উইকিবই bnwikibooks https://bn.wikibooks.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8_%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE MediaWiki 1.45.0-wmf.6 first-letter মিডিয়া বিশেষ আলাপ ব্যবহারকারী ব্যবহারকারী আলাপ উইকিবই উইকিবই আলোচনা চিত্র চিত্র আলোচনা মিডিয়াউইকি মিডিয়াউইকি আলোচনা টেমপ্লেট টেমপ্লেট আলোচনা সাহায্য সাহায্য আলোচনা বিষয়শ্রেণী বিষয়শ্রেণী আলোচনা উইকিশৈশব উইকিশৈশব আলাপ বিষয় বিষয় আলাপ রন্ধনপ্রণালী রন্ধনপ্রণালী আলোচনা TimedText TimedText talk মডিউল মডিউল আলাপ সিলেটি ভাষা শিক্ষা/নাগরি লিপি 0 10645 84852 70918 2025-06-18T18:11:10Z 37.111.232.212 /* পাঠ */ 84852 wikitext text/x-wiki '''সিলোটি ভাষা''' বা '''সিলোটি''' হল [[বাংলাদেশ]]ের দুইটি স্বতন্ত্র ভাষার একটি। এটা ভারতের ৮টি রাজ্যের মানুষের মুখের ভাষা। ব্রিটেন এবং আমেরিকার অভিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত প্রধান ও প্রভাবশালী একটি ভাষা সিলোটি ভাষা। এ ভাষায় পৃথিবীর প্রায় ১৯০ লক্ষ মানুষ কথা বলে। এটি পৃথিবীর ৯৭ তম (২০২০) বৃহত্তম ভাষা। উক্ত ভাষার সহজতা, সৌন্দর্য, মাধুর্যতা এবং তার বিজ্ঞানসম্মত বর্ণমালা ও বৈজ্ঞানিকভাবে সহজে আয়ত্ত করার ক্ষমতা পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিকে ভাষাটি দিন দিন তার প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে এবং শিখতে আকৃষ্ট করছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ২০ লাখ মানুষ, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি অথবা অন্যকিছু, তারা সিলোটি ভাষা শিখেছে এবং উক্ত ভাষা নিয়ে গবেষণা করছে, আর পাশাপাশি আগ্রহভরে কথাও বলছে। == লিখন পদ্ধতি == [[চিত্র:Siloti.png|800px|নাগরী লিপির সাথে বাংলা লিপির মিল]] সিলেটি নাগরী লিপি খুবই সরল স্বভাবের একটি লিপি। এর অক্ষর সংখ্যা বাংলা লিপির চেয়েও কম। তাছাড়া এই লিপিতে কোনো যুক্তাক্ষর নেই বললেই চলে। নাগরী লিপিতে বর্ণমালার সংখ্যা সাধারণভাবে ৩২টি, "ং" (অনুস্বার)-কে "০" হিসেবে ধরে এর সংখ্যা ৩৩টি; এর মধ্যে স্বরবর্ণ ৫টি, ব্যঞ্জণবর্ণ ২৮টি। === স্বরবর্ণ === নাগরী লিপির সর্বসম্মত স্বরবর্ণ সংখ্যা ৫টি। যদিও বিভিন্ন গ্রন্থে আরও ক'টি স্বরবর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন: শ্রী অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি প্রণীত ''শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত'' বইয়ের পরিশিষ্টে "শ্রীহট্টের মোসলমানী নাগরাক্ষর" শিরোনামে উল্লেখ করা নাগরী বর্ণমালায় স্বরবর্ণ দেখা যায় ৬টি। সেখানে সর্বসম্মত ৫টি বর্ণের পাশাপাশি "ঐ" উচ্চারণের আরেকটি চিহ্নের উল্লেখ আছে। {|class="wikitable" ! হরফ ! কার ! পূর্বী নাগরি লিপ্যন্তর ! [[রোমান লিপি|রোমান লিপ্যন্তর]] ! [[আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা|আইপিএ]] |- | ꠀ |০ꠣ |আ |a |/a/ |- | ꠁ | ০ꠤ |ই |i |/i/ |- | ꠃ | ০ꠥ |উ |u |/u/ |- |ꠄ |০ꠦ |এ |e |/e/ |- |ꠅ |০ꠧ |ও |ô |/ɔ/ |- |ꠅꠤ |০ꠂ |ঐ |ôi |/ɔi/ |} === ব্যঞ্জনবর্ণ === নাগরী লিপিতে ২৭টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতীক এই লিপির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। {|class="wikitable" ! হরফ ! পূর্বী নাগরি লিপ্যন্তর ! রোমান লিপ্যন্তর ! আইপিএ |- |ꠇ |ক |ko |/xɔ/ |- |ꠈ |খ |xo |/xɔ/ |- |ꠉ |গ |go |/gɔ/ |- |ꠊ |ঘ |gó |/gɔ/ |- |ꠌ |চ |co |/sɔ/ |- |ꠍ |ছ |so |/sɔ/ |- |ꠎ |জ |jo |/zɔ/ |- |ꠏ |ঝ |jó |/zɔ/ |- |ꠐ |ট |ṭo |/ʈɔ/ |- |ꠑ |ঠ |ṭó |/ʈɔ/ |- |ꠒ |ড |ḍo |/ɖɔ/ |- |ꠓ |ঢ |ḍó |/ɖɔ/ |- |ꠔ |ত |to |/t̪ɔ/ |- |ꠕ |থ |tó |/t̪ɔ/ |- |ꠖ |দ |do |/d̪ɔ/ |- |ꠗ |ধ |dó |/d̪ɔ/ |- |ꠘ |ন |no |/nɔ/ |- |ꠙ |প |po |/ɸɔ/ |- |ꠚ |ফ |fo |/fɔ/ |- |ꠛ |ব |bo |/bɔ/ |- |ꠜ |ভ |bó |/bɔ/ |- |ꠝ |ম |mo |/mɔ/ |- |ꠞ |র |ro |/ɾɔ/ |- |ꠟ |ল |lo |/lɔ/ |- |ꠠ |ড় |ṛo |/ɽɔ/ |- |ꠡ |শ |sho |/ʃɔ/ |- |ꠢ |হ |ho |/ɦɔ/ |} === ধ্বনিনির্দেশক চিহ্ন === {|class="wikitable" ! চিহ্ন ! রোমান লিপ্যন্তর ! আইপিএ |- |০꠆ |– |– |- |০ꠋ |ngô |/ŋɔ/ |- |꠨ |– |– |- |꠩ |– |– |- |꠪ |– |– |- |꠫ |– |– |} ==সংখ্যা পদ্ধতি== সিলেটি নাগরি লিপিতে সিলোটি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সিলোটি সংখ্যাগুলো এখনো ইউনিকোডে স্থান পায়নি, কিন্তু সিলোটি সাহিত্যে ব্যবহার করা হয়। {|class="wikitable" ! সিলেটি সংখ্যা ! [[বাংলা সংখ্যা পদ্ধতি|বাংলা সংখ্যা]] ! বাংলা লিপ্যন্তর ! আইপিএ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ০.svg|20px]] |০ |শুইন্ন |/ʃuinːɔ/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ১.svg|20px]] |১ |এখ |/ex/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ২.svg|20px]] |২ |দুই |/d̪ui/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ৩.svg|20px]] |৩ |তিন |/t̪in/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ৪.svg|20px]] |৪ |চাইর |/saiɾ/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ৫.svg|20px]] |৫ |পাঁচ |/ɸas/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ৬.svg|20px]] |৬ |ছয় |/sɔe̯/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ৭.svg|20px]] |৭ |হাত |/ɦat̪/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ৮.svg|20px]] |৮ |আট |/aʈ/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ৯.svg|20px]] |৯ |নয় |/nɔe̯/ |- |[[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ১.svg|20px]][[চিত্র:সিলেটি সংখ্যা ০.svg|20px]] |১০ |দশ |/d̪ɔʃ/ |} == পাঠ == * [[সিলোটি ফয়লা কিতাব]] * [[সিলোটি দুছরা কিতাব]] * [[সিলোটি তিছরা কিতাব]] == উদ্ভব অঞ্চল == * সেভেন সিস্টার্স, ভারত * সিলেট, বাংলাদেশ {{বর্ণানুক্রমিক|স}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} {{উইকিপিডিয়া|সিলেটি ভাষা}} {{বিষয়|সিলেটি ভাষা শিক্ষা}} 3naao4qkdeebkhtpx7q5doyumil0zo3 ব্যবহারকারী আলাপ:MS Sakib 3 11866 84869 84726 2025-06-18T23:57:50Z Mehedi Abedin 7113 /* জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ */ নতুন অনুচ্ছেদ 84869 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগতম == প্রিয় MS Sakib, উইকিবইয়ে স্বাগতম! [[চিত্র:Smiley oui.gif|30px|link=]] </br> এই প্রকল্পে আপনার আগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ; আশা করছি এ পরিবেশটি আপনার ভাল লাগবে এবং উইকিবইকে সমৃদ্ধ করার কাজে আপনি সহায়তা করবেন।। আপনার যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে এগুলি দেখুন: * [[চিত্র:Animated tools.gif|20px|link=]] [[উইকিবই:সহায়িকা|সহায়িকা পাতা]] * [[চিত্র:Article icon cropped.svg|20px|link=]] [[সাহায্য:কিভাবে একটি নতুন উইকিবই শুরু করবেন|নতুন লেখা শুরু কিভাবে করবেন]] * [[চিত্র:Notepad icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:রচনাশৈলী নির্দেশিকা|উইকিবইয়ের রচনাশৈলী]] * [[চিত্র:Books-aj.svg_aj_ashton_01.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:উইকিবই কী?|উইকিবই কী]] * [[চিত্র:Control copyright icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:কপিরাইট|কপিরাইট]] আপনি সম্প্রদায়কে কোন সার্বজনীন প্রশ্ন করতে বা আলোচনা করতে [[উইকিবই:প্রশাসকদের আলোচনাসভা|আলোচনাসভা]] ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার]] আপনাকে কাজের একটি তালিকা দিবে যা দিয়ে আপনি এখানে সাহায্য করতে পারেন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে বিনা দ্বিধায় [[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আমার আলাপের পাতায়]] তা করতে পারেন। অনুগ্রহপূর্বক আলাপের পাতায় বার্তা রাখার পর সম্পাদনা সরঞ্জামদণ্ডের [[চিত্র:OOjs UI icon signature-ltr.svg|22px|link=|alt=স্বাক্ষর আইকন]] চিহ্নে ক্লিক করার মাধ্যমে অথবা চারটি টিল্ডা (<code><nowiki>~~~~</nowiki></code>) চিহ্ন দিয়ে নাম স্বাক্ষর করুন। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার নাম এবং তারিখ যোগ করবে। যদি আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|অভ্যর্থনা কমিটির]] যে-কোনো সদস্যকে প্রশ্ন করুন, বা আপনার আলাপের পাতায় '''<nowiki>{{সাহায্য করুন}}</nowiki>''' লিখুন এবং তার নিচে নিচে আপনার প্রশ্নটি লিখুন। একজন সাহায্যকারী কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন।<br /> আশা করি আপনি [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|বাংলা উইকিবই সম্প্রদায়ের]] একজন হয়ে সম্পাদনা করে আনন্দ পাবেন! আবারও স্বাগতম এবং শুভেচ্ছা!<br> &mdash; [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|উইকিবই অভ্যর্থনা কমিটি]] [[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৬:৩৮, ১৩ অক্টোবর ২০২১ (ইউটিসি) == '''উইকি শিশুদের ভালোবাসে''' লিখন প্রতিযোগিতা- ''অংশ নিন ও পুরস্কার জিতুন'' == {| style="background-color: #9ee5ff; border: 1px solid #00b0f0; padding:10px;" |- |[[File:WLC logo.svg|frameless|right|100px]] সুপ্রিয় {{BASEPAGENAME}}, আশা করি এই গুমোট আবহাওয়াতেও ভালো আছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, গত ১৬ অক্টোবর থেকে বাংলা উইকিবইয়ে '''[[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১]]''' শীর্ষক একটি লিখন ও অনুবাদ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ‌আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতাটি অভিজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও নতুন ব্যবহারকারী সকলের জন্যই উন্মুক্ত।  অন্যান্য ভাষার উইকিবইয়ের চাইতে বাংলা উইকিবইয়ে অবদানকারীর সংখ্যা নিতান্তই কম, এমনকি সংখ্যাটি বাংলা উইকিপিডিয়ার তুলনায়ও নগণ্য। অথচ ডিজিটাল বইয়ের এই যুগে বাংলা উইকিবই যথেষ্ট গুরত্বের দাবি রাখে। এজন্য আমাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। আশা করি আপনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন ও উইকিবইকে সমৃদ্ধ করবেন। বিস্তারিত [[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|প্রকল্প পাতায়]] দেখুন। '''শীর্ষ অবদানকারীদের জন্য পুরষ্কার''' * প্রথম পুরস্কার - ৳১৬০০ গিফট ভাউচার + মুদ্রিত সনদপত্র * দ্বিতীয় পুরস্কার - ৳১২০০ গিফট ভাউচার + মুদ্রিত সনদপত্র * তৃতীয় পুরস্কার - ৳৮০০ গিফট ভাউচার + মুদ্রিত সনদপত্র * সকল অবদানকারী পাবেন অনলাইন সনদপত্র ও উইকিপদক প্রতিযোগিতায় আপনাকে স্বাগত।<br /> শুভেচ্ছান্তে, <br /> [[ব্যবহারকারী:Aishik Rehman|Aishik Rehman]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Aishik Rehman|আলাপ]]) ১৮:১৫, ১৭ অক্টোবর ২০২১ (ইউটিসি) |} == উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১ <small>(তথ্য প্রদানের অনুরোধ) </small> == <div style="border:1px solid #88ddfc;"> <div style=" padding:10px;"> <span style="font-size:180%;">'''উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১'''</span> <br/>'''১৬ অক্টোবর - ৩১ অক্টোবর, ২০২১''' </div> <div style="padding:10px; font-size:1.1em;">[[File:WLC logo.svg|right|frameless]] '''[[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১]]''' (''উইকি লাভস চিল্ড্রেন'') প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণপূর্বক শিশুতোষ বই রচনা ও অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা উইকিবইকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে <span class="plainlinks">'''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSfHVfa1Aunuqf9O4rCaSYwpzUZYfwGhrThhlCBu9NbwGsxV-A/viewform?usp=sf_link এই ফর্মটি]'''</span> পূরণ করুন এবং পুরস্কার ও সনদপত্র প্রদান সহ পরবর্তী ধাপগুলি সম্পন্ন করতে আমাদেরকে সহযোগিতা করুন৷ <small>আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় আয়োজকদের সাথে যোগাযোগ করুন।</small> শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:Aishik Rehman|Aishik Rehman]]''' <br />আয়োজক, উইকি লাভস চিল্ড্রেন <br />০৭:৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২১ (ইউটিসি) </div> </div> == উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১ পদক == <div style="display:flex;flex-direction:row; flex-wrap:wrap; justify-content: center; align-items: center; border-radius: 5px; border:1px solid lightblue; padding:10px;gap:10px;"> <div style="flex:0 0 200px; display:inline-block;">[[File:Blue Barnstar.png|200px|link=|পদক]]</div> <div style="flex:1 0 300px; text-align: left; vertical-align:middle; display:inline-block;"> <span style="font-family: Siyam Rupali; font-size: 1.5em;">'''উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১ পদক'''</span><br> <p>প্রিয় MS Sakib,<br> বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, ‘[[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১]]’ শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় শিশু বিষয়ক গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন। <br />শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:Aishik Rehman|Aishik Rehman]]''' <br />আয়োজক, উইকি লাভস চিল্ড্রেন <br />০৭:৫২, ২ ডিসেম্বর ২০২১ (ইউটিসি) </p> </div> </div> == গণিতে হাতেখড়ি/ঋণাত্মক সংখ্যা == জনাব {{BASEPAGENAME}},<br/> [[উইকিবই: উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]] উপলক্ষে প্রস্তুত করা [[উইকিশৈশব:গণিতে হাতেখড়ি/ঋণাত্মক সংখ্যা]] বইটি পুনঃ পর্যালোচনা করুন। — [[ব্যবহারকারী:MdaNoman|নোমান]] <span>[[User talk:MdaNoman |(আলাপ)]]</span> ১৪:২০, ৫ অক্টোবর ২০২২ (ইউটিসি) == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা: তথ্য প্রদানের অনুরোধ == {| style="margin: 1em 4em;" |- valign="top" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]] | <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;"> সুপ্রিয় MS Sakib,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]]-এ পর্যালোচক হিসেবে কাজ করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার আন্তরিক সহয়তার জন্য প্রতিযোগীতাটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSe6AjysEkRQO1R86LmhqJxQvt9siyvaCx6__xHbiyGINyvg4A/viewform এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:০৭, ২৩ নভেম্বর ২০২২ (ইউটিসি) </div> |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=52127-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == ইউজার লিস্টে নাম আসে না কেন? == ভাইয়া আমি সদস্য হয়েছি। বেশ কয়েকটা জমা দিয়েছি কিন্তু এইখানে লিস্টে আমার নাম আসে না কেন? [[ব্যবহারকারী:Robiul islam 50|Robiul islam 50]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Robiul islam 50|আলাপ]]) ১০:০৬, ২২ জুন ২০২৪ (ইউটিসি) == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪: তথ্য প্রদানের অনুরোধ == {| style="margin: 1em 4em;" |- valign="top" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]] | <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;"> সুপ্রিয় MS Sakib,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]-এ অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার জমা দেয়া এক বা একাধিক পাতা প্রতিযোগিতায় গৃহীত হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন! আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSfbU0XnUtQltWCaC59XqYCfjFicHrveyMOi_wW_g-I4FRnJMA/viewform?usp=sf_link এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১০:২১, ২৯ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি) </div> |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69589-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক == {| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;" |rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest barnstar.svg|100px]] |style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক''' |- |style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | সুপ্রিয় MS Sakib,<br />বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]''' শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন‌। <br />শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:MdsShakil|শাকিল হোসেন]]''' <br />সমন্বয়ক, উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ <br />১০:৩৩, ২৪ আগস্ট ২০২৪ (ইউটিসি) |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69912-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == পুনঃপর্যালোচনা করার অনুরোধ == জনাব দয়া করে [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন নাগেট]] পাতাটি পুনঃপর্যালোচনা করুন। আমি আপনার বার্তা মতো যথাসাথ্য সম্পাদনা করেছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৩৮, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|MS Sakib]] [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন রোল]] কেও পুনরায় পর্যালোচনা করার অনুরোধ করবো। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫১, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::[[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন রোল]] ::১/২ কাপ + ১ কাপ এটা কী ধরনের মাপ? প্যান এর বাংলা করুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৫:৪১, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] প্যান এর বাংলা আমার জানা নাই। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:১৫, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] তাওয়া হতে পারে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৬:১৭, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::একই সমস্যা ২ টেবিল চামচ + ২ টেবিল চামচ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৬:১৮, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|MS Sakib]] [[রন্ধনপ্রণালী:লাচ্ছা সেমাই]] টাকেও প্লিজ। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:১২, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::[[রন্ধনপ্রণালী:লাচ্ছা সেমাই]] ::প্যান শব্দের বাংলা করুন। "দুধ ফুটে মিষ্টি হয়ে যাবে" মানে কী? এই বাক্য সংশোধন করুন। কোনো লেখা গত পরিবর্তন করা হয়নি পর্যালোচনার পর [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৫:৩৫, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::{{ping|Md Mobashir Hossain}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৫:৪৫, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|সাকিব]] ভাই, আমি সব সংশোধন করেছি আর আমাকে সতর্ক করার জন্য @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|রিফাত]] ভাইকে অনেক ধন্যবাদ। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:২৬, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|MS Sakib]] ভাই! [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৭:০৭, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] পুনঃপর্যালোচনা করা হবে। অপেক্ষা করুন। বারবার পিং করার প্রয়োজন নেই। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৯:০২, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::সাকিব ভাই! মনে হয় ভুলে গিয়েছেন। :/ [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৫:০৬, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] "১/২ কাপ" বলতে ১ থেকে ২ কাপ অথবা ১ বা দুই কাপ বুঝানো হতে পারে। তাই "আধা কাপ" লিখুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:১৯, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] {{tl|ভগ্নাংশ}} ব্যবহার করতে পারেন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৬:৪৮, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/লেখকের স্বীকৃতি]] == পুনরায় যাচাই করবেন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৮:১২, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] এখনও অত্যন্ত যান্ত্রিক। "কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়, যারা ‘‘Object-Oriented Programming in Python’’ গ্রন্থটিও CC-BY-SA লাইসেন্সে ভাগ করে নিয়ে তাঁদের প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।" এটা স্বাভাবিক বাক্যগঠন? ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৯:৩৯, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::আবার দেখুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৬:০১, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == ইন্দ্রিয়তন্ত্র/পরিশিষ্ট == যদিও বিজ্ঞান শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে আমরা জানি এমনভাবে বিজ্ঞান বইগুলো লেখা হয়। তারপরও সম্পূর্ণ বাংলায় করে দিলাম [[ব্যবহারকারী:Editobd|Editobd]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Editobd|আলাপ]]) ১০:০৯, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[রন্ধনপ্রণালী:ঘোল]] == আপনি [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] দেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন, ও সেটি দেখে পরিবর্তন করতে বলেছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কোথায় পরিবর্তন করতে হবে, আমি “সমুচা” পাতাটি দেখেই এই রন্ধনপ্রণালী লিখেছি। কিছু বাড়তি জিনিস যুক্ত করেছি বটে, তবে অপ্রাসঙ্গিক নয়। [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৬:৪৭, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]]: দুঃখিত, পুরোটাই আগাগোড়া AI লিখিত। বাংলা উইকিবইয়ের রন্ধনপ্রণালীতে "আরও দেখুন" সহ অতিরিক্ত কিছু লেখা হয় না। :তালিকার উপরে নির্দেশিত কাঠামো হিসেবে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] দেওয়া ছিল। আপনার সবগুলো পাতা এই অনুযায়ী সংশোধন করুন, নয়তো গৃহীত হবে না। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০০:৫৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::শুধু “আরও দেখুন” অংশ নয়, আমি “ঐতিহাসিক ঘটনা”, “সাস্থ্যসচেতনতা” অংশ ও যুক্ত করেছি। আর এটি ইচ্ছে করেই আমার নিজ থেকে যুক্ত করা। এটি AI এর কাজ নয় !!! ::প্রতিযোগিতার আলাপ পাতায় রন্ধনপ্রণালী তে “তথ্যসূত্র” যোগ করা নিয়ে একজন প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেখানেই উত্তর পেয়েছি যে, তথ্যসূত্র বাধ্যতামূলক নয়, তবে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] থেকে বাড়তি অংশ যোগ করলে আরও ভালো হবে। ::সেজন্যই পাতাকে তথ্যবহুল করতে আমি বিভিন্ন অংশ যুক্ত করেছি। আমি চাইলে ওই সকল অংশ মুছে ফেলতে রাজি। ::তবে এই ব্যপারে আলোচনা প্রয়োজন ও সঠিক কারণও দেওয়া প্রয়োজন। [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৯:০০, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] প্রতিযোগিতায় যেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেরকম না হলে গ্রহণ করার সুযোগ নেই। আপনি আলাপ পাতায় যার মন্তব্যের কথা বললেন, সে আয়োজক বা পর্যালোচকদের কেউ নয়। সে কেন এমনটা বলেছে, তা কেবল সে-ই বলতে পারে। প্রতিযোগিতার [[উইকিবই আলোচনা:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫#রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতা সমূহ|মূল আয়োজকের বক্তব্য]] দেখুন (১১ মে ২০২৫)। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০০:১০, ১৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == পরামর্শ গ্রহণ পূর্বক যথাযথ সংশোধন আনা হয়েছে == আসসালামুয়ালাইকুম, ঈদ মোবারক। আশা করি পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। আমার তৈরীকৃত এবং আপনার দ্বারা একবার পর্যালোচিত [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শব্দ]] পাতাটির যান্ত্রিকতা দূরীকরণে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি আমার উক্ত পাতাটি পুনরায় পর্যালোচনা করবেন। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:১৭, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি আরো একটি পাতা সংশোধন করেছি, সময় পেলে দেখুন - [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/স্থিতিবিদ্যা]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:২৩, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] পাস্কাল একক? ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:৩৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] পাস্কাল নামে কোনো একক নেই ওটা হয়তো প্যাসকেল হবে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:৪৬, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] আমি দেখলাম নিবন্ধটিতে ইংরেজির কিছু বিষয়বস্তু নেই আবার অনেক জিনিস অন্যভাবে লেখা আপনি অন্যভাবে সহজ করার উদ্দেশ্যে লিখতেই পারেন কিন্তু কিছু বাক্য দেখলাম ইংরেজির সংস্করণে থাকলেও বাংলা নেই আবার কিছু জিনিস আপনি নিজে থেকেও যুক্ত করেছেন কোনো বিশেষ কারণ? কিংবা কেনো এমন হয়েছে তার পেছনে কোনো যুক্তি? [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:০৫, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ]] == [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ]] পাতায় কিছু ছোটখাটো সমস্যা ছিল যেগুলো আমি সংশোধন করেছি। কিন্তু এখানে প্রথম কয়েকটি অনুচ্ছেদে একই লেখা দুই তিনবার দেখা যাচ্ছে। এগুলো আমার জন্য শনাক্ত করে মুছে ফেলা কঠিন, এগুলো আপনাকে ঠিক করতে হবে। তারপর আমাকে জানালে আমি আবার পর্যালোচনা করবো। [[ব্যবহারকারী:Mehedi Abedin|Mehedi Abedin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Mehedi Abedin|আলাপ]]) ২৩:৫৭, ১৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ixgg7tkehgmmp2z4pm5l6v427gq2205 84902 84869 2025-06-19T06:51:06Z Asikur.rahman25 11164 /* জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান */ নতুন অনুচ্ছেদ 84902 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগতম == প্রিয় MS Sakib, উইকিবইয়ে স্বাগতম! [[চিত্র:Smiley oui.gif|30px|link=]] </br> এই প্রকল্পে আপনার আগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ; আশা করছি এ পরিবেশটি আপনার ভাল লাগবে এবং উইকিবইকে সমৃদ্ধ করার কাজে আপনি সহায়তা করবেন।। আপনার যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে এগুলি দেখুন: * [[চিত্র:Animated tools.gif|20px|link=]] [[উইকিবই:সহায়িকা|সহায়িকা পাতা]] * [[চিত্র:Article icon cropped.svg|20px|link=]] [[সাহায্য:কিভাবে একটি নতুন উইকিবই শুরু করবেন|নতুন লেখা শুরু কিভাবে করবেন]] * [[চিত্র:Notepad icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:রচনাশৈলী নির্দেশিকা|উইকিবইয়ের রচনাশৈলী]] * [[চিত্র:Books-aj.svg_aj_ashton_01.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:উইকিবই কী?|উইকিবই কী]] * [[চিত্র:Control copyright icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:কপিরাইট|কপিরাইট]] আপনি সম্প্রদায়কে কোন সার্বজনীন প্রশ্ন করতে বা আলোচনা করতে [[উইকিবই:প্রশাসকদের আলোচনাসভা|আলোচনাসভা]] ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার]] আপনাকে কাজের একটি তালিকা দিবে যা দিয়ে আপনি এখানে সাহায্য করতে পারেন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে বিনা দ্বিধায় [[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আমার আলাপের পাতায়]] তা করতে পারেন। অনুগ্রহপূর্বক আলাপের পাতায় বার্তা রাখার পর সম্পাদনা সরঞ্জামদণ্ডের [[চিত্র:OOjs UI icon signature-ltr.svg|22px|link=|alt=স্বাক্ষর আইকন]] চিহ্নে ক্লিক করার মাধ্যমে অথবা চারটি টিল্ডা (<code><nowiki>~~~~</nowiki></code>) চিহ্ন দিয়ে নাম স্বাক্ষর করুন। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার নাম এবং তারিখ যোগ করবে। যদি আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|অভ্যর্থনা কমিটির]] যে-কোনো সদস্যকে প্রশ্ন করুন, বা আপনার আলাপের পাতায় '''<nowiki>{{সাহায্য করুন}}</nowiki>''' লিখুন এবং তার নিচে নিচে আপনার প্রশ্নটি লিখুন। একজন সাহায্যকারী কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন।<br /> আশা করি আপনি [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|বাংলা উইকিবই সম্প্রদায়ের]] একজন হয়ে সম্পাদনা করে আনন্দ পাবেন! আবারও স্বাগতম এবং শুভেচ্ছা!<br> &mdash; [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|উইকিবই অভ্যর্থনা কমিটি]] [[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৬:৩৮, ১৩ অক্টোবর ২০২১ (ইউটিসি) == '''উইকি শিশুদের ভালোবাসে''' লিখন প্রতিযোগিতা- ''অংশ নিন ও পুরস্কার জিতুন'' == {| style="background-color: #9ee5ff; border: 1px solid #00b0f0; padding:10px;" |- |[[File:WLC logo.svg|frameless|right|100px]] সুপ্রিয় {{BASEPAGENAME}}, আশা করি এই গুমোট আবহাওয়াতেও ভালো আছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, গত ১৬ অক্টোবর থেকে বাংলা উইকিবইয়ে '''[[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১]]''' শীর্ষক একটি লিখন ও অনুবাদ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ‌আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতাটি অভিজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও নতুন ব্যবহারকারী সকলের জন্যই উন্মুক্ত।  অন্যান্য ভাষার উইকিবইয়ের চাইতে বাংলা উইকিবইয়ে অবদানকারীর সংখ্যা নিতান্তই কম, এমনকি সংখ্যাটি বাংলা উইকিপিডিয়ার তুলনায়ও নগণ্য। অথচ ডিজিটাল বইয়ের এই যুগে বাংলা উইকিবই যথেষ্ট গুরত্বের দাবি রাখে। এজন্য আমাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। আশা করি আপনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন ও উইকিবইকে সমৃদ্ধ করবেন। বিস্তারিত [[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|প্রকল্প পাতায়]] দেখুন। '''শীর্ষ অবদানকারীদের জন্য পুরষ্কার''' * প্রথম পুরস্কার - ৳১৬০০ গিফট ভাউচার + মুদ্রিত সনদপত্র * দ্বিতীয় পুরস্কার - ৳১২০০ গিফট ভাউচার + মুদ্রিত সনদপত্র * তৃতীয় পুরস্কার - ৳৮০০ গিফট ভাউচার + মুদ্রিত সনদপত্র * সকল অবদানকারী পাবেন অনলাইন সনদপত্র ও উইকিপদক প্রতিযোগিতায় আপনাকে স্বাগত।<br /> শুভেচ্ছান্তে, <br /> [[ব্যবহারকারী:Aishik Rehman|Aishik Rehman]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Aishik Rehman|আলাপ]]) ১৮:১৫, ১৭ অক্টোবর ২০২১ (ইউটিসি) |} == উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১ <small>(তথ্য প্রদানের অনুরোধ) </small> == <div style="border:1px solid #88ddfc;"> <div style=" padding:10px;"> <span style="font-size:180%;">'''উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১'''</span> <br/>'''১৬ অক্টোবর - ৩১ অক্টোবর, ২০২১''' </div> <div style="padding:10px; font-size:1.1em;">[[File:WLC logo.svg|right|frameless]] '''[[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১]]''' (''উইকি লাভস চিল্ড্রেন'') প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণপূর্বক শিশুতোষ বই রচনা ও অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা উইকিবইকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে <span class="plainlinks">'''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSfHVfa1Aunuqf9O4rCaSYwpzUZYfwGhrThhlCBu9NbwGsxV-A/viewform?usp=sf_link এই ফর্মটি]'''</span> পূরণ করুন এবং পুরস্কার ও সনদপত্র প্রদান সহ পরবর্তী ধাপগুলি সম্পন্ন করতে আমাদেরকে সহযোগিতা করুন৷ <small>আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় আয়োজকদের সাথে যোগাযোগ করুন।</small> শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:Aishik Rehman|Aishik Rehman]]''' <br />আয়োজক, উইকি লাভস চিল্ড্রেন <br />০৭:৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২১ (ইউটিসি) </div> </div> == উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১ পদক == <div style="display:flex;flex-direction:row; flex-wrap:wrap; justify-content: center; align-items: center; border-radius: 5px; border:1px solid lightblue; padding:10px;gap:10px;"> <div style="flex:0 0 200px; display:inline-block;">[[File:Blue Barnstar.png|200px|link=|পদক]]</div> <div style="flex:1 0 300px; text-align: left; vertical-align:middle; display:inline-block;"> <span style="font-family: Siyam Rupali; font-size: 1.5em;">'''উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১ পদক'''</span><br> <p>প্রিয় MS Sakib,<br> বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, ‘[[উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১|উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১]]’ শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় শিশু বিষয়ক গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন। <br />শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:Aishik Rehman|Aishik Rehman]]''' <br />আয়োজক, উইকি লাভস চিল্ড্রেন <br />০৭:৫২, ২ ডিসেম্বর ২০২১ (ইউটিসি) </p> </div> </div> == গণিতে হাতেখড়ি/ঋণাত্মক সংখ্যা == জনাব {{BASEPAGENAME}},<br/> [[উইকিবই: উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]] উপলক্ষে প্রস্তুত করা [[উইকিশৈশব:গণিতে হাতেখড়ি/ঋণাত্মক সংখ্যা]] বইটি পুনঃ পর্যালোচনা করুন। — [[ব্যবহারকারী:MdaNoman|নোমান]] <span>[[User talk:MdaNoman |(আলাপ)]]</span> ১৪:২০, ৫ অক্টোবর ২০২২ (ইউটিসি) == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা: তথ্য প্রদানের অনুরোধ == {| style="margin: 1em 4em;" |- valign="top" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]] | <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;"> সুপ্রিয় MS Sakib,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]]-এ পর্যালোচক হিসেবে কাজ করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার আন্তরিক সহয়তার জন্য প্রতিযোগীতাটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSe6AjysEkRQO1R86LmhqJxQvt9siyvaCx6__xHbiyGINyvg4A/viewform এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:০৭, ২৩ নভেম্বর ২০২২ (ইউটিসি) </div> |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=52127-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == ইউজার লিস্টে নাম আসে না কেন? == ভাইয়া আমি সদস্য হয়েছি। বেশ কয়েকটা জমা দিয়েছি কিন্তু এইখানে লিস্টে আমার নাম আসে না কেন? [[ব্যবহারকারী:Robiul islam 50|Robiul islam 50]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Robiul islam 50|আলাপ]]) ১০:০৬, ২২ জুন ২০২৪ (ইউটিসি) == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪: তথ্য প্রদানের অনুরোধ == {| style="margin: 1em 4em;" |- valign="top" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]] | <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;"> সুপ্রিয় MS Sakib,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]-এ অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার জমা দেয়া এক বা একাধিক পাতা প্রতিযোগিতায় গৃহীত হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন! আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSfbU0XnUtQltWCaC59XqYCfjFicHrveyMOi_wW_g-I4FRnJMA/viewform?usp=sf_link এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১০:২১, ২৯ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি) </div> |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69589-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক == {| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;" |rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest barnstar.svg|100px]] |style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক''' |- |style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | সুপ্রিয় MS Sakib,<br />বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]''' শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন‌। <br />শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:MdsShakil|শাকিল হোসেন]]''' <br />সমন্বয়ক, উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ <br />১০:৩৩, ২৪ আগস্ট ২০২৪ (ইউটিসি) |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69912-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == পুনঃপর্যালোচনা করার অনুরোধ == জনাব দয়া করে [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন নাগেট]] পাতাটি পুনঃপর্যালোচনা করুন। আমি আপনার বার্তা মতো যথাসাথ্য সম্পাদনা করেছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৩৮, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|MS Sakib]] [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন রোল]] কেও পুনরায় পর্যালোচনা করার অনুরোধ করবো। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫১, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::[[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন রোল]] ::১/২ কাপ + ১ কাপ এটা কী ধরনের মাপ? প্যান এর বাংলা করুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৫:৪১, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] প্যান এর বাংলা আমার জানা নাই। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:১৫, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] তাওয়া হতে পারে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৬:১৭, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::একই সমস্যা ২ টেবিল চামচ + ২ টেবিল চামচ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৬:১৮, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|MS Sakib]] [[রন্ধনপ্রণালী:লাচ্ছা সেমাই]] টাকেও প্লিজ। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:১২, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::[[রন্ধনপ্রণালী:লাচ্ছা সেমাই]] ::প্যান শব্দের বাংলা করুন। "দুধ ফুটে মিষ্টি হয়ে যাবে" মানে কী? এই বাক্য সংশোধন করুন। কোনো লেখা গত পরিবর্তন করা হয়নি পর্যালোচনার পর [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৫:৩৫, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::{{ping|Md Mobashir Hossain}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৫:৪৫, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|সাকিব]] ভাই, আমি সব সংশোধন করেছি আর আমাকে সতর্ক করার জন্য @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|রিফাত]] ভাইকে অনেক ধন্যবাদ। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:২৬, ১২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MS Sakib|MS Sakib]] ভাই! [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৭:০৭, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] পুনঃপর্যালোচনা করা হবে। অপেক্ষা করুন। বারবার পিং করার প্রয়োজন নেই। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৯:০২, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::সাকিব ভাই! মনে হয় ভুলে গিয়েছেন। :/ [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৫:০৬, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] "১/২ কাপ" বলতে ১ থেকে ২ কাপ অথবা ১ বা দুই কাপ বুঝানো হতে পারে। তাই "আধা কাপ" লিখুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:১৯, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] {{tl|ভগ্নাংশ}} ব্যবহার করতে পারেন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৬:৪৮, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/লেখকের স্বীকৃতি]] == পুনরায় যাচাই করবেন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৮:১২, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] এখনও অত্যন্ত যান্ত্রিক। "কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়, যারা ‘‘Object-Oriented Programming in Python’’ গ্রন্থটিও CC-BY-SA লাইসেন্সে ভাগ করে নিয়ে তাঁদের প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।" এটা স্বাভাবিক বাক্যগঠন? ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৯:৩৯, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::আবার দেখুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৬:০১, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == ইন্দ্রিয়তন্ত্র/পরিশিষ্ট == যদিও বিজ্ঞান শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে আমরা জানি এমনভাবে বিজ্ঞান বইগুলো লেখা হয়। তারপরও সম্পূর্ণ বাংলায় করে দিলাম [[ব্যবহারকারী:Editobd|Editobd]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Editobd|আলাপ]]) ১০:০৯, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[রন্ধনপ্রণালী:ঘোল]] == আপনি [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] দেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন, ও সেটি দেখে পরিবর্তন করতে বলেছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কোথায় পরিবর্তন করতে হবে, আমি “সমুচা” পাতাটি দেখেই এই রন্ধনপ্রণালী লিখেছি। কিছু বাড়তি জিনিস যুক্ত করেছি বটে, তবে অপ্রাসঙ্গিক নয়। [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৬:৪৭, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]]: দুঃখিত, পুরোটাই আগাগোড়া AI লিখিত। বাংলা উইকিবইয়ের রন্ধনপ্রণালীতে "আরও দেখুন" সহ অতিরিক্ত কিছু লেখা হয় না। :তালিকার উপরে নির্দেশিত কাঠামো হিসেবে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] দেওয়া ছিল। আপনার সবগুলো পাতা এই অনুযায়ী সংশোধন করুন, নয়তো গৃহীত হবে না। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০০:৫৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::শুধু “আরও দেখুন” অংশ নয়, আমি “ঐতিহাসিক ঘটনা”, “সাস্থ্যসচেতনতা” অংশ ও যুক্ত করেছি। আর এটি ইচ্ছে করেই আমার নিজ থেকে যুক্ত করা। এটি AI এর কাজ নয় !!! ::প্রতিযোগিতার আলাপ পাতায় রন্ধনপ্রণালী তে “তথ্যসূত্র” যোগ করা নিয়ে একজন প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেখানেই উত্তর পেয়েছি যে, তথ্যসূত্র বাধ্যতামূলক নয়, তবে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] থেকে বাড়তি অংশ যোগ করলে আরও ভালো হবে। ::সেজন্যই পাতাকে তথ্যবহুল করতে আমি বিভিন্ন অংশ যুক্ত করেছি। আমি চাইলে ওই সকল অংশ মুছে ফেলতে রাজি। ::তবে এই ব্যপারে আলোচনা প্রয়োজন ও সঠিক কারণও দেওয়া প্রয়োজন। [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৯:০০, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] প্রতিযোগিতায় যেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেরকম না হলে গ্রহণ করার সুযোগ নেই। আপনি আলাপ পাতায় যার মন্তব্যের কথা বললেন, সে আয়োজক বা পর্যালোচকদের কেউ নয়। সে কেন এমনটা বলেছে, তা কেবল সে-ই বলতে পারে। প্রতিযোগিতার [[উইকিবই আলোচনা:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫#রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতা সমূহ|মূল আয়োজকের বক্তব্য]] দেখুন (১১ মে ২০২৫)। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০০:১০, ১৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == পরামর্শ গ্রহণ পূর্বক যথাযথ সংশোধন আনা হয়েছে == আসসালামুয়ালাইকুম, ঈদ মোবারক। আশা করি পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। আমার তৈরীকৃত এবং আপনার দ্বারা একবার পর্যালোচিত [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শব্দ]] পাতাটির যান্ত্রিকতা দূরীকরণে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি আমার উক্ত পাতাটি পুনরায় পর্যালোচনা করবেন। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:১৭, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি আরো একটি পাতা সংশোধন করেছি, সময় পেলে দেখুন - [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/স্থিতিবিদ্যা]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:২৩, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] পাস্কাল একক? ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:৩৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] পাস্কাল নামে কোনো একক নেই ওটা হয়তো প্যাসকেল হবে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:৪৬, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] আমি দেখলাম নিবন্ধটিতে ইংরেজির কিছু বিষয়বস্তু নেই আবার অনেক জিনিস অন্যভাবে লেখা আপনি অন্যভাবে সহজ করার উদ্দেশ্যে লিখতেই পারেন কিন্তু কিছু বাক্য দেখলাম ইংরেজির সংস্করণে থাকলেও বাংলা নেই আবার কিছু জিনিস আপনি নিজে থেকেও যুক্ত করেছেন কোনো বিশেষ কারণ? কিংবা কেনো এমন হয়েছে তার পেছনে কোনো যুক্তি? [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:০৫, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ]] == [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ]] পাতায় কিছু ছোটখাটো সমস্যা ছিল যেগুলো আমি সংশোধন করেছি। কিন্তু এখানে প্রথম কয়েকটি অনুচ্ছেদে একই লেখা দুই তিনবার দেখা যাচ্ছে। এগুলো আমার জন্য শনাক্ত করে মুছে ফেলা কঠিন, এগুলো আপনাকে ঠিক করতে হবে। তারপর আমাকে জানালে আমি আবার পর্যালোচনা করবো। [[ব্যবহারকারী:Mehedi Abedin|Mehedi Abedin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Mehedi Abedin|আলাপ]]) ২৩:৫৭, ১৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান]] == ঠিক করা হয়েছে। পুনরায় পর্যালোচনার জন্য অনুরোধ করছি। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ০৬:৫১, ১৯ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) b14wp73npzweh4crjiyhrgchwoxudry উইকিবই:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১/পর্যালোচনা 4 12870 84927 45579 2025-06-19T07:59:28Z RiazACU 4467 সংশোধন 84927 wikitext text/x-wiki {{উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১}} == শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="5" |শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/প্ল্যান্টজেনেটস|ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/প্ল্যান্টজেনেটস]] |৬,৯৭৯ | rowspan="46" |গৃহীত | rowspan="8" |MdsShakil |- |২ |[[উইকিশৈশব:পরিবার পরিজন/পরিবার ও সমাজ|পরিবার পরিজন/পরিবার ও সমাজ]] |৬৯৩ |- |৩ |[[উইকিশৈশব:ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/ড্যান্স|ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/ড্যান্স]] |১,৭৬৯ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:ইংল্যান্ডের রাজা ও রানী/অ্যাংলো স্যাক্সন|ইংল্যান্ডের রাজা ও রানী/অ্যাংলো স্যাক্সন]] |৩,৪১১ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/জরাথুস্ট্রবাদ|বিচিত্র ধর্মমত/জরাথুস্ট্রবাদ]] |৩৯০ |- |৬ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/নাস্তিকতা|বিচিত্র ধর্মমত/নাস্তিকতা]] |১৫২৫ |- |৭ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/খ্রিস্টধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/খ্রিস্টধর্ম]] |৯৪৫ |- |৮ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/ডোডো|বিলুপ্ত পাখি/ডোডো]] |৩৪৭ |- |৯ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/ডাঙ্গা মোয়া|বিলুপ্ত পাখি/ডাঙ্গা মোয়া]] |১৮০ | rowspan="5" |RiazACU |- |১০ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/সওয়ারি কবুতর|বিলুপ্ত পাখি/সওয়ারি কবুতর]] |২৬৫ |- |১১ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/নিউজিল্যান্ড কোয়েল|বিলুপ্ত পাখি/নিউজিল্যান্ড কোয়েল]] |১১০ |- |১২ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/ল্যাব্রাডর হাঁস|বিলুপ্ত পাখি/ল্যাব্রাডর হাঁস]] |২৭২ |- |১৩ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/বড় অউক|বিলুপ্ত পাখি/বড় অউক]] |২৪২ |- |১৪ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/হাসু পেঁচা|বিলুপ্ত পাখি/হাসু পেঁচা]] |২৬৬ |MdsShakil |- |১৫ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি/ক্যারোলিনা টিয়া|বিলুপ্ত পাখি/ক্যারোলিনা টিয়া]] |১১১ |RiazACU |- |১৬ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/রেফ্রিজারেটর|এটা কীভাবে কাজ করে/রেফ্রিজারেটর]] |২,০৬৫ |MdsShakil |- |১৭ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/একতাবাদী সর্বজনীনতা|বিচিত্র ধর্মমত/একতাবাদী সর্বজনীনতা]] |১৫৫ | rowspan="5" |RiazACU |- |১৮ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/তাওবাদ|বিচিত্র ধর্মমত/তাওবাদ]] |১৯০ |- |১৯ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/শিখধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/শিখধর্ম]] |২৫০ |- |২০ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/শিন্তৌ ধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/শিন্তৌ ধর্ম]] |২০১ |- |২১ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/বাহাই ধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/বাহাই ধর্ম]] |১৯৮ |- |২২ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/বাল্ব|এটা কীভাবে কাজ করে/বাল্ব]] |২,০০৬ | rowspan="8" |Aishik Rehman |- |২৩ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/লেজার|এটা কীভাবে কাজ করে/লেজার]] |১,৭৭৯ |- |২৪ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/গাড়ির ইঞ্জিন|এটা কীভাবে কাজ করে/গাড়ির ইঞ্জিন]] |১,৫৭৫ |- |২৫ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/বিমান|এটা কীভাবে কাজ করে/বিমান]] |৭৯৯ |- |২৬ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/হার্ডড্রাইভ|এটা কীভাবে কাজ করে/হার্ডড্রাইভ]] |৭৪৫ |- |২৭ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/স্ক্রু|এটা কীভাবে কাজ করে/স্ক্রু]] |১,০৩৭ |- |২৮ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/সৌর প্যানেল|এটা কীভাবে কাজ করে/সৌর প্যানেল]] |২৪৫ |- |২৯ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/ফ্লুরোসেন্ট বাতি|এটা কীভাবে কাজ করে/ফ্লুরোসেন্ট বাতি]] |২৬৫ |- |৩০ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/এলসিডি ডিসপ্লে|এটা কীভাবে কাজ করে/এলসিডি ডিসপ্লে]] |৫৯৫ | rowspan="2" |MdsShakil |- |৩১ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/ভ্যাকুয়াম ক্লিনার|এটা কীভাবে কাজ করে/ভ্যাকুয়াম ক্লিনার]] |৪১৮ |- |৩২ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/অডিও স্পিকার|এটা কীভাবে কাজ করে/অডিও স্পিকার]] |৪৪১ |Aishik Rehman |- |৩৩ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/ক্যামেরা|এটা কীভাবে কাজ করে/ক্যামেরা]] |৫১৬ | rowspan="8" |MdsShakil |- |৩৪ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/ডিভিডি|এটা কীভাবে কাজ করে/ডিভিডি]] |৫৮৯ |- |৩৫ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/টেলিভিশন|এটা কীভাবে কাজ করে/টেলিভিশন]] |৬৮০ |- |৩৬ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/পেন্সিল|এটা কীভাবে কাজ করে/পেন্সিল]] |৭৩৬ |- |৩৭ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/ফ্লাশ টয়লেট|এটা কীভাবে কাজ করে/ফ্লাশ টয়লেট]] |১,০৬৩ |- |৩৮ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/বেতার গ্রাহক|এটা কীভাবে কাজ করে/বেতার গ্রাহক]] |৭০৩ |- |৩৯ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/মেটাল ডিটেক্টর|এটা কীভাবে কাজ করে/মেটাল ডিটেক্টর]] |৪৫০ |- |৪০ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/পানির পাম্প|এটা কীভাবে কাজ করে/পানির পাম্প]] |১৯৪ |- |৪১ |[[উইকিশৈশব:এটা কিভাবে কাজ করে/হাইড্রোলিক সিস্টেম|এটা কিভাবে কাজ করে/হাইড্রোলিক সিস্টেম]] |২৮১ |Aishik Rehman |- |৪২ |[[উইকিশৈশব:এটা কিভাবে কাজ করে/ভূমিকা|এটা কিভাবে কাজ করে/ভূমিকা]] |১৫২ | rowspan="5" |MdsShakil |- |৪৩ |[[উইকিশৈশব:এটা কিভাবে কাজ করে/৬টি সরল যন্ত্র|এটা কিভাবে কাজ করে/৬টি সরল যন্ত্র]] |৩০৮ |- |৪৪ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/ব্যাথা|মানবদেহ/ব্যাথা]] |৮২৫ |- |৪৫ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/মুখ|মানবদেহ/মুখ]] |৩৯০ |- |৪৬ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/ত্বক|মানবদেহ/ত্বক]] |১,১৬৭ |- |৪৭ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/সুরশলাকা|বাদ্যযন্ত্র/সুরশলাকা]] | rowspan="7" | | rowspan="7" |গৃহীত হয়নি | rowspan="14" |Aishik Rehman |- |৪৮ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/পাখোয়াজ|বাদ্যযন্ত্র/পাখোয়াজ]] |- |৪৯ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/ডমরু|বাদ্যযন্ত্র/ডমরু]] |- |৫০ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/ঢোল|বাদ্যযন্ত্র/ঢোল]] |- |৫১ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/তবলা|বাদ্যযন্ত্র/তবলা]] |- |৫২ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/তানপুরা|বাদ্যযন্ত্র/তানপুরা]] |- |৫৩ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/পিয়ানো|বাদ্যযন্ত্র/পিয়ানো]] |- |৫৪ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/একতারা|বাদ্যযন্ত্র/একতারা]] |২৮০ | rowspan="2" |গৃহীত |- |৫৫ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/দোতারা|বাদ্যযন্ত্র/দোতারা]] |৮০০ |- |৫৬ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/বেহালা|বাদ্যযন্ত্র/বেহালা]] | |গৃহীত হয়নি |- |৫৭ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/মাদল|বাদ্যযন্ত্র/মাদল]] |৩০৬ |গৃহীত |- |৫৮ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/গিটার|বাদ্যযন্ত্র/গিটার]] | |গৃহীত হয়নি |- |৫৯ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/শঙ্খ|বাদ্যযন্ত্র/শঙ্খ]] |৩৮৬ | rowspan="2" |গৃহীত |- |৬০ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/সানাই|বাদ্যযন্ত্র/সানাই]] |২৭০ |- |৬১ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/বাঁশি|বাদ্যযন্ত্র/বাঁশি]] | rowspan="3" | | rowspan="3" |গৃহীত হয়নি |MdsShakil |- |৬২ |[[উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/হারমোনিয়াম|বাদ্যযন্ত্র/হারমোনিয়াম]] | rowspan="20" |Aishik Rehman |- |৬৩ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/চোখ|মানবদেহ/চোখ]] |- |৬৪ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/শারীরস্থান|মানবদেহ/শারীরস্থান]] |৯০৩ | rowspan="22" |গৃহীত |- |৬৫ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/তালিকা|ছোট্ট মালি/তালিকা]] |৩০ |- |৬৬ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/কঙ্কাল|মানবদেহ/কঙ্কাল]] |১,২৭৪ |- |৬৭ |[[উইকিশৈশব:প্রাণিজগৎ/কম্বোজ|প্রাণিজগৎ/কম্বোজ]] |২২৩ |- |৬৮ |[[উইকিশৈশব:প্রাণিজগৎ/স্তন্যপায়ী|প্রাণিজগৎ/স্তন্যপায়ী]] |২১৪ |- |৬৯ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/সূর্যমুখী|ছোট্ট মালি/সূর্যমুখী]] |৪৫৬ |- |৭০ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/স্কোয়াশ|ছোট্ট মালি/স্কোয়াশ]] |৪৬২ |- |৭১ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/কুমড়ো|ছোট্ট মালি/কুমড়ো]] |৪৭১ |- |৭২ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/মূলা|ছোট্ট মালি/মূলা]] |৪৭৩ |- |৭৩ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/পার্সলে|ছোট্ট মালি/পার্সলে]] |৪৬২ |- |৭৪ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/মর্নিং গ্লোরি|ছোট্ট মালি/মর্নিং গ্লোরি]] |৪৮৩ |- |৭৫ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/লেটুস|ছোট্ট মালি/লেটুস]] |৪৭৪ |- |৭৬ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/শব্দকোষ|ছোট্ট মালি/শব্দকোষ]] |৯৭ |- |৭৭ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/শুলফা|ছোট্ট মালি/শুলফা]] |৪২২ |- |৭৮ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/কসমস|ছোট্ট মালি/কসমস]] |৪৪৫ |- |৭৯ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/ধনেপাতা|ছোট্ট মালি/ধনেপাতা]] |৪৩৩ |- |৮০ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/চিভস|ছোট্ট মালি/চিভস]] |৪২৪ |- |৮১ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/ক্যামোমাইল|ছোট্ট মালি/ক্যামোমাইল]] |৪৪৭ |- |৮২ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/মটরশুটি|ছোট্ট মালি/মটরশুটি]] |৪৪২ | rowspan="3" |RiazACU |- |৮৩ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/তুলসী|ছোট্ট মালি/তুলসী]] |৪৪০ |- |৮৪ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/গাজর|ছোট্ট মালি/গাজর]] |৪৪৫ |- |৮৫ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/অন্যান্য সরঞ্জাম|ছোট্ট মালি/অন্যান্য সরঞ্জাম]] |৫৭৭ |MdsShakil |- |৮৬ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/বুলবুলি|পাখপাখালির দেশে/বুলবুলি]] | |গৃহীত হয়নি |RiazACU Aishik Rehman |- |৮৭ |[[উইকিশৈশব:প্রাণিজগৎ/পোকামাকড়|প্রাণিজগৎ/পোকামাকড়]] |২২৯ |গৃহীত |RiazACU |- |৮৮ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/কাক|পাখপাখালির দেশে/কাক]] | rowspan="2" | | rowspan="2" |গৃহীত হয়নি | rowspan="4" |Aishik Rehman Yahya |- |৮৯ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/ময়না|পাখপাখালির দেশে/ময়না]] |- |৯০ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/বাবুই|পাখপাখালির দেশে/বাবুই]] |৩৯৩ |গৃহীত |- |৯১ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/কবুতর|পাখপাখালির দেশে/কবুতর]] | |গৃহীত হয়নি |- |৯২ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/টুনটুনি|পাখপাখালির দেশে/টুনটুনি]] |২০৪ |গৃহীত |Yahya |- |৯৩ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/টিয়া|পাখপাখালির দেশে/টিয়া]] | rowspan="5" | | rowspan="5" |গৃহীত হয়নি | rowspan="5" |Aishik Rehman Yahya |- |৯৪ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/ঘুঘু|পাখপাখালির দেশে/ঘুঘু]] |- |৯৫ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/শালিক|পাখপাখালির দেশে/শালিক]] |- |৯৬ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/বক|পাখপাখালির দেশে/বক]] |- |৯৭ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/মাছরাঙা|পাখপাখালির দেশে/মাছরাঙা]] |- |৯৮ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ধাঁধাঁ|সৌরজগৎ/ধাঁধাঁ]] |১০১ | rowspan="8" |গৃহীত | rowspan="2" |RiazACU |- |৯৯ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ওবেরন|সৌরজগৎ/ওবেরন]] |৪০১ |- |১০০ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/টাইটানিয়া|সৌরজগৎ/টাইটানিয়া]] |৪৮৫ | rowspan="2" |MdsShakil |- |১০১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/আমব্রিয়েল|সৌরজগৎ/আমব্রিয়েল]] |২৭৬ |- |১০২ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/শনি|সৌরজগৎ/শনি]] |১,০৮৩ |RiazACU |- |১০৩ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/বৃহস্পতি|সৌরজগৎ/বৃহস্পতি]] |১,৮১৪ |Yahya |- |১০৪ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ফোবোস|সৌরজগৎ/ফোবোস]] |১,২৮৪ | rowspan="2" |MdsShakil |- |১০৫ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/বুধ|সৌরজগৎ/বুধ]] |৯৪৫ |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="3" |'''৫৭,৮৭৭''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="3" |'''৫৭৮.৭৭''' |} == Nettime Sujata == {| class="wikitable" style="width:100%" !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/দ্য স্ক্রিম|জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/দ্য স্ক্রিম]] |৪৬ | rowspan="50" |গৃহীত | rowspan="8" |Aishik Rehman |- |২ |[[উইকিশৈশব:জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/গার্ল উইথ দ্য পার্ল ইয়ারিং|জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/গার্ল উইথ দ্য পার্ল ইয়ারিং]] |২৭ |- |৩ |[[উইকিশৈশব:জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/এ সানডে আফটারনুন অন দ্য আইল্যান্ড অফ লা গ্র্যান্ডে জাতে|জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/এ সানডে আফটারনুন অন দ্য আইল্যান্ড অফ লা গ্র্যান্ডে জাতে]] |৫৩ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/নর্ম্যানস|ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/নর্ম্যানস]] |৩,৮১৩ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/আরও অ্যাংলো-স্যাক্সন|ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/আরও অ্যাংলো-স্যাক্সন]] |১,৭৫১ |- |৬ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/উইকা|বিচিত্র ধর্মমত/উইকা]] |৬৪৯ |- |৭ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/ইহুদি ধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/ইহুদি ধর্ম]] |৫০৯ |- |৮ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/ইসলাম ধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/ইসলাম ধর্ম]] |৫৬৮ |- |৯ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/দ্বিমিক সংখ্যা|এটা কীভাবে কাজ করে/দ্বিমিক সংখ্যা]] |১,৪৪১ |RiazACU |- |১০ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/কীল|এটা কীভাবে কাজ করে/কীল]] |৫৪৯ | rowspan="9" |Aishik Rehman |- |১১ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/রকেট|এটা কীভাবে কাজ করে/রকেট]] |১,২২১ |- |১২ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/কপিকল|এটা কীভাবে কাজ করে/কপিকল]] |৮৫৩ |- |১৩ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/পারমাণবিক বোমা|এটা কীভাবে কাজ করে/পারমাণবিক বোমা]] |২,০১৯ |- |১৪ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/সময়রেখা|এটা কীভাবে কাজ করে/সময়রেখা]] |৮২ |- |১৫ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/লিভার|এটা কীভাবে কাজ করে/লিভার]] |৯২৬ |- |১৬ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/বিদ্যুৎ|এটা কীভাবে কাজ করে/বিদ্যুৎ]] |৯২৮ |- |১৭ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/মাইক্রোওয়েভ ওভেন|এটা কীভাবে কাজ করে/মাইক্রোওয়েভ ওভেন]] |৫৮৪ |- |১৮ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/কম্পিউটার|এটা কীভাবে কাজ করে/কম্পিউটার]] |১,২২৫ |- |১৯ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/সময়|এটা কীভাবে কাজ করে/সময়]] |৮২২ | rowspan="2" |MdsShakil |- |২০ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/মোবাইল ফোন|এটা কীভাবে কাজ করে/মোবাইল ফোন]] |১,৫৪৫ |- |২১ |[[উইকিশৈশব:পরিবহন/সমাজ|পরিবহন/সমাজ]] |৫২২ |Aishik Rehman |- |২২ |[[উইকিশৈশব:পরিবহন/অবকাঠামো|পরিবহন/অবকাঠামো]] |২৭০ | |- |২৩ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/উপসংহার|মানবদেহ/উপসংহার]] |৭৫ | rowspan="2" |MdsShakil |- |২৪ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/সূচনা|মানবদেহ/সূচনা]] |১৫৩ |- |২৫ |[[উইকিশৈশব:অনুবাদ গল্প/নাম নিয়ে কলহ|অনুবাদ গল্প/নাম নিয়ে কলহ]] |১৬৯ | rowspan="6" |Aishik Rehman |- |২৬ |[[উইকিশৈশব:অনুবাদ গল্প/তিন স্কুলবন্ধু|অনুবাদ গল্প/তিন স্কুলবন্ধু]] |৭২৮ |- |২৭ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা|মানবদেহ/রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা]] |৭২৪ |- |২৮ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি|ছোট্ট মালি]] |৭১৭ |- |২৯ |[[উইকিশৈশব:পরিবহন/ইতিহাস|পরিবহন/ইতিহাস]] |৩২০ |- |৩০ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/পাকস্থলী|মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/পাকস্থলী]] |৫৪১ |- |৩১ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/ক্ষুদ্রান্ত্র|মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/ক্ষুদ্রান্ত্র]] |৩৩৯ | rowspan="2" |MdsShakil |- |৩২ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/বৃহদন্ত্র|মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/বৃহদন্ত্র]] |৩২৭ |- |৩৩ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/মস্তিষ্ক|মানবদেহ/মস্তিষ্ক]] |৬৭৮ | rowspan="9" |Aishik Rehman |- |৩৪ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/পাচনতন্ত্র|মানবদেহ/পাচনতন্ত্র]] |৮৫১ |- |৩৫ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা|মানবদেহ/রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা]] |৭১৫ |- |৩৬ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/রক্তনালী|মানবদেহ/রক্তনালী]] |৮০৪ |- |৩৭ |[[উইকিশৈশব:প্রাণিজগৎ/পাখি|প্রাণিজগৎ/পাখি]] |২৪০ |- |৩৮ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/কুপার বেল্ট|সৌরজগৎ/কুপার বেল্ট]] |৫৯৩ |- |৩৯ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ধূমকেতু|সৌরজগৎ/ধূমকেতু]] |১,১৭৮ |- |৪০ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/অ্যাপেটাস|সৌরজগৎ/অ্যাপেটাস]] |৪৮৯ |- |৪১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/টাইটান|সৌরজগৎ/টাইটান]] |৫০০ |- |৪২ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/রিয়া|সৌরজগৎ/রিয়া]] |৪২৯ | rowspan="2" |Yahya |- |৪৩ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ডিওন|সৌরজগৎ/ডিওন]] |৩০৭ |- |৪৪ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/টেথিস|সৌরজগৎ/টেথিস]] |৪৮১ |Aishik Rehman |- |৪৫ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/এনসেলাডাস|সৌরজগৎ/এনসেলাডাস]] |৪২১ | rowspan="6" |MdsShakil |- |৪৬ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ক্যালিস্টো|সৌরজগৎ/ক্যালিস্টো]] |২৫৮ |- |৪৭ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/গ্যানিমেড|সৌরজগৎ/গ্যানিমেড]] |৩৫৭ |- |৪৮ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/আইয়ো|সৌরজগৎ/আইয়ো]] |৭৭৬ |- |৪৯ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/গ্রহাণুপুঞ্জ|সৌরজগৎ/গ্রহাণুপুঞ্জ]] |১,৩৩৯ |- |৫০ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/কোষ|জীববিজ্ঞান/কোষ]] |৫৩১ |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="3" |'''৩৫,৪৪৩''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="3" |'''৩৫৪.৪৩''' |} == Obangmoy == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |✔ Obangmoy |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/বৌদ্ধধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/বৌদ্ধধর্ম]] |৪৭৭ | rowspan="16" |নতুন | rowspan="16" |গৃহীত | rowspan="4" |RiazACU |- |২ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত/জৈন ধর্ম|বিচিত্র ধর্মমত/জৈন ধর্ম]] |১৫৪ |- |৩ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/চাকা|এটা কীভাবে কাজ করে/চাকা]] |৩০৮ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/লিফট|এটা কীভাবে কাজ করে/লিফট]] |৪১৯ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:পরিবহন/পরিবহণের পদ্ধতি|পরিবহন/পরিবহণের পদ্ধতি]] |২৬১ | rowspan="11" |MdsShakil |- |৬ |[[উইকিশৈশব:পরিবহন/পরিচিতি|পরিবহন/পরিচিতি]] |৮৩ |- |৭ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/শব্দকোষ|মানবদেহ/শব্দকোষ]] |৭২৭ |- |৮ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/অবদান রাখুন|মানবদেহ/অবদান রাখুন]] |৩৪৬ |- |৯ |[[উইকিশৈশব:পরিবহন/রূপরেখা|পরিবহন/রূপরেখা]] |৩৫১ |- |১০ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/বৃক্ক|মানবদেহ/পাচনতন্ত্র/বৃক্ক]] |৩১৮ |- |১১ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/পেশী|মানবদেহ/পেশী]] |৩৩৭ |- |১২ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/কান|মানবদেহ/কান]] |২৪৪ |- |১৩ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/পৃথিবী|সৌরজগৎ/পৃথিবী]] |৭৯৫ |- |১৪ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/প্রাণের উৎপত্তি ও বিবর্তন|জীববিজ্ঞান/প্রাণের উৎপত্তি ও বিবর্তন]] |৪৩৭ |- |১৫ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/সূর্য|সৌরজগৎ/সূর্য]] |৫১৯ |- |১৬ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/শ্বসনতন্ত্র|জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/শ্বসনতন্ত্র]] |২০৩ |RiazACU |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৫,৯৭৯''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৫৯.৭৯''' |} == Greatder == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |✔ Greatder |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/দ্য স্টেরি নাইট|জনপ্রিয় চিত্রকর্ম/দ্য স্টেরি নাইট]] |৩৩ | rowspan="8" |নতুন | rowspan="8" |গৃহীত |Aishik Rehman |- |২ |[[উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/শব্দকোষ|এটা কীভাবে কাজ করে/শব্দকোষ]] |২১৯ | rowspan="3" |MdsShakil |- |৩ |[[উইকিশৈশব:অনুবাদ গল্প|অনুবাদ গল্প]] |৭৮ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/নাক|মানবদেহ/নাক]] |২১৫ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:অনুবাদ গল্প/নির্বোধ পাথুরে|অনুবাদ গল্প/নির্বোধ পাথুরে]] |৩৩০ |Aishik Rehman |- |৬ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/চড়ুই|পাখপাখালির দেশে/চড়ুই]] |২৫৬২ |MdsShakil |- |৭ |[[উইকিশৈশব:পাখপাখালির দেশে/দোয়েল|পাখপাখালির দেশে/দোয়েল]] |৬০৭ |Aishik Rehman |- |৮ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ইউরেনাস|সৌরজগৎ/ইউরেনাস]] |৫০৫ |MdsShakil |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৪,৫৪৯''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৪৫.৪৯''' |} == Firuz Ahmmed == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Firuz Ahmmed |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/রাজ্য|জীববিজ্ঞান/রাজ্য]] |৮৮ | rowspan="7" |নতুন | rowspan="7" |গৃহীত | rowspan="7" |Yahya |- |২ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/রাজ্য/আর্কিয়া|জীববিজ্ঞান/রাজ্য/আর্কিয়া]] |৪৫ |- |৩ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/রাজ্য/ব্যাকটেরিয়া|জীববিজ্ঞান/রাজ্য/ব্যাকটেরিয়া]] |৮৪ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/রাজ্য/ছত্রাক|জীববিজ্ঞান/রাজ্য/ছত্রাক]] |১২১ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/রাজ্য/উদ্ভিদ|জীববিজ্ঞান/রাজ্য/উদ্ভিদ]] |১৫৭ |- |৬ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/রাজ্য/প্রাণী|জীববিজ্ঞান/রাজ্য/প্রাণী]] |১৩৩ |- |৭ |[[উইকিশৈশব:প্রাণিজগৎ/মাছ|প্রাণিজগৎ/মাছ]] |৩১৭ |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৯৪৫''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৯.৪৫''' |} == Safi Mahfouz == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Safi Mahfouz |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরণ !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/নেপচুন/প্রোটিয়াস|সৌরজগৎ/নেপচুন/প্রোটিয়াস]] |১৮০ | rowspan="7" |নতুন | rowspan="7" |গৃহীত |MdsShakil |- |২ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ট্রাইটন|সৌরজগৎ/ট্রাইটন]] |৩৭৫ | rowspan="5" |RiazACU |- |৩ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/নেরিড|সৌরজগৎ/নেরিড]] |১২৫ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/হাইপেরিয়ন|সৌরজগৎ/হাইপেরিয়ন]] |২০১ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ফোবে|সৌরজগৎ/ফোবে]] |৩৩২ |- |৬ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ক্যারন|সৌরজগৎ/ক্যারন]] |২২৩ |- |৭ |[[আল-ফিকহুল মুয়াসসার]]* |১৫৮ |Aishik Rehman |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''১,৫৯৪''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''১৫.৯৪''' |} == Nakul Chandra Barman == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Nakul Chandra Barman |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:প্রাণিজগৎ/সরীসৃপ|প্রাণিজগৎ/সরীসৃপ]] |১৩৩ | rowspan="6" |নতুন | rowspan="6" |গৃহীত |Yahya |- |২ |[[উইকিশৈশব:প্রাণিজগৎ/উভচর|প্রাণিজগৎ/উভচর]] |২২৯ |Aishik Rehman |- |৩ |[[উইকিশৈশব:ছোট্ট মালি/মরিচ|ছোট্ট মালি/মরিচ]] |৫৭৪ | rowspan="3" |MdsShakil |- |৪ |[[উইকিশৈশব:ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/মহাকাশ প্রতিযোগিতা|ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/মহাকাশ প্রতিযোগিতা]] |২২৪ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/প্রাচীন মিশরীয়|ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/প্রাচীন মিশরীয়]] |২৪৫ |- |৬ |[[উইকিশৈশব:ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/প্রাচীন চীন|ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/প্রাচীন চীন]] |১৬ |Aishik Rehman |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''১,৪২১''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''১৪.২১''' |} == রামিশা তাবাস্সুম == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |রামিশা তাবাস্সুম |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/হৃৎপিণ্ড|মানবদেহ/হৃৎপিণ্ড]] |৫১৫ | rowspan="5" |নতুন | rowspan="5" |গৃহীত | rowspan="4" |RiazACU |- |২ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/হাত|মানবদেহ/হাত]] |৭২ |- |৩ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/কঙ্কালতন্ত্র|জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/কঙ্কালতন্ত্র]] |৯৯ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/আচ্ছাদন তন্ত্র|জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/আচ্ছাদন তন্ত্র]] |৬২ |- |৫ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/রেচনতন্ত্র|জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/রেচনতন্ত্র]] |৬৪ |MdsShakil |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৮১২''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৮.১২''' |} == Mohaguru == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Mohaguru |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:মানবদেহ/মেরূদণ্ড|মানবদেহ/মেরূদণ্ড]] |৩৭৬ | rowspan="4" |নতুন | rowspan="4" |গৃহীত | rowspan="4" |MdsShakil |- |২ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/যাচাই|সৌরজগৎ/যাচাই]] |৫৯২ |- |৩ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/মিরান্ডা|সৌরজগৎ/মিরান্ডা]] |৪৪৬ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/মিমাস|সৌরজগৎ/মিমাস]] |২৬৪ |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''১,৬৭৮''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''১৬.৭৮''' |} == Syfur007 == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Syfur007 |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/প্রজনন তন্ত্র|জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/প্রজনন তন্ত্র]]* |৭০ |সম্প্রসারণ | rowspan="4" |গৃহীত | rowspan="3" |MdsShakil |- |২ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ইউরোপা|সৌরজগৎ/ইউরোপা]] |৭৪৭ | rowspan="3" |নতুন |- |৩ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/অ্যামালথিয়া|সৌরজগৎ/অ্যামালথিয়া]] |৪১৫ |- |৪ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/চাঁদ|সৌরজগৎ/চাঁদ]] |৭৬৫ |Aishik Rehman |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''১,৯৯৭''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''১৯.৯৭''' |} == MS Sakib == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |MS Sakib |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/মঙ্গল|সৌরজগৎ/মঙ্গল]] |১২৬৮ | rowspan="3" |নতুন | rowspan="3" |গৃহীত |MdsShakil |- |২ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/শুক্র|সৌরজগৎ/শুক্র]] |১১৭০ |RiazACU |- |৩ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/অর্ট ক্লাউড|সৌরজগৎ/অর্ট ক্লাউড]] |৫০২ |MdsShakil |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''২,৯৪০''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''২৯.৪''' |} == MdsShakil == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |MdsShakil |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:বিচিত্র ধর্মমত|বিচিত্র ধর্মমত]] |৪৭ | rowspan="2" |নতুন | rowspan="2" |গৃহীত | rowspan="2" |RiazACU |- |২ |[[উইকিশৈশব:বিলুপ্ত পাখি|বিলুপ্ত পাখি]] |৭১ |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''১১৮''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''১.১৮''' |} == Rubel33 == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Rubel33 |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/প্রাচীন রোম|ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/প্রাচীন রোম]] |৮১ | rowspan="2" |নতুন | rowspan="2" |গৃহীত |Aishik Rehman |- |২ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/অ্যারিয়েল|সৌরজগৎ/অ্যারিয়েল]] |৩৮৯ |RiazACU |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৪৭০''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৪.৭''' |} == মোহাম্মদ হাসানুর রশিদ == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |মোহাম্মদ হাসানুর রশিদ |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/পেশীতন্ত্র|জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/পেশীতন্ত্র]] |৩৭ | rowspan="2" |নতুন | rowspan="2" |গৃহীত |RiazACU |- |২ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/প্রতিরক্ষাতন্ত্র|জীববিজ্ঞান/তন্ত্র/প্রতিরক্ষাতন্ত্র]] |৮৬ |MdsShakil |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''১২৩''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''১.২৩''' |} == Arian Writing == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Arian Writing |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/মহাকাশ বিশ্লেষণ|সৌরজগৎ/মহাকাশ বিশ্লেষণ]] |৮৭৭ | rowspan="2" |নতুন | rowspan="2" |গৃহীত |RiazACU |- |২ |[[উইকিশৈশব:জীববিজ্ঞান/রাজ্য/প্রোটিস্ট|জীববিজ্ঞান/রাজ্য/প্রোটিস্ট]] |৬৪ |MdsShakil |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৯৪১''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৯.৪১''' |} == হাম্মাদ == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |হাম্মাদ |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/আমাদের সৌরজগৎ|সৌরজগৎ/আমাদের সৌরজগৎ]] |৪৭৬ |নতুন |গৃহীত |Aishik Rehman |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৪৭৬''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৪.৭৬''' |} == Md. Golam Mukit Khan == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Md. Golam Mukit Khan |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/প্লুটো|সৌরজগৎ/প্লুটো]] |৭০৫ |নতুন |গৃহীত |MdsShakil |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৭০৫''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৭.০৫''' |} == কামাল আহমেদ পাশা == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |কামাল আহমেদ পাশা |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/ডিজিটাল বিপ্লব|ছবিতে বিশ্বের ইতিহাস/ডিজিটাল বিপ্লব]] |১২১ |নতুন |গৃহীত |Aishik Rehman |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''১২১''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''১.২১''' |} == Muntakimtonmoy == {| class="wikitable" style="width:100%" ! colspan="6" |Muntakimtonmoy |- !ক্র. !বাংলা নিবন্ধ !শব্দসংখ্যা !ধরন !অবস্থা !পর্যালোচক |- |১ |[[উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/ডিমোস|সৌরজগৎ/ডিমোস]] |৭২২ |নতুন |গৃহীত |MdsShakil |- | colspan="2" |'''মোট শব্দসংখ্যা''' | colspan="4" |'''৭২২''' |- | colspan="2" |'''মোট স্কোর''' | colspan="4" |'''৭.২২''' |} [[বিষয়শ্রেণী:উইকি শিশুদের ভালোবাসে ২০২১]] pm2cgj26z10yl6fd1bm7574kkm5siv9 ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS 3 16324 84836 84661 2025-06-18T13:57:46Z NusJaS 8394 /* জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/সংঘর্ষকালীন রাজ্য যুগ */ উত্তর 84836 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == প্রিয় NusJaS, উইকিবইয়ে স্বাগত! [[চিত্র:Smiley oui.gif|30px|link=]] </br> এই প্রকল্পে আপনার আগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ; আশা করছি এ পরিবেশটি আপনার ভাল লাগবে এবং উইকিবইকে সমৃদ্ধ করার কাজে আপনি সহায়তা করবেন।। আপনার যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে এগুলি দেখুন: * [[চিত্র:Animated tools.gif|20px|link=]] [[উইকিবই:সহায়িকা|সহায়িকা পাতা]] * [[চিত্র:Article icon cropped.svg|20px|link=]] [[সাহায্য:কিভাবে একটি নতুন উইকিবই শুরু করবেন|নতুন লেখা শুরু কিভাবে করবেন]] * [[চিত্র:Notepad icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:রচনাশৈলী নির্দেশিকা|উইকিবইয়ের রচনাশৈলী]] * [[চিত্র:Books-aj.svg_aj_ashton_01.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:উইকিবই কী?|উইকিবই কী]] * [[চিত্র:Control copyright icon.svg|20px|link=]] [[উইকিবই:কপিরাইট|কপিরাইট]] আপনি সম্প্রদায়কে কোন সার্বজনীন প্রশ্ন করতে বা আলোচনা করতে [[উইকিবই:প্রশাসকদের আলোচনাসভা|আলোচনাসভা]] ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার]] আপনাকে কাজের একটি তালিকা দিবে যা দিয়ে আপনি এখানে সাহায্য করতে পারেন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে বিনা দ্বিধায় [[ব্যবহারকারী আলাপ:MdaNoman|আমার আলাপের পাতায়]] তা করতে পারেন। অনুগ্রহপূর্বক আলাপের পাতায় বার্তা রাখার পর সম্পাদনা সরঞ্জামদণ্ডের [[চিত্র:OOjs UI icon signature-ltr.svg|22px|link=|alt=স্বাক্ষর আইকন]] চিহ্নে ক্লিক করার মাধ্যমে অথবা চারটি টিল্ডা (<code><nowiki>~~~~</nowiki></code>) চিহ্ন দিয়ে নাম স্বাক্ষর করুন। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার নাম এবং তারিখ যোগ করবে। যদি আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|অভ্যর্থনা কমিটির]] যে-কোনো সদস্যকে প্রশ্ন করুন, বা আপনার আলাপের পাতায় '''<nowiki>{{সাহায্য করুন}}</nowiki>''' লিখুন এবং তার নিচে আপনার প্রশ্নটি লিখুন। একজন সাহায্যকারী কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন।<br /> আশা করি আপনি [[উইকিবই:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার|বাংলা উইকিবই সম্প্রদায়ের]] একজন হয়ে সম্পাদনা করে আনন্দ পাবেন! আবারও স্বাগত এবং শুভেচ্ছা!<br> &mdash; [[উইকিবই:অভ্যর্থনা কমিটি|উইকিবই অভ্যর্থনা কমিটি]]— [[ব্যবহারকারী:MdaNoman|নোমান]] <span>[[User talk:MdaNoman |(আলাপ)]]</span> ১৪:৪৭, ১ অক্টোবর ২০২২ (ইউটিসি) == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২ পদক == {| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;" |rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest barnstar.svg|100px]] |style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা পদক''' |- |style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | সুপ্রিয় NusJaS, বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]]''' শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন‌। <br />শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:MdsShakil|শাকিল হোসেন]]''' <br />সমন্বয়ক, উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২ <br />১৩:৫৯, ২০ নভেম্বর ২০২২ (ইউটিসি) |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=52050-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা: তথ্য প্রদানের অনুরোধ == {| style="margin: 1em 4em;" |- valign="top" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]] | <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;"> সুপ্রিয় NusJaS,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২২]]-এ অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার জমা দেয়া এক বা একাধিক পাতা প্রতিযোগিতায় গৃহীত হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন! আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLScOFXrwWd6r8bBuutYxDP2CLQaKUQXFpQD4jpwQwmYjIR4f6A/viewform?usp=send_form এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:৩২, ২০ নভেম্বর ২০২২ (ইউটিসি) </div> |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=52070-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> :আপনি এখনও ফর্মটি পূরণ করেননি। অনুগ্রহ করে আগামী '''দুই দিনের''' মাঝে ফর্মটি পূরণ করুন, এরমাঝে পূরণ না করলে আপনি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত নাও হতে পারেন। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৫:৫৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] করেছি। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ২০:৪৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ (ইউটিসি) == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪: তথ্য প্রদানের অনুরোধ == {| style="margin: 1em 4em;" |- valign="top" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest.svg|146px|link=উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]] | <div style="background-color:#f4f3f0; color: #393D38; padding: 0.4em 1em;border-radius:10px;"> সুপ্রিয় NusJaS,<br>[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]-এ অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার জমা দেয়া এক বা একাধিক পাতা প্রতিযোগিতায় গৃহীত হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন! আয়োজক দল পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই আমরা আপনাকে '''[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSfbU0XnUtQltWCaC59XqYCfjFicHrveyMOi_wW_g-I4FRnJMA/viewform?usp=sf_link এই ফর্মটি পূরণ করতে] অনুরোধ করছি'''। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ফর্মটি পূরণ করে থাকেন, তাহলে দয়া করে দ্বিতীয়বার পূরণ করবেন না। আপনার সম্পাদনা-যাত্রা শুভ হোক। প্রতিযোগিতার আয়োজক দলের পক্ষে —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১০:২১, ২৯ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি) </div> |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69589-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক == {| style="background-color: #fdffe7; border: 1px solid #fceb92;" |rowspan="2" style="vertical-align: middle; padding: 5px;" | [[চিত্র:Wikibooks Writing Contest barnstar.svg|100px]] |style="font-size: x-large; padding: 3px 3px 0 3px; height: 1.5em;" | '''উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ পদক''' |- |style="vertical-align: middle; padding: 3px;" | সুপ্রিয় NusJaS,<br />বাংলা উইকিবইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত, '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪]]''' শীর্ষক গ্রন্থলিখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত গ্রন্থ/গ্রন্থপৃষ্ঠা তৈরির মাধ্যমে বাংলা উইকিবইয়ের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখায়, শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে আপনাকে এই উইকিপদকটি প্রদান করা হলো। আশা করি বাংলা উইকিবইয়ের পথচলায় আপনার সরব ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে থাকুন‌। <br />শুভেচ্ছান্তে, <br />'''[[User:MdsShakil|শাকিল হোসেন]]''' <br />সমন্বয়ক, উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৪ <br />১০:৩৩, ২৪ আগস্ট ২০২৪ (ইউটিসি) |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%98%E0%A6%B0&oldid=69912-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == পুনঃপর্যালোচনা == আপনার বার্তা মতো ভুল অনুবাদ সংশোধন ও পরিমার্জিত বাংলায় [[লুইস ক্যারল/থ্রু দ্য লুকিং-গ্লাস]] পাতাটিকে গৃহীত করার মতো পর্যায়ে এনেছি। আশা করি সময় পেলে আমার বার্তাটি ও পাতাটি পুনরায় পর্যালোচনা করবেন। {{Thank you}} -- [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৪:৩৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ! [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১২:১৬, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] [[রন্ধনপ্রণালী:চাট]] পাতাটিকেও পুনরায় পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:১৯, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] নির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি। [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] দেখুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৬:২৫, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::মনে হয় সংক্ষিপ্ত করতে বলছেন? [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩৬, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] উক্ত পাতায় যেরকম ফরম্যাটে আছে, সেভাবেই লিখুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৬:৩৯, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] দয়া করে [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/অবিচ্ছিন্ন সীমা]] পাতাটি দেখুন! সব ঠিক করেছি। শুরু থেকে শেষ। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১১:০৫, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/শিক্ষা]] == এটা ঠিক করেছি। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ১২:১০, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] গ্রহণ {{করা হয়েছে}}। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৭:৪১, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == লুইস ক্যারল/মিস্টার ডজসন ও মিস্টার ক্যারল == পাতাটি সম্পূর্ন অনুবাদ ও ঠিক করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.Asaduzzaman sahed|আলাপ]]) ১৩:২৭, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] এখনও ইংরেজি লেখা আছে। Minos, Niemand সহ আরও আছে। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৭:৪২, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/গোষ্ঠী == পাতার ফরম্যাটিং ঠিক করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.Asaduzzaman sahed|আলাপ]]) ১৫:২২, ২২ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] গ্রহণ {{করা হয়েছে}}। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৭:৪৫, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/রেটিনাল ইমপ্লান্ট]] == এটা ঠিক করেছি। [[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:SMontaha32|আলাপ]]) ১০:৫৪, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] গ্রহণ করেছি। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১১:০৮, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্নায়ুসংবেদী ইমপ্লান্ট/ভেস্টিবুলার ইমপ্লান্ট]] == সংশোধন করেছি। [[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:SMontaha32|আলাপ]]) ১০:৫৫, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:SMontaha32|SMontaha32]] গ্রহণ করেছি। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১১:০৭, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/মানব বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ == মহোদয় এই পাতাতে কি যান্ত্রিকতা আছে একটু নির্দিষ্ট করে বলুন [[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.Asaduzzaman sahed|আলাপ]]) ০৯:০৫, ২৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:M.Asaduzzaman sahed|M.Asaduzzaman sahed]] কোনো ট্রান্সলেটর টুল বা এআই-এর মাধ্যমে অপরিশোধিত অনুবাদ। complex and compound sentences কে simple করা যান্ত্রিকতা দূর করার একটা সহজ উপায়। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১৫:৫৩, ২৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == সংশোধন == [[প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/পৌষ্টিকনালী ও পরিপাক/নিজের জ্ঞান যাচাইয়ের উত্তরমালা]] এবং [[তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণ/দৃশ্যমান আলো]] অনুবাদ সংশোধন করা হয়েছে। [[ব্যবহারকারী:যুবায়ের হোসাইন কায়েফ|যুবায়ের হোসাইন কায়েফ]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:যুবায়ের হোসাইন কায়েফ|আলাপ]]) ২০:০০, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:যুবায়ের হোসাইন কায়েফ|যুবায়ের হোসাইন কায়েফ]] গৃহীত হয়েছে। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৫:৪৪, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == মানব শারীরতত্ত্ব/সংবহন তন্ত্র == ইংরেজি শব্দগুলোর বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও পাতার ফরমেট ঠিক করা হয়েছে। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ০৯:০৬, ১২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] না, এখনও সব বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করা বাকি। পাঠ্যবইয়ে সেমিলুনার কপাটিকা>অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা, কার্ডিয়াক মাসল>হৃদপেশি, অ্যাওর্টা>মহাধমনী ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। পাতাটিতে এমন আরও ইংরেজি আছে। তাছাড়া অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডকে হৃদয় লেখা হয়না। :আপনি মাধ্যমিকের জীববিজ্ঞান বই ডাউনলোড করে সেখানে দেখে পরিভাষাগুলো ব্যবহার করুন। তবে যেগুলোর কোনও বাংলা পরিভাষা ব্যবহৃত হয় না, সেগুলো ইংরেজিতে রাখতে পারেন। আপনি পাঠকের সুবিধার্থে "মহাধমনী বা অ্যাওর্টা"/"মহাধমনী (অ্যাওর্টা)" যেকোনো একভাবে লেখতে পারেন। :এছাড়াও লেখায় সামান্য যান্ত্রিকতা আছে। Complex and Compound Sentences কে Simple আকারে লিখুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১০:২৭, ১৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/সংঘর্ষকালীন রাজ্য যুগ == ঠিক করা হয়েছে। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ১৮:৪৯, ১৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] গ্রহণ করেছি। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ১৩:৫৭, ১৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) joayyn9dnoqlabiox6rja4a4fptvia9 ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T 3 18208 84895 84354 2025-06-19T06:26:53Z Asikur.rahman25 11164 /* প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/জৈবচিকিৎসীয় আলট্রাসাউন্ড */ নতুন অনুচ্ছেদ 84895 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৮:৪০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (ইউটিসি) == সম্পাদনা দ্বন্দ্ব == প্রিয় R1F4T, বই সম্পাদনা কালে আমি আপনার সম্পাদনা করতে চাওয়া ([[:en:Famous Theorems of Mathematics/Pythagorean trigonometric identity|Famous Theorems of Mathematics/Pythagorean trigonometric identity]]) পাতাটি বইয়ের ভিতরে গিয়ে তৈরি না অবস্থায় পাওয়ার পর [[গণিতের বিখ্যাত উপপাদ্য/পিথাগোরাসের ত্রিকোণোমিতির অভেদক|তৈরি করে ফেলেছি]]। কিন্তু আপনি সম্পাদান করতে চেয়েছেন এটা আগে খেয়াল করতে পারিনি। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। [[ব্যবহারকারী:Ashiqur Rahman|Ashiqur Rahman]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ashiqur Rahman|আলাপ]]) ১৪:১৯, ৪ জুন ২০২৪ (ইউটিসি) :সমস্যা নেই। আপনি করুন অনুবাদ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৪:২৯, ৪ জুন ২০২৪ (ইউটিসি) == [[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫: অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ]] == {| style="background-color: #f8f9fa; border: 1px solid #ced4da; padding:10px; color: #212529;" |- |[[File:Bangla Wikibooks Writing contest 2025 Banner (2).png|frameless|center|300px|link=[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫]]]]<br/> সুপ্রিয় R1F4T, আশা করি এই গ্রীষ্মের এই রৌদ্রোজ্জ্বল তপ্ত আবহাওয়াতেও ভালো আছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, গত ৭ মে থেকে বাংলা উইকিবইয়ে '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫]]''' শীর্ষক একটি বই লিখন ও অনুবাদ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ‌আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতাটি অভিজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও নতুন ব্যবহারকারী সকলের জন্যই মুক্ত।  অন্যান্য ভাষার উইকিবইয়ের চাইতে বাংলা উইকিবইয়ে অবদানকারীর সংখ্যা নিতান্তই কম, এমনকি সংখ্যাটি বাংলা উইকিপিডিয়ার তুলনায়ও নগণ্য। অথচ ডিজিটাল বইয়ের এই যুগে বাংলা উইকিবই যথেষ্ট গুরত্বের দাবি রাখে। এজন্য আমাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। আশা করি আপনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন ও উইকিবইকে সমৃদ্ধ করবেন। বিস্তারিত [[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|প্রকল্প পাতায়]] দেখুন। '''শীর্ষ অবদানকারীদের জন্য পুরষ্কার''' * ১ম স্থান অধিকারকারী ― ৬০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র * ২য় স্থান অধিকারকারী ― ৪০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র * ৩য় স্থান অধিকারকারী ― ৩০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র * ৪র্থ স্থান অধিকারকারী ― ২৫০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র * ৫ম স্থান অধিকারকারী ― ২০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র * ৬ষ্ঠ থেকে ১০তম স্থান অধিকারকারী (৫ জন) ― ৫০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র * কমপক্ষে একটি পাতা গৃহীত হলে ― ডিজিটাল সনদপত্র প্রতিযোগিতায় আপনাকে স্বাগত।<br /> শুভেচ্ছান্তে, <br /> —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৬:৪৪, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) |} <!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=74028-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন --> == পুনঃপর্যালোচনার আবেদন == আসসালামুয়ালাইকুম রিফাত ভাই, [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্বাদতন্ত্র]] পাতাটি পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য বিনীতভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৫:৩১, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :রিফাত ভাই, আপনার বক্তব্য অনুযায়ী [[রন্ধনপ্রণালী:বিফ ভুনা]] ঠিক করেছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৫:৪৩, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্বাদতন্ত্র]] নিবন্ধটি গৃহীত হয়নি। :কারণ: অসম্পূর্ণ অনুবাদ :এবং পর্যালোচনার নীতিমালা অনুসারে সংশোধনের আর সুযোগ দেয়া হবে না। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০২, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] {{আপনাকে ধন্যবাদ}} [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৭:০৩, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] :::এছাড়াও আপনাকে নিবন্ধটি ai দিয়ে অনুবাদ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী না করায় সতর্ক করা হলো। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:২১, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] [[অতীন্দ্রিয়বাদ/প্রার্থনা]] পাতাটি পুনরায় দেখুন! [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১০:৫৯, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :সুপ্রিয় উইকিমিডিয়ান, আপনাকে ঈদ মোবারক! দয়া করে এই পাতাটি পুনরায় দেখুন - [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/বিদ্যুৎ]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:২৭, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শক্তি]] দেখুন [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:২৯, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == মার্ক যোগ হচ্ছে না কেন? == ২ টি আর্টিকেল লেখা হয়েছে কিন্তু এখনো কোনো মার্কস যোগ হয়নি [[ব্যবহারকারী:Azizul Islam Abir|Azizul Islam Abir]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Azizul Islam Abir|আলাপ]]) ১৩:৪৪, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Azizul Islam Abir|Azizul Islam Abir]] যেহুতু পর্যালোচকগণ স্বেচ্ছাসেবক তাই তারা তাদের ফাঁকা সময় পর্যালোচনা করেন তাই একটু দেরি হতে পারে তবে ফল প্রকাশের পূর্বেই সব নিবন্ধ পর্যালোচনা করা হবে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:৪৭, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[রন্ধনপ্রণালী:চালতার টক]] == পরামর্শ অংশটি সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে। পুনরায় যাচাই করুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৫:২০, ৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/নাথিং ডেটা টাইপ]] == সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, পুনরায় দেখুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৫:২৬, ৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[রন্ধনপ্রণালী:নুনগড়া পিঠা]] == পুনরায় দেখুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১১:১৯, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[রন্ধনপ্রণালী:চুষি পিঠা]] == পুনরায় দেখবেন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১১:২২, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == পুনরায় যাচাই করবেন == উক্ত নিবন্ধ গুলোর স্বাস্থ্য বিষয়ক অংশ, যান্ত্রিকতা দূর করে প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করা হয়েছে। পুনরায় যাচাই করবেন — # [[রন্ধনপ্রণালী:ফিস পাকোড়া]] # [[রন্ধনপ্রণালী:বোরহানি]] # [[রন্ধনপ্রণালী:সাম্বর]] # [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন হারিয়ালি কাবাব]] # [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন রেশমি কাবাব]] # [[রন্ধনপ্রণালী:বাঁশকোরার ভর্তা]] [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৩:১৫, ১৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/জৈবচিকিৎসীয় আলট্রাসাউন্ড]] == বাংলা পরিভাষা যোগ করা হয়েছে। পুনরায় পর্যালোচনার জন্য অনুরোধ করছি। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ০৬:২৬, ১৯ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) m52zyde931oockl09eazm357qlmdrmn ব্যবহারকারী:R1F4T/খেলাঘর 2 18619 84849 84801 2025-06-18T16:29:02Z R1F4T 9121 84849 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৪৯ |- | ২ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৩ || Tahmid || ১৪০ |- | ৪ || Yahya || ১৩৫ |- | ৫ || NusJaS || ১৩৩ |- | ৬ || R1F4T || ১১০ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১০৪ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১১৩৩টি |} 92zcrjudpl0ugynceqwoxbf73ncgfcc 84853 84849 2025-06-18T18:22:39Z R1F4T 9121 84853 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৪৯ |- | ২ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৩ || Tahmid || ১৪০ |- | ৪ || Yahya || ১৩৫ |- | ৫ || NusJaS || ১৩৩ |- | ৬ || R1F4T || ১৩১ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১০৪ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১১৫৪টি |} 1s6gik4bogaahajj1zn38b6yqb8qcgz উইকিবই আলোচনা:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫ 5 22675 84839 84419 2025-06-18T14:26:25Z RDasgupta2020 8748 /* নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ */ 84839 wikitext text/x-wiki {{উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|সক্রিয়=6}} == মাত্র দুুইটা ধরে রাখা যাবে? == @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাই, দয়া করে এই ব্যাপারটি লক্ষ করুন। সাধারণত উইকিপিডিয়ার মতো উইকিও আপনাকে প্রতিযোগিতায় ৩টি নিবন্ধ একসাথে ধরে রাখার সুযোগ দেয়। তাই অনুরোধ করবো সংখ্যাটা বাড়াতে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি একসাথে দুইয়ের অধিক পাতা ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:৫২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ২টি পাতা নাকি ২টি বই। তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবো। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৩, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::আপনি কোনটা মনে করেন? —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৫:০৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ঐখানে লেখা আছে '''পাতা''' তাই সেটাই মনে করি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:৫৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::তাহলে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করছেন কোন কারণে! —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] এটা উইকিবই, এখানে বই থাকে নিবন্ধ নয়। উইকিপিডিয়ায় লেখা থাকে পাতা মানে নিবন্ধ, উক্তিতে পাতা মানে ভুক্তি, উইকিসংবাদে পাতা মানে প্রতিবেদন, উইকিভ্রমণে পাতা মানে ভ্রমণ নির্দেশিকা কিন্তু এখানে পাতা আর বই ভিন্ন ব্যাপার। তাই এই প্রশ্ন করা। এটা অপ্রয়োজনীয় হলে করতাম না কারণ আমিও এখন উক্তি প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] উইকিবইয়ের পাতা মানে বইয়ের পাতা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৮:৩৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::ভাই আমি একটা পাতা অনুবাদ করে "প্রকাশ করুন" এ টিপ দিয়েছি।এরপর আর কিছু করা লাগবে? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:০২, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] পাতা জমা দিতে হবে তো [https://fountain.toolforge.org/editathons/wrcbn2025 এখানে] [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:১৩, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::sir ,"articles topic" e ki likhbo? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:২৫, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == Hello,I like vir. I joint you. Please answer my question. https://en.m.wikibooks.org/wiki/Cognitive_Psychology_and_Cognitive_Neuroscience/Cognitive_Psychology_and_the_Brain [[ব্যবহারকারী:Ishrat Jahan Tahmid|Ishrat Jahan Tahmid]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ishrat Jahan Tahmid|আলাপ]]) ২৩:৩৮, ৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :amio onubad korte chai [[ব্যবহারকারী:Khalid S Noor|Khalid S Noor]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Khalid S Noor|আলাপ]]) ২৩:০৪, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী তালিকায় যুক্ত করুন == [[রন্ধনপ্রণালী:গ্রিলিং]] । মূল সমন্বয়ক @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] কে ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৩:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বিদেশি খাবার সম্পর্কে == বিদেশি (যেমন: ইউরোপীয়, জাপানিজ ইত্যাদি) খাবার সম্পর্কিত রন্ধনপ্রণালী প্রতিযোগিতায় গৃহীত হবে কি? বর্তমানে অনেক বিদেশী খাবার বাংলাদেশ, ভারতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে । [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১২:৪৭, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ভাই, সব খাবার গণহারে দেওয়া হবে না (আমি যদ্দুর জানি)। আপনাকে নির্ধারিত তালিকা দিতে হবে যা আয়োজকদল গ্রহণ করবে অথবা নাও করতে পারে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:১০, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == উক্ত কাজটি কিভাবে সম্পন্ন করবো? আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন। == আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন।দয়া করে জানাবেন [[ব্যবহারকারী:M.A. Fahad|M.A. Fahad]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.A. Fahad|আলাপ]]) ১৮:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == একটির বেশি বই [[বিশেষ:অবদান/118.179.176.189|118.179.176.189]] ২১:১১, ৮ মে ২০২৫ == তালিকাতে নেই == [[:en:Electromagnetic_radiation|Electromagnetic radiation]], [[:en:Engineering_Acoustics|Engineering Acoustics]] - বই দুটো পুরো অনুবাদ করতে চাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Somajyoti|আলাপ]]) ২০:৫০, ৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) BTS ARMY :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somjyoti]] [[:en:Electromagnetic radiation|Electromagnetic radiation]] {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৬:০৫, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] Engineering Acoustics {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৫:২৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতা সমূহ == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতায় আরও দেখুন থাকবে না, কিছু ক্ষেত্রে বহিঃসংযোগ থাকতে পারে তবে না থাকাটাই ভালো। রন্ধনপ্রণালী নিয়ে লিখতে চাইলে ফরম্যাট ও কীভাবে লিখতে হবে জানতে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] পাতাটি দেখুন ও এটাই অনুসরণ করুন। আয়োজক দলের পক্ষে, —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:০০, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মুদ্রণযোগ্য সংস্করণ সম্বন্ধে == '''আয়োজক(দের/এর) প্রতি:''' আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মুদ্রণযোগ্য সংস্করণগুলো প্রতিযোগিতায় গ্রহণযোগ্য নয়; যেহেতু এখানে টেমপ্লেটের মাধ্যমে অন্য পাতাগুলো দেখানো হয় মাত্র। যদিও বেশি সময় লাগে না, তারপরেও, প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে কেউ তৈরি করার পর গৃহীত না হলে খামোখা হতাশ হবেন। এই বিষয়টা প্রতিযোগীদের মধ্যে খোলসা করে দেওয়া উচিত। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ১৩:৩২, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাইকে মেনশন করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৪:০৮, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::ওইরকম পাতা গৃহীত হবে না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৫:১১, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::সেক্ষেত্রে তালিকা থেকে ওই পাতাগুলো সরানো বা প্রতিযোগিতা পাতায় বিষয়টি উল্লেখ করলে ভালো হয় [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৭:৪২, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মাসালা র কিতাব == যেকোনো মাস আলা জানার জন্য [[বিশেষ:অবদান/103.204.209.73|103.204.209.73]] ১৫:১৮, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় বই যোগ == দয়া করে বইয়ের তালিকায় [[Rhetoric and Writing in the Public Sphere: An Introduction]] ইংরেজি বইটা যোগ করে দেন। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ২০:১৬, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} অসম্পূর্ণ বই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যুক্তকরণ প্রসঙ্গে == [[en:C# Programming]] বইটি তালিকায় যুক্ত করলে ভালো হতো, বইটি অতীব জরুরী। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫২, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :আর এই বইটাকেও যুক্তকরণ করা যেতে পারে। [[en:OpenSSH]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৪, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাইকে এই দিকে সক্রিয় দেখছি তাই ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৮:৫২, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত পাতা যোগ করা হবে না আর [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:৪৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::কেন তা কি জানতে পারি? @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাই। একটি বই থাকার কারণে? [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১২:১১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] না। বিভিন্ন কারণে প্রথমত কোড যাচাই করণ আমি যতদূর দেখেছি কোড কম্পাইল হয়না ইংরেজি সংস্করণেরটাই এছাড়াও বেশ কিছু সমস্যা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৩, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == একটা বিষয় জানার ছিলো == আচ্ছা আমাদের যে সমস্ত পৃষ্ঠা গ্রহণ যোগ্য তার জন্য কি আমরা নম্বর পাবো না? এখনো আমাদের কোন নাম্বার যোগ হচ্ছে না কেন? বিশেষ করে আমার। আর গ্রহণযোগ্য না হলেও তো সেটও তো জানাবেন। [[ব্যবহারকারী:Editobd|Editobd]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Editobd|আলাপ]]) ০৮:০৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বইয়ের প্রস্তাব == '''১. [https://en.wikibooks.org/wiki/High_school_physics High School Physics]''' এই বইটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক একটি সহজবোধ্য পাঠ্যবই। এতে নিউটনের সূত্র, বল, গতি, শক্তি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি নিজে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, তাই এই বইটি অনুবাদ করা আমার পক্ষে সহজ ও উপযুক্ত হবে। '''২. [https://en.m.wikibooks.org/wiki/Study_Skills/Managing_Your_Time Study Skills: Managing Your Time]''' এই বইটি ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল শেখায়, যা এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি মনে করি এটি অনুবাদ করলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। বইটি ছোট এবং সহজ, তাই কার্যকরভাবে অনুবাদ করা সম্ভব। --[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Torikul Islam Tarek|আলাপ]]) ১৬:১৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২২, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মোঃ জাফর == ১২২৩৫৫৫৬৬ [[বিশেষ:অবদান/36.50.116.26|36.50.116.26]] ১৮:০১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == সংশোধিত পাতা পুনরায় চেক == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]]S আমার রন্ধনপ্রণালীর গৃহীত না হওয়া পাতাগুলো সংশোধন করা হয়েছে, আবার চেক করার অনুরোধ করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১২:২২, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ==রন্ধনপ্রনালী সম্পর্কিত== আচ্ছা রন্ধনপ্রনালীর পৃষ্ঠাতে কি তথ্যসূত্র দেওয়ার প্রয়োজন আছে? কারন নমুনা হিসাবে যে পাতাটি দেওয়া হয়েছে তাতে তথ্যসূত্র সংযোজিত নেই। [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:২৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :নমুনা পাতার চেয়ে কম সুসংগঠিত হলে তা সংশোধন করতে হবে। কিন্তু তথ্যসূত্র, অন্যান্য বিষয় যোগ করে উন্নত করতে পারলে তা অবশ্যই ভালো।@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১০:০১, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual|চলচ্চিত্র নির্মাণ নির্দেশিকা}} (সম্পূর্ণ বই) # {{eb|Visual Arts Of The Indian Subcontinent|ভারতীয় উপমহাদেশের দৃশ্যকলা}} # {{eb|Chromolithography|ক্রোমোলিথোগ্রাফি}} # {{eb|Chromolithography/Estimating, Assessing and Producing|ক্রোমোলিথোগ্রাফি/অনুমান, মূল্যায়ন এবং উৎপাদন}} তালিকায় যোগ করার আবেদন রইল। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ০৭:০৯, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকার বাইরে একটি পাতা অনুবাদ করতে চাই == History of the Nawabs of Bengal/List of Conflicts এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৪, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} একেবারে অসম্পূর্ণ বই। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২৩, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যুক্তের আবেদন == US History বইটি যুক্ত করার আবেদন করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] বইটি যোগ করা হবে। তার আগে আপনি [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস]] নামে পাতাটির অনুবাদ শেষ করুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৫:২৬, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::অনুবাদ করেছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:৪০, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] তালিকাভুক্তির জন্য গ্রহণযোগ্য। আপনিই তালিকায় যুক্ত করতে পারেন অথবা এখান ্থেকেই অনুবাদ করতে থাকুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:৫৯, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::প্রস্তাব পাতা থেকেই অনুবাদ শুরু করে দিলে, অন্য প্রতিযোগীরা কীভাবে সেই বই নিয়ে কাজ করবে? নতুন অবদানকারীরা হয়তো এই প্রস্তাব পাতায় আসবেও না। ::::আমার মতো অনেকে হয়তো, অবদান রাখার জন্য তালিকায় নতুন বই যুক্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সেই ফাঁকে কেবল প্রস্তাবনা দিয়েই যদি কেউ সেই বই নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়, তাহলে সেটা কি আদৌ ন্যায্য হলো? [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৮:৪৪, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Taysirul Islam Shuvo|Taysirul Islam Shuvo]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Taysirul Islam Shuvo|আলাপ]]) ১৩:৩৮, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == ভুলক্রমে তালিকায় না থাকা বই যোগের অনুরোধ== নিম্নের সূচিপত্র বিশিষ্ট বইটি আমি অনুবাদ করেছি। "শুধুমাত্র আয়োজকরা প্রতিযোগিতার জন্য বই যোগ করতে পারবে" —এটা প্রকল্প পাতা থেকে স্পষ্ট না হতে পেরে তালিকায় তোলা হয়নি। তবে আমি ধ্বংসাত্মক কিছু না করায় তালিকায় যোগ করার অনুরোধ করছি। আর প্রকল্প পাতায় নিয়মটি স্পষ্ট করার অনুরোধ করছি। === [[সম্পর্ক]] === # {{eb|Relationships|সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/The Evolution of the Human Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#The_Triune_Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/ত্রয়ী মস্তিষ্ক}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Natural vs. Sexual Selection|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/প্রাকৃতিক বনাম যৌন নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Did cerebral Cortex evolve by sexual selection?|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/সেরিব্রাল কর্টেক্স কি যৌন নির্বাচনে বিকশিত?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Do Men and Women Have Different Sex Drives?|সম্পর্ক/হরমোন/পুরুষ এবং মহিলাদের ভিন্ন যৌনতা?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Pheromones|সম্পর্ক/হরমোন/ফেরোমন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Oxytocin|সম্পর্ক/হরমোন/অক্সিটোসিন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Testosterone|সম্পর্ক/হরমোন/টেস্টোস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Estrogen and Progesterone|সম্পর্ক/হরমোন/ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones|সম্পর্ক/হরমোন}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Industrial-Information Society|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/শিল্প-তথ্য সমিতি}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Idyllic Lifestyle|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/মনোরম জীবনধারা}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Egalitarian Groups|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সমতাবাদী গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Limited Polygyny|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সীমিত বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Were Our Ancestors Monogamous or Polygamous?|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/আমাদের পূর্বপুরুষরা কি একগামী ছিলেন নাকি বহুগামী ছিলেন?}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Agricultural Societies|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/কৃষি সমিতি}} # {{eb|Relationships/Communication Styles|সম্পর্ক/যোগাযোগ}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#The Great Male Hierarchy|সম্পর্ক/যোগাযোগ/মহান পুরুষ শ্রেণিবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women’s Support Circles|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর সহযোগী চক্র}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women's Culture, Men's Culture|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর রীতি, পুরুষের রীতি}} # {{eb|Relationships/How Men Select Women|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন}} # {{eb|How Men Select Women#Youth|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/যৌবন}} # {{eb|How Men Select Women#Beauty|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/সৌন্দর্য}} # {{eb|How Men Select Women#Education and Employment|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/শিক্ষা ও কর্মজীবন}} # {{eb|How Men Select Women#Emotional Connection|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Trait preferences|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/পছন্দের বৈশিষ্ট্য}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Relationship Skills|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/সম্পর্কের দক্ষতা}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Emotional Connection|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women-Egalitarian Sisterhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মহিলা-সমকালীন বোনতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women's Power|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/নারীর ক্ষমতায়ন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Increasing Status via Hypergamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/হাইপারগ্যামির মাধ্যমে স্ট্যাটাস বৃদ্ধি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Careers vs. Motherhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ক্যারিয়ার বনাম মাতৃত্ব}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men-Masters, Slaves, and Welfare Cheats|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ-দক্ষ , দাস, এবং কল্যাণ প্রতারণা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Class Stratification|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/শ্রেণী স্তরবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Incest, Child Abuse, and Wife Battering|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/অজাচার, শিশু নির্যাতন, এবং স্ত্রী নির্যাতন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Welfare Fraud |সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/কল্যাণ জালিয়াতি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Violence in Polygynous Societies|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/বহুগামী সমাজে সহিংসতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Judaism, Christianity, Islam, and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ইহুদি, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Contemporary Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/সমসাময়িক একবিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men's and Women's Desired Number of Partners|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ এবং মহিলাদের কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীর সংখ্যা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#When Masculine Sexuality Is Acceptable|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/যখন পুরুষতান্ত্রিক যৌনতা গ্রহণযোগ্য}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Stress and Promiscuity|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মানসিক চাপ এবং অশ্লীলতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Sexual Satisfaction in Monogamous Relationships|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/একগামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌন তৃপ্তি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Is There a "Marriage Crisis"?|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/"বিবাহ সংকট" কি আছে?}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Serial Monogamy Tends Toward Polyandry|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ধারাবাহিক একবিবাহ বহুপতিত্বের দিকে ঝোঁক দেয়}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#African-American Marriage and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/আফ্রিকান-আমেরিকান বিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Childhood|সম্পর্ক/শৈশব}} # {{eb|Relationships/Adolescence|সম্পর্ক/কৈশোর}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Anima and Animus|সম্পর্ক/কৈশোর/পুরুষের মাতৃত্ববোধ ও কুসংস্কার}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Projection|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রদর্শন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Becoming Your Object of Desire|সম্পর্ক/কৈশোর/আকাঙ্ক্ষার বস্তু হয়ে উঠুন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Developing an Adult Identity|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রাপ্তবয়স্কদের পরিচয় গড়ে তোলা}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Adolescent Friendship|সম্পর্ক/কৈশোর/কিশোর বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#30s: Stuck Between Adolescence and Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/৩০ এর দশক: কৈশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কতার মধ্যে আটকে থাকা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Adult Friendship|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Companionate Marriages|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/জীবনসঙ্গী}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Your Village of Relationships|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/সম্পর্কের স্থল}} # {{eb|Relationships/Agape|সম্পর্ক/অ্যাগাপে}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Who Introduced Couples|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পরিচয় করায় কে?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Similarity and Dissimilarity|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/সাদৃশ্য এবং বৈষম্য}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Where to Meet Single Men and Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/বসবেন কোথায়?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Two Contradictory Rules for Attracting Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/নারীদের আকৃষ্ট করার দুটি অদ্ভুত নিয়ম}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Woman Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি নারীর অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Commitment Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি প্রতিশ্রুতির অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Create Your Own Man- or Woman-Advantage|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/আপনার নিজের পুরুষ- অথবা নারী-সুবিধা তৈরি করুন}} # {{eb|Relationships/Flirting|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য}} # {{eb|Relationships/Flirting#Babysitting Lessons|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/বেবিসিটিং পাঠ}} # {{eb|Relationships/Flirting#Flirt with Everyone|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/সবার সাথে প্রেমের ভান}} # {{eb|Relationships/Flirting#Peek-a-Boo|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/উঁকি দিয়ে দেখুন}} # {{eb|Relationships/Flirting#"Speed Dating"|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/"স্পিড ডেটিং"}} # {{eb|Relationships/Flirting#Compliments|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/প্রশংসা}} # {{eb|Relationships/Flirting#Transition Points|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/মোর নিন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Making a Date|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্পষ্ট হোন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dress for Sex|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/পোশাক}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dream Houses, Dream Relationships|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্বপ্নের ঘর, স্বপ্নের সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Examples|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/উদাহরণ}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Making Personal Ads Work|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন কার্যকর করা}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Responding to Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের প্রতিক্রিয়া জানানো}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#The Future of Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের ভবিষ্যৎ}} # {{eb|Relationships/Dating|সম্পর্ক/ডেটিং}} # {{eb|Relationships/Dating#Emotional Range|সম্পর্ক/ডেটিং/আবেগের পরিসর}} # {{eb|Relationships/Dating#What to Do on a Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটে কী করবেন?}} # {{eb|Relationships/Dating#Group Dates|সম্পর্ক/ডেটিং/গ্রুপ ডেট}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Man Can Take a Woman On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন পুরুষ কোন নারীকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Woman Can Take a Man On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন নারী কোন পুরুষকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#Ending the Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটের শেষটা}} # {{eb|Relationships/Dating#Alcohol and Sexual Intimacy|সম্পর্ক/ডেটিং/অ্যালকোহল এবং যৌন ঘনিষ্ঠতা}} # {{eb|Relationships/Dating#11 Dating Mistakes Men Make|সম্পর্ক/ডেটিং/পুরুষদের ডেটিংয়ে করা ১১টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Dating#3 Dating Mistakes Women Make|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটিংয়ে নারীদের করা ৩টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Sex|সম্পর্ক/যৌনতা}} # {{eb|Relationships/Sex#Physiological aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/শারীরবৃত্তীয় দিক}} # {{eb|Relationships/Sex#Social and cultural aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক}} # {{eb|Relationships/Couples|সম্পর্ক/দম্পতি}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanently Passive Women|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় নারী}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanent Pursuers|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ী অনুসরণকারীরা}} # {{eb|Relationships/Couples#Switch Genders Roles for Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির জন্য ভূমিকা বদলান}} # {{eb|Relationships/Couples#"Our Relationship" Talks|সম্পর্ক/দম্পতি/"আমাদের সম্পর্ক" নিয়ে আলোচনা}} # {{eb|Relationships/Couples#Resistance to Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির বাধা}} # {{eb|Relationships/Couples#Life Stages Conflict|সম্পর্ক/দম্পতি/জীবনের নানা দ্বন্দ্ব}} # {{eb|Relationships/Couples#Deciding Whom to Marry vs. Deciding When to Marry|সম্পর্ক/দম্পতি/কাকে বিয়ে, কখন বিয়ে?}} # {{eb|Relationships/Conflict|সম্পর্ক/সংঘাত}} # {{eb|Relationships/Conflict#Conjunct Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সংযুক্ত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Opposite Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/বিপরীত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Triangular Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/ত্রিভুজাকার সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Square Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/চতুর্ভুজ রিলেশনশিপস}} # {{eb|Relationships/Conflict#Larger Groups|সম্পর্ক/সংঘাত/বৃহত্তর গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/Conflict#Dyad Trouble|সম্পর্ক/সংঘাত/দুজনের সমস্যা}} # {{eb|Relationships/Conflict#Staying in Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Archetypes|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/আর্ক-টাইপ}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Opposites Attract|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/বিপরীতমুখী আকর্ষণ}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus-Hera Marriage|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস-হেরার বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/এথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Apollo-Artemis Marriage|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/অ্যাপোলো-আর্টেমিসের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes-Hestia Marriage|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস-হেস্টিয়া বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Hephaestus|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/হেফেস্টাস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares-Hephaestus-Aphrodite Marriage|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইটের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Relationships/Dionysus-Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus-Demeter Marriage|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস-ডিমিটারের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/পার্সেফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades-Persephone Marriage|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#The Hades-Persephone Relationship|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের সম্পর্ক}} {{ping|Md Rashidul Hasan Biplob}} আপনি নতুন ব্যবহারকারী হওয়ায় Benefit of doubt দিয়ে তালিকাটি '''গ্রহণ করা হলো'''। এরপর থেকে প্রতিযোগিতার নিয়মকানুন ভালো করে দেখে কাজ করবেন। এরকম সুযোগ দ্বিতীয়বার দেওয়া হবে না। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০৬:৪৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :জি আমি অবশ্যই সতর্ক থাকব। নিয়মের বিরুদ্ধে আমি নিজেও যেতে আগ্রহী নই। আয়োজক দলকে অনেক ধন্যবাদ। [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ০৬:৫২, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় নেই এমন একটি বই অনুবাদ করতে চাই == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Climatology এই বইটি অনুবাদ করতে চাচ্ছি, অনুগ্রহ করে বই টি তালিকায় যুক্ত করবেন। [[ব্যবহারকারী:Dark1618|Dark1618]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Dark1618|আলাপ]]) ০৯:০৮, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == Seeing What Others Don’t == বইটির সম্পর্কে বিস্তারিত: লেখক: Gary Klein প্রকাশকাল: ২০১৩ বিষয়বস্তু: কগনিটিভ সাইকোলজি, ডিসিশন মেকিং, ইনসাইট ডেভেলপমেন্ট বইটির মূল থিম: গ্যারি ক্লেইন তার গবেষণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ কীভাবে হঠাৎ করে কোনো সমস্যা বা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উপলব্ধি বা insight লাভ করে — যা সাধারণ চিন্তাধারার বাইরে। তিনি ১২০টিরও বেশি কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে: অনেক সময় তথ্য থাকার পরেও মানুষ বুঝতে পারে না আসল বিষয়টি কী, আবার অনেক সময় সাধারণ মানুষও অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি পেতে পারে। তিনি তিনটি প্রধান পন্থা দেখিয়েছেন, যেভাবে ইনসাইট জন্ম নেয়: Contradiction – যখন বাস্তবতা আমাদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করে Connection – দুটি অসংযুক্ত ধারণাকে যুক্ত করা হয় Creative Desperation – যখন অন্য সব বিকল্প ব্যর্থ হলে হঠাৎ এক নতুন সমাধান মাথায় আসে আপনি অনুবাদ করতে চাইলে কীভাবে এগোবেন? ১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন: আপনি কি ব্যক্তিগত পাঠের জন্য অনুবাদ করবেন, নাকি প্রকাশনার উদ্দেশ্যে? প্রকাশনার জন্য হলে কপিরাইট অনুমতি লাগবে। ২. অনুবাদের ধরন ঠিক করুন: কি আপনি শব্দ-বাক্য ভিত্তিক সঠিক অনুবাদ চান? না কি ভাবানুবাদ— অর্থ বজায় রেখে সহজ বাংলায় প্রকাশ করবেন? ৩. অধ্যায়ভিত্তিক কাজ করলে ভালো হয়: আমি চাইলে আপনাকে প্রতি অধ্যায়ের সারাংশ বা পূর্ণ অনুবাদ দিতে পারি — যেমন: অধ্যায় ১: "Insight as a Flash" (বাংলা অনুবাদে: হঠাৎ প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি) অধ্যায় ২: "The Curious Nature of Insight" ... ৪. লেখার ধরন বজায় রাখা: Gary Klein-এর লেখায় অনেক বাস্তব কেস স্টাডি ও সংলাপ থাকে, অনুবাদে সেগুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা জরুরি। [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৩৬, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :সেগুলোকে বিস্তারিত আলোচনা করে তুলে ধরা হবে [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৪৪, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual}} # {{eb|3D Printing}} [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৫:২৩, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] প্রথম বইটি সম্পূর্ণ নয় দ্বিতীয় বইটি যাচাই করে যুক্ত করা হবে। যুক্ত করা হলে এখানে জানিয়ে দিব। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ২য় বইটি যোগ করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১২:০৯, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন পাতা অনুবাদ == Applications of ICT in Libraries এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই, পাতাটি তালিকায় যুক্ত করার অনুরোধ করছি, পাতাটির লিংক: [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:২৯, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :1111 [[বিশেষ:অবদান/37.111.239.140|37.111.239.140]] ১২:৩৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::01714638936 ::MD suman sadar [[বিশেষ:অবদান/37.111.242.105|37.111.242.105]] ১৩:২১, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্ত করার অনুরোধ == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি।'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ২২:৪২, ২৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == কুইজ টেমপ্লেটটি কাজ করছেনা == বাংলা উইকিবইয়ের পাতাতে কুইজ টেমপ্লেট যোগ করতে চাইলে সেটি ঠিকমতো কাজ করছেনা। প্রশ্ন এবং উত্তর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। খালি '''টেমপ্লেট:কুইজ''' -এরকম দেখাচ্ছে। কেউ কি বলতে পারেন যে কুইজ টেমপ্লেট কিভাবে ব্যবহার করা যাবে, অথবা এর বিকল্প কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:৫১, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] বাংলা উইকিবইয়ে এক্সটেনশনটি আপাতত নেই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৪, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::তাহলে কি কুইজের প্রশ্ন উত্তর গুলো আলাধাভাবে প্যারার আকারে লিখে দেব না কি যেমন আছে সেরকম রেখে দেব? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:১৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] যেমন আছে সেরকমই আপাতত রেখে দিন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == দুই পাতার এক শিরোনাম == সুধী বিচারকগন, একটি ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, নিম্নের এই দুটি উইকিবই... # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations (Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} - [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১১:১৪, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations(Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} এই দুটি ইংরেজি উইকিবইয়ের শিরোনাম এক থাকলেও তাদের বিষয়বস্তু ভিন্ন। আমি প্রথম বইটির বাংলা তর্জ‌মা করেছিলাম, কিন্তু দুটি বইয়ের শিরোনাম এক থাকার দরুন আমি যখন প্রথম বইটির লাল লিংক -এ ক্লিক করে অনুবাদ প্রকাশ করি, তখন সাথে সাথে দ্বিতীয় বইটিরও বাংলা অনুবাদে একই বিষয়বস্তু যুক্ত হয়ে গেছে। দুটি পাতার এক শিরোনাম থাকার কারনে হয়তো এটা হয়েছে কিন্তু দুটি বইয়ের বিষয়বস্তু আলাদা করা দরকার। এই বিষয়ে কেউ কি সাহায্য করতে পারবেন? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৪:২১, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] দুটি পাতার বিষয়বস্তু একত্রীকরণ করে ফেলুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::একত্রীকরণ করব কি ভাবে ঠিক বুঝলামনা। দুটো পাতারই বিষয়বস্তু একসাথে অনুবাদ করে একটা পাতায় লিখব কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:২০, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] সামঞ্জস্য করে দুই পাতার বিষয়বস্তু একসাথে লিখুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৫, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Communication_Theory Communication Theory বইটি অনুবাদ করতে চাই। [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৮:১৮, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] বইটি ইতোমধ্যে বিদ্যমান [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৯:৩০, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing Professional and Technical Writing বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৯:৪৫, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Introduction_to_Philosophy Introduction to Philosophy বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ১০:০৪, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] যোগ করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:২৪, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] দয়া করে <S>[[en:History of Islam]]</s> [[en:United Nations History]] বইটি যুক্ত করুন। আর এমনিতেই বইয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩০, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) #[[en:History of the National Hockey League]] এবং [[en:History of Florida]] কেও যুক্ত করতে পারেন [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩৫, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৭:২১, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == Recheck ejected pages == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] i have corrected two pages you rejected # [[রন্ধনপ্রণালী:আমের চাটনি|আমের চাটনি - উইকিবই]] # [[রন্ধনপ্রণালী:টমেটো চাটনি|টমেটো চাটনি - উইকিবই]] requesting to recheck them again [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৯:২২, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] দুঃখিত, ভাষাটা বুঝতে পারিনি। বাংলায় বলুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৫:৪২, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] পুনঃ পর্যালোচনা করতে বলেছে :/ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == bokthiar == আমার সাইডে আমি ঢুকতে পারতেছি না কেন কারণ কি [[বিশেষ:অবদান/2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1|2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1]] ০০:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == article topic finding problem == আমি "Article Topic" এ যেয়ে কিভাবে সাবমিট করব? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১৫:৫৬, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ == সুধী বিচারকগন, আমার [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নামক নিবন্ধটি প্রোগ্রামিং -এর কোডে ভুল থাকার কারনে অগৃহীত হয়েছে। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি। আমার বিনীত অনুরোধ, নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা হোক।[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৮:১০, ১০ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :[[ব্যবহারকারী:Tahmid|Tahmid]] প্লীজ একটু দেখুন যদি [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা যায়। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি। [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৫:৩১, ১৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) l7b53mabl58o37r04yt9ur2xjuirl4d 84843 84839 2025-06-18T14:38:54Z RDasgupta2020 8748 /* নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ */ 84843 wikitext text/x-wiki {{উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|সক্রিয়=6}} == মাত্র দুুইটা ধরে রাখা যাবে? == @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাই, দয়া করে এই ব্যাপারটি লক্ষ করুন। সাধারণত উইকিপিডিয়ার মতো উইকিও আপনাকে প্রতিযোগিতায় ৩টি নিবন্ধ একসাথে ধরে রাখার সুযোগ দেয়। তাই অনুরোধ করবো সংখ্যাটা বাড়াতে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি একসাথে দুইয়ের অধিক পাতা ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:৫২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ২টি পাতা নাকি ২টি বই। তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবো। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৩, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::আপনি কোনটা মনে করেন? —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৫:০৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ঐখানে লেখা আছে '''পাতা''' তাই সেটাই মনে করি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:৫৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::তাহলে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করছেন কোন কারণে! —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] এটা উইকিবই, এখানে বই থাকে নিবন্ধ নয়। উইকিপিডিয়ায় লেখা থাকে পাতা মানে নিবন্ধ, উক্তিতে পাতা মানে ভুক্তি, উইকিসংবাদে পাতা মানে প্রতিবেদন, উইকিভ্রমণে পাতা মানে ভ্রমণ নির্দেশিকা কিন্তু এখানে পাতা আর বই ভিন্ন ব্যাপার। তাই এই প্রশ্ন করা। এটা অপ্রয়োজনীয় হলে করতাম না কারণ আমিও এখন উক্তি প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] উইকিবইয়ের পাতা মানে বইয়ের পাতা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৮:৩৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::ভাই আমি একটা পাতা অনুবাদ করে "প্রকাশ করুন" এ টিপ দিয়েছি।এরপর আর কিছু করা লাগবে? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:০২, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] পাতা জমা দিতে হবে তো [https://fountain.toolforge.org/editathons/wrcbn2025 এখানে] [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:১৩, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::sir ,"articles topic" e ki likhbo? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:২৫, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == Hello,I like vir. I joint you. Please answer my question. https://en.m.wikibooks.org/wiki/Cognitive_Psychology_and_Cognitive_Neuroscience/Cognitive_Psychology_and_the_Brain [[ব্যবহারকারী:Ishrat Jahan Tahmid|Ishrat Jahan Tahmid]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ishrat Jahan Tahmid|আলাপ]]) ২৩:৩৮, ৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :amio onubad korte chai [[ব্যবহারকারী:Khalid S Noor|Khalid S Noor]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Khalid S Noor|আলাপ]]) ২৩:০৪, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী তালিকায় যুক্ত করুন == [[রন্ধনপ্রণালী:গ্রিলিং]] । মূল সমন্বয়ক @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] কে ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৩:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বিদেশি খাবার সম্পর্কে == বিদেশি (যেমন: ইউরোপীয়, জাপানিজ ইত্যাদি) খাবার সম্পর্কিত রন্ধনপ্রণালী প্রতিযোগিতায় গৃহীত হবে কি? বর্তমানে অনেক বিদেশী খাবার বাংলাদেশ, ভারতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে । [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১২:৪৭, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ভাই, সব খাবার গণহারে দেওয়া হবে না (আমি যদ্দুর জানি)। আপনাকে নির্ধারিত তালিকা দিতে হবে যা আয়োজকদল গ্রহণ করবে অথবা নাও করতে পারে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:১০, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == উক্ত কাজটি কিভাবে সম্পন্ন করবো? আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন। == আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন।দয়া করে জানাবেন [[ব্যবহারকারী:M.A. Fahad|M.A. Fahad]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.A. Fahad|আলাপ]]) ১৮:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == একটির বেশি বই [[বিশেষ:অবদান/118.179.176.189|118.179.176.189]] ২১:১১, ৮ মে ২০২৫ == তালিকাতে নেই == [[:en:Electromagnetic_radiation|Electromagnetic radiation]], [[:en:Engineering_Acoustics|Engineering Acoustics]] - বই দুটো পুরো অনুবাদ করতে চাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Somajyoti|আলাপ]]) ২০:৫০, ৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) BTS ARMY :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somjyoti]] [[:en:Electromagnetic radiation|Electromagnetic radiation]] {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৬:০৫, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] Engineering Acoustics {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৫:২৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতা সমূহ == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতায় আরও দেখুন থাকবে না, কিছু ক্ষেত্রে বহিঃসংযোগ থাকতে পারে তবে না থাকাটাই ভালো। রন্ধনপ্রণালী নিয়ে লিখতে চাইলে ফরম্যাট ও কীভাবে লিখতে হবে জানতে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] পাতাটি দেখুন ও এটাই অনুসরণ করুন। আয়োজক দলের পক্ষে, —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:০০, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মুদ্রণযোগ্য সংস্করণ সম্বন্ধে == '''আয়োজক(দের/এর) প্রতি:''' আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মুদ্রণযোগ্য সংস্করণগুলো প্রতিযোগিতায় গ্রহণযোগ্য নয়; যেহেতু এখানে টেমপ্লেটের মাধ্যমে অন্য পাতাগুলো দেখানো হয় মাত্র। যদিও বেশি সময় লাগে না, তারপরেও, প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে কেউ তৈরি করার পর গৃহীত না হলে খামোখা হতাশ হবেন। এই বিষয়টা প্রতিযোগীদের মধ্যে খোলসা করে দেওয়া উচিত। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ১৩:৩২, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাইকে মেনশন করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৪:০৮, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::ওইরকম পাতা গৃহীত হবে না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৫:১১, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::সেক্ষেত্রে তালিকা থেকে ওই পাতাগুলো সরানো বা প্রতিযোগিতা পাতায় বিষয়টি উল্লেখ করলে ভালো হয় [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৭:৪২, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মাসালা র কিতাব == যেকোনো মাস আলা জানার জন্য [[বিশেষ:অবদান/103.204.209.73|103.204.209.73]] ১৫:১৮, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় বই যোগ == দয়া করে বইয়ের তালিকায় [[Rhetoric and Writing in the Public Sphere: An Introduction]] ইংরেজি বইটা যোগ করে দেন। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ২০:১৬, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} অসম্পূর্ণ বই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যুক্তকরণ প্রসঙ্গে == [[en:C# Programming]] বইটি তালিকায় যুক্ত করলে ভালো হতো, বইটি অতীব জরুরী। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫২, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :আর এই বইটাকেও যুক্তকরণ করা যেতে পারে। [[en:OpenSSH]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৪, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাইকে এই দিকে সক্রিয় দেখছি তাই ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৮:৫২, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত পাতা যোগ করা হবে না আর [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:৪৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::কেন তা কি জানতে পারি? @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাই। একটি বই থাকার কারণে? [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১২:১১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] না। বিভিন্ন কারণে প্রথমত কোড যাচাই করণ আমি যতদূর দেখেছি কোড কম্পাইল হয়না ইংরেজি সংস্করণেরটাই এছাড়াও বেশ কিছু সমস্যা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৩, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == একটা বিষয় জানার ছিলো == আচ্ছা আমাদের যে সমস্ত পৃষ্ঠা গ্রহণ যোগ্য তার জন্য কি আমরা নম্বর পাবো না? এখনো আমাদের কোন নাম্বার যোগ হচ্ছে না কেন? বিশেষ করে আমার। আর গ্রহণযোগ্য না হলেও তো সেটও তো জানাবেন। [[ব্যবহারকারী:Editobd|Editobd]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Editobd|আলাপ]]) ০৮:০৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বইয়ের প্রস্তাব == '''১. [https://en.wikibooks.org/wiki/High_school_physics High School Physics]''' এই বইটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক একটি সহজবোধ্য পাঠ্যবই। এতে নিউটনের সূত্র, বল, গতি, শক্তি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি নিজে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, তাই এই বইটি অনুবাদ করা আমার পক্ষে সহজ ও উপযুক্ত হবে। '''২. [https://en.m.wikibooks.org/wiki/Study_Skills/Managing_Your_Time Study Skills: Managing Your Time]''' এই বইটি ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল শেখায়, যা এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি মনে করি এটি অনুবাদ করলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। বইটি ছোট এবং সহজ, তাই কার্যকরভাবে অনুবাদ করা সম্ভব। --[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Torikul Islam Tarek|আলাপ]]) ১৬:১৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২২, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মোঃ জাফর == ১২২৩৫৫৫৬৬ [[বিশেষ:অবদান/36.50.116.26|36.50.116.26]] ১৮:০১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == সংশোধিত পাতা পুনরায় চেক == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]]S আমার রন্ধনপ্রণালীর গৃহীত না হওয়া পাতাগুলো সংশোধন করা হয়েছে, আবার চেক করার অনুরোধ করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১২:২২, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ==রন্ধনপ্রনালী সম্পর্কিত== আচ্ছা রন্ধনপ্রনালীর পৃষ্ঠাতে কি তথ্যসূত্র দেওয়ার প্রয়োজন আছে? কারন নমুনা হিসাবে যে পাতাটি দেওয়া হয়েছে তাতে তথ্যসূত্র সংযোজিত নেই। [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:২৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :নমুনা পাতার চেয়ে কম সুসংগঠিত হলে তা সংশোধন করতে হবে। কিন্তু তথ্যসূত্র, অন্যান্য বিষয় যোগ করে উন্নত করতে পারলে তা অবশ্যই ভালো।@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১০:০১, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual|চলচ্চিত্র নির্মাণ নির্দেশিকা}} (সম্পূর্ণ বই) # {{eb|Visual Arts Of The Indian Subcontinent|ভারতীয় উপমহাদেশের দৃশ্যকলা}} # {{eb|Chromolithography|ক্রোমোলিথোগ্রাফি}} # {{eb|Chromolithography/Estimating, Assessing and Producing|ক্রোমোলিথোগ্রাফি/অনুমান, মূল্যায়ন এবং উৎপাদন}} তালিকায় যোগ করার আবেদন রইল। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ০৭:০৯, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকার বাইরে একটি পাতা অনুবাদ করতে চাই == History of the Nawabs of Bengal/List of Conflicts এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৪, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} একেবারে অসম্পূর্ণ বই। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২৩, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যুক্তের আবেদন == US History বইটি যুক্ত করার আবেদন করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] বইটি যোগ করা হবে। তার আগে আপনি [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস]] নামে পাতাটির অনুবাদ শেষ করুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৫:২৬, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::অনুবাদ করেছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:৪০, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] তালিকাভুক্তির জন্য গ্রহণযোগ্য। আপনিই তালিকায় যুক্ত করতে পারেন অথবা এখান ্থেকেই অনুবাদ করতে থাকুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:৫৯, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::প্রস্তাব পাতা থেকেই অনুবাদ শুরু করে দিলে, অন্য প্রতিযোগীরা কীভাবে সেই বই নিয়ে কাজ করবে? নতুন অবদানকারীরা হয়তো এই প্রস্তাব পাতায় আসবেও না। ::::আমার মতো অনেকে হয়তো, অবদান রাখার জন্য তালিকায় নতুন বই যুক্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সেই ফাঁকে কেবল প্রস্তাবনা দিয়েই যদি কেউ সেই বই নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়, তাহলে সেটা কি আদৌ ন্যায্য হলো? [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৮:৪৪, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Taysirul Islam Shuvo|Taysirul Islam Shuvo]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Taysirul Islam Shuvo|আলাপ]]) ১৩:৩৮, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == ভুলক্রমে তালিকায় না থাকা বই যোগের অনুরোধ== নিম্নের সূচিপত্র বিশিষ্ট বইটি আমি অনুবাদ করেছি। "শুধুমাত্র আয়োজকরা প্রতিযোগিতার জন্য বই যোগ করতে পারবে" —এটা প্রকল্প পাতা থেকে স্পষ্ট না হতে পেরে তালিকায় তোলা হয়নি। তবে আমি ধ্বংসাত্মক কিছু না করায় তালিকায় যোগ করার অনুরোধ করছি। আর প্রকল্প পাতায় নিয়মটি স্পষ্ট করার অনুরোধ করছি। === [[সম্পর্ক]] === # {{eb|Relationships|সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/The Evolution of the Human Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#The_Triune_Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/ত্রয়ী মস্তিষ্ক}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Natural vs. Sexual Selection|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/প্রাকৃতিক বনাম যৌন নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Did cerebral Cortex evolve by sexual selection?|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/সেরিব্রাল কর্টেক্স কি যৌন নির্বাচনে বিকশিত?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Do Men and Women Have Different Sex Drives?|সম্পর্ক/হরমোন/পুরুষ এবং মহিলাদের ভিন্ন যৌনতা?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Pheromones|সম্পর্ক/হরমোন/ফেরোমন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Oxytocin|সম্পর্ক/হরমোন/অক্সিটোসিন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Testosterone|সম্পর্ক/হরমোন/টেস্টোস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Estrogen and Progesterone|সম্পর্ক/হরমোন/ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones|সম্পর্ক/হরমোন}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Industrial-Information Society|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/শিল্প-তথ্য সমিতি}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Idyllic Lifestyle|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/মনোরম জীবনধারা}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Egalitarian Groups|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সমতাবাদী গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Limited Polygyny|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সীমিত বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Were Our Ancestors Monogamous or Polygamous?|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/আমাদের পূর্বপুরুষরা কি একগামী ছিলেন নাকি বহুগামী ছিলেন?}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Agricultural Societies|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/কৃষি সমিতি}} # {{eb|Relationships/Communication Styles|সম্পর্ক/যোগাযোগ}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#The Great Male Hierarchy|সম্পর্ক/যোগাযোগ/মহান পুরুষ শ্রেণিবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women’s Support Circles|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর সহযোগী চক্র}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women's Culture, Men's Culture|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর রীতি, পুরুষের রীতি}} # {{eb|Relationships/How Men Select Women|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন}} # {{eb|How Men Select Women#Youth|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/যৌবন}} # {{eb|How Men Select Women#Beauty|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/সৌন্দর্য}} # {{eb|How Men Select Women#Education and Employment|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/শিক্ষা ও কর্মজীবন}} # {{eb|How Men Select Women#Emotional Connection|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Trait preferences|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/পছন্দের বৈশিষ্ট্য}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Relationship Skills|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/সম্পর্কের দক্ষতা}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Emotional Connection|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women-Egalitarian Sisterhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মহিলা-সমকালীন বোনতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women's Power|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/নারীর ক্ষমতায়ন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Increasing Status via Hypergamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/হাইপারগ্যামির মাধ্যমে স্ট্যাটাস বৃদ্ধি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Careers vs. Motherhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ক্যারিয়ার বনাম মাতৃত্ব}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men-Masters, Slaves, and Welfare Cheats|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ-দক্ষ , দাস, এবং কল্যাণ প্রতারণা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Class Stratification|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/শ্রেণী স্তরবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Incest, Child Abuse, and Wife Battering|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/অজাচার, শিশু নির্যাতন, এবং স্ত্রী নির্যাতন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Welfare Fraud |সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/কল্যাণ জালিয়াতি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Violence in Polygynous Societies|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/বহুগামী সমাজে সহিংসতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Judaism, Christianity, Islam, and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ইহুদি, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Contemporary Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/সমসাময়িক একবিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men's and Women's Desired Number of Partners|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ এবং মহিলাদের কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীর সংখ্যা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#When Masculine Sexuality Is Acceptable|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/যখন পুরুষতান্ত্রিক যৌনতা গ্রহণযোগ্য}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Stress and Promiscuity|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মানসিক চাপ এবং অশ্লীলতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Sexual Satisfaction in Monogamous Relationships|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/একগামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌন তৃপ্তি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Is There a "Marriage Crisis"?|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/"বিবাহ সংকট" কি আছে?}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Serial Monogamy Tends Toward Polyandry|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ধারাবাহিক একবিবাহ বহুপতিত্বের দিকে ঝোঁক দেয়}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#African-American Marriage and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/আফ্রিকান-আমেরিকান বিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Childhood|সম্পর্ক/শৈশব}} # {{eb|Relationships/Adolescence|সম্পর্ক/কৈশোর}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Anima and Animus|সম্পর্ক/কৈশোর/পুরুষের মাতৃত্ববোধ ও কুসংস্কার}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Projection|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রদর্শন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Becoming Your Object of Desire|সম্পর্ক/কৈশোর/আকাঙ্ক্ষার বস্তু হয়ে উঠুন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Developing an Adult Identity|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রাপ্তবয়স্কদের পরিচয় গড়ে তোলা}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Adolescent Friendship|সম্পর্ক/কৈশোর/কিশোর বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#30s: Stuck Between Adolescence and Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/৩০ এর দশক: কৈশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কতার মধ্যে আটকে থাকা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Adult Friendship|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Companionate Marriages|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/জীবনসঙ্গী}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Your Village of Relationships|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/সম্পর্কের স্থল}} # {{eb|Relationships/Agape|সম্পর্ক/অ্যাগাপে}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Who Introduced Couples|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পরিচয় করায় কে?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Similarity and Dissimilarity|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/সাদৃশ্য এবং বৈষম্য}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Where to Meet Single Men and Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/বসবেন কোথায়?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Two Contradictory Rules for Attracting Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/নারীদের আকৃষ্ট করার দুটি অদ্ভুত নিয়ম}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Woman Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি নারীর অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Commitment Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি প্রতিশ্রুতির অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Create Your Own Man- or Woman-Advantage|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/আপনার নিজের পুরুষ- অথবা নারী-সুবিধা তৈরি করুন}} # {{eb|Relationships/Flirting|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য}} # {{eb|Relationships/Flirting#Babysitting Lessons|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/বেবিসিটিং পাঠ}} # {{eb|Relationships/Flirting#Flirt with Everyone|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/সবার সাথে প্রেমের ভান}} # {{eb|Relationships/Flirting#Peek-a-Boo|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/উঁকি দিয়ে দেখুন}} # {{eb|Relationships/Flirting#"Speed Dating"|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/"স্পিড ডেটিং"}} # {{eb|Relationships/Flirting#Compliments|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/প্রশংসা}} # {{eb|Relationships/Flirting#Transition Points|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/মোর নিন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Making a Date|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্পষ্ট হোন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dress for Sex|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/পোশাক}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dream Houses, Dream Relationships|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্বপ্নের ঘর, স্বপ্নের সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Examples|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/উদাহরণ}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Making Personal Ads Work|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন কার্যকর করা}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Responding to Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের প্রতিক্রিয়া জানানো}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#The Future of Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের ভবিষ্যৎ}} # {{eb|Relationships/Dating|সম্পর্ক/ডেটিং}} # {{eb|Relationships/Dating#Emotional Range|সম্পর্ক/ডেটিং/আবেগের পরিসর}} # {{eb|Relationships/Dating#What to Do on a Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটে কী করবেন?}} # {{eb|Relationships/Dating#Group Dates|সম্পর্ক/ডেটিং/গ্রুপ ডেট}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Man Can Take a Woman On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন পুরুষ কোন নারীকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Woman Can Take a Man On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন নারী কোন পুরুষকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#Ending the Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটের শেষটা}} # {{eb|Relationships/Dating#Alcohol and Sexual Intimacy|সম্পর্ক/ডেটিং/অ্যালকোহল এবং যৌন ঘনিষ্ঠতা}} # {{eb|Relationships/Dating#11 Dating Mistakes Men Make|সম্পর্ক/ডেটিং/পুরুষদের ডেটিংয়ে করা ১১টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Dating#3 Dating Mistakes Women Make|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটিংয়ে নারীদের করা ৩টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Sex|সম্পর্ক/যৌনতা}} # {{eb|Relationships/Sex#Physiological aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/শারীরবৃত্তীয় দিক}} # {{eb|Relationships/Sex#Social and cultural aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক}} # {{eb|Relationships/Couples|সম্পর্ক/দম্পতি}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanently Passive Women|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় নারী}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanent Pursuers|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ী অনুসরণকারীরা}} # {{eb|Relationships/Couples#Switch Genders Roles for Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির জন্য ভূমিকা বদলান}} # {{eb|Relationships/Couples#"Our Relationship" Talks|সম্পর্ক/দম্পতি/"আমাদের সম্পর্ক" নিয়ে আলোচনা}} # {{eb|Relationships/Couples#Resistance to Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির বাধা}} # {{eb|Relationships/Couples#Life Stages Conflict|সম্পর্ক/দম্পতি/জীবনের নানা দ্বন্দ্ব}} # {{eb|Relationships/Couples#Deciding Whom to Marry vs. Deciding When to Marry|সম্পর্ক/দম্পতি/কাকে বিয়ে, কখন বিয়ে?}} # {{eb|Relationships/Conflict|সম্পর্ক/সংঘাত}} # {{eb|Relationships/Conflict#Conjunct Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সংযুক্ত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Opposite Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/বিপরীত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Triangular Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/ত্রিভুজাকার সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Square Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/চতুর্ভুজ রিলেশনশিপস}} # {{eb|Relationships/Conflict#Larger Groups|সম্পর্ক/সংঘাত/বৃহত্তর গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/Conflict#Dyad Trouble|সম্পর্ক/সংঘাত/দুজনের সমস্যা}} # {{eb|Relationships/Conflict#Staying in Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Archetypes|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/আর্ক-টাইপ}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Opposites Attract|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/বিপরীতমুখী আকর্ষণ}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus-Hera Marriage|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস-হেরার বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/এথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Apollo-Artemis Marriage|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/অ্যাপোলো-আর্টেমিসের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes-Hestia Marriage|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস-হেস্টিয়া বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Hephaestus|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/হেফেস্টাস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares-Hephaestus-Aphrodite Marriage|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইটের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Relationships/Dionysus-Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus-Demeter Marriage|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস-ডিমিটারের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/পার্সেফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades-Persephone Marriage|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#The Hades-Persephone Relationship|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের সম্পর্ক}} {{ping|Md Rashidul Hasan Biplob}} আপনি নতুন ব্যবহারকারী হওয়ায় Benefit of doubt দিয়ে তালিকাটি '''গ্রহণ করা হলো'''। এরপর থেকে প্রতিযোগিতার নিয়মকানুন ভালো করে দেখে কাজ করবেন। এরকম সুযোগ দ্বিতীয়বার দেওয়া হবে না। