উইকিবই
bnwikibooks
https://bn.wikibooks.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8_%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE
MediaWiki 1.45.0-wmf.5
first-letter
মিডিয়া
বিশেষ
আলাপ
ব্যবহারকারী
ব্যবহারকারী আলাপ
উইকিবই
উইকিবই আলোচনা
চিত্র
চিত্র আলোচনা
মিডিয়াউইকি
মিডিয়াউইকি আলোচনা
টেমপ্লেট
টেমপ্লেট আলোচনা
সাহায্য
সাহায্য আলোচনা
বিষয়শ্রেণী
বিষয়শ্রেণী আলোচনা
উইকিশৈশব
উইকিশৈশব আলাপ
বিষয়
বিষয় আলাপ
রন্ধনপ্রণালী
রন্ধনপ্রণালী আলোচনা
TimedText
TimedText talk
মডিউল
মডিউল আলাপ
ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil
3
10826
84059
74060
2025-06-12T01:24:20Z
MD Abu Siyam
8392
/* রন্ধনপ্রণালী:ঘেভার */ নতুন অনুচ্ছেদ
84059
wikitext
text/x-wiki
{{সংগ্রহশালাসমূহ}}
== সমাধান প্রয়োজন ==
আমি [[ইউরোপের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস/১৯১৪ সাল থেকে ইউরোপ|একটা পাতা]] নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে ওতে আমার নাম যোগ করে রেখেছিলাম। তখনও পাতাটির শিরোনাম লাল রঙের দেখাচ্ছিল অর্থাৎ পাতাটিতে কেউ তখনও লেখা শুরু করে নি। কিন্তু পরবর্তীতে অনুবাদ শেষ করার পর পাতা সম্পাদনা করতে গিয়ে দেখি অন্য একজন সেটা সম্পাদনা করেছে এবং জমা দিয়ে দিয়েছে। অন্যের নামে যোগ করা পাতা সম্পাদনা করা কি শৃঙ্খলাবহির্ভূত নয়? [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ১৩:১১, ৭ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
:আপনার শুরু করার সময় কার কোনো প্রমাণ দিতে পারলে আপনার অনুবাদ তা স্বীকৃতি পাবে [[বিশেষ:অবদান/103.215.227.181|103.215.227.181]] ১৩:২৩, ২১ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
== Article check ==
আমার লেখা আর্টিকেলটি পুনরায় পর্যবেক্ষণ করার জন্য অনুরোধ করছি
উইকিশৈশব:মজার বৈজ্ঞানিক গবেষণা/How to make a needle float, and how to make it sink [[ব্যবহারকারী:MR.ANABRATA GUCHAIT|MR.ANABRATA GUCHAIT]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MR.ANABRATA GUCHAIT|আলাপ]]) ০৪:১৫, ৮ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:MR.ANABRATA GUCHAIT|MR.ANABRATA GUCHAIT]] পাতাটি বাংলা ভাষায় লিখুন —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৮:২৮, ৯ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
::ঠিক আছে [[ব্যবহারকারী:MR.ANABRATA GUCHAIT|MR.ANABRATA GUCHAIT]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MR.ANABRATA GUCHAIT|আলাপ]]) ১৫:৫২, ১১ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
== Point ==
'''আমার লেখা প্রতিটি আর্টিক্যালে আপনি শূন্য পয়েন্ট দিচ্ছেন। আপনি পুনরায় ভালো করে আর্টিক্যালগুলি চেক করে দেখুন! কোন ত্রুটি নেই, নিজের লেখা আর্টিক্যাল।
দয়া করে আর্টিকেল গুলির পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে নাম্বার দেবেন।
খাতা সংশোধন করার পরে নম্বর দেওয়ার অনুমতি আছে, কিছু আপনি দিচ্ছেন না।
আমার কর্তব্য সবাইয়ের কাছে সহজ ভাবে বিষযগুলির ব্যাখ্যা দেওয়া, আপনার পছন্দ হলে গ্রহণ করবেন।
সবকিছুই সময়ের উপর নির্ভর করে।
'''
আপনি যখন পয়েন্ট দিচ্ছেন তার টাইম কোন নির্দিষ্ট নেই, খাতা অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই পয়েন্ট দিচ্ছেন, যেগুলো পয়েন্ট দেননি তো দেন-ই-নি।
[[ব্যবহারকারী:MR.ANABRATA GUCHAIT|MR.ANABRATA GUCHAIT]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MR.ANABRATA GUCHAIT|আলাপ]]) ১২:০৫, ১২ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:MR.ANABRATA GUCHAIT|MR.ANABRATA GUCHAIT]] পাতা সম্পূর্ণ না করে জমা দিবেন না। গৃহিত হয়নি এমন পাতা সংশোধন করে জানালে সেটা পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১২:০৯, ১২ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
::এখনো পর্যন্ত আমি যে কটা আর্টিকেল বা পাতা লিখেছি সবকটি আজকেই সংশোধন করা হয়েছে দেখতে পারেন। [[ব্যবহারকারী:MR.ANABRATA GUCHAIT|MR.ANABRATA GUCHAIT]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MR.ANABRATA GUCHAIT|আলাপ]]) ১২:৪৭, ১২ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
:::@[[ব্যবহারকারী:MR.ANABRATA GUCHAIT|MR.ANABRATA GUCHAIT]] আপনার লেখা পাতাগুলো গুগল অনুবাদ বা যান্ত্রিক অনুবাদে পরিপূর্ণ। এগুলো সরল ও প্রাজ্ঞল ভাষায় লিখুন যাতে পড়লেই সহজে বোঝা যায়। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৩:৩৭, ১২ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
== ফাউনন্টেন সমাধান ==
উইকিশৈশব:ভাষা/আইসল্যান্ডীয়
যোগ করতে পারছি না ফাউনন্টেনের মাধ্যমে। বলছে-
Another user has already added this article to the editathon [[ব্যবহারকারী:Vilen09|Vilen09]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Vilen09|আলাপ]]) ০৭:২০, ২৬ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:Vilen09|Vilen09]] এখন চেষ্টা করুন। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৮:৫১, ২৬ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
::ধন্যবাদ [[ব্যবহারকারী:Vilen09|Vilen09]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Vilen09|আলাপ]]) ০৪:০০, ২৭ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
== টুলফোর্জ এ সমস্যা ==
প্রতিযোগিতার সময়সীমা কি বাড়ানো হয়েছে? টুলফোর্জ কিন্তু দেখাচ্ছে এখনো ১৭ ঘণ্টা বাকি আছে। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ০৬:৪৫, ১ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পাতাগুলো এই সময়ে শুধুমাত্র জমা দেওয়া যাবে, সময় বৃদ্ধি করা হয়নি। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৬:৪৭, ১ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
== A barnstar for you! ==
{| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;"
|rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Original Barnstar Hires.png|100px]]
|style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''The Original Barnstar'''
|-
|style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | original [[ব্যবহারকারী:Md Aahradul Islam Tasin|Md Aahradul Islam Tasin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Aahradul Islam Tasin|আলাপ]]) ০৯:২৫, ৫ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
|}
== সংশোধন করা হলো ==
জনাব,<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/লেখক<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/তথ্যসূত্র<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/আরো পড়ুন<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/শিক্ষায় আইসিটি একীভূত করার ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের সমস্যা<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি<br>
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/ভূমিকা<br>
পাতাগুলো সংশোধন করা হলো<br>
এগুলি ইংরেজি https://en.wikibooks.org/wiki/ICT_in_Education পা্তা থেকে অনুবা্দ করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:Rajan chandra Saha Raju|Rajan chandra Saha Raju]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Rajan chandra Saha Raju|আলাপ]]) ০৭:১০, ৮ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:Rajan chandra Saha Raju|Rajan chandra Saha Raju]] পাতাগুলোতে থাকা যান্ত্রিক ও জটিলতায় পরিপূর্ণ অনুবাদ গুলো প্রাঞ্জল ও সরল ভাষায় লিখতে হবে, আমি এখনও পাতাগুলোতে যান্ত্রিক অনুবাদ দেখতে পাচ্ছি। পাতাগুলো নিজের ভাষায় বুঝিয়ে লিখুন। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২৭, ৮ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
::সবগুলি পাতা সংশোধন করা হয়েছে। এবা্র একটু দেখুন। [[ব্যবহারকারী:Rajan chandra Saha Raju|Rajan chandra Saha Raju]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Rajan chandra Saha Raju|আলাপ]]) ১০:৩৯, ১২ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
== ইলেকট্রনিক্সে হাতেখড়ি/সেমিকন্ডাক্টর ==
ইলেকট্রনিক্সে হাতেখড়ি/সেমিকন্ডাক্টর পাতাটি সংশোধন দেখে জানাবেন ঠিক আছে কিনা। [[ব্যবহারকারী:Rajan chandra Saha Raju|Rajan chandra Saha Raju]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Rajan chandra Saha Raju|আলাপ]]) ১০:২৪, ১২ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
== সংশোধন করা হলো ==
পরিবহনে বিজ্ঞান/সময়সূচী ও সময় নির্ধারণ - এটা যান্ত্রিক অনুবাদ সংশোধন করা হল। [[ব্যবহারকারী:Sourav saha032|Sourav saha032]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sourav saha032|আলাপ]]) ১৬:১৪, ১৭ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
== উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪: তথ্য প্রদানের অনুরোধ ==
{| style="margin: 1em 4em;"
|- valign="top"
| [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]
| <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;">
সুপ্রিয় MdsShakil,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]-এ অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার জমা দেয়া এক বা একাধিক পাতা প্রতিযোগিতায় গৃহীত হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন! আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSepliAn9c9o4ISEM6ck_jWW0H_W0pr9596OfZAGy6q_UfTOFw/viewform?usp=sf_link এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১০:৩৩, ২৯ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
</div>
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69608-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
== উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক ==
{| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;"
|rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest barnstar.svg|100px]]
|style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক'''
|-
|style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | সুপ্রিয় MdsShakil,<br />বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]''' শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন।
<br />শুভেচ্ছান্তে,
<br />'''[[User:MdsShakil|শাকিল হোসেন]]'''
<br />সমন্বয়ক, উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪
<br />১০:৩৩, ২৪ আগস্ট ২০২৪ (ইউটিসি)
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69912-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
== টেমপ্লেট:তাক ==
@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] কিছু সমস্যা ছিল টেমপ্লেটে তবে সেগুলো সংশোধন করেছি। সময় পেলে একটু পরীক্ষা করে দেখবেন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:৩৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] আপনি না একবার সংশোধন করেছিলেন? কি সমস্যা হয়েছিলো আবার? —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৮:০৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (ইউটিসি)
::বিষয়শ্রেণী যুক্ত হচ্ছিল না। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০২:১১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (ইউটিসি)
:::টেমপ্লেট:বিভাগ এও কিছু সমস্যা পেয়েছি বিকালে ঠিক করব ইনশাল্লাহ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০২:২৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (ইউটিসি)
== Notice of expiration of your sysop right ==
<div dir="ltr">Hi, as part of [[:m:Special:MyLanguage/Global reminder bot|Global reminder bot]], this is an automated reminder to let you know that your permission "sysop" (প্রশাসক) will expire on 2025-04-06 14:24:19. Please renew this right if you would like to continue using it. <i>In other languages: [[:m:Special:MyLanguage/Global reminder bot/Messages/default|click here]]</i> [[ব্যবহারকারী:Leaderbot|Leaderbot]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Leaderbot|আলাপ]]) ১৯:৪২, ৩০ মার্চ ২০২৫ (ইউটিসি)</div>
== [[টেমপ্লেট:Printable]] ==
[[টেমপ্লেট:Printable]] কাজ করছে না। দয়া করে নিশ্চিত করুন যে এটি সঠিকভাবে কাজ করা। [[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Somajyoti|আলাপ]]) ১৪:০৬, ১০ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫: অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ]] ==
{| style="background-color: #f8f9fa; border: 1px solid #ced4da; padding:10px; color: #212529;"
|-
|[[File:Bangla Wikibooks Writing contest 2025 Banner (2).png|frameless|center|300px|link=[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫]]]]<br/>
সুপ্রিয় MdsShakil,
আশা করি এই গ্রীষ্মের এই রৌদ্রোজ্জ্বল তপ্ত আবহাওয়াতেও ভালো আছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, গত ৭ মে থেকে বাংলা উইকিবইয়ে '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫]]''' শীর্ষক একটি বই লিখন ও অনুবাদ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতাটি অভিজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও নতুন ব্যবহারকারী সকলের জন্যই মুক্ত।
অন্যান্য ভাষার উইকিবইয়ের চাইতে বাংলা উইকিবইয়ে অবদানকারীর সংখ্যা নিতান্তই কম, এমনকি সংখ্যাটি বাংলা উইকিপিডিয়ার তুলনায়ও নগণ্য। অথচ ডিজিটাল বইয়ের এই যুগে বাংলা উইকিবই যথেষ্ট গুরত্বের দাবি রাখে। এজন্য আমাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। আশা করি আপনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন ও উইকিবইকে সমৃদ্ধ করবেন। বিস্তারিত [[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|প্রকল্প পাতায়]] দেখুন।
'''শীর্ষ অবদানকারীদের জন্য পুরষ্কার'''
* ১ম স্থান অধিকারকারী ― ৬০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ২য় স্থান অধিকারকারী ― ৪০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৩য় স্থান অধিকারকারী ― ৩০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৪র্থ স্থান অধিকারকারী ― ২৫০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৫ম স্থান অধিকারকারী ― ২০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৬ষ্ঠ থেকে ১০তম স্থান অধিকারকারী (৫ জন) ― ৫০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* কমপক্ষে একটি পাতা গৃহীত হলে ― ডিজিটাল সনদপত্র
প্রতিযোগিতায় আপনাকে স্বাগত।<br />
শুভেচ্ছান্তে, <br /> —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৬:৪৪, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=74028-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
== [[রন্ধনপ্রণালী:ঘেভার]] ==
পরিবর্তন করা হয়েছে, যাচাই করুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০১:২৪, ১২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
nc91bag6dmvmj5zgd9zdfo4tr53h7c5
ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS
3
16324
84104
81932
2025-06-12T09:06:52Z
Asikur.rahman25
11164
/* মানব শারীরতত্ত্ব/সংবহন তন্ত্র */ নতুন অনুচ্ছেদ
84104
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
প্রিয় NusJaS, উইকিবইয়ে স্বাগত! [[চিত্র:Smiley oui.gif|30px|link=]] </br>
এই প্রকল্পে আপনার আগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ; আশা করছি এ পরিবেশটি আপনার ভাল লাগবে এবং উইকিবইকে সমৃদ্ধ করার কাজে আপনি সহায়তা করবেন।। আপনার যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে এগুলি দেখুন:
* [[চিত্র:Animated tools.gif|20px|link=]] [[উইকিবই:সহায়িকা|সহায়িকা পাতা]]
* [[চিত্র:Article icon cropped.svg|20px|link=]] [[সাহায্য:কিভাবে একটি নতুন উইকিবই শুরু করবেন|নতুন লেখা শুরু কিভাবে করবেন]]
* [[চিত্র:Notepad icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:রচনাশৈলী নির্দেশিকা|উইকিবইয়ের রচনাশৈলী]]
* [[চিত্র:Books-aj.svg_aj_ashton_01.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:উইকিবই কী?|উইকিবই কী]]
* [[চিত্র:Control copyright icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:কপিরাইট|কপিরাইট]]
আপনি সম্প্রদায়কে কোন সার্বজনীন প্রশ্ন করতে বা আলোচনা করতে [[উইকিবই:প্রশাসকদের আলোচনাসভা|আলোচনাসভা]] ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার]] আপনাকে কাজের একটি তালিকা দিবে যা দিয়ে আপনি এখানে সাহায্য করতে পারেন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে বিনা দ্বিধায় [[ব্যবহারকারী আলাপ:MdaNoman|আমার আলাপের পাতায়]] তা করতে পারেন।
অনুগ্রহপূর্বক আলাপের পাতায় বার্তা রাখার পর সম্পাদনা সরঞ্জামদণ্ডের [[চিত্র:OOjs UI icon signature-ltr.svg|22px|link=|alt=স্বাক্ষর আইকন]] চিহ্নে ক্লিক করার মাধ্যমে অথবা চারটি টিল্ডা (<code><nowiki>~~~~</nowiki></code>) চিহ্ন দিয়ে নাম স্বাক্ষর করুন। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার নাম এবং তারিখ যোগ করবে। যদি আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|অভ্যর্থনা কমিটির]] যে-কোনো সদস্যকে প্রশ্ন করুন, বা আপনার আলাপের পাতায় '''<nowiki>{{সাহায্য করুন}}</nowiki>''' লিখুন এবং তার নিচে আপনার প্রশ্নটি লিখুন। একজন সাহায্যকারী কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন।<br /> আশা করি আপনি [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|বাংলা উইকিবই সম্প্রদায়ের]] একজন হয়ে সম্পাদনা করে আনন্দ পাবেন! আবারও স্বাগত এবং শুভেচ্ছা!<br>
— [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|উইকিবই অভ্যর্থনা কমিটি]]— [[ব্যবহারকারী:MdaNoman|নোমান]] <span>[[User talk:MdaNoman |(আলাপ)]]</span> ১৪:৪৭, ১ অক্টোবর ২০২২ (ইউটিসি)
== উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২ পদক ==
{| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;"
|rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest barnstar.svg|100px]]
|style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা পদক'''
|-
|style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | সুপ্রিয় NusJaS, বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]]''' শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন।
<br />শুভেচ্ছান্তে,
<br />'''[[User:MdsShakil|শাকিল হোসেন]]'''
<br />সমন্বয়ক, উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২
<br />১৩:৫৯, ২০ নভেম্বর ২০২২ (ইউটিসি)
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=52050-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
== উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা: তথ্য প্রদানের অনুরোধ ==
{| style="margin: 1em 4em;"
|- valign="top"
| [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]]
| <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;">
সুপ্রিয় NusJaS,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]]-এ অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার জমা দেয়া এক বা একাধিক পাতা প্রতিযোগিতায় গৃহীত হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন! আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLScOFXrwWd6r8bBuutYxDP2CLQaKUQXFpQD4jpwQwmYjIR4f6A/viewform?usp=send_form এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:৩২, ২০ নভেম্বর ২০২২ (ইউটিসি)
</div>
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=52070-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
:আপনি এখনও ফর্মটি পূরণ করেননি। অনুগ্রহ করে আগামী '''দুই দিনের''' মাঝে ফর্মটি পূরণ করুন, এরমাঝে পূরণ না করলে আপনি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত নাও হতে পারেন। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৫:৫৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ (ইউটিসি)
::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] করেছি। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ২০:৪৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ (ইউটিসি)
== উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪: তথ্য প্রদানের অনুরোধ ==
{| style="margin: 1em 4em;"
|- valign="top"
| [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]
| <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;">
সুপ্রিয় NusJaS,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]-এ অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার জমা দেয়া এক বা একাধিক পাতা প্রতিযোগিতায় গৃহীত হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন! আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSfbU0XnUtQltWCaC59XqYCfjFicHrveyMOi_wW_g-I4FRnJMA/viewform?usp=sf_link এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১০:২১, ২৯ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)
</div>
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69589-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
== উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক ==
{| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;"
|rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest barnstar.svg|100px]]
|style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক'''
|-
|style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | সুপ্রিয় NusJaS,<br />বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]''' শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন।
<br />শুভেচ্ছান্তে,
<br />'''[[User:MdsShakil|শাকিল হোসেন]]'''
<br />সমন্বয়ক, উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪
<br />১০:৩৩, ২৪ আগস্ট ২০২৪ (ইউটিসি)
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69912-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
== পুনঃপর্যালোচনা ==
আপনার বার্তা মতো ভুল অনুবাদ সংশোধন ও পরিমার্জিত বাংলায় [[লুইস ক্যারল/থ্রু দ্য লুকিং-গ্লাস]] পাতাটিকে গৃহীত করার মতো পর্যায়ে এনেছি। আশা করি সময় পেলে আমার বার্তাটি ও পাতাটি পুনরায় পর্যালোচনা করবেন। {{Thank you}} -- [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৪:৩৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ! [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১২:১৬, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] [[রন্ধনপ্রণালী:চাট]] পাতাটিকেও পুনরায় পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:১৯, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] নির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি। [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] দেখুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৬:২৫, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
:::মনে হয় সংক্ষিপ্ত করতে বলছেন? [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩৬, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] উক্ত পাতায় যেরকম ফরম্যাটে আছে, সেভাবেই লিখুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৬:৩৯, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
::@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] দয়া করে [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/অবিচ্ছিন্ন সীমা]] পাতাটি দেখুন! সব ঠিক করেছি। শুরু থেকে শেষ। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১১:০৫, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/শিক্ষা]] ==
এটা ঠিক করেছি। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ১২:১০, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] গ্রহণ {{করা হয়েছে}}। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৭:৪১, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== লুইস ক্যারল/মিস্টার ডজসন ও মিস্টার ক্যারল ==
পাতাটি সম্পূর্ন অনুবাদ ও ঠিক করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.Asaduzzaman sahed|আলাপ]]) ১৩:২৭, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] এখনও ইংরেজি লেখা আছে। Minos, Niemand সহ আরও আছে। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৭:৪২, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/গোষ্ঠী ==
পাতার ফরম্যাটিং ঠিক করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.Asaduzzaman sahed|আলাপ]]) ১৫:২২, ২২ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] গ্রহণ {{করা হয়েছে}}। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৭:৪৫, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/রেটিনাল ইমপ্লান্ট]] ==
এটা ঠিক করেছি। [[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:SMontaha32|আলাপ]]) ১০:৫৪, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] গ্রহণ করেছি। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১১:০৮, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভেস্টিবুলার ইমপ্লান্ট]] ==
সংশোধন করেছি। [[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:SMontaha32|আলাপ]]) ১০:৫৫, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] গ্রহণ করেছি। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১১:০৭, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/মানব বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ ==
মহোদয় এই পাতাতে কি যান্ত্রিকতা আছে একটু নির্দিষ্ট করে বলুন [[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.Asaduzzaman sahed|আলাপ]]) ০৯:০৫, ২৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] কোনো ট্রান্সলেটর টুল বা এআই-এর মাধ্যমে অপরিশোধিত অনুবাদ। complex and compound sentences কে simple করা যান্ত্রিকতা দূর করার একটা সহজ উপায়। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১৫:৫৩, ২৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== সংশোধন ==
[[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/পৌষ্টিকনালী ও পরিপাক/নিজের জ্ঞান যাচাইয়ের উত্তরমালা]] এবং [[তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণ/দৃশ্যমান আলো]] অনুবাদ সংশোধন করা হয়েছে। [[ব্যবহারকারী:যুবায়ের হোসাইন কায়েফ|যুবায়ের হোসাইন কায়েফ]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:যুবায়ের হোসাইন কায়েফ|আলাপ]]) ২০:০০, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:যুবায়ের হোসাইন কায়েফ|যুবায়ের হোসাইন কায়েফ]] গৃহীত হয়েছে। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৫:৪৪, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== মানব শারীরতত্ত্ব/সংবহন তন্ত্র ==
ইংরেজি শব্দগুলোর বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও পাতার ফরমেট ঠিক করা হয়েছে। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ০৯:০৬, ১২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
0zqhdzg1ahirta24smvddnceplkoy6e
ব্যবহারকারী আলাপ:ARI
3
22173
84109
70664
2025-06-12T10:51:59Z
MdsShakil
7280
MdsShakil [[ব্যবহারকারী আলাপ:Arijit Kisku]] কে [[ব্যবহারকারী আলাপ:ARI]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন: ব্যবহারকারীকে "[[Special:CentralAuth/Arijit Kisku|Arijit Kisku]]" থেকে "[[Special:CentralAuth/ARI|ARI]]"-এ নামান্তরের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাতা স্থানান্তরিত
70664
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০৭:৪০, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ (ইউটিসি)
3jtbitgpmwlctw0279ob5mc77s53ao8
মানব শারীরতত্ত্ব/সংবহন তন্ত্র
0
23112
84079
73636
2025-06-12T03:34:25Z
Asikur.rahman25
11164
84079
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে।
হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা।
আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে।
কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত ভেন্ট্রিকলে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।
মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি ভেন্ট্রিকল। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে ভেন্ট্রিকলগুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার ভেন্ট্রিকল সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====ভেন্ট্রিকল====
ভেন্ট্রিকল হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি ভেন্ট্রিকল আছে: ডান ভেন্ট্রিকল রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম ভেন্ট্রিকল রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়।
ভেন্ট্রিকলের দেয়াল অ্যাট্রিয়ার চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান ভেন্ট্রিকল তুলনা করলে দেখা যায়, বাম ভেন্ট্রিকলের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (ভেন্ট্রিকল) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান ভেন্ট্রিকলের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান ভেন্ট্রিকলের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু এট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকলে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার ভেন্ট্রিকলে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ।
ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান এট্রিয়াম এবং ডান ভেন্ট্রিকলের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান এট্রিয়াম থেকে ডান ভেন্ট্রিকলে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং এট্রিয়াম রক্ত ভেন্ট্রিকলে ঠেলে দেয়। এরপর ভেন্ট্রিকল সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন ভেন্ট্রিকলের চাপ এট্রিয়ামের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়।
বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম ভেন্ট্রিকলের রক্তকে বাম এট্রিয়ামে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা।
আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান ভেন্ট্রিকল ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম ভেন্ট্রিকল ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা এট্রিয়ামে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়।
রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় এট্রিয়াম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় ভেন্ট্রিকলও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়।
দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান এট্রিয়ামে প্রবেশ করে। ডান এট্রিয়াম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান ভেন্ট্রিকলে পাঠায়। এরপর ডান ভেন্ট্রিকল সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে।
এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম এট্রিয়ামে ফিরে আসে। বাম এট্রিয়াম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম ভেন্ট্রিকলে পাঠায়। এরপর বাম ভেন্ট্রিকল সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → ক্যাপিলারি → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===ক্যাপিলারির মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক ক্যাপিলারিতে প্রবেশ করে। ক্যাপিলারির প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। ক্যাপিলারির ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন ক্যাপিলারির দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত ক্যাপিলারিতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===ক্যাপিলারি===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
ক্যাপিলারি হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই ক্যাপিলারি থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
ক্যাপিলারির প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"ক্যাপিলারি বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই ক্যাপিলারিগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত ক্যাপিলারি বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি ক্যাপিলারি দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়।
যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে।
শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা ক্যাপিলারি বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান ভেন্ট্রিকল থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম ভেন্ট্রিকল থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)।
একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের ক্যাপিলারিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর ভেন্ট্রিকল সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে ক্যাপিলারিতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো ক্যাপিলারি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম ভেন্ট্রিকল সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত।
যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে।
সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে।
প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে।
এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়—উপরের ও নিচের দল।
উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে।
শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে।
প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয়—আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন ভেন্ট্রিকল সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়।
[ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন ভেন্ট্রিকল শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া।
ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) ভেন্ট্রিকলের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম ভেন্ট্রিকলের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম ভেন্ট্রিকলে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান ভেন্ট্রিকলের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান ভেন্ট্রিকলে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে ভেন্ট্রিকল সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন ভেন্ট্রিকলের চাপ এট্রিয়ার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার ভেন্ট্রিকল থেকে এট্রিয়ামে ফিরে যেতে না পারে।
দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম ভেন্ট্রিকল খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান ভেন্ট্রিকলের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়।
শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান ভেন্ট্রিকলে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো।
কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
[[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]
'''SA নোড'''
সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে।
যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না।
SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়।
যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান ভেন্ট্রিকলের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে।
SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে।
অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও ভেন্ট্রিকল এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে।
এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে।
এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকলে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়।
এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা ভেন্ট্রিকলের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে ভেন্ট্রিকল সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে (Campbell ''et al.'', 2002)।
প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে।
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো ভেন্ট্রিকল ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে ভেন্ট্রিকল সংকোচন করায়।
এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।
হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে — এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে।
এগুলি এভি নোড (যা ভেন্ট্রিকলের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত ভেন্ট্রিকলের পেশিতে পৌঁছে দেয়।
বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত ভেন্ট্রিকল পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
[[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা ভেন্ট্রিকলের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে ভেন্ট্রিকলের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান ভেন্ট্রিকল থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম ভেন্ট্রিকল থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]।
১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে।
যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)।
হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে।
ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না।
সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়।
[[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে।
যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও ভেন্ট্রিকলের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে।
ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত ভেন্ট্রিকলে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে ভেন্ট্রিকল বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - ভেন্ট্রিকলের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - ভেন্ট্রিকলের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়।
তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে।
এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে।
রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ।
একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন ভেন্ট্রিকল বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref>
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়।
আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে।
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়।
আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)।
রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়।
স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে।
প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে।
এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ।
ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (ভেন্ট্রিকল) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন—পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==ভেন্ট্রিকলের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে ভেন্ট্রিকলগুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং ভেন্ট্রিকলের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের ভেন্ট্রিকলের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি ভেন্ট্রিকলের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং ভেন্ট্রিকলের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে ভেন্ট্রিকলের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ ভেন্ট্রিকলের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ ভেন্ট্রিকলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) ক্যাপিলারির জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে ক্যাপিলারিতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''ক্যাপিলারিজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস ক্যাপিলারিজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড ক্যাপিলারিজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল ক্যাপিলারিজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ ক্যাপিলারি যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': ক্যাপিলারি থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা ক্যাপিলারি থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
eviilroy321ff3c1f2hhvflyhygfqzp
84080
84079
2025-06-12T03:36:52Z
Asikur.rahman25
11164
84080
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে।
হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা।
আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে।
কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।
মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়।
নিলয়ের দেয়াল অ্যাট্রিয়ার চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু এট্রিয়া থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ।
ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান এট্রিয়াম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান এট্রিয়াম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং এট্রিয়াম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ এট্রিয়ামের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়।
বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম এট্রিয়ামে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা।
আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা এট্রিয়ামে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়।
রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় এট্রিয়াম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়।
দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান এট্রিয়ামে প্রবেশ করে। ডান এট্রিয়াম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে।
এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম এট্রিয়ামে ফিরে আসে। বাম এট্রিয়াম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → ক্যাপিলারি → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===ক্যাপিলারির মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক ক্যাপিলারিতে প্রবেশ করে। ক্যাপিলারির প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। ক্যাপিলারির ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন ক্যাপিলারির দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত ক্যাপিলারিতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===ক্যাপিলারি===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
ক্যাপিলারি হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই ক্যাপিলারি থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
ক্যাপিলারির প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"ক্যাপিলারি বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই ক্যাপিলারিগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত ক্যাপিলারি বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি ক্যাপিলারি দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়।
যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে।
শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা ক্যাপিলারি বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)।
একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের ক্যাপিলারিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে ক্যাপিলারিতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো ক্যাপিলারি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত।
যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে।
সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে।
প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে।
এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়—উপরের ও নিচের দল।
উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে।
শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে।
প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয়—আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়।
[ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া।
ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ এট্রিয়ার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে এট্রিয়ামে ফিরে যেতে না পারে।
দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়।
শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো।
কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
[[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]
'''SA নোড'''
সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে।
যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না।
SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়।
যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে।
SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে।
অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে।
এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে।
এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়।
এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে (Campbell ''et al.'', 2002)।
প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে।
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়।
এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।
হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে — এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে।
এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়।
বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
[[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]।
১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে।
যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)।
হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে।
ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না।
সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়।
[[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে।
যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে।
ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়।
তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে।
এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে।
রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ।
একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref>
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়।
আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে।
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়।
আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)।
রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়।
স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে।
প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে।
এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ।
ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন—পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) ক্যাপিলারির জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে ক্যাপিলারিতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''ক্যাপিলারিজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস ক্যাপিলারিজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড ক্যাপিলারিজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল ক্যাপিলারিজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ ক্যাপিলারি যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': ক্যাপিলারি থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা ক্যাপিলারি থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
rvat41iuykvvtlbevl9jvsxi6gw7m6i
84081
84080
2025-06-12T03:52:12Z
Asikur.rahman25
11164
84081
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে।
হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা।
আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে।
কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।
মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়।
নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ।
ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়।
বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা।
আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়।
রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়।
দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে।
এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → ক্যাপিলারি → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===ক্যাপিলারির মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক ক্যাপিলারিতে প্রবেশ করে। ক্যাপিলারির প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। ক্যাপিলারির ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন ক্যাপিলারির দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত ক্যাপিলারিতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===ক্যাপিলারি===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
ক্যাপিলারি হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই ক্যাপিলারি থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
ক্যাপিলারির প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"ক্যাপিলারি বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই ক্যাপিলারিগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত ক্যাপিলারি বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি ক্যাপিলারি দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়।
যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে।
শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা ক্যাপিলারি বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)।
একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের ক্যাপিলারিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে ক্যাপিলারিতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো ক্যাপিলারি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত।
যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে।
সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে।
প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে।
এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়—উপরের ও নিচের দল।
উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে।
শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে।
প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয়—আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়।
[ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া।
ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে।
দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়।
শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো।
কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
[[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]
'''SA নোড'''
সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে।
যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না।
SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়।
যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে।
SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে।
অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে।
এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে।
এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়।
এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে (Campbell ''et al.'', 2002)।
প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে।
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়।
এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।
হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে — এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে।
এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়।
বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
[[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]।
১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে।
যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)।
হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে।
ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না।
সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়।
[[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে।
যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে।
ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়।
তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে।
এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে।
রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ।
একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref>
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়।
আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে।
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়।
আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)।
রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়।
স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে।
প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে।
এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ।
ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন—পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) ক্যাপিলারির জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে ক্যাপিলারিতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''ক্যাপিলারিজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস ক্যাপিলারিজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড ক্যাপিলারিজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল ক্যাপিলারিজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ ক্যাপিলারি যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': ক্যাপিলারি থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা ক্যাপিলারি থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
m4pstvg613rq09o82zf8n57kpco6jzy
84082
84081
2025-06-12T03:56:16Z
Asikur.rahman25
11164
84082
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে।
হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা।
আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে।
কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।
মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়।
নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ।
ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়।
বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা।
আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়।
রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়।
দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে।
এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===কৈশিকনালী===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়।
যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে।
শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)।
একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত।
যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে।
সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে।
প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে।
এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়—উপরের ও নিচের দল।
উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে।
শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে।
প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয়—আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়।
[ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া।
ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে।
দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়।
শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো।
কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
[[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]
'''SA নোড'''
সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে।
যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না।
SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়।
যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে।
SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে।
অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে।
এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে।
এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়।
এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে (Campbell ''et al.'', 2002)।
প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে।
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়।
এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।
হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে — এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে।
এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়।
বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
[[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]।
১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে।
যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)।
হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে।
ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না।
সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়।
[[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে।
যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে।
ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়।
তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে।
এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে।
রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ।
একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref>
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়।
আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে।
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়।
আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)।
রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়।
স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে।
প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে।
এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ।
ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন—পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) কৈশিকনালীর জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
ta4omyhboxbyul3ry3y6vcu7u696qcd
84094
84082
2025-06-12T06:57:59Z
Asikur.rahman25
11164
84094
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===কৈশিকনালী===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে।
এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়—উপরের ও নিচের দল।
উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে।
শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে।
প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয়—আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়।
[ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া।
ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে।
দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়।
শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো।
কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
[[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]
'''SA নোড'''
সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে।
যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না।
SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়।
যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে।
SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে।
অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে।
এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে।
এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়।
এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে (Campbell ''et al.'', 2002)।
প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে।
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়।
এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।
হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে — এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে।
এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়।
বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
[[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]।
১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে।
যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)।
হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে।
ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না।
সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়।
[[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে।
যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে।
ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়।
তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে।
এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে।
রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ।
একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref>
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়।
আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে।
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়।
আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)।
রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়।
স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে।
প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে।
এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ।
ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন—পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) কৈশিকনালীর জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
tmihp70m4ea1qdqvo0urhq66m7h197u
84095
84094
2025-06-12T07:02:13Z
Asikur.rahman25
11164
/* ফুসফুস সঞ্চালন পথ */
84095
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===কৈশিকনালী===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে।
এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়—উপরের ও নিচের দল।
উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে।
শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে।
প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয়—আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়।
[ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া।
ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে।
দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়।
শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো।
কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
[[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]
'''SA নোড'''
সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে।
যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না।
SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়।
যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে।
SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে।
অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে।
এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে।
এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়।
এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে (Campbell ''et al.'', 2002)।
প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে।
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়।
এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।
হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে — এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে।
এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়।
বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
[[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]।
১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে।
যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)।
হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে।
ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না।
সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়।
[[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে।
যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে।
ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়।
তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে।
এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে।
রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ।
একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref>
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়।
আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে।
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়।
আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)।
রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়।
স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে।
প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে।
এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ।
ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন—পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) কৈশিকনালীর জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
kv93p7irr5vzdgie1nnmp5ji0weifca
84096
84095
2025-06-12T07:05:31Z
Asikur.rahman25
11164
84096
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===কৈশিকনালী===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
[[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]
'''SA নোড'''
সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে।
যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না।
SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়।
যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে।
SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়।
সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে।
অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে।
এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে।
এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়।
এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে (Campbell ''et al.'', 2002)।
প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে।
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়।
এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।
হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে — এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে।
এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়।
বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
[[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]।
১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে।
যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)।
হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে।
ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না।
সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়।
[[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে।
যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে।
ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়।
তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে।
এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে।
রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ।
একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref>
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়।
আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে।
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়।
আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)।
রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়।
স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে।
প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে।
এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ।
ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন—পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) কৈশিকনালীর জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
hcf05uans4rvu8wkdiyz6jiaxdnrzxi
84097
84096
2025-06-12T07:15:41Z
Asikur.rahman25
11164
84097
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===কৈশিকনালী===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি:
১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে।
১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে।
অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে।
এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে।
রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) কৈশিকনালীর জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
srqknh8w4ix9hhrr5yk8xg8t4wehkkc
84098
84097
2025-06-12T07:19:46Z
Asikur.rahman25
11164
84098
wikitext
text/x-wiki
{{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}}
[[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]]
==ভূমিকা==
হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত।
==হৃদপিণ্ড==
হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে, যার অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে।
===এন্ডোকার্ডিয়াম===
এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়।
===মায়োকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
===এপিকার্ডিয়াম===
মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর।
===পেরিকার্ডিয়াম===
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে।
===হৃদপিণ্ডের কক্ষ===
হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী।
====অলিন্দ====
হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে।
====নিলয়====
নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত।
===সেপ্টাম===
ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম।
===কপাটিকাগুলি===
দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদয়ের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদয় সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদয়ের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে।
===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ===
কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে।
===হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা===
হৃদয়ের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়।
অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি।
==হৃদয়ের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ==
[[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]]
যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদয় মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়।
===হৃদয় থেকে রক্তপ্রবাহের পথ===
অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা
===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ===
আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র==
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে।
উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল।
===ধমনী===
ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদয় থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে।
====আর্টেরিওল====
আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়।
===কৈশিকনালী===
[[Image:Illu capillary en.jpg|framed|right]]
কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে।
কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়।
"কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়।
===শিরা===
শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদয়ে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে।
শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য।
===ভেনিওল===
ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা।
==হৃদরক্ত নালির পথ==
[[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]]
রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয় দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদয় অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ।
===ফুসফুস সঞ্চালন পথ===
ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদয়ের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদয়ের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ===
সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়।
===মহাধমনী===
মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে।
মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়।
===ঊর্ধ্ব মহাশিরা===
ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে।
===নিম্ন মহাশিরা===
নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদয়ের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে।
===করোনারি ধমনীসমূহ===
[[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]]
{{wikipedia|Coronary circulation}}
হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ
করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান।
• ডান করোনারি ধমনী
• বাম করোনারি ধমনী
উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে।
===হেপাটিক শিরাসমূহ===
মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না।
==হৃদ্পিণ্ডের চক্র==
হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
===সিস্টোল===
[[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]]
সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে।
===ডায়াস্টোল===
[[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]]
ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড
কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে।
===লাব-ডাব===
প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা==
হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়।
[http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)]
====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ====
হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে।
====এভি নোড====
অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।
====এভি বান্ডল====
[[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে।
====পারকিঞ্জি ফাইবার====
[[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়।
====পেসমেকার====
হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে।
====ফিব্রিলেশন====
ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়।
==ইসিজি==
ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে।
====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়====
{| class="wikitable"
! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র
|-
|
[[Image:QRS normal.svg]]
|
;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়।
;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়।
;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে।
;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে।
;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে।
|}
===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন===
কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
===রক্তচাপ===
রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে।
====সিস্টলিক চাপ====
সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়।
====ডায়াস্টলিক চাপ====
ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে।
==হৃদরোগ==
হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার।
====উচ্চ রক্তচাপ====
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও।
====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস====
[[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]]
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
====প্লাক====
প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়।
====সার্কুলেটরি শক====
সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
====থ্রম্বাস====
থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে।
====এম্বোলিজম====
এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে।
====স্ট্রোক====
স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে।
* '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়।
* '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে।
এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে।
====হার্ট অ্যাটাক====
{{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}}
হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ।
====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস====
অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়।
====করোনারি বাইপাস====
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।
====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর====
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়।
====অ্যানিউরিজম====
অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)।
====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা====
রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়।
====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা====
করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়।
===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা===
====ভ্যারিকোজ শিরা====
ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি।
====ফ্লেবাইটিস====
ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে।
===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি===
[[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]]
জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত।
====অসায়ানোটিক ত্রুটি====
অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে।
====সায়ানোটিক ত্রুটি====
সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম।
==হোমিওস্টেসিস==
[[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
===লসিকা তন্ত্র===
লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে।
==দারুণ কিছু তথ্য==
• হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br>
• প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br>
• চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br>
• সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br>
• আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে।
==সুস্থ হৃদয়ের জন্য করণীয়==
• স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br>
• ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br>
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br>
• এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br>
• চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br>
==বৃদ্ধাবস্থা==
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়।
==শক==
;শারীরবৃত্তীয় চাপ
শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়।
"ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)।
"প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি।
==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন==
SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন।
==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
• SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br>
• AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br>
• AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br>
• বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br>
[[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]]
==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম==
• P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
• T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br>
[[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]]
==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা==
স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে:
* এপিনেফ্রিন
* নরএপিনেফ্রিন
* ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড
* ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন
* রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম
==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ==
হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদয়ে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদয় পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদয় বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদয় ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদয়ের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন।
====স্টোক====
সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে।
স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
==সারাংশ==
শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদয়ের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদয়ের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে।
==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী==
;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে]
১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
:ক) এপিকার্ডিয়াম
:খ) পেরিকার্ডিয়াম
:গ) মায়োকার্ডিয়াম
:ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস
:ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে
২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয়
:ক) শিরা
:খ) কৈশিকনালীর জালিকা
:গ) শিরা
:ঘ) অ্যাওর্টা
:ঙ) ভেনা কেভা
৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে
:ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে
:খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল
:গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ
:ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি
:ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন
৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার
:ক) এভি নোড
:খ) পারকিনজে ফাইবার
:গ) এভি বান্ডল
:ঘ) এসএ নোড
:ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়
৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে
:ক) S
:খ) P
:গ) U
:ঘ) T
:ঙ) Q
৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে
:ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা
:খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন
:গ) এসএ নোড উদ্দীপনা
:ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন
:ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা
৭. রক্তচাপ হলো
:ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ
:খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ
:গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ
:ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ
:ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ
৮. সিস্টলিক চাপ হলো
:ক) গড়ে ১২০ mm Hg
:খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায়
:গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয়
:ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg
:ঙ) উভয় ক এবং গ
:চ) উভয় খ এবং ঘ
৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে?
:ক) একটি
:খ) দুটি
:গ) তিনটি
:ঘ) চারটি
:ঙ) পাঁচটি
==শব্দকোষ==
<br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে।
<br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী
<br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ
<br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
<br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে
<br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদয়ের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে।
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে
<br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে
<br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে
<br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ
<br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ
<br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে
<br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ
<br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে।
<br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে
<br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী
<br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে
<br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে
<br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয়
<br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে
<br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব
<br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড
<br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়
<br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয়
<br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে
<br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার
<br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে
<br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা
<br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা
<br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর
<br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয়
<br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর
<br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয়
<br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে
<br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু
<br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন
<br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ
<br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট
<br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে
<br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা
<br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে
<br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''':
<br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে
<br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে
<br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ
<br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ
<br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক
<br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া
<br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু
<br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা
<br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা
<br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয়
<br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন
<br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া
<br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে
<br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ
<br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায়
==তথ্যসূত্র==
# Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002.
# Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders
# Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester.
# Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>.
{{reflist}}
sbqh4v4h4q93pgvus27yk83wbcc1wql
পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/বিষয়সমূহ
0
23389
84093
74453
2025-06-12T06:20:29Z
Tahmid
4464
84093
wikitext
text/x-wiki
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/রৈখিক গতি|স্থানচ্যুতি, বেগ এবং ত্বরণ]]
#* [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/ভেক্টর এবং স্কেলার|ভেক্টর এবং স্কেলার]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/বল|বল]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/দড়ি এবং টান|দড়ি এবং টান]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/মহাকর্ষ|মহাকর্ষ]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/ভরবেগ ও সংঘর্ষজনিত বল|ভরবেগ ও সংঘর্ষজনিত বল]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শক্তি|শক্তি]]
#* [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/গতিশক্তি|গতিশক্তি]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/ঘর্ষণ|ঘর্ষণ]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/আবর্ত গতি|আবর্ত গতি]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/ঘূর্ণন বল|ঘূর্ণন বল]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/বৃত্তাকার গতি|বৃত্তাকার গতি]]
#* [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/ভরকেন্দ্র|ভরকেন্দ্র]]
#* [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/জড়তা ও ভ্রামক জড়তা|জড়তা ও ভ্রামক জড়তা]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/পদার্থের শক্তি: চাপ ও প্রসারণ|পদার্থের শক্তি: চাপ ও প্রসারণ]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/তাপগতিবিদ্যা|তাপগতিবিদ্যা]]
#* [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/ক্ষমতা|ক্ষমতা]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/গ্যাস|গ্যাস]]
#* [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/আদর্শ গ্যাস|আদর্শ গ্যাস]]
#* [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/চাপ ও আংশিক চাপ|চাপ ও আংশিক চাপ]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/তরল|তরল]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/ঘনত্ব|ঘনত্ব]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/আদর্শ তরলের স্তরীয় প্রবাহ|আদর্শ তরলের স্তরীয় প্রবাহ]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শক্তি ঘনত্ব|শক্তি ঘনত্ব]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/বাস্তব তরল|বাস্তব তরল]]
#[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শিয়ার ঘন ও পাতলা তরল|শিয়ার ঘন ও পাতলা তরল]]
{{BookCat}}
kxlup6uk534jl975tq8n04biurfjzt2
প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/স্নায়ুতন্ত্র
0
23473
84111
74790
2025-06-12T10:57:21Z
Asikur.rahman25
11164
84111
wikitext
text/x-wiki
[[File:Anatomy and Physiology of Animals - 14 Nervous.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/royalty-free-images/139764662/ Royalty-free image collection]. Used under a CC-BY licence.]]
==উদ্দেশ্য==
এই অংশটি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন:
* একটি প্রাণীর পরিবেশের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা কী
* স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস ও সংরক্ষণ করে এবং আন্দোলন শুরু করে
* একটি নিউরনের মৌলিক গঠন ও কার্যাবলি
* একটি সিন্যাপ্স এবং নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিকের গঠন ও কাজ কী
* প্রতিফলন নামে পরিচিত স্নায়বিক পথ কী এবং এর উদাহরণসমূহ
* প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কীভাবে প্রাণীদের শর্তযুক্ত প্রতিফলন তৈরি করা যায়
* স্নায়ুতন্ত্রকে কেন্দ্রীয় ও পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে ভাগ করা যায়
* মস্তিষ্ক মেনিনজেস নামক ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত
* মস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলো এবং সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার, হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি, সেরিবেলাম ও মেডুলা অবলংগাটার কাজ কী
* মেরুদণ্ডের গঠন ও কার্যাবলি
* পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে করোটিক ও মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু এবং স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত
* স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রে সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক অংশ রয়েছে এবং এগুলোর কার্যাবলি ভিন্ন
==সমন্বয়==
প্রাণীদের টিকে থাকতে হলে তারা যে পরিবেশে বাস করে তা অনুভব করতে ও সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে সক্ষম হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাদের আশেপাশের তাপমাত্রা বুঝতে পারতে হয়, যেন তারা প্রচণ্ড রোদ থেকে বাঁচতে পারে। তাদের খাদ্য চিহ্নিত করা এবং শিকারির হাত থেকে পালাতে পারার মতো ক্ষমতাও থাকতে হয়।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমগুলোকেও এমনভাবে সংযুক্ত থাকতে হয় যেন তারা একসাথে কাজ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি শিকারি প্রাণী যখন তার শিকারের অবস্থান নির্ধারণ করে, তখন সেটিকে ধরতে হলে
মাংসপেশির সংকোচন সমন্বয় করে দৌড়াতে হয়। সেই সময় মাংসপেশিতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দিতে
রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বাড়ে যেন বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়
এবং যে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় তা সরিয়ে ফেলা যায়। শিকার ধরার পর
যখন তা খাওয়া হয়, তখন হজমতন্ত্র সক্রিয় হয়ে তা হজম করে।
পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি প্রাণীর সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং এই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জটিল সংযুক্তিকরণকে '''সমন্বয়''' বলা হয়।
প্রাণীদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য দুটি সিস্টেম কাজ করে: '''স্নায়ুতন্ত্র''' এবং '''অন্তঃস্রাবী তন্ত্র'''।
প্রথমটি কাজ করে স্নায়ুর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত চালিয়ে এবং দ্বিতীয়টি গ্রন্থি থেকে রক্তে
বিশেষ রাসায়নিক বা হরমোন নিঃসরণ করে কাজ করে।
==স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি==
স্নায়ুতন্ত্রের তিনটি প্রধান কাজ রয়েছে:
:১. '''ইন্দ্রিয়গত কার্যাবলি''' – দেহের ভেতরে ও বাইরে পরিবর্তন (যেমন: উদ্দীপনা) অনুভব করা।
যেমন, চোখ আলো পরিবর্তন অনুভব করে এবং কান শব্দতরঙ্গ গ্রহণ করে।
পেটের স্ট্রেচ রিসেপ্টর বলে দেয় কখন পেট ভরে গেছে এবং রক্তনালীর রাসায়নিক রিসেপ্টর
রক্তের অম্লতা পর্যবেক্ষণ করে।
:২. '''সমন্বয় কার্যাবলি''' – ইন্দ্রিয় অঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ।
এই অঙ্গগুলো থেকে আগত সংকেত বিশ্লেষণ করা হয় এবং স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত হয়।
বিভিন্ন উৎস থেকে আসা সংকেতগুলো শ্রেণিবিন্যাস, সামঞ্জস্য ও সমন্বয় করা হয়
এবং উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া শুরু করা হয়।
এই বিশ্লেষণ, স্মরণ ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করার ক্ষমতাই উচ্চতর প্রাণীদের উন্নত করে তোলে।
:৩. '''প্রেরণ কার্যাবলি''' – উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশি সংকোচন বা গ্রন্থি থেকে রস নিঃসরণ ঘটানো।
সব স্নায়ুতন্তু '''নিউরন''' নামক স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত। এরা দ্রুতগতির সংকেত পরিবহন করে,
যা '''স্নায়ু সংকেত''' নামে পরিচিত। এই সংকেতকে বৈদ্যুতিক প্রবাহের মতো ভাবা যায়।
==নিউরন==
নিউরন এমন কোষ, যেগুলো স্নায়ু সংকেত পরিবহন করার জন্য অভিযোজিত। একটি সাধারণ নিউরনে
একটি '''কোষদেহ''' থাকে যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। এছাড়া এক বা একাধিক শাখিত ফাইবার
থাকে যেগুলোকে '''ডেনড্রাইট''' বলা হয়। এগুলো কোষদেহের দিকে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে, যাকে '''অ্যাকসন''' বলা হয়। এটি কোষদেহ থেকে দূরে সংকেত নিয়ে যায়।
অনেক অ্যাকসনের চারপাশে '''মাইলিন''' নামক চর্বিজাত পদার্থের আবরণ থাকে।
এটি স্নায়ু সংকেতের গতি বাড়িয়ে দেয় (ডায়াগ্রাম ১৪.১ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Motor neuron.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১ – একটি মোটর নিউরন
নিউরনের কোষদেহ সাধারণত মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে,
অ্যাকসনটি সেই অঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে যেটিকে এটি সংকেত দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘোড়ার মেরুদণ্ড থেকে পিছনের পা বা লেজে সংকেত নিয়ে যাওয়া নিউরন
অনেক ফুট দীর্ঘ হতে পারে। একটি '''স্নায়ু''' অনেকগুলো অ্যাকসনের গুচ্ছ।
একটি '''ইন্দ্রিয় নিউরন''' হলো এমন এক স্নায়ুকোষ যা চোখ বা কানের মতো
ইন্দ্রিয় গ্রাহক থেকে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি '''মোটর নিউরন''' হলো এমন কোষ যা মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ড থেকে পেশি বা গ্রন্থিতে সংকেত পাঠায়।
একটি '''রিলে নিউরন''' ইন্দ্রিয় ও মোটর নিউরনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে
এবং এটি মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১ ও ১৪.২ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Relation btw sensory, relay & motor neurons.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.২ – ইন্দ্রিয়, রিলে ও মোটর নিউরনের সম্পর্ক
===নিউরনের সংযোগ===
পার্শ্ববর্তী নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগকে বলা হয় '''সিন্যাপ্স'''। এখানে দুটি স্নায়ুকোষ আসলে একে অপরকে স্পর্শ করে না, বরং তাদের মাঝখানে একটি অতি সূক্ষ্ম ফাঁকা জায়গা থাকে। সিন্যাপ্সের আগের নিউরনে বৈদ্যুতিক সংকেত পৌঁছালে এটি '''নিউরোট্রান্সমিটার''' নামে কিছু রাসায়নিক উৎপন্ন করে (যেমন '''অ্যাসিটাইলকোলিন'''), যেগুলো এই ফাঁকা জায়গায় নিঃসৃত হয়।
নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিক পদার্থগুলো ওই ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে পাশের স্নায়ুকোষের ঝিল্লির সাথে সংস্পর্শে এলে নতুন একটি স্নায়ু সংকেত সৃষ্টি হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৩ দেখুন)। সংকেতটি চলে যাওয়ার পর ওই রাসায়নিকটি ভেঙে যায় এবং সিন্যাপ্স আবার পরবর্তী সংকেত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Magnification of a synapse.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৩ - একটি স্নায়ু এবং সিন্যাপ্সের বর্ধিত চিত্র
==প্রতিবর্তী ক্রিয়া==
'''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো কোন উত্তেজক বা উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় সাড়া। আপনি যদি ভুল করে গরম কিছু স্পর্শ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নেন, সেটিই প্রতিবর্তী ক্রিয়া ক্রিয়া। এটি ঘটে আপনাকে ভাবতে না হয়েই।
যেমন, চোখের সামনে হঠাৎ কিছু আসলে পশুরা চোখ বন্ধ করে ফেলে, বা বিড়াল পড়ে যেতে যেতে শরীর ঘুরিয়ে পায়ের উপর পড়ে। (দয়া করে এটা বিড়ালের উপর পরীক্ষা করবেন না!)
গিলতে থাকা, হাঁচি দেওয়া এবং উজ্জ্বল আলোতে চোখের মণি ছোট হয়ে যাওয়া—সবই প্রতিবর্তী ক্রিয়া। আরও কিছু উদাহরণ হলো ঠান্ডায় কাঁপা এবং হঠাৎ উচ্চ শব্দে মুখ খুলে যাওয়া।
প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যে পথ অনুসরণ করে, তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলে। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে তিনটি নিউরন থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.৪ দেখুন)।
'''উদ্দীপক''' (যেমন পায়ে সুচ ফোটানো) ত্বকের ব্যথা গ্রহণকারী রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে, যা একটি সংবেদী নিউরনে সংকেত পাঠায়। এটি মেরুদণ্ডে পৌঁছে, সেখানে অবস্থিত একটি '''রিলে নিউরন''' এর সাথে একটি সিন্যাপ্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়। রিলে নিউরন আবার এক বা একাধিক মোটর নিউরনের সাথে সংযুক্ত হয়ে সংকেতটি পেশিতে পৌঁছে দেয়। ফলে পেশি সংকুচিত হয়ে পা সরিয়ে নেয়।
এই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্ক সরাসরি অংশগ্রহণ করে না, তবে আপনি সচেতন থাকেন এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বন্ধ করতে পারেন। পশুরা জন্ম থেকেই এই প্রতিবর্তী ক্রিয়া নিয়ে জন্মায়—এগুলো যেন প্রাকৃতিকভাবে ইনস্টল করা থাকে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals A reflex arc.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৪ - একটি প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক
===শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া===
বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়াে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক থাকে। যেমন, মুখে খাবার আসলে লালাগ্রন্থি লালা নিঃসরণ করে। তবে, পশুদের (এবং মানুষকেও) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় যেন তারা ভিন্ন এবং প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক উদ্দীপকে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটিকে বলা হয় '''শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া'''।
একজন রাশিয়ান জীববিজ্ঞানী পাভলভ এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত পরীক্ষা করেন, যেখানে তিনি কুকুরদের ঘণ্টার শব্দ শুনে লালা ঝরানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেন।
প্রায় প্রতিটি পোষা প্রাণীর মালিকই এমন কিছু প্রতিবর্তী ক্রিয়া শনাক্ত করতে পারেন যেগুলো তারা নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন। যেমন, আপনি হয়তো আপনার বিড়ালকে ফ্রিজ খোলার শব্দ শুনেই খাবারের আশায় ছুটে আসতে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন, বা কুকুরকে হাঁটতে যাওয়ার আগে কিছু নির্দিষ্ট কাজের সাথে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন।
==স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ==
মেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্র ব্যাখ্যা করার সময় আমরা সাধারণত এটি দুটি অংশে ভাগ করি (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
:1. '''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত।
:2. '''পরিকেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে সংযুক্ত স্নায়ুগুলি নিয়ে গঠিত (মস্তিষ্কীয় এবং মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু) এবং এর অংশ হিসেবে '''স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র''' থাকে।
[[Image:Horse nervous system labelled.JPG]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৫ - ঘোড়ার স্নায়ুতন্ত্র
===কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র===
'''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত। এটি একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মতো কাজ করে, যেখানে অসংখ্য সংযোগ স্থাপন হয়।
মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের দিকে তাকালে কিছু অংশ সাদা ('''সাদা পদার্থ''') এবং কিছু অংশ ধূসর ('''ধূসর পদার্থ''') দেখায়। সাদা পদার্থ মূলত স্নায়ু এক্সন দ্বারা গঠিত, আর ধূসর পদার্থ গঠিত হয় স্নায়ুকোষের কোষদেহ দ্বারা। মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থ বাইরের দিকে এবং মেরুদণ্ডজালে এটি ভেতরের দিকে থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.২ দেখুন)।
====মস্তিষ্ক====
মস্তিষ্কের প্রধান অংশটি মাথার খুলি বা '''ক্রেনিয়ামের''' ভেতরে সুরক্ষিত থাকে। এর চারপাশে থাকে '''মেনিনজেস''' নামের প্রতিরক্ষামূলক পর্দা (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন), এবং একধরনের পরিষ্কার তরল পদার্থ যাকে '''সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড''' বলা হয়। এই তরল পদার্থ মস্তিষ্ককে সুরক্ষা ও পুষ্টি দেয় এবং মস্তিষ্কের চারটি গহ্বর বা '''ভেন্ট্রিকল''' পূর্ণ করে রাখে।
মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় একটি টিস্যু। এমনকি যখন পশু বিশ্রামে থাকে, তখনও এটি শরীরে নেওয়া মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০% ব্যবহার করে। '''ক্যারোটিড ধমনী''', যা পৃষ্ঠীয় মহাধমনী থেকে শাখা বের করে আসে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। মাত্র ৪–৮ মিনিট অক্সিজেন না পেলে মস্তিষ্কের কোষ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মস্তিষ্ককে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়:
:1. '''অগ্রমস্তিষ্ক''', যেখানে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''', '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''।
:2. '''পশ্চাৎমস্তিষ্ক''' বা '''ব্রেন স্টেম''', যেখানে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা''' এবং '''পন্স'''।
:3. '''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Longitudinal section through brain of a dog.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৬ - কুকুরের মস্তিষ্কের লম্বালম্বি কাটা অংশ
=====মস্তিষ্কের মানচিত্র=====
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশের কাজ নির্ধারণ করে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৭ দেখুন)।
ডায়াগ্রাম ১৪.৭ - মানব সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
=====অগ্রমস্তিষ্ক=====
'''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' হলো মস্তিষ্কের উপরের দিকে থাকা টিস্যুর ভর। এর পৃষ্ঠদেশে '''সাল্কাস''' (বাঁকানো খাঁজ ও উঁচু) থাকে, যা এটিকে আখরোটের মতো দেখায়। দুটি হেমিস্ফিয়ার গভীর খাঁজ দিয়ে বিভক্ত, তবে ভেতরে পুরু স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে যুক্ত থাকে। প্রতিটি হেমিস্ফিয়ারের বাইরের স্তরকে বলে '''সেরিব্রাল কর্টেক্স''' এবং এখানেই মূল কার্যাবলি ঘটে।
স্তন্যপায়ী প্রাণীর সেরিব্রাল কর্টেক্স অন্যান্য মেরুদণ্ডীর তুলনায় বড় ও বেশি জটিল, আর মানুষের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড়, কারণ এখানে স্মৃতি, শেখা, যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার উচ্চতর কেন্দ্রগুলি অবস্থিত।
চোখ, কান, নাক ও ত্বক থেকে আসা সংবেদনশীল সংকেত এখানে এসে ব্যাখ্যা করা হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত চলাফেরা এখান থেকেই শুরু হয়।
কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট সংবেদনশীল ও মোটর কাজের জন্য দায়ী, যেমন: দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ, বা পা ও লেজ নাড়ানো। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি কুকুর গন্ধ শোঁকে, তখন নাকের গন্ধগ্রাহী অঙ্গ থেকে সংকেত '''অলফ্যাকটরি স্নায়ু'''র মাধ্যমে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের অলফ্যাকটরি কেন্দ্রে পৌঁছায় এবং সেখানে সংকেত ব্যাখ্যা ও সমন্বয় হয়।
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের অংশগুলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৮ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Functions of the regions of the cerebral cortex.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৮ - সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
'''হাইপোথ্যালামাস''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি একটি "ডাঁটা" দ্বারা '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''র সাথে যুক্ত, যেটিকে "মাস্টার" হরমোন উৎপাদক গ্রন্থি বলা হয় (অধ্যায় ১৬ দেখুন)। হাইপোথ্যালামাস হলো স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন উৎপাদনকারী অন্তঃস্রাবী তন্ত্রের মধ্যে সংযোগকারী সেতু।
এটি কিছু হরমোন তৈরি করে যেগুলো পিটুইটারিতে নিঃসরণ হয় এবং অন্যদের নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি পশুর শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে '''হোমিওস্টেসিস''' বজায় রাখে। যেমন, খাদ্য হজম, দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ এবং রক্তের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম এবং যৌন প্রবৃত্তিও এটি নিয়ন্ত্রণ করে।
=====পশ্চাৎমস্তিষ্ক=====
'''মেডুলা অবলংগাটা''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি মেরুদণ্ডের সম্প্রসারণ। এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদানের পথ। এখানে এমন কিছু কেন্দ্র রয়েছে যা শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, হৃদস্পন্দনের হার ও অন্ত্রের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি গিলতে থাকা, বমি, কাশি ও হাঁচির সমন্বয় করে।
=====সেরিবেলাম=====
'''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" দেখতে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের ছোট সংস্করণের মতো, এবং এটি মস্তিষ্কের পেছনে সংযুক্ত থাকে। এটি অন্তঃকর্ণের ভারসাম্য অঙ্গ এবং পেশি ও টেনডনের রিসেপ্টর থেকে সংকেত পায়। এগুলোর সমন্বয় করে হাঁটা-দৌড়ানোর সময় পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পশুর ভঙ্গিমা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেরিবেলামের সমস্যা হলে শরীরে কাঁপুনি ও অস্বাভাবিক চলাফেরা দেখা যায়।
====মেরুদণ্ডজাল====
মেরুদণ্ডজাল হলো স্নায়ুতন্তুর এক ধরনের তার, যা পশ্চাৎমস্তিষ্ক থেকে শুরু করে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী চ্যানেল দিয়ে যায়। এটি ধীরে ধীরে সরু হয়, কারণ বিভিন্ন অংশ থেকে জোড়া '''স্পাইনাল নার্ভ''' বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যায়। এর চারপাশে প্রতিরক্ষামূলক '''মেনিনজেস''' থাকে এবং এর মধ্যে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল প্রবাহিত হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals The spinal cord.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৯ - মেরুদণ্ডজাল
আপনি যদি মেরুদণ্ডজালকে কেটে দেখেন, তবে দেখবেন বাইরের দিকে সাদা পদার্থ এবং ভেতরে একটি এইচ-আকৃতির বা প্রজাপতির মতো ধূসর পদার্থ রয়েছে।
===পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র===
'''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' বলতে সেই সব স্নায়ুকে বোঝায় যেগুলো মস্তিষ্কের ('''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''') এবং মেরুদণ্ডের ('''স্পাইনাল নার্ভ''') সাথে যুক্ত। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র'''-ও পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ।
====ক্র্যানিয়াল নার্ভ====
মস্তিষ্ক থেকে ১২ জোড়া ক্র্যানিয়াল নার্ভ বের হয়। প্রতিটি নার্ভ খুলির (মস্তিষ্কের খোলস) একটি গর্ত দিয়ে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভগুলো হলো অলফ্যাক্টরি, অপটিক, অ্যাকউস্টিক এবং ভ্যাগাস নার্ভ।
'''অলফ্যাক্টরি নার্ভ''' (ঘ্রাণের জন্য) নাকের ঘ্রাণ সংবেদক অঙ্গ থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''অপটিক নার্ভ''' (দৃষ্টির জন্য) চোখের রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে সংকেত বহন করে।
'''অডিটরি (অ্যাকউস্টিক) নার্ভ''' (শ্রবণের জন্য) কান-এর ভেতরের কক্লিয়া থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''ভ্যাগাস নার্ভ''' গিলতে সাহায্য করে এমন পেশিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হৃদপিণ্ড, শ্বাসনালী, ফুসফুস, পেট এবং অন্ত্রের পেশিগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
====স্পাইনাল নার্ভ====
'''স্পাইনাল নার্ভ''' মেরুদণ্ডকে শরীরের সংবেদক অঙ্গ, পেশি এবং গ্রন্থির সাথে যুক্ত করে। প্রতিটি জোড়া স্পাইনাল নার্ভ মেরুদণ্ড থেকে বের হয়ে একেকটি কশেরুকার মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে বাইরে আসে (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
'''সায়াটিক নার্ভ''' হলো শরীরের সবচেয়ে বড় স্পাইনাল নার্ভ (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)। এটি একাধিক নার্ভের মিলিত অংশ যা একত্রে একটি চ্যাপ্টা নার্ভ টিস্যুর ফিতা তৈরি করে। এটি উরুর মধ্য দিয়ে পেছনের পায়ের দিকে যায় এবং এই অঙ্গের বিভিন্ন পেশিতে শাখা দেয়।
====স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র====
'''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে যেগুলো আমরা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো শিকার প্রাণীকে কোনো শিকারি তাড়া করে, তখন স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্বাস ও হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে দেয়। এটি পেশিতে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোকে চওড়া করে, যকৃত থেকে গ্লুকোজ ছাড়ায় এবং হঠাৎ করে কাজ করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।
যখন প্রাণীটি পালিয়ে যায় এবং নিরাপদ হয়, তখন এই স্নায়ুতন্ত্র আগের বাড়তি কাজগুলো ধীর করে এবং স্বাভাবিক কাজ যেমন হজম প্রক্রিয়া আবার শুরু করে।
স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুগুলো মেরুদণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়ে কশেরুকার মাঝ দিয়ে বেরিয়ে বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১০ দেখুন)। এটি দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত — '''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' এবং '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম'''।
'''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' "লড়াই, ভয়, পালানো" প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে, যাতে প্রাণী শত্রুর মুখোমুখি হতে বা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে। এটি হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ায়, এবং কঙ্কাল পেশিতে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ যেমন অন্ত্র ও চর্মে রক্তপ্রবাহ কমায়। এটি চোখের পিউপিলও বড় করে। সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের প্রভাব অ্যাড্রিনালিন হরমোনের প্রভাবের মতো (চ্যাপ্টার ১৬ দেখুন)।
'''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের বিপরীত কাজ করে। এটি শরীরের স্বাভাবিক বিশ্রামের অবস্থায় কাজ পরিচালনা করে। একে মাঝে মাঝে “হাউসকিপিং ফাংশন” বলা হয়। এটি হজমকে সহায়তা করে, মলত্যাগ ও প্রস্রাবকে উদ্দীপিত করে এবং নিয়মিত হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Function of the sympathetic & parasympathetic nervous systems.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১০ - সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি
==সারসংক্ষেপ==
* '''নিউরন''' হলো স্নায়ুতন্ত্রের মূল একক। এটি একটি '''সেল বডি''' নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে, '''ডেনড্রাইট''' নামের শাখা থাকে এবং একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে যাকে '''অ্যাক্সন''' বলা হয়, যা সাধারণত '''মাইলিন শিথ''' দ্বারা আবৃত থাকে।
* একটি '''নার্ভ''' হলো অনেক অ্যাক্সনের গুচ্ছ।
* মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের '''গ্রে ম্যাটার''' মূলত স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত, আর '''হোয়াইট ম্যাটার''' অনেক অ্যাক্সন নিয়ে গঠিত।
* '''নার্ভ ইমপালস''' অ্যাক্সনের মধ্য দিয়ে চলে।
* কাছাকাছি নিউরনগুলো একে অপরের সাথে '''সিন্যাপ্স''' নামক স্থানে যুক্ত থাকে।
* '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো উদ্দীপনার প্রতি স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া। প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যেভাবে চলে তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলা হয়। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে ৩টি নিউরন থাকে – একটি '''সেন্সরি নিউরন''', একটি '''রিলে নিউরন''' এবং একটি '''মোটর নিউরন'''। যেমন পায়ে সূঁচ লাগলে সেন্সরি নিউরনে সংকেত তৈরি হয়, যা একটি সিন্যাপ্স দিয়ে রিলে নিউরনে যায় (যা মেরুদণ্ডে থাকে), তারপর আরেকটি সিন্যাপ্স হয়ে মোটর নিউরনে যায়। মোটর নিউরন এই সংকেতটি পেশিতে পাঠায়, ফলে পা সরে যায়।
* স্নায়ুতন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত: '''সেন্ট্রাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড) এবং '''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে যুক্ত নার্ভসমূহ)। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
* মস্তিষ্ক তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: ১. '''ফোরব্রেইন''' যাতে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' (বা '''সেরিব্রাম'''), '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্ল্যান্ড'''। ২. '''হাইন্ডব্রেইন''' বা '''ব্রেইনস্টেম''' যাতে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা'''। ৩. '''সেরিবেলাম'''।
* '''মেনিনজেস''' নামে পরিচিত সুরক্ষামূলক পর্দা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে রাখে।
* ১২ জোড়া '''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''' রয়েছে যাদের মধ্যে অপটিক, অলফ্যাক্টরি, অ্যাকউস্টিক এবং '''ভ্যাগাস''' নার্ভ উল্লেখযোগ্য।
* '''স্পাইনাল কর্ড''' হলো স্নায়ু টিস্যুর একটি তার, যা মেনিনজেস দ্বারা আবৃত এবং মস্তিষ্ক থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যায়। '''স্পাইনাল নার্ভ''' প্রতিটি কশেরুকার মধ্য দিয়ে '''ভেন্ট্রাল''' ও '''ডরসাল রুট''' দিয়ে বের হয় এবং মেরুদণ্ডকে অঙ্গ ও পেশির সাথে সংযুক্ত করে।
* '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটি দুই ভাগে বিভক্ত: '''সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসনালীর প্রশস্তকরণ, চোখের পিউপিল বড় হওয়া এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ কমে যাওয়া। আর '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা হৃদস্পন্দন কমায়, চোখের পিউপিল সংকুচিত করে এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ বাড়ায়।
==কার্যপত্র==
[http://www.wikieducator.org/Nervous_System_Worksheet স্নায়ুতন্ত্র ওয়ার্কশীট]
==নিজেকে পরীক্ষা করো==
১। নিচের মোটর নিউরনের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো।
:[[W:কোষদেহ|কোষদেহ]] | [[W:নিউক্লিয়াস|নিউক্লিয়াস]] | [[W:অ্যাক্সন|অ্যাক্সন]] | [[W:ডেনড্রাইট|ডেনড্রাইট]] | [[W:মায়োলিন আবরণী|মায়োলিন আবরণী]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled neuron.jpg]]
২। [[W:সিন্যাপ্স|সিন্যাপ্স]] কী?
৩। [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া|প্রতিবর্তী ক্রিয়া]] কী?
৪। নিচের প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কের অংশগুলো এমনভাবে সাজাও যেন স্নায়ু সংকেত সংবেদক অঙ্গ থেকে পেশিতে যাওয়ার পথ বোঝায়:
:[[W:ইন্দ্রিয় অঙ্গ|ইন্দ্রিয় অঙ্গ]] | [[W:রিলে নিউরন|রিলে নিউরন]] | [[W:মোটর নিউরন|মোটর নিউরন]] | [[W:সেন্সরি নিউরন|সেন্সরি নিউরন]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
৫। নিচের কুকুরের মস্তিষ্কের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো:
:[[W:সেরিবেলাম|সেরিবেলাম]] | [[W:সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার|সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার]] | [[W:সেরিব্রাল কর্টেক্স|সেরিব্রাল কর্টেক্স]] | [[W:পিটুইটারি গ্রন্থি|পিটুইটারি গ্রন্থি]] | [[W:মেডুলা অবলংগাটা|মেডুলা অবলংগাটা]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled LS dog's brain.jpg]]
৬। মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড ঘেরা [[W:মেনিনজেস|মেনিনজেস]]-এর কাজ কী?
৭। [[W:সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র|সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র]]ের ৩টি প্রভাব উল্লেখ করো।
[[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]]
==ওয়েবসাইটসমূহ==
*http://en.wikipedia.org/wiki/Neuron [[W:নিউরন|উইকিপিডিয়া]]। এখানে অনেক ভালো তথ্য রয়েছে, তবে মনে রাখো—এখানে কিছু টার্ম ও ধারণা এই কোর্সের বাইরে।
*http://images.google.co.nz/imgres?imgurl=http://static.howstuffworks.com/gif/brain-neuron.gif&imgrefurl=http://science.howstuffworks.com/brain1.htm&h=296&w=394&sz=17&hl=en&start=5&tbnid=LWLRI9lW_5PZhM:&tbnh=93&tbnw=124&prev=/images%3Fq%3Dneuron%26svnum%3D10%26hl%3Den%26lr%3D%26sa%3DN [[W:নিউরন|হাউ স্টাফ ওয়ার্কস]]। এখানে নিউরন সম্পর্কে সহজ ব্যাখ্যা আছে। ‘নিউরনের প্রকারভেদ’, ‘মস্তিষ্কের অংশ’ এবং ‘ভারসাম্য রক্ষা’ চেষ্টা করো।
*http://web.archive.org/web/20060821134839/http://www.bbc.co.uk/schools/gcsebitesize/flash/bireflexarc.swf [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক|প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক]]। এটি একটি পরিষ্কার ও সহজ অ্যানিমেশন।
==শব্দকোষ==
*[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক]
{{BookCat}}
d4wwrxbyttf5kr7w3i78u81m3izj95o
84112
84111
2025-06-12T10:59:46Z
Asikur.rahman25
11164
84112
wikitext
text/x-wiki
[[File:Anatomy and Physiology of Animals - 14 Nervous.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/royalty-free-images/139764662/ Royalty-free image collection]. Used under a CC-BY licence.]]
==উদ্দেশ্য==
এই অংশটি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন:
* একটি প্রাণীর পরিবেশের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা কী
* স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস ও সংরক্ষণ করে এবং আন্দোলন শুরু করে
* একটি নিউরনের মৌলিক গঠন ও কার্যাবলি
* একটি সিন্যাপ্স এবং নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিকের গঠন ও কাজ কী
* প্রতিফলন নামে পরিচিত স্নায়বিক পথ কী এবং এর উদাহরণসমূহ
* প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কীভাবে প্রাণীদের শর্তযুক্ত প্রতিফলন তৈরি করা যায়
* স্নায়ুতন্ত্রকে কেন্দ্রীয় ও পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে ভাগ করা যায়
* মস্তিষ্ক মেনিনজেস নামক ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত
* মস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলো এবং সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার, হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি, সেরিবেলাম ও মেডুলা অবলংগাটার কাজ কী
* মেরুদণ্ডের গঠন ও কার্যাবলি
* পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে করোটিক ও মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু এবং স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত
* স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রে সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক অংশ রয়েছে এবং এগুলোর কার্যাবলি ভিন্ন
==সমন্বয়==
প্রাণীদের টিকে থাকতে হলে তারা যে পরিবেশে বাস করে তা অনুভব করতে ও সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে সক্ষম হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাদের আশেপাশের তাপমাত্রা বুঝতে পারতে হয়, যেন তারা প্রচণ্ড রোদ থেকে বাঁচতে পারে। তাদের খাদ্য চিহ্নিত করা এবং শিকারির হাত থেকে পালাতে পারার মতো ক্ষমতাও থাকতে হয়।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমগুলোকেও এমনভাবে সংযুক্ত থাকতে হয় যেন তারা একসাথে কাজ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি শিকারি প্রাণী যখন তার শিকারের অবস্থান নির্ধারণ করে, তখন সেটিকে ধরতে হলে
মাংসপেশির সংকোচন সমন্বয় করে দৌড়াতে হয়। সেই সময় মাংসপেশিতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দিতে
রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বাড়ে যেন বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়
এবং যে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় তা সরিয়ে ফেলা যায়। শিকার ধরার পর
যখন তা খাওয়া হয়, তখন হজমতন্ত্র সক্রিয় হয়ে তা হজম করে।
পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি প্রাণীর সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং এই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জটিল সংযুক্তিকরণকে '''সমন্বয়''' বলা হয়।
প্রাণীদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য দুটি সিস্টেম কাজ করে: '''স্নায়ুতন্ত্র''' এবং '''অন্তঃস্রাবী তন্ত্র'''।
প্রথমটি কাজ করে স্নায়ুর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত চালিয়ে এবং দ্বিতীয়টি গ্রন্থি থেকে রক্তে
বিশেষ রাসায়নিক বা হরমোন নিঃসরণ করে কাজ করে।
==স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি==
স্নায়ুতন্ত্রের তিনটি প্রধান কাজ রয়েছে:
:১. '''ইন্দ্রিয়গত কার্যাবলি''' দেহের ভেতরে ও বাইরে পরিবর্তন (যেমন: উদ্দীপনা) অনুভব করা।
যেমন, চোখ আলো পরিবর্তন অনুভব করে এবং কান শব্দতরঙ্গ গ্রহণ করে।
পেটের স্ট্রেচ রিসেপ্টর বলে দেয় কখন পেট ভরে গেছে এবং রক্তনালীর রাসায়নিক রিসেপ্টর
রক্তের অম্লতা পর্যবেক্ষণ করে।
:২. '''সমন্বয় কার্যাবলি''' ইন্দ্রিয় অঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ।
এই অঙ্গগুলো থেকে আগত সংকেত বিশ্লেষণ করা হয় এবং স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত হয়।
বিভিন্ন উৎস থেকে আসা সংকেতগুলো শ্রেণিবিন্যাস, সামঞ্জস্য ও সমন্বয় করা হয়
এবং উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া শুরু করা হয়।
এই বিশ্লেষণ, স্মরণ ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করার ক্ষমতাই উচ্চতর প্রাণীদের উন্নত করে তোলে।
:৩. '''প্রেরণ কার্যাবলি''' উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশি সংকোচন বা গ্রন্থি থেকে রস নিঃসরণ ঘটানো।
সব স্নায়ুতন্তু '''নিউরন''' নামক স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত। এরা দ্রুতগতির সংকেত পরিবহন করে,
যা '''স্নায়ু সংকেত''' নামে পরিচিত। এই সংকেতকে বৈদ্যুতিক প্রবাহের মতো ভাবা যায়।
==নিউরন==
নিউরন এমন কোষ, যেগুলো স্নায়ু সংকেত পরিবহন করার জন্য অভিযোজিত। একটি সাধারণ নিউরনে
একটি '''কোষদেহ''' থাকে যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। এছাড়া এক বা একাধিক শাখিত ফাইবার
থাকে যেগুলোকে '''ডেনড্রাইট''' বলা হয়। এগুলো কোষদেহের দিকে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে, যাকে '''অ্যাকসন''' বলা হয়। এটি কোষদেহ থেকে দূরে সংকেত নিয়ে যায়।
অনেক অ্যাকসনের চারপাশে '''মাইলিন''' নামক চর্বিজাত পদার্থের আবরণ থাকে।
এটি স্নায়ু সংকেতের গতি বাড়িয়ে দেয় (ডায়াগ্রাম ১৪.১ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Motor neuron.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১ – একটি মোটর নিউরন
নিউরনের কোষদেহ সাধারণত মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে,
অ্যাকসনটি সেই অঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে যেটিকে এটি সংকেত দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘোড়ার মেরুদণ্ড থেকে পিছনের পা বা লেজে সংকেত নিয়ে যাওয়া নিউরন
অনেক ফুট দীর্ঘ হতে পারে। একটি '''স্নায়ু''' অনেকগুলো অ্যাকসনের গুচ্ছ।
একটি '''ইন্দ্রিয় নিউরন''' হলো এমন এক স্নায়ুকোষ যা চোখ বা কানের মতো
ইন্দ্রিয় গ্রাহক থেকে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি '''মোটর নিউরন''' হলো এমন কোষ যা মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ড থেকে পেশি বা গ্রন্থিতে সংকেত পাঠায়।
একটি '''রিলে নিউরন''' ইন্দ্রিয় ও মোটর নিউরনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে
এবং এটি মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১ ও ১৪.২ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Relation btw sensory, relay & motor neurons.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.২ – ইন্দ্রিয়, রিলে ও মোটর নিউরনের সম্পর্ক
===নিউরনের সংযোগ===
পার্শ্ববর্তী নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগকে বলা হয় '''সিন্যাপ্স'''। এখানে দুটি স্নায়ুকোষ আসলে একে অপরকে স্পর্শ করে না, বরং তাদের মাঝখানে একটি অতি সূক্ষ্ম ফাঁকা জায়গা থাকে। সিন্যাপ্সের আগের নিউরনে বৈদ্যুতিক সংকেত পৌঁছালে এটি '''নিউরোট্রান্সমিটার''' নামে কিছু রাসায়নিক উৎপন্ন করে (যেমন '''অ্যাসিটাইলকোলিন'''), যেগুলো এই ফাঁকা জায়গায় নিঃসৃত হয়।
নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিক পদার্থগুলো ওই ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে পাশের স্নায়ুকোষের ঝিল্লির সাথে সংস্পর্শে এলে নতুন একটি স্নায়ু সংকেত সৃষ্টি হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৩ দেখুন)। সংকেতটি চলে যাওয়ার পর ওই রাসায়নিকটি ভেঙে যায় এবং সিন্যাপ্স আবার পরবর্তী সংকেত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Magnification of a synapse.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৩ - একটি স্নায়ু এবং সিন্যাপ্সের বর্ধিত চিত্র
==প্রতিবর্তী ক্রিয়া==
'''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো কোন উত্তেজক বা উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় সাড়া। আপনি যদি ভুল করে গরম কিছু স্পর্শ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নেন, সেটিই প্রতিবর্তী ক্রিয়া ক্রিয়া। এটি ঘটে আপনাকে ভাবতে না হয়েই।
যেমন, চোখের সামনে হঠাৎ কিছু আসলে পশুরা চোখ বন্ধ করে ফেলে, বা বিড়াল পড়ে যেতে যেতে শরীর ঘুরিয়ে পায়ের উপর পড়ে। (দয়া করে এটা বিড়ালের উপর পরীক্ষা করবেন না!)
গিলতে থাকা, হাঁচি দেওয়া এবং উজ্জ্বল আলোতে চোখের মণি ছোট হয়ে যাওয়া—সবই প্রতিবর্তী ক্রিয়া। আরও কিছু উদাহরণ হলো ঠান্ডায় কাঁপা এবং হঠাৎ উচ্চ শব্দে মুখ খুলে যাওয়া।
প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যে পথ অনুসরণ করে, তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলে। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে তিনটি নিউরন থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.৪ দেখুন)।
'''উদ্দীপক''' (যেমন পায়ে সুচ ফোটানো) ত্বকের ব্যথা গ্রহণকারী রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে, যা একটি সংবেদী নিউরনে সংকেত পাঠায়। এটি মেরুদণ্ডে পৌঁছে, সেখানে অবস্থিত একটি '''রিলে নিউরন''' এর সাথে একটি সিন্যাপ্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়। রিলে নিউরন আবার এক বা একাধিক মোটর নিউরনের সাথে সংযুক্ত হয়ে সংকেতটি পেশিতে পৌঁছে দেয়। ফলে পেশি সংকুচিত হয়ে পা সরিয়ে নেয়।
এই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্ক সরাসরি অংশগ্রহণ করে না, তবে আপনি সচেতন থাকেন এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বন্ধ করতে পারেন। পশুরা জন্ম থেকেই এই প্রতিবর্তী ক্রিয়া নিয়ে জন্মায়—এগুলো যেন প্রাকৃতিকভাবে ইনস্টল করা থাকে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals A reflex arc.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৪ - একটি প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক
===শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া===
বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়াে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক থাকে। যেমন, মুখে খাবার আসলে লালাগ্রন্থি লালা নিঃসরণ করে। তবে, পশুদের (এবং মানুষকেও) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় যেন তারা ভিন্ন এবং প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক উদ্দীপকে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটিকে বলা হয় '''শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া'''।
একজন রাশিয়ান জীববিজ্ঞানী পাভলভ এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত পরীক্ষা করেন, যেখানে তিনি কুকুরদের ঘণ্টার শব্দ শুনে লালা ঝরানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেন।
প্রায় প্রতিটি পোষা প্রাণীর মালিকই এমন কিছু প্রতিবর্তী ক্রিয়া শনাক্ত করতে পারেন যেগুলো তারা নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন। যেমন, আপনি হয়তো আপনার বিড়ালকে ফ্রিজ খোলার শব্দ শুনেই খাবারের আশায় ছুটে আসতে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন, বা কুকুরকে হাঁটতে যাওয়ার আগে কিছু নির্দিষ্ট কাজের সাথে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন।
==স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ==
মেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্র ব্যাখ্যা করার সময় আমরা সাধারণত এটি দুটি অংশে ভাগ করি (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
:1. '''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত।
:2. '''পরিকেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে সংযুক্ত স্নায়ুগুলি নিয়ে গঠিত (মস্তিষ্কীয় এবং মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু) এবং এর অংশ হিসেবে '''স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র''' থাকে।
[[Image:Horse nervous system labelled.JPG]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৫ - ঘোড়ার স্নায়ুতন্ত্র
===কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র===
'''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত। এটি একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মতো কাজ করে, যেখানে অসংখ্য সংযোগ স্থাপন হয়।
মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের দিকে তাকালে কিছু অংশ সাদা ('''সাদা পদার্থ''') এবং কিছু অংশ ধূসর ('''ধূসর পদার্থ''') দেখায়। সাদা পদার্থ মূলত স্নায়ু এক্সন দ্বারা গঠিত, আর ধূসর পদার্থ গঠিত হয় স্নায়ুকোষের কোষদেহ দ্বারা। মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থ বাইরের দিকে এবং মেরুদণ্ডজালে এটি ভেতরের দিকে থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.২ দেখুন)।
====মস্তিষ্ক====
মস্তিষ্কের প্রধান অংশটি মাথার খুলি বা '''ক্রেনিয়ামের''' ভেতরে সুরক্ষিত থাকে। এর চারপাশে থাকে '''মেনিনজেস''' নামের প্রতিরক্ষামূলক পর্দা (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন), এবং একধরনের পরিষ্কার তরল পদার্থ যাকে '''সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড''' বলা হয়। এই তরল পদার্থ মস্তিষ্ককে সুরক্ষা ও পুষ্টি দেয় এবং মস্তিষ্কের চারটি গহ্বর বা '''ভেন্ট্রিকল''' পূর্ণ করে রাখে।
মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় একটি টিস্যু। এমনকি যখন পশু বিশ্রামে থাকে, তখনও এটি শরীরে নেওয়া মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০% ব্যবহার করে। '''ক্যারোটিড ধমনী''', যা পৃষ্ঠীয় মহাধমনী থেকে শাখা বের করে আসে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। মাত্র ৪–৮ মিনিট অক্সিজেন না পেলে মস্তিষ্কের কোষ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মস্তিষ্ককে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়:
:1. '''অগ্রমস্তিষ্ক''', যেখানে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''', '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''।
:2. '''পশ্চাৎমস্তিষ্ক''' বা '''ব্রেন স্টেম''', যেখানে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা''' এবং '''পন্স'''।
:3. '''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Longitudinal section through brain of a dog.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৬ - কুকুরের মস্তিষ্কের লম্বালম্বি কাটা অংশ
=====মস্তিষ্কের মানচিত্র=====
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশের কাজ নির্ধারণ করে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৭ দেখুন)।
ডায়াগ্রাম ১৪.৭ - মানব সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
=====অগ্রমস্তিষ্ক=====
'''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' হলো মস্তিষ্কের উপরের দিকে থাকা টিস্যুর ভর। এর পৃষ্ঠদেশে '''সাল্কাস''' (বাঁকানো খাঁজ ও উঁচু) থাকে, যা এটিকে আখরোটের মতো দেখায়। দুটি হেমিস্ফিয়ার গভীর খাঁজ দিয়ে বিভক্ত, তবে ভেতরে পুরু স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে যুক্ত থাকে। প্রতিটি হেমিস্ফিয়ারের বাইরের স্তরকে বলে '''সেরিব্রাল কর্টেক্স''' এবং এখানেই মূল কার্যাবলি ঘটে।
স্তন্যপায়ী প্রাণীর সেরিব্রাল কর্টেক্স অন্যান্য মেরুদণ্ডীর তুলনায় বড় ও বেশি জটিল, আর মানুষের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড়, কারণ এখানে স্মৃতি, শেখা, যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার উচ্চতর কেন্দ্রগুলি অবস্থিত।
চোখ, কান, নাক ও ত্বক থেকে আসা সংবেদনশীল সংকেত এখানে এসে ব্যাখ্যা করা হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত চলাফেরা এখান থেকেই শুরু হয়।
কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট সংবেদনশীল ও মোটর কাজের জন্য দায়ী, যেমন: দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ, বা পা ও লেজ নাড়ানো। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি কুকুর গন্ধ শোঁকে, তখন নাকের গন্ধগ্রাহী অঙ্গ থেকে সংকেত '''অলফ্যাকটরি স্নায়ু'''র মাধ্যমে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের অলফ্যাকটরি কেন্দ্রে পৌঁছায় এবং সেখানে সংকেত ব্যাখ্যা ও সমন্বয় হয়।
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের অংশগুলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৮ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Functions of the regions of the cerebral cortex.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৮ - সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
'''হাইপোথ্যালামাস''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি একটি "ডাঁটা" দ্বারা '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''র সাথে যুক্ত, যেটিকে "মাস্টার" হরমোন উৎপাদক গ্রন্থি বলা হয় (অধ্যায় ১৬ দেখুন)। হাইপোথ্যালামাস হলো স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন উৎপাদনকারী অন্তঃস্রাবী তন্ত্রের মধ্যে সংযোগকারী সেতু।
এটি কিছু হরমোন তৈরি করে যেগুলো পিটুইটারিতে নিঃসরণ হয় এবং অন্যদের নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি পশুর শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে '''হোমিওস্টেসিস''' বজায় রাখে। যেমন, খাদ্য হজম, দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ এবং রক্তের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম এবং যৌন প্রবৃত্তিও এটি নিয়ন্ত্রণ করে।
=====পশ্চাৎমস্তিষ্ক=====
'''মেডুলা অবলংগাটা''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি মেরুদণ্ডের সম্প্রসারণ। এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদানের পথ। এখানে এমন কিছু কেন্দ্র রয়েছে যা শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, হৃদস্পন্দনের হার ও অন্ত্রের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি গিলতে থাকা, বমি, কাশি ও হাঁচির সমন্বয় করে।
=====সেরিবেলাম=====
'''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" দেখতে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের ছোট সংস্করণের মতো, এবং এটি মস্তিষ্কের পেছনে সংযুক্ত থাকে। এটি অন্তঃকর্ণের ভারসাম্য অঙ্গ এবং পেশি ও টেনডনের রিসেপ্টর থেকে সংকেত পায়। এগুলোর সমন্বয় করে হাঁটা-দৌড়ানোর সময় পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পশুর ভঙ্গিমা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেরিবেলামের সমস্যা হলে শরীরে কাঁপুনি ও অস্বাভাবিক চলাফেরা দেখা যায়।
====মেরুদণ্ডজাল====
মেরুদণ্ডজাল হলো স্নায়ুতন্তুর এক ধরনের তার, যা পশ্চাৎমস্তিষ্ক থেকে শুরু করে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী চ্যানেল দিয়ে যায়। এটি ধীরে ধীরে সরু হয়, কারণ বিভিন্ন অংশ থেকে জোড়া '''স্পাইনাল নার্ভ''' বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যায়। এর চারপাশে প্রতিরক্ষামূলক '''মেনিনজেস''' থাকে এবং এর মধ্যে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল প্রবাহিত হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals The spinal cord.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৯ - মেরুদণ্ডজাল
আপনি যদি মেরুদণ্ডজালকে কেটে দেখেন, তবে দেখবেন বাইরের দিকে সাদা পদার্থ এবং ভেতরে একটি এইচ-আকৃতির বা প্রজাপতির মতো ধূসর পদার্থ রয়েছে।
===পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র===
'''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' বলতে সেই সব স্নায়ুকে বোঝায় যেগুলো মস্তিষ্কের ('''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''') এবং মেরুদণ্ডের ('''স্পাইনাল নার্ভ''') সাথে যুক্ত। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র'''-ও পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ।
====ক্র্যানিয়াল নার্ভ====
মস্তিষ্ক থেকে ১২ জোড়া ক্র্যানিয়াল নার্ভ বের হয়। প্রতিটি নার্ভ খুলির (মস্তিষ্কের খোলস) একটি গর্ত দিয়ে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভগুলো হলো অলফ্যাক্টরি, অপটিক, অ্যাকউস্টিক এবং ভ্যাগাস নার্ভ।
'''অলফ্যাক্টরি নার্ভ''' (ঘ্রাণের জন্য) নাকের ঘ্রাণ সংবেদক অঙ্গ থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''অপটিক নার্ভ''' (দৃষ্টির জন্য) চোখের রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে সংকেত বহন করে।
'''অডিটরি (অ্যাকউস্টিক) নার্ভ''' (শ্রবণের জন্য) কান-এর ভেতরের কক্লিয়া থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''ভ্যাগাস নার্ভ''' গিলতে সাহায্য করে এমন পেশিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হৃদপিণ্ড, শ্বাসনালী, ফুসফুস, পেট এবং অন্ত্রের পেশিগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
====স্পাইনাল নার্ভ====
'''স্পাইনাল নার্ভ''' মেরুদণ্ডকে শরীরের সংবেদক অঙ্গ, পেশি এবং গ্রন্থির সাথে যুক্ত করে। প্রতিটি জোড়া স্পাইনাল নার্ভ মেরুদণ্ড থেকে বের হয়ে একেকটি কশেরুকার মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে বাইরে আসে (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
'''সায়াটিক নার্ভ''' হলো শরীরের সবচেয়ে বড় স্পাইনাল নার্ভ (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)। এটি একাধিক নার্ভের মিলিত অংশ যা একত্রে একটি চ্যাপ্টা নার্ভ টিস্যুর ফিতা তৈরি করে। এটি উরুর মধ্য দিয়ে পেছনের পায়ের দিকে যায় এবং এই অঙ্গের বিভিন্ন পেশিতে শাখা দেয়।
====স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র====
'''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে যেগুলো আমরা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো শিকার প্রাণীকে কোনো শিকারি তাড়া করে, তখন স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্বাস ও হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে দেয়। এটি পেশিতে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোকে চওড়া করে, যকৃত থেকে গ্লুকোজ ছাড়ায় এবং হঠাৎ করে কাজ করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।
যখন প্রাণীটি পালিয়ে যায় এবং নিরাপদ হয়, তখন এই স্নায়ুতন্ত্র আগের বাড়তি কাজগুলো ধীর করে এবং স্বাভাবিক কাজ যেমন হজম প্রক্রিয়া আবার শুরু করে।
স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুগুলো মেরুদণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়ে কশেরুকার মাঝ দিয়ে বেরিয়ে বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১০ দেখুন)। এটি দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত — '''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' এবং '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম'''।
'''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' "লড়াই, ভয়, পালানো" প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে, যাতে প্রাণী শত্রুর মুখোমুখি হতে বা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে। এটি হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ায়, এবং কঙ্কাল পেশিতে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ যেমন অন্ত্র ও চর্মে রক্তপ্রবাহ কমায়। এটি চোখের পিউপিলও বড় করে। সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের প্রভাব অ্যাড্রিনালিন হরমোনের প্রভাবের মতো (চ্যাপ্টার ১৬ দেখুন)।
'''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের বিপরীত কাজ করে। এটি শরীরের স্বাভাবিক বিশ্রামের অবস্থায় কাজ পরিচালনা করে। একে মাঝে মাঝে “হাউসকিপিং ফাংশন” বলা হয়। এটি হজমকে সহায়তা করে, মলত্যাগ ও প্রস্রাবকে উদ্দীপিত করে এবং নিয়মিত হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Function of the sympathetic & parasympathetic nervous systems.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১০ - সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি
==সারসংক্ষেপ==
* '''নিউরন''' হলো স্নায়ুতন্ত্রের মূল একক। এটি একটি '''সেল বডি''' নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে, '''ডেনড্রাইট''' নামের শাখা থাকে এবং একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে যাকে '''অ্যাক্সন''' বলা হয়, যা সাধারণত '''মাইলিন শিথ''' দ্বারা আবৃত থাকে।
* একটি '''নার্ভ''' হলো অনেক অ্যাক্সনের গুচ্ছ।
* মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের '''গ্রে ম্যাটার''' মূলত স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত, আর '''হোয়াইট ম্যাটার''' অনেক অ্যাক্সন নিয়ে গঠিত।
* '''নার্ভ ইমপালস''' অ্যাক্সনের মধ্য দিয়ে চলে।
* কাছাকাছি নিউরনগুলো একে অপরের সাথে '''সিন্যাপ্স''' নামক স্থানে যুক্ত থাকে।
* '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো উদ্দীপনার প্রতি স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া। প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যেভাবে চলে তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলা হয়। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে ৩টি নিউরন থাকে – একটি '''সেন্সরি নিউরন''', একটি '''রিলে নিউরন''' এবং একটি '''মোটর নিউরন'''। যেমন পায়ে সূঁচ লাগলে সেন্সরি নিউরনে সংকেত তৈরি হয়, যা একটি সিন্যাপ্স দিয়ে রিলে নিউরনে যায় (যা মেরুদণ্ডে থাকে), তারপর আরেকটি সিন্যাপ্স হয়ে মোটর নিউরনে যায়। মোটর নিউরন এই সংকেতটি পেশিতে পাঠায়, ফলে পা সরে যায়।
* স্নায়ুতন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত: '''সেন্ট্রাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড) এবং '''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে যুক্ত নার্ভসমূহ)। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
* মস্তিষ্ক তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: ১. '''ফোরব্রেইন''' যাতে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' (বা '''সেরিব্রাম'''), '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্ল্যান্ড'''। ২. '''হাইন্ডব্রেইন''' বা '''ব্রেইনস্টেম''' যাতে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা'''। ৩. '''সেরিবেলাম'''।
* '''মেনিনজেস''' নামে পরিচিত সুরক্ষামূলক পর্দা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে রাখে।
* ১২ জোড়া '''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''' রয়েছে যাদের মধ্যে অপটিক, অলফ্যাক্টরি, অ্যাকউস্টিক এবং '''ভ্যাগাস''' নার্ভ উল্লেখযোগ্য।
* '''স্পাইনাল কর্ড''' হলো স্নায়ু টিস্যুর একটি তার, যা মেনিনজেস দ্বারা আবৃত এবং মস্তিষ্ক থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যায়। '''স্পাইনাল নার্ভ''' প্রতিটি কশেরুকার মধ্য দিয়ে '''ভেন্ট্রাল''' ও '''ডরসাল রুট''' দিয়ে বের হয় এবং মেরুদণ্ডকে অঙ্গ ও পেশির সাথে সংযুক্ত করে।
* '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটি দুই ভাগে বিভক্ত: '''সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসনালীর প্রশস্তকরণ, চোখের পিউপিল বড় হওয়া এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ কমে যাওয়া। আর '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা হৃদস্পন্দন কমায়, চোখের পিউপিল সংকুচিত করে এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ বাড়ায়।
==কার্যপত্র==
[http://www.wikieducator.org/Nervous_System_Worksheet স্নায়ুতন্ত্র ওয়ার্কশীট]
==নিজেকে পরীক্ষা করো==
১। নিচের মোটর নিউরনের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো।
:[[W:কোষদেহ|কোষদেহ]] | [[W:নিউক্লিয়াস|নিউক্লিয়াস]] | [[W:অ্যাক্সন|অ্যাক্সন]] | [[W:ডেনড্রাইট|ডেনড্রাইট]] | [[W:মায়োলিন আবরণী|মায়োলিন আবরণী]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled neuron.jpg]]
২। [[W:সিন্যাপ্স|সিন্যাপ্স]] কী?
৩। [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া|প্রতিবর্তী ক্রিয়া]] কী?
৪। নিচের প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কের অংশগুলো এমনভাবে সাজাও যেন স্নায়ু সংকেত সংবেদক অঙ্গ থেকে পেশিতে যাওয়ার পথ বোঝায়:
:[[W:ইন্দ্রিয় অঙ্গ|ইন্দ্রিয় অঙ্গ]] | [[W:রিলে নিউরন|রিলে নিউরন]] | [[W:মোটর নিউরন|মোটর নিউরন]] | [[W:সেন্সরি নিউরন|সেন্সরি নিউরন]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
৫। নিচের কুকুরের মস্তিষ্কের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো:
:[[W:সেরিবেলাম|সেরিবেলাম]] | [[W:সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার|সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার]] | [[W:সেরিব্রাল কর্টেক্স|সেরিব্রাল কর্টেক্স]] | [[W:পিটুইটারি গ্রন্থি|পিটুইটারি গ্রন্থি]] | [[W:মেডুলা অবলংগাটা|মেডুলা অবলংগাটা]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled LS dog's brain.jpg]]
৬। মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড ঘেরা [[W:মেনিনজেস|মেনিনজেস]]-এর কাজ কী?
৭। [[W:সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র|সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র]]ের ৩টি প্রভাব উল্লেখ করো।
[[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]]
==ওয়েবসাইটসমূহ==
*http://en.wikipedia.org/wiki/Neuron [[W:নিউরন|উইকিপিডিয়া]]। এখানে অনেক ভালো তথ্য রয়েছে, তবে মনে রাখো—এখানে কিছু টার্ম ও ধারণা এই কোর্সের বাইরে।
*http://images.google.co.nz/imgres?imgurl=http://static.howstuffworks.com/gif/brain-neuron.gif&imgrefurl=http://science.howstuffworks.com/brain1.htm&h=296&w=394&sz=17&hl=en&start=5&tbnid=LWLRI9lW_5PZhM:&tbnh=93&tbnw=124&prev=/images%3Fq%3Dneuron%26svnum%3D10%26hl%3Den%26lr%3D%26sa%3DN [[W:নিউরন|হাউ স্টাফ ওয়ার্কস]]। এখানে নিউরন সম্পর্কে সহজ ব্যাখ্যা আছে। ‘নিউরনের প্রকারভেদ’, ‘মস্তিষ্কের অংশ’ এবং ‘ভারসাম্য রক্ষা’ চেষ্টা করো।
*http://web.archive.org/web/20060821134839/http://www.bbc.co.uk/schools/gcsebitesize/flash/bireflexarc.swf [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক|প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক]]। এটি একটি পরিষ্কার ও সহজ অ্যানিমেশন।
==শব্দকোষ==
*[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক]
{{BookCat}}
byyq1qlgcxj5rz2dfy1srjl8uzfbx42
84113
84112
2025-06-12T11:08:11Z
Asikur.rahman25
11164
84113
wikitext
text/x-wiki
[[File:Anatomy and Physiology of Animals - 14 Nervous.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/royalty-free-images/139764662/ Royalty-free image collection]. Used under a CC-BY licence.]]
==উদ্দেশ্য==
এই অংশটি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন:
* একটি প্রাণীর পরিবেশের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা কী
* স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস ও সংরক্ষণ করে এবং আন্দোলন শুরু করে
* একটি নিউরনের মৌলিক গঠন ও কার্যাবলি
* একটি সিন্যাপ্স এবং নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিকের গঠন ও কাজ কী
* প্রতিফলন নামে পরিচিত স্নায়বিক পথ কী এবং এর উদাহরণসমূহ
* প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কীভাবে প্রাণীদের শর্তযুক্ত প্রতিফলন তৈরি করা যায়
* স্নায়ুতন্ত্রকে কেন্দ্রীয় ও পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে ভাগ করা যায়
* মস্তিষ্ক মেনিনজেস নামক ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত
* মস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলো এবং সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার, হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি, সেরিবেলাম ও মেডুলা অবলংগাটার কাজ কী
* মেরুদণ্ডের গঠন ও কার্যাবলি
* পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে করোটিক ও মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু এবং স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত
* স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রে সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক অংশ রয়েছে এবং এগুলোর কার্যাবলি ভিন্ন
==সমন্বয়==
প্রাণীদের টিকে থাকতে হলে তারা যে পরিবেশে বাস করে তা অনুভব করতে ও সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে সক্ষম হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাদের আশেপাশের তাপমাত্রা বুঝতে পারতে হয়, যেন তারা প্রচণ্ড রোদ থেকে বাঁচতে পারে। তাদের খাদ্য চিহ্নিত করা এবং শিকারির হাত থেকে পালাতে পারার মতো ক্ষমতাও থাকতে হয়।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমগুলোকেও এমনভাবে সংযুক্ত থাকতে হয় যেন তারা একসাথে কাজ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি শিকারি প্রাণী যখন তার শিকারের অবস্থান নির্ধারণ করে, তখন সেটিকে ধরতে হলে
মাংসপেশির সংকোচন সমন্বয় করে দৌড়াতে হয়। সেই সময় মাংসপেশিতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দিতে
রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বাড়ে যেন বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়
এবং যে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় তা সরিয়ে ফেলা যায়। শিকার ধরার পর
যখন তা খাওয়া হয়, তখন হজমতন্ত্র সক্রিয় হয়ে তা হজম করে।
পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি প্রাণীর সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং এই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জটিল সংযুক্তিকরণকে '''সমন্বয়''' বলা হয়।
প্রাণীদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য দুটি সিস্টেম কাজ করে: '''স্নায়ুতন্ত্র''' এবং '''অন্তঃস্রাবী তন্ত্র'''।
প্রথমটি কাজ করে স্নায়ুর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত চালিয়ে এবং দ্বিতীয়টি গ্রন্থি থেকে রক্তে
বিশেষ রাসায়নিক বা হরমোন নিঃসরণ করে কাজ করে।
==স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি==
স্নায়ুতন্ত্রের তিনটি প্রধান কাজ রয়েছে:
:১. '''ইন্দ্রিয়গত কার্যাবলি''' দেহের ভেতরে ও বাইরে পরিবর্তন (যেমন: উদ্দীপনা) অনুভব করা।
যেমন, চোখ আলো পরিবর্তন অনুভব করে এবং কান শব্দতরঙ্গ গ্রহণ করে।
পেটের স্ট্রেচ রিসেপ্টর বলে দেয় কখন পেট ভরে গেছে এবং রক্তনালীর রাসায়নিক রিসেপ্টর
রক্তের অম্লতা পর্যবেক্ষণ করে।
:২. '''সমন্বয় কার্যাবলি''' ইন্দ্রিয় অঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ।
এই অঙ্গগুলো থেকে আগত সংকেত বিশ্লেষণ করা হয় এবং স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত হয়।
বিভিন্ন উৎস থেকে আসা সংকেতগুলো শ্রেণিবিন্যাস, সামঞ্জস্য ও সমন্বয় করা হয়
এবং উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া শুরু করা হয়।
এই বিশ্লেষণ, স্মরণ ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করার ক্ষমতাই উচ্চতর প্রাণীদের উন্নত করে তোলে।
:৩. '''প্রেরণ কার্যাবলি''' উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশি সংকোচন বা গ্রন্থি থেকে রস নিঃসরণ ঘটানো।
সব স্নায়ুতন্তু '''নিউরন''' নামক স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত। এরা দ্রুতগতির সংকেত পরিবহন করে,
যা '''স্নায়ু সংকেত''' নামে পরিচিত। এই সংকেতকে বৈদ্যুতিক প্রবাহের মতো ভাবা যায়।
==নিউরন==
নিউরন এমন কোষ, যেগুলো স্নায়ু সংকেত পরিবহন করার জন্য অভিযোজিত। একটি সাধারণ নিউরনে
একটি '''কোষদেহ''' থাকে যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। এছাড়া এক বা একাধিক শাখিত ফাইবার
থাকে যেগুলোকে '''ডেনড্রাইট''' বলা হয়। এগুলো কোষদেহের দিকে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে, যাকে '''অ্যাকসন''' বলা হয়। এটি কোষদেহ থেকে দূরে সংকেত নিয়ে যায়।
অনেক অ্যাকসনের চারপাশে '''মাইলিন''' নামক চর্বিজাত পদার্থের আবরণ থাকে।
এটি স্নায়ু সংকেতের গতি বাড়িয়ে দেয় (ডায়াগ্রাম ১৪.১ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Motor neuron.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১ – একটি মোটর নিউরন
নিউরনের কোষদেহ সাধারণত মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে,
অ্যাকসনটি সেই অঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে যেটিকে এটি সংকেত দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘোড়ার মেরুদণ্ড থেকে পিছনের পা বা লেজে সংকেত নিয়ে যাওয়া নিউরন
অনেক ফুট দীর্ঘ হতে পারে। একটি '''স্নায়ু''' অনেকগুলো অ্যাকসনের গুচ্ছ।
একটি '''ইন্দ্রিয় নিউরন''' হলো এমন এক স্নায়ুকোষ যা চোখ বা কানের মতো
ইন্দ্রিয় গ্রাহক থেকে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি '''মোটর নিউরন''' হলো এমন কোষ যা মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ড থেকে পেশি বা গ্রন্থিতে সংকেত পাঠায়।
একটি '''রিলে নিউরন''' ইন্দ্রিয় ও মোটর নিউরনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে
এবং এটি মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১ ও ১৪.২ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Relation btw sensory, relay & motor neurons.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.২ – ইন্দ্রিয়, রিলে ও মোটর নিউরনের সম্পর্ক
===নিউরনের সংযোগ===
পার্শ্ববর্তী নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগকে বলা হয় '''সিন্যাপ্স'''। এখানে দুটি স্নায়ুকোষ আসলে একে অপরকে স্পর্শ করে না, বরং তাদের মাঝখানে একটি অতি সূক্ষ্ম ফাঁকা জায়গা থাকে। সিন্যাপ্সের আগের নিউরনে বৈদ্যুতিক সংকেত পৌঁছালে এটি '''নিউরোট্রান্সমিটার''' নামে কিছু রাসায়নিক উৎপন্ন করে (যেমন '''অ্যাসিটাইলকোলিন'''), যেগুলো এই ফাঁকা জায়গায় নিঃসৃত হয়।
নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিক পদার্থগুলো ওই ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে পাশের স্নায়ুকোষের ঝিল্লির সাথে সংস্পর্শে এলে নতুন একটি স্নায়ু সংকেত সৃষ্টি হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৩ দেখুন)। সংকেতটি চলে যাওয়ার পর ওই রাসায়নিকটি ভেঙে যায় এবং সিন্যাপ্স আবার পরবর্তী সংকেত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Magnification of a synapse.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৩ - একটি স্নায়ু এবং সিন্যাপ্সের বর্ধিত চিত্র
==প্রতিবর্তী ক্রিয়া==
'''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো কোন উত্তেজক বা উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় সাড়া। আপনি যদি ভুল করে গরম কিছু স্পর্শ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নেন, সেটিই প্রতিবর্তী ক্রিয়া ক্রিয়া। এটি ঘটে আপনাকে ভাবতে না হয়েই। যেমন, চোখের সামনে হঠাৎ কিছু আসলে পশুরা চোখ বন্ধ করে ফেলে, বা বিড়াল পড়ে যেতে যেতে শরীর ঘুরিয়ে পায়ের উপর পড়ে। (দয়া করে এটা বিড়ালের উপর পরীক্ষা করবেন না!)
গিলতে থাকা, হাঁচি দেওয়া এবং উজ্জ্বল আলোতে চোখের মণি ছোট হয়ে যাওয়া সবই প্রতিবর্তী ক্রিয়া। আরও কিছু উদাহরণ হলো ঠান্ডায় কাঁপা এবং হঠাৎ উচ্চ শব্দে মুখ খুলে যাওয়া।
প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যে পথ অনুসরণ করে, তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলে। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে তিনটি নিউরন থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.৪ দেখুন)। '''উদ্দীপক''' (যেমন পায়ে সুচ ফোটানো) ত্বকের ব্যথা গ্রহণকারী রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে, যা একটি সংবেদী নিউরনে সংকেত পাঠায়। এটি মেরুদণ্ডে পৌঁছে, সেখানে অবস্থিত একটি '''রিলে নিউরন''' এর সাথে একটি সিন্যাপ্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়। রিলে নিউরন আবার এক বা একাধিক মোটর নিউরনের সাথে সংযুক্ত হয়ে সংকেতটি পেশিতে পৌঁছে দেয়। ফলে পেশি সংকুচিত হয়ে পা সরিয়ে নেয়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্ক সরাসরি অংশগ্রহণ করে না, তবে আপনি সচেতন থাকেন এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বন্ধ করতে পারেন। পশুরা জন্ম থেকেই এই প্রতিবর্তী ক্রিয়া নিয়ে জন্মায় এগুলো যেন প্রাকৃতিকভাবে ইনস্টল করা থাকে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals A reflex arc.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৪ - একটি প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক
===শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া===
বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়াে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক থাকে। যেমন, মুখে খাবার আসলে লালাগ্রন্থি লালা নিঃসরণ করে। তবে, পশুদের (এবং মানুষকেও) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় যেন তারা ভিন্ন এবং প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক উদ্দীপকে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটিকে বলা হয় '''শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া'''।
একজন রাশিয়ান জীববিজ্ঞানী পাভলভ এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত পরীক্ষা করেন, যেখানে তিনি কুকুরদের ঘণ্টার শব্দ শুনে লালা ঝরানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেন। প্রায় প্রতিটি পোষা প্রাণীর মালিকই এমন কিছু প্রতিবর্তী ক্রিয়া শনাক্ত করতে পারেন যেগুলো তারা নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন। যেমন, আপনি হয়তো আপনার বিড়ালকে ফ্রিজ খোলার শব্দ শুনেই খাবারের আশায় ছুটে আসতে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন, বা কুকুরকে হাঁটতে যাওয়ার আগে কিছু নির্দিষ্ট কাজের সাথে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন।
==স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ==
মেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্র ব্যাখ্যা করার সময় আমরা সাধারণত এটি দুটি অংশে ভাগ করি (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
:১. '''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত।
:২. '''পরিকেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে সংযুক্ত স্নায়ুগুলি নিয়ে গঠিত (মস্তিষ্কীয় এবং মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু) এবং এর অংশ হিসেবে '''স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র''' থাকে।
[[Image:Horse nervous system labelled.JPG]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৫ ঘোড়ার স্নায়ুতন্ত্র
===কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র===
'''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত। এটি একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মতো কাজ করে, যেখানে অসংখ্য সংযোগ স্থাপন হয়।
মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের দিকে তাকালে কিছু অংশ সাদা ('''সাদা পদার্থ''') এবং কিছু অংশ ধূসর ('''ধূসর পদার্থ''') দেখায়। সাদা পদার্থ মূলত স্নায়ু এক্সন দ্বারা গঠিত, আর ধূসর পদার্থ গঠিত হয় স্নায়ুকোষের কোষদেহ দ্বারা। মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থ বাইরের দিকে এবং মেরুদণ্ডজালে এটি ভেতরের দিকে থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.২ দেখুন)।
====মস্তিষ্ক====
মস্তিষ্কের প্রধান অংশটি মাথার খুলি বা '''ক্রেনিয়ামের''' ভেতরে সুরক্ষিত থাকে। এর চারপাশে থাকে '''মেনিনজেস''' নামের প্রতিরক্ষামূলক পর্দা (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন), এবং একধরনের পরিষ্কার তরল পদার্থ যাকে '''সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড''' বলা হয়। এই তরল পদার্থ মস্তিষ্ককে সুরক্ষা ও পুষ্টি দেয় এবং মস্তিষ্কের চারটি গহ্বর বা '''ভেন্ট্রিকল''' পূর্ণ করে রাখে।
মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় একটি টিস্যু। এমনকি যখন পশু বিশ্রামে থাকে, তখনও এটি শরীরে নেওয়া মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০% ব্যবহার করে। '''ক্যারোটিড ধমনী''' যা পৃষ্ঠীয় মহাধমনী থেকে শাখা বের করে আসে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। মাত্র ৪–৮ মিনিট অক্সিজেন না পেলে মস্তিষ্কের কোষ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মস্তিষ্ককে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়:
:১. '''অগ্রমস্তিষ্ক''', যেখানে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''', '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''।
:২. '''পশ্চাৎমস্তিষ্ক''' বা '''ব্রেন স্টেম''', যেখানে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা''' এবং '''পন্স'''।
:৩. '''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Longitudinal section through brain of a dog.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৬ কুকুরের মস্তিষ্কের লম্বালম্বি কাটা অংশ
=====মস্তিষ্কের মানচিত্র=====
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশের কাজ নির্ধারণ করে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৭ দেখুন)।
ডায়াগ্রাম ১৪.৭ মানব সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
=====অগ্রমস্তিষ্ক=====
'''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' হলো মস্তিষ্কের উপরের দিকে থাকা টিস্যুর ভর। এর পৃষ্ঠদেশে '''সাল্কাস''' (বাঁকানো খাঁজ ও উঁচু) থাকে, যা এটিকে আখরোটের মতো দেখায়। দুটি হেমিস্ফিয়ার গভীর খাঁজ দিয়ে বিভক্ত, তবে ভেতরে পুরু স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে যুক্ত থাকে। প্রতিটি হেমিস্ফিয়ারের বাইরের স্তরকে বলে '''সেরিব্রাল কর্টেক্স''' এবং এখানেই মূল কার্যাবলি ঘটে।
স্তন্যপায়ী প্রাণীর সেরিব্রাল কর্টেক্স অন্যান্য মেরুদণ্ডীর তুলনায় বড় ও বেশি জটিল, আর মানুষের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড়, কারণ এখানে স্মৃতি, শেখা, যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার উচ্চতর কেন্দ্রগুলি অবস্থিত।
চোখ, কান, নাক ও ত্বক থেকে আসা সংবেদনশীল সংকেত এখানে এসে ব্যাখ্যা করা হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত চলাফেরা এখান থেকেই শুরু হয়।
কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট সংবেদনশীল ও মোটর কাজের জন্য দায়ী, যেমন: দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ, বা পা ও লেজ নাড়ানো। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি কুকুর গন্ধ শোঁকে, তখন নাকের গন্ধগ্রাহী অঙ্গ থেকে সংকেত '''অলফ্যাকটরি স্নায়ু'''র মাধ্যমে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের অলফ্যাকটরি কেন্দ্রে পৌঁছায় এবং সেখানে সংকেত ব্যাখ্যা ও সমন্বয় হয়।
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের অংশগুলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৮ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Functions of the regions of the cerebral cortex.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৮ - সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
'''হাইপোথ্যালামাস''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি একটি "ডাঁটা" দ্বারা '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''র সাথে যুক্ত, যেটিকে "মাস্টার" হরমোন উৎপাদক গ্রন্থি বলা হয় (অধ্যায় ১৬ দেখুন)। হাইপোথ্যালামাস হলো স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন উৎপাদনকারী অন্তঃস্রাবী তন্ত্রের মধ্যে সংযোগকারী সেতু।
এটি কিছু হরমোন তৈরি করে যেগুলো পিটুইটারিতে নিঃসরণ হয় এবং অন্যদের নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি পশুর শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে '''হোমিওস্টেসিস''' বজায় রাখে। যেমন, খাদ্য হজম, দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ এবং রক্তের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম এবং যৌন প্রবৃত্তিও এটি নিয়ন্ত্রণ করে।
=====পশ্চাৎমস্তিষ্ক=====
'''মেডুলা অবলংগাটা''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি মেরুদণ্ডের সম্প্রসারণ। এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদানের পথ। এখানে এমন কিছু কেন্দ্র রয়েছে যা শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, হৃদস্পন্দনের হার ও অন্ত্রের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি গিলতে থাকা, বমি, কাশি ও হাঁচির সমন্বয় করে।
=====সেরিবেলাম=====
'''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" দেখতে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের ছোট সংস্করণের মতো, এবং এটি মস্তিষ্কের পেছনে সংযুক্ত থাকে। এটি অন্তঃকর্ণের ভারসাম্য অঙ্গ এবং পেশি ও টেনডনের রিসেপ্টর থেকে সংকেত পায়। এগুলোর সমন্বয় করে হাঁটা-দৌড়ানোর সময় পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পশুর ভঙ্গিমা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেরিবেলামের সমস্যা হলে শরীরে কাঁপুনি ও অস্বাভাবিক চলাফেরা দেখা যায়।
====মেরুদণ্ডজাল====
মেরুদণ্ডজাল হলো স্নায়ুতন্তুর এক ধরনের তার, যা পশ্চাৎমস্তিষ্ক থেকে শুরু করে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী চ্যানেল দিয়ে যায়। এটি ধীরে ধীরে সরু হয়, কারণ বিভিন্ন অংশ থেকে জোড়া '''স্পাইনাল নার্ভ''' বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যায়। এর চারপাশে প্রতিরক্ষামূলক '''মেনিনজেস''' থাকে এবং এর মধ্যে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল প্রবাহিত হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals The spinal cord.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৯ মেরুদণ্ডজাল
আপনি যদি মেরুদণ্ডজালকে কেটে দেখেন, তবে দেখবেন বাইরের দিকে সাদা পদার্থ এবং ভেতরে একটি এইচ-আকৃতির বা প্রজাপতির মতো ধূসর পদার্থ রয়েছে।
===পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র===
'''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' বলতে সেই সব স্নায়ুকে বোঝায় যেগুলো মস্তিষ্কের ('''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''') এবং মেরুদণ্ডের ('''স্পাইনাল নার্ভ''') সাথে যুক্ত। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র'''-ও পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ।
====ক্র্যানিয়াল নার্ভ====
মস্তিষ্ক থেকে ১২ জোড়া ক্র্যানিয়াল নার্ভ বের হয়। প্রতিটি নার্ভ খুলির (মস্তিষ্কের খোলস) একটি গর্ত দিয়ে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভগুলো হলো অলফ্যাক্টরি, অপটিক, অ্যাকউস্টিক এবং ভ্যাগাস নার্ভ।
'''অলফ্যাক্টরি নার্ভ''' (ঘ্রাণের জন্য) নাকের ঘ্রাণ সংবেদক অঙ্গ থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''অপটিক নার্ভ''' (দৃষ্টির জন্য) চোখের রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে সংকেত বহন করে।
'''অডিটরি (অ্যাকউস্টিক) নার্ভ''' (শ্রবণের জন্য) কান-এর ভেতরের কক্লিয়া থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''ভ্যাগাস নার্ভ''' গিলতে সাহায্য করে এমন পেশিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হৃদপিণ্ড, শ্বাসনালী, ফুসফুস, পেট এবং অন্ত্রের পেশিগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
====স্পাইনাল নার্ভ====
'''স্পাইনাল নার্ভ''' মেরুদণ্ডকে শরীরের সংবেদক অঙ্গ, পেশি এবং গ্রন্থির সাথে যুক্ত করে। প্রতিটি জোড়া স্পাইনাল নার্ভ মেরুদণ্ড থেকে বের হয়ে একেকটি কশেরুকার মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে বাইরে আসে (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
'''সায়াটিক নার্ভ''' হলো শরীরের সবচেয়ে বড় স্পাইনাল নার্ভ (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)। এটি একাধিক নার্ভের মিলিত অংশ যা একত্রে একটি চ্যাপ্টা নার্ভ টিস্যুর ফিতা তৈরি করে। এটি উরুর মধ্য দিয়ে পেছনের পায়ের দিকে যায় এবং এই অঙ্গের বিভিন্ন পেশিতে শাখা দেয়।
====স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র====
'''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে যেগুলো আমরা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো শিকার প্রাণীকে কোনো শিকারি তাড়া করে, তখন স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্বাস ও হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে দেয়। এটি পেশিতে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোকে চওড়া করে, যকৃত থেকে গ্লুকোজ ছাড়ায় এবং হঠাৎ করে কাজ করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।
যখন প্রাণীটি পালিয়ে যায় এবং নিরাপদ হয়, তখন এই স্নায়ুতন্ত্র আগের বাড়তি কাজগুলো ধীর করে এবং স্বাভাবিক কাজ যেমন হজম প্রক্রিয়া আবার শুরু করে।
স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুগুলো মেরুদণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়ে কশেরুকার মাঝ দিয়ে বেরিয়ে বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১০ দেখুন)। এটি দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত — '''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' এবং '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম'''।
'''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' "লড়াই, ভয়, পালানো" প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে, যাতে প্রাণী শত্রুর মুখোমুখি হতে বা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে। এটি হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ায়, এবং কঙ্কাল পেশিতে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ যেমন অন্ত্র ও চর্মে রক্তপ্রবাহ কমায়। এটি চোখের পিউপিলও বড় করে। সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের প্রভাব অ্যাড্রিনালিন হরমোনের প্রভাবের মতো (চ্যাপ্টার ১৬ দেখুন)।
'''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের বিপরীত কাজ করে। এটি শরীরের স্বাভাবিক বিশ্রামের অবস্থায় কাজ পরিচালনা করে। একে মাঝে মাঝে “হাউসকিপিং ফাংশন” বলা হয়। এটি হজমকে সহায়তা করে, মলত্যাগ ও প্রস্রাবকে উদ্দীপিত করে এবং নিয়মিত হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Function of the sympathetic & parasympathetic nervous systems.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১০ - সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি
==সারসংক্ষেপ==
* '''নিউরন''' হলো স্নায়ুতন্ত্রের মূল একক। এটি একটি '''সেল বডি''' নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে, '''ডেনড্রাইট''' নামের শাখা থাকে এবং একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে যাকে '''অ্যাক্সন''' বলা হয়, যা সাধারণত '''মাইলিন শিথ''' দ্বারা আবৃত থাকে।
* একটি '''নার্ভ''' হলো অনেক অ্যাক্সনের গুচ্ছ।
* মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের '''গ্রে ম্যাটার''' মূলত স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত, আর '''হোয়াইট ম্যাটার''' অনেক অ্যাক্সন নিয়ে গঠিত।
* '''নার্ভ ইমপালস''' অ্যাক্সনের মধ্য দিয়ে চলে।
* কাছাকাছি নিউরনগুলো একে অপরের সাথে '''সিন্যাপ্স''' নামক স্থানে যুক্ত থাকে।
* '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো উদ্দীপনার প্রতি স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া। প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যেভাবে চলে তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলা হয়। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে ৩টি নিউরন থাকে – একটি '''সেন্সরি নিউরন''', একটি '''রিলে নিউরন''' এবং একটি '''মোটর নিউরন'''। যেমন পায়ে সূঁচ লাগলে সেন্সরি নিউরনে সংকেত তৈরি হয়, যা একটি সিন্যাপ্স দিয়ে রিলে নিউরনে যায় (যা মেরুদণ্ডে থাকে), তারপর আরেকটি সিন্যাপ্স হয়ে মোটর নিউরনে যায়। মোটর নিউরন এই সংকেতটি পেশিতে পাঠায়, ফলে পা সরে যায়।
* স্নায়ুতন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত: '''সেন্ট্রাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড) এবং '''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে যুক্ত নার্ভসমূহ)। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
* মস্তিষ্ক তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: ১. '''ফোরব্রেইন''' যাতে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' (বা '''সেরিব্রাম'''), '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্ল্যান্ড'''। ২. '''হাইন্ডব্রেইন''' বা '''ব্রেইনস্টেম''' যাতে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা'''। ৩. '''সেরিবেলাম'''।
* '''মেনিনজেস''' নামে পরিচিত সুরক্ষামূলক পর্দা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে রাখে।
* ১২ জোড়া '''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''' রয়েছে যাদের মধ্যে অপটিক, অলফ্যাক্টরি, অ্যাকউস্টিক এবং '''ভ্যাগাস''' নার্ভ উল্লেখযোগ্য।
* '''স্পাইনাল কর্ড''' হলো স্নায়ু টিস্যুর একটি তার, যা মেনিনজেস দ্বারা আবৃত এবং মস্তিষ্ক থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যায়। '''স্পাইনাল নার্ভ''' প্রতিটি কশেরুকার মধ্য দিয়ে '''ভেন্ট্রাল''' ও '''ডরসাল রুট''' দিয়ে বের হয় এবং মেরুদণ্ডকে অঙ্গ ও পেশির সাথে সংযুক্ত করে।
* '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটি দুই ভাগে বিভক্ত: '''সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসনালীর প্রশস্তকরণ, চোখের পিউপিল বড় হওয়া এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ কমে যাওয়া। আর '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা হৃদস্পন্দন কমায়, চোখের পিউপিল সংকুচিত করে এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ বাড়ায়।
==কার্যপত্র==
[http://www.wikieducator.org/Nervous_System_Worksheet স্নায়ুতন্ত্র ওয়ার্কশীট]
==নিজেকে পরীক্ষা করো==
১। নিচের মোটর নিউরনের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো।
:[[W:কোষদেহ|কোষদেহ]] | [[W:নিউক্লিয়াস|নিউক্লিয়াস]] | [[W:অ্যাক্সন|অ্যাক্সন]] | [[W:ডেনড্রাইট|ডেনড্রাইট]] | [[W:মায়োলিন আবরণী|মায়োলিন আবরণী]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled neuron.jpg]]
২। [[W:সিন্যাপ্স|সিন্যাপ্স]] কী?
৩। [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া|প্রতিবর্তী ক্রিয়া]] কী?
৪। নিচের প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কের অংশগুলো এমনভাবে সাজাও যেন স্নায়ু সংকেত সংবেদক অঙ্গ থেকে পেশিতে যাওয়ার পথ বোঝায়:
:[[W:ইন্দ্রিয় অঙ্গ|ইন্দ্রিয় অঙ্গ]] | [[W:রিলে নিউরন|রিলে নিউরন]] | [[W:মোটর নিউরন|মোটর নিউরন]] | [[W:সেন্সরি নিউরন|সেন্সরি নিউরন]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
৫। নিচের কুকুরের মস্তিষ্কের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো:
:[[W:সেরিবেলাম|সেরিবেলাম]] | [[W:সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার|সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার]] | [[W:সেরিব্রাল কর্টেক্স|সেরিব্রাল কর্টেক্স]] | [[W:পিটুইটারি গ্রন্থি|পিটুইটারি গ্রন্থি]] | [[W:মেডুলা অবলংগাটা|মেডুলা অবলংগাটা]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled LS dog's brain.jpg]]
৬। মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড ঘেরা [[W:মেনিনজেস|মেনিনজেস]]-এর কাজ কী?
৭। [[W:সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র|সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র]]ের ৩টি প্রভাব উল্লেখ করো।
[[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]]
==ওয়েবসাইটসমূহ==
*http://en.wikipedia.org/wiki/Neuron [[W:নিউরন|উইকিপিডিয়া]]। এখানে অনেক ভালো তথ্য রয়েছে, তবে মনে রাখো—এখানে কিছু টার্ম ও ধারণা এই কোর্সের বাইরে।
*http://images.google.co.nz/imgres?imgurl=http://static.howstuffworks.com/gif/brain-neuron.gif&imgrefurl=http://science.howstuffworks.com/brain1.htm&h=296&w=394&sz=17&hl=en&start=5&tbnid=LWLRI9lW_5PZhM:&tbnh=93&tbnw=124&prev=/images%3Fq%3Dneuron%26svnum%3D10%26hl%3Den%26lr%3D%26sa%3DN [[W:নিউরন|হাউ স্টাফ ওয়ার্কস]]। এখানে নিউরন সম্পর্কে সহজ ব্যাখ্যা আছে। ‘নিউরনের প্রকারভেদ’, ‘মস্তিষ্কের অংশ’ এবং ‘ভারসাম্য রক্ষা’ চেষ্টা করো।
*http://web.archive.org/web/20060821134839/http://www.bbc.co.uk/schools/gcsebitesize/flash/bireflexarc.swf [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক|প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক]]। এটি একটি পরিষ্কার ও সহজ অ্যানিমেশন।
==শব্দকোষ==
*[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক]
{{BookCat}}
3wv3zgww1400tmg6v6irmufqhks5iy2
84114
84113
2025-06-12T11:12:00Z
Asikur.rahman25
11164
/* স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র */
84114
wikitext
text/x-wiki
[[File:Anatomy and Physiology of Animals - 14 Nervous.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/royalty-free-images/139764662/ Royalty-free image collection]. Used under a CC-BY licence.]]
==উদ্দেশ্য==
এই অংশটি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন:
* একটি প্রাণীর পরিবেশের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা কী
* স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস ও সংরক্ষণ করে এবং আন্দোলন শুরু করে
* একটি নিউরনের মৌলিক গঠন ও কার্যাবলি
* একটি সিন্যাপ্স এবং নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিকের গঠন ও কাজ কী
* প্রতিফলন নামে পরিচিত স্নায়বিক পথ কী এবং এর উদাহরণসমূহ
* প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কীভাবে প্রাণীদের শর্তযুক্ত প্রতিফলন তৈরি করা যায়
* স্নায়ুতন্ত্রকে কেন্দ্রীয় ও পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে ভাগ করা যায়
* মস্তিষ্ক মেনিনজেস নামক ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত
* মস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলো এবং সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার, হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি, সেরিবেলাম ও মেডুলা অবলংগাটার কাজ কী
* মেরুদণ্ডের গঠন ও কার্যাবলি
* পার্শ্বীয় স্নায়ুতন্ত্রে করোটিক ও মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু এবং স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত
* স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রে সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক অংশ রয়েছে এবং এগুলোর কার্যাবলি ভিন্ন
==সমন্বয়==
প্রাণীদের টিকে থাকতে হলে তারা যে পরিবেশে বাস করে তা অনুভব করতে ও সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে সক্ষম হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাদের আশেপাশের তাপমাত্রা বুঝতে পারতে হয়, যেন তারা প্রচণ্ড রোদ থেকে বাঁচতে পারে। তাদের খাদ্য চিহ্নিত করা এবং শিকারির হাত থেকে পালাতে পারার মতো ক্ষমতাও থাকতে হয়।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমগুলোকেও এমনভাবে সংযুক্ত থাকতে হয় যেন তারা একসাথে কাজ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি শিকারি প্রাণী যখন তার শিকারের অবস্থান নির্ধারণ করে, তখন সেটিকে ধরতে হলে
মাংসপেশির সংকোচন সমন্বয় করে দৌড়াতে হয়। সেই সময় মাংসপেশিতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দিতে
রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বাড়ে যেন বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়
এবং যে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় তা সরিয়ে ফেলা যায়। শিকার ধরার পর
যখন তা খাওয়া হয়, তখন হজমতন্ত্র সক্রিয় হয়ে তা হজম করে।
পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি প্রাণীর সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং এই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জটিল সংযুক্তিকরণকে '''সমন্বয়''' বলা হয়।
প্রাণীদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য দুটি সিস্টেম কাজ করে: '''স্নায়ুতন্ত্র''' এবং '''অন্তঃস্রাবী তন্ত্র'''।
প্রথমটি কাজ করে স্নায়ুর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত চালিয়ে এবং দ্বিতীয়টি গ্রন্থি থেকে রক্তে
বিশেষ রাসায়নিক বা হরমোন নিঃসরণ করে কাজ করে।
==স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি==
স্নায়ুতন্ত্রের তিনটি প্রধান কাজ রয়েছে:
:১. '''ইন্দ্রিয়গত কার্যাবলি''' দেহের ভেতরে ও বাইরে পরিবর্তন (যেমন: উদ্দীপনা) অনুভব করা।
যেমন, চোখ আলো পরিবর্তন অনুভব করে এবং কান শব্দতরঙ্গ গ্রহণ করে।
পেটের স্ট্রেচ রিসেপ্টর বলে দেয় কখন পেট ভরে গেছে এবং রক্তনালীর রাসায়নিক রিসেপ্টর
রক্তের অম্লতা পর্যবেক্ষণ করে।
:২. '''সমন্বয় কার্যাবলি''' ইন্দ্রিয় অঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ।
এই অঙ্গগুলো থেকে আগত সংকেত বিশ্লেষণ করা হয় এবং স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত হয়।
বিভিন্ন উৎস থেকে আসা সংকেতগুলো শ্রেণিবিন্যাস, সামঞ্জস্য ও সমন্বয় করা হয়
এবং উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া শুরু করা হয়।
এই বিশ্লেষণ, স্মরণ ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করার ক্ষমতাই উচ্চতর প্রাণীদের উন্নত করে তোলে।
:৩. '''প্রেরণ কার্যাবলি''' উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশি সংকোচন বা গ্রন্থি থেকে রস নিঃসরণ ঘটানো।
সব স্নায়ুতন্তু '''নিউরন''' নামক স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত। এরা দ্রুতগতির সংকেত পরিবহন করে,
যা '''স্নায়ু সংকেত''' নামে পরিচিত। এই সংকেতকে বৈদ্যুতিক প্রবাহের মতো ভাবা যায়।
==নিউরন==
নিউরন এমন কোষ, যেগুলো স্নায়ু সংকেত পরিবহন করার জন্য অভিযোজিত। একটি সাধারণ নিউরনে
একটি '''কোষদেহ''' থাকে যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। এছাড়া এক বা একাধিক শাখিত ফাইবার
থাকে যেগুলোকে '''ডেনড্রাইট''' বলা হয়। এগুলো কোষদেহের দিকে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে, যাকে '''অ্যাকসন''' বলা হয়। এটি কোষদেহ থেকে দূরে সংকেত নিয়ে যায়।
অনেক অ্যাকসনের চারপাশে '''মাইলিন''' নামক চর্বিজাত পদার্থের আবরণ থাকে।
এটি স্নায়ু সংকেতের গতি বাড়িয়ে দেয় (ডায়াগ্রাম ১৪.১ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Motor neuron.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১ – একটি মোটর নিউরন
নিউরনের কোষদেহ সাধারণত মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে,
অ্যাকসনটি সেই অঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে যেটিকে এটি সংকেত দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘোড়ার মেরুদণ্ড থেকে পিছনের পা বা লেজে সংকেত নিয়ে যাওয়া নিউরন
অনেক ফুট দীর্ঘ হতে পারে। একটি '''স্নায়ু''' অনেকগুলো অ্যাকসনের গুচ্ছ।
একটি '''ইন্দ্রিয় নিউরন''' হলো এমন এক স্নায়ুকোষ যা চোখ বা কানের মতো
ইন্দ্রিয় গ্রাহক থেকে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে সংকেত নিয়ে যায়।
একটি '''মোটর নিউরন''' হলো এমন কোষ যা মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ড থেকে পেশি বা গ্রন্থিতে সংকেত পাঠায়।
একটি '''রিলে নিউরন''' ইন্দ্রিয় ও মোটর নিউরনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে
এবং এটি মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে অবস্থান করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১ ও ১৪.২ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Relation btw sensory, relay & motor neurons.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.২ – ইন্দ্রিয়, রিলে ও মোটর নিউরনের সম্পর্ক
===নিউরনের সংযোগ===
পার্শ্ববর্তী নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগকে বলা হয় '''সিন্যাপ্স'''। এখানে দুটি স্নায়ুকোষ আসলে একে অপরকে স্পর্শ করে না, বরং তাদের মাঝখানে একটি অতি সূক্ষ্ম ফাঁকা জায়গা থাকে। সিন্যাপ্সের আগের নিউরনে বৈদ্যুতিক সংকেত পৌঁছালে এটি '''নিউরোট্রান্সমিটার''' নামে কিছু রাসায়নিক উৎপন্ন করে (যেমন '''অ্যাসিটাইলকোলিন'''), যেগুলো এই ফাঁকা জায়গায় নিঃসৃত হয়।
নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিক পদার্থগুলো ওই ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে পাশের স্নায়ুকোষের ঝিল্লির সাথে সংস্পর্শে এলে নতুন একটি স্নায়ু সংকেত সৃষ্টি হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৩ দেখুন)। সংকেতটি চলে যাওয়ার পর ওই রাসায়নিকটি ভেঙে যায় এবং সিন্যাপ্স আবার পরবর্তী সংকেত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Magnification of a synapse.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৩ - একটি স্নায়ু এবং সিন্যাপ্সের বর্ধিত চিত্র
==প্রতিবর্তী ক্রিয়া==
'''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো কোন উত্তেজক বা উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় সাড়া। আপনি যদি ভুল করে গরম কিছু স্পর্শ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নেন, সেটিই প্রতিবর্তী ক্রিয়া ক্রিয়া। এটি ঘটে আপনাকে ভাবতে না হয়েই। যেমন, চোখের সামনে হঠাৎ কিছু আসলে পশুরা চোখ বন্ধ করে ফেলে, বা বিড়াল পড়ে যেতে যেতে শরীর ঘুরিয়ে পায়ের উপর পড়ে। (দয়া করে এটা বিড়ালের উপর পরীক্ষা করবেন না!)
গিলতে থাকা, হাঁচি দেওয়া এবং উজ্জ্বল আলোতে চোখের মণি ছোট হয়ে যাওয়া সবই প্রতিবর্তী ক্রিয়া। আরও কিছু উদাহরণ হলো ঠান্ডায় কাঁপা এবং হঠাৎ উচ্চ শব্দে মুখ খুলে যাওয়া।
প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যে পথ অনুসরণ করে, তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলে। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে তিনটি নিউরন থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.৪ দেখুন)। '''উদ্দীপক''' (যেমন পায়ে সুচ ফোটানো) ত্বকের ব্যথা গ্রহণকারী রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে, যা একটি সংবেদী নিউরনে সংকেত পাঠায়। এটি মেরুদণ্ডে পৌঁছে, সেখানে অবস্থিত একটি '''রিলে নিউরন''' এর সাথে একটি সিন্যাপ্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়। রিলে নিউরন আবার এক বা একাধিক মোটর নিউরনের সাথে সংযুক্ত হয়ে সংকেতটি পেশিতে পৌঁছে দেয়। ফলে পেশি সংকুচিত হয়ে পা সরিয়ে নেয়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্ক সরাসরি অংশগ্রহণ করে না, তবে আপনি সচেতন থাকেন এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বন্ধ করতে পারেন। পশুরা জন্ম থেকেই এই প্রতিবর্তী ক্রিয়া নিয়ে জন্মায় এগুলো যেন প্রাকৃতিকভাবে ইনস্টল করা থাকে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals A reflex arc.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৪ - একটি প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক
===শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া===
বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়াে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক থাকে। যেমন, মুখে খাবার আসলে লালাগ্রন্থি লালা নিঃসরণ করে। তবে, পশুদের (এবং মানুষকেও) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় যেন তারা ভিন্ন এবং প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক উদ্দীপকে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটিকে বলা হয় '''শর্তাধীন প্রতিবর্তী ক্রিয়া'''।
একজন রাশিয়ান জীববিজ্ঞানী পাভলভ এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত পরীক্ষা করেন, যেখানে তিনি কুকুরদের ঘণ্টার শব্দ শুনে লালা ঝরানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেন। প্রায় প্রতিটি পোষা প্রাণীর মালিকই এমন কিছু প্রতিবর্তী ক্রিয়া শনাক্ত করতে পারেন যেগুলো তারা নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন। যেমন, আপনি হয়তো আপনার বিড়ালকে ফ্রিজ খোলার শব্দ শুনেই খাবারের আশায় ছুটে আসতে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন, বা কুকুরকে হাঁটতে যাওয়ার আগে কিছু নির্দিষ্ট কাজের সাথে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন।
==স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ==
মেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্র ব্যাখ্যা করার সময় আমরা সাধারণত এটি দুটি অংশে ভাগ করি (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
:১. '''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত।
:২. '''পরিকেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' যা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে সংযুক্ত স্নায়ুগুলি নিয়ে গঠিত (মস্তিষ্কীয় এবং মেরুদণ্ডীয় স্নায়ু) এবং এর অংশ হিসেবে '''স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র''' থাকে।
[[Image:Horse nervous system labelled.JPG]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৫ ঘোড়ার স্নায়ুতন্ত্র
===কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র===
'''কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র''' মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডজাল নিয়ে গঠিত। এটি একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মতো কাজ করে, যেখানে অসংখ্য সংযোগ স্থাপন হয়।
মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের দিকে তাকালে কিছু অংশ সাদা ('''সাদা পদার্থ''') এবং কিছু অংশ ধূসর ('''ধূসর পদার্থ''') দেখায়। সাদা পদার্থ মূলত স্নায়ু এক্সন দ্বারা গঠিত, আর ধূসর পদার্থ গঠিত হয় স্নায়ুকোষের কোষদেহ দ্বারা। মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থ বাইরের দিকে এবং মেরুদণ্ডজালে এটি ভেতরের দিকে থাকে (ডায়াগ্রাম ১৪.২ দেখুন)।
====মস্তিষ্ক====
মস্তিষ্কের প্রধান অংশটি মাথার খুলি বা '''ক্রেনিয়ামের''' ভেতরে সুরক্ষিত থাকে। এর চারপাশে থাকে '''মেনিনজেস''' নামের প্রতিরক্ষামূলক পর্দা (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন), এবং একধরনের পরিষ্কার তরল পদার্থ যাকে '''সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড''' বলা হয়। এই তরল পদার্থ মস্তিষ্ককে সুরক্ষা ও পুষ্টি দেয় এবং মস্তিষ্কের চারটি গহ্বর বা '''ভেন্ট্রিকল''' পূর্ণ করে রাখে।
মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় একটি টিস্যু। এমনকি যখন পশু বিশ্রামে থাকে, তখনও এটি শরীরে নেওয়া মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০% ব্যবহার করে। '''ক্যারোটিড ধমনী''' যা পৃষ্ঠীয় মহাধমনী থেকে শাখা বের করে আসে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। মাত্র ৪–৮ মিনিট অক্সিজেন না পেলে মস্তিষ্কের কোষ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মস্তিষ্ককে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়:
:১. '''অগ্রমস্তিষ্ক''', যেখানে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''', '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''।
:২. '''পশ্চাৎমস্তিষ্ক''' বা '''ব্রেন স্টেম''', যেখানে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা''' এবং '''পন্স'''।
:৩. '''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" (ডায়াগ্রাম ১৪.৬ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Longitudinal section through brain of a dog.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৬ কুকুরের মস্তিষ্কের লম্বালম্বি কাটা অংশ
=====মস্তিষ্কের মানচিত্র=====
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশের কাজ নির্ধারণ করে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৭ দেখুন)।
ডায়াগ্রাম ১৪.৭ মানব সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
=====অগ্রমস্তিষ্ক=====
'''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' হলো মস্তিষ্কের উপরের দিকে থাকা টিস্যুর ভর। এর পৃষ্ঠদেশে '''সাল্কাস''' (বাঁকানো খাঁজ ও উঁচু) থাকে, যা এটিকে আখরোটের মতো দেখায়। দুটি হেমিস্ফিয়ার গভীর খাঁজ দিয়ে বিভক্ত, তবে ভেতরে পুরু স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে যুক্ত থাকে। প্রতিটি হেমিস্ফিয়ারের বাইরের স্তরকে বলে '''সেরিব্রাল কর্টেক্স''' এবং এখানেই মূল কার্যাবলি ঘটে।
স্তন্যপায়ী প্রাণীর সেরিব্রাল কর্টেক্স অন্যান্য মেরুদণ্ডীর তুলনায় বড় ও বেশি জটিল, আর মানুষের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড়, কারণ এখানে স্মৃতি, শেখা, যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার উচ্চতর কেন্দ্রগুলি অবস্থিত।
চোখ, কান, নাক ও ত্বক থেকে আসা সংবেদনশীল সংকেত এখানে এসে ব্যাখ্যা করা হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত চলাফেরা এখান থেকেই শুরু হয়।
কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট সংবেদনশীল ও মোটর কাজের জন্য দায়ী, যেমন: দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ, বা পা ও লেজ নাড়ানো। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি কুকুর গন্ধ শোঁকে, তখন নাকের গন্ধগ্রাহী অঙ্গ থেকে সংকেত '''অলফ্যাকটরি স্নায়ু'''র মাধ্যমে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের অলফ্যাকটরি কেন্দ্রে পৌঁছায় এবং সেখানে সংকেত ব্যাখ্যা ও সমন্বয় হয়।
মানুষ এবং কিছু প্রাণীতে সেরিব্রাল কর্টেক্সের অংশগুলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৪.৮ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Functions of the regions of the cerebral cortex.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৮ - সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলভিত্তিক কার্যাবলি
'''হাইপোথ্যালামাস''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি একটি "ডাঁটা" দ্বারা '''পিটুইটারি গ্রন্থি'''র সাথে যুক্ত, যেটিকে "মাস্টার" হরমোন উৎপাদক গ্রন্থি বলা হয় (অধ্যায় ১৬ দেখুন)। হাইপোথ্যালামাস হলো স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন উৎপাদনকারী অন্তঃস্রাবী তন্ত্রের মধ্যে সংযোগকারী সেতু।
এটি কিছু হরমোন তৈরি করে যেগুলো পিটুইটারিতে নিঃসরণ হয় এবং অন্যদের নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি পশুর শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে '''হোমিওস্টেসিস''' বজায় রাখে। যেমন, খাদ্য হজম, দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ এবং রক্তের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম এবং যৌন প্রবৃত্তিও এটি নিয়ন্ত্রণ করে।
=====পশ্চাৎমস্তিষ্ক=====
'''মেডুলা অবলংগাটা''' মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত এবং এটি মেরুদণ্ডের সম্প্রসারণ। এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদানের পথ। এখানে এমন কিছু কেন্দ্র রয়েছে যা শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, হৃদস্পন্দনের হার ও অন্ত্রের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি গিলতে থাকা, বমি, কাশি ও হাঁচির সমন্বয় করে।
=====সেরিবেলাম=====
'''সেরিবেলাম''' বা "ছোট মস্তিষ্ক" দেখতে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের ছোট সংস্করণের মতো, এবং এটি মস্তিষ্কের পেছনে সংযুক্ত থাকে। এটি অন্তঃকর্ণের ভারসাম্য অঙ্গ এবং পেশি ও টেনডনের রিসেপ্টর থেকে সংকেত পায়। এগুলোর সমন্বয় করে হাঁটা-দৌড়ানোর সময় পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পশুর ভঙ্গিমা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেরিবেলামের সমস্যা হলে শরীরে কাঁপুনি ও অস্বাভাবিক চলাফেরা দেখা যায়।
====মেরুদণ্ডজাল====
মেরুদণ্ডজাল হলো স্নায়ুতন্তুর এক ধরনের তার, যা পশ্চাৎমস্তিষ্ক থেকে শুরু করে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী চ্যানেল দিয়ে যায়। এটি ধীরে ধীরে সরু হয়, কারণ বিভিন্ন অংশ থেকে জোড়া '''স্পাইনাল নার্ভ''' বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যায়। এর চারপাশে প্রতিরক্ষামূলক '''মেনিনজেস''' থাকে এবং এর মধ্যে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল প্রবাহিত হয় (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals The spinal cord.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.৯ মেরুদণ্ডজাল
আপনি যদি মেরুদণ্ডজালকে কেটে দেখেন, তবে দেখবেন বাইরের দিকে সাদা পদার্থ এবং ভেতরে একটি এইচ-আকৃতির বা প্রজাপতির মতো ধূসর পদার্থ রয়েছে।
===পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র===
'''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' বলতে সেই সব স্নায়ুকে বোঝায় যেগুলো মস্তিষ্কের ('''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''') এবং মেরুদণ্ডের ('''স্পাইনাল নার্ভ''') সাথে যুক্ত। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র'''-ও পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ।
====ক্র্যানিয়াল নার্ভ====
মস্তিষ্ক থেকে ১২ জোড়া ক্র্যানিয়াল নার্ভ বের হয়। প্রতিটি নার্ভ খুলির (মস্তিষ্কের খোলস) একটি গর্ত দিয়ে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভগুলো হলো অলফ্যাক্টরি, অপটিক, অ্যাকউস্টিক এবং ভ্যাগাস নার্ভ।
'''অলফ্যাক্টরি নার্ভ''' (ঘ্রাণের জন্য) নাকের ঘ্রাণ সংবেদক অঙ্গ থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''অপটিক নার্ভ''' (দৃষ্টির জন্য) চোখের রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে সংকেত বহন করে।
'''অডিটরি (অ্যাকউস্টিক) নার্ভ''' (শ্রবণের জন্য) কান-এর ভেতরের কক্লিয়া থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
'''ভ্যাগাস নার্ভ''' গিলতে সাহায্য করে এমন পেশিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হৃদপিণ্ড, শ্বাসনালী, ফুসফুস, পেট এবং অন্ত্রের পেশিগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)।
====স্পাইনাল নার্ভ====
'''স্পাইনাল নার্ভ''' মেরুদণ্ডকে শরীরের সংবেদক অঙ্গ, পেশি এবং গ্রন্থির সাথে যুক্ত করে। প্রতিটি জোড়া স্পাইনাল নার্ভ মেরুদণ্ড থেকে বের হয়ে একেকটি কশেরুকার মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে বাইরে আসে (ডায়াগ্রাম ১৪.৯ দেখুন)।
'''সায়াটিক নার্ভ''' হলো শরীরের সবচেয়ে বড় স্পাইনাল নার্ভ (ডায়াগ্রাম ১৪.৫ দেখুন)। এটি একাধিক নার্ভের মিলিত অংশ যা একত্রে একটি চ্যাপ্টা নার্ভ টিস্যুর ফিতা তৈরি করে। এটি উরুর মধ্য দিয়ে পেছনের পায়ের দিকে যায় এবং এই অঙ্গের বিভিন্ন পেশিতে শাখা দেয়।
====স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র====
'''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে যেগুলো আমরা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো শিকার প্রাণীকে কোনো শিকারি তাড়া করে, তখন স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্বাস ও হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে দেয়। এটি পেশিতে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোকে চওড়া করে, যকৃত থেকে গ্লুকোজ ছাড়ায় এবং হঠাৎ করে কাজ করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে। যখন প্রাণীটি পালিয়ে যায় এবং নিরাপদ হয়, তখন এই স্নায়ুতন্ত্র আগের বাড়তি কাজগুলো ধীর করে এবং স্বাভাবিক কাজ যেমন হজম প্রক্রিয়া আবার শুরু করে।
স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুগুলো মেরুদণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়ে কশেরুকার মাঝ দিয়ে বেরিয়ে বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করে (ডায়াগ্রাম ১৪.১০ দেখুন)। এটি দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত '''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' এবং '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম'''।
'''সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' "লড়াই, ভয়, পালানো" প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে, যাতে প্রাণী শত্রুর মুখোমুখি হতে বা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে। এটি হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ায়, এবং কঙ্কাল পেশিতে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ যেমন অন্ত্র ও চর্মে রক্তপ্রবাহ কমায়। এটি চোখের পিউপিলও বড় করে। সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের প্রভাব অ্যাড্রিনালিন হরমোনের প্রভাবের মতো (চ্যাপ্টার ১৬ দেখুন)।
'''প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম''' সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের বিপরীত কাজ করে। এটি শরীরের স্বাভাবিক বিশ্রামের অবস্থায় কাজ পরিচালনা করে। একে মাঝে মাঝে “হাউসকিপিং ফাংশন” বলা হয়। এটি হজমকে সহায়তা করে, মলত্যাগ ও প্রস্রাবকে উদ্দীপিত করে এবং নিয়মিত হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Function of the sympathetic & parasympathetic nervous systems.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৪.১০ সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি
==সারসংক্ষেপ==
* '''নিউরন''' হলো স্নায়ুতন্ত্রের মূল একক। এটি একটি '''সেল বডি''' নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে, '''ডেনড্রাইট''' নামের শাখা থাকে এবং একটি দীর্ঘ ফাইবার থাকে যাকে '''অ্যাক্সন''' বলা হয়, যা সাধারণত '''মাইলিন শিথ''' দ্বারা আবৃত থাকে।
* একটি '''নার্ভ''' হলো অনেক অ্যাক্সনের গুচ্ছ।
* মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের '''গ্রে ম্যাটার''' মূলত স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত, আর '''হোয়াইট ম্যাটার''' অনেক অ্যাক্সন নিয়ে গঠিত।
* '''নার্ভ ইমপালস''' অ্যাক্সনের মধ্য দিয়ে চলে।
* কাছাকাছি নিউরনগুলো একে অপরের সাথে '''সিন্যাপ্স''' নামক স্থানে যুক্ত থাকে।
* '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া''' হলো উদ্দীপনার প্রতি স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া। প্রতিবর্তী ক্রিয়াে স্নায়ু সংকেত যেভাবে চলে তাকে '''প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক''' বলা হয়। বেশিরভাগ প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কে ৩টি নিউরন থাকে – একটি '''সেন্সরি নিউরন''', একটি '''রিলে নিউরন''' এবং একটি '''মোটর নিউরন'''। যেমন পায়ে সূঁচ লাগলে সেন্সরি নিউরনে সংকেত তৈরি হয়, যা একটি সিন্যাপ্স দিয়ে রিলে নিউরনে যায় (যা মেরুদণ্ডে থাকে), তারপর আরেকটি সিন্যাপ্স হয়ে মোটর নিউরনে যায়। মোটর নিউরন এই সংকেতটি পেশিতে পাঠায়, ফলে পা সরে যায়।
* স্নায়ুতন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত: '''সেন্ট্রাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড) এবং '''পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র''' (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সাথে যুক্ত নার্ভসমূহ)। '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
* মস্তিষ্ক তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: ১. '''ফোরব্রেইন''' যাতে থাকে '''সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার''' (বা '''সেরিব্রাম'''), '''হাইপোথ্যালামাস''' এবং '''পিটুইটারি গ্ল্যান্ড'''। ২. '''হাইন্ডব্রেইন''' বা '''ব্রেইনস্টেম''' যাতে থাকে '''মেডুলা অবলংগাটা'''। ৩. '''সেরিবেলাম'''।
* '''মেনিনজেস''' নামে পরিচিত সুরক্ষামূলক পর্দা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে রাখে।
* ১২ জোড়া '''ক্র্যানিয়াল নার্ভ''' রয়েছে যাদের মধ্যে অপটিক, অলফ্যাক্টরি, অ্যাকউস্টিক এবং '''ভ্যাগাস''' নার্ভ উল্লেখযোগ্য।
* '''স্পাইনাল কর্ড''' হলো স্নায়ু টিস্যুর একটি তার, যা মেনিনজেস দ্বারা আবৃত এবং মস্তিষ্ক থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যায়। '''স্পাইনাল নার্ভ''' প্রতিটি কশেরুকার মধ্য দিয়ে '''ভেন্ট্রাল''' ও '''ডরসাল রুট''' দিয়ে বের হয় এবং মেরুদণ্ডকে অঙ্গ ও পেশির সাথে সংযুক্ত করে।
* '''স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র''' শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটি দুই ভাগে বিভক্ত: '''সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসনালীর প্রশস্তকরণ, চোখের পিউপিল বড় হওয়া এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ কমে যাওয়া। আর '''প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র''', যা হৃদস্পন্দন কমায়, চোখের পিউপিল সংকুচিত করে এবং অন্ত্রের কার্যকলাপ বাড়ায়।
==কার্যপত্র==
[http://www.wikieducator.org/Nervous_System_Worksheet স্নায়ুতন্ত্র ওয়ার্কশীট]
==নিজেকে পরীক্ষা করো==
১। নিচের মোটর নিউরনের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো।
:[[W:কোষদেহ|কোষদেহ]] | [[W:নিউক্লিয়াস|নিউক্লিয়াস]] | [[W:অ্যাক্সন|অ্যাক্সন]] | [[W:ডেনড্রাইট|ডেনড্রাইট]] | [[W:মায়োলিন আবরণী|মায়োলিন আবরণী]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled neuron.jpg]]
২। [[W:সিন্যাপ্স|সিন্যাপ্স]] কী?
৩। [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া|প্রতিবর্তী ক্রিয়া]] কী?
৪। নিচের প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্কের অংশগুলো এমনভাবে সাজাও যেন স্নায়ু সংকেত সংবেদক অঙ্গ থেকে পেশিতে যাওয়ার পথ বোঝায়:
:[[W:ইন্দ্রিয় অঙ্গ|ইন্দ্রিয় অঙ্গ]] | [[W:রিলে নিউরন|রিলে নিউরন]] | [[W:মোটর নিউরন|মোটর নিউরন]] | [[W:সেন্সরি নিউরন|সেন্সরি নিউরন]] | [[W:পেশী তন্তু|পেশী তন্তু]]
৫। নিচের কুকুরের মস্তিষ্কের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো:
:[[W:সেরিবেলাম|সেরিবেলাম]] | [[W:সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার|সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার]] | [[W:সেরিব্রাল কর্টেক্স|সেরিব্রাল কর্টেক্স]] | [[W:পিটুইটারি গ্রন্থি|পিটুইটারি গ্রন্থি]] | [[W:মেডুলা অবলংগাটা|মেডুলা অবলংগাটা]]
[[Image:Anatomy and physiology unlabeled LS dog's brain.jpg]]
৬। মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড ঘেরা [[W:মেনিনজেস|মেনিনজেস]]-এর কাজ কী?
৭। [[W:সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র|সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র]]ের ৩টি প্রভাব উল্লেখ করো।
[[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]]
==ওয়েবসাইটসমূহ==
*http://en.wikipedia.org/wiki/Neuron [[W:নিউরন|উইকিপিডিয়া]]। এখানে অনেক ভালো তথ্য রয়েছে, তবে মনে রাখো—এখানে কিছু টার্ম ও ধারণা এই কোর্সের বাইরে।
*http://images.google.co.nz/imgres?imgurl=http://static.howstuffworks.com/gif/brain-neuron.gif&imgrefurl=http://science.howstuffworks.com/brain1.htm&h=296&w=394&sz=17&hl=en&start=5&tbnid=LWLRI9lW_5PZhM:&tbnh=93&tbnw=124&prev=/images%3Fq%3Dneuron%26svnum%3D10%26hl%3Den%26lr%3D%26sa%3DN [[W:নিউরন|হাউ স্টাফ ওয়ার্কস]]। এখানে নিউরন সম্পর্কে সহজ ব্যাখ্যা আছে। ‘নিউরনের প্রকারভেদ’, ‘মস্তিষ্কের অংশ’ এবং ‘ভারসাম্য রক্ষা’ চেষ্টা করো।
*http://web.archive.org/web/20060821134839/http://www.bbc.co.uk/schools/gcsebitesize/flash/bireflexarc.swf [[W:প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক|প্রতিবর্তী ক্রিয়া আর্ক]]। এটি একটি পরিষ্কার ও সহজ অ্যানিমেশন।
==শব্দকোষ==
*[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক]
{{BookCat}}
fkqjgo7rbf1s4rfz2oswogl9e46wdw3
প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/জ্ঞানেন্দ্রিয়সমূহ
0
23518
84103
74882
2025-06-12T07:37:51Z
Asikur.rahman25
11164
/* ভারসাম্য */
84103
wikitext
text/x-wiki
[[File:Anatomy and Physiology of Animals - 15 Senses.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/miss_pupik/5350317/ miss pupik] cc by]]
==লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য==
এই অংশটি সম্পন্ন করার পর আপনি জানতে পারবেন:
* যে সাধারণ স্পর্শ, চাপ, ব্যথা ইত্যাদি অনুভূতির সংবেদনশীলতা চামড়ার ডার্মিস স্তর এবং শরীরের অন্যান্য অংশে থাকে
* যে বিশেষ ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে ঘ্রাণ, স্বাদ, দৃষ্টি, শ্রবণ এবং ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত
* চোখের প্রধান গঠন ও তাদের কাজ
* আলো কীভাবে চোখের মাধ্যমে রেটিনায় পৌঁছায় তার পথ
* রেটিনায় রডস ও কনস-এর ভূমিকা
* দ্বৈত দৃষ্টির সুবিধাসমূহ
* কানের প্রধান গঠন ও তাদের কাজ
* শব্দ তরঙ্গ কীভাবে কানের মাধ্যমে কক্লিয়ায় পৌঁছায় তার পথ
* ভারসাম্য ও অঙ্গভঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ভেস্টিবুলার অঙ্গের (সেমিসারকুলার ক্যানাল ও ওটোলিথ অর্গান) ভূমিকা
==ইন্দ্রিয় অঙ্গসমূহ==
ইন্দ্রিয় অঙ্গ প্রাণীদের আশপাশের পরিবেশ এবং নিজেদের শরীরের পরিবর্তন টের পেতে সাহায্য করে, যাতে তারা উপযুক্তভাবে সাড়া দিতে পারে। এর ফলে প্রাণীরা বিরূপ পরিবেশ এড়াতে পারে, শিকারির উপস্থিতি টের পায় এবং খাবার খুঁজে পায়।
প্রাণীরা বহু ধরনের উদ্দীপনা টের পেতে পারে, যেমন স্পর্শ, চাপ, ব্যথা, তাপমাত্রা, রাসায়নিক পদার্থ, আলো, শব্দ, শরীরের নড়াচড়া ও অবস্থান। কিছু প্রাণী বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ক্ষেত্রও অনুভব করতে পারে। সব ইন্দ্রিয় অঙ্গ উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় স্নায়ু সংকেত তৈরি করে, যা সংবেদন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এরপর মস্তিষ্ক এই সংকেত ব্যথা, দৃষ্টি, শব্দ, স্বাদ ইত্যাদি হিসেবে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে।
ইন্দ্রিয়গুলো সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
:১. '''সাধারণ ইন্দ্রিয়''' – যেমন স্পর্শ, চাপ, ব্যথা ও তাপমাত্রা সংবেদন। এগুলো চামড়ার উপরিভাগ জুড়ে তুলনামূলকভাবে সমানভাবে ছড়ানো থাকে। কিছু আবার পেশি ও সন্ধিতে থাকে।
:২. '''বিশেষ ইন্দ্রিয়''' – যেমন ঘ্রাণ, স্বাদ, দৃষ্টি, শ্রবণ ও ভারসাম্য। এসব ইন্দ্রিয় অঙ্গ অনেক সময় গঠনে বেশ জটিল হয়ে থাকে।
==স্পর্শ ও চাপ==
চামড়ার ডার্মিস স্তরে এমন বহু পরিবর্তিত স্নায়ু প্রান্ত থাকে, যেগুলো স্পর্শ ও চাপের প্রতি সংবেদনশীল। লোমের শিকড়েও প্রচুর সংবেদন রিসেপ্টর থাকে, যা প্রাণীকে কোনো বস্তু স্পর্শ করছে কি না তা জানান দেয় (ডায়াগ্রাম ১৫.১ দেখুন)। গোঁফ হলো বিশেষভাবে পরিবর্তিত লোম।
==ব্যথা==
ব্যথা অনুভব করার রিসেপ্টর প্রায় সব ধরনের টিস্যুতে থাকে।
এগুলো প্রাণীকে জানায় যে কোনো টিস্যু খুব বেশি গরম, ঠান্ডা, চেপে গেছে বা টান পড়েছে, কিংবা সেখানে রক্তপ্রবাহ কমে গেছে। ফলে প্রাণী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিজেকে আরও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals General senses in skin.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.১ চামড়ায় সাধারণ ইন্দ্রিয়
==তাপমাত্রা==
চামড়ায় স্নায়ু প্রান্ত থাকে যা গরম ও ঠান্ডা উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেয় (ডায়াগ্রাম ১৫.১ দেখুন)।
==অঙ্গের অবস্থান সম্পর্কে সচেতনতা==
পেশি, টেনডন এবং সন্ধিতে এমন ইন্দ্রিয় অঙ্গ থাকে, যেগুলো মস্তিষ্কে নিরবিচারে সংকেত পাঠায় এবং জানায় প্রতিটি অঙ্গ কোথায় আছে। এর ফলে প্রাণী তার অঙ্গ সঠিকভাবে রাখতে পারে এবং না তাকিয়েও তাদের অবস্থান বুঝতে পারে।
==ঘ্রাণ==
প্রাণীরা খাবার খুঁজতে, এলাকা চিহ্নিত করতে, নিজের বাচ্চাকে চিনতে এবং সঙ্গীর উপস্থিতি ও যৌন অবস্থা নির্ধারণে ঘ্রাণ ব্যবহার করে। ঘ্রাণ অঙ্গ ('''olfactory organ''') নাকে থাকে এবং বাতাসে থাকা রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সাড়া দেয়।
এটি এমন কিছু পরিবর্তিত স্নায়ুকোষ নিয়ে গঠিত, যাদের পৃষ্ঠে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোম থাকে। এই রোমগুলো নাকের ছাদের এপিথেলিয়াম থেকে বের হয়ে পাশের মিউকাস স্তরে প্রবেশ করে। প্রাণী যখন শ্বাস নেয়, বাতাসে থাকা রাসায়নিক পদার্থ মিউকাসে মিশে যায়। কোনো বিশেষ অণুর প্রতি ঘ্রাণ কোষ সাড়া দিলে, তা দিয়ে একটি স্নায়ু সংকেত তৈরি হয়, যা '''অলফ্যাক্টরি ''' এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে যায় এবং ঘ্রাণ হিসেবে অনুভূত হয় (ডায়াগ্রাম ১৫.২ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Olfactory organ the sense of smell.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.২ ঘ্রাণ অঙ্গ – ঘ্রাণের অনুভূতি
মানুষের ঘ্রাণশক্তি বহু প্রাণীর তুলনায় দুর্বল। শিকারি মাংসাশীরা ঘ্রাণে খুব সংবেদনশীল। যেমন: একটি মেরু ভালুক ২০ কি.মি দূরে থাকা মৃত সীলের গন্ধ পেতে পারে এবং একটি রক্তহাউন্ড বিভিন্ন মানুষের গন্ধের পথ আলাদা করতে পারে, যদিও কখনো কখনো যমজ ভাইদের জটিল পথ তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
সাপ ও টিকটিকিরা '''জ্যাকবসনের অঙ্গ''' এর মাধ্যমে গন্ধ সনাক্ত করে। এটি মুখের ছাদের ওপরে থাকে এবং এতে গর্তের মতো কাঠামোর মধ্যে সংবেদনশীল কোষ থাকে। সাপ যখন তার কাঁটাযুক্ত জিভ বের করে, তখন সে বাতাসে থাকা গন্ধের অণু জিভে নিয়ে জ্যাকবসনের অঙ্গ এ পৌঁছে দেয়।
==স্বাদ==
স্বাদ ইন্দ্রিয় প্রাণীদের দ্রবীভূত রাসায়নিক পদার্থ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের মধ্যে স্বাদ কুড়ি ('''taste buds''') মূলত জিভের ওপরের অংশে থাকে।
এগুলো এমন কিছু গর্ত নিয়ে গঠিত যার ভেতরে সংবেদনশীল কোষ কমলা ফলের খণ্ডের মতো সাজানো থাকে (ডায়াগ্রাম ১৫.৩ দেখুন)। প্রতিটি রিসেপ্টর কোষে একটি ক্ষুদ্র রোম থাকে, যা লালায় বেরিয়ে রাসায়নিক পদার্থ শনাক্ত করে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Taste buds on the tongue.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.৩ জিভে স্বাদের কুঁড়ি
স্বাদ ইন্দ্রিয় তুলনামূলকভাবে সীমিত। মানুষ মাত্র চার ধরনের স্বাদ আলাদা করতে পারে (মিষ্টি, টক, তেতো ও লবণ)। আমরা সাধারণত যাকে স্বাদ মনে করি তা আসলে অনেকটাই ঘ্রাণের অনুভূতি। নাক বন্ধ থাকলে খাবার প্রায় নিরস লাগে এবং অনেক সময় বিড়াল খেতেই চায় না।
==দৃষ্টি==
চোখ হলো দৃষ্টির অঙ্গ। এগুলো গোলাকার '''চক্ষুগোলক''' নিয়ে গঠিত, যা খুলি বা করোটির গভীর গর্ত '''অর্বিটে''' অবস্থান করে। এগুলো ছয়টি পেশির মাধ্যমে অরবিটের দেওয়ালে আটকানো থাকে, যা চোখ ঘোরাতে সাহায্য করে। উপরের ও নিচের '''চোখের পাতাগুলো''' ঘুমের সময় চোখ ঢেকে রাখে, বাইরের বস্তু বা অতিরিক্ত আলো থেকে রক্ষা করে এবং চোখের ওপর অশ্রু ছড়িয়ে দেয়।
'''নিকটিটেটিং মেমব্রেন''' একটি স্বচ্ছ পাতলা স্তর, যা চোখের ভেতরের দিক থেকে পাশ বরাবর সরে যায় এবং আলো বন্ধ না করেই কর্নিয়া পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখে। এটি পাখি, কুমির, ব্যাঙ, মাছ ও পাউচযুক্ত প্রাণী যেমন ক্যাঙ্গারুতে দেখা যায়। স্তন্যপায়ীদের মধ্যে এটি বিরল, তবে ঘুমন্ত অবস্থায় বিড়াল বা কুকুরের চোখ আলতো করে খুললে এটি দেখা যেতে পারে। '''চোখের পাপড়িও''' সূর্য ও বাইরের বস্তু থেকে চোখ রক্ষা করে।
===চোখের গঠন===
চোখের পাতা ও চোখের সামনের অংশ আবৃত করে থাকে এক প্রকার পাতলা উপকলা যাকে '''কনজাংকটিভা''' বলা হয়। কনজাংকটিভার প্রদাহকে বলা হয় কনজাংকটিভাইটিস। চোখের উপরের পাতার নিচে খোলা '''অশ্রু গ্রন্থি''' এক ধরনের লবণাক্ত তরল নিঃসরণ করে, যা চোখের খোলা অংশটিকে আর্দ্র রাখে, ধুলা দূর করে এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী এক ধরণের এনজাইম ধারণ করে।
চোখের প্রাচীর তিনটি স্তরে গঠিত (ডায়াগ্রাম ১৫.৪ দেখুন)। বাইরের দিক থেকে এই স্তরগুলো হলো: '''সক্লেরা''', '''কোরয়েড''' এবং '''রেটিনা'''।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Structure of the eye.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.৪ - চোখের গঠন
'''সক্লেরা''' হলো একটি শক্ত আঁশযুক্ত স্তর যা চোখকে সুরক্ষা দেয় এবং এর গঠন দৃঢ় করে। চোখের সামনের দিকে এটি “'''সাদা অংশ'''” হিসেবে দৃশ্যমান, যা পরিবর্তিত হয়ে স্বচ্ছ '''কর্নিয়ায়''' পরিণত হয়। আলো চোখে প্রবেশ করতে হলে কর্নিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কর্নিয়া চোখে প্রবেশকারী আলোকরশ্মিকে ফোকাস করতে সাহায্য করে।
'''কোরয়েড''' হল সক্লেরার নিচে অবস্থিত স্তর। এটি রক্তনালির একটি জালিকা ধারণ করে যা চোখে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। এর অভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠটি অত্যন্ত রঞ্জিত, যা বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মিকে শোষণ করে। বিড়াল ও পসাম-এর মতো নিশাচর প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই রঞ্জিত স্তর আলো প্রতিফলিত করে আলো সংরক্ষণে সাহায্য করে। তাই এদের চোখ গাড়ির হেডলাইটে চকচক করে।
চোখের সামনের দিকে কোরয়েড পরিবর্তিত হয়ে '''আইরিস''' তৈরি করে। এটি চোখের রঙিন অংশ, যা চোখের '''পিউপিলে''' প্রবেশ করা আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। মৃদু আলোতে পিউপিল বড় হয়ে যায় যাতে যতটা সম্ভব আলো প্রবেশ করতে পারে, আর উজ্জ্বল আলোতে পিউপিল সঙ্কুচিত হয় যাতে অতিরিক্ত আলো রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে।
বেশিরভাগ প্রাণীর '''পিউপিল''' গোলাকার হলেও, অনেক নিশাচর প্রাণীর ক্ষেত্রে এটি ফাঁকা চেরা আকৃতির হয়, যা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি যেমন বিড়াল বা পসামের মতো অতিসংবেদনশীল আলো অনুভবকারী প্রাণীদের রোদ থেকে সুরক্ষা দেয়।
চোখের ভেতরের দিকের স্তর হলো '''রেটিনা'''। এটি আলোক সংবেদনশীল কোষ ধারণ করে যাদের বলা হয় '''রড''' ও '''কোন''' কোষ (ডায়াগ্রাম ১৫.৫ দেখুন)।
'''রড কোষ''' লম্বা ও মোটা এবং অল্প আলোতে সংবেদনশীল, তবে রঙ চিনতে পারে না। এরা এক ধরণের রঞ্জক পদার্থ ধারণ করে যা আলোতে পরিবর্তিত হয়। এই রঞ্জক ভিটামিন ‘এ’ থেকে তৈরি হয়, যা গাজরসহ কিছু খাবারে পাওয়া যায়। এই ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়। তাই মায়েরা যখন বলেন, “গাজর খাও, অন্ধকারে দেখতে পারবে,” তারা ঠিকই বলেন!
'''কোন কোষ''' রঙ দেখার জন্য দায়ী এবং প্রাণীদের স্পষ্ট দেখতে সাহায্য করে। এরা মূলত রেটিনার মাঝখানে অবস্থান করে এবং সবচেয়ে বেশি ঘনত্বে থাকে '''ফোভিয়া''' নামক একটি ছোট এলাকায়। আপনি এখন যে লেখা পড়ছেন, সেটি ঠিক এই এলাকাতেই রেটিনায় ফোকাস হচ্ছে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals A rod and cone from the retina.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.৫ - রেটিনার একটি রড ও একটি কোন কোষ
রেটিনার কোষ থেকে সৃষ্ট স্নায়ু তন্তুগুলি একত্রিত হয়ে চোখ ত্যাগ করে '''অপটিক নার্ভ''' তৈরি করে। এখানে কোন রড বা কোন কোষ থাকে না এবং এই অংশটিই হলো '''ব্লাইন্ড স্পট'''। অপটিক নার্ভ কপাটের পেছন দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।
'''লেন্স''' পিউপিল ও আইরিসের ঠিক পেছনে অবস্থিত। এটি একটি স্বচ্ছ স্ফটিক জাতীয় গঠন, যার কোন রক্তনালী নেই এবং এটি একটি লিগামেন্ট দ্বারা ধরে রাখা হয়। এই লিগামেন্ট একটি পেশির সাথে সংযুক্ত যা লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন করে, ফলে চোখ কাছের ও দূরের বস্তুকে ফোকাস করতে পারে। এই ফোকাস বদলের ক্ষমতাকে বলা হয় '''অ্যাকমোডেশন'''। অনেক স্তন্যপায়ীতে এই অ্যাকমোডেশনের পেশি খুব দুর্বলভাবে গঠিত। যেমন: ইঁদুর, গরু ও কুকুর কাছের কিছু স্পষ্টভাবে দেখতে পারে না বলে মনে করা হয়।
বার্ধক্য বা কিছু রোগের ফলে লেন্স ঝাপসা হয়ে যেতে পারে, এতে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়। একে বলা হয় '''ক্যাটারাক্ট'''।
চোখের অভ্যন্তরে দুটি গহ্বর থাকে — '''অ্যান্টেরিয়র''' ও '''পোস্টেরিয়র চেম্বার''' — যেগুলো লেন্স দ্বারা পৃথক থাকে। এই গহ্বরগুলিতে '''অ্যাকুয়াস''' ও '''ভিট্রিয়াস হিউমার''' নামক তরল থাকে, যা চোখের গঠন ঠিক রাখে এবং রেটিনাকে কোরয়েডে দৃঢ়ভাবে চেপে রাখতে সাহায্য করে, যাতে স্পষ্ট ছবি দেখা যায়।
===চোখ কীভাবে দেখে===
চোখের কাজ অনেকটা ক্যামেরার মতো। কোনও বস্তুর আলো চোখে প্রবেশ করে এবং চোখের পেছনের রেটিনায় (যা "ফিল্ম") ফোকাস হয়। কর্নিয়া, লেন্স ও চোখের ভেতরের তরল সব আলো ফোকাস করতে সাহায্য করে। এরা আলোকরশ্মিকে বেঁকিয়ে দেয় যাতে বস্তু থেকে আসা আলো রেটিনায় পড়ে। এই আলো বেঁকানোর প্রক্রিয়াকে বলা হয় '''রিফ্র্যাকশন'''। আলো রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষকে উদ্দীপ্ত করে এবং স্নায়ু সংকেত তৈরি হয় যা অপটিক নার্ভ দিয়ে মস্তিষ্কে যায় (ডায়াগ্রাম ১৫.৬ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals How light travels from the object to the retina of the eye.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.৬ - কীভাবে আলো বস্তু থেকে রেটিনায় পৌঁছায়
===প্রাণীদের রঙ দেখার ক্ষমতা===
আগে বলা হয়েছে, রেটিনায় দুটি ধরনের কোষ থাকে — ''''''রড'''''' ও ''''''কোন''''''। মানুষ ও উন্নত প্রাইমেট যেমন বাবুন ও গরিলার ক্ষেত্রে রড কোষ অল্প আলোতে কাজ করে কিন্তু রঙ বোঝে না। কোন কোষ উজ্জ্বল আলোতে সক্রিয় হয় এবং রঙ ও খুঁটিনাটি দেখতে সাহায্য করে।
অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের রেটিনায় খুব অল্প কোন কোষ থাকে, ফলে ধারণা করা হয় তারা রঙ দেখতে পায় না বা সীমিত পরিসরে দেখতে পায়। প্রাণীরা আসলে কীভাবে দেখে, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। ধারণা করা হয়, হরিণ, ইঁদুর, খরগোশ এবং নিশাচর প্রাণী যেমন বিড়াল রঙ দেখতে পায় না বা একদম কম রঙ দেখে। কুকুর সম্ভবত সবুজ ও নীল দেখতে পায়। কিছু মাছ ও বেশিরভাগ পাখির রঙ দেখার ক্ষমতা মানুষের চেয়ে ভালো এবং তারা উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করে একে অপরকে চিনে ও সঙ্গী নির্বাচন বা আত্মরক্ষায় ব্যবহার করে।
===দ্বিনেত্র দৃষ্টিশক্তি===
বিড়ালের মতো শিকারি প্রাণীদের চোখ মাথার সামনে এমনভাবে বসানো থাকে যাতে দুটি চোখ একই বিস্তৃত এলাকাকে ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে দেখতে পায় (ডায়াগ্রাম ১৫.৭ দেখুন)। একে বলা হয় '''দ্বিনেত্র দৃষ্টিশক্তি'''। এর প্রধান সুবিধা হলো—এটি প্রাণীদের শিকার পর্যন্ত দূরত্ব নির্ণয় করতে সাহায্য করে যাতে তারা সঠিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Well developed binocular vision.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.৭ - বিড়ালের মতো শিকারি প্রাণীদের উন্নত দ্বিনেত্র দৃষ্টিশক্তি
অন্যদিকে খরগোশ ও হরিণের মতো তৃণভোজী শিকার হওয়া প্রাণীদের চারপাশ ভালোভাবে দেখার প্রয়োজন পড়ে যাতে তারা শিকারির আক্রমণ আগে থেকেই বুঝতে পারে। তাই এদের চোখ মাথার পাশে অবস্থিত, প্রত্যেক চোখের আলাদা দৃষ্টিশক্তি রয়েছে (ডায়াগ্রাম ১৫.৮ দেখুন)। এদের সামনে সামান্য পরিমাণ দ্বিনেত্র দৃষ্টিশক্তি থাকে, তবে নড়াচড়ার প্রতি এরা অত্যন্ত সংবেদনশীল।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Panaoramic monocular vision.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.৮ - খরগোশের মতো শিকার হওয়া প্রাণীদের বিস্তৃত একচোখা দৃষ্টিশক্তি
==শ্রবণ ক্ষমতা==
প্রাণীরা শ্রবণ শক্তি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে। এটি শত্রু বা বিপদের উপস্থিতি টের পেতে, শিকার চিহ্নিত করতে, সঙ্গী নির্বাচন করতে এবং সামাজিকভাবে যোগাযোগ বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। কিছু প্রাণী (যেমন অধিকাংশ বাদুড় ও ডলফিন) শব্দ ব্যবহার করে “দেখে” বা শব্দ প্রতিফলনের মাধ্যমে আশেপাশের বাধা ও শিকার নির্ণয় করে।
===কানের গঠন===
কান, অর্থাৎ শ্রবণের অঙ্গ, বেশিরভাগই খুলির হাড়ের ভেতরে লুকানো থাকে। এটি তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত – '''বাহ্যিক কান''', '''মধ্য কান''' এবং '''অভ্যন্তরীণ কান''' (ডায়াগ্রাম ১৫.৯ দেখুন)।
[[Image:Anatomy and physiology of animals The ear.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.৯ - কান
'''বাহ্যিক কান''' একটি '''কানপথ''' নিয়ে গঠিত, যা ভেতরের দিকে গিয়ে একটি পাতলা ঝিল্লিতে শেষ হয়, যাকে '''কানের পর্দা''' বা '''টাইমপ্যানিক ঝিল্লি''' বলা হয়। অনেক প্রাণীর একটি বাইরের কান থাকে, যাকে '''পিন্না''' বলা হয়। এটি শব্দ সংগ্রহ করে কানের পথে পাঠায়। পিন্না সাধারণত সামনে দিকে থাকে, তবে অনেক প্রাণী এটি শব্দের উৎসের দিকে ঘোরাতে পারে।
কুকুরের কানের পথ লম্বা ও বাঁকা হওয়ায় এতে মোম জমে অথবা জীবাণু, ছত্রাক ও মাইটের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।
'''মধ্য কান''' খুলির মধ্যে একটি গহ্বর, যা একটি সরু নালী দিয়ে '''গলবিলের''' সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই নালিকে '''ইউস্টেশিয়ান নালী''' বলা হয়। এটি কানের ভিতর ও বাইরের বায়ুচাপ সমান রাখতে সাহায্য করে। কেউ যদি ঢাল বেয়ে নিচে নামে, তখন বায়ুচাপের পার্থক্যের কারণে কানের পর্দা টান পড়ে এবং অস্বস্তি হয়। গিললে ইউস্টেশিয়ান নালী খুলে যায় এবং চাপ সমান হয়।
মধ্য কানের ভেতরে শরীরের সবচেয়ে ছোট তিনটি হাড় থাকে, যেগুলোকে '''শ্রবণ অস্থি''' বলা হয়। এগুলোকে 'হ্যামার', 'অ্যানভিল' ও 'স্টিরাপ' বলা হয়, কারণ এদের আকার এসব জিনিসের মতো। এই হাড়গুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং কানের পর্দার কম্পনকে অভ্যন্তরীণ কানের প্রবেশপথের ঝিল্লিতে পৌঁছে দেয়।
'''অভ্যন্তরীণ কান''' একটি জটিল তরল-ভর্তি নালিকামালার সমষ্টি, যা খুলির হাড়ে অবস্থিত। এটি দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত - '''ককলিয়া''' (যেখানে শব্দের তরঙ্গ স্নায়বিক উত্তেজনায় রূপান্তরিত হয়) এবং '''ভেস্টিবুলার অঙ্গ''' (যেটি ভারসাম্যের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু শ্রবণের সাথে নয়)।
'''ককলিয়া''' দেখতে একটির মতো একটি গোলাপি খোলসের মতো। এর ভেতরে সূক্ষ্ম লোমযুক্ত বিশেষ কোষ থাকে, যেগুলো তরল কম্পনে সাড়া দিয়ে স্নায়বিক সংকেত তৈরি করে। এই সংকেত '''শ্রবণ স্নায়ু''' ধরে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
===কীভাবে কান শুনে===
শব্দতরঙ্গকে বায়ুর কম্পনের মতো ভাবা যায়। এগুলো কানপল্লব দ্বারা ধরা পড়ে কানের পথ ধরে কানের পর্দায় পৌঁছে পর্দাকে কম্পিত করে। (একটি মজার তথ্য হলো, যখন আপনি কারো কথা শুনছেন, তখন তার স্বরযন্ত্রের কম্পনের হারেই আপনার কানের পর্দা কম্পন করে।)
এই কম্পন মধ্য কানের ছোট তিনটি হাড়ের মধ্যে সঞ্চালিত হয় এবং তা অভ্যন্তরীণ কানের প্রবেশপথের ঝিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়। এই হাড়গুলো কম্পন কেবল স্থানান্তরই করে না, বরং তা অনেকগুণ বাড়ায়ও। মানুষের কানে এটি প্রায় ২০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, আর মরুভূমির প্রাণী যেমন ক্যাঙ্গারু ইঁদুরের ক্ষেত্রে এটি ১০০ গুণ হয়। এই সংবেদনশীল শ্রবণশক্তি তাদের পেঁচা বা সাপের মতো শিকারির আগমন আগেভাগে টের পেতে সাহায্য করে।
এই কম্পনের ফলে অভ্যন্তরীণ কানের তরলে তরঙ্গ তৈরি হয়, যা ককলিয়ার লোমযুক্ত কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করে। তারা স্নায়বিক সংকেত তৈরি করে, যা শ্রবণ স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্টেক্সে পৌঁছে এবং শব্দ হিসেবে ব্যাখ্যা হয়।
সংক্ষেপে শব্দতরঙ্গের পথে:
'''বাহ্যিক কান → টাইমপ্যানিক ঝিল্লি → শ্রবণ অস্থি → অভ্যন্তরীণ কান → ককলিয়া → লোমযুক্ত কোষ'''
এই কোষগুলো স্নায়বিক সংকেত তৈরি করে যা শ্রবণ স্নায়ু হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে।
মনে রাখবেন, ইউস্টেশিয়ান নালী দিয়ে শব্দতরঙ্গ যায় না। এর কাজ কেবল টাইমপ্যানিক ঝিল্লির দুই পাশে বায়ুচাপ সমান রাখা।
==ভারসাম্য==
অভ্যন্তরীণ কানের '''ভেস্টিবুলার অঙ্গ''' প্রাণীর দেহের ভঙ্গিমা বজায় রাখতে ও ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি মাথার অবস্থান ও নড়াচড়া শনাক্ত করে। এটি দুইটি গঠন নিয়ে গঠিত – '''সেমি-সার্কুলার ক্যানাল''' ও '''ওটোলিথ অঙ্গ'''।
'''সেমি-সার্কুলার ক্যানাল''' (ডায়াগ্রাম ১৫.১০ দেখুন) দেহের চলাচলে সাড়া দেয়। এগুলো প্রাণীকে বলে দেয় সে উপরে না নিচে, বামে না ডানে যাচ্ছে। এই ক্যানাল তিনটি ভিন্ন সমতলে থাকে এবং একে অপরের সাথে ৯০ ডিগ্রি কোণে থাকে, যাতে যেকোনো দিকের নড়াচড়া ধরা যায়। প্রতিটি ক্যানালে তরল এবং সূক্ষ্ম লোমবিশিষ্ট অনুভূতিসংবেদী কোষ থাকে। মাথা নড়লে তরল ঘুরে যায় এবং লোম কোষগুলো উদ্দীপ্ত হয়। এই কোষ স্নায়বিক সংকেত পাঠায় '''ভেস্টিবুলার স্নায়ু''' ধরে '''সেরিবেলাম'''-এ।
এই ক্যানালগুলো গতি বাড়া-কমার (অ্যাকসেলারেশন ও ডিসেলারেশন) এবং দিক পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে, তবে একই গতিতে চলা ধরতে পারে না।
'''ওটোলিথ অঙ্গ'''-কে কখনও কখনও মহাকর্ষ সংবেদকও বলা হয়। এটি জানাতে সাহায্য করে আপনি মাথা হেলিয়ে আছেন কি না বা মাথা নিচের দিকে করে আছেন কি না। এটি সেমি-সার্কুলার ক্যানালের গোড়ায় ফোলা অংশে থাকে, যেখানে লোমযুক্ত কোষগুলো একটি জেলির মতো পদার্থে ঢাকা থাকে। এই জেলির মধ্যে ছোট ছোট খোয়াড়জাত পাথরের কণা থাকে, যাদের বলা হয় '''ওটোলিথ''' (ডায়াগ্রাম ১৫.১০ দেখুন)। মাথা হঠাৎ নড়লে বা হেলে পড়লে, ওটোলিথগুলো লোম কোষের উপর টান দেয় এবং এতে স্নায়বিক সংকেত তৈরি হয়। এই সংকেত '''ভেস্টিবুলার স্নায়ু''' ধরে '''সেরিবেলাম''' এ পৌঁছে। সেমি-সার্কুলার ক্যানাল এবং ওটোলিথ অঙ্গ থেকে আসা সংকেতের সমন্বয়ে সেরিবেলাম প্রাণীকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
[[Image:Anatomy and physiology of animals Olith organs.jpg]]
ডায়াগ্রাম ১৫.১০ - ওটোলিথ অঙ্গ
==সংক্ষিপ্তসার==
* ত্বকে স্পর্শ, চাপ, ব্যথা এবং তাপমাত্রা অনুভব করার রিসেপ্টর থাকে। পেশি, টেনডন এবং জয়েন্টের রিসেপ্টরগুলো মস্তিষ্ককে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থান সম্পর্কে জানায়।
* নাকের '''ঘ্রাণেন্দ্রিয়''' বাতাসে থাকা রাসায়নিকের প্রতি সাড়া দেয়, অর্থাৎ গন্ধ অনুভব করে।
* জিভের ওপর থাকা '''স্বাদগ্রন্থি''' লালায় দ্রবীভূত কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়া জানায়।
* চোখ হলো দৃষ্টির অঙ্গ। গোলাকার '''চক্ষুগোলক''' খুলির কোটরে থাকে এবং এটির গঠন তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত।
* শক্ত বাইরের স্তরটি '''স্ক্লেরা''' যা চোখকে রক্ষা করে এবং এর আকার ধরে রাখে। সামনে এটি চোখের সাদা অংশ এবং স্বচ্ছ '''কর্নিয়া''' হিসেবে দেখা যায় যা আলোকে চোখে প্রবেশ করতে দেয়।
* মাঝের স্তরটি হলো '''কোরয়েড'''। বেশিরভাগ প্রাণীর চোখে এটি অতিরিক্ত আলো শোষণ করে, তবে নিশাচর প্রাণীর চোখে এটি আলো প্রতিফলিত করে যাতে আলো সংরক্ষিত হয়। চোখের সামনে এটি '''আইরিস''' এ রূপ নেয় যার পেশি '''পিউপিল''' এর আকার নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই অনুযায়ী চোখে আলো প্রবেশ করে।
* ভেতরের স্তরটি হলো '''রেটিনা''' যেখানে আলো সংবেদী কোষ থাকে: '''রডস''' যা অল্প আলোতে সাদা-কালো দেখতে সাহায্য করে এবং '''কোনস''' যা রঙ ও বিস্তারিত দেখতে সাহায্য করে। এই কোষগুলো থেকে সৃষ্ট স্নায়ু সংকেত '''অপটিক নার্ভ''' এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে যায়।
* '''লেন্স''' (কর্নিয়ার সাথে) আলোকে রেটিনার ওপর কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। লেন্সের পেশিগুলো এর আকার পরিবর্তন করে যাতে কাছের বা দূরের জিনিস পরিষ্কার দেখা যায়।
* '''অ্যাকুয়াস হিউমার''' কর্নিয়ার ঠিক পেছনের অংশটি পূর্ণ করে ও এর আকৃতি ধরে রাখে এবং '''ভিট্রিয়াস হিউমার''', একটি স্বচ্ছ জেলি জাতীয় পদার্থ, লেন্সের পেছনের অংশটি পূর্ণ করে যাতে আলো রেটিনার দিকে যেতে পারে।
* কান হলো শ্রবণ এবং ভারসাম্য রক্ষার অঙ্গ।
* বাইরের '''পিনার''' শব্দ তরঙ্গগুলো কানে নিয়ে আসে এবং শব্দের উৎস কোথায় তা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। শব্দ তরঙ্গগুলো বাইরের '''কান নালি''' দিয়ে গিয়ে '''ইয়ারড্রাম''' বা '''টাইমপ্যানিক মেমব্রেন'''-এ পৌঁছে কম্পন সৃষ্টি করে। এই কম্পন '''অডিটরি অসিকলস''' নামক মধ্যকর্ণের হাড়গুলোর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কানে পৌঁছে যায়। এখানে '''ককলিয়া'''-র রিসেপ্টরগুলো সাড়া দিয়ে স্নায়ু সংকেত তৈরি করে যা '''অডিটরি''' (অ্যাকোস্টিক) নার্ভ দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়।
* '''ইউস্টেশিয়ান টিউব''' মধ্যকর্ণকে গলার ফ্যারিঙ্ক্স-এর সাথে যুক্ত করে যাতে টাইমপ্যানিক মেমব্রেনের দুই পাশে বায়ুর চাপ সমান থাকে।
* অভ্যন্তরীণ কানের '''ভেস্টিবুলার অঙ্গ''' প্রাণীর ভারসাম্য ও ভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি গঠিত '''সেমিসারকুলার ক্যানালস''' ও '''ওটোলিথ অর্গানস''' দ্বারা।
==কাজের শীট==
[http://www.wikieducator.org/Special_Senses_Worksheet ইন্দ্রিয়সংক্রান্ত কাজের শীট]
==নিজেকে পরীক্ষা করো==
১. ব্যথা, চাপ এবং তাপমাত্রা শনাক্ত করার অঙ্গগুলো কোথায় থাকে?
২. কোন ইন্দ্রিয় অঙ্গ বাতাসে থাকা রাসায়নিকের প্রতি সাড়া দেয়?
৩. নিচের তালিকার শব্দগুলোকে নিচের বর্ণনাগুলোর সাথে মেলাও।
:[[W:অপটিক স্নায়ু|অপটিক স্নায়ু]] | [[W:কোরয়েড|কোরয়েড]] | [[W:কর্নিয়া|কর্নিয়া]] | [[W:অ্যাকুয়াস হিউমার|অ্যাকুয়াস হিউমার]] | [[W:রেটিনা|রেটিনা]] | [[W:কোন কোষ|কোন কোষ]] | [[W:আইরিশ|আইরিশ]] | [[W:ভিট্রিয়াস হিউমার|ভিট্রিয়াস হিউমার]] | [[W:স্ক্লেরা|স্ক্লেরা]] | [[W:লেন্স|লেন্স]]
:ক) রেটিনার ওপর আলো কেন্দ্রীভূত করে।
:খ) রঙ এবং বিস্তারিত দেখতে সাড়া দেয়।
:গ) চোখের বাইরের আবরণ।
:ঘ) রেটিনা থেকে স্নায়ু সংকেত মস্তিষ্কে নিয়ে যায়।
:ঙ) লেন্সের পেছনের অংশটি এই পদার্থ দিয়ে পূর্ণ থাকে।
:চ) নিশাচর প্রাণীদের চোখে এই স্তরটি আলো প্রতিফলিত করে।
:ছ) চোখের সামনের স্বচ্ছ জানালার মতো অংশ।
:ছ) উজ্জ্বল আলোতে সংকুচিত হয়ে চোখে আলো প্রবেশ কমায়।
:জ) লেন্স এবং কর্নিয়া এই জায়গায় আলো কেন্দ্রীভূত করে।
:ঝ) লেন্সের সামনে এই তরল পদার্থ থাকে।
৪. নিচের কানের চিত্রে নিচের লেবেলগুলো যোগ করো।
:[[W:পিনা|পিনা]] | [[W:ইউস্টেশিয়ান নালী|ইউস্টেশিয়ান নালী]] | [[W:কক্লিয়া|কক্লিয়া]] | [[W:টাইমপ্যানিক ঝিল্লি|টাইমপ্যানিক ঝিল্লি]] | [[W:বাহ্যিক শ্রবণ নালী|বাহ্যিক শ্রবণ নালী]] | [[W:কর্ণ অস্থি|কর্ণ অস্থি]] | [[W:সেমিসারকুলার নালী|সেমিসারকুলার নালী]]
[[Image:Unlabeled diagram of the dog's ear.jpg]]
৫. ইউস্টেশিয়ান টিউবের কাজ কী?
৬. ইয়ার অসিকলস (মধ্যকর্ণের হাড়) কী কাজ করে?
৭. সেমিসারকুলার ক্যানালস কী কাজ করে?
[[/Senses Test Yourself Answers/]]
==ওয়েবসাইট==
*http://en.wikipedia.org/wiki/Sense উইকিপিডিয়া। সবসময় নির্ভরযোগ্য। এখানে 'eye', 'ear', 'taste' ছাড়াও ‘[[W:সমতা অনুভব|equilibrioception]]’, এবং ‘[[W:প্রতিধ্বনিধ্বনি|echolocation]]’ খুঁজে দেখো।
*http://www.bbc.co.uk/science/humanbody/body/factfiles/smell/smell_ani_f5.swf বিবিসি সায়েন্স অ্যান্ড ন্যাচার। (মানব) ঘ্রাণেন্দ্রিয় ও গন্ধ নেওয়ার অ্যানিমেশন।
*http://www.bbc.co.uk/science/humanbody/body/factfiles/taste/taste_ani_f5.swf বিবিসি সায়েন্স। (মানব) স্বাদগ্রন্থি ও স্বাদ নেওয়ার অ্যানিমেশন।
*http://web.archive.org/web/20071121213719/http://www.bishopstopford.com/faculties/science/arthur/Eye%20Drag%20%26%20Drop.swf চোখের ছবি। নাম লেখো ও তোমার জ্ঞান পরীক্ষা করো।
*http://www.bbc.co.uk/science/humanbody/body/factfiles/hearing/hearing_animation.shtml শ্রবণ নিয়ে বিবিসির অ্যানিমেশন। দেখার মতো একটি বিষয়।
*http://www.wisc-online.com/objects/index_tj.asp?objid=AP1502 কানের অ্যানিমেশন। শ্রবণ সম্পর্কে চমৎকার ব্যাখ্যা।
*http://www.bbc.co.uk/science/humanbody/body/factfiles/balance/balance_ani_f5.swf বিবিসি ভারসাম্য অ্যানিমেশন। এখানে ওটোলিথ অঙ্গের (এই অ্যানিমেশনে ম্যাকুলা নামে) কাজ দেখানো হয়েছে।
==শব্দকোষ==
*[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক]
{{BookCat}}
scmq916w30xqfdw5qhvwju2jj6xu64k
সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/নজরদারি ও প্রতিনজরদারি
0
23745
84038
84033
2025-06-11T14:40:21Z
MS Sakib
6561
/* টেলিফোন কোম্পানিসমূহের জন্য আইন */
84038
wikitext
text/x-wiki
= নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স =
== ভূমিকা ও মূল ধারণাসমূহ ==
[[চিত্র:TheBigbrother.jpg|ডান|থাম্ব|বিগ ব্রাদার তোমার উপর নজর রাখছে]]
[[চিত্র:SurveillanceSousveillanceLifeGloggingMannSensecamMemoto.jpg|থাম্ব|স্যুভেইলেন্সের তুলনায় নজরদারি]]
{{Quote box|quote=২০১২ সালে, স্পেনের সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে যে, আমেরিকার ''NSA ([[w:ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি|ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি]])'' ক্রিসমাস মাসে গোপনে ৬ কোটিরও বেশি টেলিফোন রেকর্ড নজরদারির আওতায় এনেছিল।<ref>Angwin, J. U. L. I. A., Savage, C. H. A. R. L. I. E., Larson, J. E. F. F., Moltke, H. E. N. R. I. K., Poitras, L. A. U. R. A., & Risen, J. (2015). AT &T Helped US Spy on Internet on a Vast Scale. New York Times, August, 15.</ref> জার্মানির একটি ম্যাগাজিন ''[[w:Der Spiegel|ডার স্পিগেল]]'' প্রস্তাব করে যে, এনএসএ-এর প্রধান নজরদারির বিষয় ছিল ৩৫ জন রাজনীতিবিদ।<ref>Timberg, C., & Soltani, A. (2013). By cracking cellphone code, NSA has capacity for decoding private conversations. The Washington Post.</ref> আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে মানব সমাজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সহজেই ডিজিটাল আকারে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রচার করা যায়। এর ফলে তৈরি হয়েছে একটি নজরদারিমূলক সমাজ, যার অর্থ ''"অল্প কয়েকজন অনেককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে"''। তবে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে “'''স্যুভেইলেন্স'''” শব্দটি প্রস্তাব করেন [[w:Steve Mann|স্টিভ ম্যান]], জেসন নোলান এবং [[w:ব্যারি ওয়েলম্যান|ব্যারি ওয়েলম্যান]]। এটি “'''নজরদারি'''” শব্দটির বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং বোঝায় ''বহুসংখ্যক মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে''।<ref>S. Mann, J. Nolan and B. Wellman. (2003), "Sousveillance: Inventing and Using Wearable Computing Devices for Data Collection in Surveillance Environments",Surveillance & Society, vol. 1, no. 3, pp. 331-355.</ref>|align=left|width=50%}}'সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?' বইয়ের এই অধ্যায়ে নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর মূল ধারণাগুলোর বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে এই দুই ক্ষেত্রের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা। নজরদারির ক্ষেত্রে আলোচনা করা হবে এই কাজে ব্যবহৃত সংগঠন ও প্রযুক্তি, সেইসাথে প্রযোজ্য আইন ও বিধিনিষেধ সম্পর্কে। এছাড়াও এই অধ্যায়ে মানবতা কীভাবে নজরদারির বিরোধিতা করে এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব]-এর মতো ভিডিও-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মকে নজরদারি না স্যুভেইলেন্স—এই বিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে অধ্যায়টি স্যুভেইলেন্স-এর দিকে দৃষ্টি দেয়। এতে স্টিভ ম্যান-এর ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এই শব্দটির প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী বিশ্লেষণে স্যুভেইলেন্স-এর বিভিন্ন রূপ এবং মানব ইতিহাসে এর বিকাশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে এখানে স্থান পেয়েছে এবং স্যুভেইলেন্স-এর সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে কিছু কেস স্টাডির মাধ্যমে এটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর বিষয়ে কথা বললে, প্রথমটি তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত। এর একটি কারণ হতে পারে আমরা প্রতিদিনই নজরদারির মুখোমুখি হই—আমরা কোনো না কোনো নজরদারির নজর ছাড়া এক কদমও এগোতে পারি না। একে “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট” বলা হয়, যা এই অধ্যায়ে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও আমরা জানি নজরদারি সর্বত্র বিদ্যমান, আমরা তা নিয়ে খুব একটা সচেতন নই। আমাদের বলা হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ধরনের বার্তা আমাদের মনে গেঁথে গেছে এবং আমরা ভুলে গেছি আসলে কতবার আমাদের নজরদারির আওতায় আনা হয়। অপরদিকে, স্যুভেইলেন্স তুলনামূলকভাবে নতুন, তাই কম পরিচিত। কারণ, স্যুভেইলেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি (যেমন হাতে ধরা ক্যামেরা) সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়েছে। যদিও শব্দটি সাধারণত উচ্চতর কর্তৃপক্ষের দিকে ক্যামেরা নির্দেশ করে করা কার্যকলাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, স্যুভেইলেন্স তখনও ঘটে যখন একটি গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী গোষ্ঠীকে পুরনো বা নতুন যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে। ইতিহাসের দিকে ভালোভাবে তাকালে দেখা যায়, ফরাসি বিপ্লবসহ প্রথম দিকের অনেক বিপ্লবই স্যুভেইলেন্সের উপর নির্ভর করে রাজা অপসারণ ও সমাজে পরিবর্তন এনেছিল।
একটি তত্ত্ব হিসেবে স্যুভেইলেন্স-এর প্রবর্তন ও বিকাশ ঘটে স্টিভ ম্যান-এর মাধ্যমে, যাঁকে এই অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
= নজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
এই অংশে ''''নজরদারি'''<nowiki/>' শব্দটির কিছু প্রচলিত সংজ্ঞা আলোচনা করা হবে।
'''নজরদারি''' শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা '''Surveillance''' শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি ভাষা থেকে। এর উৎস হল '''sur''' অর্থাৎ '''উপর থেকে''' এবং '''veiller''' অর্থাৎ '''পর্যবেক্ষণ করা'''—ফলে এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় '''উপর থেকে দেখা'''।
'''নজরদারি''' বলতে বোঝায় সেই ক্যামেরা বা অন্যান্য সেন্সর, যা কোনো স্থাপনার (যেমন: জমি, খুঁটি বা ভবন) সঙ্গে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে। এটি সেই ধরণের পর্যবেক্ষণ যা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি অন্যান্য পর্যবেক্ষণকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। নজরদারি হলো মূলত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। এই সহজ সংজ্ঞার মধ্যে অসংখ্য কৌশল ও পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত যেগুলোকে নজরদারির রূপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই পদ্ধতিগুলোর অনেকটাই জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের জানা। নজরদারির ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে [[w:নজরদারির ইতিহাস|নজরদারির ইতিহাস]] পাতায় যাওয়া যেতে পারে। সেখানে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে নজরদারির ধারণাটি সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিদ্যমান, শুধুমাত্র ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের মাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। প্রাথমিক দূরবীন থেকে শুরু করে আধুনিক [[w:রেডিও_ফ্রিকোয়েন্সি_আইডেন্টিফিকেশন|রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন]] পর্যন্ত নজরদারি প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত উন্নত হয়েছে।
সর্বাধিক পরিচিত নজরদারির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্থির নজরদারি, প্রযুক্তিগত নজরদারি (সাধারণত গোপন ভিডিও বা অডিও রেকর্ডিং), ইলেকট্রনিক নজরদারি (ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ, [[w:কি-স্ট্রোক_ডায়নামিকস|কীস্ট্রোক ডায়নামিকস]]) এবং আরও অনেক কিছু। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান থাকলে প্রায় যে কেউ নজরদারিতে অংশ নিতে পারে—এক্ষেত্রে নজরদারির কৌশল ব্যবহার করেন ফেডারেল কর্মকর্তারা যাঁরা জীবন রক্ষায় কাজ করেন, কিংবা বেসরকারি গোয়েন্দারা যাঁরা সিভিল কোর্টের প্রমাণ সংগ্রহ করেন। [http://www.oxforddictionaries.com/ অক্সফোর্ড অভিধান অনলাইন] (২০১৬)-এ নজরদারির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—'সন্দেহভাজন গুপ্তচর বা অপরাধীর উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ' (Close observation, especially of a suspected spy or criminal)।<ref>Surveillance. 2016. In ''Oxford Dictionaries''. Retrieved from http://www.oxforddictionaries.com/definition/english/surveillance.</ref> এই সংজ্ঞা এই বইয়ের পরবর্তী অংশে আলোচিত একটি বিষয়ের সূত্রপাত করে। সেখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে ডিজিটাল মিডিয়ার বিকাশ এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যে, দাবি করা যায় বৃহত্তর জনগণ সর্বদাই নজরদারির আওতায় আছে।
=== নজরদারির প্রকারভেদ ===
নজরদারির প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে। স্রারা পৃথিবী ব্যাপী ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি তাদের গোপনীয়তা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। নেটওয়ার্ক ডেটাবেইস জনসাধারণ ও ব্যক্তির মধ্যকার সীমারেখা মুছে দেয় এবং ব্যক্তি-মানুষকে একটি ডিজিটাল প্যানআপটিকনে পরিণত করে। [[w:ফেসবুক|ফেসবুক]], [[w:টুইটার|টুইটার]], ব্লগ, [[w:ইনস্টাগ্রাম|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তি-মানুষকে তাদের গোপনীয়তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে উৎসাহিত করে।<ref>Cristani, M., Raghavendra, R., Del Bue, A., & Murino, V. (2013). Human behaviour analysis in video surveillance: A social signal processing perspective. Neurocomputing, 100, 86-97.</ref>
প্রথমত, সিসিটিভি ([[w:ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন|ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন]]) ইলেকট্রনিক নজরদারির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি। ইংল্যান্ড, প্রথম দেশ হিসেবে পাবলিক প্লেসে সিসিটিভি স্থাপন করে এবং প্রায় ৩০ লক্ষ ক্যামেরা ব্যবহার করে দিনের ২৪ ঘণ্টা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন পর্যবেক্ষণ করে। নরিস ও আর্মস্ট্রং একটি সিসিটিভি-সমৃদ্ধ সমাজকে বর্ণনা করেছেন "সবচেয়ে বড় নজরদারি সমাজ" হিসেবে।<ref>Carr, R. (2014). Surveillance politics and local government: A national survey of federal funding for CCTV in Australia. Security Journal.</ref> [http://www.google.com/intl/en_uk/earth/ গুগল আর্থ], গুগলের একটি মানচিত্র অনুসন্ধান সরঞ্জাম, স্যাটেলাইট ছবি, জিপিএস, জিআইএস, ভিডিও স্ট্রিমিং ও ৩ডি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সকল ব্যবহারকারীর জন্য বাস্তবচিত্র সরবরাহ করে। অনেকেই বলেন ''গুগল আর্থ একটি যুগের সূচনা করেছে। সেখানে সবাই একজন গুপ্তচর হতে পারে''।
দ্বিতীয়ত, নেটওয়ার্ক ডেটাবেইসের উন্নয়ন মানুষকে অজান্তেই পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৯০ সালে, টেলিভিশন তারকা [[w:Rebecca Saire|রেবেকা সেয়ার]] তার বাসার দরজার সামনে এক উন্মাদ ভক্তের গুলিতে নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, ওই হত্যাকারী তার ড্রাইভার লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে সরকারী ওয়েবসাইট থেকে তার ঠিকানা বের করেছিল। ''কুকিজ'' প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু মৌলিক তথ্যই নয়, ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ, ইমেইল ঠিকানা ইত্যাদিও সংগ্রহ করা যায়।
তৃতীয়ত, ব্যবহারকারীরাই ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেন, যা নজরদারির জন্য আদর্শ মাধ্যম। [[w:Facebook|ফেসবুক]], [[w:Twitter|টুইটার]], ব্লগ, [[w:Instagram|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। তারা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, ছবি, অনুভূতি এসব প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে থাকেন। যদিও এই ওয়েবসাইটগুলোতে নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়, তবুও ব্যবহারকারীর তথ্য ও কার্যকলাপ নজরদারির আওতায় পড়ে। ব্যবহারকারীর পরিচয় নির্ধারণে আইপি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীর অবস্থান (শহর বা জেলা) শনাক্ত করে। যদি একাধিক ওয়েবসাইটে একই নজরদারি ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং ইতিহাস একসাথে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। যেমন, একজন ব্যক্তি ফেসবুকে লগইন থাকা অবস্থায় অন্য একটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে এবং সেখানে “লাইক” বাটনে ক্লিক করে, তাহলে ফেসবুক ওই ওয়েবসাইটের ব্রাউজ ইতিহাস রেকর্ড করে, ব্যবহারকারীর বন্ধুদের সম্পর্কেও তথ্য রেকর্ড করে। এসব তথ্যের সমন্বয়ে নজরদারির জন্য একটি সামাজিক সম্পর্ক চিত্র গঠন করা যায়। সেখানে ব্যবহারকারীর বন্ধু, অবস্থান ও সময় নির্ভর তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।
আরও একটি শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে '''কম্পিউটিং ও নজরদারি'''-র ভিত্তিতে
গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নজরদারি ও তথ্য সমাজ অধ্যয়নের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা নজরদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে কম্পিউটিংয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। এর ফলে কম্পিউটার ও নজরদারির পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে কয়েকটি শ্রেণিবিন্যাস গড়ে উঠেছে: যেমন নতুন নজরদারি, ডেটাভেইলেন্স, ইলেকট্রনিক (সুপার)প্যানঅপটিকন, ইলেকট্রনিক নজরদারি বা ডিজিটাল নজরদারি। গ্যারি টি. মার্কস "নতুন নজরদারিকে" সংজ্ঞায়িত করেছেন “ব্যক্তিগত তথ্য আহরণ বা সৃষ্টির জন্য প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে। এটি ব্যক্তি বা পরিবেশ থেকে সংগৃহীত হতে পারে।”<ref>Marx 2002, 12; see also: Marx 1988, pp.217–219</ref> তাঁর মতে, পুরনো নজরদারিতে তথ্য প্রেরণ কঠিন ছিল, কিন্তু নতুন নজরদারিতে তা অনেক সহজ। ঐতিহ্যবাহী নজরদারিতে “যা নজরদারি কর্তৃপক্ষ জানে, তাও সাধারণত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তি জানে”, কিন্তু নতুন নজরদারিতে “নজরদার ব্যক্তি এমন কিছু জানে যা লক্ষ্যবস্তু জানে না।”<ref>Marx, 2002, p.29</ref> তিনি বলেন, নতুন নজরদারি দৃশ্যমান নয় বরং দূরবর্তী এবং এটি “কম জোরপূর্বক” <ref name="Marx, 2002, p.28">Marx, 2002, p.28</ref> এবং “আরও গণতান্ত্রিক” কারণ এর কিছু রূপ আরও সহজলভ্য।<ref name="Marx, 2002, p.28" /> কম্পিউটারভিত্তিক নজরদারি হচ্ছে নতুন নজরদারির একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। “কম্পিউটার নজরদারির প্রকৃতি মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে—এটিকে নিয়মিত, বিস্তৃত ও গভীর করে তোলে। প্রতিষ্ঠানগত স্মৃতি স্থান ও সময় জুড়ে প্রসারিত হয়”।<ref>Marx, 2002, p.208</ref> ডেটাভেইলেন্স হচ্ছে “তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের কর্মকাণ্ড বা যোগাযোগের পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ” (ক্লার্ক ১৯৮৮, ৫০০)। ক্লার্ক (১৯৯৪) ব্যক্তি-ভিত্তিক ডেটাভেইলেন্স (যা একজন বা একাধিক ব্যক্তির উপর নজর রাখে) এবং গণ ডেটাভেইলেন্স (যেখানে একটি গোষ্ঠী বা বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নজরদারির আওতায় আনা হয় যাতে আগ্রহের ব্যক্তি শনাক্ত করা যায়) এর মধ্যে পার্থক্য করেন। বগার্ড (২০০৬) যুক্তি দেন যে কম্পিউটার একটি প্রযুক্তি যা নজরদারির অনুকরণ করে। গর্ডন (১৯৮৭) ইলেকট্রনিক প্যানঅপটিকনের কথা বলেন। মার্ক পোস্টার (১৯৯০) “ইলেকট্রনিক সুপারপ্যানঅপটিকন” ধারণা দেন: “আজকের ‘যোগাযোগের চক্র’ এবং এগুলো দ্বারা সৃষ্ট ডেটাবেস এক ধরনের সুপারপ্যানঅপটিকন সৃষ্টি করে, এটি এমন একটি নজরদারি ব্যবস্থা যার কোনো দেয়াল, জানালা, টাওয়ার বা প্রহরী নেই” (পোস্টার১৯৯০, ৯৩)। মার্ক আন্দ্রেয়েভিচ “ডিজিটাল এনক্লোজার” ধারণা দেন,<ref>Andrejevic, M. (2004). The web cam subculture and the digital enclosure. In N. Couldry & A. McCarthy (eds.)</ref> যেখানে ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।<ref>Fuchs, Boersma, Albrechtslund, and Sandoval (eds.) (2012) Internet and Surveillance: The Challenges of Web 2.0 and Social Media. London: Routledge, p.1</ref>
তৃতীয় ধরনের শ্রেণিবিন্যাস এসেছে ওগুরা (২০০৬) এবং গ্যান্ডি (১৯৯৩)-এর মতবাদ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে নজরদারির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুঁজিবাদ এবং/অথবা জাতিরাষ্ট্র ভিত্তিক জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা।<ref>Gandy, O. H. & Farrall, K. N. (2008). Metaphoric reinforcement of the virtual fence: factors shaping the political economy of property in cyberspace. In A. Chadwick & P. N. Howard (eds.), The Handbook of Internet Politics (pp. 349–63). London: Routledge</ref> আমরা নজরদারির দুটি প্রধান রূপ আলাদা করতে পারি: '''অর্থনৈতিক''' ও '''রাজনৈতিক''' নজরদারি। ''জাতিরাষ্ট্র'' ও করপোরেশন দ্বারা পরিচালিত নজরদারির লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা, অর্থাৎ তারা যেন নির্দিষ্ট কিছু করে বা না করে, কারণ তারা জানে যে তাদের উপস্থিতি, চলাচল, অবস্থান, বা চিন্তাভাবনা নজরদারি ব্যবস্থার দ্বারা পর্যবেক্ষিত হচ্ছে বা হতে পারে।<ref>Fuchs 2008, 267–277</ref> রাজনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা সংঘটিত সহিংসতার (আইনের) হুমকির সম্মুখীন হয় যদি তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আচরণ করে এবং রাজনৈতিক অভিনেতাদের (যেমন গোপন সেবা বা পুলিশ) নজরে পড়ে। অর্থনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, বাজারের সহিংসতা ব্যক্তি ওদের নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে বা উৎপাদনে বাধ্য করে এবং পুঁজিবাদী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তাদের অর্থনৈতিক আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এই ধরনের নজরদারিতে সহিংসতা ও পরাধীনতা চূড়ান্ত অস্ত্র। নিচের ছকে বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারির ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে।
‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই প্রবণতাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, কারণ এটি মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডিং সিস্টেম ও অন্যান্য গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত আচরণের অবস্থানভিত্তিক নজরদারিকে সম্ভব করে তোলে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।’<ref>Gandy and Farall, 2008: May, Phillips: 2008</ref>
==== নজরদারির উদ্দেশ্য ====
নজরদারির অনেক উপকার থাকতে পারে। পরিস্থিতিভেদে এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও সাধারণত নিম্নোক্ত এক বা একাধিক লক্ষ্য পূরণের জন্য করা হয়:
* তল্লাশি বা ওয়ারেন্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা।
* কোনো ব্যক্তি, অবৈধ পণ্য বা অবৈধ কাজের স্থান খুঁজে বের করা।
* কোনো ব্যক্তি, অপরাধী গোষ্ঠী বা স্থানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* গোপন বা প্রকাশ্য নজরদারির মাধ্যমে কোনো অপরাধ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা।
* অভিযানের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী ব্যক্তি বা অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
== বিশ্বব্যাপী নজরদারি ==
[[চিত্র:Internet_Censorship_and_Surveillance_World_Map.svg|থাম্ব|204x204পিক্সেল|দেশভিত্তিক ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও নজরদারির মানচিত্র।]]
বিশ্বব্যাপী নজরদারি বলতে জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত নজরদারিকে বোঝায়। এর ইতিহাস ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়, যখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি করে। পরবর্তীতে এতে নিউ জিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া যুক্ত হয়, গঠিত হয় ‘ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’। তারা 'তৃতীয় পক্ষের' দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিও করে। এর মাধ্যমে গঠিত হয় একটি বিশ্বব্যাপী নজরদারি নেটওয়ার্ক, যার নাম 'ইসেলন'। এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অবগত ছিল না যতক্ষণ না [[w:Edward Snowden|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
== নজরদারির জন্য সংস্থা ==
নজরদারি ব্যবস্থা মূলত নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে। এজন্য একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ''"অল্প কিছু মানুষ অনেককে পর্যবেক্ষণ করে"''।<ref>Lyon, D. (2008). Surveillance studies: an overview (p. 140). Cambridge [u.a.]: Polity Press.</ref> তাই যে সংস্থাগুলো এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা হলো: ''সরকার, পুলিশ স্টেশন, ব্যাংক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিরাপত্তা কোম্পানি, বাণিজ্যিক ভবন'' ইত্যাদি—যাতে নাগরিক ও মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এই নজরদারি ব্যবস্থা মানুষের নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করে অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য। তবে, নজরদারি প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ, প্রেরণ ও ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই নতুন মিডিয়া যুগে, উপরে উল্লিখিত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সাধারণ কোম্পানি, ব্যক্তিগত গোয়েন্দা বা এমনকি ব্যক্তি হ্যাকাররাও ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক তথ্য ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
==== যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ====
২০১৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার [[w:এডওয়ার্ড_স্নোডেন|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সংস্থাটির মার্কিন নাগরিক ও বিদেশি রাষ্ট্রের উপর পরিচালিত ব্যাপক নজরদারি কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা শুরু করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার চেষ্টার হাত থেকে বাঁচাতে তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানে তাকে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। জুন ২০১৩-তে স্নোডেনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি সম্পদ চুরির অভিযোগ আনা হয়। স্নোডেন যে তথ্যগুলো গণমাধ্যমে ফাঁস করেন, তার মধ্যে ছিল যে এনএসএ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষের ইন্টারনেট কার্যক্রম ও ফোন তথ্য সংগ্রহ করেছিল। কেবল মার্কিন ও বিদেশি নাগরিক নয়, এনএসএ বিদেশি নেতাদের ও তাদের সহকর্মীদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে। স্নোডেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এনএসএ-এর কর্মচারী ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করতেন এই নজরদারি কার্যক্রম সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। তবে, সমালোচকেরা বলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিজীবনে অনধিকার প্রবেশ করেছে এবং তাদের অজ্ঞাতসারে নজরদারির আওতায় এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এনএসএ বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন সরকার নজরদারিতে আইনগত গণ্ডি অতিক্রম করে না, তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক ভবিষ্যতেও চলবে।<ref>Alexander Stingl, 'Technology and Surveillance' in ''Research Starters: Sociology,'' 2015</ref>
== ইউটিউব: নজরদারি না সুভেইলেন্স? ==
নজরদারি ও সুভেইলেন্সের সংজ্ঞা এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব] এর প্রেক্ষাপটে তাদের প্রয়োগ বিবেচনা করলে দেখা যায় এই দুটি ধারণা কখনও কখনও পরস্পরকে ছাপিয়ে যেতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য একাধিক উপধারা রয়েছে। যেমন: ব্লগারদের কার্যক্রম সাধারণত সুভেইলেন্সে পড়লেও কিছু ক্ষেত্রে নজরদারিতেও পড়ে। বিভিন্ন ইউটিউবারের উদাহরণ বিশ্লেষণ করা হবে। নজরদারি ও সুভেইলেন্সের প্রেক্ষাপটে সমাজের উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার পিরামিড, এবং সেই পিরামিডের যেকোনো স্তর থেকে ভিডিও ফুটেজে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত এক ক্ষুদ্র বিতর্ক। এমনকি দুইজন ইউটিউবারের একটি কেস স্টাডিও থাকবে, যাদের কনটেন্টের স্বত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তারা এখনও সেই কনটেন্টের মালিকানা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্সকে বক্তৃতার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
[[চিত্র:Logo_Canale_YouTube_(2013-2017).jpg|alt=YouTube Logo|বাম|থাম্ব|নজরদারি না সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম?]]