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০৬:৪৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :জি আমি অবশ্যই সতর্ক থাকব। নিয়মের বিরুদ্ধে আমি নিজেও যেতে আগ্রহী নই। আয়োজক দলকে অনেক ধন্যবাদ। [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ০৬:৫২, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় নেই এমন একটি বই অনুবাদ করতে চাই == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Climatology এই বইটি অনুবাদ করতে চাচ্ছি, অনুগ্রহ করে বই টি তালিকায় যুক্ত করবেন। [[ব্যবহারকারী:Dark1618|Dark1618]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Dark1618|আলাপ]]) ০৯:০৮, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == Seeing What Others Don’t == বইটির সম্পর্কে বিস্তারিত: লেখক: Gary Klein প্রকাশকাল: ২০১৩ বিষয়বস্তু: কগনিটিভ সাইকোলজি, ডিসিশন মেকিং, ইনসাইট ডেভেলপমেন্ট বইটির মূল থিম: গ্যারি ক্লেইন তার গবেষণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ কীভাবে হঠাৎ করে কোনো সমস্যা বা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উপলব্ধি বা insight লাভ করে — যা সাধারণ চিন্তাধারার বাইরে। তিনি ১২০টিরও বেশি কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে: অনেক সময় তথ্য থাকার পরেও মানুষ বুঝতে পারে না আসল বিষয়টি কী, আবার অনেক সময় সাধারণ মানুষও অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি পেতে পারে। তিনি তিনটি প্রধান পন্থা দেখিয়েছেন, যেভাবে ইনসাইট জন্ম নেয়: Contradiction – যখন বাস্তবতা আমাদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করে Connection – দুটি অসংযুক্ত ধারণাকে যুক্ত করা হয় Creative Desperation – যখন অন্য সব বিকল্প ব্যর্থ হলে হঠাৎ এক নতুন সমাধান মাথায় আসে আপনি অনুবাদ করতে চাইলে কীভাবে এগোবেন? ১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন: আপনি কি ব্যক্তিগত পাঠের জন্য অনুবাদ করবেন, নাকি প্রকাশনার উদ্দেশ্যে? প্রকাশনার জন্য হলে কপিরাইট অনুমতি লাগবে। ২. অনুবাদের ধরন ঠিক করুন: কি আপনি শব্দ-বাক্য ভিত্তিক সঠিক অনুবাদ চান? না কি ভাবানুবাদ— অর্থ বজায় রেখে সহজ বাংলায় প্রকাশ করবেন? ৩. অধ্যায়ভিত্তিক কাজ করলে ভালো হয়: আমি চাইলে আপনাকে প্রতি অধ্যায়ের সারাংশ বা পূর্ণ অনুবাদ দিতে পারি — যেমন: অধ্যায় ১: "Insight as a Flash" (বাংলা অনুবাদে: হঠাৎ প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি) অধ্যায় ২: "The Curious Nature of Insight" ... ৪. লেখার ধরন বজায় রাখা: Gary Klein-এর লেখায় অনেক বাস্তব কেস স্টাডি ও সংলাপ থাকে, অনুবাদে সেগুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা জরুরি। [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৩৬, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :সেগুলোকে বিস্তারিত আলোচনা করে তুলে ধরা হবে [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৪৪, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual}} # {{eb|3D Printing}} [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৫:২৩, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] প্রথম বইটি সম্পূর্ণ নয় দ্বিতীয় বইটি যাচাই করে যুক্ত করা হবে। যুক্ত করা হলে এখানে জানিয়ে দিব। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ২য় বইটি যোগ করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১২:০৯, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন পাতা অনুবাদ == Applications of ICT in Libraries এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই, পাতাটি তালিকায় যুক্ত করার অনুরোধ করছি, পাতাটির লিংক: [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:২৯, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :1111 [[বিশেষ:অবদান/37.111.239.140|37.111.239.140]] ১২:৩৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::01714638936 ::MD suman sadar [[বিশেষ:অবদান/37.111.242.105|37.111.242.105]] ১৩:২১, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্ত করার অনুরোধ == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি।'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ২২:৪২, ২৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == কুইজ টেমপ্লেটটি কাজ করছেনা == বাংলা উইকিবইয়ের পাতাতে কুইজ টেমপ্লেট যোগ করতে চাইলে সেটি ঠিকমতো কাজ করছেনা। প্রশ্ন এবং উত্তর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। খালি '''টেমপ্লেট:কুইজ''' -এরকম দেখাচ্ছে। কেউ কি বলতে পারেন যে কুইজ টেমপ্লেট কিভাবে ব্যবহার করা যাবে, অথবা এর বিকল্প কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:৫১, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] বাংলা উইকিবইয়ে এক্সটেনশনটি আপাতত নেই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৪, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::তাহলে কি কুইজের প্রশ্ন উত্তর গুলো আলাধাভাবে প্যারার আকারে লিখে দেব না কি যেমন আছে সেরকম রেখে দেব? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:১৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] যেমন আছে সেরকমই আপাতত রেখে দিন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == দুই পাতার এক শিরোনাম == সুধী বিচারকগন, একটি ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, নিম্নের এই দুটি উইকিবই... # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations (Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} - [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১১:১৪, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations(Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} এই দুটি ইংরেজি উইকিবইয়ের শিরোনাম এক থাকলেও তাদের বিষয়বস্তু ভিন্ন। আমি প্রথম বইটির বাংলা তর্জ‌মা করেছিলাম, কিন্তু দুটি বইয়ের শিরোনাম এক থাকার দরুন আমি যখন প্রথম বইটির লাল লিংক -এ ক্লিক করে অনুবাদ প্রকাশ করি, তখন সাথে সাথে দ্বিতীয় বইটিরও বাংলা অনুবাদে একই বিষয়বস্তু যুক্ত হয়ে গেছে। দুটি পাতার এক শিরোনাম থাকার কারনে হয়তো এটা হয়েছে কিন্তু দুটি বইয়ের বিষয়বস্তু আলাদা করা দরকার। এই বিষয়ে কেউ কি সাহায্য করতে পারবেন? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৪:২১, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] দুটি পাতার বিষয়বস্তু একত্রীকরণ করে ফেলুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::একত্রীকরণ করব কি ভাবে ঠিক বুঝলামনা। দুটো পাতারই বিষয়বস্তু একসাথে অনুবাদ করে একটা পাতায় লিখব কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:২০, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] সামঞ্জস্য করে দুই পাতার বিষয়বস্তু একসাথে লিখুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৫, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Communication_Theory Communication Theory বইটি অনুবাদ করতে চাই। [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৮:১৮, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] বইটি ইতোমধ্যে বিদ্যমান [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৯:৩০, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing Professional and Technical Writing বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৯:৪৫, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Introduction_to_Philosophy Introduction to Philosophy বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ১০:০৪, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] যোগ করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:২৪, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] দয়া করে <S>[[en:History of Islam]]</s> [[en:United Nations History]] বইটি যুক্ত করুন। আর এমনিতেই বইয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩০, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) #[[en:History of the National Hockey League]] এবং [[en:History of Florida]] কেও যুক্ত করতে পারেন [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩৫, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৭:২১, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == Recheck ejected pages == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] i have corrected two pages you rejected # [[রন্ধনপ্রণালী:আমের চাটনি|আমের চাটনি - উইকিবই]] # [[রন্ধনপ্রণালী:টমেটো চাটনি|টমেটো চাটনি - উইকিবই]] requesting to recheck them again [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৯:২২, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] দুঃখিত, ভাষাটা বুঝতে পারিনি। বাংলায় বলুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৫:৪২, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] পুনঃ পর্যালোচনা করতে বলেছে :/ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == bokthiar == আমার সাইডে আমি ঢুকতে পারতেছি না কেন কারণ কি [[বিশেষ:অবদান/2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1|2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1]] ০০:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == article topic finding problem == আমি "Article Topic" এ যেয়ে কিভাবে সাবমিট করব? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১৫:৫৬, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ == সুধী বিচারকগন, আমার [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নামক নিবন্ধটি প্রোগ্রামিং -এর কোডে ভুল থাকার কারনে অগৃহীত হয়েছে। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি। আমার বিনীত অনুরোধ, নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা হোক।[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৮:১০, ১০ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Tahmid|Tahmid]] প্লীজ একটু দেখুন যদি [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা যায়। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি। [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৫:৩১, ১৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) 9y338i3m7imei4yjvoee2en7f9vqlt2 84844 84843 2025-06-18T14:40:19Z RDasgupta2020 8748 /* নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ */ 84844 wikitext text/x-wiki {{উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|সক্রিয়=6}} == মাত্র দুুইটা ধরে রাখা যাবে? == @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাই, দয়া করে এই ব্যাপারটি লক্ষ করুন। সাধারণত উইকিপিডিয়ার মতো উইকিও আপনাকে প্রতিযোগিতায় ৩টি নিবন্ধ একসাথে ধরে রাখার সুযোগ দেয়। তাই অনুরোধ করবো সংখ্যাটা বাড়াতে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি একসাথে দুইয়ের অধিক পাতা ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:৫২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ২টি পাতা নাকি ২টি বই। তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবো। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৩, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::আপনি কোনটা মনে করেন? —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৫:০৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ঐখানে লেখা আছে '''পাতা''' তাই সেটাই মনে করি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:৫৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::তাহলে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করছেন কোন কারণে! —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] এটা উইকিবই, এখানে বই থাকে নিবন্ধ নয়। উইকিপিডিয়ায় লেখা থাকে পাতা মানে নিবন্ধ, উক্তিতে পাতা মানে ভুক্তি, উইকিসংবাদে পাতা মানে প্রতিবেদন, উইকিভ্রমণে পাতা মানে ভ্রমণ নির্দেশিকা কিন্তু এখানে পাতা আর বই ভিন্ন ব্যাপার। তাই এই প্রশ্ন করা। এটা অপ্রয়োজনীয় হলে করতাম না কারণ আমিও এখন উক্তি প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] উইকিবইয়ের পাতা মানে বইয়ের পাতা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৮:৩৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::ভাই আমি একটা পাতা অনুবাদ করে "প্রকাশ করুন" এ টিপ দিয়েছি।এরপর আর কিছু করা লাগবে? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:০২, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] পাতা জমা দিতে হবে তো [https://fountain.toolforge.org/editathons/wrcbn2025 এখানে] [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:১৩, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::sir ,"articles topic" e ki likhbo? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:২৫, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == Hello,I like vir. I joint you. Please answer my question. https://en.m.wikibooks.org/wiki/Cognitive_Psychology_and_Cognitive_Neuroscience/Cognitive_Psychology_and_the_Brain [[ব্যবহারকারী:Ishrat Jahan Tahmid|Ishrat Jahan Tahmid]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ishrat Jahan Tahmid|আলাপ]]) ২৩:৩৮, ৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :amio onubad korte chai [[ব্যবহারকারী:Khalid S Noor|Khalid S Noor]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Khalid S Noor|আলাপ]]) ২৩:০৪, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী তালিকায় যুক্ত করুন == [[রন্ধনপ্রণালী:গ্রিলিং]] । মূল সমন্বয়ক @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] কে ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৩:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বিদেশি খাবার সম্পর্কে == বিদেশি (যেমন: ইউরোপীয়, জাপানিজ ইত্যাদি) খাবার সম্পর্কিত রন্ধনপ্রণালী প্রতিযোগিতায় গৃহীত হবে কি? বর্তমানে অনেক বিদেশী খাবার বাংলাদেশ, ভারতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে । [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১২:৪৭, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ভাই, সব খাবার গণহারে দেওয়া হবে না (আমি যদ্দুর জানি)। আপনাকে নির্ধারিত তালিকা দিতে হবে যা আয়োজকদল গ্রহণ করবে অথবা নাও করতে পারে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:১০, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == উক্ত কাজটি কিভাবে সম্পন্ন করবো? আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন। == আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন।দয়া করে জানাবেন [[ব্যবহারকারী:M.A. Fahad|M.A. Fahad]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.A. Fahad|আলাপ]]) ১৮:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == একটির বেশি বই [[বিশেষ:অবদান/118.179.176.189|118.179.176.189]] ২১:১১, ৮ মে ২০২৫ == তালিকাতে নেই == [[:en:Electromagnetic_radiation|Electromagnetic radiation]], [[:en:Engineering_Acoustics|Engineering Acoustics]] - বই দুটো পুরো অনুবাদ করতে চাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Somajyoti|আলাপ]]) ২০:৫০, ৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) BTS ARMY :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somjyoti]] [[:en:Electromagnetic radiation|Electromagnetic radiation]] {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৬:০৫, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] Engineering Acoustics {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৫:২৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতা সমূহ == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতায় আরও দেখুন থাকবে না, কিছু ক্ষেত্রে বহিঃসংযোগ থাকতে পারে তবে না থাকাটাই ভালো। রন্ধনপ্রণালী নিয়ে লিখতে চাইলে ফরম্যাট ও কীভাবে লিখতে হবে জানতে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] পাতাটি দেখুন ও এটাই অনুসরণ করুন। আয়োজক দলের পক্ষে, —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:০০, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মুদ্রণযোগ্য সংস্করণ সম্বন্ধে == '''আয়োজক(দের/এর) প্রতি:''' আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মুদ্রণযোগ্য সংস্করণগুলো প্রতিযোগিতায় গ্রহণযোগ্য নয়; যেহেতু এখানে টেমপ্লেটের মাধ্যমে অন্য পাতাগুলো দেখানো হয় মাত্র। যদিও বেশি সময় লাগে না, তারপরেও, প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে কেউ তৈরি করার পর গৃহীত না হলে খামোখা হতাশ হবেন। এই বিষয়টা প্রতিযোগীদের মধ্যে খোলসা করে দেওয়া উচিত। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ১৩:৩২, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাইকে মেনশন করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৪:০৮, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::ওইরকম পাতা গৃহীত হবে না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৫:১১, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::সেক্ষেত্রে তালিকা থেকে ওই পাতাগুলো সরানো বা প্রতিযোগিতা পাতায় বিষয়টি উল্লেখ করলে ভালো হয় [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৭:৪২, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মাসালা র কিতাব == যেকোনো মাস আলা জানার জন্য [[বিশেষ:অবদান/103.204.209.73|103.204.209.73]] ১৫:১৮, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় বই যোগ == দয়া করে বইয়ের তালিকায় [[Rhetoric and Writing in the Public Sphere: An Introduction]] ইংরেজি বইটা যোগ করে দেন। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ২০:১৬, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} অসম্পূর্ণ বই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যুক্তকরণ প্রসঙ্গে == [[en:C# Programming]] বইটি তালিকায় যুক্ত করলে ভালো হতো, বইটি অতীব জরুরী। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫২, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :আর এই বইটাকেও যুক্তকরণ করা যেতে পারে। [[en:OpenSSH]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৪, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাইকে এই দিকে সক্রিয় দেখছি তাই ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৮:৫২, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত পাতা যোগ করা হবে না আর [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:৪৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::কেন তা কি জানতে পারি? @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাই। একটি বই থাকার কারণে? [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১২:১১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] না। বিভিন্ন কারণে প্রথমত কোড যাচাই করণ আমি যতদূর দেখেছি কোড কম্পাইল হয়না ইংরেজি সংস্করণেরটাই এছাড়াও বেশ কিছু সমস্যা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৩, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == একটা বিষয় জানার ছিলো == আচ্ছা আমাদের যে সমস্ত পৃষ্ঠা গ্রহণ যোগ্য তার জন্য কি আমরা নম্বর পাবো না? এখনো আমাদের কোন নাম্বার যোগ হচ্ছে না কেন? বিশেষ করে আমার। আর গ্রহণযোগ্য না হলেও তো সেটও তো জানাবেন। [[ব্যবহারকারী:Editobd|Editobd]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Editobd|আলাপ]]) ০৮:০৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বইয়ের প্রস্তাব == '''১. [https://en.wikibooks.org/wiki/High_school_physics High School Physics]''' এই বইটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক একটি সহজবোধ্য পাঠ্যবই। এতে নিউটনের সূত্র, বল, গতি, শক্তি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি নিজে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, তাই এই বইটি অনুবাদ করা আমার পক্ষে সহজ ও উপযুক্ত হবে। '''২. [https://en.m.wikibooks.org/wiki/Study_Skills/Managing_Your_Time Study Skills: Managing Your Time]''' এই বইটি ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল শেখায়, যা এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি মনে করি এটি অনুবাদ করলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। বইটি ছোট এবং সহজ, তাই কার্যকরভাবে অনুবাদ করা সম্ভব। --[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Torikul Islam Tarek|আলাপ]]) ১৬:১৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২২, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মোঃ জাফর == ১২২৩৫৫৫৬৬ [[বিশেষ:অবদান/36.50.116.26|36.50.116.26]] ১৮:০১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == সংশোধিত পাতা পুনরায় চেক == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]]S আমার রন্ধনপ্রণালীর গৃহীত না হওয়া পাতাগুলো সংশোধন করা হয়েছে, আবার চেক করার অনুরোধ করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১২:২২, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ==রন্ধনপ্রনালী সম্পর্কিত== আচ্ছা রন্ধনপ্রনালীর পৃষ্ঠাতে কি তথ্যসূত্র দেওয়ার প্রয়োজন আছে? কারন নমুনা হিসাবে যে পাতাটি দেওয়া হয়েছে তাতে তথ্যসূত্র সংযোজিত নেই। [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:২৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :নমুনা পাতার চেয়ে কম সুসংগঠিত হলে তা সংশোধন করতে হবে। কিন্তু তথ্যসূত্র, অন্যান্য বিষয় যোগ করে উন্নত করতে পারলে তা অবশ্যই ভালো।@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১০:০১, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual|চলচ্চিত্র নির্মাণ নির্দেশিকা}} (সম্পূর্ণ বই) # {{eb|Visual Arts Of The Indian Subcontinent|ভারতীয় উপমহাদেশের দৃশ্যকলা}} # {{eb|Chromolithography|ক্রোমোলিথোগ্রাফি}} # {{eb|Chromolithography/Estimating, Assessing and Producing|ক্রোমোলিথোগ্রাফি/অনুমান, মূল্যায়ন এবং উৎপাদন}} তালিকায় যোগ করার আবেদন রইল। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ০৭:০৯, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকার বাইরে একটি পাতা অনুবাদ করতে চাই == History of the Nawabs of Bengal/List of Conflicts এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৪, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} একেবারে অসম্পূর্ণ বই। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২৩, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যুক্তের আবেদন == US History বইটি যুক্ত করার আবেদন করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] বইটি যোগ করা হবে। তার আগে আপনি [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস]] নামে পাতাটির অনুবাদ শেষ করুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৫:২৬, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::অনুবাদ করেছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:৪০, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] তালিকাভুক্তির জন্য গ্রহণযোগ্য। আপনিই তালিকায় যুক্ত করতে পারেন অথবা এখান ্থেকেই অনুবাদ করতে থাকুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:৫৯, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::প্রস্তাব পাতা থেকেই অনুবাদ শুরু করে দিলে, অন্য প্রতিযোগীরা কীভাবে সেই বই নিয়ে কাজ করবে? নতুন অবদানকারীরা হয়তো এই প্রস্তাব পাতায় আসবেও না। ::::আমার মতো অনেকে হয়তো, অবদান রাখার জন্য তালিকায় নতুন বই যুক্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সেই ফাঁকে কেবল প্রস্তাবনা দিয়েই যদি কেউ সেই বই নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়, তাহলে সেটা কি আদৌ ন্যায্য হলো? [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৮:৪৪, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Taysirul Islam Shuvo|Taysirul Islam Shuvo]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Taysirul Islam Shuvo|আলাপ]]) ১৩:৩৮, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == ভুলক্রমে তালিকায় না থাকা বই যোগের অনুরোধ== নিম্নের সূচিপত্র বিশিষ্ট বইটি আমি অনুবাদ করেছি। "শুধুমাত্র আয়োজকরা প্রতিযোগিতার জন্য বই যোগ করতে পারবে" —এটা প্রকল্প পাতা থেকে স্পষ্ট না হতে পেরে তালিকায় তোলা হয়নি। তবে আমি ধ্বংসাত্মক কিছু না করায় তালিকায় যোগ করার অনুরোধ করছি। আর প্রকল্প পাতায় নিয়মটি স্পষ্ট করার অনুরোধ করছি। === [[সম্পর্ক]] === # {{eb|Relationships|সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/The Evolution of the Human Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#The_Triune_Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/ত্রয়ী মস্তিষ্ক}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Natural vs. Sexual Selection|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/প্রাকৃতিক বনাম যৌন নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Did cerebral Cortex evolve by sexual selection?|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/সেরিব্রাল কর্টেক্স কি যৌন নির্বাচনে বিকশিত?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Do Men and Women Have Different Sex Drives?|সম্পর্ক/হরমোন/পুরুষ এবং মহিলাদের ভিন্ন যৌনতা?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Pheromones|সম্পর্ক/হরমোন/ফেরোমন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Oxytocin|সম্পর্ক/হরমোন/অক্সিটোসিন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Testosterone|সম্পর্ক/হরমোন/টেস্টোস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Estrogen and Progesterone|সম্পর্ক/হরমোন/ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones|সম্পর্ক/হরমোন}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Industrial-Information Society|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/শিল্প-তথ্য সমিতি}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Idyllic Lifestyle|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/মনোরম জীবনধারা}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Egalitarian Groups|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সমতাবাদী গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Limited Polygyny|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সীমিত বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Were Our Ancestors Monogamous or Polygamous?|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/আমাদের পূর্বপুরুষরা কি একগামী ছিলেন নাকি বহুগামী ছিলেন?}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Agricultural Societies|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/কৃষি সমিতি}} # {{eb|Relationships/Communication Styles|সম্পর্ক/যোগাযোগ}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#The Great Male Hierarchy|সম্পর্ক/যোগাযোগ/মহান পুরুষ শ্রেণিবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women’s Support Circles|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর সহযোগী চক্র}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women's Culture, Men's Culture|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর রীতি, পুরুষের রীতি}} # {{eb|Relationships/How Men Select Women|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন}} # {{eb|How Men Select Women#Youth|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/যৌবন}} # {{eb|How Men Select Women#Beauty|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/সৌন্দর্য}} # {{eb|How Men Select Women#Education and Employment|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/শিক্ষা ও কর্মজীবন}} # {{eb|How Men Select Women#Emotional Connection|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Trait preferences|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/পছন্দের বৈশিষ্ট্য}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Relationship Skills|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/সম্পর্কের দক্ষতা}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Emotional Connection|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women-Egalitarian Sisterhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মহিলা-সমকালীন বোনতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women's Power|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/নারীর ক্ষমতায়ন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Increasing Status via Hypergamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/হাইপারগ্যামির মাধ্যমে স্ট্যাটাস বৃদ্ধি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Careers vs. Motherhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ক্যারিয়ার বনাম মাতৃত্ব}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men-Masters, Slaves, and Welfare Cheats|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ-দক্ষ , দাস, এবং কল্যাণ প্রতারণা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Class Stratification|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/শ্রেণী স্তরবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Incest, Child Abuse, and Wife Battering|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/অজাচার, শিশু নির্যাতন, এবং স্ত্রী নির্যাতন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Welfare Fraud |সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/কল্যাণ জালিয়াতি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Violence in Polygynous Societies|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/বহুগামী সমাজে সহিংসতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Judaism, Christianity, Islam, and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ইহুদি, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Contemporary Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/সমসাময়িক একবিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men's and Women's Desired Number of Partners|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ এবং মহিলাদের কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীর সংখ্যা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#When Masculine Sexuality Is Acceptable|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/যখন পুরুষতান্ত্রিক যৌনতা গ্রহণযোগ্য}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Stress and Promiscuity|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মানসিক চাপ এবং অশ্লীলতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Sexual Satisfaction in Monogamous Relationships|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/একগামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌন তৃপ্তি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Is There a "Marriage Crisis"?|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/"বিবাহ সংকট" কি আছে?}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Serial Monogamy Tends Toward Polyandry|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ধারাবাহিক একবিবাহ বহুপতিত্বের দিকে ঝোঁক দেয়}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#African-American Marriage and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/আফ্রিকান-আমেরিকান বিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Childhood|সম্পর্ক/শৈশব}} # {{eb|Relationships/Adolescence|সম্পর্ক/কৈশোর}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Anima and Animus|সম্পর্ক/কৈশোর/পুরুষের মাতৃত্ববোধ ও কুসংস্কার}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Projection|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রদর্শন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Becoming Your Object of Desire|সম্পর্ক/কৈশোর/আকাঙ্ক্ষার বস্তু হয়ে উঠুন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Developing an Adult Identity|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রাপ্তবয়স্কদের পরিচয় গড়ে তোলা}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Adolescent Friendship|সম্পর্ক/কৈশোর/কিশোর বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#30s: Stuck Between Adolescence and Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/৩০ এর দশক: কৈশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কতার মধ্যে আটকে থাকা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Adult Friendship|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Companionate Marriages|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/জীবনসঙ্গী}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Your Village of Relationships|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/সম্পর্কের স্থল}} # {{eb|Relationships/Agape|সম্পর্ক/অ্যাগাপে}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Who Introduced Couples|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পরিচয় করায় কে?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Similarity and Dissimilarity|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/সাদৃশ্য এবং বৈষম্য}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Where to Meet Single Men and Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/বসবেন কোথায়?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Two Contradictory Rules for Attracting Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/নারীদের আকৃষ্ট করার দুটি অদ্ভুত নিয়ম}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Woman Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি নারীর অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Commitment Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি প্রতিশ্রুতির অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Create Your Own Man- or Woman-Advantage|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/আপনার নিজের পুরুষ- অথবা নারী-সুবিধা তৈরি করুন}} # {{eb|Relationships/Flirting|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য}} # {{eb|Relationships/Flirting#Babysitting Lessons|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/বেবিসিটিং পাঠ}} # {{eb|Relationships/Flirting#Flirt with Everyone|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/সবার সাথে প্রেমের ভান}} # {{eb|Relationships/Flirting#Peek-a-Boo|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/উঁকি দিয়ে দেখুন}} # {{eb|Relationships/Flirting#"Speed Dating"|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/"স্পিড ডেটিং"}} # {{eb|Relationships/Flirting#Compliments|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/প্রশংসা}} # {{eb|Relationships/Flirting#Transition Points|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/মোর নিন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Making a Date|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্পষ্ট হোন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dress for Sex|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/পোশাক}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dream Houses, Dream Relationships|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্বপ্নের ঘর, স্বপ্নের সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Examples|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/উদাহরণ}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Making Personal Ads Work|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন কার্যকর করা}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Responding to Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের প্রতিক্রিয়া জানানো}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#The Future of Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের ভবিষ্যৎ}} # {{eb|Relationships/Dating|সম্পর্ক/ডেটিং}} # {{eb|Relationships/Dating#Emotional Range|সম্পর্ক/ডেটিং/আবেগের পরিসর}} # {{eb|Relationships/Dating#What to Do on a Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটে কী করবেন?}} # {{eb|Relationships/Dating#Group Dates|সম্পর্ক/ডেটিং/গ্রুপ ডেট}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Man Can Take a Woman On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন পুরুষ কোন নারীকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Woman Can Take a Man On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন নারী কোন পুরুষকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#Ending the Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটের শেষটা}} # {{eb|Relationships/Dating#Alcohol and Sexual Intimacy|সম্পর্ক/ডেটিং/অ্যালকোহল এবং যৌন ঘনিষ্ঠতা}} # {{eb|Relationships/Dating#11 Dating Mistakes Men Make|সম্পর্ক/ডেটিং/পুরুষদের ডেটিংয়ে করা ১১টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Dating#3 Dating Mistakes Women Make|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটিংয়ে নারীদের করা ৩টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Sex|সম্পর্ক/যৌনতা}} # {{eb|Relationships/Sex#Physiological aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/শারীরবৃত্তীয় দিক}} # {{eb|Relationships/Sex#Social and cultural aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক}} # {{eb|Relationships/Couples|সম্পর্ক/দম্পতি}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanently Passive Women|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় নারী}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanent Pursuers|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ী অনুসরণকারীরা}} # {{eb|Relationships/Couples#Switch Genders Roles for Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির জন্য ভূমিকা বদলান}} # {{eb|Relationships/Couples#"Our Relationship" Talks|সম্পর্ক/দম্পতি/"আমাদের সম্পর্ক" নিয়ে আলোচনা}} # {{eb|Relationships/Couples#Resistance to Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির বাধা}} # {{eb|Relationships/Couples#Life Stages Conflict|সম্পর্ক/দম্পতি/জীবনের নানা দ্বন্দ্ব}} # {{eb|Relationships/Couples#Deciding Whom to Marry vs. Deciding When to Marry|সম্পর্ক/দম্পতি/কাকে বিয়ে, কখন বিয়ে?}} # {{eb|Relationships/Conflict|সম্পর্ক/সংঘাত}} # {{eb|Relationships/Conflict#Conjunct Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সংযুক্ত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Opposite Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/বিপরীত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Triangular Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/ত্রিভুজাকার সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Square Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/চতুর্ভুজ রিলেশনশিপস}} # {{eb|Relationships/Conflict#Larger Groups|সম্পর্ক/সংঘাত/বৃহত্তর গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/Conflict#Dyad Trouble|সম্পর্ক/সংঘাত/দুজনের সমস্যা}} # {{eb|Relationships/Conflict#Staying in Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Archetypes|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/আর্ক-টাইপ}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Opposites Attract|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/বিপরীতমুখী আকর্ষণ}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus-Hera Marriage|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস-হেরার বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/এথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Apollo-Artemis Marriage|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/অ্যাপোলো-আর্টেমিসের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes-Hestia Marriage|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস-হেস্টিয়া বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Hephaestus|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/হেফেস্টাস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares-Hephaestus-Aphrodite Marriage|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইটের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Relationships/Dionysus-Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus-Demeter Marriage|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস-ডিমিটারের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/পার্সেফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades-Persephone Marriage|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#The Hades-Persephone Relationship|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের সম্পর্ক}} {{ping|Md Rashidul Hasan Biplob}} আপনি নতুন ব্যবহারকারী হওয়ায় Benefit of doubt দিয়ে তালিকাটি '''গ্রহণ করা হলো'''। এরপর থেকে প্রতিযোগিতার নিয়মকানুন ভালো করে দেখে কাজ করবেন। এরকম সুযোগ দ্বিতীয়বার দেওয়া হবে না। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০৬:৪৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :জি আমি অবশ্যই সতর্ক থাকব। নিয়মের বিরুদ্ধে আমি নিজেও যেতে আগ্রহী নই। আয়োজক দলকে অনেক ধন্যবাদ। [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ০৬:৫২, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় নেই এমন একটি বই অনুবাদ করতে চাই == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Climatology এই বইটি অনুবাদ করতে চাচ্ছি, অনুগ্রহ করে বই টি তালিকায় যুক্ত করবেন। [[ব্যবহারকারী:Dark1618|Dark1618]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Dark1618|আলাপ]]) ০৯:০৮, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == Seeing What Others Don’t == বইটির সম্পর্কে বিস্তারিত: লেখক: Gary Klein প্রকাশকাল: ২০১৩ বিষয়বস্তু: কগনিটিভ সাইকোলজি, ডিসিশন মেকিং, ইনসাইট ডেভেলপমেন্ট বইটির মূল থিম: গ্যারি ক্লেইন তার গবেষণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ কীভাবে হঠাৎ করে কোনো সমস্যা বা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উপলব্ধি বা insight লাভ করে — যা সাধারণ চিন্তাধারার বাইরে। তিনি ১২০টিরও বেশি কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে: অনেক সময় তথ্য থাকার পরেও মানুষ বুঝতে পারে না আসল বিষয়টি কী, আবার অনেক সময় সাধারণ মানুষও অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি পেতে পারে। তিনি তিনটি প্রধান পন্থা দেখিয়েছেন, যেভাবে ইনসাইট জন্ম নেয়: Contradiction – যখন বাস্তবতা আমাদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করে Connection – দুটি অসংযুক্ত ধারণাকে যুক্ত করা হয় Creative Desperation – যখন অন্য সব বিকল্প ব্যর্থ হলে হঠাৎ এক নতুন সমাধান মাথায় আসে আপনি অনুবাদ করতে চাইলে কীভাবে এগোবেন? ১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন: আপনি কি ব্যক্তিগত পাঠের জন্য অনুবাদ করবেন, নাকি প্রকাশনার উদ্দেশ্যে? প্রকাশনার জন্য হলে কপিরাইট অনুমতি লাগবে। ২. অনুবাদের ধরন ঠিক করুন: কি আপনি শব্দ-বাক্য ভিত্তিক সঠিক অনুবাদ চান? না কি ভাবানুবাদ— অর্থ বজায় রেখে সহজ বাংলায় প্রকাশ করবেন? ৩. অধ্যায়ভিত্তিক কাজ করলে ভালো হয়: আমি চাইলে আপনাকে প্রতি অধ্যায়ের সারাংশ বা পূর্ণ অনুবাদ দিতে পারি — যেমন: অধ্যায় ১: "Insight as a Flash" (বাংলা অনুবাদে: হঠাৎ প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি) অধ্যায় ২: "The Curious Nature of Insight" ... ৪. লেখার ধরন বজায় রাখা: Gary Klein-এর লেখায় অনেক বাস্তব কেস স্টাডি ও সংলাপ থাকে, অনুবাদে সেগুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা জরুরি। [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৩৬, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :সেগুলোকে বিস্তারিত আলোচনা করে তুলে ধরা হবে [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৪৪, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual}} # {{eb|3D Printing}} [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৫:২৩, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] প্রথম বইটি সম্পূর্ণ নয় দ্বিতীয় বইটি যাচাই করে যুক্ত করা হবে। যুক্ত করা হলে এখানে জানিয়ে দিব। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ২য় বইটি যোগ করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১২:০৯, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন পাতা অনুবাদ == Applications of ICT in Libraries এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই, পাতাটি তালিকায় যুক্ত করার অনুরোধ করছি, পাতাটির লিংক: [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:২৯, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :1111 [[বিশেষ:অবদান/37.111.239.140|37.111.239.140]] ১২:৩৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::01714638936 ::MD suman sadar [[বিশেষ:অবদান/37.111.242.105|37.111.242.105]] ১৩:২১, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্ত করার অনুরোধ == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি।'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ২২:৪২, ২৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == কুইজ টেমপ্লেটটি কাজ করছেনা == বাংলা উইকিবইয়ের পাতাতে কুইজ টেমপ্লেট যোগ করতে চাইলে সেটি ঠিকমতো কাজ করছেনা। প্রশ্ন এবং উত্তর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। খালি '''টেমপ্লেট:কুইজ''' -এরকম দেখাচ্ছে। কেউ কি বলতে পারেন যে কুইজ টেমপ্লেট কিভাবে ব্যবহার করা যাবে, অথবা এর বিকল্প কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:৫১, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] বাংলা উইকিবইয়ে এক্সটেনশনটি আপাতত নেই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৪, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::তাহলে কি কুইজের প্রশ্ন উত্তর গুলো আলাধাভাবে প্যারার আকারে লিখে দেব না কি যেমন আছে সেরকম রেখে দেব? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:১৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] যেমন আছে সেরকমই আপাতত রেখে দিন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == দুই পাতার এক শিরোনাম == সুধী বিচারকগন, একটি ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, নিম্নের এই দুটি উইকিবই... # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations (Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} - [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১১:১৪, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations(Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} এই দুটি ইংরেজি উইকিবইয়ের শিরোনাম এক থাকলেও তাদের বিষয়বস্তু ভিন্ন। আমি প্রথম বইটির বাংলা তর্জ‌মা করেছিলাম, কিন্তু দুটি বইয়ের শিরোনাম এক থাকার দরুন আমি যখন প্রথম বইটির লাল লিংক -এ ক্লিক করে অনুবাদ প্রকাশ করি, তখন সাথে সাথে দ্বিতীয় বইটিরও বাংলা অনুবাদে একই বিষয়বস্তু যুক্ত হয়ে গেছে। দুটি পাতার এক শিরোনাম থাকার কারনে হয়তো এটা হয়েছে কিন্তু দুটি বইয়ের বিষয়বস্তু আলাদা করা দরকার। এই বিষয়ে কেউ কি সাহায্য করতে পারবেন? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৪:২১, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] দুটি পাতার বিষয়বস্তু একত্রীকরণ করে ফেলুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::একত্রীকরণ করব কি ভাবে ঠিক বুঝলামনা। দুটো পাতারই বিষয়বস্তু একসাথে অনুবাদ করে একটা পাতায় লিখব কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:২০, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] সামঞ্জস্য করে দুই পাতার বিষয়বস্তু একসাথে লিখুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৫, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Communication_Theory Communication Theory বইটি অনুবাদ করতে চাই। [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৮:১৮, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] বইটি ইতোমধ্যে বিদ্যমান [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৯:৩০, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing Professional and Technical Writing বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৯:৪৫, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Introduction_to_Philosophy Introduction to Philosophy বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ১০:০৪, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] যোগ করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:২৪, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] দয়া করে <S>[[en:History of Islam]]</s> [[en:United Nations History]] বইটি যুক্ত করুন। আর এমনিতেই বইয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩০, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) #[[en:History of the National Hockey League]] এবং [[en:History of Florida]] কেও যুক্ত করতে পারেন [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩৫, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৭:২১, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == Recheck ejected pages == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] i have corrected two pages you rejected # [[রন্ধনপ্রণালী:আমের চাটনি|আমের চাটনি - উইকিবই]] # [[রন্ধনপ্রণালী:টমেটো চাটনি|টমেটো চাটনি - উইকিবই]] requesting to recheck them again [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৯:২২, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] দুঃখিত, ভাষাটা বুঝতে পারিনি। বাংলায় বলুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৫:৪২, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] পুনঃ পর্যালোচনা করতে বলেছে :/ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == bokthiar == আমার সাইডে আমি ঢুকতে পারতেছি না কেন কারণ কি [[বিশেষ:অবদান/2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1|2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1]] ০০:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == article topic finding problem == আমি "Article Topic" এ যেয়ে কিভাবে সাবমিট করব? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১৫:৫৬, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ == সুধী বিচারকগন, আমার [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নামক নিবন্ধটি প্রোগ্রামিং -এর কোডে ভুল থাকার কারনে অগৃহীত হয়েছে। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি। আমার বিনীত অনুরোধ, নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা হোক।[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৮:১০, ১০ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :প্লীজ একটু দেখুন যদি [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা যায়। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি। @[[ব্যবহারকারী:Tahmid|Tahmid]] -[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৫:৩১, ১৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) lcxjqaq89nchng0x98x1vukptyzxujw 84846 84844 2025-06-18T14:55:39Z RDasgupta2020 8748 /* নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ */ 84846 wikitext text/x-wiki {{উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|সক্রিয়=6}} == মাত্র দুুইটা ধরে রাখা যাবে? == @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাই, দয়া করে এই ব্যাপারটি লক্ষ করুন। সাধারণত উইকিপিডিয়ার মতো উইকিও আপনাকে প্রতিযোগিতায় ৩টি নিবন্ধ একসাথে ধরে রাখার সুযোগ দেয়। তাই অনুরোধ করবো সংখ্যাটা বাড়াতে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি একসাথে দুইয়ের অধিক পাতা ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:৫২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ২টি পাতা নাকি ২টি বই। তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবো। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৩, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::আপনি কোনটা মনে করেন? —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৫:০৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ঐখানে লেখা আছে '''পাতা''' তাই সেটাই মনে করি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:৫৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::তাহলে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করছেন কোন কারণে! —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৬:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::::::@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] এটা উইকিবই, এখানে বই থাকে নিবন্ধ নয়। উইকিপিডিয়ায় লেখা থাকে পাতা মানে নিবন্ধ, উক্তিতে পাতা মানে ভুক্তি, উইকিসংবাদে পাতা মানে প্রতিবেদন, উইকিভ্রমণে পাতা মানে ভ্রমণ নির্দেশিকা কিন্তু এখানে পাতা আর বই ভিন্ন ব্যাপার। তাই এই প্রশ্ন করা। এটা অপ্রয়োজনীয় হলে করতাম না কারণ আমিও এখন উক্তি প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৬:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) :::::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] উইকিবইয়ের পাতা মানে বইয়ের পাতা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৮:৩৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (ইউটিসি) ::ভাই আমি একটা পাতা অনুবাদ করে "প্রকাশ করুন" এ টিপ দিয়েছি।এরপর আর কিছু করা লাগবে? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:০২, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] পাতা জমা দিতে হবে তো [https://fountain.toolforge.org/editathons/wrcbn2025 এখানে] [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:১৩, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::::sir ,"articles topic" e ki likhbo? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১০:২৫, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == Hello,I like vir. I joint you. Please answer my question. https://en.m.wikibooks.org/wiki/Cognitive_Psychology_and_Cognitive_Neuroscience/Cognitive_Psychology_and_the_Brain [[ব্যবহারকারী:Ishrat Jahan Tahmid|Ishrat Jahan Tahmid]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ishrat Jahan Tahmid|আলাপ]]) ২৩:৩৮, ৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :amio onubad korte chai [[ব্যবহারকারী:Khalid S Noor|Khalid S Noor]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Khalid S Noor|আলাপ]]) ২৩:০৪, ২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী তালিকায় যুক্ত করুন == [[রন্ধনপ্রণালী:গ্রিলিং]] । মূল সমন্বয়ক @[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] কে ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৩:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বিদেশি খাবার সম্পর্কে == বিদেশি (যেমন: ইউরোপীয়, জাপানিজ ইত্যাদি) খাবার সম্পর্কিত রন্ধনপ্রণালী প্রতিযোগিতায় গৃহীত হবে কি? বর্তমানে অনেক বিদেশী খাবার বাংলাদেশ, ভারতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে । [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১২:৪৭, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ভাই, সব খাবার গণহারে দেওয়া হবে না (আমি যদ্দুর জানি)। আপনাকে নির্ধারিত তালিকা দিতে হবে যা আয়োজকদল গ্রহণ করবে অথবা নাও করতে পারে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৫:১০, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == উক্ত কাজটি কিভাবে সম্পন্ন করবো? আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন। == আপনার পছন্দসই পাতার পাশে থাকা ইংরেজি উইকিবইয়ের পাতাটি নতুন একটি ট্যাবে ওপেন করুন ও পাতায় থাকা সম্পাদনা আইকনে ক্লিক করে পুরো পাতার পাঠ্য কপি করুন।দয়া করে জানাবেন [[ব্যবহারকারী:M.A. Fahad|M.A. Fahad]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:M.A. Fahad|আলাপ]]) ১৮:৪৮, ৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == একটির বেশি বই [[বিশেষ:অবদান/118.179.176.189|118.179.176.189]] ২১:১১, ৮ মে ২০২৫ == তালিকাতে নেই == [[:en:Electromagnetic_radiation|Electromagnetic radiation]], [[:en:Engineering_Acoustics|Engineering Acoustics]] - বই দুটো পুরো অনুবাদ করতে চাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Somajyoti|আলাপ]]) ২০:৫০, ৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) BTS ARMY :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somjyoti]] [[:en:Electromagnetic radiation|Electromagnetic radiation]] {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৬:০৫, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Somajyoti|Somajyoti]] Engineering Acoustics {{done}} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৫:২৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতা সমূহ == রন্ধনপ্রণালী নাম স্থানের পাতায় আরও দেখুন থাকবে না, কিছু ক্ষেত্রে বহিঃসংযোগ থাকতে পারে তবে না থাকাটাই ভালো। রন্ধনপ্রণালী নিয়ে লিখতে চাইলে ফরম্যাট ও কীভাবে লিখতে হবে জানতে [[রন্ধনপ্রণালী:সমুচা]] পাতাটি দেখুন ও এটাই অনুসরণ করুন। আয়োজক দলের পক্ষে, —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:০০, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মুদ্রণযোগ্য সংস্করণ সম্বন্ধে == '''আয়োজক(দের/এর) প্রতি:''' আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মুদ্রণযোগ্য সংস্করণগুলো প্রতিযোগিতায় গ্রহণযোগ্য নয়; যেহেতু এখানে টেমপ্লেটের মাধ্যমে অন্য পাতাগুলো দেখানো হয় মাত্র। যদিও বেশি সময় লাগে না, তারপরেও, প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে কেউ তৈরি করার পর গৃহীত না হলে খামোখা হতাশ হবেন। এই বিষয়টা প্রতিযোগীদের মধ্যে খোলসা করে দেওয়া উচিত। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ১৩:৩২, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|MdsShakil]] ভাইকে মেনশন করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৪:০৮, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::ওইরকম পাতা গৃহীত হবে না। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৫:১১, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::সেক্ষেত্রে তালিকা থেকে ওই পাতাগুলো সরানো বা প্রতিযোগিতা পাতায় বিষয়টি উল্লেখ করলে ভালো হয় [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৭:৪২, ১৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মাসালা র কিতাব == যেকোনো মাস আলা জানার জন্য [[বিশেষ:অবদান/103.204.209.73|103.204.209.73]] ১৫:১৮, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় বই যোগ == দয়া করে বইয়ের তালিকায় [[Rhetoric and Writing in the Public Sphere: An Introduction]] ইংরেজি বইটা যোগ করে দেন। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ২০:১৬, ১৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} অসম্পূর্ণ বই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যুক্তকরণ প্রসঙ্গে == [[en:C# Programming]] বইটি তালিকায় যুক্ত করলে ভালো হতো, বইটি অতীব জরুরী। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫২, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :আর এই বইটাকেও যুক্তকরণ করা যেতে পারে। [[en:OpenSSH]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১৪:৫৪, ১৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাইকে এই দিকে সক্রিয় দেখছি তাই ট্যাগ করলাম। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৮:৫২, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত পাতা যোগ করা হবে না আর [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১০:৪৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::কেন তা কি জানতে পারি? @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ভাই। একটি বই থাকার কারণে? [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১২:১১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] না। বিভিন্ন কারণে প্রথমত কোড যাচাই করণ আমি যতদূর দেখেছি কোড কম্পাইল হয়না ইংরেজি সংস্করণেরটাই এছাড়াও বেশ কিছু সমস্যা [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৩, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == একটা বিষয় জানার ছিলো == আচ্ছা আমাদের যে সমস্ত পৃষ্ঠা গ্রহণ যোগ্য তার জন্য কি আমরা নম্বর পাবো না? এখনো আমাদের কোন নাম্বার যোগ হচ্ছে না কেন? বিশেষ করে আমার। আর গ্রহণযোগ্য না হলেও তো সেটও তো জানাবেন। [[ব্যবহারকারী:Editobd|Editobd]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Editobd|আলাপ]]) ০৮:০৬, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বইয়ের প্রস্তাব == '''১. [https://en.wikibooks.org/wiki/High_school_physics High School Physics]''' এই বইটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক একটি সহজবোধ্য পাঠ্যবই। এতে নিউটনের সূত্র, বল, গতি, শক্তি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি নিজে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, তাই এই বইটি অনুবাদ করা আমার পক্ষে সহজ ও উপযুক্ত হবে। '''২. [https://en.m.wikibooks.org/wiki/Study_Skills/Managing_Your_Time Study Skills: Managing Your Time]''' এই বইটি ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল শেখায়, যা এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি মনে করি এটি অনুবাদ করলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। বইটি ছোট এবং সহজ, তাই কার্যকরভাবে অনুবাদ করা সম্ভব। --[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Torikul Islam Tarek|আলাপ]]) ১৬:১৯, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Torikul Islam Tarek|Torikul Islam Tarek]] করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২২, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == মোঃ জাফর == ১২২৩৫৫৫৬৬ [[বিশেষ:অবদান/36.50.116.26|36.50.116.26]] ১৮:০১, ১৭ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == সংশোধিত পাতা পুনরায় চেক == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]]S আমার রন্ধনপ্রণালীর গৃহীত না হওয়া পাতাগুলো সংশোধন করা হয়েছে, আবার চেক করার অনুরোধ করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১২:২২, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ==রন্ধনপ্রনালী সম্পর্কিত== আচ্ছা রন্ধনপ্রনালীর পৃষ্ঠাতে কি তথ্যসূত্র দেওয়ার প্রয়োজন আছে? কারন নমুনা হিসাবে যে পাতাটি দেওয়া হয়েছে তাতে তথ্যসূত্র সংযোজিত নেই। [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:২৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :নমুনা পাতার চেয়ে কম সুসংগঠিত হলে তা সংশোধন করতে হবে। কিন্তু তথ্যসূত্র, অন্যান্য বিষয় যোগ করে উন্নত করতে পারলে তা অবশ্যই ভালো।@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ১০:০১, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual|চলচ্চিত্র নির্মাণ নির্দেশিকা}} (সম্পূর্ণ বই) # {{eb|Visual Arts Of The Indian Subcontinent|ভারতীয় উপমহাদেশের দৃশ্যকলা}} # {{eb|Chromolithography|ক্রোমোলিথোগ্রাফি}} # {{eb|Chromolithography/Estimating, Assessing and Producing|ক্রোমোলিথোগ্রাফি/অনুমান, মূল্যায়ন এবং উৎপাদন}} তালিকায় যোগ করার আবেদন রইল। [[ব্যবহারকারী:কমলেশ মন্ডল|কমলেশ মন্ডল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:কমলেশ মন্ডল|আলাপ]]) ০৭:০৯, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকার বাইরে একটি পাতা অনুবাদ করতে চাই == History of the Nawabs of Bengal/List of Conflicts এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৪, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :{{করা হয়নি}} একেবারে অসম্পূর্ণ বই। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ১৪:২৩, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যুক্তের আবেদন == US History বইটি যুক্ত করার আবেদন করছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৩:৫৮, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] বইটি যোগ করা হবে। তার আগে আপনি [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস]] নামে পাতাটির অনুবাদ শেষ করুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ১৫:২৬, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::অনুবাদ করেছি [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:৪০, ১৯ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] তালিকাভুক্তির জন্য গ্রহণযোগ্য। আপনিই তালিকায় যুক্ত করতে পারেন অথবা এখান ্থেকেই অনুবাদ করতে থাকুন। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ২১:৫৯, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::::প্রস্তাব পাতা থেকেই অনুবাদ শুরু করে দিলে, অন্য প্রতিযোগীরা কীভাবে সেই বই নিয়ে কাজ করবে? নতুন অবদানকারীরা হয়তো এই প্রস্তাব পাতায় আসবেও না। ::::আমার মতো অনেকে হয়তো, অবদান রাখার জন্য তালিকায় নতুন বই যুক্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সেই ফাঁকে কেবল প্রস্তাবনা দিয়েই যদি কেউ সেই বই নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়, তাহলে সেটা কি আদৌ ন্যায্য হলো? [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৮:৪৪, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == অনুবাদ করতে চাই == অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Taysirul Islam Shuvo|Taysirul Islam Shuvo]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Taysirul Islam Shuvo|আলাপ]]) ১৩:৩৮, ২৩ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == ভুলক্রমে তালিকায় না থাকা বই যোগের অনুরোধ== নিম্নের সূচিপত্র বিশিষ্ট বইটি আমি অনুবাদ করেছি। "শুধুমাত্র আয়োজকরা প্রতিযোগিতার জন্য বই যোগ করতে পারবে" —এটা প্রকল্প পাতা থেকে স্পষ্ট না হতে পেরে তালিকায় তোলা হয়নি। তবে আমি ধ্বংসাত্মক কিছু না করায় তালিকায় যোগ করার অনুরোধ করছি। আর প্রকল্প পাতায় নিয়মটি স্পষ্ট করার অনুরোধ করছি। === [[সম্পর্ক]] === # {{eb|Relationships|সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/The Evolution of the Human Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#The_Triune_Brain|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/ত্রয়ী মস্তিষ্ক}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Natural vs. Sexual Selection|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/প্রাকৃতিক বনাম যৌন নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/The_Evolution_of_the_Human_Brain#Did cerebral Cortex evolve by sexual selection?|সম্পর্ক/মানব মস্তিষ্কের বিকাশ/সেরিব্রাল কর্টেক্স কি যৌন নির্বাচনে বিকশিত?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Do Men and Women Have Different Sex Drives?|সম্পর্ক/হরমোন/পুরুষ এবং মহিলাদের ভিন্ন যৌনতা?}} # {{eb|Relationships/Hormones#Pheromones|সম্পর্ক/হরমোন/ফেরোমন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Oxytocin|সম্পর্ক/হরমোন/অক্সিটোসিন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Testosterone|সম্পর্ক/হরমোন/টেস্টোস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones#Estrogen and Progesterone|সম্পর্ক/হরমোন/ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন}} # {{eb|Relationships/Hormones|সম্পর্ক/হরমোন}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Industrial-Information Society|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/শিল্প-তথ্য সমিতি}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Idyllic Lifestyle|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/মনোরম জীবনধারা}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Egalitarian Groups|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সমতাবাদী গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Limited Polygyny|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/সীমিত বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Were Our Ancestors Monogamous or Polygamous?|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/আমাদের পূর্বপুরুষরা কি একগামী ছিলেন নাকি বহুগামী ছিলেন?}} # {{eb|Relationships/How Our Ancestors Lived#Agricultural Societies|সম্পর্ক/পূর্বপুরুষ/কৃষি সমিতি}} # {{eb|Relationships/Communication Styles|সম্পর্ক/যোগাযোগ}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#The Great Male Hierarchy|সম্পর্ক/যোগাযোগ/মহান পুরুষ শ্রেণিবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women’s Support Circles|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর সহযোগী চক্র}} # {{eb|Relationships/Communication Styles#Women's Culture, Men's Culture|সম্পর্ক/যোগাযোগ/নারীর রীতি, পুরুষের রীতি}} # {{eb|Relationships/How Men Select Women|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন}} # {{eb|How Men Select Women#Youth|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/যৌবন}} # {{eb|How Men Select Women#Beauty|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/সৌন্দর্য}} # {{eb|How Men Select Women#Education and Employment|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/শিক্ষা ও কর্মজীবন}} # {{eb|How Men Select Women#Emotional Connection|সম্পর্ক/পুরুষের নারী নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Trait preferences|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/পছন্দের বৈশিষ্ট্য}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Relationship Skills|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/সম্পর্কের দক্ষতা}} # {{eb|Relationships/How Women Select Men#Emotional Connection|সম্পর্ক/নারীর পুরুষ নির্বাচন/আবেগ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women-Egalitarian Sisterhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মহিলা-সমকালীন বোনতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Women's Power|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/নারীর ক্ষমতায়ন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Increasing Status via Hypergamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/হাইপারগ্যামির মাধ্যমে স্ট্যাটাস বৃদ্ধি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Careers vs. Motherhood|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ক্যারিয়ার বনাম মাতৃত্ব}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men-Masters, Slaves, and Welfare Cheats|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ-দক্ষ , দাস, এবং কল্যাণ প্রতারণা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Class Stratification|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/শ্রেণী স্তরবিন্যাস}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Incest, Child Abuse, and Wife Battering|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/অজাচার, শিশু নির্যাতন, এবং স্ত্রী নির্যাতন}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Welfare Fraud |সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/কল্যাণ জালিয়াতি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Violence in Polygynous Societies|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/বহুগামী সমাজে সহিংসতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Judaism, Christianity, Islam, and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ইহুদি, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Contemporary Monogamy and Polygamy|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/সমসাময়িক একবিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Men's and Women's Desired Number of Partners|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/পুরুষ এবং মহিলাদের কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীর সংখ্যা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#When Masculine Sexuality Is Acceptable|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/যখন পুরুষতান্ত্রিক যৌনতা গ্রহণযোগ্য}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Stress and Promiscuity|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/মানসিক চাপ এবং অশ্লীলতা}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Sexual Satisfaction in Monogamous Relationships|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/একগামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌন তৃপ্তি}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Is There a "Marriage Crisis"?|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/"বিবাহ সংকট" কি আছে?}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#Serial Monogamy Tends Toward Polyandry|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/ধারাবাহিক একবিবাহ বহুপতিত্বের দিকে ঝোঁক দেয়}} # {{eb|Relationships/Monogamy and Polygamy#African-American Marriage and Polygyny|সম্পর্ক/একগামিতা এবং বহুগামিতা/আফ্রিকান-আমেরিকান বিবাহ এবং বহুবিবাহ}} # {{eb|Relationships/Childhood|সম্পর্ক/শৈশব}} # {{eb|Relationships/Adolescence|সম্পর্ক/কৈশোর}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Anima and Animus|সম্পর্ক/কৈশোর/পুরুষের মাতৃত্ববোধ ও কুসংস্কার}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Projection|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রদর্শন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Becoming Your Object of Desire|সম্পর্ক/কৈশোর/আকাঙ্ক্ষার বস্তু হয়ে উঠুন}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Developing an Adult Identity|সম্পর্ক/কৈশোর/প্রাপ্তবয়স্কদের পরিচয় গড়ে তোলা}} # {{eb|Relationships/Adolescence#Adolescent Friendship|সম্পর্ক/কৈশোর/কিশোর বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#30s: Stuck Between Adolescence and Adulthood|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/৩০ এর দশক: কৈশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কতার মধ্যে আটকে থাকা}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Adult Friendship|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/বন্ধুত্ব}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Companionate Marriages|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/জীবনসঙ্গী}} # {{eb|Relationships/Adulthood#Your Village of Relationships|সম্পর্ক/প্রাপ্তবয়স্কতা/সম্পর্কের স্থল}} # {{eb|Relationships/Agape|সম্পর্ক/অ্যাগাপে}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Who Introduced Couples|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পরিচয় করায় কে?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Similarity and Dissimilarity|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/সাদৃশ্য এবং বৈষম্য}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Where to Meet Single Men and Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/বসবেন কোথায়?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Two Contradictory Rules for Attracting Women|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/নারীদের আকৃষ্ট করার দুটি অদ্ভুত নিয়ম}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Woman Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি নারীর অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Man Shortage or Commitment Shortage?|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/পুরুষের অভাব নাকি প্রতিশ্রুতির অভাব?}} # {{eb|Relationships/Where Couples Met#Create Your Own Man- or Woman-Advantage|সম্পর্ক/দম্পতিরা কোথায় মিলিত হয়/আপনার নিজের পুরুষ- অথবা নারী-সুবিধা তৈরি করুন}} # {{eb|Relationships/Flirting|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য}} # {{eb|Relationships/Flirting#Babysitting Lessons|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/বেবিসিটিং পাঠ}} # {{eb|Relationships/Flirting#Flirt with Everyone|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/সবার সাথে প্রেমের ভান}} # {{eb|Relationships/Flirting#Peek-a-Boo|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/উঁকি দিয়ে দেখুন}} # {{eb|Relationships/Flirting#"Speed Dating"|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/"স্পিড ডেটিং"}} # {{eb|Relationships/Flirting#Compliments|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/প্রশংসা}} # {{eb|Relationships/Flirting#Transition Points|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/মোর নিন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Making a Date|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্পষ্ট হোন}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dress for Sex|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/পোশাক}} # {{eb|Relationships/Flirting#Dream Houses, Dream Relationships|সম্পর্ক/প্রণয়চাতুর্য/স্বপ্নের ঘর, স্বপ্নের সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Examples|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/উদাহরণ}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Making Personal Ads Work|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন কার্যকর করা}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#Responding to Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের প্রতিক্রিয়া জানানো}} # {{eb|Relationships/How to Write a Personal Ad#The Future of Personal Ads|সম্পর্ক/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন/ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের ভবিষ্যৎ}} # {{eb|Relationships/Dating|সম্পর্ক/ডেটিং}} # {{eb|Relationships/Dating#Emotional Range|সম্পর্ক/ডেটিং/আবেগের পরিসর}} # {{eb|Relationships/Dating#What to Do on a Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটে কী করবেন?}} # {{eb|Relationships/Dating#Group Dates|সম্পর্ক/ডেটিং/গ্রুপ ডেট}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Man Can Take a Woman On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন পুরুষ কোন নারীকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#The Best Date a Woman Can Take a Man On|সম্পর্ক/ডেটিং/একজন নারী কোন পুরুষকে যে সেরা ডেটে নিতে পারে}} # {{eb|Relationships/Dating#Ending the Date|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটের শেষটা}} # {{eb|Relationships/Dating#Alcohol and Sexual Intimacy|সম্পর্ক/ডেটিং/অ্যালকোহল এবং যৌন ঘনিষ্ঠতা}} # {{eb|Relationships/Dating#11 Dating Mistakes Men Make|সম্পর্ক/ডেটিং/পুরুষদের ডেটিংয়ে করা ১১টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Dating#3 Dating Mistakes Women Make|সম্পর্ক/ডেটিং/ডেটিংয়ে নারীদের করা ৩টি ভুল}} # {{eb|Relationships/Sex|সম্পর্ক/যৌনতা}} # {{eb|Relationships/Sex#Physiological aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/শারীরবৃত্তীয় দিক}} # {{eb|Relationships/Sex#Social and cultural aspects|সম্পর্ক/যৌনতা/সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক}} # {{eb|Relationships/Couples|সম্পর্ক/দম্পতি}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanently Passive Women|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় নারী}} # {{eb|Relationships/Couples#Permanent Pursuers|সম্পর্ক/দম্পতি/স্থায়ী অনুসরণকারীরা}} # {{eb|Relationships/Couples#Switch Genders Roles for Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির জন্য ভূমিকা বদলান}} # {{eb|Relationships/Couples#"Our Relationship" Talks|সম্পর্ক/দম্পতি/"আমাদের সম্পর্ক" নিয়ে আলোচনা}} # {{eb|Relationships/Couples#Resistance to Commitment|সম্পর্ক/দম্পতি/প্রতিশ্রুতির বাধা}} # {{eb|Relationships/Couples#Life Stages Conflict|সম্পর্ক/দম্পতি/জীবনের নানা দ্বন্দ্ব}} # {{eb|Relationships/Couples#Deciding Whom to Marry vs. Deciding When to Marry|সম্পর্ক/দম্পতি/কাকে বিয়ে, কখন বিয়ে?}} # {{eb|Relationships/Conflict|সম্পর্ক/সংঘাত}} # {{eb|Relationships/Conflict#Conjunct Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সংযুক্ত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Opposite Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/বিপরীত সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Triangular Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/ত্রিভুজাকার সম্পর্ক}} # {{eb|Relationships/Conflict#Square Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/চতুর্ভুজ রিলেশনশিপস}} # {{eb|Relationships/Conflict#Larger Groups|সম্পর্ক/সংঘাত/বৃহত্তর গোষ্ঠী}} # {{eb|Relationships/Conflict#Dyad Trouble|সম্পর্ক/সংঘাত/দুজনের সমস্যা}} # {{eb|Relationships/Conflict#Staying in Relationships|সম্পর্ক/সংঘাত/সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Archetypes|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/আর্ক-টাইপ}} # {{eb|Relationships/Emotional Control Systems#Opposites Attract|সম্পর্ক/আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/বিপরীতমুখী আকর্ষণ}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Hera|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/হেরা}} # {{eb|Relationships/Zeus-Hera#Zeus-Hera Marriage|সম্পর্ক/জিউস-হেরা/জিউস-হেরার বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/এথেনা}} # {{eb|Relationships/Poseidon-Athena#Poseidon-Athena|সম্পর্ক/পসেইডন-অ্যাথেনা/পসেইডন-অ্যাথেনা}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Artemis|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/আর্টেমিস}} # {{eb|Relationships/Apollo-Artemis#Apollo-Artemis Marriage|সম্পর্ক/অ্যাপোলো-আর্টেমিস/অ্যাপোলো-আর্টেমিসের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hestia|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হেস্টিয়া}} # {{eb|Relationships/Hermes-Hestia#Hermes-Hestia Marriage|সম্পর্ক/হার্মিস-হেস্টিয়া/হার্মিস-হেস্টিয়া বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Hephaestus|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/হেফেস্টাস}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Aphrodite|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/অ্যাফ্রোডাইট}} # {{eb|Relationships/Ares-Hephaestus-Aphrodite#Ares-Hephaestus-Aphrodite Marriage|সম্পর্ক/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইট/এরেস-হেফেস্টাস-অ্যাফ্রোডাইটের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Relationships/Dionysus-Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Demeter|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডিমিটার}} # {{eb|Relationships/Dionysus-Demeter/Dionysus-Demeter Marriage|সম্পর্ক/ডায়োনিসাস-ডিমিটার/ডায়োনিসাস-ডিমিটারের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Persephone|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/পার্সেফোন}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#Hades-Persephone Marriage|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের বিবাহ}} # {{eb|Relationships/Hades-Persephone#The Hades-Persephone Relationship|সম্পর্ক/হেডিস-পার্সিফোন/হেডিস-পার্সেফোনের সম্পর্ক}} {{ping|Md Rashidul Hasan Biplob}} আপনি নতুন ব্যবহারকারী হওয়ায় Benefit of doubt দিয়ে তালিকাটি '''গ্রহণ করা হলো'''। এরপর থেকে প্রতিযোগিতার নিয়মকানুন ভালো করে দেখে কাজ করবেন। এরকম সুযোগ দ্বিতীয়বার দেওয়া হবে না। ≈ <b style="border:1.5px solid #736AFF;font-family:georgia;font-variant:small-caps">[[User:MS_Sakib|<b style="background-color:#FBB117;color:#7E2217">MS Sakib&nbsp;</b>]][[User talk:MS Sakib|&nbsp;«আলাপ»]]</b> ০৬:৪৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :জি আমি অবশ্যই সতর্ক থাকব। নিয়মের বিরুদ্ধে আমি নিজেও যেতে আগ্রহী নই। আয়োজক দলকে অনেক ধন্যবাদ। [[ব্যবহারকারী:Md Rashidul Hasan Biplob|Md Rashidul Hasan Biplob]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Rashidul Hasan Biplob|আলাপ]]) ০৬:৫২, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় নেই এমন একটি বই অনুবাদ করতে চাই == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Climatology এই বইটি অনুবাদ করতে চাচ্ছি, অনুগ্রহ করে বই টি তালিকায় যুক্ত করবেন। [[ব্যবহারকারী:Dark1618|Dark1618]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Dark1618|আলাপ]]) ০৯:০৮, ২৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == Seeing What Others Don’t == বইটির সম্পর্কে বিস্তারিত: লেখক: Gary Klein প্রকাশকাল: ২০১৩ বিষয়বস্তু: কগনিটিভ সাইকোলজি, ডিসিশন মেকিং, ইনসাইট ডেভেলপমেন্ট বইটির মূল থিম: গ্যারি ক্লেইন তার গবেষণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ কীভাবে হঠাৎ করে কোনো সমস্যা বা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উপলব্ধি বা insight লাভ করে — যা সাধারণ চিন্তাধারার বাইরে। তিনি ১২০টিরও বেশি কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে: অনেক সময় তথ্য থাকার পরেও মানুষ বুঝতে পারে না আসল বিষয়টি কী, আবার অনেক সময় সাধারণ মানুষও অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি পেতে পারে। তিনি তিনটি প্রধান পন্থা দেখিয়েছেন, যেভাবে ইনসাইট জন্ম নেয়: Contradiction – যখন বাস্তবতা আমাদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করে Connection – দুটি অসংযুক্ত ধারণাকে যুক্ত করা হয় Creative Desperation – যখন অন্য সব বিকল্প ব্যর্থ হলে হঠাৎ এক নতুন সমাধান মাথায় আসে আপনি অনুবাদ করতে চাইলে কীভাবে এগোবেন? ১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন: আপনি কি ব্যক্তিগত পাঠের জন্য অনুবাদ করবেন, নাকি প্রকাশনার উদ্দেশ্যে? প্রকাশনার জন্য হলে কপিরাইট অনুমতি লাগবে। ২. অনুবাদের ধরন ঠিক করুন: কি আপনি শব্দ-বাক্য ভিত্তিক সঠিক অনুবাদ চান? না কি ভাবানুবাদ— অর্থ বজায় রেখে সহজ বাংলায় প্রকাশ করবেন? ৩. অধ্যায়ভিত্তিক কাজ করলে ভালো হয়: আমি চাইলে আপনাকে প্রতি অধ্যায়ের সারাংশ বা পূর্ণ অনুবাদ দিতে পারি — যেমন: অধ্যায় ১: "Insight as a Flash" (বাংলা অনুবাদে: হঠাৎ প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি) অধ্যায় ২: "The Curious Nature of Insight" ... ৪. লেখার ধরন বজায় রাখা: Gary Klein-এর লেখায় অনেক বাস্তব কেস স্টাডি ও সংলাপ থাকে, অনুবাদে সেগুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা জরুরি। [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৩৬, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :সেগুলোকে বিস্তারিত আলোচনা করে তুলে ধরা হবে [[ব্যবহারকারী:Humayun.faruque|Humayun.faruque]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Humayun.faruque|আলাপ]]) ১০:৪৪, ২৫ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == তালিকায় যোগ == # {{eb|Movie Making Manual}} # {{eb|3D Printing}} [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৫:২৩, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] প্রথম বইটি সম্পূর্ণ নয় দ্বিতীয় বইটি যাচাই করে যুক্ত করা হবে। যুক্ত করা হলে এখানে জানিয়ে দিব। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ২য় বইটি যোগ করা হয়েছে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১২:০৯, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন পাতা অনুবাদ == Applications of ICT in Libraries এই পাতাটি অনুবাদ করতে চাই, পাতাটি তালিকায় যুক্ত করার অনুরোধ করছি, পাতাটির লিংক: [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৮:২৯, ২৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :1111 [[বিশেষ:অবদান/37.111.239.140|37.111.239.140]] ১২:৩৫, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::01714638936 ::MD suman sadar [[বিশেষ:অবদান/37.111.242.105|37.111.242.105]] ১৩:২১, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্ত করার অনুরোধ == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি।'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ২২:৪২, ২৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == কুইজ টেমপ্লেটটি কাজ করছেনা == বাংলা উইকিবইয়ের পাতাতে কুইজ টেমপ্লেট যোগ করতে চাইলে সেটি ঠিকমতো কাজ করছেনা। প্রশ্ন এবং উত্তর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। খালি '''টেমপ্লেট:কুইজ''' -এরকম দেখাচ্ছে। কেউ কি বলতে পারেন যে কুইজ টেমপ্লেট কিভাবে ব্যবহার করা যাবে, অথবা এর বিকল্প কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৫:৫১, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] বাংলা উইকিবইয়ে এক্সটেনশনটি আপাতত নেই [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৪, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::তাহলে কি কুইজের প্রশ্ন উত্তর গুলো আলাধাভাবে প্যারার আকারে লিখে দেব না কি যেমন আছে সেরকম রেখে দেব? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:১৮, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] যেমন আছে সেরকমই আপাতত রেখে দিন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৬, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == দুই পাতার এক শিরোনাম == সুধী বিচারকগন, একটি ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, নিম্নের এই দুটি উইকিবই... # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations (Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} - [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১১:১৪, ৩০ মে ২০২৫ (ইউটিসি) # {{eb|Engineering Acoustics/Forced Oscillations(Simple Spring-Mass System)|প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/বলকৃত দোলন (সাধারণ স্প্রিং-ভর সিস্টেম)}} এই দুটি ইংরেজি উইকিবইয়ের শিরোনাম এক থাকলেও তাদের বিষয়বস্তু ভিন্ন। আমি প্রথম বইটির বাংলা তর্জ‌মা করেছিলাম, কিন্তু দুটি বইয়ের শিরোনাম এক থাকার দরুন আমি যখন প্রথম বইটির লাল লিংক -এ ক্লিক করে অনুবাদ প্রকাশ করি, তখন সাথে সাথে দ্বিতীয় বইটিরও বাংলা অনুবাদে একই বিষয়বস্তু যুক্ত হয়ে গেছে। দুটি পাতার এক শিরোনাম থাকার কারনে হয়তো এটা হয়েছে কিন্তু দুটি বইয়ের বিষয়বস্তু আলাদা করা দরকার। এই বিষয়ে কেউ কি সাহায্য করতে পারবেন? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৪:২১, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] দুটি পাতার বিষয়বস্তু একত্রীকরণ করে ফেলুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০৩, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) ::একত্রীকরণ করব কি ভাবে ঠিক বুঝলামনা। দুটো পাতারই বিষয়বস্তু একসাথে অনুবাদ করে একটা পাতায় লিখব কি? [[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ০৯:২০, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) :::@[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] সামঞ্জস্য করে দুই পাতার বিষয়বস্তু একসাথে লিখুন [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১১:২৫, ৩১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Communication_Theory Communication Theory বইটি অনুবাদ করতে চাই। [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৮:১৮, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] বইটি ইতোমধ্যে বিদ্যমান [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৯:৩০, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing Professional and Technical Writing বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ০৯:৪৫, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == বই যোগ == https://en.m.wikibooks.org/wiki/Introduction_to_Philosophy Introduction to Philosophy বইটি অনুবাদ করতে চাই [[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Anisvai|আলাপ]]) ১০:০৪, ১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Anisvai|Anisvai]] যোগ করা হয়েছে। —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৯:২৪, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == @[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] দয়া করে <S>[[en:History of Islam]]</s> [[en:United Nations History]] বইটি যুক্ত করুন। আর এমনিতেই বইয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩০, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) #[[en:History of the National Hockey League]] এবং [[en:History of Florida]] কেও যুক্ত করতে পারেন [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৬:৩৫, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নতুন বই যুক্তকরণ প্রয়োজন == Java programming ( ''জাভা প্রোগ্রামিং) বইটি যুক্ত করার অনুরোধ করছি'' [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৭:২১, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == Recheck ejected pages == @[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] i have corrected two pages you rejected # [[রন্ধনপ্রণালী:আমের চাটনি|আমের চাটনি - উইকিবই]] # [[রন্ধনপ্রণালী:টমেটো চাটনি|টমেটো চাটনি - উইকিবই]] requesting to recheck them again [[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Sheikh Mehedi Hassan|আলাপ]]) ১৯:২২, ৩ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :@[[ব্যবহারকারী:Sheikh Mehedi Hassan|Sheikh Mehedi Hassan]] দুঃখিত, ভাষাটা বুঝতে পারিনি। বাংলায় বলুন। [[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:NusJaS|আলাপ]]) ০৫:৪২, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::@[[ব্যবহারকারী:NusJaS|NusJaS]] পুনঃ পর্যালোচনা করতে বলেছে :/ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == bokthiar == আমার সাইডে আমি ঢুকতে পারতেছি না কেন কারণ কি [[বিশেষ:অবদান/2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1|2401:1900:8051:92B5:0:0:0:1]] ০০:১৭, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == article topic finding problem == আমি "Article Topic" এ যেয়ে কিভাবে সাবমিট করব? [[ব্যবহারকারী:Abdullah Al Hasan (Hasan)|Abdullah Al Hasan (Hasan)]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Abdullah Al Hasan (Hasan)|আলাপ]]) ১৫:৫৬, ৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) == নিবন্ধ পুনরালোচনার অনুরোধ == সুধী বিচারকগন, আমার [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নামক নিবন্ধটি প্রোগ্রামিং -এর কোডে ভুল থাকার কারনে অগৃহীত হয়েছে। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি। আমার বিনীত অনুরোধ, নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা হোক।[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৮:১০, ১০ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :প্লীজ একটু দেখুন যদি [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/মডুলার প্রোগ্রামিং]] নিবন্ধটি আরেকবার পর্যালোচনা করা যায়। আমি ভুল সংশোধন করে দিয়েছি।[[ব্যবহারকারী:RDasgupta2020|RDasgupta2020]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:RDasgupta2020|আলাপ]]) ১৫:৩১, ১৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) qo38t5lrqfvlpt4jsbxprotqastoqv7 প্রাণীর অঙ্গসংস্থান ও শরীরবিদ্যা/পৌষ্টিকনালী ও পরিপাক 0 23355 84918 73934 2025-06-19T07:33:16Z Asikur.rahman25 11164 /* উদ্ভিদভোজী */ 84918 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রিউমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''', যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি—এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায়—এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী—দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময়—উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। এক, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দুই, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রিউমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রিউমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রিউমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রিউমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয়—এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রিউমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রিউমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} 7zmhuuh468jukdg6vncelz2spjxtpd4 84919 84918 2025-06-19T07:34:25Z Asikur.rahman25 11164 /* মাংসভোজী */ 84919 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রিউমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায়—এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী—দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময়—উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। এক, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দুই, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রিউমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রিউমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রিউমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রিউমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয়—এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রিউমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রিউমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} h9jsy9yk8g0ajvo03jyyfqmq34051zh 84920 84919 2025-06-19T07:38:14Z Asikur.rahman25 11164 /* সর্বভোজী */ 84920 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রিউমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায় এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। প্রথমত, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রিউমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রিউমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রিউমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রিউমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয়—এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রিউমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রিউমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} 3p3us7dje837q7hqt55ojz7j4vxgwwr 84921 84920 2025-06-19T07:39:25Z Asikur.rahman25 11164 /* অন্ত্র */ 84921 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রিউমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায় এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। প্রথমত, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রিউমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রিউমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রিউমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রিউমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয়—এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রিউমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রিউমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} o72va5qa2yztov8uio5mmqm09u5n9ob 84922 84921 2025-06-19T07:40:51Z Asikur.rahman25 11164 /* পাকস্থলী */ 84922 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রিউমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায় এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। প্রথমত, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রিউমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রিউমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রিউমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রিউমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয়—এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রিউমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রিউমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} lef6pudwd21e7zl8mhts3gg2aeap4gg 84923 84922 2025-06-19T07:42:07Z Asikur.rahman25 11164 /* রিউমেন */ 84923 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রিউমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায় এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। প্রথমত, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রুমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রিউমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রিউমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রিউমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয় এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রিউমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রিউমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} nlj4b0djwo5j01sw78v09ccma9wci9t 84924 84923 2025-06-19T07:42:57Z Asikur.rahman25 11164 84924 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রুমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায় এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। প্রথমত, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রুমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রুমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রুমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রুমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয় এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রুমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রুমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} 52gdh44qbcs4hoot0l9ga6vgkips683 84925 84924 2025-06-19T07:44:40Z Asikur.rahman25 11164 /* কার্যকরী সিকাম */ 84925 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রুমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায় এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। প্রথমত, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রুমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রুমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রুমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রুমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয় এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রুমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রুমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি। শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} ipdke93a939tewk2bypobg1fn2jhywa 84926 84925 2025-06-19T07:45:20Z Asikur.rahman25 11164 /* পাখির অন্ত্র */ 84926 wikitext text/x-wiki [[File:Anatomy and Physiology of Animals - 11 Digestion.jpg|thumb|400px|right|মূল তথ্যচিত্র [http://flickr.com/photos/vnysia/521324958/ vnysia] cc by]] ==উদ্দেশ্য== এই অধ্যায়টি শেষ করার পর আপনি জানতে পারবেন: * গ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, আত্মীকরণ, বর্জন, পেরিস্টালসিস এবং কাইম শব্দগুলোর অর্থ * উদ্ভিদভোজী, মাংসভোজী ও সর্বভোজী খাদ্যাভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা * অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ * খাবার যেসব অঙ্গ দিয়ে নিচে নামে, সেগুলোর সঠিক ক্রম ==অন্ত্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া== উদ্ভিদের কোষ সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে জৈব অণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে '''ফটোসিনথেসিস'''। প্রাণীরা এই তৈরি করা জৈব অণুগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের জন্য। কিছু প্রাণী (উদ্ভিদভোজী) উদ্ভিদ খায়; আবার কিছু (মাংসভোজী) এই উদ্ভিদভোজীদের খায়। ==উদ্ভিদভোজী== ''উদ্ভিদভোজীরা'' উদ্ভিদজাত উপাদান খায়। কোনও প্রাণীই উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে থাকা বৃহৎ '''সেলুলোজ''' অণু ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে না। তবে কিছু অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, এই সেলুলোজ ভাঙতে পারে। এজন্য উদ্ভিদভোজীরা এই অণুজীবদের সাহায্যে সেলুলোজ ভাঙিয়ে থাকে। উদ্ভিদভোজীর দুটি প্রকার রয়েছে: :প্রথমত, '''রিউমিন্যান্ট''' যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এরা বড় পেটের একটি বিশেষ অংশে, যেটিকে বলে '''রুমেন''', সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব রাখে। :দ্বিতীয় প্রকার হল যাদের বৃহৎ অন্ত্র এবং সিকাম বড়, যেটিকে বলে '''ফাংশনাল সিকাম''' এখানেও সেলুলোজ ভাঙা অণুজীব থাকে। এদের বলা হয় নন-রিউমিন্যান্ট উদ্ভিদভোজী; যেমন ঘোড়া, খরগোশ এবং ইঁদুর। উদ্ভিদ হলো একটি বিশুদ্ধ এবং ভালো পুষ্টির উৎস, কিন্তু এগুলো সহজে হজম হয় না। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সব উপাদান মেলে। গরু, ঘোড়া ও খরগোশ প্রায় সারা দিনই খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। অণুজীবদের যাতে সেলুলোজে পৌঁছাতে সুবিধা হয়, এজন্য উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর ভাঙতে হয়। এজন্য উদ্ভিদভোজীদের দাঁত চূর্ণ ও ঘর্ষণের উপযোগী হয়ে থাকে। তাদের অন্ত্র সাধারণত দীর্ঘ হয় এবং খাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। উদ্ভিদ খাওয়ার আরও একটি সুবিধা হলো এগুলো চলাফেরা করে না, তাই খুঁজে আনতে বেশি শক্তি খরচ হয় না। এটি মাংসভোজীদের থেকে আলাদা, যাদের শিকার ধরতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ==মাংসভোজী== '''মাংসভোজী প্রাণীরা''' যেমন বিড়াল ও কুকুর জাতীয় প্রাণী, ধলপোলার ভালুক, সীল, কুমির এবং শিকারি পাখি এরা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়। এদের অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয় শিকার খুঁজে বের করা, অনুসরণ করা, ধরা ও মেরে ফেলার জন্য। তবে শিকার করলে এরা উচ্চমাত্রার পুষ্টি পায়, কারণ মাংস খুব পুষ্টিকর। বন্য মাংসভোজীরা সাধারণত একবারে অনেক খায়, এরপর দীর্ঘ সময় কিছু খায় না। খাবার খাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটে হজম ও শোষণে। মাংসভোজীদের অন্ত্র সাধারণত ছোট ও সহজগঠনযুক্ত, কারণ মাংস উদ্ভিদের তুলনায় সহজে হজম হয়। এদের দাঁত মাংস, তরুণাস্থি ও হাড় চিবোতে উপযোগী হয়। এদের শরীর চটপটে, নখ শক্তিশালী ও ধারালো এবং ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা সাধারণত বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়। ==সর্বভোজী== অনেক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়জাত খাবার খায় এদের বলা হয় '''সর্বভোজী'''। সর্বভোজিতার দুটি সাধারণ সংজ্ঞা রয়েছে: ১. উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা থাকা। ২. এমন বৈশিষ্ট্য থাকা যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দুই ধরনের খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক প্রাণী এই দুই সংজ্ঞাই পূরণ করে, যেমন ভালুক, র‍্যাকুন, কুকুর ও হেজহগ। এদের খাবার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অন্য শিকারি প্রাণীর অবশিষ্ট শিকার পর্যন্ত। এদের নখ, ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল থাকায় সহজে শিকার করতে পারে, আবার মাংসভোজীদের তুলনায় অন্ত্র একটু লম্বা হওয়ায় উদ্ভিদ হজম করতেও সুবিধা হয়। এদের অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে, ফলে রান্না না করা মাংসও বেশিরভাগের কাছে খাওয়ার উপযোগী লাগে। মানুষ ও শিম্পাঞ্জি প্রথাগতভাবে সর্বভোজী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জির খাদ্যতালিকার ৯৫%-ই উদ্ভিদ, আর বাকি অংশ মূলত দিমাক। তাদের দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই, তাই অনেকে মনে করেন এদের উদ্ভিদভোজী বলা উচিত। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে মাংস খেয়ে এসেছে, তবে দাঁত, চোয়াল, পাকস্থলির অম্লতা ও অন্ত্রের দৈর্ঘ্যও অনেকটা উদ্ভিদভোজীদের মতোই। এই বিভ্রান্তির দুটি কারণ আছে। প্রথমত, গাছ-ভিত্তিক অথবা সামান্য প্রাণীজাত খাবারসহ ডায়েট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষণায় দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, ধনী মানুষদের ইতিহাসে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়, যা কেউ কেউ মনে করেন আমাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির ইঙ্গিত। প্রথাগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সর্বভোজীদের মাংসভোজী বা উদ্ভিদভোজীদের মতো বিশেষ দাঁত বা অন্ত্র নেই, তবে এদের বুদ্ধিমত্তা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি, যা তাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ==খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণ== প্রাণী উদ্ভিদ হোক বা মাংস, খাদ্যের '''কার্বোহাইড্রেট''', '''চর্বি''' ও '''প্রোটিন''' সাধারণত বৃহৎ অণু (দেখুন অধ্যায় ১)। এগুলোকে রক্তে শোষণ ও কোষে প্রবেশ করানোর আগে ছোট অণুতে ভাগ করতে হয়, যাতে শক্তি উৎপাদন বা নতুন কোষ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: :'''কার্বোহাইড্রেট''' যেমন সেলুলোজ, স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙতে হয় '''গ্লুকোজ''' ও অন্যান্য '''মনোস্যাকারাইডে'''; :'''প্রোটিন''' ভাঙতে হয় '''অ্যামিনো অ্যাসিডে'''; :'''চর্বি''' বা '''লিপিড''' ভাঙতে হয় '''ফ্যাটি অ্যাসিড''' ও '''গ্লিসারলে'''। ==অন্ত্র== '''ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট''', '''অ্যালিমেন্টারি ক্যানাল''' বা '''গাট''' একটি ফাঁপা নালি, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হল সেই অঙ্গতন্ত্র যা খাবারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী। মুখে বৃহৎ অণুসমূহ অন্ত্রে প্রবেশ করে—এটি '''গ্রহণ''' নামে পরিচিত। এরপর হজমের জন্য এনজাইমের সাহায্যে ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা হয় এটি '''পরিপাক'''। এরপর এগুলো রক্তে শোষিত হয়—'''শোষণ'''। কোষগুলো তখন এই ছোট অণু ব্যবহার করতে পারে—'''আত্মীকরণ'''। যেগুলো হজম হয় না, সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—এটি '''বর্জন''' (দেখুন চিত্র ১১.১)। [[Image:Anatomy and physiology of animals From ingestion to egestion.jpg]] চিত্র ১১.১ - গ্রহণ থেকে বর্জন পর্যন্ত অন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ হলো: :১। খাবার পরিবহন করা; :২। শারীরিকভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণ (চিবানো, মেশানো, তরল যোগ করা ইত্যাদি); :৩। রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ—হজম এনজাইম দিয়ে বড় অণু ভেঙে ছোট করা; :৪। এই ছোট অণু রক্তে শোষণ করা, যাতে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে। একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ (যেমন বিড়াল বা কুকুর) চিত্র ১১.২-তে দেখানো হয়েছে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Typical mammalian gut.jpg]] চিত্র ১১.২ - একটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর অন্ত্র খাবার '''মুখ''' দিয়ে প্রবেশ করে '''ইসোফ্যাগাস''', তারপর '''পাকস্থলী''', '''ছোট অন্ত্র''', '''সিকাম''', '''বড় অন্ত্র''', '''রেক্টাম''' এবং শেষে অপাচ্য অংশ '''পায়ু''' দিয়ে বেরিয়ে যায়। '''লিভার''' ও '''প্যানক্রিয়াস''' হজমে সহায়ক রস তৈরি করে এবং '''গল ব্লাডার''' এই '''পিত্তরস''' সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদভোজীদের একটি অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, যা সেলুলোজ হজমে সাহায্য করে। মাংসভোজীদেরও অ্যাপেন্ডিক্স থাকে, তবে তাদের খাদ্যতালিকায় সেলুলোজ না থাকায় এটি কার্যকর নয়। ==মুখ== মুখ হলো শরীরের ভেতরে খাবার নেওয়ার প্রবেশপথ। চিবোনোর সময় ঠোঁট খাবারকে মুখের ভেতরে ধরে রাখে এবং বাচ্চা প্রাণী মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার সময় ঠোঁট সাহায্য করে। হাতির ক্ষেত্রে ঠোঁট ও নাক একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে শুঁড়, যা খাবার সংগ্রহের প্রধান হাতিয়ার। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন হ্যামস্টারদের গালের ভেতর প্রসারিত থলির মতো অংশ থাকে, যা তারা খাবার বহন বা বাসা তৈরির উপকরণ আনতে ব্যবহার করে। খাবার দেখা বা গন্ধ পাওয়া কিংবা মুখে খাবার ঢোকার ফলে '''লালাগ্রন্থি''' সক্রিয় হয়ে '''লালা''' উৎপন্ন করে। বিড়াল ও কুকুরের শরীরে এই ধরনের চার জোড়া গ্রন্থি আছে (ছবি ১১.৩ দেখুন)। এই তরল খাবারকে ভেজায় এবং নরম করে, ফলে গিলতে সহজ হয়। এতে থাকে একটি উৎসেচক, '''স্যালিভারি অ্যামাইলেজ''', যা শ্বেতসার ভাঙার কাজ শুরু করে। '''জিহ্বা''' মুখে খাবার ঘোরাফেরা করায় এবং এটি একটি গোলাকার বলের মতো রূপে তৈরি করে, যাকে বলে বলাস, যা গিলতে সুবিধা করে। '''রুচিগ্রাহী কোষ''' বা স্বাদ কণা জিহ্বায় থাকে এবং বিড়াল ও কুকুরের জিহ্বা ছোট ছোট কাঁটার মতো অংশে ঢাকা থাকে, যা তারা নিজেদের পরিষ্কার করতে ও পানি চাটতে ব্যবহার করে। গরুর জিহ্বা পাকিয়ে ঘাস ধরতে পারে, এটি খুব কার্যকর। গিলবার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে ২৫টির মতো পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি খাবারকে অন্ননালিতে ঠেলে পাঠায় এবং একই সময়ে একটি ছোট টিস্যু ফ্ল্যাপ, যাকে বলে '''ইপিগ্লটিস''', তা শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় যাতে খাবার ট্রাকিয়াতে না গিয়ে প্রাণী শ্বাসরুদ্ধ না হয় (ছবি ১১.৪ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Salivary glands.jpg]] ছবি ১১.৩ - লালাগ্রন্থি [[Image:Anatomy and physiology of animals Section through head of a dog.jpg]] ছবি ১১.৪ - কুকুরের মাথার কাটা অংশ ==দাঁত== দাঁত খাবার চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলে এবং চূর্ণ করে। এগুলো হাড়ের গর্তে বসানো থাকে এবং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - মাড়ির উপরের অংশকে বলে 'ক্রাউন' এবং নিচের অংশকে বলে 'রুট'। ক্রাউনের ওপরে থাকে '''এনামেল''', যা শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ। এর নিচে থাকে '''ডেন্টিন''', যা অপেক্ষাকৃত নরম হলেও মজবুত এবং আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। দাঁতের কেন্দ্রে থাকে '''পাল্প''', যেখানে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে। দাঁত গর্তে ভালোভাবে বসে থাকে এবং বেশিরভাগ দাঁতের রুটের মাথা সরু থাকে, যেখানে একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে রক্তনালী ও স্নায়ু প্রবেশ করে (ছবি ১১.৫ দেখুন)। যেসব দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে, যেমন ইঁদুরদের সামনের দাঁত, তাদের রুটের ছিদ্র বড় থাকে এবং এদের বলা হয় '''ওপেন রুটেড দাঁত'''। স্তন্যপায়ীদের দুটি আলাদা সেটের দাঁত থাকে। প্রথম সেটকে বলে '''দুধ দাঁত''', যা পরে '''স্থায়ী দাঁত''' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stucture of tooth.jpg]] ছবি ১১.৫ - দাঁতের গঠন ===দাঁতের ধরন=== মাছ এবং সরীসৃপদের দাঁত সাধারণত একই ধরনের হলেও, স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে চার ধরনের আলাদা দাঁত দেখা যায়। '''ইনসাইজার''' বা সামনের দাঁতগুলো ছেনির মতো, যা দিয়ে খাবার কাটা হয়। ইঁদুর ও খরগোশের ইনসাইজার দাঁত সারাজীবন বাড়তে থাকে (ওপেন-রুটেড দাঁত)। এদের দাঁতের একদিকে শক্ত এনামেল থাকে, ফলে তা অসমভাবে ক্ষয় হয় এবং ধারালো থাকে। হাতির বড় ইনসাইজার দাঁতই হলো দাঁত বা '''টাস্ক'''। অলস প্রাণীর কোনো ইনসাইজার থাকে না, আর ভেড়ার ওপরের চোয়ালে ইনসাইজার নেই (ছবি ১১.৬ দেখুন)। সেখানে একটি শক্ত প্যাড থাকে যার সঙ্গে নিচের ইনসাইজার দাঁত খাবার কাটে। '''ক্যানাইন''' দাঁতগুলো (অথবা 'নেকড়ে দাঁত') লম্বা ও শঙ্কু আকৃতির এবং ইনসাইজারের ঠিক পেছনে থাকে। বিড়াল ও কুকুরের ক্ষেত্রে এগুলো খুব উন্নত হয় এবং শিকার ধরে রাখা, ছিদ্র করা ও হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় (ছবি ১১.৭ দেখুন)। বুনো শূকর ও ওয়ালরাসের টাস্ক আসলে বড় ক্যানাইন দাঁত। ইঁদুর ও ঘাসখেকো প্রাণীদের (যেমন ভেড়া) ক্যানাইন হয় না বা খুব ছোট থাকে। এই ফাঁকা অংশকে বলে '''ডায়াস্টিমা'''। ইঁদুর বা ভুঁইচাঁদার মতো প্রাণীদের এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে চিবোনোর সময়ের আবর্জনা বেরিয়ে যেতে পারে। '''পেছনের দাঁত''' বা '''প্রিমোলার''' ও '''মোলার''' দাঁত খাবার চূর্ণ ও গুঁড়ো করে। ঘাসখেকো প্রাণীদের মধ্যে এই দাঁত খুব বেশি উন্নত থাকে এবং জটিল ঢেউয়ের মতো গঠনে তৈরি, যাতে ভালোভাবে ঘষে খাবার ভেঙে ফেলা যায় (ছবি ১১.৬ দেখুন)। এই দাঁতগুলো শক্ত এনামেল ও নরম ডেন্টিনের স্তরে গঠিত হয়, যা ভিন্ন হারে ক্ষয় হয় এবং ধারালো প্রান্ত তৈরি করে। মাংসখেকোদের ক্ষেত্রে প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সঙ্গে কাঁচির মতো কাটে এবং একে বলে '''কারনাসিয়াল দাঁত''' (ছবি ১১.৭ দেখুন)। এদের সাহায্যে মাংস ও হাড় ছেঁড়া হয়। ===ডেন্টাল ফর্মুলা=== দাঁতের সংখ্যা '''ডেন্টাল ফর্মুলা''' বা দাঁতের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ইনসাইজার, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার দাঁতের সংখ্যা দেয়, এবং এটি মুখের '''এক পাশের''' দাঁত নির্দেশ করে। উপরের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে চার ধরনের দাঁতের সংখ্যা রেখার ওপরে লেখা হয়, এবং নিচের চোয়ালের বাম বা ডান পাশে লেখা হয় রেখার নিচে। যেমন ভেড়ার ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::০.০.৩.৩ :::::::৩.১.৩.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে কোনো ইনসাইজার বা ক্যানাইন নেই (অর্থাৎ সেখানে একটি '''ডায়াস্টিমা''' আছে), তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, তিনটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৬ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Sheeps skull.jpg]] ছবি ১১.৬ - একটি ভেড়ার খুলি একটি কুকুরের ডেন্টাল ফর্মুলা হলো: :::::::৩.১.৪.২ :::::::৩.১.৪.৩ এটি বোঝায় যে উপরের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং দুটি মোলার আছে। নিচের ডান (বা বাম) চোয়ালে তিনটি ইনসাইজার, একটি ক্যানাইন, চারটি প্রিমোলার এবং তিনটি মোলার আছে (ছবি ১১.৭ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Dogs skull.jpg]] ছবি ১১.৭ - একটি কুকুরের খুলি ==অন্ননালি== '''অন্ননালি''' খাবারকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায়। অন্ননালি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ভেতর দিয়ে খাবার অগ্রসর হয় পাতলা পেশির সংকোচনের মাধ্যমে, যেগুলো খাবারকে একরকম টিউবের ভেতর টুথপেস্টের মতো ঠেলে নিয়ে যায়। এই চলাচলকে বলা হয় '''পেরিস্টালসিস''' (ছবি ১১.৮ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Peristalis.jpg]] ছবি ১১.৮ - পেরিস্টালসিস ==পাকস্থলী== '''পাকস্থলী''' খাবার সংরক্ষণ ও মিশ্রণের কাজ করে। এর দেয়ালে থাকা গ্রন্থিগুলো '''গ্যাস্ট্রিক রস''' নিঃসরণ করে যাতে প্রোটিন ও চর্বি হজম করার উৎসেচক থাকে, এবং '''হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড''' থাকে যা খাবারকে খুব অ্যাসিডিক করে তোলে। পাকস্থলীর দেয়াল খুব পেশিবহুল এবং তা খাবারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। এই মিশ্রিত তরলকে বলে '''কাইম''' (উচ্চারণ: কাইম)। পাকস্থলীর প্রবেশ ও প্রস্থানপথে '''স্ফিনক্টার''' নামের মাংসপেশির রিং থাকে, যা খাবার আসা-যাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে (ছবি ১১.৯ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach.jpg]] ছবি ১১.৯ - পাকস্থলী ==ছোট অন্ত্র== খাদ্যের বড় অণুগুলোর ভাঙ্গন এবং ছোট অণুগুলোর শোষণের বেশিরভাগ কাজ হয় লম্বা ও সরু ছোট অন্ত্রে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রাণীর ভেদে আলাদা হয়—মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ৬.৫ মিটার, ঘোড়ায় ২১ মিটার, গরুতে ৪০ মিটার এবং নীল তিমিতে ১৫০ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ছোট অন্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত: [[W:ডুওডেনাম|ডুওডেনাম]] (পেটের পরেই), [[W:জেজুনাম|জেজুনাম]] এবং [[W:ইলিয়াম|ইলিয়াম]]। ডুওডেনাম তিন ধরণের নিঃসরণ গ্রহণ করে: :১) যকৃত থেকে '''পিত্তরস'''; :২) অগ্ন্যাশয় থেকে '''প্যানক্রিয়াটিক রস''' এবং :৩) অন্ত্রের দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে '''আন্ত্রিক রস'''। এই রসগুলো স্টার্চ, চর্বি ও প্রোটিনের সম্পূর্ণ পরিপাক সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো অন্ত্রের দেয়ালের মধ্য দিয়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রে শোষিত হয়। এই দেয়াল আঙুলের মত ছোট ছোট '''ভিলি''' দ্বারা আবৃত থাকে, যা শোষণক্ষমতা বাড়ায় (চিত্র ১১.১০ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Wall of small intestine showing villi.jpg]] চিত্র ১১.১০ - ভিলিসহ ছোট অন্ত্রের দেয়াল ==রুমেন== [[W:রিউমিন্যান্ট|রিউমিন্যান্ট]] তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া ও হরিণদের পাকস্থলী অত্যন্ত পরিবর্তিত, যাতে এটি "ফারমেন্টেশন ভ্যাট" হিসেবে কাজ করে। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় '''রুমেন'''। গরুর ক্ষেত্রে এটি পুরো পেটের বাম অংশ জুড়ে থাকে এবং প্রায় ২৭০ লিটার ধারণ করতে পারে। '''রেটিকুলাম''' তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এর ভেতরের অংশ মধুচক্রের মতো ভাঁজযুক্ত। উটের ক্ষেত্রে এই অংশ পানি সংরক্ষণের জন্য আরও পরিবর্তিত। পরবর্তী অংশ '''ওমাসাম''', যার অভ্যন্তরে বহু ভাঁজ থাকে। তবে উটের ওমাসাম থাকে না। শেষ ভাগটি '''অ্যাবোমাসাম''', এটি প্রকৃত অর্থে "সত্যিকারের" পাকস্থলী, যেখানে খাদ্য মেশানো ও পরিপাকের জন্য পেশীগুলো কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১১ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals The rumen.jpg]] চিত্র ১১.১১ - রুমেন রিউমিন্যান্টরা ঘাস প্রায় না চিবিয়েই গিলে ফেলে এবং এটি খাদ্যনালী ধরে রুমেন ও রেটিকুলামে পৌঁছে। এখানে তরল যোগ হয় এবং পেশীপ্রাচীর খাদ্যকে মেশাতে থাকে। এই দুই অংশই ফারমেন্টেশনের প্রধান স্থান। এখানে [[W:ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] ও এককোষী প্রাণীরা উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরে থাকা [[W:সেলুলোজ|সেলুলোজ]] ভাঙা শুরু করে। তারা সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে যা প্রাণীর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় [[W:মিথেন|মিথেন]] ও [[W:কার্বন ডাইঅক্সাইড|কার্বন ডাইঅক্সাইড]] গ্যাস উৎপন্ন হয় এগুলোই গরু বা ভেড়ার 'ঢেঁকুর' এর কারণ। শুধু তাই নয়, এই অণুজীবগুলো '''ভিটামিন E, B এবং K''' উৎপাদন করে, যা প্রাণীটি ব্যবহার করতে পারে। এসব অণুজীবের পরিপাক হওয়া দেহই রিউমিন্যান্টদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। বন্য পরিবেশে ঘাস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে শিকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই তৃণভোজীরা দ্রুত ঘাস গিলে ফেলে এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে সেটি আবার মুখে তোলে চিবানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে '''রিউমিনেশন''' বা জাবর কাটা। ভালোভাবে চিবানো খাদ্য আবার রুমেনে ফিরে যেতে পারে অথবা যদি এটি যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা একটি বিশেষ খাঁজ ধরে সরাসরি ওমাসামে চলে যায়। ওমাসামে খাদ্য মথিত হয় এবং পানি শোষিত হয়, এরপর এটি অ্যাবোমাসামে প্রবেশ করে। অ্যাবোমাসামই প্রকৃত পাকস্থলীর মত কাজ করে এবং প্রোটিন পরিপাকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে। ==বৃহৎ অন্ত্র== '''বৃহৎ অন্ত্র''' তিনটি ভাগ নিয়ে গঠিত: '''সিকাম''', '''কোলন''' এবং '''রেকটাম'''। ছোট অন্ত্র থেকে কোলনে প্রবেশ করা [[W:কাইম|কাইম]] মূলত পানি ও অপচনীয় উপাদান যেমন সেলুলোজ (ফাইবার বা রাফেজ) নিয়ে গঠিত। শুকর এবং মানুষের মতো সর্বভোজীদের ক্ষেত্রে কোলনের প্রধান কাজ হলো পানি শোষণ করে কঠিন মল তৈরি করা। এই অংশে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া '''ভিটামিন B ও K''' উৎপন্ন করে। সিকাম হলো একটি থলের মতো অবস্থা যেখানে ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রে যুক্ত হয়। এটি মানুষের ও শুকরের দেহে ছোট এবং পানি শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় এবং তখন একে বলা হয় '''কার্যকরী সিকাম'''। এখানে অণুজীবের মাধ্যমে সেলুলোজ পরিপাক হয়। সিকামের একদম শেষে একটি সরু মৃতপ্রান্ত নল থাকে যাকে বলা হয় '''অ্যাপেন্ডিক্স'''। এটি বিশেষ করে প্রাইমেটদের মধ্যে বড় হলেও, এর কোনো হজমজনিত কার্যকারিতা নেই। ==কার্যকরী সিকাম== খরগোশ, ইঁদুর ও গিনিপিগের ক্ষেত্রে সিকাম অনেক বড় এবং এটি ফারমেন্টেশন ভ্যাট হিসেবে কাজ করে। এখানে অণুজীব সেলুলোজ ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তর করে (চিত্র ১১.১২ দেখুন)। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সিকাম এবং কোলন দুটোই বড়। এখানেও সেলুলোজ ভেঙে শোষণযোগ্য ছোট অণু তৈরি হয়। তবে কার্যকরী সিকাম পরিপাক ও শোষণের মূল জায়গার পরে অবস্থান করায়, এটি রুমেনের তুলনায় কম কার্যকর। ফলে এখানে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো শোষিত না হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে খরগোশ, ইঁদুর ও ঘোড়ার বাচ্চারা নিজেদের মল খেয়ে ফেলে যাতে তা আবার অন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং শোষণ সম্পন্ন হয়। খরগোশ দুই ধরণের মল ত্যাগ করে। নরম রাতের মল তারা সরাসরি পায়ুপথ থেকে খেয়ে ফেলে এবং শক্ত মল, যেটা আমরা সাধারণত দেখি, অন্ত্র দিয়ে দু’বার গিয়ে তৈরি হয়। [[Image:Anatomy and physiology of animals Gut of a rabbit.jpg]] চিত্র ১১.১২ - খরগোশের অন্ত্র ==পাখির অন্ত্র== পাখির অন্ত্র স্তন্যপায়ীর অন্ত্রের তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা। সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হলো, পাখিদের দাঁতের পরিবর্তে '''ঠোঁট''' থাকে। দাঁতের তুলনায় ঠোঁট অনেক হালকা, যা উড়ার উপযোগী। চিন্তা করুন তো, একটা পাখি মাথায় দাঁত নিয়ে উড়তে পারবে? খাদ্যনালীর গোড়ায় পাখিদের একধরনের থলের মতো অংশ থাকে যাকে বলে '''ক্রপ'''। অনেক পাখির ক্ষেত্রে এটি খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখে পেটের আগেই। কবুতর ও ঘুঘুর মতো পাখিরা ক্রপ থেকে একটি বিশেষ তরল '''ক্রপ-মিল্ক''' নিঃসরণ করে যা বাবা-মা পাখি তাদের ছানাদের খাওয়ায়। পাখির পাকস্থলীও পরিবর্তিত, যা দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হলো প্রকৃত পাকস্থলী, যেটির পেশীদেয়াল ও এনজাইম নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকে। দ্বিতীয় ভাগ হলো '''গিজার্ড'''। বীজভোজী পাখিদের গিজার্ডে পেশীপ্রাচীর খুব শক্ত হয় এবং এতে পাথরের টুকরো থাকে যা খাদ্য পিষে গুঁড়ো করে। এই কারণেই খাঁচার পাখিকে কাঁকর দেওয়া জরুরি।শিকারি পাখিদের (যেমন বাজপাখি) গিজার্ডের দেয়াল তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং এটি বড় খাবার ধরতে প্রসারিত হয় (চিত্র ১১.১৩ দেখুন)। [[Image:Anatomy and physiology of animals Stomach & small intestine of hen.jpg]] চিত্র ১১.১৩ - মুরগির পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র ==পরিপাক প্রক্রিয়া== পরিপাকের সময় বড় খাদ্য অণুগুলোকে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে ছোট অণুতে রূপান্তরিত করা হয়। অন্ত্রে নিঃসৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ধরনের এনজাইম হলো: :# '''অ্যামাইলেज़''', যা কার্বোহাইড্রেট যেমন স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজের মতো মনোসাকারাইডে পরিণত করে। :# '''প্রোটিয়েজ''', যা প্রোটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। :# '''লিপেজ''', যা চর্বি বা লিপিডকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। গ্ল্যান্ডগুলো বিভিন্ন নিঃসরণ উৎপন্ন করে, যা অন্ত্রে খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এই নিঃসরণগুলোর মধ্যে রয়েছে: :# '''লালা''' যা মুখে একাধিক '''লালাগ্রন্থি''' থেকে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.৩ দেখুন)। লালার বেশিরভাগ অংশ পানি হলেও এতে লবণ, শ্লেষ্মা ও স্যালিভারি অ্যামাইলেज़ থাকে। লালার কাজ হলো চিবোনোর সময় খাদ্যকে সিক্ত ও মসৃণ করা এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ স্টার্চ পরিপাকে সহায়তা করে। :# '''গ্যাস্ট্রিক রস''' যা পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এতে '''পেপসিন''' থাকে, যা প্রোটিন ভাঙে এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে যা এনজাইমের কাজ করার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। শিশু প্রাণীদের পাকস্থলীতে দুধ পরিপাকের জন্য রেনিনও তৈরি হয়। :# '''পিত্তরস''', যা যকৃত তৈরি করে। এটি '''পিত্তথলি'''তে জমা থাকে এবং '''পিত্তনালি'''র মাধ্যমে ডুওডেনামে নিঃসৃত হয় (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। (মনে রাখবেন ঘোড়া, হরিণ, টিয়া এবং ইঁদুরের পিত্তথলি নেই)। পিত্তরস কোন এনজাইম নয়। এর কাজ হলো বড় ফ্যাট গ্লোবুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা, যাতে ফ্যাট ভাঙার এনজাইম সহজে কাজ করতে পারে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Liver, gall bladder & pancreas.jpg]] চিত্র ১১.১৪ - যকৃত, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয় ==অগ্ন্যাশয়ের রস== '''অগ্ন্যাশয়''' হলো একটি গ্রন্থি, যা ডুওডেনামের কাছাকাছি অবস্থিত (চিত্র ১১.১৪ দেখুন)। বেশিরভাগ প্রাণীতে এটি বড় ও সহজে দৃশ্যমান হলেও ইঁদুর ও খরগোশের মধ্যে এটি অন্ত্রের লুপগুলোর মধ্যে থাকা ঝিল্লির ('''মেসেনটেরি''') ভিতরে থাকে এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। '''অগ্ন্যাশয় রস''' অগ্ন্যাশয়ে উৎপন্ন হয়। এটি ডুওডেনামে প্রবাহিত হয় এবং এতে স্টার্চ পরিপাকে '''অ্যামাইলেজ''', ফ্যাট ভাঙতে '''লিপেজ''' ও প্রোটিন পরিপাকে '''প্রোটিয়েজ''' থাকে। ==অন্ত্ররস== '''অন্ত্ররস''' ছোট অন্ত্রের আস্তরণে থাকা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। এতে ডিসাকারাইড ও প্রোটিন ভাঙার এনজাইম থাকে, পাশাপাশি শ্লেষ্মা ও লবণ থাকে, যা ছোট অন্ত্রের বস্তুগুলোকে আরও ক্ষারীয় করে তোলে যাতে এনজাইমগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ==শোষণ== পরিপাকের ফলে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো '''ছোট অন্ত্র'''র দেয়ালের '''ভিলি'''তে শোষিত হয়। ভিলির ছোট আঙুলের মতো অংশগুলো শোষণের জন্য পৃষ্ঠের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তনালী দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে, যা হয় ছড়িয়ে পড়ে বা সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে ঘটে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল '''ল্যাক্টিয়াল''' নামক লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে, যা প্রতিটি ভিলাসের কেন্দ্রে অবস্থিত। ==যকৃত== যকৃত পেটের গহ্বরে, ডায়াফ্রামের পাশে অবস্থিত (চিত্র ২ ও ১৪ দেখুন)। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় একক অঙ্গ এবং এর ১০০-রও বেশি পরিচিত কাজ রয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক সংক্রান্ত কাজ দুটি হলো: :# ফ্যাট পরিপাকে সহায়তা করার জন্য '''পিত্তরস''' তৈরি (আগে বর্ণিত হয়েছে) এবং :# '''রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ''' গ্লুকোজ অন্ত্রের ভিলির ক্যাপিলারিতে শোষিত হয়। এটি '''হেপাটিক পোর্টাল নালিকা''' বা '''শিরা'''র মাধ্যমে সরাসরি যকৃতে যায় (চিত্র ১১.১৫ দেখুন)। যকৃত এই গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে। যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন যকৃত এই গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তর করে রক্তে ছেড়ে দেয়, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। '''অগ্ন্যাশয়'''র বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন '''ইনসুলিন''' নামক হরমোন এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। [[Image:Anatomy and physiology of animals Control of glucose by the liver.jpg]] চিত্র ১১.১৫ - যকৃতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ যকৃতের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে: :৩. '''ভিটামিন এ''' তৈরি করা, :৪. '''রক্ত প্লাজমা'''তে থাকা '''অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন''' ও '''ফাইব্রিনোজেন''' নামক '''প্রোটিন''' তৈরি করা, :৫. '''লোহা''' সংরক্ষণ করা, :৬. মদ ও বিষাক্ত পদার্থের মতো '''বিষাক্ত উপাদান''' রক্ত থেকে সরিয়ে নিরাপদ উপাদানে রূপান্তর করা, :৭. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে '''তাপ উৎপাদন''' করা। [[Image:Anatomy and physiology of animals Summary of the main functions of the different regions of the gut.jpg]] চিত্র ১১.১৬ - অন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান কাজের সারাংশ ==সারাংশ== * '''অন্ত্র''' উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উপাদানকে ভেঙে এমন পুষ্টিতে পরিণত করে যা প্রাণীর দেহে ব্যবহারযোগ্য। * উদ্ভিদের উপাদান প্রাণিজ টিস্যুর চেয়ে ভাঙা কঠিন। তাই '''তৃণভোজীদের''' অন্ত্র '''মাংসভোজীদের''' চেয়ে বড় ও জটিল হয়। তৃণভোজীদের সাধারণত একটি কুঠুরি ('''রুমেন''' বা '''কার্যকর সিকাম''') থাকে যেখানে '''সেলুলোজ''' ভাঙার জন্য অণুজীব থাকে। * দাঁত দিয়ে চিবোনোর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। দাঁতের প্রধান চার ধরন হলো: '''ইনসিজর, ক্যানাইন, প্রিমোলার''' ও '''মোলার'''। কুকুর ও বিড়ালের প্রিমোলার ও মোলার দাঁত একে অপরের সাথে কাটার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এগুলোকে '''কারনাসিয়াল''' দাঁত বলা হয়। * '''লালা''' মুখে নিঃসৃত হয়। এটি খাদ্যকে সিক্ত করে গিলতে সাহায্য করে এবং স্টার্চ ভাঙার জন্য একটি এনজাইম থাকে। * চিবানো খাবার গিলে ফেলা হয় এবং '''ইসোফাগাস''' দিয়ে চলে যায়, যেখানে দেয়ালের '''পারিস্টালসিস''' নামক সঞ্চালনের মাধ্যমে নিচে নামানো হয়। এরপর খাবার পাকস্থলীতে যায়, যেখানে এটি ঘুরে মিশে যায় ও অ্যাসিডিক '''গ্যাস্ট্রিক রস'''র সাথে মিশে প্রোটিন পরিপাক শুরু হয়। * পরবর্তী '''কাইম''' ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙার এনজাইম নিঃসৃত হয়। যকৃত থেকে তৈরি '''পিত্তরস'''ও এখানে নিঃসৃত হয়, যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। '''ভিলি''' পরিপাকজাত দ্রব্য শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় বড় পৃষ্ঠের আয়তন দেয়। * '''কলন''' ও '''সিকাম'''-এ পানি শোষিত হয় এবং অণুজীব কিছু '''ভিটামিন বি ও কে''' তৈরি করে। খরগোশ, ঘোড়া ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে সিকাম বড় ও '''কার্যকর সিকাম''' হিসেবে কাজ করে এবং অণুজীব সেলুলোজের কোষপ্রাচীর ভেঙে সহজ কার্বোহাইড্রেটে রূপান্তর করে। বর্জ্য পদার্থ '''রেকটাম''' ও '''মলদ্বার''' দিয়ে শরীর থেকে বের হয়। * '''অগ্ন্যাশয়''' '''অগ্ন্যাশয় রস''' তৈরি করে, যাতে ছোট অন্ত্রে নিঃসৃত বেশিরভাগ এনজাইম থাকে। * পিত্তরস তৈরির পাশাপাশি যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিলি থেকে শোষিত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর ও সংরক্ষণ করে। যকৃত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে, লোহা সংরক্ষণ করে, ভিটামিন এ তৈরি করে ও তাপ উৎপন্ন করে। ==ওয়ার্কশিট== [http://www.wikieducator.org/Digestive_System_Worksheet পরিপাকতন্ত্র ওয়ার্কশিট] ব্যবহার করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ শিখুন। ==নিজেকে পরীক্ষা করো== তারপর নিচের "নিজেকে পরীক্ষা করো" অংশটি পড়ে দেখো তুমি যা শিখেছো তা কতটা বুঝেছো এবং মনে রেখেছো। ১. দাঁতের চারটি ভিন্ন প্রকারের নাম লেখো। ২. বিড়াল ও কুকুরের দাঁত কীভাবে মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী হয়েছে সে বিষয়ে দুটি তথ্য দাও: :১. :২. ৩. লালা খাবারের সঙ্গে কী করে? ৪. পারিস্টালসিস কী? ৫. পাকস্থলীতে খাবারের কী ঘটে? ৬. কাইম কী? ৭. কাইম পাকস্থলী থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যায়? ৮. ভিলাই কী এবং এটি কী কাজ করে? ৯. ক্ষুদ্রান্ত্রে কী ঘটে? ১০. অগ্ন্যাশয় কোথায় অবস্থিত এবং এটি কী কাজ করে? ১১. খরগোশের সিকাম বিড়ালের সিকাম থেকে কীভাবে আলাদা? ১২. যকৃত কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে? ১৩. যকৃতের দুটি অন্যান্য কাজ লেখো: :১. :২. [[/নিজের উত্তর যাচাই কর/]] ==ওয়েবসাইটসমূহ== *http://www.second-opinions.co.uk/carn_herb_comparison.html Second opinion. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের একটি ভালো তুলনা *http://www.chu.cam.ac.uk/~ALRF/giintro.htm The gastrointestinal system. মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্ত্রতন্ত্রের তুলনা, আগের ওয়েবসাইটটির চেয়ে আরও উন্নত তথ্যসহ। *http://www.westga.edu/~lkral/peristalsis/index.html পারিস্টালসিসের অ্যানিমেশন। *http://en.wikipedia.org/wiki/Digestion উইকিপিডিয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। বেশিরভাগ তথ্য মানুষের হজম নিয়ে হলেও অনেক কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ==শব্দকোষ== *[http://en.wikibooks.org/wiki/Anatomy_and_Physiology_of_Animals/Glossary শব্দকোষের লিংক] {{BookCat}} rmjunfdmk3jn3l76r6usytovez4n44v সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/জনসংখ্যাতত্ত্ব 0 23359 84903 73978 2025-06-19T06:55:47Z Asikur.rahman25 11164 /* প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা */ 84903 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা—সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল—সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয়, বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায়—যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত — সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা — যেমন, সন্তান পালনের খরচ — আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায়, যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]]-এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত— ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে— বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না— অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে, প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে যুক্তি দেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে, কিন্তু জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’-এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে, তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]]-সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== * The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। * International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। * International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} kj5nhwwmwrb7plt2191k3b03oqpe6nk 84904 84903 2025-06-19T06:57:51Z Asikur.rahman25 11164 /* প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা */ 84904 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত — সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা — যেমন, সন্তান পালনের খরচ — আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায়, যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]]-এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত— ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে— বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না— অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে, প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে যুক্তি দেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে, কিন্তু জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’-এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে, তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]]-সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== * The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। * International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। * International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} n6d93jhvt4atbik32ujuptn9fd4ho3s 84905 84904 2025-06-19T06:59:26Z Asikur.rahman25 11164 /* মৃত্যুহার */ 84905 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা — যেমন, সন্তান পালনের খরচ — আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায়, যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]]-এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত— ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে— বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না— অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে, প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে যুক্তি দেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে, কিন্তু জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’-এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে, তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]]-সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== * The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। * International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। * International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} jecjpam3t3pxdhleqn64dtmy8oxkjhx 84906 84905 2025-06-19T07:01:56Z Asikur.rahman25 11164 /* জনসংখ্যাগত রূপান্তর */ 84906 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায়, যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]]-এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত— ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে— বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না— অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে, প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে যুক্তি দেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে, কিন্তু জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’-এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে, তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]]-সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== * The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। * International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। * International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} i0sxwvw5f3jto8997rjgjlzilm4qf2v 84907 84906 2025-06-19T07:02:58Z Asikur.rahman25 11164 /* জনসংখ্যাগত রূপান্তর */ 84907 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায়, যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]]-এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত— ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে— বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না— অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে, প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে যুক্তি দেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে, কিন্তু জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’-এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে, তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]]-সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== * The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। * International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। * International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} bnhk89mq4smxrn8stjpx8gp9pbt9y37 84908 84907 2025-06-19T07:05:32Z Asikur.rahman25 11164 /* জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য */ 84908 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে যুক্তি দেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে, কিন্তু জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’-এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে, তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]]-সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== * The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। * International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। * International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} sijajankgg102g8bnzzlhcfez0acyi8 84909 84908 2025-06-19T07:08:08Z Asikur.rahman25 11164 /* জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস */ 84909 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== * The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। * International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। * International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} a8q1w65y9erqkn9xcnpawid65yqfu4h 84910 84909 2025-06-19T07:10:15Z Asikur.rahman25 11164 /* অতিরিক্ত পাঠ */ 84910 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== *The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। *International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। *International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} 95mu81o2bth8yyf0da4gswhuaiqh1a9 84911 84910 2025-06-19T07:12:35Z Asikur.rahman25 11164 /* অতিরিক্ত পাঠ */ 84911 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== *The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। *International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। *International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} 0qy2x979iq7epssh5hq5tqmvemi846d 84912 84911 2025-06-19T07:13:41Z Asikur.rahman25 11164 /* অতিরিক্ত পাঠ */ 84912 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি]— পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি— [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা]— ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} gu7400y22b42n7am85wr80ef4ae8t70 84913 84912 2025-06-19T07:16:03Z Asikur.rahman25 11164 /* বহিঃসংযোগ */ 84913 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি] পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা] ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} ctw2mhivx848qby2ci9hb2vnpzscwmb 84914 84913 2025-06-19T07:17:41Z Asikur.rahman25 11164 /* অভিবাসন */ 84914 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের "World Urbanization Prospects" রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি] পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা] ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} 444ed5aln1a0wskmbkint9lbqcmu7fk 84915 84914 2025-06-19T07:20:50Z Asikur.rahman25 11164 /* আন্দোলন */ 84915 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w:মুম্বই|মুম্বই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের বিশ্ব নগরায়ণের সম্ভাবনা রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি] পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা] ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} t0lu5xvh1y908f5msxax75l72sxb3xg 84916 84915 2025-06-19T07:21:24Z Asikur.rahman25 11164 /* আন্দোলন */ 84916 wikitext text/x-wiki {|style="width:80%; text-align:left; background-color:#BCF5A9;" align="center" |- | পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট শহরের একদল পৌর কাউন্সিলর দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। গত কয়েক দশকে উচ্চ স্থানীয় জন্মহার শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এখন আরও বেশি মানুষ জমি চায় ঘর তৈরি করার জন্য, অথচ সেই জমি দরকার খাদ্য উৎপাদনের জন্যও। পরিষ্কার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় মালিকেরা আগের চেয়ে কম মজুরিতে মরিয়া কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতার ফলে সহিংস সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলররা বুঝতে পারেন যে, ভবিষ্যতের আরও বড় সংকট এড়াতে উচ্চ জন্মহার কমানো জরুরি। তারা এমন কিছু শহরের উদাহরণ দেন, যারা জন্মহার কমাতে নানা চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ নতুন জন্ম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। কেউবা বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আবার কেউ জনসচেতনতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার কোনোটিই সফল হয়নি। কারণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানদের আশীর্বাদ মনে করা হতো, আর বয়সে বৃদ্ধ হলে নিজের দেখভালের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তাও। অবশেষে, কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ে ফেরা এক তরুণ কথা বললো। সে বলল, “আমি এমন এক পদ্ধতির কথা শিখেছি, যা আফ্রিকায়ই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই জন্মহার কমাতে দারুণ সফল হয়েছে। প্রথমে বিষয়টা স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু অনেক গবেষণাই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।” শহরের কাউন্সিলররা উৎসাহিত হলেন, এবং তাকে বিস্তারিত বলতে বললেন। “আপনারা যদি সত্যিই জন্মহার কমাতে চান... তাহলে নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দিতে হবে।” এই আকর্ষণীয় পরামর্শের পেছনের কারণগুলো অধ্যায়ের পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। |} ==পরিচিতি== [[File:Jiayuguan-029.JPG|400px|thumbnail|right|চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অনেক দেশের মতো চীন সরকারও প্রজনন হার সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করেছে।]] '''ডেমোগ্রাফি''' হলো মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতার অধ্যয়ন। এটি জনসংখ্যার আকার, গঠন ও বণ্টন এবং জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন ও বার্ধক্যের মাধ্যমে জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করে। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ পুরো সমাজ বা শিক্ষা, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি মানদণ্ডে নির্ধারিত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। ==ডেমোগ্রাফি কেন অধ্যয়ন করা হয়?== সমাজবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব ([[W:বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব|বিশ্ব ব্যবস্থার তত্ত্ব]]) প্রস্তাব করার আগে, বিশেষ করে বৃহৎ বা সামাজিক পর্যায়ে, সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য প্রথমে ডেমোগ্রাফিক সূচকগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ডেমোগ্রাফিক বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী উপায় যা অনেক সমাজগত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ [[W:প্রথম বিশ্বযুদ্ধ#কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ|রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের]] দিকে নজর দেয়, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব অনেকেই বিবেচনায় নেয় না। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্য, জমি, বাণিজ্যপথ ও বন্দর ইত্যাদির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ে। যদিও এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ নয়, তবে যুদ্ধের আগে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে এটির একটি ভূমিকা থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডেমোগ্রাফিক সূচক প্রায়শই বৈশ্বিক ঘটনাবলিকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যাখ্যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ==ইতিহাস== যেমনটা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানব জনসংখ্যা অধ্যয়নের শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে, যখন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। কিছু প্রাথমিক গণিতবিদ [[W:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] বা জীবন প্রত্যাশার তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত জীবন বীমা ও [[W:অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞান|অ্যাকচুয়ারিয়াল]] কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]], আরেকটি ডেমোগ্রাফিক সরঞ্জাম, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল: * কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে * রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণে ডেমোগ্রাফিক হিসাব-নিকাশের বিকাশ শুরু হয় ১৮শ শতকে। তবে জনশুমারির ইতিহাস আরও পুরনো, প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকেই চীন ও রোমানদের মধ্যে এবং তারও আগে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল। অধিকাংশ আধুনিক জনশুমারি শুরু হয়েছে ১৮শ শতকের শেষভাগে। ==তথ্য ও পদ্ধতি== ডেমোগ্রাফি বড় আকারের তথ্যভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করে, যা প্রধানত [[W:জনশুমারি|জনশুমারি]] ও নিবন্ধন পরিসংখ্যান (যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের নিবন্ধন) থেকে সংগৃহীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংগৃহীত বড় তথ্যভাণ্ডার (যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর শুমারি হয়) জন্ম ও মৃত্যুহারের মতো ডেমোগ্রাফিক সূচকের প্রবণতা নির্ধারণে প্রয়োজন হয়। তবে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, নির্ভরযোগ্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য এখনো পাওয়া কঠিন। কিছু এলাকায় ''জনশুমারি'' শব্দটি ''কর'' আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সমস্যা তৈরি হয়। ===ডেমোগ্রাফিক সূচক=== যেহেতু ডেমোগ্রাফি মানব জনসংখ্যার পরিবর্তনে আগ্রহী, তাই ডেমোগ্রাফাররা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু সূচকে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো জন্মহার ও মৃত্যুহার, যেগুলোকে [[W:প্রজনন|''প্রজনন হার'']] (এছাড়াও দেখুন [[W:উর্বরতা|উর্বরতা]]) এবং ''মৃত্যুহার'' বলা হয়। এছাড়াও, মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ধারা বা অভিবাসন প্রবণতাও ডেমোগ্রাফারদের আগ্রহের বিষয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপ নিচে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও ডেমোগ্রাফি প্রায়ই সামাজিক কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে—বিশেষত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে—নির্ভুল সংখ্যাগত মান পাওয়া কঠিন। ফলে নতুন ও আরও উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামো ও চিত্র নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ব্যাখ্যাও পরিবর্তিত হতে থাকে।<ref>Dudley L. Poston, Michael Micklin. 2006. Handbook of Population. Springer.</ref> ===প্রজননক্ষমতা এবং জননক্ষমতা=== গণতাত্ত্বিক ভাষায় '''প্রজননক্ষমতা''' বলতে বোঝায় একজন নারীর সুস্থ সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য। আর '''জননক্ষমতা''' হল একজন নারীর সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য ক্ষমতা। প্রজননক্ষমতা ও জননক্ষমতা নির্ধারণে কিছু সাধারণ গণতাত্ত্বিক পরিমাপ ব্যবহৃত হয়, যেমন: *'''মোট জন্মহার''': প্রতি বছর প্রতি হাজার জনসংখ্যায় জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''সাধারণ প্রজনন হার''': প্রতি বছর ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী (কখনও ১৫-৪৪ বছর) প্রতি ১০০০ নারীর জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''বয়সভিত্তিক প্রজনন হার''': নির্দিষ্ট বয়সের নারী (সাধারণত ১৫-১৯, ২০-২৪ ইত্যাদি) প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে জীবিত জন্মের সংখ্যা। *'''মোট প্রজনন হার''': একজন নারী যদি তার পুরো সন্তান জন্মদানের সময়কালে প্রত্যেক বয়সে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেয়, তবে তার সন্তানের সংখ্যা। *'''মোট কন্যা সন্তান হার''': একজন নারী তার সন্তান জন্মদানের সময়কালে বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন হার অনুযায়ী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। *'''নেট কন্যা সন্তান হার''': বর্তমান বয়সভিত্তিক প্রজনন ও মৃত্যুহার অনুযায়ী একজন নারী যত কন্যা সন্তান জন্ম দেবে। প্রজনন সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল ''প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার''। এর মানে হল, বর্তমান জনসংখ্যাকে প্রতিস্থাপন করতে একজন নারী বা একবিবাহী দম্পতির যত সন্তান হওয়া প্রয়োজন। যদি কোনো দেশের প্রজনন হার এই স্তরের নিচে থাকে, তখন একে বলা হয় 'সাব-প্রতিস্থাপন প্রজনন হার'। সাধারণভাবে, প্রতিস্থাপন স্তরের প্রজনন হার ধরা হয় নারীর জীবদ্দশায় গড়ে ২.১টি সন্তান। এই সংখ্যা ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে, কারণ মৃত্যুহার বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন। এই সংখ্যা ২.১ হওয়ার কারণ হল, দুই সন্তান মা-বাবাকে প্রতিস্থাপন করে, আর অতিরিক্ত ০.১ সন্তান ধরা হয় শিশু ও মায়েদের মৃত্যুহারের জন্য, যারা সন্তান জন্মদানের পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে না।<ref name="Carr2009">carr, deborah. 2009. “worries over a population implosion.” Contexts 8:58-59.</ref> অবশ্যই বাস্তবে কেউ ০.১ সন্তান জন্ম দেয় না। এটি মূলত গড় হিসাব কারণ কিছু নারী দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেন আর কেউ কেউ দুইয়ের কম। নিচের চার্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। উন্নত অঞ্চলে প্রজনন হার অনেক আগেই কমে গিয়েছিল। এরপর এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা কমে। এখন আফ্রিকায় এই হার ধীরে ধীরে কমছে। [[File:Trends in Total Fertility 1950-2021.png|alt=This chart shows trends in the Total Fertility Rate by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টটি ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট প্রজনন হারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ]] নিচের চার্টে বিভিন্ন দেশের প্রজনন হার দেখানো হয়েছে। কিছু দেশে এই হার খুবই কম, কিছু দেশে মাঝারি, আবার কিছু দেশে খুবই বেশি। [[File:Total Fertility Rates for Select Countries-2021.png|alt=This chart illustrates the total fertility rates for various countries around the world in 2021.|center|thumb|800x800px|এই চার্টে ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট প্রজনন হার চিত্রিত করা হয়েছে। ]] পরবর্তী চার্টে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার এবং মোট প্রজনন হারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার যত বাড়ে, নারীদের সন্তানসংখ্যা তত কমে। [[Image:Scatterplot of contraceptive use and TFR by region 2010.png|center|thumb|800px]] নারীদের [[Introduction_to_Sociology/Education|শিক্ষাগত অর্জন]] হলো প্রজনন হারের সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাসকারী বিষয়গুলোর একটি।<ref name="Mare2006">Mare, R.D., & Maralani, V. (2006). The Intergenerational Effects of Changes in Women's Educational Attainments. ''American Sociological Review'', 71(4), 542-564.</ref> প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীদের শিক্ষার মাত্রা যত বেশি, তাদের সন্তান সংখ্যা তত কম। তবে শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর কারণেই মূলত প্রজনন হার কমে। যেমন: উচ্চশিক্ষিত নারীরা সাধারণত দেরিতে বিয়ে করেন বা বিয়ে এবং সন্তান নেওয়া এড়িয়ে চলেন। তারা কর্মসংস্থানে বেশি সুযোগ পান, যৌন সম্পর্কের সময় [[w:গর্ভনিরোধক|গর্ভনিরোধক]] ব্যবহারে সচেতন থাকেন, এবং তারা প্রথাগত মাতৃত্বের ভূমিকা পালনে কম আগ্রহী হন।<ref name="Mare2006"/> প্রজনন হার একটি দেশের উন্নয়নের স্তরের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।<ref name="carr2007">carr, deborah. 2007. “the cost of kids.” Contexts 6:62.</ref> উন্নত দেশে সন্তান নেওয়া মানে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরতি, যার ফলে তার আয় কমে যায়। কারণ, এসব দেশে নারীরা সাধারণত দক্ষ ও ভালো বেতনের চাকরিতে থাকেন। এছাড়াও সন্তান নেওয়ার বয়স দেরিতে হওয়া, সন্তান টিকে থাকার সম্ভাবনা, পরিবার নিয়ে সামাজিক ধারণা, এবং গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা সবকিছুই প্রজনন হার কমিয়ে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হল সন্তানের খরচ। অন্নদাতা হিসেবে নয় বরং খরচের বোঝা হিসেবে সন্তান ধরা হয় উন্নত দেশে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সন্তানদের দিয়ে কৃষিকাজ করানো যায় যাতে বেতন দিতে হয় না, শুধু খাবার ও বাসস্থান দিলেই হয়। অথচ উন্নত দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২% মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত) সন্তান পালন মানে বড় অর্থনৈতিক দায়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন শিশুকে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালনের গড় খরচ ছিল ৩,১০,০০০ ডলার।<ref>Maruf, Ramishah. 8/29/2022. CNN. https://www.cnn.com/2022/08/29/success/child-raising-costs-rise/index.html</ref> এই খরচ উন্নত দেশে সন্তান জন্মদানের হার কমিয়ে দেয়।<ref name="carr2007"/> তদুপরি, উন্নত দেশে মা হওয়ার কারণে নারীরা (তবে পুরুষরা নন) প্রায়ই বেতন বৈষম্যের শিকার হন, যার ফলে অভিভাবকত্ব গ্রহণ নারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।<ref name="Moller2013">Stephanie Moller, Joya Misra, and Eiko Strader. 2013. “A Cross-National Look at How Welfare States Reduce Inequality.” Sociological Compass. 7(2): 135-146.</ref> ===মৃত্যুহার=== '''মৃত্যুহার''' মানে হলো মানুষের জীবন সীমিত সবাই একসময় মারা যায়। জনসংখ্যাবিজ্ঞানে, মৃত্যুহার বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে কতজন মারা গেছে, কিংবা মোট জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুর অনুপাত বোঝায়। মৃত্যুর কিছু সাধারণ পরিমাপক হলো: *'''মোট মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জনে কতজন মারা যায় *'''শিশু মৃত্যুহার''': প্রতি বছর প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মের অনুপাতে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা *'''জীবন প্রত্যাশা''': বর্তমান মৃত্যুহার ধরে একটি নির্দিষ্ট বয়সের একজন ব্যক্তি গড়ে আর কত বছর বাঁচবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো দেশের মোট মৃত্যুহার নির্ধারণ করলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশে কম উন্নত দেশের তুলনায় প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে, যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত। এর কারণ, উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর এই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে মোট মৃত্যুহার বেশি দেখা গেলেও, প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার কম থাকতে পারে। মৃত্যুহারের আরও পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় [[w:লাইফ টেবিল|লাইফ টেবিল]] থেকে, যেখানে প্রতিটি বয়সে মৃত্যুর হার আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়। এই চিত্রে বিশ্ব অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে। কম উন্নত অঞ্চলগুলোতে শিশু মৃত্যুহার উন্নত অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি। [[File:Infant Mortality Rates - 1950-2021.png|alt=This chart shows infant mortality rates by world regions from 1950 to 2021.|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহারের প্রবণতা দেখানো হয়েছে।]] এই চিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। শিশু মৃত্যুহারের মতো, উন্নত অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি। [[File:Life Expectancy at Birth 1950-2021.png|center|thumb|800x800px|এই চিত্রে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের হিসাব দেখানো হয়েছে।]] সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,<ref name="Kolata2007">Kolata, G. (2007). A Surprising Secret to a Long Life: Stay in School. The New York Times. Retrieved January 3, 2007. [http://www.nytimes.com/2007/01/03/health/03aging.html]</ref> [[w:দীর্ঘজীবন|দীর্ঘজীবনের]] অন্যতম বড় পূর্বাভাস হলো শিক্ষা। এমনকি অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রভাব বাদ দিলেও দেখা যায় — একজন ব্যক্তি যত বেশি পড়াশোনা করেন, তার দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা তত বেশি। মাত্র কয়েক বছর বেশি পড়ালেখাও জীবনের গুণগত মান উন্নত করে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই প্রভাব আসলে শিক্ষার সরাসরি প্রভাব নয়, বরং শিক্ষা যেসব স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আচরণে প্রভাব ফেলে তার মাধ্যমে আসে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ধূমপান বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের হার কম থাকে এবং তারা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন নিয়মিত ব্যায়াম বেশি করে থাকে।<ref name="Kolata2007"/> দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কিছু বিষয় হলো: *সম্পদ: টাকার মাধ্যমে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও জীবনকাল বাড়ায় *জাতিগত পরিচয়: শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে, তবে এটি জাতিগত কারণে নয়; বরং আয়ের পার্থক্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বৈষম্যের কারণে *আত্মসংযম: যেসব মানুষ তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ না করে অপেক্ষা করতে পারে, তারা বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে *বড় সামাজিক সম্পর্কজাল: বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে [[w:সামাজিক সহায়তা|সামাজিক সহায়তা]] বাড়ে, যা স্বাস্থ্য উন্নত করে *কর্মজীবনের সন্তুষ্টি: যারা শক্তিশালী এবং সন্তোষজনক পেশায় কাজ করে, তাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো থাকে ==জনসংখ্যাগত রূপান্তর== [[Image:Stage5.svg|right|thumb|300px]] '''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''' একটি মডেল ও তত্ত্ব, যা বর্ণনা করে কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ থেকে নিম্নে নেমে আসে। শিল্প-পূর্ব সমাজে জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। অধিকাংশ শিল্পোত্তর সমাজে উভয় হারই কমে যায়। এই পরিবর্তনকেই বলা হয় ''জনসংখ্যাগত রূপান্তর''। এই রূপান্তর তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি করেছেন থম্পসন,<ref name="Thompson1929">Thompson, W. C. 1929. The American Journal of Sociology 34:959-75.</ref> ব্ল্যাকার,<ref name="Blacker1947">Blacker, C. P. 1947. Eugenics Review 39:88-101.</ref> এবং নোটস্টেইন,<ref name="Notestein1945">Notestein, F. W. 1945. Pp. 36-57 in Food for the World, Editor T. W. Schultz. Chicago: University of Chicago Press.</ref> যারা বিগত দুইশ বছরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে এই মডেল তৈরি করেছেন। যখন কোনো সমাজে মৃত্যুহার কমে কিন্তু জন্মহার স্থির থাকে, তখন সেই সমাজে জনসংখ্যাগত রূপান্তরের সূচনা হয়। এটি সাধারণত স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও পরিচ্ছন্নতার কারণে ঘটে। রূপান্তরের দ্বিতীয় ধাপে (ডায়াগ্রামে দেখা যায়) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুহার কমে গেলেও জন্মহার তৃতীয় ধাপে গিয়ে কমে, ফলে ডায়াগ্রামে লাল রেখা দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত উপরে উঠে এবং তৃতীয় ধাপের শেষে গিয়ে ধীরে ধীরে স্থির হয়। তৃতীয় ধাপের শেষে জন্মহারও মৃত্যুহারের সমান হয়ে যায়। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার জন্য একাধিক তত্ত্ব রয়েছে (যেমন: বেকার এবং ক্যাল্ডওয়েলের মত অনুযায়ী সন্তানরা একটি অর্থনৈতিক সম্পদ)।<ref name="Becker1960">Becker, Gary S. 1960. "An Economic Analysis of Fertility." Pp. 209-31 in Demographic and Economic Change in Developed Countries, Edited Princeton: Princeton University Press.</ref><ref name="Caldwell1982">Caldwell, John C. 1982. Theory of Fertility Decline. Sydney: Academic Press.</ref> তবে শিল্পোত্তর সমাজে জন্মহার কেন কমে যায়, তা এখনও গবেষণাধীন। মঙ্গোলিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে দেশটি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই সময়ে নারীরা শিক্ষা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয় ধনসম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে।<ref name="Alvergne2014">Alvergne, Alexandra and Virpi Lummaa. 2014. Ecological variation in wealth–fertility relationships in Mongolia: the ‘central theoretical problem of sociobiology’ not a problem after all? Proceedings of the Royal Society B. Volume 281, Issue 1796.</ref> অর্থাৎ, অনেক সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আগের ধারণা যেমন, সন্তান পালনের খরচ আংশিকভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এই রূপান্তরের ফলে অনেক উন্নত দেশে এখন জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা [[w:population decline|হ্রাসমান]]। সব মডেলের মতো, এটি একটি আদর্শায়িত এবং সম্মিলিত চিত্র, যা এই দেশগুলোর জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই মডেলটি সাধারণীকরণের ভিত্তিতে তৈরি, যা পুরো একটি দেশগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য হলেও প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নাও হতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল সমাজগুলোর ক্ষেত্রে এটি কতটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জনসংখ্যাগত রূপান্তর নিয়ে আরও জানতে [http://www.uwmc.uwc.edu/geography/Demotrans/demtran.htm এখানে] দেখুন। ==জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আধিক্য== [[Image:Time Between Billions in World Population Growth.png|right|thumb|400px|বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রতি এক বিলিয়ন জন যুক্ত হতে সময় কমে আসছে।]] '''জনসংখ্যার আধিক্য''' এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে কোনো জীবজন্তুর জনসংখ্যা তার [[w:বাস্তুগত নিড়ান|বাস্তুগত নিড়ান]] এর [[w:বহনক্ষমতা|বহনক্ষমতা]] ছাড়িয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে না, বরং জনসংখ্যা ও তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বললে, এটি একটি অনুপাত ''জনসংখ্যা'' বনাম ''সম্পদ''। যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে ১০ জন মানুষ থাকে, কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি যথেষ্ট থাকে ৯ জনের জন্য, তাহলে ওই পরিবেশে জনসংখ্যার আধিক্য আছে। আবার, কোনো স্থানে ১০০ জন মানুষ থাকলেও যদি খাবার ও পানির সরবরাহ ২০০ জনের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে সেটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার শিকার নয়। এই নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয়, উষ্ণতা ইত্যাদি। মানুষের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি [[w:চাষযোগ্য জমি|চাষযোগ্য জমি]] এবং বেশিরভাগ সমাজে বিশেষ করে যারা আদিম জীবনধারা অনুসরণ করছে না অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যেমন চাকরি, অর্থ, শিক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহনকেও গণনা করতে হয়। [[Image:Population growth in more and less developed regions 1950-2100.png|right|thumb|400px|আজকের দিনে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত কম উন্নত দেশগুলোতেই হচ্ছে।]] বর্তমানে প্রতি বছর [[w:বিশ্ব জনসংখ্যা|বিশ্বের মানুষের জনসংখ্যা]] প্রায় ৮ কোটি করে বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই [[w:প্রতিস্থাপন-স্তরের চেয়ে কম প্রজনন হার|প্রতিস্থাপন হারের নিচে]] জন্মহার দেখা যায়, এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত অভিবাসনের ফলেই হচ্ছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রজনন হার কমতে কমতে জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে স্থিতিশীল হবে।<ref name="UN-pop">http://www.un.org/esa/population/unpop.htm</ref> পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন ও লাওস ব্যতীত, জন্মহার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে এই হার খুবই নিচে। পশ্চিম ইউরোপেও একই চিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক ও লেবাননেও জন্মহার নিচে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর গড় সন্তান সংখ্যা বর্তমানে ১.৬, যা প্রতিস্থাপন হারের নিচে। তবে এসব দেশের অনেকগুলোতেই অভিবাসনের হার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় অংশটি আফ্রিকান দেশগুলো থেকেই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ এসব দেশে জন্মহার এখনও অনেক বেশি।<ref name="frost2009">frost, ashley e., and f. nii-amoo dodoo. 2009. “men are missing from african family planning.” Contexts 8(1):44-49.</ref> যদিও ১৯৯০ সালের পর বেশিরভাগ দেশে জন্মহার কমেছে, আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মহার উল্টো বেড়েছে এবং একজন নারী গড়ে ৫টির বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক উপরে।<ref name="frost2009"/> ===জনসংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে প্রাথমিক পূর্বাভাস=== ১৯ শতকের গোড়ার দিকে [[w:থমাস ম্যালথাস|থমাস ম্যালথাস]] তাঁর ''An Essay on the Principle of Population'' বইতে বলেন, যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে মানুষ একসময় এতটাই বাড়বে যে তখনকার কৃষিভিত্তিক খাবার উৎপাদন তা সামলাতে পারবে না। তাঁর মতে, সম্পদ সাধারণত গাণিতিক হারে বাড়ে তবে জনসংখ্যা [[w:সূচকীয় বৃদ্ধি|সূচকীয় হারে]] বাড়ে। একসময় খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে। ম্যালথাস এ অবস্থা প্রতিরোধে [[w:জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ|জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের]] জন্য ‘নৈতিক সংযম’ এর পরামর্শ দেন। ম্যালথাসের মতে, যদি নৈতিক সংযম না থাকে তবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে দুর্ভিক্ষ, রোগ বা যুদ্ধের মাধ্যমে, কারণ যখন সম্পদের অভাব ঘটে, তখন মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সম্পদের সীমা অতিক্রম করে না। ম্যালথাসের পূর্বাভাসের পরবর্তী ২০০ বছরে, বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। [[w:নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদী|নব্য-ম্যালথুসিয়ানবাদীরা]] মনে করেন, এই দুর্ভিক্ষগুলো [[w:ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়|ম্যালথুসিয়ান বিপর্যয়]]-এর উদাহরণ। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর চাপ, [[w:গ্লোবাল ওয়ার্মিং|গ্লোবাল ওয়ার্মিং]] সহ অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির কারণে জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ===খাদ্যপ্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা=== কিছু গবেষক মনে করেন, খাদ্যের সরবরাহ অনুযায়ী মানুষের জনসংখ্যা বাড়ে বা কমে— খাবার বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে, আর খাবারের অভাবে জনসংখ্যা কমে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক না হলেও একটি সমস্যা হলো, যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হয়, ফলে আবার জনসংখ্যা বাড়ে— এই চক্র চলতেই থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষি বিপ্লবের পর নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ শুরু হলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা এই মতবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। তবে সমালোচকরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার ইচ্ছাকৃতভাবে কম, যদিও সেখানে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে। কিছু দেশে তো জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই দেশের জন্মহার হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের সহজলভ্যতা, বিয়ের বয়স বাড়ানো, অনেক নারীর কর্মজীবন বেছে নেওয়া, এবং শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানদের আর্থিক ‘ব্যবহারিকতা’ কমে যাওয়া।<ref name="Becker1960"/><ref name="Caldwell1982"/> ছোট কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুদের কাজের প্রয়োজন থাকে বেশি, কিন্তু শিল্প সমাজে তা অনেক কম, তাই এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও এটি কিছুটা নির্মম মনে হতে পারে।মানুষের জনসংখ্যা যদি ভালুক আর মাছের জনসংখ্যার মতো আচরণ করে— এই ধারণা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আবার অনেকের কাছে এটি জনসংখ্যা সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বলে মনে হয়। যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই, যেহেতু জনসংখ্যা তাদের খাদ্যভিত্তির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা বিবেচনা না করে করা উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব কিনা তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।<ref name="Godfray2010">Godfray, H. Charles J. et al. 2010. “Food Security: The Challenge of Feeding 9 Billion People.” Science 327:812-818.</ref> এই গবেষণা বলছে, পৃথিবী সম্ভবত ৯০০ কোটির চূড়ান্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে পারবে— তবে এর জন্য কৃষিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য, কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার, জলজ কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব সীমিত করা।<ref name="Godfray2010"/> ===জনসংখ্যার আধিক্যের প্রভাব=== জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক পক্ষাবলম্বী বলেন, দুর্ভিক্ষই জনসংখ্যার আধিক্যের একমাত্র সমস্যা নয়। এরা বলেন, শক্তির উৎস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং সীমিত সম্পদের ওপর যুদ্ধ— এসবও গুরুতর সমস্যা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জমির ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের কৃষি উৎপাদন, যদি সমানভাবে বণ্টন করা যেত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো। তবে অনেক সমালোচকের মতে, যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, শুধু সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি একে অনিরবচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ, বন উজাড়, মহামারি এবং যুদ্ধ দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা আধিক্যের আরও কিছু লক্ষণ হলো: * শিশুদের দারিদ্র্য * উচ্চ জন্মহার * গড় আয়ু হ্রাস * সাক্ষরতার নিম্ন হার * বিশেষ করে [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চলে]] বেকারত্বের হার বেশি * চাষযোগ্য জমির অভাব * খাদ্যের অতিরিক্ত মজুতের অভাব * খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিহীনতা (যেমন: [[w:রিকেটস|রিকেটস]]) * মাথাপিছু জিডিপির নিম্নমান * অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিস্তার * সরকার আর্থিকভাবে চাপে থাকে * টিকে থাকার জন্য মানুষ সম্পদ চুরি করায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় * কৃষি ও জনবসতির জন্য বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক বিলুপ্তি [[Image:Percentage of Population Residing in Urban Areas 1950-2050.png|center|thumb|800px|শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরায়নের হার বেড়েছে।]] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনমান কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিয়ে [[w:ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি|ভার্জিনিয়া অ্যাবারনেথি]]-র ভিন্নমত আছে। ''Population Politics'' বইতে তিনি দেখান, শিল্পায়নের পর জন্মহার হ্রাস সাধারণত সেই দেশগুলোতেই ঘটে যেখানে নারীরা তুলনামূলকভাবে উচ্চ মর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু যেসব দেশে নারীরা অধিকতর অধিকারহীন, সেখানে জীবনমানের উন্নয়নই উল্টোভাবে জনসংখ্যা বাড়ায়। অ্যাবারনেথি মনে করেন, দরিদ্র দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য দেওয়ার সময় নারীর শিক্ষা, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ===জনসংখ্যার আধিক্যের সম্ভাব্য সমাধান=== কেউ কেউ জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রে ''[[w:যোগ্যতমের টিকে থাকা|যোগ্যতমের টিকে থাকা]]'' ও ''[[w:স্বাধীন বাজারনীতির|স্বাধীন বাজারনীতির]]'' পক্ষ নেন। তাদের মতে, পৃথিবীর প্রতিবেশ যদি অতিরিক্ত চাপে পড়ে, তবে প্রকৃতি নিজেই তা সামাল দেবে। এই যুক্তিতে, রোগ বা অনাহার হল জনসংখ্যা কমানোর ‘প্রাকৃতিক’ উপায়। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকরা বলেন: # এই প্রক্রিয়ায় বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে # কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ হবে, যা সহজে রোধ করা সম্ভব হবে না # এটি বড় ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করবে, কারণ এতে বহু মানুষের ভয়াবহ কষ্টে মৃত্যু ঘটবে আরেকটি পক্ষ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক ধরনের [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] ঘটায়, যার ফলে জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। যেকোনো অবস্থাতেই, অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এর অন্যতম প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। যেসব দেশে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে, সেসব দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তা টেকসই পর্যায়ে এসেছে। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্যকর [[w:পরিবার পরিকল্পনা|পরিবার পরিকল্পনা]], স্থানীয় [[w:নবায়নযোগ্য জ্বালানি|নবায়নযোগ্য জ্বালানি]] ব্যবহার, [[w:টেকসই কৃষি|টেকসই কৃষি]] প্রযুক্তি ও উপকরণ, [[w:বনায়ন|বনায়ন]], এবং স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। [http://www.utne.com/web_special/web_specials_archives/articles/799-1.html ডেভিড পিমেন্টেল], কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ২২তম শতাব্দীর জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র আঁকেন: # একটি পৃথিবী যেখানে ২০০ কোটির মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছে # কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত— ১২০০ কোটির কষ্টে জর্জরিত মানুষ সীমিত সম্পদের ভেতর দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছে এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই প্রথম ধাপ। ===অতিঅল্প জনসংখ্যা=== কিছু দেশ [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|জনসংখ্যাগত রূপান্তর]] পার হওয়ার পর এতটা কম জন্মহার দেখে যে, সেটি প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে চলে যায় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে (যেমন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এতে [[w:জনসংখ্যাগত রূপান্তর|বিদেশ গমন]]-এর ভূমিকাও আছে)। বর্তমানে অনেক সরকারের নতুন উদ্বেগ হলো— বিশেষ করে যেসব দেশে অত্যন্ত কম জন্মহার রয়েছে— যে জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে দেশের [[w:জিডিপি|মোট দেশজ উৎপাদন]] ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায়ই অর্থনৈতিক অগ্রগতির চালিকা শক্তি।<ref name="Carr2009"/> এই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু সরকার পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করেছে, যেমন সন্তান জন্মদানে প্রণোদনা প্রদান এবং বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘ মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি। এই নীতিমালাগুলো হয়তো জন্মহার বাড়াতে পারে, তবে এর ফলে আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। ==অভিবাসন== গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কারও অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন আমেরিকান প্রতি বছরে স্থান পরিবর্তন করেন, যা ১৯৬০-এর দশকে বার্ষিক স্থানান্তর হারের অর্ধেকেরও কম।<ref name="Roberts2008">Roberts, Sam. 2008. “Data Show Steady Drop in Americans on Move.” The New York Times, December 21 http://www.nytimes.com/2008/12/21/us/21mobility.html?_r=1 (Accessed December 1, 2009).</ref><ref name="USCensusPopSurvey2008">Source: U.S. Census Bureau, Current Population Survey, 2008 Annual Social and Economic Supplement</ref> এই স্থানান্তর হ্রাসের কারণ হলো জনসংখ্যার বয়স্ক হয়ে পড়া (বয়স্করা কম স্থান পরিবর্তন করেন) এবং দুই কর্মজীবী ব্যক্তির বিবাহিত জীবনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যারা স্থান পরিবর্তন করেন, তাদের অধিকাংশই কাজের খোঁজে স্থানান্তর করেন।<ref name="Roberts2008"/> প্রায় ৩৭% আমেরিকান তাদের জন্মস্থান বা জন্ম সম্প্রদায় ছেড়ে কখনও যাননি।<ref name="Roberts2008"/> তবে, এই স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন। যেমন, টেক্সাসে ৭৬% বাসিন্দা সেখানেই জন্মেছেন, কিন্তু নেভাডায় এই সংখ্যা মাত্র ১৪%। আবার কিছু রাজ্যে যাদের জন্ম হয়েছে তারা সেখান থেকে অনেকেই চলে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কায় যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৮% এখনো সেখানে থাকেন।<ref name="Roberts2008"/> অভিবাসন অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, নানা কারণে। এর বেশিরভাগই নতুন আগতদের সাথে আগে থেকেই বসবাসকারী মানুষের প্রতিযোগিতা নিয়ে। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীদের সাথে স্থানীয়দের এক ধরনের প্রতিযোগিতা অতিরঞ্জিতভাবে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, অভিবাসীদের কারণে স্থানীয়দের কলেজে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।<ref name="Neymotin2009">Neymotin, Florence. 2009. Immigration and Its Effect on the College-Going Outcomes of Natives. Economics of Education Review. 28, 5:538-550.</ref> কিন্তু নেমোটিন দেখিয়েছেন যে, অভিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা স্থানীয় আমেরিকানদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে ক্ষতি করে না, বরং এতে কলেজে যাওয়ার হার বাড়তে পারে।<ref name="Neymotin2009"/> সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অভিবাসন নিয়ে বিরোধের পেছনে চাকরি বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সমাজের পরিচয় বা সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।<ref name="Hainmueller2014">Hainmueller, J., & Hopkins, D. J. (2014). Public Attitudes Toward Immigration. Annual Review of Political Science, 17(1), 225–249. doi:10.1146/annurev-polisci-102512-194818</ref> ==নগরায়ন== '''নগরায়ন''' হল [[w:শহরাঞ্চল|শহরাঞ্চল]]গুলোর শারীরিক বৃদ্ধি, যা বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে ঘটে। জাতিসংঘ নগরায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের স্থানান্তর এবং এর সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ২০০৮ সালের শেষে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি [[W:বিশ্ব জনসংখ্যা|জনসংখ্যা]] শহরে বাস করত এবং এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে।<ref name="InternationalHeraldTribune2008"> http://web.archive.org/web/20080412005441/http://www.iht.com/articles/ap/2008/02/26/news/UN-GEN-UN-Growing-Cities.php The Associated Press. February 26, 2008. UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008. International Herald Tribune.</ref> নগরায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত [[w:আধুনিকীকরণ|আধুনিকীকরণ]], [[w:শিল্পায়ন|শিল্পায়ন]] এবং [[w:যুক্তিবাদ (সমাজবিজ্ঞান)|যুক্তিবাদ]] এর সমাজবিজ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সাথে। ===আন্দোলন=== [[File:Urban_population_in_2005_world_map.PNG|thumb|right|300px|২০০৫ সালের হিসাবে দেশভেদে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত।<ref name="Unicef2008">http://www.unicef.org/sowc08/docs/sowc08_table_StatisticalTables.pdf</ref>]] যখন বেশি মানুষ গ্রাম ও খামার ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেন, তখন শহরগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন, উনিশ শতকের শেষদিকে শিকাগো এবং এক শতাব্দী পরে [[w: মুম্বাই|মুম্বাই]] শহরের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ ছিল গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন। এই ধরণের বৃদ্ধি [[w:উন্নয়নশীল দেশ|উন্নয়নশীল দেশগুলোতে]] বিশেষভাবে সাধারণ। জাতিসংঘের বিশ্ব নগরায়ণের সম্ভাবনা রিপোর্ট অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের নগরায়নের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯০০ সালে শহরবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩% (২২ কোটি), যা ১৯৫০ সালে ২৯% (৭৩ কোটি), ২০০৫ সালে ৪৯% (৩.২ বিলিয়ন)<ref name="UN2005">[http://www.un.org/esa/population/publications/WUP2005/2005wup.htm World Urbanization Prospects: The 2005 Revision, Pop. Division, Department of Economic and Social Affairs, UN]</ref> এবং ২০২০ সালে ৫৬.২% এ পৌঁছায়। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা ৬০% (৪.৯ বিলিয়ন) এবং ২০৫০ সালে ৬৮.৪% হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।<ref>World Urbanization Prospects: The 2018 revision. https://population.un.org/wup/Download/</ref> বিভিন্ন দেশে নগরায়নের হার ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শহরায়নের হার চীন, ভারত, সোয়াজিল্যান্ড বা নাইজারের তুলনায় অনেক বেশি, তবে তাদের বার্ষিক নগরায়নের হার অনেক কম, কারণ তাদের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ===কারণ=== [[File:Manila shanty.jpg|300px|right|thumb|নগরায়ন সবসময় ঘনবসতির কারণে হয় না। [[w:ম্যানিলা|ম্যানিলা]]তে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই [[w:বস্তি|বস্তি]] ও [[w:টিনের ঘর|টিনের ঘরে]] থাকতে বাধ্য হন]] মানুষ সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে শহরে যান। এর একটি বড় কারণ হল "[[w:গ্রামপালায়ন|গ্রামপালায়ন]]"। গ্রামাঞ্চলে, ছোট পারিবারিক খামারগুলোতে সাধারণত মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়া জীবনের মান উন্নত করা কঠিন। খামার-জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। খরা, বন্যা কিংবা পোকামাকড়ের আক্রমণে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে [[w:কারখানা খামার|শিল্পায়িত কৃষি]] ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং গ্রামীণ শ্রমবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, শহরগুলোই ধন-সম্পদ, সেবা ও সুযোগের কেন্দ্র। শহরেই ভাগ্য গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিকভাবে উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরি ও পুঁজি উৎপাদনকারী ব্যবসা-বাণিজ্যও মূলত শহরেই গড়ে ওঠে। বিদেশি টাকা যেকোনো দেশে প্রধানত শহরপথেই আসে, হোক সেটা বাণিজ্য কিংবা পর্যটনের মাধ্যমে। অভিবাসনের মতো, এখানে কিছু কারণ মানুষকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় এবং কিছু কারণ শহরের দিকে আকৃষ্ট করে। শহরগুলোতে মৌলিক সেবা ও বিশেষায়িত সেবা বেশি পাওয়া যায় যা গ্রামে নেই। এখানে চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাকরির বৈচিত্র্যও বেশি। স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষজন শহরে যেতে বাধ্য হন কারণ চিকিৎসা ও হাসপাতাল শহরে সহজলভ্য। বিনোদন (যেমন রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিম পার্ক ইত্যাদি) ও ভালো মানের শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়) পাওয়ার সুযোগও মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। শহরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরকে খুঁজে পায়, যা গ্রামে কঠিন। যখন কোনো সমাজ পূর্ব-শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরিত হয়, তখন এই শর্তগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। ===অর্থনৈতিক প্রভাব=== শহরগুলো যখন বিকশিত হয়, তখন প্রায়ই খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে স্থানীয় [[w:শ্রমজীবী শ্রেণি|শ্রমজীবী শ্রেণি]] রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে ছিটকে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক হবসবম লিখেছেন, "আমাদের সময়ে [১৭৮৯–১৮৪৮] নগর উন্নয়ন ছিল এক বিশাল শ্রেণিভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন শ্রমজীবী দরিদ্রদের শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আর বুর্জোয়া শ্রেণির জন্য গড়ে উঠেছে বিশেষ আবাসিক এলাকা। ইউরোপে 'ভালো' পশ্চিম প্রান্ত এবং 'গরিব' পূর্ব প্রান্তের বিভাজন এই সময়ে শুরু হয়েছিল।"<ref>''Hobsbawm, Eric. 2005. The Age of the Revolution: 1789–1848''. Chapter 11.</ref> এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে হতে পারে, যা কয়লার ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষণ বহন করে, ফলে শহরের পশ্চিম অংশ বাসযোগ্য এবং পূর্ব অংশ কম বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এখন এই ধরণের সমস্যা উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়; দ্রুত নগরায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে। উন্নয়নের তাগিদ ও দক্ষতার খোঁজে শহরগুলোতে অসম সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।<ref name="Grant2008">Grant, Ursula (2008) Opportunity and exploitation in urban labour markets [http://www.odi.org.uk/resources/download/1969.pdf] London: [[w:বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট|বিদেশী উন্নয়ন ইনস্টিটিউট]]</ref> নগরায়ন অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবহনের সুযোগ উন্নত করার প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। শহরে বসবাস মানুষকে ঘনত্ব, বৈচিত্র্য এবং বাজার প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে সাহায্য করে।<ref name="Glaeser1998">Glaeser, Edward. 1998. "Are Cities Dying?" The Journal of Economic Perspectives. 12(2):139–160</ref> ===পরিবেশগত প্রভাব=== নগরায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ হলো [[w:আরবান হিট আইল্যান্ড|আরবান হিট আইল্যান্ড]]। যখন কোনো এলাকা শিল্পোন্নত ও নগরায়িত হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত তাপ জমা হতে শুরু করে এবং এই 'হিট আইল্যান্ড' তৈরি হয়। গ্রামীণ এলাকায়, সূর্যের আলো থেকে আসা বেশিরভাগ শক্তি উদ্ভিদ ও মাটির পানি বাষ্পীভবনের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু শহরগুলোতে যেখানে উদ্ভিদ ও খোলা মাটির পরিমাণ কম, সেখানে সূর্যের শক্তির বেশিরভাগ অংশই ভবন ও পিচঢালা সড়কের দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দিনে যখন রোদ থাকে, তখন শহরে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করার সুযোগ কম থাকে, আর এতে শহরের তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও, শহরে যানবাহন, কল-কারখানা ও ঘরবাড়ির গরম ও ঠাণ্ডা করার যন্ত্র থেকেও অতিরিক্ত তাপ নিঃসৃত হয়।<ref name="Park1987">Park, H.-S. (1987). Variations in the urban heat island intensity affected by geographical environments. Environmental Research Center papers, no. 11. Ibaraki, Japan: Environmental Research Center, The University of Tsukuba.</ref> এই প্রভাবে শহর আশেপাশের তুলনায় ২ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি গরম হতে পারে।<ref name="EPA-heat">[http://www.epa.gov/heatisland/ "Heat Island Effect"]</ref> এ ধরনের তাপ বৃদ্ধি মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে তোলে।<ref name="gtresearchnews">"Heating Up: Study Shows Rapid Urbanization in China Warming the Regional Climate Faster than Other Urban Areas" [http://gtresearchnews.gatech.edu/newsrelease/china-climate.htm]</ref> তবে নগরায়নের কিছু ইতিবাচক পরিবেশগত দিকও আছে। শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পায়, যা জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া, এটি ধ্বংসাত্মক টিকে থাকার কৃষি পদ্ধতি যেমন [[w:জলানো ও চাষ করা|জলানো ও চাষ করা]] বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষে, নগরায়নের ফলে মানুষের ব্যবহারের জন্য জমির পরিমাণ কমে যায়, ফলে প্রকৃতির জন্য বেশি জমি সংরক্ষিত থাকে।<ref name="Brand">Brand, Stewart. Whole Earth Discipline.</ref> ===অন্যান্য প্রভাব=== উপরোক্ত প্রভাবগুলোর পাশাপাশি নগরায়ন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতিরও প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করেন তারা প্রতিবেশীদের কম চেনেন। যদিও, তারা রাস্তায় একা হাঁটার সময় একক পরিবারে বসবাসকারী মানুষের তুলনায় বেশি ভয় পান না। বরং, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে একা বাসায় থাকাকালীন তারা একক বাড়ির বাসিন্দাদের তুলনায় কম ভয় অনুভব করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে "দুর্গ প্রভাব"—বড় ভবনের বাসিন্দারা বাইরের মানুষদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন।<ref name="Rollwagen2014">Rollwagen, Heather. 2014. “The Relationship Between Dwelling Type and Fear of Crime.” Environment and Behavior 0013916514540459.</ref> আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমাদের চারপাশে মানুষ থাকলে—even যদি তারা অচেনা হয়—তাও কিছুটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। ===নগরায়নের পরিবর্তিত রূপ=== নগরায়নের ধরন বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—স্থাপত্যশৈলী, পরিকল্পনা পদ্ধতি ও এলাকার ঐতিহাসিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে। [[W:উন্নত দেশ|উন্নত বিশ্বের]] শহরগুলোতে সাধারণত নগরায়নের ফলে মানুষ ও কার্যকলাপ কেন্দ্রীভূত হতো শহরের কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন অভ্যন্তরীণ শহর পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নতুন বাসিন্দারা আর কেন্দ্রস্থলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন না। কিছু উন্নত অঞ্চলে, এর বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যাকে [[w:কাউন্টার আরবানাইজেশন|কাউন্টার আরবানাইজেশন]] বলা হয়, যেখানে শহর থেকে গ্রামে মানুষ স্থানান্তরিত হয়। ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে। এর পেছনে অপরাধভীতি ও খারাপ শহর পরিবেশ বড় কারণ। পরবর্তীতে, এই প্রবণতাকে ''[[w:হোয়াইট ফ্লাইট|হোয়াইট ফ্লাইট]]'' বলা হয়, যদিও এটি শুধু জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন বসবাসের এলাকা শহরের কেন্দ্র থেকে বাইরে সরে যায়, তখন সেটিকে [[w:সাবআরবানাইজেশন|সাবআরবানাইজেশন]] বলা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাবআরবানাইজেশন এতদূর বিস্তৃত হয়েছে যে নতুন কেন্দ্রীভূত বসতি শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে—এমনকি [[w:ভারত|ভারতের]] মতো উন্নয়নশীল দেশেও।<ref name="Sridhar2007">Sridhar, K. 2007. Density gradients and their determinants: Evidence from India. Regional Science and Urban Economics 37(3):314-344</ref> নগরায়ন হতে পারে পরিকল্পিত বা স্বতঃস্ফূর্ত। পরিকল্পিত নগরায়ন যেমন [[w:পরিকল্পিত কমিউনিটি|পরিকল্পিত কমিউনিটি]], একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই পরিকল্পনা হতে পারে সামরিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক অথবা [[w:নগর নকশা|নগর নকশা]] বিষয়ক। অন্যদিকে, স্বতঃস্ফূর্ত নগরায়ন হয় এলোমেলোভাবে। [[w:Landscape planning|ল্যান্ডস্কেপ পরিকল্পনাকারী]]রা নগরায়নের আগে বা পরে এলাকায় [[w:সার্বজনীন উদ্যান|সার্বজনীন উদ্যান]], [[টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা|টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা]], [[w:সবুজ করিডোর|সবুজ করিডোর]] ইত্যাদি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ==অতিরিক্ত পাঠ== The International Handbook of the Demography of Race and Ethnicity সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৪ সম্পাদনায়: Sáenz, Rogelio, Embrick, David G., Rodríguez, Néstor P. প্রকাশিত: ২০১৫, XXIII, ৭০৮ পৃষ্ঠা, ৯১টি চিত্র, ৪১টি রঙিন চিত্র। International Handbook of Rural Demography সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৩ সম্পাদনায়: Kulcsár, László J., Curtis, Katherine J. প্রকাশিত: ২০১২, XIV, ৪০৬ পৃষ্ঠা। International Handbook on the Demography of Sexuality সিরিজ: International Handbooks of Population, খণ্ড ৫ সম্পাদনায়: Baumle, Amanda K. প্রকাশিত: ২০১৩, VI, ৪২৯ পৃষ্ঠা, ৪৬টি চিত্র। ==আলোচনার প্রশ্ন== * আপনি কি মনে করেন, পৃথিবী এখন অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভরপুর? * যদি আপনার মনে হয় পৃথিবী অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভোগছে, তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবনকালকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? * আপনার জীবনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনার প্রজনন হারে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} ==বহিঃসংযোগ== * [http://gsociology.icaap.org/reports.html Brief Review of World Population Trends: Summary.] জনসংখ্যা, জন্ম, মৃত্যু, অভিবাসন, মোট প্রজনন হার, শিশু মৃত্যুহার ও বয়সভিত্তিক বণ্টনের সারাংশ। * [http://www.populationassociation.org/ Population Association of America (PAA)] জনসংখ্যা গবেষকদের পেশাদার সংগঠন, যা সর্বশেষ জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা, তথ্যের উৎস, সম্মেলন ও প্রকল্পের তালিকা ও সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। * মার্কিন জনসংখ্যা ব্যুরো সম্প্রতি দুটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। প্রথমটি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-county-population-change/ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কাউন্টির জনসংখ্যা বৃদ্ধি] পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের কারণ দেখায়। দ্বিতীয়টি [http://storymaps.esri.com/stories/2014/census-metro-micro-change/ মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনের তুলনা] ২০০২-০৩ ও ২০১২-১৩ সালের জন্য সকল মেট্রো ও মাইক্রো এলাকার শতকরা হারে পরিবর্তন দেখায়। {{BookCat}} {{chapter navigation|গোষ্ঠীসমূহ|বার্ধক্য}} cjikvtfb25jqvlgkvid7nkrg3sek3va সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/নজরদারি ও প্রতিনজরদারি 0 23745 84871 84260 2025-06-19T00:04:19Z MS Sakib 6561 84871 wikitext text/x-wiki = নজরদারি ও প্রতিনজরদারি = == ভূমিকা ও মূল ধারণা == [[চিত্র:TheBigbrother.jpg|ডান|থাম্ব|বিগ ব্রাদার তোমার উপর নজর রাখছে]] [[চিত্র:SurveillanceSousveillanceLifeGloggingMannSensecamMemoto.jpg|থাম্ব|প্রতিনজরদারিের তুলনায় নজরদারি]] {{Quote box|quote=২০১২ সালে, স্পেনের সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে যে, আমেরিকার ''NSA ([[w:ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি|ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি]])'' ক্রিসমাস মাসে গোপনে ৬ কোটিরও বেশি টেলিফোন রেকর্ড নজরদারির আওতায় এনেছিল।<ref>Angwin, J. U. L. I. A., Savage, C. H. A. R. L. I. E., Larson, J. E. F. F., Moltke, H. E. N. R. I. K., Poitras, L. A. U. R. A., & Risen, J. (2015). AT &T Helped US Spy on Internet on a Vast Scale. New York Times, August, 15.</ref> জার্মানির একটি ম্যাগাজিন ''[[w:Der Spiegel|ডার স্পিগেল]]'' প্রস্তাব করে যে, এনএসএ-এর প্রধান নজরদারির বিষয় ছিল ৩৫ জন রাজনীতিবিদ।<ref>Timberg, C., & Soltani, A. (2013). By cracking cellphone code, NSA has capacity for decoding private conversations. The Washington Post.</ref> আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে মানব সমাজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সহজেই ডিজিটাল আকারে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রচার করা যায়। এর ফলে তৈরি হয়েছে একটি নজরদারিমূলক সমাজ, যার অর্থ ''"অল্প কয়েকজন অনেককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে"''। তবে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে “'''স্যুভেইলেন্স'''” শব্দটি প্রস্তাব করেন [[w:Steve Mann|স্টিভ ম্যান]], জেসন নোলান এবং [[w:ব্যারি ওয়েলম্যান|ব্যারি ওয়েলম্যান]]। এটি “'''নজরদারি'''” শব্দটির বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং বোঝায় ''বহুসংখ্যক মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করতে পারে''।<ref>S. Mann, J. Nolan and B. Wellman. (2003), "Sousveillance: Inventing and Using Wearable Computing Devices for Data Collection in Surveillance Environments",Surveillance & Society, vol. 1, no. 3, pp. 331-355.</ref>|align=left|width=50%}}'[[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?]]' বইয়ের এই অধ্যায়ে নজরদারি ও প্রতিনজরদারির মূল ধারণাগুলোর বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে এই দুই ক্ষেত্রের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা। নজরদারির ক্ষেত্রে আলোচনা করা হবে এই কাজে ব্যবহৃত সংগঠন ও প্রযুক্তি, সেইসাথে প্রযোজ্য আইন ও বিধিনিষেধ সম্পর্কে। এছাড়াও এই অধ্যায়ে মানবতা কীভাবে নজরদারির বিরোধিতা করে এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব]-এর মতো ভিডিও-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মকে নজরদারি না প্রতিনজরদারি—এই বিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে অধ্যায়টি প্রতিনজরদারির দিকে দৃষ্টি দেয়। এতে স্টিভ ম্যান-এর ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এই শব্দটির প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী বিশ্লেষণে প্রতিনজরদারির বিভিন্ন রূপ এবং মানব ইতিহাসে এর বিকাশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে এখানে স্থান পেয়েছে এবং প্রতিনজরদারির সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে কিছু কেস স্টাডির মাধ্যমে এটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নজরদারি ও প্রতিনজরদারির বিষয়ে কথা বললে, প্রথমটি তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত। এর একটি কারণ হতে পারে আমরা প্রতিদিনই নজরদারির মুখোমুখি হই—আমরা কোনো না কোনো নজরদারির নজর ছাড়া এক কদমও এগোতে পারি না। একে “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট” বলা হয়, যা এই অধ্যায়ে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও আমরা জানি নজরদারি সর্বত্র বিদ্যমান, আমরা তা নিয়ে খুব একটা সচেতন নই। আমাদের বলা হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ধরনের বার্তা আমাদের মনে গেঁথে গেছে এবং আমরা ভুলে গেছি আসলে কতবার আমাদের নজরদারির আওতায় আনা হয়। অপরদিকে, প্রতিনজরদারি তুলনামূলকভাবে নতুন, তাই কম পরিচিত। কারণ, প্রতিনজরদারিের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি (যেমন হাতে ধরা ক্যামেরা) সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়েছে। যদিও শব্দটি সাধারণত উচ্চতর কর্তৃপক্ষের দিকে ক্যামেরা নির্দেশ করে করা কার্যকলাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, প্রতিনজরদারি তখনও ঘটে যখন একটি গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী গোষ্ঠীকে পুরনো বা নতুন যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে। ইতিহাসের দিকে ভালোভাবে তাকালে দেখা যায়, ফরাসি বিপ্লবসহ প্রথম দিকের অনেক বিপ্লবই প্রতিনজরদারিের উপর নির্ভর করে রাজা অপসারণ ও সমাজে পরিবর্তন এনেছিল। একটি তত্ত্ব হিসেবে প্রতিনজরদারির প্রবর্তন ও বিকাশ ঘটে স্টিভ ম্যান-এর মাধ্যমে, যাঁকে এই অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। = নজরদারি = == সংজ্ঞা == এই অংশে ''''নজরদারি'''' শব্দটির কিছু প্রচলিত সংজ্ঞা আলোচনা করা হবে। '''নজরদারি''' শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা '''Surveillance''' শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি ভাষা থেকে। এর উৎস হল '''sur''' অর্থাৎ '''উপর থেকে''' এবং '''veiller''' অর্থাৎ '''পর্যবেক্ষণ করা'''—ফলে এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় '''উপর থেকে দেখা'''। '''নজরদারি''' বলতে বোঝায় সেই ক্যামেরা বা অন্যান্য সেন্সর, যা কোনো স্থাপনার (যেমন: জমি, খুঁটি বা ভবন) সঙ্গে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে। এটি সেই ধরণের পর্যবেক্ষণ যা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি অন্যান্য পর্যবেক্ষণকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। নজরদারি হলো মূলত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। এই সহজ সংজ্ঞার মধ্যে অসংখ্য কৌশল ও পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত যেগুলোকে নজরদারির রূপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই পদ্ধতিগুলোর অনেকটাই জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের জানা। নজরদারির ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে [[w:নজরদারির ইতিহাস|নজরদারির ইতিহাস]] পাতায় যাওয়া যেতে পারে। সেখানে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে নজরদারির ধারণাটি সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিদ্যমান, শুধুমাত্র ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের মাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। প্রাথমিক দূরবীন থেকে শুরু করে আধুনিক [[w:রেডিও_ফ্রিকোয়েন্সি_আইডেন্টিফিকেশন|রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন]] পর্যন্ত নজরদারি প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত উন্নত হয়েছে। সর্বাধিক পরিচিত নজরদারির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্থির নজরদারি, প্রযুক্তিগত নজরদারি (সাধারণত গোপন ভিডিও বা অডিও রেকর্ডিং), ইলেকট্রনিক নজরদারি (ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ, [[w:কি-স্ট্রোক_ডায়নামিকস|কীস্ট্রোক ডায়নামিকস]]) এবং আরও অনেক কিছু। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান থাকলে প্রায় যে কেউ নজরদারিতে অংশ নিতে পারে—এক্ষেত্রে নজরদারির কৌশল ব্যবহার করেন ফেডারেল কর্মকর্তারা যাঁরা জীবন রক্ষায় কাজ করেন, কিংবা বেসরকারি গোয়েন্দারা যাঁরা সিভিল কোর্টের প্রমাণ সংগ্রহ করেন। [http://www.oxforddictionaries.com/ অক্সফোর্ড অভিধান অনলাইন] (২০১৬)-এ নজরদারির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—'সন্দেহভাজন গুপ্তচর বা অপরাধীর উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ' (Close observation, especially of a suspected spy or criminal)।<ref>Surveillance. 2016. In ''Oxford Dictionaries''. Retrieved from http://www.oxforddictionaries.com/definition/english/surveillance.</ref> এই সংজ্ঞা এই বইয়ের পরবর্তী অংশে আলোচিত একটি বিষয়ের সূত্রপাত করে। সেখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে ডিজিটাল মিডিয়ার বিকাশ এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যে, দাবি করা যায় বৃহত্তর জনগণ সর্বদাই নজরদারির আওতায় আছে। === নজরদারির প্রকারভেদ === নজরদারির প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে। স্রারা পৃথিবী ব্যাপী ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি তাদের গোপনীয়তা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। নেটওয়ার্ক ডেটাবেইস জনসাধারণ ও ব্যক্তির মধ্যকার সীমারেখা মুছে দেয় এবং ব্যক্তি-মানুষকে একটি ডিজিটাল প্যানআপটিকনে পরিণত করে। [[w:ফেসবুক|ফেসবুক]], [[w:টুইটার|টুইটার]], ব্লগ, [[w:ইনস্টাগ্রাম|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তি-মানুষকে তাদের গোপনীয়তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে উৎসাহিত করে।<ref>Cristani, M., Raghavendra, R., Del Bue, A., & Murino, V. (2013). Human behaviour analysis in video surveillance: A social signal processing perspective. Neurocomputing, 100, 86-97.</ref> প্রথমত, সিসিটিভি ([[w:ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন|ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন]]) ইলেকট্রনিক নজরদারির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি। ইংল্যান্ড, প্রথম দেশ হিসেবে পাবলিক প্লেসে সিসিটিভি স্থাপন করে এবং প্রায় ৩০ লক্ষ ক্যামেরা ব্যবহার করে দিনের ২৪ ঘণ্টা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন পর্যবেক্ষণ করে। নরিস ও আর্মস্ট্রং একটি সিসিটিভি-সমৃদ্ধ সমাজকে বর্ণনা করেছেন "সবচেয়ে বড় নজরদারি সমাজ" হিসেবে।<ref>Carr, R. (2014). Surveillance politics and local government: A national survey of federal funding for CCTV in Australia. Security Journal.</ref> [http://www.google.com/intl/en_uk/earth/ গুগল আর্থ], গুগলের একটি মানচিত্র অনুসন্ধান সরঞ্জাম, স্যাটেলাইট ছবি, জিপিএস, জিআইএস, ভিডিও স্ট্রিমিং ও ৩ডি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সকল ব্যবহারকারীর জন্য বাস্তবচিত্র সরবরাহ করে। অনেকেই বলেন ''গুগল আর্থ একটি যুগের সূচনা করেছে। সেখানে সবাই একজন গুপ্তচর হতে পারে''। দ্বিতীয়ত, নেটওয়ার্ক ডেটাবেইসের উন্নয়ন মানুষকে অজান্তেই পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৯০ সালে, টেলিভিশন তারকা [[w:Rebecca Saire|রেবেকা সেয়ার]] তার বাসার দরজার সামনে এক উন্মাদ ভক্তের গুলিতে নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, ওই হত্যাকারী তার ড্রাইভার লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে সরকারী ওয়েবসাইট থেকে তার ঠিকানা বের করেছিল। ''কুকিজ'' প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু মৌলিক তথ্যই নয়, ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ, ইমেইল ঠিকানা ইত্যাদিও সংগ্রহ করা যায়। তৃতীয়ত, ব্যবহারকারীরাই ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেন, যা নজরদারির জন্য আদর্শ মাধ্যম। [[w:Facebook|ফেসবুক]], [[w:Twitter|টুইটার]], ব্লগ, [[w:Instagram|ইনস্টাগ্রাম]] ইত্যাদি সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। তারা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, ছবি, অনুভূতি এসব প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে থাকেন। যদিও এই ওয়েবসাইটগুলোতে নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়, তবুও ব্যবহারকারীর তথ্য ও কার্যকলাপ নজরদারির আওতায় পড়ে। ব্যবহারকারীর পরিচয় নির্ধারণে আইপি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীর অবস্থান (শহর বা জেলা) শনাক্ত করে। যদি একাধিক ওয়েবসাইটে একই নজরদারি ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং ইতিহাস একসাথে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। যেমন, একজন ব্যক্তি ফেসবুকে লগইন থাকা অবস্থায় অন্য একটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে এবং সেখানে “লাইক” বাটনে ক্লিক করে, তাহলে ফেসবুক ওই ওয়েবসাইটের ব্রাউজ ইতিহাস রেকর্ড করে, ব্যবহারকারীর বন্ধুদের সম্পর্কেও তথ্য রেকর্ড করে। এসব তথ্যের সমন্বয়ে নজরদারির জন্য একটি সামাজিক সম্পর্ক চিত্র গঠন করা যায়। সেখানে ব্যবহারকারীর বন্ধু, অবস্থান ও সময় নির্ভর তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। আরও একটি শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে '''কম্পিউটিং ও নজরদা'''রির ভিত্তিতে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নজরদারি ও তথ্য সমাজ অধ্যয়নের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা নজরদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে কম্পিউটিংয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। এর ফলে কম্পিউটার ও নজরদারির পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে কয়েকটি শ্রেণিবিন্যাস গড়ে উঠেছে: যেমন নতুন নজরদারি, ডেটাভেইলেন্স, ইলেকট্রনিক (সুপার)প্যানঅপটিকন, ইলেকট্রনিক নজরদারি বা ডিজিটাল নজরদারি। গ্যারি টি. মার্কস "নতুন নজরদারিকে" সংজ্ঞায়িত করেছেন “ব্যক্তিগত তথ্য আহরণ বা সৃষ্টির জন্য প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে। এটি ব্যক্তি বা পরিবেশ থেকে সংগৃহীত হতে পারে।”<ref>Marx 2002, 12; see also: Marx 1988, pp.217–219</ref> তাঁর মতে, পুরনো নজরদারিতে তথ্য প্রেরণ কঠিন ছিল, কিন্তু নতুন নজরদারিতে তা অনেক সহজ। ঐতিহ্যবাহী নজরদারিতে “যা নজরদারি কর্তৃপক্ষ জানে, তাও সাধারণত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তি জানে”, কিন্তু নতুন নজরদারিতে “নজরদার ব্যক্তি এমন কিছু জানে যা লক্ষ্যবস্তু জানে না।”<ref>Marx, 2002, p.29</ref> তিনি বলেন, নতুন নজরদারি দৃশ্যমান নয় বরং দূরবর্তী এবং এটি “কম জোরপূর্বক” <ref name="Marx, 2002, p.28">Marx, 2002, p.28</ref> এবং “আরও গণতান্ত্রিক” কারণ এর কিছু রূপ আরও সহজলভ্য।<ref name="Marx, 2002, p.28" /> কম্পিউটারভিত্তিক নজরদারি হচ্ছে নতুন নজরদারির একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। “কম্পিউটার নজরদারির প্রকৃতি মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে—এটিকে নিয়মিত, বিস্তৃত ও গভীর করে তোলে। প্রতিষ্ঠানগত স্মৃতি স্থান ও সময় জুড়ে প্রসারিত হয়”।<ref>Marx, 2002, p.208</ref> ডেটাভেইলেন্স হচ্ছে “তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের কর্মকাণ্ড বা যোগাযোগের পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ” (ক্লার্ক ১৯৮৮, ৫০০)। ক্লার্ক (১৯৯৪) ব্যক্তি-ভিত্তিক ডেটাভেইলেন্স (যা একজন বা একাধিক ব্যক্তির উপর নজর রাখে) এবং গণ ডেটাভেইলেন্স (যেখানে একটি গোষ্ঠী বা বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নজরদারির আওতায় আনা হয় যাতে আগ্রহের ব্যক্তি শনাক্ত করা যায়) এর মধ্যে পার্থক্য করেন। বগার্ড (২০০৬) যুক্তি দেন যে কম্পিউটার একটি প্রযুক্তি যা নজরদারির অনুকরণ করে। গর্ডন (১৯৮৭) ইলেকট্রনিক প্যানঅপটিকনের কথা বলেন। মার্ক পোস্টার (১৯৯০) “ইলেকট্রনিক সুপারপ্যানঅপটিকন” ধারণা দেন: “আজকের ‘যোগাযোগের চক্র’ এবং এগুলো দ্বারা সৃষ্ট ডেটাবেস এক ধরনের সুপারপ্যানঅপটিকন সৃষ্টি করে, এটি এমন একটি নজরদারি ব্যবস্থা যার কোনো দেয়াল, জানালা, টাওয়ার বা প্রহরী নেই” (পোস্টার১৯৯০, ৯৩)। মার্ক আন্দ্রেয়েভিচ “ডিজিটাল এনক্লোজার” ধারণা দেন,<ref>Andrejevic, M. (2004). The web cam subculture and the digital enclosure. In N. Couldry & A. McCarthy (eds.)</ref> যেখানে ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।<ref>Fuchs, Boersma, Albrechtslund, and Sandoval (eds.) (2012) Internet and Surveillance: The Challenges of Web 2.0 and Social Media. London: Routledge, p.1</ref> তৃতীয় ধরনের শ্রেণিবিন্যাস এসেছে ওগুরা (২০০৬) এবং গ্যান্ডি (১৯৯৩)-এর মতবাদ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে নজরদারির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুঁজিবাদ এবং/অথবা জাতিরাষ্ট্র ভিত্তিক জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা।<ref>Gandy, O. H. & Farrall, K. N. (2008). Metaphoric reinforcement of the virtual fence: factors shaping the political economy of property in cyberspace. In A. Chadwick & P. N. Howard (eds.), The Handbook of Internet Politics (pp. 349–63). London: Routledge</ref> আমরা নজরদারির দুটি প্রধান রূপ আলাদা করতে পারি: '''অর্থনৈতিক''' ও '''রাজনৈতিক''' নজরদারি। ''জাতিরাষ্ট্র'' ও করপোরেশন দ্বারা পরিচালিত নজরদারির লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা, অর্থাৎ তারা যেন নির্দিষ্ট কিছু করে বা না করে, কারণ তারা জানে যে তাদের উপস্থিতি, চলাচল, অবস্থান, বা চিন্তাভাবনা নজরদারি ব্যবস্থার দ্বারা পর্যবেক্ষিত হচ্ছে বা হতে পারে।<ref>Fuchs 2008, 267–277</ref> রাজনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা সংঘটিত সহিংসতার (আইনের) হুমকির সম্মুখীন হয় যদি তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আচরণ করে এবং রাজনৈতিক অভিনেতাদের (যেমন গোপন সেবা বা পুলিশ) নজরে পড়ে। অর্থনৈতিক ইলেকট্রনিক নজরদারির ক্ষেত্রে, বাজারের সহিংসতা ব্যক্তি ওদের নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে বা উৎপাদনে বাধ্য করে এবং পুঁজিবাদী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তাদের অর্থনৈতিক আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এই ধরনের নজরদারিতে সহিংসতা ও পরাধীনতা চূড়ান্ত অস্ত্র। নিচের ছকে বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারির ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে। ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই প্রবণতাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, কারণ এটি মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডিং সিস্টেম ও অন্যান্য গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত আচরণের অবস্থানভিত্তিক নজরদারিকে সম্ভব করে তোলে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।’<ref>Gandy and Farall, 2008: May, Phillips: 2008</ref> ==== নজরদারির উদ্দেশ্য ==== নজরদারির অনেক উপকার থাকতে পারে। পরিস্থিতিভেদে এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও সাধারণত নিম্নোক্ত এক বা একাধিক লক্ষ্য পূরণের জন্য করা হয়: * তল্লাশি বা ওয়ারেন্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা। * কোনো ব্যক্তি, অবৈধ পণ্য বা অবৈধ কাজের স্থান খুঁজে বের করা। * কোনো ব্যক্তি, অপরাধী গোষ্ঠী বা স্থানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। * গোপন বা প্রকাশ্য নজরদারির মাধ্যমে কোনো অপরাধ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা। * অভিযানের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। * তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী ব্যক্তি বা অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। == বিশ্বব্যাপী নজরদারি == [[চিত্র:Internet_Censorship_and_Surveillance_World_Map.svg|থাম্ব|204x204পিক্সেল|দেশভিত্তিক ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও নজরদারির মানচিত্র।]] বিশ্বব্যাপী নজরদারি বলতে জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত নজরদারিকে বোঝায়। এর ইতিহাস ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়, যখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি করে। পরবর্তীতে এতে নিউ জিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া যুক্ত হয়, গঠিত হয় ‘ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’। তারা 'তৃতীয় পক্ষের' দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিও করে। এর মাধ্যমে গঠিত হয় একটি বিশ্বব্যাপী নজরদারি নেটওয়ার্ক, যার নাম 'ইসেলন'। এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অবগত ছিল না যতক্ষণ না [[w:Edward Snowden|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। == নজরদারির জন্য সংস্থা == নজরদারি ব্যবস্থা মূলত নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে। এজন্য একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ''"অল্প কিছু মানুষ অনেককে পর্যবেক্ষণ করে"''।<ref>Lyon, D. (2008). Surveillance studies: an overview (p. 140). Cambridge [u.a.]: Polity Press.</ref> তাই যে সংস্থাগুলো এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা হলো: ''সরকার, পুলিশ স্টেশন, ব্যাংক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিরাপত্তা কোম্পানি, বাণিজ্যিক ভবন'' ইত্যাদি—যাতে নাগরিক ও মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এই নজরদারি ব্যবস্থা মানুষের নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করে অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য। তবে, নজরদারি প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ, প্রেরণ ও ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই নতুন মিডিয়া যুগে, উপরে উল্লিখিত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সাধারণ কোম্পানি, ব্যক্তিগত গোয়েন্দা বা এমনকি ব্যক্তি হ্যাকাররাও ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক তথ্য ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে। ==== যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ==== ২০১৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার [[w:এডওয়ার্ড_স্নোডেন|এডওয়ার্ড স্নোডেন]] আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সংস্থাটির মার্কিন নাগরিক ও বিদেশি রাষ্ট্রের উপর পরিচালিত ব্যাপক নজরদারি কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা শুরু করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার চেষ্টার হাত থেকে বাঁচাতে তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানে তাকে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। জুন ২০১৩-তে স্নোডেনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি সম্পদ চুরির অভিযোগ আনা হয়। স্নোডেন যে তথ্যগুলো গণমাধ্যমে ফাঁস করেন, তার মধ্যে ছিল যে এনএসএ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষের ইন্টারনেট কার্যক্রম ও ফোন তথ্য সংগ্রহ করেছিল। কেবল মার্কিন ও বিদেশি নাগরিক নয়, এনএসএ বিদেশি নেতাদের ও তাদের সহকর্মীদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে। স্নোডেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এনএসএ-এর কর্মচারী ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করতেন এই নজরদারি কার্যক্রম সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। তবে, সমালোচকেরা বলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিজীবনে অনধিকার প্রবেশ করেছে এবং তাদের অজ্ঞাতসারে নজরদারির আওতায় এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এনএসএ বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন সরকার নজরদারিতে আইনগত গণ্ডি অতিক্রম করে না, তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক ভবিষ্যতেও চলবে।<ref>Alexander Stingl, 'Technology and Surveillance' in ''Research Starters: Sociology,'' 2015</ref> == ইউটিউব: নজরদারি না সুভেইলেন্স? == নজরদারি ও সুভেইলেন্সের সংজ্ঞা এবং [https://www.youtube.com/ ইউটিউব] এর প্রেক্ষাপটে তাদের প্রয়োগ বিবেচনা করলে দেখা যায় এই দুটি ধারণা কখনও কখনও পরস্পরকে ছাপিয়ে যেতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য একাধিক উপধারা রয়েছে। যেমন: ব্লগারদের কার্যক্রম সাধারণত সুভেইলেন্সে পড়লেও কিছু ক্ষেত্রে নজরদারিতেও পড়ে। বিভিন্ন ইউটিউবারের উদাহরণ বিশ্লেষণ করা হবে। নজরদারি ও সুভেইলেন্সের প্রেক্ষাপটে সমাজের উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার পিরামিড, এবং সেই পিরামিডের যেকোনো স্তর থেকে ভিডিও ফুটেজে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত এক ক্ষুদ্র বিতর্ক। এমনকি দুইজন ইউটিউবারের একটি কেস স্টাডিও থাকবে, যাদের কনটেন্টের স্বত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তারা এখনও সেই কনটেন্টের মালিকানা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্সকে বক্তৃতার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। [[চিত্র:Logo_Canale_YouTube_(2013-2017).jpg|alt=YouTube Logo|বাম|থাম্ব|নজরদারি না সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম?]] ইউটিউব সর্বদাই সুভেইলেন্সের একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সাধারণ মানুষ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা বিশ্বব্যাপী শেয়ার করে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউটিউবের গঠন ও বিন্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছে যাতে তারা নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে নিজেকে বিশ্বে উপস্থাপন করতে পারে। যারা এটি করে তারা 'ইউটিউবার' বা 'ভ্লগার' নামে পরিচিত। ভ্লগিং মানে হলো কোনো ঘটনাকে ভিডিও আকারে ডায়েরি হিসেবে উপস্থাপন করা, কিন্তু ইউটিউবারদের জন্য এটি মানে তাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি দিক শেয়ার করা। এর ফলে দর্শকরা তাদের জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত বোধ করেন এবং এটি টিভির তুলনায় বেশি বাস্তব মনে হয় কারণ এখানে জীবনের প্রকৃত রূপ দেখানো হয়, যা স্ক্রিপ্টেড বা পরিবর্তিত নয়। অধিকাংশ ইউটিউবার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, ভিডিও গেম খেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে যা জনগণের বাস্তব কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিভাত হয়। ইউটিউবের বিন্যাস ইউটিউবারদের নিজেদের জীবনধারা প্রচারের সুযোগ দেয়। বিনোদন ও প্রচার ছাড়াও, একটি অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে—যদি যথেষ্ট মানুষ তাদের ভিডিও দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা অর্থ উপার্জন করতে পারে। এর মানে হচ্ছে, কারিগরি দিক থেকে যদি তাদের ভিডিও যথেষ্ট সংখ্যক দর্শক দেখে, তাহলে ইউটিউবাররা সেটিকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারে। জনপ্রিয় ইউটিউবারদের অনেকেই এমনটি করে থাকেন, যেমন [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]। তবে তারা সেখানেই থেমে থাকেন না, অনেকে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রি করেন - যেমন [http://redrawr.storenvy.com/ Rose and Rosie], [https://shop.spreadshirt.com/ZACKSCOTT/ ZackScottgames], আবার কেউ কেউ নিজেদের বইও প্রকাশ করেছেন - যেমন [https://www.gofundme.com/cahsvf9g/ Ashley Mardell], [http://tyleroakleybook.com/ Tyler Oakley], [https://www.zoella.co.uk/category/life/books/ Zoella]। কেউ কেউ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রবেশ করেছেন টেলিভিশন শোয়ের মাধ্যমে - যেমন [http://www.epicmealtime.com/ Epic Meal Time]। ইউটিউব সাধারণ মানুষের জন্য খ্যাতি অর্জনের একটি চমৎকার মাধ্যম, যেমন [https://www.youtube.com/user/rhettandlink2/ Good Mythical Morning] বা [https://www.youtube.com/user/PewDiePie/ PewDiePie]-এর মতো কেউ কেউ প্রকৃত সফলতা অর্জন করেছেন এবং অনেক সেলিব্রিটির কাছেও পরিচিত। ইউটিউবাররা সাধারণত "সুসভেইলেন্স" ধারণার মধ্যে পড়ে, যেহেতু তারা বাস্তব জীবন ধারণ করেন এবং তারাও জানেন যে তারা একটি ক্যামেরার সামনে রয়েছেন। এটি তাদের জীবনকে ধারণ করছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় যখন [https://www.youtube.com/user/RoseEllenDix/ Rose and Rosie] এর মতো ইউটিউবাররা বলেন, তারা জীবনের বেশিরভাগ অংশ ক্যামেরাবন্দি করেন যাতে ছোট ছোট মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে থাকে। তাই, তাদের জন্য সুসভেইলেন্স হতে পারে উপকারী। তবে ইউটিউবারদের নজরদারিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আসে প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলো থেকে। সেখানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে বা সমাজের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়। [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] এবং [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] হলেন প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানানো দুইজন ইউটিউবার। সুসভেইলেন্স এবং সারভেইলেন্স-এর মধ্যে সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে যায় কারণ ইউটিউব স্বভাবতই সুসভেইলেন্স। সেখানে মানুষ নিজেরাই ক্যামেরা ধরে এবং তা সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু যখন ইউটিউবাররা অন্য সাধারণ মানুষকে প্র্যাঙ্ক করার জন্য গোপনে ধারণ করেন এবং তাদের এই ধারণার কথা জানা থাকে না, তখনই ইউটিউবের ক্যাটাগরি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই ধারণাটি আরও জটিল হয় যখন এতে ‘উদ্দেশ্য’ এবং ‘ক্ষমতা’র ধারণা যুক্ত করা হয়। যদি একটি শক্তির পিরামিড কল্পনা করা হয়, তাহলে তার শীর্ষে থাকবে সরকার, তারপর পুলিশ ও কাউন্সিল, এরপর পেশাজীবী/ব্যবসা/ইউটিউবার এবং সর্বনিম্নে থাকবে সাধারণ জনগণ। এই বিশেষ ক্ষমতার সম্পর্ক সুসভেইলেন্স ও সারভেইলেন্সের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করে। সরকার শুধুমাত্র সিসিটিভিকে (সম্পূর্ণ সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হয়েছে) একটি নজরদারি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যদিও কেউ কেউ বলবেন তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি নিখাদ নয় এবং সেটা গুপ্তচরবৃত্তির মতো, তবুও যদি আমরা ধরে নিই যে উদ্দেশ্য নিখাদ, তাহলে তাদের নজরদারি সাধারণ জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। এটি আরও সুস্পষ্ট হয় যখন দেখা যায়, বিশেষভাবে কিছু কর্মী নিয়োগ করা হয় ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং যেকোনো বেআইনি কার্যকলাপ রিপোর্ট করার জন্য। ফলে এই ফুটেজ নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃত নয় কারণ এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুরক্ষা এবং এটি একটি বিশ্বস্ত উৎস থেকে আসে। তবে, পরে এই বিষয়ে একটি যুক্তি তুলে ধরা হবে যে কীভাবে সরকার পক্ষ থেকেও ফুটেজ বিকৃত করা যেতে পারে। পিরামিডের পরবর্তী স্তরে রয়েছে পুলিশ এবং কাউন্সিল, যাদের উদ্দেশ্যও সাধারণ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পেশাদার এবং নিখাদ। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, যেমন আমেরিকান পুলিশ বনাম ব্রিটিশ পুলিশের প্রসঙ্গ যেখানে [http://news.sky.com/story/1633328/scots-police-teach-us-cops-how-to-avoid-gun-use/ ব্রিটিশ পুলিশ আমেরিকান পুলিশকে কম সহিংসভাবে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখাতে হয়েছে], কারণ আমেরিকান জনগণ তাদের পুলিশের দ্বারা আতঙ্কিত বোধ করছিলেন এবং পুলিশের অতিরিক্ত অস্ত্র ব্যবহার তাদের উদ্বিগ্ন করেছিল। এতটাই যে জনগণ মনে করে যে রেকর্ড করা ফুটেজ বা ড্যাশ ক্যামেরার ভিডিও সত্য ঘটনাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না, যা ফুটেজের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে এবং এই সন্দেহ জাগে যে এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে যেন অভিযুক্ত পুলিশের বদলে ভুক্তভোগীকেই দোষী প্রমাণ করা যায়। [http://www.huffingtonpost.com/news/police-brutality/ হাফিংটন পোস্ট] এই বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়েছে এবং [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] নামক একটি আন্দোলনের কথাও বলেছে। তবে পুলিশের নজরদারি উদ্দেশ্যগতভাবে ভালো হওয়ার কথা, কারণ এটি অপরাধীকে আদালতে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে। এর নিচে রয়েছে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং ইউটিউবাররা। প্রথম দুই শ্রেণি নজরদারির জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করেন তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করতে। তাদের উদ্দেশ্যও ভালো, কারণ তারা শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এটি ব্যবহার করেন এবং ফুটেজ মূলত বিকৃত থাকে না। তবে এটি কিছুটা অস্পষ্ট, কারণ এটি সেই স্তর যেখানে নজরদারি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির জন্য করা হয়। তাই উদ্দেশ্য নির্ধারণ কিছুটা কঠিন, তবে তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ফুটেজ বিকৃত না রাখার প্রবণতা থাকবে, যেমন কোনো আইনি মামলা হলে এটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে ইউটিউবারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও আকর্ষণীয়। ইউটিউবারদের উদ্দেশ্য সাধারণত স্বচ্ছ হলেও কখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জনগণকে বিনোদন দেওয়া (পিরামিডের নিচের স্তর), তথ্য সরবরাহ করা বা সমাজের নির্দিষ্ট ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা। এটি প্র্যাঙ্ক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, যেগুলো হয় হাস্যরস সৃষ্টি করে বা সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে, যেমন বিপদে মানুষের সাহায্য না করার প্রবণতা। ইউটিউবারদের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা সেলিব্রিটি হলেও সাধারণ মানুষের মতোই মনে হয়, কারণ আমরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন দেখতে পাই। কিন্তু তারপরও তারা কিছুটা উচ্চতর অবস্থানে থাকে। যেমন, তারা একটি প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে পারে, যা অন্য কেউ পারত না। এখানেই নজরদারি ও সুসভেইলেন্সের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইউটিউবারদের যখন দেখা যায় তারা গোপনে সাধারণ মানুষকে ধারণ করছে, তখন এটি একধরনের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের সীমারেখা আরও অস্পষ্ট হয়। এর আগে আলোচনা হয়েছিল যে সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্স ফুটেজ বিকৃত এবং অ বিকৃত — এই দ্বন্দ্বে উপনীত হয়, যা আবার ‘উদ্দেশ্য’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর একটি উদাহরণ হলো স্টোকস ক্রফটে ‘অ্যান্টি-টেস্কো’ ঘটনা। সেখানে, গণমাধ্যম একটি দাঙ্গার খবর প্রচার করে যেখানে সাধারণ মানুষ টেস্কো সুপার মার্কেট স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। পরে ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওগুলো থেকে জানা যায় যে দাঙ্গা আসলে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল, যা সাধারণ জনগণের প্রাথমিক দাবিকে সমর্থন করে।<ref>http://m.nms.sagepub.com/content/17/5/755</ref> পিরামিডের শীর্ষে সরকারের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজই হওয়া উচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বিকৃতহীন, যেহেতু এটি কেবল জনগণের সুরক্ষার জন্যই রয়েছে। তবে এই যুক্তির বিরোধী যুক্তি হতে পারে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফুটেজ থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয় বা কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা আদালতে দেখানো হয় যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এটি অবশ্য তাত্ত্বিক, তবুও এটি একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে যে কীভাবে সরকার এই ফুটেজ ব্যবহার করে ভুল ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে। এটি আবার উদ্দেশ্য ও ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ আদালত সিসিটিভি ফুটেজকে প্রায়শই নির্ভরযোগ্য বলে ধরে নেয়, যদিও তা নাও হতে পারে। অন্যদিকে ইউটিউবার ও সুসভেইলেন্সের ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, জনগণ নিজেরাই জানে যে তাদের ফুটেজে বিকৃতি ঘটানো যেতে পারে কারণ এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং উদ্দেশ্য সবসময় স্পষ্ট নয়। যেমন [https://www.youtube.com/user/OFFICIALsampepper/ Sam Pepper] ও [https://www.youtube.com/user/fouseyTUBE/ FouseyTube] – তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা জনগণকে গোপনে ধারণ করে সমাজের কিছু দিক উন্মোচনের নামে জনগণকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তবে ইউটিউব এবং জনগণের ফুটেজ কখনো কখনো আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারে কারণ অনেক সময় জনসাধারণ নির্দিষ্ট ঘটনাকে সত্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও ধারণ করে। এর উদাহরণ আবার [http://blacklivesmatter.com/ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার] আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। সেখানে আমেরিকার সাধারণ মানুষ পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করছে কারণ তারা মনে করে সরকার পক্ষের ফুটেজ বিকৃত বা অবিশ্বস্ত এবং তাদের ভিডিও বেশি নির্ভরযোগ্য। অধিকাংশ সংস্কৃতিতে কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব থাকে, যার ফলে জনগণ সরকারিভাবে রেকর্ডকৃত ফুটেজের চেয়ে অপেশাদার ভিডিওকেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করে। এটি ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে জনগণ হয়তো সত্যিই সেই ফুটেজকে বেশি বিশ্বাস করে যা সরকারিভাবে নয় বরং জনগণ নিজেরাই ধারণ করেছে। সারভেইলেন্স ও সুসভেইলেন্সের মধ্যে এই উদ্দেশ্য ও নির্ভরযোগ্যতার বিতর্ক পিরামিডের স্তরগুলোর মাঝে একটি জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। সুসভেইলেন্সের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে এবং [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ সপ্তম সপ্তাহের বক্তৃতা]-এর আলোকে দুটি ইউটিউবার ব্রিয়া ও ক্রিসির একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি উঠে আসে, যারা প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্কিত কপিরাইট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ছেন। ক্রিসি যখন আঠারো বছর বয়সে ছিলেন, তখন তার প্রাক্তন প্রেমিক তার অজান্তে তাদের যৌন সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে এবং তা কিছু ওয়েবসাইটে আপলোড করে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কপিরাইট ইস্যু এখানেই আসে, কারণ ক্রিসি কখনোই এই ভিডিও ধারণে সম্মতি দেননি এবং তিনি ঘটনাটি মনে করতে পারছেন না কারণ তাকে অ্যালকোহল খাইয়ে মাতাল করা হয়েছিল। তবুও ফুটেজের মালিকানা তার নয়, কারণ এটি তার প্রেমিকের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কপিরাইট আইন অনুযায়ী, যদিও এগুলো বর্তমানে হালনাগাদ হয়েছে, এই ঘটনা সেই পরিবর্তনের আগে ঘটায় এই আইন তাকে সহায়তা করতে পারছে না। ভিডিওটি সরাতে হলে তাকে কেবল তার প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ভিডিওটির মালিকানা আদায় করতে হবে। এই কপিরাইট অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই এখনও চলছে। এই বিষয়ে [https://www.youtube.com/watch?v=xFHbuFT_sHU/ দ্য গার্ডিয়ান]-এর একটি ছোট তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল, পাশাপাশি ব্রিয়া এবং ক্রিসির ভ্লগও ছিল। এছাড়াও তাদের [https://www.generosity.com/fundraising/revenge-porn-victim-seeks-justice/ পৃষ্ঠার] একটি লিঙ্ক রয়েছে। সেখানে তাদের গল্পটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইউটিউব দম্পতিকে নিয়ে এই কেস স্টাডিটি উদ্দেশ্য সম্পর্কিত অংশের সঙ্গেও সম্পর্কিত, কারণ ক্রিসির প্রাক্তন প্রেমিক তাকে তার সম্মতি ছাড়াই ভিডিও করেছিল, যার পেছনে ছিল অসৎ উদ্দেশ্য। এর অর্থ দাঁড়ায়, এই সুভেইলেন্সটি ছিল ক্ষতিকর এবং এটি নজরদারিতে পরিণত হয়, যেহেতু ক্রিসি জানত না যে তাকে ভিডিও করা হচ্ছে। ক্রিসির জন্য এই ভয়ানক অভিজ্ঞতাটি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারের] সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। সেখানে অনলাইন পরিচয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কারণ তার সুনাম এবং অনলাইন সত্তা এই একটি ভিডিওর কারণে খারাপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তিনি স্মরণ করেছেন, যারা তাকে একজন আদর্শ হিসেবে দেখতেন, তারা যখন ভিডিওটি আবিষ্কার করলেন, তখনই তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গেল। তরুণদের জন্য ইতিবাচকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে যেভাবে তিনি এতদিন ধরে চেষ্টা করেছিলেন, সেই অনলাইন পরিচয় একটি ভয়ানক ভিডিওর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। এটি আলোচিত বিষয়ে সম্পর্কিত, কারণ যদিও এখানে ইউটিউবকে একটি ইতিবাচক সুভেইলেন্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, তবে যদি উদ্দেশ্য খারাপ বা অস্পষ্ট হয়, তবে এটি নেতিবাচকও হয়ে উঠতে পারে। সবশেষে, নজরদারি ও সুভেইলেন্স অবশ্যই লেকচারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং ইউটিউবকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়। [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ দ্বিতীয় সপ্তাহের লেকচারে] অনলাইন পরিচয় নিয়ে জিজি এ. পাপাচারিসির <ref>Zizi A. Papacharissi, 'A Private Sphere' in Private Sphere : Democracy in a Digital Age, (2013)</ref> একটি লেখা ছিল যেখানে ব্লগিং (পৃষ্ঠা ১৪৪) এবং ইউটিউব (পৃষ্ঠা ১৫০)-এর কথা বলা হয়েছে। বইটি ইউটিউবকে এমন একটি স্থান হিসেবে বর্ণনা করেছে যেখানে “তোমাকে কী করতে হবে তা বলে না” (পৃষ্ঠা ১৫০) এবং যেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়বস্তু থাকে, “ইউটিউবের অনেক গোত্র”-এর উল্লেখ রয়েছে (পৃষ্ঠা ১৫০)। এই ‘গোত্রগুলি’ তাদেরকে বোঝাতে পারে যারা LGBT ইউটিউবার, যাদের অন্য কোথাও স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ নেই, তাই ইউটিউব তাদের একটি জায়গা দেয় নিজস্বভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের প্রকাশ করার জন্য। এতে আরও বলা হয়েছে “ইউটিউব একটি বিকল্প মতপ্রকাশের মাধ্যম, যা প্রচলিত আন্দোলন, মতপ্রকাশ বা প্রতিবাদের চেয়ে আলাদা... কিছু ভিডিও শুধু ব্যঙ্গ, রসবোধ বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের জন্ম দেয়, যা সমান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা ও মতপ্রকাশের মাধ্যম” (পৃষ্ঠা ১৫১)। এটি অনলাইন পরিচয়ের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ ইউটিউব মানুষকে তাদের পরিচয় অনলাইনে প্রকাশ করতে দেয় বা অন্যদের দ্বারা তাদের পরিচয়কে উপস্থাপন করতে দেয়, যার ফলে এক ধরণের কমিউনিটি গড়ে ওঠে যেখানে মানুষ নিজেদের মত অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত অনুভব করে। ইউটিউবকে ভালো মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করার এই ধারণা ব্যাখ্যা করে কেন সুভেইলেন্স এখানে বিকশিত হয়েছে, কারণ মানুষ এখানে যা ইচ্ছা তা করতে এবং তৈরি করতে পারে এবং এটি নিজেই সুভেইলেন্স, কারণ তারা নিজেরাই ক্যামেরার সামনে সচেতনভাবে রেকর্ড করছে। নজরদারি [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/gs30/listenagain.php/ চতুর্থ সপ্তাহের] “অলওয়েজ অন” লেকচারের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ সেখানে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে আমরা সবসময় কোনো না কোনো প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত আছি, যেমন সিসিটিভি ফুটেজ সর্বদা আমাদের ওপর নজর রাখছে এবং আমাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। “হিউম্যানিটি বনাম নজরদারি” অংশে বলা হয়েছে, কিভাবে সাধারণ মানুষ এখন এমন অ্যাপ কিনতে পারে যা দিয়ে অন্যদের উপর নজরদারি করা যায় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। কিন্তু সবার উপর এই ক্রমাগত নজরদারি “একটি অনলাইন সত্তা” তৈরি করে, যা দ্বিতীয় সপ্তাহের আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ অধিকাংশ মানুষ জানে না যে তাদের রেকর্ড করা হচ্ছে, তবুও এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা দৃশ্যমান এবং তাদের এমন একটি দিক তুলে ধরা হয় যা আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)। ড্যানাহ বয়েড <ref>danah boyd, Participating in the always-on culture in The Social Media Reader by Michael Mandiberg, (2012)</ref> “অলওয়েজ অন” থাকার বিষয়ে বলেন, “এটি আর শুধু অন বা অফ থাকা নিয়ে নয়। এটি এমন একটি পৃথিবীতে বসবাস করা যেখানে যখনই ও যেখানেই প্রয়োজন, তখনই মানুষ এবং তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়।” (পৃষ্ঠা ৭১-৭২) বয়েড এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেও এটি নজরদারির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ সাধারণ মানুষ জানে যে তাদের চারপাশে সিসিটিভি রয়েছে, কিন্তু তারা যেন সেটি নিয়ে ভাবিত নয়, যদিও এটি তাদের রেকর্ড করছে / তাদের অনলাইন প্রোফাইলের আরেকটি অংশ তৈরি করছে। [http://listenagain.stir.ac.uk/media/2015/sr56/listenagain.php/ অষ্টম সপ্তাহের লেকচারে] আলোচিত "কগনিটিভ সারপ্লাস" এর প্রসঙ্গে সুভেইলেন্স অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে মানুষের হাতে অনেক অবসর সময় রয়েছে, যেহেতু শ্রমিকশ্রেণির কাজকর্মে প্রযুক্তি স্থান নিয়েছে। দেয়া উদাহরণগুলো প্রধানত গেমারদের যারা কঠিন পরিস্থিতিতে গেম সম্পন্ন করেছেন। তবে এটি সুভেইলেন্সের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত, কারণ এই বাড়তি সময় না থাকলে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম এবং সুভেইলেন্সের চর্চা সম্ভব হতো না; যেমন ব্লগিং, ডেইলি লাইফ ভিডিও তৈরি কিংবা সমাজ নিয়ে মন্তব্য ইত্যাদি। এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ নতুন মাধ্যম যুগে। সেখানে নজরদারি এবং সুভেইলেন্স উভয়েরই কার্যকারিতা রয়েছে। ব্যবহারকারীরা তাদের ভিডিওগুলো অনলাইনে স্বাধীনভাবে শেয়ার করার মাধ্যমে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুহূর্তেই সারা পৃথিবীতে পৌঁছে যায়, তা সরকার চাইলেও হোক বা না চাইলেও। এই চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা উচ্চস্তরের কর্মকাণ্ড তদারকির সুযোগ পায়, অন্যভাবে বললে, ''অসংখ্য মানুষ অল্পসংখ্যককে পর্যবেক্ষণ করে''। উদাহরণস্বরূপ, [[w:২০১৩-এর_বোস্টন_ম্যারাথন_বোমা_হামলা|২০১৩ সালের বোস্টন ম্যারাথন বোমা হামলা]] চলাকালীন বিপুল পরিমাণ ছবি ও ভিডিও Vine, Facebook, YouTube প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যম সাইটে আপলোড করা হয়, যা পুলিশি তদন্তে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক ছিল।<ref>Biddinger, P. D., Baggish, A., Harrington, L., d'Hemecourt, P., Hooley, J., Jones, J., ... & Dyer, K. S. (2013). Be prepared—the Boston Marathon and mass-casualty events. New England journal of medicine, 368(21), 1958-1960.</ref> অন্যদিকে, সুভেইলেন্সের সুযোগে অল্পসংখ্যক মানুষও ইউটিউবের মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি ব্যবহারকারীর সামাজিক মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে, যেমন [https://sumall.com/ SumAll], [http://www.thoughtbuzz.com/ ThoughtBuzz] এবং GraphDive। সাধারণত এই তথ্য সংগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মার্কেটিং ও গ্রাহকসেবা কার্যক্রমে ব্যবহারকারীদের মৌলিক তথ্য, শখ, যোগাযোগ, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি কাজে লাগানো। == আইন ও বিধিনিষেধ == [http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Definition সংজ্ঞা] অনুযায়ী, নজরদারি হলো তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ। যেহেতু কোম্পানি এবং সরকার বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে, যেমন যোগাযোগ তথ্য এবং তার বিষয়বস্তু, তাই নজরদারির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং গোপনীয়তার ক্ষতি ঠেকাতে আইন ও বিধিনিষেধ থাকা আবশ্যক। হাউস অফ লর্ডস কনস্টিটিউশন কমিটি বলেছে: 'নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জাতির জীবনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক নজরদারি গোপনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।' [http://www.theregister.co.uk/2009/02/06/lords_reject_government_data/] একটি আচরণবিধি রয়েছে, যা স্টেট সেক্রেটারির পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। সেখানে নজরদারি ক্যামেরা সিস্টেম কীভাবে যথাযথভাবে ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ([http://An_Internet_of_Everything%3F/Surveillance_and_Sousveillance#Protection_of_Freedoms_Act_2012 ২০১২ সালের ফ্রিডম সুরক্ষা আইন] এর ধারা ৩৩)। ==== নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধি ==== নজরদারি ক্যামেরার আচরণবিধ <ref>Surveillance Camera Code of Practice. Retrieved from: Surveillance Camera Code of Practice, 2013, London: The Stationery Office</ref> নির্দেশনা প্রদান করে যাতে নজরদারি প্রযুক্তিগুলো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। যেন সেগুলো মানুষের ও সম্পদের নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই আচরণবিধির উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা এবং এই আস্থা তৈরি করা যে ক্যামেরাগুলো কেবলমাত্র তাদের সুরক্ষার জন্যই স্থাপন ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কোডটি এমন নির্দেশনা দেয় যাতে নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার স্বচ্ছ ও বোধগম্য হয়। তবে এই কোড শুধুমাত্র তাদের উপরই প্রযোজ্য যারা জনসমক্ষে স্থাপিত নজরদারি প্রযুক্তি বা ক্যামেরা ব্যবহার করে। ==== উদাহরণ ==== নজরদারির কথা বললে, [[w:September 11 attacks|৯/১১ হামলার]] পর আমেরিকান সরকারকে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে আমেরিকান সরকার ''[https://www.justice.gov/archive/ll/highlights.htm প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট]'' এবং ''[https://www.dhs.gov/homeland-security-act-2002 হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট]'' প্রণয়ন করে। সেখানে প্রয়োজনে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে।<ref>Kennedy, S. S. (2015). Congressional Investigations. The Encyclopedia of Civil Liberties in America, 213.</ref> তবে এই আইনগুলোর জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনা করেছে। ''জার্মান মিডিয়া আইন'' বিশ্বে প্রথম আইন যা ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে বলা হয়েছে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকতে হবে।<ref>Spindler, G. (2014). Social Networks and Liability—the Difficult Triangle Between Network Operators, Users and Third Parties in German Media Law. In Varieties of European Economic Law and Regulation (pp. 863-892). Springer International Publishing.</ref> ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক গোপনীয়তা তথ্য কেন্দ্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে একটি বৈশ্বিক গোপনীয়তা জরিপ প্রকাশ করে থাকে, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত গোপনীয়তা প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়। গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার প্রতিবেদন (প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল ২০০৭ক)৭৫টিরও বেশি দেশে নজরদারি এবং গোপনীয়তা রক্ষার অবস্থা মূল্যায়ন করে। ‘গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটি মানব মর্যাদা এবং মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা ইত্যাদি মূল্যের ভিত্তি। এটি আধুনিক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার হয়ে উঠেছে।<ref>Karen Lawrence Öqvist (2008) 'All in the Name of National Safety' in Virtual Shadows Your privacy in the information society, Swindon: The British Computer Society, p.110.</ref> সেই অনুযায়ী, ইউরোপে তথ্য গোপনীয়তা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপাত্ত গোপনীয়তা নির্দেশিকা (৯৫/৪৬/EC) দ্বারা সমর্থিত। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের উচিত একটি গোপনীয়তা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা যাতে এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে রয়েছে তথ্য সুরক্ষা আইন ১৯৯৮ (তথ্য কমিশনারের কার্যালয় ১৯৯৮)। যুক্তরাজ্যের যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের সরকারে নিবন্ধন করতে হয় এবং তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ==== টেলিফোন কোম্পানির জন্য আইন ==== মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের আদালত নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তা সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকারকে গোপনীয়তা অধিকারের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিষেবা প্রদানের সময় সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের বা প্রকাশের জন্য গ্রাহকের অনুমতি নিতে হয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেগুলেশন কোডের টাইটেল ৪৭, ধারা ৬৪.২০০৫)[https://www.law.cornell.edu/cfr/text/47/64.2005]। অবৈধভাবে অনুসৃত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ প্রকাশ করা যেতে পারে (মার্কিন কোডের টাইটেল ১৮, ধারা ২৫১১)[https://www.law.cornell.edu/uscode/text/18/2511] এবং অননুমোদিতভাবে ব্যবহারকারীর ফাইল অনলাইনে প্রবেশ নিষিদ্ধ (১৯৮৬ সালের মার্কিন ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্রাইভেসি অ্যাক্ট)[https://it.ojp.gov/privacyliberty/authorities/statutes/1285]। এই শর্তগুলো শিল্পোত্তর গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিগত তথ্যের দুর্বলতাকে সরাসরি স্বীকৃতি দেয়। তবে, আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এসব নিয়মাবলী বেসরকারি খাতে সংগৃহীত সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ১৯৯৯ সালের ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী আরও কঠোর নিয়মাবলী অনুসরণ করে যা ভোক্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে [http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents]। এই নির্দেশিকা ভোক্তা তথ্যের উপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং বিদেশি বাণিজ্য অংশীদারদের সমান মানের সুরক্ষায় আবদ্ধ করে <ref>Lee, Laurie Thomas (2000). Privacy, security and intellectual property. In Alan B. Albarran & David H. Goff (eds.), Understanding the Web: Social, Political, and Economic Dimensions of the Internet (pp. 135–64). Arnes: Iowa State University Press</ref>)। যদিও ব্যক্তিগত তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ থেকে যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা না থাকলে অন্য দেশে স্থানান্তর নিষিদ্ধ, তবে বিশ্বায়িত ব্যবসার প্রকৃতিগত কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির মাধ্যমে গোপনীয়তা বিধানের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক কোম্পানির সাথে ব্যবসা করতে পারে (যেমন: লি, ২০০০)। এই চুক্তিগুলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে আইনি সুরক্ষার চেয়ে অগ্রাধিকার না দিলে, তথ্যের অপব্যবহার এড়ানো অসম্ভব।<ref>Zizi A. Papacharissi, A Private Sphere: Democracy in a Digital Age, pp.43-44.</ref> ==== বিধিনিষেধ ==== সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি পরিচালনার জন্য কিছু শর্ত পূরণ নিশ্চিত করতে [[w:Data Protection Act 1998|ডেটা সুরক্ষা আইন ১৯৯৮]]-এর মাধ্যমে কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে: # চিত্র ধারণকারী ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণ করা # তৃতীয় পক্ষের কাছে উপকরণ প্রকাশ না করা # উপকরণ যতদিন প্রয়োজন ততদিন সংরক্ষণ করা # পরিচয় নিশ্চিত করা, অর্থাৎ নজরদারি ক্যামেরা চালু রয়েছে তা জানানো<ref>Data Protection Act. In 'legislation.gov.uk´. Retrieved from http://www.legislation.gov.uk/ukpga/1998/29/contents/enacted .</ref> এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, ভিডিও উপকরণ কেবল তখনই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে যদি সিসিটিভি আইনগত বিধিনিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যদি সিসিটিভি অপরাধ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়ে থাকে, তবে অপারেটররা প্রয়োজনমতো উপকরণ সংরক্ষণ করতে পারবেন। ==== খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল ==== [[w:Draft Investigatory Powers Bill|খসড়া তদন্তকারী ক্ষমতা বিল]] যুক্তরাজ্যের সংসদের একটি যৌথ কমিটির দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়। এটি ক্ষমতাধর সংস্থা এবং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি তিনটি পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ক্ষমতাধর সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য সংস্কার প্রস্তাব করে। তদুপরি, তারা গ্যারান্টির একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দেয় যাতে আইন মেনে চলা নিশ্চিত হয়। খসড়া বিলের তিনটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে:<ref>Draft Investigatory Powers Bill. Retrieved from: https://www.gov.uk/government/uploads/system/uploads/attachment_data/file/473770/Draft_Investigatory_Powers_Bill.pdf</ref> # এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা ও [[w:Intelligence agency|গুপ্তচর সংস্থার]] যেসব ক্ষমতা ইতোমধ্যে রয়েছে, সেগুলোকে একত্র করবে। এটি যোগাযোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এসব ক্ষমতাকে স্পষ্ট ও বোধগম্য করে তুলবে। # এটি অনুমোদন ও তদারকি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে এবং [http://definitions.uslegal.com/i/intercept-warrant/ অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্ট]-এর জন্য একটি ‘ডাবল-লক’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে, যাতে সেগুলো কেবল বিচারকের অনুমোদনের পরই কার্যকর হয়। এর ফলে, এক নতুন তদন্তকারী ক্ষমতা কমিশনার (IPC) নিযুক্ত করা হবে যিনি এই ক্ষমতাগুলো আইন অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা তদারকি করবেন। # এটি নিশ্চিত করবে যে সমস্ত ক্ষমতা ডিজিটাল যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইন্টারনেট সংযোগ রেকর্ড (ICRS) সংরক্ষণের বিধান প্রদান করবে, যা কোনো ডিভাইসের দ্বারা প্রবেশ করা ইন্টারনেট সেবাসমূহের রেকর্ড। ==== 'তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল' ==== তদন্তকারী ক্ষমতা বিলের উপাদানগুলো অপব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য একজন পর্যবেক্ষক দরকার। [[w:Investigatory Powers Tribunal|তদন্তকারী ক্ষমতা ট্রাইব্যুনাল]] নামে একটি কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি সরকারের কাছ থেকে স্বাধীন, যার কাজ হচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো যেন মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে তা নিশ্চিত করা। কেউ যদি মনে করে তারা বেআইনি কার্যক্রমের শিকার হয়েছে, তবে তারা ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে অভিযোগ দাখিল করতে পারে এবং ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি যাচাই করে দেখবে।<ref>The Investigatory Powers Tribunal. Retrieved from : http://www.ipt-uk.com/section.aspx?pageid=1</ref> ==== ২০১৪ সালের তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ==== যুক্তরাজ্যের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনে, পার্লামেন্ট ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তথ্য সংরক্ষণ ও তদন্তকারী ক্ষমতা আইন পাস করে যাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো টেলিফোন ও ইন্টারনেট রেকর্ডে প্রবেশের পূর্বতন ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। এই আইন কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করেনি, তবে এটি স্পষ্ট করেছে যে, বিদেশে অবস্থিত কিন্তু যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপরও এই আইন প্রযোজ্য। এই আইন 'ডেটা রিটেনশন (ইসি নির্দেশিকা) রেগুলেশন ২০০৯' (S.I. 2009/859) প্রতিস্থাপনের জন্য গৃহীত নতুন আইন প্রবর্তনের ক্ষমতা প্রদান করে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত সুরক্ষার বিধানও রাখে। এই আইন কার্যকর করা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, যুক্তরাজ্যে যেসব কোম্পানি যোগাযোগ সেবা প্রদান করে তারা রাষ্ট্র সচিবের অনুরোধ অনুযায়ী যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও অনুপ্রবেশ ওয়ারেন্টে সাড়া দিতে বাধ্য হয়।<ref>Data Retention and Investigatory Powers Act 2014. Retrieved from: http://www.legislation.gov.uk/ukpga/2014/27/notes/division/2</ref> এই আইনের উপাদানগুলো বিদ্যমান কাঠামোকে ব্যাখ্যা ও দৃঢ় করে। ==== ২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইন ==== ২০১২ সালের স্বাধীনতা সুরক্ষা আইনে সরকারি ডেটাবেসে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ধারণ ও ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। * এটি পুলিশ কর্তৃক আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করে * এই আইন নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার জন্য একটি আচরণবিধি প্রবর্তন করে, তবে কেবল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত নজরদারির বিচারিক অনুমোদনের জন্য * এটি তথ্যের স্বাধীনতা অধিকারের সম্প্রসারণ ঘটায়, যার অধীনে ডেটাবেসগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী ফরম্যাটে উন্মুক্ত করতে হবে * এটি কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ক্ষমতার জন্য একটি আচরণবিধি সরবরাহ করে। সেখানে এই ক্ষমতাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিলযোগ্য যুক্তরাজ্যের ডেটা সুরক্ষা আইন (DPA) আপনাকে একটি তথ্য বিষয় হিসেবে আপনার উপর কী সংরক্ষিত রয়েছে এবং কে সংরক্ষণ করছে তা জানার অধিকার প্রদান করে। এই আইনে স্বচ্ছতার অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর অর্থ, একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেটি সরাসরি আপনার পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত, তা সরকার বা অন্য যেকোনো সংস্থা সংরক্ষণ করলে আপনি তা জানার অধিকার রাখেন। আপনাকে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে এবং আপনার অনুরোধ যৌক্তিক হলে তারা তা মেনে চলতে বাধ্য।<ref>Öqvist, 2008 p.112</ref> ==== ২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ==== ২০০০ সালের তদন্তকারী ক্ষমতা আইন (আরআইপি বা আরআইপিএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন যা সরকারি সংস্থাগুলোকে নজরদারি ও তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ডাকযোগে যোগাযোগের বিষয়বস্তু অনুসরণ; যোগাযোগের বিষয়বস্তু ছাড়া অন্যান্য তথ্য (যেমন যোগাযোগের ধরন, ফোন নম্বর, ইন্টারনেট ঠিকানা, ডোমেইন নাম, ডাক ঠিকানা, তারিখ, সময় ও সময়কাল) সংগ্রহ; গুপ্তচর, তথ্যদাতা, ছদ্মবেশী অফিসার ব্যবহার; ব্যক্তিগত ভবন ও যানবাহনে ইলেকট্রনিক নজরদারি; কাউকে অনুসরণ করা; এবং এনক্রিপ্ট করা ডেটা অ্যাক্সেস করা। ==== ১৯৮৪ সালের টেলিকমিউনিকেশন আইন ==== টেলিকমিউনিকেশন আইন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত একটি বিধান, যার অধীনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়: * ব্রিটিশ টেলিকমকে বেসরকারিকরণ * ভোক্তার স্বার্থ ও বাজার প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্য 'Oftel' নামে একটি টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা * টেলিকমিউনিকেশন পরিচালনা কিংবা অন্য কোনো সিস্টেমের সাথে সংযোগ করার জন্য লাইসেন্স প্রবর্তন করা। লাইসেন্স ছাড়া তা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় ২০১৪ সালের এপ্রিলে হাউস অফ কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিবেদনে টেলিকমিউনিকেশন আইন ১৯৮৪-এর অধীনে যোগাযোগ তথ্য সংগ্রহ এবং এই ক্ষমতার তদারকির অভাব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। == মানবতা বনাম নজরদারি == === মানবতার পক্ষে যুক্তি === "নজরদারি নিয়ে আলোচনায় একটি প্রধান রাজনৈতিক উদ্বেগ হলো: নিরাপত্তার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ ও নতুন নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার কি জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ বইয়ের মত একটি দমনমূলক সর্বনিয়ন্ত্রিত সমাজ নিয়ে আসছে?"<ref>[http://www.worldcat.org/title/our-biometric-future-facial-recognition-technology-and-the-culture-of-surveillance/oclc/630468338 Our Biometric Future: Facial Recognition Technology and the Culture of Surveillance].</ref> নজরদারি ক্যামেরাগুলো প্রতিটি রাস্তার কোণায়, প্রতিটি পাব-এ, প্রতিটি গণপরিবহন ব্যবস্থায় বসানো হয়েছে। এগুলো আমাদের শহরের গায়ে এবং মানুষের মানসিকতায় স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। বলা হয় যে, যুক্তরাজ্যের কোনো শহুরে এলাকায় আপনি প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে প্রায় ৩০টি নজরদারি ক্যামেরা ব্যবস্থার আওতায় পড়েন — ক্যামেরা নয়, সম্পূর্ণ ব্যবস্থা! অর্থাৎ, সেটি প্রায় ৩০০টি ক্যামেরা হতে পারে! ব্রিটিশ সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ৪ থেকে ৬ মিলিয়ন নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে। প্রযুক্তি বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে চলেছে। যা একসময় একটি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল, এখন তা মুখ শনাক্ত করতে কিংবা আচরণ পূর্বাভাস দিতে পারে। মানবতা বনাম নজরদারি বিতর্কে আসলে কে জয়ী হচ্ছে? এই ধরণের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ একটি জীবনযাত্রার মান সৃষ্টি করেছে যা [[w:Big Brother (franchise)|বিগ ব্রাদার]]-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেখানে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী একজন সাধারণ নাগরিক জানেন যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারির আওতায় রয়েছে—একেবারে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-এর মতো। এটি কেবলমাত্র জনসাধারণের প্রতিদিনের জীবনে সীমাবদ্ধ নয়, একজন সাধারণ ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্যবহারের উপরও নজরদারি চালানো হয়, [http://www.theguardian.com/world/2015/nov/04/theresa-may-surveillance-measures-edward-snowden এমনকি যদি তার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড না-ও থাকে]। নজরদারি নিজেই গোপনীয়তার উপর হস্তক্ষেপ, তবে এর ইতিবাচক ফলাফল ও সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করা যায় না। রেকর্ড করা ফুটেজ আদালতের মামলায় ব্যবহার করা যায় যেমনটি রাস্তার অপরাধ বা [http://www.cctvcamerapros.com/Nanny-Camera-Court-Evidence-s/288.htm বাড়ির অভ্যন্তরেও] হয়, তবে এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি শহরে ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। এটি এমনকি ঘরে কিংবা বাইরে অজান্তে কারো ওপর ক্যামেরা বসানো নৈতিক ও নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে। যদিও—বিগ ব্রাদার শো-এর মতো করে ফুটেজ দেখা এত সহজ নয়—তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখা যায়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপগুলো নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখার সুযোগ করে দেয়। এটি আবার সেই প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয় যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (যার মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়—যদিও এটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি বাস্তব চিত্র দেখাতে সহায়ক হতে পারে, এটি একইসঙ্গে অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের—যেমন পেডোফাইলদের—জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে, যারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখা উচিত। কখনো কখনো এটি এমন একটি অবস্থা হয় যেখানে জনগণ নজরদারির বিপক্ষে দাঁড়ায়, অথচ একইসাথে শহর ও শহরতলিতে অপরাধ বা বিপদ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করতে চায়। সাধারণ মানুষও তাদের মুখমণ্ডল রেকর্ড করে ভবিষ্যতে সংরক্ষণ করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। অনলাইনে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা অত্যন্ত সহজ—গুগলে মাত্র একটি সার্চেই ৯.৫ মিলিয়ন ফলাফল পাওয়া যায়। এই সহজলভ্যতা ও দ্রুততা যে কারো জন্যই উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত, যিনি কখনো কোনো জনসমাগমপূর্ণ স্থানে ছিলেন। এটি শুধুমাত্র সরকারের ব্যবহারের জন্য নয়, তা হলে এটি এত সহজে পাওয়া যেত না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, নজরদারি বিরক্তিকর ও অনুপ্রবেশমূলক হলেও এটি জননিরাপত্তার জন্য এবং অপরাধমূলক ঘটনার ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ সত্য ফুটেজ প্রদানের জন্য অপরিহার্য। এটি জরুরি সেবাসমূহের (যেমন পুলিশ) প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যাতে তারা ঘটনার নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাহলে কি এত ক্যামেরার সত্যিই প্রয়োজন আছে? সমাজ সবসময় নজরদারির চক্ষু সহ্য করে এসেছে কারণ আমাদের মগজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু কতদিন এই যুক্তি কার্যকর থাকবে? যদি তারা এই সিস্টেমগুলো এমনভাবে আপগ্রেড করে যাতে শুধু দেখা নয়, মানুষের কথাবার্তাও শুনতে পারে এবং মুখ শনাক্তকরণ সংরক্ষণ করে আপনার ওপর নজর রাখতে পারে—তবে কি সত্যিই এটি নিরাপত্তার জন্য? তবে আপনি লক্ষ্য করবেন, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিপরীতে, সিসিটিভি সিস্টেমে তেমন কোনো ব্যাপক আপগ্রেড হয়নি। এর কারণ হতে পারে, যদি আপগ্রেড করা হতো, মানুষ সহজেই তা লক্ষ করত। আমরা এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চলাফেরা করতে যে আমরা এগুলোর অস্তিত্বই খেয়াল করি না। ফলে মানুষের স্বাভাবিক আচরণ সহজে বোঝা যায়। কেবল যুক্তরাজ্যে ৪-৬ মিলিয়নের মতো ক্যামেরা রয়েছে। সবগুলো আপগ্রেড করতে গেলে বিশাল খরচ হবে। সরকার এটি গোপন রাখতে পারবে না। এতে করে সন্দেহ তৈরি হয় যে, হয়তো তারা আপগ্রেড করছে না (শুধু খরচের কারণে নয়, যদিও সেটাও বড় কারণ), বরং জনগণ যাতে বুঝতে না পারে যে তারা কত ঘন ঘন পর্যবেক্ষণের আওতায় পড়ছে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে, আমরা কি আদৌ ক্যামেরার মাধ্যমে সুরক্ষিত? যেসব ক্যামেরা ১৫–২০ বছরের পুরনো এবং এখনো অ্যানালগ সিস্টেমে চলছে, তারা কিভাবে আমাদের রক্ষা করবে? অথবা আরও ভালো প্রশ্ন হতে পারে—মানবতা বনাম নজরদারি: কোথায় মানবতার কণ্ঠ? এটি বলার উদ্দেশ্য নয় যে সব সিসিটিভি ক্যামেরাই পুরনো। বাস্তবে, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের সিসিটিভি সিস্টেম যুক্তরাজ্যের অন্যতম আধুনিকতম এবং এটি নাকি একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ব্যক্তির চলাচল ট্র্যাক করতে পারে। এই সিস্টেমটি প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি ইউনিক ‘সিগনেচার’ বরাদ্দ করতে পারে এবং বাস্তব সময়ে তাদের চলাফেরা শহর জুড়ে ট্র্যাক করতে পারে—কিন্তু কতজন মানুষ জানে যে এটি তাদের সঙ্গে ঘটছে? সাধারণ মানুষ কিভাবে এমন তথ্য জানতে পারবে? এত ক্যামেরা বসানোর আসল উদ্দেশ্য কি মানবতার সুরক্ষা, নাকি কেবল আমাদের ওপর নজরদারি? নিয়মিত নজরদারিকে বর্ণনা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো “বিগ ব্রাদার ইফেক্ট।” যদিও ফুটেজ বিগ ব্রাদারের মতো সহজে দেখা যায় না, তবুও এমন অ্যাপ আছে যেগুলো পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে লাইভ স্ট্রিম দেখার সুযোগ দেয়। Surveillance App, Webcams Viewer, live Cams, ispy Cameras-এর মতো অ্যাপ নজরদারির মধ্যে হ্যাক করে আপনাকে তা দেখতে সাহায্য করে। এটি আবার সেই প্রশ্ন তোলে—“নজরদারি কি সত্যিই আমাদের নিরাপদ রাখছে?” স্পষ্টতই নয়, যদি আপনি এমন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন যা সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সরাসরি ফুটেজ দেখায়। আপনি এমন কাউকে গোপনে দেখতে পারেন—অজানা কেউ—যাকে আপনি আক্রমণ বা চুরি করতে চান। কিছু অ্যাপ যেমন Live Cams (এর মাধ্যমে ২৯৮০টি লাইভ ক্যামেরা দেখা যায়) এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়, যদিও এটি বাস্তব সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করতে পারে, তবুও এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। যে কেউ আপনাকে যেকোনো কিছু করতে দেখতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো—স্কুল ও পার্কগুলো দেখা যায়। যদিও উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার সন্তান নিরাপদ আছে কিনা তা দেখা, কিন্তু যে-কেউই দেখতে পারে। এটি বিকৃত রুচির ব্যক্তিদের (যেমন পেডোফাইল) জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার তৈরি করে। তারা মোবাইল ফোন থেকে যেকোনো জায়গা দেখতে পারে। এখানে আর কোনো নিরাপত্তা বোধ অবশিষ্ট নেই। যদি আপনার উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ হয়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি মানুষকে নিরাপদ রাখার একটি সহজ উপায়, তবে সবাই যে বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাপগুলো ব্যবহার করবে—তা নয়। আর সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মনে রাখা উচিত। শেষতক, নজরদারি অপরাধ প্রতিরোধ করে না। এমন কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই যে ক্যামেরা অপরাধ প্রতিরোধ করে। এমনকি ওয়েলসের একজন পুলিশ ও অপরাধ কমিশনার এই যুক্তিতেই সিসিটিভির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করেছেন। ২০১৫ সালে প্যারিসে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার কথাই ধরুন। কোনো পরিমাণ নজরদারি এটি আগেভাগে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত না কিংবা থামাতে পারত না। যত বড় সংখ্যায় ক্যামেরা থাকুক না কেন, একসাথে সবাইকে দেখার মতো কেউ উপস্থিত থাকতে পারে না। মানবতার এত ক্যামেরার প্রয়োজন নেই, গোপনে নজরদারি আর নিরাপত্তার মধ্যে সূক্ষ্ম একটি পার্থক্য রয়েছে।<ref>https://www.gov.uk/government/speeches/humanity-vs-surveillance-commissioners-speech-to-stirling-university</ref> === নজরদারি বিতর্ক === তবে, নজরদারির ওপর আক্রমণ সত্ত্বেও এটি একটি উদ্দেশ্য পূরণ করে। নজরদারি সমাজকে সহায়তা করে। জনসাধারণ এটি সমর্থন করে, গবেষণায় দেখা গেছে ৮৪% মানুষ মনে করেন ক্যামেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য পূরণ করে। মাত্র ১৬% মানুষ নজরদারির বিরুদ্ধে ছিলেন, তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল—এই নজরদারির তদারকির অভাব নিয়ে। এটি জনগণের উপকারে এসেছে—অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির জন্য প্রমাণ সরবরাহ করে—এমনকি মানুষ অনুভব করে যে এটি থাকলে তারা বেশি নিরাপদ, বরং যদি এটি না থাকত। তাহলে যদি এত মানুষ নজরদারির পক্ষে থাকে—এই বিতর্ক নিয়েই বা সন্দেহ কোথা থেকে আসে? এর কারণ আপনি কখনোই সবার ব্যক্তিগত মতামত জানতে পারবেন না। প্রত্যেক ব্যক্তির বিশ্বাস জানার জন্য বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করা অসম্ভব—তবে আপনি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের একটি বৃহৎ অংশকে জিজ্ঞাসা করলে সেটাই আপনার সবচেয়ে ভালো সুযোগ। তবে আপনি সবসময় এমন কিছু মানুষ পাবেন যারা বলবে—"নজরদারি হলো শুধু সরকারের আমাদের ওপর নজর রাখার একটা উপায়!!" তবে এই ধারনা যে নজরদারি কেবলমাত্র আপনার দৈনন্দিন জীবনে নজর রাখার জন্য—তা একেবারেই বিভ্রান্তিকর। যেমন সান্তা কেবলমাত্র শিশুদের কল্পনায় বাস্তব—এই ধারণাটিও সমাজের কিছু অংশের মনগড়া কল্পনা। এটি একটি বিভ্রান্তিকর প্রচারণা যা আপনাকে বিশ্বাস করায় যে সরকার কেবল খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। বাস্তবে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে কেবলমাত্র ৫% সিসিটিভি ক্যামেরা পুলিশ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে। আমরা একটি নজরদারি রাষ্ট্র, সিসিটিভির আওতার অধীনস্ত এক জাতি—এই ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হতে পারে। সিসিটিভি ক্যামেরার একটি বড় অংশ সাধারণ জনগণ নিজস্ব ব্যবসা সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করে। তাহলে, অন্যান্য ব্যক্তিদের নজরদারি ক্যামেরা আর পুলিশের/সরকারের ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কী? নজরদারি বা নজরদারির মাধ্যমে খুন বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কখনো কখনো এটি কোনো অপরাধের স্থান থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরে থাকা ব্যক্তিকেও শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে। হ্যাঁ, একটি ক্যামেরা এলোমেলো সহিংসতা বা অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে না, তবে এটি অপরাধীদের শনাক্ত ও ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাজ্যজুড়ে সিসিটিভি ব্যবস্থার বিস্তারের পেছনে ছিল একটি ঘটনা—জেমি বালজারের অপহরণ। আপনি নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন সেই অস্পষ্ট ভিডিওচিত্র। সেখানে একজন শিশুকে দুই ১০ বছর বয়সী খুনির হাতে মারসিসাইডের একটি শপিং সেন্টার থেকে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছিল। এই ভিডিওচিত্র বারবার টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে, যা এক সময় প্রতীকমূলক রূপ লাভ করে। যদিও ভিডিওটি সেই ভয়াবহ অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারেনি, তবে এটি জনগণের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্ম দিয়েছিল যে অপরাধীরা ধরা পড়বেই।<ref>http://news.bbc.co.uk/onthisday/hi/dates/stories/february/20/newsid_2552000/2552185.stm</ref> ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে শার্লি এবদো হামলা। সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দ্রুত পরিস্থিতি মূল্যায়নে এবং পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়। পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সিসিটিভি-এর মাধ্যমে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হামলার সাথে জড়িত দুই ভাইকে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল। দ্রুত তথ্য পাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে মনুষ্যবলের দিকনির্দেশ করতে পেরেছিল। সিসিটিভি ছাড়া সাড়া দেওয়ার সময় আরও দীর্ঘ হত, যার ফলে অপরাধীদের ধরা পড়ার সম্ভাবনাও কমে যেত। এটি প্রমাণ করে যে সিসিটিভি এতটা খারাপও নয়। জরুরি অবস্থায় এটি সাহায্য করতে পারলে এটি যে কার্যকর, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। নজরদারি শুধু বড় অপরাধের জন্য নয়; ছোটখাটো অপরাধ যেমন চুরি প্রতিরোধেও কার্যকর। যদি তা না হতো, তবে সাধারণ জনগণ বা ব্যবসায়ীরা কেন এত খরচ করে এই ধরনের ক্যামেরা স্থাপন করতেন? সবশেষে, আলোচনা হবে গোপনীয়তা নিয়ে। অনেকে যুক্তি দেন নজরদারি ক্যামেরা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপমূলক। আমি পুরোপুরি বুঝি যে আপনি যদি বিশ্বাস করেন একটি ক্যামেরা আপনাকে অনুসরণ করছে বা আপনার বাগান কিংবা বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে, তাহলে সেটা অত্যন্ত অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবে চিন্তা করুন, বড় কর্পোরেশন বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবহৃত নজরদারি ক্যামেরাগুলোর কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা প্রভাব বিশ্লেষণ সম্পন্ন করে এবং তাদের সিস্টেমে গোপনীয়তা রক্ষার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকে। Privacy by design বলতে বোঝানো হয়, যদি কোনো ক্যামেরা আবাসিক এলাকার দিকে ঘোরে বা তাকায়, তাহলে ছবিগুলো পিক্সেল করে দেওয়া হয় যেন অপারেটর বাস্তবে কারও ঘর, বাগান বা স্কুলের ভেতর দেখতে না পান। এর ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করে তাদের নিরাপদ রাখা যায়। এছাড়াও বড় প্রতিষ্ঠানের নজরদারি ক্যামেরার গোপনীয়তা আরও উন্নত করার কথাও উঠেছে। এর মানে হচ্ছে, যেসব কিছু ভিডিও করা হচ্ছে, সেখানে বাস্তব মানুষের পরিবর্তে অবতার দেখানো হবে—ফলে তথ্য পুরোপুরি বেনামী থাকবে। এরপর যদি কোনো অপরাধ ঘটে, তাহলে সেই ডেটা ডিক্রিপ্ট করা যাবে। ফলে যারা কোনো অপরাধ করছেন না, তাদের পরিচয় গোপনই থাকবে এবং এটি শুধু অপরাধ ঘটলে ব্যবহৃত হবে। ==== মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী ==== ১৯৪৮ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানব সমাজের প্রথম বৈশ্বিক ও বিস্তৃত দলিল হিসেবে ''[http://www.un.org/en/universal-declaration-human-rights/ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র]'' ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় বলা হয়, সকল মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার এবং যোগাযোগে যেন কোনো ধরনের ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ না করা হয়। এই নিয়মে, প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>Renteln, A. D. (2013). International human rights: universalism versus relativism. Quid Pro Books.</ref> এই ধরনের আইন ও বিধান দ্বারা নজরদারি ব্যবস্থার ব্যাপ্তিকে সীমিত করা হয়। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে, জনসাধারণের যোগাযোগ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের গোপনীয়তা প্রকাশিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কর্পোরেশন, সুপারমার্কেট, ব্যাংক, রাস্তা ইত্যাদিতে স্থাপিত ক্যামেরা ও রেকর্ডার দ্বারা ব্যক্তিগত কথোপকথন নজরদারি করা যেতে পারে। ব্রাউজিং ইতিহাস ও অভ্যাস নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের কাছে চলে যেতে পারে। স্মার্টফোন ব্যক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রকাশ্যে বা গোপনে রেকর্ড করতে পারে। নজরদারি ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশ। সেখানে আইনগত প্রতিষ্ঠান ও অপরাধী উভয়ই অন্যদের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম, তা মানবতার বৃহৎ পরিসরে লঙ্ঘন করে। ==== উপসংহার ==== এটি একটি বৃহৎ বিতর্কের বিষয়। নজরদারির ওপর আপনি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করবেন কি না, তা একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে জোরালো যুক্তি রয়েছে। সবকিছু নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যের ওপর। নজরদারি খারাপ হতে পারে যদি এটি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে যখন এটি জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায় এবং এটি প্রমাণ করে যে আমরা এটি প্রয়োজন, যাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মানুষ নিরাপদ থাকে। == নজরদারি প্রযুক্তি == নজরদারি প্রযুক্তি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত—''পাবলিক ক্যামেরা'' বা ''[[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]]''। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ''অদৃশ্য ক্যামেরা - ইন্টারনেট''। দৃশ্যমান ক্যামেরা হোক বা অদৃশ্য, প্রযুক্তি নিজেই নিরপেক্ষ। এগুলোকে উপকারী বা ক্ষতিকর করে তোলে যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এগুলো ব্যবহার করে, তাই এদের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা প্রয়োজন। ==== কম্পিউটার ==== বিশেষত [[w:ইন্টারনেট|ইন্টারনেটে]] কম্পিউটার নজরদারির বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে [[w:ডেটা মাইনিং|ডেটা]] এবং [[w:ট্র্যাফিক অ্যানালাইসিস|ট্র্যাফিক]] বিশ্লেষণ। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে [[w:আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন|আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যোগাযোগ সহায়তা আইন]] অনুসারে, সব ফোনকল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্র্যাফিক (ইমেইল, ওয়েব ট্র্যাফিক, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ইত্যাদি) ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য বিনা বাধায় বাস্তবসময়ে নজরদারির জন্য উন্মুক্ত রাখতে হয়।<ref name="eff-calea-archive2">{{cite web|url=http://w2.eff.org/Privacy/নজরদারি/CALEA/?f=archive.html|title=CALEA Archive -- Electronic Frontier Foundation|work=Electronic Frontier Foundation (website)|accessdate=March 14, 2009}}</ref> ইন্টারনেটে এত বিশাল পরিমাণ ডেটা রয়েছে যে মানব তদন্তকারীদের পক্ষে সব খুঁজে দেখা অসম্ভব। তাই স্বয়ংক্রিয় ইন্টারনেট নজরদারি কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে বিপুল ট্র্যাফিক ছেঁকে, নির্দিষ্ট "ট্রিগার" শব্দ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি দ্বারা আগ্রহজনক ট্র্যাফিক আলাদা করে মানব তদন্তকারীদের জানানো হয়। প্রতি বছর এনএসএ, এফবিআই, তথ্য সচেতনতা অফিসের মতো সংস্থাগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে Carnivore (FBI), NarusInsight এবং ECHELON-এর মতো সিস্টেমের উন্নয়ন, ক্রয়, বাস্তবায়ন ও পরিচালনায়, যেন নজরদারির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনা যায়। ==== সিসিটিভি ==== সম্ভবত নজরদারির সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যবহৃত প্রযুক্তি হলো সিসিটিভি। [[w:ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন|সিসিটিভি]] বা ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের উদ্ভব জার্মানিতে, ১৯৪২ সালে। এই প্রযুক্তি এখন বৈশ্বিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ''সিসিটিভি''-এর ক্ষেত্রে কে এটি স্থাপন করতে পারবে, কোথায় ও কখন এটি স্থাপন করা যাবে—এই বিষয়গুলো রিপোর্ট ও সীমাবদ্ধতার আওতায় থাকা উচিত। আমেরিকান সমালোচক [[w:জেনিফার গ্র্যানহোম|জেনিফার গ্র্যানহোম]] যেমন বলেছেন, নাগরিকদের পক্ষে আশা করা অনাযুক্ত যে তারা জনগণ ও পুলিশের নজরদারিতে থাকবে না, অথচ তারা নিজেরা চায় যে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগগুলোতে কোনো নজরদারি থাকবে না, এমনকি শক্তিশালী রিমোট মনিটরিং থেকেও নয়।<ref>Granholm, J. (2015). Archived Websites-Governor's Official Homepage-2007.</ref> এছাড়া অদৃশ্য ক্যামেরা বা নেটওয়ার্ক ডেটাবেসের প্রসঙ্গে [[w:Mark Poster|মার্ক পোস্টার]] ''[[wiktionary:superpanopticon|"superpanopticon"]]'' নামক নতুন ধারণা দেন, যা বর্ণনা করে কীভাবে ডিজিটাল দুনিয়ায় ব্যক্তিজীবন গঠিত হয়।<ref>Fuchs, C., Boersma, K., Albrechtslund, A., & Sandoval, M. (2014). The Internet and নজরদারি.</ref> নেটওয়ার্ক ডেটাবেসে তথ্য প্রেরণ দ্রুত এবং সুবিধাজনক, যা সিসিটিভি থেকেও বেশি নিখুঁত ও বিস্তৃত। এই প্রেক্ষাপটে, নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে আইন ও বিধান প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন। নজরদারি ক্যামেরা বা সিসিটিভি দিন দিন বিশ্বব্যাপী জনসাধারণ ও ব্যক্তিগত স্থান নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকার, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি ও ব্যক্তিগত ব্যক্তি অপরাধ প্রতিরোধ, শহুরে পরিবেশ ও সরকারি ভবনের নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ভিডিও নজরদারি ব্যবহার করে। নজরদারি প্রযুক্তিকে কখনো কখনো ‘পঞ্চম ইউটিলিটি’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে,<ref>Graham (2002)</ref> যেখানে সিসিটিভি শহুরে পরিবেশে এমনভাবে সংযুক্ত হয়েছে যেমন বিদ্যুৎ বা টেলিফোন নেটওয়ার্ক শতাব্দীর প্রথমার্ধে সংযুক্ত ছিল। পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির মধ্যে সম্ভবত সিসিটিভি-ই সবচেয়ে প্রভাবশালী, শুধুমাত্র ব্যবহৃত ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকেই। যেমন, ২০০৭ সালে, প্রায় ''দশ'' বছর আগে, অনুমান করা হয়েছিল যে যুক্তরাজ্যে ৪.২ মিলিয়ন সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।<ref>Meikle, G & Young, S. (2012). ''Media Convergence: Networked Digital Media in Everyday Life''. Basingstoke: Palgrave Macmillan. p130.</ref> সিসিটিভি সম্ভবত নজরদারির কার্যপ্রণালিকেই বদলে দিয়েছে। মিশেল ফুকো (১৯৭৭) ব্যাখ্যা করেছেন যে অতীতে অনেক মানুষ মুষ্টিমেয় প্রভাবশালীদের পর্যবেক্ষণ করত, যেমন: প্রকাশ্য ভাষণের মাধ্যমে। কিন্তু এখন নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প কিছু মানুষই অনেক মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে! তিনি বলেন, 'visibility is a trap' <ref>Foucalt, M. (1977). ''Discipline and Punish''. Harmondsworth: Penguin. p.200.</ref>। যদিও এটি একমুখী সম্পর্ক নয়, কারণ এখনো ‘অনেক মানুষ’ ‘মুষ্টিমেয় মানুষ’কে দেখে টিভি ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে। তবে সিসিটিভি মূলত মুষ্টিমেয়ের নিয়ন্ত্রণে, যার মানে—যখন আপনি জনসমক্ষে থাকবেন, তখন আপনাকে ভিডিও করা হতে পারে, অনেক সময় আপনার অজান্তেই। বিশ্বে নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাজ্য শীর্ষে: প্রতি ১২ জনে ১টি ক্যামেরা বা প্রায় ৫ মিলিয়ন ক্যামেরা সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে।<ref>Öqvist, 2008, p.153</ref> [[চিত্র:Cameras_innercity_London_2005.jpg|থাম্ব|300x300পিক্সেল|লন্ডন, যুক্তরাজ্যে সিসিটিভির উদাহরণ]] ==== এএনপিআর ==== অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা (ANPR), অথবা লাইসেন্স প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা (LPR) হল যানবাহন নজরদারির প্রধান উপায়গুলোর একটি। এগুলো সড়কের ধারে, বিশেষত মোটরওয়েগুলোর পাশে বসানো হয় এবং গতি সীমা অতিক্রম এবং অন্যান্য মহাসড়ক নিরাপত্তা লঙ্ঘনের প্রতিবেদন দিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো স্বয়ংক্রিয় টোল কর সংগ্রহের মতো প্রক্রিয়াতেও ব্যবহার করা যায়।<ref>Patel, C, Shah, S & Patel, A. (2013). Main content area Automatic Number Plate Recognition System (ANPR): A Survey. International Journal of Computer Applications, 69(9)</ref> যদিও এগুলো একধরনের ক্যামেরা, তথাপি এগুলো CCTV থেকে ভিন্ন কারণ এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যানবাহনের কার্যকলাপ চিত্রায়ণ নয় বরং নাম্বার প্লেট সনাক্ত করা এবং সেখানকার অক্ষরগুলো শনাক্ত করা, এমনকি দূর থেকে বা চলন্ত অবস্থাতেও। সফটওয়্যার OCR ব্যবহার করে বিভিন্ন ধারণকৃত চিত্র থেকে তথ্য ব্যবহারযোগ্য কোডে রূপান্তর করা হয়, এবং ক্যামেরাগুলোকে অবশ্যই ইনফ্রারেড আলোতে সংবেদনশীল হতে হয়, দৃশ্যমান স্পেকট্রামে সীমিত হতে হয় যেন দিনের বেলাতেও এবং রাতেও, হেডলাইট আলোকপ্রভা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কাজ করতে পারে।<ref>http://www.cctv-information.co.uk/i/An_Introduction_to_ANPR</ref> ==== টেলিফোন ==== সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে টেলিফোন লাইনে আড়িপাতা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। অধিকাংশ কলের জন্য মানব এজেন্ট প্রয়োজন হয় না। স্পিচ-টু-টেক্সট সফটওয়্যার ধারণকৃত অডিও থেকে যন্ত্রপাঠযোগ্য পাঠ্য তৈরি করে, যা পরে স্বয়ংক্রিয় কল বিশ্লেষণকারী প্রোগ্রাম দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যেমন ইনফরমেশন অ্যাওয়ারনেস অফিস বা ভারিন্ট এবং নারাস-এর মতো কোম্পানিগুলোর দ্বারা বিকশিত সফটওয়্যার, যেগুলো নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্যাংশ অনুসন্ধান করে নির্ধারণ করে যে কলটিতে মানব এজেন্ট নিয়োজিত করা হবে কিনা।<ref name="latimes-fbi-intel-analysis">{{cite news|url=http://articles.latimes.com/2002/jul/29/nation/na-technology29|title=FBI Plans to Fight Terror With High-Tech Arsenal|last=Piller|first=Charles|author2=Eric Lichtblau|date=July 29, 2002|work=LA Times|accessdate=March 14, 2009}}</ref> যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা মোবাইল ফোনের মাইক্রোফোন দূরবর্তীভাবে সক্রিয় করতে পারে, ফোনের ডায়াগনস্টিক বা রক্ষণাবেক্ষণ বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে, যাতে ফোনধারীর আশেপাশে যে কথোপকথন হচ্ছে তা শোনা যায়।<ref name="schneier-roving-bugs">{{cite web|url=http://www.schneier.com/blog/archives/2006/12/remotely_eavesd_1.html|title=Remotely Eavesdropping on Cell Phone Microphones|last=Schneier|first=Bruce|date=December 5, 2006|work=Schneier On Security|accessdate=December 13, 2009}}</ref> মোবাইল ফোন অবস্থান তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মোবাইল ফোনের ভৌগোলিক অবস্থান (এবং সেইসাথে ফোনধারীর অবস্থান) সহজেই নির্ধারণ করা যায় এমনকি ফোনটি ব্যবহৃত না হলেও, একটি কৌশল ব্যবহার করে যেটিকে বলে মাল্টিল্যাটারেশন, যা ফোন থেকে মালিকের নিকটবর্তী বিভিন্ন সেল টাওয়ারে সংকেত পৌঁছাতে সময়ের পার্থক্য পরিমাপ করে কাজ করে। স্নোডেন ফাঁসের মাধ্যমে জানা গেছে যে ব্রিটিশ সরকারি যোগাযোগ সদর দপ্তর (জিসিএইচকিউ)আমেরিকান নাগরিকদের ওপর এনএসএ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্যে প্রবেশ করতে পারে। একবার ডেটা সংগ্রহ হয়ে গেলে, জিসিএইচকিউ তা সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারে। এই সময়সীমা "জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ কর্মকর্তা"-র অনুমতিতে বাড়ানো যেতে পারে। টেলিফোন এবং মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি আছে যা কার্যকর এবং সহজলভ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো বাগিং এবং ট্র্যাকিং প্রযুক্তি। '''বাগিং''' গোপন শ্রবণ ডিভাইস হিসেবেও পরিচিত, বাগ বা ওয়্যার সাধারণত একটি ছোট রেডিও ট্রান্সমিটার এবং একটি মাইক্রোফোন নিয়ে গঠিত। প্রধানত পুলিশ তদন্তে ব্যবহৃত হলেও, এগুলো সাধারণ মানুষও ব্যবহার করতে পারে। ডেইলি মেইল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যেখানে সম্পর্কের মধ্যে থাকা মানুষদের সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গী হয়তো মোবাইল ফোনে বাগিং ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের ওপর নজর রাখছে।<ref>http://www.dailymail.co.uk/news/article-2889521/Bugging-phones-jealous-partners-rife-Campaign-group-warns-women-guard-against-spyware-tells-suspicious-husband-boyfriend-use-device.html</ref> ফ্লেক্সিস্পাই-এর মতো সিস্টেম নিজেদের নজরদারি সফটওয়্যার বিজ্ঞাপনে বলেছে “আপনি যদি একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে থাকেন, সন্তানের দায়িত্বে থাকেন অথবা কর্মচারী পরিচালনা করেন, তবে **আপনার জানার অধিকার আছে**।<ref>http://www.flexispy.com/</ref> সত্য জানুন, তাদের ফোনে নজর রাখুন।” যদিও এটি ডেটা সুরক্ষা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন, এই সিস্টেমসহ অনেকগুলো এখনো জনপ্রিয় এবং শাস্তি শুধু একটি জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে, জনসমক্ষে, অফিসে এবং নিজের বাসায় শ্রবণ বা রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করা বৈধ। '''ট্র্যাকিং''' ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে, স্টিংরে ফোন ট্র্যাকার সবচেয়ে প্রচলিত। হ্যারিস কর্পোরেশন দ্বারা উন্নিত, এই ডিভাইস একটি মোবাইল ফোন নজরদারি যন্ত্র। এটি কাছাকাছি থাকা সব ডিভাইসকে এতে সংযোগ ঘটাতে বাধ্য করে, এরপর সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ তথ্য গ্রহণ করতে পারে, ডেটা ডাউনলোড করতে পারে এবং যোগাযোগের বিষয়বস্তু আটকাতে পারে, এমনকি তা ডিক্রিপ্ট এবং রেকর্ড করতেও পারে। স্টিংরে যেসব ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় সেগুলোর অবস্থানও নির্ণয় করতে পারে। এই সফটওয়্যার মূলত সামরিক এবং গোয়েন্দা সংস্থার জন্য তৈরি হলেও, বর্তমানে এটি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অন্তত ২৩টি অঙ্গরাজ্যের ৬০টি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে যারা স্টিংরে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।<ref>https://www.aclu.org/map/stingray-tracking-devices-whos-got-them</ref> তবে যুক্তরাজ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়নি। স্কাই নিউজের একটি তদন্ত নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে লন্ডনজুড়ে পুলিশ নকল মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করছে এমন অভিযোগ রয়েছে।<ref>http://www.bbc.co.uk/news/business-33076527</ref> এই টাওয়ারগুলো মোবাইল ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই যন্ত্রগুলো পুলিশি সন্দেহভাজনদের ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হতে পারে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ধরনের নজরদারির ব্যবহার স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। '''''উদাহরণ''''' নেদারল্যান্ডসে সবআইএসপি-কে আদালতের আদেশ অনুযায়ী সব ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ করার সক্ষমতা থাকতে হয় এবং ব্যবহারকারীদের লগ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। নিউজিল্যান্ডে Telecommunications (Interception Capabilities) Act 2004 অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এবংআইএসপি-দের পুলিশ বা নিরাপত্তা সংস্থার অনুরোধে ফোন কল এবং ইমেইল নজরদারির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সুইজারল্যান্ডেআইএসপি-দের মেইল এবং টেলিযোগাযোগ নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। ==== সোশ্যাল মিডিয়া ==== তথ্য গোপনীয়তার আরেকটি অংশ, যা কোনো আইনি কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সেটি হলো অনলাইনে আমরা যে তথ্য শেয়ার করি। এটি তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘তথ্য উন্মোচন’-এর সংজ্ঞায় এক নতুন মাত্রা নিয়ে আসে যখন এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করা হয়। ‘ডিজিটাল তথ্যের অবশিষ্টাংশ’ বলতে বোঝায় আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য যা কেউ বা কিছু অনলাইনে সংগ্রহ বা শেয়ার করেছে এবং কোথাও ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত আছে, যার ওপর আমাদের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অনলাইন কমিউনিটি যেভাবে এসেছে, সেভাবেই এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া। Oxford Dictionary of Media Communications-এ এটি বর্ণিত আছে।<ref name="ChandlerMunday2011">{{cite book|last1=Chandler|first1=Daniel|last2=Munday|first2=Rod|date=2011|title=A Dictionary of Media and Communication|location=Oxford|publisher=Oxford University Press|isbn=978019956875}}{{rp|397}}</ref> তবে এটি বলা কঠিন যে কে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করছে যদি না তারা সরাসরি যোগাযোগ করে। কিছু গোপনীয়তা সেটিংস আমাদের নিয়ন্ত্রণে যেমন পোস্টের ‘custom’ সেটিং যা আমাদের দেখতে দেয় কে পোস্টটি দেখছে; তবে অন্যরা আমাদের ট্যাগ করলে (যতক্ষণ না আমরা নিজেকে আনট্যাগ করি), সেটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ওই কয়েক মিনিটে চিন্তা চলে আসে ‘ওহ না – কে কে ইতিমধ্যেই এটি দেখে ফেলেছে?’ গ্রাহাম মেইকল এবং শেরম্যান ইয়াং বলেন: 'ভাবুন, কীভাবে ফেসবুক আমাদের কার্যক্রম বন্ধু তালিকার সবাইকে “নিউজফিড” ফাংশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। আপনি হয়তো ভাবছেন কোনো বন্ধুর স্ট্যাটাসে আপনার মন্তব্য অন্যদের দেখার সুযোগ নেই, কিন্তু দেখা গেল তার প্রোফাইল সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় আপনার মন্তব্য “শীর্ষ খবর” হিসেবে আপনার সব বন্ধুর কাছেই পৌঁছে গেছে।<ref name="MeikleYoung2012">{{cite book|last1=Meikle|first1=Graham|last2=Young|first2=Sherman|date=2012|title=Media Convergence: Networked Media in Everyday Life|location=Basingstoke|publisher=Palgrave Macmillan|isbn=9780230228948}}</ref>{{rp|72}} রিক্রুটমেন্ট কোম্পানি জবভাইট-এর বার্ষিক জরিপ (সর্বশেষ সেপ্টেম্বর ২০১৫) অনুযায়ী, ৯২% নিয়োগকারী নিয়োগ দেওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল চেক করে।<ref>http://www.jobvite.com/blog/welcome-to-the-2015-recruiter-nation-formerly-known-as-the-social-recruiting-survey</ref> তদ্ব্যতীত, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন নির্দেশনা রয়েছে যাতে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে গুপ্তচরবৃত্তির শিকার না হন।<ref>http://www.webwise.ie/teachers/facebook-for-teachers</ref> উভয় ঘটনাকেই সমাজবিজ্ঞানী [[w:Erving Goffman|এরভিং গফম্যান]]-এর তত্ত্বের উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে, যিনি বলেন আমরা বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রূপ ধারণ করি এবং আমাদের নির্দিষ্ট শ্রোতার জন্য পারফর্ম করি এবং থিয়েটারের মতো হলেও আমাদের প্রকৃত সত্তাটি থাকে মঞ্চের পেছনে।<ref name="PapacharissiZizi2010">{{cite book|last1=Papacharissi|first1=Zizi|date=2010|title=A Networked Self Identity, Community, and Culture on Social Network Sites|location=Hoboken|publisher=Taylor and Francis|isbn=9780415801805}}</ref>{{rp|306–7}} ===== স্ক্রিনশট, সৌসভেইলেন্স, অনলাইন ডেটিং ও বিশ্বাসঘাতকতা ===== [[w:স্ক্রিনশট|স্ক্রিনশট]] আগে শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপে প্রিন্ট স্ক্রিন বোতাম চেপে নেওয়া যেত, কিন্তু আজকের স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে এক ক্লিকেই প্রতিদিন বন্ধুদের ছবি ও তথ্য পাঠাতে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ডেটিং অ্যাপ [[w:টিন্ডার (অ্যাপ)|টিন্ডার]] তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য ‘শেয়ার’ ফিচার চালুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।<ref>http://microcapmagazine.com/2016-03-08-tinder-testing-new-feature-that-lets-your-friends-play-matchmaker</ref> এই ডেটিং অ্যাপটি জানিয়েছে এটি তাদের উপকারে আসবে যারা কারো সাথে পরিচিত হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা না থাকায় [[w:ফেসবুক|ফেসবুকে]] অ্যাড করেনি, সেই ব্যক্তির প্রোফাইল বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই এটি গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে কারণ একটি লিংক ৪৮ ঘণ্টা বা পাঁচবার ক্লিক হওয়ার পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে। টিন্ডার বলেছে ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল স্ক্রিনশট নিয়ে তা বন্ধুদের পাঠানোর সুযোগ আগেও ছিল এবং ব্যবহারকারীরা চাইলে এই ফিচার থেকে ‘opt out’ করতে পারবে। কিন্তু [[w:বাজফিড|বাজফিড]] এবং ডিস্ট্র্যাক্টিফাই-এর মতো বিনোদনমূলক ওয়েবসাইট স্ক্রিনশট ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের অদ্ভুত, যৌনতাপূর্ণ এবং হাস্যকর কথোপকথনের সংকলন তৈরি করে মজা করে,<ref>http://www.buzzfeed.com/rossalynwarren/best-worst-and-weirdest-messages-tinder#.jgPg5e22g</ref> যা ভুক্তভোগীদের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। এমনকি এখন “Tinder Nightmares” নামে পূর্ণ অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে যা ব্যবহারকারীদের স্ক্রিনশট পাঠাতে উৎসাহিত করে।<ref>https://www.instagram.com/tindernightmares/</ref> আরও দেখুন: [[সবকিছুর জন্যেই ইন্টারনেট?/নজরদারি ও প্রতিনজরদারি#Sousveillance and art?|সৌসভেইলেন্স ও শিল্প?]] তবে, স্ক্রিনশট নজরদারি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে মডেল এমিলি সিয়ার্স-এর ক্ষেত্রে,<ref>http://metro.co.uk/2016/01/30/this-model-is-shaming-guys-who-send-her-dick-pics-by-letting-their-girlfriends-know-5652780</ref> যিনি অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন চিত্র পাঠানোয় বিরক্ত হয়ে, ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল ঘেটে তাদের পরিবারের সদস্য বা প্রেমিকার খোঁজ বের করে ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে ওই ব্যক্তিরা দ্রুত ক্ষমা চায়। বাজফিড-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে<ref>http://buzzfeed.com/rossalynwarren/a-model-is-alerting-girlfriends-of-the-men-who-send-her-dick#.dr8BA3KKB</ref> মিস সিয়ার্স বলেন, মানুষেরা তাদের কম্পিউটার পেছনে নিরাপদ বলে মনে করে এমন আচরণ করে। এই সামাজিক আচরণকে বলা হয় অনলাইন নিষেধমুক্তির প্রভাব। তাত্ত্বিক জন সুলারের মতে, বাস্তবে যা করার বা বলার সাহস নেই, অনলাইনে সেই কাজ করে ফেলার অনুভূতি। একজন পুরুষ যদি রাস্তায় নিজের নগ্ন দেহ উন্মুক্ত করে, তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। অথচ অনেকে ভাবেন কারও মোবাইলে তাদের যৌনচিত্র পাঠানো নাকি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। ==== কোম্পানিসমূহ ==== পাসপোর্ট পরিষেবাগুলি ভোক্তাদের তথ্য শোষণ করেছে এবং Salon.com থেকে উদ্ভূত নিবন্ধগুলির একটি সিরিজ অনুসরণ করে তাদের গোপনীয়তা নীতি এবং বিবৃতি সংশোধন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। ইয়াহু এবং মাইক্রোসফট ই-মেইল পরিষেবা উভয়ই ব্যক্তিগতভাবে সনাক্তকরণযোগ্য তথ্য ভাগ না করার তাদের বর্ণিত গোপনীয়তা নীতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।  ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সম্ভাব্য গোপনীয়তা লঙ্ঘন সম্পর্কে ব্যবহারকারীর সমালোচনার জবাবে, ফেসবুক তার নতুন সংশোধিত পরিষেবার শর্তাদি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। গুগলের গোপনীয়তা অনুশীলনগুলি ইইউ গোপনীয়তার মানগুলি পূরণ করে না এবং একইভাবে বেশ কয়েকটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে আইনপ্রণেতা গোপনীয়তা অনুশীলন নিয়ে গুগলকে প্রশ্ন করেন প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার রূপরেখার জন্য সংস্থাগুলি গোপনীয়তা এবং ব্যবহারের শর্তাদি বিবৃতি নিয়োগ করে, যাতে ব্যবহারকারীর অভিযোগের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়। এই পদ্ধতিতে, ব্যক্তিগত তথ্য জনসাধারণের মধ্যে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়, প্রক্রিয়াটিতে ব্যক্তির কাছ থেকে সামান্য ইনপুট সহ। ২০১৪ সালের এনএসএ.In বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এমন সংস্থাগুলি রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট '''টুইটার''' মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে যাতে এটি ব্যবহারকারীদের উপর সরকারের নজরদারি সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে স্বচ্ছ হওয়ার ক্ষমতা চেয়েছিল। টুইটারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন লি বলেছেন, এই বিধিনিষেধ প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন। টুইটারের মামলার আগে '''গুগল''' একটি অনুরূপ মামলা দায়ের করেছিল যা সংস্থাটি কতবার ডেটা জন্য জাতীয় সুরক্ষা অনুরোধ পায় তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার অনুমতি চেয়েছিল। [৬] ==== বায়োমেট্রিক ==== ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের মতে, "বায়োমেট্রিক্স বলতে জীবিত ব্যক্তিদের স্থায়ী শারীরিক বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ বা পরিচয় যাচাইকরণকে বোঝায়"।  এই ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি বহু বছর ধরে সাধারণভাবে পরিচিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্বীকৃতি এবং আইরিস স্বীকৃতির সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে পোস্ট করা ছবিতে মানুষকে 'ট্যাগ' করে। এই সমস্তগুলি নজরদারি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি থেকে গঠিত ডেটা সরকারী বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা হয়। বায়োমেট্রিক ডেটার এই ধরনের ব্যবহার সুপরিচিত, তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবহার অন্বেষণ করা হচ্ছে। আমেরিকা এবং চীনে, ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরাগুলি শহরগুলির চারপাশে ল্যাম্প পোস্টগুলিতে স্থাপন করা হচ্ছে যাতে রিয়েল টাইমে ব্যক্তিদের ট্যাগ করা ভিডিও দেখার পাশাপাশি সহিংস কার্যকলাপের জন্য জড়ো হতে পারে এমন বিশাল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা যায়।  গত বছর ইউরোপে ওয়ান্টেড অপরাধীদের ভিড় স্ক্যান করার জন্য লেস্টারশায়ার পুলিশ কর্তৃক ডাউনলোড ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এটি যুক্তরাজ্যের একটি বহিরঙ্গন ভেন্যুতে এই ধরণের প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার ছিল এবং যখন এটি জনসাধারণের নজরে আনা হয়েছিল তখন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।  একই সময়ে আইসি পুতুলগুলি স্টোরগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে তারা সংস্থাগুলিকে বিপণনের ডেটা দেওয়ার জন্য খুচরা গ্রাহকদের বয়স, জাতি এবং লিঙ্গ ট্র্যাক করতে পারে; এক ধরনের কর্পোরেট নজরদারি।  এটি একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর মতো শোনাতে পারে তবে ক্রমবর্ধমান এটি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আইকোনেমের নিজস্ব পুতুল সিস্টেম রয়েছে যা স্মার্টফোনে বীকন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অ্যাপের মাধ্যমে পণ্যের বিবরণ সম্পর্কে সতর্ক  কয়েক বছরের মধ্যে কোনও দোকানে প্রবেশ করা এবং পুতুলটি আপনাকে আপনার নাম ধরে ডাকে এবং তারপরে কেবল মুখের স্বীকৃতি সফটওয়্যার এবং গ্রাহক ডাটাবেসগুলি একত্রিত করে আপনাকে পণ্যগুলির প্রস্তাব দেয়। অবশ্যই এর কোনোটিই সহজে করা যায় না, যেমনটি কেলি গেটস তার বই আওয়ার বায়োমেট্রিক ফিউচার: ফেসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি অ্যান্ড দ্য কালচার অব সার্ভিল্যান্সে তুলে ধরেছেন, তবে এর উন্নয়ন ও উৎপাদনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে বায়োমেট্রিক নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই,[ তবে যুক্তরাজ্য এবং কানাডা কিছু আইন পাস করেছে যা আক্রমণাত্মক বায়োমেট্রিক্স সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করবে, যেমন 'স্নুপ বিল' যা এর ক্ষমতা হ্রাস করবে যোগাযোগ ক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি (সিসিডিপি)। পিটার ওয়াগেট বলেছেন, "আমি ২০ বছর ধরে বায়োমেট্রিক্স নিয়ে কাজ করছি, এবং এটি এমন একটি টিপিং পয়েন্টে পৌঁছেছে যেখানে লোকেরা কোথায় রয়েছে এবং তারা কী করছে তা বোঝা অসম্ভব হতে চলেছে। সবকিছু মনিটরিং করা হবে।  একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি ইতিমধ্যে সত্য তবে বায়োমেট্রিক্স পরবর্তী কোথায় যায় তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে। '''''উদাহরণ''''' সুইডেনে ১৯৭৫ সালে বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক গবেষণার উদ্দেশ্যে জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছেন। ফাংশন বা মিশন ক্রিপের ফলে সম্প্রতি এই রক্তের নমুনাগুলি ২০০৩ সালে একজন খুনির দোষী সাব্যস্ত করার জন্য এবং ২০০৪ সালে থাইল্যান্ডের সুনামি বিপর্যয়ের শিকারদের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সমস্ত ২৭ ইইউ দেশ সমস্ত ইইউ পুলিশ ডাটাবেসে জেনেটিক তথ্য, আঙুলের ছাপ এবং গাড়ি নিবন্ধকরণ তথ্যে অবাধ অ্যাক্সেস করতে সম্মত হয়েছে? নিউজিল্যান্ডে নবজাতকের রক্তের স্পট নমুনা এবং সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং এই তথ্য পুলিশ দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কেবল শেষ উপায় হিসাবে বা পিতামাতার সম্মতিতে । ==== এরিয়াল ==== আকাশ নজরদারি এক ধরনের নজরদারি যা সাধারণত কম্পিউটারাইজড বায়বীয় ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত হয়। নজরদারির এই ফর্মটি নিজস্ব সমস্যা এবং সীমানা নিয়ে আসে যা প্রায়শই অতিক্রম করা হয়। নতুন প্রযুক্তি ড্রোনের মতো ডিভাইস তৈরি করছে, একটি আকাশ নজরদারি ইউনিট যা নিজেরাই কাজ করে এবং দূর থেকে মালিকের কাছে নজরদারি চিত্র প্রেরণ করে। এই ডিভাইসগুলি ব্যবহারের মূল সমস্যাটি হ'ল গোপনীয়তার আক্রমণ, বিশেষত যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স ছাড়াই অনেকগুলি ড্রোন কেনা এবং ব্যবহার করা যায়। ২০ কেজি ওজনের কম ওজনের ড্রোনগুলির জন্য বিশেষ পারমিটের প্রয়োজন হয় না,[ অর্থ যে কেউ এই রেকর্ডিং ডিভাইসগুলি যার উপর ইচ্ছা 'গুপ্তচরবৃত্তি' করতে ব্যবহার করতে পারে। যাঁদের কাছে ড্রোন রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই ব্যস্ত এলাকার ১৫০ মিটার এবং কোনও ব্যক্তির ৫০ মিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো এড়ানো উচিত, তবে এই নিয়মটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না। মেশিনগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি নতুন রূপ গ্রহণ করায় অনেকে ড্রোন থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি তাদের আশেপাশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময় মুখের স্বীকৃতি ব্যবহার করতে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধি অনুসরণ এবং নথিভুক্ত করার ক্ষমতা ধারণ করতে তাদের কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করতে সক্ষম। ড্রোনগুলিতে ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশনের বিধিনিষেধ নেই, অন্যথায় সিসিটিভি হিসাবে পরিচিত, যা জনসমক্ষে কোনও ব্যক্তির গতিবিধি রেকর্ড করতে সক্ষম হলেও ব্যক্তি অনুসরণ করতে পারে না বা বায়বীয় দৃশ্য থেকে রেকর্ড করতে পারে না। কম্পিউটার ভিশন, ফেস রিকগনিশন, অবজেক্ট রিকগনিশন এবং অন্যান্য ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সহ ড্রোনগুলি দ্রুত নজরদারির অন্যতম অনুপ্রবেশকারী ফর্ম হয়ে উঠছে। ড্রোনগুলি তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং কোনও অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও বিষয় অনুসরণ করা এবং চিত্রগ্রহণের মতো মানুষের মতো উদ্দেশ্যগুলি সম্পূর্ণ করতে পারে। জনসাধারণের সুরক্ষা এবং তাদের নিজের বাড়িতে গোপনীয়তার অধিকারের জন্য এবং সুরক্ষা সতর্কতার জন্যও বিমান নজরদারিতে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, কারণ এফএএ নিয়ম অনুসারে ৪০০ ফুটের উপরে বা বিমানবন্দরের দুই মাইলের মধ্যে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০১৫ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি আবাসন বিল চালু করা হয়েছিল যাতে বিমান নজরদারির ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা যায়। ''''প্রোটেকটিং ইন্ডিভিজুয়ালস ফ্রম মাস এরিয়াল সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট'''' নামের ওই বিলটিতে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে নজরদারি চালাতে চাইলে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের এখন পরোয়ানা জারি করতে হবে। ফ্রেমের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদেরও শনাক্ত করতে পারছেন না তারা। যেহেতু ড্রোনগুলি নজরদারির আরও সাম্প্রতিক রূপ, তাই অনেক লোক প্রযুক্তিটির বিপদ বা সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত নয়, তবে এমন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে যারা একটি বিমান নজরদারি ব্যবস্থার মালিকানার জন্য বিধিবিধান এবং নিয়ম বাড়াতে চান। ২০১৪ সালে পারমাণবিক সাবমেরিন স্থাপনার কাছে ড্রোন ব্যবহারের দায়ে রবার্ট নোলসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাকে ৪ হাজার ৩০০ পাউন্ড পরিশোধের নির্দেশ দেয়।  বিবিসির খবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোথায় কেউ ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে আর পারবে না, কারণ ক্রিসমাস ও জন্মদিনের উপহার হিসেবে অনেককেই গ্রহণ করা হচ্ছে।  ড্রোনগুলি নজরদারি প্রযুক্তির নতুন 'এটি' খেলনা, তবে নির্দেশিকাগুলি উপেক্ষা করার পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে, ম্যানচেস্টারে অপব্যবহারের আরেকটি মামলা রয়েছে। সেখানে টটেনহ্যাম হটস্পারের সাথে ম্যানচেস্টার সিটির হোম ম্যাচের উপর ড্রোন উড়ানোর জন্য এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।  ড্রোনগুলি অনেকের জন্য মজাদার, নিরীহ খেলনা হিসাবে দেখা হয়, তবে বিমান নজরদারির এই অত্যন্ত উন্নত রূপটি গোপনীয়তা এবং নামহীনতার অধিকারের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক এবং নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদি সিসিটিভিকে গোপনীয়তার বিষয়ে খুব বেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সতর্ক করা হয়, তবে তুলনামূলকভাবে ড্রোনটি আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বৃহত্তর সুযোগ সহ অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। ==== ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং ==== ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং হ'ল ডেটা নজরদারি, একটি প্যাটার্ন ভিত্তিক বৈকল্পিক ব্যবহার করে এবং পৃথক ক্রিয়াকলাপ যাচাই করার জন্য ডেটা মাইনগুলির মাধ্যমে অনুসন্ধান করা। ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং একটি প্রোফাইল তৈরি করতে এবং ব্যক্তিদের ইন্টারনেট কার্যকলাপের নিদর্শনগুলি খুঁজে পেতে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এইভাবে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় আচরণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হতে পারে। সফটওয়্যারের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি অনলাইন লেনদেনের জরিপ এবং উল্লেখ করার সাথে সাথে আরও বিশদ বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতির জন্য তৈরি করে। ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য বেসরকারী সংস্থাগুলি বিভিন্ন লোকের ইন্টারনেট ক্রিয়াকলাপ অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। এটি ব্যক্তির জন্য একটি ভোক্তা প্রোফাইল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ এই সংস্থাগুলিকে "তৃতীয় পক্ষ" বলে অভিহিত করে, কারণ তারা তাদের গ্রাহকদের লেনদেনকে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপায় হিসাবে সরাসরি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক তথ্যের সাথে ন্যস্ত করা হয়। কর্পোরেট খেলোয়াড়দের অন্য সেটের জন্য, তবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রয় তাদের ব্যবসা, কেবল পণ্য ও পরিষেবাদির বিনিময়ের পণ্য নয়। সংস্থাগুলির দ্বারা ডেটা ট্র্যাকিং এবং নোট করা লক্ষ্যবস্তুর গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। সরকার যখন এই তথ্য পায় তখন অতিরিক্ত গোপনীয়তার সমস্যা দেখা দেয়, যা বর্তমানে কোনও আইনি পরিণতি ছাড়াই করতে পারে।  এটি প্রোফাইল এবং প্রোফাইলার, বা শিকার এবং শিকারীর মধ্যে একটি ক্ষমতার লড়াই তৈরি করে। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাকিংয়ের সাথে পাসওয়ার্ড এবং এর বৈধতা বা এমনকি প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি অপ্রচলিত বলে মনে হয় যে একজনকে তাদের নিজস্ব ইমেল প্রবেশ করার জন্য একটি পাসকোড প্রয়োজন, যখন কোনও ডেটা মাইনারের কোনও ব্যক্তির সম্পূর্ণ চিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় এমন কোনও কিছুতে অ্যাক্সেস রয়েছে। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে জিমেইলের মতো সাইটে অ্যাক্সেস করতে অসুবিধা বিদ্রূপাত্মক- একটি মায়ের প্রথম নাম বা শৈশব পোষা প্রাণী অবশ্যই মনে রাখতে হবে যখন একটি পৃথক সংস্থা বা প্রোফাইলার কারও পরিচয় সংগ্রহ করার জন্য তাদের অজ্ঞতা উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় গোয়েন্দা এবং আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের দ্বারা কৌশল হিসাবে ডেটা মাইনিং ব্যবহার করা হয়েছে। এটি চালু করা হয়েছিল যখন তদন্তগুলি সন্ত্রাসীদের আচরণ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথেষ্ট প্রকাশ করে না যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমাজে মিশে যায়। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত, বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রতিরোধের জন্য, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে বিশাল এবং বেশিরভাগ অকেজো লেনদেনমূলক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ শুরু করেছে। ডেটা প্রোফাইলিং এবং মাইনিং নজরদারির জগতে খালি চোখে যা দেখতে পারে তার পৃষ্ঠের নিচে খনন করতে এবং ব্যানাল ক্রিয়াকলাপকে ব্যবহারকারীর প্যাটার্নে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থহীন হিসাবে বিবেচিত ডেটা ব্যবহার করা এমন প্রোফাইলারের পক্ষে অত্যাবশ্যক হতে পারে যারা অনলাইন লেনদেন থেকে তাদের ডেটা তৈরি করতে পারে এবং যেমন কোনও ব্যক্তির একটি পরিষ্কার চিত্র তৈরি করতে পারে। এটি অনুশীলনের যথার্থতা নয় যা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে নৈতিক অসদাচরণ যা কৌশলটির অংশ। ব্যক্তিগত তথ্য বড় কোম্পানিগুলির জন্য একটি গরম পণ্য, তবে ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং সাধারণত একজন সাধারণ ব্যক্তির দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কেবল অনুসন্ধান করা হয় এবং এই ধরনের নজরদারি তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। ==== হিউম্যান অপারেটিভ ==== স্পাই থ্রিলারে আমরা যেমন দেখি এজেন্টরা কি নজরদারির হাতিয়ার? এটা যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে হ্যাঁ তারা আছে। https://www.mi5.gov.uk এমআই৫ এর ওয়েবসাইট অনুসারে "গোপন মানব গোয়েন্দা সূত্র (সিএইচআইএস), বা "এজেন্ট", এমন লোক যারা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারে যা আমাদের তদন্তে সহায়তা করতে পারে"।  এই এজেন্টগুলি প্রায়শই নাটকের উদ্দেশ্যে কাল্পনিক কাজগুলিতে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়, তবে এই জাতীয় গল্পগুলির ভিত্তি একই থাকে। সম্ভবত বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত সুরক্ষা সংস্থা হ'ল সিআইএ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা বাহিনীর একটি শাখা। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা কার্যক্রম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সরকার-ব্যাপী ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে,[ যখন যুক্তরাজ্যে, এমআই ৬ এবং এমআই ৫ ১৯০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখন তারা সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো নামে পরিচিত ছিল।  এই নিরাপত্তা পরিষেবা ব্যবহারের সবচেয়ে সক্রিয় সময়কাল, এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রতিলিপি যুগ ঠান্ডা যুদ্ধ হতে হবে। এই সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য বিদেশী সরকারের নজরদারি অপরিহার্য ছিল। এই সব বিদেশী স্বার্থ সঙ্গে কাজ অপারেশন সম্পর্কিত, কিন্তু মানব অপারেটর মাধ্যমে গার্হস্থ্য জনসংখ্যার নজরদারি জন্য সেট আপ করা এজেন্সি আছে। সবচেয়ে বড় হোমল্যান্ড কাউন্টার-টেররিজম সংস্থা হ'ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস রয়েছে যেখানে এজেন্টদের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ঝুঁকির জন্য জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মানব অপারেটররা তাদের নিজস্ব নজরদারি প্রযুক্তি, সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। যুক্তরাজ্যে এজেন্টদের ভূমিকা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, বিবিসির রেডিও ৪ এর টুডে প্রোগ্রাম সম্প্রতি এমআই ৫ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বেনামী এজেন্টের সাক্ষাত্কার নিয়েছে। ==== ডি.এন.এ. প্রোফাইলিং ==== বেশ কয়েকটি দেশ নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরিষেবাগুলি থেকে লাভের আশায় প্রধানত ফার্মাসিউটিকাল সংস্থাগুলি এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ দ্বারা পরিচালিত চিকিত্সা গবেষণার জন্য দেশব্যাপী ডিএনএ ডাটাবেস তৈরি করছে। চিকিৎসা গবেষণা সুইডেনে ড্রাইভার যার মাধ্যমে ১৯৭৫ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি নাগরিক জন্মের সময় রক্তের নমুনা সরবরাহ করেছে (পিকেইউলাবরেটরিয়েট ২০০৮)। নমুনাটি জিনগত রোগ ফিনাইল-কেটোন-ইউরিয়া (পিকেইউ) পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ডাটাবেসে ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণার জন্যও সংরক্ষণ করা হয়। ডাটাবেসে কোনও ডিএনএ প্রোফাইল নেই, তবে রক্তের নমুনাগুলি সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। প্রতিটি নমুনার সাথে পরিচয় তথ্যও সরবরাহ করা হয়। ডাটাবেসটি অপরাধ তদন্তে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নয়। যাইহোক, আনা লিন্ধ (সুইডিশ পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব) হত্যার হাই-প্রোফাইল মামলায় পুলিশ ডাটাবেসে অস্থায়ী অ্যাক্সেস পেয়েছিল যা হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। ==== স্যাটেলাইট চিত্রাবলী ==== ২৫ শে মে, ২০০ ২০০৭-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জন মাইকেল ম্যাককনেল অনুমোদিত জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন অফিস এর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ স্থানীয়, রাজ্য এবং দেশীয় ফেডারেল এজেন্সিগুলিকে সামরিক গোয়েন্দা পুনরুদ্ধার উপগ্রহ এবং পুনরুদ্ধার বিমান সেন্সর থেকে চিত্রাবলী অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেওয়ার জন্য যা এখন মার্কিন নাগরিকদের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যাটেলাইট এবং বিমান সেন্সরগুলি মেঘের আচ্ছাদন ভেদ করতে, রাসায়নিক চিহ্নগুলি সনাক্ত করতে এবং বিল্ডিং এবং "ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার" এর বস্তুগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম হবে এবং গুগল আর্থের মতো প্রোগ্রামগুলির দ্বারা উত্পাদিত স্থির-চিত্রগুলির চেয়ে অনেক বেশি রেজোলিউশনে রিয়েল-টাইম ভিডিও সরবরাহ করবে। ==== সনাক্তকরণ এবং শংসাপত্র ==== সনাক্তকরণের সহজতম ফর্মগুলির মধ্যে একটি হ'ল শংসাপত্র বহন। কিছু জাতির সনাক্তকরণে সহায়তা করার জন্য একটি পরিচয় নথি সিস্টেম রয়েছে, অন্যরা এটি বিবেচনা করছে তবে জনসাধারণের বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যান্য নথি, যেমন পাসপোর্ট, ড্রাইভারের লাইসেন্স, লাইব্রেরি কার্ড, ব্যাংকিং বা ক্রেডিট কার্ডগুলিও পরিচয় যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। যদি পরিচয়পত্রের ফর্মটি "মেশিন-পঠনযোগ্য" হয়, সাধারণত একটি এনকোডযুক্ত চৌম্বকীয় স্ট্রাইপ বা সনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার করে, তবে এটি বিষয়টির সনাক্তকারী ডেটা সমর্থন করে। এই ক্ষেত্রে এটি একটি বৈদ্যুতিন ট্রেইল তৈরি করতে পারে যখন এটি চেক করা হয় এবং স্ক্যান করা হয়, যা প্রোফাইলিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, উপরে উল্লিখিত হিসাবে। ==== ভূতাত্ত্বিক ডিভাইস ==== মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পুলিশ কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য লোকের গাড়িতে গোপন ট্র্যাকিং ডিভাইস স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে তারা আদালতে যুক্তি দেখাচ্ছিল যে তাদের এটি করার অধিকার রয়েছে।  বেশ কয়েকটি শহর পাইলট প্রকল্প চালাচ্ছে যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে জিপিএস ডিভাইস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। ==== মানব মাইক্রোচিপ ==== সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ এবং সংশয়বাদীরা একটি সম্ভাব্য নজরদারি পদ্ধতির অত্যন্ত সমালোচনা করেছেন: নাগরিকদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে মাইক্রো-চিপের ব্যবহার। যদিও অনেক বাণিজ্যিক পণ্য ইতিমধ্যে চুরি প্রতিরোধের জন্য মাইক্রো-চিপ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, এই চিপগুলি সম্ভাব্যভাবে অন্যান্য উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন এটি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে নতুন আমেরিকান পাসপোর্টগুলি একটি আরএফআইডি চিপ দিয়ে জারি করা হয় যা ব্যক্তিগত তথ্য ধারণ করে। এই চিপগুলি দশ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। তবে একই ধরনের চিপ এরই মধ্যে মানুষের মধ্যেও বসানো হয়েছে। কয়েকটি ক্লাব এবং ডিস্কোথেক নিয়মিত গ্রাহকদের বাহুতে মাইক্রো-চিপ ইনজেকশনের মাধ্যমে এই ব্যবহারকে নেতৃত্ব দিয়েছে যাতে তাদের সহজে অ্যাক্সেস এবং একটি বৈদ্যুতিন ট্যাব সরবরাহ করা যায় যা অর্থ বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা দূর করে। হাস্যকরভাবে, এটি অনুসরণ করে যে নজরদারি কেবল নিয়ন্ত্রণের একটি অন্তর্নিহিত এবং গোপন ফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে না, তবে সুস্পষ্ট ৩৬০ ° প্রতিক্রিয়া প্রদানের উপায় হিসাবে ব্যবসায়িক চেনাশোনাগুলিতে গৃহীত হয়েছে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সমগ্র সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট নিরীক্ষণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন জড়িত। যাইহোক, এই প্রক্রিয়াটি একটি সংগঠনের মধ্যে মাইক্রো-রাজনীতির জন্ম দিতে পারে এবং নিন্দা এবং ব্ল্যাকমেইলকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে এটি শৃঙ্খলার নিখুঁত রূপ যে এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ক্ষমতার বিষয়টিকে স্বাগত বোধ করে এবং প্রকাশ্যে শৃঙ্খলাকে আমন্ত্রণ জানায়। একইভাবে, সংশয়বাদীরা ভয় পায় যে আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিটি ব্যক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করে এবং এই বিবরণগুলিকে বাইরের শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন করে স্বচ্ছ মানব বা "কাচের মানুষ" তৈরি করছি। ==== ডাক সেবা ==== টেক্সট মেসেজিং, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং ইমেলের উত্থানের সাথে সাথে এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে ডাক চিঠিটি তরুণ প্রজন্মের জন্য অপ্রচলিত হয়ে উঠছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করেছিল যে জাতীয় সাক্ষরতা ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা গেছে যে ছয়জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে মাত্র একজন এখনও চিঠি লেখে এবং তারা বিশ্বাস করে যে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্বে বাস করা চিঠি লেখার পতনের পিছনে কারণ। আমাদের মধ্যে যারা চিঠি পাঠান এবং গ্রহণ করি এবং মহামান্যের সন্তুষ্টিতে নেই এমনকি যদি এটি কেবল অদ্ভুত ক্রিসমাস বা ধন্যবাদ কার্ড হয় তবে আমরা সর্বদা ধরে নিই যে আমাদের তথ্য ব্যক্তিগত; তবে যুক্তরাজ্য ডাক এবং যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকারের সাথে একটি ওঠানামা সম্পর্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। মিডিয়া ব্লগ ইনফর্ম (ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অফ রেসপন্সিবল মিডিয়া ফোরাম)  ১৭ থেকে ২০ শতকের চিঠিগুলি কেবল একটি পরোয়ানার অনুমোদনের মাধ্যমে ট্রানজিটে খোলা যেতে পারে, তবে পরোয়ানার ফর্মটি সরকারী ক্ষমতার বিবেচনার ভিত্তিতে হবে, তবে তারা প্রকাশ্যে পরামর্শ দেয়নি যে বাধা দেওয়া হচ্ছে। উপরন্তু, কোন কেলেঙ্কারি গোপনে মোকাবেলা করা হত। এই অনুশীলনের নীরবতা ১৯ ১৯৭৯৯ সাল পর্যন্ত রয়ে গিয়েছিল যখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে স্থানীয় পুলিশ একটি প্রাচীন ব্যবসায়ীর টেলিফোন রেকর্ড করছিল এবং যখন যুক্তরাজ্যের আদালত আদালত খারিজ করে দেয়, তখন বাদী মামলাটি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে নিয়ে যায় যেখানে এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে যুক্তরাজ্য সরকার মানবাধিকারের ইউরোপীয় কনভেনশনের ৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্যের একজন ব্যক্তিকে শান্ত জীবনের অধিকার দেয়া। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একমাত্র লুপ হোল। এটি আদালত কর্তৃক আদেশিত যোগাযোগ আইন ১৯৮৫ এর ইন্টারসেপশন তৈরির দিকে পরিচালিত করে এবং পরে তদন্তকারী ক্ষমতা আইন ২০০০ এর নিয়ন্ত্রণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। আরও দেখুন: আইন ও বিধিনিষেধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক আইনের গোপনীয়তা কেবল ১৯ শতকে ঘটেছিল। জন ডারহাম পিটারস বলেছেন যে স্ট্যাম্প, সিল করা খাম এবং পোস্ট বাক্সের আগে চিঠিগুলি খোলা, পড়া এবং এমনকি স্থানীয় প্রেসে প্রকাশিত হতে পারে। গ্রাহাম মেইকেল এবং শেরম্যান ইয়ং চিঠি লেখার ক্ষেত্রে বিকশিত গোপনীয়তার সামঞ্জস্যতা এবং আজকের সোশ্যাল মিডিয়া আউটলেটগুলিতে কোনটি ব্যক্তিগত এবং কোনটি নয় তা সংজ্ঞায়িত করার কোনও আহ্বান জানানো হয়নি। তারা বলে, 'কাউকে এভাবে বার্তা পাঠানো অস্বাভাবিক কিছু নয়, কেবল তখনই আপনার পৃষ্ঠার 'প্রাচীর' অঞ্চলে লিখে তাদের উত্তর দেওয়া অস্বাভাবিক নয়, যাতে কথোপকথনটি আরও বিস্তৃত শ্রোতাদের কাছে উন্মুক্ত হয়, প্রশ্নে প্রাচীরে কী গোপনীয়তা সেটিংস প্রয়োগ করা হয় তার উপর নির্ভর করে। ==== অ্যাপ্লিকেশন ==== নজরদারি প্রযুক্তির একটি বিশেষ রূপ হ'ল গুগল প্লে এবং আইটিউনসের মতো অ্যাপ্লিকেশন স্টোরগুলির মাধ্যমে ভোক্তাদের অ্যাক্সেসযোগ্য। এই প্রযুক্তিটি বাজারজাত করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে; কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের ইন্টারনেট ব্যবহার ট্র্যাক করার জন্য সংস্থাগুলির জন্য, তাদের ফোনের মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করার জন্য পিতামাতার কাছে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং স্বামী বা স্ত্রীর ক্রিয়াকলাপ তদন্তের উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়। অবশ্যই, বেসিক সফটওয়্যারটি মূলত একই এবং ইন্টারনেট সংযোগ সহ যে কোনও কম্পিউটার বা ফোনে ডাউনলোডযোগ্য। এই বিভাগটি বিশেষত এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি এবং সেগুলি কীভাবে কাজ করে তা দেখবে। একটি আকর্ষণীয় সূচনা পয়েন্ট হতে পারে হাফিংটন পোস্ট দ্বারা একটি নিবন্ধ পাঁচটি ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তাদের বাচ্চাদের উপর "গুপ্তচরবৃত্তি" করার জন্য পিতামাতার কাছে বিক্রি করা হয়। এটি এই পণ্যগুলির প্রধান বিক্রয় পয়েন্টগুলি হাইলাইট করে, তাদের বাচ্চারা কী পাঠ্য করে তা দেখার ক্ষমতা থেকে শুরু করে তারা যে গাড়িতে ভ্রমণ করছে তার গতি জানা। এই পণ্যগুলির ওয়েবসাইটগুলি নিজেরাই অনুরূপ পয়েন্টগুলি উল্লেখ করে, পাশাপাশি কর্মচারীদের শিথিলতা এবং প্রতারণামূলক স্বামীদের কথা বলে।  শীর্ষ ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির মতে 'এমএসপিআই' হ'ল "বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ব্যবহৃত সেল ফোন ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন", তাই এটি যেভাবে কাজ করে এবং এই বিষয়ে কোম্পানির কী বলার আছে তা দেখা মূল্যবান। এমস্পাই এর হোমপেজে 'হাউ ইট ওয়ার্কস' শিরোনামে একটি বিভাগ রয়েছে যেখানে তারা বলেছে "আমাদের সফটওয়্যারটি জিপিএস অবস্থান, ওয়েব ইতিহাস, ছবি, ভিডিও, ইমেল, এসএমএস, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, কীস্ট্রোক এবং আরও অনেক কিছু সহ পর্যবেক্ষণ করা ফোনের পটভূমিতে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে কাজ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে - কল পরিচালনা করা, পাঠ্য বার্তা এবং জিপিএস অবস্থানগুলি ট্র্যাক করা, ক্যালেন্ডার এবং ঠিকানা বইগুলি অ্যাক্সেস করা এবং কয়েকটি নাম রাখার জন্য অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রোগ্রামগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। এটি আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈধতার প্রশ্ন থাকতে পারে, কারণ এটি বেসামরিক নজরদারি সফটওয়্যার, তবে তাদের সাইটটি ব্যাখ্যা করে যে "এর ব্যবহার একেবারে আইনী" যতক্ষণ না এটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের, কর্মচারীদের নিরীক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় যারা সচেতন যে তাদের ট্র্যাক করা হচ্ছে, বা ক্রেতার নিজের ফোনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যাইহোক, সফটওয়্যারটি দূরবর্তীভাবে কোনও ডিভাইসে ডাউনলোড করার জন্য উপলব্ধ তাই ব্যবহারকারীদের পক্ষে অবৈধভাবে এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। স্পাই বাবলের মতো অনুরূপ সাইটগুলিতে, বৈধতার প্রশ্নটি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ কারণ এটি অংশীদারের ডিভাইসে ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং অনুমোদনের বিষয়টিকে সম্বোধন করা হয় না। অনলাইনে অনেক নিবন্ধ রয়েছে যা এখানে বর্ণিত আইনী এবং নৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে। এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলির ব্যবহার বিতর্কিত হতে পারে, তবে দৈনন্দিন নজরদারি প্রযুক্তি হিসাবে সময় বাড়ার সাথে সাথে তারা বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। == নেটওয়ার্কড সংস্কৃতির ক্ষমতার রাজনীতি == প্রযুক্তি এবং অন্য সবকিছুর ব্যাপক আবেদন রয়েছে যা ক্ষমতা সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বদা সমালোচিত হওয়া উচিত। একটি নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজ বিশ্বের শক্তিশালী সরকারগুলিকে যে সুবিধাগুলি দেয় তা সমালোচনা করা বা হাইলাইট না করা বোকামি। এমন একটি বিশ্ব যেখানে প্রযুক্তির নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নির্বিঘ্নে দেখার অনুমতি দেয়। কে দেখছে আমাদের? যারা আমাদের দেখছে তাদের কে দেখছে? এই প্রযুক্তিগত যুগে সমালোচনামূলক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী থাকার জন্য আমাদের এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে হবে। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী, ল্যারি ডায়মন্ডের 'সর্বদা সংস্কৃতিতে' একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে এটি প্রযুক্তি এবং তথ্যে সহজে অ্যাক্সেসের অনুমতি দিয়েছে। ডায়মন্ড বিশ্বাস করেন যে সস্তা ভিডিও ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সক্ষম মোবাইল ফোন যা ভিডিও রেকর্ড করতে পারে তা 'ক্ষমতা' বেসামরিক নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে, জনগণকে নিজেরাই সার্ভেলান্ট হয়ে উঠতে এবং নজরদারির ঐতিহ্যবাহী শ্রেণিবিন্যাসকে সমতল করে তুলেছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমরা আমাদের হাতে থাকা ডিভাইসগুলি আমাদের সরকারী এবং কর্পোরেট কর্মকর্তাদের ক্রিয়াকলাপ নথিভুক্ত করার অনুমতি দেয়, তাই বেসামরিক নাগরিকদের দিনের যে কোনও সময় শক্তিশালী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার ক্ষমতা দেয়; নিচ থেকে কর্তৃপক্ষকে দেখার ক্ষমতা।  এমন একটি সমাজের ধারণা যা চতুর্থ এস্টেটে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং আমাদের অ্যাক্সেস এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতার প্রতীকগুলিকে জবাবদিহি করার ক্ষমতা রাখে তা ৮০ এর দশকের শো সিওপিএস-এ দেখা যায়। এমন একটি শো যা আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপকে প্রকাশ করেছিল কারণ তারা বল প্রয়োগ করে এবং কখনও কখনও নৃশংস কৌশল ব্যবহার করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছিল। শোটি বৈপ্লবিক ছিল যে এটি ক্ষমতার এজেন্টদের রেখেছিল যারা তাদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য কেউ ছাড়াই অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছিল এবং হঠাৎ সাধারণ জনগণের সমালোচনা করার জন্য আলোতে আনা হয়েছিল। প্রাক্তন সিআইএ কর্মী '''এডওয়ার্ড স্নোডেন''' অবশ্য দেখিয়েছেন যে কীভাবে কখনও কখনও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক নজরদারি ঘটে যখন আমরা জানি না যে এটি ঘটছে বা এমনকি বিদ্যমান রয়েছে। যখন জনগণ অসচেতন থাকায় কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। সেই সময় যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আইনের ঢিবি যা কেউ পড়ে না, ক্ষমতার এজেন্টদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলিতে অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়। এনএসএ হাজার হাজার নিরহংকারী আমেরিকানদের টেলিফোন রেকর্ড সংগ্রহ করছিল। একটি প্রক্রিয়া যা টেলিযোগাযোগ সংস্থা ভেরাইজনকে দৈনিক ভিত্তিতে টেলিফোন ডেটা হস্তান্তর করার জন্য একটি গোপন আদালতের আদেশ দ্বারা সক্ষম হয়েছিল। এনএসএ প্রিজম নামে একটি নজরদারি প্রোগ্রামে প্রতিটি বড় ইন্টারনেট সংস্থার সার্ভারে ট্যাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। 'প্রিজম' কর্মসূচি থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্যও ব্রিটেনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল। এডওয়ার্ড স্নোডেন, যিনি এই তথ্য ফাঁসের জন্য দায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সম্পত্তি চুরির জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং নির্বাসনে রয়েছেন এবং তবুও তিনি যা করেছেন তা হল ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা। [৯] এডওয়ার্ড স্নোডেন এবং উইকিলিকসের মতো সংস্থা গণ নজরদারির ব্যাপকতার চিত্র তুলে ধরেছে। স্নোডেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডর দূতাবাসে পালিয়ে যেতে হয়েছিল যাতে তিনি দাবি করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্বাভাবিক উপস্থাপনার প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা যায়। অ্যাক্সেসযোগ্যতার দিক থেকে অনলাইনে সংগঠিত করা অনেক সহজ হতে পারে, তবে জনসাধারণ যদি অবিচ্ছিন্ন নজরদারির অধীনে থাকে তবে তর্ক করা কঠিন হয়ে পড়ে যে তারা তাদের ডিভাইস দ্বারা সত্যই ক্ষমতায়িত, যদি এগুলি তাদের গোপনীয়তার এই জাতীয় আক্রমণকে অনুমতি দেয়। প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল একটি সমাজে ক্ষমতাসীনরা কীভাবে নজরদারি বৈশিষ্ট্যগুলির অপব্যবহার করতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ বিশ্বের ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারি। গল্পটি ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল যখন তৎকালীন নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রাজকীয় সম্পাদক ক্লাইভ গুডম্যান এবং একজন বেসরকারী তদন্তকারী গ্লেন মুলকায়ারকে রাজকীয় সহযোগীদের জন্য রেখে যাওয়া ভয়েসমেইল বার্তাগুলিতে বাধা দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয় এবং আরও হ্যাকিংয়ের গল্প সামনে আসে। তবে এই কেলেঙ্কারির জটিল রাজনৈতিক মুহূর্ত আসে যখন গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায় যে সংবাদপত্রটি খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মিলি ডাউলারের মোবাইল ফোন হ্যাক করেছে। অভিযোগ, টার্গেটদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, মৃত ব্রিটিশ সৈন্যদের আত্মীয় এবং লন্ডন বোমা হামলায় আটকে পড়া লোকজন রয়েছেন। নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির সাথে একটি সমাজে, অবস্তুগততা সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত তথ্য ডিজিটাল আকারে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেটের কারণে সময় ও স্থানের দূরত্বও দূর হয়ে যায়। আরও কি, সমতা নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেহেতু সমস্ত নাগরিক অনলাইনে তাদের মতামত পড়তে এবং পোস্ট করতে পারে। ক্ষমতার রাজনীতির জন্য, ইন্টারনেটের উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে সর্বাধিক পরিমাণে সমর্থন অর্জনের জন্য সময়মতো রাজনৈতিক তথ্য প্রেরণ করতে সহায়তা করতে পারে। নেটওয়ার্কযুক্ত সংবাদপত্র, সম্প্রচার, টেলিভিশন ইত্যাদি জনসাধারণকে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সরবরাহ করতে পারে, যাতে জনমতের জন্য সঠিক অভিযোজন আকার দেওয়া যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতো দেশে, এটি অনলাইনে ব্যাপক সেন্সরশিপের দিকে পরিচালিত করেছে। চীনের গ্রেট ফায়ারওয়াল[ এর অর্থ হ'ল ইন্টারনেট কেবল সরকার অনুমোদিত সামগ্রী অ্যাক্সেস করে এবং অনুসন্ধানগুলি নির্দিষ্ট শব্দের জন্য ফিল্টার করা হয় যার ফলে ফৌজদারি অভিযোগ এবং কারাদণ্ড হতে পারে। শিল্পী এবং সমালোচক পিআরসি আই ওয়েইওয়েই চীনের মতো আচরণের জন্য এনএসএর নজরদারি কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন এবং সরকারী নজরদারিতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার আহ্বান জানিয়েছেন। == নৈতিক উদ্বেগ == নজরদারি কখনই বিষয়টির গোপনীয়তার যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশায় অনুপ্রবেশ করা উচিত নয়। যদিও বেসরকারী সুরক্ষা এবং নজরদারি অপারেটিভরা অনুসন্ধান এবং জব্দ সুরক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক উদ্বেগের সাথে পুলিশ অফিসার নয়, যদি অযৌক্তিক উপায়ে কোনও বিষয়ের অধিকার লঙ্ঘন হয় তবে সম্ভবত নাগরিক দায়বদ্ধতা থাকবে। এটি একটি পরিচিত সত্য যে উদাহরণস্বরূপ ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করার সময় - এমন একটি ব্যবহার যা দৈনন্দিন ভিত্তিতে বৃহদায়তন হতে থাকে - লোকেরা শর্তাদি এবং শর্তাদি না পড়েই সম্মত হয়। অ্যাপ্লিকেশনগুলি তখন কেবল ব্যবহারকারীদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে আকারের ডেটা ব্যাংক সংগ্রহ করে না, তবে প্রতিষ্ঠানগুলি (সরকারের মতো) নিজেরাই প্রোফাইল এবং কথোপকথন (ব্যবহারকারীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়) থেকে ব্যক্তিগত ডেটা অ্যাক্সেস করে, সুরক্ষার জন্য বলা হয় এমন বিষয়গুলির জন্য এগুলি ফিল্টার করে। এই ঘটনাগুলির উপর সুনির্দিষ্ট তথ্য অর্জন করা কঠিন এবং যদিও, জনগণকে যা জ্ঞান দেওয়া হয় তা থেকে, প্রতিটি সরকার সবকিছু নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না, যখন এটি ঘটে তখন এটি নজরদারির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এই ধরণের পরিস্থিতিতে, এটি খুব বিতর্কিত যে সম্প্রদায়ের সর্বোত্তম স্বার্থে সুরক্ষার কারণে নজরদারির 'ইতিবাচক' ব্যবহার হতে পারে কিনা, বা এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণের মামলা। সামগ্রিকভাবে ইন্টারনেটের আরও সাধারণ স্তরে উত্থাপিত যুক্তিগুলিও ডিজিটাল শ্রমের একটি ভাল শোষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে কিছু অ্যাপ্লিকেশন এবং পৃষ্ঠাগুলি ব্যবহার করে, উদাহরণস্বরূপ, আমরা ব্যবহারকারীরা নিজের চেয়ে অন্য কাউকে বেশি উপকৃত করছি এবং যেখানে মেকানিক্যাল তুর্কের মতো সিস্টেমে শ্রম অত্যন্ত সস্তা যখন এটি অর্থ প্রদান করে এবং তাই এইচআইটির অনুরোধকারীকে উপকৃত করে। গুগল এবং অ্যামাজনের মতো সিস্টেম / কর্পোরেশনগুলিকে মেগাস্ট্রাকচার, উল্লেখযোগ্য প্রাসঙ্গিকতার সাথে ডেটাব্যাঙ্ক হওয়ার অনুমতি দেয়, যেন একটি ভার্চুয়াল সাম্রাজ্য যা আরও শারীরিক চ্যালেঞ্জ করতে পারে (উদাহরণস্বরূপ তেল কোম্পানি এবং গাড়ি কারখানা)। ডেটাব্যাঙ্কগুলি ব্যবহারকারীর 'সম্মতি' (প্রায়শই অজানা) এর উপর নির্মিত। যদিও সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল বিশ্ব ছায়াময় পরিস্থিতি, লঙ্ঘন, অপব্যবহার এবং নৈতিক উদ্বেগের পরিস্থিতিগুলির উদাহরণ (মাঝে মাঝে ভাল সংবাদের জন্য তৈরি করে) অনুমতি দেয়, এগুলি এমনকি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মতো এটির একটি নমুনা বিভাগ গ্রহণ করতে দেখা যায়। ফেসবুক একটি জনপ্রিয় হওয়ায়, এটি অতীতে উদ্বেগের বিষয় ছিল, উদাহরণস্বরূপ ব্যবহারকারীরা এমনকি পরবর্তী অবধি এটি সম্পর্কে সচেতন না হয়েই "সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে ব্যাপক আকারের সংবেদনশীল সংক্রামকের পরীক্ষামূলক প্রমাণ" চালাতে সক্ষম হয়েছিল। আবারও ব্যবহারকারীর ভঙ্গুরতা এবং তুলনামূলকভাবে সহজ ম্যানিপুলেশনের অনুমতি দেয় এমন একটি এক্সপোজারকে আন্ডারলাইন করে, এটি এবং এর এক্সটেনশন অ্যাপ্লিকেশনগুলির কাজের মধ্যে নৈতিক সমস্যা রয়েছে। একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি হতে পারে ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন মেসেঞ্জার সম্পর্কিত নৈতিক উদ্বেগ। মেসেঞ্জারের অনেক ব্যবহারকারীই জানেন না যে তারা অ্যাপটি ব্যবহারে সম্মত হওয়ার সময় ঠিক কতগুলি অনুমতি দিয়েছেন। এটিকে গোপনীয়তার সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত কিনা তা নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে। আরও কিছু আশ্চর্যজনক অনুমতিগুলির মধ্যে রয়েছে তবে সীমাবদ্ধ নয়: আপনার পরিচিতিগুলি সংশোধন করা, আপনার পাঠ্য বার্তাগুলি পড়া, পাঠ্য বার্তা প্রেরণ, সরাসরি ফোন নম্বরগুলিতে কল করা, কল লগ পড়া, আপনার ইউএসবি স্টোরেজের সামগ্রী পড়া, ছবি এবং ভিডিও তোলা, অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড করা।  এই অনুমতিগুলির মধ্যে কয়েকটি অবাক করা বলে মনে হচ্ছে কারণ এই অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত বার্তা এবং ছবি প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে নৈতিক উদ্বেগ হ'ল অনেক ব্যবহারকারী এই অনুমতিগুলি সম্পর্কে অসচেতন এবং এইভাবে একটি ভয় থাকতে পারে যে অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারীরা ডেটা মাইন বা চরম ক্ষেত্রে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এটির সুবিধা নিতে পারে। এখানে ভবিষ্যতের জন্যও উদ্বেগ রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ - "যদি এত লোক ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রযোজ্য অনুমতি গোষ্ঠীগুলি পরীক্ষা না করে থাকে ... ভবিষ্যতে মোবাইল বিকাশকারীরা কতটা সাহসী হবেন?". ফেসবুক এই নৈতিক আতঙ্কে সাড়া দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, 'বন্ধুকে সেলফি পাঠাতে চাইলে আপনার ফোনের ক্যামেরা অন করে সেই ছবি ধারণ করতে অ্যাপটির অনুমতি নিতে হবে। আপনি যখন অ্যাপটি ব্যবহার করছেন না তখন আমরা আপনার ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন চালু করি না।  যাইহোক, এটি সম্পূর্ণরূপে জল্পনা শেষ করেনি, কারণ প্রতিক্রিয়াটিতে সমস্ত অনুমতির ন্যায্যতার সম্পূর্ণ ভাঙ্গন ছিল না। সম্ভবত ফেসবুককেও এখন 'বিগ ব্রাদার' হিসেবেও দেখা হয় এবং অবিশ্বাসের একটা স্তর আছে। তবে আস্তে আস্তে মানুষ বুঝতে পেরেছে ফেসবুক কীভাবে এই পারমিশন ব্যবহার করে। পরিচিতিগুলির অনুমতির প্রসঙ্গে, আরেকটি ন্যায্যতা হ'ল "অ্যাপ্লিকেশনটির আপনাকে একটি নিশ্চিতকরণ কোডের মাধ্যমে আপনার ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বার্তাগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অনুমতি দেওয়া দরকার"। এটি অ্যাপটি সম্পর্কে কিছু নৈতিক বিতর্ককে বাতিল করতে পারে তবে সত্যটি হ'ল ফেসবুক আপনার কাছে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনগুলি লক্ষ্য করতে অ্যাপটি ব্যবহার করে, তবে এই ডেটা সংগ্রহের বেশিরভাগই অ্যাপ্লিকেশনটিতে রয়েছে। এটি একটি জটিল প্রশ্ন উত্থাপন করে: আপনার আগ্রহের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন পাঠানো গোপনীয়তার লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা উচিত? মোটামুটিভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়। নৈতিক সমস্যা, অবহিত সম্মতির নীতি এবং অনলাইনে পরিচয়ের প্রকাশ আসলে একটি বিস্তৃত বিষয়ের অংশ এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মোকাবেলা করা যেতে পারে, কোনও ব্যক্তির স্ট্যাটাস আপডেট থেকে শুরু করে রাফায়েল কাপুরো এবং ক্রিস্টোফ পিঙ্গেলের কাগজের মতো একাডেমিক প্রকাশনা পর্যন্ত। মুদ্রণ যুগে সেন্সরশিপ থেকে অনলাইন আস্থা সম্পর্কিত আরও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যন্ত, এটি নজরদারি এবং স্বাধীনতার মধ্যে উত্তেজনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা ডিজিটাল সম্প্রদায়ের সহযোগিতামূলক পরিবেশ এবং পারস্পরিক সমর্থন তৈরিতে মৌলিক নৈতিক চ্যালেঞ্জ গঠন করে। === নজরদারির পক্ষে ও বিপক্ষে === সমর্থকরা যুক্তি দেন যে নজরদারি তিনটি উপায়ে অপরাধ হ্রাস করতে পারে: প্রতিরোধ, পর্যবেক্ষণ এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে। নজরদারি ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে এবং মোডাস অপারেন্ডি প্রকাশ করে প্রতিরোধ করতে পারে। এর জন্য ন্যূনতম স্তরের আক্রমণাত্মকতা প্রয়োজন। নজরদারি উন্নত পরিস্থিতিগত সচেতনতার মাধ্যমে বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মানব অপারেটরদের একটি কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে, যেমন ভিডিও বিশ্লেষণ। নজরদারি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের জন্য ফুটেজের প্রাপ্যতার মাধ্যমে কোনও ঘটনার পুনর্গঠন এবং অপরাধ প্রমাণ করতে সহায়তা করতে পারে। নজরদারি সংস্থানগুলি দৃশ্যমান হলে বা নজরদারির পরিণতি অনুভব করা গেলে বিষয়গত সুরক্ষাকেও প্রভাবিত করতে পারে। * সমর্থকরা কেবল বিশ্বাস করে যে এটি সম্পর্কে কিছুই করা যায় না এবং লোকেরা অবশ্যই কোনও গোপনীয়তা না থাকার অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। * সাধারণ যুক্তিটি হ'ল: "তর্ক লুকানোর কিছু নেই, যদি আপনি কিছু ভুল না করেন তবে আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই"। অন্যদিকে, অনেক নাগরিক অধিকার এবং গোপনীয়তা, যেমন ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে নাগরিকদের উপর সরকারী নজরদারিতে ক্রমাগত বৃদ্ধির অনুমতি দিয়ে আমরা অত্যন্ত সীমিত বা অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক এবং / অথবা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সহ একটি গণ নজরদারি সমাজে শেষ করব। * কিছু সমালোচক বলেছেন যে সমর্থকদের দ্বারা করা দাবিটি পড়ার জন্য সংশোধন করা উচিত: "যতক্ষণ না আমরা যা বলি তা করি, ততক্ষণ আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই"। যদি এমন যুক্তি থাকে যে আমাদের ডিজিটাল নজরদারি সীমাবদ্ধ করা উচিত, তবে এটি সামাজিক মিডিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহারে কাটছাঁট করতে হবে। তবে "আজকের সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের নমুনা হিসাবে আমাদের সম্পর্কে কিছু শিখিয়ে থাকে তবে তা হ'ল ভাগ করে নেওয়ার জন্য মানুষের প্রবণতা গোপনীয়তার জন্য মানুষের প্রবণতাকে ছাড়িয়ে যায়।  