ইউটিউব সর্বদাই সুভেইলেন্সের একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সাধারণ মানুষ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা বিশ্বব্যাপী শেয়ার করে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউটিউবের গঠন ও বিন্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছে যাতে তারা নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে নিজেকে বিশ্বে উপস্থাপন করতে পারে। যারা এটি করে তারা 'ইউটিউবার' বা 'ভ্লগার' নামে পরিচিত। ভ্লগিং মানে হলো কোনো ঘটনাকে ভিডিও আকারে ডায়েরি হিসেবে উপস্থাপন করা, কিন্তু ইউটিউবারদের জন্য এটি মানে তাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি দিক শেয়ার করা। এর ফলে দর্শকরা তাদের জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত বোধ করেন এবং এটি টিভির তুলনায় বেশি বাস্তব মনে হয় কারণ এখানে জীবনের প্রকৃত রূপ দেখানো হয়, যা স্ক্রিপ্টেড বা পরিবর্তিত নয়। অধিকাংশ ইউটিউবার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, ভিডিও গেম খেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে যা জনগণের বাস্তব কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিভাত হয়। ইউটিউবের বিন্যাস ইউটিউবারদের নিজেদের জীবনধারা প্রচারের সুযোগ দেয়। বিনোদন ও প্রচার ছাড়াও, একটি অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে—যদি যথেষ্ট মানুষ তাদের ভিডিও দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা অর্থ উপার্জন করতে পারে। এর মানে হচ্ছে, কারিগরি দিক থেকে যদি তাদের ভিডিও যথেষ্ট সংখ্যক দর্শক দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা সেটিকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারে। জনপ্রিয় ইউটিউবারদের অনেকেই এমনটি করে থাকেন, যেমন [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]। তবে তারা সেখানেই থেমে থাকেন না, অনেকে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রি করেন - যেমন [http://redrawr.storenvy.com/ Rose and Rosie], [https://shop.spreadshirt.com/ZACKSCOTT/ ZackScottgames], আবার কেউ কেউ নিজেদের বইও প্রকাশ করেছেন - যেমন [https://www.gofundme.com/cahsvf9g/ Ashley Mardell], [http://tyleroakleybook.com/ Tyler Oakley], [https://www.zoella.co.uk/category/life/books/ Zoella]। কেউ কেউ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রবেশ করেছেন টেলিভিশন শোয়ের মাধ্যমে - যেমন [http://www.epicmealtime.com/ Epic Meal Time]। ইউটিউব সাধারণ মানুষের জন্য খ্যাতি অর্জনের একটি চমৎকার মাধ্যম, যেমন [https://www.youtube.com/user/rhettandlink2/ Good Mythical Morning] বা [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]-এর মতো কেউ কেউ প্রকৃত সফলতা অর্জন করেছেন এবং অনেক সেলিব্রিটির কাছেও পরিচিত। ইউটিউবাররা সাধারণত "সুসভেইলেন্স" ধারণার মধ্যে পড়ে, যেহেতু তারা বাস্তব জীবন ধারণ করেন এবং তারাও জানেন যে তারা একটি ক্যামেরার সামনে রয়েছেন। এটি তাদের জীবনকে ধারণ করছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় যখন [https://www.youtube.com/user/RoseEllenDix/ Rose and Rosie] এর মতো ইউটিউবাররা বলেন, তারা জীবনের বেশিরভাগ অংশ ক্যামেরাবন্দি করেন যাতে ছোট ছোট মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে থাকে। তাই, তাদের জন্য সুসভেইলেন্স হতে পারে উপকারী। তবে ইউটিউবারদের নজরদারিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আসে প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলো থেকে। সেখানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে বা সমাজের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়। [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] এবং [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] হলেন প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানানো দুইজন ইউটিউবার। সুসভেইলেন্স এবং সারভেইলেন্স-এর মধ্যে সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে যায় কারণ ইউটিউব স্বভাবতই সুসভেইলেন্স। সেখানে মানুষ নিজেরাই ক্যামেরা ধরে এবং তা সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু যখন ইউটিউবাররা অন্য সাধারণ মানুষকে প্র্যাঙ্ক করার জন্য গোপনে ধারণ করেন এবং তাদের এই ধারণার কথা জানা থাকে না, তখনই ইউটিউবের ক্যাটাগরি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
এই ধারণাটি আরও জটিল হয় যখন এতে ‘উদ্দেশ্য’ এবং ‘ক্ষমতা’র ধারণা যুক্ত করা হয়। যদি একটি শক্তির পিরামিড কল্পনা করা হয়, তাহলে তার শীর্ষে থাকবে সরকার, তারপর পুলিশ ও কাউন্সিল, এরপর পেশাজীবী/ব্যবসা/ইউটিউবার এবং সর্বনিম্নে থাকবে সাধারণ জনগণ। এই বিশেষ ক্ষমতার সম্পর্ক সুসভেইলেন্স ও সারভেইলেন্সের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করে। সরকার শুধুমাত্র সিসিটিভিকে (সম্পূর্ণ সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হয়েছে) একটি নজরদারি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যদিও কেউ কেউ বলবেন তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি নিখাদ নয় এবং সেটা গুপ্তচরবৃত্তির মতো, তবুও যদি আমরা ধরে নিই যে উদ্দেশ্য নিখাদ, তাহলে তাদের নজরদারি সাধারণ জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। এটি আরও সুস্পষ্ট হয় যখন দেখা যায়, বিশেষভাবে কিছু কর্মী নিয়োগ করা হয় ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং যেকোনো বেআইনি কার্যকলাপ রিপোর্ট করার জন্য। ফলে এই ফুটেজ নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃত নয় কারণ এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুরক্ষা এবং এটি একটি বিশ্বস্ত উৎস থেকে আসে। তবে, পরে এই বিষয়ে একটি যুক্তি তুলে ধরা হবে যে কীভাবে সরকার পক্ষ থেকেও ফুটেজ বিকৃত করা যেতে পারে।
পিরামিডের পরবর্তী স্তরে রয়েছে পুলিশ এবং কাউন্সিল, যাদের উদ্দেশ্যও সাধারণ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পেশাদার এবং নিখাদ। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, যেমন আমেরিকান পুলিশ বনাম ব্রিটিশ পুলিশের প্রসঙ্গ যেখানে [http://news.sky.com/story/1633328/scots-police-teach-us-cops-how-to-avoid-gun-use/ ব্রিটিশ পুলিশ আমেরিকান পুলিশকে কম সহিংসভাবে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখাতে হয়েছে], কারণ আমেরিকান জনগণ তাদের পুলিশের দ্বারা আতঙ্কিত বোধ করছিলেন এবং পুলিশের অতিরিক্ত অস্ত্র ব্যবহার তাদের উদ্বিগ্ন করেছিল। এতটাই যে জনগণ মনে করে যে রেকর্ড করা ফুটেজ বা ড্যাশ ক্যামেরার ভিডিও সত্য ঘটনাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না, যা ফুটেজের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে এবং এই সন্দেহ জাগে যে এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে যেন অভিযুক্ত পুলিশের বদলে ভুক্তভোগীকেই দোষী প্রমাণ করা যায়। [http://www.huffingtonpost.com/news/police-brutality/ হাফিংটন পোস্ট] এই বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়েছে এবং [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] নামক একটি আন্দোলনের কথাও বলেছে। তবে পুলিশের নজরদারি উদ্দেশ্যগতভাবে ভালো হওয়ার কথা, কারণ এটি অপরাধীকে আদালতে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে।
এর নিচে রয়েছে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং ইউটিউবাররা। প্রথম দুই শ্রেণি নজরদারির জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করেন তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করতে। তাদের উদ্দেশ্যও ভালো, কারণ তারা শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এটি ব্যবহার করেন এবং ফুটেজ মূলত বিকৃত থাকে না। তবে এটি কিছুটা অস্পষ্ট, কারণ এটি সেই স্তর যেখানে নজরদারি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির জন্য করা হয়। তাই উদ্দেশ্য নির্ধারণ কিছুটা কঠিন, তবে তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ফুটেজ বিকৃত না রাখার প্রবণতা থাকবে, যেমন কোনো আইনি মামলা হলে এটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে ইউটিউবারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও আকর্ষণীয়। ইউটিউবারদের উদ্দেশ্য সাধারণত স্বচ্ছ হলেও কখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জনগণকে বিনোদন দেওয়া (পিরামিডের নিচের স্তর), তথ্য সরবরাহ করা বা সমাজের নির্দিষ্ট ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা। এটি প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, যেগুলো হয় হাস্যরস সৃষ্টি করে বা সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে, যেমন বিপদে মানুষের সাহায্য না করার প্রবণতা। ইউটিউবারদের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা সেলিব্রিটি হলেও সাধারণ মানুষের মতোই মনে হয়, কারণ আমরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন দেখতে পাই। কিন্তু তারপরও তারা কিছুটা উচ্চতর অবস্থানে থাকে। যেমন, তারা একটি প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে পারে, যা অন্য কেউ পারত না। এখানেই নজরদারি ও সুসভেইলেন্সের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইউটিউবারদের যখন দেখা যায় তারা গোপনে সাধারণ মানুষকে ধারণ করছে, তখন এটি একধরনের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের সীমারেখা আরও অস্পষ্ট হয়।
এর আগে আলোচনা হয়েছিল যে সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্স ফুটেজ বিকৃত এবং অ বিকৃত — এই দ্বন্দ্বে উপনীত হয়, যা আবার ‘উদ্দেশ্য’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর একটি উদাহরণ হলো স্টোকস ক্রফটে ‘অ্যান্টি-টেস্কো’ ঘটনা। সেখানে, গণমাধ্যম একটি দাঙ্গার খবর প্রচার করে যেখানে সাধারণ মানুষ টেস্কো সুপার মার্কেট স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। পরে ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওগুলো থেকে জানা যায় যে দাঙ্গা আসলে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল, যা সাধারণ জনগণের প্রাথমিক দাবিকে সমর্থন করে।<ref>http://m.nms.sagepub.com/content/17/5/755</ref> পিরামিডের শীর্ষে সরকারের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজই হওয়া উচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃতহীন, যেহেতু এটি কেবল জনগণের সুরক্ষার জন্যই রয়েছে। তবে এই যুক্তির বিরোধী যুক্তি হতে পারে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফুটেজ থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয় বা কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা আদালতে দেখানো হয় যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এটি অবশ্য তাত্ত্বিক, তবুও এটি একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে যে কীভাবে সরকার এই ফুটেজ ব্যবহার করে ভুল ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে। এটি আবার উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ আদালত সিসিটিভি ফুটেজকে প্রায়শই নির্ভরযোগ্য বলে ধরে নেয়, যদিও তা নাও হতে পারে। অন্যদিকে ইউটিউবার ও সুসভেইলেন্সের ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, জনগণ নিজেরাই জানে যে তাদের ফুটেজে বিকৃতি ঘটানো যেতে পারে কারণ এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং উদ্দেশ্য সবসময় স্পষ্ট নয়। যেমন [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] ও [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] – তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা জনগণকে গোপনে ধারণ করে সমাজের কিছু দিক উন্মোচনের নামে জনগণকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তবে ইউটিউব এবং জনগণের ফুটেজ কখনো কখনো আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারে কারণ অনেক সময় জনসাধারণ নির্দিষ্ট ঘটনাকে সত্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও ধারণ করে। এর উদাহরণ আবার [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। সেখানে আমেরিকার সাধারণ মানুষ পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করছে কারণ তারা মনে করে সরকার পক্ষের ফুটেজ বিকৃত বা অবিশ্বস্ত এবং তাদের ভিডিও বেশি নির্ভরযোগ্য। অধিকাংশ সংস্কৃতিতে কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব থাকে, যার ফলে জনগণ সরকারিভাবে রেকর্ডকৃত ফুটেজের চেয়ে অপেশাদার ভিডিওকেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করে। এটি ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে জনগণ হয়তো সত্যিই সেই ফুটেজকে বেশি বিশ্বাস করে যা সরকারিভাবে নয় বরং জনগণ নিজেরাই ধারণ করেছে। সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের মধ্যে এই উদ্দেশ্য ও নির্ভরযোগ্যতার বিতর্ক পিরামিডের স্তরগুলোর মাঝে একটি জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
সুসভেইলেন্সের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে এবং [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ সপ্তম সপ্তাহের বক্তৃতা]-এর আলোকে দুটি ইউটিউবার ব্রিয়া ও ক্রিসির একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি উঠে আসে, যারা প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত কপিরাইট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ছেন। ক্রিসি যখন আঠারো বছর বয়সে ছিলেন, তখন তার প্রাক্তন প্রেমিক তার অজান্তে তাদের যৌন সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে এবং তা কিছু ওয়েবসাইটে আপলোড করে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কপিরাইট ইস্যু এখানেই আসে, কারণ ক্রিসি কখনোই এই ভিডিও ধারণে সম্মতি দেননি এবং তিনি ঘটনাটি মনে করতে পারছেন না কারণ তাকে অ্যালকোহল খাইয়ে মাতাল করা হয়েছিল। তবুও ফুটেজের মালিকানা তার নয়, কারণ এটি তার প্রেমিকের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কপিরাইট আইন অনুযায়ী, যদিও এগুলো বর্তমানে হালনাগাদ হয়েছে, এই ঘটনা সেই পরিবর্তনের আগে ঘটায় এই আইন তাকে সহায়তা করতে পারছে না। ভিডিওটি সরাতে হলে তাকে কেবল তার প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ভিডিওটির মালিকানা আদায় করতে হবে। এই কপিরাইট অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই এখনও চলছে।
এই বিষয়ে [https://www.youtube.com/watch?v=xFHbuFT_sHU/ দ্য গার্ডিয়ান]-এর একটি ছোট তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল, পাশাপাশি ব্রিয়া এবং ক্রিসির ভ্লগও ছিল। এছাড়াও তাদের [https://www.generosity.com/fundraising/revenge-porn-victim-seeks-justice/ পৃষ্ঠার] একটি লিঙ্ক রয়েছে। সেখানে তাদের গল্পটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইউটিউব দম্পতিকে নিয়ে এই কেস স্টাডিটি উদ্দেশ্য সম্পর্কিত অংশের সঙ্গেও সম্পর্কিত, কারণ ক্রিসির প্রাক্তন প্রেমিক তাকে তার সম্মতি ছাড়াই ভিডিও করেছিল, যার পেছনে ছিল অসৎ উদ্দেশ্য। এর অর্থ দাঁড়ায়, এই সুভেইলেন্সটি ছিল ক্ষতিকর এবং এটি নজরদারিতে পরিণত হয়, যেহেতু ক্রিসি জানত না যে তাকে ভিডিও করা হচ্ছে। ক্রিসির জন্য এই ভয়ানক অভিজ্ঞতাটি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারের] সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। সেখানে অনলাইন পরিচয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কারণ তার সুনাম এবং অনলাইন সত্তা এই একটি ভিডিওর কারণে খারাপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তিনি স্মরণ করেছেন, যারা তাকে একজন আদর্শ হিসেবে দেখতেন, তারা যখন ভিডিওটি আবিষ্কার করলেন, তখনই তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গেল। তরুণদের জন্য ইতিবাচকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে যেভাবে তিনি এতদিন ধরে চেষ্টা করেছিলেন, সেই অনলাইন পরিচয় একটি ভয়ানক ভিডিওর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। এটি আলোচিত বিষয়ে সম্পর্কিত, কারণ যদিও এখানে ইউটিউবকে একটি ইতিবাচক সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, তবে যদি উদ্দেশ্য খারাপ বা অস্পষ্ট হয়, তবে এটি নেতিবাচকও হয়ে উঠতে পারে।
সবশেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্স অবশ্যই লেকচারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং ইউটিউবকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়। [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারে] অনলাইন পরিচয় নিয়ে জিজি এ. পাপাচারিসির <ref>Zizi A. Papacharissi, 'A Private Sphere' in Private Sphere : Democracy in a Digital Age, (2013)</ref> একটি লেখা ছিল যেখানে ব্লগিং (পৃষ্ঠা ১৪৪) এবং ইউটিউব (পৃষ্ঠা ১৫০)-এর কথা বলা হয়েছে। বইটি ইউটিউবকে এমন একটি স্থান হিসেবে বর্ণনা করেছে যেখানে “তোমাকে কী করতে হবে তা বলে না” (পৃষ্ঠা ১৫০) এবং যেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়বস্তু থাকে, “ইউটিউবের অনেক গোত্র”-এর উল্লেখ রয়েছে (পৃষ্ঠা ১৫০)। এই ‘গোত্রগুলি’ তাদেরকে বোঝাতে পারে যারা LGBT ইউটিউবার, যাদের অন্য কোথাও স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ নেই, তাই ইউটিউব তাদের একটি জায়গা দেয় নিজস্বভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের প্রকাশ করার জন্য। এতে আরও বলা হয়েছে “ইউটিউব একটি বিকল্প মতপ্রকাশের মাধ্যম, যা প্রচলিত আন্দোলন, মতপ্রকাশ বা প্রতিবাদের চেয়ে আলাদা... কিছু ভিডিও শুধু ব্যঙ্গ, রসবোধ বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের জন্ম দেয়, যা সমান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা ও মতপ্রকাশের মাধ্যম” (পৃষ্ঠা ১৫১)। এটি অনলাইন পরিচয়ের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ ইউটিউব মানুষকে তাদের পরিচয় অনলাইনে প্রকাশ করতে দেয় বা অন্যদের দ্বারা তাদের পরিচয়কে উপস্থাপন করতে দেয়, যার ফলে এক ধরণের কমিউনিটি গড়ে ওঠে যেখানে মানুষ নিজেদের মত অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত অনুভব করে। ইউটিউবকে ভালো মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করার এই ধারণা ব্যাখ্যা করে কেন সুভেইলেন্স এখানে বিকশিত হয়েছে, কারণ মানুষ এখানে যা ইচ্ছা তা করতে এবং তৈরি করতে পারে এবং এটি নিজেই সুভেইলেন্স, কারণ তারা নিজেরাই ক্যামেরার সামনে সচেতনভাবে রেকর্ড করছে।
নজরদারি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ চতুর্থ সপ্তাহের] “অলওয়েজ অন” লেকচারের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ সেখানে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে আমরা সবসময় কোনো না কোনো প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত আছি, যেমন সিসিটিভি ফুটেজ সর্বদা আমাদের ওপর নজর রাখছে এবং আমাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। “হিউম্যানিটি বনাম নজরদারি” অংশে বলা হয়েছে, কিভাবে সাধারণ মানুষ এখন এমন অ্যাপ কিনতে পারে যা দিয়ে অন্যদের উপর নজরদারি করা যায় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। কিন্তু সবার উপর এই ক্রমাগত নজরদারি “একটি অনলাইন সত্তা” তৈরি করে, যা দ্বিতীয় সপ্তাহের আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ অধিকাংশ মানুষ জানে না যে তাদের রেকর্ড করা হচ্ছে, তবুও এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা দৃশ্যমান এবং তাদের এমন একটি দিক তুলে ধরা হয় যা আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)। ড্যানাহ বয়েড <ref>danah boyd, Participating in the always-on culture in The Social Media Reader by Michael Mandiberg, (2012)</ref> “অলওয়েজ অন” থাকার বিষয়ে বলেন, “এটি আর শুধু অন বা অফ থাকা নিয়ে নয়। এটি এমন একটি পৃথিবীতে বসবাস করা যেখানে যখনই ও যেখানেই প্রয়োজন, তখনই মানুষ এবং তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়।” (পৃষ্ঠা ৭১-৭২) বয়েড এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেও এটি নজরদারির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ সাধারণ মানুষ জানে যে তাদের চারপাশে সিসিটিভি রয়েছে, কিন্তু তারা যেন সেটি নিয়ে ভাবিত নয়, যদিও এটি তাদের রেকর্ড করছে / তাদের অনলাইন প্রোফাইলের আরেকটি অংশ তৈরি করছে।
[http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ অষ্টম সপ্তাহের লেকচারে] আলোচিত "কগনিটিভ সারপ্লাস" এর প্রসঙ্গে সুভেইলেন্স অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে মানুষের হাতে অনেক অবসর সময় রয়েছে, যেহেতু শ্রমিকশ্রেণির কাজকর্মে প্রযুক্তি স্থান নিয়েছে। দেয়া উদাহরণগুলো প্রধানত গেমারদের যারা কঠিন পরিস্থিতিতে গেম সম্পন্ন করেছেন। তবে এটি সুভেইলেন্সের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত, কারণ এই বাড়তি সময় না থাকলে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম এবং সুভেইলেন্সের চর্চা সম্ভব হতো না; যেমন ব্লগিং, ডেইলি লাইফ ভিডিও তৈরি কিংবা সমাজ নিয়ে মন্তব্য ইত্যাদি।
এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ নতুন মাধ্যম যুগে। সেখানে নজরদারি এবং সুভেইলেন্স উভয়েরই কার্যকারিতা রয়েছে। ব্যবহারকারীরা তাদের ভিডিওগুলো অনলাইনে স্বাধীনভাবে শেয়ার করার মাধ্যমে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুহূর্তেই সারা পৃথিবীতে পৌঁছে যায়, তা সরকার চাইলেও হোক বা না চাইলেও। এই চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা উচ্চস্তরের কর্মকাণ্ড তদারকির সুযোগ পায়, অন্যভাবে বললে, ''অসংখ্য মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করে''। উদাহরণস্বরূপ, [[w:২০১৩-এর_বোস্টন_ম্যারাথন_বোমা_হামলা|২০১৩ সালের বোস্টন ম্যারাথন বোমা হামলা]] চলাকালীন বিপুল পরিমাণ ছবি ও ভিডিও Vine, Facebook, YouTube প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যম সাইটে আপলোড করা হয়, যা পুলিশি তদন্তে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক ছিল।<ref>Biddinger, P. D., Baggish, A., Harrington, L., d'Hemecourt, P., Hooley, J., Jones, J., ... & Dyer, K. S. (2013). Be prepared—the Boston Marathon and mass-casualty events. New England journal of medicine, 368(21), 1958-1960.</ref> অন্যদিকে, সুভেইলেন্সের সুযোগে অল্পসংখ্যক মানুষও ইউটিউবের মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি ব্যবহারকারীর সামাজিক মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে, যেমন [https://sumall.com/ SumAll], [http://www.thoughtbuzz.com/ ThoughtBuzz] এবং GraphDive। সাধারণত এই তথ্য সংগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মার্কেটিং ও গ্রাহকসেবা কার্যক্রমে ব্যবহারকারীদের মৌলিক তথ্য, শখ, যোগাযোগ, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি কাজে লাগানো।
== আইন ও বিধিনিষেধ ==
[http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Definition সংজ্ঞা] অনুযায়ী, নজরদারি হলো তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। যেহেতু কোম্পানি এবং সরকার বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে, যেমন যোগাযোগ তথ্য এবং তার বিষয়বস্তু, তাই নজরদারির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং গোপনীয়তার ক্ষতি ঠেকাতে আইন ও বিধিনিষেধ থাকা আবশ্যক। হাউস অফ লর্ডস কনস্টিটিউশন কমিটি বলেছে: 'নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জাতির জীবনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক নজরদারি গোপনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।' [http://www.theregister.co.uk/2009/02/06/lords_reject_government_data/]
একটি আচরণবিধি রয়েছে, যা স্টেট সেক্রেটারির পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। সেখানে নজরদারি ক্যামেরা সিস্টেম কীভাবে যথাযথভাবে ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ([http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Protection_of_Freedoms_Act_2012 ২০১২ সালের ফ্রিডম সুরক্ষা আইন] এর ধারা ৩৩)।
==== নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধি ====
নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধ <ref>Surveillance Camera Code of Practice. Retrieved from: Surveillance Camera Code of Practice, 2013, London: The Stationery Office</ref> নির্দেশনা প্রদান করে যাতে নজরদারি প্রযুক্তিগুলো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। যেন সেগুলো মানুষের ও সম্পদের নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই আচরণবিধির উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা এবং এই আস্থা তৈরি করা যে ক্যামেরাগুলো কেবলমাত্র তাদের সুরক্ষার জন্যই স্থাপন ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কোডটি এমন নির্দেশনা দেয় যাতে নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার স্বচ্ছ ও বোধগম্য হয়। তবে এই কোড শুধুমাত্র তাদের উপরই প্রযোজ্য যারা জনসমক্ষে স্থাপিত নজরদারি প্রযুক্তি বা ক্যামেরা ব্যবহার করে।
==== উদাহরণ ====
নজরদারির কথা বললে, [[w:September 11 attacks|৯/১১ হামলার]] পর আমেরিকান সরকারকে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে আমেরিকান সরকার ''[https://www.justice.gov/archive/ll/highlights.htm প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট]'' এবং ''[https://www.dhs.gov/homeland-security-act-2002 হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট]'' প্রণয়ন করে। সেখানে প্রয়োজনে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে।<ref>Kennedy, S. S. (2015). Congressional Investigations. The Encyclopedia of Civil Liberties in America, 213.</ref> তবে এই আইনগুলোর জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনা করেছে। ''জার্মান মিডিয়া আইন'' বিশ্বে প্রথম আইন যা ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে বলা হয়েছে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকতে হবে।<ref>Spindler, G. (2014). Social Networks and Liability—the Difficult Triangle Between Network Operators, Users and Third Parties in German Media Law. In Varieties of European Economic Law and Regulation (pp. 863-892). Springer International Publishing.</ref>
১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক গোপনীয়তা তথ্য কেন্দ্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে একটি বৈশ্বিক গোপনীয়তা জরিপ প্রকাশ করে থাকে, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত গোপনীয়তা প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়। গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার প্রতিবেদন (প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল ২০০৭ক)৭৫টিরও বেশি দেশে নজরদারি এবং গোপনীয়তা রক্ষার অবস্থা মূল্যায়ন করে।
‘গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটি মানব মর্যাদা এবং মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা ইত্যাদি মূল্যের ভিত্তি। এটি আধুনিক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার হয়ে উঠেছে।<ref>Karen Lawrence Öqvist (2008) 'All in the Name of National Safety' in Virtual Shadows Your privacy in the information society, Swindon: The British Computer Society, p.110.</ref>
সেই অনুযায়ী, ইউরোপে তথ্য গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপাত্ত গোপনীয়তা নির্দেশিকা (৯৫/৪৬/EC) দ্বারা সমর্থিত। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের উচিত একটি গোপনীয়তা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা যাতে এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে রয়েছে তথ্য সুরক্ষা আইন ১৯৯৮ (তথ্য কমিশনারের কার্যালয় ১৯৯৮)। যুক্তরাজ্যের যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের সরকারে নিবন্ধন করতে হয় এবং তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
==== টেলিফোন কোম্পানির জন্য আইন ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের আদালত নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তা সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকারকে গোপনীয়তা অধিকারের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিষেবা প্রদানের সময় সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের বা প্রকাশের জন্য গ্রাহকের অনুমতি নিতে হয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেগুলেশন কোডের টাইটেল ৪৭, ধারা ৬৪.২০০৫)[https://www.law.cornell.edu/cfr/text/47/64.2005]। অবৈধভাবে অনুসৃত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ প্রকাশ করা যেতে পারে (মার্কিন কোডের টাইটেল ১৮, ধারা ২৫১১)[https://www.law.cornell.edu/uscode/text/18/2511] এবং অননুমোদিতভাবে ব্যবহারকারীর ফাইল অনলাইনে প্রবেশ নিষিদ্ধ (১৯৮৬ সালের মার্কিন ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্রাইভেসি অ্যাক্ট)[https://it.ojp.gov/privacyliberty/authorities/statutes/1285]। এই শর্তগুলো শিল্পোত্তর গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিগত তথ্যের দুর্বলতাকে সরাসরি স্বীকৃতি দেয়। তবে, আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এসব নিয়মাবলী বেসরকারি খাতে সংগৃহীত সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ১৯৯৯ সালের ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী আরও কঠোর নিয়মাবলী অনুসরণ করে যা ভোক্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে [http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents]। এই নির্দেশিকা ভোক্তা তথ্যের উপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং বিদেশি বাণিজ্য অংশীদারদের সমান মানের সুরক্ষায় আবদ্ধ করে <ref>Lee, Laurie Thomas (2000). Privacy, security and intellectual property. In Alan B. Albarran & David H. Goff (eds.), Understanding the Web: Social, Political, and Economic Dimensions of the Internet (pp. 135–64). Arnes: Iowa State University Press</ref>)। যদিও ব্যক্তিগত তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ থেকে যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা না থাকলে অন্য দেশে স্থানান্তর নিষিদ্ধ, তবে বিশ্বায়িত ব্যবসার প্রকৃতিগত কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির মাধ্যমে গোপনীয়তা বিধানের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক কোম্পানির সাথে ব্যবসা করতে পারে (যেমন: লি, ২০০০)। এই চুক্তিগুলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে আইনি সুরক্ষার চেয়ে অগ্রাধিকার না দিলে, তথ্যের অপব্যবহার এড়ানো অসম্ভব।<ref>Zizi A. Papacharissi, A Private Sphere: Democracy in a Digital Age, pp.43-44.</ref>
==== বিধিনিষেধ ====
সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি পরিচালনার জন্য কিছু শর্ত পূরণ নিশ্চিত করতে [[w:Data Protection Act 1998|ডেটা সুরক্ষা আইন ১৯৯৮]]-এর মাধ্যমে কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এই বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে:
# চিত্র ধারণকারী ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণ করা
# তৃতীয় পক্ষের কাছে উপকরণ প্রকাশ না করা
# উপকরণ যতদিন প্রয়োজন ততদিন সংরক্ষণ করা
# পরিচয় নিশ্চিত করা, অর্থাৎ নজরদারি ক্যামেরা চালু রয়েছে তা জানানো<ref>Data Protection Act. In 'legislation.gov.uk´. Retrieved from http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents/enacted .</ref>
এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, ভিডিও উপকরণ কেবল তখনই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে যদি সিসিটিভি আইনগত বিধিনিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যদি সিসিটিভি অপরাধ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়ে থাকে, তবে অপারেটররা প্রয়োজনমতো উপকরণ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
==== খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল ====
[[w:Draft Investigatory Powers Bill|খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল]] যুক্তরাজ্যের সংসদের একটি যৌথ কমিটির দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়। এটি ক্ষমতাধর সংস্থা এবং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি তিনটি পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ক্ষমতাধর সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য সংস্কার প্রস্তাব করে। তদুপরি, তারা গ্যারান্টির একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দেয় যাতে আইন মেনে চলা নিশ্চিত হয়।
খসড়া বিলের তিনটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে:<ref>Draft Investigatory Powers Bill. Retrieved from: https://www.gov.uk/government/uploads/system/uploads/attachment_data/file/473770/Draft_Investigatory_Powers_Bill.pdf</ref>
# এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা ও [[w:Intelligence agency|গুপ্তচর সংস্থার]] যেসব ক্ষমতা ইতোমধ্যে রয়েছে, সেগুলোকে একত্র করবে। এটি যোগাযোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এসব ক্ষমতাকে স্পষ্ট ও বোধগম্য করে তুলবে।
# এটি অনুমোদন ও তদারকি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে এবং [http://definitions.uslegal.com/i/intercept-warrant/ অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্ট]-এর জন্য একটি ‘ডাবল-লক’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে, যাতে সেগুলো কেবল বিচারকের অনুমোদনের পরই কার্যকর হয়। এর ফলে, এক নতুন তদন্তকারী ক্ষমতা কমিশনার (IPC) নিযুক্ত করা হবে যিনি এই ক্ষমতাগুলো আইন অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা তদারকি করবেন।
# এটি নিশ্চিত করবে যে সমস্ত ক্ষমতা ডিজিটাল যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইন্টারনেট সংযোগ রেকর্ড (ICRS) সংরক্ষণের বিধান প্রদান করবে, যা কোনো ডিভাইসের দ্বারা প্রবেশ করা ইন্টারনেট সেবাসমূহের রেকর্ড।
==== 'তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল' ====
তদন্তকারী ক্ষমতা বিলের উপাদানগুলো অপব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য একজন পর্যবেক্ষক দরকার। [[w:Investigatory Powers Tribunal|তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল]] নামে একটি কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি সরকারের কাছ থেকে স্বাধীন, যার কাজ হচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো যেন মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে তা নিশ্চিত করা। কেউ যদি মনে করে তারা বেআইনি কার্যক্রমের শিকার হয়েছে, তবে তারা ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে অভিযোগ দাখিল করতে পারে এবং ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি যাচাই করে দেখবে।<ref>The Investigatory Powers Tribunal. Retrieved from : http://www.ipt-uk.com/section.aspx?pageid=1</ref>
==== ২০১৪ সালের তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
যুক্তরাজ্যের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনে, পার্লামেন্ট ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন পাস করে যাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো টেলিফোন ও ইন্টারনেট রেকর্ডে প্রবেশের পূর্বতন ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। এই আইন কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করেনি, তবে এটি স্পষ্ট করেছে যে, বিদেশে অবস্থিত কিন্তু যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপরও এই আইন প্রযোজ্য।
এই আইন 'ডেটা রিটেনশন (ইসি নির্দেশিকা) রেগুলেশন ২০০৯' (S.I. 2009/859) প্রতিস্থাপনের জন্য গৃহীত নতুন আইন প্রবর্তনের ক্ষমতা প্রদান করে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত সুরক্ষার বিধানও রাখে। এই আইন কার্যকর করা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, যুক্তরাজ্যে যেসব কোম্পানি যোগাযোগ সেবা প্রদান করে তারা রাষ্ট্র সচিবের অনুরোধ অনুযায়ী যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্টে সাড়া দিতে বাধ্য হয়।<ref>Data Retention and Investigatory Powers Act 2014. Retrieved from: http://www.legislation.gov.uk/ukpga/2014/27/notes/division/2</ref> এই আইনের উপাদানগুলো বিদ্যমান কাঠামোকে ব্যাখ্যা ও দৃঢ় করে।
==== ২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইন ====
২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইনে সরকারি ডেটাবেসে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ধারণ ও ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
* এটি পুলিশ কর্তৃক আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করে
* এই আইন নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার জন্য একটি আচরণবিধি প্রবর্তন করে, তবে কেবল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত নজরদারির বিচারিক অনুমোদনের জন্য
* এটি তথ্যের স্বাধীনতা অধিকারের সম্প্রসারণ ঘটায়, যার অধীনে ডেটাবেসগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী ফরম্যাটে উন্মুক্ত করতে হবে
* এটি কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ক্ষমতার জন্য একটি আচরণবিধি সরবরাহ করে, যেখানে এই ক্ষমতাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিলযোগ্য
যুক্তরাজ্যের ডেটা সুরক্ষা আইন (DPA) আপনাকে একটি তথ্য বিষয় হিসেবে আপনার উপর কী সংরক্ষিত রয়েছে এবং কে সংরক্ষণ করছে তা জানার অধিকার প্রদান করে। এই আইনে স্বচ্ছতার অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর অর্থ, একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেটি সরাসরি আপনার পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত, তা সরকার বা অন্য যেকোনো সংস্থা সংরক্ষণ করলে আপনি তা জানার অধিকার রাখেন। আপনাকে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে এবং আপনার অনুরোধ যৌক্তিক হলে তারা তা মেনে চলতে বাধ্য।<ref>Öqvist, 2008 p.112</ref>
==== ২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন (আরআইপি বা আরআইপিএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন যা সরকারি সংস্থাগুলোকে নজরদারি ও তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ডাকযোগে যোগাযোগের বিষয়বস্তু অনুসরণ; যোগাযোগের বিষয়বস্তু ছাড়া অন্যান্য তথ্য (যেমন যোগাযোগের ধরন, ফোন নম্বর, ইন্টারনেট ঠিকানা, ডোমেইন নাম, ডাক ঠিকানা, তারিখ, সময় ও সময়কাল) সংগ্রহ; গুপ্তচর, তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী অফিসার ব্যবহার; ব্যক্তিগত ভবন ও যানবাহনে ইলেকট্রনিক নজরদারি; কাউকে অনুসরণ করা; এবং এনক্রিপ্ট করা ডেটা অ্যাক্সেস করা।
==== ১৯৮৪ সালের টেলিকমিউনিকেশন আইন ====
টেলিকমিউনিকেশন আইন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত একটি বিধান, যার অধীনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়:
* ব্রিটিশ টেলিকমকে বেসরকারিকরণ
* ভোক্তার স্বার্থ ও বাজার প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্য 'Oftel' নামে একটি টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা
* টেলিকমিউনিকেশন পরিচালনা কিংবা অন্য কোনো সিস্টেমের সাথে সংযোগ করার জন্য লাইসেন্স প্রবর্তন করা। লাইসেন্স ছাড়া তা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়
২০১৪ সালের এপ্রিলে হাউস অফ কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিবেদনে টেলিকমিউনিকেশন আইন ১৯৮৪-এর অধীনে যোগাযোগ তথ্য সংগ্রহ এবং এই ক্ষমতার তদারকির অভাব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
== মানবতা বনাম নজরদারি ==
=== মানবতার পক্ষে যুক্তি ===
"নজরদারি নিয়ে আলোচনায় একটি প্রধান রাজনৈতিক উদ্বেগ হলো: নিরাপত্তার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ ও নতুন নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার কি জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ বইয়ের মত একটি দমনমূলক সর্বনিয়ন্ত্রিত সমাজ নিয়ে আসছে?"<ref>[http://www.worldcat.org/title/our-biometric-future-facial-recognition-technology-and-the-culture-of-surveillance/oclc/630468338 Our Biometric Future: Facial Recognition Technology and the Culture of Surveillance].</ref> নজরদারি ক্যামেরাগুলো প্রতিটি রাস্তার কোণায়, প্রতিটি পাব-এ, প্রতিটি গণপরিবহন ব্যবস্থায় বসানো হয়েছে। এগুলো আমাদের শহরের গায়ে এবং মানুষের মানসিকতায় স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। বলা হয় যে, যুক্তরাজ্যের কোনো শহুরে এলাকায় আপনি প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে প্রায় ৩০টি নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার আওতায় পড়েন — ক্যামেরা নয়, সম্পূর্ণ ব্যবস্থা! অর্থাৎ, সেটি প্রায় ৩০০টি ক্যামেরা হতে পারে! ব্রিটিশ সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ৪ থেকে ৬ মিলিয়ন নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে। প্রযুক্তি বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং যা একসময় একটি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, এখন তা মুখ শনাক্ত করতে কিংবা আচরণ পূর্বাভাস দিতে পারে। মানবতা বনাম নজরদারি বিতর্কে আসলে কে জয়ী হচ্ছে?
এই ক্রমাগত তত্ত্বাবধান জীবনযাত্রার এমন একটি মান এনেছে যা বিগ ব্রাদারের সাথে তুলনা করা হয়। সেখানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত একজন সাধারণ নাগরিক সচেতন যে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ট্র্যাক করা হচ্ছে, অনেকটা জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ের মতো। এটি কেবল দৈনন্দিন জনসাধারণের ক্ষেত্রেই নয়, গড় ব্যক্তি তাদের ইন্টারনেট কার্যকলাপও পর্যবেক্ষণ করবে, এমনকি যদি তাদের কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকে । নজরদারি নিজেই গোপনীয়তার আক্রমণ তবে ইতিবাচক ফলাফলের সম্ভাবনা এবং ঘটনাগুলি অনস্বীকার্য। রেকর্ড করা ফুটেজগুলি আদালতের ক্ষেত্রে যেমন রাস্তার অপরাধের সাথে বা এমনকি বাড়ির মধ্যেও হতে পারে তবে এটি অজুহাত হিসাবে প্রতিটি শহর পর্যবেক্ষণ করে এমন ক্যামেরার ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকেও উত্সাহ দেয়। এটি বাড়িতে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই অজানা বিষয়ে ক্যামেরা স্থাপনের নৈতিক এবং নৈতিক বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
যদিও - বড় ভাইয়ের বিপরীতে - ফুটেজটি বড় ভাই দেখার মতো সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য নয়, এমন অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যা আপনাকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় দেখার জন্য লাইভ স্ট্রিম দেয়। নজরদারি অ্যাপ, ওয়েবক্যাম ভিউয়ার, লাইভ ক্যাম, আইএসপি ক্যামেরার মতো অ্যাপগুলি নজরদারি হ্যাক করতে সহায়তা করতে পারে এবং আপনাকে এটি দেখতে দেয়। এটি "নজরদারি কি আসলেই আমাদের নিরাপদ রাখছে?" এই ধারণার সাথে লিঙ্ক করে। স্পষ্টতই যদি আপনি এমন কোনও অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে লাইভ ফুটেজ দেখায়। আপনি অপরিচিত সহ যে কারও উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারেন যার কাছ থেকে আপনি আক্রমণ করতে বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ্লিকেশন যেমন লাইভ ক্যাম (যা দেখার জন্য ২৯৮০ লাইভ ক্যামেরা উপলব্ধ) এমনকি আপনাকে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অভ্যন্তরে দেখার অনুমতি দেয় যদিও আপনাকে রিয়েল টাইমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি দিক দেখানোর জন্য দুর্দান্ত - এটি খুব বিরক্তিকরও। যে কেউ আপনাকে যে কোনও কিছু করতে দেখতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে স্কুল ও পার্ক দেখতে পারা। যদিও উদ্দেশ্যটি কেবল আপনার সন্তানের দিকে নজর রাখা হতে পারে যাতে তারা সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য, যে কেউ দেখতে পারে। এটি পেডোফাইল এবং অন্যান্য ঘৃণ্য ফেটিশ লোকেদের তাদের ফোনের মাধ্যমে যে কোনও জায়গায় দেখার জন্য উন্মুক্ত অ্যাক্সেস দেয়। এখানে এখন আর নিরাপত্তার বোধ নেই। আপনার যদি খাঁটি উদ্দেশ্য থাকে তবে আপনি এটিকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি সহজ অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে দেখতে সক্ষম হতে পারেন তবে প্রত্যেকেরই খাঁটি উদ্দেশ্য নেই এবং এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি কখনও কখনও জনসাধারণের 'গুপ্তচরবৃত্তি' হওয়ার ধারণার সাথে বিবাদে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা হতে পারে, একই সাথে শহর ও শহরগুলিতে অপরাধ বা বিপদ থেকে সুরক্ষিত এবং নিরাপদ বোধ করতে চায়। সাধারণ জনগণও তাদের মুখ রেকর্ড করা এবং ভবিষ্যতে নজরদারির জন্য ফাইল করা নিয়ে ক্লান্ত। অনলাইনে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা যে কারও পক্ষে সহজলভ্য - যা করা দরকার তা হ'ল প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন ফলাফলের জন্য গুগলে দ্রুত অনুসন্ধান করা। এই স্বাচ্ছন্দ্য এবং দ্রুততা যে কেউ কখনও একটি পাবলিক এলাকায় হয়েছে যে কেউ উদ্বেগজনক হওয়া উচিত। এটা শুধু সরকারি ব্যবহারের জন্য নয়, যদি থাকত, তাহলে এত সহজে পাওয়া যেত না। যাইহোক, এটি অনস্বীকার্য যে নজরদারি, যদিও অনুপ্রবেশকারী এবং বিরক্তিকর, জনসাধারণের সুরক্ষার জন্য এবং ফৌজদারি মামলায় প্রমাণকে ক্ষতিকারক করার জন্য একটি প্রয়োজনীয়তা কারণ এটি প্রকৃত ঘটনার অনস্বীকার্যভাবে সত্য ফুটেজ সরবরাহ করে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে বিঘ্ন বা দুর্ঘটনা বন্ধ করার অভিপ্রায় নিয়ে পুলিশের মতো জরুরি পরিষেবাগুলির প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করা উচিত।
আসলেই কি এত ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা আছে? সমাজ সর্বদা নজরদারির অবিচ্ছিন্ন নজরদারি সহ্য করেছে কারণ এটি আমাদের মধ্যে ড্রিল করা হয়েছে যে এটি আমাদের সুরক্ষার জন্য। এই যুক্তি কতদিন প্রাসঙ্গিক থাকতে পারে? যদি তারা সিস্টেমগুলি আপগ্রেড করতে পছন্দ করে যাতে তারা কেবল দেখার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে পারে, যদি তারা আসলে মানুষের কথোপকথন শুনতে শুরু করে এবং আপনার জন্য নজর রাখতে এবং আপনি ঠিক কী করেন তার দিকে মনোনিবেশ করার জন্য মুখের স্বীকৃতি সঞ্চয় করতে সক্ষম হন, তবে এটি কি সত্যিই আমাদের সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত?
যাইহোক, আপনি লক্ষ্য করেছেন, ইদানীং প্রযুক্তির বৃদ্ধি সত্ত্বেও, সিসিটিভি সিস্টেমে কোনও আপগ্রেড হয়নি - অন্তত বিস্তৃত দিক থেকে। এটি হতে পারে কারণ যদি তারা আপগ্রেড করা হয় তবে লোকেরা তাদের আরও লক্ষ্য করবে। আমরা সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা পাস করতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আমরা তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে এতটাই অসচেতন হয়ে পড়েছি যার ফলে মানুষের আচরণের আরও স্বাভাবিক পাঠ তৈরি হয়। শুধু যুক্তরাজ্য জুড়েই ৪০ থেকে ৬০ লাখ ক্যামেরা থাকায় সব কিছু আপগ্রেড করতে গেলে বোমা খরচ হবে- যা সরকার লুকাতে পারবে না। এটি সন্দেহ তৈরি করে যে সম্ভবত তারা তাদের আপগ্রেড করতে যাচ্ছে না (ব্যয়ের কারণে নয় যদিও এটিও একটি সার্ভারের সমস্যা) তবে যাতে তারা জনসাধারণকে অসচেতন রাখতে পারে যে তারা আসলে কতবার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটি এই ধারণার সাথে লিঙ্ক করে যে আমরা কি আসলে ক্যামেরা দ্বারা সুরক্ষিত হচ্ছি? তাদের মধ্যে কিছু ১৫-২০ বছরের পুরানো এবং এখনও অ্যানালগ সিস্টেমে চলছে, তারা কীভাবে আমাদের রক্ষা করতে পারে? অথবা আরও ভাল প্রশ্ন হতে পারে মানবতা বনাম নজরদারি নিয়ে: মানবতার কণ্ঠস্বর কোথায়?
তার মানে এই নয় যে, সব সিসিটিভি ক্যামেরাই পুরনো। প্রকৃতপক্ষে, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে সিসিটিভি সিস্টেমটি যুক্তরাজ্যের অন্যতম অত্যাধুনিক এবং একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ব্যক্তির গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিস্টেমটি প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি অনন্য স্বাক্ষর বরাদ্দ করতে সক্ষম হয় যা রিয়েল টাইমে একটি ক্যামেরার পাশ দিয়ে হেঁটে যায় এবং তারপরে শহরের মধ্য দিয়ে তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করে - তবে কতজন লোক আসলে তাদের সাথে এটি ঘটছে সে সম্পর্কে সচেতন? সাধারণ মানুষ কীভাবে এই তথ্যে হোঁচট খাবে? মানবতাকে রক্ষা করার জন্য এতগুলি ক্যামেরার আসল প্রেরণা নাকি এটি কেবল আমাদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার একটি উপায়?
ধ্রুবক নজরদারি বর্ণনা করার সর্বোত্তম উপায় হ'ল "বড় ভাই প্রভাব" দ্বারা। যদিও ফুটেজটি বিগ ব্রাদারকে দেখার মতো সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য নয়, এমন অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যা আপনাকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় দেখার জন্য লাইভ স্ট্রিম দেয়। নজরদারি অ্যাপ, ওয়েবক্যাম ভিউয়ার, লাইভ ক্যাম, আইএসপি ক্যামেরার মতো অ্যাপগুলি নজরদারি হ্যাক করতে সহায়তা করতে পারে এবং আপনাকে এটি দেখতে দেয়। এটি "নজরদারি কি আসলেই আমাদের নিরাপদ রাখছে?" এই ধারণার সাথে লিঙ্ক করে। স্পষ্টতই যদি আপনি এমন কোনও অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে লাইভ ফুটেজ দেখায়। আপনি অপরিচিত সহ যে কারও উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারেন যার কাছ থেকে আপনি আক্রমণ করতে বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ্লিকেশন যেমন লাইভ ক্যাম (যা দেখার জন্য ২৯৮০ লাইভ ক্যামেরা উপলব্ধ) এমনকি আপনাকে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অভ্যন্তরে দেখার অনুমতি দেয় যদিও আপনাকে রিয়েল টাইমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি দিক দেখানোর জন্য দুর্দান্ত - এটি খুব বিরক্তিকরও। যে কেউ আপনাকে যে কোনও কিছু করতে দেখতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে স্কুল ও পার্ক দেখতে পারা। যদিও উদ্দেশ্যটি কেবল আপনার সন্তানের দিকে নজর রাখা হতে পারে যাতে তারা সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য, যে কেউ দেখতে পারে। এটি পেডোফাইল এবং অন্যান্য ঘৃণ্য ফেটিশ লোকেদের তাদের ফোনের মাধ্যমে যে কোনও জায়গায় দেখার জন্য উন্মুক্ত অ্যাক্সেস দেয়। এখানে এখন আর নিরাপত্তার বোধ নেই। আপনার যদি খাঁটি উদ্দেশ্য থাকে তবে আপনি এটিকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি সহজ অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে দেখতে সক্ষম হতে পারেন তবে প্রত্যেকেরই খাঁটি উদ্দেশ্য নেই এবং এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পরিশেষে- নজরদারি অপরাধ প্রতিরোধ করে না। ক্যামেরা অপরাধ প্রতিরোধ করে এমন কোনও শক্ত প্রমাণ নেই। এমনকি ওয়েলসের একজন পুলিশ এবং ক্রাইম কমিশনার এই সত্যের কারণে সিসিটিভি থেকে তহবিল সরিয়ে দিচ্ছেন। ২০১৫ সালে প্যারিসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার কথাই ধরুন। যতই নজরদারি করা হোক না কেন, এসব ঘটনা ঘটবে বা থামানো যাবে তা আন্দাজ করা যায়নি। বিপুল পরিমাণ ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও কারও পক্ষে একবারে সবাইকে দেখতে সক্ষম হওয়া অসম্ভব। মানবতার এত ক্যামেরার দরকার নেই, গুপ্তচরবৃত্তি এবং সুরক্ষার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম রেখা রয়েছে।
=== নজরদারি যুক্তি ===
তবে নজরদারিতে হামলা হলেও এর একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। নজরদারি সমাজকে সমর্থন করে। জনসাধারণ এর পিছনে রয়েছে, গবেষণায় ৮৪% মনে করে যে ক্যামেরা একটি মূল্যবান উদ্দেশ্য সরবরাহ করেছে। নজরদারির বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ১৬ শতাংশ সংখ্যালঘু কেবল এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি ছিল যে এই জাতীয় নজরদারির উপর নজরদারির অভাব ছিল। এটি অপরাধীদের দূরে রাখতে এবং প্রমাণ সরবরাহ করতে সহায়তা করে জনসাধারণের সুবিধার্থে এত ভালভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যে লোকেরা এটি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার চেয়ে নিরাপদ বোধ করে। সুতরাং নজরদারির জন্য যদি এত লোক থাকে তবে এই যুক্তিতে সন্দেহ কেন? কারণ আপনি কখনোই সবার কাছে তাদের ব্যক্তিগত মতামত জানতে পারবেন না। সেখানে গিয়ে প্রতিটি একক ব্যক্তি কী বিশ্বাস করে তা দেখা অসম্ভব, তবে আপনি যে সর্বোত্তম সুযোগটি পান তা হ'ল বিভিন্ন ধরণের লোককে জিজ্ঞাসা করা। আপনি সর্বদা এমন লোকদের পাবেন যারা দাবি করে যে "নজরদারি, এটি কেবল আমাদের উপর গুপ্তচরবৃত্তির সরকারী উপায়!!"
যাইহোক, এই ধারণাটি যে এটি কেবল আপনার দৈনন্দিন জীবনে আপনার উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য রয়েছে, এটি কেবল বিভ্রান্তিকর। সান্তা যেমন শিশুদের মনের মধ্যে কেবল বাস্তব - এটি সমাজের কিছু মনের মধ্যে তৈরি একটি বিভ্রম মাত্র। একটি ভয় দেখানোর কৌশল যা আপনাকে বিশ্বাস করায় যে সরকারের কেবল খারাপ উদ্দেশ্য রয়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে পরিচালিত সিসিটিভি ক্যামেরার মাত্র ৫ শতাংশ পুলিশ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয়। আমরা একটি নজরদারি রাষ্ট্র - সিসিটিভির অধীনে একটি জাতি এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভ্রান্তি বলে যুক্তি দেওয়া যেতে পারে। সিসিটিভি ক্যামেরার একটি বড় অংশ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আসে তাদের ব্যবসাকে নিরাপদ রাখার জন্য সিসিটিভি ব্যবহার করে। তাহলে অন্যান্য মানুষের নজরদারি ক্যামেরা এবং পুলিশ/সরকারের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
একটি হত্যা বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধের দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ধরতে নজরদারি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অপরাধের ঘটনাস্থল থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে কাউকে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। হ্যাঁ, একটি ক্যামেরা এলোমেলো সহিংসতা বা অপরাধের একটি কাজ প্রতিরোধ করতে পারে না তবে তারা অপরাধীদের সনাক্ত করতে এবং ধরতে সহায়তা করতে পারে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাজ্য জুড়ে সিসিটিভির বিস্তারের ঘটনাটি নিন - জেমি বুলগারকে অপহরণ করা। আমি নিশ্চিত যে আপনার মনে থাকবে মার্সিসাইড শপিং সেন্টার থেকে তার ১০ বছর বয়সী দুই খুনি শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার দানাদার ছবি। এই ছবিগুলো রাতের পর রাত টিভিতে রিপ্লে করা হয়, আইকনিক হয়ে ওঠে। যদিও তারা এই ভয়ঙ্কর অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারেনি, চিত্রগুলি এই বিশ্বাসের দিকে পরিচালিত করেছিল যে যারা এটি চালিয়েছিল তারা ধরা পড়বে।
শার্লি হেবদো হামলার সাথে ফ্রান্সের আরও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির জন্য, সিসিটিভি চিত্রের ব্যবহার পরিস্থিতি দ্রুত মূল্যায়ন করতে এবং পুলিশকে পরিস্থিতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছিল। পুলিশ এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা সিসিটিভি থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছিল যা আক্রমণকারী ভাইদের সনাক্ত করতে সহায়তা করেছিল। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত যে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল তা তাদের পক্ষে ম্যানহান্টের জন্য সংস্থানগুলি পরিচালনা করা সম্ভব করেছিল। সিসিটিভি ব্যবহার না করলে রেসপন্স টাইম স্লো হতো এবং এর সাথে কে করেছে তা ধরার সুযোগ কম থাকতো। এটি দেখায় যে সিসিটিভি এতটা খারাপ হতে পারে না। এর মতো জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা করতে সক্ষম হওয়ার জন্য, এটি স্পষ্ট যে এটির উপকারিতা রয়েছে - কেবল তাই নয়, এটি দেখায় যে এটি আসলে তার কাজ করছে। নজরদারি শুধু বড় বড় অপরাধের ক্ষেত্রেই নয়। স্পষ্টতই এটি চুরির মতো ছোট অপরাধের জন্য কাজ করে। যদি তা না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ যারা ব্যবসায়ী তারা কেন এই ধরনের ক্যামেরা ইনস্টল করার জন্য ব্যয় করবে?
অবশেষে, শেষ পয়েন্টটি গোপনীয়তার উপর থাকবে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে নজরদারি ক্যামেরাগুলি অত্যন্ত অনুপ্রবেশকারী। আমি পুরোপুরি বুঝতে পারি যে আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে কোনও ক্যামেরা আপনাকে ট্র্যাক করছে বা আপনার বাগান বা আপনার বাড়িতে উঁকি দিচ্ছে তবে এটি কতটা অস্থির বোধ করতে পারে। তবে নজরদারি ক্যামেরা বা বড় কর্পোরেশন দ্বারা ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলি সম্পর্কে চিন্তা করুন, যার বেশিরভাগই এই সংস্থাগুলির গোপনীয়তা প্রভাব মূল্যায়ন সম্পন্ন করা উচিত ছিল এবং তাদের সিস্টেমে অন্তর্নির্মিত নকশা দ্বারা গোপনীয়তা থাকবে। প্রাইভেসি ডিজাইন বলতে যা বোঝায় তা হ'ল যদি কোনও ক্যামেরা প্যান করে বা কোনও আবাসিক অঞ্চলে নজর দেয় তবে চিত্রগুলি পিক্সেলেটেড হয় যাতে অপারেটর আসলে কারও বাড়ি, বাগান বা কোনও স্কুলে দেখতে না পারে। এটি করে আপনি সাধারণ জনগণকে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর কোনও গুপ্তচরবৃত্তি না করে সুরক্ষিত রাখছেন। বড় ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত নজরদারি ক্যামেরাগুলির নামহীনতা উন্নত করার কথাও বলা হয়েছে। এর অর্থ হ'ল যে জিনিসগুলি চিত্রায়িত হচ্ছে সেগুলি মানুষের পরিবর্তে অবতার প্রদর্শন করবে - এটি ক্যাপচার করা ডেটা সম্পূর্ণরূপে বেনামী করে। যদি কোনও ঘটনা ঘটে তবে সেই চিত্রগুলি এনক্রিপ্ট করা যেতে পারে যার অর্থ হ'ল যে কেউ কোনও অপরাধ করছে না তাকে বেনামে রাখা হবে এবং এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা হবে যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে।
==== মানবাধিকার ও সম্পর্কিত বিষয়গুলির সর্বজনীন ঘোষণা[ ====
সম্পাদনা]উৎস সম্পাদনা]
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানব সমাজের প্রথম বিশ্বব্যাপী এবং ব্যাপক দলিল জারি করে - ''মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র''। এতে শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে সমস্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে নির্বিচারে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এই প্রবিধানে, সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
এ ধরনের আইন ও বিধিবিধানের মাধ্যমে নজরদারি ব্যবস্থার পরিধি সীমিত করা হয়। তবে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে জনসাধারণের যোগাযোগের চ্যানেলটি প্রতিটি নাগরিকের গোপনীয়তা প্রদর্শন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যক্তিগত কথোপকথন কর্পোরেশন, সুপারমার্কেট, ব্যাংক, রাস্তা ইত্যাদিতে ইনস্টল করা ক্যামেরা এবং রেকর্ডার দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ব্রাউজিংয়ের ইতিহাস এবং অভ্যাসগুলি নেটওয়ার্ক সরবরাহকারীদের কাছে প্রেরণ করা হবে। প্রকাশ্যে বা গোপনে মানুষের দৈনন্দিন জীবন রেকর্ড করবে স্মার্টফোন। নজরদারি ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশ। সেখানে আইনি প্রতিষ্ঠান এবং অপরাধী উভয়েরই অন্যদের নিরীক্ষণের সুযোগ রয়েছে, বিস্তৃত অর্থে মানবতা লঙ্ঘন করে।
==== উপসংহার ====
এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এটি ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে আপনি নজরদারির উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেন কিনা তবে এর পক্ষে এবং বিপক্ষে দুর্দান্ত যুক্তি রয়েছে। পুরোটাই ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। আপনি নজরদারিকে একটি খারাপ জিনিস হিসাবে দেখতে পারেন যখন এটি খারাপ উদ্দেশ্যগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে যখন এটি সাধারণ জনগণকে সুরক্ষিত রাখার সত্যিকারের উদ্দেশ্যগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তখন এটি একটি ভাল আলোতে দেখায় এবং দেখায় যে সবকিছু ঠিকঠাক রাখতে এবং মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করার জন্য আমাদের এটির প্রয়োজন।
== নজরদারি প্রযুক্তি ==
নজরদারি প্রযুক্তিগুলি মূলত ''পাবলিক ক্যামেরা'' বা ''সিসিটিভিতে'' বিভক্ত করা হয় - যা আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে, এবং ''অদৃশ্য ক্যামেরা - ইন্টারনেট''। এটি দৃশ্যমান ক্যামেরা বা অদৃশ্য ক্যামেরার সাথে সম্পর্কিত কিনা তা নির্বিশেষে, প্রযুক্তিগুলি মূলত নিরপেক্ষ। এটি এমন সংস্থাগুলি যা এই প্রযুক্তিগুলি গ্রহণ করে যা তাদের উপকারী বা মন্দ করে তোলে, এইভাবে তাদের ব্যবহার করার সময় বিধিনিষেধের প্রয়োজন হয়।
==== কম্পিউটার ====
কম্পিউটার নজরদারির সিংহভাগ ইন্টারনেটে ডেটা এবং ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আইন প্রয়োগকারী আইনের জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইনের অধীনে, সমস্ত ফোন কল এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্র্যাফিক (ইমেল, ওয়েব ট্র্যাফিক, তাত্ক্ষণিক বার্তাপ্রেরণ, ইত্যাদি) ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দ্বারা নিরবচ্ছিন্ন রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণের জন্য উপলব্ধ হওয়া প্রয়োজন। মানব তদন্তকারীদের ম্যানুয়ালি এটির মাধ্যমে অনুসন্ধান করার জন্য ইন্টারনেটে অনেক বেশি ডেটা রয়েছে। সুতরাং স্বয়ংক্রিয় ইন্টারনেট নজরদারি কম্পিউটারগুলি বিপুল পরিমাণে ইন্টারসেপটেড ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের মধ্য দিয়ে অনুসন্ধান করে এবং নির্দিষ্ট "ট্রিগার" শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করে, নির্দিষ্ট ধরণের ওয়েব সাইটগুলি পরিদর্শন করে, বা ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বা সন্দেহজনক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সাথে চ্যাট করে মানব তদন্তকারীদের ট্র্যাফিককে সনাক্ত করে এবং রিপোর্ট করে। তথ্য সচেতনতা অফিস, এনএসএ এবং এফবিআইয়ের মতো সংস্থাগুলি কার্নিভোর (এফবিআই), নারুসইনসাইট এবং ইচেলনের মতো সিস্টেমগুলি বিকাশ, ক্রয়, বাস্তবায়ন এবং পরিচালনা করতে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এই সমস্ত ডেটা আটকাতে এবং বিশ্লেষণ করতে এবং কেবলমাত্র আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির জন্য দরকারী তথ্য বের করতে।
==== সিসিটিভি ====
সম্ভবত নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সর্বাধিক পরিচিত এবং পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি হ'ল সিসিটিভি। সিসিটিভি ক্লোজড সার্কিট টিভির জন্য দাঁড়িয়েছে, এবং ১৯৪২ সালে জার্মানিতে উদ্ভাবিত হয়েছিল। প্রযুক্তিটি বিভিন্ন অর্থে বিশ্বায়ন হয়ে উঠেছে এবং যুক্তরাজ্য সহ অনেক দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
''সিসিটিভির'' ক্ষেত্রে, কার ''সিসিটিভি'' ইনস্টল করার অধিকার রয়েছে এবং কোথায় এবং কখন তারা সেগুলি ইনস্টল করতে পারে তা রিপোর্ট করা উচিত এবং সীমাবদ্ধ করা উচিত। আমেরিকান সমালোচক জেনিফার গ্রানহোম যেমন বলেছেন, নাগরিকদের পক্ষে জনসাধারণ এবং পুলিশ দ্বারা নজরদারি না করার আশা করা অযৌক্তিক, যখন তাদের উচ্চ ক্ষমতার রিমোট মনিটরের অধীনে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের প্রতি কোনও নজরদারির প্রয়োজন নেই। অতিরিক্তভাবে, অদৃশ্য ক্যামেরা বা নেটওয়ার্ক ডাটাবেসের বিষয়ে, মার্ক পোস্টার ডিজিটাল বিশ্বে ব্যক্তিগত জীবন কীভাবে নির্মিত হয় তা ব্যাখ্যা করে ''"সুপারপ্যানোপটিকন"'' এর একটি নতুন ধারণা প্রস্তাব করেছিলেন। নেটওয়ার্ক ডাটাবেসগুলিতে ডেটা ট্রান্সমিশন দ্রুত এবং সুবিধাজনক, যা সিসিটিভির চেয়ে আরও সঠিক এবং সম্পূর্ণ। এই ক্ষেত্রে, আইন এবং প্রবিধানগুলি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির অধিকার এবং বাধ্যবাধকতাগুলি প্রস্তাব করা উচিত এবং নিশ্চিতভাবে আরোপ করা উচিত।
নজরদারি ক্যামেরা বা সিসিটিভি (বিশ্বজুড়ে পাবলিক এবং প্রাইভেট স্পেস নিরীক্ষণের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি এবং বেসরকারী ব্যক্তিরা অপরাধ প্রতিরোধ, শহুরে পরিবেশ এবং সরকারী ভবনগুলির নিরাপত্তা, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধ তদন্তের প্রসঙ্গে ভিডিও নজরদারি ব্যবহার করে। নজরদারি প্রযুক্তিগুলিকে এমনকি 'পঞ্চম ইউটিলিটি' হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যেখানে শতাব্দীর প্রথমার্ধে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং টেলিফোন নেটওয়ার্কের মতোই সিসিটিভি শহুরে পরিবেশে একীভূত হচ্ছে।
অ্যাকশনে থাকা ক্যামেরাগুলির খাঁটি সংখ্যার কারণে সিসিটিভিকে সমস্ত নজরদারি প্রযুক্তির প্রভাবশালী পাওয়ার হাউস হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ''দশ'' বছর আগে ২০০৭ সালে এটি অনুমান করা হয়েছিল যে যুক্তরাজ্যে ৪.২ মিলিয়ন সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। সিসিটিভি নজরদারির কাজটি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করেছে। মিশেল ফুকো (১৯৭৭) ব্যাখ্যা করেছেন যে অতীতে, অনেকে জনসাধারণের বক্তৃতার মতো ইভেন্টগুলির মাধ্যমে অল্প কয়েকজনকে (উদাহরণস্বরূপ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারীদের) দেখেছিল। তবে সিসিটিভির মতো নজরদারি প্রযুক্তির দৌলতে খুব কম লোকই এখন অনেকগুলি দেখতে পারে! এবং এইভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন যে 'দৃশ্যমানতা একটি ফাঁদ' যাইহোক, এটি কোনও একমুখী সম্পর্ক নয়, কারণ 'অনেকে' এখনও টিভি এবং অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে কয়েকজনকে দেখেন। যাইহোক, সিসিটিভি কয়েকজনের রেমিটে রয়েছে এবং এর অর্থ হ'ল জনসমক্ষে, রেকর্ড হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে, প্রায়শই সেই ব্যক্তির অজান্তেই।
ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে: প্রতি ১২ জনের জন্য প্রায় ১ জন বা সরকারী ও বেসরকারী হাতে প্রায় ৫ মিলিয়ন।
==== এএনপিআর ====
স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট স্বীকৃতি ক্যামেরা (এএনপিআর), বা লাইসেন্স প্লেট স্বীকৃতি ক্যামেরা (এলপিআর) যানবাহন নজরদারির অন্যতম প্রাথমিক পদ্ধতি। রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়, বিশেষত মোটরওয়ে, তারা গতি এবং অন্যান্য হাইওয়ে সুরক্ষা লঙ্ঘনের প্রতিবেদন করতে পরিবেশন করে। এগুলি স্বয়ংক্রিয় টোল ট্যাক্স সংগ্রহের মতো প্রক্রিয়াগুলির জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্যামেরার একটি ফর্ম হলেও, তারা সিসিটিভি থেকে পৃথক যে তাদের উদ্দেশ্য যানবাহনগুলি কী করছে তার ভিজ্যুয়াল ডেটা রেকর্ড করা নয়, তবে নম্বর প্লেটগুলি সনাক্ত করা এবং অক্ষরগুলি সনাক্ত করা, এমনকি দূর থেকে বা গতিতেও। সফটওয়্যার ওসিআর একাধিক ক্যাপচার করা চিত্র থেকে ডেটা ব্যবহারযোগ্য কোডে রূপান্তর করতে ব্যবহৃত হয় এবং হেডল্যাম্প আলোকসজ্জা এবং অন্যান্য বাধা নির্বিশেষে দিন এবং রাত উভয়ই কাজ করার জন্য ক্যামেরাগুলি দৃশ্যমান বর্ণালীর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকা অবস্থায় ইনফ্রারেড আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে।
==== টেলিফোন ====
টেলিফোন লাইনের সরকারী এবং অনানুষ্ঠানিক ট্যাপিং ব্যাপক। হিউম্যান এজেন্টদের বেশিরভাগ কল নিরীক্ষণের প্রয়োজন হয় না। স্পিচ-টু-টেক্সট সফটওয়্যার বাধা দেওয়া অডিও থেকে মেশিন-পঠনযোগ্য পাঠ্য তৈরি করে, যা পরে স্বয়ংক্রিয় কল-বিশ্লেষণ প্রোগ্রাম দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যেমন তথ্য সচেতনতা অফিসের মতো সংস্থাগুলি বা ভেরিন্ট এবং নারুসের মতো সংস্থাগুলি দ্বারা বিকাশ করা হয়, যা নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্যাংশ অনুসন্ধান করে, কলটিতে কোনও মানব এজেন্টকে উত্সর্গ করবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নিতে। যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা পরিষেবাদির কাছে ফোনের ডায়াগনস্টিক বা রক্ষণাবেক্ষণ বৈশিষ্ট্যগুলি অ্যাক্সেস করে দূরবর্তীভাবে সেল ফোনে মাইক্রোফোনগুলি সক্রিয় করার প্রযুক্তি রয়েছে যাতে ফোনটি ধরে থাকা ব্যক্তির কাছাকাছি ঘটে যাওয়া কথোপকথনগুলি শোনা যায়। লোকেশন ডেটা সংগ্রহের জন্যও সাধারণত মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। একটি মোবাইল ফোনের ভৌগলিক অবস্থান (এবং এইভাবে এটি বহনকারী ব্যক্তি) ফোনটি ব্যবহার না করা হলেও সহজেই নির্ধারণ করা যেতে পারে, মাল্টিলেটেরেশন নামে পরিচিত একটি কৌশল ব্যবহার করে সেল ফোন থেকে ফোনের মালিকের নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি সেল টাওয়ারের প্রতিটিতে একটি সংকেত ভ্রমণের জন্য সময়ের পার্থক্য গণনা করে। স্নোডেনের ফাঁস করা নথিতে আরও জানা গেছে, ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার্স (জিসিএইচকিউ) মার্কিন নাগরিকদের বিষয়ে এনএসএ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে। একবার ডেটা সংগ্রহ করা হয়ে গেলে, জিসিএইচকিউ এটি দুই বছর পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে। 'ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তা'র অনুমতি সাপেক্ষে এই সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে।
বিভিন্ন নজরদারি প্রযুক্তি রয়েছে যা টেলিফোন এবং মোবাইল ফোনের সাথে সম্পর্কিত ব্যবহারের জন্য কার্যকর এবং সহজেই উপলব্ধ। সর্বাধিক পরিচিত কয়েকটি হ'ল বাগিংয়ের মাধ্যম এবং টেলিফোন এবং সেলুলার ডিভাইসগুলি ট্র্যাক করা।
'''বাগিং'''
একটি গোপন শ্রবণ ডিভাইস, একটি বাগ বা একটি তারের হিসাবেও পরিচিত, শ্রবণ ডিভাইসগুলিতে সাধারণত একটি ছোট রেডিও ট্রান্সমিটার এবং একটি মাইক্রোফোন থাকে। বেশিরভাগ পুলিশ তদন্তে ব্যবহৃত হয়, ডিভাইসগুলি এখনও জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ। ডেইলি মেইল একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে যা তাদের মোবাইল ফোনে বাগিং ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের অংশীদারদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে এমন লোকদের সতর্ক করে। ফ্লেক্সিস্পাইয়ের মতো সিস্টেমগুলির সাথে, যা তাদের গুপ্তচরবৃত্তি সফটওয়্যারটির বিবৃতি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয় "আপনি যদি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে থাকেন, কোনও সন্তানের জন্য দায়বদ্ধ হন বা কোনও কর্মচারী পরিচালনা করেন তবে আপনার জানার অধিকার রয়েছে। সত্যিটা জেনে নিন, ওদের ফোনে গুপ্তচরবৃত্তি করুন। ডেটা সুরক্ষা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হলেও, সিস্টেমটি, আরও অনেকের সাথে এখনও জনপ্রিয় এবং জরিমানা কেবল জরিমানা। তবে সর্বজনীন স্থানে, অফিসে এবং আপনার নিজের বাড়িতে শ্রবণ বা রেকর্ডিংয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার করা কি আইনী।
'''ট্র্যাকিং''' ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে, স্টিংরে ফোন ট্র্যাকার সবচেয়ে সাধারণ। হ্যারিস কর্পোরেশনের তৈরি ডিভাইসটি একটি সেলুলার ফোন নজরদারি ডিভাইস। ডিভাইসটি নিকটবর্তী সমস্ত ডিভাইসকে এটির সাথে সংযোগ করতে বাধ্য করে এবং সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারে, ডেটা ডাউনলোড করতে পারে এবং যোগাযোগের সামগ্রী আটকাতে পারে এবং সামগ্রী ডিক্রিপ্ট এবং রেকর্ড করতে পারে। স্টিংরে এটির সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলি ট্র্যাক এবং সনাক্ত করতে পারে। সফটওয়্যারটি মূলত সামরিক ও গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের পছন্দগুলির জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং বিতর্কিত হলেও, সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার বিষয়গুলির মধ্যে অস্পষ্ট রেখা সহ, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ২৩টি অঙ্গরাজ্যের অন্তত ৬০টি এজেন্সিকে চিহ্নিত করেছে যারা স্টিংরে প্রযুক্তির মালিক এবং ব্যবহার করে। তবে যুক্তরাজ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্কাই নিউজের এক অনুসন্ধানে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, লন্ডনজুড়ে পুলিশ নকল মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করছে। এই টাওয়ারগুলি মোবাইল ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ব্যবহারকারীদের অবস্থান প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিভাইসগুলো সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ট্র্যাক করতে ব্যবহার করা হতে পারে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ধরণের নজরদারি ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার বা নিশ্চিত করেনি।
'''''উদাহরণ'''''
নেদারল্যান্ডসে সমস্ত আইএসপিগুলির আদালতের আদেশের সাথে সমস্ত ট্র্যাফিক আটকানোর ক্ষমতা থাকতে হবে এবং তিন মাসের জন্য ব্যবহারকারীদের লগ বজায় রাখতে হবে। নিউজিল্যান্ডে, টেলিযোগাযোগ (ইন্টারসেপশন ক্ষমতা) আইন ২০০৪ টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলি এবং আইএসপিগুলিকে পুলিশ এবং সুরক্ষা পরিষেবাদির অনুরোধে ফোন কল এবং ইমেলগুলি আটকাতে বাধ্য করে। সুইজারল্যান্ডে আইএসপিগুলিকে মেইল এবং টেলিযোগাযোগের আড়িপাতার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
==== সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ====
তথ্য গোপনীয়তার আরেকটি অংশ যা কোনও আইনি কাঠামোর আওতাভুক্ত নয় তা হ'ল আমরা অনলাইনে যাওয়ার সময় যে তথ্য ভাগ করে নিচ্ছি। এটি সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ের প্রসঙ্গে প্রয়োগ করা হলে তথ্য সুরক্ষার ডোমেনে 'তথ্য এক্সপোজার' এর সংজ্ঞায় সম্পূর্ণ নতুন ধারণা উত্থাপন করে। 'ডিজিটাল তথ্যের অবশিষ্টাংশ' হ'ল আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য যা সাইবারস্পেসে কেউ বা কিছু দ্বারা সংগ্রহ বা ভাগ করা এবং ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং যার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
যতদিন অনলাইন সম্প্রদায় ছিল, ততদিন অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ মিডিয়া কমিউনিকেশনে বর্ণিত সোশ্যাল মিডিয়া ছিল। তবে সরাসরি যোগাযোগ না করে সোশ্যাল মিডিয়া পৃষ্ঠাগুলিতে আমাদের প্রোফাইলটি ঠিক কে পর্যবেক্ষণ করছে তা নির্ধারণ করা কম সহজ। কিছু গোপনীয়তা সেটিংস আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে যেমন কোনও পোস্টে 'কাস্টম' সেটিংস যা আমাদের পোস্টটি কে দেখছে তা দেখতে দেয়; যাইহোক, অন্যদের ট্যাগিং (যতক্ষণ না আমরা নিজেদেরকে ডি-ট্যাগ করি) আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং সেই কয়েক মিনিট 'ওহ না - কে ইতিমধ্যে এটি দেখেছে?' দিয়ে পরিপূর্ণ হয়। গ্রাহাম মেইকেল এবং শেরম্যান ইয়ং বলেছেন: "নিউজফিড ফাংশনের মাধ্যমে ফেসবুক যেভাবে আমাদের বন্ধুদের তালিকার প্রত্যেকের কাছে আমাদের ক্রিয়াকলাপ প্রচার করে তা ভেবে দেখুন। আপনি ভাবতে পারেন যে বন্ধুর স্ট্যাটাসে আপনি যে বিশেষ মন্তব্য করেন তা অন্যদের থেকে সীমাবদ্ধ যারা এটি দেখতে চান না, কেবল তার প্রোফাইলটি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং তাই আপনার মন্তব্যটি আপনার প্রতিটি বন্ধুকে 'শীর্ষ সংবাদ' হিসাবে পুনরায় বিতরণ করা হয়েছে।
নিয়োগ কোম্পানি জবভিট তাদের বার্ষিক জরিপে (সর্বশেষ সেপ্টেম্বর ২০১৫) অনুসারে, ৯২% নিয়োগকর্তা নিয়োগের আগে সামাজিক মিডিয়া পৃষ্ঠাগুলি চেক করেন। তদুপরি, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানের সাথে সাথে শিক্ষকরা যাতে ক্লাসের বাইরে গুপ্তচরবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নির্দেশিকা
এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে উভয় উদাহরণই তাত্ত্বিক এরভিং গফম্যানের কাজের উদাহরণ যিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমাদের বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতির জন্য বহুমাত্রিক ছদ্মবেশ রয়েছে এবং আমরা আমাদের ক্যাটারড শ্রোতাদের কাছে অভিনয় করি এবং থিয়েটারের অনুরূপ হলেও আমাদের আসল সত্তা ব্যাকস্টেজ।
===== স্ক্রিনশট সুসভিলেন্স অনলাইন ডেটিং এবং বিশ্বাসঘাতকতা =====
স্ক্রিনশটগুলি কেবলমাত্র পিসি বা ল্যাপটপে প্রিন্ট স্ক্রিন টিপে আমরা করতে পারতাম, তবে স্মার্টফোনের প্রস্তুত প্রাপ্যতার অর্থ আজ এক ক্লিকের সাথে তারা প্রতিদিনের ভিত্তিতে বন্ধুদের কাছে ফরোয়ার্ড করার জন্য ছবি এবং তথ্য ক্যাপচার করার জন্য ক্রমবর্ধমান সাধারণ পদ্ধতি হয়ে উঠছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার তাদের ব্যবহারকারী ও সম্ভাব্য সঙ্গীদের জন্য একটি 'শেয়ার' ফাংশন তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। ডেটিং জায়ান্ট বলছে যে এটি ব্যবহারকারীরা এমন কারও প্রোফাইল ভাগ করে নিতে উপকৃত হবে যা তারা সম্ভবত পরিচিত হিসাবে দেখা করেছে এবং ফেসবুক বন্ধু হিসাবে যুক্ত করার পক্ষে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ নয়, এমন কারও সম্পর্কে তারা আগ্রহী কিন্তু তাদের প্রাপ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চিত। এটি স্বাভাবিকভাবেই গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ নিয়ে আসে কারণ একটি লিঙ্কটি ৪৮ ঘন্টা বা পাঁচটি ক্লিকের পরে উপলব্ধ ব্যক্তির বন্ধুকে ইমেল করা যেতে পারে।
টিন্ডার যুক্তি দেয় যে ব্যবহারকারীদের ইতিমধ্যে ব্যবহারকারীর প্রোফাইলগুলি স্ক্রিনশট করার এবং তাদের বন্ধুদের কাছে পাঠানোর বিকল্প রয়েছে এবং ব্যবহারকারীরা তাদের বিবরণ ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে 'অপট' আউট করার সুযোগ পাবেন। তবে বাজফিড এবং ডিসট্রাক্টিফাইয়ের মতো বিনোদন ওয়েবসাইটগুলি অদ্ভুত, নোংরা এবং নিখুঁত অদ্ভুত কথোপকথনগুলি ক্যাপচার করেছে এমন ব্যবহারকারীদের দ্বারা প্রেরিত স্ক্রিনশটগুলি সংকলন করে সন্দেহহীন ব্যবহারকারীদের ব্যয়ে হাস্যরস তৈরি করতে প্রোফাইল ব্যবহার করে,[ জাতীয় পদক্ষেপগুলি প্রাপ্তির প্রান্তে থাকা ব্যক্তিদের জন্য সামান্য সান্ত্বনা নিয়ে আসে। এখন পুরো অ্যাকাউন্ট রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের টিন্ডার দুঃস্বপ্ন প্রেরণের জন্য উত্সর্গীকৃত এবং উত্সাহিত করে। তবে মডেল এমিলি সিয়ার্সের ক্ষেত্রে স্ক্রিনশট নজরদারি একটি সুবিধার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে,[ যিনি পুরুষদের তাদের লিঙ্গের অযাচিত ছবি প্রেরণের পরিমাণ নিয়ে হতাশ হওয়ার পরে 'তিনি তাদের পরিবার বা বান্ধবীদের সন্ধানের জন্য তাদের প্রোফাইলে সন্ধান করেছিলেন এবং তাদের ফরোয়ার্ড করার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি দেখতে পান যে পুরুষরা তাদের আচরণের জন্য দ্রুত ক্ষমা চেয়েছিল।
তার বাজফিড সাক্ষাত্কারে[ মিস সিয়ার্স বলেছিলেন যে পুরুষরা বিশ্বাস করে যে তারা তাদের কম্পিউটারের পিছনে সুরক্ষিত ছিল। এই সামাজিক আচরণকে তাত্ত্বিক জন সুলার অনলাইন ডিসইনহিবিশন বলে অভিহিত করেছেন, কারণ বাস্তবে এমন কিছু করার বা বলার স্বাধীনতার অনুভূতি যা সাধারণত কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। যদি কোনও পুরুষ রাস্তায় নিজেকে প্রকাশ করে তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে তবে কিছু পুরুষ বিশ্বাস করে যে তাদের পুরুষাঙ্গের ছবি পাঠানো সামাজিকভাবে আরও গ্রহণযোগ্য।
==== কোম্পানিসমূহ ====
পাসপোর্ট পরিষেবাগুলি ভোক্তাদের তথ্য শোষণ করেছে এবং Salon.com থেকে উদ্ভূত নিবন্ধগুলির একটি সিরিজ অনুসরণ করে তাদের গোপনীয়তা নীতি এবং বিবৃতি সংশোধন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। ইয়াহু এবং মাইক্রোসফট ই-মেইল পরিষেবা উভয়ই ব্যক্তিগতভাবে সনাক্তকরণযোগ্য তথ্য ভাগ না করার তাদের বর্ণিত গোপনীয়তা নীতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সম্ভাব্য গোপনীয়তা লঙ্ঘন সম্পর্কে ব্যবহারকারীর সমালোচনার জবাবে, ফেসবুক তার নতুন সংশোধিত পরিষেবার শর্তাদি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। গুগলের গোপনীয়তা অনুশীলনগুলি ইইউ গোপনীয়তার মানগুলি পূরণ করে না এবং একইভাবে বেশ কয়েকটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে আইনপ্রণেতা গোপনীয়তা অনুশীলন নিয়ে গুগলকে প্রশ্ন করেন প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার রূপরেখার জন্য সংস্থাগুলি গোপনীয়তা এবং ব্যবহারের শর্তাদি বিবৃতি নিয়োগ করে, যাতে ব্যবহারকারীর অভিযোগের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়।
এই পদ্ধতিতে, ব্যক্তিগত তথ্য জনসাধারণের মধ্যে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়, প্রক্রিয়াটিতে ব্যক্তির কাছ থেকে সামান্য ইনপুট সহ।
২০১৪ সালের NSA.In বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এমন সংস্থাগুলি রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট '''টুইটার''' মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে যাতে এটি ব্যবহারকারীদের উপর সরকারের নজরদারি সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে স্বচ্ছ হওয়ার ক্ষমতা চেয়েছিল। টুইটারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন লি বলেছেন, এই বিধিনিষেধ প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন। টুইটারের মামলার আগে '''গুগল''' একটি অনুরূপ মামলা দায়ের করেছিল যা সংস্থাটি কতবার ডেটা জন্য জাতীয় সুরক্ষা অনুরোধ পায় তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার অনুমতি চেয়েছিল। [৬]
==== বায়োমেট্রিক ====
ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের মতে, "বায়োমেট্রিক্স বলতে জীবিত ব্যক্তিদের স্থায়ী শারীরিক বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ বা পরিচয় যাচাইকরণকে বোঝায়"। এই ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি বহু বছর ধরে সাধারণভাবে পরিচিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্বীকৃতি এবং আইরিস স্বীকৃতির সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে পোস্ট করা ছবিতে মানুষকে 'ট্যাগ' করে। এই সমস্তগুলি নজরদারি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি থেকে গঠিত ডেটা সরকারী বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা হয়। বায়োমেট্রিক ডেটার এই ধরনের ব্যবহার সুপরিচিত, তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবহার অন্বেষণ করা হচ্ছে।
আমেরিকা এবং চীনে, ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরাগুলি শহরগুলির চারপাশে ল্যাম্প পোস্টগুলিতে স্থাপন করা হচ্ছে যাতে রিয়েল টাইমে ব্যক্তিদের ট্যাগ করা ভিডিও দেখার পাশাপাশি সহিংস কার্যকলাপের জন্য জড়ো হতে পারে এমন বিশাল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা যায়। গত বছর ইউরোপে ওয়ান্টেড অপরাধীদের ভিড় স্ক্যান করার জন্য লেস্টারশায়ার পুলিশ কর্তৃক ডাউনলোড ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এটি যুক্তরাজ্যের একটি বহিরঙ্গন ভেন্যুতে এই ধরণের প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার ছিল এবং যখন এটি জনসাধারণের নজরে আনা হয়েছিল তখন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। একই সময়ে আইসি পুতুলগুলি স্টোরগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে তারা সংস্থাগুলিকে বিপণনের ডেটা দেওয়ার জন্য খুচরা গ্রাহকদের বয়স, জাতি এবং লিঙ্গ ট্র্যাক করতে পারে; এক ধরনের কর্পোরেট নজরদারি। এটি একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর মতো শোনাতে পারে তবে ক্রমবর্ধমান এটি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আইকোনেমের নিজস্ব পুতুল সিস্টেম রয়েছে যা স্মার্টফোনে বীকন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অ্যাপের মাধ্যমে পণ্যের বিবরণ সম্পর্কে সতর্ক কয়েক বছরের মধ্যে কোনও দোকানে প্রবেশ করা এবং পুতুলটি আপনাকে আপনার নাম ধরে ডাকে এবং তারপরে কেবল মুখের স্বীকৃতি সফটওয়্যার এবং গ্রাহক ডাটাবেসগুলি একত্রিত করে আপনাকে পণ্যগুলির প্রস্তাব দেয়। অবশ্যই এর কোনোটিই সহজে করা যায় না, যেমনটি কেলি গেটস তার বই আওয়ার বায়োমেট্রিক ফিউচার: ফেসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি অ্যান্ড দ্য কালচার অব সার্ভিল্যান্সে তুলে ধরেছেন, তবে এর উন্নয়ন ও উৎপাদনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে বায়োমেট্রিক নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই,[ তবে যুক্তরাজ্য এবং কানাডা কিছু আইন পাস করেছে যা আক্রমণাত্মক বায়োমেট্রিক্স সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করবে, যেমন 'স্নুপ বিল' যা এর ক্ষমতা হ্রাস করবে যোগাযোগ ক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি (সিসিডিপি)।
পিটার ওয়াগেট বলেছেন, "আমি ২০ বছর ধরে বায়োমেট্রিক্স নিয়ে কাজ করছি, এবং এটি এমন একটি টিপিং পয়েন্টে পৌঁছেছে যেখানে লোকেরা কোথায় রয়েছে এবং তারা কী করছে তা বোঝা অসম্ভব হতে চলেছে। সবকিছু মনিটরিং করা হবে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি ইতিমধ্যে সত্য তবে বায়োমেট্রিক্স পরবর্তী কোথায় যায় তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে।
'''''উদাহরণ'''''
সুইডেনে ১৯৭৫ সালে বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক গবেষণার উদ্দেশ্যে জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছেন। ফাংশন বা মিশন ক্রিপের ফলে সম্প্রতি এই রক্তের নমুনাগুলি ২০০৩ সালে একজন খুনির দোষী সাব্যস্ত করার জন্য এবং ২০০৪ সালে থাইল্যান্ডের সুনামি বিপর্যয়ের শিকারদের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সমস্ত ২৭ ইইউ দেশ সমস্ত ইইউ পুলিশ ডাটাবেসে জেনেটিক তথ্য, আঙুলের ছাপ এবং গাড়ি নিবন্ধকরণ তথ্যে অবাধ অ্যাক্সেস করতে সম্মত হয়েছে? নিউজিল্যান্ডে নবজাতকের রক্তের স্পট নমুনা এবং সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং এই তথ্য পুলিশ দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কেবল শেষ উপায় হিসাবে বা পিতামাতার সম্মতিতে ।
==== এরিয়াল ====
আকাশ নজরদারি এক ধরনের নজরদারি যা সাধারণত কম্পিউটারাইজড বায়বীয় ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত হয়। নজরদারির এই ফর্মটি নিজস্ব সমস্যা এবং সীমানা নিয়ে আসে যা প্রায়শই অতিক্রম করা হয়। নতুন প্রযুক্তি ড্রোনের মতো ডিভাইস তৈরি করছে, একটি আকাশ নজরদারি ইউনিট যা নিজেরাই কাজ করে এবং দূর থেকে মালিকের কাছে নজরদারি চিত্র প্রেরণ করে। এই ডিভাইসগুলি ব্যবহারের মূল সমস্যাটি হ'ল গোপনীয়তার আক্রমণ, বিশেষত যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স ছাড়াই অনেকগুলি ড্রোন কেনা এবং ব্যবহার করা যায়। ২০ কেজি ওজনের কম ওজনের ড্রোনগুলির জন্য বিশেষ পারমিটের প্রয়োজন হয় না,[ অর্থ যে কেউ এই রেকর্ডিং ডিভাইসগুলি যার উপর ইচ্ছা 'গুপ্তচরবৃত্তি' করতে ব্যবহার করতে পারে। যাঁদের কাছে ড্রোন রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই ব্যস্ত এলাকার ১৫০ মিটার এবং কোনও ব্যক্তির ৫০ মিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো এড়ানো উচিত, তবে এই নিয়মটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না।
মেশিনগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি নতুন রূপ গ্রহণ করায় অনেকে ড্রোন থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি তাদের আশেপাশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময় মুখের স্বীকৃতি ব্যবহার করতে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধি অনুসরণ এবং নথিভুক্ত করার ক্ষমতা ধারণ করতে তাদের কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করতে সক্ষম। ড্রোনগুলিতে ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশনের বিধিনিষেধ নেই, অন্যথায় সিসিটিভি হিসাবে পরিচিত, যা জনসমক্ষে কোনও ব্যক্তির গতিবিধি রেকর্ড করতে সক্ষম হলেও ব্যক্তি অনুসরণ করতে পারে না বা বায়বীয় দৃশ্য থেকে রেকর্ড করতে পারে না। কম্পিউটার ভিশন, ফেস রিকগনিশন, অবজেক্ট রিকগনিশন এবং অন্যান্য ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সহ ড্রোনগুলি দ্রুত নজরদারির অন্যতম অনুপ্রবেশকারী ফর্ম হয়ে উঠছে। ড্রোনগুলি তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং কোনও অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও বিষয় অনুসরণ করা এবং চিত্রগ্রহণের মতো মানুষের মতো উদ্দেশ্যগুলি সম্পূর্ণ করতে পারে।
জনসাধারণের সুরক্ষা এবং তাদের নিজের বাড়িতে গোপনীয়তার অধিকারের জন্য এবং সুরক্ষা সতর্কতার জন্যও বিমান নজরদারিতে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, কারণ এফএএ নিয়ম অনুসারে ৪০০ ফুটের উপরে বা বিমানবন্দরের দুই মাইলের মধ্যে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০১৫ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি আবাসন বিল চালু করা হয়েছিল যাতে বিমান নজরদারির ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা যায়। ''''প্রোটেকটিং ইন্ডিভিজুয়ালস ফ্রম মাস এরিয়াল সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট'''<nowiki/>' নামের ওই বিলটিতে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে নজরদারি চালাতে চাইলে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের এখন পরোয়ানা জারি করতে হবে। ফ্রেমের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদেরও শনাক্ত করতে পারছেন না তারা।
যেহেতু ড্রোনগুলি নজরদারির আরও সাম্প্রতিক রূপ, তাই অনেক লোক প্রযুক্তিটির বিপদ বা সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত নয়, তবে এমন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে যারা একটি বিমান নজরদারি ব্যবস্থার মালিকানার জন্য বিধিবিধান এবং নিয়ম বাড়াতে চান। ২০১৪ সালে পারমাণবিক সাবমেরিন স্থাপনার কাছে ড্রোন ব্যবহারের দায়ে রবার্ট নোলসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাকে ৪ হাজার ৩০০ পাউন্ড পরিশোধের নির্দেশ দেয়। বিবিসির খবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোথায় কেউ ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে আর পারবে না, কারণ ক্রিসমাস ও জন্মদিনের উপহার হিসেবে অনেককেই গ্রহণ করা হচ্ছে। ড্রোনগুলি নজরদারি প্রযুক্তির নতুন 'এটি' খেলনা, তবে নির্দেশিকাগুলি উপেক্ষা করার পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে, ম্যানচেস্টারে অপব্যবহারের আরেকটি মামলা রয়েছে। সেখানে টটেনহ্যাম হটস্পারের সাথে ম্যানচেস্টার সিটির হোম ম্যাচের উপর ড্রোন উড়ানোর জন্য এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ড্রোনগুলি অনেকের জন্য মজাদার, নিরীহ খেলনা হিসাবে দেখা হয়, তবে বিমান নজরদারির এই অত্যন্ত উন্নত রূপটি গোপনীয়তা এবং নামহীনতার অধিকারের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক এবং নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদি সিসিটিভিকে গোপনীয়তার বিষয়ে খুব বেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সতর্ক করা হয়, তবে তুলনামূলকভাবে ড্রোনটি আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বৃহত্তর সুযোগ সহ অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।
==== ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং ====
ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং হ'ল ডেটা নজরদারি, একটি প্যাটার্ন ভিত্তিক বৈকল্পিক ব্যবহার করে এবং পৃথক ক্রিয়াকলাপ যাচাই করার জন্য ডেটা মাইনগুলির মাধ্যমে অনুসন্ধান করা। ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং একটি প্রোফাইল তৈরি করতে এবং ব্যক্তিদের ইন্টারনেট কার্যকলাপের নিদর্শনগুলি খুঁজে পেতে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এইভাবে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় আচরণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হতে পারে। সফটওয়্যারের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি অনলাইন লেনদেনের জরিপ এবং উল্লেখ করার সাথে সাথে আরও বিশদ বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতির জন্য তৈরি করে।
ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য বেসরকারী সংস্থাগুলি বিভিন্ন লোকের ইন্টারনেট ক্রিয়াকলাপ অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। এটি ব্যক্তির জন্য একটি ভোক্তা প্রোফাইল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ এই সংস্থাগুলিকে "তৃতীয় পক্ষ" বলে অভিহিত করে, কারণ তারা তাদের গ্রাহকদের লেনদেনকে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপায় হিসাবে সরাসরি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক তথ্যের সাথে ন্যস্ত করা হয়। কর্পোরেট খেলোয়াড়দের অন্য সেটের জন্য, তবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রয় তাদের ব্যবসা, কেবল পণ্য ও পরিষেবাদির বিনিময়ের পণ্য নয়।
সংস্থাগুলির দ্বারা ডেটা ট্র্যাকিং এবং নোট করা লক্ষ্যবস্তুর গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। সরকার যখন এই তথ্য পায় তখন অতিরিক্ত গোপনীয়তার সমস্যা দেখা দেয়, যা বর্তমানে কোনও আইনি পরিণতি ছাড়াই করতে পারে। এটি প্রোফাইল এবং প্রোফাইলার, বা শিকার এবং শিকারীর মধ্যে একটি ক্ষমতার লড়াই তৈরি করে। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাকিংয়ের সাথে পাসওয়ার্ড এবং এর বৈধতা বা এমনকি প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি অপ্রচলিত বলে মনে হয় যে একজনকে তাদের নিজস্ব ইমেল প্রবেশ করার জন্য একটি পাসকোড প্রয়োজন, যখন কোনও ডেটা মাইনারের কোনও ব্যক্তির সম্পূর্ণ চিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় এমন কোনও কিছুতে অ্যাক্সেস রয়েছে। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে জিমেইলের মতো সাইটে অ্যাক্সেস করতে অসুবিধা বিদ্রূপাত্মক- একটি মায়ের প্রথম নাম বা শৈশব পোষা প্রাণী অবশ্যই মনে রাখতে হবে যখন একটি পৃথক সংস্থা বা প্রোফাইলার কারও পরিচয় সংগ্রহ করার জন্য তাদের অজ্ঞতা উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় গোয়েন্দা এবং আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের দ্বারা কৌশল হিসাবে ডেটা মাইনিং ব্যবহার করা হয়েছে। এটি চালু করা হয়েছিল যখন তদন্তগুলি সন্ত্রাসীদের আচরণ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথেষ্ট প্রকাশ করে না যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমাজে মিশে যায়। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত, বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রতিরোধের জন্য, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে বিশাল এবং বেশিরভাগ অকেজো লেনদেনমূলক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ শুরু করেছে।
ডেটা প্রোফাইলিং এবং মাইনিং নজরদারির জগতে খালি চোখে যা দেখতে পারে তার পৃষ্ঠের নিচে খনন করতে এবং ব্যানাল ক্রিয়াকলাপকে ব্যবহারকারীর প্যাটার্নে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থহীন হিসাবে বিবেচিত ডেটা ব্যবহার করা এমন প্রোফাইলারের পক্ষে অত্যাবশ্যক হতে পারে যারা অনলাইন লেনদেন থেকে তাদের ডেটা তৈরি করতে পারে এবং যেমন কোনও ব্যক্তির একটি পরিষ্কার চিত্র তৈরি করতে পারে। এটি অনুশীলনের যথার্থতা নয় যা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে নৈতিক অসদাচরণ যা কৌশলটির অংশ। ব্যক্তিগত তথ্য বড় কোম্পানিগুলির জন্য একটি গরম পণ্য, তবে ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং সাধারণত একজন সাধারণ ব্যক্তির দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কেবল অনুসন্ধান করা হয় এবং এই ধরনের নজরদারি তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ।
==== হিউম্যান অপারেটিভ ====
স্পাই থ্রিলারে আমরা যেমন দেখি এজেন্টরা কি নজরদারির হাতিয়ার? এটা যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে হ্যাঁ তারা আছে। <nowiki>https://www.mi{{subst:#invoke:ConvertDigit|main|5}}.gov.uk</nowiki> এমআই৫ এর ওয়েবসাইট অনুসারে "গোপন মানব গোয়েন্দা সূত্র (সিএইচআইএস), বা "এজেন্ট", এমন লোক যারা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারে যা আমাদের তদন্তে সহায়তা করতে পারে"। এই এজেন্টগুলি প্রায়শই নাটকের উদ্দেশ্যে কাল্পনিক কাজগুলিতে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়, তবে এই জাতীয় গল্পগুলির ভিত্তি একই থাকে।
সম্ভবত বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত সুরক্ষা সংস্থা হ'ল সিআইএ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা বাহিনীর একটি শাখা। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা কার্যক্রম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সরকার-ব্যাপী ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে,[ যখন যুক্তরাজ্যে, এমআই ৬ এবং এমআই ৫ ১৯০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখন তারা সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো নামে পরিচিত ছিল। এই নিরাপত্তা পরিষেবা ব্যবহারের সবচেয়ে সক্রিয় সময়কাল, এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রতিলিপি যুগ ঠান্ডা যুদ্ধ হতে হবে। এই সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য বিদেশী সরকারের নজরদারি অপরিহার্য ছিল।
এই সব বিদেশী স্বার্থ সঙ্গে কাজ অপারেশন সম্পর্কিত, কিন্তু মানব অপারেটর মাধ্যমে গার্হস্থ্য জনসংখ্যার নজরদারি জন্য সেট আপ করা এজেন্সি আছে। সবচেয়ে বড় হোমল্যান্ড কাউন্টার-টেররিজম সংস্থা হ'ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস রয়েছে যেখানে এজেন্টদের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ঝুঁকির জন্য জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মানব অপারেটররা তাদের নিজস্ব নজরদারি প্রযুক্তি, সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। যুক্তরাজ্যে এজেন্টদের ভূমিকা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, বিবিসির রেডিও ৪ এর টুডে প্রোগ্রাম সম্প্রতি এমআই ৫ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বেনামী এজেন্টের সাক্ষাত্কার নিয়েছে।
==== ডি.এন.এ. প্রোফাইলিং ====
বেশ কয়েকটি দেশ নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরিষেবাগুলি থেকে লাভের আশায় প্রধানত ফার্মাসিউটিকাল সংস্থাগুলি এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ দ্বারা পরিচালিত চিকিত্সা গবেষণার জন্য দেশব্যাপী ডিএনএ ডাটাবেস তৈরি করছে। চিকিৎসা গবেষণা সুইডেনে ড্রাইভার যার মাধ্যমে ১৯৭৫ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছে (পিকেইউলাবরেটরিয়েট ২০০৮)। নমুনাটি জিনগত রোগ ফিনাইল-কেটোন-ইউরিয়া (পিকেইউ) পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ডাটাবেসে ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণার জন্যও সংরক্ষণ করা হয়। ডাটাবেসে কোনও ডিএনএ প্রোফাইল নেই, তবে রক্তের নমুনাগুলি সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। প্রতিটি নমুনার সাথে পরিচয় তথ্যও সরবরাহ করা হয়। ডাটাবেসটি অপরাধ তদন্তে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নয়। যাইহোক, আনা লিন্ধ (সুইডিশ পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব) হত্যার হাই-প্রোফাইল মামলায় পুলিশ ডাটাবেসে অস্থায়ী অ্যাক্সেস পেয়েছিল যা হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
==== স্যাটেলাইট চিত্রাবলী ====
২৫ শে মে, ২০০ ২০০৭-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জন মাইকেল ম্যাককনেল অনুমোদিত জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন অফিস এর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ স্থানীয়, রাজ্য এবং দেশীয় ফেডারেল এজেন্সিগুলিকে সামরিক গোয়েন্দা পুনরুদ্ধার উপগ্রহ এবং পুনরুদ্ধার বিমান সেন্সর থেকে চিত্রাবলী অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেওয়ার জন্য যা এখন মার্কিন নাগরিকদের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যাটেলাইট এবং বিমান সেন্সরগুলি মেঘের আচ্ছাদন ভেদ করতে, রাসায়নিক চিহ্নগুলি সনাক্ত করতে এবং বিল্ডিং এবং "ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার" এর বস্তুগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম হবে এবং গুগল আর্থের মতো প্রোগ্রামগুলির দ্বারা উত্পাদিত স্থির-চিত্রগুলির চেয়ে অনেক বেশি রেজোলিউশনে রিয়েল-টাইম ভিডিও সরবরাহ করবে।
==== সনাক্তকরণ এবং শংসাপত্র ====
সনাক্তকরণের সহজতম ফর্মগুলির মধ্যে একটি হ'ল শংসাপত্র বহন। কিছু জাতির সনাক্তকরণে সহায়তা করার জন্য একটি পরিচয় নথি সিস্টেম রয়েছে, অন্যরা এটি বিবেচনা করছে তবে জনসাধারণের বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যান্য নথি, যেমন পাসপোর্ট, ড্রাইভারের লাইসেন্স, লাইব্রেরি কার্ড, ব্যাংকিং বা ক্রেডিট কার্ডগুলিও পরিচয় যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। যদি পরিচয়পত্রের ফর্মটি "মেশিন-পঠনযোগ্য" হয়, সাধারণত একটি এনকোডযুক্ত চৌম্বকীয় স্ট্রাইপ বা সনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার করে, তবে এটি বিষয়টির সনাক্তকারী ডেটা সমর্থন করে। এই ক্ষেত্রে এটি একটি বৈদ্যুতিন ট্রেইল তৈরি করতে পারে যখন এটি চেক করা হয় এবং স্ক্যান করা হয়, যা প্রোফাইলিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, উপরে উল্লিখিত হিসাবে।
==== ভূতাত্ত্বিক ডিভাইস ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পুলিশ কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য লোকের গাড়িতে গোপন ট্র্যাকিং ডিভাইস স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে তারা আদালতে যুক্তি দেখাচ্ছিল যে তাদের এটি করার অধিকার রয়েছে। বেশ কয়েকটি শহর পাইলট প্রকল্প চালাচ্ছে যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে জিপিএস ডিভাইস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।
==== মানব মাইক্রোচিপ ====
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ এবং সংশয়বাদীরা একটি সম্ভাব্য নজরদারি পদ্ধতির অত্যন্ত সমালোচনা করেছেন: নাগরিকদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে মাইক্রো-চিপের ব্যবহার। যদিও অনেক বাণিজ্যিক পণ্য ইতিমধ্যে চুরি প্রতিরোধের জন্য মাইক্রো-চিপ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, এই চিপগুলি সম্ভাব্যভাবে অন্যান্য উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন এটি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে নতুন আমেরিকান পাসপোর্টগুলি একটি আরএফআইডি চিপ দিয়ে জারি করা হয় যা ব্যক্তিগত তথ্য ধারণ করে। এই চিপগুলি দশ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। তবে একই ধরনের চিপ এরই মধ্যে মানুষের মধ্যেও বসানো হয়েছে। কয়েকটি ক্লাব এবং ডিস্কোথেক নিয়মিত গ্রাহকদের বাহুতে মাইক্রো-চিপ ইনজেকশনের মাধ্যমে এই ব্যবহারকে নেতৃত্ব দিয়েছে যাতে তাদের সহজে অ্যাক্সেস এবং একটি বৈদ্যুতিন ট্যাব সরবরাহ করা যায় যা অর্থ বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা দূর করে। হাস্যকরভাবে, এটি অনুসরণ করে যে নজরদারি কেবল নিয়ন্ত্রণের একটি অন্তর্নিহিত এবং গোপন ফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে না, তবে সুস্পষ্ট ৩৬০ ° প্রতিক্রিয়া প্রদানের উপায় হিসাবে ব্যবসায়িক চেনাশোনাগুলিতে গৃহীত হয়েছে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সমগ্র সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট নিরীক্ষণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন জড়িত। যাইহোক, এই প্রক্রিয়াটি একটি সংগঠনের মধ্যে মাইক্রো-রাজনীতির জন্ম দিতে পারে এবং নিন্দা এবং ব্ল্যাকমেইলকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে এটি শৃঙ্খলার নিখুঁত রূপ যে এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ক্ষমতার বিষয়টিকে স্বাগত বোধ করে এবং প্রকাশ্যে শৃঙ্খলাকে আমন্ত্রণ জানায়। একইভাবে, সংশয়বাদীরা ভয় পায় যে আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিটি ব্যক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করে এবং এই বিবরণগুলিকে বাইরের শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন করে স্বচ্ছ মানব বা "কাচের মানুষ" তৈরি করছি।
==== ডাক সেবা ====
টেক্সট মেসেজিং, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং ইমেলের উত্থানের সাথে সাথে এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে ডাক চিঠিটি তরুণ প্রজন্মের জন্য অপ্রচলিত হয়ে উঠছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করেছিল যে জাতীয় সাক্ষরতা ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা গেছে যে ছয়জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে মাত্র একজন এখনও চিঠি লেখে এবং তারা বিশ্বাস করে যে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্বে বাস করা চিঠি লেখার পতনের পিছনে কারণ।
আমাদের মধ্যে যারা চিঠি পাঠান এবং গ্রহণ করি এবং মহামান্যের সন্তুষ্টিতে নেই এমনকি যদি এটি কেবল অদ্ভুত ক্রিসমাস বা ধন্যবাদ কার্ড হয় তবে আমরা সর্বদা ধরে নিই যে আমাদের তথ্য ব্যক্তিগত; তবে যুক্তরাজ্য ডাক এবং যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকারের সাথে একটি ওঠানামা সম্পর্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
মিডিয়া ব্লগ ইনফর্ম (ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অফ রেসপন্সিবল মিডিয়া ফোরাম) ১৭ থেকে ২০ শতকের চিঠিগুলি কেবল একটি পরোয়ানার অনুমোদনের মাধ্যমে ট্রানজিটে খোলা যেতে পারে, তবে পরোয়ানার ফর্মটি সরকারী ক্ষমতার বিবেচনার ভিত্তিতে হবে, তবে তারা প্রকাশ্যে পরামর্শ দেয়নি যে বাধা দেওয়া হচ্ছে। উপরন্তু, কোন কেলেঙ্কারি গোপনে মোকাবেলা করা হত।
এই অনুশীলনের নীরবতা ১৯ ১৯৭৯৯ সাল পর্যন্ত রয়ে গিয়েছিল যখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে স্থানীয় পুলিশ একটি প্রাচীন ব্যবসায়ীর টেলিফোন রেকর্ড করছিল এবং যখন যুক্তরাজ্যের আদালত আদালত খারিজ করে দেয়, তখন বাদী মামলাটি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে নিয়ে যায় যেখানে এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে যুক্তরাজ্য সরকার মানবাধিকারের ইউরোপীয় কনভেনশনের ৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্যের একজন ব্যক্তিকে শান্ত জীবনের অধিকার দেয়া। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একমাত্র লুপ হোল।
এটি আদালত কর্তৃক আদেশিত যোগাযোগ আইন ১৯৮৫ এর ইন্টারসেপশন তৈরির দিকে পরিচালিত করে এবং পরে তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ২০০০ এর নিয়ন্ত্রণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। আরও দেখুন: আইন ও বিধিনিষেধ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক আইনের গোপনীয়তা কেবল ১৯ শতকে ঘটেছিল। জন ডারহাম পিটারস বলেছেন যে স্ট্যাম্প, সিল করা খাম এবং পোস্ট বাক্সের আগে চিঠিগুলি খোলা, পড়া এবং এমনকি স্থানীয় প্রেসে প্রকাশিত হতে পারে।
গ্রাহাম মেইকেল এবং শেরম্যান ইয়ং চিঠি লেখার ক্ষেত্রে বিকশিত গোপনীয়তার সামঞ্জস্যতা এবং আজকের সোশ্যাল মিডিয়া আউটলেটগুলিতে কোনটি ব্যক্তিগত এবং কোনটি নয় তা সংজ্ঞায়িত করার কোনও আহ্বান জানানো হয়নি। তারা বলে, 'কাউকে এভাবে বার্তা পাঠানো অস্বাভাবিক কিছু নয়, কেবল তখনই আপনার পৃষ্ঠার 'প্রাচীর' অঞ্চলে লিখে তাদের উত্তর দেওয়া অস্বাভাবিক নয়, যাতে কথোপকথনটি আরও বিস্তৃত শ্রোতাদের কাছে উন্মুক্ত হয়, প্রশ্নে প্রাচীরে কী গোপনীয়তা সেটিংস প্রয়োগ করা হয় তার উপর নির্ভর করে।
==== অ্যাপ্লিকেশন ====
নজরদারি প্রযুক্তির একটি বিশেষ রূপ হ'ল গুগল প্লে এবং আইটিউনসের মতো অ্যাপ্লিকেশন স্টোরগুলির মাধ্যমে ভোক্তাদের অ্যাক্সেসযোগ্য। এই প্রযুক্তিটি বাজারজাত করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে; কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের ইন্টারনেট ব্যবহার ট্র্যাক করার জন্য সংস্থাগুলির জন্য, তাদের ফোনের মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করার জন্য পিতামাতার কাছে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং স্বামী বা স্ত্রীর ক্রিয়াকলাপ তদন্তের উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়। অবশ্যই, বেসিক সফটওয়্যারটি মূলত একই এবং ইন্টারনেট সংযোগ সহ যে কোনও কম্পিউটার বা ফোনে ডাউনলোডযোগ্য। এই বিভাগটি বিশেষত এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি এবং সেগুলি কীভাবে কাজ করে তা দেখবে।
একটি আকর্ষণীয় সূচনা পয়েন্ট হতে পারে হাফিংটন পোস্ট দ্বারা একটি নিবন্ধ পাঁচটি ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তাদের বাচ্চাদের উপর "গুপ্তচরবৃত্তি" করার জন্য পিতামাতার কাছে বিক্রি করা হয়। এটি এই পণ্যগুলির প্রধান বিক্রয় পয়েন্টগুলি হাইলাইট করে, তাদের বাচ্চারা কী পাঠ্য করে তা দেখার ক্ষমতা থেকে শুরু করে তারা যে গাড়িতে ভ্রমণ করছে তার গতি জানা। এই পণ্যগুলির ওয়েবসাইটগুলি নিজেরাই অনুরূপ পয়েন্টগুলি উল্লেখ করে, পাশাপাশি কর্মচারীদের শিথিলতা এবং প্রতারণামূলক স্বামীদের কথা বলে। শীর্ষ ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির মতে 'এমএসপিআই' হ'ল "বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ব্যবহৃত সেল ফোন ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন", তাই এটি যেভাবে কাজ করে এবং এই বিষয়ে কোম্পানির কী বলার আছে তা দেখা মূল্যবান।
এমস্পাই এর হোমপেজে 'হাউ ইট ওয়ার্কস' শিরোনামে একটি বিভাগ রয়েছে যেখানে তারা বলেছে "আমাদের সফটওয়্যারটি জিপিএস অবস্থান, ওয়েব ইতিহাস, ছবি, ভিডিও, ইমেল, এসএমএস, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, কীস্ট্রোক এবং আরও অনেক কিছু সহ পর্যবেক্ষণ করা ফোনের পটভূমিতে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে কাজ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে - কল পরিচালনা করা, পাঠ্য বার্তা এবং জিপিএস অবস্থানগুলি ট্র্যাক করা, ক্যালেন্ডার এবং ঠিকানা বইগুলি অ্যাক্সেস করা এবং কয়েকটি নাম রাখার জন্য অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রোগ্রামগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। এটি আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈধতার প্রশ্ন থাকতে পারে, কারণ এটি বেসামরিক নজরদারি সফটওয়্যার, তবে তাদের সাইটটি ব্যাখ্যা করে যে "এর ব্যবহার একেবারে আইনী" যতক্ষণ না এটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের, কর্মচারীদের নিরীক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় যারা সচেতন যে তাদের ট্র্যাক করা হচ্ছে, বা ক্রেতার নিজের ফোনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যাইহোক, সফটওয়্যারটি দূরবর্তীভাবে কোনও ডিভাইসে ডাউনলোড করার জন্য উপলব্ধ তাই ব্যবহারকারীদের পক্ষে অবৈধভাবে এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। স্পাই বাবলের মতো অনুরূপ সাইটগুলিতে, বৈধতার প্রশ্নটি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ কারণ এটি অংশীদারের ডিভাইসে ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং অনুমোদনের বিষয়টিকে সম্বোধন করা হয় না। অনলাইনে অনেক নিবন্ধ রয়েছে যা এখানে বর্ণিত আইনী এবং নৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে।
এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলির ব্যবহার বিতর্কিত হতে পারে, তবে দৈনন্দিন নজরদারি প্রযুক্তি হিসাবে সময় বাড়ার সাথে সাথে তারা বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
== নেটওয়ার্কড সংস্কৃতির ক্ষমতার রাজনীতি ==
প্রযুক্তি এবং অন্য সবকিছুর ব্যাপক আবেদন রয়েছে যা ক্ষমতা সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বদা সমালোচিত হওয়া উচিত। একটি নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজ বিশ্বের শক্তিশালী সরকারগুলিকে যে সুবিধাগুলি দেয় তা সমালোচনা করা বা হাইলাইট না করা বোকামি। এমন একটি বিশ্ব যেখানে প্রযুক্তির নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নির্বিঘ্নে দেখার অনুমতি দেয়। কে দেখছে আমাদের? যারা আমাদের দেখছে তাদের কে দেখছে? এই প্রযুক্তিগত যুগে সমালোচনামূলক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী থাকার জন্য আমাদের এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে হবে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী, ল্যারি ডায়মন্ডের 'সর্বদা সংস্কৃতিতে' একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে এটি প্রযুক্তি এবং তথ্যে সহজে অ্যাক্সেসের অনুমতি দিয়েছে। ডায়মন্ড বিশ্বাস করেন যে সস্তা ভিডিও ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সক্ষম মোবাইল ফোন যা ভিডিও রেকর্ড করতে পারে তা 'ক্ষমতা' বেসামরিক নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে, জনগণকে নিজেরাই সার্ভেলান্ট হয়ে উঠতে এবং নজরদারির ঐতিহ্যবাহী শ্রেণিবিন্যাসকে সমতল করে তুলেছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমরা আমাদের হাতে থাকা ডিভাইসগুলি আমাদের সরকারী এবং কর্পোরেট কর্মকর্তাদের ক্রিয়াকলাপ নথিভুক্ত করার অনুমতি দেয়, তাই বেসামরিক নাগরিকদের দিনের যে কোনও সময় শক্তিশালী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার ক্ষমতা দেয়; নিচ থেকে কর্তৃপক্ষকে দেখার ক্ষমতা। এমন একটি সমাজের ধারণা যা চতুর্থ এস্টেটে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং আমাদের অ্যাক্সেস এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতার প্রতীকগুলিকে জবাবদিহি করার ক্ষমতা রাখে তা ৮০ এর দশকের শো সিওপিএস-এ দেখা যায়। এমন একটি শো যা আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপকে প্রকাশ করেছিল কারণ তারা বল প্রয়োগ করে এবং কখনও কখনও নৃশংস কৌশল ব্যবহার করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছিল। শোটি বৈপ্লবিক ছিল যে এটি ক্ষমতার এজেন্টদের রেখেছিল যারা তাদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য কেউ ছাড়াই অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছিল এবং হঠাৎ সাধারণ জনগণের সমালোচনা করার জন্য আলোতে আনা হয়েছিল।
প্রাক্তন সিআইএ কর্মী '''এডওয়ার্ড স্নোডেন''' অবশ্য দেখিয়েছেন যে কীভাবে কখনও কখনও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক নজরদারি ঘটে যখন আমরা জানি না যে এটি ঘটছে বা এমনকি বিদ্যমান রয়েছে। যখন জনগণ অসচেতন থাকায় কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। সেই সময় যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আইনের ঢিবি যা কেউ পড়ে না, ক্ষমতার এজেন্টদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলিতে অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়। এনএসএ হাজার হাজার নিরহংকারী আমেরিকানদের টেলিফোন রেকর্ড সংগ্রহ করছিল। একটি প্রক্রিয়া যা টেলিযোগাযোগ সংস্থা ভেরাইজনকে দৈনিক ভিত্তিতে টেলিফোন ডেটা হস্তান্তর করার জন্য একটি গোপন আদালতের আদেশ দ্বারা সক্ষম হয়েছিল। এনএসএ প্রিজম নামে একটি নজরদারি প্রোগ্রামে প্রতিটি বড় ইন্টারনেট সংস্থার সার্ভারে ট্যাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। 'প্রিজম' কর্মসূচি থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্যও ব্রিটেনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল। এডওয়ার্ড স্নোডেন, যিনি এই তথ্য ফাঁসের জন্য দায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সম্পত্তি চুরির জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং নির্বাসনে রয়েছেন এবং তবুও তিনি যা করেছেন তা হল ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা। [৯]
এডওয়ার্ড স্নোডেন এবং উইকিলিকসের মতো সংস্থা গণ নজরদারির ব্যাপকতার চিত্র তুলে ধরেছে। স্নোডেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডর দূতাবাসে পালিয়ে যেতে হয়েছিল যাতে তিনি দাবি করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্বাভাবিক উপস্থাপনার প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা যায়। অ্যাক্সেসযোগ্যতার দিক থেকে অনলাইনে সংগঠিত করা অনেক সহজ হতে পারে, তবে জনসাধারণ যদি অবিচ্ছিন্ন নজরদারির অধীনে থাকে তবে তর্ক করা কঠিন হয়ে পড়ে যে তারা তাদের ডিভাইস দ্বারা সত্যই ক্ষমতায়িত, যদি এগুলি তাদের গোপনীয়তার এই জাতীয় আক্রমণকে অনুমতি দেয়।
প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল একটি সমাজে ক্ষমতাসীনরা কীভাবে নজরদারি বৈশিষ্ট্যগুলির অপব্যবহার করতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ বিশ্বের ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারি। গল্পটি ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল যখন তৎকালীন নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রাজকীয় সম্পাদক ক্লাইভ গুডম্যান এবং একজন বেসরকারী তদন্তকারী গ্লেন মুলকায়ারকে রাজকীয় সহযোগীদের জন্য রেখে যাওয়া ভয়েসমেইল বার্তাগুলিতে বাধা দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয় এবং আরও হ্যাকিংয়ের গল্প সামনে আসে। তবে এই কেলেঙ্কারির জটিল রাজনৈতিক মুহূর্ত আসে যখন গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায় যে সংবাদপত্রটি খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মিলি ডাউলারের মোবাইল ফোন হ্যাক করেছে। অভিযোগ, টার্গেটদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, মৃত ব্রিটিশ সৈন্যদের আত্মীয় এবং লন্ডন বোমা হামলায় আটকে পড়া লোকজন রয়েছেন।
নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির সাথে একটি সমাজে, অবস্তুগততা সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত তথ্য ডিজিটাল আকারে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেটের কারণে সময় ও স্থানের দূরত্বও দূর হয়ে যায়। আরও কি, সমতা নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত নাগরিক অনলাইনে তাদের মতামত পড়তে এবং পোস্ট করতে পারে। ক্ষমতার রাজনীতির জন্য, ইন্টারনেটের উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে সর্বাধিক পরিমাণে সমর্থন অর্জনের জন্য সময়মতো রাজনৈতিক তথ্য প্রেরণ করতে সহায়তা করতে পারে। নেটওয়ার্কযুক্ত সংবাদপত্র, সম্প্রচার, টেলিভিশন ইত্যাদি জনসাধারণকে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সরবরাহ করতে পারে, যাতে জনমতের জন্য সঠিক অভিযোজন আকার দেওয়া যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতো দেশে, এটি অনলাইনে ব্যাপক সেন্সরশিপের দিকে পরিচালিত করেছে। চীনের গ্রেট ফায়ারওয়াল[ এর অর্থ হ'ল ইন্টারনেট কেবল সরকার অনুমোদিত সামগ্রী অ্যাক্সেস করে এবং অনুসন্ধানগুলি নির্দিষ্ট শব্দের জন্য ফিল্টার করা হয় যার ফলে ফৌজদারি অভিযোগ এবং কারাদণ্ড হতে পারে। শিল্পী এবং সমালোচক পিআরসি আই ওয়েইওয়েই চীনের মতো আচরণের জন্য এনএসএর নজরদারি কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন এবং সরকারী নজরদারিতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
== নৈতিক উদ্বেগ ==
নজরদারি কখনই বিষয়টির গোপনীয়তার যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশায় অনুপ্রবেশ করা উচিত নয়। যদিও বেসরকারী সুরক্ষা এবং নজরদারি অপারেটিভরা অনুসন্ধান এবং জব্দ সুরক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক উদ্বেগের সাথে পুলিশ অফিসার নয়, যদি অযৌক্তিক উপায়ে কোনও বিষয়ের অধিকার লঙ্ঘন হয় তবে সম্ভবত নাগরিক দায়বদ্ধতা থাকবে।
এটি একটি পরিচিত সত্য যে উদাহরণস্বরূপ ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করার সময় - এমন একটি ব্যবহার যা দৈনন্দিন ভিত্তিতে বৃহদায়তন হতে থাকে - লোকেরা শর্তাদি এবং শর্তাদি না পড়েই সম্মত হয়। অ্যাপ্লিকেশনগুলি তখন কেবল ব্যবহারকারীদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে আকারের ডেটা ব্যাংক সংগ্রহ করে না, তবে প্রতিষ্ঠানগুলি (সরকারের মতো) নিজেরাই প্রোফাইল এবং কথোপকথন (ব্যবহারকারীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়) থেকে ব্যক্তিগত ডেটা অ্যাক্সেস করে, সুরক্ষার জন্য বলা হয় এমন বিষয়গুলির জন্য এগুলি ফিল্টার করে। এই ঘটনাগুলির উপর সুনির্দিষ্ট তথ্য অর্জন করা কঠিন এবং যদিও, জনগণকে যা জ্ঞান দেওয়া হয় তা থেকে, প্রতিটি সরকার সবকিছু নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না, যখন এটি ঘটে তখন এটি নজরদারির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এই ধরণের পরিস্থিতিতে, এটি খুব বিতর্কিত যে সম্প্রদায়ের সর্বোত্তম স্বার্থে সুরক্ষার কারণে নজরদারির 'ইতিবাচক' ব্যবহার হতে পারে কিনা, বা এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণের মামলা। সামগ্রিকভাবে ইন্টারনেটের আরও সাধারণ স্তরে উত্থাপিত যুক্তিগুলিও ডিজিটাল শ্রমের একটি ভাল শোষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে কিছু অ্যাপ্লিকেশন এবং পৃষ্ঠাগুলি ব্যবহার করে, উদাহরণস্বরূপ, আমরা ব্যবহারকারীরা নিজের চেয়ে অন্য কাউকে বেশি উপকৃত করছি এবং যেখানে মেকানিক্যাল তুর্কের মতো সিস্টেমে শ্রম অত্যন্ত সস্তা যখন এটি অর্থ প্রদান করে এবং তাই এইচআইটির অনুরোধকারীকে উপকৃত করে। গুগল এবং অ্যামাজনের মতো সিস্টেম / কর্পোরেশনগুলিকে মেগাস্ট্রাকচার, উল্লেখযোগ্য প্রাসঙ্গিকতার সাথে ডেটাব্যাঙ্ক হওয়ার অনুমতি দেয়, যেন একটি ভার্চুয়াল সাম্রাজ্য যা আরও শারীরিক চ্যালেঞ্জ করতে পারে (উদাহরণস্বরূপ তেল কোম্পানি এবং গাড়ি কারখানা)। ডেটাব্যাঙ্কগুলি ব্যবহারকারীর 'সম্মতি' (প্রায়শই অজানা) এর উপর নির্মিত।
যদিও সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল বিশ্ব ছায়াময় পরিস্থিতি, লঙ্ঘন, অপব্যবহার এবং নৈতিক উদ্বেগের পরিস্থিতিগুলির উদাহরণ (মাঝে মাঝে ভাল সংবাদের জন্য তৈরি করে) অনুমতি দেয়, এগুলি এমনকি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মতো এটির একটি নমুনা বিভাগ গ্রহণ করতে দেখা যায়। ফেসবুক একটি জনপ্রিয় হওয়ায়, এটি অতীতে উদ্বেগের বিষয় ছিল, উদাহরণস্বরূপ ব্যবহারকারীরা এমনকি পরবর্তী অবধি এটি সম্পর্কে সচেতন না হয়েই "সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে ব্যাপক আকারের সংবেদনশীল সংক্রামকের পরীক্ষামূলক প্রমাণ" চালাতে সক্ষম হয়েছিল। আবারও ব্যবহারকারীর ভঙ্গুরতা এবং তুলনামূলকভাবে সহজ ম্যানিপুলেশনের অনুমতি দেয় এমন একটি এক্সপোজারকে আন্ডারলাইন করে, এটি এবং এর এক্সটেনশন অ্যাপ্লিকেশনগুলির কাজের মধ্যে নৈতিক সমস্যা রয়েছে।
একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি হতে পারে ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন মেসেঞ্জার সম্পর্কিত নৈতিক উদ্বেগ। মেসেঞ্জারের অনেক ব্যবহারকারীই জানেন না যে তারা অ্যাপটি ব্যবহারে সম্মত হওয়ার সময় ঠিক কতগুলি অনুমতি দিয়েছেন। এটিকে গোপনীয়তার সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত কিনা তা নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে।
আরও কিছু আশ্চর্যজনক অনুমতিগুলির মধ্যে রয়েছে তবে সীমাবদ্ধ নয়: আপনার পরিচিতিগুলি সংশোধন করা, আপনার পাঠ্য বার্তাগুলি পড়া, পাঠ্য বার্তা প্রেরণ, সরাসরি ফোন নম্বরগুলিতে কল করা, কল লগ পড়া, আপনার ইউএসবি স্টোরেজের সামগ্রী পড়া, ছবি এবং ভিডিও তোলা, অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড করা। এই অনুমতিগুলির মধ্যে কয়েকটি অবাক করা বলে মনে হচ্ছে কারণ এই অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত বার্তা এবং ছবি প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এখানে নৈতিক উদ্বেগ হ'ল অনেক ব্যবহারকারী এই অনুমতিগুলি সম্পর্কে অসচেতন এবং এইভাবে একটি ভয় থাকতে পারে যে অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারীরা ডেটা মাইন বা চরম ক্ষেত্রে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এটির সুবিধা নিতে পারে। এখানে ভবিষ্যতের জন্যও উদ্বেগ রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ - "যদি এত লোক ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রযোজ্য অনুমতি গোষ্ঠীগুলি পরীক্ষা না করে থাকে ... ভবিষ্যতে মোবাইল বিকাশকারীরা কতটা সাহসী হবেন?".
ফেসবুক এই নৈতিক আতঙ্কে সাড়া দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, 'বন্ধুকে সেলফি পাঠাতে চাইলে আপনার ফোনের ক্যামেরা অন করে সেই ছবি ধারণ করতে অ্যাপটির অনুমতি নিতে হবে। আপনি যখন অ্যাপটি ব্যবহার করছেন না তখন আমরা আপনার ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন চালু করি না। যাইহোক, এটি সম্পূর্ণরূপে জল্পনা শেষ করেনি, কারণ প্রতিক্রিয়াটিতে সমস্ত অনুমতির ন্যায্যতার সম্পূর্ণ ভাঙ্গন ছিল না। সম্ভবত ফেসবুককেও এখন 'বিগ ব্রাদার' হিসেবেও দেখা হয় এবং অবিশ্বাসের একটা স্তর আছে।
তবে আস্তে আস্তে মানুষ বুঝতে পেরেছে ফেসবুক কীভাবে এই পারমিশন ব্যবহার করে। পরিচিতিগুলির অনুমতির প্রসঙ্গে, আরেকটি ন্যায্যতা হ'ল "অ্যাপ্লিকেশনটির আপনাকে একটি নিশ্চিতকরণ কোডের মাধ্যমে আপনার ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বার্তাগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অনুমতি দেওয়া দরকার"।
এটি অ্যাপটি সম্পর্কে কিছু নৈতিক বিতর্ককে বাতিল করতে পারে তবে সত্যটি হ'ল ফেসবুক আপনার কাছে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনগুলি লক্ষ্য করতে অ্যাপটি ব্যবহার করে, তবে এই ডেটা সংগ্রহের বেশিরভাগই অ্যাপ্লিকেশনটিতে রয়েছে। এটি একটি জটিল প্রশ্ন উত্থাপন করে: আপনার আগ্রহের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন পাঠানো গোপনীয়তার লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা উচিত? মোটামুটিভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়।
নৈতিক সমস্যা, অবহিত সম্মতির নীতি এবং অনলাইনে পরিচয়ের প্রকাশ আসলে একটি বিস্তৃত বিষয়ের অংশ এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবেলা করা যেতে পারে, কোনও ব্যক্তির স্ট্যাটাস আপডেট থেকে শুরু করে রাফায়েল কাপুরো এবং ক্রিস্টোফ পিঙ্গেলের কাগজের মতো একাডেমিক প্রকাশনা পর্যন্ত। মুদ্রণ যুগে সেন্সরশিপ থেকে অনলাইন আস্থা সম্পর্কিত আরও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যন্ত, এটি নজরদারি এবং স্বাধীনতার মধ্যে উত্তেজনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা ডিজিটাল সম্প্রদায়ের সহযোগিতামূলক পরিবেশ এবং পারস্পরিক সমর্থন তৈরিতে মৌলিক নৈতিক চ্যালেঞ্জ গঠন করে।
=== নজরদারির পক্ষে ও বিপক্ষে ===
সমর্থকরা যুক্তি দেন যে নজরদারি তিনটি উপায়ে অপরাধ হ্রাস করতে পারে: প্রতিরোধ, পর্যবেক্ষণ এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে। নজরদারি ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে এবং মোডাস অপারেন্ডি প্রকাশ করে প্রতিরোধ করতে পারে। এর জন্য ন্যূনতম স্তরের আক্রমণাত্মকতা প্রয়োজন। নজরদারি উন্নত পরিস্থিতিগত সচেতনতার মাধ্যমে বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মানব অপারেটরদের একটি কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে, যেমন ভিডিও বিশ্লেষণ। নজরদারি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের জন্য ফুটেজের প্রাপ্যতার মাধ্যমে কোনও ঘটনার পুনর্গঠন এবং অপরাধ প্রমাণ করতে সহায়তা করতে পারে। নজরদারি সংস্থানগুলি দৃশ্যমান হলে বা নজরদারির পরিণতি অনুভব করা গেলে বিষয়গত সুরক্ষাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
* সমর্থকরা কেবল বিশ্বাস করে যে এটি সম্পর্কে কিছুই করা যায় না এবং লোকেরা অবশ্যই কোনও গোপনীয়তা না থাকার অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
* সাধারণ যুক্তিটি হ'ল: "তর্ক লুকানোর কিছু নেই, যদি আপনি কিছু ভুল না করেন তবে আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
অন্যদিকে, অনেক নাগরিক অধিকার এবং গোপনীয়তা, যেমন ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে নাগরিকদের উপর সরকারী নজরদারিতে ক্রমাগত বৃদ্ধির অনুমতি দিয়ে আমরা অত্যন্ত সীমিত বা অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক এবং / অথবা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সহ একটি গণ নজরদারি সমাজে শেষ করব।
* কিছু সমালোচক বলেছেন যে সমর্থকদের দ্বারা করা দাবিটি পড়ার জন্য সংশোধন করা উচিত: "যতক্ষণ না আমরা যা বলি তা করি, ততক্ষণ আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
যদি এমন যুক্তি থাকে যে আমাদের ডিজিটাল নজরদারি সীমাবদ্ধ করা উচিত, তবে এটি সামাজিক মিডিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহারে কাটছাঁট করতে হবে। তবে "আজকের সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের নমুনা হিসাবে আমাদের সম্পর্কে কিছু শিখিয়ে থাকে তবে তা হ'ল ভাগ করে নেওয়ার জন্য মানুষের প্রবণতা গোপনীয়তার জন্য মানুষের প্রবণতাকে ছাড়িয়ে যায়। এটি তখন পরামর্শ দেবে যে মানুষ গোপনীয়তার চেয়ে ভাগ করে নেওয়ার কাজটিকে মূল্য দেয়, সুতরাং নজরদারির বৃদ্ধি এইভাবে আশ্চর্যজনক নয় কারণ দেখার জন্য আরও কিছু উপলব্ধ রয়েছে।
== যুক্তরাজ্যে নজরদারি ==
'''''যুক্তরাজ্যে নজরদারি''' সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, দয়া করে যুক্তরাজ্যে গণ নজরদারি দেখুন''
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অগ্রগামী হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্যে ডিজিটাল আকারে নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ সালে বিল্ড গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) ছিল যা ইংরেজিভাষী দেশগুলির ফাইভ আইজ সহযোগিতার মতো প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বৈদ্যুতিন যোগাযোগে বাধা দেওয়া, যা সময়ের সাথে সাথে অনেক বেড়েছে।
আজকাল, যুক্তরাজ্যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের নজরদারি যুক্তরাজ্যের সংসদে প্রণীত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষত, ব্যক্তিগত বার্তাগুলির সামগ্রীতে অ্যাক্সেস (অর্থাৎ, কোনও ইমেল বা টেলিফোন কলের মতো যোগাযোগের বাধা) অবশ্যই সেক্রেটারি অফ স্টেটের স্বাক্ষরিত ওয়ারেন্ট দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা গোপনীয়তা আইন যুক্তরাজ্যের আইনে প্রযোজ্য। আইনটি বৈদ্যুতিন নজরদারি ব্যবহারের উপর শাসন এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করে।
== জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
* জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর-এ'' গোপনীয়তার অভাব পুরো উপন্যাস জুড়ে একটি প্রধান চলমান থিম। অডিও এবং ভিডিও উভয়ই রেকর্ড করে এমন টেলিস্ক্রিনগুলি চরিত্রগুলির অনেকের বাড়িতে, ব্যবসায় এবং সর্বজনীন স্থানে ইনস্টল করা হয় যাতে তাদের উপর ট্যাব রাখা যায়। বেসরকারী নাগরিকদের তাদের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে রিপোর্ট করতে উত্সাহিত করা হয় এবং থট পুলিশ 'চিন্তার অপরাধ' উন্মোচনের দায়িত্বে থাকা আন্ডারকভার অফিসার। উপন্যাসে নজরদারির থিমগুলি 'বিগ ব্রাদার' শব্দগুচ্ছের ব্যবহার এবং একই নামের টেলিভিশন প্রোগ্রাম সহ একটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রভাব ফেলেছে। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারির সাথে যুক্ত একটি নির্দিষ্ট ভয় রয়েছে এবং ১৯৮৪ এটি খুব ভালভাবে চিত্রিত করে - "অবশ্যই কোনও মুহুর্তে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা জানার কোনও উপায় ছিল না" এর থেকে আরও, অরওয়েল সরকারী ক্ষমতার জন্য ক্ষুধা এবং ড্রাইভের সাথে সহাবস্থান নজরদারির ধারণাটিকে সম্বোধন করেছেন। এটি নজরদারির নেতিবাচক প্রভাবগুলি নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করে, যা আজ আধুনিক সমাজে সিসিটিভি ব্যবহার এবং আজ চালু হওয়া নজরদারির ক্রমবর্ধমান পরিমাণের মাধ্যমে স্পষ্ট। অরওয়েল তার উপন্যাসে বলেছেন, 'ক্ষমতা কোনো মাধ্যম নয়; এটা একটা শেষ। বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেউ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে না; একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য বিপ্লব করে। নিপীড়নের বস্তু হচ্ছে নিপীড়ন। নির্যাতনের বস্তু হচ্ছে নির্যাতন। ক্ষমতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা"। এটি প্রমাণ করে যে নজরদারির ব্যবহার সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য নয়, বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
* ৮০ এর দশকে ''সিওপিএস'' শোটি হিট হয়েছিল কারণ এটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের অপরাধীদের উপর আইনকে শক্তিশালী করার জন্য একাধিকবার বল প্রয়োগের নজরদারি ফুটেজ দেখিয়েছিল। শোটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারের আপাতদৃষ্টিতে অকলুষিত চিত্রটি উন্মোচন করেছিল।
* অনেক 'ফ্লাই-অন-দ্য ওয়াল' রিয়েলিটি টিভি শো একটি সেটিংয়ে ক্যামেরা মাউন্ট করার পদ্ধতি নিয়োগ করে এবং তাদের স্বীকার না করেই বিষয়গুলির ক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করে। এটি বিষয়গুলির জ্ঞান দিয়ে করা যেতে পারে, যেমন ''শোতে আমি একজন সেলিব্রিটি ... গেট মি আউট অফ হিয়ার!'', বা ক্যামেরাটি লুকানো যেতে পারে এবং কেবল পরে ''পাঙ্ক'ডের'' মতো শোতে দেওয়া যেতে পারে। এই দ্বিতীয় ধরনের জনসাধারণের সদস্যদের ব্যবহার করার ঝোঁক থাকে।
* ২০১৩ সালের চলচ্চিত্র ''আন্ডার দ্য স্কিন-এ'' বেশ কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে স্কারলেট জোহানসনের চরিত্র, একজন এলিয়েন মানুষকে অপহরণ করার চেষ্টা করে, একটি ভ্যানে অপরিচিতদের তুলে নিয়ে যায়। এই অপরিচিতদের অভিনেতাদের দ্বারা অভিনয় করা হয়নি, তবে জনসাধারণের সদস্যরা জানতেন না যে তারা ফিচার ফিল্মে অংশ নিতে চলেছেন, ভ্যানে একাধিক লুকানো ক্যামেরা দৃশ্যগুলি রেকর্ড করে
* ''- গগলবক্স'', একটি ইন্টারঅ্যাকশন প্রোগ্রাম যা প্রতিদিনের লোকেরা টিভি দেখছে। দর্শক টিভি দেখতে দেখতে দেখছেন।
* জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পাপারাজ্জি একটি পুনরাবৃত্ত বিষয়। এটি নজরদারির একটি আক্রমণাত্মক রূপ যা মূলত সেলিব্রিটিদের হয়রানি করে যখন তারা প্রহরায় ধরা পড়ে তখন তাদের ফটো এবং ভিডিও পেতে হয়। এটি সমস্যাযুক্ত হয়ে ওঠে কারণ এই ধরণের নজরদারি নৈতিক আচরণবিধির বিরুদ্ধে যায়, কারণ এই ধরণের আক্রমণাত্মক অনুশীলনকে সম্মতি দেওয়া হয়নি।
* ফিলিপ কে ডিকের ছোট গল্প ''দ্য মাইনরিটি রিপোর্ট'' এবং পরবর্তী চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম এবং ফক্স টেলিভিশন সিরিজটি এমন একটি বিশ্বের চিত্রিত করে যেখানে লোকেরা এখনও করেনি এমন অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার হতে পারে। ফিল্ম অভিযোজনে, শহরব্যাপী অপটিক্যাল স্বীকৃতি সিস্টেম এড়াতে নায়ককে অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ চোখের প্রতিস্থাপন শল্য চিকিত্সার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
* ''পার্কস অ্যান্ড রিক্রিয়েশনের'' চূড়ান্ত মরসুমে, লেসলি একটি ডেটা-মাইনিং টেক সংস্থার সাথে লড়াই করে যা পাওনির নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে।
= প্রতিনজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
প্রতিনজরদারি অর্থ "নিচ থেকে দেখা এবং এর ব্যুৎপত্তিটি 'সুর' (ওভার) কে 'সস' দিয়ে প্রতিস্থাপন করা থেকে উদ্ভূত হয়, যার অর্থ 'অধীন' বা 'নিচে' বা 'নিচ থেকে'। সুতরাং শব্দটি নিজেই পরামর্শ দেয় যে প্রতিনজরদারি নজরদারির বিপরীত এবং দেখার কাজটি উভয়ের মধ্যে একমাত্র ধ্রুবক।
স্যুসভিল্যান্স হ'ল ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা কোনও ক্রিয়াকলাপের রেকর্ডিং, সাধারণত ছোট পরিধানযোগ্য বা বহনযোগ্য ব্যক্তিগত প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রতিনজরদারিকে ক্যামেরা (বা অন্যান্য সেন্সর) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা মানুষ বহন করে। সুসভিলেন্স হ'ল বহুবচনের পর্দা (অর্থাত্ "ভিড় পর্দা" বা অ-কর্তৃপক্ষ দ্বারা করা, পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন করা বা অনুরূপ)।
আপনার অভিধান প্রতিনজরদারিকে "দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ চলাকালীন কোনও ব্যক্তির সুবিধাজনক পয়েন্ট থেকে পরিবেশের রেকর্ডিং" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে।
দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনজরদারি ব্যবহারের একটি উদাহরণ - যা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মধ্যে জনপ্রিয় - যেখানে কোনও ব্যক্তি আইন ভঙ্গকারী উচ্চতর কর্তৃপক্ষের ছবি বা রেকর্ডিং তোলেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুলিশ অফিসার পুরোপুরি ইউনিফর্ম পরিহিত কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় তাদের ফোন ব্যবহার করছেন বা আদালতের বিচারক ডাবল হলুদ লাইনে পার্কিং করছেন। এগুলি কেবল ছোটখাটো উদাহরণ হতে পারে তবে আপনি যখন এই লাইনগুলির সাথে কিছু দেখেন তখন এটি আসলে প্রতিনজরদারি ব্যবহার করছে।
== স্টিভ মান ==
সাসভিল্যান্সের ক্ষেত্রে একটি মূল ব্যক্তিত্ব হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এর শব্দটি তৈরি করেছিলেন স্টিভ মান, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। বিশ্বের প্রথম সাইবর্গ বলে দাবি করা তাঁর দ্বারা কয়েক বছর ধরে বাস্তব জীবনে সাসভিলেন্সের অনুশীলন কার্যকর করা হয়েছে। মান গত ৩৫ বছর ধরে তার মাথায় একটি কম্পিউটার সংযুক্ত করে বসবাস করছেন যা তার জীবনকে সাসভিল্যান্স অনুশীলনের একটি প্রমাণ করে তুলেছে। স্টিভ মান একজন সমাজ সংস্কারবাদী হওয়ার আশা করেন যিনি অন্যদের পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রহণে প্ররোচিত করবেন। তার জীবদ্দশায় মান রাস্তায় বিজ্ঞাপন ব্যানার ফিল্টার করতে তার আইট্যাপ ব্যবহার করে আসছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে লোকেরা কী দেখতে পাবে তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং আজকের সমাজগুলি প্রলুব্ধকর শব্দ এবং চিত্রাবলী দ্বারা বোমাবর্ষণ করা হয় যা তাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে পণ্য ও পরিষেবাদি ক্রয় করতে বাধ্য করে।
=== প্রতিনজরদারিের মূল ধারণা ===
মান সাসভিল্যান্সের দুটি প্রধান সংজ্ঞা সরবরাহ করে, যা প্রায় সমতুল্য, তবে প্রতিটি সাসভিল্যান্সের কিছুটা আলাদা দিক ক্যাপচার করে:
# বিপরীত নজরদারি: নিচ থেকে দেখতে;
# ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ক্যাপচার: কার্যকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা একটি কার্যকলাপ রেকর্ডিং। অডিও সাসভিল্যান্সের জন্য ইতিমধ্যে একটি নির্দিষ্ট আইনী নজির রয়েছে, উদাঃ টেলিফোন কথোপকথনের "একপক্ষ" রেকর্ডিং কথোপকথনের পক্ষ নয় এমন ব্যক্তির দ্বারা রেকর্ডিংয়ের চেয়ে বেশি আইনী সুরক্ষা উপভোগ করে। বেশিরভাগ রাজ্যে, অডিও নজরদারি অবৈধ, তবে অডিও সোভিলেন্স বৈধ।
স্টিভ ম্যানের মতে, দুটি ধরণের সাসভিলেন্স রয়েছে: '''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (উদাঃ সংস্থার মধ্যে থেকে উদ্ভূত) এবং '''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (প্রায়শই সংস্থার দ্বারা অবাঞ্ছিত)।
'''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স ("সাবভিল্যান্স") এর উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্রাকের পিছনে ১-৮০০ নম্বর যাতে অন্যান্য চালকরা "আমি কীভাবে চালাচ্ছি" রিপোর্ট করতে পারে;
* একজন অধ্যাপকের তার ছাত্রদের দ্বারা কর্মক্ষমতা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া;
* ব্যবস্থাপনা দ্বারা ক্রেতাদের দেওয়া সন্তোষজনক প্রশ্নাবলী,
যেখানে "সাবভিল্যান্স" নাশকতামূলক, সংগঠনের অভ্যন্তর থেকে নজরদারির উপর "টেবিলগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া" অর্থে, ("নাশকতামূলক" আক্ষরিক অর্থ "নিচ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো", কোনও সংস্থার মধ্যে থেকে গোপনে কাজ করা)।
'''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্সের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীরা ড্রাইভারের (অবৈধ) ড্রাইভিং অভ্যাস নথিভুক্ত করে;
* গ্রাহকরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে অনিরাপদ ফায়ার এক্সিটের ছবি তুলছেন এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের রিপোর্ট করছেন;
* নাগরিকরা পুলিশের নির্মমতার ভিডিও ধারণ করছে এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে অনুলিপি পাঠাচ্ছে।
=== ম্যাকডোনাল্ডস অ্যাটাক ===
২০১২ সালের ১ জুলাই পরিবারের সাথে প্যারিসে ছুটি কাটাতে গিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মচারীদের দ্বারা স্টিভ মান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। হামলার কারণ ছিল মান রেস্তোরাঁর ভিতরের দৃশ্য এবং মাথায় আইট্যাপ প্রযুক্তি লাগানো মেনুতে ভিডিও করছিলেন। যদিও মানের এখানে কোনও পয়েন্ট প্রমাণ করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, তবে তার মামলাটি এখন প্রথম সাইবারনেটিক ঘৃণ্য অপরাধ হিসাবে পরিচিত, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের মধ্যে লাইনগুলি অস্পষ্ট হয়ে গেলে কী ঘটে। নজরদারি ব্যবস্থা দ্বারা চিত্রগ্রহণ করার সময় মানকে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করা হয়েছিল কারণ তিনি এটি আবার চিত্রগ্রহণ করছিলেন। আক্রমণের ফলাফলে, মানের ছয় বছর বয়সী মেয়ে দুটি পদটির শক্তির গতিশীলতা বর্ণনা করে একটি স্কেচ আঁকেন।
ম্যাকডোনাল্ডসের ঘটনাটি ম্যাকভিল্যান্স নামে একটি নতুন শব্দ তৈরি করেছিল যা মান পরে পর্দা করার কাজের প্রতি সমাজের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি চিত্রে রেখেছিলেন।
=== তিনটি দল ===
ইতিহাসের মাধ্যমে সমাজগুলি নজরদারির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি (মান এবং ফেরেনবক)। প্রথম ধরনের রাষ্ট্র জনগণকে একই মাত্রায় রাষ্ট্রের উপর নজরদারি করার অনুমতি দেয়। এই রাজ্যগুলি তাদের জনগণকে রাজনৈতিক আলোচনা এবং সংস্কারকে উত্সাহিত করার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্কিং, রাজনৈতিক ফোরাম এবং তথ্য সংক্রমণের মাধ্যমে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয়। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি উপযুক্ত আদর্শিক কাঠামো সরবরাহ করে যেখানে সাসভিল্যান্সের এই জাতীয় শর্তগুলি গ্রহণযোগ্য। যদিও লোকেরা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করতে স্বাধীন, এই জাতীয় দেশগুলিতে বিদ্যমান আইনগুলি এমন যা সরকার এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির অন্তর্গত সংবেদনশীল তথ্য এবং ডেটা রক্ষা করে। অতএব, যখন ব্যক্তিরা এই জাতীয় তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে বা এটি জনসাধারণের কাছে ফাঁস করার চেষ্টা করছে তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। চেলসি ম্যানিং এবং এডওয়ার্ড স্নোডেন উভয়ই উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তাদের উদ্ঘাটনের মধ্যে ছিল স্নোডেনের জন্য প্রিজম নজরদারি প্রোগ্রাম এবং ম্যানিংয়ের পক্ষ থেকে কোল্যাটারাল মার্ডার নামে পরিচিত একটি ভিডিও। হুইসেলব্লোয়াররা বিতর্কের একটি গরম বিষয় কারণ তারা সরকার কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত প্রযুক্তি এবং শক্তিতে সজ্জিত ব্যক্তি যারা পরিবর্তে তাদের সরঞ্জামগুলি রাষ্ট্রের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তারা একই সঙ্গে নজরদারি ও সাসভিল্যান্স চালাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় প্রকারটি হ'ল রাষ্ট্র যা এমন আইন বজায় রাখে যা জনগণকে এমন কোনও আলোচনায় জড়িত হতে বাধা দেয় যা সম্ভবত রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করতে পারে এবং সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে পারে। যদিও রাষ্ট্রের কাছে ক্যামেরা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে তার নাগরিকদের নিরীক্ষণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে এটি রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। এই ধরনের রাজ্যে এটা খুবই স্বাভাবিক যে কর্পোরেশন বা সরকারী দুর্নীতির ঘটনাগুলি উত্তর কোরিয়া, চীন এবং বিশ্বজুড়ে সামরিক একনায়কতন্ত্রের মতো আচ্ছাদিত হচ্ছে।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে এমন রাজ্যে যেখানে রাষ্ট্রের তদারকির তুলনায় মানুষের আন্ডারসাইট কর্তৃত্ব বেশি। এক্ষেত্রে নাগরিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা পুলিশ ও সরকারী সংস্থাগুলির পাশাপাশি দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের জ্ঞান সরবরাহ করে। এছাড়াও আইন পাস এবং নির্বাচনের জন্য ভোট দেওয়ার জন্য ই-ভোট সিস্টেমের মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়ায় ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। একইভাবে, অ্যামাজন এবং ইবেয়ের মতো খ্যাতি সিস্টেমের বিকাশ ব্যবহারকারীদের ভবিষ্যতের ক্রেতাদের জন্য পণ্য ও পরিষেবাদির রেট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, এক ধরণের গ্রাহক সাসভিল্যান্স সিস্টেম তৈরি করেছে। যদিও এটি ন্যায্য বাণিজ্যকে উত্সাহ দেয় এবং অনলাইন বাজারে গণতান্ত্রিক শর্ত প্রতিষ্ঠা করে, এটি কখনও কখনও বাকপটুতা এবং পেশাদারিত্বের ব্যয়েও কাজ করে। যেহেতু এই সাইটগুলি সমস্ত ধরণের ব্যবহারকারীদের তাদের কেনা কোনও পরিষেবা বা পণ্য থেকে তাদের রেটিং / পর্যালোচনা পোস্ট করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, তাই তাদের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনও বিশেষ দক্ষতা বা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না (রাইনগোল্ড)।
== সমাজ ==
পারফরম্যান্সগুলি দেখায় যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরণের নিয়ম লঙ্ঘন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি নতুন ধরণের ভারসাম্য তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা পাবলিক প্লেসে নজরদারির কাজ হিসাবে ভিডিও করার জনসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা দেখায়। যখন এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ সাধারণ মানুষ, যেমন পারফর্মারদের দ্বারা অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে করা হয়, তখন এটি প্রায়শই গৃহীত হয়। যাইহোক, যখন ডেটা প্রজেক্টরগুলি নজরদারি কর্মকর্তাদের তাদের সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা দেখায়, সেখানে রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা কম। নজরদারির জন্য দায়বদ্ধ সাংগঠনিক কর্মীরা সাধারণত "সাধারণ মানুষ" পারফর্মারদের কাছ থেকে সাসভিলেন্স গ্রহণ করেন না, এমনকি যখন ডেটা প্রদর্শনগুলি প্রকাশ করে যে প্রতিনজরদারিকারীরা কী রেকর্ড করছে।
স্ব-ক্ষমতায়নের সামাজিক দিকটি পরামর্শ দেয় যে সুভিল্যান্স হ'ল মুক্তির কাজ, আমাদের জনসাধারণের অঞ্চল দখল করা এবং নজরদারি খেলার ক্ষেত্রের সমতলকরণ। তবুও, সাসভিল্যান্স এখন যে সর্বব্যাপী সামগ্রিক নজরদারি দেয় তা ব্যক্তির পক্ষ থেকে সম্মতির চূড়ান্ত কাজ। সার্বজনীন নজরদারি / সাসভিল্যান্স শেষ পর্যন্ত কেবল বিদ্যমান প্রভাবশালী ক্ষমতা কাঠামোর লক্ষ্যগুলি পরিবেশন করতে পারে। সার্বজনীন সুর / সাসভিলেন্স পর্যবেক্ষণ এবং সর্বব্যাপী তথ্য সংগ্রহের বিস্তৃত অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়িয়ে শক্তি কাঠামোকে সমর্থন করতে পারে। অথবা উইলিয়াম গিবসন যেমন ফিচার-দৈর্ঘ্যের মোশন পিকচার ফিল্মে মন্তব্য করেছেন সাইবারম্যান (<nowiki>http://wearcam.org/cyberman.htm</nowiki>) "আপনি নজরদারি করছেন। আর সবাই নজরদারির ওপর নজরদারি চালালে নজরদারি নিষ্ক্রিয় হয়ে যেত। এটা অপ্রয়োজনীয় হবে।
এই প্যানোপটিকন, সূক্ষ্মভাবে সাজানো যাতে একজন পর্যবেক্ষক এক নজরে অনেক ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, এছাড়াও প্রত্যেককে আসতে এবং যে কোনও পর্যবেক্ষককে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে। দেখার যন্ত্রটি একসময় এক ধরণের অন্ধকার ঘর ছিল যার মধ্যে ব্যক্তি গুপ্তচরবৃত্তি করেছে; এটি একটি স্বচ্ছ বিল্ডিং হয়ে উঠেছে যার মধ্যে ক্ষমতার প্রয়োগ সামগ্রিকভাবে সমাজের তত্ত্বাবধানে হতে পারে।
মিশেল ফুকো, ''ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ'', ডিসিপ্লিন, পৃ.
এ ধরনের সমাজে তাত্ত্বিকভাবে সবার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক হতে পারে। বিষয়টি অবশ্য কোন পরিস্থিতিতে কতটা নজরদারি এবং সুনজরদারি উপস্থিত রয়েছে তা নিয়ে নয়, তবে এটি কীভাবে নজরদারির ক্ষমতাহীন প্রকৃতি, পশ্চিমা সমাজে এর অপ্রতিরোধ্য উপস্থিতি এবং এই উপস্থিতির প্রতি সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের আত্মতুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে।
সমসাময়িক নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজগুলিতে, ব্যক্তিরা একক সম্প্রদায় বা ওয়ার্কগ্রুপে এম্বেড হওয়ার পরিবর্তে একাধিক, আংশিক সম্প্রদায় এবং কাজের দলগুলির মধ্যে স্যুইচ করে। তবুও, নজরদারি হ'ল বৃহত শ্রেণিবদ্ধ সংস্থাগুলির শিল্প ও শিল্পোত্তর যুগের একটি প্রকাশ যা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের নব্য-প্যানোপটিকনগুলিতে দক্ষতার সাথে প্রযুক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমাজে, মানুষ সম্ভাবনা বেশি সুভিল্যান্স এবং কোভিল্যান্স চাই, কারণ তাদের গ্রাম / সম্প্রদায় বা শ্রেণিবদ্ধ সংস্থার সুরক্ষার অভাব রয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তাদের নজরদারিকারীদের নজরদারি করার অনুমতি দেয়। সমস্ত লোককে একই সাথে মাস্টার এবং দৃষ্টির বিষয় হওয়ার সামর্থ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিধানযোগ্য কম্পিউটিং ডিভাইসগুলি নজরদারির সাধারণত একতরফা সংলাপে একটি নতুন কণ্ঠস্বর সরবরাহ করে। তারা তাদের একাধিক এবং জটিল নেটওয়ার্কগুলি অতিক্রম করার সাথে সাথে মানুষের জন্য একটি স্ব-ক্ষমতায়নের দিকে একটি উপায় প্রস্তাব করে।
== প্রতিনজরদারির রাজনীতি ==
প্রতিনজরদারি বা Sousveillance নিচ থেকে দেখার একটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করে। এর অর্থ দৃষ্টির বিষয়টির পর্যবেক্ষকের চেয়ে বেশি শক্তি রয়েছে। নানা উপায় ও প্রযুক্তির সাহায্যে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিদ্রোহ ও সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়েছে।
=== ফরাসি বিপ্লব ===
১৭৮৯ সালের ৫ মে ফ্রান্সে এস্টেটস-জেনারেলকে ডাকা হয়। বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা পাদ্রী এবং অভিজাতদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিলেন, তবুও তাদের মাথা দিয়ে ভোট দেওয়া হয়নি। তারা তৎক্ষণাৎ মণ্ডলী ত্যাগ করে এবং তাদের চারপাশে পাদ্রী, অভিজাত এবং কৃষকদের জড়ো করে পৃথকভাবে সভা শুরু করে। এই সমস্ত বিখ্যাত টেনিস কোর্টের শপথের দিকে পরিচালিত করেছিল যেখানে স্ব-প্রশংসিত জাতীয় পরিষদের সদস্যরা ফ্রান্সের নিজস্ব সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত কখনও ভেঙে না দেওয়ার শপথ নিয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে সভাগুলি বাস্তিল আক্রমণের দিকে পরিচালিত করে।
ফরাসি বিপ্লব আমাদের দেখায় যে অন্যদের তুলনায় কম ক্ষমতার অধিকারী একদল লোক রাজা ষোড়শ লুইয়ের উৎখাত এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলুপ্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রীকরণের পথ সংগঠিত ও প্রশস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের খবর সংবাদপত্র এবং নিয়মিত মেইল চিঠিপত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি অনুমান করা নিরাপদ যে সেই সময়ের সমস্ত পতনশীল সাম্রাজ্য (উদাঃ অটোমান সাম্রাজ্য) যদি সম্ভব হয় তবে সংবাদের প্রভাবকে ছবির মাধ্যমে জোর দেওয়া হলে আরও ভালভাবে প্রস্তুত হত। আধুনিক মোবাইল কম্পিউটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং দ্রুত ইন্টারনেট গতির সাথে আজ খবর আমাদের পর্দায় তাত্ক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়।
=== উইকিলিকসের ফাঁস ও আরব বসন্ত ===
২০১০ সালে উইকিলিকসের ওয়েবসাইট থেকে মার্কিন কূটনৈতিক নথি প্রকাশের বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যে সামাজিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করার সময় জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষত, উইকিলিকসের কাজকে প্রায়শই তিউনিশিয়ার বিপ্লবের ঘটনাগুলির মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সেই সময়ে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী, সক্রিয় কর্মী এবং সাংবাদিক তিউনিশিয়ার রাস্তায় নেমে আসে এবং টুইটার এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। তারা প্রত্যেকেই বিক্ষোভের উপাদান পোস্ট করে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং ২০১০ সালে তিউনিশিয়া তার রাষ্ট্রপতি জিনে এল আবিদিন বেন আলীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এই ঘটনাগুলি শীঘ্রই প্রতিবেশী দেশ মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্যদের দখল করে নিয়েছিল আরব বসন্তের বিখ্যাত বিপ্লবী তরঙ্গ গঠন করতে।
=== মেক্সিকোতে জাপাতিস্তাস আন্দোলন ===
মেক্সিকোতে জাপাতিস্তা আন্দোলনের বিস্ফোরণ থেকে ইডিটি নামে একদল কর্মী এবং শিল্পী বিদ্রোহীদের প্রতি বহুজাতিক সমর্থনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। এই আন্দোলন রক্ষার জন্য ইডিটি ফ্লাডনেট প্রোগ্রাম তৈরি করেছে যার লক্ষ্য ছিল মেক্সিকান এবং মার্কিন সরকার এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলির ওয়েব সার্ভারকে অপ্রতিরোধ্য করা।
== নাগরিক সাংবাদিকতা ==
সিটিজেন জার্নালিজমও প্রতিনজরদারির জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। এর উৎপত্তি ১৯৯০ এর দশকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে পারে। এটি সাধারণ জনগণকে এমন তথ্য পোস্ট করে যা তারা মনে করে যে পেশাদার সাংবাদিকদের খোলাখুলিভাবে কথা বলা উচিত। নাগরিকরা যেভাবে তাদের যোগাযোগ সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে সংবাদ এবং তথ্য লিখেন, বিশ্লেষণ করেন এবং প্রেরণ করেন তার মাধ্যমে এটি স্বীকৃত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ব্যক্তিগত ব্লগ এবং ঘরোয়া পরিবেশে চিত্রগ্রহণ করা। তাদের প্রকাশিত সংবাদ ও তথ্য নাগরিক সাংবাদিকতা। এই সুভিল্যান্স পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু পেশাদার সাংবাদিকদের কাজই নয়, সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডও জনগণ মনিটরিং করতে পারবে।
নাগরিক এবং পেশাদার সাংবাদিকতার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে এমন আরেকটি মূল উপাদান হ'ল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ব্যবহার। নাগরিক সাংবাদিকরা তাদের শ্রোতাদের অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে তর্ক করা ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে। এটি প্রায়শই অনলাইন ব্লগিংয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় যা "ব্যবহারকারীদের" তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং ধারণা যুক্ত করতে দেয়। এটি নাগরিকদের পেশাদারদের চেয়ে বৃহত্তর এবং অনেক জোরালো কণ্ঠস্বর দেয় কারণ এটি বিষয়গুলিতে তাদের সত্যিকারের আগ্রহ দেখায়।
নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থান সম্পর্কে প্রশংসা করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ প্রায়শই বড় ঘটনাগুলির মধ্যে থাকে। দুর্যোগ বা ঘটনার শুরুতে একজন সংবাদ প্রতিবেদক খুব কমই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবেন, তবে নিয়মিত নাগরিকরা এখন এই ইভেন্টগুলি সরাসরি স্ট্রিম করতে বা কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউটিউবে পোস্ট করার ক্ষমতা রাখে। নাগরিক সাংবাদিকতাকে প্রায়শই দ্বিতীয় স্তরের প্রতিবেদন হিসাবে উপেক্ষা করা হয়, অনেকে উদ্বিগ্ন যে অনেক নাগরিক সাংবাদিক মূলত অপেশাদার যারা কেবল টিভি বা প্রেসে যা দেখে তা নকল করে। তবে নাগরিক সাংবাদিকতা কেবল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নয়, মিডিয়া এবং সরকারের মধ্যে জোট বা বন্ধন ভেঙে একটি গল্পের পুরো সত্য প্রকাশের জন্যও অপরিহার্য। প্রায়শই সংবাদগুলি এমনভাবে বলা হয় যা ভারসাম্যপূর্ণ নয়, বা সরকারী উদ্যোগের পক্ষে অনুকূলভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়। কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকায়, সাধারণ নাগরিকের পদক্ষেপ নেওয়া এবং সাংবাদিকরা যা করতে পারে না তা করা প্রয়োজন। একজন নাগরিক সাংবাদিক খুব কমই পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানে থাকেন, কারণ তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, অথবা তাদের কোম্পানিকে বেতন দেওয়া হচ্ছে না বা এমনকি সত্যকে বিকৃত করার জন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষ দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সিটিজেন জার্নালিজম হ'ল সাসভিলেন্সের একটি কাঁচা রূপ কারণ এটি সত্যের উপর বিধিনিষেধ বহনকারী সরকারের প্রতি আনুগত্য রাখে না। নাগরিক সাংবাদিকতা চাকরি হারানোর ভয় ছাড়াই জনসাধারণের কাছে সত্য প্রকাশ করতে পারে, তবে এটি পেশাদার এবং জনসাধারণের কাছ থেকে একইভাবে অবিশ্বাসের একটি স্তরের সাথে আসে।
=== ফার্গুসন, মিসৌরিতে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
আগস্ট ৯, ২০১৪ এ, মাইকেল ব্রাউন (সাদা পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের হাতে) মৃত্যুর পর মিসৌরির ফার্গুসন শহরটি বিশৃঙ্খলার রাজ্যে প্রবেশ করেছিল যাকে অনেকে "ফার্গুসন অস্থিরতা" বলে অভিহিত করে। বিক্ষোভের সহিংস প্রকৃতি এবং পুলিশ বাহিনীর সামরিকীকরণের কারণে সৃষ্ট নাগরিক অস্থিরতার কারণে, ফার্গুসনের বেশ কয়েকজন স্থানীয় তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে কী ঘটছে তা প্রতিবেদন করার জন্য অনলাইনে অবস্থান নিয়েছিল। শহরের নাগরিক সাংবাদিকরা টুইটার এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মিডিয়া সাইটে তাদের শহরে কি ঘটছে তার ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেয় এবং মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যুর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং একই সাথে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর শক্তিশালী সামরিকীকরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে।
নিকটবর্তী সেন্ট লুইস শহরের একজন অল্ডারম্যান অ্যান্টোনিও ফ্রেঞ্চ টুইটারে ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করে কয়েকদিন কাটিয়েছেন যা তার ফোনে ধরা পড়া পুলিশি পদক্ষেপের প্রদর্শন করে। পরে পুলিশের কর্মকাণ্ড ভিডিও করার জন্য ফ্রেঞ্চকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন সিটিজেন জার্নালিস্ট কেমন হওয়া উচিত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ভাষা কাজ করেছে; একজন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী যিনি জনগণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন। ফরাসি এবং তার মতো অন্যান্যদের ধন্যবাদ, পরবর্তী কয়েক বছরে নাগরিক সাংবাদিকরা বর্ণের লোকদের বিরুদ্ধে পুলিশি বর্বরতার আরও অনেক ঘটনা নথিভুক্ত করবে। টুইটার এবং ফেসবুকে, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্রচারাভিযানটি হ্যাশট্যাগ এবং ট্রেন্ডিং বিষয়গুলির জন্য জন্ম নিয়েছিল।
ফার্গুসন নাগরিক সাংবাদিক হওয়ার জন্য মানুষ তাদের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার প্রথম উদাহরণ নয়, বোমা হামলা এবং আক্রমণের সময় সিরিয়া, ইরান, মিশর, প্যালেস্টাইন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট, প্যারিসের মতো জায়গায় ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এটি সারা বিশ্বে ঘটে, প্রকৃতপক্ষে টুইটারের মতো সাইটগুলি বেশিরভাগ সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরাসরি সংবাদ আপডেটের জন্য ভাল হয়ে উঠছে কারণ যে গতিতে বিষয়বস্তু আপলোড করা যায়।
=== পঞ্চম এস্টেট হিসাবে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
১৭৮৭ সালের সংসদীয় বিতর্কে এমপি এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, "সংসদে তিনটি এস্টেট রয়েছে তবে রিপোর্টার্স গ্যালারিতে একটি চতুর্থ এস্টেট বসে আছে যা তাদের সকলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো বক্তব্য বা রসাত্মক বক্তব্য নয়, এটি একটি আক্ষরিক সত্য, এই সময়ে আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই বিবৃতিটি বোঝায় যে সাংবাদিকরা সরকারের ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত তিনটি শাখার চতুর্থ প্রতিষ্ঠিত শাখা হতে বোঝানো হয়েছিল। চতুর্থ এস্টেট নতুন সংযোজন হওয়ার দিন চলে গেছে, নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থানের কারণে একটি নতুন এস্টেট উত্থিত হয়েছে।
তথাকথিত পঞ্চম এস্টেট সমসাময়িক সমাজের বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গির গোষ্ঠীগুলির একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক রেফারেন্স এবং ব্লগার, সাংবাদিক এবং অ-মূলধারার মিডিয়া আউটলেটগুলির সাথে সবচেয়ে বেশি যুক্ত। এর উদাহরণগুলির মধ্যে উইকি লিকস এবং গুইডো ফক্সের মতো গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
==== প্রধান সমালোচনা ====
অনেকে যুক্তি দেখান যে নাগরিক সাংবাদিকতা অনিয়ন্ত্রিত এবং বিশ্বাস করা যায় না কারণ কোনও সরকারী প্রুফ-রিডিং নেই। এই কারণে যারা বিশ্বাস করে যে সংবাদটি ভারী পক্ষপাতদুষ্টতার সাথে আনা যায় এবং হতে পারে। এর সাথে যে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব আসতে পারে তার পাশাপাশি, লেখকের উপর নির্ভর করে লেখাটিকেও নিম্নমানের বা অপেশাদার হিসাবে বিচার করা যেতে পারে। অধিকন্তু, নাগরিক সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য পেশাদার সরঞ্জাম না থাকায় বিশ্বাসযোগ্যতা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরণের সাসভিলেন্সের পক্ষে নয় কারণ তাদের মতাদর্শগুলি তাদের তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা ওভারল্যাপ করতে পারে। সবশেষে, সিটিজেন জার্নিজমের সংজ্ঞা নিয়ে কি কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যা আছে? সিটিজেন জার্নালিস্ট শব্দটির একটা সমস্যা আছে- সাংবাদিকরাও নাগরিক হতে পারেন।
== প্রতিনজরদারি এবং শিল্প ==
যদিও প্রতিনজরদারিের শিল্পটি সভিল্যান্ট হওয়ার আসল কাজ, এই বিভাগটি সাসভিল্যান্সের মধ্যে শিল্পের ধারণাটি অন্বেষণ করবে।
শিল্প। সংজ্ঞা অনুসারে এটি একটি দক্ষতার প্রকাশ, সৃজনশীলতার ফলাফল, কল্পনা চাক্ষুষভাবে উত্পাদিত (উদাহরণস্বরূপ একটি পেইন্টিং বা ভাস্কর্য আকারে)। এটি একটি মানুষের শারীরিক সৃষ্টিতে স্থানান্তরিত হওয়ার সারাংশ, সাধারণত জনসাধারণের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য, সাধারণত আবেগকে উস্কে দিতে সক্ষম। ডিজিটাল যুগে, খোলামেলাতা এবং বিষয়বস্তু ভাগ করে নেওয়ার সাথে। সেখানে পিক্সেলগুলি প্রায়শই ম্যানুয়াল কাজকে প্রতিস্থাপন করে, যখন কোনও উদীয়মান বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিল্পীর পক্ষে কাজটি সেখানে রাখা এবং পরিচিত হওয়া অত্যন্ত সহজ, সেখানে কি রোমান্টিকতার ক্ষতি হয়, শিল্প সৌন্দর্য? জীবন থেকে শুরু করে সবকিছুর মতোই শিল্পও একটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, একটি বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়। এই যুগে তাই ডিজিটালে শিল্পের অভিযোজন আশা করা ভুল নয়, অন্তত আরও সাধারণ স্তরে। প্রকৃতপক্ষে, যদি 'বড়' নামগুলির ধ্রুপদী প্রযোজনাগুলি নতুন প্রবণতাগুলিকে প্রতিহত করতে পারে বা এমনকি আরও ঐতিহ্যবাহী লাইন বজায় রেখে তাদের আকার দিতে পারে, তবে উদীয়মানগুলি সময় এবং জনপ্রিয় চাহিদার সাথে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্রাউডসোর্সের কারণে শিল্প কম ব্যক্তিগত এবং অনন্য কিছুতে পরিণত হবে কিনা এই প্রশ্নটি পদকের অন্য দিকের বিবেচনার দিকে পরিচালিত করে, বিপরীত ঘটনা: সীমানা লঙ্ঘন এবং নতুনের অন্বেষণ। ডিজিটাল প্রসঙ্গ আসলে শিল্পীদের আরও একটি অঞ্চল দেয় যেখানে বেড়ে ওঠা এবং স্বীকৃত হতে হয়।
শিল্পের পেছনে, সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে আগ্রহ, রাজনীতি, নজরদারি। অনানুষ্ঠানিকভাবে তৈরি শব্দ 'আর্টভেইল্যান্স' ১৯৩০ এর দশক থেকে বিদ্যমান শিল্পের বিভাগ যা নজরদারির সাথে সম্পর্কিত, সৃজনশীলতার একটি প্রবাহ উপরের পর্যবেক্ষকের ব্যবহারে রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট, পোর্টেবল ক্যামেরা প্রবর্তনের সাথে সাথে ফটোগ্রাফারদের পক্ষে গোপনে ছবি তোলা সহজ করা হয়েছিল। এই সম্পদের প্রয়োগ আরও আধুনিক সময়ে, বিশেষত ৯/১১ হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে দুর্দান্ত ব্যবহার পেয়েছে। ঝাপসা শেডের একটি পাতলা রেখা শিল্পে নজরদারি এবং সুভিল্যান্স পরিস্থিতিকে বিভক্ত করে যেমন একজন শিল্পী আধিপত্যকারী হয়ে ওঠেন, এটি অগত্যা আশেপাশের লোকদের উপরে উঠছে না, তাই প্রতিনজরদারিে অভিনয় করে। উদাহরণস্বরূপ, এই দ্বিমুখী নজরদারি এবং সাসভিল্যান্স পরিস্থিতি ডিজিটাল চশমা (গুগলের প্রকল্প গ্লাস) এর মতো সরঞ্জাম দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও নজরদারির ক্ষেত্রে শিল্পের আরও ব্যবহারিক, কম শৈল্পিক ব্যবহার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কিছু শিল্পী জনসাধারণের অভিজ্ঞতার জন্য নজরদারি ডেটা আরও ভিজ্যুয়াল কিছুতে রূপান্তর করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এর একটি ভাল উদাহরণ অন্যদের মধ্যে দু'জন ব্যক্তির কাজে পাওয়া যায়: ওয়াকার ইভান্স এবং ট্রেভর পাগলেন। ওয়াকার ইভান্স, নজরদারি এবং শিল্পকে একত্রিত করার জন্য প্রথম একজন, ১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ের অজানা যাত্রীদের প্রতিদিনের রুটিন এবং সত্য মুহুর্তগুলি ক্যাপচার করার চেষ্টা করার জন্য ছবি তুলেছিলেন (প্রাকৃতিক, কোনও সেটে নয়)। অজ্ঞাতনামা মানুষের এই গোপন ছবিগুলি শিল্পী তার কোটের নিচে একটি ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন, চকচকে ক্রোমটি কালো রঙ করেছিলেন এবং বোতামগুলির মধ্যে লেন্সগুলি উঁকি দিয়েছিলেন। আজ ক্যামেরা ব্যবহারের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি পদ্ধতি, এমনকি তাদের অজান্তেই মানুষের জীবন রেকর্ড করা। এই পরিস্থিতি থেকে আলাদা, যা সাসভিল্যান্সের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হতে পারে, ট্রেভর পাগলেনের কাজটি নজরদারি এবং শিল্পকে আরও স্পষ্ট উপায়ে একত্রিত করে। তিনি পাবলিক লোকেশন থেকে সামরিক স্থাপনার ছবি এবং স্টিলথ-ড্রোনের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহের স্যাটেলাইটের পথ ট্রেস করার জন্য পরিচিত। তাঁর রচনায় আশেপাশের পরিবেশকে অন্বেষণ, বোঝার এবং বর্ণনা করার জন্য সৌন্দর্য, নকশা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের একটি সংমিশ্রণ রয়েছে। বিশেষত আকর্ষণীয়, এমন একটি প্রভাব যা অস্থিতিশীল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ট্রেভর পাগলেন মেট্রো পিকচার্স গ্যালারিতে একটি ভিডিও ইনস্টলেশনের মাধ্যমে দর্শকদের নজরদারির মূল অংশের সামনে রাখে। স্নোডেনের ফাঁস হওয়া এনএসএ নথির আর্কাইভ থেকে চার হাজারেরও বেশি কোড নাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান কলামগুলিতে একটি অন্ধকার ঘরে প্রজেক্ট করা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জিং সমাজ, শিল্প এবং সাসভিল্যান্সের পরিস্থিতিতে, শিল্প ডিজিটাল বিশ্বে একটি আধুনিক ধারণা নিয়ে বিকশিত হয়েছে: একটি ইউনিয়নে সৃজনশীলতা প্রকাশ করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার যা কখনও কখনও শ্রোতাদের অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য রাখে। ভিন্ন হওয়া, আদর্শের বিরুদ্ধে থাকা, প্রত্যাশার বিরুদ্ধে থাকা। প্রতিনজরদারিে শিল্প চরমের সম্ভাবনা খুঁজে পায়, উদাহরণস্বরূপ রেজিন ডিব্যাটির উই-মেক-মানি-নট-আর্টের মতো পৃষ্ঠাগুলির অস্তিত্বের সাথে দেখা যায় যেখানে প্রযুক্তিটি সমালোচনামূলক আলোচনার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, শিল্পী, হ্যাকার, ডিজাইনার, সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিউশনের একটি বিন্দু। শিল্প পাঠ্যের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে, শব্দ চয়নে: এটি ভিতরের তাত্পর্য (বিদ্রূপের ব্যবহার, তাত্পর্যের স্তরগুলি, রসিকতার ভিতরে) বা ফন্টের পছন্দই হোক। এই পৃষ্ঠার মতো, শিল্পকে আরও তথ্যবহুল, সমালোচনামূলক উদ্দেশ্যে প্রায় বিকৃত করা যেতে পারে। অমিতব্যয়িতা অনলাইন বিশ্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এমন একটি উপাদান যা সম্পর্কে মানুষ সচেতন এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুমতি দেয়। এই প্রসঙ্গে, আরও দু'জন শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে: কেট ডারবিন এবং টিফানি ট্রেন্ডা। প্রতিনজরদারি, যা বিপরীত নজরদারি নামেও পরিচিত, ডিজিটাল বিশ্বে একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পায়। সেখানে সাধারণ মানুষ অন্যদের পর্যবেক্ষণ করে। জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ সরঞ্জাম এবং স্থান উভয়ের মাধ্যমে, শিল্প সাধারণের মধ্যে বিকশিত হতে পারে, একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে। শিল্পকে প্রশংসা করার জন্য আড়ম্বরপূর্ণ, জাঁকজমকপূর্ণ, ব্যয়বহুল হতে হবে না এবং এটি বিশেষত বর্তমান সময়ে সত্য। উদাহরণস্বরূপ কেট ডারবিন একজন শিল্পী এবং লেখক যিনি ইনস্টাগ্রামে একটি ভাল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। সেখানে তিনি পারফর্মেটিভ হওয়ার সময় ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপের সমীক্ষক হতে পারেন। শিল্পী নিজেই তার কাজকে অভিনয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেখানে শিল্প এবং ব্যক্তিগত জীবন ওভারল্যাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি একটি ডেটিং সাইটে পুরুষদের সাথে কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করছেন, তার শ্রোতাদের বিনোদনের জন্য কিন্তু একই সময়ে একটি বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে যা অনেকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক কথোপকথন পোস্ট করা থেকে, তিনি সমাজের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করার সময় মানুষের আচরণ এবং সম্পর্কিত করার ক্ষমতার জন্য তথ্য সংগ্রহ এবং উপস্থাপন করছেন, উদাহরণস্বরূপ গোপনীয়তা। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট জিনিসগুলির মাধ্যমে শ্রোতাদের সাথে একটি সংযোগ রয়েছে যা মানুষের উপর একটি সামাজিক অধ্যয়নের জন্য মাইক্রোকোসম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চ্যালেঞ্জের পথে, পারফরম্যান্স শিল্পী টিফানি ট্রেন্ডার কাজও উল্লেখযোগ্য, যদিও তিনি ব্যক্তিগত স্থান এবং এর অনুপ্রবেশের দিকে আরও বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। প্রক্সিমিটি সিনেমা ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে করা একটি কাজ যেখানে শিল্পী প্রযুক্তি এবং এর অবচেতন ব্যবহার অন্বেষণ করতে চান। চল্লিশটি ছোট সেল ফোনের স্ক্রিন লাগানো পুরো বডি স্যুট পরা অবস্থায় তিনি লোকদের তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। 'এগিয়ে যাও', 'এটি নিয়ে চিন্তা করবেন না' এবং 'এটি ঠিক আছে' এর মতো বাক্যাংশগুলি পর্দায় ছিল, যা স্পর্শ করা হলে শিল্পীর দেহের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, শিল্পী ডিভাইসগুলির সাথে আমাদের পরিচিতি পরীক্ষা করে তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের পরিচয় উপস্থাপন করে স্বাভাবিক সামাজিক সীমাবদ্ধতাও ধ্বংস করে। নজরদারি-ভিত্তিক যুগকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পারফরম্যান্স আর্টের একটি উদাহরণ। সেখানে আমরা ব্যবহারকারী হিসাবে আমাদের পরিচয় কতটা উন্মুক্ত তা সম্পর্কে অসচেতন।
ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি থেকে গণবিদ্রোহ, শিল্প জনসাধারণের কাছে তার পথ খুঁজে পায়। নজরদারি হোক বা সাসভিল্যান্সের মাধ্যমেই হোক, চারপাশের পরিবেশ অন্বেষণকারী শিল্পী এবং শিল্পীর নিজেকে অন্বেষণের মধ্যে একটি দৃশ্যমান বাইনারি রয়েছে। মজার বিষয় হল, 'প্রতিনজরদারি' শব্দটি স্টেফান সোনভিলা-ওয়েইস নিজেকে বিশ্বের কাছে দেখানোর প্রক্রিয়ায় আত্ম-নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। চিন্তার এই লাইনে, আভি রোজেন একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, 'ডিজিটাল স্কিন ২' প্রকল্পের সাথে যেখানে বিভিন্ন প্রকৃতির ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডিজিটাল লাইফলগিং একত্রিত হয়। ডিজিটাল ডাইমেনশনে নিজের উপস্থাপনা এবং বাস্তব জগতে উপস্থাপনের মধ্যেও একটি সমান্তরাল রয়েছে। একটি শিল্প ফর্ম হিসাবে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার মানুষকে বিশ্বের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলি অন্বেষণ করার অনুমতি দিয়েছে। ২০০৮ সালে ক্রিস্টি রবার্টসন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন যা বিভিন্ন শিল্পী এবং তাদের নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার অন্বেষণ করেছিল। রবার্টসন রাজনৈতিক বিষয়গুলিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নজরদারি / প্রতিনজরদারিকে একটি শৈল্পিক রূপ হিসাবে ব্যবহারের উদাহরণ টেনেছেন। এই শিল্পীদের মধ্যে একজন ছিলেন ওয়াফা বিলালের গার্হস্থ্য উত্তেজনা (২০০৭)। তার পারফরম্যান্সের মধ্যে নজরদারি মূল বিষয় ছিল না তবে নজরদারি যে শক্তি সম্পর্ক তৈরি করে তা উন্মোচন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ধারণাগুলি চিত্রিত করতে বিলালের অভিনয় সবচেয়ে কার্যকর ছিল। ২০০৭ সালে ইরাকি-আমেরিকান শিল্পী বিলাল নিজেকে ভিডিও ক্যামেরায় ভরা একটি স্টুডিওতে আটকে রেখেছিলেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে সরাসরি প্রবাহিত হয়েছিল, যাদের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত পেইন্টবল বন্দুক দিয়ে বিলালকে গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য তার মূল উদ্দেশ্য ছিল গৃহযুদ্ধে ভুগতে থাকা ইরাকি জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে তুলে ধরা। তিনি "অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংলাপকে উস্কে দেওয়ার" উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট এবং ভয়েরিজমকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন (বিলাল, ২০০৭)। অতএব, নজরদারিকে একটি শিল্প ফর্ম হিসাবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে কারণ এই ক্ষেত্রের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে শিল্পীদের বৃদ্ধি ঘটেছে।
=== শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম ===
শৈল্পিক বক্তৃতা এবং দার্শনিক অন্বেষণের আরেকটি দিক ছিল অনিশ্চয়তার পুনঃপ্রতিষ্ঠাবাদ। প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে তাদের মধ্যে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এরপর সেগুলো এলোমেলো করে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়। সত্যি বলতে কিনা জানি না অথবা ক্যামেরা না পরা অনিশ্চয়তার নীতিকে শৈল্পিক চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদুপরি, উদাহরণস্বরূপ, সাবওয়েতে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার জন্য নিউইয়র্কের প্রস্তাবিত তদন্ত হিসাবে ভূগর্ভস্থ প্রতিনজরদারি বিবেচনা করুন। পাতাল রেলের ফটোগ্রাফগুলির একটি প্রদর্শনী হ'ল অনুসরণ করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
'''শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম নিয়ে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা: দ্য মেবিক্যামেরা'''
প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এগুলি এলোমেলো করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি পরিধানকারী জানতে না পারে যে তাদের ক্যামেরা রয়েছে কিনা। অনেকগুলি সম্ভাব্য ক্যামেরাগুলির মধ্যে একটির ক্লোজ আপ ছবি যা একটি বিচ্যুতি, বিপরীতমুখী / পুনঃ-ইকশনিজম এবং নজরদারির সাধারণ ভাষা (পাঠ্য) এর ডিকনস্ট্রাকশন দেখায়। অনেক লোক এই জুয়া (উদাঃ ক্যাসিনো, নায়াগ্রা ইত্যাদি) কোনও ঘটনা ছাড়াই পরেছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে সম্ভবত রক্ষীরা শার্ট পড়ে না। পরিধানকারীরা জানেন না যে কোন শার্টে পরিধানযোগ্য ওয়্যারলেস ওয়েব ক্যামেরা রয়েছে এবং কোন শার্টে নেই। লেখকের '''মেবিক্যামেরা''' ডিজাইন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ এস প্যান্টাগিস নিউইয়র্কের কবিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য এর মধ্যে ২৫ টির প্রাথমিক ব্যাচ তৈরি করেছিলেন, তারপরে আরও বড় উত্পাদন চালানো হয়েছিল। যেমনটি দেখা গেছে নিউইয়র্কের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সিকিউরিটি ক্যামেরায়। নিরাপত্তা ক্যামেরা দ্বারা দেখা ক্লোজআপ ভিউ।
সুভিল্যান্স এবং শিল্প? হ্যাঁ, এটি একটি সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান সম্পর্ক। সেখানে শিল্পীরা নজরদারিকে চ্যালেঞ্জ জানায় যখন শিল্পকে যেভাবে উপস্থাপন করা যায় তা পুনর্বিবেচনা করে। যদিও কিছু নিবন্ধ (যেমন অভিভাবকের জন্য জোনাথন জোন্সের "ডিজিটাল যুগ কি শিল্পকে মেরে ফেলবে?") ডিজিটাল বিশ্বে শিল্পের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দেহ উত্থাপন করে, তবে এটি অনস্বীকার্য যে কীভাবে বিশ্বের মধ্যে সহজ সংযোগগুলি উভয় লিঙ্গের বিকাশ এবং প্রকাশের অনুমতি দেয়। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে শক্তিশালী পুরুষালী উপস্থিতি শিল্পের অনলাইন উত্থানে কম কার্যকর প্রভাব ফেলে। সেখানে নারীর একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর থাকতে পারে, সমতার পরিবেশে যা শারীরিক বিশ্বে নিজেই অনুবাদ করা যেতে পারে, যেমন বৈদ্যুতিন শিল্পের উপর আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের মতো ঘটনা দ্বারা দেখানো হয়েছে।
= নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি আইন সম্পর্কে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া =
''নজরদারি আইন এবং প্রতিনজরদারি'' সম্পর্কে দুটি বিপরীত জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ নজরদারিকে তাদের গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে এবং সরকারের সিদ্ধান্তগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য নজরদারি করা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যরা মনে করেন যে অপরাধীদের প্রতিরোধ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়। তবে বেশিরভাগ নাগরিক সম্মত হন যে আইন বিভাগগুলির সাধারণ নজরদারি গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ না তাদের বিস্তারিত দৈনন্দিন জীবন দিনরাত নজরদারির আওতায় না থাকে।
আমাদের কাছে একটি ক্যামেরা স্ট্র্যাপ করা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় যার ফলে আমরা প্রতিনজরদারিকারী হয়ে উঠি, তবুও ক্যামেরা এখনও সেই সময়ের মধ্যে আমাদের মুখোমুখি হওয়া প্রত্যেককে ক্যাপচার করছে। এর ফলে কি আমরা সার্ভিলারে পরিণত হব না? এরপরে এটি পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে যে সার্ভেইলার হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করার ফলে লোকেরা আপনার প্রতি ভিন্নভাবে আচরণ করতে পারে। নজরদারির মুখোমুখি হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে পরিধেয় ডিভাইসের মতো স্যুসভিল্যান্সের ফর্মগুলির তদন্তে একটি উত্সাহ উঠেছে। মান, নোলান এবং ওয়েলম্যান (২০০৩)[১১] নজরদারি কৌশলগুলিকে 'প্রহরী দেখার' ফলাফলের সাথে প্রতিনজরদারিে রূপান্তর করার জন্য আশেপাশের (নজরদারিকৃত) পরিবেশের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সাথে জড়িত গবেষণা চালিয়েছিলেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেকগুলি কারণ (প্রযুক্তির ধরণ, অবস্থান এবং প্রযুক্তির উপস্থাপনা / উপস্থাপনা সহ) অংশগ্রহণকারীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল যা তাদের ক্ষমতায়িত বা দুর্বল বোধ করে।
তদন্তে দেখা গেছে যে লোকেরা যখন রেকর্ডিং করা ডিভাইস এবং রেকর্ড করা ফুটেজ উভয়ই দেখতে পেত তখন তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রেকর্ডিংয়ের এই ফর্মটি তখন 'কোভেইল্যান্স' নামে পরিচিত একটি নতুন শব্দ তৈরি করে। কোভিল্যান্স নজরদারি বা প্রতিনজরদারি নয় বরং এটি তৈরি হয় যখন লোকেরা একই সাথে ক্যামেরা এবং ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে পায়। সংক্ষেপে, কোভিল্যান্স = লোকেরা ভয়েরিজম সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।
এই তদন্ত থেকে আরেকটি আকর্ষণীয় অনুসন্ধান হ'ল কর্তৃপক্ষ (সুরক্ষা প্রহরী) আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে যখন প্রতিনজরদারিকারী ব্যাখ্যা করবে যে ডিভাইসের উপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। বিপরীতে, যখন এটি স্পষ্ট ছিল যে প্রতিনজরদারিকারীের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কর্তৃপক্ষ আরও সংঘাতময় হবে। ডেভিড বলিয়ার (২০১৩)[১২] সুরক্ষা থেকে এই প্রতিক্রিয়াটির সম্ভাব্য ব্যাখ্যা সরবরাহ করে। এর জন্য প্রথম সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে শপিং মলগুলির ধারণার কারণে হতে পারে যে অপরাধীদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল আবিষ্কার করার ক্ষমতা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে যা সম্ভাব্য ডাকাতির কারণ হতে পারে। অধিকন্তু, খুচরা বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে বিক্রয় মূল্য এবং খুচরা প্রদর্শনের তুলনা করার জন্য দোকানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার কারণে কিছু দোকান ফটোগ্রাফির অনুমতি দেয় না। আরেকটি ব্যাখ্যা এই ধারণার কারণে হতে পারে যে সসভিলেস নজরদারির শক্তি সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ জানায় কারণ এটি মানুষের মধ্যে সমতার বোধ পুনরুদ্ধার করে। অধিকন্তু, এটি বোঝাতে পারে যে প্রতিনজরদারি নজরদারির খেলার ক্ষেত্রকে স্তর দেয় কারণ এটি আর ক্ষমতায় নেই। উইলিয়াম গিবসন পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি সবাই প্রতিনজরদারিকারী হয়ে যায় তবে নজরদারি শেষ পর্যন্ত হ্রাস পাবে কারণ এটি আর কোনও উদ্দেশ্য পূরণ করবে না।
নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের প্রভাবগুলি প্রায়শই মুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং গণতান্ত্রিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যাইহোক, যখন বিশ্লেষণাত্মকভাবে দীর্ঘমেয়াদী ম্যাক্রো সমাজতাত্ত্বিক প্রভাবগুলির দিকে অগ্রসর হয়, তখন দৃষ্টিভঙ্গিটি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। নাগরিকদের উপর সরকারগুলির নজরদারির সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, প্রধানত সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থায় চিত্রিত, ইতিহাস জুড়ে ভয়ের অনুভূতির ফলস্বরূপ। জেরেমি বেন্থামের (১৮৩৮) 'প্যানোপটিকন' এবং একটি সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবেচনা যেখানে পর্যবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ মানুষকে এই সত্য সম্পর্কে সচেতন করেছিল যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যদিও তারা জানত না। ১৯৮০ এর দশকের লেখায় মিশেল ফুকোর মতে, এই প্রভাবটি পাওয়া গেছে যে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে (যেমন একটি কারাগার) প্যানোপটিকনের প্রতীকী এবং ব্যবহারিক উভয় ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এই ভয়ের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে চিন্তাভাবনা এবং কাজ করতে প্রভাবিত করতে পারে যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। এভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্যানোপটিকন শিল্প বিপ্লবের অংশ ছিল যা শিল্প পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ করেছিল যেখানে মালিক এবং ক্ষমতায় থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা জনসাধারণের জায়গাগুলি কেবল কারাগার এবং কারখানাগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
== পপ সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
পপ সংস্কৃতি আমাদের সমাজের উপর নজরদারির যে বিস্তৃত উপলব্ধি রয়েছে তা গ্রহণ করেছে। বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি বই, টিভি শো, চলচ্চিত্র এবং এমনকি ভিডিও গেমস রয়েছে যা এখন সুরক্ষা এবং নজরদারির ভূমিকা গ্রহণ করেছে। জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর'' এমন একটি বই যা একটি সর্বব্যাপী সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের অধীনে জীবনযাপন করে এবং সম্ভবত পপ সংস্কৃতিতে নজরদারির সবচেয়ে বিশিষ্ট উদাহরণ। বইটি একটি "বিগ ব্রাদার" প্রোগ্রাম অনুসরণ করে যা উপন্যাসের চরিত্রগুলির ওভার ভিউয়ার হিসাবে কাজ করে, এটি সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহারকে ভারীভাবে চিত্রিত করে।
২৭ মে ২০১৪ এ, ইউবিসফট স্টুডিওগুলি তাদের গেমটি প্রকাশ করেছে ''ওয়াচডগস'' যা আইডান পিয়ার্সকে কেন্দ্র করে একজন বড় চোর হ্যাকার এবং স্ব-নিযুক্ত ভিজিল্যান্ট শহরব্যাপী গণ নজরদারি এবং অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হ্যাক করতে সক্ষম হন। যাতে করে যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য এবং সংস্থান সংগ্রহ করতে পারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এড়াতে, অপরাধ ঘটার আগে বা হওয়ার আগে বন্ধ করতে, প্রয়োজনে নিজে অপরাধ করা, এবং তার সুবিধার্থে অবকাঠামোর বিভিন্ন বস্তু এবং কার্যকারিতা ম্যানিপুলেট করা। গেমটি আপনাকে বেশ কয়েকটি বড় সুপরিচিত সিস্টেমে হ্যাক করেছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থাগুলি এবং রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অর্থ চুরি করতে সাইবার সন্ত্রাসীদের সাথে কাজ করেছে। গেমটিতে মানুষের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছিল।
= প্রতিনজরদারিকারী হওয়া =
গবেষণাটি চালানোর সময় প্রতিনজরদারিকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তারা কেমন অনুভব করেছিল তখন একটি চিন্তা-উদ্দীপক আবিষ্কারও ছিল। অংশগ্রহণকারীরা যারা সাসভিল্যান্স পরিবেশন করেছিলেন তারা অনুভব করেছিলেন যে এটি তাদের ক্ষমতায়িত করেছে। রেকর্ডিং করার সময় মানুষের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আবেগ ছিল তবে প্রতিনজরদারিকারী অনুভব করেছিলেন যে এটি মানুষকে দেখানোর জন্য উদ্দীপক ছিল যে (নজরদারি সম্পর্কিত) অনেক কিছু চলছে যা আমরা জানি না। একজন অংশগ্রহণকারী একটি আকর্ষণীয় পয়েন্ট সরবরাহ করেছেন যা পরামর্শ দেয় যে নজরদারি এমন একটি খেলা যেখানে আমরা অংশ অনুভব করি তবে আসলে নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে আমরা এর অন্য দিকে রয়েছি। অন্যদিকে, এটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে সাসভিল্যান্স আরও খাঁটি কারণ রেকর্ড করা প্রত্যেককে এটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়। অতএব, এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে আমরা সকলেই সুভিল্যান্সের কাজের অংশ হয়ে উঠি কারণ এটি লুকানো নয়। যাইহোক, এই ধারণাটি প্রশ্ন করা যেতে পারে যখন লোকেরা লুকানো ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা শুরু করে। গোপনে রেকর্ড করার কাজটি তখন সাসভিল্যান্সের ধারণাটিকে জটিল করে তুলতে পারে। তাহলে কি তা আবার নজরদারিতে পরিণত হয়? এই জটিল ধারণাগুলি এবং নজরদারি এবং সুভিল্যান্সের ক্রমাগত আন্তঃসংযোগ এই ক্ষেত্রে চলমান গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।
= তথ্যসূত্র =
meu15p6joennu0jufla4o0z97gvao1c
84043
84038
2025-06-11T15:33:24Z
MS Sakib
6561
/* মানবতার পক্ষে যুক্তি */
84043
wikitext
text/x-wiki
= নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স =
== ভূমিকা ও মূল ধারণাসমূহ ==
[[চিত্র:TheBigbrother.jpg|ডান|থাম্ব|বিগ ব্রাদার তোমার উপর নজর রাখছে]]
[[চিত্র:SurveillanceSousveillanceLifeGloggingMannSensecamMemoto.jpg|থাম্ব|স্যুভেইলেন্সের তুলনায় নজরদারি]]
{{Quote box|quote=২০১২ সালে, স্পেনের সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে যে, আমেরিকার ''NSA ([[w:ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি|ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি]])'' ক্রিসমাস মাসে গোপনে ৬ কোটিরও বেশি টেলিফোন রেকর্ড নজরদারির আওতায় এনেছিল।<ref>Angwin, J. U. L. I. A., Savage, C. H. A. R. L. I. E., Larson, J. E. F. F., Moltke, H. E. N. R. I. K., Poitras, L. A. U. R. A., & Risen, J. (2015). AT &T Helped US Spy on Internet on a Vast Scale. New York Times, August, 15.</ref> জার্মানির একটি ম্যাগাজিন ''[[w:Der Spiegel|ডার স্পিগেল]]'' প্রস্তাব করে যে, এনএসএ-এর প্রধান নজরদারির বিষয় ছিল ৩৫ জন রাজনীতিবিদ।<ref>Timberg, C., & Soltani, A. (2013). By cracking cellphone code, NSA has capacity for decoding private conversations. The Washington Post.</ref> আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে মানব সমাজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সহজেই ডিজিটাল আকারে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রচার করা যায়। এর ফলে তৈরি হয়েছে একটি নজরদারিমূলক সমাজ, যার অর্থ ''"অল্প কয়েকজন অনেককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে"''। তবে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে “'''স্যুভেইলেন্স'''” শব্দটি প্রস্তাব করেন [[w:Steve Mann|স্টিভ ম্যান]], জেসন নোলান এবং [[w:ব্যারি ওয়েলম্যান|ব্যারি ওয়েলম্যান]]। এটি “'''নজরদারি'''” শব্দটির বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং বোঝায় ''বহুসংখ্যক মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে''।<ref>S. Mann, J. Nolan and B. Wellman. (2003), "Sousveillance: Inventing and Using Wearable Computing Devices for Data Collection in Surveillance Environments",Surveillance & Society, vol. 1, no. 3, pp. 331-355.</ref>|align=left|width=50%}}'সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?' বইয়ের এই অধ্যায়ে নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর মূল ধারণাগুলোর বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে এই দুই ক্ষেত্রের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা। নজরদারির ক্ষেত্রে আলোচনা করা হবে এই কাজে ব্যবহৃত সংগঠন ও প্রযুক্তি, সেইসাথে প্রযোজ্য আইন ও বিধিনিষেধ সম্পর্কে। এছাড়াও এই অধ্যায়ে মানবতা কীভাবে নজরদারির বিরোধিতা করে এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব]-এর মতো ভিডিও-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মকে নজরদারি না স্যুভেইলেন্স—এই বিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে অধ্যায়টি স্যুভেইলেন্স-এর দিকে দৃষ্টি দেয়। এতে স্টিভ ম্যান-এর ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এই শব্দটির প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী বিশ্লেষণে স্যুভেইলেন্স-এর বিভিন্ন রূপ এবং মানব ইতিহাসে এর বিকাশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে এখানে স্থান পেয়েছে এবং স্যুভেইলেন্স-এর সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে কিছু কেস স্টাডির মাধ্যমে এটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর বিষয়ে কথা বললে, প্রথমটি তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত। এর একটি কারণ হতে পারে আমরা প্রতিদিনই নজরদারির মুখোমুখি হই—আমরা কোনো না কোনো নজরদারির নজর ছাড়া এক কদমও এগোতে পারি না। একে “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট” বলা হয়, যা এই অধ্যায়ে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও আমরা জানি নজরদারি সর্বত্র বিদ্যমান, আমরা তা নিয়ে খুব একটা সচেতন নই। আমাদের বলা হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ধরনের বার্তা আমাদের মনে গেঁথে গেছে এবং আমরা ভুলে গেছি আসলে কতবার আমাদের নজরদারির আওতায় আনা হয়। অপরদিকে, স্যুভেইলেন্স তুলনামূলকভাবে নতুন, তাই কম পরিচিত। কারণ, স্যুভেইলেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি (যেমন হাতে ধরা ক্যামেরা) সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়েছে। যদিও শব্দটি সাধারণত উচ্চতর কর্তৃপক্ষের দিকে ক্যামেরা নির্দেশ করে করা কার্যকলাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, স্যুভেইলেন্স তখনও ঘটে যখন একটি গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী গোষ্ঠীকে পুরনো বা নতুন যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে। ইতিহাসের দিকে ভালোভাবে তাকালে দেখা যায়, ফরাসি বিপ্লবসহ প্রথম দিকের অনেক বিপ্লবই স্যুভেইলেন্সের উপর নির্ভর করে রাজা অপসারণ ও সমাজে পরিবর্তন এনেছিল।
একটি তত্ত্ব হিসেবে স্যুভেইলেন্স-এর প্রবর্তন ও বিকাশ ঘটে স্টিভ ম্যান-এর মাধ্যমে, যাঁকে এই অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
= নজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
এই অংশে ''''নজরদারি'''<nowiki/>' শব্দটির কিছু প্রচলিত সংজ্ঞা আলোচনা করা হবে।
'''নজরদারি''' শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা '''Surveillance''' শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি ভাষা থেকে। এর উৎস হল '''sur''' অর্থাৎ '''উপর থেকে''' এবং '''veiller''' অর্থাৎ '''পর্যবেক্ষণ করা'''—ফলে এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় '''উপর থেকে দেখা'''।
'''নজরদারি''' বলতে বোঝায় সেই ক্যামেরা বা অন্যান্য সেন্সর, যা কোনো স্থাপনার (যেমন: জমি, খুঁটি বা ভবন) সঙ্গে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে। এটি সেই ধরণের পর্যবেক্ষণ যা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি অন্যান্য পর্যবেক্ষণকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। নজরদারি হলো মূলত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। এই সহজ সংজ্ঞার মধ্যে অসংখ্য কৌশল ও পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত যেগুলোকে নজরদারির রূপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই পদ্ধতিগুলোর অনেকটাই জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের জানা। নজরদারির ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে [[w:নজরদারির ইতিহাস|নজরদারির ইতিহাস]] পাতায় যাওয়া যেতে পারে। সেখানে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে নজরদারির ধারণাটি সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিদ্যমান, শুধুমাত্র ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের মাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। প্রাথমিক দূরবীন থেকে শুরু করে আধুনিক [[w:রেডিও_ফ্রিকোয়েন্সি_আইডেন্টিফিকেশন|রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন]] পর্যন্ত নজরদারি প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত উন্নত হয়েছে।
সর্বাধিক পরিচিত নজরদারির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্থির নজরদারি, প্রযুক্তিগত নজরদারি (সাধারণত গোপন ভিডিও বা অডিও রেকর্ডিং), ইলেকট্রনিক নজরদারি (ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ, [[w:কি-স্ট্রোক_ডায়নামিকস|কীস্ট্রোক ডায়নামিকস]]) এবং আরও অনেক কিছু। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান থাকলে প্রায় যে কেউ নজরদারিতে অংশ নিতে পারে—এক্ষেত্রে নজরদারির কৌশল ব্যবহার করেন ফেডারেল কর্মকর্তারা যাঁরা জীবন রক্ষায় কাজ করেন, কিংবা বেসরকারি গোয়েন্দারা যাঁরা সিভিল কোর্টের প্রমাণ সংগ্রহ করেন। [http://www.oxforddictionaries.com/ অক্সফোর্ড অভিধান অনলাইন] (২০১৬)-এ নজরদারির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—'সন্দেহভাজন গুপ্তচর বা অপরাধীর উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ' (Close observation, especially of a suspected spy or criminal)।<ref>Surveillance. 2016. In ''Oxford Dictionaries''. Retrieved from http://www.oxforddictionaries.com/definition/english/surveillance.</ref> এই সংজ্ঞা এই বইয়ের পরবর্তী অংশে আলোচিত একটি বিষয়ের সূত্রপাত করে। সেখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে ডিজিটাল মিডিয়ার বিকাশ এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যে, দাবি করা যায় বৃহত্তর জনগণ সর্বদাই নজরদারির আওতায় আছে।
=== নজরদারির প্রকারভেদ ===
নজরদারির প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে। স্রারা পৃথিবী ব্যাপী ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি তাদের গোপনীয়তা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। নেটওয়ার্ক ডেটাবেইস জনসাধারণ ও ব্যক্তির মধ্যকার সীমারেখা মুছে দেয় এবং ব্যক্তি-মানুষকে একটি ডিজিটাল প্যানআপটিকনে পরিণত করে। [[w:ফেসবুক|ফেসবুক]], [[w:টুইটার|টুইটার]], ব্লগ, [[w:ইনস্টাগ্রাম|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তি-মানুষকে তাদের গোপনীয়তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে উৎসাহিত করে।<ref>Cristani, M., Raghavendra, R., Del Bue, A., & Murino, V. (2013). Human behaviour analysis in video surveillance: A social signal processing perspective. Neurocomputing, 100, 86-97.</ref>
প্রথমত, সিসিটিভি ([[w:ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন|ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন]]) ইলেকট্রনিক নজরদারির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি। ইংল্যান্ড, প্রথম দেশ হিসেবে পাবলিক প্লেসে সিসিটিভি স্থাপন করে এবং প্রায় ৩০ লক্ষ ক্যামেরা ব্যবহার করে দিনের ২৪ ঘণ্টা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন পর্যবেক্ষণ করে। নরিস ও আর্মস্ট্রং একটি সিসিটিভি-সমৃদ্ধ সমাজকে বর্ণনা করেছেন "সবচেয়ে বড় নজরদারি সমাজ" হিসেবে।<ref>Carr, R. (2014). Surveillance politics and local government: A national survey of federal funding for CCTV in Australia. Security Journal.</ref> [http://www.google.com/intl/en_uk/earth/ গুগল আর্থ], গুগলের একটি মানচিত্র অনুসন্ধান সরঞ্জাম, স্যাটেলাইট ছবি, জিপিএস, জিআইএস, ভিডিও স্ট্রিমিং ও ৩ডি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সকল ব্যবহারকারীর জন্য বাস্তবচিত্র সরবরাহ করে। অনেকেই বলেন ''গুগল আর্থ একটি যুগের সূচনা করেছে। সেখানে সবাই একজন গুপ্তচর হতে পারে''।
দ্বিতীয়ত, নেটওয়ার্ক ডেটাবেইসের উন্নয়ন মানুষকে অজান্তেই পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৯০ সালে, টেলিভিশন তারকা [[w:Rebecca Saire|রেবেকা সেয়ার]] তার বাসার দরজার সামনে এক উন্মাদ ভক্তের গুলিতে নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, ওই হত্যাকারী তার ড্রাইভার লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে সরকারী ওয়েবসাইট থেকে তার ঠিকানা বের করেছিল। ''কুকিজ'' প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু মৌলিক তথ্যই নয়, ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ, ইমেইল ঠিকানা ইত্যাদিও সংগ্রহ করা যায়।
তৃতীয়ত, ব্যবহারকারীরাই ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেন, যা নজরদারির জন্য আদর্শ মাধ্যম। [[w:Facebook|ফেসবুক]], [[w:Twitter|টুইটার]], ব্লগ, [[w:Instagram|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। তারা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, ছবি, অনুভূতি এসব প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে থাকেন। যদিও এই ওয়েবসাইটগুলোতে নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়, তবুও ব্যবহারকারীর তথ্য ও কার্যকলাপ নজরদারির আওতায় পড়ে। ব্যবহারকারীর পরিচয় নির্ধারণে আইপি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীর অবস্থান (শহর বা জেলা) শনাক্ত করে। যদি একাধিক ওয়েবসাইটে একই নজরদারি ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং ইতিহাস একসাথে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। যেমন, একজন ব্যক্তি ফেসবুকে লগইন থাকা অবস্থায় অন্য একটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে এবং সেখানে “লাইক” বাটনে ক্লিক করে, তাহলে ফেসবুক ওই ওয়েবসাইটের ব্রাউজ ইতিহাস রেকর্ড করে, ব্যবহারকারীর বন্ধুদের সম্পর্কেও তথ্য রেকর্ড করে। এসব তথ্যের সমন্বয়ে নজরদারির জন্য একটি সামাজিক সম্পর্ক চিত্র গঠন করা যায়। সেখানে ব্যবহারকারীর বন্ধু, অবস্থান ও সময় নির্ভর তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।
আরও একটি শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে '''কম্পিউটিং ও নজরদারি'''-র ভিত্তিতে
গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নজরদারি ও তথ্য সমাজ অধ্যয়নের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা নজরদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে কম্পিউটিংয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। এর ফলে কম্পিউটার ও নজরদারির পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে কয়েকটি শ্রেণিবিন্যাস গড়ে উঠেছে: যেমন নতুন নজরদারি, ডেটাভেইলেন্স, ইলেকট্রনিক (সুপার)প্যানঅপটিকন, ইলেকট্রনিক নজরদারি বা ডিজিটাল নজরদারি। গ্যারি টি. মার্কস "নতুন নজরদারিকে" সংজ্ঞায়িত করেছেন “ব্যক্তিগত তথ্য আহরণ বা সৃষ্টির জন্য প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে। এটি ব্যক্তি বা পরিবেশ থেকে সংগৃহীত হতে পারে।”<ref>Marx 2002, 12; see also: Marx 1988, pp.217–219</ref> তাঁর মতে, পুরনো নজরদারিতে তথ্য প্রেরণ কঠিন ছিল, কিন্তু নতুন নজরদারিতে তা অনেক সহজ। ঐতিহ্যবাহী নজরদারিতে “যা নজরদারি কর্তৃপক্ষ জানে, তাও সাধারণত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তি জানে”, কিন্তু নতুন নজরদারিতে “নজরদার ব্যক্তি এমন কিছু জানে যা লক্ষ্যবস্তু জানে না।”<ref>Marx, 2002, p.29</ref> তিনি বলেন, নতুন নজরদারি দৃশ্যমান নয় বরং দূরবর্তী এবং এটি “কম জোরপূর্বক” <ref name="Marx, 2002, p.28">Marx, 2002, p.28</ref> এবং “আরও গণতান্ত্রিক” কারণ এর কিছু রূপ আরও সহজলভ্য।<ref name="Marx, 2002, p.28" /> কম্পিউটারভিত্তিক নজরদারি হচ্ছে নতুন নজরদারির একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। “কম্পিউটার নজরদারির প্রকৃতি মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে—এটিকে নিয়মিত, বিস্তৃত ও গভীর করে তোলে। প্রতিষ্ঠানগত স্মৃতি স্থান ও সময় জুড়ে প্রসারিত হয়”।<ref>Marx, 2002, p.208</ref> ডেটাভেইলেন্স হচ্ছে “তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের কর্মকাণ্ড বা যোগাযোগের পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ” (ক্লার্ক ১৯৮৮, ৫০০)। ক্লার্ক (১৯৯৪) ব্যক্তি-ভিত্তিক ডেটাভেইলেন্স (যা একজন বা একাধিক ব্যক্তির উপর নজর রাখে) এবং গণ ডেটাভেইলেন্স (যেখানে একটি গোষ্ঠী বা বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নজরদারির আওতায় আনা হয় যাতে আগ্রহের ব্যক্তি শনাক্ত করা যায়) এর মধ্যে পার্থক্য করেন। বগার্ড (২০০৬) যুক্তি দেন যে কম্পিউটার একটি প্রযুক্তি যা নজরদারির অনুকরণ করে। গর্ডন (১৯৮৭) ইলেকট্রনিক প্যানঅপটিকনের কথা বলেন। মার্ক পোস্টার (১৯৯০) “ইলেকট্রনিক সুপারপ্যানঅপটিকন” ধারণা দেন: “আজকের ‘যোগাযোগের চক্র’ এবং এগুলো দ্বারা সৃষ্ট ডেটাবেস এক ধরনের সুপারপ্যানঅপটিকন সৃষ্টি করে, এটি এমন একটি নজরদারি ব্যবস্থা যার কোনো দেয়াল, জানালা, টাওয়ার বা প্রহরী নেই” (পোস্টার১৯৯০, ৯৩)। মার্ক আন্দ্রেয়েভিচ “ডিজিটাল এনক্লোজার” ধারণা দেন,<ref>Andrejevic, M. (2004). The web cam subculture and the digital enclosure. In N. Couldry & A. McCarthy (eds.)</ref> যেখানে ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।<ref>Fuchs, Boersma, Albrechtslund, and Sandoval (eds.) (2012) Internet and Surveillance: The Challenges of Web 2.0 and Social Media. London: Routledge, p.1</ref>
তৃতীয় ধরনের শ্রেণিবিন্যাস এসেছে ওগুরা (২০০৬) এবং গ্যান্ডি (১৯৯৩)-এর মতবাদ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে নজরদারির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুঁজিবাদ এবং/অথবা জাতিরাষ্ট্র ভিত্তিক জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা।<ref>Gandy, O. H. & Farrall, K. N. (2008). Metaphoric reinforcement of the virtual fence: factors shaping the political economy of property in cyberspace. In A. Chadwick & P. N. Howard (eds.), The Handbook of Internet Politics (pp. 349–63). London: Routledge</ref> আমরা নজরদারির দুটি প্রধান রূপ আলাদা করতে পারি: '''অর্থনৈতিক''' ও '''রাজনৈতিক''' নজরদারি। ''জাতিরাষ্ট্র'' ও করপোরেশন দ্বারা পরিচালিত নজরদারির লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা, অর্থাৎ তারা যেন নির্দিষ্ট কিছু করে বা না করে, কারণ তারা জানে যে তাদের উপস্থিতি, চলাচল, অবস্থান, বা চিন্তাভাবনা নজরদারি ব্যবস্থার দ্বারা পর্যবেক্ষিত হচ্ছে বা হতে পারে।<ref>Fuchs 2008, 267–277</ref> রাজনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা সংঘটিত সহিংসতার (আইনের) হুমকির সম্মুখীন হয় যদি তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আচরণ করে এবং রাজনৈতিক অভিনেতাদের (যেমন গোপন সেবা বা পুলিশ) নজরে পড়ে। অর্থনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, বাজারের সহিংসতা ব্যক্তি ওদের নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে বা উৎপাদনে বাধ্য করে এবং পুঁজিবাদী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তাদের অর্থনৈতিক আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এই ধরনের নজরদারিতে সহিংসতা ও পরাধীনতা চূড়ান্ত অস্ত্র। নিচের ছকে বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারির ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে।
‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই প্রবণতাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, কারণ এটি মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডিং সিস্টেম ও অন্যান্য গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত আচরণের অবস্থানভিত্তিক নজরদারিকে সম্ভব করে তোলে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।’<ref>Gandy and Farall, 2008: May, Phillips: 2008</ref>
==== নজরদারির উদ্দেশ্য ====
নজরদারির অনেক উপকার থাকতে পারে। পরিস্থিতিভেদে এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও সাধারণত নিম্নোক্ত এক বা একাধিক লক্ষ্য পূরণের জন্য করা হয়:
* তল্লাশি বা ওয়ারেন্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা।
* কোনো ব্যক্তি, অবৈধ পণ্য বা অবৈধ কাজের স্থান খুঁজে বের করা।
* কোনো ব্যক্তি, অপরাধী গোষ্ঠী বা স্থানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* গোপন বা প্রকাশ্য নজরদারির মাধ্যমে কোনো অপরাধ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা।
* অভিযানের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী ব্যক্তি বা অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
== বিশ্বব্যাপী নজরদারি ==
[[চিত্র:Internet_Censorship_and_Surveillance_World_Map.svg|থাম্ব|204x204পিক্সেল|দেশভিত্তিক ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও নজরদারির মানচিত্র।]]
বিশ্বব্যাপী নজরদারি বলতে জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত নজরদারিকে বোঝায়। এর ইতিহাস ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়, যখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি করে। পরবর্তীতে এতে নিউ জিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া যুক্ত হয়, গঠিত হয় ‘ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’। তারা 'তৃতীয় পক্ষের' দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিও করে। এর মাধ্যমে গঠিত হয় একটি বিশ্বব্যাপী নজরদারি নেটওয়ার্ক, যার নাম 'ইসেলন'। এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অবগত ছিল না যতক্ষণ না [[w:Edward Snowden|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
== নজরদারির জন্য সংস্থা ==
নজরদারি ব্যবস্থা মূলত নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে। এজন্য একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ''"অল্প কিছু মানুষ অনেককে পর্যবেক্ষণ করে"''।<ref>Lyon, D. (2008). Surveillance studies: an overview (p. 140). Cambridge [u.a.]: Polity Press.</ref> তাই যে সংস্থাগুলো এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা হলো: ''সরকার, পুলিশ স্টেশন, ব্যাংক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিরাপত্তা কোম্পানি, বাণিজ্যিক ভবন'' ইত্যাদি—যাতে নাগরিক ও মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এই নজরদারি ব্যবস্থা মানুষের নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করে অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য। তবে, নজরদারি প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ, প্রেরণ ও ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই নতুন মিডিয়া যুগে, উপরে উল্লিখিত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সাধারণ কোম্পানি, ব্যক্তিগত গোয়েন্দা বা এমনকি ব্যক্তি হ্যাকাররাও ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক তথ্য ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
==== যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ====
২০১৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার [[w:এডওয়ার্ড_স্নোডেন|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সংস্থাটির মার্কিন নাগরিক ও বিদেশি রাষ্ট্রের উপর পরিচালিত ব্যাপক নজরদারি কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা শুরু করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার চেষ্টার হাত থেকে বাঁচাতে তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানে তাকে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। জুন ২০১৩-তে স্নোডেনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি সম্পদ চুরির অভিযোগ আনা হয়। স্নোডেন যে তথ্যগুলো গণমাধ্যমে ফাঁস করেন, তার মধ্যে ছিল যে এনএসএ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষের ইন্টারনেট কার্যক্রম ও ফোন তথ্য সংগ্রহ করেছিল। কেবল মার্কিন ও বিদেশি নাগরিক নয়, এনএসএ বিদেশি নেতাদের ও তাদের সহকর্মীদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে। স্নোডেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এনএসএ-এর কর্মচারী ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করতেন এই নজরদারি কার্যক্রম সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। তবে, সমালোচকেরা বলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিজীবনে অনধিকার প্রবেশ করেছে এবং তাদের অজ্ঞাতসারে নজরদারির আওতায় এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এনএসএ বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন সরকার নজরদারিতে আইনগত গণ্ডি অতিক্রম করে না, তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক ভবিষ্যতেও চলবে।<ref>Alexander Stingl, 'Technology and Surveillance' in ''Research Starters: Sociology,'' 2015</ref>
== ইউটিউব: নজরদারি না সুভেইলেন্স? ==
নজরদারি ও সুভেইলেন্সের সংজ্ঞা এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব] এর প্রেক্ষাপটে তাদের প্রয়োগ বিবেচনা করলে দেখা যায় এই দুটি ধারণা কখনও কখনও পরস্পরকে ছাপিয়ে যেতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য একাধিক উপধারা রয়েছে। যেমন: ব্লগারদের কার্যক্রম সাধারণত সুভেইলেন্সে পড়লেও কিছু ক্ষেত্রে নজরদারিতেও পড়ে। বিভিন্ন ইউটিউবারের উদাহরণ বিশ্লেষণ করা হবে। নজরদারি ও সুভেইলেন্সের প্রেক্ষাপটে সমাজের উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার পিরামিড, এবং সেই পিরামিডের যেকোনো স্তর থেকে ভিডিও ফুটেজে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত এক ক্ষুদ্র বিতর্ক। এমনকি দুইজন ইউটিউবারের একটি কেস স্টাডিও থাকবে, যাদের কনটেন্টের স্বত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তারা এখনও সেই কনটেন্টের মালিকানা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্সকে বক্তৃতার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
[[চিত্র:Logo_Canale_YouTube_(2013-2017).jpg|alt=YouTube Logo|বাম|থাম্ব|নজরদারি না সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম?]]
ইউটিউব সর্বদাই সুভেইলেন্সের একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সাধারণ মানুষ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা বিশ্বব্যাপী শেয়ার করে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউটিউবের গঠন ও বিন্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছে যাতে তারা নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে নিজেকে বিশ্বে উপস্থাপন করতে পারে। যারা এটি করে তারা 'ইউটিউবার' বা 'ভ্লগার' নামে পরিচিত। ভ্লগিং মানে হলো কোনো ঘটনাকে ভিডিও আকারে ডায়েরি হিসেবে উপস্থাপন করা, কিন্তু ইউটিউবারদের জন্য এটি মানে তাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি দিক শেয়ার করা। এর ফলে দর্শকরা তাদের জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত বোধ করেন এবং এটি টিভির তুলনায় বেশি বাস্তব মনে হয় কারণ এখানে জীবনের প্রকৃত রূপ দেখানো হয়, যা স্ক্রিপ্টেড বা পরিবর্তিত নয়। অধিকাংশ ইউটিউবার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, ভিডিও গেম খেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে যা জনগণের বাস্তব কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিভাত হয়। ইউটিউবের বিন্যাস ইউটিউবারদের নিজেদের জীবনধারা প্রচারের সুযোগ দেয়। বিনোদন ও প্রচার ছাড়াও, একটি অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে—যদি যথেষ্ট মানুষ তাদের ভিডিও দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা অর্থ উপার্জন করতে পারে। এর মানে হচ্ছে, কারিগরি দিক থেকে যদি তাদের ভিডিও যথেষ্ট সংখ্যক দর্শক দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা সেটিকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারে। জনপ্রিয় ইউটিউবারদের অনেকেই এমনটি করে থাকেন, যেমন [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]। তবে তারা সেখানেই থেমে থাকেন না, অনেকে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রি করেন - যেমন [http://redrawr.storenvy.com/ Rose and Rosie], [https://shop.spreadshirt.com/ZACKSCOTT/ ZackScottgames], আবার কেউ কেউ নিজেদের বইও প্রকাশ করেছেন - যেমন [https://www.gofundme.com/cahsvf9g/ Ashley Mardell], [http://tyleroakleybook.com/ Tyler Oakley], [https://www.zoella.co.uk/category/life/books/ Zoella]। কেউ কেউ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রবেশ করেছেন টেলিভিশন শোয়ের মাধ্যমে - যেমন [http://www.epicmealtime.com/ Epic Meal Time]। ইউটিউব সাধারণ মানুষের জন্য খ্যাতি অর্জনের একটি চমৎকার মাধ্যম, যেমন [https://www.youtube.com/user/rhettandlink2/ Good Mythical Morning] বা [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]-এর মতো কেউ কেউ প্রকৃত সফলতা অর্জন করেছেন এবং অনেক সেলিব্রিটির কাছেও পরিচিত। ইউটিউবাররা সাধারণত "সুসভেইলেন্স" ধারণার মধ্যে পড়ে, যেহেতু তারা বাস্তব জীবন ধারণ করেন এবং তারাও জানেন যে তারা একটি ক্যামেরার সামনে রয়েছেন। এটি তাদের জীবনকে ধারণ করছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় যখন [https://www.youtube.com/user/RoseEllenDix/ Rose and Rosie] এর মতো ইউটিউবাররা বলেন, তারা জীবনের বেশিরভাগ অংশ ক্যামেরাবন্দি করেন যাতে ছোট ছোট মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে থাকে। তাই, তাদের জন্য সুসভেইলেন্স হতে পারে উপকারী। তবে ইউটিউবারদের নজরদারিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আসে প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলো থেকে। সেখানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে বা সমাজের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়। [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] এবং [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] হলেন প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানানো দুইজন ইউটিউবার। সুসভেইলেন্স এবং সারভেইলেন্স-এর মধ্যে সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে যায় কারণ ইউটিউব স্বভাবতই সুসভেইলেন্স। সেখানে মানুষ নিজেরাই ক্যামেরা ধরে এবং তা সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু যখন ইউটিউবাররা অন্য সাধারণ মানুষকে প্র্যাঙ্ক করার জন্য গোপনে ধারণ করেন এবং তাদের এই ধারণার কথা জানা থাকে না, তখনই ইউটিউবের ক্যাটাগরি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
এই ধারণাটি আরও জটিল হয় যখন এতে ‘উদ্দেশ্য’ এবং ‘ক্ষমতা’র ধারণা যুক্ত করা হয়। যদি একটি শক্তির পিরামিড কল্পনা করা হয়, তাহলে তার শীর্ষে থাকবে সরকার, তারপর পুলিশ ও কাউন্সিল, এরপর পেশাজীবী/ব্যবসা/ইউটিউবার এবং সর্বনিম্নে থাকবে সাধারণ জনগণ। এই বিশেষ ক্ষমতার সম্পর্ক সুসভেইলেন্স ও সারভেইলেন্সের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করে। সরকার শুধুমাত্র সিসিটিভিকে (সম্পূর্ণ সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হয়েছে) একটি নজরদারি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যদিও কেউ কেউ বলবেন তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি নিখাদ নয় এবং সেটা গুপ্তচরবৃত্তির মতো, তবুও যদি আমরা ধরে নিই যে উদ্দেশ্য নিখাদ, তাহলে তাদের নজরদারি সাধারণ জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। এটি আরও সুস্পষ্ট হয় যখন দেখা যায়, বিশেষভাবে কিছু কর্মী নিয়োগ করা হয় ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং যেকোনো বেআইনি কার্যকলাপ রিপোর্ট করার জন্য। ফলে এই ফুটেজ নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃত নয় কারণ এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুরক্ষা এবং এটি একটি বিশ্বস্ত উৎস থেকে আসে। তবে, পরে এই বিষয়ে একটি যুক্তি তুলে ধরা হবে যে কীভাবে সরকার পক্ষ থেকেও ফুটেজ বিকৃত করা যেতে পারে।
পিরামিডের পরবর্তী স্তরে রয়েছে পুলিশ এবং কাউন্সিল, যাদের উদ্দেশ্যও সাধারণ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পেশাদার এবং নিখাদ। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, যেমন আমেরিকান পুলিশ বনাম ব্রিটিশ পুলিশের প্রসঙ্গ যেখানে [http://news.sky.com/story/1633328/scots-police-teach-us-cops-how-to-avoid-gun-use/ ব্রিটিশ পুলিশ আমেরিকান পুলিশকে কম সহিংসভাবে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখাতে হয়েছে], কারণ আমেরিকান জনগণ তাদের পুলিশের দ্বারা আতঙ্কিত বোধ করছিলেন এবং পুলিশের অতিরিক্ত অস্ত্র ব্যবহার তাদের উদ্বিগ্ন করেছিল। এতটাই যে জনগণ মনে করে যে রেকর্ড করা ফুটেজ বা ড্যাশ ক্যামেরার ভিডিও সত্য ঘটনাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না, যা ফুটেজের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে এবং এই সন্দেহ জাগে যে এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে যেন অভিযুক্ত পুলিশের বদলে ভুক্তভোগীকেই দোষী প্রমাণ করা যায়। [http://www.huffingtonpost.com/news/police-brutality/ হাফিংটন পোস্ট] এই বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়েছে এবং [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] নামক একটি আন্দোলনের কথাও বলেছে। তবে পুলিশের নজরদারি উদ্দেশ্যগতভাবে ভালো হওয়ার কথা, কারণ এটি অপরাধীকে আদালতে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে।
এর নিচে রয়েছে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং ইউটিউবাররা। প্রথম দুই শ্রেণি নজরদারির জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করেন তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করতে। তাদের উদ্দেশ্যও ভালো, কারণ তারা শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এটি ব্যবহার করেন এবং ফুটেজ মূলত বিকৃত থাকে না। তবে এটি কিছুটা অস্পষ্ট, কারণ এটি সেই স্তর যেখানে নজরদারি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির জন্য করা হয়। তাই উদ্দেশ্য নির্ধারণ কিছুটা কঠিন, তবে তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ফুটেজ বিকৃত না রাখার প্রবণতা থাকবে, যেমন কোনো আইনি মামলা হলে এটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে ইউটিউবারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও আকর্ষণীয়। ইউটিউবারদের উদ্দেশ্য সাধারণত স্বচ্ছ হলেও কখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জনগণকে বিনোদন দেওয়া (পিরামিডের নিচের স্তর), তথ্য সরবরাহ করা বা সমাজের নির্দিষ্ট ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা। এটি প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, যেগুলো হয় হাস্যরস সৃষ্টি করে বা সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে, যেমন বিপদে মানুষের সাহায্য না করার প্রবণতা। ইউটিউবারদের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা সেলিব্রিটি হলেও সাধারণ মানুষের মতোই মনে হয়, কারণ আমরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন দেখতে পাই। কিন্তু তারপরও তারা কিছুটা উচ্চতর অবস্থানে থাকে। যেমন, তারা একটি প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে পারে, যা অন্য কেউ পারত না। এখানেই নজরদারি ও সুসভেইলেন্সের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইউটিউবারদের যখন দেখা যায় তারা গোপনে সাধারণ মানুষকে ধারণ করছে, তখন এটি একধরনের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের সীমারেখা আরও অস্পষ্ট হয়।
এর আগে আলোচনা হয়েছিল যে সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্স ফুটেজ বিকৃত এবং অ বিকৃত — এই দ্বন্দ্বে উপনীত হয়, যা আবার ‘উদ্দেশ্য’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর একটি উদাহরণ হলো স্টোকস ক্রফটে ‘অ্যান্টি-টেস্কো’ ঘটনা। সেখানে, গণমাধ্যম একটি দাঙ্গার খবর প্রচার করে যেখানে সাধারণ মানুষ টেস্কো সুপার মার্কেট স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। পরে ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওগুলো থেকে জানা যায় যে দাঙ্গা আসলে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল, যা সাধারণ জনগণের প্রাথমিক দাবিকে সমর্থন করে।<ref>http://m.nms.sagepub.com/content/17/5/755</ref> পিরামিডের শীর্ষে সরকারের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজই হওয়া উচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃতহীন, যেহেতু এটি কেবল জনগণের সুরক্ষার জন্যই রয়েছে। তবে এই যুক্তির বিরোধী যুক্তি হতে পারে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফুটেজ থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয় বা কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা আদালতে দেখানো হয় যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এটি অবশ্য তাত্ত্বিক, তবুও এটি একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে যে কীভাবে সরকার এই ফুটেজ ব্যবহার করে ভুল ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে। এটি আবার উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ আদালত সিসিটিভি ফুটেজকে প্রায়শই নির্ভরযোগ্য বলে ধরে নেয়, যদিও তা নাও হতে পারে। অন্যদিকে ইউটিউবার ও সুসভেইলেন্সের ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, জনগণ নিজেরাই জানে যে তাদের ফুটেজে বিকৃতি ঘটানো যেতে পারে কারণ এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং উদ্দেশ্য সবসময় স্পষ্ট নয়। যেমন [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] ও [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] – তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা জনগণকে গোপনে ধারণ করে সমাজের কিছু দিক উন্মোচনের নামে জনগণকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তবে ইউটিউব এবং জনগণের ফুটেজ কখনো কখনো আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারে কারণ অনেক সময় জনসাধারণ নির্দিষ্ট ঘটনাকে সত্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও ধারণ করে। এর উদাহরণ আবার [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। সেখানে আমেরিকার সাধারণ মানুষ পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করছে কারণ তারা মনে করে সরকার পক্ষের ফুটেজ বিকৃত বা অবিশ্বস্ত এবং তাদের ভিডিও বেশি নির্ভরযোগ্য। অধিকাংশ সংস্কৃতিতে কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব থাকে, যার ফলে জনগণ সরকারিভাবে রেকর্ডকৃত ফুটেজের চেয়ে অপেশাদার ভিডিওকেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করে। এটি ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে জনগণ হয়তো সত্যিই সেই ফুটেজকে বেশি বিশ্বাস করে যা সরকারিভাবে নয় বরং জনগণ নিজেরাই ধারণ করেছে। সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের মধ্যে এই উদ্দেশ্য ও নির্ভরযোগ্যতার বিতর্ক পিরামিডের স্তরগুলোর মাঝে একটি জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
সুসভেইলেন্সের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে এবং [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ সপ্তম সপ্তাহের বক্তৃতা]-এর আলোকে দুটি ইউটিউবার ব্রিয়া ও ক্রিসির একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি উঠে আসে, যারা প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত কপিরাইট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ছেন। ক্রিসি যখন আঠারো বছর বয়সে ছিলেন, তখন তার প্রাক্তন প্রেমিক তার অজান্তে তাদের যৌন সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে এবং তা কিছু ওয়েবসাইটে আপলোড করে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কপিরাইট ইস্যু এখানেই আসে, কারণ ক্রিসি কখনোই এই ভিডিও ধারণে সম্মতি দেননি এবং তিনি ঘটনাটি মনে করতে পারছেন না কারণ তাকে অ্যালকোহল খাইয়ে মাতাল করা হয়েছিল। তবুও ফুটেজের মালিকানা তার নয়, কারণ এটি তার প্রেমিকের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কপিরাইট আইন অনুযায়ী, যদিও এগুলো বর্তমানে হালনাগাদ হয়েছে, এই ঘটনা সেই পরিবর্তনের আগে ঘটায় এই আইন তাকে সহায়তা করতে পারছে না। ভিডিওটি সরাতে হলে তাকে কেবল তার প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ভিডিওটির মালিকানা আদায় করতে হবে। এই কপিরাইট অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই এখনও চলছে।
এই বিষয়ে [https://www.youtube.com/watch?v=xFHbuFT_sHU/ দ্য গার্ডিয়ান]-এর একটি ছোট তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল, পাশাপাশি ব্রিয়া এবং ক্রিসির ভ্লগও ছিল। এছাড়াও তাদের [https://www.generosity.com/fundraising/revenge-porn-victim-seeks-justice/ পৃষ্ঠার] একটি লিঙ্ক রয়েছে। সেখানে তাদের গল্পটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইউটিউব দম্পতিকে নিয়ে এই কেস স্টাডিটি উদ্দেশ্য সম্পর্কিত অংশের সঙ্গেও সম্পর্কিত, কারণ ক্রিসির প্রাক্তন প্রেমিক তাকে তার সম্মতি ছাড়াই ভিডিও করেছিল, যার পেছনে ছিল অসৎ উদ্দেশ্য। এর অর্থ দাঁড়ায়, এই সুভেইলেন্সটি ছিল ক্ষতিকর এবং এটি নজরদারিতে পরিণত হয়, যেহেতু ক্রিসি জানত না যে তাকে ভিডিও করা হচ্ছে। ক্রিসির জন্য এই ভয়ানক অভিজ্ঞতাটি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারের] সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। সেখানে অনলাইন পরিচয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কারণ তার সুনাম এবং অনলাইন সত্তা এই একটি ভিডিওর কারণে খারাপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তিনি স্মরণ করেছেন, যারা তাকে একজন আদর্শ হিসেবে দেখতেন, তারা যখন ভিডিওটি আবিষ্কার করলেন, তখনই তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গেল। তরুণদের জন্য ইতিবাচকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে যেভাবে তিনি এতদিন ধরে চেষ্টা করেছিলেন, সেই অনলাইন পরিচয় একটি ভয়ানক ভিডিওর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। এটি আলোচিত বিষয়ে সম্পর্কিত, কারণ যদিও এখানে ইউটিউবকে একটি ইতিবাচক সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, তবে যদি উদ্দেশ্য খারাপ বা অস্পষ্ট হয়, তবে এটি নেতিবাচকও হয়ে উঠতে পারে।
সবশেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্স অবশ্যই লেকচারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং ইউটিউবকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়। [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারে] অনলাইন পরিচয় নিয়ে জিজি এ. পাপাচারিসির <ref>Zizi A. Papacharissi, 'A Private Sphere' in Private Sphere : Democracy in a Digital Age, (2013)</ref> একটি লেখা ছিল যেখানে ব্লগিং (পৃষ্ঠা ১৪৪) এবং ইউটিউব (পৃষ্ঠা ১৫০)-এর কথা বলা হয়েছে। বইটি ইউটিউবকে এমন একটি স্থান হিসেবে বর্ণনা করেছে যেখানে “তোমাকে কী করতে হবে তা বলে না” (পৃষ্ঠা ১৫০) এবং যেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়বস্তু থাকে, “ইউটিউবের অনেক গোত্র”-এর উল্লেখ রয়েছে (পৃষ্ঠা ১৫০)। এই ‘গোত্রগুলি’ তাদেরকে বোঝাতে পারে যারা LGBT ইউটিউবার, যাদের অন্য কোথাও স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ নেই, তাই ইউটিউব তাদের একটি জায়গা দেয় নিজস্বভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের প্রকাশ করার জন্য। এতে আরও বলা হয়েছে “ইউটিউব একটি বিকল্প মতপ্রকাশের মাধ্যম, যা প্রচলিত আন্দোলন, মতপ্রকাশ বা প্রতিবাদের চেয়ে আলাদা... কিছু ভিডিও শুধু ব্যঙ্গ, রসবোধ বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের জন্ম দেয়, যা সমান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা ও মতপ্রকাশের মাধ্যম” (পৃষ্ঠা ১৫১)। এটি অনলাইন পরিচয়ের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ ইউটিউব মানুষকে তাদের পরিচয় অনলাইনে প্রকাশ করতে দেয় বা অন্যদের দ্বারা তাদের পরিচয়কে উপস্থাপন করতে দেয়, যার ফলে এক ধরণের কমিউনিটি গড়ে ওঠে যেখানে মানুষ নিজেদের মত অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত অনুভব করে। ইউটিউবকে ভালো মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করার এই ধারণা ব্যাখ্যা করে কেন সুভেইলেন্স এখানে বিকশিত হয়েছে, কারণ মানুষ এখানে যা ইচ্ছা তা করতে এবং তৈরি করতে পারে এবং এটি নিজেই সুভেইলেন্স, কারণ তারা নিজেরাই ক্যামেরার সামনে সচেতনভাবে রেকর্ড করছে।
নজরদারি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ চতুর্থ সপ্তাহের] “অলওয়েজ অন” লেকচারের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ সেখানে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে আমরা সবসময় কোনো না কোনো প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত আছি, যেমন সিসিটিভি ফুটেজ সর্বদা আমাদের ওপর নজর রাখছে এবং আমাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। “হিউম্যানিটি বনাম নজরদারি” অংশে বলা হয়েছে, কিভাবে সাধারণ মানুষ এখন এমন অ্যাপ কিনতে পারে যা দিয়ে অন্যদের উপর নজরদারি করা যায় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। কিন্তু সবার উপর এই ক্রমাগত নজরদারি “একটি অনলাইন সত্তা” তৈরি করে, যা দ্বিতীয় সপ্তাহের আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ অধিকাংশ মানুষ জানে না যে তাদের রেকর্ড করা হচ্ছে, তবুও এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা দৃশ্যমান এবং তাদের এমন একটি দিক তুলে ধরা হয় যা আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)। ড্যানাহ বয়েড <ref>danah boyd, Participating in the always-on culture in The Social Media Reader by Michael Mandiberg, (2012)</ref> “অলওয়েজ অন” থাকার বিষয়ে বলেন, “এটি আর শুধু অন বা অফ থাকা নিয়ে নয়। এটি এমন একটি পৃথিবীতে বসবাস করা যেখানে যখনই ও যেখানেই প্রয়োজন, তখনই মানুষ এবং তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়।” (পৃষ্ঠা ৭১-৭২) বয়েড এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেও এটি নজরদারির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ সাধারণ মানুষ জানে যে তাদের চারপাশে সিসিটিভি রয়েছে, কিন্তু তারা যেন সেটি নিয়ে ভাবিত নয়, যদিও এটি তাদের রেকর্ড করছে / তাদের অনলাইন প্রোফাইলের আরেকটি অংশ তৈরি করছে।
[http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ অষ্টম সপ্তাহের লেকচারে] আলোচিত "কগনিটিভ সারপ্লাস" এর প্রসঙ্গে সুভেইলেন্স অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে মানুষের হাতে অনেক অবসর সময় রয়েছে, যেহেতু শ্রমিকশ্রেণির কাজকর্মে প্রযুক্তি স্থান নিয়েছে। দেয়া উদাহরণগুলো প্রধানত গেমারদের যারা কঠিন পরিস্থিতিতে গেম সম্পন্ন করেছেন। তবে এটি সুভেইলেন্সের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত, কারণ এই বাড়তি সময় না থাকলে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম এবং সুভেইলেন্সের চর্চা সম্ভব হতো না; যেমন ব্লগিং, ডেইলি লাইফ ভিডিও তৈরি কিংবা সমাজ নিয়ে মন্তব্য ইত্যাদি।
এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ নতুন মাধ্যম যুগে। সেখানে নজরদারি এবং সুভেইলেন্স উভয়েরই কার্যকারিতা রয়েছে। ব্যবহারকারীরা তাদের ভিডিওগুলো অনলাইনে স্বাধীনভাবে শেয়ার করার মাধ্যমে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুহূর্তেই সারা পৃথিবীতে পৌঁছে যায়, তা সরকার চাইলেও হোক বা না চাইলেও। এই চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা উচ্চস্তরের কর্মকাণ্ড তদারকির সুযোগ পায়, অন্যভাবে বললে, ''অসংখ্য মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করে''। উদাহরণস্বরূপ, [[w:২০১৩-এর_বোস্টন_ম্যারাথন_বোমা_হামলা|২০১৩ সালের বোস্টন ম্যারাথন বোমা হামলা]] চলাকালীন বিপুল পরিমাণ ছবি ও ভিডিও Vine, Facebook, YouTube প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যম সাইটে আপলোড করা হয়, যা পুলিশি তদন্তে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক ছিল।<ref>Biddinger, P. D., Baggish, A., Harrington, L., d'Hemecourt, P., Hooley, J., Jones, J., ... & Dyer, K. S. (2013). Be prepared—the Boston Marathon and mass-casualty events. New England journal of medicine, 368(21), 1958-1960.</ref> অন্যদিকে, সুভেইলেন্সের সুযোগে অল্পসংখ্যক মানুষও ইউটিউবের মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি ব্যবহারকারীর সামাজিক মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে, যেমন [https://sumall.com/ SumAll], [http://www.thoughtbuzz.com/ ThoughtBuzz] এবং GraphDive। সাধারণত এই তথ্য সংগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মার্কেটিং ও গ্রাহকসেবা কার্যক্রমে ব্যবহারকারীদের মৌলিক তথ্য, শখ, যোগাযোগ, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি কাজে লাগানো।
== আইন ও বিধিনিষেধ ==
[http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Definition সংজ্ঞা] অনুযায়ী, নজরদারি হলো তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। যেহেতু কোম্পানি এবং সরকার বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে, যেমন যোগাযোগ তথ্য এবং তার বিষয়বস্তু, তাই নজরদারির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং গোপনীয়তার ক্ষতি ঠেকাতে আইন ও বিধিনিষেধ থাকা আবশ্যক। হাউস অফ লর্ডস কনস্টিটিউশন কমিটি বলেছে: 'নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জাতির জীবনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক নজরদারি গোপনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।' [http://www.theregister.co.uk/2009/02/06/lords_reject_government_data/]
একটি আচরণবিধি রয়েছে, যা স্টেট সেক্রেটারির পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। সেখানে নজরদারি ক্যামেরা সিস্টেম কীভাবে যথাযথভাবে ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ([http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Protection_of_Freedoms_Act_2012 ২০১২ সালের ফ্রিডম সুরক্ষা আইন] এর ধারা ৩৩)।
==== নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধি ====
নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধ <ref>Surveillance Camera Code of Practice. Retrieved from: Surveillance Camera Code of Practice, 2013, London: The Stationery Office</ref> নির্দেশনা প্রদান করে যাতে নজরদারি প্রযুক্তিগুলো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। যেন সেগুলো মানুষের ও সম্পদের নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই আচরণবিধির উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা এবং এই আস্থা তৈরি করা যে ক্যামেরাগুলো কেবলমাত্র তাদের সুরক্ষার জন্যই স্থাপন ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কোডটি এমন নির্দেশনা দেয় যাতে নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার স্বচ্ছ ও বোধগম্য হয়। তবে এই কোড শুধুমাত্র তাদের উপরই প্রযোজ্য যারা জনসমক্ষে স্থাপিত নজরদারি প্রযুক্তি বা ক্যামেরা ব্যবহার করে।
==== উদাহরণ ====
নজরদারির কথা বললে, [[w:September 11 attacks|৯/১১ হামলার]] পর আমেরিকান সরকারকে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে আমেরিকান সরকার ''[https://www.justice.gov/archive/ll/highlights.htm প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট]'' এবং ''[https://www.dhs.gov/homeland-security-act-2002 হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট]'' প্রণয়ন করে। সেখানে প্রয়োজনে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে।<ref>Kennedy, S. S. (2015). Congressional Investigations. The Encyclopedia of Civil Liberties in America, 213.</ref> তবে এই আইনগুলোর জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনা করেছে। ''জার্মান মিডিয়া আইন'' বিশ্বে প্রথম আইন যা ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে বলা হয়েছে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকতে হবে।<ref>Spindler, G. (2014). Social Networks and Liability—the Difficult Triangle Between Network Operators, Users and Third Parties in German Media Law. In Varieties of European Economic Law and Regulation (pp. 863-892). Springer International Publishing.</ref>
১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক গোপনীয়তা তথ্য কেন্দ্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে একটি বৈশ্বিক গোপনীয়তা জরিপ প্রকাশ করে থাকে, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত গোপনীয়তা প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়। গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার প্রতিবেদন (প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল ২০০৭ক)৭৫টিরও বেশি দেশে নজরদারি এবং গোপনীয়তা রক্ষার অবস্থা মূল্যায়ন করে।
‘গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটি মানব মর্যাদা এবং মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা ইত্যাদি মূল্যের ভিত্তি। এটি আধুনিক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার হয়ে উঠেছে।<ref>Karen Lawrence Öqvist (2008) 'All in the Name of National Safety' in Virtual Shadows Your privacy in the information society, Swindon: The British Computer Society, p.110.</ref>
সেই অনুযায়ী, ইউরোপে তথ্য গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপাত্ত গোপনীয়তা নির্দেশিকা (৯৫/৪৬/EC) দ্বারা সমর্থিত। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের উচিত একটি গোপনীয়তা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা যাতে এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে রয়েছে তথ্য সুরক্ষা আইন ১৯৯৮ (তথ্য কমিশনারের কার্যালয় ১৯৯৮)। যুক্তরাজ্যের যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের সরকারে নিবন্ধন করতে হয় এবং তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
==== টেলিফোন কোম্পানির জন্য আইন ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের আদালত নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তা সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকারকে গোপনীয়তা অধিকারের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিষেবা প্রদানের সময় সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের বা প্রকাশের জন্য গ্রাহকের অনুমতি নিতে হয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেগুলেশন কোডের টাইটেল ৪৭, ধারা ৬৪.২০০৫)[https://www.law.cornell.edu/cfr/text/47/64.2005]। অবৈধভাবে অনুসৃত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ প্রকাশ করা যেতে পারে (মার্কিন কোডের টাইটেল ১৮, ধারা ২৫১১)[https://www.law.cornell.edu/uscode/text/18/2511] এবং অননুমোদিতভাবে ব্যবহারকারীর ফাইল অনলাইনে প্রবেশ নিষিদ্ধ (১৯৮৬ সালের মার্কিন ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্রাইভেসি অ্যাক্ট)[https://it.ojp.gov/privacyliberty/authorities/statutes/1285]। এই শর্তগুলো শিল্পোত্তর গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিগত তথ্যের দুর্বলতাকে সরাসরি স্বীকৃতি দেয়। তবে, আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এসব নিয়মাবলী বেসরকারি খাতে সংগৃহীত সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ১৯৯৯ সালের ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী আরও কঠোর নিয়মাবলী অনুসরণ করে যা ভোক্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে [http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents]। এই নির্দেশিকা ভোক্তা তথ্যের উপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং বিদেশি বাণিজ্য অংশীদারদের সমান মানের সুরক্ষায় আবদ্ধ করে <ref>Lee, Laurie Thomas (2000). Privacy, security and intellectual property. In Alan B. Albarran & David H. Goff (eds.), Understanding the Web: Social, Political, and Economic Dimensions of the Internet (pp. 135–64). Arnes: Iowa State University Press</ref>)। যদিও ব্যক্তিগত তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ থেকে যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা না থাকলে অন্য দেশে স্থানান্তর নিষিদ্ধ, তবে বিশ্বায়িত ব্যবসার প্রকৃতিগত কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির মাধ্যমে গোপনীয়তা বিধানের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক কোম্পানির সাথে ব্যবসা করতে পারে (যেমন: লি, ২০০০)। এই চুক্তিগুলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে আইনি সুরক্ষার চেয়ে অগ্রাধিকার না দিলে, তথ্যের অপব্যবহার এড়ানো অসম্ভব।<ref>Zizi A. Papacharissi, A Private Sphere: Democracy in a Digital Age, pp.43-44.</ref>
==== বিধিনিষেধ ====
সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি পরিচালনার জন্য কিছু শর্ত পূরণ নিশ্চিত করতে [[w:Data Protection Act 1998|ডেটা সুরক্ষা আইন ১৯৯৮]]-এর মাধ্যমে কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এই বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে:
# চিত্র ধারণকারী ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণ করা
# তৃতীয় পক্ষের কাছে উপকরণ প্রকাশ না করা
# উপকরণ যতদিন প্রয়োজন ততদিন সংরক্ষণ করা
# পরিচয় নিশ্চিত করা, অর্থাৎ নজরদারি ক্যামেরা চালু রয়েছে তা জানানো<ref>Data Protection Act. In 'legislation.gov.uk´. Retrieved from http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents/enacted .</ref>
এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, ভিডিও উপকরণ কেবল তখনই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে যদি সিসিটিভি আইনগত বিধিনিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যদি সিসিটিভি অপরাধ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়ে থাকে, তবে অপারেটররা প্রয়োজনমতো উপকরণ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
==== খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল ====
[[w:Draft Investigatory Powers Bill|খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল]] যুক্তরাজ্যের সংসদের একটি যৌথ কমিটির দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়। এটি ক্ষমতাধর সংস্থা এবং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি তিনটি পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ক্ষমতাধর সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য সংস্কার প্রস্তাব করে। তদুপরি, তারা গ্যারান্টির একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দেয় যাতে আইন মেনে চলা নিশ্চিত হয়।
খসড়া বিলের তিনটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে:<ref>Draft Investigatory Powers Bill. Retrieved from: https://www.gov.uk/government/uploads/system/uploads/attachment_data/file/473770/Draft_Investigatory_Powers_Bill.pdf</ref>
# এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা ও [[w:Intelligence agency|গুপ্তচর সংস্থার]] যেসব ক্ষমতা ইতোমধ্যে রয়েছে, সেগুলোকে একত্র করবে। এটি যোগাযোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এসব ক্ষমতাকে স্পষ্ট ও বোধগম্য করে তুলবে।
# এটি অনুমোদন ও তদারকি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে এবং [http://definitions.uslegal.com/i/intercept-warrant/ অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্ট]-এর জন্য একটি ‘ডাবল-লক’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে, যাতে সেগুলো কেবল বিচারকের অনুমোদনের পরই কার্যকর হয়। এর ফলে, এক নতুন তদন্তকারী ক্ষমতা কমিশনার (IPC) নিযুক্ত করা হবে যিনি এই ক্ষমতাগুলো আইন অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা তদারকি করবেন।
# এটি নিশ্চিত করবে যে সমস্ত ক্ষমতা ডিজিটাল যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইন্টারনেট সংযোগ রেকর্ড (ICRS) সংরক্ষণের বিধান প্রদান করবে, যা কোনো ডিভাইসের দ্বারা প্রবেশ করা ইন্টারনেট সেবাসমূহের রেকর্ড।
==== 'তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল' ====
তদন্তকারী ক্ষমতা বিলের উপাদানগুলো অপব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য একজন পর্যবেক্ষক দরকার। [[w:Investigatory Powers Tribunal|তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল]] নামে একটি কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি সরকারের কাছ থেকে স্বাধীন, যার কাজ হচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো যেন মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে তা নিশ্চিত করা। কেউ যদি মনে করে তারা বেআইনি কার্যক্রমের শিকার হয়েছে, তবে তারা ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে অভিযোগ দাখিল করতে পারে এবং ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি যাচাই করে দেখবে।<ref>The Investigatory Powers Tribunal. Retrieved from : http://www.ipt-uk.com/section.aspx?pageid=1</ref>
==== ২০১৪ সালের তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
যুক্তরাজ্যের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনে, পার্লামেন্ট ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন পাস করে যাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো টেলিফোন ও ইন্টারনেট রেকর্ডে প্রবেশের পূর্বতন ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। এই আইন কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করেনি, তবে এটি স্পষ্ট করেছে যে, বিদেশে অবস্থিত কিন্তু যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপরও এই আইন প্রযোজ্য।
এই আইন 'ডেটা রিটেনশন (ইসি নির্দেশিকা) রেগুলেশন ২০০৯' (S.I. 2009/859) প্রতিস্থাপনের জন্য গৃহীত নতুন আইন প্রবর্তনের ক্ষমতা প্রদান করে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত সুরক্ষার বিধানও রাখে। এই আইন কার্যকর করা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, যুক্তরাজ্যে যেসব কোম্পানি যোগাযোগ সেবা প্রদান করে তারা রাষ্ট্র সচিবের অনুরোধ অনুযায়ী যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্টে সাড়া দিতে বাধ্য হয়।<ref>Data Retention and Investigatory Powers Act 2014. Retrieved from: http://www.legislation.gov.uk/ukpga/2014/27/notes/division/2</ref> এই আইনের উপাদানগুলো বিদ্যমান কাঠামোকে ব্যাখ্যা ও দৃঢ় করে।
==== ২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইন ====
২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইনে সরকারি ডেটাবেসে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ধারণ ও ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
* এটি পুলিশ কর্তৃক আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করে
* এই আইন নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার জন্য একটি আচরণবিধি প্রবর্তন করে, তবে কেবল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত নজরদারির বিচারিক অনুমোদনের জন্য
* এটি তথ্যের স্বাধীনতা অধিকারের সম্প্রসারণ ঘটায়, যার অধীনে ডেটাবেসগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী ফরম্যাটে উন্মুক্ত করতে হবে
* এটি কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ক্ষমতার জন্য একটি আচরণবিধি সরবরাহ করে, যেখানে এই ক্ষমতাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিলযোগ্য
যুক্তরাজ্যের ডেটা সুরক্ষা আইন (DPA) আপনাকে একটি তথ্য বিষয় হিসেবে আপনার উপর কী সংরক্ষিত রয়েছে এবং কে সংরক্ষণ করছে তা জানার অধিকার প্রদান করে। এই আইনে স্বচ্ছতার অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর অর্থ, একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেটি সরাসরি আপনার পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত, তা সরকার বা অন্য যেকোনো সংস্থা সংরক্ষণ করলে আপনি তা জানার অধিকার রাখেন। আপনাকে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে এবং আপনার অনুরোধ যৌক্তিক হলে তারা তা মেনে চলতে বাধ্য।<ref>Öqvist, 2008 p.112</ref>
==== ২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন (আরআইপি বা আরআইপিএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন যা সরকারি সংস্থাগুলোকে নজরদারি ও তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ডাকযোগে যোগাযোগের বিষয়বস্তু অনুসরণ; যোগাযোগের বিষয়বস্তু ছাড়া অন্যান্য তথ্য (যেমন যোগাযোগের ধরন, ফোন নম্বর, ইন্টারনেট ঠিকানা, ডোমেইন নাম, ডাক ঠিকানা, তারিখ, সময় ও সময়কাল) সংগ্রহ; গুপ্তচর, তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী অফিসার ব্যবহার; ব্যক্তিগত ভবন ও যানবাহনে ইলেকট্রনিক নজরদারি; কাউকে অনুসরণ করা; এবং এনক্রিপ্ট করা ডেটা অ্যাক্সেস করা।
==== ১৯৮৪ সালের টেলিকমিউনিকেশন আইন ====
টেলিকমিউনিকেশন আইন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত একটি বিধান, যার অধীনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়:
* ব্রিটিশ টেলিকমকে বেসরকারিকরণ
* ভোক্তার স্বার্থ ও বাজার প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্য 'Oftel' নামে একটি টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা
* টেলিকমিউনিকেশন পরিচালনা কিংবা অন্য কোনো সিস্টেমের সাথে সংযোগ করার জন্য লাইসেন্স প্রবর্তন করা। লাইসেন্স ছাড়া তা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়
২০১৪ সালের এপ্রিলে হাউস অফ কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিবেদনে টেলিকমিউনিকেশন আইন ১৯৮৪-এর অধীনে যোগাযোগ তথ্য সংগ্রহ এবং এই ক্ষমতার তদারকির অভাব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
== মানবতা বনাম নজরদারি ==
=== মানবতার পক্ষে যুক্তি ===
"নজরদারি নিয়ে আলোচনায় একটি প্রধান রাজনৈতিক উদ্বেগ হলো: নিরাপত্তার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ ও নতুন নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার কি জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ বইয়ের মত একটি দমনমূলক সর্বনিয়ন্ত্রিত সমাজ নিয়ে আসছে?"<ref>[http://www.worldcat.org/title/our-biometric-future-facial-recognition-technology-and-the-culture-of-surveillance/oclc/630468338 Our Biometric Future: Facial Recognition Technology and the Culture of Surveillance].</ref> নজরদারি ক্যামেরাগুলো প্রতিটি রাস্তার কোণায়, প্রতিটি পাব-এ, প্রতিটি গণপরিবহন ব্যবস্থায় বসানো হয়েছে। এগুলো আমাদের শহরের গায়ে এবং মানুষের মানসিকতায় স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। বলা হয় যে, যুক্তরাজ্যের কোনো শহুরে এলাকায় আপনি প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে প্রায় ৩০টি নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার আওতায় পড়েন — ক্যামেরা নয়, সম্পূর্ণ ব্যবস্থা! অর্থাৎ, সেটি প্রায় ৩০০টি ক্যামেরা হতে পারে! ব্রিটিশ সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ৪ থেকে ৬ মিলিয়ন নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে। প্রযুক্তি বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে চলেছে। যা একসময় একটি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, এখন তা মুখ শনাক্ত করতে কিংবা আচরণ পূর্বাভাস দিতে পারে। মানবতা বনাম নজরদারি বিতর্কে আসলে কে জয়ী হচ্ছে?
এই ধরণের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ একটি জীবনযাত্রার মান সৃষ্টি করেছে যা [[w:Big Brother (franchise)|বিগ ব্রাদার]]-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়, যেখানে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী একজন সাধারণ নাগরিক জানেন যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারির আওতায় রয়েছে—একেবারে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-এর মতো। এটি কেবলমাত্র জনসাধারণের প্রতিদিনের জীবনে সীমাবদ্ধ নয়, একজন সাধারণ ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্যবহারের উপরও নজরদারি চালানো হয়, [http://www.theguardian.com/world/2015/nov/04/theresa-may-surveillance-measures-edward-snowden এমনকি যদি তার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড না-ও থাকে]। নজরদারি নিজেই গোপনীয়তার উপর হস্তক্ষেপ, তবে এর ইতিবাচক ফলাফল ও সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করা যায় না। রেকর্ড করা ফুটেজ আদালতের মামলায় ব্যবহার করা যায় যেমনটি রাস্তার অপরাধ বা [http://www.cctvcamerapros.com/Nanny-Camera-Court-Evidence-s/288.htm বাড়ির অভ্যন্তরেও] হয়, তবে এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি শহরে ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। এটি এমনকি ঘরে কিংবা বাইরে অজান্তে কারো ওপর ক্যামেরা বসানো নৈতিক ও নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে।
যদিও—বিগ ব্রাদার শো-এর মতো করে ফুটেজ দেখা এত সহজ নয়—তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখা যায়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপগুলো নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখার সুযোগ করে দেয়। এটি আবার সেই প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয় যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (যার মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়—যদিও এটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি বাস্তব চিত্র দেখাতে সহায়ক হতে পারে, এটি একইসঙ্গে অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের—যেমন পেডোফাইলদের—জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে, যারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখা উচিত।
কখনো কখনো এটি এমন একটি অবস্থা হয় যেখানে জনগণ নজরদারির বিপক্ষে দাঁড়ায়, অথচ একইসাথে শহর ও শহরতলিতে অপরাধ বা বিপদ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করতে চায়। সাধারণ মানুষও তাদের মুখমণ্ডল রেকর্ড করে ভবিষ্যতে সংরক্ষণ করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। অনলাইনে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা অত্যন্ত সহজ—গুগলে মাত্র একটি সার্চেই ৯.৫ মিলিয়ন ফলাফল পাওয়া যায়। এই সহজলভ্যতা ও দ্রুততা যে কারো জন্যই উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত, যিনি কখনো কোনো জনসমাগমপূর্ণ স্থানে ছিলেন। এটি শুধুমাত্র সরকারের ব্যবহারের জন্য নয়, তা হলে এটি এত সহজে পাওয়া যেত না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, নজরদারি বিরক্তিকর ও অনুপ্রবেশমূলক হলেও এটি জননিরাপত্তার জন্য এবং অপরাধমূলক ঘটনার ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ সত্য ফুটেজ প্রদানের জন্য অপরিহার্য। এটি জরুরি সেবাসমূহ—যেমন পুলিশ—এর প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে যাতে তারা ঘটনার নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই হস্তক্ষেপ করতে পারে।
তাহলে কি এত ক্যামেরার সত্যিই প্রয়োজন আছে? সমাজ সবসময় নজরদারির চক্ষু সহ্য করে এসেছে কারণ আমাদের মগজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে—এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু কতদিন এই যুক্তি কার্যকর থাকবে? যদি তারা এই সিস্টেমগুলো এমনভাবে আপগ্রেড করে যাতে শুধু দেখা নয়, মানুষের কথাবার্তাও শুনতে পারে এবং মুখ শনাক্তকরণ সংরক্ষণ করে আপনার ওপর নজর রাখতে পারে—তবে কি সত্যিই এটি নিরাপত্তার জন্য?
তবে আপনি লক্ষ্য করবেন, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিপরীতে, সিসিটিভি সিস্টেমে তেমন কোনো ব্যাপক আপগ্রেড হয়নি। এর কারণ হতে পারে—যদি আপগ্রেড করা হতো, মানুষ সহজেই তা লক্ষ করত। আমরা এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চলাফেরা করতে যে আমরা এগুলোর অস্তিত্বই খেয়াল করি না—ফলে মানুষের স্বাভাবিক আচরণ সহজে বোঝা যায়। কেবল যুক্তরাজ্যে ৪-৬ মিলিয়নের মতো ক্যামেরা রয়েছে—সবগুলো আপগ্রেড করতে গেলে বিশাল খরচ হবে—যা সরকার গোপন রাখতে পারবে না। এতে করে সন্দেহ তৈরি হয় যে, হয়তো তারা আপগ্রেড করছে না (শুধু খরচের কারণে নয়, যদিও সেটাও বড় কারণ), বরং জনগণ যাতে বুঝতে না পারে যে তারা কত ঘন ঘন পর্যবেক্ষণের আওতায় পড়ছে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে—আমরা কি আদৌ ক্যামেরার মাধ্যমে সুরক্ষিত? যেসব ক্যামেরা ১৫–২০ বছরের পুরনো এবং এখনো অ্যানালগ সিস্টেমে চলছে—তারা কিভাবে আমাদের রক্ষা করবে? অথবা আরও ভালো প্রশ্ন হতে পারে—মানবতা বনাম নজরদারি: কোথায় মানবতার কণ্ঠ?
এটি বলার উদ্দেশ্য নয় যে সব সিসিটিভি ক্যামেরাই পুরনো। বাস্তবে, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের সিসিটিভি সিস্টেম যুক্তরাজ্যের অন্যতম আধুনিকতম এবং এটি নাকি একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ব্যক্তির চলাচল ট্র্যাক করতে পারে। এই সিস্টেমটি প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি ইউনিক ‘সিগনেচার’ বরাদ্দ করতে পারে এবং বাস্তব সময়ে তাদের চলাফেরা শহর জুড়ে ট্র্যাক করতে পারে—কিন্তু কতজন মানুষ জানে যে এটি তাদের সঙ্গে ঘটছে? সাধারণ মানুষ কিভাবে এমন তথ্য জানতে পারবে? এত ক্যামেরা বসানোর আসল উদ্দেশ্য কি মানবতার সুরক্ষা, নাকি কেবল আমাদের ওপর নজরদারি?
নিয়মিত নজরদারিকে বর্ণনা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট।” যদিও ফুটেজ বিগ ব্রাদারের মতো সহজে দেখা যায় না, তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখার সুযোগ দেয়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপ নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখতে সাহায্য করে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয়, যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে দেখতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (যার মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়—যদিও এটি বাস্তব সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করতে পারে—তবুও এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের—যেমন পেডোফাইলদের—জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে, যারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখা উচিত।
শেষত—নজরদারি অপরাধ প্রতিরোধ করে না। এমন কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই যে ক্যামেরা অপরাধ প্রতিরোধ করে। এমনকি ওয়েলসের একজন পুলিশ ও অপরাধ কমিশনার এই যুক্তিতেই সিসিটিভির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করেছেন। ২০১৫ সালে প্যারিসে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার কথাই ধরুন। কোনো পরিমাণ নজরদারি এটি আগেভাগে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত না কিংবা থামাতে পারত না। যত বড় সংখ্যায় ক্যামেরা থাকুক না কেন, একসাথে সবাইকে দেখার মতো কেউ উপস্থিত থাকতে পারে না। মানবতার এত ক্যামেরার প্রয়োজন নেই—গোপনে নজরদারি আর নিরাপত্তার মধ্যে সূক্ষ্ম একটি পার্থক্য রয়েছে।<ref>https://www.gov.uk/government/speeches/humanity-vs-surveillance-commissioners-speech-to-stirling-university</ref>
=== নজরদারি বিতর্ক ===
তবে, নজরদারির ওপর আক্রমণ সত্ত্বেও এটি একটি উদ্দেশ্য পূরণ করে। নজরদারি সমাজকে সহায়তা করে। জনসাধারণ এটি সমর্থন করে, গবেষণায় দেখা গেছে ৮৪% মানুষ মনে করেন ক্যামেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য পূরণ করে। মাত্র ১৬% মানুষ নজরদারির বিরুদ্ধে ছিলেন, তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল—এই নজরদারির তদারকির অভাব নিয়ে। এটি জনগণের উপকারে এসেছে—অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে—এমনকি মানুষ অনুভব করে যে এটি থাকলে তারা বেশি নিরাপদ, বরং যদি এটি না থাকত। তাহলে যদি এত মানুষ নজরদারির পক্ষে থাকে—এই বিতর্ক নিয়েই বা সন্দেহ কোথা থেকে আসে? এর কারণ আপনি কখনোই সবার ব্যক্তিগত মতামত জানতে পারবেন না। প্রত্যেক ব্যক্তির বিশ্বাস জানার জন্য বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করা অসম্ভব—তবে আপনি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের একটি বৃহৎ অংশকে জিজ্ঞাসা করলে সেটাই আপনার সবচেয়ে ভালো সুযোগ। তবে আপনি সবসময় এমন কিছু মানুষ পাবেন যারা বলবে—"নজরদারি হলো শুধু সরকারের আমাদের ওপর নজর রাখার একটা উপায়!!"
তবে এই ধারনা যে নজরদারি কেবলমাত্র আপনার দৈনন্দিন জীবনে নজর রাখার জন্য—তা একেবারেই বিভ্রান্তিকর। যেমন সান্তা কেবলমাত্র শিশুদের কল্পনায় বাস্তব—এই ধারণাটিও সমাজের কিছু অংশের মনগড়া কল্পনা। এটি একটি বিভ্রান্তিকর প্রচারণা যা আপনাকে বিশ্বাস করায় যে সরকার কেবল খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। বাস্তবে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে কেবলমাত্র ৫% সিসিটিভি ক্যামেরা পুলিশ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে। আমরা একটি নজরদারি রাষ্ট্র, সিসিটিভির আওতার অধীনস্ত এক জাতি—এই ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হতে পারে। সিসিটিভি ক্যামেরার একটি বড় অংশ সাধারণ জনগণ নিজস্ব ব্যবসা সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করে। তাহলে, অন্যান্য ব্যক্তিদের নজরদারি ক্যামেরা আর পুলিশের/সরকারের ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কী?
নজরদারি বা নজরদারির মাধ্যমে খুন বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কখনো কখনো এটি কোনো অপরাধের স্থান থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরে থাকা ব্যক্তিকেও শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে। হ্যাঁ, একটি ক্যামেরা এলোমেলো সহিংসতা বা অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে না, তবে এটি অপরাধীদের শনাক্ত ও ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাজ্যজুড়ে সিসিটিভি ব্যবস্থার বিস্তারের পেছনে ছিল একটি ঘটনা—জেমি বালজারের অপহরণ। আপনি নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন সেই অস্পষ্ট ভিডিওচিত্র, যেখানে একজন শিশুকে দুই ১০ বছর বয়সী খুনির হাতে মারসিসাইডের একটি শপিং সেন্টার থেকে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছিল। এই ভিডিওচিত্র বারবার টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে, যা এক সময় প্রতীকমূলক রূপ লাভ করে। যদিও ভিডিওটি সেই ভয়াবহ অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারেনি, তবে এটি জনগণের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্ম দিয়েছিল যে অপরাধীরা ধরা পড়বেই।<ref>http://news.bbc.co.uk/onthisday/hi/dates/stories/february/20/newsid_2552000/2552185.stm</ref>
ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে শার্লি এবদো হামলা, যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দ্রুত পরিস্থিতি মূল্যায়নে এবং পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়। পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সিসিটিভি-এর মাধ্যমে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হামলার সাথে জড়িত দুই ভাইকে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল। দ্রুত তথ্য পাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে মনুষ্যবলের দিকনির্দেশ করতে পেরেছিল। সিসিটিভি ছাড়া সাড়া দেওয়ার সময় আরও দীর্ঘ হত, যার ফলে অপরাধীদের ধরা পড়ার সম্ভাবনাও কমে যেত। এটি প্রমাণ করে যে সিসিটিভি এতটা খারাপও নয়। জরুরি অবস্থায় এটি সাহায্য করতে পারলে এটি যে কার্যকর, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। নজরদারি শুধু বড় অপরাধের জন্য নয়; ছোটখাটো অপরাধ যেমন চুরি প্রতিরোধেও কার্যকর। যদি তা না হতো, তবে সাধারণ জনগণ বা ব্যবসায়ীরা কেন এত খরচ করে এই ধরনের ক্যামেরা স্থাপন করতেন?
সবশেষে, আলোচনা হবে গোপনীয়তা নিয়ে। অনেকে যুক্তি দেন নজরদারি ক্যামেরা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপমূলক। আমি পুরোপুরি বুঝি যে আপনি যদি বিশ্বাস করেন একটি ক্যামেরা আপনাকে অনুসরণ করছে বা আপনার বাগান কিংবা বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে, তাহলে সেটা অত্যন্ত অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবে চিন্তা করুন, বড় কর্পোরেশন বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবহৃত নজরদারি ক্যামেরাগুলোর কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা প্রভাব বিশ্লেষণ সম্পন্ন করে এবং তাদের সিস্টেমে গোপনীয়তা রক্ষার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকে। Privacy by design বলতে বোঝানো হয়, যদি কোনো ক্যামেরা আবাসিক এলাকার দিকে ঘোরে বা তাকায়, তাহলে ছবিগুলো পিক্সেল করে দেওয়া হয় যেন অপারেটর বাস্তবে কারও ঘর, বাগান বা স্কুলের ভেতর দেখতে না পান। এর ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করে তাদের নিরাপদ রাখা যায়। এছাড়াও বড় প্রতিষ্ঠানের নজরদারি ক্যামেরার গোপনীয়তা আরও উন্নত করার কথাও উঠেছে। এর মানে হচ্ছে, যেসব কিছু ভিডিও করা হচ্ছে, সেখানে বাস্তব মানুষের পরিবর্তে অবতার দেখানো হবে—ফলে তথ্য পুরোপুরি বেনামী থাকবে। এরপর যদি কোনো অপরাধ ঘটে, তাহলে সেই ডেটা ডিক্রিপ্ট করা যাবে। ফলে যারা কোনো অপরাধ করছেন না, তাদের পরিচয় গোপনই থাকবে এবং এটি শুধু অপরাধ ঘটলে ব্যবহৃত হবে।
==== মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী ====
১৯৪৮ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানব সমাজের প্রথম বৈশ্বিক ও বিস্তৃত দলিল হিসেবে ''[http://www.un.org/en/universal-declaration-human-rights/ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র]'' ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় বলা হয়, সকল মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার এবং যোগাযোগে যেন কোনো ধরনের ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ না করা হয়। এই নিয়মে, প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>Renteln, A. D. (2013). International human rights: universalism versus relativism. Quid Pro Books.</ref>
এই ধরনের আইন ও বিধান দ্বারা নজরদারি ব্যবস্থার ব্যাপ্তিকে সীমিত করা হয়। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে, জনসাধারণের যোগাযোগ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের গোপনীয়তা প্রকাশিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কর্পোরেশন, সুপারমার্কেট, ব্যাংক, রাস্তা ইত্যাদিতে স্থাপিত ক্যামেরা ও রেকর্ডার দ্বারা ব্যক্তিগত কথোপকথন নজরদারি করা যেতে পারে। ব্রাউজিং ইতিহাস ও অভ্যাস নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের কাছে চলে যেতে পারে। স্মার্টফোন ব্যক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রকাশ্যে বা গোপনে রেকর্ড করতে পারে। নজরদারি ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশ, যেখানে আইনগত প্রতিষ্ঠান ও অপরাধী উভয়ই অন্যদের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম, তা মানবতার বৃহৎ পরিসরে লঙ্ঘন করে।
==== উপসংহার ====
এটি একটি বৃহৎ বিতর্কের বিষয়। নজরদারি-এর ওপর আপনি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করবেন কি না, তা একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে জোরালো যুক্তি রয়েছে। সবকিছু নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যের ওপর। নজরদারি খারাপ হতে পারে যদি এটি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে যখন এটি জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায় এবং এটি প্রমাণ করে যে আমরা এটি প্রয়োজন, যাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মানুষ নিরাপদ থাকে।
== নজরদারি প্রযুক্তি ==
নজরদারি প্রযুক্তি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত—''পাবলিক ক্যামেরা'' বা ''[[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]]''। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ''অদৃশ্য ক্যামেরা - ইন্টারনেট''। দৃশ্যমান ক্যামেরা হোক বা অদৃশ্য, প্রযুক্তি নিজেই নিরপেক্ষ। এগুলোকে উপকারী বা ক্ষতিকর করে তোলে যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এগুলো ব্যবহার করে, তাই এদের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা প্রয়োজন।
==== কম্পিউটার ====
বিশেষত [[w:ইন্টারনেট|ইন্টারনেটে]] কম্পিউটার নজরদারি-এর বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে [[w:ডেটা মাইনিং|ডেটা]] এবং [[w:ট্র্যাফিক অ্যানালাইসিস|ট্র্যাফিক]] বিশ্লেষণ। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে [[w:আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন|আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন]] অনুসারে, সব ফোনকল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্র্যাফিক (ইমেইল, ওয়েব ট্র্যাফিক, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ইত্যাদি) ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য বিনা বাধায় বাস্তবসময়ে নজরদারির জন্য উন্মুক্ত রাখতে হয়।<ref name="eff-calea-archive2">{{cite web|url=http://w2.eff.org/Privacy/নজরদারি/CALEA/?f=archive.html|title=CALEA Archive -- Electronic Frontier Foundation|work=Electronic Frontier Foundation (website)|accessdate=March 14, 2009}}</ref> ইন্টারনেটে এত বিশাল পরিমাণ ডেটা রয়েছে যে মানব তদন্তকারীদের পক্ষে সব খুঁজে দেখা অসম্ভব। তাই স্বয়ংক্রিয় ইন্টারনেট নজরদারি কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে বিপুল ট্র্যাফিক ছেঁকে, নির্দিষ্ট "ট্রিগার" শব্দ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি দ্বারা আগ্রহজনক ট্র্যাফিক আলাদা করে মানব তদন্তকারীদের জানানো হয়। প্রতি বছর এনএসএ, এফবিআই, তথ্য সচেতনতা অফিসের মতো সংস্থাগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে Carnivore (FBI), NarusInsight এবং ECHELON-এর মতো সিস্টেমের উন্নয়ন, ক্রয়, বাস্তবায়ন ও পরিচালনায়, যেন নজরদারির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনা যায়।
==== সিসিটিভি ====
সম্ভবত নজরদারি-এর সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যবহৃত প্রযুক্তি হলো সিসিটিভি। [[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]] বা ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের উদ্ভব জার্মানিতে, ১৯৪২ সালে। এই প্রযুক্তি এখন বৈশ্বিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
''সিসিটিভি''-এর ক্ষেত্রে কে এটি স্থাপন করতে পারবে, কোথায় ও কখন এটি স্থাপন করা যাবে—এই বিষয়গুলো রিপোর্ট ও সীমাবদ্ধতার আওতায় থাকা উচিত। আমেরিকান সমালোচক [[w:জেনিফার গ্র্যানহোম|জেনিফার গ্র্যানহোম]] যেমন বলেছেন, নাগরিকদের পক্ষে আশা করা অনাযুক্ত যে তারা জনগণ ও পুলিশের নজরদারিতে থাকবে না, অথচ তারা নিজেরা চায় যে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগগুলোতে কোনো নজরদারি থাকবে না, এমনকি শক্তিশালী রিমোট মনিটরিং থেকেও নয়।<ref>Granholm, J. (2015). Archived Websites-Governor's Official Homepage-2007.</ref> এছাড়া অদৃশ্য ক্যামেরা বা নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের প্রসঙ্গে [[w:Mark Poster|মার্ক পোস্টার]] ''[[wiktionary:superpanopticon|"superpanopticon"]]'' নামক নতুন ধারণা দেন, যা বর্ণনা করে কীভাবে ডিজিটাল দুনিয়ায় ব্যক্তিজীবন গঠিত হয়।<ref>Fuchs, C., Boersma, K., Albrechtslund, A., & Sandoval, M. (2014). The Internet and নজরদারি.</ref> নেটওয়ার্ক ডেটাবেসে তথ্য প্রেরণ দ্রুত এবং সুবিধাজনক, যা সিসিটিভি থেকেও বেশি নিখুঁত ও বিস্তৃত। এই প্রেক্ষাপটে, নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে আইন ও বিধান প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
নজরদারি ক্যামেরা বা সিসিটিভি দিন দিন বিশ্বব্যাপী জনসাধারণ ও ব্যক্তিগত স্থান নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকার, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি ও ব্যক্তিগত ব্যক্তি অপরাধ প্রতিরোধ, শহুরে পরিবেশ ও সরকারি ভবনের নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ভিডিও নজরদারি ব্যবহার করে। নজরদারি প্রযুক্তিকে কখনো কখনো ‘পঞ্চম ইউটিলিটি’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে,<ref>Graham (2002)</ref> যেখানে সিসিটিভি শহুরে পরিবেশে এমনভাবে সংযুক্ত হয়েছে যেমন বিদ্যুৎ বা টেলিফোন নেটওয়ার্ক শতাব্দীর প্রথমার্ধে সংযুক্ত ছিল।
পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির মধ্যে সম্ভবত সিসিটিভি-ই সবচেয়ে প্রভাবশালী, শুধুমাত্র ব্যবহৃত ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকেই। যেমন, ২০০৭ সালে, প্রায় ''দশ'' বছর আগে, অনুমান করা হয়েছিল যে যুক্তরাজ্যে ৪.২ মিলিয়ন সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।<ref>Meikle, G & Young, S. (2012). ''Media Convergence: Networked Digital Media in Everyday Life''. Basingstoke: Palgrave Macmillan. p130.</ref> সিসিটিভি সম্ভবত নজরদারি-এর কার্যপ্রণালিকেই বদলে দিয়েছে। মিশেল ফুকো (১৯৭৭) ব্যাখ্যা করেছেন যে অতীতে অনেক মানুষ মুষ্টিমেয় প্রভাবশালীদের পর্যবেক্ষণ করত, যেমন: প্রকাশ্য ভাষণের মাধ্যমে। কিন্তু এখন নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প কিছু মানুষই অনেক মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে! তিনি বলেন, 'visibility is a trap' <ref>Foucalt, M. (1977). ''Discipline and Punish''. Harmondsworth: Penguin. p.200.</ref>। যদিও এটি একমুখী সম্পর্ক নয়, কারণ এখনো ‘অনেক মানুষ’ ‘মুষ্টিমেয় মানুষ’কে দেখে টিভি ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে। তবে সিসিটিভি মূলত মুষ্টিমেয়ের নিয়ন্ত্রণে, যার মানে—যখন আপনি জনসমক্ষে থাকবেন, তখন আপনাকে ভিডিও করা হতে পারে, অনেক সময় আপনার অজান্তেই।
বিশ্বে নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাজ্য শীর্ষে: প্রতি ১২ জনে ১টি ক্যামেরা বা প্রায় ৫ মিলিয়ন ক্যামেরা সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে।<ref>Öqvist, 2008, p.153</ref>
[[চিত্র:Cameras_innercity_London_2005.jpg|থাম্ব|300x300পিক্সেল|লন্ডন, যুক্তরাজ্যে সিসিটিভির উদাহরণ]]
==== এএনপিআর ====
স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট স্বীকৃতি ক্যামেরা (এএনপিআর), বা লাইসেন্স প্লেট স্বীকৃতি ক্যামেরা (এলপিআর) যানবাহন নজরদারির অন্যতম প্রাথমিক পদ্ধতি। রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়, বিশেষত মোটরওয়ে, তারা গতি এবং অন্যান্য হাইওয়ে সুরক্ষা লঙ্ঘনের প্রতিবেদন করতে পরিবেশন করে। এগুলি স্বয়ংক্রিয় টোল ট্যাক্স সংগ্রহের মতো প্রক্রিয়াগুলির জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্যামেরার একটি ফর্ম হলেও, তারা সিসিটিভি থেকে পৃথক যে তাদের উদ্দেশ্য যানবাহনগুলি কী করছে তার ভিজ্যুয়াল ডেটা রেকর্ড করা নয়, তবে নম্বর প্লেটগুলি সনাক্ত করা এবং অক্ষরগুলি সনাক্ত করা, এমনকি দূর থেকে বা গতিতেও। সফটওয়্যার ওসিআর একাধিক ক্যাপচার করা চিত্র থেকে ডেটা ব্যবহারযোগ্য কোডে রূপান্তর করতে ব্যবহৃত হয় এবং হেডল্যাম্প আলোকসজ্জা এবং অন্যান্য বাধা নির্বিশেষে দিন এবং রাত উভয়ই কাজ করার জন্য ক্যামেরাগুলি দৃশ্যমান বর্ণালীর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকা অবস্থায় ইনফ্রারেড আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে।
==== টেলিফোন ====
টেলিফোন লাইনের সরকারী এবং অনানুষ্ঠানিক ট্যাপিং ব্যাপক। হিউম্যান এজেন্টদের বেশিরভাগ কল নিরীক্ষণের প্রয়োজন হয় না। স্পিচ-টু-টেক্সট সফটওয়্যার বাধা দেওয়া অডিও থেকে মেশিন-পঠনযোগ্য পাঠ্য তৈরি করে, যা পরে স্বয়ংক্রিয় কল-বিশ্লেষণ প্রোগ্রাম দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যেমন তথ্য সচেতনতা অফিসের মতো সংস্থাগুলি বা ভেরিন্ট এবং নারুসের মতো সংস্থাগুলি দ্বারা বিকাশ করা হয়, যা নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্যাংশ অনুসন্ধান করে, কলটিতে কোনও মানব এজেন্টকে উত্সর্গ করবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নিতে। যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা পরিষেবাদির কাছে ফোনের ডায়াগনস্টিক বা রক্ষণাবেক্ষণ বৈশিষ্ট্যগুলি অ্যাক্সেস করে দূরবর্তীভাবে সেল ফোনে মাইক্রোফোনগুলি সক্রিয় করার প্রযুক্তি রয়েছে যাতে ফোনটি ধরে থাকা ব্যক্তির কাছাকাছি ঘটে যাওয়া কথোপকথনগুলি শোনা যায়। লোকেশন ডেটা সংগ্রহের জন্যও সাধারণত মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। একটি মোবাইল ফোনের ভৌগলিক অবস্থান (এবং এইভাবে এটি বহনকারী ব্যক্তি) ফোনটি ব্যবহার না করা হলেও সহজেই নির্ধারণ করা যেতে পারে, মাল্টিলেটেরেশন নামে পরিচিত একটি কৌশল ব্যবহার করে সেল ফোন থেকে ফোনের মালিকের নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি সেল টাওয়ারের প্রতিটিতে একটি সংকেত ভ্রমণের জন্য সময়ের পার্থক্য গণনা করে। স্নোডেনের ফাঁস করা নথিতে আরও জানা গেছে, ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার্স (জিসিএইচকিউ) মার্কিন নাগরিকদের বিষয়ে এনএসএ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে। একবার ডেটা সংগ্রহ করা হয়ে গেলে, জিসিএইচকিউ এটি দুই বছর পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে। 'ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তা'র অনুমতি সাপেক্ষে এই সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে।
বিভিন্ন নজরদারি প্রযুক্তি রয়েছে যা টেলিফোন এবং মোবাইল ফোনের সাথে সম্পর্কিত ব্যবহারের জন্য কার্যকর এবং সহজেই উপলব্ধ। সর্বাধিক পরিচিত কয়েকটি হ'ল বাগিংয়ের মাধ্যম এবং টেলিফোন এবং সেলুলার ডিভাইসগুলি ট্র্যাক করা।
'''বাগিং'''
একটি গোপন শ্রবণ ডিভাইস, একটি বাগ বা একটি তারের হিসাবেও পরিচিত, শ্রবণ ডিভাইসগুলিতে সাধারণত একটি ছোট রেডিও ট্রান্সমিটার এবং একটি মাইক্রোফোন থাকে। বেশিরভাগ পুলিশ তদন্তে ব্যবহৃত হয়, ডিভাইসগুলি এখনও জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ। ডেইলি মেইল একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে যা তাদের মোবাইল ফোনে বাগিং ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের অংশীদারদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে এমন লোকদের সতর্ক করে। ফ্লেক্সিস্পাইয়ের মতো সিস্টেমগুলির সাথে, যা তাদের গুপ্তচরবৃত্তি সফটওয়্যারটির বিবৃতি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয় "আপনি যদি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে থাকেন, কোনও সন্তানের জন্য দায়বদ্ধ হন বা কোনও কর্মচারী পরিচালনা করেন তবে আপনার জানার অধিকার রয়েছে। সত্যিটা জেনে নিন, ওদের ফোনে গুপ্তচরবৃত্তি করুন। ডেটা সুরক্ষা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হলেও, সিস্টেমটি, আরও অনেকের সাথে এখনও জনপ্রিয় এবং জরিমানা কেবল জরিমানা। তবে সর্বজনীন স্থানে, অফিসে এবং আপনার নিজের বাড়িতে শ্রবণ বা রেকর্ডিংয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার করা কি আইনী।
'''ট্র্যাকিং''' ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে, স্টিংরে ফোন ট্র্যাকার সবচেয়ে সাধারণ। হ্যারিস কর্পোরেশনের তৈরি ডিভাইসটি একটি সেলুলার ফোন নজরদারি ডিভাইস। ডিভাইসটি নিকটবর্তী সমস্ত ডিভাইসকে এটির সাথে সংযোগ করতে বাধ্য করে এবং সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারে, ডেটা ডাউনলোড করতে পারে এবং যোগাযোগের সামগ্রী আটকাতে পারে এবং সামগ্রী ডিক্রিপ্ট এবং রেকর্ড করতে পারে। স্টিংরে এটির সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলি ট্র্যাক এবং সনাক্ত করতে পারে। সফটওয়্যারটি মূলত সামরিক ও গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের পছন্দগুলির জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং বিতর্কিত হলেও, সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার বিষয়গুলির মধ্যে অস্পষ্ট রেখা সহ, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ২৩টি অঙ্গরাজ্যের অন্তত ৬০টি এজেন্সিকে চিহ্নিত করেছে যারা স্টিংরে প্রযুক্তির মালিক এবং ব্যবহার করে। তবে যুক্তরাজ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্কাই নিউজের এক অনুসন্ধানে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, লন্ডনজুড়ে পুলিশ নকল মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করছে। এই টাওয়ারগুলি মোবাইল ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ব্যবহারকারীদের অবস্থান প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিভাইসগুলো সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ট্র্যাক করতে ব্যবহার করা হতে পারে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ধরণের নজরদারি ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার বা নিশ্চিত করেনি।
'''''উদাহরণ'''''
নেদারল্যান্ডসে সমস্ত আইএসপিগুলির আদালতের আদেশের সাথে সমস্ত ট্র্যাফিক আটকানোর ক্ষমতা থাকতে হবে এবং তিন মাসের জন্য ব্যবহারকারীদের লগ বজায় রাখতে হবে। নিউজিল্যান্ডে, টেলিযোগাযোগ (ইন্টারসেপশন ক্ষমতা) আইন ২০০৪ টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলি এবং আইএসপিগুলিকে পুলিশ এবং সুরক্ষা পরিষেবাদির অনুরোধে ফোন কল এবং ইমেলগুলি আটকাতে বাধ্য করে। সুইজারল্যান্ডে আইএসপিগুলিকে মেইল এবং টেলিযোগাযোগের আড়িপাতার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
==== সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ====
তথ্য গোপনীয়তার আরেকটি অংশ যা কোনও আইনি কাঠামোর আওতাভুক্ত নয় তা হ'ল আমরা অনলাইনে যাওয়ার সময় যে তথ্য ভাগ করে নিচ্ছি। এটি সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ের প্রসঙ্গে প্রয়োগ করা হলে তথ্য সুরক্ষার ডোমেনে 'তথ্য এক্সপোজার' এর সংজ্ঞায় সম্পূর্ণ নতুন ধারণা উত্থাপন করে। 'ডিজিটাল তথ্যের অবশিষ্টাংশ' হ'ল আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য যা সাইবারস্পেসে কেউ বা কিছু দ্বারা সংগ্রহ বা ভাগ করা এবং ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং যার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
যতদিন অনলাইন সম্প্রদায় ছিল, ততদিন অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ মিডিয়া কমিউনিকেশনে বর্ণিত সোশ্যাল মিডিয়া ছিল। তবে সরাসরি যোগাযোগ না করে সোশ্যাল মিডিয়া পৃষ্ঠাগুলিতে আমাদের প্রোফাইলটি ঠিক কে পর্যবেক্ষণ করছে তা নির্ধারণ করা কম সহজ। কিছু গোপনীয়তা সেটিংস আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে যেমন কোনও পোস্টে 'কাস্টম' সেটিংস যা আমাদের পোস্টটি কে দেখছে তা দেখতে দেয়; যাইহোক, অন্যদের ট্যাগিং (যতক্ষণ না আমরা নিজেদেরকে ডি-ট্যাগ করি) আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং সেই কয়েক মিনিট 'ওহ না - কে ইতিমধ্যে এটি দেখেছে?' দিয়ে পরিপূর্ণ হয়। গ্রাহাম মেইকেল এবং শেরম্যান ইয়ং বলেছেন: "নিউজফিড ফাংশনের মাধ্যমে ফেসবুক যেভাবে আমাদের বন্ধুদের তালিকার প্রত্যেকের কাছে আমাদের ক্রিয়াকলাপ প্রচার করে তা ভেবে দেখুন। আপনি ভাবতে পারেন যে বন্ধুর স্ট্যাটাসে আপনি যে বিশেষ মন্তব্য করেন তা অন্যদের থেকে সীমাবদ্ধ যারা এটি দেখতে চান না, কেবল তার প্রোফাইলটি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং তাই আপনার মন্তব্যটি আপনার প্রতিটি বন্ধুকে 'শীর্ষ সংবাদ' হিসাবে পুনরায় বিতরণ করা হয়েছে।
নিয়োগ কোম্পানি জবভিট তাদের বার্ষিক জরিপে (সর্বশেষ সেপ্টেম্বর ২০১৫) অনুসারে, ৯২% নিয়োগকর্তা নিয়োগের আগে সামাজিক মিডিয়া পৃষ্ঠাগুলি চেক করেন। তদুপরি, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানের সাথে সাথে শিক্ষকরা যাতে ক্লাসের বাইরে গুপ্তচরবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নির্দেশিকা
এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে উভয় উদাহরণই তাত্ত্বিক এরভিং গফম্যানের কাজের উদাহরণ যিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমাদের বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতির জন্য বহুমাত্রিক ছদ্মবেশ রয়েছে এবং আমরা আমাদের ক্যাটারড শ্রোতাদের কাছে অভিনয় করি এবং থিয়েটারের অনুরূপ হলেও আমাদের আসল সত্তা ব্যাকস্টেজ।
===== স্ক্রিনশট সুসভিলেন্স অনলাইন ডেটিং এবং বিশ্বাসঘাতকতা =====
স্ক্রিনশটগুলি কেবলমাত্র পিসি বা ল্যাপটপে প্রিন্ট স্ক্রিন টিপে আমরা করতে পারতাম, তবে স্মার্টফোনের প্রস্তুত প্রাপ্যতার অর্থ আজ এক ক্লিকের সাথে তারা প্রতিদিনের ভিত্তিতে বন্ধুদের কাছে ফরোয়ার্ড করার জন্য ছবি এবং তথ্য ক্যাপচার করার জন্য ক্রমবর্ধমান সাধারণ পদ্ধতি হয়ে উঠছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার তাদের ব্যবহারকারী ও সম্ভাব্য সঙ্গীদের জন্য একটি 'শেয়ার' ফাংশন তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। ডেটিং জায়ান্ট বলছে যে এটি ব্যবহারকারীরা এমন কারও প্রোফাইল ভাগ করে নিতে উপকৃত হবে যা তারা সম্ভবত পরিচিত হিসাবে দেখা করেছে এবং ফেসবুক বন্ধু হিসাবে যুক্ত করার পক্ষে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ নয়, এমন কারও সম্পর্কে তারা আগ্রহী কিন্তু তাদের প্রাপ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চিত। এটি স্বাভাবিকভাবেই গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ নিয়ে আসে কারণ একটি লিঙ্কটি ৪৮ ঘন্টা বা পাঁচটি ক্লিকের পরে উপলব্ধ ব্যক্তির বন্ধুকে ইমেল করা যেতে পারে।
টিন্ডার যুক্তি দেয় যে ব্যবহারকারীদের ইতিমধ্যে ব্যবহারকারীর প্রোফাইলগুলি স্ক্রিনশট করার এবং তাদের বন্ধুদের কাছে পাঠানোর বিকল্প রয়েছে এবং ব্যবহারকারীরা তাদের বিবরণ ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে 'অপট' আউট করার সুযোগ পাবেন। তবে বাজফিড এবং ডিসট্রাক্টিফাইয়ের মতো বিনোদন ওয়েবসাইটগুলি অদ্ভুত, নোংরা এবং নিখুঁত অদ্ভুত কথোপকথনগুলি ক্যাপচার করেছে এমন ব্যবহারকারীদের দ্বারা প্রেরিত স্ক্রিনশটগুলি সংকলন করে সন্দেহহীন ব্যবহারকারীদের ব্যয়ে হাস্যরস তৈরি করতে প্রোফাইল ব্যবহার করে,[ জাতীয় পদক্ষেপগুলি প্রাপ্তির প্রান্তে থাকা ব্যক্তিদের জন্য সামান্য সান্ত্বনা নিয়ে আসে। এখন পুরো অ্যাকাউন্ট রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের টিন্ডার দুঃস্বপ্ন প্রেরণের জন্য উত্সর্গীকৃত এবং উত্সাহিত করে। তবে মডেল এমিলি সিয়ার্সের ক্ষেত্রে স্ক্রিনশট নজরদারি একটি সুবিধার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে,[ যিনি পুরুষদের তাদের লিঙ্গের অযাচিত ছবি প্রেরণের পরিমাণ নিয়ে হতাশ হওয়ার পরে 'তিনি তাদের পরিবার বা বান্ধবীদের সন্ধানের জন্য তাদের প্রোফাইলে সন্ধান করেছিলেন এবং তাদের ফরোয়ার্ড করার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি দেখতে পান যে পুরুষরা তাদের আচরণের জন্য দ্রুত ক্ষমা চেয়েছিল।
তার বাজফিড সাক্ষাত্কারে[ মিস সিয়ার্স বলেছিলেন যে পুরুষরা বিশ্বাস করে যে তারা তাদের কম্পিউটারের পিছনে সুরক্ষিত ছিল। এই সামাজিক আচরণকে তাত্ত্বিক জন সুলার অনলাইন ডিসইনহিবিশন বলে অভিহিত করেছেন, কারণ বাস্তবে এমন কিছু করার বা বলার স্বাধীনতার অনুভূতি যা সাধারণত কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। যদি কোনও পুরুষ রাস্তায় নিজেকে প্রকাশ করে তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে তবে কিছু পুরুষ বিশ্বাস করে যে তাদের পুরুষাঙ্গের ছবি পাঠানো সামাজিকভাবে আরও গ্রহণযোগ্য।
==== কোম্পানিসমূহ ====
পাসপোর্ট পরিষেবাগুলি ভোক্তাদের তথ্য শোষণ করেছে এবং Salon.com থেকে উদ্ভূত নিবন্ধগুলির একটি সিরিজ অনুসরণ করে তাদের গোপনীয়তা নীতি এবং বিবৃতি সংশোধন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। ইয়াহু এবং মাইক্রোসফট ই-মেইল পরিষেবা উভয়ই ব্যক্তিগতভাবে সনাক্তকরণযোগ্য তথ্য ভাগ না করার তাদের বর্ণিত গোপনীয়তা নীতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সম্ভাব্য গোপনীয়তা লঙ্ঘন সম্পর্কে ব্যবহারকারীর সমালোচনার জবাবে, ফেসবুক তার নতুন সংশোধিত পরিষেবার শর্তাদি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। গুগলের গোপনীয়তা অনুশীলনগুলি ইইউ গোপনীয়তার মানগুলি পূরণ করে না এবং একইভাবে বেশ কয়েকটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে আইনপ্রণেতা গোপনীয়তা অনুশীলন নিয়ে গুগলকে প্রশ্ন করেন প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার রূপরেখার জন্য সংস্থাগুলি গোপনীয়তা এবং ব্যবহারের শর্তাদি বিবৃতি নিয়োগ করে, যাতে ব্যবহারকারীর অভিযোগের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়।
এই পদ্ধতিতে, ব্যক্তিগত তথ্য জনসাধারণের মধ্যে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়, প্রক্রিয়াটিতে ব্যক্তির কাছ থেকে সামান্য ইনপুট সহ।
২০১৪ সালের NSA.In বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এমন সংস্থাগুলি রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট '''টুইটার''' মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে যাতে এটি ব্যবহারকারীদের উপর সরকারের নজরদারি সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে স্বচ্ছ হওয়ার ক্ষমতা চেয়েছিল। টুইটারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন লি বলেছেন, এই বিধিনিষেধ প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন। টুইটারের মামলার আগে '''গুগল''' একটি অনুরূপ মামলা দায়ের করেছিল যা সংস্থাটি কতবার ডেটা জন্য জাতীয় সুরক্ষা অনুরোধ পায় তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার অনুমতি চেয়েছিল। [৬]
==== বায়োমেট্রিক ====
ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের মতে, "বায়োমেট্রিক্স বলতে জীবিত ব্যক্তিদের স্থায়ী শারীরিক বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ বা পরিচয় যাচাইকরণকে বোঝায়"। এই ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি বহু বছর ধরে সাধারণভাবে পরিচিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্বীকৃতি এবং আইরিস স্বীকৃতির সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে পোস্ট করা ছবিতে মানুষকে 'ট্যাগ' করে। এই সমস্তগুলি নজরদারি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি থেকে গঠিত ডেটা সরকারী বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা হয়। বায়োমেট্রিক ডেটার এই ধরনের ব্যবহার সুপরিচিত, তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবহার অন্বেষণ করা হচ্ছে।
আমেরিকা এবং চীনে, ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরাগুলি শহরগুলির চারপাশে ল্যাম্প পোস্টগুলিতে স্থাপন করা হচ্ছে যাতে রিয়েল টাইমে ব্যক্তিদের ট্যাগ করা ভিডিও দেখার পাশাপাশি সহিংস কার্যকলাপের জন্য জড়ো হতে পারে এমন বিশাল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা যায়। গত বছর ইউরোপে ওয়ান্টেড অপরাধীদের ভিড় স্ক্যান করার জন্য লেস্টারশায়ার পুলিশ কর্তৃক ডাউনলোড ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এটি যুক্তরাজ্যের একটি বহিরঙ্গন ভেন্যুতে এই ধরণের প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার ছিল এবং যখন এটি জনসাধারণের নজরে আনা হয়েছিল তখন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। একই সময়ে আইসি পুতুলগুলি স্টোরগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে তারা সংস্থাগুলিকে বিপণনের ডেটা দেওয়ার জন্য খুচরা গ্রাহকদের বয়স, জাতি এবং লিঙ্গ ট্র্যাক করতে পারে; এক ধরনের কর্পোরেট নজরদারি। এটি একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর মতো শোনাতে পারে তবে ক্রমবর্ধমান এটি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আইকোনেমের নিজস্ব পুতুল সিস্টেম রয়েছে যা স্মার্টফোনে বীকন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অ্যাপের মাধ্যমে পণ্যের বিবরণ সম্পর্কে সতর্ক কয়েক বছরের মধ্যে কোনও দোকানে প্রবেশ করা এবং পুতুলটি আপনাকে আপনার নাম ধরে ডাকে এবং তারপরে কেবল মুখের স্বীকৃতি সফটওয়্যার এবং গ্রাহক ডাটাবেসগুলি একত্রিত করে আপনাকে পণ্যগুলির প্রস্তাব দেয়। অবশ্যই এর কোনোটিই সহজে করা যায় না, যেমনটি কেলি গেটস তার বই আওয়ার বায়োমেট্রিক ফিউচার: ফেসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি অ্যান্ড দ্য কালচার অব সার্ভিল্যান্সে তুলে ধরেছেন, তবে এর উন্নয়ন ও উৎপাদনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে বায়োমেট্রিক নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই,[ তবে যুক্তরাজ্য এবং কানাডা কিছু আইন পাস করেছে যা আক্রমণাত্মক বায়োমেট্রিক্স সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করবে, যেমন 'স্নুপ বিল' যা এর ক্ষমতা হ্রাস করবে যোগাযোগ ক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি (সিসিডিপি)।
পিটার ওয়াগেট বলেছেন, "আমি ২০ বছর ধরে বায়োমেট্রিক্স নিয়ে কাজ করছি, এবং এটি এমন একটি টিপিং পয়েন্টে পৌঁছেছে যেখানে লোকেরা কোথায় রয়েছে এবং তারা কী করছে তা বোঝা অসম্ভব হতে চলেছে। সবকিছু মনিটরিং করা হবে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি ইতিমধ্যে সত্য তবে বায়োমেট্রিক্স পরবর্তী কোথায় যায় তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে।
'''''উদাহরণ'''''
সুইডেনে ১৯৭৫ সালে বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক গবেষণার উদ্দেশ্যে জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছেন। ফাংশন বা মিশন ক্রিপের ফলে সম্প্রতি এই রক্তের নমুনাগুলি ২০০৩ সালে একজন খুনির দোষী সাব্যস্ত করার জন্য এবং ২০০৪ সালে থাইল্যান্ডের সুনামি বিপর্যয়ের শিকারদের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সমস্ত ২৭ ইইউ দেশ সমস্ত ইইউ পুলিশ ডাটাবেসে জেনেটিক তথ্য, আঙুলের ছাপ এবং গাড়ি নিবন্ধকরণ তথ্যে অবাধ অ্যাক্সেস করতে সম্মত হয়েছে? নিউজিল্যান্ডে নবজাতকের রক্তের স্পট নমুনা এবং সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং এই তথ্য পুলিশ দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কেবল শেষ উপায় হিসাবে বা পিতামাতার সম্মতিতে ।
==== এরিয়াল ====
আকাশ নজরদারি এক ধরনের নজরদারি যা সাধারণত কম্পিউটারাইজড বায়বীয় ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত হয়। নজরদারির এই ফর্মটি নিজস্ব সমস্যা এবং সীমানা নিয়ে আসে যা প্রায়শই অতিক্রম করা হয়। নতুন প্রযুক্তি ড্রোনের মতো ডিভাইস তৈরি করছে, একটি আকাশ নজরদারি ইউনিট যা নিজেরাই কাজ করে এবং দূর থেকে মালিকের কাছে নজরদারি চিত্র প্রেরণ করে। এই ডিভাইসগুলি ব্যবহারের মূল সমস্যাটি হ'ল গোপনীয়তার আক্রমণ, বিশেষত যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স ছাড়াই অনেকগুলি ড্রোন কেনা এবং ব্যবহার করা যায়। ২০ কেজি ওজনের কম ওজনের ড্রোনগুলির জন্য বিশেষ পারমিটের প্রয়োজন হয় না,[ অর্থ যে কেউ এই রেকর্ডিং ডিভাইসগুলি যার উপর ইচ্ছা 'গুপ্তচরবৃত্তি' করতে ব্যবহার করতে পারে। যাঁদের কাছে ড্রোন রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই ব্যস্ত এলাকার ১৫০ মিটার এবং কোনও ব্যক্তির ৫০ মিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো এড়ানো উচিত, তবে এই নিয়মটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না।
মেশিনগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি নতুন রূপ গ্রহণ করায় অনেকে ড্রোন থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি তাদের আশেপাশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময় মুখের স্বীকৃতি ব্যবহার করতে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধি অনুসরণ এবং নথিভুক্ত করার ক্ষমতা ধারণ করতে তাদের কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করতে সক্ষম। ড্রোনগুলিতে ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশনের বিধিনিষেধ নেই, অন্যথায় সিসিটিভি হিসাবে পরিচিত, যা জনসমক্ষে কোনও ব্যক্তির গতিবিধি রেকর্ড করতে সক্ষম হলেও ব্যক্তি অনুসরণ করতে পারে না বা বায়বীয় দৃশ্য থেকে রেকর্ড করতে পারে না। কম্পিউটার ভিশন, ফেস রিকগনিশন, অবজেক্ট রিকগনিশন এবং অন্যান্য ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সহ ড্রোনগুলি দ্রুত নজরদারির অন্যতম অনুপ্রবেশকারী ফর্ম হয়ে উঠছে। ড্রোনগুলি তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং কোনও অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও বিষয় অনুসরণ করা এবং চিত্রগ্রহণের মতো মানুষের মতো উদ্দেশ্যগুলি সম্পূর্ণ করতে পারে।
জনসাধারণের সুরক্ষা এবং তাদের নিজের বাড়িতে গোপনীয়তার অধিকারের জন্য এবং সুরক্ষা সতর্কতার জন্যও বিমান নজরদারিতে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, কারণ এফএএ নিয়ম অনুসারে ৪০০ ফুটের উপরে বা বিমানবন্দরের দুই মাইলের মধ্যে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০১৫ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি আবাসন বিল চালু করা হয়েছিল যাতে বিমান নজরদারির ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা যায়। ''''প্রোটেকটিং ইন্ডিভিজুয়ালস ফ্রম মাস এরিয়াল সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট'''<nowiki/>' নামের ওই বিলটিতে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে নজরদারি চালাতে চাইলে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের এখন পরোয়ানা জারি করতে হবে। ফ্রেমের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদেরও শনাক্ত করতে পারছেন না তারা।
যেহেতু ড্রোনগুলি নজরদারির আরও সাম্প্রতিক রূপ, তাই অনেক লোক প্রযুক্তিটির বিপদ বা সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত নয়, তবে এমন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে যারা একটি বিমান নজরদারি ব্যবস্থার মালিকানার জন্য বিধিবিধান এবং নিয়ম বাড়াতে চান। ২০১৪ সালে পারমাণবিক সাবমেরিন স্থাপনার কাছে ড্রোন ব্যবহারের দায়ে রবার্ট নোলসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাকে ৪ হাজার ৩০০ পাউন্ড পরিশোধের নির্দেশ দেয়। বিবিসির খবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোথায় কেউ ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে আর পারবে না, কারণ ক্রিসমাস ও জন্মদিনের উপহার হিসেবে অনেককেই গ্রহণ করা হচ্ছে। ড্রোনগুলি নজরদারি প্রযুক্তির নতুন 'এটি' খেলনা, তবে নির্দেশিকাগুলি উপেক্ষা করার পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে, ম্যানচেস্টারে অপব্যবহারের আরেকটি মামলা রয়েছে। সেখানে টটেনহ্যাম হটস্পারের সাথে ম্যানচেস্টার সিটির হোম ম্যাচের উপর ড্রোন উড়ানোর জন্য এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ড্রোনগুলি অনেকের জন্য মজাদার, নিরীহ খেলনা হিসাবে দেখা হয়, তবে বিমান নজরদারির এই অত্যন্ত উন্নত রূপটি গোপনীয়তা এবং নামহীনতার অধিকারের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক এবং নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদি সিসিটিভিকে গোপনীয়তার বিষয়ে খুব বেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সতর্ক করা হয়, তবে তুলনামূলকভাবে ড্রোনটি আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বৃহত্তর সুযোগ সহ অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।
==== ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং ====
ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং হ'ল ডেটা নজরদারি, একটি প্যাটার্ন ভিত্তিক বৈকল্পিক ব্যবহার করে এবং পৃথক ক্রিয়াকলাপ যাচাই করার জন্য ডেটা মাইনগুলির মাধ্যমে অনুসন্ধান করা। ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং একটি প্রোফাইল তৈরি করতে এবং ব্যক্তিদের ইন্টারনেট কার্যকলাপের নিদর্শনগুলি খুঁজে পেতে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এইভাবে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় আচরণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হতে পারে। সফটওয়্যারের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি অনলাইন লেনদেনের জরিপ এবং উল্লেখ করার সাথে সাথে আরও বিশদ বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতির জন্য তৈরি করে।
ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য বেসরকারী সংস্থাগুলি বিভিন্ন লোকের ইন্টারনেট ক্রিয়াকলাপ অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। এটি ব্যক্তির জন্য একটি ভোক্তা প্রোফাইল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ এই সংস্থাগুলিকে "তৃতীয় পক্ষ" বলে অভিহিত করে, কারণ তারা তাদের গ্রাহকদের লেনদেনকে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপায় হিসাবে সরাসরি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক তথ্যের সাথে ন্যস্ত করা হয়। কর্পোরেট খেলোয়াড়দের অন্য সেটের জন্য, তবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রয় তাদের ব্যবসা, কেবল পণ্য ও পরিষেবাদির বিনিময়ের পণ্য নয়।
সংস্থাগুলির দ্বারা ডেটা ট্র্যাকিং এবং নোট করা লক্ষ্যবস্তুর গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। সরকার যখন এই তথ্য পায় তখন অতিরিক্ত গোপনীয়তার সমস্যা দেখা দেয়, যা বর্তমানে কোনও আইনি পরিণতি ছাড়াই করতে পারে। এটি প্রোফাইল এবং প্রোফাইলার, বা শিকার এবং শিকারীর মধ্যে একটি ক্ষমতার লড়াই তৈরি করে। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাকিংয়ের সাথে পাসওয়ার্ড এবং এর বৈধতা বা এমনকি প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি অপ্রচলিত বলে মনে হয় যে একজনকে তাদের নিজস্ব ইমেল প্রবেশ করার জন্য একটি পাসকোড প্রয়োজন, যখন কোনও ডেটা মাইনারের কোনও ব্যক্তির সম্পূর্ণ চিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় এমন কোনও কিছুতে অ্যাক্সেস রয়েছে। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে জিমেইলের মতো সাইটে অ্যাক্সেস করতে অসুবিধা বিদ্রূপাত্মক- একটি মায়ের প্রথম নাম বা শৈশব পোষা প্রাণী অবশ্যই মনে রাখতে হবে যখন একটি পৃথক সংস্থা বা প্রোফাইলার কারও পরিচয় সংগ্রহ করার জন্য তাদের অজ্ঞতা উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় গোয়েন্দা এবং আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের দ্বারা কৌশল হিসাবে ডেটা মাইনিং ব্যবহার করা হয়েছে। এটি চালু করা হয়েছিল যখন তদন্তগুলি সন্ত্রাসীদের আচরণ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথেষ্ট প্রকাশ করে না যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমাজে মিশে যায়। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত, বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রতিরোধের জন্য, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে বিশাল এবং বেশিরভাগ অকেজো লেনদেনমূলক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ শুরু করেছে।
ডেটা প্রোফাইলিং এবং মাইনিং নজরদারির জগতে খালি চোখে যা দেখতে পারে তার পৃষ্ঠের নিচে খনন করতে এবং ব্যানাল ক্রিয়াকলাপকে ব্যবহারকারীর প্যাটার্নে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থহীন হিসাবে বিবেচিত ডেটা ব্যবহার করা এমন প্রোফাইলারের পক্ষে অত্যাবশ্যক হতে পারে যারা অনলাইন লেনদেন থেকে তাদের ডেটা তৈরি করতে পারে এবং যেমন কোনও ব্যক্তির একটি পরিষ্কার চিত্র তৈরি করতে পারে। এটি অনুশীলনের যথার্থতা নয় যা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে নৈতিক অসদাচরণ যা কৌশলটির অংশ। ব্যক্তিগত তথ্য বড় কোম্পানিগুলির জন্য একটি গরম পণ্য, তবে ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং সাধারণত একজন সাধারণ ব্যক্তির দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কেবল অনুসন্ধান করা হয় এবং এই ধরনের নজরদারি তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ।
==== হিউম্যান অপারেটিভ ====
স্পাই থ্রিলারে আমরা যেমন দেখি এজেন্টরা কি নজরদারির হাতিয়ার? এটা যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে হ্যাঁ তারা আছে। <nowiki>https://www.mi{{subst:#invoke:ConvertDigit|main|5}}.gov.uk</nowiki> এমআই৫ এর ওয়েবসাইট অনুসারে "গোপন মানব গোয়েন্দা সূত্র (সিএইচআইএস), বা "এজেন্ট", এমন লোক যারা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারে যা আমাদের তদন্তে সহায়তা করতে পারে"। এই এজেন্টগুলি প্রায়শই নাটকের উদ্দেশ্যে কাল্পনিক কাজগুলিতে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়, তবে এই জাতীয় গল্পগুলির ভিত্তি একই থাকে।
সম্ভবত বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত সুরক্ষা সংস্থা হ'ল সিআইএ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা বাহিনীর একটি শাখা। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা কার্যক্রম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সরকার-ব্যাপী ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে,[ যখন যুক্তরাজ্যে, এমআই ৬ এবং এমআই ৫ ১৯০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখন তারা সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো নামে পরিচিত ছিল। এই নিরাপত্তা পরিষেবা ব্যবহারের সবচেয়ে সক্রিয় সময়কাল, এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রতিলিপি যুগ ঠান্ডা যুদ্ধ হতে হবে। এই সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য বিদেশী সরকারের নজরদারি অপরিহার্য ছিল।
এই সব বিদেশী স্বার্থ সঙ্গে কাজ অপারেশন সম্পর্কিত, কিন্তু মানব অপারেটর মাধ্যমে গার্হস্থ্য জনসংখ্যার নজরদারি জন্য সেট আপ করা এজেন্সি আছে। সবচেয়ে বড় হোমল্যান্ড কাউন্টার-টেররিজম সংস্থা হ'ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস রয়েছে যেখানে এজেন্টদের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ঝুঁকির জন্য জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মানব অপারেটররা তাদের নিজস্ব নজরদারি প্রযুক্তি, সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। যুক্তরাজ্যে এজেন্টদের ভূমিকা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, বিবিসির রেডিও ৪ এর টুডে প্রোগ্রাম সম্প্রতি এমআই ৫ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বেনামী এজেন্টের সাক্ষাত্কার নিয়েছে।
==== ডি.এন.এ. প্রোফাইলিং ====
বেশ কয়েকটি দেশ নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরিষেবাগুলি থেকে লাভের আশায় প্রধানত ফার্মাসিউটিকাল সংস্থাগুলি এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ দ্বারা পরিচালিত চিকিত্সা গবেষণার জন্য দেশব্যাপী ডিএনএ ডাটাবেস তৈরি করছে। চিকিৎসা গবেষণা সুইডেনে ড্রাইভার যার মাধ্যমে ১৯৭৫ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছে (পিকেইউলাবরেটরিয়েট ২০০৮)। নমুনাটি জিনগত রোগ ফিনাইল-কেটোন-ইউরিয়া (পিকেইউ) পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ডাটাবেসে ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণার জন্যও সংরক্ষণ করা হয়। ডাটাবেসে কোনও ডিএনএ প্রোফাইল নেই, তবে রক্তের নমুনাগুলি সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। প্রতিটি নমুনার সাথে পরিচয় তথ্যও সরবরাহ করা হয়। ডাটাবেসটি অপরাধ তদন্তে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নয়। যাইহোক, আনা লিন্ধ (সুইডিশ পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব) হত্যার হাই-প্রোফাইল মামলায় পুলিশ ডাটাবেসে অস্থায়ী অ্যাক্সেস পেয়েছিল যা হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
==== স্যাটেলাইট চিত্রাবলী ====
২৫ শে মে, ২০০ ২০০৭-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জন মাইকেল ম্যাককনেল অনুমোদিত জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন অফিস এর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ স্থানীয়, রাজ্য এবং দেশীয় ফেডারেল এজেন্সিগুলিকে সামরিক গোয়েন্দা পুনরুদ্ধার উপগ্রহ এবং পুনরুদ্ধার বিমান সেন্সর থেকে চিত্রাবলী অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেওয়ার জন্য যা এখন মার্কিন নাগরিকদের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যাটেলাইট এবং বিমান সেন্সরগুলি মেঘের আচ্ছাদন ভেদ করতে, রাসায়নিক চিহ্নগুলি সনাক্ত করতে এবং বিল্ডিং এবং "ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার" এর বস্তুগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম হবে এবং গুগল আর্থের মতো প্রোগ্রামগুলির দ্বারা উত্পাদিত স্থির-চিত্রগুলির চেয়ে অনেক বেশি রেজোলিউশনে রিয়েল-টাইম ভিডিও সরবরাহ করবে।
==== সনাক্তকরণ এবং শংসাপত্র ====
সনাক্তকরণের সহজতম ফর্মগুলির মধ্যে একটি হ'ল শংসাপত্র বহন। কিছু জাতির সনাক্তকরণে সহায়তা করার জন্য একটি পরিচয় নথি সিস্টেম রয়েছে, অন্যরা এটি বিবেচনা করছে তবে জনসাধারণের বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যান্য নথি, যেমন পাসপোর্ট, ড্রাইভারের লাইসেন্স, লাইব্রেরি কার্ড, ব্যাংকিং বা ক্রেডিট কার্ডগুলিও পরিচয় যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। যদি পরিচয়পত্রের ফর্মটি "মেশিন-পঠনযোগ্য" হয়, সাধারণত একটি এনকোডযুক্ত চৌম্বকীয় স্ট্রাইপ বা সনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার করে, তবে এটি বিষয়টির সনাক্তকারী ডেটা সমর্থন করে। এই ক্ষেত্রে এটি একটি বৈদ্যুতিন ট্রেইল তৈরি করতে পারে যখন এটি চেক করা হয় এবং স্ক্যান করা হয়, যা প্রোফাইলিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, উপরে উল্লিখিত হিসাবে।
==== ভূতাত্ত্বিক ডিভাইস ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পুলিশ কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য লোকের গাড়িতে গোপন ট্র্যাকিং ডিভাইস স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে তারা আদালতে যুক্তি দেখাচ্ছিল যে তাদের এটি করার অধিকার রয়েছে। বেশ কয়েকটি শহর পাইলট প্রকল্প চালাচ্ছে যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে জিপিএস ডিভাইস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।
==== মানব মাইক্রোচিপ ====
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ এবং সংশয়বাদীরা একটি সম্ভাব্য নজরদারি পদ্ধতির অত্যন্ত সমালোচনা করেছেন: নাগরিকদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে মাইক্রো-চিপের ব্যবহার। যদিও অনেক বাণিজ্যিক পণ্য ইতিমধ্যে চুরি প্রতিরোধের জন্য মাইক্রো-চিপ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, এই চিপগুলি সম্ভাব্যভাবে অন্যান্য উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন এটি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে নতুন আমেরিকান পাসপোর্টগুলি একটি আরএফআইডি চিপ দিয়ে জারি করা হয় যা ব্যক্তিগত তথ্য ধারণ করে। এই চিপগুলি দশ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। তবে একই ধরনের চিপ এরই মধ্যে মানুষের মধ্যেও বসানো হয়েছে। কয়েকটি ক্লাব এবং ডিস্কোথেক নিয়মিত গ্রাহকদের বাহুতে মাইক্রো-চিপ ইনজেকশনের মাধ্যমে এই ব্যবহারকে নেতৃত্ব দিয়েছে যাতে তাদের সহজে অ্যাক্সেস এবং একটি বৈদ্যুতিন ট্যাব সরবরাহ করা যায় যা অর্থ বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা দূর করে। হাস্যকরভাবে, এটি অনুসরণ করে যে নজরদারি কেবল নিয়ন্ত্রণের একটি অন্তর্নিহিত এবং গোপন ফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে না, তবে সুস্পষ্ট ৩৬০ ° প্রতিক্রিয়া প্রদানের উপায় হিসাবে ব্যবসায়িক চেনাশোনাগুলিতে গৃহীত হয়েছে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সমগ্র সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট নিরীক্ষণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন জড়িত। যাইহোক, এই প্রক্রিয়াটি একটি সংগঠনের মধ্যে মাইক্রো-রাজনীতির জন্ম দিতে পারে এবং নিন্দা এবং ব্ল্যাকমেইলকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে এটি শৃঙ্খলার নিখুঁত রূপ যে এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ক্ষমতার বিষয়টিকে স্বাগত বোধ করে এবং প্রকাশ্যে শৃঙ্খলাকে আমন্ত্রণ জানায়। একইভাবে, সংশয়বাদীরা ভয় পায় যে আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিটি ব্যক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করে এবং এই বিবরণগুলিকে বাইরের শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন করে স্বচ্ছ মানব বা "কাচের মানুষ" তৈরি করছি।
==== ডাক সেবা ====
টেক্সট মেসেজিং, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং ইমেলের উত্থানের সাথে সাথে এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে ডাক চিঠিটি তরুণ প্রজন্মের জন্য অপ্রচলিত হয়ে উঠছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করেছিল যে জাতীয় সাক্ষরতা ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা গেছে যে ছয়জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে মাত্র একজন এখনও চিঠি লেখে এবং তারা বিশ্বাস করে যে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্বে বাস করা চিঠি লেখার পতনের পিছনে কারণ।
আমাদের মধ্যে যারা চিঠি পাঠান এবং গ্রহণ করি এবং মহামান্যের সন্তুষ্টিতে নেই এমনকি যদি এটি কেবল অদ্ভুত ক্রিসমাস বা ধন্যবাদ কার্ড হয় তবে আমরা সর্বদা ধরে নিই যে আমাদের তথ্য ব্যক্তিগত; তবে যুক্তরাজ্য ডাক এবং যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকারের সাথে একটি ওঠানামা সম্পর্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
মিডিয়া ব্লগ ইনফর্ম (ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অফ রেসপন্সিবল মিডিয়া ফোরাম) ১৭ থেকে ২০ শতকের চিঠিগুলি কেবল একটি পরোয়ানার অনুমোদনের মাধ্যমে ট্রানজিটে খোলা যেতে পারে, তবে পরোয়ানার ফর্মটি সরকারী ক্ষমতার বিবেচনার ভিত্তিতে হবে, তবে তারা প্রকাশ্যে পরামর্শ দেয়নি যে বাধা দেওয়া হচ্ছে। উপরন্তু, কোন কেলেঙ্কারি গোপনে মোকাবেলা করা হত।
এই অনুশীলনের নীরবতা ১৯ ১৯৭৯৯ সাল পর্যন্ত রয়ে গিয়েছিল যখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে স্থানীয় পুলিশ একটি প্রাচীন ব্যবসায়ীর টেলিফোন রেকর্ড করছিল এবং যখন যুক্তরাজ্যের আদালত আদালত খারিজ করে দেয়, তখন বাদী মামলাটি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে নিয়ে যায় যেখানে এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে যুক্তরাজ্য সরকার মানবাধিকারের ইউরোপীয় কনভেনশনের ৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্যের একজন ব্যক্তিকে শান্ত জীবনের অধিকার দেয়া। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একমাত্র লুপ হোল।
এটি আদালত কর্তৃক আদেশিত যোগাযোগ আইন ১৯৮৫ এর ইন্টারসেপশন তৈরির দিকে পরিচালিত করে এবং পরে তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ২০০০ এর নিয়ন্ত্রণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। আরও দেখুন: আইন ও বিধিনিষেধ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক আইনের গোপনীয়তা কেবল ১৯ শতকে ঘটেছিল। জন ডারহাম পিটারস বলেছেন যে স্ট্যাম্প, সিল করা খাম এবং পোস্ট বাক্সের আগে চিঠিগুলি খোলা, পড়া এবং এমনকি স্থানীয় প্রেসে প্রকাশিত হতে পারে।
গ্রাহাম মেইকেল এবং শেরম্যান ইয়ং চিঠি লেখার ক্ষেত্রে বিকশিত গোপনীয়তার সামঞ্জস্যতা এবং আজকের সোশ্যাল মিডিয়া আউটলেটগুলিতে কোনটি ব্যক্তিগত এবং কোনটি নয় তা সংজ্ঞায়িত করার কোনও আহ্বান জানানো হয়নি। তারা বলে, 'কাউকে এভাবে বার্তা পাঠানো অস্বাভাবিক কিছু নয়, কেবল তখনই আপনার পৃষ্ঠার 'প্রাচীর' অঞ্চলে লিখে তাদের উত্তর দেওয়া অস্বাভাবিক নয়, যাতে কথোপকথনটি আরও বিস্তৃত শ্রোতাদের কাছে উন্মুক্ত হয়, প্রশ্নে প্রাচীরে কী গোপনীয়তা সেটিংস প্রয়োগ করা হয় তার উপর নির্ভর করে।
==== অ্যাপ্লিকেশন ====
নজরদারি প্রযুক্তির একটি বিশেষ রূপ হ'ল গুগল প্লে এবং আইটিউনসের মতো অ্যাপ্লিকেশন স্টোরগুলির মাধ্যমে ভোক্তাদের অ্যাক্সেসযোগ্য। এই প্রযুক্তিটি বাজারজাত করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে; কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের ইন্টারনেট ব্যবহার ট্র্যাক করার জন্য সংস্থাগুলির জন্য, তাদের ফোনের মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করার জন্য পিতামাতার কাছে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং স্বামী বা স্ত্রীর ক্রিয়াকলাপ তদন্তের উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়। অবশ্যই, বেসিক সফটওয়্যারটি মূলত একই এবং ইন্টারনেট সংযোগ সহ যে কোনও কম্পিউটার বা ফোনে ডাউনলোডযোগ্য। এই বিভাগটি বিশেষত এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি এবং সেগুলি কীভাবে কাজ করে তা দেখবে।
একটি আকর্ষণীয় সূচনা পয়েন্ট হতে পারে হাফিংটন পোস্ট দ্বারা একটি নিবন্ধ পাঁচটি ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তাদের বাচ্চাদের উপর "গুপ্তচরবৃত্তি" করার জন্য পিতামাতার কাছে বিক্রি করা হয়। এটি এই পণ্যগুলির প্রধান বিক্রয় পয়েন্টগুলি হাইলাইট করে, তাদের বাচ্চারা কী পাঠ্য করে তা দেখার ক্ষমতা থেকে শুরু করে তারা যে গাড়িতে ভ্রমণ করছে তার গতি জানা। এই পণ্যগুলির ওয়েবসাইটগুলি নিজেরাই অনুরূপ পয়েন্টগুলি উল্লেখ করে, পাশাপাশি কর্মচারীদের শিথিলতা এবং প্রতারণামূলক স্বামীদের কথা বলে। শীর্ষ ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির মতে 'এমএসপিআই' হ'ল "বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ব্যবহৃত সেল ফোন ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন", তাই এটি যেভাবে কাজ করে এবং এই বিষয়ে কোম্পানির কী বলার আছে তা দেখা মূল্যবান।
এমস্পাই এর হোমপেজে 'হাউ ইট ওয়ার্কস' শিরোনামে একটি বিভাগ রয়েছে যেখানে তারা বলেছে "আমাদের সফটওয়্যারটি জিপিএস অবস্থান, ওয়েব ইতিহাস, ছবি, ভিডিও, ইমেল, এসএমএস, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, কীস্ট্রোক এবং আরও অনেক কিছু সহ পর্যবেক্ষণ করা ফোনের পটভূমিতে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে কাজ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে - কল পরিচালনা করা, পাঠ্য বার্তা এবং জিপিএস অবস্থানগুলি ট্র্যাক করা, ক্যালেন্ডার এবং ঠিকানা বইগুলি অ্যাক্সেস করা এবং কয়েকটি নাম রাখার জন্য অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রোগ্রামগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। এটি আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈধতার প্রশ্ন থাকতে পারে, কারণ এটি বেসামরিক নজরদারি সফটওয়্যার, তবে তাদের সাইটটি ব্যাখ্যা করে যে "এর ব্যবহার একেবারে আইনী" যতক্ষণ না এটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের, কর্মচারীদের নিরীক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় যারা সচেতন যে তাদের ট্র্যাক করা হচ্ছে, বা ক্রেতার নিজের ফোনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যাইহোক, সফটওয়্যারটি দূরবর্তীভাবে কোনও ডিভাইসে ডাউনলোড করার জন্য উপলব্ধ তাই ব্যবহারকারীদের পক্ষে অবৈধভাবে এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। স্পাই বাবলের মতো অনুরূপ সাইটগুলিতে, বৈধতার প্রশ্নটি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ কারণ এটি অংশীদারের ডিভাইসে ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং অনুমোদনের বিষয়টিকে সম্বোধন করা হয় না। অনলাইনে অনেক নিবন্ধ রয়েছে যা এখানে বর্ণিত আইনী এবং নৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে।
এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলির ব্যবহার বিতর্কিত হতে পারে, তবে দৈনন্দিন নজরদারি প্রযুক্তি হিসাবে সময় বাড়ার সাথে সাথে তারা বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
== নেটওয়ার্কড সংস্কৃতির ক্ষমতার রাজনীতি ==
প্রযুক্তি এবং অন্য সবকিছুর ব্যাপক আবেদন রয়েছে যা ক্ষমতা সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বদা সমালোচিত হওয়া উচিত। একটি নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজ বিশ্বের শক্তিশালী সরকারগুলিকে যে সুবিধাগুলি দেয় তা সমালোচনা করা বা হাইলাইট না করা বোকামি। এমন একটি বিশ্ব যেখানে প্রযুক্তির নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নির্বিঘ্নে দেখার অনুমতি দেয়। কে দেখছে আমাদের? যারা আমাদের দেখছে তাদের কে দেখছে? এই প্রযুক্তিগত যুগে সমালোচনামূলক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী থাকার জন্য আমাদের এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে হবে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী, ল্যারি ডায়মন্ডের 'সর্বদা সংস্কৃতিতে' একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে এটি প্রযুক্তি এবং তথ্যে সহজে অ্যাক্সেসের অনুমতি দিয়েছে। ডায়মন্ড বিশ্বাস করেন যে সস্তা ভিডিও ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সক্ষম মোবাইল ফোন যা ভিডিও রেকর্ড করতে পারে তা 'ক্ষমতা' বেসামরিক নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে, জনগণকে নিজেরাই সার্ভেলান্ট হয়ে উঠতে এবং নজরদারির ঐতিহ্যবাহী শ্রেণিবিন্যাসকে সমতল করে তুলেছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমরা আমাদের হাতে থাকা ডিভাইসগুলি আমাদের সরকারী এবং কর্পোরেট কর্মকর্তাদের ক্রিয়াকলাপ নথিভুক্ত করার অনুমতি দেয়, তাই বেসামরিক নাগরিকদের দিনের যে কোনও সময় শক্তিশালী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার ক্ষমতা দেয়; নিচ থেকে কর্তৃপক্ষকে দেখার ক্ষমতা। এমন একটি সমাজের ধারণা যা চতুর্থ এস্টেটে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং আমাদের অ্যাক্সেস এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতার প্রতীকগুলিকে জবাবদিহি করার ক্ষমতা রাখে তা ৮০ এর দশকের শো সিওপিএস-এ দেখা যায়। এমন একটি শো যা আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপকে প্রকাশ করেছিল কারণ তারা বল প্রয়োগ করে এবং কখনও কখনও নৃশংস কৌশল ব্যবহার করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছিল। শোটি বৈপ্লবিক ছিল যে এটি ক্ষমতার এজেন্টদের রেখেছিল যারা তাদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য কেউ ছাড়াই অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছিল এবং হঠাৎ সাধারণ জনগণের সমালোচনা করার জন্য আলোতে আনা হয়েছিল।
প্রাক্তন সিআইএ কর্মী '''এডওয়ার্ড স্নোডেন''' অবশ্য দেখিয়েছেন যে কীভাবে কখনও কখনও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক নজরদারি ঘটে যখন আমরা জানি না যে এটি ঘটছে বা এমনকি বিদ্যমান রয়েছে। যখন জনগণ অসচেতন থাকায় কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। সেই সময় যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আইনের ঢিবি যা কেউ পড়ে না, ক্ষমতার এজেন্টদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলিতে অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়। এনএসএ হাজার হাজার নিরহংকারী আমেরিকানদের টেলিফোন রেকর্ড সংগ্রহ করছিল। একটি প্রক্রিয়া যা টেলিযোগাযোগ সংস্থা ভেরাইজনকে দৈনিক ভিত্তিতে টেলিফোন ডেটা হস্তান্তর করার জন্য একটি গোপন আদালতের আদেশ দ্বারা সক্ষম হয়েছিল। এনএসএ প্রিজম নামে একটি নজরদারি প্রোগ্রামে প্রতিটি বড় ইন্টারনেট সংস্থার সার্ভারে ট্যাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। 'প্রিজম' কর্মসূচি থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্যও ব্রিটেনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল। এডওয়ার্ড স্নোডেন, যিনি এই তথ্য ফাঁসের জন্য দায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সম্পত্তি চুরির জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং নির্বাসনে রয়েছেন এবং তবুও তিনি যা করেছেন তা হল ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা। [৯]
এডওয়ার্ড স্নোডেন এবং উইকিলিকসের মতো সংস্থা গণ নজরদারির ব্যাপকতার চিত্র তুলে ধরেছে। স্নোডেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডর দূতাবাসে পালিয়ে যেতে হয়েছিল যাতে তিনি দাবি করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্বাভাবিক উপস্থাপনার প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা যায়। অ্যাক্সেসযোগ্যতার দিক থেকে অনলাইনে সংগঠিত করা অনেক সহজ হতে পারে, তবে জনসাধারণ যদি অবিচ্ছিন্ন নজরদারির অধীনে থাকে তবে তর্ক করা কঠিন হয়ে পড়ে যে তারা তাদের ডিভাইস দ্বারা সত্যই ক্ষমতায়িত, যদি এগুলি তাদের গোপনীয়তার এই জাতীয় আক্রমণকে অনুমতি দেয়।
প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল একটি সমাজে ক্ষমতাসীনরা কীভাবে নজরদারি বৈশিষ্ট্যগুলির অপব্যবহার করতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ বিশ্বের ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারি। গল্পটি ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল যখন তৎকালীন নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রাজকীয় সম্পাদক ক্লাইভ গুডম্যান এবং একজন বেসরকারী তদন্তকারী গ্লেন মুলকায়ারকে রাজকীয় সহযোগীদের জন্য রেখে যাওয়া ভয়েসমেইল বার্তাগুলিতে বাধা দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয় এবং আরও হ্যাকিংয়ের গল্প সামনে আসে। তবে এই কেলেঙ্কারির জটিল রাজনৈতিক মুহূর্ত আসে যখন গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায় যে সংবাদপত্রটি খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মিলি ডাউলারের মোবাইল ফোন হ্যাক করেছে। অভিযোগ, টার্গেটদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, মৃত ব্রিটিশ সৈন্যদের আত্মীয় এবং লন্ডন বোমা হামলায় আটকে পড়া লোকজন রয়েছেন।
নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির সাথে একটি সমাজে, অবস্তুগততা সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত তথ্য ডিজিটাল আকারে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেটের কারণে সময় ও স্থানের দূরত্বও দূর হয়ে যায়। আরও কি, সমতা নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত নাগরিক অনলাইনে তাদের মতামত পড়তে এবং পোস্ট করতে পারে। ক্ষমতার রাজনীতির জন্য, ইন্টারনেটের উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে সর্বাধিক পরিমাণে সমর্থন অর্জনের জন্য সময়মতো রাজনৈতিক তথ্য প্রেরণ করতে সহায়তা করতে পারে। নেটওয়ার্কযুক্ত সংবাদপত্র, সম্প্রচার, টেলিভিশন ইত্যাদি জনসাধারণকে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সরবরাহ করতে পারে, যাতে জনমতের জন্য সঠিক অভিযোজন আকার দেওয়া যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতো দেশে, এটি অনলাইনে ব্যাপক সেন্সরশিপের দিকে পরিচালিত করেছে। চীনের গ্রেট ফায়ারওয়াল[ এর অর্থ হ'ল ইন্টারনেট কেবল সরকার অনুমোদিত সামগ্রী অ্যাক্সেস করে এবং অনুসন্ধানগুলি নির্দিষ্ট শব্দের জন্য ফিল্টার করা হয় যার ফলে ফৌজদারি অভিযোগ এবং কারাদণ্ড হতে পারে। শিল্পী এবং সমালোচক পিআরসি আই ওয়েইওয়েই চীনের মতো আচরণের জন্য এনএসএর নজরদারি কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন এবং সরকারী নজরদারিতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
== নৈতিক উদ্বেগ ==
নজরদারি কখনই বিষয়টির গোপনীয়তার যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশায় অনুপ্রবেশ করা উচিত নয়। যদিও বেসরকারী সুরক্ষা এবং নজরদারি অপারেটিভরা অনুসন্ধান এবং জব্দ সুরক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক উদ্বেগের সাথে পুলিশ অফিসার নয়, যদি অযৌক্তিক উপায়ে কোনও বিষয়ের অধিকার লঙ্ঘন হয় তবে সম্ভবত নাগরিক দায়বদ্ধতা থাকবে।
এটি একটি পরিচিত সত্য যে উদাহরণস্বরূপ ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করার সময় - এমন একটি ব্যবহার যা দৈনন্দিন ভিত্তিতে বৃহদায়তন হতে থাকে - লোকেরা শর্তাদি এবং শর্তাদি না পড়েই সম্মত হয়। অ্যাপ্লিকেশনগুলি তখন কেবল ব্যবহারকারীদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে আকারের ডেটা ব্যাংক সংগ্রহ করে না, তবে প্রতিষ্ঠানগুলি (সরকারের মতো) নিজেরাই প্রোফাইল এবং কথোপকথন (ব্যবহারকারীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়) থেকে ব্যক্তিগত ডেটা অ্যাক্সেস করে, সুরক্ষার জন্য বলা হয় এমন বিষয়গুলির জন্য এগুলি ফিল্টার করে। এই ঘটনাগুলির উপর সুনির্দিষ্ট তথ্য অর্জন করা কঠিন এবং যদিও, জনগণকে যা জ্ঞান দেওয়া হয় তা থেকে, প্রতিটি সরকার সবকিছু নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না, যখন এটি ঘটে তখন এটি নজরদারির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এই ধরণের পরিস্থিতিতে, এটি খুব বিতর্কিত যে সম্প্রদায়ের সর্বোত্তম স্বার্থে সুরক্ষার কারণে নজরদারির 'ইতিবাচক' ব্যবহার হতে পারে কিনা, বা এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণের মামলা। সামগ্রিকভাবে ইন্টারনেটের আরও সাধারণ স্তরে উত্থাপিত যুক্তিগুলিও ডিজিটাল শ্রমের একটি ভাল শোষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে কিছু অ্যাপ্লিকেশন এবং পৃষ্ঠাগুলি ব্যবহার করে, উদাহরণস্বরূপ, আমরা ব্যবহারকারীরা নিজের চেয়ে অন্য কাউকে বেশি উপকৃত করছি এবং যেখানে মেকানিক্যাল তুর্কের মতো সিস্টেমে শ্রম অত্যন্ত সস্তা যখন এটি অর্থ প্রদান করে এবং তাই এইচআইটির অনুরোধকারীকে উপকৃত করে। গুগল এবং অ্যামাজনের মতো সিস্টেম / কর্পোরেশনগুলিকে মেগাস্ট্রাকচার, উল্লেখযোগ্য প্রাসঙ্গিকতার সাথে ডেটাব্যাঙ্ক হওয়ার অনুমতি দেয়, যেন একটি ভার্চুয়াল সাম্রাজ্য যা আরও শারীরিক চ্যালেঞ্জ করতে পারে (উদাহরণস্বরূপ তেল কোম্পানি এবং গাড়ি কারখানা)। ডেটাব্যাঙ্কগুলি ব্যবহারকারীর 'সম্মতি' (প্রায়শই অজানা) এর উপর নির্মিত।
যদিও সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল বিশ্ব ছায়াময় পরিস্থিতি, লঙ্ঘন, অপব্যবহার এবং নৈতিক উদ্বেগের পরিস্থিতিগুলির উদাহরণ (মাঝে মাঝে ভাল সংবাদের জন্য তৈরি করে) অনুমতি দেয়, এগুলি এমনকি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মতো এটির একটি নমুনা বিভাগ গ্রহণ করতে দেখা যায়। ফেসবুক একটি জনপ্রিয় হওয়ায়, এটি অতীতে উদ্বেগের বিষয় ছিল, উদাহরণস্বরূপ ব্যবহারকারীরা এমনকি পরবর্তী অবধি এটি সম্পর্কে সচেতন না হয়েই "সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে ব্যাপক আকারের সংবেদনশীল সংক্রামকের পরীক্ষামূলক প্রমাণ" চালাতে সক্ষম হয়েছিল। আবারও ব্যবহারকারীর ভঙ্গুরতা এবং তুলনামূলকভাবে সহজ ম্যানিপুলেশনের অনুমতি দেয় এমন একটি এক্সপোজারকে আন্ডারলাইন করে, এটি এবং এর এক্সটেনশন অ্যাপ্লিকেশনগুলির কাজের মধ্যে নৈতিক সমস্যা রয়েছে।
একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি হতে পারে ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন মেসেঞ্জার সম্পর্কিত নৈতিক উদ্বেগ। মেসেঞ্জারের অনেক ব্যবহারকারীই জানেন না যে তারা অ্যাপটি ব্যবহারে সম্মত হওয়ার সময় ঠিক কতগুলি অনুমতি দিয়েছেন। এটিকে গোপনীয়তার সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত কিনা তা নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে।
আরও কিছু আশ্চর্যজনক অনুমতিগুলির মধ্যে রয়েছে তবে সীমাবদ্ধ নয়: আপনার পরিচিতিগুলি সংশোধন করা, আপনার পাঠ্য বার্তাগুলি পড়া, পাঠ্য বার্তা প্রেরণ, সরাসরি ফোন নম্বরগুলিতে কল করা, কল লগ পড়া, আপনার ইউএসবি স্টোরেজের সামগ্রী পড়া, ছবি এবং ভিডিও তোলা, অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড করা। এই অনুমতিগুলির মধ্যে কয়েকটি অবাক করা বলে মনে হচ্ছে কারণ এই অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত বার্তা এবং ছবি প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এখানে নৈতিক উদ্বেগ হ'ল অনেক ব্যবহারকারী এই অনুমতিগুলি সম্পর্কে অসচেতন এবং এইভাবে একটি ভয় থাকতে পারে যে অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারীরা ডেটা মাইন বা চরম ক্ষেত্রে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এটির সুবিধা নিতে পারে। এখানে ভবিষ্যতের জন্যও উদ্বেগ রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ - "যদি এত লোক ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রযোজ্য অনুমতি গোষ্ঠীগুলি পরীক্ষা না করে থাকে ... ভবিষ্যতে মোবাইল বিকাশকারীরা কতটা সাহসী হবেন?".
ফেসবুক এই নৈতিক আতঙ্কে সাড়া দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, 'বন্ধুকে সেলফি পাঠাতে চাইলে আপনার ফোনের ক্যামেরা অন করে সেই ছবি ধারণ করতে অ্যাপটির অনুমতি নিতে হবে। আপনি যখন অ্যাপটি ব্যবহার করছেন না তখন আমরা আপনার ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন চালু করি না। যাইহোক, এটি সম্পূর্ণরূপে জল্পনা শেষ করেনি, কারণ প্রতিক্রিয়াটিতে সমস্ত অনুমতির ন্যায্যতার সম্পূর্ণ ভাঙ্গন ছিল না। সম্ভবত ফেসবুককেও এখন 'বিগ ব্রাদার' হিসেবেও দেখা হয় এবং অবিশ্বাসের একটা স্তর আছে।
তবে আস্তে আস্তে মানুষ বুঝতে পেরেছে ফেসবুক কীভাবে এই পারমিশন ব্যবহার করে। পরিচিতিগুলির অনুমতির প্রসঙ্গে, আরেকটি ন্যায্যতা হ'ল "অ্যাপ্লিকেশনটির আপনাকে একটি নিশ্চিতকরণ কোডের মাধ্যমে আপনার ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বার্তাগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অনুমতি দেওয়া দরকার"।
এটি অ্যাপটি সম্পর্কে কিছু নৈতিক বিতর্ককে বাতিল করতে পারে তবে সত্যটি হ'ল ফেসবুক আপনার কাছে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনগুলি লক্ষ্য করতে অ্যাপটি ব্যবহার করে, তবে এই ডেটা সংগ্রহের বেশিরভাগই অ্যাপ্লিকেশনটিতে রয়েছে। এটি একটি জটিল প্রশ্ন উত্থাপন করে: আপনার আগ্রহের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন পাঠানো গোপনীয়তার লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা উচিত? মোটামুটিভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়।
নৈতিক সমস্যা, অবহিত সম্মতির নীতি এবং অনলাইনে পরিচয়ের প্রকাশ আসলে একটি বিস্তৃত বিষয়ের অংশ এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবেলা করা যেতে পারে, কোনও ব্যক্তির স্ট্যাটাস আপডেট থেকে শুরু করে রাফায়েল কাপুরো এবং ক্রিস্টোফ পিঙ্গেলের কাগজের মতো একাডেমিক প্রকাশনা পর্যন্ত। মুদ্রণ যুগে সেন্সরশিপ থেকে অনলাইন আস্থা সম্পর্কিত আরও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যন্ত, এটি নজরদারি এবং স্বাধীনতার মধ্যে উত্তেজনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা ডিজিটাল সম্প্রদায়ের সহযোগিতামূলক পরিবেশ এবং পারস্পরিক সমর্থন তৈরিতে মৌলিক নৈতিক চ্যালেঞ্জ গঠন করে।
=== নজরদারির পক্ষে ও বিপক্ষে ===
সমর্থকরা যুক্তি দেন যে নজরদারি তিনটি উপায়ে অপরাধ হ্রাস করতে পারে: প্রতিরোধ, পর্যবেক্ষণ এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে। নজরদারি ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে এবং মোডাস অপারেন্ডি প্রকাশ করে প্রতিরোধ করতে পারে। এর জন্য ন্যূনতম স্তরের আক্রমণাত্মকতা প্রয়োজন। নজরদারি উন্নত পরিস্থিতিগত সচেতনতার মাধ্যমে বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মানব অপারেটরদের একটি কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে, যেমন ভিডিও বিশ্লেষণ। নজরদারি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের জন্য ফুটেজের প্রাপ্যতার মাধ্যমে কোনও ঘটনার পুনর্গঠন এবং অপরাধ প্রমাণ করতে সহায়তা করতে পারে। নজরদারি সংস্থানগুলি দৃশ্যমান হলে বা নজরদারির পরিণতি অনুভব করা গেলে বিষয়গত সুরক্ষাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
* সমর্থকরা কেবল বিশ্বাস করে যে এটি সম্পর্কে কিছুই করা যায় না এবং লোকেরা অবশ্যই কোনও গোপনীয়তা না থাকার অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
* সাধারণ যুক্তিটি হ'ল: "তর্ক লুকানোর কিছু নেই, যদি আপনি কিছু ভুল না করেন তবে আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
অন্যদিকে, অনেক নাগরিক অধিকার এবং গোপনীয়তা, যেমন ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে নাগরিকদের উপর সরকারী নজরদারিতে ক্রমাগত বৃদ্ধির অনুমতি দিয়ে আমরা অত্যন্ত সীমিত বা অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক এবং / অথবা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সহ একটি গণ নজরদারি সমাজে শেষ করব।
* কিছু সমালোচক বলেছেন যে সমর্থকদের দ্বারা করা দাবিটি পড়ার জন্য সংশোধন করা উচিত: "যতক্ষণ না আমরা যা বলি তা করি, ততক্ষণ আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
যদি এমন যুক্তি থাকে যে আমাদের ডিজিটাল নজরদারি সীমাবদ্ধ করা উচিত, তবে এটি সামাজিক মিডিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহারে কাটছাঁট করতে হবে। তবে "আজকের সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের নমুনা হিসাবে আমাদের সম্পর্কে কিছু শিখিয়ে থাকে তবে তা হ'ল ভাগ করে নেওয়ার জন্য মানুষের প্রবণতা গোপনীয়তার জন্য মানুষের প্রবণতাকে ছাড়িয়ে যায়। এটি তখন পরামর্শ দেবে যে মানুষ গোপনীয়তার চেয়ে ভাগ করে নেওয়ার কাজটিকে মূল্য দেয়, সুতরাং নজরদারির বৃদ্ধি এইভাবে আশ্চর্যজনক নয় কারণ দেখার জন্য আরও কিছু উপলব্ধ রয়েছে।
== যুক্তরাজ্যে নজরদারি ==
'''''যুক্তরাজ্যে নজরদারি''' সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, দয়া করে যুক্তরাজ্যে গণ নজরদারি দেখুন''
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অগ্রগামী হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্যে ডিজিটাল আকারে নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ সালে বিল্ড গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) ছিল যা ইংরেজিভাষী দেশগুলির ফাইভ আইজ সহযোগিতার মতো প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বৈদ্যুতিন যোগাযোগে বাধা দেওয়া, যা সময়ের সাথে সাথে অনেক বেড়েছে।
আজকাল, যুক্তরাজ্যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের নজরদারি যুক্তরাজ্যের সংসদে প্রণীত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষত, ব্যক্তিগত বার্তাগুলির সামগ্রীতে অ্যাক্সেস (অর্থাৎ, কোনও ইমেল বা টেলিফোন কলের মতো যোগাযোগের বাধা) অবশ্যই সেক্রেটারি অফ স্টেটের স্বাক্ষরিত ওয়ারেন্ট দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা গোপনীয়তা আইন যুক্তরাজ্যের আইনে প্রযোজ্য। আইনটি বৈদ্যুতিন নজরদারি ব্যবহারের উপর শাসন এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করে।
== জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
* জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর-এ'' গোপনীয়তার অভাব পুরো উপন্যাস জুড়ে একটি প্রধান চলমান থিম। অডিও এবং ভিডিও উভয়ই রেকর্ড করে এমন টেলিস্ক্রিনগুলি চরিত্রগুলির অনেকের বাড়িতে, ব্যবসায় এবং সর্বজনীন স্থানে ইনস্টল করা হয় যাতে তাদের উপর ট্যাব রাখা যায়। বেসরকারী নাগরিকদের তাদের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে রিপোর্ট করতে উত্সাহিত করা হয় এবং থট পুলিশ 'চিন্তার অপরাধ' উন্মোচনের দায়িত্বে থাকা আন্ডারকভার অফিসার। উপন্যাসে নজরদারির থিমগুলি 'বিগ ব্রাদার' শব্দগুচ্ছের ব্যবহার এবং একই নামের টেলিভিশন প্রোগ্রাম সহ একটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রভাব ফেলেছে। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারির সাথে যুক্ত একটি নির্দিষ্ট ভয় রয়েছে এবং ১৯৮৪ এটি খুব ভালভাবে চিত্রিত করে - "অবশ্যই কোনও মুহুর্তে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা জানার কোনও উপায় ছিল না" এর থেকে আরও, অরওয়েল সরকারী ক্ষমতার জন্য ক্ষুধা এবং ড্রাইভের সাথে সহাবস্থান নজরদারির ধারণাটিকে সম্বোধন করেছেন। এটি নজরদারির নেতিবাচক প্রভাবগুলি নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করে, যা আজ আধুনিক সমাজে সিসিটিভি ব্যবহার এবং আজ চালু হওয়া নজরদারির ক্রমবর্ধমান পরিমাণের মাধ্যমে স্পষ্ট। অরওয়েল তার উপন্যাসে বলেছেন, 'ক্ষমতা কোনো মাধ্যম নয়; এটা একটা শেষ। বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেউ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে না; একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য বিপ্লব করে। নিপীড়নের বস্তু হচ্ছে নিপীড়ন। নির্যাতনের বস্তু হচ্ছে নির্যাতন। ক্ষমতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা"। এটি প্রমাণ করে যে নজরদারির ব্যবহার সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য নয়, বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
* ৮০ এর দশকে ''সিওপিএস'' শোটি হিট হয়েছিল কারণ এটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের অপরাধীদের উপর আইনকে শক্তিশালী করার জন্য একাধিকবার বল প্রয়োগের নজরদারি ফুটেজ দেখিয়েছিল। শোটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারের আপাতদৃষ্টিতে অকলুষিত চিত্রটি উন্মোচন করেছিল।
* অনেক 'ফ্লাই-অন-দ্য ওয়াল' রিয়েলিটি টিভি শো একটি সেটিংয়ে ক্যামেরা মাউন্ট করার পদ্ধতি নিয়োগ করে এবং তাদের স্বীকার না করেই বিষয়গুলির ক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করে। এটি বিষয়গুলির জ্ঞান দিয়ে করা যেতে পারে, যেমন ''শোতে আমি একজন সেলিব্রিটি ... গেট মি আউট অফ হিয়ার!'', বা ক্যামেরাটি লুকানো যেতে পারে এবং কেবল পরে ''পাঙ্ক'ডের'' মতো শোতে দেওয়া যেতে পারে। এই দ্বিতীয় ধরনের জনসাধারণের সদস্যদের ব্যবহার করার ঝোঁক থাকে।
* ২০১৩ সালের চলচ্চিত্র ''আন্ডার দ্য স্কিন-এ'' বেশ কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে স্কারলেট জোহানসনের চরিত্র, একজন এলিয়েন মানুষকে অপহরণ করার চেষ্টা করে, একটি ভ্যানে অপরিচিতদের তুলে নিয়ে যায়। এই অপরিচিতদের অভিনেতাদের দ্বারা অভিনয় করা হয়নি, তবে জনসাধারণের সদস্যরা জানতেন না যে তারা ফিচার ফিল্মে অংশ নিতে চলেছেন, ভ্যানে একাধিক লুকানো ক্যামেরা দৃশ্যগুলি রেকর্ড করে
* ''- গগলবক্স'', একটি ইন্টারঅ্যাকশন প্রোগ্রাম যা প্রতিদিনের লোকেরা টিভি দেখছে। দর্শক টিভি দেখতে দেখতে দেখছেন।
* জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পাপারাজ্জি একটি পুনরাবৃত্ত বিষয়। এটি নজরদারির একটি আক্রমণাত্মক রূপ যা মূলত সেলিব্রিটিদের হয়রানি করে যখন তারা প্রহরায় ধরা পড়ে তখন তাদের ফটো এবং ভিডিও পেতে হয়। এটি সমস্যাযুক্ত হয়ে ওঠে কারণ এই ধরণের নজরদারি নৈতিক আচরণবিধির বিরুদ্ধে যায়, কারণ এই ধরণের আক্রমণাত্মক অনুশীলনকে সম্মতি দেওয়া হয়নি।
* ফিলিপ কে ডিকের ছোট গল্প ''দ্য মাইনরিটি রিপোর্ট'' এবং পরবর্তী চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম এবং ফক্স টেলিভিশন সিরিজটি এমন একটি বিশ্বের চিত্রিত করে যেখানে লোকেরা এখনও করেনি এমন অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার হতে পারে। ফিল্ম অভিযোজনে, শহরব্যাপী অপটিক্যাল স্বীকৃতি সিস্টেম এড়াতে নায়ককে অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ চোখের প্রতিস্থাপন শল্য চিকিত্সার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
* ''পার্কস অ্যান্ড রিক্রিয়েশনের'' চূড়ান্ত মরসুমে, লেসলি একটি ডেটা-মাইনিং টেক সংস্থার সাথে লড়াই করে যা পাওনির নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে।
= প্রতিনজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
প্রতিনজরদারি অর্থ "নিচ থেকে দেখা এবং এর ব্যুৎপত্তিটি 'সুর' (ওভার) কে 'সস' দিয়ে প্রতিস্থাপন করা থেকে উদ্ভূত হয়, যার অর্থ 'অধীন' বা 'নিচে' বা 'নিচ থেকে'। সুতরাং শব্দটি নিজেই পরামর্শ দেয় যে প্রতিনজরদারি নজরদারির বিপরীত এবং দেখার কাজটি উভয়ের মধ্যে একমাত্র ধ্রুবক।
স্যুসভিল্যান্স হ'ল ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা কোনও ক্রিয়াকলাপের রেকর্ডিং, সাধারণত ছোট পরিধানযোগ্য বা বহনযোগ্য ব্যক্তিগত প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রতিনজরদারিকে ক্যামেরা (বা অন্যান্য সেন্সর) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা মানুষ বহন করে। সুসভিলেন্স হ'ল বহুবচনের পর্দা (অর্থাত্ "ভিড় পর্দা" বা অ-কর্তৃপক্ষ দ্বারা করা, পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন করা বা অনুরূপ)।
আপনার অভিধান প্রতিনজরদারিকে "দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ চলাকালীন কোনও ব্যক্তির সুবিধাজনক পয়েন্ট থেকে পরিবেশের রেকর্ডিং" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে।
দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনজরদারি ব্যবহারের একটি উদাহরণ - যা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মধ্যে জনপ্রিয় - যেখানে কোনও ব্যক্তি আইন ভঙ্গকারী উচ্চতর কর্তৃপক্ষের ছবি বা রেকর্ডিং তোলেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুলিশ অফিসার পুরোপুরি ইউনিফর্ম পরিহিত কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় তাদের ফোন ব্যবহার করছেন বা আদালতের বিচারক ডাবল হলুদ লাইনে পার্কিং করছেন। এগুলি কেবল ছোটখাটো উদাহরণ হতে পারে তবে আপনি যখন এই লাইনগুলির সাথে কিছু দেখেন তখন এটি আসলে প্রতিনজরদারি ব্যবহার করছে।
== স্টিভ মান ==
সাসভিল্যান্সের ক্ষেত্রে একটি মূল ব্যক্তিত্ব হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এর শব্দটি তৈরি করেছিলেন স্টিভ মান, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। বিশ্বের প্রথম সাইবর্গ বলে দাবি করা তাঁর দ্বারা কয়েক বছর ধরে বাস্তব জীবনে সাসভিলেন্সের অনুশীলন কার্যকর করা হয়েছে। মান গত ৩৫ বছর ধরে তার মাথায় একটি কম্পিউটার সংযুক্ত করে বসবাস করছেন যা তার জীবনকে সাসভিল্যান্স অনুশীলনের একটি প্রমাণ করে তুলেছে। স্টিভ মান একজন সমাজ সংস্কারবাদী হওয়ার আশা করেন যিনি অন্যদের পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রহণে প্ররোচিত করবেন। তার জীবদ্দশায় মান রাস্তায় বিজ্ঞাপন ব্যানার ফিল্টার করতে তার আইট্যাপ ব্যবহার করে আসছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে লোকেরা কী দেখতে পাবে তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং আজকের সমাজগুলি প্রলুব্ধকর শব্দ এবং চিত্রাবলী দ্বারা বোমাবর্ষণ করা হয় যা তাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে পণ্য ও পরিষেবাদি ক্রয় করতে বাধ্য করে।
=== প্রতিনজরদারিের মূল ধারণা ===
মান সাসভিল্যান্সের দুটি প্রধান সংজ্ঞা সরবরাহ করে, যা প্রায় সমতুল্য, তবে প্রতিটি সাসভিল্যান্সের কিছুটা আলাদা দিক ক্যাপচার করে:
# বিপরীত নজরদারি: নিচ থেকে দেখতে;
# ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ক্যাপচার: কার্যকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা একটি কার্যকলাপ রেকর্ডিং। অডিও সাসভিল্যান্সের জন্য ইতিমধ্যে একটি নির্দিষ্ট আইনী নজির রয়েছে, উদাঃ টেলিফোন কথোপকথনের "একপক্ষ" রেকর্ডিং কথোপকথনের পক্ষ নয় এমন ব্যক্তির দ্বারা রেকর্ডিংয়ের চেয়ে বেশি আইনী সুরক্ষা উপভোগ করে। বেশিরভাগ রাজ্যে, অডিও নজরদারি অবৈধ, তবে অডিও সোভিলেন্স বৈধ।
স্টিভ ম্যানের মতে, দুটি ধরণের সাসভিলেন্স রয়েছে: '''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (উদাঃ সংস্থার মধ্যে থেকে উদ্ভূত) এবং '''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (প্রায়শই সংস্থার দ্বারা অবাঞ্ছিত)।
'''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স ("সাবভিল্যান্স") এর উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্রাকের পিছনে ১-৮০০ নম্বর যাতে অন্যান্য চালকরা "আমি কীভাবে চালাচ্ছি" রিপোর্ট করতে পারে;
* একজন অধ্যাপকের তার ছাত্রদের দ্বারা কর্মক্ষমতা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া;
* ব্যবস্থাপনা দ্বারা ক্রেতাদের দেওয়া সন্তোষজনক প্রশ্নাবলী,
যেখানে "সাবভিল্যান্স" নাশকতামূলক, সংগঠনের অভ্যন্তর থেকে নজরদারির উপর "টেবিলগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া" অর্থে, ("নাশকতামূলক" আক্ষরিক অর্থ "নিচ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো", কোনও সংস্থার মধ্যে থেকে গোপনে কাজ করা)।
'''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্সের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীরা ড্রাইভারের (অবৈধ) ড্রাইভিং অভ্যাস নথিভুক্ত করে;
* গ্রাহকরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে অনিরাপদ ফায়ার এক্সিটের ছবি তুলছেন এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের রিপোর্ট করছেন;
* নাগরিকরা পুলিশের নির্মমতার ভিডিও ধারণ করছে এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে অনুলিপি পাঠাচ্ছে।
=== ম্যাকডোনাল্ডস অ্যাটাক ===
২০১২ সালের ১ জুলাই পরিবারের সাথে প্যারিসে ছুটি কাটাতে গিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মচারীদের দ্বারা স্টিভ মান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। হামলার কারণ ছিল মান রেস্তোরাঁর ভিতরের দৃশ্য এবং মাথায় আইট্যাপ প্রযুক্তি লাগানো মেনুতে ভিডিও করছিলেন। যদিও মানের এখানে কোনও পয়েন্ট প্রমাণ করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, তবে তার মামলাটি এখন প্রথম সাইবারনেটিক ঘৃণ্য অপরাধ হিসাবে পরিচিত, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের মধ্যে লাইনগুলি অস্পষ্ট হয়ে গেলে কী ঘটে। নজরদারি ব্যবস্থা দ্বারা চিত্রগ্রহণ করার সময় মানকে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করা হয়েছিল কারণ তিনি এটি আবার চিত্রগ্রহণ করছিলেন। আক্রমণের ফলাফলে, মানের ছয় বছর বয়সী মেয়ে দুটি পদটির শক্তির গতিশীলতা বর্ণনা করে একটি স্কেচ আঁকেন।
ম্যাকডোনাল্ডসের ঘটনাটি ম্যাকভিল্যান্স নামে একটি নতুন শব্দ তৈরি করেছিল যা মান পরে পর্দা করার কাজের প্রতি সমাজের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি চিত্রে রেখেছিলেন।
=== তিনটি দল ===
ইতিহাসের মাধ্যমে সমাজগুলি নজরদারির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি (মান এবং ফেরেনবক)। প্রথম ধরনের রাষ্ট্র জনগণকে একই মাত্রায় রাষ্ট্রের উপর নজরদারি করার অনুমতি দেয়। এই রাজ্যগুলি তাদের জনগণকে রাজনৈতিক আলোচনা এবং সংস্কারকে উত্সাহিত করার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্কিং, রাজনৈতিক ফোরাম এবং তথ্য সংক্রমণের মাধ্যমে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয়। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি উপযুক্ত আদর্শিক কাঠামো সরবরাহ করে যেখানে সাসভিল্যান্সের এই জাতীয় শর্তগুলি গ্রহণযোগ্য। যদিও লোকেরা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করতে স্বাধীন, এই জাতীয় দেশগুলিতে বিদ্যমান আইনগুলি এমন যা সরকার এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির অন্তর্গত সংবেদনশীল তথ্য এবং ডেটা রক্ষা করে। অতএব, যখন ব্যক্তিরা এই জাতীয় তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে বা এটি জনসাধারণের কাছে ফাঁস করার চেষ্টা করছে তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। চেলসি ম্যানিং এবং এডওয়ার্ড স্নোডেন উভয়ই উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তাদের উদ্ঘাটনের মধ্যে ছিল স্নোডেনের জন্য প্রিজম নজরদারি প্রোগ্রাম এবং ম্যানিংয়ের পক্ষ থেকে কোল্যাটারাল মার্ডার নামে পরিচিত একটি ভিডিও। হুইসেলব্লোয়াররা বিতর্কের একটি গরম বিষয় কারণ তারা সরকার কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত প্রযুক্তি এবং শক্তিতে সজ্জিত ব্যক্তি যারা পরিবর্তে তাদের সরঞ্জামগুলি রাষ্ট্রের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তারা একই সঙ্গে নজরদারি ও সাসভিল্যান্স চালাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় প্রকারটি হ'ল রাষ্ট্র যা এমন আইন বজায় রাখে যা জনগণকে এমন কোনও আলোচনায় জড়িত হতে বাধা দেয় যা সম্ভবত রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করতে পারে এবং সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে পারে। যদিও রাষ্ট্রের কাছে ক্যামেরা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে তার নাগরিকদের নিরীক্ষণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে এটি রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। এই ধরনের রাজ্যে এটা খুবই স্বাভাবিক যে কর্পোরেশন বা সরকারী দুর্নীতির ঘটনাগুলি উত্তর কোরিয়া, চীন এবং বিশ্বজুড়ে সামরিক একনায়কতন্ত্রের মতো আচ্ছাদিত হচ্ছে।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে এমন রাজ্যে যেখানে রাষ্ট্রের তদারকির তুলনায় মানুষের আন্ডারসাইট কর্তৃত্ব বেশি। এক্ষেত্রে নাগরিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা পুলিশ ও সরকারী সংস্থাগুলির পাশাপাশি দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের জ্ঞান সরবরাহ করে। এছাড়াও আইন পাস এবং নির্বাচনের জন্য ভোট দেওয়ার জন্য ই-ভোট সিস্টেমের মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়ায় ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। একইভাবে, অ্যামাজন এবং ইবেয়ের মতো খ্যাতি সিস্টেমের বিকাশ ব্যবহারকারীদের ভবিষ্যতের ক্রেতাদের জন্য পণ্য ও পরিষেবাদির রেট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, এক ধরণের গ্রাহক সাসভিল্যান্স সিস্টেম তৈরি করেছে। যদিও এটি ন্যায্য বাণিজ্যকে উত্সাহ দেয় এবং অনলাইন বাজারে গণতান্ত্রিক শর্ত প্রতিষ্ঠা করে, এটি কখনও কখনও বাকপটুতা এবং পেশাদারিত্বের ব্যয়েও কাজ করে। যেহেতু এই সাইটগুলি সমস্ত ধরণের ব্যবহারকারীদের তাদের কেনা কোনও পরিষেবা বা পণ্য থেকে তাদের রেটিং / পর্যালোচনা পোস্ট করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, তাই তাদের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনও বিশেষ দক্ষতা বা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না (রাইনগোল্ড)।
== সমাজ ==
পারফরম্যান্সগুলি দেখায় যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরণের নিয়ম লঙ্ঘন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি নতুন ধরণের ভারসাম্য তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা পাবলিক প্লেসে নজরদারির কাজ হিসাবে ভিডিও করার জনসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা দেখায়। যখন এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ সাধারণ মানুষ, যেমন পারফর্মারদের দ্বারা অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে করা হয়, তখন এটি প্রায়শই গৃহীত হয়। যাইহোক, যখন ডেটা প্রজেক্টরগুলি নজরদারি কর্মকর্তাদের তাদের সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা দেখায়, সেখানে রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা কম। নজরদারির জন্য দায়বদ্ধ সাংগঠনিক কর্মীরা সাধারণত "সাধারণ মানুষ" পারফর্মারদের কাছ থেকে সাসভিলেন্স গ্রহণ করেন না, এমনকি যখন ডেটা প্রদর্শনগুলি প্রকাশ করে যে প্রতিনজরদারিকারীরা কী রেকর্ড করছে।
স্ব-ক্ষমতায়নের সামাজিক দিকটি পরামর্শ দেয় যে সুভিল্যান্স হ'ল মুক্তির কাজ, আমাদের জনসাধারণের অঞ্চল দখল করা এবং নজরদারি খেলার ক্ষেত্রের সমতলকরণ। তবুও, সাসভিল্যান্স এখন যে সর্বব্যাপী সামগ্রিক নজরদারি দেয় তা ব্যক্তির পক্ষ থেকে সম্মতির চূড়ান্ত কাজ। সার্বজনীন নজরদারি / সাসভিল্যান্স শেষ পর্যন্ত কেবল বিদ্যমান প্রভাবশালী ক্ষমতা কাঠামোর লক্ষ্যগুলি পরিবেশন করতে পারে। সার্বজনীন সুর / সাসভিলেন্স পর্যবেক্ষণ এবং সর্বব্যাপী তথ্য সংগ্রহের বিস্তৃত অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়িয়ে শক্তি কাঠামোকে সমর্থন করতে পারে। অথবা উইলিয়াম গিবসন যেমন ফিচার-দৈর্ঘ্যের মোশন পিকচার ফিল্মে মন্তব্য করেছেন সাইবারম্যান (<nowiki>http://wearcam.org/cyberman.htm</nowiki>) "আপনি নজরদারি করছেন। আর সবাই নজরদারির ওপর নজরদারি চালালে নজরদারি নিষ্ক্রিয় হয়ে যেত। এটা অপ্রয়োজনীয় হবে।
এই প্যানোপটিকন, সূক্ষ্মভাবে সাজানো যাতে একজন পর্যবেক্ষক এক নজরে অনেক ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, এছাড়াও প্রত্যেককে আসতে এবং যে কোনও পর্যবেক্ষককে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে। দেখার যন্ত্রটি একসময় এক ধরণের অন্ধকার ঘর ছিল যার মধ্যে ব্যক্তি গুপ্তচরবৃত্তি করেছে; এটি একটি স্বচ্ছ বিল্ডিং হয়ে উঠেছে যার মধ্যে ক্ষমতার প্রয়োগ সামগ্রিকভাবে সমাজের তত্ত্বাবধানে হতে পারে।
মিশেল ফুকো, ''ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ'', ডিসিপ্লিন, পৃ.
এ ধরনের সমাজে তাত্ত্বিকভাবে সবার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক হতে পারে। বিষয়টি অবশ্য কোন পরিস্থিতিতে কতটা নজরদারি এবং সুনজরদারি উপস্থিত রয়েছে তা নিয়ে নয়, তবে এটি কীভাবে নজরদারির ক্ষমতাহীন প্রকৃতি, পশ্চিমা সমাজে এর অপ্রতিরোধ্য উপস্থিতি এবং এই উপস্থিতির প্রতি সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের আত্মতুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে।
সমসাময়িক নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজগুলিতে, ব্যক্তিরা একক সম্প্রদায় বা ওয়ার্কগ্রুপে এম্বেড হওয়ার পরিবর্তে একাধিক, আংশিক সম্প্রদায় এবং কাজের দলগুলির মধ্যে স্যুইচ করে। তবুও, নজরদারি হ'ল বৃহত শ্রেণিবদ্ধ সংস্থাগুলির শিল্প ও শিল্পোত্তর যুগের একটি প্রকাশ যা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের নব্য-প্যানোপটিকনগুলিতে দক্ষতার সাথে প্রযুক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমাজে, মানুষ সম্ভাবনা বেশি সুভিল্যান্স এবং কোভিল্যান্স চাই, কারণ তাদের গ্রাম / সম্প্রদায় বা শ্রেণিবদ্ধ সংস্থার সুরক্ষার অভাব রয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তাদের নজরদারিকারীদের নজরদারি করার অনুমতি দেয়। সমস্ত লোককে একই সাথে মাস্টার এবং দৃষ্টির বিষয় হওয়ার সামর্থ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিধানযোগ্য কম্পিউটিং ডিভাইসগুলি নজরদারির সাধারণত একতরফা সংলাপে একটি নতুন কণ্ঠস্বর সরবরাহ করে। তারা তাদের একাধিক এবং জটিল নেটওয়ার্কগুলি অতিক্রম করার সাথে সাথে মানুষের জন্য একটি স্ব-ক্ষমতায়নের দিকে একটি উপায় প্রস্তাব করে।
== প্রতিনজরদারির রাজনীতি ==
প্রতিনজরদারি বা Sousveillance নিচ থেকে দেখার একটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করে। এর অর্থ দৃষ্টির বিষয়টির পর্যবেক্ষকের চেয়ে বেশি শক্তি রয়েছে। নানা উপায় ও প্রযুক্তির সাহায্যে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিদ্রোহ ও সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়েছে।
=== ফরাসি বিপ্লব ===
১৭৮৯ সালের ৫ মে ফ্রান্সে এস্টেটস-জেনারেলকে ডাকা হয়। বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা পাদ্রী এবং অভিজাতদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিলেন, তবুও তাদের মাথা দিয়ে ভোট দেওয়া হয়নি। তারা তৎক্ষণাৎ মণ্ডলী ত্যাগ করে এবং তাদের চারপাশে পাদ্রী, অভিজাত এবং কৃষকদের জড়ো করে পৃথকভাবে সভা শুরু করে। এই সমস্ত বিখ্যাত টেনিস কোর্টের শপথের দিকে পরিচালিত করেছিল যেখানে স্ব-প্রশংসিত জাতীয় পরিষদের সদস্যরা ফ্রান্সের নিজস্ব সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত কখনও ভেঙে না দেওয়ার শপথ নিয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে সভাগুলি বাস্তিল আক্রমণের দিকে পরিচালিত করে।
ফরাসি বিপ্লব আমাদের দেখায় যে অন্যদের তুলনায় কম ক্ষমতার অধিকারী একদল লোক রাজা ষোড়শ লুইয়ের উৎখাত এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলুপ্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রীকরণের পথ সংগঠিত ও প্রশস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের খবর সংবাদপত্র এবং নিয়মিত মেইল চিঠিপত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি অনুমান করা নিরাপদ যে সেই সময়ের সমস্ত পতনশীল সাম্রাজ্য (উদাঃ অটোমান সাম্রাজ্য) যদি সম্ভব হয় তবে সংবাদের প্রভাবকে ছবির মাধ্যমে জোর দেওয়া হলে আরও ভালভাবে প্রস্তুত হত। আধুনিক মোবাইল কম্পিউটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং দ্রুত ইন্টারনেট গতির সাথে আজ খবর আমাদের পর্দায় তাত্ক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়।
=== উইকিলিকসের ফাঁস ও আরব বসন্ত ===
২০১০ সালে উইকিলিকসের ওয়েবসাইট থেকে মার্কিন কূটনৈতিক নথি প্রকাশের বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যে সামাজিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করার সময় জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষত, উইকিলিকসের কাজকে প্রায়শই তিউনিশিয়ার বিপ্লবের ঘটনাগুলির মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সেই সময়ে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী, সক্রিয় কর্মী এবং সাংবাদিক তিউনিশিয়ার রাস্তায় নেমে আসে এবং টুইটার এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। তারা প্রত্যেকেই বিক্ষোভের উপাদান পোস্ট করে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং ২০১০ সালে তিউনিশিয়া তার রাষ্ট্রপতি জিনে এল আবিদিন বেন আলীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এই ঘটনাগুলি শীঘ্রই প্রতিবেশী দেশ মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্যদের দখল করে নিয়েছিল আরব বসন্তের বিখ্যাত বিপ্লবী তরঙ্গ গঠন করতে।
=== মেক্সিকোতে জাপাতিস্তাস আন্দোলন ===
মেক্সিকোতে জাপাতিস্তা আন্দোলনের বিস্ফোরণ থেকে ইডিটি নামে একদল কর্মী এবং শিল্পী বিদ্রোহীদের প্রতি বহুজাতিক সমর্থনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। এই আন্দোলন রক্ষার জন্য ইডিটি ফ্লাডনেট প্রোগ্রাম তৈরি করেছে যার লক্ষ্য ছিল মেক্সিকান এবং মার্কিন সরকার এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলির ওয়েব সার্ভারকে অপ্রতিরোধ্য করা।
== নাগরিক সাংবাদিকতা ==
সিটিজেন জার্নালিজমও প্রতিনজরদারির জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। এর উৎপত্তি ১৯৯০ এর দশকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে পারে। এটি সাধারণ জনগণকে এমন তথ্য পোস্ট করে যা তারা মনে করে যে পেশাদার সাংবাদিকদের খোলাখুলিভাবে কথা বলা উচিত। নাগরিকরা যেভাবে তাদের যোগাযোগ সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে সংবাদ এবং তথ্য লিখেন, বিশ্লেষণ করেন এবং প্রেরণ করেন তার মাধ্যমে এটি স্বীকৃত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ব্যক্তিগত ব্লগ এবং ঘরোয়া পরিবেশে চিত্রগ্রহণ করা। তাদের প্রকাশিত সংবাদ ও তথ্য নাগরিক সাংবাদিকতা। এই সুভিল্যান্স পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু পেশাদার সাংবাদিকদের কাজই নয়, সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডও জনগণ মনিটরিং করতে পারবে।
নাগরিক এবং পেশাদার সাংবাদিকতার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে এমন আরেকটি মূল উপাদান হ'ল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ব্যবহার। নাগরিক সাংবাদিকরা তাদের শ্রোতাদের অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে তর্ক করা ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে। এটি প্রায়শই অনলাইন ব্লগিংয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় যা "ব্যবহারকারীদের" তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং ধারণা যুক্ত করতে দেয়। এটি নাগরিকদের পেশাদারদের চেয়ে বৃহত্তর এবং অনেক জোরালো কণ্ঠস্বর দেয় কারণ এটি বিষয়গুলিতে তাদের সত্যিকারের আগ্রহ দেখায়।
নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থান সম্পর্কে প্রশংসা করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ প্রায়শই বড় ঘটনাগুলির মধ্যে থাকে। দুর্যোগ বা ঘটনার শুরুতে একজন সংবাদ প্রতিবেদক খুব কমই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবেন, তবে নিয়মিত নাগরিকরা এখন এই ইভেন্টগুলি সরাসরি স্ট্রিম করতে বা কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউটিউবে পোস্ট করার ক্ষমতা রাখে। নাগরিক সাংবাদিকতাকে প্রায়শই দ্বিতীয় স্তরের প্রতিবেদন হিসাবে উপেক্ষা করা হয়, অনেকে উদ্বিগ্ন যে অনেক নাগরিক সাংবাদিক মূলত অপেশাদার যারা কেবল টিভি বা প্রেসে যা দেখে তা নকল করে। তবে নাগরিক সাংবাদিকতা কেবল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নয়, মিডিয়া এবং সরকারের মধ্যে জোট বা বন্ধন ভেঙে একটি গল্পের পুরো সত্য প্রকাশের জন্যও অপরিহার্য। প্রায়শই সংবাদগুলি এমনভাবে বলা হয় যা ভারসাম্যপূর্ণ নয়, বা সরকারী উদ্যোগের পক্ষে অনুকূলভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়। কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকায়, সাধারণ নাগরিকের পদক্ষেপ নেওয়া এবং সাংবাদিকরা যা করতে পারে না তা করা প্রয়োজন। একজন নাগরিক সাংবাদিক খুব কমই পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানে থাকেন, কারণ তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, অথবা তাদের কোম্পানিকে বেতন দেওয়া হচ্ছে না বা এমনকি সত্যকে বিকৃত করার জন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষ দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সিটিজেন জার্নালিজম হ'ল সাসভিলেন্সের একটি কাঁচা রূপ কারণ এটি সত্যের উপর বিধিনিষেধ বহনকারী সরকারের প্রতি আনুগত্য রাখে না। নাগরিক সাংবাদিকতা চাকরি হারানোর ভয় ছাড়াই জনসাধারণের কাছে সত্য প্রকাশ করতে পারে, তবে এটি পেশাদার এবং জনসাধারণের কাছ থেকে একইভাবে অবিশ্বাসের একটি স্তরের সাথে আসে।
=== ফার্গুসন, মিসৌরিতে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
আগস্ট ৯, ২০১৪ এ, মাইকেল ব্রাউন (সাদা পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের হাতে) মৃত্যুর পর মিসৌরির ফার্গুসন শহরটি বিশৃঙ্খলার রাজ্যে প্রবেশ করেছিল যাকে অনেকে "ফার্গুসন অস্থিরতা" বলে অভিহিত করে। বিক্ষোভের সহিংস প্রকৃতি এবং পুলিশ বাহিনীর সামরিকীকরণের কারণে সৃষ্ট নাগরিক অস্থিরতার কারণে, ফার্গুসনের বেশ কয়েকজন স্থানীয় তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে কী ঘটছে তা প্রতিবেদন করার জন্য অনলাইনে অবস্থান নিয়েছিল। শহরের নাগরিক সাংবাদিকরা টুইটার এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মিডিয়া সাইটে তাদের শহরে কি ঘটছে তার ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেয় এবং মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যুর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং একই সাথে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর শক্তিশালী সামরিকীকরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে।
নিকটবর্তী সেন্ট লুইস শহরের একজন অল্ডারম্যান অ্যান্টোনিও ফ্রেঞ্চ টুইটারে ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করে কয়েকদিন কাটিয়েছেন যা তার ফোনে ধরা পড়া পুলিশি পদক্ষেপের প্রদর্শন করে। পরে পুলিশের কর্মকাণ্ড ভিডিও করার জন্য ফ্রেঞ্চকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন সিটিজেন জার্নালিস্ট কেমন হওয়া উচিত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ভাষা কাজ করেছে; একজন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী যিনি জনগণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন। ফরাসি এবং তার মতো অন্যান্যদের ধন্যবাদ, পরবর্তী কয়েক বছরে নাগরিক সাংবাদিকরা বর্ণের লোকদের বিরুদ্ধে পুলিশি বর্বরতার আরও অনেক ঘটনা নথিভুক্ত করবে। টুইটার এবং ফেসবুকে, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্রচারাভিযানটি হ্যাশট্যাগ এবং ট্রেন্ডিং বিষয়গুলির জন্য জন্ম নিয়েছিল।
ফার্গুসন নাগরিক সাংবাদিক হওয়ার জন্য মানুষ তাদের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার প্রথম উদাহরণ নয়, বোমা হামলা এবং আক্রমণের সময় সিরিয়া, ইরান, মিশর, প্যালেস্টাইন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট, প্যারিসের মতো জায়গায় ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এটি সারা বিশ্বে ঘটে, প্রকৃতপক্ষে টুইটারের মতো সাইটগুলি বেশিরভাগ সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরাসরি সংবাদ আপডেটের জন্য ভাল হয়ে উঠছে কারণ যে গতিতে বিষয়বস্তু আপলোড করা যায়।
=== পঞ্চম এস্টেট হিসাবে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
১৭৮৭ সালের সংসদীয় বিতর্কে এমপি এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, "সংসদে তিনটি এস্টেট রয়েছে তবে রিপোর্টার্স গ্যালারিতে একটি চতুর্থ এস্টেট বসে আছে যা তাদের সকলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো বক্তব্য বা রসাত্মক বক্তব্য নয়, এটি একটি আক্ষরিক সত্য, এই সময়ে আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই বিবৃতিটি বোঝায় যে সাংবাদিকরা সরকারের ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত তিনটি শাখার চতুর্থ প্রতিষ্ঠিত শাখা হতে বোঝানো হয়েছিল। চতুর্থ এস্টেট নতুন সংযোজন হওয়ার দিন চলে গেছে, নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থানের কারণে একটি নতুন এস্টেট উত্থিত হয়েছে।
তথাকথিত পঞ্চম এস্টেট সমসাময়িক সমাজের বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গির গোষ্ঠীগুলির একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক রেফারেন্স এবং ব্লগার, সাংবাদিক এবং অ-মূলধারার মিডিয়া আউটলেটগুলির সাথে সবচেয়ে বেশি যুক্ত। এর উদাহরণগুলির মধ্যে উইকি লিকস এবং গুইডো ফক্সের মতো গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
==== প্রধান সমালোচনা ====
অনেকে যুক্তি দেখান যে নাগরিক সাংবাদিকতা অনিয়ন্ত্রিত এবং বিশ্বাস করা যায় না কারণ কোনও সরকারী প্রুফ-রিডিং নেই। এই কারণে যারা বিশ্বাস করে যে সংবাদটি ভারী পক্ষপাতদুষ্টতার সাথে আনা যায় এবং হতে পারে। এর সাথে যে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব আসতে পারে তার পাশাপাশি, লেখকের উপর নির্ভর করে লেখাটিকেও নিম্নমানের বা অপেশাদার হিসাবে বিচার করা যেতে পারে। অধিকন্তু, নাগরিক সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য পেশাদার সরঞ্জাম না থাকায় বিশ্বাসযোগ্যতা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরণের সাসভিলেন্সের পক্ষে নয় কারণ তাদের মতাদর্শগুলি তাদের তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা ওভারল্যাপ করতে পারে। সবশেষে, সিটিজেন জার্নিজমের সংজ্ঞা নিয়ে কি কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যা আছে? সিটিজেন জার্নালিস্ট শব্দটির একটা সমস্যা আছে- সাংবাদিকরাও নাগরিক হতে পারেন।
== প্রতিনজরদারি এবং শিল্প ==
যদিও প্রতিনজরদারিের শিল্পটি সভিল্যান্ট হওয়ার আসল কাজ, এই বিভাগটি সাসভিল্যান্সের মধ্যে শিল্পের ধারণাটি অন্বেষণ করবে।
শিল্প। সংজ্ঞা অনুসারে এটি একটি দক্ষতার প্রকাশ, সৃজনশীলতার ফলাফল, কল্পনা চাক্ষুষভাবে উত্পাদিত (উদাহরণস্বরূপ একটি পেইন্টিং বা ভাস্কর্য আকারে)। এটি একটি মানুষের শারীরিক সৃষ্টিতে স্থানান্তরিত হওয়ার সারাংশ, সাধারণত জনসাধারণের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য, সাধারণত আবেগকে উস্কে দিতে সক্ষম। ডিজিটাল যুগে, খোলামেলাতা এবং বিষয়বস্তু ভাগ করে নেওয়ার সাথে। সেখানে পিক্সেলগুলি প্রায়শই ম্যানুয়াল কাজকে প্রতিস্থাপন করে, যখন কোনও উদীয়মান বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিল্পীর পক্ষে কাজটি সেখানে রাখা এবং পরিচিত হওয়া অত্যন্ত সহজ, সেখানে কি রোমান্টিকতার ক্ষতি হয়, শিল্প সৌন্দর্য? জীবন থেকে শুরু করে সবকিছুর মতোই শিল্পও একটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, একটি বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়। এই যুগে তাই ডিজিটালে শিল্পের অভিযোজন আশা করা ভুল নয়, অন্তত আরও সাধারণ স্তরে। প্রকৃতপক্ষে, যদি 'বড়' নামগুলির ধ্রুপদী প্রযোজনাগুলি নতুন প্রবণতাগুলিকে প্রতিহত করতে পারে বা এমনকি আরও ঐতিহ্যবাহী লাইন বজায় রেখে তাদের আকার দিতে পারে, তবে উদীয়মানগুলি সময় এবং জনপ্রিয় চাহিদার সাথে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্রাউডসোর্সের কারণে শিল্প কম ব্যক্তিগত এবং অনন্য কিছুতে পরিণত হবে কিনা এই প্রশ্নটি পদকের অন্য দিকের বিবেচনার দিকে পরিচালিত করে, বিপরীত ঘটনা: সীমানা লঙ্ঘন এবং নতুনের অন্বেষণ। ডিজিটাল প্রসঙ্গ আসলে শিল্পীদের আরও একটি অঞ্চল দেয় যেখানে বেড়ে ওঠা এবং স্বীকৃত হতে হয়।
শিল্পের পেছনে, সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে আগ্রহ, রাজনীতি, নজরদারি। অনানুষ্ঠানিকভাবে তৈরি শব্দ 'আর্টভেইল্যান্স' ১৯৩০ এর দশক থেকে বিদ্যমান শিল্পের বিভাগ যা নজরদারির সাথে সম্পর্কিত, সৃজনশীলতার একটি প্রবাহ উপরের পর্যবেক্ষকের ব্যবহারে রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট, পোর্টেবল ক্যামেরা প্রবর্তনের সাথে সাথে ফটোগ্রাফারদের পক্ষে গোপনে ছবি তোলা সহজ করা হয়েছিল। এই সম্পদের প্রয়োগ আরও আধুনিক সময়ে, বিশেষত ৯/১১ হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে দুর্দান্ত ব্যবহার পেয়েছে। ঝাপসা শেডের একটি পাতলা রেখা শিল্পে নজরদারি এবং সুভিল্যান্স পরিস্থিতিকে বিভক্ত করে যেমন একজন শিল্পী আধিপত্যকারী হয়ে ওঠেন, এটি অগত্যা আশেপাশের লোকদের উপরে উঠছে না, তাই প্রতিনজরদারিে অভিনয় করে। উদাহরণস্বরূপ, এই দ্বিমুখী নজরদারি এবং সাসভিল্যান্স পরিস্থিতি ডিজিটাল চশমা (গুগলের প্রকল্প গ্লাস) এর মতো সরঞ্জাম দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও নজরদারির ক্ষেত্রে শিল্পের আরও ব্যবহারিক, কম শৈল্পিক ব্যবহার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কিছু শিল্পী জনসাধারণের অভিজ্ঞতার জন্য নজরদারি ডেটা আরও ভিজ্যুয়াল কিছুতে রূপান্তর করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এর একটি ভাল উদাহরণ অন্যদের মধ্যে দু'জন ব্যক্তির কাজে পাওয়া যায়: ওয়াকার ইভান্স এবং ট্রেভর পাগলেন। ওয়াকার ইভান্স, নজরদারি এবং শিল্পকে একত্রিত করার জন্য প্রথম একজন, ১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ের অজানা যাত্রীদের প্রতিদিনের রুটিন এবং সত্য মুহুর্তগুলি ক্যাপচার করার চেষ্টা করার জন্য ছবি তুলেছিলেন (প্রাকৃতিক, কোনও সেটে নয়)। অজ্ঞাতনামা মানুষের এই গোপন ছবিগুলি শিল্পী তার কোটের নিচে একটি ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন, চকচকে ক্রোমটি কালো রঙ করেছিলেন এবং বোতামগুলির মধ্যে লেন্সগুলি উঁকি দিয়েছিলেন। আজ ক্যামেরা ব্যবহারের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি পদ্ধতি, এমনকি তাদের অজান্তেই মানুষের জীবন রেকর্ড করা। এই পরিস্থিতি থেকে আলাদা, যা সাসভিল্যান্সের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হতে পারে, ট্রেভর পাগলেনের কাজটি নজরদারি এবং শিল্পকে আরও স্পষ্ট উপায়ে একত্রিত করে। তিনি পাবলিক লোকেশন থেকে সামরিক স্থাপনার ছবি এবং স্টিলথ-ড্রোনের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহের স্যাটেলাইটের পথ ট্রেস করার জন্য পরিচিত। তাঁর রচনায় আশেপাশের পরিবেশকে অন্বেষণ, বোঝার এবং বর্ণনা করার জন্য সৌন্দর্য, নকশা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের একটি সংমিশ্রণ রয়েছে। বিশেষত আকর্ষণীয়, এমন একটি প্রভাব যা অস্থিতিশীল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ট্রেভর পাগলেন মেট্রো পিকচার্স গ্যালারিতে একটি ভিডিও ইনস্টলেশনের মাধ্যমে দর্শকদের নজরদারির মূল অংশের সামনে রাখে। স্নোডেনের ফাঁস হওয়া এনএসএ নথির আর্কাইভ থেকে চার হাজারেরও বেশি কোড নাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান কলামগুলিতে একটি অন্ধকার ঘরে প্রজেক্ট করা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জিং সমাজ, শিল্প এবং সাসভিল্যান্সের পরিস্থিতিতে, শিল্প ডিজিটাল বিশ্বে একটি আধুনিক ধারণা নিয়ে বিকশিত হয়েছে: একটি ইউনিয়নে সৃজনশীলতা প্রকাশ করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার যা কখনও কখনও শ্রোতাদের অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য রাখে। ভিন্ন হওয়া, আদর্শের বিরুদ্ধে থাকা, প্রত্যাশার বিরুদ্ধে থাকা। প্রতিনজরদারিে শিল্প চরমের সম্ভাবনা খুঁজে পায়, উদাহরণস্বরূপ রেজিন ডিব্যাটির উই-মেক-মানি-নট-আর্টের মতো পৃষ্ঠাগুলির অস্তিত্বের সাথে দেখা যায় যেখানে প্রযুক্তিটি সমালোচনামূলক আলোচনার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, শিল্পী, হ্যাকার, ডিজাইনার, সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিউশনের একটি বিন্দু। শিল্প পাঠ্যের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে, শব্দ চয়নে: এটি ভিতরের তাত্পর্য (বিদ্রূপের ব্যবহার, তাত্পর্যের স্তরগুলি, রসিকতার ভিতরে) বা ফন্টের পছন্দই হোক। এই পৃষ্ঠার মতো, শিল্পকে আরও তথ্যবহুল, সমালোচনামূলক উদ্দেশ্যে প্রায় বিকৃত করা যেতে পারে। অমিতব্যয়িতা অনলাইন বিশ্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এমন একটি উপাদান যা সম্পর্কে মানুষ সচেতন এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুমতি দেয়। এই প্রসঙ্গে, আরও দু'জন শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে: কেট ডারবিন এবং টিফানি ট্রেন্ডা। প্রতিনজরদারি, যা বিপরীত নজরদারি নামেও পরিচিত, ডিজিটাল বিশ্বে একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পায়। সেখানে সাধারণ মানুষ অন্যদের পর্যবেক্ষণ করে। জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ সরঞ্জাম এবং স্থান উভয়ের মাধ্যমে, শিল্প সাধারণের মধ্যে বিকশিত হতে পারে, একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে। শিল্পকে প্রশংসা করার জন্য আড়ম্বরপূর্ণ, জাঁকজমকপূর্ণ, ব্যয়বহুল হতে হবে না এবং এটি বিশেষত বর্তমান সময়ে সত্য। উদাহরণস্বরূপ কেট ডারবিন একজন শিল্পী এবং লেখক যিনি ইনস্টাগ্রামে একটি ভাল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। সেখানে তিনি পারফর্মেটিভ হওয়ার সময় ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপের সমীক্ষক হতে পারেন। শিল্পী নিজেই তার কাজকে অভিনয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেখানে শিল্প এবং ব্যক্তিগত জীবন ওভারল্যাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি একটি ডেটিং সাইটে পুরুষদের সাথে কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করছেন, তার শ্রোতাদের বিনোদনের জন্য কিন্তু একই সময়ে একটি বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে যা অনেকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক কথোপকথন পোস্ট করা থেকে, তিনি সমাজের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করার সময় মানুষের আচরণ এবং সম্পর্কিত করার ক্ষমতার জন্য তথ্য সংগ্রহ এবং উপস্থাপন করছেন, উদাহরণস্বরূপ গোপনীয়তা। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট জিনিসগুলির মাধ্যমে শ্রোতাদের সাথে একটি সংযোগ রয়েছে যা মানুষের উপর একটি সামাজিক অধ্যয়নের জন্য মাইক্রোকোসম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চ্যালেঞ্জের পথে, পারফরম্যান্স শিল্পী টিফানি ট্রেন্ডার কাজও উল্লেখযোগ্য, যদিও তিনি ব্যক্তিগত স্থান এবং এর অনুপ্রবেশের দিকে আরও বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। প্রক্সিমিটি সিনেমা ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে করা একটি কাজ যেখানে শিল্পী প্রযুক্তি এবং এর অবচেতন ব্যবহার অন্বেষণ করতে চান। চল্লিশটি ছোট সেল ফোনের স্ক্রিন লাগানো পুরো বডি স্যুট পরা অবস্থায় তিনি লোকদের তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। 'এগিয়ে যাও', 'এটি নিয়ে চিন্তা করবেন না' এবং 'এটি ঠিক আছে' এর মতো বাক্যাংশগুলি পর্দায় ছিল, যা স্পর্শ করা হলে শিল্পীর দেহের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, শিল্পী ডিভাইসগুলির সাথে আমাদের পরিচিতি পরীক্ষা করে তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের পরিচয় উপস্থাপন করে স্বাভাবিক সামাজিক সীমাবদ্ধতাও ধ্বংস করে। নজরদারি-ভিত্তিক যুগকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পারফরম্যান্স আর্টের একটি উদাহরণ। সেখানে আমরা ব্যবহারকারী হিসাবে আমাদের পরিচয় কতটা উন্মুক্ত তা সম্পর্কে অসচেতন।
ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি থেকে গণবিদ্রোহ, শিল্প জনসাধারণের কাছে তার পথ খুঁজে পায়। নজরদারি হোক বা সাসভিল্যান্সের মাধ্যমেই হোক, চারপাশের পরিবেশ অন্বেষণকারী শিল্পী এবং শিল্পীর নিজেকে অন্বেষণের মধ্যে একটি দৃশ্যমান বাইনারি রয়েছে। মজার বিষয় হল, 'প্রতিনজরদারি' শব্দটি স্টেফান সোনভিলা-ওয়েইস নিজেকে বিশ্বের কাছে দেখানোর প্রক্রিয়ায় আত্ম-নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। চিন্তার এই লাইনে, আভি রোজেন একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, 'ডিজিটাল স্কিন ২' প্রকল্পের সাথে যেখানে বিভিন্ন প্রকৃতির ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডিজিটাল লাইফলগিং একত্রিত হয়। ডিজিটাল ডাইমেনশনে নিজের উপস্থাপনা এবং বাস্তব জগতে উপস্থাপনের মধ্যেও একটি সমান্তরাল রয়েছে। একটি শিল্প ফর্ম হিসাবে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার মানুষকে বিশ্বের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলি অন্বেষণ করার অনুমতি দিয়েছে। ২০০৮ সালে ক্রিস্টি রবার্টসন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন যা বিভিন্ন শিল্পী এবং তাদের নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার অন্বেষণ করেছিল। রবার্টসন রাজনৈতিক বিষয়গুলিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নজরদারি / প্রতিনজরদারিকে একটি শৈল্পিক রূপ হিসাবে ব্যবহারের উদাহরণ টেনেছেন। এই শিল্পীদের মধ্যে একজন ছিলেন ওয়াফা বিলালের গার্হস্থ্য উত্তেজনা (২০০৭)। তার পারফরম্যান্সের মধ্যে নজরদারি মূল বিষয় ছিল না তবে নজরদারি যে শক্তি সম্পর্ক তৈরি করে তা উন্মোচন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ধারণাগুলি চিত্রিত করতে বিলালের অভিনয় সবচেয়ে কার্যকর ছিল। ২০০৭ সালে ইরাকি-আমেরিকান শিল্পী বিলাল নিজেকে ভিডিও ক্যামেরায় ভরা একটি স্টুডিওতে আটকে রেখেছিলেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে সরাসরি প্রবাহিত হয়েছিল, যাদের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত পেইন্টবল বন্দুক দিয়ে বিলালকে গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য তার মূল উদ্দেশ্য ছিল গৃহযুদ্ধে ভুগতে থাকা ইরাকি জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে তুলে ধরা। তিনি "অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংলাপকে উস্কে দেওয়ার" উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট এবং ভয়েরিজমকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন (বিলাল, ২০০৭)। অতএব, নজরদারিকে একটি শিল্প ফর্ম হিসাবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে কারণ এই ক্ষেত্রের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে শিল্পীদের বৃদ্ধি ঘটেছে।
=== শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম ===
শৈল্পিক বক্তৃতা এবং দার্শনিক অন্বেষণের আরেকটি দিক ছিল অনিশ্চয়তার পুনঃপ্রতিষ্ঠাবাদ। প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে তাদের মধ্যে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এরপর সেগুলো এলোমেলো করে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়। সত্যি বলতে কিনা জানি না অথবা ক্যামেরা না পরা অনিশ্চয়তার নীতিকে শৈল্পিক চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদুপরি, উদাহরণস্বরূপ, সাবওয়েতে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার জন্য নিউইয়র্কের প্রস্তাবিত তদন্ত হিসাবে ভূগর্ভস্থ প্রতিনজরদারি বিবেচনা করুন। পাতাল রেলের ফটোগ্রাফগুলির একটি প্রদর্শনী হ'ল অনুসরণ করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
'''শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম নিয়ে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা: দ্য মেবিক্যামেরা'''
প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এগুলি এলোমেলো করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি পরিধানকারী জানতে না পারে যে তাদের ক্যামেরা রয়েছে কিনা। অনেকগুলি সম্ভাব্য ক্যামেরাগুলির মধ্যে একটির ক্লোজ আপ ছবি যা একটি বিচ্যুতি, বিপরীতমুখী / পুনঃ-ইকশনিজম এবং নজরদারির সাধারণ ভাষা (পাঠ্য) এর ডিকনস্ট্রাকশন দেখায়। অনেক লোক এই জুয়া (উদাঃ ক্যাসিনো, নায়াগ্রা ইত্যাদি) কোনও ঘটনা ছাড়াই পরেছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে সম্ভবত রক্ষীরা শার্ট পড়ে না। পরিধানকারীরা জানেন না যে কোন শার্টে পরিধানযোগ্য ওয়্যারলেস ওয়েব ক্যামেরা রয়েছে এবং কোন শার্টে নেই। লেখকের '''মেবিক্যামেরা''' ডিজাইন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ এস প্যান্টাগিস নিউইয়র্কের কবিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য এর মধ্যে ২৫ টির প্রাথমিক ব্যাচ তৈরি করেছিলেন, তারপরে আরও বড় উত্পাদন চালানো হয়েছিল। যেমনটি দেখা গেছে নিউইয়র্কের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সিকিউরিটি ক্যামেরায়। নিরাপত্তা ক্যামেরা দ্বারা দেখা ক্লোজআপ ভিউ।
সুভিল্যান্স এবং শিল্প? হ্যাঁ, এটি একটি সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান সম্পর্ক। সেখানে শিল্পীরা নজরদারিকে চ্যালেঞ্জ জানায় যখন শিল্পকে যেভাবে উপস্থাপন করা যায় তা পুনর্বিবেচনা করে। যদিও কিছু নিবন্ধ (যেমন অভিভাবকের জন্য জোনাথন জোন্সের "ডিজিটাল যুগ কি শিল্পকে মেরে ফেলবে?") ডিজিটাল বিশ্বে শিল্পের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দেহ উত্থাপন করে, তবে এটি অনস্বীকার্য যে কীভাবে বিশ্বের মধ্যে সহজ সংযোগগুলি উভয় লিঙ্গের বিকাশ এবং প্রকাশের অনুমতি দেয়। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে শক্তিশালী পুরুষালী উপস্থিতি শিল্পের অনলাইন উত্থানে কম কার্যকর প্রভাব ফেলে। সেখানে নারীর একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর থাকতে পারে, সমতার পরিবেশে যা শারীরিক বিশ্বে নিজেই অনুবাদ করা যেতে পারে, যেমন বৈদ্যুতিন শিল্পের উপর আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের মতো ঘটনা দ্বারা দেখানো হয়েছে।
= নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি আইন সম্পর্কে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া =
''নজরদারি আইন এবং প্রতিনজরদারি'' সম্পর্কে দুটি বিপরীত জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ নজরদারিকে তাদের গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে এবং সরকারের সিদ্ধান্তগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য নজরদারি করা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যরা মনে করেন যে অপরাধীদের প্রতিরোধ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়। তবে বেশিরভাগ নাগরিক সম্মত হন যে আইন বিভাগগুলির সাধারণ নজরদারি গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ না তাদের বিস্তারিত দৈনন্দিন জীবন দিনরাত নজরদারির আওতায় না থাকে।
আমাদের কাছে একটি ক্যামেরা স্ট্র্যাপ করা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় যার ফলে আমরা প্রতিনজরদারিকারী হয়ে উঠি, তবুও ক্যামেরা এখনও সেই সময়ের মধ্যে আমাদের মুখোমুখি হওয়া প্রত্যেককে ক্যাপচার করছে। এর ফলে কি আমরা সার্ভিলারে পরিণত হব না? এরপরে এটি পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে যে সার্ভেইলার হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করার ফলে লোকেরা আপনার প্রতি ভিন্নভাবে আচরণ করতে পারে। নজরদারির মুখোমুখি হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে পরিধেয় ডিভাইসের মতো স্যুসভিল্যান্সের ফর্মগুলির তদন্তে একটি উত্সাহ উঠেছে। মান, নোলান এবং ওয়েলম্যান (২০০৩)[১১] নজরদারি কৌশলগুলিকে 'প্রহরী দেখার' ফলাফলের সাথে প্রতিনজরদারিে রূপান্তর করার জন্য আশেপাশের (নজরদারিকৃত) পরিবেশের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সাথে জড়িত গবেষণা চালিয়েছিলেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেকগুলি কারণ (প্রযুক্তির ধরণ, অবস্থান এবং প্রযুক্তির উপস্থাপনা / উপস্থাপনা সহ) অংশগ্রহণকারীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল যা তাদের ক্ষমতায়িত বা দুর্বল বোধ করে।
তদন্তে দেখা গেছে যে লোকেরা যখন রেকর্ডিং করা ডিভাইস এবং রেকর্ড করা ফুটেজ উভয়ই দেখতে পেত তখন তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রেকর্ডিংয়ের এই ফর্মটি তখন 'কোভেইল্যান্স' নামে পরিচিত একটি নতুন শব্দ তৈরি করে। কোভিল্যান্স নজরদারি বা প্রতিনজরদারি নয় বরং এটি তৈরি হয় যখন লোকেরা একই সাথে ক্যামেরা এবং ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে পায়। সংক্ষেপে, কোভিল্যান্স = লোকেরা ভয়েরিজম সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।
এই তদন্ত থেকে আরেকটি আকর্ষণীয় অনুসন্ধান হ'ল কর্তৃপক্ষ (সুরক্ষা প্রহরী) আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে যখন প্রতিনজরদারিকারী ব্যাখ্যা করবে যে ডিভাইসের উপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। বিপরীতে, যখন এটি স্পষ্ট ছিল যে প্রতিনজরদারিকারীের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কর্তৃপক্ষ আরও সংঘাতময় হবে। ডেভিড বলিয়ার (২০১৩)[১২] সুরক্ষা থেকে এই প্রতিক্রিয়াটির সম্ভাব্য ব্যাখ্যা সরবরাহ করে। এর জন্য প্রথম সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে শপিং মলগুলির ধারণার কারণে হতে পারে যে অপরাধীদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল আবিষ্কার করার ক্ষমতা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে যা সম্ভাব্য ডাকাতির কারণ হতে পারে। অধিকন্তু, খুচরা বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে বিক্রয় মূল্য এবং খুচরা প্রদর্শনের তুলনা করার জন্য দোকানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার কারণে কিছু দোকান ফটোগ্রাফির অনুমতি দেয় না। আরেকটি ব্যাখ্যা এই ধারণার কারণে হতে পারে যে সসভিলেস নজরদারির শক্তি সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ জানায় কারণ এটি মানুষের মধ্যে সমতার বোধ পুনরুদ্ধার করে। অধিকন্তু, এটি বোঝাতে পারে যে প্রতিনজরদারি নজরদারির খেলার ক্ষেত্রকে স্তর দেয় কারণ এটি আর ক্ষমতায় নেই। উইলিয়াম গিবসন পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি সবাই প্রতিনজরদারিকারী হয়ে যায় তবে নজরদারি শেষ পর্যন্ত হ্রাস পাবে কারণ এটি আর কোনও উদ্দেশ্য পূরণ করবে না।
নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের প্রভাবগুলি প্রায়শই মুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং গণতান্ত্রিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যাইহোক, যখন বিশ্লেষণাত্মকভাবে দীর্ঘমেয়াদী ম্যাক্রো সমাজতাত্ত্বিক প্রভাবগুলির দিকে অগ্রসর হয়, তখন দৃষ্টিভঙ্গিটি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। নাগরিকদের উপর সরকারগুলির নজরদারির সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, প্রধানত সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থায় চিত্রিত, ইতিহাস জুড়ে ভয়ের অনুভূতির ফলস্বরূপ। জেরেমি বেন্থামের (১৮৩৮) 'প্যানোপটিকন' এবং একটি সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবেচনা যেখানে পর্যবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ মানুষকে এই সত্য সম্পর্কে সচেতন করেছিল যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যদিও তারা জানত না। ১৯৮০ এর দশকের লেখায় মিশেল ফুকোর মতে, এই প্রভাবটি পাওয়া গেছে যে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে (যেমন একটি কারাগার) প্যানোপটিকনের প্রতীকী এবং ব্যবহারিক উভয় ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এই ভয়ের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে চিন্তাভাবনা এবং কাজ করতে প্রভাবিত করতে পারে যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। এভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্যানোপটিকন শিল্প বিপ্লবের অংশ ছিল যা শিল্প পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ করেছিল যেখানে মালিক এবং ক্ষমতায় থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা জনসাধারণের জায়গাগুলি কেবল কারাগার এবং কারখানাগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
== পপ সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
পপ সংস্কৃতি আমাদের সমাজের উপর নজরদারির যে বিস্তৃত উপলব্ধি রয়েছে তা গ্রহণ করেছে। বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি বই, টিভি শো, চলচ্চিত্র এবং এমনকি ভিডিও গেমস রয়েছে যা এখন সুরক্ষা এবং নজরদারির ভূমিকা গ্রহণ করেছে। জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর'' এমন একটি বই যা একটি সর্বব্যাপী সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের অধীনে জীবনযাপন করে এবং সম্ভবত পপ সংস্কৃতিতে নজরদারির সবচেয়ে বিশিষ্ট উদাহরণ। বইটি একটি "বিগ ব্রাদার" প্রোগ্রাম অনুসরণ করে যা উপন্যাসের চরিত্রগুলির ওভার ভিউয়ার হিসাবে কাজ করে, এটি সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহারকে ভারীভাবে চিত্রিত করে।
২৭ মে ২০১৪ এ, ইউবিসফট স্টুডিওগুলি তাদের গেমটি প্রকাশ করেছে ''ওয়াচডগস'' যা আইডান পিয়ার্সকে কেন্দ্র করে একজন বড় চোর হ্যাকার এবং স্ব-নিযুক্ত ভিজিল্যান্ট শহরব্যাপী গণ নজরদারি এবং অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হ্যাক করতে সক্ষম হন। যাতে করে যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য এবং সংস্থান সংগ্রহ করতে পারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এড়াতে, অপরাধ ঘটার আগে বা হওয়ার আগে বন্ধ করতে, প্রয়োজনে নিজে অপরাধ করা, এবং তার সুবিধার্থে অবকাঠামোর বিভিন্ন বস্তু এবং কার্যকারিতা ম্যানিপুলেট করা। গেমটি আপনাকে বেশ কয়েকটি বড় সুপরিচিত সিস্টেমে হ্যাক করেছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থাগুলি এবং রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অর্থ চুরি করতে সাইবার সন্ত্রাসীদের সাথে কাজ করেছে। গেমটিতে মানুষের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছিল।
= প্রতিনজরদারিকারী হওয়া =
গবেষণাটি চালানোর সময় প্রতিনজরদারিকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তারা কেমন অনুভব করেছিল তখন একটি চিন্তা-উদ্দীপক আবিষ্কারও ছিল। অংশগ্রহণকারীরা যারা সাসভিল্যান্স পরিবেশন করেছিলেন তারা অনুভব করেছিলেন যে এটি তাদের ক্ষমতায়িত করেছে। রেকর্ডিং করার সময় মানুষের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আবেগ ছিল তবে প্রতিনজরদারিকারী অনুভব করেছিলেন যে এটি মানুষকে দেখানোর জন্য উদ্দীপক ছিল যে (নজরদারি সম্পর্কিত) অনেক কিছু চলছে যা আমরা জানি না। একজন অংশগ্রহণকারী একটি আকর্ষণীয় পয়েন্ট সরবরাহ করেছেন যা পরামর্শ দেয় যে নজরদারি এমন একটি খেলা যেখানে আমরা অংশ অনুভব করি তবে আসলে নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে আমরা এর অন্য দিকে রয়েছি। অন্যদিকে, এটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে সাসভিল্যান্স আরও খাঁটি কারণ রেকর্ড করা প্রত্যেককে এটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়। অতএব, এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে আমরা সকলেই সুভিল্যান্সের কাজের অংশ হয়ে উঠি কারণ এটি লুকানো নয়। যাইহোক, এই ধারণাটি প্রশ্ন করা যেতে পারে যখন লোকেরা লুকানো ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা শুরু করে। গোপনে রেকর্ড করার কাজটি তখন সাসভিল্যান্সের ধারণাটিকে জটিল করে তুলতে পারে। তাহলে কি তা আবার নজরদারিতে পরিণত হয়? এই জটিল ধারণাগুলি এবং নজরদারি এবং সুভিল্যান্সের ক্রমাগত আন্তঃসংযোগ এই ক্ষেত্রে চলমান গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।
= তথ্যসূত্র =
1p34txc2zwunsu483zto6kgv718r56f
84044
84043
2025-06-11T16:11:03Z
MS Sakib
6561
/* নজরদারি বিতর্ক */
84044
wikitext
text/x-wiki
= নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স =
== ভূমিকা ও মূল ধারণাসমূহ ==
[[চিত্র:TheBigbrother.jpg|ডান|থাম্ব|বিগ ব্রাদার তোমার উপর নজর রাখছে]]
[[চিত্র:SurveillanceSousveillanceLifeGloggingMannSensecamMemoto.jpg|থাম্ব|স্যুভেইলেন্সের তুলনায় নজরদারি]]
{{Quote box|quote=২০১২ সালে, স্পেনের সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে যে, আমেরিকার ''NSA ([[w:ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি|ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি]])'' ক্রিসমাস মাসে গোপনে ৬ কোটিরও বেশি টেলিফোন রেকর্ড নজরদারির আওতায় এনেছিল।<ref>Angwin, J. U. L. I. A., Savage, C. H. A. R. L. I. E., Larson, J. E. F. F., Moltke, H. E. N. R. I. K., Poitras, L. A. U. R. A., & Risen, J. (2015). AT &T Helped US Spy on Internet on a Vast Scale. New York Times, August, 15.</ref> জার্মানির একটি ম্যাগাজিন ''[[w:Der Spiegel|ডার স্পিগেল]]'' প্রস্তাব করে যে, এনএসএ-এর প্রধান নজরদারির বিষয় ছিল ৩৫ জন রাজনীতিবিদ।<ref>Timberg, C., & Soltani, A. (2013). By cracking cellphone code, NSA has capacity for decoding private conversations. The Washington Post.</ref> আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে মানব সমাজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সহজেই ডিজিটাল আকারে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রচার করা যায়। এর ফলে তৈরি হয়েছে একটি নজরদারিমূলক সমাজ, যার অর্থ ''"অল্প কয়েকজন অনেককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে"''। তবে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে “'''স্যুভেইলেন্স'''” শব্দটি প্রস্তাব করেন [[w:Steve Mann|স্টিভ ম্যান]], জেসন নোলান এবং [[w:ব্যারি ওয়েলম্যান|ব্যারি ওয়েলম্যান]]। এটি “'''নজরদারি'''” শব্দটির বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং বোঝায় ''বহুসংখ্যক মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে''।<ref>S. Mann, J. Nolan and B. Wellman. (2003), "Sousveillance: Inventing and Using Wearable Computing Devices for Data Collection in Surveillance Environments",Surveillance & Society, vol. 1, no. 3, pp. 331-355.</ref>|align=left|width=50%}}'সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?' বইয়ের এই অধ্যায়ে নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর মূল ধারণাগুলোর বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে এই দুই ক্ষেত্রের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা। নজরদারির ক্ষেত্রে আলোচনা করা হবে এই কাজে ব্যবহৃত সংগঠন ও প্রযুক্তি, সেইসাথে প্রযোজ্য আইন ও বিধিনিষেধ সম্পর্কে। এছাড়াও এই অধ্যায়ে মানবতা কীভাবে নজরদারির বিরোধিতা করে এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব]-এর মতো ভিডিও-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মকে নজরদারি না স্যুভেইলেন্স—এই বিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে অধ্যায়টি স্যুভেইলেন্স-এর দিকে দৃষ্টি দেয়। এতে স্টিভ ম্যান-এর ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এই শব্দটির প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী বিশ্লেষণে স্যুভেইলেন্স-এর বিভিন্ন রূপ এবং মানব ইতিহাসে এর বিকাশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে এখানে স্থান পেয়েছে এবং স্যুভেইলেন্স-এর সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে কিছু কেস স্টাডির মাধ্যমে এটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর বিষয়ে কথা বললে, প্রথমটি তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত। এর একটি কারণ হতে পারে আমরা প্রতিদিনই নজরদারির মুখোমুখি হই—আমরা কোনো না কোনো নজরদারির নজর ছাড়া এক কদমও এগোতে পারি না। একে “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট” বলা হয়, যা এই অধ্যায়ে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও আমরা জানি নজরদারি সর্বত্র বিদ্যমান, আমরা তা নিয়ে খুব একটা সচেতন নই। আমাদের বলা হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ধরনের বার্তা আমাদের মনে গেঁথে গেছে এবং আমরা ভুলে গেছি আসলে কতবার আমাদের নজরদারির আওতায় আনা হয়। অপরদিকে, স্যুভেইলেন্স তুলনামূলকভাবে নতুন, তাই কম পরিচিত। কারণ, স্যুভেইলেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি (যেমন হাতে ধরা ক্যামেরা) সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়েছে। যদিও শব্দটি সাধারণত উচ্চতর কর্তৃপক্ষের দিকে ক্যামেরা নির্দেশ করে করা কার্যকলাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, স্যুভেইলেন্স তখনও ঘটে যখন একটি গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী গোষ্ঠীকে পুরনো বা নতুন যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে। ইতিহাসের দিকে ভালোভাবে তাকালে দেখা যায়, ফরাসি বিপ্লবসহ প্রথম দিকের অনেক বিপ্লবই স্যুভেইলেন্সের উপর নির্ভর করে রাজা অপসারণ ও সমাজে পরিবর্তন এনেছিল।
একটি তত্ত্ব হিসেবে স্যুভেইলেন্স-এর প্রবর্তন ও বিকাশ ঘটে স্টিভ ম্যান-এর মাধ্যমে, যাঁকে এই অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
= নজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
এই অংশে ''''নজরদারি'''<nowiki/>' শব্দটির কিছু প্রচলিত সংজ্ঞা আলোচনা করা হবে।
'''নজরদারি''' শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা '''Surveillance''' শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি ভাষা থেকে। এর উৎস হল '''sur''' অর্থাৎ '''উপর থেকে''' এবং '''veiller''' অর্থাৎ '''পর্যবেক্ষণ করা'''—ফলে এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় '''উপর থেকে দেখা'''।
'''নজরদারি''' বলতে বোঝায় সেই ক্যামেরা বা অন্যান্য সেন্সর, যা কোনো স্থাপনার (যেমন: জমি, খুঁটি বা ভবন) সঙ্গে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে। এটি সেই ধরণের পর্যবেক্ষণ যা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি অন্যান্য পর্যবেক্ষণকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। নজরদারি হলো মূলত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। এই সহজ সংজ্ঞার মধ্যে অসংখ্য কৌশল ও পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত যেগুলোকে নজরদারির রূপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই পদ্ধতিগুলোর অনেকটাই জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের জানা। নজরদারির ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে [[w:নজরদারির ইতিহাস|নজরদারির ইতিহাস]] পাতায় যাওয়া যেতে পারে। সেখানে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে নজরদারির ধারণাটি সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিদ্যমান, শুধুমাত্র ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের মাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। প্রাথমিক দূরবীন থেকে শুরু করে আধুনিক [[w:রেডিও_ফ্রিকোয়েন্সি_আইডেন্টিফিকেশন|রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন]] পর্যন্ত নজরদারি প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত উন্নত হয়েছে।
সর্বাধিক পরিচিত নজরদারির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্থির নজরদারি, প্রযুক্তিগত নজরদারি (সাধারণত গোপন ভিডিও বা অডিও রেকর্ডিং), ইলেকট্রনিক নজরদারি (ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ, [[w:কি-স্ট্রোক_ডায়নামিকস|কীস্ট্রোক ডায়নামিকস]]) এবং আরও অনেক কিছু। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান থাকলে প্রায় যে কেউ নজরদারিতে অংশ নিতে পারে—এক্ষেত্রে নজরদারির কৌশল ব্যবহার করেন ফেডারেল কর্মকর্তারা যাঁরা জীবন রক্ষায় কাজ করেন, কিংবা বেসরকারি গোয়েন্দারা যাঁরা সিভিল কোর্টের প্রমাণ সংগ্রহ করেন। [http://www.oxforddictionaries.com/ অক্সফোর্ড অভিধান অনলাইন] (২০১৬)-এ নজরদারির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—'সন্দেহভাজন গুপ্তচর বা অপরাধীর উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ' (Close observation, especially of a suspected spy or criminal)।<ref>Surveillance. 2016. In ''Oxford Dictionaries''. Retrieved from http://www.oxforddictionaries.com/definition/english/surveillance.</ref> এই সংজ্ঞা এই বইয়ের পরবর্তী অংশে আলোচিত একটি বিষয়ের সূত্রপাত করে। সেখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে ডিজিটাল মিডিয়ার বিকাশ এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যে, দাবি করা যায় বৃহত্তর জনগণ সর্বদাই নজরদারির আওতায় আছে।
=== নজরদারির প্রকারভেদ ===
নজরদারির প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে। স্রারা পৃথিবী ব্যাপী ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি তাদের গোপনীয়তা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। নেটওয়ার্ক ডেটাবেইস জনসাধারণ ও ব্যক্তির মধ্যকার সীমারেখা মুছে দেয় এবং ব্যক্তি-মানুষকে একটি ডিজিটাল প্যানআপটিকনে পরিণত করে। [[w:ফেসবুক|ফেসবুক]], [[w:টুইটার|টুইটার]], ব্লগ, [[w:ইনস্টাগ্রাম|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তি-মানুষকে তাদের গোপনীয়তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে উৎসাহিত করে।<ref>Cristani, M., Raghavendra, R., Del Bue, A., & Murino, V. (2013). Human behaviour analysis in video surveillance: A social signal processing perspective. Neurocomputing, 100, 86-97.</ref>
প্রথমত, সিসিটিভি ([[w:ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন|ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন]]) ইলেকট্রনিক নজরদারির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি। ইংল্যান্ড, প্রথম দেশ হিসেবে পাবলিক প্লেসে সিসিটিভি স্থাপন করে এবং প্রায় ৩০ লক্ষ ক্যামেরা ব্যবহার করে দিনের ২৪ ঘণ্টা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন পর্যবেক্ষণ করে। নরিস ও আর্মস্ট্রং একটি সিসিটিভি-সমৃদ্ধ সমাজকে বর্ণনা করেছেন "সবচেয়ে বড় নজরদারি সমাজ" হিসেবে।<ref>Carr, R. (2014). Surveillance politics and local government: A national survey of federal funding for CCTV in Australia. Security Journal.</ref> [http://www.google.com/intl/en_uk/earth/ গুগল আর্থ], গুগলের একটি মানচিত্র অনুসন্ধান সরঞ্জাম, স্যাটেলাইট ছবি, জিপিএস, জিআইএস, ভিডিও স্ট্রিমিং ও ৩ডি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সকল ব্যবহারকারীর জন্য বাস্তবচিত্র সরবরাহ করে। অনেকেই বলেন ''গুগল আর্থ একটি যুগের সূচনা করেছে। সেখানে সবাই একজন গুপ্তচর হতে পারে''।
দ্বিতীয়ত, নেটওয়ার্ক ডেটাবেইসের উন্নয়ন মানুষকে অজান্তেই পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৯০ সালে, টেলিভিশন তারকা [[w:Rebecca Saire|রেবেকা সেয়ার]] তার বাসার দরজার সামনে এক উন্মাদ ভক্তের গুলিতে নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, ওই হত্যাকারী তার ড্রাইভার লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে সরকারী ওয়েবসাইট থেকে তার ঠিকানা বের করেছিল। ''কুকিজ'' প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু মৌলিক তথ্যই নয়, ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ, ইমেইল ঠিকানা ইত্যাদিও সংগ্রহ করা যায়।
তৃতীয়ত, ব্যবহারকারীরাই ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেন, যা নজরদারির জন্য আদর্শ মাধ্যম। [[w:Facebook|ফেসবুক]], [[w:Twitter|টুইটার]], ব্লগ, [[w:Instagram|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। তারা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, ছবি, অনুভূতি এসব প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে থাকেন। যদিও এই ওয়েবসাইটগুলোতে নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়, তবুও ব্যবহারকারীর তথ্য ও কার্যকলাপ নজরদারির আওতায় পড়ে। ব্যবহারকারীর পরিচয় নির্ধারণে আইপি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীর অবস্থান (শহর বা জেলা) শনাক্ত করে। যদি একাধিক ওয়েবসাইটে একই নজরদারি ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং ইতিহাস একসাথে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। যেমন, একজন ব্যক্তি ফেসবুকে লগইন থাকা অবস্থায় অন্য একটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে এবং সেখানে “লাইক” বাটনে ক্লিক করে, তাহলে ফেসবুক ওই ওয়েবসাইটের ব্রাউজ ইতিহাস রেকর্ড করে, ব্যবহারকারীর বন্ধুদের সম্পর্কেও তথ্য রেকর্ড করে। এসব তথ্যের সমন্বয়ে নজরদারির জন্য একটি সামাজিক সম্পর্ক চিত্র গঠন করা যায়। সেখানে ব্যবহারকারীর বন্ধু, অবস্থান ও সময় নির্ভর তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।
আরও একটি শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে '''কম্পিউটিং ও নজরদারি'''-র ভিত্তিতে
গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নজরদারি ও তথ্য সমাজ অধ্যয়নের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা নজরদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে কম্পিউটিংয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। এর ফলে কম্পিউটার ও নজরদারির পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে কয়েকটি শ্রেণিবিন্যাস গড়ে উঠেছে: যেমন নতুন নজরদারি, ডেটাভেইলেন্স, ইলেকট্রনিক (সুপার)প্যানঅপটিকন, ইলেকট্রনিক নজরদারি বা ডিজিটাল নজরদারি। গ্যারি টি. মার্কস "নতুন নজরদারিকে" সংজ্ঞায়িত করেছেন “ব্যক্তিগত তথ্য আহরণ বা সৃষ্টির জন্য প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে। এটি ব্যক্তি বা পরিবেশ থেকে সংগৃহীত হতে পারে।”<ref>Marx 2002, 12; see also: Marx 1988, pp.217–219</ref> তাঁর মতে, পুরনো নজরদারিতে তথ্য প্রেরণ কঠিন ছিল, কিন্তু নতুন নজরদারিতে তা অনেক সহজ। ঐতিহ্যবাহী নজরদারিতে “যা নজরদারি কর্তৃপক্ষ জানে, তাও সাধারণত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তি জানে”, কিন্তু নতুন নজরদারিতে “নজরদার ব্যক্তি এমন কিছু জানে যা লক্ষ্যবস্তু জানে না।”<ref>Marx, 2002, p.29</ref> তিনি বলেন, নতুন নজরদারি দৃশ্যমান নয় বরং দূরবর্তী এবং এটি “কম জোরপূর্বক” <ref name="Marx, 2002, p.28">Marx, 2002, p.28</ref> এবং “আরও গণতান্ত্রিক” কারণ এর কিছু রূপ আরও সহজলভ্য।<ref name="Marx, 2002, p.28" /> কম্পিউটারভিত্তিক নজরদারি হচ্ছে নতুন নজরদারির একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। “কম্পিউটার নজরদারির প্রকৃতি মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে—এটিকে নিয়মিত, বিস্তৃত ও গভীর করে তোলে। প্রতিষ্ঠানগত স্মৃতি স্থান ও সময় জুড়ে প্রসারিত হয়”।<ref>Marx, 2002, p.208</ref> ডেটাভেইলেন্স হচ্ছে “তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের কর্মকাণ্ড বা যোগাযোগের পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ” (ক্লার্ক ১৯৮৮, ৫০০)। ক্লার্ক (১৯৯৪) ব্যক্তি-ভিত্তিক ডেটাভেইলেন্স (যা একজন বা একাধিক ব্যক্তির উপর নজর রাখে) এবং গণ ডেটাভেইলেন্স (যেখানে একটি গোষ্ঠী বা বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নজরদারির আওতায় আনা হয় যাতে আগ্রহের ব্যক্তি শনাক্ত করা যায়) এর মধ্যে পার্থক্য করেন। বগার্ড (২০০৬) যুক্তি দেন যে কম্পিউটার একটি প্রযুক্তি যা নজরদারির অনুকরণ করে। গর্ডন (১৯৮৭) ইলেকট্রনিক প্যানঅপটিকনের কথা বলেন। মার্ক পোস্টার (১৯৯০) “ইলেকট্রনিক সুপারপ্যানঅপটিকন” ধারণা দেন: “আজকের ‘যোগাযোগের চক্র’ এবং এগুলো দ্বারা সৃষ্ট ডেটাবেস এক ধরনের সুপারপ্যানঅপটিকন সৃষ্টি করে, এটি এমন একটি নজরদারি ব্যবস্থা যার কোনো দেয়াল, জানালা, টাওয়ার বা প্রহরী নেই” (পোস্টার১৯৯০, ৯৩)। মার্ক আন্দ্রেয়েভিচ “ডিজিটাল এনক্লোজার” ধারণা দেন,<ref>Andrejevic, M. (2004). The web cam subculture and the digital enclosure. In N. Couldry & A. McCarthy (eds.)</ref> যেখানে ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।<ref>Fuchs, Boersma, Albrechtslund, and Sandoval (eds.) (2012) Internet and Surveillance: The Challenges of Web 2.0 and Social Media. London: Routledge, p.1</ref>
তৃতীয় ধরনের শ্রেণিবিন্যাস এসেছে ওগুরা (২০০৬) এবং গ্যান্ডি (১৯৯৩)-এর মতবাদ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে নজরদারির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুঁজিবাদ এবং/অথবা জাতিরাষ্ট্র ভিত্তিক জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা।<ref>Gandy, O. H. & Farrall, K. N. (2008). Metaphoric reinforcement of the virtual fence: factors shaping the political economy of property in cyberspace. In A. Chadwick & P. N. Howard (eds.), The Handbook of Internet Politics (pp. 349–63). London: Routledge</ref> আমরা নজরদারির দুটি প্রধান রূপ আলাদা করতে পারি: '''অর্থনৈতিক''' ও '''রাজনৈতিক''' নজরদারি। ''জাতিরাষ্ট্র'' ও করপোরেশন দ্বারা পরিচালিত নজরদারির লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা, অর্থাৎ তারা যেন নির্দিষ্ট কিছু করে বা না করে, কারণ তারা জানে যে তাদের উপস্থিতি, চলাচল, অবস্থান, বা চিন্তাভাবনা নজরদারি ব্যবস্থার দ্বারা পর্যবেক্ষিত হচ্ছে বা হতে পারে।<ref>Fuchs 2008, 267–277</ref> রাজনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা সংঘটিত সহিংসতার (আইনের) হুমকির সম্মুখীন হয় যদি তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আচরণ করে এবং রাজনৈতিক অভিনেতাদের (যেমন গোপন সেবা বা পুলিশ) নজরে পড়ে। অর্থনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, বাজারের সহিংসতা ব্যক্তি ওদের নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে বা উৎপাদনে বাধ্য করে এবং পুঁজিবাদী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তাদের অর্থনৈতিক আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এই ধরনের নজরদারিতে সহিংসতা ও পরাধীনতা চূড়ান্ত অস্ত্র। নিচের ছকে বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারির ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে।
‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই প্রবণতাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, কারণ এটি মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডিং সিস্টেম ও অন্যান্য গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত আচরণের অবস্থানভিত্তিক নজরদারিকে সম্ভব করে তোলে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।’<ref>Gandy and Farall, 2008: May, Phillips: 2008</ref>
==== নজরদারির উদ্দেশ্য ====
নজরদারির অনেক উপকার থাকতে পারে। পরিস্থিতিভেদে এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও সাধারণত নিম্নোক্ত এক বা একাধিক লক্ষ্য পূরণের জন্য করা হয়:
* তল্লাশি বা ওয়ারেন্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা।
* কোনো ব্যক্তি, অবৈধ পণ্য বা অবৈধ কাজের স্থান খুঁজে বের করা।
* কোনো ব্যক্তি, অপরাধী গোষ্ঠী বা স্থানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* গোপন বা প্রকাশ্য নজরদারির মাধ্যমে কোনো অপরাধ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা।
* অভিযানের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী ব্যক্তি বা অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
== বিশ্বব্যাপী নজরদারি ==
[[চিত্র:Internet_Censorship_and_Surveillance_World_Map.svg|থাম্ব|204x204পিক্সেল|দেশভিত্তিক ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও নজরদারির মানচিত্র।]]
বিশ্বব্যাপী নজরদারি বলতে জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত নজরদারিকে বোঝায়। এর ইতিহাস ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়, যখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি করে। পরবর্তীতে এতে নিউ জিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া যুক্ত হয়, গঠিত হয় ‘ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’। তারা 'তৃতীয় পক্ষের' দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিও করে। এর মাধ্যমে গঠিত হয় একটি বিশ্বব্যাপী নজরদারি নেটওয়ার্ক, যার নাম 'ইসেলন'। এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অবগত ছিল না যতক্ষণ না [[w:Edward Snowden|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
== নজরদারির জন্য সংস্থা ==
নজরদারি ব্যবস্থা মূলত নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে। এজন্য একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ''"অল্প কিছু মানুষ অনেককে পর্যবেক্ষণ করে"''।<ref>Lyon, D. (2008). Surveillance studies: an overview (p. 140). Cambridge [u.a.]: Polity Press.</ref> তাই যে সংস্থাগুলো এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা হলো: ''সরকার, পুলিশ স্টেশন, ব্যাংক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিরাপত্তা কোম্পানি, বাণিজ্যিক ভবন'' ইত্যাদি—যাতে নাগরিক ও মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এই নজরদারি ব্যবস্থা মানুষের নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করে অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য। তবে, নজরদারি প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ, প্রেরণ ও ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই নতুন মিডিয়া যুগে, উপরে উল্লিখিত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সাধারণ কোম্পানি, ব্যক্তিগত গোয়েন্দা বা এমনকি ব্যক্তি হ্যাকাররাও ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক তথ্য ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
==== যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ====
২০১৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার [[w:এডওয়ার্ড_স্নোডেন|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সংস্থাটির মার্কিন নাগরিক ও বিদেশি রাষ্ট্রের উপর পরিচালিত ব্যাপক নজরদারি কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা শুরু করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার চেষ্টার হাত থেকে বাঁচাতে তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানে তাকে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। জুন ২০১৩-তে স্নোডেনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি সম্পদ চুরির অভিযোগ আনা হয়। স্নোডেন যে তথ্যগুলো গণমাধ্যমে ফাঁস করেন, তার মধ্যে ছিল যে এনএসএ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষের ইন্টারনেট কার্যক্রম ও ফোন তথ্য সংগ্রহ করেছিল। কেবল মার্কিন ও বিদেশি নাগরিক নয়, এনএসএ বিদেশি নেতাদের ও তাদের সহকর্মীদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে। স্নোডেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এনএসএ-এর কর্মচারী ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করতেন এই নজরদারি কার্যক্রম সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। তবে, সমালোচকেরা বলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিজীবনে অনধিকার প্রবেশ করেছে এবং তাদের অজ্ঞাতসারে নজরদারির আওতায় এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এনএসএ বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন সরকার নজরদারিতে আইনগত গণ্ডি অতিক্রম করে না, তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক ভবিষ্যতেও চলবে।<ref>Alexander Stingl, 'Technology and Surveillance' in ''Research Starters: Sociology,'' 2015</ref>
== ইউটিউব: নজরদারি না সুভেইলেন্স? ==
নজরদারি ও সুভেইলেন্সের সংজ্ঞা এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব] এর প্রেক্ষাপটে তাদের প্রয়োগ বিবেচনা করলে দেখা যায় এই দুটি ধারণা কখনও কখনও পরস্পরকে ছাপিয়ে যেতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য একাধিক উপধারা রয়েছে। যেমন: ব্লগারদের কার্যক্রম সাধারণত সুভেইলেন্সে পড়লেও কিছু ক্ষেত্রে নজরদারিতেও পড়ে। বিভিন্ন ইউটিউবারের উদাহরণ বিশ্লেষণ করা হবে। নজরদারি ও সুভেইলেন্সের প্রেক্ষাপটে সমাজের উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার পিরামিড, এবং সেই পিরামিডের যেকোনো স্তর থেকে ভিডিও ফুটেজে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত এক ক্ষুদ্র বিতর্ক। এমনকি দুইজন ইউটিউবারের একটি কেস স্টাডিও থাকবে, যাদের কনটেন্টের স্বত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তারা এখনও সেই কনটেন্টের মালিকানা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্সকে বক্তৃতার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
[[চিত্র:Logo_Canale_YouTube_(2013-2017).jpg|alt=YouTube Logo|বাম|থাম্ব|নজরদারি না সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম?]]
ইউটিউব সর্বদাই সুভেইলেন্সের একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সাধারণ মানুষ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা বিশ্বব্যাপী শেয়ার করে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউটিউবের গঠন ও বিন্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছে যাতে তারা নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে নিজেকে বিশ্বে উপস্থাপন করতে পারে। যারা এটি করে তারা 'ইউটিউবার' বা 'ভ্লগার' নামে পরিচিত। ভ্লগিং মানে হলো কোনো ঘটনাকে ভিডিও আকারে ডায়েরি হিসেবে উপস্থাপন করা, কিন্তু ইউটিউবারদের জন্য এটি মানে তাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি দিক শেয়ার করা। এর ফলে দর্শকরা তাদের জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত বোধ করেন এবং এটি টিভির তুলনায় বেশি বাস্তব মনে হয় কারণ এখানে জীবনের প্রকৃত রূপ দেখানো হয়, যা স্ক্রিপ্টেড বা পরিবর্তিত নয়। অধিকাংশ ইউটিউবার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, ভিডিও গেম খেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে যা জনগণের বাস্তব কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিভাত হয়। ইউটিউবের বিন্যাস ইউটিউবারদের নিজেদের জীবনধারা প্রচারের সুযোগ দেয়। বিনোদন ও প্রচার ছাড়াও, একটি অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে—যদি যথেষ্ট মানুষ তাদের ভিডিও দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা অর্থ উপার্জন করতে পারে। এর মানে হচ্ছে, কারিগরি দিক থেকে যদি তাদের ভিডিও যথেষ্ট সংখ্যক দর্শক দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা সেটিকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারে। জনপ্রিয় ইউটিউবারদের অনেকেই এমনটি করে থাকেন, যেমন [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]। তবে তারা সেখানেই থেমে থাকেন না, অনেকে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রি করেন - যেমন [http://redrawr.storenvy.com/ Rose and Rosie], [https://shop.spreadshirt.com/ZACKSCOTT/ ZackScottgames], আবার কেউ কেউ নিজেদের বইও প্রকাশ করেছেন - যেমন [https://www.gofundme.com/cahsvf9g/ Ashley Mardell], [http://tyleroakleybook.com/ Tyler Oakley], [https://www.zoella.co.uk/category/life/books/ Zoella]। কেউ কেউ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রবেশ করেছেন টেলিভিশন শোয়ের মাধ্যমে - যেমন [http://www.epicmealtime.com/ Epic Meal Time]। ইউটিউব সাধারণ মানুষের জন্য খ্যাতি অর্জনের একটি চমৎকার মাধ্যম, যেমন [https://www.youtube.com/user/rhettandlink2/ Good Mythical Morning] বা [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]-এর মতো কেউ কেউ প্রকৃত সফলতা অর্জন করেছেন এবং অনেক সেলিব্রিটির কাছেও পরিচিত। ইউটিউবাররা সাধারণত "সুসভেইলেন্স" ধারণার মধ্যে পড়ে, যেহেতু তারা বাস্তব জীবন ধারণ করেন এবং তারাও জানেন যে তারা একটি ক্যামেরার সামনে রয়েছেন। এটি তাদের জীবনকে ধারণ করছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় যখন [https://www.youtube.com/user/RoseEllenDix/ Rose and Rosie] এর মতো ইউটিউবাররা বলেন, তারা জীবনের বেশিরভাগ অংশ ক্যামেরাবন্দি করেন যাতে ছোট ছোট মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে থাকে। তাই, তাদের জন্য সুসভেইলেন্স হতে পারে উপকারী। তবে ইউটিউবারদের নজরদারিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আসে প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলো থেকে। সেখানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে বা সমাজের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়। [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] এবং [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] হলেন প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানানো দুইজন ইউটিউবার। সুসভেইলেন্স এবং সারভেইলেন্স-এর মধ্যে সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে যায় কারণ ইউটিউব স্বভাবতই সুসভেইলেন্স। সেখানে মানুষ নিজেরাই ক্যামেরা ধরে এবং তা সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু যখন ইউটিউবাররা অন্য সাধারণ মানুষকে প্র্যাঙ্ক করার জন্য গোপনে ধারণ করেন এবং তাদের এই ধারণার কথা জানা থাকে না, তখনই ইউটিউবের ক্যাটাগরি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
এই ধারণাটি আরও জটিল হয় যখন এতে ‘উদ্দেশ্য’ এবং ‘ক্ষমতা’র ধারণা যুক্ত করা হয়। যদি একটি শক্তির পিরামিড কল্পনা করা হয়, তাহলে তার শীর্ষে থাকবে সরকার, তারপর পুলিশ ও কাউন্সিল, এরপর পেশাজীবী/ব্যবসা/ইউটিউবার এবং সর্বনিম্নে থাকবে সাধারণ জনগণ। এই বিশেষ ক্ষমতার সম্পর্ক সুসভেইলেন্স ও সারভেইলেন্সের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করে। সরকার শুধুমাত্র সিসিটিভিকে (সম্পূর্ণ সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হয়েছে) একটি নজরদারি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যদিও কেউ কেউ বলবেন তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি নিখাদ নয় এবং সেটা গুপ্তচরবৃত্তির মতো, তবুও যদি আমরা ধরে নিই যে উদ্দেশ্য নিখাদ, তাহলে তাদের নজরদারি সাধারণ জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। এটি আরও সুস্পষ্ট হয় যখন দেখা যায়, বিশেষভাবে কিছু কর্মী নিয়োগ করা হয় ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং যেকোনো বেআইনি কার্যকলাপ রিপোর্ট করার জন্য। ফলে এই ফুটেজ নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃত নয় কারণ এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুরক্ষা এবং এটি একটি বিশ্বস্ত উৎস থেকে আসে। তবে, পরে এই বিষয়ে একটি যুক্তি তুলে ধরা হবে যে কীভাবে সরকার পক্ষ থেকেও ফুটেজ বিকৃত করা যেতে পারে।
পিরামিডের পরবর্তী স্তরে রয়েছে পুলিশ এবং কাউন্সিল, যাদের উদ্দেশ্যও সাধারণ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পেশাদার এবং নিখাদ। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, যেমন আমেরিকান পুলিশ বনাম ব্রিটিশ পুলিশের প্রসঙ্গ যেখানে [http://news.sky.com/story/1633328/scots-police-teach-us-cops-how-to-avoid-gun-use/ ব্রিটিশ পুলিশ আমেরিকান পুলিশকে কম সহিংসভাবে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখাতে হয়েছে], কারণ আমেরিকান জনগণ তাদের পুলিশের দ্বারা আতঙ্কিত বোধ করছিলেন এবং পুলিশের অতিরিক্ত অস্ত্র ব্যবহার তাদের উদ্বিগ্ন করেছিল। এতটাই যে জনগণ মনে করে যে রেকর্ড করা ফুটেজ বা ড্যাশ ক্যামেরার ভিডিও সত্য ঘটনাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না, যা ফুটেজের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে এবং এই সন্দেহ জাগে যে এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে যেন অভিযুক্ত পুলিশের বদলে ভুক্তভোগীকেই দোষী প্রমাণ করা যায়। [http://www.huffingtonpost.com/news/police-brutality/ হাফিংটন পোস্ট] এই বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়েছে এবং [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] নামক একটি আন্দোলনের কথাও বলেছে। তবে পুলিশের নজরদারি উদ্দেশ্যগতভাবে ভালো হওয়ার কথা, কারণ এটি অপরাধীকে আদালতে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে।
এর নিচে রয়েছে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং ইউটিউবাররা। প্রথম দুই শ্রেণি নজরদারির জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করেন তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করতে। তাদের উদ্দেশ্যও ভালো, কারণ তারা শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এটি ব্যবহার করেন এবং ফুটেজ মূলত বিকৃত থাকে না। তবে এটি কিছুটা অস্পষ্ট, কারণ এটি সেই স্তর যেখানে নজরদারি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির জন্য করা হয়। তাই উদ্দেশ্য নির্ধারণ কিছুটা কঠিন, তবে তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ফুটেজ বিকৃত না রাখার প্রবণতা থাকবে, যেমন কোনো আইনি মামলা হলে এটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে ইউটিউবারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও আকর্ষণীয়। ইউটিউবারদের উদ্দেশ্য সাধারণত স্বচ্ছ হলেও কখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জনগণকে বিনোদন দেওয়া (পিরামিডের নিচের স্তর), তথ্য সরবরাহ করা বা সমাজের নির্দিষ্ট ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা। এটি প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, যেগুলো হয় হাস্যরস সৃষ্টি করে বা সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে, যেমন বিপদে মানুষের সাহায্য না করার প্রবণতা। ইউটিউবারদের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা সেলিব্রিটি হলেও সাধারণ মানুষের মতোই মনে হয়, কারণ আমরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন দেখতে পাই। কিন্তু তারপরও তারা কিছুটা উচ্চতর অবস্থানে থাকে। যেমন, তারা একটি প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে পারে, যা অন্য কেউ পারত না। এখানেই নজরদারি ও সুসভেইলেন্সের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইউটিউবারদের যখন দেখা যায় তারা গোপনে সাধারণ মানুষকে ধারণ করছে, তখন এটি একধরনের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের সীমারেখা আরও অস্পষ্ট হয়।
এর আগে আলোচনা হয়েছিল যে সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্স ফুটেজ বিকৃত এবং অ বিকৃত — এই দ্বন্দ্বে উপনীত হয়, যা আবার ‘উদ্দেশ্য’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর একটি উদাহরণ হলো স্টোকস ক্রফটে ‘অ্যান্টি-টেস্কো’ ঘটনা। সেখানে, গণমাধ্যম একটি দাঙ্গার খবর প্রচার করে যেখানে সাধারণ মানুষ টেস্কো সুপার মার্কেট স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। পরে ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওগুলো থেকে জানা যায় যে দাঙ্গা আসলে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল, যা সাধারণ জনগণের প্রাথমিক দাবিকে সমর্থন করে।<ref>http://m.nms.sagepub.com/content/17/5/755</ref> পিরামিডের শীর্ষে সরকারের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজই হওয়া উচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃতহীন, যেহেতু এটি কেবল জনগণের সুরক্ষার জন্যই রয়েছে। তবে এই যুক্তির বিরোধী যুক্তি হতে পারে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফুটেজ থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয় বা কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা আদালতে দেখানো হয় যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এটি অবশ্য তাত্ত্বিক, তবুও এটি একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে যে কীভাবে সরকার এই ফুটেজ ব্যবহার করে ভুল ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে। এটি আবার উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ আদালত সিসিটিভি ফুটেজকে প্রায়শই নির্ভরযোগ্য বলে ধরে নেয়, যদিও তা নাও হতে পারে। অন্যদিকে ইউটিউবার ও সুসভেইলেন্সের ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, জনগণ নিজেরাই জানে যে তাদের ফুটেজে বিকৃতি ঘটানো যেতে পারে কারণ এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং উদ্দেশ্য সবসময় স্পষ্ট নয়। যেমন [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] ও [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] – তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা জনগণকে গোপনে ধারণ করে সমাজের কিছু দিক উন্মোচনের নামে জনগণকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তবে ইউটিউব এবং জনগণের ফুটেজ কখনো কখনো আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারে কারণ অনেক সময় জনসাধারণ নির্দিষ্ট ঘটনাকে সত্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও ধারণ করে। এর উদাহরণ আবার [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। সেখানে আমেরিকার সাধারণ মানুষ পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করছে কারণ তারা মনে করে সরকার পক্ষের ফুটেজ বিকৃত বা অবিশ্বস্ত এবং তাদের ভিডিও বেশি নির্ভরযোগ্য। অধিকাংশ সংস্কৃতিতে কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব থাকে, যার ফলে জনগণ সরকারিভাবে রেকর্ডকৃত ফুটেজের চেয়ে অপেশাদার ভিডিওকেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করে। এটি ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে জনগণ হয়তো সত্যিই সেই ফুটেজকে বেশি বিশ্বাস করে যা সরকারিভাবে নয় বরং জনগণ নিজেরাই ধারণ করেছে। সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের মধ্যে এই উদ্দেশ্য ও নির্ভরযোগ্যতার বিতর্ক পিরামিডের স্তরগুলোর মাঝে একটি জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
সুসভেইলেন্সের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে এবং [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ সপ্তম সপ্তাহের বক্তৃতা]-এর আলোকে দুটি ইউটিউবার ব্রিয়া ও ক্রিসির একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি উঠে আসে, যারা প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত কপিরাইট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ছেন। ক্রিসি যখন আঠারো বছর বয়সে ছিলেন, তখন তার প্রাক্তন প্রেমিক তার অজান্তে তাদের যৌন সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে এবং তা কিছু ওয়েবসাইটে আপলোড করে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কপিরাইট ইস্যু এখানেই আসে, কারণ ক্রিসি কখনোই এই ভিডিও ধারণে সম্মতি দেননি এবং তিনি ঘটনাটি মনে করতে পারছেন না কারণ তাকে অ্যালকোহল খাইয়ে মাতাল করা হয়েছিল। তবুও ফুটেজের মালিকানা তার নয়, কারণ এটি তার প্রেমিকের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কপিরাইট আইন অনুযায়ী, যদিও এগুলো বর্তমানে হালনাগাদ হয়েছে, এই ঘটনা সেই পরিবর্তনের আগে ঘটায় এই আইন তাকে সহায়তা করতে পারছে না। ভিডিওটি সরাতে হলে তাকে কেবল তার প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ভিডিওটির মালিকানা আদায় করতে হবে। এই কপিরাইট অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই এখনও চলছে।
এই বিষয়ে [https://www.youtube.com/watch?v=xFHbuFT_sHU/ দ্য গার্ডিয়ান]-এর একটি ছোট তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল, পাশাপাশি ব্রিয়া এবং ক্রিসির ভ্লগও ছিল। এছাড়াও তাদের [https://www.generosity.com/fundraising/revenge-porn-victim-seeks-justice/ পৃষ্ঠার] একটি লিঙ্ক রয়েছে। সেখানে তাদের গল্পটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইউটিউব দম্পতিকে নিয়ে এই কেস স্টাডিটি উদ্দেশ্য সম্পর্কিত অংশের সঙ্গেও সম্পর্কিত, কারণ ক্রিসির প্রাক্তন প্রেমিক তাকে তার সম্মতি ছাড়াই ভিডিও করেছিল, যার পেছনে ছিল অসৎ উদ্দেশ্য। এর অর্থ দাঁড়ায়, এই সুভেইলেন্সটি ছিল ক্ষতিকর এবং এটি নজরদারিতে পরিণত হয়, যেহেতু ক্রিসি জানত না যে তাকে ভিডিও করা হচ্ছে। ক্রিসির জন্য এই ভয়ানক অভিজ্ঞতাটি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারের] সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। সেখানে অনলাইন পরিচয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কারণ তার সুনাম এবং অনলাইন সত্তা এই একটি ভিডিওর কারণে খারাপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তিনি স্মরণ করেছেন, যারা তাকে একজন আদর্শ হিসেবে দেখতেন, তারা যখন ভিডিওটি আবিষ্কার করলেন, তখনই তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গেল। তরুণদের জন্য ইতিবাচকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে যেভাবে তিনি এতদিন ধরে চেষ্টা করেছিলেন, সেই অনলাইন পরিচয় একটি ভয়ানক ভিডিওর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। এটি আলোচিত বিষয়ে সম্পর্কিত, কারণ যদিও এখানে ইউটিউবকে একটি ইতিবাচক সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, তবে যদি উদ্দেশ্য খারাপ বা অস্পষ্ট হয়, তবে এটি নেতিবাচকও হয়ে উঠতে পারে।
সবশেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্স অবশ্যই লেকচারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং ইউটিউবকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়। [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারে] অনলাইন পরিচয় নিয়ে জিজি এ. পাপাচারিসির <ref>Zizi A. Papacharissi, 'A Private Sphere' in Private Sphere : Democracy in a Digital Age, (2013)</ref> একটি লেখা ছিল যেখানে ব্লগিং (পৃষ্ঠা ১৪৪) এবং ইউটিউব (পৃষ্ঠা ১৫০)-এর কথা বলা হয়েছে। বইটি ইউটিউবকে এমন একটি স্থান হিসেবে বর্ণনা করেছে যেখানে “তোমাকে কী করতে হবে তা বলে না” (পৃষ্ঠা ১৫০) এবং যেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়বস্তু থাকে, “ইউটিউবের অনেক গোত্র”-এর উল্লেখ রয়েছে (পৃষ্ঠা ১৫০)। এই ‘গোত্রগুলি’ তাদেরকে বোঝাতে পারে যারা LGBT ইউটিউবার, যাদের অন্য কোথাও স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ নেই, তাই ইউটিউব তাদের একটি জায়গা দেয় নিজস্বভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের প্রকাশ করার জন্য। এতে আরও বলা হয়েছে “ইউটিউব একটি বিকল্প মতপ্রকাশের মাধ্যম, যা প্রচলিত আন্দোলন, মতপ্রকাশ বা প্রতিবাদের চেয়ে আলাদা... কিছু ভিডিও শুধু ব্যঙ্গ, রসবোধ বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের জন্ম দেয়, যা সমান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা ও মতপ্রকাশের মাধ্যম” (পৃষ্ঠা ১৫১)। এটি অনলাইন পরিচয়ের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ ইউটিউব মানুষকে তাদের পরিচয় অনলাইনে প্রকাশ করতে দেয় বা অন্যদের দ্বারা তাদের পরিচয়কে উপস্থাপন করতে দেয়, যার ফলে এক ধরণের কমিউনিটি গড়ে ওঠে যেখানে মানুষ নিজেদের মত অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত অনুভব করে। ইউটিউবকে ভালো মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করার এই ধারণা ব্যাখ্যা করে কেন সুভেইলেন্স এখানে বিকশিত হয়েছে, কারণ মানুষ এখানে যা ইচ্ছা তা করতে এবং তৈরি করতে পারে এবং এটি নিজেই সুভেইলেন্স, কারণ তারা নিজেরাই ক্যামেরার সামনে সচেতনভাবে রেকর্ড করছে।
নজরদারি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ চতুর্থ সপ্তাহের] “অলওয়েজ অন” লেকচারের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ সেখানে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে আমরা সবসময় কোনো না কোনো প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত আছি, যেমন সিসিটিভি ফুটেজ সর্বদা আমাদের ওপর নজর রাখছে এবং আমাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। “হিউম্যানিটি বনাম নজরদারি” অংশে বলা হয়েছে, কিভাবে সাধারণ মানুষ এখন এমন অ্যাপ কিনতে পারে যা দিয়ে অন্যদের উপর নজরদারি করা যায় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। কিন্তু সবার উপর এই ক্রমাগত নজরদারি “একটি অনলাইন সত্তা” তৈরি করে, যা দ্বিতীয় সপ্তাহের আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ অধিকাংশ মানুষ জানে না যে তাদের রেকর্ড করা হচ্ছে, তবুও এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা দৃশ্যমান এবং তাদের এমন একটি দিক তুলে ধরা হয় যা আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)। ড্যানাহ বয়েড <ref>danah boyd, Participating in the always-on culture in The Social Media Reader by Michael Mandiberg, (2012)</ref> “অলওয়েজ অন” থাকার বিষয়ে বলেন, “এটি আর শুধু অন বা অফ থাকা নিয়ে নয়। এটি এমন একটি পৃথিবীতে বসবাস করা যেখানে যখনই ও যেখানেই প্রয়োজন, তখনই মানুষ এবং তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়।” (পৃষ্ঠা ৭১-৭২) বয়েড এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেও এটি নজরদারির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ সাধারণ মানুষ জানে যে তাদের চারপাশে সিসিটিভি রয়েছে, কিন্তু তারা যেন সেটি নিয়ে ভাবিত নয়, যদিও এটি তাদের রেকর্ড করছে / তাদের অনলাইন প্রোফাইলের আরেকটি অংশ তৈরি করছে।
[http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ অষ্টম সপ্তাহের লেকচারে] আলোচিত "কগনিটিভ সারপ্লাস" এর প্রসঙ্গে সুভেইলেন্স অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে মানুষের হাতে অনেক অবসর সময় রয়েছে, যেহেতু শ্রমিকশ্রেণির কাজকর্মে প্রযুক্তি স্থান নিয়েছে। দেয়া উদাহরণগুলো প্রধানত গেমারদের যারা কঠিন পরিস্থিতিতে গেম সম্পন্ন করেছেন। তবে এটি সুভেইলেন্সের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত, কারণ এই বাড়তি সময় না থাকলে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম এবং সুভেইলেন্সের চর্চা সম্ভব হতো না; যেমন ব্লগিং, ডেইলি লাইফ ভিডিও তৈরি কিংবা সমাজ নিয়ে মন্তব্য ইত্যাদি।
এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ নতুন মাধ্যম যুগে। সেখানে নজরদারি এবং সুভেইলেন্স উভয়েরই কার্যকারিতা রয়েছে। ব্যবহারকারীরা তাদের ভিডিওগুলো অনলাইনে স্বাধীনভাবে শেয়ার করার মাধ্যমে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুহূর্তেই সারা পৃথিবীতে পৌঁছে যায়, তা সরকার চাইলেও হোক বা না চাইলেও। এই চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা উচ্চস্তরের কর্মকাণ্ড তদারকির সুযোগ পায়, অন্যভাবে বললে, ''অসংখ্য মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করে''। উদাহরণস্বরূপ, [[w:২০১৩-এর_বোস্টন_ম্যারাথন_বোমা_হামলা|২০১৩ সালের বোস্টন ম্যারাথন বোমা হামলা]] চলাকালীন বিপুল পরিমাণ ছবি ও ভিডিও Vine, Facebook, YouTube প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যম সাইটে আপলোড করা হয়, যা পুলিশি তদন্তে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক ছিল।<ref>Biddinger, P. D., Baggish, A., Harrington, L., d'Hemecourt, P., Hooley, J., Jones, J., ... & Dyer, K. S. (2013). Be prepared—the Boston Marathon and mass-casualty events. New England journal of medicine, 368(21), 1958-1960.</ref> অন্যদিকে, সুভেইলেন্সের সুযোগে অল্পসংখ্যক মানুষও ইউটিউবের মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি ব্যবহারকারীর সামাজিক মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে, যেমন [https://sumall.com/ SumAll], [http://www.thoughtbuzz.com/ ThoughtBuzz] এবং GraphDive। সাধারণত এই তথ্য সংগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মার্কেটিং ও গ্রাহকসেবা কার্যক্রমে ব্যবহারকারীদের মৌলিক তথ্য, শখ, যোগাযোগ, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি কাজে লাগানো।
== আইন ও বিধিনিষেধ ==
[http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Definition সংজ্ঞা] অনুযায়ী, নজরদারি হলো তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। যেহেতু কোম্পানি এবং সরকার বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে, যেমন যোগাযোগ তথ্য এবং তার বিষয়বস্তু, তাই নজরদারির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং গোপনীয়তার ক্ষতি ঠেকাতে আইন ও বিধিনিষেধ থাকা আবশ্যক। হাউস অফ লর্ডস কনস্টিটিউশন কমিটি বলেছে: 'নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জাতির জীবনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক নজরদারি গোপনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।' [http://www.theregister.co.uk/2009/02/06/lords_reject_government_data/]
একটি আচরণবিধি রয়েছে, যা স্টেট সেক্রেটারির পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। সেখানে নজরদারি ক্যামেরা সিস্টেম কীভাবে যথাযথভাবে ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ([http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Protection_of_Freedoms_Act_2012 ২০১২ সালের ফ্রিডম সুরক্ষা আইন] এর ধারা ৩৩)।
==== নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধি ====
নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধ <ref>Surveillance Camera Code of Practice. Retrieved from: Surveillance Camera Code of Practice, 2013, London: The Stationery Office</ref> নির্দেশনা প্রদান করে যাতে নজরদারি প্রযুক্তিগুলো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। যেন সেগুলো মানুষের ও সম্পদের নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই আচরণবিধির উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা এবং এই আস্থা তৈরি করা যে ক্যামেরাগুলো কেবলমাত্র তাদের সুরক্ষার জন্যই স্থাপন ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কোডটি এমন নির্দেশনা দেয় যাতে নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার স্বচ্ছ ও বোধগম্য হয়। তবে এই কোড শুধুমাত্র তাদের উপরই প্রযোজ্য যারা জনসমক্ষে স্থাপিত নজরদারি প্রযুক্তি বা ক্যামেরা ব্যবহার করে।
==== উদাহরণ ====
নজরদারির কথা বললে, [[w:September 11 attacks|৯/১১ হামলার]] পর আমেরিকান সরকারকে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে আমেরিকান সরকার ''[https://www.justice.gov/archive/ll/highlights.htm প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট]'' এবং ''[https://www.dhs.gov/homeland-security-act-2002 হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট]'' প্রণয়ন করে। সেখানে প্রয়োজনে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে।<ref>Kennedy, S. S. (2015). Congressional Investigations. The Encyclopedia of Civil Liberties in America, 213.</ref> তবে এই আইনগুলোর জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনা করেছে। ''জার্মান মিডিয়া আইন'' বিশ্বে প্রথম আইন যা ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে বলা হয়েছে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকতে হবে।<ref>Spindler, G. (2014). Social Networks and Liability—the Difficult Triangle Between Network Operators, Users and Third Parties in German Media Law. In Varieties of European Economic Law and Regulation (pp. 863-892). Springer International Publishing.</ref>
১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক গোপনীয়তা তথ্য কেন্দ্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে একটি বৈশ্বিক গোপনীয়তা জরিপ প্রকাশ করে থাকে, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত গোপনীয়তা প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়। গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার প্রতিবেদন (প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল ২০০৭ক)৭৫টিরও বেশি দেশে নজরদারি এবং গোপনীয়তা রক্ষার অবস্থা মূল্যায়ন করে।
‘গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটি মানব মর্যাদা এবং মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা ইত্যাদি মূল্যের ভিত্তি। এটি আধুনিক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার হয়ে উঠেছে।<ref>Karen Lawrence Öqvist (2008) 'All in the Name of National Safety' in Virtual Shadows Your privacy in the information society, Swindon: The British Computer Society, p.110.</ref>
সেই অনুযায়ী, ইউরোপে তথ্য গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপাত্ত গোপনীয়তা নির্দেশিকা (৯৫/৪৬/EC) দ্বারা সমর্থিত। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের উচিত একটি গোপনীয়তা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা যাতে এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে রয়েছে তথ্য সুরক্ষা আইন ১৯৯৮ (তথ্য কমিশনারের কার্যালয় ১৯৯৮)। যুক্তরাজ্যের যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের সরকারে নিবন্ধন করতে হয় এবং তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
==== টেলিফোন কোম্পানির জন্য আইন ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের আদালত নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তা সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকারকে গোপনীয়তা অধিকারের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিষেবা প্রদানের সময় সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের বা প্রকাশের জন্য গ্রাহকের অনুমতি নিতে হয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেগুলেশন কোডের টাইটেল ৪৭, ধারা ৬৪.২০০৫)[https://www.law.cornell.edu/cfr/text/47/64.2005]। অবৈধভাবে অনুসৃত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ প্রকাশ করা যেতে পারে (মার্কিন কোডের টাইটেল ১৮, ধারা ২৫১১)[https://www.law.cornell.edu/uscode/text/18/2511] এবং অননুমোদিতভাবে ব্যবহারকারীর ফাইল অনলাইনে প্রবেশ নিষিদ্ধ (১৯৮৬ সালের মার্কিন ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্রাইভেসি অ্যাক্ট)[https://it.ojp.gov/privacyliberty/authorities/statutes/1285]। এই শর্তগুলো শিল্পোত্তর গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিগত তথ্যের দুর্বলতাকে সরাসরি স্বীকৃতি দেয়। তবে, আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এসব নিয়মাবলী বেসরকারি খাতে সংগৃহীত সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ১৯৯৯ সালের ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী আরও কঠোর নিয়মাবলী অনুসরণ করে যা ভোক্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে [http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents]। এই নির্দেশিকা ভোক্তা তথ্যের উপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং বিদেশি বাণিজ্য অংশীদারদের সমান মানের সুরক্ষায় আবদ্ধ করে <ref>Lee, Laurie Thomas (2000). Privacy, security and intellectual property. In Alan B. Albarran & David H. Goff (eds.), Understanding the Web: Social, Political, and Economic Dimensions of the Internet (pp. 135–64). Arnes: Iowa State University Press</ref>)। যদিও ব্যক্তিগত তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ থেকে যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা না থাকলে অন্য দেশে স্থানান্তর নিষিদ্ধ, তবে বিশ্বায়িত ব্যবসার প্রকৃতিগত কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির মাধ্যমে গোপনীয়তা বিধানের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক কোম্পানির সাথে ব্যবসা করতে পারে (যেমন: লি, ২০০০)। এই চুক্তিগুলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে আইনি সুরক্ষার চেয়ে অগ্রাধিকার না দিলে, তথ্যের অপব্যবহার এড়ানো অসম্ভব।<ref>Zizi A. Papacharissi, A Private Sphere: Democracy in a Digital Age, pp.43-44.</ref>
==== বিধিনিষেধ ====
সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি পরিচালনার জন্য কিছু শর্ত পূরণ নিশ্চিত করতে [[w:Data Protection Act 1998|ডেটা সুরক্ষা আইন ১৯৯৮]]-এর মাধ্যমে কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এই বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে:
# চিত্র ধারণকারী ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণ করা
# তৃতীয় পক্ষের কাছে উপকরণ প্রকাশ না করা
# উপকরণ যতদিন প্রয়োজন ততদিন সংরক্ষণ করা
# পরিচয় নিশ্চিত করা, অর্থাৎ নজরদারি ক্যামেরা চালু রয়েছে তা জানানো<ref>Data Protection Act. In 'legislation.gov.uk´. Retrieved from http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents/enacted .</ref>
এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, ভিডিও উপকরণ কেবল তখনই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে যদি সিসিটিভি আইনগত বিধিনিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যদি সিসিটিভি অপরাধ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়ে থাকে, তবে অপারেটররা প্রয়োজনমতো উপকরণ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
==== খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল ====
[[w:Draft Investigatory Powers Bill|খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল]] যুক্তরাজ্যের সংসদের একটি যৌথ কমিটির দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়। এটি ক্ষমতাধর সংস্থা এবং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি তিনটি পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ক্ষমতাধর সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য সংস্কার প্রস্তাব করে। তদুপরি, তারা গ্যারান্টির একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দেয় যাতে আইন মেনে চলা নিশ্চিত হয়।
খসড়া বিলের তিনটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে:<ref>Draft Investigatory Powers Bill. Retrieved from: https://www.gov.uk/government/uploads/system/uploads/attachment_data/file/473770/Draft_Investigatory_Powers_Bill.pdf</ref>
# এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা ও [[w:Intelligence agency|গুপ্তচর সংস্থার]] যেসব ক্ষমতা ইতোমধ্যে রয়েছে, সেগুলোকে একত্র করবে। এটি যোগাযোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এসব ক্ষমতাকে স্পষ্ট ও বোধগম্য করে তুলবে।
# এটি অনুমোদন ও তদারকি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে এবং [http://definitions.uslegal.com/i/intercept-warrant/ অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্ট]-এর জন্য একটি ‘ডাবল-লক’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে, যাতে সেগুলো কেবল বিচারকের অনুমোদনের পরই কার্যকর হয়। এর ফলে, এক নতুন তদন্তকারী ক্ষমতা কমিশনার (IPC) নিযুক্ত করা হবে যিনি এই ক্ষমতাগুলো আইন অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা তদারকি করবেন।
# এটি নিশ্চিত করবে যে সমস্ত ক্ষমতা ডিজিটাল যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইন্টারনেট সংযোগ রেকর্ড (ICRS) সংরক্ষণের বিধান প্রদান করবে, যা কোনো ডিভাইসের দ্বারা প্রবেশ করা ইন্টারনেট সেবাসমূহের রেকর্ড।
==== 'তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল' ====
তদন্তকারী ক্ষমতা বিলের উপাদানগুলো অপব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য একজন পর্যবেক্ষক দরকার। [[w:Investigatory Powers Tribunal|তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল]] নামে একটি কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি সরকারের কাছ থেকে স্বাধীন, যার কাজ হচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো যেন মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে তা নিশ্চিত করা। কেউ যদি মনে করে তারা বেআইনি কার্যক্রমের শিকার হয়েছে, তবে তারা ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে অভিযোগ দাখিল করতে পারে এবং ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি যাচাই করে দেখবে।<ref>The Investigatory Powers Tribunal. Retrieved from : http://www.ipt-uk.com/section.aspx?pageid=1</ref>
==== ২০১৪ সালের তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
যুক্তরাজ্যের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনে, পার্লামেন্ট ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন পাস করে যাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো টেলিফোন ও ইন্টারনেট রেকর্ডে প্রবেশের পূর্বতন ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। এই আইন কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করেনি, তবে এটি স্পষ্ট করেছে যে, বিদেশে অবস্থিত কিন্তু যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপরও এই আইন প্রযোজ্য।
এই আইন 'ডেটা রিটেনশন (ইসি নির্দেশিকা) রেগুলেশন ২০০৯' (S.I. 2009/859) প্রতিস্থাপনের জন্য গৃহীত নতুন আইন প্রবর্তনের ক্ষমতা প্রদান করে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত সুরক্ষার বিধানও রাখে। এই আইন কার্যকর করা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, যুক্তরাজ্যে যেসব কোম্পানি যোগাযোগ সেবা প্রদান করে তারা রাষ্ট্র সচিবের অনুরোধ অনুযায়ী যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্টে সাড়া দিতে বাধ্য হয়।<ref>Data Retention and Investigatory Powers Act 2014. Retrieved from: http://www.legislation.gov.uk/ukpga/2014/27/notes/division/2</ref> এই আইনের উপাদানগুলো বিদ্যমান কাঠামোকে ব্যাখ্যা ও দৃঢ় করে।
==== ২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইন ====
২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইনে সরকারি ডেটাবেসে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ধারণ ও ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
* এটি পুলিশ কর্তৃক আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করে
* এই আইন নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার জন্য একটি আচরণবিধি প্রবর্তন করে, তবে কেবল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত নজরদারির বিচারিক অনুমোদনের জন্য
* এটি তথ্যের স্বাধীনতা অধিকারের সম্প্রসারণ ঘটায়, যার অধীনে ডেটাবেসগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী ফরম্যাটে উন্মুক্ত করতে হবে
* এটি কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ক্ষমতার জন্য একটি আচরণবিধি সরবরাহ করে। সেখানে এই ক্ষমতাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিলযোগ্য
যুক্তরাজ্যের ডেটা সুরক্ষা আইন (DPA) আপনাকে একটি তথ্য বিষয় হিসেবে আপনার উপর কী সংরক্ষিত রয়েছে এবং কে সংরক্ষণ করছে তা জানার অধিকার প্রদান করে। এই আইনে স্বচ্ছতার অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর অর্থ, একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেটি সরাসরি আপনার পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত, তা সরকার বা অন্য যেকোনো সংস্থা সংরক্ষণ করলে আপনি তা জানার অধিকার রাখেন। আপনাকে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে এবং আপনার অনুরোধ যৌক্তিক হলে তারা তা মেনে চলতে বাধ্য।<ref>Öqvist, 2008 p.112</ref>
==== ২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন (আরআইপি বা আরআইপিএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন যা সরকারি সংস্থাগুলোকে নজরদারি ও তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ডাকযোগে যোগাযোগের বিষয়বস্তু অনুসরণ; যোগাযোগের বিষয়বস্তু ছাড়া অন্যান্য তথ্য (যেমন যোগাযোগের ধরন, ফোন নম্বর, ইন্টারনেট ঠিকানা, ডোমেইন নাম, ডাক ঠিকানা, তারিখ, সময় ও সময়কাল) সংগ্রহ; গুপ্তচর, তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী অফিসার ব্যবহার; ব্যক্তিগত ভবন ও যানবাহনে ইলেকট্রনিক নজরদারি; কাউকে অনুসরণ করা; এবং এনক্রিপ্ট করা ডেটা অ্যাক্সেস করা।
==== ১৯৮৪ সালের টেলিকমিউনিকেশন আইন ====
টেলিকমিউনিকেশন আইন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত একটি বিধান, যার অধীনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়:
* ব্রিটিশ টেলিকমকে বেসরকারিকরণ
* ভোক্তার স্বার্থ ও বাজার প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্য 'Oftel' নামে একটি টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা
* টেলিকমিউনিকেশন পরিচালনা কিংবা অন্য কোনো সিস্টেমের সাথে সংযোগ করার জন্য লাইসেন্স প্রবর্তন করা। লাইসেন্স ছাড়া তা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়
২০১৪ সালের এপ্রিলে হাউস অফ কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিবেদনে টেলিকমিউনিকেশন আইন ১৯৮৪-এর অধীনে যোগাযোগ তথ্য সংগ্রহ এবং এই ক্ষমতার তদারকির অভাব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
== মানবতা বনাম নজরদারি ==
=== মানবতার পক্ষে যুক্তি ===
"নজরদারি নিয়ে আলোচনায় একটি প্রধান রাজনৈতিক উদ্বেগ হলো: নিরাপত্তার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ ও নতুন নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার কি জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ বইয়ের মত একটি দমনমূলক সর্বনিয়ন্ত্রিত সমাজ নিয়ে আসছে?"<ref>[http://www.worldcat.org/title/our-biometric-future-facial-recognition-technology-and-the-culture-of-surveillance/oclc/630468338 Our Biometric Future: Facial Recognition Technology and the Culture of Surveillance].</ref> নজরদারি ক্যামেরাগুলো প্রতিটি রাস্তার কোণায়, প্রতিটি পাব-এ, প্রতিটি গণপরিবহন ব্যবস্থায় বসানো হয়েছে। এগুলো আমাদের শহরের গায়ে এবং মানুষের মানসিকতায় স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। বলা হয় যে, যুক্তরাজ্যের কোনো শহুরে এলাকায় আপনি প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে প্রায় ৩০টি নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার আওতায় পড়েন — ক্যামেরা নয়, সম্পূর্ণ ব্যবস্থা! অর্থাৎ, সেটি প্রায় ৩০০টি ক্যামেরা হতে পারে! ব্রিটিশ সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ৪ থেকে ৬ মিলিয়ন নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে। প্রযুক্তি বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে চলেছে। যা একসময় একটি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, এখন তা মুখ শনাক্ত করতে কিংবা আচরণ পূর্বাভাস দিতে পারে। মানবতা বনাম নজরদারি বিতর্কে আসলে কে জয়ী হচ্ছে?