এটি তখন পরামর্শ দেবে যে মানুষ গোপনীয়তার চেয়ে ভাগ করে নেওয়ার কাজটিকে মূল্য দেয়, সুতরাং নজরদারির বৃদ্ধি এইভাবে আশ্চর্যজনক নয় কারণ দেখার জন্য আরও কিছু উপলব্ধ রয়েছে। == যুক্তরাজ্যে নজরদারি == '''''যুক্তরাজ্যে নজরদারি''' সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, দয়া করে যুক্তরাজ্যে গণ নজরদারি দেখুন'' দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অগ্রগামী হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্যে ডিজিটাল আকারে নজরদারির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ সালে বিল্ড গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) ছিল যা ইংরেজিভাষী দেশগুলির ফাইভ আইজ সহযোগিতার মতো প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বৈদ্যুতিন যোগাযোগে বাধা দেওয়া, যা সময়ের সাথে সাথে অনেক বেড়েছে। আজকাল, যুক্তরাজ্যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের নজরদারি যুক্তরাজ্যের সংসদে প্রণীত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষত, ব্যক্তিগত বার্তাগুলির সামগ্রীতে অ্যাক্সেস (অর্থাৎ, কোনও ইমেল বা টেলিফোন কলের মতো যোগাযোগের বাধা) অবশ্যই সেক্রেটারি অফ স্টেটের স্বাক্ষরিত ওয়ারেন্ট দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা গোপনীয়তা আইন যুক্তরাজ্যের আইনে প্রযোজ্য। আইনটি বৈদ্যুতিন নজরদারি ব্যবহারের উপর শাসন এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করে। == জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারি == * জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর-এ'' গোপনীয়তার অভাব পুরো উপন্যাস জুড়ে একটি প্রধান চলমান থিম। অডিও এবং ভিডিও উভয়ই রেকর্ড করে এমন টেলিস্ক্রিনগুলি চরিত্রগুলির অনেকের বাড়িতে, ব্যবসায় এবং সর্বজনীন স্থানে ইনস্টল করা হয় যাতে তাদের উপর ট্যাব রাখা যায়। বেসরকারী নাগরিকদের তাদের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে রিপোর্ট করতে উত্সাহিত করা হয় এবং থট পুলিশ 'চিন্তার অপরাধ' উন্মোচনের দায়িত্বে থাকা আন্ডারকভার অফিসার।  উপন্যাসে নজরদারির থিমগুলি 'বিগ ব্রাদার' শব্দগুচ্ছের ব্যবহার এবং একই নামের টেলিভিশন প্রোগ্রাম সহ একটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রভাব ফেলেছে। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নজরদারির সাথে যুক্ত একটি নির্দিষ্ট ভয় রয়েছে এবং ১৯৮৪ এটি খুব ভালভাবে চিত্রিত করে - "অবশ্যই কোনও মুহুর্তে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা জানার কোনও উপায় ছিল না"  এর থেকে আরও, অরওয়েল সরকারী ক্ষমতার জন্য ক্ষুধা এবং ড্রাইভের সাথে সহাবস্থান নজরদারির ধারণাটিকে সম্বোধন করেছেন। এটি নজরদারির নেতিবাচক প্রভাবগুলি নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করে, যা আজ আধুনিক সমাজে সিসিটিভি ব্যবহার এবং আজ চালু হওয়া নজরদারির ক্রমবর্ধমান পরিমাণের মাধ্যমে স্পষ্ট। অরওয়েল তার উপন্যাসে বলেছেন, 'ক্ষমতা কোনো মাধ্যম নয়; এটা একটা শেষ। বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেউ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে না; একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য বিপ্লব করে। নিপীড়নের বস্তু হচ্ছে নিপীড়ন। নির্যাতনের বস্তু হচ্ছে নির্যাতন। ক্ষমতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা"।  এটি প্রমাণ করে যে নজরদারির ব্যবহার সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য নয়, বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। * ৮০ এর দশকে ''সিওপিএস'' শোটি হিট হয়েছিল কারণ এটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের অপরাধীদের উপর আইনকে শক্তিশালী করার জন্য একাধিকবার বল প্রয়োগের নজরদারি ফুটেজ দেখিয়েছিল। শোটি আমেরিকান পুলিশ অফিসারের আপাতদৃষ্টিতে অকলুষিত চিত্রটি উন্মোচন করেছিল। * অনেক 'ফ্লাই-অন-দ্য ওয়াল' রিয়েলিটি টিভি শো একটি সেটিংয়ে ক্যামেরা মাউন্ট করার পদ্ধতি নিয়োগ করে এবং তাদের স্বীকার না করেই বিষয়গুলির ক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করে। এটি বিষয়গুলির জ্ঞান দিয়ে করা যেতে পারে, যেমন ''শোতে আমি একজন সেলিব্রিটি ... গেট মি আউট অফ হিয়ার!'', বা ক্যামেরাটি লুকানো যেতে পারে এবং কেবল পরে ''পাঙ্ক'ডের'' মতো শোতে দেওয়া যেতে পারে। এই দ্বিতীয় ধরনের জনসাধারণের সদস্যদের ব্যবহার করার ঝোঁক থাকে। * ২০১৩ সালের চলচ্চিত্র ''আন্ডার দ্য স্কিন-এ'' বেশ কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে স্কারলেট জোহানসনের চরিত্র, একজন এলিয়েন মানুষকে অপহরণ করার চেষ্টা করে, একটি ভ্যানে অপরিচিতদের তুলে নিয়ে যায়। এই অপরিচিতদের অভিনেতাদের দ্বারা অভিনয় করা হয়নি, তবে জনসাধারণের সদস্যরা জানতেন না যে তারা ফিচার ফিল্মে অংশ নিতে চলেছেন, ভ্যানে একাধিক লুকানো ক্যামেরা দৃশ্যগুলি রেকর্ড করে * ''- গগলবক্স'', একটি ইন্টারঅ্যাকশন প্রোগ্রাম যা প্রতিদিনের লোকেরা টিভি দেখছে। দর্শক টিভি দেখতে দেখতে দেখছেন। * জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পাপারাজ্জি একটি পুনরাবৃত্ত বিষয়। এটি নজরদারির একটি আক্রমণাত্মক রূপ যা মূলত সেলিব্রিটিদের হয়রানি করে যখন তারা প্রহরায় ধরা পড়ে তখন তাদের ফটো এবং ভিডিও পেতে হয়। এটি সমস্যাযুক্ত হয়ে ওঠে কারণ এই ধরণের নজরদারি নৈতিক আচরণবিধির বিরুদ্ধে যায়, কারণ এই ধরণের আক্রমণাত্মক অনুশীলনকে সম্মতি দেওয়া হয়নি। * ফিলিপ কে ডিকের ছোট গল্প ''দ্য মাইনরিটি রিপোর্ট'' এবং পরবর্তী চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম এবং ফক্স টেলিভিশন সিরিজটি এমন একটি বিশ্বের চিত্রিত করে যেখানে লোকেরা এখনও করেনি এমন অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার হতে পারে। ফিল্ম অভিযোজনে, শহরব্যাপী অপটিক্যাল স্বীকৃতি সিস্টেম এড়াতে নায়ককে অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ চোখের প্রতিস্থাপন শল্য চিকিত্সার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। * ''পার্কস অ্যান্ড রিক্রিয়েশনের'' চূড়ান্ত মরসুমে, লেসলি একটি ডেটা-মাইনিং টেক সংস্থার সাথে লড়াই করে যা পাওনির নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে। = প্রতিনজরদারি = == সংজ্ঞা == প্রতিনজরদারি অর্থ "নিচ থেকে দেখা এবং এর ব্যুৎপত্তিটি 'সুর' (ওভার) কে 'সস' দিয়ে প্রতিস্থাপন করা থেকে উদ্ভূত হয়, যার অর্থ 'অধীন' বা 'নিচে' বা 'নিচ থেকে'।  সুতরাং শব্দটি নিজেই পরামর্শ দেয় যে প্রতিনজরদারি নজরদারির বিপরীত এবং দেখার কাজটি উভয়ের মধ্যে একমাত্র ধ্রুবক। স্যুসভিল্যান্স হ'ল ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা কোনও ক্রিয়াকলাপের রেকর্ডিং, সাধারণত ছোট পরিধানযোগ্য বা বহনযোগ্য ব্যক্তিগত প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রতিনজরদারিকে ক্যামেরা (বা অন্যান্য সেন্সর) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা মানুষ বহন করে।  সুসভিলেন্স হ'ল বহুবচনের পর্দা (অর্থাত্ "ভিড় পর্দা" বা অ-কর্তৃপক্ষ দ্বারা করা, পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন করা বা অনুরূপ)। আপনার অভিধান প্রতিনজরদারিকে "দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ চলাকালীন কোনও ব্যক্তির সুবিধাজনক পয়েন্ট থেকে পরিবেশের রেকর্ডিং" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনজরদারি ব্যবহারের একটি উদাহরণ - যা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মধ্যে জনপ্রিয় - যেখানে কোনও ব্যক্তি আইন ভঙ্গকারী উচ্চতর কর্তৃপক্ষের ছবি বা রেকর্ডিং তোলেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুলিশ অফিসার পুরোপুরি ইউনিফর্ম পরিহিত কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় তাদের ফোন ব্যবহার করছেন বা আদালতের বিচারক ডাবল হলুদ লাইনে পার্কিং করছেন। এগুলি কেবল ছোটখাটো উদাহরণ হতে পারে তবে আপনি যখন এই লাইনগুলির সাথে কিছু দেখেন তখন এটি আসলে প্রতিনজরদারি ব্যবহার করছে। == স্টিভ মান == সাসভিল্যান্সের ক্ষেত্রে একটি মূল ব্যক্তিত্ব হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এর শব্দটি তৈরি করেছিলেন স্টিভ মান, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। বিশ্বের প্রথম সাইবর্গ বলে দাবি করা তাঁর দ্বারা কয়েক বছর ধরে বাস্তব জীবনে সাসভিলেন্সের অনুশীলন কার্যকর করা হয়েছে। মান গত ৩৫ বছর ধরে তার মাথায় একটি কম্পিউটার সংযুক্ত করে বসবাস করছেন যা তার জীবনকে সাসভিল্যান্স অনুশীলনের একটি প্রমাণ করে তুলেছে। স্টিভ মান একজন সমাজ সংস্কারবাদী হওয়ার আশা করেন যিনি অন্যদের পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রহণে প্ররোচিত করবেন। তার জীবদ্দশায় মান রাস্তায় বিজ্ঞাপন ব্যানার ফিল্টার করতে তার আইট্যাপ ব্যবহার করে আসছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে লোকেরা কী দেখতে পাবে তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং আজকের সমাজগুলি প্রলুব্ধকর শব্দ এবং চিত্রাবলী দ্বারা বোমাবর্ষণ করা হয় যা তাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে পণ্য ও পরিষেবাদি ক্রয় করতে বাধ্য করে। === প্রতিনজরদারির মূল ধারণা === মান সাসভিল্যান্সের দুটি প্রধান সংজ্ঞা সরবরাহ করে, যা প্রায় সমতুল্য, তবে প্রতিটি সাসভিল্যান্সের কিছুটা আলাদা দিক ক্যাপচার করে: # বিপরীত নজরদারি: নিচ থেকে দেখতে; # ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ক্যাপচার: কার্যকলাপে অংশগ্রহণকারী দ্বারা একটি কার্যকলাপ রেকর্ডিং। অডিও সাসভিল্যান্সের জন্য ইতিমধ্যে একটি নির্দিষ্ট আইনী নজির রয়েছে, উদাঃ টেলিফোন কথোপকথনের "একপক্ষ" রেকর্ডিং কথোপকথনের পক্ষ নয় এমন ব্যক্তির দ্বারা রেকর্ডিংয়ের চেয়ে বেশি আইনী সুরক্ষা উপভোগ করে। বেশিরভাগ রাজ্যে, অডিও নজরদারি অবৈধ, তবে অডিও সোভিলেন্স বৈধ। স্টিভ ম্যানের মতে, দুটি ধরণের সাসভিলেন্স রয়েছে: '''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (উদাঃ সংস্থার মধ্যে থেকে উদ্ভূত) এবং '''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্স''' (প্রায়শই সংস্থার দ্বারা অবাঞ্ছিত)। '''ইনব্যান্ড সাসভিল্যান্স ("সাবভিল্যান্স") এর উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:''' * ট্রাকের পিছনে ১-৮০০ নম্বর যাতে অন্যান্য চালকরা "আমি কীভাবে চালাচ্ছি" রিপোর্ট করতে পারে; * একজন অধ্যাপকের তার ছাত্রদের দ্বারা কর্মক্ষমতা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া; * ব্যবস্থাপনা দ্বারা ক্রেতাদের দেওয়া সন্তোষজনক প্রশ্নাবলী, যেখানে "সাবভিল্যান্স" নাশকতামূলক, সংগঠনের অভ্যন্তর থেকে নজরদারির উপর "টেবিলগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া" অর্থে, ("নাশকতামূলক" আক্ষরিক অর্থ "নিচ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো", কোনও সংস্থার মধ্যে থেকে গোপনে কাজ করা)। '''আউট-অফ-ব্যান্ড সাসভিল্যান্সের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:''' * ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীরা ড্রাইভারের (অবৈধ) ড্রাইভিং অভ্যাস নথিভুক্ত করে; * গ্রাহকরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে অনিরাপদ ফায়ার এক্সিটের ছবি তুলছেন এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের রিপোর্ট করছেন; * নাগরিকরা পুলিশের নির্মমতার ভিডিও ধারণ করছে এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে অনুলিপি পাঠাচ্ছে। === ম্যাকডোনাল্ডস অ্যাটাক === ২০১২ সালের ১ জুলাই পরিবারের সাথে প্যারিসে ছুটি কাটাতে গিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মচারীদের দ্বারা স্টিভ মান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। হামলার কারণ ছিল মান রেস্তোরাঁর ভিতরের দৃশ্য এবং মাথায় আইট্যাপ প্রযুক্তি লাগানো মেনুতে ভিডিও করছিলেন। যদিও মানের এখানে কোনও পয়েন্ট প্রমাণ করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, তবে তার মামলাটি এখন প্রথম সাইবারনেটিক ঘৃণ্য অপরাধ হিসাবে পরিচিত, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের মধ্যে লাইনগুলি অস্পষ্ট হয়ে গেলে কী ঘটে।  নজরদারি ব্যবস্থা দ্বারা চিত্রগ্রহণ করার সময় মানকে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করা হয়েছিল কারণ তিনি এটি আবার চিত্রগ্রহণ করছিলেন। আক্রমণের ফলাফলে, মানের ছয় বছর বয়সী মেয়ে দুটি পদটির শক্তির গতিশীলতা বর্ণনা করে একটি স্কেচ আঁকেন। ম্যাকডোনাল্ডসের ঘটনাটি ম্যাকভিল্যান্স নামে একটি নতুন শব্দ তৈরি করেছিল যা মান পরে পর্দা করার কাজের প্রতি সমাজের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি চিত্রে রেখেছিলেন। === তিনটি দল === ইতিহাসের মাধ্যমে সমাজগুলি নজরদারির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি (মান এবং ফেরেনবক)।  প্রথম ধরনের রাষ্ট্র জনগণকে একই মাত্রায় রাষ্ট্রের উপর নজরদারি করার অনুমতি দেয়। এই রাজ্যগুলি তাদের জনগণকে রাজনৈতিক আলোচনা এবং সংস্কারকে উত্সাহিত করার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্কিং, রাজনৈতিক ফোরাম এবং তথ্য সংক্রমণের মাধ্যমে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয়। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি উপযুক্ত আদর্শিক কাঠামো সরবরাহ করে যেখানে সাসভিল্যান্সের এই জাতীয় শর্তগুলি গ্রহণযোগ্য। যদিও লোকেরা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করতে স্বাধীন, এই জাতীয় দেশগুলিতে বিদ্যমান আইনগুলি এমন যা সরকার এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির অন্তর্গত সংবেদনশীল তথ্য এবং ডেটা রক্ষা করে। অতএব, যখন ব্যক্তিরা এই জাতীয় তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে বা এটি জনসাধারণের কাছে ফাঁস করার চেষ্টা করছে তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। চেলসি ম্যানিং এবং এডওয়ার্ড স্নোডেন উভয়ই উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তাদের উদ্ঘাটনের মধ্যে ছিল স্নোডেনের জন্য প্রিজম নজরদারি প্রোগ্রাম এবং ম্যানিংয়ের পক্ষ থেকে কোল্যাটারাল মার্ডার নামে পরিচিত একটি ভিডিও। হুইসেলব্লোয়াররা বিতর্কের একটি গরম বিষয় কারণ তারা সরকার কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত প্রযুক্তি এবং শক্তিতে সজ্জিত ব্যক্তি যারা পরিবর্তে তাদের সরঞ্জামগুলি রাষ্ট্রের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তারা একই সঙ্গে নজরদারি ও সাসভিল্যান্স চালাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রকারটি হ'ল রাষ্ট্র যা এমন আইন বজায় রাখে যা জনগণকে এমন কোনও আলোচনায় জড়িত হতে বাধা দেয় যা সম্ভবত রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করতে পারে এবং সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে পারে। যদিও রাষ্ট্রের কাছে ক্যামেরা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে তার নাগরিকদের নিরীক্ষণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে এটি রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। এই ধরনের রাজ্যে এটা খুবই স্বাভাবিক যে কর্পোরেশন বা সরকারী দুর্নীতির ঘটনাগুলি উত্তর কোরিয়া, চীন এবং বিশ্বজুড়ে সামরিক একনায়কতন্ত্রের মতো আচ্ছাদিত হচ্ছে। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে এমন রাজ্যে যেখানে রাষ্ট্রের তদারকির তুলনায় মানুষের আন্ডারসাইট কর্তৃত্ব বেশি। এক্ষেত্রে নাগরিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা পুলিশ ও সরকারী সংস্থাগুলির পাশাপাশি দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের জ্ঞান সরবরাহ করে। এছাড়াও আইন পাস এবং নির্বাচনের জন্য ভোট দেওয়ার জন্য ই-ভোট সিস্টেমের মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়ায় ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। একইভাবে, অ্যামাজন এবং ইবেয়ের মতো খ্যাতি সিস্টেমের বিকাশ ব্যবহারকারীদের ভবিষ্যতের ক্রেতাদের জন্য পণ্য ও পরিষেবাদির রেট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, এক ধরণের গ্রাহক সাসভিল্যান্স সিস্টেম তৈরি করেছে। যদিও এটি ন্যায্য বাণিজ্যকে উত্সাহ দেয় এবং অনলাইন বাজারে গণতান্ত্রিক শর্ত প্রতিষ্ঠা করে, এটি কখনও কখনও বাকপটুতা এবং পেশাদারিত্বের ব্যয়েও কাজ করে। যেহেতু এই সাইটগুলি সমস্ত ধরণের ব্যবহারকারীদের তাদের কেনা কোনও পরিষেবা বা পণ্য থেকে তাদের রেটিং / পর্যালোচনা পোস্ট করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, তাই তাদের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনও বিশেষ দক্ষতা বা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না (রাইনগোল্ড)। == সমাজ == পারফরম্যান্সগুলি দেখায় যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরণের নিয়ম লঙ্ঘন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি নতুন ধরণের ভারসাম্য তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা পাবলিক প্লেসে নজরদারির কাজ হিসাবে ভিডিও করার জনসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা দেখায়। যখন এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ সাধারণ মানুষ, যেমন পারফর্মারদের দ্বারা অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে করা হয়, তখন এটি প্রায়শই গৃহীত হয়। যাইহোক, যখন ডেটা প্রজেক্টরগুলি নজরদারি কর্মকর্তাদের তাদের সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা দেখায়, সেখানে রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা কম। নজরদারির জন্য দায়বদ্ধ সাংগঠনিক কর্মীরা সাধারণত "সাধারণ মানুষ" পারফর্মারদের কাছ থেকে সাসভিলেন্স গ্রহণ করেন না, এমনকি যখন ডেটা প্রদর্শনগুলি প্রকাশ করে যে প্রতিনজরদারিকারীরা কী রেকর্ড করছে। স্ব-ক্ষমতায়নের সামাজিক দিকটি পরামর্শ দেয় যে সুভিল্যান্স হ'ল মুক্তির কাজ, আমাদের জনসাধারণের অঞ্চল দখল করা এবং নজরদারি খেলার ক্ষেত্রের সমতলকরণ। তবুও, সাসভিল্যান্স এখন যে সর্বব্যাপী সামগ্রিক নজরদারি দেয় তা ব্যক্তির পক্ষ থেকে সম্মতির চূড়ান্ত কাজ। সার্বজনীন নজরদারি / সাসভিল্যান্স শেষ পর্যন্ত কেবল বিদ্যমান প্রভাবশালী ক্ষমতা কাঠামোর লক্ষ্যগুলি পরিবেশন করতে পারে। সার্বজনীন সুর / সাসভিলেন্স পর্যবেক্ষণ এবং সর্বব্যাপী তথ্য সংগ্রহের বিস্তৃত অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়িয়ে শক্তি কাঠামোকে সমর্থন করতে পারে।  অথবা উইলিয়াম গিবসন যেমন ফিচার-দৈর্ঘ্যের মোশন পিকচার ফিল্মে মন্তব্য করেছেন সাইবারম্যান (http://wearcam.org/cyberman.htm) "আপনি নজরদারি করছেন। আর সবাই নজরদারির ওপর নজরদারি চালালে নজরদারি নিষ্ক্রিয় হয়ে যেত। এটা অপ্রয়োজনীয় হবে। এই প্যানোপটিকন, সূক্ষ্মভাবে সাজানো যাতে একজন পর্যবেক্ষক এক নজরে অনেক ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, এছাড়াও প্রত্যেককে আসতে এবং যে কোনও পর্যবেক্ষককে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে। দেখার যন্ত্রটি একসময় এক ধরণের অন্ধকার ঘর ছিল যার মধ্যে ব্যক্তি গুপ্তচরবৃত্তি করেছে; এটি একটি স্বচ্ছ বিল্ডিং হয়ে উঠেছে যার মধ্যে ক্ষমতার প্রয়োগ সামগ্রিকভাবে সমাজের তত্ত্বাবধানে হতে পারে। মিশেল ফুকো, ''ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ'', ডিসিপ্লিন, পৃ. এ ধরনের সমাজে তাত্ত্বিকভাবে সবার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক হতে পারে। বিষয়টি অবশ্য কোন পরিস্থিতিতে কতটা নজরদারি এবং সুনজরদারি উপস্থিত রয়েছে তা নিয়ে নয়, তবে এটি কীভাবে নজরদারির ক্ষমতাহীন প্রকৃতি, পশ্চিমা সমাজে এর অপ্রতিরোধ্য উপস্থিতি এবং এই উপস্থিতির প্রতি সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের আত্মতুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে। সমসাময়িক নেটওয়ার্কযুক্ত সমাজগুলিতে, ব্যক্তিরা একক সম্প্রদায় বা ওয়ার্কগ্রুপে এম্বেড হওয়ার পরিবর্তে একাধিক, আংশিক সম্প্রদায় এবং কাজের দলগুলির মধ্যে স্যুইচ করে। তবুও, নজরদারি হ'ল বৃহত শ্রেণিবদ্ধ সংস্থাগুলির শিল্প ও শিল্পোত্তর যুগের একটি প্রকাশ যা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের নব্য-প্যানোপটিকনগুলিতে দক্ষতার সাথে প্রযুক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমাজে, মানুষ সম্ভাবনা বেশি সুভিল্যান্স এবং কোভিল্যান্স চাই, কারণ তাদের গ্রাম / সম্প্রদায় বা শ্রেণিবদ্ধ সংস্থার সুরক্ষার অভাব রয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তাদের নজরদারিকারীদের নজরদারি করার অনুমতি দেয়। সমস্ত লোককে একই সাথে মাস্টার এবং দৃষ্টির বিষয় হওয়ার সামর্থ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিধানযোগ্য কম্পিউটিং ডিভাইসগুলি নজরদারির সাধারণত একতরফা সংলাপে একটি নতুন কণ্ঠস্বর সরবরাহ করে। তারা তাদের একাধিক এবং জটিল নেটওয়ার্কগুলি অতিক্রম করার সাথে সাথে মানুষের জন্য একটি স্ব-ক্ষমতায়নের দিকে একটি উপায় প্রস্তাব করে। == প্রতিনজরদারির রাজনীতি == প্রতিনজরদারি বা Sousveillance নিচ থেকে দেখার একটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করে। এর অর্থ দৃষ্টির বিষয়টির পর্যবেক্ষকের চেয়ে বেশি শক্তি রয়েছে। নানা উপায় ও প্রযুক্তির সাহায্যে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিদ্রোহ ও সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়েছে। === ফরাসি বিপ্লব === ১৭৮৯ সালের ৫ মে ফ্রান্সে এস্টেটস-জেনারেলকে ডাকা হয়। বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা পাদ্রী এবং অভিজাতদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিলেন, তবুও তাদের মাথা দিয়ে ভোট দেওয়া হয়নি। তারা তৎক্ষণাৎ মণ্ডলী ত্যাগ করে এবং তাদের চারপাশে পাদ্রী, অভিজাত এবং কৃষকদের জড়ো করে পৃথকভাবে সভা শুরু করে। এই সমস্ত বিখ্যাত টেনিস কোর্টের শপথের দিকে পরিচালিত করেছিল যেখানে স্ব-প্রশংসিত জাতীয় পরিষদের সদস্যরা ফ্রান্সের নিজস্ব সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত কখনও ভেঙে না দেওয়ার শপথ নিয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে সভাগুলি বাস্তিল আক্রমণের দিকে পরিচালিত করে। ফরাসি বিপ্লব আমাদের দেখায় যে অন্যদের তুলনায় কম ক্ষমতার অধিকারী একদল লোক রাজা ষোড়শ লুইয়ের উৎখাত এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলুপ্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রীকরণের পথ সংগঠিত ও প্রশস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের খবর সংবাদপত্র এবং নিয়মিত মেইল চিঠিপত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি অনুমান করা নিরাপদ যে সেই সময়ের সমস্ত পতনশীল সাম্রাজ্য (উদাঃ অটোমান সাম্রাজ্য) যদি সম্ভব হয় তবে সংবাদের প্রভাবকে ছবির মাধ্যমে জোর দেওয়া হলে আরও ভালভাবে প্রস্তুত হত। আধুনিক মোবাইল কম্পিউটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং দ্রুত ইন্টারনেট গতির সাথে আজ খবর আমাদের পর্দায় তাত্ক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়। === উইকিলিকসের ফাঁস ও আরব বসন্ত === ২০১০ সালে উইকিলিকসের ওয়েবসাইট থেকে মার্কিন কূটনৈতিক নথি প্রকাশের বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যে সামাজিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করার সময় জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষত, উইকিলিকসের কাজকে প্রায়শই তিউনিশিয়ার বিপ্লবের ঘটনাগুলির মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সেই সময়ে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী, সক্রিয় কর্মী এবং সাংবাদিক তিউনিশিয়ার রাস্তায় নেমে আসে এবং টুইটার এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। তারা প্রত্যেকেই বিক্ষোভের উপাদান পোস্ট করে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং ২০১০ সালে তিউনিশিয়া তার রাষ্ট্রপতি জিনে এল আবিদিন বেন আলীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এই ঘটনাগুলি শীঘ্রই প্রতিবেশী দেশ মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্যদের দখল করে নিয়েছিল আরব বসন্তের বিখ্যাত বিপ্লবী তরঙ্গ গঠন করতে। === মেক্সিকোতে জাপাতিস্তাস আন্দোলন === মেক্সিকোতে জাপাতিস্তা আন্দোলনের বিস্ফোরণ থেকে ইডিটি নামে একদল কর্মী এবং শিল্পী বিদ্রোহীদের প্রতি বহুজাতিক সমর্থনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। এই আন্দোলন রক্ষার জন্য ইডিটি ফ্লাডনেট প্রোগ্রাম তৈরি করেছে যার লক্ষ্য ছিল মেক্সিকান এবং মার্কিন সরকার এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলির ওয়েব সার্ভারকে অপ্রতিরোধ্য করা। == নাগরিক সাংবাদিকতা == সিটিজেন জার্নালিজমও প্রতিনজরদারির জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। এর উৎপত্তি ১৯৯০ এর দশকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে পারে। এটি সাধারণ জনগণকে এমন তথ্য পোস্ট করে যা তারা মনে করে যে পেশাদার সাংবাদিকদের খোলাখুলিভাবে কথা বলা উচিত। নাগরিকরা যেভাবে তাদের যোগাযোগ সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে সংবাদ এবং তথ্য লিখেন, বিশ্লেষণ করেন এবং প্রেরণ করেন তার মাধ্যমে এটি স্বীকৃত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ব্যক্তিগত ব্লগ এবং ঘরোয়া পরিবেশে চিত্রগ্রহণ করা। তাদের প্রকাশিত সংবাদ ও তথ্য নাগরিক সাংবাদিকতা। এই সুভিল্যান্স পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু পেশাদার সাংবাদিকদের কাজই নয়, সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডও জনগণ মনিটরিং করতে পারবে। নাগরিক এবং পেশাদার সাংবাদিকতার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে এমন আরেকটি মূল উপাদান হ'ল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ব্যবহার। নাগরিক সাংবাদিকরা তাদের শ্রোতাদের অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে তর্ক করা ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে। এটি প্রায়শই অনলাইন ব্লগিংয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় যা "ব্যবহারকারীদের" তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং ধারণা যুক্ত করতে দেয়।  এটি নাগরিকদের পেশাদারদের চেয়ে বৃহত্তর এবং অনেক জোরালো কণ্ঠস্বর দেয় কারণ এটি বিষয়গুলিতে তাদের সত্যিকারের আগ্রহ দেখায়। নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থান সম্পর্কে প্রশংসা করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ প্রায়শই বড় ঘটনাগুলির মধ্যে থাকে। দুর্যোগ বা ঘটনার শুরুতে একজন সংবাদ প্রতিবেদক খুব কমই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবেন, তবে নিয়মিত নাগরিকরা এখন এই ইভেন্টগুলি সরাসরি স্ট্রিম করতে বা কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউটিউবে পোস্ট করার ক্ষমতা রাখে। নাগরিক সাংবাদিকতাকে প্রায়শই দ্বিতীয় স্তরের প্রতিবেদন হিসাবে উপেক্ষা করা হয়, অনেকে উদ্বিগ্ন যে অনেক নাগরিক সাংবাদিক মূলত অপেশাদার যারা কেবল টিভি বা প্রেসে যা দেখে তা নকল করে।  তবে নাগরিক সাংবাদিকতা কেবল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নয়, মিডিয়া এবং সরকারের মধ্যে জোট বা বন্ধন ভেঙে একটি গল্পের পুরো সত্য প্রকাশের জন্যও অপরিহার্য। প্রায়শই সংবাদগুলি এমনভাবে বলা হয় যা ভারসাম্যপূর্ণ নয়, বা সরকারী উদ্যোগের পক্ষে অনুকূলভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়। কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকায়, সাধারণ নাগরিকের পদক্ষেপ নেওয়া এবং সাংবাদিকরা যা করতে পারে না তা করা প্রয়োজন। একজন নাগরিক সাংবাদিক খুব কমই পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানে থাকেন, কারণ তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, অথবা তাদের কোম্পানিকে বেতন দেওয়া হচ্ছে না বা এমনকি সত্যকে বিকৃত করার জন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষ দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সিটিজেন জার্নালিজম হ'ল সাসভিলেন্সের একটি কাঁচা রূপ কারণ এটি সত্যের উপর বিধিনিষেধ বহনকারী সরকারের প্রতি আনুগত্য রাখে না। নাগরিক সাংবাদিকতা চাকরি হারানোর ভয় ছাড়াই জনসাধারণের কাছে সত্য প্রকাশ করতে পারে, তবে এটি পেশাদার এবং জনসাধারণের কাছ থেকে একইভাবে অবিশ্বাসের একটি স্তরের সাথে আসে। === ফার্গুসন, মিসৌরিতে নাগরিক সাংবাদিকতা === আগস্ট ৯, ২০১৪ এ, মাইকেল ব্রাউন (সাদা পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের হাতে) মৃত্যুর পর মিসৌরির ফার্গুসন শহরটি বিশৃঙ্খলার রাজ্যে প্রবেশ করেছিল যাকে অনেকে "ফার্গুসন অস্থিরতা" বলে অভিহিত করে।  বিক্ষোভের সহিংস প্রকৃতি এবং পুলিশ বাহিনীর সামরিকীকরণের কারণে সৃষ্ট নাগরিক অস্থিরতার কারণে, ফার্গুসনের বেশ কয়েকজন স্থানীয় তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে কী ঘটছে তা প্রতিবেদন করার জন্য অনলাইনে অবস্থান নিয়েছিল। শহরের নাগরিক সাংবাদিকরা টুইটার এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মিডিয়া সাইটে তাদের শহরে কি ঘটছে তার ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেয় এবং মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যুর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং একই সাথে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর শক্তিশালী সামরিকীকরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে। নিকটবর্তী সেন্ট লুইস শহরের একজন অল্ডারম্যান অ্যান্টোনিও ফ্রেঞ্চ টুইটারে ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করে কয়েকদিন কাটিয়েছেন যা তার ফোনে ধরা পড়া পুলিশি পদক্ষেপের প্রদর্শন করে। পরে পুলিশের কর্মকাণ্ড ভিডিও করার জন্য ফ্রেঞ্চকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন সিটিজেন জার্নালিস্ট কেমন হওয়া উচিত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ভাষা কাজ করেছে; একজন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী যিনি জনগণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন।  ফরাসি এবং তার মতো অন্যান্যদের ধন্যবাদ, পরবর্তী কয়েক বছরে নাগরিক সাংবাদিকরা বর্ণের লোকদের বিরুদ্ধে পুলিশি বর্বরতার আরও অনেক ঘটনা নথিভুক্ত করবে। টুইটার এবং ফেসবুকে, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্রচারাভিযানটি হ্যাশট্যাগ এবং ট্রেন্ডিং বিষয়গুলির জন্য জন্ম নিয়েছিল। ফার্গুসন নাগরিক সাংবাদিক হওয়ার জন্য মানুষ তাদের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার প্রথম উদাহরণ নয়, বোমা হামলা এবং আক্রমণের সময় সিরিয়া, ইরান, মিশর, প্যালেস্টাইন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট, প্যারিসের মতো জায়গায় ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এটি সারা বিশ্বে ঘটে, প্রকৃতপক্ষে টুইটারের মতো সাইটগুলি বেশিরভাগ সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরাসরি সংবাদ আপডেটের জন্য ভাল হয়ে উঠছে কারণ যে গতিতে বিষয়বস্তু আপলোড করা যায়। === পঞ্চম এস্টেট হিসাবে নাগরিক সাংবাদিকতা === ১৭৮৭ সালের সংসদীয় বিতর্কে এমপি এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, "সংসদে তিনটি এস্টেট রয়েছে তবে রিপোর্টার্স গ্যালারিতে একটি চতুর্থ এস্টেট বসে আছে যা তাদের সকলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।  এটা কোনো বক্তব্য বা রসাত্মক বক্তব্য নয়, এটি একটি আক্ষরিক সত্য, এই সময়ে আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই বিবৃতিটি বোঝায় যে সাংবাদিকরা সরকারের ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত তিনটি শাখার চতুর্থ প্রতিষ্ঠিত শাখা হতে বোঝানো হয়েছিল। চতুর্থ এস্টেট নতুন সংযোজন হওয়ার দিন চলে গেছে, নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থানের কারণে একটি নতুন এস্টেট উত্থিত হয়েছে। তথাকথিত পঞ্চম এস্টেট সমসাময়িক সমাজের বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গির গোষ্ঠীগুলির একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক রেফারেন্স এবং ব্লগার, সাংবাদিক এবং অ-মূলধারার মিডিয়া আউটলেটগুলির সাথে সবচেয়ে বেশি যুক্ত। এর উদাহরণগুলির মধ্যে উইকি লিকস এবং গুইডো ফক্সের মতো গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ==== প্রধান সমালোচনা ==== অনেকে যুক্তি দেখান যে নাগরিক সাংবাদিকতা অনিয়ন্ত্রিত এবং বিশ্বাস করা যায় না কারণ কোনও সরকারী প্রুফ-রিডিং নেই। এই কারণে যারা বিশ্বাস করে যে সংবাদটি ভারী পক্ষপাতদুষ্টতার সাথে আনা যায় এবং হতে পারে। এর সাথে যে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব আসতে পারে তার পাশাপাশি, লেখকের উপর নির্ভর করে লেখাটিকেও নিম্নমানের বা অপেশাদার হিসাবে বিচার করা যেতে পারে।  অধিকন্তু, নাগরিক সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য পেশাদার সরঞ্জাম না থাকায় বিশ্বাসযোগ্যতা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।  এটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরণের সাসভিলেন্সের পক্ষে নয় কারণ তাদের মতাদর্শগুলি তাদের তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা ওভারল্যাপ করতে পারে।  সবশেষে, সিটিজেন জার্নিজমের সংজ্ঞা নিয়ে কি কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যা আছে? সিটিজেন জার্নালিস্ট শব্দটির একটা সমস্যা আছে- সাংবাদিকরাও নাগরিক হতে পারেন। == প্রতিনজরদারি এবং শিল্প == যদিও প্রতিনজরদারির শিল্পটি সভিল্যান্ট হওয়ার আসল কাজ, এই বিভাগটি সাসভিল্যান্সের মধ্যে শিল্পের ধারণাটি অন্বেষণ করবে। শিল্প। সংজ্ঞা অনুসারে এটি একটি দক্ষতার প্রকাশ, সৃজনশীলতার ফলাফল, কল্পনা চাক্ষুষভাবে উত্পাদিত (উদাহরণস্বরূপ একটি পেইন্টিং বা ভাস্কর্য আকারে)। এটি একটি মানুষের শারীরিক সৃষ্টিতে স্থানান্তরিত হওয়ার সারাংশ, সাধারণত জনসাধারণের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য, সাধারণত আবেগকে উস্কে দিতে সক্ষম। ডিজিটাল যুগে, খোলামেলাতা এবং বিষয়বস্তু ভাগ করে নেওয়ার সাথে। সেখানে পিক্সেলগুলি প্রায়শই ম্যানুয়াল কাজকে প্রতিস্থাপন করে, যখন কোনও উদীয়মান বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিল্পীর পক্ষে কাজটি সেখানে রাখা এবং পরিচিত হওয়া অত্যন্ত সহজ, সেখানে কি রোমান্টিকতার ক্ষতি হয়, শিল্প সৌন্দর্য? জীবন থেকে শুরু করে সবকিছুর মতোই শিল্পও একটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, একটি বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়। এই যুগে তাই ডিজিটালে শিল্পের অভিযোজন আশা করা ভুল নয়, অন্তত আরও সাধারণ স্তরে। প্রকৃতপক্ষে, যদি 'বড়' নামগুলির ধ্রুপদী প্রযোজনাগুলি নতুন প্রবণতাগুলিকে প্রতিহত করতে পারে বা এমনকি আরও ঐতিহ্যবাহী লাইন বজায় রেখে তাদের আকার দিতে পারে, তবে উদীয়মানগুলি সময় এবং জনপ্রিয় চাহিদার সাথে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্রাউডসোর্সের কারণে শিল্প কম ব্যক্তিগত এবং অনন্য কিছুতে পরিণত হবে কিনা এই প্রশ্নটি পদকের অন্য দিকের বিবেচনার দিকে পরিচালিত করে, বিপরীত ঘটনা: সীমানা লঙ্ঘন এবং নতুনের অন্বেষণ। ডিজিটাল প্রসঙ্গ আসলে শিল্পীদের আরও একটি অঞ্চল দেয় যেখানে বেড়ে ওঠা এবং স্বীকৃত হতে হয়। শিল্পের পেছনে, সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে আগ্রহ, রাজনীতি, নজরদারি। অনানুষ্ঠানিকভাবে তৈরি শব্দ 'আর্টভেইল্যান্স' ১৯৩০ এর দশক থেকে বিদ্যমান শিল্পের বিভাগ যা নজরদারির সাথে সম্পর্কিত, সৃজনশীলতার একটি প্রবাহ উপরের পর্যবেক্ষকের ব্যবহারে রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট, পোর্টেবল ক্যামেরা প্রবর্তনের সাথে সাথে ফটোগ্রাফারদের পক্ষে গোপনে ছবি তোলা সহজ করা হয়েছিল। এই সম্পদের প্রয়োগ আরও আধুনিক সময়ে, বিশেষত ৯/১১ হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে দুর্দান্ত ব্যবহার পেয়েছে। ঝাপসা শেডের একটি পাতলা রেখা শিল্পে নজরদারি এবং সুভিল্যান্স পরিস্থিতিকে বিভক্ত করে যেমন একজন শিল্পী আধিপত্যকারী হয়ে ওঠেন, এটি অগত্যা আশেপাশের লোকদের উপরে উঠছে না, তাই প্রতিনজরদারিে অভিনয় করে। উদাহরণস্বরূপ, এই দ্বিমুখী নজরদারি এবং সাসভিল্যান্স পরিস্থিতি ডিজিটাল চশমা (গুগলের প্রকল্প গ্লাস) এর মতো সরঞ্জাম দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও নজরদারির ক্ষেত্রে শিল্পের আরও ব্যবহারিক, কম শৈল্পিক ব্যবহার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কিছু শিল্পী জনসাধারণের অভিজ্ঞতার জন্য নজরদারি ডেটা আরও ভিজ্যুয়াল কিছুতে রূপান্তর করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এর একটি ভাল উদাহরণ অন্যদের মধ্যে দু'জন ব্যক্তির কাজে পাওয়া যায়: ওয়াকার ইভান্স এবং ট্রেভর পাগলেন। ওয়াকার ইভান্স, নজরদারি এবং শিল্পকে একত্রিত করার জন্য প্রথম একজন, ১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ের অজানা যাত্রীদের প্রতিদিনের রুটিন এবং সত্য মুহুর্তগুলি ক্যাপচার করার চেষ্টা করার জন্য ছবি তুলেছিলেন (প্রাকৃতিক, কোনও সেটে নয়)। অজ্ঞাতনামা মানুষের এই গোপন ছবিগুলি শিল্পী তার কোটের নিচে একটি ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন, চকচকে ক্রোমটি কালো রঙ করেছিলেন এবং বোতামগুলির মধ্যে লেন্সগুলি উঁকি দিয়েছিলেন। আজ ক্যামেরা ব্যবহারের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি পদ্ধতি, এমনকি তাদের অজান্তেই মানুষের জীবন রেকর্ড করা। এই পরিস্থিতি থেকে আলাদা, যা সাসভিল্যান্সের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হতে পারে, ট্রেভর পাগলেনের কাজটি নজরদারি এবং শিল্পকে আরও স্পষ্ট উপায়ে একত্রিত করে। তিনি পাবলিক লোকেশন থেকে সামরিক স্থাপনার ছবি এবং স্টিলথ-ড্রোনের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহের স্যাটেলাইটের পথ ট্রেস করার জন্য পরিচিত। তাঁর রচনায় আশেপাশের পরিবেশকে অন্বেষণ, বোঝার এবং বর্ণনা করার জন্য সৌন্দর্য, নকশা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের একটি সংমিশ্রণ রয়েছে। বিশেষত আকর্ষণীয়, এমন একটি প্রভাব যা অস্থিতিশীল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ট্রেভর পাগলেন মেট্রো পিকচার্স গ্যালারিতে একটি ভিডিও ইনস্টলেশনের মাধ্যমে দর্শকদের নজরদারির মূল অংশের সামনে রাখে। স্নোডেনের ফাঁস হওয়া এনএসএ নথির আর্কাইভ থেকে চার হাজারেরও বেশি কোড নাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান কলামগুলিতে একটি অন্ধকার ঘরে প্রজেক্ট করা হয়েছে। চ্যালেঞ্জিং সমাজ, শিল্প এবং সাসভিল্যান্সের পরিস্থিতিতে, শিল্প ডিজিটাল বিশ্বে একটি আধুনিক ধারণা নিয়ে বিকশিত হয়েছে: একটি ইউনিয়নে সৃজনশীলতা প্রকাশ করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার যা কখনও কখনও শ্রোতাদের অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য রাখে। ভিন্ন হওয়া, আদর্শের বিরুদ্ধে থাকা, প্রত্যাশার বিরুদ্ধে থাকা। প্রতিনজরদারিে শিল্প চরমের সম্ভাবনা খুঁজে পায়, উদাহরণস্বরূপ রেজিন ডিব্যাটির উই-মেক-মানি-নট-আর্টের মতো পৃষ্ঠাগুলির অস্তিত্বের সাথে দেখা যায় যেখানে প্রযুক্তিটি সমালোচনামূলক আলোচনার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, শিল্পী, হ্যাকার, ডিজাইনার, সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিউশনের একটি বিন্দু। শিল্প পাঠ্যের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে, শব্দ চয়নে: এটি ভিতরের তাত্পর্য (বিদ্রূপের ব্যবহার, তাত্পর্যের স্তরগুলি, রসিকতার ভিতরে) বা ফন্টের পছন্দই হোক। এই পৃষ্ঠার মতো, শিল্পকে আরও তথ্যবহুল, সমালোচনামূলক উদ্দেশ্যে প্রায় বিকৃত করা যেতে পারে। অমিতব্যয়িতা অনলাইন বিশ্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এমন একটি উপাদান যা সম্পর্কে মানুষ সচেতন এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুমতি দেয়। এই প্রসঙ্গে, আরও দু'জন শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে: কেট ডারবিন এবং টিফানি ট্রেন্ডা। প্রতিনজরদারি, যা বিপরীত নজরদারি নামেও পরিচিত, ডিজিটাল বিশ্বে একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পায়। সেখানে সাধারণ মানুষ অন্যদের পর্যবেক্ষণ করে। জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ সরঞ্জাম এবং স্থান উভয়ের মাধ্যমে, শিল্প সাধারণের মধ্যে বিকশিত হতে পারে, একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের কাছে। শিল্পকে প্রশংসা করার জন্য আড়ম্বরপূর্ণ, জাঁকজমকপূর্ণ, ব্যয়বহুল হতে হবে না এবং এটি বিশেষত বর্তমান সময়ে সত্য। উদাহরণস্বরূপ কেট ডারবিন একজন শিল্পী এবং লেখক যিনি ইনস্টাগ্রামে একটি ভাল জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। সেখানে তিনি পারফর্মেটিভ হওয়ার সময় ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপের সমীক্ষক হতে পারেন। শিল্পী নিজেই তার কাজকে অভিনয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেখানে শিল্প এবং ব্যক্তিগত জীবন ওভারল্যাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি একটি ডেটিং সাইটে পুরুষদের সাথে কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করছেন, তার শ্রোতাদের বিনোদনের জন্য কিন্তু একই সময়ে একটি বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে যা অনেকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক কথোপকথন পোস্ট করা থেকে, তিনি সমাজের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করার সময় মানুষের আচরণ এবং সম্পর্কিত করার ক্ষমতার জন্য তথ্য সংগ্রহ এবং উপস্থাপন করছেন, উদাহরণস্বরূপ গোপনীয়তা। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট জিনিসগুলির মাধ্যমে শ্রোতাদের সাথে একটি সংযোগ রয়েছে যা মানুষের উপর একটি সামাজিক অধ্যয়নের জন্য মাইক্রোকোসম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চ্যালেঞ্জের পথে, পারফরম্যান্স শিল্পী টিফানি ট্রেন্ডার কাজও উল্লেখযোগ্য, যদিও তিনি ব্যক্তিগত স্থান এবং এর অনুপ্রবেশের দিকে আরও বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। প্রক্সিমিটি সিনেমা ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে করা একটি কাজ যেখানে শিল্পী প্রযুক্তি এবং এর অবচেতন ব্যবহার অন্বেষণ করতে চান। চল্লিশটি ছোট সেল ফোনের স্ক্রিন লাগানো পুরো বডি স্যুট পরা অবস্থায় তিনি লোকদের তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। 'এগিয়ে যাও', 'এটি নিয়ে চিন্তা করবেন না' এবং 'এটি ঠিক আছে' এর মতো বাক্যাংশগুলি পর্দায় ছিল, যা স্পর্শ করা হলে শিল্পীর দেহের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, শিল্পী ডিভাইসগুলির সাথে আমাদের পরিচিতি পরীক্ষা করে তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের পরিচয় উপস্থাপন করে স্বাভাবিক সামাজিক সীমাবদ্ধতাও ধ্বংস করে। নজরদারি-ভিত্তিক যুগকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পারফরম্যান্স আর্টের একটি উদাহরণ। সেখানে আমরা ব্যবহারকারী হিসাবে আমাদের পরিচয় কতটা উন্মুক্ত তা সম্পর্কে অসচেতন। ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি থেকে গণবিদ্রোহ, শিল্প জনসাধারণের কাছে তার পথ খুঁজে পায়। নজরদারি হোক বা সাসভিল্যান্সের মাধ্যমেই হোক, চারপাশের পরিবেশ অন্বেষণকারী শিল্পী এবং শিল্পীর নিজেকে অন্বেষণের মধ্যে একটি দৃশ্যমান বাইনারি রয়েছে। মজার বিষয় হল, 'প্রতিনজরদারি' শব্দটি স্টেফান সোনভিলা-ওয়েইস নিজেকে বিশ্বের কাছে দেখানোর প্রক্রিয়ায় আত্ম-নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। চিন্তার এই লাইনে, আভি রোজেন একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, 'ডিজিটাল স্কিন ২' প্রকল্পের সাথে যেখানে বিভিন্ন প্রকৃতির ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডিজিটাল লাইফলগিং একত্রিত হয়।  ডিজিটাল ডাইমেনশনে নিজের উপস্থাপনা এবং বাস্তব জগতে উপস্থাপনের মধ্যেও একটি সমান্তরাল রয়েছে। একটি শিল্প ফর্ম হিসাবে নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার মানুষকে বিশ্বের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলি অন্বেষণ করার অনুমতি দিয়েছে। ২০০৮ সালে ক্রিস্টি রবার্টসন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন যা বিভিন্ন শিল্পী এবং তাদের নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের ব্যবহার অন্বেষণ করেছিল। রবার্টসন রাজনৈতিক বিষয়গুলিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নজরদারি / প্রতিনজরদারিকে একটি শৈল্পিক রূপ হিসাবে ব্যবহারের উদাহরণ টেনেছেন। এই শিল্পীদের মধ্যে একজন ছিলেন ওয়াফা বিলালের গার্হস্থ্য উত্তেজনা (২০০৭)। তার পারফরম্যান্সের মধ্যে নজরদারি মূল বিষয় ছিল না তবে নজরদারি যে শক্তি সম্পর্ক তৈরি করে তা উন্মোচন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ধারণাগুলি চিত্রিত করতে বিলালের অভিনয় সবচেয়ে কার্যকর ছিল। ২০০৭ সালে ইরাকি-আমেরিকান শিল্পী বিলাল নিজেকে ভিডিও ক্যামেরায় ভরা একটি স্টুডিওতে আটকে রেখেছিলেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে সরাসরি প্রবাহিত হয়েছিল, যাদের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত পেইন্টবল বন্দুক দিয়ে বিলালকে গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য তার মূল উদ্দেশ্য ছিল গৃহযুদ্ধে ভুগতে থাকা ইরাকি জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে তুলে ধরা। তিনি "অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংলাপকে উস্কে দেওয়ার" উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট এবং ভয়েরিজমকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন (বিলাল, ২০০৭)। অতএব, নজরদারিকে একটি শিল্প ফর্ম হিসাবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে কারণ এই ক্ষেত্রের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে শিল্পীদের বৃদ্ধি ঘটেছে। === শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম === শৈল্পিক বক্তৃতা এবং দার্শনিক অন্বেষণের আরেকটি দিক ছিল অনিশ্চয়তার পুনঃপ্রতিষ্ঠাবাদ। প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে তাদের মধ্যে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এরপর সেগুলো এলোমেলো করে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়। সত্যি বলতে কিনা জানি না অথবা ক্যামেরা না পরা অনিশ্চয়তার নীতিকে শৈল্পিক চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদুপরি, উদাহরণস্বরূপ, সাবওয়েতে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার জন্য নিউইয়র্কের প্রস্তাবিত তদন্ত হিসাবে ভূগর্ভস্থ প্রতিনজরদারি বিবেচনা করুন। পাতাল রেলের ফটোগ্রাফগুলির একটি প্রদর্শনী হ'ল অনুসরণ করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। '''শ্রোডিঙ্গারের ক্যাম নিয়ে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা: দ্য মেবিক্যামেরা''' প্রচুর সংখ্যক ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম শার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তবে কেবল কয়েকটিতে ক্যামেরা ছিল। এগুলি এলোমেলো করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি পরিধানকারী জানতে না পারে যে তাদের ক্যামেরা রয়েছে কিনা। অনেকগুলি সম্ভাব্য ক্যামেরাগুলির মধ্যে একটির ক্লোজ আপ ছবি যা একটি বিচ্যুতি, বিপরীতমুখী / পুনঃ-ইকশনিজম এবং নজরদারির সাধারণ ভাষা (পাঠ্য) এর ডিকনস্ট্রাকশন দেখায়। অনেক লোক এই জুয়া (উদাঃ ক্যাসিনো, নায়াগ্রা ইত্যাদি) কোনও ঘটনা ছাড়াই পরেছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে সম্ভবত রক্ষীরা শার্ট পড়ে না। পরিধানকারীরা জানেন না যে কোন শার্টে পরিধানযোগ্য ওয়্যারলেস ওয়েব ক্যামেরা রয়েছে এবং কোন শার্টে নেই। লেখকের '''মেবিক্যামেরা''' ডিজাইন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ এস প্যান্টাগিস নিউইয়র্কের কবিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য এর মধ্যে ২৫ টির প্রাথমিক ব্যাচ তৈরি করেছিলেন, তারপরে আরও বড় উত্পাদন চালানো হয়েছিল। যেমনটি দেখা গেছে নিউইয়র্কের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সিকিউরিটি ক্যামেরায়। নিরাপত্তা ক্যামেরা দ্বারা দেখা ক্লোজআপ ভিউ। সুভিল্যান্স এবং শিল্প? হ্যাঁ, এটি একটি সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান সম্পর্ক। সেখানে শিল্পীরা নজরদারিকে চ্যালেঞ্জ জানায় যখন শিল্পকে যেভাবে উপস্থাপন করা যায় তা পুনর্বিবেচনা করে। যদিও কিছু নিবন্ধ (যেমন অভিভাবকের জন্য জোনাথন জোন্সের "ডিজিটাল যুগ কি শিল্পকে মেরে ফেলবে?") ডিজিটাল বিশ্বে শিল্পের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দেহ উত্থাপন করে, তবে এটি অনস্বীকার্য যে কীভাবে বিশ্বের মধ্যে সহজ সংযোগগুলি উভয় লিঙ্গের বিকাশ এবং প্রকাশের অনুমতি দেয়। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে শক্তিশালী পুরুষালী উপস্থিতি শিল্পের অনলাইন উত্থানে কম কার্যকর প্রভাব ফেলে। সেখানে নারীর একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর থাকতে পারে, সমতার পরিবেশে যা শারীরিক বিশ্বে নিজেই অনুবাদ করা যেতে পারে, যেমন বৈদ্যুতিন শিল্পের উপর আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের মতো ঘটনা দ্বারা দেখানো হয়েছে। = নজরদারি এবং প্রতিনজরদারি আইন সম্পর্কে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া = ''নজরদারি আইন এবং প্রতিনজরদারি'' সম্পর্কে দুটি বিপরীত জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ নজরদারিকে তাদের গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে এবং সরকারের সিদ্ধান্তগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য নজরদারি করা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যরা মনে করেন যে অপরাধীদের প্রতিরোধ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়। তবে বেশিরভাগ নাগরিক সম্মত হন যে আইন বিভাগগুলির সাধারণ নজরদারি গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ না তাদের বিস্তারিত দৈনন্দিন জীবন দিনরাত নজরদারির আওতায় না থাকে। আমাদের কাছে একটি ক্যামেরা স্ট্র্যাপ করা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় যার ফলে আমরা প্রতিনজরদারিকারী হয়ে উঠি, তবুও ক্যামেরা এখনও সেই সময়ের মধ্যে আমাদের মুখোমুখি হওয়া প্রত্যেককে ক্যাপচার করছে। এর ফলে কি আমরা সার্ভিলারে পরিণত হব না? এরপরে এটি পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে যে সার্ভেইলার হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করার ফলে লোকেরা আপনার প্রতি ভিন্নভাবে আচরণ করতে পারে। নজরদারির মুখোমুখি হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে পরিধেয় ডিভাইসের মতো স্যুসভিল্যান্সের ফর্মগুলির তদন্তে একটি উত্সাহ উঠেছে। মান, নোলান এবং ওয়েলম্যান (২০০৩) নজরদারি কৌশলগুলিকে 'প্রহরী দেখার' ফলাফলের সাথে প্রতিনজরদারিে রূপান্তর করার জন্য আশেপাশের (নজরদারিকৃত) পরিবেশের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সাথে জড়িত গবেষণা চালিয়েছিলেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেকগুলি কারণ (প্রযুক্তির ধরণ, অবস্থান এবং প্রযুক্তির উপস্থাপনা / উপস্থাপনা সহ) অংশগ্রহণকারীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল যা তাদের ক্ষমতায়িত বা দুর্বল বোধ করে। তদন্তে দেখা গেছে যে লোকেরা যখন রেকর্ডিং করা ডিভাইস এবং রেকর্ড করা ফুটেজ উভয়ই দেখতে পেত তখন তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রেকর্ডিংয়ের এই ফর্মটি তখন 'কোভেইল্যান্স' নামে পরিচিত একটি নতুন শব্দ তৈরি করে। কোভিল্যান্স নজরদারি বা প্রতিনজরদারি নয় বরং এটি তৈরি হয় যখন লোকেরা একই সাথে ক্যামেরা এবং ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে পায়। সংক্ষেপে, কোভিল্যান্স = লোকেরা ভয়েরিজম সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে সচেতন হচ্ছে। এই তদন্ত থেকে আরেকটি আকর্ষণীয় অনুসন্ধান হ'ল কর্তৃপক্ষ (সুরক্ষা প্রহরী) আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে যখন প্রতিনজরদারিকারী ব্যাখ্যা করবে যে ডিভাইসের উপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। বিপরীতে, যখন এটি স্পষ্ট ছিল যে প্রতিনজরদারিকারীের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কর্তৃপক্ষ আরও সংঘাতময় হবে। ডেভিড বলিয়ার (২০১৩)[১২] সুরক্ষা থেকে এই প্রতিক্রিয়াটির সম্ভাব্য ব্যাখ্যা সরবরাহ করে। এর জন্য প্রথম সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে শপিং মলগুলির ধারণার কারণে হতে পারে যে অপরাধীদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল আবিষ্কার করার ক্ষমতা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে যা সম্ভাব্য ডাকাতির কারণ হতে পারে। অধিকন্তু, খুচরা বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে বিক্রয় মূল্য এবং খুচরা প্রদর্শনের তুলনা করার জন্য দোকানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার কারণে কিছু দোকান ফটোগ্রাফির অনুমতি দেয় না। আরেকটি ব্যাখ্যা এই ধারণার কারণে হতে পারে যে সসভিলেস নজরদারির শক্তি সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ জানায় কারণ এটি মানুষের মধ্যে সমতার বোধ পুনরুদ্ধার করে। অধিকন্তু, এটি বোঝাতে পারে যে প্রতিনজরদারি নজরদারির খেলার ক্ষেত্রকে স্তর দেয় কারণ এটি আর ক্ষমতায় নেই। উইলিয়াম গিবসন পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি সবাই প্রতিনজরদারিকারী হয়ে যায় তবে নজরদারি শেষ পর্যন্ত হ্রাস পাবে কারণ এটি আর কোনও উদ্দেশ্য পূরণ করবে না। নজরদারি এবং সাসভিল্যান্সের প্রভাবগুলি প্রায়শই মুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং গণতান্ত্রিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যাইহোক, যখন বিশ্লেষণাত্মকভাবে দীর্ঘমেয়াদী ম্যাক্রো সমাজতাত্ত্বিক প্রভাবগুলির দিকে অগ্রসর হয়, তখন দৃষ্টিভঙ্গিটি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। নাগরিকদের উপর সরকারগুলির নজরদারির সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, প্রধানত সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থায় চিত্রিত, ইতিহাস জুড়ে ভয়ের অনুভূতির ফলস্বরূপ। জেরেমি বেন্থামের (১৮৩৮) 'প্যানোপটিকন' এবং একটি সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবেচনা যেখানে পর্যবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ মানুষকে এই সত্য সম্পর্কে সচেতন করেছিল যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যদিও তারা জানত না। ১৯৮০ এর দশকের লেখায় মিশেল ফুকোর মতে, এই প্রভাবটি পাওয়া গেছে যে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে (যেমন একটি কারাগার) প্যানোপটিকনের প্রতীকী এবং ব্যবহারিক উভয় ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এই ভয়ের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে চিন্তাভাবনা এবং কাজ করতে প্রভাবিত করতে পারে যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। এভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্যানোপটিকন শিল্প বিপ্লবের অংশ ছিল যা শিল্প পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ করেছিল যেখানে মালিক এবং ক্ষমতায় থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা জনসাধারণের জায়গাগুলি কেবল কারাগার এবং কারখানাগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। == পপ সংস্কৃতিতে নজরদারি == পপ সংস্কৃতি আমাদের সমাজের উপর নজরদারির যে বিস্তৃত উপলব্ধি রয়েছে তা গ্রহণ করেছে। বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি বই, টিভি শো, চলচ্চিত্র এবং এমনকি ভিডিও গেমস রয়েছে যা এখন সুরক্ষা এবং নজরদারির ভূমিকা গ্রহণ করেছে। জর্জ অরওয়েলের ''নাইনটিন এইটি-ফোর'' এমন একটি বই যা একটি সর্বব্যাপী সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের অধীনে জীবনযাপন করে এবং সম্ভবত পপ সংস্কৃতিতে নজরদারির সবচেয়ে বিশিষ্ট উদাহরণ। বইটি একটি "বিগ ব্রাদার" প্রোগ্রাম অনুসরণ করে যা উপন্যাসের চরিত্রগুলির ওভার ভিউয়ার হিসাবে কাজ করে, এটি সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহারকে ভারীভাবে চিত্রিত করে। ২৭ মে ২০১৪ এ, ইউবিসফট স্টুডিওগুলি তাদের গেমটি প্রকাশ করেছে ''ওয়াচডগস'' যা আইডান পিয়ার্সকে কেন্দ্র করে একজন বড় চোর হ্যাকার এবং স্ব-নিযুক্ত ভিজিল্যান্ট শহরব্যাপী গণ নজরদারি এবং অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হ্যাক করতে সক্ষম হন। যাতে করে যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য এবং সংস্থান সংগ্রহ করতে পারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এড়াতে, অপরাধ ঘটার আগে বা হওয়ার আগে বন্ধ করতে, প্রয়োজনে নিজে অপরাধ করা, এবং তার সুবিধার্থে অবকাঠামোর বিভিন্ন বস্তু এবং কার্যকারিতা ম্যানিপুলেট করা। গেমটি আপনাকে বেশ কয়েকটি বড় সুপরিচিত সিস্টেমে হ্যাক করেছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থাগুলি এবং রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অর্থ চুরি করতে সাইবার সন্ত্রাসীদের সাথে কাজ করেছে। গেমটিতে মানুষের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছিল। = প্রতিনজরদারিকারী হওয়া = গবেষণাটি চালানোর সময় প্রতিনজরদারিকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তারা কেমন অনুভব করেছিল তখন একটি চিন্তা-উদ্দীপক আবিষ্কারও ছিল। অংশগ্রহণকারীরা যারা সাসভিল্যান্স পরিবেশন করেছিলেন তারা অনুভব করেছিলেন যে এটি তাদের ক্ষমতায়িত করেছে। রেকর্ডিং করার সময় মানুষের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আবেগ ছিল তবে প্রতিনজরদারিকারী অনুভব করেছিলেন যে এটি মানুষকে দেখানোর জন্য উদ্দীপক ছিল যে (নজরদারি সম্পর্কিত) অনেক কিছু চলছে যা আমরা জানি না। একজন অংশগ্রহণকারী একটি আকর্ষণীয় পয়েন্ট সরবরাহ করেছেন যা পরামর্শ দেয় যে নজরদারি এমন একটি খেলা যেখানে আমরা অংশ অনুভব করি তবে আসলে নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে আমরা এর অন্য দিকে রয়েছি। অন্যদিকে, এটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে সাসভিল্যান্স আরও খাঁটি কারণ রেকর্ড করা প্রত্যেককে এটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়। অতএব, এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে আমরা সকলেই সুভিল্যান্সের কাজের অংশ হয়ে উঠি কারণ এটি লুকানো নয়। যাইহোক, এই ধারণাটি প্রশ্ন করা যেতে পারে যখন লোকেরা লুকানো ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা শুরু করে। গোপনে রেকর্ড করার কাজটি তখন সাসভিল্যান্সের ধারণাটিকে জটিল করে তুলতে পারে। তাহলে কি তা আবার নজরদারিতে পরিণত হয়? এই জটিল ধারণাগুলি এবং নজরদারি এবং সুভিল্যান্সের ক্রমাগত আন্তঃসংযোগ এই ক্ষেত্রে চলমান গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। = তথ্যসূত্র = 30fx2y72lq3t7n5ymys7ua64e7x9xsn ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অব্যবহারে সংবেদী প্রক্রিয়াকরণের পরিবর্তন 0 23955 84928 75888 2025-06-19T11:01:41Z Mehedi Abedin 7113 84928 wikitext text/x-wiki ==নিউরোপ্লাস্টিসিটি== মস্তিষ্কের কার্যকরী এবং কাঠামোগত সংগঠন প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কেও পরিবর্তিত হতে পারে এই ধারণা কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান। রমন ই কাজল ১৯২৮ সালে বলেছিলেন যে ক্ষতের পরে নিউরনগুলি পুনরায় উৎপাদন করতে পারে (স্ট্যানিশ এবং নিটশ, ২০০২)। কিন্তু গত দুই বা তিন দশকে এটি প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে যে কী পরিবর্তন ঘটে এবং কীভাবে ঘটে। মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলোকে মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বা নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলা হয়। নিউরোপ্লাস্টিসিটিকে কার্যকরী বা কাঠামোগত প্লাস্টিসিটিতে ভাগ করা যায়। যদিও মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা অবশ্যই সংযুক্ত, তবুও এই দুটি ধারণার মধ্যে পার্থক্য করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো ভিন্নভাবে পরিমাপ করা হয় এবং স্বাধীনভাবে ঘটতে পারে (বুওনোমানো এবং মারজেনিচ, ১৯৯৮)। ===কাঠামোগত নিউরোপ্লাস্টিসিটি=== [[File:Gray matter axonal connectivity.jpg|thumb|মস্তিষ্কের টিস্যু যেখানে নার্ভ বডি থাকে তা ধূসর দেখায়, আর অ্যাক্সোনাল ফাইবারের ট্র্যাক্ট সাদা দেখায়। এটি ধূসর এবং সাদা পদার্থের পার্থক্যের ভিত্তি।]] কাঠামোগত নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলতে মস্তিষ্কের টিস্যুর পরিবর্তন বোঝায়। এগুলো মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ বা সাদা পদার্থের পরিবর্তন হতে পারে। ধূসর পদার্থের পরিবর্তন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘনত্ব বা আয়তনের পরিবর্তন। আরো সুনির্দিষ্টভাবে, অভিজ্ঞতার কারণে প্রায়শই পুরুত্বের পরিবর্তন দেখা যায়, যেখানে একটি অঞ্চলের ক্ষেত্রফল অপরিবর্তিত থাকে। ক্ষেত্রফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিনগতভাবে নির্ধারিত বলে মনে হয়। যদিও মস্তিষ্কের সব অঞ্চল ধূসর পদার্থের ঘনত্বের একই হেরিটেবিলিটি দেখায় না। মানুষের মধ্যে ফ্রন্টাল এবং পেরিসিলভিয়ান অংশে ধূসর পদার্থের ঘনত্বের হেরিটেবিলিটি মস্তিষ্কের বাকি অংশের তুলনায় কম থাকে (থম্পসন এট আল., ২০০১)। [[File:Mapping-Human-Whole-Brain-Structural-Networks-with-Diffusion-MRI-pone.0000597.s005.ogv|300px|thumb|মস্তিষ্কের ডিফিউশন এমআরআই স্ক্যানের উদাহরণ (হ্যাগম্যান পি., ২০০৭)]] ধূসর পদার্থের ঘনত্ব, আয়তন, ক্ষেত্রফল এবং পুরুত্ব জীবিত মানুষের মস্তিষ্কে প্রায়শই ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) দ্বারা পরিমাপ করা হয়। সাদা পদার্থের পরিবর্তনও আয়তনের পরিবর্তন হতে পারে, তবে প্রায়শই সাদা পদার্থের অখণ্ডতার পরিবর্তন হয়, যেমন ফাইবার সংগঠন, মায়েলিনাইজেশনের মাত্রা বা অ্যাক্সোনাল প্রস্থের পরিবর্তন (জ্যাটোরে এট আল., ২০১২)। সাদা পদার্থের অখণ্ডতা ডিফিউশন টেনসর দ্বারা নির্ধারিত বলে মনে করা হয়, যা জীবিত টিস্যুতে ডিফিউশন টেনসর ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা সংক্ষেপে ডিফিউশন টেনসর ইমেজিং (ডিটিআই) নামক পদ্ধতি দ্বারা পরিমাপ করা হয়। এটি এমআরআই মেশিনে ব্যবহৃত পরিমাপ প্রোটোকলগুলোর একটি (জোন্স, ২০০৮)। ===কার্যকরী নিউরোপ্লাস্টিসিটি=== কার্যকরী নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলতে অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের পর মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোর কার্যকারিতার পরিবর্তন বা সক্রিয়করণ প্যাটার্নের পরিবর্তন বোঝায়। মস্তিষ্কের একটি অঞ্চল তার আকার পরিবর্তন না করে কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে। একইভাবে, মস্তিষ্কের টিস্যুর গঠনে পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই সক্রিয়করণ প্যাটার্ন পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তিত সক্রিয়করণ প্যাটার্নের অর্থ হতে পারে যে প্রশিক্ষণের পর কিছু অঞ্চল বেশি সক্রিয় এবং অন্যান্য অঞ্চল কম সক্রিয় হয়। কম সক্রিয়করণের অর্থ কম কার্যক্ষমতা নয়। একটি অঞ্চলের কম সক্রিয়করণ হতে পারে কারণ অন্য কোনো বিশেষায়িত অঞ্চল দায়িত্ব নিচ্ছে, বা কম সক্রিয় অঞ্চলটি প্রশিক্ষণের পর আরো কার্যকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু একইভাবে, বেশি সক্রিয়করণ প্রায়শই প্রশিক্ষণের পর উচ্চতর দক্ষতার কারণে বলে মনে করা হয় (জাঙ্কে, ২০১৩)। [[File:1206 FMRI.jpg|left|thumb|এটি একটি সাধারণ এফএমআরআই চিত্র। রঙে প্রদর্শিত সমস্ত ভক্সেল (পিক্সেলের থ্রিডি সমতুল্য) যা গ্রাউন্ড স্টেট থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। রঙিন অঞ্চলগুলি তাই গ্রাউন্ড স্টেটের তুলনায় বেশি সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।]] মানুষের মস্তিষ্কে সক্রিয়করণ পরিমাপের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হল ব্লাড-অক্সিজেন-লেভেল ডিপেন্ডেন্ট (বোল্ড) কনট্রাস্ট ইমেজিং, যা ফাংশনাল এমআরআইতে (এফএমআরআই) ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি এবং এটি অক্সিজেনযুক্ত এবং ডিঅক্সিজেনযুক্ত হিমোগ্লোবিনের সম্পর্ক পরিমাপ করে যা থেকে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ অনুমান করা যায় (আর্থারস এবং বোনিফেস, ২০০২)। প্রাণীদের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক কিন্তু অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন খোলা মাথার খুলিতে মাইক্রোইলেক্ট্রোড দিয়ে একক-কোষ রেকর্ডিং। ==ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে পরিবর্তন== পরিপক্কতার সময় কিছু মস্তিষ্কের কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। “গুরুত্বপূর্ণ সময়ে” মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট পূর্বনির্ধারিত উদ্দীপনার প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়। যদি স্নায়ুতন্ত্র এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উপযুক্ত উদ্দীপনা না পায়, তবে এই উদ্দীপনাগুলো প্রক্রিয়াকরণের কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হবে না। পরবর্তী জীবনে এই কার্যকারিতা বিকাশ করা কঠিন বা এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়ে (পারভস, ২০০৮)। মানুষের মধ্যে বক্তৃতা অর্জন সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত ঘটনা যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। আরেকটি উদাহরণ হল জন্মের পরপরই হাঁসের মায়ের উপর ছাপ ফেলা। ভিজ্যুয়াল সিস্টেমও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। বিড়ালদের জন্য এই সময়টি প্রায় চার সপ্তাহ বয়সে মাত্র কয়েক দিন। বানরদের ক্ষেত্রেও একই, তবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ===দৃষ্টি বঞ্চনা=== গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দৃষ্টি ইনপুটের বঞ্চনা ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে নিউরোনাল সংযোগের পরিবর্তন ঘটায় (পারভস, ২০০৮)। একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চনার পর ওকুলার ডমিনেন্স কলামের ভারসাম্যহীন বিকাশের মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলো চিত্রিত করা যায়। ওকুলার ডমিনেন্স কলামগুলো একটি চোখ বা অন্য চোখ থেকে ইনপুটের প্রতি পছন্দ করে সাড়া দেয়। এগুলো V1-এ একটি ডোরাকাটা প্যাটার্নে অবস্থিত এবং কর্টিকাল লেয়ার ৪-এ সবচেয়ে বিশিষ্ট, তবে অন্যান্য স্তরেও উপস্থিত। ডোরাগুলোর প্রস্থ প্রায় ০.৫ মিমি। একটি চোখে তেজস্ক্রিয় অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রেসার ইনজেক্ট করে কলামগুলো দৃশ্যমান করা যায়, যা পরে লেয়ার ৪-এ পরিবহন করা হয়। বিড়ালছানাদের উপর পরীক্ষায়, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে (জন্মের প্রথম তিন মাস) তাদের একটি চোখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তবে দৃষ্টি উদ্দীপনা পাওয়া চোখের কলামগুলো বঞ্চিত চোখের অঞ্চল দখল করে নেয়। ফলে, উদ্দীপিত চোখের ডোরাগুলো প্রশস্ত হয়, বঞ্চিত চোখের খরচে (হুবেল এবং উইজেল, ১৯৬২)। এটি ইঙ্গিত করে যে দুই চোখের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মিথস্ক্রিয়া বিদ্যমান, যা প্রাপ্ত দৃষ্টি উদ্দীপনার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। [[File:Mouse and human visual systems.jpg|thumb|362x362px|এখানে, মানুষের (ডানে) এবং ইঁদুরের (বামে) দৃষ্টি পথ দেখানো হয়েছে। মানুষের মধ্যে বাম এবং ডান চোখের তথ্য পৃথকভাবে প্রক্রিয়া করা হয় যতক্ষণ না তারা প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স (V1) এ পৌঁছায়। সেখানে তারা ওকুলার ডমিনেন্স কলামে প্রতিনিধিত্ব করা হয়। যদি বিকাশের সময় একটি চোখ বন্ধ থাকে, তবে সুস্থ চোখের ডমিনেন্স কলামগুলো প্রশস্ত হয়, আর বন্ধ চোখের কলামগুলো সঙ্কুচিত হয়।]] যখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দুটি চোখই বন্ধ করা হয়েছিল, তখন ওকুলার ডমিনেন্স কলামে দুই চোখের প্রতিনিধিত্ব ভারসাম্যপূর্ণ ছিল এবং দুই চোখেই দৃষ্টি বজায় ছিল। ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের এক-চতুর্থাংশ নিউরন প্রধানত একটি চোখ দ্বারা উদ্দীপিত হয়। যখন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তখন সাধারণভাবে কার্যকর চোখ দখল করে নেয়। তবুও, পরীক্ষাগুলো প্রকাশ করেছে যে বন্ধ চোখের রেটিনা বা জেনিকুলেট লেয়ারের আরো পেরিফেরাল কোষগুলো এখনো স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই চোখের প্রতিযোগিতামূলক মিথস্ক্রিয়ার নীতিটি ছোট বাচ্চাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি বহন করে: সুস্থ বিকাশের জন্য দুই চোখের ভারসাম্যপূর্ণ উদ্দীপনা প্রয়োজন। জন্মগত ত্রুটি বা চোখের আঘাতের কারণে দুই চোখের ইনপুট ভারসাম্যহীন হতে পারে। যদি এই ভারসাম্যহীনতা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে সারানো না হয়, তবে এটি “অ্যাম্বলিওপিয়া” নামক স্থায়ী দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে দ্বিচক্ষু সংযোজন দুর্বল হয়, গভীরতা উপলব্ধি হ্রাস পায় এবং তীক্ষ্ণতা কমে যায় (পারভস, ২০০৮)। স্ট্র্যাবিসমাস, যাকে কখনো কখনো “অলস চোখ” বলা হয়, একটি চোখের অস্বাভাবিক কার্যকারিতা এবং এটি অ্যাম্বলিওপিয়ার কারণ হতে পারে। একটি অতিরিক্ত চোখের পেশীর ত্রুটি দুটি চোখকে সারিবদ্ধ করতে এবং একটি বস্তুর উপর ফোকাস করতে অক্ষম করতে পারে। স্ট্র্যাবিসমাস “ইসোট্রপিয়া” হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে, যেখানে চোখের দৃষ্টি ক্রস করে, বা “এক্সোট্রপিয়া” হিসেবে, যেখানে দৃষ্টি বিচ্যুত হয়। ফলে ডবল ভিশনের কারণে একটি চোখের তথ্য দমন করা হয়। এটি উপরে বর্ণিত একটি চোখের বঞ্চনার সাথে তুলনীয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত চোখের পেশীতে তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। আরেকটি রোগ যা একটি বা দুটি চোখে দৃষ্টি বঞ্চনার কারণ হতে পারে তা হল “ক্যাটারাক্ট”, চোখের লেন্স বা কর্নিয়ার ঝাপসা হওয়া। এই ঝাপসা ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণ (অনকোসেরকিয়াসিস) দ্বারা হতে পারে, যা প্রায়শই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঘটে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, এই রোগটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রায়শই চিকিৎসা না করা থেকে যায়, এবং পরবর্তীতে দৃষ্টি পুনরুদ্ধার দ্বিচক্ষু দৃষ্টি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ===দৃষ্টি সিস্টেমের পুনর্জন্মের সম্ভাবনা=== ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্ক পরিপক্ক মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক বেশি প্লাস্টিক। এটি বিশেষ করে মোটর- এবং সোমাটোসেন্সরি এলাকার জন্য সত্য, এবং কিছুটা হলেও ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের জন্য। এই প্লাস্টিসিটির মধ্যে শুধু উপরে উল্লিখিত পরিবর্তনগুলোই নয়, মস্তিষ্কের ক্ষতির পর কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাও অন্তর্ভুক্ত। তবে, প্লাস্টিসিটির ক্ষমতা ক্ষতির অবস্থান এবং প্রকারের উপর নির্ভর করে, যা নিচে আলোচনা করা হয়েছে। দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য, আমরা সচেতন এবং অচেতন দৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। সম্পূর্ণ সচেতন দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য রেটিনা এবং প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের মধ্যে একটি কার্যকর পথ প্রয়োজন (ফেলম্যান এবং ভ্যান এসেন, ১৯৯১)। প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছুটা অচেতন দৃষ্টি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। অচেতন দৃষ্টির মধ্যে গতি, আকৃতি এবং রঙের প্রতি সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্ত। প্রমাণ রয়েছে যে শৈশবে ক্ষতি ঘটলে অচেতন দৃষ্টি আরো ভালোভাবে বিকশিত হতে পারে (মার্কুরি এট আল., ২০০৩)। তবুও, জন্ম থেকে দৃষ্টি বঞ্চিত হলে এমনকি ছোট বাচ্চাদের জন্যও দৃষ্টি পুনরুদ্ধার করা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। পবন সিনহা, একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং এমআইটি, ক্যামব্রিজে দৃষ্টি এবং কম্পিউটেশনাল নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক, প্রকাশ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ভারতে ক্যাটারাক্ট এবং কর্নিয়াল অস্বচ্ছতায় আক্রান্ত শিশুদের খুঁজে বের করা এবং চিকিৎসা করা। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিমধ্যে ৪০,০০০ শিশু স্ক্রিন করা হয়েছে এবং ৪০০ জনের বেশি শিশুকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে (সিনহা ইট আল., ২০১৩)। এই প্রকল্প থেকে মানুষের দৃষ্টি সিস্টেমের বিকাশ সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি উদ্ভূত হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরপরই এবং দৃষ্টি শুরু হওয়ার পর জন্মগতভাবে অন্ধ শিশুরা হাত দিয়ে স্পর্শ করা বস্তুকে দৃশ্যত চিনতে পারেনি। তাই লেখকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে স্পর্শ এবং দৃষ্টির মধ্যে কোনো সহজাত সংযোগ নেই, আমরা যা দেখি তা যা স্পর্শ করি তার সাথে সম্পর্কিত করতে প্রথমে শিখতে হয়। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর শিশুরা ইতিমধ্যে দেখা এবং স্পর্শ করা বস্তুগুলোর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। শুধু দেখা বস্তুকে স্পর্শ করা বস্তুর সাথে সম্পর্কিত করা নয়, দৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপরই বস্তু চিনতেও খুব দুর্বল, বিশেষ করে যখন বস্তুগুলো স্থির থাকে এবং ওভারল্যাপ করে। গতি বিভিন্ন বস্তুকে পৃথক করতে সহায়ক বলে মনে হয়। স্পষ্টতই জন্মগত অন্ধত্বের পর দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও বজায় থাকে। অস্ট্রোভস্কি ইট আল. (২০০৯) একজন ২৯ বছর বয়সী পুরুষ রোগীর কথা উল্লেখ করেছেন যিনি রিফ্র্যাক্টরি সংশোধনের মাধ্যমে আংশিকভাবে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। এক মাস পর তিনি ইতিমধ্যে স্থির, ওভারল্যাপিং বস্তুগুলো আলাদা করতে পারেন। যদিও এগুলো চিত্তাকর্ষক ফলাফল, তবুও এটা স্পষ্ট নয় যে এই শিশুদের কতটা সত্যিই জন্মগতভাবে অন্ধ হিসেবে বিবেচনা করা যায়, কারণ তাদের অনেকেই সম্পূর্ণ অন্ধ নয় এবং বেশিরভাগই জন্মের সময় অন্ধ ছিল না, বরং শৈশবে দৃষ্টি হারিয়েছে। সুস্থ, দৃষ্টিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদেরও দৃষ্টি সিস্টেমে অভিযোজন এবং প্লাস্টিসিটির ক্ষমতা রয়েছে। ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। তাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল। একটি গ্রুপকে জাগলিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, অন্য গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। গবেষণায় নিয়োগের সময় সব সাবজেক্টই জাগলিংয়ে অনভিজ্ঞ ছিল। জাগলার গ্রুপের সাবজেক্টদের তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল তিনটি বল দিয়ে জাগলিং শিখতে। তারা দক্ষ পারফর্মার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল যখন তারা কমপক্ষে ৬০ সেকেন্ড ধরে জাগলিং চালিয়ে যেতে পারত। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে, দক্ষ পারফর্মার হওয়ার সময় এবং শেষ প্রশিক্ষণ সেশনের তিন মাস পর এমআরআই ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছিল। প্রশিক্ষণের আগে দুটি গ্রুপের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। জাগলার গ্রুপে V5/MT দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং বাম পোস্টেরিয়র ইন্ট্রাপ্যারিয়েটাল সালকাস (আইপিএস) এ ধূসর পদার্থের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ দেখানো হয়েছিল। প্রশিক্ষণের তিন মাস পর ধূসর পদার্থ V5 এবং আইপিএস এ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল কিন্তু প্রশিক্ষণ পূর্বের স্ক্যানের তুলনায় এখনো উচ্চতর ছিল (ড্রাগানস্কি ইট আল., ২০০৪)। ===ক্রস-মোডাল প্লাস্টিসিটি=== [[File:Transcranial magnetic stimulation.jpg|300px|thumb|ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন হল মাথার নিরোধক টিস্যু জুড়ে এবং মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক শক্তি পৌঁছানোর একটি অ-আক্রমণাত্মক উপায়। একটি শক্তিশালী এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈদ্যুতিক প্রবাহ মাথার কাছে প্রয়োগ করা তারের কয়েলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। চৌম্বক ক্ষেত্র, যা কয়েলের সমতলের সাথে লম্বভাবে অভিমুখী, মাথার ত্বক এবং মাথার খুলি দিয়ে প্রায় বাধাহীনভাবে যায়। মস্তিষ্কে, চৌম্বক ক্ষেত্র প্রবর্তিত বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে প্রবাহ সৃষ্টি করে যা কয়েলের সমতলের সমান্তরাল। এই প্রবাহগুলো প্রবর্তিত ক্ষেত্রের সমতলে অবস্থিত নিউরাল প্রক্রিয়াগুলোকে উত্তেজিত করতে সক্ষম, যা প্রায় সরাসরি কর্টিকাল স্টিমুলেশনের সাথে ইলেক্ট্রোডের অনুরূপ।]] ক্রস-মোডাল প্লাস্টিসিটি হল প্রাথমিক সংবেদী ইনপুটের বঞ্চনার পর একটি সংবেদী ইনপুটের প্রতি নিউরোনাল প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন। একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হল ইঁদুরের হুইস্কার ব্যবহার। হুইস্কারগুলো এই প্রাণীদেরকে অন্ধকারে স্থান নির্ধারণে সহায়তা করে। যদি শৈশবে দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তবে দেখা যায় যে হুইস্কারগুলো লম্বা হয়, যা অন্ধ ইঁদুরের স্থান নির্ধারণকে উন্নত করবে বলে মনে করা হয় (রাউসচেকার ইট আল., ১৯৯২)। দৃষ্টি বঞ্চনার পর শ্রবণ এবং স্পর্শ সিস্টেমের মতো পরিপূরক সংবেদী সিস্টেমের একই উন্নতি মানুষের মধ্যে দেখা যায়। সুস্থ এবং অন্ধ বিড়ালদের উপর শব্দ স্থানীয়করণের ক্ষমতার উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই পরীক্ষাগুলো প্রকাশ করেছে যে অন্ধ প্রাণীরা শব্দ স্থানীয়করণে বেশি নির্ভুল ছিল। অন্ধ বিড়ালরা শব্দের উৎস স্থানীয়করণের জন্য একটি সাধারণ উল্লম্ব মাথার গতি করে। এই ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া সাধারণ শব্দ উপলব্ধি এবং স্থানীয়করণ উন্নত করতে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয় (রাউসচেকার, ১৯৯৫)। মানুষের উপর একটি তদন্তে, দৃষ্টিসম্পন্ন এবং অন্ধ ব্যক্তিদের শ্রবণ উদ্দীপনা দেওয়া হয়েছিল। দৃষ্টিসম্পন্ন সাবজেক্টদের অক্সিপিটাল কর্টেক্স শ্রবণ উদ্দীপনার প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, কিন্তু অন্ধ সাবজেক্টদের মধ্যে অক্সিপিটাল কর্টেক্স সক্রিয় ছিল। এই ঘটনাটি আরেকটি তদন্ত দ্বারা নিশ্চিত হয়েছিল, যা অক্সিপিটাল কর্টেক্সে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দমন করতে ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (টিএমএস) ব্যবহার করেছিল। এর ফলে অন্ধদের শব্দ স্থানীয়করণের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল, যেখানে পিচ বা তীব্রতা চিনতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্ধ সাবজেক্টদের মধ্যে স্থানীয়করণের নির্ভুলতা অক্সিপিটাল সক্রিয়করণের মাত্রার সাথে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত ছিল। তবে, এই হস্তক্ষেপ স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন সাবজেক্টদের শ্রবণ উপলব্ধিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি (কলিগনন ইট আল., ২০০৭)। আরেকটি আকর্ষণীয় উদাহরণ হল ইকোলোকেশন। কিছু অন্ধ মানুষ সক্রিয়ভাবে ইকোলোকেশন করতে শিখেছে। তারা তাদের জিহ্বা এবং মুখ দিয়ে ক্লিক শব্দ উৎপন্ন করতে শিখেছে এবং প্রতিফলিত শব্দের ব্যাখ্যা করে, যাতে তারা পরিবেশে দিক নির্ধারণ করতে এবং বিভিন্ন বস্তু থেকে দূরত্ব নির্ধারণ করতে পারে। এই ধরনের ইকোলোকেটিং ক্লিকগুলো সাধারণত সংক্ষিপ্ত (১০ মিলিসেকেন্ড) এবং বর্ণালীগতভাবে বিস্তৃত। প্রারম্ভিক এবং পরবর্তী অন্ধরা ইকোলোকেশনের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। কিন্তু মনে হয় শুধুমাত্র জন্মগত এবং প্রারম্ভিক অন্ধদের মধ্যেই ক্যালকারিন সালকাসের চারপাশে অক্সিপিটাল কর্টেক্সে বিস্তৃত সক্রিয়করণ ঘটে, পরবর্তী অন্ধদের মধ্যে নয় (থ্যালার ইট আল., ২০১১)। আমরা উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত প্লাস্টিসিটি সম্ভব, যদিও ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় রয়েছে। যদি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অক্সিপিটাল কর্টেক্স দৃশ্যত উদ্দীপিত না হয়, তবে ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের কিছু কার্যকারিতা কখনোই বিকশিত হবে না। এবং সম্ভবত ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স এমনকি ইকোলোকেশনের মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন কার্যকারিতার জন্য নিয়োজিত হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ের পর ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স কতটা প্লাস্টিক থাকে, তা এখনো বিতর্কের বিষয়। ==সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে পরিবর্তন== সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে কার্যকরী প্লাস্টিসিটির প্রথম পরীক্ষাগুলোর একটি মারজেনিচ এট আল। (১৯৮৪) প্রাইমেটদের উপর করেছিলেন। প্রথমে তারা প্রাপ্তবয়স্ক ওউল বানরের হাতের অঞ্চলে আঙুলের কর্টিকাল প্রতিনিধিত্ব মাইক্রোইলেক্ট্রোড দিয়ে নির্ধারণ করেছিলেন। তারপর তারা বানরের মধ্যম আঙুল কেটে ফেলেন এবং অ্যাম্পুটেশনের ২-৮ মাস পর হাতের অঞ্চলটি আবার ম্যাপ করেন। তারা দেখতে পান যে মাত্র দুই মাস পর পার্শ্ববর্তী আঙুলের প্রতিনিধিত্ব পূর্বে মধ্যম আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চলে প্রসারিত হয়। ফলে পার্শ্ববর্তী ত্বক কর্টেক্সে একটি বিবর্ধিত প্রতিনিধিত্ব পায়, যখন একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ত্বকের রিসেপটিভ ফিল্ডের আকার সঙ্কুচিত হয়। মনে হয় ত্বকের একই অংশের জন্য আরো নিউরন নিয়োগ করা রিসেপটিভ ফিল্ডের ছোট আকারের পথ প্রশস্ত করে। একইভাবে, যখন ওউল বানরের দুটি আঙুল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছিল, এবং এইভাবে এই দুটি আঙুলের ইনপুট অত্যন্ত সম্পর্কিত ছিল, তখন দুটি আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চলের মধ্যে সীমানা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল (ক্লার্ক ইট আল., ১৯৮৮)। অন্যদিকে, যখন বানরের আঙুলগুলো একটি সূক্ষ্ম এবং আরো জটিল উদ্দীপনার সম্মুখীন হয়েছিল, যেমন একটি ঢেউখেলানো ঘূর্ণায়মান ডিস্ক ব্যবহার করে, ৮০ দিন পর উদ্দীপিত আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চল প্রশস্ত হয়েছিল। সম্ভবত কারণ সূক্ষ্মতর উদ্দীপনার জন্য ছোট রিসেপটিভ ফিল্ড প্রয়োজন, তাই আরো নিউরন নিয়োগ করতে হয়েছিল এবং আঙুলের অঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছিল (জেনকিন্স, মারজেনিচ এবং রেকানজোন, ১৯৯০)। ===ফ্যান্টম লিম্বস=== মানুষের উপর কার্যকরী প্লাস্টিসিটির প্রথম এবং প্রভাবশালী অন্তর্দৃষ্টি রামচন্দ্রন (১৯৯৩) এনেছিলেন। তিনি দেখতে পান যে কিছু রোগী, যাদের উপরের অঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছিল, তাদের ইপ্সিল্যাটারাল মুখে তুলোর কুঁড়ি দিয়ে উদ্দীপনা দেওয়া হলে তারা অনুভব করতেন যে কেউ তাদের অস্তিত্বহীন বাহুতে স্পর্শ করছে। তিনি এমনকি রোগীর গাল এবং চোয়ালে পূর্বের অঙ্গের একটি মানচিত্র আঁকতে সক্ষম হন। অ্যাম্পুটেড অঙ্গের এই প্রতিনিধিত্বের সুনির্দিষ্ট সীমানা ছিল এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল ছিল। যেহেতু সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে মুখের অঞ্চলটি হাতের অঞ্চলের ঠিক পাশে থাকে, তাই সম্ভবত মুখের অঞ্চলটি পূর্বে অ্যাম্পুটেড অঙ্গ থেকে ইনপুট গ্রহণকারী নিউরনগুলো নিয়োগ করছে, ঠিক যেমন ওউল বানরদের পরীক্ষায়। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কিছু নিউরন মুখ থেকে আগত সংবেদী উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেওয়া শুরু করবে যখন তারা এখনো পূর্বের হাতের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে, যার ফলে ইপ্সিল্যাটারাল মুখে অ্যাম্পুটেড অঙ্গের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হয়। এই প্রতিনিধিত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবার অদৃশ্য হয়ে যায় (জাঙ্কে, ২০১৩)। সম্ভবত ফ্যান্টম লিম্ব সংবেদনও এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। কিছু রোগী এমন সংবেদন অনুভব করেন যেন তাদের অ্যাম্পুটেড অঙ্গ এখনো আছে, যাকে “ফ্যান্টম লিম্ব” বলা হয়। কখনো কখনো এই সংবেদন বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে। কিছু রোগী তাদের ফ্যান্টম লিম্বে বেদনাদায়ক অনৈচ্ছিক ক্লেঞ্চিং স্প্যাজম অনুভব করেন (রামচন্দ্রন এবং রজার্স-রামচন্দ্রন, ১৯৯৬)। প্রায়শই যখন ট্রানজিশনাল পিরিয়ড শেষ হয় এবং পূর্বের অঙ্গের নিউরনগুলো মুখের মতো অন্যান্য অঞ্চলে সম্পূর্ণরূপে একত্রিত হয়, তখন ফ্যান্টম লিম্বের সংবেদন অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু কিছু রোগী স্থায়ী ফ্যান্টম লিম্ব সংবেদন ভোগেন। এই ক্ষেত্রে প্রায়শই ব্যবহৃত থেরাপি হল মিরর থেরাপি, যেখানে একটি আয়না রোগীর সামনে উল্লম্বভাবে স্থাপন করা হয় যাতে আয়নায় অক্ষত অঙ্গটি অ্যাম্পুটেড অঙ্গের জায়গায় সুপারইম্পোজড হয়। যদিও মিরর থেরাপি সব রোগীদের সাহায্য করে না (রথগ্যাঞ্জেল ইট আল., ২০১১), কিছু রোগী উপকৃত হন, উদাহরণস্বরূপ, তাদের সুস্থ হাত খোলার মাধ্যমে তারা আয়নায় মানসিকভাবে তাদের ফ্যান্টম হাত খুলতে পারেন, যা ক্লেঞ্চিং স্প্যাজম থেকে মুক্তি দেয়। আয়না ছাড়া তারা ফ্যান্টম হাত শিথিল করতে পারতেন না (রামচন্দ্রন এবং রজার্স-রামচন্দ্রন, ১৯৯৬)। কিন্তু শুধু কার্যকরী নয়, অঙ্গ অ্যাম্পুটেশনের পর কাঠামোগত পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হয়। ড্রাগানস্কি ইট আল. (২০০৬) দেখতে পান যে অঙ্গ অ্যাম্পুটেড রোগীদের থ্যালামিক ভেন্ট্রাল পোস্টেরোল্যাটারাল নিউক্লিয়াসে বয়স-মিলিত সুস্থ নিয়ন্ত্রণের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ধূসর পদার্থ ছিল। তাছাড়া, অ্যাম্পুটেশনের সময়ের সাথে থ্যালামাসে ধূসর পদার্থের ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পর্কিত ছিল (r=.39)। ===প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন=== সংগীতজ্ঞদের উপর প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে। সংগীতজ্ঞরা খুব নিবিড়ভাবে এবং প্রায়শই জীবনব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন, তাই তারা ক্রস-সেকশনাল গবেষণার জন্য আদর্শ সাবজেক্ট। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্রিং বাদকদের সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে বাম হাতের আঙুলের জন্য অ-সংগীতজ্ঞদের তুলনায় বড় অঞ্চল থাকে। এবং একজন সংগীতজ্ঞ যত তাড়াতাড়ি জীবনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন, তার অ-প্রভাবশালী হাতের অঞ্চল তত বড় হয় (এলবার্ট ইট আল., ১৯৯৫)। পিয়ানোবাদকরা একটি ট্যাপিং টাস্কে প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি মোটর এলাকার তুলনায় অ-সংগীতজ্ঞদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম সক্রিয়করণ দেখান। এই ফলাফলের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল যে পিয়ানোবাদকদের নিবিড় এবং দীর্ঘস্থায়ী হাতের দক্ষতা প্রশিক্ষণ মোটর এলাকার দক্ষতা বাড়িয়েছে। ফলে একই কাজে প্রশিক্ষিত সাবজেক্টদের তুলনায় অপ্রশিক্ষিতদের তুলনায় কম নিউরন সক্রিয় হয় (জ্যাঙ্কে ইট আল., ২০০০)। সংগীতজ্ঞরা শ্রবণ কর্টেক্সেরও বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান (পরবর্তী বিভাগে এ সম্পর্কে আরো)। ক্রস-সেকশনাল গবেষণার একটি প্রায়শই উত্থাপিত সমালোচনা হল যে প্রশিক্ষিত মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলের পার্থক্য প্রশিক্ষণের কারণে হয়েছে নাকি তারা একটি নির্দিষ্ট কাজে (যেমন সংগীতজ্ঞ হওয়া) প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ তারা সেই কাজের জন্য বিশেষভাবে সক্ষম ছিল এবং সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলটি প্রশিক্ষণের আগেই আরো কার্যকর বা বড় ছিল তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র লংগিটুডিনাল গবেষণাই এই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারে। একটি লংগিটুডিনাল গবেষণা ১০ জন ডানহাতি রোগীর উপর পরিচালিত হয়েছিল যাদের উপরের ডান অঙ্গে আঘাতের কারণে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য অঙ্গটি স্থির করা প্রয়োজন ছিল। আঘাতের দুই দিনের মধ্যে একটি ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছিল এবং কর্টিকাল পুরুত্ব পরিমাপ করা হয়েছিল। ১৬ দিন স্থিরকরণের পর দ্বিতীয় স্ক্যানে দেখা গেছে যে বাম প্রাথমিক মোটর এলাকা এবং বাম সোমাটোসেন্সরি এলাকায় উল্লেখযোগ্য ধূসর পদার্থ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও কর্টিকোস্পাইনাল ট্র্যাক্টের অখণ্ডতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে (ল্যাঙ্গার ইট আল., ২০১২)। আরেকটি গবেষণায় ১৪ জন ডানহাতি রোগীর প্রভাবশালী হাতে রাইটার্স ক্র্যাম্পের জন্য ৪ সপ্তাহের জন্য স্থির করা হয়েছিল। স্থিরকরণের পর রোগীদের ৮ সপ্তাহ ধরে তাদের প্রভাবশালী হাত পুনরায় প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছিল। এখানেও একটি এমআরআই স্ক্যানে দেখা গেছে যে স্থিরকরণ পর্বের পর কন্ট্রাল্যাটারাল প্রাথমিক মোটর হ্যান্ড এলাকায় ধূসর পদার্থের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। পুনঃপ্রশিক্ষণ এই প্রভাবগুলোকে বিপরীত করেছিল এবং ধূসর পদার্থের ঘনত্ব আবার বৃদ্ধি পেয়েছিল (গ্রেনার্ট ইট আল., ২০১১)। বেজোলা ইট আল. (২০১১) ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী গল্ফ নবীনদের দিকে তাকিয়েছিলেন। এবং ৪০ ঘণ্টা ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণের পর মোটর এবং প্রিমোটর কর্টেক্স বা ইন্ট্রাপ্যারিয়েটাল সালকাসের মতো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে ধূসর পদার্থের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাওয়া গেছে। প্রশিক্ষণের তীব্রতা ধূসর পদার্থ বৃদ্ধির শতাংশের সাথে সম্পর্কিত ছিল। এছাড়াও গল্ফ সুইং মানসিকভাবে পুনরায় করার সময় সক্রিয়করণ প্যাটার্নের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল। প্রশিক্ষণের পর ডরসাল প্রিমোটর কর্টেক্স উল্লেখযোগ্যভাবে কম সক্রিয় ছিল (বেজোলা ইট আল., ২০১২)। ===মস্তিষ্কের ক্ষতির পর পুনর্বাসন=== অবশেষে, মস্তিষ্কের ক্ষতির পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াগুলো বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। পূর্বে বর্ণিত প্লাস্টিসিটি ক্ষমতাগুলো পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কিন্তু প্রধানত দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, যদি ক্ষতি খুব বড় হয় যাতে সম্পূর্ণ কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যায়, তবে এখন পর্যন্ত কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় নেই। দ্বিতীয়ত, আংশিকভাবে সংরক্ষিত কার্যকারিতাগুলো প্রায়শই কন্ট্রাল্যাটারাল সুস্থ অঞ্চল দ্বারা দমন করা হয় যার একই বা অনুরূপ কার্যকারিতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি শরীরের বাম পাশ আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়, তবে সুস্থ বাম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে কারণ ক্ষতিগ্রস্ত ডান গোলার্ধ থেকে বাম গোলার্ধে কোনো বাধা নেই। ফলে সুস্থ গোলার্ধ ক্ষতিগ্রস্ত গোলার্ধকে দমন করবে এবং পুনর্বাসন বাধাগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত পাশে এখনো সুস্থ নিউরনগুলোর পুনঃতারযুক্তকরণ বাধাগ্রস্ত হবে। এটি কাটিয়ে ওঠার একটি উপায় হল পুনর্বাসন প্রশিক্ষণের সময় বা ঠিক আগে টিএমএস বা ট্রান্সক্রানিয়াল ডাইরেক্ট-কারেন্ট স্টিমুলেশন (টিডিসিএস) দিয়ে সুস্থ গোলার্ধকে দমন করা (জাঙ্কে, ২০০৩)। সংক্ষেপে বলা যায়, একটি অঙ্গ বেশি ব্যবহার করা বা একটি নির্দিষ্ট কাজে প্রশিক্ষণ নেওয়া সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত আরো দক্ষতা, আরো ধূসর পদার্থ এবং সাদা পদার্থের ভালো অখণ্ডতা আসবে। একটি অঙ্গ ব্যবহার না করা, একটি ক্ষমতা প্রশিক্ষণ না দেওয়া বিপরীত প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে চরম ক্ষেত্রে অ্যাম্পুটেড অঙ্গের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলো অন্যান্য কার্যকারিতা দ্বারা দখল করা হবে। ==তথ্যসূত্র== * আর্থার্স, ও. জে.; বনিফেস, এস. (২০০২), "আমরা কতটা ভালোভাবে এফএমআরআই বোল্ড সিগন্যালের স্নায়বিক উৎস বুঝতে পারি?", ট্রেন্ডস ইন নিউরোসায়েন্সেস, ২৫ (১): ২৭–৩১ * বেজোলা, এল.; মেরিল্যাট, এস.; গাসের, সি.; ইয়ানকে, এল. (২০১১), "গল্ফ নবীনদের মধ্যে প্রশিক্ষণ-প্ররোচিত স্নায়বিক প্লাস্টিসিটি", জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্স, ৩১ (৩৫): ১২৪৪৪–১২৪৪৮ * বেজোলা, এল.; মেরিল্যাট, এস.; ইয়ানকে, এল. (২০১২), "অবসর কার্যকলাপ গল্ফ অনুশীলনের মোটর ইমেজারির উপর প্রভাব: মধ্য প্রাপ্তবয়সে একটি এফএমআরআই গবেষণা", ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্স, ৬ (৬৭) * বুওনোমানো, ডি. ভি.; মারজেনিচ, এম. এম. (১৯৯৮), "কর্টিকাল প্লাস্টিসিটি: সিনাপ্স থেকে মানচিত্র", অ্যানুয়াল রিভিউ অফ নিউরোসায়েন্স, ২১: ১৪৯–১৮৬ * ক্লার্ক, এস. এ.; অলার্ড, টি.; জেনকিন্স, ডব্লিউ. এম.; মারজেনিচ, এম. এম. (১৯৮৮), "প্রাপ্তবয়স্ক কর্টেক্সে শরীর-পৃষ্ঠ মানচিত্রে গ্রহণক্ষেত্র সময়ের সাথে সম্পর্কিত ইনপুট দ্বারা সংজ্ঞায়িত", নেচার, ৩৩২: ৪৪৪–৪৪৫ * কলিগনন, ও.; লাসন্ডে, এম.; লেপোর, এফ.; বাস্তিয়েন, ডি.; ভেরার্ট, সি. (২০০৭), "প্রারম্ভিক অন্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রবণ স্থানিক প্রক্রিয়াকরণ এবং দৃষ্টির শ্রবণ প্রতিস্থাপনের জন্য কার্যকরী মস্তিষ্ক পুনর্গঠন", সেরিব্রাল কর্টেক্স, ১৭ (২): ৪৫৭–৪৬৫ * ইয়ানকে, এল. (২০০৩). জ্ঞানীয় নিউরোসায়েন্স. বার্ন: ভারলাগ হান্স হুবের। 3f3uw32s03gmjf6nhowx99h4n5myamw 84929 84928 2025-06-19T11:18:36Z Mehedi Abedin 7113 84929 wikitext text/x-wiki ==নিউরোপ্লাস্টিসিটি== মস্তিষ্কের কার্যকরী এবং কাঠামোগত সংগঠন প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কেও পরিবর্তিত হতে পারে এই ধারণা কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান। রমন ই কাজল ১৯২৮ সালে বলেছিলেন যে ক্ষতের পরে নিউরনগুলি পুনরায় উৎপাদন করতে পারে (স্ট্যানিশ এবং নিটশ, ২০০২)। কিন্তু গত দুই বা তিন দশকে এটি প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে যে কী পরিবর্তন ঘটে এবং কীভাবে ঘটে। মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলোকে মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বা নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলা হয়। নিউরোপ্লাস্টিসিটিকে কার্যকরী বা কাঠামোগত প্লাস্টিসিটিতে ভাগ করা যায়। যদিও মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা অবশ্যই সংযুক্ত, তবুও এই দুটি ধারণার মধ্যে পার্থক্য করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো ভিন্নভাবে পরিমাপ করা হয় এবং স্বাধীনভাবে ঘটতে পারে (বুওনোমানো এবং মারজেনিচ, ১৯৯৮)। ===কাঠামোগত নিউরোপ্লাস্টিসিটি=== [[File:Gray matter axonal connectivity.jpg|thumb|মস্তিষ্কের টিস্যু যেখানে নার্ভ বডি থাকে তা ধূসর দেখায়, আর অ্যাক্সোনাল ফাইবারের ট্র্যাক্ট সাদা দেখায়। এটি ধূসর এবং সাদা পদার্থের পার্থক্যের ভিত্তি।]] কাঠামোগত নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলতে মস্তিষ্কের টিস্যুর পরিবর্তন বোঝায়। এগুলো মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ বা সাদা পদার্থের পরিবর্তন হতে পারে। ধূসর পদার্থের পরিবর্তন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘনত্ব বা আয়তনের পরিবর্তন। আরো সুনির্দিষ্টভাবে, অভিজ্ঞতার কারণে প্রায়শই পুরুত্বের পরিবর্তন দেখা যায়, যেখানে একটি অঞ্চলের ক্ষেত্রফল অপরিবর্তিত থাকে। ক্ষেত্রফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিনগতভাবে নির্ধারিত বলে মনে হয়। যদিও মস্তিষ্কের সব অঞ্চল ধূসর পদার্থের ঘনত্বের একই হেরিটেবিলিটি দেখায় না। মানুষের মধ্যে ফ্রন্টাল এবং পেরিসিলভিয়ান অংশে ধূসর পদার্থের ঘনত্বের হেরিটেবিলিটি মস্তিষ্কের বাকি অংশের তুলনায় কম থাকে (থম্পসন এট আল., ২০০১)। [[File:Mapping-Human-Whole-Brain-Structural-Networks-with-Diffusion-MRI-pone.0000597.s005.ogv|300px|thumb|মস্তিষ্কের ডিফিউশন এমআরআই স্ক্যানের উদাহরণ (হ্যাগম্যান পি., ২০০৭)]] ধূসর পদার্থের ঘনত্ব, আয়তন, ক্ষেত্রফল এবং পুরুত্ব জীবিত মানুষের মস্তিষ্কে প্রায়শই ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) দ্বারা পরিমাপ করা হয়। সাদা পদার্থের পরিবর্তনও আয়তনের পরিবর্তন হতে পারে, তবে প্রায়শই সাদা পদার্থের অখণ্ডতার পরিবর্তন হয়, যেমন ফাইবার সংগঠন, মায়েলিনাইজেশনের মাত্রা বা অ্যাক্সোনাল প্রস্থের পরিবর্তন (জ্যাটোরে এট আল., ২০১২)। সাদা পদার্থের অখণ্ডতা ডিফিউশন টেনসর দ্বারা নির্ধারিত বলে মনে করা হয়, যা জীবিত টিস্যুতে ডিফিউশন টেনসর ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা সংক্ষেপে ডিফিউশন টেনসর ইমেজিং (ডিটিআই) নামক পদ্ধতি দ্বারা পরিমাপ করা হয়। এটি এমআরআই মেশিনে ব্যবহৃত পরিমাপ প্রোটোকলগুলোর একটি (জোন্স, ২০০৮)। ===কার্যকরী নিউরোপ্লাস্টিসিটি=== কার্যকরী নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলতে অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের পর মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোর কার্যকারিতার পরিবর্তন বা সক্রিয়করণ প্যাটার্নের পরিবর্তন বোঝায়। মস্তিষ্কের একটি অঞ্চল তার আকার পরিবর্তন না করে কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে। একইভাবে, মস্তিষ্কের টিস্যুর গঠনে পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই সক্রিয়করণ প্যাটার্ন পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তিত সক্রিয়করণ প্যাটার্নের অর্থ হতে পারে যে প্রশিক্ষণের পর কিছু অঞ্চল বেশি সক্রিয় এবং অন্যান্য অঞ্চল কম সক্রিয় হয়। কম সক্রিয়করণের অর্থ কম কার্যক্ষমতা নয়। একটি অঞ্চলের কম সক্রিয়করণ হতে পারে কারণ অন্য কোনো বিশেষায়িত অঞ্চল দায়িত্ব নিচ্ছে, বা কম সক্রিয় অঞ্চলটি প্রশিক্ষণের পর আরো কার্যকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু একইভাবে, বেশি সক্রিয়করণ প্রায়শই প্রশিক্ষণের পর উচ্চতর দক্ষতার কারণে বলে মনে করা হয় (জাঙ্কে, ২০১৩)। [[File:1206 FMRI.jpg|left|thumb|এটি একটি সাধারণ এফএমআরআই চিত্র। রঙে প্রদর্শিত সমস্ত ভক্সেল (পিক্সেলের থ্রিডি সমতুল্য) যা গ্রাউন্ড স্টেট থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। রঙিন অঞ্চলগুলি তাই গ্রাউন্ড স্টেটের তুলনায় বেশি সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।]] মানুষের মস্তিষ্কে সক্রিয়করণ পরিমাপের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হল ব্লাড-অক্সিজেন-লেভেল ডিপেন্ডেন্ট (বোল্ড) কনট্রাস্ট ইমেজিং, যা ফাংশনাল এমআরআইতে (এফএমআরআই) ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি এবং এটি অক্সিজেনযুক্ত এবং ডিঅক্সিজেনযুক্ত হিমোগ্লোবিনের সম্পর্ক পরিমাপ করে যা থেকে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ অনুমান করা যায় (আর্থারস এবং বোনিফেস, ২০০২)। প্রাণীদের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক কিন্তু অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন খোলা মাথার খুলিতে মাইক্রোইলেক্ট্রোড দিয়ে একক-কোষ রেকর্ডিং। ==ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে পরিবর্তন== পরিপক্কতার সময় কিছু মস্তিষ্কের কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। "গুরুত্বপূর্ণ সময়ে" মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট পূর্বনির্ধারিত উদ্দীপনার প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়। যদি স্নায়ুতন্ত্র এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উপযুক্ত উদ্দীপনা না পায়, তবে এই উদ্দীপনাগুলো প্রক্রিয়াকরণের কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হবে না। পরবর্তী জীবনে এই কার্যকারিতা বিকাশ করা কঠিন বা এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়ে (পারভস, ২০০৮)। মানুষের মধ্যে কথা শোনা সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত ঘটনা যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। আরেকটি উদাহরণ হল জন্মের পরপরই হাঁসের মায়ের উপর ছাপ ফেলা। ভিজ্যুয়াল সিস্টেমও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। বিড়ালদের জন্য এই সময়টি প্রায় চার সপ্তাহ বয়সে মাত্র কয়েক দিন। বানরদের ক্ষেত্রেও একই, তবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ===দৃষ্টি বঞ্চনা=== গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দৃষ্টি ইনপুটের বঞ্চনা ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে নিউরোনাল সংযোগের পরিবর্তন ঘটায় (পারভস, ২০০৮)। একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চনার পর ওকুলার ডমিনেন্স কলামের ভারসাম্যহীন বিকাশের মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলো চিত্রিত করা যায়। ওকুলার ডমিনেন্স কলামগুলো একটি চোখ বা অন্য চোখ থেকে ইনপুটের প্রতি পছন্দ করে সাড়া দেয়। এগুলো ভি১-এ একটি ডোরাকাটা প্যাটার্নে অবস্থিত এবং কর্টিকাল লেয়ার ৪-এ সবচেয়ে বিশিষ্ট, তবে অন্যান্য স্তরেও উপস্থিত। ডোরাগুলোর প্রস্থ প্রায় ০.৫ মিমি। একটি চোখে তেজস্ক্রিয় অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রেসার প্রবেশ করিয়ে কলামগুলো দৃশ্যমান করা যায়, যা পরে লেয়ার ৪-এ পরিবহন করা হয়। বিড়ালছানাদের উপর পরীক্ষায়, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে (জন্মের প্রথম তিন মাস) তাদের একটি চোখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তবে দৃষ্টি উদ্দীপনা পাওয়া চোখের কলামগুলো বঞ্চিত চোখের অঞ্চল দখল করে নেয়। ফলে, উদ্দীপিত চোখের ডোরাগুলো প্রশস্ত হয়, বঞ্চিত চোখের খরচে (হুবেল এবং উইজেল, ১৯৬২)। এটি ইঙ্গিত করে যে দুই চোখের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মিথস্ক্রিয়া বিদ্যমান, যা প্রাপ্ত দৃষ্টি উদ্দীপনার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। [[File:Mouse and human visual systems.jpg|thumb|362x362px|এখানে, মানুষের (ডানে) এবং ইঁদুরের (বামে) দৃষ্টি পথ দেখানো হয়েছে। মানুষের মধ্যে বাম এবং ডান চোখের তথ্য পৃথকভাবে প্রক্রিয়া করা হয় যতক্ষণ না তারা প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে (ভি১) পৌঁছায়। সেখানে তারা ওকুলার ডমিনেন্স কলামে প্রতিনিধিত্ব করা হয়। যদি বিকাশের সময় একটি চোখ বন্ধ থাকে, তবে সুস্থ চোখের ডমিনেন্স কলামগুলো প্রশস্ত হয়, আর বন্ধ চোখের কলামগুলো সঙ্কুচিত হয়।]] যখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দুটি চোখই বন্ধ করা হয়েছিল, তখন ওকুলার ডমিনেন্স কলামে দুই চোখের প্রতিনিধিত্ব ভারসাম্যপূর্ণ ছিল এবং দুই চোখেই দৃষ্টি বজায় ছিল। ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের এক-চতুর্থাংশ নিউরন প্রধানত একটি চোখ দ্বারা উদ্দীপিত হয়। যখন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তখন সাধারণভাবে কার্যকর চোখ দখল করে নেয়। তবুও, পরীক্ষাগুলো প্রকাশ করেছে যে বন্ধ চোখের রেটিনা বা জেনিকুলেট লেয়ারের আরো পেরিফেরাল কোষগুলো তবুও স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই চোখের প্রতিযোগিতামূলক মিথস্ক্রিয়ার নীতিটি ছোট বাচ্চাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি বহন করে: সুস্থ বিকাশের জন্য দুই চোখের ভারসাম্যপূর্ণ উদ্দীপনা প্রয়োজন। জন্মগত ত্রুটি বা চোখের আঘাতের কারণে দুই চোখের ইনপুট ভারসাম্যহীন হতে পারে। যদি এই ভারসাম্যহীনতা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে সারানো না হয়, তবে এটি "অ্যাম্বলিওপিয়া" নামক স্থায়ী দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে দ্বিচক্ষু সংযোজন দুর্বল হয়, গভীরতা উপলব্ধি হ্রাস পায় এবং তীক্ষ্ণতা কমে যায় (পারভস, ২০০৮)। স্ট্র্যাবিসমাসকে কখনো কখনো “অলস চোখ” বলা হয়, এটি একটি চোখের অস্বাভাবিক কার্যকারিতা এবং অ্যাম্বলিওপিয়ার কারণ হতে পারে। একটি অতিরিক্ত চোখের পেশীর ত্রুটি দুটি চোখকে সারিবদ্ধ করতে এবং একটি বস্তুর উপর ফোকাস করতে অক্ষম করতে পারে। স্ট্র্যাবিসমাস "ইসোট্রপিয়া" বা "এক্সোট্রপিয়া" হিসেবে হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে, যেখানে চোখের দৃষ্টি ক্রস করে, যেখানে দৃষ্টি বিচ্যুত হয়। ফলে ডবল ভিশনের কারণে একটি চোখের তথ্য দমন করা হয়। এটি উপরে বর্ণিত একটি চোখের বঞ্চনার সাথে তুলনীয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত চোখের পেশীতে তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। আরেকটি রোগ যা একটি বা দুটি চোখে দৃষ্টি বঞ্চনার কারণ হতে পারে তা হল “ক্যাটারাক্ট”, চোখের লেন্স বা কর্নিয়ার ঝাপসা হওয়া। এই ঝাপসা ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণ (অনকোসেরকিয়াসিস) দ্বারা হতে পারে, যা প্রায়শই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঘটে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই রোগটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রায়শই চিকিৎসা না করা হয়, এবং পরবর্তীতে দ্বিচক্ষু দৃষ্টি পুনরুদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ===দৃষ্টি সিস্টেমের পুনর্জন্মের সম্ভাবনা=== ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্ক পরিপক্ক মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক বেশি প্লাস্টিক। এটি বিশেষ করে মোটর- এবং সোমাটোসেন্সরি এলাকার জন্য সত্য, এবং কিছুটা হলেও দৃষ্টি ব্যবস্থার জন্য। এই প্লাস্টিসিটির মধ্যে শুধু উপরে উল্লিখিত পরিবর্তনগুলোই নয়, মস্তিষ্কের ক্ষতির পর কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাও অন্তর্ভুক্ত। তবে, ক্ষতির অবস্থান এবং প্রকারের উপর প্লাস্টিসিটির ক্ষমতা নির্ভর করে, যা নিচে আলোচনা করা হয়েছে। দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা সচেতন এবং অচেতন দৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। সম্পূর্ণ সচেতন দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য রেটিনা এবং প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের মধ্যে একটি কার্যকর পথ প্রয়োজন (ফেলম্যান এবং ভ্যান এসেন, ১৯৯১)। প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছুটা অচেতন দৃষ্টি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। অচেতন দৃষ্টির মধ্যে গতি, আকৃতি এবং রঙের প্রতি সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্ত। প্রমাণ রয়েছে যে শৈশবে ক্ষতি ঘটলে অচেতন দৃষ্টি আরো ভালোভাবে বিকশিত হতে পারে (মার্কুরি এট আল., ২০০৩)। তবুও, জন্ম থেকে দৃষ্টি বঞ্চিত হলে এমনকি ছোট বাচ্চাদের জন্যও দৃষ্টি পুনরুদ্ধার করা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং এমআইটি ক্যামব্রিজে দৃষ্টি এবং কম্পিউটেশনাল নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক পবন সিনহা প্রকাশ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ভারতে ক্যাটারাক্ট এবং কর্নিয়াল অস্বচ্ছতায় আক্রান্ত শিশুদের খুঁজে বের করা এবং চিকিৎসা করা। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিমধ্যে ৪০,০০০ শিশু স্ক্রিন করা হয়েছে এবং ৪০০ জনের বেশি শিশুকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে (সিনহা ইট আল., ২০১৩)। এই প্রকল্প থেকে মানুষের দৃষ্টি ব্যবস্থার বিকাশ সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি উদ্ভূত হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরপরই এবং দৃষ্টি শুরু হওয়ার পর জন্মগতভাবে অন্ধ শিশুরা হাত দিয়ে স্পর্শ করা বস্তুকে দৃশ্যত চিনতে পারেনি। তাই লেখকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে স্পর্শ এবং দৃষ্টির মধ্যে কোনো সহজাত সংযোগ নেই, আমরা যা দেখি তা যা স্পর্শ করি তার সাথে সম্পর্কিত করতে প্রথমে শিখতে হয়। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর শিশুরা ইতিমধ্যে দেখা এবং স্পর্শ করা বস্তুগুলোর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। শুধু দেখা বস্তুকে স্পর্শ করা বস্তুর সাথে সম্পর্কিত করা নয়, দৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপরই বস্তু চিনতেও খুব দুর্বল, বিশেষ করে যখন বস্তুগুলো স্থির থাকে এবং ওভারল্যাপ করে। গতি বিভিন্ন বস্তুকে পৃথক করতে সহায়ক বলে মনে হয়। স্পষ্টতই জন্মগত অন্ধত্বের পর দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও বজায় থাকে। অস্ট্রোভস্কি ইট আল. (২০০৯) একজন ২৯ বছর বয়সী পুরুষ রোগীর কথা উল্লেখ করেছেন যিনি রিফ্র্যাক্টরি সংশোধনের মাধ্যমে আংশিকভাবে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। এক মাস পর তিনি ইতোমধ্যে স্থির, ওভারল্যাপিং বস্তুগুলো আলাদা করতে পারছিলেন। যদিও এগুলো চিত্তাকর্ষক ফলাফল, তবুও এটা স্পষ্ট নয় যে এই শিশুদের কতটা সত্যিই জন্মগতভাবে অন্ধ হিসেবে বিবেচনা করা যায়, কারণ তাদের অনেকেই সম্পূর্ণ অন্ধ নয় এবং বেশিরভাগই জন্মের সময় অন্ধ ছিল না, বরং শৈশবে দৃষ্টি হারিয়েছে। সুস্থ, দৃষ্টিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদেরও দৃষ্টি ব্যবস্থায় অভিযোজন এবং প্লাস্টিসিটির ক্ষমতা রয়েছে। ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। তাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল। একটি গ্রুপকে জাগলিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, অন্য গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। গবেষণায় নিয়োগের সময় সব সাবজেক্টই জাগলিংয়ে অনভিজ্ঞ ছিল। জাগলার গ্রুপের সাবজেক্টদের তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল তিনটি বল দিয়ে জাগলিং শিখতে। তারা দক্ষ পারফর্মার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল যখন তারা কমপক্ষে ৬০ সেকেন্ড ধরে জাগলিং চালিয়ে যেতে পারত। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে, দক্ষ পারফর্মার হওয়ার সময় এবং শেষ প্রশিক্ষণ সেশনের তিন মাস পর এমআরআই ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছিল। প্রশিক্ষণের আগে দুটি গ্রুপের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। জাগলার গ্রুপে ভি৫/এমটি দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং বাম পোস্টেরিয়র ইন্ট্রাপ্যারিয়েটাল সালকাসে (আইপিএস) ধূসর পদার্থের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ দেখানো হয়েছিল। প্রশিক্ষণের তিন মাস পর ধূসর পদার্থ ভি৫ এবং আইপিএস এ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল কিন্তু প্রাক-প্রশিক্ষণ স্ক্যানের তুলনায় তখনো উচ্চতর ছিল (ড্রাগানস্কি ইট আল., ২০০৪)। ===ক্রস-মোডাল প্লাস্টিসিটি=== [[File:Transcranial magnetic stimulation.jpg|300px|thumb|ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন হল মাথার নিরোধক টিস্যু জুড়ে এবং মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক শক্তি পৌঁছানোর একটি অ-আক্রমণাত্মক উপায়। একটি শক্তিশালী এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈদ্যুতিক প্রবাহ মাথার কাছে প্রয়োগ করা তারের কয়েলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। কয়েলের সমতলের সাথে লম্বভাবে অভিমুখী চৌম্বক ক্ষেত্র মাথার ত্বক এবং মাথার খুলি দিয়ে প্রায় বাধাহীনভাবে যায়। মস্তিষ্কে চৌম্বক ক্ষেত্র প্রবর্তিত বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে প্রবাহ সৃষ্টি করে যা কয়েলের সমতলের সমান্তরাল। এই প্রবাহগুলো প্রবর্তিত ক্ষেত্রের সমতলে অবস্থিত নিউরাল প্রক্রিয়াগুলোকে উত্তেজিত করতে সক্ষম, যা প্রায় সরাসরি কর্টিকাল স্টিমুলেশনের সাথে ইলেক্ট্রোডের অনুরূপ।]] ক্রস-মোডাল প্লাস্টিসিটি হল প্রাথমিক সংবেদী ইনপুটের বঞ্চনার পর একটি সংবেদী ইনপুটের প্রতি নিউরোনাল প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন। একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হল ইঁদুরের হুইস্কার ব্যবহার। হুইস্কারগুলো এই প্রাণীদেরকে অন্ধকারে স্থান নির্ধারণে সহায়তা করে। যদি শৈশবে দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তবে দেখা যায় যে হুইস্কারগুলো লম্বা হয়, যা অন্ধ ইঁদুরের স্থান নির্ধারণকে উন্নত করবে বলে মনে করা হয় (রাউসচেকার ইট আল., ১৯৯২)। দৃষ্টি বঞ্চনার পর শ্রবণ এবং স্পর্শ ব্যবস্থার মতো পরিপূরক সংবেদী ব্যবস্থার একই উন্নতি মানুষের মধ্যে দেখা যায়। সুস্থ এবং অন্ধ বিড়ালদের উপর শব্দ স্থানীয়করণের ক্ষমতার উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই পরীক্ষাগুলো প্রকাশ করেছে যে অন্ধ প্রাণীরা শব্দ স্থানীয়করণে বেশি নির্ভুল ছিল। অন্ধ বিড়ালরা শব্দের উৎস স্থানীয়করণের জন্য মাথা উল্লম্বভাবে সাধারণ নড়াচড়া করে। এই ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া সাধারণ শব্দ উপলব্ধি এবং স্থানীয়করণ উন্নত করতে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয় (রাউসচেকার, ১৯৯৫)। মানুষের উপর একটি তদন্তে, দৃষ্টিসম্পন্ন এবং অন্ধ ব্যক্তিদের শ্রবণ উদ্দীপনা দেওয়া হয়েছিল। দৃষ্টিসম্পন্ন সাবজেক্টদের অক্সিপিটাল কর্টেক্স শ্রবণ উদ্দীপনার প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, কিন্তু অন্ধ সাবজেক্টদের মধ্যে অক্সিপিটাল কর্টেক্স সক্রিয় ছিল। এই ঘটনাটি আরেকটি তদন্ত দ্বারা নিশ্চিত হয়েছিল, যা অক্সিপিটাল কর্টেক্সে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দমন করতে ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (টিএমএস) ব্যবহার করেছিল। এর ফলে অন্ধদের শব্দ স্থানীয়করণের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল, যেখানে পিচ বা তীব্রতা চিনতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্ধ সাবজেক্টদের মধ্যে স্থানীয়করণের নির্ভুলতা অক্সিপিটাল সক্রিয়করণের মাত্রার সাথে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত ছিল। তবে, এই হস্তক্ষেপ স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন সাবজেক্টদের শ্রবণ উপলব্ধিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি (কলিগনন ইট আল., ২০০৭)। আরেকটি আকর্ষণীয় উদাহরণ হল ইকোলোকেশন। কিছু অন্ধ মানুষ সক্রিয়ভাবে ইকোলোকেশন করতে শিখেছে। তারা তাদের জিহ্বা এবং মুখ দিয়ে ক্লিক শব্দ উৎপন্ন করতে শিখেছে এবং প্রতিফলিত শব্দের ব্যাখ্যা করে, যাতে তারা পরিবেশে দিক নির্ধারণ করতে এবং বিভিন্ন বস্তু থেকে দূরত্ব নির্ধারণ করতে পারে। এই ধরনের ইকোলোকেটিং ক্লিকগুলো সাধারণত সংক্ষিপ্ত (১০ মিলিসেকেন্ড) এবং বর্ণালীগতভাবে বিস্তৃত। প্রারম্ভিক এবং পরবর্তী অন্ধরা ইকোলোকেশনের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। কিন্তু মনে হয় শুধুমাত্র জন্মগত এবং প্রারম্ভিক অন্ধদের মধ্যেই ক্যালকারিন সালকাসের চারপাশে অক্সিপিটাল কর্টেক্সে বিস্তৃত সক্রিয়করণ ঘটে, পরবর্তী অন্ধদের মধ্যে নয় (থ্যালার ইট আল., ২০১১)। আমরা উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত প্লাস্টিসিটি সম্ভব, যদিও ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় রয়েছে। যদি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অক্সিপিটাল কর্টেক্স দৃশ্যত উদ্দীপিত না হয়, তবে ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের কিছু কার্যকারিতা কখনোই বিকশিত হবে না। এবং সম্ভবত ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স এমনকি ইকোলোকেশনের মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন কার্যকারিতার জন্য নিয়োজিত হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ের পর ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স কতটা প্লাস্টিক থাকে, তা এখনো বিতর্কের বিষয়। ==সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে পরিবর্তন== সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে কার্যকরী প্লাস্টিসিটির প্রথম পরীক্ষাগুলোর একটি মারজেনিচ এট আল। (১৯৮৪) প্রাইমেটদের উপর করেছিলেন। প্রথমে তারা প্রাপ্তবয়স্ক ওউল বানরের হাতের অঞ্চলে আঙুলের কর্টিকাল প্রতিনিধিত্ব মাইক্রোইলেক্ট্রোড দিয়ে নির্ধারণ করেছিলেন। তারপর তারা বানরের মধ্যম আঙুল কেটে ফেলেন এবং অ্যাম্পুটেশনের ২-৮ মাস পর হাতের অঞ্চলটি আবার ম্যাপ করেন। তারা দেখতে পান যে মাত্র দুই মাস পর পার্শ্ববর্তী আঙুলের প্রতিনিধিত্ব পূর্বে মধ্যম আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চলে প্রসারিত হয়। ফলে পার্শ্ববর্তী ত্বক কর্টেক্সে একটি বিবর্ধিত প্রতিনিধিত্ব পায়, যখন একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ত্বকের রিসেপটিভ ফিল্ডের আকার সঙ্কুচিত হয়। মনে হয় ত্বকের একই অংশের জন্য আরো নিউরন নিয়োগ করা রিসেপটিভ ফিল্ডের ছোট আকারের পথ প্রশস্ত করে। একইভাবে, যখন ওউল বানরের দুটি আঙুল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছিল, এবং এইভাবে এই দুটি আঙুলের ইনপুট অত্যন্ত সম্পর্কিত ছিল, তখন দুটি আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চলের মধ্যে সীমানা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল (ক্লার্ক ইট আল., ১৯৮৮)। অন্যদিকে, যখন বানরের আঙুলগুলো একটি সূক্ষ্ম এবং আরো জটিল উদ্দীপনার সম্মুখীন হয়েছিল, যেমন একটি ঢেউখেলানো ঘূর্ণায়মান ডিস্ক ব্যবহার করে, ৮০ দিন পর উদ্দীপিত আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চল প্রশস্ত হয়েছিল। সম্ভবত কারণ সূক্ষ্মতর উদ্দীপনার জন্য ছোট রিসেপটিভ ফিল্ড প্রয়োজন, তাই আরো নিউরন নিয়োগ করতে হয়েছিল এবং আঙুলের অঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছিল (জেনকিন্স, মারজেনিচ এবং রেকানজোন, ১৯৯০)। ===ফ্যান্টম লিম্বস=== মানুষের উপর কার্যকরী প্লাস্টিসিটির প্রথম এবং প্রভাবশালী অন্তর্দৃষ্টি রামচন্দ্রন (১৯৯৩) এনেছিলেন। তিনি দেখতে পান যে কিছু রোগী, যাদের উপরের অঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছিল, তাদের ইপ্সিল্যাটারাল মুখে তুলোর কুঁড়ি দিয়ে উদ্দীপনা দেওয়া হলে তারা অনুভব করতেন যে কেউ তাদের অস্তিত্বহীন বাহুতে স্পর্শ করছে। তিনি এমনকি রোগীর গাল এবং চোয়ালে পূর্বের অঙ্গের একটি মানচিত্র আঁকতে সক্ষম হন। অ্যাম্পুটেড অঙ্গের এই প্রতিনিধিত্বের সুনির্দিষ্ট সীমানা ছিল এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল ছিল। যেহেতু সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে মুখের অঞ্চলটি হাতের অঞ্চলের ঠিক পাশে থাকে, তাই সম্ভবত মুখের অঞ্চলটি পূর্বে অ্যাম্পুটেড অঙ্গ থেকে ইনপুট গ্রহণকারী নিউরনগুলো নিয়োগ করছে, ঠিক যেমন ওউল বানরদের পরীক্ষায়। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কিছু নিউরন মুখ থেকে আগত সংবেদী উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেওয়া শুরু করবে যখন তারা এখনো পূর্বের হাতের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে, যার ফলে ইপ্সিল্যাটারাল মুখে অ্যাম্পুটেড অঙ্গের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হয়। এই প্রতিনিধিত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবার অদৃশ্য হয়ে যায় (জাঙ্কে, ২০১৩)। সম্ভবত ফ্যান্টম লিম্ব সংবেদনও এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। কিছু রোগী এমন সংবেদন অনুভব করেন যেন তাদের অ্যাম্পুটেড অঙ্গ এখনো আছে, যাকে “ফ্যান্টম লিম্ব” বলা হয়। কখনো কখনো এই সংবেদন বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে। কিছু রোগী তাদের ফ্যান্টম লিম্বে বেদনাদায়ক অনৈচ্ছিক ক্লেঞ্চিং স্প্যাজম অনুভব করেন (রামচন্দ্রন এবং রজার্স-রামচন্দ্রন, ১৯৯৬)। প্রায়শই যখন ট্রানজিশনাল পিরিয়ড শেষ হয় এবং পূর্বের অঙ্গের নিউরনগুলো মুখের মতো অন্যান্য অঞ্চলে সম্পূর্ণরূপে একত্রিত হয়, তখন ফ্যান্টম লিম্বের সংবেদন অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু কিছু রোগী স্থায়ী ফ্যান্টম লিম্ব সংবেদন ভোগেন। এই ক্ষেত্রে প্রায়শই ব্যবহৃত থেরাপি হল মিরর থেরাপি, যেখানে একটি আয়না রোগীর সামনে উল্লম্বভাবে স্থাপন করা হয় যাতে আয়নায় অক্ষত অঙ্গটি অ্যাম্পুটেড অঙ্গের জায়গায় সুপারইম্পোজড হয়। যদিও মিরর থেরাপি সব রোগীদের সাহায্য করে না (রথগ্যাঞ্জেল ইট আল., ২০১১), কিছু রোগী উপকৃত হন, উদাহরণস্বরূপ, তাদের সুস্থ হাত খোলার মাধ্যমে তারা আয়নায় মানসিকভাবে তাদের ফ্যান্টম হাত খুলতে পারেন, যা ক্লেঞ্চিং স্প্যাজম থেকে মুক্তি দেয়। আয়না ছাড়া তারা ফ্যান্টম হাত শিথিল করতে পারতেন না (রামচন্দ্রন এবং রজার্স-রামচন্দ্রন, ১৯৯৬)। কিন্তু শুধু কার্যকরী নয়, অঙ্গ অ্যাম্পুটেশনের পর কাঠামোগত পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হয়। ড্রাগানস্কি ইট আল. (২০০৬) দেখতে পান যে অঙ্গ অ্যাম্পুটেড রোগীদের থ্যালামিক ভেন্ট্রাল পোস্টেরোল্যাটারাল নিউক্লিয়াসে বয়স-মিলিত সুস্থ নিয়ন্ত্রণের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ধূসর পদার্থ ছিল। তাছাড়া, অ্যাম্পুটেশনের সময়ের সাথে থ্যালামাসে ধূসর পদার্থের ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পর্কিত ছিল (r=.39)। ===প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন=== সংগীতজ্ঞদের উপর প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে। সংগীতজ্ঞরা খুব নিবিড়ভাবে এবং প্রায়শই জীবনব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন, তাই তারা ক্রস-সেকশনাল গবেষণার জন্য আদর্শ সাবজেক্ট। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্রিং বাদকদের সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে বাম হাতের আঙুলের জন্য অ-সংগীতজ্ঞদের তুলনায় বড় অঞ্চল থাকে। এবং একজন সংগীতজ্ঞ যত তাড়াতাড়ি জীবনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন, তার অ-প্রভাবশালী হাতের অঞ্চল তত বড় হয় (এলবার্ট ইট আল., ১৯৯৫)। পিয়ানোবাদকরা একটি ট্যাপিং টাস্কে প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি মোটর এলাকার তুলনায় অ-সংগীতজ্ঞদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম সক্রিয়করণ দেখান। এই ফলাফলের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল যে পিয়ানোবাদকদের নিবিড় এবং দীর্ঘস্থায়ী হাতের দক্ষতা প্রশিক্ষণ মোটর এলাকার দক্ষতা বাড়িয়েছে। ফলে একই কাজে প্রশিক্ষিত সাবজেক্টদের তুলনায় অপ্রশিক্ষিতদের তুলনায় কম নিউরন সক্রিয় হয় (জ্যাঙ্কে ইট আল., ২০০০)। সংগীতজ্ঞরা শ্রবণ কর্টেক্সেরও বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান (পরবর্তী বিভাগে এ সম্পর্কে আরো)। ক্রস-সেকশনাল গবেষণার একটি প্রায়শই উত্থাপিত সমালোচনা হল যে প্রশিক্ষিত মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলের পার্থক্য প্রশিক্ষণের কারণে হয়েছে নাকি তারা একটি নির্দিষ্ট কাজে (যেমন সংগীতজ্ঞ হওয়া) প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ তারা সেই কাজের জন্য বিশেষভাবে সক্ষম ছিল এবং সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলটি প্রশিক্ষণের আগেই আরো কার্যকর বা বড় ছিল তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র লংগিটুডিনাল গবেষণাই এই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারে। একটি লংগিটুডিনাল গবেষণা ১০ জন ডানহাতি রোগীর উপর পরিচালিত হয়েছিল যাদের উপরের ডান অঙ্গে আঘাতের কারণে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য অঙ্গটি স্থির করা প্রয়োজন ছিল। আঘাতের দুই দিনের মধ্যে একটি ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছিল এবং কর্টিকাল পুরুত্ব পরিমাপ করা হয়েছিল। ১৬ দিন স্থিরকরণের পর দ্বিতীয় স্ক্যানে দেখা গেছে যে বাম প্রাথমিক মোটর এলাকা এবং বাম সোমাটোসেন্সরি এলাকায় উল্লেখযোগ্য ধূসর পদার্থ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও কর্টিকোস্পাইনাল ট্র্যাক্টের অখণ্ডতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে (ল্যাঙ্গার ইট আল., ২০১২)। আরেকটি গবেষণায় ১৪ জন ডানহাতি রোগীর প্রভাবশালী হাতে রাইটার্স ক্র্যাম্পের জন্য ৪ সপ্তাহের জন্য স্থির করা হয়েছিল। স্থিরকরণের পর রোগীদের ৮ সপ্তাহ ধরে তাদের প্রভাবশালী হাত পুনরায় প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছিল। এখানেও একটি এমআরআই স্ক্যানে দেখা গেছে যে স্থিরকরণ পর্বের পর কন্ট্রাল্যাটারাল প্রাথমিক মোটর হ্যান্ড এলাকায় ধূসর পদার্থের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। পুনঃপ্রশিক্ষণ এই প্রভাবগুলোকে বিপরীত করেছিল এবং ধূসর পদার্থের ঘনত্ব আবার বৃদ্ধি পেয়েছিল (গ্রেনার্ট ইট আল., ২০১১)। বেজোলা ইট আল. (২০১১) ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী গল্ফ নবীনদের দিকে তাকিয়েছিলেন। এবং ৪০ ঘণ্টা ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণের পর মোটর এবং প্রিমোটর কর্টেক্স বা ইন্ট্রাপ্যারিয়েটাল সালকাসের মতো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে ধূসর পদার্থের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাওয়া গেছে। প্রশিক্ষণের তীব্রতা ধূসর পদার্থ বৃদ্ধির শতাংশের সাথে সম্পর্কিত ছিল। এছাড়াও গল্ফ সুইং মানসিকভাবে পুনরায় করার সময় সক্রিয়করণ প্যাটার্নের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল। প্রশিক্ষণের পর ডরসাল প্রিমোটর কর্টেক্স উল্লেখযোগ্যভাবে কম সক্রিয় ছিল (বেজোলা ইট আল., ২০১২)। ===মস্তিষ্কের ক্ষতির পর পুনর্বাসন=== অবশেষে, মস্তিষ্কের ক্ষতির পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াগুলো বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। পূর্বে বর্ণিত প্লাস্টিসিটি ক্ষমতাগুলো পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কিন্তু প্রধানত দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, যদি ক্ষতি খুব বড় হয় যাতে সম্পূর্ণ কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যায়, তবে এখন পর্যন্ত কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় নেই। দ্বিতীয়ত, আংশিকভাবে সংরক্ষিত কার্যকারিতাগুলো প্রায়শই কন্ট্রাল্যাটারাল সুস্থ অঞ্চল দ্বারা দমন করা হয় যার একই বা অনুরূপ কার্যকারিতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি শরীরের বাম পাশ আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়, তবে সুস্থ বাম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে কারণ ক্ষতিগ্রস্ত ডান গোলার্ধ থেকে বাম গোলার্ধে কোনো বাধা নেই। ফলে সুস্থ গোলার্ধ ক্ষতিগ্রস্ত গোলার্ধকে দমন করবে এবং পুনর্বাসন বাধাগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত পাশে এখনো সুস্থ নিউরনগুলোর পুনঃতারযুক্তকরণ বাধাগ্রস্ত হবে। এটি কাটিয়ে ওঠার একটি উপায় হল পুনর্বাসন প্রশিক্ষণের সময় বা ঠিক আগে টিএমএস বা ট্রান্সক্রানিয়াল ডাইরেক্ট-কারেন্ট স্টিমুলেশন (টিডিসিএস) দিয়ে সুস্থ গোলার্ধকে দমন করা (জাঙ্কে, ২০০৩)। সংক্ষেপে বলা যায়, একটি অঙ্গ বেশি ব্যবহার করা বা একটি নির্দিষ্ট কাজে প্রশিক্ষণ নেওয়া সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত আরো দক্ষতা, আরো ধূসর পদার্থ এবং সাদা পদার্থের ভালো অখণ্ডতা আসবে। একটি অঙ্গ ব্যবহার না করা, একটি ক্ষমতা প্রশিক্ষণ না দেওয়া বিপরীত প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে চরম ক্ষেত্রে অ্যাম্পুটেড অঙ্গের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলো অন্যান্য কার্যকারিতা দ্বারা দখল করা হবে। ==তথ্যসূত্র== * আর্থার্স, ও. জে.; বনিফেস, এস. (২০০২), "আমরা কতটা ভালোভাবে এফএমআরআই বোল্ড সিগন্যালের স্নায়বিক উৎস বুঝতে পারি?", ট্রেন্ডস ইন নিউরোসায়েন্সেস, ২৫ (১): ২৭–৩১ * বেজোলা, এল.; মেরিল্যাট, এস.; গাসের, সি.; ইয়ানকে, এল. (২০১১), "গল্ফ নবীনদের মধ্যে প্রশিক্ষণ-প্ররোচিত স্নায়বিক প্লাস্টিসিটি", জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্স, ৩১ (৩৫): ১২৪৪৪–১২৪৪৮ * বেজোলা, এল.; মেরিল্যাট, এস.; ইয়ানকে, এল. (২০১২), "অবসর কার্যকলাপ গল্ফ অনুশীলনের মোটর ইমেজারির উপর প্রভাব: মধ্য প্রাপ্তবয়সে একটি এফএমআরআই গবেষণা", ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্স, ৬ (৬৭) * বুওনোমানো, ডি. ভি.; মারজেনিচ, এম. এম. (১৯৯৮), "কর্টিকাল প্লাস্টিসিটি: সিনাপ্স থেকে মানচিত্র", অ্যানুয়াল রিভিউ অফ নিউরোসায়েন্স, ২১: ১৪৯–১৮৬ * ক্লার্ক, এস. এ.; অলার্ড, টি.; জেনকিন্স, ডব্লিউ. এম.; মারজেনিচ, এম. এম. (১৯৮৮), "প্রাপ্তবয়স্ক কর্টেক্সে শরীর-পৃষ্ঠ মানচিত্রে গ্রহণক্ষেত্র সময়ের সাথে সম্পর্কিত ইনপুট দ্বারা সংজ্ঞায়িত", নেচার, ৩৩২: ৪৪৪–৪৪৫ * কলিগনন, ও.; লাসন্ডে, এম.; লেপোর, এফ.; বাস্তিয়েন, ডি.; ভেরার্ট, সি. (২০০৭), "প্রারম্ভিক অন্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রবণ স্থানিক প্রক্রিয়াকরণ এবং দৃষ্টির শ্রবণ প্রতিস্থাপনের জন্য কার্যকরী মস্তিষ্ক পুনর্গঠন", সেরিব্রাল কর্টেক্স, ১৭ (২): ৪৫৭–৪৬৫ * ইয়ানকে, এল. (২০০৩). জ্ঞানীয় নিউরোসায়েন্স. বার্ন: ভারলাগ হান্স হুবের। ry0i9hod1tbusfm48uoqfrsrsx3otgg 84930 84929 2025-06-19T11:27:52Z Mehedi Abedin 7113 84930 wikitext text/x-wiki ==নিউরোপ্লাস্টিসিটি== মস্তিষ্কের কার্যকরী এবং কাঠামোগত সংগঠন প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কেও পরিবর্তিত হতে পারে এই ধারণা কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান। রমন ই কাজল ১৯২৮ সালে বলেছিলেন যে ক্ষতের পরে নিউরনগুলি পুনরায় উৎপাদন করতে পারে (স্ট্যানিশ এবং নিটশ, ২০০২)। কিন্তু গত দুই বা তিন দশকে এটি প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে যে কী পরিবর্তন ঘটে এবং কীভাবে ঘটে। মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলোকে মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বা নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলা হয়। নিউরোপ্লাস্টিসিটিকে কার্যকরী বা কাঠামোগত প্লাস্টিসিটিতে ভাগ করা যায়। যদিও মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা অবশ্যই সংযুক্ত, তবুও এই দুটি ধারণার মধ্যে পার্থক্য করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো ভিন্নভাবে পরিমাপ করা হয় এবং স্বাধীনভাবে ঘটতে পারে (বুওনোমানো এবং মারজেনিচ, ১৯৯৮)। ===কাঠামোগত নিউরোপ্লাস্টিসিটি=== [[File:Gray matter axonal connectivity.jpg|thumb|মস্তিষ্কের টিস্যু যেখানে নার্ভ বডি থাকে তা ধূসর দেখায়, আর অ্যাক্সোনাল ফাইবারের ট্র্যাক্ট সাদা দেখায়। এটি ধূসর এবং সাদা পদার্থের পার্থক্যের ভিত্তি।]] কাঠামোগত নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলতে মস্তিষ্কের টিস্যুর পরিবর্তন বোঝায়। এগুলো মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ বা সাদা পদার্থের পরিবর্তন হতে পারে। ধূসর পদার্থের পরিবর্তন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘনত্ব বা আয়তনের পরিবর্তন। আরো সুনির্দিষ্টভাবে, অভিজ্ঞতার কারণে প্রায়শই পুরুত্বের পরিবর্তন দেখা যায়, যেখানে একটি অঞ্চলের ক্ষেত্রফল অপরিবর্তিত থাকে। ক্ষেত্রফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিনগতভাবে নির্ধারিত বলে মনে হয়। যদিও মস্তিষ্কের সব অঞ্চল ধূসর পদার্থের ঘনত্বের একই হেরিটেবিলিটি দেখায় না। মানুষের মধ্যে ফ্রন্টাল এবং পেরিসিলভিয়ান অংশে ধূসর পদার্থের ঘনত্বের হেরিটেবিলিটি মস্তিষ্কের বাকি অংশের তুলনায় কম থাকে (থম্পসন এট আল., ২০০১)। [[File:Mapping-Human-Whole-Brain-Structural-Networks-with-Diffusion-MRI-pone.0000597.s005.ogv|300px|thumb|মস্তিষ্কের ডিফিউশন এমআরআই স্ক্যানের উদাহরণ (হ্যাগম্যান পি., ২০০৭)]] ধূসর পদার্থের ঘনত্ব, আয়তন, ক্ষেত্রফল এবং পুরুত্ব জীবিত মানুষের মস্তিষ্কে প্রায়শই ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) দ্বারা পরিমাপ করা হয়। সাদা পদার্থের পরিবর্তনও আয়তনের পরিবর্তন হতে পারে, তবে প্রায়শই সাদা পদার্থের অখণ্ডতার পরিবর্তন হয়, যেমন ফাইবার সংগঠন, মায়েলিনাইজেশনের মাত্রা বা অ্যাক্সোনাল প্রস্থের পরিবর্তন (জ্যাটোরে এট আল., ২০১২)। সাদা পদার্থের অখণ্ডতা ডিফিউশন টেনসর দ্বারা নির্ধারিত বলে মনে করা হয়, যা জীবিত টিস্যুতে ডিফিউশন টেনসর ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা সংক্ষেপে ডিফিউশন টেনসর ইমেজিং (ডিটিআই) নামক পদ্ধতি দ্বারা পরিমাপ করা হয়। এটি এমআরআই মেশিনে ব্যবহৃত পরিমাপ প্রোটোকলগুলোর একটি (জোন্স, ২০০৮)। ===কার্যকরী নিউরোপ্লাস্টিসিটি=== কার্যকরী নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলতে অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের পর মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোর কার্যকারিতার পরিবর্তন বা সক্রিয়করণ প্যাটার্নের পরিবর্তন বোঝায়। মস্তিষ্কের একটি অঞ্চল তার আকার পরিবর্তন না করে কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে। একইভাবে, মস্তিষ্কের টিস্যুর গঠনে পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই সক্রিয়করণ প্যাটার্ন পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তিত সক্রিয়করণ প্যাটার্নের অর্থ হতে পারে যে প্রশিক্ষণের পর কিছু অঞ্চল বেশি সক্রিয় এবং অন্যান্য অঞ্চল কম সক্রিয় হয়। কম সক্রিয়করণের অর্থ কম কার্যক্ষমতা নয়। একটি অঞ্চলের কম সক্রিয়করণ হতে পারে কারণ অন্য কোনো বিশেষায়িত অঞ্চল দায়িত্ব নিচ্ছে, বা কম সক্রিয় অঞ্চলটি প্রশিক্ষণের পর আরো কার্যকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু একইভাবে, বেশি সক্রিয়করণ প্রায়শই প্রশিক্ষণের পর উচ্চতর দক্ষতার কারণে বলে মনে করা হয় (জাঙ্কে, ২০১৩)। [[File:1206 FMRI.jpg|left|thumb|এটি একটি সাধারণ এফএমআরআই চিত্র। রঙে প্রদর্শিত সমস্ত ভক্সেল (পিক্সেলের থ্রিডি সমতুল্য) যা গ্রাউন্ড স্টেট থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। রঙিন অঞ্চলগুলি তাই গ্রাউন্ড স্টেটের তুলনায় বেশি সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।]] মানুষের মস্তিষ্কে সক্রিয়করণ পরিমাপের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হল ব্লাড-অক্সিজেন-লেভেল ডিপেন্ডেন্ট (বোল্ড) কনট্রাস্ট ইমেজিং, যা ফাংশনাল এমআরআইতে (এফএমআরআই) ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি এবং এটি অক্সিজেনযুক্ত এবং ডিঅক্সিজেনযুক্ত হিমোগ্লোবিনের সম্পর্ক পরিমাপ করে যা থেকে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ অনুমান করা যায় (আর্থারস এবং বোনিফেস, ২০০২)। প্রাণীদের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক কিন্তু অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন খোলা মাথার খুলিতে মাইক্রোইলেক্ট্রোড দিয়ে একক-কোষ রেকর্ডিং। ==ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে পরিবর্তন== পরিপক্কতার সময় কিছু মস্তিষ্কের কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। "গুরুত্বপূর্ণ সময়ে" মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট পূর্বনির্ধারিত উদ্দীপনার প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়। যদি স্নায়ুতন্ত্র এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উপযুক্ত উদ্দীপনা না পায়, তবে এই উদ্দীপনাগুলো প্রক্রিয়াকরণের কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হবে না। পরবর্তী জীবনে এই কার্যকারিতা বিকাশ করা কঠিন বা এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়ে (পারভস, ২০০৮)। মানুষের মধ্যে কথা শোনা সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত ঘটনা যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। আরেকটি উদাহরণ হল জন্মের পরপরই হাঁসের মায়ের উপর ছাপ ফেলা। ভিজ্যুয়াল সিস্টেমও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। বিড়ালদের জন্য এই সময়টি প্রায় চার সপ্তাহ বয়সে মাত্র কয়েক দিন। বানরদের ক্ষেত্রেও একই, তবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ===দৃষ্টি বঞ্চনা=== গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দৃষ্টি ইনপুটের বঞ্চনা ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে নিউরোনাল সংযোগের পরিবর্তন ঘটায় (পারভস, ২০০৮)। একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চনার পর ওকুলার ডমিনেন্স কলামের ভারসাম্যহীন বিকাশের মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলো চিত্রিত করা যায়। ওকুলার ডমিনেন্স কলামগুলো একটি চোখ বা অন্য চোখ থেকে ইনপুটের প্রতি পছন্দ করে সাড়া দেয়। এগুলো ভি১-এ একটি ডোরাকাটা প্যাটার্নে অবস্থিত এবং কর্টিকাল লেয়ার ৪-এ সবচেয়ে বিশিষ্ট, তবে অন্যান্য স্তরেও উপস্থিত। ডোরাগুলোর প্রস্থ প্রায় ০.৫ মিমি। একটি চোখে তেজস্ক্রিয় অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রেসার প্রবেশ করিয়ে কলামগুলো দৃশ্যমান করা যায়, যা পরে লেয়ার ৪-এ পরিবহন করা হয়। বিড়ালছানাদের উপর পরীক্ষায়, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে (জন্মের প্রথম তিন মাস) তাদের একটি চোখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তবে দৃষ্টি উদ্দীপনা পাওয়া চোখের কলামগুলো বঞ্চিত চোখের অঞ্চল দখল করে নেয়। ফলে, উদ্দীপিত চোখের ডোরাগুলো প্রশস্ত হয়, বঞ্চিত চোখের খরচে (হুবেল এবং উইজেল, ১৯৬২)। এটি ইঙ্গিত করে যে দুই চোখের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মিথস্ক্রিয়া বিদ্যমান, যা প্রাপ্ত দৃষ্টি উদ্দীপনার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। [[File:Mouse and human visual systems.jpg|thumb|362x362px|এখানে, মানুষের (ডানে) এবং ইঁদুরের (বামে) দৃষ্টি পথ দেখানো হয়েছে। মানুষের মধ্যে বাম এবং ডান চোখের তথ্য পৃথকভাবে প্রক্রিয়া করা হয় যতক্ষণ না তারা প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে (ভি১) পৌঁছায়। সেখানে তারা ওকুলার ডমিনেন্স কলামে প্রতিনিধিত্ব করা হয়। যদি বিকাশের সময় একটি চোখ বন্ধ থাকে, তবে সুস্থ চোখের ডমিনেন্স কলামগুলো প্রশস্ত হয়, আর বন্ধ চোখের কলামগুলো সঙ্কুচিত হয়।]] যখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দুটি চোখই বন্ধ করা হয়েছিল, তখন ওকুলার ডমিনেন্স কলামে দুই চোখের প্রতিনিধিত্ব ভারসাম্যপূর্ণ ছিল এবং দুই চোখেই দৃষ্টি বজায় ছিল। ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের এক-চতুর্থাংশ নিউরন প্রধানত একটি চোখ দ্বারা উদ্দীপিত হয়। যখন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি চোখের দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তখন সাধারণভাবে কার্যকর চোখ দখল করে নেয়। তবুও, পরীক্ষাগুলো প্রকাশ করেছে যে বন্ধ চোখের রেটিনা বা জেনিকুলেট লেয়ারের আরো পেরিফেরাল কোষগুলো তবুও স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই চোখের প্রতিযোগিতামূলক মিথস্ক্রিয়ার নীতিটি ছোট বাচ্চাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি বহন করে: সুস্থ বিকাশের জন্য দুই চোখের ভারসাম্যপূর্ণ উদ্দীপনা প্রয়োজন। জন্মগত ত্রুটি বা চোখের আঘাতের কারণে দুই চোখের ইনপুট ভারসাম্যহীন হতে পারে। যদি এই ভারসাম্যহীনতা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে সারানো না হয়, তবে এটি "অ্যাম্বলিওপিয়া" নামক স্থায়ী দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে দ্বিচক্ষু সংযোজন দুর্বল হয়, গভীরতা উপলব্ধি হ্রাস পায় এবং তীক্ষ্ণতা কমে যায় (পারভস, ২০০৮)। স্ট্র্যাবিসমাসকে কখনো কখনো “অলস চোখ” বলা হয়, এটি একটি চোখের অস্বাভাবিক কার্যকারিতা এবং অ্যাম্বলিওপিয়ার কারণ হতে পারে। একটি অতিরিক্ত চোখের পেশীর ত্রুটি দুটি চোখকে সারিবদ্ধ করতে এবং একটি বস্তুর উপর ফোকাস করতে অক্ষম করতে পারে। স্ট্র্যাবিসমাস "ইসোট্রপিয়া" বা "এক্সোট্রপিয়া" হিসেবে হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে, যেখানে চোখের দৃষ্টি ক্রস করে, যেখানে দৃষ্টি বিচ্যুত হয়। ফলে ডবল ভিশনের কারণে একটি চোখের তথ্য দমন করা হয়। এটি উপরে বর্ণিত একটি চোখের বঞ্চনার সাথে তুলনীয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত চোখের পেশীতে তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। আরেকটি রোগ যা একটি বা দুটি চোখে দৃষ্টি বঞ্চনার কারণ হতে পারে তা হল “ক্যাটারাক্ট”, চোখের লেন্স বা কর্নিয়ার ঝাপসা হওয়া। এই ঝাপসা ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণ (অনকোসেরকিয়াসিস) দ্বারা হতে পারে, যা প্রায়শই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঘটে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই রোগটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রায়শই চিকিৎসা না করা হয়, এবং পরবর্তীতে দ্বিচক্ষু দৃষ্টি পুনরুদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ===দৃষ্টি সিস্টেমের পুনর্জন্মের সম্ভাবনা=== ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্ক পরিপক্ক মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক বেশি প্লাস্টিক। এটি বিশেষ করে মোটর- এবং সোমাটোসেন্সরি এলাকার জন্য সত্য, এবং কিছুটা হলেও দৃষ্টি ব্যবস্থার জন্য। এই প্লাস্টিসিটির মধ্যে শুধু উপরে উল্লিখিত পরিবর্তনগুলোই নয়, মস্তিষ্কের ক্ষতির পর কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাও অন্তর্ভুক্ত। তবে, ক্ষতির অবস্থান এবং প্রকারের উপর প্লাস্টিসিটির ক্ষমতা নির্ভর করে, যা নিচে আলোচনা করা হয়েছে। দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা সচেতন এবং অচেতন দৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। সম্পূর্ণ সচেতন দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য রেটিনা এবং প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের মধ্যে একটি কার্যকর পথ প্রয়োজন (ফেলম্যান এবং ভ্যান এসেন, ১৯৯১)। প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছুটা অচেতন দৃষ্টি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। অচেতন দৃষ্টির মধ্যে গতি, আকৃতি এবং রঙের প্রতি সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্ত। প্রমাণ রয়েছে যে শৈশবে ক্ষতি ঘটলে অচেতন দৃষ্টি আরো ভালোভাবে বিকশিত হতে পারে (মার্কুরি এট আল., ২০০৩)। তবুও, জন্ম থেকে দৃষ্টি বঞ্চিত হলে এমনকি ছোট বাচ্চাদের জন্যও দৃষ্টি পুনরুদ্ধার করা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং এমআইটি ক্যামব্রিজে দৃষ্টি এবং কম্পিউটেশনাল নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক পবন সিনহা প্রকাশ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ভারতে ক্যাটারাক্ট এবং কর্নিয়াল অস্বচ্ছতায় আক্রান্ত শিশুদের খুঁজে বের করা এবং চিকিৎসা করা। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিমধ্যে ৪০,০০০ শিশু স্ক্রিন করা হয়েছে এবং ৪০০ জনের বেশি শিশুকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে (সিনহা ইট আল., ২০১৩)। এই প্রকল্প থেকে মানুষের দৃষ্টি ব্যবস্থার বিকাশ সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি উদ্ভূত হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরপরই এবং দৃষ্টি শুরু হওয়ার পর জন্মগতভাবে অন্ধ শিশুরা হাত দিয়ে স্পর্শ করা বস্তুকে দৃশ্যত চিনতে পারেনি। তাই লেখকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে স্পর্শ এবং দৃষ্টির মধ্যে কোনো সহজাত সংযোগ নেই, আমরা যা দেখি তা যা স্পর্শ করি তার সাথে সম্পর্কিত করতে প্রথমে শিখতে হয়। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর শিশুরা ইতিমধ্যে দেখা এবং স্পর্শ করা বস্তুগুলোর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। শুধু দেখা বস্তুকে স্পর্শ করা বস্তুর সাথে সম্পর্কিত করা নয়, দৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপরই বস্তু চিনতেও খুব দুর্বল, বিশেষ করে যখন বস্তুগুলো স্থির থাকে এবং ওভারল্যাপ করে। গতি বিভিন্ন বস্তুকে পৃথক করতে সহায়ক বলে মনে হয়। স্পষ্টতই জন্মগত অন্ধত্বের পর দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও বজায় থাকে। অস্ট্রোভস্কি ইট আল. (২০০৯) একজন ২৯ বছর বয়সী পুরুষ রোগীর কথা উল্লেখ করেছেন যিনি রিফ্র্যাক্টরি সংশোধনের মাধ্যমে আংশিকভাবে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। এক মাস পর তিনি ইতোমধ্যে স্থির, ওভারল্যাপিং বস্তুগুলো আলাদা করতে পারছিলেন। যদিও এগুলো চিত্তাকর্ষক ফলাফল, তবুও এটা স্পষ্ট নয় যে এই শিশুদের কতটা সত্যিই জন্মগতভাবে অন্ধ হিসেবে বিবেচনা করা যায়, কারণ তাদের অনেকেই সম্পূর্ণ অন্ধ নয় এবং বেশিরভাগই জন্মের সময় অন্ধ ছিল না, বরং শৈশবে দৃষ্টি হারিয়েছে। সুস্থ, দৃষ্টিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদেরও দৃষ্টি ব্যবস্থায় অভিযোজন এবং প্লাস্টিসিটির ক্ষমতা রয়েছে। ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। তাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল। একটি গ্রুপকে জাগলিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, অন্য গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। গবেষণায় নিয়োগের সময় সব সাবজেক্টই জাগলিংয়ে অনভিজ্ঞ ছিল। জাগলার গ্রুপের সাবজেক্টদের তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল তিনটি বল দিয়ে জাগলিং শিখতে। তারা দক্ষ পারফর্মার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল যখন তারা কমপক্ষে ৬০ সেকেন্ড ধরে জাগলিং চালিয়ে যেতে পারত। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে, দক্ষ পারফর্মার হওয়ার সময় এবং শেষ প্রশিক্ষণ সেশনের তিন মাস পর এমআরআই ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছিল। প্রশিক্ষণের আগে দুটি গ্রুপের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। জাগলার গ্রুপে ভি৫/এমটি দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং বাম পোস্টেরিয়র ইন্ট্রাপ্যারিয়েটাল সালকাসে (আইপিএস) ধূসর পদার্থের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ দেখানো হয়েছিল। প্রশিক্ষণের তিন মাস পর ধূসর পদার্থ ভি৫ এবং আইপিএস এ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল কিন্তু প্রাক-প্রশিক্ষণ স্ক্যানের তুলনায় তখনো উচ্চতর ছিল (ড্রাগানস্কি ইট আল., ২০০৪)। ===ক্রস-মোডাল প্লাস্টিসিটি=== [[File:Transcranial magnetic stimulation.jpg|300px|thumb|ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন হল মাথার নিরোধক টিস্যু জুড়ে এবং মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক শক্তি পৌঁছানোর একটি অ-আক্রমণাত্মক উপায়। একটি শক্তিশালী এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈদ্যুতিক প্রবাহ মাথার কাছে প্রয়োগ করা তারের কয়েলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। কয়েলের সমতলের সাথে লম্বভাবে অভিমুখী চৌম্বক ক্ষেত্র মাথার ত্বক এবং মাথার খুলি দিয়ে প্রায় বাধাহীনভাবে যায়। মস্তিষ্কে চৌম্বক ক্ষেত্র প্রবর্তিত বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে প্রবাহ সৃষ্টি করে যা কয়েলের সমতলের সমান্তরাল। এই প্রবাহগুলো প্রবর্তিত ক্ষেত্রের সমতলে অবস্থিত নিউরাল প্রক্রিয়াগুলোকে উত্তেজিত করতে সক্ষম, যা প্রায় সরাসরি কর্টিকাল স্টিমুলেশনের সাথে ইলেক্ট্রোডের অনুরূপ।]] ক্রস-মোডাল প্লাস্টিসিটি হল প্রাথমিক সংবেদী ইনপুটের বঞ্চনার পর একটি সংবেদী ইনপুটের প্রতি নিউরোনাল প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন। একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হল ইঁদুরের হুইস্কার ব্যবহার। হুইস্কারগুলো এই প্রাণীদেরকে অন্ধকারে স্থান নির্ধারণে সহায়তা করে। যদি শৈশবে দৃষ্টি বঞ্চিত হয়, তবে দেখা যায় যে হুইস্কারগুলো লম্বা হয়, যা অন্ধ ইঁদুরের স্থান নির্ধারণকে উন্নত করবে বলে মনে করা হয় (রাউসচেকার ইট আল., ১৯৯২)। দৃষ্টি বঞ্চনার পর শ্রবণ এবং স্পর্শ ব্যবস্থার মতো পরিপূরক সংবেদী ব্যবস্থার একই উন্নতি মানুষের মধ্যে দেখা যায়। সুস্থ এবং অন্ধ বিড়ালদের উপর শব্দ স্থানীয়করণের ক্ষমতার উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই পরীক্ষাগুলো প্রকাশ করেছে যে অন্ধ প্রাণীরা শব্দ স্থানীয়করণে বেশি নির্ভুল ছিল। অন্ধ বিড়ালরা শব্দের উৎস স্থানীয়করণের জন্য মাথা উল্লম্বভাবে সাধারণ নড়াচড়া করে। এই ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া সাধারণ শব্দ উপলব্ধি এবং স্থানীয়করণ উন্নত করতে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয় (রাউসচেকার, ১৯৯৫)। মানুষের উপর একটি তদন্তে, দৃষ্টিসম্পন্ন এবং অন্ধ ব্যক্তিদের শ্রবণ উদ্দীপনা দেওয়া হয়েছিল। দৃষ্টিসম্পন্ন সাবজেক্টদের অক্সিপিটাল কর্টেক্স শ্রবণ উদ্দীপনার প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, কিন্তু অন্ধ সাবজেক্টদের মধ্যে অক্সিপিটাল কর্টেক্স সক্রিয় ছিল। এই ঘটনাটি আরেকটি তদন্ত দ্বারা নিশ্চিত হয়েছিল, যা অক্সিপিটাল কর্টেক্সে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দমন করতে ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (টিএমএস) ব্যবহার করেছিল। এর ফলে অন্ধদের শব্দ স্থানীয়করণের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল, যেখানে পিচ বা তীব্রতা চিনতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্ধ সাবজেক্টদের মধ্যে স্থানীয়করণের নির্ভুলতা অক্সিপিটাল সক্রিয়করণের মাত্রার সাথে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত ছিল। তবে, এই হস্তক্ষেপ স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন সাবজেক্টদের শ্রবণ উপলব্ধিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি (কলিগনন ইট আল., ২০০৭)। আরেকটি আকর্ষণীয় উদাহরণ হল ইকোলোকেশন। কিছু অন্ধ মানুষ সক্রিয়ভাবে ইকোলোকেশন করতে শিখেছে। তারা তাদের জিহ্বা এবং মুখ দিয়ে ক্লিক শব্দ উৎপন্ন করতে শিখেছে এবং প্রতিফলিত শব্দের ব্যাখ্যা করে, যাতে তারা পরিবেশে দিক নির্ধারণ করতে এবং বিভিন্ন বস্তু থেকে দূরত্ব নির্ধারণ করতে পারে। এই ধরনের ইকোলোকেটিং ক্লিকগুলো সাধারণত সংক্ষিপ্ত (১০ মিলিসেকেন্ড) এবং বর্ণালীগতভাবে বিস্তৃত। প্রারম্ভিক এবং পরবর্তী অন্ধরা ইকোলোকেশনের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। কিন্তু মনে হয় শুধুমাত্র জন্মগত এবং প্রারম্ভিক অন্ধদের মধ্যেই ক্যালকারিন সালকাসের চারপাশে অক্সিপিটাল কর্টেক্সে বিস্তৃত সক্রিয়করণ ঘটে, পরবর্তী অন্ধদের মধ্যে নয় (থ্যালার ইট আল., ২০১১)। আমরা উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত প্লাস্টিসিটি সম্ভব, যদিও ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় রয়েছে। যদি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অক্সিপিটাল কর্টেক্স দৃশ্যত উদ্দীপিত না হয়, তবে ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের কিছু কার্যকারিতা কখনোই বিকশিত হবে না। এবং সম্ভবত ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স এমনকি ইকোলোকেশনের মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন কার্যকারিতার জন্য নিয়োজিত হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ের পর ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স কতটা প্লাস্টিক থাকে, তা এখনো বিতর্কের বিষয়। ==সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে পরিবর্তন== সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে কার্যকরী প্লাস্টিসিটির প্রথম পরীক্ষাগুলোর একটি মারজেনিচ এট আল (১৯৮৪) প্রাইমেটদের উপর করেছিলেন। প্রথমে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক ওউল বানরের হাতের অঞ্চলে আঙুলের কর্টিকাল প্রতিনিধিত্ব মাইক্রোইলেক্ট্রোড দিয়ে নির্ধারণ করেছিলেন। তারপর তিনি বানরের মধ্যম আঙুল কেটে ফেলেন এবং অ্যাম্পুটেশনের ২-৮ মাস পর হাতের অঞ্চলটি আবার ম্যাপ করেন। তারা দেখতে পান যে মাত্র দুই মাস পর পার্শ্ববর্তী আঙুলের প্রতিনিধিত্ব পূর্বে মধ্যম আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চলে প্রসারিত হয়। ফলে পার্শ্ববর্তী ত্বক কর্টেক্সে একটি বিবর্ধিত প্রতিনিধিত্ব পায়, যখন একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ত্বকের রিসেপটিভ ফিল্ডের আকার সঙ্কুচিত হয়। মনে হয় ত্বকের একই অংশের জন্য আরো নিউরন নিয়োগ করা রিসেপটিভ ফিল্ডের ছোট আকারের পথ প্রশস্ত করে। একইভাবে, যখন ওউল বানরের দুটি আঙুল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছিল, এবং এইভাবে এই দুটি আঙুলের ইনপুট অত্যন্ত সম্পর্কিত ছিল, তখন দুটি আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চলের মধ্যে সীমানা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল (ক্লার্ক ইট আল., ১৯৮৮)। অন্যদিকে, যখন বানরের আঙুলগুলো একটি সূক্ষ্ম এবং আরো জটিল উদ্দীপনার সম্মুখীন হয়েছিল (যেমন একটি ঢেউখেলানো ঘূর্ণায়মান ডিস্ক ব্যবহার করে) ৮০ দিন পর উদ্দীপিত আঙুলের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চল প্রশস্ত হয়েছিল। সম্ভবত কারণ সূক্ষ্মতর উদ্দীপনার জন্য ছোট রিসেপটিভ ফিল্ড প্রয়োজন, তাই আরো নিউরন নিয়োগ করতে হয়েছিল এবং আঙুলের অঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছিল (জেনকিন্স, মারজেনিচ এবং রেকানজোন, ১৯৯০)। ===ফ্যান্টম লিম্বস=== মানুষের উপর কার্যকরী প্লাস্টিসিটির প্রথম এবং প্রভাবশালী অন্তর্দৃষ্টি রামচন্দ্রন (১৯৯৩) এনেছিলেন। তিনি দেখতে পান যে কিছু রোগী, যাদের উপরের অঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছিল, তাদের ইপ্সিল্যাটারাল মুখে তুলোর কুঁড়ি দিয়ে উদ্দীপনা দেওয়া হলে তারা অনুভব করতেন যে কেউ তাদের অস্তিত্বহীন বাহুতে স্পর্শ করছে। তিনি এমনকি রোগীর গাল এবং চোয়ালে পূর্বের অঙ্গের একটি মানচিত্র আঁকতে সক্ষম হন। অ্যাম্পুটেড অঙ্গের এই প্রতিনিধিত্বের সুনির্দিষ্ট সীমানা ছিল এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল ছিল। যেহেতু সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে মুখের অঞ্চলটি হাতের অঞ্চলের ঠিক পাশে থাকে, তাই সম্ভবত মুখের অঞ্চলটি পূর্বে অ্যাম্পুটেড অঙ্গ থেকে ইনপুট গ্রহণকারী নিউরনগুলো নিয়োগ করছে, ঠিক যেমন ওউল বানরদের পরীক্ষায়। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কিছু নিউরন মুখ থেকে আগত সংবেদী উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেওয়া শুরু করবে যখন তারা এখনো পূর্বের হাতের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে, যার ফলে ইপ্সিল্যাটারাল মুখে অ্যাম্পুটেড অঙ্গের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হয়। এই প্রতিনিধিত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবার অদৃশ্য হয়ে যায় (জাঙ্কে, ২০১৩)। সম্ভবত ফ্যান্টম লিম্ব সংবেদনও এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। কিছু রোগী এমন সংবেদন অনুভব করেন যেন তাদের অ্যাম্পুটেড অঙ্গ এখনো আছে, যাকে “ফ্যান্টম লিম্ব” বলা হয়। কখনো কখনো এই সংবেদন বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে। কিছু রোগী তাদের ফ্যান্টম লিম্বে বেদনাদায়ক অনৈচ্ছিক ক্লেঞ্চিং স্প্যাজম অনুভব করেন (রামচন্দ্রন এবং রজার্স-রামচন্দ্রন, ১৯৯৬)। প্রায়শই যখন ট্রানজিশনাল পিরিয়ড শেষ হয় এবং পূর্বের অঙ্গের নিউরনগুলো মুখের মতো অন্যান্য অঞ্চলে সম্পূর্ণরূপে একত্রিত হয়, তখন ফ্যান্টম লিম্বের সংবেদন অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু কিছু রোগী স্থায়ী ফ্যান্টম লিম্ব সংবেদনে ভোগেন। এই ক্ষেত্রে প্রায়শই ব্যবহৃত থেরাপি হল মিরর থেরাপি, যেখানে একটি আয়না রোগীর সামনে উল্লম্বভাবে স্থাপন করা হয় যাতে আয়নায় অক্ষত অঙ্গটি অ্যাম্পুটেড অঙ্গের জায়গায় সুপারইম্পোজড হয়। যদিও মিরর থেরাপি সব রোগীদের সাহায্য করে না (রথগ্যাঞ্জেল ইট আল., ২০১১), কিছু রোগী উপকৃত হন, উদাহরণস্বরূপ, তাদের সুস্থ হাত খোলার মাধ্যমে তারা আয়নায় মানসিকভাবে তাদের ফ্যান্টম হাত খুলতে পারেন, যা ক্লেঞ্চিং স্প্যাজম থেকে মুক্তি দেয়। আয়না ছাড়া তারা ফ্যান্টম হাত শিথিল করতে পারতেন না (রামচন্দ্রন এবং রজার্স-রামচন্দ্রন, ১৯৯৬)। কিন্তু শুধু কার্যকরী নয় এমন অঙ্গ অ্যাম্পুটেশনের পর কাঠামোগত পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হয়। ড্রাগানস্কি ইট আল (২০০৬) দেখতে পান যে অঙ্গ অ্যাম্পুটেড রোগীদের থ্যালামিক ভেন্ট্রাল পোস্টেরোল্যাটারাল নিউক্লিয়াসে বয়স-মিলিত সুস্থ নিয়ন্ত্রণের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ধূসর পদার্থ ছিল। তাছাড়া, অ্যাম্পুটেশনের সময়ের সাথে থ্যালামাসে ধূসর পদার্থের ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পর্কিত ছিল (r=.39)। ===প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন=== সংগীতজ্ঞদের উপর প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে। সংগীতজ্ঞরা খুব নিবিড়ভাবে এবং প্রায়শই জীবনব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন, তাই তারা ক্রস-সেকশনাল গবেষণার জন্য আদর্শ সাবজেক্ট। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্রিং বাদকদের সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে বাম হাতের আঙুলের অ-সংগীতজ্ঞদের তুলনায় বড় অঞ্চল থাকে এবং একজন সংগীতজ্ঞ যত তাড়াতাড়ি জীবনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন, তার অ-প্রভাবশালী হাতের অঞ্চল তত বড় হয় (এলবার্ট ইট আল., ১৯৯৫)। পিয়ানোবাদকরা একটি ট্যাপিং টাস্কে প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি মোটর এলাকার তুলনায় অ-সংগীতজ্ঞদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম সক্রিয়করণ দেখান। এই ফলাফলের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল যে পিয়ানোবাদকদের নিবিড় এবং দীর্ঘস্থায়ী হাতের দক্ষতা প্রশিক্ষণ মোটর এলাকার দক্ষতা বাড়িয়েছে। ফলে একই কাজে প্রশিক্ষিত সাবজেক্টদের তুলনায় অপ্রশিক্ষিতদের তুলনায় কম নিউরন সক্রিয় হয় (জ্যাঙ্কে ইট আল., ২০০০)। সংগীতজ্ঞরা শ্রবণ কর্টেক্সেরও বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান (পরবর্তী বিভাগে এ সম্পর্কে আরো)। ক্রস-সেকশনাল গবেষণার একটি প্রায়শই উত্থাপিত সমালোচনা হল যে প্রশিক্ষিত মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলের পার্থক্য প্রশিক্ষণের কারণে হয়েছে নাকি তারা একটি নির্দিষ্ট কাজে (যেমন সংগীতজ্ঞ হওয়া) প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে হয়েছে, কারণ তারা সেই কাজের জন্য বিশেষভাবে সক্ষম ছিল এবং সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলটি প্রশিক্ষণের আগেই আরো কার্যকর বা বড় ছিল তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র লংগিটুডিনাল গবেষণাই এই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারে। একটি লংগিটুডিনাল গবেষণা ১০ জন ডানহাতি রোগীর উপর পরিচালিত হয়েছিল যাদের উপরের ডান অঙ্গে আঘাতের কারণে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য অঙ্গটি স্থির করা প্রয়োজন ছিল। আঘাতের দুই দিনের মধ্যে একটি ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছিল এবং কর্টিকাল পুরুত্ব পরিমাপ করা হয়েছিল। ১৬ দিন স্থিরকরণের পর দ্বিতীয় স্ক্যানে দেখা গেছে যে বাম প্রাথমিক মোটর এলাকা এবং বাম সোমাটোসেন্সরি এলাকায় উল্লেখযোগ্য ধূসর পদার্থ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও কর্টিকোস্পাইনাল ট্র্যাক্টের অখণ্ডতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে (ল্যাঙ্গার ইট আল., ২০১২)। আরেকটি গবেষণায় ১৪ জন ডানহাতি রোগীর প্রভাবশালী হাতে রাইটার্স ক্র্যাম্পের জন্য ৪ সপ্তাহের জন্য স্থির করা হয়েছিল। স্থিরকরণের পর রোগীদের ৮ সপ্তাহ ধরে তাদের প্রভাবশালী হাতের জন্য পুনরায় প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছিল। এখানেও একটি এমআরআই স্ক্যানে দেখা গেছে যে স্থিরকরণ পর্বের পর কন্ট্রাল্যাটারাল প্রাথমিক মোটর হ্যান্ড এলাকায় ধূসর পদার্থের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। পুনঃপ্রশিক্ষণ এই প্রভাবগুলোকে বিপরীত করেছিল এবং ধূসর পদার্থের ঘনত্ব আবার বৃদ্ধি পেয়েছিল (গ্রেনার্ট ইট আল., ২০১১)। বেজোলা ইট আল (২০১১) ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী গল্ফ নবীনদের তদারকি করেছিলেন। এবং ৪০ ঘণ্টা ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণের পর মোটর এবং প্রিমোটর কর্টেক্স বা ইন্ট্রাপ্যারিয়েটাল সালকাসের মতো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে ধূসর পদার্থের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাওয়া গেছে। প্রশিক্ষণের তীব্রতা ধূসর পদার্থ বৃদ্ধির শতাংশের সাথে সম্পর্কিত ছিল। এছাড়াও গল্ফ সুইং মানসিকভাবে পুনরায় করার সময় সক্রিয়করণ প্যাটার্নের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল। প্রশিক্ষণের পর ডরসাল প্রিমোটর কর্টেক্স উল্লেখযোগ্যভাবে কম সক্রিয় ছিল (বেজোলা ইট আল., ২০১২)। ===মস্তিষ্কের ক্ষতির পর পুনর্বাসন=== অবশেষে, মস্তিষ্কের ক্ষতির পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াগুলো বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। পূর্বে বর্ণিত প্লাস্টিসিটি ক্ষমতাগুলো পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কিন্তু প্রধানত দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, যদি ক্ষতি খুব বড় হয় যাতে সম্পূর্ণ কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যায়, তবে এখন পর্যন্ত কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় নেই। দ্বিতীয়ত, আংশিকভাবে সংরক্ষিত কার্যকারিতাগুলো প্রায়শই কন্ট্রাল্যাটারাল সুস্থ অঞ্চল দ্বারা দমন করা হয় যার একই বা অনুরূপ কার্যকারিতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি শরীরের বাম পাশ আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়, তবে সুস্থ বাম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে কারণ ক্ষতিগ্রস্ত ডান গোলার্ধ থেকে বাম গোলার্ধে কোনো বাধা নেই। ফলে সুস্থ গোলার্ধ ক্ষতিগ্রস্ত গোলার্ধকে দমন করবে এবং পুনর্বাসন বাধাগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত পাশে এখনো সুস্থ নিউরনগুলোর পুনঃতারযুক্তকরণ বাধাগ্রস্ত হবে। এটি কাটিয়ে ওঠার একটি উপায় হল পুনর্বাসন প্রশিক্ষণের সময় বা ঠিক আগে টিএমএস বা ট্রান্সক্রানিয়াল ডাইরেক্ট-কারেন্ট স্টিমুলেশন (টিডিসিএস) দিয়ে সুস্থ গোলার্ধকে দমন করা (জাঙ্কে, ২০০৩)। সংক্ষেপে বলা যায়, একটি অঙ্গ বেশি ব্যবহার করা বা একটি নির্দিষ্ট কাজে প্রশিক্ষণ নেওয়া সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত আরো দক্ষতা, আরো ধূসর পদার্থ এবং সাদা পদার্থের ভালো অখণ্ডতা আসবে। একটি অঙ্গ ব্যবহার না করা, একটি ক্ষমতা প্রশিক্ষণ না দেওয়া বিপরীত প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে চরম ক্ষেত্রে অ্যাম্পুটেড অঙ্গের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলো অন্যান্য কার্যকারিতা দ্বারা দখল করা হবে। ==তথ্যসূত্র== * আর্থার্স, ও. জে.; বনিফেস, এস. (২০০২), "আমরা কতটা ভালোভাবে এফএমআরআই বোল্ড সিগন্যালের স্নায়বিক উৎস বুঝতে পারি?", ট্রেন্ডস ইন নিউরোসায়েন্সেস, ২৫ (১): ২৭–৩১ * বেজোলা, এল.; মেরিল্যাট, এস.; গাসের, সি.; ইয়ানকে, এল. (২০১১), "গল্ফ নবীনদের মধ্যে প্রশিক্ষণ-প্ররোচিত স্নায়বিক প্লাস্টিসিটি", জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্স, ৩১ (৩৫): ১২৪৪৪–১২৪৪৮ * বেজোলা, এল.; মেরিল্যাট, এস.; ইয়ানকে, এল. (২০১২), "অবসর কার্যকলাপ গল্ফ অনুশীলনের মোটর ইমেজারির উপর প্রভাব: মধ্য প্রাপ্তবয়সে একটি এফএমআরআই গবেষণা", ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্স, ৬ (৬৭) * বুওনোমানো, ডি. ভি.; মারজেনিচ, এম. এম. (১৯৯৮), "কর্টিকাল প্লাস্টিসিটি: সিনাপ্স থেকে মানচিত্র", অ্যানুয়াল রিভিউ অফ নিউরোসায়েন্স, ২১: ১৪৯–১৮৬ * ক্লার্ক, এস. এ.; অলার্ড, টি.; জেনকিন্স, ডব্লিউ. এম.; মারজেনিচ, এম. এম. (১৯৮৮), "প্রাপ্তবয়স্ক কর্টেক্সে শরীর-পৃষ্ঠ মানচিত্রে গ্রহণক্ষেত্র সময়ের সাথে সম্পর্কিত ইনপুট দ্বারা সংজ্ঞায়িত", নেচার, ৩৩২: ৪৪৪–৪৪৫ * কলিগনন, ও.; লাসন্ডে, এম.; লেপোর, এফ.; বাস্তিয়েন, ডি.; ভেরার্ট, সি. (২০০৭), "প্রারম্ভিক অন্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রবণ স্থানিক প্রক্রিয়াকরণ এবং দৃষ্টির শ্রবণ প্রতিস্থাপনের জন্য কার্যকরী মস্তিষ্ক পুনর্গঠন", সেরিব্রাল কর্টেক্স, ১৭ (২): ৪৫৭–৪৬৫ * ইয়ানকে, এল. (২০০৩). জ্ঞানীয় নিউরোসায়েন্স. বার্ন: ভারলাগ হান্স হুবের। 5d6b23tmztxzbud8t8grua71p1dxcs9 ইন্দ্রিয়তন্ত্র/জেলিফিশ 0 24218 84877 76381 2025-06-19T03:30:16Z Mehedi Abedin 7113 84877 wikitext text/x-wiki == জেলিফিশ: বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা == === পরিচিতি === প্রায় সব জীবন্ত প্রাণীই আলো সংবেদন করতে সক্ষম, অর্থাৎ ৩০০-৮০০ ন্যানোমিটার পরিসরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের প্রতি সাড়া দিতে পারে। দৃষ্টি ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ জীবন বৃক্ষে একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত প্রাণীরা আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম, কখনও কখনও খুব জটিল টুল তৈরি করেছে যা তাদের আলো সংবেদন করতে সক্ষম করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বক্স জেলিফিশের (শ্রেণি কিউবোজোয়া, ফাইলাম নিডারিয়া) দৃষ্টি ব্যবস্থা (চিত্র ১): এটি সবচেয়ে জটিল নিডারিয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা। এই সুন্দর জলজ প্রাণীদের চোখ আমাদের চোখের সাথে খুবই মিল! কিউবোজোয়া শ্রেণির সদস্যদের (নিডারিয়া ফাইলামের ক্ষুদ্রতম শ্রেণি) ব্যতিক্রমী দৃষ্টিশক্তি লক্ষ্য করা গেছে যখন দেখা গেছে যে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে জটিল সাঁতারের আচরণ প্রদর্শন করে: তারা নির্দিষ্ট দিকে খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে এবং অন্ধকার এলাকা ও বাধা এড়াতে পারে। [[File:Tripedalia-cystophora-Bielecki.jpg|thumb|চিত্র ১: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা, ক্যারিবীয় সাগরের একটি বক্স জেলিফিশ।]] বক্স জেলিফিশ কীভাবে দেখে তা অধ্যয়ন করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষামূলক চেম্বারে আলোর অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে প্রাণীদের বাঁধা রাখা হয়, সেখানে পালস ফ্রিকোয়েন্সি, সংকোচন এবং জেলিফিশের ঘণ্টার গঠনগত অসামঞ্জস্যের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা মুক্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে এড়ানো এবং কাছে যাওয়ার সাঁতারের আচরণে রূপান্তরিত হয়। গত কয়েক দশকে বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্র, দৃষ্টি ব্যবস্থা সহ, শারীরবৃত্তীয়, কোষীয়, আণবিক এবং জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রাণীদের জটিল চোখ সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান এখনও অসম্পূর্ণ। === শারীরস্থান === বক্স জেলিফিশের নামকরণ হয়েছে এর ঘণ্টার ঘনকাকৃতির আকৃতির জন্য, যা প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। ঘণ্টার প্রতিটি পাশে চারটি রোপালিয়া অবস্থিত – সংবেদনশীল কাঠামো যা মোট ২৪টি বিভিন্ন ধরনের চোখ ধারণ করে। এই ধরনের দৃষ্টি অঙ্গের অবস্থান কিউবোমেডুসাকে প্রায় ৩৬০-ডিগ্রি দৃষ্টিক্ষেত্র প্রদান করে! আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের চোখ বাইরের দিকে নয়, বরং মেডুসার ভিতরের দিকে (অর্থাৎ একে অপরের দিকে!) তাকায়, কিন্তু ঘণ্টার স্বচ্ছতার কারণে তারা সব দিকে দেখতে পায়। জেলিফিশের চোখের অবস্থান পেশি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই, তাই রোপালিয়া একটি ক্রিস্টাল কাঠামোর সাহায্যে একই প্রাকৃতিক দিক বজায় রাখে, যাকে স্ট্যাটোলিথ বলা হয়, এটি নিচের দিকে ওজন হিসেবে কাজ করে এবং উপরের নমনীয় ডাঁটির মাধ্যমে ঘণ্টার সাথে সংযুক্ত থাকে। রোপালিয়ার ছয়টি চোখ চারটি ভিন্ন রূপগত ধরনের (চিত্র ২): উপরের এবং নিচের জটিল লেন্সযুক্ত মানুষের ধরনের চোখ (ইউএলই এবং এলএলই) উল্লম্ব মধ্যরেখায়, এবং প্রতিটি পাশে শুধুমাত্র আলো-সংবেদনশীল পিগমেন্টযুক্ত সাধারণ চোখ, যাকে পিট এবং স্লিট চোখ (পিই এবং এসই) বলা হয়। যদিও নিডারিয়ানরা রেডিয়ালি প্রতিসম প্রাণী, তাদের রোপালিয়ার স্নায়ুতন্ত্র দ্বিপাক্ষিকভাবে প্রতিসম, লেন্স চোখের মধ্যরেখার অবস্থান ব্যতীত। রোপালিয়াল নার্ভযুক্ত ডাঁটি রোপালিয়াম এবং ঘণ্টার প্রান্তে থাকা রিং নার্ভের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করে, যা পুনরায় নার্ভ নেটের সাথে সংযুক্ত হয়ে বক্স জেলিফিশের সম্পূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। [[File:Cubozoan visual system in Tripedalia cystophora.png|thumb|চিত্র ২: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা-র কিউবোজোয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা]] রোপালিয়ায় নিউরোনাল এবং নন-নিউরোনাল কোষ উভয়ই বর্ণনা করা হয়েছে, যা বিভিন্ন কোষের জনসংখ্যা গঠন করে। নিউরোনাল কোষগুলো দুটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম গ্রুপে জড়ো হয়, যা একে অপরের সাথে এবং পিট ও স্লিট চোখের সাথে ফাইবার পথের মাধ্যমে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে, রোপালিয়ায় ১০০০-এর বেশি নিউরোনাল কোষ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন যা লেন্স চোখের সাথে যুক্ত ফ্ল্যাঙ্ক নিউরন জায়ান্ট নিউরন নন-নিউরোনাল কোষের মধ্যে রয়েছে সিলিয়েটেড ফটোরিসেপ্টর কোষ যা প্রাথমিক আলো সংবেদনের জন্য দায়ী, বেলুন কোষ যার কার্যকারিতা অজানা এবং পোস্টেরিয়র কোষ শীট – অপরিবর্তিত কোষের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা যা সম্ভবত স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। ==== লেন্স চোখ ==== বক্স জেলিফিশের লেন্স চোখ আমাদের চোখের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিল কারণ এতে ক্যামেরা রয়েছে যার মধ্যে লেন্স এবং রেটিনার মধ্যে ভিট্রিয়াস বডি বিভাজন করে (তাই এর নাম "ক্যামেরা চোখ")। লেন্স চোখের স্থানিক রেজোলিউশন দুর্বল কারণ রেটিনা লেন্সের খুব কাছে অবস্থিত, শুধুমাত্র পাতলা ভিট্রিয়াস স্পেস (নিচের লেন্স চোখে প্রায় ৮ মাইক্রোমিটার, উপরের লেন্স চোখে অনুপস্থিত) দ্বারা পৃথক, যেখানে লেন্সের ফোকাল দৈর্ঘ্য রেটিনার অনেক পিছনে পড়ে (৪০০-৬০০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে)। মানুষের ক্ষেত্রে, তুলনায়, ক্যামেরার আকার প্রায় ২৩ মিলিমিটার। ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাফি নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে চোখে একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে বিভিন্ন দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় কোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়, উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় চোখের ধরনেরই সময়গত রেজোলিউশন কম, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন, যা ইঙ্গিত করে যে তারা বিভিন্ন দৃশ্যমান কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাম থেকে সর্বাধিক ফ্রিকোয়েন্সি (যাকে ফ্লিকার ফিউশন ফ্রিকোয়েন্সিও বলা হয়) উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের জন্য যথাক্রমে ১০ এবং ৮ হার্জ বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া, দুটি লেন্স চোখের দৃষ্টিক্ষেত্র ভিন্ন, যা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা কভার করে। সামগ্রিকভাবে, এটা সম্ভাব্য বলে মনে হয় যে বক্স জেলিফিশের চোখ নির্দিষ্ট কাজের জন্য সূক্ষ্মভাবে সুর করা হয়েছে, যা রোপালিয়ায় দৃশ্যমান উদ্দীপনার ফিল্টারিংয়ের অনুমতি দেয়। === বক্স জেলিফিশের কি রঙিন দৃষ্টি আছে? === একটি কৌতূহলী প্রশ্ন হলো কিউবোমেডুসা অর্ডারের সদস্যদের কি আমাদের মতো উন্নত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো রঙিন দৃষ্টি আছে? প্রাণীজগতে দুই ধরনের ফটোরিসেপ্টর রয়েছে: সিলিয়ারি, যা সাধারণত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং র্যাবডোমেরিক, যা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়। আকর্ষণীয়ভাবে, বক্স জেলিফিশের মধ্যে মেরুদণ্ডী-জাতীয় সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর রয়েছে। যদিও উভয় ধরনের ফটোরিসেপ্টরই আলোর সংস্পর্শে রেটিনাল অণুর একই রাসায়নিক রূপান্তরের উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ ব্লিচিং), তারা প্রক্রিয়া, গঠন, উৎপত্তি এবং আণবিক পথের দিক থেকে ভিন্ন। উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের রেটিনায় থাকা রিসেপ্টরগুলো সাধারণত নীল-সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল, যার শীর্ষ শোষণ ৪৬৫-৫০৮ ন্যানোমিটারের মধ্যে, প্রজাতির উপর নির্ভর করে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে বক্স জেলিফিশ সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যদিও সবুজ রঙ-নির্দেশিত বাধা এড়ানোর পরীক্ষাগুলো সিদ্ধান্তহীন ফলাফল দিয়েছে। অগভীর জলে বসবাসকারী এই প্রাণীদের জন্য রঙিন দৃষ্টি একটি উপযোগী অভিযোজন হতে পারে, যেখানে পৃষ্ঠের ঢেউয়ের কারণে ঝিকমিক আলো থাকে, যাতে লুমিন্যান্স (অর্থাৎ উজ্জ্বলতা, তীব্রতা) শব্দ থেকে প্রাসঙ্গিক দৃশ্যমান উদ্দীপনা আলাদা করা যায়, কারণ রঙিন দৃষ্টি লুমিন্যান্সের ওঠানামার প্রতি কম সংবেদনশীল। === দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণ এবং সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণ === এখন পর্যন্ত, শুধুমাত্র নিচের লেন্স চোখের গুরুত্ব সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ঘণ্টার সংকোচন হারের ভূমিকা রয়েছে, যা চলমান প্রাণীর গতি নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, লেন্স চোখের অপটিক্যাল শক্তি কিউবোমেডুসার প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয়, যা আরও পরিবর্তনশীলতা প্রবর্তন করে। স্লিট এবং পিট চোখের পেসমেকার কার্যকলাপে (ঘণ্টার স্পন্দনশীল চলাচল) এবং সাঁতারের দিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কিছুটা অস্পষ্ট এবং ভবিষ্যতে এমন পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট করা যেতে পারে যেখানে নির্দিষ্ট চোখের ধরন নির্বাচনীভাবে অকার্যকর করা হবে। [[File:Alatina alata swimming Johnoson Sea Link near the Bahamas.ogv|thumb|আলাটিনা আলাটা বক্স জেলিফিশ বাহামার কাছে সাঁতারচ্ছে]] বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্রে দৃশ্যমান ইনপুটের একীকরণ কীভাবে ঘটে তাও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া ডাঁটিতে (নার্ভ রিংয়ের একটি সম্প্রসারণ) এবং রোপালিয়ামের স্নায়ুতন্ত্রে উভয় ক্ষেত্রেই সনাক্ত করা গেছে। রোপালিয়ার মধ্যে নির্দিষ্ট নিউরোনাল কোষের সাথে নির্দিষ্ট চোখের ধরনের সম্পর্ক নির্দেশ করে যে কিছু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণ এই কাঠামোর মধ্যেই ঘটে। সম্ভবত সাঁতারের গতি, যা শরীর এবং টেন্টাকলের সংকোচনের হার এবং শক্তির উপর নির্ভর করে, একটি পৃথক নিউরোনাল জনসংখ্যার পেসমেকার কার্যকলাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা দৃশ্যমান তথ্যের উচ্চতর প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণের জন্য দায়ী। ফ্ল্যাঙ্ক এবং জায়ান্ট নিউরন এই কাজটি পালন করতে পারে। সূক্ষ্ম স্টিয়ারিং পুনরায় স্বাধীন সংকেত এবং ঘণ্টার বিভিন্ন পাশের অসম সংকোচনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। === বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ === জেনেটিকভাবে, বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের তুলনায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাথে বেশি সম্পর্কিত বলে মনে হয়, কারণ তারা আলো সংবেদনের অন্তর্নিহিত আণবিক পথের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাগ করে (উদাহরণস্বরূপ, ফটোট্রান্সডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফোডাইস্টেরেজ এবং রেটিনায় প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট-উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি)। অন্যথায় রেডিয়ালি প্রতিসম জেলিফিশের রোপালিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের দ্বিপাক্ষিক সংগঠন (রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন ব্যতীত) এই প্রমাণ হতে পারে যে নিডারিয়ানরা একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বক্স জেলিফিশ এবং মেরুদণ্ডী উভয়ের দ্বারা সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর এবং মেলানোজেনিক পথের ব্যবহার হয় সাধারণ পূর্বপুরুষ বা স্বাধীন সমান্তরাল বিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। বক্স জেলিফিশের অসাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থার আরও তদন্ত তাই উন্নত ক্যামেরা চোখের বিবর্তনীয় উৎপত্তির রহস্য সমাধানে সহায়ক হবে। === তথ্যসূত্র === ১. বিয়েলেকি জে, হোয়েগ জেটি, গার্ম এ: মেটাজোয়ান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফিক্সেশনাল চোখের নড়াচড়া। ২০১৩। পিএলওএস ওয়ান। ৮(৬):ই৬৬৪৪২। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23776673 pubmed] ২. একস্ট্রোম পি, গার্ম এ, পলসন জে, ভিহটেলিক টিএস, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশে একাধিক ফটোসিস্টেমের ইমিউনোহিস্টোকেমিক্যাল প্রমাণ। ২০০৮। সেল অ্যান্ড টিস্যু রিসার্চ। ৩৩৩(১):১১৫-২৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18504619 pubmed] ৩. কোজমিক জেড, রুজিকোভা জে, জোনাসোভা কে, মাতসুমোতো ওয়াই, ভোপালেনস্কি পি, কোজমিকোভা আই, স্ট্রনাড এইচ, কাওয়ামুরা এস, পিয়াটিগোর্স্কি জে, পেসেস ভি, ভ্লসেক সি: মেরুদণ্ডী-জাতীয় উপাদান থেকে নিডারিয়ান ক্যামেরা-টাইপ চোখের সমাবেশ। ২০০৮। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউএসএ। ১০৫(২৬):৮৯৮৯-৯৩। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18577593 pubmed] ৪. কোজমিক জেড: চোখের বিবর্তনে প্যাক্স জিনের ভূমিকা। ২০০৮। ব্রেন রিসার্চ বুলেটিন। ৭৫(২-৪):৩৩৫-৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18331895 pubmed] ৫. নর্ডস্ট্রোম কে, ওয়ালেন আর, সিমোর জে, নিলসন ডি: জেলিফিশ লার্ভায় নিউরনবিহীন একটি সাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থা। ২০০৩। প্রসিডিংস অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭০(১৫৩১):২৩৪৯-৫৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/14667350 pubmed] ৬. ও’কনর এম, গার্ম এ, মার্শাল জেএন, হার্ট এনএস, একস্ট্রোম পি, স্কোগ সি, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির লেন্স চোখে দৃষ্টি পিগমেন্ট। ২০১০। প্রসিডিংস বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭৭(১৬৮৯):১৮৪৩-৮। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20147327 pubmed] ৭. ও’কনর এম, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির চোখের গঠন এবং অপটিক্স{{typo help inline|reason=similar to bronzier|date=September 2022}}। ২০০৯। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৫(৬):৫৫৭-৬৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19347342 pubmed] ৮. ও’কনর এম, নিলসন ডিই, গার্ম এ: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য। ২০১০। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৬(৩):২১৩-২০। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20131056 pubmed] ৯. পেটি আর, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরায় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত স্টিয়ারিং। ২০১১। জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি। ২১৪(পিটি ১৭):২৮০৯-১৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21832123 pubmed] ১০. পিয়াটিগোর্স্কি জে, কোজমিক জেড: কিউবোজোয়ান জেলিফিশ: চোখ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার জন্য একটি ইভো/ডেভো মডেল। ২০০৪। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি। ৪৮(৮-৯):৭১৯-২৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15558464 pubmed] ১১. স্কোগ সি, গার্ম এ, নিলসন ডিই, একস্ট্রোম পি: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম রোপালিয়াল স্নায়ুতন্ত্র। ২০০৬। জার্নাল অফ মরফোলজি। ২৬৭(১২):১৩৯১-৪০৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/16217792 pubmed] g0pk7ixhr9kx5g6wenwx0w9xpq54vvo 84878 84877 2025-06-19T03:34:04Z Mehedi Abedin 7113 84878 wikitext text/x-wiki == জেলিফিশ: বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা == === পরিচিতি === প্রায় সব জীবন্ত প্রাণীই আলো সংবেদন করতে সক্ষম, অর্থাৎ ৩০০-৮০০ ন্যানোমিটার পরিসরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের প্রতি সাড়া দিতে পারে। দৃষ্টি ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ জীবন বৃক্ষে একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত প্রাণীরা আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম, কখনও কখনও খুব জটিল টুল তৈরি করেছে যা তাদের আলো সংবেদন করতে সক্ষম করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বক্স জেলিফিশের (শ্রেণি কিউবোজোয়া, ফাইলাম নিডারিয়া) দৃষ্টি ব্যবস্থা (চিত্র ১): এটি সবচেয়ে জটিল নিডারিয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা। এই সুন্দর জলজ প্রাণীদের চোখ আমাদের চোখের সাথে খুবই মিল! কিউবোজোয়া শ্রেণির সদস্যদের (নিডারিয়া ফাইলামের ক্ষুদ্রতম শ্রেণি) ব্যতিক্রমী দৃষ্টিশক্তি লক্ষ্য করা গেছে যখন দেখা গেছে যে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে জটিল সাঁতারের আচরণ প্রদর্শন করে: তারা নির্দিষ্ট দিকে খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে এবং অন্ধকার এলাকা ও বাধা এড়াতে পারে। [[File:Tripedalia-cystophora-Bielecki.jpg|thumb|চিত্র ১: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা, ক্যারিবীয় সাগরের একটি বক্স জেলিফিশ।]] বক্স জেলিফিশ কীভাবে দেখে তা অধ্যয়ন করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষামূলক চেম্বারে আলোর অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে প্রাণীদের বাঁধা রাখা হয়, সেখানে পালস ফ্রিকোয়েন্সি, সংকোচন এবং জেলিফিশের ঘণ্টার গঠনগত অসামঞ্জস্যের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা মুক্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে এড়ানো এবং কাছে যাওয়ার সাঁতারের আচরণে রূপান্তরিত হয়। গত কয়েক দশকে বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্র, দৃষ্টি ব্যবস্থা সহ, শারীরবৃত্তীয়, কোষীয়, আণবিক এবং জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রাণীদের জটিল চোখ সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান এখনও অসম্পূর্ণ। === শারীরস্থান === বক্স জেলিফিশের নামকরণ হয়েছে এর ঘণ্টার ঘনকাকৃতির আকৃতির জন্য, যা প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। ঘণ্টার প্রতিটি পাশে চারটি রোপালিয়া অবস্থিত – এটি সংবেদনশীল কাঠামো যা মোট ২৪টি বিভিন্ন ধরনের চোখ ধারণ করে। এই ধরনের দৃষ্টি অঙ্গের অবস্থান কিউবোমেডুসাকে প্রায় ৩৬০-ডিগ্রি দৃষ্টিক্ষেত্র প্রদান করে! আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের চোখ বাইরের দিকে নয়, বরং মেডুসার ভিতরের দিকে (অর্থাৎ একে অপরের দিকে!) তাকায়, কিন্তু ঘণ্টার স্বচ্ছতার কারণে তারা সব দিকে দেখতে পায়। জেলিফিশের চোখের অবস্থান পেশি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই, তাই রোপালিয়া একটি ক্রিস্টাল কাঠামোর সাহায্যে একই প্রাকৃতিক দিক বজায় রাখে, যাকে স্ট্যাটোলিথ বলা হয়, এটি নিচের দিকে ওজন হিসেবে কাজ করে এবং উপরের নমনীয় ডাঁটির মাধ্যমে ঘণ্টার সাথে সংযুক্ত থাকে। রোপালিয়ার ছয়টি চোখ চারটি ভিন্ন রূপগত ধরনের (চিত্র ২): উপরের এবং নিচের জটিল লেন্সযুক্ত মানুষের মতো চোখ (ইউএলই এবং এলএলই) উল্লম্ব মধ্যরেখায়, এবং প্রতিটি পাশে শুধুমাত্র আলো-সংবেদনশীল পিগমেন্টযুক্ত সাধারণ চোখ, যাকে পিট এবং স্লিট চোখ (পিই এবং এসই) বলা হয়। যদিও নিডারিয়ানরা রেডিয়ালি প্রতিসম প্রাণী, লেন্স চোখের মধ্যরেখার অবস্থান ব্যতীত তাদের রোপালিয়ার স্নায়ুতন্ত্র দ্বিপাক্ষিকভাবে প্রতিসম। রোপালিয়াল স্নায়ু যুক্ত ডাঁটি রোপালিয়াম এবং ঘণ্টার প্রান্তে থাকা রিং নার্ভের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করে, যা পুনরায় স্নায়ু জালের সাথে সংযুক্ত হয়ে বক্স জেলিফিশের সম্পূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। [[File:Cubozoan visual system in Tripedalia cystophora.png|thumb|চিত্র ২: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার কিউবোজোয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা]] রোপালিয়ায় নিউরোনাল এবং নন-নিউরোনাল কোষ উভয়ই বর্ণনা করা হয়েছে, যা বিভিন্ন কোষের জনসংখ্যা গঠন করে। নিউরোনাল কোষগুলো দুটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম গ্রুপে জড়ো হয়, যা একে অপরের সাথে এবং পিট ও স্লিট চোখের সাথে ফাইবার পথের মাধ্যমে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে, রোপালিয়ায় ১০০০-এর বেশি নিউরোনাল কোষ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন যা লেন্স চোখের সাথে যুক্ত ফ্ল্যাঙ্ক নিউরন জায়ান্ট নিউরন নন-নিউরোনাল কোষের মধ্যে রয়েছে সিলিয়েটেড ফটোরিসেপ্টর কোষ যা প্রাথমিক আলো সংবেদনের জন্য দায়ী, বেলুন কোষ যার কার্যকারিতা অজানা এবং পোস্টেরিয়র কোষ শীট – অপরিবর্তিত কোষের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা যা সম্ভবত স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। ==== লেন্স চোখ ==== বক্স জেলিফিশের লেন্স চোখের সাথে আমাদের চোখের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিল কারণ এতে ক্যামেরা রয়েছে যার মধ্যে লেন্স এবং রেটিনার মধ্যে ভিট্রিয়াস বডি বিভাজন করে (তাই এর নাম "ক্যামেরা চোখ")। লেন্স চোখের স্থানিক রেজোলিউশন দুর্বল কারণ রেটিনা লেন্সের খুব কাছে অবস্থিত, শুধুমাত্র পাতলা ভিট্রিয়াস স্পেস (নিচের লেন্স চোখে প্রায় ৮ মাইক্রোমিটার, উপরের লেন্স চোখে অনুপস্থিত) দ্বারা পৃথক, যেখানে লেন্সের ফোকাল দৈর্ঘ্য রেটিনার অনেক পিছনে পড়ে (৪০০-৬০০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে)। মানুষের ক্ষেত্রে, তুলনায়, ক্যামেরার আকার প্রায় ২৩ মিলিমিটার। ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাফি নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে চোখে একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে বিভিন্ন দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় কোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়, উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় চোখের ধরনেরই সময়গত রেজোলিউশন কম, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন, যা ইঙ্গিত করে যে তারা বিভিন্ন দৃশ্যমান কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাম থেকে সর্বাধিক ফ্রিকোয়েন্সি (যাকে ফ্লিকার ফিউশন ফ্রিকোয়েন্সিও বলা হয়) উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের জন্য যথাক্রমে ১০ এবং ৮ হার্জ বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া, দুটি লেন্স চোখের দৃষ্টিক্ষেত্র ভিন্ন, যা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা কভার করে। সামগ্রিকভাবে, এটা সম্ভাব্য বলে মনে হয় যে বক্স জেলিফিশের চোখ নির্দিষ্ট কাজের জন্য সূক্ষ্মভাবে সুর করা হয়েছে, যা রোপালিয়ায় দৃশ্যমান উদ্দীপনার ফিল্টারিংয়ের অনুমতি দেয়। === বক্স জেলিফিশের কি রঙিন দৃষ্টি আছে? === একটি কৌতূহলী প্রশ্ন হলো কিউবোমেডুসা অর্ডারের সদস্যদের কি আমাদের মতো উন্নত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো রঙিন দৃষ্টি আছে? প্রাণীজগতে দুই ধরনের ফটোরিসেপ্টর রয়েছে: সিলিয়ারি, যা সাধারণত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং র্যাবডোমেরিক, যা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়। আকর্ষণীয়ভাবে, বক্স জেলিফিশের মধ্যে মেরুদণ্ডী-জাতীয় সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর রয়েছে। যদিও উভয় ধরনের ফটোরিসেপ্টরই আলোর সংস্পর্শে রেটিনাল অণুর একই রাসায়নিক রূপান্তরের উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ ব্লিচিং), তারা প্রক্রিয়া, গঠন, উৎপত্তি এবং আণবিক পথের দিক থেকে ভিন্ন। উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের রেটিনায় থাকা রিসেপ্টরগুলো সাধারণত নীল-সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল, যার শীর্ষ শোষণ ৪৬৫-৫০৮ ন্যানোমিটারের মধ্যে, প্রজাতির উপর নির্ভর করে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে বক্স জেলিফিশ সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যদিও সবুজ রঙ-নির্দেশিত বাধা এড়ানোর পরীক্ষাগুলো সিদ্ধান্তহীন ফলাফল দিয়েছে। অগভীর জলে বসবাসকারী এই প্রাণীদের জন্য রঙিন দৃষ্টি একটি উপযোগী অভিযোজন হতে পারে, যেখানে পৃষ্ঠের ঢেউয়ের কারণে ঝিকমিক আলো থাকে, যাতে লুমিন্যান্স (অর্থাৎ উজ্জ্বলতা, তীব্রতা) শব্দ থেকে প্রাসঙ্গিক দৃশ্যমান উদ্দীপনা আলাদা করা যায়, কারণ রঙিন দৃষ্টি লুমিন্যান্সের ওঠানামার প্রতি কম সংবেদনশীল। === দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণ এবং সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণ === এখন পর্যন্ত, শুধুমাত্র নিচের লেন্স চোখের গুরুত্ব সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ঘণ্টার সংকোচন হারের ভূমিকা রয়েছে, যা চলমান প্রাণীর গতি নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, লেন্স চোখের অপটিক্যাল শক্তি কিউবোমেডুসার প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয়, যা আরও পরিবর্তনশীলতা প্রবর্তন করে। স্লিট এবং পিট চোখের পেসমেকার কার্যকলাপে (ঘণ্টার স্পন্দনশীল চলাচল) এবং সাঁতারের দিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কিছুটা অস্পষ্ট এবং ভবিষ্যতে এমন পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট করা যেতে পারে যেখানে নির্দিষ্ট চোখের ধরন নির্বাচনীভাবে অকার্যকর করা হবে। [[File:Alatina alata swimming Johnoson Sea Link near the Bahamas.ogv|thumb|আলাটিনা আলাটা বক্স জেলিফিশ বাহামার কাছে সাঁতারচ্ছে]] বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্রে দৃশ্যমান ইনপুটের একীকরণ কীভাবে ঘটে তাও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া ডাঁটিতে (নার্ভ রিংয়ের একটি সম্প্রসারণ) এবং রোপালিয়ামের স্নায়ুতন্ত্রে উভয় ক্ষেত্রেই সনাক্ত করা গেছে। রোপালিয়ার মধ্যে নির্দিষ্ট নিউরোনাল কোষের সাথে নির্দিষ্ট চোখের ধরনের সম্পর্ক নির্দেশ করে যে কিছু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণ এই কাঠামোর মধ্যেই ঘটে। সম্ভবত সাঁতারের গতি, যা শরীর এবং টেন্টাকলের সংকোচনের হার এবং শক্তির উপর নির্ভর করে, একটি পৃথক নিউরোনাল জনসংখ্যার পেসমেকার কার্যকলাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা দৃশ্যমান তথ্যের উচ্চতর প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণের জন্য দায়ী। ফ্ল্যাঙ্ক এবং জায়ান্ট নিউরন এই কাজটি পালন করতে পারে। সূক্ষ্ম স্টিয়ারিং পুনরায় স্বাধীন সংকেত এবং ঘণ্টার বিভিন্ন পাশের অসম সংকোচনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। === বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ === জেনেটিকভাবে, বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের তুলনায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাথে বেশি সম্পর্কিত বলে মনে হয়, কারণ তারা আলো সংবেদনের অন্তর্নিহিত আণবিক পথের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাগ করে (উদাহরণস্বরূপ, ফটোট্রান্সডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফোডাইস্টেরেজ এবং রেটিনায় প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট-উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি)। অন্যথায় রেডিয়ালি প্রতিসম জেলিফিশের রোপালিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের দ্বিপাক্ষিক সংগঠন (রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন ব্যতীত) এই প্রমাণ হতে পারে যে নিডারিয়ানরা একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বক্স জেলিফিশ এবং মেরুদণ্ডী উভয়ের দ্বারা সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর এবং মেলানোজেনিক পথের ব্যবহার হয় সাধারণ পূর্বপুরুষ বা স্বাধীন সমান্তরাল বিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। বক্স জেলিফিশের অসাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থার আরও তদন্ত তাই উন্নত ক্যামেরা চোখের বিবর্তনীয় উৎপত্তির রহস্য সমাধানে সহায়ক হবে। === তথ্যসূত্র === ১. বিয়েলেকি জে, হোয়েগ জেটি, গার্ম এ: মেটাজোয়ান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফিক্সেশনাল চোখের নড়াচড়া। ২০১৩। পিএলওএস ওয়ান। ৮(৬):ই৬৬৪৪২। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23776673 pubmed] ২. একস্ট্রোম পি, গার্ম এ, পলসন জে, ভিহটেলিক টিএস, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশে একাধিক ফটোসিস্টেমের ইমিউনোহিস্টোকেমিক্যাল প্রমাণ। ২০০৮। সেল অ্যান্ড টিস্যু রিসার্চ। ৩৩৩(১):১১৫-২৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18504619 pubmed] ৩. কোজমিক জেড, রুজিকোভা জে, জোনাসোভা কে, মাতসুমোতো ওয়াই, ভোপালেনস্কি পি, কোজমিকোভা আই, স্ট্রনাড এইচ, কাওয়ামুরা এস, পিয়াটিগোর্স্কি জে, পেসেস ভি, ভ্লসেক সি: মেরুদণ্ডী-জাতীয় উপাদান থেকে নিডারিয়ান ক্যামেরা-টাইপ চোখের সমাবেশ। ২০০৮। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউএসএ। ১০৫(২৬):৮৯৮৯-৯৩। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18577593 pubmed] ৪. কোজমিক জেড: চোখের বিবর্তনে প্যাক্স জিনের ভূমিকা। ২০০৮। ব্রেন রিসার্চ বুলেটিন। ৭৫(২-৪):৩৩৫-৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18331895 pubmed] ৫. নর্ডস্ট্রোম কে, ওয়ালেন আর, সিমোর জে, নিলসন ডি: জেলিফিশ লার্ভায় নিউরনবিহীন একটি সাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থা। ২০০৩। প্রসিডিংস অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭০(১৫৩১):২৩৪৯-৫৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/14667350 pubmed] ৬. ও’কনর এম, গার্ম এ, মার্শাল জেএন, হার্ট এনএস, একস্ট্রোম পি, স্কোগ সি, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির লেন্স চোখে দৃষ্টি পিগমেন্ট। ২০১০। প্রসিডিংস বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭৭(১৬৮৯):১৮৪৩-৮। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20147327 pubmed] ৭. ও’কনর এম, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির চোখের গঠন এবং অপটিক্স{{typo help inline|reason=similar to bronzier|date=September 2022}}। ২০০৯। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৫(৬):৫৫৭-৬৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19347342 pubmed] ৮. ও’কনর এম, নিলসন ডিই, গার্ম এ: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য। ২০১০। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৬(৩):২১৩-২০। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20131056 pubmed] ৯. পেটি আর, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরায় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত স্টিয়ারিং। ২০১১। জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি। ২১৪(পিটি ১৭):২৮০৯-১৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21832123 pubmed] ১০. পিয়াটিগোর্স্কি জে, কোজমিক জেড: কিউবোজোয়ান জেলিফিশ: চোখ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার জন্য একটি ইভো/ডেভো মডেল। ২০০৪। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি। ৪৮(৮-৯):৭১৯-২৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15558464 pubmed] ১১. স্কোগ সি, গার্ম এ, নিলসন ডিই, একস্ট্রোম পি: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম রোপালিয়াল স্নায়ুতন্ত্র। ২০০৬। জার্নাল অফ মরফোলজি। ২৬৭(১২):১৩৯১-৪০৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/16217792 pubmed] 6egh7yvemelle0fg8g2m95bwjdjxc5s 84879 84878 2025-06-19T03:35:59Z Mehedi Abedin 7113 84879 wikitext text/x-wiki == জেলিফিশ: বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা == === পরিচিতি === প্রায় সব জীবন্ত প্রাণীই আলো সংবেদন করতে সক্ষম, অর্থাৎ ৩০০-৮০০ ন্যানোমিটার পরিসরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের প্রতি সাড়া দিতে পারে। দৃষ্টি ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ জীবন বৃক্ষে একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত প্রাণীরা আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম, কখনও কখনও খুব জটিল টুল তৈরি করেছে যা তাদের আলো সংবেদন করতে সক্ষম করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বক্স জেলিফিশের (শ্রেণি কিউবোজোয়া, ফাইলাম নিডারিয়া) দৃষ্টি ব্যবস্থা (চিত্র ১): এটি সবচেয়ে জটিল নিডারিয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা। এই সুন্দর জলজ প্রাণীদের চোখ আমাদের চোখের সাথে খুবই মিল! কিউবোজোয়া শ্রেণির সদস্যদের (নিডারিয়া ফাইলামের ক্ষুদ্রতম শ্রেণি) ব্যতিক্রমী দৃষ্টিশক্তি লক্ষ্য করা গেছে যখন দেখা গেছে যে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে জটিল সাঁতারের আচরণ প্রদর্শন করে: তারা নির্দিষ্ট দিকে খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে এবং অন্ধকার এলাকা ও বাধা এড়াতে পারে। [[File:Tripedalia-cystophora-Bielecki.jpg|thumb|চিত্র ১: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা, ক্যারিবীয় সাগরের একটি বক্স জেলিফিশ।]] বক্স জেলিফিশ কীভাবে দেখে তা অধ্যয়ন করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষামূলক চেম্বারে আলোর অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে প্রাণীদের বাঁধা রাখা হয়, সেখানে পালস ফ্রিকোয়েন্সি, সংকোচন এবং জেলিফিশের ঘণ্টার গঠনগত অসামঞ্জস্যের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা মুক্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে এড়ানো এবং কাছে যাওয়ার সাঁতারের আচরণে রূপান্তরিত হয়। গত কয়েক দশকে বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্র, দৃষ্টি ব্যবস্থা সহ, শারীরবৃত্তীয়, কোষীয়, আণবিক এবং জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রাণীদের জটিল চোখ সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান এখনও অসম্পূর্ণ। === শারীরস্থান === বক্স জেলিফিশের নামকরণ হয়েছে এর ঘণ্টার ঘনকাকৃতির আকৃতির জন্য, যা প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। ঘণ্টার প্রতিটি পাশে চারটি রোপালিয়া অবস্থিত – এটি সংবেদনশীল কাঠামো যা মোট ২৪টি বিভিন্ন ধরনের চোখ ধারণ করে। এই ধরনের দৃষ্টি অঙ্গের অবস্থান কিউবোমেডুসাকে প্রায় ৩৬০-ডিগ্রি দৃষ্টিক্ষেত্র প্রদান করে! আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের চোখ বাইরের দিকে নয়, বরং মেডুসার ভিতরের দিকে (অর্থাৎ একে অপরের দিকে!) তাকায়, কিন্তু ঘণ্টার স্বচ্ছতার কারণে তারা সব দিকে দেখতে পায়। জেলিফিশের চোখের অবস্থান পেশি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই, তাই রোপালিয়া একটি ক্রিস্টাল কাঠামোর সাহায্যে একই প্রাকৃতিক দিক বজায় রাখে, যাকে স্ট্যাটোলিথ বলা হয়, এটি নিচের দিকে ওজন হিসেবে কাজ করে এবং উপরের নমনীয় ডাঁটির মাধ্যমে ঘণ্টার সাথে সংযুক্ত থাকে। রোপালিয়ার ছয়টি চোখ চারটি ভিন্ন রূপগত ধরনের (চিত্র ২): উপরের এবং নিচের জটিল লেন্সযুক্ত মানুষের মতো চোখ (ইউএলই এবং এলএলই) উল্লম্ব মধ্যরেখায়, এবং প্রতিটি পাশে শুধুমাত্র আলো-সংবেদনশীল পিগমেন্টযুক্ত সাধারণ চোখ, যাকে পিট এবং স্লিট চোখ (পিই এবং এসই) বলা হয়। যদিও নিডারিয়ানরা রেডিয়ালি প্রতিসম প্রাণী, লেন্স চোখের মধ্যরেখার অবস্থান ব্যতীত তাদের রোপালিয়ার স্নায়ুতন্ত্র দ্বিপাক্ষিকভাবে প্রতিসম। রোপালিয়াল স্নায়ু যুক্ত ডাঁটি রোপালিয়াম এবং ঘণ্টার প্রান্তে থাকা রিং নার্ভের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করে, যা পুনরায় স্নায়ু জালের সাথে সংযুক্ত হয়ে বক্স জেলিফিশের সম্পূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। [[File:Cubozoan visual system in Tripedalia cystophora.png|thumb|চিত্র ২: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার কিউবোজোয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা]] রোপালিয়ায় নিউরোনাল এবং নন-নিউরোনাল কোষ উভয়ই বর্ণনা করা হয়েছে, যা বিভিন্ন কোষের জনসংখ্যা গঠন করে। নিউরোনাল কোষগুলো দুটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম গ্রুপে জড়ো হয়, যা একে অপরের সাথে এবং পিট ও স্লিট চোখের সাথে ফাইবার পথের মাধ্যমে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে, রোপালিয়ায় ১০০০-এর বেশি নিউরোনাল কোষ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন যা লেন্স চোখের সাথে যুক্ত ফ্ল্যাঙ্ক নিউরন জায়ান্ট নিউরন নন-নিউরোনাল কোষের মধ্যে রয়েছে সিলিয়েটেড ফটোরিসেপ্টর কোষ যা প্রাথমিক আলো সংবেদনের জন্য দায়ী, বেলুন কোষ যার কার্যকারিতা অজানা এবং পোস্টেরিয়র কোষ শীট – অপরিবর্তিত কোষের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা যা সম্ভবত স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। ==== লেন্স চোখ ==== বক্স জেলিফিশের লেন্স চোখের সাথে আমাদের চোখের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিল কারণ এতে ক্যামেরা রয়েছে যার মধ্যে লেন্স এবং রেটিনার মধ্যে ভিট্রিয়াস বডি বিভাজন করে (তাই এর নাম "ক্যামেরা চোখ")। লেন্স চোখের স্থানিক রেজোলিউশন দুর্বল কারণ রেটিনা লেন্সের খুব কাছে অবস্থিত, শুধুমাত্র পাতলা ভিট্রিয়াস স্পেস (নিচের লেন্স চোখে প্রায় ৮ মাইক্রোমিটার, উপরের লেন্স চোখে অনুপস্থিত) দ্বারা পৃথক, যেখানে লেন্সের ফোকাল দৈর্ঘ্য রেটিনার অনেক পিছনে পড়ে (৪০০-৬০০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে)। মানুষের ক্ষেত্রে, তুলনায়, ক্যামেরার আকার প্রায় ২৩ মিলিমিটার। ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাফি নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে চোখে একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে বিভিন্ন দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় কোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়, উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় চোখের ধরনেরই সময়গত রেজোলিউশন কম, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন, যা ইঙ্গিত করে যে তারা বিভিন্ন দৃশ্যমান কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাম থেকে সর্বাধিক ফ্রিকোয়েন্সি (যাকে ফ্লিকার ফিউশন ফ্রিকোয়েন্সিও বলা হয়) উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের জন্য যথাক্রমে ১০ এবং ৮ হার্জ বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া, দুটি লেন্স চোখের দৃষ্টিক্ষেত্র ভিন্ন, যা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা কভার করে। সামগ্রিকভাবে, এটা সম্ভাব্য বলে মনে হয় যে বক্স জেলিফিশের চোখ নির্দিষ্ট কাজের জন্য সূক্ষ্মভাবে সুর করা হয়েছে, যা রোপালিয়ায় দৃশ্যমান উদ্দীপনার ফিল্টারিংয়ের অনুমতি দেয়। === বক্স জেলিফিশের কি রঙিন দৃষ্টি আছে? === একটি কৌতূহলী প্রশ্ন হলো কিউবোমেডুসা অর্ডারের সদস্যদের কি আমাদের মতো উন্নত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো রঙিন দৃষ্টি আছে? প্রাণীজগতে দুই ধরনের ফটোরিসেপ্টর রয়েছে: সিলিয়ারি, যা সাধারণত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং র‍্যাবডোমেরিক, যা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি আকর্ষণীয় যে, বক্স জেলিফিশের মধ্যে মেরুদণ্ডী জাতীয় সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর রয়েছে। যদিও উভয় ধরনের ফটোরিসেপ্টরই আলোর সংস্পর্শে রেটিনাল অণুর একই রাসায়নিক রূপান্তরের উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ ব্লিচিং), এগুলো প্রক্রিয়া, গঠন, উৎপত্তি এবং আণবিক পথের দিক থেকে ভিন্ন। উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের রেটিনায় থাকা রিসেপ্টরগুলো সাধারণত নীল-সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল, প্রজাতির উপর নির্ভর করে যার শীর্ষ শোষণ ৪৬৫-৫০৮ ন্যানোমিটারের মধ্যে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে বক্স জেলিফিশ সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যদিও সবুজ রঙ-নির্দেশিত বাধা এড়ানোর পরীক্ষাগুলো সিদ্ধান্তহীন ফলাফল দিয়েছে। অগভীর জলে বসবাসকারী এই প্রাণীদের জন্য রঙিন দৃষ্টি একটি উপযোগী অভিযোজন হতে পারে, যেখানে পৃষ্ঠের ঢেউয়ের কারণে ঝিকমিক আলো থাকে, যাতে লুমিন্যান্স (অর্থাৎ উজ্জ্বলতা, তীব্রতা) শব্দ থেকে প্রাসঙ্গিক দৃশ্যমান উদ্দীপনা আলাদা করা যায়, কারণ রঙিন দৃষ্টি লুমিন্যান্সের ওঠানামার প্রতি কম সংবেদনশীল। === দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণ এবং সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণ === এখন পর্যন্ত, শুধুমাত্র নিচের লেন্স চোখের গুরুত্ব সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ঘণ্টার সংকোচন হারের ভূমিকা রয়েছে, যা চলমান প্রাণীর গতি নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, লেন্স চোখের অপটিক্যাল শক্তি কিউবোমেডুসার প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয়, যা আরও পরিবর্তনশীলতা প্রবর্তন করে। স্লিট এবং পিট চোখের পেসমেকার কার্যকলাপে (ঘণ্টার স্পন্দনশীল চলাচল) এবং সাঁতারের দিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কিছুটা অস্পষ্ট এবং ভবিষ্যতে এমন পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট করা যেতে পারে যেখানে নির্দিষ্ট চোখের ধরন নির্বাচনীভাবে অকার্যকর করা হবে। [[File:Alatina alata swimming Johnoson Sea Link near the Bahamas.ogv|thumb|আলাটিনা আলাটা বক্স জেলিফিশ বাহামার কাছে সাঁতারচ্ছে]] বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্রে দৃশ্যমান ইনপুটের একীকরণ কীভাবে ঘটে তাও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া ডাঁটিতে (নার্ভ রিংয়ের একটি সম্প্রসারণ) এবং রোপালিয়ামের স্নায়ুতন্ত্রে উভয় ক্ষেত্রেই সনাক্ত করা গেছে। রোপালিয়ার মধ্যে নির্দিষ্ট নিউরোনাল কোষের সাথে নির্দিষ্ট চোখের ধরনের সম্পর্ক নির্দেশ করে যে কিছু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণ এই কাঠামোর মধ্যেই ঘটে। সম্ভবত সাঁতারের গতি, যা শরীর এবং টেন্টাকলের সংকোচনের হার এবং শক্তির উপর নির্ভর করে, একটি পৃথক নিউরোনাল জনসংখ্যার পেসমেকার কার্যকলাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা দৃশ্যমান তথ্যের উচ্চতর প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণের জন্য দায়ী। ফ্ল্যাঙ্ক এবং জায়ান্ট নিউরন এই কাজটি পালন করতে পারে। সূক্ষ্ম স্টিয়ারিং পুনরায় স্বাধীন সংকেত এবং ঘণ্টার বিভিন্ন পাশের অসম সংকোচনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। === বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ === জেনেটিকভাবে, বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের তুলনায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাথে বেশি সম্পর্কিত বলে মনে হয়, কারণ তারা আলো সংবেদনের অন্তর্নিহিত আণবিক পথের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাগ করে (উদাহরণস্বরূপ, ফটোট্রান্সডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফোডাইস্টেরেজ এবং রেটিনায় প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট-উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি)। অন্যথায় রেডিয়ালি প্রতিসম জেলিফিশের রোপালিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের দ্বিপাক্ষিক সংগঠন (রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন ব্যতীত) এই প্রমাণ হতে পারে যে নিডারিয়ানরা একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বক্স জেলিফিশ এবং মেরুদণ্ডী উভয়ের দ্বারা সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর এবং মেলানোজেনিক পথের ব্যবহার হয় সাধারণ পূর্বপুরুষ বা স্বাধীন সমান্তরাল বিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। বক্স জেলিফিশের অসাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থার আরও তদন্ত তাই উন্নত ক্যামেরা চোখের বিবর্তনীয় উৎপত্তির রহস্য সমাধানে সহায়ক হবে। === তথ্যসূত্র === ১. বিয়েলেকি জে, হোয়েগ জেটি, গার্ম এ: মেটাজোয়ান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফিক্সেশনাল চোখের নড়াচড়া। ২০১৩। পিএলওএস ওয়ান। ৮(৬):ই৬৬৪৪২। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23776673 pubmed] ২. একস্ট্রোম পি, গার্ম এ, পলসন জে, ভিহটেলিক টিএস, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশে একাধিক ফটোসিস্টেমের ইমিউনোহিস্টোকেমিক্যাল প্রমাণ। ২০০৮। সেল অ্যান্ড টিস্যু রিসার্চ। ৩৩৩(১):১১৫-২৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18504619 pubmed] ৩. কোজমিক জেড, রুজিকোভা জে, জোনাসোভা কে, মাতসুমোতো ওয়াই, ভোপালেনস্কি পি, কোজমিকোভা আই, স্ট্রনাড এইচ, কাওয়ামুরা এস, পিয়াটিগোর্স্কি জে, পেসেস ভি, ভ্লসেক সি: মেরুদণ্ডী-জাতীয় উপাদান থেকে নিডারিয়ান ক্যামেরা-টাইপ চোখের সমাবেশ। ২০০৮। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউএসএ। ১০৫(২৬):৮৯৮৯-৯৩। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18577593 pubmed] ৪. কোজমিক জেড: চোখের বিবর্তনে প্যাক্স জিনের ভূমিকা। ২০০৮। ব্রেন রিসার্চ বুলেটিন। ৭৫(২-৪):৩৩৫-৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18331895 pubmed] ৫. নর্ডস্ট্রোম কে, ওয়ালেন আর, সিমোর জে, নিলসন ডি: জেলিফিশ লার্ভায় নিউরনবিহীন একটি সাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থা। ২০০৩। প্রসিডিংস অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭০(১৫৩১):২৩৪৯-৫৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/14667350 pubmed] ৬. ও’কনর এম, গার্ম এ, মার্শাল জেএন, হার্ট এনএস, একস্ট্রোম পি, স্কোগ সি, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির লেন্স চোখে দৃষ্টি পিগমেন্ট। ২০১০। প্রসিডিংস বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭৭(১৬৮৯):১৮৪৩-৮। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20147327 pubmed] ৭. ও’কনর এম, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির চোখের গঠন এবং অপটিক্স{{typo help inline|reason=similar to bronzier|date=September 2022}}। ২০০৯। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৫(৬):৫৫৭-৬৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19347342 pubmed] ৮. ও’কনর এম, নিলসন ডিই, গার্ম এ: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য। ২০১০। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৬(৩):২১৩-২০। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20131056 pubmed] ৯. পেটি আর, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরায় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত স্টিয়ারিং। ২০১১। জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি। ২১৪(পিটি ১৭):২৮০৯-১৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21832123 pubmed] ১০. পিয়াটিগোর্স্কি জে, কোজমিক জেড: কিউবোজোয়ান জেলিফিশ: চোখ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার জন্য একটি ইভো/ডেভো মডেল। ২০০৪। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি। ৪৮(৮-৯):৭১৯-২৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15558464 pubmed] ১১. স্কোগ সি, গার্ম এ, নিলসন ডিই, একস্ট্রোম পি: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম রোপালিয়াল স্নায়ুতন্ত্র। ২০০৬। জার্নাল অফ মরফোলজি। ২৬৭(১২):১৩৯১-৪০৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/16217792 pubmed] 2k1odrkepti948fi1m7r9omks4ezf5g 84880 84879 2025-06-19T03:38:34Z Mehedi Abedin 7113 84880 wikitext text/x-wiki == জেলিফিশ: বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা == === পরিচিতি === প্রায় সব জীবন্ত প্রাণীই আলো সংবেদন করতে সক্ষম, অর্থাৎ ৩০০-৮০০ ন্যানোমিটার পরিসরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের প্রতি সাড়া দিতে পারে। দৃষ্টি ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ জীবন বৃক্ষে একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত প্রাণীরা আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম, কখনও কখনও খুব জটিল টুল তৈরি করেছে যা তাদের আলো সংবেদন করতে সক্ষম করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বক্স জেলিফিশের (শ্রেণি কিউবোজোয়া, ফাইলাম নিডারিয়া) দৃষ্টি ব্যবস্থা (চিত্র ১): এটি সবচেয়ে জটিল নিডারিয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা। এই সুন্দর জলজ প্রাণীদের চোখ আমাদের চোখের সাথে খুবই মিল! কিউবোজোয়া শ্রেণির সদস্যদের (নিডারিয়া ফাইলামের ক্ষুদ্রতম শ্রেণি) ব্যতিক্রমী দৃষ্টিশক্তি লক্ষ্য করা গেছে যখন দেখা গেছে যে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে জটিল সাঁতারের আচরণ প্রদর্শন করে: তারা নির্দিষ্ট দিকে খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে এবং অন্ধকার এলাকা ও বাধা এড়াতে পারে। [[File:Tripedalia-cystophora-Bielecki.jpg|thumb|চিত্র ১: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা, ক্যারিবীয় সাগরের একটি বক্স জেলিফিশ।]] বক্স জেলিফিশ কীভাবে দেখে তা অধ্যয়ন করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষামূলক চেম্বারে আলোর অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে প্রাণীদের বাঁধা রাখা হয়, সেখানে পালস ফ্রিকোয়েন্সি, সংকোচন এবং জেলিফিশের ঘণ্টার গঠনগত অসামঞ্জস্যের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা মুক্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে এড়ানো এবং কাছে যাওয়ার সাঁতারের আচরণে রূপান্তরিত হয়। গত কয়েক দশকে বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্র, দৃষ্টি ব্যবস্থা সহ, শারীরবৃত্তীয়, কোষীয়, আণবিক এবং জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রাণীদের জটিল চোখ সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান এখনও অসম্পূর্ণ। === শারীরস্থান === বক্স জেলিফিশের নামকরণ হয়েছে এর ঘণ্টার ঘনকাকৃতির আকৃতির জন্য, যা প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। ঘণ্টার প্রতিটি পাশে চারটি রোপালিয়া অবস্থিত – এটি সংবেদনশীল কাঠামো যা মোট ২৪টি বিভিন্ন ধরনের চোখ ধারণ করে। এই ধরনের দৃষ্টি অঙ্গের অবস্থান কিউবোমেডুসাকে প্রায় ৩৬০-ডিগ্রি দৃষ্টিক্ষেত্র প্রদান করে! আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের চোখ বাইরের দিকে নয়, বরং মেডুসার ভিতরের দিকে (অর্থাৎ একে অপরের দিকে!) তাকায়, কিন্তু ঘণ্টার স্বচ্ছতার কারণে তারা সব দিকে দেখতে পায়। জেলিফিশের চোখের অবস্থান পেশি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই, তাই রোপালিয়া একটি ক্রিস্টাল কাঠামোর সাহায্যে একই প্রাকৃতিক দিক বজায় রাখে, যাকে স্ট্যাটোলিথ বলা হয়, এটি নিচের দিকে ওজন হিসেবে কাজ করে এবং উপরের নমনীয় ডাঁটির মাধ্যমে ঘণ্টার সাথে সংযুক্ত থাকে। রোপালিয়ার ছয়টি চোখ চারটি ভিন্ন রূপগত ধরনের (চিত্র ২): উপরের এবং নিচের জটিল লেন্সযুক্ত মানুষের মতো চোখ (ইউএলই এবং এলএলই) উল্লম্ব মধ্যরেখায়, এবং প্রতিটি পাশে শুধুমাত্র আলো-সংবেদনশীল পিগমেন্টযুক্ত সাধারণ চোখ, যাকে পিট এবং স্লিট চোখ (পিই এবং এসই) বলা হয়। যদিও নিডারিয়ানরা রেডিয়ালি প্রতিসম প্রাণী, লেন্স চোখের মধ্যরেখার অবস্থান ব্যতীত তাদের রোপালিয়ার স্নায়ুতন্ত্র দ্বিপাক্ষিকভাবে প্রতিসম। রোপালিয়াল স্নায়ু যুক্ত ডাঁটি রোপালিয়াম এবং ঘণ্টার প্রান্তে থাকা রিং নার্ভের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করে, যা পুনরায় স্নায়ু জালের সাথে সংযুক্ত হয়ে বক্স জেলিফিশের সম্পূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। [[File:Cubozoan visual system in Tripedalia cystophora.png|thumb|চিত্র ২: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার কিউবোজোয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা]] রোপালিয়ায় নিউরোনাল এবং নন-নিউরোনাল কোষ উভয়ই বর্ণনা করা হয়েছে, যা বিভিন্ন কোষের জনসংখ্যা গঠন করে। নিউরোনাল কোষগুলো দুটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম গ্রুপে জড়ো হয়, যা একে অপরের সাথে এবং পিট ও স্লিট চোখের সাথে ফাইবার পথের মাধ্যমে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে, রোপালিয়ায় ১০০০-এর বেশি নিউরোনাল কোষ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন যা লেন্স চোখের সাথে যুক্ত ফ্ল্যাঙ্ক নিউরন জায়ান্ট নিউরন নন-নিউরোনাল কোষের মধ্যে রয়েছে সিলিয়েটেড ফটোরিসেপ্টর কোষ যা প্রাথমিক আলো সংবেদনের জন্য দায়ী, বেলুন কোষ যার কার্যকারিতা অজানা এবং পোস্টেরিয়র কোষ শীট – অপরিবর্তিত কোষের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা যা সম্ভবত স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। ==== লেন্স চোখ ==== বক্স জেলিফিশের লেন্স চোখের সাথে আমাদের চোখের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিল কারণ এতে ক্যামেরা রয়েছে যার মধ্যে লেন্স এবং রেটিনার মধ্যে ভিট্রিয়াস বডি বিভাজন করে (তাই এর নাম "ক্যামেরা চোখ")। লেন্স চোখের স্থানিক রেজোলিউশন দুর্বল কারণ রেটিনা লেন্সের খুব কাছে অবস্থিত, শুধুমাত্র পাতলা ভিট্রিয়াস স্পেস (নিচের লেন্স চোখে প্রায় ৮ মাইক্রোমিটার, উপরের লেন্স চোখে অনুপস্থিত) দ্বারা পৃথক, যেখানে লেন্সের ফোকাল দৈর্ঘ্য রেটিনার অনেক পিছনে পড়ে (৪০০-৬০০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে)। মানুষের ক্ষেত্রে, তুলনায়, ক্যামেরার আকার প্রায় ২৩ মিলিমিটার। ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাফি নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে চোখে একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে বিভিন্ন দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় কোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়, উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় চোখের ধরনেরই সময়গত রেজোলিউশন কম, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন, যা ইঙ্গিত করে যে তারা বিভিন্ন দৃশ্যমান কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাম থেকে সর্বাধিক ফ্রিকোয়েন্সি (যাকে ফ্লিকার ফিউশন ফ্রিকোয়েন্সিও বলা হয়) উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের জন্য যথাক্রমে ১০ এবং ৮ হার্জ বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া, দুটি লেন্স চোখের দৃষ্টিক্ষেত্র ভিন্ন, যা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা কভার করে। সামগ্রিকভাবে, এটা সম্ভাব্য বলে মনে হয় যে বক্স জেলিফিশের চোখ নির্দিষ্ট কাজের জন্য সূক্ষ্মভাবে সুর করা হয়েছে, যা রোপালিয়ায় দৃশ্যমান উদ্দীপনার ফিল্টারিংয়ের অনুমতি দেয়। === বক্স জেলিফিশের কি রঙিন দৃষ্টি আছে? === একটি কৌতূহলী প্রশ্ন হলো কিউবোমেডুসা অর্ডারের সদস্যদের কি আমাদের মতো উন্নত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো রঙিন দৃষ্টি আছে? প্রাণীজগতে দুই ধরনের ফটোরিসেপ্টর রয়েছে: সিলিয়ারি, যা সাধারণত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং র‍্যাবডোমেরিক, যা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি আকর্ষণীয় যে, বক্স জেলিফিশের মধ্যে মেরুদণ্ডী জাতীয় সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর রয়েছে। যদিও উভয় ধরনের ফটোরিসেপ্টরই আলোর সংস্পর্শে রেটিনাল অণুর একই রাসায়নিক রূপান্তরের উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ ব্লিচিং), এগুলো প্রক্রিয়া, গঠন, উৎপত্তি এবং আণবিক পথের দিক থেকে ভিন্ন। উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের রেটিনায় থাকা রিসেপ্টরগুলো সাধারণত নীল-সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল, প্রজাতির উপর নির্ভর করে যার শীর্ষ শোষণ ৪৬৫-৫০৮ ন্যানোমিটারের মধ্যে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে বক্স জেলিফিশ সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যদিও সবুজ রঙ-নির্দেশিত বাধা এড়ানোর পরীক্ষাগুলো সিদ্ধান্তহীন ফলাফল দিয়েছে। অগভীর জলে বসবাসকারী এই প্রাণীদের জন্য রঙিন দৃষ্টি একটি উপযোগী অভিযোজন হতে পারে, যেখানে পৃষ্ঠের ঢেউয়ের কারণে ঝিকমিক আলো থাকে, যাতে লুমিন্যান্স (অর্থাৎ উজ্জ্বলতা, তীব্রতা) শব্দ থেকে প্রাসঙ্গিক দৃশ্যমান উদ্দীপনা আলাদা করা যায়, কারণ রঙিন দৃষ্টি লুমিন্যান্সের ওঠানামার প্রতি কম সংবেদনশীল। === দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণ এবং সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণ === এখন পর্যন্ত, শুধুমাত্র নিচের লেন্স চোখের গুরুত্ব সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে চলমান প্রাণীর গতি নিয়ন্ত্রণকারী ঘণ্টার সংকোচন হারের ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, লেন্স চোখের অপটিক্যাল শক্তি কিউবোমেডুসার প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয়, যা আরও পরিবর্তনশীলতা প্রবর্তন করে। স্লিট এবং পিট চোখের পেসমেকার কার্যকলাপে (ঘণ্টার স্পন্দনশীল চলাচল) এবং সাঁতারের দিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কিছুটা অস্পষ্ট এবং ভবিষ্যতে এমন পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট করা যেতে পারে যেখানে নির্দিষ্ট চোখের ধরন সিলেকশন হিসেবে অকার্যকর করা হবে। [[File:Alatina alata swimming Johnoson Sea Link near the Bahamas.ogv|thumb|আলাটিনা আলাটা বক্স জেলিফিশ বাহামার কাছে সাঁতরাচ্ছে]] বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্রে দৃশ্যমান ইনপুটের একীকরণ কীভাবে ঘটে তাও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া ডাঁটিতে (স্নায়ু রিংয়ের একটি সম্প্রসারণ) এবং রোপালিয়ামের স্নায়ুতন্ত্রে উভয় ক্ষেত্রেই সনাক্ত করা গেছে। রোপালিয়ার মধ্যে নির্দিষ্ট নিউরোনাল কোষের সাথে নির্দিষ্ট চোখের ধরনের সম্পর্ক নির্দেশ করে যে কিছু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণ এই কাঠামোর মধ্যেই ঘটে। সম্ভবত শরীর এবং টেন্টাকলের সংকোচনের হার এবং শক্তির উপর নির্ভরশীল সাঁতারের গতি একটি পৃথক নিউরোনাল জনসংখ্যার পেসমেকার কার্যকলাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা দৃশ্যমান তথ্যের উচ্চতর প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণের জন্য দায়ী। ফ্ল্যাঙ্ক এবং জায়ান্ট নিউরন এই কাজটি পালন করতে পারে। সূক্ষ্ম স্টিয়ারিং পুনরায় স্বাধীন সংকেত এবং ঘণ্টার বিভিন্ন পাশের অসম সংকোচনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। === বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ === জেনেটিকভাবে, বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের তুলনায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাথে বেশি সম্পর্কিত বলে মনে হয়, কারণ তারা আলো সংবেদনের অন্তর্নিহিত আণবিক পথের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাগ করে (উদাহরণস্বরূপ, ফটোট্রান্সডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফোডাইস্টেরেজ এবং রেটিনায় প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট-উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি)। অন্যথায় রেডিয়ালি প্রতিসম জেলিফিশের রোপালিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের দ্বিপাক্ষিক সংগঠন (রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন ব্যতীত) এই প্রমাণ হতে পারে যে নিডারিয়ানরা একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বক্স জেলিফিশ এবং মেরুদণ্ডী উভয়ের দ্বারা সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর এবং মেলানোজেনিক পথের ব্যবহার হয় সাধারণ পূর্বপুরুষ বা স্বাধীন সমান্তরাল বিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। বক্স জেলিফিশের অসাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থার আরও তদন্ত তাই উন্নত ক্যামেরা চোখের বিবর্তনীয় উৎপত্তির রহস্য সমাধানে সহায়ক হবে। === তথ্যসূত্র === ১. বিয়েলেকি জে, হোয়েগ জেটি, গার্ম এ: মেটাজোয়ান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফিক্সেশনাল চোখের নড়াচড়া। ২০১৩। পিএলওএস ওয়ান। ৮(৬):ই৬৬৪৪২। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23776673 pubmed] ২. একস্ট্রোম পি, গার্ম এ, পলসন জে, ভিহটেলিক টিএস, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশে একাধিক ফটোসিস্টেমের ইমিউনোহিস্টোকেমিক্যাল প্রমাণ। ২০০৮। সেল অ্যান্ড টিস্যু রিসার্চ। ৩৩৩(১):১১৫-২৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18504619 pubmed] ৩. কোজমিক জেড, রুজিকোভা জে, জোনাসোভা কে, মাতসুমোতো ওয়াই, ভোপালেনস্কি পি, কোজমিকোভা আই, স্ট্রনাড এইচ, কাওয়ামুরা এস, পিয়াটিগোর্স্কি জে, পেসেস ভি, ভ্লসেক সি: মেরুদণ্ডী-জাতীয় উপাদান থেকে নিডারিয়ান ক্যামেরা-টাইপ চোখের সমাবেশ। ২০০৮। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউএসএ। ১০৫(২৬):৮৯৮৯-৯৩। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18577593 pubmed] ৪. কোজমিক জেড: চোখের বিবর্তনে প্যাক্স জিনের ভূমিকা। ২০০৮। ব্রেন রিসার্চ বুলেটিন। ৭৫(২-৪):৩৩৫-৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18331895 pubmed] ৫. নর্ডস্ট্রোম কে, ওয়ালেন আর, সিমোর জে, নিলসন ডি: জেলিফিশ লার্ভায় নিউরনবিহীন একটি সাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থা। ২০০৩। প্রসিডিংস অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭০(১৫৩১):২৩৪৯-৫৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/14667350 pubmed] ৬. ও’কনর এম, গার্ম এ, মার্শাল জেএন, হার্ট এনএস, একস্ট্রোম পি, স্কোগ সি, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির লেন্স চোখে দৃষ্টি পিগমেন্ট। ২০১০। প্রসিডিংস বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭৭(১৬৮৯):১৮৪৩-৮। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20147327 pubmed] ৭. ও’কনর এম, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির চোখের গঠন এবং অপটিক্স{{typo help inline|reason=similar to bronzier|date=September 2022}}। ২০০৯। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৫(৬):৫৫৭-৬৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19347342 pubmed] ৮. ও’কনর এম, নিলসন ডিই, গার্ম এ: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য। ২০১০। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৬(৩):২১৩-২০। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20131056 pubmed] ৯. পেটি আর, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরায় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত স্টিয়ারিং। ২০১১। জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি। ২১৪(পিটি ১৭):২৮০৯-১৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21832123 pubmed] ১০. পিয়াটিগোর্স্কি জে, কোজমিক জেড: কিউবোজোয়ান জেলিফিশ: চোখ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার জন্য একটি ইভো/ডেভো মডেল। ২০০৪। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি। ৪৮(৮-৯):৭১৯-২৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15558464 pubmed] ১১. স্কোগ সি, গার্ম এ, নিলসন ডিই, একস্ট্রোম পি: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম রোপালিয়াল স্নায়ুতন্ত্র। ২০০৬। জার্নাল অফ মরফোলজি। ২৬৭(১২):১৩৯১-৪০৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/16217792 pubmed] fl9lg3hzkvmfsh07u7uz5wlhxzwpkn9 84881 84880 2025-06-19T03:40:19Z Mehedi Abedin 7113 84881 wikitext text/x-wiki == জেলিফিশ: বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা == === পরিচিতি === প্রায় সব জীবন্ত প্রাণীই আলো সংবেদন করতে সক্ষম, অর্থাৎ ৩০০-৮০০ ন্যানোমিটার পরিসরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের প্রতি সাড়া দিতে পারে। দৃষ্টি ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ জীবন বৃক্ষে একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত প্রাণীরা আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম, কখনও কখনও খুব জটিল টুল তৈরি করেছে যা তাদের আলো সংবেদন করতে সক্ষম করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বক্স জেলিফিশের (শ্রেণি কিউবোজোয়া, ফাইলাম নিডারিয়া) দৃষ্টি ব্যবস্থা (চিত্র ১): এটি সবচেয়ে জটিল নিডারিয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা। এই সুন্দর জলজ প্রাণীদের চোখ আমাদের চোখের সাথে খুবই মিল! কিউবোজোয়া শ্রেণির সদস্যদের (নিডারিয়া ফাইলামের ক্ষুদ্রতম শ্রেণি) ব্যতিক্রমী দৃষ্টিশক্তি লক্ষ্য করা গেছে যখন দেখা গেছে যে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে জটিল সাঁতারের আচরণ প্রদর্শন করে: তারা নির্দিষ্ট দিকে খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে এবং অন্ধকার এলাকা ও বাধা এড়াতে পারে। [[File:Tripedalia-cystophora-Bielecki.jpg|thumb|চিত্র ১: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা, ক্যারিবীয় সাগরের একটি বক্স জেলিফিশ।]] বক্স জেলিফিশ কীভাবে দেখে তা অধ্যয়ন করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষামূলক চেম্বারে আলোর অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে প্রাণীদের বাঁধা রাখা হয়, সেখানে পালস ফ্রিকোয়েন্সি, সংকোচন এবং জেলিফিশের ঘণ্টার গঠনগত অসামঞ্জস্যের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা মুক্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে এড়ানো এবং কাছে যাওয়ার সাঁতারের আচরণে রূপান্তরিত হয়। গত কয়েক দশকে বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্র, দৃষ্টি ব্যবস্থা সহ, শারীরবৃত্তীয়, কোষীয়, আণবিক এবং জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রাণীদের জটিল চোখ সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান এখনও অসম্পূর্ণ। === শারীরস্থান === বক্স জেলিফিশের নামকরণ হয়েছে এর ঘণ্টার ঘনকাকৃতির আকৃতির জন্য, যা প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। ঘণ্টার প্রতিটি পাশে চারটি রোপালিয়া অবস্থিত – এটি সংবেদনশীল কাঠামো যা মোট ২৪টি বিভিন্ন ধরনের চোখ ধারণ করে। এই ধরনের দৃষ্টি অঙ্গের অবস্থান কিউবোমেডুসাকে প্রায় ৩৬০-ডিগ্রি দৃষ্টিক্ষেত্র প্রদান করে! আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের চোখ বাইরের দিকে নয়, বরং মেডুসার ভিতরের দিকে (অর্থাৎ একে অপরের দিকে!) তাকায়, কিন্তু ঘণ্টার স্বচ্ছতার কারণে তারা সব দিকে দেখতে পায়। জেলিফিশের চোখের অবস্থান পেশি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই, তাই রোপালিয়া একটি ক্রিস্টাল কাঠামোর সাহায্যে একই প্রাকৃতিক দিক বজায় রাখে, যাকে স্ট্যাটোলিথ বলা হয়, এটি নিচের দিকে ওজন হিসেবে কাজ করে এবং উপরের নমনীয় ডাঁটির মাধ্যমে ঘণ্টার সাথে সংযুক্ত থাকে। রোপালিয়ার ছয়টি চোখ চারটি ভিন্ন রূপগত ধরনের (চিত্র ২): উপরের এবং নিচের জটিল লেন্সযুক্ত মানুষের মতো চোখ (ইউএলই এবং এলএলই) উল্লম্ব মধ্যরেখায়, এবং প্রতিটি পাশে শুধুমাত্র আলো-সংবেদনশীল পিগমেন্টযুক্ত সাধারণ চোখ, যাকে পিট এবং স্লিট চোখ (পিই এবং এসই) বলা হয়। যদিও নিডারিয়ানরা রেডিয়ালি প্রতিসম প্রাণী, লেন্স চোখের মধ্যরেখার অবস্থান ব্যতীত তাদের রোপালিয়ার স্নায়ুতন্ত্র দ্বিপাক্ষিকভাবে প্রতিসম। রোপালিয়াল স্নায়ু যুক্ত ডাঁটি রোপালিয়াম এবং ঘণ্টার প্রান্তে থাকা রিং নার্ভের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করে, যা পুনরায় স্নায়ু জালের সাথে সংযুক্ত হয়ে বক্স জেলিফিশের সম্পূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। [[File:Cubozoan visual system in Tripedalia cystophora.png|thumb|চিত্র ২: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার কিউবোজোয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা]] রোপালিয়ায় নিউরোনাল এবং নন-নিউরোনাল কোষ উভয়ই বর্ণনা করা হয়েছে, যা বিভিন্ন কোষের জনসংখ্যা গঠন করে। নিউরোনাল কোষগুলো দুটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম গ্রুপে জড়ো হয়, যা একে অপরের সাথে এবং পিট ও স্লিট চোখের সাথে ফাইবার পথের মাধ্যমে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে, রোপালিয়ায় ১০০০-এর বেশি নিউরোনাল কোষ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন যা লেন্স চোখের সাথে যুক্ত ফ্ল্যাঙ্ক নিউরন জায়ান্ট নিউরন নন-নিউরোনাল কোষের মধ্যে রয়েছে সিলিয়েটেড ফটোরিসেপ্টর কোষ যা প্রাথমিক আলো সংবেদনের জন্য দায়ী, বেলুন কোষ যার কার্যকারিতা অজানা এবং পোস্টেরিয়র কোষ শীট – অপরিবর্তিত কোষের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা যা সম্ভবত স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। ==== লেন্স চোখ ==== বক্স জেলিফিশের লেন্স চোখের সাথে আমাদের চোখের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিল কারণ এতে ক্যামেরা রয়েছে যার মধ্যে লেন্স এবং রেটিনার মধ্যে ভিট্রিয়াস বডি বিভাজন করে (তাই এর নাম "ক্যামেরা চোখ")। লেন্স চোখের স্থানিক রেজোলিউশন দুর্বল কারণ রেটিনা লেন্সের খুব কাছে অবস্থিত, শুধুমাত্র পাতলা ভিট্রিয়াস স্পেস (নিচের লেন্স চোখে প্রায় ৮ মাইক্রোমিটার, উপরের লেন্স চোখে অনুপস্থিত) দ্বারা পৃথক, যেখানে লেন্সের ফোকাল দৈর্ঘ্য রেটিনার অনেক পিছনে পড়ে (৪০০-৬০০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে)। মানুষের ক্ষেত্রে, তুলনায়, ক্যামেরার আকার প্রায় ২৩ মিলিমিটার। ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাফি নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে চোখে একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে বিভিন্ন দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় কোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়, উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় চোখের ধরনেরই সময়গত রেজোলিউশন কম, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন, যা ইঙ্গিত করে যে তারা বিভিন্ন দৃশ্যমান কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাম থেকে সর্বাধিক ফ্রিকোয়েন্সি (যাকে ফ্লিকার ফিউশন ফ্রিকোয়েন্সিও বলা হয়) উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের জন্য যথাক্রমে ১০ এবং ৮ হার্জ বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া, দুটি লেন্স চোখের দৃষ্টিক্ষেত্র ভিন্ন, যা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা কভার করে। সামগ্রিকভাবে, এটা সম্ভাব্য বলে মনে হয় যে বক্স জেলিফিশের চোখ নির্দিষ্ট কাজের জন্য সূক্ষ্মভাবে সুর করা হয়েছে, যা রোপালিয়ায় দৃশ্যমান উদ্দীপনার ফিল্টারিংয়ের অনুমতি দেয়। === বক্স জেলিফিশের কি রঙিন দৃষ্টি আছে? === একটি কৌতূহলী প্রশ্ন হলো কিউবোমেডুসা অর্ডারের সদস্যদের কি আমাদের মতো উন্নত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো রঙিন দৃষ্টি আছে? প্রাণীজগতে দুই ধরনের ফটোরিসেপ্টর রয়েছে: সিলিয়ারি, যা সাধারণত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং র‍্যাবডোমেরিক, যা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি আকর্ষণীয় যে, বক্স জেলিফিশের মধ্যে মেরুদণ্ডী জাতীয় সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর রয়েছে। যদিও উভয় ধরনের ফটোরিসেপ্টরই আলোর সংস্পর্শে রেটিনাল অণুর একই রাসায়নিক রূপান্তরের উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ ব্লিচিং), এগুলো প্রক্রিয়া, গঠন, উৎপত্তি এবং আণবিক পথের দিক থেকে ভিন্ন। উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের রেটিনায় থাকা রিসেপ্টরগুলো সাধারণত নীল-সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল, প্রজাতির উপর নির্ভর করে যার শীর্ষ শোষণ ৪৬৫-৫০৮ ন্যানোমিটারের মধ্যে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে বক্স জেলিফিশ সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যদিও সবুজ রঙ-নির্দেশিত বাধা এড়ানোর পরীক্ষাগুলো সিদ্ধান্তহীন ফলাফল দিয়েছে। অগভীর জলে বসবাসকারী এই প্রাণীদের জন্য রঙিন দৃষ্টি একটি উপযোগী অভিযোজন হতে পারে, যেখানে পৃষ্ঠের ঢেউয়ের কারণে ঝিকমিক আলো থাকে, যাতে লুমিন্যান্স (অর্থাৎ উজ্জ্বলতা, তীব্রতা) শব্দ থেকে প্রাসঙ্গিক দৃশ্যমান উদ্দীপনা আলাদা করা যায়, কারণ রঙিন দৃষ্টি লুমিন্যান্সের ওঠানামার প্রতি কম সংবেদনশীল। === দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণ এবং সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণ === এখন পর্যন্ত, শুধুমাত্র নিচের লেন্স চোখের গুরুত্ব সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে চলমান প্রাণীর গতি নিয়ন্ত্রণকারী ঘণ্টার সংকোচন হারের ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, লেন্স চোখের অপটিক্যাল শক্তি কিউবোমেডুসার প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয়, যা আরও পরিবর্তনশীলতা প্রবর্তন করে। স্লিট এবং পিট চোখের পেসমেকার কার্যকলাপে (ঘণ্টার স্পন্দনশীল চলাচল) এবং সাঁতারের দিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কিছুটা অস্পষ্ট এবং ভবিষ্যতে এমন পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট করা যেতে পারে যেখানে নির্দিষ্ট চোখের ধরন সিলেকশন হিসেবে অকার্যকর করা হবে। [[File:Alatina alata swimming Johnoson Sea Link near the Bahamas.ogv|thumb|আলাটিনা আলাটা বক্স জেলিফিশ বাহামার কাছে সাঁতরাচ্ছে]] বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্রে দৃশ্যমান ইনপুটের একীকরণ কীভাবে ঘটে তাও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া ডাঁটিতে (স্নায়ু রিংয়ের একটি সম্প্রসারণ) এবং রোপালিয়ামের স্নায়ুতন্ত্রে উভয় ক্ষেত্রেই সনাক্ত করা গেছে। রোপালিয়ার মধ্যে নির্দিষ্ট নিউরোনাল কোষের সাথে নির্দিষ্ট চোখের ধরনের সম্পর্ক নির্দেশ করে যে কিছু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণ এই কাঠামোর মধ্যেই ঘটে। সম্ভবত শরীর এবং টেন্টাকলের সংকোচনের হার এবং শক্তির উপর নির্ভরশীল সাঁতারের গতি একটি পৃথক নিউরোনাল জনসংখ্যার পেসমেকার কার্যকলাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা দৃশ্যমান তথ্যের উচ্চতর প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণের জন্য দায়ী। ফ্ল্যাঙ্ক এবং জায়ান্ট নিউরন এই কাজটি পালন করতে পারে। সূক্ষ্ম স্টিয়ারিং পুনরায় স্বাধীন সংকেত এবং ঘণ্টার বিভিন্ন পাশের অসম সংকোচনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। === বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ === জেনেটিকভাবে, বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের তুলনায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাথে বেশি সম্পর্কিত বলে মনে হয়, কারণ তাদেএ আলো সংবেদনের অন্তর্নিহিত আণবিক পথের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ (উদাহরণস্বরূপ, ফটোট্রান্সডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফোডাইস্টেরেজ এবং রেটিনায় প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট-উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি)। অন্যথায় রেডিয়ালি প্রতিসম জেলিফিশের রোপালিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের দ্বিপাক্ষিক সংগঠন (রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন ব্যতীত) এই প্রমাণ হতে পারে যে নিডারিয়ানরা একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম বিশিষ্ট পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বক্স জেলিফিশ এবং মেরুদণ্ডী উভয়ের দ্বারা সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর এবং মেলানোজেনিক পথের ব্যবহার হয় সাধারণ পূর্বপুরুষের বা স্বাধীন সমান্তরাল বিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। বক্স জেলিফিশের অসাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থার আরও তদন্ত তাই উন্নত ক্যামেরা চোখের বিবর্তনীয় উৎপত্তির রহস্য সমাধানে সহায়ক হবে। === তথ্যসূত্র === ১. বিয়েলেকি জে, হোয়েগ জেটি, গার্ম এ: মেটাজোয়ান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফিক্সেশনাল চোখের নড়াচড়া। ২০১৩। পিএলওএস ওয়ান। ৮(৬):ই৬৬৪৪২। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23776673 pubmed] ২. একস্ট্রোম পি, গার্ম এ, পলসন জে, ভিহটেলিক টিএস, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশে একাধিক ফটোসিস্টেমের ইমিউনোহিস্টোকেমিক্যাল প্রমাণ। ২০০৮। সেল অ্যান্ড টিস্যু রিসার্চ। ৩৩৩(১):১১৫-২৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18504619 pubmed] ৩. কোজমিক জেড, রুজিকোভা জে, জোনাসোভা কে, মাতসুমোতো ওয়াই, ভোপালেনস্কি পি, কোজমিকোভা আই, স্ট্রনাড এইচ, কাওয়ামুরা এস, পিয়াটিগোর্স্কি জে, পেসেস ভি, ভ্লসেক সি: মেরুদণ্ডী-জাতীয় উপাদান থেকে নিডারিয়ান ক্যামেরা-টাইপ চোখের সমাবেশ। ২০০৮। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউএসএ। ১০৫(২৬):৮৯৮৯-৯৩। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18577593 pubmed] ৪. কোজমিক জেড: চোখের বিবর্তনে প্যাক্স জিনের ভূমিকা। ২০০৮। ব্রেন রিসার্চ বুলেটিন। ৭৫(২-৪):৩৩৫-৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18331895 pubmed] ৫. নর্ডস্ট্রোম কে, ওয়ালেন আর, সিমোর জে, নিলসন ডি: জেলিফিশ লার্ভায় নিউরনবিহীন একটি সাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থা। ২০০৩। প্রসিডিংস অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭০(১৫৩১):২৩৪৯-৫৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/14667350 pubmed] ৬. ও’কনর এম, গার্ম এ, মার্শাল জেএন, হার্ট এনএস, একস্ট্রোম পি, স্কোগ সি, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির লেন্স চোখে দৃষ্টি পিগমেন্ট। ২০১০। প্রসিডিংস বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭৭(১৬৮৯):১৮৪৩-৮। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20147327 pubmed] ৭. ও’কনর এম, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির চোখের গঠন এবং অপটিক্স{{typo help inline|reason=similar to bronzier|date=September 2022}}। ২০০৯। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৫(৬):৫৫৭-৬৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19347342 pubmed] ৮. ও’কনর এম, নিলসন ডিই, গার্ম এ: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য। ২০১০। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৬(৩):২১৩-২০। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20131056 pubmed] ৯. পেটি আর, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরায় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত স্টিয়ারিং। ২০১১। জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি। ২১৪(পিটি ১৭):২৮০৯-১৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21832123 pubmed] ১০. পিয়াটিগোর্স্কি জে, কোজমিক জেড: কিউবোজোয়ান জেলিফিশ: চোখ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার জন্য একটি ইভো/ডেভো মডেল। ২০০৪। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি। ৪৮(৮-৯):৭১৯-২৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15558464 pubmed] ১১. স্কোগ সি, গার্ম এ, নিলসন ডিই, একস্ট্রোম পি: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম রোপালিয়াল স্নায়ুতন্ত্র। ২০০৬। জার্নাল অফ মরফোলজি। ২৬৭(১২):১৩৯১-৪০৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/16217792 pubmed] nci6w1gc4yleotnn5x6rc32aexpdcvr 84882 84881 2025-06-19T03:41:05Z Mehedi Abedin 7113 84882 wikitext text/x-wiki == জেলিফিশ: বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা == === পরিচিতি === প্রায় সব জীবন্ত প্রাণীই আলো সংবেদন করতে সক্ষম, অর্থাৎ ৩০০-৮০০ ন্যানোমিটার পরিসরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের প্রতি সাড়া দিতে পারে। দৃষ্টি ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ জীবন বৃক্ষে একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত প্রাণীরা আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম, কখনও কখনও খুব জটিল টুল তৈরি করেছে যা তাদের আলো সংবেদন করতে সক্ষম করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বক্স জেলিফিশের (শ্রেণি কিউবোজোয়া, ফাইলাম নিডারিয়া) দৃষ্টি ব্যবস্থা (চিত্র ১): এটি সবচেয়ে জটিল নিডারিয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা। এই সুন্দর জলজ প্রাণীদের চোখ আমাদের চোখের সাথে খুবই মিল! কিউবোজোয়া শ্রেণির সদস্যদের (নিডারিয়া ফাইলামের ক্ষুদ্রতম শ্রেণি) ব্যতিক্রমী দৃষ্টিশক্তি লক্ষ্য করা গেছে যখন দেখা গেছে যে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে জটিল সাঁতারের আচরণ প্রদর্শন করে: তারা নির্দিষ্ট দিকে খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে এবং অন্ধকার এলাকা ও বাধা এড়াতে পারে। [[File:Tripedalia-cystophora-Bielecki.jpg|thumb|চিত্র ১: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা, ক্যারিবীয় সাগরের একটি বক্স জেলিফিশ।]] বক্স জেলিফিশ কীভাবে দেখে তা অধ্যয়ন করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষামূলক চেম্বারে আলোর অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে প্রাণীদের বাঁধা রাখা হয়, সেখানে পালস ফ্রিকোয়েন্সি, সংকোচন এবং জেলিফিশের ঘণ্টার গঠনগত অসামঞ্জস্যের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা মুক্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে এড়ানো এবং কাছে যাওয়ার সাঁতারের আচরণে রূপান্তরিত হয়। গত কয়েক দশকে বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্র, দৃষ্টি ব্যবস্থা সহ, শারীরবৃত্তীয়, কোষীয়, আণবিক এবং জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়েছে, কিন্তু এই প্রাণীদের জটিল চোখ সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান এখনও অসম্পূর্ণ। === শারীরস্থান === বক্স জেলিফিশের নামকরণ হয়েছে এর ঘণ্টার ঘনকাকৃতির আকৃতির জন্য, যা প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। ঘণ্টার প্রতিটি পাশে চারটি রোপালিয়া অবস্থিত – এটি সংবেদনশীল কাঠামো যা মোট ২৪টি বিভিন্ন ধরনের চোখ ধারণ করে। এই ধরনের দৃষ্টি অঙ্গের অবস্থান কিউবোমেডুসাকে প্রায় ৩৬০-ডিগ্রি দৃষ্টিক্ষেত্র প্রদান করে! আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের চোখ বাইরের দিকে নয়, বরং মেডুসার ভিতরের দিকে (অর্থাৎ একে অপরের দিকে!) তাকায়, কিন্তু ঘণ্টার স্বচ্ছতার কারণে তারা সব দিকে দেখতে পায়। জেলিফিশের চোখের অবস্থান পেশি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই, তাই রোপালিয়া একটি ক্রিস্টাল কাঠামোর সাহায্যে একই প্রাকৃতিক দিক বজায় রাখে, যাকে স্ট্যাটোলিথ বলা হয়, এটি নিচের দিকে ওজন হিসেবে কাজ করে এবং উপরের নমনীয় ডাঁটির মাধ্যমে ঘণ্টার সাথে সংযুক্ত থাকে। রোপালিয়ার ছয়টি চোখ চারটি ভিন্ন রূপগত ধরনের (চিত্র ২): উপরের এবং নিচের জটিল লেন্সযুক্ত মানুষের মতো চোখ (ইউএলই এবং এলএলই) উল্লম্ব মধ্যরেখায়, এবং প্রতিটি পাশে শুধুমাত্র আলো-সংবেদনশীল পিগমেন্টযুক্ত সাধারণ চোখ, যাকে পিট এবং স্লিট চোখ (পিই এবং এসই) বলা হয়। যদিও নিডারিয়ানরা রেডিয়ালি প্রতিসম প্রাণী, লেন্স চোখের মধ্যরেখার অবস্থান ব্যতীত তাদের রোপালিয়ার স্নায়ুতন্ত্র দ্বিপাক্ষিকভাবে প্রতিসম। রোপালিয়াল স্নায়ু যুক্ত ডাঁটি রোপালিয়াম এবং ঘণ্টার প্রান্তে থাকা রিং নার্ভের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করে, যা পুনরায় স্নায়ু জালের সাথে সংযুক্ত হয়ে বক্স জেলিফিশের সম্পূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। [[File:Cubozoan visual system in Tripedalia cystophora.png|thumb|চিত্র ২: ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার কিউবোজোয়ান দৃষ্টি ব্যবস্থা]] রোপালিয়ায় নিউরোনাল এবং নন-নিউরোনাল কোষ উভয়ই বর্ণনা করা হয়েছে, যা বিভিন্ন কোষের জনসংখ্যা গঠন করে। নিউরোনাল কোষগুলো দুটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম গ্রুপে জড়ো হয়, যা একে অপরের সাথে এবং পিট ও স্লিট চোখের সাথে ফাইবার পথের মাধ্যমে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে, রোপালিয়ায় ১০০০-এর বেশি নিউরোনাল কোষ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন যা লেন্স চোখের সাথে যুক্ত ফ্ল্যাঙ্ক নিউরন জায়ান্ট নিউরন নন-নিউরোনাল কোষের মধ্যে রয়েছে সিলিয়েটেড ফটোরিসেপ্টর কোষ যা প্রাথমিক আলো সংবেদনের জন্য দায়ী, বেলুন কোষ যার কার্যকারিতা অজানা এবং পোস্টেরিয়র কোষ শীট – অপরিবর্তিত কোষের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা যা সম্ভবত স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। ==== লেন্স চোখ ==== বক্স জেলিফিশের লেন্স চোখের সাথে আমাদের চোখের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিল কারণ এতে ক্যামেরা রয়েছে যার মধ্যে লেন্স এবং রেটিনার মধ্যে ভিট্রিয়াস বডি বিভাজন করে (তাই এর নাম "ক্যামেরা চোখ")। লেন্স চোখের স্থানিক রেজোলিউশন দুর্বল কারণ রেটিনা লেন্সের খুব কাছে অবস্থিত, শুধুমাত্র পাতলা ভিট্রিয়াস স্পেস (নিচের লেন্স চোখে প্রায় ৮ মাইক্রোমিটার, উপরের লেন্স চোখে অনুপস্থিত) দ্বারা পৃথক, যেখানে লেন্সের ফোকাল দৈর্ঘ্য রেটিনার অনেক পিছনে পড়ে (৪০০-৬০০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে)। মানুষের ক্ষেত্রে, তুলনায়, ক্যামেরার আকার প্রায় ২৩ মিলিমিটার। ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাফি নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে চোখে একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে বিভিন্ন দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় কোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়, উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় চোখের ধরনেরই সময়গত রেজোলিউশন কম, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন, যা ইঙ্গিত করে যে তারা বিভিন্ন দৃশ্যমান কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলেক্ট্রোরেটিনোগ্রাম থেকে সর্বাধিক ফ্রিকোয়েন্সি (যাকে ফ্লিকার ফিউশন ফ্রিকোয়েন্সিও বলা হয়) উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের জন্য যথাক্রমে ১০ এবং ৮ হার্জ বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া, দুটি লেন্স চোখের দৃষ্টিক্ষেত্র ভিন্ন, যা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা কভার করে। সামগ্রিকভাবে, এটা সম্ভাব্য বলে মনে হয় যে বক্স জেলিফিশের চোখ নির্দিষ্ট কাজের জন্য সূক্ষ্মভাবে সুর করা হয়েছে, যা রোপালিয়ায় দৃশ্যমান উদ্দীপনার ফিল্টারিংয়ের অনুমতি দেয়। === বক্স জেলিফিশের কি রঙিন দৃষ্টি আছে? === একটি কৌতূহলী প্রশ্ন হলো কিউবোমেডুসা অর্ডারের সদস্যদের কি আমাদের মতো উন্নত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো রঙিন দৃষ্টি আছে? প্রাণীজগতে দুই ধরনের ফটোরিসেপ্টর রয়েছে: সিলিয়ারি, যা সাধারণত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং র‍্যাবডোমেরিক, যা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি আকর্ষণীয় যে, বক্স জেলিফিশের মধ্যে মেরুদণ্ডী জাতীয় সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর রয়েছে। যদিও উভয় ধরনের ফটোরিসেপ্টরই আলোর সংস্পর্শে রেটিনাল অণুর একই রাসায়নিক রূপান্তরের উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ ব্লিচিং), এগুলো প্রক্রিয়া, গঠন, উৎপত্তি এবং আণবিক পথের দিক থেকে ভিন্ন। উপরের এবং নিচের লেন্স চোখের রেটিনায় থাকা রিসেপ্টরগুলো সাধারণত নীল-সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল, প্রজাতির উপর নির্ভর করে যার শীর্ষ শোষণ ৪৬৫-৫০৮ ন্যানোমিটারের মধ্যে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে বক্স জেলিফিশ সবুজ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যদিও সবুজ রঙ-নির্দেশিত বাধা এড়ানোর পরীক্ষাগুলো সিদ্ধান্তহীন ফলাফল দিয়েছে। অগভীর জলে বসবাসকারী এই প্রাণীদের জন্য রঙিন দৃষ্টি একটি উপযোগী অভিযোজন হতে পারে, যেখানে পৃষ্ঠের ঢেউয়ের কারণে ঝিকমিক আলো থাকে, যাতে লুমিন্যান্স (অর্থাৎ উজ্জ্বলতা, তীব্রতা) শব্দ থেকে প্রাসঙ্গিক দৃশ্যমান উদ্দীপনা আলাদা করা যায়, কারণ রঙিন দৃষ্টি লুমিন্যান্সের ওঠানামার প্রতি কম সংবেদনশীল। === দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণ এবং সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণ === এখন পর্যন্ত, শুধুমাত্র নিচের লেন্স চোখের গুরুত্ব সাঁতারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে চলমান প্রাণীর গতি নিয়ন্ত্রণকারী ঘণ্টার সংকোচন হারের ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, লেন্স চোখের অপটিক্যাল শক্তি কিউবোমেডুসার প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয়, যা আরও পরিবর্তনশীলতা প্রবর্তন করে। স্লিট এবং পিট চোখের পেসমেকার কার্যকলাপে (ঘণ্টার স্পন্দনশীল চলাচল) এবং সাঁতারের দিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কিছুটা অস্পষ্ট এবং ভবিষ্যতে এমন পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট করা যেতে পারে যেখানে নির্দিষ্ট চোখের ধরন সিলেকশন হিসেবে অকার্যকর করা হবে। [[File:Alatina alata swimming Johnoson Sea Link near the Bahamas.ogv|thumb|আলাটিনা আলাটা বক্স জেলিফিশ বাহামার কাছে সাঁতরাচ্ছে]] বক্স জেলিফিশের স্নায়ুতন্ত্রে দৃশ্যমান ইনপুটের একীকরণ কীভাবে ঘটে তাও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। দৃশ্যমান উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া ডাঁটিতে (স্নায়ু রিংয়ের একটি সম্প্রসারণ) এবং রোপালিয়ামের স্নায়ুতন্ত্রে উভয় ক্ষেত্রেই সনাক্ত করা গেছে। রোপালিয়ার মধ্যে নির্দিষ্ট নিউরোনাল কোষের সাথে নির্দিষ্ট চোখের ধরনের সম্পর্ক নির্দেশ করে যে কিছু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণ এই কাঠামোর মধ্যেই ঘটে। সম্ভবত শরীর এবং টেন্টাকলের সংকোচনের হার এবং শক্তির উপর নির্ভরশীল সাঁতারের গতি একটি পৃথক নিউরোনাল জনসংখ্যার পেসমেকার কার্যকলাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা দৃশ্যমান তথ্যের উচ্চতর প্রক্রিয়াকরণ এবং একীকরণের জন্য দায়ী। ফ্ল্যাঙ্ক এবং জায়ান্ট নিউরন এই কাজটি পালন করতে পারে। সূক্ষ্ম স্টিয়ারিং পুনরায় স্বাধীন সংকেত এবং ঘণ্টার বিভিন্ন পাশের অসম সংকোচনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। === বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ === জেনেটিকভাবে, বক্স জেলিফিশের দৃষ্টি ব্যবস্থা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের তুলনায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাথে বেশি সম্পর্কিত বলে মনে হয়, কারণ তাদেএ আলো সংবেদনের অন্তর্নিহিত আণবিক পথের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ (উদাহরণস্বরূপ, ফটোট্রান্সডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফোডাইস্টেরেজ এবং রেটিনায় প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট-উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি)। অন্যথায় রেডিয়ালি প্রতিসম জেলিফিশের রোপালিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের দ্বিপাক্ষিক সংগঠন (রেটিনা-সংশ্লিষ্ট নিউরন ব্যতীত) এই প্রমাণ হতে পারে যে নিডারিয়ানরা একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম বিশিষ্ট পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বক্স জেলিফিশ এবং মেরুদণ্ডী উভয়ের দ্বারা সিলিয়ারি ফটোরিসেপ্টর এবং মেলানোজেনিক পথের ব্যবহার হয় সাধারণ পূর্বপুরুষের বা স্বাধীন সমান্তরাল বিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। বক্স জেলিফিশের অসাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থার আরও তদন্ত তাই উন্নত ক্যামেরা চোখের বিবর্তনীয় উৎপত্তির রহস্য সমাধানে সহায়ক হবে। === তথ্যসূত্র === # বিয়েলেকি জে, হোয়েগ জেটি, গার্ম এ: মেটাজোয়ান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফিক্সেশনাল চোখের নড়াচড়া। ২০১৩। পিএলওএস ওয়ান। ৮(৬):ই৬৬৪৪২। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23776673 pubmed] # একস্ট্রোম পি, গার্ম এ, পলসন জে, ভিহটেলিক টিএস, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশে একাধিক ফটোসিস্টেমের ইমিউনোহিস্টোকেমিক্যাল প্রমাণ। ২০০৮। সেল অ্যান্ড টিস্যু রিসার্চ। ৩৩৩(১):১১৫-২৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18504619 pubmed] # কোজমিক জেড, রুজিকোভা জে, জোনাসোভা কে, মাতসুমোতো ওয়াই, ভোপালেনস্কি পি, কোজমিকোভা আই, স্ট্রনাড এইচ, কাওয়ামুরা এস, পিয়াটিগোর্স্কি জে, পেসেস ভি, ভ্লসেক সি: মেরুদণ্ডী-জাতীয় উপাদান থেকে নিডারিয়ান ক্যামেরা-টাইপ চোখের সমাবেশ। ২০০৮। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউএসএ। ১০৫(২৬):৮৯৮৯-৯৩। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18577593 pubmed] # কোজমিক জেড: চোখের বিবর্তনে প্যাক্স জিনের ভূমিকা। ২০০৮। ব্রেন রিসার্চ বুলেটিন। ৭৫(২-৪):৩৩৫-৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18331895 pubmed] # নর্ডস্ট্রোম কে, ওয়ালেন আর, সিমোর জে, নিলসন ডি: জেলিফিশ লার্ভায় নিউরনবিহীন একটি সাধারণ দৃষ্টি ব্যবস্থা। ২০০৩। প্রসিডিংস অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭০(১৫৩১):২৩৪৯-৫৪। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/14667350 pubmed] # ও’কনর এম, গার্ম এ, মার্শাল জেএন, হার্ট এনএস, একস্ট্রোম পি, স্কোগ সি, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির লেন্স চোখে দৃষ্টি পিগমেন্ট। ২০১০। প্রসিডিংস বায়োলজিকাল সায়েন্সেস। ২৭৭(১৬৮৯):১৮৪৩-৮। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20147327 pubmed] # ও’কনর এম, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ চিরোপসেলা ব্রোঞ্জির চোখের গঠন এবং অপটিক্স{{typo help inline|reason=similar to bronzier|date=September 2022}}। ২০০৯। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৫(৬):৫৫৭-৬৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19347342 pubmed] # ও’কনর এম, নিলসন ডিই, গার্ম এ: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার লেন্স চোখের সময়গত বৈশিষ্ট্য। ২০১০। জার্নাল অফ কম্পারেটিভ ফিজিওলজি। ১৯৬(৩):২১৩-২০। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20131056 pubmed] # পেটি আর, গার্ম এ, নিলসন ডিই: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরায় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত স্টিয়ারিং। ২০১১। জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি। ২১৪(পিটি ১৭):২৮০৯-১৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21832123 pubmed] # পিয়াটিগোর্স্কি জে, কোজমিক জেড: কিউবোজোয়ান জেলিফিশ: চোখ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার জন্য একটি ইভো/ডেভো মডেল। ২০০৪। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি। ৪৮(৮-৯):৭১৯-২৯। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15558464 pubmed] # স্কোগ সি, গার্ম এ, নিলসন ডিই, একস্ট্রোম পি: বক্স জেলিফিশ ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম রোপালিয়াল স্নায়ুতন্ত্র। ২০০৬। জার্নাল অফ মরফোলজি। ২৬৭(১২):১৩৯১-৪০৫। [http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/16217792 pubmed] 8lg0maaq6h2x5bj60xm85df002ibj03 প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/আইডেন্টিফায়ারের নাম 0 24450 84832 77922 2025-06-18T13:47:30Z RDasgupta2020 8748 /* ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা */ 84832 wikitext text/x-wiki ==সংক্ষিপ্ত বিবরণ== কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ভেরিয়েবল, ফাংশন ইত্যাদি মৌলিক উপাদানের বর্ণনামূলক নাম দেওয়ার রীতি আছে যাতে হয় যাতে প্রোগ্রামে লিখিত কোড বা নির্দেশাবলী প্রোগ্রামারের কাছে সহজবোধ্য ও অর্থবোধক হয়। প্রোগ্রামে বিবিধ গঠনগত উপাদানের জন্য ব্যবহৃত এইসকল অর্থবোধক নামকে বলা হয় '''শনাক্তকারী নাম''' অথবা '''আইডেন্টিফায়ার নাম'''। যখন প্রোগ্রামে ভেরিয়েবল বা অন্য যেকোন গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করা হয়, তখন তাকে একটি নির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত করা হয়। মূলত একটি প্রোগ্রামের যেসকল গঠনগত উপাদানের জন্য ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' ধার্য করা হয় সেগুলি হলো: [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল]] সহ বিভিন্ন [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ডেটা টাইপ|ডেটা টাইপ]] এবং বিভিন্ন [[ প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ফাংশন|ফাংশন]]। এই নামকরনের মাধ্যমে আমরা প্রোগ্রামে যে গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করছি, তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা সহজেই বোঝা যায়। তবে এই নামগুলো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে তৈরি করতে হয়, যা নির্ভর করে কিছু নিমনলিখিত শর্তের উপর: #বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা খেয়াল রেখে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত গঠনগত উপাদানগুলির নামকরন করতে হয়। #নামকরনের জন্য প্রোগ্রামিং -এর ভালো অভ্যাস থাকা জরুরী। #প্রত্যেক প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু বৈশ্বিক মানদণ্ড আছে, নামকরনের সময় সেই মানদন্ডগুলো পূর্ন করা জরুরী। ==আলোচনা== === ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা === যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের নামকরন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষার কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা থাকে। এই নিয়মগুলো না মানলে যে কম্পাইলার বা ইন্টারপ্রেটার প্রোগ্রামিং -এর জন্য ব্যাবহার করা হয় সেগুলি ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না এবং ত্রুটিপূর্ন আচরন করবে। নিচে এই সীমাবদ্ধতাগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হলো: #'''শুধুমাত্র অনুমোদিত অক্ষরের ব্যবহার করতে হবে''': অধিকাংশ প্রোগ্রামিং ভাষায় আইডেন্টিফায়ার বা গঠঙ্গত উপাদানের নামকরন করার সমত্য নামের প্রথম অক্ষরটি অবশ্যই একটি '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''' (''A-Z'' বা ''a-z'') অথবা একটি '''আন্ডারস্কোর''' (_) হতে হবে। এরপরের অক্ষরগুলোতে '''গাণিতিক সংখ্যা (0-9)''', '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''', অথবা '''আন্ডারস্কোর''' ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: <code>total</code>, <code>_count1</code>, <code>Name_123</code> ইত্যাদি বৈধ আইডেন্টিফায়ার হতে পারে। #'''সংরক্ষিত শব্দ (রিসার্ভড ওয়ার্ড) ব্যবহার করা যাবে না''': প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ সংরক্ষিত বা ''রিসার্ভড'' থাকে যা সেই ভাষার নিজস্ব কাজ সম্পাদনে ব্যবহৃত হয়। যেমন সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজে <code>int</code>, <code>return</code>, <code>if</code>, <code>while</code> ইত্যাদি শব্দগুলো কোনো ভেরিয়েবল বা ফাংশনের নাম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। উদাহরন হিসাবে, নিচের কোডটি দেখুন:<br><syntaxhighlight lang="c">int if = 5;</syntaxhighlight>এই কোডটি ভুল কারন কারণ <code>if</code> হল বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যাবহৃত এক্টি একটি সংরক্ষিত শব্দ যা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/শর্তাধীন অপারেটর|শর্তাধীন অপারেটর]] হিসাবে ব্যাবহার হয়। #'''দৈর্ঘ্যের সীমা''': কিছু ভাষা বা কম্পাইলারের ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ারের যে নামকরন করা হয় তার দৈর্ঘ্যের সীমা আরোপিত থাকে। যেমন, কোনো কম্পাইলারে একটি আইডেন্টিফায়ার সর্বোচ্চ একত্রিশ অক্ষর দীর্ঘ হতে পারে। তবে আধুনিক ভাষাগুলোর বেশিরভাগে এই সীমা অনেক বেশি বা প্রায় অনির্দিষ্ট থাকে।<br> বিভিন্ন কম্পিউটার ল্যাঙ্গোয়েজের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতাগুলো ভিন্ন হতে পারে। যেমন, পাইথন এবং জাভাস্ক্রিপ্ট -এ আইডেন্টিফায়ার নামের দৈর্ঘ্য নিয়ে কিছুটা নমনীয়তা থাকলেও, সি বা সি++ এর মতো ভাষায় কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হয়।<br>তাছাড়া, একই প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য বিভিন্ন কম্পাইলারের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। এই প্রযুক্তিগত নিয়মগুলো জানা ও মেনে চলা একজন ভালো প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামে উন্নত কোড লিখনের ভিত্তি প্রস্তুত করে দেয়। === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল সর্বপ্রথম শর্ত হল, '''প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের অর্থবোধক নামকরন'''। অর্থাৎ প্রোগ্রাম মুদ্রন করার সময় প্রতিটি ভেরিয়েবল, ফাংশন বা ধ্রুবকের জন্য এমন একটি নাম ব্যবহার করা উচিত যার মাধ্যমে তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। উদাহরন হিসাবে, ধরুন আপনি একটি ভেরিয়েবলের নাম দিয়েছেন <code>p</code> — কিন্তু <code>p</code> -এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এটা যে কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রূপ এবং কঠিন বা সাংকেতিক নাম এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে সহজবোধ্য এবং স্পষ্ট নাম ব্যবহার করা উচিত, যেমন <code>price</code>, <code>totalMarks</code>, <code>studentName</code> ইত্যাদি। এছাড়া অপরিষ্কার বা গাণিতিক চিহ্নের মত নাম যেমন <code>tmp1</code>, <code>dataX</code>, <code>aa12</code> এড়িয়ে চলা উচিত যদি না সেগুলোর মানে একদম স্পষ্ট হয়। ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশলের দ্বিতীয় শর্ত হল '''নামকরনের সময় বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা'''। অনেক প্রোগ্রামিং ভাষাতে বড় হাতের অক্ষর এবং ছোট হাতের অক্ষরকে দুটি সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ যদি কোন প্রোগ্রামে আমরা <code>p</code> এবং <code>P</code> ব্যাবহার করি তাহলে যদিও মানব বোধগম্যতার ক্ষেত্রে এই দুটি একই অক্ষর, কিন্তু প্রোগ্রাম এই দুটিকে সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করবে। সেক্ষেত্রে <code>data</code>, <code>Data</code>, এবং <code>DATA</code> — এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাম হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরন হিসাবে নিচের কোডটি লক্ষ্য করুন, <syntaxhighlight lang="c"> int studentName = 5; printf("%d", StudentName); </syntaxhighlight> উপরের কোডটিতে একটি ত্রুটি আছে কারন সি প্রোগ্রামে <code>studentName</code> এবং <code>StudentName</code> সমার্থক নয়। তাই প্রোগ্রাম চালনা করার সময় ত্রুটি ধরা পড়বে। এই সমস্যাটি এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' -এর জন্য সবসময় একই ধরনের হরফ ব্যবহার করা। অর্থাৎ আপনি যদি <code>studentName</code> নামের একটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করেন, তবে পুরো প্রোগ্রামে তা একইভাবে লিখুন — কখনো <code>StudentName</code> বা <code>STUDENTNAME</code> লিখবেন না। এতে কোড হবে পরিষ্কার, সহজবোধ্য এবং ত্রুটিমুক্ত। === শিল্পক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম === প্রায় সমস্ত প্রোগ্রামিং ভাষাতে এবং অধিকাংশ সফটওয়্যার উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামের কোড লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শৈলী প্রোগ্রামারদের মেনে চলতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ার নামের জন্য সবচেয়ে সাধারণ যে তিনধরনের হরফ বা ''কেস স্টাইল'' প্রোগ্রামাররা অনুসরণ করে সেগুলি হল, '''ক্যামেলকেস''': ক্যামেলকেস (বা <code>camelCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী যেখানে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিবিধ ধ্রুবক, ভেরিয়েবল ইত্যাদির নামকরনের সময় প্রথম শব্দটি ছোট হাতের ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকে। এবার ধরুন কোন আইডেন্টিফায়ার নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দমালার দুটি অর্থবোধক শব্দকে একত্রে যোগ করে ব্যাবহার করা হল। উদাহরন হিসাবে ধরুন বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে এবং প্রতিটি ছাত্রের বার্ষিক রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্য নেওয়া হল। এবার প্রোগ্রামে কোন ছাত্রের নাম চিহ্নিত করতে আমরা ইংরেজি শব্দমালার <code>student</code> এবং <code>name</code> এই দুটি শব্দ ব্যাবহার হল। তাহলে ক্যামেলকেসের নিয়ম অনুসারে আমরা প্রোগ্রামে সেটিকে লিখবো, <code>studentName</code> হিসাবে। অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর ছোট হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং এই দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। এটাই হল ক্যামেলকেসের নিয়ম। ক্যামেলকেস শৈলীর আরো উদাহরণ হল: <code>studentName</code>, <code>totalMarks</code> '''পাস্কালকেস''': পাস্কালকেস (বা <code>PascalCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী। পূর্বে ক্যামেলকেসে ব্যাবহৃত উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনেই বলা যাক যে ''পাস্কালকেস'' অনুসারে ছাত্রের নামকে প্রোগ্রামে উল্লেখ করা হবে, <code>StudentName</code> হিসাবে, অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং ক্যামেলকেসের মতোই পাস্কালকেসেও দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। পাস্কালকেসের আরও উদাহরণ: <code>StudentName</code>, <code>TotalMarks</code> '''স্নেককেস''': পূর্বের উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে প্রোগ্রামে যদি স্নেককেস (বা <code>snake_case</code>) অনুসারে আইডেন্টিফায়ারের নামকরন হয় তাহলে ছাত্রের নামের জন্য প্রোগ্রামে <code>student_name</code> হরফটি ব্যাবহার হবে, অর্থাৎ আইডেন্টিফায়ারে শব্দে সবই ছোট হাতের অক্ষরে থাকবে এবং দুটি অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> এবং <code>name</code> -এর মধ্য আন্ডারস্কোর (_) থাকে। স্নেক কেসের আরো উদাহরণ: <code>student_name</code>, <code>total_marks</code> সি++, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষায় সাধারণত ক্যামলকেস ব্যবহার হয়। কিন্তু ক্লাস ও লাইব্রেরির নামের জন্য পাস্কালকেস ব্যবহার করা হয়। সি শার্পে সাধারণভাবে পাস্কালকেস ব্যবহৃত হয়, তবে ফাংশনের ইনপুট প্যারামিটারে ক্যামলকেস ব্যাবহার হয়। পাইথন সাধারণত স্নেককেস ফরম্যাট অনুসরণ করে। আইডেন্টিফায়ারের নাম, আন্ডারস্কোর ( _ ) দিয়ে শুরু করা অনুচিত, কারণ এটি সাধারণত প্রযুক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ধ্রুবকের নামকরন সবসময় বড় হাতের অক্ষরে লেখা উচিত প্রায়শই এগুলো বড় হাতের অক্ষর ও স্নেককেস ফরম্যাটে লেখা হয়। যাকে সাধারনত '''আপার স্নেককেস''' বলা হয়। উদাহরণ: <code>MAX_SIZE</code>, <code>PI_VALUE</code> ==মূল পরিভাষা== ;ক্যামেল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর ছোট হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;পাস্কাল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর বড় হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;রিজার্ভড ওয়ার্ড :বিবিধ প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ থাকে যেগুলো ''বিশেষ অর্থ'' বহন করে, তাই এগুলোকে আইডেন্টিফায়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। ;স্নেক কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন ব্যাবহৃত সকল ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে শুধু ছোট হাতের অক্ষর ব্যাবহার হয় এবং দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের মাঝে একটি আন্ডারস্কোর ( _ ) ব্যবহার করা হয়। ==তথ্যসূত্র== * [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++] {{reflist}} * [[w:Camel case|Camel case]] * [[w:Pascal (programming language)|Pascal case]] * [[w:Reserved word|Reserved word]] * [[w:Snake case|Snake case]] [[category:প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা]] q4emplvh6wsc8q3yfzgu5inupvt2apc 84833 84832 2025-06-18T13:48:12Z RDasgupta2020 8748 /* ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা */ 84833 wikitext text/x-wiki ==সংক্ষিপ্ত বিবরণ== কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ভেরিয়েবল, ফাংশন ইত্যাদি মৌলিক উপাদানের বর্ণনামূলক নাম দেওয়ার রীতি আছে যাতে হয় যাতে প্রোগ্রামে লিখিত কোড বা নির্দেশাবলী প্রোগ্রামারের কাছে সহজবোধ্য ও অর্থবোধক হয়। প্রোগ্রামে বিবিধ গঠনগত উপাদানের জন্য ব্যবহৃত এইসকল অর্থবোধক নামকে বলা হয় '''শনাক্তকারী নাম''' অথবা '''আইডেন্টিফায়ার নাম'''। যখন প্রোগ্রামে ভেরিয়েবল বা অন্য যেকোন গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করা হয়, তখন তাকে একটি নির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত করা হয়। মূলত একটি প্রোগ্রামের যেসকল গঠনগত উপাদানের জন্য ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' ধার্য করা হয় সেগুলি হলো: [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল]] সহ বিভিন্ন [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ডেটা টাইপ|ডেটা টাইপ]] এবং বিভিন্ন [[ প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ফাংশন|ফাংশন]]। এই নামকরনের মাধ্যমে আমরা প্রোগ্রামে যে গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করছি, তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা সহজেই বোঝা যায়। তবে এই নামগুলো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে তৈরি করতে হয়, যা নির্ভর করে কিছু নিমনলিখিত শর্তের উপর: #বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা খেয়াল রেখে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত গঠনগত উপাদানগুলির নামকরন করতে হয়। #নামকরনের জন্য প্রোগ্রামিং -এর ভালো অভ্যাস থাকা জরুরী। #প্রত্যেক প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু বৈশ্বিক মানদণ্ড আছে, নামকরনের সময় সেই মানদন্ডগুলো পূর্ন করা জরুরী। ==আলোচনা== === ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা === যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের নামকরন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষার কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা থাকে। এই নিয়মগুলো না মানলে যে কম্পাইলার বা ইন্টারপ্রেটার প্রোগ্রামিং -এর জন্য ব্যাবহার করা হয় সেগুলি ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না এবং ত্রুটিপূর্ন আচরন করবে। নিচে এই সীমাবদ্ধতাগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হলো: #'''শুধুমাত্র অনুমোদিত অক্ষরের ব্যবহার করতে হবে''': অধিকাংশ প্রোগ্রামিং ভাষায় আইডেন্টিফায়ার বা গঠঙ্গত উপাদানের নামকরন করার সমত্য নামের প্রথম অক্ষরটি অবশ্যই একটি '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''' (''A-Z'' বা ''a-z'') অথবা একটি '''আন্ডারস্কোর''' (_) হতে হবে। এরপরের অক্ষরগুলোতে '''গাণিতিক সংখ্যা (0-9)''', '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''', অথবা '''আন্ডারস্কোর''' ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: <code>total</code>, <code>_count1</code>, <code>Name_123</code> ইত্যাদি বৈধ আইডেন্টিফায়ার হতে পারে। #'''সংরক্ষিত শব্দ (রিসার্ভড ওয়ার্ড) ব্যবহার করা যাবে না''': প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ সংরক্ষিত বা ''রিসার্ভড'' থাকে যা সেই ভাষার নিজস্ব কাজ সম্পাদনে ব্যবহৃত হয়। যেমন সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজে <code>int</code>, <code>return</code>, <code>if</code>, <code>while</code> ইত্যাদি শব্দগুলো কোনো ভেরিয়েবল বা ফাংশনের নাম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। উদাহরন হিসাবে, নিচের কোডটি দেখুন:<br><syntaxhighlight lang="c">int if = 5;</syntaxhighlight>এই কোডটি ভুল কারন কারণ <code>if</code> হল বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যাবহৃত একটি সংরক্ষিত শব্দ যা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/শর্তাধীন অপারেটর|শর্তাধীন অপারেটর]] হিসাবে ব্যাবহার হয়। #'''দৈর্ঘ্যের সীমা''': কিছু ভাষা বা কম্পাইলারের ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ারের যে নামকরন করা হয় তার দৈর্ঘ্যের সীমা আরোপিত থাকে। যেমন, কোনো কম্পাইলারে একটি আইডেন্টিফায়ার সর্বোচ্চ একত্রিশ অক্ষর দীর্ঘ হতে পারে। তবে আধুনিক ভাষাগুলোর বেশিরভাগে এই সীমা অনেক বেশি বা প্রায় অনির্দিষ্ট থাকে।<br> বিভিন্ন কম্পিউটার ল্যাঙ্গোয়েজের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতাগুলো ভিন্ন হতে পারে। যেমন, পাইথন এবং জাভাস্ক্রিপ্ট -এ আইডেন্টিফায়ার নামের দৈর্ঘ্য নিয়ে কিছুটা নমনীয়তা থাকলেও, সি বা সি++ এর মতো ভাষায় কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হয়।<br>তাছাড়া, একই প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য বিভিন্ন কম্পাইলারের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। এই প্রযুক্তিগত নিয়মগুলো জানা ও মেনে চলা একজন ভালো প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামে উন্নত কোড লিখনের ভিত্তি প্রস্তুত করে দেয়। === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল সর্বপ্রথম শর্ত হল, '''প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের অর্থবোধক নামকরন'''। অর্থাৎ প্রোগ্রাম মুদ্রন করার সময় প্রতিটি ভেরিয়েবল, ফাংশন বা ধ্রুবকের জন্য এমন একটি নাম ব্যবহার করা উচিত যার মাধ্যমে তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। উদাহরন হিসাবে, ধরুন আপনি একটি ভেরিয়েবলের নাম দিয়েছেন <code>p</code> — কিন্তু <code>p</code> -এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এটা যে কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রূপ এবং কঠিন বা সাংকেতিক নাম এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে সহজবোধ্য এবং স্পষ্ট নাম ব্যবহার করা উচিত, যেমন <code>price</code>, <code>totalMarks</code>, <code>studentName</code> ইত্যাদি। এছাড়া অপরিষ্কার বা গাণিতিক চিহ্নের মত নাম যেমন <code>tmp1</code>, <code>dataX</code>, <code>aa12</code> এড়িয়ে চলা উচিত যদি না সেগুলোর মানে একদম স্পষ্ট হয়। ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশলের দ্বিতীয় শর্ত হল '''নামকরনের সময় বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা'''। অনেক প্রোগ্রামিং ভাষাতে বড় হাতের অক্ষর এবং ছোট হাতের অক্ষরকে দুটি সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ যদি কোন প্রোগ্রামে আমরা <code>p</code> এবং <code>P</code> ব্যাবহার করি তাহলে যদিও মানব বোধগম্যতার ক্ষেত্রে এই দুটি একই অক্ষর, কিন্তু প্রোগ্রাম এই দুটিকে সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করবে। সেক্ষেত্রে <code>data</code>, <code>Data</code>, এবং <code>DATA</code> — এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাম হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরন হিসাবে নিচের কোডটি লক্ষ্য করুন, <syntaxhighlight lang="c"> int studentName = 5; printf("%d", StudentName); </syntaxhighlight> উপরের কোডটিতে একটি ত্রুটি আছে কারন সি প্রোগ্রামে <code>studentName</code> এবং <code>StudentName</code> সমার্থক নয়। তাই প্রোগ্রাম চালনা করার সময় ত্রুটি ধরা পড়বে। এই সমস্যাটি এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' -এর জন্য সবসময় একই ধরনের হরফ ব্যবহার করা। অর্থাৎ আপনি যদি <code>studentName</code> নামের একটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করেন, তবে পুরো প্রোগ্রামে তা একইভাবে লিখুন — কখনো <code>StudentName</code> বা <code>STUDENTNAME</code> লিখবেন না। এতে কোড হবে পরিষ্কার, সহজবোধ্য এবং ত্রুটিমুক্ত। === শিল্পক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম === প্রায় সমস্ত প্রোগ্রামিং ভাষাতে এবং অধিকাংশ সফটওয়্যার উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামের কোড লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শৈলী প্রোগ্রামারদের মেনে চলতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ার নামের জন্য সবচেয়ে সাধারণ যে তিনধরনের হরফ বা ''কেস স্টাইল'' প্রোগ্রামাররা অনুসরণ করে সেগুলি হল, '''ক্যামেলকেস''': ক্যামেলকেস (বা <code>camelCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী যেখানে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিবিধ ধ্রুবক, ভেরিয়েবল ইত্যাদির নামকরনের সময় প্রথম শব্দটি ছোট হাতের ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকে। এবার ধরুন কোন আইডেন্টিফায়ার নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দমালার দুটি অর্থবোধক শব্দকে একত্রে যোগ করে ব্যাবহার করা হল। উদাহরন হিসাবে ধরুন বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে এবং প্রতিটি ছাত্রের বার্ষিক রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্য নেওয়া হল। এবার প্রোগ্রামে কোন ছাত্রের নাম চিহ্নিত করতে আমরা ইংরেজি শব্দমালার <code>student</code> এবং <code>name</code> এই দুটি শব্দ ব্যাবহার হল। তাহলে ক্যামেলকেসের নিয়ম অনুসারে আমরা প্রোগ্রামে সেটিকে লিখবো, <code>studentName</code> হিসাবে। অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর ছোট হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং এই দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। এটাই হল ক্যামেলকেসের নিয়ম। ক্যামেলকেস শৈলীর আরো উদাহরণ হল: <code>studentName</code>, <code>totalMarks</code> '''পাস্কালকেস''': পাস্কালকেস (বা <code>PascalCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী। পূর্বে ক্যামেলকেসে ব্যাবহৃত উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনেই বলা যাক যে ''পাস্কালকেস'' অনুসারে ছাত্রের নামকে প্রোগ্রামে উল্লেখ করা হবে, <code>StudentName</code> হিসাবে, অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং ক্যামেলকেসের মতোই পাস্কালকেসেও দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। পাস্কালকেসের আরও উদাহরণ: <code>StudentName</code>, <code>TotalMarks</code> '''স্নেককেস''': পূর্বের উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে প্রোগ্রামে যদি স্নেককেস (বা <code>snake_case</code>) অনুসারে আইডেন্টিফায়ারের নামকরন হয় তাহলে ছাত্রের নামের জন্য প্রোগ্রামে <code>student_name</code> হরফটি ব্যাবহার হবে, অর্থাৎ আইডেন্টিফায়ারে শব্দে সবই ছোট হাতের অক্ষরে থাকবে এবং দুটি অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> এবং <code>name</code> -এর মধ্য আন্ডারস্কোর (_) থাকে। স্নেক কেসের আরো উদাহরণ: <code>student_name</code>, <code>total_marks</code> সি++, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষায় সাধারণত ক্যামলকেস ব্যবহার হয়। কিন্তু ক্লাস ও লাইব্রেরির নামের জন্য পাস্কালকেস ব্যবহার করা হয়। সি শার্পে সাধারণভাবে পাস্কালকেস ব্যবহৃত হয়, তবে ফাংশনের ইনপুট প্যারামিটারে ক্যামলকেস ব্যাবহার হয়। পাইথন সাধারণত স্নেককেস ফরম্যাট অনুসরণ করে। আইডেন্টিফায়ারের নাম, আন্ডারস্কোর ( _ ) দিয়ে শুরু করা অনুচিত, কারণ এটি সাধারণত প্রযুক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ধ্রুবকের নামকরন সবসময় বড় হাতের অক্ষরে লেখা উচিত প্রায়শই এগুলো বড় হাতের অক্ষর ও স্নেককেস ফরম্যাটে লেখা হয়। যাকে সাধারনত '''আপার স্নেককেস''' বলা হয়। উদাহরণ: <code>MAX_SIZE</code>, <code>PI_VALUE</code> ==মূল পরিভাষা== ;ক্যামেল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর ছোট হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;পাস্কাল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর বড় হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;রিজার্ভড ওয়ার্ড :বিবিধ প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ থাকে যেগুলো ''বিশেষ অর্থ'' বহন করে, তাই এগুলোকে আইডেন্টিফায়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। ;স্নেক কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন ব্যাবহৃত সকল ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে শুধু ছোট হাতের অক্ষর ব্যাবহার হয় এবং দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের মাঝে একটি আন্ডারস্কোর ( _ ) ব্যবহার করা হয়। ==তথ্যসূত্র== * [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++] {{reflist}} * [[w:Camel case|Camel case]] * [[w:Pascal (programming language)|Pascal case]] * [[w:Reserved word|Reserved word]] * [[w:Snake case|Snake case]] [[category:প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা]] 9mebj61d2obo8prloaufzcnimbskaun 84834 84833 2025-06-18T13:49:35Z RDasgupta2020 8748 /* ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা */ 84834 wikitext text/x-wiki ==সংক্ষিপ্ত বিবরণ== কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ভেরিয়েবল, ফাংশন ইত্যাদি মৌলিক উপাদানের বর্ণনামূলক নাম দেওয়ার রীতি আছে যাতে হয় যাতে প্রোগ্রামে লিখিত কোড বা নির্দেশাবলী প্রোগ্রামারের কাছে সহজবোধ্য ও অর্থবোধক হয়। প্রোগ্রামে বিবিধ গঠনগত উপাদানের জন্য ব্যবহৃত এইসকল অর্থবোধক নামকে বলা হয় '''শনাক্তকারী নাম''' অথবা '''আইডেন্টিফায়ার নাম'''। যখন প্রোগ্রামে ভেরিয়েবল বা অন্য যেকোন গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করা হয়, তখন তাকে একটি নির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত করা হয়। মূলত একটি প্রোগ্রামের যেসকল গঠনগত উপাদানের জন্য ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' ধার্য করা হয় সেগুলি হলো: [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল]] সহ বিভিন্ন [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ডেটা টাইপ|ডেটা টাইপ]] এবং বিভিন্ন [[ প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ফাংশন|ফাংশন]]। এই নামকরনের মাধ্যমে আমরা প্রোগ্রামে যে গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করছি, তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা সহজেই বোঝা যায়। তবে এই নামগুলো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে তৈরি করতে হয়, যা নির্ভর করে কিছু নিমনলিখিত শর্তের উপর: #বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা খেয়াল রেখে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত গঠনগত উপাদানগুলির নামকরন করতে হয়। #নামকরনের জন্য প্রোগ্রামিং -এর ভালো অভ্যাস থাকা জরুরী। #প্রত্যেক প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু বৈশ্বিক মানদণ্ড আছে, নামকরনের সময় সেই মানদন্ডগুলো পূর্ন করা জরুরী। ==আলোচনা== === ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা === যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের নামকরন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষার কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা থাকে। এই নিয়মগুলো না মানলে যে কম্পাইলার বা ইন্টারপ্রেটার প্রোগ্রামিং -এর জন্য ব্যাবহার করা হয় সেগুলি ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না এবং ত্রুটিপূর্ন আচরন করবে। নিচে এই সীমাবদ্ধতাগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হলো: #'''শুধুমাত্র অনুমোদিত অক্ষরের ব্যবহার করতে হবে''': অধিকাংশ প্রোগ্রামিং ভাষায় আইডেন্টিফায়ার বা গঠনগত উপাদানের নামকরন করার সময় নামের প্রথম অক্ষরটি অবশ্যই একটি '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''' (''A-Z'' বা ''a-z'') অথবা একটি '''আন্ডারস্কোর''' (_) হতে হবে। এরপরের অক্ষরগুলোতে '''গাণিতিক সংখ্যা (0-9)''', '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''', অথবা '''আন্ডারস্কোর''' ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: <code>total</code>, <code>_count1</code>, <code>Name_123</code> ইত্যাদি বৈধ আইডেন্টিফায়ার হতে পারে। #'''সংরক্ষিত শব্দ (রিসার্ভড ওয়ার্ড) ব্যবহার করা যাবে না''': প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ সংরক্ষিত বা ''রিসার্ভড'' থাকে যা সেই ভাষার নিজস্ব কাজ সম্পাদনে ব্যবহৃত হয়। যেমন সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজে <code>int</code>, <code>return</code>, <code>if</code>, <code>while</code> ইত্যাদি শব্দগুলো কোনো ভেরিয়েবল বা ফাংশনের নাম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। উদাহরন হিসাবে, নিচের কোডটি দেখুন:<br><syntaxhighlight lang="c">int if = 5;</syntaxhighlight>এই কোডটি ভুল কারন কারণ <code>if</code> হল বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যাবহৃত একটি সংরক্ষিত শব্দ যা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/শর্তাধীন অপারেটর|শর্তাধীন অপারেটর]] হিসাবে ব্যাবহার হয়। #'''দৈর্ঘ্যের সীমা''': কিছু ভাষা বা কম্পাইলারের ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ারের যে নামকরন করা হয় তার দৈর্ঘ্যের সীমা আরোপিত থাকে। যেমন, কোনো কম্পাইলারে একটি আইডেন্টিফায়ার সর্বোচ্চ একত্রিশ অক্ষর দীর্ঘ হতে পারে। তবে আধুনিক ভাষাগুলোর বেশিরভাগে এই সীমা অনেক বেশি বা প্রায় অনির্দিষ্ট থাকে।<br> বিভিন্ন কম্পিউটার ল্যাঙ্গোয়েজের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতাগুলো ভিন্ন হতে পারে। যেমন, পাইথন এবং জাভাস্ক্রিপ্ট -এ আইডেন্টিফায়ার নামের দৈর্ঘ্য নিয়ে কিছুটা নমনীয়তা থাকলেও, সি বা সি++ এর মতো ভাষায় কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হয়।<br>তাছাড়া, একই প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য বিভিন্ন কম্পাইলারের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। এই প্রযুক্তিগত নিয়মগুলো জানা ও মেনে চলা একজন ভালো প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামে উন্নত কোড লিখনের ভিত্তি প্রস্তুত করে দেয়। === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল সর্বপ্রথম শর্ত হল, '''প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের অর্থবোধক নামকরন'''। অর্থাৎ প্রোগ্রাম মুদ্রন করার সময় প্রতিটি ভেরিয়েবল, ফাংশন বা ধ্রুবকের জন্য এমন একটি নাম ব্যবহার করা উচিত যার মাধ্যমে তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। উদাহরন হিসাবে, ধরুন আপনি একটি ভেরিয়েবলের নাম দিয়েছেন <code>p</code> — কিন্তু <code>p</code> -এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এটা যে কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রূপ এবং কঠিন বা সাংকেতিক নাম এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে সহজবোধ্য এবং স্পষ্ট নাম ব্যবহার করা উচিত, যেমন <code>price</code>, <code>totalMarks</code>, <code>studentName</code> ইত্যাদি। এছাড়া অপরিষ্কার বা গাণিতিক চিহ্নের মত নাম যেমন <code>tmp1</code>, <code>dataX</code>, <code>aa12</code> এড়িয়ে চলা উচিত যদি না সেগুলোর মানে একদম স্পষ্ট হয়। ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশলের দ্বিতীয় শর্ত হল '''নামকরনের সময় বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা'''। অনেক প্রোগ্রামিং ভাষাতে বড় হাতের অক্ষর এবং ছোট হাতের অক্ষরকে দুটি সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ যদি কোন প্রোগ্রামে আমরা <code>p</code> এবং <code>P</code> ব্যাবহার করি তাহলে যদিও মানব বোধগম্যতার ক্ষেত্রে এই দুটি একই অক্ষর, কিন্তু প্রোগ্রাম এই দুটিকে সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করবে। সেক্ষেত্রে <code>data</code>, <code>Data</code>, এবং <code>DATA</code> — এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাম হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরন হিসাবে নিচের কোডটি লক্ষ্য করুন, <syntaxhighlight lang="c"> int studentName = 5; printf("%d", StudentName); </syntaxhighlight> উপরের কোডটিতে একটি ত্রুটি আছে কারন সি প্রোগ্রামে <code>studentName</code> এবং <code>StudentName</code> সমার্থক নয়। তাই প্রোগ্রাম চালনা করার সময় ত্রুটি ধরা পড়বে। এই সমস্যাটি এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' -এর জন্য সবসময় একই ধরনের হরফ ব্যবহার করা। অর্থাৎ আপনি যদি <code>studentName</code> নামের একটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করেন, তবে পুরো প্রোগ্রামে তা একইভাবে লিখুন — কখনো <code>StudentName</code> বা <code>STUDENTNAME</code> লিখবেন না। এতে কোড হবে পরিষ্কার, সহজবোধ্য এবং ত্রুটিমুক্ত। === শিল্পক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম === প্রায় সমস্ত প্রোগ্রামিং ভাষাতে এবং অধিকাংশ সফটওয়্যার উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামের কোড লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শৈলী প্রোগ্রামারদের মেনে চলতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ার নামের জন্য সবচেয়ে সাধারণ যে তিনধরনের হরফ বা ''কেস স্টাইল'' প্রোগ্রামাররা অনুসরণ করে সেগুলি হল, '''ক্যামেলকেস''': ক্যামেলকেস (বা <code>camelCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী যেখানে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিবিধ ধ্রুবক, ভেরিয়েবল ইত্যাদির নামকরনের সময় প্রথম শব্দটি ছোট হাতের ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকে। এবার ধরুন কোন আইডেন্টিফায়ার নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দমালার দুটি অর্থবোধক শব্দকে একত্রে যোগ করে ব্যাবহার করা হল। উদাহরন হিসাবে ধরুন বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে এবং প্রতিটি ছাত্রের বার্ষিক রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্য নেওয়া হল। এবার প্রোগ্রামে কোন ছাত্রের নাম চিহ্নিত করতে আমরা ইংরেজি শব্দমালার <code>student</code> এবং <code>name</code> এই দুটি শব্দ ব্যাবহার হল। তাহলে ক্যামেলকেসের নিয়ম অনুসারে আমরা প্রোগ্রামে সেটিকে লিখবো, <code>studentName</code> হিসাবে। অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর ছোট হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং এই দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। এটাই হল ক্যামেলকেসের নিয়ম। ক্যামেলকেস শৈলীর আরো উদাহরণ হল: <code>studentName</code>, <code>totalMarks</code> '''পাস্কালকেস''': পাস্কালকেস (বা <code>PascalCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী। পূর্বে ক্যামেলকেসে ব্যাবহৃত উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনেই বলা যাক যে ''পাস্কালকেস'' অনুসারে ছাত্রের নামকে প্রোগ্রামে উল্লেখ করা হবে, <code>StudentName</code> হিসাবে, অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং ক্যামেলকেসের মতোই পাস্কালকেসেও দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। পাস্কালকেসের আরও উদাহরণ: <code>StudentName</code>, <code>TotalMarks</code> '''স্নেককেস''': পূর্বের উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে প্রোগ্রামে যদি স্নেককেস (বা <code>snake_case</code>) অনুসারে আইডেন্টিফায়ারের নামকরন হয় তাহলে ছাত্রের নামের জন্য প্রোগ্রামে <code>student_name</code> হরফটি ব্যাবহার হবে, অর্থাৎ আইডেন্টিফায়ারে শব্দে সবই ছোট হাতের অক্ষরে থাকবে এবং দুটি অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> এবং <code>name</code> -এর মধ্য আন্ডারস্কোর (_) থাকে। স্নেক কেসের আরো উদাহরণ: <code>student_name</code>, <code>total_marks</code> সি++, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষায় সাধারণত ক্যামলকেস ব্যবহার হয়। কিন্তু ক্লাস ও লাইব্রেরির নামের জন্য পাস্কালকেস ব্যবহার করা হয়। সি শার্পে সাধারণভাবে পাস্কালকেস ব্যবহৃত হয়, তবে ফাংশনের ইনপুট প্যারামিটারে ক্যামলকেস ব্যাবহার হয়। পাইথন সাধারণত স্নেককেস ফরম্যাট অনুসরণ করে। আইডেন্টিফায়ারের নাম, আন্ডারস্কোর ( _ ) দিয়ে শুরু করা অনুচিত, কারণ এটি সাধারণত প্রযুক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ধ্রুবকের নামকরন সবসময় বড় হাতের অক্ষরে লেখা উচিত প্রায়শই এগুলো বড় হাতের অক্ষর ও স্নেককেস ফরম্যাটে লেখা হয়। যাকে সাধারনত '''আপার স্নেককেস''' বলা হয়। উদাহরণ: <code>MAX_SIZE</code>, <code>PI_VALUE</code> ==মূল পরিভাষা== ;ক্যামেল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর ছোট হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;পাস্কাল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর বড় হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;রিজার্ভড ওয়ার্ড :বিবিধ প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ থাকে যেগুলো ''বিশেষ অর্থ'' বহন করে, তাই এগুলোকে আইডেন্টিফায়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। ;স্নেক কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন ব্যাবহৃত সকল ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে শুধু ছোট হাতের অক্ষর ব্যাবহার হয় এবং দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের মাঝে একটি আন্ডারস্কোর ( _ ) ব্যবহার করা হয়। ==তথ্যসূত্র== * [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++] {{reflist}} * [[w:Camel case|Camel case]] * [[w:Pascal (programming language)|Pascal case]] * [[w:Reserved word|Reserved word]] * [[w:Snake case|Snake case]] [[category:প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা]] lovfbpjgmjvfhnruvf3pd2c1xhk2mbx 84835 84834 2025-06-18T13:52:04Z RDasgupta2020 8748 /* সংক্ষিপ্ত বিবরণ */ 84835 wikitext text/x-wiki ==সংক্ষিপ্ত বিবরণ== কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ভেরিয়েবল, ফাংশন ইত্যাদি মৌলিক উপাদানের বর্ণনামূলক নাম দেওয়ার রীতি আছে যাতে প্রোগ্রামে লিখিত কোড বা নির্দেশাবলী প্রোগ্রাম রচয়িতা বা প্রোগ্রামারের কাছে সহজবোধ্য ও অর্থবোধক হয়। প্রোগ্রামে বিবিধ গঠনগত উপাদানের জন্য ব্যবহৃত এইসকল অর্থবোধক নামকে বলা হয় '''শনাক্তকারী নাম''' অথবা '''আইডেন্টিফায়ার নাম'''। যখন প্রোগ্রামে ভেরিয়েবল বা অন্য যেকোন গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করা হয়, তখন তাকে একটি নির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত করা হয়। মূলত একটি প্রোগ্রামের যেসকল গঠনগত উপাদানের জন্য ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' ধার্য করা হয় সেগুলি হল, [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল]] সহ বিভিন্ন [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ডেটা টাইপ|ডেটা টাইপ]] এবং বিভিন্ন [[ প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ফাংশন|ফাংশন]]। এই নামকরনের মাধ্যমে আমরা প্রোগ্রামে যে গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করছি, তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা সহজেই বোঝা যায়। তবে এই নামগুলো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে তৈরি করতে হয়, যা নির্ভর করে কিছু নিম্নলিখিত শর্তের উপর: #বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা খেয়াল রেখে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত গঠনগত উপাদানগুলির নামকরন করতে হয়। #নামকরনের জন্য প্রোগ্রামিং -এর ভালো অভ্যাস থাকা জরুরী। #প্রত্যেক প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু বৈশ্বিক মানদণ্ড আছে, নামকরনের সময় সেই মানদন্ডগুলো পূর্ন করা জরুরী। ==আলোচনা== === ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা === যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের নামকরন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষার কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা থাকে। এই নিয়মগুলো না মানলে যে কম্পাইলার বা ইন্টারপ্রেটার প্রোগ্রামিং -এর জন্য ব্যাবহার করা হয় সেগুলি ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না এবং ত্রুটিপূর্ন আচরন করবে। নিচে এই সীমাবদ্ধতাগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হলো: #'''শুধুমাত্র অনুমোদিত অক্ষরের ব্যবহার করতে হবে''': অধিকাংশ প্রোগ্রামিং ভাষায় আইডেন্টিফায়ার বা গঠনগত উপাদানের নামকরন করার সময় নামের প্রথম অক্ষরটি অবশ্যই একটি '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''' (''A-Z'' বা ''a-z'') অথবা একটি '''আন্ডারস্কোর''' (_) হতে হবে। এরপরের অক্ষরগুলোতে '''গাণিতিক সংখ্যা (0-9)''', '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''', অথবা '''আন্ডারস্কোর''' ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: <code>total</code>, <code>_count1</code>, <code>Name_123</code> ইত্যাদি বৈধ আইডেন্টিফায়ার হতে পারে। #'''সংরক্ষিত শব্দ (রিসার্ভড ওয়ার্ড) ব্যবহার করা যাবে না''': প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ সংরক্ষিত বা ''রিসার্ভড'' থাকে যা সেই ভাষার নিজস্ব কাজ সম্পাদনে ব্যবহৃত হয়। যেমন সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজে <code>int</code>, <code>return</code>, <code>if</code>, <code>while</code> ইত্যাদি শব্দগুলো কোনো ভেরিয়েবল বা ফাংশনের নাম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। উদাহরন হিসাবে, নিচের কোডটি দেখুন:<br><syntaxhighlight lang="c">int if = 5;</syntaxhighlight>এই কোডটি ভুল কারন কারণ <code>if</code> হল বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যাবহৃত একটি সংরক্ষিত শব্দ যা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/শর্তাধীন অপারেটর|শর্তাধীন অপারেটর]] হিসাবে ব্যাবহার হয়। #'''দৈর্ঘ্যের সীমা''': কিছু ভাষা বা কম্পাইলারের ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ারের যে নামকরন করা হয় তার দৈর্ঘ্যের সীমা আরোপিত থাকে। যেমন, কোনো কম্পাইলারে একটি আইডেন্টিফায়ার সর্বোচ্চ একত্রিশ অক্ষর দীর্ঘ হতে পারে। তবে আধুনিক ভাষাগুলোর বেশিরভাগে এই সীমা অনেক বেশি বা প্রায় অনির্দিষ্ট থাকে।<br> বিভিন্ন কম্পিউটার ল্যাঙ্গোয়েজের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতাগুলো ভিন্ন হতে পারে। যেমন, পাইথন এবং জাভাস্ক্রিপ্ট -এ আইডেন্টিফায়ার নামের দৈর্ঘ্য নিয়ে কিছুটা নমনীয়তা থাকলেও, সি বা সি++ এর মতো ভাষায় কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হয়।<br>তাছাড়া, একই প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য বিভিন্ন কম্পাইলারের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। এই প্রযুক্তিগত নিয়মগুলো জানা ও মেনে চলা একজন ভালো প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামে উন্নত কোড লিখনের ভিত্তি প্রস্তুত করে দেয়। === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল সর্বপ্রথম শর্ত হল, '''প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের অর্থবোধক নামকরন'''। অর্থাৎ প্রোগ্রাম মুদ্রন করার সময় প্রতিটি ভেরিয়েবল, ফাংশন বা ধ্রুবকের জন্য এমন একটি নাম ব্যবহার করা উচিত যার মাধ্যমে তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। উদাহরন হিসাবে, ধরুন আপনি একটি ভেরিয়েবলের নাম দিয়েছেন <code>p</code> — কিন্তু <code>p</code> -এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এটা যে কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রূপ এবং কঠিন বা সাংকেতিক নাম এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে সহজবোধ্য এবং স্পষ্ট নাম ব্যবহার করা উচিত, যেমন <code>price</code>, <code>totalMarks</code>, <code>studentName</code> ইত্যাদি। এছাড়া অপরিষ্কার বা গাণিতিক চিহ্নের মত নাম যেমন <code>tmp1</code>, <code>dataX</code>, <code>aa12</code> এড়িয়ে চলা উচিত যদি না সেগুলোর মানে একদম স্পষ্ট হয়। ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশলের দ্বিতীয় শর্ত হল '''নামকরনের সময় বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা'''। অনেক প্রোগ্রামিং ভাষাতে বড় হাতের অক্ষর এবং ছোট হাতের অক্ষরকে দুটি সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ যদি কোন প্রোগ্রামে আমরা <code>p</code> এবং <code>P</code> ব্যাবহার করি তাহলে যদিও মানব বোধগম্যতার ক্ষেত্রে এই দুটি একই অক্ষর, কিন্তু প্রোগ্রাম এই দুটিকে সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করবে। সেক্ষেত্রে <code>data</code>, <code>Data</code>, এবং <code>DATA</code> — এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাম হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরন হিসাবে নিচের কোডটি লক্ষ্য করুন, <syntaxhighlight lang="c"> int studentName = 5; printf("%d", StudentName); </syntaxhighlight> উপরের কোডটিতে একটি ত্রুটি আছে কারন সি প্রোগ্রামে <code>studentName</code> এবং <code>StudentName</code> সমার্থক নয়। তাই প্রোগ্রাম চালনা করার সময় ত্রুটি ধরা পড়বে। এই সমস্যাটি এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' -এর জন্য সবসময় একই ধরনের হরফ ব্যবহার করা। অর্থাৎ আপনি যদি <code>studentName</code> নামের একটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করেন, তবে পুরো প্রোগ্রামে তা একইভাবে লিখুন — কখনো <code>StudentName</code> বা <code>STUDENTNAME</code> লিখবেন না। এতে কোড হবে পরিষ্কার, সহজবোধ্য এবং ত্রুটিমুক্ত। === শিল্পক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম === প্রায় সমস্ত প্রোগ্রামিং ভাষাতে এবং অধিকাংশ সফটওয়্যার উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামের কোড লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শৈলী প্রোগ্রামারদের মেনে চলতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ার নামের জন্য সবচেয়ে সাধারণ যে তিনধরনের হরফ বা ''কেস স্টাইল'' প্রোগ্রামাররা অনুসরণ করে সেগুলি হল, '''ক্যামেলকেস''': ক্যামেলকেস (বা <code>camelCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী যেখানে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিবিধ ধ্রুবক, ভেরিয়েবল ইত্যাদির নামকরনের সময় প্রথম শব্দটি ছোট হাতের ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকে। এবার ধরুন কোন আইডেন্টিফায়ার নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দমালার দুটি অর্থবোধক শব্দকে একত্রে যোগ করে ব্যাবহার করা হল। উদাহরন হিসাবে ধরুন বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে এবং প্রতিটি ছাত্রের বার্ষিক রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্য নেওয়া হল। এবার প্রোগ্রামে কোন ছাত্রের নাম চিহ্নিত করতে আমরা ইংরেজি শব্দমালার <code>student</code> এবং <code>name</code> এই দুটি শব্দ ব্যাবহার হল। তাহলে ক্যামেলকেসের নিয়ম অনুসারে আমরা প্রোগ্রামে সেটিকে লিখবো, <code>studentName</code> হিসাবে। অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর ছোট হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং এই দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। এটাই হল ক্যামেলকেসের নিয়ম। ক্যামেলকেস শৈলীর আরো উদাহরণ হল: <code>studentName</code>, <code>totalMarks</code> '''পাস্কালকেস''': পাস্কালকেস (বা <code>PascalCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী। পূর্বে ক্যামেলকেসে ব্যাবহৃত উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনেই বলা যাক যে ''পাস্কালকেস'' অনুসারে ছাত্রের নামকে প্রোগ্রামে উল্লেখ করা হবে, <code>StudentName</code> হিসাবে, অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং ক্যামেলকেসের মতোই পাস্কালকেসেও দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। পাস্কালকেসের আরও উদাহরণ: <code>StudentName</code>, <code>TotalMarks</code> '''স্নেককেস''': পূর্বের উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে প্রোগ্রামে যদি স্নেককেস (বা <code>snake_case</code>) অনুসারে আইডেন্টিফায়ারের নামকরন হয় তাহলে ছাত্রের নামের জন্য প্রোগ্রামে <code>student_name</code> হরফটি ব্যাবহার হবে, অর্থাৎ আইডেন্টিফায়ারে শব্দে সবই ছোট হাতের অক্ষরে থাকবে এবং দুটি অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> এবং <code>name</code> -এর মধ্য আন্ডারস্কোর (_) থাকে। স্নেক কেসের আরো উদাহরণ: <code>student_name</code>, <code>total_marks</code> সি++, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষায় সাধারণত ক্যামলকেস ব্যবহার হয়। কিন্তু ক্লাস ও লাইব্রেরির নামের জন্য পাস্কালকেস ব্যবহার করা হয়। সি শার্পে সাধারণভাবে পাস্কালকেস ব্যবহৃত হয়, তবে ফাংশনের ইনপুট প্যারামিটারে ক্যামলকেস ব্যাবহার হয়। পাইথন সাধারণত স্নেককেস ফরম্যাট অনুসরণ করে। আইডেন্টিফায়ারের নাম, আন্ডারস্কোর ( _ ) দিয়ে শুরু করা অনুচিত, কারণ এটি সাধারণত প্রযুক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ধ্রুবকের নামকরন সবসময় বড় হাতের অক্ষরে লেখা উচিত প্রায়শই এগুলো বড় হাতের অক্ষর ও স্নেককেস ফরম্যাটে লেখা হয়। যাকে সাধারনত '''আপার স্নেককেস''' বলা হয়। উদাহরণ: <code>MAX_SIZE</code>, <code>PI_VALUE</code> ==মূল পরিভাষা== ;ক্যামেল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর ছোট হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;পাস্কাল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর বড় হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;রিজার্ভড ওয়ার্ড :বিবিধ প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ থাকে যেগুলো ''বিশেষ অর্থ'' বহন করে, তাই এগুলোকে আইডেন্টিফায়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। ;স্নেক কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন ব্যাবহৃত সকল ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে শুধু ছোট হাতের অক্ষর ব্যাবহার হয় এবং দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের মাঝে একটি আন্ডারস্কোর ( _ ) ব্যবহার করা হয়। ==তথ্যসূত্র== * [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++] {{reflist}} * [[w:Camel case|Camel case]] * [[w:Pascal (programming language)|Pascal case]] * [[w:Reserved word|Reserved word]] * [[w:Snake case|Snake case]] [[category:প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা]] dsi3s6825z44f3ehoylcerho6mb497d 84837 84835 2025-06-18T14:01:21Z RDasgupta2020 8748 84837 wikitext text/x-wiki ==সংক্ষিপ্ত বিবরণ== কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত ভেরিয়েবল, ফাংশন ইত্যাদি মৌলিক উপাদানের বর্ণনামূলক নাম দেওয়ার রীতি আছে যাতে প্রোগ্রামে লিখিত কোড বা নির্দেশাবলী প্রোগ্রাম রচয়িতা বা প্রোগ্রামারের কাছে সহজবোধ্য ও অর্থবোধক হয়। প্রোগ্রামে বিবিধ গঠনগত উপাদানের জন্য ব্যবহৃত এইসকল অর্থবোধক নামকে বলা হয় '''শনাক্তকারী নাম''' অথবা '''আইডেন্টিফায়ার নাম'''। যখন প্রোগ্রামে ভেরিয়েবল বা অন্য যেকোন গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করা হয়, তখন তাকে একটি নির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত করা হয়। মূলত একটি প্রোগ্রামের যেসকল গঠনগত উপাদানের জন্য ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' ধার্য করা হয় সেগুলি হল, [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ধ্রুবক এবং ভেরিয়েবল|ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল]] সহ বিভিন্ন [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ডেটা টাইপ|ডেটা টাইপ]] এবং বিভিন্ন [[ প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/ফাংশন|ফাংশন]]। এই নামকরনের মাধ্যমে আমরা প্রোগ্রামে যে গঠনগত উপাদান ব্যাবহার করছি, তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা সহজেই বোঝা যায়। তবে এই নামগুলো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে তৈরি করতে হয়, যা নির্ভর করে কিছু নিম্নলিখিত শর্তের উপর: #বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা খেয়াল রেখে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত গঠনগত উপাদানগুলির নামকরন করতে হয়। #নামকরনের জন্য প্রোগ্রামিং -এর ভালো অভ্যাস থাকা জরুরী। #প্রত্যেক প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু বৈশ্বিক মানদণ্ড আছে, নামকরনের সময় সেই মানদন্ডগুলো পূর্ন করা জরুরী। ==আলোচনা== === ভাষাগত প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা === যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের নামকরন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষার কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা থাকে। এই নিয়মগুলো না মানলে যে কম্পাইলার বা ইন্টারপ্রেটার প্রোগ্রামিং -এর জন্য ব্যাবহার করা হয় সেগুলি ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না এবং ত্রুটিপূর্ন আচরন করবে। নিচে এই সীমাবদ্ধতাগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হলো: #'''শুধুমাত্র অনুমোদিত অক্ষরের ব্যবহার করতে হবে''': অধিকাংশ প্রোগ্রামিং ভাষায় আইডেন্টিফায়ার বা গঠনগত উপাদানের নামকরন করার সময় নামের প্রথম অক্ষরটি অবশ্যই একটি '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''' (''A-Z'' বা ''a-z'') অথবা একটি '''আন্ডারস্কোর''' (_) হতে হবে। পরের অক্ষরগুলোতে '''গাণিতিক সংখ্যা (0-9)''', '''ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর''', অথবা '''আন্ডারস্কোর''' ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু শুরুতে অবশ্যই যেন কেবল ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর ব্যাবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ: <code>total</code>, <code>_count1</code>, <code>Name_123</code> ইত্যাদি বৈধ আইডেন্টিফায়ার নেম হিসাবে ব্যাবহার করা যেতে পারে। #'''সংরক্ষিত শব্দ (রিসার্ভড ওয়ার্ড) ব্যবহার করা যাবে না''': প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ সংরক্ষিত বা ''রিসার্ভড'' থাকে যা সেই প্রোগ্রামিং ভাষার নিজস্ব কাজ সম্পাদনে ব্যবহৃত হয়। যেমন সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজে <code>int</code>, <code>return</code>, <code>if</code>, <code>while</code> ইত্যাদি শব্দগুলো কোনো ভেরিয়েবল বা ফাংশনের নাম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। উদাহরন হিসাবে, নিচের কোডটি দেখুন:<br><syntaxhighlight lang="c">int if = 5;</syntaxhighlight>এই কোডটি ভুল কারন কারণ <code>if</code> হল বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় ব্যাবহৃত একটি সংরক্ষিত শব্দ যা [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/শর্তাধীন অপারেটর|শর্তাধীন অপারেটর]] হিসাবে ব্যাবহার হয়। #'''দৈর্ঘ্যের সীমা''': কিছু ভাষা বা কম্পাইলারের ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ারের যে নামকরন করা হয় তার দৈর্ঘ্যের সীমা আরোপিত থাকে। যেমন, কোনো কম্পাইলারে একটি আইডেন্টিফায়ার সর্বোচ্চ একত্রিশ অক্ষর দীর্ঘ হতে পারে। তবে আধুনিক ভাষাগুলোর বেশিরভাগে এই সীমা অনেক বেশি বা প্রায় অনির্দিষ্ট থাকে।<br> বিভিন্ন কম্পিউটার ল্যাঙ্গোয়েজের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতাগুলো ভিন্ন হতে পারে। যেমন, পাইথন এবং জাভাস্ক্রিপ্ট -এ আইডেন্টিফায়ার নামের দৈর্ঘ্য নিয়ে কিছুটা নমনীয়তা থাকলেও, সি বা সি++ এর মতো ভাষায় কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হয়।<br>তাছাড়া, একই প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য বিভিন্ন কম্পাইলারের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। এই প্রযুক্তিগত নিয়মগুলো জানা ও মেনে চলা একজন ভালো প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামে উন্নত কোড লিখনের ভিত্তি প্রস্তুত করে দেয়। === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল === ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশল সর্বপ্রথম শর্ত হল, '''প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিভিন্ন রকমের ডেটা টাইপ, ধ্রুবক ও ভেরিয়েবল ইত্যাদি বিভিন্ন গঠনগত উপাদানের অর্থবোধক নামকরন'''। অর্থাৎ প্রোগ্রাম মুদ্রন করার সময় প্রতিটি ভেরিয়েবল, ফাংশন বা ধ্রুবকের জন্য এমন একটি নাম ব্যবহার করা উচিত যার মাধ্যমে তার প্রকৃতি ও কার্যকারিতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। উদাহরন হিসাবে, ধরুন আপনি একটি ভেরিয়েবলের নাম দিয়েছেন <code>p</code>, কিন্তু <code>p</code> -এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? <code>p</code> কি কোন গাণিতিক সংখ্যা বা কোন অক্ষর? এটা যে কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে। তাই আইডেন্টিফায়ারের নামকরনের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত চিহ্ন এবং কঠিন বা সাংকেতিক নাম এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে সহজবোধ্য এবং স্পষ্ট নাম ব্যবহার করা উচিত, যেমন <code>price</code>, <code>totalMarks</code>, <code>studentName</code> ইত্যাদি। এছাড়া অপরিষ্কার বা গাণিতিক চিহ্নের মত নাম যেমন <code>tmp1</code>, <code>dataX</code>, <code>aa12</code> এড়িয়ে চলা উচিত যদি না সেগুলোর মানে একদম স্পষ্ট হয়। ভালো প্রোগ্রামিংয়ের কৌশলের দ্বিতীয় শর্ত হল '''নামকরনের সময় বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা'''। অনেক প্রোগ্রামিং ভাষাতে বড় হাতের অক্ষর এবং ছোট হাতের অক্ষরকে দুটি সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ যদি কোন প্রোগ্রামে আমরা <code>p</code> এবং <code>P</code> ব্যাবহার করি তাহলে যদিও মানব বোধগম্যতার ক্ষেত্রে এই দুটি একই অক্ষর, কিন্তু প্রোগ্রাম এই দুটিকে সম্পূর্ন আলাধা অক্ষর হিসাবে বিবেচনা করবে। সেক্ষেত্রে <code>data</code>, <code>Data</code>, এবং <code>DATA</code> — এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন আইডেন্টিফায়ার বা উপাদান হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরন হিসাবে নিচের কোডটি লক্ষ্য করুন, <syntaxhighlight lang="c"> int studentName = 5; printf("%d", StudentName); </syntaxhighlight> উপরের কোডটিতে একটি ত্রুটি আছে কারন সি প্রোগ্রামে <code>studentName</code> এবং <code>StudentName</code> সমার্থক নয়। তাই প্রোগ্রাম চালনা করার সময় ত্রুটি ধরা পড়বে। এই সমস্যাটি এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ''আইডেন্টিফায়ার নাম'' -এর জন্য সবসময় একই ধরনের হরফ ব্যবহার করা। অর্থাৎ আপনি যদি <code>studentName</code> নামের একটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করেন, তবে পুরো প্রোগ্রামে তা একইভাবে লিখুন — কখনো <code>StudentName</code> বা <code>STUDENTNAME</code> লিখবেন না। এতে কোড পরিষ্কার, সহজবোধ্য এবং ত্রুটিমুক্ত হয়। === শিল্পক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম === প্রায় সমস্ত প্রোগ্রামিং ভাষাতে এবং অধিকাংশ সফটওয়্যার উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামের কোড লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শৈলী প্রোগ্রামারদের মেনে চলতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইডেন্টিফায়ার নামের জন্য সবচেয়ে সাধারণ যে তিনধরনের হরফ বা ''কেস স্টাইল'' প্রোগ্রামাররা অনুসরণ করে সেগুলি হল, '''ক্যামেলকেস''': ক্যামেলকেস (বা <code>camelCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী যেখানে প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত বিবিধ ধ্রুবক, ভেরিয়েবল ইত্যাদির নামকরনের সময় প্রথম শব্দটি ছোট হাতের ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকে। এবার ধরুন কোন আইডেন্টিফায়ার নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দমালার দুটি অর্থবোধক শব্দকে একত্রে যোগ করে ব্যাবহার করা হল। উদাহরন হিসাবে ধরুন বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে এবং প্রতিটি ছাত্রের বার্ষিক রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্য নেওয়া হল। এবার প্রোগ্রামে কোন ছাত্রের নাম চিহ্নিত করতে আমরা ইংরেজি শব্দমালার <code>student</code> এবং <code>name</code> এই দুটি শব্দ ব্যাবহার হল। তাহলে ক্যামেলকেসের নিয়ম অনুসারে আমরা প্রোগ্রামে সেটিকে লিখবো, <code>studentName</code> হিসাবে। অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর ছোট হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং এই দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। এটাই হল ক্যামেলকেসের নিয়ম। ক্যামেলকেস শৈলীর আরো উদাহরণ হল: <code>studentName</code>, <code>totalMarks</code> '''পাস্কালকেস''': পাস্কালকেস (বা <code>PascalCase</code>) ''আইডেন্টিফায়ার'' নামকরনে ব্যাবহৃত বিশেষ শৈলী। পূর্বে ক্যামেলকেসে ব্যাবহৃত উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনেই বলা যাক যে ''পাস্কালকেস'' অনুসারে ছাত্রের নামকে প্রোগ্রামে উল্লেখ করা হবে, <code>StudentName</code> হিসাবে, অর্থাৎ নামকরনে প্রথম অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> প্রথম অক্ষর বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দ <code>name</code> -এর প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের হরফে লেখা হবে এবং ক্যামেলকেসের মতোই পাস্কালকেসেও দুই শব্দ যোগে যখন আইডেন্টিফায়ার নেম গঠিত হবে তখন শব্দগুলোর মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা বা আন্ডারস্কোর থাকবেনা। পাস্কালকেসের আরও উদাহরণ: <code>StudentName</code>, <code>TotalMarks</code> '''স্নেককেস''': পূর্বের উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে প্রোগ্রামে যদি স্নেককেস (বা <code>snake_case</code>) অনুসারে আইডেন্টিফায়ারের নামকরন হয় তাহলে ছাত্রের নামের জন্য প্রোগ্রামে <code>student_name</code> হরফটি ব্যাবহার হবে, অর্থাৎ আইডেন্টিফায়ারে শব্দে সবই ছোট হাতের অক্ষরে থাকবে এবং দুটি অর্থবোধক শব্দ <code>student</code> এবং <code>name</code> -এর মধ্য আন্ডারস্কোর (_) থাকে। স্নেক কেসের আরো উদাহরণ: <code>student_name</code>, <code>total_marks</code> সি++, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষায় সাধারণত ক্যামলকেস ব্যবহার হয়। কিন্তু ক্লাস ও লাইব্রেরির নামের জন্য পাস্কালকেস ব্যবহার করা হয়। সি শার্পে সাধারণভাবে পাস্কালকেস ব্যবহৃত হয়, তবে ফাংশনের ইনপুট প্যারামিটারে ক্যামলকেস ব্যাবহার হয়। পাইথন সাধারণত স্নেককেস ফরম্যাট অনুসরণ করে। আইডেন্টিফায়ারের নাম, আন্ডারস্কোর ( _ ) দিয়ে শুরু করা অনুচিত, কারণ এটি সাধারণত প্রযুক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। প্রোগ্রামে কোন ধ্রুবকের ব্যাবহার করলে তার নামকরন সবসময় বড় হাতের অক্ষরে লেখা উচিত। প্রায়শই ধ্রুবকগুলিকে বড় হাতের অক্ষর ও স্নেককেস ফরম্যাটে চিহ্নিত করা হয়, যাকে সাধারনত '''আপার স্নেককেস''' বলা হয়। উদাহরণ: <code>MAX_SIZE</code>, <code>PI_VALUE</code> ==মূল পরিভাষা== ;ক্যামেল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর ছোট হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;পাস্কাল কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর বড় হাতের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের প্রথম অক্ষরটিও বড় হাতের লেখা হয় এবং এই দুই অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের মধ্যে কোন ফাঁক বা যতিচিহ্ন থাকবেনা। ;রিজার্ভড ওয়ার্ড :বিবিধ প্রোগ্রামিং ভাষায় কিছু শব্দ থাকে যেগুলো ''বিশেষ অর্থ'' বহন করে, তাই এগুলোকে আইডেন্টিফায়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। ;স্নেক কেস :একাধিক শব্দ বা বাক্যাংশের সমন্বয়ে ''আইডেন্টিফায়ার নেম'' গঠনের একটি শৈলী। যেখানে দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন ব্যাবহৃত সকল ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে শুধু ছোট হাতের অক্ষর ব্যাবহার হয় এবং দুটি অর্থবোধক ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে যখন একটি আইডেন্টিফায়ারের নামকরন করা হয় তখন প্রথম অর্থবোধক শব্দের এবং দ্বিতীয় অর্থবোধক শব্দের মাঝে একটি আন্ডারস্কোর ( _ ) ব্যবহার করা হয়। ==তথ্যসূত্র== * [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17 cnx.org: Programming Fundamentals – A Modular Structured Approach using C++] {{reflist}} * [[w:Camel case|Camel case]] * [[w:Pascal (programming language)|Pascal case]] * [[w:Reserved word|Reserved word]] * [[w:Snake case|Snake case]] [[category:প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা]] rp5yb963nsro9hm8e2jzdb3pow0xr04 প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/জৈবচিকিৎসীয় আলট্রাসাউন্ড 0 24693 84886 84669 2025-06-19T05:49:53Z Asikur.rahman25 11164 /* রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ */ 84886 wikitext text/x-wiki {{Engineering Acoustics}} == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ == প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান উইকিবইয়ের এই অধ্যায়ে জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রয়োগগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং শব্দোত্তর রশ্মির জন্য কিছু প্রাথমিক শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ ক্ষেত্রটি নানা মৌলিক শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে বহু বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি শব্দোত্তর তরঙ্গের সব দিক আলোচনা করে না। বরং এটি পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে আগ্রহীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। যাঁরা আরও গভীরভাবে জানতে চান তাঁদের জন্য কোবোল্ড এর ২০০৭ সালের গ্রন্থটি <ref name="Cobbold"/> সুপারিশ করা হয়েছে। == রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের সবচেয়ে পরিচিত প্রয়োগ হলো চিকিৎসা চিত্রায়ন যাকে শব্দোত্তর চিত্রায়ন বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়। শব্দোত্তর চিত্রায়নের নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলোর তালিকার জন্য সংশ্লিষ্ট [[w:মেডিকেল আল্ট্রাসনোগ্রাফি|উইকিপিডিয়া নিবন্ধ]]টি দেখুন। নিচের অংশে শব্দোত্তর চিত্র তৈরির জন্য যে শব্দতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা গুণগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি শব্দোত্তর তরঙ্গ রূপান্তরক স্বল্পস্থায়ী উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ নির্গত করে। প্রয়োগ অনুযায়ী এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১&nbsp;মেগাহার্টজ থেকে ১৫&nbsp;মেগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে।<ref name="Kremkau"/> নির্গত শব্দ তরঙ্গ যখন শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শব্দ প্রতিবন্ধকতার (''&rho;c'') পার্থক্যের ক্ষেত্রে আংশিক প্রতিফলন বা বিকিরণ ঘটে। চিকিৎসা চিত্রায়নের প্রসঙ্গে, এটি ঘটে শরীরের যেখানে ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে যেমন হাড় ও পেশির সংযোগস্থলে, রক্তরসের মধ্যে রক্তকণিকা, অঙ্গের ছোট গঠন ইত্যাদিতে।<ref name="Wiki_sono"/> প্রতিফলিত তরঙ্গের আচরণ নির্ভর করে প্রতিফলক গঠনের আকার এবং প্রেরিত শব্দ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়, তাহলে প্রতিফলন ঘটে শব্দ পরিবাহিতা ও প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী তা স্বাভাবিক হোক বা তির্যক।<ref name="Kinsler_rt"/> আর যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক গঠনের তুলনায় বড় হয়, তখন শব্দ বিকিরণের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।<ref name="Pierce_sd"/> এই দ্বিতীয় অবস্থা, যা ছোট প্রতিফলন উৎসের ক্ষেত্রে ঘটে, সেটিই নির্ধারণ করে শব্দোত্তর চিত্রায়নে কোন কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হবে। কোবোল্ড এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী,<ref name="Cobbold_su"/> একটি সমতল তরঙ্গ যখন একটি গোলীয় প্রতিফলক উৎসে পড়ে যার কার্যকর ব্যাসার্ধ ''a'', তখন বিকিরিত তরঙ্গের শব্দ তীব্রতা, ''I<sub>s</sub>'', পরিবর্তিত হয় এই সূত্র অনুযায়ী: <br> :<math> I_s \propto \frac{a^6}{\lambda ^4} </math> এই সূত্রটি দেখায়, যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক উৎসের তুলনায় বড় হয়, তখন প্রতিফলিত শক্তি খুব কম হয়ে যায়। ফলে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্য প্রতিফলিত তরঙ্গ ফেরত আসে না। শব্দোত্তর চিত্রে একটি গঠন স্পষ্টভাবে ধরতে হলে, নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সেই গঠনের চেয়ে ছোট হতে হবে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ পরিবাহনের পথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তাই কম কম্পাঙ্ক বেশি গভীরে ছবি তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেশি কম্পাঙ্ক (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নির্গত রশ্মিকে সরু ফোকাসে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।<ref name="Kremkau"/> নিচের টেবিলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কে পানিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে (''&lambda;'' = ''c''/''f'')। <br> {| class="wikitable" style="text-align: center;" align="center" |+ টেবিল ১: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য। |- | কম্পাঙ্ক (মেগাহার্টজ) || ১ || ২ || ৫ || ৮ || ১০ || ১২ || ১৫ |- | তরঙ্গদৈর্ঘ্য (মিলিমিটার) || ১.৫০ || ০.৭৫ || ০.৩০ || ০.১৯ || ০.১৫ || ০.১৩ || ০.১০ |} তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পর শব্দোত্তর রূপান্তরক একটি গ্রাহকের মতো কাজ করতে পারে—যেমন একটি মাইক্রোফোন বা হাইড্রোফোন। প্রতিফলিত তরঙ্গ বা ঘনত্ব পরিবর্তনের কারণে ফিরে আসা তরঙ্গ রূপান্তরকে এসে রেকর্ড হয়। প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের মধ্যকার সময় ব্যবধান থেকে প্রতিফলন উৎসের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। আর প্রাপ্ত সংকেতের তীব্রতা থেকে প্রতিফলনের শাব্দিক প্রতিবন্ধকতা এবং আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।<ref name="Wiki_sono"/> যেখানে ডপলার শব্দোত্তর চিত্রায়ন ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন থেকে প্রতিফলক উৎসের গতি নির্ধারণ করা যায়। আধুনিক শব্দোত্তর চিত্রায়নে ছোট ছোট অনেক রূপান্তরকের সমষ্টি ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রতিটি আলাদাভাবে ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় [[w:বিমফর্মিং|বিমফর্মিং]] নামের একটি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি রূপান্তরকের তরঙ্গের ধাপের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত রশ্মির দিক ও ফোকাস গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।<ref name="Cobbold_ia"/> একটি দ্বিমাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র তৈরি করতে হলে, রশ্মির কেন্দ্রে অবস্থান একটি অঞ্চলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরানো হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো রেকর্ড করে সেই নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই সাধারণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন যন্ত্রে ভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নিচে একটি দ্বি-মাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র দেখানো হয়েছে। যা ফোকাস অঞ্চল সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। <br> [[Image:CRL Crown rump length 12 weeks ecografia Dr. Wolfgang Moroder.jpg|thumb|center|420px|চিত্র ১: দ্বি-মাত্রিক গর্ভকালীন শব্দোত্তর তরঙ্গ চিত্র।]] == ক্লিনিকাল ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ == উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিকাল ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্রয়োগে সাধারণত উচ্চ তীব্রতার শব্দ তরঙ্গের অপচয়ের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেটাই চিকিৎসার মূল কার্যকারিতা তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন [[w:লিথোট্রিপসি|লিথোট্রিপসি]] তে চিকিৎসামূলক প্রভাব শব্দ তরঙ্গের অরৈখিকতার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে [[তরঙ্গ বিকৃতি|তরঙ্গ বিকৃতি]] ও [[ঘাত তরঙ্গের গঠন|ঘাত তরঙ্গ]] তৈরি হয়। এই প্রভাব সম্পর্কে [[#পরবর্তী এক খণ্ডে|পরবর্তী এক খণ্ডে]] আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে শব্দোত্তর তরঙ্গের কয়েকটি চিকিৎসামূলক প্রয়োগের আংশিক তালিকা দেওয়া হলো: * [[w:ডেন্টাল হাইজেনিস্ট|ডেন্টাল হাইজেনিস্ট]] পেশায় দাঁত পরিষ্কারের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। * কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে সিস্ট ও টিউমার (সৌম্য বা মারাত্মক) চিকিৎসা করা হয়। একে ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড সার্জারি বা উচ্চ তীব্রতা কেন্দ্রিক শব্দোত্তর বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত চিকিৎসা-নির্ণয়ের শব্দোত্তর তরঙ্গের চেয়ে কম কম্পাঙ্ক (২৫০&nbsp;কিলোহার্টজ থেকে ২০০০&nbsp;কিলোহার্টজ পর্যন্ত) ব্যবহার করা হলেও, এর শক্তি অনেক বেশি হয়। * লিথোট্রিপসি ব্যবহার করে কিডনির পাথর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[w:ফ্যাকোইমালসিফিকেশন|ফ্যাকোইমালসিফিকেশন]] পদ্ধতিতে ছানির চিকিৎসায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[W:নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গ|নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গের]] আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন হাড়ের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করা এবং ওষুধ পরিবহনের জন্য [[w:রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক|রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক]] অতিক্রমের সম্ভাবনা। == শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য == প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় শব্দোত্তর রশ্মি একটি অনন্ত বাফলে একটি সমতল বৃত্তাকার পিস্টন দোলনের ফলে উৎপন্ন হয়। বাস্তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় শব্দ রশ্মির অনেক বেশি বিস্তার পার্শ্ব-লোবের তীব্রতা এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দৈর্ঘ্য নির্ধারণের অক্ষমতা দেখা দেয়। বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিমফর্মিং নামে পরিচিত একটি সাধারণ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা হয়। যদিও সমতল রূপান্তরকগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে এগুলোর সহজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গঠিত যে কোনো রশ্মির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উন্নত প্রযুক্তির নকশার চ্যালেঞ্জ বোঝানো যায়। সরল বৃত্তাকার রূপান্তরকের জন্য ব্যবহৃত বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি পিয়ার্স,<ref name="Pierce"/> কিনসলার <ref name="Kinsler"/> এবং চিকি<ref name="Cheeke"/> এর মতো বহু শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে দেখা যায়। এখানে প্রথমে মুক্ত বায়ুতে কম্পমান একটি ছোট গোলকীয় উৎসের হারমোনিক গতি থেকে নির্গত শব্দ বিবেচনা করে শব্দ ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। সেই উৎস থেকে প্রাপ্ত শব্দ চাপ ক্ষেত্র নিম্নরূপ: <br> :<math> \boldsymbol{P} = i\left(\frac{\rho_o c U_o k a^2}{r} \right )e^{-ikr} </math> :<math> I(r) = \frac{1}{2}\rho_o c_o U_o^2 \left(\frac{a}{r} \right )^2 \left(ka \right )^2 </math> এখানে '''''P'''''(''r'') হলো রেডিয়াল দূরত্ব ''r'' এ হারমোনিক চাপের পরিমাণ ''&rho;<sub>o</sub>'' হলো তরলের ঘনত্ব, ''c<sub>o</sub>'' তরলের শব্দের বেগ, ''U<sub>o</sub>'' হলো গোলক উৎসের সর্বাধিক বেগ, ''a'' হলো গোলকের ব্যাসার্ধ, এবং ''k'' = 2''&pi;f''/''c<sub>o</sub>'' হলো তরঙ্গ সংখ্যা। উপরের সমীকরণগুলোতে ''i'' = -1<sup>1/2</sup> যা হারমোনিক চাপ ভেরিয়েবলে প্রশস্ততা ও ধাপ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। এই ফলাফলটি রূপান্তরককে একটি বৃত্তাকার রেডিয়েটর হিসেবে প্রয়োগ করতে হলে প্রতিটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে একটি আলাদা গোলীয় উৎস হিসেবে ধরা যায়। এর ফলে গঠিত শব্দ ক্ষেত্র হলো প্রতিটি গোলীয় উৎসের ইন্টিগ্রাল যোগফল। সাধারণভাবে এ ধরনের সমীকরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে সমাধান করা যায় না। তবে যখন r >> a (যেখানে ''a'' হলো এখন রূপান্তরকের ব্যাসার্ধ) ধরা হয় তখন একটি সরল ফলাফল পাওয়া যায়। পুরো ডেরিভেশন এখানে না দিয়ে (বিশদ দেখতে কিনসলার <ref name="Kinsler"/> অথবা চিকি <ref name="Cheeke"/> দেখুন) শব্দ ক্ষেত্র এবং শব্দ তীব্রতার সমীকরণগুলো হলো: <br> :<math> \boldsymbol{P}(r, \theta) = i \left( \tfrac{1}{2}\rho_o c_o U_o \frac{a}{r}ka \right ) H(\theta)e^{-ikr}, </math> :<math> H(\theta) = \frac{2J_1(ka\sin\theta)}{ka \sin \theta}, </math> :<math> I(r,\theta) = \frac{|\boldsymbol{P}(r)|^2}{2\rho_oc_o}, </math> এখানে ''H''(''&theta;'') হলো নির্দেশিকা ফাংশন ''J<sub>1</sub>'' হলো [http://en.wikipedia.org/wiki/Bessel_function প্রথম প্রকারের বেসেল ফাংশন] এবং ''I''(''r'') হলো W/m<sup>2</sup> এককে শব্দ তীব্রতা। বাস্তবিক অর্থে নির্দেশিকা ফাংশনটি রশ্মির সেই সকল কোণে চাপের পরিমাণ দেখায় যা রূপান্তরকের অক্ষ বরাবর নয়। বেশেল ফাংশনের মূল যেসব কোণে চাপ শূন্য করে সেগুলো পার্শ্ব-লোব নামে পরিচিত। এই কোণগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকে পার্শ্ব-লোব আর অক্ষ বরাবর যে অংশ থাকে তা মূল লোব নামে পরিচিত। বাস্তবে এই লোবগুলো সৃষ্টি হয় রূপান্তরকের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত তরঙ্গগুলোর ধাপীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এটি কিছুটা সরল কম্পাঙ্ক তরঙ্গের চাপ গাঁটে চাপশূন্য অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। উদাহরণস্বরূপ ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর রশ্মি জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরক দিয়ে প্রেরণ করা হলে নির্দেশিকা ফাংশন এবং শব্দ তীব্রতা কীভাবে পার্শ্ব-লোব তৈরি করে তা দেখা যায়। নিচের চিত্র ২ এ নির্দেশিকা ফাংশন দেখানো হয়েছে এবং চিত্র ৩ এ রূপান্তরকের পৃষ্ঠে তীব্রতার তুলনায় শব্দ তীব্রতা চিত্রায়িত হয়েছে। <br> [[Image:Beam_Function_1MHz.png|thumb|center|520px| চিত্র ২: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের জন্য রশ্মি ফাংশন।]] [[Image:1MHz_Ultrasound_Intensity.png|thumb|center|520px| চিত্র ৩: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের শব্দ তীব্রতার স্বাভাবিকৃত ক্ষেত্র।]] চিকিৎসা-সংক্রান্ত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইড লোব একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াগনস্টিক ইমেজিংয়ে সাইড লোব থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো প্রধান বিম থেকে প্রতিফলনের মতো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এর ফলে ইমেজের গুণমান কমে যায়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে সাইড লোব এমন এলাকায় শক্তি ছড়িয়ে দেয় যেখানে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য থাকে না। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রে [http://en.wikipedia.org/wiki/Beamforming বিমফর্মিং] তত্ত্বের ভিত্তিতে রূপান্তরক ডিজাইন করা হয়। যা সাধারণ নলাকার রূপান্তরকের তুলনায় বিশ্লেষণকে অনেক জটিল করে তোলে। সাইড লোব কমানোর একটি কৌশল হলো একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রধান বিমকে কেন্দ্রীভূত করতে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা। এর ফলে সাইড লোবার আপেক্ষিক তীব্রতা হ্রাস পায়। আরেকটি কৌশল একোস্টিক শ্যাডোয়িং, রূপান্তরকের কিনারায় অপেক্ষাকৃত কম তীব্রতার তরঙ্গ প্রেরণ করে সাইড লোব কমায়। যেমনটি পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হবে সাইড লোব কমানো এবং ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য নতুন একটি কৌশল হলো আল্ট্রাসাউন্ড বিমে ইচ্ছাকৃতভাবে নন-লিনিয়ার শব্দ প্রভাবের বিবেচনা।<ref name="Cobbold"/><ref name="Duck"/> == জীব চিকিৎসাবিষয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গে অরৈখিক শব্দবিজ্ঞান == অনেক ক্ষেত্রে শব্দতত্ত্ব প্রয়োগে তরঙ্গের রৈখিক সম্প্রসারণের ধারণা যথেষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু জীবচিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে শব্দ তরঙ্গের সম্প্রসারণের সময় প্রায়শই একটি ক্রমাগত বিকৃতির সৃষ্টি হয় যা অরৈখিক এবং সীমিত মাত্রার প্রভাবে ঘটে। ডায়াগনস্টিক আল্ট্রাসাউন্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরৈখিক প্রভাব হলো তরঙ্গে হারমোনিক তৈরি হওয়া। এই অংশের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি হিসেবে [[অরৈখিকতার শব্দ প্যারামিটার|অরৈখিক শব্দ প্যারামিটার]] এবং [[হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি|হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি]] সম্পর্কে পুনরালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জীব চিকিৎসাবিষয়ক শব্দোত্তর তরঙ্গে প্রাসঙ্গিক অরৈখিকতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে এদের প্রভাব ধীরে ধীরে দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে জমা হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হওয়ার জন্য চারটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন: *প্রচুর পরিমাণে চাপ এবং বেগের তীব্রতা থাকা। জীবচিকিৎসাবিষয়ক প্রায় সব প্রয়োগেই এই শর্ত পূরণ হয়।<ref name="Duck_2010"/> *পর্যাপ্ত দূরত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারণ যেখানে তরঙ্গ প্রায় সমতল থাকে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নির্দেশিত বিমের ক্ষেত্রে, এই শর্ত সাধারণত রেইলি দূরত্ব ''x'' = 1/2 ''ka<sup>2</sup>'' এর মধ্যে মূল লোবের জন্য প্রযোজ্য।<ref name="Hamilton"/> হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি প্রকৃতপক্ষে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংখ্যার সমানুপাতিক, পরম দূরত্বের নয়। উদাহরণস্বরূপ ১০&nbsp;MHz ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ১০&nbsp;সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০০ তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। *[[অরৈখিক প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটারে]] B/A এর পর্যাপ্ত মান থাকা। একই শব্দ তীব্রতার জন্য যে পদার্থের B/A মান বেশি তা দ্রুত হারমোনিক তৈরি করে। জলে B/A মান বায়ুর চেয়ে দশগুণ বেশি এবং কিছু জীবতন্তু টিস্যুতে এই মান জলের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। *কম শব্দ শোষণ, অনেক জীবতন্তু টিস্যুতে যেখানে B/A এর মান বেশি সেখানে শব্দ শোষণও বেশি হয়ে থাকে। কারণ উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ দ্রুত শোষিত হয়। ফলে তৈরি হওয়া হারমোনিক মূল ফ্রিকোয়েন্সির তুলনায় সহজেই শোষিত হয়। এই প্রভাবের ফলে জীবতন্তু টিস্যুতে B/A এর প্রভাব কমে যায়। এই শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অনেক ক্ষেত্রে জীব চিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হয়। এই হারমোনিক তৈরি ব্যবহার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ গড়ে উঠছে: *শব্দোত্তর তরঙ্গে রেকর্ড করা সংকেতে হারমোনিক উপাদান ব্যবহার। কারণ শব্দ তীব্রতা এবং সম্প্রসারণের দূরত্ব মূল লোবেই সবচেয়ে বেশি তাই হারমোনিক মূলত মূল লোবেই বেশি তৈরি হয় এবং সাইড লোবগুলোতে কম হয়। ফলে দ্বিতীয় হারমোনিক দ্বারা তৈরি বিমের দিকনির্দেশনা ক্ষমতা মূল ফ্রিকোয়েন্সির বিমের চেয়ে বেশি হয়। এতে ইমেজের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।<ref name="Duck"/> *টিস্যুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে B/A প্যারামিটার ব্যবহার করে হারমোনিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ। [[অরৈখিকতার প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটার]] অনুযায়ী একই শব্দ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টিস্যুর B/A মান ভিন্ন হয়। এর ফলে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের হারমোনিক উপাদান টিস্যুর B/A মানের ভিত্তিতে চিত্র তৈরি করতে পারে। এই ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আছে, কারণ বর্তমান ইমেজিং প্রযুক্তি এখনো এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।<ref name="Duck_2010"/> == বহিঃসংযোগ == * [http://www.piezotechnologies.com/Resources/White-Papers.aspx মেডিকেল আল্ট্রাসনিক রূপান্তরক] == তথ্যসূত্র == {{reflist|refs= <ref name = "Pierce" >Pierce, A. D. 1989. Radiation from Sources Near and on Solid Surfaces. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name = "Pierce_sd" >Pierce, A. D. 1989. Scattering and Diffraction. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Kinsler">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000.Radiation and Reception of Acoustic Waves. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Kinsler_rt">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000. Reflection and Transmission. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Cheeke">Cheeke, J. D. N. 2002. Finite Beams, Radiation, Diffraction, and Scattering. In Fundamentals and Applications of Ultrasonic Waves. Boca Raton, CRC Press.</ref> <ref name="Cobbold">Cobbold, R. S. C. 2007. Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_ia">Cobbold, R. S. C. 2007. Ultrasound Imaging Arrays. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_su">Cobbold, R. S. C. 2007. Scattering of Ultrasound. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name ="Duck">Duck, F. A. 2002. "Nonlinear Acoustics in Diagnostic Ultrasound." Ultrasound in Medicine & Biology 28(1).</ref> <ref name ="Wiki_sono">Wikipedia, 2010. "Medical Ultrasonography”</ref> <ref name="Kremkau">Kremkau, F. W. 2002. Diagnostic Ultrasound : Principles and Instruments. Philadelphia, W.B. Saunders</ref> <ref name="Hamilton">Hamilton, M. F., Blackstock, D. T. 2008. Sound Beams. In Nonlinear Acoustics. Melville, NY, Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Duck_2010">Duck, F. 2010. Tissue non-linearity. Proceedings of the Institution of Mechanical Engineers, Part H: Journal of Engineering in Medicine 224(2).</ref> }} cz7unr6j8lmerbvygapvhl1upzcame2 84888 84886 2025-06-19T05:54:51Z Asikur.rahman25 11164 /* ক্লিনিকাল ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ */ 84888 wikitext text/x-wiki {{Engineering Acoustics}} == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ == প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান উইকিবইয়ের এই অধ্যায়ে জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রয়োগগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং শব্দোত্তর রশ্মির জন্য কিছু প্রাথমিক শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ ক্ষেত্রটি নানা মৌলিক শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে বহু বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি শব্দোত্তর তরঙ্গের সব দিক আলোচনা করে না। বরং এটি পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে আগ্রহীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। যাঁরা আরও গভীরভাবে জানতে চান তাঁদের জন্য কোবোল্ড এর ২০০৭ সালের গ্রন্থটি <ref name="Cobbold"/> সুপারিশ করা হয়েছে। == রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের সবচেয়ে পরিচিত প্রয়োগ হলো চিকিৎসা চিত্রায়ন যাকে শব্দোত্তর চিত্রায়ন বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়। শব্দোত্তর চিত্রায়নের নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলোর তালিকার জন্য সংশ্লিষ্ট [[w:মেডিকেল আল্ট্রাসনোগ্রাফি|উইকিপিডিয়া নিবন্ধ]]টি দেখুন। নিচের অংশে শব্দোত্তর চিত্র তৈরির জন্য যে শব্দতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা গুণগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি শব্দোত্তর তরঙ্গ রূপান্তরক স্বল্পস্থায়ী উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ নির্গত করে। প্রয়োগ অনুযায়ী এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১&nbsp;মেগাহার্টজ থেকে ১৫&nbsp;মেগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে।<ref name="Kremkau"/> নির্গত শব্দ তরঙ্গ যখন শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শব্দ প্রতিবন্ধকতার (''&rho;c'') পার্থক্যের ক্ষেত্রে আংশিক প্রতিফলন বা বিকিরণ ঘটে। চিকিৎসা চিত্রায়নের প্রসঙ্গে, এটি ঘটে শরীরের যেখানে ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে যেমন হাড় ও পেশির সংযোগস্থলে, রক্তরসের মধ্যে রক্তকণিকা, অঙ্গের ছোট গঠন ইত্যাদিতে।<ref name="Wiki_sono"/> প্রতিফলিত তরঙ্গের আচরণ নির্ভর করে প্রতিফলক গঠনের আকার এবং প্রেরিত শব্দ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়, তাহলে প্রতিফলন ঘটে শব্দ পরিবাহিতা ও প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী তা স্বাভাবিক হোক বা তির্যক।<ref name="Kinsler_rt"/> আর যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক গঠনের তুলনায় বড় হয়, তখন শব্দ বিকিরণের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।<ref name="Pierce_sd"/> এই দ্বিতীয় অবস্থা, যা ছোট প্রতিফলন উৎসের ক্ষেত্রে ঘটে, সেটিই নির্ধারণ করে শব্দোত্তর চিত্রায়নে কোন কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হবে। কোবোল্ড এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী,<ref name="Cobbold_su"/> একটি সমতল তরঙ্গ যখন একটি গোলীয় প্রতিফলক উৎসে পড়ে যার কার্যকর ব্যাসার্ধ ''a'', তখন বিকিরিত তরঙ্গের শব্দ তীব্রতা, ''I<sub>s</sub>'', পরিবর্তিত হয় এই সূত্র অনুযায়ী: <br> :<math> I_s \propto \frac{a^6}{\lambda ^4} </math> এই সূত্রটি দেখায়, যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক উৎসের তুলনায় বড় হয়, তখন প্রতিফলিত শক্তি খুব কম হয়ে যায়। ফলে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্য প্রতিফলিত তরঙ্গ ফেরত আসে না। শব্দোত্তর চিত্রে একটি গঠন স্পষ্টভাবে ধরতে হলে, নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সেই গঠনের চেয়ে ছোট হতে হবে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ পরিবাহনের পথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তাই কম কম্পাঙ্ক বেশি গভীরে ছবি তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেশি কম্পাঙ্ক (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নির্গত রশ্মিকে সরু ফোকাসে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।<ref name="Kremkau"/> নিচের টেবিলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কে পানিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে (''&lambda;'' = ''c''/''f'')। <br> {| class="wikitable" style="text-align: center;" align="center" |+ টেবিল ১: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য। |- | কম্পাঙ্ক (মেগাহার্টজ) || ১ || ২ || ৫ || ৮ || ১০ || ১২ || ১৫ |- | তরঙ্গদৈর্ঘ্য (মিলিমিটার) || ১.৫০ || ০.৭৫ || ০.৩০ || ০.১৯ || ০.১৫ || ০.১৩ || ০.১০ |} তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পর শব্দোত্তর রূপান্তরক একটি গ্রাহকের মতো কাজ করতে পারে—যেমন একটি মাইক্রোফোন বা হাইড্রোফোন। প্রতিফলিত তরঙ্গ বা ঘনত্ব পরিবর্তনের কারণে ফিরে আসা তরঙ্গ রূপান্তরকে এসে রেকর্ড হয়। প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের মধ্যকার সময় ব্যবধান থেকে প্রতিফলন উৎসের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। আর প্রাপ্ত সংকেতের তীব্রতা থেকে প্রতিফলনের শাব্দিক প্রতিবন্ধকতা এবং আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।<ref name="Wiki_sono"/> যেখানে ডপলার শব্দোত্তর চিত্রায়ন ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন থেকে প্রতিফলক উৎসের গতি নির্ধারণ করা যায়। আধুনিক শব্দোত্তর চিত্রায়নে ছোট ছোট অনেক রূপান্তরকের সমষ্টি ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রতিটি আলাদাভাবে ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় [[w:বিমফর্মিং|বিমফর্মিং]] নামের একটি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি রূপান্তরকের তরঙ্গের ধাপের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত রশ্মির দিক ও ফোকাস গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।<ref name="Cobbold_ia"/> একটি দ্বিমাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র তৈরি করতে হলে, রশ্মির কেন্দ্রে অবস্থান একটি অঞ্চলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরানো হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো রেকর্ড করে সেই নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই সাধারণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন যন্ত্রে ভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নিচে একটি দ্বি-মাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র দেখানো হয়েছে। যা ফোকাস অঞ্চল সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। <br> [[Image:CRL Crown rump length 12 weeks ecografia Dr. Wolfgang Moroder.jpg|thumb|center|420px|চিত্র ১: দ্বি-মাত্রিক গর্ভকালীন শব্দোত্তর তরঙ্গ চিত্র।]] == রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ == উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিকাল ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্রয়োগে সাধারণত উচ্চ তীব্রতার শব্দ তরঙ্গের অপচয়ের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেটাই চিকিৎসার মূল কার্যকারিতা তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন [[w:লিথোট্রিপসি|লিথোট্রিপসি]] তে চিকিৎসামূলক প্রভাব শব্দ তরঙ্গের অরৈখিকতার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে [[তরঙ্গ বিকৃতি|তরঙ্গ বিকৃতি]] ও [[ঘাত তরঙ্গের গঠন|ঘাত তরঙ্গ]] তৈরি হয়। এই প্রভাব সম্পর্কে [[#পরবর্তী এক খণ্ডে|পরবর্তী এক খণ্ডে]] আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে শব্দোত্তর তরঙ্গের কয়েকটি চিকিৎসামূলক প্রয়োগের আংশিক তালিকা দেওয়া হলো: * [[w:ডেন্টাল হাইজেনিস্ট|ডেন্টাল হাইজেনিস্ট]] পেশায় দাঁত পরিষ্কারের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। * কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে সিস্ট ও টিউমার (সৌম্য বা মারাত্মক) চিকিৎসা করা হয়। একে ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড সার্জারি বা উচ্চ তীব্রতা কেন্দ্রিক শব্দোত্তর বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত চিকিৎসা-নির্ণয়ের শব্দোত্তর তরঙ্গের চেয়ে কম কম্পাঙ্ক (২৫০&nbsp;কিলোহার্টজ থেকে ২০০০&nbsp;কিলোহার্টজ পর্যন্ত) ব্যবহার করা হলেও, এর শক্তি অনেক বেশি হয়। * লিথোট্রিপসি ব্যবহার করে কিডনির পাথর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[w:ফ্যাকোইমালসিফিকেশন|ফ্যাকোইমালসিফিকেশন]] পদ্ধতিতে ছানির চিকিৎসায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[W:নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গ|নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গের]] আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন হাড়ের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করা এবং ওষুধ পরিবহনের জন্য [[w:রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক|রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক]] অতিক্রমের সম্ভাবনা। == শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য == প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় শব্দোত্তর রশ্মি একটি অনন্ত বাফলে একটি সমতল বৃত্তাকার পিস্টন দোলনের ফলে উৎপন্ন হয়। বাস্তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় শব্দ রশ্মির অনেক বেশি বিস্তার পার্শ্ব-লোবের তীব্রতা এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দৈর্ঘ্য নির্ধারণের অক্ষমতা দেখা দেয়। বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিমফর্মিং নামে পরিচিত একটি সাধারণ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা হয়। যদিও সমতল রূপান্তরকগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে এগুলোর সহজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গঠিত যে কোনো রশ্মির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উন্নত প্রযুক্তির নকশার চ্যালেঞ্জ বোঝানো যায়। সরল বৃত্তাকার রূপান্তরকের জন্য ব্যবহৃত বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি পিয়ার্স,<ref name="Pierce"/> কিনসলার <ref name="Kinsler"/> এবং চিকি<ref name="Cheeke"/> এর মতো বহু শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে দেখা যায়। এখানে প্রথমে মুক্ত বায়ুতে কম্পমান একটি ছোট গোলকীয় উৎসের হারমোনিক গতি থেকে নির্গত শব্দ বিবেচনা করে শব্দ ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। সেই উৎস থেকে প্রাপ্ত শব্দ চাপ ক্ষেত্র নিম্নরূপ: <br> :<math> \boldsymbol{P} = i\left(\frac{\rho_o c U_o k a^2}{r} \right )e^{-ikr} </math> :<math> I(r) = \frac{1}{2}\rho_o c_o U_o^2 \left(\frac{a}{r} \right )^2 \left(ka \right )^2 </math> এখানে '''''P'''''(''r'') হলো রেডিয়াল দূরত্ব ''r'' এ হারমোনিক চাপের পরিমাণ ''&rho;<sub>o</sub>'' হলো তরলের ঘনত্ব, ''c<sub>o</sub>'' তরলের শব্দের বেগ, ''U<sub>o</sub>'' হলো গোলক উৎসের সর্বাধিক বেগ, ''a'' হলো গোলকের ব্যাসার্ধ, এবং ''k'' = 2''&pi;f''/''c<sub>o</sub>'' হলো তরঙ্গ সংখ্যা। উপরের সমীকরণগুলোতে ''i'' = -1<sup>1/2</sup> যা হারমোনিক চাপ ভেরিয়েবলে প্রশস্ততা ও ধাপ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। এই ফলাফলটি রূপান্তরককে একটি বৃত্তাকার রেডিয়েটর হিসেবে প্রয়োগ করতে হলে প্রতিটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে একটি আলাদা গোলীয় উৎস হিসেবে ধরা যায়। এর ফলে গঠিত শব্দ ক্ষেত্র হলো প্রতিটি গোলীয় উৎসের ইন্টিগ্রাল যোগফল। সাধারণভাবে এ ধরনের সমীকরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে সমাধান করা যায় না। তবে যখন r >> a (যেখানে ''a'' হলো এখন রূপান্তরকের ব্যাসার্ধ) ধরা হয় তখন একটি সরল ফলাফল পাওয়া যায়। পুরো ডেরিভেশন এখানে না দিয়ে (বিশদ দেখতে কিনসলার <ref name="Kinsler"/> অথবা চিকি <ref name="Cheeke"/> দেখুন) শব্দ ক্ষেত্র এবং শব্দ তীব্রতার সমীকরণগুলো হলো: <br> :<math> \boldsymbol{P}(r, \theta) = i \left( \tfrac{1}{2}\rho_o c_o U_o \frac{a}{r}ka \right ) H(\theta)e^{-ikr}, </math> :<math> H(\theta) = \frac{2J_1(ka\sin\theta)}{ka \sin \theta}, </math> :<math> I(r,\theta) = \frac{|\boldsymbol{P}(r)|^2}{2\rho_oc_o}, </math> এখানে ''H''(''&theta;'') হলো নির্দেশিকা ফাংশন ''J<sub>1</sub>'' হলো [http://en.wikipedia.org/wiki/Bessel_function প্রথম প্রকারের বেসেল ফাংশন] এবং ''I''(''r'') হলো W/m<sup>2</sup> এককে শব্দ তীব্রতা। বাস্তবিক অর্থে নির্দেশিকা ফাংশনটি রশ্মির সেই সকল কোণে চাপের পরিমাণ দেখায় যা রূপান্তরকের অক্ষ বরাবর নয়। বেশেল ফাংশনের মূল যেসব কোণে চাপ শূন্য করে সেগুলো পার্শ্ব-লোব নামে পরিচিত। এই কোণগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকে পার্শ্ব-লোব আর অক্ষ বরাবর যে অংশ থাকে তা মূল লোব নামে পরিচিত। বাস্তবে এই লোবগুলো সৃষ্টি হয় রূপান্তরকের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত তরঙ্গগুলোর ধাপীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এটি কিছুটা সরল কম্পাঙ্ক তরঙ্গের চাপ গাঁটে চাপশূন্য অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। উদাহরণস্বরূপ ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর রশ্মি জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরক দিয়ে প্রেরণ করা হলে নির্দেশিকা ফাংশন এবং শব্দ তীব্রতা কীভাবে পার্শ্ব-লোব তৈরি করে তা দেখা যায়। নিচের চিত্র ২ এ নির্দেশিকা ফাংশন দেখানো হয়েছে এবং চিত্র ৩ এ রূপান্তরকের পৃষ্ঠে তীব্রতার তুলনায় শব্দ তীব্রতা চিত্রায়িত হয়েছে। <br> [[Image:Beam_Function_1MHz.png|thumb|center|520px| চিত্র ২: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের জন্য রশ্মি ফাংশন।]] [[Image:1MHz_Ultrasound_Intensity.png|thumb|center|520px| চিত্র ৩: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের শব্দ তীব্রতার স্বাভাবিকৃত ক্ষেত্র।]] চিকিৎসা-সংক্রান্ত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইড লোব একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াগনস্টিক ইমেজিংয়ে সাইড লোব থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো প্রধান বিম থেকে প্রতিফলনের মতো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এর ফলে ইমেজের গুণমান কমে যায়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে সাইড লোব এমন এলাকায় শক্তি ছড়িয়ে দেয় যেখানে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য থাকে না। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রে [http://en.wikipedia.org/wiki/Beamforming বিমফর্মিং] তত্ত্বের ভিত্তিতে রূপান্তরক ডিজাইন করা হয়। যা সাধারণ নলাকার রূপান্তরকের তুলনায় বিশ্লেষণকে অনেক জটিল করে তোলে। সাইড লোব কমানোর একটি কৌশল হলো একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রধান বিমকে কেন্দ্রীভূত করতে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা। এর ফলে সাইড লোবার আপেক্ষিক তীব্রতা হ্রাস পায়। আরেকটি কৌশল একোস্টিক শ্যাডোয়িং, রূপান্তরকের কিনারায় অপেক্ষাকৃত কম তীব্রতার তরঙ্গ প্রেরণ করে সাইড লোব কমায়। যেমনটি পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হবে সাইড লোব কমানো এবং ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য নতুন একটি কৌশল হলো আল্ট্রাসাউন্ড বিমে ইচ্ছাকৃতভাবে নন-লিনিয়ার শব্দ প্রভাবের বিবেচনা।<ref name="Cobbold"/><ref name="Duck"/> == জীব চিকিৎসাবিষয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গে অরৈখিক শব্দবিজ্ঞান == অনেক ক্ষেত্রে শব্দতত্ত্ব প্রয়োগে তরঙ্গের রৈখিক সম্প্রসারণের ধারণা যথেষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু জীবচিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে শব্দ তরঙ্গের সম্প্রসারণের সময় প্রায়শই একটি ক্রমাগত বিকৃতির সৃষ্টি হয় যা অরৈখিক এবং সীমিত মাত্রার প্রভাবে ঘটে। ডায়াগনস্টিক আল্ট্রাসাউন্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরৈখিক প্রভাব হলো তরঙ্গে হারমোনিক তৈরি হওয়া। এই অংশের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি হিসেবে [[অরৈখিকতার শব্দ প্যারামিটার|অরৈখিক শব্দ প্যারামিটার]] এবং [[হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি|হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি]] সম্পর্কে পুনরালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জীব চিকিৎসাবিষয়ক শব্দোত্তর তরঙ্গে প্রাসঙ্গিক অরৈখিকতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে এদের প্রভাব ধীরে ধীরে দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে জমা হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হওয়ার জন্য চারটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন: *প্রচুর পরিমাণে চাপ এবং বেগের তীব্রতা থাকা। জীবচিকিৎসাবিষয়ক প্রায় সব প্রয়োগেই এই শর্ত পূরণ হয়।