এই ধরণের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ একটি জীবনযাত্রার মান সৃষ্টি করেছে যা [[w:Big Brother (franchise)|বিগ ব্রাদার]]-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেখানে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী একজন সাধারণ নাগরিক জানেন যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারির আওতায় রয়েছে—একেবারে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-এর মতো। এটি কেবলমাত্র জনসাধারণের প্রতিদিনের জীবনে সীমাবদ্ধ নয়, একজন সাধারণ ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্যবহারের উপরও নজরদারি চালানো হয়, [http://www.theguardian.com/world/2015/nov/04/theresa-may-surveillance-measures-edward-snowden এমনকি যদি তার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড না-ও থাকে]। নজরদারি নিজেই গোপনীয়তার উপর হস্তক্ষেপ, তবে এর ইতিবাচক ফলাফল ও সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করা যায় না। রেকর্ড করা ফুটেজ আদালতের মামলায় ব্যবহার করা যায় যেমনটি রাস্তার অপরাধ বা [http://www.cctvcamerapros.com/Nanny-Camera-Court-Evidence-s/288.htm বাড়ির অভ্যন্তরেও] হয়, তবে এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি শহরে ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। এটি এমনকি ঘরে কিংবা বাইরে অজান্তে কারো ওপর ক্যামেরা বসানো নৈতিক ও নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে।
যদিও—বিগ ব্রাদার শো-এর মতো করে ফুটেজ দেখা এত সহজ নয়—তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখা যায়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপগুলো নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখার সুযোগ করে দেয়। এটি আবার সেই প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয় যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (যার মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়—যদিও এটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি বাস্তব চিত্র দেখাতে সহায়ক হতে পারে, এটি একইসঙ্গে অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের—যেমন পেডোফাইলদের—জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে, যারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখা উচিত।
কখনো কখনো এটি এমন একটি অবস্থা হয় যেখানে জনগণ নজরদারির বিপক্ষে দাঁড়ায়, অথচ একইসাথে শহর ও শহরতলিতে অপরাধ বা বিপদ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করতে চায়। সাধারণ মানুষও তাদের মুখমণ্ডল রেকর্ড করে ভবিষ্যতে সংরক্ষণ করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। অনলাইনে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা অত্যন্ত সহজ—গুগলে মাত্র একটি সার্চেই ৯.৫ মিলিয়ন ফলাফল পাওয়া যায়। এই সহজলভ্যতা ও দ্রুততা যে কারো জন্যই উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত, যিনি কখনো কোনো জনসমাগমপূর্ণ স্থানে ছিলেন। এটি শুধুমাত্র সরকারের ব্যবহারের জন্য নয়, তা হলে এটি এত সহজে পাওয়া যেত না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, নজরদারি বিরক্তিকর ও অনুপ্রবেশমূলক হলেও এটি জননিরাপত্তার জন্য এবং অপরাধমূলক ঘটনার ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ সত্য ফুটেজ প্রদানের জন্য অপরিহার্য। এটি জরুরি সেবাসমূহের (যেমন পুলিশ) প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যাতে তারা ঘটনার নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই হস্তক্ষেপ করতে পারে।
তাহলে কি এত ক্যামেরার সত্যিই প্রয়োজন আছে? সমাজ সবসময় নজরদারির চক্ষু সহ্য করে এসেছে কারণ আমাদের মগজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু কতদিন এই যুক্তি কার্যকর থাকবে? যদি তারা এই সিস্টেমগুলো এমনভাবে আপগ্রেড করে যাতে শুধু দেখা নয়, মানুষের কথাবার্তাও শুনতে পারে এবং মুখ শনাক্তকরণ সংরক্ষণ করে আপনার ওপর নজর রাখতে পারে—তবে কি সত্যিই এটি নিরাপত্তার জন্য?
তবে আপনি লক্ষ্য করবেন, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিপরীতে, সিসিটিভি সিস্টেমে তেমন কোনো ব্যাপক আপগ্রেড হয়নি। এর কারণ হতে পারে, যদি আপগ্রেড করা হতো, মানুষ সহজেই তা লক্ষ করত। আমরা এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চলাফেরা করতে যে আমরা এগুলোর অস্তিত্বই খেয়াল করি না। ফলে মানুষের স্বাভাবিক আচরণ সহজে বোঝা যায়। কেবল যুক্তরাজ্যে ৪-৬ মিলিয়নের মতো ক্যামেরা রয়েছে। সবগুলো আপগ্রেড করতে গেলে বিশাল খরচ হবে। সরকার এটি গোপন রাখতে পারবে না। এতে করে সন্দেহ তৈরি হয় যে, হয়তো তারা আপগ্রেড করছে না (শুধু খরচের কারণে নয়, যদিও সেটাও বড় কারণ), বরং জনগণ যাতে বুঝতে না পারে যে তারা কত ঘন ঘন পর্যবেক্ষণের আওতায় পড়ছে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে, আমরা কি আদৌ ক্যামেরার মাধ্যমে সুরক্ষিত? যেসব ক্যামেরা ১৫–২০ বছরের পুরনো এবং এখনো অ্যানালগ সিস্টেমে চলছে, তারা কিভাবে আমাদের রক্ষা করবে? অথবা আরও ভালো প্রশ্ন হতে পারে—মানবতা বনাম নজরদারি: কোথায় মানবতার কণ্ঠ?
এটি বলার উদ্দেশ্য নয় যে সব সিসিটিভি ক্যামেরাই পুরনো। বাস্তবে, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের সিসিটিভি সিস্টেম যুক্তরাজ্যের অন্যতম আধুনিকতম এবং এটি নাকি একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ব্যক্তির চলাচল ট্র্যাক করতে পারে। এই সিস্টেমটি প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি ইউনিক ‘সিগনেচার’ বরাদ্দ করতে পারে এবং বাস্তব সময়ে তাদের চলাফেরা শহর জুড়ে ট্র্যাক করতে পারে—কিন্তু কতজন মানুষ জানে যে এটি তাদের সঙ্গে ঘটছে? সাধারণ মানুষ কিভাবে এমন তথ্য জানতে পারবে? এত ক্যামেরা বসানোর আসল উদ্দেশ্য কি মানবতার সুরক্ষা, নাকি কেবল আমাদের ওপর নজরদারি?
নিয়মিত নজরদারিকে বর্ণনা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট।” যদিও ফুটেজ বিগ ব্রাদারের মতো সহজে দেখা যায় না, তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখার সুযোগ দেয়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপ নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখতে সাহায্য করে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয়, যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে দেখতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (এর মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়, যদিও এটি বাস্তব সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করতে পারে, তবুও এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু যে-কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের (যেমন পেডোফাইল) জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে। তারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মনে রাখা উচিত।
শেষতক, নজরদারি অপরাধ প্রতিরোধ করে না। এমন কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই যে ক্যামেরা অপরাধ প্রতিরোধ করে। এমনকি ওয়েলসের একজন পুলিশ ও অপরাধ কমিশনার এই যুক্তিতেই সিসিটিভির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করেছেন। ২০১৫ সালে প্যারিসে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার কথাই ধরুন। কোনো পরিমাণ নজরদারি এটি আগেভাগে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত না কিংবা থামাতে পারত না। যত বড় সংখ্যায় ক্যামেরা থাকুক না কেন, একসাথে সবাইকে দেখার মতো কেউ উপস্থিত থাকতে পারে না। মানবতার এত ক্যামেরার প্রয়োজন নেই, গোপনে নজরদারি আর নিরাপত্তার মধ্যে সূক্ষ্ম একটি পার্থক্য রয়েছে।<ref>https://www.gov.uk/government/speeches/humanity-vs-surveillance-commissioners-speech-to-stirling-university</ref>
=== নজরদারি বিতর্ক ===
তবে, নজরদারির ওপর আক্রমণ সত্ত্বেও এটি একটি উদ্দেশ্য পূরণ করে। নজরদারি সমাজকে সহায়তা করে। জনসাধারণ এটি সমর্থন করে, গবেষণায় দেখা গেছে ৮৪% মানুষ মনে করেন ক্যামেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য পূরণ করে। মাত্র ১৬% মানুষ নজরদারির বিরুদ্ধে ছিলেন, তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল—এই নজরদারির তদারকির অভাব নিয়ে। এটি জনগণের উপকারে এসেছে—অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে—এমনকি মানুষ অনুভব করে যে এটি থাকলে তারা বেশি নিরাপদ, বরং যদি এটি না থাকত। তাহলে যদি এত মানুষ নজরদারির পক্ষে থাকে—এই বিতর্ক নিয়েই বা সন্দেহ কোথা থেকে আসে? এর কারণ আপনি কখনোই সবার ব্যক্তিগত মতামত জানতে পারবেন না। প্রত্যেক ব্যক্তির বিশ্বাস জানার জন্য বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করা অসম্ভব—তবে আপনি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের একটি বৃহৎ অংশকে জিজ্ঞাসা করলে সেটাই আপনার সবচেয়ে ভালো সুযোগ। তবে আপনি সবসময় এমন কিছু মানুষ পাবেন যারা বলবে—"নজরদারি হলো শুধু সরকারের আমাদের ওপর নজর রাখার একটা উপায়!!"
তবে এই ধারনা যে নজরদারি কেবলমাত্র আপনার দৈনন্দিন জীবনে নজর রাখার জন্য—তা একেবারেই বিভ্রান্তিকর। যেমন সান্তা কেবলমাত্র শিশুদের কল্পনায় বাস্তব—এই ধারণাটিও সমাজের কিছু অংশের মনগড়া কল্পনা। এটি একটি বিভ্রান্তিকর প্রচারণা যা আপনাকে বিশ্বাস করায় যে সরকার কেবল খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। বাস্তবে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে কেবলমাত্র ৫% সিসিটিভি ক্যামেরা পুলিশ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে। আমরা একটি নজরদারি রাষ্ট্র, সিসিটিভির আওতার অধীনস্ত এক জাতি—এই ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হতে পারে। সিসিটিভি ক্যামেরার একটি বড় অংশ সাধারণ জনগণ নিজস্ব ব্যবসা সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করে। তাহলে, অন্যান্য ব্যক্তিদের নজরদারি ক্যামেরা আর পুলিশের/সরকারের ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কী?
নজরদারি বা নজরদারির মাধ্যমে খুন বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কখনো কখনো এটি কোনো অপরাধের স্থান থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরে থাকা ব্যক্তিকেও শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে। হ্যাঁ, একটি ক্যামেরা এলোমেলো সহিংসতা বা অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে না, তবে এটি অপরাধীদের শনাক্ত ও ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাজ্যজুড়ে সিসিটিভি ব্যবস্থার বিস্তারের পেছনে ছিল একটি ঘটনা—জেমি বালজারের অপহরণ। আপনি নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন সেই অস্পষ্ট ভিডিওচিত্র। সেখানে একজন শিশুকে দুই ১০ বছর বয়সী খুনির হাতে মারসিসাইডের একটি শপিং সেন্টার থেকে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছিল। এই ভিডিওচিত্র বারবার টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে, যা এক সময় প্রতীকমূলক রূপ লাভ করে। যদিও ভিডিওটি সেই ভয়াবহ অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারেনি, তবে এটি জনগণের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্ম দিয়েছিল যে অপরাধীরা ধরা পড়বেই।<ref>http://news.bbc.co.uk/onthisday/hi/dates/stories/february/20/newsid_2552000/2552185.stm</ref>
ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে শার্লি এবদো হামলা। সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দ্রুত পরিস্থিতি মূল্যায়নে এবং পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়। পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সিসিটিভি-এর মাধ্যমে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হামলার সাথে জড়িত দুই ভাইকে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল। দ্রুত তথ্য পাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে মনুষ্যবলের দিকনির্দেশ করতে পেরেছিল। সিসিটিভি ছাড়া সাড়া দেওয়ার সময় আরও দীর্ঘ হত, যার ফলে অপরাধীদের ধরা পড়ার সম্ভাবনাও কমে যেত। এটি প্রমাণ করে যে সিসিটিভি এতটা খারাপও নয়। জরুরি অবস্থায় এটি সাহায্য করতে পারলে এটি যে কার্যকর, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। নজরদারি শুধু বড় অপরাধের জন্য নয়; ছোটখাটো অপরাধ যেমন চুরি প্রতিরোধেও কার্যকর। যদি তা না হতো, তবে সাধারণ জনগণ বা ব্যবসায়ীরা কেন এত খরচ করে এই ধরনের ক্যামেরা স্থাপন করতেন?
সবশেষে, আলোচনা হবে গোপনীয়তা নিয়ে। অনেকে যুক্তি দেন নজরদারি ক্যামেরা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপমূলক। আমি পুরোপুরি বুঝি যে আপনি যদি বিশ্বাস করেন একটি ক্যামেরা আপনাকে অনুসরণ করছে বা আপনার বাগান কিংবা বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে, তাহলে সেটা অত্যন্ত অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবে চিন্তা করুন, বড় কর্পোরেশন বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবহৃত নজরদারি ক্যামেরাগুলোর কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা প্রভাব বিশ্লেষণ সম্পন্ন করে এবং তাদের সিস্টেমে গোপনীয়তা রক্ষার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকে। Privacy by design বলতে বোঝানো হয়, যদি কোনো ক্যামেরা আবাসিক এলাকার দিকে ঘোরে বা তাকায়, তাহলে ছবিগুলো পিক্সেল করে দেওয়া হয় যেন অপারেটর বাস্তবে কারও ঘর, বাগান বা স্কুলের ভেতর দেখতে না পান। এর ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করে তাদের নিরাপদ রাখা যায়। এছাড়াও বড় প্রতিষ্ঠানের নজরদারি ক্যামেরার গোপনীয়তা আরও উন্নত করার কথাও উঠেছে। এর মানে হচ্ছে, যেসব কিছু ভিডিও করা হচ্ছে, সেখানে বাস্তব মানুষের পরিবর্তে অবতার দেখানো হবে—ফলে তথ্য পুরোপুরি বেনামী থাকবে। এরপর যদি কোনো অপরাধ ঘটে, তাহলে সেই ডেটা ডিক্রিপ্ট করা যাবে। ফলে যারা কোনো অপরাধ করছেন না, তাদের পরিচয় গোপনই থাকবে এবং এটি শুধু অপরাধ ঘটলে ব্যবহৃত হবে।
==== মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী ====
১৯৪৮ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানব সমাজের প্রথম বৈশ্বিক ও বিস্তৃত দলিল হিসেবে ''[http://www.un.org/en/universal-declaration-human-rights/ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র]'' ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় বলা হয়, সকল মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার এবং যোগাযোগে যেন কোনো ধরনের ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ না করা হয়। এই নিয়মে, প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>Renteln, A. D. (2013). International human rights: universalism versus relativism. Quid Pro Books.</ref>
এই ধরনের আইন ও বিধান দ্বারা নজরদারি ব্যবস্থার ব্যাপ্তিকে সীমিত করা হয়। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে, জনসাধারণের যোগাযোগ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের গোপনীয়তা প্রকাশিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কর্পোরেশন, সুপারমার্কেট, ব্যাংক, রাস্তা ইত্যাদিতে স্থাপিত ক্যামেরা ও রেকর্ডার দ্বারা ব্যক্তিগত কথোপকথন নজরদারি করা যেতে পারে। ব্রাউজিং ইতিহাস ও অভ্যাস নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের কাছে চলে যেতে পারে। স্মার্টফোন ব্যক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রকাশ্যে বা গোপনে রেকর্ড করতে পারে। নজরদারি ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশ। সেখানে আইনগত প্রতিষ্ঠান ও অপরাধী উভয়ই অন্যদের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম, তা মানবতার বৃহৎ পরিসরে লঙ্ঘন করে।
==== উপসংহার ====
এটি একটি বৃহৎ বিতর্কের বিষয়। নজরদারি-এর ওপর আপনি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করবেন কি না, তা একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে জোরালো যুক্তি রয়েছে। সবকিছু নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যের ওপর। নজরদারি খারাপ হতে পারে যদি এটি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে যখন এটি জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায় এবং এটি প্রমাণ করে যে আমরা এটি প্রয়োজন, যাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মানুষ নিরাপদ থাকে।
== নজরদারি প্রযুক্তি ==
নজরদারি প্রযুক্তি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত—''পাবলিক ক্যামেরা'' বা ''[[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]]''। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ''অদৃশ্য ক্যামেরা - ইন্টারনেট''। দৃশ্যমান ক্যামেরা হোক বা অদৃশ্য, প্রযুক্তি নিজেই নিরপেক্ষ। এগুলোকে উপকারী বা ক্ষতিকর করে তোলে যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এগুলো ব্যবহার করে, তাই এদের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা প্রয়োজন।
==== কম্পিউটার ====
বিশেষত [[w:ইন্টারনেট|ইন্টারনেটে]] কম্পিউটার নজরদারি-এর বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে [[w:ডেটা মাইনিং|ডেটা]] এবং [[w:ট্র্যাফিক অ্যানালাইসিস|ট্র্যাফিক]] বিশ্লেষণ। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে [[w:আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন|আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন]] অনুসারে, সব ফোনকল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্র্যাফিক (ইমেইল, ওয়েব ট্র্যাফিক, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ইত্যাদি) ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য বিনা বাধায় বাস্তবসময়ে নজরদারির জন্য উন্মুক্ত রাখতে হয়।<ref name="eff-calea-archive2">{{cite web|url=http://w2.eff.org/Privacy/নজরদারি/CALEA/?f=archive.html|title=CALEA Archive -- Electronic Frontier Foundation|work=Electronic Frontier Foundation (website)|accessdate=March 14, 2009}}</ref> ইন্টারনেটে এত বিশাল পরিমাণ ডেটা রয়েছে যে মানব তদন্তকারীদের পক্ষে সব খুঁজে দেখা অসম্ভব। তাই স্বয়ংক্রিয় ইন্টারনেট নজরদারি কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে বিপুল ট্র্যাফিক ছেঁকে, নির্দিষ্ট "ট্রিগার" শব্দ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি দ্বারা আগ্রহজনক ট্র্যাফিক আলাদা করে মানব তদন্তকারীদের জানানো হয়। প্রতি বছর এনএসএ, এফবিআই, তথ্য সচেতনতা অফিসের মতো সংস্থাগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে Carnivore (FBI), NarusInsight এবং ECHELON-এর মতো সিস্টেমের উন্নয়ন, ক্রয়, বাস্তবায়ন ও পরিচালনায়, যেন নজরদারির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনা যায়।
==== সিসিটিভি ====
সম্ভবত নজরদারি-এর সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যবহৃত প্রযুক্তি হলো সিসিটিভি। [[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]] বা ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের উদ্ভব জার্মানিতে, ১৯৪২ সালে। এই প্রযুক্তি এখন বৈশ্বিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
''সিসিটিভি''-এর ক্ষেত্রে কে এটি স্থাপন করতে পারবে, কোথায় ও কখন এটি স্থাপন করা যাবে—এই বিষয়গুলো রিপোর্ট ও সীমাবদ্ধতার আওতায় থাকা উচিত। আমেরিকান সমালোচক [[w:জেনিফার গ্র্যানহোম|জেনিফার গ্র্যানহোম]] যেমন বলেছেন, নাগরিকদের পক্ষে আশা করা অনাযুক্ত যে তারা জনগণ ও পুলিশের নজরদারিতে থাকবে না, অথচ তারা নিজেরা চায় যে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগগুলোতে কোনো নজরদারি থাকবে না, এমনকি শক্তিশালী রিমোট মনিটরিং থেকেও নয়।<ref>Granholm, J. (2015). Archived Websites-Governor's Official Homepage-2007.</ref> এছাড়া অদৃশ্য ক্যামেরা বা নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের প্রসঙ্গে [[w:Mark Poster|মার্ক পোস্টার]] ''[[wiktionary:superpanopticon|"superpanopticon"]]'' নামক নতুন ধারণা দেন, যা বর্ণনা করে কীভাবে ডিজিটাল দুনিয়ায় ব্যক্তিজীবন গঠিত হয়।<ref>Fuchs, C., Boersma, K., Albrechtslund, A., & Sandoval, M. (2014). The Internet and নজরদারি.</ref> নেটওয়ার্ক ডেটাবেসে তথ্য প্রেরণ দ্রুত এবং সুবিধাজনক, যা সিসিটিভি থেকেও বেশি নিখুঁত ও বিস্তৃত। এই প্রেক্ষাপটে, নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে আইন ও বিধান প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
নজরদারি ক্যামেরা বা সিসিটিভি দিন দিন বিশ্বব্যাপী জনসাধারণ ও ব্যক্তিগত স্থান নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকার, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি ও ব্যক্তিগত ব্যক্তি অপরাধ প্রতিরোধ, শহুরে পরিবেশ ও সরকারি ভবনের নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ভিডিও নজরদারি ব্যবহার করে। নজরদারি প্রযুক্তিকে কখনো কখনো ‘পঞ্চম ইউটিলিটি’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে,<ref>Graham (2002)</ref> যেখানে সিসিটিভি শহুরে পরিবেশে এমনভাবে সংযুক্ত হয়েছে যেমন বিদ্যুৎ বা টেলিফোন নেটওয়ার্ক শতাব্দীর প্রথমার্ধে সংযুক্ত ছিল।
পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির মধ্যে সম্ভবত সিসিটিভি-ই সবচেয়ে প্রভাবশালী, শুধুমাত্র ব্যবহৃত ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকেই। যেমন, ২০০৭ সালে, প্রায় ''দশ'' বছর আগে, অনুমান করা হয়েছিল যে যুক্তরাজ্যে ৪.২ মিলিয়ন সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।<ref>Meikle, G & Young, S. (2012). ''Media Convergence: Networked Digital Media in Everyday Life''. Basingstoke: Palgrave Macmillan. p130.</ref> সিসিটিভি সম্ভবত নজরদারি-এর কার্যপ্রণালিকেই বদলে দিয়েছে। মিশেল ফুকো (১৯৭৭) ব্যাখ্যা করেছেন যে অতীতে অনেক মানুষ মুষ্টিমেয় প্রভাবশালীদের পর্যবেক্ষণ করত, যেমন: প্রকাশ্য ভাষণের মাধ্যমে। কিন্তু এখন নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প কিছু মানুষই অনেক মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে! তিনি বলেন, 'visibility is a trap' <ref>Foucalt, M. (1977). ''Discipline and Punish''. Harmondsworth: Penguin. p.200.</ref>। যদিও এটি একমুখী সম্পর্ক নয়, কারণ এখনো ‘অনেক মানুষ’ ‘মুষ্টিমেয় মানুষ’কে দেখে টিভি ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে। তবে সিসিটিভি মূলত মুষ্টিমেয়ের নিয়ন্ত্রণে, যার মানে—যখন আপনি জনসমক্ষে থাকবেন, তখন আপনাকে ভিডিও করা হতে পারে, অনেক সময় আপনার অজান্তেই।
বিশ্বে নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাজ্য শীর্ষে: প্রতি ১২ জনে ১টি ক্যামেরা বা প্রায় ৫ মিলিয়ন ক্যামেরা সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে।<ref>Öqvist, 2008, p.153</ref>
[[চিত্র:Cameras_innercity_London_2005.jpg|থাম্ব|300x300পিক্সেল|লন্ডন, যুক্তরাজ্যে সিসিটিভির উদাহরণ]]
==== এএনপিআর ====
অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা (ANPR), অথবা লাইসেন্স প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা (LPR) হল যানবাহন নজরদারির প্রধান উপায়গুলোর একটি। এগুলো সড়কের ধারে, বিশেষত মোটরওয়েগুলোর পাশে বসানো হয় এবং গতি সীমা অতিক্রম এবং অন্যান্য মহাসড়ক নিরাপত্তা লঙ্ঘনের প্রতিবেদন দিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো স্বয়ংক্রিয় টোল কর সংগ্রহের মতো প্রক্রিয়াতেও ব্যবহার করা যায়।<ref>Patel, C, Shah, S & Patel, A. (2013). Main content area Automatic Number Plate Recognition System (ANPR): A Survey. International Journal of Computer Applications, 69(9)</ref> যদিও এগুলো একধরনের ক্যামেরা, তথাপি এগুলো CCTV থেকে ভিন্ন কারণ এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যানবাহনের কার্যকলাপ চিত্রায়ণ নয় বরং নাম্বার প্লেট সনাক্ত করা এবং সেখানকার অক্ষরগুলো শনাক্ত করা, এমনকি দূর থেকে বা চলন্ত অবস্থাতেও। সফটওয়্যার OCR ব্যবহার করে বিভিন্ন ধারণকৃত চিত্র থেকে তথ্য ব্যবহারযোগ্য কোডে রূপান্তর করা হয়, এবং ক্যামেরাগুলোকে অবশ্যই ইনফ্রারেড আলোতে সংবেদনশীল হতে হয়, দৃশ্যমান স্পেকট্রামে সীমিত হতে হয় যেন দিনের বেলাতেও এবং রাতেও, হেডলাইট আলোকপ্রভা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কাজ করতে পারে।<ref>http://www.cctv-information.co.uk/i/An_Introduction_to_ANPR</ref>
==== টেলিফোন ====
সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে টেলিফোন লাইনে আড়িপাতা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। অধিকাংশ কলের জন্য মানব এজেন্ট প্রয়োজন হয় না। স্পিচ-টু-টেক্সট সফটওয়্যার ধারণকৃত অডিও থেকে যন্ত্রপাঠযোগ্য পাঠ্য তৈরি করে, যা পরে স্বয়ংক্রিয় কল বিশ্লেষণকারী প্রোগ্রাম দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যেমন ইনফরমেশন অ্যাওয়ারনেস অফিস বা ভারিন্ট এবং নারাস-এর মতো কোম্পানিগুলোর দ্বারা বিকশিত সফটওয়্যার, যেগুলো নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্যাংশ অনুসন্ধান করে নির্ধারণ করে যে কলটিতে মানব এজেন্ট নিয়োজিত করা হবে কিনা।<ref name="latimes-fbi-intel-analysis">{{cite news|url=http://articles.latimes.com/2002/jul/29/nation/na-technology29|title=FBI Plans to Fight Terror With High-Tech Arsenal|last=Piller|first=Charles|author2=Eric Lichtblau|date=July 29, 2002|work=LA Times|accessdate=March 14, 2009}}</ref> যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা মোবাইল ফোনের মাইক্রোফোন দূরবর্তীভাবে সক্রিয় করতে পারে, ফোনের ডায়াগনস্টিক বা রক্ষণাবেক্ষণ বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে, যাতে ফোনধারীর আশেপাশে যে কথোপকথন হচ্ছে তা শোনা যায়।<ref name="schneier-roving-bugs">{{cite web|url=http://www.schneier.com/blog/archives/2006/12/remotely_eavesd_1.html|title=Remotely Eavesdropping on Cell Phone Microphones|last=Schneier|first=Bruce|date=December 5, 2006|work=Schneier On Security|accessdate=December 13, 2009}}</ref> মোবাইল ফোন অবস্থান তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মোবাইল ফোনের ভৌগোলিক অবস্থান (এবং সেইসাথে ফোনধারীর অবস্থান) সহজেই নির্ধারণ করা যায় এমনকি ফোনটি ব্যবহৃত না হলেও, একটি কৌশল ব্যবহার করে যেটিকে বলে মাল্টিল্যাটারেশন, যা ফোন থেকে মালিকের নিকটবর্তী বিভিন্ন সেল টাওয়ারে সংকেত পৌঁছাতে সময়ের পার্থক্য পরিমাপ করে কাজ করে। স্নোডেন ফাঁসের মাধ্যমে জানা গেছে যে ব্রিটিশ সরকারি যোগাযোগ সদর দপ্তর (জিসিএইচকিউ)আমেরিকান নাগরিকদের ওপর এনএসএ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্যে প্রবেশ করতে পারে। একবার ডেটা সংগ্রহ হয়ে গেলে, জিসিএইচকিউ তা সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারে। এই সময়সীমা "জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ কর্মকর্তা"-র অনুমতিতে বাড়ানো যেতে পারে।
টেলিফোন এবং মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি আছে যা কার্যকর এবং সহজলভ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো বাগিং এবং ট্র্যাকিং প্রযুক্তি।
'''বাগিং'''
গোপন শ্রবণ ডিভাইস হিসেবেও পরিচিত, বাগ বা ওয়্যার সাধারণত একটি ছোট রেডিও ট্রান্সমিটার এবং একটি মাইক্রোফোন নিয়ে গঠিত। প্রধানত পুলিশ তদন্তে ব্যবহৃত হলেও, এগুলো সাধারণ মানুষও ব্যবহার করতে পারে। ডেইলি মেইল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যেখানে সম্পর্কের মধ্যে থাকা মানুষদের সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গী হয়তো মোবাইল ফোনে বাগিং ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের ওপর নজর রাখছে।<ref>http://www.dailymail.co.uk/news/article-2889521/Bugging-phones-jealous-partners-rife-Campaign-group-warns-women-guard-against-spyware-tells-suspicious-husband-boyfriend-use-device.html</ref> ফ্লেক্সিস্পাই-এর মতো সিস্টেম নিজেদের নজরদারি সফটওয়্যার বিজ্ঞাপনে বলেছে “আপনি যদি একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে থাকেন, সন্তানের দায়িত্বে থাকেন অথবা কর্মচারী পরিচালনা করেন, তবে **আপনার জানার অধিকার আছে**।<ref>http://www.flexispy.com/</ref> সত্য জানুন, তাদের ফোনে নজর রাখুন।” যদিও এটি ডেটা সুরক্ষা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন, এই সিস্টেমসহ অনেকগুলো এখনো জনপ্রিয় এবং শাস্তি শুধু একটি জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে, জনসমক্ষে, অফিসে এবং নিজের বাসায় শ্রবণ বা রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করা বৈধ।
'''ট্র্যাকিং''' ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে, স্টিংরে ফোন ট্র্যাকার সবচেয়ে প্রচলিত। হ্যারিস কর্পোরেশন দ্বারা উন্নিত, এই ডিভাইস একটি মোবাইল ফোন নজরদারি যন্ত্র। এটি কাছাকাছি থাকা সব ডিভাইসকে এতে সংযোগ ঘটাতে বাধ্য করে, এরপর সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ তথ্য গ্রহণ করতে পারে, ডেটা ডাউনলোড করতে পারে এবং যোগাযোগের বিষয়বস্তু আটকাতে পারে, এমনকি তা ডিক্রিপ্ট এবং রেকর্ড করতেও পারে। স্টিংরে যেসব ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় সেগুলোর অবস্থানও নির্ণয় করতে পারে। এই সফটওয়্যার মূলত সামরিক এবং গোয়েন্দা সংস্থার জন্য তৈরি হলেও, বর্তমানে এটি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অন্তত ২৩টি অঙ্গরাজ্যের ৬০টি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে যারা স্টিংরে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।<ref>https://www.aclu.org/map/stingray-tracking-devices-whos-got-them</ref> তবে যুক্তরাজ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়নি। স্কাই নিউজের একটি তদন্ত নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে লন্ডনজুড়ে পুলিশ নকল মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করছে এমন অভিযোগ রয়েছে।<ref>http://www.bbc.co.uk/news/business-33076527</ref> এই টাওয়ারগুলো মোবাইল ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই যন্ত্রগুলো পুলিশি সন্দেহভাজনদের ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হতে পারে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ধরনের নজরদারির ব্যবহার স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি।
'''''উদাহরণ'''''
নেদারল্যান্ডসে সবআইএসপি-কে আদালতের আদেশ অনুযায়ী সব ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ করার সক্ষমতা থাকতে হয় এবং ব্যবহারকারীদের লগ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। নিউজিল্যান্ডে Telecommunications (Interception Capabilities) Act 2004 অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এবংআইএসপি-দের পুলিশ বা নিরাপত্তা সংস্থার অনুরোধে ফোন কল এবং ইমেইল নজরদারির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সুইজারল্যান্ডেআইএসপি-দের মেইল এবং টেলিযোগাযোগ নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
==== সোশ্যাল মিডিয়া ====
তথ্য গোপনীয়তার আরেকটি অংশ, যা কোনো আইনি কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সেটি হলো অনলাইনে আমরা যে তথ্য শেয়ার করি। এটি তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘তথ্য উন্মোচন’-এর সংজ্ঞায় এক নতুন মাত্রা নিয়ে আসে যখন এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করা হয়। ‘ডিজিটাল তথ্যের অবশিষ্টাংশ’ বলতে বোঝায় আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য যা কেউ বা কিছু অনলাইনে সংগ্রহ বা শেয়ার করেছে এবং কোথাও ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত আছে, যার ওপর আমাদের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
অনলাইন কমিউনিটি যেভাবে এসেছে, সেভাবেই এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া। Oxford Dictionary of Media Communications-এ এটি বর্ণিত আছে।<ref name="ChandlerMunday2011">{{cite book|last1=Chandler|first1=Daniel|last2=Munday|first2=Rod|date=2011|title=A Dictionary of Media and Communication|location=Oxford|publisher=Oxford University Press|isbn=978019956875}}{{rp|397}}</ref> তবে এটি বলা কঠিন যে কে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করছে যদি না তারা সরাসরি যোগাযোগ করে। কিছু গোপনীয়তা সেটিংস আমাদের নিয়ন্ত্রণে যেমন পোস্টের ‘custom’ সেটিং যা আমাদের দেখতে দেয় কে পোস্টটি দেখছে; তবে অন্যরা আমাদের ট্যাগ করলে (যতক্ষণ না আমরা নিজেকে আনট্যাগ করি), সেটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ওই কয়েক মিনিটে চিন্তা চলে আসে ‘ওহ না – কে কে ইতিমধ্যেই এটি দেখে ফেলেছে?’ গ্রাহাম মেইকল এবং শেরম্যান ইয়াং বলেন: 'ভাবুন, কীভাবে ফেসবুক আমাদের কার্যক্রম বন্ধু তালিকার সবাইকে “নিউজফিড” ফাংশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। আপনি হয়তো ভাবছেন কোনো বন্ধুর স্ট্যাটাসে আপনার মন্তব্য অন্যদের দেখার সুযোগ নেই, কিন্তু দেখা গেল তার প্রোফাইল সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় আপনার মন্তব্য “শীর্ষ খবর” হিসেবে আপনার সব বন্ধুর কাছেই পৌঁছে গেছে।<ref name="MeikleYoung2012">{{cite book|last1=Meikle|first1=Graham|last2=Young|first2=Sherman|date=2012|title=Media Convergence: Networked Media in Everyday Life|location=Basingstoke|publisher=Palgrave Macmillan|isbn=9780230228948}}</ref>{{rp|72}}
রিক্রুটমেন্ট কোম্পানি জবভাইট-এর বার্ষিক জরিপ (সর্বশেষ সেপ্টেম্বর ২০১৫) অনুযায়ী, ৯২% নিয়োগকারী নিয়োগ দেওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল চেক করে।<ref>http://www.jobvite.com/blog/welcome-to-the-2015-recruiter-nation-formerly-known-as-the-social-recruiting-survey</ref> তদ্ব্যতীত, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন নির্দেশনা রয়েছে যাতে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে গুপ্তচরবৃত্তির শিকার না হন।<ref>http://www.webwise.ie/teachers/facebook-for-teachers</ref>
উভয় ঘটনাকেই সমাজবিজ্ঞানী [[w:Erving Goffman|এরভিং গফম্যান]]-এর তত্ত্বের উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে, যিনি বলেন আমরা বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রূপ ধারণ করি এবং আমাদের নির্দিষ্ট শ্রোতার জন্য পারফর্ম করি এবং থিয়েটারের মতো হলেও আমাদের প্রকৃত সত্তাটি থাকে মঞ্চের পেছনে।<ref name="PapacharissiZizi2010">{{cite book|last1=Papacharissi|first1=Zizi|date=2010|title=A Networked Self Identity, Community, and Culture on Social Network Sites|location=Hoboken|publisher=Taylor and Francis|isbn=9780415801805}}</ref>{{rp|306–7}}
===== স্ক্রিনশট, সৌসভেইলেন্স, অনলাইন ডেটিং ও বিশ্বাসঘাতকতা =====
[[w:স্ক্রিনশট|স্ক্রিনশট]] আগে শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপে প্রিন্ট স্ক্রিন বোতাম চেপে নেওয়া যেত, কিন্তু আজকের স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে এক ক্লিকেই প্রতিদিন বন্ধুদের ছবি ও তথ্য পাঠাতে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ডেটিং অ্যাপ [[w:টিন্ডার (অ্যাপ)|টিন্ডার]] তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য ‘শেয়ার’ ফিচার চালুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।<ref>http://microcapmagazine.com/2016-03-08-tinder-testing-new-feature-that-lets-your-friends-play-matchmaker</ref> এই ডেটিং অ্যাপটি জানিয়েছে এটি তাদের উপকারে আসবে যারা কারো সাথে পরিচিত হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা না থাকায় [[w:ফেসবুক|ফেসবুকে]] অ্যাড করেনি, সেই ব্যক্তির প্রোফাইল বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই এটি গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে কারণ একটি লিংক ৪৮ ঘণ্টা বা পাঁচবার ক্লিক হওয়ার পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে।
টিন্ডার বলেছে ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল স্ক্রিনশট নিয়ে তা বন্ধুদের পাঠানোর সুযোগ আগেও ছিল এবং ব্যবহারকারীরা চাইলে এই ফিচার থেকে ‘opt out’ করতে পারবে। কিন্তু [[w:বাজফিড|বাজফিড]] এবং ডিস্ট্র্যাক্টিফাই-এর মতো বিনোদনমূলক ওয়েবসাইট স্ক্রিনশট ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের অদ্ভুত, যৌনতাপূর্ণ এবং হাস্যকর কথোপকথনের সংকলন তৈরি করে মজা করে,<ref>http://www.buzzfeed.com/rossalynwarren/best-worst-and-weirdest-messages-tinder#.jgPg5e22g</ref> যা ভুক্তভোগীদের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। এমনকি এখন “Tinder Nightmares” নামে পূর্ণ অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে যা ব্যবহারকারীদের স্ক্রিনশট পাঠাতে উৎসাহিত করে।<ref>https://www.instagram.com/tindernightmares/</ref> আরও দেখুন: [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/নজরদারি ও প্রতিনজরদারি#Sousveillance and art?|সৌসভেইলেন্স ও শিল্প?]]
তবে, স্ক্রিনশট নজরদারি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে মডেল এমিলি সিয়ার্স-এর ক্ষেত্রে,<ref>http://metro.co.uk/2016/01/30/this-model-is-shaming-guys-who-send-her-dick-pics-by-letting-their-girlfriends-know-5652780</ref> যিনি অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন চিত্র পাঠানোয় বিরক্ত হয়ে, ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল ঘেটে তাদের পরিবারের সদস্য বা প্রেমিকার খোঁজ বের করে ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে ওই ব্যক্তিরা দ্রুত ক্ষমা চায়।
বাজফিড-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে<ref>http://buzzfeed.com/rossalynwarren/a-model-is-alerting-girlfriends-of-the-men-who-send-her-dick#.dr8BA3KKB</ref> মিস সিয়ার্স বলেন, মানুষেরা তাদের কম্পিউটার পেছনে নিরাপদ বলে মনে করে এমন আচরণ করে। এই সামাজিক আচরণকে বলা হয় অনলাইন নিষেধমুক্তির প্রভাব। তাত্ত্বিক জন সুলারের মতে, বাস্তবে যা করার বা বলার সাহস নেই, অনলাইনে সেই কাজ করে ফেলার অনুভূতি। একজন পুরুষ যদি রাস্তায় নিজের নগ্ন দেহ উন্মুক্ত করে, তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। অথচ অনেকে ভাবেন কারও মোবাইলে তাদের যৌনচিত্র পাঠানো নাকি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য।
==== কোম্পানিসমূহ ====
পাসপোর্ট পরিষেবাগুলি ভোক্তাদের তথ্য শোষণ করেছে এবং Salon.com থেকে উদ্ভূত নিবন্ধগুলির একটি সিরিজ অনুসরণ করে তাদের গোপনীয়তা নীতি এবং বিবৃতি সংশোধন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। ইয়াহু এবং মাইক্রোসফট ই-মেইল পরিষেবা উভয়ই ব্যক্তিগতভাবে সনাক্তকরণযোগ্য তথ্য ভাগ না করার তাদের বর্ণিত গোপনীয়তা নীতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সম্ভাব্য গোপনীয়তা লঙ্ঘন সম্পর্কে ব্যবহারকারীর সমালোচনার জবাবে, ফেসবুক তার নতুন সংশোধিত পরিষেবার শর্তাদি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। গুগলের গোপনীয়তা অনুশীলনগুলি ইইউ গোপনীয়তার মানগুলি পূরণ করে না এবং একইভাবে বেশ কয়েকটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে আইনপ্রণেতা গোপনীয়তা অনুশীলন নিয়ে গুগলকে প্রশ্ন করেন প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার রূপরেখার জন্য সংস্থাগুলি গোপনীয়তা এবং ব্যবহারের শর্তাদি বিবৃতি নিয়োগ করে, যাতে ব্যবহারকারীর অভিযোগের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়।
এই পদ্ধতিতে, ব্যক্তিগত তথ্য জনসাধারণের মধ্যে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়, প্রক্রিয়াটিতে ব্যক্তির কাছ থেকে সামান্য ইনপুট সহ।
২০১৪ সালের এনএসএ.In বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এমন সংস্থাগুলি রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট '''টুইটার''' মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে যাতে এটি ব্যবহারকারীদের উপর সরকারের নজরদারি সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে স্বচ্ছ হওয়ার ক্ষমতা চেয়েছিল। টুইটারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন লি বলেছেন, এই বিধিনিষেধ প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন। টুইটারের মামলার আগে '''গুগল''' একটি অনুরূপ মামলা দায়ের করেছিল যা সংস্থাটি কতবার ডেটা জন্য জাতীয় সুরক্ষা অনুরোধ পায় তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার অনুমতি চেয়েছিল। [৬]
==== বায়োমেট্রিক ====
ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের মতে, "বায়োমেট্রিক্স বলতে জীবিত ব্যক্তিদের স্থায়ী শারীরিক বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ বা পরিচয় যাচাইকরণকে বোঝায়"। এই ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি বহু বছর ধরে সাধারণভাবে পরিচিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্বীকৃতি এবং আইরিস স্বীকৃতির সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে পোস্ট করা ছবিতে মানুষকে 'ট্যাগ' করে। এই সমস্তগুলি নজরদারি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি থেকে গঠিত ডেটা সরকারী বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা হয়। বায়োমেট্রিক ডেটার এই ধরনের ব্যবহার সুপরিচিত, তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবহার অন্বেষণ করা হচ্ছে।
আমেরিকা এবং চীনে, ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরাগুলি শহরগুলির চারপাশে ল্যাম্প পোস্টগুলিতে স্থাপন করা হচ্ছে যাতে রিয়েল টাইমে ব্যক্তিদের ট্যাগ করা ভিডিও দেখার পাশাপাশি সহিংস কার্যকলাপের জন্য জড়ো হতে পারে এমন বিশাল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা যায়। গত বছর ইউরোপে ওয়ান্টেড অপরাধীদের ভিড় স্ক্যান করার জন্য লেস্টারশায়ার পুলিশ কর্তৃক ডাউনলোড ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এটি যুক্তরাজ্যের একটি বহিরঙ্গন ভেন্যুতে এই ধরণের প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার ছিল এবং যখন এটি জনসাধারণের নজরে আনা হয়েছিল তখন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। একই সময়ে আইসি পুতুলগুলি স্টোরগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে তারা সংস্থাগুলিকে বিপণনের ডেটা দেওয়ার জন্য খুচরা গ্রাহকদের বয়স, জাতি এবং লিঙ্গ ট্র্যাক করতে পারে; এক ধরনের কর্পোরেট নজরদারি। এটি একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর মতো শোনাতে পারে তবে ক্রমবর্ধমান এটি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আইকোনেমের নিজস্ব পুতুল সিস্টেম রয়েছে যা স্মার্টফোনে বীকন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অ্যাপের মাধ্যমে পণ্যের বিবরণ সম্পর্কে সতর্ক কয়েক বছরের মধ্যে কোনও দোকানে প্রবেশ করা এবং পুতুলটি আপনাকে আপনার নাম ধরে ডাকে এবং তারপরে কেবল মুখের স্বীকৃতি সফটওয়্যার এবং গ্রাহক ডাটাবেসগুলি একত্রিত করে আপনাকে পণ্যগুলির প্রস্তাব দেয়। অবশ্যই এর কোনোটিই সহজে করা যায় না, যেমনটি কেলি গেটস তার বই আওয়ার বায়োমেট্রিক ফিউচার: ফেসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি অ্যান্ড দ্য কালচার অব সার্ভিল্যান্সে তুলে ধরেছেন, তবে এর উন্নয়ন ও উৎপাদনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে বায়োমেট্রিক নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই,[ তবে যুক্তরাজ্য এবং কানাডা কিছু আইন পাস করেছে যা আক্রমণাত্মক বায়োমেট্রিক্স সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করবে, যেমন 'স্নুপ বিল' যা এর ক্ষমতা হ্রাস করবে যোগাযোগ ক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি (সিসিডিপি)।
পিটার ওয়াগেট বলেছেন, "আমি ২০ বছর ধরে বায়োমেট্রিক্স নিয়ে কাজ করছি, এবং এটি এমন একটি টিপিং পয়েন্টে পৌঁছেছে যেখানে লোকেরা কোথায় রয়েছে এবং তারা কী করছে তা বোঝা অসম্ভব হতে চলেছে। সবকিছু মনিটরিং করা হবে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি ইতিমধ্যে সত্য তবে বায়োমেট্রিক্স পরবর্তী কোথায় যায় তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে।
'''''উদাহরণ'''''
সুইডেনে ১৯৭৫ সালে বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক গবেষণার উদ্দেশ্যে জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছেন। ফাংশন বা মিশন ক্রিপের ফলে সম্প্রতি এই রক্তের নমুনাগুলি ২০০৩ সালে একজন খুনির দোষী সাব্যস্ত করার জন্য এবং ২০০৪ সালে থাইল্যান্ডের সুনামি বিপর্যয়ের শিকারদের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সমস্ত ২৭ ইইউ দেশ সমস্ত ইইউ পুলিশ ডাটাবেসে জেনেটিক তথ্য, আঙুলের ছাপ এবং গাড়ি নিবন্ধকরণ তথ্যে অবাধ অ্যাক্সেস করতে সম্মত হয়েছে? নিউজিল্যান্ডে নবজাতকের রক্তের স্পট নমুনা এবং সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং এই তথ্য পুলিশ দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কেবল শেষ উপায় হিসাবে বা পিতামাতার সম্মতিতে ।
==== এরিয়াল ====
আকাশ নজরদারি এক ধরনের নজরদারি যা সাধারণত কম্পিউটারাইজড বায়বীয় ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত হয়। নজরদারির এই ফর্মটি নিজস্ব সমস্যা এবং সীমানা নিয়ে আসে যা প্রায়শই অতিক্রম করা হয়। নতুন প্রযুক্তি ড্রোনের মতো ডিভাইস তৈরি করছে, একটি আকাশ নজরদারি ইউনিট যা নিজেরাই কাজ করে এবং দূর থেকে মালিকের কাছে নজরদারি চিত্র প্রেরণ করে। এই ডিভাইসগুলি ব্যবহারের মূল সমস্যাটি হ'ল গোপনীয়তার আক্রমণ, বিশেষত যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স ছাড়াই অনেকগুলি ড্রোন কেনা এবং ব্যবহার করা যায়। ২০ কেজি ওজনের কম ওজনের ড্রোনগুলির জন্য বিশেষ পারমিটের প্রয়োজন হয় না,[ অর্থ যে কেউ এই রেকর্ডিং ডিভাইসগুলি যার উপর ইচ্ছা 'গুপ্তচরবৃত্তি' করতে ব্যবহার করতে পারে। যাঁদের কাছে ড্রোন রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই ব্যস্ত এলাকার ১৫০ মিটার এবং কোনও ব্যক্তির ৫০ মিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো এড়ানো উচিত, তবে এই নিয়মটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না।
মেশিনগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি নতুন রূপ গ্রহণ করায় অনেকে ড্রোন থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি তাদের আশেপাশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময় মুখের স্বীকৃতি ব্যবহার করতে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধি অনুসরণ এবং নথিভুক্ত করার ক্ষমতা ধারণ করতে তাদের কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করতে সক্ষম। ড্রোনগুলিতে ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশনের বিধিনিষেধ নেই, অন্যথায় সিসিটিভি হিসাবে পরিচিত, যা জনসমক্ষে কোনও ব্যক্তির গতিবিধি রেকর্ড করতে সক্ষম হলেও ব্যক্তি অনুসরণ করতে পারে না বা বায়বীয় দৃশ্য থেকে রেকর্ড করতে পারে না। কম্পিউটার ভিশন, ফেস রিকগনিশন, অবজেক্ট রিকগনিশন এবং অন্যান্য ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সহ ড্রোনগুলি দ্রুত নজরদারির অন্যতম অনুপ্রবেশকারী ফর্ম হয়ে উঠছে। ড্রোনগুলি তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং কোনও অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও বিষয় অনুসরণ করা এবং চিত্রগ্রহণের মতো মানুষের মতো উদ্দেশ্যগুলি সম্পূর্ণ করতে পারে।
জনসাধারণের সুরক্ষা এবং তাদের নিজের বাড়িতে গোপনীয়তার অধিকারের জন্য এবং সুরক্ষা সতর্কতার জন্যও বিমান নজরদারিতে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, কারণ এফএএ নিয়ম অনুসারে ৪০০ ফুটের উপরে বা বিমানবন্দরের দুই মাইলের মধ্যে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০১৫ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি আবাসন বিল চালু করা হয়েছিল যাতে বিমান নজরদারির ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা যায়। ''''প্রোটেকটিং ইন্ডিভিজুয়ালস ফ্রম মাস এরিয়াল সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট'''<nowiki/>' নামের ওই বিলটিতে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে নজরদারি চালাতে চাইলে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের এখন পরোয়ানা জারি করতে হবে। ফ্রেমের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদেরও শনাক্ত করতে পারছেন না তারা।
যেহেতু ড্রোনগুলি নজরদারির আরও সাম্প্রতিক রূপ, তাই অনেক লোক প্রযুক্তিটির বিপদ বা সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত নয়, তবে এমন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে যারা একটি বিমান নজরদারি ব্যবস্থার মালিকানার জন্য বিধিবিধান এবং নিয়ম বাড়াতে চান। ২০১৪ সালে পারমাণবিক সাবমেরিন স্থাপনার কাছে ড্রোন ব্যবহারের দায়ে রবার্ট নোলসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাকে ৪ হাজার ৩০০ পাউন্ড পরিশোধের নির্দেশ দেয়। বিবিসির খবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোথায় কেউ ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে আর পারবে না, কারণ ক্রিসমাস ও জন্মদিনের উপহার হিসেবে অনেককেই গ্রহণ করা হচ্ছে। ড্রোনগুলি নজরদারি প্রযুক্তির নতুন 'এটি' খেলনা, তবে নির্দেশিকাগুলি উপেক্ষা করার পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে, ম্যানচেস্টারে অপব্যবহারের আরেকটি মামলা রয়েছে। সেখানে টটেনহ্যাম হটস্পারের সাথে ম্যানচেস্টার সিটির হোম ম্যাচের উপর ড্রোন উড়ানোর জন্য এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ড্রোনগুলি অনেকের জন্য মজাদার, নিরীহ খেলনা হিসাবে দেখা হয়, তবে বিমান নজরদারির এই অত্যন্ত উন্নত রূপটি গোপনীয়তা এবং নামহীনতার অধিকারের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক এবং নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদি সিসিটিভিকে গোপনীয়তার বিষয়ে খুব বেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সতর্ক করা হয়, তবে তুলনামূলকভাবে ড্রোনটি আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বৃহত্তর সুযোগ সহ অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।
==== ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং ====
ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং হ'ল ডেটা নজরদারি, একটি প্যাটার্ন ভিত্তিক বৈকল্পিক ব্যবহার করে এবং পৃথক ক্রিয়াকলাপ যাচাই করার জন্য ডেটা মাইনগুলির মাধ্যমে অনুসন্ধান করা। ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং একটি প্রোফাইল তৈরি করতে এবং ব্যক্তিদের ইন্টারনেট কার্যকলাপের নিদর্শনগুলি খুঁজে পেতে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এইভাবে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় আচরণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হতে পারে। সফটওয়্যারের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি অনলাইন লেনদেনের জরিপ এবং উল্লেখ করার সাথে সাথে আরও বিশদ বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতির জন্য তৈরি করে।
ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য বেসরকারী সংস্থাগুলি বিভিন্ন লোকের ইন্টারনেট ক্রিয়াকলাপ অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। এটি ব্যক্তির জন্য একটি ভোক্তা প্রোফাইল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ এই সংস্থাগুলিকে "তৃতীয় পক্ষ" বলে অভিহিত করে, কারণ তারা তাদের গ্রাহকদের লেনদেনকে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপায় হিসাবে সরাসরি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক তথ্যের সাথে ন্যস্ত করা হয়। কর্পোরেট খেলোয়াড়দের অন্য সেটের জন্য, তবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রয় তাদের ব্যবসা, কেবল পণ্য ও পরিষেবাদির বিনিময়ের পণ্য নয়।
সংস্থাগুলির দ্বারা ডেটা ট্র্যাকিং এবং নোট করা লক্ষ্যবস্তুর গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। সরকার যখন এই তথ্য পায় তখন অতিরিক্ত গোপনীয়তার সমস্যা দেখা দেয়, যা বর্তমানে কোনও আইনি পরিণতি ছাড়াই করতে পারে। এটি প্রোফাইল এবং প্রোফাইলার, বা শিকার এবং শিকারীর মধ্যে একটি ক্ষমতার লড়াই তৈরি করে। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাকিংয়ের সাথে পাসওয়ার্ড এবং এর বৈধতা বা এমনকি প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি অপ্রচলিত বলে মনে হয় যে একজনকে তাদের নিজস্ব ইমেল প্রবেশ করার জন্য একটি পাসকোড প্রয়োজন, যখন কোনও ডেটা মাইনারের কোনও ব্যক্তির সম্পূর্ণ চিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় এমন কোনও কিছুতে অ্যাক্সেস রয়েছে। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে জিমেইলের মতো সাইটে অ্যাক্সেস করতে অসুবিধা বিদ্রূপাত্মক- একটি মায়ের প্রথম নাম বা শৈশব পোষা প্রাণী অবশ্যই মনে রাখতে হবে যখন একটি পৃথক সংস্থা বা প্রোফাইলার কারও পরিচয় সংগ্রহ করার জন্য তাদের অজ্ঞতা উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় গোয়েন্দা এবং আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের দ্বারা কৌশল হিসাবে ডেটা মাইনিং ব্যবহার করা হয়েছে। এটি চালু করা হয়েছিল যখন তদন্তগুলি সন্ত্রাসীদের আচরণ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথেষ্ট প্রকাশ করে না যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমাজে মিশে যায়। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত, বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রতিরোধের জন্য, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে বিশাল এবং বেশিরভাগ অকেজো লেনদেনমূলক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ শুরু করেছে।
ডেটা প্রোফাইলিং এবং মাইনিং নজরদারির জগতে খালি চোখে যা দেখতে পারে তার পৃষ্ঠের নিচে খনন করতে এবং ব্যানাল ক্রিয়াকলাপকে ব্যবহারকারীর প্যাটার্নে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থহীন হিসাবে বিবেচিত ডেটা ব্যবহার করা এমন প্রোফাইলারের পক্ষে অত্যাবশ্যক হতে পারে যারা অনলাইন লেনদেন থেকে তাদের ডেটা তৈরি করতে পারে এবং যেমন কোনও ব্যক্তির একটি পরিষ্কার চিত্র তৈরি করতে পারে। এটি অনুশীলনের যথার্থতা নয় যা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে নৈতিক অসদাচরণ যা কৌশলটির অংশ। ব্যক্তিগত তথ্য বড় কোম্পানিগুলির জন্য একটি গরম পণ্য, তবে ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং সাধারণত একজন সাধারণ ব্যক্তির দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কেবল অনুসন্ধান করা হয় এবং এই ধরনের নজরদারি তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ।
==== হিউম্যান অপারেটিভ ====
স্পাই থ্রিলারে আমরা যেমন দেখি এজেন্টরা কি নজরদারির হাতিয়ার? এটা যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে হ্যাঁ তারা আছে। <nowiki>https://www.mi{{subst:#invoke:ConvertDigit|main|5}}.gov.uk</nowiki> এমআই৫ এর ওয়েবসাইট অনুসারে "গোপন মানব গোয়েন্দা সূত্র (সিএইচআইএস), বা "এজেন্ট", এমন লোক যারা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারে যা আমাদের তদন্তে সহায়তা করতে পারে"। এই এজেন্টগুলি প্রায়শই নাটকের উদ্দেশ্যে কাল্পনিক কাজগুলিতে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়, তবে এই জাতীয় গল্পগুলির ভিত্তি একই থাকে।
সম্ভবত বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত সুরক্ষা সংস্থা হ'ল সিআইএ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা বাহিনীর একটি শাখা। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা কার্যক্রম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সরকার-ব্যাপী ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে,[ যখন যুক্তরাজ্যে, এমআই ৬ এবং এমআই ৫ ১৯০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখন তারা সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো নামে পরিচিত ছিল। এই নিরাপত্তা পরিষেবা ব্যবহারের সবচেয়ে সক্রিয় সময়কাল, এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রতিলিপি যুগ ঠান্ডা যুদ্ধ হতে হবে। এই সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য বিদেশী সরকারের নজরদারি অপরিহার্য ছিল।
এই সব বিদেশী স্বার্থ সঙ্গে কাজ অপারেশন সম্পর্কিত, কিন্তু মানব অপারেটর মাধ্যমে গার্হস্থ্য জনসংখ্যার নজরদারি জন্য সেট আপ করা এজেন্সি আছে। সবচেয়ে বড় হোমল্যান্ড কাউন্টার-টেররিজম সংস্থা হ'ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস রয়েছে যেখানে এজেন্টদের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ঝুঁকির জন্য জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মানব অপারেটররা তাদের নিজস্ব নজরদারি প্রযুক্তি, সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। যুক্তরাজ্যে এজেন্টদের ভূমিকা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, বিবিসির রেডিও ৪ এর টুডে প্রোগ্রাম সম্প্রতি এমআই ৫ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বেনামী এজেন্টের সাক্ষাত্কার নিয়েছে।
==== ডি.এন.এ. প্রোফাইলিং ====
বেশ কয়েকটি দেশ নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরিষেবাগুলি থেকে লাভের আশায় প্রধানত ফার্মাসিউটিকাল সংস্থাগুলি এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ দ্বারা পরিচালিত চিকিত্সা গবেষণার জন্য দেশব্যাপী ডিএনএ ডাটাবেস তৈরি করছে। চিকিৎসা গবেষণা সুইডেনে ড্রাইভার যার মাধ্যমে ১৯৭৫ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছে (পিকেইউলাবরেটরিয়েট ২০০৮)। নমুনাটি জিনগত রোগ ফিনাইল-কেটোন-ইউরিয়া (পিকেইউ) পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ডাটাবেসে ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণার জন্যও সংরক্ষণ করা হয়। ডাটাবেসে কোনও ডিএনএ প্রোফাইল নেই, তবে রক্তের নমুনাগুলি সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। প্রতিটি নমুনার সাথে পরিচয় তথ্যও সরবরাহ করা হয়। ডাটাবেসটি অপরাধ তদন্তে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নয়। যাইহোক, আনা লিন্ধ (সুইডিশ পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব) হত্যার হাই-প্রোফাইল মামলায় পুলিশ ডাটাবেসে অস্থায়ী অ্যাক্সেস পেয়েছিল যা হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
==== স্যাটেলাইট চিত্রাবলী ====
২৫ শে মে, ২০০ ২০০৭-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জন মাইকেল ম্যাককনেল অনুমোদিত জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন অফিস এর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ স্থানীয়, রাজ্য এবং দেশীয় ফেডারেল এজেন্সিগুলিকে সামরিক গোয়েন্দা পুনরুদ্ধার উপগ্রহ এবং পুনরুদ্ধার বিমান সেন্সর থেকে চিত্রাবলী অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেওয়ার জন্য যা এখন মার্কিন নাগরিকদের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যাটেলাইট এবং বিমান সেন্সরগুলি মেঘের আচ্ছাদন ভেদ করতে, রাসায়নিক চিহ্নগুলি সনাক্ত করতে এবং বিল্ডিং এবং "ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার" এর বস্তুগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম হবে এবং গুগল আর্থের মতো প্রোগ্রামগুলির দ্বারা উত্পাদিত স্থির-চিত্রগুলির চেয়ে অনেক বেশি রেজোলিউশনে রিয়েল-টাইম ভিডিও সরবরাহ করবে।
==== সনাক্তকরণ এবং শংসাপত্র ====
সনাক্তকরণের সহজতম ফর্মগুলির মধ্যে একটি হ'ল শংসাপত্র বহন। কিছু জাতির সনাক্তকরণে সহায়তা করার জন্য একটি পরিচয় নথি সিস্টেম রয়েছে, অন্যরা এটি বিবেচনা করছে তবে জনসাধারণের বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যান্য নথি, যেমন পাসপোর্ট, ড্রাইভারের লাইসেন্স, লাইব্রেরি কার্ড, ব্যাংকিং বা ক্রেডিট কার্ডগুলিও পরিচয় যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। যদি পরিচয়পত্রের ফর্মটি "মেশিন-পঠনযোগ্য" হয়, সাধারণত একটি এনকোডযুক্ত চৌম্বকীয় স্ট্রাইপ বা সনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার করে, তবে এটি বিষয়টির সনাক্তকারী ডেটা সমর্থন করে। এই ক্ষেত্রে এটি একটি বৈদ্যুতিন ট্রেইল তৈরি করতে পারে যখন এটি চেক করা হয় এবং স্ক্যান করা হয়, যা প্রোফাইলিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, উপরে উল্লিখিত হিসাবে।
==== ভূতাত্ত্বিক ডিভাইস ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পুলিশ কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য লোকের গাড়িতে গোপন ট্র্যাকিং ডিভাইস স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে তারা আদালতে যুক্তি দেখাচ্ছিল যে তাদের এটি করার অধিকার রয়েছে। বেশ কয়েকটি শহর পাইলট প্রকল্প চালাচ্ছে যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে জিপিএস ডিভাইস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।
==== মানব মাইক্রোচিপ ====
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ এবং সংশয়বাদীরা একটি সম্ভাব্য নজরদারি পদ্ধতির অত্যন্ত সমালোচনা করেছেন: নাগরিকদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে মাইক্রো-চিপের ব্যবহার। যদিও অনেক বাণিজ্যিক পণ্য ইতিমধ্যে চুরি প্রতিরোধের জন্য মাইক্রো-চিপ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, এই চিপগুলি সম্ভাব্যভাবে অন্যান্য উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন এটি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে নতুন আমেরিকান পাসপোর্টগুলি একটি আরএফআইডি চিপ দিয়ে জারি করা হয় যা ব্যক্তিগত তথ্য ধারণ করে। এই চিপগুলি দশ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। তবে একই ধরনের চিপ এরই মধ্যে মানুষের মধ্যেও বসানো হয়েছে। কয়েকটি ক্লাব এবং ডিস্কোথেক নিয়মিত গ্রাহকদের বাহুতে মাইক্রো-চিপ ইনজেকশনের মাধ্যমে এই ব্যবহারকে নেতৃত্ব দিয়েছে যাতে তাদের সহজে অ্যাক্সেস এবং একটি বৈদ্যুতিন ট্যাব সরবরাহ করা যায় যা অর্থ বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা দূর করে। হাস্যকরভাবে, এটি অনুসরণ করে যে নজরদারি কেবল নিয়ন্ত্রণের একটি অন্তর্নিহিত এবং গোপন ফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে না, তবে সুস্পষ্ট ৩৬০ ° প্রতিক্রিয়া প্রদানের উপায় হিসাবে ব্যবসায়িক চেনাশোনাগুলিতে গৃহীত হয়েছে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সমগ্র সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট নিরীক্ষণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন জড়িত। যাইহোক, এই প্রক্রিয়াটি একটি সংগঠনের মধ্যে মাইক্রো-রাজনীতির জন্ম দিতে পারে এবং নিন্দা এবং ব্ল্যাকমেইলকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে এটি শৃঙ্খলার নিখুঁত রূপ যে এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ক্ষমতার বিষয়টিকে স্বাগত বোধ করে এবং প্রকাশ্যে শৃঙ্খলাকে আমন্ত্রণ জানায়। একইভাবে, সংশয়বাদীরা ভয় পায় যে আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিটি ব্যক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করে এবং এই বিবরণগুলিকে বাইরের শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন করে স্বচ্ছ মানব বা "কাচের মানুষ" তৈরি করছি।
==== ডাক সেবা ====
টেক্সট মেসেজিং, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং ইমেলের উত্থানের সাথে সাথে এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে ডাক চিঠিটি তরুণ প্রজন্মের জন্য অপ্রচলিত হয়ে উঠছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করেছিল যে জাতীয় সাক্ষরতা ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা গেছে যে ছয়জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে মাত্র একজন এখনও চিঠি লেখে এবং তারা বিশ্বাস করে যে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্বে বাস করা চিঠি লেখার পতনের পিছনে কারণ।
আমাদের মধ্যে যারা চিঠি পাঠান এবং গ্রহণ করি এবং মহামান্যের সন্তুষ্টিতে নেই এমনকি যদি এটি কেবল অদ্ভুত ক্রিসমাস বা ধন্যবাদ কার্ড হয় তবে আমরা সর্বদা ধরে নিই যে আমাদের তথ্য ব্যক্তিগত; তবে যুক্তরাজ্য ডাক এবং যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকারের সাথে একটি ওঠানামা সম্পর্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
মিডিয়া ব্লগ ইনফর্ম (ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অফ রেসপন্সিবল মিডিয়া ফোরাম) ১৭ থেকে ২০ শতকের চিঠিগুলি কেবল একটি পরোয়ানার অনুমোদনের মাধ্যমে ট্রানজিটে খোলা যেতে পারে, তবে পরোয়ানার ফর্মটি সরকারী ক্ষমতার বিবেচনার ভিত্তিতে হবে, তবে তারা প্রকাশ্যে পরামর্শ দেয়নি যে বাধা দেওয়া হচ্ছে। উপরন্তু, কোন কেলেঙ্কারি গোপনে মোকাবেলা করা হত।
এই অনুশীলনের নীরবতা ১৯ ১৯৭৯৯ সাল পর্যন্ত রয়ে গিয়েছিল যখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে স্থানীয় পুলিশ একটি প্রাচীন ব্যবসায়ীর টেলিফোন রেকর্ড করছিল এবং যখন যুক্তরাজ্যের আদালত আদালত খারিজ করে দেয়, তখন বাদী মামলাটি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে নিয়ে যায় যেখানে এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে যুক্তরাজ্য সরকার মানবাধিকারের ইউরোপীয় কনভেনশনের ৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্যের একজন ব্যক্তিকে শান্ত জীবনের অধিকার দেয়া। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একমাত্র লুপ হোল।
এটি আদালত কর্তৃক আদেশিত যোগাযোগ আইন ১৯৮৫ এর ইন্টারসেপশন তৈরির দিকে পরিচালিত করে এবং পরে তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ২০০০ এর নিয়ন্ত্রণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। আরও দেখুন: আইন ও বিধিনিষেধ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক আইনের গোপনীয়তা কেবল ১৯ শতকে ঘটেছিল। জন ডারহাম পিটারস বলেছেন যে স্ট্যাম্প, সিল করা খাম এবং পোস্ট বাক্সের আগে চিঠিগুলি খোলা, পড়া এবং এমনকি স্থানীয় প্রেসে প্রকাশিত হতে পারে।
গ্রাহাম মেইকেল এবং শেরম্যান ইয়ং চিঠি লেখার ক্ষেত্রে বিকশিত গোপনীয়তার সামঞ্জস্যতা এবং আজকের সোশ্যাল মিডিয়া আউটলেটগুলিতে কোনটি ব্যক্তিগত এবং কোনটি নয় তা সংজ্ঞায়িত করার কোনও আহ্বান জানানো হয়নি। তারা বলে, 'কাউকে এভাবে বার্তা পাঠানো অস্বাভাবিক কিছু নয়, কেবল তখনই আপনার পৃষ্ঠার 'প্রাচীর' অঞ্চলে লিখে তাদের উত্তর দেওয়া অস্বাভাবিক নয়, যাতে কথোপকথনটি আরও বিস্তৃত শ্রোতাদের কাছে উন্মুক্ত হয়, প্রশ্নে প্রাচীরে কী গোপনীয়তা সেটিংস প্রয়োগ করা হয় তার উপর নির্ভর করে।
==== অ্যাপ্লিকেশন ====
নজরদারি প্রযুক্তির একটি বিশেষ রূপ হ'ল গুগল প্লে এবং আইটিউনসের মতো অ্যাপ্লিকেশন স্টোরগুলির মাধ্যমে ভোক্তাদের অ্যাক্সেসযোগ্য। এই প্রযুক্তিটি বাজারজাত করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে; কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের ইন্টারনেট ব্যবহার ট্র্যাক করার জন্য সংস্থাগুলির জন্য, তাদের ফোনের মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করার জন্য পিতামাতার কাছে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং স্বামী বা স্ত্রীর ক্রিয়াকলাপ তদন্তের উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়। অবশ্যই, বেসিক সফটওয়্যারটি মূলত একই এবং ইন্টারনেট সংযোগ সহ যে কোনও কম্পিউটার বা ফোনে ডাউনলোডযোগ্য। এই বিভাগটি বিশেষত এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি এবং সেগুলি কীভাবে কাজ করে তা দেখবে।
একটি আকর্ষণীয় সূচনা পয়েন্ট হতে পারে হাফিংটন পোস্ট দ্বারা একটি নিবন্ধ পাঁচটি ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তাদের বাচ্চাদের উপর "গুপ্তচরবৃত্তি" করার জন্য পিতামাতার কাছে বিক্রি করা হয়। এটি এই পণ্যগুলির প্রধান বিক্রয় পয়েন্টগুলি হাইলাইট করে, তাদের বাচ্চারা কী পাঠ্য করে তা দেখার ক্ষমতা থেকে শুরু করে তারা যে গাড়িতে ভ্রমণ করছে তার গতি জানা। এই পণ্যগুলির ওয়েবসাইটগুলি নিজেরাই অনুরূপ পয়েন্টগুলি উল্লেখ করে, পাশাপাশি কর্মচারীদের শিথিলতা এবং প্রতারণামূলক স্বামীদের কথা বলে। শীর্ষ ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির মতে 'এমএসপিআই' হ'ল "বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ব্যবহৃত সেল ফোন ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন", তাই এটি যেভাবে কাজ করে এবং এই বিষয়ে কোম্পানির কী বলার আছে তা দেখা মূল্যবান।
এমস্পাই এর হোমপেজে 'হাউ ইট ওয়ার্কস' শিরোনামে একটি বিভাগ রয়েছে যেখানে তারা বলেছে "আমাদের সফটওয়্যারটি জিপিএস অবস্থান, ওয়েব ইতিহাস, ছবি, ভিডিও, ইমেল, এসএমএস, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, কীস্ট্রোক এবং আরও অনেক কিছু সহ পর্যবেক্ষণ করা ফোনের পটভূমিতে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে কাজ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে - কল পরিচালনা করা, পাঠ্য বার্তা এবং জিপিএস অবস্থানগুলি ট্র্যাক করা, ক্যালেন্ডার এবং ঠিকানা বইগুলি অ্যাক্সেস করা এবং কয়েকটি নাম রাখার জন্য অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রোগ্রামগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। এটি আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈধতার প্রশ্ন থাকতে পারে, কারণ এটি বেসামরিক নজরদারি সফটওয়্যার, তবে তাদের সাইটটি ব্যাখ্যা করে যে "এর ব্যবহার একেবারে আইনী" যতক্ষণ না এটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের, কর্মচারীদের নিরীক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় যারা সচেতন যে তাদের ট্র্যাক করা হচ্ছে, বা ক্রেতার নিজের ফোনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যাইহোক, সফটওয়্যারটি দূরবর্তীভাবে কোনও ডিভাইসে ডাউনলোড করার জন্য উপলব্ধ তাই ব্যবহারকারীদের পক্ষে অবৈধভাবে এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। স্পাই বাবলের মতো অনুরূপ সাইটগুলিতে, বৈধতার প্রশ্নটি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ কারণ এটি অংশীদারের ডিভাইসে ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং অনুমোদনের বিষয়টিকে সম্বোধন করা হয় না। অনলাইনে অনেক নিবন্ধ রয়েছে যা এখানে বর্ণিত আইনী এবং নৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে।
এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলির ব্যবহার বিতর্কিত হতে পারে, তবে দৈনন্দিন নজরদারি প্রযুক্তি হিসাবে সময় বাড়ার সাথে সাথে তারা বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
== নেটওয়ার্কড সংস্কৃতির ক্ষমতার রাজনীতি ==
প্রযুক্তি এবং অন্য সবকিছুর ব্যাপক আবেদন রয়েছে যা ক্ষমতা সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বদা সমালোচিত হওয়া উচিত। একটি নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজ বিশ্বের শক্তিশালী সরকারগুলিকে যে সুবিধাগুলি দেয় তা সমালোচনা করা বা হাইলাইট না করা বোকামি। এমন একটি বিশ্ব যেখানে প্রযুক্তির নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নির্বিঘ্নে দেখার অনুমতি দেয়। কে দেখছে আমাদের? যারা আমাদের দেখছে তাদের কে দেখছে? এই প্রযুক্তিগত যুগে সমালোচনামূলক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী থাকার জন্য আমাদের এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে হবে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী, ল্যারি ডায়মন্ডের 'সর্বদা সংস্কৃতিতে' একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে এটি প্রযুক্তি এবং তথ্যে সহজে অ্যাক্সেসের অনুমতি দিয়েছে। ডায়মন্ড বিশ্বাস করেন যে সস্তা ভিডিও ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সক্ষম মোবাইল ফোন যা ভিডিও রেকর্ড করতে পারে তা 'ক্ষমতা' বেসামরিক নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে, জনগণকে নিজেরাই সার্ভেলান্ট হয়ে উঠতে এবং নজরদারির ঐতিহ্যবাহী শ্রেণিবিন্যাসকে সমতল করে তুলেছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমরা আমাদের হাতে থাকা ডিভাইসগুলি আমাদের সরকারী এবং কর্পোরেট কর্মকর্তাদের ক্রিয়াকলাপ নথিভুক্ত করার অনুমতি দেয়, তাই বেসামরিক নাগরিকদের দিনের যে কোনও সময় শক্তিশালী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার ক্ষমতা দেয়; নিচ থেকে কর্তৃপক্ষকে দেখার ক্ষমতা। এমন একটি সমাজের ধারণা যা চতুর্থ এস্টেটে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং আমাদের অ্যাক্সেস এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতার প্রতীকগুলিকে জবাবদিহি করার ক্ষমতা রাখে তা ৮০ এর দশকের শো সিওপিএস-এ দেখা যায়। এমন একটি শো যা আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপকে প্রকাশ করেছিল কারণ তারা বল প্রয়োগ করে এবং কখনও কখনও নৃশংস কৌশল ব্যবহার করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছিল। শোটি বৈপ্লবিক ছিল যে এটি ক্ষমতার এজেন্টদের রেখেছিল যারা তাদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য কেউ ছাড়াই অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছিল এবং হঠাৎ সাধারণ জনগণের সমালোচনা করার জন্য আলোতে আনা হয়েছিল।
প্রাক্তন সিআইএ কর্মী '''এডওয়ার্ড স্নোডেন''' অবশ্য দেখিয়েছেন যে কীভাবে কখনও কখনও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক নজরদারি ঘটে যখন আমরা জানি না যে এটি ঘটছে বা এমনকি বিদ্যমান রয়েছে। যখন জনগণ অসচেতন থাকায় কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। সেই সময় যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আইনের ঢিবি যা কেউ পড়ে না, ক্ষমতার এজেন্টদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলিতে অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়। এনএসএ হাজার হাজার নিরহংকারী আমেরিকানদের টেলিফোন রেকর্ড সংগ্রহ করছিল। একটি প্রক্রিয়া যা টেলিযোগাযোগ সংস্থা ভেরাইজনকে দৈনিক ভিত্তিতে টেলিফোন ডেটা হস্তান্তর করার জন্য একটি গোপন আদালতের আদেশ দ্বারা সক্ষম হয়েছিল। এনএসএ প্রিজম নামে একটি নজরদারি প্রোগ্রামে প্রতিটি বড় ইন্টারনেট সংস্থার সার্ভারে ট্যাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। 'প্রিজম' কর্মসূচি থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্যও ব্রিটেনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল। এডওয়ার্ড স্নোডেন, যিনি এই তথ্য ফাঁসের জন্য দায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সম্পত্তি চুরির জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং নির্বাসনে রয়েছেন এবং তবুও তিনি যা করেছেন তা হল ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা। [৯]
এডওয়ার্ড স্নোডেন এবং উইকিলিকসের মতো সংস্থা গণ নজরদারির ব্যাপকতার চিত্র তুলে ধরেছে। স্নোডেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডর দূতাবাসে পালিয়ে যেতে হয়েছিল যাতে তিনি দাবি করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্বাভাবিক উপস্থাপনার প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা যায়। অ্যাক্সেসযোগ্যতার দিক থেকে অনলাইনে সংগঠিত করা অনেক সহজ হতে পারে, তবে জনসাধারণ যদি অবিচ্ছিন্ন নজরদারির অধীনে থাকে তবে তর্ক করা কঠিন হয়ে পড়ে যে তারা তাদের ডিভাইস দ্বারা সত্যই ক্ষমতায়িত, যদি এগুলি তাদের গোপনীয়তার এই জাতীয় আক্রমণকে অনুমতি দেয়।
প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল একটি সমাজে ক্ষমতাসীনরা কীভাবে নজরদারি বৈশিষ্ট্যগুলির অপব্যবহার করতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ বিশ্বের ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারি। গল্পটি ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল যখন তৎকালীন নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রাজকীয় সম্পাদক ক্লাইভ গুডম্যান এবং একজন বেসরকারী তদন্তকারী গ্লেন মুলকায়ারকে রাজকীয় সহযোগীদের জন্য রেখে যাওয়া ভয়েসমেইল বার্তাগুলিতে বাধা দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয় এবং আরও হ্যাকিংয়ের গল্প সামনে আসে। তবে এই কেলেঙ্কারির জটিল রাজনৈতিক মুহূর্ত আসে যখন গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায় যে সংবাদপত্রটি খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মিলি ডাউলারের মোবাইল ফোন হ্যাক করেছে। অভিযোগ, টার্গেটদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, মৃত ব্রিটিশ সৈন্যদের আত্মীয় এবং লন্ডন বোমা হামলায় আটকে পড়া লোকজন রয়েছেন।
নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির সাথে একটি সমাজে, অবস্তুগততা সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত তথ্য ডিজিটাল আকারে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেটের কারণে সময় ও স্থানের দূরত্বও দূর হয়ে যায়। আরও কি, সমতা নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত নাগরিক অনলাইনে তাদের মতামত পড়তে এবং পোস্ট করতে পারে। ক্ষমতার রাজনীতির জন্য, ইন্টারনেটের উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে সর্বাধিক পরিমাণে সমর্থন অর্জনের জন্য সময়মতো রাজনৈতিক তথ্য প্রেরণ করতে সহায়তা করতে পারে। নেটওয়ার্কযুক্ত সংবাদপত্র, সম্প্রচার, টেলিভিশন ইত্যাদি জনসাধারণকে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সরবরাহ করতে পারে, যাতে জনমতের জন্য সঠিক অভিযোজন আকার দেওয়া যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতো দেশে, এটি অনলাইনে ব্যাপক সেন্সরশিপের দিকে পরিচালিত করেছে। চীনের গ্রেট ফায়ারওয়াল[ এর অর্থ হ'ল ইন্টারনেট কেবল সরকার অনুমোদিত সামগ্রী অ্যাক্সেস করে এবং অনুসন্ধানগুলি নির্দিষ্ট শব্দের জন্য ফিল্টার করা হয় যার ফলে ফৌজদারি অভিযোগ এবং কারাদণ্ড হতে পারে। শিল্পী এবং সমালোচক পিআরসি আই ওয়েইওয়েই চীনের মতো আচরণের জন্য এনএসএর নজরদারি কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন এবং সরকারী নজরদারিতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
== নৈতিক উদ্বেগ ==
নজরদারি কখনই বিষয়টির গোপনীয়তার যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশায় অনুপ্রবেশ করা উচিত নয়। যদিও বেসরকারী সুরক্ষা এবং নজরদারি অপারেটিভরা অনুসন্ধান এবং জব্দ সুরক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক উদ্বেগের সাথে পুলিশ অফিসার নয়, যদি অযৌক্তিক উপায়ে কোনও বিষয়ের অধিকার লঙ্ঘন হয় তবে সম্ভবত নাগরিক দায়বদ্ধতা থাকবে।
এটি একটি পরিচিত সত্য যে উদাহরণস্বরূপ ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করার সময় - এমন একটি ব্যবহার যা দৈনন্দিন ভিত্তিতে বৃহদায়তন হতে থাকে - লোকেরা শর্তাদি এবং শর্তাদি না পড়েই সম্মত হয়। অ্যাপ্লিকেশনগুলি তখন কেবল ব্যবহারকারীদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে আকারের ডেটা ব্যাংক সংগ্রহ করে না, তবে প্রতিষ্ঠানগুলি (সরকারের মতো) নিজেরাই প্রোফাইল এবং কথোপকথন (ব্যবহারকারীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়) থেকে ব্যক্তিগত ডেটা অ্যাক্সেস করে, সুরক্ষার জন্য বলা হয় এমন বিষয়গুলির জন্য এগুলি ফিল্টার করে। এই ঘটনাগুলির উপর সুনির্দিষ্ট তথ্য অর্জন করা কঠিন এবং যদিও, জনগণকে যা জ্ঞান দেওয়া হয় তা থেকে, প্রতিটি সরকার সবকিছু নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না, যখন এটি ঘটে তখন এটি নজরদারির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এই ধরণের পরিস্থিতিতে, এটি খুব বিতর্কিত যে সম্প্রদায়ের সর্বোত্তম স্বার্থে সুরক্ষার কারণে নজরদারির 'ইতিবাচক' ব্যবহার হতে পারে কিনা, বা এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণের মামলা। সামগ্রিকভাবে ইন্টারনেটের আরও সাধারণ স্তরে উত্থাপিত যুক্তিগুলিও ডিজিটাল শ্রমের একটি ভাল শোষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে কিছু অ্যাপ্লিকেশন এবং পৃষ্ঠাগুলি ব্যবহার করে, উদাহরণস্বরূপ, আমরা ব্যবহারকারীরা নিজের চেয়ে অন্য কাউকে বেশি উপকৃত করছি এবং যেখানে মেকানিক্যাল তুর্কের মতো সিস্টেমে শ্রম অত্যন্ত সস্তা যখন এটি অর্থ প্রদান করে এবং তাই এইচআইটির অনুরোধকারীকে উপকৃত করে। গুগল এবং অ্যামাজনের মতো সিস্টেম / কর্পোরেশনগুলিকে মেগাস্ট্রাকচার, উল্লেখযোগ্য প্রাসঙ্গিকতার সাথে ডেটাব্যাঙ্ক হওয়ার অনুমতি দেয়, যেন একটি ভার্চুয়াল সাম্রাজ্য যা আরও শারীরিক চ্যালেঞ্জ করতে পারে (উদাহরণস্বরূপ তেল কোম্পানি এবং গাড়ি কারখানা)। ডেটাব্যাঙ্কগুলি ব্যবহারকারীর 'সম্মতি' (প্রায়শই অজানা) এর উপর নির্মিত।
যদিও সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল বিশ্ব ছায়াময় পরিস্থিতি, লঙ্ঘন, অপব্যবহার এবং নৈতিক উদ্বেগের পরিস্থিতিগুলির উদাহরণ (মাঝে মাঝে ভাল সংবাদের জন্য তৈরি করে) অনুমতি দেয়, এগুলি এমনকি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মতো এটির একটি নমুনা বিভাগ গ্রহণ করতে দেখা যায়। ফেসবুক একটি জনপ্রিয় হওয়ায়, এটি অতীতে উদ্বেগের বিষয় ছিল, উদাহরণস্বরূপ ব্যবহারকারীরা এমনকি পরবর্তী অবধি এটি সম্পর্কে সচেতন না হয়েই "সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে ব্যাপক আকারের সংবেদনশীল সংক্রামকের পরীক্ষামূলক প্রমাণ" চালাতে সক্ষম হয়েছিল। আবারও ব্যবহারকারীর ভঙ্গুরতা এবং তুলনামূলকভাবে সহজ ম্যানিপুলেশনের অনুমতি দেয় এমন একটি এক্সপোজারকে আন্ডারলাইন করে, এটি এবং এর এক্সটেনশন অ্যাপ্লিকেশনগুলির কাজের মধ্যে নৈতিক সমস্যা রয়েছে।
একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি হতে পারে ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন মেসেঞ্জার সম্পর্কিত নৈতিক উদ্বেগ। মেসেঞ্জারের অনেক ব্যবহারকারীই জানেন না যে তারা অ্যাপটি ব্যবহারে সম্মত হওয়ার সময় ঠিক কতগুলি অনুমতি দিয়েছেন। এটিকে গোপনীয়তার সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত কিনা তা নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে।
আরও কিছু আশ্চর্যজনক অনুমতিগুলির মধ্যে রয়েছে তবে সীমাবদ্ধ নয়: আপনার পরিচিতিগুলি সংশোধন করা, আপনার পাঠ্য বার্তাগুলি পড়া, পাঠ্য বার্তা প্রেরণ, সরাসরি ফোন নম্বরগুলিতে কল করা, কল লগ পড়া, আপনার ইউএসবি স্টোরেজের সামগ্রী পড়া, ছবি এবং ভিডিও তোলা, অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড করা। এই অনুমতিগুলির মধ্যে কয়েকটি অবাক করা বলে মনে হচ্ছে কারণ এই অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত বার্তা এবং ছবি প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এখানে নৈতিক উদ্বেগ হ'ল অনেক ব্যবহারকারী এই অনুমতিগুলি সম্পর্কে অসচেতন এবং এইভাবে একটি ভয় থাকতে পারে যে অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারীরা ডেটা মাইন বা চরম ক্ষেত্রে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এটির সুবিধা নিতে পারে। এখানে ভবিষ্যতের জন্যও উদ্বেগ রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ - "যদি এত লোক ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রযোজ্য অনুমতি গোষ্ঠীগুলি পরীক্ষা না করে থাকে ... ভবিষ্যতে মোবাইল বিকাশকারীরা কতটা সাহসী হবেন?".
ফেসবুক এই নৈতিক আতঙ্কে সাড়া দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, 'বন্ধুকে সেলফি পাঠাতে চাইলে আপনার ফোনের ক্যামেরা অন করে সেই ছবি ধারণ করতে অ্যাপটির অনুমতি নিতে হবে। আপনি যখন অ্যাপটি ব্যবহার করছেন না তখন আমরা আপনার ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন চালু করি না। যাইহোক, এটি সম্পূর্ণরূপে জল্পনা শেষ করেনি, কারণ প্রতিক্রিয়াটিতে সমস্ত অনুমতির ন্যায্যতার সম্পূর্ণ ভাঙ্গন ছিল না। সম্ভবত ফেসবুককেও এখন 'বিগ ব্রাদার' হিসেবেও দেখা হয় এবং অবিশ্বাসের একটা স্তর আছে।
তবে আস্তে আস্তে মানুষ বুঝতে পেরেছে ফেসবুক কীভাবে এই পারমিশন ব্যবহার করে। পরিচিতিগুলির অনুমতির প্রসঙ্গে, আরেকটি ন্যায্যতা হ'ল "অ্যাপ্লিকেশনটির আপনাকে একটি নিশ্চিতকরণ কোডের মাধ্যমে আপনার ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বার্তাগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অনুমতি দেওয়া দরকার"।
এটি অ্যাপটি সম্পর্কে কিছু নৈতিক বিতর্ককে বাতিল করতে পারে তবে সত্যটি হ'ল ফেসবুক আপনার কাছে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনগুলি লক্ষ্য করতে অ্যাপটি ব্যবহার করে, তবে এই ডেটা সংগ্রহের বেশিরভাগই অ্যাপ্লিকেশনটিতে রয়েছে। এটি একটি জটিল প্রশ্ন উত্থাপন করে: আপনার আগ্রহের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন পাঠানো গোপনীয়তার লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা উচিত? মোটামুটিভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়।
নৈতিক সমস্যা, অবহিত সম্মতির নীতি এবং অনলাইনে পরিচয়ের প্রকাশ আসলে একটি বিস্তৃত বিষয়ের অংশ এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবেলা করা যেতে পারে, কোনও ব্যক্তির স্ট্যাটাস আপডেট থেকে শুরু করে রাফায়েল কাপুরো এবং ক্রিস্টোফ পিঙ্গেলের কাগজের মতো একাডেমিক প্রকাশনা পর্যন্ত। মুদ্রণ যুগে সেন্সরশিপ থেকে অনলাইন আস্থা সম্পর্কিত আরও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যন্ত, এটি নজরদারি এবং স্বাধীনতার মধ্যে উত্তেজনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা ডিজিটাল সম্প্রদায়ের সহযোগিতামূলক পরিবেশ এবং পারস্পরিক সমর্থন তৈরিতে মৌলিক নৈতিক চ্যালেঞ্জ গঠন করে।
=== নজরদারির পক্ষে ও বিপক্ষে ===
সমর্থকরা যুক্তি দেন যে নজরদারি তিনটি উপায়ে অপরাধ হ্রাস করতে পারে: প্রতিরোধ, পর্যবেক্ষণ এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে। নজরদারি ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে এবং মোডাস অপারেন্ডি প্রকাশ করে প্রতিরোধ করতে পারে। এর জন্য ন্যূনতম স্তরের আক্রমণাত্মকতা প্রয়োজন। নজরদারি উন্নত পরিস্থিতিগত সচেতনতার মাধ্যমে বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মানব অপারেটরদের একটি কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে, যেমন ভিডিও বিশ্লেষণ। নজরদারি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের জন্য ফুটেজের প্রাপ্যতার মাধ্যমে কোনও ঘটনার পুনর্গঠন এবং অপরাধ প্রমাণ করতে সহায়তা করতে পারে। নজরদারি সংস্থানগুলি দৃশ্যমান হলে বা নজরদারির পরিণতি অনুভব করা গেলে বিষয়গত সুরক্ষাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
* সমর্থকরা কেবল বিশ্বাস করে যে এটি সম্পর্কে কিছুই করা যায় না এবং লোকেরা অবশ্যই কোনও গোপনীয়তা না থাকার অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
* সাধারণ যুক্তিটি হ'ল: "তর্ক লুকানোর কিছু নেই, যদি আপনি কিছু ভুল না করেন তবে আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
অন্যদিকে, অনেক নাগরিক অধিকার এবং গোপনীয়তা, যেমন ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে নাগরিকদের উপর সরকারী নজরদারিতে ক্রমাগত বৃদ্ধির অনুমতি দিয়ে আমরা অত্যন্ত সীমিত বা অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক এবং / অথবা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সহ একটি গণ নজরদারি সমাজে শেষ করব।
* কিছু সমালোচক বলেছেন যে সমর্থকদের দ্বারা করা দাবিটি পড়ার জন্য সংশোধন করা উচিত: "যতক্ষণ না আমরা যা বলি তা করি, ততক্ষণ আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
যদি এমন যুক্তি থাকে যে আমাদের ডিজিটাল নজরদারি সীমাবদ্ধ করা উচিত, তবে এটি সামাজিক মিডিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহারে কাটছাঁট করতে হবে। তবে "আজকের সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের নমুনা হিসাবে আমাদের সম্পর্কে কিছু শিখিয়ে থাকে তবে তা হ'ল ভাগ করে নেওয়ার জন্য মানুষের প্রবণতা গোপনীয়তার জন্য মানুষের প্রবণতাকে ছাড়িয়ে যায়। এটি তখন পরামর্শ দেবে যে মানুষ গোপনীয়তার চেয়ে ভাগ করে নেওয়ার কাজটিকে মূল্য দেয়, সুতরাং নজরদারির বৃদ্ধি এইভাবে আশ্চর্যজনক নয় কারণ দেখার জন্য আরও কিছু উপলব্ধ রয়েছে।
== যুক্তরাজ্যে নজরদারি ==
'''''যুক্তরাজ্যে নজরদারি''' সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, দয়া করে যুক্তরাজ্যে গণ নজরদারি দেখুন''
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অগ্রগামী হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্যে ডিজিটাল আকারে নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ সালে বিল্ড গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) ছিল যা ইংরেজিভাষী দেশগুলির ফাইভ আইজ সহযোগিতার মতো প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বৈদ্যুতিন যোগাযোগে বাধা দেওয়া, যা সময়ের সাথে সাথে অনেক বেড়েছে।
আজকাল, যুক্তরাজ্যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের নজরদারি যুক্তরাজ্যের সংসদে প্রণীত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষত, ব্যক্তিগত বার্তাগুলির সামগ্রীতে অ্যাক্সেস (অর্থাৎ, কোনও ইমেল বা টেলিফোন কলের মতো যোগাযোগের বাধা) অবশ্যই সেক্রেটারি অফ স্টেটের স্বাক্ষরিত ওয়ারেন্ট দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা গোপনীয়তা আইন যুক্তরাজ্যের আইনে প্রযোজ্য। আইনটি বৈদ্যুতিন নজরদারি ব্যবহারের উপর শাসন এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করে।
== জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
* জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর-এ'' গোপনীয়তার অভাব পুরো উপন্যাস জুড়ে একটি প্রধান চলমান থিম। অডিও এবং ভিডিও উভয়ই রেকর্ড করে এমন টেলিস্ক্রিনগুলি চরিত্রগুলির অনেকের বাড়িতে, ব্যবসায় এবং সর্বজনীন স্থানে ইনস্টল করা হয় যাতে তাদের উপর ট্যাব রাখা যায়। বেসরকারী নাগরিকদের তাদের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে রিপোর্ট করতে উত্সাহিত করা হয় এবং থট পুলিশ 'চিন্তার অপরাধ' উন্মোচনের দায়িত্বে থাকা আন্ডারকভার অফিসার। উপন্যাসে নজরদারির থিমগুলি 'বিগ ব্রাদার' শব্দগুচ্ছের ব্যবহার এবং একই নামের টেলিভিশন প্রোগ্রাম সহ একটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রভাব ফেলেছে। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারির সাথে যুক্ত একটি নির্দিষ্ট ভয় রয়েছে এবং ১৯৮৪ এটি খুব ভালভাবে চিত্রিত করে - "অবশ্যই কোনও মুহুর্তে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা জানার কোনও উপায় ছিল না" এর থেকে আরও, অরওয়েল সরকারী ক্ষমতার জন্য ক্ষুধা এবং ড্রাইভের সাথে সহাবস্থান নজরদারির ধারণাটিকে সম্বোধন করেছেন। এটি নজরদারির নেতিবাচক প্রভাবগুলি নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করে, যা আজ আধুনিক সমাজে সিসিটিভি ব্যবহার এবং আজ চালু হওয়া নজরদারির ক্রমবর্ধমান পরিমাণের মাধ্যমে স্পষ্ট। অরওয়েল তার উপন্যাসে বলেছেন, 'ক্ষমতা কোনো মাধ্যম নয়; এটা একটা শেষ। বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেউ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে না; একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য বিপ্লব করে। নিপীড়নের বস্তু হচ্ছে নিপীড়ন। নির্যাতনের বস্তু হচ্ছে নির্যাতন। ক্ষমতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা"। এটি প্রমাণ করে যে নজরদারির ব্যবহার সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য নয়, বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
* ৮০ এর দশকে ''সিওপিএস'' শোটি হিট হয়েছিল কারণ এটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের অপরাধীদের উপর আইনকে শক্তিশালী করার জন্য একাধিকবার বল প্রয়োগের নজরদারি ফুটেজ দেখিয়েছিল। শোটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারের আপাতদৃষ্টিতে অকলুষিত চিত্রটি উন্মোচন করেছিল।
* অনেক 'ফ্লাই-অন-দ্য ওয়াল' রিয়েলিটি টিভি শো একটি সেটিংয়ে ক্যামেরা মাউন্ট করার পদ্ধতি নিয়োগ করে এবং তাদের স্বীকার না করেই বিষয়গুলির ক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করে। এটি বিষয়গুলির জ্ঞান দিয়ে করা যেতে পারে, যেমন ''শোতে আমি একজন সেলিব্রিটি ... গেট মি আউট অফ হিয়ার!'', বা ক্যামেরাটি লুকানো যেতে পারে এবং কেবল পরে ''পাঙ্ক'ডের'' মতো শোতে দেওয়া যেতে পারে। এই দ্বিতীয় ধরনের জনসাধারণের সদস্যদের ব্যবহার করার ঝোঁক থাকে।
* ২০১৩ সালের চলচ্চিত্র ''আন্ডার দ্য স্কিন-এ'' বেশ কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে স্কারলেট জোহানসনের চরিত্র, একজন এলিয়েন মানুষকে অপহরণ করার চেষ্টা করে, একটি ভ্যানে অপরিচিতদের তুলে নিয়ে যায়। এই অপরিচিতদের অভিনেতাদের দ্বারা অভিনয় করা হয়নি, তবে জনসাধারণের সদস্যরা জানতেন না যে তারা ফিচার ফিল্মে অংশ নিতে চলেছেন, ভ্যানে একাধিক লুকানো ক্যামেরা দৃশ্যগুলি রেকর্ড করে
* ''- গগলবক্স'', একটি ইন্টারঅ্যাকশন প্রোগ্রাম যা প্রতিদিনের লোকেরা টিভি দেখছে। দর্শক টিভি দেখতে দেখতে দেখছেন।
* জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পাপারাজ্জি একটি পুনরাবৃত্ত বিষয়। এটি নজরদারির একটি আক্রমণাত্মক রূপ যা মূলত সেলিব্রিটিদের হয়রানি করে যখন তারা প্রহরায় ধরা পড়ে তখন তাদের ফটো এবং ভিডিও পেতে হয়। এটি সমস্যাযুক্ত হয়ে ওঠে কারণ এই ধরণের নজরদারি নৈতিক আচরণবিধির বিরুদ্ধে যায়, কারণ এই ধরণের আক্রমণাত্মক অনুশীলনকে সম্মতি দেওয়া হয়নি।
* ফিলিপ কে ডিকের ছোট গল্প ''দ্য মাইনরিটি রিপোর্ট'' এবং পরবর্তী চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম এবং ফক্স টেলিভিশন সিরিজটি এমন একটি বিশ্বের চিত্রিত করে যেখানে লোকেরা এখনও করেনি এমন অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার হতে পারে। ফিল্ম অভিযোজনে, শহরব্যাপী অপটিক্যাল স্বীকৃতি সিস্টেম এড়াতে নায়ককে অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ চোখের প্রতিস্থাপন শল্য চিকিত্সার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
* ''পার্কস অ্যান্ড রিক্রিয়েশনের'' চূড়ান্ত মরসুমে, লেসলি একটি ডেটা-মাইনিং টেক সংস্থার সাথে লড়াই করে যা পাওনির নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে।
= প্রতিনজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
প্রতিনজরদারি অর্থ "নিচ থেকে দেখা এবং এর ব্যুৎপত্তিটি 'সুর' (ওভার) কে 'সস' দিয়ে প্রতিস্থাপন করা থেকে উদ্ভূত হয়, যার অর্থ 'অধীন' বা 'নিচে' বা 'নিচ থেকে'। সুতরাং শব্দটি নিজেই পরামর্শ দেয় যে প্রতিনজরদারি নজরদারির বিপরীত এবং দেখার কাজটি উভয়ের মধ্যে একমাত্র ধ্রুবক।
স্যুসভিল্যান্স হ'ল ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা কোনও ক্রিয়াকলাপের রেকর্ডিং, সাধারণত ছোট পরিধানযোগ্য বা বহনযোগ্য ব্যক্তিগত প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রতিনজরদারিকে ক্যামেরা (বা অন্যান্য সেন্সর) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা মানুষ বহন করে। সুসভিলেন্স হ'ল বহুবচনের পর্দা (অর্থাত্ "ভিড় পর্দা" বা অ-কর্তৃপক্ষ দ্বারা করা, পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন করা বা অনুরূপ)।
আপনার অভিধান প্রতিনজরদারিকে "দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ চলাকালীন কোনও ব্যক্তির সুবিধাজনক পয়েন্ট থেকে পরিবেশের রেকর্ডিং" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে।
দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনজরদারি ব্যবহারের একটি উদাহরণ - যা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মধ্যে জনপ্রিয় - যেখানে কোনও ব্যক্তি আইন ভঙ্গকারী উচ্চতর কর্তৃপক্ষের ছবি বা রেকর্ডিং তোলেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুলিশ অফিসার পুরোপুরি ইউনিফর্ম পরিহিত কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় তাদের ফোন ব্যবহার করছেন বা আদালতের বিচারক ডাবল হলুদ লাইনে পার্কিং করছেন। এগুলি কেবল ছোটখাটো উদাহরণ হতে পারে তবে আপনি যখন এই লাইনগুলির সাথে কিছু দেখেন তখন এটি আসলে প্রতিনজরদারি ব্যবহার করছে।
== স্টিভ মান ==
সাসভিল্যান্সের ক্ষেত্রে একটি মূল ব্যক্তিত্ব হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এর শব্দটি তৈরি করেছিলেন স্টিভ মান, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। বিশ্বের প্রথম সাইবর্গ বলে দাবি করা তাঁর দ্বারা কয়েক বছর ধরে বাস্তব জীবনে সাসভিলেন্সের অনুশীলন কার্যকর করা হয়েছে। মান গত ৩৫ বছর ধরে তার মাথায় একটি কম্পিউটার সংযুক্ত করে বসবাস করছেন যা তার জীবনকে সাসভিল্যান্স অনুশীলনের একটি প্রমাণ করে তুলেছে। স্টিভ মান একজন সমাজ সংস্কারবাদী হওয়ার আশা করেন যিনি অন্যদের পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রহণে প্ররোচিত করবেন। তার জীবদ্দশায় মান রাস্তায় বিজ্ঞাপন ব্যানার ফিল্টার করতে তার আইট্যাপ ব্যবহার করে আসছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে লোকেরা কী দেখতে পাবে তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং আজকের সমাজগুলি প্রলুব্ধকর শব্দ এবং চিত্রাবলী দ্বারা বোমাবর্ষণ করা হয় যা তাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে পণ্য ও পরিষেবাদি ক্রয় করতে বাধ্য করে।
=== প্রতিনজরদারিের মূল ধারণা ===
মান সাসভিল্যান্সের দুটি প্রধান সংজ্ঞা সরবরাহ করে, যা প্রায় সমতুল্য, তবে প্রতিটি সাসভিল্যান্সের কিছুটা আলাদা দিক ক্যাপচার করে:
# বিপরীত নজরদারি: নিচ থেকে দেখতে;
# ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ক্যাপচার: কার্যকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা একটি কার্যকলাপ রেকর্ডিং। অডিও সাসভিল্যান্সের জন্য ইতিমধ্যে একটি নির্দিষ্ট আইনী নজির রয়েছে, উদাঃ টেলিফোন কথোপকথনের "একপক্ষ" রেকর্ডিং কথোপকথনের পক্ষ নয় এমন ব্যক্তির দ্বারা রেকর্ডিংয়ের চেয়ে বেশি আইনী সুরক্ষা উপভোগ করে। বেশিরভাগ রাজ্যে, অডিও নজরদারি অবৈধ, তবে অডিও সোভিলেন্স বৈধ।
স্টিভ ম্যানের মতে, দুটি ধরণের সাসভিলেন্স রয়েছে: '''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (উদাঃ সংস্থার মধ্যে থেকে উদ্ভূত) এবং '''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (প্রায়শই সংস্থার দ্বারা অবাঞ্ছিত)।
'''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স ("সাবভিল্যান্স") এর উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্রাকের পিছনে ১-৮০০ নম্বর যাতে অন্যান্য চালকরা "আমি কীভাবে চালাচ্ছি" রিপোর্ট করতে পারে;
* একজন অধ্যাপকের তার ছাত্রদের দ্বারা কর্মক্ষমতা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া;
* ব্যবস্থাপনা দ্বারা ক্রেতাদের দেওয়া সন্তোষজনক প্রশ্নাবলী,
যেখানে "সাবভিল্যান্স" নাশকতামূলক, সংগঠনের অভ্যন্তর থেকে নজরদারির উপর "টেবিলগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া" অর্থে, ("নাশকতামূলক" আক্ষরিক অর্থ "নিচ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো", কোনও সংস্থার মধ্যে থেকে গোপনে কাজ করা)।
'''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্সের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীরা ড্রাইভারের (অবৈধ) ড্রাইভিং অভ্যাস নথিভুক্ত করে;
* গ্রাহকরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে অনিরাপদ ফায়ার এক্সিটের ছবি তুলছেন এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের রিপোর্ট করছেন;
* নাগরিকরা পুলিশের নির্মমতার ভিডিও ধারণ করছে এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে অনুলিপি পাঠাচ্ছে।
=== ম্যাকডোনাল্ডস অ্যাটাক ===
২০১২ সালের ১ জুলাই পরিবারের সাথে প্যারিসে ছুটি কাটাতে গিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মচারীদের দ্বারা স্টিভ মান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। হামলার কারণ ছিল মান রেস্তোরাঁর ভিতরের দৃশ্য এবং মাথায় আইট্যাপ প্রযুক্তি লাগানো মেনুতে ভিডিও করছিলেন। যদিও মানের এখানে কোনও পয়েন্ট প্রমাণ করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, তবে তার মামলাটি এখন প্রথম সাইবারনেটিক ঘৃণ্য অপরাধ হিসাবে পরিচিত, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের মধ্যে লাইনগুলি অস্পষ্ট হয়ে গেলে কী ঘটে। নজরদারি ব্যবস্থা দ্বারা চিত্রগ্রহণ করার সময় মানকে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করা হয়েছিল কারণ তিনি এটি আবার চিত্রগ্রহণ করছিলেন। আক্রমণের ফলাফলে, মানের ছয় বছর বয়সী মেয়ে দুটি পদটির শক্তির গতিশীলতা বর্ণনা করে একটি স্কেচ আঁকেন।
ম্যাকডোনাল্ডসের ঘটনাটি ম্যাকভিল্যান্স নামে একটি নতুন শব্দ তৈরি করেছিল যা মান পরে পর্দা করার কাজের প্রতি সমাজের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি চিত্রে রেখেছিলেন।
=== তিনটি দল ===
ইতিহাসের মাধ্যমে সমাজগুলি নজরদারির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি (মান এবং ফেরেনবক)। প্রথম ধরনের রাষ্ট্র জনগণকে একই মাত্রায় রাষ্ট্রের উপর নজরদারি করার অনুমতি দেয়। এই রাজ্যগুলি তাদের জনগণকে রাজনৈতিক আলোচনা এবং সংস্কারকে উত্সাহিত করার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্কিং, রাজনৈতিক ফোরাম এবং তথ্য সংক্রমণের মাধ্যমে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয়। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি উপযুক্ত আদর্শিক কাঠামো সরবরাহ করে যেখানে সাসভিল্যান্সের এই জাতীয় শর্তগুলি গ্রহণযোগ্য। যদিও লোকেরা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করতে স্বাধীন, এই জাতীয় দেশগুলিতে বিদ্যমান আইনগুলি এমন যা সরকার এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির অন্তর্গত সংবেদনশীল তথ্য এবং ডেটা রক্ষা করে। অতএব, যখন ব্যক্তিরা এই জাতীয় তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে বা এটি জনসাধারণের কাছে ফাঁস করার চেষ্টা করছে তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। চেলসি ম্যানিং এবং এডওয়ার্ড স্নোডেন উভয়ই উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তাদের উদ্ঘাটনের মধ্যে ছিল স্নোডেনের জন্য প্রিজম নজরদারি প্রোগ্রাম এবং ম্যানিংয়ের পক্ষ থেকে কোল্যাটারাল মার্ডার নামে পরিচিত একটি ভিডিও। হুইসেলব্লোয়াররা বিতর্কের একটি গরম বিষয় কারণ তারা সরকার কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত প্রযুক্তি এবং শক্তিতে সজ্জিত ব্যক্তি যারা পরিবর্তে তাদের সরঞ্জামগুলি রাষ্ট্রের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তারা একই সঙ্গে নজরদারি ও সাসভিল্যান্স চালাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় প্রকারটি হ'ল রাষ্ট্র যা এমন আইন বজায় রাখে যা জনগণকে এমন কোনও আলোচনায় জড়িত হতে বাধা দেয় যা সম্ভবত রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করতে পারে এবং সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে পারে। যদিও রাষ্ট্রের কাছে ক্যামেরা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে তার নাগরিকদের নিরীক্ষণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে এটি রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। এই ধরনের রাজ্যে এটা খুবই স্বাভাবিক যে কর্পোরেশন বা সরকারী দুর্নীতির ঘটনাগুলি উত্তর কোরিয়া, চীন এবং বিশ্বজুড়ে সামরিক একনায়কতন্ত্রের মতো আচ্ছাদিত হচ্ছে।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে এমন রাজ্যে যেখানে রাষ্ট্রের তদারকির তুলনায় মানুষের আন্ডারসাইট কর্তৃত্ব বেশি। এক্ষেত্রে নাগরিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা পুলিশ ও সরকারী সংস্থাগুলির পাশাপাশি দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের জ্ঞান সরবরাহ করে। এছাড়াও আইন পাস এবং নির্বাচনের জন্য ভোট দেওয়ার জন্য ই-ভোট সিস্টেমের মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়ায় ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। একইভাবে, অ্যামাজন এবং ইবেয়ের মতো খ্যাতি সিস্টেমের বিকাশ ব্যবহারকারীদের ভবিষ্যতের ক্রেতাদের জন্য পণ্য ও পরিষেবাদির রেট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, এক ধরণের গ্রাহক সাসভিল্যান্স সিস্টেম তৈরি করেছে। যদিও এটি ন্যায্য বাণিজ্যকে উত্সাহ দেয় এবং অনলাইন বাজারে গণতান্ত্রিক শর্ত প্রতিষ্ঠা করে, এটি কখনও কখনও বাকপটুতা এবং পেশাদারিত্বের ব্যয়েও কাজ করে। যেহেতু এই সাইটগুলি সমস্ত ধরণের ব্যবহারকারীদের তাদের কেনা কোনও পরিষেবা বা পণ্য থেকে তাদের রেটিং / পর্যালোচনা পোস্ট করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, তাই তাদের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনও বিশেষ দক্ষতা বা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না (রাইনগোল্ড)।
== সমাজ ==
পারফরম্যান্সগুলি দেখায় যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরণের নিয়ম লঙ্ঘন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি নতুন ধরণের ভারসাম্য তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা পাবলিক প্লেসে নজরদারির কাজ হিসাবে ভিডিও করার জনসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা দেখায়। যখন এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ সাধারণ মানুষ, যেমন পারফর্মারদের দ্বারা অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে করা হয়, তখন এটি প্রায়শই গৃহীত হয়। যাইহোক, যখন ডেটা প্রজেক্টরগুলি নজরদারি কর্মকর্তাদের তাদের সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা দেখায়, সেখানে রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা কম। নজরদারির জন্য দায়বদ্ধ সাংগঠনিক কর্মীরা সাধারণত "সাধারণ মানুষ" পারফর্মারদের কাছ থেকে সাসভিলেন্স গ্রহণ করেন না, এমনকি যখন ডেটা প্রদর্শনগুলি প্রকাশ করে যে প্রতিনজরদারিকারীরা কী রেকর্ড করছে।
স্ব-ক্ষমতায়নের সামাজিক দিকটি পরামর্শ দেয় যে সুভিল্যান্স হ'ল মুক্তির কাজ, আমাদের জনসাধারণের অঞ্চল দখল করা এবং নজরদারি খেলার ক্ষেত্রের সমতলকরণ। তবুও, সাসভিল্যান্স এখন যে সর্বব্যাপী সামগ্রিক নজরদারি দেয় তা ব্যক্তির পক্ষ থেকে সম্মতির চূড়ান্ত কাজ। সার্বজনীন নজরদারি / সাসভিল্যান্স শেষ পর্যন্ত কেবল বিদ্যমান প্রভাবশালী ক্ষমতা কাঠামোর লক্ষ্যগুলি পরিবেশন করতে পারে। সার্বজনীন সুর / সাসভিলেন্স পর্যবেক্ষণ এবং সর্বব্যাপী তথ্য সংগ্রহের বিস্তৃত অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়িয়ে শক্তি কাঠামোকে সমর্থন করতে পারে। অথবা উইলিয়াম গিবসন যেমন ফিচার-দৈর্ঘ্যের মোশন পিকচার ফিল্মে মন্তব্য করেছেন সাইবারম্যান (<nowiki>http://wearcam.org/cyberman.htm</nowiki>) "আপনি নজরদারি করছেন। আর সবাই নজরদারির ওপর নজরদারি চালালে নজরদারি নিষ্ক্রিয় হয়ে যেত। এটা অপ্রয়োজনীয় হবে।
এই প্যানোপটিকন, সূক্ষ্মভাবে সাজানো যাতে একজন পর্যবেক্ষক এক নজরে অনেক ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, এছাড়াও প্রত্যেককে আসতে এবং যে কোনও পর্যবেক্ষককে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে। দেখার যন্ত্রটি একসময় এক ধরণের অন্ধকার ঘর ছিল যার মধ্যে ব্যক্তি গুপ্তচরবৃত্তি করেছে; এটি একটি স্বচ্ছ বিল্ডিং হয়ে উঠেছে যার মধ্যে ক্ষমতার প্রয়োগ সামগ্রিকভাবে সমাজের তত্ত্বাবধানে হতে পারে।
মিশেল ফুকো, ''ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ'', ডিসিপ্লিন, পৃ.
এ ধরনের সমাজে তাত্ত্বিকভাবে সবার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক হতে পারে। বিষয়টি অবশ্য কোন পরিস্থিতিতে কতটা নজরদারি এবং সুনজরদারি উপস্থিত রয়েছে তা নিয়ে নয়, তবে এটি কীভাবে নজরদারির ক্ষমতাহীন প্রকৃতি, পশ্চিমা সমাজে এর অপ্রতিরোধ্য উপস্থিতি এবং এই উপস্থিতির প্রতি সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের আত্মতুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে।
সমসাময়িক নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজগুলিতে, ব্যক্তিরা একক সম্প্রদায় বা ওয়ার্কগ্রুপে এম্বেড হওয়ার পরিবর্তে একাধিক, আংশিক সম্প্রদায় এবং কাজের দলগুলির মধ্যে স্যুইচ করে। তবুও, নজরদারি হ'ল বৃহত শ্রেণিবদ্ধ সংস্থাগুলির শিল্প ও শিল্পোত্তর যুগের একটি প্রকাশ যা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের নব্য-প্যানোপটিকনগুলিতে দক্ষতার সাথে প্রযুক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমাজে, মানুষ সম্ভাবনা বেশি সুভিল্যান্স এবং কোভিল্যান্স চাই, কারণ তাদের গ্রাম / সম্প্রদায় বা শ্রেণিবদ্ধ সংস্থার সুরক্ষার অভাব রয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তাদের নজরদারিকারীদের নজরদারি করার অনুমতি দেয়। সমস্ত লোককে একই সাথে মাস্টার এবং দৃষ্টির বিষয় হওয়ার সামর্থ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিধানযোগ্য কম্পিউটিং ডিভাইসগুলি নজরদারির সাধারণত একতরফা সংলাপে একটি নতুন কণ্ঠস্বর সরবরাহ করে। তারা তাদের একাধিক এবং জটিল নেটওয়ার্কগুলি অতিক্রম করার সাথে সাথে মানুষের জন্য একটি স্ব-ক্ষমতায়নের দিকে একটি উপায় প্রস্তাব করে।
== প্রতিনজরদারির রাজনীতি ==
প্রতিনজরদারি বা Sousveillance নিচ থেকে দেখার একটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করে। এর অর্থ দৃষ্টির বিষয়টির পর্যবেক্ষকের চেয়ে বেশি শক্তি রয়েছে। নানা উপায় ও প্রযুক্তির সাহায্যে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিদ্রোহ ও সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়েছে।
=== ফরাসি বিপ্লব ===
১৭৮৯ সালের ৫ মে ফ্রান্সে এস্টেটস-জেনারেলকে ডাকা হয়। বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা পাদ্রী এবং অভিজাতদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিলেন, তবুও তাদের মাথা দিয়ে ভোট দেওয়া হয়নি। তারা তৎক্ষণাৎ মণ্ডলী ত্যাগ করে এবং তাদের চারপাশে পাদ্রী, অভিজাত এবং কৃষকদের জড়ো করে পৃথকভাবে সভা শুরু করে। এই সমস্ত বিখ্যাত টেনিস কোর্টের শপথের দিকে পরিচালিত করেছিল যেখানে স্ব-প্রশংসিত জাতীয় পরিষদের সদস্যরা ফ্রান্সের নিজস্ব সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত কখনও ভেঙে না দেওয়ার শপথ নিয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে সভাগুলি বাস্তিল আক্রমণের দিকে পরিচালিত করে।
ফরাসি বিপ্লব আমাদের দেখায় যে অন্যদের তুলনায় কম ক্ষমতার অধিকারী একদল লোক রাজা ষোড়শ লুইয়ের উৎখাত এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলুপ্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রীকরণের পথ সংগঠিত ও প্রশস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের খবর সংবাদপত্র এবং নিয়মিত মেইল চিঠিপত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি অনুমান করা নিরাপদ যে সেই সময়ের সমস্ত পতনশীল সাম্রাজ্য (উদাঃ অটোমান সাম্রাজ্য) যদি সম্ভব হয় তবে সংবাদের প্রভাবকে ছবির মাধ্যমে জোর দেওয়া হলে আরও ভালভাবে প্রস্তুত হত। আধুনিক মোবাইল কম্পিউটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং দ্রুত ইন্টারনেট গতির সাথে আজ খবর আমাদের পর্দায় তাত্ক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়।
=== উইকিলিকসের ফাঁস ও আরব বসন্ত ===
২০১০ সালে উইকিলিকসের ওয়েবসাইট থেকে মার্কিন কূটনৈতিক নথি প্রকাশের বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যে সামাজিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করার সময় জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষত, উইকিলিকসের কাজকে প্রায়শই তিউনিশিয়ার বিপ্লবের ঘটনাগুলির মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সেই সময়ে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী, সক্রিয় কর্মী এবং সাংবাদিক তিউনিশিয়ার রাস্তায় নেমে আসে এবং টুইটার এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। তারা প্রত্যেকেই বিক্ষোভের উপাদান পোস্ট করে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং ২০১০ সালে তিউনিশিয়া তার রাষ্ট্রপতি জিনে এল আবিদিন বেন আলীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এই ঘটনাগুলি শীঘ্রই প্রতিবেশী দেশ মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্যদের দখল করে নিয়েছিল আরব বসন্তের বিখ্যাত বিপ্লবী তরঙ্গ গঠন করতে।
=== মেক্সিকোতে জাপাতিস্তাস আন্দোলন ===
মেক্সিকোতে জাপাতিস্তা আন্দোলনের বিস্ফোরণ থেকে ইডিটি নামে একদল কর্মী এবং শিল্পী বিদ্রোহীদের প্রতি বহুজাতিক সমর্থনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। এই আন্দোলন রক্ষার জন্য ইডিটি ফ্লাডনেট প্রোগ্রাম তৈরি করেছে যার লক্ষ্য ছিল মেক্সিকান এবং মার্কিন সরকার এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলির ওয়েব সার্ভারকে অপ্রতিরোধ্য করা।
== নাগরিক সাংবাদিকতা ==
সিটিজেন জার্নালিজমও প্রতিনজরদারির জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। এর উৎপত্তি ১৯৯০ এর দশকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে পারে। এটি সাধারণ জনগণকে এমন তথ্য পোস্ট করে যা তারা মনে করে যে পেশাদার সাংবাদিকদের খোলাখুলিভাবে কথা বলা উচিত। নাগরিকরা যেভাবে তাদের যোগাযোগ সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে সংবাদ এবং তথ্য লিখেন, বিশ্লেষণ করেন এবং প্রেরণ করেন তার মাধ্যমে এটি স্বীকৃত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ব্যক্তিগত ব্লগ এবং ঘরোয়া পরিবেশে চিত্রগ্রহণ করা। তাদের প্রকাশিত সংবাদ ও তথ্য নাগরিক সাংবাদিকতা। এই সুভিল্যান্স পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু পেশাদার সাংবাদিকদের কাজই নয়, সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডও জনগণ মনিটরিং করতে পারবে।
নাগরিক এবং পেশাদার সাংবাদিকতার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে এমন আরেকটি মূল উপাদান হ'ল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ব্যবহার। নাগরিক সাংবাদিকরা তাদের শ্রোতাদের অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে তর্ক করা ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে। এটি প্রায়শই অনলাইন ব্লগিংয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় যা "ব্যবহারকারীদের" তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং ধারণা যুক্ত করতে দেয়। এটি নাগরিকদের পেশাদারদের চেয়ে বৃহত্তর এবং অনেক জোরালো কণ্ঠস্বর দেয় কারণ এটি বিষয়গুলিতে তাদের সত্যিকারের আগ্রহ দেখায়।
নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থান সম্পর্কে প্রশংসা করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ প্রায়শই বড় ঘটনাগুলির মধ্যে থাকে। দুর্যোগ বা ঘটনার শুরুতে একজন সংবাদ প্রতিবেদক খুব কমই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবেন, তবে নিয়মিত নাগরিকরা এখন এই ইভেন্টগুলি সরাসরি স্ট্রিম করতে বা কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউটিউবে পোস্ট করার ক্ষমতা রাখে। নাগরিক সাংবাদিকতাকে প্রায়শই দ্বিতীয় স্তরের প্রতিবেদন হিসাবে উপেক্ষা করা হয়, অনেকে উদ্বিগ্ন যে অনেক নাগরিক সাংবাদিক মূলত অপেশাদার যারা কেবল টিভি বা প্রেসে যা দেখে তা নকল করে। তবে নাগরিক সাংবাদিকতা কেবল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নয়, মিডিয়া এবং সরকারের মধ্যে জোট বা বন্ধন ভেঙে একটি গল্পের পুরো সত্য প্রকাশের জন্যও অপরিহার্য। প্রায়শই সংবাদগুলি এমনভাবে বলা হয় যা ভারসাম্যপূর্ণ নয়, বা সরকারী উদ্যোগের পক্ষে অনুকূলভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়। কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকায়, সাধারণ নাগরিকের পদক্ষেপ নেওয়া এবং সাংবাদিকরা যা করতে পারে না তা করা প্রয়োজন। একজন নাগরিক সাংবাদিক খুব কমই পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানে থাকেন, কারণ তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, অথবা তাদের কোম্পানিকে বেতন দেওয়া হচ্ছে না বা এমনকি সত্যকে বিকৃত করার জন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষ দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সিটিজেন জার্নালিজম হ'ল সাসভিলেন্সের একটি কাঁচা রূপ কারণ এটি সত্যের উপর বিধিনিষেধ বহনকারী সরকারের প্রতি আনুগত্য রাখে না। নাগরিক সাংবাদিকতা চাকরি হারানোর ভয় ছাড়াই জনসাধারণের কাছে সত্য প্রকাশ করতে পারে, তবে এটি পেশাদার এবং জনসাধারণের কাছ থেকে একইভাবে অবিশ্বাসের একটি স্তরের সাথে আসে।
=== ফার্গুসন, মিসৌরিতে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
আগস্ট ৯, ২০১৪ এ, মাইকেল ব্রাউন (সাদা পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের হাতে) মৃত্যুর পর মিসৌরির ফার্গুসন শহরটি বিশৃঙ্খলার রাজ্যে প্রবেশ করেছিল যাকে অনেকে "ফার্গুসন অস্থিরতা" বলে অভিহিত করে। বিক্ষোভের সহিংস প্রকৃতি এবং পুলিশ বাহিনীর সামরিকীকরণের কারণে সৃষ্ট নাগরিক অস্থিরতার কারণে, ফার্গুসনের বেশ কয়েকজন স্থানীয় তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে কী ঘটছে তা প্রতিবেদন করার জন্য অনলাইনে অবস্থান নিয়েছিল। শহরের নাগরিক সাংবাদিকরা টুইটার এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মিডিয়া সাইটে তাদের শহরে কি ঘটছে তার ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেয় এবং মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যুর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং একই সাথে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর শক্তিশালী সামরিকীকরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে।
নিকটবর্তী সেন্ট লুইস শহরের একজন অল্ডারম্যান অ্যান্টোনিও ফ্রেঞ্চ টুইটারে ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করে কয়েকদিন কাটিয়েছেন যা তার ফোনে ধরা পড়া পুলিশি পদক্ষেপের প্রদর্শন করে। পরে পুলিশের কর্মকাণ্ড ভিডিও করার জন্য ফ্রেঞ্চকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন সিটিজেন জার্নালিস্ট কেমন হওয়া উচিত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ভাষা কাজ করেছে; একজন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী যিনি জনগণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন। ফরাসি এবং তার মতো অন্যান্যদের ধন্যবাদ, পরবর্তী কয়েক বছরে নাগরিক সাংবাদিকরা বর্ণের লোকদের বিরুদ্ধে পুলিশি বর্বরতার আরও অনেক ঘটনা নথিভুক্ত করবে। টুইটার এবং ফেসবুকে, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্রচারাভিযানটি হ্যাশট্যাগ এবং ট্রেন্ডিং বিষয়গুলির জন্য জন্ম নিয়েছিল।
ফার্গুসন নাগরিক সাংবাদিক হওয়ার জন্য মানুষ তাদের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার প্রথম উদাহরণ নয়, বোমা হামলা এবং আক্রমণের সময় সিরিয়া, ইরান, মিশর, প্যালেস্টাইন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট, প্যারিসের মতো জায়গায় ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এটি সারা বিশ্বে ঘটে, প্রকৃতপক্ষে টুইটারের মতো সাইটগুলি বেশিরভাগ সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরাসরি সংবাদ আপডেটের জন্য ভাল হয়ে উঠছে কারণ যে গতিতে বিষয়বস্তু আপলোড করা যায়।
=== পঞ্চম এস্টেট হিসাবে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
১৭৮৭ সালের সংসদীয় বিতর্কে এমপি এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, "সংসদে তিনটি এস্টেট রয়েছে তবে রিপোর্টার্স গ্যালারিতে একটি চতুর্থ এস্টেট বসে আছে যা তাদের সকলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো বক্তব্য বা রসাত্মক বক্তব্য নয়, এটি একটি আক্ষরিক সত্য, এই সময়ে আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই বিবৃতিটি বোঝায় যে সাংবাদিকরা সরকারের ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত তিনটি শাখার চতুর্থ প্রতিষ্ঠিত শাখা হতে বোঝানো হয়েছিল। চতুর্থ এস্টেট নতুন সংযোজন হওয়ার দিন চলে গেছে, নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থানের কারণে একটি নতুন এস্টেট উত্থিত হয়েছে।
তথাকথিত পঞ্চম এস্টেট সমসাময়িক সমাজের বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গির গোষ্ঠীগুলির একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক রেফারেন্স এবং ব্লগার, সাংবাদিক এবং অ-মূলধারার মিডিয়া আউটলেটগুলির সাথে সবচেয়ে বেশি যুক্ত। এর উদাহরণগুলির মধ্যে উইকি লিকস এবং গুইডো ফক্সের মতো গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
==== প্রধান সমালোচনা ====
অনেকে যুক্তি দেখান যে নাগরিক সাংবাদিকতা অনিয়ন্ত্রিত এবং বিশ্বাস করা যায় না কারণ কোনও সরকারী প্রুফ-রিডিং নেই। এই কারণে যারা বিশ্বাস করে যে সংবাদটি ভারী পক্ষপাতদুষ্টতার সাথে আনা যায় এবং হতে পারে। এর সাথে যে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব আসতে পারে তার পাশাপাশি, লেখকের উপর নির্ভর করে লেখাটিকেও নিম্নমানের বা অপেশাদার হিসাবে বিচার করা যেতে পারে। অধিকন্তু, নাগরিক সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য পেশাদার সরঞ্জাম না থাকায় বিশ্বাসযোগ্যতা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরণের সাসভিলেন্সের পক্ষে নয় কারণ তাদের মতাদর্শগুলি তাদের তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা ওভারল্যাপ করতে পারে। সবশেষে, সিটিজেন জার্নিজমের সংজ্ঞা নিয়ে কি কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যা আছে? সিটিজেন জার্নালিস্ট শব্দটির একটা সমস্যা আছে- সাংবাদিকরাও নাগরিক হতে পারেন।
== প্রতিনজরদারি এবং শিল্প ==
যদিও প্রতিনজরদারিের শিল্পটি সভিল্যান্ট হওয়ার আসল কাজ, এই বিভাগটি সাসভিল্যান্সের মধ্যে শিল্পের ধারণাটি অন্বেষণ করবে।
শিল্প। সংজ্ঞা অনুসারে এটি একটি দক্ষতার প্রকাশ, সৃজনশীলতার ফলাফল, কল্পনা চাক্ষুষভাবে উত্পাদিত (উদাহরণস্বরূপ একটি পেইন্টিং বা ভাস্কর্য আকারে)। এটি একটি মানুষের শারীরিক সৃষ্টিতে স্থানান্তরিত হওয়ার সারাংশ, সাধারণত জনসাধারণের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য, সাধারণত আবেগকে উস্কে দিতে সক্ষম। ডিজিটাল যুগে, খোলামেলাতা এবং বিষয়বস্তু ভাগ করে নেওয়ার সাথে। সেখানে পিক্সেলগুলি প্রায়শই ম্যানুয়াল কাজকে প্রতিস্থাপন করে, যখন কোনও উদীয়মান বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিল্পীর পক্ষে কাজটি সেখানে রাখা এবং পরিচিত হওয়া অত্যন্ত সহজ, সেখানে কি রোমান্টিকতার ক্ষতি হয়, শিল্প সৌন্দর্য? জীবন থেকে শুরু করে সবকিছুর মতোই শিল্পও একটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, একটি বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়। এই যুগে তাই ডিজিটালে শিল্পের অভিযোজন আশা করা ভুল নয়, অন্তত আরও সাধারণ স্তরে। প্রকৃতপক্ষে, যদি 'বড়' নামগুলির ধ্রুপদী প্রযোজনাগুলি নতুন প্রবণতাগুলিকে প্রতিহত করতে পারে বা এমনকি আরও ঐতিহ্যবাহী লাইন বজায় রেখে তাদের আকার দিতে পারে, তবে উদীয়মানগুলি সময় এবং জনপ্রিয় চাহিদার সাথে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্রাউডসোর্সের কারণে শিল্প কম ব্যক্তিগত এবং অনন্য কিছুতে পরিণত হবে কিনা এই প্রশ্নটি পদকের অন্য দিকের বিবেচনার দিকে পরিচালিত করে, বিপরীত ঘটনা: সীমানা লঙ্ঘন এবং নতুনের অন্বেষণ। ডিজিটাল প্রসঙ্গ আসলে শিল্পীদের আরও একটি অঞ্চল দেয় যেখানে বেড়ে ওঠা এবং স্বীকৃত হতে হয়।
শিল্পের পেছনে, সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে আগ্রহ, রাজনীতি, নজরদারি। অনানুষ্ঠানিকভাবে তৈরি শব্দ 'আর্টভেইল্যান্স' ১৯৩০ এর দশক থেকে বিদ্যমান শিল্পের বিভাগ যা নজরদারির সাথে সম্পর্কিত, সৃজনশীলতার একটি প্রবাহ উপরের পর্যবেক্ষকের ব্যবহারে রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট, পোর্টেবল ক্যামেরা প্রবর্তনের সাথে সাথে ফটোগ্রাফারদের পক্ষে গোপনে ছবি তোলা সহজ করা হয়েছিল। এই সম্পদের প্রয়োগ আরও আধুনিক সময়ে, বিশেষত ৯/১১ হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে দুর্দান্ত ব্যবহার পেয়েছে। ঝাপসা শেডের একটি পাতলা রেখা শিল্পে নজরদারি এবং সুভিল্যান্স পরিস্থিতিকে বিভক্ত করে যেমন একজন শিল্পী আধিপত্যকারী হয়ে ওঠেন, এটি অগত্যা আশেপাশের লোকদের উপরে উঠছে না, তাই প্রতিনজরদারিে অভিনয় করে। উদাহরণস্বরূপ, এই দ্বিমুখী নজরদারি এবং সাসভিল্যান্স পরিস্থিতি ডিজিটাল চশমা (গুগলের প্রকল্প গ্লাস) এর মতো সরঞ্জাম দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও নজরদারির ক্ষেত্রে শিল্পের আরও ব্যবহারিক, কম শৈল্পিক ব্যবহার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কিছু শিল্পী জনসাধারণের অভিজ্ঞতার জন্য নজরদারি ডেটা আরও ভিজ্যুয়াল কিছুতে রূপান্তর করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এর একটি ভাল উদাহরণ অন্যদের মধ্যে দু'জন ব্যক্তির কাজে পাওয়া যায়: ওয়াকার ইভান্স এবং ট্রেভর পাগলেন। ওয়াকার ইভান্স, নজরদারি এবং শিল্পকে একত্রিত করার জন্য প্রথম একজন, ১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ের অজানা যাত্রীদের প্রতিদিনের রুটিন এবং সত্য মুহুর্তগুলি ক্যাপচার করার চেষ্টা করার জন্য ছবি তুলেছিলেন (প্রাকৃতিক, কোনও সেটে নয়)। অজ্ঞাতনামা মানুষের এই গোপন ছবিগুলি শিল্পী তার কোটের নিচে একটি ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন, চকচকে ক্রোমটি কালো রঙ করেছিলেন এবং বোতামগুলির মধ্যে লেন্সগুলি উঁকি দিয়েছিলেন। আজ ক্যামেরা ব্যবহারের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি পদ্ধতি, এমনকি তাদের অজান্তেই মানুষের জীবন রেকর্ড করা। এই পরিস্থিতি থেকে আলাদা, যা সাসভিল্যান্সের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হতে পারে, ট্রেভর পাগলেনের কাজটি নজরদারি এবং শিল্পকে আরও স্পষ্ট উপায়ে একত্রিত করে। তিনি পাবলিক লোকেশন থেকে সামরিক স্থাপনার ছবি এবং স্টিলথ-ড্রোনের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহের স্যাটেলাইটের পথ ট্রেস করার জন্য পরিচিত। তাঁর রচনায় আশেপাশের পরিবেশকে অন্বেষণ, বোঝার এবং বর্ণনা করার জন্য সৌন্দর্য, নকশা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের একটি সংমিশ্রণ রয়েছে। বিশেষত আকর্ষণীয়, এমন একটি প্রভাব যা অস্থিতিশীল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ট্রেভর পাগলেন মেট্রো পিকচার্স গ্যালারিতে একটি ভিডিও ইনস্টলেশনের মাধ্যমে দর্শকদের নজরদারির মূল অংশের সামনে রাখে। স্নোডেনের ফাঁস হওয়া এনএসএ নথির আর্কাইভ থেকে চার হাজারেরও বেশি কোড নাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান কলামগুলিতে একটি অন্ধকার ঘরে প্রজেক্ট করা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জিং সমাজ, শিল্প এবং সাসভিল্যান্সের পরিস্থিতিতে, শিল্প ডিজিটাল বিশ্বে একটি আধুনিক ধারণা নিয়ে বিকশিত হয়েছে: একটি ইউনিয়নে সৃজনশীলতা প্রকাশ করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার যা কখনও কখনও শ্রোতাদের অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য রাখে। ভিন্ন হওয়া, আদর্শের বিরুদ্ধে থাকা, প্রত্যাশার বিরুদ্ধে থাকা। প্রতিনজরদারিে শিল্প চরমের সম্ভাবনা খুঁজে পায়, উদাহরণস্বরূপ রেজিন ডিব্যাটির উই-মেক-মানি-নট-আর্টের মতো পৃষ্ঠাগুলির অস্তিত্বের সাথে দেখা যায় যেখানে প্রযুক্তিটি সমালোচনামূলক আলোচনার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, শিল্পী, হ্যাকার, ডিজাইনার, সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিউশনের একটি বিন্দু। শিল্প পাঠ্যের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে, শব্দ চয়নে: এটি ভিতরের তাত্পর্য (বিদ্রূপের ব্যবহার, তাত্পর্যের স্তরগুলি, রসিকতার ভিতরে) বা ফন্টের পছন্দই হোক। এই পৃষ্ঠার মতো, শিল্পকে আরও তথ্যবহুল, সমালোচনামূলক উদ্দেশ্যে প্রায় বিকৃত করা যেতে পারে। অমিতব্যয়িতা অনলাইন বিশ্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এমন একটি উপাদান যা সম্পর্কে মানুষ সচেতন এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুমতি দেয়। এই প্রসঙ্গে, আরও দু'জন শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে: কেট ডারবিন এবং টিফানি ট্রেন্ডা। প্রতিনজরদারি, যা বিপরীত নজরদারি নামেও পরিচিত, ডিজিটাল বিশ্বে একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পায়। সেখানে সাধারণ মানুষ অন্যদের পর্যবেক্ষণ করে। জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ সরঞ্জাম এবং স্থান উভয়ের মাধ্যমে, শিল্প সাধারণের মধ্যে বিকশিত হতে পারে, একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে। শিল্পকে প্রশংসা করার জন্য আড়ম্বরপূর্ণ, জাঁকজমকপূর্ণ, ব্যয়বহুল হতে হবে না এবং এটি বিশেষত বর্তমান সময়ে সত্য। উদাহরণস্বরূপ কেট ডারবিন একজন শিল্পী এবং লেখক যিনি ইনস্টাগ্রামে একটি ভাল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। সেখানে তিনি পারফর্মেটিভ হওয়ার সময় ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপের সমীক্ষক হতে পারেন। শিল্পী নিজেই তার কাজকে অভিনয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেখানে শিল্প এবং ব্যক্তিগত জীবন ওভারল্যাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি একটি ডেটিং সাইটে পুরুষদের সাথে কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করছেন, তার শ্রোতাদের বিনোদনের জন্য কিন্তু একই সময়ে একটি বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে যা অনেকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক কথোপকথন পোস্ট করা থেকে, তিনি সমাজের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করার সময় মানুষের আচরণ এবং সম্পর্কিত করার ক্ষমতার জন্য তথ্য সংগ্রহ এবং উপস্থাপন করছেন, উদাহরণস্বরূপ গোপনীয়তা। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট জিনিসগুলির মাধ্যমে শ্রোতাদের সাথে একটি সংযোগ রয়েছে যা মানুষের উপর একটি সামাজিক অধ্যয়নের জন্য মাইক্রোকোসম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চ্যালেঞ্জের পথে, পারফরম্যান্স শিল্পী টিফানি ট্রেন্ডার কাজও উল্লেখযোগ্য, যদিও তিনি ব্যক্তিগত স্থান এবং এর অনুপ্রবেশের দিকে আরও বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। প্রক্সিমিটি সিনেমা ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে করা একটি কাজ যেখানে শিল্পী প্রযুক্তি এবং এর অবচেতন ব্যবহার অন্বেষণ করতে চান। চল্লিশটি ছোট সেল ফোনের স্ক্রিন লাগানো পুরো বডি স্যুট পরা অবস্থায় তিনি লোকদের তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। 'এগিয়ে যাও', 'এটি নিয়ে চিন্তা করবেন না' এবং 'এটি ঠিক আছে' এর মতো বাক্যাংশগুলি পর্দায় ছিল, যা স্পর্শ করা হলে শিল্পীর দেহের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, শিল্পী ডিভাইসগুলির সাথে আমাদের পরিচিতি পরীক্ষা করে তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের পরিচয় উপস্থাপন করে স্বাভাবিক সামাজিক সীমাবদ্ধতাও ধ্বংস করে। নজরদারি-ভিত্তিক যুগকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পারফরম্যান্স আর্টের একটি উদাহরণ। সেখানে আমরা ব্যবহারকারী হিসাবে আমাদের পরিচয় কতটা উন্মুক্ত তা সম্পর্কে অসচেতন।
ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি থেকে গণবিদ্রোহ, শিল্প জনসাধারণের কাছে তার পথ খুঁজে পায়। নজরদারি হোক বা সাসভিল্যান্সের মাধ্যমেই হোক, চারপাশের পরিবেশ অন্বেষণকারী শিল্পী এবং শিল্পীর নিজেকে অন্বেষণের মধ্যে একটি দৃশ্যমান বাইনারি রয়েছে। মজার বিষয় হল, 'প্রতিনজরদারি' শব্দটি স্টেফান সোনভিলা-ওয়েইস নিজেকে বিশ্বের কাছে দেখানোর প্রক্রিয়ায় আত্ম-নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। চিন্তার এই লাইনে, আভি রোজেন একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, 'ডিজিটাল স্কিন ২' প্রকল্পের সাথে যেখানে বিভিন্ন প্রকৃতির ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডিজিটাল লাইফলগিং একত্রিত হয়। ডিজিটাল ডাইমেনশনে নিজের উপস্থাপনা এবং বাস্তব জগতে উপস্থাপনের মধ্যেও একটি সমান্তরাল রয়েছে। একটি শিল্প ফর্ম হিসাবে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার মানুষকে বিশ্বের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলি অন্বেষণ করার অনুমতি দিয়েছে। ২০০৮ সালে ক্রিস্টি রবার্টসন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন যা বিভিন্ন শিল্পী এবং তাদের নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার অন্বেষণ করেছিল। রবার্টসন রাজনৈতিক বিষয়গুলিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নজরদারি / প্রতিনজরদারিকে একটি শৈল্পিক রূপ হিসাবে ব্যবহারের উদাহরণ টেনেছেন। এই শিল্পীদের মধ্যে একজন ছিলেন ওয়াফা বিলালের গার্হস্থ্য উত্তেজনা (২০০৭)। তার পারফরম্যান্সের মধ্যে নজরদারি মূল বিষয় ছিল না তবে নজরদারি যে শক্তি সম্পর্ক তৈরি করে তা উন্মোচন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ধারণাগুলি চিত্রিত করতে বিলালের অভিনয় সবচেয়ে কার্যকর ছিল। ২০০৭ সালে ইরাকি-আমেরিকান শিল্পী বিলাল নিজেকে ভিডিও ক্যামেরায় ভরা একটি স্টুডিওতে আটকে রেখেছিলেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে সরাসরি প্রবাহিত হয়েছিল, যাদের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত পেইন্টবল বন্দুক দিয়ে বিলালকে গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য তার মূল উদ্দেশ্য ছিল গৃহযুদ্ধে ভুগতে থাকা ইরাকি জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে তুলে ধরা। তিনি "অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংলাপকে উস্কে দেওয়ার" উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট এবং ভয়েরিজমকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন (বিলাল, ২০০৭)। অতএব, নজরদারিকে একটি শিল্প ফর্ম হিসাবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে কারণ এই ক্ষেত্রের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে শিল্পীদের বৃদ্ধি ঘটেছে।
=== শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম ===
শৈল্পিক বক্তৃতা এবং দার্শনিক অন্বেষণের আরেকটি দিক ছিল অনিশ্চয়তার পুনঃপ্রতিষ্ঠাবাদ। প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে তাদের মধ্যে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এরপর সেগুলো এলোমেলো করে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়। সত্যি বলতে কিনা জানি না অথবা ক্যামেরা না পরা অনিশ্চয়তার নীতিকে শৈল্পিক চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদুপরি, উদাহরণস্বরূপ, সাবওয়েতে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার জন্য নিউইয়র্কের প্রস্তাবিত তদন্ত হিসাবে ভূগর্ভস্থ প্রতিনজরদারি বিবেচনা করুন। পাতাল রেলের ফটোগ্রাফগুলির একটি প্রদর্শনী হ'ল অনুসরণ করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
'''শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম নিয়ে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা: দ্য মেবিক্যামেরা'''
প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এগুলি এলোমেলো করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি পরিধানকারী জানতে না পারে যে তাদের ক্যামেরা রয়েছে কিনা। অনেকগুলি সম্ভাব্য ক্যামেরাগুলির মধ্যে একটির ক্লোজ আপ ছবি যা একটি বিচ্যুতি, বিপরীতমুখী / পুনঃ-ইকশনিজম এবং নজরদারির সাধারণ ভাষা (পাঠ্য) এর ডিকনস্ট্রাকশন দেখায়। অনেক লোক এই জুয়া (উদাঃ ক্যাসিনো, নায়াগ্রা ইত্যাদি) কোনও ঘটনা ছাড়াই পরেছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে সম্ভবত রক্ষীরা শার্ট পড়ে না। পরিধানকারীরা জানেন না যে কোন শার্টে পরিধানযোগ্য ওয়্যারলেস ওয়েব ক্যামেরা রয়েছে এবং কোন শার্টে নেই। লেখকের '''মেবিক্যামেরা''' ডিজাইন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ এস প্যান্টাগিস নিউইয়র্কের কবিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য এর মধ্যে ২৫ টির প্রাথমিক ব্যাচ তৈরি করেছিলেন, তারপরে আরও বড় উত্পাদন চালানো হয়েছিল। যেমনটি দেখা গেছে নিউইয়র্কের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সিকিউরিটি ক্যামেরায়। নিরাপত্তা ক্যামেরা দ্বারা দেখা ক্লোজআপ ভিউ।
সুভিল্যান্স এবং শিল্প? হ্যাঁ, এটি একটি সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান সম্পর্ক। সেখানে শিল্পীরা নজরদারিকে চ্যালেঞ্জ জানায় যখন শিল্পকে যেভাবে উপস্থাপন করা যায় তা পুনর্বিবেচনা করে। যদিও কিছু নিবন্ধ (যেমন অভিভাবকের জন্য জোনাথন জোন্সের "ডিজিটাল যুগ কি শিল্পকে মেরে ফেলবে?") ডিজিটাল বিশ্বে শিল্পের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দেহ উত্থাপন করে, তবে এটি অনস্বীকার্য যে কীভাবে বিশ্বের মধ্যে সহজ সংযোগগুলি উভয় লিঙ্গের বিকাশ এবং প্রকাশের অনুমতি দেয়। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে শক্তিশালী পুরুষালী উপস্থিতি শিল্পের অনলাইন উত্থানে কম কার্যকর প্রভাব ফেলে। সেখানে নারীর একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর থাকতে পারে, সমতার পরিবেশে যা শারীরিক বিশ্বে নিজেই অনুবাদ করা যেতে পারে, যেমন বৈদ্যুতিন শিল্পের উপর আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের মতো ঘটনা দ্বারা দেখানো হয়েছে।
= নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি আইন সম্পর্কে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া =
''নজরদারি আইন এবং প্রতিনজরদারি'' সম্পর্কে দুটি বিপরীত জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ নজরদারিকে তাদের গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে এবং সরকারের সিদ্ধান্তগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য নজরদারি করা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যরা মনে করেন যে অপরাধীদের প্রতিরোধ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়। তবে বেশিরভাগ নাগরিক সম্মত হন যে আইন বিভাগগুলির সাধারণ নজরদারি গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ না তাদের বিস্তারিত দৈনন্দিন জীবন দিনরাত নজরদারির আওতায় না থাকে।
আমাদের কাছে একটি ক্যামেরা স্ট্র্যাপ করা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় যার ফলে আমরা প্রতিনজরদারিকারী হয়ে উঠি, তবুও ক্যামেরা এখনও সেই সময়ের মধ্যে আমাদের মুখোমুখি হওয়া প্রত্যেককে ক্যাপচার করছে। এর ফলে কি আমরা সার্ভিলারে পরিণত হব না? এরপরে এটি পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে যে সার্ভেইলার হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করার ফলে লোকেরা আপনার প্রতি ভিন্নভাবে আচরণ করতে পারে। নজরদারির মুখোমুখি হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে পরিধেয় ডিভাইসের মতো স্যুসভিল্যান্সের ফর্মগুলির তদন্তে একটি উত্সাহ উঠেছে। মান, নোলান এবং ওয়েলম্যান (২০০৩)[১১] নজরদারি কৌশলগুলিকে 'প্রহরী দেখার' ফলাফলের সাথে প্রতিনজরদারিে রূপান্তর করার জন্য আশেপাশের (নজরদারিকৃত) পরিবেশের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সাথে জড়িত গবেষণা চালিয়েছিলেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেকগুলি কারণ (প্রযুক্তির ধরণ, অবস্থান এবং প্রযুক্তির উপস্থাপনা / উপস্থাপনা সহ) অংশগ্রহণকারীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল যা তাদের ক্ষমতায়িত বা দুর্বল বোধ করে।
তদন্তে দেখা গেছে যে লোকেরা যখন রেকর্ডিং করা ডিভাইস এবং রেকর্ড করা ফুটেজ উভয়ই দেখতে পেত তখন তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রেকর্ডিংয়ের এই ফর্মটি তখন 'কোভেইল্যান্স' নামে পরিচিত একটি নতুন শব্দ তৈরি করে। কোভিল্যান্স নজরদারি বা প্রতিনজরদারি নয় বরং এটি তৈরি হয় যখন লোকেরা একই সাথে ক্যামেরা এবং ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে পায়। সংক্ষেপে, কোভিল্যান্স = লোকেরা ভয়েরিজম সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।
এই তদন্ত থেকে আরেকটি আকর্ষণীয় অনুসন্ধান হ'ল কর্তৃপক্ষ (সুরক্ষা প্রহরী) আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে যখন প্রতিনজরদারিকারী ব্যাখ্যা করবে যে ডিভাইসের উপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। বিপরীতে, যখন এটি স্পষ্ট ছিল যে প্রতিনজরদারিকারীের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কর্তৃপক্ষ আরও সংঘাতময় হবে। ডেভিড বলিয়ার (২০১৩)[১২] সুরক্ষা থেকে এই প্রতিক্রিয়াটির সম্ভাব্য ব্যাখ্যা সরবরাহ করে। এর জন্য প্রথম সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে শপিং মলগুলির ধারণার কারণে হতে পারে যে অপরাধীদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল আবিষ্কার করার ক্ষমতা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে যা সম্ভাব্য ডাকাতির কারণ হতে পারে। অধিকন্তু, খুচরা বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে বিক্রয় মূল্য এবং খুচরা প্রদর্শনের তুলনা করার জন্য দোকানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার কারণে কিছু দোকান ফটোগ্রাফির অনুমতি দেয় না। আরেকটি ব্যাখ্যা এই ধারণার কারণে হতে পারে যে সসভিলেস নজরদারির শক্তি সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ জানায় কারণ এটি মানুষের মধ্যে সমতার বোধ পুনরুদ্ধার করে। অধিকন্তু, এটি বোঝাতে পারে যে প্রতিনজরদারি নজরদারির খেলার ক্ষেত্রকে স্তর দেয় কারণ এটি আর ক্ষমতায় নেই। উইলিয়াম গিবসন পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি সবাই প্রতিনজরদারিকারী হয়ে যায় তবে নজরদারি শেষ পর্যন্ত হ্রাস পাবে কারণ এটি আর কোনও উদ্দেশ্য পূরণ করবে না।
নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের প্রভাবগুলি প্রায়শই মুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং গণতান্ত্রিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যাইহোক, যখন বিশ্লেষণাত্মকভাবে দীর্ঘমেয়াদী ম্যাক্রো সমাজতাত্ত্বিক প্রভাবগুলির দিকে অগ্রসর হয়, তখন দৃষ্টিভঙ্গিটি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। নাগরিকদের উপর সরকারগুলির নজরদারির সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, প্রধানত সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থায় চিত্রিত, ইতিহাস জুড়ে ভয়ের অনুভূতির ফলস্বরূপ। জেরেমি বেন্থামের (১৮৩৮) 'প্যানোপটিকন' এবং একটি সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবেচনা যেখানে পর্যবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ মানুষকে এই সত্য সম্পর্কে সচেতন করেছিল যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যদিও তারা জানত না। ১৯৮০ এর দশকের লেখায় মিশেল ফুকোর মতে, এই প্রভাবটি পাওয়া গেছে যে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে (যেমন একটি কারাগার) প্যানোপটিকনের প্রতীকী এবং ব্যবহারিক উভয় ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এই ভয়ের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে চিন্তাভাবনা এবং কাজ করতে প্রভাবিত করতে পারে যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। এভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্যানোপটিকন শিল্প বিপ্লবের অংশ ছিল যা শিল্প পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ করেছিল যেখানে মালিক এবং ক্ষমতায় থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা জনসাধারণের জায়গাগুলি কেবল কারাগার এবং কারখানাগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
== পপ সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
পপ সংস্কৃতি আমাদের সমাজের উপর নজরদারির যে বিস্তৃত উপলব্ধি রয়েছে তা গ্রহণ করেছে। বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি বই, টিভি শো, চলচ্চিত্র এবং এমনকি ভিডিও গেমস রয়েছে যা এখন সুরক্ষা এবং নজরদারির ভূমিকা গ্রহণ করেছে। জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর'' এমন একটি বই যা একটি সর্বব্যাপী সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের অধীনে জীবনযাপন করে এবং সম্ভবত পপ সংস্কৃতিতে নজরদারির সবচেয়ে বিশিষ্ট উদাহরণ। বইটি একটি "বিগ ব্রাদার" প্রোগ্রাম অনুসরণ করে যা উপন্যাসের চরিত্রগুলির ওভার ভিউয়ার হিসাবে কাজ করে, এটি সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহারকে ভারীভাবে চিত্রিত করে।
২৭ মে ২০১৪ এ, ইউবিসফট স্টুডিওগুলি তাদের গেমটি প্রকাশ করেছে ''ওয়াচডগস'' যা আইডান পিয়ার্সকে কেন্দ্র করে একজন বড় চোর হ্যাকার এবং স্ব-নিযুক্ত ভিজিল্যান্ট শহরব্যাপী গণ নজরদারি এবং অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হ্যাক করতে সক্ষম হন। যাতে করে যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য এবং সংস্থান সংগ্রহ করতে পারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এড়াতে, অপরাধ ঘটার আগে বা হওয়ার আগে বন্ধ করতে, প্রয়োজনে নিজে অপরাধ করা, এবং তার সুবিধার্থে অবকাঠামোর বিভিন্ন বস্তু এবং কার্যকারিতা ম্যানিপুলেট করা। গেমটি আপনাকে বেশ কয়েকটি বড় সুপরিচিত সিস্টেমে হ্যাক করেছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থাগুলি এবং রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অর্থ চুরি করতে সাইবার সন্ত্রাসীদের সাথে কাজ করেছে। গেমটিতে মানুষের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছিল।
= প্রতিনজরদারিকারী হওয়া =
গবেষণাটি চালানোর সময় প্রতিনজরদারিকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তারা কেমন অনুভব করেছিল তখন একটি চিন্তা-উদ্দীপক আবিষ্কারও ছিল। অংশগ্রহণকারীরা যারা সাসভিল্যান্স পরিবেশন করেছিলেন তারা অনুভব করেছিলেন যে এটি তাদের ক্ষমতায়িত করেছে। রেকর্ডিং করার সময় মানুষের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আবেগ ছিল তবে প্রতিনজরদারিকারী অনুভব করেছিলেন যে এটি মানুষকে দেখানোর জন্য উদ্দীপক ছিল যে (নজরদারি সম্পর্কিত) অনেক কিছু চলছে যা আমরা জানি না। একজন অংশগ্রহণকারী একটি আকর্ষণীয় পয়েন্ট সরবরাহ করেছেন যা পরামর্শ দেয় যে নজরদারি এমন একটি খেলা যেখানে আমরা অংশ অনুভব করি তবে আসলে নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে আমরা এর অন্য দিকে রয়েছি। অন্যদিকে, এটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে সাসভিল্যান্স আরও খাঁটি কারণ রেকর্ড করা প্রত্যেককে এটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়। অতএব, এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে আমরা সকলেই সুভিল্যান্সের কাজের অংশ হয়ে উঠি কারণ এটি লুকানো নয়। যাইহোক, এই ধারণাটি প্রশ্ন করা যেতে পারে যখন লোকেরা লুকানো ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা শুরু করে। গোপনে রেকর্ড করার কাজটি তখন সাসভিল্যান্সের ধারণাটিকে জটিল করে তুলতে পারে। তাহলে কি তা আবার নজরদারিতে পরিণত হয়? এই জটিল ধারণাগুলি এবং নজরদারি এবং সুভিল্যান্সের ক্রমাগত আন্তঃসংযোগ এই ক্ষেত্রে চলমান গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।
= তথ্যসূত্র =
2m5xpfx0ptc0vv8hre7wenbvtw209d9
84045
84044
2025-06-11T16:12:46Z
MS Sakib
6561
/* প্রতিনজরদারিের মূল ধারণা */
84045
wikitext
text/x-wiki
= নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স =
== ভূমিকা ও মূল ধারণাসমূহ ==
[[চিত্র:TheBigbrother.jpg|ডান|থাম্ব|বিগ ব্রাদার তোমার উপর নজর রাখছে]]
[[চিত্র:SurveillanceSousveillanceLifeGloggingMannSensecamMemoto.jpg|থাম্ব|স্যুভেইলেন্সের তুলনায় নজরদারি]]
{{Quote box|quote=২০১২ সালে, স্পেনের সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে যে, আমেরিকার ''NSA ([[w:ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি|ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি]])'' ক্রিসমাস মাসে গোপনে ৬ কোটিরও বেশি টেলিফোন রেকর্ড নজরদারির আওতায় এনেছিল।<ref>Angwin, J. U. L. I. A., Savage, C. H. A. R. L. I. E., Larson, J. E. F. F., Moltke, H. E. N. R. I. K., Poitras, L. A. U. R. A., & Risen, J. (2015). AT &T Helped US Spy on Internet on a Vast Scale. New York Times, August, 15.</ref> জার্মানির একটি ম্যাগাজিন ''[[w:Der Spiegel|ডার স্পিগেল]]'' প্রস্তাব করে যে, এনএসএ-এর প্রধান নজরদারির বিষয় ছিল ৩৫ জন রাজনীতিবিদ।<ref>Timberg, C., & Soltani, A. (2013). By cracking cellphone code, NSA has capacity for decoding private conversations. The Washington Post.</ref> আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে মানব সমাজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সহজেই ডিজিটাল আকারে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রচার করা যায়। এর ফলে তৈরি হয়েছে একটি নজরদারিমূলক সমাজ, যার অর্থ ''"অল্প কয়েকজন অনেককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে"''। তবে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে “'''স্যুভেইলেন্স'''” শব্দটি প্রস্তাব করেন [[w:Steve Mann|স্টিভ ম্যান]], জেসন নোলান এবং [[w:ব্যারি ওয়েলম্যান|ব্যারি ওয়েলম্যান]]। এটি “'''নজরদারি'''” শব্দটির বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং বোঝায় ''বহুসংখ্যক মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে''।<ref>S. Mann, J. Nolan and B. Wellman. (2003), "Sousveillance: Inventing and Using Wearable Computing Devices for Data Collection in Surveillance Environments",Surveillance & Society, vol. 1, no. 3, pp. 331-355.</ref>|align=left|width=50%}}'সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?' বইয়ের এই অধ্যায়ে নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর মূল ধারণাগুলোর বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে এই দুই ক্ষেত্রের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা। নজরদারির ক্ষেত্রে আলোচনা করা হবে এই কাজে ব্যবহৃত সংগঠন ও প্রযুক্তি, সেইসাথে প্রযোজ্য আইন ও বিধিনিষেধ সম্পর্কে। এছাড়াও এই অধ্যায়ে মানবতা কীভাবে নজরদারির বিরোধিতা করে এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব]-এর মতো ভিডিও-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মকে নজরদারি না স্যুভেইলেন্স—এই বিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে অধ্যায়টি স্যুভেইলেন্স-এর দিকে দৃষ্টি দেয়। এতে স্টিভ ম্যান-এর ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এই শব্দটির প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী বিশ্লেষণে স্যুভেইলেন্স-এর বিভিন্ন রূপ এবং মানব ইতিহাসে এর বিকাশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে এখানে স্থান পেয়েছে এবং স্যুভেইলেন্স-এর সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে কিছু কেস স্টাডির মাধ্যমে এটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
নজরদারি ও স্যুভেইলেন্স-এর বিষয়ে কথা বললে, প্রথমটি তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত। এর একটি কারণ হতে পারে আমরা প্রতিদিনই নজরদারির মুখোমুখি হই—আমরা কোনো না কোনো নজরদারির নজর ছাড়া এক কদমও এগোতে পারি না। একে “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট” বলা হয়, যা এই অধ্যায়ে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও আমরা জানি নজরদারি সর্বত্র বিদ্যমান, আমরা তা নিয়ে খুব একটা সচেতন নই। আমাদের বলা হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ধরনের বার্তা আমাদের মনে গেঁথে গেছে এবং আমরা ভুলে গেছি আসলে কতবার আমাদের নজরদারির আওতায় আনা হয়। অপরদিকে, স্যুভেইলেন্স তুলনামূলকভাবে নতুন, তাই কম পরিচিত। কারণ, স্যুভেইলেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি (যেমন হাতে ধরা ক্যামেরা) সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়েছে। যদিও শব্দটি সাধারণত উচ্চতর কর্তৃপক্ষের দিকে ক্যামেরা নির্দেশ করে করা কার্যকলাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, স্যুভেইলেন্স তখনও ঘটে যখন একটি গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী গোষ্ঠীকে পুরনো বা নতুন যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে। ইতিহাসের দিকে ভালোভাবে তাকালে দেখা যায়, ফরাসি বিপ্লবসহ প্রথম দিকের অনেক বিপ্লবই স্যুভেইলেন্সের উপর নির্ভর করে রাজা অপসারণ ও সমাজে পরিবর্তন এনেছিল।
একটি তত্ত্ব হিসেবে স্যুভেইলেন্স-এর প্রবর্তন ও বিকাশ ঘটে স্টিভ ম্যান-এর মাধ্যমে, যাঁকে এই অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
= নজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
এই অংশে ''''নজরদারি'''<nowiki/>' শব্দটির কিছু প্রচলিত সংজ্ঞা আলোচনা করা হবে।
'''নজরদারি''' শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা '''Surveillance''' শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি ভাষা থেকে। এর উৎস হল '''sur''' অর্থাৎ '''উপর থেকে''' এবং '''veiller''' অর্থাৎ '''পর্যবেক্ষণ করা'''—ফলে এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় '''উপর থেকে দেখা'''।
'''নজরদারি''' বলতে বোঝায় সেই ক্যামেরা বা অন্যান্য সেন্সর, যা কোনো স্থাপনার (যেমন: জমি, খুঁটি বা ভবন) সঙ্গে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে। এটি সেই ধরণের পর্যবেক্ষণ যা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি অন্যান্য পর্যবেক্ষণকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। নজরদারি হলো মূলত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। এই সহজ সংজ্ঞার মধ্যে অসংখ্য কৌশল ও পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত যেগুলোকে নজরদারির রূপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই পদ্ধতিগুলোর অনেকটাই জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের জানা। নজরদারির ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে [[w:নজরদারির ইতিহাস|নজরদারির ইতিহাস]] পাতায় যাওয়া যেতে পারে। সেখানে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে নজরদারির ধারণাটি সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিদ্যমান, শুধুমাত্র ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের মাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। প্রাথমিক দূরবীন থেকে শুরু করে আধুনিক [[w:রেডিও_ফ্রিকোয়েন্সি_আইডেন্টিফিকেশন|রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন]] পর্যন্ত নজরদারি প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত উন্নত হয়েছে।
সর্বাধিক পরিচিত নজরদারির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্থির নজরদারি, প্রযুক্তিগত নজরদারি (সাধারণত গোপন ভিডিও বা অডিও রেকর্ডিং), ইলেকট্রনিক নজরদারি (ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ, [[w:কি-স্ট্রোক_ডায়নামিকস|কীস্ট্রোক ডায়নামিকস]]) এবং আরও অনেক কিছু। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান থাকলে প্রায় যে কেউ নজরদারিতে অংশ নিতে পারে—এক্ষেত্রে নজরদারির কৌশল ব্যবহার করেন ফেডারেল কর্মকর্তারা যাঁরা জীবন রক্ষায় কাজ করেন, কিংবা বেসরকারি গোয়েন্দারা যাঁরা সিভিল কোর্টের প্রমাণ সংগ্রহ করেন। [http://www.oxforddictionaries.com/ অক্সফোর্ড অভিধান অনলাইন] (২০১৬)-এ নজরদারির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—'সন্দেহভাজন গুপ্তচর বা অপরাধীর উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ' (Close observation, especially of a suspected spy or criminal)।<ref>Surveillance. 2016. In ''Oxford Dictionaries''. Retrieved from http://www.oxforddictionaries.com/definition/english/surveillance.</ref> এই সংজ্ঞা এই বইয়ের পরবর্তী অংশে আলোচিত একটি বিষয়ের সূত্রপাত করে। সেখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে ডিজিটাল মিডিয়ার বিকাশ এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যে, দাবি করা যায় বৃহত্তর জনগণ সর্বদাই নজরদারির আওতায় আছে।
=== নজরদারির প্রকারভেদ ===
নজরদারির প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে। স্রারা পৃথিবী ব্যাপী ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি তাদের গোপনীয়তা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। নেটওয়ার্ক ডেটাবেইস জনসাধারণ ও ব্যক্তির মধ্যকার সীমারেখা মুছে দেয় এবং ব্যক্তি-মানুষকে একটি ডিজিটাল প্যানআপটিকনে পরিণত করে। [[w:ফেসবুক|ফেসবুক]], [[w:টুইটার|টুইটার]], ব্লগ, [[w:ইনস্টাগ্রাম|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তি-মানুষকে তাদের গোপনীয়তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে উৎসাহিত করে।<ref>Cristani, M., Raghavendra, R., Del Bue, A., & Murino, V. (2013). Human behaviour analysis in video surveillance: A social signal processing perspective. Neurocomputing, 100, 86-97.</ref>
প্রথমত, সিসিটিভি ([[w:ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন|ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন]]) ইলেকট্রনিক নজরদারির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি। ইংল্যান্ড, প্রথম দেশ হিসেবে পাবলিক প্লেসে সিসিটিভি স্থাপন করে এবং প্রায় ৩০ লক্ষ ক্যামেরা ব্যবহার করে দিনের ২৪ ঘণ্টা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন পর্যবেক্ষণ করে। নরিস ও আর্মস্ট্রং একটি সিসিটিভি-সমৃদ্ধ সমাজকে বর্ণনা করেছেন "সবচেয়ে বড় নজরদারি সমাজ" হিসেবে।<ref>Carr, R. (2014). Surveillance politics and local government: A national survey of federal funding for CCTV in Australia. Security Journal.</ref> [http://www.google.com/intl/en_uk/earth/ গুগল আর্থ], গুগলের একটি মানচিত্র অনুসন্ধান সরঞ্জাম, স্যাটেলাইট ছবি, জিপিএস, জিআইএস, ভিডিও স্ট্রিমিং ও ৩ডি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সকল ব্যবহারকারীর জন্য বাস্তবচিত্র সরবরাহ করে। অনেকেই বলেন ''গুগল আর্থ একটি যুগের সূচনা করেছে। সেখানে সবাই একজন গুপ্তচর হতে পারে''।
দ্বিতীয়ত, নেটওয়ার্ক ডেটাবেইসের উন্নয়ন মানুষকে অজান্তেই পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৯০ সালে, টেলিভিশন তারকা [[w:Rebecca Saire|রেবেকা সেয়ার]] তার বাসার দরজার সামনে এক উন্মাদ ভক্তের গুলিতে নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, ওই হত্যাকারী তার ড্রাইভার লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে সরকারী ওয়েবসাইট থেকে তার ঠিকানা বের করেছিল। ''কুকিজ'' প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু মৌলিক তথ্যই নয়, ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ, ইমেইল ঠিকানা ইত্যাদিও সংগ্রহ করা যায়।
তৃতীয়ত, ব্যবহারকারীরাই ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেন, যা নজরদারির জন্য আদর্শ মাধ্যম। [[w:Facebook|ফেসবুক]], [[w:Twitter|টুইটার]], ব্লগ, [[w:Instagram|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। তারা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, ছবি, অনুভূতি এসব প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে থাকেন। যদিও এই ওয়েবসাইটগুলোতে নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়, তবুও ব্যবহারকারীর তথ্য ও কার্যকলাপ নজরদারির আওতায় পড়ে। ব্যবহারকারীর পরিচয় নির্ধারণে আইপি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীর অবস্থান (শহর বা জেলা) শনাক্ত করে। যদি একাধিক ওয়েবসাইটে একই নজরদারি ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং ইতিহাস একসাথে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। যেমন, একজন ব্যক্তি ফেসবুকে লগইন থাকা অবস্থায় অন্য একটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে এবং সেখানে “লাইক” বাটনে ক্লিক করে, তাহলে ফেসবুক ওই ওয়েবসাইটের ব্রাউজ ইতিহাস রেকর্ড করে, ব্যবহারকারীর বন্ধুদের সম্পর্কেও তথ্য রেকর্ড করে। এসব তথ্যের সমন্বয়ে নজরদারির জন্য একটি সামাজিক সম্পর্ক চিত্র গঠন করা যায়। সেখানে ব্যবহারকারীর বন্ধু, অবস্থান ও সময় নির্ভর তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।
আরও একটি শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে '''কম্পিউটিং ও নজরদারি'''-র ভিত্তিতে
গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নজরদারি ও তথ্য সমাজ অধ্যয়নের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা নজরদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে কম্পিউটিংয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। এর ফলে কম্পিউটার ও নজরদারির পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে কয়েকটি শ্রেণিবিন্যাস গড়ে উঠেছে: যেমন নতুন নজরদারি, ডেটাভেইলেন্স, ইলেকট্রনিক (সুপার)প্যানঅপটিকন, ইলেকট্রনিক নজরদারি বা ডিজিটাল নজরদারি। গ্যারি টি. মার্কস "নতুন নজরদারিকে" সংজ্ঞায়িত করেছেন “ব্যক্তিগত তথ্য আহরণ বা সৃষ্টির জন্য প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে। এটি ব্যক্তি বা পরিবেশ থেকে সংগৃহীত হতে পারে।”<ref>Marx 2002, 12; see also: Marx 1988, pp.217–219</ref> তাঁর মতে, পুরনো নজরদারিতে তথ্য প্রেরণ কঠিন ছিল, কিন্তু নতুন নজরদারিতে তা অনেক সহজ। ঐতিহ্যবাহী নজরদারিতে “যা নজরদারি কর্তৃপক্ষ জানে, তাও সাধারণত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তি জানে”, কিন্তু নতুন নজরদারিতে “নজরদার ব্যক্তি এমন কিছু জানে যা লক্ষ্যবস্তু জানে না।”<ref>Marx, 2002, p.29</ref> তিনি বলেন, নতুন নজরদারি দৃশ্যমান নয় বরং দূরবর্তী এবং এটি “কম জোরপূর্বক” <ref name="Marx, 2002, p.28">Marx, 2002, p.28</ref> এবং “আরও গণতান্ত্রিক” কারণ এর কিছু রূপ আরও সহজলভ্য।<ref name="Marx, 2002, p.28" /> কম্পিউটারভিত্তিক নজরদারি হচ্ছে নতুন নজরদারির একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। “কম্পিউটার নজরদারির প্রকৃতি মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে—এটিকে নিয়মিত, বিস্তৃত ও গভীর করে তোলে। প্রতিষ্ঠানগত স্মৃতি স্থান ও সময় জুড়ে প্রসারিত হয়”।<ref>Marx, 2002, p.208</ref> ডেটাভেইলেন্স হচ্ছে “তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের কর্মকাণ্ড বা যোগাযোগের পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ” (ক্লার্ক ১৯৮৮, ৫০০)। ক্লার্ক (১৯৯৪) ব্যক্তি-ভিত্তিক ডেটাভেইলেন্স (যা একজন বা একাধিক ব্যক্তির উপর নজর রাখে) এবং গণ ডেটাভেইলেন্স (যেখানে একটি গোষ্ঠী বা বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নজরদারির আওতায় আনা হয় যাতে আগ্রহের ব্যক্তি শনাক্ত করা যায়) এর মধ্যে পার্থক্য করেন। বগার্ড (২০০৬) যুক্তি দেন যে কম্পিউটার একটি প্রযুক্তি যা নজরদারির অনুকরণ করে। গর্ডন (১৯৮৭) ইলেকট্রনিক প্যানঅপটিকনের কথা বলেন। মার্ক পোস্টার (১৯৯০) “ইলেকট্রনিক সুপারপ্যানঅপটিকন” ধারণা দেন: “আজকের ‘যোগাযোগের চক্র’ এবং এগুলো দ্বারা সৃষ্ট ডেটাবেস এক ধরনের সুপারপ্যানঅপটিকন সৃষ্টি করে, এটি এমন একটি নজরদারি ব্যবস্থা যার কোনো দেয়াল, জানালা, টাওয়ার বা প্রহরী নেই” (পোস্টার১৯৯০, ৯৩)। মার্ক আন্দ্রেয়েভিচ “ডিজিটাল এনক্লোজার” ধারণা দেন,<ref>Andrejevic, M. (2004). The web cam subculture and the digital enclosure. In N. Couldry & A. McCarthy (eds.)</ref> যেখানে ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।<ref>Fuchs, Boersma, Albrechtslund, and Sandoval (eds.) (2012) Internet and Surveillance: The Challenges of Web 2.0 and Social Media. London: Routledge, p.1</ref>
তৃতীয় ধরনের শ্রেণিবিন্যাস এসেছে ওগুরা (২০০৬) এবং গ্যান্ডি (১৯৯৩)-এর মতবাদ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে নজরদারির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুঁজিবাদ এবং/অথবা জাতিরাষ্ট্র ভিত্তিক জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা।<ref>Gandy, O. H. & Farrall, K. N. (2008). Metaphoric reinforcement of the virtual fence: factors shaping the political economy of property in cyberspace. In A. Chadwick & P. N. Howard (eds.), The Handbook of Internet Politics (pp. 349–63). London: Routledge</ref> আমরা নজরদারির দুটি প্রধান রূপ আলাদা করতে পারি: '''অর্থনৈতিক''' ও '''রাজনৈতিক''' নজরদারি। ''জাতিরাষ্ট্র'' ও করপোরেশন দ্বারা পরিচালিত নজরদারির লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা, অর্থাৎ তারা যেন নির্দিষ্ট কিছু করে বা না করে, কারণ তারা জানে যে তাদের উপস্থিতি, চলাচল, অবস্থান, বা চিন্তাভাবনা নজরদারি ব্যবস্থার দ্বারা পর্যবেক্ষিত হচ্ছে বা হতে পারে।<ref>Fuchs 2008, 267–277</ref> রাজনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা সংঘটিত সহিংসতার (আইনের) হুমকির সম্মুখীন হয় যদি তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আচরণ করে এবং রাজনৈতিক অভিনেতাদের (যেমন গোপন সেবা বা পুলিশ) নজরে পড়ে। অর্থনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, বাজারের সহিংসতা ব্যক্তি ওদের নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে বা উৎপাদনে বাধ্য করে এবং পুঁজিবাদী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তাদের অর্থনৈতিক আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এই ধরনের নজরদারিতে সহিংসতা ও পরাধীনতা চূড়ান্ত অস্ত্র। নিচের ছকে বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারির ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে।
‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই প্রবণতাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, কারণ এটি মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডিং সিস্টেম ও অন্যান্য গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত আচরণের অবস্থানভিত্তিক নজরদারিকে সম্ভব করে তোলে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।’<ref>Gandy and Farall, 2008: May, Phillips: 2008</ref>
==== নজরদারির উদ্দেশ্য ====
নজরদারির অনেক উপকার থাকতে পারে। পরিস্থিতিভেদে এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও সাধারণত নিম্নোক্ত এক বা একাধিক লক্ষ্য পূরণের জন্য করা হয়:
* তল্লাশি বা ওয়ারেন্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা।
* কোনো ব্যক্তি, অবৈধ পণ্য বা অবৈধ কাজের স্থান খুঁজে বের করা।
* কোনো ব্যক্তি, অপরাধী গোষ্ঠী বা স্থানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* গোপন বা প্রকাশ্য নজরদারির মাধ্যমে কোনো অপরাধ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা।
* অভিযানের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
* তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী ব্যক্তি বা অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
== বিশ্বব্যাপী নজরদারি ==
[[চিত্র:Internet_Censorship_and_Surveillance_World_Map.svg|থাম্ব|204x204পিক্সেল|দেশভিত্তিক ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও নজরদারির মানচিত্র।]]
বিশ্বব্যাপী নজরদারি বলতে জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত নজরদারিকে বোঝায়। এর ইতিহাস ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়, যখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি করে। পরবর্তীতে এতে নিউ জিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া যুক্ত হয়, গঠিত হয় ‘ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’। তারা 'তৃতীয় পক্ষের' দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিও করে। এর মাধ্যমে গঠিত হয় একটি বিশ্বব্যাপী নজরদারি নেটওয়ার্ক, যার নাম 'ইসেলন'। এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অবগত ছিল না যতক্ষণ না [[w:Edward Snowden|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
== নজরদারির জন্য সংস্থা ==
নজরদারি ব্যবস্থা মূলত নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে। এজন্য একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ''"অল্প কিছু মানুষ অনেককে পর্যবেক্ষণ করে"''।<ref>Lyon, D. (2008). Surveillance studies: an overview (p. 140). Cambridge [u.a.]: Polity Press.</ref> তাই যে সংস্থাগুলো এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা হলো: ''সরকার, পুলিশ স্টেশন, ব্যাংক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিরাপত্তা কোম্পানি, বাণিজ্যিক ভবন'' ইত্যাদি—যাতে নাগরিক ও মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এই নজরদারি ব্যবস্থা মানুষের নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করে অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য। তবে, নজরদারি প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ, প্রেরণ ও ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই নতুন মিডিয়া যুগে, উপরে উল্লিখিত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সাধারণ কোম্পানি, ব্যক্তিগত গোয়েন্দা বা এমনকি ব্যক্তি হ্যাকাররাও ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক তথ্য ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
==== যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ====
২০১৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার [[w:এডওয়ার্ড_স্নোডেন|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সংস্থাটির মার্কিন নাগরিক ও বিদেশি রাষ্ট্রের উপর পরিচালিত ব্যাপক নজরদারি কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা শুরু করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার চেষ্টার হাত থেকে বাঁচাতে তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানে তাকে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। জুন ২০১৩-তে স্নোডেনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি সম্পদ চুরির অভিযোগ আনা হয়। স্নোডেন যে তথ্যগুলো গণমাধ্যমে ফাঁস করেন, তার মধ্যে ছিল যে এনএসএ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষের ইন্টারনেট কার্যক্রম ও ফোন তথ্য সংগ্রহ করেছিল। কেবল মার্কিন ও বিদেশি নাগরিক নয়, এনএসএ বিদেশি নেতাদের ও তাদের সহকর্মীদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে। স্নোডেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এনএসএ-এর কর্মচারী ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করতেন এই নজরদারি কার্যক্রম সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। তবে, সমালোচকেরা বলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিজীবনে অনধিকার প্রবেশ করেছে এবং তাদের অজ্ঞাতসারে নজরদারির আওতায় এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এনএসএ বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন সরকার নজরদারিতে আইনগত গণ্ডি অতিক্রম করে না, তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক ভবিষ্যতেও চলবে।<ref>Alexander Stingl, 'Technology and Surveillance' in ''Research Starters: Sociology,'' 2015</ref>
== ইউটিউব: নজরদারি না সুভেইলেন্স? ==
নজরদারি ও সুভেইলেন্সের সংজ্ঞা এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব] এর প্রেক্ষাপটে তাদের প্রয়োগ বিবেচনা করলে দেখা যায় এই দুটি ধারণা কখনও কখনও পরস্পরকে ছাপিয়ে যেতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য একাধিক উপধারা রয়েছে। যেমন: ব্লগারদের কার্যক্রম সাধারণত সুভেইলেন্সে পড়লেও কিছু ক্ষেত্রে নজরদারিতেও পড়ে। বিভিন্ন ইউটিউবারের উদাহরণ বিশ্লেষণ করা হবে। নজরদারি ও সুভেইলেন্সের প্রেক্ষাপটে সমাজের উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার পিরামিড, এবং সেই পিরামিডের যেকোনো স্তর থেকে ভিডিও ফুটেজে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত এক ক্ষুদ্র বিতর্ক। এমনকি দুইজন ইউটিউবারের একটি কেস স্টাডিও থাকবে, যাদের কনটেন্টের স্বত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তারা এখনও সেই কনটেন্টের মালিকানা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্সকে বক্তৃতার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
[[চিত্র:Logo_Canale_YouTube_(2013-2017).jpg|alt=YouTube Logo|বাম|থাম্ব|নজরদারি না সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম?]]
ইউটিউব সর্বদাই সুভেইলেন্সের একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সাধারণ মানুষ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা বিশ্বব্যাপী শেয়ার করে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউটিউবের গঠন ও বিন্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছে যাতে তারা নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে নিজেকে বিশ্বে উপস্থাপন করতে পারে। যারা এটি করে তারা 'ইউটিউবার' বা 'ভ্লগার' নামে পরিচিত। ভ্লগিং মানে হলো কোনো ঘটনাকে ভিডিও আকারে ডায়েরি হিসেবে উপস্থাপন করা, কিন্তু ইউটিউবারদের জন্য এটি মানে তাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি দিক শেয়ার করা। এর ফলে দর্শকরা তাদের জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত বোধ করেন এবং এটি টিভির তুলনায় বেশি বাস্তব মনে হয় কারণ এখানে জীবনের প্রকৃত রূপ দেখানো হয়, যা স্ক্রিপ্টেড বা পরিবর্তিত নয়। অধিকাংশ ইউটিউবার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, ভিডিও গেম খেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে যা জনগণের বাস্তব কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিভাত হয়। ইউটিউবের বিন্যাস ইউটিউবারদের নিজেদের জীবনধারা প্রচারের সুযোগ দেয়। বিনোদন ও প্রচার ছাড়াও, একটি অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে—যদি যথেষ্ট মানুষ তাদের ভিডিও দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা অর্থ উপার্জন করতে পারে। এর মানে হচ্ছে, কারিগরি দিক থেকে যদি তাদের ভিডিও যথেষ্ট সংখ্যক দর্শক দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা সেটিকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারে। জনপ্রিয় ইউটিউবারদের অনেকেই এমনটি করে থাকেন, যেমন [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]। তবে তারা সেখানেই থেমে থাকেন না, অনেকে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রি করেন - যেমন [http://redrawr.storenvy.com/ Rose and Rosie], [https://shop.spreadshirt.com/ZACKSCOTT/ ZackScottgames], আবার কেউ কেউ নিজেদের বইও প্রকাশ করেছেন - যেমন [https://www.gofundme.com/cahsvf9g/ Ashley Mardell], [http://tyleroakleybook.com/ Tyler Oakley], [https://www.zoella.co.uk/category/life/books/ Zoella]। কেউ কেউ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রবেশ করেছেন টেলিভিশন শোয়ের মাধ্যমে - যেমন [http://www.epicmealtime.com/ Epic Meal Time]। ইউটিউব সাধারণ মানুষের জন্য খ্যাতি অর্জনের একটি চমৎকার মাধ্যম, যেমন [https://www.youtube.com/user/rhettandlink2/ Good Mythical Morning] বা [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]-এর মতো কেউ কেউ প্রকৃত সফলতা অর্জন করেছেন এবং অনেক সেলিব্রিটির কাছেও পরিচিত। ইউটিউবাররা সাধারণত "সুসভেইলেন্স" ধারণার মধ্যে পড়ে, যেহেতু তারা বাস্তব জীবন ধারণ করেন এবং তারাও জানেন যে তারা একটি ক্যামেরার সামনে রয়েছেন। এটি তাদের জীবনকে ধারণ করছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় যখন [https://www.youtube.com/user/RoseEllenDix/ Rose and Rosie] এর মতো ইউটিউবাররা বলেন, তারা জীবনের বেশিরভাগ অংশ ক্যামেরাবন্দি করেন যাতে ছোট ছোট মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে থাকে। তাই, তাদের জন্য সুসভেইলেন্স হতে পারে উপকারী। তবে ইউটিউবারদের নজরদারিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আসে প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলো থেকে। সেখানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে বা সমাজের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়। [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] এবং [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] হলেন প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানানো দুইজন ইউটিউবার। সুসভেইলেন্স এবং সারভেইলেন্স-এর মধ্যে সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে যায় কারণ ইউটিউব স্বভাবতই সুসভেইলেন্স। সেখানে মানুষ নিজেরাই ক্যামেরা ধরে এবং তা সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু যখন ইউটিউবাররা অন্য সাধারণ মানুষকে প্র্যাঙ্ক করার জন্য গোপনে ধারণ করেন এবং তাদের এই ধারণার কথা জানা থাকে না, তখনই ইউটিউবের ক্যাটাগরি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
এই ধারণাটি আরও জটিল হয় যখন এতে ‘উদ্দেশ্য’ এবং ‘ক্ষমতা’র ধারণা যুক্ত করা হয়। যদি একটি শক্তির পিরামিড কল্পনা করা হয়, তাহলে তার শীর্ষে থাকবে সরকার, তারপর পুলিশ ও কাউন্সিল, এরপর পেশাজীবী/ব্যবসা/ইউটিউবার এবং সর্বনিম্নে থাকবে সাধারণ জনগণ। এই বিশেষ ক্ষমতার সম্পর্ক সুসভেইলেন্স ও সারভেইলেন্সের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করে। সরকার শুধুমাত্র সিসিটিভিকে (সম্পূর্ণ সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হয়েছে) একটি নজরদারি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যদিও কেউ কেউ বলবেন তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি নিখাদ নয় এবং সেটা গুপ্তচরবৃত্তির মতো, তবুও যদি আমরা ধরে নিই যে উদ্দেশ্য নিখাদ, তাহলে তাদের নজরদারি সাধারণ জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। এটি আরও সুস্পষ্ট হয় যখন দেখা যায়, বিশেষভাবে কিছু কর্মী নিয়োগ করা হয় ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং যেকোনো বেআইনি কার্যকলাপ রিপোর্ট করার জন্য। ফলে এই ফুটেজ নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃত নয় কারণ এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুরক্ষা এবং এটি একটি বিশ্বস্ত উৎস থেকে আসে। তবে, পরে এই বিষয়ে একটি যুক্তি তুলে ধরা হবে যে কীভাবে সরকার পক্ষ থেকেও ফুটেজ বিকৃত করা যেতে পারে।
পিরামিডের পরবর্তী স্তরে রয়েছে পুলিশ এবং কাউন্সিল, যাদের উদ্দেশ্যও সাধারণ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পেশাদার এবং নিখাদ। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, যেমন আমেরিকান পুলিশ বনাম ব্রিটিশ পুলিশের প্রসঙ্গ যেখানে [http://news.sky.com/story/1633328/scots-police-teach-us-cops-how-to-avoid-gun-use/ ব্রিটিশ পুলিশ আমেরিকান পুলিশকে কম সহিংসভাবে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখাতে হয়েছে], কারণ আমেরিকান জনগণ তাদের পুলিশের দ্বারা আতঙ্কিত বোধ করছিলেন এবং পুলিশের অতিরিক্ত অস্ত্র ব্যবহার তাদের উদ্বিগ্ন করেছিল। এতটাই যে জনগণ মনে করে যে রেকর্ড করা ফুটেজ বা ড্যাশ ক্যামেরার ভিডিও সত্য ঘটনাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না, যা ফুটেজের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে এবং এই সন্দেহ জাগে যে এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে যেন অভিযুক্ত পুলিশের বদলে ভুক্তভোগীকেই দোষী প্রমাণ করা যায়। [http://www.huffingtonpost.com/news/police-brutality/ হাফিংটন পোস্ট] এই বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়েছে এবং [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] নামক একটি আন্দোলনের কথাও বলেছে। তবে পুলিশের নজরদারি উদ্দেশ্যগতভাবে ভালো হওয়ার কথা, কারণ এটি অপরাধীকে আদালতে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে।
এর নিচে রয়েছে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং ইউটিউবাররা। প্রথম দুই শ্রেণি নজরদারির জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করেন তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করতে। তাদের উদ্দেশ্যও ভালো, কারণ তারা শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এটি ব্যবহার করেন এবং ফুটেজ মূলত বিকৃত থাকে না। তবে এটি কিছুটা অস্পষ্ট, কারণ এটি সেই স্তর যেখানে নজরদারি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির জন্য করা হয়। তাই উদ্দেশ্য নির্ধারণ কিছুটা কঠিন, তবে তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ফুটেজ বিকৃত না রাখার প্রবণতা থাকবে, যেমন কোনো আইনি মামলা হলে এটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে ইউটিউবারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও আকর্ষণীয়। ইউটিউবারদের উদ্দেশ্য সাধারণত স্বচ্ছ হলেও কখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জনগণকে বিনোদন দেওয়া (পিরামিডের নিচের স্তর), তথ্য সরবরাহ করা বা সমাজের নির্দিষ্ট ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা। এটি প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, যেগুলো হয় হাস্যরস সৃষ্টি করে বা সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে, যেমন বিপদে মানুষের সাহায্য না করার প্রবণতা। ইউটিউবারদের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা সেলিব্রিটি হলেও সাধারণ মানুষের মতোই মনে হয়, কারণ আমরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন দেখতে পাই। কিন্তু তারপরও তারা কিছুটা উচ্চতর অবস্থানে থাকে। যেমন, তারা একটি প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে পারে, যা অন্য কেউ পারত না। এখানেই নজরদারি ও সুসভেইলেন্সের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইউটিউবারদের যখন দেখা যায় তারা গোপনে সাধারণ মানুষকে ধারণ করছে, তখন এটি একধরনের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের সীমারেখা আরও অস্পষ্ট হয়।
এর আগে আলোচনা হয়েছিল যে সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্স ফুটেজ বিকৃত এবং অ বিকৃত — এই দ্বন্দ্বে উপনীত হয়, যা আবার ‘উদ্দেশ্য’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর একটি উদাহরণ হলো স্টোকস ক্রফটে ‘অ্যান্টি-টেস্কো’ ঘটনা। সেখানে, গণমাধ্যম একটি দাঙ্গার খবর প্রচার করে যেখানে সাধারণ মানুষ টেস্কো সুপার মার্কেট স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। পরে ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওগুলো থেকে জানা যায় যে দাঙ্গা আসলে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল, যা সাধারণ জনগণের প্রাথমিক দাবিকে সমর্থন করে।<ref>http://m.nms.sagepub.com/content/17/5/755</ref> পিরামিডের শীর্ষে সরকারের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজই হওয়া উচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃতহীন, যেহেতু এটি কেবল জনগণের সুরক্ষার জন্যই রয়েছে। তবে এই যুক্তির বিরোধী যুক্তি হতে পারে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফুটেজ থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয় বা কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা আদালতে দেখানো হয় যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এটি অবশ্য তাত্ত্বিক, তবুও এটি একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে যে কীভাবে সরকার এই ফুটেজ ব্যবহার করে ভুল ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে। এটি আবার উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ আদালত সিসিটিভি ফুটেজকে প্রায়শই নির্ভরযোগ্য বলে ধরে নেয়, যদিও তা নাও হতে পারে। অন্যদিকে ইউটিউবার ও সুসভেইলেন্সের ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, জনগণ নিজেরাই জানে যে তাদের ফুটেজে বিকৃতি ঘটানো যেতে পারে কারণ এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং উদ্দেশ্য সবসময় স্পষ্ট নয়। যেমন [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] ও [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] – তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা জনগণকে গোপনে ধারণ করে সমাজের কিছু দিক উন্মোচনের নামে জনগণকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তবে ইউটিউব এবং জনগণের ফুটেজ কখনো কখনো আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারে কারণ অনেক সময় জনসাধারণ নির্দিষ্ট ঘটনাকে সত্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও ধারণ করে। এর উদাহরণ আবার [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। সেখানে আমেরিকার সাধারণ মানুষ পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করছে কারণ তারা মনে করে সরকার পক্ষের ফুটেজ বিকৃত বা অবিশ্বস্ত এবং তাদের ভিডিও বেশি নির্ভরযোগ্য। অধিকাংশ সংস্কৃতিতে কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব থাকে, যার ফলে জনগণ সরকারিভাবে রেকর্ডকৃত ফুটেজের চেয়ে অপেশাদার ভিডিওকেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করে। এটি ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে জনগণ হয়তো সত্যিই সেই ফুটেজকে বেশি বিশ্বাস করে যা সরকারিভাবে নয় বরং জনগণ নিজেরাই ধারণ করেছে। সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের মধ্যে এই উদ্দেশ্য ও নির্ভরযোগ্যতার বিতর্ক পিরামিডের স্তরগুলোর মাঝে একটি জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
সুসভেইলেন্সের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে এবং [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ সপ্তম সপ্তাহের বক্তৃতা]-এর আলোকে দুটি ইউটিউবার ব্রিয়া ও ক্রিসির একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি উঠে আসে, যারা প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত কপিরাইট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ছেন। ক্রিসি যখন আঠারো বছর বয়সে ছিলেন, তখন তার প্রাক্তন প্রেমিক তার অজান্তে তাদের যৌন সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে এবং তা কিছু ওয়েবসাইটে আপলোড করে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কপিরাইট ইস্যু এখানেই আসে, কারণ ক্রিসি কখনোই এই ভিডিও ধারণে সম্মতি দেননি এবং তিনি ঘটনাটি মনে করতে পারছেন না কারণ তাকে অ্যালকোহল খাইয়ে মাতাল করা হয়েছিল। তবুও ফুটেজের মালিকানা তার নয়, কারণ এটি তার প্রেমিকের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কপিরাইট আইন অনুযায়ী, যদিও এগুলো বর্তমানে হালনাগাদ হয়েছে, এই ঘটনা সেই পরিবর্তনের আগে ঘটায় এই আইন তাকে সহায়তা করতে পারছে না। ভিডিওটি সরাতে হলে তাকে কেবল তার প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ভিডিওটির মালিকানা আদায় করতে হবে। এই কপিরাইট অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই এখনও চলছে।
এই বিষয়ে [https://www.youtube.com/watch?v=xFHbuFT_sHU/ দ্য গার্ডিয়ান]-এর একটি ছোট তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল, পাশাপাশি ব্রিয়া এবং ক্রিসির ভ্লগও ছিল। এছাড়াও তাদের [https://www.generosity.com/fundraising/revenge-porn-victim-seeks-justice/ পৃষ্ঠার] একটি লিঙ্ক রয়েছে। সেখানে তাদের গল্পটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইউটিউব দম্পতিকে নিয়ে এই কেস স্টাডিটি উদ্দেশ্য সম্পর্কিত অংশের সঙ্গেও সম্পর্কিত, কারণ ক্রিসির প্রাক্তন প্রেমিক তাকে তার সম্মতি ছাড়াই ভিডিও করেছিল, যার পেছনে ছিল অসৎ উদ্দেশ্য। এর অর্থ দাঁড়ায়, এই সুভেইলেন্সটি ছিল ক্ষতিকর এবং এটি নজরদারিতে পরিণত হয়, যেহেতু ক্রিসি জানত না যে তাকে ভিডিও করা হচ্ছে। ক্রিসির জন্য এই ভয়ানক অভিজ্ঞতাটি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারের] সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। সেখানে অনলাইন পরিচয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কারণ তার সুনাম এবং অনলাইন সত্তা এই একটি ভিডিওর কারণে খারাপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তিনি স্মরণ করেছেন, যারা তাকে একজন আদর্শ হিসেবে দেখতেন, তারা যখন ভিডিওটি আবিষ্কার করলেন, তখনই তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গেল। তরুণদের জন্য ইতিবাচকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে যেভাবে তিনি এতদিন ধরে চেষ্টা করেছিলেন, সেই অনলাইন পরিচয় একটি ভয়ানক ভিডিওর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। এটি আলোচিত বিষয়ে সম্পর্কিত, কারণ যদিও এখানে ইউটিউবকে একটি ইতিবাচক সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, তবে যদি উদ্দেশ্য খারাপ বা অস্পষ্ট হয়, তবে এটি নেতিবাচকও হয়ে উঠতে পারে।
সবশেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্স অবশ্যই লেকচারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং ইউটিউবকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়। [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারে] অনলাইন পরিচয় নিয়ে জিজি এ. পাপাচারিসির <ref>Zizi A. Papacharissi, 'A Private Sphere' in Private Sphere : Democracy in a Digital Age, (2013)</ref> একটি লেখা ছিল যেখানে ব্লগিং (পৃষ্ঠা ১৪৪) এবং ইউটিউব (পৃষ্ঠা ১৫০)-এর কথা বলা হয়েছে। বইটি ইউটিউবকে এমন একটি স্থান হিসেবে বর্ণনা করেছে যেখানে “তোমাকে কী করতে হবে তা বলে না” (পৃষ্ঠা ১৫০) এবং যেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়বস্তু থাকে, “ইউটিউবের অনেক গোত্র”-এর উল্লেখ রয়েছে (পৃষ্ঠা ১৫০)। এই ‘গোত্রগুলি’ তাদেরকে বোঝাতে পারে যারা LGBT ইউটিউবার, যাদের অন্য কোথাও স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ নেই, তাই ইউটিউব তাদের একটি জায়গা দেয় নিজস্বভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের প্রকাশ করার জন্য। এতে আরও বলা হয়েছে “ইউটিউব একটি বিকল্প মতপ্রকাশের মাধ্যম, যা প্রচলিত আন্দোলন, মতপ্রকাশ বা প্রতিবাদের চেয়ে আলাদা... কিছু ভিডিও শুধু ব্যঙ্গ, রসবোধ বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের জন্ম দেয়, যা সমান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা ও মতপ্রকাশের মাধ্যম” (পৃষ্ঠা ১৫১)। এটি অনলাইন পরিচয়ের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ ইউটিউব মানুষকে তাদের পরিচয় অনলাইনে প্রকাশ করতে দেয় বা অন্যদের দ্বারা তাদের পরিচয়কে উপস্থাপন করতে দেয়, যার ফলে এক ধরণের কমিউনিটি গড়ে ওঠে যেখানে মানুষ নিজেদের মত অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত অনুভব করে। ইউটিউবকে ভালো মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করার এই ধারণা ব্যাখ্যা করে কেন সুভেইলেন্স এখানে বিকশিত হয়েছে, কারণ মানুষ এখানে যা ইচ্ছা তা করতে এবং তৈরি করতে পারে এবং এটি নিজেই সুভেইলেন্স, কারণ তারা নিজেরাই ক্যামেরার সামনে সচেতনভাবে রেকর্ড করছে।
নজরদারি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ চতুর্থ সপ্তাহের] “অলওয়েজ অন” লেকচারের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ সেখানে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে আমরা সবসময় কোনো না কোনো প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত আছি, যেমন সিসিটিভি ফুটেজ সর্বদা আমাদের ওপর নজর রাখছে এবং আমাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। “হিউম্যানিটি বনাম নজরদারি” অংশে বলা হয়েছে, কিভাবে সাধারণ মানুষ এখন এমন অ্যাপ কিনতে পারে যা দিয়ে অন্যদের উপর নজরদারি করা যায় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। কিন্তু সবার উপর এই ক্রমাগত নজরদারি “একটি অনলাইন সত্তা” তৈরি করে, যা দ্বিতীয় সপ্তাহের আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ অধিকাংশ মানুষ জানে না যে তাদের রেকর্ড করা হচ্ছে, তবুও এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা দৃশ্যমান এবং তাদের এমন একটি দিক তুলে ধরা হয় যা আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)। ড্যানাহ বয়েড <ref>danah boyd, Participating in the always-on culture in The Social Media Reader by Michael Mandiberg, (2012)</ref> “অলওয়েজ অন” থাকার বিষয়ে বলেন, “এটি আর শুধু অন বা অফ থাকা নিয়ে নয়। এটি এমন একটি পৃথিবীতে বসবাস করা যেখানে যখনই ও যেখানেই প্রয়োজন, তখনই মানুষ এবং তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়।” (পৃষ্ঠা ৭১-৭২) বয়েড এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেও এটি নজরদারির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ সাধারণ মানুষ জানে যে তাদের চারপাশে সিসিটিভি রয়েছে, কিন্তু তারা যেন সেটি নিয়ে ভাবিত নয়, যদিও এটি তাদের রেকর্ড করছে / তাদের অনলাইন প্রোফাইলের আরেকটি অংশ তৈরি করছে।
[http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ অষ্টম সপ্তাহের লেকচারে] আলোচিত "কগনিটিভ সারপ্লাস" এর প্রসঙ্গে সুভেইলেন্স অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে মানুষের হাতে অনেক অবসর সময় রয়েছে, যেহেতু শ্রমিকশ্রেণির কাজকর্মে প্রযুক্তি স্থান নিয়েছে। দেয়া উদাহরণগুলো প্রধানত গেমারদের যারা কঠিন পরিস্থিতিতে গেম সম্পন্ন করেছেন। তবে এটি সুভেইলেন্সের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত, কারণ এই বাড়তি সময় না থাকলে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম এবং সুভেইলেন্সের চর্চা সম্ভব হতো না; যেমন ব্লগিং, ডেইলি লাইফ ভিডিও তৈরি কিংবা সমাজ নিয়ে মন্তব্য ইত্যাদি।
এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ নতুন মাধ্যম যুগে। সেখানে নজরদারি এবং সুভেইলেন্স উভয়েরই কার্যকারিতা রয়েছে। ব্যবহারকারীরা তাদের ভিডিওগুলো অনলাইনে স্বাধীনভাবে শেয়ার করার মাধ্যমে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুহূর্তেই সারা পৃথিবীতে পৌঁছে যায়, তা সরকার চাইলেও হোক বা না চাইলেও। এই চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা উচ্চস্তরের কর্মকাণ্ড তদারকির সুযোগ পায়, অন্যভাবে বললে, ''অসংখ্য মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করে''। উদাহরণস্বরূপ, [[w:২০১৩-এর_বোস্টন_ম্যারাথন_বোমা_হামলা|২০১৩ সালের বোস্টন ম্যারাথন বোমা হামলা]] চলাকালীন বিপুল পরিমাণ ছবি ও ভিডিও Vine, Facebook, YouTube প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যম সাইটে আপলোড করা হয়, যা পুলিশি তদন্তে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক ছিল।<ref>Biddinger, P. D., Baggish, A., Harrington, L., d'Hemecourt, P., Hooley, J., Jones, J., ... & Dyer, K. S. (2013). Be prepared—the Boston Marathon and mass-casualty events. New England journal of medicine, 368(21), 1958-1960.</ref> অন্যদিকে, সুভেইলেন্সের সুযোগে অল্পসংখ্যক মানুষও ইউটিউবের মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি ব্যবহারকারীর সামাজিক মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে, যেমন [https://sumall.com/ SumAll], [http://www.thoughtbuzz.com/ ThoughtBuzz] এবং GraphDive। সাধারণত এই তথ্য সংগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মার্কেটিং ও গ্রাহকসেবা কার্যক্রমে ব্যবহারকারীদের মৌলিক তথ্য, শখ, যোগাযোগ, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি কাজে লাগানো।
== আইন ও বিধিনিষেধ ==
[http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Definition সংজ্ঞা] অনুযায়ী, নজরদারি হলো তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। যেহেতু কোম্পানি এবং সরকার বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে, যেমন যোগাযোগ তথ্য এবং তার বিষয়বস্তু, তাই নজরদারির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং গোপনীয়তার ক্ষতি ঠেকাতে আইন ও বিধিনিষেধ থাকা আবশ্যক। হাউস অফ লর্ডস কনস্টিটিউশন কমিটি বলেছে: 'নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জাতির জীবনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক নজরদারি গোপনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।' [http://www.theregister.co.uk/2009/02/06/lords_reject_government_data/]
একটি আচরণবিধি রয়েছে, যা স্টেট সেক্রেটারির পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। সেখানে নজরদারি ক্যামেরা সিস্টেম কীভাবে যথাযথভাবে ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ([http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Protection_of_Freedoms_Act_2012 ২০১২ সালের ফ্রিডম সুরক্ষা আইন] এর ধারা ৩৩)।
==== নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধি ====
নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধ <ref>Surveillance Camera Code of Practice. Retrieved from: Surveillance Camera Code of Practice, 2013, London: The Stationery Office</ref> নির্দেশনা প্রদান করে যাতে নজরদারি প্রযুক্তিগুলো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। যেন সেগুলো মানুষের ও সম্পদের নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই আচরণবিধির উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা এবং এই আস্থা তৈরি করা যে ক্যামেরাগুলো কেবলমাত্র তাদের সুরক্ষার জন্যই স্থাপন ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কোডটি এমন নির্দেশনা দেয় যাতে নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার স্বচ্ছ ও বোধগম্য হয়। তবে এই কোড শুধুমাত্র তাদের উপরই প্রযোজ্য যারা জনসমক্ষে স্থাপিত নজরদারি প্রযুক্তি বা ক্যামেরা ব্যবহার করে।
==== উদাহরণ ====
নজরদারির কথা বললে, [[w:September 11 attacks|৯/১১ হামলার]] পর আমেরিকান সরকারকে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে আমেরিকান সরকার ''[https://www.justice.gov/archive/ll/highlights.htm প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট]'' এবং ''[https://www.dhs.gov/homeland-security-act-2002 হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট]'' প্রণয়ন করে। সেখানে প্রয়োজনে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে।<ref>Kennedy, S. S. (2015). Congressional Investigations. The Encyclopedia of Civil Liberties in America, 213.</ref> তবে এই আইনগুলোর জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনা করেছে। ''জার্মান মিডিয়া আইন'' বিশ্বে প্রথম আইন যা ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে বলা হয়েছে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকতে হবে।<ref>Spindler, G. (2014). Social Networks and Liability—the Difficult Triangle Between Network Operators, Users and Third Parties in German Media Law. In Varieties of European Economic Law and Regulation (pp. 863-892). Springer International Publishing.</ref>
১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক গোপনীয়তা তথ্য কেন্দ্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে একটি বৈশ্বিক গোপনীয়তা জরিপ প্রকাশ করে থাকে, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত গোপনীয়তা প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়। গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার প্রতিবেদন (প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল ২০০৭ক)৭৫টিরও বেশি দেশে নজরদারি এবং গোপনীয়তা রক্ষার অবস্থা মূল্যায়ন করে।
‘গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটি মানব মর্যাদা এবং মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা ইত্যাদি মূল্যের ভিত্তি। এটি আধুনিক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার হয়ে উঠেছে।<ref>Karen Lawrence Öqvist (2008) 'All in the Name of National Safety' in Virtual Shadows Your privacy in the information society, Swindon: The British Computer Society, p.110.</ref>
সেই অনুযায়ী, ইউরোপে তথ্য গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপাত্ত গোপনীয়তা নির্দেশিকা (৯৫/৪৬/EC) দ্বারা সমর্থিত। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের উচিত একটি গোপনীয়তা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা যাতে এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে রয়েছে তথ্য সুরক্ষা আইন ১৯৯৮ (তথ্য কমিশনারের কার্যালয় ১৯৯৮)। যুক্তরাজ্যের যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের সরকারে নিবন্ধন করতে হয় এবং তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
==== টেলিফোন কোম্পানির জন্য আইন ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের আদালত নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তা সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকারকে গোপনীয়তা অধিকারের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিষেবা প্রদানের সময় সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের বা প্রকাশের জন্য গ্রাহকের অনুমতি নিতে হয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেগুলেশন কোডের টাইটেল ৪৭, ধারা ৬৪.২০০৫)[https://www.law.cornell.edu/cfr/text/47/64.2005]। অবৈধভাবে অনুসৃত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ প্রকাশ করা যেতে পারে (মার্কিন কোডের টাইটেল ১৮, ধারা ২৫১১)[https://www.law.cornell.edu/uscode/text/18/2511] এবং অননুমোদিতভাবে ব্যবহারকারীর ফাইল অনলাইনে প্রবেশ নিষিদ্ধ (১৯৮৬ সালের মার্কিন ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্রাইভেসি অ্যাক্ট)[https://it.ojp.gov/privacyliberty/authorities/statutes/1285]। এই শর্তগুলো শিল্পোত্তর গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিগত তথ্যের দুর্বলতাকে সরাসরি স্বীকৃতি দেয়। তবে, আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এসব নিয়মাবলী বেসরকারি খাতে সংগৃহীত সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ১৯৯৯ সালের ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী আরও কঠোর নিয়মাবলী অনুসরণ করে যা ভোক্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে [http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents]। এই নির্দেশিকা ভোক্তা তথ্যের উপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং বিদেশি বাণিজ্য অংশীদারদের সমান মানের সুরক্ষায় আবদ্ধ করে <ref>Lee, Laurie Thomas (2000). Privacy, security and intellectual property. In Alan B. Albarran & David H. Goff (eds.), Understanding the Web: Social, Political, and Economic Dimensions of the Internet (pp. 135–64). Arnes: Iowa State University Press</ref>)। যদিও ব্যক্তিগত তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ থেকে যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা না থাকলে অন্য দেশে স্থানান্তর নিষিদ্ধ, তবে বিশ্বায়িত ব্যবসার প্রকৃতিগত কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির মাধ্যমে গোপনীয়তা বিধানের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক কোম্পানির সাথে ব্যবসা করতে পারে (যেমন: লি, ২০০০)। এই চুক্তিগুলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে আইনি সুরক্ষার চেয়ে অগ্রাধিকার না দিলে, তথ্যের অপব্যবহার এড়ানো অসম্ভব।<ref>Zizi A. Papacharissi, A Private Sphere: Democracy in a Digital Age, pp.43-44.</ref>
==== বিধিনিষেধ ====
সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি পরিচালনার জন্য কিছু শর্ত পূরণ নিশ্চিত করতে [[w:Data Protection Act 1998|ডেটা সুরক্ষা আইন ১৯৯৮]]-এর মাধ্যমে কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এই বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে:
# চিত্র ধারণকারী ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণ করা
# তৃতীয় পক্ষের কাছে উপকরণ প্রকাশ না করা
# উপকরণ যতদিন প্রয়োজন ততদিন সংরক্ষণ করা
# পরিচয় নিশ্চিত করা, অর্থাৎ নজরদারি ক্যামেরা চালু রয়েছে তা জানানো<ref>Data Protection Act. In 'legislation.gov.uk´. Retrieved from http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents/enacted .</ref>
এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, ভিডিও উপকরণ কেবল তখনই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে যদি সিসিটিভি আইনগত বিধিনিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যদি সিসিটিভি অপরাধ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়ে থাকে, তবে অপারেটররা প্রয়োজনমতো উপকরণ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
==== খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল ====
[[w:Draft Investigatory Powers Bill|খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল]] যুক্তরাজ্যের সংসদের একটি যৌথ কমিটির দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়। এটি ক্ষমতাধর সংস্থা এবং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি তিনটি পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ক্ষমতাধর সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য সংস্কার প্রস্তাব করে। তদুপরি, তারা গ্যারান্টির একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দেয় যাতে আইন মেনে চলা নিশ্চিত হয়।
খসড়া বিলের তিনটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে:<ref>Draft Investigatory Powers Bill. Retrieved from: https://www.gov.uk/government/uploads/system/uploads/attachment_data/file/473770/Draft_Investigatory_Powers_Bill.pdf</ref>
# এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা ও [[w:Intelligence agency|গুপ্তচর সংস্থার]] যেসব ক্ষমতা ইতোমধ্যে রয়েছে, সেগুলোকে একত্র করবে। এটি যোগাযোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এসব ক্ষমতাকে স্পষ্ট ও বোধগম্য করে তুলবে।
# এটি অনুমোদন ও তদারকি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে এবং [http://definitions.uslegal.com/i/intercept-warrant/ অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্ট]-এর জন্য একটি ‘ডাবল-লক’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে, যাতে সেগুলো কেবল বিচারকের অনুমোদনের পরই কার্যকর হয়। এর ফলে, এক নতুন তদন্তকারী ক্ষমতা কমিশনার (IPC) নিযুক্ত করা হবে যিনি এই ক্ষমতাগুলো আইন অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা তদারকি করবেন।
# এটি নিশ্চিত করবে যে সমস্ত ক্ষমতা ডিজিটাল যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইন্টারনেট সংযোগ রেকর্ড (ICRS) সংরক্ষণের বিধান প্রদান করবে, যা কোনো ডিভাইসের দ্বারা প্রবেশ করা ইন্টারনেট সেবাসমূহের রেকর্ড।
==== 'তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল' ====
তদন্তকারী ক্ষমতা বিলের উপাদানগুলো অপব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য একজন পর্যবেক্ষক দরকার। [[w:Investigatory Powers Tribunal|তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল]] নামে একটি কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি সরকারের কাছ থেকে স্বাধীন, যার কাজ হচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো যেন মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে তা নিশ্চিত করা। কেউ যদি মনে করে তারা বেআইনি কার্যক্রমের শিকার হয়েছে, তবে তারা ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে অভিযোগ দাখিল করতে পারে এবং ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি যাচাই করে দেখবে।<ref>The Investigatory Powers Tribunal. Retrieved from : http://www.ipt-uk.com/section.aspx?pageid=1</ref>
==== ২০১৪ সালের তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
যুক্তরাজ্যের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনে, পার্লামেন্ট ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন পাস করে যাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো টেলিফোন ও ইন্টারনেট রেকর্ডে প্রবেশের পূর্বতন ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। এই আইন কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করেনি, তবে এটি স্পষ্ট করেছে যে, বিদেশে অবস্থিত কিন্তু যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপরও এই আইন প্রযোজ্য।
এই আইন 'ডেটা রিটেনশন (ইসি নির্দেশিকা) রেগুলেশন ২০০৯' (S.I. 2009/859) প্রতিস্থাপনের জন্য গৃহীত নতুন আইন প্রবর্তনের ক্ষমতা প্রদান করে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত সুরক্ষার বিধানও রাখে। এই আইন কার্যকর করা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, যুক্তরাজ্যে যেসব কোম্পানি যোগাযোগ সেবা প্রদান করে তারা রাষ্ট্র সচিবের অনুরোধ অনুযায়ী যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্টে সাড়া দিতে বাধ্য হয়।<ref>Data Retention and Investigatory Powers Act 2014. Retrieved from: http://www.legislation.gov.uk/ukpga/2014/27/notes/division/2</ref> এই আইনের উপাদানগুলো বিদ্যমান কাঠামোকে ব্যাখ্যা ও দৃঢ় করে।
==== ২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইন ====
২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইনে সরকারি ডেটাবেসে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ধারণ ও ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
* এটি পুলিশ কর্তৃক আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করে
* এই আইন নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার জন্য একটি আচরণবিধি প্রবর্তন করে, তবে কেবল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত নজরদারির বিচারিক অনুমোদনের জন্য
* এটি তথ্যের স্বাধীনতা অধিকারের সম্প্রসারণ ঘটায়, যার অধীনে ডেটাবেসগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী ফরম্যাটে উন্মুক্ত করতে হবে
* এটি কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ক্ষমতার জন্য একটি আচরণবিধি সরবরাহ করে। সেখানে এই ক্ষমতাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিলযোগ্য
যুক্তরাজ্যের ডেটা সুরক্ষা আইন (DPA) আপনাকে একটি তথ্য বিষয় হিসেবে আপনার উপর কী সংরক্ষিত রয়েছে এবং কে সংরক্ষণ করছে তা জানার অধিকার প্রদান করে। এই আইনে স্বচ্ছতার অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর অর্থ, একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেটি সরাসরি আপনার পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত, তা সরকার বা অন্য যেকোনো সংস্থা সংরক্ষণ করলে আপনি তা জানার অধিকার রাখেন। আপনাকে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে এবং আপনার অনুরোধ যৌক্তিক হলে তারা তা মেনে চলতে বাধ্য।<ref>Öqvist, 2008 p.112</ref>
==== ২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ====
২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন (আরআইপি বা আরআইপিএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন যা সরকারি সংস্থাগুলোকে নজরদারি ও তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ডাকযোগে যোগাযোগের বিষয়বস্তু অনুসরণ; যোগাযোগের বিষয়বস্তু ছাড়া অন্যান্য তথ্য (যেমন যোগাযোগের ধরন, ফোন নম্বর, ইন্টারনেট ঠিকানা, ডোমেইন নাম, ডাক ঠিকানা, তারিখ, সময় ও সময়কাল) সংগ্রহ; গুপ্তচর, তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী অফিসার ব্যবহার; ব্যক্তিগত ভবন ও যানবাহনে ইলেকট্রনিক নজরদারি; কাউকে অনুসরণ করা; এবং এনক্রিপ্ট করা ডেটা অ্যাক্সেস করা।
==== ১৯৮৪ সালের টেলিকমিউনিকেশন আইন ====
টেলিকমিউনিকেশন আইন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত একটি বিধান, যার অধীনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়:
* ব্রিটিশ টেলিকমকে বেসরকারিকরণ
* ভোক্তার স্বার্থ ও বাজার প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্য 'Oftel' নামে একটি টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা
* টেলিকমিউনিকেশন পরিচালনা কিংবা অন্য কোনো সিস্টেমের সাথে সংযোগ করার জন্য লাইসেন্স প্রবর্তন করা। লাইসেন্স ছাড়া তা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়
২০১৪ সালের এপ্রিলে হাউস অফ কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিবেদনে টেলিকমিউনিকেশন আইন ১৯৮৪-এর অধীনে যোগাযোগ তথ্য সংগ্রহ এবং এই ক্ষমতার তদারকির অভাব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
== মানবতা বনাম নজরদারি ==
=== মানবতার পক্ষে যুক্তি ===
"নজরদারি নিয়ে আলোচনায় একটি প্রধান রাজনৈতিক উদ্বেগ হলো: নিরাপত্তার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ ও নতুন নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার কি জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ বইয়ের মত একটি দমনমূলক সর্বনিয়ন্ত্রিত সমাজ নিয়ে আসছে?"<ref>[http://www.worldcat.org/title/our-biometric-future-facial-recognition-technology-and-the-culture-of-surveillance/oclc/630468338 Our Biometric Future: Facial Recognition Technology and the Culture of Surveillance].</ref> নজরদারি ক্যামেরাগুলো প্রতিটি রাস্তার কোণায়, প্রতিটি পাব-এ, প্রতিটি গণপরিবহন ব্যবস্থায় বসানো হয়েছে। এগুলো আমাদের শহরের গায়ে এবং মানুষের মানসিকতায় স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। বলা হয় যে, যুক্তরাজ্যের কোনো শহুরে এলাকায় আপনি প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে প্রায় ৩০টি নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার আওতায় পড়েন — ক্যামেরা নয়, সম্পূর্ণ ব্যবস্থা! অর্থাৎ, সেটি প্রায় ৩০০টি ক্যামেরা হতে পারে! ব্রিটিশ সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ৪ থেকে ৬ মিলিয়ন নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে। প্রযুক্তি বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে চলেছে। যা একসময় একটি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, এখন তা মুখ শনাক্ত করতে কিংবা আচরণ পূর্বাভাস দিতে পারে। মানবতা বনাম নজরদারি বিতর্কে আসলে কে জয়ী হচ্ছে?
এই ধরণের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ একটি জীবনযাত্রার মান সৃষ্টি করেছে যা [[w:Big Brother (franchise)|বিগ ব্রাদার]]-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেখানে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী একজন সাধারণ নাগরিক জানেন যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারির আওতায় রয়েছে—একেবারে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-এর মতো। এটি কেবলমাত্র জনসাধারণের প্রতিদিনের জীবনে সীমাবদ্ধ নয়, একজন সাধারণ ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্যবহারের উপরও নজরদারি চালানো হয়, [http://www.theguardian.com/world/2015/nov/04/theresa-may-surveillance-measures-edward-snowden এমনকি যদি তার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড না-ও থাকে]। নজরদারি নিজেই গোপনীয়তার উপর হস্তক্ষেপ, তবে এর ইতিবাচক ফলাফল ও সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করা যায় না। রেকর্ড করা ফুটেজ আদালতের মামলায় ব্যবহার করা যায় যেমনটি রাস্তার অপরাধ বা [http://www.cctvcamerapros.com/Nanny-Camera-Court-Evidence-s/288.htm বাড়ির অভ্যন্তরেও] হয়, তবে এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি শহরে ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। এটি এমনকি ঘরে কিংবা বাইরে অজান্তে কারো ওপর ক্যামেরা বসানো নৈতিক ও নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে।
যদিও—বিগ ব্রাদার শো-এর মতো করে ফুটেজ দেখা এত সহজ নয়—তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখা যায়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপগুলো নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখার সুযোগ করে দেয়। এটি আবার সেই প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয় যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (যার মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়—যদিও এটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি বাস্তব চিত্র দেখাতে সহায়ক হতে পারে, এটি একইসঙ্গে অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের—যেমন পেডোফাইলদের—জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে, যারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখা উচিত।
কখনো কখনো এটি এমন একটি অবস্থা হয় যেখানে জনগণ নজরদারির বিপক্ষে দাঁড়ায়, অথচ একইসাথে শহর ও শহরতলিতে অপরাধ বা বিপদ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করতে চায়। সাধারণ মানুষও তাদের মুখমণ্ডল রেকর্ড করে ভবিষ্যতে সংরক্ষণ করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। অনলাইনে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা অত্যন্ত সহজ—গুগলে মাত্র একটি সার্চেই ৯.৫ মিলিয়ন ফলাফল পাওয়া যায়। এই সহজলভ্যতা ও দ্রুততা যে কারো জন্যই উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত, যিনি কখনো কোনো জনসমাগমপূর্ণ স্থানে ছিলেন। এটি শুধুমাত্র সরকারের ব্যবহারের জন্য নয়, তা হলে এটি এত সহজে পাওয়া যেত না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, নজরদারি বিরক্তিকর ও অনুপ্রবেশমূলক হলেও এটি জননিরাপত্তার জন্য এবং অপরাধমূলক ঘটনার ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ সত্য ফুটেজ প্রদানের জন্য অপরিহার্য। এটি জরুরি সেবাসমূহের (যেমন পুলিশ) প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যাতে তারা ঘটনার নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই হস্তক্ষেপ করতে পারে।
তাহলে কি এত ক্যামেরার সত্যিই প্রয়োজন আছে? সমাজ সবসময় নজরদারির চক্ষু সহ্য করে এসেছে কারণ আমাদের মগজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু কতদিন এই যুক্তি কার্যকর থাকবে? যদি তারা এই সিস্টেমগুলো এমনভাবে আপগ্রেড করে যাতে শুধু দেখা নয়, মানুষের কথাবার্তাও শুনতে পারে এবং মুখ শনাক্তকরণ সংরক্ষণ করে আপনার ওপর নজর রাখতে পারে—তবে কি সত্যিই এটি নিরাপত্তার জন্য?
তবে আপনি লক্ষ্য করবেন, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিপরীতে, সিসিটিভি সিস্টেমে তেমন কোনো ব্যাপক আপগ্রেড হয়নি। এর কারণ হতে পারে, যদি আপগ্রেড করা হতো, মানুষ সহজেই তা লক্ষ করত। আমরা এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চলাফেরা করতে যে আমরা এগুলোর অস্তিত্বই খেয়াল করি না। ফলে মানুষের স্বাভাবিক আচরণ সহজে বোঝা যায়। কেবল যুক্তরাজ্যে ৪-৬ মিলিয়নের মতো ক্যামেরা রয়েছে। সবগুলো আপগ্রেড করতে গেলে বিশাল খরচ হবে। সরকার এটি গোপন রাখতে পারবে না। এতে করে সন্দেহ তৈরি হয় যে, হয়তো তারা আপগ্রেড করছে না (শুধু খরচের কারণে নয়, যদিও সেটাও বড় কারণ), বরং জনগণ যাতে বুঝতে না পারে যে তারা কত ঘন ঘন পর্যবেক্ষণের আওতায় পড়ছে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে, আমরা কি আদৌ ক্যামেরার মাধ্যমে সুরক্ষিত? যেসব ক্যামেরা ১৫–২০ বছরের পুরনো এবং এখনো অ্যানালগ সিস্টেমে চলছে, তারা কিভাবে আমাদের রক্ষা করবে? অথবা আরও ভালো প্রশ্ন হতে পারে—মানবতা বনাম নজরদারি: কোথায় মানবতার কণ্ঠ?
এটি বলার উদ্দেশ্য নয় যে সব সিসিটিভি ক্যামেরাই পুরনো। বাস্তবে, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের সিসিটিভি সিস্টেম যুক্তরাজ্যের অন্যতম আধুনিকতম এবং এটি নাকি একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ব্যক্তির চলাচল ট্র্যাক করতে পারে। এই সিস্টেমটি প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি ইউনিক ‘সিগনেচার’ বরাদ্দ করতে পারে এবং বাস্তব সময়ে তাদের চলাফেরা শহর জুড়ে ট্র্যাক করতে পারে—কিন্তু কতজন মানুষ জানে যে এটি তাদের সঙ্গে ঘটছে? সাধারণ মানুষ কিভাবে এমন তথ্য জানতে পারবে? এত ক্যামেরা বসানোর আসল উদ্দেশ্য কি মানবতার সুরক্ষা, নাকি কেবল আমাদের ওপর নজরদারি?
নিয়মিত নজরদারিকে বর্ণনা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট।” যদিও ফুটেজ বিগ ব্রাদারের মতো সহজে দেখা যায় না, তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখার সুযোগ দেয়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপ নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখতে সাহায্য করে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয়, যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে দেখতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (এর মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়, যদিও এটি বাস্তব সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করতে পারে, তবুও এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু যে-কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের (যেমন পেডোফাইল) জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে। তারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মনে রাখা উচিত।
শেষতক, নজরদারি অপরাধ প্রতিরোধ করে না। এমন কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই যে ক্যামেরা অপরাধ প্রতিরোধ করে। এমনকি ওয়েলসের একজন পুলিশ ও অপরাধ কমিশনার এই যুক্তিতেই সিসিটিভির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করেছেন। ২০১৫ সালে প্যারিসে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার কথাই ধরুন। কোনো পরিমাণ নজরদারি এটি আগেভাগে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত না কিংবা থামাতে পারত না। যত বড় সংখ্যায় ক্যামেরা থাকুক না কেন, একসাথে সবাইকে দেখার মতো কেউ উপস্থিত থাকতে পারে না। মানবতার এত ক্যামেরার প্রয়োজন নেই, গোপনে নজরদারি আর নিরাপত্তার মধ্যে সূক্ষ্ম একটি পার্থক্য রয়েছে।<ref>https://www.gov.uk/government/speeches/humanity-vs-surveillance-commissioners-speech-to-stirling-university</ref>
=== নজরদারি বিতর্ক ===
তবে, নজরদারির ওপর আক্রমণ সত্ত্বেও এটি একটি উদ্দেশ্য পূরণ করে। নজরদারি সমাজকে সহায়তা করে। জনসাধারণ এটি সমর্থন করে, গবেষণায় দেখা গেছে ৮৪% মানুষ মনে করেন ক্যামেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য পূরণ করে। মাত্র ১৬% মানুষ নজরদারির বিরুদ্ধে ছিলেন, তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল—এই নজরদারির তদারকির অভাব নিয়ে। এটি জনগণের উপকারে এসেছে—অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে—এমনকি মানুষ অনুভব করে যে এটি থাকলে তারা বেশি নিরাপদ, বরং যদি এটি না থাকত। তাহলে যদি এত মানুষ নজরদারির পক্ষে থাকে—এই বিতর্ক নিয়েই বা সন্দেহ কোথা থেকে আসে? এর কারণ আপনি কখনোই সবার ব্যক্তিগত মতামত জানতে পারবেন না। প্রত্যেক ব্যক্তির বিশ্বাস জানার জন্য বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করা অসম্ভব—তবে আপনি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের একটি বৃহৎ অংশকে জিজ্ঞাসা করলে সেটাই আপনার সবচেয়ে ভালো সুযোগ। তবে আপনি সবসময় এমন কিছু মানুষ পাবেন যারা বলবে—"নজরদারি হলো শুধু সরকারের আমাদের ওপর নজর রাখার একটা উপায়!!"
তবে এই ধারনা যে নজরদারি কেবলমাত্র আপনার দৈনন্দিন জীবনে নজর রাখার জন্য—তা একেবারেই বিভ্রান্তিকর। যেমন সান্তা কেবলমাত্র শিশুদের কল্পনায় বাস্তব—এই ধারণাটিও সমাজের কিছু অংশের মনগড়া কল্পনা। এটি একটি বিভ্রান্তিকর প্রচারণা যা আপনাকে বিশ্বাস করায় যে সরকার কেবল খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। বাস্তবে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে কেবলমাত্র ৫% সিসিটিভি ক্যামেরা পুলিশ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে। আমরা একটি নজরদারি রাষ্ট্র, সিসিটিভির আওতার অধীনস্ত এক জাতি—এই ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হতে পারে। সিসিটিভি ক্যামেরার একটি বড় অংশ সাধারণ জনগণ নিজস্ব ব্যবসা সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করে। তাহলে, অন্যান্য ব্যক্তিদের নজরদারি ক্যামেরা আর পুলিশের/সরকারের ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কী?
নজরদারি বা নজরদারির মাধ্যমে খুন বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কখনো কখনো এটি কোনো অপরাধের স্থান থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরে থাকা ব্যক্তিকেও শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে। হ্যাঁ, একটি ক্যামেরা এলোমেলো সহিংসতা বা অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে না, তবে এটি অপরাধীদের শনাক্ত ও ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাজ্যজুড়ে সিসিটিভি ব্যবস্থার বিস্তারের পেছনে ছিল একটি ঘটনা—জেমি বালজারের অপহরণ। আপনি নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন সেই অস্পষ্ট ভিডিওচিত্র। সেখানে একজন শিশুকে দুই ১০ বছর বয়সী খুনির হাতে মারসিসাইডের একটি শপিং সেন্টার থেকে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছিল। এই ভিডিওচিত্র বারবার টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে, যা এক সময় প্রতীকমূলক রূপ লাভ করে। যদিও ভিডিওটি সেই ভয়াবহ অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারেনি, তবে এটি জনগণের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্ম দিয়েছিল যে অপরাধীরা ধরা পড়বেই।<ref>http://news.bbc.co.uk/onthisday/hi/dates/stories/february/20/newsid_2552000/2552185.stm</ref>
ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে শার্লি এবদো হামলা। সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দ্রুত পরিস্থিতি মূল্যায়নে এবং পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়। পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সিসিটিভি-এর মাধ্যমে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হামলার সাথে জড়িত দুই ভাইকে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল। দ্রুত তথ্য পাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে মনুষ্যবলের দিকনির্দেশ করতে পেরেছিল। সিসিটিভি ছাড়া সাড়া দেওয়ার সময় আরও দীর্ঘ হত, যার ফলে অপরাধীদের ধরা পড়ার সম্ভাবনাও কমে যেত। এটি প্রমাণ করে যে সিসিটিভি এতটা খারাপও নয়। জরুরি অবস্থায় এটি সাহায্য করতে পারলে এটি যে কার্যকর, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। নজরদারি শুধু বড় অপরাধের জন্য নয়; ছোটখাটো অপরাধ যেমন চুরি প্রতিরোধেও কার্যকর। যদি তা না হতো, তবে সাধারণ জনগণ বা ব্যবসায়ীরা কেন এত খরচ করে এই ধরনের ক্যামেরা স্থাপন করতেন?
সবশেষে, আলোচনা হবে গোপনীয়তা নিয়ে। অনেকে যুক্তি দেন নজরদারি ক্যামেরা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপমূলক। আমি পুরোপুরি বুঝি যে আপনি যদি বিশ্বাস করেন একটি ক্যামেরা আপনাকে অনুসরণ করছে বা আপনার বাগান কিংবা বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে, তাহলে সেটা অত্যন্ত অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবে চিন্তা করুন, বড় কর্পোরেশন বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবহৃত নজরদারি ক্যামেরাগুলোর কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা প্রভাব বিশ্লেষণ সম্পন্ন করে এবং তাদের সিস্টেমে গোপনীয়তা রক্ষার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকে। Privacy by design বলতে বোঝানো হয়, যদি কোনো ক্যামেরা আবাসিক এলাকার দিকে ঘোরে বা তাকায়, তাহলে ছবিগুলো পিক্সেল করে দেওয়া হয় যেন অপারেটর বাস্তবে কারও ঘর, বাগান বা স্কুলের ভেতর দেখতে না পান। এর ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করে তাদের নিরাপদ রাখা যায়। এছাড়াও বড় প্রতিষ্ঠানের নজরদারি ক্যামেরার গোপনীয়তা আরও উন্নত করার কথাও উঠেছে। এর মানে হচ্ছে, যেসব কিছু ভিডিও করা হচ্ছে, সেখানে বাস্তব মানুষের পরিবর্তে অবতার দেখানো হবে—ফলে তথ্য পুরোপুরি বেনামী থাকবে। এরপর যদি কোনো অপরাধ ঘটে, তাহলে সেই ডেটা ডিক্রিপ্ট করা যাবে। ফলে যারা কোনো অপরাধ করছেন না, তাদের পরিচয় গোপনই থাকবে এবং এটি শুধু অপরাধ ঘটলে ব্যবহৃত হবে।
==== মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী ====
১৯৪৮ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানব সমাজের প্রথম বৈশ্বিক ও বিস্তৃত দলিল হিসেবে ''[http://www.un.org/en/universal-declaration-human-rights/ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র]'' ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় বলা হয়, সকল মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার এবং যোগাযোগে যেন কোনো ধরনের ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ না করা হয়। এই নিয়মে, প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>Renteln, A. D. (2013). International human rights: universalism versus relativism. Quid Pro Books.</ref>
এই ধরনের আইন ও বিধান দ্বারা নজরদারি ব্যবস্থার ব্যাপ্তিকে সীমিত করা হয়। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে, জনসাধারণের যোগাযোগ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের গোপনীয়তা প্রকাশিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কর্পোরেশন, সুপারমার্কেট, ব্যাংক, রাস্তা ইত্যাদিতে স্থাপিত ক্যামেরা ও রেকর্ডার দ্বারা ব্যক্তিগত কথোপকথন নজরদারি করা যেতে পারে। ব্রাউজিং ইতিহাস ও অভ্যাস নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের কাছে চলে যেতে পারে। স্মার্টফোন ব্যক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রকাশ্যে বা গোপনে রেকর্ড করতে পারে। নজরদারি ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশ। সেখানে আইনগত প্রতিষ্ঠান ও অপরাধী উভয়ই অন্যদের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম, তা মানবতার বৃহৎ পরিসরে লঙ্ঘন করে।
==== উপসংহার ====
এটি একটি বৃহৎ বিতর্কের বিষয়। নজরদারি-এর ওপর আপনি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করবেন কি না, তা একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে জোরালো যুক্তি রয়েছে। সবকিছু নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যের ওপর। নজরদারি খারাপ হতে পারে যদি এটি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে যখন এটি জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায় এবং এটি প্রমাণ করে যে আমরা এটি প্রয়োজন, যাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মানুষ নিরাপদ থাকে।
== নজরদারি প্রযুক্তি ==
নজরদারি প্রযুক্তি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত—''পাবলিক ক্যামেরা'' বা ''[[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]]''। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ''অদৃশ্য ক্যামেরা - ইন্টারনেট''। দৃশ্যমান ক্যামেরা হোক বা অদৃশ্য, প্রযুক্তি নিজেই নিরপেক্ষ। এগুলোকে উপকারী বা ক্ষতিকর করে তোলে যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এগুলো ব্যবহার করে, তাই এদের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা প্রয়োজন।
==== কম্পিউটার ====
বিশেষত [[w:ইন্টারনেট|ইন্টারনেটে]] কম্পিউটার নজরদারি-এর বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে [[w:ডেটা মাইনিং|ডেটা]] এবং [[w:ট্র্যাফিক অ্যানালাইসিস|ট্র্যাফিক]] বিশ্লেষণ। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে [[w:আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন|আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন]] অনুসারে, সব ফোনকল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্র্যাফিক (ইমেইল, ওয়েব ট্র্যাফিক, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ইত্যাদি) ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য বিনা বাধায় বাস্তবসময়ে নজরদারির জন্য উন্মুক্ত রাখতে হয়।<ref name="eff-calea-archive2">{{cite web|url=http://w2.eff.org/Privacy/নজরদারি/CALEA/?f=archive.html|title=CALEA Archive -- Electronic Frontier Foundation|work=Electronic Frontier Foundation (website)|accessdate=March 14, 2009}}</ref> ইন্টারনেটে এত বিশাল পরিমাণ ডেটা রয়েছে যে মানব তদন্তকারীদের পক্ষে সব খুঁজে দেখা অসম্ভব। তাই স্বয়ংক্রিয় ইন্টারনেট নজরদারি কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে বিপুল ট্র্যাফিক ছেঁকে, নির্দিষ্ট "ট্রিগার" শব্দ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি দ্বারা আগ্রহজনক ট্র্যাফিক আলাদা করে মানব তদন্তকারীদের জানানো হয়। প্রতি বছর এনএসএ, এফবিআই, তথ্য সচেতনতা অফিসের মতো সংস্থাগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে Carnivore (FBI), NarusInsight এবং ECHELON-এর মতো সিস্টেমের উন্নয়ন, ক্রয়, বাস্তবায়ন ও পরিচালনায়, যেন নজরদারির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনা যায়।
==== সিসিটিভি ====
সম্ভবত নজরদারি-এর সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যবহৃত প্রযুক্তি হলো সিসিটিভি। [[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]] বা ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের উদ্ভব জার্মানিতে, ১৯৪২ সালে। এই প্রযুক্তি এখন বৈশ্বিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
''সিসিটিভি''-এর ক্ষেত্রে কে এটি স্থাপন করতে পারবে, কোথায় ও কখন এটি স্থাপন করা যাবে—এই বিষয়গুলো রিপোর্ট ও সীমাবদ্ধতার আওতায় থাকা উচিত। আমেরিকান সমালোচক [[w:জেনিফার গ্র্যানহোম|জেনিফার গ্র্যানহোম]] যেমন বলেছেন, নাগরিকদের পক্ষে আশা করা অনাযুক্ত যে তারা জনগণ ও পুলিশের নজরদারিতে থাকবে না, অথচ তারা নিজেরা চায় যে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগগুলোতে কোনো নজরদারি থাকবে না, এমনকি শক্তিশালী রিমোট মনিটরিং থেকেও নয়।<ref>Granholm, J. (2015). Archived Websites-Governor's Official Homepage-2007.</ref> এছাড়া অদৃশ্য ক্যামেরা বা নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের প্রসঙ্গে [[w:Mark Poster|মার্ক পোস্টার]] ''[[wiktionary:superpanopticon|"superpanopticon"]]'' নামক নতুন ধারণা দেন, যা বর্ণনা করে কীভাবে ডিজিটাল দুনিয়ায় ব্যক্তিজীবন গঠিত হয়।<ref>Fuchs, C., Boersma, K., Albrechtslund, A., & Sandoval, M. (2014). The Internet and নজরদারি.</ref> নেটওয়ার্ক ডেটাবেসে তথ্য প্রেরণ দ্রুত এবং সুবিধাজনক, যা সিসিটিভি থেকেও বেশি নিখুঁত ও বিস্তৃত। এই প্রেক্ষাপটে, নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে আইন ও বিধান প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
নজরদারি ক্যামেরা বা সিসিটিভি দিন দিন বিশ্বব্যাপী জনসাধারণ ও ব্যক্তিগত স্থান নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকার, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি ও ব্যক্তিগত ব্যক্তি অপরাধ প্রতিরোধ, শহুরে পরিবেশ ও সরকারি ভবনের নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ভিডিও নজরদারি ব্যবহার করে। নজরদারি প্রযুক্তিকে কখনো কখনো ‘পঞ্চম ইউটিলিটি’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে,<ref>Graham (2002)</ref> যেখানে সিসিটিভি শহুরে পরিবেশে এমনভাবে সংযুক্ত হয়েছে যেমন বিদ্যুৎ বা টেলিফোন নেটওয়ার্ক শতাব্দীর প্রথমার্ধে সংযুক্ত ছিল।
পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির মধ্যে সম্ভবত সিসিটিভি-ই সবচেয়ে প্রভাবশালী, শুধুমাত্র ব্যবহৃত ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকেই। যেমন, ২০০৭ সালে, প্রায় ''দশ'' বছর আগে, অনুমান করা হয়েছিল যে যুক্তরাজ্যে ৪.২ মিলিয়ন সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।<ref>Meikle, G & Young, S. (2012). ''Media Convergence: Networked Digital Media in Everyday Life''. Basingstoke: Palgrave Macmillan. p130.</ref> সিসিটিভি সম্ভবত নজরদারি-এর কার্যপ্রণালিকেই বদলে দিয়েছে। মিশেল ফুকো (১৯৭৭) ব্যাখ্যা করেছেন যে অতীতে অনেক মানুষ মুষ্টিমেয় প্রভাবশালীদের পর্যবেক্ষণ করত, যেমন: প্রকাশ্য ভাষণের মাধ্যমে। কিন্তু এখন নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প কিছু মানুষই অনেক মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে! তিনি বলেন, 'visibility is a trap' <ref>Foucalt, M. (1977). ''Discipline and Punish''. Harmondsworth: Penguin. p.200.</ref>। যদিও এটি একমুখী সম্পর্ক নয়, কারণ এখনো ‘অনেক মানুষ’ ‘মুষ্টিমেয় মানুষ’কে দেখে টিভি ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে। তবে সিসিটিভি মূলত মুষ্টিমেয়ের নিয়ন্ত্রণে, যার মানে—যখন আপনি জনসমক্ষে থাকবেন, তখন আপনাকে ভিডিও করা হতে পারে, অনেক সময় আপনার অজান্তেই।
বিশ্বে নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাজ্য শীর্ষে: প্রতি ১২ জনে ১টি ক্যামেরা বা প্রায় ৫ মিলিয়ন ক্যামেরা সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে।<ref>Öqvist, 2008, p.153</ref>
[[চিত্র:Cameras_innercity_London_2005.jpg|থাম্ব|300x300পিক্সেল|লন্ডন, যুক্তরাজ্যে সিসিটিভির উদাহরণ]]
==== এএনপিআর ====
অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা (ANPR), অথবা লাইসেন্স প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা (LPR) হল যানবাহন নজরদারির প্রধান উপায়গুলোর একটি। এগুলো সড়কের ধারে, বিশেষত মোটরওয়েগুলোর পাশে বসানো হয় এবং গতি সীমা অতিক্রম এবং অন্যান্য মহাসড়ক নিরাপত্তা লঙ্ঘনের প্রতিবেদন দিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো স্বয়ংক্রিয় টোল কর সংগ্রহের মতো প্রক্রিয়াতেও ব্যবহার করা যায়।<ref>Patel, C, Shah, S & Patel, A. (2013). Main content area Automatic Number Plate Recognition System (ANPR): A Survey. International Journal of Computer Applications, 69(9)</ref> যদিও এগুলো একধরনের ক্যামেরা, তথাপি এগুলো CCTV থেকে ভিন্ন কারণ এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যানবাহনের কার্যকলাপ চিত্রায়ণ নয় বরং নাম্বার প্লেট সনাক্ত করা এবং সেখানকার অক্ষরগুলো শনাক্ত করা, এমনকি দূর থেকে বা চলন্ত অবস্থাতেও। সফটওয়্যার OCR ব্যবহার করে বিভিন্ন ধারণকৃত চিত্র থেকে তথ্য ব্যবহারযোগ্য কোডে রূপান্তর করা হয়, এবং ক্যামেরাগুলোকে অবশ্যই ইনফ্রারেড আলোতে সংবেদনশীল হতে হয়, দৃশ্যমান স্পেকট্রামে সীমিত হতে হয় যেন দিনের বেলাতেও এবং রাতেও, হেডলাইট আলোকপ্রভা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কাজ করতে পারে।<ref>http://www.cctv-information.co.uk/i/An_Introduction_to_ANPR</ref>
==== টেলিফোন ====
সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে টেলিফোন লাইনে আড়িপাতা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। অধিকাংশ কলের জন্য মানব এজেন্ট প্রয়োজন হয় না। স্পিচ-টু-টেক্সট সফটওয়্যার ধারণকৃত অডিও থেকে যন্ত্রপাঠযোগ্য পাঠ্য তৈরি করে, যা পরে স্বয়ংক্রিয় কল বিশ্লেষণকারী প্রোগ্রাম দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যেমন ইনফরমেশন অ্যাওয়ারনেস অফিস বা ভারিন্ট এবং নারাস-এর মতো কোম্পানিগুলোর দ্বারা বিকশিত সফটওয়্যার, যেগুলো নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্যাংশ অনুসন্ধান করে নির্ধারণ করে যে কলটিতে মানব এজেন্ট নিয়োজিত করা হবে কিনা।<ref name="latimes-fbi-intel-analysis">{{cite news|url=http://articles.latimes.com/2002/jul/29/nation/na-technology29|title=FBI Plans to Fight Terror With High-Tech Arsenal|last=Piller|first=Charles|author2=Eric Lichtblau|date=July 29, 2002|work=LA Times|accessdate=March 14, 2009}}</ref> যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা মোবাইল ফোনের মাইক্রোফোন দূরবর্তীভাবে সক্রিয় করতে পারে, ফোনের ডায়াগনস্টিক বা রক্ষণাবেক্ষণ বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে, যাতে ফোনধারীর আশেপাশে যে কথোপকথন হচ্ছে তা শোনা যায়।<ref name="schneier-roving-bugs">{{cite web|url=http://www.schneier.com/blog/archives/2006/12/remotely_eavesd_1.html|title=Remotely Eavesdropping on Cell Phone Microphones|last=Schneier|first=Bruce|date=December 5, 2006|work=Schneier On Security|accessdate=December 13, 2009}}</ref> মোবাইল ফোন অবস্থান তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মোবাইল ফোনের ভৌগোলিক অবস্থান (এবং সেইসাথে ফোনধারীর অবস্থান) সহজেই নির্ধারণ করা যায় এমনকি ফোনটি ব্যবহৃত না হলেও, একটি কৌশল ব্যবহার করে যেটিকে বলে মাল্টিল্যাটারেশন, যা ফোন থেকে মালিকের নিকটবর্তী বিভিন্ন সেল টাওয়ারে সংকেত পৌঁছাতে সময়ের পার্থক্য পরিমাপ করে কাজ করে। স্নোডেন ফাঁসের মাধ্যমে জানা গেছে যে ব্রিটিশ সরকারি যোগাযোগ সদর দপ্তর (জিসিএইচকিউ)আমেরিকান নাগরিকদের ওপর এনএসএ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্যে প্রবেশ করতে পারে। একবার ডেটা সংগ্রহ হয়ে গেলে, জিসিএইচকিউ তা সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারে। এই সময়সীমা "জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ কর্মকর্তা"-র অনুমতিতে বাড়ানো যেতে পারে।
টেলিফোন এবং মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি আছে যা কার্যকর এবং সহজলভ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো বাগিং এবং ট্র্যাকিং প্রযুক্তি।
'''বাগিং'''
গোপন শ্রবণ ডিভাইস হিসেবেও পরিচিত, বাগ বা ওয়্যার সাধারণত একটি ছোট রেডিও ট্রান্সমিটার এবং একটি মাইক্রোফোন নিয়ে গঠিত। প্রধানত পুলিশ তদন্তে ব্যবহৃত হলেও, এগুলো সাধারণ মানুষও ব্যবহার করতে পারে। ডেইলি মেইল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যেখানে সম্পর্কের মধ্যে থাকা মানুষদের সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গী হয়তো মোবাইল ফোনে বাগিং ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের ওপর নজর রাখছে।<ref>http://www.dailymail.co.uk/news/article-2889521/Bugging-phones-jealous-partners-rife-Campaign-group-warns-women-guard-against-spyware-tells-suspicious-husband-boyfriend-use-device.html</ref> ফ্লেক্সিস্পাই-এর মতো সিস্টেম নিজেদের নজরদারি সফটওয়্যার বিজ্ঞাপনে বলেছে “আপনি যদি একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে থাকেন, সন্তানের দায়িত্বে থাকেন অথবা কর্মচারী পরিচালনা করেন, তবে **আপনার জানার অধিকার আছে**।<ref>http://www.flexispy.com/</ref> সত্য জানুন, তাদের ফোনে নজর রাখুন।” যদিও এটি ডেটা সুরক্ষা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন, এই সিস্টেমসহ অনেকগুলো এখনো জনপ্রিয় এবং শাস্তি শুধু একটি জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে, জনসমক্ষে, অফিসে এবং নিজের বাসায় শ্রবণ বা রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করা বৈধ।
'''ট্র্যাকিং''' ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে, স্টিংরে ফোন ট্র্যাকার সবচেয়ে প্রচলিত। হ্যারিস কর্পোরেশন দ্বারা উন্নিত, এই ডিভাইস একটি মোবাইল ফোন নজরদারি যন্ত্র। এটি কাছাকাছি থাকা সব ডিভাইসকে এতে সংযোগ ঘটাতে বাধ্য করে, এরপর সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ তথ্য গ্রহণ করতে পারে, ডেটা ডাউনলোড করতে পারে এবং যোগাযোগের বিষয়বস্তু আটকাতে পারে, এমনকি তা ডিক্রিপ্ট এবং রেকর্ড করতেও পারে। স্টিংরে যেসব ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় সেগুলোর অবস্থানও নির্ণয় করতে পারে। এই সফটওয়্যার মূলত সামরিক এবং গোয়েন্দা সংস্থার জন্য তৈরি হলেও, বর্তমানে এটি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অন্তত ২৩টি অঙ্গরাজ্যের ৬০টি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে যারা স্টিংরে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।<ref>https://www.aclu.org/map/stingray-tracking-devices-whos-got-them</ref> তবে যুক্তরাজ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়নি। স্কাই নিউজের একটি তদন্ত নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে লন্ডনজুড়ে পুলিশ নকল মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করছে এমন অভিযোগ রয়েছে।<ref>http://www.bbc.co.uk/news/business-33076527</ref> এই টাওয়ারগুলো মোবাইল ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই যন্ত্রগুলো পুলিশি সন্দেহভাজনদের ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হতে পারে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ধরনের নজরদারির ব্যবহার স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি।
'''''উদাহরণ'''''
নেদারল্যান্ডসে সবআইএসপি-কে আদালতের আদেশ অনুযায়ী সব ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ করার সক্ষমতা থাকতে হয় এবং ব্যবহারকারীদের লগ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। নিউজিল্যান্ডে Telecommunications (Interception Capabilities) Act 2004 অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এবংআইএসপি-দের পুলিশ বা নিরাপত্তা সংস্থার অনুরোধে ফোন কল এবং ইমেইল নজরদারির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সুইজারল্যান্ডেআইএসপি-দের মেইল এবং টেলিযোগাযোগ নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
==== সোশ্যাল মিডিয়া ====
তথ্য গোপনীয়তার আরেকটি অংশ, যা কোনো আইনি কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সেটি হলো অনলাইনে আমরা যে তথ্য শেয়ার করি। এটি তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘তথ্য উন্মোচন’-এর সংজ্ঞায় এক নতুন মাত্রা নিয়ে আসে যখন এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করা হয়। ‘ডিজিটাল তথ্যের অবশিষ্টাংশ’ বলতে বোঝায় আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য যা কেউ বা কিছু অনলাইনে সংগ্রহ বা শেয়ার করেছে এবং কোথাও ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত আছে, যার ওপর আমাদের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
অনলাইন কমিউনিটি যেভাবে এসেছে, সেভাবেই এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া। Oxford Dictionary of Media Communications-এ এটি বর্ণিত আছে।<ref name="ChandlerMunday2011">{{cite book|last1=Chandler|first1=Daniel|last2=Munday|first2=Rod|date=2011|title=A Dictionary of Media and Communication|location=Oxford|publisher=Oxford University Press|isbn=978019956875}}{{rp|397}}</ref> তবে এটি বলা কঠিন যে কে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করছে যদি না তারা সরাসরি যোগাযোগ করে। কিছু গোপনীয়তা সেটিংস আমাদের নিয়ন্ত্রণে যেমন পোস্টের ‘custom’ সেটিং যা আমাদের দেখতে দেয় কে পোস্টটি দেখছে; তবে অন্যরা আমাদের ট্যাগ করলে (যতক্ষণ না আমরা নিজেকে আনট্যাগ করি), সেটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ওই কয়েক মিনিটে চিন্তা চলে আসে ‘ওহ না – কে কে ইতিমধ্যেই এটি দেখে ফেলেছে?’ গ্রাহাম মেইকল এবং শেরম্যান ইয়াং বলেন: 'ভাবুন, কীভাবে ফেসবুক আমাদের কার্যক্রম বন্ধু তালিকার সবাইকে “নিউজফিড” ফাংশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। আপনি হয়তো ভাবছেন কোনো বন্ধুর স্ট্যাটাসে আপনার মন্তব্য অন্যদের দেখার সুযোগ নেই, কিন্তু দেখা গেল তার প্রোফাইল সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় আপনার মন্তব্য “শীর্ষ খবর” হিসেবে আপনার সব বন্ধুর কাছেই পৌঁছে গেছে।<ref name="MeikleYoung2012">{{cite book|last1=Meikle|first1=Graham|last2=Young|first2=Sherman|date=2012|title=Media Convergence: Networked Media in Everyday Life|location=Basingstoke|publisher=Palgrave Macmillan|isbn=9780230228948}}</ref>{{rp|72}}
রিক্রুটমেন্ট কোম্পানি জবভাইট-এর বার্ষিক জরিপ (সর্বশেষ সেপ্টেম্বর ২০১৫) অনুযায়ী, ৯২% নিয়োগকারী নিয়োগ দেওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল চেক করে।<ref>http://www.jobvite.com/blog/welcome-to-the-2015-recruiter-nation-formerly-known-as-the-social-recruiting-survey</ref> তদ্ব্যতীত, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন নির্দেশনা রয়েছে যাতে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে গুপ্তচরবৃত্তির শিকার না হন।<ref>http://www.webwise.ie/teachers/facebook-for-teachers</ref>
উভয় ঘটনাকেই সমাজবিজ্ঞানী [[w:Erving Goffman|এরভিং গফম্যান]]-এর তত্ত্বের উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে, যিনি বলেন আমরা বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রূপ ধারণ করি এবং আমাদের নির্দিষ্ট শ্রোতার জন্য পারফর্ম করি এবং থিয়েটারের মতো হলেও আমাদের প্রকৃত সত্তাটি থাকে মঞ্চের পেছনে।<ref name="PapacharissiZizi2010">{{cite book|last1=Papacharissi|first1=Zizi|date=2010|title=A Networked Self Identity, Community, and Culture on Social Network Sites|location=Hoboken|publisher=Taylor and Francis|isbn=9780415801805}}</ref>{{rp|306–7}}
===== স্ক্রিনশট, সৌসভেইলেন্স, অনলাইন ডেটিং ও বিশ্বাসঘাতকতা =====
[[w:স্ক্রিনশট|স্ক্রিনশট]] আগে শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপে প্রিন্ট স্ক্রিন বোতাম চেপে নেওয়া যেত, কিন্তু আজকের স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে এক ক্লিকেই প্রতিদিন বন্ধুদের ছবি ও তথ্য পাঠাতে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ডেটিং অ্যাপ [[w:টিন্ডার (অ্যাপ)|টিন্ডার]] তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য ‘শেয়ার’ ফিচার চালুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।<ref>http://microcapmagazine.com/2016-03-08-tinder-testing-new-feature-that-lets-your-friends-play-matchmaker</ref> এই ডেটিং অ্যাপটি জানিয়েছে এটি তাদের উপকারে আসবে যারা কারো সাথে পরিচিত হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা না থাকায় [[w:ফেসবুক|ফেসবুকে]] অ্যাড করেনি, সেই ব্যক্তির প্রোফাইল বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই এটি গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে কারণ একটি লিংক ৪৮ ঘণ্টা বা পাঁচবার ক্লিক হওয়ার পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে।
টিন্ডার বলেছে ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল স্ক্রিনশট নিয়ে তা বন্ধুদের পাঠানোর সুযোগ আগেও ছিল এবং ব্যবহারকারীরা চাইলে এই ফিচার থেকে ‘opt out’ করতে পারবে। কিন্তু [[w:বাজফিড|বাজফিড]] এবং ডিস্ট্র্যাক্টিফাই-এর মতো বিনোদনমূলক ওয়েবসাইট স্ক্রিনশট ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের অদ্ভুত, যৌনতাপূর্ণ এবং হাস্যকর কথোপকথনের সংকলন তৈরি করে মজা করে,<ref>http://www.buzzfeed.com/rossalynwarren/best-worst-and-weirdest-messages-tinder#.jgPg5e22g</ref> যা ভুক্তভোগীদের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। এমনকি এখন “Tinder Nightmares” নামে পূর্ণ অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে যা ব্যবহারকারীদের স্ক্রিনশট পাঠাতে উৎসাহিত করে।<ref>https://www.instagram.com/tindernightmares/</ref> আরও দেখুন: [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/নজরদারি ও প্রতিনজরদারি#Sousveillance and art?|সৌসভেইলেন্স ও শিল্প?]]
তবে, স্ক্রিনশট নজরদারি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে মডেল এমিলি সিয়ার্স-এর ক্ষেত্রে,<ref>http://metro.co.uk/2016/01/30/this-model-is-shaming-guys-who-send-her-dick-pics-by-letting-their-girlfriends-know-5652780</ref> যিনি অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন চিত্র পাঠানোয় বিরক্ত হয়ে, ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল ঘেটে তাদের পরিবারের সদস্য বা প্রেমিকার খোঁজ বের করে ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে ওই ব্যক্তিরা দ্রুত ক্ষমা চায়।
বাজফিড-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে<ref>http://buzzfeed.com/rossalynwarren/a-model-is-alerting-girlfriends-of-the-men-who-send-her-dick#.dr8BA3KKB</ref> মিস সিয়ার্স বলেন, মানুষেরা তাদের কম্পিউটার পেছনে নিরাপদ বলে মনে করে এমন আচরণ করে। এই সামাজিক আচরণকে বলা হয় অনলাইন নিষেধমুক্তির প্রভাব। তাত্ত্বিক জন সুলারের মতে, বাস্তবে যা করার বা বলার সাহস নেই, অনলাইনে সেই কাজ করে ফেলার অনুভূতি। একজন পুরুষ যদি রাস্তায় নিজের নগ্ন দেহ উন্মুক্ত করে, তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। অথচ অনেকে ভাবেন কারও মোবাইলে তাদের যৌনচিত্র পাঠানো নাকি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য।
==== কোম্পানিসমূহ ====
পাসপোর্ট পরিষেবাগুলি ভোক্তাদের তথ্য শোষণ করেছে এবং Salon.com থেকে উদ্ভূত নিবন্ধগুলির একটি সিরিজ অনুসরণ করে তাদের গোপনীয়তা নীতি এবং বিবৃতি সংশোধন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। ইয়াহু এবং মাইক্রোসফট ই-মেইল পরিষেবা উভয়ই ব্যক্তিগতভাবে সনাক্তকরণযোগ্য তথ্য ভাগ না করার তাদের বর্ণিত গোপনীয়তা নীতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সম্ভাব্য গোপনীয়তা লঙ্ঘন সম্পর্কে ব্যবহারকারীর সমালোচনার জবাবে, ফেসবুক তার নতুন সংশোধিত পরিষেবার শর্তাদি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। গুগলের গোপনীয়তা অনুশীলনগুলি ইইউ গোপনীয়তার মানগুলি পূরণ করে না এবং একইভাবে বেশ কয়েকটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে আইনপ্রণেতা গোপনীয়তা অনুশীলন নিয়ে গুগলকে প্রশ্ন করেন প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার রূপরেখার জন্য সংস্থাগুলি গোপনীয়তা এবং ব্যবহারের শর্তাদি বিবৃতি নিয়োগ করে, যাতে ব্যবহারকারীর অভিযোগের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়।
এই পদ্ধতিতে, ব্যক্তিগত তথ্য জনসাধারণের মধ্যে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়, প্রক্রিয়াটিতে ব্যক্তির কাছ থেকে সামান্য ইনপুট সহ।
২০১৪ সালের এনএসএ.In বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এমন সংস্থাগুলি রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট '''টুইটার''' মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে যাতে এটি ব্যবহারকারীদের উপর সরকারের নজরদারি সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে স্বচ্ছ হওয়ার ক্ষমতা চেয়েছিল। টুইটারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন লি বলেছেন, এই বিধিনিষেধ প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন। টুইটারের মামলার আগে '''গুগল''' একটি অনুরূপ মামলা দায়ের করেছিল যা সংস্থাটি কতবার ডেটা জন্য জাতীয় সুরক্ষা অনুরোধ পায় তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার অনুমতি চেয়েছিল। [৬]
==== বায়োমেট্রিক ====
ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের মতে, "বায়োমেট্রিক্স বলতে জীবিত ব্যক্তিদের স্থায়ী শারীরিক বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ বা পরিচয় যাচাইকরণকে বোঝায়"। এই ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি বহু বছর ধরে সাধারণভাবে পরিচিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্বীকৃতি এবং আইরিস স্বীকৃতির সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে পোস্ট করা ছবিতে মানুষকে 'ট্যাগ' করে। এই সমস্তগুলি নজরদারি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি থেকে গঠিত ডেটা সরকারী বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা হয়। বায়োমেট্রিক ডেটার এই ধরনের ব্যবহার সুপরিচিত, তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবহার অন্বেষণ করা হচ্ছে।
আমেরিকা এবং চীনে, ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরাগুলি শহরগুলির চারপাশে ল্যাম্প পোস্টগুলিতে স্থাপন করা হচ্ছে যাতে রিয়েল টাইমে ব্যক্তিদের ট্যাগ করা ভিডিও দেখার পাশাপাশি সহিংস কার্যকলাপের জন্য জড়ো হতে পারে এমন বিশাল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা যায়। গত বছর ইউরোপে ওয়ান্টেড অপরাধীদের ভিড় স্ক্যান করার জন্য লেস্টারশায়ার পুলিশ কর্তৃক ডাউনলোড ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এটি যুক্তরাজ্যের একটি বহিরঙ্গন ভেন্যুতে এই ধরণের প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার ছিল এবং যখন এটি জনসাধারণের নজরে আনা হয়েছিল তখন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। একই সময়ে আইসি পুতুলগুলি স্টোরগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে তারা সংস্থাগুলিকে বিপণনের ডেটা দেওয়ার জন্য খুচরা গ্রাহকদের বয়স, জাতি এবং লিঙ্গ ট্র্যাক করতে পারে; এক ধরনের কর্পোরেট নজরদারি। এটি একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর মতো শোনাতে পারে তবে ক্রমবর্ধমান এটি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আইকোনেমের নিজস্ব পুতুল সিস্টেম রয়েছে যা স্মার্টফোনে বীকন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অ্যাপের মাধ্যমে পণ্যের বিবরণ সম্পর্কে সতর্ক কয়েক বছরের মধ্যে কোনও দোকানে প্রবেশ করা এবং পুতুলটি আপনাকে আপনার নাম ধরে ডাকে এবং তারপরে কেবল মুখের স্বীকৃতি সফটওয়্যার এবং গ্রাহক ডাটাবেসগুলি একত্রিত করে আপনাকে পণ্যগুলির প্রস্তাব দেয়। অবশ্যই এর কোনোটিই সহজে করা যায় না, যেমনটি কেলি গেটস তার বই আওয়ার বায়োমেট্রিক ফিউচার: ফেসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি অ্যান্ড দ্য কালচার অব সার্ভিল্যান্সে তুলে ধরেছেন, তবে এর উন্নয়ন ও উৎপাদনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে বায়োমেট্রিক নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই,[ তবে যুক্তরাজ্য এবং কানাডা কিছু আইন পাস করেছে যা আক্রমণাত্মক বায়োমেট্রিক্স সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করবে, যেমন 'স্নুপ বিল' যা এর ক্ষমতা হ্রাস করবে যোগাযোগ ক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি (সিসিডিপি)।
পিটার ওয়াগেট বলেছেন, "আমি ২০ বছর ধরে বায়োমেট্রিক্স নিয়ে কাজ করছি, এবং এটি এমন একটি টিপিং পয়েন্টে পৌঁছেছে যেখানে লোকেরা কোথায় রয়েছে এবং তারা কী করছে তা বোঝা অসম্ভব হতে চলেছে। সবকিছু মনিটরিং করা হবে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি ইতিমধ্যে সত্য তবে বায়োমেট্রিক্স পরবর্তী কোথায় যায় তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে।
'''''উদাহরণ'''''
সুইডেনে ১৯৭৫ সালে বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক গবেষণার উদ্দেশ্যে জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছেন। ফাংশন বা মিশন ক্রিপের ফলে সম্প্রতি এই রক্তের নমুনাগুলি ২০০৩ সালে একজন খুনির দোষী সাব্যস্ত করার জন্য এবং ২০০৪ সালে থাইল্যান্ডের সুনামি বিপর্যয়ের শিকারদের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সমস্ত ২৭ ইইউ দেশ সমস্ত ইইউ পুলিশ ডাটাবেসে জেনেটিক তথ্য, আঙুলের ছাপ এবং গাড়ি নিবন্ধকরণ তথ্যে অবাধ অ্যাক্সেস করতে সম্মত হয়েছে? নিউজিল্যান্ডে নবজাতকের রক্তের স্পট নমুনা এবং সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং এই তথ্য পুলিশ দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কেবল শেষ উপায় হিসাবে বা পিতামাতার সম্মতিতে ।
==== এরিয়াল ====
আকাশ নজরদারি এক ধরনের নজরদারি যা সাধারণত কম্পিউটারাইজড বায়বীয় ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত হয়। নজরদারির এই ফর্মটি নিজস্ব সমস্যা এবং সীমানা নিয়ে আসে যা প্রায়শই অতিক্রম করা হয়। নতুন প্রযুক্তি ড্রোনের মতো ডিভাইস তৈরি করছে, একটি আকাশ নজরদারি ইউনিট যা নিজেরাই কাজ করে এবং দূর থেকে মালিকের কাছে নজরদারি চিত্র প্রেরণ করে। এই ডিভাইসগুলি ব্যবহারের মূল সমস্যাটি হ'ল গোপনীয়তার আক্রমণ, বিশেষত যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স ছাড়াই অনেকগুলি ড্রোন কেনা এবং ব্যবহার করা যায়। ২০ কেজি ওজনের কম ওজনের ড্রোনগুলির জন্য বিশেষ পারমিটের প্রয়োজন হয় না,[ অর্থ যে কেউ এই রেকর্ডিং ডিভাইসগুলি যার উপর ইচ্ছা 'গুপ্তচরবৃত্তি' করতে ব্যবহার করতে পারে। যাঁদের কাছে ড্রোন রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই ব্যস্ত এলাকার ১৫০ মিটার এবং কোনও ব্যক্তির ৫০ মিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো এড়ানো উচিত, তবে এই নিয়মটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না।
মেশিনগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি নতুন রূপ গ্রহণ করায় অনেকে ড্রোন থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি তাদের আশেপাশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময় মুখের স্বীকৃতি ব্যবহার করতে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধি অনুসরণ এবং নথিভুক্ত করার ক্ষমতা ধারণ করতে তাদের কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করতে সক্ষম। ড্রোনগুলিতে ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশনের বিধিনিষেধ নেই, অন্যথায় সিসিটিভি হিসাবে পরিচিত, যা জনসমক্ষে কোনও ব্যক্তির গতিবিধি রেকর্ড করতে সক্ষম হলেও ব্যক্তি অনুসরণ করতে পারে না বা বায়বীয় দৃশ্য থেকে রেকর্ড করতে পারে না। কম্পিউটার ভিশন, ফেস রিকগনিশন, অবজেক্ট রিকগনিশন এবং অন্যান্য ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সহ ড্রোনগুলি দ্রুত নজরদারির অন্যতম অনুপ্রবেশকারী ফর্ম হয়ে উঠছে। ড্রোনগুলি তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং কোনও অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও বিষয় অনুসরণ করা এবং চিত্রগ্রহণের মতো মানুষের মতো উদ্দেশ্যগুলি সম্পূর্ণ করতে পারে।
জনসাধারণের সুরক্ষা এবং তাদের নিজের বাড়িতে গোপনীয়তার অধিকারের জন্য এবং সুরক্ষা সতর্কতার জন্যও বিমান নজরদারিতে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, কারণ এফএএ নিয়ম অনুসারে ৪০০ ফুটের উপরে বা বিমানবন্দরের দুই মাইলের মধ্যে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০১৫ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি আবাসন বিল চালু করা হয়েছিল যাতে বিমান নজরদারির ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা যায়। ''''প্রোটেকটিং ইন্ডিভিজুয়ালস ফ্রম মাস এরিয়াল সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট'''<nowiki/>' নামের ওই বিলটিতে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে নজরদারি চালাতে চাইলে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের এখন পরোয়ানা জারি করতে হবে। ফ্রেমের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদেরও শনাক্ত করতে পারছেন না তারা।
যেহেতু ড্রোনগুলি নজরদারির আরও সাম্প্রতিক রূপ, তাই অনেক লোক প্রযুক্তিটির বিপদ বা সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত নয়, তবে এমন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে যারা একটি বিমান নজরদারি ব্যবস্থার মালিকানার জন্য বিধিবিধান এবং নিয়ম বাড়াতে চান। ২০১৪ সালে পারমাণবিক সাবমেরিন স্থাপনার কাছে ড্রোন ব্যবহারের দায়ে রবার্ট নোলসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাকে ৪ হাজার ৩০০ পাউন্ড পরিশোধের নির্দেশ দেয়। বিবিসির খবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোথায় কেউ ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে আর পারবে না, কারণ ক্রিসমাস ও জন্মদিনের উপহার হিসেবে অনেককেই গ্রহণ করা হচ্ছে। ড্রোনগুলি নজরদারি প্রযুক্তির নতুন 'এটি' খেলনা, তবে নির্দেশিকাগুলি উপেক্ষা করার পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে, ম্যানচেস্টারে অপব্যবহারের আরেকটি মামলা রয়েছে। সেখানে টটেনহ্যাম হটস্পারের সাথে ম্যানচেস্টার সিটির হোম ম্যাচের উপর ড্রোন উড়ানোর জন্য এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ড্রোনগুলি অনেকের জন্য মজাদার, নিরীহ খেলনা হিসাবে দেখা হয়, তবে বিমান নজরদারির এই অত্যন্ত উন্নত রূপটি গোপনীয়তা এবং নামহীনতার অধিকারের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক এবং নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদি সিসিটিভিকে গোপনীয়তার বিষয়ে খুব বেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সতর্ক করা হয়, তবে তুলনামূলকভাবে ড্রোনটি আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বৃহত্তর সুযোগ সহ অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।
==== ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং ====
ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং হ'ল ডেটা নজরদারি, একটি প্যাটার্ন ভিত্তিক বৈকল্পিক ব্যবহার করে এবং পৃথক ক্রিয়াকলাপ যাচাই করার জন্য ডেটা মাইনগুলির মাধ্যমে অনুসন্ধান করা। ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং একটি প্রোফাইল তৈরি করতে এবং ব্যক্তিদের ইন্টারনেট কার্যকলাপের নিদর্শনগুলি খুঁজে পেতে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এইভাবে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় আচরণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হতে পারে। সফটওয়্যারের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি অনলাইন লেনদেনের জরিপ এবং উল্লেখ করার সাথে সাথে আরও বিশদ বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতির জন্য তৈরি করে।
ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য বেসরকারী সংস্থাগুলি বিভিন্ন লোকের ইন্টারনেট ক্রিয়াকলাপ অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। এটি ব্যক্তির জন্য একটি ভোক্তা প্রোফাইল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ এই সংস্থাগুলিকে "তৃতীয় পক্ষ" বলে অভিহিত করে, কারণ তারা তাদের গ্রাহকদের লেনদেনকে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপায় হিসাবে সরাসরি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক তথ্যের সাথে ন্যস্ত করা হয়। কর্পোরেট খেলোয়াড়দের অন্য সেটের জন্য, তবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রয় তাদের ব্যবসা, কেবল পণ্য ও পরিষেবাদির বিনিময়ের পণ্য নয়।
সংস্থাগুলির দ্বারা ডেটা ট্র্যাকিং এবং নোট করা লক্ষ্যবস্তুর গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। সরকার যখন এই তথ্য পায় তখন অতিরিক্ত গোপনীয়তার সমস্যা দেখা দেয়, যা বর্তমানে কোনও আইনি পরিণতি ছাড়াই করতে পারে। এটি প্রোফাইল এবং প্রোফাইলার, বা শিকার এবং শিকারীর মধ্যে একটি ক্ষমতার লড়াই তৈরি করে। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাকিংয়ের সাথে পাসওয়ার্ড এবং এর বৈধতা বা এমনকি প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি অপ্রচলিত বলে মনে হয় যে একজনকে তাদের নিজস্ব ইমেল প্রবেশ করার জন্য একটি পাসকোড প্রয়োজন, যখন কোনও ডেটা মাইনারের কোনও ব্যক্তির সম্পূর্ণ চিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় এমন কোনও কিছুতে অ্যাক্সেস রয়েছে। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে জিমেইলের মতো সাইটে অ্যাক্সেস করতে অসুবিধা বিদ্রূপাত্মক- একটি মায়ের প্রথম নাম বা শৈশব পোষা প্রাণী অবশ্যই মনে রাখতে হবে যখন একটি পৃথক সংস্থা বা প্রোফাইলার কারও পরিচয় সংগ্রহ করার জন্য তাদের অজ্ঞতা উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় গোয়েন্দা এবং আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের দ্বারা কৌশল হিসাবে ডেটা মাইনিং ব্যবহার করা হয়েছে। এটি চালু করা হয়েছিল যখন তদন্তগুলি সন্ত্রাসীদের আচরণ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথেষ্ট প্রকাশ করে না যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমাজে মিশে যায়। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত, বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রতিরোধের জন্য, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে বিশাল এবং বেশিরভাগ অকেজো লেনদেনমূলক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ শুরু করেছে।
ডেটা প্রোফাইলিং এবং মাইনিং নজরদারির জগতে খালি চোখে যা দেখতে পারে তার পৃষ্ঠের নিচে খনন করতে এবং ব্যানাল ক্রিয়াকলাপকে ব্যবহারকারীর প্যাটার্নে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থহীন হিসাবে বিবেচিত ডেটা ব্যবহার করা এমন প্রোফাইলারের পক্ষে অত্যাবশ্যক হতে পারে যারা অনলাইন লেনদেন থেকে তাদের ডেটা তৈরি করতে পারে এবং যেমন কোনও ব্যক্তির একটি পরিষ্কার চিত্র তৈরি করতে পারে। এটি অনুশীলনের যথার্থতা নয় যা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে নৈতিক অসদাচরণ যা কৌশলটির অংশ। ব্যক্তিগত তথ্য বড় কোম্পানিগুলির জন্য একটি গরম পণ্য, তবে ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং সাধারণত একজন সাধারণ ব্যক্তির দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কেবল অনুসন্ধান করা হয় এবং এই ধরনের নজরদারি তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ।
==== হিউম্যান অপারেটিভ ====
স্পাই থ্রিলারে আমরা যেমন দেখি এজেন্টরা কি নজরদারির হাতিয়ার? এটা যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে হ্যাঁ তারা আছে। <nowiki>https://www.mi{{subst:#invoke:ConvertDigit|main|5}}.gov.uk</nowiki> এমআই৫ এর ওয়েবসাইট অনুসারে "গোপন মানব গোয়েন্দা সূত্র (সিএইচআইএস), বা "এজেন্ট", এমন লোক যারা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারে যা আমাদের তদন্তে সহায়তা করতে পারে"। এই এজেন্টগুলি প্রায়শই নাটকের উদ্দেশ্যে কাল্পনিক কাজগুলিতে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়, তবে এই জাতীয় গল্পগুলির ভিত্তি একই থাকে।
সম্ভবত বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত সুরক্ষা সংস্থা হ'ল সিআইএ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা বাহিনীর একটি শাখা। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা কার্যক্রম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সরকার-ব্যাপী ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে,[ যখন যুক্তরাজ্যে, এমআই ৬ এবং এমআই ৫ ১৯০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখন তারা সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো নামে পরিচিত ছিল। এই নিরাপত্তা পরিষেবা ব্যবহারের সবচেয়ে সক্রিয় সময়কাল, এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রতিলিপি যুগ ঠান্ডা যুদ্ধ হতে হবে। এই সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য বিদেশী সরকারের নজরদারি অপরিহার্য ছিল।
এই সব বিদেশী স্বার্থ সঙ্গে কাজ অপারেশন সম্পর্কিত, কিন্তু মানব অপারেটর মাধ্যমে গার্হস্থ্য জনসংখ্যার নজরদারি জন্য সেট আপ করা এজেন্সি আছে। সবচেয়ে বড় হোমল্যান্ড কাউন্টার-টেররিজম সংস্থা হ'ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস রয়েছে যেখানে এজেন্টদের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ঝুঁকির জন্য জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মানব অপারেটররা তাদের নিজস্ব নজরদারি প্রযুক্তি, সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। যুক্তরাজ্যে এজেন্টদের ভূমিকা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, বিবিসির রেডিও ৪ এর টুডে প্রোগ্রাম সম্প্রতি এমআই ৫ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বেনামী এজেন্টের সাক্ষাত্কার নিয়েছে।
==== ডি.এন.এ. প্রোফাইলিং ====
বেশ কয়েকটি দেশ নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরিষেবাগুলি থেকে লাভের আশায় প্রধানত ফার্মাসিউটিকাল সংস্থাগুলি এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ দ্বারা পরিচালিত চিকিত্সা গবেষণার জন্য দেশব্যাপী ডিএনএ ডাটাবেস তৈরি করছে। চিকিৎসা গবেষণা সুইডেনে ড্রাইভার যার মাধ্যমে ১৯৭৫ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছে (পিকেইউলাবরেটরিয়েট ২০০৮)। নমুনাটি জিনগত রোগ ফিনাইল-কেটোন-ইউরিয়া (পিকেইউ) পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ডাটাবেসে ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণার জন্যও সংরক্ষণ করা হয়। ডাটাবেসে কোনও ডিএনএ প্রোফাইল নেই, তবে রক্তের নমুনাগুলি সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। প্রতিটি নমুনার সাথে পরিচয় তথ্যও সরবরাহ করা হয়। ডাটাবেসটি অপরাধ তদন্তে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নয়। যাইহোক, আনা লিন্ধ (সুইডিশ পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব) হত্যার হাই-প্রোফাইল মামলায় পুলিশ ডাটাবেসে অস্থায়ী অ্যাক্সেস পেয়েছিল যা হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
==== স্যাটেলাইট চিত্রাবলী ====
২৫ শে মে, ২০০ ২০০৭-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জন মাইকেল ম্যাককনেল অনুমোদিত জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন অফিস এর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ স্থানীয়, রাজ্য এবং দেশীয় ফেডারেল এজেন্সিগুলিকে সামরিক গোয়েন্দা পুনরুদ্ধার উপগ্রহ এবং পুনরুদ্ধার বিমান সেন্সর থেকে চিত্রাবলী অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেওয়ার জন্য যা এখন মার্কিন নাগরিকদের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যাটেলাইট এবং বিমান সেন্সরগুলি মেঘের আচ্ছাদন ভেদ করতে, রাসায়নিক চিহ্নগুলি সনাক্ত করতে এবং বিল্ডিং এবং "ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার" এর বস্তুগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম হবে এবং গুগল আর্থের মতো প্রোগ্রামগুলির দ্বারা উত্পাদিত স্থির-চিত্রগুলির চেয়ে অনেক বেশি রেজোলিউশনে রিয়েল-টাইম ভিডিও সরবরাহ করবে।
==== সনাক্তকরণ এবং শংসাপত্র ====
সনাক্তকরণের সহজতম ফর্মগুলির মধ্যে একটি হ'ল শংসাপত্র বহন। কিছু জাতির সনাক্তকরণে সহায়তা করার জন্য একটি পরিচয় নথি সিস্টেম রয়েছে, অন্যরা এটি বিবেচনা করছে তবে জনসাধারণের বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যান্য নথি, যেমন পাসপোর্ট, ড্রাইভারের লাইসেন্স, লাইব্রেরি কার্ড, ব্যাংকিং বা ক্রেডিট কার্ডগুলিও পরিচয় যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। যদি পরিচয়পত্রের ফর্মটি "মেশিন-পঠনযোগ্য" হয়, সাধারণত একটি এনকোডযুক্ত চৌম্বকীয় স্ট্রাইপ বা সনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার করে, তবে এটি বিষয়টির সনাক্তকারী ডেটা সমর্থন করে। এই ক্ষেত্রে এটি একটি বৈদ্যুতিন ট্রেইল তৈরি করতে পারে যখন এটি চেক করা হয় এবং স্ক্যান করা হয়, যা প্রোফাইলিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, উপরে উল্লিখিত হিসাবে।
==== ভূতাত্ত্বিক ডিভাইস ====
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পুলিশ কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য লোকের গাড়িতে গোপন ট্র্যাকিং ডিভাইস স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে তারা আদালতে যুক্তি দেখাচ্ছিল যে তাদের এটি করার অধিকার রয়েছে। বেশ কয়েকটি শহর পাইলট প্রকল্প চালাচ্ছে যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে জিপিএস ডিভাইস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।
==== মানব মাইক্রোচিপ ====
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ এবং সংশয়বাদীরা একটি সম্ভাব্য নজরদারি পদ্ধতির অত্যন্ত সমালোচনা করেছেন: নাগরিকদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে মাইক্রো-চিপের ব্যবহার। যদিও অনেক বাণিজ্যিক পণ্য ইতিমধ্যে চুরি প্রতিরোধের জন্য মাইক্রো-চিপ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, এই চিপগুলি সম্ভাব্যভাবে অন্যান্য উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন এটি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে নতুন আমেরিকান পাসপোর্টগুলি একটি আরএফআইডি চিপ দিয়ে জারি করা হয় যা ব্যক্তিগত তথ্য ধারণ করে। এই চিপগুলি দশ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। তবে একই ধরনের চিপ এরই মধ্যে মানুষের মধ্যেও বসানো হয়েছে। কয়েকটি ক্লাব এবং ডিস্কোথেক নিয়মিত গ্রাহকদের বাহুতে মাইক্রো-চিপ ইনজেকশনের মাধ্যমে এই ব্যবহারকে নেতৃত্ব দিয়েছে যাতে তাদের সহজে অ্যাক্সেস এবং একটি বৈদ্যুতিন ট্যাব সরবরাহ করা যায় যা অর্থ বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা দূর করে। হাস্যকরভাবে, এটি অনুসরণ করে যে নজরদারি কেবল নিয়ন্ত্রণের একটি অন্তর্নিহিত এবং গোপন ফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে না, তবে সুস্পষ্ট ৩৬০ ° প্রতিক্রিয়া প্রদানের উপায় হিসাবে ব্যবসায়িক চেনাশোনাগুলিতে গৃহীত হয়েছে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সমগ্র সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট নিরীক্ষণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন জড়িত। যাইহোক, এই প্রক্রিয়াটি একটি সংগঠনের মধ্যে মাইক্রো-রাজনীতির জন্ম দিতে পারে এবং নিন্দা এবং ব্ল্যাকমেইলকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে এটি শৃঙ্খলার নিখুঁত রূপ যে এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ক্ষমতার বিষয়টিকে স্বাগত বোধ করে এবং প্রকাশ্যে শৃঙ্খলাকে আমন্ত্রণ জানায়। একইভাবে, সংশয়বাদীরা ভয় পায় যে আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিটি ব্যক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করে এবং এই বিবরণগুলিকে বাইরের শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন করে স্বচ্ছ মানব বা "কাচের মানুষ" তৈরি করছি।
==== ডাক সেবা ====
টেক্সট মেসেজিং, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং ইমেলের উত্থানের সাথে সাথে এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে ডাক চিঠিটি তরুণ প্রজন্মের জন্য অপ্রচলিত হয়ে উঠছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করেছিল যে জাতীয় সাক্ষরতা ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা গেছে যে ছয়জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে মাত্র একজন এখনও চিঠি লেখে এবং তারা বিশ্বাস করে যে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্বে বাস করা চিঠি লেখার পতনের পিছনে কারণ।
আমাদের মধ্যে যারা চিঠি পাঠান এবং গ্রহণ করি এবং মহামান্যের সন্তুষ্টিতে নেই এমনকি যদি এটি কেবল অদ্ভুত ক্রিসমাস বা ধন্যবাদ কার্ড হয় তবে আমরা সর্বদা ধরে নিই যে আমাদের তথ্য ব্যক্তিগত; তবে যুক্তরাজ্য ডাক এবং যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকারের সাথে একটি ওঠানামা সম্পর্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
মিডিয়া ব্লগ ইনফর্ম (ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অফ রেসপন্সিবল মিডিয়া ফোরাম) ১৭ থেকে ২০ শতকের চিঠিগুলি কেবল একটি পরোয়ানার অনুমোদনের মাধ্যমে ট্রানজিটে খোলা যেতে পারে, তবে পরোয়ানার ফর্মটি সরকারী ক্ষমতার বিবেচনার ভিত্তিতে হবে, তবে তারা প্রকাশ্যে পরামর্শ দেয়নি যে বাধা দেওয়া হচ্ছে। উপরন্তু, কোন কেলেঙ্কারি গোপনে মোকাবেলা করা হত।
এই অনুশীলনের নীরবতা ১৯ ১৯৭৯৯ সাল পর্যন্ত রয়ে গিয়েছিল যখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে স্থানীয় পুলিশ একটি প্রাচীন ব্যবসায়ীর টেলিফোন রেকর্ড করছিল এবং যখন যুক্তরাজ্যের আদালত আদালত খারিজ করে দেয়, তখন বাদী মামলাটি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে নিয়ে যায় যেখানে এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে যুক্তরাজ্য সরকার মানবাধিকারের ইউরোপীয় কনভেনশনের ৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্যের একজন ব্যক্তিকে শান্ত জীবনের অধিকার দেয়া। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একমাত্র লুপ হোল।
এটি আদালত কর্তৃক আদেশিত যোগাযোগ আইন ১৯৮৫ এর ইন্টারসেপশন তৈরির দিকে পরিচালিত করে এবং পরে তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ২০০০ এর নিয়ন্ত্রণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। আরও দেখুন: আইন ও বিধিনিষেধ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক আইনের গোপনীয়তা কেবল ১৯ শতকে ঘটেছিল। জন ডারহাম পিটারস বলেছেন যে স্ট্যাম্প, সিল করা খাম এবং পোস্ট বাক্সের আগে চিঠিগুলি খোলা, পড়া এবং এমনকি স্থানীয় প্রেসে প্রকাশিত হতে পারে।
গ্রাহাম মেইকেল এবং শেরম্যান ইয়ং চিঠি লেখার ক্ষেত্রে বিকশিত গোপনীয়তার সামঞ্জস্যতা এবং আজকের সোশ্যাল মিডিয়া আউটলেটগুলিতে কোনটি ব্যক্তিগত এবং কোনটি নয় তা সংজ্ঞায়িত করার কোনও আহ্বান জানানো হয়নি। তারা বলে, 'কাউকে এভাবে বার্তা পাঠানো অস্বাভাবিক কিছু নয়, কেবল তখনই আপনার পৃষ্ঠার 'প্রাচীর' অঞ্চলে লিখে তাদের উত্তর দেওয়া অস্বাভাবিক নয়, যাতে কথোপকথনটি আরও বিস্তৃত শ্রোতাদের কাছে উন্মুক্ত হয়, প্রশ্নে প্রাচীরে কী গোপনীয়তা সেটিংস প্রয়োগ করা হয় তার উপর নির্ভর করে।
==== অ্যাপ্লিকেশন ====
নজরদারি প্রযুক্তির একটি বিশেষ রূপ হ'ল গুগল প্লে এবং আইটিউনসের মতো অ্যাপ্লিকেশন স্টোরগুলির মাধ্যমে ভোক্তাদের অ্যাক্সেসযোগ্য। এই প্রযুক্তিটি বাজারজাত করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে; কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের ইন্টারনেট ব্যবহার ট্র্যাক করার জন্য সংস্থাগুলির জন্য, তাদের ফোনের মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করার জন্য পিতামাতার কাছে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং স্বামী বা স্ত্রীর ক্রিয়াকলাপ তদন্তের উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়। অবশ্যই, বেসিক সফটওয়্যারটি মূলত একই এবং ইন্টারনেট সংযোগ সহ যে কোনও কম্পিউটার বা ফোনে ডাউনলোডযোগ্য। এই বিভাগটি বিশেষত এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি এবং সেগুলি কীভাবে কাজ করে তা দেখবে।
একটি আকর্ষণীয় সূচনা পয়েন্ট হতে পারে হাফিংটন পোস্ট দ্বারা একটি নিবন্ধ পাঁচটি ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তাদের বাচ্চাদের উপর "গুপ্তচরবৃত্তি" করার জন্য পিতামাতার কাছে বিক্রি করা হয়। এটি এই পণ্যগুলির প্রধান বিক্রয় পয়েন্টগুলি হাইলাইট করে, তাদের বাচ্চারা কী পাঠ্য করে তা দেখার ক্ষমতা থেকে শুরু করে তারা যে গাড়িতে ভ্রমণ করছে তার গতি জানা। এই পণ্যগুলির ওয়েবসাইটগুলি নিজেরাই অনুরূপ পয়েন্টগুলি উল্লেখ করে, পাশাপাশি কর্মচারীদের শিথিলতা এবং প্রতারণামূলক স্বামীদের কথা বলে। শীর্ষ ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির মতে 'এমএসপিআই' হ'ল "বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ব্যবহৃত সেল ফোন ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন", তাই এটি যেভাবে কাজ করে এবং এই বিষয়ে কোম্পানির কী বলার আছে তা দেখা মূল্যবান।
এমস্পাই এর হোমপেজে 'হাউ ইট ওয়ার্কস' শিরোনামে একটি বিভাগ রয়েছে যেখানে তারা বলেছে "আমাদের সফটওয়্যারটি জিপিএস অবস্থান, ওয়েব ইতিহাস, ছবি, ভিডিও, ইমেল, এসএমএস, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, কীস্ট্রোক এবং আরও অনেক কিছু সহ পর্যবেক্ষণ করা ফোনের পটভূমিতে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে কাজ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে - কল পরিচালনা করা, পাঠ্য বার্তা এবং জিপিএস অবস্থানগুলি ট্র্যাক করা, ক্যালেন্ডার এবং ঠিকানা বইগুলি অ্যাক্সেস করা এবং কয়েকটি নাম রাখার জন্য অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রোগ্রামগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। এটি আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈধতার প্রশ্ন থাকতে পারে, কারণ এটি বেসামরিক নজরদারি সফটওয়্যার, তবে তাদের সাইটটি ব্যাখ্যা করে যে "এর ব্যবহার একেবারে আইনী" যতক্ষণ না এটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের, কর্মচারীদের নিরীক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় যারা সচেতন যে তাদের ট্র্যাক করা হচ্ছে, বা ক্রেতার নিজের ফোনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যাইহোক, সফটওয়্যারটি দূরবর্তীভাবে কোনও ডিভাইসে ডাউনলোড করার জন্য উপলব্ধ তাই ব্যবহারকারীদের পক্ষে অবৈধভাবে এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। স্পাই বাবলের মতো অনুরূপ সাইটগুলিতে, বৈধতার প্রশ্নটি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ কারণ এটি অংশীদারের ডিভাইসে ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং অনুমোদনের বিষয়টিকে সম্বোধন করা হয় না। অনলাইনে অনেক নিবন্ধ রয়েছে যা এখানে বর্ণিত আইনী এবং নৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে।
এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলির ব্যবহার বিতর্কিত হতে পারে, তবে দৈনন্দিন নজরদারি প্রযুক্তি হিসাবে সময় বাড়ার সাথে সাথে তারা বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
== নেটওয়ার্কড সংস্কৃতির ক্ষমতার রাজনীতি ==
প্রযুক্তি এবং অন্য সবকিছুর ব্যাপক আবেদন রয়েছে যা ক্ষমতা সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বদা সমালোচিত হওয়া উচিত। একটি নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজ বিশ্বের শক্তিশালী সরকারগুলিকে যে সুবিধাগুলি দেয় তা সমালোচনা করা বা হাইলাইট না করা বোকামি। এমন একটি বিশ্ব যেখানে প্রযুক্তির নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নির্বিঘ্নে দেখার অনুমতি দেয়। কে দেখছে আমাদের? যারা আমাদের দেখছে তাদের কে দেখছে? এই প্রযুক্তিগত যুগে সমালোচনামূলক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী থাকার জন্য আমাদের এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে হবে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী, ল্যারি ডায়মন্ডের 'সর্বদা সংস্কৃতিতে' একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে এটি প্রযুক্তি এবং তথ্যে সহজে অ্যাক্সেসের অনুমতি দিয়েছে। ডায়মন্ড বিশ্বাস করেন যে সস্তা ভিডিও ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সক্ষম মোবাইল ফোন যা ভিডিও রেকর্ড করতে পারে তা 'ক্ষমতা' বেসামরিক নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে, জনগণকে নিজেরাই সার্ভেলান্ট হয়ে উঠতে এবং নজরদারির ঐতিহ্যবাহী শ্রেণিবিন্যাসকে সমতল করে তুলেছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমরা আমাদের হাতে থাকা ডিভাইসগুলি আমাদের সরকারী এবং কর্পোরেট কর্মকর্তাদের ক্রিয়াকলাপ নথিভুক্ত করার অনুমতি দেয়, তাই বেসামরিক নাগরিকদের দিনের যে কোনও সময় শক্তিশালী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার ক্ষমতা দেয়; নিচ থেকে কর্তৃপক্ষকে দেখার ক্ষমতা। এমন একটি সমাজের ধারণা যা চতুর্থ এস্টেটে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং আমাদের অ্যাক্সেস এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতার প্রতীকগুলিকে জবাবদিহি করার ক্ষমতা রাখে তা ৮০ এর দশকের শো সিওপিএস-এ দেখা যায়। এমন একটি শো যা আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপকে প্রকাশ করেছিল কারণ তারা বল প্রয়োগ করে এবং কখনও কখনও নৃশংস কৌশল ব্যবহার করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছিল। শোটি বৈপ্লবিক ছিল যে এটি ক্ষমতার এজেন্টদের রেখেছিল যারা তাদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য কেউ ছাড়াই অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছিল এবং হঠাৎ সাধারণ জনগণের সমালোচনা করার জন্য আলোতে আনা হয়েছিল।
প্রাক্তন সিআইএ কর্মী '''এডওয়ার্ড স্নোডেন''' অবশ্য দেখিয়েছেন যে কীভাবে কখনও কখনও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক নজরদারি ঘটে যখন আমরা জানি না যে এটি ঘটছে বা এমনকি বিদ্যমান রয়েছে। যখন জনগণ অসচেতন থাকায় কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। সেই সময় যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আইনের ঢিবি যা কেউ পড়ে না, ক্ষমতার এজেন্টদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলিতে অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়। এনএসএ হাজার হাজার নিরহংকারী আমেরিকানদের টেলিফোন রেকর্ড সংগ্রহ করছিল। একটি প্রক্রিয়া যা টেলিযোগাযোগ সংস্থা ভেরাইজনকে দৈনিক ভিত্তিতে টেলিফোন ডেটা হস্তান্তর করার জন্য একটি গোপন আদালতের আদেশ দ্বারা সক্ষম হয়েছিল। এনএসএ প্রিজম নামে একটি নজরদারি প্রোগ্রামে প্রতিটি বড় ইন্টারনেট সংস্থার সার্ভারে ট্যাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। 'প্রিজম' কর্মসূচি থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্যও ব্রিটেনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল। এডওয়ার্ড স্নোডেন, যিনি এই তথ্য ফাঁসের জন্য দায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সম্পত্তি চুরির জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং নির্বাসনে রয়েছেন এবং তবুও তিনি যা করেছেন তা হল ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা। [৯]
এডওয়ার্ড স্নোডেন এবং উইকিলিকসের মতো সংস্থা গণ নজরদারির ব্যাপকতার চিত্র তুলে ধরেছে। স্নোডেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডর দূতাবাসে পালিয়ে যেতে হয়েছিল যাতে তিনি দাবি করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্বাভাবিক উপস্থাপনার প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা যায়। অ্যাক্সেসযোগ্যতার দিক থেকে অনলাইনে সংগঠিত করা অনেক সহজ হতে পারে, তবে জনসাধারণ যদি অবিচ্ছিন্ন নজরদারির অধীনে থাকে তবে তর্ক করা কঠিন হয়ে পড়ে যে তারা তাদের ডিভাইস দ্বারা সত্যই ক্ষমতায়িত, যদি এগুলি তাদের গোপনীয়তার এই জাতীয় আক্রমণকে অনুমতি দেয়।
প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল একটি সমাজে ক্ষমতাসীনরা কীভাবে নজরদারি বৈশিষ্ট্যগুলির অপব্যবহার করতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ বিশ্বের ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারি। গল্পটি ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল যখন তৎকালীন নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রাজকীয় সম্পাদক ক্লাইভ গুডম্যান এবং একজন বেসরকারী তদন্তকারী গ্লেন মুলকায়ারকে রাজকীয় সহযোগীদের জন্য রেখে যাওয়া ভয়েসমেইল বার্তাগুলিতে বাধা দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয় এবং আরও হ্যাকিংয়ের গল্প সামনে আসে। তবে এই কেলেঙ্কারির জটিল রাজনৈতিক মুহূর্ত আসে যখন গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায় যে সংবাদপত্রটি খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মিলি ডাউলারের মোবাইল ফোন হ্যাক করেছে। অভিযোগ, টার্গেটদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, মৃত ব্রিটিশ সৈন্যদের আত্মীয় এবং লন্ডন বোমা হামলায় আটকে পড়া লোকজন রয়েছেন।
নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির সাথে একটি সমাজে, অবস্তুগততা সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত তথ্য ডিজিটাল আকারে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেটের কারণে সময় ও স্থানের দূরত্বও দূর হয়ে যায়। আরও কি, সমতা নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত নাগরিক অনলাইনে তাদের মতামত পড়তে এবং পোস্ট করতে পারে। ক্ষমতার রাজনীতির জন্য, ইন্টারনেটের উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে সর্বাধিক পরিমাণে সমর্থন অর্জনের জন্য সময়মতো রাজনৈতিক তথ্য প্রেরণ করতে সহায়তা করতে পারে। নেটওয়ার্কযুক্ত সংবাদপত্র, সম্প্রচার, টেলিভিশন ইত্যাদি জনসাধারণকে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সরবরাহ করতে পারে, যাতে জনমতের জন্য সঠিক অভিযোজন আকার দেওয়া যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতো দেশে, এটি অনলাইনে ব্যাপক সেন্সরশিপের দিকে পরিচালিত করেছে। চীনের গ্রেট ফায়ারওয়াল[ এর অর্থ হ'ল ইন্টারনেট কেবল সরকার অনুমোদিত সামগ্রী অ্যাক্সেস করে এবং অনুসন্ধানগুলি নির্দিষ্ট শব্দের জন্য ফিল্টার করা হয় যার ফলে ফৌজদারি অভিযোগ এবং কারাদণ্ড হতে পারে। শিল্পী এবং সমালোচক পিআরসি আই ওয়েইওয়েই চীনের মতো আচরণের জন্য এনএসএর নজরদারি কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন এবং সরকারী নজরদারিতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
== নৈতিক উদ্বেগ ==
নজরদারি কখনই বিষয়টির গোপনীয়তার যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশায় অনুপ্রবেশ করা উচিত নয়। যদিও বেসরকারী সুরক্ষা এবং নজরদারি অপারেটিভরা অনুসন্ধান এবং জব্দ সুরক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক উদ্বেগের সাথে পুলিশ অফিসার নয়, যদি অযৌক্তিক উপায়ে কোনও বিষয়ের অধিকার লঙ্ঘন হয় তবে সম্ভবত নাগরিক দায়বদ্ধতা থাকবে।
এটি একটি পরিচিত সত্য যে উদাহরণস্বরূপ ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করার সময় - এমন একটি ব্যবহার যা দৈনন্দিন ভিত্তিতে বৃহদায়তন হতে থাকে - লোকেরা শর্তাদি এবং শর্তাদি না পড়েই সম্মত হয়। অ্যাপ্লিকেশনগুলি তখন কেবল ব্যবহারকারীদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে আকারের ডেটা ব্যাংক সংগ্রহ করে না, তবে প্রতিষ্ঠানগুলি (সরকারের মতো) নিজেরাই প্রোফাইল এবং কথোপকথন (ব্যবহারকারীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়) থেকে ব্যক্তিগত ডেটা অ্যাক্সেস করে, সুরক্ষার জন্য বলা হয় এমন বিষয়গুলির জন্য এগুলি ফিল্টার করে। এই ঘটনাগুলির উপর সুনির্দিষ্ট তথ্য অর্জন করা কঠিন এবং যদিও, জনগণকে যা জ্ঞান দেওয়া হয় তা থেকে, প্রতিটি সরকার সবকিছু নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না, যখন এটি ঘটে তখন এটি নজরদারির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এই ধরণের পরিস্থিতিতে, এটি খুব বিতর্কিত যে সম্প্রদায়ের সর্বোত্তম স্বার্থে সুরক্ষার কারণে নজরদারির 'ইতিবাচক' ব্যবহার হতে পারে কিনা, বা এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণের মামলা। সামগ্রিকভাবে ইন্টারনেটের আরও সাধারণ স্তরে উত্থাপিত যুক্তিগুলিও ডিজিটাল শ্রমের একটি ভাল শোষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে কিছু অ্যাপ্লিকেশন এবং পৃষ্ঠাগুলি ব্যবহার করে, উদাহরণস্বরূপ, আমরা ব্যবহারকারীরা নিজের চেয়ে অন্য কাউকে বেশি উপকৃত করছি এবং যেখানে মেকানিক্যাল তুর্কের মতো সিস্টেমে শ্রম অত্যন্ত সস্তা যখন এটি অর্থ প্রদান করে এবং তাই এইচআইটির অনুরোধকারীকে উপকৃত করে। গুগল এবং অ্যামাজনের মতো সিস্টেম / কর্পোরেশনগুলিকে মেগাস্ট্রাকচার, উল্লেখযোগ্য প্রাসঙ্গিকতার সাথে ডেটাব্যাঙ্ক হওয়ার অনুমতি দেয়, যেন একটি ভার্চুয়াল সাম্রাজ্য যা আরও শারীরিক চ্যালেঞ্জ করতে পারে (উদাহরণস্বরূপ তেল কোম্পানি এবং গাড়ি কারখানা)। ডেটাব্যাঙ্কগুলি ব্যবহারকারীর 'সম্মতি' (প্রায়শই অজানা) এর উপর নির্মিত।
যদিও সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল বিশ্ব ছায়াময় পরিস্থিতি, লঙ্ঘন, অপব্যবহার এবং নৈতিক উদ্বেগের পরিস্থিতিগুলির উদাহরণ (মাঝে মাঝে ভাল সংবাদের জন্য তৈরি করে) অনুমতি দেয়, এগুলি এমনকি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মতো এটির একটি নমুনা বিভাগ গ্রহণ করতে দেখা যায়। ফেসবুক একটি জনপ্রিয় হওয়ায়, এটি অতীতে উদ্বেগের বিষয় ছিল, উদাহরণস্বরূপ ব্যবহারকারীরা এমনকি পরবর্তী অবধি এটি সম্পর্কে সচেতন না হয়েই "সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে ব্যাপক আকারের সংবেদনশীল সংক্রামকের পরীক্ষামূলক প্রমাণ" চালাতে সক্ষম হয়েছিল। আবারও ব্যবহারকারীর ভঙ্গুরতা এবং তুলনামূলকভাবে সহজ ম্যানিপুলেশনের অনুমতি দেয় এমন একটি এক্সপোজারকে আন্ডারলাইন করে, এটি এবং এর এক্সটেনশন অ্যাপ্লিকেশনগুলির কাজের মধ্যে নৈতিক সমস্যা রয়েছে।
একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি হতে পারে ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন মেসেঞ্জার সম্পর্কিত নৈতিক উদ্বেগ। মেসেঞ্জারের অনেক ব্যবহারকারীই জানেন না যে তারা অ্যাপটি ব্যবহারে সম্মত হওয়ার সময় ঠিক কতগুলি অনুমতি দিয়েছেন। এটিকে গোপনীয়তার সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত কিনা তা নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে।
আরও কিছু আশ্চর্যজনক অনুমতিগুলির মধ্যে রয়েছে তবে সীমাবদ্ধ নয়: আপনার পরিচিতিগুলি সংশোধন করা, আপনার পাঠ্য বার্তাগুলি পড়া, পাঠ্য বার্তা প্রেরণ, সরাসরি ফোন নম্বরগুলিতে কল করা, কল লগ পড়া, আপনার ইউএসবি স্টোরেজের সামগ্রী পড়া, ছবি এবং ভিডিও তোলা, অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড করা। এই অনুমতিগুলির মধ্যে কয়েকটি অবাক করা বলে মনে হচ্ছে কারণ এই অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত বার্তা এবং ছবি প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এখানে নৈতিক উদ্বেগ হ'ল অনেক ব্যবহারকারী এই অনুমতিগুলি সম্পর্কে অসচেতন এবং এইভাবে একটি ভয় থাকতে পারে যে অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারীরা ডেটা মাইন বা চরম ক্ষেত্রে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এটির সুবিধা নিতে পারে। এখানে ভবিষ্যতের জন্যও উদ্বেগ রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ - "যদি এত লোক ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রযোজ্য অনুমতি গোষ্ঠীগুলি পরীক্ষা না করে থাকে ... ভবিষ্যতে মোবাইল বিকাশকারীরা কতটা সাহসী হবেন?".
ফেসবুক এই নৈতিক আতঙ্কে সাড়া দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, 'বন্ধুকে সেলফি পাঠাতে চাইলে আপনার ফোনের ক্যামেরা অন করে সেই ছবি ধারণ করতে অ্যাপটির অনুমতি নিতে হবে। আপনি যখন অ্যাপটি ব্যবহার করছেন না তখন আমরা আপনার ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন চালু করি না। যাইহোক, এটি সম্পূর্ণরূপে জল্পনা শেষ করেনি, কারণ প্রতিক্রিয়াটিতে সমস্ত অনুমতির ন্যায্যতার সম্পূর্ণ ভাঙ্গন ছিল না। সম্ভবত ফেসবুককেও এখন 'বিগ ব্রাদার' হিসেবেও দেখা হয় এবং অবিশ্বাসের একটা স্তর আছে।
তবে আস্তে আস্তে মানুষ বুঝতে পেরেছে ফেসবুক কীভাবে এই পারমিশন ব্যবহার করে। পরিচিতিগুলির অনুমতির প্রসঙ্গে, আরেকটি ন্যায্যতা হ'ল "অ্যাপ্লিকেশনটির আপনাকে একটি নিশ্চিতকরণ কোডের মাধ্যমে আপনার ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বার্তাগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অনুমতি দেওয়া দরকার"।
এটি অ্যাপটি সম্পর্কে কিছু নৈতিক বিতর্ককে বাতিল করতে পারে তবে সত্যটি হ'ল ফেসবুক আপনার কাছে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনগুলি লক্ষ্য করতে অ্যাপটি ব্যবহার করে, তবে এই ডেটা সংগ্রহের বেশিরভাগই অ্যাপ্লিকেশনটিতে রয়েছে। এটি একটি জটিল প্রশ্ন উত্থাপন করে: আপনার আগ্রহের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন পাঠানো গোপনীয়তার লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা উচিত? মোটামুটিভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়।
নৈতিক সমস্যা, অবহিত সম্মতির নীতি এবং অনলাইনে পরিচয়ের প্রকাশ আসলে একটি বিস্তৃত বিষয়ের অংশ এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবেলা করা যেতে পারে, কোনও ব্যক্তির স্ট্যাটাস আপডেট থেকে শুরু করে রাফায়েল কাপুরো এবং ক্রিস্টোফ পিঙ্গেলের কাগজের মতো একাডেমিক প্রকাশনা পর্যন্ত। মুদ্রণ যুগে সেন্সরশিপ থেকে অনলাইন আস্থা সম্পর্কিত আরও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যন্ত, এটি নজরদারি এবং স্বাধীনতার মধ্যে উত্তেজনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা ডিজিটাল সম্প্রদায়ের সহযোগিতামূলক পরিবেশ এবং পারস্পরিক সমর্থন তৈরিতে মৌলিক নৈতিক চ্যালেঞ্জ গঠন করে।
=== নজরদারির পক্ষে ও বিপক্ষে ===
সমর্থকরা যুক্তি দেন যে নজরদারি তিনটি উপায়ে অপরাধ হ্রাস করতে পারে: প্রতিরোধ, পর্যবেক্ষণ এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে। নজরদারি ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে এবং মোডাস অপারেন্ডি প্রকাশ করে প্রতিরোধ করতে পারে। এর জন্য ন্যূনতম স্তরের আক্রমণাত্মকতা প্রয়োজন। নজরদারি উন্নত পরিস্থিতিগত সচেতনতার মাধ্যমে বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মানব অপারেটরদের একটি কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে, যেমন ভিডিও বিশ্লেষণ। নজরদারি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের জন্য ফুটেজের প্রাপ্যতার মাধ্যমে কোনও ঘটনার পুনর্গঠন এবং অপরাধ প্রমাণ করতে সহায়তা করতে পারে। নজরদারি সংস্থানগুলি দৃশ্যমান হলে বা নজরদারির পরিণতি অনুভব করা গেলে বিষয়গত সুরক্ষাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
* সমর্থকরা কেবল বিশ্বাস করে যে এটি সম্পর্কে কিছুই করা যায় না এবং লোকেরা অবশ্যই কোনও গোপনীয়তা না থাকার অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
* সাধারণ যুক্তিটি হ'ল: "তর্ক লুকানোর কিছু নেই, যদি আপনি কিছু ভুল না করেন তবে আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
অন্যদিকে, অনেক নাগরিক অধিকার এবং গোপনীয়তা, যেমন ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে নাগরিকদের উপর সরকারী নজরদারিতে ক্রমাগত বৃদ্ধির অনুমতি দিয়ে আমরা অত্যন্ত সীমিত বা অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক এবং / অথবা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সহ একটি গণ নজরদারি সমাজে শেষ করব।
* কিছু সমালোচক বলেছেন যে সমর্থকদের দ্বারা করা দাবিটি পড়ার জন্য সংশোধন করা উচিত: "যতক্ষণ না আমরা যা বলি তা করি, ততক্ষণ আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।
যদি এমন যুক্তি থাকে যে আমাদের ডিজিটাল নজরদারি সীমাবদ্ধ করা উচিত, তবে এটি সামাজিক মিডিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহারে কাটছাঁট করতে হবে। তবে "আজকের সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের নমুনা হিসাবে আমাদের সম্পর্কে কিছু শিখিয়ে থাকে তবে তা হ'ল ভাগ করে নেওয়ার জন্য মানুষের প্রবণতা গোপনীয়তার জন্য মানুষের প্রবণতাকে ছাড়িয়ে যায়। এটি তখন পরামর্শ দেবে যে মানুষ গোপনীয়তার চেয়ে ভাগ করে নেওয়ার কাজটিকে মূল্য দেয়, সুতরাং নজরদারির বৃদ্ধি এইভাবে আশ্চর্যজনক নয় কারণ দেখার জন্য আরও কিছু উপলব্ধ রয়েছে।
== যুক্তরাজ্যে নজরদারি ==
'''''যুক্তরাজ্যে নজরদারি''' সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, দয়া করে যুক্তরাজ্যে গণ নজরদারি দেখুন''
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অগ্রগামী হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্যে ডিজিটাল আকারে নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ সালে বিল্ড গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) ছিল যা ইংরেজিভাষী দেশগুলির ফাইভ আইজ সহযোগিতার মতো প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বৈদ্যুতিন যোগাযোগে বাধা দেওয়া, যা সময়ের সাথে সাথে অনেক বেড়েছে।
আজকাল, যুক্তরাজ্যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের নজরদারি যুক্তরাজ্যের সংসদে প্রণীত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষত, ব্যক্তিগত বার্তাগুলির সামগ্রীতে অ্যাক্সেস (অর্থাৎ, কোনও ইমেল বা টেলিফোন কলের মতো যোগাযোগের বাধা) অবশ্যই সেক্রেটারি অফ স্টেটের স্বাক্ষরিত ওয়ারেন্ট দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা গোপনীয়তা আইন যুক্তরাজ্যের আইনে প্রযোজ্য। আইনটি বৈদ্যুতিন নজরদারি ব্যবহারের উপর শাসন এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করে।
== জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
* জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর-এ'' গোপনীয়তার অভাব পুরো উপন্যাস জুড়ে একটি প্রধান চলমান থিম। অডিও এবং ভিডিও উভয়ই রেকর্ড করে এমন টেলিস্ক্রিনগুলি চরিত্রগুলির অনেকের বাড়িতে, ব্যবসায় এবং সর্বজনীন স্থানে ইনস্টল করা হয় যাতে তাদের উপর ট্যাব রাখা যায়। বেসরকারী নাগরিকদের তাদের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে রিপোর্ট করতে উত্সাহিত করা হয় এবং থট পুলিশ 'চিন্তার অপরাধ' উন্মোচনের দায়িত্বে থাকা আন্ডারকভার অফিসার। উপন্যাসে নজরদারির থিমগুলি 'বিগ ব্রাদার' শব্দগুচ্ছের ব্যবহার এবং একই নামের টেলিভিশন প্রোগ্রাম সহ একটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রভাব ফেলেছে। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারির সাথে যুক্ত একটি নির্দিষ্ট ভয় রয়েছে এবং ১৯৮৪ এটি খুব ভালভাবে চিত্রিত করে - "অবশ্যই কোনও মুহুর্তে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা জানার কোনও উপায় ছিল না" এর থেকে আরও, অরওয়েল সরকারী ক্ষমতার জন্য ক্ষুধা এবং ড্রাইভের সাথে সহাবস্থান নজরদারির ধারণাটিকে সম্বোধন করেছেন। এটি নজরদারির নেতিবাচক প্রভাবগুলি নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করে, যা আজ আধুনিক সমাজে সিসিটিভি ব্যবহার এবং আজ চালু হওয়া নজরদারির ক্রমবর্ধমান পরিমাণের মাধ্যমে স্পষ্ট। অরওয়েল তার উপন্যাসে বলেছেন, 'ক্ষমতা কোনো মাধ্যম নয়; এটা একটা শেষ। বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেউ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে না; একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য বিপ্লব করে। নিপীড়নের বস্তু হচ্ছে নিপীড়ন। নির্যাতনের বস্তু হচ্ছে নির্যাতন। ক্ষমতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা"। এটি প্রমাণ করে যে নজরদারির ব্যবহার সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য নয়, বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
* ৮০ এর দশকে ''সিওপিএস'' শোটি হিট হয়েছিল কারণ এটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের অপরাধীদের উপর আইনকে শক্তিশালী করার জন্য একাধিকবার বল প্রয়োগের নজরদারি ফুটেজ দেখিয়েছিল। শোটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারের আপাতদৃষ্টিতে অকলুষিত চিত্রটি উন্মোচন করেছিল।
* অনেক 'ফ্লাই-অন-দ্য ওয়াল' রিয়েলিটি টিভি শো একটি সেটিংয়ে ক্যামেরা মাউন্ট করার পদ্ধতি নিয়োগ করে এবং তাদের স্বীকার না করেই বিষয়গুলির ক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করে। এটি বিষয়গুলির জ্ঞান দিয়ে করা যেতে পারে, যেমন ''শোতে আমি একজন সেলিব্রিটি ... গেট মি আউট অফ হিয়ার!'', বা ক্যামেরাটি লুকানো যেতে পারে এবং কেবল পরে ''পাঙ্ক'ডের'' মতো শোতে দেওয়া যেতে পারে। এই দ্বিতীয় ধরনের জনসাধারণের সদস্যদের ব্যবহার করার ঝোঁক থাকে।
* ২০১৩ সালের চলচ্চিত্র ''আন্ডার দ্য স্কিন-এ'' বেশ কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে স্কারলেট জোহানসনের চরিত্র, একজন এলিয়েন মানুষকে অপহরণ করার চেষ্টা করে, একটি ভ্যানে অপরিচিতদের তুলে নিয়ে যায়। এই অপরিচিতদের অভিনেতাদের দ্বারা অভিনয় করা হয়নি, তবে জনসাধারণের সদস্যরা জানতেন না যে তারা ফিচার ফিল্মে অংশ নিতে চলেছেন, ভ্যানে একাধিক লুকানো ক্যামেরা দৃশ্যগুলি রেকর্ড করে
* ''- গগলবক্স'', একটি ইন্টারঅ্যাকশন প্রোগ্রাম যা প্রতিদিনের লোকেরা টিভি দেখছে। দর্শক টিভি দেখতে দেখতে দেখছেন।
* জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পাপারাজ্জি একটি পুনরাবৃত্ত বিষয়। এটি নজরদারির একটি আক্রমণাত্মক রূপ যা মূলত সেলিব্রিটিদের হয়রানি করে যখন তারা প্রহরায় ধরা পড়ে তখন তাদের ফটো এবং ভিডিও পেতে হয়। এটি সমস্যাযুক্ত হয়ে ওঠে কারণ এই ধরণের নজরদারি নৈতিক আচরণবিধির বিরুদ্ধে যায়, কারণ এই ধরণের আক্রমণাত্মক অনুশীলনকে সম্মতি দেওয়া হয়নি।
* ফিলিপ কে ডিকের ছোট গল্প ''দ্য মাইনরিটি রিপোর্ট'' এবং পরবর্তী চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম এবং ফক্স টেলিভিশন সিরিজটি এমন একটি বিশ্বের চিত্রিত করে যেখানে লোকেরা এখনও করেনি এমন অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার হতে পারে। ফিল্ম অভিযোজনে, শহরব্যাপী অপটিক্যাল স্বীকৃতি সিস্টেম এড়াতে নায়ককে অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ চোখের প্রতিস্থাপন শল্য চিকিত্সার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
* ''পার্কস অ্যান্ড রিক্রিয়েশনের'' চূড়ান্ত মরসুমে, লেসলি একটি ডেটা-মাইনিং টেক সংস্থার সাথে লড়াই করে যা পাওনির নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে।
= প্রতিনজরদারি =
== সংজ্ঞা ==
প্রতিনজরদারি অর্থ "নিচ থেকে দেখা এবং এর ব্যুৎপত্তিটি 'সুর' (ওভার) কে 'সস' দিয়ে প্রতিস্থাপন করা থেকে উদ্ভূত হয়, যার অর্থ 'অধীন' বা 'নিচে' বা 'নিচ থেকে'। সুতরাং শব্দটি নিজেই পরামর্শ দেয় যে প্রতিনজরদারি নজরদারির বিপরীত এবং দেখার কাজটি উভয়ের মধ্যে একমাত্র ধ্রুবক।
স্যুসভিল্যান্স হ'ল ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা কোনও ক্রিয়াকলাপের রেকর্ডিং, সাধারণত ছোট পরিধানযোগ্য বা বহনযোগ্য ব্যক্তিগত প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রতিনজরদারিকে ক্যামেরা (বা অন্যান্য সেন্সর) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা মানুষ বহন করে। সুসভিলেন্স হ'ল বহুবচনের পর্দা (অর্থাত্ "ভিড় পর্দা" বা অ-কর্তৃপক্ষ দ্বারা করা, পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন করা বা অনুরূপ)।
আপনার অভিধান প্রতিনজরদারিকে "দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ চলাকালীন কোনও ব্যক্তির সুবিধাজনক পয়েন্ট থেকে পরিবেশের রেকর্ডিং" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে।
দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনজরদারি ব্যবহারের একটি উদাহরণ - যা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মধ্যে জনপ্রিয় - যেখানে কোনও ব্যক্তি আইন ভঙ্গকারী উচ্চতর কর্তৃপক্ষের ছবি বা রেকর্ডিং তোলেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুলিশ অফিসার পুরোপুরি ইউনিফর্ম পরিহিত কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় তাদের ফোন ব্যবহার করছেন বা আদালতের বিচারক ডাবল হলুদ লাইনে পার্কিং করছেন। এগুলি কেবল ছোটখাটো উদাহরণ হতে পারে তবে আপনি যখন এই লাইনগুলির সাথে কিছু দেখেন তখন এটি আসলে প্রতিনজরদারি ব্যবহার করছে।
== স্টিভ মান ==
সাসভিল্যান্সের ক্ষেত্রে একটি মূল ব্যক্তিত্ব হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এর শব্দটি তৈরি করেছিলেন স্টিভ মান, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। বিশ্বের প্রথম সাইবর্গ বলে দাবি করা তাঁর দ্বারা কয়েক বছর ধরে বাস্তব জীবনে সাসভিলেন্সের অনুশীলন কার্যকর করা হয়েছে। মান গত ৩৫ বছর ধরে তার মাথায় একটি কম্পিউটার সংযুক্ত করে বসবাস করছেন যা তার জীবনকে সাসভিল্যান্স অনুশীলনের একটি প্রমাণ করে তুলেছে। স্টিভ মান একজন সমাজ সংস্কারবাদী হওয়ার আশা করেন যিনি অন্যদের পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রহণে প্ররোচিত করবেন। তার জীবদ্দশায় মান রাস্তায় বিজ্ঞাপন ব্যানার ফিল্টার করতে তার আইট্যাপ ব্যবহার করে আসছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে লোকেরা কী দেখতে পাবে তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং আজকের সমাজগুলি প্রলুব্ধকর শব্দ এবং চিত্রাবলী দ্বারা বোমাবর্ষণ করা হয় যা তাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে পণ্য ও পরিষেবাদি ক্রয় করতে বাধ্য করে।
=== প্রতিনজরদারির মূল ধারণা ===
মান সাসভিল্যান্সের দুটি প্রধান সংজ্ঞা সরবরাহ করে, যা প্রায় সমতুল্য, তবে প্রতিটি সাসভিল্যান্সের কিছুটা আলাদা দিক ক্যাপচার করে:
# বিপরীত নজরদারি: নিচ থেকে দেখতে;
# ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ক্যাপচার: কার্যকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা একটি কার্যকলাপ রেকর্ডিং। অডিও সাসভিল্যান্সের জন্য ইতিমধ্যে একটি নির্দিষ্ট আইনী নজির রয়েছে, উদাঃ টেলিফোন কথোপকথনের "একপক্ষ" রেকর্ডিং কথোপকথনের পক্ষ নয় এমন ব্যক্তির দ্বারা রেকর্ডিংয়ের চেয়ে বেশি আইনী সুরক্ষা উপভোগ করে। বেশিরভাগ রাজ্যে, অডিও নজরদারি অবৈধ, তবে অডিও সোভিলেন্স বৈধ।
স্টিভ ম্যানের মতে, দুটি ধরণের সাসভিলেন্স রয়েছে: '''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (উদাঃ সংস্থার মধ্যে থেকে উদ্ভূত) এবং '''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (প্রায়শই সংস্থার দ্বারা অবাঞ্ছিত)।
'''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স ("সাবভিল্যান্স") এর উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্রাকের পিছনে ১-৮০০ নম্বর যাতে অন্যান্য চালকরা "আমি কীভাবে চালাচ্ছি" রিপোর্ট করতে পারে;
* একজন অধ্যাপকের তার ছাত্রদের দ্বারা কর্মক্ষমতা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া;
* ব্যবস্থাপনা দ্বারা ক্রেতাদের দেওয়া সন্তোষজনক প্রশ্নাবলী,
যেখানে "সাবভিল্যান্স" নাশকতামূলক, সংগঠনের অভ্যন্তর থেকে নজরদারির উপর "টেবিলগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া" অর্থে, ("নাশকতামূলক" আক্ষরিক অর্থ "নিচ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো", কোনও সংস্থার মধ্যে থেকে গোপনে কাজ করা)।
'''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্সের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:'''
* ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীরা ড্রাইভারের (অবৈধ) ড্রাইভিং অভ্যাস নথিভুক্ত করে;
* গ্রাহকরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে অনিরাপদ ফায়ার এক্সিটের ছবি তুলছেন এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের রিপোর্ট করছেন;
* নাগরিকরা পুলিশের নির্মমতার ভিডিও ধারণ করছে এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে অনুলিপি পাঠাচ্ছে।
=== ম্যাকডোনাল্ডস অ্যাটাক ===
২০১২ সালের ১ জুলাই পরিবারের সাথে প্যারিসে ছুটি কাটাতে গিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মচারীদের দ্বারা স্টিভ মান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। হামলার কারণ ছিল মান রেস্তোরাঁর ভিতরের দৃশ্য এবং মাথায় আইট্যাপ প্রযুক্তি লাগানো মেনুতে ভিডিও করছিলেন। যদিও মানের এখানে কোনও পয়েন্ট প্রমাণ করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, তবে তার মামলাটি এখন প্রথম সাইবারনেটিক ঘৃণ্য অপরাধ হিসাবে পরিচিত, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের মধ্যে লাইনগুলি অস্পষ্ট হয়ে গেলে কী ঘটে। নজরদারি ব্যবস্থা দ্বারা চিত্রগ্রহণ করার সময় মানকে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করা হয়েছিল কারণ তিনি এটি আবার চিত্রগ্রহণ করছিলেন। আক্রমণের ফলাফলে, মানের ছয় বছর বয়সী মেয়ে দুটি পদটির শক্তির গতিশীলতা বর্ণনা করে একটি স্কেচ আঁকেন।
ম্যাকডোনাল্ডসের ঘটনাটি ম্যাকভিল্যান্স নামে একটি নতুন শব্দ তৈরি করেছিল যা মান পরে পর্দা করার কাজের প্রতি সমাজের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি চিত্রে রেখেছিলেন।
=== তিনটি দল ===
ইতিহাসের মাধ্যমে সমাজগুলি নজরদারির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি (মান এবং ফেরেনবক)। প্রথম ধরনের রাষ্ট্র জনগণকে একই মাত্রায় রাষ্ট্রের উপর নজরদারি করার অনুমতি দেয়। এই রাজ্যগুলি তাদের জনগণকে রাজনৈতিক আলোচনা এবং সংস্কারকে উত্সাহিত করার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্কিং, রাজনৈতিক ফোরাম এবং তথ্য সংক্রমণের মাধ্যমে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয়। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি উপযুক্ত আদর্শিক কাঠামো সরবরাহ করে যেখানে সাসভিল্যান্সের এই জাতীয় শর্তগুলি গ্রহণযোগ্য। যদিও লোকেরা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করতে স্বাধীন, এই জাতীয় দেশগুলিতে বিদ্যমান আইনগুলি এমন যা সরকার এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির অন্তর্গত সংবেদনশীল তথ্য এবং ডেটা রক্ষা করে। অতএব, যখন ব্যক্তিরা এই জাতীয় তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে বা এটি জনসাধারণের কাছে ফাঁস করার চেষ্টা করছে তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। চেলসি ম্যানিং এবং এডওয়ার্ড স্নোডেন উভয়ই উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তাদের উদ্ঘাটনের মধ্যে ছিল স্নোডেনের জন্য প্রিজম নজরদারি প্রোগ্রাম এবং ম্যানিংয়ের পক্ষ থেকে কোল্যাটারাল মার্ডার নামে পরিচিত একটি ভিডিও। হুইসেলব্লোয়াররা বিতর্কের একটি গরম বিষয় কারণ তারা সরকার কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত প্রযুক্তি এবং শক্তিতে সজ্জিত ব্যক্তি যারা পরিবর্তে তাদের সরঞ্জামগুলি রাষ্ট্রের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তারা একই সঙ্গে নজরদারি ও সাসভিল্যান্স চালাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় প্রকারটি হ'ল রাষ্ট্র যা এমন আইন বজায় রাখে যা জনগণকে এমন কোনও আলোচনায় জড়িত হতে বাধা দেয় যা সম্ভবত রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করতে পারে এবং সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে পারে। যদিও রাষ্ট্রের কাছে ক্যামেরা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে তার নাগরিকদের নিরীক্ষণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে এটি রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। এই ধরনের রাজ্যে এটা খুবই স্বাভাবিক যে কর্পোরেশন বা সরকারী দুর্নীতির ঘটনাগুলি উত্তর কোরিয়া, চীন এবং বিশ্বজুড়ে সামরিক একনায়কতন্ত্রের মতো আচ্ছাদিত হচ্ছে।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে এমন রাজ্যে যেখানে রাষ্ট্রের তদারকির তুলনায় মানুষের আন্ডারসাইট কর্তৃত্ব বেশি। এক্ষেত্রে নাগরিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা পুলিশ ও সরকারী সংস্থাগুলির পাশাপাশি দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের জ্ঞান সরবরাহ করে। এছাড়াও আইন পাস এবং নির্বাচনের জন্য ভোট দেওয়ার জন্য ই-ভোট সিস্টেমের মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়ায় ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। একইভাবে, অ্যামাজন এবং ইবেয়ের মতো খ্যাতি সিস্টেমের বিকাশ ব্যবহারকারীদের ভবিষ্যতের ক্রেতাদের জন্য পণ্য ও পরিষেবাদির রেট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, এক ধরণের গ্রাহক সাসভিল্যান্স সিস্টেম তৈরি করেছে। যদিও এটি ন্যায্য বাণিজ্যকে উত্সাহ দেয় এবং অনলাইন বাজারে গণতান্ত্রিক শর্ত প্রতিষ্ঠা করে, এটি কখনও কখনও বাকপটুতা এবং পেশাদারিত্বের ব্যয়েও কাজ করে। যেহেতু এই সাইটগুলি সমস্ত ধরণের ব্যবহারকারীদের তাদের কেনা কোনও পরিষেবা বা পণ্য থেকে তাদের রেটিং / পর্যালোচনা পোস্ট করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, তাই তাদের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনও বিশেষ দক্ষতা বা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না (রাইনগোল্ড)।
== সমাজ ==
পারফরম্যান্সগুলি দেখায় যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরণের নিয়ম লঙ্ঘন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি নতুন ধরণের ভারসাম্য তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা পাবলিক প্লেসে নজরদারির কাজ হিসাবে ভিডিও করার জনসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা দেখায়। যখন এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ সাধারণ মানুষ, যেমন পারফর্মারদের দ্বারা অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে করা হয়, তখন এটি প্রায়শই গৃহীত হয়। যাইহোক, যখন ডেটা প্রজেক্টরগুলি নজরদারি কর্মকর্তাদের তাদের সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা দেখায়, সেখানে রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা কম। নজরদারির জন্য দায়বদ্ধ সাংগঠনিক কর্মীরা সাধারণত "সাধারণ মানুষ" পারফর্মারদের কাছ থেকে সাসভিলেন্স গ্রহণ করেন না, এমনকি যখন ডেটা প্রদর্শনগুলি প্রকাশ করে যে প্রতিনজরদারিকারীরা কী রেকর্ড করছে।
স্ব-ক্ষমতায়নের সামাজিক দিকটি পরামর্শ দেয় যে সুভিল্যান্স হ'ল মুক্তির কাজ, আমাদের জনসাধারণের অঞ্চল দখল করা এবং নজরদারি খেলার ক্ষেত্রের সমতলকরণ। তবুও, সাসভিল্যান্স এখন যে সর্বব্যাপী সামগ্রিক নজরদারি দেয় তা ব্যক্তির পক্ষ থেকে সম্মতির চূড়ান্ত কাজ। সার্বজনীন নজরদারি / সাসভিল্যান্স শেষ পর্যন্ত কেবল বিদ্যমান প্রভাবশালী ক্ষমতা কাঠামোর লক্ষ্যগুলি পরিবেশন করতে পারে। সার্বজনীন সুর / সাসভিলেন্স পর্যবেক্ষণ এবং সর্বব্যাপী তথ্য সংগ্রহের বিস্তৃত অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়িয়ে শক্তি কাঠামোকে সমর্থন করতে পারে। অথবা উইলিয়াম গিবসন যেমন ফিচার-দৈর্ঘ্যের মোশন পিকচার ফিল্মে মন্তব্য করেছেন সাইবারম্যান (<nowiki>http://wearcam.org/cyberman.htm</nowiki>) "আপনি নজরদারি করছেন। আর সবাই নজরদারির ওপর নজরদারি চালালে নজরদারি নিষ্ক্রিয় হয়ে যেত। এটা অপ্রয়োজনীয় হবে।
এই প্যানোপটিকন, সূক্ষ্মভাবে সাজানো যাতে একজন পর্যবেক্ষক এক নজরে অনেক ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, এছাড়াও প্রত্যেককে আসতে এবং যে কোনও পর্যবেক্ষককে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে। দেখার যন্ত্রটি একসময় এক ধরণের অন্ধকার ঘর ছিল যার মধ্যে ব্যক্তি গুপ্তচরবৃত্তি করেছে; এটি একটি স্বচ্ছ বিল্ডিং হয়ে উঠেছে যার মধ্যে ক্ষমতার প্রয়োগ সামগ্রিকভাবে সমাজের তত্ত্বাবধানে হতে পারে।
মিশেল ফুকো, ''ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ'', ডিসিপ্লিন, পৃ.
এ ধরনের সমাজে তাত্ত্বিকভাবে সবার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক হতে পারে। বিষয়টি অবশ্য কোন পরিস্থিতিতে কতটা নজরদারি এবং সুনজরদারি উপস্থিত রয়েছে তা নিয়ে নয়, তবে এটি কীভাবে নজরদারির ক্ষমতাহীন প্রকৃতি, পশ্চিমা সমাজে এর অপ্রতিরোধ্য উপস্থিতি এবং এই উপস্থিতির প্রতি সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের আত্মতুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে।
সমসাময়িক নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজগুলিতে, ব্যক্তিরা একক সম্প্রদায় বা ওয়ার্কগ্রুপে এম্বেড হওয়ার পরিবর্তে একাধিক, আংশিক সম্প্রদায় এবং কাজের দলগুলির মধ্যে স্যুইচ করে। তবুও, নজরদারি হ'ল বৃহত শ্রেণিবদ্ধ সংস্থাগুলির শিল্প ও শিল্পোত্তর যুগের একটি প্রকাশ যা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের নব্য-প্যানোপটিকনগুলিতে দক্ষতার সাথে প্রযুক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমাজে, মানুষ সম্ভাবনা বেশি সুভিল্যান্স এবং কোভিল্যান্স চাই, কারণ তাদের গ্রাম / সম্প্রদায় বা শ্রেণিবদ্ধ সংস্থার সুরক্ষার অভাব রয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তাদের নজরদারিকারীদের নজরদারি করার অনুমতি দেয়। সমস্ত লোককে একই সাথে মাস্টার এবং দৃষ্টির বিষয় হওয়ার সামর্থ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিধানযোগ্য কম্পিউটিং ডিভাইসগুলি নজরদারির সাধারণত একতরফা সংলাপে একটি নতুন কণ্ঠস্বর সরবরাহ করে। তারা তাদের একাধিক এবং জটিল নেটওয়ার্কগুলি অতিক্রম করার সাথে সাথে মানুষের জন্য একটি স্ব-ক্ষমতায়নের দিকে একটি উপায় প্রস্তাব করে।
== প্রতিনজরদারির রাজনীতি ==
প্রতিনজরদারি বা Sousveillance নিচ থেকে দেখার একটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করে। এর অর্থ দৃষ্টির বিষয়টির পর্যবেক্ষকের চেয়ে বেশি শক্তি রয়েছে। নানা উপায় ও প্রযুক্তির সাহায্যে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিদ্রোহ ও সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়েছে।
=== ফরাসি বিপ্লব ===
১৭৮৯ সালের ৫ মে ফ্রান্সে এস্টেটস-জেনারেলকে ডাকা হয়। বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা পাদ্রী এবং অভিজাতদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিলেন, তবুও তাদের মাথা দিয়ে ভোট দেওয়া হয়নি। তারা তৎক্ষণাৎ মণ্ডলী ত্যাগ করে এবং তাদের চারপাশে পাদ্রী, অভিজাত এবং কৃষকদের জড়ো করে পৃথকভাবে সভা শুরু করে। এই সমস্ত বিখ্যাত টেনিস কোর্টের শপথের দিকে পরিচালিত করেছিল যেখানে স্ব-প্রশংসিত জাতীয় পরিষদের সদস্যরা ফ্রান্সের নিজস্ব সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত কখনও ভেঙে না দেওয়ার শপথ নিয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে সভাগুলি বাস্তিল আক্রমণের দিকে পরিচালিত করে।
ফরাসি বিপ্লব আমাদের দেখায় যে অন্যদের তুলনায় কম ক্ষমতার অধিকারী একদল লোক রাজা ষোড়শ লুইয়ের উৎখাত এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলুপ্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রীকরণের পথ সংগঠিত ও প্রশস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের খবর সংবাদপত্র এবং নিয়মিত মেইল চিঠিপত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি অনুমান করা নিরাপদ যে সেই সময়ের সমস্ত পতনশীল সাম্রাজ্য (উদাঃ অটোমান সাম্রাজ্য) যদি সম্ভব হয় তবে সংবাদের প্রভাবকে ছবির মাধ্যমে জোর দেওয়া হলে আরও ভালভাবে প্রস্তুত হত। আধুনিক মোবাইল কম্পিউটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং দ্রুত ইন্টারনেট গতির সাথে আজ খবর আমাদের পর্দায় তাত্ক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়।
=== উইকিলিকসের ফাঁস ও আরব বসন্ত ===
২০১০ সালে উইকিলিকসের ওয়েবসাইট থেকে মার্কিন কূটনৈতিক নথি প্রকাশের বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যে সামাজিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করার সময় জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষত, উইকিলিকসের কাজকে প্রায়শই তিউনিশিয়ার বিপ্লবের ঘটনাগুলির মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সেই সময়ে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী, সক্রিয় কর্মী এবং সাংবাদিক তিউনিশিয়ার রাস্তায় নেমে আসে এবং টুইটার এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। তারা প্রত্যেকেই বিক্ষোভের উপাদান পোস্ট করে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং ২০১০ সালে তিউনিশিয়া তার রাষ্ট্রপতি জিনে এল আবিদিন বেন আলীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এই ঘটনাগুলি শীঘ্রই প্রতিবেশী দেশ মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্যদের দখল করে নিয়েছিল আরব বসন্তের বিখ্যাত বিপ্লবী তরঙ্গ গঠন করতে।
=== মেক্সিকোতে জাপাতিস্তাস আন্দোলন ===
মেক্সিকোতে জাপাতিস্তা আন্দোলনের বিস্ফোরণ থেকে ইডিটি নামে একদল কর্মী এবং শিল্পী বিদ্রোহীদের প্রতি বহুজাতিক সমর্থনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। এই আন্দোলন রক্ষার জন্য ইডিটি ফ্লাডনেট প্রোগ্রাম তৈরি করেছে যার লক্ষ্য ছিল মেক্সিকান এবং মার্কিন সরকার এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলির ওয়েব সার্ভারকে অপ্রতিরোধ্য করা।
== নাগরিক সাংবাদিকতা ==
সিটিজেন জার্নালিজমও প্রতিনজরদারির জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। এর উৎপত্তি ১৯৯০ এর দশকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে পারে। এটি সাধারণ জনগণকে এমন তথ্য পোস্ট করে যা তারা মনে করে যে পেশাদার সাংবাদিকদের খোলাখুলিভাবে কথা বলা উচিত। নাগরিকরা যেভাবে তাদের যোগাযোগ সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে সংবাদ এবং তথ্য লিখেন, বিশ্লেষণ করেন এবং প্রেরণ করেন তার মাধ্যমে এটি স্বীকৃত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ব্যক্তিগত ব্লগ এবং ঘরোয়া পরিবেশে চিত্রগ্রহণ করা। তাদের প্রকাশিত সংবাদ ও তথ্য নাগরিক সাংবাদিকতা। এই সুভিল্যান্স পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু পেশাদার সাংবাদিকদের কাজই নয়, সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডও জনগণ মনিটরিং করতে পারবে।
নাগরিক এবং পেশাদার সাংবাদিকতার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে এমন আরেকটি মূল উপাদান হ'ল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ব্যবহার। নাগরিক সাংবাদিকরা তাদের শ্রোতাদের অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে তর্ক করা ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে। এটি প্রায়শই অনলাইন ব্লগিংয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় যা "ব্যবহারকারীদের" তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং ধারণা যুক্ত করতে দেয়। এটি নাগরিকদের পেশাদারদের চেয়ে বৃহত্তর এবং অনেক জোরালো কণ্ঠস্বর দেয় কারণ এটি বিষয়গুলিতে তাদের সত্যিকারের আগ্রহ দেখায়।
নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থান সম্পর্কে প্রশংসা করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ প্রায়শই বড় ঘটনাগুলির মধ্যে থাকে। দুর্যোগ বা ঘটনার শুরুতে একজন সংবাদ প্রতিবেদক খুব কমই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবেন, তবে নিয়মিত নাগরিকরা এখন এই ইভেন্টগুলি সরাসরি স্ট্রিম করতে বা কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউটিউবে পোস্ট করার ক্ষমতা রাখে। নাগরিক সাংবাদিকতাকে প্রায়শই দ্বিতীয় স্তরের প্রতিবেদন হিসাবে উপেক্ষা করা হয়, অনেকে উদ্বিগ্ন যে অনেক নাগরিক সাংবাদিক মূলত অপেশাদার যারা কেবল টিভি বা প্রেসে যা দেখে তা নকল করে। তবে নাগরিক সাংবাদিকতা কেবল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নয়, মিডিয়া এবং সরকারের মধ্যে জোট বা বন্ধন ভেঙে একটি গল্পের পুরো সত্য প্রকাশের জন্যও অপরিহার্য। প্রায়শই সংবাদগুলি এমনভাবে বলা হয় যা ভারসাম্যপূর্ণ নয়, বা সরকারী উদ্যোগের পক্ষে অনুকূলভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়। কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকায়, সাধারণ নাগরিকের পদক্ষেপ নেওয়া এবং সাংবাদিকরা যা করতে পারে না তা করা প্রয়োজন। একজন নাগরিক সাংবাদিক খুব কমই পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানে থাকেন, কারণ তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, অথবা তাদের কোম্পানিকে বেতন দেওয়া হচ্ছে না বা এমনকি সত্যকে বিকৃত করার জন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষ দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সিটিজেন জার্নালিজম হ'ল সাসভিলেন্সের একটি কাঁচা রূপ কারণ এটি সত্যের উপর বিধিনিষেধ বহনকারী সরকারের প্রতি আনুগত্য রাখে না। নাগরিক সাংবাদিকতা চাকরি হারানোর ভয় ছাড়াই জনসাধারণের কাছে সত্য প্রকাশ করতে পারে, তবে এটি পেশাদার এবং জনসাধারণের কাছ থেকে একইভাবে অবিশ্বাসের একটি স্তরের সাথে আসে।
=== ফার্গুসন, মিসৌরিতে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
আগস্ট ৯, ২০১৪ এ, মাইকেল ব্রাউন (সাদা পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের হাতে) মৃত্যুর পর মিসৌরির ফার্গুসন শহরটি বিশৃঙ্খলার রাজ্যে প্রবেশ করেছিল যাকে অনেকে "ফার্গুসন অস্থিরতা" বলে অভিহিত করে। বিক্ষোভের সহিংস প্রকৃতি এবং পুলিশ বাহিনীর সামরিকীকরণের কারণে সৃষ্ট নাগরিক অস্থিরতার কারণে, ফার্গুসনের বেশ কয়েকজন স্থানীয় তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে কী ঘটছে তা প্রতিবেদন করার জন্য অনলাইনে অবস্থান নিয়েছিল। শহরের নাগরিক সাংবাদিকরা টুইটার এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মিডিয়া সাইটে তাদের শহরে কি ঘটছে তার ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেয় এবং মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যুর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং একই সাথে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর শক্তিশালী সামরিকীকরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে।
নিকটবর্তী সেন্ট লুইস শহরের একজন অল্ডারম্যান অ্যান্টোনিও ফ্রেঞ্চ টুইটারে ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করে কয়েকদিন কাটিয়েছেন যা তার ফোনে ধরা পড়া পুলিশি পদক্ষেপের প্রদর্শন করে। পরে পুলিশের কর্মকাণ্ড ভিডিও করার জন্য ফ্রেঞ্চকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন সিটিজেন জার্নালিস্ট কেমন হওয়া উচিত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ভাষা কাজ করেছে; একজন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী যিনি জনগণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন। ফরাসি এবং তার মতো অন্যান্যদের ধন্যবাদ, পরবর্তী কয়েক বছরে নাগরিক সাংবাদিকরা বর্ণের লোকদের বিরুদ্ধে পুলিশি বর্বরতার আরও অনেক ঘটনা নথিভুক্ত করবে। টুইটার এবং ফেসবুকে, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্রচারাভিযানটি হ্যাশট্যাগ এবং ট্রেন্ডিং বিষয়গুলির জন্য জন্ম নিয়েছিল।
ফার্গুসন নাগরিক সাংবাদিক হওয়ার জন্য মানুষ তাদের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার প্রথম উদাহরণ নয়, বোমা হামলা এবং আক্রমণের সময় সিরিয়া, ইরান, মিশর, প্যালেস্টাইন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট, প্যারিসের মতো জায়গায় ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এটি সারা বিশ্বে ঘটে, প্রকৃতপক্ষে টুইটারের মতো সাইটগুলি বেশিরভাগ সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরাসরি সংবাদ আপডেটের জন্য ভাল হয়ে উঠছে কারণ যে গতিতে বিষয়বস্তু আপলোড করা যায়।
=== পঞ্চম এস্টেট হিসাবে নাগরিক সাংবাদিকতা ===
১৭৮৭ সালের সংসদীয় বিতর্কে এমপি এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, "সংসদে তিনটি এস্টেট রয়েছে তবে রিপোর্টার্স গ্যালারিতে একটি চতুর্থ এস্টেট বসে আছে যা তাদের সকলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো বক্তব্য বা রসাত্মক বক্তব্য নয়, এটি একটি আক্ষরিক সত্য, এই সময়ে আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই বিবৃতিটি বোঝায় যে সাংবাদিকরা সরকারের ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত তিনটি শাখার চতুর্থ প্রতিষ্ঠিত শাখা হতে বোঝানো হয়েছিল। চতুর্থ এস্টেট নতুন সংযোজন হওয়ার দিন চলে গেছে, নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থানের কারণে একটি নতুন এস্টেট উত্থিত হয়েছে।
তথাকথিত পঞ্চম এস্টেট সমসাময়িক সমাজের বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গির গোষ্ঠীগুলির একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক রেফারেন্স এবং ব্লগার, সাংবাদিক এবং অ-মূলধারার মিডিয়া আউটলেটগুলির সাথে সবচেয়ে বেশি যুক্ত। এর উদাহরণগুলির মধ্যে উইকি লিকস এবং গুইডো ফক্সের মতো গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
==== প্রধান সমালোচনা ====
অনেকে যুক্তি দেখান যে নাগরিক সাংবাদিকতা অনিয়ন্ত্রিত এবং বিশ্বাস করা যায় না কারণ কোনও সরকারী প্রুফ-রিডিং নেই। এই কারণে যারা বিশ্বাস করে যে সংবাদটি ভারী পক্ষপাতদুষ্টতার সাথে আনা যায় এবং হতে পারে। এর সাথে যে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব আসতে পারে তার পাশাপাশি, লেখকের উপর নির্ভর করে লেখাটিকেও নিম্নমানের বা অপেশাদার হিসাবে বিচার করা যেতে পারে। অধিকন্তু, নাগরিক সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য পেশাদার সরঞ্জাম না থাকায় বিশ্বাসযোগ্যতা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরণের সাসভিলেন্সের পক্ষে নয় কারণ তাদের মতাদর্শগুলি তাদের তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা ওভারল্যাপ করতে পারে। সবশেষে, সিটিজেন জার্নিজমের সংজ্ঞা নিয়ে কি কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যা আছে? সিটিজেন জার্নালিস্ট শব্দটির একটা সমস্যা আছে- সাংবাদিকরাও নাগরিক হতে পারেন।
== প্রতিনজরদারি এবং শিল্প ==
যদিও প্রতিনজরদারির শিল্পটি সভিল্যান্ট হওয়ার আসল কাজ, এই বিভাগটি সাসভিল্যান্সের মধ্যে শিল্পের ধারণাটি অন্বেষণ করবে।
শিল্প। সংজ্ঞা অনুসারে এটি একটি দক্ষতার প্রকাশ, সৃজনশীলতার ফলাফল, কল্পনা চাক্ষুষভাবে উত্পাদিত (উদাহরণস্বরূপ একটি পেইন্টিং বা ভাস্কর্য আকারে)। এটি একটি মানুষের শারীরিক সৃষ্টিতে স্থানান্তরিত হওয়ার সারাংশ, সাধারণত জনসাধারণের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য, সাধারণত আবেগকে উস্কে দিতে সক্ষম। ডিজিটাল যুগে, খোলামেলাতা এবং বিষয়বস্তু ভাগ করে নেওয়ার সাথে। সেখানে পিক্সেলগুলি প্রায়শই ম্যানুয়াল কাজকে প্রতিস্থাপন করে, যখন কোনও উদীয়মান বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিল্পীর পক্ষে কাজটি সেখানে রাখা এবং পরিচিত হওয়া অত্যন্ত সহজ, সেখানে কি রোমান্টিকতার ক্ষতি হয়, শিল্প সৌন্দর্য? জীবন থেকে শুরু করে সবকিছুর মতোই শিল্পও একটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, একটি বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়। এই যুগে তাই ডিজিটালে শিল্পের অভিযোজন আশা করা ভুল নয়, অন্তত আরও সাধারণ স্তরে। প্রকৃতপক্ষে, যদি 'বড়' নামগুলির ধ্রুপদী প্রযোজনাগুলি নতুন প্রবণতাগুলিকে প্রতিহত করতে পারে বা এমনকি আরও ঐতিহ্যবাহী লাইন বজায় রেখে তাদের আকার দিতে পারে, তবে উদীয়মানগুলি সময় এবং জনপ্রিয় চাহিদার সাথে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্রাউডসোর্সের কারণে শিল্প কম ব্যক্তিগত এবং অনন্য কিছুতে পরিণত হবে কিনা এই প্রশ্নটি পদকের অন্য দিকের বিবেচনার দিকে পরিচালিত করে, বিপরীত ঘটনা: সীমানা লঙ্ঘন এবং নতুনের অন্বেষণ। ডিজিটাল প্রসঙ্গ আসলে শিল্পীদের আরও একটি অঞ্চল দেয় যেখানে বেড়ে ওঠা এবং স্বীকৃত হতে হয়।
শিল্পের পেছনে, সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে আগ্রহ, রাজনীতি, নজরদারি। অনানুষ্ঠানিকভাবে তৈরি শব্দ 'আর্টভেইল্যান্স' ১৯৩০ এর দশক থেকে বিদ্যমান শিল্পের বিভাগ যা নজরদারির সাথে সম্পর্কিত, সৃজনশীলতার একটি প্রবাহ উপরের পর্যবেক্ষকের ব্যবহারে রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট, পোর্টেবল ক্যামেরা প্রবর্তনের সাথে সাথে ফটোগ্রাফারদের পক্ষে গোপনে ছবি তোলা সহজ করা হয়েছিল। এই সম্পদের প্রয়োগ আরও আধুনিক সময়ে, বিশেষত ৯/১১ হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে দুর্দান্ত ব্যবহার পেয়েছে। ঝাপসা শেডের একটি পাতলা রেখা শিল্পে নজরদারি এবং সুভিল্যান্স পরিস্থিতিকে বিভক্ত করে যেমন একজন শিল্পী আধিপত্যকারী হয়ে ওঠেন, এটি অগত্যা আশেপাশের লোকদের উপরে উঠছে না, তাই প্রতিনজরদারিে অভিনয় করে। উদাহরণস্বরূপ, এই দ্বিমুখী নজরদারি এবং সাসভিল্যান্স পরিস্থিতি ডিজিটাল চশমা (গুগলের প্রকল্প গ্লাস) এর মতো সরঞ্জাম দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও নজরদারির ক্ষেত্রে শিল্পের আরও ব্যবহারিক, কম শৈল্পিক ব্যবহার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কিছু শিল্পী জনসাধারণের অভিজ্ঞতার জন্য নজরদারি ডেটা আরও ভিজ্যুয়াল কিছুতে রূপান্তর করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এর একটি ভাল উদাহরণ অন্যদের মধ্যে দু'জন ব্যক্তির কাজে পাওয়া যায়: ওয়াকার ইভান্স এবং ট্রেভর পাগলেন। ওয়াকার ইভান্স, নজরদারি এবং শিল্পকে একত্রিত করার জন্য প্রথম একজন, ১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ের অজানা যাত্রীদের প্রতিদিনের রুটিন এবং সত্য মুহুর্তগুলি ক্যাপচার করার চেষ্টা করার জন্য ছবি তুলেছিলেন (প্রাকৃতিক, কোনও সেটে নয়)। অজ্ঞাতনামা মানুষের এই গোপন ছবিগুলি শিল্পী তার কোটের নিচে একটি ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন, চকচকে ক্রোমটি কালো রঙ করেছিলেন এবং বোতামগুলির মধ্যে লেন্সগুলি উঁকি দিয়েছিলেন। আজ ক্যামেরা ব্যবহারের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি পদ্ধতি, এমনকি তাদের অজান্তেই মানুষের জীবন রেকর্ড করা। এই পরিস্থিতি থেকে আলাদা, যা সাসভিল্যান্সের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হতে পারে, ট্রেভর পাগলেনের কাজটি নজরদারি এবং শিল্পকে আরও স্পষ্ট উপায়ে একত্রিত করে। তিনি পাবলিক লোকেশন থেকে সামরিক স্থাপনার ছবি এবং স্টিলথ-ড্রোনের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহের স্যাটেলাইটের পথ ট্রেস করার জন্য পরিচিত। তাঁর রচনায় আশেপাশের পরিবেশকে অন্বেষণ, বোঝার এবং বর্ণনা করার জন্য সৌন্দর্য, নকশা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের একটি সংমিশ্রণ রয়েছে। বিশেষত আকর্ষণীয়, এমন একটি প্রভাব যা অস্থিতিশীল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ট্রেভর পাগলেন মেট্রো পিকচার্স গ্যালারিতে একটি ভিডিও ইনস্টলেশনের মাধ্যমে দর্শকদের নজরদারির মূল অংশের সামনে রাখে। স্নোডেনের ফাঁস হওয়া এনএসএ নথির আর্কাইভ থেকে চার হাজারেরও বেশি কোড নাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান কলামগুলিতে একটি অন্ধকার ঘরে প্রজেক্ট করা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জিং সমাজ, শিল্প এবং সাসভিল্যান্সের পরিস্থিতিতে, শিল্প ডিজিটাল বিশ্বে একটি আধুনিক ধারণা নিয়ে বিকশিত হয়েছে: একটি ইউনিয়নে সৃজনশীলতা প্রকাশ করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার যা কখনও কখনও শ্রোতাদের অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য রাখে। ভিন্ন হওয়া, আদর্শের বিরুদ্ধে থাকা, প্রত্যাশার বিরুদ্ধে থাকা। প্রতিনজরদারিে শিল্প চরমের সম্ভাবনা খুঁজে পায়, উদাহরণস্বরূপ রেজিন ডিব্যাটির উই-মেক-মানি-নট-আর্টের মতো পৃষ্ঠাগুলির অস্তিত্বের সাথে দেখা যায় যেখানে প্রযুক্তিটি সমালোচনামূলক আলোচনার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, শিল্পী, হ্যাকার, ডিজাইনার, সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিউশনের একটি বিন্দু। শিল্প পাঠ্যের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে, শব্দ চয়নে: এটি ভিতরের তাত্পর্য (বিদ্রূপের ব্যবহার, তাত্পর্যের স্তরগুলি, রসিকতার ভিতরে) বা ফন্টের পছন্দই হোক। এই পৃষ্ঠার মতো, শিল্পকে আরও তথ্যবহুল, সমালোচনামূলক উদ্দেশ্যে প্রায় বিকৃত করা যেতে পারে। অমিতব্যয়িতা অনলাইন বিশ্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এমন একটি উপাদান যা সম্পর্কে মানুষ সচেতন এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুমতি দেয়। এই প্রসঙ্গে, আরও দু'জন শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে: কেট ডারবিন এবং টিফানি ট্রেন্ডা। প্রতিনজরদারি, যা বিপরীত নজরদারি নামেও পরিচিত, ডিজিটাল বিশ্বে একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পায়। সেখানে সাধারণ মানুষ অন্যদের পর্যবেক্ষণ করে। জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ সরঞ্জাম এবং স্থান উভয়ের মাধ্যমে, শিল্প সাধারণের মধ্যে বিকশিত হতে পারে, একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে। শিল্পকে প্রশংসা করার জন্য আড়ম্বরপূর্ণ, জাঁকজমকপূর্ণ, ব্যয়বহুল হতে হবে না এবং এটি বিশেষত বর্তমান সময়ে সত্য। উদাহরণস্বরূপ কেট ডারবিন একজন শিল্পী এবং লেখক যিনি ইনস্টাগ্রামে একটি ভাল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। সেখানে তিনি পারফর্মেটিভ হওয়ার সময় ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপের সমীক্ষক হতে পারেন। শিল্পী নিজেই তার কাজকে অভিনয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেখানে শিল্প এবং ব্যক্তিগত জীবন ওভারল্যাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি একটি ডেটিং সাইটে পুরুষদের সাথে কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করছেন, তার শ্রোতাদের বিনোদনের জন্য কিন্তু একই সময়ে একটি বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে যা অনেকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক কথোপকথন পোস্ট করা থেকে, তিনি সমাজের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করার সময় মানুষের আচরণ এবং সম্পর্কিত করার ক্ষমতার জন্য তথ্য সংগ্রহ এবং উপস্থাপন করছেন, উদাহরণস্বরূপ গোপনীয়তা। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট জিনিসগুলির মাধ্যমে শ্রোতাদের সাথে একটি সংযোগ রয়েছে যা মানুষের উপর একটি সামাজিক অধ্যয়নের জন্য মাইক্রোকোসম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চ্যালেঞ্জের পথে, পারফরম্যান্স শিল্পী টিফানি ট্রেন্ডার কাজও উল্লেখযোগ্য, যদিও তিনি ব্যক্তিগত স্থান এবং এর অনুপ্রবেশের দিকে আরও বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। প্রক্সিমিটি সিনেমা ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে করা একটি কাজ যেখানে শিল্পী প্রযুক্তি এবং এর অবচেতন ব্যবহার অন্বেষণ করতে চান। চল্লিশটি ছোট সেল ফোনের স্ক্রিন লাগানো পুরো বডি স্যুট পরা অবস্থায় তিনি লোকদের তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। 'এগিয়ে যাও', 'এটি নিয়ে চিন্তা করবেন না' এবং 'এটি ঠিক আছে' এর মতো বাক্যাংশগুলি পর্দায় ছিল, যা স্পর্শ করা হলে শিল্পীর দেহের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, শিল্পী ডিভাইসগুলির সাথে আমাদের পরিচিতি পরীক্ষা করে তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের পরিচয় উপস্থাপন করে স্বাভাবিক সামাজিক সীমাবদ্ধতাও ধ্বংস করে। নজরদারি-ভিত্তিক যুগকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পারফরম্যান্স আর্টের একটি উদাহরণ। সেখানে আমরা ব্যবহারকারী হিসাবে আমাদের পরিচয় কতটা উন্মুক্ত তা সম্পর্কে অসচেতন।
ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি থেকে গণবিদ্রোহ, শিল্প জনসাধারণের কাছে তার পথ খুঁজে পায়। নজরদারি হোক বা সাসভিল্যান্সের মাধ্যমেই হোক, চারপাশের পরিবেশ অন্বেষণকারী শিল্পী এবং শিল্পীর নিজেকে অন্বেষণের মধ্যে একটি দৃশ্যমান বাইনারি রয়েছে। মজার বিষয় হল, 'প্রতিনজরদারি' শব্দটি স্টেফান সোনভিলা-ওয়েইস নিজেকে বিশ্বের কাছে দেখানোর প্রক্রিয়ায় আত্ম-নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। চিন্তার এই লাইনে, আভি রোজেন একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, 'ডিজিটাল স্কিন ২' প্রকল্পের সাথে যেখানে বিভিন্ন প্রকৃতির ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডিজিটাল লাইফলগিং একত্রিত হয়। ডিজিটাল ডাইমেনশনে নিজের উপস্থাপনা এবং বাস্তব জগতে উপস্থাপনের মধ্যেও একটি সমান্তরাল রয়েছে। একটি শিল্প ফর্ম হিসাবে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার মানুষকে বিশ্বের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলি অন্বেষণ করার অনুমতি দিয়েছে। ২০০৮ সালে ক্রিস্টি রবার্টসন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন যা বিভিন্ন শিল্পী এবং তাদের নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার অন্বেষণ করেছিল। রবার্টসন রাজনৈতিক বিষয়গুলিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নজরদারি / প্রতিনজরদারিকে একটি শৈল্পিক রূপ হিসাবে ব্যবহারের উদাহরণ টেনেছেন। এই শিল্পীদের মধ্যে একজন ছিলেন ওয়াফা বিলালের গার্হস্থ্য উত্তেজনা (২০০৭)। তার পারফরম্যান্সের মধ্যে নজরদারি মূল বিষয় ছিল না তবে নজরদারি যে শক্তি সম্পর্ক তৈরি করে তা উন্মোচন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ধারণাগুলি চিত্রিত করতে বিলালের অভিনয় সবচেয়ে কার্যকর ছিল। ২০০৭ সালে ইরাকি-আমেরিকান শিল্পী বিলাল নিজেকে ভিডিও ক্যামেরায় ভরা একটি স্টুডিওতে আটকে রেখেছিলেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে সরাসরি প্রবাহিত হয়েছিল, যাদের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত পেইন্টবল বন্দুক দিয়ে বিলালকে গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য তার মূল উদ্দেশ্য ছিল গৃহযুদ্ধে ভুগতে থাকা ইরাকি জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে তুলে ধরা। তিনি "অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংলাপকে উস্কে দেওয়ার" উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট এবং ভয়েরিজমকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন (বিলাল, ২০০৭)। অতএব, নজরদারিকে একটি শিল্প ফর্ম হিসাবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে কারণ এই ক্ষেত্রের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে শিল্পীদের বৃদ্ধি ঘটেছে।
=== শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম ===
শৈল্পিক বক্তৃতা এবং দার্শনিক অন্বেষণের আরেকটি দিক ছিল অনিশ্চয়তার পুনঃপ্রতিষ্ঠাবাদ। প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে তাদের মধ্যে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এরপর সেগুলো এলোমেলো করে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়। সত্যি বলতে কিনা জানি না অথবা ক্যামেরা না পরা অনিশ্চয়তার নীতিকে শৈল্পিক চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদুপরি, উদাহরণস্বরূপ, সাবওয়েতে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার জন্য নিউইয়র্কের প্রস্তাবিত তদন্ত হিসাবে ভূগর্ভস্থ প্রতিনজরদারি বিবেচনা করুন। পাতাল রেলের ফটোগ্রাফগুলির একটি প্রদর্শনী হ'ল অনুসরণ করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
'''শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম নিয়ে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা: দ্য মেবিক্যামেরা'''
প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এগুলি এলোমেলো করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি পরিধানকারী জানতে না পারে যে তাদের ক্যামেরা রয়েছে কিনা। অনেকগুলি সম্ভাব্য ক্যামেরাগুলির মধ্যে একটির ক্লোজ আপ ছবি যা একটি বিচ্যুতি, বিপরীতমুখী / পুনঃ-ইকশনিজম এবং নজরদারির সাধারণ ভাষা (পাঠ্য) এর ডিকনস্ট্রাকশন দেখায়। অনেক লোক এই জুয়া (উদাঃ ক্যাসিনো, নায়াগ্রা ইত্যাদি) কোনও ঘটনা ছাড়াই পরেছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে সম্ভবত রক্ষীরা শার্ট পড়ে না। পরিধানকারীরা জানেন না যে কোন শার্টে পরিধানযোগ্য ওয়্যারলেস ওয়েব ক্যামেরা রয়েছে এবং কোন শার্টে নেই। লেখকের '''মেবিক্যামেরা''' ডিজাইন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ এস প্যান্টাগিস নিউইয়র্কের কবিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য এর মধ্যে ২৫ টির প্রাথমিক ব্যাচ তৈরি করেছিলেন, তারপরে আরও বড় উত্পাদন চালানো হয়েছিল। যেমনটি দেখা গেছে নিউইয়র্কের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সিকিউরিটি ক্যামেরায়। নিরাপত্তা ক্যামেরা দ্বারা দেখা ক্লোজআপ ভিউ।
সুভিল্যান্স এবং শিল্প? হ্যাঁ, এটি একটি সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান সম্পর্ক। সেখানে শিল্পীরা নজরদারিকে চ্যালেঞ্জ জানায় যখন শিল্পকে যেভাবে উপস্থাপন করা যায় তা পুনর্বিবেচনা করে। যদিও কিছু নিবন্ধ (যেমন অভিভাবকের জন্য জোনাথন জোন্সের "ডিজিটাল যুগ কি শিল্পকে মেরে ফেলবে?") ডিজিটাল বিশ্বে শিল্পের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দেহ উত্থাপন করে, তবে এটি অনস্বীকার্য যে কীভাবে বিশ্বের মধ্যে সহজ সংযোগগুলি উভয় লিঙ্গের বিকাশ এবং প্রকাশের অনুমতি দেয়। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে শক্তিশালী পুরুষালী উপস্থিতি শিল্পের অনলাইন উত্থানে কম কার্যকর প্রভাব ফেলে। সেখানে নারীর একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর থাকতে পারে, সমতার পরিবেশে যা শারীরিক বিশ্বে নিজেই অনুবাদ করা যেতে পারে, যেমন বৈদ্যুতিন শিল্পের উপর আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের মতো ঘটনা দ্বারা দেখানো হয়েছে।
= নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি আইন সম্পর্কে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া =
''নজরদারি আইন এবং প্রতিনজরদারি'' সম্পর্কে দুটি বিপরীত জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ নজরদারিকে তাদের গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে এবং সরকারের সিদ্ধান্তগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য নজরদারি করা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যরা মনে করেন যে অপরাধীদের প্রতিরোধ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়। তবে বেশিরভাগ নাগরিক সম্মত হন যে আইন বিভাগগুলির সাধারণ নজরদারি গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ না তাদের বিস্তারিত দৈনন্দিন জীবন দিনরাত নজরদারির আওতায় না থাকে।
আমাদের কাছে একটি ক্যামেরা স্ট্র্যাপ করা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় যার ফলে আমরা প্রতিনজরদারিকারী হয়ে উঠি, তবুও ক্যামেরা এখনও সেই সময়ের মধ্যে আমাদের মুখোমুখি হওয়া প্রত্যেককে ক্যাপচার করছে। এর ফলে কি আমরা সার্ভিলারে পরিণত হব না? এরপরে এটি পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে যে সার্ভেইলার হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করার ফলে লোকেরা আপনার প্রতি ভিন্নভাবে আচরণ করতে পারে। নজরদারির মুখোমুখি হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে পরিধেয় ডিভাইসের মতো স্যুসভিল্যান্সের ফর্মগুলির তদন্তে একটি উত্সাহ উঠেছে। মান, নোলান এবং ওয়েলম্যান (২০০৩) নজরদারি কৌশলগুলিকে 'প্রহরী দেখার' ফলাফলের সাথে প্রতিনজরদারিে রূপান্তর করার জন্য আশেপাশের (নজরদারিকৃত) পরিবেশের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সাথে জড়িত গবেষণা চালিয়েছিলেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেকগুলি কারণ (প্রযুক্তির ধরণ, অবস্থান এবং প্রযুক্তির উপস্থাপনা / উপস্থাপনা সহ) অংশগ্রহণকারীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল যা তাদের ক্ষমতায়িত বা দুর্বল বোধ করে।
তদন্তে দেখা গেছে যে লোকেরা যখন রেকর্ডিং করা ডিভাইস এবং রেকর্ড করা ফুটেজ উভয়ই দেখতে পেত তখন তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রেকর্ডিংয়ের এই ফর্মটি তখন 'কোভেইল্যান্স' নামে পরিচিত একটি নতুন শব্দ তৈরি করে। কোভিল্যান্স নজরদারি বা প্রতিনজরদারি নয় বরং এটি তৈরি হয় যখন লোকেরা একই সাথে ক্যামেরা এবং ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে পায়। সংক্ষেপে, কোভিল্যান্স = লোকেরা ভয়েরিজম সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।
এই তদন্ত থেকে আরেকটি আকর্ষণীয় অনুসন্ধান হ'ল কর্তৃপক্ষ (সুরক্ষা প্রহরী) আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে যখন প্রতিনজরদারিকারী ব্যাখ্যা করবে যে ডিভাইসের উপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। বিপরীতে, যখন এটি স্পষ্ট ছিল যে প্রতিনজরদারিকারীের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কর্তৃপক্ষ আরও সংঘাতময় হবে। ডেভিড বলিয়ার (২০১৩)[১২] সুরক্ষা থেকে এই প্রতিক্রিয়াটির সম্ভাব্য ব্যাখ্যা সরবরাহ করে। এর জন্য প্রথম সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে শপিং মলগুলির ধারণার কারণে হতে পারে যে অপরাধীদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল আবিষ্কার করার ক্ষমতা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে যা সম্ভাব্য ডাকাতির কারণ হতে পারে। অধিকন্তু, খুচরা বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে বিক্রয় মূল্য এবং খুচরা প্রদর্শনের তুলনা করার জন্য দোকানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার কারণে কিছু দোকান ফটোগ্রাফির অনুমতি দেয় না। আরেকটি ব্যাখ্যা এই ধারণার কারণে হতে পারে যে সসভিলেস নজরদারির শক্তি সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ জানায় কারণ এটি মানুষের মধ্যে সমতার বোধ পুনরুদ্ধার করে। অধিকন্তু, এটি বোঝাতে পারে যে প্রতিনজরদারি নজরদারির খেলার ক্ষেত্রকে স্তর দেয় কারণ এটি আর ক্ষমতায় নেই। উইলিয়াম গিবসন পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি সবাই প্রতিনজরদারিকারী হয়ে যায় তবে নজরদারি শেষ পর্যন্ত হ্রাস পাবে কারণ এটি আর কোনও উদ্দেশ্য পূরণ করবে না।
নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের প্রভাবগুলি প্রায়শই মুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং গণতান্ত্রিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যাইহোক, যখন বিশ্লেষণাত্মকভাবে দীর্ঘমেয়াদী ম্যাক্রো সমাজতাত্ত্বিক প্রভাবগুলির দিকে অগ্রসর হয়, তখন দৃষ্টিভঙ্গিটি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। নাগরিকদের উপর সরকারগুলির নজরদারির সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, প্রধানত সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থায় চিত্রিত, ইতিহাস জুড়ে ভয়ের অনুভূতির ফলস্বরূপ। জেরেমি বেন্থামের (১৮৩৮) 'প্যানোপটিকন' এবং একটি সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবেচনা যেখানে পর্যবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ মানুষকে এই সত্য সম্পর্কে সচেতন করেছিল যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যদিও তারা জানত না। ১৯৮০ এর দশকের লেখায় মিশেল ফুকোর মতে, এই প্রভাবটি পাওয়া গেছে যে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে (যেমন একটি কারাগার) প্যানোপটিকনের প্রতীকী এবং ব্যবহারিক উভয় ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এই ভয়ের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে চিন্তাভাবনা এবং কাজ করতে প্রভাবিত করতে পারে যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। এভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্যানোপটিকন শিল্প বিপ্লবের অংশ ছিল যা শিল্প পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ করেছিল যেখানে মালিক এবং ক্ষমতায় থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা জনসাধারণের জায়গাগুলি কেবল কারাগার এবং কারখানাগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
== পপ সংস্কৃতিতে নজরদারি ==
পপ সংস্কৃতি আমাদের সমাজের উপর নজরদারির যে বিস্তৃত উপলব্ধি রয়েছে তা গ্রহণ করেছে। বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি বই, টিভি শো, চলচ্চিত্র এবং এমনকি ভিডিও গেমস রয়েছে যা এখন সুরক্ষা এবং নজরদারির ভূমিকা গ্রহণ করেছে। জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর'' এমন একটি বই যা একটি সর্বব্যাপী সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের অধীনে জীবনযাপন করে এবং সম্ভবত পপ সংস্কৃতিতে নজরদারির সবচেয়ে বিশিষ্ট উদাহরণ। বইটি একটি "বিগ ব্রাদার" প্রোগ্রাম অনুসরণ করে যা উপন্যাসের চরিত্রগুলির ওভার ভিউয়ার হিসাবে কাজ করে, এটি সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহারকে ভারীভাবে চিত্রিত করে।
২৭ মে ২০১৪ এ, ইউবিসফট স্টুডিওগুলি তাদের গেমটি প্রকাশ করেছে ''ওয়াচডগস'' যা আইডান পিয়ার্সকে কেন্দ্র করে একজন বড় চোর হ্যাকার এবং স্ব-নিযুক্ত ভিজিল্যান্ট শহরব্যাপী গণ নজরদারি এবং অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হ্যাক করতে সক্ষম হন। যাতে করে যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য এবং সংস্থান সংগ্রহ করতে পারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এড়াতে, অপরাধ ঘটার আগে বা হওয়ার আগে বন্ধ করতে, প্রয়োজনে নিজে অপরাধ করা, এবং তার সুবিধার্থে অবকাঠামোর বিভিন্ন বস্তু এবং কার্যকারিতা ম্যানিপুলেট করা। গেমটি আপনাকে বেশ কয়েকটি বড় সুপরিচিত সিস্টেমে হ্যাক করেছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থাগুলি এবং রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অর্থ চুরি করতে সাইবার সন্ত্রাসীদের সাথে কাজ করেছে। গেমটিতে মানুষের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছিল।
= প্রতিনজরদারিকারী হওয়া =
গবেষণাটি চালানোর সময় প্রতিনজরদারিকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তারা কেমন অনুভব করেছিল তখন একটি চিন্তা-উদ্দীপক আবিষ্কারও ছিল। অংশগ্রহণকারীরা যারা সাসভিল্যান্স পরিবেশন করেছিলেন তারা অনুভব করেছিলেন যে এটি তাদের ক্ষমতায়িত করেছে। রেকর্ডিং করার সময় মানুষের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আবেগ ছিল তবে প্রতিনজরদারিকারী অনুভব করেছিলেন যে এটি মানুষকে দেখানোর জন্য উদ্দীপক ছিল যে (নজরদারি সম্পর্কিত) অনেক কিছু চলছে যা আমরা জানি না। একজন অংশগ্রহণকারী একটি আকর্ষণীয় পয়েন্ট সরবরাহ করেছেন যা পরামর্শ দেয় যে নজরদারি এমন একটি খেলা যেখানে আমরা অংশ অনুভব করি তবে আসলে নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে আমরা এর অন্য দিকে রয়েছি। অন্যদিকে, এটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে সাসভিল্যান্স আরও খাঁটি কারণ রেকর্ড করা প্রত্যেককে এটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়। অতএব, এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে আমরা সকলেই সুভিল্যান্সের কাজের অংশ হয়ে উঠি কারণ এটি লুকানো নয়। যাইহোক, এই ধারণাটি প্রশ্ন করা যেতে পারে যখন লোকেরা লুকানো ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা শুরু করে। গোপনে রেকর্ড করার কাজটি তখন সাসভিল্যান্সের ধারণাটিকে জটিল করে তুলতে পারে। তাহলে কি তা আবার নজরদারিতে পরিণত হয়? এই জটিল ধারণাগুলি এবং নজরদারি এবং সুভিল্যান্সের ক্রমাগত আন্তঃসংযোগ এই ক্ষেত্রে চলমান গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।
= তথ্যসূত্র =
58wh4jq9jbph0njluiyitzzndg8hm63
রন্ধনপ্রণালী:গোমাংস ভুনা
104
24042
84034
75995
2025-06-11T12:21:57Z
MdsShakil
7280
84034
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মাংস
| পরিবেশন = ৪ জন
| তৈরির সময় = ২০ মিনিট
| রান্নার সময় = ১ ঘণ্টা
| মোট সময় = ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = 4
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = গোমাংস ভুনা একটি জনপ্রিয় মাংসের পদ যা গরম মশলা এবং অন্যান্য মশলা দিয়ে তৈরি হয়। এটি মূলত ভাত বা রুটি সহ পরিবেশন করা হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''গোমাংস ভুনা'''</big></center>
গোমাংস ভুনা একটি জনপ্রিয় মাংসের পদ যা গরুর মাংস, পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা, গরম মসলা, এবং অন্যান্য মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি বিশেষত চাঁদ রাত বা বড় দিনের খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! নাম !! পরিমাণ
|-
| গরুর মাংস (কিউব করে কাটা) || ৫০০ গ্রাম
|-
| পেঁয়াজ (কুচি) || ২টি
|-
| আদা-রসুন বাটা || ২ টেবিল চামচ
|-
| টমেটো কুচি || ১টি
|-
| হলুদ গুঁড়া || ১/২ চা চামচ
|-
| মরিচ গুঁড়া || ১ চা চামচ
|-
| ধনে গুঁড়া || ১ চা চামচ
|-
| জিরা গুঁড়া || ১/২ চা চামচ
|-
| গরম মসলা গুঁড়া || ১/২ চা চামচ
|-
| লবণ || স্বাদমতো
|-
| তেল || ৩ টেবিল চামচ
|-
| পানি || ১ কাপ
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন।
# এরপর আদা-রসুন বাটা, টমেটো কুচি, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
# কষানো মশলার মধ্যে গরুর মাংসের কিউবগুলো দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ মিনিট রান্না করুন।
# এরপর গরম মসলা গুঁড়া যোগ করে ২-৩ মিনিট আরো কষান।
# এবার পানি যোগ করে ঢেকে মাঝারি আঁচে মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন (প্রায় ৩০-৪০ মিনিট)।
# মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে ঘন ঝোল হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ মিশিয়ে নিন।
== পরিবেশন পদ্ধতি ==
গরম গরম গোমাংস ভুনা ভাত, পরোটা অথবা রুটি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
a7667aus9s07ty4i3mgbl73zw19ya0n
রন্ধনপ্রণালী:মিষ্টি পুলি
104
24045
84035
75999
2025-06-11T12:22:47Z
MdsShakil
7280
84035
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টি
| পরিবেশন = ৪ জন
| তৈরির সময় = ৩০ মিনিট
| রান্নার সময় = ২০ মিনিট
| মোট সময় = ৫০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = 3
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = মিষ্টি পুলি একটি জনপ্রিয় বাংলা মিষ্টান্ন, যা পিঠে বা মিষ্টান্ন হিসেবে খাওয়া হয়। এটি সাধারণত চালের আটা এবং মিষ্টি সুরভিত স্টাফিং দিয়ে তৈরি হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''মিষ্টি পুলি'''</big></center>
মিষ্টি পুলি একটি রেসিপি যা পিঠে বা মিষ্টান্ন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এটি সাধারণত চালের আটা, খেজুর গুড় বা চিনি দিয়ে স্টাফ করা হয় এবং সেদ্ধ বা ভাজা যায়। মিষ্টি পুলি বিভিন্ন উৎসবে ও বিশেষ দিনগুলিতে পরিবেশন করা হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! নাম !! পরিমাণ
|-
| চালের আটা || ২ কাপ
|-
| গুড় বা চিনি || ১ কাপ
|-
| নারিকেল কুচি || ১/২ কাপ
|-
| খেজুর গুড় || ১/২ কাপ
|-
| মিষ্টি এলাচ গুঁড়া || ১/৪ চা চামচ
|-
| তেল || ২ টেবিল চামচ
|-
| পানি || প্রয়োজনমতো
|-
| ঘি (ভাজার জন্য) || পরিমাণমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে চালের আটা নিয়ে তার মধ্যে ১ টেবিল চামচ তেল, মিষ্টি এলাচ গুঁড়া এবং প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে একটি নরম মিশ্রণ তৈরি করুন।
# একটি প্যানে গুড় বা চিনি গলিয়ে নারিকেল কুচি ও খেজুর গুড় দিয়ে একত্রিত করে নেড়ে মিষ্টি স্টাফিং তৈরি করুন।
# স্টাফিং তৈরি হলে, চালের আটা থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করে, প্রতিটি বলের মধ্যে স্টাফিং ভরে পুলি তৈরি করুন।
# এখন একটি প্যানে ঘি গরম করে পুলিগুলো সোনালি বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
# ভাজা পুলিগুলো তেল ঝরানোর জন্য কিচেন পেপারে রাখুন।
== পরিবেশন পদ্ধতি ==
গরম গরম মিষ্টি পুলি পরিবেশন করুন। এটি ইফতার, উৎসব বা বিশেষ দিনের মিষ্টান্ন হিসেবে জনপ্রিয়।
63j4ac9clvuuy2mxjhkfhj9peauhukq
রন্ধনপ্রণালী:আমের টক
104
24048
84036
76003
2025-06-11T12:24:19Z
MdsShakil
7280
84036
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = ফলমূল
| পরিবেশন = ৪ জন
| তৈরির সময় = ১০ মিনিট
| রান্নার সময় = ১০ মিনিট
| মোট সময় = ২০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = 2
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = আমের টক বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গরম মৌসুমি পানীয় যা সাধারণত গরমে ঠান্ডা শরবত হিসেবে খাওয়া হয়। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং সতেজ অনুভূতি প্রদান করে।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''আমের টক'''</big></center>
আমের টক একটি তাজা ও সুস্বাদু পানীয় যা মৌসুমী কাঁচা আম থেকে তৈরি করা হয়। এটি গরমের দিনে শরীরকে সতেজ করতে সাহায্য করে এবং ঠান্ডা পানীয় হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! নাম !! পরিমাণ
|-
| কাঁচা আম || ১টি
|-
| চিনি || ২ টেবিল চামচ
|-
| গোলমরিচ গুঁড়া || ১/২ চা চামচ
|-
| লবণ || ১/৪ চা চামচ
|-
| পানি || ২ কাপ
|-
| পুদিনা পাতা (সাজানোর জন্য) || কিছু
|-
| চাট মসলা || ১/২ চা চামচ
|-
| বরফের টুকরো || পরিমাণমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে কাঁচা আমটি সেদ্ধ করে তার খোসা ছাড়িয়ে গুঁড়ো করে নিন।
# একটি প্যানে পানি ও গুঁড়ো করা আম মিশিয়ে নিন।
# চিনি, গোলমরিচ গুঁড়া, লবণ এবং চাট মসলা যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
# পানীয়টি চুলায় ৫-৭ মিনিট গরম করে চিনি পুরোপুরি গলে যাওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
# এবার সেটি ঠান্ডা হতে দিন এবং পরে বরফের টুকরো ও পুদিনা পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।
== পরিবেশন পদ্ধতি ==
ঠান্ডা আমের টক গরমের দিনে সতেজতার জন্য আদর্শ। এটি বরফের টুকরো সহ গ্লাসে পরিবেশন করুন।
ncv9qvo2pf86r4my9419dzzwa9v459d
প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ইনপুট-প্রসেস-আউটপুট মডেল
0
24537
84039
77206
2025-06-11T15:06:20Z
RDasgupta2020
8748
84039
wikitext
text/x-wiki
==সংক্ষিপ্ত বিবরণ==
'''ইনপুট–প্রসেস–আউটপুট মডেল''', যাকে সংক্ষেপে ''আই পি ও'' মডেল হিসাবে অভিহিত করা হয়, সেটি হল একটি সহজ ও প্রচলিত ধারণা, যা কম্পিউটারের [[w:অপারেটিং সিস্টেম|অপারেটিং সিস্টেমের]] বিশ্লেষণ এবং [[w:সফটওয়্যার প্রকৌশল|সফটওয়্যার প্রকৌশলে]] ব্যবহৃত হয়। এই মডেলের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, কোনো একটি প্রোগ্রাম বা প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে — অর্থাৎ প্রোগ্রাম কিভাবে বাহ্যিক তথ্য বা ''ইনপুট'' গ্রহণ করে, কিভাবে সেই তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ হয়, এবং শেষ পর্যন্ত সেই তথ্য অনুসারে কিভাবে ফলাফল বা ''আউটপুট'' প্রদর্শিত তৈরি হয়। এই সহজ কাঠামোর মাধ্যমে যেকোনো [[w:সফটওয়্যার|সফটওয়্যার]] বা [[w:কম্পিউটার প্রোগ্রাম|প্রোগ্রামের]] কার্যপ্রনালী বোঝা সহজ হয়। তাই এটি সফটওয়্যারের প্রাথমিক পরিকল্পনা এবং বিশ্লেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাথমিক মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>[[Wikipedia: IPO model]]</ref>
==আলোচনা==
একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা অন্য যেকোনো ধরণের প্রক্রিয়া, যা ইনপুট–প্রসেস–আউটপুট (আই পি ও) মডেল অনুসরণ করে, তা ব্যবহারকারী বা অন্য কোনো উৎস থেকে তথ্য বা ''ইনপুট'' গ্রহণ করে, তারপর অপারেটিং সিস্টেম সেই তথ্যের গণনা বা বিশ্লেষণ করে এবং তারপর সেই গণনার ফলাফল ''আউটপুট'' হিসাবে প্রদর্শিত করে। ''আই পি ও'' মডেলটি মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে:<ref>[[Wikipedia: IPO model]]</ref>
১.'''ইনপুট''': ব্যবহারকারীর কাছ থেকে বা অন্য কোনো উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হয়।<br>
২.'''প্রসেস''': গৃহীত তথ্যের উপর নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালানো হয়।<br>
৩.'''আউটপুট''': প্রক্রিয়াজাত তথ্য ফলাফল হিসেবে প্রদর্শন বা সংরক্ষণ করা হয়।<br>
উদাহরণ হিসাবে নিচে একটি সরল কম্পিউটার প্রোগ্রামের উদাহরন দেওয়া হয়েছে যা ফারেনহাইট মানকে নির্ধারিত তাপমাত্রার মানকে সেলসিয়াস মানকের তাপমাত্রায় রূপান্তর করে। ''আই পি ও'' মডেল অনুসারে, প্রোগ্রামটি নিম্নলিখিত ধাপে কাজ করবে:
'''প্রথমত''', ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ফারেনহাইট মানকে নির্ধারিত তাপমাত্রার মান চাওয়া হবে ইনপুট হিসাবে।<br>
'''দ্বিতীয়ত''', প্রোগ্রামে একটি সূত্র ব্যবহার করে ফারেনহাইট মানকের তাপমাত্রাকে সেলসিয়াস মানকে রূপান্তর করা হবে। এই ধাপকে আই পি ও মডেলে ''প্রসেস'' বা প্রক্রিয়াকরন হিসাবে উল্লেখ করা হয়।<br>
'''তৃতীয়ত''', প্রক্রিয়াকরনের ফলাফল হিসেবে সেলসিয়াস মানকের তাপমাত্রা প্রদর্শন করা হবে ফলাফল বা ''আউটপুট'' হিসাবে।<br>
এইভাবে, ''আই পি ও'' মডেল অনুসরণ করে একটি প্রোগ্রাম কাঠামোবদ্ধ এবং সহজে বুঝতে ও পরিচালনা করতে সুবিধাজনক হয়।
===সিউডোকোড===
সিউডোকোড হল এমন এক ধরনের কৃত্রিম কোড যা [[w:প্রোগ্রামিং ভাষা|প্রোগ্রামিং ভাষার]] নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে থেকে সাধারণ ভাষায় লেখা হয়। এখানে প্রযুক্তিগত জটিলতা পরিহার করে কোডিং এর বিভিন্ন ধাপ সহজ ও পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়।<ref>[[Wikipedia: Pseudocode]]</ref>
উপরে উদাহরন হিসাবে উল্লিখিত প্রোগ্রামটির সরল তথ্যবহ রূপ বা ''সিউডোকোড'' নিচে প্রদর্শন করা হল,
<syntaxhighlight>
Function Main
... This program converts an input Fahrenheit temperature to Celsius.
Declare Real fahrenheit
Declare Real celsius
Output "Enter Fahrenheit temperature:"
Input fahrenheit
Assign celsius = (fahrenheit - 32) * 5 / 9
Output fahrenheit & "° Fahrenheit is " & celsius & "° Celsius"
End
</syntaxhighlight>
উপরের প্রোগ্রামটিতে সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট তাপমাত্রার পারস্পরিক সূত্র রূপান্তরনের জন্য ব্যাবহার হয়েছে। প্রোগ্রামটির আউটপুট হবে,
===আউটপুট===
<syntaxhighlight>
Enter Fahrenheit temperature:
100
100° Fahrenheit is 37.7777777777778° Celsius
</syntaxhighlight>
===প্রবাহচিত্র বা ফ্লোচার্ট===
''ফ্লোচার্ট'' হল প্রোগ্রামের চিত্রগত উপস্থাপনা। এর বাংলা অর্থ হলো ''প্রবাহচিত্র''। ফ্লোচার্ট বা প্রবাহচিত্র একটি প্রক্রিয়া বা কর্মপ্রবাহকে চিত্র আকারে উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে কোনো সিস্টেম বা প্রোগ্রামের কর্মপদ্ধতি ধাপে ধাপে সহজে বোঝানো যায়।<ref>[[Wikipedia: Flowchart]]</ref>উপরিউক্ত প্রোগ্রামটির প্রবাহচিত্র বা ''ফ্লোচার্ট'' নিম্নরূপ
[[File:Flowgorithm_Input_Process_Output.svg|500px|ফারেনহাইট থেকে সেলসিয়াসে রূপান্তরন-প্রোগ্রামের প্রবাহচিত্র]]
==তথ্যসূত্র==
* [[Wikiversity: Computer Programming]]
* [http://www.flowgorithm.org/ Flowgorithm – Flowchart Programming Language]
{{reflist}}
6e6t5fbb05lp83k40vhdtj1ab784fqd
প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/বহুমাত্রিক অ্যারে
0
24835
84040
78784
2025-06-11T15:09:23Z
RDasgupta2020
8748
/* আলোচনা */
84040
wikitext
text/x-wiki
==সংক্ষিপ্ত বিবরণ==
কম্পিউটার প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূরণ উপাদান হল '''অ্যারে'''। অ্যারে প্রধানত দু প্রকারের হয়, '''একমাত্রিক''' ও '''বহুমাত্রিক'''। অ্যারের ভেতরে এক বা একাধিক উপাদান (প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ধ্রুবক, চলক ইত্যাদি তথ্য) সংরক্ষিত করা রাখা যায়। একটি অ্যারের মধ্যে অবস্থিত কোন একটি নির্দিষ্ট উপাদানকে সনাক্ত করতে '''ইনডেক্স''' বা '''সূচক''' -এর প্রয়োজন হয়। একমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি ''ইনডেক্স'' বা সূচকের মাধ্যমে অ্যারের মধ্যবর্তী কোন উপাদানের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়; কিন্তু বহুমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। দ্বিমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে অ্যারের ভেতরের কোন উপাদানকে চিহ্নিত করতে দুটি ইনডেক্স ব্যাবহার করা হয়। আবার ত্রিমাত্রিক অ্যরের ক্ষেত্রে অ্যারের ভেতরের কোন উপাদানকে চিহ্নিত করতে তিনটি ইনডেক্স ব্যাবহার করা হয়। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে কোন অ্যারের মধ্যস্থিত উপাদানের অবস্থান নির্দেশনা করতে কতগুলি সূচক বা ইনডেক্সের দরকার- সেই সংখ্যার মাধ্যমে অ্যারের ''মাত্রা'' বা ''ডাইমেনশন'' নির্ধারন করা যায়।<ref>[[Wikipedia: Array data type]]</ref>
==আলোচনা==
[[File:1D array diagram.svg|thumb|চার উপাদানবিশিষ্ট একটি একমাত্রিক অ্যারে]]
[[File:2D array diagram.svg|thumb|চারটি সারি(''রো'') ও চারটি স্তম্ভ(''কলাম'') বিশিষ্ট একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারে]]
[[File:3D array diagram.svg|thumb|সারি, স্তম্ভ ও উচ্চতাবিশিষ্ট একটি ত্রিমাত্রিক অ্যারে]]
কম্পিউটার প্রোগ্রামে একাধিক সংরক্ষিত উপাদানের জন্য একটি একক '''শনাক্তকারী নাম''' বা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/আইডেন্টিফায়ারের নাম|আইডেনটিফায়ার নাম]] ব্যবহার করলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। সেরকমই কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত অ্যারে হলো এক বিশেষ ধরনের ডেটা টাইপ যার মধ্যে ধ্রুবক, [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|চলক(ভেরিয়েবল)]] ইত্যাদি একাধিক উপাদান একটি বিশেষ ক্রম অনুসারে সংরক্ষিত থাকে। অ্যারে একাধিক উপাদানের সংগ্রহ তাই অ্যারেকে ''জটিল ডেটা টাইপ'' বা ''কমপ্লেক্স ডেটা টাইপ'' -এর শ্রেনীভুক্ত করা হয়।<ref>[[Wikipedia: Data type]]</ref> আমরা আগেই বলেছি অ্যারে দুপ্রকার: একমাত্রিক ও বহুমাত্রিক অ্যারে। এই দুই প্রকার অ্যারে সম্পর্কে নিচে বিশদে আলোচনা করা হল,
*'''একমাত্রিক অ্যারে''' -এর মূল কাঠামোতে একটিমাত্র সারি (''রো'') বর্তমান তাকে, সাধারনত <code>array[i]</code> -এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। (স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে একমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন) যেখানে <code>i</code> হল অ্যারের সূচক বা ইনডেক্স, অর্থাৎ অ্যারেতে কতগুলি উপাদান আছে তাও নির্ধারিত হয় এই <code>i</code> -এর মাধ্যমে। একমাত্রিক অ্যারেকে সাধারণভাবে একটি '''তালিকা''' বা লিস্টের সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।
*'''দ্বিমাত্রিক অ্যারে''' একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক '''সারি''' (<code>row</code>) এবং '''স্তম্ভ''' (<code>column</code>) -এর মাধ্যমে গঠিত হয় (স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে দ্বিমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন)। দ্বিমাত্রিক অ্যারের মূল কাঠামোর সাথে সাদৃ্শ্য থাকার জন্য অনেক সময় একে '''টেবল''' বলা হয় (যেমন: ''এক্সেল''-এর একটি স্প্রেডশিট একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারের উদাহরন<ref>[[Wikipedia: Microsoft Excel]]</ref>)। দ্বিমাত্রিক অ্যারেকে <code>array[row][column]</code> -এই সংকেতের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। যেখানে অ্যারের প্রথম সূচক বা ''ইনডেক্স'' <code>row</code> হল দ্বিমাত্রিক অ্যারের সারির সংখ্যা এবং দ্বিতীয় সূচক <code>column</code> হল দ্বিমাত্রিক অ্যারের সারির সংখ্যা স্তম্ভের সংখ্যা। এই দুই সূচকের মাধ্যমে অ্যারেতে উপস্থিত যেকোন উপাদানের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। উদাহরনস্বরূপ, <code>array[2][3]</code> -এর মানে হলো, অ্যারের ২ নম্বর সারির ৩ নম্বর স্তম্ভের উপাদানটির দিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
*এছাড়াও '''ত্রিমাত্রিক অ্যারে''' নামক বহুমাত্রিক অ্যারের উপস্থিতি আছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জগতে যেখানে তিনটি সূচক ব্যাবহার করে অ্যারের অন্তরবর্তী উপাদানের অবস্থান নির্নয় করা হয়।(স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে ত্রিমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন)। ত্রিমাত্রিক অ্যারের কাঠামো হিসাবে একটি থিয়েটারের টিকিটের উদাহরন দেওয়া যায় যেখানে ''বিভাগ'' বা ''সেকশন'', ''সারি'' বা ''রো'' এবং ''আসন'' বা ''সীট'' থাকে একটি ত্রিমাত্রিক অ্যারের উদাহরণ।
বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় অ্যারে চিহ্নিতকরনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। একটি অ্যারেতে সর্বোচ্চ কত মাত্রা থাকতে পারবে তা নির্ভর করে ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষার শৈলী ও কম্পিউটারের মেমরির আকারের উপর।
একটি বহুমাত্রিক অ্যারে সম্বলিত প্রোগ্রামের সরল চিত্ররূপ বা সিউডোকোড নিম্নে দেওয়া হল,
===সিউডোকোড===
<syntaxhighlight>
Function Main
Declare String Array game[3][3]
Assign game = [ ["X", "O", "X"], ["O", "O", "O"], ["X", "O", "X"] ]
DisplayGame(game)
End
Function DisplayGame (String Array game)
Declare Integer row
Declare Integer column
Output "Tic-Tac-Toe"
For row = 0 to 2
For column = 0 to 2
Output game[row][column]
If column < 2 Then
Output " | "
End
End
End
End
</syntaxhighlight>
উপরোক্ত প্রোগ্রামের আউটপুট বা ফলাফল নিম্নরূপ;
===ফলফল===
<syntaxhighlight>
Tic-Tac-Toe
X | O | X
O | O | O
X | O | X
</syntaxhighlight>
== মূল পরিভাষা ==
;অ্যারে মেম্বার (অ্যারে সদস্য)
:অ্যারেতে থাকা একটি উপাদান বা মান।
;ডাইমেনশন (মাত্রা)
:একটি অ্যারের গঠনগত স্তর বা উপাদান।
;ইনডেক্স (সূচক)
:এর মাধ্যমে অ্যারের মধ্যে উপস্থিত কোনো নির্দিষ্ট উপাদানের অবস্থান নির্দেশ করা যায় এবং তার সাথে অ্যারের মাত্রাও নির্দেশ করা হয়।
;লিস্ট (তালিকা)
:একটি একমাত্রিক অ্যারে।
;অফসেট
:অ্যারের প্রথম সদস্যের অবস্থান নির্দেশকারী সূচকের মান সাধারণত শূন্য হয় এবং পরবর্তী উপাদানগুলির সূচকের মান ক্রমানুবর্ভাবে বাড়তে থাকে। যেমন দ্বিতীয় সদস্যের সূচক সংখ্যা এক, তৃতীয় সদস্যের সূচক সংখ্যা তিন, ইত্যাদি। অ্যারের সূচকের মান শূন্য থেকে গননা করার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ''অফসেট''
;টেবল
:একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারের উদাহরন।
==তথ্যসূত্র==
* [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++]
{{reflist}}
{{BookCat}}
eixkkjycfaplk5sjeulee44ngbniuy8
84041
84040
2025-06-11T15:13:04Z
RDasgupta2020
8748
/* মূল পরিভাষা */
84041
wikitext
text/x-wiki
==সংক্ষিপ্ত বিবরণ==
কম্পিউটার প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূরণ উপাদান হল '''অ্যারে'''। অ্যারে প্রধানত দু প্রকারের হয়, '''একমাত্রিক''' ও '''বহুমাত্রিক'''। অ্যারের ভেতরে এক বা একাধিক উপাদান (প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ধ্রুবক, চলক ইত্যাদি তথ্য) সংরক্ষিত করা রাখা যায়। একটি অ্যারের মধ্যে অবস্থিত কোন একটি নির্দিষ্ট উপাদানকে সনাক্ত করতে '''ইনডেক্স''' বা '''সূচক''' -এর প্রয়োজন হয়। একমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি ''ইনডেক্স'' বা সূচকের মাধ্যমে অ্যারের মধ্যবর্তী কোন উপাদানের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়; কিন্তু বহুমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। দ্বিমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে অ্যারের ভেতরের কোন উপাদানকে চিহ্নিত করতে দুটি ইনডেক্স ব্যাবহার করা হয়। আবার ত্রিমাত্রিক অ্যরের ক্ষেত্রে অ্যারের ভেতরের কোন উপাদানকে চিহ্নিত করতে তিনটি ইনডেক্স ব্যাবহার করা হয়। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে কোন অ্যারের মধ্যস্থিত উপাদানের অবস্থান নির্দেশনা করতে কতগুলি সূচক বা ইনডেক্সের দরকার- সেই সংখ্যার মাধ্যমে অ্যারের ''মাত্রা'' বা ''ডাইমেনশন'' নির্ধারন করা যায়।<ref>[[Wikipedia: Array data type]]</ref>
==আলোচনা==
[[File:1D array diagram.svg|thumb|চার উপাদানবিশিষ্ট একটি একমাত্রিক অ্যারে]]
[[File:2D array diagram.svg|thumb|চারটি সারি(''রো'') ও চারটি স্তম্ভ(''কলাম'') বিশিষ্ট একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারে]]
[[File:3D array diagram.svg|thumb|সারি, স্তম্ভ ও উচ্চতাবিশিষ্ট একটি ত্রিমাত্রিক অ্যারে]]
কম্পিউটার প্রোগ্রামে একাধিক সংরক্ষিত উপাদানের জন্য একটি একক '''শনাক্তকারী নাম''' বা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/আইডেন্টিফায়ারের নাম|আইডেনটিফায়ার নাম]] ব্যবহার করলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। সেরকমই কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত অ্যারে হলো এক বিশেষ ধরনের ডেটা টাইপ যার মধ্যে ধ্রুবক, [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|চলক(ভেরিয়েবল)]] ইত্যাদি একাধিক উপাদান একটি বিশেষ ক্রম অনুসারে সংরক্ষিত থাকে। অ্যারে একাধিক উপাদানের সংগ্রহ তাই অ্যারেকে ''জটিল ডেটা টাইপ'' বা ''কমপ্লেক্স ডেটা টাইপ'' -এর শ্রেনীভুক্ত করা হয়।<ref>[[Wikipedia: Data type]]</ref> আমরা আগেই বলেছি অ্যারে দুপ্রকার: একমাত্রিক ও বহুমাত্রিক অ্যারে। এই দুই প্রকার অ্যারে সম্পর্কে নিচে বিশদে আলোচনা করা হল,
*'''একমাত্রিক অ্যারে''' -এর মূল কাঠামোতে একটিমাত্র সারি (''রো'') বর্তমান তাকে, সাধারনত <code>array[i]</code> -এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। (স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে একমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন) যেখানে <code>i</code> হল অ্যারের সূচক বা ইনডেক্স, অর্থাৎ অ্যারেতে কতগুলি উপাদান আছে তাও নির্ধারিত হয় এই <code>i</code> -এর মাধ্যমে। একমাত্রিক অ্যারেকে সাধারণভাবে একটি '''তালিকা''' বা লিস্টের সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।
*'''দ্বিমাত্রিক অ্যারে''' একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক '''সারি''' (<code>row</code>) এবং '''স্তম্ভ''' (<code>column</code>) -এর মাধ্যমে গঠিত হয় (স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে দ্বিমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন)। দ্বিমাত্রিক অ্যারের মূল কাঠামোর সাথে সাদৃ্শ্য থাকার জন্য অনেক সময় একে '''টেবল''' বলা হয় (যেমন: ''এক্সেল''-এর একটি স্প্রেডশিট একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারের উদাহরন<ref>[[Wikipedia: Microsoft Excel]]</ref>)। দ্বিমাত্রিক অ্যারেকে <code>array[row][column]</code> -এই সংকেতের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। যেখানে অ্যারের প্রথম সূচক বা ''ইনডেক্স'' <code>row</code> হল দ্বিমাত্রিক অ্যারের সারির সংখ্যা এবং দ্বিতীয় সূচক <code>column</code> হল দ্বিমাত্রিক অ্যারের সারির সংখ্যা স্তম্ভের সংখ্যা। এই দুই সূচকের মাধ্যমে অ্যারেতে উপস্থিত যেকোন উপাদানের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। উদাহরনস্বরূপ, <code>array[2][3]</code> -এর মানে হলো, অ্যারের ২ নম্বর সারির ৩ নম্বর স্তম্ভের উপাদানটির দিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
*এছাড়াও '''ত্রিমাত্রিক অ্যারে''' নামক বহুমাত্রিক অ্যারের উপস্থিতি আছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জগতে যেখানে তিনটি সূচক ব্যাবহার করে অ্যারের অন্তরবর্তী উপাদানের অবস্থান নির্নয় করা হয়।(স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে ত্রিমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন)। ত্রিমাত্রিক অ্যারের কাঠামো হিসাবে একটি থিয়েটারের টিকিটের উদাহরন দেওয়া যায় যেখানে ''বিভাগ'' বা ''সেকশন'', ''সারি'' বা ''রো'' এবং ''আসন'' বা ''সীট'' থাকে একটি ত্রিমাত্রিক অ্যারের উদাহরণ।
বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় অ্যারে চিহ্নিতকরনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। একটি অ্যারেতে সর্বোচ্চ কত মাত্রা থাকতে পারবে তা নির্ভর করে ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষার শৈলী ও কম্পিউটারের মেমরির আকারের উপর।
একটি বহুমাত্রিক অ্যারে সম্বলিত প্রোগ্রামের সরল চিত্ররূপ বা সিউডোকোড নিম্নে দেওয়া হল,
===সিউডোকোড===
<syntaxhighlight>
Function Main
Declare String Array game[3][3]
Assign game = [ ["X", "O", "X"], ["O", "O", "O"], ["X", "O", "X"] ]
DisplayGame(game)
End
Function DisplayGame (String Array game)
Declare Integer row
Declare Integer column
Output "Tic-Tac-Toe"
For row = 0 to 2
For column = 0 to 2
Output game[row][column]
If column < 2 Then
Output " | "
End
End
End
End
</syntaxhighlight>
উপরোক্ত প্রোগ্রামের আউটপুট বা ফলাফল নিম্নরূপ;
===ফলফল===
<syntaxhighlight>
Tic-Tac-Toe
X | O | X
O | O | O
X | O | X
</syntaxhighlight>
== মূল পরিভাষা ==
;অ্যারে মেম্বার (অ্যারে সদস্য)
:অ্যারেতে থাকা একটি উপাদান বা মান।
;ডাইমেনশন (মাত্রা)
:একটি অ্যারের গঠনগত স্তর বা উপাদান।
;ইনডেক্স (সূচক)
:এর মাধ্যমে অ্যারের মধ্যে উপস্থিত কোনো নির্দিষ্ট উপাদানের অবস্থান নির্দেশ করা যায় এবং তার সাথে অ্যারের মাত্রাও নির্দেশ করা হয়।
;লিস্ট (তালিকা)
:একটি একমাত্রিক অ্যারে।
;অফসেট
:অ্যারের প্রথম সদস্যের অবস্থান নির্দেশকারী সূচকের মান সাধারণত শূন্য হয় এবং পরবর্তী উপাদানগুলির সূচকের মান স্বাভাবিক সংখ্যার ক্রমানুসারে বাড়তে থাকে। যেমন দ্বিতীয় সদস্যের সূচক সংখ্যা এক, তৃতীয় সদস্যের সূচক সংখ্যা তিন, ইত্যাদি। অ্যারের সূচকের মান শূন্য থেকে গননা করার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ''অফসেট''
;টেবল
:একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারের উদাহরন।
==তথ্যসূত্র==
* [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++]
{{reflist}}
{{BookCat}}
cu6bg6ewyjtalqqjq3j7pij0nmncy05
84100
84041
2025-06-12T07:21:48Z
RDasgupta2020
8748
84100
wikitext
text/x-wiki
==সংক্ষিপ্ত বিবরণ==
কম্পিউটার প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূরণ উপাদান হল '''অ্যারে'''। অ্যারে প্রধানত দু প্রকারের হয়, '''একমাত্রিক''' ও '''বহুমাত্রিক'''। অ্যারের ভেতরে এক বা একাধিক উপাদান (প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ধ্রুবক, চলক ইত্যাদি তথ্য) সংরক্ষিত করা রাখা যায়। একটি অ্যারের মধ্যে অবস্থিত কোন একটি নির্দিষ্ট উপাদানকে সনাক্ত করতে '''ইনডেক্স''' বা '''সূচক''' -এর প্রয়োজন হয়। একমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি ''ইনডেক্স'' বা সূচকের মাধ্যমে অ্যারের মধ্যবর্তী কোন উপাদানের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়; কিন্তু বহুমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। দ্বিমাত্রিক অ্যারের ক্ষেত্রে অ্যারের ভেতরের কোন উপাদানকে চিহ্নিত করতে দুটি ইনডেক্স ব্যাবহার করা হয়। আবার ত্রিমাত্রিক অ্যরের ক্ষেত্রে অ্যারের ভেতরের কোন উপাদানকে চিহ্নিত করতে তিনটি ইনডেক্স ব্যাবহার করা হয়। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে কোন অ্যারের মধ্যস্থিত উপাদানের অবস্থান নির্দেশনা করতে কতগুলি সূচক বা ইনডেক্সের দরকার- সেই সংখ্যার মাধ্যমে অ্যারের ''মাত্রা'' বা ''ডাইমেনশন'' নির্ধারন করা যায়।<ref>[[Wikipedia: Array data type]]</ref>
==আলোচনা==
[[File:1D array diagram.svg|thumb|চার উপাদানবিশিষ্ট একটি একমাত্রিক অ্যারে]]
[[File:2D array diagram.svg|thumb|চারটি সারি(''রো'') ও চারটি স্তম্ভ(''কলাম'') বিশিষ্ট একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারে]]
[[File:3D array diagram.svg|thumb|সারি, স্তম্ভ ও উচ্চতাবিশিষ্ট একটি ত্রিমাত্রিক অ্যারে]]
কম্পিউটার প্রোগ্রামে একাধিক সংরক্ষিত উপাদানের জন্য একটি একক '''শনাক্তকারী নাম''' বা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/আইডেন্টিফায়ারের নাম|আইডেনটিফায়ার নাম]] ব্যবহার করলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। সেরকমই কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত অ্যারে হলো এক বিশেষ ধরনের ডেটা টাইপ যার মধ্যে ধ্রুবক, [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|চলক(ভেরিয়েবল)]] ইত্যাদি একাধিক উপাদান একটি বিশেষ ক্রম অনুসারে সংরক্ষিত থাকে। অ্যারে একাধিক উপাদানের সংগ্রহ তাই অ্যারেকে ''জটিল ডেটা টাইপ'' বা ''কমপ্লেক্স ডেটা টাইপ'' -এর শ্রেনীভুক্ত করা হয়।<ref>[[Wikipedia: Data type]]</ref> আমরা আগেই বলেছি অ্যারে দুপ্রকার: একমাত্রিক ও বহুমাত্রিক অ্যারে। এই দুই প্রকার অ্যারে সম্পর্কে নিচে বিশদে আলোচনা করা হল,
*'''একমাত্রিক অ্যারে''' -এর মূল কাঠামোতে একটিমাত্র সারি (''রো'') বর্তমান তাকে, সাধারনত <code>array[i]</code> -এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। (স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে একমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন) যেখানে <code>i</code> হল অ্যারের সূচক বা ইনডেক্স, অর্থাৎ অ্যারেতে কতগুলি উপাদান আছে তাও নির্ধারিত হয় এই <code>i</code> -এর মাধ্যমে। একমাত্রিক অ্যারেকে সাধারণভাবে একটি '''তালিকা''' বা লিস্টের সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।
*'''দ্বিমাত্রিক অ্যারে''' একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক '''সারি''' (<code>row</code>) এবং '''স্তম্ভ''' (<code>column</code>) -এর মাধ্যমে গঠিত হয় (স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে দ্বিমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন)। দ্বিমাত্রিক অ্যারের মূল কাঠামোর সাথে সাদৃ্শ্য থাকার জন্য অনেক সময় একে '''টেবল''' বলা হয় (যেমন: ''এক্সেল''-এর একটি স্প্রেডশিট একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারের উদাহরন<ref>[[Wikipedia: Microsoft Excel]]</ref>)। দ্বিমাত্রিক অ্যারেকে <code>array[row][column]</code> -এই সংকেতের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। যেখানে অ্যারের প্রথম সূচক বা ''ইনডেক্স'' <code>row</code> হল দ্বিমাত্রিক অ্যারের সারির সংখ্যা এবং দ্বিতীয় সূচক <code>column</code> হল দ্বিমাত্রিক অ্যারের সারির সংখ্যা স্তম্ভের সংখ্যা। এই দুই সূচকের মাধ্যমে অ্যারেতে উপস্থিত যেকোন উপাদানের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। উদাহরনস্বরূপ, <code>array[2][3]</code> -এর মানে হলো, অ্যারের ২ নম্বর সারির ৩ নম্বর স্তম্ভের উপাদানটির দিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
*এছাড়াও '''ত্রিমাত্রিক অ্যারে''' নামক বহুমাত্রিক অ্যারের উপস্থিতি আছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জগতে যেখানে তিনটি সূচক ব্যাবহার করে অ্যারের অন্তরবর্তী উপাদানের অবস্থান নির্নয় করা হয়।(স্পষ্ট ধারনার জন্য পাশে ত্রিমাত্রিক অ্যারের চিত্রটি দেখুন)। ত্রিমাত্রিক অ্যারের কাঠামো হিসাবে একটি থিয়েটারের টিকিটের উদাহরন দেওয়া যায় যেখানে ''বিভাগ'' বা ''সেকশন'', ''সারি'' বা ''রো'' এবং ''আসন'' বা ''সীট'' থাকে একটি ত্রিমাত্রিক অ্যারের উদাহরণ।
বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় অ্যারে চিহ্নিতকরনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। একটি অ্যারেতে সর্বোচ্চ কত মাত্রা থাকতে পারবে তা নির্ভর করে ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষার শৈলী ও কম্পিউটারের মেমরির আকারের উপর।
একটি বহুমাত্রিক অ্যারে সম্বলিত প্রোগ্রামের সরল চিত্ররূপ বা সিউডোকোড নিম্নে দেওয়া হল,
===সিউডোকোড===
Function Main
Declare String Array game[3][3]
Assign game = [ ["X", "O", "X"], ["O", "O", "O"], ["X", "O", "X"] ]
DisplayGame(game)
End
Function DisplayGame (String Array game)
Declare Integer row
Declare Integer column
Output "Tic-Tac-Toe"
For row = 0 to 2
For column = 0 to 2
Output game[row][column]
If column < 2 Then
Output " | "
End
End
End
End
উপরোক্ত প্রোগ্রামের আউটপুট বা ফলাফল নিম্নরূপ;
===ফলফল===
Tic-Tac-Toe
X | O | X
O | O | O
X | O | X
== মূল পরিভাষা ==
;অ্যারে মেম্বার (অ্যারে সদস্য)
:অ্যারেতে থাকা একটি উপাদান বা মান।
;ডাইমেনশন (মাত্রা)
:একটি অ্যারের গঠনগত স্তর বা উপাদান।
;ইনডেক্স (সূচক)
:এর মাধ্যমে অ্যারের মধ্যে উপস্থিত কোনো নির্দিষ্ট উপাদানের অবস্থান নির্দেশ করা যায় এবং তার সাথে অ্যারের মাত্রাও নির্দেশ করা হয়।
;লিস্ট (তালিকা)
:একটি একমাত্রিক অ্যারে।
;অফসেট
:অ্যারের প্রথম সদস্যের অবস্থান নির্দেশকারী সূচকের মান সাধারণত শূন্য হয় এবং পরবর্তী উপাদানগুলির সূচকের মান স্বাভাবিক সংখ্যার ক্রমানুসারে বাড়তে থাকে। যেমন দ্বিতীয় সদস্যের সূচক সংখ্যা এক, তৃতীয় সদস্যের সূচক সংখ্যা তিন, ইত্যাদি। অ্যারের সূচকের মান শূন্য থেকে গননা করার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ''অফসেট''
;টেবল
:একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারের উদাহরন।
==তথ্যসূত্র==
* [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++]
{{reflist}}
{{BookCat}}
b68s1gcphzdqv2euain2moqx36mq9bl
প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/নেস্টেড ইফ দেন এলস
0
24844
84099
78770
2025-06-12T07:20:18Z
RDasgupta2020
8748
84099
wikitext
text/x-wiki
==সংক্ষিপ্ত বিবরণ==
কম্পিউটার প্রোগ্রামে কখোনো কখোনো [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/শর্তাধীন অপারেটর|শর্তাধীন অপারেটর]] <code>if-else</code>-এর কাঠামোর ভেতরে আরও একটি <code>if-else</code> কাঠামো থাকতে পারে। এইরকম কাঠামো কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহার মাধ্যমে একাধিক শর্ত সমৃদ্ধ কোন নির্দেশনা সহজেই কোডের আকারে লেখা যায়। এভাবে গঠিত <code>if-else</code> কাঠামোকে '''নেস্টেড''' বা '''স্তরবদ্ধ''' গঠন কাঠামো বলা হয়। <code>if-else</code>-এর ক্ষেত্রে এই বিশেষ স্তরবদ্ধ কাঠামোকে বলা হয় '''নেস্টেড ইফ দেন এলস''' যার ব্যাবহারের ফলে প্রোগ্রামে শর্তাধীন অপারেটরের ব্যাবহার আরও সহজ করে তোলে।
==আলোচনা==
আমরা প্রথমে কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ''নেস্টেড কন্ট্রোল স্ট্রাকচার'' বা ''স্তরযুক্ত গঠন কাঠামো'' -এর ধারণা পরিচয় করিয়ে দেব। কম্পিউটার প্রোগ্রামে, একটি শর্তাধীন অপারেটরের ভিতরে আরেকটি শর্তাধীন অপারেটরের অবস্থান থাকতে পারে। যেমন, নিচের কোডটি লক্ষ্য করুন:
if expression
true action
else
false action
উপরে কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ''নেস্টেড'' শর্তাধীন অপারেটরের প্রাথমিক গঠন কাঠামো দেখানো হয়েছে। এই গঠন কাঠামো অনুযায়ী একটি ''নেস্টেড ইফ দেন এলস'' -এর উদাহরন হবে,
if age is less than 18
you can't vote
if age is less than 16
you can't drive
else
you can drive
else
you can vote
if age is less than 21
you can't drink
else
you can drink
উপরের প্রোগ্রামে একটি শর্তাধীন অপারেটর <code>if-else</code> ব্যাবহার হয়েছে। <code>if-else</code> অপারেটরের <code>if</code> এবং <code>else</code> -এই দুই অংশের ভেতরেই আলাদা আলাদা ভাবে একটি <code>if-else</code> কাঠামোর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এইভাবেই একটি <code>if-else</code> অপারেটরের দুটি বিভাগ (<code>if</code> এবং <code>else</code>) -এর ভেতরে অপর <code>if-else</code> গঠন কাঠামোর উপস্থিতিকেই ''নেস্টেড'' কাঠামো হিসাবে অভিহিত করা হয়।
এছাড়াও <code>while</code> লুপের ভিতরেও <code>if-then-else</code> -এর ব্যাবহার সম্ভব। অর্থাৎ, ''নেস্টিং'' -এর ধারণার মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন ধরণের শর্তাধীন অপারেটর একযোগে যুক্ত করে বিভিন্ন কোডিং নির্দেশনা পালনে ব্যাবহার করতে পারি।
===একাধিক বিকল্প নির্বাচন (মাল্টিওয়ে সিলেকশন)===
কম্পিউটার প্রোগ্রামে শর্তাধীন অপারেটর <code>if-else</code> -এর ব্যাবহারের মাধ্যমে আমরা কেবলমাত্র দুইটি বিকল্পের মধ্যে যেকোন একটিকে নির্বাচিত করতে পারি। কিন্তু কিছু কিছু কম্পিউটার প্রোগ্রামে আমাদের দুইয়ের অধিক বিকল্পের মধ্যে যেকোন একটিকে নির্বাচিত করতে হয়। যেমন নিচের কম্পিউটার প্রোগ্রামের উদাহরনটি লক্ষ্য করুন যেখানে চারটি বিকল্পের মধ্যে যেকোন একটিকে নির্বাচন করতে হবে।
if age equal to 18
you can now vote
else
if age equal to 39
you are middle-aged
else
if age equal to 65
you can consider retirement
else
your age is unimportant
উপরের প্রোগ্রামের ''আউটপুট'' হিসাবে <code>age</code> নামক চলক(ভেরিয়েবল) -এর মানের উপর ভিত্তি করে একটি উপযুক্ত ফলাফল পাওয়া যায়। উপরে নেস্টেড <code>if-else</code> -এর শেষের অংশে আমরা <code>default</code> নামক এক বিভাগের উপস্থিতি লক্ষ্য করি। যদি <code>age</code> -এর মান ১৮, ৩৯ বা ৬৫ না হয় তাহলে <code>default</code> বিভাগে লিখিত বার্তাটি প্রোগ্রামের আউটপুটে প্রদর্শিত হবে। উপরিউক্ত কোডকে সহজভাবে নিচের মতো করে লেখা হয়:
if age equal to 18
you can now vote
else if age equal to 39
you are middle-aged
else if age equal to 65
you can consider retirement
else
your age is unimportant
== মূল পরিভাষা ==
;একাধিক বিকল্প নির্বাচন (মাল্টিওয়ে সিলেকশন)
:শর্তাধীন অপারেটরের ক্ষেত্রে দুইয়ের অধিক বিকল্প নির্বাচনের জন্য ব্যাবহার হয়।
;নেস্টেড কন্ট্রোল স্ট্রাকচার (স্তরযুক্ত গঠন কাঠামো)
:কম্পিউটার প্রোগ্রামে কোন ''অপারেটর'' <ref>[[Wikipedia: Operator (computer programming)]]</ref>, বিশেষ করে শর্তাধীন অপারেটরের ক্ষেত্রে এই কথাটি বেশিরভাগ ব্যাবহৃত হয়। একটি অপারেটরের গঠন কাঠামোর মধ্যে অপর একটি অপারেটরের গঠন কাঠামোর উপস্থিতি থাকলে সেটিকে ''নেস্টেড কন্ট্রোল স্ট্রাকচার'' বা ''স্তরযুক্ত গঠন কাঠামো'' বলা হয়।
==তথ্যসূত্র==
* [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++]
{{reflist}}
{{BookCat}}
4rzjucwdwnh7wt7g84u5os2b8m8xmp9
প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/রিটার্ন স্টেটমেন্ট
0
24982
84101
78766
2025-06-12T07:28:13Z
RDasgupta2020
8748
84101
wikitext
text/x-wiki
==সংক্ষিপ্ত বিবরণ==
'''রিটার্ন স্টেটমেন্ট''' কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষার অন্তর্গত [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ফাংশন|ফাংশন]] নামক গঠন কাঠামোর গুরুত্বপূর্ন অংশ। ''রিটার্ন স্টেটমেন্ট'' -এর মাধ্যমে কোন ফাংশনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও আমরা জানি যে কম্পিউটার প্রোগ্রামে কোন ফাংশনের কার্যকলাপের সূচনা কেবল তখনই হয় যখন প্রোগ্রামের প্রধান ফাংশন <code>main()</code> (অথবা অন্য যে কোন ফাংশন) -এর তরফ থেকে তাকে [[ প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/কল বাই ভ্যালু বনাম কল বাই রেফারেন্স|কল]] করা হয়। কল করার পর ফাংশন তার ভেতরে লিখিত নির্দেশাবলী বা কোড অনুসারে কার্য সম্পাদন করে <code>main()</code> ফাংশন (অথবা অন্য যে ফাংশন থেকে কল করা হয়েছিল) তাকে একটি নির্দিষ্ট মান ফেরত দেওয়ার জন্য রিটার্ন স্টেটমেন্টের সহায়তা নেয়। বেশিরভাগ [[w:প্রোগ্রামিং ভাষা|প্রোগ্রামিং ভাষায়]] <code>return</code> স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ফাংশন তার [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ইনপুট এবং আউটপুট|আউটপুট]] মান ফেরত পাঠায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ফাংশন কোন আউটপুট মান ফেরত না ও পাঠাতে পারে।<ref>[[Wikipedia: Return statement]]</ref>
==বিশদ আলোচনা==
''রিটার্ন স্টেটমেন্ট'' একটি ফাংশনের কার্যসম্পাদন চূড়ান্ত করে এবং <code>main()</code> ফাংশন (অথবা অন্য যে ফাংশন থেকে কল করা হয়) -কে একটি মান ফেরত দেয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোন ফাংশন আউটপুট হিসাবে কোন মান প্রেরন না ও করতে পারে। নিচে একটি ছদ্ম-কোড বা সিউডোকোডের<ref>[[Wikipedia:Pseudocode]]</ref> মাধ্যমে <code>return</code> স্টেটমেন্টের কার্যকারিতার বিশদ ব্যাখা দেওয়া হল:
Function Main
...
Assign fahrenheit = GetFahrenheit()
...
End
Function GetFahrenheit
Declare Real fahrenheit
Output "Enter Fahrenheit temperature:"
Input fahrenheit
Return Real fahrenheit
এখানে প্রোগ্রামের প্রধান ফাংশন <code>Main</code> ফাংশন, <code>GetFahrenheit</code> নামক ফাংশনকে কল করে কিন্তু তার ইনপুট প্যারামিটারে কোন রকম তথ্য প্রদান করেনা। কল করার পর প্রোগ্রামের নিয়ন্ত্রন চলে যায় <code>GetFahrenheit</code> ফাংশন -এর কাছে যেটি তার অন্তর্লিখিত কোড বা নির্দেশাবলী অনুসারে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ইনপুট তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই মানটি <code>GetFahrenheit</code> ফাংশনের অন্তরবর্তী <code>fahrenheit</code> নামক [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|ভেরিয়েবলে]] সংরক্ষিত হয়। <code>GetFahrenheit</code> ফাংশনের কারযকারিতা শেষ হওয়ার পর, রিটার্ন স্টেটমেন্ট <code>Return</code> -এর মাধ্যমে মূল ফাংশন <code>Main</code> ফাংশনে <code>GetFahrenheit</code> ভেরিয়েবলের মান ফেরত পাঠায়। লক্ষনীয় যে এই <code>Main</code> ফাংশন কোনো মান ফেরত দেয় না। সেই ফাংশনে কোনপ্রকার ''রিটার্ন স্টেটমেন্ট'' -এর উপস্থিতি নেই। অর্থাৎ ফাংশনে ''রিটার্ন স্টেটমেন্ট'' -এর উপস্থিতি আবশ্যিক নয়।
এখানে লক্ষণীয় যে প্রতিটি ফাংশন স্বতন্ত্র এবং প্রত্যেক ফাংশনের নিজ নিজ ভেরিয়েবল থাকে। উপরের সিউডোকোডে যদিও <code>Main</code> এবং <code>GetFahrenheit</code> -এই দুইটি ফাংশনেই <code>fahrenheit</code> নামক ভেরিয়েবলের উপস্থিতি আছে কিন্তু তারা সমনামের হলেও এক নয়। কম্পিউটারের মেমোরিতে এই দুটি সমনামের ভেরিয়েবল দুটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকে।
ফাংশন কল করার পর যখন তার ইনপুট [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/প্যারামিটার এবং আর্গুমেন্ট|প্যারামিটারে]] কোন [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/প্যারামিটার এবং আর্গুমেন্ট|আর্গুমেন্ট]] বা তথ্য প্রদান করা হয় (যাতে সেই তথ্য অনুযায়ী ফাংশন তার নিজস্ব কাজ সম্পাদন করে একটি মান ফেরত দিতে পারে) তখন সাধারণত ইনপুট প্যারামিটারের অবস্থান অনুযায়ী সেই আর্গুমেন্ট প্রেরন করা হয়। সেভাবেই ইনপুট প্যারামিটারের অবস্থান নজরে রেখেই <code>return</code> স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ফাংশনের আউটপুট প্রেরন করা হয় (বিশেষ করে কোন ফাংশনে যখন একের অধিক মান আউটপুট হিসাবে প্রেরন করতে হয়, তখনই এই পদ্ধতি কাজে লাগে)।
উপরিউক্ত সিউডোকডটিকে নিম্নরূপেও লেখা যায়,
Function Main
...
Assign fahrenheit = GetTemperature()
...