<ref name="Duck_2010"/> *পর্যাপ্ত দূরত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারণ যেখানে তরঙ্গ প্রায় সমতল থাকে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নির্দেশিত বিমের ক্ষেত্রে, এই শর্ত সাধারণত রেইলি দূরত্ব ''x'' = 1/2 ''ka<sup>2</sup>'' এর মধ্যে মূল লোবের জন্য প্রযোজ্য।<ref name="Hamilton"/> হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি প্রকৃতপক্ষে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংখ্যার সমানুপাতিক, পরম দূরত্বের নয়। উদাহরণস্বরূপ ১০&nbsp;MHz ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ১০&nbsp;সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০০ তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। *[[অরৈখিক প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটারে]] B/A এর পর্যাপ্ত মান থাকা। একই শব্দ তীব্রতার জন্য যে পদার্থের B/A মান বেশি তা দ্রুত হারমোনিক তৈরি করে। জলে B/A মান বায়ুর চেয়ে দশগুণ বেশি এবং কিছু জীবতন্তু টিস্যুতে এই মান জলের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। *কম শব্দ শোষণ, অনেক জীবতন্তু টিস্যুতে যেখানে B/A এর মান বেশি সেখানে শব্দ শোষণও বেশি হয়ে থাকে। কারণ উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ দ্রুত শোষিত হয়। ফলে তৈরি হওয়া হারমোনিক মূল ফ্রিকোয়েন্সির তুলনায় সহজেই শোষিত হয়। এই প্রভাবের ফলে জীবতন্তু টিস্যুতে B/A এর প্রভাব কমে যায়। এই শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অনেক ক্ষেত্রে জীব চিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হয়। এই হারমোনিক তৈরি ব্যবহার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ গড়ে উঠছে: *শব্দোত্তর তরঙ্গে রেকর্ড করা সংকেতে হারমোনিক উপাদান ব্যবহার। কারণ শব্দ তীব্রতা এবং সম্প্রসারণের দূরত্ব মূল লোবেই সবচেয়ে বেশি তাই হারমোনিক মূলত মূল লোবেই বেশি তৈরি হয় এবং সাইড লোবগুলোতে কম হয়। ফলে দ্বিতীয় হারমোনিক দ্বারা তৈরি বিমের দিকনির্দেশনা ক্ষমতা মূল ফ্রিকোয়েন্সির বিমের চেয়ে বেশি হয়। এতে ইমেজের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।<ref name="Duck"/> *টিস্যুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে B/A প্যারামিটার ব্যবহার করে হারমোনিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ। [[অরৈখিকতার প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটার]] অনুযায়ী একই শব্দ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টিস্যুর B/A মান ভিন্ন হয়। এর ফলে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের হারমোনিক উপাদান টিস্যুর B/A মানের ভিত্তিতে চিত্র তৈরি করতে পারে। এই ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আছে, কারণ বর্তমান ইমেজিং প্রযুক্তি এখনো এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।<ref name="Duck_2010"/> == বহিঃসংযোগ == * [http://www.piezotechnologies.com/Resources/White-Papers.aspx মেডিকেল আল্ট্রাসনিক রূপান্তরক] == তথ্যসূত্র == {{reflist|refs= <ref name = "Pierce" >Pierce, A. D. 1989. Radiation from Sources Near and on Solid Surfaces. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name = "Pierce_sd" >Pierce, A. D. 1989. Scattering and Diffraction. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Kinsler">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000.Radiation and Reception of Acoustic Waves. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Kinsler_rt">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000. Reflection and Transmission. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Cheeke">Cheeke, J. D. N. 2002. Finite Beams, Radiation, Diffraction, and Scattering. In Fundamentals and Applications of Ultrasonic Waves. Boca Raton, CRC Press.</ref> <ref name="Cobbold">Cobbold, R. S. C. 2007. Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_ia">Cobbold, R. S. C. 2007. Ultrasound Imaging Arrays. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_su">Cobbold, R. S. C. 2007. Scattering of Ultrasound. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name ="Duck">Duck, F. A. 2002. "Nonlinear Acoustics in Diagnostic Ultrasound." Ultrasound in Medicine & Biology 28(1).</ref> <ref name ="Wiki_sono">Wikipedia, 2010. "Medical Ultrasonography”</ref> <ref name="Kremkau">Kremkau, F. W. 2002. Diagnostic Ultrasound : Principles and Instruments. Philadelphia, W.B. Saunders</ref> <ref name="Hamilton">Hamilton, M. F., Blackstock, D. T. 2008. Sound Beams. In Nonlinear Acoustics. Melville, NY, Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Duck_2010">Duck, F. 2010. Tissue non-linearity. Proceedings of the Institution of Mechanical Engineers, Part H: Journal of Engineering in Medicine 224(2).</ref> }} ke4k1ixz96vdgefgsqg8fq79s15dj1g 84889 84888 2025-06-19T05:56:12Z Asikur.rahman25 11164 /* রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ */ 84889 wikitext text/x-wiki {{Engineering Acoustics}} == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ == প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান উইকিবইয়ের এই অধ্যায়ে জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রয়োগগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং শব্দোত্তর রশ্মির জন্য কিছু প্রাথমিক শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ ক্ষেত্রটি নানা মৌলিক শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে বহু বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি শব্দোত্তর তরঙ্গের সব দিক আলোচনা করে না। বরং এটি পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে আগ্রহীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। যাঁরা আরও গভীরভাবে জানতে চান তাঁদের জন্য কোবোল্ড এর ২০০৭ সালের গ্রন্থটি <ref name="Cobbold"/> সুপারিশ করা হয়েছে। == রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের সবচেয়ে পরিচিত প্রয়োগ হলো চিকিৎসা চিত্রায়ন যাকে শব্দোত্তর চিত্রায়ন বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়। শব্দোত্তর চিত্রায়নের নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলোর তালিকার জন্য সংশ্লিষ্ট [[w:মেডিকেল আল্ট্রাসনোগ্রাফি|উইকিপিডিয়া নিবন্ধ]]টি দেখুন। নিচের অংশে শব্দোত্তর চিত্র তৈরির জন্য যে শব্দতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা গুণগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি শব্দোত্তর তরঙ্গ রূপান্তরক স্বল্পস্থায়ী উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ নির্গত করে। প্রয়োগ অনুযায়ী এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১&nbsp;মেগাহার্টজ থেকে ১৫&nbsp;মেগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে।<ref name="Kremkau"/> নির্গত শব্দ তরঙ্গ যখন শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শব্দ প্রতিবন্ধকতার (''&rho;c'') পার্থক্যের ক্ষেত্রে আংশিক প্রতিফলন বা বিকিরণ ঘটে। চিকিৎসা চিত্রায়নের প্রসঙ্গে, এটি ঘটে শরীরের যেখানে ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে যেমন হাড় ও পেশির সংযোগস্থলে, রক্তরসের মধ্যে রক্তকণিকা, অঙ্গের ছোট গঠন ইত্যাদিতে।<ref name="Wiki_sono"/> প্রতিফলিত তরঙ্গের আচরণ নির্ভর করে প্রতিফলক গঠনের আকার এবং প্রেরিত শব্দ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়, তাহলে প্রতিফলন ঘটে শব্দ পরিবাহিতা ও প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী তা স্বাভাবিক হোক বা তির্যক।<ref name="Kinsler_rt"/> আর যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক গঠনের তুলনায় বড় হয়, তখন শব্দ বিকিরণের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।<ref name="Pierce_sd"/> এই দ্বিতীয় অবস্থা, যা ছোট প্রতিফলন উৎসের ক্ষেত্রে ঘটে, সেটিই নির্ধারণ করে শব্দোত্তর চিত্রায়নে কোন কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হবে। কোবোল্ড এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী,<ref name="Cobbold_su"/> একটি সমতল তরঙ্গ যখন একটি গোলীয় প্রতিফলক উৎসে পড়ে যার কার্যকর ব্যাসার্ধ ''a'', তখন বিকিরিত তরঙ্গের শব্দ তীব্রতা, ''I<sub>s</sub>'', পরিবর্তিত হয় এই সূত্র অনুযায়ী: <br> :<math> I_s \propto \frac{a^6}{\lambda ^4} </math> এই সূত্রটি দেখায়, যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক উৎসের তুলনায় বড় হয়, তখন প্রতিফলিত শক্তি খুব কম হয়ে যায়। ফলে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্য প্রতিফলিত তরঙ্গ ফেরত আসে না। শব্দোত্তর চিত্রে একটি গঠন স্পষ্টভাবে ধরতে হলে, নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সেই গঠনের চেয়ে ছোট হতে হবে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ পরিবাহনের পথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তাই কম কম্পাঙ্ক বেশি গভীরে ছবি তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেশি কম্পাঙ্ক (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নির্গত রশ্মিকে সরু ফোকাসে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।<ref name="Kremkau"/> নিচের টেবিলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কে পানিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে (''&lambda;'' = ''c''/''f'')। <br> {| class="wikitable" style="text-align: center;" align="center" |+ টেবিল ১: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য। |- | কম্পাঙ্ক (মেগাহার্টজ) || ১ || ২ || ৫ || ৮ || ১০ || ১২ || ১৫ |- | তরঙ্গদৈর্ঘ্য (মিলিমিটার) || ১.৫০ || ০.৭৫ || ০.৩০ || ০.১৯ || ০.১৫ || ০.১৩ || ০.১০ |} তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পর শব্দোত্তর রূপান্তরক একটি গ্রাহকের মতো কাজ করতে পারে—যেমন একটি মাইক্রোফোন বা হাইড্রোফোন। প্রতিফলিত তরঙ্গ বা ঘনত্ব পরিবর্তনের কারণে ফিরে আসা তরঙ্গ রূপান্তরকে এসে রেকর্ড হয়। প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের মধ্যকার সময় ব্যবধান থেকে প্রতিফলন উৎসের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। আর প্রাপ্ত সংকেতের তীব্রতা থেকে প্রতিফলনের শাব্দিক প্রতিবন্ধকতা এবং আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।<ref name="Wiki_sono"/> যেখানে ডপলার শব্দোত্তর চিত্রায়ন ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন থেকে প্রতিফলক উৎসের গতি নির্ধারণ করা যায়। আধুনিক শব্দোত্তর চিত্রায়নে ছোট ছোট অনেক রূপান্তরকের সমষ্টি ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রতিটি আলাদাভাবে ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় [[w:বিমফর্মিং|বিমফর্মিং]] নামের একটি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি রূপান্তরকের তরঙ্গের ধাপের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত রশ্মির দিক ও ফোকাস গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।<ref name="Cobbold_ia"/> একটি দ্বিমাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র তৈরি করতে হলে, রশ্মির কেন্দ্রে অবস্থান একটি অঞ্চলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরানো হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো রেকর্ড করে সেই নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই সাধারণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন যন্ত্রে ভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নিচে একটি দ্বি-মাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র দেখানো হয়েছে। যা ফোকাস অঞ্চল সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। <br> [[Image:CRL Crown rump length 12 weeks ecografia Dr. Wolfgang Moroder.jpg|thumb|center|420px|চিত্র ১: দ্বি-মাত্রিক গর্ভকালীন শব্দোত্তর তরঙ্গ চিত্র।]] == রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ == উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্রয়োগে সাধারণত উচ্চ তীব্রতার শব্দ তরঙ্গের অপচয়ের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেটাই চিকিৎসার মূল কার্যকারিতা তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন [[w:লিথোট্রিপসি|লিথোট্রিপসি]] তে চিকিৎসামূলক প্রভাব শব্দ তরঙ্গের অরৈখিকতার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে [[তরঙ্গ বিকৃতি|তরঙ্গ বিকৃতি]] ও [[ঘাত তরঙ্গের গঠন|ঘাত তরঙ্গ]] তৈরি হয়। এই প্রভাব সম্পর্কে [[#পরবর্তী এক খণ্ডে|পরবর্তী এক খণ্ডে]] আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে শব্দোত্তর তরঙ্গের কয়েকটি চিকিৎসামূলক প্রয়োগের আংশিক তালিকা দেওয়া হলো: * [[w:ডেন্টাল হাইজেনিস্ট|ডেন্টাল হাইজেনিস্ট]] পেশায় দাঁত পরিষ্কারের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। * কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে সিস্ট ও টিউমার (সৌম্য বা মারাত্মক) চিকিৎসা করা হয়। একে ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড সার্জারি বা উচ্চ তীব্রতা কেন্দ্রিক শব্দোত্তর বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত চিকিৎসা-নির্ণয়ের শব্দোত্তর তরঙ্গের চেয়ে কম কম্পাঙ্ক (২৫০&nbsp;কিলোহার্টজ থেকে ২০০০&nbsp;কিলোহার্টজ পর্যন্ত) ব্যবহার করা হলেও, এর শক্তি অনেক বেশি হয়। * লিথোট্রিপসি ব্যবহার করে কিডনির পাথর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[w:ফ্যাকোইমালসিফিকেশন|ফ্যাকোইমালসিফিকেশন]] পদ্ধতিতে ছানির চিকিৎসায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[W:নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গ|নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গের]] আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন হাড়ের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করা এবং ওষুধ পরিবহনের জন্য [[w:রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক|রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক]] অতিক্রমের সম্ভাবনা। == শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য == প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় শব্দোত্তর রশ্মি একটি অনন্ত বাফলে একটি সমতল বৃত্তাকার পিস্টন দোলনের ফলে উৎপন্ন হয়। বাস্তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় শব্দ রশ্মির অনেক বেশি বিস্তার পার্শ্ব-লোবের তীব্রতা এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দৈর্ঘ্য নির্ধারণের অক্ষমতা দেখা দেয়। বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিমফর্মিং নামে পরিচিত একটি সাধারণ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা হয়। যদিও সমতল রূপান্তরকগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে এগুলোর সহজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গঠিত যে কোনো রশ্মির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উন্নত প্রযুক্তির নকশার চ্যালেঞ্জ বোঝানো যায়। সরল বৃত্তাকার রূপান্তরকের জন্য ব্যবহৃত বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি পিয়ার্স,<ref name="Pierce"/> কিনসলার <ref name="Kinsler"/> এবং চিকি<ref name="Cheeke"/> এর মতো বহু শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে দেখা যায়। এখানে প্রথমে মুক্ত বায়ুতে কম্পমান একটি ছোট গোলকীয় উৎসের হারমোনিক গতি থেকে নির্গত শব্দ বিবেচনা করে শব্দ ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। সেই উৎস থেকে প্রাপ্ত শব্দ চাপ ক্ষেত্র নিম্নরূপ: <br> :<math> \boldsymbol{P} = i\left(\frac{\rho_o c U_o k a^2}{r} \right )e^{-ikr} </math> :<math> I(r) = \frac{1}{2}\rho_o c_o U_o^2 \left(\frac{a}{r} \right )^2 \left(ka \right )^2 </math> এখানে '''''P'''''(''r'') হলো রেডিয়াল দূরত্ব ''r'' এ হারমোনিক চাপের পরিমাণ ''&rho;<sub>o</sub>'' হলো তরলের ঘনত্ব, ''c<sub>o</sub>'' তরলের শব্দের বেগ, ''U<sub>o</sub>'' হলো গোলক উৎসের সর্বাধিক বেগ, ''a'' হলো গোলকের ব্যাসার্ধ, এবং ''k'' = 2''&pi;f''/''c<sub>o</sub>'' হলো তরঙ্গ সংখ্যা। উপরের সমীকরণগুলোতে ''i'' = -1<sup>1/2</sup> যা হারমোনিক চাপ ভেরিয়েবলে প্রশস্ততা ও ধাপ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। এই ফলাফলটি রূপান্তরককে একটি বৃত্তাকার রেডিয়েটর হিসেবে প্রয়োগ করতে হলে প্রতিটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে একটি আলাদা গোলীয় উৎস হিসেবে ধরা যায়। এর ফলে গঠিত শব্দ ক্ষেত্র হলো প্রতিটি গোলীয় উৎসের ইন্টিগ্রাল যোগফল। সাধারণভাবে এ ধরনের সমীকরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে সমাধান করা যায় না। তবে যখন r >> a (যেখানে ''a'' হলো এখন রূপান্তরকের ব্যাসার্ধ) ধরা হয় তখন একটি সরল ফলাফল পাওয়া যায়। পুরো ডেরিভেশন এখানে না দিয়ে (বিশদ দেখতে কিনসলার <ref name="Kinsler"/> অথবা চিকি <ref name="Cheeke"/> দেখুন) শব্দ ক্ষেত্র এবং শব্দ তীব্রতার সমীকরণগুলো হলো: <br> :<math> \boldsymbol{P}(r, \theta) = i \left( \tfrac{1}{2}\rho_o c_o U_o \frac{a}{r}ka \right ) H(\theta)e^{-ikr}, </math> :<math> H(\theta) = \frac{2J_1(ka\sin\theta)}{ka \sin \theta}, </math> :<math> I(r,\theta) = \frac{|\boldsymbol{P}(r)|^2}{2\rho_oc_o}, </math> এখানে ''H''(''&theta;'') হলো নির্দেশিকা ফাংশন ''J<sub>1</sub>'' হলো [http://en.wikipedia.org/wiki/Bessel_function প্রথম প্রকারের বেসেল ফাংশন] এবং ''I''(''r'') হলো W/m<sup>2</sup> এককে শব্দ তীব্রতা। বাস্তবিক অর্থে নির্দেশিকা ফাংশনটি রশ্মির সেই সকল কোণে চাপের পরিমাণ দেখায় যা রূপান্তরকের অক্ষ বরাবর নয়। বেশেল ফাংশনের মূল যেসব কোণে চাপ শূন্য করে সেগুলো পার্শ্ব-লোব নামে পরিচিত। এই কোণগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকে পার্শ্ব-লোব আর অক্ষ বরাবর যে অংশ থাকে তা মূল লোব নামে পরিচিত। বাস্তবে এই লোবগুলো সৃষ্টি হয় রূপান্তরকের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত তরঙ্গগুলোর ধাপীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এটি কিছুটা সরল কম্পাঙ্ক তরঙ্গের চাপ গাঁটে চাপশূন্য অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। উদাহরণস্বরূপ ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর রশ্মি জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরক দিয়ে প্রেরণ করা হলে নির্দেশিকা ফাংশন এবং শব্দ তীব্রতা কীভাবে পার্শ্ব-লোব তৈরি করে তা দেখা যায়। নিচের চিত্র ২ এ নির্দেশিকা ফাংশন দেখানো হয়েছে এবং চিত্র ৩ এ রূপান্তরকের পৃষ্ঠে তীব্রতার তুলনায় শব্দ তীব্রতা চিত্রায়িত হয়েছে। <br> [[Image:Beam_Function_1MHz.png|thumb|center|520px| চিত্র ২: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের জন্য রশ্মি ফাংশন।]] [[Image:1MHz_Ultrasound_Intensity.png|thumb|center|520px| চিত্র ৩: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের শব্দ তীব্রতার স্বাভাবিকৃত ক্ষেত্র।]] চিকিৎসা-সংক্রান্ত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইড লোব একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াগনস্টিক ইমেজিংয়ে সাইড লোব থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো প্রধান বিম থেকে প্রতিফলনের মতো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এর ফলে ইমেজের গুণমান কমে যায়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে সাইড লোব এমন এলাকায় শক্তি ছড়িয়ে দেয় যেখানে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য থাকে না। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রে [http://en.wikipedia.org/wiki/Beamforming বিমফর্মিং] তত্ত্বের ভিত্তিতে রূপান্তরক ডিজাইন করা হয়। যা সাধারণ নলাকার রূপান্তরকের তুলনায় বিশ্লেষণকে অনেক জটিল করে তোলে। সাইড লোব কমানোর একটি কৌশল হলো একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রধান বিমকে কেন্দ্রীভূত করতে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা। এর ফলে সাইড লোবার আপেক্ষিক তীব্রতা হ্রাস পায়। আরেকটি কৌশল একোস্টিক শ্যাডোয়িং, রূপান্তরকের কিনারায় অপেক্ষাকৃত কম তীব্রতার তরঙ্গ প্রেরণ করে সাইড লোব কমায়। যেমনটি পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হবে সাইড লোব কমানো এবং ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য নতুন একটি কৌশল হলো আল্ট্রাসাউন্ড বিমে ইচ্ছাকৃতভাবে নন-লিনিয়ার শব্দ প্রভাবের বিবেচনা।<ref name="Cobbold"/><ref name="Duck"/> == জীব চিকিৎসাবিষয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গে অরৈখিক শব্দবিজ্ঞান == অনেক ক্ষেত্রে শব্দতত্ত্ব প্রয়োগে তরঙ্গের রৈখিক সম্প্রসারণের ধারণা যথেষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু জীবচিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে শব্দ তরঙ্গের সম্প্রসারণের সময় প্রায়শই একটি ক্রমাগত বিকৃতির সৃষ্টি হয় যা অরৈখিক এবং সীমিত মাত্রার প্রভাবে ঘটে। ডায়াগনস্টিক আল্ট্রাসাউন্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরৈখিক প্রভাব হলো তরঙ্গে হারমোনিক তৈরি হওয়া। এই অংশের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি হিসেবে [[অরৈখিকতার শব্দ প্যারামিটার|অরৈখিক শব্দ প্যারামিটার]] এবং [[হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি|হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি]] সম্পর্কে পুনরালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জীব চিকিৎসাবিষয়ক শব্দোত্তর তরঙ্গে প্রাসঙ্গিক অরৈখিকতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে এদের প্রভাব ধীরে ধীরে দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে জমা হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হওয়ার জন্য চারটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন: *প্রচুর পরিমাণে চাপ এবং বেগের তীব্রতা থাকা। জীবচিকিৎসাবিষয়ক প্রায় সব প্রয়োগেই এই শর্ত পূরণ হয়।<ref name="Duck_2010"/> *পর্যাপ্ত দূরত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারণ যেখানে তরঙ্গ প্রায় সমতল থাকে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নির্দেশিত বিমের ক্ষেত্রে, এই শর্ত সাধারণত রেইলি দূরত্ব ''x'' = 1/2 ''ka<sup>2</sup>'' এর মধ্যে মূল লোবের জন্য প্রযোজ্য।<ref name="Hamilton"/> হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি প্রকৃতপক্ষে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংখ্যার সমানুপাতিক, পরম দূরত্বের নয়। উদাহরণস্বরূপ ১০&nbsp;MHz ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ১০&nbsp;সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০০ তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। *[[অরৈখিক প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটারে]] B/A এর পর্যাপ্ত মান থাকা। একই শব্দ তীব্রতার জন্য যে পদার্থের B/A মান বেশি তা দ্রুত হারমোনিক তৈরি করে। জলে B/A মান বায়ুর চেয়ে দশগুণ বেশি এবং কিছু জীবতন্তু টিস্যুতে এই মান জলের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। *কম শব্দ শোষণ, অনেক জীবতন্তু টিস্যুতে যেখানে B/A এর মান বেশি সেখানে শব্দ শোষণও বেশি হয়ে থাকে। কারণ উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ দ্রুত শোষিত হয়। ফলে তৈরি হওয়া হারমোনিক মূল ফ্রিকোয়েন্সির তুলনায় সহজেই শোষিত হয়। এই প্রভাবের ফলে জীবতন্তু টিস্যুতে B/A এর প্রভাব কমে যায়। এই শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অনেক ক্ষেত্রে জীব চিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হয়। এই হারমোনিক তৈরি ব্যবহার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ গড়ে উঠছে: *শব্দোত্তর তরঙ্গে রেকর্ড করা সংকেতে হারমোনিক উপাদান ব্যবহার। কারণ শব্দ তীব্রতা এবং সম্প্রসারণের দূরত্ব মূল লোবেই সবচেয়ে বেশি তাই হারমোনিক মূলত মূল লোবেই বেশি তৈরি হয় এবং সাইড লোবগুলোতে কম হয়। ফলে দ্বিতীয় হারমোনিক দ্বারা তৈরি বিমের দিকনির্দেশনা ক্ষমতা মূল ফ্রিকোয়েন্সির বিমের চেয়ে বেশি হয়। এতে ইমেজের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।<ref name="Duck"/> *টিস্যুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে B/A প্যারামিটার ব্যবহার করে হারমোনিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ। [[অরৈখিকতার প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটার]] অনুযায়ী একই শব্দ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টিস্যুর B/A মান ভিন্ন হয়। এর ফলে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের হারমোনিক উপাদান টিস্যুর B/A মানের ভিত্তিতে চিত্র তৈরি করতে পারে। এই ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আছে, কারণ বর্তমান ইমেজিং প্রযুক্তি এখনো এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।<ref name="Duck_2010"/> == বহিঃসংযোগ == * [http://www.piezotechnologies.com/Resources/White-Papers.aspx মেডিকেল আল্ট্রাসনিক রূপান্তরক] == তথ্যসূত্র == {{reflist|refs= <ref name = "Pierce" >Pierce, A. D. 1989. Radiation from Sources Near and on Solid Surfaces. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name = "Pierce_sd" >Pierce, A. D. 1989. Scattering and Diffraction. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Kinsler">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000.Radiation and Reception of Acoustic Waves. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Kinsler_rt">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000. Reflection and Transmission. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Cheeke">Cheeke, J. D. N. 2002. Finite Beams, Radiation, Diffraction, and Scattering. In Fundamentals and Applications of Ultrasonic Waves. Boca Raton, CRC Press.</ref> <ref name="Cobbold">Cobbold, R. S. C. 2007. Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_ia">Cobbold, R. S. C. 2007. Ultrasound Imaging Arrays. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_su">Cobbold, R. S. C. 2007. Scattering of Ultrasound. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name ="Duck">Duck, F. A. 2002. "Nonlinear Acoustics in Diagnostic Ultrasound." Ultrasound in Medicine & Biology 28(1).</ref> <ref name ="Wiki_sono">Wikipedia, 2010. "Medical Ultrasonography”</ref> <ref name="Kremkau">Kremkau, F. W. 2002. Diagnostic Ultrasound : Principles and Instruments. Philadelphia, W.B. Saunders</ref> <ref name="Hamilton">Hamilton, M. F., Blackstock, D. T. 2008. Sound Beams. In Nonlinear Acoustics. Melville, NY, Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Duck_2010">Duck, F. 2010. Tissue non-linearity. Proceedings of the Institution of Mechanical Engineers, Part H: Journal of Engineering in Medicine 224(2).</ref> }} b8vwx6ks55f5xtkjfbz3r3pczfx5yew 84890 84889 2025-06-19T06:12:14Z Asikur.rahman25 11164 /* শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য */ 84890 wikitext text/x-wiki {{Engineering Acoustics}} == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ == প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান উইকিবইয়ের এই অধ্যায়ে জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রয়োগগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং শব্দোত্তর রশ্মির জন্য কিছু প্রাথমিক শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ ক্ষেত্রটি নানা মৌলিক শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে বহু বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি শব্দোত্তর তরঙ্গের সব দিক আলোচনা করে না। বরং এটি পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে আগ্রহীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। যাঁরা আরও গভীরভাবে জানতে চান তাঁদের জন্য কোবোল্ড এর ২০০৭ সালের গ্রন্থটি <ref name="Cobbold"/> সুপারিশ করা হয়েছে। == রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের সবচেয়ে পরিচিত প্রয়োগ হলো চিকিৎসা চিত্রায়ন যাকে শব্দোত্তর চিত্রায়ন বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়। শব্দোত্তর চিত্রায়নের নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলোর তালিকার জন্য সংশ্লিষ্ট [[w:মেডিকেল আল্ট্রাসনোগ্রাফি|উইকিপিডিয়া নিবন্ধ]]টি দেখুন। নিচের অংশে শব্দোত্তর চিত্র তৈরির জন্য যে শব্দতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা গুণগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি শব্দোত্তর তরঙ্গ রূপান্তরক স্বল্পস্থায়ী উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ নির্গত করে। প্রয়োগ অনুযায়ী এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১&nbsp;মেগাহার্টজ থেকে ১৫&nbsp;মেগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে।<ref name="Kremkau"/> নির্গত শব্দ তরঙ্গ যখন শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শব্দ প্রতিবন্ধকতার (''&rho;c'') পার্থক্যের ক্ষেত্রে আংশিক প্রতিফলন বা বিকিরণ ঘটে। চিকিৎসা চিত্রায়নের প্রসঙ্গে, এটি ঘটে শরীরের যেখানে ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে যেমন হাড় ও পেশির সংযোগস্থলে, রক্তরসের মধ্যে রক্তকণিকা, অঙ্গের ছোট গঠন ইত্যাদিতে।<ref name="Wiki_sono"/> প্রতিফলিত তরঙ্গের আচরণ নির্ভর করে প্রতিফলক গঠনের আকার এবং প্রেরিত শব্দ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়, তাহলে প্রতিফলন ঘটে শব্দ পরিবাহিতা ও প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী তা স্বাভাবিক হোক বা তির্যক।<ref name="Kinsler_rt"/> আর যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক গঠনের তুলনায় বড় হয়, তখন শব্দ বিকিরণের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।<ref name="Pierce_sd"/> এই দ্বিতীয় অবস্থা, যা ছোট প্রতিফলন উৎসের ক্ষেত্রে ঘটে, সেটিই নির্ধারণ করে শব্দোত্তর চিত্রায়নে কোন কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হবে। কোবোল্ড এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী,<ref name="Cobbold_su"/> একটি সমতল তরঙ্গ যখন একটি গোলীয় প্রতিফলক উৎসে পড়ে যার কার্যকর ব্যাসার্ধ ''a'', তখন বিকিরিত তরঙ্গের শব্দ তীব্রতা, ''I<sub>s</sub>'', পরিবর্তিত হয় এই সূত্র অনুযায়ী: <br> :<math> I_s \propto \frac{a^6}{\lambda ^4} </math> এই সূত্রটি দেখায়, যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক উৎসের তুলনায় বড় হয়, তখন প্রতিফলিত শক্তি খুব কম হয়ে যায়। ফলে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্য প্রতিফলিত তরঙ্গ ফেরত আসে না। শব্দোত্তর চিত্রে একটি গঠন স্পষ্টভাবে ধরতে হলে, নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সেই গঠনের চেয়ে ছোট হতে হবে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ পরিবাহনের পথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তাই কম কম্পাঙ্ক বেশি গভীরে ছবি তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেশি কম্পাঙ্ক (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নির্গত রশ্মিকে সরু ফোকাসে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।<ref name="Kremkau"/> নিচের টেবিলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কে পানিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে (''&lambda;'' = ''c''/''f'')। <br> {| class="wikitable" style="text-align: center;" align="center" |+ টেবিল ১: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য। |- | কম্পাঙ্ক (মেগাহার্টজ) || ১ || ২ || ৫ || ৮ || ১০ || ১২ || ১৫ |- | তরঙ্গদৈর্ঘ্য (মিলিমিটার) || ১.৫০ || ০.৭৫ || ০.৩০ || ০.১৯ || ০.১৫ || ০.১৩ || ০.১০ |} তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পর শব্দোত্তর রূপান্তরক একটি গ্রাহকের মতো কাজ করতে পারে—যেমন একটি মাইক্রোফোন বা হাইড্রোফোন। প্রতিফলিত তরঙ্গ বা ঘনত্ব পরিবর্তনের কারণে ফিরে আসা তরঙ্গ রূপান্তরকে এসে রেকর্ড হয়। প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের মধ্যকার সময় ব্যবধান থেকে প্রতিফলন উৎসের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। আর প্রাপ্ত সংকেতের তীব্রতা থেকে প্রতিফলনের শাব্দিক প্রতিবন্ধকতা এবং আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।<ref name="Wiki_sono"/> যেখানে ডপলার শব্দোত্তর চিত্রায়ন ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন থেকে প্রতিফলক উৎসের গতি নির্ধারণ করা যায়। আধুনিক শব্দোত্তর চিত্রায়নে ছোট ছোট অনেক রূপান্তরকের সমষ্টি ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রতিটি আলাদাভাবে ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় [[w:বিমফর্মিং|বিমফর্মিং]] নামের একটি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি রূপান্তরকের তরঙ্গের ধাপের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত রশ্মির দিক ও ফোকাস গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।<ref name="Cobbold_ia"/> একটি দ্বিমাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র তৈরি করতে হলে, রশ্মির কেন্দ্রে অবস্থান একটি অঞ্চলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরানো হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো রেকর্ড করে সেই নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই সাধারণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন যন্ত্রে ভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নিচে একটি দ্বি-মাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র দেখানো হয়েছে। যা ফোকাস অঞ্চল সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। <br> [[Image:CRL Crown rump length 12 weeks ecografia Dr. Wolfgang Moroder.jpg|thumb|center|420px|চিত্র ১: দ্বি-মাত্রিক গর্ভকালীন শব্দোত্তর তরঙ্গ চিত্র।]] == রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ == উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্রয়োগে সাধারণত উচ্চ তীব্রতার শব্দ তরঙ্গের অপচয়ের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেটাই চিকিৎসার মূল কার্যকারিতা তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন [[w:লিথোট্রিপসি|লিথোট্রিপসি]] তে চিকিৎসামূলক প্রভাব শব্দ তরঙ্গের অরৈখিকতার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে [[তরঙ্গ বিকৃতি|তরঙ্গ বিকৃতি]] ও [[ঘাত তরঙ্গের গঠন|ঘাত তরঙ্গ]] তৈরি হয়। এই প্রভাব সম্পর্কে [[#পরবর্তী এক খণ্ডে|পরবর্তী এক খণ্ডে]] আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে শব্দোত্তর তরঙ্গের কয়েকটি চিকিৎসামূলক প্রয়োগের আংশিক তালিকা দেওয়া হলো: * [[w:ডেন্টাল হাইজেনিস্ট|ডেন্টাল হাইজেনিস্ট]] পেশায় দাঁত পরিষ্কারের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। * কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে সিস্ট ও টিউমার (সৌম্য বা মারাত্মক) চিকিৎসা করা হয়। একে ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড সার্জারি বা উচ্চ তীব্রতা কেন্দ্রিক শব্দোত্তর বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত চিকিৎসা-নির্ণয়ের শব্দোত্তর তরঙ্গের চেয়ে কম কম্পাঙ্ক (২৫০&nbsp;কিলোহার্টজ থেকে ২০০০&nbsp;কিলোহার্টজ পর্যন্ত) ব্যবহার করা হলেও, এর শক্তি অনেক বেশি হয়। * লিথোট্রিপসি ব্যবহার করে কিডনির পাথর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[w:ফ্যাকোইমালসিফিকেশন|ফ্যাকোইমালসিফিকেশন]] পদ্ধতিতে ছানির চিকিৎসায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[W:নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গ|নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গের]] আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন হাড়ের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করা এবং ওষুধ পরিবহনের জন্য [[w:রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক|রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক]] অতিক্রমের সম্ভাবনা। == শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য == প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় শব্দোত্তর রশ্মি একটি অনন্ত বাফলে একটি সমতল বৃত্তাকার পিস্টন দোলনের ফলে উৎপন্ন হয়। বাস্তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় শব্দ রশ্মির অনেক বেশি বিস্তার পার্শ্ব-লোবের তীব্রতা এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দৈর্ঘ্য নির্ধারণের অক্ষমতা দেখা দেয়। বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিমফর্মিং নামে পরিচিত একটি সাধারণ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা হয়। যদিও সমতল রূপান্তরকগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে এগুলোর সহজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গঠিত যে কোনো রশ্মির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উন্নত প্রযুক্তির নকশার চ্যালেঞ্জ বোঝানো যায়। সরল বৃত্তাকার রূপান্তরকের জন্য ব্যবহৃত বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি পিয়ার্স,<ref name="Pierce"/> কিনসলার <ref name="Kinsler"/> এবং চিকি<ref name="Cheeke"/> এর মতো বহু শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে দেখা যায়। এখানে প্রথমে মুক্ত বায়ুতে কম্পমান একটি ছোট গোলকীয় উৎসের হারমোনিক গতি থেকে নির্গত শব্দ বিবেচনা করে শব্দ ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। সেই উৎস থেকে প্রাপ্ত শব্দ চাপ ক্ষেত্র নিম্নরূপ: <br> :<math> \boldsymbol{P} = i\left(\frac{\rho_o c U_o k a^2}{r} \right )e^{-ikr} </math> :<math> I(r) = \frac{1}{2}\rho_o c_o U_o^2 \left(\frac{a}{r} \right )^2 \left(ka \right )^2 </math> এখানে '''''P'''''(''r'') হলো কেন্দ্র থেকে দূরত্ব ''r'' এ হারমোনিক চাপের পরিমাণ ''&rho;<sub>o</sub>'' হলো তরলের ঘনত্ব, ''c<sub>o</sub>'' তরলের শব্দের বেগ, ''U<sub>o</sub>'' হলো গোলক উৎসের সর্বাধিক বেগ, ''a'' হলো গোলকের ব্যাসার্ধ, এবং ''k'' = 2''&pi;f''/''c<sub>o</sub>'' হলো তরঙ্গ সংখ্যা। উপরের সমীকরণগুলোতে ''i'' = -1<sup>1/2</sup> যা হারমোনিক চাপ চালকের প্রশস্ততা ও ধাপ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। এই ফলাফলটি রূপান্তরককে একটি বৃত্তাকার তাপ বিকিরক হিসেবে প্রয়োগ করতে হলে প্রতিটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে একটি আলাদা গোলীয় উৎস হিসেবে ধরতে হয়। এর ফলে গঠিত শব্দ ক্ষেত্র হলো প্রতিটি গোলীয় উৎসের ইন্টিগ্রাল যোগফল। সাধারণভাবে এ ধরনের সমীকরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে সমাধান করা যায় না। তবে যখন r >> a (যেখানে ''a'' হলো এখন রূপান্তরকের ব্যাসার্ধ) ধরা হয় তখন একটি সরল ফলাফল পাওয়া যায়। পুরো ডেরিভেশন এখানে না দিয়ে (বিশদ দেখতে কিনসলার <ref name="Kinsler"/> অথবা চিকি <ref name="Cheeke"/> দেখুন) শব্দ ক্ষেত্র এবং শব্দ তীব্রতার সমীকরণগুলো হলো: <br> :<math> \boldsymbol{P}(r, \theta) = i \left( \tfrac{1}{2}\rho_o c_o U_o \frac{a}{r}ka \right ) H(\theta)e^{-ikr}, </math> :<math> H(\theta) = \frac{2J_1(ka\sin\theta)}{ka \sin \theta}, </math> :<math> I(r,\theta) = \frac{|\boldsymbol{P}(r)|^2}{2\rho_oc_o}, </math> এখানে ''H''(''&theta;'') হলো নির্দেশিকা ফাংশন ''J<sub>1</sub>'' হলো [http://en.wikipedia.org/wiki/Bessel_function প্রথম প্রকারের বেসেল ফাংশন] এবং ''I''(''r'') হলো W/m<sup>2</sup> এককে শব্দ তীব্রতা। বাস্তবিক অর্থে নির্দেশিকা ফাংশনটি রশ্মির সেই সকল কোণে চাপের পরিমাণ দেখায় যা রূপান্তরকের অক্ষ বরাবর নয়। বেশেল ফাংশনের মূল যেসব কোণে চাপ শূন্য করে সেগুলো পার্শ্ব-লোব নামে পরিচিত। এই কোণগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকে পার্শ্ব-লোব আর অক্ষ বরাবর যে অংশ থাকে তা মূল লোব নামে পরিচিত। বাস্তবে এই লোবগুলো সৃষ্টি হয় রূপান্তরকের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত তরঙ্গগুলোর ধাপীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এটি কিছুটা সরল কম্পাঙ্ক তরঙ্গের চাপ শূন্যচাপ অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। উদাহরণস্বরূপ ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর রশ্মি জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরক দিয়ে প্রেরণ করা হলে নির্দেশিকা ফাংশন এবং শব্দ তীব্রতা কীভাবে পার্শ্ব-লোব তৈরি করে তা দেখা যায়। নিচের চিত্র ২ এ নির্দেশিকা ফাংশন দেখানো হয়েছে এবং চিত্র ৩ এ রূপান্তরকের পৃষ্ঠে তীব্রতার তুলনায় শব্দ তীব্রতা চিত্রায়িত হয়েছে। <br> [[Image:Beam_Function_1MHz.png|thumb|center|520px| চিত্র ২: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের জন্য রশ্মি ফাংশন।]] [[Image:1MHz_Ultrasound_Intensity.png|thumb|center|520px| চিত্র ৩: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের শব্দ তীব্রতার স্বাভাবিকৃত ক্ষেত্র।]] চিকিৎসা-সংক্রান্ত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইড লোব একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াগনস্টিক ইমেজিংয়ে সাইড লোব থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো প্রধান বিম থেকে প্রতিফলনের মতো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এর ফলে ইমেজের গুণমান কমে যায়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে সাইড লোব এমন এলাকায় শক্তি ছড়িয়ে দেয় যেখানে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য থাকে না। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রে [http://en.wikipedia.org/wiki/Beamforming বিমফর্মিং] তত্ত্বের ভিত্তিতে রূপান্তরক ডিজাইন করা হয়। যা সাধারণ নলাকার রূপান্তরকের তুলনায় বিশ্লেষণকে অনেক জটিল করে তোলে। সাইড লোব কমানোর একটি কৌশল হলো একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রধান বিমকে কেন্দ্রীভূত করতে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা। এর ফলে সাইড লোবার আপেক্ষিক তীব্রতা হ্রাস পায়। আরেকটি কৌশল শব্দবিজ্ঞানের প্রতিধ্বনি, রূপান্তরকের কিনারায় অপেক্ষাকৃত কম তীব্রতার তরঙ্গ প্রেরণ করে সাইড লোব কমায়। যেমনটি পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হবে সাইড লোব কমানো এবং ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য নতুন একটি কৌশল হলো আল্ট্রাসাউন্ড বিমে ইচ্ছাকৃতভাবে নন-লিনিয়ার শব্দ প্রভাবের বিবেচনা।<ref name="Cobbold"/><ref name="Duck"/> == জীব চিকিৎসাবিষয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গে অরৈখিক শব্দবিজ্ঞান == অনেক ক্ষেত্রে শব্দতত্ত্ব প্রয়োগে তরঙ্গের রৈখিক সম্প্রসারণের ধারণা যথেষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু জীবচিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে শব্দ তরঙ্গের সম্প্রসারণের সময় প্রায়শই একটি ক্রমাগত বিকৃতির সৃষ্টি হয় যা অরৈখিক এবং সীমিত মাত্রার প্রভাবে ঘটে। ডায়াগনস্টিক আল্ট্রাসাউন্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরৈখিক প্রভাব হলো তরঙ্গে হারমোনিক তৈরি হওয়া। এই অংশের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি হিসেবে [[অরৈখিকতার শব্দ প্যারামিটার|অরৈখিক শব্দ প্যারামিটার]] এবং [[হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি|হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি]] সম্পর্কে পুনরালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জীব চিকিৎসাবিষয়ক শব্দোত্তর তরঙ্গে প্রাসঙ্গিক অরৈখিকতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে এদের প্রভাব ধীরে ধীরে দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে জমা হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হওয়ার জন্য চারটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন: *প্রচুর পরিমাণে চাপ এবং বেগের তীব্রতা থাকা। জীবচিকিৎসাবিষয়ক প্রায় সব প্রয়োগেই এই শর্ত পূরণ হয়।<ref name="Duck_2010"/> *পর্যাপ্ত দূরত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারণ যেখানে তরঙ্গ প্রায় সমতল থাকে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নির্দেশিত বিমের ক্ষেত্রে, এই শর্ত সাধারণত রেইলি দূরত্ব ''x'' = 1/2 ''ka<sup>2</sup>'' এর মধ্যে মূল লোবের জন্য প্রযোজ্য।<ref name="Hamilton"/> হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি প্রকৃতপক্ষে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংখ্যার সমানুপাতিক, পরম দূরত্বের নয়। উদাহরণস্বরূপ ১০&nbsp;MHz ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ১০&nbsp;সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০০ তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। *[[অরৈখিক প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটারে]] B/A এর পর্যাপ্ত মান থাকা। একই শব্দ তীব্রতার জন্য যে পদার্থের B/A মান বেশি তা দ্রুত হারমোনিক তৈরি করে। জলে B/A মান বায়ুর চেয়ে দশগুণ বেশি এবং কিছু জীবতন্তু টিস্যুতে এই মান জলের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। *কম শব্দ শোষণ, অনেক জীবতন্তু টিস্যুতে যেখানে B/A এর মান বেশি সেখানে শব্দ শোষণও বেশি হয়ে থাকে। কারণ উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ দ্রুত শোষিত হয়। ফলে তৈরি হওয়া হারমোনিক মূল ফ্রিকোয়েন্সির তুলনায় সহজেই শোষিত হয়। এই প্রভাবের ফলে জীবতন্তু টিস্যুতে B/A এর প্রভাব কমে যায়। এই শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অনেক ক্ষেত্রে জীব চিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হয়। এই হারমোনিক তৈরি ব্যবহার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ গড়ে উঠছে: *শব্দোত্তর তরঙ্গে রেকর্ড করা সংকেতে হারমোনিক উপাদান ব্যবহার। কারণ শব্দ তীব্রতা এবং সম্প্রসারণের দূরত্ব মূল লোবেই সবচেয়ে বেশি তাই হারমোনিক মূলত মূল লোবেই বেশি তৈরি হয় এবং সাইড লোবগুলোতে কম হয়। ফলে দ্বিতীয় হারমোনিক দ্বারা তৈরি বিমের দিকনির্দেশনা ক্ষমতা মূল ফ্রিকোয়েন্সির বিমের চেয়ে বেশি হয়। এতে ইমেজের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।<ref name="Duck"/> *টিস্যুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে B/A প্যারামিটার ব্যবহার করে হারমোনিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ। [[অরৈখিকতার প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটার]] অনুযায়ী একই শব্দ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টিস্যুর B/A মান ভিন্ন হয়। এর ফলে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের হারমোনিক উপাদান টিস্যুর B/A মানের ভিত্তিতে চিত্র তৈরি করতে পারে। এই ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আছে, কারণ বর্তমান ইমেজিং প্রযুক্তি এখনো এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।<ref name="Duck_2010"/> == বহিঃসংযোগ == * [http://www.piezotechnologies.com/Resources/White-Papers.aspx মেডিকেল আল্ট্রাসনিক রূপান্তরক] == তথ্যসূত্র == {{reflist|refs= <ref name = "Pierce" >Pierce, A. D. 1989. Radiation from Sources Near and on Solid Surfaces. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name = "Pierce_sd" >Pierce, A. D. 1989. Scattering and Diffraction. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Kinsler">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000.Radiation and Reception of Acoustic Waves. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Kinsler_rt">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000. Reflection and Transmission. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Cheeke">Cheeke, J. D. N. 2002. Finite Beams, Radiation, Diffraction, and Scattering. In Fundamentals and Applications of Ultrasonic Waves. Boca Raton, CRC Press.</ref> <ref name="Cobbold">Cobbold, R. S. C. 2007. Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_ia">Cobbold, R. S. C. 2007. Ultrasound Imaging Arrays. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_su">Cobbold, R. S. C. 2007. Scattering of Ultrasound. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name ="Duck">Duck, F. A. 2002. "Nonlinear Acoustics in Diagnostic Ultrasound." Ultrasound in Medicine & Biology 28(1).</ref> <ref name ="Wiki_sono">Wikipedia, 2010. "Medical Ultrasonography”</ref> <ref name="Kremkau">Kremkau, F. W. 2002. Diagnostic Ultrasound : Principles and Instruments. Philadelphia, W.B. Saunders</ref> <ref name="Hamilton">Hamilton, M. F., Blackstock, D. T. 2008. Sound Beams. In Nonlinear Acoustics. Melville, NY, Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Duck_2010">Duck, F. 2010. Tissue non-linearity. Proceedings of the Institution of Mechanical Engineers, Part H: Journal of Engineering in Medicine 224(2).</ref> }} gd8mkb141ndcfyvd5ezo1f5bdsxbdbk 84892 84890 2025-06-19T06:17:14Z Asikur.rahman25 11164 /* শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য */ 84892 wikitext text/x-wiki {{Engineering Acoustics}} == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ == প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান উইকিবইয়ের এই অধ্যায়ে জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রয়োগগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং শব্দোত্তর রশ্মির জন্য কিছু প্রাথমিক শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ ক্ষেত্রটি নানা মৌলিক শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে বহু বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি শব্দোত্তর তরঙ্গের সব দিক আলোচনা করে না। বরং এটি পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে আগ্রহীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। যাঁরা আরও গভীরভাবে জানতে চান তাঁদের জন্য কোবোল্ড এর ২০০৭ সালের গ্রন্থটি <ref name="Cobbold"/> সুপারিশ করা হয়েছে। == রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের সবচেয়ে পরিচিত প্রয়োগ হলো চিকিৎসা চিত্রায়ন যাকে শব্দোত্তর চিত্রায়ন বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়। শব্দোত্তর চিত্রায়নের নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলোর তালিকার জন্য সংশ্লিষ্ট [[w:মেডিকেল আল্ট্রাসনোগ্রাফি|উইকিপিডিয়া নিবন্ধ]]টি দেখুন। নিচের অংশে শব্দোত্তর চিত্র তৈরির জন্য যে শব্দতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা গুণগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি শব্দোত্তর তরঙ্গ রূপান্তরক স্বল্পস্থায়ী উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ নির্গত করে। প্রয়োগ অনুযায়ী এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১&nbsp;মেগাহার্টজ থেকে ১৫&nbsp;মেগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে।<ref name="Kremkau"/> নির্গত শব্দ তরঙ্গ যখন শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শব্দ প্রতিবন্ধকতার (''&rho;c'') পার্থক্যের ক্ষেত্রে আংশিক প্রতিফলন বা বিকিরণ ঘটে। চিকিৎসা চিত্রায়নের প্রসঙ্গে, এটি ঘটে শরীরের যেখানে ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে যেমন হাড় ও পেশির সংযোগস্থলে, রক্তরসের মধ্যে রক্তকণিকা, অঙ্গের ছোট গঠন ইত্যাদিতে।<ref name="Wiki_sono"/> প্রতিফলিত তরঙ্গের আচরণ নির্ভর করে প্রতিফলক গঠনের আকার এবং প্রেরিত শব্দ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়, তাহলে প্রতিফলন ঘটে শব্দ পরিবাহিতা ও প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী তা স্বাভাবিক হোক বা তির্যক।<ref name="Kinsler_rt"/> আর যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক গঠনের তুলনায় বড় হয়, তখন শব্দ বিকিরণের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।<ref name="Pierce_sd"/> এই দ্বিতীয় অবস্থা, যা ছোট প্রতিফলন উৎসের ক্ষেত্রে ঘটে, সেটিই নির্ধারণ করে শব্দোত্তর চিত্রায়নে কোন কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হবে। কোবোল্ড এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী,<ref name="Cobbold_su"/> একটি সমতল তরঙ্গ যখন একটি গোলীয় প্রতিফলক উৎসে পড়ে যার কার্যকর ব্যাসার্ধ ''a'', তখন বিকিরিত তরঙ্গের শব্দ তীব্রতা, ''I<sub>s</sub>'', পরিবর্তিত হয় এই সূত্র অনুযায়ী: <br> :<math> I_s \propto \frac{a^6}{\lambda ^4} </math> এই সূত্রটি দেখায়, যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক উৎসের তুলনায় বড় হয়, তখন প্রতিফলিত শক্তি খুব কম হয়ে যায়। ফলে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্য প্রতিফলিত তরঙ্গ ফেরত আসে না। শব্দোত্তর চিত্রে একটি গঠন স্পষ্টভাবে ধরতে হলে, নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সেই গঠনের চেয়ে ছোট হতে হবে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ পরিবাহনের পথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তাই কম কম্পাঙ্ক বেশি গভীরে ছবি তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেশি কম্পাঙ্ক (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নির্গত রশ্মিকে সরু ফোকাসে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।<ref name="Kremkau"/> নিচের টেবিলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কে পানিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে (''&lambda;'' = ''c''/''f'')। <br> {| class="wikitable" style="text-align: center;" align="center" |+ টেবিল ১: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য। |- | কম্পাঙ্ক (মেগাহার্টজ) || ১ || ২ || ৫ || ৮ || ১০ || ১২ || ১৫ |- | তরঙ্গদৈর্ঘ্য (মিলিমিটার) || ১.৫০ || ০.৭৫ || ০.৩০ || ০.১৯ || ০.১৫ || ০.১৩ || ০.১০ |} তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পর শব্দোত্তর রূপান্তরক একটি গ্রাহকের মতো কাজ করতে পারে—যেমন একটি মাইক্রোফোন বা হাইড্রোফোন। প্রতিফলিত তরঙ্গ বা ঘনত্ব পরিবর্তনের কারণে ফিরে আসা তরঙ্গ রূপান্তরকে এসে রেকর্ড হয়। প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের মধ্যকার সময় ব্যবধান থেকে প্রতিফলন উৎসের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। আর প্রাপ্ত সংকেতের তীব্রতা থেকে প্রতিফলনের শাব্দিক প্রতিবন্ধকতা এবং আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।<ref name="Wiki_sono"/> যেখানে ডপলার শব্দোত্তর চিত্রায়ন ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন থেকে প্রতিফলক উৎসের গতি নির্ধারণ করা যায়। আধুনিক শব্দোত্তর চিত্রায়নে ছোট ছোট অনেক রূপান্তরকের সমষ্টি ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রতিটি আলাদাভাবে ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় [[w:বিমফর্মিং|বিমফর্মিং]] নামের একটি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি রূপান্তরকের তরঙ্গের ধাপের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত রশ্মির দিক ও ফোকাস গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।<ref name="Cobbold_ia"/> একটি দ্বিমাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র তৈরি করতে হলে, রশ্মির কেন্দ্রে অবস্থান একটি অঞ্চলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরানো হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো রেকর্ড করে সেই নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই সাধারণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন যন্ত্রে ভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নিচে একটি দ্বি-মাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র দেখানো হয়েছে। যা ফোকাস অঞ্চল সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। <br> [[Image:CRL Crown rump length 12 weeks ecografia Dr. Wolfgang Moroder.jpg|thumb|center|420px|চিত্র ১: দ্বি-মাত্রিক গর্ভকালীন শব্দোত্তর তরঙ্গ চিত্র।]] == রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ == উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্রয়োগে সাধারণত উচ্চ তীব্রতার শব্দ তরঙ্গের অপচয়ের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেটাই চিকিৎসার মূল কার্যকারিতা তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন [[w:লিথোট্রিপসি|লিথোট্রিপসি]] তে চিকিৎসামূলক প্রভাব শব্দ তরঙ্গের অরৈখিকতার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে [[তরঙ্গ বিকৃতি|তরঙ্গ বিকৃতি]] ও [[ঘাত তরঙ্গের গঠন|ঘাত তরঙ্গ]] তৈরি হয়। এই প্রভাব সম্পর্কে [[#পরবর্তী এক খণ্ডে|পরবর্তী এক খণ্ডে]] আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে শব্দোত্তর তরঙ্গের কয়েকটি চিকিৎসামূলক প্রয়োগের আংশিক তালিকা দেওয়া হলো: * [[w:ডেন্টাল হাইজেনিস্ট|ডেন্টাল হাইজেনিস্ট]] পেশায় দাঁত পরিষ্কারের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। * কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে সিস্ট ও টিউমার (সৌম্য বা মারাত্মক) চিকিৎসা করা হয়। একে ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড সার্জারি বা উচ্চ তীব্রতা কেন্দ্রিক শব্দোত্তর বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত চিকিৎসা-নির্ণয়ের শব্দোত্তর তরঙ্গের চেয়ে কম কম্পাঙ্ক (২৫০&nbsp;কিলোহার্টজ থেকে ২০০০&nbsp;কিলোহার্টজ পর্যন্ত) ব্যবহার করা হলেও, এর শক্তি অনেক বেশি হয়। * লিথোট্রিপসি ব্যবহার করে কিডনির পাথর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[w:ফ্যাকোইমালসিফিকেশন|ফ্যাকোইমালসিফিকেশন]] পদ্ধতিতে ছানির চিকিৎসায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[W:নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গ|নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গের]] আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন হাড়ের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করা এবং ওষুধ পরিবহনের জন্য [[w:রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক|রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক]] অতিক্রমের সম্ভাবনা। == শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য == প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় শব্দোত্তর রশ্মি একটি অনন্ত বাফলে একটি সমতল বৃত্তাকার পিস্টন দোলনের ফলে উৎপন্ন হয়। বাস্তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় শব্দ রশ্মির অনেক বেশি বিস্তার পার্শ্ব-লোবের তীব্রতা এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দৈর্ঘ্য নির্ধারণের অক্ষমতা দেখা দেয়। বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিমফর্মিং নামে পরিচিত একটি সাধারণ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা হয়। যদিও সমতল রূপান্তরকগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে এগুলোর সহজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গঠিত যে কোনো রশ্মির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উন্নত প্রযুক্তির নকশার চ্যালেঞ্জ বোঝানো যায়। সরল বৃত্তাকার রূপান্তরকের জন্য ব্যবহৃত বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি পিয়ার্স,<ref name="Pierce"/> কিনসলার <ref name="Kinsler"/> এবং চিকি<ref name="Cheeke"/> এর মতো বহু শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে দেখা যায়। এখানে প্রথমে মুক্ত বায়ুতে কম্পমান একটি ছোট গোলকীয় উৎসের হারমোনিক গতি থেকে নির্গত শব্দ বিবেচনা করে শব্দ ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। সেই উৎস থেকে প্রাপ্ত শব্দ চাপ ক্ষেত্র নিম্নরূপ: <br> :<math> \boldsymbol{P} = i\left(\frac{\rho_o c U_o k a^2}{r} \right )e^{-ikr} </math> :<math> I(r) = \frac{1}{2}\rho_o c_o U_o^2 \left(\frac{a}{r} \right )^2 \left(ka \right )^2 </math> এখানে '''''P'''''(''r'') হলো কেন্দ্র থেকে দূরত্ব ''r'' এ হারমোনিক চাপের পরিমাণ ''&rho;<sub>o</sub>'' হলো তরলের ঘনত্ব, ''c<sub>o</sub>'' তরলের শব্দের বেগ, ''U<sub>o</sub>'' হলো গোলক উৎসের সর্বাধিক বেগ, ''a'' হলো গোলকের ব্যাসার্ধ, এবং ''k'' = 2''&pi;f''/''c<sub>o</sub>'' হলো তরঙ্গ সংখ্যা। উপরের সমীকরণগুলোতে ''i'' = -1<sup>1/2</sup> যা হারমোনিক চাপ চালকের প্রশস্ততা ও ধাপ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। এই ফলাফলটি রূপান্তরককে একটি বৃত্তাকার তাপ বিকিরক হিসেবে প্রয়োগ করতে হলে প্রতিটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে একটি আলাদা গোলীয় উৎস হিসেবে ধরতে হবে। এর ফলে গঠিত শব্দ ক্ষেত্র হলো প্রতিটি গোলীয় উৎসের ইন্টিগ্রাল যোগফল। সাধারণভাবে এ ধরনের সমীকরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে সমাধান করা যায় না। তবে যখন r >> a (যেখানে ''a'' হলো এখন রূপান্তরকের ব্যাসার্ধ) ধরা হয় তখন একটি সরল ফলাফল পাওয়া যায়। পুরো ডেরিভেশন এখানে না দিয়ে (বিশদ দেখতে কিনসলার <ref name="Kinsler"/> অথবা চিকি <ref name="Cheeke"/> দেখুন) শব্দ ক্ষেত্র এবং শব্দ তীব্রতার সমীকরণগুলো হলো: <br> :<math> \boldsymbol{P}(r, \theta) = i \left( \tfrac{1}{2}\rho_o c_o U_o \frac{a}{r}ka \right ) H(\theta)e^{-ikr}, </math> :<math> H(\theta) = \frac{2J_1(ka\sin\theta)}{ka \sin \theta}, </math> :<math> I(r,\theta) = \frac{|\boldsymbol{P}(r)|^2}{2\rho_oc_o}, </math> এখানে ''H''(''&theta;'') হলো নির্দেশিকা ফাংশন ''J<sub>1</sub>'' হলো [http://en.wikipedia.org/wiki/Bessel_function প্রথম প্রকারের বেসেল ফাংশন] এবং ''I''(''r'') হলো W/m<sup>2</sup> এককে শব্দ তীব্রতা। বাস্তবিক অর্থে নির্দেশিকা ফাংশনটি রশ্মির সেই সকল কোণে চাপের পরিমাণ দেখায় যা রূপান্তরকের অক্ষ বরাবর নয়। বেশেল ফাংশনের মূল যেসব কোণে চাপ শূন্য করে সেগুলো পার্শ্ব-লোব নামে পরিচিত। এই কোণগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকে পার্শ্ব-লোব আর অক্ষ বরাবর যে অংশ থাকে তা মূল লোব নামে পরিচিত। বাস্তবে এই লোবগুলো সৃষ্টি হয় রূপান্তরকের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত তরঙ্গগুলোর ধাপীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এটি কিছুটা সরল কম্পাঙ্ক তরঙ্গের চাপ শূন্যচাপ অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। উদাহরণস্বরূপ ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর রশ্মি জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরক দিয়ে প্রেরণ করা হলে নির্দেশিকা ফাংশন এবং শব্দ তীব্রতা কীভাবে পার্শ্ব-লোব তৈরি করে তা দেখা যায়। নিচের চিত্র ২ এ নির্দেশিকা ফাংশন দেখানো হয়েছে এবং চিত্র ৩ এ রূপান্তরকের পৃষ্ঠে তীব্রতার তুলনায় শব্দ তীব্রতা চিত্রায়িত হয়েছে। <br> [[Image:Beam_Function_1MHz.png|thumb|center|520px| চিত্র ২: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের জন্য রশ্মি ফাংশন।]] [[Image:1MHz_Ultrasound_Intensity.png|thumb|center|520px| চিত্র ৩: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের শব্দ তীব্রতার স্বাভাবিকৃত ক্ষেত্র।]] চিকিৎসা-সংক্রান্ত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইড লোব একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াগনস্টিক ইমেজিংয়ে সাইড লোব থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো প্রধান বিম থেকে প্রতিফলনের মতো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এর ফলে ইমেজের গুণমান কমে যায়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে সাইড লোব এমন এলাকায় শক্তি ছড়িয়ে দেয় যেখানে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য থাকে না। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রে [http://en.wikipedia.org/wiki/Beamforming বিমফর্মিং] তত্ত্বের ভিত্তিতে রূপান্তরক ডিজাইন করা হয়। যা সাধারণ নলাকার রূপান্তরকের তুলনায় বিশ্লেষণকে অনেক জটিল করে তোলে। সাইড লোব কমানোর একটি কৌশল হলো একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রধান বিমকে কেন্দ্রীভূত করতে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা। এর ফলে সাইড লোবার আপেক্ষিক তীব্রতা হ্রাস পায়। আরেকটি কৌশল শব্দবিজ্ঞানের প্রতিধ্বনি, রূপান্তরকের কিনারায় অপেক্ষাকৃত কম তীব্রতার তরঙ্গ প্রেরণ করে সাইড লোব কমায়। যেমনটি পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হবে সাইড লোব কমানো এবং ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য নতুন একটি কৌশল হলো আল্ট্রাসাউন্ড বিমে ইচ্ছাকৃতভাবে নন-লিনিয়ার শব্দ প্রভাবের বিবেচনা।<ref name="Cobbold"/><ref name="Duck"/> == জীব চিকিৎসাবিষয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গে অরৈখিক শব্দবিজ্ঞান == অনেক ক্ষেত্রে শব্দতত্ত্ব প্রয়োগে তরঙ্গের রৈখিক সম্প্রসারণের ধারণা যথেষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু জীবচিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে শব্দ তরঙ্গের সম্প্রসারণের সময় প্রায়শই একটি ক্রমাগত বিকৃতির সৃষ্টি হয় যা অরৈখিক এবং সীমিত মাত্রার প্রভাবে ঘটে। ডায়াগনস্টিক আল্ট্রাসাউন্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরৈখিক প্রভাব হলো তরঙ্গে হারমোনিক তৈরি হওয়া। এই অংশের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি হিসেবে [[অরৈখিকতার শব্দ প্যারামিটার|অরৈখিক শব্দ প্যারামিটার]] এবং [[হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি|হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি]] সম্পর্কে পুনরালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জীব চিকিৎসাবিষয়ক শব্দোত্তর তরঙ্গে প্রাসঙ্গিক অরৈখিকতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে এদের প্রভাব ধীরে ধীরে দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে জমা হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হওয়ার জন্য চারটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন: *প্রচুর পরিমাণে চাপ এবং বেগের তীব্রতা থাকা। জীবচিকিৎসাবিষয়ক প্রায় সব প্রয়োগেই এই শর্ত পূরণ হয়।<ref name="Duck_2010"/> *পর্যাপ্ত দূরত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারণ যেখানে তরঙ্গ প্রায় সমতল থাকে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নির্দেশিত বিমের ক্ষেত্রে, এই শর্ত সাধারণত রেইলি দূরত্ব ''x'' = 1/2 ''ka<sup>2</sup>'' এর মধ্যে মূল লোবের জন্য প্রযোজ্য।<ref name="Hamilton"/> হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি প্রকৃতপক্ষে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংখ্যার সমানুপাতিক, পরম দূরত্বের নয়। উদাহরণস্বরূপ ১০&nbsp;MHz ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ১০&nbsp;সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০০ তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। *[[অরৈখিক প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটারে]] B/A এর পর্যাপ্ত মান থাকা। একই শব্দ তীব্রতার জন্য যে পদার্থের B/A মান বেশি তা দ্রুত হারমোনিক তৈরি করে। জলে B/A মান বায়ুর চেয়ে দশগুণ বেশি এবং কিছু জীবতন্তু টিস্যুতে এই মান জলের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। *কম শব্দ শোষণ, অনেক জীবতন্তু টিস্যুতে যেখানে B/A এর মান বেশি সেখানে শব্দ শোষণও বেশি হয়ে থাকে। কারণ উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ দ্রুত শোষিত হয়। ফলে তৈরি হওয়া হারমোনিক মূল ফ্রিকোয়েন্সির তুলনায় সহজেই শোষিত হয়। এই প্রভাবের ফলে জীবতন্তু টিস্যুতে B/A এর প্রভাব কমে যায়। এই শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অনেক ক্ষেত্রে জীব চিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হয়। এই হারমোনিক তৈরি ব্যবহার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ গড়ে উঠছে: *শব্দোত্তর তরঙ্গে রেকর্ড করা সংকেতে হারমোনিক উপাদান ব্যবহার। কারণ শব্দ তীব্রতা এবং সম্প্রসারণের দূরত্ব মূল লোবেই সবচেয়ে বেশি তাই হারমোনিক মূলত মূল লোবেই বেশি তৈরি হয় এবং সাইড লোবগুলোতে কম হয়। ফলে দ্বিতীয় হারমোনিক দ্বারা তৈরি বিমের দিকনির্দেশনা ক্ষমতা মূল ফ্রিকোয়েন্সির বিমের চেয়ে বেশি হয়। এতে ইমেজের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।<ref name="Duck"/> *টিস্যুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে B/A প্যারামিটার ব্যবহার করে হারমোনিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ। [[অরৈখিকতার প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটার]] অনুযায়ী একই শব্দ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টিস্যুর B/A মান ভিন্ন হয়। এর ফলে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের হারমোনিক উপাদান টিস্যুর B/A মানের ভিত্তিতে চিত্র তৈরি করতে পারে। এই ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আছে, কারণ বর্তমান ইমেজিং প্রযুক্তি এখনো এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।<ref name="Duck_2010"/> == বহিঃসংযোগ == * [http://www.piezotechnologies.com/Resources/White-Papers.aspx মেডিকেল আল্ট্রাসনিক রূপান্তরক] == তথ্যসূত্র == {{reflist|refs= <ref name = "Pierce" >Pierce, A. D. 1989. Radiation from Sources Near and on Solid Surfaces. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name = "Pierce_sd" >Pierce, A. D. 1989. Scattering and Diffraction. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Kinsler">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000.Radiation and Reception of Acoustic Waves. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Kinsler_rt">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000. Reflection and Transmission. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Cheeke">Cheeke, J. D. N. 2002. Finite Beams, Radiation, Diffraction, and Scattering. In Fundamentals and Applications of Ultrasonic Waves. Boca Raton, CRC Press.</ref> <ref name="Cobbold">Cobbold, R. S. C. 2007. Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_ia">Cobbold, R. S. C. 2007. Ultrasound Imaging Arrays. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_su">Cobbold, R. S. C. 2007. Scattering of Ultrasound. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name ="Duck">Duck, F. A. 2002. "Nonlinear Acoustics in Diagnostic Ultrasound." Ultrasound in Medicine & Biology 28(1).</ref> <ref name ="Wiki_sono">Wikipedia, 2010. "Medical Ultrasonography”</ref> <ref name="Kremkau">Kremkau, F. W. 2002. Diagnostic Ultrasound : Principles and Instruments. Philadelphia, W.B. Saunders</ref> <ref name="Hamilton">Hamilton, M. F., Blackstock, D. T. 2008. Sound Beams. In Nonlinear Acoustics. Melville, NY, Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Duck_2010">Duck, F. 2010. Tissue non-linearity. Proceedings of the Institution of Mechanical Engineers, Part H: Journal of Engineering in Medicine 224(2).</ref> }} li3ux2qubtceeo3z86nxpeqjue1znla 84893 84892 2025-06-19T06:19:19Z Asikur.rahman25 11164 84893 wikitext text/x-wiki {{Engineering Acoustics}} == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ == প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান উইকিবইয়ের এই অধ্যায়ে জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রয়োগগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং শব্দোত্তর রশ্মির জন্য কিছু প্রাথমিক শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ ক্ষেত্রটি নানা মৌলিক শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে বহু বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি শব্দোত্তর তরঙ্গের সব দিক আলোচনা করে না। বরং এটি পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে আগ্রহীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। যাঁরা আরও গভীরভাবে জানতে চান তাঁদের জন্য কোবোল্ড এর ২০০৭ সালের গ্রন্থটি <ref name="Cobbold"/> সুপারিশ করা হয়েছে। == রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের সবচেয়ে পরিচিত প্রয়োগ হলো চিকিৎসা চিত্রায়ন যাকে শব্দোত্তর চিত্রায়ন বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়। শব্দোত্তর চিত্রায়নের নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলোর তালিকার জন্য সংশ্লিষ্ট [[w:মেডিকেল আল্ট্রাসনোগ্রাফি|উইকিপিডিয়া নিবন্ধ]]টি দেখুন। নিচের অংশে শব্দোত্তর চিত্র তৈরির জন্য যে শব্দতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা গুণগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি শব্দোত্তর তরঙ্গ রূপান্তরক স্বল্পস্থায়ী উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ নির্গত করে। প্রয়োগ অনুযায়ী এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১&nbsp;মেগাহার্টজ থেকে ১৫&nbsp;মেগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে।<ref name="Kremkau"/> নির্গত শব্দ তরঙ্গ যখন শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শব্দ প্রতিবন্ধকতার (''&rho;c'') পার্থক্যের ক্ষেত্রে আংশিক প্রতিফলন বা বিকিরণ ঘটে। চিকিৎসা চিত্রায়নের প্রসঙ্গে, এটি ঘটে শরীরের যেখানে ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে যেমন হাড় ও পেশির সংযোগস্থলে, রক্তরসের মধ্যে রক্তকণিকা, অঙ্গের ছোট গঠন ইত্যাদিতে।<ref name="Wiki_sono"/> প্রতিফলিত তরঙ্গের আচরণ নির্ভর করে প্রতিফলক গঠনের আকার এবং প্রেরিত শব্দ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়, তাহলে প্রতিফলন ঘটে শব্দ পরিবাহিতা ও প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী তা স্বাভাবিক হোক বা তির্যক।<ref name="Kinsler_rt"/> আর যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক গঠনের তুলনায় বড় হয়, তখন শব্দ বিকিরণের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।<ref name="Pierce_sd"/> এই দ্বিতীয় অবস্থা, যা ছোট প্রতিফলন উৎসের ক্ষেত্রে ঘটে, সেটিই নির্ধারণ করে শব্দোত্তর চিত্রায়নে কোন কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হবে। কোবোল্ড এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী,<ref name="Cobbold_su"/> একটি সমতল তরঙ্গ যখন একটি গোলীয় প্রতিফলক উৎসে পড়ে যার কার্যকর ব্যাসার্ধ ''a'', তখন বিকিরিত তরঙ্গের শব্দ তীব্রতা, ''I<sub>s</sub>'', পরিবর্তিত হয় এই সূত্র অনুযায়ী: <br> :<math> I_s \propto \frac{a^6}{\lambda ^4} </math> এই সূত্রটি দেখায়, যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক উৎসের তুলনায় বড় হয়, তখন প্রতিফলিত শক্তি খুব কম হয়ে যায়। ফলে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্য প্রতিফলিত তরঙ্গ ফেরত আসে না। শব্দোত্তর চিত্রে একটি গঠন স্পষ্টভাবে ধরতে হলে, নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সেই গঠনের চেয়ে ছোট হতে হবে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ পরিবাহনের পথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তাই কম কম্পাঙ্ক বেশি গভীরে ছবি তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেশি কম্পাঙ্ক (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নির্গত রশ্মিকে সরু ফোকাসে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।<ref name="Kremkau"/> নিচের টেবিলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কে পানিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে (''&lambda;'' = ''c''/''f'')। <br> {| class="wikitable" style="text-align: center;" align="center" |+ টেবিল ১: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য। |- | কম্পাঙ্ক (মেগাহার্টজ) || ১ || ২ || ৫ || ৮ || ১০ || ১২ || ১৫ |- | তরঙ্গদৈর্ঘ্য (মিলিমিটার) || ১.৫০ || ০.৭৫ || ০.৩০ || ০.১৯ || ০.১৫ || ০.১৩ || ০.১০ |} তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পর শব্দোত্তর রূপান্তরক একটি গ্রাহকের মতো কাজ করতে পারে—যেমন একটি মাইক্রোফোন বা হাইড্রোফোন। প্রতিফলিত তরঙ্গ বা ঘনত্ব পরিবর্তনের কারণে ফিরে আসা তরঙ্গ রূপান্তরকে এসে রেকর্ড হয়। প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের মধ্যকার সময় ব্যবধান থেকে প্রতিফলন উৎসের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। আর প্রাপ্ত সংকেতের তীব্রতা থেকে প্রতিফলনের শাব্দিক প্রতিবন্ধকতা এবং আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।<ref name="Wiki_sono"/> যেখানে ডপলার শব্দোত্তর চিত্রায়ন ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন থেকে প্রতিফলক উৎসের গতি নির্ধারণ করা যায়। আধুনিক শব্দোত্তর চিত্রায়নে ছোট ছোট অনেক রূপান্তরকের সমষ্টি ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রতিটি আলাদাভাবে ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় [[w:বিমফর্মিং|বিমফর্মিং]] নামের একটি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি রূপান্তরকের তরঙ্গের ধাপের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত রশ্মির দিক ও ফোকাস গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।<ref name="Cobbold_ia"/> একটি দ্বিমাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র তৈরি করতে হলে, রশ্মির কেন্দ্রে অবস্থান একটি অঞ্চলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরানো হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো রেকর্ড করে সেই নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই সাধারণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন যন্ত্রে ভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নিচে একটি দ্বি-মাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র দেখানো হয়েছে। যা ফোকাস অঞ্চল সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। <br> [[Image:CRL Crown rump length 12 weeks ecografia Dr. Wolfgang Moroder.jpg|thumb|center|420px|চিত্র ১: দ্বি-মাত্রিক গর্ভকালীন শব্দোত্তর তরঙ্গ চিত্র।]] == রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ == উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্রয়োগে সাধারণত উচ্চ তীব্রতার শব্দ তরঙ্গের অপচয়ের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেটাই চিকিৎসার মূল কার্যকারিতা তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন [[w:লিথোট্রিপসি|লিথোট্রিপসি]] তে চিকিৎসামূলক প্রভাব শব্দ তরঙ্গের অরৈখিকতার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে [[তরঙ্গ বিকৃতি|তরঙ্গ বিকৃতি]] ও [[ঘাত তরঙ্গের গঠন|ঘাত তরঙ্গ]] তৈরি হয়। এই প্রভাব সম্পর্কে [[#পরবর্তী এক খণ্ডে|পরবর্তী এক খণ্ডে]] আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে শব্দোত্তর তরঙ্গের কয়েকটি চিকিৎসামূলক প্রয়োগের আংশিক তালিকা দেওয়া হলো: * [[w:ডেন্টাল হাইজেনিস্ট|ডেন্টাল হাইজেনিস্ট]] পেশায় দাঁত পরিষ্কারের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। * কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে সিস্ট ও টিউমার (সৌম্য বা মারাত্মক) চিকিৎসা করা হয়। একে ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড সার্জারি বা উচ্চ তীব্রতা কেন্দ্রিক শব্দোত্তর বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত চিকিৎসা-নির্ণয়ের শব্দোত্তর তরঙ্গের চেয়ে কম কম্পাঙ্ক (২৫০&nbsp;কিলোহার্টজ থেকে ২০০০&nbsp;কিলোহার্টজ পর্যন্ত) ব্যবহার করা হলেও, এর শক্তি অনেক বেশি হয়। * লিথোট্রিপসি ব্যবহার করে কিডনির পাথর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[w:ফ্যাকোইমালসিফিকেশন|ফ্যাকোইমালসিফিকেশন]] পদ্ধতিতে ছানির চিকিৎসায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[W:নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গ|নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গের]] আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন হাড়ের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করা এবং ওষুধ পরিবহনের জন্য [[w:রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক|রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক]] অতিক্রমের সম্ভাবনা। == শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য == প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় শব্দোত্তর রশ্মি একটি অনন্ত বাফলে একটি সমতল বৃত্তাকার পিস্টন দোলনের ফলে উৎপন্ন হয়। বাস্তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় শব্দ রশ্মির অনেক বেশি বিস্তার পার্শ্ব-লোবের তীব্রতা এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দৈর্ঘ্য নির্ধারণের অক্ষমতা দেখা দেয়। বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিমফর্মিং নামে পরিচিত একটি সাধারণ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা হয়। যদিও সমতল রূপান্তরকগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে এগুলোর সহজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গঠিত যে কোনো রশ্মির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উন্নত প্রযুক্তির নকশার চ্যালেঞ্জ বোঝানো যায়। সরল বৃত্তাকার রূপান্তরকের জন্য ব্যবহৃত বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি পিয়ার্স,<ref name="Pierce"/> কিনসলার <ref name="Kinsler"/> এবং চিকি<ref name="Cheeke"/> এর মতো বহু শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে দেখা যায়। এখানে প্রথমে মুক্ত বায়ুতে কম্পমান একটি ছোট গোলকীয় উৎসের হারমোনিক গতি থেকে নির্গত শব্দ বিবেচনা করে শব্দ ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। সেই উৎস থেকে প্রাপ্ত শব্দ চাপ ক্ষেত্র নিম্নরূপ: <br> :<math> \boldsymbol{P} = i\left(\frac{\rho_o c U_o k a^2}{r} \right )e^{-ikr} </math> :<math> I(r) = \frac{1}{2}\rho_o c_o U_o^2 \left(\frac{a}{r} \right )^2 \left(ka \right )^2 </math> এখানে '''''P'''''(''r'') হলো কেন্দ্র থেকে দূরত্ব ''r'' এ হারমোনিক চাপের পরিমাণ ''&rho;<sub>o</sub>'' হলো তরলের ঘনত্ব, ''c<sub>o</sub>'' তরলের শব্দের বেগ, ''U<sub>o</sub>'' হলো গোলক উৎসের সর্বাধিক বেগ, ''a'' হলো গোলকের ব্যাসার্ধ, এবং ''k'' = 2''&pi;f''/''c<sub>o</sub>'' হলো তরঙ্গ সংখ্যা। উপরের সমীকরণগুলোতে ''i'' = -1<sup>1/2</sup> যা হারমোনিক চাপ চালকের প্রশস্ততা ও ধাপ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। এই ফলাফলটি রূপান্তরককে একটি বৃত্তাকার তাপ বিকিরক হিসেবে প্রয়োগ করতে হলে প্রতিটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে একটি আলাদা গোলীয় উৎস হিসেবে ধরতে হবে। এর ফলে গঠিত শব্দ ক্ষেত্র হলো প্রতিটি গোলীয় উৎসের ইন্টিগ্রাল যোগফল। সাধারণভাবে এ ধরনের সমীকরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে সমাধান করা যায় না। তবে যখন r >> a (যেখানে ''a'' হলো এখন রূপান্তরকের ব্যাসার্ধ) ধরা হয় তখন একটি সরল ফলাফল পাওয়া যায়। পুরো ডেরিভেশন এখানে না দিয়ে (বিশদ দেখতে কিনসলার <ref name="Kinsler"/> অথবা চিকি <ref name="Cheeke"/> দেখুন) শব্দ ক্ষেত্র এবং শব্দ তীব্রতার সমীকরণগুলো হলো: <br> :<math> \boldsymbol{P}(r, \theta) = i \left( \tfrac{1}{2}\rho_o c_o U_o \frac{a}{r}ka \right ) H(\theta)e^{-ikr}, </math> :<math> H(\theta) = \frac{2J_1(ka\sin\theta)}{ka \sin \theta}, </math> :<math> I(r,\theta) = \frac{|\boldsymbol{P}(r)|^2}{2\rho_oc_o}, </math> এখানে ''H''(''&theta;'') হলো নির্দেশিকা ফাংশন ''J<sub>1</sub>'' হলো [http://en.wikipedia.org/wiki/Bessel_function প্রথম প্রকারের বেসেল ফাংশন] এবং ''I''(''r'') হলো W/m<sup>2</sup> এককে শব্দ তীব্রতা। বাস্তবিক অর্থে নির্দেশিকা ফাংশনটি রশ্মির সেই সকল কোণে চাপের পরিমাণ দেখায় যা রূপান্তরকের অক্ষ বরাবর নয়। বেশেল ফাংশনের মূল যেসব কোণে চাপ শূন্য করে সেগুলো পার্শ্ব-লোব নামে পরিচিত। এই কোণগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকে পার্শ্ব-লোব আর অক্ষ বরাবর যে অংশ থাকে তা মূল লোব নামে পরিচিত। বাস্তবে এই লোবগুলো সৃষ্টি হয় রূপান্তরকের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত তরঙ্গগুলোর ধাপীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এটি কিছুটা সরল কম্পাঙ্ক তরঙ্গের চাপ শূন্যচাপ অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। উদাহরণস্বরূপ ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর রশ্মি জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরক দিয়ে প্রেরণ করা হলে নির্দেশিকা ফাংশন এবং শব্দ তীব্রতা কীভাবে পার্শ্ব-লোব তৈরি করে তা দেখা যায়। নিচের চিত্র ২ এ নির্দেশিকা ফাংশন দেখানো হয়েছে এবং চিত্র ৩ এ রূপান্তরকের পৃষ্ঠে তীব্রতার তুলনায় শব্দ তীব্রতা চিত্রায়িত হয়েছে। <br> [[Image:Beam_Function_1MHz.png|thumb|center|520px| চিত্র ২: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের জন্য রশ্মি ফাংশন।]] [[Image:1MHz_Ultrasound_Intensity.png|thumb|center|520px| চিত্র ৩: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের শব্দ তীব্রতার স্বাভাবিকৃত ক্ষেত্র।]] চিকিৎসা-সংক্রান্ত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইড লোব একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াগনস্টিক ইমেজিংয়ে সাইড লোব থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো প্রধান বিম থেকে প্রতিফলনের মতো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এর ফলে ইমেজের গুণমান কমে যায়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে সাইড লোব এমন এলাকায় শক্তি ছড়িয়ে দেয় যেখানে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য থাকে না। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রে [http://en.wikipedia.org/wiki/Beamforming বিমফর্মিং] তত্ত্বের ভিত্তিতে রূপান্তরক ডিজাইন করা হয়। যা সাধারণ নলাকার রূপান্তরকের তুলনায় বিশ্লেষণকে অনেক জটিল করে তোলে। সাইড লোব কমানোর একটি কৌশল হলো একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রধান বিমকে কেন্দ্রীভূত করতে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা। এর ফলে সাইড লোবার আপেক্ষিক তীব্রতা হ্রাস পায়। আরেকটি কৌশল শব্দবিজ্ঞানের প্রতিধ্বনি, রূপান্তরকের কিনারায় অপেক্ষাকৃত কম তীব্রতার তরঙ্গ প্রেরণ করে সাইড লোব কমায়। যেমনটি পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হবে সাইড লোব কমানো এবং ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য নতুন একটি কৌশল হলো আল্ট্রাসাউন্ড বিমে ইচ্ছাকৃতভাবে নন-লিনিয়ার শব্দ প্রভাবের বিবেচনা।<ref name="Cobbold"/><ref name="Duck"/> == জীব চিকিৎসাবিষয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গে অরৈখিক শব্দবিজ্ঞান == অনেক ক্ষেত্রে শব্দতত্ত্ব প্রয়োগে তরঙ্গের রৈখিক সম্প্রসারণের ধারণা যথেষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু জীবচিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে শব্দ তরঙ্গের সম্প্রসারণের সময় প্রায়শই একটি ক্রমাগত বিকৃতির সৃষ্টি হয় যা অরৈখিক এবং সীমিত মাত্রার প্রভাবে ঘটে। ডায়াগনস্টিক আল্ট্রাসাউন্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরৈখিক প্রভাব হলো তরঙ্গে হারমোনিক তৈরি হওয়া। এই অংশের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি হিসেবে [[অরৈখিকতার শব্দ প্যারামিটার|অরৈখিক শব্দ প্যারামিটার]] এবং [[হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি|হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি]] সম্পর্কে পুনরালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জীব চিকিৎসাবিষয়ক শব্দোত্তর তরঙ্গে প্রাসঙ্গিক অরৈখিকতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে এদের প্রভাব ধীরে ধীরে দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে জমা হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হওয়ার জন্য চারটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন: *প্রচুর পরিমাণে চাপ এবং বেগের তীব্রতা থাকা। জীবচিকিৎসাবিষয়ক প্রায় সব প্রয়োগেই এই শর্ত পূরণ হয়।<ref name="Duck_2010"/> *পর্যাপ্ত দূরত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারণ যেখানে তরঙ্গ প্রায় সমতল থাকে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নির্দেশিত বিমের ক্ষেত্রে, এই শর্ত সাধারণত রেইলি দূরত্ব ''x'' = 1/2 ''ka<sup>2</sup>'' এর মধ্যে মূল লোবের জন্য প্রযোজ্য।<ref name="Hamilton"/> হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি প্রকৃতপক্ষে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংখ্যার সমানুপাতিক, পরম দূরত্বের নয়। উদাহরণস্বরূপ ১০&nbsp;MHz কম্পাঙ্কর তরঙ্গ ১০&nbsp;সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০০ তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। *[[অরৈখিক প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটারে]] B/A এর পর্যাপ্ত মান থাকা। একই শব্দ তীব্রতার জন্য যে পদার্থের B/A মান বেশি তা দ্রুত হারমোনিক তৈরি করে। জলে B/A মান বায়ুর চেয়ে দশগুণ বেশি এবং কিছু জীবতন্তু টিস্যুতে এই মান জলের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। *কম শব্দ শোষণ, অনেক জীবতন্তু টিস্যুতে যেখানে B/A এর মান বেশি সেখানে শব্দ শোষণও বেশি হয়ে থাকে। কারণ উচ্চ কম্পাঙ্কতে তরঙ্গ দ্রুত শোষিত হয়। ফলে তৈরি হওয়া হারমোনিক মূল কম্পাঙ্কর তুলনায় সহজেই শোষিত হয়। এই প্রভাবের ফলে জীবতন্তু টিস্যুতে B/A এর প্রভাব কমে যায়। এই শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অনেক ক্ষেত্রে জীব চিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হয়। এই হারমোনিক তৈরি ব্যবহার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ গড়ে উঠছে: *শব্দোত্তর তরঙ্গে রেকর্ড করা সংকেতে হারমোনিক উপাদান ব্যবহার। কারণ শব্দ তীব্রতা এবং সম্প্রসারণের দূরত্ব মূল লোবেই সবচেয়ে বেশি তাই হারমোনিক মূলত মূল লোবেই বেশি তৈরি হয় এবং সাইড লোবগুলোতে কম হয়। ফলে দ্বিতীয় হারমোনিক দ্বারা তৈরি বিমের দিকনির্দেশনা ক্ষমতা মূল কম্পাঙ্কর বিমের চেয়ে বেশি হয়। এতে ইমেজের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।<ref name="Duck"/> *টিস্যুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে B/A প্যারামিটার ব্যবহার করে হারমোনিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ। [[অরৈখিকতার প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটার]] অনুযায়ী একই শব্দ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টিস্যুর B/A মান ভিন্ন হয়। এর ফলে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের হারমোনিক উপাদান টিস্যুর B/A মানের ভিত্তিতে চিত্র তৈরি করতে পারে। এই ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আছে, কারণ বর্তমান ইমেজিং প্রযুক্তি এখনো এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।<ref name="Duck_2010"/> == বহিঃসংযোগ == * [http://www.piezotechnologies.com/Resources/White-Papers.aspx মেডিকেল আল্ট্রাসনিক রূপান্তরক] == তথ্যসূত্র == {{reflist|refs= <ref name = "Pierce" >Pierce, A. D. 1989. Radiation from Sources Near and on Solid Surfaces. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name = "Pierce_sd" >Pierce, A. D. 1989. Scattering and Diffraction. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Kinsler">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000.Radiation and Reception of Acoustic Waves. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Kinsler_rt">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000. Reflection and Transmission. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Cheeke">Cheeke, J. D. N. 2002. Finite Beams, Radiation, Diffraction, and Scattering. In Fundamentals and Applications of Ultrasonic Waves. Boca Raton, CRC Press.</ref> <ref name="Cobbold">Cobbold, R. S. C. 2007. Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_ia">Cobbold, R. S. C. 2007. Ultrasound Imaging Arrays. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_su">Cobbold, R. S. C. 2007. Scattering of Ultrasound. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name ="Duck">Duck, F. A. 2002. "Nonlinear Acoustics in Diagnostic Ultrasound." Ultrasound in Medicine & Biology 28(1).</ref> <ref name ="Wiki_sono">Wikipedia, 2010. "Medical Ultrasonography”</ref> <ref name="Kremkau">Kremkau, F. W. 2002. Diagnostic Ultrasound : Principles and Instruments. Philadelphia, W.B. Saunders</ref> <ref name="Hamilton">Hamilton, M. F., Blackstock, D. T. 2008. Sound Beams. In Nonlinear Acoustics. Melville, NY, Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Duck_2010">Duck, F. 2010. Tissue non-linearity. Proceedings of the Institution of Mechanical Engineers, Part H: Journal of Engineering in Medicine 224(2).</ref> }} 6m022bhaohb7k48665j2ajmeblnybem 84894 84893 2025-06-19T06:21:26Z Asikur.rahman25 11164 /* শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য */ 84894 wikitext text/x-wiki {{Engineering Acoustics}} == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ == প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান উইকিবইয়ের এই অধ্যায়ে জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রয়োগগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং শব্দোত্তর রশ্মির জন্য কিছু প্রাথমিক শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গ ক্ষেত্রটি নানা মৌলিক শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে বহু বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি শব্দোত্তর তরঙ্গের সব দিক আলোচনা করে না। বরং এটি পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে আগ্রহীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। যাঁরা আরও গভীরভাবে জানতে চান তাঁদের জন্য কোবোল্ড এর ২০০৭ সালের গ্রন্থটি <ref name="Cobbold"/> সুপারিশ করা হয়েছে। == রোগনির্ণয়ে প্রয়োগ == জৈব-চিকিৎসা শব্দোত্তর তরঙ্গের সবচেয়ে পরিচিত প্রয়োগ হলো চিকিৎসা চিত্রায়ন যাকে শব্দোত্তর চিত্রায়ন বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়। শব্দোত্তর চিত্রায়নের নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলোর তালিকার জন্য সংশ্লিষ্ট [[w:মেডিকেল আল্ট্রাসনোগ্রাফি|উইকিপিডিয়া নিবন্ধ]]টি দেখুন। নিচের অংশে শব্দোত্তর চিত্র তৈরির জন্য যে শব্দতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা গুণগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি শব্দোত্তর তরঙ্গ রূপান্তরক স্বল্পস্থায়ী উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ নির্গত করে। প্রয়োগ অনুযায়ী এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১&nbsp;মেগাহার্টজ থেকে ১৫&nbsp;মেগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে।<ref name="Kremkau"/> নির্গত শব্দ তরঙ্গ যখন শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শব্দ প্রতিবন্ধকতার (''&rho;c'') পার্থক্যের ক্ষেত্রে আংশিক প্রতিফলন বা বিকিরণ ঘটে। চিকিৎসা চিত্রায়নের প্রসঙ্গে, এটি ঘটে শরীরের যেখানে ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে যেমন হাড় ও পেশির সংযোগস্থলে, রক্তরসের মধ্যে রক্তকণিকা, অঙ্গের ছোট গঠন ইত্যাদিতে।<ref name="Wiki_sono"/> প্রতিফলিত তরঙ্গের আচরণ নির্ভর করে প্রতিফলক গঠনের আকার এবং প্রেরিত শব্দ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়, তাহলে প্রতিফলন ঘটে শব্দ পরিবাহিতা ও প্রতিফলনের নিয়ম অনুযায়ী তা স্বাভাবিক হোক বা তির্যক।<ref name="Kinsler_rt"/> আর যদি তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক গঠনের তুলনায় বড় হয়, তখন শব্দ বিকিরণের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।<ref name="Pierce_sd"/> এই দ্বিতীয় অবস্থা, যা ছোট প্রতিফলন উৎসের ক্ষেত্রে ঘটে, সেটিই নির্ধারণ করে শব্দোত্তর চিত্রায়নে কোন কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হবে। কোবোল্ড এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী,<ref name="Cobbold_su"/> একটি সমতল তরঙ্গ যখন একটি গোলীয় প্রতিফলক উৎসে পড়ে যার কার্যকর ব্যাসার্ধ ''a'', তখন বিকিরিত তরঙ্গের শব্দ তীব্রতা, ''I<sub>s</sub>'', পরিবর্তিত হয় এই সূত্র অনুযায়ী: <br> :<math> I_s \propto \frac{a^6}{\lambda ^4} </math> এই সূত্রটি দেখায়, যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলক উৎসের তুলনায় বড় হয়, তখন প্রতিফলিত শক্তি খুব কম হয়ে যায়। ফলে রূপান্তরকে উল্লেখযোগ্য প্রতিফলিত তরঙ্গ ফেরত আসে না। শব্দোত্তর চিত্রে একটি গঠন স্পষ্টভাবে ধরতে হলে, নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সেই গঠনের চেয়ে ছোট হতে হবে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ পরিবাহনের পথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তাই কম কম্পাঙ্ক বেশি গভীরে ছবি তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বেশি কম্পাঙ্ক (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নির্গত রশ্মিকে সরু ফোকাসে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে।<ref name="Kremkau"/> নিচের টেবিলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কে পানিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে (''&lambda;'' = ''c''/''f'')। <br> {| class="wikitable" style="text-align: center;" align="center" |+ টেবিল ১: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য। |- | কম্পাঙ্ক (মেগাহার্টজ) || ১ || ২ || ৫ || ৮ || ১০ || ১২ || ১৫ |- | তরঙ্গদৈর্ঘ্য (মিলিমিটার) || ১.৫০ || ০.৭৫ || ০.৩০ || ০.১৯ || ০.১৫ || ০.১৩ || ০.১০ |} তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পর শব্দোত্তর রূপান্তরক একটি গ্রাহকের মতো কাজ করতে পারে—যেমন একটি মাইক্রোফোন বা হাইড্রোফোন। প্রতিফলিত তরঙ্গ বা ঘনত্ব পরিবর্তনের কারণে ফিরে আসা তরঙ্গ রূপান্তরকে এসে রেকর্ড হয়। প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের মধ্যকার সময় ব্যবধান থেকে প্রতিফলন উৎসের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। আর প্রাপ্ত সংকেতের তীব্রতা থেকে প্রতিফলনের শাব্দিক প্রতিবন্ধকতা এবং আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।<ref name="Wiki_sono"/> যেখানে ডপলার শব্দোত্তর চিত্রায়ন ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রেরিত ও প্রাপ্ত সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন থেকে প্রতিফলক উৎসের গতি নির্ধারণ করা যায়। আধুনিক শব্দোত্তর চিত্রায়নে ছোট ছোট অনেক রূপান্তরকের সমষ্টি ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রতিটি আলাদাভাবে ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় [[w:বিমফর্মিং|বিমফর্মিং]] নামের একটি কৌশল ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি রূপান্তরকের তরঙ্গের ধাপের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত রশ্মির দিক ও ফোকাস গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।<ref name="Cobbold_ia"/> একটি দ্বিমাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র তৈরি করতে হলে, রশ্মির কেন্দ্রে অবস্থান একটি অঞ্চলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরানো হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো রেকর্ড করে সেই নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই সাধারণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন যন্ত্রে ভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নিচে একটি দ্বি-মাত্রিক শব্দোত্তর চিত্র দেখানো হয়েছে। যা ফোকাস অঞ্চল সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। <br> [[Image:CRL Crown rump length 12 weeks ecografia Dr. Wolfgang Moroder.jpg|thumb|center|420px|চিত্র ১: দ্বি-মাত্রিক গর্ভকালীন শব্দোত্তর তরঙ্গ চিত্র।]] == রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগ == উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসামূলক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের প্রয়োগে সাধারণত উচ্চ তীব্রতার শব্দ তরঙ্গের অপচয়ের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেটাই চিকিৎসার মূল কার্যকারিতা তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন [[w:লিথোট্রিপসি|লিথোট্রিপসি]] তে চিকিৎসামূলক প্রভাব শব্দ তরঙ্গের অরৈখিকতার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে [[তরঙ্গ বিকৃতি|তরঙ্গ বিকৃতি]] ও [[ঘাত তরঙ্গের গঠন|ঘাত তরঙ্গ]] তৈরি হয়। এই প্রভাব সম্পর্কে [[#পরবর্তী এক খণ্ডে|পরবর্তী এক খণ্ডে]] আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে শব্দোত্তর তরঙ্গের কয়েকটি চিকিৎসামূলক প্রয়োগের আংশিক তালিকা দেওয়া হলো: * [[w:ডেন্টাল হাইজেনিস্ট|ডেন্টাল হাইজেনিস্ট]] পেশায় দাঁত পরিষ্কারের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। * কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে সিস্ট ও টিউমার (সৌম্য বা মারাত্মক) চিকিৎসা করা হয়। একে ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড সার্জারি বা উচ্চ তীব্রতা কেন্দ্রিক শব্দোত্তর বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত চিকিৎসা-নির্ণয়ের শব্দোত্তর তরঙ্গের চেয়ে কম কম্পাঙ্ক (২৫০&nbsp;কিলোহার্টজ থেকে ২০০০&nbsp;কিলোহার্টজ পর্যন্ত) ব্যবহার করা হলেও, এর শক্তি অনেক বেশি হয়। * লিথোট্রিপসি ব্যবহার করে কিডনির পাথর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীভূত শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[w:ফ্যাকোইমালসিফিকেশন|ফ্যাকোইমালসিফিকেশন]] পদ্ধতিতে ছানির চিকিৎসায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। * [[W:নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গ|নিম্ন-তীব্রতার শব্দোত্তর তরঙ্গের]] আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন হাড়ের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করা এবং ওষুধ পরিবহনের জন্য [[w:রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক|রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক]] অতিক্রমের সম্ভাবনা। == শব্দোত্তর রশ্মির শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য == প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় শব্দোত্তর রশ্মি একটি অনন্ত বাফলে একটি সমতল বৃত্তাকার পিস্টন দোলনের ফলে উৎপন্ন হয়। বাস্তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় শব্দ রশ্মির অনেক বেশি বিস্তার পার্শ্ব-লোবের তীব্রতা এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দৈর্ঘ্য নির্ধারণের অক্ষমতা দেখা দেয়। বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিমফর্মিং নামে পরিচিত একটি সাধারণ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা হয়। যদিও সমতল রূপান্তরকগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে এগুলোর সহজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গঠিত যে কোনো রশ্মির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উন্নত প্রযুক্তির নকশার চ্যালেঞ্জ বোঝানো যায়। সরল বৃত্তাকার রূপান্তরকের জন্য ব্যবহৃত বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি পিয়ার্স,<ref name="Pierce"/> কিনসলার <ref name="Kinsler"/> এবং চিকি<ref name="Cheeke"/> এর মতো বহু শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে দেখা যায়। এখানে প্রথমে মুক্ত বায়ুতে কম্পমান একটি ছোট গোলকীয় উৎসের হারমোনিক গতি থেকে নির্গত শব্দ বিবেচনা করে শব্দ ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। সেই উৎস থেকে প্রাপ্ত শব্দ চাপ ক্ষেত্র নিম্নরূপ: <br> :<math> \boldsymbol{P} = i\left(\frac{\rho_o c U_o k a^2}{r} \right )e^{-ikr} </math> :<math> I(r) = \frac{1}{2}\rho_o c_o U_o^2 \left(\frac{a}{r} \right )^2 \left(ka \right )^2 </math> এখানে '''''P'''''(''r'') হলো কেন্দ্র থেকে দূরত্ব ''r'' এ হারমোনিক চাপের পরিমাণ ''&rho;<sub>o</sub>'' হলো তরলের ঘনত্ব, ''c<sub>o</sub>'' তরলের শব্দের বেগ, ''U<sub>o</sub>'' হলো গোলক উৎসের সর্বাধিক বেগ, ''a'' হলো গোলকের ব্যাসার্ধ, এবং ''k'' = 2''&pi;f''/''c<sub>o</sub>'' হলো তরঙ্গ সংখ্যা। উপরের সমীকরণগুলোতে ''i'' = -1<sup>1/2</sup> যা হারমোনিক চাপ চালকের প্রশস্ততা ও ধাপ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে। এই ফলাফলটি রূপান্তরককে একটি বৃত্তাকার তাপ বিকিরক হিসেবে প্রয়োগ করতে হলে প্রতিটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে একটি আলাদা গোলীয় উৎস হিসেবে ধরতে হবে। এর ফলে গঠিত শব্দ ক্ষেত্র হলো প্রতিটি গোলীয় উৎসের ইন্টিগ্রাল যোগফল। সাধারণভাবে এ ধরনের সমীকরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে সমাধান করা যায় না। তবে যখন r >> a (যেখানে ''a'' হলো এখন রূপান্তরকের ব্যাসার্ধ) ধরা হয় তখন একটি সরল ফলাফল পাওয়া যায়। পুরো ডেরিভেশন এখানে না দিয়ে (বিশদ দেখতে কিনসলার <ref name="Kinsler"/> অথবা চিকি <ref name="Cheeke"/> দেখুন) শব্দ ক্ষেত্র এবং শব্দ তীব্রতার সমীকরণগুলো হলো: <br> :<math> \boldsymbol{P}(r, \theta) = i \left( \tfrac{1}{2}\rho_o c_o U_o \frac{a}{r}ka \right ) H(\theta)e^{-ikr}, </math> :<math> H(\theta) = \frac{2J_1(ka\sin\theta)}{ka \sin \theta}, </math> :<math> I(r,\theta) = \frac{|\boldsymbol{P}(r)|^2}{2\rho_oc_o}, </math> এখানে ''H''(''&theta;'') হলো নির্দেশিকা ফাংশন ''J<sub>1</sub>'' হলো [http://en.wikipedia.org/wiki/Bessel_function প্রথম প্রকারের বেসেল ফাংশন] এবং ''I''(''r'') হলো W/m<sup>2</sup> এককে শব্দ তীব্রতা। বাস্তবিক অর্থে নির্দেশিকা ফাংশনটি রশ্মির সেই সকল কোণে চাপের পরিমাণ দেখায় যা রূপান্তরকের অক্ষ বরাবর নয়। বেশেল ফাংশনের মূল যেসব কোণে চাপ শূন্য করে সেগুলো পার্শ্ব-লোব নামে পরিচিত। এই কোণগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকে পার্শ্ব-লোব আর অক্ষ বরাবর যে অংশ থাকে তা মূল লোব নামে পরিচিত। বাস্তবে এই লোবগুলো সৃষ্টি হয় রূপান্তরকের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত তরঙ্গগুলোর ধাপীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এটি কিছুটা সরল কম্পাঙ্ক তরঙ্গের চাপ শূন্যচাপ অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। উদাহরণস্বরূপ ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর রশ্মি জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরক দিয়ে প্রেরণ করা হলে নির্দেশিকা ফাংশন এবং শব্দ তীব্রতা কীভাবে পার্শ্ব-লোব তৈরি করে তা দেখা যায়। নিচের চিত্র ২ এ নির্দেশিকা ফাংশন দেখানো হয়েছে এবং চিত্র ৩ এ রূপান্তরকের পৃষ্ঠে তীব্রতার তুলনায় শব্দ তীব্রতা চিত্রায়িত হয়েছে। <br> [[Image:Beam_Function_1MHz.png|thumb|center|520px| চিত্র ২: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের জন্য রশ্মি ফাংশন।]] [[Image:1MHz_Ultrasound_Intensity.png|thumb|center|520px| চিত্র ৩: জলীয় মাধ্যমে ১&nbsp;মেগাহার্টজ শব্দোত্তর তরঙ্গ নির্গতকারী ১&nbsp;সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের রূপান্তরকের শব্দ তীব্রতার স্বাভাবিকৃত ক্ষেত্র।]] চিকিৎসা-সংক্রান্ত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইড লোব একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াগনস্টিক ইমেজিংয়ে সাইড লোব থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গগুলো প্রধান বিম থেকে প্রতিফলনের মতো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এর ফলে ইমেজের গুণমান কমে যায়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে সাইড লোব এমন এলাকায় শক্তি ছড়িয়ে দেয় যেখানে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য থাকে না। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রে [http://en.wikipedia.org/wiki/Beamforming বিমফর্মিং] তত্ত্বের ভিত্তিতে রূপান্তরক ডিজাইন করা হয়। যা সাধারণ নলাকার রূপান্তরকের তুলনায় বিশ্লেষণকে অনেক জটিল করে তোলে। সাইড লোব কমানোর একটি কৌশল হলো একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রধান বিমকে কেন্দ্রীভূত করতে ফেজড অ্যারে ব্যবহার করা। এর ফলে সাইড লোবার আপেক্ষিক তীব্রতা হ্রাস পায়। আরেকটি কৌশল শব্দবিজ্ঞানের প্রতিধ্বনি, রূপান্তরকের কিনারায় অপেক্ষাকৃত কম তীব্রতার তরঙ্গ প্রেরণ করে সাইড লোব কমায়। যেমনটি পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হবে সাইড লোব কমানো এবং ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য নতুন একটি কৌশল হলো আল্ট্রাসাউন্ড বিমে ইচ্ছাকৃতভাবে অরৈখিক শব্দ প্রভাবের বিবেচনা।<ref name="Cobbold"/><ref name="Duck"/> == জীব চিকিৎসাবিষয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গে অরৈখিক শব্দবিজ্ঞান == অনেক ক্ষেত্রে শব্দতত্ত্ব প্রয়োগে তরঙ্গের রৈখিক সম্প্রসারণের ধারণা যথেষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু জীবচিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে শব্দ তরঙ্গের সম্প্রসারণের সময় প্রায়শই একটি ক্রমাগত বিকৃতির সৃষ্টি হয় যা অরৈখিক এবং সীমিত মাত্রার প্রভাবে ঘটে। ডায়াগনস্টিক আল্ট্রাসাউন্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরৈখিক প্রভাব হলো তরঙ্গে হারমোনিক তৈরি হওয়া। এই অংশের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি হিসেবে [[অরৈখিকতার শব্দ প্যারামিটার|অরৈখিক শব্দ প্যারামিটার]] এবং [[হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি|হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি]] সম্পর্কে পুনরালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জীব চিকিৎসাবিষয়ক শব্দোত্তর তরঙ্গে প্রাসঙ্গিক অরৈখিকতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে এদের প্রভাব ধীরে ধীরে দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে জমা হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হওয়ার জন্য চারটি শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন: *প্রচুর পরিমাণে চাপ এবং বেগের তীব্রতা থাকা। জীবচিকিৎসাবিষয়ক প্রায় সব প্রয়োগেই এই শর্ত পূরণ হয়।<ref name="Duck_2010"/> *পর্যাপ্ত দূরত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারণ যেখানে তরঙ্গ প্রায় সমতল থাকে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ব্যবহৃত নির্দেশিত বিমের ক্ষেত্রে, এই শর্ত সাধারণত রেইলি দূরত্ব ''x'' = 1/2 ''ka<sup>2</sup>'' এর মধ্যে মূল লোবের জন্য প্রযোজ্য।<ref name="Hamilton"/> হারমোনিক শব্দ উৎপত্তি প্রকৃতপক্ষে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংখ্যার সমানুপাতিক, পরম দূরত্বের নয়। উদাহরণস্বরূপ ১০&nbsp;MHz কম্পাঙ্কর তরঙ্গ ১০&nbsp;সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০০ তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। *[[অরৈখিক প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটারে]] B/A এর পর্যাপ্ত মান থাকা। একই শব্দ তীব্রতার জন্য যে পদার্থের B/A মান বেশি তা দ্রুত হারমোনিক তৈরি করে। জলে B/A মান বায়ুর চেয়ে দশগুণ বেশি এবং কিছু জীবতন্তু টিস্যুতে এই মান জলের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। *কম শব্দ শোষণ, অনেক জীবতন্তু টিস্যুতে যেখানে B/A এর মান বেশি সেখানে শব্দ শোষণও বেশি হয়ে থাকে। কারণ উচ্চ কম্পাঙ্কতে তরঙ্গ দ্রুত শোষিত হয়। ফলে তৈরি হওয়া হারমোনিক মূল কম্পাঙ্কর তুলনায় সহজেই শোষিত হয়। এই প্রভাবের ফলে জীবতন্তু টিস্যুতে B/A এর প্রভাব কমে যায়। এই শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অনেক ক্ষেত্রে জীব চিকিৎসাবিষয়ক আল্ট্রাসাউন্ডে উল্লেখযোগ্য হারমোনিক তৈরি হয়। এই হারমোনিক তৈরি ব্যবহার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ গড়ে উঠছে: *শব্দোত্তর তরঙ্গে রেকর্ড করা সংকেতে হারমোনিক উপাদান ব্যবহার। কারণ শব্দ তীব্রতা এবং সম্প্রসারণের দূরত্ব মূল লোবেই সবচেয়ে বেশি তাই হারমোনিক মূলত মূল লোবেই বেশি তৈরি হয় এবং সাইড লোবগুলোতে কম হয়। ফলে দ্বিতীয় হারমোনিক দ্বারা তৈরি বিমের দিকনির্দেশনা ক্ষমতা মূল কম্পাঙ্কর বিমের চেয়ে বেশি হয়। এতে ইমেজের মান উন্নত করা সম্ভব হয়।<ref name="Duck"/> *টিস্যুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে B/A প্যারামিটার ব্যবহার করে হারমোনিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ। [[অরৈখিকতার প্যারামিটার|অরৈখিক প্যারামিটার]] অনুযায়ী একই শব্দ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টিস্যুর B/A মান ভিন্ন হয়। এর ফলে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের হারমোনিক উপাদান টিস্যুর B/A মানের ভিত্তিতে চিত্র তৈরি করতে পারে। এই ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আছে, কারণ বর্তমান ইমেজিং প্রযুক্তি এখনো এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।<ref name="Duck_2010"/> == বহিঃসংযোগ == * [http://www.piezotechnologies.com/Resources/White-Papers.aspx মেডিকেল আল্ট্রাসনিক রূপান্তরক] == তথ্যসূত্র == {{reflist|refs= <ref name = "Pierce" >Pierce, A. D. 1989. Radiation from Sources Near and on Solid Surfaces. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name = "Pierce_sd" >Pierce, A. D. 1989. Scattering and Diffraction. In Acoustics : An Introduction to its Physical Principles and Applications. Woodbury, N.Y., Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Kinsler">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000.Radiation and Reception of Acoustic Waves. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Kinsler_rt">Kinsler, L. E., Frey, A. R., Coppens, A. B., Sanders, J. V. 2000. Reflection and Transmission. In Fundamentals of Acoustics. New York, Wiley.</ref> <ref name="Cheeke">Cheeke, J. D. N. 2002. Finite Beams, Radiation, Diffraction, and Scattering. In Fundamentals and Applications of Ultrasonic Waves. Boca Raton, CRC Press.</ref> <ref name="Cobbold">Cobbold, R. S. C. 2007. Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_ia">Cobbold, R. S. C. 2007. Ultrasound Imaging Arrays. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name="Cobbold_su">Cobbold, R. S. C. 2007. Scattering of Ultrasound. In Foundations of Biomedical Ultrasound. Nonlinear Ultrasonics. Oxford University Press.</ref> <ref name ="Duck">Duck, F. A. 2002. "Nonlinear Acoustics in Diagnostic Ultrasound." Ultrasound in Medicine & Biology 28(1).</ref> <ref name ="Wiki_sono">Wikipedia, 2010. "Medical Ultrasonography”</ref> <ref name="Kremkau">Kremkau, F. W. 2002. Diagnostic Ultrasound : Principles and Instruments. Philadelphia, W.B. Saunders</ref> <ref name="Hamilton">Hamilton, M. F., Blackstock, D. T. 2008. Sound Beams. In Nonlinear Acoustics. Melville, NY, Acoustical Society of America.</ref> <ref name="Duck_2010">Duck, F. 2010. Tissue non-linearity. Proceedings of the Institution of Mechanical Engineers, Part H: Journal of Engineering in Medicine 224(2).</ref> }} 6dbqmaec9y58i50fvevxosfsxpehyq2 ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain/খেলাঘর 2 25114 84883 83736 2025-06-19T04:17:49Z Md Mobashir Hossain 10853 84883 wikitext text/x-wiki ==১০০০ এর উপরে শব্দ== {| class="wikitable" |+ ! পৃষ্ঠা !! শব্দ সংখ্যা |- | [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/শব্দীয় গিটার]] || ২২৮৭ |- | [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/গতিবিদ্যার মৌলিক নীতিমালা]] || ১৯৩৭ |- | [[মানব শারীরতত্ত্ব/রক্ত শারীরতত্ত্ব]] || ৩৫৯৫ |- | [[কোয়ান্টাম জগৎ/সম্ভাব্যতা]] || ৪২৩৮ |- | [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/নিউটনের নিয়মের বিকল্প রূপ]] || ১০৯৫ |- | [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শব্দ]] || ১২২৮ |- | [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/আংশিক উৎপন্ন]] || ১৪৩৫ |- ! মোট || ১৬৪১৫ |} 4u0nxq5uqeqc46mtgvbf0bpjk3jc7st প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/পর্যালোচনা: ফাউন্ডেশন টপিকস গ্রুপ 0 25218 84885 78790 2025-06-19T05:43:39Z RDasgupta2020 8748 84885 wikitext text/x-wiki [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] সংগ্রহ/পাঠ্যপুস্তকের একাধিক অধ্যায়গুলি পর্যালোচনা করুন। ==কৌশল আলোচনা== প্রোগ্রামিং অধ্যয়নের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একটি কৌশল অনুসরন করা উচিত। আপনার পঠনপাঠনের পদ্ধতি ও বিষয় আয়ত্তকরনের কৌশল বিভিন্ন প্রশিক্ষকের ক্ষেত্রে আলাধা আলাধা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক পর্যালোচনার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলোর উপর ব্যবহার করেন: #বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা #স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক প্রশ্নাবলীর অনুশীলন, যেমন সত্য/মিথ্যা নির্বাচনকারী প্রশ্ন, বহু বিকল্প নির্বাচনী প্রশ্ন অথবা সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নের চর্চা #প্রোগ্রামিং -এর মাধ্যমে সমস্যাভিত্তিক প্রশ্নের সামাধান [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] -এই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন অংশে এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য এগুলো ভালোভাবে অনুশীলনের পরামর্শ দেওয়া হয়। #যদি আপনার অধ্যাপক বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা আছে কিনা তা যাচাই করার পরীক্ষা নেন এবং যার জন্য আপনি বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলি মুখস্থ রাখার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি পাঠ্যবইয়ের অ্যাপেনডিক্স অংশে থাকা <code>Study Habits that Build the Brain</code> শীর্ষক অংশের <code>"Using the Flash Card Activity"</code> অংশটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। সংজ্ঞাগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। #বইয়ের অনুশীলনী অংশের যেকোনো অনুশীলন দ্রুত পর্যালোচনা করুন। পাশাপাশি আপনি যেসব মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোর উত্তর পর্যালোচনা করুন এবং আপনি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর ভুল করেছেন, সেগুলোর কারণ ভালোভাবে বুঝে নিন। #যদি আপনার অধ্যাপক ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন যে তিনি পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশ থেকে বেশ কয়েকটি সমস্যা পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুমতি থাকলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন যাতে উত্তর আরও উন্নত করা যায়। পরীক্ষার আগে প্রতিটি সমস্যা ও তার উত্তর সামান্য সময় নিয়ে পর্যালোচনা করুন। ==বিবিধ বিষয়াবলী== লিঙ্ক:[https://legacy.cnx.org/content/m22418/latest/Manipulation_Data_Part_1.pdf ডেটা ম্যানিপুলেশন পার্ট ১] {{BookCat}} 6dfh1bfee6i901slsjtzgoqw4yw5gb4 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/প্রাক-কলম্বীয় 0 25246 84857 79134 2025-06-18T21:54:53Z Mehedi Abedin 7113 84857 wikitext text/x-wiki [[File:Kincaid Mounds Site aerial illustration HRoe 2019.jpg|thumb|প্রাক-কলম্বীয় যুগে কিনকেইড মাউন্ডস স্থানের শৈল্পিক কল্পচিত্র।]] আমেরিকায় মানব সভ্যতার সূচনা সম্ভবত শেষ বরফ যুগে হয়েছিল, যখন প্রাগৈতিহাসিক শিকারীরা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মাঝে একটি স্থলপথ পার হয়ে এসেছিল।<ref>{{cite news |last1=Gerszak |first1=Fen Montaigne,Jennie Rothenberg Gritz,Rafal |title=The Story of How Humans Came to the Americas Is Constantly Evolving |url=https://www.smithsonianmag.com/science-nature/how-humans-came-to-americas-180973739/ |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Magazine |language=en}}</ref> উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাগুলোর জটিলতা, প্রযুক্তি এবং সংহতির স্তর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত সমাজ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্কৃতিগুলো লেখার পদ্ধতি বিকাশ করেছিল, যা তাদের প্রসার ও আধিপত্য স্থাপনে সাহায্য করেছিল। তারা প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর কিছু গড়ে তোলে। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতিগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং কম ঐক্যবদ্ধ। উপজাতিই ছিল প্রধান সামাজিক একক এবং উপজাতিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে এক ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার দুর্গম মরু অঞ্চলে ইউরোপীয় শহরের সমান বড় উপজাতীয় বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ইতিহাসবিদদের পক্ষে এসব সংস্কৃতিকে একটি একক নামের অধীনে চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের জন্য কোনো অভিন্ন নাম ছিল না। প্রথমে ইউরোপীয়রা স্থানীয়দের "ইন্ডিয়ান" নামে ডাকত। এই নামটি এসেছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সেই ধারণা থেকে যে তিনি ভারত যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন।<ref name="indianname">{{cite web |title=American Indians and Native Americans |url=https://www.umass.edu/legal/derrico/shoshone/indian.html |website=www.umass.edu |accessdate=23 September 2020}}</ref> যদিও আমেরিগো ভেসপুচ্চি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমেরিকা আসলে ভারত নয়, তবুও "ইন্ডিয়ান" শব্দটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হত।<ref name="indianname"/> ১৯৬০-এর দশক থেকে "নেটিভ আমেরিকান" শব্দটি চালু হয়। তবে এটিও একটি সমস্যাযুক্ত শব্দ হতে পারে: "আমেরিকা" নামটি এসেছে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম থেকে, যিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে খুব সামান্য সম্পর্কিত ছিলেন।<ref name="indianname"/> "আমেরিকান ইন্ডিয়ান" শব্দটিও খুব সাধারণ একটি শব্দ, যা এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যাদের মধ্যে গায়ের রং এবং ইউরোপীয় ভাষা ব্যতিরেকে খুব বেশি মিল নেই। কানাডায় "ফার্স্ট পিপল" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই সব নামই আমেরিকার স্থানীয় জনগণের বৈচিত্র্য ও প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকা সম্পর্কে চলমান মতপার্থক্যকে তুলে ধরে, যা নিয়ে আজও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ==আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দারা== ===বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ=== [[Image:Map of gene flow in and out of Beringia.jpg|thumb|upright|আমেরিকাতে এশিয়া থেকে মানুষের আগমন দেখানো একটি মানচিত্র।]] আমেরিকার ইতিহাস শুরু হয়নি কলম্বাসের ১৪৯২ সালের আগমনের সঙ্গে। ইউরোপীয় প্রথম আগমনের অনেক আগেই আমেরিকা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।<ref name="landbridge">{{cite web |title=Migration of Humans into the Americas (c. 14,000 BCE) |url=https://www.science.smith.edu/climatelit/migration-of-humans-into-north-america/ |website=Climate Across Curriculum |accessdate=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০}}</ref> সভ্যতা শুরু হয়েছিল শেষ বরফযুগের সময়, প্রায় ১৫ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে।<ref name="landbridge"/> উত্তর দিকে বিশাল বরফের চাদর ছিল, ফলে সমুদ্রের স্তর অনেক নিচে নামছিল, যা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি ভূমিসেতু সৃষ্টি করেছিল।<ref name="landbridge"/> এটিই বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ নামে পরিচিত, দুটি বড় বরফের চাদরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা যা বর্তমান এলাস্কা থেকে আলবার্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সংযোগ ছিল।<ref name="landbridge"/> শিকারী পশুর ঝাঁক অনুসরণ করে নোমাডিক এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। একটি বিশেষ ধরনের তীরের সূচক পাওয়া গেছে যা প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল বর্তমান ক্লোভিস, নিউ মেক্সিকোর কাছে। উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত অনেক স্থানে বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাধারণ সমাধি প্রথার প্রমাণ পাওয়া যায়। ===ক্লোভিস মানুষ=== '''ক্লোভিস মানুষ''' উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। স্পষ্ট নয় যে তারা একক একটি গোত্র ছিল কি না, নাকি একই প্রযুক্তি ও বিশ্বাসবিশ্লেষণের অনেক গোত্র ছিল। তাদের প্রায় ২০০০ মাইলের কঠিন যাত্রা ছিল প্রাক-ইতিহাসের অন্যতম অসাধারণ কীর্তি। তাদের সংস্কৃতি প্রায় ১২,৯০০ বছর আগে হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণ নিয়ে বিস্তর ধারণা প্রচলিত। মেমথের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে একটি ধূমকেতুর প্রভাবে পরিবেশগত হঠাৎ পরিবর্তন বা বিশাল একটি মিষ্টি পানির হ্রদ, লেক অ্যাগাসিসের ভাঙ্গনের ফলে বন্যা আসার মত তত্ত্ব রয়েছে। ক্লোভিসের আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসতির বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষাবিজ্ঞান তুলনায় প্রমাণ মেলে যে প্রাচীন আমেরিকা একাধিক সমসাময়িক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কিছু জেনেটিক ও সময় নির্ধারণ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রাচীন আমেরিকানরা অন্য স্থান থেকেও আসতে পারে এবং ক্লোভিস সাইটের চেয়ে আগে এসেছিল। সম্ভবত কিছু প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূল বরাবর চলাচল করেছিল বা পলিনেশিয়ান দ্বীপ থেকে নৌকাযোগে এসেছিল। সময়ের সঙ্গে, এই প্রাচীন বসতি স্থাপনকারীরা কৃষিজীবনে পরিণত হয়েছিল, গৃহপালিত পশুপালনসহ। বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থায়ী গোত্রে পরিণত হয় এবং নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছিল, যা এতটাই আলাদা ছিল যে দূরবর্তী আত্মীয়রা একে অপরকে বুঝতে পারত না। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান — বিভিন্ন গোত্রের ভাষার অধ্যয়ন — বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখায়, শত শত মাইল দূরের গোত্রের মধ্যে মিল থাকলেও কাছাকাছি গোত্রের ভাষায় বড় পার্থক্য ছিল। কখনও কখনও কোনো গোত্র আঞ্চলিক গুরুত্ব লাভ করে আমেরিকার বড় বড় অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করত। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্রাজ্য উঠেছিল যা ইউরোপের সেরা সম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। তাদের সময়ের জন্য, এই সম্রাজ্যগুলো অত্যন্ত উন্নত ছিল। ==মেসোআমেরিকার প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত সভ্যতা হিসেবে পরিগণিত। মেসোআমেরিকায় পড়া ও লেখা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং এই সভ্যতাগুলি রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি ও স্থাপত্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। এইসব সভ্যতা এমন কিছু রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ অর্জন করেছিল যা তাদের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, অলঙ্কৃত ও জনবহুল নগরসমূহ নির্মাণে সক্ষম করে তোলে। ===মায়া=== [[File:Dintel 26 de Yachilán 3.jpg|thumb|মায়ারা ছিল এক উন্নত সভ্যতা, যারা শিল্পকলায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেছিল।]] আদিম আমেরিকানরা বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রায় ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ, '''মায়া''' সংস্কৃতি একটি জটিল সভ্যতায় পরিণত হয়। মায়ারা ইউকাটান নিম্নভূমিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক, শিল্প ও ধর্মীয় পরিচয় গঠন করে। 'ক্লাসিক যুগ' (২৫০-৯০০ খ্রি.)-এ মায়া সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং এটি অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সময়ে অনেক স্বাধীন নগর-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মায়া জনগণের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। মায়া সমাজ রাজনীতির মাধ্যমে নয়, বরং তাদের জটিল ও উচ্চতর ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত ছিল। মায়া ধর্ম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং তারা আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী ছিল। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সে সময়কার ইউরোপীয় সমাজগুলোর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। তারা সময় পরিমাপের জন্য একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং রাত্রিকালীন আকাশের চলাচল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল। শুক্র গ্রহকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিত, কারণ এটি উজ্জ্বলতম এবং সন্ধ্যা ও ভোর উভয় সময়ে দৃশ্যমান হতো। মায়া শিল্পকলা প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুসজ্জিত ও উন্নত বিবেচিত হয়। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে মায়া সংস্কৃতির পতন ঘটে। এর কারণ আজও গবেষণার বিষয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ে শিলালিপি ও স্থাপত্য নির্মাণের হ্রাস লক্ষ্য করেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মায়ারা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। একটি বিকেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা মায়াদের স্পেনীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আজও ইউকাটানে মায়া সংস্কৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, যদিও অনেক শিলালিপি হারিয়ে গেছে। ===আজটেক=== [[File:1479 Stein der fünften Sonne, sog. Aztekenkalender, Ollin Tonatiuh anagoria.JPG|thumb|আজটেক ক্যালেন্ডার পাথর]] '''আজটেক''' সংস্কৃতির উদ্ভব হয় মেক্সিকো উপত্যকায় মেক্সিকা জনগণের আগমনের মাধ্যমে। এই জনগোষ্ঠীর নেতারা আধিপত্যশীল জাতিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে আজটেক ত্রৈমিত্রি গড়ে তোলে এবং একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যা আজকের মেক্সিকোর অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজটেক কনফেডারেশন দখল ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলো দখল করে আজটেক সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। স্থানীয় নেতারা আজটেক সংস্কৃতি গ্রহণ ও প্রসারে মর্যাদা অর্জন করত। একইভাবে, আজটেকরা পরাজিত জাতিগুলোর সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় জ্ঞান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করত। আজটেক শক্তির কেন্দ্র ছিল অর্থনৈতিক ঐক্য। বিজিত অঞ্চলগুলি রাজধানী টেনোচটিটলানকে কর প্রদান করত, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটির অবস্থান। বিপুল পরিমাণ করের মাধ্যমে এই নগরটি প্রভাবশালী, জনবহুল ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৫২১ সালে স্পেনীয়দের আগমনের সময় এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ট্লাতেলোলকো নামের একসময়ের স্বাধীন শহর)। তখন এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২১২,৫০০। শহরটিতে ছিল ১৯৭ ফুট উঁচু টেম্পল ডি মেয়র, ৪৫টি সরকারি ভবন, একটি প্রাসাদ, দুটি চিড়িয়াখানা, একটি উদ্ভিদ উদ্যান ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। লেক টেক্সকোকোর অগভীর জলে ভেসে থাকা ‘চিনাম্পা’ নামক ভাসমান কৃষিক্ষেত্র ছিল শহরবাসীর খাদ্যের উৎস। যদিও অনেক মেসোআমেরিকান সভ্যতাই মানব বলিদান করত, আজটেকদের বলিদানের পরিমাণ ছিল তুলনাহীন। তাদের মতে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানব বলিদান অপরিহার্য ছিল। ১৪৮৭ সালে টেনোচটিটলানের প্রধান পিরামিড পুনর consecration-এর সময় তারা চার দিনে ৮৪,৪০০ জন বন্দিকে বলি দেয় বলে দাবি করে। স্পেনীয়রা টেনোচটিটলানে এসে আজটেক সংস্কৃতির পতন ঘটায়। শহরের বিশালতা তাদের চমকে দিলেও ব্যাপক মানব বলিদান ইউরোপীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সোনা-রূপার প্রাচুর্য তাদের লোভ উদ্রেক করে। জুন ১৫২০-এ তারা রাজা মন্টেজুমাকে হত্যা করে এবং ১৫২১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ত্লাসকালা জাতির সহযোগিতায় নগরটিতে অবরোধ সৃষ্টি করে ধ্বংস করে ফেলে। ===ইনকা=== [[Image:Peru_Machu_Picchu_Sunrise.jpg|thumb|upright|মাচু পিচু, "ইনকার হারানো শহর"]] প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান পেরুর কুসকো অঞ্চলে মানকো কাপাক নামক একজন সম্রাটের উত্থানের মাধ্যমে '''ইনকা''' সভ্যতার সূচনা হয়। ধর্ম ইনকাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। রাজপরিবার সূর্যদেবতার সন্তান হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে সম্রাটের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত, যা কেবল ঐতিহ্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকত। ইনকাদের অধীনে একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো ছিল — প্রতি দশজন নাগরিকের জন্য গড়ে একজন করে কর্মকর্তা থাকত। সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত; বার্তাবাহকরা গ্রাম থেকে গ্রামে দৌড়ে রাজকীয় বার্তা পৌঁছে দিত। ১৪৩৮ সালে পচাকুতি নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন, যিনি ইনকাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক বলে বিবেচিত। তিনি কুসকো ও সূর্য মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। তার কৌশলী সামরিক নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনৈতিক প্রচারণা ইনকাদের সাফল্যের ভিত্তি। তিনি বিজয়ী অঞ্চলগুলোর নেতাদের বিলাসদ্রব্য ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। ইনকারা একটি সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, যা ইনকা সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করত। ফলে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ইনকা সাম্রাজ্যের অনেক বিস্তার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫শ শতাব্দীর শেষদিকে ইনকা সাম্রাজ্য বর্তমান ইকুয়েডর থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কুসকো ছিল এর রাজধানী, যা স্পেনীয়দের মতে "স্পেনের যেকোনো শহরের সমান" ছিল। তবে ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর ছিল মাচু পিচু — একটি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল, যেটিকে ইনকারা তাদের নেতৃবৃন্দের বিশ্রামস্থল হিসেবে গড়ে তোলে। এখানে প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ করা হয়েছিল শুকনো পাথরের দেয়াল দিয়ে, যা এত নিখুঁতভাবে কাটানো ও বসানো যে, তার ফাঁকে একটি ছুরি ঢোকানো যায় না। স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় আগমন করে এবং ধীরে চলা অবরোধ যুদ্ধের তুলনায় তাদের আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তারা সম্রাটকে বন্দি করে হত্যা করে এবং ১৫৩৩ সালে ইনকা সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। তবে কিছু বিদ্রোহী পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং আরও ৩৯ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ===মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ=== মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ নিঃসন্দেহে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ সভ্যতা ছিল। মেসোআমেরিকায় লেখালেখির প্রচলন ছিল, যা উত্তর আমেরিকার তুলনায় এই সংস্কৃতিগুলোকে অনেক সহজে বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। প্রতিটি সভ্যতাই বিস্ময়কর নগর ব্যবস্থা ও জটিল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা ইউরোপীয় স্পেনীয়দের মতোই 'সভ্য' ছিল যারা ১৫শ ও ১৬শ শতকে তাদের দখল করে। ==দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== দক্ষিণ-পশ্চিমের শুষ্ক মরুভূমির সাথে স্থানীয় আমেরিকানরা খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র আবহাওয়ার একটি সময়কালে এই অঞ্চলের অনেক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সেচ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি এখানে গড়ে ওঠে। জটিল অ্যাডোবি ও বালুকাপাথরের ভবন নির্মিত হয়। অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও শৈল্পিক মাটির পাত্র তৈরি করা হয়। তবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া চিরকাল স্থায়ী হয়নি, এবং ধীরে ধীরে তা আবার এই অঞ্চলের সাধারণ খরার দিকে ফিরে যায়। এই শুষ্ক পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল মানুষকে সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে, এবং অবশেষে এই সংস্কৃতিগুলোর জটিল কৃতিত্ব পরিত্যক্ত হয়। ===আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান=== [[File:Mesaverde cliffpalace 20030914.752.jpg|thumb|আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের একটি স্থাপনা, ক্লিফ প্যালেস।]] একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ছিল '''আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান''', যারা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং তার আশেপাশের এলাকায় বাস করত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল সমতল শুষ্ক মরুভূমি, যা ছোট ছোট উঁচু মালভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেগুলোকে "মেসা" বলা হয়। এই মেসাগুলোর নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ক্যানিয়ন ও ওভারহ্যাং তৈরি করেছিল। আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি এই মেসাগুলোর ঢালের গুহার মতো ওভারহ্যাংকে অস্থায়ী বজ্রবৃষ্টিপূর্ণ ঝড় থেকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। তারা প্রাকৃতিক জলস্রোত ব্যবহার করে এবং বরফ গলার জলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেতের দিকে প্রবাহিত করে ভুট্টা, কুমড়ো ও শিম চাষ করত। ঋতুভিত্তিক ক্ষুদ্র নদীগুলি কাদামাটির স্তর সৃষ্টি করত। এই কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে ওঠত, যাকে অ্যাডোবি বলা হয়, এবং এটি বালুকাপাথরের সাথে মিশিয়ে জটিল স্থাপনা গড়ে তোলা হত, অনেক সময় সেগুলো মেসাগুলোর ওভারহ্যাংয়ের ওপরে থাকত। তারা মাটি দিয়ে সুন্দর ও কার্যকর পাত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিল। ৯০০ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিস্থিতি আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের বিকাশের সুযোগ দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিখুঁত হয়, মাটির পাত্র শৈল্পিক হয়ে ওঠে, টার্কি পোষ মানানো হয় এবং দীর্ঘ দূরত্বে বাণিজ্য সারা অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। এরপর আসে প্রায় ৩০০ বছরের দীর্ঘ খরা, যা "গ্রেট ড্রাউট" নামে পরিচিত। এই সময় পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি চাপে পড়ে এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত দূরে কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে শুষ্কতা থেকে বাঁচতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা ছড়িয়ে পড়ে; জটিল স্থাপনাগুলি ত্যাগ করে ছোট ছোট বসতিতে চলে যায় যেখানে অল্প জল পাওয়া যেত। ===হোহোকাম=== [[File:CasaGrandeRuin.jpg|thumb|কাসা গ্রান্দে ধ্বংসাবশেষ, আধুনিক ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত।]] উত্তরে আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতির পাশেই দক্ষিণ অ্যারিজোনায় একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে ওঠে, যাকে '''হোহোকাম''' বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক আদিবাসী সীমিত পরিসরে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার করলেও, হোহোকামরাই এই প্রযুক্তিকে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে (আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই)। ছোট কৃষিভূমিতে পানি প্রবাহিত করার ক্ষমতা হোহোকামদের তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে সত্য ছিল গিলা নদী উপত্যকায়, যেখানে নদীকে বহু স্থানে বিভক্ত করে উর্বর সমভূমি ও বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর সেচ করা হত। বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে একটি 'গ্রেট হাউস' থাকত, যা ছিল বড় একটি অ্যাডোবি/পাথরের কাঠামো। এর মধ্যে কিছু চার তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং সম্ভবত এটি প্রশাসনিক বা ধর্মীয় অভিজাতদের জন্য ব্যবহৃত হত। ছোট ছোট খননকৃত কক্ষ বা গর্ত অ্যাডোবি দেয়ালে ঘেরা থাকত এবং মূল আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। আরও ছোট কক্ষ বা গর্ত ছিল নানা কাজে ব্যবহৃত। সেচ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল বিশাল কাসা গ্রান্দে গ্রাম। দুটি প্রধান খালের মাঝখানে অবস্থিত এই স্থানটি প্রায় নয় দশক ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। মূল শহরটি একটি গ্রেট হাউসের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং এতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বৃত্তাকার চত্বর ছিল। দশম শতকের মধ্যে আশেপাশে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং একটি বৃহৎ, উন্নত অঞ্চল তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালের একটি খননের ফলে কাসা গ্রান্দে এলাকার পরিমাণ বোঝা যায়। সেই প্রকল্পে ২৪৭টি পিট হাউস, ২৭টি পিট রুম, ৮৬৬টি গর্ত, ১১টি ছোট খাল, একটি বল কোর্ট এবং চারটি অ্যাডোবি প্রাচীরবিশিষ্ট চত্বরের অংশ চিহ্নিত করা হয়। হোহোকাম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে যখন খরার কারণে খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেয়। একটি ছোট বাধা বা খালের ধস পুরো সেচ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করত। বড় শহর এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ত্যাগ করে এবং পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। ==মিসিসিপির প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== [[File:Serpent Mound (aerial view).jpg|thumb|upright|দ্য গ্রেট সার্পেন্ট মাউন্ড]] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মহাদেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা উত্তর আমেরিকার ইতিহাসের শুরুতে মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো আরও স্তরবিন্যাসযুক্ত হয়ে ওঠে এবং উপজাতিতে পরিণত হয়। এই উপজাতিগুলো দীর্ঘ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করত। বাণিজ্য পথের গুরুত্ব প্রভাবশালী নগর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণ ছিল উত্তর আমেরিকায় উদ্ভূত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের আশেপাশে এই সংস্কৃতিগুলোর বিকাশ ঘটে, যারা ধর্মীয় ও সমাধি উদ্দেশ্যে মাউন্ড ব্যবহার করত। এই মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণকে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলোর স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্ম ও নিদর্শন বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সমাধি মাউন্ড ছিল এই সকল সমাজের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। এই বৃহৎ কাঠামোগুলো তৈরি হতো সাবধানে নির্বাচিত মাটি ঝুড়িতে করে এনে স্তূপীকরণ করে। মাউন্ডগুলো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হতো, যার উপরের অংশ চ্যাপ্টা করা থাকত। কখনও কখনও এর উপরে ছোট ছোট কাঠামো নির্মিত হতো। কিছু মাউন্ড অত্যন্ত বিশাল। বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্যানহ্যান্ডলে অবস্থিত গ্রেভ ক্রিক মাউন্ড প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ৩০০ ফুট ব্যাসযুক্ত। অন্যান্য মাউন্ডগুলোকে খগোলীয় ঘটনাবলির (যেমন দিবসূত্র ও বিষুব) সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো আকার ও গুরুত্বে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। প্রথম সংস্কৃতি ছিল '''অ্যাডেনা''', যারা বর্তমান দক্ষিণ ওহাইও এবং আশেপাশের এলাকায় বাস করত। পরবর্তী সংস্কৃতিগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিস্ময়কর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে একে অপরকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। '''হোপওয়েল''' আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চলের জনগণ। এ সময়ে এই জাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা দেয়। এই সংগঠন উপজাতি গঠনের পূর্ববর্তী রূপ, যা পরবর্তীকালে পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ছিল '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো সামাজিক জটিলতায় পরিণত হয়, যা রোম-পরবর্তী ও উপজাতিগত ইংল্যান্ডের (একত্রীকরণের পূর্ববর্তী) সমাজ কাঠামোর সাথে তুলনীয়। মাউন্ড সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু বসতিতে বৃহৎ মাউন্ড কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। মাউন্ডের উপর প্রায়শই কাঠামো নির্মিত হতো। সামাজিক অসমতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যেমন দাসত্ব ও মানব বলিদান। কাহোকিয়া, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের কাছে অবস্থিত, ছিল একটি প্রভাবশালী ও উচ্চপর্যায়ের উন্নত সমাজ। বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গ্রেট লেকস থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাহোকিয়া ছিল মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এবং এই সংস্কৃতির বৃহত্তম বসতি। এই বসতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্মীয় মাউন্ড '''মঙ্ক’স মাউন্ড'''। এটি ছিল মাউন্ড নির্মাণকারীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মাউন্ড, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯০০ ফুট। মঙ্ক’স মাউন্ডের উপরে খননকাজে একটি বৃহৎ কাঠামোর প্রমাণ পাওয়া গেছে — সম্ভবত এটি একটি মন্দির — যা সমগ্র শহর থেকে দেখা যেত। শহরটি মাউন্ডটির দক্ষিণে একটি বিস্তৃত সমতলে বিস্তৃত ছিল। [[Image:Monks Mound in July.JPG|thumb|কোলিনসভিল, ইলিনয়ের কাছে অবস্থিত কাহোকিয়া সাইটে ম Monk's Mound]] শহরটির মূল অংশে শহরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ১২০টি মাউন্ড ছিল। এই মাউন্ডগুলো কয়েকটি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব অর্থ ও কার্যকারিতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। মঙ্ক’স মাউন্ডের নিকটবর্তী একটি খুঁটির বৃত্ত বহু খগোলীয় ঘটনার (যেমন ঋতু পরিবর্তন) চিহ্ন নির্দেশ করে। শহরটি একটি হীরার মত বিন্যাসে বিস্তৃত ছিল, যার ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৫ মাইল। এর সর্বোচ্চ অবস্থায়, শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ — যা একে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম শহর করে তোলে। সম্ভবত '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দ্বারা আনা ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন গুটিবসন্তের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নগর এলাকাগুলো এইসব রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল ছিল, এবং কাহোকিয়া ১৫০০ সালের দশকে পরিত্যক্ত হয়। উপজাতিগুলোর ছত্রভঙ্গের ফলে মাউন্ড নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং অনেক মাউন্ড ইউরোপীয়রা পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। ==ইউরোপীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ== ===মহামারী=== [[File:Acuna-Soto EID-v8n4p360 Fig1.png|thumb|মেক্সিকোর জনসংখ্যার গ্রাফ, যেখানে প্রধান মহামারীগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।]] উত্তর আমেরিকার অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে ইউরোপীয় যোগাযোগ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্ত ভারতীয় জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি ছিল ভাইরাসজনিত রোগ ও মহামারীর সূচনা।<ref>{{cite web |title=Conclusion :: U.S. History |url=https://www.dhr.history.vt.edu/modules/us/mod01_pop/conclusion.html |website=www.dhr.history.vt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Columbian Exchange |url=https://cla.umn.edu/ihrc/news-events/other/columbian-exchange |access-date=26 December 2020 |work=Immigration History Research Center College of Liberal Arts |date=16 June 2015 |language=en}}</ref> গুটি বসন্ত সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি ছিল। সংক্রামিত আদিবাসীরা ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক সাক্ষাতের পরই অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অনুমান করা হয় যে প্রথম সংস্পর্শের পর প্রায় ৯০% আদিবাসী ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায়।<ref>{{cite web |title=Guns Germs & Steel: Variables. Smallpox PBS |url=https://www.pbs.org/gunsgermssteel/variables/smallpox.html |website=www.pbs.org |access-date=26 December 2020}}</ref> এর প্রভাব অনেক শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শহরাঞ্চল এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং আদিবাসী সংস্কৃতি তখন আরও বিচ্ছিন্ন, কম ঐক্যবদ্ধ এবং একটি নতুন আন্ত-গোষ্ঠীগত যুদ্ধের রূপ নেয়, কারণ একেকটি গোষ্ঠী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকারভুক্ত সম্পদের উপর দখল নিতে চেষ্টা করে। ===কলম্বীয় বিনিময়=== অন্যদিকে, ইউরোপীয়রা আক্রমণাত্মক গাছপালা ও প্রাণী এনেছিল।<ref>{{cite web |title=APWG: Background Information |url=https://cybercemetery.unt.edu/archive/nisic/20110630090151/http://www.nps.gov/plants/alien/bkgd.htm |website=cybercemetery.unt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Escape of the invasives: Top six invasive plant species in the United States |url=https://www.si.edu/stories/escape-invasives |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Institution |language=en}}</ref> ঘোড়া আবার আমেরিকায় আনা হয়েছিল<ref>{{cite web |title=History of Horses in America |url=https://www.belrea.edu/a-history-of-horses-in-america/ |website=www.belrea.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> (কারণ প্রাচীন কালে বেরিং স্থলসেতু দিয়ে আসা আমেরিকান বন্য ঘোড়ার প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এবং তা দ্রুত বিস্তৃত বৃহৎ প্রেইরিতে মুক্তভাবে বিচরণে অভিযোজিত হয়। যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলি দ্রুত ঘোড়ার মূল্য অনুধাবন করে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;<ref>{{cite web |title=Wealth & Status A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/wealth.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> যার ফলে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়।<ref>{{cite web |title=Warfare A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/warfare.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> ইউরোপীয়রা গাছপালা ও প্রাণী নিয়ে আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছপালা যেমন ভুট্টা, আলু ও টমেটো নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।<ref>{{cite web |title=Columbian Exchange (1492-1800) |url=https://mypages.unh.edu/hoslac/book/columbian-exchange-1492-1800 |access-date=26 December 2020 |language=en}}</ref> == পর্যালোচনা প্রশ্ন == ১. আমেরিকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের জন্য দুটি নাম উল্লেখ করুন, এবং প্রতিটি নামের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন। ২. ইনকা, মায়া ও অ্যাজটেক সংস্কৃতির কী কী প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে? ৩. দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের উত্থান ও পতনে আবহাওয়াগত কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছিল? == সূত্র == {{Reflist}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} {{chapnav|ভূমিকা|ইউরোপীয় ইতিহাস}} aeajuvwo7tzaubchz1xf7eufkjuk1nl 84858 84857 2025-06-18T21:58:53Z Mehedi Abedin 7113 84858 wikitext text/x-wiki [[File:Kincaid Mounds Site aerial illustration HRoe 2019.jpg|thumb|প্রাক-কলম্বীয় যুগে কিনকেইড মাউন্ডস স্থানের শৈল্পিক কল্পচিত্র।]] আমেরিকায় মানব সভ্যতার সূচনা সম্ভবত শেষ বরফ যুগে হয়েছিল, যখন প্রাগৈতিহাসিক শিকারীরা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মাঝে একটি স্থলপথ পার হয়ে এসেছিল।<ref>{{cite news |last1=Gerszak |first1=Fen Montaigne,Jennie Rothenberg Gritz,Rafal |title=The Story of How Humans Came to the Americas Is Constantly Evolving |url=https://www.smithsonianmag.com/science-nature/how-humans-came-to-americas-180973739/ |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Magazine |language=en}}</ref> উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাগুলোর জটিলতা, প্রযুক্তি এবং সংহতির স্তর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত সমাজ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্কৃতিগুলো লেখার পদ্ধতি বিকাশ করেছিল, যা তাদের প্রসার ও আধিপত্য স্থাপনে সাহায্য করেছিল। তারা প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর কিছু গড়ে তোলে। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতিগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং কম ঐক্যবদ্ধ। উপজাতিই ছিল প্রধান সামাজিক একক এবং উপজাতিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে এক ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার দুর্গম মরু অঞ্চলে ইউরোপীয় শহরের সমান বড় উপজাতীয় বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ইতিহাসবিদদের পক্ষে এসব সংস্কৃতিকে একটি একক নামের অধীনে চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের জন্য কোনো অভিন্ন নাম ছিল না। প্রথমে ইউরোপীয়রা স্থানীয়দের "ইন্ডিয়ান" নামে ডাকত। এই নামটি এসেছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সেই ধারণা থেকে যে তিনি ভারত যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন।<ref name="indianname">{{cite web |title=American Indians and Native Americans |url=https://www.umass.edu/legal/derrico/shoshone/indian.html |website=www.umass.edu |accessdate=23 September 2020}}</ref> যদিও আমেরিগো ভেসপুচ্চি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমেরিকা আসলে ভারত নয়, তবুও "ইন্ডিয়ান" শব্দটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হত।<ref name="indianname"/> ১৯৬০-এর দশক থেকে "নেটিভ আমেরিকান" শব্দটি চালু হয়। তবে এটিও একটি সমস্যাযুক্ত শব্দ হতে পারে: "আমেরিকা" নামটি এসেছে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম থেকে, যিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে খুব সামান্য সম্পর্কিত ছিলেন।<ref name="indianname"/> "আমেরিকান ইন্ডিয়ান" শব্দটিও খুব সাধারণ একটি শব্দ, যা এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যাদের মধ্যে গায়ের রং এবং ইউরোপীয় ভাষা ব্যতিরেকে খুব বেশি মিল নেই। কানাডায় "ফার্স্ট পিপল" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই সব নামই আমেরিকার স্থানীয় জনগণের বৈচিত্র্য ও প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকা সম্পর্কে চলমান মতপার্থক্যকে তুলে ধরে, যা নিয়ে আজও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ==আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা== ===বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ=== [[Image:Map of gene flow in and out of Beringia.jpg|thumb|upright|আমেরিকাতে এশিয়া থেকে মানুষের আগমন দেখানো একটি মানচিত্র।]] কলম্বাসের ১৪৯২ সালের আগমনের পর আমেরিকার ইতিহাস শুরু হয়নি। ইউরোপীয়দের প্রথম আগমনের অনেক আগেই আমেরিকা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।<ref name="landbridge">{{cite web |title=Migration of Humans into the Americas (c. 14,000 BCE) |url=https://www.science.smith.edu/climatelit/migration-of-humans-into-north-america/ |website=Climate Across Curriculum |accessdate=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০}}</ref> এর সভ্যতা শুরু হয়েছিল শেষ বরফযুগের সময়, প্রায় ১৫ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে।<ref name="landbridge"/> উত্তর দিকে বিশাল বরফের চাদর ছিল, ফলে সমুদ্রের স্তর অনেক নিচে নামছিল, যা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি ভূমিসেতু সৃষ্টি করেছিল।<ref name="landbridge"/> দুটি বড় বরফের চাদরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গাই বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ নামে পরিচিত, যা বর্তমান এলাস্কা থেকে আলবার্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সংযোগ ছিল।<ref name="landbridge"/> শিকারী পশুর ঝাঁক অনুসরণ করে যাযাবর এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। একটি বিশেষ ধরনের তীরের সূচক পাওয়া গেছে যা প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল বর্তমান ক্লোভিস, নিউ মেক্সিকোর কাছে। উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত অনেক স্থানে বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাধারণ সমাধি প্রথার প্রমাণ পাওয়া যায়। ===ক্লোভিস মানুষ=== '''ক্লোভিস মানুষ''' উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। স্পষ্ট নয় যে তারা একক একটি গোত্র ছিল কি না, নাকি একই প্রযুক্তি ও বিশ্বাসবিশ্লেষণের অনেক গোত্র ছিল। তাদের প্রায় ২০০০ মাইলের কঠিন যাত্রা ছিল প্রাক-ইতিহাসের অন্যতম অসাধারণ কীর্তি। তাদের সংস্কৃতি প্রায় ১২,৯০০ বছর আগে হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণ নিয়ে বিস্তর ধারণা প্রচলিত। মেমথের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে একটি ধূমকেতুর প্রভাবে পরিবেশগত হঠাৎ পরিবর্তন বা বিশাল একটি মিষ্টি পানির হ্রদ লেক অ্যাগাসিসের ভাঙ্গনের ফলে বন্যা আসার মত তত্ত্ব রয়েছে। ক্লোভিসের আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসতির বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষাবিজ্ঞান তুলনায় প্রমাণ মেলে যে প্রাচীন আমেরিকা একাধিক সমসাময়িক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কিছু জেনেটিক ও সময় নির্ধারণ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রাচীন আমেরিকানরা অন্য স্থান থেকেও আসতে পারে এবং ক্লোভিস সাইটের চেয়ে আগে এসেছিল। সম্ভবত কিছু প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূল বরাবর চলাচল করেছিল বা পলিনেশীয় দ্বীপ থেকে নৌকাযোগে এসেছিল। সময়ের সঙ্গে এই প্রাচীন বসতি স্থাপনকারীরা গৃহপালিত পশুপালনসহ কৃষিজীবনে পা রেখেছিল। বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থায়ী গোত্রে পরিণত হয় এবং নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছিল, যা এতটাই আলাদা ছিল যে দূরবর্তী আত্মীয়রা একে অপরকে বুঝতে পারত না। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বা বিভিন্ন গোত্রের ভাষার অধ্যয়ন বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখায়, শত শত মাইল দূরের গোত্রের মধ্যে মিল থাকলেও কাছাকাছি গোত্রের ভাষায় বড় পার্থক্য ছিল। কখনও কখনও কোনো গোত্র আঞ্চলিক গুরুত্ব লাভ করে আমেরিকার বড় বড় অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করত। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্রাজ্য উঠেছিল যা ইউরোপের সেরা সম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। তাদের সময়ের জন্য এই সম্রাজ্যগুলো অত্যন্ত উন্নত ছিল। ==মেসোআমেরিকার প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত সভ্যতা হিসেবে পরিগণিত। মেসোআমেরিকায় পড়া ও লেখা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং এই সভ্যতাগুলি রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি ও স্থাপত্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। এইসব সভ্যতা এমন কিছু রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ অর্জন করেছিল যা তাদের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, অলঙ্কৃত ও জনবহুল নগরসমূহ নির্মাণে সক্ষম করে তোলে। ===মায়া=== [[File:Dintel 26 de Yachilán 3.jpg|thumb|মায়ারা ছিল এক উন্নত সভ্যতা, যারা শিল্পকলায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেছিল।]] আদিম আমেরিকানরা বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রায় ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ, '''মায়া''' সংস্কৃতি একটি জটিল সভ্যতায় পরিণত হয়। মায়ারা ইউকাটান নিম্নভূমিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক, শিল্প ও ধর্মীয় পরিচয় গঠন করে। 'ক্লাসিক যুগ' (২৫০-৯০০ খ্রি.)-এ মায়া সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং এটি অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সময়ে অনেক স্বাধীন নগর-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মায়া জনগণের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। মায়া সমাজ রাজনীতির মাধ্যমে নয়, বরং তাদের জটিল ও উচ্চতর ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত ছিল। মায়া ধর্ম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং তারা আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী ছিল। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সে সময়কার ইউরোপীয় সমাজগুলোর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। তারা সময় পরিমাপের জন্য একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং রাত্রিকালীন আকাশের চলাচল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল। শুক্র গ্রহকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিত, কারণ এটি উজ্জ্বলতম এবং সন্ধ্যা ও ভোর উভয় সময়ে দৃশ্যমান হতো। মায়া শিল্পকলা প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুসজ্জিত ও উন্নত বিবেচিত হয়। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে মায়া সংস্কৃতির পতন ঘটে। এর কারণ আজও গবেষণার বিষয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ে শিলালিপি ও স্থাপত্য নির্মাণের হ্রাস লক্ষ্য করেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মায়ারা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। একটি বিকেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা মায়াদের স্পেনীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আজও ইউকাটানে মায়া সংস্কৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, যদিও অনেক শিলালিপি হারিয়ে গেছে। ===আজটেক=== [[File:1479 Stein der fünften Sonne, sog. Aztekenkalender, Ollin Tonatiuh anagoria.JPG|thumb|আজটেক ক্যালেন্ডার পাথর]] '''আজটেক''' সংস্কৃতির উদ্ভব হয় মেক্সিকো উপত্যকায় মেক্সিকা জনগণের আগমনের মাধ্যমে। এই জনগোষ্ঠীর নেতারা আধিপত্যশীল জাতিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে আজটেক ত্রৈমিত্রি গড়ে তোলে এবং একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যা আজকের মেক্সিকোর অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজটেক কনফেডারেশন দখল ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলো দখল করে আজটেক সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। স্থানীয় নেতারা আজটেক সংস্কৃতি গ্রহণ ও প্রসারে মর্যাদা অর্জন করত। একইভাবে, আজটেকরা পরাজিত জাতিগুলোর সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় জ্ঞান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করত। আজটেক শক্তির কেন্দ্র ছিল অর্থনৈতিক ঐক্য। বিজিত অঞ্চলগুলি রাজধানী টেনোচটিটলানকে কর প্রদান করত, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটির অবস্থান। বিপুল পরিমাণ করের মাধ্যমে এই নগরটি প্রভাবশালী, জনবহুল ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৫২১ সালে স্পেনীয়দের আগমনের সময় এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ট্লাতেলোলকো নামের একসময়ের স্বাধীন শহর)। তখন এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২১২,৫০০। শহরটিতে ছিল ১৯৭ ফুট উঁচু টেম্পল ডি মেয়র, ৪৫টি সরকারি ভবন, একটি প্রাসাদ, দুটি চিড়িয়াখানা, একটি উদ্ভিদ উদ্যান ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। লেক টেক্সকোকোর অগভীর জলে ভেসে থাকা ‘চিনাম্পা’ নামক ভাসমান কৃষিক্ষেত্র ছিল শহরবাসীর খাদ্যের উৎস। যদিও অনেক মেসোআমেরিকান সভ্যতাই মানব বলিদান করত, আজটেকদের বলিদানের পরিমাণ ছিল তুলনাহীন। তাদের মতে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানব বলিদান অপরিহার্য ছিল। ১৪৮৭ সালে টেনোচটিটলানের প্রধান পিরামিড পুনর consecration-এর সময় তারা চার দিনে ৮৪,৪০০ জন বন্দিকে বলি দেয় বলে দাবি করে। স্পেনীয়রা টেনোচটিটলানে এসে আজটেক সংস্কৃতির পতন ঘটায়। শহরের বিশালতা তাদের চমকে দিলেও ব্যাপক মানব বলিদান ইউরোপীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সোনা-রূপার প্রাচুর্য তাদের লোভ উদ্রেক করে। জুন ১৫২০-এ তারা রাজা মন্টেজুমাকে হত্যা করে এবং ১৫২১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ত্লাসকালা জাতির সহযোগিতায় নগরটিতে অবরোধ সৃষ্টি করে ধ্বংস করে ফেলে। ===ইনকা=== [[Image:Peru_Machu_Picchu_Sunrise.jpg|thumb|upright|মাচু পিচু, "ইনকার হারানো শহর"]] প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান পেরুর কুসকো অঞ্চলে মানকো কাপাক নামক একজন সম্রাটের উত্থানের মাধ্যমে '''ইনকা''' সভ্যতার সূচনা হয়। ধর্ম ইনকাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। রাজপরিবার সূর্যদেবতার সন্তান হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে সম্রাটের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত, যা কেবল ঐতিহ্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকত। ইনকাদের অধীনে একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো ছিল — প্রতি দশজন নাগরিকের জন্য গড়ে একজন করে কর্মকর্তা থাকত। সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত; বার্তাবাহকরা গ্রাম থেকে গ্রামে দৌড়ে রাজকীয় বার্তা পৌঁছে দিত। ১৪৩৮ সালে পচাকুতি নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন, যিনি ইনকাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক বলে বিবেচিত। তিনি কুসকো ও সূর্য মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। তার কৌশলী সামরিক নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনৈতিক প্রচারণা ইনকাদের সাফল্যের ভিত্তি। তিনি বিজয়ী অঞ্চলগুলোর নেতাদের বিলাসদ্রব্য ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। ইনকারা একটি সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, যা ইনকা সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করত। ফলে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ইনকা সাম্রাজ্যের অনেক বিস্তার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫শ শতাব্দীর শেষদিকে ইনকা সাম্রাজ্য বর্তমান ইকুয়েডর থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কুসকো ছিল এর রাজধানী, যা স্পেনীয়দের মতে "স্পেনের যেকোনো শহরের সমান" ছিল। তবে ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর ছিল মাচু পিচু — একটি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল, যেটিকে ইনকারা তাদের নেতৃবৃন্দের বিশ্রামস্থল হিসেবে গড়ে তোলে। এখানে প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ করা হয়েছিল শুকনো পাথরের দেয়াল দিয়ে, যা এত নিখুঁতভাবে কাটানো ও বসানো যে, তার ফাঁকে একটি ছুরি ঢোকানো যায় না। স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় আগমন করে এবং ধীরে চলা অবরোধ যুদ্ধের তুলনায় তাদের আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তারা সম্রাটকে বন্দি করে হত্যা করে এবং ১৫৩৩ সালে ইনকা সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। তবে কিছু বিদ্রোহী পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং আরও ৩৯ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ===মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ=== মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ নিঃসন্দেহে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ সভ্যতা ছিল। মেসোআমেরিকায় লেখালেখির প্রচলন ছিল, যা উত্তর আমেরিকার তুলনায় এই সংস্কৃতিগুলোকে অনেক সহজে বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। প্রতিটি সভ্যতাই বিস্ময়কর নগর ব্যবস্থা ও জটিল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা ইউরোপীয় স্পেনীয়দের মতোই 'সভ্য' ছিল যারা ১৫শ ও ১৬শ শতকে তাদের দখল করে। ==দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== দক্ষিণ-পশ্চিমের শুষ্ক মরুভূমির সাথে স্থানীয় আমেরিকানরা খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র আবহাওয়ার একটি সময়কালে এই অঞ্চলের অনেক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সেচ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি এখানে গড়ে ওঠে। জটিল অ্যাডোবি ও বালুকাপাথরের ভবন নির্মিত হয়। অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও শৈল্পিক মাটির পাত্র তৈরি করা হয়। তবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া চিরকাল স্থায়ী হয়নি, এবং ধীরে ধীরে তা আবার এই অঞ্চলের সাধারণ খরার দিকে ফিরে যায়। এই শুষ্ক পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল মানুষকে সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে, এবং অবশেষে এই সংস্কৃতিগুলোর জটিল কৃতিত্ব পরিত্যক্ত হয়। ===আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান=== [[File:Mesaverde cliffpalace 20030914.752.jpg|thumb|আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের একটি স্থাপনা, ক্লিফ প্যালেস।]] একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ছিল '''আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান''', যারা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং তার আশেপাশের এলাকায় বাস করত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল সমতল শুষ্ক মরুভূমি, যা ছোট ছোট উঁচু মালভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেগুলোকে "মেসা" বলা হয়। এই মেসাগুলোর নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ক্যানিয়ন ও ওভারহ্যাং তৈরি করেছিল। আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি এই মেসাগুলোর ঢালের গুহার মতো ওভারহ্যাংকে অস্থায়ী বজ্রবৃষ্টিপূর্ণ ঝড় থেকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। তারা প্রাকৃতিক জলস্রোত ব্যবহার করে এবং বরফ গলার জলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেতের দিকে প্রবাহিত করে ভুট্টা, কুমড়ো ও শিম চাষ করত। ঋতুভিত্তিক ক্ষুদ্র নদীগুলি কাদামাটির স্তর সৃষ্টি করত। এই কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে ওঠত, যাকে অ্যাডোবি বলা হয়, এবং এটি বালুকাপাথরের সাথে মিশিয়ে জটিল স্থাপনা গড়ে তোলা হত, অনেক সময় সেগুলো মেসাগুলোর ওভারহ্যাংয়ের ওপরে থাকত। তারা মাটি দিয়ে সুন্দর ও কার্যকর পাত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিল। ৯০০ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিস্থিতি আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের বিকাশের সুযোগ দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিখুঁত হয়, মাটির পাত্র শৈল্পিক হয়ে ওঠে, টার্কি পোষ মানানো হয় এবং দীর্ঘ দূরত্বে বাণিজ্য সারা অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। এরপর আসে প্রায় ৩০০ বছরের দীর্ঘ খরা, যা "গ্রেট ড্রাউট" নামে পরিচিত। এই সময় পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি চাপে পড়ে এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত দূরে কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে শুষ্কতা থেকে বাঁচতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা ছড়িয়ে পড়ে; জটিল স্থাপনাগুলি ত্যাগ করে ছোট ছোট বসতিতে চলে যায় যেখানে অল্প জল পাওয়া যেত। ===হোহোকাম=== [[File:CasaGrandeRuin.jpg|thumb|কাসা গ্রান্দে ধ্বংসাবশেষ, আধুনিক ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত।]] উত্তরে আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতির পাশেই দক্ষিণ অ্যারিজোনায় একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে ওঠে, যাকে '''হোহোকাম''' বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক আদিবাসী সীমিত পরিসরে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার করলেও, হোহোকামরাই এই প্রযুক্তিকে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে (আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই)। ছোট কৃষিভূমিতে পানি প্রবাহিত করার ক্ষমতা হোহোকামদের তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে সত্য ছিল গিলা নদী উপত্যকায়, যেখানে নদীকে বহু স্থানে বিভক্ত করে উর্বর সমভূমি ও বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর সেচ করা হত। বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে একটি 'গ্রেট হাউস' থাকত, যা ছিল বড় একটি অ্যাডোবি/পাথরের কাঠামো। এর মধ্যে কিছু চার তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং সম্ভবত এটি প্রশাসনিক বা ধর্মীয় অভিজাতদের জন্য ব্যবহৃত হত। ছোট ছোট খননকৃত কক্ষ বা গর্ত অ্যাডোবি দেয়ালে ঘেরা থাকত এবং মূল আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। আরও ছোট কক্ষ বা গর্ত ছিল নানা কাজে ব্যবহৃত। সেচ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল বিশাল কাসা গ্রান্দে গ্রাম। দুটি প্রধান খালের মাঝখানে অবস্থিত এই স্থানটি প্রায় নয় দশক ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। মূল শহরটি একটি গ্রেট হাউসের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং এতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বৃত্তাকার চত্বর ছিল। দশম শতকের মধ্যে আশেপাশে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং একটি বৃহৎ, উন্নত অঞ্চল তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালের একটি খননের ফলে কাসা গ্রান্দে এলাকার পরিমাণ বোঝা যায়। সেই প্রকল্পে ২৪৭টি পিট হাউস, ২৭টি পিট রুম, ৮৬৬টি গর্ত, ১১টি ছোট খাল, একটি বল কোর্ট এবং চারটি অ্যাডোবি প্রাচীরবিশিষ্ট চত্বরের অংশ চিহ্নিত করা হয়। হোহোকাম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে যখন খরার কারণে খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেয়। একটি ছোট বাধা বা খালের ধস পুরো সেচ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করত। বড় শহর এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ত্যাগ করে এবং পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। ==মিসিসিপির প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== [[File:Serpent Mound (aerial view).jpg|thumb|upright|দ্য গ্রেট সার্পেন্ট মাউন্ড]] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মহাদেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা উত্তর আমেরিকার ইতিহাসের শুরুতে মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো আরও স্তরবিন্যাসযুক্ত হয়ে ওঠে এবং উপজাতিতে পরিণত হয়। এই উপজাতিগুলো দীর্ঘ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করত। বাণিজ্য পথের গুরুত্ব প্রভাবশালী নগর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণ ছিল উত্তর আমেরিকায় উদ্ভূত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের আশেপাশে এই সংস্কৃতিগুলোর বিকাশ ঘটে, যারা ধর্মীয় ও সমাধি উদ্দেশ্যে মাউন্ড ব্যবহার করত। এই মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণকে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলোর স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্ম ও নিদর্শন বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সমাধি মাউন্ড ছিল এই সকল সমাজের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। এই বৃহৎ কাঠামোগুলো তৈরি হতো সাবধানে নির্বাচিত মাটি ঝুড়িতে করে এনে স্তূপীকরণ করে। মাউন্ডগুলো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হতো, যার উপরের অংশ চ্যাপ্টা করা থাকত। কখনও কখনও এর উপরে ছোট ছোট কাঠামো নির্মিত হতো। কিছু মাউন্ড অত্যন্ত বিশাল। বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্যানহ্যান্ডলে অবস্থিত গ্রেভ ক্রিক মাউন্ড প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ৩০০ ফুট ব্যাসযুক্ত। অন্যান্য মাউন্ডগুলোকে খগোলীয় ঘটনাবলির (যেমন দিবসূত্র ও বিষুব) সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো আকার ও গুরুত্বে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। প্রথম সংস্কৃতি ছিল '''অ্যাডেনা''', যারা বর্তমান দক্ষিণ ওহাইও এবং আশেপাশের এলাকায় বাস করত। পরবর্তী সংস্কৃতিগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিস্ময়কর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে একে অপরকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। '''হোপওয়েল''' আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চলের জনগণ। এ সময়ে এই জাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা দেয়। এই সংগঠন উপজাতি গঠনের পূর্ববর্তী রূপ, যা পরবর্তীকালে পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ছিল '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো সামাজিক জটিলতায় পরিণত হয়, যা রোম-পরবর্তী ও উপজাতিগত ইংল্যান্ডের (একত্রীকরণের পূর্ববর্তী) সমাজ কাঠামোর সাথে তুলনীয়। মাউন্ড সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু বসতিতে বৃহৎ মাউন্ড কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। মাউন্ডের উপর প্রায়শই কাঠামো নির্মিত হতো। সামাজিক অসমতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যেমন দাসত্ব ও মানব বলিদান। কাহোকিয়া, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের কাছে অবস্থিত, ছিল একটি প্রভাবশালী ও উচ্চপর্যায়ের উন্নত সমাজ। বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গ্রেট লেকস থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাহোকিয়া ছিল মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এবং এই সংস্কৃতির বৃহত্তম বসতি। এই বসতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্মীয় মাউন্ড '''মঙ্ক’স মাউন্ড'''। এটি ছিল মাউন্ড নির্মাণকারীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মাউন্ড, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯০০ ফুট। মঙ্ক’স মাউন্ডের উপরে খননকাজে একটি বৃহৎ কাঠামোর প্রমাণ পাওয়া গেছে — সম্ভবত এটি একটি মন্দির — যা সমগ্র শহর থেকে দেখা যেত। শহরটি মাউন্ডটির দক্ষিণে একটি বিস্তৃত সমতলে বিস্তৃত ছিল। [[Image:Monks Mound in July.JPG|thumb|কোলিনসভিল, ইলিনয়ের কাছে অবস্থিত কাহোকিয়া সাইটে ম Monk's Mound]] শহরটির মূল অংশে শহরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ১২০টি মাউন্ড ছিল। এই মাউন্ডগুলো কয়েকটি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব অর্থ ও কার্যকারিতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। মঙ্ক’স মাউন্ডের নিকটবর্তী একটি খুঁটির বৃত্ত বহু খগোলীয় ঘটনার (যেমন ঋতু পরিবর্তন) চিহ্ন নির্দেশ করে। শহরটি একটি হীরার মত বিন্যাসে বিস্তৃত ছিল, যার ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৫ মাইল। এর সর্বোচ্চ অবস্থায়, শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ — যা একে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম শহর করে তোলে। সম্ভবত '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দ্বারা আনা ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন গুটিবসন্তের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নগর এলাকাগুলো এইসব রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল ছিল, এবং কাহোকিয়া ১৫০০ সালের দশকে পরিত্যক্ত হয়। উপজাতিগুলোর ছত্রভঙ্গের ফলে মাউন্ড নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং অনেক মাউন্ড ইউরোপীয়রা পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। ==ইউরোপীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ== ===মহামারী=== [[File:Acuna-Soto EID-v8n4p360 Fig1.png|thumb|মেক্সিকোর জনসংখ্যার গ্রাফ, যেখানে প্রধান মহামারীগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।]] উত্তর আমেরিকার অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে ইউরোপীয় যোগাযোগ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্ত ভারতীয় জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি ছিল ভাইরাসজনিত রোগ ও মহামারীর সূচনা।<ref>{{cite web |title=Conclusion :: U.S. History |url=https://www.dhr.history.vt.edu/modules/us/mod01_pop/conclusion.html |website=www.dhr.history.vt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Columbian Exchange |url=https://cla.umn.edu/ihrc/news-events/other/columbian-exchange |access-date=26 December 2020 |work=Immigration History Research Center College of Liberal Arts |date=16 June 2015 |language=en}}</ref> গুটি বসন্ত সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি ছিল। সংক্রামিত আদিবাসীরা ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক সাক্ষাতের পরই অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অনুমান করা হয় যে প্রথম সংস্পর্শের পর প্রায় ৯০% আদিবাসী ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায়।<ref>{{cite web |title=Guns Germs & Steel: Variables. Smallpox PBS |url=https://www.pbs.org/gunsgermssteel/variables/smallpox.html |website=www.pbs.org |access-date=26 December 2020}}</ref> এর প্রভাব অনেক শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শহরাঞ্চল এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং আদিবাসী সংস্কৃতি তখন আরও বিচ্ছিন্ন, কম ঐক্যবদ্ধ এবং একটি নতুন আন্ত-গোষ্ঠীগত যুদ্ধের রূপ নেয়, কারণ একেকটি গোষ্ঠী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকারভুক্ত সম্পদের উপর দখল নিতে চেষ্টা করে। ===কলম্বীয় বিনিময়=== অন্যদিকে, ইউরোপীয়রা আক্রমণাত্মক গাছপালা ও প্রাণী এনেছিল।<ref>{{cite web |title=APWG: Background Information |url=https://cybercemetery.unt.edu/archive/nisic/20110630090151/http://www.nps.gov/plants/alien/bkgd.htm |website=cybercemetery.unt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Escape of the invasives: Top six invasive plant species in the United States |url=https://www.si.edu/stories/escape-invasives |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Institution |language=en}}</ref> ঘোড়া আবার আমেরিকায় আনা হয়েছিল<ref>{{cite web |title=History of Horses in America |url=https://www.belrea.edu/a-history-of-horses-in-america/ |website=www.belrea.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> (কারণ প্রাচীন কালে বেরিং স্থলসেতু দিয়ে আসা আমেরিকান বন্য ঘোড়ার প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এবং তা দ্রুত বিস্তৃত বৃহৎ প্রেইরিতে মুক্তভাবে বিচরণে অভিযোজিত হয়। যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলি দ্রুত ঘোড়ার মূল্য অনুধাবন করে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;<ref>{{cite web |title=Wealth & Status A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/wealth.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> যার ফলে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়।<ref>{{cite web |title=Warfare A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/warfare.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> ইউরোপীয়রা গাছপালা ও প্রাণী নিয়ে আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছপালা যেমন ভুট্টা, আলু ও টমেটো নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।<ref>{{cite web |title=Columbian Exchange (1492-1800) |url=https://mypages.unh.edu/hoslac/book/columbian-exchange-1492-1800 |access-date=26 December 2020 |language=en}}</ref> == পর্যালোচনা প্রশ্ন == ১. আমেরিকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের জন্য দুটি নাম উল্লেখ করুন, এবং প্রতিটি নামের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন। ২. ইনকা, মায়া ও অ্যাজটেক সংস্কৃতির কী কী প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে? ৩. দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের উত্থান ও পতনে আবহাওয়াগত কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছিল? == সূত্র == {{Reflist}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} {{chapnav|ভূমিকা|ইউরোপীয় ইতিহাস}} njdojvp3tom3c65cmma1froigv86c1r 84859 84858 2025-06-18T22:05:05Z Mehedi Abedin 7113 84859 wikitext text/x-wiki [[File:Kincaid Mounds Site aerial illustration HRoe 2019.jpg|thumb|প্রাক-কলম্বীয় যুগে কিনকেইড মাউন্ডস স্থানের শৈল্পিক কল্পচিত্র।]] আমেরিকায় মানব সভ্যতার সূচনা সম্ভবত শেষ বরফ যুগে হয়েছিল, যখন প্রাগৈতিহাসিক শিকারীরা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মাঝে একটি স্থলপথ পার হয়ে এসেছিল।<ref>{{cite news |last1=Gerszak |first1=Fen Montaigne,Jennie Rothenberg Gritz,Rafal |title=The Story of How Humans Came to the Americas Is Constantly Evolving |url=https://www.smithsonianmag.com/science-nature/how-humans-came-to-americas-180973739/ |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Magazine |language=en}}</ref> উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাগুলোর জটিলতা, প্রযুক্তি এবং সংহতির স্তর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত সমাজ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্কৃতিগুলো লেখার পদ্ধতি বিকাশ করেছিল, যা তাদের প্রসার ও আধিপত্য স্থাপনে সাহায্য করেছিল। তারা প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর কিছু গড়ে তোলে। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতিগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং কম ঐক্যবদ্ধ। উপজাতিই ছিল প্রধান সামাজিক একক এবং উপজাতিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে এক ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার দুর্গম মরু অঞ্চলে ইউরোপীয় শহরের সমান বড় উপজাতীয় বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ইতিহাসবিদদের পক্ষে এসব সংস্কৃতিকে একটি একক নামের অধীনে চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের জন্য কোনো অভিন্ন নাম ছিল না। প্রথমে ইউরোপীয়রা স্থানীয়দের "ইন্ডিয়ান" নামে ডাকত। এই নামটি এসেছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সেই ধারণা থেকে যে তিনি ভারত যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন।<ref name="indianname">{{cite web |title=American Indians and Native Americans |url=https://www.umass.edu/legal/derrico/shoshone/indian.html |website=www.umass.edu |accessdate=23 September 2020}}</ref> যদিও আমেরিগো ভেসপুচ্চি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমেরিকা আসলে ভারত নয়, তবুও "ইন্ডিয়ান" শব্দটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হত।<ref name="indianname"/> ১৯৬০-এর দশক থেকে "নেটিভ আমেরিকান" শব্দটি চালু হয়। তবে এটিও একটি সমস্যাযুক্ত শব্দ হতে পারে: "আমেরিকা" নামটি এসেছে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম থেকে, যিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে খুব সামান্য সম্পর্কিত ছিলেন।<ref name="indianname"/> "আমেরিকান ইন্ডিয়ান" শব্দটিও খুব সাধারণ একটি শব্দ, যা এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যাদের মধ্যে গায়ের রং এবং ইউরোপীয় ভাষা ব্যতিরেকে খুব বেশি মিল নেই। কানাডায় "ফার্স্ট পিপল" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই সব নামই আমেরিকার স্থানীয় জনগণের বৈচিত্র্য ও প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকা সম্পর্কে চলমান মতপার্থক্যকে তুলে ধরে, যা নিয়ে আজও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ==আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা== ===বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ=== [[Image:Map of gene flow in and out of Beringia.jpg|thumb|upright|আমেরিকাতে এশিয়া থেকে মানুষের আগমন দেখানো একটি মানচিত্র।]] কলম্বাসের ১৪৯২ সালের আগমনের পর আমেরিকার ইতিহাস শুরু হয়নি। ইউরোপীয়দের প্রথম আগমনের অনেক আগেই আমেরিকা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।<ref name="landbridge">{{cite web |title=Migration of Humans into the Americas (c. 14,000 BCE) |url=https://www.science.smith.edu/climatelit/migration-of-humans-into-north-america/ |website=Climate Across Curriculum |accessdate=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০}}</ref> এর সভ্যতা শুরু হয়েছিল শেষ বরফযুগের সময়, প্রায় ১৫ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে।<ref name="landbridge"/> উত্তর দিকে বিশাল বরফের চাদর ছিল, ফলে সমুদ্রের স্তর অনেক নিচে নামছিল, যা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি ভূমিসেতু সৃষ্টি করেছিল।<ref name="landbridge"/> দুটি বড় বরফের চাদরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গাই বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ নামে পরিচিত, যা বর্তমান এলাস্কা থেকে আলবার্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সংযোগ ছিল।<ref name="landbridge"/> শিকারী পশুর ঝাঁক অনুসরণ করে যাযাবর এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। একটি বিশেষ ধরনের তীরের সূচক পাওয়া গেছে যা প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল বর্তমান ক্লোভিস, নিউ মেক্সিকোর কাছে। উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত অনেক স্থানে বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাধারণ সমাধি প্রথার প্রমাণ পাওয়া যায়। ===ক্লোভিস মানুষ=== '''ক্লোভিস মানুষ''' উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। স্পষ্ট নয় যে তারা একক একটি গোত্র ছিল কি না, নাকি একই প্রযুক্তি ও বিশ্বাসবিশ্লেষণের অনেক গোত্র ছিল। তাদের প্রায় ২০০০ মাইলের কঠিন যাত্রা ছিল প্রাক-ইতিহাসের অন্যতম অসাধারণ কীর্তি। তাদের সংস্কৃতি প্রায় ১২,৯০০ বছর আগে হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণ নিয়ে বিস্তর ধারণা প্রচলিত। মেমথের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে একটি ধূমকেতুর প্রভাবে পরিবেশগত হঠাৎ পরিবর্তন বা বিশাল একটি মিষ্টি পানির হ্রদ লেক অ্যাগাসিসের ভাঙ্গনের ফলে বন্যা আসার মত তত্ত্ব রয়েছে। ক্লোভিসের আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসতির বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষাবিজ্ঞান তুলনায় প্রমাণ মেলে যে প্রাচীন আমেরিকা একাধিক সমসাময়িক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কিছু জেনেটিক ও সময় নির্ধারণ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রাচীন আমেরিকানরা অন্য স্থান থেকেও আসতে পারে এবং ক্লোভিস সাইটের চেয়ে আগে এসেছিল। সম্ভবত কিছু প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূল বরাবর চলাচল করেছিল বা পলিনেশীয় দ্বীপ থেকে নৌকাযোগে এসেছিল। সময়ের সঙ্গে এই প্রাচীন বসতি স্থাপনকারীরা গৃহপালিত পশুপালনসহ কৃষিজীবনে পা রেখেছিল। বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থায়ী গোত্রে পরিণত হয় এবং নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছিল, যা এতটাই আলাদা ছিল যে দূরবর্তী আত্মীয়রা একে অপরকে বুঝতে পারত না। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বা বিভিন্ন গোত্রের ভাষার অধ্যয়ন বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখায়, শত শত মাইল দূরের গোত্রের মধ্যে মিল থাকলেও কাছাকাছি গোত্রের ভাষায় বড় পার্থক্য ছিল। কখনও কখনও কোনো গোত্র আঞ্চলিক গুরুত্ব লাভ করে আমেরিকার বড় বড় অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করত। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্রাজ্য উঠেছিল যা ইউরোপের সেরা সম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। তাদের সময়ের জন্য এই সম্রাজ্যগুলো অত্যন্ত উন্নত ছিল। ==মেসোআমেরিকার প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত সভ্যতা হিসেবে পরিগণিত। মেসোআমেরিকায় পড়া ও লেখা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং এই সভ্যতাগুলি রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি ও স্থাপত্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। এইসব সভ্যতা এমন কিছু রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ অর্জন করেছিল যা তাদের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, অলঙ্কৃত ও জনবহুল নগরসমূহ নির্মাণে সক্ষম করে তোলে। ===মায়া=== [[File:Dintel 26 de Yachilán 3.jpg|thumb|মায়ারা ছিল এক উন্নত সভ্যতা, যারা শিল্পকলায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেছিল।]] আদিম আমেরিকানরা বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রায় ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ, '''মায়া''' সংস্কৃতি একটি জটিল সভ্যতায় পরিণত হয়। মায়ারা ইউকাটান নিম্নভূমিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক, শিল্প ও ধর্মীয় পরিচয় গঠন করে। 'শাস্ত্রীয় যুগ' (২৫০-৯০০ খ্রি.)-এ মায়া সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং এটি অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সময়ে অনেক স্বাধীন নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মায়া জনগণের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। মায়া সমাজ রাজনীতির মাধ্যমে নয়, বরং তাদের জটিল ও উচ্চতর ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত ছিল। মায়া ধর্ম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং তারা আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী ছিল। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সে সময়কার ইউরোপীয় সমাজগুলোর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। তারা সময় পরিমাপের জন্য একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং রাত্রিকালীন আকাশের চলাচল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল। শুক্র গ্রহকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিত, কারণ এটি উজ্জ্বলতম এবং সন্ধ্যা ও ভোর উভয় সময়ে দৃশ্যমান হতো। মায়া শিল্পকলা প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুসজ্জিত ও উন্নত বিবেচিত হয়। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে মায়া সংস্কৃতির পতন ঘটে। এর কারণ আজও গবেষণার বিষয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ে শিলালিপি ও স্থাপত্য নির্মাণের হ্রাস লক্ষ্য করেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মায়ারা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। একটি বিকেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা মায়াদের স্পেনীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আজও ইউকাটানে মায়া সংস্কৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, যদিও অনেক শিলালিপি হারিয়ে গেছে। ===আজটেক=== [[File:1479 Stein der fünften Sonne, sog. Aztekenkalender, Ollin Tonatiuh anagoria.JPG|thumb|আজটেক পঞ্জিকা পাথর]] '''আজটেক''' সংস্কৃতির উদ্ভব হয় মেক্সিকো উপত্যকায় মেক্সিকা জনগণের আগমনের মাধ্যমে। এই জনগোষ্ঠীর নেতারা আধিপত্যশীল জাতিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে আজটেক ত্রৈমিত্রি গড়ে তুলে একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যা আজকের মেক্সিকোর অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজটেক মিত্রসংঘ দখল ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলো দখল করে আজটেক সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। স্থানীয় নেতারা আজটেক সংস্কৃতি গ্রহণ ও প্রসারে মর্যাদা অর্জন করত। একইভাবে, আজটেকরা পরাজিত জাতিগুলোর সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় জ্ঞান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করত। আজটেক শক্তির কেন্দ্র ছিল অর্থনৈতিক ঐক্য। বিজিত অঞ্চলগুলি রাজধানী টেনোচটিটলানকে কর প্রদান করত, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটির অবস্থান। বিপুল পরিমাণ করের মাধ্যমে এই নগরটি প্রভাবশালী, জনবহুল ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৫২১ সালে স্পেনীয়দের আগমনের সময় এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ট্লাতেলোলকো নামের একসময়ের স্বাধীন শহর)। তখন এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২১২,৫০০। শহরটিতে ছিল ১৯৭ ফুট উঁচু টেম্পল ডি মেয়র, ৪৫টি সরকারি ভবন, একটি প্রাসাদ, দুটি চিড়িয়াখানা, একটি উদ্ভিদ উদ্যান ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। লেক টেক্সকোকোর অগভীর জলে ভেসে থাকা ‘চিনাম্পা’ নামক ভাসমান কৃষিক্ষেত্র ছিল শহরবাসীর খাদ্যের উৎস। যদিও অনেক মেসোআমেরিকান সভ্যতাই মানব বলিদান করত, আজটেকদের বলিদানের পরিমাণ ছিল তুলনাহীন। তাদের মতে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানব বলিদান অপরিহার্য ছিল। ১৪৮৭ সালে টেনোচটিটলানের প্রধান পিরামিড পুনর কনসক্রেশনের সময় তারা চার দিনে ৮৪,৪০০ জন বন্দিকে বলি দেয় বলে দাবি করে। স্পেনীয়রা টেনোচটিটলানে এসে আজটেক সংস্কৃতির পতন ঘটায়। শহরের বিশালতা তাদের চমকে দিলেও ব্যাপক মানব বলিদান ইউরোপীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সোনা-রূপার প্রাচুর্য তাদের লোভ উদ্রেক করে। জুন ১৫২০-এ তারা রাজা মন্টেজুমাকে হত্যা করে এবং ১৫২১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ত্লাসকালা জাতির সহযোগিতায় নগরটিতে অবরোধ সৃষ্টি করে ধ্বংস করে ফেলে। ===ইনকা=== [[Image:Peru_Machu_Picchu_Sunrise.jpg|thumb|upright|মাচু পিচু, "ইনকার হারানো শহর"]] প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান পেরুর কুসকো অঞ্চলে মানকো কাপাক নামক একজন সম্রাটের উত্থানের মাধ্যমে '''ইনকা''' সভ্যতার সূচনা হয়। ধর্ম ইনকাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। রাজপরিবার সূর্যদেবতার সন্তান হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে সম্রাটের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত, যা কেবল ঐতিহ্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকত। ইনকাদের অধীনে একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো ছিল — প্রতি দশজন নাগরিকের জন্য গড়ে একজন করে কর্মকর্তা থাকত। সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত; বার্তাবাহকরা গ্রাম থেকে গ্রামে দৌড়ে রাজকীয় বার্তা পৌঁছে দিত। ১৪৩৮ সালে পচাকুতি নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন, যিনি ইনকাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক বলে বিবেচিত। তিনি কুসকো ও সূর্য মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। তার কৌশলী সামরিক নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনৈতিক প্রচারণা ইনকাদের সাফল্যের ভিত্তি। তিনি বিজয়ী অঞ্চলগুলোর নেতাদের বিলাসদ্রব্য ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। ইনকারা একটি সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, যা ইনকা সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করত। ফলে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ইনকা সাম্রাজ্যের অনেক বিস্তার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫শ শতাব্দীর শেষদিকে ইনকা সাম্রাজ্য বর্তমান ইকুয়েডর থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কুসকো ছিল এর রাজধানী, যা স্পেনীয়দের মতে "স্পেনের যেকোনো শহরের সমান" ছিল। তবে ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর ছিল মাচু পিচু — একটি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল, যেটিকে ইনকারা তাদের নেতৃবৃন্দের বিশ্রামস্থল হিসেবে গড়ে তোলে। এখানে প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ করা হয়েছিল শুকনো পাথরের দেয়াল দিয়ে, যা এত নিখুঁতভাবে কাটানো ও বসানো যে, তার ফাঁকে একটি ছুরি ঢোকানো যায় না। স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় আগমন করে এবং ধীরে চলা অবরোধ যুদ্ধের তুলনায় তাদের আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তারা সম্রাটকে বন্দি করে হত্যা করে এবং ১৫৩৩ সালে ইনকা সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। তবে কিছু বিদ্রোহী পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং আরও ৩৯ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ===মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ=== মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ নিঃসন্দেহে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ সভ্যতা ছিল। মেসোআমেরিকায় লেখালেখির প্রচলন ছিল, যা উত্তর আমেরিকার তুলনায় এই সংস্কৃতিগুলোকে অনেক সহজে বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। প্রতিটি সভ্যতাই বিস্ময়কর নগর ব্যবস্থা ও জটিল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা ইউরোপীয় স্পেনীয়দের মতোই 'সভ্য' ছিল যারা ১৫শ ও ১৬শ শতকে তাদের দখল করে। ==দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== দক্ষিণ-পশ্চিমের শুষ্ক মরুভূমির সাথে স্থানীয় আমেরিকানরা খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র আবহাওয়ার একটি সময়কালে এই অঞ্চলের অনেক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সেচ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি এখানে গড়ে ওঠে। জটিল অ্যাডোবি ও বালুকাপাথরের ভবন নির্মিত হয়। অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও শৈল্পিক মাটির পাত্র তৈরি করা হয়। তবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া চিরকাল স্থায়ী হয়নি, এবং ধীরে ধীরে তা আবার এই অঞ্চলের সাধারণ খরার দিকে ফিরে যায়। এই শুষ্ক পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল মানুষকে সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে, এবং অবশেষে এই সংস্কৃতিগুলোর জটিল কৃতিত্ব পরিত্যক্ত হয়। ===আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান=== [[File:Mesaverde cliffpalace 20030914.752.jpg|thumb|আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের একটি স্থাপনা, ক্লিফ প্যালেস।]] একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ছিল '''আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান''', যারা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং তার আশেপাশের এলাকায় বাস করত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল সমতল শুষ্ক মরুভূমি, যা ছোট ছোট উঁচু মালভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেগুলোকে "মেসা" বলা হয়। এই মেসাগুলোর নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ক্যানিয়ন ও ওভারহ্যাং তৈরি করেছিল। আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি এই মেসাগুলোর ঢালের গুহার মতো ওভারহ্যাংকে অস্থায়ী বজ্রবৃষ্টিপূর্ণ ঝড় থেকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। তারা প্রাকৃতিক জলস্রোত ব্যবহার করে এবং বরফ গলার জলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেতের দিকে প্রবাহিত করে ভুট্টা, কুমড়ো ও শিম চাষ করত। ঋতুভিত্তিক ক্ষুদ্র নদীগুলি কাদামাটির স্তর সৃষ্টি করত। এই কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে ওঠত, যাকে অ্যাডোবি বলা হয়, এবং এটি বালুকাপাথরের সাথে মিশিয়ে জটিল স্থাপনা গড়ে তোলা হত, অনেক সময় সেগুলো মেসাগুলোর ওভারহ্যাংয়ের ওপরে থাকত। তারা মাটি দিয়ে সুন্দর ও কার্যকর পাত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিল। ৯০০ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিস্থিতি আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের বিকাশের সুযোগ দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিখুঁত হয়, মাটির পাত্র শৈল্পিক হয়ে ওঠে, টার্কি পোষ মানানো হয় এবং দীর্ঘ দূরত্বে বাণিজ্য সারা অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। এরপর আসে প্রায় ৩০০ বছরের দীর্ঘ খরা, যা "গ্রেট ড্রাউট" নামে পরিচিত। এই সময় পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি চাপে পড়ে এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত দূরে কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে শুষ্কতা থেকে বাঁচতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা ছড়িয়ে পড়ে; জটিল স্থাপনাগুলি ত্যাগ করে ছোট ছোট বসতিতে চলে যায় যেখানে অল্প জল পাওয়া যেত। ===হোহোকাম=== [[File:CasaGrandeRuin.jpg|thumb|কাসা গ্রান্দে ধ্বংসাবশেষ, আধুনিক ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত।]] উত্তরে আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতির পাশেই দক্ষিণ অ্যারিজোনায় একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে ওঠে, যাকে '''হোহোকাম''' বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক আদিবাসী সীমিত পরিসরে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার করলেও, হোহোকামরাই এই প্রযুক্তিকে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে (আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই)। ছোট কৃষিভূমিতে পানি প্রবাহিত করার ক্ষমতা হোহোকামদের তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে সত্য ছিল গিলা নদী উপত্যকায়, যেখানে নদীকে বহু স্থানে বিভক্ত করে উর্বর সমভূমি ও বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর সেচ করা হত। বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে একটি 'গ্রেট হাউস' থাকত, যা ছিল বড় একটি অ্যাডোবি/পাথরের কাঠামো। এর মধ্যে কিছু চার তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং সম্ভবত এটি প্রশাসনিক বা ধর্মীয় অভিজাতদের জন্য ব্যবহৃত হত। ছোট ছোট খননকৃত কক্ষ বা গর্ত অ্যাডোবি দেয়ালে ঘেরা থাকত এবং মূল আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। আরও ছোট কক্ষ বা গর্ত ছিল নানা কাজে ব্যবহৃত। সেচ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল বিশাল কাসা গ্রান্দে গ্রাম। দুটি প্রধান খালের মাঝখানে অবস্থিত এই স্থানটি প্রায় নয় দশক ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। মূল শহরটি একটি গ্রেট হাউসের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং এতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বৃত্তাকার চত্বর ছিল। দশম শতকের মধ্যে আশেপাশে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং একটি বৃহৎ, উন্নত অঞ্চল তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালের একটি খননের ফলে কাসা গ্রান্দে এলাকার পরিমাণ বোঝা যায়। সেই প্রকল্পে ২৪৭টি পিট হাউস, ২৭টি পিট রুম, ৮৬৬টি গর্ত, ১১টি ছোট খাল, একটি বল কোর্ট এবং চারটি অ্যাডোবি প্রাচীরবিশিষ্ট চত্বরের অংশ চিহ্নিত করা হয়। হোহোকাম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে যখন খরার কারণে খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেয়। একটি ছোট বাধা বা খালের ধস পুরো সেচ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করত। বড় শহর এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ত্যাগ করে এবং পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। ==মিসিসিপির প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== [[File:Serpent Mound (aerial view).jpg|thumb|upright|দ্য গ্রেট সার্পেন্ট মাউন্ড]] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মহাদেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা উত্তর আমেরিকার ইতিহাসের শুরুতে মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো আরও স্তরবিন্যাসযুক্ত হয়ে ওঠে এবং উপজাতিতে পরিণত হয়। এই উপজাতিগুলো দীর্ঘ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করত। বাণিজ্য পথের গুরুত্ব প্রভাবশালী নগর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণ ছিল উত্তর আমেরিকায় উদ্ভূত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের আশেপাশে এই সংস্কৃতিগুলোর বিকাশ ঘটে, যারা ধর্মীয় ও সমাধি উদ্দেশ্যে মাউন্ড ব্যবহার করত। এই মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণকে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলোর স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্ম ও নিদর্শন বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সমাধি মাউন্ড ছিল এই সকল সমাজের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। এই বৃহৎ কাঠামোগুলো তৈরি হতো সাবধানে নির্বাচিত মাটি ঝুড়িতে করে এনে স্তূপীকরণ করে। মাউন্ডগুলো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হতো, যার উপরের অংশ চ্যাপ্টা করা থাকত। কখনও কখনও এর উপরে ছোট ছোট কাঠামো নির্মিত হতো। কিছু মাউন্ড অত্যন্ত বিশাল। বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্যানহ্যান্ডলে অবস্থিত গ্রেভ ক্রিক মাউন্ড প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ৩০০ ফুট ব্যাসযুক্ত। অন্যান্য মাউন্ডগুলোকে খগোলীয় ঘটনাবলির (যেমন দিবসূত্র ও বিষুব) সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো আকার ও গুরুত্বে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। প্রথম সংস্কৃতি ছিল '''অ্যাডেনা''', যারা বর্তমান দক্ষিণ ওহাইও এবং আশেপাশের এলাকায় বাস করত। পরবর্তী সংস্কৃতিগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিস্ময়কর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে একে অপরকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। '''হোপওয়েল''' আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চলের জনগণ। এ সময়ে এই জাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা দেয়। এই সংগঠন উপজাতি গঠনের পূর্ববর্তী রূপ, যা পরবর্তীকালে পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ছিল '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো সামাজিক জটিলতায় পরিণত হয়, যা রোম-পরবর্তী ও উপজাতিগত ইংল্যান্ডের (একত্রীকরণের পূর্ববর্তী) সমাজ কাঠামোর সাথে তুলনীয়। মাউন্ড সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু বসতিতে বৃহৎ মাউন্ড কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। মাউন্ডের উপর প্রায়শই কাঠামো নির্মিত হতো। সামাজিক অসমতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যেমন দাসত্ব ও মানব বলিদান। কাহোকিয়া, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের কাছে অবস্থিত, ছিল একটি প্রভাবশালী ও উচ্চপর্যায়ের উন্নত সমাজ। বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গ্রেট লেকস থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাহোকিয়া ছিল মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এবং এই সংস্কৃতির বৃহত্তম বসতি। এই বসতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্মীয় মাউন্ড '''মঙ্ক’স মাউন্ড'''। এটি ছিল মাউন্ড নির্মাণকারীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মাউন্ড, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯০০ ফুট। মঙ্ক’স মাউন্ডের উপরে খননকাজে একটি বৃহৎ কাঠামোর প্রমাণ পাওয়া গেছে — সম্ভবত এটি একটি মন্দির — যা সমগ্র শহর থেকে দেখা যেত। শহরটি মাউন্ডটির দক্ষিণে একটি বিস্তৃত সমতলে বিস্তৃত ছিল। [[Image:Monks Mound in July.JPG|thumb|কোলিনসভিল, ইলিনয়ের কাছে অবস্থিত কাহোকিয়া সাইটে ম Monk's Mound]] শহরটির মূল অংশে শহরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ১২০টি মাউন্ড ছিল। এই মাউন্ডগুলো কয়েকটি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব অর্থ ও কার্যকারিতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। মঙ্ক’স মাউন্ডের নিকটবর্তী একটি খুঁটির বৃত্ত বহু খগোলীয় ঘটনার (যেমন ঋতু পরিবর্তন) চিহ্ন নির্দেশ করে। শহরটি একটি হীরার মত বিন্যাসে বিস্তৃত ছিল, যার ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৫ মাইল। এর সর্বোচ্চ অবস্থায়, শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ — যা একে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম শহর করে তোলে। সম্ভবত '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দ্বারা আনা ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন গুটিবসন্তের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নগর এলাকাগুলো এইসব রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল ছিল, এবং কাহোকিয়া ১৫০০ সালের দশকে পরিত্যক্ত হয়। উপজাতিগুলোর ছত্রভঙ্গের ফলে মাউন্ড নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং অনেক মাউন্ড ইউরোপীয়রা পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। ==ইউরোপীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ== ===মহামারী=== [[File:Acuna-Soto EID-v8n4p360 Fig1.png|thumb|মেক্সিকোর জনসংখ্যার গ্রাফ, যেখানে প্রধান মহামারীগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।]] উত্তর আমেরিকার অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে ইউরোপীয় যোগাযোগ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্ত ভারতীয় জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি ছিল ভাইরাসজনিত রোগ ও মহামারীর সূচনা।<ref>{{cite web |title=Conclusion :: U.S. History |url=https://www.dhr.history.vt.edu/modules/us/mod01_pop/conclusion.html |website=www.dhr.history.vt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Columbian Exchange |url=https://cla.umn.edu/ihrc/news-events/other/columbian-exchange |access-date=26 December 2020 |work=Immigration History Research Center College of Liberal Arts |date=16 June 2015 |language=en}}</ref> গুটি বসন্ত সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি ছিল। সংক্রামিত আদিবাসীরা ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক সাক্ষাতের পরই অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অনুমান করা হয় যে প্রথম সংস্পর্শের পর প্রায় ৯০% আদিবাসী ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায়।<ref>{{cite web |title=Guns Germs & Steel: Variables. Smallpox PBS |url=https://www.pbs.org/gunsgermssteel/variables/smallpox.html |website=www.pbs.org |access-date=26 December 2020}}</ref> এর প্রভাব অনেক শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শহরাঞ্চল এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং আদিবাসী সংস্কৃতি তখন আরও বিচ্ছিন্ন, কম ঐক্যবদ্ধ এবং একটি নতুন আন্ত-গোষ্ঠীগত যুদ্ধের রূপ নেয়, কারণ একেকটি গোষ্ঠী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকারভুক্ত সম্পদের উপর দখল নিতে চেষ্টা করে। ===কলম্বীয় বিনিময়=== অন্যদিকে, ইউরোপীয়রা আক্রমণাত্মক গাছপালা ও প্রাণী এনেছিল।<ref>{{cite web |title=APWG: Background Information |url=https://cybercemetery.unt.edu/archive/nisic/20110630090151/http://www.nps.gov/plants/alien/bkgd.htm |website=cybercemetery.unt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Escape of the invasives: Top six invasive plant species in the United States |url=https://www.si.edu/stories/escape-invasives |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Institution |language=en}}</ref> ঘোড়া আবার আমেরিকায় আনা হয়েছিল<ref>{{cite web |title=History of Horses in America |url=https://www.belrea.edu/a-history-of-horses-in-america/ |website=www.belrea.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> (কারণ প্রাচীন কালে বেরিং স্থলসেতু দিয়ে আসা আমেরিকান বন্য ঘোড়ার প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এবং তা দ্রুত বিস্তৃত বৃহৎ প্রেইরিতে মুক্তভাবে বিচরণে অভিযোজিত হয়। যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলি দ্রুত ঘোড়ার মূল্য অনুধাবন করে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;<ref>{{cite web |title=Wealth & Status A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/wealth.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> যার ফলে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়।<ref>{{cite web |title=Warfare A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/warfare.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> ইউরোপীয়রা গাছপালা ও প্রাণী নিয়ে আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছপালা যেমন ভুট্টা, আলু ও টমেটো নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।<ref>{{cite web |title=Columbian Exchange (1492-1800) |url=https://mypages.unh.edu/hoslac/book/columbian-exchange-1492-1800 |access-date=26 December 2020 |language=en}}</ref> == পর্যালোচনা প্রশ্ন == ১. আমেরিকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের জন্য দুটি নাম উল্লেখ করুন, এবং প্রতিটি নামের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন। ২. ইনকা, মায়া ও অ্যাজটেক সংস্কৃতির কী কী প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে? ৩. দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের উত্থান ও পতনে আবহাওয়াগত কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছিল? == সূত্র == {{Reflist}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} {{chapnav|ভূমিকা|ইউরোপীয় ইতিহাস}} im1o7fogbvuftx2yzfrpnrnjpabw5xy 84860 84859 2025-06-18T22:09:00Z Mehedi Abedin 7113 84860 wikitext text/x-wiki [[File:Kincaid Mounds Site aerial illustration HRoe 2019.jpg|thumb|প্রাক-কলম্বীয় যুগে কিনকেইড মাউন্ডস স্থানের শৈল্পিক কল্পচিত্র।]] আমেরিকায় মানব সভ্যতার সূচনা সম্ভবত শেষ বরফ যুগে হয়েছিল, যখন প্রাগৈতিহাসিক শিকারীরা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মাঝে একটি স্থলপথ পার হয়ে এসেছিল।<ref>{{cite news |last1=Gerszak |first1=Fen Montaigne,Jennie Rothenberg Gritz,Rafal |title=The Story of How Humans Came to the Americas Is Constantly Evolving |url=https://www.smithsonianmag.com/science-nature/how-humans-came-to-americas-180973739/ |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Magazine |language=en}}</ref> উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাগুলোর জটিলতা, প্রযুক্তি এবং সংহতির স্তর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত সমাজ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্কৃতিগুলো লেখার পদ্ধতি বিকাশ করেছিল, যা তাদের প্রসার ও আধিপত্য স্থাপনে সাহায্য করেছিল। তারা প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর কিছু গড়ে তোলে। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতিগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং কম ঐক্যবদ্ধ। উপজাতিই ছিল প্রধান সামাজিক একক এবং উপজাতিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে এক ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার দুর্গম মরু অঞ্চলে ইউরোপীয় শহরের সমান বড় উপজাতীয় বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ইতিহাসবিদদের পক্ষে এসব সংস্কৃতিকে একটি একক নামের অধীনে চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের জন্য কোনো অভিন্ন নাম ছিল না। প্রথমে ইউরোপীয়রা স্থানীয়দের "ইন্ডিয়ান" নামে ডাকত। এই নামটি এসেছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সেই ধারণা থেকে যে তিনি ভারত যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন।<ref name="indianname">{{cite web |title=American Indians and Native Americans |url=https://www.umass.edu/legal/derrico/shoshone/indian.html |website=www.umass.edu |accessdate=23 September 2020}}</ref> যদিও আমেরিগো ভেসপুচ্চি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমেরিকা আসলে ভারত নয়, তবুও "ইন্ডিয়ান" শব্দটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হত।<ref name="indianname"/> ১৯৬০-এর দশক থেকে "নেটিভ আমেরিকান" শব্দটি চালু হয়। তবে এটিও একটি সমস্যাযুক্ত শব্দ হতে পারে: "আমেরিকা" নামটি এসেছে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম থেকে, যিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে খুব সামান্য সম্পর্কিত ছিলেন।<ref name="indianname"/> "আমেরিকান ইন্ডিয়ান" শব্দটিও খুব সাধারণ একটি শব্দ, যা এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যাদের মধ্যে গায়ের রং এবং ইউরোপীয় ভাষা ব্যতিরেকে খুব বেশি মিল নেই। কানাডায় "ফার্স্ট পিপল" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই সব নামই আমেরিকার স্থানীয় জনগণের বৈচিত্র্য ও প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকা সম্পর্কে চলমান মতপার্থক্যকে তুলে ধরে, যা নিয়ে আজও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ==আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা== ===বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ=== [[Image:Map of gene flow in and out of Beringia.jpg|thumb|upright|আমেরিকাতে এশিয়া থেকে মানুষের আগমন দেখানো একটি মানচিত্র।]] কলম্বাসের ১৪৯২ সালের আগমনের পর আমেরিকার ইতিহাস শুরু হয়নি। ইউরোপীয়দের প্রথম আগমনের অনেক আগেই আমেরিকা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।<ref name="landbridge">{{cite web |title=Migration of Humans into the Americas (c. 14,000 BCE) |url=https://www.science.smith.edu/climatelit/migration-of-humans-into-north-america/ |website=Climate Across Curriculum |accessdate=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০}}</ref> এর সভ্যতা শুরু হয়েছিল শেষ বরফযুগের সময়, প্রায় ১৫ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে।<ref name="landbridge"/> উত্তর দিকে বিশাল বরফের চাদর ছিল, ফলে সমুদ্রের স্তর অনেক নিচে নামছিল, যা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি ভূমিসেতু সৃষ্টি করেছিল।<ref name="landbridge"/> দুটি বড় বরফের চাদরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গাই বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ নামে পরিচিত, যা বর্তমান এলাস্কা থেকে আলবার্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সংযোগ ছিল।<ref name="landbridge"/> শিকারী পশুর ঝাঁক অনুসরণ করে যাযাবর এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। একটি বিশেষ ধরনের তীরের সূচক পাওয়া গেছে যা প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল বর্তমান ক্লোভিস, নিউ মেক্সিকোর কাছে। উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত অনেক স্থানে বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাধারণ সমাধি প্রথার প্রমাণ পাওয়া যায়। ===ক্লোভিস মানুষ=== '''ক্লোভিস মানুষ''' উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। স্পষ্ট নয় যে তারা একক একটি গোত্র ছিল কি না, নাকি একই প্রযুক্তি ও বিশ্বাসবিশ্লেষণের অনেক গোত্র ছিল। তাদের প্রায় ২০০০ মাইলের কঠিন যাত্রা ছিল প্রাক-ইতিহাসের অন্যতম অসাধারণ কীর্তি। তাদের সংস্কৃতি প্রায় ১২,৯০০ বছর আগে হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণ নিয়ে বিস্তর ধারণা প্রচলিত। মেমথের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে একটি ধূমকেতুর প্রভাবে পরিবেশগত হঠাৎ পরিবর্তন বা বিশাল একটি মিষ্টি পানির হ্রদ লেক অ্যাগাসিসের ভাঙ্গনের ফলে বন্যা আসার মত তত্ত্ব রয়েছে। ক্লোভিসের আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসতির বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষাবিজ্ঞান তুলনায় প্রমাণ মেলে যে প্রাচীন আমেরিকা একাধিক সমসাময়িক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কিছু জেনেটিক ও সময় নির্ধারণ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রাচীন আমেরিকানরা অন্য স্থান থেকেও আসতে পারে এবং ক্লোভিস সাইটের চেয়ে আগে এসেছিল। সম্ভবত কিছু প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূল বরাবর চলাচল করেছিল বা পলিনেশীয় দ্বীপ থেকে নৌকাযোগে এসেছিল। সময়ের সঙ্গে এই প্রাচীন বসতি স্থাপনকারীরা গৃহপালিত পশুপালনসহ কৃষিজীবনে পা রেখেছিল। বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থায়ী গোত্রে পরিণত হয় এবং নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছিল, যা এতটাই আলাদা ছিল যে দূরবর্তী আত্মীয়রা একে অপরকে বুঝতে পারত না। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বা বিভিন্ন গোত্রের ভাষার অধ্যয়ন বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখায়, শত শত মাইল দূরের গোত্রের মধ্যে মিল থাকলেও কাছাকাছি গোত্রের ভাষায় বড় পার্থক্য ছিল। কখনও কখনও কোনো গোত্র আঞ্চলিক গুরুত্ব লাভ করে আমেরিকার বড় বড় অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করত। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্রাজ্য উঠেছিল যা ইউরোপের সেরা সম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। তাদের সময়ের জন্য এই সম্রাজ্যগুলো অত্যন্ত উন্নত ছিল। ==মেসোআমেরিকার প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত সভ্যতা হিসেবে পরিগণিত। মেসোআমেরিকায় পড়া ও লেখা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং এই সভ্যতাগুলি রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি ও স্থাপত্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। এইসব সভ্যতা এমন কিছু রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ অর্জন করেছিল যা তাদের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, অলঙ্কৃত ও জনবহুল নগরসমূহ নির্মাণে সক্ষম করে তোলে। ===মায়া=== [[File:Dintel 26 de Yachilán 3.jpg|thumb|মায়ারা ছিল এক উন্নত সভ্যতা, যারা শিল্পকলায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেছিল।]] আদিম আমেরিকানরা বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রায় ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ, '''মায়া''' সংস্কৃতি একটি জটিল সভ্যতায় পরিণত হয়। মায়ারা ইউকাটান নিম্নভূমিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক, শিল্প ও ধর্মীয় পরিচয় গঠন করে। 'শাস্ত্রীয় যুগ' (২৫০-৯০০ খ্রি.)-এ মায়া সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং এটি অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সময়ে অনেক স্বাধীন নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মায়া জনগণের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। মায়া সমাজ রাজনীতির মাধ্যমে নয়, বরং তাদের জটিল ও উচ্চতর ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত ছিল। মায়া ধর্ম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং তারা আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী ছিল। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সে সময়কার ইউরোপীয় সমাজগুলোর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। তারা সময় পরিমাপের জন্য একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং রাত্রিকালীন আকাশের চলাচল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল। শুক্র গ্রহকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিত, কারণ এটি উজ্জ্বলতম এবং সন্ধ্যা ও ভোর উভয় সময়ে দৃশ্যমান হতো। মায়া শিল্পকলা প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুসজ্জিত ও উন্নত বিবেচিত হয়। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে মায়া সংস্কৃতির পতন ঘটে। এর কারণ আজও গবেষণার বিষয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ে শিলালিপি ও স্থাপত্য নির্মাণের হ্রাস লক্ষ্য করেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মায়ারা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। একটি বিকেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা মায়াদের স্পেনীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আজও ইউকাটানে মায়া সংস্কৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, যদিও অনেক শিলালিপি হারিয়ে গেছে। ===আজটেক=== [[File:1479 Stein der fünften Sonne, sog. Aztekenkalender, Ollin Tonatiuh anagoria.JPG|thumb|আজটেক পঞ্জিকা পাথর]] '''আজটেক''' সংস্কৃতির উদ্ভব হয় মেক্সিকো উপত্যকায় মেক্সিকা জনগণের আগমনের মাধ্যমে। এই জনগোষ্ঠীর নেতারা আধিপত্যশীল জাতিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে আজটেক ত্রৈমিত্রি গড়ে তুলে একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যা আজকের মেক্সিকোর অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজটেক মিত্রসংঘ দখল ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলো দখল করে আজটেক সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। স্থানীয় নেতারা আজটেক সংস্কৃতি গ্রহণ ও প্রসারে মর্যাদা অর্জন করত। একইভাবে, আজটেকরা পরাজিত জাতিগুলোর সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় জ্ঞান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করত। আজটেক শক্তির কেন্দ্র ছিল অর্থনৈতিক ঐক্য। বিজিত অঞ্চলগুলি রাজধানী টেনোচটিটলানকে কর প্রদান করত, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটির অবস্থান। বিপুল পরিমাণ করের মাধ্যমে এই নগরটি প্রভাবশালী, জনবহুল ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৫২১ সালে স্পেনীয়দের আগমনের সময় এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ট্লাতেলোলকো নামের একসময়ের স্বাধীন শহর)। তখন এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২১২,৫০০। শহরটিতে ছিল ১৯৭ ফুট উঁচু টেম্পল ডি মেয়র, ৪৫টি সরকারি ভবন, একটি প্রাসাদ, দুটি চিড়িয়াখানা, একটি উদ্ভিদ উদ্যান ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। লেক টেক্সকোকোর অগভীর জলে ভেসে থাকা ‘চিনাম্পা’ নামক ভাসমান কৃষিক্ষেত্র ছিল শহরবাসীর খাদ্যের উৎস। যদিও অনেক মেসোআমেরিকান সভ্যতাই মানব বলিদান করত, আজটেকদের বলিদানের পরিমাণ ছিল তুলনাহীন। তাদের মতে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানব বলিদান অপরিহার্য ছিল। ১৪৮৭ সালে টেনোচটিটলানের প্রধান পিরামিড পুনর কনসক্রেশনের সময় তারা চার দিনে ৮৪,৪০০ জন বন্দিকে বলি দেয় বলে দাবি করে। স্পেনীয়রা টেনোচটিটলানে এসে আজটেক সংস্কৃতির পতন ঘটায়। শহরের বিশালতা তাদের চমকে দিলেও ব্যাপক মানব বলিদান ইউরোপীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সোনা-রূপার প্রাচুর্য তাদের লোভ উদ্রেক করে। জুন ১৫২০-এ তারা রাজা মন্টেজুমাকে হত্যা করে এবং ১৫২১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ত্লাসকালা জাতির সহযোগিতায় নগরটিতে অবরোধ সৃষ্টি করে ধ্বংস করে ফেলে। ===ইনকা=== [[Image:Peru_Machu_Picchu_Sunrise.jpg|thumb|upright|মাচু পিচু, "ইনকার হারানো শহর"]] প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান পেরুর কুসকো অঞ্চলে মানকো কাপাক নামক একজন সম্রাটের উত্থানের মাধ্যমে '''ইনকা''' সভ্যতার সূচনা হয়। ধর্ম ইনকাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। রাজপরিবার সূর্যদেবতার সন্তান হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে সম্রাটের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত, যা কেবল ঐতিহ্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকত। ইনকাদের অধীনে একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো ছিল — প্রতি দশজন নাগরিকের জন্য গড়ে একজন করে কর্মকর্তা থাকত। সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত; বার্তাবাহকরা গ্রাম থেকে গ্রামে দৌড়ে রাজকীয় বার্তা পৌঁছে দিত। ১৪৩৮ সালে পচাকুতি নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন, যিনি ইনকাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক বলে বিবেচিত। তিনি কুসকো ও সূর্য মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। তার কৌশলী সামরিক নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনৈতিক প্রচারণা ইনকাদের সাফল্যের ভিত্তি। তিনি বিজয়ী অঞ্চলগুলোর নেতাদের বিলাসদ্রব্য ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। ইনকারা একটি সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, যা ইনকা সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করত। ফলে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ইনকা সাম্রাজ্যের অনেক বিস্তার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫শ শতাব্দীর শেষদিকে ইনকা সাম্রাজ্য বর্তমান ইকুয়েডর থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কুসকো ছিল এর রাজধানী, যা স্পেনীয়দের মতে "স্পেনের যেকোনো শহরের সমান" ছিল। তবে ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর ছিল মাচু পিচু — একটি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল, যেটিকে ইনকারা তাদের নেতৃবৃন্দের বিশ্রামস্থল হিসেবে গড়ে তোলে। এখানে প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ করা হয়েছিল শুকনো পাথরের দেয়াল দিয়ে, যা এত নিখুঁতভাবে কাটানো ও বসানো যে, তার ফাঁকে একটি ছুরি ঢোকানো যায় না। স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় আগমন করে এবং ধীরে চলা অবরোধ যুদ্ধের তুলনায় তাদের আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তারা সম্রাটকে বন্দি করে হত্যা করে এবং ১৫৩৩ সালে ইনকা সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। তবে কিছু বিদ্রোহী পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং আরও ৩৯ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ===মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ=== মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ নিঃসন্দেহে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ সভ্যতা ছিল। মেসোআমেরিকায় লেখালেখির প্রচলন ছিল, যা উত্তর আমেরিকার তুলনায় এই সংস্কৃতিগুলোকে অনেক সহজে বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। প্রতিটি সভ্যতাই বিস্ময়কর নগর ব্যবস্থা ও জটিল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা ইউরোপীয় স্পেনীয়দের মতোই 'সভ্য' ছিল যারা ১৫শ ও ১৬শ শতকে তাদের দখল করে। ==দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== দক্ষিণ-পশ্চিমের শুষ্ক মরুভূমির সাথে স্থানীয় আমেরিকানরা খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র আবহাওয়ার একটি সময়কালে এই অঞ্চলের অনেক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সেচ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি এখানে গড়ে ওঠে। জটিল অ্যাডোবি ও বালুকাপাথরের ভবন নির্মিত হয়। অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও শৈল্পিক মাটির পাত্র তৈরি করা হয়। তবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া চিরকাল স্থায়ী হয়নি এবং ধীরে ধীরে তা আবার এই অঞ্চলের সাধারণ খরার দিকে ফিরে যায়। এই শুষ্ক পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল মানুষকে সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে, এবং অবশেষে এই সংস্কৃতিগুলোর জটিল কৃতিত্ব পরিত্যক্ত হয়। ===আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান=== [[File:Mesaverde cliffpalace 20030914.752.jpg|thumb|আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের একটি স্থাপনা, ক্লিফ প্রাসাদ।]] একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ছিল '''আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান''', যারা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং তার আশেপাশের এলাকায় বাস করত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল সমতল শুষ্ক মরুভূমি, যা ছোট ছোট উঁচু মালভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেগুলোকে "মেসা" বলা হয়। এই মেসাগুলোর নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ক্যানিয়ন ও ওভারহ্যাং তৈরি করেছিল। আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি এই মেসাগুলোর ঢালের গুহার মতো ওভারহ্যাংকে অস্থায়ী বজ্রবৃষ্টিপূর্ণ ঝড় থেকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। তারা প্রাকৃতিক জলস্রোত ব্যবহার করে এবং বরফ গলার জলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেতের দিকে প্রবাহিত করে ভুট্টা, কুমড়ো ও শিম চাষ করত। ঋতুভিত্তিক ক্ষুদ্র নদীগুলি কাদামাটির স্তর সৃষ্টি করত। এই কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে ওঠত, যাকে অ্যাডোবি বলা হয়, এবং এটি বালুকাপাথরের সাথে মিশিয়ে জটিল স্থাপনা গড়ে তোলা হত, অনেক সময় সেগুলো মেসাগুলোর ওভারহ্যাংয়ের ওপরে থাকত। তারা মাটি দিয়ে সুন্দর ও কার্যকর পাত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিল। ৯০০ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিস্থিতি আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের বিকাশের সুযোগ দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিখুঁত হয়, মাটির পাত্র শৈল্পিক হয়ে ওঠে, টার্কি পোষ মানানো হয় এবং দীর্ঘ দূরত্বে বাণিজ্য সারা অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। এরপর আসে প্রায় ৩০০ বছরের দীর্ঘ খরা, যা "গ্রেট ড্রাউট" নামে পরিচিত। এই সময় পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি চাপে পড়ে এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত দূরে কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে শুষ্কতা থেকে বাঁচতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা ছড়িয়ে পড়ে; জটিল স্থাপনাগুলি ত্যাগ করে ছোট ছোট বসতিতে চলে যায় যেখানে অল্প জল পাওয়া যেত। ===হোহোকাম=== [[File:CasaGrandeRuin.jpg|thumb|কাসা গ্রান্দে ধ্বংসাবশেষ, আধুনিক ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত।]] উত্তরে আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতির পাশেই দক্ষিণ অ্যারিজোনায় একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে ওঠে, যাকে '''হোহোকাম''' বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক আদিবাসী সীমিত পরিসরে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার করলেও, হোহোকামরাই এই প্রযুক্তিকে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে (আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই)। ছোট কৃষিভূমিতে পানি প্রবাহিত করার ক্ষমতা হোহোকামদের তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে সত্য ছিল গিলা নদী উপত্যকায়, যেখানে নদীকে বহু স্থানে বিভক্ত করে উর্বর সমভূমি ও বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর সেচ করা হত। বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে একটি 'গ্রেট হাউস' থাকত, যা ছিল বড় একটি অ্যাডোবি/পাথরের কাঠামো। এর মধ্যে কিছু চার তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং সম্ভবত এটি প্রশাসনিক বা ধর্মীয় অভিজাতদের জন্য ব্যবহৃত হত। ছোট ছোট খননকৃত কক্ষ বা গর্ত অ্যাডোবি দেয়ালে ঘেরা থাকত এবং মূল আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। আরও ছোট কক্ষ বা গর্ত ছিল নানা কাজে ব্যবহৃত। সেচ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল বিশাল কাসা গ্রান্দে গ্রাম। দুটি প্রধান খালের মাঝখানে অবস্থিত এই স্থানটি প্রায় নয় দশক ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। মূল শহরটি একটি বড় দরবারের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং এতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বৃত্তাকার চত্বর ছিল। দশম শতকের মধ্যে আশেপাশে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং একটি বৃহৎ, উন্নত অঞ্চল তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালের একটি খননের ফলে কাসা গ্রান্দে এলাকার পরিমাণ বোঝা যায়। সেই প্রকল্পে ২৪৭টি পিট হাউস, ২৭টি পিট রুম, ৮৬৬টি গর্ত, ১১টি ছোট খাল, একটি বল কোর্ট এবং চারটি অ্যাডোবি প্রাচীরবিশিষ্ট চত্বরের অংশ চিহ্নিত করা হয়। হোহোকাম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে যখন খরার কারণে খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেয়। একটি ছোট বাধা বা খালের ধস পুরো সেচ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করত। বড় শহর এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ত্যাগ করে এবং পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। ==মিসিসিপির প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== [[File:Serpent Mound (aerial view).jpg|thumb|upright|দ্য গ্রেট সার্পেন্ট মাউন্ড]] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মহাদেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা উত্তর আমেরিকার ইতিহাসের শুরুতে মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো আরও স্তরবিন্যাসযুক্ত হয়ে ওঠে এবং উপজাতিতে পরিণত হয়। এই উপজাতিগুলো দীর্ঘ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করত। বাণিজ্য পথের গুরুত্ব প্রভাবশালী নগর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণ ছিল উত্তর আমেরিকায় উদ্ভূত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের আশেপাশে এই সংস্কৃতিগুলোর বিকাশ ঘটে, যারা ধর্মীয় ও সমাধি উদ্দেশ্যে মাউন্ড ব্যবহার করত। এই মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণকে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলোর স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্ম ও নিদর্শন বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সমাধি মাউন্ড ছিল এই সকল সমাজের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। এই বৃহৎ কাঠামোগুলো তৈরি হতো সাবধানে নির্বাচিত মাটি ঝুড়িতে করে এনে স্তূপীকরণ করে। মাউন্ডগুলো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হতো, যার উপরের অংশ চ্যাপ্টা করা থাকত। কখনও কখনও এর উপরে ছোট ছোট কাঠামো নির্মিত হতো। কিছু মাউন্ড অত্যন্ত বিশাল। বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্যানহ্যান্ডলে অবস্থিত গ্রেভ ক্রিক মাউন্ড প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ৩০০ ফুট ব্যাসযুক্ত। অন্যান্য মাউন্ডগুলোকে খগোলীয় ঘটনাবলির (যেমন দিবসূত্র ও বিষুব) সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো আকার ও গুরুত্বে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। প্রথম সংস্কৃতি ছিল '''অ্যাডেনা''', যারা বর্তমান দক্ষিণ ওহাইও এবং আশেপাশের এলাকায় বাস করত। পরবর্তী সংস্কৃতিগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিস্ময়কর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে একে অপরকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। '''হোপওয়েল''' আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চলের জনগণ। এ সময়ে এই জাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা দেয়। এই সংগঠন উপজাতি গঠনের পূর্ববর্তী রূপ, যা পরবর্তীকালে পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ছিল '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো সামাজিক জটিলতায় পরিণত হয়, যা রোম-পরবর্তী ও উপজাতিগত ইংল্যান্ডের (একত্রীকরণের পূর্ববর্তী) সমাজ কাঠামোর সাথে তুলনীয়। মাউন্ড সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু বসতিতে বৃহৎ মাউন্ড কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। মাউন্ডের উপর প্রায়শই কাঠামো নির্মিত হতো। সামাজিক অসমতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যেমন দাসত্ব ও মানব বলিদান। কাহোকিয়া, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের কাছে অবস্থিত, ছিল একটি প্রভাবশালী ও উচ্চপর্যায়ের উন্নত সমাজ। বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গ্রেট লেকস থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাহোকিয়া ছিল মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এবং এই সংস্কৃতির বৃহত্তম বসতি। এই বসতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্মীয় মাউন্ড '''মঙ্ক’স মাউন্ড'''। এটি ছিল মাউন্ড নির্মাণকারীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মাউন্ড, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯০০ ফুট। মঙ্ক’স মাউন্ডের উপরে খননকাজে একটি বৃহৎ কাঠামোর প্রমাণ পাওয়া গেছে — সম্ভবত এটি একটি মন্দির — যা সমগ্র শহর থেকে দেখা যেত। শহরটি মাউন্ডটির দক্ষিণে একটি বিস্তৃত সমতলে বিস্তৃত ছিল। [[Image:Monks Mound in July.JPG|thumb|কোলিনসভিল, ইলিনয়ের কাছে অবস্থিত কাহোকিয়া সাইটে ম Monk's Mound]] শহরটির মূল অংশে শহরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ১২০টি মাউন্ড ছিল। এই মাউন্ডগুলো কয়েকটি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব অর্থ ও কার্যকারিতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। মঙ্ক’স মাউন্ডের নিকটবর্তী একটি খুঁটির বৃত্ত বহু খগোলীয় ঘটনার (যেমন ঋতু পরিবর্তন) চিহ্ন নির্দেশ করে। শহরটি একটি হীরার মত বিন্যাসে বিস্তৃত ছিল, যার ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৫ মাইল। এর সর্বোচ্চ অবস্থায়, শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ — যা একে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম শহর করে তোলে। সম্ভবত '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দ্বারা আনা ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন গুটিবসন্তের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নগর এলাকাগুলো এইসব রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল ছিল, এবং কাহোকিয়া ১৫০০ সালের দশকে পরিত্যক্ত হয়। উপজাতিগুলোর ছত্রভঙ্গের ফলে মাউন্ড নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং অনেক মাউন্ড ইউরোপীয়রা পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। ==ইউরোপীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ== ===মহামারী=== [[File:Acuna-Soto EID-v8n4p360 Fig1.png|thumb|মেক্সিকোর জনসংখ্যার গ্রাফ, যেখানে প্রধান মহামারীগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।]] উত্তর আমেরিকার অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে ইউরোপীয় যোগাযোগ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্ত ভারতীয় জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি ছিল ভাইরাসজনিত রোগ ও মহামারীর সূচনা।<ref>{{cite web |title=Conclusion :: U.S. History |url=https://www.dhr.history.vt.edu/modules/us/mod01_pop/conclusion.html |website=www.dhr.history.vt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Columbian Exchange |url=https://cla.umn.edu/ihrc/news-events/other/columbian-exchange |access-date=26 December 2020 |work=Immigration History Research Center College of Liberal Arts |date=16 June 2015 |language=en}}</ref> গুটি বসন্ত সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি ছিল। সংক্রামিত আদিবাসীরা ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক সাক্ষাতের পরই অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অনুমান করা হয় যে প্রথম সংস্পর্শের পর প্রায় ৯০% আদিবাসী ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায়।<ref>{{cite web |title=Guns Germs & Steel: Variables. Smallpox PBS |url=https://www.pbs.org/gunsgermssteel/variables/smallpox.html |website=www.pbs.org |access-date=26 December 2020}}</ref> এর প্রভাব অনেক শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শহরাঞ্চল এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং আদিবাসী সংস্কৃতি তখন আরও বিচ্ছিন্ন, কম ঐক্যবদ্ধ এবং একটি নতুন আন্ত-গোষ্ঠীগত যুদ্ধের রূপ নেয়, কারণ একেকটি গোষ্ঠী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকারভুক্ত সম্পদের উপর দখল নিতে চেষ্টা করে। ===কলম্বীয় বিনিময়=== অন্যদিকে, ইউরোপীয়রা আক্রমণাত্মক গাছপালা ও প্রাণী এনেছিল।<ref>{{cite web |title=APWG: Background Information |url=https://cybercemetery.unt.edu/archive/nisic/20110630090151/http://www.nps.gov/plants/alien/bkgd.htm |website=cybercemetery.unt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Escape of the invasives: Top six invasive plant species in the United States |url=https://www.si.edu/stories/escape-invasives |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Institution |language=en}}</ref> ঘোড়া আবার আমেরিকায় আনা হয়েছিল<ref>{{cite web |title=History of Horses in America |url=https://www.belrea.edu/a-history-of-horses-in-america/ |website=www.belrea.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> (কারণ প্রাচীন কালে বেরিং স্থলসেতু দিয়ে আসা আমেরিকান বন্য ঘোড়ার প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এবং তা দ্রুত বিস্তৃত বৃহৎ প্রেইরিতে মুক্তভাবে বিচরণে অভিযোজিত হয়। যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলি দ্রুত ঘোড়ার মূল্য অনুধাবন করে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;<ref>{{cite web |title=Wealth & Status A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/wealth.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> যার ফলে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়।<ref>{{cite web |title=Warfare A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/warfare.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> ইউরোপীয়রা গাছপালা ও প্রাণী নিয়ে আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছপালা যেমন ভুট্টা, আলু ও টমেটো নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।<ref>{{cite web |title=Columbian Exchange (1492-1800) |url=https://mypages.unh.edu/hoslac/book/columbian-exchange-1492-1800 |access-date=26 December 2020 |language=en}}</ref> == পর্যালোচনা প্রশ্ন == ১. আমেরিকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের জন্য দুটি নাম উল্লেখ করুন, এবং প্রতিটি নামের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন। ২. ইনকা, মায়া ও অ্যাজটেক সংস্কৃতির কী কী প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে? ৩. দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের উত্থান ও পতনে আবহাওয়াগত কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছিল? == সূত্র == {{Reflist}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} {{chapnav|ভূমিকা|ইউরোপীয় ইতিহাস}} q0mzhy6f4n0o11i6apk1ir0gqmg4uo6 84861 84860 2025-06-18T22:13:01Z Mehedi Abedin 7113 84861 wikitext text/x-wiki [[File:Kincaid Mounds Site aerial illustration HRoe 2019.jpg|thumb|প্রাক-কলম্বীয় যুগে কিনকেইড মাউন্ডস স্থানের শৈল্পিক কল্পচিত্র।]] আমেরিকায় মানব সভ্যতার সূচনা সম্ভবত শেষ বরফ যুগে হয়েছিল, যখন প্রাগৈতিহাসিক শিকারীরা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মাঝে একটি স্থলপথ পার হয়ে এসেছিল।<ref>{{cite news |last1=Gerszak |first1=Fen Montaigne,Jennie Rothenberg Gritz,Rafal |title=The Story of How Humans Came to the Americas Is Constantly Evolving |url=https://www.smithsonianmag.com/science-nature/how-humans-came-to-americas-180973739/ |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Magazine |language=en}}</ref> উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাগুলোর জটিলতা, প্রযুক্তি এবং সংহতির স্তর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত সমাজ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্কৃতিগুলো লেখার পদ্ধতি বিকাশ করেছিল, যা তাদের প্রসার ও আধিপত্য স্থাপনে সাহায্য করেছিল। তারা প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর কিছু গড়ে তোলে। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতিগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং কম ঐক্যবদ্ধ। উপজাতিই ছিল প্রধান সামাজিক একক এবং উপজাতিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে এক ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার দুর্গম মরু অঞ্চলে ইউরোপীয় শহরের সমান বড় উপজাতীয় বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ইতিহাসবিদদের পক্ষে এসব সংস্কৃতিকে একটি একক নামের অধীনে চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের জন্য কোনো অভিন্ন নাম ছিল না। প্রথমে ইউরোপীয়রা স্থানীয়দের "ইন্ডিয়ান" নামে ডাকত। এই নামটি এসেছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সেই ধারণা থেকে যে তিনি ভারত যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন।<ref name="indianname">{{cite web |title=American Indians and Native Americans |url=https://www.umass.edu/legal/derrico/shoshone/indian.html |website=www.umass.edu |accessdate=23 September 2020}}</ref> যদিও আমেরিগো ভেসপুচ্চি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমেরিকা আসলে ভারত নয়, তবুও "ইন্ডিয়ান" শব্দটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হত।<ref name="indianname"/> ১৯৬০-এর দশক থেকে "নেটিভ আমেরিকান" শব্দটি চালু হয়। তবে এটিও একটি সমস্যাযুক্ত শব্দ হতে পারে: "আমেরিকা" নামটি এসেছে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম থেকে, যিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে খুব সামান্য সম্পর্কিত ছিলেন।<ref name="indianname"/> "আমেরিকান ইন্ডিয়ান" শব্দটিও খুব সাধারণ একটি শব্দ, যা এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যাদের মধ্যে গায়ের রং এবং ইউরোপীয় ভাষা ব্যতিরেকে খুব বেশি মিল নেই। কানাডায় "ফার্স্ট পিপল" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই সব নামই আমেরিকার স্থানীয় জনগণের বৈচিত্র্য ও প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকা সম্পর্কে চলমান মতপার্থক্যকে তুলে ধরে, যা নিয়ে আজও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ==আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা== ===বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ=== [[Image:Map of gene flow in and out of Beringia.jpg|thumb|upright|আমেরিকাতে এশিয়া থেকে মানুষের আগমন দেখানো একটি মানচিত্র।]] কলম্বাসের ১৪৯২ সালের আগমনের পর আমেরিকার ইতিহাস শুরু হয়নি। ইউরোপীয়দের প্রথম আগমনের অনেক আগেই আমেরিকা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।<ref name="landbridge">{{cite web |title=Migration of Humans into the Americas (c. 14,000 BCE) |url=https://www.science.smith.edu/climatelit/migration-of-humans-into-north-america/ |website=Climate Across Curriculum |accessdate=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০}}</ref> এর সভ্যতা শুরু হয়েছিল শেষ বরফযুগের সময়, প্রায় ১৫ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে।<ref name="landbridge"/> উত্তর দিকে বিশাল বরফের চাদর ছিল, ফলে সমুদ্রের স্তর অনেক নিচে নামছিল, যা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি ভূমিসেতু সৃষ্টি করেছিল।<ref name="landbridge"/> দুটি বড় বরফের চাদরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গাই বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ নামে পরিচিত, যা বর্তমান এলাস্কা থেকে আলবার্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সংযোগ ছিল।<ref name="landbridge"/> শিকারী পশুর ঝাঁক অনুসরণ করে যাযাবর এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। একটি বিশেষ ধরনের তীরের সূচক পাওয়া গেছে যা প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল বর্তমান ক্লোভিস, নিউ মেক্সিকোর কাছে। উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত অনেক স্থানে বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাধারণ সমাধি প্রথার প্রমাণ পাওয়া যায়। ===ক্লোভিস মানুষ=== '''ক্লোভিস মানুষ''' উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। স্পষ্ট নয় যে তারা একক একটি গোত্র ছিল কি না, নাকি একই প্রযুক্তি ও বিশ্বাসবিশ্লেষণের অনেক গোত্র ছিল। তাদের প্রায় ২০০০ মাইলের কঠিন যাত্রা ছিল প্রাক-ইতিহাসের অন্যতম অসাধারণ কীর্তি। তাদের সংস্কৃতি প্রায় ১২,৯০০ বছর আগে হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণ নিয়ে বিস্তর ধারণা প্রচলিত। মেমথের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে একটি ধূমকেতুর প্রভাবে পরিবেশগত হঠাৎ পরিবর্তন বা বিশাল একটি মিষ্টি পানির হ্রদ লেক অ্যাগাসিসের ভাঙ্গনের ফলে বন্যা আসার মত তত্ত্ব রয়েছে। ক্লোভিসের আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসতির বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষাবিজ্ঞান তুলনায় প্রমাণ মেলে যে প্রাচীন আমেরিকা একাধিক সমসাময়িক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কিছু জেনেটিক ও সময় নির্ধারণ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রাচীন আমেরিকানরা অন্য স্থান থেকেও আসতে পারে এবং ক্লোভিস সাইটের চেয়ে আগে এসেছিল। সম্ভবত কিছু প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূল বরাবর চলাচল করেছিল বা পলিনেশীয় দ্বীপ থেকে নৌকাযোগে এসেছিল। সময়ের সঙ্গে এই প্রাচীন বসতি স্থাপনকারীরা গৃহপালিত পশুপালনসহ কৃষিজীবনে পা রেখেছিল। বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থায়ী গোত্রে পরিণত হয় এবং নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছিল, যা এতটাই আলাদা ছিল যে দূরবর্তী আত্মীয়রা একে অপরকে বুঝতে পারত না। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বা বিভিন্ন গোত্রের ভাষার অধ্যয়ন বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখায়, শত শত মাইল দূরের গোত্রের মধ্যে মিল থাকলেও কাছাকাছি গোত্রের ভাষায় বড় পার্থক্য ছিল। কখনও কখনও কোনো গোত্র আঞ্চলিক গুরুত্ব লাভ করে আমেরিকার বড় বড় অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করত। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্রাজ্য উঠেছিল যা ইউরোপের সেরা সম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। তাদের সময়ের জন্য এই সম্রাজ্যগুলো অত্যন্ত উন্নত ছিল। ==মেসোআমেরিকার প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত সভ্যতা হিসেবে পরিগণিত। মেসোআমেরিকায় পড়া ও লেখা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং এই সভ্যতাগুলি রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি ও স্থাপত্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। এইসব সভ্যতা এমন কিছু রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ অর্জন করেছিল যা তাদের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, অলঙ্কৃত ও জনবহুল নগরসমূহ নির্মাণে সক্ষম করে তোলে। ===মায়া=== [[File:Dintel 26 de Yachilán 3.jpg|thumb|মায়ারা ছিল এক উন্নত সভ্যতা, যারা শিল্পকলায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেছিল।]] আদিম আমেরিকানরা বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রায় ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ, '''মায়া''' সংস্কৃতি একটি জটিল সভ্যতায় পরিণত হয়। মায়ারা ইউকাটান নিম্নভূমিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক, শিল্প ও ধর্মীয় পরিচয় গঠন করে। 'শাস্ত্রীয় যুগ' (২৫০-৯০০ খ্রি.)-এ মায়া সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং এটি অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সময়ে অনেক স্বাধীন নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মায়া জনগণের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। মায়া সমাজ রাজনীতির মাধ্যমে নয়, বরং তাদের জটিল ও উচ্চতর ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত ছিল। মায়া ধর্ম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং তারা আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী ছিল। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সে সময়কার ইউরোপীয় সমাজগুলোর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। তারা সময় পরিমাপের জন্য একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং রাত্রিকালীন আকাশের চলাচল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল। শুক্র গ্রহকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিত, কারণ এটি উজ্জ্বলতম এবং সন্ধ্যা ও ভোর উভয় সময়ে দৃশ্যমান হতো। মায়া শিল্পকলা প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুসজ্জিত ও উন্নত বিবেচিত হয়। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে মায়া সংস্কৃতির পতন ঘটে। এর কারণ আজও গবেষণার বিষয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ে শিলালিপি ও স্থাপত্য নির্মাণের হ্রাস লক্ষ্য করেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মায়ারা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। একটি বিকেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা মায়াদের স্পেনীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আজও ইউকাটানে মায়া সংস্কৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, যদিও অনেক শিলালিপি হারিয়ে গেছে। ===আজটেক=== [[File:1479 Stein der fünften Sonne, sog. Aztekenkalender, Ollin Tonatiuh anagoria.JPG|thumb|আজটেক পঞ্জিকা পাথর]] '''আজটেক''' সংস্কৃতির উদ্ভব হয় মেক্সিকো উপত্যকায় মেক্সিকা জনগণের আগমনের মাধ্যমে। এই জনগোষ্ঠীর নেতারা আধিপত্যশীল জাতিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে আজটেক ত্রৈমিত্রি গড়ে তুলে একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যা আজকের মেক্সিকোর অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজটেক মিত্রসংঘ দখল ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলো দখল করে আজটেক সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। স্থানীয় নেতারা আজটেক সংস্কৃতি গ্রহণ ও প্রসারে মর্যাদা অর্জন করত। একইভাবে, আজটেকরা পরাজিত জাতিগুলোর সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় জ্ঞান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করত। আজটেক শক্তির কেন্দ্র ছিল অর্থনৈতিক ঐক্য। বিজিত অঞ্চলগুলি রাজধানী টেনোচটিটলানকে কর প্রদান করত, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটির অবস্থান। বিপুল পরিমাণ করের মাধ্যমে এই নগরটি প্রভাবশালী, জনবহুল ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৫২১ সালে স্পেনীয়দের আগমনের সময় এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ট্লাতেলোলকো নামের একসময়ের স্বাধীন শহর)। তখন এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২১২,৫০০। শহরটিতে ছিল ১৯৭ ফুট উঁচু টেম্পল ডি মেয়র, ৪৫টি সরকারি ভবন, একটি প্রাসাদ, দুটি চিড়িয়াখানা, একটি উদ্ভিদ উদ্যান ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। লেক টেক্সকোকোর অগভীর জলে ভেসে থাকা ‘চিনাম্পা’ নামক ভাসমান কৃষিক্ষেত্র ছিল শহরবাসীর খাদ্যের উৎস। যদিও অনেক মেসোআমেরিকান সভ্যতাই মানব বলিদান করত, আজটেকদের বলিদানের পরিমাণ ছিল তুলনাহীন। তাদের মতে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানব বলিদান অপরিহার্য ছিল। ১৪৮৭ সালে টেনোচটিটলানের প্রধান পিরামিড পুনর কনসক্রেশনের সময় তারা চার দিনে ৮৪,৪০০ জন বন্দিকে বলি দেয় বলে দাবি করে। স্পেনীয়রা টেনোচটিটলানে এসে আজটেক সংস্কৃতির পতন ঘটায়। শহরের বিশালতা তাদের চমকে দিলেও ব্যাপক মানব বলিদান ইউরোপীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সোনা-রূপার প্রাচুর্য তাদের লোভ উদ্রেক করে। জুন ১৫২০-এ তারা রাজা মন্টেজুমাকে হত্যা করে এবং ১৫২১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ত্লাসকালা জাতির সহযোগিতায় নগরটিতে অবরোধ সৃষ্টি করে ধ্বংস করে ফেলে। ===ইনকা=== [[Image:Peru_Machu_Picchu_Sunrise.jpg|thumb|upright|মাচু পিচু, "ইনকার হারানো শহর"]] প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান পেরুর কুসকো অঞ্চলে মানকো কাপাক নামক একজন সম্রাটের উত্থানের মাধ্যমে '''ইনকা''' সভ্যতার সূচনা হয়। ধর্ম ইনকাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। রাজপরিবার সূর্যদেবতার সন্তান হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে সম্রাটের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত, যা কেবল ঐতিহ্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকত। ইনকাদের অধীনে একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো ছিল — প্রতি দশজন নাগরিকের জন্য গড়ে একজন করে কর্মকর্তা থাকত। সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত; বার্তাবাহকরা গ্রাম থেকে গ্রামে দৌড়ে রাজকীয় বার্তা পৌঁছে দিত। ১৪৩৮ সালে পচাকুতি নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন, যিনি ইনকাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক বলে বিবেচিত। তিনি কুসকো ও সূর্য মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। তার কৌশলী সামরিক নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনৈতিক প্রচারণা ইনকাদের সাফল্যের ভিত্তি। তিনি বিজয়ী অঞ্চলগুলোর নেতাদের বিলাসদ্রব্য ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। ইনকারা একটি সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, যা ইনকা সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করত। ফলে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ইনকা সাম্রাজ্যের অনেক বিস্তার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫শ শতাব্দীর শেষদিকে ইনকা সাম্রাজ্য বর্তমান ইকুয়েডর থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কুসকো ছিল এর রাজধানী, যা স্পেনীয়দের মতে "স্পেনের যেকোনো শহরের সমান" ছিল। তবে ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর ছিল মাচু পিচু — একটি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল, যেটিকে ইনকারা তাদের নেতৃবৃন্দের বিশ্রামস্থল হিসেবে গড়ে তোলে। এখানে প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ করা হয়েছিল শুকনো পাথরের দেয়াল দিয়ে, যা এত নিখুঁতভাবে কাটানো ও বসানো যে, তার ফাঁকে একটি ছুরি ঢোকানো যায় না। স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় আগমন করে এবং ধীরে চলা অবরোধ যুদ্ধের তুলনায় তাদের আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তারা সম্রাটকে বন্দি করে হত্যা করে এবং ১৫৩৩ সালে ইনকা সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। তবে কিছু বিদ্রোহী পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং আরও ৩৯ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ===মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ=== মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ নিঃসন্দেহে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ সভ্যতা ছিল। মেসোআমেরিকায় লেখালেখির প্রচলন ছিল, যা উত্তর আমেরিকার তুলনায় এই সংস্কৃতিগুলোকে অনেক সহজে বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। প্রতিটি সভ্যতাই বিস্ময়কর নগর ব্যবস্থা ও জটিল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা ইউরোপীয় স্পেনীয়দের মতোই 'সভ্য' ছিল যারা ১৫শ ও ১৬শ শতকে তাদের দখল করে। ==দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== দক্ষিণ-পশ্চিমের শুষ্ক মরুভূমির সাথে স্থানীয় আমেরিকানরা খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র আবহাওয়ার একটি সময়কালে এই অঞ্চলের অনেক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সেচ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি এখানে গড়ে ওঠে। জটিল অ্যাডোবি ও বালুকাপাথরের ভবন নির্মিত হয়। অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও শৈল্পিক মাটির পাত্র তৈরি করা হয়। তবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া চিরকাল স্থায়ী হয়নি এবং ধীরে ধীরে তা আবার এই অঞ্চলের সাধারণ খরার দিকে ফিরে যায়। এই শুষ্ক পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল মানুষকে সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে, এবং অবশেষে এই সংস্কৃতিগুলোর জটিল কৃতিত্ব পরিত্যক্ত হয়। ===আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান=== [[File:Mesaverde cliffpalace 20030914.752.jpg|thumb|আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের একটি স্থাপনা, ক্লিফ প্রাসাদ।]] একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ছিল '''আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান''', যারা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং তার আশেপাশের এলাকায় বাস করত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল সমতল শুষ্ক মরুভূমি, যা ছোট ছোট উঁচু মালভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেগুলোকে "মেসা" বলা হয়। এই মেসাগুলোর নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ক্যানিয়ন ও ওভারহ্যাং তৈরি করেছিল। আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি এই মেসাগুলোর ঢালের গুহার মতো ওভারহ্যাংকে অস্থায়ী বজ্রবৃষ্টিপূর্ণ ঝড় থেকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। তারা প্রাকৃতিক জলস্রোত ব্যবহার করে এবং বরফ গলার জলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেতের দিকে প্রবাহিত করে ভুট্টা, কুমড়ো ও শিম চাষ করত। ঋতুভিত্তিক ক্ষুদ্র নদীগুলি কাদামাটির স্তর সৃষ্টি করত। এই কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে ওঠত, যাকে অ্যাডোবি বলা হয়, এবং এটি বালুকাপাথরের সাথে মিশিয়ে জটিল স্থাপনা গড়ে তোলা হত, অনেক সময় সেগুলো মেসাগুলোর ওভারহ্যাংয়ের ওপরে থাকত। তারা মাটি দিয়ে সুন্দর ও কার্যকর পাত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিল। ৯০০ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিস্থিতি আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের বিকাশের সুযোগ দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিখুঁত হয়, মাটির পাত্র শৈল্পিক হয়ে ওঠে, টার্কি পোষ মানানো হয় এবং দীর্ঘ দূরত্বে বাণিজ্য সারা অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। এরপর আসে প্রায় ৩০০ বছরের দীর্ঘ খরা, যা "গ্রেট ড্রাউট" নামে পরিচিত। এই সময় পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি চাপে পড়ে এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত দূরে কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে শুষ্কতা থেকে বাঁচতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা ছড়িয়ে পড়ে; জটিল স্থাপনাগুলি ত্যাগ করে ছোট ছোট বসতিতে চলে যায় যেখানে অল্প জল পাওয়া যেত। ===হোহোকাম=== [[File:CasaGrandeRuin.jpg|thumb|কাসা গ্রান্দে ধ্বংসাবশেষ, আধুনিক ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত।]] উত্তরে আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতির পাশেই দক্ষিণ অ্যারিজোনায় একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে ওঠে, যাকে '''হোহোকাম''' বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক আদিবাসী সীমিত পরিসরে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার করলেও, হোহোকামরাই এই প্রযুক্তিকে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে (আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই)। ছোট কৃষিভূমিতে পানি প্রবাহিত করার ক্ষমতা হোহোকামদের তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে সত্য ছিল গিলা নদী উপত্যকায়, যেখানে নদীকে বহু স্থানে বিভক্ত করে উর্বর সমভূমি ও বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর সেচ করা হত। বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে একটি 'গ্রেট হাউস' থাকত, যা ছিল বড় একটি অ্যাডোবি/পাথরের কাঠামো। এর মধ্যে কিছু চার তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং সম্ভবত এটি প্রশাসনিক বা ধর্মীয় অভিজাতদের জন্য ব্যবহৃত হত। ছোট ছোট খননকৃত কক্ষ বা গর্ত অ্যাডোবি দেয়ালে ঘেরা থাকত এবং মূল আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। আরও ছোট কক্ষ বা গর্ত ছিল নানা কাজে ব্যবহৃত। সেচ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল বিশাল কাসা গ্রান্দে গ্রাম। দুটি প্রধান খালের মাঝখানে অবস্থিত এই স্থানটি প্রায় নয় দশক ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। মূল শহরটি একটি বড় দরবারের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং এতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বৃত্তাকার চত্বর ছিল। দশম শতকের মধ্যে আশেপাশে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং একটি বৃহৎ, উন্নত অঞ্চল তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালের একটি খননের ফলে কাসা গ্রান্দে এলাকার পরিমাণ বোঝা যায়। সেই প্রকল্পে ২৪৭টি পিট হাউস, ২৭টি পিট রুম, ৮৬৬টি গর্ত, ১১টি ছোট খাল, একটি বল কোর্ট এবং চারটি অ্যাডোবি প্রাচীরবিশিষ্ট চত্বরের অংশ চিহ্নিত করা হয়। হোহোকাম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে যখন খরার কারণে খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেয়। একটি ছোট বাধা বা খালের ধস পুরো সেচ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করত। বড় শহর এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ত্যাগ করে এবং পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। ==মিসিসিপির প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== [[File:Serpent Mound (aerial view).jpg|thumb|upright|দ্য গ্রেট সার্পেন্ট ঢিবি]] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মহাদেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা উত্তর আমেরিকার ইতিহাসের শুরুতে ঢিবি নির্মাণকারী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো আরও স্তরবিন্যাসযুক্ত হয়ে ওঠে এবং উপজাতিতে পরিণত হয়। এই উপজাতিগুলো দীর্ঘ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করত। তারা বাণিজ্য পথের গুরুত্ব প্রভাবশালী নগর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ঢিবি নির্মাণকারী জনগণ ছিল উত্তর আমেরিকায় উদ্ভূত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের আশেপাশে এই সংস্কৃতিগুলোর বিকাশ ঘটে, যারা ধর্মীয় ও সমাধি উদ্দেশ্যে ঢিবি ব্যবহার করত। এই মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণকে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলোর স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্ম ও নিদর্শন বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সমাধি ঢিবি ছিল এই সকল সমাজের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। এই বৃহৎ কাঠামোগুলো তৈরি হতো সাবধানে নির্বাচিত মাটি ঝুড়িতে করে এনে স্তূপীকরণ করে। ঢিবিগুলো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হতো, যার উপরের অংশ চ্যাপ্টা করা থাকত। কখনও কখনও এর উপরে ছোট ছোট কাঠামো নির্মিত হতো। কিছু ঢিবি অত্যন্ত বিশাল। বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্যানহ্যান্ডলে অবস্থিত গ্রেভ ক্রিক মাউন্ড প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ৩০০ ফুট ব্যাসযুক্ত। অন্যান্য মাউন্ডগুলোকে খগোলীয় ঘটনাবলির (যেমন দিবসূত্র ও বিষুব) সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো আকার ও গুরুত্বে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। প্রথম সংস্কৃতি ছিল '''অ্যাডেনা''', যারা বর্তমান দক্ষিণ ওহাইও এবং আশেপাশের এলাকায় বাস করত। পরবর্তী সংস্কৃতিগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিস্ময়কর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে একে অপরকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। '''হোপওয়েল''' আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চলের জনগণ। এ সময়ে এই জাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা দেয়। এই সংগঠন উপজাতি গঠনের পূর্ববর্তী রূপ, যা পরবর্তীকালে পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ছিল '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি। ঢিবি নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো সামাজিক জটিলতায় পরিণত হয়, যা রোম-পরবর্তী ও উপজাতিগত ইংল্যান্ডের (একত্রীকরণের পূর্ববর্তী) সমাজ কাঠামোর সাথে তুলনীয়। ঢিবির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু বসতিতে বৃহৎ ঢিবি কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। ঢিবির উপর প্রায়শই কাঠামো নির্মিত হতো। সামাজিক অসমতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যেমন দাসত্ব ও মানব বলিদান। কাহোকিয়া, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের কাছে অবস্থিত, ছিল একটি প্রভাবশালী ও উচ্চপর্যায়ের উন্নত সমাজ। বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গ্রেট লেকস থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাহোকিয়া ছিল মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এবং এই সংস্কৃতির বৃহত্তম বসতি। এই বসতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্মীয় মাউন্ড '''মঙ্ক’স মাউন্ড'''। এটি ছিল মাউন্ড নির্মাণকারীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মাউন্ড, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯০০ ফুট। মঙ্ক’স মাউন্ডের উপরে খননকাজে একটি বৃহৎ কাঠামোর প্রমাণ পাওয়া গেছে, সম্ভবত এটি একটি মন্দির — যা সমগ্র শহর থেকে দেখা যেত। শহরটি ঢিবির দক্ষিণে একটি বিস্তৃত সমতলে বিস্তৃত ছিল। [[Image:Monks Mound in July.JPG|thumb|কোলিনসভিল, ইলিনয়ের কাছে অবস্থিত কাহোকিয়া সাইটে মঙ্ক ঢিবি]] শহরটির মূল অংশে শহরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ১২০টি ঢিবি ছিল। এই ঢিবিগুলো কয়েকটি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব অর্থ ও কার্যকারিতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। মঙ্ক ঢিবিএ নিকটবর্তী একটি খুঁটির বৃত্ত বহু খগোলীয় ঘটনার (যেমন ঋতু পরিবর্তন) চিহ্ন নির্দেশ করে। শহরটি একটি হীরার মত বিন্যাসে বিস্তৃত ছিল, যার ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৫ মাইল। সর্বোচ্চ অবস্থায় শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ — যা একে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম শহর করে তোলে। সম্ভবত '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দ্বারা আনা ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন গুটিবসন্তের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নগর এলাকাগুলো এইসব রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল ছিল, এবং কাহোকিয়া ১৫০০ সালের দশকে পরিত্যক্ত হয়। উপজাতিগুলোর ছত্রভঙ্গের ফলে ঢিবি নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং অনেক ঢিবি ইউরোপীয়রা পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। ==ইউরোপীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ== ===মহামারী=== [[File:Acuna-Soto EID-v8n4p360 Fig1.png|thumb|মেক্সিকোর জনসংখ্যার গ্রাফ, যেখানে প্রধান মহামারীগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।]] উত্তর আমেরিকার অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে ইউরোপীয় যোগাযোগ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্ত ভারতীয় জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি ছিল ভাইরাসজনিত রোগ ও মহামারীর সূচনা।<ref>{{cite web |title=Conclusion :: U.S. History |url=https://www.dhr.history.vt.edu/modules/us/mod01_pop/conclusion.html |website=www.dhr.history.vt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Columbian Exchange |url=https://cla.umn.edu/ihrc/news-events/other/columbian-exchange |access-date=26 December 2020 |work=Immigration History Research Center College of Liberal Arts |date=16 June 2015 |language=en}}</ref> গুটি বসন্ত সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি ছিল। সংক্রামিত আদিবাসীরা ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক সাক্ষাতের পরই অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অনুমান করা হয় যে প্রথম সংস্পর্শের পর প্রায় ৯০% আদিবাসী ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায়।<ref>{{cite web |title=Guns Germs & Steel: Variables. Smallpox PBS |url=https://www.pbs.org/gunsgermssteel/variables/smallpox.html |website=www.pbs.org |access-date=26 December 2020}}</ref> এর প্রভাব অনেক শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শহরাঞ্চল এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং আদিবাসী সংস্কৃতি তখন আরও বিচ্ছিন্ন, কম ঐক্যবদ্ধ এবং একটি নতুন আন্ত-গোষ্ঠীগত যুদ্ধের রূপ নেয়, কারণ একেকটি গোষ্ঠী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকারভুক্ত সম্পদের উপর দখল নিতে চেষ্টা করে। ===কলম্বীয় বিনিময়=== অন্যদিকে, ইউরোপীয়রা আক্রমণাত্মক গাছপালা ও প্রাণী এনেছিল।<ref>{{cite web |title=APWG: Background Information |url=https://cybercemetery.unt.edu/archive/nisic/20110630090151/http://www.nps.gov/plants/alien/bkgd.htm |website=cybercemetery.unt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Escape of the invasives: Top six invasive plant species in the United States |url=https://www.si.edu/stories/escape-invasives |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Institution |language=en}}</ref> ঘোড়া আবার আমেরিকায় আনা হয়েছিল<ref>{{cite web |title=History of Horses in America |url=https://www.belrea.edu/a-history-of-horses-in-america/ |website=www.belrea.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> (কারণ প্রাচীন কালে বেরিং স্থলসেতু দিয়ে আসা আমেরিকান বন্য ঘোড়ার প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এবং তা দ্রুত বিস্তৃত বৃহৎ প্রেইরিতে মুক্তভাবে বিচরণে অভিযোজিত হয়। যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলি দ্রুত ঘোড়ার মূল্য অনুধাবন করে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;<ref>{{cite web |title=Wealth & Status A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/wealth.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> যার ফলে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়।<ref>{{cite web |title=Warfare A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/warfare.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> ইউরোপীয়রা গাছপালা ও প্রাণী নিয়ে আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছপালা যেমন ভুট্টা, আলু ও টমেটো নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।<ref>{{cite web |title=Columbian Exchange (1492-1800) |url=https://mypages.unh.edu/hoslac/book/columbian-exchange-1492-1800 |access-date=26 December 2020 |language=en}}</ref> == পর্যালোচনা প্রশ্ন == ১. আমেরিকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের জন্য দুটি নাম উল্লেখ করুন, এবং প্রতিটি নামের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন। ২. ইনকা, মায়া ও অ্যাজটেক সংস্কৃতির কী কী প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে? ৩. দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের উত্থান ও পতনে আবহাওয়াগত কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছিল? == সূত্র == {{Reflist}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} {{chapnav|ভূমিকা|ইউরোপীয় ইতিহাস}} 8444bv8blr4urq6kwf0n09dz2a09v7d 84862 84861 2025-06-18T22:14:31Z Mehedi Abedin 7113 84862 wikitext text/x-wiki [[File:Kincaid Mounds Site aerial illustration HRoe 2019.jpg|thumb|প্রাক-কলম্বীয় যুগে কিনকেইড মাউন্ডস স্থানের শৈল্পিক কল্পচিত্র।]] আমেরিকায় মানব সভ্যতার সূচনা সম্ভবত শেষ বরফ যুগে হয়েছিল, যখন প্রাগৈতিহাসিক শিকারীরা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মাঝে একটি স্থলপথ পার হয়ে এসেছিল।<ref>{{cite news |last1=Gerszak |first1=Fen Montaigne,Jennie Rothenberg Gritz,Rafal |title=The Story of How Humans Came to the Americas Is Constantly Evolving |url=https://www.smithsonianmag.com/science-nature/how-humans-came-to-americas-180973739/ |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Magazine |language=en}}</ref> উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাগুলোর জটিলতা, প্রযুক্তি এবং সংহতির স্তর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত সমাজ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্কৃতিগুলো লেখার পদ্ধতি বিকাশ করেছিল, যা তাদের প্রসার ও আধিপত্য স্থাপনে সাহায্য করেছিল। তারা প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর কিছু গড়ে তোলে। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতিগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং কম ঐক্যবদ্ধ। উপজাতিই ছিল প্রধান সামাজিক একক এবং উপজাতিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে এক ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার দুর্গম মরু অঞ্চলে ইউরোপীয় শহরের সমান বড় উপজাতীয় বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ইতিহাসবিদদের পক্ষে এসব সংস্কৃতিকে একটি একক নামের অধীনে চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের জন্য কোনো অভিন্ন নাম ছিল না। প্রথমে ইউরোপীয়রা স্থানীয়দের "ইন্ডিয়ান" নামে ডাকত। এই নামটি এসেছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সেই ধারণা থেকে যে তিনি ভারত যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন।<ref name="indianname">{{cite web |title=American Indians and Native Americans |url=https://www.umass.edu/legal/derrico/shoshone/indian.html |website=www.umass.edu |accessdate=23 September 2020}}</ref> যদিও আমেরিগো ভেসপুচ্চি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমেরিকা আসলে ভারত নয়, তবুও "ইন্ডিয়ান" শব্দটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হত।<ref name="indianname"/> ১৯৬০-এর দশক থেকে "নেটিভ আমেরিকান" শব্দটি চালু হয়। তবে এটিও একটি সমস্যাযুক্ত শব্দ হতে পারে: "আমেরিকা" নামটি এসেছে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম থেকে, যিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে খুব সামান্য সম্পর্কিত ছিলেন।<ref name="indianname"/> "আমেরিকান ইন্ডিয়ান" শব্দটিও খুব সাধারণ একটি শব্দ, যা এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যাদের মধ্যে গায়ের রং এবং ইউরোপীয় ভাষা ব্যতিরেকে খুব বেশি মিল নেই। কানাডায় "ফার্স্ট পিপল" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই সব নামই আমেরিকার স্থানীয় জনগণের বৈচিত্র্য ও প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকা সম্পর্কে চলমান মতপার্থক্যকে তুলে ধরে, যা নিয়ে আজও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ==আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা== ===বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ=== [[Image:Map of gene flow in and out of Beringia.jpg|thumb|upright|আমেরিকাতে এশিয়া থেকে মানুষের আগমন দেখানো একটি মানচিত্র।]] কলম্বাসের ১৪৯২ সালের আগমনের পর আমেরিকার ইতিহাস শুরু হয়নি। ইউরোপীয়দের প্রথম আগমনের অনেক আগেই আমেরিকা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।<ref name="landbridge">{{cite web |title=Migration of Humans into the Americas (c. 14,000 BCE) |url=https://www.science.smith.edu/climatelit/migration-of-humans-into-north-america/ |website=Climate Across Curriculum |accessdate=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০}}</ref> এর সভ্যতা শুরু হয়েছিল শেষ বরফযুগের সময়, প্রায় ১৫ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে।<ref name="landbridge"/> উত্তর দিকে বিশাল বরফের চাদর ছিল, ফলে সমুদ্রের স্তর অনেক নিচে নামছিল, যা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি ভূমিসেতু সৃষ্টি করেছিল।<ref name="landbridge"/> দুটি বড় বরফের চাদরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গাই বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ নামে পরিচিত, যা বর্তমান এলাস্কা থেকে আলবার্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সংযোগ ছিল।<ref name="landbridge"/> শিকারী পশুর ঝাঁক অনুসরণ করে যাযাবর এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। একটি বিশেষ ধরনের তীরের সূচক পাওয়া গেছে যা প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল বর্তমান ক্লোভিস, নিউ মেক্সিকোর কাছে। উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত অনেক স্থানে বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাধারণ সমাধি প্রথার প্রমাণ পাওয়া যায়। ===ক্লোভিস মানুষ=== '''ক্লোভিস মানুষ''' উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। স্পষ্ট নয় যে তারা একক একটি গোত্র ছিল কি না, নাকি একই প্রযুক্তি ও বিশ্বাসবিশ্লেষণের অনেক গোত্র ছিল। তাদের প্রায় ২০০০ মাইলের কঠিন যাত্রা ছিল প্রাক-ইতিহাসের অন্যতম অসাধারণ কীর্তি। তাদের সংস্কৃতি প্রায় ১২,৯০০ বছর আগে হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণ নিয়ে বিস্তর ধারণা প্রচলিত। মেমথের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে একটি ধূমকেতুর প্রভাবে পরিবেশগত হঠাৎ পরিবর্তন বা বিশাল একটি মিষ্টি পানির হ্রদ লেক অ্যাগাসিসের ভাঙ্গনের ফলে বন্যা আসার মত তত্ত্ব রয়েছে। ক্লোভিসের আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসতির বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষাবিজ্ঞান তুলনায় প্রমাণ মেলে যে প্রাচীন আমেরিকা একাধিক সমসাময়িক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কিছু জেনেটিক ও সময় নির্ধারণ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রাচীন আমেরিকানরা অন্য স্থান থেকেও আসতে পারে এবং ক্লোভিস সাইটের চেয়ে আগে এসেছিল। সম্ভবত কিছু প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূল বরাবর চলাচল করেছিল বা পলিনেশীয় দ্বীপ থেকে নৌকাযোগে এসেছিল। সময়ের সঙ্গে এই প্রাচীন বসতি স্থাপনকারীরা গৃহপালিত পশুপালনসহ কৃষিজীবনে পা রেখেছিল। বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থায়ী গোত্রে পরিণত হয় এবং নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছিল, যা এতটাই আলাদা ছিল যে দূরবর্তী আত্মীয়রা একে অপরকে বুঝতে পারত না। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বা বিভিন্ন গোত্রের ভাষার অধ্যয়ন বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখায়, শত শত মাইল দূরের গোত্রের মধ্যে মিল থাকলেও কাছাকাছি গোত্রের ভাষায় বড় পার্থক্য ছিল। কখনও কখনও কোনো গোত্র আঞ্চলিক গুরুত্ব লাভ করে আমেরিকার বড় বড় অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করত। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্রাজ্য উঠেছিল যা ইউরোপের সেরা সম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। তাদের সময়ের জন্য এই সম্রাজ্যগুলো অত্যন্ত উন্নত ছিল। ==মেসোআমেরিকার প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত সভ্যতা হিসেবে পরিগণিত। মেসোআমেরিকায় পড়া ও লেখা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং এই সভ্যতাগুলি রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি ও স্থাপত্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। এইসব সভ্যতা এমন কিছু রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ অর্জন করেছিল যা তাদের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, অলঙ্কৃত ও জনবহুল নগরসমূহ নির্মাণে সক্ষম করে তোলে। ===মায়া=== [[File:Dintel 26 de Yachilán 3.jpg|thumb|মায়ারা ছিল এক উন্নত সভ্যতা, যারা শিল্পকলায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেছিল।]] আদিম আমেরিকানরা বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রায় ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ, '''মায়া''' সংস্কৃতি একটি জটিল সভ্যতায় পরিণত হয়। মায়ারা ইউকাটান নিম্নভূমিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক, শিল্প ও ধর্মীয় পরিচয় গঠন করে। 'শাস্ত্রীয় যুগ' (২৫০-৯০০ খ্রি.)-এ মায়া সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং এটি অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সময়ে অনেক স্বাধীন নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মায়া জনগণের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। মায়া সমাজ রাজনীতির মাধ্যমে নয়, বরং তাদের জটিল ও উচ্চতর ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত ছিল। মায়া ধর্ম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং তারা আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী ছিল। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সে সময়কার ইউরোপীয় সমাজগুলোর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। তারা সময় পরিমাপের জন্য একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং রাত্রিকালীন আকাশের চলাচল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল। শুক্র গ্রহকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিত, কারণ এটি উজ্জ্বলতম এবং সন্ধ্যা ও ভোর উভয় সময়ে দৃশ্যমান হতো। মায়া শিল্পকলা প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুসজ্জিত ও উন্নত বিবেচিত হয়। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে মায়া সংস্কৃতির পতন ঘটে। এর কারণ আজও গবেষণার বিষয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ে শিলালিপি ও স্থাপত্য নির্মাণের হ্রাস লক্ষ্য করেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মায়ারা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। একটি বিকেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা মায়াদের স্পেনীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আজও ইউকাটানে মায়া সংস্কৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, যদিও অনেক শিলালিপি হারিয়ে গেছে। ===আজটেক=== [[File:1479 Stein der fünften Sonne, sog. Aztekenkalender, Ollin Tonatiuh anagoria.JPG|thumb|আজটেক পঞ্জিকা পাথর]] '''আজটেক''' সংস্কৃতির উদ্ভব হয় মেক্সিকো উপত্যকায় মেক্সিকা জনগণের আগমনের মাধ্যমে। এই জনগোষ্ঠীর নেতারা আধিপত্যশীল জাতিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে আজটেক ত্রৈমিত্রি গড়ে তুলে একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যা আজকের মেক্সিকোর অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজটেক মিত্রসংঘ দখল ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলো দখল করে আজটেক সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। স্থানীয় নেতারা আজটেক সংস্কৃতি গ্রহণ ও প্রসারে মর্যাদা অর্জন করত। একইভাবে, আজটেকরা পরাজিত জাতিগুলোর সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় জ্ঞান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করত। আজটেক শক্তির কেন্দ্র ছিল অর্থনৈতিক ঐক্য। বিজিত অঞ্চলগুলি রাজধানী টেনোচটিটলানকে কর প্রদান করত, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটির অবস্থান। বিপুল পরিমাণ করের মাধ্যমে এই নগরটি প্রভাবশালী, জনবহুল ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৫২১ সালে স্পেনীয়দের আগমনের সময় এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ট্লাতেলোলকো নামের একসময়ের স্বাধীন শহর)। তখন এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২১২,৫০০। শহরটিতে ছিল ১৯৭ ফুট উঁচু টেম্পল ডি মেয়র, ৪৫টি সরকারি ভবন, একটি প্রাসাদ, দুটি চিড়িয়াখানা, একটি উদ্ভিদ উদ্যান ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। লেক টেক্সকোকোর অগভীর জলে ভেসে থাকা ‘চিনাম্পা’ নামক ভাসমান কৃষিক্ষেত্র ছিল শহরবাসীর খাদ্যের উৎস। যদিও অনেক মেসোআমেরিকান সভ্যতাই মানব বলিদান করত, আজটেকদের বলিদানের পরিমাণ ছিল তুলনাহীন। তাদের মতে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানব বলিদান অপরিহার্য ছিল। ১৪৮৭ সালে টেনোচটিটলানের প্রধান পিরামিড পুনর কনসক্রেশনের সময় তারা চার দিনে ৮৪,৪০০ জন বন্দিকে বলি দেয় বলে দাবি করে। স্পেনীয়রা টেনোচটিটলানে এসে আজটেক সংস্কৃতির পতন ঘটায়। শহরের বিশালতা তাদের চমকে দিলেও ব্যাপক মানব বলিদান ইউরোপীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সোনা-রূপার প্রাচুর্য তাদের লোভ উদ্রেক করে। জুন ১৫২০-এ তারা রাজা মন্টেজুমাকে হত্যা করে এবং ১৫২১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ত্লাসকালা জাতির সহযোগিতায় নগরটিতে অবরোধ সৃষ্টি করে ধ্বংস করে ফেলে। ===ইনকা=== [[Image:Peru_Machu_Picchu_Sunrise.jpg|thumb|upright|মাচু পিচু, "ইনকার হারানো শহর"]] প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান পেরুর কুসকো অঞ্চলে মানকো কাপাক নামক একজন সম্রাটের উত্থানের মাধ্যমে '''ইনকা''' সভ্যতার সূচনা হয়। ধর্ম ইনকাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। রাজপরিবার সূর্যদেবতার সন্তান হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে সম্রাটের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত, যা কেবল ঐতিহ্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকত। ইনকাদের অধীনে একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো ছিল — প্রতি দশজন নাগরিকের জন্য গড়ে একজন করে কর্মকর্তা থাকত। সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত; বার্তাবাহকরা গ্রাম থেকে গ্রামে দৌড়ে রাজকীয় বার্তা পৌঁছে দিত। ১৪৩৮ সালে পচাকুতি নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন, যিনি ইনকাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক বলে বিবেচিত। তিনি কুসকো ও সূর্য মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। তার কৌশলী সামরিক নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনৈতিক প্রচারণা ইনকাদের সাফল্যের ভিত্তি। তিনি বিজয়ী অঞ্চলগুলোর নেতাদের বিলাসদ্রব্য ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। ইনকারা একটি সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, যা ইনকা সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করত। ফলে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ইনকা সাম্রাজ্যের অনেক বিস্তার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫শ শতাব্দীর শেষদিকে ইনকা সাম্রাজ্য বর্তমান ইকুয়েডর থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কুসকো ছিল এর রাজধানী, যা স্পেনীয়দের মতে "স্পেনের যেকোনো শহরের সমান" ছিল। তবে ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর ছিল মাচু পিচু — একটি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল, যেটিকে ইনকারা তাদের নেতৃবৃন্দের বিশ্রামস্থল হিসেবে গড়ে তোলে। এখানে প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ করা হয়েছিল শুকনো পাথরের দেয়াল দিয়ে, যা এত নিখুঁতভাবে কাটানো ও বসানো যে, তার ফাঁকে একটি ছুরি ঢোকানো যায় না। স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় আগমন করে এবং ধীরে চলা অবরোধ যুদ্ধের তুলনায় তাদের আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তারা সম্রাটকে বন্দি করে হত্যা করে এবং ১৫৩৩ সালে ইনকা সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। তবে কিছু বিদ্রোহী পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং আরও ৩৯ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ===মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ=== মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ নিঃসন্দেহে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ সভ্যতা ছিল। মেসোআমেরিকায় লেখালেখির প্রচলন ছিল, যা উত্তর আমেরিকার তুলনায় এই সংস্কৃতিগুলোকে অনেক সহজে বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। প্রতিটি সভ্যতাই বিস্ময়কর নগর ব্যবস্থা ও জটিল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা ইউরোপীয় স্পেনীয়দের মতোই 'সভ্য' ছিল যারা ১৫শ ও ১৬শ শতকে তাদের দখল করে। ==দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== দক্ষিণ-পশ্চিমের শুষ্ক মরুভূমির সাথে স্থানীয় আমেরিকানরা খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র আবহাওয়ার একটি সময়কালে এই অঞ্চলের অনেক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সেচ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি এখানে গড়ে ওঠে। জটিল অ্যাডোবি ও বালুকাপাথরের ভবন নির্মিত হয়। অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও শৈল্পিক মাটির পাত্র তৈরি করা হয়। তবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া চিরকাল স্থায়ী হয়নি এবং ধীরে ধীরে তা আবার এই অঞ্চলের সাধারণ খরার দিকে ফিরে যায়। এই শুষ্ক পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল মানুষকে সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে, এবং অবশেষে এই সংস্কৃতিগুলোর জটিল কৃতিত্ব পরিত্যক্ত হয়। ===আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান=== [[File:Mesaverde cliffpalace 20030914.752.jpg|thumb|আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের একটি স্থাপনা, ক্লিফ প্রাসাদ।]] একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ছিল '''আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান''', যারা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং তার আশেপাশের এলাকায় বাস করত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল সমতল শুষ্ক মরুভূমি, যা ছোট ছোট উঁচু মালভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেগুলোকে "মেসা" বলা হয়। এই মেসাগুলোর নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ক্যানিয়ন ও ওভারহ্যাং তৈরি করেছিল। আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি এই মেসাগুলোর ঢালের গুহার মতো ওভারহ্যাংকে অস্থায়ী বজ্রবৃষ্টিপূর্ণ ঝড় থেকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। তারা প্রাকৃতিক জলস্রোত ব্যবহার করে এবং বরফ গলার জলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেতের দিকে প্রবাহিত করে ভুট্টা, কুমড়ো ও শিম চাষ করত। ঋতুভিত্তিক ক্ষুদ্র নদীগুলি কাদামাটির স্তর সৃষ্টি করত। এই কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে ওঠত, যাকে অ্যাডোবি বলা হয়, এবং এটি বালুকাপাথরের সাথে মিশিয়ে জটিল স্থাপনা গড়ে তোলা হত, অনেক সময় সেগুলো মেসাগুলোর ওভারহ্যাংয়ের ওপরে থাকত। তারা মাটি দিয়ে সুন্দর ও কার্যকর পাত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিল। ৯০০ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিস্থিতি আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের বিকাশের সুযোগ দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিখুঁত হয়, মাটির পাত্র শৈল্পিক হয়ে ওঠে, টার্কি পোষ মানানো হয় এবং দীর্ঘ দূরত্বে বাণিজ্য সারা অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। এরপর আসে প্রায় ৩০০ বছরের দীর্ঘ খরা, যা "গ্রেট ড্রাউট" নামে পরিচিত। এই সময় পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি চাপে পড়ে এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত দূরে কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে শুষ্কতা থেকে বাঁচতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা ছড়িয়ে পড়ে; জটিল স্থাপনাগুলি ত্যাগ করে ছোট ছোট বসতিতে চলে যায় যেখানে অল্প জল পাওয়া যেত। ===হোহোকাম=== [[File:CasaGrandeRuin.jpg|thumb|কাসা গ্রান্দে ধ্বংসাবশেষ, আধুনিক ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত।]] উত্তরে আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতির পাশেই দক্ষিণ অ্যারিজোনায় একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে ওঠে, যাকে '''হোহোকাম''' বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক আদিবাসী সীমিত পরিসরে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার করলেও, হোহোকামরাই এই প্রযুক্তিকে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে (আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই)। ছোট কৃষিভূমিতে পানি প্রবাহিত করার ক্ষমতা হোহোকামদের তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে সত্য ছিল গিলা নদী উপত্যকায়, যেখানে নদীকে বহু স্থানে বিভক্ত করে উর্বর সমভূমি ও বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর সেচ করা হত। বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে একটি 'গ্রেট হাউস' থাকত, যা ছিল বড় একটি অ্যাডোবি/পাথরের কাঠামো। এর মধ্যে কিছু চার তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং সম্ভবত এটি প্রশাসনিক বা ধর্মীয় অভিজাতদের জন্য ব্যবহৃত হত। ছোট ছোট খননকৃত কক্ষ বা গর্ত অ্যাডোবি দেয়ালে ঘেরা থাকত এবং মূল আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। আরও ছোট কক্ষ বা গর্ত ছিল নানা কাজে ব্যবহৃত। সেচ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল বিশাল কাসা গ্রান্দে গ্রাম। দুটি প্রধান খালের মাঝখানে অবস্থিত এই স্থানটি প্রায় নয় দশক ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। মূল শহরটি একটি বড় দরবারের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং এতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বৃত্তাকার চত্বর ছিল। দশম শতকের মধ্যে আশেপাশে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং একটি বৃহৎ, উন্নত অঞ্চল তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালের একটি খননের ফলে কাসা গ্রান্দে এলাকার পরিমাণ বোঝা যায়। সেই প্রকল্পে ২৪৭টি পিট হাউস, ২৭টি পিট রুম, ৮৬৬টি গর্ত, ১১টি ছোট খাল, একটি বল কোর্ট এবং চারটি অ্যাডোবি প্রাচীরবিশিষ্ট চত্বরের অংশ চিহ্নিত করা হয়। হোহোকাম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে যখন খরার কারণে খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেয়। একটি ছোট বাধা বা খালের ধস পুরো সেচ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করত। বড় শহর এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ত্যাগ করে এবং পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। ==মিসিসিপির প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== [[File:Serpent Mound (aerial view).jpg|thumb|upright|দ্য গ্রেট সার্পেন্ট ঢিবি]] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মহাদেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা উত্তর আমেরিকার ইতিহাসের শুরুতে ঢিবি নির্মাণকারী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো আরও স্তরবিন্যাসযুক্ত হয়ে ওঠে এবং উপজাতিতে পরিণত হয়। এই উপজাতিগুলো দীর্ঘ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করত। তারা বাণিজ্য পথের গুরুত্ব প্রভাবশালী নগর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ঢিবি নির্মাণকারী জনগণ ছিল উত্তর আমেরিকায় উদ্ভূত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের আশেপাশে এই সংস্কৃতিগুলোর বিকাশ ঘটে, যারা ধর্মীয় ও সমাধি উদ্দেশ্যে ঢিবি ব্যবহার করত। এই মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণকে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলোর স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্ম ও নিদর্শন বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সমাধি ঢিবি ছিল এই সকল সমাজের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। এই বৃহৎ কাঠামোগুলো তৈরি হতো সাবধানে নির্বাচিত মাটি ঝুড়িতে করে এনে স্তূপীকরণ করে। ঢিবিগুলো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হতো, যার উপরের অংশ চ্যাপ্টা করা থাকত। কখনও কখনও এর উপরে ছোট ছোট কাঠামো নির্মিত হতো। কিছু ঢিবি অত্যন্ত বিশাল। বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্যানহ্যান্ডলে অবস্থিত গ্রেভ ক্রিক মাউন্ড প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ৩০০ ফুট ব্যাসযুক্ত। অন্যান্য মাউন্ডগুলোকে খগোলীয় ঘটনাবলির (যেমন দিবসূত্র ও বিষুব) সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো আকার ও গুরুত্বে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। প্রথম সংস্কৃতি ছিল '''অ্যাডেনা''', যারা বর্তমান দক্ষিণ ওহাইও এবং আশেপাশের এলাকায় বাস করত। পরবর্তী সংস্কৃতিগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিস্ময়কর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে একে অপরকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। '''হোপওয়েল''' আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চলের জনগণ। এ সময়ে এই জাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা দেয়। এই সংগঠন উপজাতি গঠনের পূর্ববর্তী রূপ, যা পরবর্তীকালে পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ছিল '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি। ঢিবি নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো সামাজিক জটিলতায় পরিণত হয়, যা রোম-পরবর্তী ও উপজাতিগত ইংল্যান্ডের (একত্রীকরণের পূর্ববর্তী) সমাজ কাঠামোর সাথে তুলনীয়। ঢিবির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু বসতিতে বৃহৎ ঢিবি কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। ঢিবির উপর প্রায়শই কাঠামো নির্মিত হতো। সামাজিক অসমতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যেমন দাসত্ব ও মানব বলিদান। কাহোকিয়া, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের কাছে অবস্থিত, ছিল একটি প্রভাবশালী ও উচ্চপর্যায়ের উন্নত সমাজ। বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গ্রেট লেকস থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাহোকিয়া ছিল মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এবং এই সংস্কৃতির বৃহত্তম বসতি। এই বসতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্মীয় মাউন্ড '''মঙ্ক’স মাউন্ড'''। এটি ছিল মাউন্ড নির্মাণকারীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মাউন্ড, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯০০ ফুট। মঙ্ক’স মাউন্ডের উপরে খননকাজে একটি বৃহৎ কাঠামোর প্রমাণ পাওয়া গেছে, সম্ভবত এটি একটি মন্দির — যা সমগ্র শহর থেকে দেখা যেত। শহরটি ঢিবির দক্ষিণে একটি বিস্তৃত সমতলে বিস্তৃত ছিল। [[Image:Monks Mound in July.JPG|thumb|কোলিনসভিল, ইলিনয়ের কাছে অবস্থিত কাহোকিয়া সাইটে মঙ্ক ঢিবি]] শহরটির মূল অংশে শহরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ১২০টি ঢিবি ছিল। এই ঢিবিগুলো কয়েকটি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব অর্থ ও কার্যকারিতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। মঙ্ক ঢিবিএ নিকটবর্তী একটি খুঁটির বৃত্ত বহু খগোলীয় ঘটনার (যেমন ঋতু পরিবর্তন) চিহ্ন নির্দেশ করে। শহরটি একটি হীরার মত বিন্যাসে বিস্তৃত ছিল, যার ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৫ মাইল। সর্বোচ্চ অবস্থায় শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ — যা একে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম শহর করে তোলে। সম্ভবত '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দ্বারা আনা ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন গুটিবসন্তের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নগর এলাকাগুলো এইসব রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল ছিল, এবং কাহোকিয়া ১৫০০ সালের দশকে পরিত্যক্ত হয়। উপজাতিগুলোর ছত্রভঙ্গের ফলে ঢিবি নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং অনেক ঢিবি ইউরোপীয়রা পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। ==ইউরোপীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ== ===মহামারী=== [[File:Acuna-Soto EID-v8n4p360 Fig1.png|thumb|মেক্সিকোর জনসংখ্যার গ্রাফ, যেখানে প্রধান মহামারীগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।]] উত্তর আমেরিকার অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে ইউরোপীয় যোগাযোগ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্ত ইন্ডিয়ান জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি ছিল ভাইরাসজনিত রোগ ও মহামারীর সূচনা।<ref>{{cite web |title=Conclusion :: U.S. History |url=https://www.dhr.history.vt.edu/modules/us/mod01_pop/conclusion.html |website=www.dhr.history.vt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Columbian Exchange |url=https://cla.umn.edu/ihrc/news-events/other/columbian-exchange |access-date=26 December 2020 |work=Immigration History Research Center College of Liberal Arts |date=16 June 2015 |language=en}}</ref> গুটি বসন্ত সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি ছিল। সংক্রামিত আদিবাসীরা ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক সাক্ষাতের পরই অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অনুমান করা হয় যে প্রথম সংস্পর্শের পর প্রায় ৯০% আদিবাসী ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায়।<ref>{{cite web |title=Guns Germs & Steel: Variables. Smallpox PBS |url=https://www.pbs.org/gunsgermssteel/variables/smallpox.html |website=www.pbs.org |access-date=26 December 2020}}</ref> এর প্রভাব অনেক শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শহরাঞ্চল এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং আদিবাসী সংস্কৃতি তখন আরও বিচ্ছিন্ন, কম ঐক্যবদ্ধ এবং একটি নতুন আন্ত-গোষ্ঠীগত যুদ্ধের রূপ নেয়, কারণ একেকটি গোষ্ঠী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকারভুক্ত সম্পদের উপর দখল নিতে চেষ্টা করে। ===কলম্বীয় বিনিময়=== অন্যদিকে, ইউরোপীয়রা আক্রমণাত্মক গাছপালা ও প্রাণী এনেছিল।<ref>{{cite web |title=APWG: Background Information |url=https://cybercemetery.unt.edu/archive/nisic/20110630090151/http://www.nps.gov/plants/alien/bkgd.htm |website=cybercemetery.unt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Escape of the invasives: Top six invasive plant species in the United States |url=https://www.si.edu/stories/escape-invasives |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Institution |language=en}}</ref> ঘোড়া আবার আমেরিকায় আনা হয়েছিল<ref>{{cite web |title=History of Horses in America |url=https://www.belrea.edu/a-history-of-horses-in-america/ |website=www.belrea.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> (কারণ প্রাচীন কালে বেরিং স্থলসেতু দিয়ে আসা আমেরিকান বন্য ঘোড়ার প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এবং তা দ্রুত বিস্তৃত বৃহৎ প্রেইরিতে মুক্তভাবে বিচরণে অভিযোজিত হয়। যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলি দ্রুত ঘোড়ার মূল্য অনুধাবন করে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;<ref>{{cite web |title=Wealth & Status A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/wealth.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> যার ফলে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়।<ref>{{cite web |title=Warfare A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/warfare.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> ইউরোপীয়রা গাছপালা ও প্রাণী নিয়ে আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছপালা যেমন ভুট্টা, আলু ও টমেটো নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।<ref>{{cite web |title=Columbian Exchange (1492-1800) |url=https://mypages.unh.edu/hoslac/book/columbian-exchange-1492-1800 |access-date=26 December 2020 |language=en}}</ref> == পর্যালোচনা প্রশ্ন == ১. আমেরিকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের জন্য দুটি নাম উল্লেখ করুন, এবং প্রতিটি নামের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন। ২. ইনকা, মায়া ও অ্যাজটেক সংস্কৃতির কী কী প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে? ৩. দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের উত্থান ও পতনে আবহাওয়াগত কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছিল? == সূত্র == {{Reflist}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} {{chapnav|ভূমিকা|ইউরোপীয় ইতিহাস}} 9ckmwipup20hyv24hb9mwh0skpqrzkf 84863 84862 2025-06-18T22:14:59Z Mehedi Abedin 7113 84863 wikitext text/x-wiki [[File:Kincaid Mounds Site aerial illustration HRoe 2019.jpg|thumb|প্রাক-কলম্বীয় যুগে কিনকেইড মাউন্ডস স্থানের শৈল্পিক কল্পচিত্র।]] আমেরিকায় মানব সভ্যতার সূচনা সম্ভবত শেষ বরফ যুগে হয়েছিল, যখন প্রাগৈতিহাসিক শিকারীরা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মাঝে একটি স্থলপথ পার হয়ে এসেছিল।<ref>{{cite news |last1=Gerszak |first1=Fen Montaigne,Jennie Rothenberg Gritz,Rafal |title=The Story of How Humans Came to the Americas Is Constantly Evolving |url=https://www.smithsonianmag.com/science-nature/how-humans-came-to-americas-180973739/ |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Magazine |language=en}}</ref> উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাগুলোর জটিলতা, প্রযুক্তি এবং সংহতির স্তর ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত সমাজ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্কৃতিগুলো লেখার পদ্ধতি বিকাশ করেছিল, যা তাদের প্রসার ও আধিপত্য স্থাপনে সাহায্য করেছিল। তারা প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর কিছু গড়ে তোলে। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতিগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং কম ঐক্যবদ্ধ। উপজাতিই ছিল প্রধান সামাজিক একক এবং উপজাতিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে এক ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার দুর্গম মরু অঞ্চলে ইউরোপীয় শহরের সমান বড় উপজাতীয় বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ইতিহাসবিদদের পক্ষে এসব সংস্কৃতিকে একটি একক নামের অধীনে চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের জন্য কোনো অভিন্ন নাম ছিল না। প্রথমে ইউরোপীয়রা স্থানীয়দের "ইন্ডিয়ান" নামে ডাকত। এই নামটি এসেছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সেই ধারণা থেকে যে তিনি ভারত যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন।<ref name="indianname">{{cite web |title=American Indians and Native Americans |url=https://www.umass.edu/legal/derrico/shoshone/indian.html |website=www.umass.edu |accessdate=23 September 2020}}</ref> যদিও আমেরিগো ভেসপুচ্চি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমেরিকা আসলে ভারত নয়, তবুও "ইন্ডিয়ান" শব্দটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হত।<ref name="indianname"/> ১৯৬০-এর দশক থেকে "নেটিভ আমেরিকান" শব্দটি চালু হয়। তবে এটিও একটি সমস্যাযুক্ত শব্দ হতে পারে: "আমেরিকা" নামটি এসেছে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম থেকে, যিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে খুব সামান্য সম্পর্কিত ছিলেন।<ref name="indianname"/> "আমেরিকান ইন্ডিয়ান" শব্দটিও খুব সাধারণ একটি শব্দ, যা এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যাদের মধ্যে গায়ের রং এবং ইউরোপীয় ভাষা ব্যতিরেকে খুব বেশি মিল নেই। কানাডায় "ফার্স্ট পিপল" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই সব নামই আমেরিকার স্থানীয় জনগণের বৈচিত্র্য ও প্রাক-কলম্বীয় আমেরিকা সম্পর্কে চলমান মতপার্থক্যকে তুলে ধরে, যা নিয়ে আজও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ==আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা== ===বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ=== [[Image:Map of gene flow in and out of Beringia.jpg|thumb|upright|আমেরিকাতে এশিয়া থেকে মানুষের আগমন দেখানো একটি মানচিত্র।]] কলম্বাসের ১৪৯২ সালের আগমনের পর আমেরিকার ইতিহাস শুরু হয়নি। ইউরোপীয়দের প্রথম আগমনের অনেক আগেই আমেরিকা বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।<ref name="landbridge">{{cite web |title=Migration of Humans into the Americas (c. 14,000 BCE) |url=https://www.science.smith.edu/climatelit/migration-of-humans-into-north-america/ |website=Climate Across Curriculum |accessdate=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০}}</ref> এর সভ্যতা শুরু হয়েছিল শেষ বরফযুগের সময়, প্রায় ১৫ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে।<ref name="landbridge"/> উত্তর দিকে বিশাল বরফের চাদর ছিল, ফলে সমুদ্রের স্তর অনেক নিচে নামছিল, যা এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি ভূমিসেতু সৃষ্টি করেছিল।<ref name="landbridge"/> দুটি বড় বরফের চাদরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গাই বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ নামে পরিচিত, যা বর্তমান এলাস্কা থেকে আলবার্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সংযোগ ছিল।<ref name="landbridge"/> শিকারী পশুর ঝাঁক অনুসরণ করে যাযাবর এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। একটি বিশেষ ধরনের তীরের সূচক পাওয়া গেছে যা প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল বর্তমান ক্লোভিস, নিউ মেক্সিকোর কাছে। উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত অনেক স্থানে বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাধারণ সমাধি প্রথার প্রমাণ পাওয়া যায়। ===ক্লোভিস মানুষ=== '''ক্লোভিস মানুষ''' উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। স্পষ্ট নয় যে তারা একক একটি গোত্র ছিল কি না, নাকি একই প্রযুক্তি ও বিশ্বাসবিশ্লেষণের অনেক গোত্র ছিল। তাদের প্রায় ২০০০ মাইলের কঠিন যাত্রা ছিল প্রাক-ইতিহাসের অন্যতম অসাধারণ কীর্তি। তাদের সংস্কৃতি প্রায় ১২,৯০০ বছর আগে হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণ নিয়ে বিস্তর ধারণা প্রচলিত। মেমথের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে একটি ধূমকেতুর প্রভাবে পরিবেশগত হঠাৎ পরিবর্তন বা বিশাল একটি মিষ্টি পানির হ্রদ লেক অ্যাগাসিসের ভাঙ্গনের ফলে বন্যা আসার মত তত্ত্ব রয়েছে। ক্লোভিসের আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসতির বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষাবিজ্ঞান তুলনায় প্রমাণ মেলে যে প্রাচীন আমেরিকা একাধিক সমসাময়িক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কিছু জেনেটিক ও সময় নির্ধারণ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে যে প্রাচীন আমেরিকানরা অন্য স্থান থেকেও আসতে পারে এবং ক্লোভিস সাইটের চেয়ে আগে এসেছিল। সম্ভবত কিছু প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূল বরাবর চলাচল করেছিল বা পলিনেশীয় দ্বীপ থেকে নৌকাযোগে এসেছিল। সময়ের সঙ্গে এই প্রাচীন বসতি স্থাপনকারীরা গৃহপালিত পশুপালনসহ কৃষিজীবনে পা রেখেছিল। বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থায়ী গোত্রে পরিণত হয় এবং নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করেছিল, যা এতটাই আলাদা ছিল যে দূরবর্তী আত্মীয়রা একে অপরকে বুঝতে পারত না। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বা বিভিন্ন গোত্রের ভাষার অধ্যয়ন বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখায়, শত শত মাইল দূরের গোত্রের মধ্যে মিল থাকলেও কাছাকাছি গোত্রের ভাষায় বড় পার্থক্য ছিল। কখনও কখনও কোনো গোত্র আঞ্চলিক গুরুত্ব লাভ করে আমেরিকার বড় বড় অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করত। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্রাজ্য উঠেছিল যা ইউরোপের সেরা সম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। তাদের সময়ের জন্য এই সম্রাজ্যগুলো অত্যন্ত উন্নত ছিল। ==মেসোআমেরিকার প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত সভ্যতা হিসেবে পরিগণিত। মেসোআমেরিকায় পড়া ও লেখা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং এই সভ্যতাগুলি রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি ও স্থাপত্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। এইসব সভ্যতা এমন কিছু রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ অর্জন করেছিল যা তাদের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, অলঙ্কৃত ও জনবহুল নগরসমূহ নির্মাণে সক্ষম করে তোলে। ===মায়া=== [[File:Dintel 26 de Yachilán 3.jpg|thumb|মায়ারা ছিল এক উন্নত সভ্যতা, যারা শিল্পকলায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেছিল।]] আদিম আমেরিকানরা বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রায় ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ, '''মায়া''' সংস্কৃতি একটি জটিল সভ্যতায় পরিণত হয়। মায়ারা ইউকাটান নিম্নভূমিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক, শিল্প ও ধর্মীয় পরিচয় গঠন করে। 'শাস্ত্রীয় যুগ' (২৫০-৯০০ খ্রি.)-এ মায়া সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং এটি অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সময়ে অনেক স্বাধীন নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মায়া জনগণের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। মায়া সমাজ রাজনীতির মাধ্যমে নয়, বরং তাদের জটিল ও উচ্চতর ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একত্রিত ছিল। মায়া ধর্ম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং তারা আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী ছিল। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সে সময়কার ইউরোপীয় সমাজগুলোর চেয়েও অনেক উন্নত ছিল। তারা সময় পরিমাপের জন্য একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং রাত্রিকালীন আকাশের চলাচল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল। শুক্র গ্রহকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিত, কারণ এটি উজ্জ্বলতম এবং সন্ধ্যা ও ভোর উভয় সময়ে দৃশ্যমান হতো। মায়া শিল্পকলা প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুসজ্জিত ও উন্নত বিবেচিত হয়। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে মায়া সংস্কৃতির পতন ঘটে। এর কারণ আজও গবেষণার বিষয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ে শিলালিপি ও স্থাপত্য নির্মাণের হ্রাস লক্ষ্য করেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মায়ারা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। একটি বিকেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা মায়াদের স্পেনীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আজও ইউকাটানে মায়া সংস্কৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, যদিও অনেক শিলালিপি হারিয়ে গেছে। ===আজটেক=== [[File:1479 Stein der fünften Sonne, sog. Aztekenkalender, Ollin Tonatiuh anagoria.JPG|thumb|আজটেক পঞ্জিকা পাথর]] '''আজটেক''' সংস্কৃতির উদ্ভব হয় মেক্সিকো উপত্যকায় মেক্সিকা জনগণের আগমনের মাধ্যমে। এই জনগোষ্ঠীর নেতারা আধিপত্যশীল জাতিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে আজটেক ত্রৈমিত্রি গড়ে তুলে একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যা আজকের মেক্সিকোর অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজটেক মিত্রসংঘ দখল ও আত্মীকরণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। দূরবর্তী অঞ্চলগুলো দখল করে আজটেক সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। স্থানীয় নেতারা আজটেক সংস্কৃতি গ্রহণ ও প্রসারে মর্যাদা অর্জন করত। একইভাবে, আজটেকরা পরাজিত জাতিগুলোর সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় জ্ঞান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করত। আজটেক শক্তির কেন্দ্র ছিল অর্থনৈতিক ঐক্য। বিজিত অঞ্চলগুলি রাজধানী টেনোচটিটলানকে কর প্রদান করত, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটির অবস্থান। বিপুল পরিমাণ করের মাধ্যমে এই নগরটি প্রভাবশালী, জনবহুল ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৫২১ সালে স্পেনীয়দের আগমনের সময় এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ট্লাতেলোলকো নামের একসময়ের স্বাধীন শহর)। তখন এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২১২,৫০০। শহরটিতে ছিল ১৯৭ ফুট উঁচু টেম্পল ডি মেয়র, ৪৫টি সরকারি ভবন, একটি প্রাসাদ, দুটি চিড়িয়াখানা, একটি উদ্ভিদ উদ্যান ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। লেক টেক্সকোকোর অগভীর জলে ভেসে থাকা ‘চিনাম্পা’ নামক ভাসমান কৃষিক্ষেত্র ছিল শহরবাসীর খাদ্যের উৎস। যদিও অনেক মেসোআমেরিকান সভ্যতাই মানব বলিদান করত, আজটেকদের বলিদানের পরিমাণ ছিল তুলনাহীন। তাদের মতে, দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানব বলিদান অপরিহার্য ছিল। ১৪৮৭ সালে টেনোচটিটলানের প্রধান পিরামিড পুনর কনসক্রেশনের সময় তারা চার দিনে ৮৪,৪০০ জন বন্দিকে বলি দেয় বলে দাবি করে। স্পেনীয়রা টেনোচটিটলানে এসে আজটেক সংস্কৃতির পতন ঘটায়। শহরের বিশালতা তাদের চমকে দিলেও ব্যাপক মানব বলিদান ইউরোপীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সোনা-রূপার প্রাচুর্য তাদের লোভ উদ্রেক করে। জুন ১৫২০-এ তারা রাজা মন্টেজুমাকে হত্যা করে এবং ১৫২১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ত্লাসকালা জাতির সহযোগিতায় নগরটিতে অবরোধ সৃষ্টি করে ধ্বংস করে ফেলে। ===ইনকা=== [[Image:Peru_Machu_Picchu_Sunrise.jpg|thumb|upright|মাচু পিচু, "ইনকার হারানো শহর"]] প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান পেরুর কুসকো অঞ্চলে মানকো কাপাক নামক একজন সম্রাটের উত্থানের মাধ্যমে '''ইনকা''' সভ্যতার সূচনা হয়। ধর্ম ইনকাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। রাজপরিবার সূর্যদেবতার সন্তান হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে সম্রাটের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত, যা কেবল ঐতিহ্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকত। ইনকাদের অধীনে একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো ছিল — প্রতি দশজন নাগরিকের জন্য গড়ে একজন করে কর্মকর্তা থাকত। সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত; বার্তাবাহকরা গ্রাম থেকে গ্রামে দৌড়ে রাজকীয় বার্তা পৌঁছে দিত। ১৪৩৮ সালে পচাকুতি নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন, যিনি ইনকাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক বলে বিবেচিত। তিনি কুসকো ও সূর্য মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। তার কৌশলী সামরিক নেতৃত্ব ও দক্ষ কূটনৈতিক প্রচারণা ইনকাদের সাফল্যের ভিত্তি। তিনি বিজয়ী অঞ্চলগুলোর নেতাদের বিলাসদ্রব্য ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। ইনকারা একটি সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, যা ইনকা সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করত। ফলে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ইনকা সাম্রাজ্যের অনেক বিস্তার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫শ শতাব্দীর শেষদিকে ইনকা সাম্রাজ্য বর্তমান ইকুয়েডর থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কুসকো ছিল এর রাজধানী, যা স্পেনীয়দের মতে "স্পেনের যেকোনো শহরের সমান" ছিল। তবে ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর ছিল মাচু পিচু — একটি পাহাড়ি আশ্রয়স্থল, যেটিকে ইনকারা তাদের নেতৃবৃন্দের বিশ্রামস্থল হিসেবে গড়ে তোলে। এখানে প্রায় সমস্ত নির্মাণ কাজ করা হয়েছিল শুকনো পাথরের দেয়াল দিয়ে, যা এত নিখুঁতভাবে কাটানো ও বসানো যে, তার ফাঁকে একটি ছুরি ঢোকানো যায় না। স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় আগমন করে এবং ধীরে চলা অবরোধ যুদ্ধের তুলনায় তাদের আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তারা সম্রাটকে বন্দি করে হত্যা করে এবং ১৫৩৩ সালে ইনকা সাম্রাজ্য ধ্বংস করে। তবে কিছু বিদ্রোহী পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং আরও ৩৯ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ===মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ=== মেসোআমেরিকান সাম্রাজ্যসমূহ নিঃসন্দেহে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ সভ্যতা ছিল। মেসোআমেরিকায় লেখালেখির প্রচলন ছিল, যা উত্তর আমেরিকার তুলনায় এই সংস্কৃতিগুলোকে অনেক সহজে বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। প্রতিটি সভ্যতাই বিস্ময়কর নগর ব্যবস্থা ও জটিল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তারা ইউরোপীয় স্পেনীয়দের মতোই 'সভ্য' ছিল যারা ১৫শ ও ১৬শ শতকে তাদের দখল করে। ==দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== দক্ষিণ-পশ্চিমের শুষ্ক মরুভূমির সাথে স্থানীয় আমেরিকানরা খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র আবহাওয়ার একটি সময়কালে এই অঞ্চলের অনেক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সেচ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি এখানে গড়ে ওঠে। জটিল অ্যাডোবি ও বালুকাপাথরের ভবন নির্মিত হয়। অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও শৈল্পিক মাটির পাত্র তৈরি করা হয়। তবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া চিরকাল স্থায়ী হয়নি এবং ধীরে ধীরে তা আবার এই অঞ্চলের সাধারণ খরার দিকে ফিরে যায়। এই শুষ্ক পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল মানুষকে সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে, এবং অবশেষে এই সংস্কৃতিগুলোর জটিল কৃতিত্ব পরিত্যক্ত হয়। ===আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান=== [[File:Mesaverde cliffpalace 20030914.752.jpg|thumb|আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের একটি স্থাপনা, ক্লিফ প্রাসাদ।]] একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ছিল '''আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান''', যারা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং তার আশেপাশের এলাকায় বাস করত। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল সমতল শুষ্ক মরুভূমি, যা ছোট ছোট উঁচু মালভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেগুলোকে "মেসা" বলা হয়। এই মেসাগুলোর নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ক্যানিয়ন ও ওভারহ্যাং তৈরি করেছিল। আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি এই মেসাগুলোর ঢালের গুহার মতো ওভারহ্যাংকে অস্থায়ী বজ্রবৃষ্টিপূর্ণ ঝড় থেকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। তারা প্রাকৃতিক জলস্রোত ব্যবহার করে এবং বরফ গলার জলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেতের দিকে প্রবাহিত করে ভুট্টা, কুমড়ো ও শিম চাষ করত। ঋতুভিত্তিক ক্ষুদ্র নদীগুলি কাদামাটির স্তর সৃষ্টি করত। এই কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে ওঠত, যাকে অ্যাডোবি বলা হয়, এবং এটি বালুকাপাথরের সাথে মিশিয়ে জটিল স্থাপনা গড়ে তোলা হত, অনেক সময় সেগুলো মেসাগুলোর ওভারহ্যাংয়ের ওপরে থাকত। তারা মাটি দিয়ে সুন্দর ও কার্যকর পাত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিল। ৯০০ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিস্থিতি আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ানদের বিকাশের সুযোগ দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিখুঁত হয়, মাটির পাত্র শৈল্পিক হয়ে ওঠে, টার্কি পোষ মানানো হয় এবং দীর্ঘ দূরত্বে বাণিজ্য সারা অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। এরপর আসে প্রায় ৩০০ বছরের দীর্ঘ খরা, যা "গ্রেট ড্রাউট" নামে পরিচিত। এই সময় পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতি চাপে পড়ে এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত দূরে কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে শুষ্কতা থেকে বাঁচতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তারা ছড়িয়ে পড়ে; জটিল স্থাপনাগুলি ত্যাগ করে ছোট ছোট বসতিতে চলে যায় যেখানে অল্প জল পাওয়া যেত। ===হোহোকাম=== [[File:CasaGrandeRuin.jpg|thumb|কাসা গ্রান্দে ধ্বংসাবশেষ, আধুনিক ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত।]] উত্তরে আনসেস্ট্রাল পুয়েবলোয়ান সংস্কৃতির পাশেই দক্ষিণ অ্যারিজোনায় একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে ওঠে, যাকে '''হোহোকাম''' বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক আদিবাসী সীমিত পরিসরে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার করলেও, হোহোকামরাই এই প্রযুক্তিকে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে (আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই)। ছোট কৃষিভূমিতে পানি প্রবাহিত করার ক্ষমতা হোহোকামদের তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে সত্য ছিল গিলা নদী উপত্যকায়, যেখানে নদীকে বহু স্থানে বিভক্ত করে উর্বর সমভূমি ও বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর সেচ করা হত। বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে একটি 'গ্রেট হাউস' থাকত, যা ছিল বড় একটি অ্যাডোবি/পাথরের কাঠামো। এর মধ্যে কিছু চার তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং সম্ভবত এটি প্রশাসনিক বা ধর্মীয় অভিজাতদের জন্য ব্যবহৃত হত। ছোট ছোট খননকৃত কক্ষ বা গর্ত অ্যাডোবি দেয়ালে ঘেরা থাকত এবং মূল আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। আরও ছোট কক্ষ বা গর্ত ছিল নানা কাজে ব্যবহৃত। সেচ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল বিশাল কাসা গ্রান্দে গ্রাম। দুটি প্রধান খালের মাঝখানে অবস্থিত এই স্থানটি প্রায় নয় দশক ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। মূল শহরটি একটি বড় দরবারের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং এতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বৃত্তাকার চত্বর ছিল। দশম শতকের মধ্যে আশেপাশে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং একটি বৃহৎ, উন্নত অঞ্চল তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালের একটি খননের ফলে কাসা গ্রান্দে এলাকার পরিমাণ বোঝা যায়। সেই প্রকল্পে ২৪৭টি পিট হাউস, ২৭টি পিট রুম, ৮৬৬টি গর্ত, ১১টি ছোট খাল, একটি বল কোর্ট এবং চারটি অ্যাডোবি প্রাচীরবিশিষ্ট চত্বরের অংশ চিহ্নিত করা হয়। হোহোকাম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে যখন খরার কারণে খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেয়। একটি ছোট বাধা বা খালের ধস পুরো সেচ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করত। বড় শহর এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ত্যাগ করে এবং পার্শ্ববর্তী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। ==মিসিসিপির প্রাচীন সাম্রাজ্যসমূহ== [[File:Serpent Mound (aerial view).jpg|thumb|upright|দ্য গ্রেট সার্পেন্ট ঢিবি]] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মহাদেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা উত্তর আমেরিকার ইতিহাসের শুরুতে ঢিবি নির্মাণকারী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো আরও স্তরবিন্যাসযুক্ত হয়ে ওঠে এবং উপজাতিতে পরিণত হয়। এই উপজাতিগুলো দীর্ঘ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করত। তারা বাণিজ্য পথের গুরুত্ব প্রভাবশালী নগর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ঢিবি নির্মাণকারী জনগণ ছিল উত্তর আমেরিকায় উদ্ভূত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের আশেপাশে এই সংস্কৃতিগুলোর বিকাশ ঘটে, যারা ধর্মীয় ও সমাধি উদ্দেশ্যে ঢিবি ব্যবহার করত। এই মাউন্ড নির্মাণকারী জনগণকে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলোর স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্ম ও নিদর্শন বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সমাধি ঢিবি ছিল এই সকল সমাজের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। এই বৃহৎ কাঠামোগুলো তৈরি হতো সাবধানে নির্বাচিত মাটি ঝুড়িতে করে এনে স্তূপীকরণ করে। ঢিবিগুলো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হতো, যার উপরের অংশ চ্যাপ্টা করা থাকত। কখনও কখনও এর উপরে ছোট ছোট কাঠামো নির্মিত হতো। কিছু ঢিবি অত্যন্ত বিশাল। বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্যানহ্যান্ডলে অবস্থিত গ্রেভ ক্রিক মাউন্ড প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ৩০০ ফুট ব্যাসযুক্ত। অন্যান্য মাউন্ডগুলোকে খগোলীয় ঘটনাবলির (যেমন দিবসূত্র ও বিষুব) সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাউন্ড নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো আকার ও গুরুত্বে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। প্রথম সংস্কৃতি ছিল '''অ্যাডেনা''', যারা বর্তমান দক্ষিণ ওহাইও এবং আশেপাশের এলাকায় বাস করত। পরবর্তী সংস্কৃতিগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিস্ময়কর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে একে অপরকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। '''হোপওয়েল''' আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চলের জনগণ। এ সময়ে এই জাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা দেয়। এই সংগঠন উপজাতি গঠনের পূর্ববর্তী রূপ, যা পরবর্তীকালে পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ছিল '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি। ঢিবি নির্মাণকারী সংস্কৃতিগুলো সামাজিক জটিলতায় পরিণত হয়, যা রোম-পরবর্তী ও উপজাতিগত ইংল্যান্ডের (একত্রীকরণের পূর্ববর্তী) সমাজ কাঠামোর সাথে তুলনীয়। ঢিবির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু বসতিতে বৃহৎ ঢিবি কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। ঢিবির উপর প্রায়শই কাঠামো নির্মিত হতো। সামাজিক অসমতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যেমন দাসত্ব ও মানব বলিদান। কাহোকিয়া, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের কাছে অবস্থিত, ছিল একটি প্রভাবশালী ও উচ্চপর্যায়ের উন্নত সমাজ। বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গ্রেট লেকস থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাহোকিয়া ছিল মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এবং এই সংস্কৃতির বৃহত্তম বসতি। এই বসতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্মীয় মাউন্ড '''মঙ্ক’স মাউন্ড'''। এটি ছিল মাউন্ড নির্মাণকারীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মাউন্ড, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯০০ ফুট। মঙ্ক’স মাউন্ডের উপরে খননকাজে একটি বৃহৎ কাঠামোর প্রমাণ পাওয়া গেছে, সম্ভবত এটি একটি মন্দির — যা সমগ্র শহর থেকে দেখা যেত। শহরটি ঢিবির দক্ষিণে একটি বিস্তৃত সমতলে বিস্তৃত ছিল। [[Image:Monks Mound in July.JPG|thumb|কোলিনসভিল, ইলিনয়ের কাছে অবস্থিত কাহোকিয়া সাইটে মঙ্ক ঢিবি]] শহরটির মূল অংশে শহরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত ১২০টি ঢিবি ছিল। এই ঢিবিগুলো কয়েকটি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব অর্থ ও কার্যকারিতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। মঙ্ক ঢিবিএ নিকটবর্তী একটি খুঁটির বৃত্ত বহু খগোলীয় ঘটনার (যেমন ঋতু পরিবর্তন) চিহ্ন নির্দেশ করে। শহরটি একটি হীরার মত বিন্যাসে বিস্তৃত ছিল, যার ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৫ মাইল। সর্বোচ্চ অবস্থায় শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ — যা একে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম শহর করে তোলে। সম্ভবত '''মিসিসিপিয়ান''' সংস্কৃতি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের দ্বারা আনা ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন গুটিবসন্তের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নগর এলাকাগুলো এইসব রোগের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল ছিল, এবং কাহোকিয়া ১৫০০ সালের দশকে পরিত্যক্ত হয়। উপজাতিগুলোর ছত্রভঙ্গের ফলে ঢিবি নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং অনেক ঢিবি ইউরোপীয়রা পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। ==ইউরোপীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ== ===মহামারী=== [[File:Acuna-Soto EID-v8n4p360 Fig1.png|thumb|মেক্সিকোর জনসংখ্যার গ্রাফ, যেখানে প্রধান মহামারীগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।]] উত্তর আমেরিকার অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে ইউরোপীয় যোগাযোগ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্ত ইন্ডিয়ান জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি ছিল ভাইরাসজনিত রোগ ও মহামারীর সূচনা।<ref>{{cite web |title=Conclusion :: U.S. History |url=https://www.dhr.history.vt.edu/modules/us/mod01_pop/conclusion.html |website=www.dhr.history.vt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Columbian Exchange |url=https://cla.umn.edu/ihrc/news-events/other/columbian-exchange |access-date=26 December 2020 |work=Immigration History Research Center College of Liberal Arts |date=16 June 2015 |language=en}}</ref> গুটি বসন্ত সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি ছিল। সংক্রামিত আদিবাসীরা ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক সাক্ষাতের পরই অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অনুমান করা হয় যে প্রথম সংস্পর্শের পর প্রায় ৯০% আদিবাসী ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায়।<ref>{{cite web |title=Guns Germs & Steel: Variables. Smallpox PBS |url=https://www.pbs.org/gunsgermssteel/variables/smallpox.html |website=www.pbs.org |access-date=26 December 2020}}</ref> এর প্রভাব অনেক শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শহরাঞ্চল এই রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং আদিবাসী সংস্কৃতি তখন আরও বিচ্ছিন্ন, কম ঐক্যবদ্ধ এবং একটি নতুন আন্ত-গোষ্ঠীগত যুদ্ধের রূপ নেয়, কারণ একেকটি গোষ্ঠী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকারভুক্ত সম্পদের উপর দখল নিতে চেষ্টা করে। ===কলম্বীয় বিনিময়=== অন্যদিকে, ইউরোপীয়রা আক্রমণাত্মক গাছপালা ও প্রাণী এনেছিল।<ref>{{cite web |title=APWG: Background Information |url=https://cybercemetery.unt.edu/archive/nisic/20110630090151/http://www.nps.gov/plants/alien/bkgd.htm |website=cybercemetery.unt.edu |access-date=26 December 2020}}</ref><ref>{{cite news |title=Escape of the invasives: Top six invasive plant species in the United States |url=https://www.si.edu/stories/escape-invasives |access-date=26 December 2020 |work=Smithsonian Institution |language=en}}</ref> ঘোড়া আবার আমেরিকায় আনা হয়েছিল<ref>{{cite web |title=History of Horses in America |url=https://www.belrea.edu/a-history-of-horses-in-america/ |website=www.belrea.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> (কারণ প্রাচীন কালে বেরিং স্থলসেতু দিয়ে আসা আমেরিকান বন্য ঘোড়ার প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এবং তা দ্রুত বিস্তৃত বৃহৎ প্রেইরিতে মুক্তভাবে বিচরণে অভিযোজিত হয়। যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলি দ্রুত ঘোড়ার মূল্য অনুধাবন করে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;<ref>{{cite web |title=Wealth & Status A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/wealth.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> যার ফলে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়।<ref>{{cite web |title=Warfare A Song for the Horse Nation - October 29, 2011 through January 7, 2013 - The National Museum of the American Indian - Washington, D.C. |url=https://americanindian.si.edu/static/exhibitions/horsenation/warfare.html |website=americanindian.si.edu |access-date=26 December 2020}}</ref> ইউরোপীয়রা গাছপালা ও প্রাণী নিয়ে আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছপালা যেমন ভুট্টা, আলু ও টমেটো নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।<ref>{{cite web |title=Columbian Exchange (1492-1800) |url=https://mypages.unh.edu/hoslac/book/columbian-exchange-1492-1800 |access-date=26 December 2020 |language=en}}</ref> == পর্যালোচনা প্রশ্ন == # আমেরিকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের জন্য দুটি নাম উল্লেখ করুন, এবং প্রতিটি নামের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন। # ইনকা, মায়া ও আজটেক সংস্কৃতির কী কী প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে? # দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের উত্থান ও পতনে আবহাওয়াগত কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছিল? == সূত্র == {{Reflist}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} {{chapnav|ভূমিকা|ইউরোপীয় ইতিহাস}} qhfh7td0w3ajr1q9tezccspg9ei5n14 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/পুনর্গঠন 0 25252 84870 79471 2025-06-19T00:01:20Z Mehedi Abedin 7113 84870 wikitext text/x-wiki == পুনর্গঠনের সূচনা == [[File:Atlanta roundhouse ruin3.jpg|thumb|১৮৬৬ সালে জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি রেলইয়ার্ড। গৃহযুদ্ধের পর দক্ষিণ ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল।]] ২ মার্চ, ১৮৬৭ তারিখে কংগ্রেস প্রথম পুনর্গঠন আইন পাস করে। দক্ষিণকে পাঁচটি সামরিক জেলায় ভাগ করা হয়, প্রতিটিতে একজন মেজর জেনারেল নিযুক্ত হন। প্রতিটি রাজ্যে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত পুরুষ দাসদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। এই আইনে একটি সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত ছিল যা বলেছিল যে, দক্ষিণের রাজ্যগুলো ১৪তম সংশোধনী অনুমোদন এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করলে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারবে। প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন তৎক্ষণাৎ এই বিলটিতে ভেটো দেন, কিন্তু কংগ্রেস একই দিনেই এটি আবার পাস করে। অ্যান্ড্রু জনসন সামরিক জেলার প্রশাসকের পদে নিয়োগের আগে জেনারেল ইউলিসিস এস. গ্রান্ট-এর পরামর্শ নেন। পরে তিনি নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেন: জন স্কোফিল্ড (ভার্জিনিয়া), ড্যানিয়েল সিকলস (দ্য ক্যারোলিনাস), জন পোপ (জর্জিয়া, আলাবামা এবং ফ্লোরিডা), এডওয়ার্ড অর্ড (আর্কানসাস এবং মিসিসিপি), এবং ফিলিপ শেরিডান (লুইজিয়ানা এবং টেক্সাস)। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) অবস্থান কী হবে।{{fix|text=what}} বেশিরভাগ গবেষক ১৮৬৫-১৮৭৭ সালকে পুনর্গঠনের সময়সীমা হিসেবে মেনে নেন। এই যুগটি ছিল বিতর্কিত এবং আমেরিকান সমাজের বিভিন্ন অংশ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। কনফেডারেট রাজ্যগুলোকে কীভাবে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের মর্যাদা কী হবে — এই প্রশ্নে বিভিন্ন মতবিরোধ দেখা দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্বাধীনতার অর্থ নিয়েই দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সদ্য গঠিত রিপাবলিকান পার্টির একটি প্রধান অংশ চেয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কিছুটা সুরক্ষা, আর র‌্যাডিকালরা চেয়েছিল দক্ষিণের সমাজব্যবস্থার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন। এই সময়ে কনজারভেটিভ (বিশেষত ডেমোক্র্যাটরা) বিশ্বাস করত যে, রাজ্যগুলোর মধ্যে এবং শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে পূর্ববর্তী সম্পর্কের ব্যবস্থাই টিকে থাকা উচিত। বেশিরভাগ আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং অনেকক্ষেত্রে জমির পুনর্বন্টন এবং প্ল্যান্টেশন ব্যবস্থার ভাঙনের দাবি করেছিল। এই বিভিন্ন মতামতের মধ্য দিয়ে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত সময়কাল এক অর্থে আন্তবর্ণীয় গণতন্ত্রের একটি বিশাল পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এই সময়জুড়ে দক্ষিণে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সহিংসতাও বিরাজ করেছিল। == সংজ্ঞা == যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে *পুনর্গঠন* বলতে সেই সময়কালকে বোঝায় যা আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পর শুরু হয়েছিল, যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কনফেডারেট স্টেটস অব আমেরিকা-এর রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, এবং সেই প্রক্রিয়াকেও বোঝায় যার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য, উত্তরাঞ্চলের মধ্যপন্থী রিপাবলিকান এবং র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একমত হয়েছিল যে কনফেডারেসি এবং এর দাসপ্রথার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে হবে এবং যাতে এটি আর কখনও ফিরে আসতে না পারে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জন করা হবে এবং কখন তা অর্জিত হয়েছে তা নির্ধারণ করবে কে—এই বিষয়গুলো নিয়েই মূল বিতর্ক ছিল। র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানরা বিশ্বাস করত যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনই ছিল *স্লেভ পাওয়ার* ধ্বংস করার জন্য অপরিহার্য এবং এটি রাজ্যগুলোর চিরস্থায়ী ঐক্য নিশ্চিত করার জন্য এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) নানা সমস্যার সমাধানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাসাচুসেটসের মার্কিন সিনেটর চার্লস সামনার, যিনি একজন র‌্যাডিকাল রিপাবলিকান ছিলেন, বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেসকে দাসপ্রথার সাথে সাথে কনফেডারেসিও বিলুপ্ত করতে হবে, কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একসাথে শিক্ষা দিতে হবে। “মধ্যপন্থীরা” দাবি করেছিল যে, কনফেডারেটরা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করেছে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছে—এই নিশ্চয়তার মাধ্যমে তারা লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছে। আব্রাহাম লিংকন এবং অ্যান্ড্রু জনসনের মতো বেশিরভাগ মধ্যপন্থী চাইতেন শুধু কৃষ্ণাঙ্গ সাবেক সৈনিকদের ভোটাধিকার প্রদান করতে, অন্য আফ্রিকান-আমেরিকানদের নয়। দক্ষিণের রাজনৈতিক নেতারা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে, কিন্তু ১৮৬৭ সালে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যখন তাদের রাজ্য সরকারগুলোকে ফেডারেল সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সেগুলোর স্থলে *র‌্যাডিকাল রিপাবলিকান* সরকার গঠন করে, যেগুলোর নেতৃত্বে ছিল ফ্রিডম্যান, *কার্পেটব্যাগার* এবং *স্ক্যালাওয়াগ*। তাদের প্রধান হাতিয়ার ছিল *ব্ল্যাক কোডস* (১৮৬৫), যা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার সীমিত করেছিল এবং অর্থনৈতিক ও শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণে চাকরির সুযোগ প্রায় ছিলই না। ইয়াঙ্কিরা দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য যুদ্ধ জিতেছিল, কিন্তু পুনর্গঠনকাল কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের উপকারে আসেনি, যারা চাকরির জন্য সংগ্রাম করছিল। == পুনর্গঠনের সমস্যা == [[File:Wealth, per capita, in the United States, from 9th US Census (1872).jpg|thumb|upright|১৮৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু সম্পদ। দক্ষিণ ছিল বিপর্যস্ত।]] পুনর্গঠন ছিল দাসশ্রমের পরিবর্তে মুক্ত শ্রমের ভিত্তিতে দক্ষিণকে পুনর্গঠন করার একটি প্রয়াস। উত্তরের রাজনীতিকদের জন্য প্রধান প্রশ্ন ছিল—এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রস্তাব করে, যা দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়। কোনো রাজ্যকে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হতো না যতক্ষণ না তা সংশোধনীটি অনুমোদন করত, কিন্তু মিসিসিপির মতো কিছু রাজ্য সংশোধনীটি অনুমোদন না করেও অন্তর্ভুক্ত হয়। সংশোধনীটি ১৮৬৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সংবিধানের অংশ হয়ে যায়। এই সময় বহু উত্তরাঞ্চলীয় ব্যক্তি দক্ষিণে চলে যান নতুন জীবন শুরু করতে। অনেকে কার্পেট দিয়ে তৈরি ব্রিফকেসে তাদের মালপত্র বহন করতেন, এজন্য কনফেডারেট দক্ষিণবাসীরা তাদের "কার্পেটব্যাগার" নামে ডাকত। দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গ রিপাবলিকানদের জন্যও তাদের কাছে একটি অবমাননাকর নাম ছিল—"স্ক্যালাওয়াগ"। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে *ব্ল্যাক কোডস* নামক আইন চালু হয়, যা মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মৌলিক মানবাধিকার সীমিত করে। এসব আইনের মধ্যে সাধারণ কিছু ছিল: জাত নির্ধারণে রক্তের ভিত্তি প্রযোজ্য—মানে শরীরে সামান্য পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ রক্ত থাকলেও তাকে কৃষ্ণাঙ্গ গণ্য করা হতো; মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গের অনুপস্থিতিতে একত্র হতে পারত না; গণশৌচাগারসহ অন্যান্য সুবিধা ছিল পৃথক।