End
Function GetTemperature
Declare Real temperature
Output "Enter Fahrenheit temperature:"
Input temperature
Return Real temperature
বেশিরভাগ আধুনিক প্রোগ্রামিং ভাষাতে যখন কোন ফাংশনে ''রিটার্ন স্টেটমেন্ট'' -এর মাধ্যমে কোন মান ফেরত দেওয়ার কোড বা সাংকেতিক নির্দেশ থাকেনা তখন কম্পিউটার প্রোগ্রামের বৈশ্বিক নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট ফাংশনটি প্রধানত শূন্য বা যেকোন একটি সিস্টেম নির্দেশিত মান আউটপুট হিসাবে প্রেরন করে। কিছু পুরনো প্রোগ্রামিং ভাষায় <code>return</code> মানের কোন অস্তিত্ব বা প্রয়োগ ছিল না। সে সব প্রোগ্রামিং ভাষাগুলিতে ফাংশনকে <code>subroutine</code> বলা হতো। আবার কিছু প্রোগ্রামিং ভাষায় একের অধিক মান আউটপুট হিসাবে ''রিটার্ন'' বা ফেরত দেওয়ার সুবিধা করেছে। তবে বিষয়ের সহজতার খাতিরে এইখানে আমরা যেকোন ফাংশনের দ্বারা, <code>return</code> স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ''শুধুমাত্র আউটপুট একক মান প্রেরন'' অথবা ''কোনো আউটপুট মান প্রেরন না করা'' -এই দুই বিষয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখলাম।
==পরিভাষাসমূহ==
;রিটার্ন
:কম্পিউটার প্রোগ্রামের বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো যা একটি ফাংশনের সমাপ্তি ঘোষনা করতে এবং আউটপুট মান প্রেরন করতে সহায়তা করে।
==তথ্যসূত্র==
* [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++]
* [[Wikiversity: Computer Programming]]
{{reflist}}
{{BookCat}}
i8e9neotoflq5tx3lufvt0hysgc9ly3
রন্ধনপ্রণালী:ঘেভার
104
25062
84058
78467
2025-06-12T01:22:34Z
MD Abu Siyam
8392
84058
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৬ জন
| তৈরির সময় = ২ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = ভারতের বিখ্যাত রাজস্থান রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় একটি মিষ্টি হল ঘেভার। বিশেষ করে রাখি ও তিজ উৎসবে এটি অবধারিত পদ হিসেবে তৈরি হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''ঘেভার'''</big></center>
ঘেভার একটি বিখ্যাত রাজস্থানী মিষ্টান্ন, যার গোলাকৃতি জালযুক্ত গঠন ও দুধ-চিনি-ঘি-এর মিশেলে তৈরি সুস্বাদু স্বাদ একে অনন্য রূপ দেয়। এটি তৈরি করতে কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও, এর স্বাদ ও সৌন্দর্য সব পরিশ্রমের সার্থকতা এনে দেয়। ঘেভার মূলত উৎসবের দিনে, বিশেষ করে রাখি বা তিজ-এর সময় রাজস্থানের ঘরে ঘরে তৈরি হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! নাম !! পরিমাণ
|-
| ময়দা || ২ কাপ
|-
| ঘি || ১/২ কাপ
|-
| ঠান্ডা জল || প্রয়োজনমতো (ঘন মিশ্রণ তৈরির জন্য)
|-
| বরফ কুচি || ১ কাপ
|-
| দুধ || ১/২ কাপ
|-
| লেবুর রস || ১ চা চামচ
|-
| চিনি || ২ কাপ
|-
| জল (চিনির সিরার জন্য) || ১ কাপ
|-
| এলাচ গুঁড়ো || ১/২ চা চামচ
|-
| কেশর || কয়েকটি সুতোর মতো (ইচ্ছামতো)
|-
| বাদাম কুচি || ২ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)
|-
| পেস্তা কুচি || ২ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)
|-
| ঘি || গভীর ভাজার জন্য
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে ঘি ও বরফ কুচি একত্রে নড়িয়ে ফেনার মতো করে তুলুন।
# ধীরে ধীরে ময়দা, দুধ, ঠান্ডা জল ও লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে একটি পাতলা ও মসৃণ খামী তৈরি করুন। খামীটি ঢালার মতো তরল হবে।
# একটি গভীর পাত্রে প্রচুর ঘি গরম করুন। ঘি ভালভাবে গরম হলে আঁচ মাঝারি করুন।
# গরম ঘিতে লম্বা চামচ বা কড়চি দিয়ে ব্যাটার ঢালুন। এটি গিয়ে ফেনার মতো গোলাকৃতি গঠন তৈরি করবে।
# ব্যাটার কয়েক ধাপে ঢালুন এবং প্রতিটি ধাপে গঠনের মাঝখানে গর্ত তৈরি করতে দিন।
# সোনালি রঙ ধারণ করলে ঘেভার তুলে নিন ও ঠান্ডা হতে দিন।
# অন্যদিকে চিনি ও জল দিয়ে হালকা সিরা তৈরি করুন। এতে এলাচ গুঁড়ো ও কেশর দিন।
# ঠান্ডা ঘেভার সিরায় চুবিয়ে নিয়ে বাদাম ও পেস্তা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
== পরিবেশন ==
ঘেভার সাধারণত ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয়। ইচ্ছামতো উপরে ঘন দুধ বা রাবড়ি ছড়িয়ে বিশেষ দিনের মিষ্টান্ন হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
== পরামর্শ ==
* ঘি ভালভাবে গরম না হলে সঠিক গঠন আসবে না, তাই প্রথমে ঘি যথেষ্ট গরম হওয়া নিশ্চিত করুন।
* ব্যাটার খুব ঘন বা খুব পাতলা না হওয়াই উত্তম। প্রয়োজনে একবার প্রাকটিস করা যেতে পারে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:ভারতীয় মিষ্টান্ন]]
[[Category:রাজস্থানী ঐতিহ্য]]
[[Category:উৎসবের খাবার]]
starqjux3qcrzmxrgm93z1i57cneeg8
প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/অনুশীলন: নির্দিষ্ট কাজের ফাংশন
0
25152
84102
78764
2025-06-12T07:30:05Z
RDasgupta2020
8748
/* অনুশীলন 07b–সমাধানের নির্দেশাবলী */
84102
wikitext
text/x-wiki
নিচের সকল প্রশ্ন, অনুশীলনী, সমস্যা ইত্যাদির জন্য [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] সংগ্রহ/পাঠ্যবইয়ের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
==শেখার উদ্দেশ্য==
বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা, স্মৃতিশক্তি-বর্ধন, অনুশীলন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান ১০০% সঠিকতার সাথে ইত্যাদি। শিক্ষার্থীকে নিম্নলিখিত বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে:
#এই অধ্যায়-সংশ্লিষ্ট সকল পরিভাষাগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।
#কিছু পূর্ব-লিখিত ও পূর্ব পরীক্ষিত প্রোগ্রাম দেওয়া হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীকে একটি ''স্পেশিফিক টাস্ক'' অথবা নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্নকারী কোন ফাংশনের একটি ''প্রোটোটাইপ''<ref>[[Wikipedia: Prototype]]</ref> প্রস্তুত করতে হবে যা প্রোগ্রানের শুরুতে বা ''হেডার ফাইল''<ref>[[Wikipedia: Include directive]]</ref> -এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং এটাও দেখতে হবে যাতে হেডার ফাইলে প্রোটোটাইপ উল্লেখ করার পর প্রোগ্রাম সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।
==অনুশীলন==
=== অনুশীলনী ১ ===
নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সত্য অথবা মিথ্যা উত্তর দাও:
# [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/স্কোপ|স্কোপ]] হল মুখ ধোওয়ার দ্রব্য প্রস্তুতকারী একটি সংস্থা।
# ব্যবহারকারী দ্বারা নির্ধারিত [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/নির্দিষ্ট কাজের ফাংশন|স্পেশিফিক টাস্ক ফাংশন]] বা নির্দিষ্ট কাজের ফাংশনগুলি সাধারণত একটি ব্যবহারকারী দ্বারা নির্ধারিত লাইব্রেরিতে স্থাপন করা হয়।
# স্থানীয় এবং বৈশ্বিক তথ্যের সংগ্রহশালা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/স্কোপ|স্কোপের]] ধারণার সাথে সম্পর্কিত।
# ব্যবহারকারীর দ্বারা নির্ধারিত স্পেশিফিক টাস্ক ফাংশন বা নির্দিষ্ট কাজের ফাংশনের জন্য একটি হেডার ফাইল তৈরি করা একটি কঠিন কাজ।
# স্ট্যাক হলো কম্পিউটারের মেমোরির একটি অংশ যা ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
{{New collapse|boxBorder=1|headline=উপরিউক্ত সমস্ত প্রশ্নের উত্তরের জন্য ক্লিক করুন|content=
১.'''মিথ্যা''' - যদিও '''স্কোপ''' নামে মুখ ধোওয়ার দ্রব্য প্রস্তুতকারী একটি সংস্থা আছে কিন্তু এখানে আমরা কম্পিউটার প্রোগ্রাম সম্পর্কিত সংজ্ঞা খুঁজছি।<br>
২.'''সত্য'''<br>
৩.'''সত্য'''<br>
৪.'''মিথ্যা''' - প্রথমক্ষেত্রে যদিও এটি কঠিন কাজ হিসাবে মনে হয়, কিন্তু অভ্যাসের সাথে সাথে তা সহজ হয়ে আসে।<br>
৫.'''সত্য'''}}
==বিবিধ বিষয়াবলী==
এই মুহূর্তে কিছু নেই।
==পরীক্ষাগার অনুশীলনী বা ল্যাব অ্যাসাইনমেন্ট==
=== অধ্যায় ০৭-এর ফাইলগুলির জন্য একটি ফোল্ডার বা সাব-ফোল্ডার তৈরি করা ===
আপনার [[w:কম্পাইলার|কম্পাইলার]]/[[w:ইনটিগ্রেটেড ডেভলপমেন্ট ইনভাইরনমেন্ট|আই.ডি.ই]] অনুসারে, আপনি কম্পিউটারের কোন [[w:ডিরেক্টরি (কম্পিউটিং)|ফোল্ডার বা সাব-ফোল্ডারে]] [[w:উৎস কোড|সোর্স কোড]] ফাইল [[w:ডাউনলোড করা|ডাউনলোড]] ও সংরক্ষণ করবেন তা নির্ধারণ করা উচিত। সাবধানতা অবলম্বন করে ডাউনলোডের পূর্বে প্রয়োজনীয় ফোল্ডার তৈরি করা শ্রেয়। যেমন, <code>Bloodshed Dev-C++ 5</code> নামক কম্পাইলার বা আই.ডি.ই -এর জন্য একটি প্রস্তাবিত সাব-ফোল্ডারের নাম হতে পারে: <code>Chapter_07</code> — যা থাকবে <code>Cpp_Source_Code_Files</code> নামের মূল ফোল্ডারের ভেতরে।
অনুগ্রহ করে অনুশীলন শুরু আগে প্রয়োজন অনুযায়ী ফোল্ডার এবং/অথবা সাব-ফোল্ডার তৈরি করুন।
=== ল্যাব ফাইল(গুলি) ডাউনলোড করুন ===
নিম্নলিখিত ফাইল(গুলি) আপনার কম্পিউটারে উপযুক্ত ফোল্ডারে ডাউনলোড ও সংরক্ষণ করুন। ফাইল ডাউনলোড করার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত লিঙ্কের উপ্র মাউসের ডানদিকের বোতাম ক্লিক করে <code>Save Target As</code> বা অনুরূপ বিকল্প বেছে নিতে হতে পারে। নিম্নলিখিত কনেক্সিওন সাইটের
এই লিংক থেকে সোর্স কোড ডাউনলোড করুন: [https://legacy.cnx.org/content/m22459/latest/Lab_07_Testing_Shell.cpp Lab_07_Testing_Shell.cpp]
=== বিস্তারিত ল্যাব নির্দেশনা ===
নিচের নির্দেশনাগুলি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং তালিকাভুক্ত ধাপে ধাপে অনুসরণ করুন।
*আপনার কম্পিউটারের <code>Chapter_07</code> নামক সাব-ফোল্ডারে যান। সেখানে <code>Lab 07 Testing Shell</code> নামক একটি সোর্স কোড দেখতে পাবেন। সেই সোর্স কোড কম্পাইল করুন এবং রান করুন।<br>নোট:এই প্রোগ্রামটিতে <code>udst_monitor.h</code> নামক একটি লাইব্রেরি ফাইল অন্তর্ভুক্ত করা আছে, যেটি কনেক্সিওনের সপ্তম অধ্যায়ের উপকরণে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
*কনেক্সিওন মডিউলের <code>Using a Header File for User Defined Specific Task Functions</code> অংশে দেখানো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিচের ফাইলগুলো তৈরি করুন:
**<code>udst_us_to_metric.h</code>
**<code>udst_us_to_metric_prototypes.txt</code>
**<code>Lab_07_Verify_Header.cpp</code>
*হেডার ফাইলটি আপনার কম্পিউটারের ''ইউজার লাইব্রেরি'' নামক স্থানে কপি করুন, তারপর আপনার <code>verify header</code> প্রোগ্রামটি কম্পাইল এবং রান করুন।
*আপনি সফলভাবে প্রোগ্রামটি লেখার পর, যদি আপনি এই কোর্সটি আপনি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে আপনার কলেজে জমা দিতে চান তাহলে আপনার প্রফেসর/ইন্সট্রাক্টরের নির্দেশনা অনুসারে এটি গ্রেডিংয়ের জন্য জমা দিন।
==অনুশীলনের সমাধান==
===অনুশীলন 07a–সমাধানের নির্দেশাবলী===
নিম্নলিখিত সমস্যা সমাধান করার জন্য একটি স্পেসিফিক টাস্ক ফাংশনের [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/স্যুডোকোড|সিউডোকোড]] তৈরি করুন:<br>সমস্যা:কোন ঘরের অন্দরসজ্জার সময় একজন গৃহসজ্জা বিশেষজ্ঞ(ইন্টেরিয়র ডিজাইনার) -কে সর্বদা একটি ঘরের ক্ষেত্রফল গণনা করতে হয় যাতে মেঝের আচ্ছাদনের জন্য ঠিক কতগুলি টালি প্রয়োজন তার পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়, অথবা মেঝেটি ঢাকতে কত ফুটের কার্পেট আচ্ছাদন তৈরি করা হবে তা নির্ধারন করা। ঘরগুলি প্রধানত আয়তাকার হয় এবং মাপগুলি ফুটে পরিমাপ করা হয় (দশমিক ভগ্নাংশ সহ)। এবার এই ক্ষেত্রফল নির্নয়ের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামে একটি উপযুক্ত ফাংশন প্রস্তুত করুন এবং নিশ্চিত করুন যাতে ফাংশনটি ঘরের ক্ষেত্রফল বর্গ-গজ বা স্কোয়ার-ফুট এককে নির্নয় করে ফেরত দেয়। মনে রাখবেন, এক গজ তিন রৈখিক ফুট এককের সমান।
===অনুশীলন 07b–সমাধানের নির্দেশাবলী===
নিম্নলিখিত স্পেসিফিক টাস্ক ফাংশনের পরীক্ষার জন্য তথ্য তৈরি করুন:<br>সমস্যা:কোন ঘরের অন্দরসজ্জার সময় একজন গৃহসজ্জা বিশেষজ্ঞ(ইন্টেরিয়র ডিজাইনার) -কে সর্বদা একটি ঘরের ক্ষেত্রফল গণনা করতে হয় যাতে মেঝের আচ্ছাদনের জন্য ঠিক কতগুলি টালি প্রয়োজন তার পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়, অথবা মেঝেটি ঢাকতে কত ফুটের কার্পেট আচ্ছাদন তৈরি করা হবে তা নির্ধারন করা যায়। ঘরগুলি প্রধানত আয়তাকার হয় এবং মাপগুলি ফুটে পরিমাপ করা হয় (দশমিক ভগ্নাংশ সহ)। এবার এই ক্ষেত্রফল নির্নয়ের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামে একটি উপযুক্ত ফাংশন প্রস্তুত করুন এবং নিশ্চিত করুন যাতে ফাংশনটি ঘরের ক্ষেত্রফল বর্গ-গজ বা স্কোয়ার-ফুট এককে নির্নয় করে ফেরত দেয়। মনে রাখবেন, এক গজ তিন রৈখিক ফুট এককের সমান।
==তথ্যসূত্র==
* [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++]
{{reflist}}
{{BookCat}}
olvftdufohp3749990pstluyz2rtxuc
রন্ধনপ্রণালী:চিতল মাছের কালিয়া
104
25390
84042
79149
2025-06-11T15:14:12Z
RDasgupta2020
8748
84042
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মাছ রন্ধনপ্রণালী
| পরিবেশন = ৪ জন
| তৈরির সময় = ৩৫ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = 4
| চিত্র =
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''চিতল মাছের কালিয়া'''</big></center>
চিতল মাছের কালিয়া একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মাছের ঝোল জাতীয় পদ, যা মূলত চিতল মাছের গাঢ় মশলাদার, ঘন ও তেলে-ঝালে কষানো রান্না। এই রান্নায় পেঁয়াজ, আদা-রসুন, টমেটো এবং নানান গরম মসলা দিয়ে একটি ঘন রিচ গ্রেভি তৈরি করা হয়, যাতে ভেজে রাখা চিতল মাছের টুকরো রান্না করা হয়। এটি সাধারণত উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন বা বিশেষ রোজকার খাবারে পরিবেশন করা হয় পোলাও বা গরম ভাতের সঙ্গে। ঝাল-ঝোলের ভারসাম্য এবং চিতল মাছের নিজস্ব স্বাদ—সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য বাঙালি রান্নার নিদর্শন।
==উপকরন==
{| class="wikitable"
! উপকরন !! পরিমান
|-
| চিতল মাছ || চার টুকরো
|-
| সরষের তেল || ৩০ মিলি লিটার
|-
| হলুদ গুঁড়ো || এক চা চামচ
|-
| লঙ্কা গুঁড়ো || অর্ধেক চা চামচ
|-
| কাশ্মিরি লঙ্কার গুঁড়ো || অর্ধেক চা চামচ
|-
| নুন || পরিমাণ মতো
|-
| কাঁচা লঙ্কা|| পাঁচ থেকে ছটা
|-
| কাজুবাদাম || ১০-১২ টা
|-
| কিশমিশ|| ছটা
|-
| জিরে || এক চা চামচ
|-
| আদা || ১ টা অর্ধেক কাটা
|-
| গোটা গরম মশলা || এক চা চামচ (বাটা)
|-
| হালকা গরম জল || এক কাপ
|-
| পেঁয়াজ || একটা বড় আকারের
|-
| টম্যাটো || দুটো
|}
== রন্ধনপ্রণালী ==
# প্রথমেই পেঁয়াজ ও টম্যাটো আলাদা আলাদা করে বেটে করে রাখতে হবে।
# জিরে আদা ও কাঁচা লঙ্কা একসঙ্গে বেতে রাখুন
# চিতল মাছের টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপর এতে হলুদ আর লবণ ভালো করে মাখিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে।
# এরপর আঁচ মাঝারি করে কড়াইয়ে সরষের তেল দিন। তেল গরম হয়ে এলে তেলে এক চিমটে লবণ দিন।
# তেলে লবণ দিলে মাছ ভাজার সময় কড়াইয়ে লেগে যায় না।
# এবার সাবধানে মাছের টুকরো ওই গরম তেলে ভেজে নিয়ে তুলে রাখুন।
# এবার ওই মাছ ভাজা তেলেই তিনটে কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন।
# তারপর জিরে আদা ও কাঁচা লঙ্কার বাটা কড়াইয়ে দিয়ে কষান।
# এরপর টম্যাটো বাটা, লঙ্কা, হলুদ ও কাশ্মিরি লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে কষান।
# মশলার তেল ছেড়ে এলে কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে কড়াইয়ে এক কাপ জল ঢালুন।
#কড়াই ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ জল ফুটিয়ে নিয়ে তাতে মাছগুলো একে একে ছেড়ে দিন।
#এরপর গরম মশলা বাটা দিয়ে নামিয়ে নিলেই তৈরি চিতল মাছের কালিয়া।<span style=color:red;><center>'''গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন চিতল মাছের কালিয়া'''</center></span>
[[বিষয়শ্রেণী:মাছ রন্ধনপ্রণালী]]
9gdtzdl1vzlgluni89v2joqf02p4vrc
প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চলকসমূহ
0
25849
84106
80657
2025-06-12T09:57:21Z
RDasgupta2020
8748
84106
wikitext
text/x-wiki
== মৌলিক অনুমান ==
একটি নলাকার বস্তুর মধ্যে চলমান একটি [[w:পিস্টন|পিস্টন]] বিবেচনা করুন। ধরা যাক পিস্টনটি <math>t=0</math> মুহুর্তে তার চলন শুরু করল যখন তার গতিবেগ, u=<math>u_p</math>। পিস্টনটি নলের মধ্যে নিঁখুতভাবে এঁটে গিয়ে এমনভাবে অবস্থান করে যে নলাকার বস্তুর ভিতরে তার চলনের সময় সেটি কোনোভাবে ঘর্ষণ বা বাঁধার সম্মুখীন হয়না। নলাকার বস্তুর মধ্যে পিস্টনের এই গতি এক ধ্বণিগত আন্দোলন সৃষ্টি করে যা একটি সমতল শব্দ তরঙ্গের সমতুল্য। এই সমতল শব্দ তরঙ্গ নলের মধ্যে দিয়ে ধ্রুব গতিতে অগ্রসর হয় এবং তরঙ্গের এই ধ্রুব গতিকে প্রকাশ করা হয়, c>><math>u_p</math> -এই গাণিতিক নির্দেশিকার মাধ্যমে।
যদি নলটির আকার খুব ছোট হয়, তাহলে পিস্টন থেকে নলের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত শব্দতরঙ্গের পৌঁছাতে যে সময় লাগে তা উপেক্ষা করা যেতে পারে; এই কারণে ধরা যেতে পারে যে, পুরো নলের মধ্যেই ধ্বণিগত আন্দোলন সমানভাবে বিরাজ করছে।
=== অনুমান ===
# শব্দ তরল বা কঠিন উভয় মাধ্যমেই ছড়াতে পারে, কিন্তু আমরা প্রথমে এমন এক পরিস্থিতি বিবেচনা করব যেখানে মাধ্যমটি একটি স্থির তরল। এই তরলের প্রাকৃতিক বা অশান্তিহীন অবস্থাকে বোঝাতে চলকের পাশে ''জিরো'' বা শূণ্য উপসর্গ ব্যবহার করা হবে। মনে রাখবেন, তরল এমন এক পদার্থ যা যেকোনো সামান্য স্পর্শ বা চাপের ফলে ক্রমাগত আকার পরিবর্তন করে।
#শব্দের কারণে তরলে যে অশান্তি তৈরি হয় তা সংকোচনজনিত বা কম্প্রেশিওনাল, অর্থাৎ এই শব্দের ফলে তরলে যে আন্দোলন তৈরী হয়, তার ফলে তরলের কণাগুলি আনুভূমিকভাবে (সামনে-পিছনে) আন্দোলিত হয়। অর্থাৎ কনাসমূহের এই কম্পন ট্রান্সভার্স বা আনুভূমিক কম্পনের মতো নয়, যেখানে কণাগুলি উলম্বভাবে (উপরের দিকে বা নিচের দিকে) আন্দোলিত হয়।
# তরলকে আমরা একটি ''কন্টিনিয়াম'' বা অবিচ্ছিন্ন মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করি—এটি এমন এক ধারণা, যেখানে তরলকে অসীমভাবে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা যায় এবং প্রতিটি অংশে একটি নির্দিষ্ট ধর্ম (যেমন চাপ বা ঘনত্ব) বিদ্যমান থাকে।
#পিস্টনের চলাচলের ফলে কোন মাধ্যমের মধ্যে যে চাপের পরিবর্তন হয় বা শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তা একটি নির্দিষ্ট গতিতে এগোয়। এই গতি নির্ভর করে তরলের প্রকৃতির উপর। যেহেতু তরলের ধর্ম (যেমন ঘনত্ব, চাপ) তরলের সমস্ত অংশে একি রকম ধরা হয়েছে, তাই শব্দতরঙ্গের গতি সর্বত্র একই থাকবে। এই গতিকে শব্দের গতি বলা হয় এবং এটি <math>c_0</math> দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
#এখানে ধরা হয়েছে, পিস্টনটি একদম সমান এবং এটি এত নিখুঁতভাবে নলের মধ্যে বসানো হয়েছে যে পিস্টন এবং নলের মধ্যে কোনো ফাঁক নেই তার ফলে কোনও তরল বেরোতে পারে না। পিস্টন ও নলের দেয়াল একেবারে শক্ত ও অনমনীয়। পুরো নলটি অনেক লম্বা এবং এর অভ্যন্তরের ব্যাসার্ধ সর্বত্র একই।
#তরলের মধ্যে যে শব্দতরঙ্গ ছড়ায়, তা এক নির্দিষ্ট নিয়মে এবং সুষমভাবে তরল মাধ্যমের সব জায়গায় ছড়ায়। অর্থাৎ, নলের ভেতরে যেকোনো নির্দিষ্ট দূরত্বে তরলের ধর্ম (যেমন চাপ, গতি) একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পরিবর্তিত হয়।
== গুরুত্বপূর্ণ চলকসমূহ ==
===চাপ(বল/একক ক্ষেত্রফল)===
চাপ বলতে বোঝায়, তরলের কোনও নির্দিষ্ট পৃষ্ঠে উলম্বভাবে (সোজাসুজি) একক ক্ষেত্রফলের মধ্যে ক্রীয়াশীল বলের মান। সহজভাবে বললে, চাপ মানে হল প্রতি বর্গমিটার জায়গায় কতটা বল প্রয়োগ হচ্ছে তার মান। চাপকে গাণিতিকভাবে নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায়;
<math>p = \frac {\tilde{F}.\tilde{n}}{dS} </math>
এই ক্ষেত্রে, আমরা একটি নলের ভিতরে একটি তরল (যেমন গ্যাস বা তরল পদার্থ) নিয়ে কাজ করছি। এই নলের ভিতরের তরলের একটি নির্দিষ্ট পৃষ্ঠ বা অংশের উপর একটি বল ক্রীয়াশীল। সেই নির্দিষ্ট পৃষ্ঠের একক ক্ষেত্রফলের উপর ক্রীয়ারত বলের যে মান পাওয়া যায়, সেটাকেই চাপ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই চাপকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
#'''স্থিতিশীল বা ভারসাম্য অবস্থা থেকে আগত চাপ''' – একে গাণিতিকভাবে <math>p_0</math> হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি নলের ভেতরের তরলের উপর অপরিবর্তনশীল একটি ধ্রুবক মানের চাপ।
#'''চাপের পরিবর্তন বা বিচ্যুতি''' - একে গাণিতিকভাবে <math>p^'(x)</math> -এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। একে অ্যাকোস্টিক প্রেসার বা ধ্বণিগত চাপ হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা তরলের মধ্যে তৈরি হওয়া শব্দতরঙ্গ বা কম্পনের ফলে পরিবর্তিত হয়। <math>p^'</math> মানটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে, কারণ শব্দতরঙ্গের কারণে চাপ কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে। এই ধ্বণিগত চাপের একক; <math>kg/ms^2</math>। ধ্বণিগত চাপকে আমরা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পরিমাপ করতে পারি।
এইভাবে, চাপের বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে শব্দতরঙ্গ তরলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং কীভাবে সেটি পরিমাপযোগ্য হয়।
=== ঘণত্ব ===
ঘনত্ব হল প্রতি একক আয়তনে তরলের ভর। ঘনত্বকে ρ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি দুটি অংশে ভাগ করা যায়,
#'''স্থিতিশীল ঘনত্ব '''- একে ρ0 দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, ρ0-এর মান প্রায় ১.১৫কিগ্রা/ঘণমিটার
#'''পরিবর্তনশীল অংশ'''- একে ρ′(x) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে।
ঘণত্বের একক: <math>kg/m^3</math>।
এইভাবে, তরলের ঘনত্ব বোঝাতে আমরা স্থিতিশীল ঘনত্বের সাথে একটি শব্দতরঙ্গ বা কম্পনের ফলে সৃষ্ট পরিবর্তনকে যুক্ত করি।
=== ধ্বণিগত আয়তনীয় বেগ ===
এটি হল তরল মাধ্যমের কণাসমুহের অবস্থানের সময়ভিত্তিক পরিবর্তনের হার, যা মূলত তরল প্রবাহের হার বা ''ফ্লো রেট'' নামে পরিচিত।
<center><math>U=\int_{s}\tilde{u}.\tilde{n}\, dS</math></center>
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধরা হয় যে, তরলের গতি নলের সমস্ত অংশে ধ্রুবক বা অপরিবর্তনশীল। এই অবস্থায় ধ্বনিক আয়তনীয় বেগ হিসাব করা যায়, নলের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তরলের বেগ <math>\tilde{u}</math> এবং সেই অংশের ক্ষেত্রফল '''S'''-এর গুণফল হিসাবে।
<center><math>U=\tilde{u}.S </math></center>
{{BookCat}}
tddnhddtevazfgq32nsgndpa4vxnpua
84107
84106
2025-06-12T09:59:36Z
RDasgupta2020
8748
/* চাপ(বল/একক ক্ষেত্রফল) */
84107
wikitext
text/x-wiki
== মৌলিক অনুমান ==
একটি নলাকার বস্তুর মধ্যে চলমান একটি [[w:পিস্টন|পিস্টন]] বিবেচনা করুন। ধরা যাক পিস্টনটি <math>t=0</math> মুহুর্তে তার চলন শুরু করল যখন তার গতিবেগ, u=<math>u_p</math>। পিস্টনটি নলের মধ্যে নিঁখুতভাবে এঁটে গিয়ে এমনভাবে অবস্থান করে যে নলাকার বস্তুর ভিতরে তার চলনের সময় সেটি কোনোভাবে ঘর্ষণ বা বাঁধার সম্মুখীন হয়না। নলাকার বস্তুর মধ্যে পিস্টনের এই গতি এক ধ্বণিগত আন্দোলন সৃষ্টি করে যা একটি সমতল শব্দ তরঙ্গের সমতুল্য। এই সমতল শব্দ তরঙ্গ নলের মধ্যে দিয়ে ধ্রুব গতিতে অগ্রসর হয় এবং তরঙ্গের এই ধ্রুব গতিকে প্রকাশ করা হয়, c>><math>u_p</math> -এই গাণিতিক নির্দেশিকার মাধ্যমে।
যদি নলটির আকার খুব ছোট হয়, তাহলে পিস্টন থেকে নলের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত শব্দতরঙ্গের পৌঁছাতে যে সময় লাগে তা উপেক্ষা করা যেতে পারে; এই কারণে ধরা যেতে পারে যে, পুরো নলের মধ্যেই ধ্বণিগত আন্দোলন সমানভাবে বিরাজ করছে।
=== অনুমান ===
# শব্দ তরল বা কঠিন উভয় মাধ্যমেই ছড়াতে পারে, কিন্তু আমরা প্রথমে এমন এক পরিস্থিতি বিবেচনা করব যেখানে মাধ্যমটি একটি স্থির তরল। এই তরলের প্রাকৃতিক বা অশান্তিহীন অবস্থাকে বোঝাতে চলকের পাশে ''জিরো'' বা শূণ্য উপসর্গ ব্যবহার করা হবে। মনে রাখবেন, তরল এমন এক পদার্থ যা যেকোনো সামান্য স্পর্শ বা চাপের ফলে ক্রমাগত আকার পরিবর্তন করে।
#শব্দের কারণে তরলে যে অশান্তি তৈরি হয় তা সংকোচনজনিত বা কম্প্রেশিওনাল, অর্থাৎ এই শব্দের ফলে তরলে যে আন্দোলন তৈরী হয়, তার ফলে তরলের কণাগুলি আনুভূমিকভাবে (সামনে-পিছনে) আন্দোলিত হয়। অর্থাৎ কনাসমূহের এই কম্পন ট্রান্সভার্স বা আনুভূমিক কম্পনের মতো নয়, যেখানে কণাগুলি উলম্বভাবে (উপরের দিকে বা নিচের দিকে) আন্দোলিত হয়।
# তরলকে আমরা একটি ''কন্টিনিয়াম'' বা অবিচ্ছিন্ন মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করি—এটি এমন এক ধারণা, যেখানে তরলকে অসীমভাবে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা যায় এবং প্রতিটি অংশে একটি নির্দিষ্ট ধর্ম (যেমন চাপ বা ঘনত্ব) বিদ্যমান থাকে।
#পিস্টনের চলাচলের ফলে কোন মাধ্যমের মধ্যে যে চাপের পরিবর্তন হয় বা শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তা একটি নির্দিষ্ট গতিতে এগোয়। এই গতি নির্ভর করে তরলের প্রকৃতির উপর। যেহেতু তরলের ধর্ম (যেমন ঘনত্ব, চাপ) তরলের সমস্ত অংশে একি রকম ধরা হয়েছে, তাই শব্দতরঙ্গের গতি সর্বত্র একই থাকবে। এই গতিকে শব্দের গতি বলা হয় এবং এটি <math>c_0</math> দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
#এখানে ধরা হয়েছে, পিস্টনটি একদম সমান এবং এটি এত নিখুঁতভাবে নলের মধ্যে বসানো হয়েছে যে পিস্টন এবং নলের মধ্যে কোনো ফাঁক নেই তার ফলে কোনও তরল বেরোতে পারে না। পিস্টন ও নলের দেয়াল একেবারে শক্ত ও অনমনীয়। পুরো নলটি অনেক লম্বা এবং এর অভ্যন্তরের ব্যাসার্ধ সর্বত্র একই।
#তরলের মধ্যে যে শব্দতরঙ্গ ছড়ায়, তা এক নির্দিষ্ট নিয়মে এবং সুষমভাবে তরল মাধ্যমের সব জায়গায় ছড়ায়। অর্থাৎ, নলের ভেতরে যেকোনো নির্দিষ্ট দূরত্বে তরলের ধর্ম (যেমন চাপ, গতি) একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পরিবর্তিত হয়।
== গুরুত্বপূর্ণ চলকসমূহ ==
===চাপ(বল/একক ক্ষেত্রফল)===
চাপ বলতে বোঝায়, তরলের কোনও নির্দিষ্ট পৃষ্ঠে উলম্বভাবে (সোজাসুজি) একক ক্ষেত্রফলের মধ্যে ক্রীয়াশীল বলের মান। সহজভাবে বললে, চাপ মানে হল প্রতি বর্গমিটার জায়গায় কতটা বল প্রয়োগ হচ্ছে তার মান। চাপকে গাণিতিকভাবে নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায়;
<math>p = \frac {\tilde{F}.\tilde{n}}{dS} </math>
এই ক্ষেত্রে, আমরা একটি নলের ভিতরে উপস্থিত তরল (যেমন গ্যাস বা তরল পদার্থ) পদার্থ নিয়ে কাজ করছি। এই নলের ভিতরের তরলের একটি নির্দিষ্ট পৃষ্ঠ বা অংশের উপর একটি বল ক্রীয়াশীল। সেই নির্দিষ্ট পৃষ্ঠের একক ক্ষেত্রফলের উপর ক্রীয়ারত বলের যে মান পাওয়া যায়, সেটাকেই চাপ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই চাপকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
#'''স্থিতিশীল বা ভারসাম্য অবস্থা থেকে আগত চাপ''' – একে গাণিতিকভাবে <math>p_0</math> হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি নলের ভেতরের তরলের উপর অপরিবর্তনশীল একটি ধ্রুবক মানের চাপ।
#'''চাপের পরিবর্তন বা বিচ্যুতি''' - একে গাণিতিকভাবে <math>p^'(x)</math> -এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। একে অ্যাকোস্টিক প্রেসার বা ধ্বণিগত চাপ হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা তরলের মধ্যে তৈরি হওয়া শব্দতরঙ্গ বা কম্পনের ফলে পরিবর্তিত হয়। <math>p^'</math> মানটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে, কারণ শব্দতরঙ্গের কারণে চাপ কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে। এই ধ্বণিগত চাপের একক; <math>kg/ms^2</math>। ধ্বণিগত চাপকে আমরা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পরিমাপ করতে পারি।
এইভাবে, চাপের বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে শব্দতরঙ্গ তরলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং কীভাবে সেটি পরিমাপযোগ্য হয়।
=== ঘণত্ব ===
ঘনত্ব হল প্রতি একক আয়তনে তরলের ভর। ঘনত্বকে ρ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি দুটি অংশে ভাগ করা যায়,
#'''স্থিতিশীল ঘনত্ব '''- একে ρ0 দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, ρ0-এর মান প্রায় ১.১৫কিগ্রা/ঘণমিটার
#'''পরিবর্তনশীল অংশ'''- একে ρ′(x) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে।
ঘণত্বের একক: <math>kg/m^3</math>।
এইভাবে, তরলের ঘনত্ব বোঝাতে আমরা স্থিতিশীল ঘনত্বের সাথে একটি শব্দতরঙ্গ বা কম্পনের ফলে সৃষ্ট পরিবর্তনকে যুক্ত করি।
=== ধ্বণিগত আয়তনীয় বেগ ===
এটি হল তরল মাধ্যমের কণাসমুহের অবস্থানের সময়ভিত্তিক পরিবর্তনের হার, যা মূলত তরল প্রবাহের হার বা ''ফ্লো রেট'' নামে পরিচিত।
<center><math>U=\int_{s}\tilde{u}.\tilde{n}\, dS</math></center>
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধরা হয় যে, তরলের গতি নলের সমস্ত অংশে ধ্রুবক বা অপরিবর্তনশীল। এই অবস্থায় ধ্বনিক আয়তনীয় বেগ হিসাব করা যায়, নলের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তরলের বেগ <math>\tilde{u}</math> এবং সেই অংশের ক্ষেত্রফল '''S'''-এর গুণফল হিসাবে।
<center><math>U=\tilde{u}.S </math></center>
{{BookCat}}
96xg8cv53qnj1ecoww1vax2a879wzyv
রন্ধনপ্রণালী:কাঁঠালের মুচি ভর্তা
104
26113
84088
81335
2025-06-12T04:30:17Z
MD Abu Siyam
8392
84088
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = ভর্তা
| পরিবেশন = ৩–৪ জন
| তৈরির সময় = ৩০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = কাঁঠালের মুচি ভর্তা একটি অতি প্রাচীন ও গ্রামীণ পদ যা রংপুর অঞ্চলে বিশেষ জনপ্রিয়। এটি কাঁঠালের কচি মুচি, তেঁতুলের মাড় ও আখের গুড়ের অনন্য সংমিশ্রণে তৈরি এক স্বাদবহুল ঐতিহ্য।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''কাঁঠালের মুচি ভর্তা'''</big></center>
কাঁঠালের মুচি ভর্তা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে রংপুরের এক দুর্লভ ও ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রণালী। ‘মুচি’ বলতে বোঝায় কাঁঠালের একদম কচি অবস্থা, যখন ফলটি পুরোপুরি গঠিত হয়নি কিন্তু তার আঁশ ও বীজের রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই সময়ের কাঁঠালে থাকে অনন্য স্বাদ ও ঘ্রাণ, যা ভর্তার জন্য আদর্শ। গ্রামের বাড়ির উঠোনে বসে তেঁতুলের টক-মিষ্টি মাড় আর আখের গুড় মিশিয়ে ঝাঁকি দিয়ে তৈরি এই ভর্তা আজও অনেকের শৈশব স্মৃতির অংশ।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! নাম !! পরিমাণ
|-
| কাঁঠালের মুচি (কুচি করে কাটা) || ১ কাপ
|-
| তেঁতুলের মাড় || প্রায় ২ টেবিল চামচ
|-
| আখের গুড় (কোরানো) || আধা কাপ
|-
| শুকনা মরিচ ভাজা গুঁড়ো || আধা চা-চামচ
|-
| সরষে তেল || ২ টেবিল চামচ
|-
| লবণ || স্বাদমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# কাঁঠালের কচি মুচি সংগ্রহ করে তার খোসা ছাড়িয়ে নিন। এরপর এগুলোকে সূক্ষ্মভাবে কুচি করে কেটে নিতে হবে।
# কুচানো মুচি ৫ মিনিট লবণ-পানিতে ভিজিয়ে রাখুন যাতে এর কোনো কষ বা তিতকুটে ভাব না থাকে।
# এরপর পানি ঝরিয়ে একটি বড় পাত্রে নিন এবং তাতে তেঁতুলের মাড়, কোরানো গুড়, ভাজা শুকনা মরিচের গুঁড়ো, সরষে তেল এবং লবণ দিয়ে সব উপকরণ ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
# ভর্তাটি তৈরি হয়ে গেলে পরিবেশনের আগে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে দিন যাতে সব স্বাদ একত্রে মিশে যায়।
== পরিবেশন ==
এই ভর্তা গরম ভাতের সঙ্গে খেলে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যায়। তবে অনেক সময় এটি লুচি বা ঘি-ভাতের সাথেও পরিবেশন করা হয় গ্রামীণ উৎসবে। সহজ অথচ ব্যতিক্রমী স্বাদের এই পদটি অতিথিদের তাক লাগাতে সক্ষম।
== পরামর্শ ==
* কাঁঠালের মুচি যত কচি হবে, তত বেশি মসৃণ ও স্বাদযুক্ত ভর্তা হবে।
* তেঁতুলের মাড় ঘন করে নিতে হবে, যাতে টক ভাবটা ঠিকভাবে আসে এবং গুড়ের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় থাকে।
* সরষে তেলের ঘ্রাণ এই রেসিপির প্রাণ, তাই খাঁটি সরষে তেল ব্যবহার করুন।
== অতিরিক্ত তথ্য ==
রংপুর অঞ্চলেই এই পদটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। স্থানীয় বয়স্করা বলেন, “শীতের শুরুতেই মুচি ভর্তা মানেই পাড়ায় পাড়ায় গুড়ের ঘ্রাণ।” এই ভর্তা শুধু স্বাদের নয়, আবেগ ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক। প্রাচীন কালের কোনো রান্নার বই বা নানির হাতে লেখা খাতায় এই রকম ভর্তার অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা আমাদের খাদ্য সংস্কৃতিকে এক অনন্য দৃষ্টিকোণ দেয়।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:ভর্তা]]
[[Category:রংপুরের খাবার]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
hahnlqov2zjyd72j3t40yhozydwn83d
রন্ধনপ্রণালী:চ্যাপার পুলি
104
26114
84089
81337
2025-06-12T04:30:56Z
MD Abu Siyam
8392
84089
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = ঐতিহ্যবাহী খাবার
| পরিবেশন = ৪–৫ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = চ্যাপার পুলি ময়মনসিংহ অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি ভাজা পিঠা, যার ভেতরে থাকে চ্যাপা শুটকির অসাধারণ পুর। এর ঘ্রাণ ও স্বাদ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''চ্যাপার পুলি'''</big></center>
চ্যাপার পুলি হলো এমন এক ঐতিহ্যবাহী পিঠা, যা সাধারণত চ্যাপা শুটকি দিয়ে বানানো হয়। ময়মনসিংহসহ মধ্যাঞ্চলের অনেক গ্রামীণ পরিবারে শীতকালে কিংবা উৎসব উপলক্ষে এটি পরিবেশন করা হয়। চ্যাপা শুটকির তীব্র স্বাদ ও গন্ধ এই পিঠাটিকে এক অনন্য মাত্রা দেয়। এটি একাধারে ঝাল ও সুস্বাদু, যা সাধারণ ভাজা পিঠা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| চ্যাপা শুটকি || ১ কাপ (পরিষ্কার করে কুচি করা)
|-
| পেঁয়াজ কুচি || ১ কাপ
|-
| রসুন বাটা || ১ চা-চামচ
|-
| শুকনা মরিচ ভাজা গুঁড়া || ১ চা-চামচ
|-
| ধনে পাতা কুচি || ১/২ কাপ
|-
| সরষে তেল || ৩ টেবিল চামচ
|-
| লবণ || পরিমাণমতো
|-
| চালের গুঁড়া || ২ কাপ (পুলি তৈরির জন্য)
|-
| গরম পানি || পরিমাণমতো (আটা মাখানোর জন্য)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে চ্যাপা শুটকি পরিষ্কার করে ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর অল্প আঁচে শুকিয়ে নিন যাতে কাঁচা গন্ধ চলে যায়।
# একটি কড়াইয়ে সরষে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ ও রসুন বাটা দিয়ে ভাজুন। পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে চ্যাপা শুটকি দিন।
# শুকনা মরিচ গুঁড়া, লবণ ও ধনে পাতা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ভাজুন। মিশ্রণটি শুকনো হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন।
# চালের গুঁড়া গরম পানিতে অল্প অল্প করে দিয়ে মেখে নিন। হাতের সাহায্যে নরম মন্ড তৈরি করুন।
# ছোট ছোট লেচি কেটে প্রতিটি লেচি বেলে নিয়ে তার মাঝে চ্যাপা শুটকির পুর দিন ও পুলি আকারে বন্ধ করে দিন।
# একটি কড়াইতে সরষে তেল গরম করে প্রতিটি পুলি ভাজুন যতক্ষণ না সোনালি রং হয়।
== পরিবেশন ==
চ্যাপার পুলি গরম গরম পরিবেশন করলেই সবচেয়ে ভালো লাগে। এটি সাধারণত এককভাবে খাওয়া হয়, তবে চাইলে টমেটো চাটনি বা সরষে ভর্তার সঙ্গে পরিবেশন করা যায়।
== পরামর্শ ==
* পুর রান্নার সময় তেল কম ব্যবহার করলে পুর শুকনো ও সুস্বাদু হয়।
* চালের গুঁড়া ভালোভাবে গরম পানিতে মেখে নিলে পুলি ভালোভাবে গড়ে ওঠে ও ফাটে না।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
চ্যাপার পুলি মূলত ময়মনসিংহের বিভিন্ন গ্রামে প্রচলিত ছিল যেখানে মাছ সংরক্ষণের জন্য চ্যাপা শুটকি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই শুটকিকে পিঠার ভেতরে পুর হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। একে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের রান্না ঘরের এক অমূল্য রত্ন।
== মন্তব্য ==
এই পিঠার গন্ধ এতটাই গভীর ও অনন্য যে বহু মানুষ প্রথমবার খেয়ে অভিভূত হন। অনেক প্রবাসী ময়মনসিংহবাসীর কাছে এটি শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:বাংলাদেশি পিঠা]]
[[Category:ময়মনসিংহের ঐতিহ্য]]
[[Category:শুটকি]]
dh2j27rmknss7wa8uxz8fyhyso6x4gs
রন্ধনপ্রণালী:আলুঘাটি
104
26115
84090
81339
2025-06-12T04:31:29Z
MD Abu Siyam
8392
84090
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = তরকারি
| পরিবেশন = ৪–৫ জন
| তৈরির সময় = ৪৫ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = আলুঘাটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে প্রচলিত এক ঐতিহ্যবাহী পদ যা আলু এবং খেসারির ডালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''আলুঘাটি'''</big></center>
আলুঘাটি, নামটা শুনলেই যেন গ্রামীণ ঘ্রাণে ভরে ওঠে মন। এই রেসিপিটি মূলত রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ও দিনাজপুর অঞ্চলে অতিপরিচিত, যেখানে এটি সাধারণত চালের ভাত, পান্তা বা খৈ ভাতের সাথে পরিবেশিত হয়। 'ঘাটি' শব্দটি এখানে অর্থ দাঁড়ায় মিহি করে গুঁড়ো করে তৈরি একটি ঘন মিশ্রণ। এটি এমন এক পদ, যার ঝাঁজালো স্বাদ, সরষের তীব্রতা ও শুকনা মরিচের ঝাল এক অনন্য মিশ্রণে খাবারে নিয়ে আসে দারুণ বৈচিত্র্য।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| আলু (মাঝারি) || ৫টি (সেদ্ধ ও চটকে নেওয়া)
|-
| খেসারির ডালের গুঁড়ো || ১/২ কাপ (শুকনো ভেজে গুঁড়া করে নেওয়া)
|-
| পেঁয়াজ কুচি || ১/২ কাপ
|-
| রসুন কুচি || ১ টেবিল চামচ
|-
| শুকনা মরিচ ভাজা গুঁড়ো || ১ চা-চামচ
|-
| কাঁচা মরিচ কুচি || ৩–৪টি
|-
| সরষে বাটা || ২ টেবিল চামচ
|-
| সরষে তেল || ৩ টেবিল চামচ
|-
| লবণ || পরিমাণমতো
|-
| ধনে পাতা কুচি || ২ টেবিল চামচ
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে আলুগুলো সেদ্ধ করে ঠান্ডা হলে খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে চটকে নিন।
# একটি শুকনো কড়াইতে খেসারির ডাল ভেজে নিয়ে ঠান্ডা হলে মিহি গুঁড়া করে রাখুন।
# কড়াইয়ে সরষে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি দিয়ে ভাজুন যতক্ষণ না তা সোনালি হয়ে আসে।
# এবার এতে শুকনা মরিচ গুঁড়ো, কাঁচা মরিচ কুচি ও সরষে বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন।
# মসলা থেকে ঘ্রাণ আসতে শুরু করলে তাতে চটকে রাখা আলু ও খেসারির ডালের গুঁড়ো দিয়ে ভালোভাবে মেশান।
# প্রয়োজনমতো পানি দিন যাতে মিশ্রণটি ঘন তরকারির মতো হয়। লবণ দিন স্বাদ অনুযায়ী।
# মাঝারি আঁচে ৫–৬ মিনিট রান্না করে ধনে পাতা ছড়িয়ে নামিয়ে ফেলুন।
== পরিবেশন ==
আলুঘাটি পরিবেশন করা হয় গরম ভাত, পান্তা ভাত অথবা খৈ ভাতের সঙ্গে। এটি একটি সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবার, তবে চাইলে ডিমভাজা বা বেগুন ভাজার সাথেও এটি পরিবেশন করা যায়।
== পরামর্শ ==
* খেসারির ডাল না পেলে বুটের ডাল শুকিয়ে ভেজে গুঁড়ো করেও ব্যবহার করা যায়।
* রসুন ও সরষের বাটার পরিমাণ বেশি দিলে এর স্বাদ আরও ঝাঁজালো ও তীব্র হয়।
* খুব বেশি জল দিলে এটি পাতলা হয়ে যেতে পারে, তাই ঘনভাব বজায় রাখুন।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
আলুঘাটির উৎপত্তি মূলত দুর্ভিক্ষের সময় থেকে বলে ধারণা করা হয়। গ্রামীণ কৃষিজীবী পরিবারগুলো যখন মাংস, মাছের অভাবে পড়তেন, তখন আলু ও ডালের মিশ্রণে এই পদটি তৈরি হতো, যা পরবর্তীকালে স্থানীয় রন্ধনসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। রংপুর অঞ্চলে অনেক পরিবার এই পদকে বংশানুক্রমে সংরক্ষণ করে চলেছেন।
== মন্তব্য ==
আলুঘাটি কেবল একটি তরকারিই নয়, এটি একটি ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। একে একবার চেখে দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন কতটা স্বাদ আর সংবেদন থাকে সাধারণ উপকরণের মধ্যেও। এটি এমন এক পদ, যা স্বাদে-গন্ধে আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় শেকড়ের কাছাকাছি।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:বাংলাদেশি খাবার]]
[[Category:রংপুরের খাবার]]
[[Category:নিরামিষ]]
iyuqkdshsqs7zjxfzrofn582fdrmwde
রন্ধনপ্রণালী:ছানার পোলাও
104
26119
84091
81346
2025-06-12T04:32:49Z
MD Abu Siyam
8392
84091
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৫–৬ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = এটি একটি রুচিকর মিষ্টি, যা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে "সীতাভোগ" নামেও পরিচিত।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''ছানার পোলাও'''</big></center>
ছানার পোলাও, এক অসাধারণ মিষ্টান্ন, যা প্রথম দেখাতেই সাধারণ পোলাওয়ের মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আদতে একেবারে অন্যরকম এক সৃষ্টি। এটি ভাজা ছানার ঝুরি ও ছোট ছোট মিষ্টি দিয়ে তৈরি হয়, যার প্রতিটা কণা মিষ্টি সিরায় ভিজে এক স্বর্গীয় স্বাদের আবেশ তৈরি করে। এই রেসিপিটি মূলত পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান অঞ্চলের সীতাভোগ নামক একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির প্রেরণায় বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে উৎসব কিংবা অতিথি আপ্যায়নে ছানার পোলাও পরিবেশন এক অভিনব সংযোজন হিসেবে ধরা পড়ে।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ছানা || ২ কাপ (নরম, তাজা)
|-
| চালের গুঁড়া || ১/২ কাপ
|-
| চিনি || ১.৫ কাপ
|-
| পানি || ১ কাপ
|-
| দারুচিনি || ২ টুকরো
|-
| এলাচ || ৩–৪টি
|-
| সরিষার তেল বা রিফাইনড তেল || ভাজার জন্য প্রয়োজনমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#প্রথমেই একটি পাত্রে চিনি, পানি, দারুচিনি ও এলাচ একসাথে দিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন।
#সিরা ফুটে উঠলে কিছুটা ঘন হতে দিন।
#যখন সিরার ঘনত্ব হালকা হবে (একতারে পরিণত), তখন চুলা বন্ধ করে রাখুন। সিরাটি গরম রাখা জরুরি, কারণ গরম সিরাতেই ছানার ঝুরি ভালোভাবে ভিজে স্বাদগ্রহণযোগ্য হয়।
#একটি বড় পাত্রে তাজা ছানা ও চালের গুঁড়া একসঙ্গে নিয়ে হাত দিয়ে খুব ভালো করে মেখে নিন। এই মিশ্রণটি ৫ মিনিট ঢেকে রাখলে তা আরও মসৃণ ও কাজের উপযোগী হয়ে ওঠে।
#এরপর এই মিশ্রণকে ৪ ভাগে ভাগ করে নিন। এর মধ্যে ৩ ভাগ ঝুরি পোলাও তৈরিতে এবং ১ ভাগ ছোট ছোট মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার হবে।
#একটি কড়াইতে তেল গরম করুন। গ্রেটার (ঝাঁঝরি) ধরে তার ওপর থেকে অল্প অল্প ছানা হাত দিয়ে চেপে গরম তেলে ফেলুন, যাতে ছানাগুলো ছোট ছোট ঝুরির মতো তেলে পড়ে।
#এগুলোকে ৩০ সেকেন্ডের বেশি ভাজা যাবে না, কারণ খুব বেশি ভাজলে মচমচে হয়ে সিরা শোষণ করবে না। ভাজা শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গেই গরম সিরার মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। এভাবে সমস্ত ঝুরি ভেজে সিরার মধ্যে রেখে দিন।
#বাকি ছানা দিয়ে গোল গোল ছোট ছোট মিষ্টির মতো বল তৈরি করুন। এগুলোকে লাল করে ভেজে নিয়ে গরম সিরার মধ্যে দিয়ে চুলায় আরও ১০ মিনিট রান্না করুন।
#তারপর চুলা বন্ধ করে মিষ্টিগুলো সিরায় কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন।
=== পরিবেশন ===
একটি পরিবেশনের প্লেটে ঝুরি করা ছানার পোলাও ঢেলে তার ওপর সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিন ছোট ছোট মিষ্টিগুলো। চাইলে ওপর থেকে অল্প এলাচ গুঁড়া ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
ছানার পোলাও মূলত বর্ধমানের ঐতিহ্যবাহী সীতাভোগ মিষ্টির সহজতর সংস্করণ। সীতাভোগের ইতিহাস বহু পুরনো। ভারতের স্বাধীনতার পূর্বে ব্রিটিশ রাজ কর্মকর্তারা বর্ধমানে এই অনন্য মিষ্টান্ন পরিবেশনে এতটাই মুগ্ধ হন যে, এই খাবারটির স্বাদ পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
== পরামর্শ ==
* ছানা খুব নরম ও তাজা হলে ঝুরি ভালো হবে এবং মিষ্টিগুলোর গঠন নিখুঁত হবে।
* সিরা সর্বদা গরম রাখুন, না হলে ঝুরি ঠিকভাবে ভেজে উঠবে না।
* চাইলে গোলাপজল বা কেওড়া জল কয়েক ফোঁটা সিরায় মিশিয়ে নিতে পারেন বাড়তি সুগন্ধের জন্য।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:বাংলাদেশি মিষ্টি]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী রান্না]]
[[Category:উৎসবের খাবার]]
njlllb1fwt81pousldjl5cj0thhp9n9
রন্ধনপ্রণালী:পেশোয়ারি বিফ
104
26121
84092
81350
2025-06-12T04:33:34Z
MD Abu Siyam
8392
84092
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মাংস
| পরিবেশন = ৪–৬ জন
| তৈরির সময় = ২ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৫
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = এটি একটি গাঢ় মসলা ও মাটির স্বাদের গরুর মাংসের প্রস্তুতি, যা পেশোয়ার অঞ্চলের স্বাদ বহন করে।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''পেশোয়ারি বিফ'''</big></center>
পেশোয়ারি বিফ একটি গাঢ়, সমৃদ্ধ এবং ধীর-রন্ধন পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত গরুর মাংসের রন্ধনপ্রণালী, যার উৎপত্তি পাকিস্তানের পেশোয়ার অঞ্চলে। এটি সাধারণত খুবই কম মসলা দিয়ে রান্না করা হয়, যাতে মূল উপাদান—গরুর মাংস—এর প্রাকৃতিক স্বাদ এবং ঘ্রাণ প্রধান ভূমিকা পালন করে। পেশোয়ার অঞ্চলের পশতুন সম্প্রদায় এই ধরণের রান্নায় পারদর্শী, এবং তাঁরা "Less is more" নীতিতে বিশ্বাস করেন—অর্থাৎ, কম উপকরণেই বেশি স্বাদ আনতে দক্ষ।
এই রন্ধনপ্রণালীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাল শুকনো মরিচ, রসুন এবং সরিষার তেলে ধীর আঁচে রান্না করা হয়, যা মাংসকে একটি গাঢ় রঙ ও গভীর স্বাদ প্রদান করে। এটি সাধারণত নান, খমির রুটি, অথবা পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশিত হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| গরুর মাংস (হাড়হীন) || ১ কেজি (চক বা রাম্প অংশ, মাঝারি টুকরো করে কাটা)
|-
| রসুন বাটা || ২ টেবিল চামচ
|-
| শুকনো লাল মরিচ (গুঁড়া নয়, গোটা) || ৭–৮টি
|-
| লবণ || স্বাদমতো
|-
| সরিষার তেল || ১/২ কাপ
|-
| টক দই || ১/২ কাপ (বিকল্প: লেবুর রস ৩ টেবিল চামচ)
|-
| দারুচিনি || ১ টুকরো
|-
| এলাচ || ২টি
|-
| লবঙ্গ || ৩টি
|-
| গোলমরিচ || ৬–৭টি
|-
| পানি || প্রয়োজন অনুযায়ী
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
=== ধাপ ১: তেল ও মসলা প্রস্তুত ===
প্রথমে একটি বড় কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে নিতে হবে। তেল ভালোভাবে গরম হলে অল্প আঁচে নামিয়ে আনুন এবং এতে দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ও গোলমরিচ ফোড়ন দিন। এরপর রসুন বাটা দিয়ে হালকা বাদামি রঙ না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এই পর্যায়ে রান্নার ঘ্রাণ থেকেই বোঝা যাবে যে আসল পেশোয়ারি সুগন্ধ তৈরি হচ্ছে।
=== ধাপ ২: মাংস সেদ্ধ ===
এবার ধোয়া ও পানি ঝরানো গরুর মাংস দিয়ে দিন এবং মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন। মাংসের রং পরিবর্তন হলে লবণ ও গোটা শুকনো মরিচ দিয়ে দিন। এই শুকনো মরিচই পেশোয়ারি বিফের মূল ঘ্রাণ ও তীব্রতা এনে দেয়। মাংস থেকে বের হওয়া পানিতে ধীরে ধীরে ঢেকে দিন এবং রান্না হতে দিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা।
=== ধাপ ৩: টক সংযোজন ===
যখন মাংস প্রায় সেদ্ধ হয়ে আসবে, তখন টক দই (অথবা লেবুর রস) মিশিয়ে দিন। এরপর ঢেকে দিন আরও ১৫–২০ মিনিট। টক উপাদান মাংসকে আরও কোমল করে এবং রান্নার শেষে একটি হালকা ঝাঁঝালো টান দেয়।
=== ধাপ ৪: ঘন ঝোল তৈরি ===
মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন যাতে বাড়তি পানিটা শুকিয়ে ঘন রস তৈরি হয়। শেষে আবার সামান্য সরিষার তেল ছড়িয়ে দিতে পারেন, এতে অতিরিক্ত স্বাদ আসে এবং ঘ্রাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
পেশোয়ারের এই ঐতিহ্যবাহী গরুর মাংসের রান্না বহু বছর ধরে পশতুন উপজাতিদের মাঝে বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। এটি যুদ্ধ বা দীর্ঘ যাত্রার পর সৈন্যদের পুষ্টি ফিরিয়ে আনার জন্যেও ব্যবহৃত হতো বলে জানা যায়।
== পরামর্শ ==
* চাইলে এই রন্ধনপ্রণালীতে আধা কাপ পেঁয়াজ বাটা যোগ করে একটি ভিন্ন স্বাদ আনতে পারেন, তবে এটি ঐতিহ্যবিরোধী হবে।
* টক দই-এর বদলে কাঁচা আমের রস ব্যবহার করে একটি মৌসুমি বৈচিত্র্য আনতে পারেন।
* এই রেসিপিটি রোটি বা নান দিয়ে পরিবেশন করলে সেরা স্বাদ পাওয়া যায়।
== পরিবেশন ==
পেশোয়ারি বিফ গরম গরম পরিবেশন করুন ঘি মেশানো বাটার নান বা বাউল পোলাওয়ের সঙ্গে। খাওয়ার আগে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ছিটিয়ে নিলে স্বাদ বহুগুণে বাড়বে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মাংস]]
[[Category:পাকিস্তানি খাবার]]
[[Category:ঐতিহাসিক রান্না]]
mdfyzo3wfs0amso0c5ywx7tyltdb8u5
রন্ধনপ্রণালী:জাফরানি পোলাও
104
26123
84086
81354
2025-06-12T04:29:05Z
MD Abu Siyam
8392
84086
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = ভাত
| পরিবেশন = ৫–৬ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = এটি একটি ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি পোলাও, যেখানে ব্যবহার করা হয় জাফরান, কাজু, ঘি ও মশলার নিখুঁত সংমিশ্রণ।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''জাফরানি পোলাও'''</big></center>
জাফরানি পোলাও ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অতি সুপরিচিত এবং বিলাসবহুল পোলাও রেসিপি, যা মূলত মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনামলে রাজ দরবারের অতিথি আপ্যায়নের প্রধান আকর্ষণ ছিল। এই পোলাওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জাফরান (সাফরন), যা এর সোনালি রং, সুগন্ধ এবং এক অনন্য ঐশ্বর্য এনে দেয়।
জাফরানি পোলাও সাধারণত উৎসব, বিয়ে বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিশেষ দিনেই রান্না করা হয়। এটি একটি নিরামিষ হলেও রাজকীয় স্বাদের ভাত, যা প্রায়শই বিরিয়ানি বা কোরমা জাতীয় মাংসের পদগুলোর সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| বাসমতি চাল || ২ কাপ
|-
| জাফরান || ১/২ চা-চামচ
|-
| গরম দুধ || ১/৪ কাপ (জাফরান ভেজানোর জন্য)
|-
| ঘি || ১/২ কাপ
|-
| কাজু বাদাম || ১০–১২টি
|-
| কিসমিস || ১ টেবিল চামচ
|-
| দারুচিনি || ১ টুকরো
|-
| এলাচ || ৩টি
|-
| লবঙ্গ || ৩টি
|-
| তেজপাতা || ১টি
|-
| পেঁয়াজ কুঁচি || ১টি (হালকা ভাজা)
|-
| চিনি || ১ চা-চামচ
|-
| লবণ || স্বাদমতো
|-
| পানি || ৩ কাপ
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#একটি ছোট বাটিতে গরম দুধ নিয়ে তাতে জাফরান ভিজিয়ে রাখুন অন্তত ১৫ মিনিট। এতে দুধ হলদে-সোনালি রং ধারণ করবে এবং একটি তীব্র সুগন্ধ তৈরি হবে, যা মূলত পোলাওয়ের প্রাণ।
#বাসমতি চাল ধুয়ে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি ঝরিয়ে আলাদা করে রাখুন।
#একটি কড়াইতে অল্প ঘি গরম করে তাতে কাজু বাদাম ও কিসমিস হালকা লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন।
#একই ঘি-তে দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ও তেজপাতা দিয়ে ফোড়ন দিন। মশলার ঘ্রাণ বের হলে পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে হালকা বাদামি করে ভাজুন।
#তারপর ধোয়া বাসমতি চাল যোগ করুন এবং অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন ২–৩ মিনিট।
#এবার ৩ কাপ গরম পানি, লবণ ও চিনি দিয়ে দিন। ঢেকে দিন এবং চাল সেদ্ধ হওয়ার অপেক্ষা করুন।
#যখন চাল প্রায় ৭০% রান্না হয়ে যাবে, তখন উপর থেকে জাফরান ভেজানো দুধ ছড়িয়ে দিন এবং হালকাভাবে ঢেকে দিন।
#পোলাও ৯০% সেদ্ধ হলে ঢাকনা দিয়ে খুব ভালোভাবে ঢেকে অল্প আঁচে ১০ মিনিট দম দিন। এর ফলে চাল একেবারে ঝরঝরে হবে এবং জাফরানের সুগন্ধ চালের ভেতরে মিশে যাবে।
#পোলাও নামানোর পরে উপর থেকে ভাজা বাদাম ও কিসমিস ছড়িয়ে দিন। চাইলে কিছু ঘি ছড়িয়ে ঝকঝকে রূপ দিতে পারেন।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
মুঘল আমলের বিভিন্ন রন্ধনগ্রন্থ ও ইতিহাসবিদদের মতে, জাফরান ছিল শুধুমাত্র রাজপরিবার এবং উচ্চবিত্তদের খাবারে ব্যবহৃত এক প্রাকৃতিক ওষুধগুণসম্পন্ন মসলা।
== পরিবেশন ==
এই পোলাও সাধারণত শাহী কোরমা, বাটার চিকেন বা শাহী দম বিরিয়ানির সঙ্গে পরিবেশিত হয়। তবে নিরামিষ পছন্দ করলে দই বেগুন বা পনির কারির সঙ্গে পরিবেশন করেও অসাধারণ লাগে।
== পরামর্শ ==
* জাফরান যদি না পান, তাহলে কেওড়া জল বা রোজ ওয়াটার দিয়ে স্বাদ আনতে পারেন, তবে সেটা জাফরানের স্বাদকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।
* পোলাও এর স্বাদ বাড়াতে এক চিমটি জায়ফল গুঁড়ো ব্যবহার করা যেতে পারে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:ভাত]]
[[Category:মুঘলাই খাবার]]
[[Category:ঐতিহাসিক রান্না]]
ef1zf921wt7f3w21ra4ec0d0ba3ikk1
রন্ধনপ্রণালী:চিংড়ি মাশরুম
104
26124
84087
81356
2025-06-12T04:29:31Z
MD Abu Siyam
8392
84087
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = তরকারি
| পরিবেশন = ৩–৪ জন
| তৈরির সময় = ৪০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = আধুনিক ও পুষ্টিকর এক পদ যেখানে চিংড়ির সমৃদ্ধ স্বাদ মিশে যায় মাশরুমের সাথে
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''চিংড়ি মাশরুম'''</big></center>
চিংড়ি মাছ ও মাশরুম—এই দুটি উপকরণ একত্রে এমন একটি স্বাদ তৈরি করে, যা গ্রামীণ রান্নার স্নিগ্ধতা ও আধুনিকতার ঝলক দুই-ই বহন করে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের পাশাপাশি এখন গ্রামাঞ্চলেও মাশরুম চাষ হওয়ায় এই পদটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাশরুমের স্বাস্থ্যগুণ এবং চিংড়ির স্নিগ্ধ স্বাদের সংমিশ্রণে এটি হয়ে উঠেছে একটি ব্যতিক্রমধর্মী তরকারি, যা ভাত বা পোলাওয়ের সাথে পরিবেশন করলে রসনার এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| চিংড়ি মাছ (পরিষ্কার করা) || ১০০ গ্রাম
|-
| মাশরুম (কাটা) || ২৫০ গ্রাম
|-
| পেঁয়াজ কুঁচি || ৫০ গ্রাম
|-
| আদা, রসুন ও জিরা বাটা || ১ টেবিল চামচ
|-
| কাঁচা মরিচ || ৫–৭টি (চেরা)
|-
| লবণ || পরিমাণমতো
|-
| সয়াবিন তেল || ৫০ গ্রাম
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
* প্রথমে চিংড়ি মাছ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখুন।
* মাশরুমগুলো ধুয়ে মাঝারি আকারে টুকরা করে কাটুন।
* একটি কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম করুন।
* গরম তেলে পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে দিন এবং হালকা বাদামি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
* এরপর আদা, রসুন ও জিরা বাটা দিয়ে দিন এবং ২–৩ মিনিট ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
* কষানো মশলায় চিংড়ি মাছ দিয়ে দিন এবং ৪–৫ মিনিট নেড়ে রান্না করুন, যাতে মাছ আধা-সিদ্ধ হয়ে যায়।
* এবার মাশরুমের টুকরাগুলো যোগ করুন এবং উপরে কাঁচা মরিচ ও পরিমাণমতো লবণ ছিটিয়ে দিন।
* অল্প পানি যোগ করে ঢেকে দিন এবং ৫–৭ মিনিট রান্না করুন, যাতে মাশরুম সেদ্ধ হয়ে যায় এবং সব উপকরণ একত্রে মিশে যায়।
* পানি শুকিয়ে এলে রান্না সম্পন্ন। এবার নামিয়ে পরিবেশন করুন।
== পরিবেশন ==
এই পদটি গরম ভাত, পোলাও বা পরোটা–যেকোনো কিছুর সঙ্গেই পরিবেশনযোগ্য। চাইলে উপরে একটু ঘি ছিটিয়ে দিতে পারেন স্বাদ বাড়ানোর জন্য।
== পরামর্শ ==
* মাশরুম ধোয়ার পর খুব বেশি পানি যেন না জমে থাকে, তা খেয়াল রাখুন, নইলে তরকারি পানসা হয়ে যেতে পারে।
* চিংড়ি বেশি সময় রান্না করলে শক্ত হয়ে যায়, তাই নির্দিষ্ট সময়ের বেশি না রান্নাই ভালো।
* চাইলে এতে সামান্য গরম মসলা বা ধনে গুঁড়ো যোগ করে স্বাদের ভিন্নতা আনা যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
চিংড়ির ব্যবহার বাংলা রান্নায় বহু পুরোনো, কিন্তু মাশরুম একসময় বিলাসবহুল খাদ্য হিসেবে গণ্য হতো। বর্তমানে কৃষিপণ্য হিসেবেও মাশরুম উৎপাদিত হচ্ছে। এই পদটির মধ্যে রয়েছে পুরাতন ও আধুনিকের এক চমৎকার সমন্বয়—যেখানে চিংড়ির দেশীয়তা ও মাশরুমের বৈশ্বিকতা মিলেমিশে যায়।
== মন্তব্য ==
চিংড়ি মাশরুম এমন একটি পদ যা একবার খেলে এর ঘ্রাণ, স্বাদ মুগ্ধ করে রাখে। এটি উৎসব বা দৈনন্দিন রান্না–যেকোনো পরিপ্রেক্ষিতেই মানানসই।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মাছের পদ]]
[[Category:মাশরুম]]
[[Category:আধুনিক রান্না]]
0m2ebu5c7r5xoi9neq3k0r3owp9eqj6
রন্ধনপ্রণালী:লতি চিংড়ি
104
26125
84085
81359
2025-06-12T04:27:47Z
MD Abu Siyam
8392
84085
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = তরকারি
| পরিবেশন = ৪ জন
| তৈরির সময় = ৪০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = লতি চিংড়ি বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় ঘরোয়া রান্না, যা কচুর লতি এবং চিংড়ি মাছ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এটি সাধারণত গরম ভাতের সাথে পরিবেশিত হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''লতি চিংড়ি'''</big></center>
বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের স্বাদ খুঁজতে গেলে যে ক’টি রন্ধনপ্রণালী মনকে ছুঁয়ে যায়, তার মধ্যে ‘লতি চিংড়ি’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি এমন একটি পদ, যেখানে কচুর লতির স্নিগ্ধতায় চিংড়ির স্বাদ মিশে তৈরি করে এক অনন্য রন্ধন অভিজ্ঞতা। চিংড়ির হালকা ঝাঁজ ও কচুর লতির নরম, মোলায়েম স্বাদ একত্রে রুচিতে আনে দারুণ বৈচিত্র্য। এটি বিশেষত বর্ষাকালে বেশি রান্না করা হয়, কারণ এই সময় কচুর লতি সহজলভ্য থাকে।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| চিংড়ি মাছ (মাঝারি বা ছোট) || ২০টি (পরিষ্কার করা)
|-
| কচুর চিকন লতি || ১ কেজি (ধুয়ে কাটা)
|-
| পেঁয়াজ কুচি || ৩টি (মাঝারি সাইজ)
|-
| কাঁচা মরিচ || ২–৩টি (ফালি করা)
|-
| রসুন বাটা || ১/২ চা চামচ
|-
| হলুদ গুঁড়ো || ১ চা চামচ
|-
| লাল মরিচ গুঁড়ো || ১/২ চা চামচ
|-
| লবণ || পরিমাণমতো
|-
| সয়াবিন তেল || পরিমাণমতো
|-
| পানি || প্রয়োজনমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে কচুর লতি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে পানি ঝরিয়ে নিন। চিংড়ি মাছ গুলোও ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে জল ঝরিয়ে রাখুন।
# একটি হাঁড়িতে সয়াবিন তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা ভেজে নিন যতক্ষণ না তা সোনালি হয়ে আসে।
# এরপর সামান্য পানি দিয়ে তাতে রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লাল মরিচ গুঁড়ো ও স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিন। এই মসলাগুলো ভালোভাবে কষিয়ে নিন যতক্ষণ না তেল ছাড়ে।
# এবার চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে দিন এবং নেড়েচেড়ে ঢেকে ৫ মিনিটের মতো মাঝারি আঁচে রান্না করুন।
# চিংড়ি কষে গেলে কচুর লতি এবং ফালি করা কাঁচা মরিচ দিন। নেড়ে আবার ৫–৬ মিনিট কষান যেন লতি নরম হয়।
# লতি কষে গেলে সামান্য পানি দিন, ভালোভাবে মিশিয়ে ঢেকে দিন এবং আরও ৫–৬ মিনিট রান্না করুন যতক্ষণ না তরকারির ঘনত্ব ও গন্ধ ঠিকমতো আসে।
== পরিবেশন ==
এই লতি চিংড়ি সাধারণত গরম ভাতের সাথে পরিবেশ করা হয়। এটি এমন একটি পদ, যা দুপুরের খাবারে পাতে একটুখানি থাকলেই পুরো খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে পান্তাভাতের সাথেও এটি খাওয়া হয় অনেক এলাকায়।
== পরামর্শ ==
* চিংড়ি মাছ বড় হলে কেটে ব্যবহার করাও যায়, তবে ছোট মাছ হলে খোসাসহ রান্না করাই ভালো।
* লতির ভেতরে যদি আঁশ থেকে যায়, তবে কেটে নেওয়ার সময় ভালোভাবে টেনে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
* ঝাঁজ বেশি পছন্দ হলে কাঁচা মরিচের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
লতি চিংড়ি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে পরিচিত থাকলেও এটি বিশেষত বরিশাল, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। কচুর লতি বর্ষাকালে চাষাবাদ করা যায় এবং এই সময় নদী বা খালবিল থেকে সহজেই চিংড়ি সংগ্রহ করা যায়। গ্রামীণ গৃহিণীরা এই সহজলভ্য উপকরণগুলো দিয়ে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু তরকারি প্রস্তুত করতেন, যা সময়ের সাথে হয়ে উঠেছে পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ।
== মন্তব্য ==
‘লতি চিংড়ি’ কেবল একটি পদ নয়, এটি একটি মৌসুমী ঐতিহ্য, একটি পারিবারিক স্বাদ। যারা গ্রামে বড় হয়েছেন, তাদের জন্য এই তরকারির স্বাদ যেন শৈশবের স্মৃতির মতো ফিরে আসে। আপনি যদি প্রাকৃতিক স্বাদের সন্ধান করেন, তবে একবার ‘লতি চিংড়ি’ রান্না করে দেখুন—আপনার রান্নাঘর ভরে উঠবে গ্রামবাংলার ঘ্রাণে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:বাংলাদেশি তরকারি]]
[[Category:চিংড়ি মাছের পদ]]
[[Category:গ্রামীণ রান্না]]
[[Category:]]
hfl4ak5dkiv20sk3rhm0axrx81e1p0t
রন্ধনপ্রণালী:ধনেপাতা ভর্তা
104
26126
84084
81361
2025-06-12T04:27:21Z
MD Abu Siyam
8392
84084
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = ভর্তা
| পরিবেশন = ২–৩ জন
| তৈরির সময় = ১৫ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ১
| খাদ্য শক্তি = হালকা
| টীকা = ধনেপাতা ভর্তা একটি সহজ ও সুগন্ধিযুক্ত ভর্তা, যা গরম ভাতের সাথে দারুণ লাগে। এটি সাধারণত অন্যান্য ভর্তার পাশে পার্শ্বপদ হিসেবে পরিবেশিত হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''ধনেপাতা ভর্তা'''</big></center>
ধনেপাতা ভর্তা বাংলাদেশের সাধারণ ঘরে ঘরে পরিচিত একটি ভর্তা পদ। ধনেপাতা নিজেই একটি এমন উপাদান যার ঘ্রাণে পুরো রান্নাঘর জুড়ে যায় সতেজতার ছোঁয়ায়। শীতকালে যখন বাজারে টাটকা ধনেপাতা মেলে, তখন এই ভর্তাটি খুব দ্রুতই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ঢুকে পড়ে। খুবই সহজলভ্য ও কম উপকরণে তৈরি হওয়া এই পদটি স্বাদে কিন্তু মোটেও সাদামাটা নয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ধনেপাতা || ১ গুচ্ছ (পরিষ্কার ও কুচি করে কাটা)
|-
| কাঁচা মরিচ || ৪–৫টি (পরিমাণ মতো বাড়ানো যায়)
|-
| রসুন কোয়া || ২–৩টি (ছোট করে কাটা)
|-
| পেঁয়াজ কুচি || ১টি মাঝারি (ঐচ্ছিক)
|-
| লবণ || স্বাদ মতো
|-
| সরিষার তেল || ১–২ চা চামচ (স্বাদ বাড়াতে)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# ধনেপাতা ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন, এরপর কুঁচি করে কেটে নিন।
# শুকনো কড়াইতে রসুন কোয়া ও কাঁচা মরিচ হালকা ভেজে নিতে পারেন – এতে অতিরিক্ত ঘ্রাণ ও স্বাদ আসে। না ভেজে কাঁচাও ব্যবহার করা যায়।
# এবার একটি সিলনো বা শিলপাটায় ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, রসুন ও লবণ একসাথে বেটে নিন। ভালোভাবে মসৃণ হয়ে গেলে একটি বাটিতে তুলে রাখুন।
# উপর থেকে সরিষার তেল ছিটিয়ে দিন, চাইলে কিছুটা পেঁয়াজ কুচিও মিশিয়ে দিতে পারেন।
== পরিবেশন ==
এই ভর্তাটি গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করলে সবচেয়ে ভালো লাগে। বিশেষত ডাল, আলুভর্তা ও শুকনো ভাজির পাশে এটি অতিরিক্ত স্বাদ যুক্ত করে। রুটির সাথেও কেউ কেউ এটি খেতে পছন্দ করেন।
== পরামর্শ ==
* অতিরিক্ত ঘ্রাণ পেতে সরিষার তেল হালকা গরম করে দিতে পারেন।
* ধনেপাতা পুরোটাই বাটলে সবুজ রঙ কমে যেতে পারে, চাইলে অর্ধেক কুচি করে মিশিয়ে দিলে দেখতে সুন্দর লাগে।
* কাঁচা মরিচের বদলে ঝাল শুকনো মরিচ ভেজে ব্যবহার করলেও ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে শীতকালীন ভর্তা একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। ধনেপাতা মূলত মসলা হিসেবে পরিচিত হলেও, ভর্তার জন্য এটি আলাদা সম্মান পেয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে ধনেপাতা ভর্তায় সরিষাবাটা বা শুকনা মরিচ ব্যবহার করে স্থানীয় বৈচিত্র্য আনা হয়। সিলেট, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে এই ভর্তাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
== মন্তব্য ==
‘ধনেপাতা ভর্তা’ রান্নাঘরে যতটা সহজ, খেতে ততটাই চমকপ্রদ। এটি প্রমাণ করে, স্বাদের জন্য দরকার নেই ভারী মসলা বা অনেক সময়—সঠিক উপাদান ও অনুপাতেই তৈরি হতে পারে হৃদয়গ্রাহী পদ।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:ভর্তা]]
[[Category:শীতকালীন পদ]]
[[Category:ধনেপাতার পদ]]
[[Category:বাংলাদেশি খাবার]]
j0oz6tadg4k2r5f05s8ds9dx1bovb08
রন্ধনপ্রণালী:লাবাং
104
26131
84083
81370
2025-06-12T04:26:55Z
MD Abu Siyam
8392
84083
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পানীয়
| পরিবেশন = ৪–৫ জন
| তৈরির সময় = ২০ মিনিট (ঠান্ডা হতে সময় বাদে)
| কষ্টসাধ্য = ১
| খাদ্য শক্তি = হালকা
| টীকা = লাবাং বা লাবান একটি ঘোল বা দই-ভিত্তিক পানীয়, যা সাধারণত ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয় এবং শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। এটি বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে প্রচলিত।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''লাবাং'''</big></center>
লাবাং, আবার কেউ কেউ একে "লাবান" নামেও চেনে, একটি শীতল পানীয় যা মূলত টক দই, ঠান্ডা পানি, চিনি এবং ঘ্রাণবর্ধক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। মুসলিম সমাজে রমজান মাসে ইফতারিতে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, বিশেষত গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং তৃষ্ণা নিবারণে। এটি অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের 'লাসি' বা 'বাটারমিল্ক'-এর মতো হলেও, লাবাংয়ের নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ রয়েছে যা একে আলাদা করে তোলে।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| টক দই || ১ কাপ
|-
| ঠান্ডা পানি || ৩ কাপ
|-
| চিনির সিরা || ২–৩ টেবিল চামচ (স্বাদমতো)
|-
| গোলাপ জল || ১ চা চামচ
|-
| পুদিনা পাতা কুচি || ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
|-
| কালো লবণ || ১ চিমটি (ঐচ্ছিক)
|-
| বরফ কুচি || ১/২ কাপ
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে টক দই একটি পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন যাতে কোনো গাঁট না থাকে।
# দইয়ে ধীরে ধীরে ঠান্ডা পানি মেশান এবং ক্রমাগত নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না মিশ্রণটি মসৃণ ও হালকা তরল হয়।
# এবার তাতে চিনির সিরা মেশান। চাইলে সরাসরি চিনি দিলেও চলে, তবে চিনির সিরা দিলে মেশানো সহজ হয়।
# গোলাপ জল এবং সামান্য কালো লবণ মেশান। চাইলে পুদিনা পাতাও কুচি করে দিতে পারেন।
# সব উপকরণ ভালোভাবে মিশে গেলে পরিবেশনের আগে ১০–১৫ মিনিট ফ্রিজে ঠান্ডা করুন।
# পরিবেশনের সময় বরফ কুচি দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
== পরিবেশন ==
লাবাং সাধারণত ইফতারির সময় খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি বা অন্যান্য মুখরোচক খাবারের সাথে পরিবেশিত হয়। এটি এককভাবেও খেতে দারুণ এবং যেকোনো গ্রীষ্মকালীন অনুষ্ঠানে বা অতিথি আপ্যায়নে চমৎকার একটি পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
== পরামর্শ ==
* লাবাংয়ে ঘনতা বাড়াতে চাইলে দই ও পানির অনুপাত কমিয়ে নিতে পারেন।
* সুগন্ধি ও স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে এলাচ গুঁড়া, দারুচিনি গুঁড়া, বা সামান্য লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
* যদি ফ্যাটযুক্ত দই ব্যবহার করেন, তবে পানীয়টি আরও মসৃণ ও ঘন হবে।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
‘লাবাং’ শব্দটি ফারসি ‘লাবান’ থেকে এসেছে, যার অর্থই দুধজাত পানীয়। মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতীয় উপমহাদেশে এই ধরণের পানীয় দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। বাংলাদেশে এটি মূলত মুসলিম সমাজে প্রচলিত হলেও এখন নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রমজানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তাঘাটে, ইফতারের দোকানে ও বাসাবাড়িতে এই পানীয়টির বহুল প্রচলন দেখা যায়।
== মন্তব্য ==
লাবাং শুধু একটি পানীয় নয়, এটি গ্রীষ্মের উত্তাপ থেকে মুক্তির প্রতীক। সহজ প্রস্তুতি, কম খরচে তৈরি ও দারুণ স্বাদের কারণে এটি যেকোনো ঘরে ঘরে স্থান করে নিতে পারে। এক গ্লাস লাবাং মানেই এক মুহূর্তের প্রশান্তি।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:পানীয়]]
[[Category:রমজানের খাবার]]
[[Category:বাংলাদেশি পানীয়]]
4tcmbkcp94kaxuq1jocnht7gbeama2e
রন্ধনপ্রণালী:মিহিদানা লাড্ডু
104
26147
84078
81407
2025-06-12T01:45:13Z
MD Abu Siyam
8392
84078
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৬–৮ জন
| তৈরির সময় = ২–৩ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = মিহিদানা থেকে তৈরি লাড্ডু একটি জনপ্রিয় ও মুখরোচক মিষ্টি যা সাধারণত উৎসব, পূজা বা বিশেষ দিনে পরিবেশন করা হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''মিহিদানা লাড্ডু'''</big></center>
মিহিদানা লাড্ডু হল একটি বিখ্যাত বাঙালি মিষ্টি, যা সূক্ষ্ম বুন্দির মতো দেখতে মিহিদানা থেকে তৈরি হয়। এটি সাধারণত ঘি বা ঘন চিনি-সিরার মাধ্যমে একত্রিত করে গোলাকার রূপে তৈরি করা হয়। রাজশাহী, বর্ধমান বা নদীয়া অঞ্চলে বিশেষভাবে এই মিষ্টির জনপ্রিয়তা রয়েছে। একে শুধুমাত্র একটি খাবার বলা যায় না, এটি আমাদের উৎসব, আনন্দ আর আতিথেয়তার প্রতীক।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| বেসনের মিহি আটা || ২ কাপ
|-
| বেকিং সোডা || ১ চিমটি
|-
| পানি || প্রয়োজনমতো (ঘন গোলার জন্য)
|-
| ঘি (ভাজার জন্য) || পর্যাপ্ত পরিমাণ
|-
| চিনি || ২ কাপ
|-
| পানি (চিনি সিরার জন্য) || ১ কাপ
|-
| এলাচ গুঁড়া || ১/২ চা চামচ
|-
| পেস্তা বা কাজু কুচি || সাজানোর জন্য (ঐচ্ছিক)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে একটি পাত্রে বেসনের মিহি আটা ও এক চিমটি বেকিং সোডা নিয়ে অল্প অল্প পানি দিয়ে একটি মসৃণ ও মাঝারি পাতলা গোলা তৈরি করুন। গোলাটি যেন খুব পাতলা না হয়।
# একটি মিহি ছিদ্রযুক্ত ঝাঁজরি বা ছাঁকনিতে গোলা নিয়ে গরম ঘিতে ফোঁটা ফোঁটা করে ছেড়ে দিন। এতে ছোট ছোট দানার মতো মিহিদানা তৈরি হবে। হালকা ভাজা হলে তুলে কিচেন টিস্যুতে রাখুন।
# এইভাবে সব মিহিদানা তৈরি করে নিন। চাইলে দ্বিতীয়বার হালকা ভেজে আরও কড়কড়ে করা যায়, তবে অধিক ভাজা উচিত নয়।
# অন্যদিকে একটি পাত্রে ২ কাপ চিনি ও ১ কাপ পানি দিয়ে পাতলা সিরা তৈরি করুন। এতে এলাচ গুঁড়া মিশিয়ে দিন। সিরা আঁঠালো হলে চুলা থেকে নামান।
# মিহিদানা সিরায় ডুবিয়ে ৩০–৪০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, যাতে চিনি ভালোভাবে ঢুকে যায়।
# এবার সিরা থেকে মিহিদানা ছেঁকে নিয়ে একটি বড় প্লেটে নিয়ে ঘি দিয়ে হাতে ভালোভাবে মাখাতে থাকুন।
# হাতে চেপে চেপে ছোট ছোট গোল লাড্ডু তৈরি করুন। চাইলে প্রতিটিতে পেস্তা বা কাজু কুচি গুঁজে দিতে পারেন।
== পরিবেশন ==
মিহিদানা লাড্ডু ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করতে হয়। এটি পূজা, পার্বণ, বিয়ে বা অতিথি আপ্যায়নে বিশেষভাবে পরিবেশিত হয়। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ—সবাই এই মিষ্টির স্বাদে মুগ্ধ হন।
== পরামর্শ ==
* মিহিদানার গোলা খুব পাতলা করলে ফোঁটা পড়ে না, আবার ঘন হলে বড় দানা হয়—তাই মাঝামাঝি ঘনত্ব বজায় রাখা জরুরি।
* সিরার ঘনত্ব খুব বেশি হলে লাড্ডু শক্ত হয়ে যায়, আবার কম হলে বাঁধে না—একটু ঝুলে আঁঠালো অবস্থায় নামানোই উত্তম।
* লাড্ডু বানানোর সময় হাত ঘিতে মাখানো থাকলে ভালোভাবে গোল করা যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
বর্ধমান জেলার মিহিদানা ও সীতাভোগ ২০১৭ সালে GI ট্যাগ লাভ করে। এই লাড্ডুর ইতিহাস সেই ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত গড়ে ওঠে, যখন ইংরেজ কর্মকর্তারা বাঙালি মিষ্টির অমৃত স্বাদে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে আমাদের মিহিদানা লাড্ডু।
== মন্তব্য ==
মিহিদানা লাড্ডু শুধু একটি মিষ্টান্ন নয়, এটি বাঙালির আনন্দঘন মুহূর্তের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সূক্ষ্ম গঠন, ঘ্রাণ, ও মুখে গলে যাওয়া স্বাদ—সব মিলিয়ে এটি একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
[[Category:লাড্ডু]]
ienptspvtp4iossqzxfv1szzvh95a57
রন্ধনপ্রণালী:তিরামিসু
104
26148
84070
81409
2025-06-12T01:36:40Z
MD Abu Siyam
8392
84070
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৬–৮ জন
| তৈরির সময় = ৪–৫ ঘণ্টা (ঠান্ডা করার সময়সহ)
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = তিরামিসু একটি ইতালীয় মিষ্টান্ন, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এর স্বাদে থাকে কফি, কোকো ও মসকারপোন চিজের মিশ্রণ, যা মুখে গলে যায়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''তিরামিসু'''</big></center>
তিরামিসু একটি বিখ্যাত ইতালীয় মিষ্টান্ন, যার অর্থ "তোমাকে তুলতে দিচ্ছি" বা "উপরে তুলে আনি"। এটি সাধারণত লেডিফিঙ্গার বিস্কুট, মসকারপোন চিজ, কফি ও কোকো পাউডার দিয়ে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে অনেক সময় মসকারপোনের পরিবর্তে হুইপিং ক্রিম, ক্রিম চিজ অথবা ঘন দুধ ব্যবহার করা হয়। একে ফ্রিজে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হয়।
তিরামিসুর জন্ম ইতালির ভেনেটো অঞ্চলে ১৯৬০-এর দশকে হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এরপর এই মিষ্টান্নটি দ্রুত বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখন এটি অনেক দেশের রেস্তোরাঁ ও ঘরোয়া রান্নায় স্থান করে নিয়েছে।
তিরামিসু আজ শুধু একটি বিদেশি খাবার নয়, বরং বাঙালি ঘরেও এটি ঘরে তৈরি হওয়ার মতো সহজ ও আকর্ষণীয় একটি উপাদান। কিছু সহজলভ্য উপকরণ ও ধৈর্য থাকলেই এই অনন্যসাধারণ মিষ্টান্ন তৈরি করা যায়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| লেডিফিঙ্গার বিস্কুট || ১ প্যাকেট (প্রায় ২৪টি)
|-
| ইনস্ট্যান্ট কফি || ২ টেবিল চামচ
|-
| গরম পানি || ১ কাপ (কফির জন্য)
|-
| চিনি || ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী)
|-
| মসকারপোন চিজ || ২৫০ গ্রাম (অথবা হুইপিং ক্রিম ও ক্রিম চিজ মিশিয়ে)
|-
| হুইপিং ক্রিম || ১ কাপ (ঠান্ডা অবস্থায়)
|-
| ভ্যানিলা এসেন্স || ১ চা চামচ
|-
| কোকো পাউডার || ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য
|-
| ডার্ক চকোলেট গ্রেট || সাজানোর জন্য (ঐচ্ছিক)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে গরম পানিতে কফি মিশিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। চাইলে সামান্য চিনি মেশাতে পারেন।
# অন্যদিকে একটি বাটিতে হুইপিং ক্রিমকে ফেটে শক্ত ফেনার মতো করে তুলুন।
# আরেকটি পাত্রে মসকারপোন চিজ (বা হুইপিং ক্রিম ও ক্রিম চিজের মিশ্রণ), চিনি ও ভ্যানিলা একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
# এবার হুইপিং ক্রিমটি ধীরে ধীরে চিজ মিশ্রণে মিশিয়ে দিন। এটি হবে ক্রিমি ও হালকা ঘন একটি ফিলিং।
# একটি কাচের ট্রেতে বা পাত্রে লেডিফিঙ্গার বিস্কুটগুলো কফিতে ডুবিয়ে এক সারিতে বিছিয়ে দিন। খুব বেশি ভিজিয়ে ফেলবেন না, নরম হয়ে যাবে।
# তার উপর এক স্তর চিজ-ক্রিম মিশ্রণ দিন এবং সমান করে ছড়িয়ে দিন।
# আবার একটি লেডিফিঙ্গার স্তর ও একটি ক্রিম স্তর বসান।
# শেষে ওপর থেকে কোকো পাউডার ছিটিয়ে দিন। চাইলে ডার্ক চকোলেট গ্রেট করে ছিটিয়ে দিতে পারেন।
# এবার তিরামিসুটি ফ্রিজে ৪–৬ ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা হতে দিন, যাতে সেট হয়ে যায়।
== পরিবেশন ==
ঠান্ডা অবস্থায় ছোট ছোট কিউব করে কেটে পরিবেশন করুন। এটি যেকোনো উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন বা রোমান্টিক সন্ধ্যায় অসাধারণ একটি মিষ্টান্ন।
== পরামর্শ ==
* মসকারপোন চিজ না থাকলে ঘন ক্রিম ও চিজ ক্রিম মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
* বেশি ভেজালে লেডিফিঙ্গার নরম হয়ে ভেঙে যায়, তাই দ্রুত ডুবিয়ে তুলুন।
* ফ্রিজে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা রাখুন, না হলে স্তর ঠিকভাবে বসবে না।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:ইউরোপিয়ান খাবার]]
2vcq0ufjt0dabvsy3sytfmpjr8fxmku
রন্ধনপ্রণালী:চকলেট মাফিন
104
26149
84071
81411
2025-06-12T01:37:12Z
MD Abu Siyam
8392
84071
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৮–১০টি মাফিন
| তৈরির সময় = ৪০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = চকলেটপ্রেমীদের জন্য চকলেট মাফিন একটি অসাধারণ বিকেলের নাস্তা বা অতিথি আপ্যায়নের উপযোগী খাবার।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''চকলেট মাফিন'''</big></center>
চকলেট মাফিন হলো এক ধরনের ছোট কাপের মতো কেক যা চকলেটের গন্ধ ও স্বাদে ভরপুর। এটি সাধারণত সকালের নাস্তা, বিকেলের চা কিংবা হালকা খাবার হিসেবে পরিবেশিত হয়। বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়, সবাই এই মাফিন ভালোবাসে। ঘরে বসে অল্প কিছু উপকরণেই এটি তৈরি করা যায়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ময়দা || ১ কাপ
|-
| কোকো পাউডার || ১/৩ কাপ
|-
| চিনি || ১/২ কাপ (চুলোর মাফিন হলে সামান্য কম)
|-
| বেকিং পাউডার || ১ চা চামচ
|-
| বেকিং সোডা || ১/২ চা চামচ
|-
| লবণ || ১ চিমটি
|-
| ডিম || ১টি
|-
| তরল দুধ || ১/২ কাপ (উষ্ণ)
|-
| তেল (সয়াবিন/রিফাইন্ড) || ১/৪ কাপ
|-
| ভ্যানিলা এসেন্স || ১ চা চামচ
|-
| চকলেট চিপস || ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক)
|-
| ভিনেগার (সাদা) || ১ চা চামচ
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে একটি বড় বাটিতে ময়দা, কোকো পাউডার, চিনি, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা ও লবণ একসাথে চেলে নিন।
# অন্য একটি পাত্রে ডিম, দুধ, তেল, ভ্যানিলা ও ভিনেগার ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন।
# এবার তরল মিশ্রণটি ধীরে ধীরে শুকনা উপকরণের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। হাত দিয়ে বেশি নেড়েচেড়ে নয়—সামান্য মিশ্রণ করলেই হবে।
# মিশ্রণটি ঘন ও একটু দানাদার হবে—এটাই স্বাভাবিক।
# এখন চকলেট চিপস মিশিয়ে দিন। চাইলে অর্ধেকটা উপর থেকে ছিটিয়েও দিতে পারেন।
# মাফিন মোল্ডে কাগজের কাপস রাখুন এবং মিশ্রণটি প্রায় ৩/৪ অংশ পর্যন্ত ভরুন।
# প্রি-হিটেড ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১৮–২০ মিনিট বেক করুন। একটি কাঠি ঢুকিয়ে পরীক্ষা করুন—কাঠি পরিষ্কার বের হলে মাফিন তৈরি।
== পরিবেশন ==
তাজা চকলেট মাফিন গরম গরম পরিবেশন করুন এক কাপ চা, কফি কিংবা ঠান্ডা দুধের সঙ্গে। চাইলে উপর থেকে সামান্য আইসিং সুগার ছিটিয়ে পরিবেশন করা যায়।
== পরামর্শ ==
* ওভেন না থাকলে কড়াই বা প্রেসার কুকার ব্যবহার করে চুলাতেও মাফিন বেক করা যায়।
* চিনি নিজের স্বাদ অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যায়।
* কোকো পাউডার উচ্চ মানের হলে স্বাদ আরও ঘন ও চকলেটি হয়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
মাফিনের ইতিহাস ইংল্যান্ড থেকে শুরু হলেও আমেরিকায় এটি রীতিমতো জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। আধুনিক চকলেট মাফিন মূলত আমেরিকান কুকবুক থেকে প্রচলিত। বর্তমানে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
== মন্তব্য ==
চকলেট মাফিন ঘরে তৈরি করলে তার স্বাদ ও ঘ্রাণ দুইই থাকে অনন্য। এটি যেকোনো সাধারণ দিনকে বিশেষ করে তুলতে পারে। বিশেষ করে যখন বৃষ্টি পড়ে কিংবা শীতের সন্ধ্যায় কিছু গরম গরম খেতে ইচ্ছা করে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:কেক]]
lmxyv9dwhbghe3sssuhrz9v2nd65qnk
রন্ধনপ্রণালী:চিকেন পাই
104
26150
84072
81413
2025-06-12T01:37:48Z
MD Abu Siyam
8392
84072
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = নোনতা খাবার
| পরিবেশন = ৪–৬ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘন্টা ২০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = চিকেন পাই একটি ব্রিটিশ ঐতিহ্যবাহী খাবার যা মাংসপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি একটি পেস্ট্রি খাবার।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''চিকেন পাই'''</big></center>
== পরিচিতি ==
চিকেন পাই একটি স্যাভরি (লবণাক্ত) পেস্ট্রি খাবার যা মূলত ব্রিটিশ রান্নার অংশ হলেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরণের রূপে পরিচিত। এটি মাখনের তৈরি মোটা পেস্ট্রির ভেতরে মুরগির কিমা, শাকসবজি ও ক্রীমি সস মিশিয়ে বেক করে পরিবেশন করা হয়। মচমচে বাইরের স্তর আর নরম ভিতরের পুর এই খাবারটিকে করে তোলে বিশেষ। বাংলাদেশের অনেক অভিজাত রেঁস্তোরায় এটি পরিবেশিত হলেও ঘরে বসেও সহজে তৈরি করা যায়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| মুরগির মাংস (হাড় ছাড়া, কুঁচি করে কাটা) || ২ কাপ
|-
| ময়দা || ২ কাপ
|-
| ঠান্ডা মাখন || ১/২ কাপ
|-
| ঠান্ডা পানি || প্রয়োজনমতো (প্রায় ৪–৫ টেবিল চামচ)
|-
| পেঁয়াজ (কুচি) || ১ কাপ
|-
| রসুন বাটা || ১ চা চামচ
|-
| গাজর (ক্ষুদ্র টুকরো) || ১/২ কাপ
|-
| সেদ্ধ মটরশুঁটি || ১/২ কাপ
|-
| দুধ || ১ কাপ
|-
| ময়দা (সসের জন্য আলাদা) || ২ টেবিল চামচ
|-
| গোলমরিচ গুঁড়া || ১/২ চা চামচ
|-
| লবণ || স্বাদমতো
|-
| রান্নার তেল || ২ টেবিল চামচ
|-
| ডিম (মাখনের উপরে ব্রাশ করার জন্য) || ১টি
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
=== ময়দার খোলস তৈরির ধাপ ===
# একটি বড় পাত্রে ময়দা ও লবণ মিশিয়ে ঠান্ডা মাখন কুচি করে দিন।
# হাত দিয়ে চটকাতে চটকাতে মিশ্রণটি ব্রেডক্রাম্বসের মতো ঝুরঝুরে করে নিন।
# এবার অল্প অল্প ঠান্ডা পানি দিয়ে ডো তৈরি করুন এবং ফ্রিজে ৩০ মিনিট রেখে দিন।
=== চিকেন পুর তৈরি ===
# একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও রসুন হালকা ভেজে নিন।
# এরপর গাজর ও মটরশুঁটি দিয়ে ২–৩ মিনিট নাড়ুন।
# মুরগির কুঁচি করা মাংস, লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিন।
# আলাদা একটি প্যানে ২ টেবিল চামচ ময়দা ও সামান্য তেল দিয়ে হালকা ভেজে তাতে দুধ যোগ করে ঘন সস তৈরি করুন।
# এই সসটি ভেজানো মুরগির মিশ্রণে মিশিয়ে নিন। এটি ঠান্ডা হতে দিন।
=== পাই তৈরি ও বেকিং ===
# ফ্রিজে রাখা ডো দুটি ভাগে ভাগ করুন। একটি অংশ বেলে পাইয়ের নিচের খোলস বানান এবং পাই প্যানে বিছিয়ে দিন।
# মুরগির ফিলিং বিছিয়ে দিন উপরে।
# এরপর আরেকটি ডো বেলে ঢাকনা বানিয়ে উপরে বসিয়ে চারপাশ মুড়ে দিন।
# ডিম ফেটিয়ে উপরে ব্রাশ করুন।
# ওভেন ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রি-হিট করে ৩০–৩৫ মিনিট বেক করুন অথবা যতক্ষণ না উপরের স্তরটি সোনালী-বাদামী রং ধারণ করে।
== পরিবেশন ==
চিকেন পাই গরম গরম পরিবেশন করুন টমেটো সস বা গার্লিক সসের সঙ্গে। এটি এককভাবে একটি পূর্ণ খাবার হিসেবেও পরিবেশনযোগ্য, বিশেষ করে দুপুর বা রাতের খাবারে।
== পরামর্শ ==
* চাইলে মুরগির সঙ্গে কিছু ধনেপাতা বা মৌরি পাতা যোগ করে ভিন্ন স্বাদ আনা যায়।
* বেকিং করার সময় পাইয়ের উপর কিছু ছিদ্র করে দিন যেন বাষ্প সহজে বেরিয়ে আসতে পারে।
* ফ্রোজেন সবজি ব্যবহার করলেও স্বাদে খুব বেশি পার্থক্য আসে না।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
চিকেন পাইয়ের উৎপত্তি মূলত ব্রিটেনে হলেও রোমান যুগ থেকেই পেস্ট্রি ও মাংসের মিশ্রণে তৈরি খাবারের প্রচলন দেখা যায়। মধ্যযুগে এটি একটি রাজকীয় খাবার হিসেবে গণ্য হতো। বর্তমানে এর বহু সংস্করণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে — ফ্রান্সে "প্যাস্টি", আমেরিকায় "পট পাই" এবং দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্ভাবিত বিভিন্ন মসলা মিশ্রিত সংস্করণ।
== মন্তব্য ==
চিকেন পাই এমন একটি খাবার যা একবার খেলেই আবার খেতে ইচ্ছা করে। এটি তৈরি করতে সময় একটু বেশি লাগে বটে, কিন্তু পরিশ্রম স্বার্থক হয় প্রতিটি কামড়ে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:নোনতা খাবার]]
rxrhatoj8299f8m1kusedmo1kcw5w9u
রন্ধনপ্রণালী:নাট মাফিন
104
26151
84073
81418
2025-06-12T01:39:02Z
MD Abu Siyam
8392
84073
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৬–৮ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘন্টা
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = নাট মাফিন একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর বাদামযুক্ত মাফিন, যা সকালের নাস্তা বা বিকেলের জলখাবারে আদর্শ।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''নাট মাফিন'''</big></center>
নাট মাফিন নামটি শুনলেই বোঝা যায়, এটি একটি বাদামযুক্ত ছোট কেকজাতীয় খাবার। সাধারণ মাফিনের সঙ্গে পার্থক্য হলো এর ভিতরে প্রচুর পরিমাণে বাদাম থাকে — যেমন কাঠবাদাম, কাজু, আখরোট, পেস্তা ইত্যাদি। এটি খেতে মোলায়েম এবং হালকা মিষ্টি, কিন্তু মাঝে মাঝে কিছুটা কুড়মুরে পাওয়া যায় বাদামের জন্য। পশ্চিমা দেশগুলোতে এটি খুবই জনপ্রিয় এবং বর্তমানে আমাদের দেশেও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এটি সমাদৃত হচ্ছে।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ময়দা || ১ ও ১/২ কাপ
|-
| চিনি || ১/২ কাপ (চাইলে বাদামী চিনি ব্যবহার করা যায়)
|-
| ডিম || ২টি
|-
| তরল দুধ || ১/২ কাপ
|-
| বেকিং পাউডার || ১ চা চামচ
|-
| বেকিং সোডা || ১/২ চা চামচ
|-
| গলানো মাখন/তেল || ১/৩ কাপ
|-
| ভ্যানিলা এসেন্স || ১ চা চামচ
|-
| কাজুবাদাম (মিহি করে কাটা) || ১/৪ কাপ
|-
| আখরোট (হালকা ভাঙা) || ১/৪ কাপ
|-
| পেস্তা বাদাম || ২ টেবিল চামচ
|-
| কিশমিশ || ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
|-
| লবণ || ১ চিমটি
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#প্রথমেই ওভেন ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রি-হিট করে রাখুন।
#মাফিন ট্রেতে পেপার কাপ বসিয়ে নিন বা হালকা তেল/মাখন মাখিয়ে নিন যেন মাফিন লেগে না যায়।
#একটি পাত্রে ময়দা, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা, লবণ ও বাদাম গুলো (কাজু, আখরোট, পেস্তা) মিশিয়ে নিন। চাইলে কিশমিশও এখানে মিশিয়ে নিতে পারেন।
# অন্য একটি পাত্রে ডিম ফেটে তাতে চিনি দিন ও ভালোভাবে বিট করুন।
#এবার এতে দুধ, গলানো মাখন (বা তেল) ও ভ্যানিলা এসেন্স মেশান।
# তরল মিশ্রণটি ধীরে ধীরে শুকনা উপকরণে দিন এবং হালকা হাতে মেশান। খুব বেশি নাড়াচাড়া করবেন না, এতে মাফিন শক্ত হতে পারে।
# মাফিন ট্রেতে মিশ্রণটি চামচে করে সমানভাবে দিন। প্রতিটি কাপে মিশ্রণ ভরুন ৩/৪ অংশ পর্যন্ত (কারণ বেক হলে ফুলে উঠবে)।
#ওভেনে ২০–২৫ মিনিট বেক করুন। একটি কাঠি ঢুকিয়ে দেখে নিন, যদি পরিষ্কার বেরিয়ে আসে, তাহলে হয়ে গেছে।
#ওভেন থেকে বের করে ঠান্ডা হতে দিন ১০ মিনিট।
#এরপর পরিবেশন করুন গরম চা, কফি বা দুধের সঙ্গে।
== পরিবেশন ==
নাট মাফিন বিশেষ করে সকালের নাস্তা, বিকেলের জলখাবার বা অতিথি আপ্যায়নে আদর্শ। ঠান্ডা বা গরম — দুইভাবেই খাওয়া যায়। চাইলে ওপরে সামান্য গুঁড়া চিনি ছিটিয়ে পরিবেশন করা যায়।
== পরামর্শ ==
* চাইলে বাদামের পরিবর্তে চকলেট চিপস বা নারকেল কোড়ানোও যোগ করা যায়।
* ডিম ছাড়া বানাতে চাইলে ১/৪ কাপ টক দই বা ১/২টি পাকা কলা ব্যবহার করুন।
* ওটস বা হোল হুইট ফ্লাওয়ার দিয়ে চাইলে আরও স্বাস্থ্যকর সংস্করণ বানানো যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
“মাফিন” শব্দটি এসেছে মধ্যযুগীয় ফরাসি শব্দ “moufflet” থেকে, যার অর্থ নরম রুটি। বাদাম যুক্ত মাফিন বা নাট মাফিন মূলত পশ্চিমা দেশে প্রোটিন এবং শক্তির উৎস হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে এটি “নিউট্রিশন স্ন্যাক” হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
== মন্তব্য ==
নাট মাফিন এমন একটি খাবার যা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী, তেমনি স্বাদের দিক থেকেও মজার। ঘরে বসে সহজে তৈরি করা যায় এবং বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দের সবারই পছন্দ।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মাফিন]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:নাস্তা]]
3bc0lritchu42mfe8rjvwjt0nn3t07f
রন্ধনপ্রণালী:মোহিতো
104
26152
84074
81422
2025-06-12T01:40:41Z
MD Abu Siyam
8392
84074
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পানীয়
| পরিবেশন = ২ জন
| তৈরির সময় = ১০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ১
| খাদ্য শক্তি = কম
| টীকা = মোহিতো একটি ঠান্ডা ও পুদিনা সুগন্ধযুক্ত পানীয়, যা গ্রীষ্মকালে শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''মোহিতো'''</big></center>
মোহিতো একটি কিউবান উৎসের অ্যালকোহলহীন ঠান্ডা পানীয়, যার মূল উপাদান হলো লেবুর রস, পুদিনা পাতা, বরফ এবং সোডা। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সতেজতা প্রদানকারী পানীয়, যা মূলত গ্রীষ্মের সময় ঠান্ডা লাগানোর জন্য পরিবেশিত হয়। আমাদের দেশে এখন এটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা রেস্তরায় নন-অ্যালকোহলিক ড্রিংক হিসেবেও পরিবেশিত হচ্ছে।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| পুদিনা পাতা || ১০–১২টি
|-
| লেবু || ১টি (ফালি করা ও রসসহ)
|-
| চিনি || ২ টেবিল চামচ (চাইলে কমবেশি করা যায়)
|-
| বরফ কুচি || পরিমাণ মতো
|-
| ঠান্ডা পানি বা ক্লাব সোডা || ১ কাপ
|-
| লবণ || এক চিমটি (ঐচ্ছিক)
|-
| পুদিনা পাতা ও লেবু ফালি || সাজানোর জন্য
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#একটি গ্লাসে পুদিনা পাতা ও কাটা লেবুর টুকরাগুলো নিন। এতে চিনি যোগ করুন।
#একটি কাঠের চামচ দিয়ে হালকা চেপে চেপে সব উপাদান থেঁতলে দিন যেন লেবুর রস ও পুদিনার ঘ্রাণ ভালোভাবে বের হয়।
#গ্লাসে বরফ কুচি দিন, তারপর ঠান্ডা পানি বা ক্লাব সোডা ঢেলে দিন। চাইলে এক চিমটি লবণ যোগ করতে পারেন স্বাদে ভিন্নতা আনতে।
#একটি লম্বা চামচ দিয়ে পানীয়টি ভালোভাবে নাড়ুন। ওপরে পুদিনা পাতা ও একটি পাতলা লেবুর ফালি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
#চাইলে রিমে (গ্লাসের মুখে) লবণ লাগিয়ে নিতে পারেন আরও আকর্ষণীয় করতে।
== পরিবেশন ==
মোহিতো সাধারণত দুপুরে বা বিকেলের দিকে ঠান্ডা পরিবেশে পান করা হয়। এটি অতিথি আপ্যায়নের জন্যও একটি দারুণ পানীয়। পরিবেশন করার সময় উচ্চ গ্লাস ও স্ট্র ব্যবহার করলে এর সৌন্দর্য বাড়ে।
== পরামর্শ ==
* চাইলে এক চিমটি বিট লবণ বা গোলমরিচ গুঁড়ো যোগ করে মোহিতোকে আরও মজাদার করা যায়।
* লেবুর বদলে কমলালেবু বা মালটা দিয়েও ভিন্ন স্বাদের মোহিতো তৈরি করা যায়।
* ক্যালোরি কমাতে চাইলে চিনির বদলে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
মোহিতো মূলত কিউবার এক ঐতিহ্যবাহী পানীয়। প্রথম দিকে এটি রাম দিয়ে তৈরি হতো, কিন্তু পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে এর অ্যালকোহলমুক্ত সংস্করণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এবং বহু রেস্টুরেন্ট ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
== মন্তব্য ==
যদি তুমি এমন একটি পানীয় খুঁজে থাকো যা গরমে মন ও শরীর ঠান্ডা করবে এবং খুব সহজে ঘরে বানানো যায়, তাহলে মোহিতো নিঃসন্দেহে একটি দুর্দান্ত পছন্দ।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:পানীয়]]
54anwqt0g04vpcblhhm96vzb6j639tw
রন্ধনপ্রণালী:ভাপা পুলি পিঠা
104
26153
84075
81424
2025-06-12T01:41:50Z
MD Abu Siyam
8392
84075
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৪–৬ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = এটি একটি বাষ্পে সিদ্ধ ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পিঠা, যা গুড়, নারকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''ভাপা পুলি পিঠা'''</big></center>
ভাপা পুলি পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন যা মূলত শীতকালে গৃহস্থ ঘরে তৈরি হয়। ‘পুলি’ মানে হচ্ছে পূর্ণযুক্ত পিঠা বা মোড়ানো পিঠা। এটি সাধারণত চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি খোসার ভেতরে নারকেল, গুড়, তিল ইত্যাদির পুর ভরে বাষ্পে সিদ্ধ করে তৈরি করা হয়। খেতে এটি অত্যন্ত মোলায়েম, মিষ্টি ও তৃপ্তিদায়ক।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| চালের গুঁড়ো || আধা কেজি
|-
| ময়দা || ৩ টেবিল চামচ
|-
| পানি || পরিমাণ মতো
|-
| লবণ || সামান্য
|-
| নারকেল কোড়ানো || দেড় কাপ
|-
| খেজুরের গুড় / চিনি || দেড় কাপ
|-
| সাদা তিল (ভেজে গুঁড়ো করা) || আধা কাপ
|-
| ঘি || ২ টেবিল চামচ
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#একটি পাত্রে নারকেল কোড়ানো, খেজুরের গুড় এবং ভাজা তিল একসঙ্গে নিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না গুড় গলে সব উপাদান ভালোভাবে মিশে যায়। এটি একটি আঠালো মিশ্রণ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা হতে দিন।
#চুলায় একটি হাঁড়িতে পানি গরম করুন।
#ফুটে উঠলে তাতে সামান্য লবণ ও ২ টেবিল চামচ ঘি দিন।
#এবার চালের গুঁড়ো ও ময়দা ধীরে ধীরে দিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ ঢেকে দিন অল্প আঁচে। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে ভালোভাবে মথে একটি মসৃণ কাই তৈরি করুন। প্রয়োজনে একটু গরম পানি দিয়ে মথতে পারেন যেন লুচির খামের মতো নরম হয়।
#এই কাই থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে নিন। প্রতিটি লেচি হাত দিয়ে অথবা বেলন দিয়ে বেলে পাতলা রুটির মতো তৈরি করুন।
#এরপর মাঝে পুর দিয়ে অর্ধচন্দ্রের মতো ভাঁজ করে কোনাগুলো ভালো করে চেপে দিন। চাইলে ছাঁচ বা হাতের কাজ দিয়ে সুন্দর নকশাও দিতে পারেন।
#একটি বড় হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে তার ওপরে বাঁশের চালনি বসিয়ে দিন। চালনিতে কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপরে পিঠাগুলো সাজান। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ১০–১২ মিনিট ধরে ভাপে সিদ্ধ করুন। চাইলে রাইস কুকার বা স্টিমার ব্যবহার করেও করা যায়।
== পরিবেশন ==
ভাপা পুলি পিঠা সাধারণত গরম অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। খাওয়ার সময় অতিরিক্ত ঘি বা গুঁড় দিয়ে পরিবেশন করলে স্বাদ আরও বৃদ্ধি পায়। এটি নকশি পিঠা, চিতই পিঠা বা পাটিসাপটার মতোই উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ।
== পরামর্শ ==
* খোলস বেশি শক্ত হয়ে গেলে পুর ভরা কষ্টকর হবে, তাই কাইটা যতটা সম্ভব মোলায়েম রাখার চেষ্টা করুন।
* ঘি না থাকলে সরিষার তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে প্রাকৃতিক সুগন্ধ যোগ করার জন্য।
* চাইলে পুরে কাজু, কিসমিস, শুকনো নারকেল ইত্যাদি মিশিয়ে বিশেষ স্বাদ তৈরি করা যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পিঠা-পুলির রেওয়াজ বহু প্রাচীন। ভাপা পুলি পিঠা চৈত্রসংক্রান্তি, পৌষ পার্বণ, অথবা নতুন ধানের আগমনে বিশেষভাবে তৈরি করা হতো। এটি নারীকণ্ঠে গান গেয়ে দলবদ্ধভাবে বানানোর একটি আবেগঘন সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ।
== মন্তব্য ==
ভাপা পুলি পিঠা শুধু একটি মিষ্টান্ন নয় — এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক বিশেষ রান্না। বিশেষ করে যারা গ্রামের ঘ্রাণ মাখা পিঠার স্বাদ মনে রাখেন, তাদের জন্য এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:পিঠা]]
[[Category:বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
jd9u0e5ssl778867k9ceij5dxltjgq7
রন্ধনপ্রণালী:ডিম চিতই
104
26154
84076
81426
2025-06-12T01:43:09Z
MD Abu Siyam
8392
84076
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পিঠা
| পরিবেশন = ২–৪ জন
| তৈরির সময় = ৩০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = ডিম দিয়ে তৈরি এক অভিনব চিতই পিঠা যা সকালের নাশতা বা বিকেলের জলখাবারে খাওয়া যায়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''ডিম চিতই পিঠা'''</big></center>
ডিম চিতই পিঠা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয়, নোনতা স্বাদের পিঠা যা গ্রামবাংলার ঘরোয়া রান্নায় বিশেষ স্থান পেয়েছে। সাধারণ চিতই পিঠার মতো দেখতে হলেও এর মাঝে ভেঙে দেয়া হয় একটি আস্ত ডিম, যা একে করে তোলে আরও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। সাধারণত শীতকালে অথবা উৎসবের দিনে এই পিঠাটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| চাল || ১ কাপ
|-
| ফুটন্ত পানি || দেড় কাপ
|-
| ডিম || ৪টি
|-
| লবণ || ১ চা চামচ (স্বাদমতো)
|-
| সাদা তেল || অল্প (তাওয়া মাখাতে)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#প্রথমে ১ কাপ চাল ৪-৫ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
#এরপর পানি ঝরিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে দেড় কাপ ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে ব্লেন্ড করুন যতক্ষণ না একটি মসৃণ তরল মিশ্রণ তৈরি হয়। চাইলে চালের গুঁড়া ব্যবহার করেও একইভাবে ফুটন্ত পানিতে মিশিয়ে গোলা তৈরি করতে পারেন।
#একটি মাটির বা লোহার চিতই তাওয়া গরম করুন। তাওয়া ভালোভাবে গরম হলে সাদা তেল দিয়ে মুছে নিন যাতে পিঠা লেগে না যায়।
#তাওয়ার মাঝখানে ১ বড় চামচ চালের গোলা ঢালুন। গোলা ঢেলে তাওয়ায় সামান্য ঘুরিয়ে দিন যাতে পাতলা আবরণ তৈরি হয়।
#সঙ্গে সঙ্গে একটি ডিম ভেঙে গোলার উপর ঢেলে দিন। ডিমের উপর অল্প লবণ ছিটিয়ে দিন। চাইলে কাঁচামরিচ কুচি বা পেঁয়াজ কুচি দিয়েও রুচি অনুযায়ী স্বাদ বাড়ানো যায়।
#পিঠার উপরে ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে ৪-৫ মিনিট ভাপে রান্না করুন। এই সময়ে চালের গোলা ও ডিম ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে যাবে।
#ডিম চিতই তৈরি হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন। চাইলে সঙ্গে ঘরে তৈরি আলু ভর্তা, টমেটোর চাটনি বা কাঁচা মরিচের আচার পরিবেশন করতে পারেন।
== পরিবেশন ==
এই পিঠা সাধারণত গরম অবস্থায় খাওয়াই উত্তম। এটি একাই খাওয়া যায়, তবে মসলা চাটনি বা ডাল ভর্তা থাকলে স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
== পরামর্শ ==
* চালের গোলা খুব পাতলা বা ঘন যেন না হয়, মাঝারি ঘনত্ব বজায় রাখলে পিঠা সুন্দর হবে।
* মাটির তাওয়া না থাকলে ননস্টিক তাওয়াতেও তৈরি করা যায়, তবে মূল স্বাদ তখন কিছুটা কমে যেতে পারে।
* পিঠা ঢাকতে ধাতব ঢাকনা ব্যবহার করলে তাপ বেশি ধরে, ফলে ভালোভাবে ভাপে সিদ্ধ হয়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
চিতই পিঠা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পিঠা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শীতকালে এটি তৈরি করা হয়। ডিম চিতই এই ঐতিহ্যবাহী পিঠার একটি উন্নত সংস্করণ, যা তুলনামূলকভাবে আধুনিক সংযোজন হলেও এখন স্থান করে নিয়েছে শহর ও গ্রাম — উভয় রান্নাঘরে।
== মন্তব্য ==
ডিম চিতই পিঠা হল পুরোনো ঐতিহ্য আর নতুন পুষ্টির এক অনন্য সমন্বয়। এটি যেমন সহজে তৈরি করা যায়, তেমনই স্বাদে ও উপকারিতায় পূর্ণ এক স্বাস্থ্যকর উপাদেয়।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:পিঠা]]
[[Category:বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
[[Category:ডিমের পদ]]
7wccp6v5gbtydtxk2gvgfphwaq2o3z6
রন্ধনপ্রণালী:লবঙ্গ লতিকা
104
26156
84077
81429
2025-06-12T01:44:40Z
MD Abu Siyam
8392
84077
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পিঠা
| পরিবেশন = ৫–৬ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = লবঙ্গ দিয়ে মুখ বন্ধ করা এক বিশেষ ভাজা ও সিরা-মিশ্রিত পিঠা, যা উৎসবে বা মেহমানদারিতে পরিবেশিত হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''লবঙ্গ লতিকা'''</big></center>
লবঙ্গ লতিকা হলো একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পিঠা, যা খামিরে পুর ভরে ভাঁজ করে মুখে একটি লবঙ্গ লাগিয়ে তৈরি করা হয়। এটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও তেমনি সুস্বাদু ও মুখরোচক। বাংলাদেশে বিশেষত শীতকালে ও উৎসবের সময় এটি ব্যাপকভাবে তৈরি হয়।
== উপকরণ ==
=== খামিরের জন্য ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ময়দা || ২ কাপ
|-
| সাদা তেল || ২ টেবিল চামচ
|-
| লবণ || সামান্য
|-
| পানি || প্রয়োজনমতো
|}
=== পুরের জন্য ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| নারকেল কোড়ানো || ২ কাপ
|-
| গুড় বা চিনি || ১ কাপ
|}
=== সিরার জন্য ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| চিনি || ৪০০ গ্রাম
|-
| পানি || ১ কাপ
|}
=== অন্যান্য উপকরণ ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| লবঙ্গ || ১৫–২০টি
|-
| ডুবো তেলের জন্য || পরিমাণমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#একটি পাত্রে ২ কাপ ময়দা, সামান্য লবণ ও ২ টেবিল চামচ সাদা তেল মিশিয়ে অল্প অল্প করে পানি যোগ করে শক্ত খামির তৈরি করে নিন। খামির ঢেকে রেখে দিন ১৫–২০ মিনিট।
#একটি তাওয়ায় ২ কাপ নারকেল কোড়ানো ও ১ কাপ গুড় (বা চিনি) একসঙ্গে জ্বাল দিন যতক্ষণ না গুড় গলে নারকেলের সাথে মিশে পুর আঠালো হয়ে আসে। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন।
#একটি হাঁড়িতে ৪০০ গ্রাম চিনি ও ১ কাপ পানি একসঙ্গে দিয়ে জ্বাল দিন যতক্ষণ না ঘন সিরা তৈরি হয়। সিরার ঘনত্ব মাঝারি হওয়া উচিত—এক ফোঁটা আঙুলে নিয়ে টানলে হালকা সুতা টানবে এমন।
#খামির থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে পাতলা রুটি বেলে নিন।
#প্রতিটি রুটির মাঝখানে ১ টেবিল চামচ করে নারকেল পুর দিন। এবার রুটির চারদিক থেকে ভাঁজ করে চতুষ্কোণ আকারে মুড়ে দিন।
#মুখ বন্ধ করার পর মাঝখানে একটি লবঙ্গ গেঁথে দিন যাতে লতিকা না খুলে যায়।
#গরম ডুবো তেলে লতিকাগুলো বাদামি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভেজে তুলুন। এরপর গরম গরম লতিকা গুলো ঘন চিনির সিরায় ১–২ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন, যাতে লতিকা সিরা ভালোভাবে শোষণ করে।
== পরিবেশন ==
লবঙ্গ লতিকা সাধারণত ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করা হয়, তবে হালকা গরম থাকলেও এর স্বাদ অতুলনীয়। এটি চা-নাশতা, উৎসব বা অতিথি আপ্যায়নের জন্য উপযুক্ত।
== পরামর্শ ==
* খামির যেন বেশি নরম না হয়, তা হলে ভাজার সময় ফেটে যেতে পারে।
* লতিকা ভাঁজ করার সময় মুখ ভালোভাবে চেপে বন্ধ করুন, নাহলে পুর বেরিয়ে আসতে পারে।
* চাইলে পুরে এলাচগুঁড়া, কিশমিশ বা ক্ষিরও যোগ করা যায় স্বাদ বাড়াতে।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
লবঙ্গ লতিকা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত, বিশেষত রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। এটি প্রাচীনকালে মেহমান আপ্যায়ন ও বিয়েবাড়িতে পরিবেশিত হতো এক ধরনের রাজকীয় মিষ্টি হিসেবে।
== মন্তব্য ==
লবঙ্গ লতিকা শুধু একটি পিঠা নয়, এটি একটি শিল্প। লতিকা ভাঁজ করার ধরণ, লবঙ্গ গেঁথে মুখ বন্ধ করার পদ্ধতি এবং শেষে মিষ্টি সিরার আবরণ—এই সবকিছু মিলেই এর ঐতিহ্যগত রূপ ও স্বাদকে পূর্ণতা দেয়।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:পিঠা]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
7g7iqx16d4x9q2yycfxitk4rskox2b5
রন্ধনপ্রণালী:তালের কেক
104
26157
84065
81431
2025-06-12T01:29:21Z
MD Abu Siyam
8392
84065
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৬–৮ জন
| তৈরির সময় = ৭–৮ ঘণ্টা (তালের গোলা প্রস্তুতসহ)
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = এই কেকটি মূলত তালের রস, চালের গুঁড়ো, নারকেল ও গুড় দিয়ে তৈরি এক ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মিষ্টান্ন, যা কলাপাতায় তৈরি করলে আলাদা ঘ্রাণ ও স্বাদ পায়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''তালের কেক'''</big></center>
তালের কেক একটি অনন্য ও প্রাচীন মিষ্টান্ন যা প্রধানত বাংলার গ্রামীণ এলাকায় প্রচলিত। এই কেকের মূল উপাদান হলো তালের গোলা, যা থেকে এর স্বাদ ও ঘ্রাণে আসে একটি স্বাভাবিক মিষ্টতা ও গ্রামীণ সুবাস। কলাপাতায় পেঁচিয়ে অথবা বিছিয়ে এটি সেকে তৈরি করা হয়, যা একে অন্য সব কেক থেকে আলাদা করে তোলে।
== উপকরণ ==
=== প্রধান উপকরণ ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| তালের গোলা || ৪ কাপ
|-
| চালের গুঁড়ো || ২ কাপ
|-
| ময়দা || ১ কাপ
|-
| গুঁড়া দুধ || ১ কাপ
|-
| খেজুরের গুড় || ২ কাপ
|-
| চিনি || ২ টেবিল চামচ
|-
| ডিম || ২টি
|-
| নারকেল কোড়ানো || ১ কাপ
|-
| ঘি || আধা কাপ
|-
| এলাচ গুঁড়া || ১/৪ চা চামচ
|-
| কিশমিশ || ১ টেবিল চামচ
|-
| পেস্তা বাদাম কুচি || ১ টেবিল চামচ
|-
| বেকিং পাউডার || ৩ চা চামচ
|-
| লবণ || সামান্য
|-
| কলাপাতা || পরিমাণমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# তালের কচি অংশ থেঁতো করে ছাঁকনি দিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে তালের গোলা তৈরি করুন।
# এরপর এটি ঢেকে রেখে ৬–৭ ঘণ্টা উষ্ণ স্থানে রাখুন যাতে এটি অল্প ফেঁপে উঠে এবং ঘন হয়ে আসে।
# শুকনো খোলায় হালকা টেলে চালের গুঁড়া তৈরি করে নিন।
#ঠাণ্ডা হয়ে এলে এতে ময়দা, গুঁড়া দুধ ও বেকিং পাউডার মিশিয়ে একটি চালনিতে চেলে নিন যাতে মিশ্রণটি ঝরঝরে হয়।
# ডিম, চিনি ও ঘি একসঙ্গে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন যতক্ষণ না মিশ্রণটি হালকা ও ক্রিমি হয়।
#এরপর অল্প অল্প করে তালের গোলা ও খেজুরের গুড় মিশিয়ে নিন।
#তারপর চালের গুঁড়ার মিশ্রণ, নারকেল কোড়ানো, এলাচ গুঁড়া, সামান্য লবণ ও কিশমিশ ধীরে ধীরে একসঙ্গে মেশান।
#একটি পাত্রে কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপরে মিশ্রণটি ঢেলে দিন। চাইলে ওপরে পেস্তা কুচি ছিটিয়ে দিন। প্রি-হিটেড ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৫০–৫৫ মিনিট বেক করুন।
#ভেতরের অংশ ভালোভাবে বেক হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে কাঠি ঢুকিয়ে দেখুন—পরিষ্কার বের হলে বুঝবেন বেক হয়েছে।
#এরপর ওপরে আবার কিছু কলাপাতা বিছিয়ে কয়লার আগুন বা চুলার খুব হালকা আঁচে ১৫–২০ মিনিট রাখুন। মিষ্টি ঘ্রাণ বের হলে বুঝবেন কেকটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
#তালের কেক ঠান্ডা হলে টুকরা করে পরিবেশন করুন। এটি চায়ের সঙ্গে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে উপযোগী একটি অনন্য পিঠা-কেক মিষ্টান্ন।
== পরামর্শ ==
* কলাপাতা আগে থেকে আগুনে হালকা সেঁকে নিতে হবে যাতে তা সহজে ভাঁজ হয় ও ভাঙ্গে না।
* চাইলে গুড়ের পরিবর্তে মধু দিয়ে চেষ্টা করা যায়, তবে স্বাদে পার্থক্য আসবে।
* ওভেন না থাকলে এটি স্টিমারে বা মাটির হাঁড়ির ভাপেও তৈরি করা যায়।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:তালের খাবার]]
[[Category:বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
[[Category:কেক]]
arc0j0xsr77dkeeidx22f4chr39mu5m
রন্ধনপ্রণালী:তালের পায়েস
104
26158
84066
81433
2025-06-12T01:30:29Z
MD Abu Siyam
8392
84066
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মিষ্টান্ন
| পরিবেশন = ৪–৬ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = তালের পায়েস একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পায়েস যা খেজুর গুড়, তালের মাড় ও আতপ চালের অসাধারণ সমন্বয়ে তৈরি হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''তালের পায়েস'''</big></center>
তালের পায়েস বাংলার এক পুরোনো মিষ্টান্ন যা মূলত বর্ষাকাল বা তালের মৌসুমে তৈরি করা হয়। এর বিশেষত্ব হলো তালের মাড়ের মোলায়েম স্বাদ, খেজুর গুড়ের ঘ্রাণ আর নারকেলের মিষ্টতা একত্রে মিলেমিশে এমন এক উপাদেয় পদ তৈরি করে যা উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন কিংবা পারিবারিক আয়োজনের শ্রেষ্ঠ অংশ হিসেবে ধরা হয়। মাওয়া, ঘন দুধ এবং মসলার মিশেলে এটি হয়ে ওঠে আরও সমৃদ্ধ ও সুগন্ধময়।
তালের পায়েস মূলত বর্ষার সময় তাল পাকার মৌসুমে তৈরি হয়। এটি বাংলার গ্রামীণ জনপদে বহু প্রজন্ম ধরে তৈরি হয়ে আসছে এবং বিভিন্ন উৎসব যেমন ভাদ্র সংক্রান্তি বা নবান্ন উৎসবে এর কদর সবচেয়ে বেশি।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| আতপ চাল || ১ কাপ
|-
| ঘন দুধ || ১ কাপ
|-
| খেজুর গুড় || ১ কাপ
|-
| তালের মাড় || ১/২ কাপ
|-
| এলাচ || ৩–৪টি
|-
| দারুচিনি || ১ টুকরা
|-
| মাওয়া || ১/২ কাপ
|-
| নারকেল কোরা || ১/২ কাপ
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#প্রথমে আতপ চাল ভালোভাবে ধুয়ে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন।
#এরপর ঘন দুধ, এলাচ ও দারুচিনি একসঙ্গে একটি পাত্রে জ্বাল দিন।
#দুধ ফুটে উঠলে চাল দিয়ে ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন। অল্প আঁচে চাল সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে।
#চাল সেদ্ধ হয়ে এলে খেজুরের গুড় দিয়ে মিশিয়ে দিন। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন এবং গুড় ভালোভাবে গলে দুধে মিশে গেলে তালের মাড় দিন। এবার আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিন যাতে সব উপাদান ভালোভাবে একত্রিত হয় ও ঘনত্ব বাড়ে।
#সবশেষে মাওয়া ও নারকেল কোরা দিয়ে হালকা করে মিশিয়ে ২–৩ মিনিট জ্বাল দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
== পরিবেশন ==
তালের পায়েস গরম বা ঠান্ডা – দুইভাবেই পরিবেশন করা যায়। পায়েসটি পাত্রে ঢেলে ওপর থেকে সামান্য কিশমিশ বা বাদাম ছিটিয়ে পরিবেশন করলে এটি আরও আকর্ষণীয় দেখায়।
== পরামর্শ ==
* দুধ ঘন করার জন্য চাইলে আগে থেকেই তা কিছুটা জ্বাল দিয়ে নিতে পারেন।
* মাওয়া না থাকলে গুঁড়া দুধ ব্যবহার করে ঘনতা ও স্বাদ বজায় রাখা যায়।
* খেজুরের গুড়ের পরিবর্তে চিনিও ব্যবহার করা যায়, তবে তালের স্বাদ কমে যেতে পারে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:মিষ্টান্ন]]
[[Category:তালের খাবার]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
[[Category:পায়েস]]
gvr99jo9f7bgdq64xwevf7nmb92z390
রন্ধনপ্রণালী:চুঙ্গা পিঠা
104
26163
84067
81446
2025-06-12T01:31:46Z
MD Abu Siyam
8392
84067
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পিঠা
| পরিবেশন = ৬–৮ জন
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = চুঙ্গা পিঠা একটি প্রাচীন ও বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া বাঙালি পিঠা, যা ঢলুবাঁশে পুড়িয়ে প্রস্তুত করা হয়।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''চুঙ্গা পিঠা'''</big></center>
চুঙ্গা পিঠা পূর্ববাংলার একটি প্রাচীন ও শ্রমসাধ্য পিঠা যা ঢলুবাঁশ বা তৈলাক্ত জাতের বিশেষ বাঁশের মধ্যে চাল ও অন্যান্য উপাদান ভর্তি করে খড়ের আগুনে পোড়ানো হয়। এই পিঠা মূলত সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলে বেশি প্রচলিত। চুঙ্গা পিঠা শুধুই একটি খাবার নয়, এটি একটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক, যা প্রকৃতি ও গ্রামের জীবনযাত্রার ঘনিষ্ঠ সংযোগ বহন করে।
চুঙ্গা পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির এক অসাধারণ উদাহরণ, যেখানে পরিবেশবান্ধব উপাদান যেমন বাঁশ, খড় ও কলাপাতা ব্যবহার করে এক অনন্য খাবার তৈরি হয়। এই পিঠা উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন এবং ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানেও বিশেষভাবে পরিবেশিত হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| বিন্নি চাল || ২ কাপ (৩–৪ ঘণ্টা পানিতে ভেজানো)
|-
| নারকেল কোরা || ১ কাপ
|-
| খেজুর গুড় / চিনি || ১ কাপ (রুচি অনুযায়ী)
|-
| ঘন দুধ || ১ কাপ (ঐচ্ছিক)
|-
| লবণ || সামান্য
|-
| কলাপাতা || প্রয়োজনমতো (মোড়ানোর জন্য)
|-
| ঢলুবাঁশের চুঙ্গা || ৫–৬টি (প্রস্তুত করা)
|-
| খড় / কাঠ || পোড়ানোর জন্য
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#বিন্নি চাল অন্তত ৩ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। চাইলে চালটি একটু ভেজে শুকনা গুঁড়াও করে নিতে পারেন, তবে ভেজানো অবস্থাতেই ব্যবহৃত হওয়াই প্রচলিত।
#ভেজানো চালের সঙ্গে নারকেল কোরা, গুড় বা চিনি, সামান্য লবণ ও ঘন দুধ একত্রে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি যেন খুব পাতলা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
#কলাপাতা আগুনে হালকা সেঁকে নরম করে নিন। এরপর চালের মিশ্রণ কলাপাতায় মুড়ে ঢলুবাঁশের চুঙ্গার ভেতরে ভরে দিন।
#চুঙ্গার মুখে আরও একটি কলাপাতা দিয়ে বন্ধ করে, তারপরে খড় বা মাটি দিয়ে ভালোভাবে সিল করে দিন যাতে ভিতরের বাষ্প বের হতে না পারে।
#ইট বা পাথরের সাহায্যে একটি উঁচু মঞ্চ তৈরি করে তার উপর চুঙ্গাগুলো বিছিয়ে দিন। নিচে ও উপরে খড় দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিন।
#প্রতি ১০–১৫ মিনিট পর পর চুঙ্গাগুলো ঘুরিয়ে দিন যেন সব দিক সমানভাবে পুড়ে সেদ্ধ হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর চুঙ্গা থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ বের হলে বুঝবেন পিঠা প্রস্তুত।
== পরিবেশন ==
পুড়ে যাওয়ার পর বাঁশ ঠাণ্ডা হলে তার গায়ে চাপ দিলে পিঠাটি মোমবাতির মতো সরে বেরিয়ে আসে। এটি কেটে কেটে পরিবেশন করা যায়। গরম গরম চুঙ্গা পিঠার স্বাদ অনন্য, তবে ঠাণ্ডা হলেও বিশেষভাবে উপভোগ্য।
== পরামর্শ ==
* ঢলুবাঁশ ছাড়া সাধারণ বাঁশ ব্যবহার করলে তা পোড়ে যেতে পারে, তাই ঢলুবাঁশ ব্যবহার করাই উত্তম।
* পিঠার স্বাদ বাড়াতে ঘন নারকেল দুধ বা এলাচ গুঁড়া যোগ করা যেতে পারে।
* পাকা কলাপাতা না পেলে কলাপাতার পরিবর্তে সুতির কাপড়ও ব্যবহৃত হতে পারে, তবে স্বাদে ভিন্নতা আসবে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:পিঠা]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
[[Category:সিলেটি খাবার]]
8ch4b8b8c6f131216m3qqafc5gskc1q
রন্ধনপ্রণালী:লইট্টা শুটকি ভর্তা
104
26199
84068
81589
2025-06-12T01:33:02Z
MD Abu Siyam
8392
84068
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = শুটকি ভর্তা
| পরিবেশন = ৪–৫ জন
| তৈরির সময় = ৩০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = উপকূলীয় অঞ্চলের জনপ্রিয় লইট্টা শুটকি ভর্তা রান্না খুব সহজ এবং স্বাদে অনন্য।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''লইট্টা শুটকি ভর্তা'''</big></center>
লইট্টা শুটকি ভর্তা বাংলাদেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিশেষ শুটকি-ভিত্তিক খাবার, যা ঝাল ও সুগন্ধি স্বাদের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়। এটি কেবলমাত্র একটি ভর্তাই নয়, বরং বাঙালি রান্নার এক চিরচেনা ঐতিহ্য যা গ্রামবাংলার প্রতিটি প্রান্তে শুটকির গন্ধে মন মাতিয়ে তোলে। বিশেষত গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করলে এই ভর্তা এক আলাদা মায়াজাল তৈরি করে।
লইট্টা শুটকি পল্লী বাংলার মাছ সংরক্ষণের অন্যতম পুরনো পদ্ধতির একটি অংশ। উপকূলীয় অঞ্চলে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর পরিমাণে লইট্টা মাছ ধরা পড়ে এবং তখন সেগুলো শুকিয়ে রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা হয়। এই শুটকি থেকে ভর্তা, তরকারি ও ভুনা সহ নানা পদের রান্না হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| লইট্টা শুটকি || ৫–৬ টুকরা (পরিষ্কার করে নেওয়া)
|-
| পেঁয়াজ কুচি || ১ কাপ
|-
| কাঁচা মরিচ || ৮–১০টি (স্বাদ অনুযায়ী)
|-
| রসুন || ৫–৬ কোয়া
|-
| শুকনা মরিচ || ৪–৫টি (ঐচ্ছিক)
|-
| সরিষার তেল || ৪ টেবিল চামচ
|-
| লবণ || স্বাদ অনুযায়ী
|-
| ধনে পাতা কুচি || ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#লইট্টা শুটকি পরিষ্কার করে নিতে হবে। যদি বেশি কাঁটা থাকে, তবে তা কেটে বাদ দেওয়া উচিত।
#এবার একটি খোলা জায়গায় শুটকিগুলো শুকনা তাওয়ায় হালকা করে ভেজে নিতে হবে অথবা চুলার আগুনে একটু ঝলসে নিলেও ভালো হয়। চাইলে ভাপে সিদ্ধ করেও নিতে পারেন যাতে গন্ধ কিছুটা কমে আসে।
#পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ ভালোভাবে কুচি করে নিন। শুকনা মরিচও হালকা ভেজে নিন।
#এরপর একটি শিলনোড়া বা মসলা বাটার পাথরে সমস্ত উপকরণ একত্রে বেটে নিতে হবে। প্রথমে রসুন ও মরিচ বেটে, পরে পেঁয়াজ, তারপর শুটকি দিয়ে বাটতে হবে।
#বাটানো ভর্তার মধ্যে সরিষার তেল ও সামান্য লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন। চাইলে কিছু ধনে পাতা কুচি দিয়ে মেখে নিতে পারেন।
== পরিবেশন ==
ভর্তাটি গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করলে সবচেয়ে ভালো লাগে। এটি নিরামিষভোজিদের জন্য নয়, কিন্তু যারা ঝাল এবং শুটকির গন্ধ পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি এক দুর্দান্ত খাবার।
== পরামর্শ ==
* শুটকি ভাজার সময় চুলার নিচে পানি রেখে দিন, এতে গন্ধ কম ছড়ায়।
* চাইলে একটু লেবুর রস বা সরষে বাটা দিয়েও স্বাদ বাড়ানো যায়।
* ভর্তা তৈরি করার পর কিছুক্ষণ রেখে দিলে স্বাদ আরও ভালো হয়।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:শুটকি]]
[[Category:ভর্তা]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
eblumen89fm9sie9eivmaaz2bgsrbfb
84069
84068
2025-06-12T01:33:13Z
MD Abu Siyam
8392
84069
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = ভর্তা
| পরিবেশন = ৪–৫ জন
| তৈরির সময় = ৩০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = উপকূলীয় অঞ্চলের জনপ্রিয় লইট্টা শুটকি ভর্তা রান্না খুব সহজ এবং স্বাদে অনন্য।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''লইট্টা শুটকি ভর্তা'''</big></center>
লইট্টা শুটকি ভর্তা বাংলাদেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিশেষ শুটকি-ভিত্তিক খাবার, যা ঝাল ও সুগন্ধি স্বাদের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়। এটি কেবলমাত্র একটি ভর্তাই নয়, বরং বাঙালি রান্নার এক চিরচেনা ঐতিহ্য যা গ্রামবাংলার প্রতিটি প্রান্তে শুটকির গন্ধে মন মাতিয়ে তোলে। বিশেষত গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করলে এই ভর্তা এক আলাদা মায়াজাল তৈরি করে।
লইট্টা শুটকি পল্লী বাংলার মাছ সংরক্ষণের অন্যতম পুরনো পদ্ধতির একটি অংশ। উপকূলীয় অঞ্চলে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর পরিমাণে লইট্টা মাছ ধরা পড়ে এবং তখন সেগুলো শুকিয়ে রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা হয়। এই শুটকি থেকে ভর্তা, তরকারি ও ভুনা সহ নানা পদের রান্না হয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| লইট্টা শুটকি || ৫–৬ টুকরা (পরিষ্কার করে নেওয়া)
|-
| পেঁয়াজ কুচি || ১ কাপ
|-
| কাঁচা মরিচ || ৮–১০টি (স্বাদ অনুযায়ী)
|-
| রসুন || ৫–৬ কোয়া
|-
| শুকনা মরিচ || ৪–৫টি (ঐচ্ছিক)
|-
| সরিষার তেল || ৪ টেবিল চামচ
|-
| লবণ || স্বাদ অনুযায়ী
|-
| ধনে পাতা কুচি || ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#লইট্টা শুটকি পরিষ্কার করে নিতে হবে। যদি বেশি কাঁটা থাকে, তবে তা কেটে বাদ দেওয়া উচিত।
#এবার একটি খোলা জায়গায় শুটকিগুলো শুকনা তাওয়ায় হালকা করে ভেজে নিতে হবে অথবা চুলার আগুনে একটু ঝলসে নিলেও ভালো হয়। চাইলে ভাপে সিদ্ধ করেও নিতে পারেন যাতে গন্ধ কিছুটা কমে আসে।
#পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ ভালোভাবে কুচি করে নিন। শুকনা মরিচও হালকা ভেজে নিন।
#এরপর একটি শিলনোড়া বা মসলা বাটার পাথরে সমস্ত উপকরণ একত্রে বেটে নিতে হবে। প্রথমে রসুন ও মরিচ বেটে, পরে পেঁয়াজ, তারপর শুটকি দিয়ে বাটতে হবে।
#বাটানো ভর্তার মধ্যে সরিষার তেল ও সামান্য লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন। চাইলে কিছু ধনে পাতা কুচি দিয়ে মেখে নিতে পারেন।
== পরিবেশন ==
ভর্তাটি গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করলে সবচেয়ে ভালো লাগে। এটি নিরামিষভোজিদের জন্য নয়, কিন্তু যারা ঝাল এবং শুটকির গন্ধ পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি এক দুর্দান্ত খাবার।
== পরামর্শ ==
* শুটকি ভাজার সময় চুলার নিচে পানি রেখে দিন, এতে গন্ধ কম ছড়ায়।
* চাইলে একটু লেবুর রস বা সরষে বাটা দিয়েও স্বাদ বাড়ানো যায়।
* ভর্তা তৈরি করার পর কিছুক্ষণ রেখে দিলে স্বাদ আরও ভালো হয়।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:শুটকি]]
[[Category:ভর্তা]]
[[Category:ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
jchwrpqc1gkvkt9zwwa08dbzhubyxhn
চিন্তন ও নির্দেশনা/পড়তে শেখা
0
26202
84053
83614
2025-06-11T19:17:10Z
NusJaS
8394
84053
wikitext
text/x-wiki
পড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা. কারণ এটি আমাদের সব একাডেমিক বিষয় শিখতে সাহায্য করে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরের সফলতার জন্যও এটি খুবই জরুরি। পড়তে শেখা একটি জটিল ও বহু বছরের প্রক্রিয়া। এখানে প্রতীক এবং লিখিত শব্দের শব্দ ও অর্থ চিনতে শেখা অন্তর্ভুক্ত। শিশুদের জন্য পড়ার দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, কারণ এটিই তাদের সাক্ষরতা ও শেখার জগতে প্রবেশের দরজা, যা জীবনের অনেক দিকের ওপর নির্ভর করে।
[[চিত্র:A_Family_Place_Library_(14071466252).jpg|থাম্ব|পড়তে শেখা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেক শিশু সহজ শব্দ ও রঙিন ছবিযুক্ত বই পড়া দিয়ে শুরু করে, তারপর ধীরে ধীরে কঠিন বই পড়ার দিকে এগিয়ে যায়।]]
এই অধ্যায়ে পড়তে শেখার বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়েছে। এর শুরু হয়েছে পড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীয় উপাদান যেমন স্মৃতি ও মনোযোগ দিয়ে। এখানে পড়ার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং শিক্ষাদানের ওপর এর কিছু প্রভাবও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেহেতু প্রতিটি শিশু আলাদা, তাই পড়তে শেখানোর জন্য একক কোনো পদ্ধতি সব শিশুর ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এই অধ্যায়ে পড়ার তিনটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে প্রথমে এমন শিশুদের কথা বলা হয়েছে যারা কোনো শব্দ পড়তে বা চিনতে পারে না, এবং শেষ পর্যন্ত এমন শিশুদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা অচেনা শব্দগুলো ডিকোড করার জন্য অক্ষর ও তাদের শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। বর্তমানে পড়তে শেখানোর পদ্ধতিতে বিভিন্ন তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত কৌশলগুলো একত্রিত করে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযোজিত করা হয়। অবশেষে, পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়নের কয়েকটি কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
== পড়ার জ্ঞানীয় উপাদান ==
পড়ার ক্ষেত্রে সফলতা নির্ভর করে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি ব্যবহারের পাশাপাশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ওপর, যাতে পাঠের অর্থ বোঝা যায়। পাশাপাশি, পাঠককে তার আশেপাশের জগত সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকতে হয় যাতে সে তথ্যটি অনুধাবন করতে পারে।
=== স্মৃতি ===
কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি এমন জ্ঞানীয় উপাদান, যা শিশুর পড়তে শেখার সাফল্যের সঙ্গে জড়িত। পড়া একটি স্মৃতিভিত্তিক কাজ, কারণ এটি বিশ্ব ও ভাষাগত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যখন একটি শিশু একটি শব্দ শিখছে, তখন তাকে সেই শব্দটি যথেষ্ট সময় ধরে মনে রাখতে হয় যাতে সে বাক্যাংশ, বাক্য এবং পুরো অনুচ্ছেদের জটিল অর্থ বুঝতে পারে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। একটি শিশু যা পড়েছে, সেটি অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য কার্যকর স্মৃতির প্রয়োজন <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি অন্যান্য স্মৃতির ধরন থেকে আলাদা, কারণ এটি প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ উভয়কে প্রতিফলিত করে <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি প্রায়শই শিশুদের পড়তে শেখার উন্নয়ন বোঝার জন্য গবেষণায় ব্যবহৃত হয় এবং Baddeley-এর মডেলটি কার্যকর স্মৃতি ও পড়ার উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই মডেলে দুটি মৌলিক দিক রয়েছে: ধ্বনিগত লুপ ও ভিজ্যুয়াল স্কেচপ্যাড <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ধ্বনিগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি অভ্যন্তরীণ অনুশীলন অংশ রয়েছে, যাকে বলা হয় articulatory loop, যা ধ্বনিগত তথ্যকে দীর্ঘ সময় ধরে স্মৃতিতে ধরে রাখতে সাহায্য করে, যাতে শব্দ ডিকোড ও পাঠ অনুধাবন সম্ভব হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। যখন শিশুরা শব্দ ডিকোড করতে পারে না বা সমস্যায় পড়ে, তখন এটি ধ্বনিগত সচেতনতার সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই ধরণের সমস্যা থাকা শিশুরা কথ্য ভাষার শব্দগত গঠন বোঝে না বা তার নাগাল পায় না <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ছোটবেলায় শিশুদের কার্যকর স্মৃতির পরিসর সীমিত থাকে কারণ তাদের এনকোডিং ও অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এখনো পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। পড়াকে অর্থবহ করে তুলতে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনের স্মৃতি প্রয়োজন <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। তাই যখন শিশুরা নতুন কিছু শেখে, তখন সেই তথ্যকে তাদের কার্যকর স্মৃতিতে সতেজ রেখে আগের শিখে রাখা তথ্যকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি থেকে আহরণ করতে হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। শিশুদের দক্ষ পাঠক হওয়ার জন্য, তাদের অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে জানতে হবে, যাতে বাক্য বা অনুচ্ছেদের অর্থ বোঝার সময় খুব বেশি সময় ধরে শব্দের অর্থ মনে রাখতে না হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। দুর্বল পাঠকরা যদি যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে না পারে, তাহলে তাদের অতিরিক্ত সময় নিতে হয় শব্দ বুঝতে, যা পাঠ অনুধাবনে বাড়তি চাপ তৈরি করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
=== মনোযোগ ===
পড়া ও মনোযোগের বিষয়ে আসলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মনোযোগ ছাড়া কোনো পাঠ অনুধাবন সম্ভব নয়। মনোযোগ ছাড়া কেউ পড়তে পারে না। ছোট শিক্ষার্থীদের পড়ানো প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং হয়, কারণ কেউ কেউ দীর্ঘ সময় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না, বা তারা যে উপাদান পড়ছে, সেটির প্রতি আগ্রহও থাকতে পারে না।
একজন শিশুকে পড়তে হলে, তার সামনে একটি বই খোলা থাকতে হবে এবং তাকে লেখার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson</ref> এমন অবস্থায় শিশুদের আনাও অনেক সময় একটি বড় অর্জন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ কিছু শিশু এই ধরণের কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
শুধু বইয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়াই নয়, পড়ার সময় শিশুদের উচিত সংযোগ তৈরি করা—যাতে পড়ার ছোট ছোট অংশগুলো বড় বিষয়ের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত, তা বুঝতে পারে। এ ক্ষেত্রেও অনেক মনোযোগের প্রয়োজন হয়, কারণ প্রায়শই একটি ছোট পয়েন্ট উপেক্ষা করা হলে, সেটি পরে শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বড়রা যেখানে পড়ার প্রক্রিয়ায় খুব বেশি মনোযোগ না দিয়েও পড়তে পারে, ছোটদের ক্ষেত্রে তা হয় না, কারণ তারা এখনো সেই প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে শেখেনি বা চর্চা করেনি। চোখের গতি ও বাম থেকে ডানে চোখ সরানোর মতো বিষয়গুলিও এই ধরনের মনোযোগের অন্তর্ভুক্ত।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref> পাঠের সময় মনোযোগকেও শব্দ থেকে শব্দে সুনির্দিষ্টভাবে সরানো উচিত এবং নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি শব্দ পাঠের মূল বার্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। এছাড়াও, চিত্র বা ছবি থেকে লেখায় এবং আবার লেখায় থেকে চিত্রে মনোযোগ স্থানান্তর করতে হবে যাতে গল্পের সব উপাদান অর্থবহ হয়।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
== পড়া সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা ==
যতটা না পড়ার জন্য শিশুর অক্ষর ও শব্দ বুঝে নেওয়া এবং পূর্বজ্ঞান কাজে লাগানো প্রয়োজন, ঠিক ততটাই এই দক্ষতা শেখানোও জরুরি। তবে কিছু শিক্ষার্থী শেখার এই প্রক্রিয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা অনেক সময় শেখার অক্ষমতার কারণে হয়। এমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার সময় তাদের সমস্যাকে মাথায় রেখে সাক্ষরতা বিকাশের কার্যকর উপায়গুলো ব্যবহার করতে হয়।
=== পড়ার সমস্যার নির্ণয় ===
প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে, পড়তে শেখা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকা একটি প্রতিবন্ধকতা শেখার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, অর্থাৎ শিক্ষককে প্রায়শই নিজের শিক্ষাদানের ধরন পরিবর্তন করতে হয় যাতে শিক্ষার্থী তথ্যটি বুঝতে পারে। যদিও "প্রতিবন্ধকতা" শব্দটি অনেক কিছু বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, তবে প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা আলাদা, এবং প্রতিটি পড়াকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
অধিকাংশ সময় পড়ার সমস্যা চিহ্নিত করার সবচেয়ে কঠিন অংশ হলো, সমস্যাটা আসলে কোথায় তা নির্ধারণ করা। নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনটি নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করা হয়। প্রথমত, শিক্ষার্থীর পড়ার অভ্যাস যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করতে হয়, কোন অংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। দ্বিতীয়ত, বিশ্লেষণটি প্রাসঙ্গিক ও বিদ্যমান তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। শেষত, তথ্য বিশ্লেষণের সময় মানসিকভাবে খোলা মন নিয়ে থাকতে হবে। <ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref> যদিও খোলা মন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে না-ও হতে পারে, তবে নির্ণয়ের সময় এটি বড় ভূমিকা পালন করে, কারণ একটি পড়ার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য কোনো তত্ত্ব প্রমাণ বা খণ্ডন করা নয়, বরং শিক্ষার্থীর সমস্যাটা কোথায় সেটা খুঁজে বের করা। এছাড়া, অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে না, বরং একাধিক ক্ষেত্রে সমস্যার লক্ষণ দেখায়। এই ধরনের ক্ষেত্রে খোলা মনের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ণয় ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর কারণ, কোনো শিশুর যদি পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলেও সেটা কোনো নির্দিষ্ট মডেল বা ফর্মুলায় ফিট নাও করতে পারে, এবং সেটা থাকলেই সেটা "প্রতিবন্ধকতা" হিসেবে বিবেচিত হবে না।
নির্ণয়ের নীতির বাইরে, এখানে নির্ণয় প্রক্রিয়ার ছয়টি সাধারণ ধাপ রয়েছে:
১. "ক্লাস বা স্কুলের পড়ার কৃতিত্ব পরিমাপ করা" - প্রতিটি ক্লাসে পড়ার স্তর পরিমাপ করার জন্য শিক্ষার্থীদের পড়ার পরীক্ষা দেওয়া হয় এবং স্কোরের ঘাটতি দেখা যায়।
২. "প্রতিটি গ্রেডের জন্য প্রধান পড়ার সমস্যাগুলো নির্বাচন করা" - পরীক্ষার স্কোরগুলো বিশ্লেষণ করা হয় এবং প্রতিটি গ্রেডের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা নির্ধারণ করা হয় এবং গড়ের নীচে যে কোনও শিক্ষার্থীর মনোযোগ এবং সমর্থন প্রয়োজন।
৩। "পড়ার ঘাটতি রয়েছে এমন ছাত্রদের নির্বাচন করা" - গড়ের নীচে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দেওয়া হয়।
৪। "পৃথক নির্ণয়ের জন্য নির্বাচিত ছাত্রদের সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য প্রাপ্তি" - শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য, সাধারণ বুদ্ধি এবং মনোভাব সম্পর্কে তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রায়ই এই ধরনের কারণগুলো শিক্ষার্থীর সাধারণ ঝোঁক দক্ষতার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যান্য বিষয় যেমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য স্প্যান, স্থিরকরণের সংখ্যা এবং নিয়মিততা, ডিসলেক্সিয়া, কণ্ঠস্বর এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাসগুলোও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
৫। "পড়ার ঘাটতির প্রকারভেদ নির্ধারণ" এবং ৬। "পড়ার ত্রুটিগুলোর কারণগুলো নির্ধারণ করা" একটি বৃহত্তর পদক্ষেপে গোষ্ঠীভুক্ত করা যেতে পারে। কারণ পূর্ববর্তী চারটি পদক্ষেপগুলো কীভাবে এবং কেন শিক্ষার্থীর শিখতে অসুবিধা হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।
যদিও এই পদক্ষেপগুলো কোনও শিক্ষার্থীর সাথে কী অসুবিধা হতে পারে তা নির্ধারণে গাইডলাইন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, প্রতিটি ক্ষেত্রে অনন্য এবং সেই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে এমন অন্যান্য পদ্ধতিতে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পাঁচটি কাজ রয়েছে যা কোনও শিশু আসলে ডিসলেক্সিক কিনা তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে: মৌখিক শব্দ এবং সিউডোওয়ার্ড পড়া, মৌখিক পাঠ্য পড়া, মৌখিক ছদ্মশব্দ পাঠ্য পড়া, মৌখিক শব্দ তালিকা পড়া, এবং বানান শব্দ এবং ছদ্মশব্দ। এই পরীক্ষাগুলো করার সময়, চার ধরণের পড়ার গতি এবং চারটি স্তরের পড়া এবং বানান নির্ভুলতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। যদি কোনও শিশু প্রতিটি পরীক্ষিত কাজের জন্য স্কোরের নীচের ১০ তম শতাংশে অবতরণ করে তবে দেখা যায় যে তাদের পড়া এবং বোঝার ক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। সম্পূর্ণরূপে ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ের জন্য, শিশুকে অবশ্যই চারটি নির্ভুলতা পরীক্ষার মধ্যে সর্বনিম্ন তিনটিতে বা চারটি সাবলীলতা পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে বা নির্ভুলতা পরীক্ষার দুটিতে নীচের ১০ তম শতাংশে স্কোর করতে হবে।
অতীতে, শেখার অক্ষমতাগুলো আইকিউ পরীক্ষা এবং পড়ার পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্কোরের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। যদি তাদের আইকিউ গড় পাওয়া যায় তবে কম পড়ার কৃতিত্বের স্কোর দেখায়। তবে শিশুটি শেখার অক্ষমতা হিসাবে নির্ণয় করা হয়েছিল। বৈষম্য মডেল ভিত্তিক পদ্ধতি হিসাবে পরিচিত, নির্ণয়ের এই প্রক্রিয়াটি অনেক স্কুলে ব্যবহৃত হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে স্থাপন করা হয়েছিল যা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা সরবরাহ করতে পারে।
আজ, পড়ার কম্পোনেন্ট মডেলটি পড়া এবং শেখার অক্ষমতা বুঝতে এবং নির্ণয় করতে সহায়তা করার জন্য প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। কম্পোনেন্ট মডেল অফ রিডিং (সিএমআর) এর তিনটি ডোমেন রয়েছে: জ্ঞানীয়। এর মধ্যে শব্দ স্বীকৃতি এবং বোধগম্যতার দুটি উপাদান রয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক। এর মধ্যে অনুপ্রেরণা এবং আগ্রহের উপাদান, নিয়ন্ত্রণের লোকাস, শেখার শৈলী এবং লিঙ্গ পার্থক্য এবং পরিবেশগত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাড়ি এবং শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি, পিতামাতার জড়িত হওয়া এবং উপভাষা। একটি বিষয় মনে রাখবেন যে জ্ঞানীয় ডোমেনের উপাদানগুলো একজন শিক্ষার্থীর স্বাধীনতার শর্ত পূরণ করতে পারে। তবে মনস্তাত্ত্বিক এবং পরিবেশগত ডোমেনগুলোও এটি করে না।
পড়ার উপাদান মডেলের কার্যকারিতা সম্পর্কিত ২০০৫ সালের একটি গবেষণায়, এটি পাওয়া গেছে যে পড়ার অক্ষমতা নির্ধারণের জন্য পূর্বে ব্যবহৃত আইকিউ পরীক্ষাগুলো কেবল পড়ার বোধগম্যতার প্রায় ২৫% পরিবর্তনশীলতার পূর্বাভাস দিতে পারে, যেখানে পড়ার উপাদান মডেলের সাথে, ৩৮-৪১% পরিবর্তনশীলতা পাওয়া যায়।
সামগ্রিকভাবে, পড়া এবং শেখার অক্ষমতা নির্ণয় এমন একটি প্রক্রিয়া যা সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে এবং আরও বেশি সুনির্দিষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও একাধিক ধরণের পড়ার অক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রত্যেককে খোলা মনের অনুভূতির সাথে যোগাযোগ করা উচিত, পাশাপাশি সচেতন সচেতনতা যে প্রতিটি শিশু এবং অক্ষমতা আলাদা হবে। রোগ নির্ণয়ের উপায়গুলোর ক্ষেত্রে এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত পদক্ষেপগুলো কাজ করতে প্রমাণিত হয়েছে, যদিও তারা ভবিষ্যতে পরিবর্তন সাপেক্ষে কারণ শিক্ষাবিদরা হস্তক্ষেপ এবং কীভাবে প্রতিবন্ধীদের অগ্রগতি বা পরিবর্তন সম্পর্কে আরও শিখবেন।
=== পড়ার অসুবিধা এবং অক্ষমতা প্রকারভেদ ===
পড়ার অসুবিধা এবং অক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করার সময়, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পড়া এবং বোধগম্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন বিভিন্ন কারণের বিস্তৃত অ্যারে রয়েছে এবং যে সমস্ত শিক্ষার্থী পড়তে সমস্যা অনুভব করে তাদের "পড়ার অক্ষমতা" ধরা পড়ে না। কখনও কখনও শিক্ষার্থীরা পড়ার জন্য ঝোঁক এবং পড়ার ভাষাতত্ত্ব বোঝার জন্য সংগ্রামের জন্য বিকাশগতভাবে প্রস্তুত হয় না, অন্যরা সাংস্কৃতিক বা ভাষাগত পটভূমি থেকে আসে যা স্কুলে শেখানো পড়ার নির্দেশের ধরণের সাথে মেলে না। এছাড়াও, কিছু শিক্ষার্থীর ভাল নির্দেশনা দিয়েও পড়তে শিখতে অসুবিধা হতে পারে। এটি কম সাধারণ দক্ষতার জন্য দায়ী করা যেতে পারে। এর অর্থ তারা পড়ার চেয়ে বোধগম্যতার সাথে বেশি লড়াই করে।
শিক্ষার্থীরা গড় বা গড় বুদ্ধিমত্তার চেয়ে বেশি হলেও পড়ার অক্ষমতাও থাকতে পারে। এটি দরিদ্র পাঠকদের চেয়ে আলাদা। বক্তৃতা সমস্যাগুলো প্রায়ই লেখার এবং বানানের অসুবিধাগুলোর সাথে যুক্ত হয়। এর ফলস্বরূপ শিক্ষার্থীরা যা পড়ছে তা সফলভাবে পড়তে এবং বোঝার ক্ষমতাকে বাধা দেয়।
একটি সাধারণ পড়ার অসুবিধা কোনও শব্দের ধ্বনিবিজ্ঞানের মধ্যে রয়েছে, বিশেষত যখন কোনও শিক্ষার্থী ভিজ্যুয়াল প্রতীকের সাথে চিঠির শব্দগুলো মেলাতে অক্ষম হয়। এই ক্ষেত্রে সমস্যাটি সংবেদনশীল না হয়ে কেন্দ্রীয় হয়। শব্দ অন্ধত্ব, বা ডিসলেক্সিয়া, আরেকটি সাধারণ পঠন অক্ষমতা যেখানে অক্ষর এবং শব্দগুলো শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে চারপাশে মিশ্রিত হয়। এটি পড়া হচ্ছে তা বোঝার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত অসুবিধা সৃষ্টি করে।
ডিসলেক্সিয়া একটি পড়ার ঘাটতি যা পরিবারগুলোতে চলে। যদি কোনও পিতামাতা বা আত্মীয়েরও অক্ষমতা থাকে তবে সন্তানের ডিসলেক্সিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৪০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
বাম হাতি শিক্ষার্থীদের প্রায়ই পড়তে শিখতে অসুবিধা হয়। কারণ ডানহাতি শিক্ষার্থীদের পক্ষে বাম থেকে ডানে পড়া স্বাভাবিক - তারা এটির চেয়ে শরীরের কেন্দ্র থেকে দূরে নিয়ে যেতে অভ্যস্ত। এটি বাম হাতি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিপরীত।
ধীর, নীরব পঠন ভিজ্যুয়াল ত্রুটিগুলোর পাশাপাশি স্বীকৃতি এবং ডিসলেক্সিয়ার একটি সংকীর্ণ স্প্যানের কারণে হতে পারে, যখন ধীর পড়ার দুর্বল পড়ার বোধগম্যতা ফোকাস করতে অক্ষমতা, মূল ধারণাগুলো সংগঠিত করতে বা মনোযোগের অভাবের কারণে হতে পারে। তবে, যদিও মনোযোগের অভাবের কারণে পড়ার বোধগম্যতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে একক শব্দে অত্যধিক মনোযোগ বা ফোকাসও সমস্যার কারণ হতে পারে। যদি কোনও শিক্ষার্থী পৃথক শব্দগুলোতে খুব বেশি মনোনিবেশ করে তবে তারা সামগ্রিকভাবে একটি বাক্য একসাথে আনতে অক্ষম হতে পারে।
মনোযোগ ঘাটতি হাইপার্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) এর পরিপ্রেক্ষিতে, এটি পাওয়া যায় যে ৮% থেকে ২০% শিক্ষার্থীর এই ব্যাধি রয়েছে। তবে কেবল ৩% থেকে ৭% যথেষ্ট গুরুতর লক্ষণ দেখায় যে তাদের ক্লিনিকাল ডায়াগনোসিস দেওয়া হয় এবং বিশেষ শিক্ষা হস্তক্ষেপ এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হয়। যদিও এডিএইচডি সর্বদা এর অর্থ এই নয় যে কোনও শিক্ষার্থীর পড়ার অক্ষমতা রয়েছে, এটি প্রায়ই একটির সাথে মিলিত হতে পারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যের ভুল ব্যাখ্যা করতে পারে, বা যা পড়া হচ্ছে তাতে সাধারণ সংযোগ সম্পর্কিত সাধারণ বোঝার সমস্যা রয়েছে।
=== শিক্ষার উপর প্রভাব ===
যে কোনও শিক্ষার্থীর মতো যে কোনও বিষয় নিয়ে লড়াই করছে, শিক্ষক এবং শেখার সহায়তাকারীদের উপাদানটিকে শেখার যোগ্য করে তুলতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষণ শৈলী এবং উপাদানগুলোতে পরিবর্তন করা দরকার। একটি পদ্ধতি হলো রিডিং রিকভারি পদ্ধতি। এটি নিউজিল্যান্ডে তৈরি করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে চারটি ধাপ রয়েছে:
১. "শিশুদের বিভিন্ন সাক্ষরতার কাজের উপর মূল্যায়ন করা হয়, যেমন তাদের অক্ষর সনাক্ত করার ক্ষমতা, শব্দ পড়া, লেখা এবং মৌখিক পড়া, পাশাপাশি তাদের সাক্ষরতা জ্ঞান এবং কৌশল"
"৩০ মিনিটের দৈনিক টিউটোরিয়ালগুলোর একটি সিরিজ যেখানে একজন রিডিং রিকভারি শিক্ষক একজন পৃথক শিক্ষার্থীর সাথে একের পর এক কাজ করেন।
৩. "স্ট্যান্ডার্ডাইজড সেশনগুলো যা শিশুকে অক্ষর এবং শব্দগুলো অনুশীলন করা, সংক্ষিপ্ত বই থেকে পড়া এবং সংক্ষিপ্ত রচনাগুলো তৈরি করা সহ ক্রিয়াকলাপগুলোর একটি নিয়মতান্ত্রিক সেট সরবরাহ করে যা কাটা এবং পুনরায় পড়া হয়।
৪. "কর্মীদের বিকাশের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষকরা রিডিং রিকভারি প্রশিক্ষকদের দ্বারা প্রশিক্ষণ পান।
এই স্তরের ভারা উভয়ই শিক্ষার্থীদের শেখার চালিত করার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক এবং দক্ষ এবং শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়ের জন্য উচ্চ স্তরের সহায়তা সরবরাহ করে।
রবার্ট শোয়ার্জ দ্বারা পরিচালিত ২০০৫ সালের একটি গবেষণায়, রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামটি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সহায়তার কার্যকারিতার দিক থেকে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই গবেষণায়, ১৪ টি রাজ্যের ৪৭ টি রিডিং রিকভারি শিক্ষক ১০৭ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৫৩% পুরুষ এবং ৪৭% মহিলা ছিলেন। শিক্ষার্থীদের একটি রিডিং রিকভারি শিক্ষকের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল যিনি প্রোগ্রামটির মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর মধ্যে দৈনিক টিউটোরিয়ালগুলো ৩০ মিনিটের দৈর্ঘ্যের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা কাঠামোগত ক্রিয়াকলাপগুলোর দিকে লক্ষ্য করা হয় যার মধ্যে অক্ষর এবং শব্দ অনুশীলন করা, ছোট বই পড়া, লেখার ছোট ছোট টুকরো তৈরি করা হয় যা পরে বিভক্ত হয় এবং পুনরায় পড়া হয়। অধ্যয়ন শেষে, ৬৫% শিক্ষার্থী প্রোগ্রামটি "স্নাতক" করেছে, ১৬% আরও সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল এবং ১৬% প্রোগ্রামটি সম্পূর্ণ করেনি। এটি জাতীয় পঠন পুনরুদ্ধারের ডেটার সাথে তুলনা করা যেতে পারে: ৫৬% শিক্ষার্থী স্নাতক হয়েছেন, ১৫% আরও সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল, ১৯% অসম্পূর্ণ হিসাবে লেবেল করা হয়েছিল, ৫% "সরানো হয়েছিল" এবং ৪% "উপরের কোনওটিই নয়" হিসাবে লেবেল করা হয়েছিল। রিডিং রিকভারি পুনর্বাসন এবং হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে একটি খুব সফল প্রোগ্রাম হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামের একটি আকর্ষণীয় দিক হলো যদিও এটি ৮০ এর দশক থেকে রয়েছে, সিস্টেম এবং প্রক্রিয়াটি এখনও কার্যকর এবং কোনও বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি। প্রোগ্রামটির সাফল্যের একটি প্রমাণ হল এটি ইংরেজীভাষী দেশগুলোতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর উচ্চ সাফল্যের হার রয়েছে।
যে কোনও পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী সংগ্রাম করছে, সন্তানের সংগ্রামের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষণ পদ্ধতি এবং পদ্ধতিগুলো অবশ্যই সামঞ্জস্য করতে হবে। পড়তে শেখার পর্যায়ে পড়ার প্রতিবন্ধীদের হস্তক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পড়তে শেখার সাথে বিকশিত একটি সমস্যা যদি শীঘ্রই ধরা না পড়ে তবে একজন শিক্ষার্থীকে সারা জীবন ধরে জর্জরিত করতে পারে। ঠিক এই কারণেই পড়া পুনরুদ্ধার এবং শিক্ষকদের সহায়তার মতো প্রোগ্রামগুলো পড়তে শেখার প্রক্রিয়ায় এত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এসইএ এবং অন্যান্য সহায়তা কর্মীদের সহায়তা শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে উপকৃত করতে পারে এবং শিক্ষকদের কিছু বোঝা কমাতে সহায়তা করতে পারে, তবুও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি শিশুর যা প্রয়োজন তা পূরণ করার জন্য একটি অনন্য শেখার পরিকল্পনা থাকা দরকার এবং তাদের সহায়তার প্রয়োজন নেই।
যদিও সমস্ত শিক্ষার্থী পড়ার অক্ষমতা নির্ণয় করে না। তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে শেখানো উপাদানগুলোর সাথে লড়াই করা অস্বাভাবিক নয়। কখনও কখনও এটি একটি অনির্ণিত অক্ষমতার জন্য দায়ী করা যেতে পারে। একজন অনির্ণীত শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বা একজন শিক্ষার্থী যিনি অক্ষম নন কিন্তু এখনও শেখার সাথে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, হস্তক্ষেপ এবং বোঝার ক্ষেত্রে শিশুর ভবিষ্যতের বিকাশে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
== পড়ার পর্যায়সমূহ ==
জীবনের অন্য যে কোনও জিনিস শেখার মতো, পড়তে শেখার জন্য পদক্ষেপ বা পর্যায় প্রয়োজন। যখন শিশুরা পড়তে শিখতে শুরু করে, তখন তিনটি প্রধান পর্যায় রয়েছে যা তারা সকলেই অতিক্রম করবে। শিশুরা কোনও শব্দ (প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায়) ডিকোড করতে না পেরে পড়তে শিখতে শুরু করে, তারপরে তারা ফোনিক সংকেত এবং অন্যান্য পড়ার কৌশলগুলো (আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়) ব্যবহার করতে শুরু করে এবং অবশেষে এমন একটি বিন্দুতে পৌঁছায় যেখানে তারা অনুরূপ বানানযুক্ত শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় এবং সংযোগ তৈরি করার সময় নতুন শব্দ শিখতে সক্ষম হয় (সম্পূর্ণ বর্ণানুক্রমিক পর্যায়) . ব্যক্তি প্রচলিত সাক্ষরতায় পৌঁছানোর আগে পড়া একাধিক মাত্রায় বিকশিত হয়। এই পর্যায়গুলোর প্রত্যেকটিকে ছোট বাচ্চারা খুব কম সাক্ষরতা-সম্পর্কিত আচরণ প্রদর্শন থেকে অবশেষে পদ্ধতিগতভাবে ভাষা ডিকোড করতে সক্ষম হওয়ার দিকে অগ্রসর হয় বলে বর্ণনা করা হয়।
=== প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায় ===
'''প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ে''' এমন শিশুরা থাকে যারা সাক্ষরতা সম্পর্কে বেশ কিছুটা জানে তবে কোনও শব্দ কীভাবে পড়তে হয় তা জানে না। এই পর্যায়ে শিশুদের কোন বর্ণানুক্রমিক জ্ঞান থাকে না, যে কারণে পর্যায়টিকে প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায় বলা হয়। তবে শিশুরা অনেক শব্দ জানে, পুরো বাক্যে কথা বলতে পারে এবং অন্যদের সাথে কথোপকথন করতে পারে। তবে কোনও আসল শব্দ পড়তে সক্ষম হয় না। তবে এর সাথে যুক্ত প্রতীকটি দেখে তারা একটি শব্দ বলতে পারে। যেমন- বড় 'এম' দেখে 'ম্যাকডোনাল্ডস' শব্দটি পড়া বা একজনের ছবি দেখে 'কুকুর' শব্দটি বলা। শিশুরা 'ম্যাকডোনাল্ডস' শব্দটি বা 'কুকুর' শব্দটির কোনো স্বীকৃতি পায় না এবং একবার ছবি সরিয়ে ফেললে তারা শব্দটিও পড়তে পারবে না। শিশুরা কেবল তাদের পরিবেশে সাড়া দিচ্ছে এবং মুদ্রণে নয়। শিশুরা বেশ কিছু শব্দ জানে এবং পুরো বাক্য বলতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তারা নিজেরাই শব্দ বা কোনও মুদ্রণ পড়তে সক্ষম হয় না। এই পর্যায়ে অন্য ধরণের গোষ্ঠী "কোনও শব্দের চেহারাটিকে তার উচ্চারণ এবং অর্থের সাথে সংযুক্ত চেষ্টা করে। যাইহোক, এইভাবে পড়ার স্মৃতির চাহিদা শিশুদের জন্য খুব অপ্রতিরোধ্য এবং ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে এবং তারা শীঘ্রই পড়ার সময় ফোনেটিক তথ্যের উপর আরও নির্ভর করার চেষ্টা করে।
=== আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায় ===
শিশুরা '''আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ে''' প্রবেশ করে যখন তারা বর্ণমালার নাম বা শব্দগুলো শিখে এবং তারপর শব্দগুলো পড়তে এই জ্ঞানটি ব্যবহার করে। এটি সেই পর্যায় যেখানে প্রকৃত পাঠ ঘটতে শুরু করে। শিশুরা এখন আর শুধু ছবি দেখে শব্দ পড়ছে না, তারা আসলে প্রিন্ট পড়ার চেষ্টা করছে। তারা এখন বর্ণমালার অক্ষরগুলোর জ্ঞান অর্জন করেছে এবং এই জ্ঞানটি তাদের শব্দগুলো পড়তে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করছে। এই পর্যায়ে শিশুরা সাধারণত শব্দের প্রথম এবং শেষ অক্ষরের দিকে বেশি মনোনিবেশ করে, উদাহরণস্বরূপ, ''চামচ পড়ার'' জন্য ''এস এবং এন'' অক্ষর যখন বাচ্চাদের শব্দগুলো লিখতে বলা হয় তখন তারা শব্দটি উচ্চারণ করার সময় যে শব্দটি শুনতে পায় সেই অক্ষরগুলো লিখে রাখার ঝোঁক রাখে। উদাহরণস্বরূপ, শিশুরা ''জিরাফ'' শব্দটি ''জেআরএফ'' হিসাবে লিখতে পারে। এই পর্যায়ে শিশুদের পড়া কেবল আংশিক কারণ তারা কেবল শব্দের কিছু অক্ষরের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সাধারণত উচ্চারণের জন্য কেবল কিছু শব্দ।
প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠক এবং আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠকদের পার্থক্য আরও ভালভাবে বোঝার জন্য, ১৯৮৫ সালে এহরি এবং উইলস একটি গবেষণা করেছিলেন। এই গবেষণায় কিন্ডারগার্টনারদের উপরে উল্লিখিত দুটি ভিন্ন পর্যায়ে পৃথক করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। দুটি ধরণের বানান পড়তে শেখার জন্য প্রতিটি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি অনুশীলন পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। এক ধরণের বিভিন্ন আকারের সাথে ভিজ্যুয়াল বানান জড়িত তবে শব্দগুলোর সাথে কোনও সম্পর্ক নেই, তাই উদাহরণস্বরূপ, ''মুখোশটি'' উহো বানানযুক্ত। অন্য ধরণের ফোনেটিক বানান জড়িত যা অক্ষরগুলো শব্দগুলোতে কিছু শব্দের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই উদাহরণস্বরূপ, ''মুখোশ'' বানান এমএসকে।
ফলাফলগুলো ছিল যে প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠকরা ফোনেটিক বানানের চেয়ে ভিজ্যুয়াল বানানগুলো অনেক সহজে পড়তে শিখেছিলেন। এহরি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এটি তাদের ধারণাকে নিশ্চিত করেছে যে প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠকরা ভিজ্যুয়াল ইঙ্গিতগুলোর উপর নির্ভর করে কারণ তাদের অক্ষরের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠকরা বিপরীত প্যাটার্নটি প্রদর্শন করেছিলেন এবং শব্দগুলো মনে রাখতে অক্ষর-শব্দ সংকেত ব্যবহার করতে সক্ষম হন।
=== পূর্ণ বর্ণানুক্রমিক পর্যায় ===
শিশুরা যখন বানানের অক্ষর এবং উচ্চারণে ধ্বনিগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণ সংযোগ তৈরি করে দর্শনীয় শব্দগুলো শিখতে সক্ষম হয়, তখন তারা '''সম্পূর্ণ বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ে''' চলে আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ে, শিশুরা শব্দটি উচ্চারণ করার সময় তারা স্পষ্টভাবে শুনতে পারে এমন অক্ষরগুলো দিয়ে শব্দগুলো লিখবে। যাইহোক, পূর্ণ বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ে শিশুরা এখন পড়ার সময় অপরিচিত শব্দগুলো ডিকোড করতে সক্ষম হয়, তারা এমন বানানগুলো আবিষ্কার করতে পারে যা সমস্ত ফোনেমের প্রতিনিধিত্ব করে এবং শব্দের বানানটি আরও ভালভাবে মনে রাখতে সক্ষম হয়।
পড়ার পর্যায়গুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখানোর জন্য ১৯৮৭ সালে এহরি এবং উইলস একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। এই গবেষণাটি পূর্ণ এবং আংশিক পর্যায়ের পাঠকদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি শব্দ শেখার পার্থক্য দেখানোর জন্য করা হয়েছিল। এই গবেষণার জন্য, কিন্ডারগার্টনাররা যারা ইতিমধ্যে আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ে ছিল এলোমেলোভাবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তারপরে তাদের এলোমেলোভাবে একটি চিকিত্সা বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল। চিকিত্সা গোষ্ঠীটি তখন অনুরূপ বানানযুক্ত শব্দগুলো পড়ার অনুশীলন করে সম্পূর্ণ বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠক হওয়ার প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। এর জন্য শব্দগুলোতে সমস্ত গ্রাফিম-ফোনেম সম্পর্কগুলো সঠিকভাবে পড়ার জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রয়োজন ছিল। নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীভুক্ত কোনও প্রশিক্ষণ পায়নি এবং আংশিক পর্যায়ের পাঠক হিসাবে রয়ে গেছে। এর পরে, কিন্ডারগার্টেনের উভয় গ্রুপ বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় পনেরো শব্দের একটি সেট পড়তে শেখার অনুশীলন পেয়েছিল। তালিকার সমস্ত শব্দের একই রকম বানান ছিল যা আংশিক সংকেত মনে রেখে শিশুদের পক্ষে শেখা শক্ত করে তুলেছিল। শব্দের তালিকায় স্পিন, ছুরিকাঘাত, স্ট্যাম্প বা স্ট্যান্ডের মতো শব্দ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অধ্যয়নের আগে, শিশুদের কেউই প্রশিক্ষণের আগে এই শব্দগুলোর মধ্যে দুটির বেশি পড়তে পারত না।
গবেষণার ফলাফলগুলো কিন্ডারগার্টেনের দুটি গ্রুপের মধ্যে বিশাল পার্থক্য দেখিয়েছে। পূর্ণ-বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠকরা তিনটি পরীক্ষায় তালিকার বেশিরভাগ শব্দ পড়তে শিখেছিলেন তবে আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠকরা কখনও শেখার এই স্তরে পৌঁছেননি। গবেষণায় বলা হয়েছে যে আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের পাঠকদের জন্য অসুবিধার কারণ হলো তাদের অনুরূপ বানানযুক্ত শব্দগুলোকে বিভ্রান্ত করা। যা পাঠকদের সুবিধাটি দেখায় যখন তারা স্মৃতিতে দৃষ্টিশক্তি শব্দগুলো ধরে রাখার জন্য সম্পূর্ণ সংযোগ তৈরি করতে পারে।
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে পড়ার ক্ষেত্রে কেবল এক ধাপ পিছনে থাকা ফলাফলগুলোতে এত বড় পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। পুরো বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ে থাকার কারণে কিন্ডারগার্টনাররা তিনটি পরীক্ষায় অনুরূপ বানানযুক্ত শব্দগুলো পড়তে সক্ষম হয়েছিল যেখানে আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়ের কিন্ডারগার্টনারদের এটি করতে এত সমস্যা হয়েছিল। এটি প্রতিটি পঠন পর্যায়ের গুরুত্ব এবং শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত কিনা তা নিশ্চিত করা শিক্ষকদের পক্ষে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দেখায়। শিক্ষকদের নিশ্চিত হওয়া দরকার যে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পর্যায়ে পাস করতে সহায়তা করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু শিখেছে।
=== একীভূত পর্যায় ===
শিশুরা পড়ার এই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যখন তারা তাদের স্মৃতিতে আরও দর্শনীয় শব্দ ধরে রাখে এবং অক্ষরের নিদর্শনগুলোর সাথে পরিচিত হয়। শিশুরা এখন বিভিন্ন শব্দে বারবার প্রদর্শিত অক্ষর নিদর্শনগুলোর সাথে পরিচিত এবং গ্রাফিম-ফোনেম সংযোগগুলো বৃহত্তর ইউনিটগুলোতে একীভূত হতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রণের মতো শব্দগুলো এখন আরও সহজে শেখা যায় কারণ স্মৃতিতে শব্দটি সুরক্ষিত করার জন্য কম সংযোগের প্রয়োজন হয় এবং শব্দটি আর অনেকগুলো পৃথক অক্ষর-শব্দ সংযোগ হিসাবে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে না তবে দুটি সিলেবল আকারের অংশ।
=== শিক্ষার উপর প্রভাব ===
ইংরেজি ভাষা নিখুঁত নয় এবং তাই এটি একটি অক্ষর একটি শব্দ প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, দুই বা ততোধিক অক্ষর যে একটি শব্দ প্রতিনিধিত্ব করে, একটি নীরব চূড়ান্ত স্বর মধ্যবর্তী স্বরবর্ণের শব্দ পরিবর্তন করতে পারে, এবং অনেক শব্দ এমন অক্ষর ধারণ করে যার কোনও শব্দ নেই। যখন শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের কীভাবে পড়তে হয় তা শেখাতে শুরু করেন, তখন তাদের অক্ষর এবং শব্দগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত এবং শিশুরা যখন তাদের সাক্ষরতার দক্ষতা বিকাশ করে তখন তারা যে বিভিন্ন পর্যায়ে যায় তা জানা উচিত। তিনটি বর্ণানুক্রমিক পর্যায় জুড়ে, শিক্ষকদের দক্ষতা হিসাবে ডিকোডিং এবং শব্দভাণ্ডারের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত কারণ এই মাত্রাগুলো জন্য অত্যাবশ্যক। শিশুদের শব্দগুলো ডিকোড করতে সক্ষম হতে হবে, অন্য কথায়, অক্ষর এবং শব্দ সম্পর্ক সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং লিখিত শব্দগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে সক্ষম হতে হবে। গেমগুলো বাচ্চাদের অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলোর সঠিক উচ্চারণ শেখানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বাচ্চাদের সামনে চিঠির সাথে অক্ষরের বিভিন্ন শব্দ শুনতে দেওয়া তাদের আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করবে। যেহেতু শিক্ষানবিস পাঠকরা ভিজ্যুয়াল লার্নার, তাই ছবিগুলো তাদের অক্ষর এবং শব্দের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক ব্যাটের একটি ছবি রাখতে পারেন এবং বোর্ডে ব্যাট শব্দটি লিখতে পারেন তবে প্রথম অক্ষরটি এড়িয়ে যেতে পারেন। এখন শিক্ষক বারবার ব্যাট শব্দটি উচ্চারণ করে এবং শিক্ষার্থীদের এটি উচ্চারণ করতে সহায়তা করে শিক্ষার্থীদের প্রথম অক্ষর কী হতে পারে তা জিজ্ঞাসা করতে পারেন। শিশুদের জন্য শব্দগুলো ডিকোড করা এবং সাবলীলভাবে পড়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে শিশুরা নির্দিষ্ট প্রাসঙ্গিক শব্দের অর্থ বুঝতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। যখন শিশুরা শব্দগুলোর অর্থ পড়তে এবং বুঝতে পারে তখন তারা সত্যই একটি পাঠ্য বুঝতে সক্ষম হয়। শিক্ষকদের উচিত শিশুদের নির্দিষ্ট বিভাগে একে অপরের সাথে সংযুক্ত শব্দগুলো স্থাপন করে, শব্দের সংযুক্ত বিভাগ তৈরি করে, শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে, শব্দের অর্থ প্রসারিত করতে অভিধান বা থিসরাস ব্যবহার করে এবং শব্দভান্ডার অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের স্ব-নির্বাচিত শব্দ এবং এই শব্দগুলো চয়ন করার জন্য নির্দিষ্ট কারণগুলো উল্লেখ করে পাঠ্যে পাওয়া শব্দের অর্থ আবিষ্কার করতে সহায়তা করা উচিত।
== পড়তে শেখান ==
সাক্ষরতা এবং পড়ার দক্ষতার উপর প্রায়ই প্রচুর গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাই শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের কীভাবে পড়তে হয় তা শেখানোর জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি বা পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য চাপ অনুভব করতে পারেন। প্রারম্ভিক পাঠকদের শেখানোর সময় কোন ক্ষেত্রগুলোতে ফোকাস করা উচিত তা সিদ্ধান্ত নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আদর্শভাবে, পড়ার নির্দেশটি ভাষার প্রতিটি ভিত্তির পাশাপাশি পড়তে শেখার সুবিধাগুলো স্পর্শ করা উচিত। পড়ার নির্দেশের ইতিহাস চলাকালীন, বাচ্চাদের পড়তে শেখানোর জন্য কোন পদ্ধতিগুলো সবচেয়ে ভাল তা নিয়ে অসংখ্য বিতর্ক হয়েছে ১৯৬৭ সালে, জিন চ্যাল পড়ার পদ্ধতিগুলোকে দুটি বিভাগে বিভক্ত করেছিলেন যা পড়ার নির্দেশের বিভাজন বোঝার জন্য এখনও কার্যকর: কোড-জোর পদ্ধতি এবং অর্থ-জোর দেওয়ার পদ্ধতি। '''কোড-জোর দেওয়ার পদ্ধতিগুলো''' অক্ষর এবং শব্দগুলো ডিকোডিং এবং শেখার দিকে মনোনিবেশ করে, যখন '''অর্থ-জোর দেওয়ার পদ্ধতিগুলো''' অর্থ তৈরি এবং কারও সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করে। পড়তে শেখানোর নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো তাদের পদ্ধতি দ্বারা পৃথক করা হয়। তবে আজ, পড়ার মডেলগুলো দুটি ধরণের পড়ার পদ্ধতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে কারণ তারা উভয়ই পড়তে শেখার জন্য অপরিহার্য হিসাবে স্বীকৃত। পড়া এবং সাক্ষরতার বিকাশের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। তবে আমাদের বাচ্চাদের শেখানোর গুরুত্বও ভুলে গেলে চলবে না যে পড়া উপভোগ্য হতে পারে।
=== ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতি ===
পড়তে শেখানোর জন্য একটি ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতি হলো এক ধরণের কোড-জোর পদ্ধতি। প্রাথমিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুরা যাতে পারে তা নিশ্চিত করা: অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র বুঝতে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচিত শব্দগুলো চিনতে এবং অপরিচিত শব্দগুলো ডিকোড করতে পারে আরও ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতির পক্ষে ওকালতি করা গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে বর্ণানুক্রমিক প্রতীকগুলোকে তাদের শব্দের সাথে সংযুক্ত করতে শেখার জন্য ফোনমিক সচেতনতা একটি প্রয়োজনীয়তা এবং এই অক্ষর-শব্দ সংযোগগুলো পৃথক শব্দগুলো সনাক্ত করতে শেখার জন্য এবং সাধারণভাবে পড়তে শেখার জন্য যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে, অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র শেখা প্রারম্ভিক পাঠকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতে পারে, বিশেষত যেহেতু শব্দগুলো অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্রের সংমিশ্রণে গঠিত। একটি ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতির মধ্যে, দুটি ধরণের নির্দেশনা রয়েছে: একটি সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি এবং একটি অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি। একটি '''সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতিতে''', শব্দগুলো নিজেরাই অক্ষরের সাথে যুক্ত হয় এবং তারপরে শব্দ গঠনের জন্য একসাথে মিশ্রিত হয় শ্রেণিকক্ষে, একজন শিক্ষক সরাসরি শিক্ষার্থীদের একটি পৃথক অক্ষর দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা শব্দটি বলতে পারেন। একবার শিক্ষার্থীরা কয়েকটি অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র শিখলে, তারা শব্দগুলো একসাথে মিশ্রিত করে পড়তে শিখতে শুরু করে। সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতিতে শব্দগুলো সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত প্রধান কৌশলটি অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্রের শিক্ষার্থীর জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে যখন কোনও শিক্ষার্থী কোনও অপরিচিত শব্দের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের এটি শব্দ করতে উত্সাহিত করা হয় এবং শব্দটি সনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের শব্দের প্রসঙ্গে পরিচালিত করা হয় না এই ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ কেবল একটি মেটাকগনিটিভ কৌশল যা সামগ্রিকভাবে পাঠ্যটি বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি '''অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতিতে''', অক্ষরের শব্দগুলো বিচ্ছিন্নভাবে অক্ষরের পরিবর্তে পুরো শব্দের প্রসঙ্গে চিহ্নিত করা হয় নির্দেশের সময়, শিক্ষক বোর্ডে হাত শব্দটি লিখতে পারেন ও এইচ অক্ষরটি আন্ডারলাইন করতে পারেন। তারপরে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে "হাত" বলতেন যে এইচ শব্দটি / এইচ / তৈরি করে। উপরন্তু, শব্দ এবং চিত্র সূত্রের প্রসঙ্গ অপরিচিত শব্দ শব্দ শব্দ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি সাধারণ সমস্যা যা অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র শেখানোর জন্য প্রসঙ্গ ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো কিছু শিক্ষার্থী এই চিঠিপত্রগুলো শিখতে ব্যর্থ হয় কারণ তারা শব্দগুলোকে তাদের স্বতন্ত্র শব্দগুলোতে বিভক্ত করতে অক্ষম। কারণ তাদের পুরো শব্দ থেকে শব্দগুলো অনুমান করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব রয়েছে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রমাণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে বেশিরভাগ দরিদ্র পাঠকদের বর্ণানুক্রমিক কোডিং এবং ফোনমিক সচেতনতার ঘাটতি। পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, আদর্শ পঠন নির্দেশে কোড-জোর পদ্ধতি এবং অর্থ-জোর পদ্ধতি উভয়ই জড়িত হওয়া উচিত। যেমন, ধ্বনিবিজ্ঞান নির্দেশের বিরুদ্ধে লোক যতটা না লোক রয়েছে তার চেয়ে বেশি লোক ধ্বনিবিজ্ঞান এবং নির্দেশমূলক শিক্ষণ পদ্ধতির উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার বিরুদ্ধে
ম্যাডক্স এবং ফেং (২০১৩) এর একটি গবেষণায় শিক্ষার্থীদের পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতার উন্নতির জন্য পুরো ভাষা পড়ার নির্দেশের কার্যকারিতা বনাম ধ্বনিবিজ্ঞান নির্দেশের কার্যকারিতা তুলনা করা হয়েছে। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা পুরো ভাষা নির্দেশের চেয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতার উপর আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পুরো ভাষা নির্দেশনা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের চেয়ে পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতায় আরও বেশি লাভ দেখাবে। একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে বাইশ জন প্রথম গ্রেডারকে এলোমেলোভাবে পরীক্ষামূলক গ্রুপ বা নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষামূলক গোষ্ঠীটি ধ্বনিবিজ্ঞান গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল এবং সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা পেয়েছিল, যখন নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীটি পুরো ভাষা গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল এবং সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা পায়নি। পরীক্ষামূলক দলের সাথে, শিক্ষক ধ্বনিবিজ্ঞানের নিদর্শনগুলো শিখিয়েছিলেন এবং গ্রুপটি এই নিদর্শনগুলোর সাথে সেগমেন্টিং, কোডিং, মিশ্রণ এবং কাজ করার অনুশীলন করেছিল। তবে কোনও গল্প পড়েনি। কন্ট্রোল গ্রুপের সাথে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের রাজ-বাচ্চাদের পড়ার প্রোগ্রাম থেকে চৌদ্দটি গল্প পড়ে শোনান; গল্পগুলোর শব্দগুলোতে ফনিক্স গ্রুপে শেখানো একই ধ্বনিবিদ্যা নিদর্শন ছিল এবং শিক্ষার্থীরা চিত্র পদচারণা, গল্পের ভবিষ্যদ্বাণী এবং শব্দভাণ্ডারের অর্থের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। উভয় গ্রুপ চার সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের শিক্ষকের (যিনি পরীক্ষকদের মধ্যে একজনও ছিলেন) সাথে বিশ মিনিটের জন্য সাক্ষাত করেছিলেন, সপ্তাহে পাঁচ দিন। প্রশিক্ষণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে, এইমসওয়েব রিডিং কারিকুলাম বেসড মেজার (আরসিবিএম) এবং এইমসওয়েব স্পেলিং কারিকুলাম বেসড মেজার (এসসিবিএম) ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের প্রিটেস্ট স্কোর সংগ্রহ করা হয়েছিল। চার সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পরে, পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতার পরিবর্তনগুলো পরিমাপ করার জন্য পোস্টটেস্ট স্কোর গণনা করার জন্য শিক্ষার্থীদের আবার একই পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। ফলাফলগুলো উভয় গ্রুপের পড়ার সাবলীলতা বা বানান নির্ভুলতার ক্ষেত্রে কোনও পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নির্দেশ করে না। ফোনিক্স গ্রুপের গড় পড়ার স্কোর বেশি ছিল এবং পুরো ভাষা গোষ্ঠীর তুলনায় তাদের পড়ার সাবলীলতা ৮.০০ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। এরা তাদের পড়ার সাবলীলতা ৪.০৯ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। বানান নির্ভুলতার জন্য ডেটা দেখায় যে ধ্বনিবিজ্ঞান গ্রুপের ১.০০ পয়েন্ট বৃদ্ধির সাথে ইতিবাচক ফলাফল ছিল যখন পুরো ভাষা গোষ্ঠীটি -০.২৭ পয়েন্ট হ্রাসের সাথে পিছিয়ে পড়েছিল। একটি সরাসরি তুলনা ইঙ্গিত দেয় যে ধ্বনিবিজ্ঞান গোষ্ঠীটি পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতা উভয় ক্ষেত্রেই আরও বেশি লাভ করেছে।
=== ধ্বনিমূলক সচেতনতা ===
ফোনমিক সচেতনতা কীভাবে পড়তে শেখার উপর প্রভাব ফেলে? '''ফোনমিক সচেতনতা''' কথ্য শব্দে ফোনেমগুলোতে ফোকাস করার এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। '''ফোনেমগুলো''' হলো ক্ষুদ্রতম ইউনিট যা কথ্য ভাষা তৈরি করে এবং সিলেবল এবং শব্দ গঠনে একত্রিত হয়,[ সুতরাং, ফোনমিক সচেতনতা একটি কোড-জোর পদ্ধতি। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্মৃতি থেকে শব্দ-পড়ার জন্য ফোনেম সেগমেন্টেশন দক্ষতা প্রয়োজন এবং ফোনমিক সচেতনতা শিশুদের অক্ষর-শব্দ বানান উদ্ভাবন করতে বা স্মৃতি থেকে বানান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করে শব্দ লিখতে সহায়তা করে মনে করা হয়।
ক্যাসেল, রিয়াচ এবং নিকলসন (১৯৯৪) এর একটি গবেষণা করা হয়েছিল ফোনমিক সচেতনতার প্রশিক্ষণ শিশুদের পড়া এবং বানানের ক্ষেত্রে আরও ভাল সূচনা করবে কিনা তা নির্ধারণের লক্ষ্যে করা হয়েছিল, এমনকি যদি তারা ইতিমধ্যে পুরো ভাষা প্রোগ্রামের মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরীক্ষাটি নিউজিল্যান্ডের শিশুদের স্কুলের প্রথম কয়েক মাসে করা হয়েছিল, যখন তারা কেবল পড়তে এবং লিখতে শিখছিল। তিনটি ভিন্ন স্কুল থেকে ৩৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের বিভক্ত করা হয়েছিল এবং একটি পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে মিলিত হয়েছিল। পরীক্ষামূলক দলটি ১০ সপ্তাহের জন্য সপ্তাহে দু'বার ২০ মিনিটের প্রশিক্ষণ সেশন ছিল, সামগ্রিক প্রশিক্ষণের সময় মোট ৬.৭ ঘন্টা। এই সেশনগুলোর সময় আচ্ছাদিত বিষয়গুলো ফোনেম সেগমেন্টেশন, ফোনেম প্রতিস্থাপন, ফোনেম মোছা এবং ছড়া সহ ফোনমিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বেছে নেওয়া হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর একই পরিমাণ শিক্ষামূলক সময় ছিল। তবে শিশুরা নিউজিল্যান্ডের স্কুলগুলোতে পুরো ভাষা পদ্ধতির অংশ হিসাবে প্রক্রিয়া লেখার ক্রিয়াকলাপে জড়িত ছিল, যেখানে শিশুরা তাদের নিজস্ব গল্প লিখেছিল এবং শব্দের নিজস্ব বানান আবিষ্কার করেছিল। প্রশিক্ষণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে একাধিক প্রিটেস্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে: রোপারের ফোনমিক সচেতনতার পরিমাপ, বানান পরীক্ষার একটি বিস্তৃত পরিসীমা অর্জন, একটি পরীক্ষামূলক বানান পরীক্ষা এবং একটি ডিকশন পরীক্ষা। প্রশিক্ষণ সেশন শেষ হওয়ার পরে এই একই পরীক্ষাগুলোও পোস্টটেস্ট হিসাবে পরিচালিত হয়েছিল। গবেষণার ফলাফলগুলো ফোনমিক সচেতনতায় উভয় গ্রুপের জন্য উল্লেখযোগ্য লাভ দেখিয়েছিল। তবে পরীক্ষামূলক এবং নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল যা ইঙ্গিত দেয় যে গবেষণায় ব্যবহৃত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটি ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতা উন্নত করতে কার্যকর ছিল। দুটি বানান পরীক্ষায় (বানান পরীক্ষার ওয়াইড রেঞ্জ অ্যাচিভমেন্ট এবং পরীক্ষামূলক বানান পরীক্ষা) গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও ছিল। এটি দেখায় যে ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতার উন্নতি আরও ভাল বানান দক্ষতার দিকে পরিচালিত করে। উপসংহারে, গবেষণার ফলাফলগুলো পরামর্শ দেয় যে অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো লিঙ্ক করার ক্ষমতা বানান অগ্রগতির সাথে যুক্ত এবং ফোনমিক সচেতনতা বানান অধিগ্রহণকে উত্সাহ দেয়
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ফোনমিক সচেতনতা নির্দেশের প্রভাব প্রাক স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন বছরগুলোতে সর্বাধিক এবং প্রথম শ্রেণির বাইরে আরও ছোট হতে পারে শিক্ষার্থীরা প্রথম শ্রেণি ছাড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতা বানান নিদর্শন শেখার প্রয়োজনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ফোনমিক সচেতনতার সুস্পষ্ট নির্দেশনা বয়স্ক শিক্ষার্থীদের পক্ষে ততটা কার্যকর নাও হতে পারে; এটি এমন শিশুদের জন্য কার্যকর হতে পারে যারা স্বাভাবিক পড়ার অগ্রগতি করেনি এবং পড়ার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা, সুতরাং, ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতা নির্দেশনা এই শিক্ষার্থীদের পড়া এবং বানান অসুবিধাগুলোতে সহায়তা করতে পারে
=== সমগ্র ভাষা পদ্ধতি ===
পুরো ভাষা পদ্ধতিতে, সাক্ষরতাকে একটি শীর্ষ-ডাউন প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা হয় পুরো ভাষা পদ্ধতিটি এমন একটি দর্শন যা শব্দ এবং শব্দগুলো তৈরি করে এমন শব্দ এবং ধ্বনিগুলো শেখার চেয়ে শব্দ এবং বাক্যগুলো পড়ার উপর জোর দেয়। চিঠির শব্দ-চিঠিপত্র পড়া থেকে স্বাধীনভাবে শেখানো হয় না, এবং তাই এটি এক ধরণের অর্থ-জোর পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা অংশগুলো পৃথক করার পরিবর্তে এবং প্রত্যেককে অনুশীলন করার পরিবর্তে সামগ্রিকভাবে ভাষার সাথে জড়িত। পড়া স্বাভাবিকভাবেই বোঝানো হয়, যেমন যখন শিশুরা প্রথম কথা বলতে শিখেছিল: খুব কম সরাসরি নির্দেশনা এবং প্রচুর উত্সাহ সহ পড়ার সম্পূর্ণতা অনুভব করে। তবেই শিক্ষার্থীরা শব্দের উপ-অংশগুলো শিখতে পারে একটি সম্পূর্ণ ভাষা পদ্ধতির খুব বেশি একটি প্রসঙ্গ-চালিত প্রক্রিয়া, এবং শব্দগুলো প্রসঙ্গের বাইরে উপস্থাপিত হয় না হাতের কাছে থাকা পাঠ্যটি বোঝার জন্য, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য এবং কোনও অপরিচিত অর্থ বোঝার জন্য তাদের সঞ্চিত জ্ঞান, চিত্রণ, ফোনেটিক কৌশল এবং পূর্বের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ব্যবহার করতে বোঝানো হয়। যে শিক্ষকরা পুরো ভাষা পদ্ধতির সমর্থন করেন তারা প্রায়ই বেসাল পাঠকদের পরিবর্তে "আসল বই" ব্যবহার করেন (প্রায়ই কোড-জোর পদ্ধতিতে দেখা যায়) কারণ তারা পড়ার সাবলীলতা এবং অর্থ তৈরির প্রচার করে তদুপরি, এটি একটি সম্পূর্ণ ভাষা পদ্ধতির উপর জোর দেওয়া হয় যে শেখার প্রক্রিয়াটি সর্বদা মসৃণ এবং নির্দিষ্ট হয় না এবং শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের শেখার লক্ষ্যগুলোর জন্য মালিকানা এবং দায়িত্ব নিতে হবে পুরো ভাষা পদ্ধতিটি প্রায়ই ভাইগটস্কিয়ান দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়: শিক্ষকরা মধ্যস্থতাকারী যারা বিশ্বের সাথে শিক্ষার্থীদের লেনদেন সম্ভব করে ভাইগটস্কির মতে, শেখা একটি সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, এবং অর্থ বিনিময় এবং শিশুদের অন্যদের সাথে কথোপকথন করতে হবে। যেমন, পড়ার নির্দেশের পুরো ভাষা পদ্ধতিটি সমস্ত ধরণের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে কারণ শিক্ষার্থীরা যখন একই সমস্যাগুলোতে সহযোগিতা করে এবং করে তখন তারা আরও কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে। যখন শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করে, তখন তাদের আলোচনা প্রায়ই কেবল সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তবে নতুন অর্থ গঠন করতে পারে এবং সহযোগিতা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে নতুন জ্ঞান সংগ্রহ করতে পারে। ভাইগটস্কি আরও বলেছিলেন যে সাক্ষরতার অভিজ্ঞতাগুলো কাঠামোগত হওয়া উচিত যাতে তারা কোনও কিছুর জন্য প্রয়োজনীয় হয়, অর্থাৎ, কীভাবে পড়তে হয় তা শেখার একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। ক্লাসে এমন উদাহরণ ব্যবহার করা যা প্রাসঙ্গিক বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার সাথে সমান্তরাল তুলনা রয়েছে তা পড়ার অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে তুলতে পারে পুরো ভাষা পদ্ধতির ব্যবহার করে নির্দেশনা পড়ার জন্য অন্য একটি ভাইগটস্কিয়ান মডেল হলো '''প্রক্সিমাল বিকাশের শিক্ষার্থীর জোনের''' মধ্যে কাজ করা। এটি কোনও ব্যক্তির একা কী করতে পারে এবং সাহায্যের মাধ্যমে তারা কী করতে পারে তার মধ্যে শেখার ক্ষেত্র। পড়ার সময়, শিক্ষার্থীদের ভাষা সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বা স্পষ্টতার জন্য স্কিল তৈরি করতে পারেএলএস তারা ইতিমধ্যে দখল করেছে। শিক্ষার্থীদের উপাদান সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা এবং অর্থ তৈরির উত্সাহ দেওয়া পড়ার বোধগম্যতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে যখন প্রকৃত পঠনকে পুরো ভাষা পড়ার নির্দেশের প্রধান উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তখন পদ্ধতিটি পড়ার বোধগম্যতা পরীক্ষার জন্য উপকারী সর্বোপরি, পড়ার বোধগম্যতা নির্দেশাবলী পড়ার একটি প্রধান লক্ষ্য।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের পড়া এবং লেখার কাজগুলোর উপর ম্যানিং এবং কামির গবেষণা (২০০০) বিচ্ছিন্ন ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশের তুলনায় পুরো ভাষার কার্যকারিতা তুলনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলের দুটি কিন্ডারগার্টেন ক্লাসের ৩৮ জন শিশুকে পরীক্ষা করা হয়। একটি শ্রেণির শিক্ষক পুরো ভাষার শিক্ষক হিসাবে চিহ্নিত এবং অন্যটি ধ্বনিবিদ্যার শিক্ষক হিসাবে। ধ্বনিবিদ্যা শ্রেণীকক্ষে, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের ফোনিকস ওয়ার্কশিট এবং মৌখিক-শব্দ প্রশিক্ষণ ছিল এবং প্রায়ই দর্শনীয় শব্দ এবং অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র অনুশীলনের জন্য ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করত। এমন পোস্টার ছিল যা বিভিন্ন ধ্বনিবিজ্ঞানের নিয়ম প্রদর্শন করেছিল, দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য প্রতীক দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পুরো ভাষা শ্রেণীকক্ষে, শিশুরা প্রচুর ভাগ করে নেওয়া পড়া এবং লেখার কাজ করেছিল, যেমন স্বাধীন জার্নাল লেখা এবং গ্রুপ লেখার ক্রিয়াকলাপ। শিক্ষক প্রতিদিন এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বইগুলো উচ্চস্বরে পড়া হত, দিনভর ছড়িয়ে দেওয়া হত। সমস্ত শিশুদের সারা বছর ধরে পাঁচবার পৃথকভাবে সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছিল, যেখানে তাদের আটটি শব্দ লিখতে বলা হয়েছিল এবং তারপরে দুই থেকে চারটি বাক্য পড়তে বলা হয়েছিল। গবেষকরা তখন শিক্ষার্থীদের তাদের লেখার স্তর এবং প্রদত্ত বাক্যে একটি শব্দ সনাক্ত করার ক্ষমতা অনুসারে স্কোর করেছিলেন। ফলাফলগুলো দেখায় যে যদিও পুরো ভাষা গোষ্ঠীটি নিম্ন স্তরে বছর শুরু করেছিল। তবে অনেক বেশি শিশু ধ্বনিবিদ্যা গোষ্ঠীর চেয়ে উচ্চতর স্তরে বছর শেষ করেছে। ফনিক্স গ্রুপে, রিগ্রেশনের আরও উদাহরণ ছিল এবং সামগ্রিকভাবে কম অগ্রসর হয়েছিল এবং তাদের কিন্ডারগার্টেন বছরের সময় আরও বিভ্রান্ত হয়েছিল।
=== স্কিমা তত্ত্ব ===
স্কিমা তত্ত্ব হলো পাঠকরা কীভাবে পাঠ্য বোঝার জন্য তাদের পূর্বের জ্ঞান ব্যবহার করে তার একটি ব্যাখ্যা '''স্কিমা''' (বহুবচন: ''স্কিমাটা'') শব্দটি প্রথম মনোবিজ্ঞানে একটি মানসিক কাঠামো বর্ণনা করার জন্য চালু হয়েছিল যা কোনও ব্যক্তির জ্ঞানকে সংগঠিত করে এবং পরে পড়ার নির্দেশে ব্যবহৃত হয়েছিল যাতে শিক্ষার্থীদের পূর্বের জ্ঞান পড়ার বোধগম্যতায় যে ভূমিকা পালন করে তা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল স্কিমা তত্ত্ব অনুসারে, লোকেরা স্কিমাটায় যা কিছু জানে তা সংগঠিত প্রত্যেকের স্কিমাটা পৃথক করা হয় এবং কোনও ব্যক্তির স্কিমা কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য যত বেশি বিস্তৃত হয়, তত সহজেই তারা সেই বিষয় অঞ্চলে নতুন তথ্য শিখতে সক্ষম হবে একজন ব্যক্তির বিদ্যমান জ্ঞান কাঠামো নমনীয় এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল; যখন কোনও ব্যক্তি নতুন তথ্য শেখেন, তখন তাদের পূর্ব-বিদ্যমান স্কিমাটি এই নতুন তথ্যটি সামঞ্জস্য করার জন্য সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন হতে পারে। পড়ার ক্ষেত্রে স্কিমা তত্ত্বের মূল ধারণাটি হলো লিখিত পাঠ্য কেবল অর্থ বহন করে না; বরং, পাঠ্যটি পাঠকদের কীভাবে পূর্ববর্তী বিদ্যমান জ্ঞান কাঠামো থেকে অর্থ পুনরুদ্ধার বা নির্মাণ করা উচিত তার জন্য দিকনির্দেশনা সরবরাহ করে। বিষয়বস্তুর জন্য স্কিমাটা থাকার পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের পড়ার প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন ধরণের পাঠ্য কাঠামোর জন্য স্কিমাটাও রয়েছে পাঠ্যটি বোঝা পাঠকের পূর্ব জ্ঞান এবং প্রকৃত পাঠ্যের মধ্যে একটি পারস্পরিক এবং ইন্টারেক্টিভ প্রক্রিয়া কারণ কার্যকর বোঝার জন্য পাঠ্যের সাথে পূর্বের জ্ঞানের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা প্রয়োজন পড়ার বোধগম্যতার সময় স্কিমা তত্ত্বের দুটি ধরণের প্রক্রিয়াকরণ রয়েছে: '''বটম-আপ প্রসেসিং''' হলো স্কিমা অ্যাক্টিভেশন (যখন পাঠ্য উদ্দীপনা প্রাসঙ্গিক স্কিমাটার সংকেত স্মরণ করে) পাঠ্যের নির্দিষ্ট তথ্যের মাধ্যমে, যখন '''শীর্ষ-ডাউন প্রক্রিয়াকরণ''' সাধারণ জ্ঞান দিয়ে শুরু হয় এবং আরও নির্দিষ্ট বিশদের দিকে নেমে যায় এবং আরও উদ্দীপনা উপস্থাপিত হওয়ার সাথে সাথে পাঠ্য সম্পর্কিত পাঠকের নির্দিষ্ট স্কিমাটা সক্রিয় করা যেতে পারে. পাঠ্য বোঝার জন্য এই দুটি ধরণের প্রক্রিয়াকরণ একযোগে এবং ইন্টারেক্টিভভাবে
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে পাঠকরা যখন পাঠ্যের পূর্বরূপ দেখে পূর্বের জ্ঞানকে সক্রিয় করে, তখন তারা পড়া শুরু করার সাথে সাথেই স্কিমাটা ব্যবহার করে এবং পুরানো এবং মধ্যে সংযোগ তৈরির লক্ষ্যে নতুন তথ্যের দিকে মনোনিবেশ করে। পাঠ্যের কাঠামো বা বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিদ্যমান স্কিমা ব্যতীত পড়ার বোধগম্যতা ঘটবে না। প্রাক-বিদ্যমান জ্ঞানের গুরুত্বের কারণে, শিক্ষকরা পড়ার আগে শিক্ষার্থীদের স্কিমা তৈরি এবং সক্রিয় করতে পারেন পাঠ্যের পূর্বাভাসে মস্তিষ্কের ঝড় বা গ্রুপ আলোচনা, বা এমনকি পাঠ্যটি পড়ার জন্য কৌশল এবং দক্ষতা পর্যালোচনা করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি লক্ষ করাও গুরুত্বপূর্ণ যে পার্থক্য এবং শিক্ষার্থীদের স্কিমাটা পড়ার বোধগম্যতার পার্থক্যের সাথে সম্পর্কিত। তবে পাঠ্যের পূর্বরূপ একজন পাঠককে আগাম উপলব্ধি করতে দেয় যে তাদের বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, সেই পড়ার কাজের জন্য শিক্ষার্থীর স্ব-কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
ইরানি শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণায় পরীক্ষা করা হয়েছে যে প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে স্কিমা অ্যাক্টিভেশন সংস্কৃতি ভিত্তিক পাঠ্যগুলোর পড়ার বোধগম্যতার উপর প্রভাব ফেলে কিনা। বিষয়গুলোর মধ্যে ছিয়াত্তর জন ইংলিশ অ্যাজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ (ইএফএল) শিক্ষার্থীরা হয় ইংরেজি সাহিত্যে মেজর বা টিচিং ইংলিশ অ্যাজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ (টিইএফএল) এ মেজর ছিল। অংশগ্রহণকারীরা সবাই ইরানের কেরমানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের দ্বিতীয় শিক্ষার্থী ছিলেন। সমস্ত শিক্ষার্থী একই ইংরেজি দক্ষতার ছিল তা নিশ্চিত করার জন্য, অক্সফোর্ড প্লেসমেন্ট টেস্টে তাদের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের ইংরেজির বেসিক থেকে উচ্চ-মধ্যবর্তী স্তর পর্যন্ত শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের তখন দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছিল: একটি পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ। গবেষকরা দুটি নাল হাইপোথিসিস পরীক্ষা করেছেন: প্রথমটি, স্কিমা অ্যাক্টিভেশনের পরে পরীক্ষামূলক গ্রুপের গড় প্রিটেস্ট এবং গড় পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকবে না; এবং দ্বিতীয়ত, পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রিটেস্ট এবং পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই যখন শিক্ষার্থীদের স্কিমাগুলো প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সক্রিয় করা হয়। প্রক্রিয়া চলাকালীন, পরীক্ষামূলক এবং নিয়ন্ত্রণ উভয় গ্রুপকেই প্রিটেস্ট হিসাবে হ্যালোইনের উত্স এবং রীতিনীতি সম্পর্কে একটি পড়ার বোধগম্যতা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ ছুটির দিনটি সাংস্কৃতিকভাবে লোড করা হয় এবং তাই অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের এটি বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। তারপরে, পরীক্ষামূলক গ্রুপের একজন গবেষকের সাথে স্কিমা অ্যাক্টিভেশনের দুটি প্রশিক্ষণ সেশন ছিল - এই সেশনগুলোতে প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপ, পূর্বরূপ, প্রাক-শিক্ষণ শব্দভাণ্ডার এবং শিক্ষার্থীদের হ্যালোইন কাস্টমসের সাথে আরও পরিচিত করার জন্য ছবিগুলো দেখা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপরে গ্রুপটিকে হ্যালোইন সম্পর্কে তারা কী জানত সে সম্পর্কে কথা বলতে বলা হয়েছিল এবং এটি গ্রুপ আলোচনার ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছিল। প্রশিক্ষণ সেশনের সময়, গবেষক গ্রুপটিকে নতুন শব্দভান্ডার শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং প্রয়োজনে সমার্থক শব্দ এবং সংজ্ঞা সরবরাহ করেছিলেন। পরীক্ষামূলক দলটিকে তখন দুই সপ্তাহ পরে পোস্টটেস্টের মতো একই পঠন বোধগম্যতা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। কন্ট্রোল গ্রুপটি কেবল প্রাথমিক প্রিটেস্ট পরিচালিত হয়েছিল এবং কোনও প্রশিক্ষণ সেশন বা পোস্টটেস্ট ছিল না। ফলাফলগুলো দেখিয়েছিল যে উভয় নাল হাইপোথিসিস প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, এবং উভয় গ্রুপই প্রিটেস্টে প্রায় একই স্কোর করেছিল - ১৬.৪২ এর গড় স্কোর সহ পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং ১৬.৫৭ এর গড় স্কোর সহ নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ - তবে পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রশিক্ষণ সেশনের পরে, তাদের পোস্টটেস্ট গড় স্কোর বেড়ে ১৮.৭০ এ দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রিটেস্ট এবং পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন। উপসংহারে, পরীক্ষামূলক গোষ্ঠীটি আরও পটভূমি জ্ঞান পাওয়ার সাথে সাথে পড়ার বোধগম্যতা বাড়ানো হয়েছিল এবং গবেষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে গবেষণার ফলাফল এবং প্রভাবগুলো অন্যান্য কম সাংস্কৃতিকভাবে আবদ্ধ উপকরণগুলোতে প্রযোজ্য। শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান স্কিমাগুলোতে নতুন তথ্য সংযুক্ত করতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষক নির্দেশিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্কিমা অ্যাক্টিভেশন ক্রিয়াকলাপগুলোতে সময় ব্যয় করা শিক্ষার্থীদের আরও ভাল পারফরম্যান্সের দিকে পরিচালিত করে
== পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন ==
শিশুরা যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন তারা প্রথম যে জিনিসটি শিখতে শুরু করে তা হল পড়া। আনুষ্ঠানিকভাবে পড়তে শেখা কিন্ডারগার্টেনে শুরু হয় এবং আমাদের জীবনকাল জুড়ে অব্যাহত থাকে। শিশুরা যখন পড়তে শিখছে, তখন তাদের প্রতিক্রিয়া জানানো এবং তারা কেমন করছে তা দেখার জন্য তাদের মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষার্থীর পড়ার দক্ষতার সাফল্য এবং উন্নতির পরিমাপ করার জন্য, কারও পড়ার অগ্রগতি নির্ধারণের জন্য কিছু ঘন ঘন মূল্যায়ন করা চিহ্নিতকারী রয়েছে: ফোনমিক সচেতনতা, অক্ষর জ্ঞান এবং মৌখিক পড়ার সাবলীলতা। শিশুরা মুদ্রণ করতে শেখার আগে, শব্দের অক্ষরগুলোর শব্দগুলো কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে তাদের সচেতন হওয়া দরকার। ফোনেমিক সচেতনতা মূলত এটি মূল্যায়ন করছে, শিশুদের কথ্য শব্দের ফোনমিক বিভাগগুলো লক্ষ্য করার, চিন্তা করার এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা থাকা দরকার। যদি শিশুরা ভাষার শব্দ কাঠামো সম্পর্কে সচেতন না হয় তবে তারা কথ্য শব্দের পৃথক শব্দগুলোতে অংশ নিতে সক্ষম হবে না এবং এইভাবে অক্ষর-ধ্বনি চিঠিপত্র স্থাপন করতে সক্ষম হবে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই অক্ষর-শব্দ লিঙ্কটি ডিকোডিংয়ের একটি মৌলিক দক্ষতা এবং সাক্ষরতার গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক দক্ষতা। অক্ষর জ্ঞান শিশুদের বড় এবং ছোট হাতের অক্ষরের নাম এবং বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষরের শব্দ জানার ক্ষমতা দ্বারা পরিমাপ করা হয়। বাচ্চাদের পক্ষে এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা যখন অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো বুঝতে পারে তখনই তারা পড়তে শুরু করতে পারে। পড়ার সময়, বাচ্চাদের কীভাবে শব্দগুলো শব্দ করতে হয়, তাদের ডিকোড করতে হয় এবং তাদের উচ্চারণ করতে হয় এবং এটি কেবল তখনই সম্ভব যদি তারা অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো আয়ত্ত করে। প্রারম্ভিক পড়ার অগ্রগতি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত তৃতীয় ধরণের মূল্যায়নটি পড়ার সাবলীলতা হিসাবে পরিচিত। এটি মূলত শিশুদের দ্রুত, নির্ভুলভাবে এবং অভিব্যক্তি দিয়ে পড়ার ক্ষমতা পরিমাপ করার চেষ্টা করছে। এই ধরণের মূল্যায়ন কিছু লোকের জন্য বিতর্কিত কারণ তারা বিশ্বাস করে না যে দ্রুত পড়ার মাধ্যমে শিশুরা অগ্রগতি করেছে। দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে পড়া পড়ার আসল উদ্দেশ্য নয়, আপনি যা পড়েছেন তা বোঝা এবং স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
কার্যকর মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়া উচিত এবং শিশুরা দ্রুত কোনও পাঠ্য পড়তে এবং এটি বুঝতে পারার পরে কেবল থামানো উচিত নয়। এ কারণেই কিছু খাঁটি মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে যা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা এবং শেখার নির্ধারণ করতে এবং বর্তমান এবং ভবিষ্যতের নির্দেশনাকে অবহিত করতে ব্যবহার করতে সক্ষম হন। শিক্ষকরা মৌখিক এবং লিখিত গল্পের পুনর্বিবেচনার মতো মূল্যায়ন ব্যবহার করতে সক্ষম হন যা অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ার বোধগম্যতা পরিমাপ করবে, সাক্ষরতার পোর্টফোলিওগুলো শিক্ষার্থীদের মৌখিক এবং লিখিত প্রক্রিয়া, পণ্য এবং দক্ষতা প্রদর্শন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং চেকলিস্টগুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের পর্যবেক্ষণে সহায়তা করতে এবং শিক্ষার্থীদের সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা এবং বৃদ্ধি নির্ধারণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
শিক্ষার্থীদের পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীরা কোন পর্যায়ে রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এটি শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনকে আরও ভালভাবে সহায়তা করতে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার অনেক সুবিধা রয়েছে তবে শিক্ষকদের সর্বদা সচেতন হওয়া উচিত যে মূল্যায়নই সবকিছু নয় এবং সমস্ত শিক্ষার্থীকে একই সময়ে বা একইভাবে মূল্যায়ন করা যায় না।
== শব্দকোষ ==
'''বটম-আপ প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি যা তথ্যের ছোট ছোট টুকরো টুকরো
'''কোড-জোর দেওয়ার পদ্ধতি:''' পড়ার পদ্ধতিগুলো অক্ষর এবং শব্দ এবং অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্রের ডিকোডিংয়ের গুরুত্বকে জোর দেয়।
'''বক্তৃতা:''' ভাষার কাঠামোগত, সুসংগত ক্রম যেখানে বাক্যগুলো উচ্চতর ক্রমের ইউনিটগুলোতে একত্রিত হয়, যেমন অনুচ্ছেদ, আখ্যান এবং এক্সপোজিটরি পাঠ্য, অর্থাত্, কথোপকথন।
'''সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়ার নির্দেশ যেখানে অক্ষরের সাথে সম্পর্কিত শব্দগুলো (অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র) প্রথমে স্বাধীনভাবে চিহ্নিত করা হয়, তারপরে পরে শব্দ গঠনের জন্য একসাথে মিশ্রিত হয়।
'''সম্পূর্ণ বর্ণানুক্রমিক পর্যায়:''' পাঠকরা যারা পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ করার সাথে সাথে শব্দের পৃথক শব্দগুলো সনাক্ত করতে পারেন এবং বুঝতে পারেন যে বানানগুলো উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
'''অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়ার নির্দেশ যেখানে অক্ষরের ধ্বনিগুলো স্বাধীনভাবে না হয়ে পুরো শব্দের মধ্যে চিহ্নিত করা হয়।
'''অর্থ-জোর পদ্ধতি:''' পড়ার পদ্ধতিগুলো শব্দগুলো থেকে অর্থ তৈরি এবং কারও সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার করার দিকে বেশি মনোনিবেশ করে।
'''আংশিক বর্ণানুক্রমিক পর্যায়:''' পাঠক। এরা পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু শব্দের অক্ষরকে শব্দের সাথে যুক্ত করে পড়েন।
'''ধ্বনি:''' শব্দের ক্ষুদ্রতম একক যা একটি শব্দ তৈরি করে।
'''ধ্বনিমূলক সচেতনতা:''' একটি শব্দে পৃথক ধ্বনিগুলো সনাক্ত এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা।
'''প্র্যাগমেটিক্স:''' ভাষার অর্থ, বার্তা ও ব্যবহার।
'''প্রাক-বর্ণানুক্রমিক পর্যায়:''' এটি এমন একটি পর্যায় যখন শিশুরা বেশ কিছুটা সাক্ষরতা জানে তবে কোনও শব্দ কীভাবে পড়তে হয় তা জানে না।
'''স্কীমা:'''একটি মানসিক কাঠামোর ধারণা যা আমাদের জ্ঞান এবং এই তথ্যের টুকরোগুলোর মধ্যে সম্পর্কগুলো সংগঠিত করতে সহায়তা করে।
'''স্কিমা অ্যাক্টিভেশন:'''প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পাঠ্য উদ্দীপনা বর্তমান পড়ার কাজের জন্য স্মৃতি থেকে প্রাসঙ্গিক স্কিমাটা স্মরণ করার সংকেত দেয়।
'''শব্দার্থবিজ্ঞান:''' শব্দ এবং তাদের অর্থ অধ্যয়ন।
'''বাক্যগঠন:''' একটি ভাষার শব্দগুলো বৃহত্তর ইউনিটে বিভক্ত করা হয়, যেমন বাক্যাংশ, ধারা এবং।
'''টপ-ডাউন প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি যা সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে যা জানা যায় তা পূরণ করতে এবং ছোট ছোট বিবরণের দিকে কাজ করে।
'''প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্টের জোন:''' ভাইগটস্কি দ্বারা তৈরি একটি ধারণা যা একজন শিক্ষার্থী নিজেরাই কী করতে সক্ষম এবং তারা সাহায্যের মাধ্যমে কী করতে পারে, যেমন শিক্ষক, পিতামাতা বা যত্নশীলের কাছ থেকে শেখার ক্ষেত্রটি বর্ণনা করে।
== প্রস্তাবিত পাঠ ==
Bukowiecki, E. M. (২০০৭)। শিশুকে লেখাপড়তে শেখান। কাপ্পা ডেল্টা পাই রেকর্ড, ৪৩ (২), ৫৮-৬৫। ডিওআই: ১০.১০৮০/০০২২৮৯৫৮.২০০৭.১০৫১৬৪৬৩
Ehri, L. C. (২০০৫)। শব্দগুলো পড়তে শেখা: তত্ত্ব, অনুসন্ধান এবং সমস্যা। পড়ার বৈজ্ঞানিক স্টাডিজ, ৯ (২), ১৬৭-১৮৮। ডিওআই: ১০.১২০৭ / s১৫৩২৭৯৯xssr০৯০২_৪
Hempestall, K. (২০০৫)। পুরো ভাষা-ধ্বনিবিজ্ঞান বিতর্ক: একটি .তিহাসিক দৃষ্টিকোণ। অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অফ লার্নিং ডিসেবিলিটিস, ১০ (৩-৪), ১৯-৩৩। ডিওআই: ১০.১০৮০ / ১৯৪০৪১৫০৫০৯৫৪৬৭৯৭
ট্রেসি, ডিএইচ, এবং মোরো, এলএম (২০১২)। পড়ার উপর লেন্স, দ্বিতীয় সংস্করণ: তত্ত্ব এবং মডেলগুলোর একটি ভূমিকা। গিলফোর্ড প্রেস।
389cbos80s0e6yy9fufgepf33kfxke8
84054
84053
2025-06-11T19:30:48Z
NusJaS
8394
/* পড়ার সমস্যার নির্ণয় */
84054
wikitext
text/x-wiki
পড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা. কারণ এটি আমাদের সব একাডেমিক বিষয় শিখতে সাহায্য করে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরের সফলতার জন্যও এটি খুবই জরুরি। পড়তে শেখা একটি জটিল ও বহু বছরের প্রক্রিয়া। এখানে প্রতীক এবং লিখিত শব্দের শব্দ ও অর্থ চিনতে শেখা অন্তর্ভুক্ত। শিশুদের জন্য পড়ার দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, কারণ এটিই তাদের সাক্ষরতা ও শেখার জগতে প্রবেশের দরজা, যা জীবনের অনেক দিকের ওপর নির্ভর করে।
[[চিত্র:A_Family_Place_Library_(14071466252).jpg|থাম্ব|পড়তে শেখা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেক শিশু সহজ শব্দ ও রঙিন ছবিযুক্ত বই পড়া দিয়ে শুরু করে, তারপর ধীরে ধীরে কঠিন বই পড়ার দিকে এগিয়ে যায়।]]
এই অধ্যায়ে পড়তে শেখার বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়েছে। এর শুরু হয়েছে পড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীয় উপাদান যেমন স্মৃতি ও মনোযোগ দিয়ে। এখানে পড়ার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং শিক্ষাদানের ওপর এর কিছু প্রভাবও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেহেতু প্রতিটি শিশু আলাদা, তাই পড়তে শেখানোর জন্য একক কোনো পদ্ধতি সব শিশুর ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এই অধ্যায়ে পড়ার তিনটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে প্রথমে এমন শিশুদের কথা বলা হয়েছে যারা কোনো শব্দ পড়তে বা চিনতে পারে না, এবং শেষ পর্যন্ত এমন শিশুদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা অচেনা শব্দগুলো ডিকোড করার জন্য অক্ষর ও তাদের শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। বর্তমানে পড়তে শেখানোর পদ্ধতিতে বিভিন্ন তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত কৌশলগুলো একত্রিত করে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযোজিত করা হয়। অবশেষে, পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়নের কয়েকটি কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
== পড়ার জ্ঞানীয় উপাদান ==
পড়ার ক্ষেত্রে সফলতা নির্ভর করে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি ব্যবহারের পাশাপাশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ওপর, যাতে পাঠের অর্থ বোঝা যায়। পাশাপাশি, পাঠককে তার আশেপাশের জগত সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকতে হয় যাতে সে তথ্যটি অনুধাবন করতে পারে।
=== স্মৃতি ===
কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি এমন জ্ঞানীয় উপাদান, যা শিশুর পড়তে শেখার সাফল্যের সঙ্গে জড়িত। পড়া একটি স্মৃতিভিত্তিক কাজ, কারণ এটি বিশ্ব ও ভাষাগত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যখন একটি শিশু একটি শব্দ শিখছে, তখন তাকে সেই শব্দটি যথেষ্ট সময় ধরে মনে রাখতে হয় যাতে সে বাক্যাংশ, বাক্য এবং পুরো অনুচ্ছেদের জটিল অর্থ বুঝতে পারে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। একটি শিশু যা পড়েছে, সেটি অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য কার্যকর স্মৃতির প্রয়োজন <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি অন্যান্য স্মৃতির ধরন থেকে আলাদা, কারণ এটি প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ উভয়কে প্রতিফলিত করে <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি প্রায়শই শিশুদের পড়তে শেখার উন্নয়ন বোঝার জন্য গবেষণায় ব্যবহৃত হয় এবং Baddeley-এর মডেলটি কার্যকর স্মৃতি ও পড়ার উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই মডেলে দুটি মৌলিক দিক রয়েছে: ধ্বনিগত লুপ ও ভিজ্যুয়াল স্কেচপ্যাড <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ধ্বনিগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি অভ্যন্তরীণ অনুশীলন অংশ রয়েছে, যাকে বলা হয় articulatory loop, যা ধ্বনিগত তথ্যকে দীর্ঘ সময় ধরে স্মৃতিতে ধরে রাখতে সাহায্য করে, যাতে শব্দ ডিকোড ও পাঠ অনুধাবন সম্ভব হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। যখন শিশুরা শব্দ ডিকোড করতে পারে না বা সমস্যায় পড়ে, তখন এটি ধ্বনিগত সচেতনতার সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই ধরণের সমস্যা থাকা শিশুরা কথ্য ভাষার শব্দগত গঠন বোঝে না বা তার নাগাল পায় না <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ছোটবেলায় শিশুদের কার্যকর স্মৃতির পরিসর সীমিত থাকে কারণ তাদের এনকোডিং ও অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এখনো পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। পড়াকে অর্থবহ করে তুলতে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনের স্মৃতি প্রয়োজন <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। তাই যখন শিশুরা নতুন কিছু শেখে, তখন সেই তথ্যকে তাদের কার্যকর স্মৃতিতে সতেজ রেখে আগের শিখে রাখা তথ্যকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি থেকে আহরণ করতে হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। শিশুদের দক্ষ পাঠক হওয়ার জন্য, তাদের অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে জানতে হবে, যাতে বাক্য বা অনুচ্ছেদের অর্থ বোঝার সময় খুব বেশি সময় ধরে শব্দের অর্থ মনে রাখতে না হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। দুর্বল পাঠকরা যদি যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে না পারে, তাহলে তাদের অতিরিক্ত সময় নিতে হয় শব্দ বুঝতে, যা পাঠ অনুধাবনে বাড়তি চাপ তৈরি করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
=== মনোযোগ ===
পড়া ও মনোযোগের বিষয়ে আসলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মনোযোগ ছাড়া কোনো পাঠ অনুধাবন সম্ভব নয়। মনোযোগ ছাড়া কেউ পড়তে পারে না। ছোট শিক্ষার্থীদের পড়ানো প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং হয়, কারণ কেউ কেউ দীর্ঘ সময় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না, বা তারা যে উপাদান পড়ছে, সেটির প্রতি আগ্রহও থাকতে পারে না।
একজন শিশুকে পড়তে হলে, তার সামনে একটি বই খোলা থাকতে হবে এবং তাকে লেখার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson</ref> এমন অবস্থায় শিশুদের আনাও অনেক সময় একটি বড় অর্জন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ কিছু শিশু এই ধরণের কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
শুধু বইয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়াই নয়, পড়ার সময় শিশুদের উচিত সংযোগ তৈরি করা—যাতে পড়ার ছোট ছোট অংশগুলো বড় বিষয়ের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত, তা বুঝতে পারে। এ ক্ষেত্রেও অনেক মনোযোগের প্রয়োজন হয়, কারণ প্রায়শই একটি ছোট পয়েন্ট উপেক্ষা করা হলে, সেটি পরে শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বড়রা যেখানে পড়ার প্রক্রিয়ায় খুব বেশি মনোযোগ না দিয়েও পড়তে পারে, ছোটদের ক্ষেত্রে তা হয় না, কারণ তারা এখনো সেই প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে শেখেনি বা চর্চা করেনি। চোখের গতি ও বাম থেকে ডানে চোখ সরানোর মতো বিষয়গুলিও এই ধরনের মনোযোগের অন্তর্ভুক্ত।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref> পাঠের সময় মনোযোগকেও শব্দ থেকে শব্দে সুনির্দিষ্টভাবে সরানো উচিত এবং নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি শব্দ পাঠের মূল বার্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। এছাড়াও, চিত্র বা ছবি থেকে লেখায় এবং আবার লেখায় থেকে চিত্রে মনোযোগ স্থানান্তর করতে হবে যাতে গল্পের সব উপাদান অর্থবহ হয়।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
== পড়া সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা ==
যতটা না পড়ার জন্য শিশুর অক্ষর ও শব্দ বুঝে নেওয়া এবং পূর্বজ্ঞান কাজে লাগানো প্রয়োজন, ঠিক ততটাই এই দক্ষতা শেখানোও জরুরি। তবে কিছু শিক্ষার্থী শেখার এই প্রক্রিয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা অনেক সময় শেখার অক্ষমতার কারণে হয়। এমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার সময় তাদের সমস্যাকে মাথায় রেখে সাক্ষরতা বিকাশের কার্যকর উপায়গুলো ব্যবহার করতে হয়।
=== পড়ার সমস্যার নির্ণয় ===
প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে পড়তে শেখা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকা একটি প্রতিবন্ধকতা শেখার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, অর্থাৎ শিক্ষককে প্রায়শই নিজের শিক্ষাদানের ধরন পরিবর্তন করতে হয় যাতে শিক্ষার্থী তথ্যটি বুঝতে পারে। যদিও "প্রতিবন্ধকতা" শব্দটি অনেক কিছু বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, তবে প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা আলাদা, এবং প্রতিটি পড়াকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
অধিকাংশ সময় পড়ার সমস্যা চিহ্নিত করার সবচেয়ে কঠিন অংশ হলো, সমস্যাটা আসলে কোথায় তা নির্ধারণ করা। নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনটি নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করা হয়। প্রথমত, শিক্ষার্থীর পড়ার অভ্যাস যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করতে হয়, কোন অংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। দ্বিতীয়ত, বিশ্লেষণটি প্রাসঙ্গিক ও বিদ্যমান তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। শেষত, তথ্য বিশ্লেষণের সময় মানসিকভাবে খোলা মন নিয়ে থাকতে হবে। <ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref> যদিও খোলা মন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে না-ও হতে পারে, তবে নির্ণয়ের সময় এটি বড় ভূমিকা পালন করে, কারণ একটি পড়ার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য কোনো তত্ত্ব প্রমাণ বা খণ্ডন করা নয়, বরং শিক্ষার্থীর সমস্যাটা কোথায় সেটা খুঁজে বের করা। এছাড়া, অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে না, বরং একাধিক ক্ষেত্রে সমস্যার লক্ষণ দেখায়। এই ধরনের ক্ষেত্রে খোলা মনের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ণয় ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর কারণ, কোনো শিশুর যদি পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলেও সেটা কোনো নির্দিষ্ট মডেল বা ফর্মুলায় ফিট নাও করতে পারে, এবং সেটা থাকলেই সেটা "প্রতিবন্ধকতা" হিসেবে বিবেচিত হবে না।
নির্ণয়ের নীতির বাইরে, এখানে নির্ণয় প্রক্রিয়ার ছয়টি সাধারণ ধাপ রয়েছে:
১. "শ্রেণি বা বিদ্যালয়ের পাঠ দক্ষতা পরিমাপ" - পাঠ দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়, যাতে প্রতিটি শ্রেণির পাঠ দক্ষতার স্তর নির্ধারণ করা যায় এবং পরীক্ষার ফলাফলে ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
২. "প্রতি শ্রেণির প্রধান পাঠ-সমস্যাগুলো নির্বাচন" - পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রতি শ্রেণির প্রধান সমস্যাটি নির্ধারণ করা হয় এবং গড়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের বিশেষ মনোযোগ ও সহায়তা প্রদান করা হয়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৩. "পাঠে দুর্বল শিক্ষার্থীদের নির্বাচন" - গড়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর মনোযোগ প্রদান করা হয়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৪. "ব্যক্তিগতভাবে বিশ্লেষণের জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ" - শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রায়ই দেখা যায় যে এইসব উপাদান শিক্ষার্থীর সামগ্রিক শেখার সক্ষমতার উপর বড় প্রভাব ফেলে। অনান্য উপাদান যেমন দৃষ্টিগত পরিধি, দৃষ্টিনির্দেশের সংখ্যা ও নিয়মিততা, ডিসলেক্সিয়া, উচ্চারণ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাসও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৫. "পাঠের দুর্বলতার ধরন নির্ধারণ" এবং
৬. "পাঠে ঘাটতির কারণ নির্ধারণ" - এই দুটি ধাপকে একটি বৃহত্তর ধাপে একত্রিত করা যায়। কারণ পূর্ববর্তী চারটি ধাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শেখার সমস্যা কীভাবে এবং কেন হচ্ছে তা নির্ধারণ করা যায়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
যদিও এই ধাপগুলো শিক্ষার্থীর সমস্যাগুলি চিহ্নিত করতে নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, প্রতিটি ক্ষেত্রই স্বতন্ত্র এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন পদ্ধতিতে সমাধান করা যেতে পারে।
ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ে পাঁচটি কাজ রয়েছে যা নির্ধারণ করে যে একটি শিশু সত্যিই ডিসলেক্সিক কিনা: মৌখিক শব্দ ও ছদ্মশব্দ পড়া, মৌখিক পাঠ্য পড়া, মৌখিক ছদ্মশব্দ পাঠ্য পড়া, মৌখিক শব্দ তালিকা পড়া, এবং শব্দ ও ছদ্মশব্দ বানান লেখা।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref> এই পরীক্ষাগুলো করতে গিয়ে চার ধরনের পাঠের গতি এবং চারটি স্তরের পাঠ ও বানান নির্ভুলতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। যদি একটি শিশু প্রতিটি পরীক্ষিত কাজের স্কোরে নিচের ১০ শতাংশে পড়ে, তবে দেখা যায় যে সে নির্দিষ্ট পাঠ ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে দুর্বল। সম্পূর্ণরূপে ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ের জন্য শিশুকে অন্তত চারটি নির্ভুলতার পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে, বা চারটি গতি পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে, অথবা দুটি নির্ভুলতা ও দুটি গতি পরীক্ষায় নিচের ১০ শতাংশ স্কোর করতে হবে।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref>
পূর্বে শেখার অক্ষমতা নির্ধারণ করা হতো আইকিউ পরীক্ষা এবং পাঠ পরীক্ষায় অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে। যদি কোনো শিশুর আইকিউ গড় হয় কিন্তু তার পাঠ দক্ষতা কম থাকে, তবে তাকে শেখার অক্ষমতা আছে বলে বিবেচনা করা হতো।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref> এই পদ্ধতি, যা “ডিসক্রেপেন্সি মডেল” নামে পরিচিত, অনেক বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হতো এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রেণিতে স্থান দেওয়া হতো।
বর্তমানে, পঠন উপাদানগত মডেল (Component Model of Reading - CMR) ব্যবহৃত হয় পাঠ ও শেখার অক্ষমতা বোঝা ও নির্ণয়ের জন্য। এই মডেলে তিনটি প্রধান ক্ষেত্র রয়েছে: কগনিটিভ (জ্ঞানীয়), যাতে রয়েছে শব্দ স্বীকৃতি ও অনুধাবনের উপাদান; সাইকোলজিক্যাল (মানসিক), যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় মোটিভেশন, আগ্রহ, নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি, শেখার ধরণ ও লিঙ্গভেদ; এবং ইকোলজিক্যাল (পরিবেশগত), যাতে রয়েছে পরিবার ও শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ, সংস্কৃতি, পিতামাতার অংশগ্রহণ এবং উপভাষা।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref> একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি যে কগনিটিভ ডোমেইনের উপাদানগুলো শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা অর্জনের শর্ত পূরণ করতে পারে, তবে সাইকোলজিক্যাল ও ইকোলজিক্যাল ডোমেইনগুলো তা করতে পারে না।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref>
২০০৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পঠন উপাদানগত মডেল ব্যবহার করে পাঠ অনুধাবনে ভিন্নতা ৩৮-৪১% পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়, যেখানে পূর্বে ব্যবহৃত আইকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ২৫% নির্ধারণ করা যেত।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref>
সার্বিকভাবে, পাঠ ও শেখার অক্ষমতা নির্ণয়ের পদ্ধতি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ক্রমশ আরও নিখুঁত হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন ধরনের পাঠ অক্ষমতা রয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে খোলামনের দৃষ্টিভঙ্গি রাখা জরুরি এবং জানা থাকা উচিত যে প্রতিটি শিশু ও তার সমস্যাই ভিন্ন। নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এখানে বর্ণিত ধাপগুলো কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, তবে শিক্ষকেরা হস্তক্ষেপ ও সমস্যার অগ্রগতি সম্পর্কে আরও জানার সঙ্গে সঙ্গে এই ধাপগুলো ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে পারে।
=== পাঠে দুর্বলতা ও অক্ষমতার ধরন ===
পাঠে দুর্বলতা ও অক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করার সময় মনে রাখা জরুরি যে পাঠ ও অনুধাবনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন বহু উপাদান রয়েছে, এবং সব শিক্ষার্থী যারা পড়তে সমস্যায় পড়ে তারা “পাঠ অক্ষমতা” দ্বারা আক্রান্ত নয়। কখনো কখনো শিক্ষার্থীরা পড়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে না এবং ভাষাগত কাঠামো বুঝতে কষ্ট হয়, আবার কেউ কেউ এমন সাংস্কৃতিক বা ভাষাগত পটভূমি থেকে আসে যা বিদ্যালয়ের পাঠ শিক্ষার পদ্ধতির সঙ্গে মিল না খাওয়ায় সমস্যায় পড়ে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref> এছাড়াও, কিছু শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষার সুযোগ পেলেও পড়া শেখায় সমস্যা অনুভব করে। এটি সাধারণ বুদ্ধিমত্তার ঘাটতির কারণে হতে পারে, যেখানে তারা পড়ার চেয়ে বোঝার ক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়ে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
কিছু শিক্ষার্থী গড় বা তার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হলেও তাদের পাঠ অক্ষমতা থাকতে পারে, যা দুর্বল পাঠকদের থেকে আলাদা। কথা বলার সমস্যার সঙ্গে প্রায়শই লেখা ও বানানের সমস্যাও থাকে, যা শিক্ষার্থীর সফলভাবে পড়া ও বোঝার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
একটি সাধারণ পাঠ সমস্যার মধ্যে রয়েছে শব্দের ধ্বনিগততা—বিশেষ করে যখন শিক্ষার্থী বর্ণের ধ্বনিকে দৃষ্টিগত চিহ্নের সঙ্গে মিলাতে পারে না। এই ক্ষেত্রে সমস্যা ইন্দ্রিয়গত নয়, বরং কেন্দ্রীয়।<ref>Hoillingworth, L. S. (1923). Reading. In , Special talents and defects: Their significance for education (pp. 57-97). New York, NY, US: MacMillan Co. doi:10.1037/13549-004</ref> ওয়ার্ড ব্লাইন্ডনেস বা ডিসলেক্সিয়া আরেকটি সাধারণ পাঠ অক্ষমতা, যেখানে শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে অক্ষর ও শব্দ গুলিয়ে যায়, ফলে যা পড়ছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়।<ref>Hoillingworth, L. S. (1923). Reading. In , Special talents and defects: Their significance for education (pp. 57-97). New York, NY, US: MacMillan Co. doi:10.1037/13549-004</ref>
ডিসলেক্সিয়া একটি পাঠ সমস্যা যা বংশগতভাবে চলে আসতে পারে। যদি কোনো পিতা-মাতা বা আত্মীয় এই সমস্যায় আক্রান্ত হন, তবে সন্তানের ডিসলেক্সিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৪০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref>
বামহাতি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়া শেখা কঠিন হতে পারে, কারণ ডানহাতি শিক্ষার্থীদের জন্য বাম দিক থেকে ডানদিকে পড়া স্বাভাবিক, যেখানে বামহাতিদের জন্য এটি বিপরীত।<ref>Dearborn, W. F. (1932). Difficulties in learning. In W. V. Bingham, W. V. Bingham (Eds.) , Psychology today: Lectures and study manual (pp. 186-194). Chicago, IL, US: University of Chicago Press. doi:10.1037/13342-021</ref>
ধীর ও নীরব পাঠ দৃষ্টিগত সমস্যা, স্বল্প দৃষ্টিসীমা, ও ডিসলেক্সিয়ার কারণে হতে পারে, আর মনোযোগের অভাব, মূল ভাব সংগঠনের অক্ষমতা বা অমনোযোগিতার কারণে দুর্বল পাঠ অনুধাবন হতে পারে।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref> তবে মনে রাখতে হবে, মনোযোগের অভাব যেমন ক্ষতিকর, তেমনই অতিরিক্ত মনোযোগও সমস্যার কারণ হতে পারে। যদি শিক্ষার্থী একটি একটি শব্দে অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়, তবে পুরো বাক্যটি একসাথে গঠন করতে ব্যর্থ হতে পারে।
ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ৮% থেকে ২০% শিক্ষার্থীর মধ্যে এই সমস্যা রয়েছে, তবে মাত্র ৩% থেকে ৭% এর লক্ষণ এতটাই গুরুতর হয় যে তাদেরকে ক্লিনিক্যালি নির্ণয় করা হয় এবং বিশেষ শিক্ষামূলক সহায়তা ও সেবা প্রদান করা হয়।<ref>Zentall, S. S., & Lee, J. (2012). A reading motivation intervention with differential outcomes for students at risk for reading disabilities, ADHD, and typical comparisons: 'Clever is and clever does'. Learning Disability Quarterly, 35(4), 248-259. doi:10.1177/0731948712438556</ref> যদিও ADHD থাকলেই পড়াশোনায় সমস্যা থাকবে এমন নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এটি পড়াশোনায় সমস্যার সাথে মিলেও যায়, যার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই পাঠ্যবস্তুর ভুল ব্যাখ্যা করে বা পাঠ্যাংশে সাধারণ সংযোগগুলোর অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা অনুভব করে।
=== শিক্ষাদানের প্রভাব ===
যেকোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখায়, তখন শিক্ষকদের এবং শিক্ষা সহায়কদের উচিত পাঠদানের ধরণ ও উপকরণ পরিবর্তন করে বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তোলা। একটি উপায় হলো ‘রিডিং রিকভারি’ পদ্ধতি, যা নিউ জিল্যান্ডে উদ্ভাবিত। এই পদ্ধতিতে চারটি ধাপ রয়েছে:
1. "শিশুদের বিভিন্ন সাক্ষরতা নিরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়, যেমন: তারা অক্ষর চিনতে পারছে কি না, শব্দ পড়তে পারছে কি না, লিখতে পারছে কি না, মৌখিক পাঠে কতটা দক্ষ এবং তাদের সাক্ষরতা জ্ঞান ও কৌশল কেমন।"
2. "৩০ মিনিট দৈনিক শিক্ষাদান পর্ব, যেখানে রিডিং রিকভারি শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একান্তভাবে কাজ করেন।"
3. "একটি মানসম্মত পাঠদান সেশন যেখানে ধারাবাহিক কিছু কার্যক্রম থাকে, যার মধ্যে রয়েছে অক্ষর ও শব্দ অনুশীলন, ছোট ছোট বই থেকে পাঠ করা এবং সংক্ষিপ্ত লেখা তৈরি করে তা কাটাকাটি করে পুনরায় পাঠ করা।"
4. "একটি সংগঠিত কর্মী উন্নয়ন প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষকরা রিডিং রিকভারি প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।"<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
এই ধরণের ধাপে ধাপে সহায়তা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে যেমন কার্যকর, তেমনই শিক্ষকদের জন্যও এটি সহায়ক এবং বাস্তবসম্মত।
২০০৫ সালে রবার্ট শোয়ার্টজ পরিচালিত একটি গবেষণায় রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামটি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কতটা কার্যকর তা বিশ্লেষণ করা হয়। এই গবেষণায় ১৪টি অঙ্গরাজ্যের ৪৭ জন রিডিং রিকভারি শিক্ষক ১০৭ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠান, যাদের মধ্যে ৫৩% ছেলে এবং ৪৭% মেয়ে ছিল। শিক্ষার্থীদের একজন রিডিং রিকভারি শিক্ষকের সঙ্গে জোড়া লাগানো হয়, যিনি তাদেরকে দৈনিক ৩০ মিনিটের সেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন গঠিত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নিয়ে যান—যার মধ্যে রয়েছে অক্ষর ও শব্দ অনুশীলন, ছোট ছোট বই পড়া, সংক্ষিপ্ত লেখা তৈরি করা এবং সেগুলো ভাগ করে পুনরায় পাঠ করা। গবেষণার শেষে দেখা যায়, ৬৫% শিক্ষার্থী “গ্র্যাজুয়েট” করে, ১৬% কে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয় এবং ১৬% প্রোগ্রামটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি। এটি জাতীয় রিডিং রিকভারি তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়: ৫৬% শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট করে, ১৫% কে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয়, ১৯% কে “অসম্পূর্ণ” হিসেবে লেবেল দেওয়া হয়, ৫% “স্থানান্তরিত” হয় এবং ৪% “উল্লিখিত নয়” হিসেবে চিহ্নিত হয়।<ref>Schwartz, R. M. (2005). Literacy Learning of At-Risk First-Grade Students in the Reading Recovery Early Intervention. Journal Of Educational Psychology, 97(2), 257-267. doi:10.1037/0022-0663.97.2.257</ref> রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামটি পুনর্বাসন এবং হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল একটি উদ্যোগ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রোগ্রামের একটি চমৎকার দিক হলো, এটি ৮০’র দশক থেকে চললেও এখনো কার্যকর রয়েছে এবং এতে কোনো বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি। এই প্রোগ্রামের সফলতার আরেকটি প্রমাণ হলো—এটি ইংরেজি ভাষাভাষী বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর সফলতার হার খুবই উচ্চ।
শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে পাঠদানের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা জরুরি। পড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে শুরুতেই হস্তক্ষেপ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পড়তে শেখার সময় যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয় এবং তা যদি ঠিক সময়ে ধরা না পড়ে, তাহলে সেটি শিক্ষার্থীর সারা জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণেই রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগ এবং শিক্ষকদের সহায়তা শেখার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও SEA এবং অন্যান্য সহায়তা কর্মীদের সহায়তা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে এবং শিক্ষকদের চাপ কিছুটা কমায়, তবুও মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি শিশুর নিজস্ব শেখার একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত, যা তার প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
যদিও সব শিক্ষার্থীকে পাঠদানে সমস্যা রয়েছে এমন নির্ণয় করা হয় না, তবুও শ্রেণিকক্ষে পড়ানো বিষয়বস্তু শেখার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীই সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেক সময় এটি কোনো অজানা সমস্যার কারণেও হতে পারে। যদি কোনো শিক্ষার্থীকে নির্ণয় করা না হয়ে থাকে বা যদি সে প্রতিবন্ধী না হয় তবুও যদি সে শেখার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তবে সেই শিক্ষার্থীকে বোঝা এবং তাকে সহায়তা করা তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
== পাঠ শেখার ধাপ ==
জীবনের অন্য যেকোনো কিছু শেখার মতো, পড়া শেখার জন্যও কিছু ধাপ বা পর্যায় রয়েছে। শিশুরা যখন পড়া শেখা শুরু করে, তখন তারা তিনটি প্রধান ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। তারা প্রথমে এমন একটি পর্যায়ে থাকে যেখানে তারা কোনো শব্দ বিশ্লেষণ করতে পারে না (প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়), তারপর তারা ফনিক সংকেত এবং অন্যান্য পঠন কৌশল ব্যবহার করতে শেখে (আংশিক বর্ণমালা পর্যায়), এবং শেষে তারা এমন একটি স্তরে পৌঁছে যায় যেখানে তারা একে অপরের সাথে মিল আছে এমন বানানের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং নতুন শব্দ শিখতে ও সংযোগ করতে পারে (ফুল আলফাবেটিক স্টেজ) <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। পড়া শেখা একাধিক মাত্রায় বিকশিত হয়, যতক্ষণ না একজন ব্যক্তি প্রচলিত সাক্ষরতার স্তরে পৌঁছায়। প্রতিটি ধাপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে ছোট ছোট শিশুরা খুব সামান্য সাক্ষরতা সম্পর্কিত আচরণ দেখানো থেকে শুরু করে, পরে ভাষা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়।
=== প্রাক-বর্ণমালা পর্যায় ===
'''প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়''' বা প্রি-আলফাবেটিক স্টেজ-এ থাকা শিশুরা অনেক কিছুই জানে সাক্ষরতা সম্পর্কে, কিন্তু কোনো শব্দ পড়তে জানে না। এই পর্যায়ে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান থাকে না বলেই এটি প্রাক-বর্ণমালা পর্যায় নামে পরিচিত। শিশুরা অনেক শব্দ জানে, পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে পারে এবং অন্যদের সাথে কথোপকথন করতে পারে, কিন্তু কোনো শব্দ পড়তে পারে না। তবে তারা কোনো চিহ্ন বা প্রতীকের ভিত্তিতে শব্দটি বলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বড় ‘M’ দেখে ‘McDonald’s’ বলা বা কুকুরের ছবি দেখে ‘dog’ বলা। কিন্তু তারা ‘McDonald’s’ বা ‘dog’ শব্দটি চিনতে পারে না এবং ছবিটি সরিয়ে নিলে আর বলতে পারবে না। শিশুরা কেবল তাদের চারপাশের পরিবেশ দেখে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, ছাপা লেখাকে নয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যদিও শিশুরা অনেক শব্দ জানে এবং পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে পারে, তারা নিজেরা কোনো শব্দ বা ছাপা লেখা পড়তে পারে না। এই ধাপে থাকা একটি গোষ্ঠী “শব্দের চেহারা, উচ্চারণ এবং অর্থ” এর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে চেষ্টা করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। কিন্তু এভাবে পড়া শেখার সময় স্মৃতি থেকে বারবার মনে রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়, এবং শিশুরা পরে ধ্বনিগত তথ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
=== আংশিক বর্ণমালা পর্যায় ===
শিশুরা '''আংশিক বর্ণমালা পর্যায়''' বা পারশিয়াল আলফাবেটিক স্টেজ-এ প্রবেশ করে যখন তারা অক্ষরের নাম বা ধ্বনি শিখে এবং তা ব্যবহার করে শব্দ পড়তে চেষ্টা করে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এই পর্যায় থেকেই প্রকৃত পঠন শুরু হয়। শিশুরা আর কেবল ছবি দেখে শব্দ বলছে না, তারা আসলেই ছাপা লেখাটি পড়তে চেষ্টা করছে। তারা এখন অক্ষর চেনে এবং সেই জ্ঞান ব্যবহার করে শব্দ পড়ছে। এই পর্যায়ে শিশুরা সাধারণত শব্দের প্রথম এবং শেষ অক্ষরের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, যেমন, “spoon” পড়তে গিয়ে তারা s এবং n এর উপর জোর দেয় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। যখন তাদেরকে কোনো শব্দ লিখতে বলা হয়, তারা উচ্চারণে যেসব ধ্বনি শুনতে পায় সেগুলোর উপর ভিত্তি করে অক্ষর লেখে। যেমন, তারা “giraffe” শব্দটি “jrf” হিসেবে লিখতে পারে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। এই পর্যায়ে তাদের পঠন আংশিক থাকে কারণ তারা শব্দের সব অক্ষর বা ধ্বনি ব্যবহার করছে না, কেবল কিছু অংশ ব্যবহার করছে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
প্রাক-বর্ণমালা ও আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে ১৯৮৫ সালে এহরি এবং উইল্স একটি গবেষণা করেন। তারা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের দুটি ধাপে ভাগ করে পরীক্ষামূলক পাঠদানে নিয়োজিত করেন। একটি ধাপে ছিল ভিজ্যুয়াল বানান, যেখানে শব্দের ধ্বনির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, যেমন “mask” বানান লেখা হয়েছে “uHo”; অন্যটি ছিল ধ্বনিগত বানান যেখানে শব্দের কিছু ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব করে অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন “mask” বানান লেখা হয়েছে “MSK”।
ফলাফল ছিল, প্রাক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকেরা ভিজ্যুয়াল বানান সহজে শিখেছে, আর পারশিয়াল আলফাবেটিক পাঠকেরা ধ্বনিগত বানান ভালোভাবে মনে রাখতে পেরেছে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এহরি ব্যাখ্যা করেন, এটি নিশ্চিত করে যে প্রাক বর্ণমালা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ভিজ্যুয়াল সংকেতের উপর নির্ভর করে কারণ তাদের অক্ষর জ্ঞান নেই। আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উল্টোভাবে কাজ করে এবং শব্দ মনে রাখতে অক্ষর-ধ্বনির সংকেত ব্যবহার করতে পারে।
[[চিত্র:Screen_Shot_2015-12-03_at_5.41.40_PM.png|কিছুই_না|ফ্রেম|উইলস এবং এহরির ১৯৮৫ সালের পঠন পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল (গ্রাফটি প্রতিটি পর্যায়ে পঠিত শব্দের সংখ্যা দেখাচ্ছে)-গ্রাফটি পুনর্নির্মিত করা হয়েছে]]
=== পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায় ===
শিশুরা যখন বানানের অক্ষর এবং উচ্চারণে ধ্বনিগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণ সংযোগ তৈরি করে দর্শনীয় শব্দগুলো শিখতে সক্ষম হয়, তখন তারা '''সম্পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে''' চলে আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ে, শিশুরা শব্দটি উচ্চারণ করার সময় তারা স্পষ্টভাবে শুনতে পারে এমন অক্ষরগুলো দিয়ে শব্দগুলো লিখবে। যাইহোক, পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে শিশুরা এখন পড়ার সময় অপরিচিত শব্দগুলো ডিকোড করতে সক্ষম হয়, তারা এমন বানানগুলো আবিষ্কার করতে পারে যা সমস্ত ফোনেমের প্রতিনিধিত্ব করে এবং শব্দের বানানটি আরও ভালভাবে মনে রাখতে সক্ষম হয়।
পড়ার পর্যায়গুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখানোর জন্য ১৯৮৭ সালে এহরি এবং উইলস একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। এই গবেষণাটি পূর্ণ এবং আংশিক পর্যায়ের পাঠকদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি শব্দ শেখার পার্থক্য দেখানোর জন্য করা হয়েছিল। এই গবেষণার জন্য, কিন্ডারগার্টনাররা যারা ইতিমধ্যে আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ে ছিল এলোমেলোভাবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তারপরে তাদের এলোমেলোভাবে একটি চিকিত্সা বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল। চিকিত্সা গোষ্ঠীটি তখন অনুরূপ বানানযুক্ত শব্দগুলো পড়ার অনুশীলন করে সম্পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠক হওয়ার প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। এর জন্য শব্দগুলোতে সমস্ত গ্রাফিম-ফোনেম সম্পর্কগুলো সঠিকভাবে পড়ার জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রয়োজন ছিল। নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীভুক্ত কোনও প্রশিক্ষণ পায়নি এবং আংশিক পর্যায়ের পাঠক হিসাবে রয়ে গেছে। এর পরে, কিন্ডারগার্টেনের উভয় গ্রুপ বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় পনেরো শব্দের একটি সেট পড়তে শেখার অনুশীলন পেয়েছিল। তালিকার সমস্ত শব্দের একই রকম বানান ছিল যা আংশিক সংকেত মনে রেখে শিশুদের পক্ষে শেখা শক্ত করে তুলেছিল। শব্দের তালিকায় স্পিন, ছুরিকাঘাত, স্ট্যাম্প বা স্ট্যান্ডের মতো শব্দ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অধ্যয়নের আগে, শিশুদের কেউই প্রশিক্ষণের আগে এই শব্দগুলোর মধ্যে দুটির বেশি পড়তে পারত না।
গবেষণার ফলাফলগুলো কিন্ডারগার্টেনের দুটি গ্রুপের মধ্যে বিশাল পার্থক্য দেখিয়েছে। পূর্ণ-বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকরা তিনটি পরীক্ষায় তালিকার বেশিরভাগ শব্দ পড়তে শিখেছিলেন তবে আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকরা কখনও শেখার এই স্তরে পৌঁছেননি। গবেষণায় বলা হয়েছে যে আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকদের জন্য অসুবিধার কারণ হলো তাদের অনুরূপ বানানযুক্ত শব্দগুলোকে বিভ্রান্ত করা। যা পাঠকদের সুবিধাটি দেখায় যখন তারা স্মৃতিতে দৃষ্টিশক্তি শব্দগুলো ধরে রাখার জন্য সম্পূর্ণ সংযোগ তৈরি করতে পারে।
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে পড়ার ক্ষেত্রে কেবল এক ধাপ পিছনে থাকা ফলাফলগুলোতে এত বড় পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। পুরো বর্ণমালা পর্যায়ে থাকার কারণে কিন্ডারগার্টনাররা তিনটি পরীক্ষায় অনুরূপ বানানযুক্ত শব্দগুলো পড়তে সক্ষম হয়েছিল যেখানে আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের কিন্ডারগার্টনারদের এটি করতে এত সমস্যা হয়েছিল। এটি প্রতিটি পঠন পর্যায়ের গুরুত্ব এবং শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত কিনা তা নিশ্চিত করা শিক্ষকদের পক্ষে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দেখায়। শিক্ষকদের নিশ্চিত হওয়া দরকার যে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পর্যায়ে পাস করতে সহায়তা করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু শিখেছে।
=== একীভূত পর্যায় ===
শিশুরা পড়ার এই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যখন তারা তাদের স্মৃতিতে আরও দর্শনীয় শব্দ ধরে রাখে এবং অক্ষরের নিদর্শনগুলোর সাথে পরিচিত হয়। শিশুরা এখন বিভিন্ন শব্দে বারবার প্রদর্শিত অক্ষর নিদর্শনগুলোর সাথে পরিচিত এবং গ্রাফিম-ফোনেম সংযোগগুলো বৃহত্তর ইউনিটগুলোতে একীভূত হতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রণের মতো শব্দগুলো এখন আরও সহজে শেখা যায় কারণ স্মৃতিতে শব্দটি সুরক্ষিত করার জন্য কম সংযোগের প্রয়োজন হয় এবং শব্দটি আর অনেকগুলো পৃথক অক্ষর-শব্দ সংযোগ হিসাবে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে না তবে দুটি সিলেবল আকারের অংশ।
=== শিক্ষার উপর প্রভাব ===
ইংরেজি ভাষা নিখুঁত নয় এবং তাই এটি একটি অক্ষর একটি শব্দ প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, দুই বা ততোধিক অক্ষর যে একটি শব্দ প্রতিনিধিত্ব করে, একটি নীরব চূড়ান্ত স্বর মধ্যবর্তী স্বরবর্ণের শব্দ পরিবর্তন করতে পারে, এবং অনেক শব্দ এমন অক্ষর ধারণ করে যার কোনও শব্দ নেই। যখন শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের কীভাবে পড়তে হয় তা শেখাতে শুরু করেন, তখন তাদের অক্ষর এবং শব্দগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত এবং শিশুরা যখন তাদের সাক্ষরতার দক্ষতা বিকাশ করে তখন তারা যে বিভিন্ন পর্যায়ে যায় তা জানা উচিত। তিনটি বর্ণমালা পর্যায় জুড়ে, শিক্ষকদের দক্ষতা হিসাবে ডিকোডিং এবং শব্দভাণ্ডারের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত কারণ এই মাত্রাগুলো জন্য অত্যাবশ্যক। শিশুদের শব্দগুলো ডিকোড করতে সক্ষম হতে হবে, অন্য কথায়, অক্ষর এবং শব্দ সম্পর্ক সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং লিখিত শব্দগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে সক্ষম হতে হবে। গেমগুলো বাচ্চাদের অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলোর সঠিক উচ্চারণ শেখানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বাচ্চাদের সামনে চিঠির সাথে অক্ষরের বিভিন্ন শব্দ শুনতে দেওয়া তাদের আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করবে। যেহেতু শিক্ষানবিস পাঠকরা ভিজ্যুয়াল লার্নার, তাই ছবিগুলো তাদের অক্ষর এবং শব্দের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক ব্যাটের একটি ছবি রাখতে পারেন এবং বোর্ডে ব্যাট শব্দটি লিখতে পারেন তবে প্রথম অক্ষরটি এড়িয়ে যেতে পারেন। এখন শিক্ষক বারবার ব্যাট শব্দটি উচ্চারণ করে এবং শিক্ষার্থীদের এটি উচ্চারণ করতে সহায়তা করে শিক্ষার্থীদের প্রথম অক্ষর কী হতে পারে তা জিজ্ঞাসা করতে পারেন। শিশুদের জন্য শব্দগুলো ডিকোড করা এবং সাবলীলভাবে পড়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে শিশুরা নির্দিষ্ট প্রাসঙ্গিক শব্দের অর্থ বুঝতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। যখন শিশুরা শব্দগুলোর অর্থ পড়তে এবং বুঝতে পারে তখন তারা সত্যই একটি পাঠ্য বুঝতে সক্ষম হয়। শিক্ষকদের উচিত শিশুদের নির্দিষ্ট বিভাগে একে অপরের সাথে সংযুক্ত শব্দগুলো স্থাপন করে, শব্দের সংযুক্ত বিভাগ তৈরি করে, শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে, শব্দের অর্থ প্রসারিত করতে অভিধান বা থিসরাস ব্যবহার করে এবং শব্দভান্ডার অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের স্ব-নির্বাচিত শব্দ এবং এই শব্দগুলো চয়ন করার জন্য নির্দিষ্ট কারণগুলো উল্লেখ করে পাঠ্যে পাওয়া শব্দের অর্থ আবিষ্কার করতে সহায়তা করা উচিত।
== পড়তে শেখান ==
সাক্ষরতা এবং পড়ার দক্ষতার উপর প্রায়ই প্রচুর গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাই শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের কীভাবে পড়তে হয় তা শেখানোর জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি বা পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য চাপ অনুভব করতে পারেন। প্রারম্ভিক পাঠকদের শেখানোর সময় কোন ক্ষেত্রগুলোতে ফোকাস করা উচিত তা সিদ্ধান্ত নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আদর্শভাবে, পড়ার নির্দেশটি ভাষার প্রতিটি ভিত্তির পাশাপাশি পড়তে শেখার সুবিধাগুলো স্পর্শ করা উচিত। পড়ার নির্দেশের ইতিহাস চলাকালীন, বাচ্চাদের পড়তে শেখানোর জন্য কোন পদ্ধতিগুলো সবচেয়ে ভাল তা নিয়ে অসংখ্য বিতর্ক হয়েছে ১৯৬৭ সালে, জিন চ্যাল পড়ার পদ্ধতিগুলোকে দুটি বিভাগে বিভক্ত করেছিলেন যা পড়ার নির্দেশের বিভাজন বোঝার জন্য এখনও কার্যকর: কোড-জোর পদ্ধতি এবং অর্থ-জোর দেওয়ার পদ্ধতি। '''কোড-জোর দেওয়ার পদ্ধতিগুলো''' অক্ষর এবং শব্দগুলো ডিকোডিং এবং শেখার দিকে মনোনিবেশ করে, যখন '''অর্থ-জোর দেওয়ার পদ্ধতিগুলো''' অর্থ তৈরি এবং কারও সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করে। পড়তে শেখানোর নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো তাদের পদ্ধতি দ্বারা পৃথক করা হয়। তবে আজ, পড়ার মডেলগুলো দুটি ধরণের পড়ার পদ্ধতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে কারণ তারা উভয়ই পড়তে শেখার জন্য অপরিহার্য হিসাবে স্বীকৃত। পড়া এবং সাক্ষরতার বিকাশের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। তবে আমাদের বাচ্চাদের শেখানোর গুরুত্বও ভুলে গেলে চলবে না যে পড়া উপভোগ্য হতে পারে।
=== ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতি ===
পড়তে শেখানোর জন্য একটি ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতি হলো এক ধরণের কোড-জোর পদ্ধতি। প্রাথমিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুরা যাতে পারে তা নিশ্চিত করা: অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র বুঝতে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচিত শব্দগুলো চিনতে এবং অপরিচিত শব্দগুলো ডিকোড করতে পারে আরও ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতির পক্ষে ওকালতি করা গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে বর্ণমালা প্রতীকগুলোকে তাদের শব্দের সাথে সংযুক্ত করতে শেখার জন্য ফোনমিক সচেতনতা একটি প্রয়োজনীয়তা এবং এই অক্ষর-শব্দ সংযোগগুলো পৃথক শব্দগুলো সনাক্ত করতে শেখার জন্য এবং সাধারণভাবে পড়তে শেখার জন্য যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে, অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র শেখা প্রারম্ভিক পাঠকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতে পারে, বিশেষত যেহেতু শব্দগুলো অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্রের সংমিশ্রণে গঠিত। একটি ধ্বনিবিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতির মধ্যে, দুটি ধরণের নির্দেশনা রয়েছে: একটি সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি এবং একটি অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি। একটি '''সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতিতে''', শব্দগুলো নিজেরাই অক্ষরের সাথে যুক্ত হয় এবং তারপরে শব্দ গঠনের জন্য একসাথে মিশ্রিত হয় শ্রেণিকক্ষে, একজন শিক্ষক সরাসরি শিক্ষার্থীদের একটি পৃথক অক্ষর দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা শব্দটি বলতে পারেন। একবার শিক্ষার্থীরা কয়েকটি অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র শিখলে, তারা শব্দগুলো একসাথে মিশ্রিত করে পড়তে শিখতে শুরু করে। সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতিতে শব্দগুলো সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত প্রধান কৌশলটি অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্রের শিক্ষার্থীর জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে যখন কোনও শিক্ষার্থী কোনও অপরিচিত শব্দের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের এটি শব্দ করতে উত্সাহিত করা হয় এবং শব্দটি সনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের শব্দের প্রসঙ্গে পরিচালিত করা হয় না এই ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ কেবল একটি মেটাকগনিটিভ কৌশল যা সামগ্রিকভাবে পাঠ্যটি বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি '''অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতিতে''', অক্ষরের শব্দগুলো বিচ্ছিন্নভাবে অক্ষরের পরিবর্তে পুরো শব্দের প্রসঙ্গে চিহ্নিত করা হয় নির্দেশের সময়, শিক্ষক বোর্ডে হাত শব্দটি লিখতে পারেন ও এইচ অক্ষরটি আন্ডারলাইন করতে পারেন। তারপরে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে "হাত" বলতেন যে এইচ শব্দটি / এইচ / তৈরি করে। উপরন্তু, শব্দ এবং চিত্র সূত্রের প্রসঙ্গ অপরিচিত শব্দ শব্দ শব্দ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি সাধারণ সমস্যা যা অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র শেখানোর জন্য প্রসঙ্গ ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো কিছু শিক্ষার্থী এই চিঠিপত্রগুলো শিখতে ব্যর্থ হয় কারণ তারা শব্দগুলোকে তাদের স্বতন্ত্র শব্দগুলোতে বিভক্ত করতে অক্ষম। কারণ তাদের পুরো শব্দ থেকে শব্দগুলো অনুমান করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব রয়েছে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রমাণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে বেশিরভাগ দরিদ্র পাঠকদের বর্ণমালা কোডিং এবং ফোনমিক সচেতনতার ঘাটতি। পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, আদর্শ পঠন নির্দেশে কোড-জোর পদ্ধতি এবং অর্থ-জোর পদ্ধতি উভয়ই জড়িত হওয়া উচিত। যেমন, ধ্বনিবিজ্ঞান নির্দেশের বিরুদ্ধে লোক যতটা না লোক রয়েছে তার চেয়ে বেশি লোক ধ্বনিবিজ্ঞান এবং নির্দেশমূলক শিক্ষণ পদ্ধতির উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার বিরুদ্ধে
ম্যাডক্স এবং ফেং (২০১৩) এর একটি গবেষণায় শিক্ষার্থীদের পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতার উন্নতির জন্য পুরো ভাষা পড়ার নির্দেশের কার্যকারিতা বনাম ধ্বনিবিজ্ঞান নির্দেশের কার্যকারিতা তুলনা করা হয়েছে। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা পুরো ভাষা নির্দেশের চেয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতার উপর আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পুরো ভাষা নির্দেশনা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের চেয়ে পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতায় আরও বেশি লাভ দেখাবে। একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে বাইশ জন প্রথম গ্রেডারকে এলোমেলোভাবে পরীক্ষামূলক গ্রুপ বা নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষামূলক গোষ্ঠীটি ধ্বনিবিজ্ঞান গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল এবং সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা পেয়েছিল, যখন নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীটি পুরো ভাষা গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল এবং সুস্পষ্ট ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশনা পায়নি। পরীক্ষামূলক দলের সাথে, শিক্ষক ধ্বনিবিজ্ঞানের নিদর্শনগুলো শিখিয়েছিলেন এবং গ্রুপটি এই নিদর্শনগুলোর সাথে সেগমেন্টিং, কোডিং, মিশ্রণ এবং কাজ করার অনুশীলন করেছিল। তবে কোনও গল্প পড়েনি। কন্ট্রোল গ্রুপের সাথে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের রাজ-বাচ্চাদের পড়ার প্রোগ্রাম থেকে চৌদ্দটি গল্প পড়ে শোনান; গল্পগুলোর শব্দগুলোতে ফনিক্স গ্রুপে শেখানো একই ধ্বনিবিদ্যা নিদর্শন ছিল এবং শিক্ষার্থীরা চিত্র পদচারণা, গল্পের ভবিষ্যদ্বাণী এবং শব্দভাণ্ডারের অর্থের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। উভয় গ্রুপ চার সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের শিক্ষকের (যিনি পরীক্ষকদের মধ্যে একজনও ছিলেন) সাথে বিশ মিনিটের জন্য সাক্ষাত করেছিলেন, সপ্তাহে পাঁচ দিন। প্রশিক্ষণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে, এইমসওয়েব রিডিং কারিকুলাম বেসড মেজার (আরসিবিএম) এবং এইমসওয়েব স্পেলিং কারিকুলাম বেসড মেজার (এসসিবিএম) ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের প্রিটেস্ট স্কোর সংগ্রহ করা হয়েছিল। চার সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পরে, পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতার পরিবর্তনগুলো পরিমাপ করার জন্য পোস্টটেস্ট স্কোর গণনা করার জন্য শিক্ষার্থীদের আবার একই পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। ফলাফলগুলো উভয় গ্রুপের পড়ার সাবলীলতা বা বানান নির্ভুলতার ক্ষেত্রে কোনও পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নির্দেশ করে না। ফোনিক্স গ্রুপের গড় পড়ার স্কোর বেশি ছিল এবং পুরো ভাষা গোষ্ঠীর তুলনায় তাদের পড়ার সাবলীলতা ৮.০০ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। এরা তাদের পড়ার সাবলীলতা ৪.০৯ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। বানান নির্ভুলতার জন্য ডেটা দেখায় যে ধ্বনিবিজ্ঞান গ্রুপের ১.০০ পয়েন্ট বৃদ্ধির সাথে ইতিবাচক ফলাফল ছিল যখন পুরো ভাষা গোষ্ঠীটি -০.২৭ পয়েন্ট হ্রাসের সাথে পিছিয়ে পড়েছিল। একটি সরাসরি তুলনা ইঙ্গিত দেয় যে ধ্বনিবিজ্ঞান গোষ্ঠীটি পড়ার সাবলীলতা এবং বানান নির্ভুলতা উভয় ক্ষেত্রেই আরও বেশি লাভ করেছে।
=== ধ্বনিমূলক সচেতনতা ===
ফোনমিক সচেতনতা কীভাবে পড়তে শেখার উপর প্রভাব ফেলে? '''ফোনমিক সচেতনতা''' কথ্য শব্দে ফোনেমগুলোতে ফোকাস করার এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। '''ফোনেমগুলো''' হলো ক্ষুদ্রতম ইউনিট যা কথ্য ভাষা তৈরি করে এবং সিলেবল এবং শব্দ গঠনে একত্রিত হয়,[ সুতরাং, ফোনমিক সচেতনতা একটি কোড-জোর পদ্ধতি। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্মৃতি থেকে শব্দ-পড়ার জন্য ফোনেম সেগমেন্টেশন দক্ষতা প্রয়োজন এবং ফোনমিক সচেতনতা শিশুদের অক্ষর-শব্দ বানান উদ্ভাবন করতে বা স্মৃতি থেকে বানান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করে শব্দ লিখতে সহায়তা করে মনে করা হয়।
ক্যাসেল, রিয়াচ এবং নিকলসন (১৯৯৪) এর একটি গবেষণা করা হয়েছিল ফোনমিক সচেতনতার প্রশিক্ষণ শিশুদের পড়া এবং বানানের ক্ষেত্রে আরও ভাল সূচনা করবে কিনা তা নির্ধারণের লক্ষ্যে করা হয়েছিল, এমনকি যদি তারা ইতিমধ্যে পুরো ভাষা প্রোগ্রামের মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরীক্ষাটি নিউজিল্যান্ডের শিশুদের স্কুলের প্রথম কয়েক মাসে করা হয়েছিল, যখন তারা কেবল পড়তে এবং লিখতে শিখছিল। তিনটি ভিন্ন স্কুল থেকে ৩৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের বিভক্ত করা হয়েছিল এবং একটি পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে মিলিত হয়েছিল। পরীক্ষামূলক দলটি ১০ সপ্তাহের জন্য সপ্তাহে দু'বার ২০ মিনিটের প্রশিক্ষণ সেশন ছিল, সামগ্রিক প্রশিক্ষণের সময় মোট ৬.৭ ঘন্টা। এই সেশনগুলোর সময় আচ্ছাদিত বিষয়গুলো ফোনেম সেগমেন্টেশন, ফোনেম প্রতিস্থাপন, ফোনেম মোছা এবং ছড়া সহ ফোনমিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বেছে নেওয়া হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর একই পরিমাণ শিক্ষামূলক সময় ছিল। তবে শিশুরা নিউজিল্যান্ডের স্কুলগুলোতে পুরো ভাষা পদ্ধতির অংশ হিসাবে প্রক্রিয়া লেখার ক্রিয়াকলাপে জড়িত ছিল, যেখানে শিশুরা তাদের নিজস্ব গল্প লিখেছিল এবং শব্দের নিজস্ব বানান আবিষ্কার করেছিল। প্রশিক্ষণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে একাধিক প্রিটেস্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে: রোপারের ফোনমিক সচেতনতার পরিমাপ, বানান পরীক্ষার একটি বিস্তৃত পরিসীমা অর্জন, একটি পরীক্ষামূলক বানান পরীক্ষা এবং একটি ডিকশন পরীক্ষা। প্রশিক্ষণ সেশন শেষ হওয়ার পরে এই একই পরীক্ষাগুলোও পোস্টটেস্ট হিসাবে পরিচালিত হয়েছিল। গবেষণার ফলাফলগুলো ফোনমিক সচেতনতায় উভয় গ্রুপের জন্য উল্লেখযোগ্য লাভ দেখিয়েছিল। তবে পরীক্ষামূলক এবং নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল যা ইঙ্গিত দেয় যে গবেষণায় ব্যবহৃত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটি ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতা উন্নত করতে কার্যকর ছিল। দুটি বানান পরীক্ষায় (বানান পরীক্ষার ওয়াইড রেঞ্জ অ্যাচিভমেন্ট এবং পরীক্ষামূলক বানান পরীক্ষা) গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও ছিল। এটি দেখায় যে ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতার উন্নতি আরও ভাল বানান দক্ষতার দিকে পরিচালিত করে। উপসংহারে, গবেষণার ফলাফলগুলো পরামর্শ দেয় যে অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো লিঙ্ক করার ক্ষমতা বানান অগ্রগতির সাথে যুক্ত এবং ফোনমিক সচেতনতা বানান অধিগ্রহণকে উত্সাহ দেয়
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ফোনমিক সচেতনতা নির্দেশের প্রভাব প্রাক স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন বছরগুলোতে সর্বাধিক এবং প্রথম শ্রেণির বাইরে আরও ছোট হতে পারে শিক্ষার্থীরা প্রথম শ্রেণি ছাড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতা বানান নিদর্শন শেখার প্রয়োজনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ফোনমিক সচেতনতার সুস্পষ্ট নির্দেশনা বয়স্ক শিক্ষার্থীদের পক্ষে ততটা কার্যকর নাও হতে পারে; এটি এমন শিশুদের জন্য কার্যকর হতে পারে যারা স্বাভাবিক পড়ার অগ্রগতি করেনি এবং পড়ার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা, সুতরাং, ফোনমিক সচেতনতা দক্ষতা নির্দেশনা এই শিক্ষার্থীদের পড়া এবং বানান অসুবিধাগুলোতে সহায়তা করতে পারে
=== সমগ্র ভাষা পদ্ধতি ===
পুরো ভাষা পদ্ধতিতে, সাক্ষরতাকে একটি শীর্ষ-ডাউন প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা হয় পুরো ভাষা পদ্ধতিটি এমন একটি দর্শন যা শব্দ এবং শব্দগুলো তৈরি করে এমন শব্দ এবং ধ্বনিগুলো শেখার চেয়ে শব্দ এবং বাক্যগুলো পড়ার উপর জোর দেয়। চিঠির শব্দ-চিঠিপত্র পড়া থেকে স্বাধীনভাবে শেখানো হয় না, এবং তাই এটি এক ধরণের অর্থ-জোর পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা অংশগুলো পৃথক করার পরিবর্তে এবং প্রত্যেককে অনুশীলন করার পরিবর্তে সামগ্রিকভাবে ভাষার সাথে জড়িত। পড়া স্বাভাবিকভাবেই বোঝানো হয়, যেমন যখন শিশুরা প্রথম কথা বলতে শিখেছিল: খুব কম সরাসরি নির্দেশনা এবং প্রচুর উত্সাহ সহ পড়ার সম্পূর্ণতা অনুভব করে। তবেই শিক্ষার্থীরা শব্দের উপ-অংশগুলো শিখতে পারে একটি সম্পূর্ণ ভাষা পদ্ধতির খুব বেশি একটি প্রসঙ্গ-চালিত প্রক্রিয়া, এবং শব্দগুলো প্রসঙ্গের বাইরে উপস্থাপিত হয় না হাতের কাছে থাকা পাঠ্যটি বোঝার জন্য, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য এবং কোনও অপরিচিত অর্থ বোঝার জন্য তাদের সঞ্চিত জ্ঞান, চিত্রণ, ফোনেটিক কৌশল এবং পূর্বের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ব্যবহার করতে বোঝানো হয়। যে শিক্ষকরা পুরো ভাষা পদ্ধতির সমর্থন করেন তারা প্রায়ই বেসাল পাঠকদের পরিবর্তে "আসল বই" ব্যবহার করেন (প্রায়ই কোড-জোর পদ্ধতিতে দেখা যায়) কারণ তারা পড়ার সাবলীলতা এবং অর্থ তৈরির প্রচার করে তদুপরি, এটি একটি সম্পূর্ণ ভাষা পদ্ধতির উপর জোর দেওয়া হয় যে শেখার প্রক্রিয়াটি সর্বদা মসৃণ এবং নির্দিষ্ট হয় না এবং শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের শেখার লক্ষ্যগুলোর জন্য মালিকানা এবং দায়িত্ব নিতে হবে পুরো ভাষা পদ্ধতিটি প্রায়ই ভাইগটস্কিয়ান দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়: শিক্ষকরা মধ্যস্থতাকারী যারা বিশ্বের সাথে শিক্ষার্থীদের লেনদেন সম্ভব করে ভাইগটস্কির মতে, শেখা একটি সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, এবং অর্থ বিনিময় এবং শিশুদের অন্যদের সাথে কথোপকথন করতে হবে। যেমন, পড়ার নির্দেশের পুরো ভাষা পদ্ধতিটি সমস্ত ধরণের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে কারণ শিক্ষার্থীরা যখন একই সমস্যাগুলোতে সহযোগিতা করে এবং করে তখন তারা আরও কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে। যখন শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করে, তখন তাদের আলোচনা প্রায়ই কেবল সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তবে নতুন অর্থ গঠন করতে পারে এবং সহযোগিতা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে নতুন জ্ঞান সংগ্রহ করতে পারে। ভাইগটস্কি আরও বলেছিলেন যে সাক্ষরতার অভিজ্ঞতাগুলো কাঠামোগত হওয়া উচিত যাতে তারা কোনও কিছুর জন্য প্রয়োজনীয় হয়, অর্থাৎ, কীভাবে পড়তে হয় তা শেখার একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। ক্লাসে এমন উদাহরণ ব্যবহার করা যা প্রাসঙ্গিক বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার সাথে সমান্তরাল তুলনা রয়েছে তা পড়ার অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে তুলতে পারে পুরো ভাষা পদ্ধতির ব্যবহার করে নির্দেশনা পড়ার জন্য অন্য একটি ভাইগটস্কিয়ান মডেল হলো '''প্রক্সিমাল বিকাশের শিক্ষার্থীর জোনের''' মধ্যে কাজ করা। এটি কোনও ব্যক্তির একা কী করতে পারে এবং সাহায্যের মাধ্যমে তারা কী করতে পারে তার মধ্যে শেখার ক্ষেত্র। পড়ার সময়, শিক্ষার্থীদের ভাষা সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বা স্পষ্টতার জন্য স্কিল তৈরি করতে পারেএলএস তারা ইতিমধ্যে দখল করেছে। শিক্ষার্থীদের উপাদান সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা এবং অর্থ তৈরির উত্সাহ দেওয়া পড়ার বোধগম্যতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে যখন প্রকৃত পঠনকে পুরো ভাষা পড়ার নির্দেশের প্রধান উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তখন পদ্ধতিটি পড়ার বোধগম্যতা পরীক্ষার জন্য উপকারী সর্বোপরি, পড়ার বোধগম্যতা নির্দেশাবলী পড়ার একটি প্রধান লক্ষ্য।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের পড়া এবং লেখার কাজগুলোর উপর ম্যানিং এবং কামির গবেষণা (২০০০) বিচ্ছিন্ন ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশের তুলনায় পুরো ভাষার কার্যকারিতা তুলনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলের দুটি কিন্ডারগার্টেন ক্লাসের ৩৮ জন শিশুকে পরীক্ষা করা হয়। একটি শ্রেণির শিক্ষক পুরো ভাষার শিক্ষক হিসাবে চিহ্নিত এবং অন্যটি ধ্বনিবিদ্যার শিক্ষক হিসাবে। ধ্বনিবিদ্যা শ্রেণীকক্ষে, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের ফোনিকস ওয়ার্কশিট এবং মৌখিক-শব্দ প্রশিক্ষণ ছিল এবং প্রায়ই দর্শনীয় শব্দ এবং অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র অনুশীলনের জন্য ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করত। এমন পোস্টার ছিল যা বিভিন্ন ধ্বনিবিজ্ঞানের নিয়ম প্রদর্শন করেছিল, দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য প্রতীক দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পুরো ভাষা শ্রেণীকক্ষে, শিশুরা প্রচুর ভাগ করে নেওয়া পড়া এবং লেখার কাজ করেছিল, যেমন স্বাধীন জার্নাল লেখা এবং গ্রুপ লেখার ক্রিয়াকলাপ। শিক্ষক প্রতিদিন এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বইগুলো উচ্চস্বরে পড়া হত, দিনভর ছড়িয়ে দেওয়া হত। সমস্ত শিশুদের সারা বছর ধরে পাঁচবার পৃথকভাবে সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছিল, যেখানে তাদের আটটি শব্দ লিখতে বলা হয়েছিল এবং তারপরে দুই থেকে চারটি বাক্য পড়তে বলা হয়েছিল। গবেষকরা তখন শিক্ষার্থীদের তাদের লেখার স্তর এবং প্রদত্ত বাক্যে একটি শব্দ সনাক্ত করার ক্ষমতা অনুসারে স্কোর করেছিলেন। ফলাফলগুলো দেখায় যে যদিও পুরো ভাষা গোষ্ঠীটি নিম্ন স্তরে বছর শুরু করেছিল। তবে অনেক বেশি শিশু ধ্বনিবিদ্যা গোষ্ঠীর চেয়ে উচ্চতর স্তরে বছর শেষ করেছে। ফনিক্স গ্রুপে, রিগ্রেশনের আরও উদাহরণ ছিল এবং সামগ্রিকভাবে কম অগ্রসর হয়েছিল এবং তাদের কিন্ডারগার্টেন বছরের সময় আরও বিভ্রান্ত হয়েছিল।
=== স্কিমা তত্ত্ব ===
স্কিমা তত্ত্ব হলো পাঠকরা কীভাবে পাঠ্য বোঝার জন্য তাদের পূর্বের জ্ঞান ব্যবহার করে তার একটি ব্যাখ্যা '''স্কিমা''' (বহুবচন: ''স্কিমাটা'') শব্দটি প্রথম মনোবিজ্ঞানে একটি মানসিক কাঠামো বর্ণনা করার জন্য চালু হয়েছিল যা কোনও ব্যক্তির জ্ঞানকে সংগঠিত করে এবং পরে পড়ার নির্দেশে ব্যবহৃত হয়েছিল যাতে শিক্ষার্থীদের পূর্বের জ্ঞান পড়ার বোধগম্যতায় যে ভূমিকা পালন করে তা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল স্কিমা তত্ত্ব অনুসারে, লোকেরা স্কিমাটায় যা কিছু জানে তা সংগঠিত প্রত্যেকের স্কিমাটা পৃথক করা হয় এবং কোনও ব্যক্তির স্কিমা কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য যত বেশি বিস্তৃত হয়, তত সহজেই তারা সেই বিষয় অঞ্চলে নতুন তথ্য শিখতে সক্ষম হবে একজন ব্যক্তির বিদ্যমান জ্ঞান কাঠামো নমনীয় এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল; যখন কোনও ব্যক্তি নতুন তথ্য শেখেন, তখন তাদের পূর্ব-বিদ্যমান স্কিমাটি এই নতুন তথ্যটি সামঞ্জস্য করার জন্য সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন হতে পারে। পড়ার ক্ষেত্রে স্কিমা তত্ত্বের মূল ধারণাটি হলো লিখিত পাঠ্য কেবল অর্থ বহন করে না; বরং, পাঠ্যটি পাঠকদের কীভাবে পূর্ববর্তী বিদ্যমান জ্ঞান কাঠামো থেকে অর্থ পুনরুদ্ধার বা নির্মাণ করা উচিত তার জন্য দিকনির্দেশনা সরবরাহ করে। বিষয়বস্তুর জন্য স্কিমাটা থাকার পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের পড়ার প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন ধরণের পাঠ্য কাঠামোর জন্য স্কিমাটাও রয়েছে পাঠ্যটি বোঝা পাঠকের পূর্ব জ্ঞান এবং প্রকৃত পাঠ্যের মধ্যে একটি পারস্পরিক এবং ইন্টারেক্টিভ প্রক্রিয়া কারণ কার্যকর বোঝার জন্য পাঠ্যের সাথে পূর্বের জ্ঞানের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা প্রয়োজন পড়ার বোধগম্যতার সময় স্কিমা তত্ত্বের দুটি ধরণের প্রক্রিয়াকরণ রয়েছে: '''বটম-আপ প্রসেসিং''' হলো স্কিমা অ্যাক্টিভেশন (যখন পাঠ্য উদ্দীপনা প্রাসঙ্গিক স্কিমাটার সংকেত স্মরণ করে) পাঠ্যের নির্দিষ্ট তথ্যের মাধ্যমে, যখন '''শীর্ষ-ডাউন প্রক্রিয়াকরণ''' সাধারণ জ্ঞান দিয়ে শুরু হয় এবং আরও নির্দিষ্ট বিশদের দিকে নেমে যায় এবং আরও উদ্দীপনা উপস্থাপিত হওয়ার সাথে সাথে পাঠ্য সম্পর্কিত পাঠকের নির্দিষ্ট স্কিমাটা সক্রিয় করা যেতে পারে. পাঠ্য বোঝার জন্য এই দুটি ধরণের প্রক্রিয়াকরণ একযোগে এবং ইন্টারেক্টিভভাবে
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে পাঠকরা যখন পাঠ্যের পূর্বরূপ দেখে পূর্বের জ্ঞানকে সক্রিয় করে, তখন তারা পড়া শুরু করার সাথে সাথেই স্কিমাটা ব্যবহার করে এবং পুরানো এবং মধ্যে সংযোগ তৈরির লক্ষ্যে নতুন তথ্যের দিকে মনোনিবেশ করে। পাঠ্যের কাঠামো বা বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিদ্যমান স্কিমা ব্যতীত পড়ার বোধগম্যতা ঘটবে না। প্রাক-বিদ্যমান জ্ঞানের গুরুত্বের কারণে, শিক্ষকরা পড়ার আগে শিক্ষার্থীদের স্কিমা তৈরি এবং সক্রিয় করতে পারেন পাঠ্যের পূর্বাভাসে মস্তিষ্কের ঝড় বা গ্রুপ আলোচনা, বা এমনকি পাঠ্যটি পড়ার জন্য কৌশল এবং দক্ষতা পর্যালোচনা করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি লক্ষ করাও গুরুত্বপূর্ণ যে পার্থক্য এবং শিক্ষার্থীদের স্কিমাটা পড়ার বোধগম্যতার পার্থক্যের সাথে সম্পর্কিত। তবে পাঠ্যের পূর্বরূপ একজন পাঠককে আগাম উপলব্ধি করতে দেয় যে তাদের বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, সেই পড়ার কাজের জন্য শিক্ষার্থীর স্ব-কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
ইরানি শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণায় পরীক্ষা করা হয়েছে যে প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে স্কিমা অ্যাক্টিভেশন সংস্কৃতি ভিত্তিক পাঠ্যগুলোর পড়ার বোধগম্যতার উপর প্রভাব ফেলে কিনা। বিষয়গুলোর মধ্যে ছিয়াত্তর জন ইংলিশ অ্যাজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ (ইএফএল) শিক্ষার্থীরা হয় ইংরেজি সাহিত্যে মেজর বা টিচিং ইংলিশ অ্যাজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ (টিইএফএল) এ মেজর ছিল। অংশগ্রহণকারীরা সবাই ইরানের কেরমানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের দ্বিতীয় শিক্ষার্থী ছিলেন। সমস্ত শিক্ষার্থী একই ইংরেজি দক্ষতার ছিল তা নিশ্চিত করার জন্য, অক্সফোর্ড প্লেসমেন্ট টেস্টে তাদের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের ইংরেজির বেসিক থেকে উচ্চ-মধ্যবর্তী স্তর পর্যন্ত শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের তখন দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছিল: একটি পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ। গবেষকরা দুটি নাল হাইপোথিসিস পরীক্ষা করেছেন: প্রথমটি, স্কিমা অ্যাক্টিভেশনের পরে পরীক্ষামূলক গ্রুপের গড় প্রিটেস্ট এবং গড় পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকবে না; এবং দ্বিতীয়ত, পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রিটেস্ট এবং পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই যখন শিক্ষার্থীদের স্কিমাগুলো প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সক্রিয় করা হয়। প্রক্রিয়া চলাকালীন, পরীক্ষামূলক এবং নিয়ন্ত্রণ উভয় গ্রুপকেই প্রিটেস্ট হিসাবে হ্যালোইনের উত্স এবং রীতিনীতি সম্পর্কে একটি পড়ার বোধগম্যতা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ ছুটির দিনটি সাংস্কৃতিকভাবে লোড করা হয় এবং তাই অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের এটি বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। তারপরে, পরীক্ষামূলক গ্রুপের একজন গবেষকের সাথে স্কিমা অ্যাক্টিভেশনের দুটি প্রশিক্ষণ সেশন ছিল - এই সেশনগুলোতে প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপ, পূর্বরূপ, প্রাক-শিক্ষণ শব্দভাণ্ডার এবং শিক্ষার্থীদের হ্যালোইন কাস্টমসের সাথে আরও পরিচিত করার জন্য ছবিগুলো দেখা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপরে গ্রুপটিকে হ্যালোইন সম্পর্কে তারা কী জানত সে সম্পর্কে কথা বলতে বলা হয়েছিল এবং এটি গ্রুপ আলোচনার ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছিল। প্রশিক্ষণ সেশনের সময়, গবেষক গ্রুপটিকে নতুন শব্দভান্ডার শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং প্রয়োজনে সমার্থক শব্দ এবং সংজ্ঞা সরবরাহ করেছিলেন। পরীক্ষামূলক দলটিকে তখন দুই সপ্তাহ পরে পোস্টটেস্টের মতো একই পঠন বোধগম্যতা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। কন্ট্রোল গ্রুপটি কেবল প্রাথমিক প্রিটেস্ট পরিচালিত হয়েছিল এবং কোনও প্রশিক্ষণ সেশন বা পোস্টটেস্ট ছিল না। ফলাফলগুলো দেখিয়েছিল যে উভয় নাল হাইপোথিসিস প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, এবং উভয় গ্রুপই প্রিটেস্টে প্রায় একই স্কোর করেছিল - ১৬.৪২ এর গড় স্কোর সহ পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং ১৬.৫৭ এর গড় স্কোর সহ নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ - তবে পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রশিক্ষণ সেশনের পরে, তাদের পোস্টটেস্ট গড় স্কোর বেড়ে ১৮.৭০ এ দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রিটেস্ট এবং পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন। উপসংহারে, পরীক্ষামূলক গোষ্ঠীটি আরও পটভূমি জ্ঞান পাওয়ার সাথে সাথে পড়ার বোধগম্যতা বাড়ানো হয়েছিল এবং গবেষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে গবেষণার ফলাফল এবং প্রভাবগুলো অন্যান্য কম সাংস্কৃতিকভাবে আবদ্ধ উপকরণগুলোতে প্রযোজ্য। শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান স্কিমাগুলোতে নতুন তথ্য সংযুক্ত করতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষক নির্দেশিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্কিমা অ্যাক্টিভেশন ক্রিয়াকলাপগুলোতে সময় ব্যয় করা শিক্ষার্থীদের আরও ভাল পারফরম্যান্সের দিকে পরিচালিত করে
== পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন ==
শিশুরা যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন তারা প্রথম যে জিনিসটি শিখতে শুরু করে তা হল পড়া। আনুষ্ঠানিকভাবে পড়তে শেখা কিন্ডারগার্টেনে শুরু হয় এবং আমাদের জীবনকাল জুড়ে অব্যাহত থাকে। শিশুরা যখন পড়তে শিখছে, তখন তাদের প্রতিক্রিয়া জানানো এবং তারা কেমন করছে তা দেখার জন্য তাদের মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষার্থীর পড়ার দক্ষতার সাফল্য এবং উন্নতির পরিমাপ করার জন্য, কারও পড়ার অগ্রগতি নির্ধারণের জন্য কিছু ঘন ঘন মূল্যায়ন করা চিহ্নিতকারী রয়েছে: ফোনমিক সচেতনতা, অক্ষর জ্ঞান এবং মৌখিক পড়ার সাবলীলতা। শিশুরা মুদ্রণ করতে শেখার আগে, শব্দের অক্ষরগুলোর শব্দগুলো কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে তাদের সচেতন হওয়া দরকার। ফোনেমিক সচেতনতা মূলত এটি মূল্যায়ন করছে, শিশুদের কথ্য শব্দের ফোনমিক বিভাগগুলো লক্ষ্য করার, চিন্তা করার এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা থাকা দরকার। যদি শিশুরা ভাষার শব্দ কাঠামো সম্পর্কে সচেতন না হয় তবে তারা কথ্য শব্দের পৃথক শব্দগুলোতে অংশ নিতে সক্ষম হবে না এবং এইভাবে অক্ষর-ধ্বনি চিঠিপত্র স্থাপন করতে সক্ষম হবে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই অক্ষর-শব্দ লিঙ্কটি ডিকোডিংয়ের একটি মৌলিক দক্ষতা এবং সাক্ষরতার গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক দক্ষতা। অক্ষর জ্ঞান শিশুদের বড় এবং ছোট হাতের অক্ষরের নাম এবং বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষরের শব্দ জানার ক্ষমতা দ্বারা পরিমাপ করা হয়। বাচ্চাদের পক্ষে এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা যখন অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো বুঝতে পারে তখনই তারা পড়তে শুরু করতে পারে। পড়ার সময়, বাচ্চাদের কীভাবে শব্দগুলো শব্দ করতে হয়, তাদের ডিকোড করতে হয় এবং তাদের উচ্চারণ করতে হয় এবং এটি কেবল তখনই সম্ভব যদি তারা অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো আয়ত্ত করে। প্রারম্ভিক পড়ার অগ্রগতি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত তৃতীয় ধরণের মূল্যায়নটি পড়ার সাবলীলতা হিসাবে পরিচিত। এটি মূলত শিশুদের দ্রুত, নির্ভুলভাবে এবং অভিব্যক্তি দিয়ে পড়ার ক্ষমতা পরিমাপ করার চেষ্টা করছে। এই ধরণের মূল্যায়ন কিছু লোকের জন্য বিতর্কিত কারণ তারা বিশ্বাস করে না যে দ্রুত পড়ার মাধ্যমে শিশুরা অগ্রগতি করেছে। দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে পড়া পড়ার আসল উদ্দেশ্য নয়, আপনি যা পড়েছেন তা বোঝা এবং স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
কার্যকর মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়া উচিত এবং শিশুরা দ্রুত কোনও পাঠ্য পড়তে এবং এটি বুঝতে পারার পরে কেবল থামানো উচিত নয়। এ কারণেই কিছু খাঁটি মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে যা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা এবং শেখার নির্ধারণ করতে এবং বর্তমান এবং ভবিষ্যতের নির্দেশনাকে অবহিত করতে ব্যবহার করতে সক্ষম হন। শিক্ষকরা মৌখিক এবং লিখিত গল্পের পুনর্বিবেচনার মতো মূল্যায়ন ব্যবহার করতে সক্ষম হন যা অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ার বোধগম্যতা পরিমাপ করবে, সাক্ষরতার পোর্টফোলিওগুলো শিক্ষার্থীদের মৌখিক এবং লিখিত প্রক্রিয়া, পণ্য এবং দক্ষতা প্রদর্শন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং চেকলিস্টগুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের পর্যবেক্ষণে সহায়তা করতে এবং শিক্ষার্থীদের সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা এবং বৃদ্ধি নির্ধারণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
শিক্ষার্থীদের পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীরা কোন পর্যায়ে রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এটি শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনকে আরও ভালভাবে সহায়তা করতে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার অনেক সুবিধা রয়েছে তবে শিক্ষকদের সর্বদা সচেতন হওয়া উচিত যে মূল্যায়নই সবকিছু নয় এবং সমস্ত শিক্ষার্থীকে একই সময়ে বা একইভাবে মূল্যায়ন করা যায় না।
== শব্দকোষ ==
'''বটম-আপ প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি যা তথ্যের ছোট ছোট টুকরো টুকরো
'''কোড-জোর দেওয়ার পদ্ধতি:''' পড়ার পদ্ধতিগুলো অক্ষর এবং শব্দ এবং অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্রের ডিকোডিংয়ের গুরুত্বকে জোর দেয়।
'''বক্তৃতা:''' ভাষার কাঠামোগত, সুসংগত ক্রম যেখানে বাক্যগুলো উচ্চতর ক্রমের ইউনিটগুলোতে একত্রিত হয়, যেমন অনুচ্ছেদ, আখ্যান এবং এক্সপোজিটরি পাঠ্য, অর্থাত্, কথোপকথন।
'''সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়ার নির্দেশ যেখানে অক্ষরের সাথে সম্পর্কিত শব্দগুলো (অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র) প্রথমে স্বাধীনভাবে চিহ্নিত করা হয়, তারপরে পরে শব্দ গঠনের জন্য একসাথে মিশ্রিত হয়।
'''সম্পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়:''' পাঠকরা যারা পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ করার সাথে সাথে শব্দের পৃথক শব্দগুলো সনাক্ত করতে পারেন এবং বুঝতে পারেন যে বানানগুলো উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
'''অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়ার নির্দেশ যেখানে অক্ষরের ধ্বনিগুলো স্বাধীনভাবে না হয়ে পুরো শব্দের মধ্যে চিহ্নিত করা হয়।
'''অর্থ-জোর পদ্ধতি:''' পড়ার পদ্ধতিগুলো শব্দগুলো থেকে অর্থ তৈরি এবং কারও সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার করার দিকে বেশি মনোনিবেশ করে।
'''আংশিক বর্ণমালা পর্যায়:''' পাঠক। এরা পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু শব্দের অক্ষরকে শব্দের সাথে যুক্ত করে পড়েন।
'''ধ্বনি:''' শব্দের ক্ষুদ্রতম একক যা একটি শব্দ তৈরি করে।
'''ধ্বনিমূলক সচেতনতা:''' একটি শব্দে পৃথক ধ্বনিগুলো সনাক্ত এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা।
'''প্র্যাগমেটিক্স:''' ভাষার অর্থ, বার্তা ও ব্যবহার।
'''প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়:''' এটি এমন একটি পর্যায় যখন শিশুরা বেশ কিছুটা সাক্ষরতা জানে তবে কোনও শব্দ কীভাবে পড়তে হয় তা জানে না।
'''স্কীমা:'''একটি মানসিক কাঠামোর ধারণা যা আমাদের জ্ঞান এবং এই তথ্যের টুকরোগুলোর মধ্যে সম্পর্কগুলো সংগঠিত করতে সহায়তা করে।
'''স্কিমা অ্যাক্টিভেশন:'''প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পাঠ্য উদ্দীপনা বর্তমান পড়ার কাজের জন্য স্মৃতি থেকে প্রাসঙ্গিক স্কিমাটা স্মরণ করার সংকেত দেয়।
'''শব্দার্থবিজ্ঞান:''' শব্দ এবং তাদের অর্থ অধ্যয়ন।
'''বাক্যগঠন:''' একটি ভাষার শব্দগুলো বৃহত্তর ইউনিটে বিভক্ত করা হয়, যেমন বাক্যাংশ, ধারা এবং।
'''টপ-ডাউন প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি যা সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে যা জানা যায় তা পূরণ করতে এবং ছোট ছোট বিবরণের দিকে কাজ করে।
'''প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্টের জোন:''' ভাইগটস্কি দ্বারা তৈরি একটি ধারণা যা একজন শিক্ষার্থী নিজেরাই কী করতে সক্ষম এবং তারা সাহায্যের মাধ্যমে কী করতে পারে, যেমন শিক্ষক, পিতামাতা বা যত্নশীলের কাছ থেকে শেখার ক্ষেত্রটি বর্ণনা করে।
== প্রস্তাবিত পাঠ ==
Bukowiecki, E. M. (২০০৭)। শিশুকে লেখাপড়তে শেখান। কাপ্পা ডেল্টা পাই রেকর্ড, ৪৩ (২), ৫৮-৬৫। ডিওআই: ১০.১০৮০/০০২২৮৯৫৮.২০০৭.১০৫১৬৪৬৩
Ehri, L. C. (২০০৫)। শব্দগুলো পড়তে শেখা: তত্ত্ব, অনুসন্ধান এবং সমস্যা। পড়ার বৈজ্ঞানিক স্টাডিজ, ৯ (২), ১৬৭-১৮৮। ডিওআই: ১০.১২০৭ / s১৫৩২৭৯৯xssr০৯০২_৪
Hempestall, K. (২০০৫)। পুরো ভাষা-ধ্বনিবিজ্ঞান বিতর্ক: একটি .তিহাসিক দৃষ্টিকোণ। অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অফ লার্নিং ডিসেবিলিটিস, ১০ (৩-৪), ১৯-৩৩। ডিওআই: ১০.১০৮০ / ১৯৪০৪১৫০৫০৯৫৪৬৭৯৭
ট্রেসি, ডিএইচ, এবং মোরো, এলএম (২০১২)। পড়ার উপর লেন্স, দ্বিতীয় সংস্করণ: তত্ত্ব এবং মডেলগুলোর একটি ভূমিকা। গিলফোর্ড প্রেস।
1oxdza1yo7htodctt0vr7y17qfk3nh7
84055
84054
2025-06-11T19:44:40Z
NusJaS
8394
/* পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায় */
84055
wikitext
text/x-wiki
পড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা. কারণ এটি আমাদের সব একাডেমিক বিষয় শিখতে সাহায্য করে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরের সফলতার জন্যও এটি খুবই জরুরি। পড়তে শেখা একটি জটিল ও বহু বছরের প্রক্রিয়া। এখানে প্রতীক এবং লিখিত শব্দের শব্দ ও অর্থ চিনতে শেখা অন্তর্ভুক্ত। শিশুদের জন্য পড়ার দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, কারণ এটিই তাদের সাক্ষরতা ও শেখার জগতে প্রবেশের দরজা, যা জীবনের অনেক দিকের ওপর নির্ভর করে।
[[চিত্র:A_Family_Place_Library_(14071466252).jpg|থাম্ব|পড়তে শেখা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেক শিশু সহজ শব্দ ও রঙিন ছবিযুক্ত বই পড়া দিয়ে শুরু করে, তারপর ধীরে ধীরে কঠিন বই পড়ার দিকে এগিয়ে যায়।]]
এই অধ্যায়ে পড়তে শেখার বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়েছে। এর শুরু হয়েছে পড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীয় উপাদান যেমন স্মৃতি ও মনোযোগ দিয়ে। এখানে পড়ার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং শিক্ষাদানের ওপর এর কিছু প্রভাবও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেহেতু প্রতিটি শিশু আলাদা, তাই পড়তে শেখানোর জন্য একক কোনো পদ্ধতি সব শিশুর ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এই অধ্যায়ে পড়ার তিনটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে প্রথমে এমন শিশুদের কথা বলা হয়েছে যারা কোনো শব্দ পড়তে বা চিনতে পারে না, এবং শেষ পর্যন্ত এমন শিশুদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা অচেনা শব্দগুলো ডিকোড করার জন্য অক্ষর ও তাদের শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। বর্তমানে পড়তে শেখানোর পদ্ধতিতে বিভিন্ন তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত কৌশলগুলো একত্রিত করে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযোজিত করা হয়। অবশেষে, পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়নের কয়েকটি কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
== পড়ার জ্ঞানীয় উপাদান ==
পড়ার ক্ষেত্রে সফলতা নির্ভর করে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি ব্যবহারের পাশাপাশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ওপর, যাতে পাঠের অর্থ বোঝা যায়। পাশাপাশি, পাঠককে তার আশেপাশের জগত সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকতে হয় যাতে সে তথ্যটি অনুধাবন করতে পারে।
=== স্মৃতি ===
কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি এমন জ্ঞানীয় উপাদান, যা শিশুর পড়তে শেখার সাফল্যের সঙ্গে জড়িত। পড়া একটি স্মৃতিভিত্তিক কাজ, কারণ এটি বিশ্ব ও ভাষাগত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যখন একটি শিশু একটি শব্দ শিখছে, তখন তাকে সেই শব্দটি যথেষ্ট সময় ধরে মনে রাখতে হয় যাতে সে বাক্যাংশ, বাক্য এবং পুরো অনুচ্ছেদের জটিল অর্থ বুঝতে পারে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। একটি শিশু যা পড়েছে, সেটি অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য কার্যকর স্মৃতির প্রয়োজন <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি অন্যান্য স্মৃতির ধরন থেকে আলাদা, কারণ এটি প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ উভয়কে প্রতিফলিত করে <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি প্রায়শই শিশুদের পড়তে শেখার উন্নয়ন বোঝার জন্য গবেষণায় ব্যবহৃত হয় এবং Baddeley-এর মডেলটি কার্যকর স্মৃতি ও পড়ার উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই মডেলে দুটি মৌলিক দিক রয়েছে: ধ্বনিগত লুপ ও ভিজ্যুয়াল স্কেচপ্যাড <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ধ্বনিগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি অভ্যন্তরীণ অনুশীলন অংশ রয়েছে, যাকে বলা হয় articulatory loop, যা ধ্বনিগত তথ্যকে দীর্ঘ সময় ধরে স্মৃতিতে ধরে রাখতে সাহায্য করে, যাতে শব্দ ডিকোড ও পাঠ অনুধাবন সম্ভব হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। যখন শিশুরা শব্দ ডিকোড করতে পারে না বা সমস্যায় পড়ে, তখন এটি ধ্বনিগত সচেতনতার সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই ধরণের সমস্যা থাকা শিশুরা কথ্য ভাষার শব্দগত গঠন বোঝে না বা তার নাগাল পায় না <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ছোটবেলায় শিশুদের কার্যকর স্মৃতির পরিসর সীমিত থাকে কারণ তাদের এনকোডিং ও অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এখনো পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। পড়াকে অর্থবহ করে তুলতে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনের স্মৃতি প্রয়োজন <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। তাই যখন শিশুরা নতুন কিছু শেখে, তখন সেই তথ্যকে তাদের কার্যকর স্মৃতিতে সতেজ রেখে আগের শিখে রাখা তথ্যকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি থেকে আহরণ করতে হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। শিশুদের দক্ষ পাঠক হওয়ার জন্য, তাদের অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে জানতে হবে, যাতে বাক্য বা অনুচ্ছেদের অর্থ বোঝার সময় খুব বেশি সময় ধরে শব্দের অর্থ মনে রাখতে না হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। দুর্বল পাঠকরা যদি যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে না পারে, তাহলে তাদের অতিরিক্ত সময় নিতে হয় শব্দ বুঝতে, যা পাঠ অনুধাবনে বাড়তি চাপ তৈরি করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
=== মনোযোগ ===
পড়া ও মনোযোগের বিষয়ে আসলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মনোযোগ ছাড়া কোনো পাঠ অনুধাবন সম্ভব নয়। মনোযোগ ছাড়া কেউ পড়তে পারে না। ছোট শিক্ষার্থীদের পড়ানো প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং হয়, কারণ কেউ কেউ দীর্ঘ সময় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না, বা তারা যে উপাদান পড়ছে, সেটির প্রতি আগ্রহও থাকতে পারে না।
একজন শিশুকে পড়তে হলে, তার সামনে একটি বই খোলা থাকতে হবে এবং তাকে লেখার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson</ref> এমন অবস্থায় শিশুদের আনাও অনেক সময় একটি বড় অর্জন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ কিছু শিশু এই ধরণের কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
শুধু বইয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়াই নয়, পড়ার সময় শিশুদের উচিত সংযোগ তৈরি করা—যাতে পড়ার ছোট ছোট অংশগুলো বড় বিষয়ের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত, তা বুঝতে পারে। এ ক্ষেত্রেও অনেক মনোযোগের প্রয়োজন হয়, কারণ প্রায়শই একটি ছোট পয়েন্ট উপেক্ষা করা হলে, সেটি পরে শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বড়রা যেখানে পড়ার প্রক্রিয়ায় খুব বেশি মনোযোগ না দিয়েও পড়তে পারে, ছোটদের ক্ষেত্রে তা হয় না, কারণ তারা এখনো সেই প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে শেখেনি বা চর্চা করেনি। চোখের গতি ও বাম থেকে ডানে চোখ সরানোর মতো বিষয়গুলিও এই ধরনের মনোযোগের অন্তর্ভুক্ত।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref> পাঠের সময় মনোযোগকেও শব্দ থেকে শব্দে সুনির্দিষ্টভাবে সরানো উচিত এবং নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি শব্দ পাঠের মূল বার্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। এছাড়াও, চিত্র বা ছবি থেকে লেখায় এবং আবার লেখায় থেকে চিত্রে মনোযোগ স্থানান্তর করতে হবে যাতে গল্পের সব উপাদান অর্থবহ হয়।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
== পড়া সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা ==
যতটা না পড়ার জন্য শিশুর অক্ষর ও শব্দ বুঝে নেওয়া এবং পূর্বজ্ঞান কাজে লাগানো প্রয়োজন, ঠিক ততটাই এই দক্ষতা শেখানোও জরুরি। তবে কিছু শিক্ষার্থী শেখার এই প্রক্রিয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা অনেক সময় শেখার অক্ষমতার কারণে হয়। এমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার সময় তাদের সমস্যাকে মাথায় রেখে সাক্ষরতা বিকাশের কার্যকর উপায়গুলো ব্যবহার করতে হয়।
=== পড়ার সমস্যার নির্ণয় ===
প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে পড়তে শেখা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকা একটি প্রতিবন্ধকতা শেখার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, অর্থাৎ শিক্ষককে প্রায়শই নিজের শিক্ষাদানের ধরন পরিবর্তন করতে হয় যাতে শিক্ষার্থী তথ্যটি বুঝতে পারে। যদিও "প্রতিবন্ধকতা" শব্দটি অনেক কিছু বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, তবে প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা আলাদা, এবং প্রতিটি পড়াকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
অধিকাংশ সময় পড়ার সমস্যা চিহ্নিত করার সবচেয়ে কঠিন অংশ হলো, সমস্যাটা আসলে কোথায় তা নির্ধারণ করা। নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনটি নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করা হয়। প্রথমত, শিক্ষার্থীর পড়ার অভ্যাস যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করতে হয়, কোন অংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। দ্বিতীয়ত, বিশ্লেষণটি প্রাসঙ্গিক ও বিদ্যমান তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। শেষত, তথ্য বিশ্লেষণের সময় মানসিকভাবে খোলা মন নিয়ে থাকতে হবে। <ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref> যদিও খোলা মন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে না-ও হতে পারে, তবে নির্ণয়ের সময় এটি বড় ভূমিকা পালন করে, কারণ একটি পড়ার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য কোনো তত্ত্ব প্রমাণ বা খণ্ডন করা নয়, বরং শিক্ষার্থীর সমস্যাটা কোথায় সেটা খুঁজে বের করা। এছাড়া, অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে না, বরং একাধিক ক্ষেত্রে সমস্যার লক্ষণ দেখায়। এই ধরনের ক্ষেত্রে খোলা মনের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ণয় ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর কারণ, কোনো শিশুর যদি পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলেও সেটা কোনো নির্দিষ্ট মডেল বা ফর্মুলায় ফিট নাও করতে পারে, এবং সেটা থাকলেই সেটা "প্রতিবন্ধকতা" হিসেবে বিবেচিত হবে না।
নির্ণয়ের নীতির বাইরে, এখানে নির্ণয় প্রক্রিয়ার ছয়টি সাধারণ ধাপ রয়েছে:
১. "শ্রেণি বা বিদ্যালয়ের পাঠ দক্ষতা পরিমাপ" - পাঠ দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়, যাতে প্রতিটি শ্রেণির পাঠ দক্ষতার স্তর নির্ধারণ করা যায় এবং পরীক্ষার ফলাফলে ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
২. "প্রতি শ্রেণির প্রধান পাঠ-সমস্যাগুলো নির্বাচন" - পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রতি শ্রেণির প্রধান সমস্যাটি নির্ধারণ করা হয় এবং গড়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের বিশেষ মনোযোগ ও সহায়তা প্রদান করা হয়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৩. "পাঠে দুর্বল শিক্ষার্থীদের নির্বাচন" - গড়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর মনোযোগ প্রদান করা হয়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৪. "ব্যক্তিগতভাবে বিশ্লেষণের জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ" - শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রায়ই দেখা যায় যে এইসব উপাদান শিক্ষার্থীর সামগ্রিক শেখার সক্ষমতার উপর বড় প্রভাব ফেলে। অনান্য উপাদান যেমন দৃষ্টিগত পরিধি, দৃষ্টিনির্দেশের সংখ্যা ও নিয়মিততা, ডিসলেক্সিয়া, উচ্চারণ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাসও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৫. "পাঠের দুর্বলতার ধরন নির্ধারণ" এবং
৬. "পাঠে ঘাটতির কারণ নির্ধারণ" - এই দুটি ধাপকে একটি বৃহত্তর ধাপে একত্রিত করা যায়। কারণ পূর্ববর্তী চারটি ধাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শেখার সমস্যা কীভাবে এবং কেন হচ্ছে তা নির্ধারণ করা যায়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
যদিও এই ধাপগুলো শিক্ষার্থীর সমস্যাগুলি চিহ্নিত করতে নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, প্রতিটি ক্ষেত্রই স্বতন্ত্র এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন পদ্ধতিতে সমাধান করা যেতে পারে।
ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ে পাঁচটি কাজ রয়েছে যা নির্ধারণ করে যে একটি শিশু সত্যিই ডিসলেক্সিক কিনা: মৌখিক শব্দ ও ছদ্মশব্দ পড়া, মৌখিক পাঠ্য পড়া, মৌখিক ছদ্মশব্দ পাঠ্য পড়া, মৌখিক শব্দ তালিকা পড়া, এবং শব্দ ও ছদ্মশব্দ বানান লেখা।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref> এই পরীক্ষাগুলো করতে গিয়ে চার ধরনের পাঠের গতি এবং চারটি স্তরের পাঠ ও বানান নির্ভুলতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। যদি একটি শিশু প্রতিটি পরীক্ষিত কাজের স্কোরে নিচের ১০ শতাংশে পড়ে, তবে দেখা যায় যে সে নির্দিষ্ট পাঠ ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে দুর্বল। সম্পূর্ণরূপে ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ের জন্য শিশুকে অন্তত চারটি নির্ভুলতার পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে, বা চারটি গতি পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে, অথবা দুটি নির্ভুলতা ও দুটি গতি পরীক্ষায় নিচের ১০ শতাংশ স্কোর করতে হবে।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref>
পূর্বে শেখার অক্ষমতা নির্ধারণ করা হতো আইকিউ পরীক্ষা এবং পাঠ পরীক্ষায় অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে। যদি কোনো শিশুর আইকিউ গড় হয় কিন্তু তার পাঠ দক্ষতা কম থাকে, তবে তাকে শেখার অক্ষমতা আছে বলে বিবেচনা করা হতো।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref> এই পদ্ধতি, যা “ডিসক্রেপেন্সি মডেল” নামে পরিচিত, অনেক বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হতো এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রেণিতে স্থান দেওয়া হতো।
বর্তমানে, পঠন উপাদানগত মডেল (Component Model of Reading - CMR) ব্যবহৃত হয় পাঠ ও শেখার অক্ষমতা বোঝা ও নির্ণয়ের জন্য। এই মডেলে তিনটি প্রধান ক্ষেত্র রয়েছে: কগনিটিভ (জ্ঞানীয়), যাতে রয়েছে শব্দ স্বীকৃতি ও অনুধাবনের উপাদান; সাইকোলজিক্যাল (মানসিক), যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় মোটিভেশন, আগ্রহ, নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি, শেখার ধরণ ও লিঙ্গভেদ; এবং ইকোলজিক্যাল (পরিবেশগত), যাতে রয়েছে পরিবার ও শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ, সংস্কৃতি, পিতামাতার অংশগ্রহণ এবং উপভাষা।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref> একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি যে কগনিটিভ ডোমেইনের উপাদানগুলো শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা অর্জনের শর্ত পূরণ করতে পারে, তবে সাইকোলজিক্যাল ও ইকোলজিক্যাল ডোমেইনগুলো তা করতে পারে না।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref>
২০০৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পঠন উপাদানগত মডেল ব্যবহার করে পাঠ অনুধাবনে ভিন্নতা ৩৮-৪১% পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়, যেখানে পূর্বে ব্যবহৃত আইকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ২৫% নির্ধারণ করা যেত।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref>
সার্বিকভাবে, পাঠ ও শেখার অক্ষমতা নির্ণয়ের পদ্ধতি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ক্রমশ আরও নিখুঁত হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন ধরনের পাঠ অক্ষমতা রয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে খোলামনের দৃষ্টিভঙ্গি রাখা জরুরি এবং জানা থাকা উচিত যে প্রতিটি শিশু ও তার সমস্যাই ভিন্ন। নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এখানে বর্ণিত ধাপগুলো কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, তবে শিক্ষকেরা হস্তক্ষেপ ও সমস্যার অগ্রগতি সম্পর্কে আরও জানার সঙ্গে সঙ্গে এই ধাপগুলো ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে পারে।
=== পাঠে দুর্বলতা ও অক্ষমতার ধরন ===
পাঠে দুর্বলতা ও অক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করার সময় মনে রাখা জরুরি যে পাঠ ও অনুধাবনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন বহু উপাদান রয়েছে, এবং সব শিক্ষার্থী যারা পড়তে সমস্যায় পড়ে তারা “পাঠ অক্ষমতা” দ্বারা আক্রান্ত নয়। কখনো কখনো শিক্ষার্থীরা পড়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে না এবং ভাষাগত কাঠামো বুঝতে কষ্ট হয়, আবার কেউ কেউ এমন সাংস্কৃতিক বা ভাষাগত পটভূমি থেকে আসে যা বিদ্যালয়ের পাঠ শিক্ষার পদ্ধতির সঙ্গে মিল না খাওয়ায় সমস্যায় পড়ে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref> এছাড়াও, কিছু শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষার সুযোগ পেলেও পড়া শেখায় সমস্যা অনুভব করে। এটি সাধারণ বুদ্ধিমত্তার ঘাটতির কারণে হতে পারে, যেখানে তারা পড়ার চেয়ে বোঝার ক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়ে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
কিছু শিক্ষার্থী গড় বা তার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হলেও তাদের পাঠ অক্ষমতা থাকতে পারে, যা দুর্বল পাঠকদের থেকে আলাদা। কথা বলার সমস্যার সঙ্গে প্রায়শই লেখা ও বানানের সমস্যাও থাকে, যা শিক্ষার্থীর সফলভাবে পড়া ও বোঝার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
একটি সাধারণ পাঠ সমস্যার মধ্যে রয়েছে শব্দের ধ্বনিগততা—বিশেষ করে যখন শিক্ষার্থী বর্ণের ধ্বনিকে দৃষ্টিগত চিহ্নের সঙ্গে মিলাতে পারে না। এই ক্ষেত্রে সমস্যা ইন্দ্রিয়গত নয়, বরং কেন্দ্রীয়।<ref>Hoillingworth, L. S. (1923). Reading. In , Special talents and defects: Their significance for education (pp. 57-97). New York, NY, US: MacMillan Co. doi:10.1037/13549-004</ref> ওয়ার্ড ব্লাইন্ডনেস বা ডিসলেক্সিয়া আরেকটি সাধারণ পাঠ অক্ষমতা, যেখানে শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে অক্ষর ও শব্দ গুলিয়ে যায়, ফলে যা পড়ছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়।<ref>Hoillingworth, L. S. (1923). Reading. In , Special talents and defects: Their significance for education (pp. 57-97). New York, NY, US: MacMillan Co. doi:10.1037/13549-004</ref>
ডিসলেক্সিয়া একটি পাঠ সমস্যা যা বংশগতভাবে চলে আসতে পারে। যদি কোনো পিতা-মাতা বা আত্মীয় এই সমস্যায় আক্রান্ত হন, তবে সন্তানের ডিসলেক্সিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৪০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref>
বামহাতি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়া শেখা কঠিন হতে পারে, কারণ ডানহাতি শিক্ষার্থীদের জন্য বাম দিক থেকে ডানদিকে পড়া স্বাভাবিক, যেখানে বামহাতিদের জন্য এটি বিপরীত।<ref>Dearborn, W. F. (1932). Difficulties in learning. In W. V. Bingham, W. V. Bingham (Eds.) , Psychology today: Lectures and study manual (pp. 186-194). Chicago, IL, US: University of Chicago Press. doi:10.1037/13342-021</ref>
ধীর ও নীরব পাঠ দৃষ্টিগত সমস্যা, স্বল্প দৃষ্টিসীমা, ও ডিসলেক্সিয়ার কারণে হতে পারে, আর মনোযোগের অভাব, মূল ভাব সংগঠনের অক্ষমতা বা অমনোযোগিতার কারণে দুর্বল পাঠ অনুধাবন হতে পারে।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref> তবে মনে রাখতে হবে, মনোযোগের অভাব যেমন ক্ষতিকর, তেমনই অতিরিক্ত মনোযোগও সমস্যার কারণ হতে পারে। যদি শিক্ষার্থী একটি একটি শব্দে অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়, তবে পুরো বাক্যটি একসাথে গঠন করতে ব্যর্থ হতে পারে।
ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ৮% থেকে ২০% শিক্ষার্থীর মধ্যে এই সমস্যা রয়েছে, তবে মাত্র ৩% থেকে ৭% এর লক্ষণ এতটাই গুরুতর হয় যে তাদেরকে ক্লিনিক্যালি নির্ণয় করা হয় এবং বিশেষ শিক্ষামূলক সহায়তা ও সেবা প্রদান করা হয়।<ref>Zentall, S. S., & Lee, J. (2012). A reading motivation intervention with differential outcomes for students at risk for reading disabilities, ADHD, and typical comparisons: 'Clever is and clever does'. Learning Disability Quarterly, 35(4), 248-259. doi:10.1177/0731948712438556</ref> যদিও ADHD থাকলেই পড়াশোনায় সমস্যা থাকবে এমন নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এটি পড়াশোনায় সমস্যার সাথে মিলেও যায়, যার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই পাঠ্যবস্তুর ভুল ব্যাখ্যা করে বা পাঠ্যাংশে সাধারণ সংযোগগুলোর অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা অনুভব করে।
=== শিক্ষাদানের প্রভাব ===
যেকোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখায়, তখন শিক্ষকদের এবং শিক্ষা সহায়কদের উচিত পাঠদানের ধরণ ও উপকরণ পরিবর্তন করে বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তোলা। একটি উপায় হলো ‘রিডিং রিকভারি’ পদ্ধতি, যা নিউ জিল্যান্ডে উদ্ভাবিত। এই পদ্ধতিতে চারটি ধাপ রয়েছে:
1. "শিশুদের বিভিন্ন সাক্ষরতা নিরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়, যেমন: তারা অক্ষর চিনতে পারছে কি না, শব্দ পড়তে পারছে কি না, লিখতে পারছে কি না, মৌখিক পাঠে কতটা দক্ষ এবং তাদের সাক্ষরতা জ্ঞান ও কৌশল কেমন।"
2. "৩০ মিনিট দৈনিক শিক্ষাদান পর্ব, যেখানে রিডিং রিকভারি শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একান্তভাবে কাজ করেন।"
3. "একটি মানসম্মত পাঠদান সেশন যেখানে ধারাবাহিক কিছু কার্যক্রম থাকে, যার মধ্যে রয়েছে অক্ষর ও শব্দ অনুশীলন, ছোট ছোট বই থেকে পাঠ করা এবং সংক্ষিপ্ত লেখা তৈরি করে তা কাটাকাটি করে পুনরায় পাঠ করা।"
4. "একটি সংগঠিত কর্মী উন্নয়ন প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষকরা রিডিং রিকভারি প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।"<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
এই ধরণের ধাপে ধাপে সহায়তা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে যেমন কার্যকর, তেমনই শিক্ষকদের জন্যও এটি সহায়ক এবং বাস্তবসম্মত।
২০০৫ সালে রবার্ট শোয়ার্টজ পরিচালিত একটি গবেষণায় রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামটি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কতটা কার্যকর তা বিশ্লেষণ করা হয়। এই গবেষণায় ১৪টি অঙ্গরাজ্যের ৪৭ জন রিডিং রিকভারি শিক্ষক ১০৭ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠান, যাদের মধ্যে ৫৩% ছেলে এবং ৪৭% মেয়ে ছিল। শিক্ষার্থীদের একজন রিডিং রিকভারি শিক্ষকের সঙ্গে জোড়া লাগানো হয়, যিনি তাদেরকে দৈনিক ৩০ মিনিটের সেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন গঠিত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নিয়ে যান—যার মধ্যে রয়েছে অক্ষর ও শব্দ অনুশীলন, ছোট ছোট বই পড়া, সংক্ষিপ্ত লেখা তৈরি করা এবং সেগুলো ভাগ করে পুনরায় পাঠ করা। গবেষণার শেষে দেখা যায়, ৬৫% শিক্ষার্থী “গ্র্যাজুয়েট” করে, ১৬% কে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয় এবং ১৬% প্রোগ্রামটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি। এটি জাতীয় রিডিং রিকভারি তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়: ৫৬% শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট করে, ১৫% কে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয়, ১৯% কে “অসম্পূর্ণ” হিসেবে লেবেল দেওয়া হয়, ৫% “স্থানান্তরিত” হয় এবং ৪% “উল্লিখিত নয়” হিসেবে চিহ্নিত হয়।<ref>Schwartz, R. M. (2005). Literacy Learning of At-Risk First-Grade Students in the Reading Recovery Early Intervention. Journal Of Educational Psychology, 97(2), 257-267. doi:10.1037/0022-0663.97.2.257</ref> রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামটি পুনর্বাসন এবং হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল একটি উদ্যোগ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রোগ্রামের একটি চমৎকার দিক হলো, এটি ৮০’র দশক থেকে চললেও এখনো কার্যকর রয়েছে এবং এতে কোনো বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি। এই প্রোগ্রামের সফলতার আরেকটি প্রমাণ হলো—এটি ইংরেজি ভাষাভাষী বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর সফলতার হার খুবই উচ্চ।
শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে পাঠদানের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা জরুরি। পড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে শুরুতেই হস্তক্ষেপ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পড়তে শেখার সময় যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয় এবং তা যদি ঠিক সময়ে ধরা না পড়ে, তাহলে সেটি শিক্ষার্থীর সারা জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণেই রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগ এবং শিক্ষকদের সহায়তা শেখার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও SEA এবং অন্যান্য সহায়তা কর্মীদের সহায়তা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে এবং শিক্ষকদের চাপ কিছুটা কমায়, তবুও মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি শিশুর নিজস্ব শেখার একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত, যা তার প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
যদিও সব শিক্ষার্থীকে পাঠদানে সমস্যা রয়েছে এমন নির্ণয় করা হয় না, তবুও শ্রেণিকক্ষে পড়ানো বিষয়বস্তু শেখার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীই সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেক সময় এটি কোনো অজানা সমস্যার কারণেও হতে পারে। যদি কোনো শিক্ষার্থীকে নির্ণয় করা না হয়ে থাকে বা যদি সে প্রতিবন্ধী না হয় তবুও যদি সে শেখার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তবে সেই শিক্ষার্থীকে বোঝা এবং তাকে সহায়তা করা তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
== পাঠ শেখার ধাপ ==
জীবনের অন্য যেকোনো কিছু শেখার মতো, পড়া শেখার জন্যও কিছু ধাপ বা পর্যায় রয়েছে। শিশুরা যখন পড়া শেখা শুরু করে, তখন তারা তিনটি প্রধান ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। তারা প্রথমে এমন একটি পর্যায়ে থাকে যেখানে তারা কোনো শব্দ বিশ্লেষণ করতে পারে না (প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়), তারপর তারা ফনিক সংকেত এবং অন্যান্য পঠন কৌশল ব্যবহার করতে শেখে (আংশিক বর্ণমালা পর্যায়), এবং শেষে তারা এমন একটি স্তরে পৌঁছে যায় যেখানে তারা একে অপরের সাথে মিল আছে এমন বানানের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং নতুন শব্দ শিখতে ও সংযোগ করতে পারে (ফুল আলফাবেটিক স্টেজ) <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। পড়া শেখা একাধিক মাত্রায় বিকশিত হয়, যতক্ষণ না একজন ব্যক্তি প্রচলিত সাক্ষরতার স্তরে পৌঁছায়। প্রতিটি ধাপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে ছোট ছোট শিশুরা খুব সামান্য সাক্ষরতা সম্পর্কিত আচরণ দেখানো থেকে শুরু করে, পরে ভাষা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়।
=== প্রাক-বর্ণমালা পর্যায় ===
'''প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়''' বা প্রি-আলফাবেটিক স্টেজ-এ থাকা শিশুরা অনেক কিছুই জানে সাক্ষরতা সম্পর্কে, কিন্তু কোনো শব্দ পড়তে জানে না। এই পর্যায়ে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান থাকে না বলেই এটি প্রাক-বর্ণমালা পর্যায় নামে পরিচিত। শিশুরা অনেক শব্দ জানে, পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে পারে এবং অন্যদের সাথে কথোপকথন করতে পারে, কিন্তু কোনো শব্দ পড়তে পারে না। তবে তারা কোনো চিহ্ন বা প্রতীকের ভিত্তিতে শব্দটি বলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বড় ‘M’ দেখে ‘McDonald’s’ বলা বা কুকুরের ছবি দেখে ‘dog’ বলা। কিন্তু তারা ‘McDonald’s’ বা ‘dog’ শব্দটি চিনতে পারে না এবং ছবিটি সরিয়ে নিলে আর বলতে পারবে না। শিশুরা কেবল তাদের চারপাশের পরিবেশ দেখে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, ছাপা লেখাকে নয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যদিও শিশুরা অনেক শব্দ জানে এবং পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে পারে, তারা নিজেরা কোনো শব্দ বা ছাপা লেখা পড়তে পারে না। এই ধাপে থাকা একটি গোষ্ঠী “শব্দের চেহারা, উচ্চারণ এবং অর্থ” এর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে চেষ্টা করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। কিন্তু এভাবে পড়া শেখার সময় স্মৃতি থেকে বারবার মনে রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়, এবং শিশুরা পরে ধ্বনিগত তথ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
=== আংশিক বর্ণমালা পর্যায় ===
শিশুরা '''আংশিক বর্ণমালা পর্যায়''' বা পারশিয়াল আলফাবেটিক স্টেজ-এ প্রবেশ করে যখন তারা অক্ষরের নাম বা ধ্বনি শিখে এবং তা ব্যবহার করে শব্দ পড়তে চেষ্টা করে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এই পর্যায় থেকেই প্রকৃত পঠন শুরু হয়। শিশুরা আর কেবল ছবি দেখে শব্দ বলছে না, তারা আসলেই ছাপা লেখাটি পড়তে চেষ্টা করছে। তারা এখন অক্ষর চেনে এবং সেই জ্ঞান ব্যবহার করে শব্দ পড়ছে। এই পর্যায়ে শিশুরা সাধারণত শব্দের প্রথম এবং শেষ অক্ষরের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, যেমন, “spoon” পড়তে গিয়ে তারা s এবং n এর উপর জোর দেয় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। যখন তাদেরকে কোনো শব্দ লিখতে বলা হয়, তারা উচ্চারণে যেসব ধ্বনি শুনতে পায় সেগুলোর উপর ভিত্তি করে অক্ষর লেখে। যেমন, তারা “giraffe” শব্দটি “jrf” হিসেবে লিখতে পারে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। এই পর্যায়ে তাদের পঠন আংশিক থাকে কারণ তারা শব্দের সব অক্ষর বা ধ্বনি ব্যবহার করছে না, কেবল কিছু অংশ ব্যবহার করছে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
প্রাক-বর্ণমালা ও আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে ১৯৮৫ সালে এহরি এবং উইল্স একটি গবেষণা করেন। তারা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের দুটি ধাপে ভাগ করে পরীক্ষামূলক পাঠদানে নিয়োজিত করেন। একটি ধাপে ছিল ভিজ্যুয়াল বানান, যেখানে শব্দের ধ্বনির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, যেমন “mask” বানান লেখা হয়েছে “uHo”; অন্যটি ছিল ধ্বনিগত বানান যেখানে শব্দের কিছু ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব করে অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন “mask” বানান লেখা হয়েছে “MSK”।
ফলাফল ছিল, প্রাক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকেরা ভিজ্যুয়াল বানান সহজে শিখেছে, আর পারশিয়াল আলফাবেটিক পাঠকেরা ধ্বনিগত বানান ভালোভাবে মনে রাখতে পেরেছে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এহরি ব্যাখ্যা করেন, এটি নিশ্চিত করে যে প্রাক বর্ণমালা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ভিজ্যুয়াল সংকেতের উপর নির্ভর করে কারণ তাদের অক্ষর জ্ঞান নেই। আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উল্টোভাবে কাজ করে এবং শব্দ মনে রাখতে অক্ষর-ধ্বনির সংকেত ব্যবহার করতে পারে।
[[চিত্র:Screen_Shot_2015-12-03_at_5.41.40_PM.png|কিছুই_না|ফ্রেম|উইলস এবং এহরির ১৯৮৫ সালের পঠন পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল (গ্রাফটি প্রতিটি পর্যায়ে পঠিত শব্দের সংখ্যা দেখাচ্ছে)-গ্রাফটি পুনর্নির্মিত করা হয়েছে]]
=== পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায় ===
যখন শিশুরা বানানে প্রতিটি অক্ষরের সাথে উচ্চারণের ধ্বনির একটি পূর্ণাঙ্গ সংযোগ গড়ে তোলে এবং সেই অনুযায়ী দৃষ্টিগত শব্দ শিখতে সক্ষম হয়, তখন তারা '''পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে''' প্রবেশ করে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। আংশিক বর্ণগত ধাপে শিশুরা শুধু সেই অক্ষরগুলোই লেখে, যেগুলোর ধ্বনি তারা স্পষ্টভাবে শুনতে পায়। কিন্তু পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে তারা অপরিচিত শব্দও পড়ে ফেলতে পারে, সমস্ত ধ্বনিকে উপস্থাপন করে এমন বানান তৈরি করতে পারে এবং শব্দের বানান অনেক ভালোভাবে মনে রাখতে সক্ষম হয় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>।
এই পড়ার ধাপগুলোর পার্থক্য বোঝাতে ১৯৮৭ সালে Ehri এবং Wilce একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ এবং আংশিক ধাপের পাঠকদের মধ্যে দৃষ্টিগত শব্দ শেখার পার্থক্য দেখানো <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। গবেষণার জন্য এমন কিছু কেজি শ্রেণির শিশু নির্বাচন করা হয় যারা ইতোমধ্যে আংশিক বর্ণগত ধাপে ছিল। এরপর তাদের এলোমেলোভাবে একটি নিয়ন্ত্রণ দল এবং একটি ট্রিটমেন্ট দলে ভাগ করা হয়। ট্রিটমেন্ট দলের শিশুদের অনুরূপ বানানবিশিষ্ট শব্দ পড়ার অনুশীলনের মাধ্যমে পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায় অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে তারা শব্দগুলো সঠিকভাবে পড়তে হলে প্রতিটি গ্রাফিম-ধ্বনি সম্পর্ক বুঝে নিতে বাধ্য হয়। অপরদিকে, নিয়ন্ত্রণ দলকে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি এবং তারা আংশিক ধাপেই থেকে যায়। এরপর উভয় দলকেই পনেরোটি শব্দ শেখার অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়। সবগুলো শব্দের বানান ছিল একরকম, যাতে শিশুরা আংশিক ইঙ্গিতের ওপর নির্ভর করে শব্দ শেখা কঠিন হয়ে পড়ে। তালিকায় যেমন ছিল: spin, stab, stamp, stand। প্রশিক্ষণের আগে এই শব্দগুলোর মধ্যে কেউই দুইটির বেশি পড়তে পারত না।
গবেষণার ফলাফল দেখায় যে, দুই দলের শিশুদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়। পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ের শিশুরা মাত্র তিনটি অনুশীলনেই বেশিরভাগ শব্দ শিখে ফেলে, কিন্তু আংশিক ধাপের শিশুরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাতেই পারেনি <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। গবেষণায় বলা হয়, আংশিক ধাপের পাঠকদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ ছিল একই রকম বানানবিশিষ্ট শব্দগুলোকে গুলিয়ে ফেলা। এটি প্রমাণ করে, যখন পাঠকরা পূর্ণ সংযোগ গড়তে পারে তখন তারা দৃষ্টিগত শব্দগুলো স্মৃতিতে রাখতে অনেক সুবিধা পায় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>।
[[চিত্র:Screen_Shot_2015-12-03_at_5.41.22_PM.png|কিছুই_না|ফ্রেম|Ehri এবং Wilce-এর ১৯৮৭ সালের পাঠ ধাপ বিষয়ক পরীক্ষার ফলাফল (গ্রাফটি সঠিক উত্তরপ্রাপ্ত শব্দের শতকরা হার এবং চেষ্টার সংখ্যা দেখাচ্ছে)-গ্রাফটি পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে]]
এটি লক্ষ্য করার বিষয় যে, পড়ার ক্ষেত্রে মাত্র একটি ধাপ পেছনে থাকাই কত বড় পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। শুধু পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে থাকলেই কেজি শ্রেণির শিশুরা একই বানানবিশিষ্ট শব্দ মাত্র তিনটি চেষ্টাতেই পড়ে ফেলতে পেরেছে, অথচ আংশিক ধাপের শিশুরা অনেকটা হিমশিম খেয়েছে। এটি প্রতিটি পড়ার ধাপের গুরুত্ব এবং শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়। শিক্ষকরা নিশ্চিত হতে হবে যে, পূর্ববর্তী ধাপে শিক্ষার্থীরা যা শেখা প্রয়োজন সব কিছুই শিখেছে, যাতে তারা পরবর্তী ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করতে পারে।
=== একীভূত পর্যায় ===
যখন শিশুরা তাদের স্মৃতিতে আরও বেশি দৃষ্টিগত শব্দ ধরে রাখতে পারে এবং অক্ষরের প্যাটার্ন সম্পর্কে পরিচিত হয়ে ওঠে, তখন তারা পড়ার এই চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছায় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এই পর্যায়ে শিশুরা বুঝতে শেখে কোন কোন অক্ষর প্যাটার্ন বিভিন্ন শব্দে বারবার দেখা যায় এবং গ্রাফিম-ধ্বনি সংযোগগুলো বৃহত্তর একক হিসেবে একত্রিত হতে শুরু করে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। উদাহরণস্বরূপ, "printing" শব্দটি এখন সহজেই শেখা যায় কারণ এটি স্মৃতিতে রাখতে কম সংযোগ প্রয়োজন হয় এবং এই শব্দটি আর আলাদা আলাদা অক্ষর-ধ্বনি সংযোগ হিসেবে নয়। বরং দুটি সিলেবল আকারে প্রক্রিয়াজাত হয়। <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
=== শিক্ষণ পদ্ধতির প্রভাব ===
ইংরেজি ভাষা নিখুঁত নয়, এবং এক অক্ষর একটি ধ্বনি নির্দেশ করতে পারে, আবার দুই বা তার বেশি অক্ষর একটিই ধ্বনি নির্দেশ করতে পারে, এক বা একাধিক শব্দে নীরব স্বরবর্ণ একটি মধ্যবর্তী স্বরবর্ণের ধ্বনি পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি অনেক শব্দে কিছু অক্ষরের কোনো ধ্বনি থাকে না <ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>। শিক্ষকরা যখন শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করেন, তখন তাদের উচিত অক্ষর এবং ধ্বনির মধ্যকার আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং শিশুদের সাক্ষরতা বিকাশের ধাপগুলো জানা। তিনটি বর্ণগত ধাপজুড়ে শিক্ষকদের উচিত ডিকোডিং ও শব্দভাণ্ডার শেখানোয় গুরুত্ব দেওয়া, কারণ এগুলো সফল পাঠের জন্য অপরিহার্য <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। শিশুদের অবশ্যই শব্দ ডিকোড করতে জানতে হবে, অর্থাৎ অক্ষর ও ধ্বনির সম্পর্ক বুঝে লেখা শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে জানতে হবে। এই দক্ষতা শেখাতে গেম ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুদের চোখের সামনে অক্ষর রেখে সেই অক্ষরের ধ্বনি শুনিয়ে দিলে তারা সহজে বুঝতে পারে। যেহেতু প্রাথমিক পাঠকরা ভিজ্যুয়াল লার্নার, তাই ছবি তাদের শেখাতে সহায়ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক বোর্ডে "bat" শব্দের ছবি ঝুলিয়ে শব্দটি লিখে প্রথম অক্ষরটি ফাঁকা রাখতে পারেন। এরপর শিক্ষার্থীদের "bat" শব্দটি বারবার উচ্চারণ করে প্রথম অক্ষর কী হতে পারে তা বলতে বলেন। শিশুরা যেন সঠিকভাবে শব্দগুলো ডিকোড করতে এবং সাবলীলভাবে পড়তে পারে, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তাদের নির্দিষ্ট প্রসঙ্গভিত্তিক শব্দগুলোর অর্থও বুঝতে পারা জরুরি <ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>। যখন শিশুরা কোনো শব্দ পড়ে এবং এর অর্থ বুঝতে পারে, তখনই তারা একটি পাঠ্যবস্তুর পূর্ণাঙ্গ অর্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হয় <ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>। শিক্ষকরা শিশুদেরকে শব্দ শেখাতে উৎসাহিত করতে পারেন যেমন: সম্পর্কিত শব্দ একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা, শব্দের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরা, অভিধান বা থিসরাস ব্যবহার করে শব্দের অর্থ বিস্তৃত করা, এবং শিক্ষার্থীদের নিজে শব্দ নির্বাচন করে কেন তা বেছে নিয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা।<ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>
শ্রেণিকক্ষে, একজন শিক্ষক সরাসরি শিক্ষার্থীদের কোনো একটি নির্দিষ্ট বর্ণ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা শব্দটি শেখাতে পারেন। যখন শিক্ষার্থীরা কিছু বর্ণ-ধ্বনি সম্পর্ক শিখে ফেলে, তখন তারা ধ্বনিগুলো একত্রে মিলিয়ে পড়া শিখতে শুরু করে<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। স্পষ্ট ফনিক্স পদ্ধতিতে শব্দ সনাক্ত করার প্রধান কৌশলটি শিক্ষার্থীদের বর্ণ-ধ্বনি সম্পর্কের জ্ঞান ভিত্তিক হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। যখন কোনো শিক্ষার্থী একটি অপরিচিত শব্দের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের শব্দটি ধ্বনি করে পড়ার জন্য উৎসাহিত করা হয় এবং শব্দটি সনাক্ত করার আগে তাদের শব্দের প্রসঙ্গে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় না<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। এই ক্ষেত্রে, পাঠ্য বোঝার জন্য প্রসঙ্গ কেবল একটি মেটাকগনিটিভ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। '''অপ্রকাশ্য ফনিক্স পদ্ধতিতে''' বর্ণের ধ্বনিগুলো পৃথকভাবে নয়, বরং সম্পূর্ণ শব্দের প্রসঙ্গের মধ্যে শনাক্ত করা হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। শিক্ষাদানের সময়, শিক্ষক বোর্ডে “hand” শব্দটি লিখে "h" বর্ণটিকে নিচে দাগ দিতে পারেন। এরপর শিক্ষক শিক্ষার্থীদের “hand” উচ্চারণ করতে বলেন যেন তারা বুঝতে পারে যে “h” থেকে /h/ ধ্বনি উৎপন্ন হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। এছাড়াও, অপরিচিত শব্দ পড়ার ক্ষেত্রে শব্দের প্রসঙ্গ এবং চিত্র সূত্রগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্ণ-ধ্বনি সম্পর্ক শেখাতে প্রসঙ্গ ব্যবহারের একটি সাধারণ সমস্যা হলো, কিছু শিক্ষার্থী এই সম্পর্কগুলো শিখতে ব্যর্থ হয় কারণ তারা শব্দকে পৃথক ধ্বনিতে ভাগ করতে পারে না, যেহেতু তারা সম্পূর্ণ শব্দ থেকে ধ্বনি অনুমান করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা রাখে না<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, অধিকাংশ দুর্বল পাঠক অক্ষরভিত্তিক কোডিং এবং ধ্বনিমূলক সচেতনতায় দুর্বল<ref>Vellutino, F.R. (1991). Introduction to three studies on reading acquisition: Convergent findings on theoretical foundations of code-oriented versus whole-language approaches to reading instruction. Journal of Educational Psychology, 83(4). 437-443. doi:10.1037/0022-0663.83.4.437</ref>। পূর্বে উল্লেখিত মতো, আদর্শ পাঠ শিক্ষা পদ্ধতিতে কোড-ভিত্তিক ও অর্থ-ভিত্তিক পদ্ধতির সমন্বয় থাকা উচিত। সেই অনুযায়ী, ফনিক্স বা নির্দেশনামূলক পদ্ধতির অতিরিক্ত গুরুত্বারোপের বিরোধিতায় লোকসংখ্যা বেশি, কিন্তু ফনিক্স শিক্ষার বিরোধিতায় নয়<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
ম্যাডঅক্স এবং ফেং (২০১৩) কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণায়, সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক পাঠ শিক্ষার তুলনায় ফনিক্স শিক্ষার কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছিল যাতে শিক্ষার্থীদের পড়ার গতি এবং বানান নির্ভুলতা উন্নত হয় কিনা তা বোঝা যায়। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে স্পষ্ট ফনিক্স শিক্ষা শিক্ষার্থীদের পড়ার গতি এবং বানান নির্ভুলতায় বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং যারা স্পষ্ট ফনিক্স শিক্ষা পাবে তারা সম্পূর্ণ ভাষা শিক্ষাপদ্ধতিতে থাকা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করবে। একটি শ্রেণির ২২ জন প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে এলোমেলোভাবে পরীক্ষামূলক দল ও নিয়ন্ত্রণ দলে ভাগ করা হয়। পরীক্ষামূলক দল ফনিক্স দল হিসেবে নির্ধারিত হয় এবং তারা স্পষ্ট ফনিক্স শিক্ষা পায়, অপরদিকে নিয়ন্ত্রণ দল সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক দল হিসেবে নির্ধারিত হয় এবং তারা ফনিক্স শিক্ষা পায় না। পরীক্ষামূলক দলে শিক্ষক ফনিক্স প্যাটার্ন শেখান এবং শিক্ষার্থীরা সেই প্যাটার্ন নিয়ে বিভাজন, কোডিং, একত্রিতকরণ এবং চর্চা করে, তবে তারা কোনো গল্প পড়েনি। নিয়ন্ত্রণ দলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের র্যাজ-কিডস রিডিং প্রোগ্রামের ১৪টি গল্প পড়ান; গল্পগুলোতে ফনিক্স দল দ্বারা শেখানো একই প্যাটার্নের শব্দ অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং শিক্ষার্থীরা চিত্র পর্যবেক্ষণ, গল্প অনুমান এবং শব্দার্থ বোঝায় মনোযোগ দেয়। উভয় দল তাদের শিক্ষকের (যিনি একই সাথে গবেষকের একজন ছিলেন) সঙ্গে সপ্তাহে পাঁচ দিন, দিনে ২০ মিনিট করে চার সপ্তাহ প্রশিক্ষণ পায়। প্রশিক্ষণের আগে শিক্ষার্থীদের প্রাক-পরীক্ষা স্কোর এইমসওয়েব পাঠ্যক্রম ভিত্তিক পরিমাপ (আরসিবিএম) এবং এইমসওয়েব বানান পাঠ্যক্রম ভিত্তিক পরিমাপ (এসিবিএম)এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। চার সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পর, একই পরীক্ষা আবার শিক্ষার্থীদের উপর প্রয়োগ করা হয় যাতে পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর বের করে পড়ার গতি ও বানান নির্ভুলতার পরিবর্তন পরিমাপ করা যায়। ফলাফলে দেখা যায় যে উভয় দলের মধ্যে পড়ার গতি বা বানান নির্ভুলতায় কোনো পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তবে, গড়ে ফনিক্স দলের পড়ার স্কোর বেশি ছিল এবং তারা তাদের পড়ার গতি ৮.০০ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়ায়, যেখানে সম্পূর্ণ ভাষা দল পড়ার গতি ৪.০৯ পয়েন্ট বাড়ায়। বানান নির্ভুলতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ফনিক্স দলের স্কোর ১.০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়, আর সম্পূর্ণ ভাষা দলের স্কোর -০.২৭ পয়েন্ট কমে যায়। সরাসরি তুলনায় দেখা যায়, ফনিক্স দল পড়ার গতি ও বানান নির্ভুলতা—উভয় ক্ষেত্রেই বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে<ref>Maddox, K., & Feng, J. (2013). Whole Language Instruction vs. Phonics Instruction: Effects on Reading Fluency and Spelling Accuracy of First Grade Students. Retrieved from ERIC database. (ED545621)</ref>
[[চিত্র:Reading_Fluency_Maddox_&_Feng.png|কিছুই_না|ফ্রেম|পঠন সাবলীলতা এর জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]
[[চিত্র:Spelling_Accuracy_Maddox_&_Feng.png|কিছুই_না|ফ্রেম|বানানের নির্ভুলতা এর জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]
=== '''ধ্বনিমূলক সচেতনতা''' ===
ধ্বনিমূলক সচেতনতা কীভাবে পড়া শেখার উপর প্রভাব ফেলে? '''ধ্বনিমূলক সচেতনতা''' বলতে কথ্য শব্দের ধ্বনিগুলোর উপর মনোনিবেশ এবং সেগুলো পরিচালনার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। '''ধ্বনি''' হলো কথ্য ভাষার ক্ষুদ্রতম একক, যেগুলো মিলিত হয়ে শব্দাংশ এবং শব্দ গঠন করে<ref>Ehri, L. C., Nunes, S. R., Willows, D. M., Schuster, B. V., Yaghoub-Zadeh, Z., & Shanahan, T.. (2001). Phonemic Awareness Instruction Helps Children Learn to Read: Evidence from the National Reading Panel's Meta-Analysis. Reading Research Quarterly, 36(3), 250–287. Retrieved from http://www.jstor.org/stable/748111</ref>। অতএব, ধ্বনিমূলক সচেতনতা একটি কোড-ভিত্তিক পদ্ধতি। গবেষণায় বলা হয়েছে যে শব্দগুলো স্মৃতি থেকে চাক্ষুষভাবে পড়তে পারার জন্য ধ্বনি বিভাজনের দক্ষতা প্রয়োজন এবং ধ্বনিমূলক সচেতনতা শিশুদেরকে শব্দের বানান উদ্ভাবন করতে বা বানান স্মৃতি থেকে উদ্ধার করতে সহায়তা করে<ref>Ehri, L. C., Nunes, S. R., Willows, D. M., Schuster, B. V., Yaghoub-Zadeh, Z., & Shanahan, T.. (2001). Phonemic Awareness Instruction Helps Children Learn to Read: Evidence from the National Reading Panel's Meta-Analysis. Reading Research Quarterly, 36(3), 250–287. Retrieved from http://www.jstor.org/stable/748111</ref>।
ক্যাসেল, রিয়াচ এবং নিকলসন (১৯৯৪) এর একটি গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, ধ্বনিমূলক সচেতনতা প্রশিক্ষণ শিশুকে পড়া ও বানানে একটি ভালো শুরু এনে দিতে পারে কিনা, এমনকি যদি তারা সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক প্রোগ্রামে শিক্ষা পাচ্ছে তবুও। এই গবেষণা নিউজিল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের স্কুলজীবনের শুরুর কয়েক মাসে পরিচালিত হয়েছিল, যখন তারা পড়া ও লেখা শেখার প্রাথমিক ধাপে ছিল। তিনটি ভিন্ন স্কুলের ৫ বছর বয়সী ত্রিশজন শিশুকে একটি পরীক্ষামূলক দল ও একটি নিয়ন্ত্রণ দলে ভাগ করে সামঞ্জস্য করা হয়। পরীক্ষামূলক দল সপ্তাহে দুইবার ২০ মিনিট করে মোট ১০ সপ্তাহ প্রশিক্ষণ পায়, যার মোট সময় ছিল ৬.৭ ঘণ্টা। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ছিল ধ্বনিমূলক সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে তৈরি, যার মধ্যে ছিল ধ্বনি বিভাজন, ধ্বনি প্রতিস্থাপন, ধ্বনি মুছে ফেলা এবং ছন্দ। নিয়ন্ত্রণ দলও একই সময়ের শিক্ষা পায়, তবে তারা সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক প্রোগ্রামে প্রক্রিয়াভিত্তিক লেখালিখি কার্যক্রমে অংশ নেয়, যেখানে শিশুরা নিজেরা গল্প লেখে এবং শব্দের বানান নিজেরাই উদ্ভাবন করে। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের উপর Roper-এর ধ্বনিমূলক সচেতনতা পরিমাপক বানান পরীক্ষার বিস্তৃত পরিসরের অর্জন একটি প্রায়োগিক বানান পরীক্ষা এবং একটি উচ্চারণ পরীক্ষা চালানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে একই পরীক্ষা আবার নেওয়া হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, উভয় দলেই ধ্বনিমূলক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে পরীক্ষামূলক দল ও নিয়ন্ত্রণ দলের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল, যা প্রমাণ করে যে ব্যবহৃত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ধ্বনিমূলক সচেতনতা দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর ছিল। দুটি বানান পরীক্ষায় (বানান পরীক্ষার বিস্তৃত পরিসরের অর্জন এবং প্রায়োগিক বানান পরীক্ষা) দলদ্বয়ের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও দেখা গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে ধ্বনিমূলক সচেতনতা দক্ষতার উন্নয়ন বানান দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। উপসংহারে, গবেষণার ফলাফল নির্দেশ করে যে বর্ণ এবং তার ধ্বনির মধ্যে সংযোগ তৈরি করার সক্ষমতা বানান দক্ষতার উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত এবং ধ্বনিমূলক সচেতনতা বানান শিক্ষায় সহায়তা করে<ref>Castle, J.M., Riach, J., & Nicholson, T. (1994). Getting Off to a Better Start in Reading and Spelling: The Effects of Phonemic Awareness Instruction Within a Whole Language Program. Journal of Educational Psychology, 86(3), 350-359. doi:10.1037/0022-0663.86.3.350</ref>।
[[চিত্র:WRAT_Spelling_Test_Castle_Riach_&_Nicholson.png|কিছুই_না|ফ্রেম|ডব্লিউআরএটি বানান পরীক্ষা এর জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]
[[চিত্র:Experimental_Spelling_Test_Castle_Riach_&_Nicholson.png|কিছুই_না|ফ্রেম|পরীক্ষামূলক বানান পরীক্ষার জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]
=== সমগ্র ভাষা পদ্ধতি ===
পুরো ভাষা পদ্ধতিতে, সাক্ষরতাকে একটি শীর্ষ-ডাউন প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা হয় পুরো ভাষা পদ্ধতিটি এমন একটি দর্শন যা শব্দ এবং শব্দগুলো তৈরি করে এমন শব্দ এবং ধ্বনিগুলো শেখার চেয়ে শব্দ এবং বাক্যগুলো পড়ার উপর জোর দেয়। চিঠির শব্দ-চিঠিপত্র পড়া থেকে স্বাধীনভাবে শেখানো হয় না, এবং তাই এটি এক ধরণের অর্থ-জোর পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা অংশগুলো পৃথক করার পরিবর্তে এবং প্রত্যেককে অনুশীলন করার পরিবর্তে সামগ্রিকভাবে ভাষার সাথে জড়িত। পড়া স্বাভাবিকভাবেই বোঝানো হয়, যেমন যখন শিশুরা প্রথম কথা বলতে শিখেছিল: খুব কম সরাসরি নির্দেশনা এবং প্রচুর উত্সাহ সহ পড়ার সম্পূর্ণতা অনুভব করে। তবেই শিক্ষার্থীরা শব্দের উপ-অংশগুলো শিখতে পারে একটি সম্পূর্ণ ভাষা পদ্ধতির খুব বেশি একটি প্রসঙ্গ-চালিত প্রক্রিয়া, এবং শব্দগুলো প্রসঙ্গের বাইরে উপস্থাপিত হয় না হাতের কাছে থাকা পাঠ্যটি বোঝার জন্য, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য এবং কোনও অপরিচিত অর্থ বোঝার জন্য তাদের সঞ্চিত জ্ঞান, চিত্রণ, ফোনেটিক কৌশল এবং পূর্বের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ব্যবহার করতে বোঝানো হয়। যে শিক্ষকরা পুরো ভাষা পদ্ধতির সমর্থন করেন তারা প্রায়ই বেসাল পাঠকদের পরিবর্তে "আসল বই" ব্যবহার করেন (প্রায়ই কোড-জোর পদ্ধতিতে দেখা যায়) কারণ তারা পড়ার সাবলীলতা এবং অর্থ তৈরির প্রচার করে তদুপরি, এটি একটি সম্পূর্ণ ভাষা পদ্ধতির উপর জোর দেওয়া হয় যে শেখার প্রক্রিয়াটি সর্বদা মসৃণ এবং নির্দিষ্ট হয় না এবং শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের শেখার লক্ষ্যগুলোর জন্য মালিকানা এবং দায়িত্ব নিতে হবে পুরো ভাষা পদ্ধতিটি প্রায়ই ভাইগটস্কিয়ান দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়: শিক্ষকরা মধ্যস্থতাকারী যারা বিশ্বের সাথে শিক্ষার্থীদের লেনদেন সম্ভব করে ভাইগটস্কির মতে, শেখা একটি সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, এবং অর্থ বিনিময় এবং শিশুদের অন্যদের সাথে কথোপকথন করতে হবে। যেমন, পড়ার নির্দেশের পুরো ভাষা পদ্ধতিটি সমস্ত ধরণের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে কারণ শিক্ষার্থীরা যখন একই সমস্যাগুলোতে সহযোগিতা করে এবং করে তখন তারা আরও কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে। যখন শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করে, তখন তাদের আলোচনা প্রায়ই কেবল সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তবে নতুন অর্থ গঠন করতে পারে এবং সহযোগিতা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে নতুন জ্ঞান সংগ্রহ করতে পারে। ভাইগটস্কি আরও বলেছিলেন যে সাক্ষরতার অভিজ্ঞতাগুলো কাঠামোগত হওয়া উচিত যাতে তারা কোনও কিছুর জন্য প্রয়োজনীয় হয়, অর্থাৎ, কীভাবে পড়তে হয় তা শেখার একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। ক্লাসে এমন উদাহরণ ব্যবহার করা যা প্রাসঙ্গিক বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার সাথে সমান্তরাল তুলনা রয়েছে তা পড়ার অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে তুলতে পারে পুরো ভাষা পদ্ধতির ব্যবহার করে নির্দেশনা পড়ার জন্য অন্য একটি ভাইগটস্কিয়ান মডেল হলো '''প্রক্সিমাল বিকাশের শিক্ষার্থীর জোনের''' মধ্যে কাজ করা। এটি কোনও ব্যক্তির একা কী করতে পারে এবং সাহায্যের মাধ্যমে তারা কী করতে পারে তার মধ্যে শেখার ক্ষেত্র। পড়ার সময়, শিক্ষার্থীদের ভাষা সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বা স্পষ্টতার জন্য স্কিল তৈরি করতে পারেএলএস তারা ইতিমধ্যে দখল করেছে। শিক্ষার্থীদের উপাদান সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা এবং অর্থ তৈরির উত্সাহ দেওয়া পড়ার বোধগম্যতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে যখন প্রকৃত পঠনকে পুরো ভাষা পড়ার নির্দেশের প্রধান উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তখন পদ্ধতিটি পড়ার বোধগম্যতা পরীক্ষার জন্য উপকারী সর্বোপরি, পড়ার বোধগম্যতা নির্দেশাবলী পড়ার একটি প্রধান লক্ষ্য।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের পড়া এবং লেখার কাজগুলোর উপর ম্যানিং এবং কামির গবেষণা (২০০০) বিচ্ছিন্ন ধ্বনিবিদ্যা নির্দেশের তুলনায় পুরো ভাষার কার্যকারিতা তুলনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলের দুটি কিন্ডারগার্টেন ক্লাসের ৩৮ জন শিশুকে পরীক্ষা করা হয়। একটি শ্রেণির শিক্ষক পুরো ভাষার শিক্ষক হিসাবে চিহ্নিত এবং অন্যটি ধ্বনিবিদ্যার শিক্ষক হিসাবে। ধ্বনিবিদ্যা শ্রেণীকক্ষে, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের ফোনিকস ওয়ার্কশিট এবং মৌখিক-শব্দ প্রশিক্ষণ ছিল এবং প্রায়ই দর্শনীয় শব্দ এবং অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র অনুশীলনের জন্য ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করত। এমন পোস্টার ছিল যা বিভিন্ন ধ্বনিবিজ্ঞানের নিয়ম প্রদর্শন করেছিল, দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য প্রতীক দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পুরো ভাষা শ্রেণীকক্ষে, শিশুরা প্রচুর ভাগ করে নেওয়া পড়া এবং লেখার কাজ করেছিল, যেমন স্বাধীন জার্নাল লেখা এবং গ্রুপ লেখার ক্রিয়াকলাপ। শিক্ষক প্রতিদিন এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বইগুলো উচ্চস্বরে পড়া হত, দিনভর ছড়িয়ে দেওয়া হত। সমস্ত শিশুদের সারা বছর ধরে পাঁচবার পৃথকভাবে সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছিল, যেখানে তাদের আটটি শব্দ লিখতে বলা হয়েছিল এবং তারপরে দুই থেকে চারটি বাক্য পড়তে বলা হয়েছিল। গবেষকরা তখন শিক্ষার্থীদের তাদের লেখার স্তর এবং প্রদত্ত বাক্যে একটি শব্দ সনাক্ত করার ক্ষমতা অনুসারে স্কোর করেছিলেন। ফলাফলগুলো দেখায় যে যদিও পুরো ভাষা গোষ্ঠীটি নিম্ন স্তরে বছর শুরু করেছিল। তবে অনেক বেশি শিশু ধ্বনিবিদ্যা গোষ্ঠীর চেয়ে উচ্চতর স্তরে বছর শেষ করেছে। ফনিক্স গ্রুপে, রিগ্রেশনের আরও উদাহরণ ছিল এবং সামগ্রিকভাবে কম অগ্রসর হয়েছিল এবং তাদের কিন্ডারগার্টেন বছরের সময় আরও বিভ্রান্ত হয়েছিল।
=== স্কিমা তত্ত্ব ===
স্কিমা তত্ত্ব হলো পাঠকরা কীভাবে পাঠ্য বোঝার জন্য তাদের পূর্বের জ্ঞান ব্যবহার করে তার একটি ব্যাখ্যা '''স্কিমা''' (বহুবচন: ''স্কিমাটা'') শব্দটি প্রথম মনোবিজ্ঞানে একটি মানসিক কাঠামো বর্ণনা করার জন্য চালু হয়েছিল যা কোনও ব্যক্তির জ্ঞানকে সংগঠিত করে এবং পরে পড়ার নির্দেশে ব্যবহৃত হয়েছিল যাতে শিক্ষার্থীদের পূর্বের জ্ঞান পড়ার বোধগম্যতায় যে ভূমিকা পালন করে তা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল স্কিমা তত্ত্ব অনুসারে, লোকেরা স্কিমাটায় যা কিছু জানে তা সংগঠিত প্রত্যেকের স্কিমাটা পৃথক করা হয় এবং কোনও ব্যক্তির স্কিমা কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য যত বেশি বিস্তৃত হয়, তত সহজেই তারা সেই বিষয় অঞ্চলে নতুন তথ্য শিখতে সক্ষম হবে একজন ব্যক্তির বিদ্যমান জ্ঞান কাঠামো নমনীয় এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল; যখন কোনও ব্যক্তি নতুন তথ্য শেখেন, তখন তাদের পূর্ব-বিদ্যমান স্কিমাটি এই নতুন তথ্যটি সামঞ্জস্য করার জন্য সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন হতে পারে। পড়ার ক্ষেত্রে স্কিমা তত্ত্বের মূল ধারণাটি হলো লিখিত পাঠ্য কেবল অর্থ বহন করে না; বরং, পাঠ্যটি পাঠকদের কীভাবে পূর্ববর্তী বিদ্যমান জ্ঞান কাঠামো থেকে অর্থ পুনরুদ্ধার বা নির্মাণ করা উচিত তার জন্য দিকনির্দেশনা সরবরাহ করে। বিষয়বস্তুর জন্য স্কিমাটা থাকার পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের পড়ার প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন ধরণের পাঠ্য কাঠামোর জন্য স্কিমাটাও রয়েছে পাঠ্যটি বোঝা পাঠকের পূর্ব জ্ঞান এবং প্রকৃত পাঠ্যের মধ্যে একটি পারস্পরিক এবং ইন্টারেক্টিভ প্রক্রিয়া কারণ কার্যকর বোঝার জন্য পাঠ্যের সাথে পূর্বের জ্ঞানের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা প্রয়োজন পড়ার বোধগম্যতার সময় স্কিমা তত্ত্বের দুটি ধরণের প্রক্রিয়াকরণ রয়েছে: '''বটম-আপ প্রসেসিং''' হলো স্কিমা অ্যাক্টিভেশন (যখন পাঠ্য উদ্দীপনা প্রাসঙ্গিক স্কিমাটার সংকেত স্মরণ করে) পাঠ্যের নির্দিষ্ট তথ্যের মাধ্যমে, যখন '''শীর্ষ-ডাউন প্রক্রিয়াকরণ''' সাধারণ জ্ঞান দিয়ে শুরু হয় এবং আরও নির্দিষ্ট বিশদের দিকে নেমে যায় এবং আরও উদ্দীপনা উপস্থাপিত হওয়ার সাথে সাথে পাঠ্য সম্পর্কিত পাঠকের নির্দিষ্ট স্কিমাটা সক্রিয় করা যেতে পারে. পাঠ্য বোঝার জন্য এই দুটি ধরণের প্রক্রিয়াকরণ একযোগে এবং ইন্টারেক্টিভভাবে
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে পাঠকরা যখন পাঠ্যের পূর্বরূপ দেখে পূর্বের জ্ঞানকে সক্রিয় করে, তখন তারা পড়া শুরু করার সাথে সাথেই স্কিমাটা ব্যবহার করে এবং পুরানো এবং মধ্যে সংযোগ তৈরির লক্ষ্যে নতুন তথ্যের দিকে মনোনিবেশ করে। পাঠ্যের কাঠামো বা বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিদ্যমান স্কিমা ব্যতীত পড়ার বোধগম্যতা ঘটবে না। প্রাক-বিদ্যমান জ্ঞানের গুরুত্বের কারণে, শিক্ষকরা পড়ার আগে শিক্ষার্থীদের স্কিমা তৈরি এবং সক্রিয় করতে পারেন পাঠ্যের পূর্বাভাসে মস্তিষ্কের ঝড় বা গ্রুপ আলোচনা, বা এমনকি পাঠ্যটি পড়ার জন্য কৌশল এবং দক্ষতা পর্যালোচনা করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি লক্ষ করাও গুরুত্বপূর্ণ যে পার্থক্য এবং শিক্ষার্থীদের স্কিমাটা পড়ার বোধগম্যতার পার্থক্যের সাথে সম্পর্কিত। তবে পাঠ্যের পূর্বরূপ একজন পাঠককে আগাম উপলব্ধি করতে দেয় যে তাদের বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, সেই পড়ার কাজের জন্য শিক্ষার্থীর স্ব-কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
ইরানি শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণায় পরীক্ষা করা হয়েছে যে প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে স্কিমা অ্যাক্টিভেশন সংস্কৃতি ভিত্তিক পাঠ্যগুলোর পড়ার বোধগম্যতার উপর প্রভাব ফেলে কিনা। বিষয়গুলোর মধ্যে ছিয়াত্তর জন ইংলিশ অ্যাজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ (ইএফএল) শিক্ষার্থীরা হয় ইংরেজি সাহিত্যে মেজর বা টিচিং ইংলিশ অ্যাজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ (টিইএফএল) এ মেজর ছিল। অংশগ্রহণকারীরা সবাই ইরানের কেরমানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের দ্বিতীয় শিক্ষার্থী ছিলেন। সমস্ত শিক্ষার্থী একই ইংরেজি দক্ষতার ছিল তা নিশ্চিত করার জন্য, অক্সফোর্ড প্লেসমেন্ট টেস্টে তাদের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের ইংরেজির বেসিক থেকে উচ্চ-মধ্যবর্তী স্তর পর্যন্ত শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের তখন দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছিল: একটি পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ। গবেষকরা দুটি নাল হাইপোথিসিস পরীক্ষা করেছেন: প্রথমটি, স্কিমা অ্যাক্টিভেশনের পরে পরীক্ষামূলক গ্রুপের গড় প্রিটেস্ট এবং গড় পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকবে না; এবং দ্বিতীয়ত, পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রিটেস্ট এবং পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই যখন শিক্ষার্থীদের স্কিমাগুলো প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সক্রিয় করা হয়। প্রক্রিয়া চলাকালীন, পরীক্ষামূলক এবং নিয়ন্ত্রণ উভয় গ্রুপকেই প্রিটেস্ট হিসাবে হ্যালোইনের উত্স এবং রীতিনীতি সম্পর্কে একটি পড়ার বোধগম্যতা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ ছুটির দিনটি সাংস্কৃতিকভাবে লোড করা হয় এবং তাই অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের এটি বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। তারপরে, পরীক্ষামূলক গ্রুপের একজন গবেষকের সাথে স্কিমা অ্যাক্টিভেশনের দুটি প্রশিক্ষণ সেশন ছিল - এই সেশনগুলোতে প্রাক-পঠন ক্রিয়াকলাপ, পূর্বরূপ, প্রাক-শিক্ষণ শব্দভাণ্ডার এবং শিক্ষার্থীদের হ্যালোইন কাস্টমসের সাথে আরও পরিচিত করার জন্য ছবিগুলো দেখা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপরে গ্রুপটিকে হ্যালোইন সম্পর্কে তারা কী জানত সে সম্পর্কে কথা বলতে বলা হয়েছিল এবং এটি গ্রুপ আলোচনার ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছিল। প্রশিক্ষণ সেশনের সময়, গবেষক গ্রুপটিকে নতুন শব্দভান্ডার শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং প্রয়োজনে সমার্থক শব্দ এবং সংজ্ঞা সরবরাহ করেছিলেন। পরীক্ষামূলক দলটিকে তখন দুই সপ্তাহ পরে পোস্টটেস্টের মতো একই পঠন বোধগম্যতা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। কন্ট্রোল গ্রুপটি কেবল প্রাথমিক প্রিটেস্ট পরিচালিত হয়েছিল এবং কোনও প্রশিক্ষণ সেশন বা পোস্টটেস্ট ছিল না। ফলাফলগুলো দেখিয়েছিল যে উভয় নাল হাইপোথিসিস প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, এবং উভয় গ্রুপই প্রিটেস্টে প্রায় একই স্কোর করেছিল - ১৬.৪২ এর গড় স্কোর সহ পরীক্ষামূলক গ্রুপ এবং ১৬.৫৭ এর গড় স্কোর সহ নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ - তবে পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রশিক্ষণ সেশনের পরে, তাদের পোস্টটেস্ট গড় স্কোর বেড়ে ১৮.৭০ এ দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা পরীক্ষামূলক গ্রুপের প্রিটেস্ট এবং পোস্টটেস্ট স্কোরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন। উপসংহারে, পরীক্ষামূলক গোষ্ঠীটি আরও পটভূমি জ্ঞান পাওয়ার সাথে সাথে পড়ার বোধগম্যতা বাড়ানো হয়েছিল এবং গবেষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে গবেষণার ফলাফল এবং প্রভাবগুলো অন্যান্য কম সাংস্কৃতিকভাবে আবদ্ধ উপকরণগুলোতে প্রযোজ্য। শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান স্কিমাগুলোতে নতুন তথ্য সংযুক্ত করতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষক নির্দেশিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্কিমা অ্যাক্টিভেশন ক্রিয়াকলাপগুলোতে সময় ব্যয় করা শিক্ষার্থীদের আরও ভাল পারফরম্যান্সের দিকে পরিচালিত করে
== পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন ==
শিশুরা যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন তারা প্রথম যে জিনিসটি শিখতে শুরু করে তা হল পড়া। আনুষ্ঠানিকভাবে পড়তে শেখা কিন্ডারগার্টেনে শুরু হয় এবং আমাদের জীবনকাল জুড়ে অব্যাহত থাকে। শিশুরা যখন পড়তে শিখছে, তখন তাদের প্রতিক্রিয়া জানানো এবং তারা কেমন করছে তা দেখার জন্য তাদের মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষার্থীর পড়ার দক্ষতার সাফল্য এবং উন্নতির পরিমাপ করার জন্য, কারও পড়ার অগ্রগতি নির্ধারণের জন্য কিছু ঘন ঘন মূল্যায়ন করা চিহ্নিতকারী রয়েছে: ফোনমিক সচেতনতা, অক্ষর জ্ঞান এবং মৌখিক পড়ার সাবলীলতা। শিশুরা মুদ্রণ করতে শেখার আগে, শব্দের অক্ষরগুলোর শব্দগুলো কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে তাদের সচেতন হওয়া দরকার। ফোনেমিক সচেতনতা মূলত এটি মূল্যায়ন করছে, শিশুদের কথ্য শব্দের ফোনমিক বিভাগগুলো লক্ষ্য করার, চিন্তা করার এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা থাকা দরকার। যদি শিশুরা ভাষার শব্দ কাঠামো সম্পর্কে সচেতন না হয় তবে তারা কথ্য শব্দের পৃথক শব্দগুলোতে অংশ নিতে সক্ষম হবে না এবং এইভাবে অক্ষর-ধ্বনি চিঠিপত্র স্থাপন করতে সক্ষম হবে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই অক্ষর-শব্দ লিঙ্কটি ডিকোডিংয়ের একটি মৌলিক দক্ষতা এবং সাক্ষরতার গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক দক্ষতা। অক্ষর জ্ঞান শিশুদের বড় এবং ছোট হাতের অক্ষরের নাম এবং বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষরের শব্দ জানার ক্ষমতা দ্বারা পরিমাপ করা হয়। বাচ্চাদের পক্ষে এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা যখন অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো বুঝতে পারে তখনই তারা পড়তে শুরু করতে পারে। পড়ার সময়, বাচ্চাদের কীভাবে শব্দগুলো শব্দ করতে হয়, তাদের ডিকোড করতে হয় এবং তাদের উচ্চারণ করতে হয় এবং এটি কেবল তখনই সম্ভব যদি তারা অক্ষর এবং তাদের শব্দগুলো আয়ত্ত করে। প্রারম্ভিক পড়ার অগ্রগতি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত তৃতীয় ধরণের মূল্যায়নটি পড়ার সাবলীলতা হিসাবে পরিচিত। এটি মূলত শিশুদের দ্রুত, নির্ভুলভাবে এবং অভিব্যক্তি দিয়ে পড়ার ক্ষমতা পরিমাপ করার চেষ্টা করছে। এই ধরণের মূল্যায়ন কিছু লোকের জন্য বিতর্কিত কারণ তারা বিশ্বাস করে না যে দ্রুত পড়ার মাধ্যমে শিশুরা অগ্রগতি করেছে। দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে পড়া পড়ার আসল উদ্দেশ্য নয়, আপনি যা পড়েছেন তা বোঝা এবং স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
কার্যকর মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়া উচিত এবং শিশুরা দ্রুত কোনও পাঠ্য পড়তে এবং এটি বুঝতে পারার পরে কেবল থামানো উচিত নয়। এ কারণেই কিছু খাঁটি মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে যা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা এবং শেখার নির্ধারণ করতে এবং বর্তমান এবং ভবিষ্যতের নির্দেশনাকে অবহিত করতে ব্যবহার করতে সক্ষম হন। শিক্ষকরা মৌখিক এবং লিখিত গল্পের পুনর্বিবেচনার মতো মূল্যায়ন ব্যবহার করতে সক্ষম হন যা অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ার বোধগম্যতা পরিমাপ করবে, সাক্ষরতার পোর্টফোলিওগুলো শিক্ষার্থীদের মৌখিক এবং লিখিত প্রক্রিয়া, পণ্য এবং দক্ষতা প্রদর্শন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং চেকলিস্টগুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের পর্যবেক্ষণে সহায়তা করতে এবং শিক্ষার্থীদের সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা এবং বৃদ্ধি নির্ধারণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
শিক্ষার্থীদের পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীরা কোন পর্যায়ে রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এটি শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনকে আরও ভালভাবে সহায়তা করতে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার অনেক সুবিধা রয়েছে তবে শিক্ষকদের সর্বদা সচেতন হওয়া উচিত যে মূল্যায়নই সবকিছু নয় এবং সমস্ত শিক্ষার্থীকে একই সময়ে বা একইভাবে মূল্যায়ন করা যায় না।
== শব্দকোষ ==
'''বটম-আপ প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি যা তথ্যের ছোট ছোট টুকরো টুকরো
'''কোড-জোর দেওয়ার পদ্ধতি:''' পড়ার পদ্ধতিগুলো অক্ষর এবং শব্দ এবং অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্রের ডিকোডিংয়ের গুরুত্বকে জোর দেয়।
'''বক্তৃতা:''' ভাষার কাঠামোগত, সুসংগত ক্রম যেখানে বাক্যগুলো উচ্চতর ক্রমের ইউনিটগুলোতে একত্রিত হয়, যেমন অনুচ্ছেদ, আখ্যান এবং এক্সপোজিটরি পাঠ্য, অর্থাত্, কথোপকথন।
'''সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়ার নির্দেশ যেখানে অক্ষরের সাথে সম্পর্কিত শব্দগুলো (অক্ষর-শব্দ চিঠিপত্র) প্রথমে স্বাধীনভাবে চিহ্নিত করা হয়, তারপরে পরে শব্দ গঠনের জন্য একসাথে মিশ্রিত হয়।
'''সম্পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়:''' পাঠকরা যারা পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ করার সাথে সাথে শব্দের পৃথক শব্দগুলো সনাক্ত করতে পারেন এবং বুঝতে পারেন যে বানানগুলো উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
'''অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়ার নির্দেশ যেখানে অক্ষরের ধ্বনিগুলো স্বাধীনভাবে না হয়ে পুরো শব্দের মধ্যে চিহ্নিত করা হয়।
'''অর্থ-জোর পদ্ধতি:''' পড়ার পদ্ধতিগুলো শব্দগুলো থেকে অর্থ তৈরি এবং কারও সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার করার দিকে বেশি মনোনিবেশ করে।
'''আংশিক বর্ণমালা পর্যায়:''' পাঠক। এরা পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু শব্দের অক্ষরকে শব্দের সাথে যুক্ত করে পড়েন।
'''ধ্বনি:''' শব্দের ক্ষুদ্রতম একক যা একটি শব্দ তৈরি করে।
'''ধ্বনিমূলক সচেতনতা:''' একটি শব্দে পৃথক ধ্বনিগুলো সনাক্ত এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা।
'''প্র্যাগমেটিক্স:''' ভাষার অর্থ, বার্তা ও ব্যবহার।
'''প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়:''' এটি এমন একটি পর্যায় যখন শিশুরা বেশ কিছুটা সাক্ষরতা জানে তবে কোনও শব্দ কীভাবে পড়তে হয় তা জানে না।
'''স্কীমা:'''একটি মানসিক কাঠামোর ধারণা যা আমাদের জ্ঞান এবং এই তথ্যের টুকরোগুলোর মধ্যে সম্পর্কগুলো সংগঠিত করতে সহায়তা করে।
'''স্কিমা অ্যাক্টিভেশন:'''প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পাঠ্য উদ্দীপনা বর্তমান পড়ার কাজের জন্য স্মৃতি থেকে প্রাসঙ্গিক স্কিমাটা স্মরণ করার সংকেত দেয়।
'''শব্দার্থবিজ্ঞান:''' শব্দ এবং তাদের অর্থ অধ্যয়ন।
'''বাক্যগঠন:''' একটি ভাষার শব্দগুলো বৃহত্তর ইউনিটে বিভক্ত করা হয়, যেমন বাক্যাংশ, ধারা এবং।
'''টপ-ডাউন প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি যা সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে যা জানা যায় তা পূরণ করতে এবং ছোট ছোট বিবরণের দিকে কাজ করে।
'''প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্টের জোন:''' ভাইগটস্কি দ্বারা তৈরি একটি ধারণা যা একজন শিক্ষার্থী নিজেরাই কী করতে সক্ষম এবং তারা সাহায্যের মাধ্যমে কী করতে পারে, যেমন শিক্ষক, পিতামাতা বা যত্নশীলের কাছ থেকে শেখার ক্ষেত্রটি বর্ণনা করে।
== প্রস্তাবিত পাঠ ==
Bukowiecki, E. M. (২০০৭)। শিশুকে লেখাপড়তে শেখান। কাপ্পা ডেল্টা পাই রেকর্ড, ৪৩ (২), ৫৮-৬৫। ডিওআই: ১০.১০৮০/০০২২৮৯৫৮.২০০৭.১০৫১৬৪৬৩
Ehri, L. C. (২০০৫)। শব্দগুলো পড়তে শেখা: তত্ত্ব, অনুসন্ধান এবং সমস্যা। পড়ার বৈজ্ঞানিক স্টাডিজ, ৯ (২), ১৬৭-১৮৮। ডিওআই: ১০.১২০৭ / s১৫৩২৭৯৯xssr০৯০২_৪
Hempestall, K. (২০০৫)। পুরো ভাষা-ধ্বনিবিজ্ঞান বিতর্ক: একটি .তিহাসিক দৃষ্টিকোণ। অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অফ লার্নিং ডিসেবিলিটিস, ১০ (৩-৪), ১৯-৩৩। ডিওআই: ১০.১০৮০ / ১৯৪০৪১৫০৫০৯৫৪৬৭৯৭
ট্রেসি, ডিএইচ, এবং মোরো, এলএম (২০১২)। পড়ার উপর লেন্স, দ্বিতীয় সংস্করণ: তত্ত্ব এবং মডেলগুলোর একটি ভূমিকা। গিলফোর্ড প্রেস।
sjw33fbib3e4niuptnkr2965cquh9p6
84056
84055
2025-06-11T20:02:34Z
NusJaS
8394
/* সমগ্র ভাষা পদ্ধতি */
84056
wikitext
text/x-wiki
পড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা. কারণ এটি আমাদের সব একাডেমিক বিষয় শিখতে সাহায্য করে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরের সফলতার জন্যও এটি খুবই জরুরি। পড়তে শেখা একটি জটিল ও বহু বছরের প্রক্রিয়া। এখানে প্রতীক এবং লিখিত শব্দের শব্দ ও অর্থ চিনতে শেখা অন্তর্ভুক্ত। শিশুদের জন্য পড়ার দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, কারণ এটিই তাদের সাক্ষরতা ও শেখার জগতে প্রবেশের দরজা, যা জীবনের অনেক দিকের ওপর নির্ভর করে।
[[চিত্র:A_Family_Place_Library_(14071466252).jpg|থাম্ব|পড়তে শেখা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেক শিশু সহজ শব্দ ও রঙিন ছবিযুক্ত বই পড়া দিয়ে শুরু করে, তারপর ধীরে ধীরে কঠিন বই পড়ার দিকে এগিয়ে যায়।]]
এই অধ্যায়ে পড়তে শেখার বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়েছে। এর শুরু হয়েছে পড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীয় উপাদান যেমন স্মৃতি ও মনোযোগ দিয়ে। এখানে পড়ার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং শিক্ষাদানের ওপর এর কিছু প্রভাবও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেহেতু প্রতিটি শিশু আলাদা, তাই পড়তে শেখানোর জন্য একক কোনো পদ্ধতি সব শিশুর ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এই অধ্যায়ে পড়ার তিনটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে প্রথমে এমন শিশুদের কথা বলা হয়েছে যারা কোনো শব্দ পড়তে বা চিনতে পারে না, এবং শেষ পর্যন্ত এমন শিশুদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা অচেনা শব্দগুলো ডিকোড করার জন্য অক্ষর ও তাদের শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। বর্তমানে পড়তে শেখানোর পদ্ধতিতে বিভিন্ন তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত কৌশলগুলো একত্রিত করে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযোজিত করা হয়। অবশেষে, পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়নের কয়েকটি কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
== পড়ার জ্ঞানীয় উপাদান ==
পড়ার ক্ষেত্রে সফলতা নির্ভর করে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি ব্যবহারের পাশাপাশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ওপর, যাতে পাঠের অর্থ বোঝা যায়। পাশাপাশি, পাঠককে তার আশেপাশের জগত সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকতে হয় যাতে সে তথ্যটি অনুধাবন করতে পারে।
=== স্মৃতি ===
কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি এমন জ্ঞানীয় উপাদান, যা শিশুর পড়তে শেখার সাফল্যের সঙ্গে জড়িত। পড়া একটি স্মৃতিভিত্তিক কাজ, কারণ এটি বিশ্ব ও ভাষাগত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যখন একটি শিশু একটি শব্দ শিখছে, তখন তাকে সেই শব্দটি যথেষ্ট সময় ধরে মনে রাখতে হয় যাতে সে বাক্যাংশ, বাক্য এবং পুরো অনুচ্ছেদের জটিল অর্থ বুঝতে পারে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। একটি শিশু যা পড়েছে, সেটি অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য কার্যকর স্মৃতির প্রয়োজন <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি অন্যান্য স্মৃতির ধরন থেকে আলাদা, কারণ এটি প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ উভয়কে প্রতিফলিত করে <ref>Swanson, H. L., & Ashbaker, M. H. (2000). Working memory, short-term memory, speech rate, word recognition and reading comprehension in learning disabled readers: Does the executive system have a role? Intelligence, 28(1), 1-30. doi:10.1016/S0160-2896(99)00025-2</ref>। কার্যকর স্মৃতি প্রায়শই শিশুদের পড়তে শেখার উন্নয়ন বোঝার জন্য গবেষণায় ব্যবহৃত হয় এবং Baddeley-এর মডেলটি কার্যকর স্মৃতি ও পড়ার উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই মডেলে দুটি মৌলিক দিক রয়েছে: ধ্বনিগত লুপ ও ভিজ্যুয়াল স্কেচপ্যাড <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ধ্বনিগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি অভ্যন্তরীণ অনুশীলন অংশ রয়েছে, যাকে বলা হয় articulatory loop, যা ধ্বনিগত তথ্যকে দীর্ঘ সময় ধরে স্মৃতিতে ধরে রাখতে সাহায্য করে, যাতে শব্দ ডিকোড ও পাঠ অনুধাবন সম্ভব হয় <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। যখন শিশুরা শব্দ ডিকোড করতে পারে না বা সমস্যায় পড়ে, তখন এটি ধ্বনিগত সচেতনতার সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। এই ধরণের সমস্যা থাকা শিশুরা কথ্য ভাষার শব্দগত গঠন বোঝে না বা তার নাগাল পায় না <ref>Verhoevan, L., Reitsma, P., & Siegel, L. S. (2011). Cognitive and linguistic factors in reading acquisition. Reading and Writing, 24(4), 387-394. doi:10.1007/s11145-010-9232-4</ref>। ছোটবেলায় শিশুদের কার্যকর স্মৃতির পরিসর সীমিত থাকে কারণ তাদের এনকোডিং ও অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এখনো পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। পড়াকে অর্থবহ করে তুলতে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনের স্মৃতি প্রয়োজন <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। তাই যখন শিশুরা নতুন কিছু শেখে, তখন সেই তথ্যকে তাদের কার্যকর স্মৃতিতে সতেজ রেখে আগের শিখে রাখা তথ্যকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি থেকে আহরণ করতে হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। শিশুদের দক্ষ পাঠক হওয়ার জন্য, তাদের অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে জানতে হবে, যাতে বাক্য বা অনুচ্ছেদের অর্থ বোঝার সময় খুব বেশি সময় ধরে শব্দের অর্থ মনে রাখতে না হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। দুর্বল পাঠকরা যদি যুক্তিসঙ্গত গতিতে শব্দ ডিকোড করতে না পারে, তাহলে তাদের অতিরিক্ত সময় নিতে হয় শব্দ বুঝতে, যা পাঠ অনুধাবনে বাড়তি চাপ তৈরি করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
=== মনোযোগ ===
পড়া ও মনোযোগের বিষয়ে আসলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মনোযোগ ছাড়া কোনো পাঠ অনুধাবন সম্ভব নয়। মনোযোগ ছাড়া কেউ পড়তে পারে না। ছোট শিক্ষার্থীদের পড়ানো প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং হয়, কারণ কেউ কেউ দীর্ঘ সময় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না, বা তারা যে উপাদান পড়ছে, সেটির প্রতি আগ্রহও থাকতে পারে না।
একজন শিশুকে পড়তে হলে, তার সামনে একটি বই খোলা থাকতে হবে এবং তাকে লেখার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson</ref> এমন অবস্থায় শিশুদের আনাও অনেক সময় একটি বড় অর্জন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ কিছু শিশু এই ধরণের কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
শুধু বইয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়াই নয়, পড়ার সময় শিশুদের উচিত সংযোগ তৈরি করা—যাতে পড়ার ছোট ছোট অংশগুলো বড় বিষয়ের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত, তা বুঝতে পারে। এ ক্ষেত্রেও অনেক মনোযোগের প্রয়োজন হয়, কারণ প্রায়শই একটি ছোট পয়েন্ট উপেক্ষা করা হলে, সেটি পরে শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বড়রা যেখানে পড়ার প্রক্রিয়ায় খুব বেশি মনোযোগ না দিয়েও পড়তে পারে, ছোটদের ক্ষেত্রে তা হয় না, কারণ তারা এখনো সেই প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে শেখেনি বা চর্চা করেনি। চোখের গতি ও বাম থেকে ডানে চোখ সরানোর মতো বিষয়গুলিও এই ধরনের মনোযোগের অন্তর্ভুক্ত।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref> পাঠের সময় মনোযোগকেও শব্দ থেকে শব্দে সুনির্দিষ্টভাবে সরানো উচিত এবং নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি শব্দ পাঠের মূল বার্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। এছাড়াও, চিত্র বা ছবি থেকে লেখায় এবং আবার লেখায় থেকে চিত্রে মনোযোগ স্থানান্তর করতে হবে যাতে গল্পের সব উপাদান অর্থবহ হয়।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
== পড়া সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা ==
যতটা না পড়ার জন্য শিশুর অক্ষর ও শব্দ বুঝে নেওয়া এবং পূর্বজ্ঞান কাজে লাগানো প্রয়োজন, ঠিক ততটাই এই দক্ষতা শেখানোও জরুরি। তবে কিছু শিক্ষার্থী শেখার এই প্রক্রিয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা অনেক সময় শেখার অক্ষমতার কারণে হয়। এমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার সময় তাদের সমস্যাকে মাথায় রেখে সাক্ষরতা বিকাশের কার্যকর উপায়গুলো ব্যবহার করতে হয়।
=== পড়ার সমস্যার নির্ণয় ===
প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে পড়তে শেখা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকা একটি প্রতিবন্ধকতা শেখার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, অর্থাৎ শিক্ষককে প্রায়শই নিজের শিক্ষাদানের ধরন পরিবর্তন করতে হয় যাতে শিক্ষার্থী তথ্যটি বুঝতে পারে। যদিও "প্রতিবন্ধকতা" শব্দটি অনেক কিছু বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, তবে প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা আলাদা, এবং প্রতিটি পড়াকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
অধিকাংশ সময় পড়ার সমস্যা চিহ্নিত করার সবচেয়ে কঠিন অংশ হলো, সমস্যাটা আসলে কোথায় তা নির্ধারণ করা। নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনটি নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করা হয়। প্রথমত, শিক্ষার্থীর পড়ার অভ্যাস যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করতে হয়, কোন অংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। দ্বিতীয়ত, বিশ্লেষণটি প্রাসঙ্গিক ও বিদ্যমান তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। শেষত, তথ্য বিশ্লেষণের সময় মানসিকভাবে খোলা মন নিয়ে থাকতে হবে। <ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref> যদিও খোলা মন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে না-ও হতে পারে, তবে নির্ণয়ের সময় এটি বড় ভূমিকা পালন করে, কারণ একটি পড়ার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য কোনো তত্ত্ব প্রমাণ বা খণ্ডন করা নয়, বরং শিক্ষার্থীর সমস্যাটা কোথায় সেটা খুঁজে বের করা। এছাড়া, অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে না, বরং একাধিক ক্ষেত্রে সমস্যার লক্ষণ দেখায়। এই ধরনের ক্ষেত্রে খোলা মনের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ণয় ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর কারণ, কোনো শিশুর যদি পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলেও সেটা কোনো নির্দিষ্ট মডেল বা ফর্মুলায় ফিট নাও করতে পারে, এবং সেটা থাকলেই সেটা "প্রতিবন্ধকতা" হিসেবে বিবেচিত হবে না।
নির্ণয়ের নীতির বাইরে, এখানে নির্ণয় প্রক্রিয়ার ছয়টি সাধারণ ধাপ রয়েছে:
১. "শ্রেণি বা বিদ্যালয়ের পাঠ দক্ষতা পরিমাপ" - পাঠ দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়, যাতে প্রতিটি শ্রেণির পাঠ দক্ষতার স্তর নির্ধারণ করা যায় এবং পরীক্ষার ফলাফলে ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
২. "প্রতি শ্রেণির প্রধান পাঠ-সমস্যাগুলো নির্বাচন" - পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রতি শ্রেণির প্রধান সমস্যাটি নির্ধারণ করা হয় এবং গড়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের বিশেষ মনোযোগ ও সহায়তা প্রদান করা হয়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৩. "পাঠে দুর্বল শিক্ষার্থীদের নির্বাচন" - গড়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর মনোযোগ প্রদান করা হয়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৪. "ব্যক্তিগতভাবে বিশ্লেষণের জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ" - শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রায়ই দেখা যায় যে এইসব উপাদান শিক্ষার্থীর সামগ্রিক শেখার সক্ষমতার উপর বড় প্রভাব ফেলে। অনান্য উপাদান যেমন দৃষ্টিগত পরিধি, দৃষ্টিনির্দেশের সংখ্যা ও নিয়মিততা, ডিসলেক্সিয়া, উচ্চারণ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাসও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
৫. "পাঠের দুর্বলতার ধরন নির্ধারণ" এবং
৬. "পাঠে ঘাটতির কারণ নির্ধারণ" - এই দুটি ধাপকে একটি বৃহত্তর ধাপে একত্রিত করা যায়। কারণ পূর্ববর্তী চারটি ধাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শেখার সমস্যা কীভাবে এবং কেন হচ্ছে তা নির্ধারণ করা যায়।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref>
যদিও এই ধাপগুলো শিক্ষার্থীর সমস্যাগুলি চিহ্নিত করতে নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, প্রতিটি ক্ষেত্রই স্বতন্ত্র এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন পদ্ধতিতে সমাধান করা যেতে পারে।
ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ে পাঁচটি কাজ রয়েছে যা নির্ধারণ করে যে একটি শিশু সত্যিই ডিসলেক্সিক কিনা: মৌখিক শব্দ ও ছদ্মশব্দ পড়া, মৌখিক পাঠ্য পড়া, মৌখিক ছদ্মশব্দ পাঠ্য পড়া, মৌখিক শব্দ তালিকা পড়া, এবং শব্দ ও ছদ্মশব্দ বানান লেখা।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref> এই পরীক্ষাগুলো করতে গিয়ে চার ধরনের পাঠের গতি এবং চারটি স্তরের পাঠ ও বানান নির্ভুলতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। যদি একটি শিশু প্রতিটি পরীক্ষিত কাজের স্কোরে নিচের ১০ শতাংশে পড়ে, তবে দেখা যায় যে সে নির্দিষ্ট পাঠ ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে দুর্বল। সম্পূর্ণরূপে ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ের জন্য শিশুকে অন্তত চারটি নির্ভুলতার পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে, বা চারটি গতি পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে, অথবা দুটি নির্ভুলতা ও দুটি গতি পরীক্ষায় নিচের ১০ শতাংশ স্কোর করতে হবে।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref>
পূর্বে শেখার অক্ষমতা নির্ধারণ করা হতো আইকিউ পরীক্ষা এবং পাঠ পরীক্ষায় অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে। যদি কোনো শিশুর আইকিউ গড় হয় কিন্তু তার পাঠ দক্ষতা কম থাকে, তবে তাকে শেখার অক্ষমতা আছে বলে বিবেচনা করা হতো।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref> এই পদ্ধতি, যা “ডিসক্রেপেন্সি মডেল” নামে পরিচিত, অনেক বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হতো এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রেণিতে স্থান দেওয়া হতো।
বর্তমানে, পঠন উপাদানগত মডেল (Component Model of Reading - CMR) ব্যবহৃত হয় পাঠ ও শেখার অক্ষমতা বোঝা ও নির্ণয়ের জন্য। এই মডেলে তিনটি প্রধান ক্ষেত্র রয়েছে: কগনিটিভ (জ্ঞানীয়), যাতে রয়েছে শব্দ স্বীকৃতি ও অনুধাবনের উপাদান; সাইকোলজিক্যাল (মানসিক), যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় মোটিভেশন, আগ্রহ, নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি, শেখার ধরণ ও লিঙ্গভেদ; এবং ইকোলজিক্যাল (পরিবেশগত), যাতে রয়েছে পরিবার ও শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ, সংস্কৃতি, পিতামাতার অংশগ্রহণ এবং উপভাষা।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref> একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি যে কগনিটিভ ডোমেইনের উপাদানগুলো শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা অর্জনের শর্ত পূরণ করতে পারে, তবে সাইকোলজিক্যাল ও ইকোলজিক্যাল ডোমেইনগুলো তা করতে পারে না।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref>
২০০৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পঠন উপাদানগত মডেল ব্যবহার করে পাঠ অনুধাবনে ভিন্নতা ৩৮-৪১% পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়, যেখানে পূর্বে ব্যবহৃত আইকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ২৫% নির্ধারণ করা যেত।<ref>Aaron, P. G., Joshi, R. M., Gooden, R., & Bentum, K. E. (2008). Diagnosis and treatment of reading disabilities based on the component model of reading: An alternative to the discrepancy model of LD. Journal Of Learning Disabilities, 41(1), 67-84. doi:10.1177/0022219407310838</ref>
সার্বিকভাবে, পাঠ ও শেখার অক্ষমতা নির্ণয়ের পদ্ধতি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ক্রমশ আরও নিখুঁত হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন ধরনের পাঠ অক্ষমতা রয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে খোলামনের দৃষ্টিভঙ্গি রাখা জরুরি এবং জানা থাকা উচিত যে প্রতিটি শিশু ও তার সমস্যাই ভিন্ন। নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এখানে বর্ণিত ধাপগুলো কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, তবে শিক্ষকেরা হস্তক্ষেপ ও সমস্যার অগ্রগতি সম্পর্কে আরও জানার সঙ্গে সঙ্গে এই ধাপগুলো ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে পারে।
=== পাঠে দুর্বলতা ও অক্ষমতার ধরন ===
পাঠে দুর্বলতা ও অক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করার সময় মনে রাখা জরুরি যে পাঠ ও অনুধাবনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন বহু উপাদান রয়েছে, এবং সব শিক্ষার্থী যারা পড়তে সমস্যায় পড়ে তারা “পাঠ অক্ষমতা” দ্বারা আক্রান্ত নয়। কখনো কখনো শিক্ষার্থীরা পড়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে না এবং ভাষাগত কাঠামো বুঝতে কষ্ট হয়, আবার কেউ কেউ এমন সাংস্কৃতিক বা ভাষাগত পটভূমি থেকে আসে যা বিদ্যালয়ের পাঠ শিক্ষার পদ্ধতির সঙ্গে মিল না খাওয়ায় সমস্যায় পড়ে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref> এছাড়াও, কিছু শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষার সুযোগ পেলেও পড়া শেখায় সমস্যা অনুভব করে। এটি সাধারণ বুদ্ধিমত্তার ঘাটতির কারণে হতে পারে, যেখানে তারা পড়ার চেয়ে বোঝার ক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়ে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
কিছু শিক্ষার্থী গড় বা তার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হলেও তাদের পাঠ অক্ষমতা থাকতে পারে, যা দুর্বল পাঠকদের থেকে আলাদা। কথা বলার সমস্যার সঙ্গে প্রায়শই লেখা ও বানানের সমস্যাও থাকে, যা শিক্ষার্থীর সফলভাবে পড়া ও বোঝার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
একটি সাধারণ পাঠ সমস্যার মধ্যে রয়েছে শব্দের ধ্বনিগততা—বিশেষ করে যখন শিক্ষার্থী বর্ণের ধ্বনিকে দৃষ্টিগত চিহ্নের সঙ্গে মিলাতে পারে না। এই ক্ষেত্রে সমস্যা ইন্দ্রিয়গত নয়, বরং কেন্দ্রীয়।<ref>Hoillingworth, L. S. (1923). Reading. In , Special talents and defects: Their significance for education (pp. 57-97). New York, NY, US: MacMillan Co. doi:10.1037/13549-004</ref> ওয়ার্ড ব্লাইন্ডনেস বা ডিসলেক্সিয়া আরেকটি সাধারণ পাঠ অক্ষমতা, যেখানে শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে অক্ষর ও শব্দ গুলিয়ে যায়, ফলে যা পড়ছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়।<ref>Hoillingworth, L. S. (1923). Reading. In , Special talents and defects: Their significance for education (pp. 57-97). New York, NY, US: MacMillan Co. doi:10.1037/13549-004</ref>
ডিসলেক্সিয়া একটি পাঠ সমস্যা যা বংশগতভাবে চলে আসতে পারে। যদি কোনো পিতা-মাতা বা আত্মীয় এই সমস্যায় আক্রান্ত হন, তবে সন্তানের ডিসলেক্সিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৪০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।<ref>Eklund, K. M., Torppa, M., & Lyytinen, H. (2013). Predicting reading disability: Early cognitive risk and protective factors. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 19(1), 1-10. doi:10.1002/dys.1447</ref>
বামহাতি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়া শেখা কঠিন হতে পারে, কারণ ডানহাতি শিক্ষার্থীদের জন্য বাম দিক থেকে ডানদিকে পড়া স্বাভাবিক, যেখানে বামহাতিদের জন্য এটি বিপরীত।<ref>Dearborn, W. F. (1932). Difficulties in learning. In W. V. Bingham, W. V. Bingham (Eds.) , Psychology today: Lectures and study manual (pp. 186-194). Chicago, IL, US: University of Chicago Press. doi:10.1037/13342-021</ref>
ধীর ও নীরব পাঠ দৃষ্টিগত সমস্যা, স্বল্প দৃষ্টিসীমা, ও ডিসলেক্সিয়ার কারণে হতে পারে, আর মনোযোগের অভাব, মূল ভাব সংগঠনের অক্ষমতা বা অমনোযোগিতার কারণে দুর্বল পাঠ অনুধাবন হতে পারে।<ref>Brooks, F. D. (1926). How to diagnose reading deficiencies. In , The applied psychology of reading: With exercises and directions for improving silent and oral reading (pp. 168-185). New York, NY, US: D Appleton & Company. doi:10.1037/14870-012</ref> তবে মনে রাখতে হবে, মনোযোগের অভাব যেমন ক্ষতিকর, তেমনই অতিরিক্ত মনোযোগও সমস্যার কারণ হতে পারে। যদি শিক্ষার্থী একটি একটি শব্দে অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়, তবে পুরো বাক্যটি একসাথে গঠন করতে ব্যর্থ হতে পারে।
ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ৮% থেকে ২০% শিক্ষার্থীর মধ্যে এই সমস্যা রয়েছে, তবে মাত্র ৩% থেকে ৭% এর লক্ষণ এতটাই গুরুতর হয় যে তাদেরকে ক্লিনিক্যালি নির্ণয় করা হয় এবং বিশেষ শিক্ষামূলক সহায়তা ও সেবা প্রদান করা হয়।<ref>Zentall, S. S., & Lee, J. (2012). A reading motivation intervention with differential outcomes for students at risk for reading disabilities, ADHD, and typical comparisons: 'Clever is and clever does'. Learning Disability Quarterly, 35(4), 248-259. doi:10.1177/0731948712438556</ref> যদিও ADHD থাকলেই পড়াশোনায় সমস্যা থাকবে এমন নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এটি পড়াশোনায় সমস্যার সাথে মিলেও যায়, যার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই পাঠ্যবস্তুর ভুল ব্যাখ্যা করে বা পাঠ্যাংশে সাধারণ সংযোগগুলোর অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা অনুভব করে।
=== শিক্ষাদানের প্রভাব ===
যেকোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখায়, তখন শিক্ষকদের এবং শিক্ষা সহায়কদের উচিত পাঠদানের ধরণ ও উপকরণ পরিবর্তন করে বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তোলা। একটি উপায় হলো ‘রিডিং রিকভারি’ পদ্ধতি, যা নিউ জিল্যান্ডে উদ্ভাবিত। এই পদ্ধতিতে চারটি ধাপ রয়েছে:
1. "শিশুদের বিভিন্ন সাক্ষরতা নিরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়, যেমন: তারা অক্ষর চিনতে পারছে কি না, শব্দ পড়তে পারছে কি না, লিখতে পারছে কি না, মৌখিক পাঠে কতটা দক্ষ এবং তাদের সাক্ষরতা জ্ঞান ও কৌশল কেমন।"
2. "৩০ মিনিট দৈনিক শিক্ষাদান পর্ব, যেখানে রিডিং রিকভারি শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একান্তভাবে কাজ করেন।"
3. "একটি মানসম্মত পাঠদান সেশন যেখানে ধারাবাহিক কিছু কার্যক্রম থাকে, যার মধ্যে রয়েছে অক্ষর ও শব্দ অনুশীলন, ছোট ছোট বই থেকে পাঠ করা এবং সংক্ষিপ্ত লেখা তৈরি করে তা কাটাকাটি করে পুনরায় পাঠ করা।"
4. "একটি সংগঠিত কর্মী উন্নয়ন প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষকরা রিডিং রিকভারি প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।"<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
এই ধরণের ধাপে ধাপে সহায়তা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে যেমন কার্যকর, তেমনই শিক্ষকদের জন্যও এটি সহায়ক এবং বাস্তবসম্মত।
২০০৫ সালে রবার্ট শোয়ার্টজ পরিচালিত একটি গবেষণায় রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামটি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কতটা কার্যকর তা বিশ্লেষণ করা হয়। এই গবেষণায় ১৪টি অঙ্গরাজ্যের ৪৭ জন রিডিং রিকভারি শিক্ষক ১০৭ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠান, যাদের মধ্যে ৫৩% ছেলে এবং ৪৭% মেয়ে ছিল। শিক্ষার্থীদের একজন রিডিং রিকভারি শিক্ষকের সঙ্গে জোড়া লাগানো হয়, যিনি তাদেরকে দৈনিক ৩০ মিনিটের সেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন গঠিত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নিয়ে যান—যার মধ্যে রয়েছে অক্ষর ও শব্দ অনুশীলন, ছোট ছোট বই পড়া, সংক্ষিপ্ত লেখা তৈরি করা এবং সেগুলো ভাগ করে পুনরায় পাঠ করা। গবেষণার শেষে দেখা যায়, ৬৫% শিক্ষার্থী “গ্র্যাজুয়েট” করে, ১৬% কে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয় এবং ১৬% প্রোগ্রামটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি। এটি জাতীয় রিডিং রিকভারি তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়: ৫৬% শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট করে, ১৫% কে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য সুপারিশ করা হয়, ১৯% কে “অসম্পূর্ণ” হিসেবে লেবেল দেওয়া হয়, ৫% “স্থানান্তরিত” হয় এবং ৪% “উল্লিখিত নয়” হিসেবে চিহ্নিত হয়।<ref>Schwartz, R. M. (2005). Literacy Learning of At-Risk First-Grade Students in the Reading Recovery Early Intervention. Journal Of Educational Psychology, 97(2), 257-267. doi:10.1037/0022-0663.97.2.257</ref> রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামটি পুনর্বাসন এবং হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল একটি উদ্যোগ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রোগ্রামের একটি চমৎকার দিক হলো, এটি ৮০’র দশক থেকে চললেও এখনো কার্যকর রয়েছে এবং এতে কোনো বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি। এই প্রোগ্রামের সফলতার আরেকটি প্রমাণ হলো—এটি ইংরেজি ভাষাভাষী বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর সফলতার হার খুবই উচ্চ।
শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে পাঠদানের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা জরুরি। পড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে শুরুতেই হস্তক্ষেপ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পড়তে শেখার সময় যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয় এবং তা যদি ঠিক সময়ে ধরা না পড়ে, তাহলে সেটি শিক্ষার্থীর সারা জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণেই রিডিং রিকভারি প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগ এবং শিক্ষকদের সহায়তা শেখার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও SEA এবং অন্যান্য সহায়তা কর্মীদের সহায়তা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে এবং শিক্ষকদের চাপ কিছুটা কমায়, তবুও মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি শিশুর নিজস্ব শেখার একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত, যা তার প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
যদিও সব শিক্ষার্থীকে পাঠদানে সমস্যা রয়েছে এমন নির্ণয় করা হয় না, তবুও শ্রেণিকক্ষে পড়ানো বিষয়বস্তু শেখার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীই সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেক সময় এটি কোনো অজানা সমস্যার কারণেও হতে পারে। যদি কোনো শিক্ষার্থীকে নির্ণয় করা না হয়ে থাকে বা যদি সে প্রতিবন্ধী না হয় তবুও যদি সে শেখার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তবে সেই শিক্ষার্থীকে বোঝা এবং তাকে সহায়তা করা তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
== পাঠ শেখার ধাপ ==
জীবনের অন্য যেকোনো কিছু শেখার মতো, পড়া শেখার জন্যও কিছু ধাপ বা পর্যায় রয়েছে। শিশুরা যখন পড়া শেখা শুরু করে, তখন তারা তিনটি প্রধান ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। তারা প্রথমে এমন একটি পর্যায়ে থাকে যেখানে তারা কোনো শব্দ বিশ্লেষণ করতে পারে না (প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়), তারপর তারা ফনিক সংকেত এবং অন্যান্য পঠন কৌশল ব্যবহার করতে শেখে (আংশিক বর্ণমালা পর্যায়), এবং শেষে তারা এমন একটি স্তরে পৌঁছে যায় যেখানে তারা একে অপরের সাথে মিল আছে এমন বানানের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং নতুন শব্দ শিখতে ও সংযোগ করতে পারে (ফুল আলফাবেটিক স্টেজ) <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। পড়া শেখা একাধিক মাত্রায় বিকশিত হয়, যতক্ষণ না একজন ব্যক্তি প্রচলিত সাক্ষরতার স্তরে পৌঁছায়। প্রতিটি ধাপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে ছোট ছোট শিশুরা খুব সামান্য সাক্ষরতা সম্পর্কিত আচরণ দেখানো থেকে শুরু করে, পরে ভাষা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়।
=== প্রাক-বর্ণমালা পর্যায় ===
'''প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়''' বা প্রি-আলফাবেটিক স্টেজ-এ থাকা শিশুরা অনেক কিছুই জানে সাক্ষরতা সম্পর্কে, কিন্তু কোনো শব্দ পড়তে জানে না। এই পর্যায়ে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান থাকে না বলেই এটি প্রাক-বর্ণমালা পর্যায় নামে পরিচিত। শিশুরা অনেক শব্দ জানে, পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে পারে এবং অন্যদের সাথে কথোপকথন করতে পারে, কিন্তু কোনো শব্দ পড়তে পারে না। তবে তারা কোনো চিহ্ন বা প্রতীকের ভিত্তিতে শব্দটি বলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বড় ‘M’ দেখে ‘McDonald’s’ বলা বা কুকুরের ছবি দেখে ‘dog’ বলা। কিন্তু তারা ‘McDonald’s’ বা ‘dog’ শব্দটি চিনতে পারে না এবং ছবিটি সরিয়ে নিলে আর বলতে পারবে না। শিশুরা কেবল তাদের চারপাশের পরিবেশ দেখে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, ছাপা লেখাকে নয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যদিও শিশুরা অনেক শব্দ জানে এবং পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে পারে, তারা নিজেরা কোনো শব্দ বা ছাপা লেখা পড়তে পারে না। এই ধাপে থাকা একটি গোষ্ঠী “শব্দের চেহারা, উচ্চারণ এবং অর্থ” এর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে চেষ্টা করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। কিন্তু এভাবে পড়া শেখার সময় স্মৃতি থেকে বারবার মনে রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়, এবং শিশুরা পরে ধ্বনিগত তথ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
=== আংশিক বর্ণমালা পর্যায় ===
শিশুরা '''আংশিক বর্ণমালা পর্যায়''' বা পারশিয়াল আলফাবেটিক স্টেজ-এ প্রবেশ করে যখন তারা অক্ষরের নাম বা ধ্বনি শিখে এবং তা ব্যবহার করে শব্দ পড়তে চেষ্টা করে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এই পর্যায় থেকেই প্রকৃত পঠন শুরু হয়। শিশুরা আর কেবল ছবি দেখে শব্দ বলছে না, তারা আসলেই ছাপা লেখাটি পড়তে চেষ্টা করছে। তারা এখন অক্ষর চেনে এবং সেই জ্ঞান ব্যবহার করে শব্দ পড়ছে। এই পর্যায়ে শিশুরা সাধারণত শব্দের প্রথম এবং শেষ অক্ষরের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, যেমন, “spoon” পড়তে গিয়ে তারা s এবং n এর উপর জোর দেয় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। যখন তাদেরকে কোনো শব্দ লিখতে বলা হয়, তারা উচ্চারণে যেসব ধ্বনি শুনতে পায় সেগুলোর উপর ভিত্তি করে অক্ষর লেখে। যেমন, তারা “giraffe” শব্দটি “jrf” হিসেবে লিখতে পারে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। এই পর্যায়ে তাদের পঠন আংশিক থাকে কারণ তারা শব্দের সব অক্ষর বা ধ্বনি ব্যবহার করছে না, কেবল কিছু অংশ ব্যবহার করছে <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
প্রাক-বর্ণমালা ও আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে ১৯৮৫ সালে এহরি এবং উইল্স একটি গবেষণা করেন। তারা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের দুটি ধাপে ভাগ করে পরীক্ষামূলক পাঠদানে নিয়োজিত করেন। একটি ধাপে ছিল ভিজ্যুয়াল বানান, যেখানে শব্দের ধ্বনির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, যেমন “mask” বানান লেখা হয়েছে “uHo”; অন্যটি ছিল ধ্বনিগত বানান যেখানে শব্দের কিছু ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব করে অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন “mask” বানান লেখা হয়েছে “MSK”।
ফলাফল ছিল, প্রাক বর্ণমালা পর্যায়ের পাঠকেরা ভিজ্যুয়াল বানান সহজে শিখেছে, আর পারশিয়াল আলফাবেটিক পাঠকেরা ধ্বনিগত বানান ভালোভাবে মনে রাখতে পেরেছে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এহরি ব্যাখ্যা করেন, এটি নিশ্চিত করে যে প্রাক বর্ণমালা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ভিজ্যুয়াল সংকেতের উপর নির্ভর করে কারণ তাদের অক্ষর জ্ঞান নেই। আংশিক বর্ণমালা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উল্টোভাবে কাজ করে এবং শব্দ মনে রাখতে অক্ষর-ধ্বনির সংকেত ব্যবহার করতে পারে।
[[চিত্র:Screen_Shot_2015-12-03_at_5.41.40_PM.png|কিছুই_না|ফ্রেম|উইলস এবং এহরির ১৯৮৫ সালের পঠন পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল (গ্রাফটি প্রতিটি পর্যায়ে পঠিত শব্দের সংখ্যা দেখাচ্ছে)-গ্রাফটি পুনর্নির্মিত করা হয়েছে]]
=== পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায় ===
যখন শিশুরা বানানে প্রতিটি অক্ষরের সাথে উচ্চারণের ধ্বনির একটি পূর্ণাঙ্গ সংযোগ গড়ে তোলে এবং সেই অনুযায়ী দৃষ্টিগত শব্দ শিখতে সক্ষম হয়, তখন তারা '''পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে''' প্রবেশ করে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। আংশিক বর্ণগত ধাপে শিশুরা শুধু সেই অক্ষরগুলোই লেখে, যেগুলোর ধ্বনি তারা স্পষ্টভাবে শুনতে পায়। কিন্তু পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে তারা অপরিচিত শব্দও পড়ে ফেলতে পারে, সমস্ত ধ্বনিকে উপস্থাপন করে এমন বানান তৈরি করতে পারে এবং শব্দের বানান অনেক ভালোভাবে মনে রাখতে সক্ষম হয় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>।
এই পড়ার ধাপগুলোর পার্থক্য বোঝাতে ১৯৮৭ সালে Ehri এবং Wilce একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ এবং আংশিক ধাপের পাঠকদের মধ্যে দৃষ্টিগত শব্দ শেখার পার্থক্য দেখানো <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। গবেষণার জন্য এমন কিছু কেজি শ্রেণির শিশু নির্বাচন করা হয় যারা ইতোমধ্যে আংশিক বর্ণগত ধাপে ছিল। এরপর তাদের এলোমেলোভাবে একটি নিয়ন্ত্রণ দল এবং একটি ট্রিটমেন্ট দলে ভাগ করা হয়। ট্রিটমেন্ট দলের শিশুদের অনুরূপ বানানবিশিষ্ট শব্দ পড়ার অনুশীলনের মাধ্যমে পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায় অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে তারা শব্দগুলো সঠিকভাবে পড়তে হলে প্রতিটি গ্রাফিম-ধ্বনি সম্পর্ক বুঝে নিতে বাধ্য হয়। অপরদিকে, নিয়ন্ত্রণ দলকে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি এবং তারা আংশিক ধাপেই থেকে যায়। এরপর উভয় দলকেই পনেরোটি শব্দ শেখার অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়। সবগুলো শব্দের বানান ছিল একরকম, যাতে শিশুরা আংশিক ইঙ্গিতের ওপর নির্ভর করে শব্দ শেখা কঠিন হয়ে পড়ে। তালিকায় যেমন ছিল: spin, stab, stamp, stand। প্রশিক্ষণের আগে এই শব্দগুলোর মধ্যে কেউই দুইটির বেশি পড়তে পারত না।
গবেষণার ফলাফল দেখায় যে, দুই দলের শিশুদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়। পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ের শিশুরা মাত্র তিনটি অনুশীলনেই বেশিরভাগ শব্দ শিখে ফেলে, কিন্তু আংশিক ধাপের শিশুরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাতেই পারেনি <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। গবেষণায় বলা হয়, আংশিক ধাপের পাঠকদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ ছিল একই রকম বানানবিশিষ্ট শব্দগুলোকে গুলিয়ে ফেলা। এটি প্রমাণ করে, যখন পাঠকরা পূর্ণ সংযোগ গড়তে পারে তখন তারা দৃষ্টিগত শব্দগুলো স্মৃতিতে রাখতে অনেক সুবিধা পায় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>।
[[চিত্র:Screen_Shot_2015-12-03_at_5.41.22_PM.png|কিছুই_না|ফ্রেম|Ehri এবং Wilce-এর ১৯৮৭ সালের পাঠ ধাপ বিষয়ক পরীক্ষার ফলাফল (গ্রাফটি সঠিক উত্তরপ্রাপ্ত শব্দের শতকরা হার এবং চেষ্টার সংখ্যা দেখাচ্ছে)-গ্রাফটি পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে]]
এটি লক্ষ্য করার বিষয় যে, পড়ার ক্ষেত্রে মাত্র একটি ধাপ পেছনে থাকাই কত বড় পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। শুধু পূর্ণ বর্ণমালা পর্যায়ে থাকলেই কেজি শ্রেণির শিশুরা একই বানানবিশিষ্ট শব্দ মাত্র তিনটি চেষ্টাতেই পড়ে ফেলতে পেরেছে, অথচ আংশিক ধাপের শিশুরা অনেকটা হিমশিম খেয়েছে। এটি প্রতিটি পড়ার ধাপের গুরুত্ব এবং শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়। শিক্ষকরা নিশ্চিত হতে হবে যে, পূর্ববর্তী ধাপে শিক্ষার্থীরা যা শেখা প্রয়োজন সব কিছুই শিখেছে, যাতে তারা পরবর্তী ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করতে পারে।
=== একীভূত পর্যায় ===
যখন শিশুরা তাদের স্মৃতিতে আরও বেশি দৃষ্টিগত শব্দ ধরে রাখতে পারে এবং অক্ষরের প্যাটার্ন সম্পর্কে পরিচিত হয়ে ওঠে, তখন তারা পড়ার এই চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছায় <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। এই পর্যায়ে শিশুরা বুঝতে শেখে কোন কোন অক্ষর প্যাটার্ন বিভিন্ন শব্দে বারবার দেখা যায় এবং গ্রাফিম-ধ্বনি সংযোগগুলো বৃহত্তর একক হিসেবে একত্রিত হতে শুরু করে <ref>Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188, doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4</ref>। উদাহরণস্বরূপ, "printing" শব্দটি এখন সহজেই শেখা যায় কারণ এটি স্মৃতিতে রাখতে কম সংযোগ প্রয়োজন হয় এবং এই শব্দটি আর আলাদা আলাদা অক্ষর-ধ্বনি সংযোগ হিসেবে নয়। বরং দুটি সিলেবল আকারে প্রক্রিয়াজাত হয়। <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>
=== শিক্ষণ পদ্ধতির প্রভাব ===
ইংরেজি ভাষা নিখুঁত নয়, এবং এক অক্ষর একটি ধ্বনি নির্দেশ করতে পারে, আবার দুই বা তার বেশি অক্ষর একটিই ধ্বনি নির্দেশ করতে পারে, এক বা একাধিক শব্দে নীরব স্বরবর্ণ একটি মধ্যবর্তী স্বরবর্ণের ধ্বনি পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি অনেক শব্দে কিছু অক্ষরের কোনো ধ্বনি থাকে না <ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>। শিক্ষকরা যখন শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করেন, তখন তাদের উচিত অক্ষর এবং ধ্বনির মধ্যকার আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং শিশুদের সাক্ষরতা বিকাশের ধাপগুলো জানা। তিনটি বর্ণগত ধাপজুড়ে শিক্ষকদের উচিত ডিকোডিং ও শব্দভাণ্ডার শেখানোয় গুরুত্ব দেওয়া, কারণ এগুলো সফল পাঠের জন্য অপরিহার্য <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। শিশুদের অবশ্যই শব্দ ডিকোড করতে জানতে হবে, অর্থাৎ অক্ষর ও ধ্বনির সম্পর্ক বুঝে লেখা শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে জানতে হবে। এই দক্ষতা শেখাতে গেম ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুদের চোখের সামনে অক্ষর রেখে সেই অক্ষরের ধ্বনি শুনিয়ে দিলে তারা সহজে বুঝতে পারে। যেহেতু প্রাথমিক পাঠকরা ভিজ্যুয়াল লার্নার, তাই ছবি তাদের শেখাতে সহায়ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক বোর্ডে "bat" শব্দের ছবি ঝুলিয়ে শব্দটি লিখে প্রথম অক্ষরটি ফাঁকা রাখতে পারেন। এরপর শিক্ষার্থীদের "bat" শব্দটি বারবার উচ্চারণ করে প্রথম অক্ষর কী হতে পারে তা বলতে বলেন। শিশুরা যেন সঠিকভাবে শব্দগুলো ডিকোড করতে এবং সাবলীলভাবে পড়তে পারে, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তাদের নির্দিষ্ট প্রসঙ্গভিত্তিক শব্দগুলোর অর্থও বুঝতে পারা জরুরি <ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>। যখন শিশুরা কোনো শব্দ পড়ে এবং এর অর্থ বুঝতে পারে, তখনই তারা একটি পাঠ্যবস্তুর পূর্ণাঙ্গ অর্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হয় <ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>। শিক্ষকরা শিশুদেরকে শব্দ শেখাতে উৎসাহিত করতে পারেন যেমন: সম্পর্কিত শব্দ একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা, শব্দের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরা, অভিধান বা থিসরাস ব্যবহার করে শব্দের অর্থ বিস্তৃত করা, এবং শিক্ষার্থীদের নিজে শব্দ নির্বাচন করে কেন তা বেছে নিয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা।<ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>
শ্রেণিকক্ষে, একজন শিক্ষক সরাসরি শিক্ষার্থীদের কোনো একটি নির্দিষ্ট বর্ণ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা শব্দটি শেখাতে পারেন। যখন শিক্ষার্থীরা কিছু বর্ণ-ধ্বনি সম্পর্ক শিখে ফেলে, তখন তারা ধ্বনিগুলো একত্রে মিলিয়ে পড়া শিখতে শুরু করে<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। স্পষ্ট ফনিক্স পদ্ধতিতে শব্দ সনাক্ত করার প্রধান কৌশলটি শিক্ষার্থীদের বর্ণ-ধ্বনি সম্পর্কের জ্ঞান ভিত্তিক হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। যখন কোনো শিক্ষার্থী একটি অপরিচিত শব্দের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের শব্দটি ধ্বনি করে পড়ার জন্য উৎসাহিত করা হয় এবং শব্দটি সনাক্ত করার আগে তাদের শব্দের প্রসঙ্গে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় না<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। এই ক্ষেত্রে, পাঠ্য বোঝার জন্য প্রসঙ্গ কেবল একটি মেটাকগনিটিভ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। '''অপ্রকাশ্য ফনিক্স পদ্ধতিতে''' বর্ণের ধ্বনিগুলো পৃথকভাবে নয়, বরং সম্পূর্ণ শব্দের প্রসঙ্গের মধ্যে শনাক্ত করা হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। শিক্ষাদানের সময়, শিক্ষক বোর্ডে “hand” শব্দটি লিখে "h" বর্ণটিকে নিচে দাগ দিতে পারেন। এরপর শিক্ষক শিক্ষার্থীদের “hand” উচ্চারণ করতে বলেন যেন তারা বুঝতে পারে যে “h” থেকে /h/ ধ্বনি উৎপন্ন হয়<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। এছাড়াও, অপরিচিত শব্দ পড়ার ক্ষেত্রে শব্দের প্রসঙ্গ এবং চিত্র সূত্রগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্ণ-ধ্বনি সম্পর্ক শেখাতে প্রসঙ্গ ব্যবহারের একটি সাধারণ সমস্যা হলো, কিছু শিক্ষার্থী এই সম্পর্কগুলো শিখতে ব্যর্থ হয় কারণ তারা শব্দকে পৃথক ধ্বনিতে ভাগ করতে পারে না, যেহেতু তারা সম্পূর্ণ শব্দ থেকে ধ্বনি অনুমান করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা রাখে না<ref>Stein, M., Johnson, B., & Gutlohn, L., (1999). Analyzing Beginning Reading Programs: The Relationship Between Decoding Instruction and Text. Remedial and Special Education, 20(5), 275-287. doi:10.1177/074193259902000503</ref>। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, অধিকাংশ দুর্বল পাঠক অক্ষরভিত্তিক কোডিং এবং ধ্বনিমূলক সচেতনতায় দুর্বল<ref>Vellutino, F.R. (1991). Introduction to three studies on reading acquisition: Convergent findings on theoretical foundations of code-oriented versus whole-language approaches to reading instruction. Journal of Educational Psychology, 83(4). 437-443. doi:10.1037/0022-0663.83.4.437</ref>। পূর্বে উল্লেখিত মতো, আদর্শ পাঠ শিক্ষা পদ্ধতিতে কোড-ভিত্তিক ও অর্থ-ভিত্তিক পদ্ধতির সমন্বয় থাকা উচিত। সেই অনুযায়ী, ফনিক্স বা নির্দেশনামূলক পদ্ধতির অতিরিক্ত গুরুত্বারোপের বিরোধিতায় লোকসংখ্যা বেশি, কিন্তু ফনিক্স শিক্ষার বিরোধিতায় নয়<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
ম্যাডঅক্স এবং ফেং (২০১৩) কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণায়, সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক পাঠ শিক্ষার তুলনায় ফনিক্স শিক্ষার কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছিল যাতে শিক্ষার্থীদের পড়ার গতি এবং বানান নির্ভুলতা উন্নত হয় কিনা তা বোঝা যায়। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে স্পষ্ট ফনিক্স শিক্ষা শিক্ষার্থীদের পড়ার গতি এবং বানান নির্ভুলতায় বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং যারা স্পষ্ট ফনিক্স শিক্ষা পাবে তারা সম্পূর্ণ ভাষা শিক্ষাপদ্ধতিতে থাকা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করবে। একটি শ্রেণির ২২ জন প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে এলোমেলোভাবে পরীক্ষামূলক দল ও নিয়ন্ত্রণ দলে ভাগ করা হয়। পরীক্ষামূলক দল ফনিক্স দল হিসেবে নির্ধারিত হয় এবং তারা স্পষ্ট ফনিক্স শিক্ষা পায়, অপরদিকে নিয়ন্ত্রণ দল সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক দল হিসেবে নির্ধারিত হয় এবং তারা ফনিক্স শিক্ষা পায় না। পরীক্ষামূলক দলে শিক্ষক ফনিক্স প্যাটার্ন শেখান এবং শিক্ষার্থীরা সেই প্যাটার্ন নিয়ে বিভাজন, কোডিং, একত্রিতকরণ এবং চর্চা করে, তবে তারা কোনো গল্প পড়েনি। নিয়ন্ত্রণ দলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের র্যাজ-কিডস রিডিং প্রোগ্রামের ১৪টি গল্প পড়ান; গল্পগুলোতে ফনিক্স দল দ্বারা শেখানো একই প্যাটার্নের শব্দ অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং শিক্ষার্থীরা চিত্র পর্যবেক্ষণ, গল্প অনুমান এবং শব্দার্থ বোঝায় মনোযোগ দেয়। উভয় দল তাদের শিক্ষকের (যিনি একই সাথে গবেষকের একজন ছিলেন) সঙ্গে সপ্তাহে পাঁচ দিন, দিনে ২০ মিনিট করে চার সপ্তাহ প্রশিক্ষণ পায়। প্রশিক্ষণের আগে শিক্ষার্থীদের প্রাক-পরীক্ষা স্কোর এইমসওয়েব পাঠ্যক্রম ভিত্তিক পরিমাপ (আরসিবিএম) এবং এইমসওয়েব বানান পাঠ্যক্রম ভিত্তিক পরিমাপ (এসিবিএম)এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। চার সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পর, একই পরীক্ষা আবার শিক্ষার্থীদের উপর প্রয়োগ করা হয় যাতে পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর বের করে পড়ার গতি ও বানান নির্ভুলতার পরিবর্তন পরিমাপ করা যায়। ফলাফলে দেখা যায় যে উভয় দলের মধ্যে পড়ার গতি বা বানান নির্ভুলতায় কোনো পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তবে, গড়ে ফনিক্স দলের পড়ার স্কোর বেশি ছিল এবং তারা তাদের পড়ার গতি ৮.০০ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়ায়, যেখানে সম্পূর্ণ ভাষা দল পড়ার গতি ৪.০৯ পয়েন্ট বাড়ায়। বানান নির্ভুলতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ফনিক্স দলের স্কোর ১.০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়, আর সম্পূর্ণ ভাষা দলের স্কোর -০.২৭ পয়েন্ট কমে যায়। সরাসরি তুলনায় দেখা যায়, ফনিক্স দল পড়ার গতি ও বানান নির্ভুলতা—উভয় ক্ষেত্রেই বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে<ref>Maddox, K., & Feng, J. (2013). Whole Language Instruction vs. Phonics Instruction: Effects on Reading Fluency and Spelling Accuracy of First Grade Students. Retrieved from ERIC database. (ED545621)</ref>
[[চিত্র:Reading_Fluency_Maddox_&_Feng.png|কিছুই_না|ফ্রেম|পঠন সাবলীলতা এর জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]
[[চিত্র:Spelling_Accuracy_Maddox_&_Feng.png|কিছুই_না|ফ্রেম|বানানের নির্ভুলতা এর জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]
=== '''ধ্বনিমূলক সচেতনতা''' ===
ধ্বনিমূলক সচেতনতা কীভাবে পড়া শেখার উপর প্রভাব ফেলে? '''ধ্বনিমূলক সচেতনতা''' বলতে কথ্য শব্দের ধ্বনিগুলোর উপর মনোনিবেশ এবং সেগুলো পরিচালনার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। '''ধ্বনি''' হলো কথ্য ভাষার ক্ষুদ্রতম একক, যেগুলো মিলিত হয়ে শব্দাংশ এবং শব্দ গঠন করে<ref>Ehri, L. C., Nunes, S. R., Willows, D. M., Schuster, B. V., Yaghoub-Zadeh, Z., & Shanahan, T.. (2001). Phonemic Awareness Instruction Helps Children Learn to Read: Evidence from the National Reading Panel's Meta-Analysis. Reading Research Quarterly, 36(3), 250–287. Retrieved from http://www.jstor.org/stable/748111</ref>। অতএব, ধ্বনিমূলক সচেতনতা একটি কোড-ভিত্তিক পদ্ধতি। গবেষণায় বলা হয়েছে যে শব্দগুলো স্মৃতি থেকে চাক্ষুষভাবে পড়তে পারার জন্য ধ্বনি বিভাজনের দক্ষতা প্রয়োজন এবং ধ্বনিমূলক সচেতনতা শিশুদেরকে শব্দের বানান উদ্ভাবন করতে বা বানান স্মৃতি থেকে উদ্ধার করতে সহায়তা করে<ref>Ehri, L. C., Nunes, S. R., Willows, D. M., Schuster, B. V., Yaghoub-Zadeh, Z., & Shanahan, T.. (2001). Phonemic Awareness Instruction Helps Children Learn to Read: Evidence from the National Reading Panel's Meta-Analysis. Reading Research Quarterly, 36(3), 250–287. Retrieved from http://www.jstor.org/stable/748111</ref>।
ক্যাসেল, রিয়াচ এবং নিকলসন (১৯৯৪) এর একটি গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, ধ্বনিমূলক সচেতনতা প্রশিক্ষণ শিশুকে পড়া ও বানানে একটি ভালো শুরু এনে দিতে পারে কিনা, এমনকি যদি তারা সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক প্রোগ্রামে শিক্ষা পাচ্ছে তবুও। এই গবেষণা নিউজিল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের স্কুলজীবনের শুরুর কয়েক মাসে পরিচালিত হয়েছিল, যখন তারা পড়া ও লেখা শেখার প্রাথমিক ধাপে ছিল। তিনটি ভিন্ন স্কুলের ৫ বছর বয়সী ত্রিশজন শিশুকে একটি পরীক্ষামূলক দল ও একটি নিয়ন্ত্রণ দলে ভাগ করে সামঞ্জস্য করা হয়। পরীক্ষামূলক দল সপ্তাহে দুইবার ২০ মিনিট করে মোট ১০ সপ্তাহ প্রশিক্ষণ পায়, যার মোট সময় ছিল ৬.৭ ঘণ্টা। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ছিল ধ্বনিমূলক সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে তৈরি, যার মধ্যে ছিল ধ্বনি বিভাজন, ধ্বনি প্রতিস্থাপন, ধ্বনি মুছে ফেলা এবং ছন্দ। নিয়ন্ত্রণ দলও একই সময়ের শিক্ষা পায়, তবে তারা সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক প্রোগ্রামে প্রক্রিয়াভিত্তিক লেখালিখি কার্যক্রমে অংশ নেয়, যেখানে শিশুরা নিজেরা গল্প লেখে এবং শব্দের বানান নিজেরাই উদ্ভাবন করে। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের উপর Roper-এর ধ্বনিমূলক সচেতনতা পরিমাপক বানান পরীক্ষার বিস্তৃত পরিসরের অর্জন একটি প্রায়োগিক বানান পরীক্ষা এবং একটি উচ্চারণ পরীক্ষা চালানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে একই পরীক্ষা আবার নেওয়া হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, উভয় দলেই ধ্বনিমূলক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে পরীক্ষামূলক দল ও নিয়ন্ত্রণ দলের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল, যা প্রমাণ করে যে ব্যবহৃত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ধ্বনিমূলক সচেতনতা দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর ছিল। দুটি বানান পরীক্ষায় (বানান পরীক্ষার বিস্তৃত পরিসরের অর্জন এবং প্রায়োগিক বানান পরীক্ষা) দলদ্বয়ের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও দেখা গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে ধ্বনিমূলক সচেতনতা দক্ষতার উন্নয়ন বানান দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। উপসংহারে, গবেষণার ফলাফল নির্দেশ করে যে বর্ণ এবং তার ধ্বনির মধ্যে সংযোগ তৈরি করার সক্ষমতা বানান দক্ষতার উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত এবং ধ্বনিমূলক সচেতনতা বানান শিক্ষায় সহায়তা করে<ref>Castle, J.M., Riach, J., & Nicholson, T. (1994). Getting Off to a Better Start in Reading and Spelling: The Effects of Phonemic Awareness Instruction Within a Whole Language Program. Journal of Educational Psychology, 86(3), 350-359. doi:10.1037/0022-0663.86.3.350</ref>।
[[চিত্র:WRAT_Spelling_Test_Castle_Riach_&_Nicholson.png|কিছুই_না|ফ্রেম|ডব্লিউআরএটি বানান পরীক্ষা এর জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]
[[চিত্র:Experimental_Spelling_Test_Castle_Riach_&_Nicholson.png|কিছুই_না|ফ্রেম|পরীক্ষামূলক বানান পরীক্ষার জন্য পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রণ দলের গড় প্রাক-পরীক্ষা ও পোস্ট-পরীক্ষার স্কোর।]]এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ধ্বনিমূলক সচেতনতা নির্দেশনার প্রভাব প্রাক-প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন স্তরে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, এবং প্রথম শ্রেণির পর এই প্রভাব কমে যেতে পারে<ref>Ehri, L. C., Nunes, S. R., Willows, D. M., Schuster, B. V., Yaghoub-Zadeh, Z., & Shanahan, T.. (2001). Phonemic Awareness Instruction Helps Children Learn to Read: Evidence from the National Reading Panel's Meta-Analysis. Reading Research Quarterly, 36(3), 250–287. Retrieved from http://www.jstor.org/stable/748111</ref>। শিক্ষার্থীরা প্রথম শ্রেণি অতিক্রম করার পর, ধ্বনিমূলক সচেতনতার চেয়ে বানানের প্যাটার্ন শেখার গুরুত্ব বেশি হয়ে ওঠে<ref>Ehri, L. C., Nunes, S. R., Willows, D. M., Schuster, B. V., Yaghoub-Zadeh, Z., & Shanahan, T.. (2001). Phonemic Awareness Instruction Helps Children Learn to Read: Evidence from the National Reading Panel's Meta-Analysis. Reading Research Quarterly, 36(3), 250–287. Retrieved from http://www.jstor.org/stable/748111</ref>। ধ্বনিমূলক সচেতনতার স্পষ্ট নির্দেশনা বড়দের জন্য ততটা কার্যকর নাও হতে পারে, তবে যারা স্বাভাবিক পাঠ দক্ষতায় অগ্রগতি করতে পারেনি এবং যাদের পাঠে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তাদের জন্য এটি কার্যকর হতে পারে; এইভাবে, এই ধরনের শিক্ষার্থীদের পাঠ ও বানানে অসুবিধা দূর করতে ধ্বনিমূলক সচেতনতা নির্দেশনা সহায়ক হতে পারে<ref>Ehri, L. C., Nunes, S. R., Willows, D. M., Schuster, B. V., Yaghoub-Zadeh, Z., & Shanahan, T.. (2001). Phonemic Awareness Instruction Helps Children Learn to Read: Evidence from the National Reading Panel's Meta-Analysis. Reading Research Quarterly, 36(3), 250–287. Retrieved from http://www.jstor.org/stable/748111</ref>।
=== সমগ্র ভাষা পদ্ধতি ===
[[চিত্র:Zone_of_proximal_development.svg|থাম্ব|'''সন্নিহিত উন্নয়ন ক্ষেত্র''' ]]
“সমগ্র ভাষা” পদ্ধতিতে সাক্ষরতা অর্জনকে একটি উপরের দিক থেকে নিচের দিকে প্রবাহমান প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়<ref>McCaslin, M. M.. (1989). Whole Language: Theory, Instruction, and Future Implementation. The Elementary School Journal, 90(2), 223–229. Retrieved from http://www.jstor.org.proxy.lib.sfu.ca/stable/1002031</ref>। এই পদ্ধতিটি একটি দর্শন যা জোর দেয় যে শব্দ ও বাক্য পড়া — শব্দ গঠনের জন্য ব্যবহৃত ধ্বনি ও ধ্বনিমূলক উপাদান শেখার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অক্ষর ও ধ্বনির সম্পর্ক আলাদাভাবে শেখানো হয় না, তাই এটি অর্থ-কেন্দ্রিক পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষার্থীরা ভাষার পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে কাজ করে, প্রতিটি অংশ আলাদাভাবে অনুশীলন না করেই<ref>Stone, T. J. (1993). Whole language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। পড়া শেখা স্বাভাবিকভাবে হওয়া উচিত বলে ধারণা করা হয়, যেমন শিশু যখন প্রথম কথা বলতে শেখে— খুব সামান্য সরাসরি নির্দেশনা ও অনেক উৎসাহের মাধ্যমে<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। যখন শিক্ষার্থীরা পড়ার পূর্ণতা অনুভব করে, তখনই তারা শব্দের উপাদানগুলো শেখে<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। এই পদ্ধতি পুরোপুরি প্রাসঙ্গিকতার ওপর নির্ভর করে, এবং শব্দগুলো প্রসঙ্গ ছাড়াই উপস্থাপন করা হয় না<ref>Vellutino, F.R. (1991). Introduction to three studies on reading acquisition: Convergent findings on theoretical foundations of code-oriented versus whole-language approaches to reading instruction. Journal of Educational Psychology, 83(4). 437-443. doi:10.1037/0022-0663.83.4.437</ref>। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য থাকে পাঠ্যবস্তুর অর্থ অনুধাবন করা, যার জন্য তারা তাদের পূর্বজ্ঞান, চিত্রাবলি, ধ্বনিগত কৌশল ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। “সমগ্র ভাষা” পদ্ধতির শিক্ষকরা প্রায়শই “বাস্তব বই” ব্যবহার করেন, কারণ এগুলো পাঠ দক্ষতা ও অর্থ তৈরিতে সহায়ক<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। তদুপরি, এই পদ্ধতিতে জোর দেওয়া হয় যে শেখার প্রক্রিয়া সবসময় মসৃণ বা নিশ্চিত নয়, এবং শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার লক্ষ্যে দায়িত্ব ও মালিকানা নিতে হবে<ref>McCaslin, M. M.. (1989). Whole Language: Theory, Instruction, and Future Implementation. The Elementary School Journal, 90(2), 223–229. Retrieved from http://www.jstor.org.proxy.lib.sfu.ca/stable/1002031</ref>।
এই পদ্ধতি প্রায়ই ভায়গটস্কির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়: যেখানে শিক্ষকরা মধ্যস্থতাকারী, যারা শিক্ষার্থীদের পারিপার্শ্বিক বিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করেন<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। ভায়গটস্কির মতে, শেখা একটি সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, এবং শিশুদের অর্থ গঠন ও বিনিময়ের জন্য একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। সেই অনুযায়ী, “সমগ্র ভাষা” পদ্ধতি সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিকশিত হয়, কারণ এই ধরনের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা আরও দক্ষভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং একসঙ্গে কাজ করে একে অপরের কাছ থেকে শেখে<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। একসঙ্গে কাজ করার সময় তাদের আলোচনাগুলো কেবল সমস্যার সমাধানেই নয়, নতুন অর্থ গঠন ও তথ্য ভিত্তিক জ্ঞান সঞ্চয়েও সহায়তা করে। ভায়গটস্কি আরও বলেছিলেন যে সাক্ষরতার অভিজ্ঞতাগুলো এমনভাবে গঠিত হওয়া উচিত যেন তা প্রয়োজনীয় হয়— অর্থাৎ পড়া ও লেখার শেখার পেছনে একটি বাস্তব উদ্দেশ্য থাকতে হবে<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জীবনানুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত উদাহরণ ব্যবহার করলে পড়ার আগ্রহ বাড়তে পারে<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>।
আরও একটি ভায়গটস্কিয় মডেল হলো শিক্ষার্থীদের '''সন্নিহিত উন্নয়ন ক্ষেত্র''' (zone of proximal development) এর মধ্যে কাজ করা, যা হলো এমন একটি শেখার ক্ষেত্র যেখানে শিক্ষার্থী একা কিছুটা কাজ করতে পারে এবং সহায়তায় আরও কিছু শিখতে পারে। পড়ার সময় শিক্ষার্থীদের ভাষা বা ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করা তাদের বিদ্যমান দক্ষতাকে বিকশিত করতে পারে<ref>Stone, T. J. (1993). Whole-language reading processes from a Vygotskian perspective. Child & Youth Care Forum, 22(5), 361-373. doi:10.1007/BF00760945</ref>। তাদের সঙ্গে পাঠ্যবস্তু নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর ও অর্থ গঠনমূলক আলোচনা পাঠ অনুধাবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন প্রকৃত পাঠকে “সমগ্র ভাষা” পদ্ধতির মূল উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তখন এই পদ্ধতিটি পাঠ অনুধাবনে সহায়ক<ref>Krashen, S.D. (2002). Defending whole language: the limits of phonics instruction and the efficacy of whole language instruction. Reading Improvement, 39(1), 32-42.</ref>। সর্বোপরি, পাঠ অনুধাবনই তো পড়া শেখানোর একটি প্রধান উদ্দেশ্য।
ম্যানিং এবং কামির (২০০০) একটি গবেষণায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের পড়া ও লেখা সম্পর্কিত কাজের উপর ভিত্তি করে “সমগ্র ভাষা” বনাম পৃথক ফনিক্স নির্দেশনার কার্যকারিতা তুলনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিদ্যালয়ের দুটি কিন্ডারগার্টেন শ্রেণির ৩৮ জন শিক্ষার্থীকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একটি শ্রেণির শিক্ষক নিজেকে “সমগ্র ভাষা” শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেন, অন্য শ্রেণির শিক্ষক ছিলেন “ফনিক্স” শিক্ষক। ফনিক্স শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ফনিক্স ওয়ার্কশীট এবং মৌখিক শব্দ অনুশীলনে অংশগ্রহণ করত, এবং দৃষ্টিশব্দ ও অক্ষর-ধ্বনি সম্পর্ক অনুশীলনে ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করত। শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ফনিক্স নিয়মের পোস্টার লাগানো ছিল, যাতে দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত স্বরের চিহ্ন যুক্ত ছিল। অন্যদিকে “সমগ্র ভাষা” শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভাগাভাগি করে পড়া ও লেখা করত, যেমন স্বতন্ত্র জার্নাল লেখা এবং দলগত রচনামূলক কাজ। শিক্ষক প্রতিদিন এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীদের উচ্চস্বরে বই পড়ে শোনাতেন, যা দিনব্যাপী ছড়িয়ে থাকত। শিক্ষাবর্ষজুড়ে প্রতিটি শিশুকে পাঁচবার করে আলাদাভাবে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যেখানে তাদের আটটি শব্দ লিখতে এবং দুই থেকে চারটি বাক্য পড়তে বলা হয়। পরে গবেষকরা তাদের লেখা ও বাক্য থেকে শব্দ শনাক্ত করার দক্ষতা অনুযায়ী স্কোর দেন। ফলাফলে দেখা যায় যে যদিও “সমগ্র ভাষা” শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতে পিছিয়ে ছিল, বছরের শেষে তারা অনেক এগিয়ে ছিল, এবং ফনিক্স শ্রেণির তুলনায় উন্নত স্তরে পৌঁছায়। ফনিক্স শ্রেণিতে পিছিয়ে পড়ার হার বেশি দেখা যায়, এবং তারা সামগ্রিকভাবে কম উন্নতি করে এবং বছরের শেষে আরও বেশি বিভ্রান্তিতে পড়ে<ref>Manning, M., & Kamii, C. (2000). Whole Language vs. Isolated Phonics Instruction: A Longitudinal Study in Kindergarten With Reading and Writing Tasks, Journal of Research in Childhood Education, 15(1), 53-65. doi: 10.1080/02568540009594775</ref>।
=== '''স্কিমা তত্ত্ব''' ===
স্কিমা থিওরি ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে পাঠকেরা তাদের পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করে একটি পাঠ্য অনুধাবন করে<ref>Shuying, A. (2013). Schema Theory in Reading. Theory & Practice in Language Studies, 3(1), 130-134. doi:10.4304/tpls.3.1.130-134</ref>। '''স্কিমা''' (বহুবচনে: ''স্কিমাটা'') শব্দটি প্রথম মনোবিজ্ঞানে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি মানসিক কাঠামো বোঝাতে যা একজন ব্যক্তির জ্ঞান সংগঠিত করে, এবং পরে এটি পাঠ অনুধাবনের প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান ব্যবহারের ভূমিকা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়<ref>Shuying, A. (2013). Schema Theory in Reading. Theory & Practice in Language Studies, 3(1), 130-134. doi:10.4304/tpls.3.1.130-134</ref>। স্কিমা থিওরি অনুসারে, মানুষ তাদের সমস্ত জ্ঞান স্কিমার মাধ্যমে সংগঠিত করে<ref>Tracey, D.H., & Morrow, L.M. (2012). Lenses on Reading, Second Edition : An Introduction to Theories and Models. Guilford Press.</ref>। প্রত্যেকের স্কিমা আলাদা হয়, এবং কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কারো স্কিমা যত বেশি বিস্তৃত, সেই বিষয়ে নতুন তথ্য শেখা তত সহজ হয়<ref>Tracey, D.H., & Morrow, L.M. (2012). Lenses on Reading, Second Edition : An Introduction to Theories and Models. Guilford Press.</ref>। মানুষের বিদ্যমান জ্ঞান কাঠামো নমনীয় এবং সবসময় পরিবর্তনশীল<ref>Tracey, D.H., & Morrow, L.M. (2012). Lenses on Reading, Second Edition : An Introduction to Theories and Models. Guilford Press.</ref>; যখন কেউ নতুন কিছু শেখে, তখন তার পুরোনো স্কিমা সেই নতুন তথ্য গ্রহণ করার জন্য মানিয়ে নিতে হয়।
পাঠ অনুধাবনের ক্ষেত্রে, স্কিমা থিওরির মূল ধারণা হলো: লিখিত পাঠ্য নিজে নিজে অর্থ বহন করে না; বরং, পাঠ্য নির্দেশনা দেয় কীভাবে পাঠক তার পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করে অর্থ গঠন করবে<ref>Shuying, A. (2013). Schema Theory in Reading. Theory & Practice in Language Studies, 3(1), 130-134. doi:10.4304/tpls.3.1.130-134</ref>। কেবল বিষয়বস্তুর জন্য নয়, পাঠকরা পাঠ প্রক্রিয়া এবং পাঠ্য কাঠামোর জন্যও স্কিমা ধারণ করে<ref>Tracey, D.H., & Morrow, L.M. (2012). Lenses on Reading, Second Edition : An Introduction to Theories and Models. Guilford Press.</ref>। পাঠ অনুধাবন একটি পারস্পরিক ও আন্তঃক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া, যেখানে পাঠকের পূর্বজ্ঞান এবং পাঠ্য একে অপরকে সম্পূরক করে, কারণ সফল অনুধাবনের জন্য পূর্বজ্ঞানকে পাঠ্যের সাথে যুক্ত করার দক্ষতা প্রয়োজন<ref>Shuying, A. (2013). Schema Theory in Reading. Theory & Practice in Language Studies, 3(1), 130-134. doi:10.4304/tpls.3.1.130-134</ref>। স্কিমা থিওরিতে পাঠ অনুধাবনের সময় দুটি ধরণের প্রক্রিয়া থাকে: '''বটম-আপ প্রসেসিং'''—যেখানে পাঠ্যের নির্দিষ্ট তথ্য স্কিমা সক্রিয় করে; এবং '''টপ-ডাউন প্রসেসিং'''—যেখানে পাঠক সাধারণ জ্ঞান থেকে নির্দিষ্ট তথ্যের দিকে এগিয়ে যায় এবং বিভিন্ন উদ্দীপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কিমা সক্রিয় হয়<ref>Shuying, A. (2013). Schema Theory in Reading. Theory & Practice in Language Studies, 3(1), 130-134. doi:10.4304/tpls.3.1.130-134</ref>। পাঠ্য অনুধাবনের জন্য এই দুটি প্রক্রিয়া একসাথে ও আন্তঃক্রিয়াশীলভাবে কাজ করে।<ref>Shuying, A. (2013). Schema Theory in Reading. Theory & Practice in Language Studies, 3(1), 130-134. doi:10.4304/tpls.3.1.130-134</ref>
[[চিত্র:Top-Down_Bottom-Up_Processing.png|থাম্ব|টপ-ডাউন এবং বটম-আপ প্রসেসিং]]
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে পাঠকরা যখন পাঠ্যের পূর্বরূপ দেখে পূর্বের জ্ঞানকে সক্রিয় করে, তখন তারা পড়া শুরু করার সাথে সাথেই স্কিমাটা ব্যবহার করে এবং পুরানো এবং মধ্যে সংযোগ তৈরির লক্ষ্যে নতুন তথ্যের দিকে মনোনিবেশ করে। পাঠ্যের কাঠামো বা বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিদ্যমান স্কিমা ব্যতীত পড়ার বোধগম্যতা ঘটবে না। প্রাক-বিদ্যমান জ্ঞানের গুরুত্বের কারণে, শিক্ষকরা পড়ার আগে শিক্ষার্থীদের স্কিমা তৈরি এবং সক্রিয় করতে পারেন পাঠ্যের পূর্বাভাসে মস্তিষ্কের ঝড় বা গ্রুপ আলোচনা, বা এমনকি পাঠ্যটি পড়ার জন্য কৌশল এবং দক্ষতা পর্যালোচনা করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি লক্ষ করাও গুরুত্বপূর্ণ যে পার্থক্য এবং শিক্ষার্থীদের স্কিমাটা পড়ার বোধগম্যতার পার্থক্যের সাথে সম্পর্কিত। তবে পাঠ্যের পূর্বরূপ একজন পাঠককে আগাম উপলব্ধি করতে দেয় যে তাদের বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, সেই পড়ার কাজের জন্য শিক্ষার্থীর স্ব-কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন পাঠকরা পাঠের পূর্বে তাদের পূর্বজ্ঞান সক্রিয় করেন, তখন তারা পড়া শুরু করার সাথে সাথেই স্কিমাটা ব্যবহার করেন এবং পরিবর্তে নতুন তথ্যের ওপর মনোযোগ দেন, যাতে পুরনো ও নতুন তথ্যের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলা যায়<ref>Al-Faki, I., & Siddiek, A. G. (2013). The role of background knowledge in enhancing reading comprehension. World Journal of English Language, 3(4), 42-n/a. Retrieved from https://www.proquest.com/docview/1525981385</ref>। যদি পাঠ্যবস্তুর গঠন বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে কোনো স্কিমা না থাকে, তাহলে পাঠ বোঝাপড়া সম্ভব হয় না<ref>Tracey, D.H., & ;Morrow, L.M. (2012). Lenses on Reading, Second Edition : An Introduction to Theories and Models. Guilford Press.</ref>। পূর্ববর্তী জ্ঞানের গুরুত্বের কারণে, শিক্ষকরা পড়ার আগে শিক্ষার্থীদের স্কিমা সক্রিয় করতে ও তার ওপর ভিত্তি করে পড়া শুরু করতে সহায়তা করতে পারেন<ref>Tracey, D.H., & ;Morrow, L.M. (2012). Lenses on Reading, Second Edition : An Introduction to Theories and Models. Guilford Press.</ref>। পাঠ্যপুস্তক পূর্বরূপ দেখা, আইডিয়া সেশন বা দলগত আলোচনার মাধ্যমে, এমনকি পাঠ্যটি পড়ার কৌশল ও দক্ষতা পুনরালোচনা করাও এর অংশ হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, শিক্ষার্থীদের স্কিমার পার্থক্যের ফলে পড়া বোঝার ক্ষেত্রেও পার্থক্য দেখা যায়, তবে পাঠ্যপুস্তক পূর্বরূপ দেখার মাধ্যমে পাঠক আগে থেকেই বুঝতে পারেন যে তাদের বিষয় সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান রয়েছে, যা সেই পড়ার কাজের জন্য শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়<ref>Al-Faki, I., & Siddiek, A. G. (2013). The role of background knowledge in enhancing reading comprehension. World Journal of English Language, 3(4), 42-n/a. Retrieved from https://www.proquest.com/docview/1525981385</ref>।
ইরানি শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণায় দেখা হয়েছে, প্রি-রিডিং কার্যকলাপের মাধ্যমে স্কিমা সক্রিয় করা সংস্কৃতিনির্ভর পাঠ্য বোঝার ওপর কী প্রভাব ফেলে। অংশগ্রহণকারীরা ছিল ইংরেজি সাহিত্য বা ইংরেজি ভাষা শেখানো (TEFL) বিষয়ে অধ্যয়নরত মোট ছিয়াত্তরজন ইংরেজি বিদেশি ভাষা (EFL) শিক্ষার্থী। তারা সবাই ইরানের কেরমানে ইসলামী আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ সেমিস্টারের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। সবাই যেন একই ইংরেজি দক্ষতার স্তরে থাকে, তা নিশ্চিত করতে তাদের অক্সফোর্ড প্লেসমেন্ট টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে বেসিক থেকে আপার-ইন্টারমিডিয়েট স্তরে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এরপর অংশগ্রহণকারীদের দুইটি দলে ভাগ করা হয়: একটি পরীক্ষামূলক দল এবং একটি নিয়ন্ত্রণ দল। গবেষকরা দুটি শূন্য অনুমান পরীক্ষা করেন: প্রথমত, স্কিমা সক্রিয়করণের পর পরীক্ষামূলক দলের প্রি-টেস্ট এবং পোস্ট-টেস্টের গড় নম্বরের মধ্যে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য থাকবে না; এবং দ্বিতীয়ত, প্রি-রিডিং কার্যকলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কিমা সক্রিয় করা হলে পরীক্ষামূলক দলের প্রি-টেস্ট ও পোস্ট-টেস্ট নম্বরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকবে না। প্রক্রিয়ার সময়, উভয় দলকে হ্যালোইনের উৎপত্তি ও প্রথা সম্পর্কে একটি রিডিং কমপ্রিহেনশন টেস্ট দেওয়া হয় প্রি-টেস্ট হিসেবে। বিষয়টি বেছে নেওয়া হয় কারণ এটি একটি সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ছুটির দিন, যা অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের বুঝতে সমস্যা হতে পারে। এরপর, পরীক্ষামূলক দলকে গবেষকের সঙ্গে দুটি স্কিমা সক্রিয়করণ প্রশিক্ষণ সেশন দেওয়া হয় – এই সেশনগুলোতে প্রি-রিডিং কার্যকলাপ, পূর্বরূপ দেখা, শব্দভাণ্ডার শেখানো এবং ছবি দেখা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাতে শিক্ষার্থীরা হ্যালোইনের প্রথার সাথে পরিচিত হতে পারে। এরপর, দলকে হ্যালোইন সম্পর্কে তারা যা জানে তা নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়, যা দলীয় আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রশিক্ষণ সেশন চলাকালে, গবেষক নতুন শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন এবং প্রয়োজনে প্রতিশব্দ ও সংজ্ঞা দেন। এরপর পরীক্ষামূলক দলকে একই রিডিং কমপ্রিহেনশন টেস্ট পোস্ট-টেস্ট হিসেবে দুই সপ্তাহ পরে আবার দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রণ দল কেবল প্রাথমিক প্রি-টেস্টই দেয়, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ বা পোস্ট-টেস্ট হয়নি। ফলাফলে দেখা যায়, দুটি শূন্য অনুমানই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, এবং উভয় দলের প্রি-টেস্ট স্কোর প্রায় সমান ছিল – পরীক্ষামূলক দলের গড় স্কোর ছিল ১৬.৪২ এবং নিয়ন্ত্রণ দলের ১৬.৫৭ – কিন্তু প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষামূলক দলের পোস্ট-টেস্ট গড় স্কোর বেড়ে দাঁড়ায় ১৮.৭০। গবেষকরা প্রি-টেস্ট ও পোস্ট-টেস্ট স্কোরের মধ্যে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্কও খুঁজে পান। উপসংহারে বলা যায়, পরীক্ষামূলক দল বেশি পূর্বজ্ঞান পাওয়ার ফলে তাদের পাঠ বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এবং গবেষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে এই গবেষণার ফলাফল ও প্রভাব অন্যান্য কম সাংস্কৃতিকভাবে নির্ভরশীল বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শিক্ষক দিকনির্দেশনা শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্যকে বিদ্যমান স্কিমার সাথে যুক্ত করতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং স্কিমা সক্রিয়করণ কার্যকলাপে সময় ব্যয় করাও শিক্ষার্থীদের সাফল্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে<ref>Maghsoudi, Najmeh. (2012). The impact of schema activation on reading comprehension of cultural texts among Iranian EFL learners. Canadian Social Science, 8(5), 196-201. doi:10.3968/j.css.1923669720120805.3131</ref>।
[[চিত্র:Pretest_and_Posttest_Results_Maghsoudi.png|কিছুই_না|ফ্রেম|পঠন বোধগম্যতা পরীক্ষার উপর পরীক্ষামূলক এবং নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর গড় প্রাক-পরীক্ষা এবং উত্তর-পরীক্ষার ফলাফলের তুলনা।]]
== পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন ==
যখন শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করে, তখন তারা যে প্রথম দিকের বিষয়গুলো শেখে তার মধ্যে পড়া অন্যতম। আনুষ্ঠানিকভাবে পড়া শেখা শুরু হয় কিন্ডারগার্টেনে এবং এটি আজীবন চলতে থাকে। যখন শিশুরা পড়া শিখছে, তখন তাদের ফিডব্যাক দেওয়া এবং কোথায় আছে তা নির্ধারণের জন্য নিয়মিত মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষার্থীর পড়ার দক্ষতার সাফল্য ও উন্নতি মূল্যায়নের জন্য কিছু সাধারণভাবে ব্যবহৃত সূচক রয়েছে: ধ্বনিগত সচেতনতা, অক্ষর জ্ঞান, এবং মৌখিকভাবে পড়ার সাবলীলতা<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। শিশুদের পড়তে শেখার আগে তাদের শব্দের অক্ষরের ধ্বনিগুলো কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে হবে। ধ্বনিগত সচেতনতা মূলত এটিই মূল্যায়ন করে, শিশুদের বলতে শোনা শব্দের ধ্বনিগত অংশগুলো লক্ষ্য করা, চিন্তা করা এবং পরিচালনা করার ক্ষমতা থাকতে হবে<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। যদি শিশুরা ভাষার ধ্বনিগত গঠন সম্পর্কে সচেতন না হয়, তাহলে তারা শব্দের পৃথক ধ্বনি লক্ষ্য করতে পারবে না এবং অক্ষর-ধ্বনি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না<ref>Walsh, R. (2009). Word games: The importance of defining phonemic awareness for professional discourse. Australian Journal of Language & Literacy, 32(3), 211-225. Retrieved from http://web.a.ebscohost.com.proxy.lib.sfu.ca/ehost/pdfviewer/pdfviewer?sid=e203b503-b43d-4f66-b2e9-2534fa1b2905%40sessionmgr4002&vid=13&hid=4104</ref>। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই অক্ষর-ধ্বনি সংযোগ একটি মৌলিক ডিকোডিং দক্ষতা এবং প্রাথমিক সাক্ষরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ<ref>Walsh, R. (2009). Word games: The importance of defining phonemic awareness for professional discourse. Australian Journal of Language & Literacy, 32(3), 211-225. Retrieved from http://web.a.ebscohost.com.proxy.lib.sfu.ca/ehost/pdfviewer/pdfviewer?sid=e203b503-b43d-4f66-b2e9-2534fa1b2905%40sessionmgr4002&vid=13&hid=4104</ref>। অক্ষর জ্ঞান মূল্যায়ন করা হয় শিশুরা বড় ও ছোট হাতের অক্ষর নাম বলতে পারে কিনা এবং প্রতিটি অক্ষরের ধ্বনি চেনে কিনা তার ভিত্তিতে<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। এটি শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ কেবল তখনই তারা পড়া শুরু করতে পারবে, যখন তারা অক্ষর ও তার ধ্বনিগুলো বুঝবে। পড়ার সময়, শিশুদের শব্দগুলো কীভাবে উচ্চারণ করতে হয়, ডিকোড করতে হয়, এবং সঠিকভাবে বলতে হয় তা জানতে হবে এবং এটি সম্ভব কেবল তখনই, যখন তারা অক্ষর ও তার ধ্বনি রপ্ত করে ফেলেছে। প্রাথমিক পড়ার অগ্রগতি পরিমাপের জন্য তৃতীয় মূল্যায়ন পদ্ধতিকে বলা হয় পড়ার সাবলীলতা। এটি মূলত শিশুদের দ্রুত, সঠিকভাবে ও আবেগসহ পড়ার দক্ষতা পরিমাপ করে<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>। এই ধরণের মূল্যায়ন কিছু মানুষের কাছে বিতর্কিত, কারণ তাদের মতে কেবল দ্রুত পড়ার মানে অগ্রগতি নয়। দ্রুত ও সঠিকভাবে পড়াই পড়ার মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং যা পড়া হয়েছে তা বোঝা ও মনে রাখা আসল লক্ষ্য<ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
কার্যকর মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়া উচিত এবং তা কেবল শিশু দ্রুত পড়তে ও বুঝতে পারলে থেমে যাওয়া উচিত নয়। এজন্য কিছু বাস্তব মূল্যায়ন পদ্ধতি রয়েছে যা শিক্ষকরা ব্যবহার করতে পারেন শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও শেখা নির্ধারণ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের শিক্ষাদানের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে<ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>। শিক্ষকরা মৌখিক ও লিখিত গল্প পুনঃবর্ণনার মতো মূল্যায়ন ব্যবহার করতে পারেন, যা অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়া বোঝার ক্ষমতা পরিমাপ করে, সাক্ষরতা পোর্টফোলিও ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মৌখিক ও লিখিত প্রক্রিয়া, পণ্য ও দক্ষতা প্রদর্শন করা যায়, এবং চেকলিস্ট ব্যবহার করে শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ সহজ হয় ও শিক্ষার্থীদের সাক্ষরতার প্রয়োজন ও অগ্রগতি নির্ধারণ করা যায়<ref>Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463</ref>।
শিক্ষার্থীদের পড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীরা কোন পর্যায়ে রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এটি শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনকে আরও ভালভাবে সহায়তা করতে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার অনেক সুবিধা রয়েছে তবে শিক্ষকদের সর্বদা সচেতন হওয়া উচিত যে মূল্যায়নই সবকিছু নয় এবং সমস্ত শিক্ষার্থীকে একই সময়ে বা একইভাবে মূল্যায়ন করা যায় না।
== শব্দকোষ ==
'''বটম-আপ প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি, যেখানে ছোট ছোট তথ্যের অংশ একত্রিত করে ধাপে ধাপে বড় ধারণা গঠনের চেষ্টা করা হয়।
'''কোড-জোর দেওয়ার পদ্ধতি:''' পড়াশোনার এমন কিছু পদ্ধতি, যেগুলো অক্ষর ও শব্দ ডিকোড করা এবং অক্ষর-ধ্বনির সম্পর্ক বোঝার ওপর জোর দেয়।
'''ডিসকোর্স:''' সংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট ভাষার ধারা, যেখানে বাক্যগুলো একত্রে অনুচ্ছেদ, বর্ণনা, বিশ্লেষণধর্মী লেখা কিংবা কথোপকথনের মতো উচ্চতর একক গঠনে মিলিত হয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
'''সুস্পষ্ট ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়াশোনার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে অক্ষরের সাথে সম্পর্কিত ধ্বনিগুলো আগে আলাদাভাবে শেখানো হয়, এরপর সেগুলোকে একত্রে মিলিয়ে শব্দ গঠন করা শেখানো হয়।
''':''' এই পর্যায়ে পাঠকরা শব্দের প্রতিটি ধ্বনি আলাদাভাবে শনাক্ত করতে পারে এবং বোঝে যে বানান উচ্চারণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
'''অন্তর্নিহিত ধ্বনিবিজ্ঞান পদ্ধতি:''' পড়াশোনার একটি পদ্ধতি, যেখানে শব্দের মধ্যে অক্ষরের ধ্বনি চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু তা আলাদাভাবে নয় বরং সম্পূর্ণ শব্দের মাধ্যমে।
'''অর্থ-জোর দেওয়ার পদ্ধতি:''' পড়ার এমন পদ্ধতি, যা শব্দ থেকে অর্থ তৈরি করার ওপর এবং ব্যক্তির সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়।
'''আংশিক বর্ণমালা পর্যায়:''' এই পর্যায়ের পাঠকরা শব্দের কিছু অক্ষরের সঙ্গে ধ্বনি মেলাতে পারে, কিন্তু সবগুলো নয় <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
'''ধ্বনি:''' একটি শব্দ গঠনে ব্যবহৃত ক্ষুদ্রতম ধ্বনিগত একক।
'''ধ্বনিমূলক সচেতনতা:''' কোনো শব্দের পৃথক ধ্বনিগুলো শনাক্ত এবং নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
'''প্র্যাগমেটিক্স:''' ভাষার ব্যবহার, তা থেকে বোঝা যায় বার্তা, অর্থ এবং প্রয়োগ <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
'''প্রাক-বর্ণমালা পর্যায়:''' এই পর্যায়ে শিশুরা কিছুটা লিখনজ্ঞান রাখলেও তারা এখনো কোনো শব্দ পড়তে শেখেনি।
'''স্কিমা:''' একটি মানসিক কাঠামোর ধারণা, যা আমাদের জ্ঞান এবং তার মধ্যে সম্পর্ককে সংগঠিত করতে সহায়তা করে।
'''স্কিমা অ্যাক্টিভেশন:''' একটি পাঠ্য উপাদান পাঠকের স্মৃতিতে থাকা সংশ্লিষ্ট স্কিমার স্মরণ করিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া, যাতে তা বর্তমান পাঠ কার্যক্রমে সাহায্য করে।
'''শব্দার্থবিজ্ঞান বা Semantics:''' শব্দ এবং তাদের অর্থ নিয়ে অধ্যয়ন <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
'''বাক্যগঠন বা সিন্ট্যাক্স:''' কোনো ভাষার শব্দ কীভাবে বড় এককে রূপান্তরিত হয়, যেমন— বাক্যাংশ, উপবাক্য এবং বাক্য <ref>Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive Psychology and Instruction (5th ed). Pearson.</ref>।
'''টপ-ডাউন প্রসেসিং:''' তথ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি পদ্ধতি, যেখানে বৃহত্তর সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে অজানা অংশ পূরণ করা হয় এবং ধীরে ধীরে ছোট ছোট বিস্তারিত অংশে পৌঁছানো হয়।
'''প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্ জোন:''' ভিগোৎস্কির একটি ধারণা, যা এমন একটি শিক্ষার ক্ষেত্রকে বর্ণনা করে যেখানে শিক্ষার্থী নিজে নিজে কিছু করতে পারে, আবার কারও সাহায্যে (যেমন— শিক্ষক, অভিভাবক বা অভিজ্ঞ ব্যক্তি) আরও উন্নততর কাজ করতে পারে।
{{BookCat}}
== প্রস্তাবিত পাঠ ==
Bukowiecki, E. M. (2007). Teaching children how to read. Kappa Delta Pi Record, 43(2), 58-65. doi: 10.1080/00228958.2007.10516463
Ehri, L. C. (2005). Learning to read words: Theory, findings, and issues. Scientific Studies of Reading, 9(2), 167-188. doi: 10.1207/s1532799xssr0902_4
Hempestall, K. (2005). The whole language‐phonics controversy: A historical perspective. Australian Journal of Learning Disabilities, 10(3-4), 19-33. doi: 10.1080/19404150509546797
Tracey, D.H., & Morrow, L.M. (2012). Lenses on Reading, Second Edition : An Introduction to Theories and Models. Guilford Press.
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা}}
5nr4qdolox5ezca3kp2aoukoioo9hq0
চিন্তন ও নির্দেশনা/শেখার জন্য প্রযুক্তি ও নকশা
0
26211
84115
83993
2025-06-12T11:44:49Z
NusJaS
8394
/* তথ্যসূত্র */
84115
wikitext
text/x-wiki
শিক্ষণ ও শিক্ষার জন্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে, শিক্ষক ও ডিজাইনারদের এটির সম্ভাব্য উপকারিতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝা প্রয়োজন। এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশে মানুষের জ্ঞানগত প্রক্রিয়াগুলোর উপর প্রভাব পড়ে এবং এই ধরনের পরিবেশ ডিজাইনের জন্য প্রমাণ-ভিত্তিক নীতিমালা। প্রথম অংশে পরিচিতি দেয়া হয়েছে জ্ঞানীয় চাপ থিওরি সম্পর্কে এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে কীভাবে একটি মাল্টিমিডিয়া পরিবেশের জ্ঞানগত চাহিদা শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। দ্বিতীয় অংশে আলোচনা করা হয়েছে ফোর কম্পোনেন্ট ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইন মডেল, যা জটিল দক্ষতা শেখানোর জন্য উপকরণ ও প্রযুক্তি ডিজাইন করতে গবেষণা-ভিত্তিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে। শেষ পর্যন্ত, এই অধ্যায়ে দেখা হবে কীভাবে প্রযুক্তি সহযোগিতামূলক শেখাকে সহজতর করতে ব্যবহৃত হতে পারে।
== '''জ্ঞানীয় চাপ তত্ত্ব''' ==
জ্ঞানীয় চাপ থিওরি বা কগনিটিভ লোড থিওরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যখন শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা হয়। জ্ঞানীয় চাপ তত্ত্ব জন সুয়েলার কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি তত্ত্ব যা কার্যকর স্মৃতি এবং নির্দেশনার উপর গুরুত্ব দেয়।<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref> আমাদের কার্যকর স্মৃতি একই সময়ে মাত্র সীমিত পরিমাণ তথ্য প্রক্রিয়া করতে সক্ষম।<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref> শিক্ষাদান উপকরণ ডিজাইন করার সময় কার্যকর স্মৃতির এই সীমাবদ্ধতাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে, বিশেষ করে যখন প্রযুক্তিকে নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ যদি একসাথে খুব বেশি তথ্য উপস্থাপন করা হয় তাহলে কার্যকর স্মৃতি অতিভারপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে—ফলে হয়তো সব তথ্য গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় অথবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুই গ্রহণ করে না। সুয়েলার প্রস্তাব করেন যে জ্ঞানীয় চাপ তিন প্রকার: ইনট্রিনসিক, বাহ্যিক, এবং জারমেইন। এই তিন প্রকার জ্ঞানীয় চাপের পার্থক্য বোঝার মাধ্যমে আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা শেখার জন্য সহায়ক কিনা অথবা তা জ্ঞানীয় চাপের সমস্যা তৈরি করছে কিনা।<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref>
[[চিত্র:WorkingCogLoad.png|ফ্রেম|How Cognitive Load Affects Working Memory]]
=== '''ইনট্রিনসিক জ্ঞানীয় চাপ''' ===
'''অভ্যন্তরীণ জ্ঞানীয় চাপ''' বা '''ইনট্রিনসিক কগনিটিভ লোড''' এমন মানসিক প্রক্রিয়া বোঝায় যা কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য অপরিহার্য।<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref> সুয়েলারের মতে ইনট্রিনসিক জ্ঞানীয় চাপ শিক্ষাদান ডিজাইনের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায় না, তবে এটি ডিজাইনারদের মাথায় রাখতে হয়।<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref> যেকোনো শেখার উপকরণ কার্যকর স্মৃতির ওপর ইনট্রিনসিক জ্ঞানীয় চাপ তৈরি করে; এর মাত্রা নির্ভর করে বিষয়বস্তুর জটিলতার উপর।<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref> যদি কোনো শিক্ষার্থীর কোনো বিষয়ে দক্ষতা বেশি থাকে, তবে ইনট্রিনসিক জ্ঞানীয় চাপ তখনো প্রভাব ফেলবে, তবে কম পরিমাণে।<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref> সুতরাং, শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান বিবেচনায় নিয়ে নতুন তথ্য উপস্থাপন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তির কমলা ফল সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান থাকে, তবে কমলার বিভিন্ন অংশ নিয়ে পাঠের সময় তার কার্যকর স্মৃতির ওপর চাপ কম পড়বে, তুলনায় যদি সে কিছুই না জানত।
=== '''বাহ্যিক জ্ঞানীয় চাপ''' ===
'''বাহ্যিক জ্ঞানীয় চাপ বা এক্সট্রেনিয়াস কগনিটিভ লোড''' হলো এমন মানসিক প্রক্রিয়া যা শেখার সহায়ক নয় এবং যেটা কাজের ডিজাইন পরিবর্তনের মাধ্যমে দূর করা যায়।<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref> এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ধারিত হয় শিক্ষাদান ডিজাইনের মাধ্যমে।<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref> উদাহরণস্বরূপ, মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনায় শব্দ, ছবি, টেক্সট এবং অ্যানিমেশন বাহ্যিক জ্ঞানীয় চাপ তৈরি করতে পারে। যত বেশি কার্যকর স্মৃতিকে মনোযোগ দিতে হয়, তত কম তথ্য ধরে রাখা সম্ভব হয়।<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref> বাহ্যিক লোড নিয়ন্ত্রণযোগ্য, ভালো শিক্ষাদান ডিজাইন এই লোড কমায় এবং খারাপ ডিজাইন তা বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক প্রজাপতির জীবনচক্র নিয়ে পাঠ দিচ্ছেন এবং স্মার্ট বোর্ডে একটি স্লাইড শো ব্যবহার করছেন। যদি তিনি অপ্রাসঙ্গিক অ্যানিমেশন যোগ করেন, তবে শিক্ষার্থীদের একসাথে তথ্য ও অ্যানিমেশনে মনোযোগ দিতে হয়—ফলে বাহ্যিক লোড বেড়ে যায়।
=== '''জারমেইন জ্ঞানীয় চাপ''' ===
'''জারমেইন জ্ঞানীয় চাপ''' হচ্ছে কার্যকর স্মৃতির সেই অংশ যা উপস্থাপিত তথ্যের ইনট্রিনসিক জ্ঞানীয় চাপ প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয় এবং এটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে।<ref>Sweller, J. (2010). Element Interactivity and intrinsic, extraneous, and germane cognitive load. Educational Psychology Review 22(2), 123-138. doi: 10.1007//s10648-010-9128-5</ref> সুয়েলার বলেন, এটি কার্যকর স্মৃতির ওপর স্বাধীন চাপ সৃষ্টি করে না, বরং এটি ইনট্রিনসিক ও বাহ্যিক লোডের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, যদি শিক্ষার্থীর প্রেরণা অপরিবর্তিত থাকে, তবে তার জারমেইন লোডের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না।<ref>Sweller, J. (2010). Element Interactivity and intrinsic, extraneous, and germane cognitive load. Educational Psychology Review 22(2), 123-138. doi: 10.1007//s10648-010-9128-5</ref> তাহলে এর সাথে শিক্ষাদানের সম্পর্ক কী? সুয়েলারের মতে, পাঠগুলো এমনভাবে তৈরি করা উচিত যাতে কার্যকর স্মৃতি ইনট্রিনসিক লোডের দিকে মনোযোগ দিতে পারে এবং বাহ্যিক লোড কমিয়ে দিলে জারমেইন লোড এবং শেখার মান উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
=== গবেষণা ও প্রভাব ===
অভ্যন্তরীণ এবং অতিরিক্ত জ্ঞানীয় চাপ একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত/অর্থাৎ যদি উভয়ই উচ্চ হয় তাহলে কার্যকারী স্মৃতি অতিরিক্তভাবে চাপগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref>। এর তাৎপর্য হলো, যেহেতু শুধুমাত্র অতিরিক্ত জ্ঞানীয় চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাই পাঠ পরিকল্পনাকারীদের এটি কম রাখার জন্য কাজ করা উচিত, যাতে করে অভ্যন্তরীণ জ্ঞানীয় চাপ বেশি থাকলেও কার্যকারী স্মৃতি অতিরিক্ত চাপের শিকার না হয়<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref>। তত্ত্ব অনুযায়ী, অতিরিক্ত জ্ঞানীয় চাপ হ্রাস করার জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতির বিশাল ধারণক্ষমতার সদ্ব্যবহার করা উচিত, পূর্ববর্তী স্কিমার ব্যবহার এবং নতুন স্কিমা তৈরি করে কার্যকারী স্মৃতির উপর চাপ কমানো যায়<ref>van Merrienboer, J., & Ayres, P. (2005). Research on cognitive load theory and its design implications for e-learning. Educational Technology Research and Development 53(3), 5-13</ref>। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: নির্ধারিত লক্ষ্যবিহীন সমস্যা উপস্থাপন, কার্যকর অতিরিক্ততা, পদ্ধতি, অসম্পূর্ণ সমস্যা প্রভাব, বিভক্ত মনোযোগ প্রভাব এবং অন্যান্য<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref>।
শুরু করার জন্য, বহিরাগত জ্ঞানীয় চাপ হ্রাস করতে এবং স্কিমা উত্পাদনকে উত্সাহিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন করার জন্য লক্ষ্য মুক্ত সমস্যাগুলো ডিজাইন করা হয়েছিল।<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref> তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করার জন্য কোনও শিক্ষার্থী লক্ষ্য সম্পর্কিত কৌশলগুলো ব্যবহার করার সম্ভাবনা হ্রাস করে এটি করে। এটি কোনও সমস্যার শব্দ পরিবর্তন করে করা হয় যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে ট্রায়াল এন্ড এরর পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে। অনেক সময় কাজের মেমোরির উপর ব্যাপক চাপ ফেলে।<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref> উদাহরণস্বরূপ, একটি সমস্যায় বলা হয়: একটি ট্রেন ঘণ্টায় পঞ্চাশ কিলোমিটার গতিতে চলেছে এবং ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এতে সময় কত লেগেছে? যদি একজন শিক্ষার্থী সময় নির্ণয়ের সঠিক সূত্র না জানে, তাহলে সে অনুমান নির্ভর কৌশলে সমাধান খুঁজে বের করতে যাবে, যা অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানীয় চাপ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু, যদি প্রশ্নটি এভাবে করা হয় যে “সমাধানটি বের করার যতগুলো উপায় সম্ভব তা দেখাও”, তাহলে কাজের মেমোরির উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ হ্রাস পায়।
প্রারম্ভে, লক্ষ্যবিহীন সমস্যাগুলি ডিজাইন করা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার জন্য যাতে অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানীয় চাপ হ্রাস পায় এবং স্কিমা তৈরি করতে উৎসাহিত করা যায়<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref>। এটি করার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা লক্ষ্যভিত্তিক কৌশল অনুসরণ না করে সমস্যার সমাধান করতে পারে। সমস্যার ভাষার গঠন পরিবর্তন করে এটি করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র অনুমান ও পরীক্ষানিরীক্ষার উপর নির্ভর না করে, যা অনেক সময় কাজের মেমোরির উপর ব্যাপক চাপ ফেলে<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref>। উদাহরণস্বরূপ, একটি গণিত সমস্যায় বলা হয়: একটি ট্রেন ঘণ্টায় পঞ্চাশ কিলোমিটার গতিতে চলেছে এবং ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এতে সময় কত লেগেছে? যদি একজন শিক্ষার্থী সময় নির্ণয়ের সঠিক সূত্র না জানে, তাহলে সে অনুমান নির্ভর কৌশলে সমাধান খুঁজে বের করতে যাবে, যা অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানীয় চাপ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু, যদি প্রশ্নটি এভাবে করা হয় যে “সমাধানটি বের করার যতগুলো উপায় সম্ভব তা দেখাও”, তাহলে কাজের মেমোরির উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ হ্রাস পায়।
"কার্যকরী উদাহরণ প্রভাব" বলতে বোঝানো হয়, যখন একজন ব্যক্তি ইতোমধ্যে সমাধান করা উদাহরণ অধ্যয়ন করে, যাতে তারা শিখতে পারে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। এটি অনুমান নির্ভর পদ্ধতি কমিয়ে দেয় কারণ এতে শিক্ষার্থীদের একটি স্কিমা তৈরি করার সুযোগ থাকে যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরনের সমস্যার সমাধান করা যায়<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref>। সাধারণ সমস্যাগুলোর তুলনায়, এই ধরনের উদাহরণগুলো ব্যক্তির মনোযোগ পুরো সমস্যার ওপর নয় বরং ধাপে ধাপে কী করতে হবে সেটার ওপর কেন্দ্রীভূত করে, ফলে তত্ত্বগতভাবে অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানীয় চাপ হ্রাস পায় কারণ অতিরিক্ত কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref>। এই ক্ষেত্রে, যদি একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নতুন কোনো গণিত সমীকরণ শেখান এবং পাশাপাশি সেই সমীকরণ ব্যবহার করে সমাধান করা কিছু উদাহরণ দেন, তবে শিক্ষার্থীদের কাছে একটি রেফারেন্স থাকবে, যা তাদের জ্ঞানীয় চাপ কমিয়ে দেবে।
উপকারী পুনরাবৃত্তির পেছনের ধারণা হলো, যদি একজন শিক্ষার্থী একই তথ্য বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত দেখতে পান, তাহলে সেই তথ্য স্মরণ রাখার সম্ভাবনা বেশি থাকে<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref>। কারণ এটি একই তথ্য যা কেবল ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাই অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানীয় চাপ হ্রাস পায়, কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন তথ্য গ্রহণের জন্য<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref>। তবে, পরবর্তীকালে পরিচালিত গবেষণায় এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—গবেষণাগুলো দেখিয়েছে যে এটি গভীর শেখার পরিবর্তে বরং শেখার মান কমিয়ে দেয়<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref>।
মেয়ার, হাইজার এবং লন পরিচালিত এক গবেষণায়, মাল্টিমিডিয়া শিক্ষায় পুনরাবৃত্তি প্রভাব নিয়ে একাধিক পরীক্ষা চালানো হয়<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। তাঁরা পুনরাবৃত্তি প্রভাবকে ব্যাখ্যা করেন এমন এক পরিস্থিতি হিসেবে যেখানে একই তথ্য পাঠ্য ও শ্রুতির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় এবং এর ফলে শেখার মান কমে যায়<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। প্রথম পরীক্ষায় ৭৮ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে বজ্রপাত গঠনের বিষয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে তথ্য ধারণ ও স্থানান্তরের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের চারটি দলে ভাগ করা হয়। "No-text/no-seductive-details" দলটি এনিমেশন ও সমসাময়িক বর্ণনা পায়, "text/no-seductive-details" দলটি এতে সংক্ষেপিত পাঠ্য পায়, "no-text/seductive-details" দলটি আকর্ষণীয় কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক তথ্য পায় এবং শেষ দলটি এই দুই ধরণের তথ্যই পায়<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, যেসব শিক্ষার্থীরা পর্দায় সংক্ষেপিত পাঠ্য পেয়েছিল তারা কম তথ্য মনে রাখতে পেরেছে। একইভাবে যারা আকর্ষণীয় অপ্রাসঙ্গিক তথ্য পেয়েছিল তারাও কম তথ্য মনে রাখতে পেরেছে<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। এই পরীক্ষার ফলাফল দেখায় যে অতিরিক্ত তথ্য উপস্থাপন শেখার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। গবেষকরা ধারণা দেন যে এটি দৃশ্যমান বা শ্রাব্য চ্যানেলে অতিরিক্ত জ্ঞানীয় চাপ সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয় পরীক্ষায় এই ধারণার পরীক্ষা করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়: একটি দল পাঠ্য ছাড়াই উপস্থাপনা পায়, একটি দল সংক্ষিপ্ত সারাংশ সহ এবং আরেকটি দল হুবহু পাঠ্য সহ<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। দেখা যায় যে যারা কোনো অতিরিক্ত পাঠ্য পায়নি তারা সবচেয়ে বেশি তথ্য মনে রাখতে পেরেছে। অন্য দুই দলের মধ্যে মনে রাখার ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তৃতীয় পরীক্ষায় মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনায় ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হলে কী ঘটে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, ভিডিও ক্লিপে বজ্রপাত সংক্রান্ত তথ্য থাকলেও তা প্রাসঙ্গিক ছিল না<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। ৩৮ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে দুটি দলে ভাগ করা হয়। দেখা যায়, ভিডিও যুক্ত দলটি আরও বেশি কিছু মনে রাখতে পারেনি এবং ফলাফল উল্লেখযোগ্য ছিল না<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। চতুর্থ পরীক্ষায় দেখা হয় যে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনার আগে বা পরে ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করলে আগ্রহ বাড়ে কিনা। দেখা যায়, উপস্থাপনার শুরুতে ভিডিও ক্লিপ দিলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা বেশি মনে রাখে, যদিও ফলাফল পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>। সামগ্রিকভাবে এই গবেষণা উপসংহার টানে যে, একই তথ্য একাধিক উপায়ে উপস্থাপন করা হলে শিক্ষার্থীরা কম তথ্য মনে রাখতে পারে। যখন একজন শিক্ষার্থীকে কাজের মেমোরি ভাগ করে তথ্য বুঝতে হয়, তখন অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানীয় চাপ বেড়ে যায়, ফলে শেখার পরিমাণ কমে যায়। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যখন পাঠ্য উপস্থাপনার সাথে যুক্ত করা হয়। মেয়ার, হাইজার এবং লন পরামর্শ দেন যে, শিক্ষামূলক ডিজাইনারদের উচিত শ্রবণযোগ্য উপস্থাপনায় পাঠ্য না যোগ করা<ref>Mayer, R.E., Heiser, J., & Lonn, S. (2001). Cognitive constraints on multimedia learning: When presenting more material results in less understanding. Journal of Educational Psychology 93(1), 187-198.</ref>।
কিছু গবেষক মনে করেন যে, শিক্ষাগত ডিজাইনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানীয় চাপ কমানোই যথেষ্ট নয়। তাঁদের মতে, শিক্ষার্থী যেন আরও বেশি অর্থবহ স্কিমা তৈরি করতে পারে, সেই জন্য তাদের "জার্মেইন জ্ঞানীয় চাপ" বা প্রাসঙ্গিক জ্ঞানীয় চাপ বাড়ানো উচিত<ref>Sweller, J., van Merrienboer, J., & Paas, F. (1998). Cognitive Architecture and Instructional Design. Educational Psychology Review, 10(3), 251-296. doi:1040-726X/98/0900-0251S15.00/0</ref>। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ স্কিমা নির্মাণে নিবদ্ধ হয়, যা শিক্ষার সময় কাজের মেমোরির ওপর চাপ কমায়।
=== '''সারাংশ''' ===
সারাংশে, Sweller তিন ধরনের জ্ঞানীয় চাপের কথা বলেন এবং এগুলো কীভাবে নতুন তথ্য শেখার সময় কাজের মেমোরির ব্যবহারকে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করেন। জ্ঞানীয় চাপ থিয়োরির আলোকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার ডিজাইনে বলা হয়েছে যে, প্রযুক্তি একটি কার্যকর শেখার উপায় হতে পারে যদি তা কাজের মেমোরির ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ না সৃষ্টি করে। বিশেষত, শিক্ষকদের উচিত "redundancy effect" নিয়ে করা গবেষণার দিকে মনোযোগ দেওয়া যাতে তারা অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মেমোরি অতিভার না করে। প্রযুক্তির একটি উপযোগী ব্যবহার হতে পারে এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন করা যা স্কিমা তৈরি করতে সহায়তা করে, যা তথ্যকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে স্থানান্তর করে জ্ঞানীয় চাপ হ্রাস করে।
== চার-উপাদান নির্দেশমূলক নকশা ==
চার-উপাদান নির্দেশমূলক নকশা বা Four Component Instructional Design (4C/ID) হলো একটি নির্দেশনামূলক ডিজাইন মডেল, যা ভ্যান মেরিয়েনবুয়ের এবং তাঁর সহকর্মীরা উদ্ভাবন করেছেন। এটি জটিল পরিবেশে শেখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। 4C/ID মডেলটি এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি যে, দক্ষতা সবচেয়ে কার্যকরভাবে শেখা যায় তা ব্যবহার করার মাধ্যমে, শুধু পাঠ্যবইয়ের নির্দেশনা পড়ে নয়। শেখার শর্তাবলি বাস্তব জীবনের প্রয়োগের সাথে মিল রেখে তৈরি হওয়া জরুরি, এবং নির্দেশনার লক্ষ্য হওয়া উচিত তথ্য দেওয়ার চেয়ে অনুশীলনের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা। 4C/ID মডেলটি চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত: ''(১) লার্নিং টাস্ক'', ''(২) সহায়ক তথ্য'', ''(৩) জাস্ট-ইন-টাইম (JIT) তথ্য'', এবং ''(৪) পার্ট-টাস্ক অনুশীলন'' (ভ্যান মেরিনবোয়ার, ১৯৯৭;<ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>; ভ্যান মেরিনবোয়ার এবং কির্সনার, ২০০৭)। এই কাজগুলো জটিলতার ভিত্তিতে সহজ থেকে কঠিন ক্রমে সাজানো থাকে। প্রতিটি উপাদানের শুরুতে অনেক বেশি সহায়ক কাঠামো বা ‘স্ক্যাফোল্ডিং’ প্রয়োজন হয়, যা শিক্ষার্থীরা অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হয়।
এই অংশে আমরা আলোচনা করব কীভাবে প্রযুক্তি এই শিক্ষার তত্ত্বকে সমর্থন করতে পারে তা নিয়ে গবেষণা ও তত্ত্ব।
=== '''(১) লার্নিং টাস্ক''' ===
লার্নিং টাস্ক-গুলো চিত্র ১-এ বৃত্তাকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। জটিল শেখা মানে হলো একত্রে একাধিক শেখার লক্ষ্য অর্জন করা। 4C/ID মডেলটি এমন শেখার কাজ ব্যবহারের পক্ষে, যা সম্পূর্ণ, বাস্তবসম্মত ও স্পষ্ট। অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা হিসেবেও পরিচিত এই মডেলের ভিত্তিতে শেখা শুরু করা উচিত অপেক্ষাকৃত সহজ কিন্তু অর্থপূর্ণ কাজের গুচ্ছ দিয়ে। একে '''টাস্ক ক্লাস''' বলা হয়। প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের শুরুতেই অত্যন্ত জটিল শেখার কাজ দেওয়া অসম্ভব, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং শেখা ও পারফরম্যান্স উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। একবার শিক্ষার্থীরা সহজ কিন্তু প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো আয়ত্ত করলে, তারা আরও জটিল কাজের দিকে অগ্রসর হয়। একটি কাজের জটিলতা নির্ধারিত হয় এতে থাকা দক্ষতার সংখ্যা, এই দক্ষতাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এবং কাজটি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। একই টাস্ক ক্লাসে থাকা শেখার কাজগুলোতে ক্রমান্বয়ে জটিলতা বাড়ানো না হলেও, এতে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তার পরিমাণে পার্থক্য থাকতে পারে। এই সহায়তাকে বলা হয় ‘স্ক্যাফোল্ডিং’ <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। যখন শিক্ষার্থীরা নিম্নস্তরের টাস্ক ক্লাস থেকে উচ্চতর স্তরের টাস্ক ক্লাসে অগ্রসর হয়, তখন স্ক্যাফোল্ডিং ব্যবহার করা হয়। চিত্র ১-এ বৃত্তগুলোর চারপাশে ছিদ্রযুক্ত রেখা শেখার উপযুক্ত কাজ নির্বাচন ও উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। শেষ পর্যন্ত এই সহায়তা এবং স্ক্যাফোল্ডিং ধীরে ধীরে কমে আসে। এই সহায়তা হ্রাসের কারণ হলো '''দক্ষতার বিপরীত প্রভাব'''। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষানবিসদের জন্য কার্যকর যে সহায়তা ও নির্দেশনা পদ্ধতি (যেমন কোচিং বা নিয়মিত ধাপ) তা অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে <ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011)...</ref>। এটি তাদের মানসিক চাপও বাড়ায়। শেখার কাজ শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে ধারণা গঠনে সহায়তা করে, যা তারা শেখার কাজ থেকে প্রাপ্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বিমূর্ত করে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। শেখার ক্ষেত্রে সাধারণীকরণ ও পার্থক্যকরণ ধারণাগুলো গঠনে সাহায্য করে, যাতে তা নতুন অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। ভ্যান মেরিয়েনবুয়ের, ক্লার্ক, এবং ক্রুক <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref> এর মতে, এই গঠিত ধারণাগুলো দুটি রূপে আসে: ''মানসিক মডেলs'': যা শেখার ক্ষেত্রটি কিভাবে সংগঠিত তা প্রতিফলিত করে এবং যুক্তির সহায়তা করে; ''জ্ঞানীয় কৌশল'': যা সমস্যা সমাধানে গাইড করে এবং দেখায় কীভাবে কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধানে এগোনো যায়।
শিক্ষার পরিবেশে শেখার কাজ প্রয়োগের দুটি ধরণ রয়েছে—ফলাফল কেন্দ্রিক এবং প্রক্রিয়া কেন্দ্রিক সহায়তা। ফলাফল কেন্দ্রিক সহায়তা সর্বোচ্চ বা নিম্ন স্তরে ভাগ করা যায়। সর্বোচ্চ স্তরের ফলাফল কেন্দ্রিক সহায়তা হলো এমন শেখার কাজ যেখানে একটি কেস স্টাডি বা প্রস্তুত উদাহরণ দেওয়া হয় যাতে শিক্ষার্থীকে একটি প্রারম্ভিক অবস্থা, কাঙ্ক্ষিত অবস্থা এবং একটি সমাধান বা মধ্যবর্তী সমাধান দেওয়া হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। শিক্ষার্থীদের শেখাতে উদ্ভট ঘটনা, সফলতার গল্প বা চমকপ্রদ উপসংহারসহ গল্প ব্যবহার করা যেতে পারে। এই শিক্ষণীয় কাজগুলিতে শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয় যা তাদের গভীর চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে এবং দেওয়া উদাহরণ থেকে মানসিক মডেল তৈরিতে সহায়তা করে। বাস্তব উদাহরণ দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্র কীভাবে সংগঠিত। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উপসংহার বা সমাধানে পৌঁছাতে দেওয়া উচিত। চিত্র ২-এ এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। প্রক্রিয়া কেন্দ্রিক সহায়তা সরাসরি সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে কাজ করে। একটি ''modeling example''-এ একজন বিশেষজ্ঞ কীভাবে একটি কাজ সম্পাদন করছে এবং কেন সে এটি করছে তা ব্যাখ্যা সহ উপস্থাপন করা হয়। এই হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য ধারণ সহজ করে তোলে যা শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়ে বোঝা সম্ভব নয়। এই পদ্ধতিতে শেখা তথ্য দীর্ঘস্থায়ীভাবে মনে রাখতেও সাহায্য করে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। এই উদাহরণ দেখে শিক্ষার্থীরা এমনকি পেশাদাররাও যে প্রণালী ও নীতিমালা অনুসরণ করে তা সহজে অনুধাবন করতে পারে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। উচ্চস্বরে চিন্তা করাও উপকারী হতে পারে কারণ এটি মস্তিষ্কের ভিতরের সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াকে প্রকাশ করে। তদ্ব্যতীত, কম্পিউটার-ভিত্তিক শিক্ষার সরঞ্জামগুলো শিক্ষার্থীদের এমনভাবে সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করে যেন তারা একজন বিশেষজ্ঞের মতো চিন্তা করে।
=== '''(২) সহায়ক তথ্য''' ===
এই ধরনের তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জটিল দক্ষতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শেখার কাজে সাফল্য পেতে এবং সেখান থেকে বাস্তব অর্থে শিখতে শিক্ষার্থীদের '''অ-পুনরাবৃত্ত দক্ষতা''' (স্কিমাটা-সদৃশ নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া) সম্পর্কিত তথ্য প্রয়োজন <ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011)...</ref>। প্রক্রিয়াভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াকে 4C/ID কাঠামোতে '''পুনরাবৃত্ত দক্ষতা''' বলা হয় <ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011)...</ref>। জটিল জ্ঞান উভয় ধরনের দক্ষতার সমন্বয়ে গঠিত। সহায়ক তথ্য প্রদান করা হয় যাতে শিক্ষার্থীরা অ-পুনরাবৃত্ত দিকগুলো আয়ত্ত করতে পারে। এটি শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান এবং শেখার কাজের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে <ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011)...</ref>। শিক্ষকরা সাধারণত যেটিকে 'তত্ত্ব' হিসেবে উল্লেখ করেন, এটি সেই তথ্য এবং এটি সাধারণত লেকচারে বা পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপন করা হয়। এর লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের এমন নমনীয় স্কিমা তৈরি করতে সাহায্য করা যা বাস্তব জীবনের সমস্যা মোকাবেলায় কার্যকর। সহায়ক তথ্য পূর্ববর্তী তথ্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্য উপাদানের মধ্যে বাস্তবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। এটি শিক্ষার্থীদের এমন কাজ করতে সক্ষম করে যা আগে সম্ভব ছিল না। দেখা গেছে, এই ধরনের তথ্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা জটিল স্কিমা গঠনে সাহায্য করে যা গভীর অনুধাবন তৈরি করে। শিক্ষার্থীরা ডেটাবেইস কীভাবে সংগঠিত তা অধ্যয়নের মাধ্যমে কার্যকর মানসিক মডেল তৈরি করতে পারে। কাজের পারফর্মাররা নিজেদের মানসিক মডেল এবং জ্ঞানীয় কৌশল আরও বিকশিত করে যাতে তাদের পারফরম্যান্স উন্নত হয়। উদাহরণস্বরূপ, টাইগার উডস গলফ কোর্সের বিন্যাস বিশ্লেষণ করে কীভাবে এগুলো সংগঠিত তা জানতে মানসিক মডেল তৈরি করেন এবং প্রতিপক্ষের ভিডিও দেখার মাধ্যমে কৌশল তৈরি করেন কীভাবে সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। এখানে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি যে সম্পর্কগুলো যেন যথাসম্ভব যুক্তিযুক্ত হয়। এই সম্পর্ক নির্ধারণের পদ্ধতিগুলো উপস্থাপন করা যেতে পারে ব্যাখ্যামূলক বা অনুসন্ধানভিত্তিক উপায়ে। ''ব্যাখ্যামূলক পদ্ধতি'' শিক্ষার্থীদের এই সম্পর্কগুলো সরাসরি উপস্থাপন করে, এবং ''অনুসন্ধান পদ্ধতি'' শিক্ষার্থীদের নিজে থেকে এসব সম্পর্ক আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করে। এই দুই পদ্ধতির মধ্যে অভিজ্ঞতাভিত্তিক সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সাধারণ ও বিমূর্ত জ্ঞানকে বাস্তব উদাহরণের সাথে যুক্ত করে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>। 4C/ID মডেলটি সহায়ক তথ্য উপস্থাপনে প্ররোচনামূলক ও নির্ণয়মূলক কৌশলের মধ্যে পার্থক্য করে। প্ররোচনামূলক কৌশলের দুটি ধরন রয়েছে: ''ইন্ডাকটিভ-ইনকোয়ারি কৌশল''-এ এক বা একাধিক কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সম্পর্ক চিহ্নিত করতে বলা হয়। তবে এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ এবং গভীর বোধের প্রয়োজন হয়, বিশেষত যাদের দক্ষতা নেই তাদের জন্য। এজন্য ভ্যান মেরিনবোয়ার, ক্লার্ক, এবং ক্রোক (২০০২)<ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref> পর্যাপ্ত সময় না থাকলে এই কৌশল ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন। ''ইন্ডাকটিভ-এক্সপোজিটরি কৌশল'' তে এক বা একাধিক কেস স্টাডি দিয়ে শুরু করে এবং সেখানে চিত্রিত তথ্যগুলোর সম্পর্ক সরাসরি ব্যাখ্যা করা হয়। মেরিনবোয়ার, ক্লার্ক, এবং ক্রোক (২০০২)<ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref> এই কৌশলটি সাধারণভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন কারণ এটি বাস্তব কেস দিয়ে শুরু হয় এবং পূর্ব জ্ঞানের অভাব থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর। ''জ্ঞানীয় প্রতিক্রিয়া'' সহায়ক তথ্য-এর চূড়ান্ত অংশ হিসেবে পরিচিত। এটি অ-পুনরাবৃত্ত কর্মক্ষমতা-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেহেতু এই ধরনের পারফরম্যান্স কখনো একেবারে সঠিক বা ভুল নয়, বরং বেশি বা কম কার্যকর। জ্ঞানীয় প্রতিক্রিয়া কেবল তখনই প্রদান করা যায় যখন শিক্ষার্থী একটি বা একাধিক শেখার কাজ সম্পন্ন করে। ভালোভাবে পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি এবং গৃহীত সমাধান নিয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002)...</ref>।
=== '''(3) জাস্ট-ইন-টাইম (JIT) তথ্য''' ===
সহায়ক তথ্যের বিপরীতে, JIT তথ্য জটিল দক্ষতার পুনরাবৃত্ত দিকগুলোর উপর কেন্দ্রীভূত। এটি শেখার কাজ বা অনুশীলনের উপাদানের পুনরাবৃত্ত দিক শেখা ও সম্পাদনের জন্য অপরিহার্য। স্বয়ংক্রিয়তা অনেকাংশে নির্ভর করে ধারাবাহিকতা এবং পুনরাবৃত্ত অনুশীলনের ওপর। JIT তথ্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুসারে ধাপে ধাপে নির্দেশনা দেয় এবং প্রয়োজন না থাকলে দ্রুত ম্লান হয়ে যায়। JIT তথ্যের লক্ষ্য হচ্ছে মৌলিক, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব স্বয়ংক্রিয় করে তোলা। জ্ঞানগত সম্পদ মুক্ত করা এবং স্বয়ংক্রিয়তা বৃদ্ধি করা উন্নত শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এটি ধাপে ধাপে জ্ঞানও প্রদান করে, যেমন শিক্ষক বা টিউটররা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের গাইড করেন, যেন একজন সহকারী তাদের কাঁধের ওপর নজর রাখছে। JIT তথ্য অনেক শেখার কাজের জন্য একই রকম হওয়ায়, এটি সাধারণত প্রথম শেখার কাজের সময় দেয়া হয় যেটার সাথে ওই দক্ষতা সম্পর্কিত থাকে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। স্ক্যাফোল্ডিংয়ের মতোই, JIT তথ্যের একটি নীতি হলো ফেডিং (fading), অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যখন শেখার বিষয়ে আরও দক্ষতা অর্জন করে তখন দ্রুত ধীরে ধীরে তথ্যের উপস্থিতি কমে যায়। JIT তথ্যের শিক্ষাদান পদ্ধতি মূলত নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জ্ঞানকে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে জটিলতা বাড়ায় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। এই নিয়মগুলি বহুবার অনুশীলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে এবং এই সময় তথ্য সরাসরি আমাদের কার্যকরী স্মৃতিতে উপলব্ধ থাকে যা নিয়ম গঠনের জন্য প্রয়োজন। বাস্তব জীবনে প্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক কেউ গল্ফ শিখছে, তখন কোচ সাধারণত ক্লাব ধরার পদ্ধতি, স্ট্যান্স নেওয়া এবং ড্রাইভিং রেঞ্জে প্রথম ড্রাইভ করার সময় সুইং করার নিয়ম বুঝিয়ে দেন, শ্রেণিকক্ষে লেকচারের সময় নয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। ''তথ্য প্রদর্শনী'' ছোট ছোট ইউনিটে সংগঠিত থাকে, যা অপরিহার্য কারণ নতুন তথ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে অনুশীলনের সময় প্রক্রিয়াকরণ অতিরিক্ত চাপ কমায়। বাস্তব জীবনে, যেমন একটি জটিল যন্ত্রের ম্যানুয়াল ধাপে ধাপে কাজগুলো ব্যাখ্যা করে, ব্যবহারকারীর পূর্ব জ্ঞান ধরে নিয়ে শুধু কিছু ধাপ উল্লেখ করে না। এই পদ্ধতিতে তথ্য সরাসরি প্রদর্শন করা উচিত যখন শিক্ষার্থীদের সেই তথ্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট শেখার কাজের পুনরাবৃত্ত দিকগুলোতে কাজ করার জন্য <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সব সময় কার্যকর নাও হতে পারে। যেমন চাকরির প্রশিক্ষণে, অনলাইন হেল্প সিস্টেম, চেকলিস্ট এবং ম্যানুয়ালসহ বিভিন্ন সহায়তা সহজে পাওয়া যায়। এর কারণ হলো প্রয়োজনীয় সময়ে JIT তথ্য সরাসরি প্রদান না হওয়া। ''ডেমন্সট্রেশন ও ইনস্ট্যান্স'' হল পুনরাবৃত্ত দক্ষতার উপাদান, যা সাধারণত ''সাধারণত্ব'' নামে পরিচিত। যেমন নিয়ম বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যায়, সেগুলোকে ''ডেমন্সট্রেশন'' বলা হয়; অন্যদিকে ধারণা, পরিকল্পনা ও নীতিগুলোকে ''ইনস্ট্যান্স'' বলা হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। ''কগনিটিভ ফিডব্যাক'' JIT তথ্যের একটি চূড়ান্ত অংশ, যা কর্মদক্ষতার পুনরাবৃত্ত দিকগুলোতে প্রদানকৃত প্রতিক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। এই ফিডব্যাক সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে, অর্থাৎ যদি নিয়মগুলো সঠিকভাবে পরিস্থিতিতে প্রয়োগ না হয়, তাহলে শিক্ষার্থী "ত্রুটি" করে বলে ধরা হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। এই ফিডব্যাকগুলি যত দ্রুত সম্ভব প্রদান করার পরামর্শ দেয়া হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা সঠিক তথ্য তাদের কার্যকরী স্মৃতিতে সঠিকভাবে ইনপুট করতে পারে। 4C/ID মডেল বিশ্বাস করে যে শেখার সময় ত্রুটি হওয়া অনিবার্য এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের ভুল চিনতে শিখে এবং সেগুলো থেকে কিভাবে উত্তরণ করতে হয় তা শিখে। ভালোভাবে ডিজাইন করা ফিডব্যাক শিক্ষার্থীদের জানায় কেন ত্রুটি হয়েছে এবং কিভাবে লক্ষ্য অর্জন করতে পারে তার পরামর্শ বা ইঙ্গিত দেয়। শেখার প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য সরাসরি উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>।
=== '''(৪) পার্ট-টাস্ক অনুশীলন''' ===
শেখার কাজগুলো স্কিমা নির্মাণে সহায়ক এবং জটিল দক্ষতার পুনরাবৃত্ত দিকগুলোর সংকলন সহজতর করতে ডিজাইন করা হয়। 4C/ID মডেলের শেষ উপাদান, পার্ট-টাস্ক অনুশীলন, নির্বাচিত পুনরাবৃত্ত দক্ষতার অতিরিক্ত অনুশীলন দেয় যাতে প্রয়োজনীয় স্বয়ংক্রিয়তা স্তর অর্জন করা যায়। এটি প্রক্রিয়াগত জ্ঞান দ্রুত স্বয়ংক্রিয় করার একটি উপায়, যেখানে শিক্ষার্থীরা একই সময়ে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করার কারণে সৃষ্ট জ্ঞানগত চাপের সমস্যা এড়িয়ে যায়। দক্ষতা সাধারণত ধীরে ধীরে বিকাশমান একটি প্রক্রিয়া যা আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী উৎপাদনগুলোর স্বয়ংক্রিয়করণের জন্য অনুশীলনের প্রসারনের ওপর নির্ভর করে। JIT তথ্য উপস্থাপন নতুন তথ্যকে সীমাবদ্ধভাবে নিয়মে কোড করার লক্ষ্য রাখে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। শিক্ষার্থীদের অনুশীলন উপযুক্ত JIT তথ্য দ্বারা সমর্থিত হবে যতক্ষণ না তারা স্বয়ংক্রিয়তা অর্জন করে। ভ্যান মেরিয়েনবোয়ার ও তাঁর সহযোগীরা বিশ্বাস করেন যে কিছু পার্ট-টাস্ক অনুশীলন কাজের জটিলতা কমাতে সাহায্য করে কারণ এর সময়কাল তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত ও বিরতিপূর্ণ এবং জটিল, প্রামাণিক কাজের সঙ্গে মিশ্রিত থাকে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের উপদক্ষতাগুলো অনুশীলন করতে এবং সেগুলোকে সামগ্রিক কাজের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে। অনুশীলনকৃত বিষয়গুলো বিভিন্ন পরিস্থিতি বা পরিবেশের জন্য বহুমুখী হওয়া উচিত যাতে অন্তর্নিহিত নিয়মগুলো সব পরিস্থিতিতে প্রয়োগযোগ্য হয়। তবে, যখন পুনরাবৃত্ত দিকগুলোর উচ্চ স্তরের স্বয়ংক্রিয়তা প্রয়োজন হয়, তখন শেখার কাজগুলো পর্যাপ্ত পুনরাবৃত্তি প্রদান করতে পারে না যা শক্তিশালীকরণের জন্য জরুরি। তখন অতিরিক্ত পার্ট-টাস্ক অনুশীলন প্রয়োজন হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। অন্যান্য পরিস্থিতিতে যেমন সাধারণ পরিবেশে শেখার ক্ষেত্রে পার্ট-টাস্ক অনুশীলন জটিল শেখার জন্য সহায়ক নয়। পার্ট-টাস্ক অনুশীলন পদ্ধতি নিয়ম বা প্রক্রিয়ার সংকলন এবং তাদের পরবর্তী শক্তিশালীকরণকে উৎসাহিত করে। এটি একটি খুব ধীর প্রক্রিয়া যা বহুবার অনুশীলনের প্রয়োজন হয়। পার্ট-টাস্ক অনুশীলনের উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যায় গুণন তালিকা বা সঙ্গীত যন্ত্রের স্কেল বাজানো। এটি যথাযথ কগনিটিভ প্রসঙ্গে শুরু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কার্যকর প্রমাণিত হয় শুধুমাত্র তখনই যখন শিক্ষার্থীরা জটিল দক্ষতার সহজ সংস্করণে পরিচিত হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। কাজের শ্রেণীবিভাগ নির্দেশ করে যে, এগুলো হয় অনেক উচ্চতর দক্ষতার কার্যকারিতা সক্ষম করে, অথবা একাধিক সমন্বিত দক্ষতার সঙ্গে একই সময়ে সম্পাদিত হতে হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। সুতরাং, প্রথমে কাজের শ্রেণি চিহ্নিত করে তারপরে পার্ট-টাস্ক অনুশীলন শুরু করা উচিত। পার্ট-টাস্ক অনুশীলনের ''প্র্যাকটিস আইটেমস'' শিক্ষার্থীদের অনেকবার অনুশীলন করতে উৎসাহিত করে যেমন প্রবাদ আছে, "অনুশীলনই পারদর্শিতা আনে"। তবে শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে যে সম্পূর্ণ অনুশীলন সেটটি বহুমুখী এবং সব পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য হতে হবে। এর ফলে একটি বিস্তৃত পরিস্থিতি-নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি হবে। যেমন অত্যন্ত জটিল অ্যালগরিদমের ক্ষেত্রে, সেগুলোকে সহজ থেকে জটিল অনুশীলন আইটেমে ভাগ করা এবং পরে ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ কাজের দিকে এগোনো প্রয়োজন হতে পারে। এই পদ্ধতিকে ''পার্ট-হোল অ্যাপ্রোচ'' বলা হয় <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। পার্ট-টাস্ক অনুশীলনের সঠিক ব্যবহার পুনরাবৃত্ত দক্ষতার সঠিক সম্পাদন নিশ্চিত করে। এছাড়াও, দক্ষতাকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করতে ব্যাপক অতিরিক্ত অনুশীলন প্রয়োজন হতে পারে। স্বয়ংক্রিয়তার উপর খুব বেশি নির্ভরশীল কাজের ক্ষেত্রে, মাঝে মাঝে চূড়ান্ত লক্ষ্য সঠিকতা নয়। এমন ক্ষেত্রে সাধারণত গৃহীত সঠিকতা, উচ্চ গতি এবং সম্পাদনের সমন্বয়ই লক্ষ্য হয়। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে, পুনরাবৃত্ত দক্ষতাগুলো প্রথমে গতি চাপের মধ্যে অনুশীলন করা হয়, এরপর গতি মাপকাঠি অর্জিত হলে সময় ভাগাভাগি শর্তে অনুশীলন করা হয়। তারপরই দক্ষতাটি সমগ্র কাজ হিসেবে অনুশীলন করা হয়। অর্থাৎ, সম্পাদনার মানদণ্ড ধীরে ধীরে সঠিকতা থেকে সঠিকতা ও গতি, এবং পরে সঠিকতা, গতি ও সময় ভাগাভাগির শর্তে বা উচ্চ সামগ্রিক কাজের চাপের মধ্যে পরিবর্তিত হয় <ref>Salisbury, D.F., Richards, B.F., & Klein, D. (1985). Designing practice: A review of prescriptions and recommendations from instructional design theories. Journal of InstructionalDevelopment, 8(4), 9- 19.</ref>। সংক্ষিপ্ত, বিরতিপূর্ণ পার্ট-টাস্ক অনুশীলন বা অতিরিক্ত অনুশীলনের ফলাফল দীর্ঘ, ঘনীভূত পার্ট-টাস্ক অনুশীলনের চেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। পার্ট-টাস্ক অনুশীলন শেখার কাজগুলোর সাথে মিলিয়ে করানো উচিত, কারণ এতে বণ্টিত অনুশীলন হয় এবং শিক্ষার্থীরা পুনরাবৃত্ত উপাদানকে পুরো জটিল দক্ষতার সাথে সংযুক্ত করতে পারে <ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>।
=== '''গবেষণা ও বাস্তবায়ন''' ===
ফ্রেডরিক কে. সারফো এবং জান এলেন (২০০৭) কর্তৃক এক-দ্বারা-দ্বি পূর্বপরীক্ষা-পশ্চাত্পরীক্ষাভিত্তিক একটি আধা-প্রায়োগিক নকশা ব্যবহার করে শিক্ষার পরিবেশের কার্যকারিতা নিয়ে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে 4C/ID পদ্ধতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এর সাথে একত্রিত হয়ে শিক্ষাগত অগ্রগতিতে সেরা ফলাফল দেখিয়েছে<ref>Sarfo, F., & Elen, J. (2007). Developing technical expertise in secondary technical schools: The effect of 4C/ID learning environments. Learning Environ Res Learning Environments Research, 207-221. doi:10.1007/s10984-007-9031-2</ref>। নির্ভরশীল চলক ছিল শিক্ষাগত অগ্রগতি, যা পূর্বপরীক্ষা স্কোর থেকে পশ্চাত্পরীক্ষা স্কোর বিয়োগ করে হিসাব করা হয়েছে। স্বাধীন চলক ছিল তিনটি চিকিৎসা পরিস্থিতি। তিনটি দলের মধ্যে তুলনা করা হয়েছিল; প্রচলিত পাঠদানের পদ্ধতি বনাম আইসিটি সহ 4C/ID শিখন পরিবেশ বনাম আইসিটি ছাড়াই 4C/ID শিখন পরিবেশ। গবেষণায় ঘানা’র ছয়টি মাধ্যমিক প্রযুক্তি বিদ্যালয় থেকে ১৮ বছর গড় বয়স এবং ১.৩ বছর মান বিচ্যুতি সহ মোট ১২৯ জন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূল্যায়নের কাজের মধ্যে ছিল ২৬টি পূর্বপরীক্ষা ও পশ্চাত্পরীক্ষা উপাদান; ১৩টি রক্ষণশীলতা এবং ১৩টি স্থানান্তর পরীক্ষা। ফলাফল দেখিয়েছে যে তিনটি দলের শিক্ষার্থীদের পূর্বপরীক্ষা ও পশ্চাত্পরীক্ষার মধ্যে পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য ছিল। সমস্ত দলের গড় পূর্বপরীক্ষা স্কোর ছিল ৬.২৮, যেখানে পশ্চাত্পরীক্ষা স্কোর ছিল ১৪.৩৯। ফ্রেডরিক কে. সারফো এবং জান এলেন (২০০৭) প্রদত্ত ডেটা গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে আইসিটি সহ 4C/ID শিখন পরিবেশ পূর্ব ও পশ্চাত্পরীক্ষায় উভয় ক্ষেত্রেই উচ্চ স্কোর অর্জন করেছে<ref>Sarfo, F., & Elen, J. (2007). Developing technical expertise in secondary technical schools: The effect of 4C/ID learning environments. Learning Environ Res Learning Environments Research, 207-221. doi:10.1007/s10984-007-9031-2</ref>। গবেষকেরা উপসংহারে বলেছেন, এই ফলাফলগুলি নির্দেশ করে যে পরীক্ষামূলক দল এমন সমস্যা সমাধানে আরও দক্ষ ছিল, যেখানে যুক্তি, প্রতিফলন এবং প্রক্রিয়া, তথ্য ও ধারণা পুনরুদ্ধার করতে হয়েছে<ref>Sarfo, F., & Elen, J. (2007). Developing technical expertise in secondary technical schools: The effect of 4C/ID learning environments. Learning Environ Res Learning Environments Research, 207-221. doi:10.1007/s10984-007-9031-2</ref>।
শ্রেণিকক্ষে এই চার উপাদানবিশিষ্ট নির্দেশনামূলক নকশা ব্যবহার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষত জটিল পরিবেশে শেখার জন্য উপকারী হবে। এই মডেল প্রয়োগ করতে হলে, যিনি পাঠদান করছেন তার ঐ বিষয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হওয়া আবশ্যক। এতে করে শিক্ষার্থীদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে এবং বিষয়বস্তুর গভীর উপলব্ধি অর্জন সম্ভব হবে। মিডিয়া বা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অতিরিক্ত সহায়তাও প্রয়োজন হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, এই মডেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী সম্পর্ক একটি সমন্বিত দলের মতো কাজ করা আবশ্যক।
=== '''সারাংশ''' ===
চার উপাদান নির্দেশনামূলক নকশা মডেল জ্ঞানীয় শেখা এবং দক্ষতার উপর গবেষণার ভিত্তিতে নির্মিত। এটি জটিল দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা নকশার একটি কাঠামো প্রদান করে। মডেল অনুযায়ী, অভিজ্ঞতাগুলো বাস্তবসম্মত এবং ক্রমান্বয়ে আরও প্রামাণ্য কাজ হওয়া উচিত; যেমন প্রকল্প, কেস, ও দৃশ্যপট। শিক্ষার্থীদেরকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয় তা তথ্য দেওয়ার উপর নয়, বরং অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref>। এই উপাদানগুলো এমনভাবে অনুশীলন করা হবে যতক্ষণ না কেউ প্রয়োজনীয় স্বয়ংক্রিয়তার স্তরে পৌঁছায়, কোনো সহায়তা ছাড়াই। যখন শিক্ষার্থীরা চারটি উপাদান সম্পন্ন করে, তখন বলা যায় যে সে ঐ জ্ঞান বা কার্যকলাপে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, 4C/ID মডেল ভুলবিহীন শেখার ধারণাকে সমর্থন করে না<ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। এই মডেলটি জটিল দক্ষতার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বিকাশ এবং যেখানে স্থানান্তর একটি প্রধান শিক্ষাগত লক্ষ্য সেখানে ব্যবহার করা উচিত। এই মডেলটি ধারণাগত জ্ঞান বা প্রক্রিয়াগত দক্ষতা শেখানোর জন্য তৈরি নয়, এবং খুব সংক্ষিপ্ত প্রোগ্রামগুলোর জন্যও এটি উপযোগী নয়<ref>Merriënboer, J., Clark, R., & Croock, M. (2002). Blueprints for complex learning: The 4C/ID-model. ETR&D Educational Technology Research and Development, 50(2), 39-64.</ref>। যদিও এসব গবেষণা হয়েছে, চার উপাদান নির্দেশনামূলক নকশা মডেল নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।
== সমন্বিত শিক্ষা ==
'''প্রযুক্তি ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে সমন্বিত শিক্ষা'''
প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, এর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে, যার মাধ্যমে ব্যক্তি তথ্য সংগ্রহ ও শেয়ার করতে পারছে। '''সমন্বিত শিক্ষা''', অর্থাৎ সহপাঠী বা দলের মাধ্যমে জ্ঞান ভাগাভাগি ও অর্জন এখন প্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাকশনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া জ্ঞানীয় বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিক্ষার্থীদের তাদের সহপাঠী ও শিক্ষকের সাথে মিথস্ক্রিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিময়গুলোর মধ্যে পড়ে<ref>Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Norby, M. M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.) Pearson.</ref>। তবে, একটি প্রশ্ন উঠে আসে—এই ধরনের মিথস্ক্রিয়াগুলোতে প্রযুক্তি কীভাবে সহায়তা করতে পারে বা তা অন্তর্ভুক্ত করা যায়? একটি ভাল প্রযুক্তি নকশা শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারে যদি তা আমাদের জ্ঞানীয় ব্যবস্থার কার্যপদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়; যেমন মনোযোগ, কার্যকারী স্মৃতি, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি এবং কীভাবে জটিল জ্ঞানীয় দক্ষতা গড়ে ওঠে। এর একটি উদাহরণ হলো—সহায়ক এবং সময়োপযোগী (JIT) তথ্য, প্রশিক্ষণ এবং ধাপে ধাপে সহায়তা যা কার্যকর শেখার কৌশল হিসেবে কাজ করে। একটি মূল বিষয় হলো—একটি ভালো নকশা ব্যবস্থা আমাদের জ্ঞানীয় ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এই অংশটি বিভিন্ন প্রযুক্তি নকশার মডেল এবং সমন্বিত শিক্ষা এই ব্যবস্থার মধ্যে কার্যকর কি না, তার বিশ্লেষণ দ্বারা বিভক্ত করা হবে। যেসব মডেলগুলোর মাধ্যমে এটি বিশ্লেষণ করা হবে তা হলো—বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা, সহপাঠীদের সাথে শেখা, অনুসন্ধানের মাধ্যমে শেখা, সৃজনের মাধ্যমে শেখা, এবং গেমসের মাধ্যমে শেখা। সমন্বিত শিক্ষা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়, যখন বিষয়বস্তু শেখানো বা ভাগাভাগি করা হয়। এটি শিক্ষার্থীদের একে অপরের সাথে দলগত কাজ করার অভিজ্ঞতা দেয়। তবে, যদিও এটি শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দারুণ একটি ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যায়, এটি কিছু সীমাবদ্ধতা বহন করে এবং এখনো পুরোপুরি কার্যকরভাবে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। শিক্ষকদের এসব প্রযুক্তি ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়, তবে এগুলো সহায়ক এবং তথ্যবহুল হতে পারে।
প্রযুক্তি ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরন ও এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই যা বিবেচনা করতে হয় তা হলো—মানুষ কীভাবে শেখে? প্রায়ই দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী তথ্য শেখার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে কারণ তারা বোঝার চেয়ে মুখস্থ করায় বেশি মনোযোগ দেয়<ref>Bransford, J. D., Brown, A. L., & Cocking, R. R. (2000). How people learn. Washington DC: National Academy Press. (pp. 1-50)</ref>। তবে, নোবেল বিজয়ী হারবার্ট সাইমনের একটি চমৎকার উক্তি আছে—“জানার অর্থ এখন আর কেবল স্মরণ করা ও পুনরাবৃত্তি করা নয়, বরং এটি কোথায় খুঁজে পাওয়া যায় ও কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা জানা।” বিষয়বস্তুর প্রতি ভালোভাবে বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার্থীদের থাকতে হবে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রকৃত তথ্যজ্ঞান, ধারনার কাঠামোতে তথ্য ও ধারণা বোঝা এবং জ্ঞানকে এমনভাবে সংগঠিত করা যাতে তা সহজে মনে পড়ে ও প্রয়োগ করা যায়। এর মানে হলো—যদি শিক্ষার্থীরা প্রকৃত তথ্যভিত্তিক ভিত্তি রাখে, তবে তারা জানবে কোন তথ্য সত্য এবং তাদের শেখার সাথে প্রাসঙ্গিক। ধারনার কাঠামোতে তথ্য বোঝা মানে হলো শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে শিখছে তার প্রেক্ষাপটে তথ্যের তাৎপর্য বুঝতে পারছে এবং কিভাবে তা ঐ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। জ্ঞানকে এমনভাবে সংগঠিত করা যাতে তা সহজে উদ্ধার ও প্রয়োগযোগ্য হয়, মানে হলো শিক্ষার্থীরা যা শিখেছে বা শিখছে তা অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োগ করতে সক্ষম হচ্ছে। তবে এসবের বাস্তবায়নে কিছু অসুবিধা দেখা যায়। শিক্ষকরা সমস্যায় পড়েন কারণ শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে আগে থেকে কিছু ধারণা নিয়ে আসে। একই সঙ্গে, শিক্ষকদের একটি নির্ধারিত পাঠসূচি শেষ করতে হয়, এবং যখন তাদের প্রতিটি বিষয়ে গভীরভাবে যেতে হয় বা কোনো অংশ বারবার শেখাতে হয়, তখন তা কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষাজীবনে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে অনেক শিক্ষক বিশ্বাস করেন যে পূর্ববর্তী শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিষয় শিখে এসেছে, কিন্তু তা সবসময় সঠিক নয়। কিছু শিক্ষার্থী মনে করতে পারে তারা পিছিয়ে পড়েছে, বা তারা প্রশ্ন করতে কিংবা সাহায্য চাইতে লজ্জা পায়। এখানেই প্রযুক্তি ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমাতে এবং শ্রেণিকক্ষে বা শিক্ষার্থীর নিজস্ব সময়ে ব্যবহারের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে, এই প্রযুক্তি ব্যবস্থাগুলো শিক্ষকের বিকল্প নয়, বরং শিক্ষকের পাঠের পরিপূরক হিসেবে কাজ করা উচিত। এগুলোর কাজ শেখার ভিত্তি তৈরি করা নয়, বরং পরীক্ষার প্রস্তুতি বা প্রকল্পে সহায়তার জন্য পর্যালোচনার উপকরণ হিসেবে কাজ করা। শিক্ষকরা যদি এগুলোর উপর অতিরিক্ত নির্ভর করে, তবে শিক্ষার্থীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও মিথস্ক্রিয়া হারিয়ে ফেলবে যা শুধুমাত্র একজন বাস্তব শিক্ষক থেকেই পাওয়া সম্ভব। প্রযুক্তিকে শিক্ষকের বিকল্প হিসেবে দেখা সঠিক পন্থা নয়, বরং এটি একটি সহায়ক সরঞ্জাম হিসেবে দেখা উচিত।
এই ব্যবস্থাগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া যাক—
'''বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা: কগনিটিভ টিউটর ও টেলিমেন্টরিং'''
প্রযুক্তি ব্যবস্থার প্রথম ধরণটি হলো বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা, যার দুটি উদাহরণ হলো '''কগনিটিভ টিউটর''' এবং টেলিমেন্টরিং। '''কগনিটিভ টিউটর''' হলো “এক ধরনের বুদ্ধিমান টিউটর যা ‘কার্যকরভাবে শেখা’কে সহায়তা করে” <ref>Bollen, L., Harrer, A., Mclaren, B. M., Seawall, J., & Walker, E. (1995) Collaboration and Cognitive Tutoring: Integration, Empirical Results, and Future Direction</ref>। কগনিটিভ টিউটর জন অ্যান্ডারসনের ACT তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এই তত্ত্বে তিনটি মূলনীতি রয়েছে—প্রথমটি হলো প্রক্রিয়াগত ও ঘোষণামূলক জ্ঞানের পার্থক্য, দ্বিতীয়টি হলো জ্ঞান সংকলন এবং তৃতীয়টি হলো অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞানকে মজবুত করা। <ref>Anderson, J., Corbett, A. T., Koedinger, K. R., & Pelletier, R. (1995). Cognitive tutors: Lessons learned: Journal of the Learning Sciences, 4(2), 167-207.</ref> কগনিটিভ টিউটরের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের শেখার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে নির্দিষ্ট প্রসঙ্গভিত্তিক প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করা। মূলত গণিত এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিক্ষায় কগনিটিভ টিউটর ব্যবহৃত হয়। এটি শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব গতিতে কাজ করার সুযোগ দেয়, ফলে তারা বিষয়বস্তুর গভীরতা অনুধাবন করতে পারে এবং অন্যদের সাথে যৌথভাবে সমস্যা সমাধানে অংশ নিতে পারে।
কগনিটিভ টিউটরের ওপর একটি গবেষণা করেছিলেন কেনেথ আর. কোয়েডিংগার, যার শিরোনাম ছিল *Intelligent Tutoring Goes To School in the Big City*। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, “The Pittsburgh Urban Mathematics Project (PUMP) একটি বীজগণিত পাঠক্রম তৈরি করেছে যা বাস্তব জীবনের সমস্যার গাণিতিক বিশ্লেষণ এবং কম্পিউটেশনাল টুল ব্যবহারের ওপর কেন্দ্রীভূত। আমরা PAT নামের একটি বুদ্ধিমান টিউটর তৈরি করেছি, যা এই পাঠক্রমকে সহায়তা করে এবং এটি পিটসবার্গের তিনটি স্কুলে নবম শ্রেণির বীজগণিত পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। PAT শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ছিল কারণ এটি শ্রেণিকক্ষে যারা শেখার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ত তাদের সহায়তা করত। ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে PAT পাঠক্রমটি ১০টি পাঠ ও ২১৪টি সমস্যার অন্তর্ভুক্তিতে সম্প্রসারিত হয়। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে দুই দিন কম্পিউটার ল্যাবে PAT-এ কাজ করত, এবং তাদের শেখার সময় আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ (প্রায় ২৫ দিন থেকে ৭০ দিনে) বৃদ্ধি পায়।” <ref>Anderson, J. R., Hadley, W. H., Koedinger, K. R., & Mark, M. A. (1997).Intelligent tutoring goes to school in the big city. International Journal of Artificial Intelligence in Education (IJAIED), 8, 30-43.</ref>
টেলিমেন্টরিং, যা ‘ই-মেন্টরিং’ বা ‘অনলাইন-পরামর্শ’ নামেও পরিচিত <ref>Anderson, J. R., Hadley, W. H., Koedinger, K. R., & Mark, M. A. (1997). Intelligent tutoring goes to school in the big city. International Journal of Artificial Intelligence in Education (IJAIED), 8, 30-43.</ref>, শিক্ষার্থীদের এমন একজন ব্যক্তির সাথে কাজ করার সুযোগ দেয় যিনি তাদের কোর্স উপাদানের সমস্যায় সহায়তা করতে পারেন। এই মেন্টরিং প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন এবং সমস্যার সমাধান কেন্দ্রিক। তবে টেলিমেন্টরিং-এর একটি সীমাবদ্ধতা হলো, শিক্ষার্থীরা একই পরামর্শদাতার সাথে বারবার কাজ করতে পারে না। তারা পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করলেও একজন শিক্ষকের সাথে যেরকম ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠে, তা হয় না। সরাসরি একজন শিক্ষকের সাথে শিখন এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে শেখার মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি ভিন্ন, যা শিক্ষার্থী ও পরামর্শকের মধ্যে সংযোগহীনতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। কগনিটিভ টিউটর বা সফটওয়্যার নির্ভর শেখার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
'''সহপাঠীদের সঙ্গে শেখা: নলেজ ফোরাম ও স্টারবার্স্ট'''
নলেজ ফোরাম একটি সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম যেখানে শিক্ষার্থীরা ধারণাগুলো নিয়ে কাজ করে এবং তা বিকশিত করে। এটি ব্যক্তির পরিবর্তে সম্প্রদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে। এখানে শিক্ষার্থীরা বা ব্যক্তিরা এমন একটি ডেটাবেস তৈরি করতে পারে যেখানে জ্ঞান গঠিত হয়, আর এখানে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নলেজ ফোরামের মূল উপাদান হলো ‘নোট’ এবং ‘ভিউ’ <ref>Scardamalia, M., & Bereiter, C. (2006). Knowledge building: theory, pedagogy, and technology. In R. K. Sawyer (Ed.), The Cambridge handbook of the learning sciences (pp. 97–119). New York: Cambridge University Press</ref>। একটি ভিউ হলো ব্যক্তিরা যে নোট তৈরি করে সেগুলোর একটি সংগঠিত রূপ, যা ধারণা মানচিত্র, চিত্র বা যেকোনো ভিজ্যুয়াল কাঠামো হতে পারে। এই কাঠামোর মধ্যেই নোটগুলো প্রদর্শিত হয়। এটি বিশেষভাবে সহায়ক কারণ এটি ভিজ্যুয়াল লার্নিংকেও অন্তর্ভুক্ত করে। শিক্ষার্থীরা চিত্র ও মানচিত্রের মাধ্যমে ধারণাগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে এবং তা বোঝার সুযোগ পায়। এটি এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দলগতভাবে কাজ করতে পারে এবং একটি ডেটাবেসে তথ্য যোগ করতে পারে, যা সময়ের সাথে সাথে প্রসারিত হয়।
তবে জ্ঞান অর্জনের জন্য শুধুমাত্র নলেজ ফোরামই একমাত্র মাধ্যম নয়। বই, বক্তৃতা ও শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি পায়। নলেজ ফোরাম মূলত একটি ডেটাবেস যেখানে একটি বিষয় বিকশিত ও রূপান্তরিত হয়। নলেজ ফোরামের অনুরূপ স্টারবার্স্ট নামের আরও একটি পদ্ধতিও রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে ধারণা ভাগাভাগি করতে পারে। তবে স্টারবার্স্টে ধারণাগুলো একটি জালের মতো বিস্তৃত হয়। এই দুটি পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞান গঠন ও সম্প্রসারণ।
নলেজ ফোরাম ব্যবহার করে ক্যারল এবং ইউয়েন ইয়ান চ্যান একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে:
“নমুনায় হংকংয়ের আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফর্ম ওয়ান থেকে সিক্স (বয়স ১২–১৭) পর্যন্ত ৫২১ জন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা কম্পিউটার-সহায়িত জ্ঞান নির্মাণের ওপর একটি গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছিল। নমুনার মধ্যে ৩২২ জন পুরুষ এবং ১৯৯ জন মহিলা শিক্ষার্থী ছিল, যেখানে ২১৬ জন জুনিয়র হাই (গ্রেড ৭–৯, বয়স ১২–১৪) এবং ৩০৫ জন সিনিয়র হাই (গ্রেড ১০–১২, বয়স ১৫–১৭) শ্রেণির। হংকংয়ে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কৃতিত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যান্ডে ভাগ করা হয়; এখানে ২৬৭ জন শিক্ষার্থী উচ্চ ব্যান্ড এবং ২৫৪ জন নিম্ন ব্যান্ডের স্কুল থেকে এসেছে। এই গবেষণাটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়-বিদ্যালয় অংশীদারিত্ব প্রকল্পের অংশ ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য জ্ঞান নির্মাণ পেডাগজি উন্নয়ন করা। প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক/পরামর্শকগণ শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করতেন। পুরো বছরজুড়ে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করা হতো যাতে শিক্ষকরা জ্ঞান নির্মাণের দার্শনিক ও পদ্ধতিগত দিকটি ভালোভাবে বুঝতে পারেন; প্রকল্প শিক্ষকদের একটি দল মিলে পাঠক্রম পরিকল্পনা করতেন এবং শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শনে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক ও শিক্ষক একসাথে যেতেন।
একটি আদর্শ জ্ঞান নির্মাণশীল শ্রেণিকক্ষে, শিক্ষার্থীরা সাধারণত অনুসন্ধানের ক্ষেত্র নির্ধারণ করে এবং তাদের নিজস্ব ধারণা ও প্রশ্ন উপস্থাপন করে—‘ধারণাগুলোকে জনসমক্ষে তুলে ধরা’কে সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয় <ref>Scardamalia, M., & Bereiter, C. (2006). Knowledge building: theory, pedagogy, and technology. In R. K. Sawyer (Ed.), The Cambridge handbook of the learning sciences (pp. 97–119). New York: Cambridge University Press</ref>। এশীয় শ্রেণিকক্ষগুলিতে শিক্ষার্থীদের একটি সম্প্রদায় হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা পাওয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পে শ্রেণিকক্ষ ও অনলাইন আলোচনার সমন্বয় ছিল, যেখানে শিক্ষার্থীরা সহযোগিতামূলক অনুসন্ধানে অংশগ্রহণ করত—প্রশ্ন উপস্থাপন, ধারণা ও তত্ত্ব প্রকাশ, অন্যদের ধারণার ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ এবং সমষ্টিগত জ্ঞান উন্নয়নে ব্যাখ্যা গঠন করত।
তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল দুটি প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার অভিজ্ঞতা এবং অনলাইন শেখার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করেছিল। বিশ্লেষণের সময় অনলাইন শেখার পরিবর্তনশীল প্রতিক্রিয়াযুক্ত উপাদানগুলো বাদ দিয়ে কেবলমাত্র জ্ঞান নির্মাণ এবং শেখার পদ্ধতির উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের Knowledge Forum ব্যবহারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের জন্য Analytic Toolkit ব্যবহার করা হয়েছিল। Analytic Toolkit Version 4.6 শিক্ষার্থীদের অনলাইন ফোরামে পারস্পরিক যোগাযোগের ধরণ বিশ্লেষণের জন্য সর্বোচ্চ ২৭টি বিশ্লেষণ সরবরাহ করে।
আমরা আগের গবেষণাগুলোতে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক নির্বাচন করেছি, যেমন:
(i) লিখিত নোটের সংখ্যা: এটি অনলাইন অংশগ্রহণ পরিমাপের সবচেয়ে প্রচলিত সূচক। (ii) স্ক্যাফোল্ডস: স্ক্যাফোল্ড হলো চিন্তার সূচক বাক্যাংশ যা শিক্ষার্থীদের চিন্তা গঠনে সহায়তা করে, যেমন “আমি বুঝতে চাই”, “আরও ভালো একটি তত্ত্ব”, “আমাদের জ্ঞান একত্রিত করা”। (iii) সংশোধন: শিক্ষার্থীরা নোট সংশোধনের চেষ্টা করলে তা রেকর্ড করা হয়। জ্ঞান নির্মাণের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ধারণার ওপর গভীর কাজের ইঙ্গিত দেয়। (iv) পড়া নোটের সংখ্যা: এটি কমিউনিটি সচেতনতা যাচাইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অন্যদের কী লেখা হয়েছে তা না জেনে আলোচনায় অংশ নেওয়া যায় না। (v) বিল্ড-অন নোটের সংখ্যা: এটি নতুন নোট পোস্ট করার সংখ্যা থেকে আলাদা, এটি পূর্ববর্তী নোটের প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে। এটি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার গভীরতা বোঝায়। (vi) কীওয়ার্ড: শিক্ষার্থীরা নোট লেখার সময় কীওয়ার্ড যোগ করতে পারে। এই কীওয়ার্ড ব্যবহার করে অন্যরা সম্পর্কিত বিষয়ে আরও নোট খুঁজে পেতে পারে। কীওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান এবং কমিউনিটি সচেতনতা প্রকাশ পায়।” <ref>Chan, C. Chan, Y. (2010). Students’ views of collaboration and online participation in Knowledge Forum. Computers & Education, Vol 57(1), Aug, 2011. pp. 1445-1457</ref>
'''অনুসন্ধানের মাধ্যমে শেখা: অ্যাঙ্করড নির্দেশনা এবং বুদ্ধিমান'''
নোঙ্গরযুক্ত নির্দেশের সর্বোত্তম উদাহরণ হিসাবে পরিচিত জ্যাস্পার উডবারি সিরিজের অ্যাডভেঞ্চারস। এই সিরিজগুলো জটিল ভিডিও-ভিত্তিক সমস্যা এবং এটি তৈরি করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি জ্যাস্পার অ্যাডভেঞ্চার একটি জটিল গণিত-ভিত্তিক সমস্যার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যা সমাধান করা দরকার। যেহেতু এই ধরনের গাণিতিক সমস্যাগুলো খুব জটিল, এগুলো প্রায়শই একা সমাধান করা খুব কঠিন। একসাথে কাজ করার সময়, শিক্ষার্থীরা একাধিক সঠিক সমাধান নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং কেন তারা তাদের সঠিক বলে মনে করে তার প্রমাণ সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রদত্ত সমস্যাগুলোর বিভিন্ন সমাধান নিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা জড়িত কারণ কেবলমাত্র একটি সঠিক উত্তর নেই। সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করতে পারে এমন আরেকটি উপায় হলো ওয়াইজ (ওয়েব-ভিত্তিক অনুসন্ধান বিজ্ঞান পরিবেশ) এর মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরা একটি ওয়েব-ভিত্তিক পরিবেশে একসাথে কাজ করে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পুনর্ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে। ওয়াইজের সাহায্যে শিক্ষকরা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন এবং শিক্ষার্থীরা সমাধান হিসাবে কী সরবরাহ করছে তা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন। "ওয়াইজ বিষয়টি সম্পর্কে প্রমাণ এবং ইঙ্গিত সরবরাহ করে; নোট, ভিজ্যুয়ালাইজেশন, আলোচনা এবং মূল্যায়ন সরঞ্জাম; এবং সহযোগিতা, প্রতিফলন এবং সমাধানগুলোর নকশার জন্য অনুরোধ জানায় " নোঙ্গরযুক্ত নির্দেশের সাথে বড় ধারণাগুলো হলো শিক্ষার্থীরা বোঝার পাশাপাশি প্রসঙ্গে শেখার মাধ্যমে শিখছে। জেনারেটিভ লার্নিংও ঘটে এবং এখানেই উপ-লক্ষ্য তৈরি হয়। জ্ঞানী হিসাবে একটি প্রোগ্রামের সাথে বড় ধারণাগুলো হলো শেখা ইচ্ছাকৃত এবং শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় পূর্বের জ্ঞানকে একীভূত করছে।
'''সৃষ্টির মাধ্যমে শেখা: স্ক্র্যাচ'''
সৃষ্টির মাধ্যমে শেখার একটি উদাহরণ হলো প্রোগ্রাম স্ক্র্যাচ। এটি এমন একটি ওয়েবসাইট যা মিডিয়া এবং ভিজ্যুয়ালগুলো প্রধান উপাদান। স্ক্র্যাচে, শিক্ষার্থীরা একটি অনলাইন সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রোগ্রামে ভিজ্যুয়াল তৈরি করতে স্বতন্ত্রভাবে বা একটি গ্রুপ হিসাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। তারা এই ভিজ্যুয়ালগুলো একে অপরের সাথে ভাগ করে নিতে সক্ষম। স্ক্র্যাচের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বস্তুর ব্যবহার করে চিন্তা করতে সক্ষম হয়, পাশাপাশি তাদের নিজস্ব কল্পনা থেকে কিছু তৈরি করতে সক্ষম হয়। তারা তাদের ভিজ্যুয়াল সৃষ্টির পাশাপাশি অডিও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। শিক্ষার্থীরা এই টুকরোগুলো তৈরিতে একসাথে কাজ করে এবং কোনও প্রকল্পের অংশ হিসাবে শ্রেণিকক্ষে সেগুলো ভাগ করে নিতে পারে, বা শিক্ষকরা এটি শিখছেন এমন কোনও থিম বা বিষয় থেকে এটি তৈরি করতে পারেন। এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে এবং সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। শিক্ষকরা তাদের পাঠ পরিকল্পনায় কীভাবে স্ক্র্যাচ ব্যবহার করতে পারেন তার একটি উদাহরণ হলো কল্পনা করুন যে আপনি আপনার অষ্টম শ্রেণির ইতিহাসের ক্লাসে রয়েছেন এবং আপনার চূড়ান্ত প্রকল্পের জন্য আপনাকে এমন একটি বিষয় চয়ন করতে হবে যা আপনি সেমিস্টারের মধ্যে শিখেছেন এবং এর একটি ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা তৈরি করুন। প্রকল্পটি দলবদ্ধভাবে সম্পন্ন হোক বা পৃথকভাবে সম্পন্ন হোক। আপনি অন্যান্য সদস্যদের সাথে কাজ করেন এবং প্রোগ্রামটি স্ক্র্যাচ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন, আপনি আহত পুরুষ এবং সৈন্য ইত্যাদির মতো বিভিন্ন চরিত্র তৈরি করতে শুরু করেন। আপনি এবং আপনার গ্রুপের সদস্যরা ধারণাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রতিটি ধারণা টুকরো টুকরো করে তৈরি করতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে আপনার গ্রুপের মনে যে চিত্রটি ছিল তা সৃজনশীলভাবে জীবন্ত হয়ে উঠছে। আপনি এখন একটি ভিজ্যুয়াল ছবিতে শিখেছেন ইতিহাসের টুকরোটি দেখতে সক্ষম হন এবং আপনি এটি আপনার অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে ভাগ করতে পারেন।
'''গেমসের মাধ্যমে শেখা: কোয়েস্ট আটলান্টিস'''
শিক্ষার্থীরা সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে পারে এমন আরেকটি উপায় হলো গেমসের মাধ্যমে, বিশেষত একটি খেলা হলো কোয়েস্ট আটলান্টিস। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং ক্ষেত্র সরবরাহ করে কারণ তারা এমন সমস্যা এবং কাজগুলোর মুখোমুখি হয় যা তাদের বেছে নিতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। এটি একটি আকর্ষক খেলা তবে এটি শ্রেণিকক্ষে মাপসই নাও হতে পারে বরং শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময়ে। প্রসঙ্গটি '''অবস্থিত শিক্ষা''' প্রদানের জন্য সর্বোত্তম; এটি এমন শিক্ষা যা সামাজিক সম্পর্ক থেকে সঞ্চালিত হয় এবং পূর্ববর্তী জ্ঞানকে নতুন প্রসঙ্গে সংযুক্ত করে।
কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহারের মাধ্যমে সহযোগী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের উপকরণের সাথে জড়িত করার আরেকটি দুর্দান্ত উপায়। এটি যেভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে তাতে বিপত্তি রয়েছে। শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ডিভাইস নাও থাকতে পারে পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ফোকাসহীন হয়ে উঠতে পারে এবং প্রোগ্রামগুলোর সাথে কেবল খেলতে শুরু করতে পারে। যখন কোনও সমস্যা ঘটে তখন ইঙ্গিতগুলো সরবরাহ করে এমন প্রোগ্রামগুলোর জন্য, শিক্ষার্থীরা এমনকি চেষ্টা না করেই ক্রমাগত ইঙ্গিত পেতে পারে। যদিও এই প্রযুক্তি ব্যবস্থাগুলোর একটি ইতিবাচক রয়েছে, তবে নেতিবাচক প্রভাবগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। উল্লিখিত হিসাবে, এই সিস্টেমগুলোর কোনওটিই শিক্ষার্থীদের শেখার প্রাথমিক ভিত্তি হওয়া উচিত নয়, পরিবর্তে তারা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ব্যবহারের জন্য একটি পরিপূরক সংযোজন হওয়া উচিত।
== শব্দকোষ ==
'''জ্ঞানীয় চাপ তত্ত্ব:''' জন সোয়েলার দ্বারা প্রস্তাবিত একটি তত্ত্ব এবং কার্যকর স্মৃতি এবং নির্দেশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
'''কগনিটিভ টিউটর''': এক ধরনের বুদ্ধিমান টিউটর যা 'গাইডেড লার্নিং বাই ডুয়িং' সমর্থন করে
'''সহযোগী শিক্ষা''': সহকর্মী / গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং শেখা
'''দক্ষতা বিপরীত প্রভাব''': পর্যায় যেখানে সমর্থন এবং নির্দেশমূলক পদ্ধতি জ্ঞানীয় চাপ বৃদ্ধির কারণে ব্যক্তিদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
'''বহিরাগত জ্ঞানীয় চাপ হলো উপাদান দ্বারা কার্যকর স্মৃতি যেভাবে প্রভাবিত হয় তা উপস্থাপিত হয়'''
'''জার্মেইন জ্ঞানীয় চাপ:''' উপস্থাপিত তথ্যের সাথে সম্পর্কিত অভ্যন্তরীণ জ্ঞানীয় চাপের পরিমাণ প্রক্রিয়াকরণের জন্য নিবেদিত কার্যকর স্মৃতির পরিমাণ এবং কেবলমাত্র একজন শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে যুক্ত।
'''অভ্যন্তরীণ জ্ঞানীয় চাপ:''' তথ্য উপস্থাপনের পদ্ধতি বোঝায়।
'''অ-পুনরাবৃত্ত দক্ষতা:''' কাজগুলো যা প্রচেষ্টামূলক, ত্রুটি-প্রবণ, সহজেই ওভারলোড হয় এবং মনোনিবেশ করা প্রয়োজন; =স্কিমাটা
'''পুনরাবৃত্ত দক্ষতা''': পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ; এগুলো অল্প বা কোনও প্রচেষ্টা ছাড়াই ঘটে, ডেটা-চালিত এবং খুব কম বা কোনও সচেতন মনোযোগের প্রয়োজন হয় না
'''অবস্থিত শিক্ষা:''' সামাজিক সম্পর্ক থেকে সঞ্চালিত শেখা এবং পূর্ববর্তী জ্ঞানকে নতুন প্রসঙ্গে সংযুক্ত করা।
'''টাস্ক ক্লাস''': একটি সহজ থেকে জটিল বা অর্থপূর্ণ কাজ কাজ করার নীতি
== প্রস্তাবিত পাঠ ==
* - ব্রানসফোর্ড, জে ডি, ব্রাউন, এএল, এবং ককিং, আর আর (২০০০)। মানুষ কিভাবে শেখে। ওয়াশিংটন ডিসি: জাতীয় একাডেমি প্রেস।
* Chan, C. Chan, Y. (২০১০)। জ্ঞান ফোরামে সহযোগিতা এবং অনলাইন অংশগ্রহণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত। কম্পিউটার ও শিক্ষা, ভলিউম ৫৭ (১), আগস্ট, ২০১১। পৃষ্ঠা ১৪৪৫–১৪৫৭
* সারফো, এফ, এবং এলেন, জে (২০০৭)। "মাধ্যমিক প্রযুক্তিগত বিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিকাশ: ৪ সি / আইডি শেখার পরিবেশের প্রভাব"। লার্নিং এনভাইরন রেস লার্নিং এনভায়রনমেন্টস রিসার্চ, ২০৭-২২১। ডিওআই:১০.১০০৭/s১০৯৮৪-০০৭-৯০৩১-২
== তথ্যসূত্র ==
* - অ্যান্ডারসন, জে, কর্বেট, এটি, কোডিঞ্জার, কেআর, এবং পেলেটিয়ার, আর (১৯৯৫)। জ্ঞানীয় শিক্ষক: শিখেছি পাঠ: লার্নিং সায়েন্সেসের জার্নাল, ৪ (২), ১৬৭-২০৭।
* - অ্যান্ডারসন, জে আর, হ্যাডলি, ডাব্লুএইচ, কোডিঞ্জার, কেআর, এবং মার্ক, এমএ (১৯৯৭)। বুদ্ধিমান টিউটরিং বড় শহরের স্কুলে যায়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন এডুকেশন (আইজেএআইইডি), ৮, ৩০-৪৩।
* বারাব, এসএ, ডজ, টি, এবং ইনগ্রাম-গোবল, এ (২০০৮)। রিফ্লেক্সিভ প্লে স্পেস: একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা। ''গেমস, লার্নিং অ্যান্ড সোসাইটি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ, এমএ।''
* - ব্রুনিং, আর এইচ, শ্রাও, জি জে, এবং নর্বি, এম এম (২০১১)। Cognitive psychology and instruction (English ভাষায়) (৫th সংস্করণ)। পিয়ারসন।
* বোলেন, এল, হ্যারার, এ, ম্যাকলারেন, বিএম, সিওয়াল, জে, এবং ওয়াকার, ই (১৯৯৫) সহযোগিতা এবং জ্ঞানীয় টিউটরিং: ইন্টিগ্রেশন, অভিজ্ঞতামূলক ফলাফল এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
* - ব্রানসফোর্ড, জে ডি, ব্রাউন, এএল, এবং ককিং, আর আর (২০০০)। ''মানুষ কিভাবে শেখে।'' ওয়াশিংটন ডিসি: জাতীয় একাডেমি প্রেস।
* - ক্রেগ, এস, ঘোলসন, বি, এবং ড্রিসকোল, ডি (২০০২)। "মাল্টিমিডিয়া শিক্ষাগত পরিবেশে অ্যানিমেটেড শিক্ষামূলক এজেন্ট: এজেন্ট বৈশিষ্ট্য, চিত্র বৈশিষ্ট্য এবং অপ্রয়োজনীয়তার প্রভাব"। শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান জার্নাল, ৯৪ (২), ৪২৮-৪৩৪। ডিওআই:১০.১০৩৭//০০২২-০৬৬৩.৯৪.২.৪২৮
* Chan, C. Chan, Y. (২০১০)। জ্ঞান ফোরামে সহযোগিতা এবং অনলাইন অংশগ্রহণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত। কম্পিউটার ও শিক্ষা, ভলিউম ৫৭ (১), আগস্ট, ২০১১। পৃষ্ঠা ১৪৪৫–১৪৫৭
* ↑ Kevin O'Neil, D., & Harris, J. B. (২০০৪)। পাঠ্যক্রম ভিত্তিক টেলিমেন্টরিং প্রোগ্রামগুলোতে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং উন্নয়নমূলক প্রয়োজনীয়তাগুলো ব্রিজ করা। ''শিক্ষায় প্রযুক্তি সম্পর্কিত গবেষণা জার্নাল, ৩৭ (২),'' ১১১-১২৮
* মায়ার, আর.ই., হাইজার, জে, এবং লন, এস (২০০১)। মাল্টিমিডিয়া লার্নিংয়ে জ্ঞানীয় সীমাবদ্ধতা: বেশি উপাদান উপস্থাপন করার সময় কম বোঝার ফলাফল হয়। ''শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান জার্নাল ৯৩'' (১), ১৮৭-১৯৮।
* মেরিয়েনবোয়ার, জে, ক্লার্ক, আর, এবং ক্রুক, এম (২০০২)। জটিল শিক্ষার জন্য ব্লুপ্রিন্ট: ৪ সি / আইডি-মডেল। ইটিআর অ্যান্ড ডি শিক্ষাগত প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন, ৫০ (২), ৩৯-৬৪।
* সারফো, এফ, এবং এলেন, জে (২০০৭)। "মাধ্যমিক প্রযুক্তিগত বিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিকাশ: ৪ সি / আইডি শেখার পরিবেশের প্রভাব"। লার্নিং এনভাইরন রেস লার্নিং এনভায়রনমেন্টস রিসার্চ, ২০৭-২২১। ডিওআই:১০.১০০৭/s১০৯৮৪-০০৭-৯০৩১-২
* Scardamalia, M., & Bereiter, C. (২০০৬)। জ্ঞান নির্মাণ: তত্ত্ব, শিক্ষাবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি। ভিতরে আর কে সাওয়ার (সম্পাদনা)। ''লার্নিং সায়েন্সেসের কেমব্রিজ হ্যান্ডবুক'' (পৃষ্ঠা ৯৭-১১৮)। নিউ ইয়র্ক: কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
* স্যালসবারি, ডিএফ, রিচার্ডস, বিএফ, এবং ক্লেইন, ডি (১৯৮৫)। ডিজাইনিং অনুশীলন: নির্দেশমূলক নকশা তত্ত্বগুলো থেকে প্রেসক্রিপশন এবং সুপারিশগুলোর একটি পর্যালোচনা। জার্নাল অফ ইনস্ট্রাকশনাল ডেভেলপমেন্ট, ৮ (৪), ৯-১৯।
* Schnotz, W., & Rasch, T. (২০০৫)। মাল্টিমিডিয়া লার্নিংয়ে অ্যানিমেশনগুলোর প্রভাবগুলো সক্ষম, সহজতর করা এবং বাধা দেওয়া: জ্ঞানীয় চাপ হ্রাস কেন শেখার উপর নেতিবাচক ফলাফল আনতে পারে। ইটিআর অ্যান্ড ডি শিক্ষাগত প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন, ৫৩ (৩), ৪৭-৫৮।
* Sweller, J. (২০১০)। উপাদান ইন্টারঅ্যাক্টিভিটি এবং অভ্যন্তরীণ, বহিরাগত এবং জার্মান জ্ঞানীয় চাপ। ''শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান পর্যালোচনা ২২'' (২), ১২৩-১৩৮। ডিওআই: ১০.১০০৭// এস ১০৬৪৮-০১০-৯১২৮-৫।
* , ভ্যান মেরিয়েনবোয়ার, জে, এবং পাস, এফ (১৯৯৮)। জ্ঞানীয় আর্কিটেকচার এবং নির্দেশমূলক নকশা। শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান পর্যালোচনা, ১০ (৩), ২৫১-২৯৬। doi:১০৪০-৭২৬X/৯৮/০৯০০-০২৫১S১৫.০০/০
* ভ্যান মেরিয়েনবোয়ার, জে, এবং আইরেস, পি (২০০৫)। জ্ঞানীয় চাপ তত্ত্ব এবং ই-লার্নিংয়ের জন্য এর নকশার প্রভাব নিয়ে গবেষণা। ''শিক্ষাগত প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন ৫৩'' (৩), ৫-১৩।
{{সূত্র তালিকা}}
tkd7w4g9un21yvzoxy2rna982n0uunt
রন্ধনপ্রণালী:আমড়ার আচার
104
26406
84064
83846
2025-06-12T01:26:45Z
MD Abu Siyam
8392
84064
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = আচার
| পরিবেশন = সংরক্ষণযোগ্য (১–২ মাস)
| তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা (চুলায়) + রোদে শুকানো (২–৩ দিন)
| কষ্টসাধ্য = ২
| খাদ্য শক্তি = মাঝারি
| টীকা = টক-মিষ্টি-ঝাল স্বাদের এই আচার ঘরে তৈরি করা যায় এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''আমড়ার আচার'''</big></center>
আমড়া বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় টক জাতীয় ফল। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমড়া দিয়ে তৈরি আচার আমাদের রন্ধনসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই আচারের টক-মিষ্টি স্বাদ যেমন রুচি বাড়ায়, তেমনি এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়।
গ্রামবাংলায় বর্ষা বা শরৎকালে পাকা বা আধাপাকা আমড়া সংগ্রহ করে বিভিন্ন রকম আচারের প্রস্তুতি চলে। এগুলো শুধু পরিবারের রসনার তৃপ্তিই নয়, বরং আত্মীয়দের উপহার হিসেবেও জনপ্রিয়।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| পাকা বা আধাপাকা আমড়া || ১ কেজি
|-
| লবণ || ২ টেবিল চামচ
|-
| চিনি || ৫০০ গ্রাম (স্বাদ অনুযায়ী)
|-
| শুকনা মরিচ গুঁড়া || ২ টেবিল চামচ
|-
| সরিষার তেল || ১ কাপ
|-
| পাঁচফোড়ন || ১ টেবিল চামচ
|-
| সরিষা গুঁড়ো || ১ টেবিল চামচ
|-
| রসুন বাটা || ২ টেবিল চামচ
|-
| সিরকা || ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক, সংরক্ষণের জন্য)
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#আমড়াগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
#এরপর আমড়াগুলোকে মাঝখান দিয়ে চিরে ২–৪ ভাগ করে নিতে হবে। চাইলে বীজ ফেলে দেওয়া যায়, আবার কেউ কেউ বীজসহই রাখেন।
#এরপর এগুলো ছায়াযুক্ত রোদে একদিন শুকিয়ে নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা না থাকে।
#একটি শুকনা কড়াইতে পাঁচফোড়ন হালকা ভেজে গুঁড়ো করে নিন। রসুন বাটাও অল্প তেলে হালকা ভেজে রাখুন। এতে আচারের স্বাদ ও ঘ্রাণ আরও বাড়বে।
#একটি বড় কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে তাতে রসুন বাটা, শুকনা মরিচ গুঁড়ো, পাঁচফোড়ন গুঁড়ো, সরিষা গুঁড়ো দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে।
#মশলার কষানো হলে তাতে শুকানো আমড়া দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে তাতে চিনি ও লবণ দিন। চিনি গলে গেলে আচারে একটু ঘনত্ব চলে আসবে।
#সবশেষে চাইলে সিরকা দিন।
#আচার ঠান্ডা হলে পরিষ্কার কাচের বোতলে ভরে ফেলুন। আচারের ওপর ২–৩ চামচ সরিষার তেল দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর রোদে রেখে ২–৩ দিন শুকিয়ে নিন।
== পরিবেশন ==
এই আমড়ার আচার ভাত, খিচুড়ি, পরোটা বা স্ন্যাকসের সঙ্গে খাওয়া যায়। টক-মিষ্টি ও ঝাল স্বাদের কারণে এটি মুখরোচক এবং রুচি বাড়াতে সহায়ক।
== সংরক্ষণ পরামর্শ ==
* আচার তৈরির প্রতিটি ধাপে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
* কাচের বোতলে ভরে রাখার সময় পানি বা ভেজা চামচ ব্যবহার করা যাবে না।
* মাঝে মাঝে রোদে দিয়ে রাখলে আচার অনেক দিন ভালো থাকবে।
[[Category:রন্ধনপ্রণালী]]
[[Category:আচার]]
[[Category:বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার]]
[[Category:সংরক্ষণযোগ্য খাবার]]
kb4yz32xd2ha3bgqiqgsp0r0ig3td9y
রন্ধনপ্রণালী:পানখিলি পিঠা
104
26407
84062
83843
2025-06-12T01:25:39Z
MD Abu Siyam
8392
84062
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পিঠা
| পরিবেশন = ৬–৮ জন
| তৈরির সময় = ২ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = প্রাচীন রাজপরিবারের উৎসবভোজে পরিবেশিত ঐতিহ্যবাহী ও শিল্পসম্মত মিষ্টি পিঠা।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''পানখিলি পিঠা'''</big></center>
পানখিলি পিঠা একসময় রাজা-জমিদারদের প্রাসাদ বা উৎসবভোজের একটি অভিজাত ও আলঙ্কারিক মিষ্টান্ন ছিল। এই পিঠাটি দেখতে অনেকটা পানের খিলির মতো হওয়ায় এর নাম "পানখিলি পিঠা"। এটি একটি দুই ধাপে প্রস্তুতকৃত পিঠা—প্রথম ধাপে থাকে হালকা সবুজ রঙের নরম খোলস তৈরি, দ্বিতীয় ধাপে তাতে ভরা হয় ঘন, দুধ-বাদাম মেশানো সুস্বাদু পুর। আধুনিক কালে এই পিঠা প্রায় বিলুপ্তির পথে, তবে যারা ঐতিহ্য ভালোবাসেন, তাদের কাছে এটি এক অমূল্য স্বাদ।
== উপকরণ ==
=== বাহিরের খোলসের জন্য ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ময়দা || ২ কাপ
|-
| চালের গুঁড়া || ১/২ কাপ
|-
| ডিম (বড়) || ১টি
|-
| তরল দুধ || ২ কাপ
|-
| চিনি || ১ চা চামচ
|-
| লবণ || পরিমাণমতো
|-
| সবুজ ফুড কালার || ১ চা চামচ
|-
| তেল || ২ টেবিল চামচ (তাওয়ায় লাগানোর জন্য)
|-
| ফয়েল পেপার/কলাপাতা || প্রয়োজন মতো
|}
=== পুরের জন্য ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ঘন তরল দুধ (জ্বাল দিয়ে তৈরি) || ৪ কাপ
|-
| চিনি || ২ কাপ
|-
| মাওয়া || ১/২ কাপ
|-
| পোলাওয়ের চাল বাটা || ১/২ কাপ
|-
| কাজু বাদাম বাটা || ১/২ কাপ
|-
| জাফরান || ১ চিমটি (ঐচ্ছিক)
|-
| পেস্তা বাদাম ও চেরি টুকরো || সাজানোর জন্য
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#প্রথমে চালের গুঁড়া ও ময়দা একত্রে চেলে নিন।
#এরপর এতে ডিম, চিনি, লবণ ও তরল দুধ দিয়ে একটি মাঝারি ঘনতার বেটার তৈরি করুন। ভালোভাবে মিশিয়ে নিন যাতে কোনো দানা না থাকে।
#তারপর এতে সবুজ ফুড কালার মিশিয়ে দিন।
#চুলায় মাঝারি আঁচে একটি ননস্টিক ফ্রাইং প্যানে সামান্য তেল মালিশ করে দিন। এক টেবিল চামচ খামি নিয়ে তাওয়ায় ঢালুন ও পাতলা করে ছড়িয়ে দিন। এক পাশ একটু শুকিয়ে উঠলেই তুলে নিন—পিঠাটি যেন কড়কড়ে না হয়, বরং নরম থাকে।
#তারপর প্রতিটি পিঠাকে আইসক্রিম কনের মতো করে কোণ আকৃতিতে মুড়ে নিচে ফয়েল পেপার পেঁচিয়ে দিন যাতে ভেঙে না যায়।
#একটি পাত্রে দুধ জ্বাল দিতে দিন। ফুটে উঠলে পোলাও চাল বাটা দিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন।
#১০ মিনিট পর চিনি, মাওয়া, কাজু বাটা ও জাফরান দিন। ঘন ও মসৃণ মিশ্রণ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
#প্রতিটি খোলসের মধ্যে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া পুরটি চামচ দিয়ে ভরে দিন। উপরে পেস্তা বাদাম কুচি ও চেরি টুকরো দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন সুগন্ধি, মিষ্টি, ও অভিজাত পানখিলি পিঠা।
== পরামর্শ ==
* খোলস বেশি ভাজা হলে তা মুড়তে গেলে ভেঙে যেতে পারে, তাই পাতলা ও নরম করে রান্না করুন।
* পুরে চাইলে ক্ষীরের স্বাদ আনতে কনডেন্সড মিল্ক বা ঘন দুধ ব্যবহার করা যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
পানখিলি পিঠা মূলত পূর্ববাংলার জমিদারবাড়ির এক রাজকীয় আয়োজন ছিল। বিশেষ অতিথিদের সামনে এই পিঠার চিত্র ও স্বাদ ছিল মূল আকর্ষণ। বর্তমানে খুব অল্প কিছু এলাকায় এটি এখনো তৈরি হয়, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী।
== আরও দেখুন ==
* [[রন্ধনপ্রণালী:খেজুরের ক্ষীর]]
* [[রন্ধনপ্রণালী:চুঙ্গা পিঠা]]
* [[রন্ধনপ্রণালী:দুধ পুলি]]
4cqom163k1fg643x4p1odbznmy22u1h
84063
84062
2025-06-12T01:25:51Z
MD Abu Siyam
8392
84063
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পিঠা
| পরিবেশন = ৬–৮ জন
| তৈরির সময় = ২ ঘণ্টা
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = উচ্চ
| টীকা = প্রাচীন রাজপরিবারের উৎসবভোজে পরিবেশিত ঐতিহ্যবাহী ও শিল্পসম্মত মিষ্টি পিঠা।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''পানখিলি পিঠা'''</big></center>
পানখিলি পিঠা একসময় রাজা-জমিদারদের প্রাসাদ বা উৎসবভোজের একটি অভিজাত ও আলঙ্কারিক মিষ্টান্ন ছিল। এই পিঠাটি দেখতে অনেকটা পানের খিলির মতো হওয়ায় এর নাম "পানখিলি পিঠা"। এটি একটি দুই ধাপে প্রস্তুতকৃত পিঠা—প্রথম ধাপে থাকে হালকা সবুজ রঙের নরম খোলস তৈরি, দ্বিতীয় ধাপে তাতে ভরা হয় ঘন, দুধ-বাদাম মেশানো সুস্বাদু পুর। আধুনিক কালে এই পিঠা প্রায় বিলুপ্তির পথে, তবে যারা ঐতিহ্য ভালোবাসেন, তাদের কাছে এটি এক অমূল্য স্বাদ।
== উপকরণ ==
=== বাহিরের খোলসের জন্য ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ময়দা || ২ কাপ
|-
| চালের গুঁড়া || ১/২ কাপ
|-
| ডিম (বড়) || ১টি
|-
| তরল দুধ || ২ কাপ
|-
| চিনি || ১ চা চামচ
|-
| লবণ || পরিমাণমতো
|-
| সবুজ ফুড কালার || ১ চা চামচ
|-
| তেল || ২ টেবিল চামচ (তাওয়ায় লাগানোর জন্য)
|-
| ফয়েল পেপার/কলাপাতা || প্রয়োজন মতো
|}
=== পুরের জন্য ===
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| ঘন তরল দুধ (জ্বাল দিয়ে তৈরি) || ৪ কাপ
|-
| চিনি || ২ কাপ
|-
| মাওয়া || ১/২ কাপ
|-
| পোলাওয়ের চাল বাটা || ১/২ কাপ
|-
| কাজু বাদাম বাটা || ১/২ কাপ
|-
| জাফরান || ১ চিমটি (ঐচ্ছিক)
|-
| পেস্তা বাদাম ও চেরি টুকরো || সাজানোর জন্য
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
#প্রথমে চালের গুঁড়া ও ময়দা একত্রে চেলে নিন।
#এরপর এতে ডিম, চিনি, লবণ ও তরল দুধ দিয়ে একটি মাঝারি ঘনতার বেটার তৈরি করুন। ভালোভাবে মিশিয়ে নিন যাতে কোনো দানা না থাকে।
#তারপর এতে সবুজ ফুড কালার মিশিয়ে দিন।
#চুলায় মাঝারি আঁচে একটি ননস্টিক ফ্রাইং প্যানে সামান্য তেল মালিশ করে দিন। এক টেবিল চামচ খামি নিয়ে তাওয়ায় ঢালুন ও পাতলা করে ছড়িয়ে দিন। এক পাশ একটু শুকিয়ে উঠলেই তুলে নিন—পিঠাটি যেন কড়কড়ে না হয়, বরং নরম থাকে।
#তারপর প্রতিটি পিঠাকে আইসক্রিম কনের মতো করে কোণ আকৃতিতে মুড়ে নিচে ফয়েল পেপার পেঁচিয়ে দিন যাতে ভেঙে না যায়।
#একটি পাত্রে দুধ জ্বাল দিতে দিন। ফুটে উঠলে পোলাও চাল বাটা দিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন।
#১০ মিনিট পর চিনি, মাওয়া, কাজু বাটা ও জাফরান দিন। ঘন ও মসৃণ মিশ্রণ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
#প্রতিটি খোলসের মধ্যে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া পুরটি চামচ দিয়ে ভরে দিন। উপরে পেস্তা বাদাম কুচি ও চেরি টুকরো দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন সুগন্ধি, মিষ্টি, ও অভিজাত পানখিলি পিঠা।
== পরামর্শ ==
* খোলস বেশি ভাজা হলে তা মুড়তে গেলে ভেঙে যেতে পারে, তাই পাতলা ও নরম করে রান্না করুন।
* পুরে চাইলে ক্ষীরের স্বাদ আনতে কনডেন্সড মিল্ক বা ঘন দুধ ব্যবহার করা যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
পানখিলি পিঠা মূলত পূর্ববাংলার জমিদারবাড়ির এক রাজকীয় আয়োজন ছিল। বিশেষ অতিথিদের সামনে এই পিঠার চিত্র ও স্বাদ ছিল মূল আকর্ষণ। বর্তমানে খুব অল্প কিছু এলাকায় এটি এখনো তৈরি হয়, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী।
d0bfwag1izu80kpmvz9wh614giln4q8
ব্যবহারকারী:MS Sakib/খেলাঘর/১
2
26653
84052
84023
2025-06-11T18:54:04Z
NusJaS
8394
84052
wikitext
text/x-wiki
{| class="wikitable sortable"
! নিবন্ধের নাম !! শব্দসংখ্যা !! ✔️?
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া]] || ১,২৪০ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/কানাডায় শরণার্থী প্রক্রিয়ার ইতিহাস]] || ২৬,৬৯১ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/শুনানির অধিকার ও ন্যায্য শুনানির অধিকার]] || ২১,৬৩২
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্তগ্রহণকারীর অধিকার]] || ৫,৫৬৬ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/বোর্ডের অনুসন্ধানমূলক দায়িত্ব]] || ৮,৪২০
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/শরণার্থী প্রক্রিয়া ব্যাখ্যার নীতিমালা]] || ১৭,৯৯০ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/স্বাধীন সিদ্ধান্তগ্রহণকারীর অধিকার]] || ৫,২৮৫ || (✔️)
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা]] || ৩৪১ || ✔️
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ]] || ৩০,১২১ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?]] || ৪৫১ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/ওপেনসোর্স ও মালিকানাভিত্তিক প্রযুক্তি]] || ১২,৩৭৫ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত ও জনপরিসর]] || ৩৮,৮১৪ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/দৈনন্দিন জীবনে জ্ঞান ও উপাত্তের প্রবেশাধিকার]] || ২৭,১৬৪ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/নজরদারি ও প্রতিনজরদারি]] || ২০,৯৭৫
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক নির্ধারণবাদ]] || ১৩,৫৫৬
|}
-----
{| class="wikitable sortable"
! নিবন্ধের নাম !! শব্দসংখ্যা !! ✔️
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/এনকোডিং ও পুনরুদ্ধার]] || ১১,৬৫১ || ✔️
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/গণিত শেখা]] || ১০,৫০৬
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি]] || ৬,৯৮২ || ✔️!
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/পড়তে শেখা]] || ৭,৬২২
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা]] || ১৬,১৮১
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/শিখন ও স্মৃতি]] || ৯,৩৭৪ || ✔️!
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/শেখার জন্য প্রযুক্তি ও নকশা]] || ৭,৯১০
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/সমস্যা সমাধান, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও যুক্তি]] || ২০,৮৬০
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/সহযোগিতামূলক এবং অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন]] || ১৬,৯৯৫
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/সাংবদ্ধ মনোবিজ্ঞানের উৎপত্তি]] || ৮,৩৭০ || ✔️!
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আধুনিক জাপান]] || ৩,৮৬৯ || ✔️
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/ইয়াইয়োই যুগ]] || ১০,৫১৫
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/নারা যুগ]] || ২৫,৯০২
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মধ্য হেইয়ান যুগ]] || ১১,৮৩৮
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ/নানবোকুচো যুগ]] || ৮,৯৫০
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র]] || ৭,৩২৭ || ✔️
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব]] || ৯,০৯৫ || ✔️
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/রেচনতন্ত্র]] || ৫,৫৩৬ || ✔️
|}
-----
{| class="wikitable sortable"
! নিবন্ধের নাম !! শব্দসংখ্যা
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:আমের টক]] || ২৩০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অ-প্রাইমেট পাখির গান]] || ২,২৪৬
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অন্যান্য প্রাণী]] || ৩,৩৮১
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অন্যান্য প্রাণী/ইকোলোকেশনকারী দাঁতযুক্ত তিমি]] || ৮৮০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/ঘ্রাণতন্ত্র সিমুলেশন]] || ২,৮৮৫
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/বাক্ প্রত্যক্ষণ]] || ৮৩৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/ভারসাম্যতন্ত্র সিমুলেশন]] || ২১৫
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/শ্রবণতন্ত্র সিমুলেশন]] || ৪,৮৮৬
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/স্নায়বিক সিমুলেশন]] || ৫,১৩৫
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র]] || ১২,১৯১
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র/ইন ভিভো ইমেজিং]] || ১,২৩৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্রের আন্তঃপ্রজাতি তুলনা]] || ১,৯৬০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র/পুরাতন/সংবেদী অঙ্গের উপাদান]] || ১,৮২৯
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দেহসংবেদী তন্ত্রে স্পর্শলোম]] || ১,৩৪০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/পতঙ্গ/হ্যালটেরেস]] || ৫৫৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/পাখি/চৌম্বক উপলব্ধি]] || ৩,৪৮৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/বহুসংবেদী একত্রীকরণ]] || ২,০৬৪
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/ব্যথার শারীরবিদ্যা]] || ৪,৬৬৪
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/ভারসাম্যতন্ত্র]] || ২,১৫১
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/ভারসাম্যতন্ত্রের অঙ্গসংস্থান]] || ৮৮৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/সামুদ্রিক প্রাণী]] || ২,৮২৯
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট]] || ৬,৫১৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট]] || ১,৪৩০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা]] || ১,৮৪২
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা/অপটোজেনেটিক্স]] || ১,১৯৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভেস্টিবুলার ইমপ্লান্ট]] || ১,০৮৩
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/রেটিনাল ইমপ্লান্ট]] || ৩,৯০৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/হাঙ্গর]] || ১,৭২৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:কুমড়ো ঘন্ট]] || ২৩৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:কোরমা খিচুড়ি]] || ৩৩৬
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:গরুর রেজালা]] || ২৭১
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:গোমাংস ভুনা]] || ২৮৮
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:চাপাটি]] || ২২২
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন কারি]] || ৩০৩
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/বিজ্ঞান শিখন ও ধারণাগত পরিবর্তন]] || ১৯২
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/কোফুন যুগ]] || ১১,৫৬০
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/জাপানে বৌদ্ধধর্ম]] || ৭,০৮৩
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ]] || ৯,২৫৮
|-
| [[তড়িৎ ও চুম্বক/চুম্বকত্ব/তড়িৎ প্রবাহ দ্বারা চৌম্বক বল]] || ১৬৮
|-
| [[দর্শনের সাথে পরিচয়/ধর্মতত্ত্ব]] || ৯১৯
|-
| [[দর্শনের সাথে পরিচয়/যুক্তিবিদ্যা/বাক্যযুক্তির আরও আনুষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি]] || ৬৯৩
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:নান রুটি]] || ৩০২
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা]] || ৩৬৮
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/পোল ও জিরো]] || ৫৯৬
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/বোডি চিত্র]] || ১,১২৩
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রাউথ-হারউইটজ মানদণ্ড]] || ৭৫৯
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সময় ভেদে পরিবর্তনশীল সিস্টেম সমাধান]] || ৮৫৭
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স]] || ১,৬৪৪
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম শনাক্তকরণ]] || ১,০৮৭
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্টেট-স্পেস সমীকরণ]] || ২,৩৭৬
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্টেট-স্পেস স্থিতিশীলতা]] || ৮১৯
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্যাম্পলড ডেটা সিস্টেম]] || ২,১৯৬
|-
| [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/লম্ব বল ও ঘর্ষণ]] || ৭২০
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:পাবদা মাছের ঝোল]] || ২৫৬
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ/অনুমান]] || ৮২১
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ/লেখক/রীতিনীতি]] || ৩,৭৩৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উপস্থাপনা]] || ৩,২৫৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা]] || ৯৭৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/ব্যবহারযোগ্যতা]] || ১,২৭৯
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/শেষাংশ]] || ৯৭৫
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নির্দেশাবলি]] || ১,৫৬৬
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নৈতিকতা/সংস্কৃতি]] || ১,২৫৮
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা]] || ৭৫৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা/কাভার লেটার]] || ২,১২৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা/জীবনবৃত্তান্ত]] || ২,৪৯০
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশাদার লেখনী সম্বন্ধে]] || ৪৯৩
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/প্রকল্প ব্যবস্থাপনা]] || ৭৬৫
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/প্রকল্প ব্যবস্থাপনা/দলসমূহ]] || ১,৫৭৩
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/প্রস্তাবনা]] || ১,৭৫৫
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ/ওয়েবসাইট]] || ৯৬৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ/চিঠি]] || ৭৮৪
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ/মেমো]] || ১,২২৪
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/সম্ভাব্যতা]] || ১,৭৪১
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/আলট্রাসনিক মাধ্যমের জন্য নতুন শব্দ ফিল্টার]] || ১,৪৪৬
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/চলন্ত কয়েল লাউডস্পিকার]] || ৫৭৯
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/পিজোইলেকট্রিক ট্রান্সডিউসার]] || ৬৩৩
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/ফিল্টার ডিজাইন ও বাস্তবায়ন]] || ১,৬৪৮
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বাদুড় ও ডলফিনের ইকোলোকেশন]] || ১,৪২৩
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/মানব স্বররজ্জু]] || ৭৪৭
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/স্ব-সমন্বয়ী হেলমহোল্টজ অনুরণকের সাহায্যে কোলাহল নিয়ন্ত্রণ]] || ১,২৪৭
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/লসিকা তন্ত্র]] || ৭৮২
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/শব্দকোষ/ক-খ]] || ৬৪৯
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/শব্দকোষ/গ-ঘ]] || ৮৬৭
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/শব্দকোষ/থ-ধ]] || ৮০২
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:বিফ কালিয়া]] || ৩১৫
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:বিফ স্যুপ]] || ২৪৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:বুটের বড়া]] || ২৭৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মটর ডাল]] || ২৪৫
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মাংসের চচ্চড়ি]] || ২৬৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মাছের টিক্কি]] || ২৭৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/আইজেনহাওয়ার নাগরিক অধিকার পঞ্চাশের দশক]] || ৪,০৭৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/আবিষ্কারের যুগ ও গিল্ডেড যুগ]] || ৩,৩৯১
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/ইংরেজ উপনিবেশ]] || ৩,৯৩৫
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/ওবামা]] || ১,৯৮২
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/ডব্লিউ. বুশ]] || ৩,৮১১
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/পুনর্গঠন]] || ৫,০৬০
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/প্রাক-কলম্বীয়]] || ২,৯২৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/বিপ্লবের পথে]] || ৪,৪৪৩
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/রাষ্ট্রপতিরা]] || ১,৯৪৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/সংবিধানের প্রাথমিক বছর]] || ৩,৭৩৭
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/সুপ্রিম কোর্টের মামলাসমূহ]] || ৬,৭১১
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ]] || ১,৪৩৫
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মিষ্টি পুলি]] || ২৫৮
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুগডালের বড়া]] || ২৬৭
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুরগি ভুনা]] || ২৭৮
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুরগির কাটলেট]] || ২৩৭
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুরগির কোপ্তা]] || ৩৫৪
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:রস পিঠা]] || ২৪১
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:লাল সেমাই]] || ২৪৪
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:শসা ভর্তা]] || ২১০
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:সবজি নুডলস]] || ২৬৭
|-
| [[সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/সাধারণ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব]] || ২৪৬
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/নিয়ন্ত্রিত গতি]] || ৫৬৩
|}
g8llic05z3x8pvg0767cqcpc44k7yss
84057
84052
2025-06-11T20:04:04Z
NusJaS
8394
84057
wikitext
text/x-wiki
{| class="wikitable sortable"
! নিবন্ধের নাম !! শব্দসংখ্যা !! ✔️?
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া]] || ১,২৪০ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/কানাডায় শরণার্থী প্রক্রিয়ার ইতিহাস]] || ২৬,৬৯১ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/শুনানির অধিকার ও ন্যায্য শুনানির অধিকার]] || ২১,৬৩২
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্তগ্রহণকারীর অধিকার]] || ৫,৫৬৬ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/বোর্ডের অনুসন্ধানমূলক দায়িত্ব]] || ৮,৪২০
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/শরণার্থী প্রক্রিয়া ব্যাখ্যার নীতিমালা]] || ১৭,৯৯০ || ✔️
|-
| [[কানাডায় শরনার্থী প্রক্রিয়া/স্বাধীন সিদ্ধান্তগ্রহণকারীর অধিকার]] || ৫,২৮৫ || (✔️)
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা]] || ৩৪১ || ✔️
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ]] || ৩০,১২১ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?]] || ৪৫১ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/ওপেনসোর্স ও মালিকানাভিত্তিক প্রযুক্তি]] || ১২,৩৭৫ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত ও জনপরিসর]] || ৩৮,৮১৪ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/দৈনন্দিন জীবনে জ্ঞান ও উপাত্তের প্রবেশাধিকার]] || ২৭,১৬৪ || ✔️
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/নজরদারি ও প্রতিনজরদারি]] || ২০,৯৭৫
|-
| [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক নির্ধারণবাদ]] || ১৩,৫৫৬
|}
-----
{| class="wikitable sortable"
! নিবন্ধের নাম !! শব্দসংখ্যা !! ✔️
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/এনকোডিং ও পুনরুদ্ধার]] || ১১,৬৫১ || ✔️
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/গণিত শেখা]] || ১০,৫০৬
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি]] || ৬,৯৮২ || ✔️!
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/পড়তে শেখা]] || ৭,৬২২ || ✔️
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা]] || ১৬,১৮১
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/শিখন ও স্মৃতি]] || ৯,৩৭৪ || ✔️!
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/শেখার জন্য প্রযুক্তি ও নকশা]] || ৭,৯১০
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/সমস্যা সমাধান, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও যুক্তি]] || ২০,৮৬০
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/সহযোগিতামূলক এবং অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন]] || ১৬,৯৯৫
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/সাংবদ্ধ মনোবিজ্ঞানের উৎপত্তি]] || ৮,৩৭০ || ✔️!
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আধুনিক জাপান]] || ৩,৮৬৯ || ✔️
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/ইয়াইয়োই যুগ]] || ১০,৫১৫
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/নারা যুগ]] || ২৫,৯০২
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মধ্য হেইয়ান যুগ]] || ১১,৮৩৮
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ/নানবোকুচো যুগ]] || ৮,৯৫০
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র]] || ৭,৩২৭ || ✔️
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব]] || ৯,০৯৫ || ✔️
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/রেচনতন্ত্র]] || ৫,৫৩৬ || ✔️
|}
-----
{| class="wikitable sortable"
! নিবন্ধের নাম !! শব্দসংখ্যা
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:আমের টক]] || ২৩০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অ-প্রাইমেট পাখির গান]] || ২,২৪৬
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অন্যান্য প্রাণী]] || ৩,৩৮১
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অন্যান্য প্রাণী/ইকোলোকেশনকারী দাঁতযুক্ত তিমি]] || ৮৮০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/ঘ্রাণতন্ত্র সিমুলেশন]] || ২,৮৮৫
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/বাক্ প্রত্যক্ষণ]] || ৮৩৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/ভারসাম্যতন্ত্র সিমুলেশন]] || ২১৫
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/শ্রবণতন্ত্র সিমুলেশন]] || ৪,৮৮৬
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/কম্পিউটার মডেল/স্নায়বিক সিমুলেশন]] || ৫,১৩৫
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র]] || ১২,১৯১
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র/ইন ভিভো ইমেজিং]] || ১,২৩৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্রের আন্তঃপ্রজাতি তুলনা]] || ১,৯৬০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র/পুরাতন/সংবেদী অঙ্গের উপাদান]] || ১,৮২৯
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দেহসংবেদী তন্ত্রে স্পর্শলোম]] || ১,৩৪০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/পতঙ্গ/হ্যালটেরেস]] || ৫৫৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/পাখি/চৌম্বক উপলব্ধি]] || ৩,৪৮৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/বহুসংবেদী একত্রীকরণ]] || ২,০৬৪
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/ব্যথার শারীরবিদ্যা]] || ৪,৬৬৪
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/ভারসাম্যতন্ত্র]] || ২,১৫১
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/ভারসাম্যতন্ত্রের অঙ্গসংস্থান]] || ৮৮৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/সামুদ্রিক প্রাণী]] || ২,৮২৯
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট]] || ৬,৫১৮
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট]] || ১,৪৩০
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা]] || ১,৮৪২
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা/অপটোজেনেটিক্স]] || ১,১৯৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভেস্টিবুলার ইমপ্লান্ট]] || ১,০৮৩
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/রেটিনাল ইমপ্লান্ট]] || ৩,৯০৭
|-
| [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/হাঙ্গর]] || ১,৭২৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:কুমড়ো ঘন্ট]] || ২৩৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:কোরমা খিচুড়ি]] || ৩৩৬
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:গরুর রেজালা]] || ২৭১
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:গোমাংস ভুনা]] || ২৮৮
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:চাপাটি]] || ২২২
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন কারি]] || ৩০৩
|-
| [[চিন্তন ও নির্দেশনা/বিজ্ঞান শিখন ও ধারণাগত পরিবর্তন]] || ১৯২
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/কোফুন যুগ]] || ১১,৫৬০
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/জাপানে বৌদ্ধধর্ম]] || ৭,০৮৩
|-
| [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ]] || ৯,২৫৮
|-
| [[তড়িৎ ও চুম্বক/চুম্বকত্ব/তড়িৎ প্রবাহ দ্বারা চৌম্বক বল]] || ১৬৮
|-
| [[দর্শনের সাথে পরিচয়/ধর্মতত্ত্ব]] || ৯১৯
|-
| [[দর্শনের সাথে পরিচয়/যুক্তিবিদ্যা/বাক্যযুক্তির আরও আনুষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি]] || ৬৯৩
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:নান রুটি]] || ৩০২
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা]] || ৩৬৮
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/পোল ও জিরো]] || ৫৯৬
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/বোডি চিত্র]] || ১,১২৩
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রাউথ-হারউইটজ মানদণ্ড]] || ৭৫৯
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সময় ভেদে পরিবর্তনশীল সিস্টেম সমাধান]] || ৮৫৭
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স]] || ১,৬৪৪
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম শনাক্তকরণ]] || ১,০৮৭
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্টেট-স্পেস সমীকরণ]] || ২,৩৭৬
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্টেট-স্পেস স্থিতিশীলতা]] || ৮১৯
|-
| [[নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্যাম্পলড ডেটা সিস্টেম]] || ২,১৯৬
|-
| [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/লম্ব বল ও ঘর্ষণ]] || ৭২০
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:পাবদা মাছের ঝোল]] || ২৫৬
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ/অনুমান]] || ৮২১
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ/লেখক/রীতিনীতি]] || ৩,৭৩৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উপস্থাপনা]] || ৩,২৫৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা]] || ৯৭৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/ব্যবহারযোগ্যতা]] || ১,২৭৯
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/শেষাংশ]] || ৯৭৫
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নির্দেশাবলি]] || ১,৫৬৬
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নৈতিকতা/সংস্কৃতি]] || ১,২৫৮
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা]] || ৭৫৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা/কাভার লেটার]] || ২,১২৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা/জীবনবৃত্তান্ত]] || ২,৪৯০
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশাদার লেখনী সম্বন্ধে]] || ৪৯৩
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/প্রকল্প ব্যবস্থাপনা]] || ৭৬৫
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/প্রকল্প ব্যবস্থাপনা/দলসমূহ]] || ১,৫৭৩
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/প্রস্তাবনা]] || ১,৭৫৫
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ/ওয়েবসাইট]] || ৯৬৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ/চিঠি]] || ৭৮৪
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ/মেমো]] || ১,২২৪
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/সম্ভাব্যতা]] || ১,৭৪১
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/আলট্রাসনিক মাধ্যমের জন্য নতুন শব্দ ফিল্টার]] || ১,৪৪৬
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/চলন্ত কয়েল লাউডস্পিকার]] || ৫৭৯
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/পিজোইলেকট্রিক ট্রান্সডিউসার]] || ৬৩৩
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/ফিল্টার ডিজাইন ও বাস্তবায়ন]] || ১,৬৪৮
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বাদুড় ও ডলফিনের ইকোলোকেশন]] || ১,৪২৩
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/মানব স্বররজ্জু]] || ৭৪৭
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/স্ব-সমন্বয়ী হেলমহোল্টজ অনুরণকের সাহায্যে কোলাহল নিয়ন্ত্রণ]] || ১,২৪৭
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/লসিকা তন্ত্র]] || ৭৮২
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/শব্দকোষ/ক-খ]] || ৬৪৯
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/শব্দকোষ/গ-ঘ]] || ৮৬৭
|-
| [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/শব্দকোষ/থ-ধ]] || ৮০২
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:বিফ কালিয়া]] || ৩১৫
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:বিফ স্যুপ]] || ২৪৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:বুটের বড়া]] || ২৭৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মটর ডাল]] || ২৪৫
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মাংসের চচ্চড়ি]] || ২৬৯
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মাছের টিক্কি]] || ২৭৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/আইজেনহাওয়ার নাগরিক অধিকার পঞ্চাশের দশক]] || ৪,০৭৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/আবিষ্কারের যুগ ও গিল্ডেড যুগ]] || ৩,৩৯১
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/ইংরেজ উপনিবেশ]] || ৩,৯৩৫
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/ওবামা]] || ১,৯৮২
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/ডব্লিউ. বুশ]] || ৩,৮১১
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/পুনর্গঠন]] || ৫,০৬০
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/প্রাক-কলম্বীয়]] || ২,৯২৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/বিপ্লবের পথে]] || ৪,৪৪৩
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/রাষ্ট্রপতিরা]] || ১,৯৪৪
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/সংবিধানের প্রাথমিক বছর]] || ৩,৭৩৭
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/সুপ্রিম কোর্টের মামলাসমূহ]] || ৬,৭১১
|-
| [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ]] || ১,৪৩৫
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মিষ্টি পুলি]] || ২৫৮
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুগডালের বড়া]] || ২৬৭
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুরগি ভুনা]] || ২৭৮
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুরগির কাটলেট]] || ২৩৭
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:মুরগির কোপ্তা]] || ৩৫৪
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:রস পিঠা]] || ২৪১
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:লাল সেমাই]] || ২৪৪
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:শসা ভর্তা]] || ২১০
|-
| [[রন্ধনপ্রণালী:সবজি নুডলস]] || ২৬৭
|-
| [[সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/সাধারণ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব]] || ২৪৬
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/নিয়ন্ত্রিত গতি]] || ৫৬৩
|}
th1ujdh9tod0zt4u6zjo6rijs12ec1w
জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আধুনিক জাপান
0
26659
84050
83631
2025-06-11T18:49:45Z
NusJaS
8394
84050
wikitext
text/x-wiki
জাপান আজ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এই বইয়ে এখন পর্যন্ত যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তা এই জাতির উপর ছাপ রেখে গেছে। এখানে পাশ্চাত্য ও আদিবাসী ধারণার মিশ্রণ ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি রয়েছে। বর্তমানে দেশটি বিশ্বে ইলেকট্রনিক্স ও প্রকৌশলে নেতৃত্বস্থানে আছে।
== সরকার ও রাজনীতি ==
[[চিত্র:Emperor_Akihito_and_empress_Michiko_of_japan.jpg|থাম্ব| সম্রাট আকিহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মিচিকো। জাপানে বিশ্ব ইতিহাসের প্রাচীনতম ধারাবাহিক বংশগত রাজতন্ত্র রয়েছে, যার উত্তরাধিকারসূত্রে কমপক্ষে 660 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে এটি চালু রয়েছে।]]
জাপান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। দেশটিতে সম্রাটের ক্ষমতা খুবই সীমিত। একজন আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সংবিধান তাকে "রাষ্ট্র এবং জনগণের ঐক্যের প্রতীক" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ক্ষমতা প্রধানত জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং ডায়েটের অন্যান্য নির্বাচিত সদস্যদের হাতে। সাংবিধানিক ভাবে সার্বভৌমত্ব জাপানি জনগণের হাতে ন্যস্ত। সম্রাট কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে কার্যকরভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন। জাপানের বর্তমান সম্রাট [[w:আকিহিতো|আকিহিতো]]। জাপানের যুবরাজ [[w:নারুহিতো|নারুহিতো]] সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী আছেন।
(এই তথ্যটি বইটি লেখার সময় প্রাসঙ্গিক ছিল। উল্লিখিত যুবরাজ [[w:নারুহিতো|নারুহিতো]]<nowiki/>ই বর্তমানে জাপানের সম্রাট।)
জাপানের আইনসভা হল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ জাতীয় ডায়েট। ডায়েটে ৪৮০ আসন বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি পরিষদ থাকে। এটি প্রতি চার বছর অন্তর অথবা ভেঙে গেলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। উচ্চকক্ষ হিসেবে২৪২টি আসন বিশিষ্ট কাউন্সিলর পরিষদ থাকে। এর জনপ্রিয় নির্বাচিত সদস্যরা ছয় বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সর্বজনীন ভোটাধিকার রয়েছে। সমস্ত নির্বাচনী অফিসের জন্য গোপন ব্যালটের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৯ সালে উদারপন্থী রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৫৪ বছরের শাসনের পর জাপানের সামাজিক উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতা দখল করে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। জাপানের সম্রাট ডায়েট কর্তৃক তার সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হওয়ার পর এই পদটি নিযুক্ত করেন এবং পদে বহাল থাকার জন্য তাকে প্রতিনিধি পরিষদের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হলেন মন্ত্রিসভার প্রধান (তাঁর জাপানি পদবির আক্ষরিক অনুবাদ "মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী") এবং তিনি প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করেন, যাদের বেশিরভাগকেই ডায়েটের সদস্য হতে হবে। ২৬শে ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইয়োশিহিকো নোদার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য ডায়েট কর্তৃক শিনজো আবেকে মনোনীত করা হয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত হন, জাপানের সংবিধান স্পষ্টভাবে সম্রাটকে ডায়েট কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়োগ করার নির্দেশ দেয়। সম্রাট আকিহিতো একই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন।
জাপানের আইনসভা জাতীয় ডায়েট থেকে সম্রাটের রাবার স্ট্যাম্প অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধিবদ্ধ আইনের উৎপত্তি হয়। বর্তমান সংবিধান অনুসারে সম্রাটকে ডায়েট কর্তৃক পাস করা আইন জারি করতে হবে। বিশেষ করে আইনটি পাসের বিরোধিতা করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হবে না। জাপানের আদালত ব্যবস্থা চারটি মৌলিক স্তরে বিভক্ত: সুপ্রিম কোর্ট এবং তিনটি স্তরের নিম্ন আদালত। জাপানি আইনের প্রধান অংশ হলো ছয়টি কোড নামক একটি সংগ্রহ।
== বৈদেশিক সম্পর্ক ও সামরিক বাহিনী ==
[[চিত্র:SM3_from_JDS_Kongo.jpg|বাম|থাম্ব| জেডিএস ''কঙ্গো'' (ডিডিজি-১৭৩) একটি স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল ৩ অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করছে।]]
[[চিত্র:Helicopter_carrier_Hyūga_(16DDH).jpg|থাম্ব| জেডিএস ''হিউগা'', দুটি জাপানি মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স হেলিকপ্টার ক্যারিয়ারের একটি।]]
বিশ্বের যেকোনো দেশের মধ্যে জাপান বৃহত্তম সামরিক বাজেট বজায় রাখে। জাপানের তার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে মার্কিন-জাপান নিরাপত্তা জোট তাদের পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৬ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে জাপান মোট ১৯ বছর ধরে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, সম্প্রতি ২০০৯ এবং ২০১০ সালে। এটি নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভের জন্য আগ্রহী G4 দেশগুলির মধ্যে একটি।
G8, APEC, "ASEAN Plus Three" এর সদস্য এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে জাপান আন্তর্জাতিক বিষয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং বিশ্বজুড়ে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। জাপান ২০০৭ সালের মার্চ মাসে অস্ট্রেলিয়ার সাথে এবং ২০০৮ সালের অক্টোবরে ভারতের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের পরে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সরকারি উন্নয়ন সহায়তা দাতা। ২০০৯ সালে দেশটি ৯.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিল। জাপান ইরাক যুদ্ধে অ-যোদ্ধা সৈন্য প্রেরণ করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে ইরাক থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। জাপানি মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স রিমপ্যাক সামুদ্রিক মহড়ায় নিয়মিত অংশগ্রহণকারী।
জাপান তার প্রতিবেশীদের সাথে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে: [[w:কুরিল_দ্বীপপুঞ্জ|দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ]] নিয়ে রাশিয়ার সাথে, লিয়ানকোর্ট রকস নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে, [[w:সেনকাকু_দ্বীপ|সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ]] নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং চীন প্রজাতন্ত্রের (তাইওয়ান) সাথে এবং ওকিনোটোরিশিমার আশেপাশের EEZ নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এর সাথে।
জাপানের নাগরিকদের অপহরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সাথে জাপানের চলমান বিরোধেরও মুখোমুখি (ছয়-পক্ষীয় আলোচনাও দেখুন)।
জাপানের সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে জাপানের সামরিক বাহিনী সীমিত। এটি আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যুদ্ধ ঘোষণা বা সামরিক শক্তি ব্যবহারের জাপানের অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে। জাপানের সামরিক বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয় এবং মূলত জাপান গ্রাউন্ড সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (JGSDF), জাপান মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (JMSDF) এবং জাপান এয়ার সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (JASDF) নিয়ে গঠিত। সম্প্রতি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এই বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইরাকে জাপানি সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে জাপানি সেনাবাহিনীর প্রথম বিদেশে ব্যবহার করা হয়েছে।
জাপান যাতে জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটারের মতো বহুজাতিক প্রকল্পে যোগ দিতে পারে, সেজন্য নিপ্পন কেইদানরেন সরকারের কাছে অস্ত্র রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাপান ইতিমধ্যেই এজিস ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম তৈরিতে সাহায্য করেছে।
এই মুহূর্তে জাপানের কাছে কোনও পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তবে কিছু রাজনীতিবিদ আছেন যারা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলির হুমকির সাথে এই নীতিটি উল্টে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
== প্রশাসনিক বিভাগ ==
[[চিত্র:Regions_and_Prefectures_of_Japan.svg|থাম্ব|320x320পিক্সেল| ISO 3166-2:JP ক্রম অনুসারে জাপানের প্রিফেকচারগুলির মানচিত্র এবং জাপানের অঞ্চলগুলি]]
জাপান সাতচল্লিশটি প্রিফেকচার নিয়ে গঠিত, প্রতিটি প্রিফেকচারের তত্ত্বাবধান একজন নির্বাচিত গভর্নর, আইনসভা এবং প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র করে। প্রতিটি প্রিফেকচার আরও শহর, শহর এবং গ্রামে বিভক্ত।
{| style="margin:auto;"
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Hokkaidō'''</div>
----
1. Hokkaidō
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Tōhoku'''</div>
----
2. Aomori
3. Iwate
4. Miyagi
5. Akita
6. Yamagata
7. Fukushima
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Kantō'''</div>
----
8. Ibaraki
9. Tochigi
10. Gunma
11. Saitama
12. Chiba
13. Tokyo
14. Kanagawa
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Chūbu'''</div>
----
15. Niigata
16. Toyama
17. Ishikawa
18. Fukui
19. Yamanashi
20. |Nagano
21. Gifu
22. Shizuoka
23. Aichi
|-
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Kansai'''</div>
----
24. Mie
25. Shiga
26. Kyoto
27. Osaka
28. Hyōgo
29. Nara
30. Wakayama
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Chūgoku'''</div>
----
31. Tottori
32. Shimane
33. Okayama
34. Hiroshima
35. Yamaguchi
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Shikoku'''</div>
----
36. Tokushima
37. Kagawa
38. Ehime
39. Kōchi
| style="padding-right:1em; vertical-align:top;" |
<div class="center">'''Kyūshū and Okinawa'''</div>
----
40. Fukuoka
41. Saga
42. Nagasaki
43. Kumamoto
44. Ōita
45. Miyazaki
46. Kagoshima
47. Okinawa
|}
দেশটি বর্তমানে অনেক শহর, নগর ও গ্রামকে একে অপরের সাথে একীভূত করে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি উপ-প্রিফেকচার প্রশাসনিক অঞ্চলের সংখ্যা হ্রাস করবে এবং প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
== ভূগোল ==
[[চিত্র:Satellite_View_of_Japan_1999.jpg|থাম্ব| জাপানের একটি উপগ্রহ চিত্র]]
[[চিত্র:Tanuki01_960.jpg|ডান|থাম্ব|220x220পিক্সেল| বন্য তানুকি (জাপানি র্যাকুন কুকুর), ফুকুইয়ামা, হিরোশিমা]]
জাপান এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর বিস্তৃত তিন হাজারেরও বেশি দ্বীপের একটি দেশ। উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত প্রধান দ্বীপগুলি হল হোক্কাইডো, হোনশু (প্রধান দ্বীপ), শিকোকু এবং কিউশু। ওকিনাওয়া সহ রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জ হল কিউশুর দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জের একটি শৃঙ্খল। একসাথে তারা প্রায়শই জাপানি দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত।
দেশের প্রায় ৭০% থেকে ৮০% এলাকা বনভূমি, পাহাড়ি এলাকা এবং কৃষি, শিল্প বা আবাসিক ব্যবহারের জন্য অনুপযুক্ত। এর কারণ হল সাধারণত খাড়া উচ্চতা, জলবায়ু এবং ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের ঝুঁকি, নরম ভূমি এবং ভারী বৃষ্টিপাত। এর ফলে মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাসযোগ্য অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি হয়েছে। জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি।
তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ারে এর অবস্থানের কারণে জাপানে ঘন ঘন কম-তীব্রতার কম্পন এবং মাঝে মাঝে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ অনুভূত হয়। প্রতি শতাব্দীতে বেশ কয়েকবার ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প ঘটে, যার ফলে প্রায়শই সুনামি হয়। ১৯২৩ সালের টোকিও ভূমিকম্পে ১,৪০,০০০ এরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল। সাম্প্রতিকতম বড় ভূমিকম্পগুলি হল ২০১৬ সালের কুমামোটো ভূমিকম্প, ২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্প এবং ২০০৪ সালের চুয়েতসু ভূমিকম্প। উষ্ণ প্রস্রবণ অসংখ্য এবং এগুলিকে রিসোর্ট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
=== ভূতত্ত্ব ===
জাপানের দ্বীপপুঞ্জগুলি প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ারের একটি আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে অবস্থিত। এগুলি মূলত মধ্য-সিলুরিয়ান থেকে প্লাইস্টোসিন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সংঘটিত বেশ কয়েকটি বৃহৎ মহাসাগরীয় আন্দোলনের ফলাফল, যা দক্ষিণে মহাদেশীয় আমুরিয়ান প্লেট এবং ওকিনাওয়া প্লেটের নীচে ফিলিপাইন সমুদ্র প্লেটের অধীনতা এবং উত্তরে ওখোটস্ক প্লেটের নীচে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের অধীনতার ফলে ঘটে।
জাপান মূলত ইউরেশিয়ান মহাদেশের পূর্ব উপকূলের সাথে সংযুক্ত ছিল। ইউরেশিয়ান প্লেটের চেয়ে গভীর হওয়ায়, সাবডাক্টিং প্লেটগুলি জাপানকে পূর্ব দিকে টেনে নিয়েছিল, প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে জাপান সাগর খুলে দিয়েছিল। টার্টারি প্রণালী এবং কোরিয়া প্রণালী অনেক পরে খুলেছিল।
[[চিত্র:1974_Japan_Sakurajima.jpg|থাম্ব| ১৯৭৪ সালে সাকুরাজিমার অগ্ন্যুৎপাত। জাপানে ১০৮টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে]]
[[চিত্র:Jomon_Sugi_07.jpg|ডান|থাম্ব| জোমন সুগি, ইয়াকুশিমা দ্বীপে। সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জীবন্ত গাছ: এটি ৭,২০০ বছর বয়সী বলে অনুমান করা হয়।]]
জাপানের জলবায়ু প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ, তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি এটিকে ছয়টি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করে:
* হোক্কাইডো: সবচেয়ে উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলে একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু রয়েছে যেখানে দীর্ঘ, ঠান্ডা শীতকাল এবং শীতল গ্রীষ্মকাল রয়েছে। বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয় না, তবে শীতকালে দ্বীপগুলিতে সাধারণত গভীর তুষারপাতের সৃষ্টি হয়।
[[চিত্র:Mt.Yarigatake_from_Enzansou.jpg|বাম|থাম্ব| মাউন্ট ইয়ারি, আগস্টে নাগানো প্রিফেকচার]]
* জাপান সাগর: হোনশুর পশ্চিম উপকূলে, শীতকালে উত্তর-পশ্চিম বাতাস ভারী তুষারপাতের সৃষ্টি করে। গ্রীষ্মকালে, এই অঞ্চলটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তুলনায় শীতল থাকে, যদিও ফোহন বাতাসের কারণে কখনও কখনও এখানে অত্যন্ত গরম তাপমাত্রা অনুভূত হয়।
* মধ্য উচ্চভূমি: একটি সাধারণ অভ্যন্তরীণ জলবায়ু, যেখানে গ্রীষ্ম ও শীত এবং দিন ও রাতের মধ্যে তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য থাকে। বৃষ্টিপাত হালকা।
* সেতো অভ্যন্তরীণ সাগর: চুগোকু এবং শিকোকু অঞ্চলের পাহাড়গুলি এই অঞ্চলটিকে মৌসুমী বাতাস থেকে রক্ষা করে, যা সারা বছর ধরে মৃদু আবহাওয়া বজায় রাখে।
* প্রশান্ত মহাসাগর: পূর্ব উপকূলে শীতকাল ঠান্ডা থাকে, সামান্য তুষারপাত হয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বাতাসের কারণে গ্রীষ্মকাল গরম, আর্দ্র থাকে।
* রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জ: রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু উপক্রান্তীয়, যেখানে শীতকাল উষ্ণ এবং গ্রীষ্মকাল উষ্ণ। বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয়, বিশেষ করে বর্ষাকালে। টাইফুন সাধারণ।
জাপানে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৯ °সে (১০৫.৬ °ফা)।
ওকিনাওয়াতে প্রধান বর্ষাকাল মে মাসের প্রথম দিকে শুরু হয় এবং এর জন্য দায়ী স্থির বৃষ্টিপাত ধীরে ধীরে উত্তর দিকে এগিয়ে যায় যতক্ষণ না জুলাইয়ের শেষের দিকে হোক্কাইডোতে পৌঁছানোর আগে উত্তর জাপানে বিলীন হয়ে যায়। হোনশুর বেশিরভাগ অঞ্চলে, জুনের মাঝামাঝি সময়ের আগেই বর্ষাকাল শুরু হয় এবং প্রায় ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়। গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং শরতের শুরুতে, টাইফুন প্রায়শই ভারী বৃষ্টিপাত নিয়ে আসে।
=== বাস্তুতন্ত্র ===
জাপানে নয়টি বন ইকোঅঞ্চল রয়েছে। এটি এই দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু এবং ভূগোলকে প্রতিফলিত করে। এগুলি রিউকিউ এবং বনিন দ্বীপপুঞ্জের উপ-ক্রান্তীয় আর্দ্র চওড়া পাতার বন থেকে শুরু করে প্রধান দ্বীপপুঞ্জের মৃদু জলবায়ু অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ প্রশস্ত পাতার এবং মিশ্র বন, উত্তর দ্বীপপুঞ্জের ঠান্ডা, শীতকালীন অংশে নাতিশীতোষ্ণ শঙ্কুযুক্ত বন পর্যন্ত বিস্তৃত।
=== পরিবেশ ===
বর্তমানে জাপান নতুন পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্বের অন্যতম নেতা। হোন্ডা এবং টয়োটা হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলিকে সর্বোচ্চ জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং সর্বনিম্ন নির্গমনের জন্য নামকরণ করা হয়েছিল। এর কারণ হাইব্রিড সিস্টেমের উন্নত প্রযুক্তি, জৈব জ্বালানি, হালকা ওজনের উপাদানের ব্যবহার এবং নতুন প্রকৌশল।
কিয়োটো প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারী এবং ১৯৯৭ সালের সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে, জাপান তার কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চুক্তির বাধ্যবাধকতা পালন করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির অধীনে চালু করা কুল বিজ প্রচারণার লক্ষ্য ছিল সরকারি অফিসে এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে শক্তির ব্যবহার কমানো। জাপান শিল্পকে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনে বড় ধরনের কর্তন করতে বাধ্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন একটি দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা কিয়োটো প্রোটোকলের বাধ্যবাধকতা পূরণে লড়াই করছে।
২০১০ সালের পরিবেশগত কর্মক্ষমতা সূচকে জাপান বিশ্বের ২০তম সেরা স্থানে রয়েছে।
== অর্থনীতি ==
[[চিত্র:The_Tokyo_Stock_Exchange_-_main_room_3.jpg|থাম্ব| টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ]]
২০১০ সালে চীন জাপানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে, জাপানের অর্থনীতি ছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম, নামমাত্র জিডিপির দিক থেকে প্রায় ৪.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ক্রয়ক্ষমতার সমতার দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে তৃতীয়। ২০০৯ সালে জাপানের সরকারি ঋণ ছিল তার বার্ষিক মোট দেশজ উৎপাদনের ১৯৩%। ব্যাংকিং, বীমা, রিয়েল এস্টেট, খুচরা বিক্রয়, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ এবং নির্মাণ - এই সবই প্রধান শিল্প। জাপানের শিল্প সক্ষমতা বিশাল এবং মোটরযান, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, মেশিন টুলস, ইস্পাত এবং অ লৌহঘটিত ধাতু, জাহাজ, রাসায়নিক, বস্ত্র এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের বৃহত্তম, শীর্ষস্থানীয় এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কিছু উৎপাদকের আবাসস্থল। মোট দেশজ উৎপাদনের তিন-চতুর্থাংশের জন্য পরিষেবা খাত দায়ী।
বিগ ম্যাক ইনডেক্স দেখায় যে জাপানি কর্মীরা বিশ্বে প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ বেতন পান। জাপানের কিছু বৃহৎ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে টয়োটা, নিন্টেন্ডো, এনটিটি ডোকোমো, ক্যানন, হোন্ডা, তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল, সনি, প্যানাসনিক, তোশিবা, শার্প, নিপ্পন স্টিল, নিপ্পন অয়েল, জাপান টোব্যাকো, টেপকো, মিতসুবিশি, ৭১১, হিটাচি, নিসান, ইওন, টয়োটা সুশো, ফুজিৎসু এবং নিপ্পন টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন। এটি বিশ্বের কয়েকটি বৃহত্তম ব্যাংকের আবাসস্থল এবং টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ (যা তার নিক্কেই ২২৫ এবং টপিক্স সূচকের জন্য পরিচিত) বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। ফোর্বস গ্লোবাল ২০০০-এর ৩২৬টি কোম্পানির আবাসস্থল জাপান, যা ২০০৬ সালের হিসাবে ১৬.৩%।
২০০৮ সালের ব্যবসা করার সহজতা সূচকে জাপান ১৭৮টি দেশের মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে এবং উন্নত বিশ্বের মধ্যে এটির সরকার ব্যবস্থা সবচেয়ে ছোট। জাপানি পুঁজিবাদের বিভিন্ন রূপের অনেক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কেইরেৎসু এন্টারপ্রাইজগুলি প্রভাবশালী। জাপানি কর্মপরিবেশে আজীবন কর্মসংস্থান এবং জ্যেষ্ঠতা-ভিত্তিক কর্মজীবনের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে সাধারণ। জাপানি কোম্পানিগুলি "দ্য টয়োটা ওয়ে" এর মতো ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির জন্য পরিচিত। শেয়ারহোল্ডারদের সক্রিয়তা বিরল। সম্প্রতি, জাপান এই নিয়মগুলির কিছু থেকে সরে এসেছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে, জাপান ৩০টি এশিয়ান দেশের মধ্যে ৫ম সর্বাধিক অস্বচ্ছল।
২০০৫ সালে জাপানের মাথাপিছু রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪,২১০ মার্কিন ডলার। জাপানের প্রধান রপ্তানি বাজার হল চীন (১৮.৮৮%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৬.৪২%), দক্ষিণ কোরিয়া (৮.১৩%), তাইওয়ান (৬.২৭%) এবং হংকং (৫.৪৯%) (২০০৯ সালের জন্য)। জাপানের প্রধান রপ্তানি পণ্য হল পরিবহন সরঞ্জাম, মোটরযান, ইলেকট্রনিক্স, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং রাসায়নিক। জাপানের প্রধান আমদানি বাজার হল চীন (২২.২%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১০.৯৬%), অস্ট্রেলিয়া (৬.২৯%), সৌদি আরব (৫.২৯%), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৪.১২%), দক্ষিণ কোরিয়া (৩.৯৮%) এবং ইন্দোনেশিয়া (৩.৯৫%) (২০০৯ সালের জন্য)। জাপানের প্রধান আমদানি পণ্য হলো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, জীবাশ্ম জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্য (বিশেষ করে গরুর মাংস), রাসায়নিক, বস্ত্র এবং তার শিল্পের কাঁচামাল। বাজার ভাগের পরিমাপের দিক থেকে, দেশীয় বাজারগুলি যেকোনো OECD দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম উন্মুক্ত। জুনিচিরো কোইজুমি প্রশাসন প্রতিযোগিতা-বান্ধব কিছু সংস্কার শুরু করেছে এবং সম্প্রতি জাপানে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে।
জাপানের ব্যবসায়িক সংস্কৃতিতে অনেক আদিবাসী ধারণা রয়েছে যেমন নেমাওয়াশি, নেঙ্কো সিস্টেম, বেতনভোগী এবং অফিস মহিলা। জাপানের আবাসন বাজার শহরাঞ্চলে সীমিত জমি সরবরাহ দ্বারা চিহ্নিত। এটি বিশেষ করে বিশ্বের বৃহত্তম নগর সমষ্টি টোকিওর ক্ষেত্রে সত্য। অর্ধেকেরও বেশি জাপানি শহরতলিতে বা আরও গ্রামীণ এলাকায় বাস করে, যেখানে বিচ্ছিন্ন ঘরগুলিই প্রধান আবাসন ধরণের। জাপানের কৃষি ব্যবসাগুলি প্রায়শই সোপান চাষের পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং ফসলের ফলন বেশি হয়। জাপানের ১৩% জমি চাষযোগ্য। বিশ্বব্যাপী মাছ ধরার প্রায় ১৫% জাপানে আসে, চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে। জাপানের কৃষি খাত উচ্চ মূল্যে সুরক্ষিত।
=== বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ===
বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিশেষ করে প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি এবং জৈব চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রে জাপান অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ। প্রায় ৭০০,০০০ গবেষকের গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেট ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জাপান বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বা চিকিৎসাবিদ্যায় পনেরোজন নোবেল বিজয়ী, তিনজন ফিল্ডস পদকপ্রাপ্ত এবং একজন গাউস পুরস্কার বিজয়ী তৈরি করেছে।
জাপানের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত অবদান ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, যন্ত্রপাতি, ভূমিকম্প প্রকৌশল, শিল্প রোবোটিক্স, অপটিক্স, রাসায়নিক, অর্ধপরিবাহী এবং ধাতুর ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। রোবোটিক্স উৎপাদন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়, বিশ্বের শিল্প রোবট উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত অর্ধেকেরও বেশি (৭৪২,৫০০ এর মধ্যে ৪০২,২০০) জাপানের দখলে। এটি QRIO, ASIMO এবং AIBOও তৈরি করেছিল। জাপান বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোবাইল উৎপাদক এবং বর্তমানে বিশ্বের পনেরটি বৃহত্তম অটোমোবাইল প্রস্তুতকারকের মধ্যে চারটি এবং বিশ্বের বিশটি বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর বিক্রয় নেতাদের মধ্যে সাতটি এখানে অবস্থিত।
[[চিত্র:Kibo_PM_and_ELM-PS.jpg|বাম|থাম্ব| JAXA জাপানি এক্সপেরিমেন্ট মডিউল, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি অংশ।]]
জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA) হল জাপানের মহাকাশ সংস্থা যা মহাকাশ ও গ্রহ গবেষণা, বিমান গবেষণা এবং রকেট ও উপগ্রহের উন্নয়ন পরিচালনা করে। এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি অংশগ্রহণকারী এবং ২০০৮ সালে স্পেস শাটল অ্যাসেম্বলি ফ্লাইটের সময় জাপানি এক্সপেরিমেন্ট মডিউল (কিবো) আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যুক্ত করা হয়েছিল। মহাকাশ অনুসন্ধানে এর পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন ২০১০ সালে শুক্রগ্রহ, আকাতসুকিতে একটি মহাকাশ অনুসন্ধান পাঠানো, ২০১৩ সালে উৎক্ষেপণ করা বুধের চৌম্বকীয় অরবিটার তৈরি করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে একটি চাঁদের ভিত্তি তৈরি করা।
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ তারিখে, এটি তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে একটি H-IIA (মডেল H2A2022) ক্যারিয়ার রকেটে চন্দ্র কক্ষপথ অনুসন্ধানকারী "SELENE" (সেলেনোলজিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপ্লোরার) উৎক্ষেপণ করে। সেলেনকে কাগুয়া নামেও পরিচিত, প্রাচীন লোককাহিনী "দ্য টেল অফ দ্য ব্যাম্বু কাটার"-এর চন্দ্র রাজকন্যা। অ্যাপোলো প্রোগ্রামের পর কাগুয়া হলো সবচেয়ে বড় চন্দ্র অনুসন্ধান অভিযান। এর লক্ষ্য হল চাঁদের উৎপত্তি এবং বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। এটি ৪ অক্টোবর চন্দ্র কক্ষপথে প্রবেশ করে, প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) উচ্চতায় চন্দ্র কক্ষপথে উড়ে।
== পরিকাঠামো ==
[[চিত্র:Kansai_International_Airport01n4272.jpg|থাম্ব| কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্মাণ প্রকল্প।]]
[[চিত্র:JR_East_Shinkansen_lineup_at_Niigata_Depot_200910.jpg|বাম|থাম্ব| জাপানে উচ্চ গতির শিনকানসেন বা ''বুলেট ট্রেন'' পরিবহনের একটি সাধারণ মাধ্যম।]]
[[চিত্র:ANA_Boeing_747-481_(JA8962)_in_Pokémon_livery.jpg|ডান|থাম্ব|280x280পিক্সেল| একটি অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ পোকেমন জেট]]
২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, জাপানের জ্বালানির অর্ধেক পেট্রোলিয়াম থেকে, এক পঞ্চমাংশ কয়লা থেকে এবং ১৪% প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উৎপাদিত হয়। জাপানের এক-চতুর্থাংশ বিদ্যুত উৎপাদন করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ।
জাপানের যানবাহন রাস্তার বাম দিকে। উচ্চ-গতির, বিভক্ত, সীমিত-প্রবেশযোগ্য টোল রাস্তার একটি একক নেটওয়ার্ক প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করে এবং টোল-সংগ্রহকারী উদ্যোগগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়। নতুন এবং ব্যবহৃত গাড়ির দাম কম। গাড়ির মালিকানা ফি এবং জ্বালানি শুল্ক শক্তি-দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, মোট ভ্রমণের মাত্র ৫০% দূরত্বের কারণে, গাড়ির ব্যবহার সমস্ত G8 দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম।
জাপানের কয়েক ডজন রেলওয়ে কোম্পানি আঞ্চলিক এবং স্থানীয় যাত্রী পরিবহন বাজারে প্রতিযোগিতা করে; উদাহরণস্বরূপ, ৭টি জেআর এন্টারপ্রাইজ, কিন্টেৎসু কর্পোরেশন, সেইবু রেলওয়ে এবং কেইও কর্পোরেশন। প্রায়শই, এই উদ্যোগগুলির কৌশলগুলিতে স্টেশনের পাশে রিয়েল এস্টেট বা ডিপার্টমেন্ট স্টোর থাকে। প্রায় ২৫০টি উচ্চ-গতির শিনকানসেন ট্রেন প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করে। জাপানি ট্রেনগুলি তাদের সময়ানুবর্তিতার জন্য পরিচিত।
১৭৩টি বিমানবন্দর রয়েছে এবং শহরগুলির মধ্যে ভ্রমণের জন্য বিমান একটি জনপ্রিয় উপায়। বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর, হানেদা বিমানবন্দর, এশিয়ার দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রবেশপথ হল নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টোকিও অঞ্চল), কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ওসাকা/কোবে/কিয়োটো অঞ্চল) এবং চুবু সেন্ট্রেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (নাগোয়া অঞ্চল)। বৃহত্তম বন্দরগুলির মধ্যে রয়েছে নাগোয়া বন্দর।
== জনসংখ্যা ==
[[চিত্র:Skyscrapers_of_Shinjuku_2009_January.jpg|থাম্ব| গ্রেটার টোকিও এরিয়া হল বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মেট্রোপলিটন এলাকা যেখানে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ বাস করে।]]
জাপানের জনসংখ্যা আনুমানিক ১২৭.৩ মিলিয়ন (২০১৩)। জাপানি সমাজ ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকভাবে একজাত, যেখানে বিদেশী কর্মীদের সংখ্যা কম। জাপানে বসবাসকারী ক্ষুদ্র সংখ্যালঘুদের মধ্যে জাইনিচি কোরিয়ান, জাইনিচি চাইনিজ, ফিলিপিনো, জাপানি ব্রাজিলিয়ান, জাপানি পেরুভিয়ানরা অন্যতম। ২০০৩ সালে, জাপানে প্রায় ১,৩৬,০০০ পশ্চিমা প্রবাসী ছিল। সবচেয়ে প্রভাবশালী স্থানীয় জাতিগত গোষ্ঠী হল ইয়ামাতো জনগণ; প্রাথমিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে আদিবাসী আইনু এবং রিউকুয়ান, পাশাপাশি বুরাকুমিনের মতো সামাজিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী।
জাপানের আয়ুষ্কাল বিশ্বের সর্বোচ্চ দেশগুলির মধ্যে একটি, ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে মানুষের বয়স ছিল ৮৩.১০ বছর। জাপানের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধ হচ্ছে, যুদ্ধ-পরবর্তী শিশু বৃদ্ধির প্রভাবে এবং বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে। ২০০৪ সালে, জনসংখ্যার প্রায় ১৯.৫% ছিল ৬৫ বছরের বেশি বয়সী।
[[চিত্র:Shibuya_night.jpg|বাম|থাম্ব| শিবুয়া ক্রসিংয়ের একটি দৃশ্য, যা টোকিওর প্রায়শই জনাকীর্ণ রাস্তার একটি উদাহরণ।]]
জনসংখ্যাতাত্ত্বিক কাঠামোর পরিবর্তনগুলি বেশ কয়েকটি সামাজিক সমস্যা তৈরি করেছে, বিশেষ করে কর্মশক্তির জনসংখ্যার সম্ভাব্য হ্রাস এবং পাবলিক পেনশন পরিকল্পনার মতো সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার ব্যয় বৃদ্ধি। অনেক জাপানি তরুণ ক্রমশ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে বিয়ে না করা বা পরিবার না রাখা পছন্দ করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা ১০ কোটি এবং ২১০০ সালের মধ্যে ৬ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সমস্যা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে বর্তমানে জনসংখ্যাবিদ এবং সরকারি পরিকল্পনাকারীরা তীব্র বিতর্কে লিপ্ত। দেশের বয়স্ক জনসংখ্যাকে সহায়তা করার জন্য তরুণ কর্মী সরবরাহের সমাধান হিসেবে কখনও কখনও অভিবাসন এবং জন্ম প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়। ইউএনএইচসিআরের মতে, ২০০৭ সালে জাপান মাত্র ৪১ জন শরণার্থীকে পুনর্বাসনের জন্য গ্রহণ করেছিল, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০,০০০ জনকে আশ্রয় দিয়েছিল।
জাপানে আত্মহত্যার হার বেশি। ২০০৯ সালে, টানা দ্বাদশ বছরের মতো আত্মহত্যার সংখ্যা ৩০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। ৩০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হল আত্মহত্যা।
=== ধর্ম ===
[[চিত্র:Itsukushima_Shrine_Torii_Gate_(13890465459).jpg|থাম্ব| শিন্তো ইতসুকুশিমা মন্দির ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান]]
জাপানে বৌদ্ধ এবং শিনটো ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সম্পর্কে সর্বোচ্চ অনুমান ৮৪-৯৬%। এটি উভয় ধর্মের একটি বৃহৎ সংখ্যক বিশ্বাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এই পূর্বাভাসগুলো মন্দিরের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ধর্মের অনুসরণকারী ব্যক্তিদের সংখ্যা নয়। প্রফেসর রবার্ট কিসালা (নানজান ইউনিভার্সিটি) পরামর্শ দেন যে জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ নিজেকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত বলে চিহ্নিত করে।
চীনের তাওবাদ, কনফুসিয়ানিজম এবং বৌদ্ধধর্মও জাপানি বিশ্বাস এবং রীতিনীতিকে প্রভাবিত করেছে। জাপানে ধর্ম প্রকৃতিগতভাবে সমন্বয়মূলক, এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরণের অনুশীলন দেখা যায়। যেমন বাবা-মা ও শিশুদের শিন্তো আচার উদযাপন, পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীরা প্রার্থনা, খ্রিস্টান গির্জায় দম্পতিদের বিবাহ এবং বৌদ্ধ মন্দিরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। জাপানে এক শতাংশেরও কম খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাস করে] প্রকৃতপক্ষে সম্ভবত আধা শতাংশেরও কম। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক দাবি করেছে দুই শতাংশ (২.৪ মিলিয়ন)।
এছাড়াও, ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে জাপানে অসংখ্য ধর্মীয় সম্প্রদায় (শিনশুকিও) আবির্ভূত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হল সেইচো-নো-ই ৩ মিলিয়ন, টেনরিকিও ২ মিলিয়ন, প্লা কিয়োদান ১ মিলিয়ন, সেকাই কিউসেইকিও, ১ মিলিয়ন, সুকিও মাহিকারি ১ মিলিয়ন, হনমিচি ০.৯ মিলিয়ন, কনকোকিও ০.৫ মিলিয়ন, তেনশো কোটাই জিঙ্গুকিও ০.৪ মিলিয়ন, এন্নোকিও ০.৩ মিলিয়ন (১৯৭৮ সালের হিসাবে), কুরোজুমিকিও ০.২৫ মিলিয়ন এবং ওমোটো ০.১৫ মিলিয়ন।
=== ভাষা ===
জনসংখ্যার ৯৯% এরও বেশি তাদের মাতৃভাষা হিসেবে জাপানি ভাষায় কথা বলে। এটি একটি সমষ্টিগত ভাষা। জাপানি সমাজের শ্রেণিবিন্যাসের প্রকৃতি প্রতিফলিত করে এমন সম্মানসূচক ব্যবস্থা দ্বারা আলাদা। সেখানে ক্রিয়াপদের রূপ এবং নির্দিষ্ট শব্দভাণ্ডার রয়েছে। এগুলো বক্তা এবং শ্রোতার আপেক্ষিক অবস্থা নির্দেশ করে। জাপানি অভিধান শিনসেন-কোকুগোজিতেন অনুসারে, চীনা-ভিত্তিক শব্দগুলি মোট শব্দভান্ডারের ৪৯.১%, আদিবাসী শব্দগুলি ৩৩.৮% এবং অন্যান্য ধার করা শব্দগুলি ৮.৮%।
লেখার পদ্ধতিতে কাঞ্জি (চীনা অক্ষর) এবং দুটি সেট কানা (সরলীকৃত চীনা অক্ষরের উপর ভিত্তি করে তৈরি সিলেবার), পাশাপাশি ল্যাটিন বর্ণমালা এবং আরবি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। জাপানি ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত রিউকুয়ান ভাষাসমূহ ওকিনাওয়াতে কথিত। তবে বর্তমানে খুব কম শিশুই এই ভাষাগুলি শেখে। আইনু ভাষা মৃতপ্রায়। হোক্কাইডোতে মাত্র কয়েকজন বয়স্ক স্থানীয় ভাষাভাষী অবশিষ্ট রয়েছে। বেশিরভাগ সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের জাপানি এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই কোর্স করতে হয়।
== শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ==
[[চিত্র:Yasuda_Auditorium,_Tokyo_University_-_Nov_2005.JPG|থাম্ব| জাপানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসুদা অডিটোরিয়াম।]]
মেইজি পুনরুদ্ধারের ফলে ১৮৭২ সালে জাপানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে, জাপানে বাধ্যতামূলক শিক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যা নয় বছর (৬ বছর বয়স থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত) স্থায়ী হয়। প্রায় সকল শিশু তিন বছরের সিনিয়র হাই স্কুলে তাদের শিক্ষা অব্যাহত রাখে এবং MEXT অনুসারে, ২০০৫ সালে প্রায় ৭৫.৯% উচ্চ বিদ্যালয়ের স্নাতকরা বিশ্ববিদ্যালয়, জুনিয়র কলেজ, ট্রেড স্কুল বা অন্যান্য উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে।
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা খুবই প্রতিযোগিতামূলক, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের ক্ষেত্রে। জাপানের দুটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় হল টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়। OECD দ্বারা সমন্বিত আন্তর্জাতিক ছাত্র মূল্যায়ন প্রোগ্রাম, বর্তমানে ১৫ বছর বয়সীদের জাপানি জ্ঞান এবং দক্ষতাকে বিশ্বের ষষ্ঠ সেরা হিসেবে স্থান দেয়।
জাপানে জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদান একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বীমা ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হয়। এটি একটি সরকারি কমিটি দ্বারা নির্ধারিত ফি সহ, আপেক্ষিক সমতা প্রদান করে। নিয়োগকর্তাদের মাধ্যমে বীমাবিহীন ব্যক্তিরা স্থানীয় সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ১৯৭৩ সাল থেকে, সমস্ত বয়স্ক ব্যক্তি সরকার-স্পন্সরিত বীমার আওতায় এসেছেন। রোগীরা তাদের পছন্দের চিকিৎসক বা সুবিধা নির্বাচন করতে স্বাধীন।
== সংস্কৃতি এবং বিনোদন ==
[[চিত্র:Genji_emaki_01003_001.jpg|বাম|থাম্ব| বিশ্বের প্রথম উপন্যাস হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত দ্য টেল অফ গেঞ্জির একটি হাতের লেখার পৃষ্ঠাগুলি]]
জাপানি সংস্কৃতি বছরের পর বছর ধরে ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে, দেশটির আদি জোমোন সংস্কৃতি থেকে শুরু করে সমসাময়িক সংস্কৃতিতে, যা এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার প্রভাবকে একত্রিত করে। ঐতিহ্যবাহী জাপানি শিল্পের মধ্যে রয়েছে কারুশিল্প (ইকেবানা, অরিগামি, উকিয়ো-ই, পুতুল, বার্ণিশের পাত্র, মৃৎশিল্প), পরিবেশনা (বুনরাকু, নৃত্য, কাবুকি, নোহ, রাকুগো), ঐতিহ্য (খেলা, চা অনুষ্ঠান, বুদো, স্থাপত্য, বাগান, তরবারি) এবং রন্ধনপ্রণালী। ঐতিহ্যবাহী কাঠের ব্লক প্রিন্টিং এবং পশ্চিমা শিল্পের মিশ্রণের ফলে মাঙ্গা তৈরি হয়, যা সাধারণত জাপানি কমিক বইয়ের একটি বিন্যাস যা এখন জাপানের ভেতরে এবং বাইরে জনপ্রিয়। টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের জন্য মাঙ্গা-প্রভাবিত অ্যানিমেশনকে অ্যানিমে বলা হয়। জাপানি তৈরি ভিডিও গেম কনসোলগুলি ১৯৮০ এর দশক থেকে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে তাদের প্রভাব অব্যাহত রয়েছে।
[[চিত্র:Kinkaku_Snow_E4.jpg|থাম্ব|310x310পিক্সেল| স্বর্ণমণ্ডপের মন্দির ( ''কিঙ্কাকুজি'' )]]
জাপানি সঙ্গীত সারগ্রাহী, প্রতিবেশী সংস্কৃতি থেকে বাদ্যযন্ত্র, স্কেল এবং শৈলী ধার করা হয়েছে। নবম এবং দশম শতাব্দীতে কোটোর মতো অনেক বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ঘটে। নোহ নাটকের আবৃত্তি চতুর্দশ শতাব্দীর এবং জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত, গিটারের মতো শামিসেন সহ, ষোড়শ শতাব্দীর। উনিশ শতকের শেষের দিকে প্রবর্তিত পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীত এখন সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধোত্তর জাপান আমেরিকান এবং ইউরোপীয় আধুনিক সঙ্গীত দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে, যার ফলে জে-পপ নামক জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীতের বিবর্তন ঘটেছে।
কারাওকে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের মধ্যে একটি। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে যে, সেই বছর জাপানিরা ফুল সাজানো বা চা অনুষ্ঠানের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের চেয়ে বেশি সংখ্যক কারাওকে গেয়েছিলেন।
জাপানি সাহিত্যের প্রাচীনতম রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে দুটি ইতিহাসের বই কোজিকি এবং নিহোন শোকি এবং অষ্টম শতাব্দীর কাব্যগ্রন্থ মান'য়োশু, যা সবই চীনা অক্ষরে লেখা। হেইয়ান যুগের প্রাথমিক দিনগুলিতে, কানা (হিরাগানা এবং কাতাকানা) নামে পরিচিত প্রতিলিপি পদ্ধতিটি ফোনোগ্রাম হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। বাঁশ কাটার গল্পটিকে প্রাচীনতম জাপানি আখ্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই শোনাগনের লেখা "দ্য পিলো বুক" বইয়ে হেইয়ানের রাজদরবারের জীবনের একটি বিবরণ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে লেডি মুরাসাকির লেখা "দ্য টেল অফ গেঞ্জি" বইটিকে প্রায়শই বিশ্বের প্রথম উপন্যাস হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
এডো যুগে সাহিত্য ততটা সামুরাই অভিজাতদের ক্ষেত্র হয়ে ওঠেনি, সাহিত্য তখন ছিল চোনিন তথা সাধারণ মানুষের। উদাহরণস্বরূপ, ইয়োমিহোন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং পাঠক এবং লেখকত্বের এই গভীর পরিবর্তন প্রকাশ করে। মেইজি যুগে ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যিক রূপের পতন ঘটে, এই সময়ে জাপানি সাহিত্যে পশ্চিমা প্রভাব একীভূত হয়। নাটসুমে সোসেকি এবং মোরি ওগাই ছিলেন জাপানের প্রথম "আধুনিক" ঔপন্যাসিক, তার পরে ছিলেন রিউনোসুকে আকুতাগাওয়া, জুন'ইচিরো তানিজাকি, ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা, ইউকিও মিশিমা এবং সম্প্রতি হারুকি মুরাকামি। জাপানে দুজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখক আছেন - ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা (১৯৬৮) এবং কেনজাবুরো ওই (১৯৯৪)।
== খেলাধুলা ==
[[চিত্র:Asashoryu_fight_Jan08.JPG|বাম|থাম্ব| একটি সুমো ম্যাচ]]
ঐতিহ্যগতভাবে সুমো জাপানের জাতীয় খেলা হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি দর্শকদের কাছে বেশ একটি জনপ্রিয় খেলা। জুডো, কারাতে এবং আধুনিক কেন্দোর মতো মার্শাল আর্টও দেশটিতে দর্শকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে অনুশীলন এবং উপভোগ করা হয়। মেইজি পুনরুদ্ধারের পর জাপানে অনেক পশ্চিমা খেলাধুলা চালু হয় এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
জাপানে পেশাদার বেসবল লীগ ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ বেসবল দেশের সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় খেলা। জাপানের সবচেয়ে বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হলেন ইচিরো সুজুকি। তিনি ১৯৯৪, ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে জাপানের সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতেছিলেন। এখন তিনি উত্তর আমেরিকান মেজর লীগ বেসবলের নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিসের হয়ে খেলেন। এর আগে সাদাহারু ওহ জাপানের বাইরে সুপরিচিত ছিলেন। জাপানে তার ক্যারিয়ারে তার সমসাময়িক হ্যাঙ্ক অ্যারনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতটা হোম রান করেছিলেন তার চেয়ে বেশি রান করেছিলেন।
১৯৯২ সালে জাপান পেশাদার ফুটবল লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে, অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলও (সকার) যথেষ্ট অনুসারী অর্জন করেছে। ১৯৮১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জাপান ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের একটি ভেন্যু ছিল এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করেছিল। জাপান এশিয়ার অন্যতম সফল ফুটবল দল, চারবার এশিয়ান কাপ জিতেছে, সম্প্রতি ২০১১ সালে।
জাপানে গলফও জনপ্রিয়। যেমন সুপার জিটি স্পোর্টস কার সিরিজ এবং ফর্মুলা নিপ্পন ফর্মুলা রেসিংয়ের মতো অটো রেসিং। জাপানে ইন্ডিকার রেসিং আনার জন্য হোন্ডা ১৯৯৭ সালে টুইন রিং মোতেগি সম্পন্ন করে।
১৯৬৪ সালে জাপান টোকিওতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছিল। জাপান দুবার শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছে: ১৯৭২ সালে সাপ্পোরো এবং ১৯৯৮ সালে নাগানো। ২০২০ সালে জাপান আবার টোকিওতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের কথা রয়েছে।
pbvgenva600hkqmucls2xoq89mzi24r
84051
84050
2025-06-11T18:52:57Z
NusJaS
8394
84051
wikitext
text/x-wiki
জাপান আজ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এই বইয়ে এখন পর্যন্ত যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তা এই জাতির উপর ছাপ রেখে গেছে। এখানে পাশ্চাত্য ও আদিবাসী ধারণার মিশ্রণ ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি রয়েছে। বর্তমানে দেশটি বিশ্বে ইলেকট্রনিক্স ও প্রকৌশলে নেতৃত্বস্থানে আছে।
== সরকার ও রাজনীতি ==
[[চিত্র:Emperor_Akihito_and_empress_Michiko_of_japan.jpg|থাম্ব| সম্রাট আকিহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মিচিকো। জাপানে বিশ্ব ইতিহাসের প্রাচীনতম ধারাবাহিক বংশগত রাজতন্ত্র রয়েছে, যার উত্তরাধিকারসূত্রে কমপক্ষে 660 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে এটি চালু রয়েছে।]]
জাপান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। দেশটিতে সম্রাটের ক্ষমতা খুবই সীমিত। একজন আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সংবিধান তাকে "রাষ্ট্র এবং জনগণের ঐক্যের প্রতীক" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ক্ষমতা প্রধানত জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং ডায়েটের অন্যান্য নির্বাচিত সদস্যদের হাতে। সাংবিধানিক ভাবে সার্বভৌমত্ব জাপানি জনগণের হাতে ন্যস্ত। সম্রাট কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে কার্যকরভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন। জাপানের বর্তমান সম্রাট [[w:আকিহিতো|আকিহিতো]]। জাপানের যুবরাজ [[w:নারুহিতো|নারুহিতো]] সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী আছেন।
(এই তথ্যটি বইটি লেখার সময় প্রাসঙ্গিক ছিল। উল্লিখিত যুবরাজ [[w:নারুহিতো|নারুহিতো]]<nowiki/>ই বর্তমানে জাপানের সম্রাট।)
জাপানের আইনসভা হল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ জাতীয় ডায়েট। ডায়েটে ৪৮০ আসন বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি পরিষদ থাকে। এটি প্রতি চার বছর অন্তর অথবা ভেঙে গেলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। উচ্চকক্ষ হিসেবে২৪২টি আসন বিশিষ্ট কাউন্সিলর পরিষদ থাকে। এর জনপ্রিয় নির্বাচিত সদস্যরা ছয় বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সর্বজনীন ভোটাধিকার রয়েছে। সমস্ত নির্বাচনী অফিসের জন্য গোপন ব্যালটের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৯ সালে উদারপন্থী রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৫৪ বছরের শাসনের পর জাপানের সামাজিক উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতা দখল করে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। জাপানের সম্রাট ডায়েট কর্তৃক তার সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হওয়ার পর এই পদটি নিযুক্ত করেন এবং পদে বহাল থাকার জন্য তাকে প্রতিনিধি পরিষদের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হলেন মন্ত্রিসভার প্রধান (তাঁর জাপানি পদবির আক্ষরিক অনুবাদ "মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী") এবং তিনি প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করেন, যাদের বেশিরভাগকেই ডায়েটের সদস্য হতে হবে। ২৬শে ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইয়োশিহিকো নোদার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য ডায়েট কর্তৃক শিনজো আবেকে মনোনীত করা হয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত হন, জাপানের সংবিধান স্পষ্টভাবে সম্রাটকে ডায়েট কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়োগ করার নির্দেশ দেয়। সম্রাট আকিহিতো একই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন।
জাপানের আইনসভা জাতীয় ডায়েট থেকে সম্রাটের রাবার স্ট্যাম্প অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধিবদ্ধ আইনের উৎপত্তি হয়। বর্তমান সংবিধান অনুসারে সম্রাটকে ডায়েট কর্তৃক পাস করা আইন জারি করতে হবে। বিশেষ করে আইনটি পাসের বিরোধিতা করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হবে না। জাপানের আদালত ব্যবস্থা চারটি মৌলিক স্তরে বিভক্ত: সুপ্রিম কোর্ট এবং তিনটি স্তরের নিম্ন আদালত। জাপানি আইনের প্রধান অংশ হলো ছয়টি কোড নামক একটি সংগ্রহ।
== বৈদেশিক সম্পর্ক ও সামরিক বাহিনী ==
[[চিত্র:SM3_from_JDS_Kongo.jpg|বাম|থাম্ব| জেডিএস ''কঙ্গো'' (ডিডিজি-১৭৩) একটি স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল ৩ অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করছে।]]
[[চিত্র:Helicopter_carrier_Hyūga_(16DDH).jpg|থাম্ব| জেডিএস ''হিউগা'', দুটি জাপানি মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স হেলিকপ্টার ক্যারিয়ারের একটি।]]
বিশ্বের যেকোনো দেশের মধ্যে জাপান বৃহত্তম সামরিক বাজেট বজায় রাখে। জাপানের তার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে মার্কিন-জাপান নিরাপত্তা জোট তাদের পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৬ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে জাপান মোট ১৯ বছর ধরে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, সম্প্রতি ২০০৯ এবং ২০১০ সালে। এটি নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভের জন্য আগ্রহী G4 দেশগুলির মধ্যে একটি।
G8, APEC, "ASEAN Plus Three" এর সদস্য এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে জাপান আন্তর্জাতিক বিষয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং বিশ্বজুড়ে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। জাপান ২০০৭ সালের মার্চ মাসে অস্ট্রেলিয়ার সাথে এবং ২০০৮ সালের অক্টোবরে ভারতের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের পরে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সরকারি উন্নয়ন সহায়তা দাতা। ২০০৯ সালে দেশটি ৯.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিল। জাপান ইরাক যুদ্ধে অ-যোদ্ধা সৈন্য প্রেরণ করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে ইরাক থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। জাপানি মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স রিমপ্যাক সামুদ্রিক মহড়ায় নিয়মিত অংশগ্রহণকারী।
জাপান তার প্রতিবেশীদের সাথে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে: [[w:কুরিল_দ্বীপপুঞ্জ|দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ]] নিয়ে রাশিয়ার সাথে, লিয়ানকোর্ট রকস নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে, [[w:সেনকাকু_দ্বীপ|সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ]] নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং চীন প্রজাতন্ত্রের (তাইওয়ান) সাথে এবং ওকিনোটোরিশিমার আশেপাশের EEZ নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এর সাথে।
জাপানের নাগরিকদের অপহরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সাথে জাপানের চলমান বিরোধেরও মুখোমুখি (ছয়-পক্ষীয় আলোচনাও দেখুন)।
জাপানের সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে জাপানের সামরিক বাহিনী সীমিত। এটি আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যুদ্ধ ঘোষণা বা সামরিক শক্তি ব্যবহারের জাপানের অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে। জাপানের সামরিক বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয় এবং মূলত জাপান গ্রাউন্ড সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (JGSDF), জাপান মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (JMSDF) এবং জাপান এয়ার সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (JASDF) নিয়ে গঠিত। সম্প্রতি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এই বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইরাকে জাপানি সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে জাপানি সেনাবাহিনীর প্রথম বিদেশে ব্যবহার করা হয়েছে।
জাপান যাতে জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটারের মতো বহুজাতিক প্রকল্পে যোগ দিতে পারে, সেজন্য নিপ্পন কেইদানরেন সরকারের কাছে অস্ত্র রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাপান ইতিমধ্যেই এজিস ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম তৈরিতে সাহায্য করেছে।
এই মুহূর্তে জাপানের কাছে কোনও পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তবে কিছু রাজনীতিবিদ আছেন যারা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলির হুমকির সাথে এই নীতিটি উল্টে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
== প্রশাসনিক বিভাগ ==
[[চিত্র:Regions_and_Prefectures_of_Japan.svg|থাম্ব|320x320পিক্সেল| ISO 3166-2:JP ক্রম অনুসারে জাপানের প্রিফেকচারগুলির মানচিত্র এবং জাপানের অঞ্চলগুলি]]
জাপান সাতচল্লিশটি প্রিফেকচার নিয়ে গঠিত, প্রতিটি প্রিফেকচারের তত্ত্বাবধান একজন নির্বাচিত গভর্নর, আইনসভা এবং প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র করে। প্রতিটি প্রিফেকচার আরও শহর, শহর এবং গ্রামে বিভক্ত।
{| class="wikitable"
|'''হোক্কাইদো'''
----১. হোক্কাইদো
|'''তোহোকু'''
----২. আওমোরি
৩. ইওয়াতে
৪. মিয়াগি
৫. আকিতা
৬. ইয়ামাগাতা
৭. ফুকুশিমা
|'''কান্তো'''
----৮. ইবারাকি
৯. তোচিগি
১০. গুনমা
১১. সাইতামা
১২. চিবা
১৩. টোকিও
১৪. কানাগাওয়া
|'''চুবু'''
----১৫. নিগাতা
১৬. তোয়ামা
১৭. ইশিকাওয়া
১৮. ফুকুই
১৯. ইয়ামানাশি
২০. |নাগানো
২১. গিফু
২২. শিযুওকা
২৩. আইচি
|-
|'''কানসাই'''
----২৪. মি
২৫. শিগা
২৬. কিয়োটো
২৭. ওসাকা
২৮. হিয়োগো
২৯. নারা
৩০. ওয়াকায়ামা
|'''চুগোকু'''
----৩১. তোত্তোরি
৩২. শিমানে
৩৩. ওকায়ামা
৩৪. হিরোশিমা
৩৫. ইয়ামাগুচি
|'''শিকোকু'''
----৩৬. তোকুশিমা
৩৭. কাগাওয়া
৩৮. এহিমে
৩৯. কোচি
|'''কিউশু এবং ওকিনাওয়া'''
----৪০. ফুকুওকা
৪১. সাগা
৪২. নাগাসাকি
৪৩. কুমামোতো
৪৪. ওইতা
৪৫. মিয়াজাকি
৪৬. কাগোশিমা
৪৭. ওকিনাওয়া
|}
দেশটি বর্তমানে অনেক শহর, নগর ও গ্রামকে একে অপরের সাথে একীভূত করে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি উপ-প্রিফেকচার প্রশাসনিক অঞ্চলের সংখ্যা হ্রাস করবে এবং প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
== ভূগোল ==
[[চিত্র:Satellite_View_of_Japan_1999.jpg|থাম্ব| জাপানের একটি উপগ্রহ চিত্র]]
[[চিত্র:Tanuki01_960.jpg|ডান|থাম্ব|220x220পিক্সেল| বন্য তানুকি (জাপানি র্যাকুন কুকুর), ফুকুইয়ামা, হিরোশিমা]]
জাপান এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর বিস্তৃত তিন হাজারেরও বেশি দ্বীপের একটি দেশ। উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত প্রধান দ্বীপগুলি হল হোক্কাইডো, হোনশু (প্রধান দ্বীপ), শিকোকু এবং কিউশু। ওকিনাওয়া সহ রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জ হল কিউশুর দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জের একটি শৃঙ্খল। একসাথে তারা প্রায়শই জাপানি দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত।
দেশের প্রায় ৭০% থেকে ৮০% এলাকা বনভূমি, পাহাড়ি এলাকা এবং কৃষি, শিল্প বা আবাসিক ব্যবহারের জন্য অনুপযুক্ত। এর কারণ হল সাধারণত খাড়া উচ্চতা, জলবায়ু এবং ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের ঝুঁকি, নরম ভূমি এবং ভারী বৃষ্টিপাত। এর ফলে মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাসযোগ্য অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি হয়েছে। জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি।
তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ারে এর অবস্থানের কারণে জাপানে ঘন ঘন কম-তীব্রতার কম্পন এবং মাঝে মাঝে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ অনুভূত হয়। প্রতি শতাব্দীতে বেশ কয়েকবার ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প ঘটে, যার ফলে প্রায়শই সুনামি হয়। ১৯২৩ সালের টোকিও ভূমিকম্পে ১,৪০,০০০ এরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল। সাম্প্রতিকতম বড় ভূমিকম্পগুলি হল ২০১৬ সালের কুমামোটো ভূমিকম্প, ২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্প এবং ২০০৪ সালের চুয়েতসু ভূমিকম্প। উষ্ণ প্রস্রবণ অসংখ্য এবং এগুলিকে রিসোর্ট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
=== ভূতত্ত্ব ===
জাপানের দ্বীপপুঞ্জগুলি প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ারের একটি আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে অবস্থিত। এগুলি মূলত মধ্য-সিলুরিয়ান থেকে প্লাইস্টোসিন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সংঘটিত বেশ কয়েকটি বৃহৎ মহাসাগরীয় আন্দোলনের ফলাফল, যা দক্ষিণে মহাদেশীয় আমুরিয়ান প্লেট এবং ওকিনাওয়া প্লেটের নীচে ফিলিপাইন সমুদ্র প্লেটের অধীনতা এবং উত্তরে ওখোটস্ক প্লেটের নীচে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের অধীনতার ফলে ঘটে।
জাপান মূলত ইউরেশিয়ান মহাদেশের পূর্ব উপকূলের সাথে সংযুক্ত ছিল। ইউরেশিয়ান প্লেটের চেয়ে গভীর হওয়ায়, সাবডাক্টিং প্লেটগুলি জাপানকে পূর্ব দিকে টেনে নিয়েছিল, প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে জাপান সাগর খুলে দিয়েছিল। টার্টারি প্রণালী এবং কোরিয়া প্রণালী অনেক পরে খুলেছিল।
[[চিত্র:1974_Japan_Sakurajima.jpg|থাম্ব| ১৯৭৪ সালে সাকুরাজিমার অগ্ন্যুৎপাত। জাপানে ১০৮টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে]]
[[চিত্র:Jomon_Sugi_07.jpg|ডান|থাম্ব| জোমন সুগি, ইয়াকুশিমা দ্বীপে। সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জীবন্ত গাছ: এটি ৭,২০০ বছর বয়সী বলে অনুমান করা হয়।]]
জাপানের জলবায়ু প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ, তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি এটিকে ছয়টি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করে:
* হোক্কাইডো: সবচেয়ে উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলে একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু রয়েছে যেখানে দীর্ঘ, ঠান্ডা শীতকাল এবং শীতল গ্রীষ্মকাল রয়েছে। বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয় না, তবে শীতকালে দ্বীপগুলিতে সাধারণত গভীর তুষারপাতের সৃষ্টি হয়।
[[চিত্র:Mt.Yarigatake_from_Enzansou.jpg|বাম|থাম্ব| মাউন্ট ইয়ারি, আগস্টে নাগানো প্রিফেকচার]]
* জাপান সাগর: হোনশুর পশ্চিম উপকূলে, শীতকালে উত্তর-পশ্চিম বাতাস ভারী তুষারপাতের সৃষ্টি করে। গ্রীষ্মকালে, এই অঞ্চলটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তুলনায় শীতল থাকে, যদিও ফোহন বাতাসের কারণে কখনও কখনও এখানে অত্যন্ত গরম তাপমাত্রা অনুভূত হয়।
* মধ্য উচ্চভূমি: একটি সাধারণ অভ্যন্তরীণ জলবায়ু, যেখানে গ্রীষ্ম ও শীত এবং দিন ও রাতের মধ্যে তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য থাকে। বৃষ্টিপাত হালকা।
* সেতো অভ্যন্তরীণ সাগর: চুগোকু এবং শিকোকু অঞ্চলের পাহাড়গুলি এই অঞ্চলটিকে মৌসুমী বাতাস থেকে রক্ষা করে, যা সারা বছর ধরে মৃদু আবহাওয়া বজায় রাখে।
* প্রশান্ত মহাসাগর: পূর্ব উপকূলে শীতকাল ঠান্ডা থাকে, সামান্য তুষারপাত হয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বাতাসের কারণে গ্রীষ্মকাল গরম, আর্দ্র থাকে।
* রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জ: রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু উপক্রান্তীয়, যেখানে শীতকাল উষ্ণ এবং গ্রীষ্মকাল উষ্ণ। বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয়, বিশেষ করে বর্ষাকালে। টাইফুন সাধারণ।
জাপানে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৯ °সে (১০৫.৬ °ফা)।
ওকিনাওয়াতে প্রধান বর্ষাকাল মে মাসের প্রথম দিকে শুরু হয় এবং এর জন্য দায়ী স্থির বৃষ্টিপাত ধীরে ধীরে উত্তর দিকে এগিয়ে যায় যতক্ষণ না জুলাইয়ের শেষের দিকে হোক্কাইডোতে পৌঁছানোর আগে উত্তর জাপানে বিলীন হয়ে যায়। হোনশুর বেশিরভাগ অঞ্চলে, জুনের মাঝামাঝি সময়ের আগেই বর্ষাকাল শুরু হয় এবং প্রায় ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়। গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং শরতের শুরুতে, টাইফুন প্রায়শই ভারী বৃষ্টিপাত নিয়ে আসে।
=== বাস্তুতন্ত্র ===
জাপানে নয়টি বন ইকোঅঞ্চল রয়েছে। এটি এই দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু এবং ভূগোলকে প্রতিফলিত করে। এগুলি রিউকিউ এবং বনিন দ্বীপপুঞ্জের উপ-ক্রান্তীয় আর্দ্র চওড়া পাতার বন থেকে শুরু করে প্রধান দ্বীপপুঞ্জের মৃদু জলবায়ু অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ প্রশস্ত পাতার এবং মিশ্র বন, উত্তর দ্বীপপুঞ্জের ঠান্ডা, শীতকালীন অংশে নাতিশীতোষ্ণ শঙ্কুযুক্ত বন পর্যন্ত বিস্তৃত।
=== পরিবেশ ===
বর্তমানে জাপান নতুন পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্বের অন্যতম নেতা। হোন্ডা এবং টয়োটা হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলিকে সর্বোচ্চ জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং সর্বনিম্ন নির্গমনের জন্য নামকরণ করা হয়েছিল। এর কারণ হাইব্রিড সিস্টেমের উন্নত প্রযুক্তি, জৈব জ্বালানি, হালকা ওজনের উপাদানের ব্যবহার এবং নতুন প্রকৌশল।
কিয়োটো প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারী এবং ১৯৯৭ সালের সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে, জাপান তার কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চুক্তির বাধ্যবাধকতা পালন করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির অধীনে চালু করা কুল বিজ প্রচারণার লক্ষ্য ছিল সরকারি অফিসে এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে শক্তির ব্যবহার কমানো। জাপান শিল্পকে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনে বড় ধরনের কর্তন করতে বাধ্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন একটি দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা কিয়োটো প্রোটোকলের বাধ্যবাধকতা পূরণে লড়াই করছে।
২০১০ সালের পরিবেশগত কর্মক্ষমতা সূচকে জাপান বিশ্বের ২০তম সেরা স্থানে রয়েছে।
== অর্থনীতি ==
[[চিত্র:The_Tokyo_Stock_Exchange_-_main_room_3.jpg|থাম্ব| টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ]]
২০১০ সালে চীন জাপানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে, জাপানের অর্থনীতি ছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম, নামমাত্র জিডিপির দিক থেকে প্রায় ৪.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ক্রয়ক্ষমতার সমতার দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে তৃতীয়। ২০০৯ সালে জাপানের সরকারি ঋণ ছিল তার বার্ষিক মোট দেশজ উৎপাদনের ১৯৩%। ব্যাংকিং, বীমা, রিয়েল এস্টেট, খুচরা বিক্রয়, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ এবং নির্মাণ - এই সবই প্রধান শিল্প। জাপানের শিল্প সক্ষমতা বিশাল এবং মোটরযান, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, মেশিন টুলস, ইস্পাত এবং অ লৌহঘটিত ধাতু, জাহাজ, রাসায়নিক, বস্ত্র এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের বৃহত্তম, শীর্ষস্থানীয় এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কিছু উৎপাদকের আবাসস্থল। মোট দেশজ উৎপাদনের তিন-চতুর্থাংশের জন্য পরিষেবা খাত দায়ী।
বিগ ম্যাক ইনডেক্স দেখায় যে জাপানি কর্মীরা বিশ্বে প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ বেতন পান। জাপানের কিছু বৃহৎ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে টয়োটা, নিন্টেন্ডো, এনটিটি ডোকোমো, ক্যানন, হোন্ডা, তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল, সনি, প্যানাসনিক, তোশিবা, শার্প, নিপ্পন স্টিল, নিপ্পন অয়েল, জাপান টোব্যাকো, টেপকো, মিতসুবিশি, ৭১১, হিটাচি, নিসান, ইওন, টয়োটা সুশো, ফুজিৎসু এবং নিপ্পন টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন। এটি বিশ্বের কয়েকটি বৃহত্তম ব্যাংকের আবাসস্থল এবং টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ (যা তার নিক্কেই ২২৫ এবং টপিক্স সূচকের জন্য পরিচিত) বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। ফোর্বস গ্লোবাল ২০০০-এর ৩২৬টি কোম্পানির আবাসস্থল জাপান, যা ২০০৬ সালের হিসাবে ১৬.৩%।
২০০৮ সালের ব্যবসা করার সহজতা সূচকে জাপান ১৭৮টি দেশের মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে এবং উন্নত বিশ্বের মধ্যে এটির সরকার ব্যবস্থা সবচেয়ে ছোট। জাপানি পুঁজিবাদের বিভিন্ন রূপের অনেক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কেইরেৎসু এন্টারপ্রাইজগুলি প্রভাবশালী। জাপানি কর্মপরিবেশে আজীবন কর্মসংস্থান এবং জ্যেষ্ঠতা-ভিত্তিক কর্মজীবনের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে সাধারণ। জাপানি কোম্পানিগুলি "দ্য টয়োটা ওয়ে" এর মতো ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির জন্য পরিচিত। শেয়ারহোল্ডারদের সক্রিয়তা বিরল। সম্প্রতি, জাপান এই নিয়মগুলির কিছু থেকে সরে এসেছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে, জাপান ৩০টি এশিয়ান দেশের মধ্যে ৫ম সর্বাধিক অস্বচ্ছল।
২০০৫ সালে জাপানের মাথাপিছু রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪,২১০ মার্কিন ডলার। জাপানের প্রধান রপ্তানি বাজার হল চীন (১৮.৮৮%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৬.৪২%), দক্ষিণ কোরিয়া (৮.১৩%), তাইওয়ান (৬.২৭%) এবং হংকং (৫.৪৯%) (২০০৯ সালের জন্য)। জাপানের প্রধান রপ্তানি পণ্য হল পরিবহন সরঞ্জাম, মোটরযান, ইলেকট্রনিক্স, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং রাসায়নিক। জাপানের প্রধান আমদানি বাজার হল চীন (২২.২%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১০.৯৬%), অস্ট্রেলিয়া (৬.২৯%), সৌদি আরব (৫.২৯%), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৪.১২%), দক্ষিণ কোরিয়া (৩.৯৮%) এবং ইন্দোনেশিয়া (৩.৯৫%) (২০০৯ সালের জন্য)। জাপানের প্রধান আমদানি পণ্য হলো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, জীবাশ্ম জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্য (বিশেষ করে গরুর মাংস), রাসায়নিক, বস্ত্র এবং তার শিল্পের কাঁচামাল। বাজার ভাগের পরিমাপের দিক থেকে, দেশীয় বাজারগুলি যেকোনো OECD দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম উন্মুক্ত। জুনিচিরো কোইজুমি প্রশাসন প্রতিযোগিতা-বান্ধব কিছু সংস্কার শুরু করেছে এবং সম্প্রতি জাপানে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে।
জাপানের ব্যবসায়িক সংস্কৃতিতে অনেক আদিবাসী ধারণা রয়েছে যেমন নেমাওয়াশি, নেঙ্কো সিস্টেম, বেতনভোগী এবং অফিস মহিলা। জাপানের আবাসন বাজার শহরাঞ্চলে সীমিত জমি সরবরাহ দ্বারা চিহ্নিত। এটি বিশেষ করে বিশ্বের বৃহত্তম নগর সমষ্টি টোকিওর ক্ষেত্রে সত্য। অর্ধেকেরও বেশি জাপানি শহরতলিতে বা আরও গ্রামীণ এলাকায় বাস করে, যেখানে বিচ্ছিন্ন ঘরগুলিই প্রধান আবাসন ধরণের। জাপানের কৃষি ব্যবসাগুলি প্রায়শই সোপান চাষের পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং ফসলের ফলন বেশি হয়। জাপানের ১৩% জমি চাষযোগ্য। বিশ্বব্যাপী মাছ ধরার প্রায় ১৫% জাপানে আসে, চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে। জাপানের কৃষি খাত উচ্চ মূল্যে সুরক্ষিত।
=== বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ===
বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিশেষ করে প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি এবং জৈব চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রে জাপান অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ। প্রায় ৭০০,০০০ গবেষকের গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেট ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জাপান বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বা চিকিৎসাবিদ্যায় পনেরোজন নোবেল বিজয়ী, তিনজন ফিল্ডস পদকপ্রাপ্ত এবং একজন গাউস পুরস্কার বিজয়ী তৈরি করেছে।
জাপানের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত অবদান ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, যন্ত্রপাতি, ভূমিকম্প প্রকৌশল, শিল্প রোবোটিক্স, অপটিক্স, রাসায়নিক, অর্ধপরিবাহী এবং ধাতুর ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। রোবোটিক্স উৎপাদন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়, বিশ্বের শিল্প রোবট উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত অর্ধেকেরও বেশি (৭৪২,৫০০ এর মধ্যে ৪০২,২০০) জাপানের দখলে। এটি QRIO, ASIMO এবং AIBOও তৈরি করেছিল। জাপান বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোবাইল উৎপাদক এবং বর্তমানে বিশ্বের পনেরটি বৃহত্তম অটোমোবাইল প্রস্তুতকারকের মধ্যে চারটি এবং বিশ্বের বিশটি বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর বিক্রয় নেতাদের মধ্যে সাতটি এখানে অবস্থিত।
[[চিত্র:Kibo_PM_and_ELM-PS.jpg|বাম|থাম্ব| JAXA জাপানি এক্সপেরিমেন্ট মডিউল, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি অংশ।]]
জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA) হল জাপানের মহাকাশ সংস্থা যা মহাকাশ ও গ্রহ গবেষণা, বিমান গবেষণা এবং রকেট ও উপগ্রহের উন্নয়ন পরিচালনা করে। এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি অংশগ্রহণকারী এবং ২০০৮ সালে স্পেস শাটল অ্যাসেম্বলি ফ্লাইটের সময় জাপানি এক্সপেরিমেন্ট মডিউল (কিবো) আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যুক্ত করা হয়েছিল। মহাকাশ অনুসন্ধানে এর পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন ২০১০ সালে শুক্রগ্রহ, আকাতসুকিতে একটি মহাকাশ অনুসন্ধান পাঠানো, ২০১৩ সালে উৎক্ষেপণ করা বুধের চৌম্বকীয় অরবিটার তৈরি করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে একটি চাঁদের ভিত্তি তৈরি করা।
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ তারিখে, এটি তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে একটি H-IIA (মডেল H2A2022) ক্যারিয়ার রকেটে চন্দ্র কক্ষপথ অনুসন্ধানকারী "SELENE" (সেলেনোলজিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপ্লোরার) উৎক্ষেপণ করে। সেলেনকে কাগুয়া নামেও পরিচিত, প্রাচীন লোককাহিনী "দ্য টেল অফ দ্য ব্যাম্বু কাটার"-এর চন্দ্র রাজকন্যা। অ্যাপোলো প্রোগ্রামের পর কাগুয়া হলো সবচেয়ে বড় চন্দ্র অনুসন্ধান অভিযান। এর লক্ষ্য হল চাঁদের উৎপত্তি এবং বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। এটি ৪ অক্টোবর চন্দ্র কক্ষপথে প্রবেশ করে, প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) উচ্চতায় চন্দ্র কক্ষপথে উড়ে।
== পরিকাঠামো ==
[[চিত্র:Kansai_International_Airport01n4272.jpg|থাম্ব| কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্মাণ প্রকল্প।]]
[[চিত্র:JR_East_Shinkansen_lineup_at_Niigata_Depot_200910.jpg|বাম|থাম্ব| জাপানে উচ্চ গতির শিনকানসেন বা ''বুলেট ট্রেন'' পরিবহনের একটি সাধারণ মাধ্যম।]]
[[চিত্র:ANA_Boeing_747-481_(JA8962)_in_Pokémon_livery.jpg|ডান|থাম্ব|280x280পিক্সেল| একটি অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ পোকেমন জেট]]
২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, জাপানের জ্বালানির অর্ধেক পেট্রোলিয়াম থেকে, এক পঞ্চমাংশ কয়লা থেকে এবং ১৪% প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উৎপাদিত হয়। জাপানের এক-চতুর্থাংশ বিদ্যুত উৎপাদন করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ।
জাপানের যানবাহন রাস্তার বাম দিকে। উচ্চ-গতির, বিভক্ত, সীমিত-প্রবেশযোগ্য টোল রাস্তার একটি একক নেটওয়ার্ক প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করে এবং টোল-সংগ্রহকারী উদ্যোগগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়। নতুন এবং ব্যবহৃত গাড়ির দাম কম। গাড়ির মালিকানা ফি এবং জ্বালানি শুল্ক শক্তি-দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, মোট ভ্রমণের মাত্র ৫০% দূরত্বের কারণে, গাড়ির ব্যবহার সমস্ত G8 দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম।
জাপানের কয়েক ডজন রেলওয়ে কোম্পানি আঞ্চলিক এবং স্থানীয় যাত্রী পরিবহন বাজারে প্রতিযোগিতা করে; উদাহরণস্বরূপ, ৭টি জেআর এন্টারপ্রাইজ, কিন্টেৎসু কর্পোরেশন, সেইবু রেলওয়ে এবং কেইও কর্পোরেশন। প্রায়শই, এই উদ্যোগগুলির কৌশলগুলিতে স্টেশনের পাশে রিয়েল এস্টেট বা ডিপার্টমেন্ট স্টোর থাকে। প্রায় ২৫০টি উচ্চ-গতির শিনকানসেন ট্রেন প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করে। জাপানি ট্রেনগুলি তাদের সময়ানুবর্তিতার জন্য পরিচিত।
১৭৩টি বিমানবন্দর রয়েছে এবং শহরগুলির মধ্যে ভ্রমণের জন্য বিমান একটি জনপ্রিয় উপায়। বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর, হানেদা বিমানবন্দর, এশিয়ার দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রবেশপথ হল নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টোকিও অঞ্চল), কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ওসাকা/কোবে/কিয়োটো অঞ্চল) এবং চুবু সেন্ট্রেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (নাগোয়া অঞ্চল)। বৃহত্তম বন্দরগুলির মধ্যে রয়েছে নাগোয়া বন্দর।
== জনসংখ্যা ==
[[চিত্র:Skyscrapers_of_Shinjuku_2009_January.jpg|থাম্ব| গ্রেটার টোকিও এরিয়া হল বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মেট্রোপলিটন এলাকা যেখানে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ বাস করে।]]
জাপানের জনসংখ্যা আনুমানিক ১২৭.৩ মিলিয়ন (২০১৩)। জাপানি সমাজ ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকভাবে একজাত, যেখানে বিদেশী কর্মীদের সংখ্যা কম। জাপানে বসবাসকারী ক্ষুদ্র সংখ্যালঘুদের মধ্যে জাইনিচি কোরিয়ান, জাইনিচি চাইনিজ, ফিলিপিনো, জাপানি ব্রাজিলিয়ান, জাপানি পেরুভিয়ানরা অন্যতম। ২০০৩ সালে, জাপানে প্রায় ১,৩৬,০০০ পশ্চিমা প্রবাসী ছিল। সবচেয়ে প্রভাবশালী স্থানীয় জাতিগত গোষ্ঠী হল ইয়ামাতো জনগণ; প্রাথমিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে আদিবাসী আইনু এবং রিউকুয়ান, পাশাপাশি বুরাকুমিনের মতো সামাজিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী।
জাপানের আয়ুষ্কাল বিশ্বের সর্বোচ্চ দেশগুলির মধ্যে একটি, ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে মানুষের বয়স ছিল ৮৩.১০ বছর। জাপানের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধ হচ্ছে, যুদ্ধ-পরবর্তী শিশু বৃদ্ধির প্রভাবে এবং বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে। ২০০৪ সালে, জনসংখ্যার প্রায় ১৯.৫% ছিল ৬৫ বছরের বেশি বয়সী।
[[চিত্র:Shibuya_night.jpg|বাম|থাম্ব| শিবুয়া ক্রসিংয়ের একটি দৃশ্য, যা টোকিওর প্রায়শই জনাকীর্ণ রাস্তার একটি উদাহরণ।]]
জনসংখ্যাতাত্ত্বিক কাঠামোর পরিবর্তনগুলি বেশ কয়েকটি সামাজিক সমস্যা তৈরি করেছে, বিশেষ করে কর্মশক্তির জনসংখ্যার সম্ভাব্য হ্রাস এবং পাবলিক পেনশন পরিকল্পনার মতো সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার ব্যয় বৃদ্ধি। অনেক জাপানি তরুণ ক্রমশ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে বিয়ে না করা বা পরিবার না রাখা পছন্দ করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা ১০ কোটি এবং ২১০০ সালের মধ্যে ৬ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সমস্যা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে বর্তমানে জনসংখ্যাবিদ এবং সরকারি পরিকল্পনাকারীরা তীব্র বিতর্কে লিপ্ত। দেশের বয়স্ক জনসংখ্যাকে সহায়তা করার জন্য তরুণ কর্মী সরবরাহের সমাধান হিসেবে কখনও কখনও অভিবাসন এবং জন্ম প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়। ইউএনএইচসিআরের মতে, ২০০৭ সালে জাপান মাত্র ৪১ জন শরণার্থীকে পুনর্বাসনের জন্য গ্রহণ করেছিল, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০,০০০ জনকে আশ্রয় দিয়েছিল।
জাপানে আত্মহত্যার হার বেশি। ২০০৯ সালে, টানা দ্বাদশ বছরের মতো আত্মহত্যার সংখ্যা ৩০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। ৩০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হল আত্মহত্যা।
=== ধর্ম ===
[[চিত্র:Itsukushima_Shrine_Torii_Gate_(13890465459).jpg|থাম্ব| শিন্তো ইতসুকুশিমা মন্দির ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান]]
জাপানে বৌদ্ধ এবং শিনটো ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সম্পর্কে সর্বোচ্চ অনুমান ৮৪-৯৬%। এটি উভয় ধর্মের একটি বৃহৎ সংখ্যক বিশ্বাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এই পূর্বাভাসগুলো মন্দিরের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ধর্মের অনুসরণকারী ব্যক্তিদের সংখ্যা নয়। প্রফেসর রবার্ট কিসালা (নানজান ইউনিভার্সিটি) পরামর্শ দেন যে জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ নিজেকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত বলে চিহ্নিত করে।
চীনের তাওবাদ, কনফুসিয়ানিজম এবং বৌদ্ধধর্মও জাপানি বিশ্বাস এবং রীতিনীতিকে প্রভাবিত করেছে। জাপানে ধর্ম প্রকৃতিগতভাবে সমন্বয়মূলক, এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরণের অনুশীলন দেখা যায়। যেমন বাবা-মা ও শিশুদের শিন্তো আচার উদযাপন, পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীরা প্রার্থনা, খ্রিস্টান গির্জায় দম্পতিদের বিবাহ এবং বৌদ্ধ মন্দিরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। জাপানে এক শতাংশেরও কম খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাস করে] প্রকৃতপক্ষে সম্ভবত আধা শতাংশেরও কম। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক দাবি করেছে দুই শতাংশ (২.৪ মিলিয়ন)।
এছাড়াও, ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে জাপানে অসংখ্য ধর্মীয় সম্প্রদায় (শিনশুকিও) আবির্ভূত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হল সেইচো-নো-ই ৩ মিলিয়ন, টেনরিকিও ২ মিলিয়ন, প্লা কিয়োদান ১ মিলিয়ন, সেকাই কিউসেইকিও, ১ মিলিয়ন, সুকিও মাহিকারি ১ মিলিয়ন, হনমিচি ০.৯ মিলিয়ন, কনকোকিও ০.৫ মিলিয়ন, তেনশো কোটাই জিঙ্গুকিও ০.৪ মিলিয়ন, এন্নোকিও ০.৩ মিলিয়ন (১৯৭৮ সালের হিসাবে), কুরোজুমিকিও ০.২৫ মিলিয়ন এবং ওমোটো ০.১৫ মিলিয়ন।
=== ভাষা ===
জনসংখ্যার ৯৯% এরও বেশি তাদের মাতৃভাষা হিসেবে জাপানি ভাষায় কথা বলে। এটি একটি সমষ্টিগত ভাষা। জাপানি সমাজের শ্রেণিবিন্যাসের প্রকৃতি প্রতিফলিত করে এমন সম্মানসূচক ব্যবস্থা দ্বারা আলাদা। সেখানে ক্রিয়াপদের রূপ এবং নির্দিষ্ট শব্দভাণ্ডার রয়েছে। এগুলো বক্তা এবং শ্রোতার আপেক্ষিক অবস্থা নির্দেশ করে। জাপানি অভিধান শিনসেন-কোকুগোজিতেন অনুসারে, চীনা-ভিত্তিক শব্দগুলি মোট শব্দভান্ডারের ৪৯.১%, আদিবাসী শব্দগুলি ৩৩.৮% এবং অন্যান্য ধার করা শব্দগুলি ৮.৮%।
লেখার পদ্ধতিতে কাঞ্জি (চীনা অক্ষর) এবং দুটি সেট কানা (সরলীকৃত চীনা অক্ষরের উপর ভিত্তি করে তৈরি সিলেবার), পাশাপাশি ল্যাটিন বর্ণমালা এবং আরবি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। জাপানি ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত রিউকুয়ান ভাষাসমূহ ওকিনাওয়াতে কথিত। তবে বর্তমানে খুব কম শিশুই এই ভাষাগুলি শেখে। আইনু ভাষা মৃতপ্রায়। হোক্কাইডোতে মাত্র কয়েকজন বয়স্ক স্থানীয় ভাষাভাষী অবশিষ্ট রয়েছে। বেশিরভাগ সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের জাপানি এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই কোর্স করতে হয়।
== শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ==
[[চিত্র:Yasuda_Auditorium,_Tokyo_University_-_Nov_2005.JPG|থাম্ব| জাপানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসুদা অডিটোরিয়াম।]]
মেইজি পুনরুদ্ধারের ফলে ১৮৭২ সালে জাপানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে, জাপানে বাধ্যতামূলক শিক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যা নয় বছর (৬ বছর বয়স থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত) স্থায়ী হয়। প্রায় সকল শিশু তিন বছরের সিনিয়র হাই স্কুলে তাদের শিক্ষা অব্যাহত রাখে এবং MEXT অনুসারে, ২০০৫ সালে প্রায় ৭৫.৯% উচ্চ বিদ্যালয়ের স্নাতকরা বিশ্ববিদ্যালয়, জুনিয়র কলেজ, ট্রেড স্কুল বা অন্যান্য উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে।
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা খুবই প্রতিযোগিতামূলক, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের ক্ষেত্রে। জাপানের দুটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় হল টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়। OECD দ্বারা সমন্বিত আন্তর্জাতিক ছাত্র মূল্যায়ন প্রোগ্রাম, বর্তমানে ১৫ বছর বয়সীদের জাপানি জ্ঞান এবং দক্ষতাকে বিশ্বের ষষ্ঠ সেরা হিসেবে স্থান দেয়।
জাপানে জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদান একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বীমা ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হয়। এটি একটি সরকারি কমিটি দ্বারা নির্ধারিত ফি সহ, আপেক্ষিক সমতা প্রদান করে। নিয়োগকর্তাদের মাধ্যমে বীমাবিহীন ব্যক্তিরা স্থানীয় সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ১৯৭৩ সাল থেকে, সমস্ত বয়স্ক ব্যক্তি সরকার-স্পন্সরিত বীমার আওতায় এসেছেন। রোগীরা তাদের পছন্দের চিকিৎসক বা সুবিধা নির্বাচন করতে স্বাধীন।
== সংস্কৃতি এবং বিনোদন ==
[[চিত্র:Genji_emaki_01003_001.jpg|বাম|থাম্ব| বিশ্বের প্রথম উপন্যাস হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত দ্য টেল অফ গেঞ্জির একটি হাতের লেখার পৃষ্ঠাগুলি]]
জাপানি সংস্কৃতি বছরের পর বছর ধরে ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে, দেশটির আদি জোমোন সংস্কৃতি থেকে শুরু করে সমসাময়িক সংস্কৃতিতে, যা এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার প্রভাবকে একত্রিত করে। ঐতিহ্যবাহী জাপানি শিল্পের মধ্যে রয়েছে কারুশিল্প (ইকেবানা, অরিগামি, উকিয়ো-ই, পুতুল, বার্ণিশের পাত্র, মৃৎশিল্প), পরিবেশনা (বুনরাকু, নৃত্য, কাবুকি, নোহ, রাকুগো), ঐতিহ্য (খেলা, চা অনুষ্ঠান, বুদো, স্থাপত্য, বাগান, তরবারি) এবং রন্ধনপ্রণালী। ঐতিহ্যবাহী কাঠের ব্লক প্রিন্টিং এবং পশ্চিমা শিল্পের মিশ্রণের ফলে মাঙ্গা তৈরি হয়, যা সাধারণত জাপানি কমিক বইয়ের একটি বিন্যাস যা এখন জাপানের ভেতরে এবং বাইরে জনপ্রিয়। টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের জন্য মাঙ্গা-প্রভাবিত অ্যানিমেশনকে অ্যানিমে বলা হয়। জাপানি তৈরি ভিডিও গেম কনসোলগুলি ১৯৮০ এর দশক থেকে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে তাদের প্রভাব অব্যাহত রয়েছে।
[[চিত্র:Kinkaku_Snow_E4.jpg|থাম্ব|310x310পিক্সেল| স্বর্ণমণ্ডপের মন্দির ( ''কিঙ্কাকুজি'' )]]
জাপানি সঙ্গীত সারগ্রাহী, প্রতিবেশী সংস্কৃতি থেকে বাদ্যযন্ত্র, স্কেল এবং শৈলী ধার করা হয়েছে। নবম এবং দশম শতাব্দীতে কোটোর মতো অনেক বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ঘটে। নোহ নাটকের আবৃত্তি চতুর্দশ শতাব্দীর এবং জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত, গিটারের মতো শামিসেন সহ, ষোড়শ শতাব্দীর। উনিশ শতকের শেষের দিকে প্রবর্তিত পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীত এখন সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধোত্তর জাপান আমেরিকান এবং ইউরোপীয় আধুনিক সঙ্গীত দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে, যার ফলে জে-পপ নামক জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীতের বিবর্তন ঘটেছে।
কারাওকে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের মধ্যে একটি। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে যে, সেই বছর জাপানিরা ফুল সাজানো বা চা অনুষ্ঠানের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের চেয়ে বেশি সংখ্যক কারাওকে গেয়েছিলেন।
জাপানি সাহিত্যের প্রাচীনতম রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে দুটি ইতিহাসের বই কোজিকি এবং নিহোন শোকি এবং অষ্টম শতাব্দীর কাব্যগ্রন্থ মান'য়োশু, যা সবই চীনা অক্ষরে লেখা। হেইয়ান যুগের প্রাথমিক দিনগুলিতে, কানা (হিরাগানা এবং কাতাকানা) নামে পরিচিত প্রতিলিপি পদ্ধতিটি ফোনোগ্রাম হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। বাঁশ কাটার গল্পটিকে প্রাচীনতম জাপানি আখ্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই শোনাগনের লেখা "দ্য পিলো বুক" বইয়ে হেইয়ানের রাজদরবারের জীবনের একটি বিবরণ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে লেডি মুরাসাকির লেখা "দ্য টেল অফ গেঞ্জি" বইটিকে প্রায়শই বিশ্বের প্রথম উপন্যাস হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
এডো যুগে সাহিত্য ততটা সামুরাই অভিজাতদের ক্ষেত্র হয়ে ওঠেনি, সাহিত্য তখন ছিল চোনিন তথা সাধারণ মানুষের। উদাহরণস্বরূপ, ইয়োমিহোন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং পাঠক এবং লেখকত্বের এই গভীর পরিবর্তন প্রকাশ করে। মেইজি যুগে ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যিক রূপের পতন ঘটে, এই সময়ে জাপানি সাহিত্যে পশ্চিমা প্রভাব একীভূত হয়। নাটসুমে সোসেকি এবং মোরি ওগাই ছিলেন জাপানের প্রথম "আধুনিক" ঔপন্যাসিক, তার পরে ছিলেন রিউনোসুকে আকুতাগাওয়া, জুন'ইচিরো তানিজাকি, ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা, ইউকিও মিশিমা এবং সম্প্রতি হারুকি মুরাকামি। জাপানে দুজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখক আছেন - ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা (১৯৬৮) এবং কেনজাবুরো ওই (১৯৯৪)।
== খেলাধুলা ==
[[চিত্র:Asashoryu_fight_Jan08.JPG|বাম|থাম্ব| একটি সুমো ম্যাচ]]
ঐতিহ্যগতভাবে সুমো জাপানের জাতীয় খেলা হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি দর্শকদের কাছে বেশ একটি জনপ্রিয় খেলা। জুডো, কারাতে এবং আধুনিক কেন্দোর মতো মার্শাল আর্টও দেশটিতে দর্শকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে অনুশীলন এবং উপভোগ করা হয়। মেইজি পুনরুদ্ধারের পর জাপানে অনেক পশ্চিমা খেলাধুলা চালু হয় এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
জাপানে পেশাদার বেসবল লীগ ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ বেসবল দেশের সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় খেলা। জাপানের সবচেয়ে বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হলেন ইচিরো সুজুকি। তিনি ১৯৯৪, ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে জাপানের সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতেছিলেন। এখন তিনি উত্তর আমেরিকান মেজর লীগ বেসবলের নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিসের হয়ে খেলেন। এর আগে সাদাহারু ওহ জাপানের বাইরে সুপরিচিত ছিলেন। জাপানে তার ক্যারিয়ারে তার সমসাময়িক হ্যাঙ্ক অ্যারনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতটা হোম রান করেছিলেন তার চেয়ে বেশি রান করেছিলেন।
১৯৯২ সালে জাপান পেশাদার ফুটবল লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে, অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলও (সকার) যথেষ্ট অনুসারী অর্জন করেছে। ১৯৮১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জাপান ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের একটি ভেন্যু ছিল এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করেছিল। জাপান এশিয়ার অন্যতম সফল ফুটবল দল, চারবার এশিয়ান কাপ জিতেছে, সম্প্রতি ২০১১ সালে।
জাপানে গলফও জনপ্রিয়। যেমন সুপার জিটি স্পোর্টস কার সিরিজ এবং ফর্মুলা নিপ্পন ফর্মুলা রেসিংয়ের মতো অটো রেসিং। জাপানে ইন্ডিকার রেসিং আনার জন্য হোন্ডা ১৯৯৭ সালে টুইন রিং মোতেগি সম্পন্ন করে।
১৯৬৪ সালে জাপান টোকিওতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছিল। জাপান দুবার শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছে: ১৯৭২ সালে সাপ্পোরো এবং ১৯৯৮ সালে নাগানো। ২০২০ সালে জাপান আবার টোকিওতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের কথা রয়েছে।
q4nq8yiaz8zfrkm9prcwe5ciou5nxx3
রন্ধনপ্রণালী:শিং-এর কচুরি
104
26834
84046
83284
2025-06-11T17:37:15Z
MdsShakil
7280
MdsShakil [[রন্ধনপ্রণালী:হিং-এর কচুরি]] কে [[রন্ধনপ্রণালী:শিং-এর কচুরি]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন
83284
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = সকালের নাস্তা
| পরিবেশন = পরিমান অনুসারে, কমপক্ষে ৫ জন।
| তৈরির সময় = প্রায় ৫০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ৩
| চিত্র =
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''হিং-এর কচুর'''</big></center>
হিং-এর কচুরি একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি প্রাতঃরাশ বা জলখাবারের পদ। শুকনো মসুর ডাল বা মটর ডাল বেটে তাতে হিং, আদা, সামান্য মশলা দিয়ে কষিয়ে পুর তৈরি করা হয়, এবং তা ময়দার আস্তরণে ভরে লুচির মতো করে ভেজে কচুরি বানানো হয়। হালকা ঝাল, হিং-এর সুগন্ধ ও ডালের স্বাদ মিলিয়ে এটি এক অপূর্ব স্বাদ তৈরি করে।
==উপকরন==
{| class="wikitable"
! উপকরন !! পরিমান
|-
| ময়দা || ২ কাপ
|-
| তেল || ১ টেবিল চামচ (ময়দা মাখানোর জন্য) + ভাজার জন্য পরিমাণমতো
|-
| শুকনো মটর ডাল (বা মসুর ডাল) || ১ কাপ (৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা)
|-
| আদা কুচি বা বাটা || ১ চা চামচ
|-
| কাঁচা লঙ্কা কুচি || ২টি
|-
| হিং || ১/২ চা চামচ
|-
| জিরে গুঁড়ো || ১/২ চা চামচ
|-
| শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো || ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
|-
| নুন || স্বাদমতো
|}
== রন্ধনপ্রণালী ==
#প্রথমে ময়দার মধ্যে ১ টেবিল চামচ তেল ও স্বাদমতো নুন মিশিয়ে জল দিয়ে মোলায়েম মণ্ড তৈরি করে রেখে দিন ১৫-২০ মিনিট।
#ডালটি ভিজিয়ে নরম হলে জল ঝরিয়ে গ্রাইন্ডারে খুব বেশি জল না দিয়ে বেটে নিন (একদম মিহি নয়)।
#কড়াইয়ে ১-২ চামচ তেল গরম করে হিং ফোড়ন দিন, তারপর তাতে আদা, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নেড়ে বাটা ডাল দিন।
#ডালটি নেড়ে নেড়ে কষান, নুন ও অন্যান্য মশলা দিয়ে শুকিয়ে একটি মন্ড তৈরি করে নিন। ঠান্ডা হতে দিন।
#ময়দা থেকে লেচি কেটে ছোট বল বানান, হাত দিয়ে চেপে মাঝখানে ডালের পুর দিন এবং মুড়ে বেলে কচুরি বানান।
#কড়াইয়ে তেল গরম হলে কচুরিগুলো একে একে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজুন যতক্ষণ না সোনালি রঙ হয়<span style=color:red;><center>'''হিং-এর কচুরি খেতে পারেন আলুর দম, ছোলার ডাল বা শুধু টক আচার দিয়েও। এটি ঘরোয়া উৎসব ও ছুটির দিনের সকালের জন্য আদর্শ'''</center></span>
==তথ্যসূত্র==
*[https://www.youtube.com/watch?v=hc0t_b9HDrM মিষ্টির দোকানের মতন হিং এর কচুরি বানানোর পদ্ধতি]
[[বিষয়শ্রেণী:রন্ধনপ্রণালী]]
[[বিষয়শ্রেণী:সকালের নাস্তা]]
hgnj4foi4mk11uzlgq6508nr3b10u7g
রন্ধনপ্রণালী আলোচনা:শিং-এর কচুরি
105
26956
84048
83426
2025-06-11T17:37:16Z
MdsShakil
7280
MdsShakil [[রন্ধনপ্রণালী আলোচনা:হিং-এর কচুরি]] কে [[রন্ধনপ্রণালী আলোচনা:শিং-এর কচুরি]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন
83426
wikitext
text/x-wiki
{{আলাপ পাতা}}
{{আলাপ পাতা/উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫}}
8vxn9zum7n3tju9ayrerhr25vm4kljv
রন্ধনপ্রণালী:চুষি পিঠা
104
27111
84061
83839
2025-06-12T01:25:19Z
MD Abu Siyam
8392
84061
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পিঠা
| পরিবেশন = ৪ জন
| তৈরির সময় = ৩০ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ৩
| খাদ্য শক্তি = মধ্যম
| টীকা = দুধ, খেজুর গুড় ও নারকেলের স্বাদে ভরা লম্বাকৃতির ঐতিহ্যবাহী একটি পিঠা।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''চুষি পিঠা'''</big></center>
চুষি পিঠা বাংলার গ্রামীণ প্রথাগত এক বিশেষ মিষ্টি পিঠা, যা সাধারণত শীতকালে রান্না করা হয়। পাতলা ও লম্বা করে তৈরি চালের পিঠা দুধে সিদ্ধ করে খেজুর গুড় ও নারকেলের সাথে পরিবেশন করা হয়। এর স্বাদ যেমন মোলায়েম, তেমনি এতে রয়েছে পুষ্টিগুণ ও তৃপ্তির ছোঁয়া। এই পিঠার ঘ্রাণ ও রং সাধারণত শৈশবের স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনে।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| চালের গুঁড়ো || ৫০০ গ্রাম
|-
| তরল দুধ || ২ লিটার
|-
| গুঁড়ো দুধ || ১/২ কাপ
|-
| খেজুর গুড় || ২৫০ গ্রাম
|-
| নারকেল কোরা || ২ কাপ
|-
| তেজপাতা || ১টি
|-
| এলাচ || ৪টি
|-
| লবণ || ১ চিমটি
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে একটি বড় পাত্রে অল্প গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে এক চিমটি লবণ মেশান।
# এরপর ধীরে ধীরে চালের গুঁড়ো দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি নরম মণ্ড তৈরি করুন। মণ্ড যেন চিটচিটে না হয় এবং সহজে আকার দেয়া যায়, সেটি নিশ্চিত করুন।
# তৈরি মণ্ডটি ঢেকে কিছুক্ষণ বিশ্রামে রাখুন।
# তৈরি মণ্ড থেকে ছোট ছোট অংশ নিয়ে হাতের তালুতে রেখে লম্বা পাতলা আকার দিন। এগুলো দেখতে হবে সুতার মতো সরু, তবে ভঙ্গুর না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
# এভাবে সব চুষি তৈরি করে একটি শুকনো থালায় ছড়িয়ে রাখুন যাতে একে অপরের সঙ্গে লেগে না যায়।
# একটি বড় হাঁড়িতে তরল দুধ বসিয়ে তাতে তেজপাতা ও এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে নিন।
# দুধ কিছুটা ঘন হয়ে এলে গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে দিন এবং নাড়তে থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে প্রস্তুত করা চুষিগুলো একে একে দিয়ে দিন। একবারে সব না দিয়ে ধীরে ধীরে দিন যেন চুষিগুলো আলাদা থাকে।
# চুষি দুধে সেদ্ধ হয়ে নরম হয়ে গেলে খেজুর গুড় ও নারকেল কোরা দিন। গুড় সম্পূর্ণ মিশে গেলে চুলা বন্ধ করে দিন।
== পরিবেশন ==
চুষি পিঠা গরম অবস্থায় পরিবেশন করাই উত্তম। তবে ইচ্ছা করলে ঠান্ডা করেও খাওয়া যায়। উপরে সামান্য ঘন দুধ ছিটিয়ে অথবা বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করলে আরও আকর্ষণীয় লাগে।
== পরামর্শ ==
* মণ্ড তৈরি করার সময় পানি কম বেশি হলে পিঠা ভেঙে যেতে পারে, তাই পরিমাণ মতো পানি দিন।
* খেজুর গুড় না থাকলে চিনি ব্যবহার করা যায়, তবে খেজুর গুড়েই মূল স্বাদ।
* চাইলে সামান্য ঘি দিয়ে পরিবেশন করা যায়।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
চুষি পিঠা বহু প্রাচীনকাল থেকে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত। বিশেষ করে গ্রামে শীতকালে সন্ধ্যাবেলা রান্না ঘরে পরিবারের সদস্যদের একত্রে বসে এই পিঠা তৈরির রীতি এক আবেগঘন স্মৃতি তৈরি করে।
nsm4tlykv67e6de0u0z1skhwh87csb3
রন্ধনপ্রণালী:নুনগড়া পিঠা
104
27113
84060
83840
2025-06-12T01:24:42Z
MD Abu Siyam
8392
84060
wikitext
text/x-wiki
{{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ
| রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = পিঠা
| পরিবেশন = ৪-৫ জন
| তৈরির সময় = ৪৫ মিনিট
| কষ্টসাধ্য = ৪
| খাদ্য শক্তি = লবণাক্ত ও মসলাদার
| টীকা = সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি ভাজা নোনতা পিঠা, যা তুলতুলে কাই ও মশলার স্বাদে ভরপুর।
}}
{{রন্ধনপ্রণালী}}
<center><big>'''নুনগড়া পিঠা'''</big></center>
নুনগড়া পিঠা, সিলেট অঞ্চলের এক চমৎকার ঐতিহ্যবাহী নোনতা পিঠা। এটি দেখতে অনেকটা ভাজা রুটির টুকরোর মতো, কিন্তু এর ভেতরের স্বাদ ও গন্ধ একেবারে আলাদা। মূলত শীতকাল বা বিশেষ অনুষ্ঠানেই এই পিঠার প্রচলন বেশি। মসলা মেশানো ফুটন্ত জলে চালের গুঁড়া ও ময়দা দিয়ে কাই তৈরি করে তা ঠান্ডা করে ছোট ছোট বল বানিয়ে ভেজে নেওয়াই এর মূল প্রক্রিয়া।
== উপকরণ ==
{| class="wikitable"
! উপকরণ !! পরিমাণ
|-
| পানি || প্রয়োজনমতো
|-
| পেঁয়াজ কুচি || ১ কাপ
|-
| আদা বাটা || ১ টেবিল চামচ
|-
| রসুন বাটা || ১ টেবিল চামচ
|-
| লবণ || স্বাদমতো
|-
| হলুদ গুঁড়ো || ১ চা চামচ
|-
| পাঁচফোড়ন বাটা (ঐচ্ছিক) || ১ চা চামচ
|-
| ধনে পাতা কুচি (ঐচ্ছিক) || ২ টেবিল চামচ
|-
| চালের গুঁড়ো || ১ কাপ
|-
| ময়দা || ১ কাপ
|-
| ভাজার জন্য তেল || প্রয়োজনমতো
|}
== প্রস্তুত প্রণালী ==
# প্রথমে একটি বড় হাঁড়িতে পরিমাণমতো পানি নিয়ে ফুটাতে দিন।
# পানি ফুটে উঠলে তাতে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো ও লবণ যোগ করুন। চাইলে পাঁচফোড়ন বাটা ও ধনে পাতাও মেশাতে পারেন — এতে স্বাদ ও গন্ধ আরও বাড়ে।
# ফুটন্ত জলে মসলা মিশে গেলে ধীরে ধীরে চালের গুঁড়ো ও ময়দা দিয়ে দিন এবং নাড়তে থাকুন। ভালোভাবে নেড়ে একটি নরম, চিটচিটে মণ্ড তৈরি করুন। কাই যেন পাত্রের তলা ছেড়ে আসে, সেটা লক্ষ্য করুন। কাই সম্পূর্ণ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
# ঠান্ডা হয়ে এলে কাই থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করুন। এরপর প্রতিটি বলকে বেলে পাতলা রুটি বানান। রুটিগুলো থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে ছোট ছোট টুকরো কেটে নিতে পারেন — অনেকে ত্রিভুজ বা আয়তাকার আকার দিয়ে থাকে।
# একটি কড়াইতে তেল গরম করুন।
# তেল গরম হয়ে গেলে টুকরো করা পিঠাগুলো একে একে দিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিন। প্রতিটি টুকরো দুই পাশ থেকে সোনালি বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে।
# ভাজার পর কিচেন টিস্যুতে তুলে অতিরিক্ত তেল ঝরিয়ে নিন।
== পরিবেশন ==
নুনগড়া পিঠা গরম গরম পরিবেশন করাই শ্রেয়। চাইলে টক দই বা টক আচার সহযোগেও পরিবেশন করা যায়। এটি সকালের নাস্তা বা বিকেলের জলখাবারে উপযুক্ত।
== সংরক্ষণ পদ্ধতি ==
এই পিঠা ভাজার আগে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা যায়। বেলার পর কাটা রুটি ফ্রিজে রাখলে পরে তা ভেজে পরিবেশন করা যায়। এটি সহজে নষ্ট হয় না এবং এক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণযোগ্য।
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
সিলেট অঞ্চলে বিয়ে, উৎসব বা নতুন চাল আসার আনন্দে এই নোনতা পিঠা তৈরি করা হয়। হান্দেশ ও নুনগড়া একসাথে খাওয়ার চল রয়েছে। এটি গ্রামীণ মহিলাদের হাতে তৈরি হওয়া এক অনন্য স্বাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার।
j1vaxk0xaalmzp594zkt9ly07ecdlop
ব্যবহারকারী আলাপ:MD RASHADU JJAMAN
3
27136
84037
2025-06-11T13:40:08Z
KanikBot
8129
স্বাগতম!
84037
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৩:৪০, ১১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
f86hsdwere1xsuv3udasa8tvthgv3qb
রন্ধনপ্রণালী:হিং-এর কচুরি
104
27137
84047
2025-06-11T17:37:15Z
MdsShakil
7280
MdsShakil [[রন্ধনপ্রণালী:হিং-এর কচুরি]] কে [[রন্ধনপ্রণালী:শিং-এর কচুরি]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন
84047
wikitext
text/x-wiki
#পুনর্নির্দেশ [[রন্ধনপ্রণালী:শিং-এর কচুরি]]
kmxk0v3z6kzlg08xmhvps9fx514zndv
রন্ধনপ্রণালী আলোচনা:হিং-এর কচুরি
105
27138
84049
2025-06-11T17:37:16Z
MdsShakil
7280
MdsShakil [[রন্ধনপ্রণালী আলোচনা:হিং-এর কচুরি]] কে [[রন্ধনপ্রণালী আলোচনা:শিং-এর কচুরি]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন
84049
wikitext
text/x-wiki
#পুনর্নির্দেশ [[রন্ধনপ্রণালী আলোচনা:শিং-এর কচুরি]]
bxaklchj9nk2sebeogdxfeylefp5yyj
ব্যবহারকারী আলাপ:MHPial
3
27139
84105
2025-06-12T09:40:17Z
KanikBot
8129
স্বাগতম!
84105
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০৯:৪০, ১২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
5g2k4u10teb4bc6oa12yn32tdr4f7w6
ব্যবহারকারী আলাপ:Mohammad Rafiquzzaman Khandaker
3
27140
84108
2025-06-12T10:40:23Z
KanikBot
8129
স্বাগতম!
84108
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১০:৪০, ১২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
29l1vhss2iiy8dbfeq6z1xfjv4tlghn
ব্যবহারকারী আলাপ:Arijit Kisku
3
27141
84110
2025-06-12T10:51:59Z
MdsShakil
7280
MdsShakil [[ব্যবহারকারী আলাপ:Arijit Kisku]] কে [[ব্যবহারকারী আলাপ:ARI]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন: ব্যবহারকারীকে "[[Special:CentralAuth/Arijit Kisku|Arijit Kisku]]" থেকে "[[Special:CentralAuth/ARI|ARI]]"-এ নামান্তরের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাতা স্থানান্তরিত
84110
wikitext
text/x-wiki
#পুনর্নির্দেশ [[ব্যবহারকারী আলাপ:ARI]]
68r0h850nmjm02rxvk6h74act61gn24