<ref>http://www.u-s-history.com/pages/h411.html</ref> এই সময় ছিল অত্যন্ত অস্থির। দেশজুড়ে বহু জাতিগত সহিংস দাঙ্গা শুরু হয়। দক্ষিণে উত্তরের প্রতি এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষ ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। === কু ক্লাক্স ক্লান === [[Image:Mississippi_ku_klux.jpg|thumb|upright|মিসিসিপিতে কু ক্লাক্স ক্লান]] *কু ক্লাক্স ক্লান* (Ku Klux Klan বা KKK) যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত বেশ কয়েকটি সংগঠনের নাম, যেগুলো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ইহুদিবিদ্বেষ, ক্যাথলিকবিদ্বেষ, বর্ণবাদ, সমকামবিদ্বেষ, সাম্যবাদবিরোধিতা এবং জাতীয়তাবাদ প্রচারে বিশ্বাসী ছিল। এই সংগঠনগুলো প্রায়শই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজ করত, যেমন: আগুনে ক্রুশ দাহ, লিঞ্চিং ইত্যাদি, যার লক্ষ্য ছিল আফ্রিকান-আমেরিকান এবং অন্যান্য সামাজিক ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর উপর নিপীড়ন চালানো। প্রথম কু ক্লাক্স ক্লান গঠিত হয় টেনেসির পুলাস্কিতে, ১৮৬৬ সালের মে মাসে। এক বছর পর, ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাশভিলে স্থানীয় ক্লানগুলোকে একত্র করে একটি সাধারণ সংগঠন গঠিত হয়। অধিকাংশ নেতাই ছিলেন কনফেডারেট সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং প্রথম *গ্র্যান্ড উইজার্ড* ছিলেন নাথান ফরেস্ট, যিনি গৃহযুদ্ধে একজন বিশিষ্ট জেনারেল ছিলেন। পরবর্তী দুই বছরে, মুখোশ পরা ক্লান সদস্যরা, সাদা টুপি ও চাদরে আবৃত হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এবং সহানুভূতিশীল শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন ও হত্যা করে। তারা অভিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করে, যাদের তারা র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানদের নির্বাচনের জন্য দায়ী মনে করত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে কু ক্লাক্স ক্লান উত্তর ক্যারোলিনা, টেনেসি এবং জর্জিয়ায় শ্বেতাঙ্গ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংগঠনের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৮৬৬ সালে। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কনফেডারেট সেনার সাবেক সৈনিকেরা। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুনর্গঠনের বিরোধিতা। তারা "কার্পেটব্যাগার" ও "স্ক্যালাওয়াগ" দমন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের দমন করার চেষ্টা করে। ক্লান দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। দক্ষিণের অভিজাত শ্রেণি ক্লানকে ত্যাগ করে, কারণ তারা এটি ফেডারেল সেনার দক্ষিণে থাকার একটি অজুহাত হিসেবে দেখত। সংগঠনটি ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৮৭১ সালের *সিভিল রাইটস অ্যাক্ট* (যা *কু ক্লাক্স ক্লান অ্যাক্ট* নামেও পরিচিত) এর আওতায় প্রেসিডেন্ট উলিসিস এস. গ্রান্টের দৃঢ় পদক্ষেপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ১৮৬৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস *ফ্রিডম্যান ব্যুরো* প্রতিষ্ঠা করে। এর লক্ষ্য ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের স্বার্থ রক্ষা করা। এর মধ্যে ছিল নতুন চাকরি খুঁজতে সাহায্য করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। পরবর্তী এক বছরে ব্যুরো প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ৪,০০০ স্কুল, ১০০ হাসপাতাল স্থাপন করে এবং দাসদের জন্য আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা পুনর্গঠনের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় এবং ১৮৬৭ সালের পর আরও সংগঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্লান পুনর্গঠন ব্যর্থ করতে এবং মুক্তি পাওয়া দাসদের দমন করতেই কাজ করত। কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাস এতটাই প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, রাতের বেলা হেনস্তা, চাবুক মারা, মারধর, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল সাধারণ ঘটনা। ক্লানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক—যদিও তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর অত্যাচার করত যারা তাদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়াত। সক্রিয় রিপাবলিকানরা ছিল অন্ধকার রাতের আইনবহির্ভূত আক্রমণের মূল লক্ষ্য। যখন দক্ষিণ ক্যারোলিনার একজন স্ক্যালাওয়াগের অধীনে কাজ করা মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা ভোট দিতে শুরু করে, তখন সন্ত্রাসীরা সেই বাগানে গিয়ে, এক ভুক্তভোগীর ভাষায়, “যে যত কৃষ্ণাঙ্গকে পেয়েছে, সবাইকে চাবুক মেরেছে।” == লিংকন ও পুনর্গঠন == [[File:Waud - 1867 - The First Vote.jpg|thumb|upright|আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রথমবারের মতো ভোটদান। জিম ক্রো আইন পরে আফ্রিকান-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার পুনরায় কেড়ে নিতে প্রণীত হয়।]] লিংকন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে কখনোই ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি, কারণ সংবিধান অনুযায়ী তারা তা করতে পারে না। তিনি আশা করেছিলেন যে বিচ্ছিন্ন হওয়া ১১টি অঙ্গরাজ্য কিছু রাজনৈতিক আনুগত্যের শর্ত পূরণ করে পুনরায় "পুনঃঅঙ্গীভূত" হতে পারে। লিংকন পুনঃঅঙ্গীভুক্তি নিয়ে অনেক আগেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। ১৮৬৩ সালে তাঁর জারি করা ক্ষমার ঘোষণা ও পুনর্গঠন প্রস্তাবে তিনি একটি সহজ প্রক্রিয়া স্থাপন করেন, যাতে ইউনিয়নপন্থীরা রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসতে পারে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নয়। এই পরিকল্পনায় সকল দক্ষিণী (সে সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের বাদে) যারা ভবিষ্যতে ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেবে, তাদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান করা হতো। ১৮৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানকারী জনগণের ১০ শতাংশ এই শপথ গ্রহণ করলেই কোনো অঙ্গরাজ্যকে বৈধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যেত এবং দাসমুক্তির নীতিকে মেনে একটি সরকার গঠন করা যেত। লিংকনের এই রাষ্ট্রপতি পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা দাবি করেছিল এটি খুবই কোমল। তারা ১৮৬৪ সালে ওয়েড-ডেভিস বিল পাশ করে, যা অনেক কঠোর শর্ত আরোপ করে। এই বিলে ৫০ শতাংশ ভোটারকে আনুগত্যের শপথ নিতে বলা হয় এবং শুধুমাত্র যারা কখনো কনফেডারেসিকে সমর্থন করেননি তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন বা ফেডারেল চাকরি পেতেন। লিংকন এই বিলটি গ্রহণ না করে পকেট ভেটো করেন। ১৮৬৫ সালের মার্চে কংগ্রেস ফ্রিডম্যান ব্যুরো নামে একটি নতুন সংস্থা গঠন করে। এই সংস্থা কৃষ্ণাঙ্গ ও দরিদ্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা, চাকরি খোঁজার সহায়তা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করত। এটি ছিল সে সময়ের বৃহত্তম সরকারি সাহায্য কার্যক্রম। এটি ছিল প্রথম বড় আকারের ফেডারেল কল্যাণ কর্মসূচি। [[File:Lincoln assassination slide c1900 - Restoration.jpg|thumb|রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকাণ্ডের চিত্র। এই ভয়াবহ ঘটনায় অ্যান্ড্রু জনসন রাষ্ট্রপতি হন, যার ফলে দক্ষিণের পুনর্গঠনের ধারা আমূল পাল্টে যায়।]] ১৮৬৪ সালে লিংকনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হন টেনেসির অ্যান্ড্রু জনসন, যিনি ছিলেন একমাত্র দক্ষিণী সেনেটর যিনি ইউনিয়নের প্রতি অনুগত ছিলেন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল লিংকন নিহত হলে জনসন রাষ্ট্রপতি হন এবং কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানদের জন্য তিনি একটি প্রধান বাধা হয়ে ওঠেন। তারা দক্ষিণের সরকার ও অর্থনীতিকে পুরোপুরি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছিলেন, যা আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করত। ১৮৬৫ সালের মে মাসে জনসন নিজস্ব এক ঘোষণা জারি করেন, যা লিংকনের ঘোষণার সঙ্গে খুবই মিল ছিল। তিনি ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেওয়া প্রায় সকল কনফেডারেটকে ক্ষমা প্রদানের প্রস্তাব দেন এবং ফ্রিডম্যানদের জন্য জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত শার্মানের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। জনসন রাষ্ট্রপতি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিকল্পনার আওতায় সব প্রাক্তন কনফেডারেট অঙ্গরাজ্য পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গীভূত হয়। ১৮৬৬ সালে জনসন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল ভেটো করেন — একটি ছিল ফ্রিডম্যান ব্যুরোর সুরক্ষা জোরদার করার জন্য এবং অন্যটি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য একটি নাগরিক অধিকার বিল। পরে রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে যে মধ্যপন্থী ও র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একত্রিত হলে তারা জনসনের ভেটো অতিক্রম করতে পারবে, এবং তারা ১৮৬৬ সালে নাগরিক অধিকার আইন এবং চতুর্দশ সংশোধনী পাশ করে। এই সংশোধনী যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিকে নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে এবং প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে তাদের অধিকার রক্ষা করতে বাধ্য করে। নাগরিক অধিকার আইন দক্ষিণে প্রচলিত ব্ল্যাক কোডসমূহকে অবৈধ ঘোষণা করে। জনসনের ভেটোর পরও কংগ্রেস ১৮৬৭ সালে তিনটি পুনর্গঠন আইন পাশ করে। এতে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোকে পাঁচটি সামরিক জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং সেখানে ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। প্রতিটি জেলার সামরিক কমান্ডার নিশ্চিত করতেন যে সংশ্লিষ্ট রাজ্য চতুর্দশ সংশোধনী অনুমোদন করছে এবং বর্ণবৈষম্যহীন ভোটাধিকার প্রদান করছে। টেনেসি ১৮৬৬ সালেই সংশোধনী অনুমোদন করায় এটি সামরিক জেলার বাইরে রাখা হয়। ১৮৬৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদ অ্যান্ড্রু জনসনকে অভিশংসিত করে। এর আগে কংগ্রেস টেনিওর অফ অফিস অ্যাক্ট পাশ করেছিল (জনসনের ভেটোর পর), যেখানে বলা হয় রাষ্ট্রপতির নিয়োগে সিনেটের পরামর্শ ও সম্মতির মাধ্যমে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার জন্যও একই পরামর্শ ও সম্মতি লাগবে। জনসন এই আইনের সাংবিধানিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন (এবং ১৯২৬ সালে সুপ্রিম কোর্টও একমত হয়) এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আইনটি লঙ্ঘন করেন একটি পরীক্ষা করার জন্য। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তাঁকে অভিশংসন করে, কিন্তু সেনেট এক ভোটের ব্যবধানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। ১৮৬৮ সালের নির্বাচনে উলিসিস গ্রান্ট রিপাবলিকান প্রার্থী হন এবং অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেন। রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে, তারা যদি দ্রুত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত না করে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। তাই কংগ্রেস ১৮৬৯ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে, যা বর্ণের কারণে পুরুষ নাগরিকদের ভোটাধিকার অস্বীকার করা যাবে না বলে বলে। এটি নারীবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় আঘাত ছিল, কারণ এই প্রথমবার লিঙ্গকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রিপাবলিকানরা দাবি করে, যদি এই সংশোধনীতে বর্ণ ও লিঙ্গ উভয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকত, তবে এটি কংগ্রেসে পাশ হতো না। === কংগ্রেসে আফ্রিকান-আমেরিকানরা === [[File:Hiram Rhodes Revels - Brady-Handy-(restored).png|thumb|upright|হাইরাম রোডস রেভেলস, কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান]] এই সময়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনেক আফ্রিকান-আমেরিকান কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। পুনর্গঠন আইন অনুসারে ফেডারেল সেনাবাহিনী দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রেরিত হয় এবং সাউথ ক্যারোলাইনা ও মিসিসিপিতে আফ্রিকান-আমেরিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং লুইজিয়ানা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও আলাবামায় শ্বেতাঙ্গদের প্রায় সমান সংখ্যায় ছিল, ফলে এসব রাজ্য থেকে কৃষ্ণাঙ্গরা কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। জন উইলিস মেনার্ড ১৮৬৮ সালে লুইজিয়ানার ২য় জেলা থেকে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যালেব হান্ট নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান এবং উভয় প্রার্থীর বক্তব্য শুনে প্রতিনিধি পরিষদ কাউকেই আসন দেয়নি। হাইরাম রেভেলস মিসিসিপির সিনেট দ্বারা ৮১-১৫ ভোটে নির্বাচিত হন, গৃহযুদ্ধ চলাকালে পদত্যাগকারী সেনেটর আলবার্ট জি. ব্রাউনের শূন্য আসন পূরণে। তিনি ১৮৭০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৭১ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। জোসেফ রেইনি ১৮৭০ সালের নির্বাচনে সাউথ ক্যারোলাইনার ১ম জেলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে উইলিয়াম এল. ডসনের আগে পর্যন্ত কংগ্রেসে দীর্ঘতম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য ছিলেন। ব্লাঞ্চ ব্রুস ১৮৭১ সালে মিসিসিপির স্টেট সিনেট দ্বারা পূর্ণ মেয়াদে মার্কিন সিনেটে নির্বাচিত হন। ব্রুস ছিলেন একমাত্র প্রাক্তন দাস, যিনি মার্কিন সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন। == আলাস্কা ক্রয় == [[File:Alaska purchase.jpg|thumb|১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ আলাস্কা চুক্তি স্বাক্ষরের একটি চিত্রকর্ম।]] ১৭৭০-এর দশক থেকে রুশ সাম্রাজ্য আলাস্কা উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে।<ref>{{cite web |title=Russians in Alaska and U.S. Purchase Federal Indian Law for Alaska Tribes |url=https://www.uaf.edu/tribal/112/unit_1/russiansinalaskaanduspurchase.php |website=www.uaf.edu |accessdate=18 September 2020}}</ref> ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ মার্কিন সরকার রুশ সাম্রাজ্য থেকে আলাস্কা ৭.২ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।<ref name="rochesteralaska">{{cite web |title=The myth—and memorabilia—of Seward's Folly |url=https://www.rochester.edu/newscenter/sewards-folly-308482/ |website=NewsCenter |accessdate=18 September 2020 |date=29 March 2018}}</ref> সে সময় এই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে উপহাস করা হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন সেখানে সোনা ও তেলের সন্ধান মেলে, তখন এটি একটি লাভজনক চুক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়।<ref name="rochesteralaska"/> সেই অঞ্চলে থাকা অল্পসংখ্যক রুশ বসবাসকারীকে তিন বছরের মধ্যে রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার অথবা থেকে গিয়ে আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।<ref name="rochesteralaska"/> == ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা == [[File:Panic of 1873 bank run.jpg|thumb|upright|১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হুড়োহুড়ি।]] ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা ছিল গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত প্রথম মন্দা। এই মন্দা আন্তর্জাতিকভাবে রূপার চাহিদা হ্রাস পাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়া যুদ্ধের পর জার্মানি রুপা মানদণ্ড ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৭৩ সালের কয়েনেজ আইন পাশ করে, যা আমাদের মুদ্রা ব্যবস্থাকে সোনা ও রুপার পরিবর্তে কেবলমাত্র সোনার ওপর নির্ভর করে তৈরি করে। এই আইন রুপার মান তৎক্ষণাৎ কমিয়ে দেয় এবং পশ্চিমাঞ্চলের খনিশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৮৭৩ সালের মন্দার আরেকটি কারণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেলপথ কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বিনিয়োগ, যা দ্রুত লাভ এনে দিতে পারেনি। জে কুক অ্যান্ড কোম্পানি নামক একটি মার্কিন ব্যাংক ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ সালে দেউলিয়া ঘোষণা করে। ব্যাংকটি অতিরিক্ত রেলপথ ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ থেকে দশ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেই মন্দার সময়ে ৩৬৪টি রেলপথ কোম্পানির মধ্যে ৮৯টি ব্যর্থ হয়। মন্দার সময়ে রিয়েল এস্টেটের মূল্য, মজুরি এবং কর্পোরেট মুনাফা হ্রাস পায়। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এই মন্দায় বন্ধ হয়ে যায়। এই মন্দা প্রেসিডেন্ট গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। == ১৮৭৭ সালের মহা রেল ধর্মঘট == [[File:Harpers 8 11 1877 Blockade of Engines at Martinsburg W VA.jpg|thumb|ধর্মঘট চলাকালে ইঞ্জিনগুলোর পথ অবরোধ।]] ১৮৭৭ সালের ১৪ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মার্টিন্সবার্গে এই ধর্মঘট শুরু হয়। এই ধর্মঘটের কারণ ছিল বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহিও রেলরোড কোম্পানির বেতন কর্তন। শ্রমিকরা রেলপথ চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। ধর্মঘট দমন করতে রাজ্য মিলিশিয়া পাঠানো হলেও তারা ধর্মঘটকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। গভর্নর হেনরি ম্যাথিউস ধর্মঘট দমন ও রেল চলাচল পুনরায় শুরু করতে ফেডারেল সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানান। ধর্মঘটটি কুম্বারল্যান্ড, মেরিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সেনারা ধর্মঘটকারীদের একটি জনতার ওপর গুলি চালায় এবং দশজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। এই ধর্মঘট ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর, পিটসবার্গ এবং এমনকি সেন্ট লুইস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মঘটে কোটি কোটি ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয় এবং বহু প্রাণহানি ঘটে। এই মহা ধর্মঘট ৪৫ দিন স্থায়ী হয়, শেষ পর্যন্ত শহর থেকে শহরে ফেডারেল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এটি দমন করা হয়। == রিপাবলিকানদের ক্ষমতাচ্যুতি == গ্রান্টের শাসনামলেই রিপাবলিকান পার্টির পতনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ফেডারেল পদ ও মন্ত্রিসভায় বিপুল সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেকেই পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যরা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ক্লান্ত হয়ে দক্ষিণের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্মিলনের প্রস্তাব দেন। এরা নিজেদের 'লিবারেল রিপাবলিকান' বলে পরিচয় দেন এবং ১৮৭২ সালে গ্রান্টের বিরুদ্ধে হোরেস গ্রিলিকে মনোনয়ন দেন। ডেমোক্র্যাটরাও গ্রিলিকে সমর্থন করে। তবে ব্যাপক সমর্থন সত্ত্বেও, গ্রান্ট ১৮৭২ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হন। নির্বাচনের মৌসুমে, লিবারেল রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে 'অ্যামনেস্টি অ্যাক্ট' (ক্ষমাপ্রদান আইন) পাশ করাতে ব্যস্ত ছিল এবং ১৮৭২ সালের মে মাসে এই আইন পাশ হয়। এই আইনটি অধিকাংশ সাবেক কনফেডারেট নাগরিকদের ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ উন্মুক্ত করে। এর ফলে দক্ষিণে ডেমোক্রেটদের রাজনৈতিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে। শীঘ্রই ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনার সরকারগুলো ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকানদের সংখ্যা ছিল বেশি, সেসব স্থানে কু ক্লুক্স ক্লান (গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠী) রিপাবলিকানদের আতঙ্কিত করে তোলে এবং তাদেরকে ডেমোক্রেটদের ভোট দিতে অথবা ভোট না দিতে বাধ্য করে। ১৮৭৬ সালের মধ্যে দক্ষিণে রিপাবলিকানরা কেবল তিনটি রাজ্যে—ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা এবং সাউথ ক্যারোলিনায়—ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়, যার সবকটিতেই তখনো ইউনিয়ন সেনা মোতায়েন ছিল। গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদকালে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেলে রিপাবলিকানদের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। জনসাধারণের কাছে সবচেয়ে আঘাতকর ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধসচিবকে জড়িত করে কেলেঙ্কারির ঘটনা। একই বছরে দেশ একটি মহামন্দার কবলে পড়লে উত্তরাঞ্চলের জনমত রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে চলে যায়। ১৮৭৪ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানরা উভয় কক্ষে ব্যাপক আসন হারায় এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর পূর্ববর্তী সময়ের পর এই প্রথম ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের একটি কক্ষে (প্রতিনিধি পরিষদ) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ফলে কংগ্রেস আর পুনর্গঠনের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকল না। [[Image:A certificate for the electoral vote for Rutherford B. Hayes and William A. Wheeler for the State of Louisiana dated 1876 part 6.jpg|thumb|upright|১৮৭৬ সালের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রাদারফোর্ড বি. হেইস ও উইলিয়াম এ. হুইলারের নির্বাচনী ভোটের প্রত্যয়নপত্র]] ১৮৭৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা নিউ ইয়র্কের গভর্নর এস. জে. টিলডেনকে প্রার্থী করে এবং রিপাবলিকানরা ওহাইওর গভর্নর রাদারফোর্ড বি. হেইসকে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনের দিন দেখা যায়, টিলডেন ২৫০,০০০-এরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু সাউথ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা এবং লুইজিয়ানার যথাক্রমে সাত, চার ও আটটি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় (এই তিন রাজ্যে তখনো উত্তরীয় সেনা মোতায়েন ছিল)। এছাড়াও, ওরেগনের তিনটি ইলেকটোরাল ভোটের একটি নিয়েও বিরোধ দেখা দেয়। যদি হেইস সব ২০টি ভোট পেতেন, তাহলে তিনি নির্বাচনে জয়ী হতেন। কংগ্রেস একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে, যাতে সাতজন ডেমোক্র্যাট, সাতজন রিপাবলিকান এবং একজন স্বাধীন সদস্য ছিলেন। তবে স্বাধীন সদস্য পদত্যাগ করলে তার স্থানে একজন রিপাবলিকান নিযুক্ত হন। কমিশন দলীয় বিভাজনের ভিত্তিতে ভোট দিয়ে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করে, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হুমকি দেয়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা গোপনে একত্র হয়ে একটি সমঝোতা খসড়া করেন, যা ‘১৮৭৭ সালের সমঝোতা’ নামে পরিচিত। এতে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, দক্ষিণ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয় এবং দক্ষিণে আরও সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়; এটি পুনর্গঠনের অবসান নির্দেশ করে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সমঝোতা ব্যর্থ হয়, কারণ ডেমোক্র্যাটরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং দক্ষিণে আফ্রিকান আমেরিকানদের অধিকারের সুরক্ষা দেয়নি। পুনর্গঠন-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণে ডেমোক্র্যাট ‘রিডিমার’দের উত্থান ঘটে। রিডিমাররা দক্ষিণে রিপাবলিকান শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রতিজ্ঞা করে। তারা ‘জিম ক্রো’ আইন প্রণয়ন করে, যা কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের পৃথকীকরণ করে এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সীমিত করে, যা পরবর্তী শতাব্দীর আগে বিলুপ্ত হয়নি। জিম ক্রো আইনকে চ্যালেঞ্জ করা হয় *Plessy v. Ferguson* মামলায়, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে বৈধতা দেয় এই শর্তে যে পৃথক সুবিধাসমূহ হতে হবে "পৃথক কিন্তু সমান"। == সিঞ্চিমইয়াংগো == [[File:Sujagi.jpg|thumb|১৮৭১ সালে ইউএসএস কলোরাডোতে বন্দী হওয়া সুজাগি, একটি কমান্ডিং জেনারেলের পতাকা।]] ১৮৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোরিয়ার প্রতি অভিযান, যাকে সিঞ্চিমইয়াংগো বা 'সিনমি বর্ষের পশ্চিমা গোলযোগ' বলা হয়, ছিল কোরিয়ায় প্রথম আমেরিকান সামরিক অভিযান। এটি প্রধানত কোরিয়ার গাংহওয়া দ্বীপ ও এর আশেপাশে সংঘটিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র একটি সামরিক অভিযাত্রী বাহিনী কোরিয়ায় প্রেরণ করেছিল একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলকে সহায়তা করার জন্য, যা কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, জেনারেল শেরম্যান বাণিজ্যিক জাহাজের ভাগ্য নির্ণয় এবং জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার নাবিকদের সাহায্যের জন্য একটি চুক্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী জোসিয়ান রাজবংশের সরকার ও চাপদাতা আমেরিকানদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, যা কূটনৈতিক অভিযানকে সশস্ত্র সংঘর্ষে পরিণত করে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সামান্য বিজয় লাভ করলেও, কোরিয়ারা দেশটি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানায়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যথেষ্ট ক্ষমতা বা শক্তি ছিল না, তারা তাদের কূটনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। == ১৯শ শতাব্দীর ধর্ম == === ইহুদি নতুন তরঙ্গ অভিবাসন === [[File:Welcome to the land of freedom.png|thumb|১৮৮৭ সালের ছবি যা ইউরোপীয় অভিবাসীদের নিউইয়র্ক সিটিতে আগমন দেখায়।]] ১৮২০ থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে প্রায় ২,৫০,০০০ ইহুদি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অভিবাসন ছিল কেবল ইউরোপীয় অর্থনীতির সঙ্কটের কারণে নয়, ১৮৪৮ সালের জার্মান রাজ্যের লিবারেল বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণে।<ref>Stone, Amy. ''Jewish Americans''. Milwaukee, Wisconsin: World Almanac Library, 2007. Pp. 6-9.</ref> রেলপথ এবং বৃহৎ স্টিমার জাহাজগুলো ১৮০০ এবং ১৯০০ সালের শেষের দিকে আমেরিকায় অভিবাসনকে সহজতর করে। তবু যাত্রাটি ছিল অস্বচ্ছন্দকর, অসুস্থকর ও বিপজ্জনক। ধনী পরিবার যারা শীর্ষ বর্গের কামরায় ছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত কেবিন ছিল, কিন্তু অধিকাংশ অভিবাসী স্টিয়ারেজ শ্রেণীতে যাতায়াত করতেন: তিনশো মানুষ, পুরুষ, নারী ও শিশু, ঘনিষ্ঠভাবে গাদাগাদি করে, দ্বৈত বা ত্রৈত বেডে ঘুমাতেন। বেডগুলো প্রায় ছয় ফুট লম্বা এবং দুই ফুট চওড়া ছিল, বেডের মাঝে মাত্র দুই-আধা ফুটের ব্যবধান। তাদের সামান্য মালপত্র বেডের ওপর রাখা হতো। পানীয় জল ছিল খুবই কম বা ছিল না, দুর্গন্ধ অসহনীয় ছিল, এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না। এক প্রত্যক্ষদর্শী সোফিয়া ক্রেইটসবের্গ বলেছিলেন, "আপনি যখন মাথা খোঁচাতেন [...] তখন হাতেই লাউস ধরতো।"<ref>Stone, p.15</ref> এই ঘনিষ্ঠ পরিবেশ, অভাব-অনটন ও দীর্ঘ যাত্রার চাপের কারণে রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটত। ইহুদিরা অশুদ্ধ (কোষের নিয়মে নিষিদ্ধ) মাংস ও স্যুপ পরিবেশন পেত, যা অনেকেই খেতেন না। তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা শুকনো ফল, শক্ত রুটি, বা বেয়ানো পনির খানিক খেতেন।<ref>Stone.</ref> অন্য প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কয়েকটি বন্দর ছিল। ১৮৫৫ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত এটি মূলত ক্যাসেল গার্ডেন ছিল, ম্যানহাটনের প্রান্তে, যা পরবর্তীতে নিউইয়র্ক সিটি হিসেবে পরিচিত। ১৮৯০ সাল থেকে ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী এলিস দ্বীপে প্রবেশ করত।<ref>http://genealogy./od/ports/p/castle_garden.htm Retrieved on March 15, 2015.</ref> এই জায়গাগুলোতে মানুষকে যথাযথভাবে জাহাজ, উৎপত্তি দেশ, পূর্ব কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হতো।<ref>http://www.castlegarden.org/manifests.php Retrieved on March 15, 2015.</ref> === ক্যাথলিক আমেরিকা === [[File:GibbonsPhotoStanding.jpg|thumb|upright|জেমস গিবন্স, ১৮৬০ থেকে ১৯০০ সালের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী ক্যাথলিক নেতা।]] [[File:The American River Ganges (Thomas Nast cartoon).jpg|thumb|১৮৭৫ সালের একটি রাজনৈতিক কার্টুন, যা ক্যাথলিক চার্চকে আমেরিকান পাবলিক শিক্ষার শত্রু হিসেবে দেখায়। থমাস নাস্ট ভয় পেতেন যে সরকারী তহবিল পাবলিক শিক্ষার পরিবর্তে ক্যাথলিক শিক্ষাকে সমর্থন করবে।]] ==== ক্যাথলিক অভিবাসন ==== আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্য (বিশেষ করে পোল্যান্ড) থেকে ব্যাপক অভিবাসনের ফলে ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৪০ থেকে ১৮৫১ সালের মধ্যে আয়ারল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ ও অত্যাচার চলছিল। অন্যান্য অভিবাসন জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে হয়েছিল। ১৮৫০ সালের মধ্যে ক্যাথলিক ধর্ম যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সেক্টর হয়ে ওঠে; ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পায়, প্রধানত অভিবাসনের কারণে। এই ব্যাপক ক্যাথলিক অভিবাসনের ফলে ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ==== নির্যাতন ==== আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টরা ক্যাথলিকদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকত। গৃহযুদ্ধের আগে আমেরিকায় অ্যান্টি-ক্যাথলিক পূর্বাগ্রহ "নোথিংস" দল এবং আমেরিকার অরেঞ্জ ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে প্রকাশ পেত। যুদ্ধের পর আমেরিকান প্রোটেকটিভ অ্যাসোসিয়েশন ও কু ক্লাক্স ক্লান ক্যাথলিকদের নিয়মিতভাবে নির্যাতন ও বৈষম্য করত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ফিলাডেলফিয়ার নেটিভিস্ট দাঙ্গা, "ব্লাডি মান্ডে", এবং নিউইয়র্ক সিটির অরেঞ্জ দাঙ্গা ১৮৭১ ও ১৮৭২ সালে।<ref>Michael Gordon, The Orange riots: Irish political violence in New York City, 1870 and 1871 (1993</ref> ==== নেটিভিজম ==== কঠোর অ্যান্টি-ক্যাথলিক কার্যক্রম নেটিভিজমের অনুভূতিকে প্রকাশ করত, যা সমস্ত "দেশজ জন্মানো আমেরিকান পুরুষদের" বিদেশিদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে উৎসাহিত করত। (অর্থাৎ, এখানে আসল দেশীয় আমেরিকানদের নয়, বরং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত প্রোটেস্ট্যান্টদের কথা বলা হচ্ছে যারা এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন।) প্রথম নেটিভিস্ট প্রকাশনা ছিল ''The Protestant''; এর প্রথম সংখ্যা ১৮৩০ সালের ২ জানুয়ারি বিক্রি হয়। সম্পাদক ছিলেন জর্জ বর্ন, যিনি লিখেছিলেন, "পত্রিকার লক্ষ্য ক্যাথলিক বিশ্বাসের সমালোচনায় কেন্দ্রীভূত।"<ref>Baker, Sean. ''The American Religious Experience, American Nativism, 1830-1845.''</ref> অ্যান্টি-ক্যাথলিক বক্তব্য মাঝে মাঝে সহিংসতায় পরিণত হতো; ১৮৩৪ সালের আগস্ট ১০ তারিখে ৪০-৫০ জন মানুষ ইউর্সুলাইন কনভেন্ট স্কুলের বাইরে জমায়েত হয়ে সেটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।<ref>Baker, Sean</ref> ১৮৩৪ সালে এফ.বি. মরস, যিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অধ্যাপক ছিলেন এবং নেটিভিস্ট নেতা ছিলেন, "The Foreign Conspiracies Against the Liberties of the United States" গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষার কথা বলেন। প্রোটেস্ট্যান্টদের ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে আশঙ্কা ও ভয় মূলত ক্যাথলিক ধর্মের রাজতান্ত্রিক প্রবণতা নিয়ে ছিল। এই সময়ে শহরগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল অভিবাসীদের ব্যাপক আগমনের কারণে যারা একত্রিত হয়ে একই এলাকায় বসবাস করত। নেটিভিস্টরা এটিকে "গোষ্ঠীবদ্ধতা" হিসেবে দেখত এবং "আমেরিকানীকরণ" এড়ানোর বা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বলে মনে করত। মরস এবং তাঁর সমকালীন লিম্যান বীচারদের সফলতার সঙ্গে নেটিভিস্ট আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে জনতা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য না করে কাল্পনিক কাহিনীকেও সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৮৩৬ সালে মারিয়া মঙ্ক "Awful Disclosures of the Hotel Dieu Nunnery of Montreal" নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এতে তিনি ক্যাথলিক ধর্মের সঙ্গে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন পাদরিদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক এবং নন ও শিশুদের হত্যা ঘটেছিল; বইয়ের শেষ অংশে তিনি তার গর্ভে থাকা শিশুকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গেছেন। মঙ্কের মা এই লেখাকে অস্বীকার করেন এবং বলেন, মারিয়া কখনো কোন কনভেন্টে ছিলেন না, এবং মারিয়ার শৈশবে যে মস্তিষ্ক আঘাত হয়েছিল তা তার গল্পের কারণ হতে পারে। উত্তর-মধ্য আমেরিকা ও দেশের উত্তরের অংশে ক্যাথলিকদের স্বাধীন চিন্তার অক্ষম বলে মনে করা হত এবং তাদের "অ্যান্টি-আমেরিকান প্যাপিস্ট" বলা হতো, কারণ তারা রোমের পোপের আদেশ পালন করতেন বলে ধারণা ছিল। মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে মেক্সিকান ক্যাথলিকদের "প্যাপিস্ট কুসংস্কার" কারণে মিডিয়ায় হাস্যকর বা বোকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমেরিকার ক্যাথলিকদের সম্পর্কে সাধারণ মনোভাবের কারণেই প্রায় ১০০ জন আমেরিকান ক্যাথলিক, যাদের বেশিরভাগই সদ্য অভিবাসিত আইরিশ, মেক্সিকানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন; তাদের "সেন্ট প্যাট্রিকস ব্যাটালিয়ন" == শিক্ষা == [[File:General Oliver Otis Howard House - Howard University.jpg|thumb|জেনারেল অলিভার ওটিস হাওয়ার্ড হাউস, ১৮৬৭ সালে নির্মিত এবং হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও বিদ্যমান সবচেয়ে প্রাচীন ভবন।]] সারাদেশে প্রাক্তন দাসেরা শিক্ষা অর্জনের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। সব বয়সের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বইয়ে কী লেখা আছে তা জানার প্রবল আগ্রহ ছিল, যেগুলো একসময় শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্যই অনুমোদিত ছিল। স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা নিজেদের স্কুল শুরু করে এবং দিনে ও রাতে ক্লাস গুলো উপচে পড়ত। তারা গুঁড়ি গুঁড়ি বসত গাছের গুঁড়ির আসনে বা মাটির মেঝেতে। পুরানো পঞ্জিকা বা বাতিল হয়ে যাওয়া অভিধানে তারা অক্ষর চর্চা করত। দাসত্বের অজ্ঞতা থেকে মুক্তির প্রবল ইচ্ছার কারণে, দারিদ্র্য উপেক্ষা করেও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মাসে $১ বা $১.৫০ করে টিউশন ফি দিত।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গরা এবং তাদের শ্বেতাঙ্গ মিত্ররাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল, যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষক, পাদ্রি ও পেশাজীবী নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমেরিকান মিশনারি অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ফিস্ক এবং আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাতটি কলেজ ১৮৬৬ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রিডম্যান ব্যুরো ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। মেথডিস্ট, ব্যাপটিস্ট ও কনগ্রেগেশনালিস্টদের মতো উত্তরাঞ্চলীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও ডজনখানেক ধর্মতাত্ত্বিক ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজকে সমর্থন করে।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাথমিক শিক্ষা মূলত মিশনারিদের মাধ্যমে আসত, যাদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন কৃষ্ণাঙ্গদের শিক্ষার হার খুবই কম ছিল, যতক্ষণ না আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে মুক্তিপত্র ঘোষণা করেন। ১৮৬৭ সালে শিক্ষা বিভাগ গঠিত হয়, যাতে আরও কার্যকরী বিদ্যালয় ব্যবস্থা চালু করা যায়। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের জন্য “লিবারেল আর্টস ও বিজ্ঞানে” শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৯ সালে বোস্টনে প্রথম পাবলিক স্কুল ডে পালিত হয়। == প্রযুক্তি == [[File:Earlyoilfield.jpg|thumb|পেনসিলভানিয়ার একটি তেলক্ষেত্র।]] গৃহযুদ্ধের ঠিক আগে পেনসিলভানিয়ার টাইটাসভিল ও আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয় এবং যুদ্ধের পরে এটি ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে তেল শুধুমাত্র ঔষধি কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি শিল্পক্ষেত্রে এবং তিমির তেলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বিপজ্জনক ও ব্যয়বহুল তিমি শিকার শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু শহর রাতের আলো জ্বালানোর জন্য কয়লা গ্যাস ব্যবহার করলেও অন্য শহরগুলো তেল বাতি ব্যবহার শুরু করে এবং বড় বড় শহরগুলো রাতের আলোতে আলোকিত হয়। পেট্রোলিয়াম, বাতি তেল (বড় ইঞ্জিন বাতির জন্য) এবং যন্ত্র তেল রেলপথের কার্যকারিতা বাড়ায়। [[File:East and West Shaking hands at the laying of last rail Union Pacific Railroad - Restoration.jpg|thumb|প্রথম ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রেলরোড, ইউটাহ, ১৮৬৯]] দূরত্ব অতিক্রম করে তথ্য পরিবহন করা যেত টেলিগ্রাফের মাধ্যমে। ১৮৭০ ও ১৮৮০ দশকে আবিষ্কর্তারা মানুষের কণ্ঠস্বর পরিবহন করার প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এবং এলিশা গ্রে। ১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যন্ত্র ব্যবহার করে একটি স্টিলের রিডের শব্দ প্রেরণ করেন। ১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলের এক সহযোগী তাঁর পেটেন্ট ওয়াশিংটন ডিসির পেটেন্ট অফিসে জমা দেন, ঠিক একই দিনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এলিশা গ্রে ও পেটেন্ট দাখিল করেন। তিন সপ্তাহ পর, ৭ মার্চ, বেলের পেটেন্ট জয়ী হয়ে অনুমোদিত হয়। == যুদ্ধের পরে আদিবাসীরা == গৃহযুদ্ধ চলাকালীন আদিবাসীদের সাথে যে অবিচার হয়েছিল তা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দূর হয়নি। মার্কিন জাতীয় সরকার স্পষ্ট করেছিল যে এই মানুষগুলো যদিও এই মহাদেশের স্থানীয় অধিবাসী, তবে তারা দেশের নাগরিক হবে না। আদিবাসীদের পশ্চিমের আর্থসীমার বাইরে সংরক্ষিত জমিতে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়। তাদের চলাচল সরকারি এজেন্টরা নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি করত। শিকার করতে, মাছ ধরতে বা পাশের সংরক্ষিত জমিতে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত জমির বাইরে যাওয়া ভারতীয় বিষয়ক দফতর কর্তৃক নিষেধ ছিল। পরবর্তীতে, আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই দফতর একটি পাস ব্যবস্থা চালু করে। এই ব্যবস্থায় আদিবাসীদের সংরক্ষিত জমির বাইরে যেতে পাস নিতে হতো এজেন্টদের কাছ থেকে। সাদা বসবাসকারীদেরও ট্রেনে আদিবাসীদের চলাচলে আপত্তি ছিল। তবে, নেভাডার সেন্ট্রাল প্যাসিফিক রেলরোড আদিবাসীদের ট্রেনের ওপর চড়ে যাত্রা করার অনুমতি দেয় বিনিময়ে তাদের রেললাইন সংরক্ষিত জমির মধ্য দিয়ে চলার সুযোগ পায়। অনেক ভারতীয় এজেন্ট এই বিনামূল্যের যাত্রা ব্যবস্থা পছন্দ করতেন না এবং এটিকে বন্ধ করার জন্য দফতরে চিঠি লেখা শুরু করেন। একজন এজেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, "এই সীমাহীন স্বাধীনতা এবং বারবার অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আদিবাসীদের জন্য অতিরঞ্জিত করা যাবে না।" ১৪তম সংশোধনী এর মাধ্যমে নাগরিক অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে আদিবাসীদের জন্য তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলা হয়। ১৮৬৬ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্টে উল্লেখ আছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সমস্ত ব্যক্তি, যারা কোনো বিদেশি ক্ষমতার অন্তর্গত নয়, এবং কর প্রদানে অব্যাহত ভারতীয়রা ব্যতীত, তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে ঘোষণা করা হলো।” === লিটল বিঘর্নের যুদ্ধ === [[File:Little Big Horn.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|চিয়েনে একজন শিল্পীর আঁকা লিটল বিঘর্ন যুদ্ধের চিত্র।]] ১৮৭৬ সালে, কয়েকটি কম গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষের পর, কর্নেল জর্জ এ. কাস্টার এবং তার ছোট ক্যাভ্যালারি দল লিটল বিঘর্ন নদীর কাছে সিউক্স ও তাদের কিছু মিত্রের সাথে মুখোমুখি হন। বড় ভারতীয় বাহিনীকে সংরক্ষিত জমিতে ফিরিয়ে পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনী তিনটি ফৌজ পাঠায় আক্রমণের জন্য। একটি দলের মধ্যে ছিল লেফটেন্যান্ট কাস্টার ও সেভেন্থ ক্যাভ্যালারি। তারা সিউক্স গ্রামের সন্ধান পায়, যা প্রায় পনেরো মাইল দূরে রোজবাড নদীর পাশে ছিল। কাস্টার আরও একটি প্রায় চল্লিশ সদস্যের দলও দেখতে পান। তিনি আদেশ অগ্রাহ্য করে আগ্রাসী হয়ে উঠেন, কারণ তিনি মনে করতেন তারা মূল দলকে সতর্ক করে দেবে। তিনি বুঝতে পারেননি যে সংখ্যায় তারা তাকে তিন গুণে বেশি। কাস্টার তার বাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করেন। তিনি ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক বেন্টিনকে আদেশ দেন যাতে তারা লিটল বিঘর্ন নদীর উপরের উপত্যকায় ভারতীয়দের পালানোর পথ আটকায়। মেজর মার্কাস রেনো তার গ্রুপকে তাড়া করার এবং তারপর নদী পার হয়ে ভারতীয় গ্রাম আক্রমণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যেখানে তার অধীনে থাকা বাকি সৈন্যরা ছিল। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ থেকে ভারতীয় শিবির আঘাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না যে তাকে কঠোর ভৌগলিক বাধা অতিক্রম করতে হবে। যখন ভারতীয়রা আক্রমণ করতে নেমে আসে, কাস্টার তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন ঘোড়াগুলোকে গুলি করতে এবং তাদের লাশ সামনে গড়িয়ে দেয়াল বানাতে। কিন্তু এটি গুলির বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করতে পারেনি। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কাস্টার ও তার সকল সৈন্য নিহত হন, যা আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক বিপর্যয়ের মধ্যে একটি। একদিনের অতিরিক্ত লড়াইয়ের পর রেনো ও বেন্টিনের একত্রিত বাহিনী ভারতীয়রা যুদ্ধ থামানোর পর পালিয়ে যায়। তারা জানত যে আরও দুইটি সৈন্যদল তাদের দিকে আসছে, তাই দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। কাস্টারের এই শেষ যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা তার গৃহযুদ্ধে অর্জিত যেকোনো সাফল্যকে ছাপিয়ে যায়। কাস্টার ২৫ জুন, ১৮৭৬ সালে লিটল বিঘর্ন যুদ্ধে পরাজিত হন ও নিহত হন, যা "কাস্টারের শেষ প্রতিরোধ" নামে পরিচিত। == ঐ সময়কার নারীর ইতিহাস == === ভিক্টোরিয়া উডহাল === [[File:Victoria Claflin Woodhull by Mathew Brady - Oval Portrait.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ভিক্টোরিয়া উডহাল]] ১৮৭২ সালে ভিক্টোরিয়া উডহাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন। তিনি মে ১০ তারিখে ইকুয়াল রাইটস পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও এটি অনস্বীকার্য যে তিনি প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী, তার প্রার্থিতার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল; কারণ তার নাম আসলে ভোটের তালিকায় ছিল না এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে ৩৫ বছরের নিচে থাকা উচিত নয়। উডহাল কোনো ইলেক্টোরাল ভোট পাননি, তবে প্রমাণ আছে যে তিনি কিছু জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন যা গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন গঠিত হয় ২২ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ সালে। নিউ ইয়র্কের ফ্রেডোনিয়াকে এই গোষ্ঠীর জন্মস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। টেম্পারেন্স আন্দোলন ছিল একটি সামাজিক আন্দোলন যা মদ্যপানের পরিমাণ কমানোর জন্য কাজ করেছিল। এই আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং নারীরা বার ও ওষুধের দোকানে গিয়ে গান গেয়ে এবং প্রার্থনা করত। ১৮৭৪ সালে ক্লিভল্যান্ড, ওহায়োতে ন্যাশনাল উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীরা অ্যালকোহল সেবনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে সেলুনে গিয়ে প্রার্থনা করত। অনেক সময় তাদের প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত এবং বারকর্মীদের গালিগালাজ সহ্য করতে হত। এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা আইন প্রণয়নে সহায়ক হয়। ==সূত্রসমূহ== {{reflist|2}} {{chapnav|গৃহযুদ্ধ|আবিষ্কারের যুগ এবং গিল্ডেড যুগ}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} qm7pt3b9z0o5ycnp049yas3b5taazp8 84872 84870 2025-06-19T00:04:28Z Mehedi Abedin 7113 84872 wikitext text/x-wiki == পুনর্গঠনের সূচনা == [[File:Atlanta roundhouse ruin3.jpg|thumb|১৮৬৬ সালে জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি রেল ইয়ার্ড। গৃহযুদ্ধের পর দক্ষিণাঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল।]] ২ মার্চ, ১৮৬৭ তারিখে কংগ্রেস প্রথম পুনর্গঠন আইন পাস করে। দক্ষিণকে পাঁচটি সামরিক জেলায় ভাগ করা হয়, প্রতিটিতে একজন মেজর জেনারেল নিযুক্ত হন। প্রতিটি রাজ্যে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত পুরুষ দাসদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। এই আইনে একটি সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত ছিল যা বলেছিল যে, দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো ১৪তম সংশোধনী অনুমোদন এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করলে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারবে। রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জনসন তৎক্ষণাৎ এই বিলটিতে ভেটো দেন, কিন্তু কংগ্রেস একই দিনেই এটি আবার পাস করে। অ্যান্ড্রু জনসন সামরিক জেলার প্রশাসকের পদে নিয়োগের আগে জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্টের পরামর্শ নেন। পরে তিনি নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেন: জন স্কোফিল্ড (ভার্জিনিয়া), ড্যানিয়েল সিকলস (দ্য ক্যারোলিনাস), জন পোপ (জর্জিয়া, আলাবামা এবং ফ্লোরিডা), এডওয়ার্ড অর্ড (আর্কানসাস এবং মিসিসিপি), এবং ফিলিপ শেরিডান (লুইজিয়ানা এবং টেক্সাস)। মার্কিন গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) অবস্থান কী হবে।{{fix|text=what}} বেশিরভাগ গবেষক ১৮৬৫-১৮৭৭ সালকে পুনর্গঠনের সময়সীমা হিসেবে মেনে নেন। এই যুগটি ছিল বিতর্কিত এবং মার্কিন সমাজের বিভিন্ন অংশ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। কনফেডারেট অঙ্গরাজ্যগুলোকে কীভাবে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের মর্যাদা কী হবে — এই প্রশ্নে বিভিন্ন মতবিরোধ দেখা দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্বাধীনতার অর্থ নিয়েই দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সদ্য গঠিত রিপাবলিকান পার্টির একটি প্রধান অংশ চেয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কিছুটা সুরক্ষা, আর র‍্যাডিকালরা চেয়েছিল দক্ষিণের সমাজব্যবস্থার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন। এই সময়ে কনজারভেটিভ (বিশেষত ডেমোক্র্যাটরা) বিশ্বাস করত যে, অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে এবং শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে পূর্ববর্তী সম্পর্কের ব্যবস্থাই টিকে থাকা উচিত। বেশিরভাগ আফ্রিকান-মার্কিন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং অনেকক্ষেত্রে জমির পুনর্বন্টন এবং কারখানা ব্যবস্থার ভাঙনের দাবি করেছিল। এই বিভিন্ন মতামতের মধ্য দিয়ে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত সময়কাল এক অর্থে আন্তবর্ণীয় গণতন্ত্রের একটি বিশাল পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এই সময়জুড়ে দক্ষিণে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সহিংসতাও বিরাজ করেছিল। == সংজ্ঞা == যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে *পুনর্গঠন* বলতে সেই সময়কালকে বোঝায় যা আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পর শুরু হয়েছিল, যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কনফেডারেট স্টেটস অব আমেরিকা-এর রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, এবং সেই প্রক্রিয়াকেও বোঝায় যার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য, উত্তরাঞ্চলের মধ্যপন্থী রিপাবলিকান এবং র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একমত হয়েছিল যে কনফেডারেসি এবং এর দাসপ্রথার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে হবে এবং যাতে এটি আর কখনও ফিরে আসতে না পারে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জন করা হবে এবং কখন তা অর্জিত হয়েছে তা নির্ধারণ করবে কে—এই বিষয়গুলো নিয়েই মূল বিতর্ক ছিল। র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানরা বিশ্বাস করত যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনই ছিল *স্লেভ পাওয়ার* ধ্বংস করার জন্য অপরিহার্য এবং এটি রাজ্যগুলোর চিরস্থায়ী ঐক্য নিশ্চিত করার জন্য এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) নানা সমস্যার সমাধানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাসাচুসেটসের মার্কিন সিনেটর চার্লস সামনার, যিনি একজন র‌্যাডিকাল রিপাবলিকান ছিলেন, বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেসকে দাসপ্রথার সাথে সাথে কনফেডারেসিও বিলুপ্ত করতে হবে, কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একসাথে শিক্ষা দিতে হবে। “মধ্যপন্থীরা” দাবি করেছিল যে, কনফেডারেটরা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করেছে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছে—এই নিশ্চয়তার মাধ্যমে তারা লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছে। আব্রাহাম লিংকন এবং অ্যান্ড্রু জনসনের মতো বেশিরভাগ মধ্যপন্থী চাইতেন শুধু কৃষ্ণাঙ্গ সাবেক সৈনিকদের ভোটাধিকার প্রদান করতে, অন্য আফ্রিকান-আমেরিকানদের নয়। দক্ষিণের রাজনৈতিক নেতারা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে, কিন্তু ১৮৬৭ সালে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যখন তাদের রাজ্য সরকারগুলোকে ফেডারেল সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সেগুলোর স্থলে *র‌্যাডিকাল রিপাবলিকান* সরকার গঠন করে, যেগুলোর নেতৃত্বে ছিল ফ্রিডম্যান, *কার্পেটব্যাগার* এবং *স্ক্যালাওয়াগ*। তাদের প্রধান হাতিয়ার ছিল *ব্ল্যাক কোডস* (১৮৬৫), যা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার সীমিত করেছিল এবং অর্থনৈতিক ও শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণে চাকরির সুযোগ প্রায় ছিলই না। ইয়াঙ্কিরা দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য যুদ্ধ জিতেছিল, কিন্তু পুনর্গঠনকাল কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের উপকারে আসেনি, যারা চাকরির জন্য সংগ্রাম করছিল। == পুনর্গঠনের সমস্যা == [[File:Wealth, per capita, in the United States, from 9th US Census (1872).jpg|thumb|upright|১৮৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু সম্পদ। দক্ষিণ ছিল বিপর্যস্ত।]] পুনর্গঠন ছিল দাসশ্রমের পরিবর্তে মুক্ত শ্রমের ভিত্তিতে দক্ষিণকে পুনর্গঠন করার একটি প্রয়াস। উত্তরের রাজনীতিকদের জন্য প্রধান প্রশ্ন ছিল—এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রস্তাব করে, যা দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়। কোনো রাজ্যকে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হতো না যতক্ষণ না তা সংশোধনীটি অনুমোদন করত, কিন্তু মিসিসিপির মতো কিছু রাজ্য সংশোধনীটি অনুমোদন না করেও অন্তর্ভুক্ত হয়। সংশোধনীটি ১৮৬৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সংবিধানের অংশ হয়ে যায়। এই সময় বহু উত্তরাঞ্চলীয় ব্যক্তি দক্ষিণে চলে যান নতুন জীবন শুরু করতে। অনেকে কার্পেট দিয়ে তৈরি ব্রিফকেসে তাদের মালপত্র বহন করতেন, এজন্য কনফেডারেট দক্ষিণবাসীরা তাদের "কার্পেটব্যাগার" নামে ডাকত। দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গ রিপাবলিকানদের জন্যও তাদের কাছে একটি অবমাননাকর নাম ছিল—"স্ক্যালাওয়াগ"। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে *ব্ল্যাক কোডস* নামক আইন চালু হয়, যা মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মৌলিক মানবাধিকার সীমিত করে। এসব আইনের মধ্যে সাধারণ কিছু ছিল: জাত নির্ধারণে রক্তের ভিত্তি প্রযোজ্য—মানে শরীরে সামান্য পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ রক্ত থাকলেও তাকে কৃষ্ণাঙ্গ গণ্য করা হতো; মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গের অনুপস্থিতিতে একত্র হতে পারত না; গণশৌচাগারসহ অন্যান্য সুবিধা ছিল পৃথক।<ref>http://www.u-s-history.com/pages/h411.html</ref> এই সময় ছিল অত্যন্ত অস্থির। দেশজুড়ে বহু জাতিগত সহিংস দাঙ্গা শুরু হয়। দক্ষিণে উত্তরের প্রতি এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষ ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। === কু ক্লাক্স ক্লান === [[Image:Mississippi_ku_klux.jpg|thumb|upright|মিসিসিপিতে কু ক্লাক্স ক্লান]] *কু ক্লাক্স ক্লান* (Ku Klux Klan বা KKK) যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত বেশ কয়েকটি সংগঠনের নাম, যেগুলো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ইহুদিবিদ্বেষ, ক্যাথলিকবিদ্বেষ, বর্ণবাদ, সমকামবিদ্বেষ, সাম্যবাদবিরোধিতা এবং জাতীয়তাবাদ প্রচারে বিশ্বাসী ছিল। এই সংগঠনগুলো প্রায়শই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজ করত, যেমন: আগুনে ক্রুশ দাহ, লিঞ্চিং ইত্যাদি, যার লক্ষ্য ছিল আফ্রিকান-আমেরিকান এবং অন্যান্য সামাজিক ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর উপর নিপীড়ন চালানো। প্রথম কু ক্লাক্স ক্লান গঠিত হয় টেনেসির পুলাস্কিতে, ১৮৬৬ সালের মে মাসে। এক বছর পর, ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাশভিলে স্থানীয় ক্লানগুলোকে একত্র করে একটি সাধারণ সংগঠন গঠিত হয়। অধিকাংশ নেতাই ছিলেন কনফেডারেট সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং প্রথম *গ্র্যান্ড উইজার্ড* ছিলেন নাথান ফরেস্ট, যিনি গৃহযুদ্ধে একজন বিশিষ্ট জেনারেল ছিলেন। পরবর্তী দুই বছরে, মুখোশ পরা ক্লান সদস্যরা, সাদা টুপি ও চাদরে আবৃত হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এবং সহানুভূতিশীল শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন ও হত্যা করে। তারা অভিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করে, যাদের তারা র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানদের নির্বাচনের জন্য দায়ী মনে করত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে কু ক্লাক্স ক্লান উত্তর ক্যারোলিনা, টেনেসি এবং জর্জিয়ায় শ্বেতাঙ্গ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংগঠনের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৮৬৬ সালে। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কনফেডারেট সেনার সাবেক সৈনিকেরা। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুনর্গঠনের বিরোধিতা। তারা "কার্পেটব্যাগার" ও "স্ক্যালাওয়াগ" দমন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের দমন করার চেষ্টা করে। ক্লান দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। দক্ষিণের অভিজাত শ্রেণি ক্লানকে ত্যাগ করে, কারণ তারা এটি ফেডারেল সেনার দক্ষিণে থাকার একটি অজুহাত হিসেবে দেখত। সংগঠনটি ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৮৭১ সালের *সিভিল রাইটস অ্যাক্ট* (যা *কু ক্লাক্স ক্লান অ্যাক্ট* নামেও পরিচিত) এর আওতায় প্রেসিডেন্ট উলিসিস এস. গ্রান্টের দৃঢ় পদক্ষেপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ১৮৬৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস *ফ্রিডম্যান ব্যুরো* প্রতিষ্ঠা করে। এর লক্ষ্য ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের স্বার্থ রক্ষা করা। এর মধ্যে ছিল নতুন চাকরি খুঁজতে সাহায্য করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। পরবর্তী এক বছরে ব্যুরো প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ৪,০০০ স্কুল, ১০০ হাসপাতাল স্থাপন করে এবং দাসদের জন্য আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা পুনর্গঠনের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় এবং ১৮৬৭ সালের পর আরও সংগঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্লান পুনর্গঠন ব্যর্থ করতে এবং মুক্তি পাওয়া দাসদের দমন করতেই কাজ করত। কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাস এতটাই প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, রাতের বেলা হেনস্তা, চাবুক মারা, মারধর, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল সাধারণ ঘটনা। ক্লানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক—যদিও তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর অত্যাচার করত যারা তাদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়াত। সক্রিয় রিপাবলিকানরা ছিল অন্ধকার রাতের আইনবহির্ভূত আক্রমণের মূল লক্ষ্য। যখন দক্ষিণ ক্যারোলিনার একজন স্ক্যালাওয়াগের অধীনে কাজ করা মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা ভোট দিতে শুরু করে, তখন সন্ত্রাসীরা সেই বাগানে গিয়ে, এক ভুক্তভোগীর ভাষায়, “যে যত কৃষ্ণাঙ্গকে পেয়েছে, সবাইকে চাবুক মেরেছে।” == লিংকন ও পুনর্গঠন == [[File:Waud - 1867 - The First Vote.jpg|thumb|upright|আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রথমবারের মতো ভোটদান। জিম ক্রো আইন পরে আফ্রিকান-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার পুনরায় কেড়ে নিতে প্রণীত হয়।]] লিংকন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে কখনোই ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি, কারণ সংবিধান অনুযায়ী তারা তা করতে পারে না। তিনি আশা করেছিলেন যে বিচ্ছিন্ন হওয়া ১১টি অঙ্গরাজ্য কিছু রাজনৈতিক আনুগত্যের শর্ত পূরণ করে পুনরায় "পুনঃঅঙ্গীভূত" হতে পারে। লিংকন পুনঃঅঙ্গীভুক্তি নিয়ে অনেক আগেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। ১৮৬৩ সালে তাঁর জারি করা ক্ষমার ঘোষণা ও পুনর্গঠন প্রস্তাবে তিনি একটি সহজ প্রক্রিয়া স্থাপন করেন, যাতে ইউনিয়নপন্থীরা রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসতে পারে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নয়। এই পরিকল্পনায় সকল দক্ষিণী (সে সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের বাদে) যারা ভবিষ্যতে ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেবে, তাদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান করা হতো। ১৮৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানকারী জনগণের ১০ শতাংশ এই শপথ গ্রহণ করলেই কোনো অঙ্গরাজ্যকে বৈধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যেত এবং দাসমুক্তির নীতিকে মেনে একটি সরকার গঠন করা যেত। লিংকনের এই রাষ্ট্রপতি পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা দাবি করেছিল এটি খুবই কোমল। তারা ১৮৬৪ সালে ওয়েড-ডেভিস বিল পাশ করে, যা অনেক কঠোর শর্ত আরোপ করে। এই বিলে ৫০ শতাংশ ভোটারকে আনুগত্যের শপথ নিতে বলা হয় এবং শুধুমাত্র যারা কখনো কনফেডারেসিকে সমর্থন করেননি তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন বা ফেডারেল চাকরি পেতেন। লিংকন এই বিলটি গ্রহণ না করে পকেট ভেটো করেন। ১৮৬৫ সালের মার্চে কংগ্রেস ফ্রিডম্যান ব্যুরো নামে একটি নতুন সংস্থা গঠন করে। এই সংস্থা কৃষ্ণাঙ্গ ও দরিদ্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা, চাকরি খোঁজার সহায়তা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করত। এটি ছিল সে সময়ের বৃহত্তম সরকারি সাহায্য কার্যক্রম। এটি ছিল প্রথম বড় আকারের ফেডারেল কল্যাণ কর্মসূচি। [[File:Lincoln assassination slide c1900 - Restoration.jpg|thumb|রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকাণ্ডের চিত্র। এই ভয়াবহ ঘটনায় অ্যান্ড্রু জনসন রাষ্ট্রপতি হন, যার ফলে দক্ষিণের পুনর্গঠনের ধারা আমূল পাল্টে যায়।]] ১৮৬৪ সালে লিংকনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হন টেনেসির অ্যান্ড্রু জনসন, যিনি ছিলেন একমাত্র দক্ষিণী সেনেটর যিনি ইউনিয়নের প্রতি অনুগত ছিলেন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল লিংকন নিহত হলে জনসন রাষ্ট্রপতি হন এবং কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানদের জন্য তিনি একটি প্রধান বাধা হয়ে ওঠেন। তারা দক্ষিণের সরকার ও অর্থনীতিকে পুরোপুরি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছিলেন, যা আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করত। ১৮৬৫ সালের মে মাসে জনসন নিজস্ব এক ঘোষণা জারি করেন, যা লিংকনের ঘোষণার সঙ্গে খুবই মিল ছিল। তিনি ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেওয়া প্রায় সকল কনফেডারেটকে ক্ষমা প্রদানের প্রস্তাব দেন এবং ফ্রিডম্যানদের জন্য জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত শার্মানের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। জনসন রাষ্ট্রপতি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিকল্পনার আওতায় সব প্রাক্তন কনফেডারেট অঙ্গরাজ্য পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গীভূত হয়। ১৮৬৬ সালে জনসন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল ভেটো করেন — একটি ছিল ফ্রিডম্যান ব্যুরোর সুরক্ষা জোরদার করার জন্য এবং অন্যটি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য একটি নাগরিক অধিকার বিল। পরে রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে যে মধ্যপন্থী ও র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একত্রিত হলে তারা জনসনের ভেটো অতিক্রম করতে পারবে, এবং তারা ১৮৬৬ সালে নাগরিক অধিকার আইন এবং চতুর্দশ সংশোধনী পাশ করে। এই সংশোধনী যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিকে নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে এবং প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে তাদের অধিকার রক্ষা করতে বাধ্য করে। নাগরিক অধিকার আইন দক্ষিণে প্রচলিত ব্ল্যাক কোডসমূহকে অবৈধ ঘোষণা করে। জনসনের ভেটোর পরও কংগ্রেস ১৮৬৭ সালে তিনটি পুনর্গঠন আইন পাশ করে। এতে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোকে পাঁচটি সামরিক জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং সেখানে ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। প্রতিটি জেলার সামরিক কমান্ডার নিশ্চিত করতেন যে সংশ্লিষ্ট রাজ্য চতুর্দশ সংশোধনী অনুমোদন করছে এবং বর্ণবৈষম্যহীন ভোটাধিকার প্রদান করছে। টেনেসি ১৮৬৬ সালেই সংশোধনী অনুমোদন করায় এটি সামরিক জেলার বাইরে রাখা হয়। ১৮৬৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদ অ্যান্ড্রু জনসনকে অভিশংসিত করে। এর আগে কংগ্রেস টেনিওর অফ অফিস অ্যাক্ট পাশ করেছিল (জনসনের ভেটোর পর), যেখানে বলা হয় রাষ্ট্রপতির নিয়োগে সিনেটের পরামর্শ ও সম্মতির মাধ্যমে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার জন্যও একই পরামর্শ ও সম্মতি লাগবে। জনসন এই আইনের সাংবিধানিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন (এবং ১৯২৬ সালে সুপ্রিম কোর্টও একমত হয়) এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আইনটি লঙ্ঘন করেন একটি পরীক্ষা করার জন্য। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তাঁকে অভিশংসন করে, কিন্তু সেনেট এক ভোটের ব্যবধানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। ১৮৬৮ সালের নির্বাচনে উলিসিস গ্রান্ট রিপাবলিকান প্রার্থী হন এবং অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেন। রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে, তারা যদি দ্রুত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত না করে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। তাই কংগ্রেস ১৮৬৯ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে, যা বর্ণের কারণে পুরুষ নাগরিকদের ভোটাধিকার অস্বীকার করা যাবে না বলে বলে। এটি নারীবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় আঘাত ছিল, কারণ এই প্রথমবার লিঙ্গকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রিপাবলিকানরা দাবি করে, যদি এই সংশোধনীতে বর্ণ ও লিঙ্গ উভয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকত, তবে এটি কংগ্রেসে পাশ হতো না। === কংগ্রেসে আফ্রিকান-আমেরিকানরা === [[File:Hiram Rhodes Revels - Brady-Handy-(restored).png|thumb|upright|হাইরাম রোডস রেভেলস, কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান]] এই সময়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনেক আফ্রিকান-আমেরিকান কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। পুনর্গঠন আইন অনুসারে ফেডারেল সেনাবাহিনী দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রেরিত হয় এবং সাউথ ক্যারোলাইনা ও মিসিসিপিতে আফ্রিকান-আমেরিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং লুইজিয়ানা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও আলাবামায় শ্বেতাঙ্গদের প্রায় সমান সংখ্যায় ছিল, ফলে এসব রাজ্য থেকে কৃষ্ণাঙ্গরা কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। জন উইলিস মেনার্ড ১৮৬৮ সালে লুইজিয়ানার ২য় জেলা থেকে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যালেব হান্ট নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান এবং উভয় প্রার্থীর বক্তব্য শুনে প্রতিনিধি পরিষদ কাউকেই আসন দেয়নি। হাইরাম রেভেলস মিসিসিপির সিনেট দ্বারা ৮১-১৫ ভোটে নির্বাচিত হন, গৃহযুদ্ধ চলাকালে পদত্যাগকারী সেনেটর আলবার্ট জি. ব্রাউনের শূন্য আসন পূরণে। তিনি ১৮৭০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৭১ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। জোসেফ রেইনি ১৮৭০ সালের নির্বাচনে সাউথ ক্যারোলাইনার ১ম জেলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে উইলিয়াম এল. ডসনের আগে পর্যন্ত কংগ্রেসে দীর্ঘতম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য ছিলেন। ব্লাঞ্চ ব্রুস ১৮৭১ সালে মিসিসিপির স্টেট সিনেট দ্বারা পূর্ণ মেয়াদে মার্কিন সিনেটে নির্বাচিত হন। ব্রুস ছিলেন একমাত্র প্রাক্তন দাস, যিনি মার্কিন সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন। == আলাস্কা ক্রয় == [[File:Alaska purchase.jpg|thumb|১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ আলাস্কা চুক্তি স্বাক্ষরের একটি চিত্রকর্ম।]] ১৭৭০-এর দশক থেকে রুশ সাম্রাজ্য আলাস্কা উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে।<ref>{{cite web |title=Russians in Alaska and U.S. Purchase Federal Indian Law for Alaska Tribes |url=https://www.uaf.edu/tribal/112/unit_1/russiansinalaskaanduspurchase.php |website=www.uaf.edu |accessdate=18 September 2020}}</ref> ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ মার্কিন সরকার রুশ সাম্রাজ্য থেকে আলাস্কা ৭.২ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।<ref name="rochesteralaska">{{cite web |title=The myth—and memorabilia—of Seward's Folly |url=https://www.rochester.edu/newscenter/sewards-folly-308482/ |website=NewsCenter |accessdate=18 September 2020 |date=29 March 2018}}</ref> সে সময় এই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে উপহাস করা হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন সেখানে সোনা ও তেলের সন্ধান মেলে, তখন এটি একটি লাভজনক চুক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়।<ref name="rochesteralaska"/> সেই অঞ্চলে থাকা অল্পসংখ্যক রুশ বসবাসকারীকে তিন বছরের মধ্যে রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার অথবা থেকে গিয়ে আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।<ref name="rochesteralaska"/> == ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা == [[File:Panic of 1873 bank run.jpg|thumb|upright|১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হুড়োহুড়ি।]] ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা ছিল গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত প্রথম মন্দা। এই মন্দা আন্তর্জাতিকভাবে রূপার চাহিদা হ্রাস পাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়া যুদ্ধের পর জার্মানি রুপা মানদণ্ড ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৭৩ সালের কয়েনেজ আইন পাশ করে, যা আমাদের মুদ্রা ব্যবস্থাকে সোনা ও রুপার পরিবর্তে কেবলমাত্র সোনার ওপর নির্ভর করে তৈরি করে। এই আইন রুপার মান তৎক্ষণাৎ কমিয়ে দেয় এবং পশ্চিমাঞ্চলের খনিশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৮৭৩ সালের মন্দার আরেকটি কারণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেলপথ কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বিনিয়োগ, যা দ্রুত লাভ এনে দিতে পারেনি। জে কুক অ্যান্ড কোম্পানি নামক একটি মার্কিন ব্যাংক ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ সালে দেউলিয়া ঘোষণা করে। ব্যাংকটি অতিরিক্ত রেলপথ ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ থেকে দশ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেই মন্দার সময়ে ৩৬৪টি রেলপথ কোম্পানির মধ্যে ৮৯টি ব্যর্থ হয়। মন্দার সময়ে রিয়েল এস্টেটের মূল্য, মজুরি এবং কর্পোরেট মুনাফা হ্রাস পায়। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এই মন্দায় বন্ধ হয়ে যায়। এই মন্দা প্রেসিডেন্ট গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। == ১৮৭৭ সালের মহা রেল ধর্মঘট == [[File:Harpers 8 11 1877 Blockade of Engines at Martinsburg W VA.jpg|thumb|ধর্মঘট চলাকালে ইঞ্জিনগুলোর পথ অবরোধ।]] ১৮৭৭ সালের ১৪ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মার্টিন্সবার্গে এই ধর্মঘট শুরু হয়। এই ধর্মঘটের কারণ ছিল বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহিও রেলরোড কোম্পানির বেতন কর্তন। শ্রমিকরা রেলপথ চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। ধর্মঘট দমন করতে রাজ্য মিলিশিয়া পাঠানো হলেও তারা ধর্মঘটকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। গভর্নর হেনরি ম্যাথিউস ধর্মঘট দমন ও রেল চলাচল পুনরায় শুরু করতে ফেডারেল সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানান। ধর্মঘটটি কুম্বারল্যান্ড, মেরিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সেনারা ধর্মঘটকারীদের একটি জনতার ওপর গুলি চালায় এবং দশজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। এই ধর্মঘট ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর, পিটসবার্গ এবং এমনকি সেন্ট লুইস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মঘটে কোটি কোটি ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয় এবং বহু প্রাণহানি ঘটে। এই মহা ধর্মঘট ৪৫ দিন স্থায়ী হয়, শেষ পর্যন্ত শহর থেকে শহরে ফেডারেল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এটি দমন করা হয়। == রিপাবলিকানদের ক্ষমতাচ্যুতি == গ্রান্টের শাসনামলেই রিপাবলিকান পার্টির পতনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ফেডারেল পদ ও মন্ত্রিসভায় বিপুল সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেকেই পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যরা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ক্লান্ত হয়ে দক্ষিণের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্মিলনের প্রস্তাব দেন। এরা নিজেদের 'লিবারেল রিপাবলিকান' বলে পরিচয় দেন এবং ১৮৭২ সালে গ্রান্টের বিরুদ্ধে হোরেস গ্রিলিকে মনোনয়ন দেন। ডেমোক্র্যাটরাও গ্রিলিকে সমর্থন করে। তবে ব্যাপক সমর্থন সত্ত্বেও, গ্রান্ট ১৮৭২ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হন। নির্বাচনের মৌসুমে, লিবারেল রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে 'অ্যামনেস্টি অ্যাক্ট' (ক্ষমাপ্রদান আইন) পাশ করাতে ব্যস্ত ছিল এবং ১৮৭২ সালের মে মাসে এই আইন পাশ হয়। এই আইনটি অধিকাংশ সাবেক কনফেডারেট নাগরিকদের ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ উন্মুক্ত করে। এর ফলে দক্ষিণে ডেমোক্রেটদের রাজনৈতিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে। শীঘ্রই ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনার সরকারগুলো ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকানদের সংখ্যা ছিল বেশি, সেসব স্থানে কু ক্লুক্স ক্লান (গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠী) রিপাবলিকানদের আতঙ্কিত করে তোলে এবং তাদেরকে ডেমোক্রেটদের ভোট দিতে অথবা ভোট না দিতে বাধ্য করে। ১৮৭৬ সালের মধ্যে দক্ষিণে রিপাবলিকানরা কেবল তিনটি রাজ্যে—ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা এবং সাউথ ক্যারোলিনায়—ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়, যার সবকটিতেই তখনো ইউনিয়ন সেনা মোতায়েন ছিল। গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদকালে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেলে রিপাবলিকানদের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। জনসাধারণের কাছে সবচেয়ে আঘাতকর ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধসচিবকে জড়িত করে কেলেঙ্কারির ঘটনা। একই বছরে দেশ একটি মহামন্দার কবলে পড়লে উত্তরাঞ্চলের জনমত রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে চলে যায়। ১৮৭৪ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানরা উভয় কক্ষে ব্যাপক আসন হারায় এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর পূর্ববর্তী সময়ের পর এই প্রথম ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের একটি কক্ষে (প্রতিনিধি পরিষদ) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ফলে কংগ্রেস আর পুনর্গঠনের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকল না। [[Image:A certificate for the electoral vote for Rutherford B. Hayes and William A. Wheeler for the State of Louisiana dated 1876 part 6.jpg|thumb|upright|১৮৭৬ সালের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রাদারফোর্ড বি. হেইস ও উইলিয়াম এ. হুইলারের নির্বাচনী ভোটের প্রত্যয়নপত্র]] ১৮৭৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা নিউ ইয়র্কের গভর্নর এস. জে. টিলডেনকে প্রার্থী করে এবং রিপাবলিকানরা ওহাইওর গভর্নর রাদারফোর্ড বি. হেইসকে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনের দিন দেখা যায়, টিলডেন ২৫০,০০০-এরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু সাউথ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা এবং লুইজিয়ানার যথাক্রমে সাত, চার ও আটটি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় (এই তিন রাজ্যে তখনো উত্তরীয় সেনা মোতায়েন ছিল)। এছাড়াও, ওরেগনের তিনটি ইলেকটোরাল ভোটের একটি নিয়েও বিরোধ দেখা দেয়। যদি হেইস সব ২০টি ভোট পেতেন, তাহলে তিনি নির্বাচনে জয়ী হতেন। কংগ্রেস একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে, যাতে সাতজন ডেমোক্র্যাট, সাতজন রিপাবলিকান এবং একজন স্বাধীন সদস্য ছিলেন। তবে স্বাধীন সদস্য পদত্যাগ করলে তার স্থানে একজন রিপাবলিকান নিযুক্ত হন। কমিশন দলীয় বিভাজনের ভিত্তিতে ভোট দিয়ে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করে, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হুমকি দেয়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা গোপনে একত্র হয়ে একটি সমঝোতা খসড়া করেন, যা ‘১৮৭৭ সালের সমঝোতা’ নামে পরিচিত। এতে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, দক্ষিণ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয় এবং দক্ষিণে আরও সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়; এটি পুনর্গঠনের অবসান নির্দেশ করে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সমঝোতা ব্যর্থ হয়, কারণ ডেমোক্র্যাটরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং দক্ষিণে আফ্রিকান আমেরিকানদের অধিকারের সুরক্ষা দেয়নি। পুনর্গঠন-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণে ডেমোক্র্যাট ‘রিডিমার’দের উত্থান ঘটে। রিডিমাররা দক্ষিণে রিপাবলিকান শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রতিজ্ঞা করে। তারা ‘জিম ক্রো’ আইন প্রণয়ন করে, যা কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের পৃথকীকরণ করে এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সীমিত করে, যা পরবর্তী শতাব্দীর আগে বিলুপ্ত হয়নি। জিম ক্রো আইনকে চ্যালেঞ্জ করা হয় *Plessy v. Ferguson* মামলায়, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে বৈধতা দেয় এই শর্তে যে পৃথক সুবিধাসমূহ হতে হবে "পৃথক কিন্তু সমান"। == সিঞ্চিমইয়াংগো == [[File:Sujagi.jpg|thumb|১৮৭১ সালে ইউএসএস কলোরাডোতে বন্দী হওয়া সুজাগি, একটি কমান্ডিং জেনারেলের পতাকা।]] ১৮৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোরিয়ার প্রতি অভিযান, যাকে সিঞ্চিমইয়াংগো বা 'সিনমি বর্ষের পশ্চিমা গোলযোগ' বলা হয়, ছিল কোরিয়ায় প্রথম আমেরিকান সামরিক অভিযান। এটি প্রধানত কোরিয়ার গাংহওয়া দ্বীপ ও এর আশেপাশে সংঘটিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র একটি সামরিক অভিযাত্রী বাহিনী কোরিয়ায় প্রেরণ করেছিল একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলকে সহায়তা করার জন্য, যা কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, জেনারেল শেরম্যান বাণিজ্যিক জাহাজের ভাগ্য নির্ণয় এবং জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার নাবিকদের সাহায্যের জন্য একটি চুক্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী জোসিয়ান রাজবংশের সরকার ও চাপদাতা আমেরিকানদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, যা কূটনৈতিক অভিযানকে সশস্ত্র সংঘর্ষে পরিণত করে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সামান্য বিজয় লাভ করলেও, কোরিয়ারা দেশটি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানায়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যথেষ্ট ক্ষমতা বা শক্তি ছিল না, তারা তাদের কূটনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। == ১৯শ শতাব্দীর ধর্ম == === ইহুদি নতুন তরঙ্গ অভিবাসন === [[File:Welcome to the land of freedom.png|thumb|১৮৮৭ সালের ছবি যা ইউরোপীয় অভিবাসীদের নিউইয়র্ক সিটিতে আগমন দেখায়।]] ১৮২০ থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে প্রায় ২,৫০,০০০ ইহুদি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অভিবাসন ছিল কেবল ইউরোপীয় অর্থনীতির সঙ্কটের কারণে নয়, ১৮৪৮ সালের জার্মান রাজ্যের লিবারেল বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণে।<ref>Stone, Amy. ''Jewish Americans''. Milwaukee, Wisconsin: World Almanac Library, 2007. Pp. 6-9.</ref> রেলপথ এবং বৃহৎ স্টিমার জাহাজগুলো ১৮০০ এবং ১৯০০ সালের শেষের দিকে আমেরিকায় অভিবাসনকে সহজতর করে। তবু যাত্রাটি ছিল অস্বচ্ছন্দকর, অসুস্থকর ও বিপজ্জনক। ধনী পরিবার যারা শীর্ষ বর্গের কামরায় ছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত কেবিন ছিল, কিন্তু অধিকাংশ অভিবাসী স্টিয়ারেজ শ্রেণীতে যাতায়াত করতেন: তিনশো মানুষ, পুরুষ, নারী ও শিশু, ঘনিষ্ঠভাবে গাদাগাদি করে, দ্বৈত বা ত্রৈত বেডে ঘুমাতেন। বেডগুলো প্রায় ছয় ফুট লম্বা এবং দুই ফুট চওড়া ছিল, বেডের মাঝে মাত্র দুই-আধা ফুটের ব্যবধান। তাদের সামান্য মালপত্র বেডের ওপর রাখা হতো। পানীয় জল ছিল খুবই কম বা ছিল না, দুর্গন্ধ অসহনীয় ছিল, এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না। এক প্রত্যক্ষদর্শী সোফিয়া ক্রেইটসবের্গ বলেছিলেন, "আপনি যখন মাথা খোঁচাতেন [...] তখন হাতেই লাউস ধরতো।"<ref>Stone, p.15</ref> এই ঘনিষ্ঠ পরিবেশ, অভাব-অনটন ও দীর্ঘ যাত্রার চাপের কারণে রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটত। ইহুদিরা অশুদ্ধ (কোষের নিয়মে নিষিদ্ধ) মাংস ও স্যুপ পরিবেশন পেত, যা অনেকেই খেতেন না। তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা শুকনো ফল, শক্ত রুটি, বা বেয়ানো পনির খানিক খেতেন।<ref>Stone.</ref> অন্য প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কয়েকটি বন্দর ছিল। ১৮৫৫ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত এটি মূলত ক্যাসেল গার্ডেন ছিল, ম্যানহাটনের প্রান্তে, যা পরবর্তীতে নিউইয়র্ক সিটি হিসেবে পরিচিত। ১৮৯০ সাল থেকে ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী এলিস দ্বীপে প্রবেশ করত।<ref>http://genealogy./od/ports/p/castle_garden.htm Retrieved on March 15, 2015.</ref> এই জায়গাগুলোতে মানুষকে যথাযথভাবে জাহাজ, উৎপত্তি দেশ, পূর্ব কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হতো।<ref>http://www.castlegarden.org/manifests.php Retrieved on March 15, 2015.</ref> === ক্যাথলিক আমেরিকা === [[File:GibbonsPhotoStanding.jpg|thumb|upright|জেমস গিবন্স, ১৮৬০ থেকে ১৯০০ সালের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী ক্যাথলিক নেতা।]] [[File:The American River Ganges (Thomas Nast cartoon).jpg|thumb|১৮৭৫ সালের একটি রাজনৈতিক কার্টুন, যা ক্যাথলিক চার্চকে আমেরিকান পাবলিক শিক্ষার শত্রু হিসেবে দেখায়। থমাস নাস্ট ভয় পেতেন যে সরকারী তহবিল পাবলিক শিক্ষার পরিবর্তে ক্যাথলিক শিক্ষাকে সমর্থন করবে।]] ==== ক্যাথলিক অভিবাসন ==== আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্য (বিশেষ করে পোল্যান্ড) থেকে ব্যাপক অভিবাসনের ফলে ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৪০ থেকে ১৮৫১ সালের মধ্যে আয়ারল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ ও অত্যাচার চলছিল। অন্যান্য অভিবাসন জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে হয়েছিল। ১৮৫০ সালের মধ্যে ক্যাথলিক ধর্ম যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সেক্টর হয়ে ওঠে; ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পায়, প্রধানত অভিবাসনের কারণে। এই ব্যাপক ক্যাথলিক অভিবাসনের ফলে ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ==== নির্যাতন ==== আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টরা ক্যাথলিকদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকত। গৃহযুদ্ধের আগে আমেরিকায় অ্যান্টি-ক্যাথলিক পূর্বাগ্রহ "নোথিংস" দল এবং আমেরিকার অরেঞ্জ ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে প্রকাশ পেত। যুদ্ধের পর আমেরিকান প্রোটেকটিভ অ্যাসোসিয়েশন ও কু ক্লাক্স ক্লান ক্যাথলিকদের নিয়মিতভাবে নির্যাতন ও বৈষম্য করত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ফিলাডেলফিয়ার নেটিভিস্ট দাঙ্গা, "ব্লাডি মান্ডে", এবং নিউইয়র্ক সিটির অরেঞ্জ দাঙ্গা ১৮৭১ ও ১৮৭২ সালে।<ref>Michael Gordon, The Orange riots: Irish political violence in New York City, 1870 and 1871 (1993</ref> ==== নেটিভিজম ==== কঠোর অ্যান্টি-ক্যাথলিক কার্যক্রম নেটিভিজমের অনুভূতিকে প্রকাশ করত, যা সমস্ত "দেশজ জন্মানো আমেরিকান পুরুষদের" বিদেশিদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে উৎসাহিত করত। (অর্থাৎ, এখানে আসল দেশীয় আমেরিকানদের নয়, বরং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত প্রোটেস্ট্যান্টদের কথা বলা হচ্ছে যারা এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন।) প্রথম নেটিভিস্ট প্রকাশনা ছিল ''The Protestant''; এর প্রথম সংখ্যা ১৮৩০ সালের ২ জানুয়ারি বিক্রি হয়। সম্পাদক ছিলেন জর্জ বর্ন, যিনি লিখেছিলেন, "পত্রিকার লক্ষ্য ক্যাথলিক বিশ্বাসের সমালোচনায় কেন্দ্রীভূত।"<ref>Baker, Sean. ''The American Religious Experience, American Nativism, 1830-1845.''</ref> অ্যান্টি-ক্যাথলিক বক্তব্য মাঝে মাঝে সহিংসতায় পরিণত হতো; ১৮৩৪ সালের আগস্ট ১০ তারিখে ৪০-৫০ জন মানুষ ইউর্সুলাইন কনভেন্ট স্কুলের বাইরে জমায়েত হয়ে সেটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।<ref>Baker, Sean</ref> ১৮৩৪ সালে এফ.বি. মরস, যিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অধ্যাপক ছিলেন এবং নেটিভিস্ট নেতা ছিলেন, "The Foreign Conspiracies Against the Liberties of the United States" গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষার কথা বলেন। প্রোটেস্ট্যান্টদের ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে আশঙ্কা ও ভয় মূলত ক্যাথলিক ধর্মের রাজতান্ত্রিক প্রবণতা নিয়ে ছিল। এই সময়ে শহরগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল অভিবাসীদের ব্যাপক আগমনের কারণে যারা একত্রিত হয়ে একই এলাকায় বসবাস করত। নেটিভিস্টরা এটিকে "গোষ্ঠীবদ্ধতা" হিসেবে দেখত এবং "আমেরিকানীকরণ" এড়ানোর বা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বলে মনে করত। মরস এবং তাঁর সমকালীন লিম্যান বীচারদের সফলতার সঙ্গে নেটিভিস্ট আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে জনতা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য না করে কাল্পনিক কাহিনীকেও সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৮৩৬ সালে মারিয়া মঙ্ক "Awful Disclosures of the Hotel Dieu Nunnery of Montreal" নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এতে তিনি ক্যাথলিক ধর্মের সঙ্গে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন পাদরিদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক এবং নন ও শিশুদের হত্যা ঘটেছিল; বইয়ের শেষ অংশে তিনি তার গর্ভে থাকা শিশুকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গেছেন। মঙ্কের মা এই লেখাকে অস্বীকার করেন এবং বলেন, মারিয়া কখনো কোন কনভেন্টে ছিলেন না, এবং মারিয়ার শৈশবে যে মস্তিষ্ক আঘাত হয়েছিল তা তার গল্পের কারণ হতে পারে। উত্তর-মধ্য আমেরিকা ও দেশের উত্তরের অংশে ক্যাথলিকদের স্বাধীন চিন্তার অক্ষম বলে মনে করা হত এবং তাদের "অ্যান্টি-আমেরিকান প্যাপিস্ট" বলা হতো, কারণ তারা রোমের পোপের আদেশ পালন করতেন বলে ধারণা ছিল। মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে মেক্সিকান ক্যাথলিকদের "প্যাপিস্ট কুসংস্কার" কারণে মিডিয়ায় হাস্যকর বা বোকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমেরিকার ক্যাথলিকদের সম্পর্কে সাধারণ মনোভাবের কারণেই প্রায় ১০০ জন আমেরিকান ক্যাথলিক, যাদের বেশিরভাগই সদ্য অভিবাসিত আইরিশ, মেক্সিকানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন; তাদের "সেন্ট প্যাট্রিকস ব্যাটালিয়ন" == শিক্ষা == [[File:General Oliver Otis Howard House - Howard University.jpg|thumb|জেনারেল অলিভার ওটিস হাওয়ার্ড হাউস, ১৮৬৭ সালে নির্মিত এবং হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও বিদ্যমান সবচেয়ে প্রাচীন ভবন।]] সারাদেশে প্রাক্তন দাসেরা শিক্ষা অর্জনের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। সব বয়সের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বইয়ে কী লেখা আছে তা জানার প্রবল আগ্রহ ছিল, যেগুলো একসময় শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্যই অনুমোদিত ছিল। স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা নিজেদের স্কুল শুরু করে এবং দিনে ও রাতে ক্লাস গুলো উপচে পড়ত। তারা গুঁড়ি গুঁড়ি বসত গাছের গুঁড়ির আসনে বা মাটির মেঝেতে। পুরানো পঞ্জিকা বা বাতিল হয়ে যাওয়া অভিধানে তারা অক্ষর চর্চা করত। দাসত্বের অজ্ঞতা থেকে মুক্তির প্রবল ইচ্ছার কারণে, দারিদ্র্য উপেক্ষা করেও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মাসে $১ বা $১.৫০ করে টিউশন ফি দিত।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গরা এবং তাদের শ্বেতাঙ্গ মিত্ররাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল, যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষক, পাদ্রি ও পেশাজীবী নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমেরিকান মিশনারি অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ফিস্ক এবং আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাতটি কলেজ ১৮৬৬ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রিডম্যান ব্যুরো ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। মেথডিস্ট, ব্যাপটিস্ট ও কনগ্রেগেশনালিস্টদের মতো উত্তরাঞ্চলীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও ডজনখানেক ধর্মতাত্ত্বিক ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজকে সমর্থন করে।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাথমিক শিক্ষা মূলত মিশনারিদের মাধ্যমে আসত, যাদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন কৃষ্ণাঙ্গদের শিক্ষার হার খুবই কম ছিল, যতক্ষণ না আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে মুক্তিপত্র ঘোষণা করেন। ১৮৬৭ সালে শিক্ষা বিভাগ গঠিত হয়, যাতে আরও কার্যকরী বিদ্যালয় ব্যবস্থা চালু করা যায়। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের জন্য “লিবারেল আর্টস ও বিজ্ঞানে” শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৯ সালে বোস্টনে প্রথম পাবলিক স্কুল ডে পালিত হয়। == প্রযুক্তি == [[File:Earlyoilfield.jpg|thumb|পেনসিলভানিয়ার একটি তেলক্ষেত্র।]] গৃহযুদ্ধের ঠিক আগে পেনসিলভানিয়ার টাইটাসভিল ও আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয় এবং যুদ্ধের পরে এটি ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে তেল শুধুমাত্র ঔষধি কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি শিল্পক্ষেত্রে এবং তিমির তেলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বিপজ্জনক ও ব্যয়বহুল তিমি শিকার শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু শহর রাতের আলো জ্বালানোর জন্য কয়লা গ্যাস ব্যবহার করলেও অন্য শহরগুলো তেল বাতি ব্যবহার শুরু করে এবং বড় বড় শহরগুলো রাতের আলোতে আলোকিত হয়। পেট্রোলিয়াম, বাতি তেল (বড় ইঞ্জিন বাতির জন্য) এবং যন্ত্র তেল রেলপথের কার্যকারিতা বাড়ায়। [[File:East and West Shaking hands at the laying of last rail Union Pacific Railroad - Restoration.jpg|thumb|প্রথম ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রেলরোড, ইউটাহ, ১৮৬৯]] দূরত্ব অতিক্রম করে তথ্য পরিবহন করা যেত টেলিগ্রাফের মাধ্যমে। ১৮৭০ ও ১৮৮০ দশকে আবিষ্কর্তারা মানুষের কণ্ঠস্বর পরিবহন করার প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এবং এলিশা গ্রে। ১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যন্ত্র ব্যবহার করে একটি স্টিলের রিডের শব্দ প্রেরণ করেন। ১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলের এক সহযোগী তাঁর পেটেন্ট ওয়াশিংটন ডিসির পেটেন্ট অফিসে জমা দেন, ঠিক একই দিনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এলিশা গ্রে ও পেটেন্ট দাখিল করেন। তিন সপ্তাহ পর, ৭ মার্চ, বেলের পেটেন্ট জয়ী হয়ে অনুমোদিত হয়। == যুদ্ধের পরে আদিবাসীরা == গৃহযুদ্ধ চলাকালীন আদিবাসীদের সাথে যে অবিচার হয়েছিল তা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দূর হয়নি। মার্কিন জাতীয় সরকার স্পষ্ট করেছিল যে এই মানুষগুলো যদিও এই মহাদেশের স্থানীয় অধিবাসী, তবে তারা দেশের নাগরিক হবে না। আদিবাসীদের পশ্চিমের আর্থসীমার বাইরে সংরক্ষিত জমিতে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়। তাদের চলাচল সরকারি এজেন্টরা নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি করত। শিকার করতে, মাছ ধরতে বা পাশের সংরক্ষিত জমিতে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত জমির বাইরে যাওয়া ভারতীয় বিষয়ক দফতর কর্তৃক নিষেধ ছিল। পরবর্তীতে, আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই দফতর একটি পাস ব্যবস্থা চালু করে। এই ব্যবস্থায় আদিবাসীদের সংরক্ষিত জমির বাইরে যেতে পাস নিতে হতো এজেন্টদের কাছ থেকে। সাদা বসবাসকারীদেরও ট্রেনে আদিবাসীদের চলাচলে আপত্তি ছিল। তবে, নেভাডার সেন্ট্রাল প্যাসিফিক রেলরোড আদিবাসীদের ট্রেনের ওপর চড়ে যাত্রা করার অনুমতি দেয় বিনিময়ে তাদের রেললাইন সংরক্ষিত জমির মধ্য দিয়ে চলার সুযোগ পায়। অনেক ভারতীয় এজেন্ট এই বিনামূল্যের যাত্রা ব্যবস্থা পছন্দ করতেন না এবং এটিকে বন্ধ করার জন্য দফতরে চিঠি লেখা শুরু করেন। একজন এজেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, "এই সীমাহীন স্বাধীনতা এবং বারবার অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আদিবাসীদের জন্য অতিরঞ্জিত করা যাবে না।" ১৪তম সংশোধনী এর মাধ্যমে নাগরিক অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে আদিবাসীদের জন্য তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলা হয়। ১৮৬৬ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্টে উল্লেখ আছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সমস্ত ব্যক্তি, যারা কোনো বিদেশি ক্ষমতার অন্তর্গত নয়, এবং কর প্রদানে অব্যাহত ভারতীয়রা ব্যতীত, তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে ঘোষণা করা হলো।” === লিটল বিঘর্নের যুদ্ধ === [[File:Little Big Horn.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|চিয়েনে একজন শিল্পীর আঁকা লিটল বিঘর্ন যুদ্ধের চিত্র।]] ১৮৭৬ সালে, কয়েকটি কম গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষের পর, কর্নেল জর্জ এ. কাস্টার এবং তার ছোট ক্যাভ্যালারি দল লিটল বিঘর্ন নদীর কাছে সিউক্স ও তাদের কিছু মিত্রের সাথে মুখোমুখি হন। বড় ভারতীয় বাহিনীকে সংরক্ষিত জমিতে ফিরিয়ে পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনী তিনটি ফৌজ পাঠায় আক্রমণের জন্য। একটি দলের মধ্যে ছিল লেফটেন্যান্ট কাস্টার ও সেভেন্থ ক্যাভ্যালারি। তারা সিউক্স গ্রামের সন্ধান পায়, যা প্রায় পনেরো মাইল দূরে রোজবাড নদীর পাশে ছিল। কাস্টার আরও একটি প্রায় চল্লিশ সদস্যের দলও দেখতে পান। তিনি আদেশ অগ্রাহ্য করে আগ্রাসী হয়ে উঠেন, কারণ তিনি মনে করতেন তারা মূল দলকে সতর্ক করে দেবে। তিনি বুঝতে পারেননি যে সংখ্যায় তারা তাকে তিন গুণে বেশি। কাস্টার তার বাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করেন। তিনি ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক বেন্টিনকে আদেশ দেন যাতে তারা লিটল বিঘর্ন নদীর উপরের উপত্যকায় ভারতীয়দের পালানোর পথ আটকায়। মেজর মার্কাস রেনো তার গ্রুপকে তাড়া করার এবং তারপর নদী পার হয়ে ভারতীয় গ্রাম আক্রমণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যেখানে তার অধীনে থাকা বাকি সৈন্যরা ছিল। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ থেকে ভারতীয় শিবির আঘাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না যে তাকে কঠোর ভৌগলিক বাধা অতিক্রম করতে হবে। যখন ভারতীয়রা আক্রমণ করতে নেমে আসে, কাস্টার তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন ঘোড়াগুলোকে গুলি করতে এবং তাদের লাশ সামনে গড়িয়ে দেয়াল বানাতে। কিন্তু এটি গুলির বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করতে পারেনি। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কাস্টার ও তার সকল সৈন্য নিহত হন, যা আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক বিপর্যয়ের মধ্যে একটি। একদিনের অতিরিক্ত লড়াইয়ের পর রেনো ও বেন্টিনের একত্রিত বাহিনী ভারতীয়রা যুদ্ধ থামানোর পর পালিয়ে যায়। তারা জানত যে আরও দুইটি সৈন্যদল তাদের দিকে আসছে, তাই দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। কাস্টারের এই শেষ যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা তার গৃহযুদ্ধে অর্জিত যেকোনো সাফল্যকে ছাপিয়ে যায়। কাস্টার ২৫ জুন, ১৮৭৬ সালে লিটল বিঘর্ন যুদ্ধে পরাজিত হন ও নিহত হন, যা "কাস্টারের শেষ প্রতিরোধ" নামে পরিচিত। == ঐ সময়কার নারীর ইতিহাস == === ভিক্টোরিয়া উডহাল === [[File:Victoria Claflin Woodhull by Mathew Brady - Oval Portrait.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ভিক্টোরিয়া উডহাল]] ১৮৭২ সালে ভিক্টোরিয়া উডহাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন। তিনি মে ১০ তারিখে ইকুয়াল রাইটস পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও এটি অনস্বীকার্য যে তিনি প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী, তার প্রার্থিতার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল; কারণ তার নাম আসলে ভোটের তালিকায় ছিল না এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে ৩৫ বছরের নিচে থাকা উচিত নয়। উডহাল কোনো ইলেক্টোরাল ভোট পাননি, তবে প্রমাণ আছে যে তিনি কিছু জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন যা গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন গঠিত হয় ২২ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ সালে। নিউ ইয়র্কের ফ্রেডোনিয়াকে এই গোষ্ঠীর জন্মস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। টেম্পারেন্স আন্দোলন ছিল একটি সামাজিক আন্দোলন যা মদ্যপানের পরিমাণ কমানোর জন্য কাজ করেছিল। এই আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং নারীরা বার ও ওষুধের দোকানে গিয়ে গান গেয়ে এবং প্রার্থনা করত। ১৮৭৪ সালে ক্লিভল্যান্ড, ওহায়োতে ন্যাশনাল উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীরা অ্যালকোহল সেবনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে সেলুনে গিয়ে প্রার্থনা করত। অনেক সময় তাদের প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত এবং বারকর্মীদের গালিগালাজ সহ্য করতে হত। এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা আইন প্রণয়নে সহায়ক হয়। ==সূত্রসমূহ== {{reflist|2}} {{chapnav|গৃহযুদ্ধ|আবিষ্কারের যুগ এবং গিল্ডেড যুগ}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} 5jk7o1m4a895j6a4oaa40mq8sg44ay4 84873 84872 2025-06-19T00:09:15Z Mehedi Abedin 7113 84873 wikitext text/x-wiki == পুনর্গঠনের সূচনা == [[File:Atlanta roundhouse ruin3.jpg|thumb|১৮৬৬ সালে জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি রেল ইয়ার্ড। গৃহযুদ্ধের পর দক্ষিণাঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল।]] ২ মার্চ, ১৮৬৭ তারিখে কংগ্রেস প্রথম পুনর্গঠন আইন পাস করে। দক্ষিণকে পাঁচটি সামরিক জেলায় ভাগ করা হয়, প্রতিটিতে একজন মেজর জেনারেল নিযুক্ত হন। প্রতিটি রাজ্যে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত পুরুষ দাসদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। এই আইনে একটি সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত ছিল যা বলেছিল যে, দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো ১৪তম সংশোধনী অনুমোদন এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করলে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারবে। রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জনসন তৎক্ষণাৎ এই বিলটিতে ভেটো দেন, কিন্তু কংগ্রেস একই দিনেই এটি আবার পাস করে। অ্যান্ড্রু জনসন সামরিক জেলার প্রশাসকের পদে নিয়োগের আগে জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্টের পরামর্শ নেন। পরে তিনি নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেন: জন স্কোফিল্ড (ভার্জিনিয়া), ড্যানিয়েল সিকলস (দ্য ক্যারোলিনাস), জন পোপ (জর্জিয়া, আলাবামা এবং ফ্লোরিডা), এডওয়ার্ড অর্ড (আর্কানসাস এবং মিসিসিপি), এবং ফিলিপ শেরিডান (লুইজিয়ানা এবং টেক্সাস)। মার্কিন গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) অবস্থান কী হবে।{{fix|text=what}} বেশিরভাগ গবেষক ১৮৬৫-১৮৭৭ সালকে পুনর্গঠনের সময়সীমা হিসেবে মেনে নেন। এই যুগটি ছিল বিতর্কিত এবং মার্কিন সমাজের বিভিন্ন অংশ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। কনফেডারেট অঙ্গরাজ্যগুলোকে কীভাবে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের মর্যাদা কী হবে — এই প্রশ্নে বিভিন্ন মতবিরোধ দেখা দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্বাধীনতার অর্থ নিয়েই দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সদ্য গঠিত রিপাবলিকান পার্টির একটি প্রধান অংশ চেয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কিছুটা সুরক্ষা, আর র‍্যাডিকালরা চেয়েছিল দক্ষিণের সমাজব্যবস্থার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন। এই সময়ে কনজারভেটিভ (বিশেষত ডেমোক্র্যাটরা) বিশ্বাস করত যে, অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে এবং শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে পূর্ববর্তী সম্পর্কের ব্যবস্থাই টিকে থাকা উচিত। বেশিরভাগ আফ্রিকান-মার্কিন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং অনেকক্ষেত্রে জমির পুনর্বন্টন এবং কারখানা ব্যবস্থার ভাঙনের দাবি করেছিল। এই বিভিন্ন মতামতের মধ্য দিয়ে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত সময়কাল এক অর্থে আন্তবর্ণীয় গণতন্ত্রের একটি বিশাল পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এই সময়জুড়ে দক্ষিণে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সহিংসতাও বিরাজ করেছিল। == সংজ্ঞা == যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পুনর্গঠন বলতে সেই সময়কালকে বোঝায় যা মার্কিন গৃহযুদ্ধের পর শুরু হয়েছিল, যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কনফেডারেট স্টেটস অব আমেরিকার রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং এটি সেই প্রক্রিয়াকেও বোঝায় যার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয়। মার্কিন গৃহযুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য, উত্তরাঞ্চলের মধ্যপন্থী রিপাবলিকান এবং র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একমত হয়েছিল যে কনফেডারেসি এবং এর দাসপ্রথার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে হবে এবং যাতে এটি আর কখনও ফিরে আসতে না পারে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জন করা হবে এবং কখন তা অর্জিত হয়েছে তা নির্ধারণ করবে কে—এই বিষয়গুলো নিয়েই মূল বিতর্ক ছিল। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা বিশ্বাস করত যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনই ছিল স্লেভ পাওয়ার ধ্বংস করার জন্য অপরিহার্য এবং এটি অঙ্গরাজ্যগুলোর চিরস্থায়ী ঐক্য নিশ্চিত করার জন্য এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) নানা সমস্যার সমাধানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাসাচুসেটসের মার্কিন সিনেটর চার্লস সামনার একজন র‍্যাডিক্যাল রিপাবলিকান ছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেসকে দাসপ্রথার সাথে সাথে কনফেডারেসিও বিলুপ্ত করতে হবে, কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একসাথে শিক্ষা দিতে হবে। “মধ্যপন্থীরা” দাবি করেছিল যে, কনফেডারেটরা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করেছে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছে—এই নিশ্চয়তার মাধ্যমে তারা লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছে। আব্রাহাম লিংকন এবং অ্যান্ড্রু জনসনের মতো বেশিরভাগ মধ্যপন্থী চাইতেন শুধু কৃষ্ণাঙ্গ সাবেক সৈনিকদের ভোটাধিকার প্রদান করতে, অন্য আফ্রিকান-আমেরিকানদের নয়। দক্ষিণের রাজনৈতিক নেতারা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে, কিন্তু ১৮৬৭ সালে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যখন তাদের অঙ্গরাজ্য সরকারগুলোকে ফেডারেল সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সেগুলোর স্থলে র‍্যাডিক্যাল রিপাবলিকান সরকার গঠন করে, যেগুলোর নেতৃত্বে ছিল ফ্রিডম্যান, কার্পেটব্যাগার এবং স্ক্যালাওয়াগ। তাদের প্রধান হাতিয়ার ছিল ব্ল্যাক কোডস (১৮৬৫) যা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার সীমিত করেছিল এবং অর্থনৈতিক ও শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণে চাকরির সুযোগ প্রায় ছিলই না। ইয়াঙ্কিরা দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য যুদ্ধ জিতেছিল, কিন্তু পুনর্গঠনকাল কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের উপকারে আসেনি যারা চাকরির জন্য সংগ্রাম করছিল। == পুনর্গঠনের সমস্যা == [[File:Wealth, per capita, in the United States, from 9th US Census (1872).jpg|thumb|upright|১৮৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু সম্পদ। দক্ষিণ ছিল বিপর্যস্ত।]] পুনর্গঠন ছিল দাসশ্রমের পরিবর্তে মুক্ত শ্রমের ভিত্তিতে দক্ষিণকে পুনর্গঠন করার একটি প্রয়াস। উত্তরের রাজনীতিকদের জন্য প্রধান প্রশ্ন ছিল—এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রস্তাব করে, যা দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়। কোনো রাজ্যকে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হতো না যতক্ষণ না তা সংশোধনীটি অনুমোদন করত, কিন্তু মিসিসিপির মতো কিছু রাজ্য সংশোধনীটি অনুমোদন না করেও অন্তর্ভুক্ত হয়। সংশোধনীটি ১৮৬৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সংবিধানের অংশ হয়ে যায়। এই সময় বহু উত্তরাঞ্চলীয় ব্যক্তি দক্ষিণে চলে যান নতুন জীবন শুরু করতে। অনেকে কার্পেট দিয়ে তৈরি ব্রিফকেসে তাদের মালপত্র বহন করতেন, এজন্য কনফেডারেট দক্ষিণবাসীরা তাদের "কার্পেটব্যাগার" নামে ডাকত। দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গ রিপাবলিকানদের জন্যও তাদের কাছে একটি অবমাননাকর নাম ছিল—"স্ক্যালাওয়াগ"। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে *ব্ল্যাক কোডস* নামক আইন চালু হয়, যা মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মৌলিক মানবাধিকার সীমিত করে। এসব আইনের মধ্যে সাধারণ কিছু ছিল: জাত নির্ধারণে রক্তের ভিত্তি প্রযোজ্য—মানে শরীরে সামান্য পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ রক্ত থাকলেও তাকে কৃষ্ণাঙ্গ গণ্য করা হতো; মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গের অনুপস্থিতিতে একত্র হতে পারত না; গণশৌচাগারসহ অন্যান্য সুবিধা ছিল পৃথক।<ref>http://www.u-s-history.com/pages/h411.html</ref> এই সময় ছিল অত্যন্ত অস্থির। দেশজুড়ে বহু জাতিগত সহিংস দাঙ্গা শুরু হয়। দক্ষিণে উত্তরের প্রতি এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষ ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। === কু ক্লাক্স ক্লান === [[Image:Mississippi_ku_klux.jpg|thumb|upright|মিসিসিপিতে কু ক্লাক্স ক্লান]] *কু ক্লাক্স ক্লান* (Ku Klux Klan বা KKK) যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত বেশ কয়েকটি সংগঠনের নাম, যেগুলো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ইহুদিবিদ্বেষ, ক্যাথলিকবিদ্বেষ, বর্ণবাদ, সমকামবিদ্বেষ, সাম্যবাদবিরোধিতা এবং জাতীয়তাবাদ প্রচারে বিশ্বাসী ছিল। এই সংগঠনগুলো প্রায়শই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজ করত, যেমন: আগুনে ক্রুশ দাহ, লিঞ্চিং ইত্যাদি, যার লক্ষ্য ছিল আফ্রিকান-আমেরিকান এবং অন্যান্য সামাজিক ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর উপর নিপীড়ন চালানো। প্রথম কু ক্লাক্স ক্লান গঠিত হয় টেনেসির পুলাস্কিতে, ১৮৬৬ সালের মে মাসে। এক বছর পর, ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাশভিলে স্থানীয় ক্লানগুলোকে একত্র করে একটি সাধারণ সংগঠন গঠিত হয়। অধিকাংশ নেতাই ছিলেন কনফেডারেট সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং প্রথম *গ্র্যান্ড উইজার্ড* ছিলেন নাথান ফরেস্ট, যিনি গৃহযুদ্ধে একজন বিশিষ্ট জেনারেল ছিলেন। পরবর্তী দুই বছরে, মুখোশ পরা ক্লান সদস্যরা, সাদা টুপি ও চাদরে আবৃত হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এবং সহানুভূতিশীল শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন ও হত্যা করে। তারা অভিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করে, যাদের তারা র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানদের নির্বাচনের জন্য দায়ী মনে করত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে কু ক্লাক্স ক্লান উত্তর ক্যারোলিনা, টেনেসি এবং জর্জিয়ায় শ্বেতাঙ্গ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংগঠনের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৮৬৬ সালে। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কনফেডারেট সেনার সাবেক সৈনিকেরা। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুনর্গঠনের বিরোধিতা। তারা "কার্পেটব্যাগার" ও "স্ক্যালাওয়াগ" দমন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের দমন করার চেষ্টা করে। ক্লান দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। দক্ষিণের অভিজাত শ্রেণি ক্লানকে ত্যাগ করে, কারণ তারা এটি ফেডারেল সেনার দক্ষিণে থাকার একটি অজুহাত হিসেবে দেখত। সংগঠনটি ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৮৭১ সালের *সিভিল রাইটস অ্যাক্ট* (যা *কু ক্লাক্স ক্লান অ্যাক্ট* নামেও পরিচিত) এর আওতায় প্রেসিডেন্ট উলিসিস এস. গ্রান্টের দৃঢ় পদক্ষেপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ১৮৬৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস *ফ্রিডম্যান ব্যুরো* প্রতিষ্ঠা করে। এর লক্ষ্য ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের স্বার্থ রক্ষা করা। এর মধ্যে ছিল নতুন চাকরি খুঁজতে সাহায্য করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। পরবর্তী এক বছরে ব্যুরো প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ৪,০০০ স্কুল, ১০০ হাসপাতাল স্থাপন করে এবং দাসদের জন্য আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা পুনর্গঠনের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় এবং ১৮৬৭ সালের পর আরও সংগঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্লান পুনর্গঠন ব্যর্থ করতে এবং মুক্তি পাওয়া দাসদের দমন করতেই কাজ করত। কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাস এতটাই প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, রাতের বেলা হেনস্তা, চাবুক মারা, মারধর, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল সাধারণ ঘটনা। ক্লানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক—যদিও তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর অত্যাচার করত যারা তাদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়াত। সক্রিয় রিপাবলিকানরা ছিল অন্ধকার রাতের আইনবহির্ভূত আক্রমণের মূল লক্ষ্য। যখন দক্ষিণ ক্যারোলিনার একজন স্ক্যালাওয়াগের অধীনে কাজ করা মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা ভোট দিতে শুরু করে, তখন সন্ত্রাসীরা সেই বাগানে গিয়ে, এক ভুক্তভোগীর ভাষায়, “যে যত কৃষ্ণাঙ্গকে পেয়েছে, সবাইকে চাবুক মেরেছে।” == লিংকন ও পুনর্গঠন == [[File:Waud - 1867 - The First Vote.jpg|thumb|upright|আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রথমবারের মতো ভোটদান। জিম ক্রো আইন পরে আফ্রিকান-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার পুনরায় কেড়ে নিতে প্রণীত হয়।]] লিংকন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে কখনোই ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি, কারণ সংবিধান অনুযায়ী তারা তা করতে পারে না। তিনি আশা করেছিলেন যে বিচ্ছিন্ন হওয়া ১১টি অঙ্গরাজ্য কিছু রাজনৈতিক আনুগত্যের শর্ত পূরণ করে পুনরায় "পুনঃঅঙ্গীভূত" হতে পারে। লিংকন পুনঃঅঙ্গীভুক্তি নিয়ে অনেক আগেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। ১৮৬৩ সালে তাঁর জারি করা ক্ষমার ঘোষণা ও পুনর্গঠন প্রস্তাবে তিনি একটি সহজ প্রক্রিয়া স্থাপন করেন, যাতে ইউনিয়নপন্থীরা রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসতে পারে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নয়। এই পরিকল্পনায় সকল দক্ষিণী (সে সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের বাদে) যারা ভবিষ্যতে ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেবে, তাদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান করা হতো। ১৮৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানকারী জনগণের ১০ শতাংশ এই শপথ গ্রহণ করলেই কোনো অঙ্গরাজ্যকে বৈধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যেত এবং দাসমুক্তির নীতিকে মেনে একটি সরকার গঠন করা যেত। লিংকনের এই রাষ্ট্রপতি পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা দাবি করেছিল এটি খুবই কোমল। তারা ১৮৬৪ সালে ওয়েড-ডেভিস বিল পাশ করে, যা অনেক কঠোর শর্ত আরোপ করে। এই বিলে ৫০ শতাংশ ভোটারকে আনুগত্যের শপথ নিতে বলা হয় এবং শুধুমাত্র যারা কখনো কনফেডারেসিকে সমর্থন করেননি তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন বা ফেডারেল চাকরি পেতেন। লিংকন এই বিলটি গ্রহণ না করে পকেট ভেটো করেন। ১৮৬৫ সালের মার্চে কংগ্রেস ফ্রিডম্যান ব্যুরো নামে একটি নতুন সংস্থা গঠন করে। এই সংস্থা কৃষ্ণাঙ্গ ও দরিদ্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা, চাকরি খোঁজার সহায়তা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করত। এটি ছিল সে সময়ের বৃহত্তম সরকারি সাহায্য কার্যক্রম। এটি ছিল প্রথম বড় আকারের ফেডারেল কল্যাণ কর্মসূচি। [[File:Lincoln assassination slide c1900 - Restoration.jpg|thumb|রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকাণ্ডের চিত্র। এই ভয়াবহ ঘটনায় অ্যান্ড্রু জনসন রাষ্ট্রপতি হন, যার ফলে দক্ষিণের পুনর্গঠনের ধারা আমূল পাল্টে যায়।]] ১৮৬৪ সালে লিংকনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হন টেনেসির অ্যান্ড্রু জনসন, যিনি ছিলেন একমাত্র দক্ষিণী সেনেটর যিনি ইউনিয়নের প্রতি অনুগত ছিলেন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল লিংকন নিহত হলে জনসন রাষ্ট্রপতি হন এবং কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানদের জন্য তিনি একটি প্রধান বাধা হয়ে ওঠেন। তারা দক্ষিণের সরকার ও অর্থনীতিকে পুরোপুরি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছিলেন, যা আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করত। ১৮৬৫ সালের মে মাসে জনসন নিজস্ব এক ঘোষণা জারি করেন, যা লিংকনের ঘোষণার সঙ্গে খুবই মিল ছিল। তিনি ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেওয়া প্রায় সকল কনফেডারেটকে ক্ষমা প্রদানের প্রস্তাব দেন এবং ফ্রিডম্যানদের জন্য জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত শার্মানের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। জনসন রাষ্ট্রপতি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিকল্পনার আওতায় সব প্রাক্তন কনফেডারেট অঙ্গরাজ্য পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গীভূত হয়। ১৮৬৬ সালে জনসন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল ভেটো করেন — একটি ছিল ফ্রিডম্যান ব্যুরোর সুরক্ষা জোরদার করার জন্য এবং অন্যটি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য একটি নাগরিক অধিকার বিল। পরে রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে যে মধ্যপন্থী ও র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একত্রিত হলে তারা জনসনের ভেটো অতিক্রম করতে পারবে, এবং তারা ১৮৬৬ সালে নাগরিক অধিকার আইন এবং চতুর্দশ সংশোধনী পাশ করে। এই সংশোধনী যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিকে নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে এবং প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে তাদের অধিকার রক্ষা করতে বাধ্য করে। নাগরিক অধিকার আইন দক্ষিণে প্রচলিত ব্ল্যাক কোডসমূহকে অবৈধ ঘোষণা করে। জনসনের ভেটোর পরও কংগ্রেস ১৮৬৭ সালে তিনটি পুনর্গঠন আইন পাশ করে। এতে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোকে পাঁচটি সামরিক জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং সেখানে ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। প্রতিটি জেলার সামরিক কমান্ডার নিশ্চিত করতেন যে সংশ্লিষ্ট রাজ্য চতুর্দশ সংশোধনী অনুমোদন করছে এবং বর্ণবৈষম্যহীন ভোটাধিকার প্রদান করছে। টেনেসি ১৮৬৬ সালেই সংশোধনী অনুমোদন করায় এটি সামরিক জেলার বাইরে রাখা হয়। ১৮৬৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদ অ্যান্ড্রু জনসনকে অভিশংসিত করে। এর আগে কংগ্রেস টেনিওর অফ অফিস অ্যাক্ট পাশ করেছিল (জনসনের ভেটোর পর), যেখানে বলা হয় রাষ্ট্রপতির নিয়োগে সিনেটের পরামর্শ ও সম্মতির মাধ্যমে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার জন্যও একই পরামর্শ ও সম্মতি লাগবে। জনসন এই আইনের সাংবিধানিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন (এবং ১৯২৬ সালে সুপ্রিম কোর্টও একমত হয়) এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আইনটি লঙ্ঘন করেন একটি পরীক্ষা করার জন্য। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তাঁকে অভিশংসন করে, কিন্তু সেনেট এক ভোটের ব্যবধানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। ১৮৬৮ সালের নির্বাচনে উলিসিস গ্রান্ট রিপাবলিকান প্রার্থী হন এবং অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেন। রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে, তারা যদি দ্রুত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত না করে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। তাই কংগ্রেস ১৮৬৯ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে, যা বর্ণের কারণে পুরুষ নাগরিকদের ভোটাধিকার অস্বীকার করা যাবে না বলে বলে। এটি নারীবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় আঘাত ছিল, কারণ এই প্রথমবার লিঙ্গকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রিপাবলিকানরা দাবি করে, যদি এই সংশোধনীতে বর্ণ ও লিঙ্গ উভয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকত, তবে এটি কংগ্রেসে পাশ হতো না। === কংগ্রেসে আফ্রিকান-আমেরিকানরা === [[File:Hiram Rhodes Revels - Brady-Handy-(restored).png|thumb|upright|হাইরাম রোডস রেভেলস, কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান]] এই সময়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনেক আফ্রিকান-আমেরিকান কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। পুনর্গঠন আইন অনুসারে ফেডারেল সেনাবাহিনী দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রেরিত হয় এবং সাউথ ক্যারোলাইনা ও মিসিসিপিতে আফ্রিকান-আমেরিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং লুইজিয়ানা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও আলাবামায় শ্বেতাঙ্গদের প্রায় সমান সংখ্যায় ছিল, ফলে এসব রাজ্য থেকে কৃষ্ণাঙ্গরা কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। জন উইলিস মেনার্ড ১৮৬৮ সালে লুইজিয়ানার ২য় জেলা থেকে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যালেব হান্ট নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান এবং উভয় প্রার্থীর বক্তব্য শুনে প্রতিনিধি পরিষদ কাউকেই আসন দেয়নি। হাইরাম রেভেলস মিসিসিপির সিনেট দ্বারা ৮১-১৫ ভোটে নির্বাচিত হন, গৃহযুদ্ধ চলাকালে পদত্যাগকারী সেনেটর আলবার্ট জি. ব্রাউনের শূন্য আসন পূরণে। তিনি ১৮৭০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৭১ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। জোসেফ রেইনি ১৮৭০ সালের নির্বাচনে সাউথ ক্যারোলাইনার ১ম জেলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে উইলিয়াম এল. ডসনের আগে পর্যন্ত কংগ্রেসে দীর্ঘতম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য ছিলেন। ব্লাঞ্চ ব্রুস ১৮৭১ সালে মিসিসিপির স্টেট সিনেট দ্বারা পূর্ণ মেয়াদে মার্কিন সিনেটে নির্বাচিত হন। ব্রুস ছিলেন একমাত্র প্রাক্তন দাস, যিনি মার্কিন সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন। == আলাস্কা ক্রয় == [[File:Alaska purchase.jpg|thumb|১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ আলাস্কা চুক্তি স্বাক্ষরের একটি চিত্রকর্ম।]] ১৭৭০-এর দশক থেকে রুশ সাম্রাজ্য আলাস্কা উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে।<ref>{{cite web |title=Russians in Alaska and U.S. Purchase Federal Indian Law for Alaska Tribes |url=https://www.uaf.edu/tribal/112/unit_1/russiansinalaskaanduspurchase.php |website=www.uaf.edu |accessdate=18 September 2020}}</ref> ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ মার্কিন সরকার রুশ সাম্রাজ্য থেকে আলাস্কা ৭.২ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।<ref name="rochesteralaska">{{cite web |title=The myth—and memorabilia—of Seward's Folly |url=https://www.rochester.edu/newscenter/sewards-folly-308482/ |website=NewsCenter |accessdate=18 September 2020 |date=29 March 2018}}</ref> সে সময় এই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে উপহাস করা হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন সেখানে সোনা ও তেলের সন্ধান মেলে, তখন এটি একটি লাভজনক চুক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়।<ref name="rochesteralaska"/> সেই অঞ্চলে থাকা অল্পসংখ্যক রুশ বসবাসকারীকে তিন বছরের মধ্যে রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার অথবা থেকে গিয়ে আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।<ref name="rochesteralaska"/> == ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা == [[File:Panic of 1873 bank run.jpg|thumb|upright|১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হুড়োহুড়ি।]] ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা ছিল গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত প্রথম মন্দা। এই মন্দা আন্তর্জাতিকভাবে রূপার চাহিদা হ্রাস পাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়া যুদ্ধের পর জার্মানি রুপা মানদণ্ড ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৭৩ সালের কয়েনেজ আইন পাশ করে, যা আমাদের মুদ্রা ব্যবস্থাকে সোনা ও রুপার পরিবর্তে কেবলমাত্র সোনার ওপর নির্ভর করে তৈরি করে। এই আইন রুপার মান তৎক্ষণাৎ কমিয়ে দেয় এবং পশ্চিমাঞ্চলের খনিশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৮৭৩ সালের মন্দার আরেকটি কারণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেলপথ কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বিনিয়োগ, যা দ্রুত লাভ এনে দিতে পারেনি। জে কুক অ্যান্ড কোম্পানি নামক একটি মার্কিন ব্যাংক ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ সালে দেউলিয়া ঘোষণা করে। ব্যাংকটি অতিরিক্ত রেলপথ ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ থেকে দশ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেই মন্দার সময়ে ৩৬৪টি রেলপথ কোম্পানির মধ্যে ৮৯টি ব্যর্থ হয়। মন্দার সময়ে রিয়েল এস্টেটের মূল্য, মজুরি এবং কর্পোরেট মুনাফা হ্রাস পায়। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এই মন্দায় বন্ধ হয়ে যায়। এই মন্দা প্রেসিডেন্ট গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। == ১৮৭৭ সালের মহা রেল ধর্মঘট == [[File:Harpers 8 11 1877 Blockade of Engines at Martinsburg W VA.jpg|thumb|ধর্মঘট চলাকালে ইঞ্জিনগুলোর পথ অবরোধ।]] ১৮৭৭ সালের ১৪ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মার্টিন্সবার্গে এই ধর্মঘট শুরু হয়। এই ধর্মঘটের কারণ ছিল বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহিও রেলরোড কোম্পানির বেতন কর্তন। শ্রমিকরা রেলপথ চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। ধর্মঘট দমন করতে রাজ্য মিলিশিয়া পাঠানো হলেও তারা ধর্মঘটকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। গভর্নর হেনরি ম্যাথিউস ধর্মঘট দমন ও রেল চলাচল পুনরায় শুরু করতে ফেডারেল সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানান। ধর্মঘটটি কুম্বারল্যান্ড, মেরিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সেনারা ধর্মঘটকারীদের একটি জনতার ওপর গুলি চালায় এবং দশজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। এই ধর্মঘট ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর, পিটসবার্গ এবং এমনকি সেন্ট লুইস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মঘটে কোটি কোটি ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয় এবং বহু প্রাণহানি ঘটে। এই মহা ধর্মঘট ৪৫ দিন স্থায়ী হয়, শেষ পর্যন্ত শহর থেকে শহরে ফেডারেল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এটি দমন করা হয়। == রিপাবলিকানদের ক্ষমতাচ্যুতি == গ্রান্টের শাসনামলেই রিপাবলিকান পার্টির পতনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ফেডারেল পদ ও মন্ত্রিসভায় বিপুল সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেকেই পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যরা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ক্লান্ত হয়ে দক্ষিণের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্মিলনের প্রস্তাব দেন। এরা নিজেদের 'লিবারেল রিপাবলিকান' বলে পরিচয় দেন এবং ১৮৭২ সালে গ্রান্টের বিরুদ্ধে হোরেস গ্রিলিকে মনোনয়ন দেন। ডেমোক্র্যাটরাও গ্রিলিকে সমর্থন করে। তবে ব্যাপক সমর্থন সত্ত্বেও, গ্রান্ট ১৮৭২ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হন। নির্বাচনের মৌসুমে, লিবারেল রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে 'অ্যামনেস্টি অ্যাক্ট' (ক্ষমাপ্রদান আইন) পাশ করাতে ব্যস্ত ছিল এবং ১৮৭২ সালের মে মাসে এই আইন পাশ হয়। এই আইনটি অধিকাংশ সাবেক কনফেডারেট নাগরিকদের ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ উন্মুক্ত করে। এর ফলে দক্ষিণে ডেমোক্রেটদের রাজনৈতিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে। শীঘ্রই ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনার সরকারগুলো ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকানদের সংখ্যা ছিল বেশি, সেসব স্থানে কু ক্লুক্স ক্লান (গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠী) রিপাবলিকানদের আতঙ্কিত করে তোলে এবং তাদেরকে ডেমোক্রেটদের ভোট দিতে অথবা ভোট না দিতে বাধ্য করে। ১৮৭৬ সালের মধ্যে দক্ষিণে রিপাবলিকানরা কেবল তিনটি রাজ্যে—ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা এবং সাউথ ক্যারোলিনায়—ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়, যার সবকটিতেই তখনো ইউনিয়ন সেনা মোতায়েন ছিল। গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদকালে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেলে রিপাবলিকানদের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। জনসাধারণের কাছে সবচেয়ে আঘাতকর ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধসচিবকে জড়িত করে কেলেঙ্কারির ঘটনা। একই বছরে দেশ একটি মহামন্দার কবলে পড়লে উত্তরাঞ্চলের জনমত রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে চলে যায়। ১৮৭৪ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানরা উভয় কক্ষে ব্যাপক আসন হারায় এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর পূর্ববর্তী সময়ের পর এই প্রথম ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের একটি কক্ষে (প্রতিনিধি পরিষদ) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ফলে কংগ্রেস আর পুনর্গঠনের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকল না। [[Image:A certificate for the electoral vote for Rutherford B. Hayes and William A. Wheeler for the State of Louisiana dated 1876 part 6.jpg|thumb|upright|১৮৭৬ সালের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রাদারফোর্ড বি. হেইস ও উইলিয়াম এ. হুইলারের নির্বাচনী ভোটের প্রত্যয়নপত্র]] ১৮৭৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা নিউ ইয়র্কের গভর্নর এস. জে. টিলডেনকে প্রার্থী করে এবং রিপাবলিকানরা ওহাইওর গভর্নর রাদারফোর্ড বি. হেইসকে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনের দিন দেখা যায়, টিলডেন ২৫০,০০০-এরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু সাউথ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা এবং লুইজিয়ানার যথাক্রমে সাত, চার ও আটটি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় (এই তিন রাজ্যে তখনো উত্তরীয় সেনা মোতায়েন ছিল)। এছাড়াও, ওরেগনের তিনটি ইলেকটোরাল ভোটের একটি নিয়েও বিরোধ দেখা দেয়। যদি হেইস সব ২০টি ভোট পেতেন, তাহলে তিনি নির্বাচনে জয়ী হতেন। কংগ্রেস একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে, যাতে সাতজন ডেমোক্র্যাট, সাতজন রিপাবলিকান এবং একজন স্বাধীন সদস্য ছিলেন। তবে স্বাধীন সদস্য পদত্যাগ করলে তার স্থানে একজন রিপাবলিকান নিযুক্ত হন। কমিশন দলীয় বিভাজনের ভিত্তিতে ভোট দিয়ে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করে, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হুমকি দেয়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা গোপনে একত্র হয়ে একটি সমঝোতা খসড়া করেন, যা ‘১৮৭৭ সালের সমঝোতা’ নামে পরিচিত। এতে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, দক্ষিণ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয় এবং দক্ষিণে আরও সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়; এটি পুনর্গঠনের অবসান নির্দেশ করে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সমঝোতা ব্যর্থ হয়, কারণ ডেমোক্র্যাটরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং দক্ষিণে আফ্রিকান আমেরিকানদের অধিকারের সুরক্ষা দেয়নি। পুনর্গঠন-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণে ডেমোক্র্যাট ‘রিডিমার’দের উত্থান ঘটে। রিডিমাররা দক্ষিণে রিপাবলিকান শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রতিজ্ঞা করে। তারা ‘জিম ক্রো’ আইন প্রণয়ন করে, যা কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের পৃথকীকরণ করে এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সীমিত করে, যা পরবর্তী শতাব্দীর আগে বিলুপ্ত হয়নি। জিম ক্রো আইনকে চ্যালেঞ্জ করা হয় *Plessy v. Ferguson* মামলায়, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে বৈধতা দেয় এই শর্তে যে পৃথক সুবিধাসমূহ হতে হবে "পৃথক কিন্তু সমান"। == সিঞ্চিমইয়াংগো == [[File:Sujagi.jpg|thumb|১৮৭১ সালে ইউএসএস কলোরাডোতে বন্দী হওয়া সুজাগি, একটি কমান্ডিং জেনারেলের পতাকা।]] ১৮৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোরিয়ার প্রতি অভিযান, যাকে সিঞ্চিমইয়াংগো বা 'সিনমি বর্ষের পশ্চিমা গোলযোগ' বলা হয়, ছিল কোরিয়ায় প্রথম আমেরিকান সামরিক অভিযান। এটি প্রধানত কোরিয়ার গাংহওয়া দ্বীপ ও এর আশেপাশে সংঘটিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র একটি সামরিক অভিযাত্রী বাহিনী কোরিয়ায় প্রেরণ করেছিল একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলকে সহায়তা করার জন্য, যা কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, জেনারেল শেরম্যান বাণিজ্যিক জাহাজের ভাগ্য নির্ণয় এবং জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার নাবিকদের সাহায্যের জন্য একটি চুক্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী জোসিয়ান রাজবংশের সরকার ও চাপদাতা আমেরিকানদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, যা কূটনৈতিক অভিযানকে সশস্ত্র সংঘর্ষে পরিণত করে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সামান্য বিজয় লাভ করলেও, কোরিয়ারা দেশটি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানায়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যথেষ্ট ক্ষমতা বা শক্তি ছিল না, তারা তাদের কূটনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। == ১৯শ শতাব্দীর ধর্ম == === ইহুদি নতুন তরঙ্গ অভিবাসন === [[File:Welcome to the land of freedom.png|thumb|১৮৮৭ সালের ছবি যা ইউরোপীয় অভিবাসীদের নিউইয়র্ক সিটিতে আগমন দেখায়।]] ১৮২০ থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে প্রায় ২,৫০,০০০ ইহুদি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অভিবাসন ছিল কেবল ইউরোপীয় অর্থনীতির সঙ্কটের কারণে নয়, ১৮৪৮ সালের জার্মান রাজ্যের লিবারেল বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণে।<ref>Stone, Amy. ''Jewish Americans''. Milwaukee, Wisconsin: World Almanac Library, 2007. Pp. 6-9.</ref> রেলপথ এবং বৃহৎ স্টিমার জাহাজগুলো ১৮০০ এবং ১৯০০ সালের শেষের দিকে আমেরিকায় অভিবাসনকে সহজতর করে। তবু যাত্রাটি ছিল অস্বচ্ছন্দকর, অসুস্থকর ও বিপজ্জনক। ধনী পরিবার যারা শীর্ষ বর্গের কামরায় ছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত কেবিন ছিল, কিন্তু অধিকাংশ অভিবাসী স্টিয়ারেজ শ্রেণীতে যাতায়াত করতেন: তিনশো মানুষ, পুরুষ, নারী ও শিশু, ঘনিষ্ঠভাবে গাদাগাদি করে, দ্বৈত বা ত্রৈত বেডে ঘুমাতেন। বেডগুলো প্রায় ছয় ফুট লম্বা এবং দুই ফুট চওড়া ছিল, বেডের মাঝে মাত্র দুই-আধা ফুটের ব্যবধান। তাদের সামান্য মালপত্র বেডের ওপর রাখা হতো। পানীয় জল ছিল খুবই কম বা ছিল না, দুর্গন্ধ অসহনীয় ছিল, এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না। এক প্রত্যক্ষদর্শী সোফিয়া ক্রেইটসবের্গ বলেছিলেন, "আপনি যখন মাথা খোঁচাতেন [...] তখন হাতেই লাউস ধরতো।"<ref>Stone, p.15</ref> এই ঘনিষ্ঠ পরিবেশ, অভাব-অনটন ও দীর্ঘ যাত্রার চাপের কারণে রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটত। ইহুদিরা অশুদ্ধ (কোষের নিয়মে নিষিদ্ধ) মাংস ও স্যুপ পরিবেশন পেত, যা অনেকেই খেতেন না। তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা শুকনো ফল, শক্ত রুটি, বা বেয়ানো পনির খানিক খেতেন।<ref>Stone.</ref> অন্য প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কয়েকটি বন্দর ছিল। ১৮৫৫ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত এটি মূলত ক্যাসেল গার্ডেন ছিল, ম্যানহাটনের প্রান্তে, যা পরবর্তীতে নিউইয়র্ক সিটি হিসেবে পরিচিত। ১৮৯০ সাল থেকে ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী এলিস দ্বীপে প্রবেশ করত।<ref>http://genealogy./od/ports/p/castle_garden.htm Retrieved on March 15, 2015.</ref> এই জায়গাগুলোতে মানুষকে যথাযথভাবে জাহাজ, উৎপত্তি দেশ, পূর্ব কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হতো।<ref>http://www.castlegarden.org/manifests.php Retrieved on March 15, 2015.</ref> === ক্যাথলিক আমেরিকা === [[File:GibbonsPhotoStanding.jpg|thumb|upright|জেমস গিবন্স, ১৮৬০ থেকে ১৯০০ সালের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী ক্যাথলিক নেতা।]] [[File:The American River Ganges (Thomas Nast cartoon).jpg|thumb|১৮৭৫ সালের একটি রাজনৈতিক কার্টুন, যা ক্যাথলিক চার্চকে আমেরিকান পাবলিক শিক্ষার শত্রু হিসেবে দেখায়। থমাস নাস্ট ভয় পেতেন যে সরকারী তহবিল পাবলিক শিক্ষার পরিবর্তে ক্যাথলিক শিক্ষাকে সমর্থন করবে।]] ==== ক্যাথলিক অভিবাসন ==== আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্য (বিশেষ করে পোল্যান্ড) থেকে ব্যাপক অভিবাসনের ফলে ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৪০ থেকে ১৮৫১ সালের মধ্যে আয়ারল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ ও অত্যাচার চলছিল। অন্যান্য অভিবাসন জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে হয়েছিল। ১৮৫০ সালের মধ্যে ক্যাথলিক ধর্ম যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সেক্টর হয়ে ওঠে; ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পায়, প্রধানত অভিবাসনের কারণে। এই ব্যাপক ক্যাথলিক অভিবাসনের ফলে ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ==== নির্যাতন ==== আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টরা ক্যাথলিকদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকত। গৃহযুদ্ধের আগে আমেরিকায় অ্যান্টি-ক্যাথলিক পূর্বাগ্রহ "নোথিংস" দল এবং আমেরিকার অরেঞ্জ ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে প্রকাশ পেত। যুদ্ধের পর আমেরিকান প্রোটেকটিভ অ্যাসোসিয়েশন ও কু ক্লাক্স ক্লান ক্যাথলিকদের নিয়মিতভাবে নির্যাতন ও বৈষম্য করত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ফিলাডেলফিয়ার নেটিভিস্ট দাঙ্গা, "ব্লাডি মান্ডে", এবং নিউইয়র্ক সিটির অরেঞ্জ দাঙ্গা ১৮৭১ ও ১৮৭২ সালে।<ref>Michael Gordon, The Orange riots: Irish political violence in New York City, 1870 and 1871 (1993</ref> ==== নেটিভিজম ==== কঠোর অ্যান্টি-ক্যাথলিক কার্যক্রম নেটিভিজমের অনুভূতিকে প্রকাশ করত, যা সমস্ত "দেশজ জন্মানো আমেরিকান পুরুষদের" বিদেশিদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে উৎসাহিত করত। (অর্থাৎ, এখানে আসল দেশীয় আমেরিকানদের নয়, বরং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত প্রোটেস্ট্যান্টদের কথা বলা হচ্ছে যারা এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন।) প্রথম নেটিভিস্ট প্রকাশনা ছিল ''The Protestant''; এর প্রথম সংখ্যা ১৮৩০ সালের ২ জানুয়ারি বিক্রি হয়। সম্পাদক ছিলেন জর্জ বর্ন, যিনি লিখেছিলেন, "পত্রিকার লক্ষ্য ক্যাথলিক বিশ্বাসের সমালোচনায় কেন্দ্রীভূত।"<ref>Baker, Sean. ''The American Religious Experience, American Nativism, 1830-1845.''</ref> অ্যান্টি-ক্যাথলিক বক্তব্য মাঝে মাঝে সহিংসতায় পরিণত হতো; ১৮৩৪ সালের আগস্ট ১০ তারিখে ৪০-৫০ জন মানুষ ইউর্সুলাইন কনভেন্ট স্কুলের বাইরে জমায়েত হয়ে সেটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।<ref>Baker, Sean</ref> ১৮৩৪ সালে এফ.বি. মরস, যিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অধ্যাপক ছিলেন এবং নেটিভিস্ট নেতা ছিলেন, "The Foreign Conspiracies Against the Liberties of the United States" গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষার কথা বলেন। প্রোটেস্ট্যান্টদের ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে আশঙ্কা ও ভয় মূলত ক্যাথলিক ধর্মের রাজতান্ত্রিক প্রবণতা নিয়ে ছিল। এই সময়ে শহরগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল অভিবাসীদের ব্যাপক আগমনের কারণে যারা একত্রিত হয়ে একই এলাকায় বসবাস করত। নেটিভিস্টরা এটিকে "গোষ্ঠীবদ্ধতা" হিসেবে দেখত এবং "আমেরিকানীকরণ" এড়ানোর বা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বলে মনে করত। মরস এবং তাঁর সমকালীন লিম্যান বীচারদের সফলতার সঙ্গে নেটিভিস্ট আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে জনতা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য না করে কাল্পনিক কাহিনীকেও সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৮৩৬ সালে মারিয়া মঙ্ক "Awful Disclosures of the Hotel Dieu Nunnery of Montreal" নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এতে তিনি ক্যাথলিক ধর্মের সঙ্গে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন পাদরিদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক এবং নন ও শিশুদের হত্যা ঘটেছিল; বইয়ের শেষ অংশে তিনি তার গর্ভে থাকা শিশুকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গেছেন। মঙ্কের মা এই লেখাকে অস্বীকার করেন এবং বলেন, মারিয়া কখনো কোন কনভেন্টে ছিলেন না, এবং মারিয়ার শৈশবে যে মস্তিষ্ক আঘাত হয়েছিল তা তার গল্পের কারণ হতে পারে। উত্তর-মধ্য আমেরিকা ও দেশের উত্তরের অংশে ক্যাথলিকদের স্বাধীন চিন্তার অক্ষম বলে মনে করা হত এবং তাদের "অ্যান্টি-আমেরিকান প্যাপিস্ট" বলা হতো, কারণ তারা রোমের পোপের আদেশ পালন করতেন বলে ধারণা ছিল। মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে মেক্সিকান ক্যাথলিকদের "প্যাপিস্ট কুসংস্কার" কারণে মিডিয়ায় হাস্যকর বা বোকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমেরিকার ক্যাথলিকদের সম্পর্কে সাধারণ মনোভাবের কারণেই প্রায় ১০০ জন আমেরিকান ক্যাথলিক, যাদের বেশিরভাগই সদ্য অভিবাসিত আইরিশ, মেক্সিকানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন; তাদের "সেন্ট প্যাট্রিকস ব্যাটালিয়ন" == শিক্ষা == [[File:General Oliver Otis Howard House - Howard University.jpg|thumb|জেনারেল অলিভার ওটিস হাওয়ার্ড হাউস, ১৮৬৭ সালে নির্মিত এবং হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও বিদ্যমান সবচেয়ে প্রাচীন ভবন।]] সারাদেশে প্রাক্তন দাসেরা শিক্ষা অর্জনের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। সব বয়সের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বইয়ে কী লেখা আছে তা জানার প্রবল আগ্রহ ছিল, যেগুলো একসময় শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্যই অনুমোদিত ছিল। স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা নিজেদের স্কুল শুরু করে এবং দিনে ও রাতে ক্লাস গুলো উপচে পড়ত। তারা গুঁড়ি গুঁড়ি বসত গাছের গুঁড়ির আসনে বা মাটির মেঝেতে। পুরানো পঞ্জিকা বা বাতিল হয়ে যাওয়া অভিধানে তারা অক্ষর চর্চা করত। দাসত্বের অজ্ঞতা থেকে মুক্তির প্রবল ইচ্ছার কারণে, দারিদ্র্য উপেক্ষা করেও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মাসে $১ বা $১.৫০ করে টিউশন ফি দিত।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গরা এবং তাদের শ্বেতাঙ্গ মিত্ররাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল, যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষক, পাদ্রি ও পেশাজীবী নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমেরিকান মিশনারি অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ফিস্ক এবং আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাতটি কলেজ ১৮৬৬ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রিডম্যান ব্যুরো ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। মেথডিস্ট, ব্যাপটিস্ট ও কনগ্রেগেশনালিস্টদের মতো উত্তরাঞ্চলীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও ডজনখানেক ধর্মতাত্ত্বিক ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজকে সমর্থন করে।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাথমিক শিক্ষা মূলত মিশনারিদের মাধ্যমে আসত, যাদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন কৃষ্ণাঙ্গদের শিক্ষার হার খুবই কম ছিল, যতক্ষণ না আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে মুক্তিপত্র ঘোষণা করেন। ১৮৬৭ সালে শিক্ষা বিভাগ গঠিত হয়, যাতে আরও কার্যকরী বিদ্যালয় ব্যবস্থা চালু করা যায়। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের জন্য “লিবারেল আর্টস ও বিজ্ঞানে” শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৯ সালে বোস্টনে প্রথম পাবলিক স্কুল ডে পালিত হয়। == প্রযুক্তি == [[File:Earlyoilfield.jpg|thumb|পেনসিলভানিয়ার একটি তেলক্ষেত্র।]] গৃহযুদ্ধের ঠিক আগে পেনসিলভানিয়ার টাইটাসভিল ও আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয় এবং যুদ্ধের পরে এটি ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে তেল শুধুমাত্র ঔষধি কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি শিল্পক্ষেত্রে এবং তিমির তেলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বিপজ্জনক ও ব্যয়বহুল তিমি শিকার শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু শহর রাতের আলো জ্বালানোর জন্য কয়লা গ্যাস ব্যবহার করলেও অন্য শহরগুলো তেল বাতি ব্যবহার শুরু করে এবং বড় বড় শহরগুলো রাতের আলোতে আলোকিত হয়। পেট্রোলিয়াম, বাতি তেল (বড় ইঞ্জিন বাতির জন্য) এবং যন্ত্র তেল রেলপথের কার্যকারিতা বাড়ায়। [[File:East and West Shaking hands at the laying of last rail Union Pacific Railroad - Restoration.jpg|thumb|প্রথম ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রেলরোড, ইউটাহ, ১৮৬৯]] দূরত্ব অতিক্রম করে তথ্য পরিবহন করা যেত টেলিগ্রাফের মাধ্যমে। ১৮৭০ ও ১৮৮০ দশকে আবিষ্কর্তারা মানুষের কণ্ঠস্বর পরিবহন করার প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এবং এলিশা গ্রে। ১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যন্ত্র ব্যবহার করে একটি স্টিলের রিডের শব্দ প্রেরণ করেন। ১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলের এক সহযোগী তাঁর পেটেন্ট ওয়াশিংটন ডিসির পেটেন্ট অফিসে জমা দেন, ঠিক একই দিনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এলিশা গ্রে ও পেটেন্ট দাখিল করেন। তিন সপ্তাহ পর, ৭ মার্চ, বেলের পেটেন্ট জয়ী হয়ে অনুমোদিত হয়। == যুদ্ধের পরে আদিবাসীরা == গৃহযুদ্ধ চলাকালীন আদিবাসীদের সাথে যে অবিচার হয়েছিল তা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দূর হয়নি। মার্কিন জাতীয় সরকার স্পষ্ট করেছিল যে এই মানুষগুলো যদিও এই মহাদেশের স্থানীয় অধিবাসী, তবে তারা দেশের নাগরিক হবে না। আদিবাসীদের পশ্চিমের আর্থসীমার বাইরে সংরক্ষিত জমিতে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়। তাদের চলাচল সরকারি এজেন্টরা নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি করত। শিকার করতে, মাছ ধরতে বা পাশের সংরক্ষিত জমিতে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত জমির বাইরে যাওয়া ভারতীয় বিষয়ক দফতর কর্তৃক নিষেধ ছিল। পরবর্তীতে, আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই দফতর একটি পাস ব্যবস্থা চালু করে। এই ব্যবস্থায় আদিবাসীদের সংরক্ষিত জমির বাইরে যেতে পাস নিতে হতো এজেন্টদের কাছ থেকে। সাদা বসবাসকারীদেরও ট্রেনে আদিবাসীদের চলাচলে আপত্তি ছিল। তবে, নেভাডার সেন্ট্রাল প্যাসিফিক রেলরোড আদিবাসীদের ট্রেনের ওপর চড়ে যাত্রা করার অনুমতি দেয় বিনিময়ে তাদের রেললাইন সংরক্ষিত জমির মধ্য দিয়ে চলার সুযোগ পায়। অনেক ভারতীয় এজেন্ট এই বিনামূল্যের যাত্রা ব্যবস্থা পছন্দ করতেন না এবং এটিকে বন্ধ করার জন্য দফতরে চিঠি লেখা শুরু করেন। একজন এজেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, "এই সীমাহীন স্বাধীনতা এবং বারবার অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আদিবাসীদের জন্য অতিরঞ্জিত করা যাবে না।" ১৪তম সংশোধনী এর মাধ্যমে নাগরিক অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে আদিবাসীদের জন্য তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলা হয়। ১৮৬৬ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্টে উল্লেখ আছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সমস্ত ব্যক্তি, যারা কোনো বিদেশি ক্ষমতার অন্তর্গত নয়, এবং কর প্রদানে অব্যাহত ভারতীয়রা ব্যতীত, তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে ঘোষণা করা হলো।” === লিটল বিঘর্নের যুদ্ধ === [[File:Little Big Horn.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|চিয়েনে একজন শিল্পীর আঁকা লিটল বিঘর্ন যুদ্ধের চিত্র।]] ১৮৭৬ সালে, কয়েকটি কম গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষের পর, কর্নেল জর্জ এ. কাস্টার এবং তার ছোট ক্যাভ্যালারি দল লিটল বিঘর্ন নদীর কাছে সিউক্স ও তাদের কিছু মিত্রের সাথে মুখোমুখি হন। বড় ভারতীয় বাহিনীকে সংরক্ষিত জমিতে ফিরিয়ে পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনী তিনটি ফৌজ পাঠায় আক্রমণের জন্য। একটি দলের মধ্যে ছিল লেফটেন্যান্ট কাস্টার ও সেভেন্থ ক্যাভ্যালারি। তারা সিউক্স গ্রামের সন্ধান পায়, যা প্রায় পনেরো মাইল দূরে রোজবাড নদীর পাশে ছিল। কাস্টার আরও একটি প্রায় চল্লিশ সদস্যের দলও দেখতে পান। তিনি আদেশ অগ্রাহ্য করে আগ্রাসী হয়ে উঠেন, কারণ তিনি মনে করতেন তারা মূল দলকে সতর্ক করে দেবে। তিনি বুঝতে পারেননি যে সংখ্যায় তারা তাকে তিন গুণে বেশি। কাস্টার তার বাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করেন। তিনি ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক বেন্টিনকে আদেশ দেন যাতে তারা লিটল বিঘর্ন নদীর উপরের উপত্যকায় ভারতীয়দের পালানোর পথ আটকায়। মেজর মার্কাস রেনো তার গ্রুপকে তাড়া করার এবং তারপর নদী পার হয়ে ভারতীয় গ্রাম আক্রমণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যেখানে তার অধীনে থাকা বাকি সৈন্যরা ছিল। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ থেকে ভারতীয় শিবির আঘাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না যে তাকে কঠোর ভৌগলিক বাধা অতিক্রম করতে হবে। যখন ভারতীয়রা আক্রমণ করতে নেমে আসে, কাস্টার তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন ঘোড়াগুলোকে গুলি করতে এবং তাদের লাশ সামনে গড়িয়ে দেয়াল বানাতে। কিন্তু এটি গুলির বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করতে পারেনি। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কাস্টার ও তার সকল সৈন্য নিহত হন, যা আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক বিপর্যয়ের মধ্যে একটি। একদিনের অতিরিক্ত লড়াইয়ের পর রেনো ও বেন্টিনের একত্রিত বাহিনী ভারতীয়রা যুদ্ধ থামানোর পর পালিয়ে যায়। তারা জানত যে আরও দুইটি সৈন্যদল তাদের দিকে আসছে, তাই দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। কাস্টারের এই শেষ যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা তার গৃহযুদ্ধে অর্জিত যেকোনো সাফল্যকে ছাপিয়ে যায়। কাস্টার ২৫ জুন, ১৮৭৬ সালে লিটল বিঘর্ন যুদ্ধে পরাজিত হন ও নিহত হন, যা "কাস্টারের শেষ প্রতিরোধ" নামে পরিচিত। == ঐ সময়কার নারীর ইতিহাস == === ভিক্টোরিয়া উডহাল === [[File:Victoria Claflin Woodhull by Mathew Brady - Oval Portrait.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ভিক্টোরিয়া উডহাল]] ১৮৭২ সালে ভিক্টোরিয়া উডহাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন। তিনি মে ১০ তারিখে ইকুয়াল রাইটস পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও এটি অনস্বীকার্য যে তিনি প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী, তার প্রার্থিতার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল; কারণ তার নাম আসলে ভোটের তালিকায় ছিল না এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে ৩৫ বছরের নিচে থাকা উচিত নয়। উডহাল কোনো ইলেক্টোরাল ভোট পাননি, তবে প্রমাণ আছে যে তিনি কিছু জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন যা গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন গঠিত হয় ২২ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ সালে। নিউ ইয়র্কের ফ্রেডোনিয়াকে এই গোষ্ঠীর জন্মস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। টেম্পারেন্স আন্দোলন ছিল একটি সামাজিক আন্দোলন যা মদ্যপানের পরিমাণ কমানোর জন্য কাজ করেছিল। এই আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং নারীরা বার ও ওষুধের দোকানে গিয়ে গান গেয়ে এবং প্রার্থনা করত। ১৮৭৪ সালে ক্লিভল্যান্ড, ওহায়োতে ন্যাশনাল উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীরা অ্যালকোহল সেবনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে সেলুনে গিয়ে প্রার্থনা করত। অনেক সময় তাদের প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত এবং বারকর্মীদের গালিগালাজ সহ্য করতে হত। এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা আইন প্রণয়নে সহায়ক হয়। ==সূত্রসমূহ== {{reflist|2}} {{chapnav|গৃহযুদ্ধ|আবিষ্কারের যুগ এবং গিল্ডেড যুগ}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} dw7j2izk7148cfaggm1kdf5zkh8rwos রন্ধনপ্রণালী:চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা 104 25765 84840 83552 2025-06-18T14:30:43Z RDasgupta2020 8748 84840 wikitext text/x-wiki {{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ | রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মাছ রন্ধনপ্রণালী | পরিবেশন = পরিমান অনুসারে, কমপক্ষে ৪-৫ জন। | তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা মতো | কষ্টসাধ্য = ৩ | চিত্র = }} {{রন্ধনপ্রণালী}} <center><big>'''চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা'''</big></center> চিংড়ি মুসুর ডাল ভর্তা বা চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা হল একটি সহজ, ঘরোয়া এবং অত্যন্ত সুস্বাদু বাঙালি ভর্তার পদ। মূলত সেদ্ধ মুসুর ডালের সঙ্গে ভাজা চিংড়ি, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা লঙ্কা এবং সরষের তেল মিশিয়ে এই ভর্তা তৈরি করা হয়। এটি একটি সুস্বাদু মাখা-ভর্তা। এই চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা মূলত পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বেশি জনপ্রিয়। এটি একটি স্বল্প উপকরণে তৈরি, কম ঝাল এবং পেটের পক্ষে হালকা একটি ভর্তা। চিংড়ির ঝুরো স্বাদ, মুসুর ডালের নরম মাখো-মাখো স্বাদ এবং কাঁচা সরষের তেলের ঘ্রাণ একত্রে মিশে গিয়ে এই ভর্তাকে করে তোলে অনন্য। কম পরিশ্রমে তোইরি এ এক এক দুর্দান্ত খাবার। গ্রামীণ বাঙালি পদ হিসাবে এটি বেশ বিখ্যাত। ==উপকরন== {|class="wikitable" ! উপকরণ !! পরিমাণ |- | কুচো চিংড়ি || ২০০ গ্রাম |- | মুসুর ডাল || ১ কাপ |- | পেঁয়াজ কুচি || ২টি (বড় আকার) |- | রসুন কুচি || ১টি গোটা রসুন |- | টমেটো || ১টি (মাঝারি আকার) |- | কাঁচা লঙ্কা || পরিমাণমতো |- | শুকনো লঙ্কা || পরিমাণমতো |- | সরষের তেল || পরিমাণমতো |- | নুন || স্বাদমতো |- | হলুদ গুঁড়ো || স্বাদমতো |- | লঙ্কার গুঁড়ো || স্বাদমতো |} == রন্ধনপ্রণালী == # প্রথমে মুসুরডাল খানিক রসুন, লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। ডাল শুকিয়ে এলে নামিয়ে নিন। # একটা কড়ায় তেল গরম করে নুন-হলুদ মাখিয়ে চিংড়িগুলো ভেজে তুলে নিন। চিংড়ি মাছগুলি মিক্সিতে একবার ঘুরিয়ে নিন। নইলে ভর্তা মাখতে গিয়ে অসুবিধে হবে। সাজানোর জন্য কয়েকটা চিংড়ি গোটা রাখতে পারেন চাইলে। # মাঝারি টমেটোটা স্লাইজ করে কেটে তাওয়ায় তেল ব্রাশ করে খানিক এপিঠ-ওপিঠ করে পুড়িয়ে নিন। # এবার কড়ায় রাখা বাকি তেলে রসুন কুচি, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে সেদ্ধ করা শুকনো ডাল, মিক্সিতে হালকা পেস্ট করা ভাজা চিংড়ি, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন, চিনি ১ চিমটি (ঐচ্ছিক) দিয়ে ঢিমে আঁচে নাড়াতে থাকুন। একদম শুকনো হয়ে গেলে নামিয়ে একটা পাত্রে রাখুন। # খানিক ঠান্ডা হয়ে এলে কাঁচা পিঁয়াজ কুচি, লঙ্কা কুচি আর ১ চামচ সরষের তেল দিয়ে ভর্তা মেখে নিন। #চাইলে ধনেপাতা দিতে পারেন এতে মন্দ লাগবে না।<span style=color:red;><center>'''গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা'''</center></span> ==তথ্যসূত্র== *[https://www.sangbadpratidin.in/lifestyle/food/tasty-recipe-of-prawn-bharta-with-masoor-dal মুসুর ডাল দিয়ে চিংড়ি ভর্তা, মুখে দিলেই স্বাদকোরকের সাম্বা নৃত্য হতে বাধ্য!] [[বিষয়শ্রেণী:রন্ধনপ্রণালী]] [[বিষয়শ্রেণী:মাছ রন্ধনপ্রণালী]] ojnl6bowt9wzmi9nqjc2hfekpq660b1 84841 84840 2025-06-18T14:31:25Z RDasgupta2020 8748 /* রন্ধনপ্রণালী */ 84841 wikitext text/x-wiki {{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ | রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মাছ রন্ধনপ্রণালী | পরিবেশন = পরিমান অনুসারে, কমপক্ষে ৪-৫ জন। | তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা মতো | কষ্টসাধ্য = ৩ | চিত্র = }} {{রন্ধনপ্রণালী}} <center><big>'''চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা'''</big></center> চিংড়ি মুসুর ডাল ভর্তা বা চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা হল একটি সহজ, ঘরোয়া এবং অত্যন্ত সুস্বাদু বাঙালি ভর্তার পদ। মূলত সেদ্ধ মুসুর ডালের সঙ্গে ভাজা চিংড়ি, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা লঙ্কা এবং সরষের তেল মিশিয়ে এই ভর্তা তৈরি করা হয়। এটি একটি সুস্বাদু মাখা-ভর্তা। এই চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা মূলত পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বেশি জনপ্রিয়। এটি একটি স্বল্প উপকরণে তৈরি, কম ঝাল এবং পেটের পক্ষে হালকা একটি ভর্তা। চিংড়ির ঝুরো স্বাদ, মুসুর ডালের নরম মাখো-মাখো স্বাদ এবং কাঁচা সরষের তেলের ঘ্রাণ একত্রে মিশে গিয়ে এই ভর্তাকে করে তোলে অনন্য। কম পরিশ্রমে তোইরি এ এক এক দুর্দান্ত খাবার। গ্রামীণ বাঙালি পদ হিসাবে এটি বেশ বিখ্যাত। ==উপকরন== {|class="wikitable" ! উপকরণ !! পরিমাণ |- | কুচো চিংড়ি || ২০০ গ্রাম |- | মুসুর ডাল || ১ কাপ |- | পেঁয়াজ কুচি || ২টি (বড় আকার) |- | রসুন কুচি || ১টি গোটা রসুন |- | টমেটো || ১টি (মাঝারি আকার) |- | কাঁচা লঙ্কা || পরিমাণমতো |- | শুকনো লঙ্কা || পরিমাণমতো |- | সরষের তেল || পরিমাণমতো |- | নুন || স্বাদমতো |- | হলুদ গুঁড়ো || স্বাদমতো |- | লঙ্কার গুঁড়ো || স্বাদমতো |} == রন্ধনপ্রণালী == # প্রথমে মুসুরডাল খানিক রসুন, লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। ডাল শুকিয়ে এলে নামিয়ে নিন। # একটা কড়ায় তেল গরম করে নুন-হলুদ মাখিয়ে চিংড়িগুলো ভেজে তুলে নিন। চিংড়ি মাছগুলি মিক্সিতে একবার ঘুরিয়ে নিন। নইলে ভর্তা মাখতে গিয়ে অসুবিধে হবে। সাজানোর জন্য কয়েকটা চিংড়ি গোটা রাখতে পারেন চাইলে। # মাঝারি টমেটোটা স্লাইস করে কেটে তাওয়ায় তেল ব্রাশ করে খানিক এপিঠ-ওপিঠ করে পুড়িয়ে নিন। # এবার কড়ায় রাখা বাকি তেলে রসুন কুচি, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে সেদ্ধ করা শুকনো ডাল, মিক্সিতে হালকা পেস্ট করা ভাজা চিংড়ি, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন, চিনি ১ চিমটি (ঐচ্ছিক) দিয়ে ঢিমে আঁচে নাড়াতে থাকুন। একদম শুকনো হয়ে গেলে নামিয়ে একটা পাত্রে রাখুন। # খানিক ঠান্ডা হয়ে এলে কাঁচা পিঁয়াজ কুচি, লঙ্কা কুচি আর ১ চামচ সরষের তেল দিয়ে ভর্তা মেখে নিন। #চাইলে ধনেপাতা দিতে পারেন এতে মন্দ লাগবে না।<span style=color:red;><center>'''গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা'''</center></span> ==তথ্যসূত্র== *[https://www.sangbadpratidin.in/lifestyle/food/tasty-recipe-of-prawn-bharta-with-masoor-dal মুসুর ডাল দিয়ে চিংড়ি ভর্তা, মুখে দিলেই স্বাদকোরকের সাম্বা নৃত্য হতে বাধ্য!] [[বিষয়শ্রেণী:রন্ধনপ্রণালী]] [[বিষয়শ্রেণী:মাছ রন্ধনপ্রণালী]] 38240w4wu4meixasnyaixwe5zcyepg9 84842 84841 2025-06-18T14:32:02Z RDasgupta2020 8748 /* রন্ধনপ্রণালী */ 84842 wikitext text/x-wiki {{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ | রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মাছ রন্ধনপ্রণালী | পরিবেশন = পরিমান অনুসারে, কমপক্ষে ৪-৫ জন। | তৈরির সময় = ১ ঘণ্টা মতো | কষ্টসাধ্য = ৩ | চিত্র = }} {{রন্ধনপ্রণালী}} <center><big>'''চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা'''</big></center> চিংড়ি মুসুর ডাল ভর্তা বা চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা হল একটি সহজ, ঘরোয়া এবং অত্যন্ত সুস্বাদু বাঙালি ভর্তার পদ। মূলত সেদ্ধ মুসুর ডালের সঙ্গে ভাজা চিংড়ি, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা লঙ্কা এবং সরষের তেল মিশিয়ে এই ভর্তা তৈরি করা হয়। এটি একটি সুস্বাদু মাখা-ভর্তা। এই চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা মূলত পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বেশি জনপ্রিয়। এটি একটি স্বল্প উপকরণে তৈরি, কম ঝাল এবং পেটের পক্ষে হালকা একটি ভর্তা। চিংড়ির ঝুরো স্বাদ, মুসুর ডালের নরম মাখো-মাখো স্বাদ এবং কাঁচা সরষের তেলের ঘ্রাণ একত্রে মিশে গিয়ে এই ভর্তাকে করে তোলে অনন্য। কম পরিশ্রমে তোইরি এ এক এক দুর্দান্ত খাবার। গ্রামীণ বাঙালি পদ হিসাবে এটি বেশ বিখ্যাত। ==উপকরন== {|class="wikitable" ! উপকরণ !! পরিমাণ |- | কুচো চিংড়ি || ২০০ গ্রাম |- | মুসুর ডাল || ১ কাপ |- | পেঁয়াজ কুচি || ২টি (বড় আকার) |- | রসুন কুচি || ১টি গোটা রসুন |- | টমেটো || ১টি (মাঝারি আকার) |- | কাঁচা লঙ্কা || পরিমাণমতো |- | শুকনো লঙ্কা || পরিমাণমতো |- | সরষের তেল || পরিমাণমতো |- | নুন || স্বাদমতো |- | হলুদ গুঁড়ো || স্বাদমতো |- | লঙ্কার গুঁড়ো || স্বাদমতো |} == রন্ধনপ্রণালী == # প্রথমে মুসুরডাল খানিক রসুন, লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। ডাল শুকিয়ে এলে নামিয়ে নিন। # একটা কড়ায় তেল গরম করে নুন-হলুদ মাখিয়ে চিংড়িগুলো ভেজে তুলে নিন। চিংড়ি মাছগুলি মিক্সিতে একবার ঘুরিয়ে নিন। নইলে ভর্তা মাখতে গিয়ে অসুবিধে হবে। সাজানোর জন্য কয়েকটা চিংড়ি গোটা রাখতে পারেন চাইলে। # মাঝারি টমেটোটা স্লাইস করে কেটে তাওয়ায় তেল ব্রাশ করে খানিক এপিঠ-ওপিঠ করে পুড়িয়ে নিন। # এবার কড়ায় রাখা বাকি তেলে রসুন কুচি, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে সেদ্ধ করা শুকনো ডাল, মিক্সিতে হালকা পেস্ট করা ভাজা চিংড়ি, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন, চিনি ১ চিমটি (ঐচ্ছিক) দিয়ে ঢিমে আঁচে নাড়াতে থাকুন। একদম শুকনো হয়ে গেলে নামিয়ে একটা পাত্রে রাখুন। # খানিক ঠান্ডা হয়ে এলে কাঁচা পিঁয়াজ কুচি, লঙ্কা কুচি আর ১ চামচ সরষের তেল দিয়ে ভর্তা মেখে নিন। #চাইলে উপরে ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে দিতে পারেন এতে মন্দ লাগবে না।<span style=color:red;><center>'''গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন চিংড়ি মুসুড়ি ভর্তা'''</center></span> ==তথ্যসূত্র== *[https://www.sangbadpratidin.in/lifestyle/food/tasty-recipe-of-prawn-bharta-with-masoor-dal মুসুর ডাল দিয়ে চিংড়ি ভর্তা, মুখে দিলেই স্বাদকোরকের সাম্বা নৃত্য হতে বাধ্য!] [[বিষয়শ্রেণী:রন্ধনপ্রণালী]] [[বিষয়শ্রেণী:মাছ রন্ধনপ্রণালী]] 8bc4935e7b17112np77wsqvvnktw1a9 ব্যবহারকারী:নিজাম উদ্দীন তামীম 2 25826 84874 80599 2025-06-19T02:17:55Z নিজাম উদ্দীন তামীম 11573 84874 wikitext text/x-wiki প্রেম। এ এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সবার জীবনেই এর আগমন ঘটে। কেউ হয়ত দেখা পায় সবশেষ পরিণামের। আর কারো বা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়।এমনি এক সূচনালগ্নেই সমাপ্ত হওয়া প্রেম কাহিনী নিয়ে নির্মিত আমাদের "একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প।" a08qxkomsy3zz4ujjczgul5xjknctpt 84875 84874 2025-06-19T02:19:01Z নিজাম উদ্দীন তামীম 11573 84875 wikitext text/x-wiki প্রেম। এ এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সবার জীবনেই এর আগমন ঘটে। কেউ হয়ত দেখা পায় সবশেষ পরিণামের। আর কারো বা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়।এমনি এক সূচনালগ্নেই সমাপ্ত হওয়া প্রেম কাহিনী নিয়ে রচিত আমাদের "একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প।" 6zaishzv10c25egd12zkblqzwl3tib4 উইকিশৈশব:কণা/গ্যাসের চাপ 100 25949 84847 84399 2025-06-18T15:33:30Z Ishtiak Abdullah 9574 /* প্রশ্নোত্তর */ 84847 wikitext text/x-wiki {{navigate|Prev=পদার্থের তিন দশা|Next= কণা/ভাসবে না ডুববে?}} আপনি হয়তো সেই পরীক্ষার কথা শুনেছেন যেখানে একটি গ্লাস জলে পূর্ণ করে গ্লাসটির মুখে একটি কার্ডবোর্ড চাপা দেওয়ার পর গ্লাসটি উল্টো করে ধরলে, কার্ডবোর্ডটি নিচে পড়ে যায় না। কেন এমন হয়? এছাড়াও অধুনাকালে, দেওয়ালের উপর কোন কিছু ঝুলিয়ে রাখার জন্য (যেমন তোয়ালে) আর পরিশ্রম করে দেওয়ালে কোন পেরেক পোঁতা হয়না। তার বদলে এক ধরনের রাবারের চাকতি দেওয়ালের সাথে চেপে বসিয়ে দেওয়া হয় যেগুলিকে সাকশন কাপ বলা হয়। এই সাকশন কাপগুলি কিভাবে দেওয়ালের সাথে আটকে থাকে? এই অধ্যায় পড়ে সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। ==গ্যাসের চাপ== ভাবুন তো এমন একটি দৃশ্য। আপনার কাছে চারটি টেবিল টেনিস বল আছে এবং আপনি সেগুলো একটি ১ মিটার x ১ মিটার x ১ মিটার মাপের বাক্সে রাখলেন। এটি বেশ বড় একটি বাক্স। এবার আপনি একজন ভার উত্তোলককে সেই বাক্সটি জোরে ঝাঁকাতে বললেন। আপনি শুনতে পাবেন, টেবিল টেনিস বলগুলি বাক্সের দেওয়ালে আঘাত করছে — ধরুন, প্রতি দশ সেকেন্ডে একবার আঘাতের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এবার আপনি সেই বলগুলো একটি ছোট বাক্সে রাখলেন, যার মাপ ৫০ সেমি x ৫০ সেমি x ৫০ সেমি। এবার আপনি লক্ষ্য করবেন যে, বলগুলো প্রতি দশ সেকেন্ডে ছয়বার বাক্সের দেওয়ালে ধাক্কা দিচ্ছে! কারণ, বাক্সের আয়তন যত ছোট হয়, বলগুলোর দেওয়ালে আঘাত করার সম্ভাবনা ততই বাড়ে। টেবিল টেনিস বলগুলি যখন দেওয়ালে বেশি ধাক্কা খায়, তখন তারা দেওয়ালের উপর বেশি চাপ প্রয়োগ করে। যখন কেউ আপনার উপর ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে তখন সেই আঘাতের কারনে একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। মনে করুন, আমরা আগের অধ্যায়ে পড়েছি যে, গ্যাস কণাগুলো সব সময় মুক্তভাবেই চলাফেরা করে। যখন গ্যাসের কণাগুলিকে একটি পাত্রে রাখা হয়, তখন তারা সেই পাত্রের দেওয়ালে ধাক্কা দেয় এবং চাপ সৃষ্টি করে। আর যদি সেই পাত্রটি আয়তনে ছোট হয়, তবে তারা আরও বেশি করে দেওয়ালে ধাক্কা দেবে। এই যে গ্যাসের কণাগুলো দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে যে চাপ সৃষ্টি করে — একেই বলা হয় গ্যাসীয় চাপ বা গ্যাসের চাপ। গ্যাস চাপ মাপা হয় পাস্কাল এককে, যাকে সংক্ষেপে '''Pa''' বলা হয়। '''বুরডন গেজ''' নামক যন্ত্র দিয়ে গ্যাস চাপ মাপা যায়। এছাড়াও, আমরা একটি ''চাপ সেন্সর'' নামক যন্ত্রকেে একটি ''ডেটালগার'' নামক বিশেষ যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করে গ্যাসের চাপ মাপতে পারি। ==বায়ুচাপ== বায়ুও এক ধরণের গ্যাস তাই বায়ুও তার পারিপার্শ্বিক বস্তুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। বায়ুতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং অন্যান্য অনেক গ্যাসীয় উপাদানের উপুস্থিতি আছে। যেহেতু বায়ু আমাদের চারপাশে থাকে, তাই বায়ু আমাদের শরীরেও একধরণের গ্যাসীয় চাপ সৃষ্টি করে। বায়ুতে উপস্থিত গ্যাস সমূহের চাপকে বায়ুচাপ বা বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বলা হয়। তবে এই চাপের মান বেশ নগন্য। আপনার ত্বকে বাতাসের কণা আঘাত করলে আপনি তা অনুভব করতে পারবেন না! ==শূণ্যস্থান== [[File:Magdeburg Hemispheres.svg|200px|left]] যদি বাতাস না থাকে, তাহলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপও থাকে না। ১৬৬৪ সালে, জার্মানির ম্যাগডেবার্গ শহরে বিজ্ঞানী অটো ভন গুয়েরিক বায়ুচাপের ব্যাখ্যা করার জন্য একটি পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি দুটি অর্ধ গোলককে একত্রিত করে একটি পূর্ণ গোলক বানিয়েছিলেন। তারপর তিনি সেই গোলকের ভেতর থেকে বাতাস বের করে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি দুটি অর্ধ গোলককে আলাধা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনভাবেই ওই দুটি অর্ধ গোলককে আলাদা করা যায়নি। শোনা যায় গোলকের দুপাশে দুটি ঘোড়াকে যুক্ত করেও তাদের আলাদা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। কিন্তু কেন এমন হয়েছিল? বাম দিকের চিত্রটি দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যখন গোলার্ধগুলি বাতাসে পূর্ণ থাকে, তখন ভিতরের বায়ুচাপ বাইরের বায়ুচাপের সমান হয়। যখন ভিতরের অংশটি ফাঁকা থাকে, তখন গোলকের ভেতরর অংশে কোনও বায়ুর চাপ থাকে না। কিন্তু গোলকের বাইরের বায়ু তখন গোলকের পৃষ্ঠে প্রবলভাবে চাপ দেয় এবং সেই বায়ুচাপ ওই দুই অর্ধগোলককে দৃঢ়ভাবে আঁটকে রাখে, যার ফলে তাদের পৃথক করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যে স্থানে কোনও বায়ু নেই তাকে '''শূন্যস্থান''' বলা হয়। [[File:Suction-lifter-one-cup.jpg|100px|right]] দৈনন্দিন জীবনে বায়ুশূণ্যতার একটি ব্যবহার হল সাকশন কাপ। যখন সাকশন কাপের উপর চাপ দিয়ে তাকে দেয়ালে সাথে আটকানো হয়, তখন চাপের জন্য সাকশন কাপের ভেতরের অবতল অংশ থেকে সমস্ত বাতাস বেরিয়ে যায়। তখন বাইরের উত্তল অংশে বায়ুকণাগুলো সাকশন কাপের উপর চাপ দেয়, যার ফলে বাতাসের চাপ তৈরি হয় এবং সাকশন কাপ সজোরে দেওয়ালের সাথে আটকে যায়। তখন এই সাকশন কাপগুলোকে সহজে দেওয়াল থেকে তোলা যায়না! == প্রশ্নোত্তর == শূন্যস্থান পূরণ করুন। * গ্যাসীয় চাপ তখনই সৃষ্টি হয় যখন গ্যসের (১) তার (২) দেয়ালে আঘাত করে। * (৩) চাপকে বায়ুচাপও বলা হয়। * (৫) -এর অর্ধ গোলক পরীক্ষার মাধ্যমে (৪) -এর শক্তি দেখানো যেতে পারে। উত্তর: * (১) কণা * (২) ধারক পাত্রের * (৩) বায়ুমণ্ডলীয় * (৪) বায়ুশূন্যতা * (৫) ম্যাগডেবার্গ {{BookCat}} kjoecwus3ln13g61fx93aj03ore2c0u নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রৈখিক সিস্টেম সমাধান 0 26002 84831 81125 2025-06-18T13:45:14Z RDasgupta2020 8748 84831 wikitext text/x-wiki {{Control Systems/Page| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্টেট-স্পেস সমীকরণ|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সময় ভেদে পরিবর্তনশীল সিস্টেম সমাধান}} == অবস্থান সমীকরন সমাধান == {{SideBox|এই অধ্যায়ের সমাধানগুলি পূর্ববর্তী [[w:ব্যবকলনীয় সমীকরণ|সাধারণ অবকল সমীকরণ]] সম্পর্কিত জ্ঞানের উপর দৃঢ়ভাবে নির্ভর করে। এই অধ্যায়টি পড়ার আগে পাঠকদের উক্ত বিষয় সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান থাকা উচিত।}} যেকোন সিস্টেম বা ব্যাবস্থার অবস্থান সমীকরণ, যা স্টেট-স্পেস সমীকরন নামে বেশি পরিচিত, এটি একটি প্রথম ক্রমের রৈখিক অবকল সমীকরণ বা আরও নির্দিষ্টভাবে বললে এটি একাধিক রৈখিক অবকল সমীকরণের একটি গাণিতিক ব্যাবস্থা। যেহেতু অবস্থান সমীকরন একটি প্রথম ক্রমের সমীকরণ, তাই আমরা সাধারণ অবকল সমীকরণ সমাধানের নিয়ম অনুসরন করে অবস্থান সমীকরণের একটি সাধারণ সমাধান পেতে পারি, যেখানে অবস্থান চলরাশিকে '''x''' হিসেবে ধরা হয়। একবার '''x'''-এর সমাধান পাওয়া গেলে, সেই সমাধানকে সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত আউটপুট বিশ্লেষণকারী সমীকরণে সরাসরি প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে যে সমীকরণ তৈরি হয়, তা সরাসরি ইনপুট ও আউটপুটের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করা যায় এবং এতে আর আলাদাভাবে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ অবস্থার হিসাব রাখতে হয় না। এই অধ্যায়ের বিভিন্ন অংশে আমরা বিভিন্ন অবস্থান সমীকরন বা স্টেট-স্পেস সমীকরণের সমাধান নিয়ে আলোচনা করব। আলোচনা শুরু হবে সবচেয়ে সহজ বিষয় থেকে (যেমন: সময়-নিরপেক্ষ সিস্টেম, যেখানে কোনো ইনপুট নেই), এবং শেষ হবে সবচেয়ে কঠিন বিষয়ের (যেমন: সময়-পরিবর্তনশীল সিস্টেম) আলোচনা দিয়ে। == শূন্য ইনপুট দিয়ে x(t) -এর সমাধান == এবার আমরা অবস্থান সমীকরণের বিষয়ে আলোচনা করতে পারি, নিচের গাণিতিক সমীকরণটি লক্ষ্য করুন: :<math>x' = Ax(t) + Bu(t)</math> আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এই সমীকরণটি একটি প্রথম-ক্রমের অবকল সমীকরণ। শুধু পার্থক্য এই যে এখানে চলরাশিগুলি ভেক্টর এবং সহগগুলো ম্যাট্রিক্স। তবে ম্যাট্রিক্স ক্যালকুলাসের নিয়ম অনুযায়ী, এই ভিন্নতাগুলো বিশেষ গুরুত্ব রাখে না। আপাতত আমরা ইনপুট পদটিকে উপেক্ষা করতে পারি এবং সমীকরণটিকে নিচের রূপে পুনর্লিখন করতে পারি: :<math>\frac{dx(t)}{dt} = Ax(t)</math> এবং আমরা সমীকরন থেকে চলকগুলিকে এভাবে আলাদা করতে পারি: :<math>\frac{dx(t)}{x(t)} = A dt</math> উভয় পাশে সমাকলন করে এবং উভয় পার্শ্বে ''e'' -এর ঘাতে উন্নীত করলে আমরা পাই: :<math>x(t) = e^{At+C}</math> যেখানে ''C'' একটি ধ্রুবক। আমরা সমীকরণটি সহজ করতে ''D = e<sup>C</sup>'' ধরতে পারি। তখন ''D'' তখন সেই সিস্টেমের প্রাথমিক শর্তে পরিণত হবে। এই ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয় যখন আমরা চলক ''t'' -এর মান শূন্য ধরি। এই সমীকরণের চূড়ান্ত সমাধান তখন হয়: :<math>x(t) = e^{A(t-t_0)}x(t_0)</math> আমরা ম্যাট্রিক্স সূচকীয় রূপ ''e<sup>At</sup>'' '-কে '''স্টেট ট্রাঞ্জিসন ম্যাট্রিক্স''' বা '''স্থিতি-পরিবর্তন ম্যাট্রিক্স''' বলি। এর গণনা করা যদিও কখনও কখনও কঠিন হয়, তবুও কোনো সিস্টেম বিশ্লেষণ ও নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে আমরা এই ম্যাট্রিক্স সূচকীয় রূপ কীভাবে গণনা করতে হয় তা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো। == x(t) -এর সমাধান অশূন্য মান দিয়ে == যদি আমাদের ইনপুট শূন্য না হয় (যেমনটা সাধারণত অধিকাংশ বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে হয়ে থাকে), তাহলে সমীকরণের সমাধানটি কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। লক্ষ্য করুন, এখন যেহেতু আমাদের সমীকরণে অশূন্য ইনপুট যুক্ত হয়েছে, তাই আমরা আর সহজে চলরাশিগুলিকে আলাদা করে সমীকরনের দুই পাশে সমাকলন করতে পারব না। :<math>x'(t) = Ax(t) + Bu(t)</math> সমীকরনের বাম পাশে নির্দিষ্টভাবে <math>Ax(t)</math> -এই রাশিটি পেতে আমরা বিয়োগের মতো কিছু গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরন করে বিয়োগ করি, এবং তারপর সমীকরনের উভয় পাশই স্টেট-ট্রানজিশন ম্যাট্রিক্সের ইনভার্স দ্বারা পূর্বে গুণ করি। :<math>e^{-At}x'(t) - e^{-At}Ax(t) = e^{-At}Bu(t)</math> এই শেষ ধাপের যুক্তিটি সম্ভবত অস্পষ্ট বলে মনে হতে পারে, তাই আমরা একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করব: === উদাহরণ === {{TextBox|1= সময় ('''t''') -এর সাপেক্ষে নিম্নলিখিত সমীকরনের অন্তরকলন করুন: :<math>e^{-At}x(t)</math> অন্তরকলন থেকে প্রাপ্ত গুণফলের সূত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যদি দুটি ফাংশন একসাথে গুণ করা থাকে: :<math>f(t)g(t)</math> আর যদি সময় t -এর সাপেক্ষে অন্তরকলন করা হয়, তাহলে ফলাফল: :<math>f(t)g'(t) + f'(t)g(t)</math> এবার ফাংশনগুলি মান অনুযায়ী বসালে: :<math>f(t) = e^{-At}\qquad f'(t) = -Ae^{-At}</math> :<math>g(t) = x(t)\qquad g'(t) = x'(t)</math> আউটপুট ফলাফল হল: :<math>e^{-At}x'(t) - e^{-At}Ax(t)</math> এই ফলাফলটি উপরিউক্ত সমীকরণের সাথে সমতুল্য}} আমাদের উদাহরণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ব্যবহার করে, আমরা সমীকরণের বাম পাশটিকে একটি ডিফারেনশিয়ালে (অবলব্ধিতে) সংক্ষিপ্ত করতে পারি: :<math>\frac{d(e^{-At}x(t))}{dt} = e^{-At}Bu(t)</math> এখন আমরা সমীকরণের উভয় পাশে ইন্টিগ্রেশন করতে পারি যার সীমা হবে প্রাথমিক সময় (''t<sub>0</sub>'') থেকে বর্তমান সময় (''t'') পর্যন্ত এবং একটি কাল্পনিক চলক &tau; ব্যবহার করা হবে। এতে আমরা আমাদের চূড়ান্ত ফলাফলের আরও কাছাকাছি পৌঁছাব। শেষে, যদি আমরা e<sup>At</sup> দ্বারা পূর্ব গুণ করি, তাহলে আমাদের চূড়ান্ত ফলাফল হবে: {{eqn|সাধারণ অবস্থা সমীকরণ সমাধান}} :<math>x(t) = e^{A(t-t_0)}x(t_0) + \int_{t_0}^{t}e^{A(t - \tau)}Bu(\tau)d\tau</math> যদি আমরা এই সমাধানটিকে আউটপুট সমীকরণে ব্যাবহার করি, তাহলে আমরা পাব: {{eqn|সাধারণ অবস্থা সমীকরণ সমাধান}} :<math>y(t) = Ce^{A(t-t_0)}x(t_0) + C\int_{t_0}^{t}e^{A(t - \tau)}Bu(\tau)d\tau + Du(t)</math> এটি হল অশূন্য ইনপুট মান দ্বারা ''স্টেট-স্পেস সমীকরন'' -এর সময়-নিরপেক্ষ সমাধান। এই সমীকরন ও তার সমাধানগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগ্রহী অধ্যয়নকারীদের পরবর্তী পঠনের জন্য এই সমীকরণ এবং তার সমাধানের বিষয়ে ভালোভাবে অবগত থাকা উচিত। ==স্টেট ট্রাঞ্জিসন ম্যাট্রিক্স== {{SideBox|ম্যাট্রিক্স সূচক সম্পর্কে আরও তথ্য এখানে পাওয়া যাবে:<br> '''[[Engineering Analysis|ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষণ]]'''}} স্টেট ট্রাঞ্জিসন ম্যাট্রিক্স সূচক ''e<sup>At</sup>'', সাধারণ সময়-নিরপেক্ষ স্টেট-স্পেস সমীকরনের সামাধানের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। যখনই কোন নতুন সিস্টেমের বিশ্লেষণ করা হয়, তখন ম্যাট্রিক্স সূচকের গননা সবার প্রথমে করা হয় এবং এই গণনার মাধ্যমে সিস্টেম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। টেলর-সিরিজ সম্প্রসারণ ব্যবহার করে এই ম্যাট্রিক্স সূচকের সরাসরি গণনা করা যেতে পারে: :<math>e^{At} = \sum_{n=0}^\infty \frac{(At)^n}{n!}</math> {{SideBox|তির্যক ম্যাট্রিক্স এবং জর্ডান-ফর্ম ম্যাট্রিক্স সম্পর্কে আরও তথ্য এখানে পাওয়া যাবে::<br> '''[[ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষণ]]'''}} এছাড়াও আমরা ম্যাট্রিক্স '''A''' -কে একটি '''তীর্যক ম্যাট্রিক্স''' (ডায়াগোনাল ম্যাট্রিক্স) অথবা একটি '''জর্ডন ক্যানোনিকাল ম্যাট্রিক্স''' -এ রূপান্তরিত করতে পারি। একটি তীর্যক ম্যাট্রিক্সের সূচকীয় মান নির্ণয় করা তুলনামূলকভাবে সহজ — কেবল ম্যাট্রিক্সের তীর্যক বা কর্ণের অবস্থানে প্রতিটি উপাদানকে পৃথকভাবে সূচকে উত্তোলন করতে হয়। জর্ডান ক্যানোনিকাল ম্যাট্রিক্সের ক্ষেত্রে এই গণনা কিছুটা জটিল, তবে সেখানে একটি কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে যা ব্যবহার করে দ্রুত সমাধানে পৌঁছানো যায়। আগ্রহী পাঠকদের [[ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষণ]]-এর প্রাসঙ্গিক অংশগুলি পড়ে দেখা উচিত। নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থার ক্ষেত্র পরিসরে স্টেট ট্রাঞ্জিসন ম্যাট্রিক্স এবং ম্যাট্রিক্স সূচকের অত্যন্ত গুরুত্ব আছে। === তীর্যক ম্যাট্রিক্স === তীর্যক ম্যাট্রিক্সের ক্ষেত্রে, ম্যাট্রিক্সের তীর্যক অবস্থানের প্রতিটি উপাদানকে ''e'' -এর ঘাতে তুলে স্টেট ট্রানজিশন ম্যাট্রিক্স গননা করা যায়। === জর্ডন ক্যানোনিকাল ম্যাট্রিক্স === যদি '''A''' ম্যাট্রিক্স একটি জর্ডন ক্যানোনিকাল ম্যাট্রিক্স হয় তাহলে নিম্নলিখিত সূত্র ব্যাবহার করে সহজেই ম্যাট্রিক্স সূচক গননা করা যায়: :<math>e^{Jt} = e^{\lambda t} \begin{bmatrix} 1 & t & \frac{1}{2!}t^2 & \cdots & \frac{1}{n!}t^n \\0 & 1 & t & \cdots & \frac{1}{(n-1)!}t^{n-1} \\ \vdots & \vdots & \vdots & \ddots & \vdots \\ 0 & 0 & 0 & \cdots & 1\end{bmatrix}</math> এখানে ''&lambda;'' হল জর্ডন ক্যানোনিকাল ম্যাট্রিক্সটির ''আইগেন মান'' (ম্যাট্রিক্স -এর কর্ণের অবস্থানে অবস্থিত উপাদানসমূহের মান) ===ইনভার্স ল্যাপ্লেস পদ্ধতি=== আমরা নিম্নলিখিত ইনভার্স ল্যাপ্লেস রূপান্তর পদ্ধতি ব্যবহার করে স্টেট-ট্রানজিশন ম্যাট্রিক্স (অথবা যেকোনো ম্যাট্রিক্সের সূচকীয় ফাংশন) হিসাব করতে পারি: :<math>e^{At} = \mathcal{L}^{-1}[(sI - A)^{-1}]</math> যদি '''A''' একটি উচ্চ ক্রমের ম্যাট্রিক্স হয় তাহলে ইনভার্স ল্যাপ্লেস পদ্ধতির ব্যাবহার করে সূচকের মান নির্ণয় করা একটু জটিল হয়। যদি A ম্যাট্রিক্স জর্ডন ক্যানোনিকাল আকারে থাকে, তাহলে নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করে ম্যাট্রিক্স সূচক গননা করা যেতে পারে: <math>e^{Jt} = e^{\lambda t} \begin{bmatrix} 1 & t & \frac{1}{2!}t^2 & \cdots & \frac{1}{n!}t^n \\0 & 1 & t & \cdots & \frac{1}{(n-1)!}t^{n-1} \\ \vdots & \vdots & \vdots & \ddots & \vdots \\ 0 & 0 & 0 & \cdots & 1\end{bmatrix}</math> এখানে '''λ''' হল জর্ডন ক্যানোনিকাল ম্যাট্রিক্সের ''এইগেন মান''। === স্পেকট্রাল বিশ্লেষণ === যদি আমরা ''A'' ম্যাট্রিক্সের আইগেন মান গননা করতে পারি, তাহলে আমরা তার সহায়তায় ট্রাঞ্জিসন ম্যাট্রিক্স ''T'' এবং ইনভার্স ট্রাঞ্জিশন ম্যাট্রিক্স ''T<sup>-1</sup>'' গঠন করতে পারবো। এই ম্যাট্রিক্সগুলি যথাক্রমে ডান(রাইট) এবং বাম(লেফ্ট) দিশাবর্তী আইগেন ভেক্টরের সাথে যুক্ত ম্যাট্রিক্স। যদি আমাদের কাছে ডান ও বাম আইগেন ভেক্টর উপলব্ধ থাকে তাহলে আমরা নিম্নরুপে স্টেট ট্রাঞ্জিসন ম্যাট্রিক্সের গননা করতে পারব: {{eqn|স্পেকট্রাল বিশ্লেষণ}} :<math> e^{At} = \sum_{i = 1}^ne^{\lambda_i t} v_i w_i'</math> মনে রাখবেন ''w<sub>i</sub>' '' হল ''i'' তম বাম-আইগেন ভেক্টরের ট্রান্স্পোজ, অন্তরকলন নয়। আমরা পরের অধ্যায়ে ''আইগেন মান'', ''আইগেন ভেক্টর''এবং স্পেক্ট্রাল বিশ্লেষণের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব। ===কেলি-হ্যামিল্টন উপপাদ্য=== {{SideBox|কেলি-হ্যামিল্টন উপপাদ্য সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য , দেখুন::<br>'''[[ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষণ]]'''}} কেলি -হ্যামিল্টন উপপাদ্যটি একটি ম্যাট্রিক্স সূচকীয়ের সমাধান খুঁজে পেতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সিস্টেম ম্যাট্রিক্স '''A''' -এর যেকোন আইগেন মানের জন্য (''&lambda;'') আমরা দেখাতে পারি যে দুটি সমীকরণ সমতুল্য: :<math>e^{\lambda t} = a_0 + a_1 \lambda t + a_2 \lambda^2t^2 + \cdots + a_{n-1}\lambda^{n-1}t^{n-1}</math> উপরের সমীকরনের, ''a'' চিহ্নিত সহগগুলির মান সমাধান করে বের করতে পারলে তা আমরা নিচের সমীকরনে প্রয়োগ করে পাই: :<math>e^{At} = a_0I + a_1 A t + a_2 A^2 t^2 + \cdots + a_{n-1} A^{n-1} t^{n-1}</math> === উদাহরণ: অতীর্যক(অফ-ডায়াগোনাল) ম্যাট্রিক্স === {{TextBox|1=নিম্নলিখিত ম্যাট্রিক্স A-কে বিবেচনা করলে, অবস্থা-পরিবর্তন ম্যাট্রিক্সটি নির্ণয় করো: :<math>A = \begin{bmatrix}0 & 1 \\ -1 & 0 \end{bmatrix}</math> এই ম্যাট্রিক্সের আইজেন মানগুলি আমরা λ = i , - i হিসাবে খুঁজে পেতে পারি । যদি আমরা এই মানগুলিকে আমাদের আইজেনভেক্টর সমীকরণে প্রয়োগ করি, তাহলে আমরা পাব: :<math>\begin{vmatrix}i & -1 \\1 & i\end{vmatrix} v_1 = 0</math> :<math>\begin{vmatrix}-i & -1 \\1 & -i\end{vmatrix} v_2 = 0</math> এবং আমরা আমাদের আইজেনভেক্টরগুলির জন্য সমাধান করতে পারি: :<math>v_1 = \begin{bmatrix}1 \\ i\end{bmatrix}</math> :<math>v_2 = \begin{bmatrix}1 \\ -i\end{bmatrix}</math> আমাদের আইজেনভেক্টর দিয়ে, আমরা আমাদের বাম-আইজেনভেক্টরগুলির জন্য সমাধান করতে পারি: :<math>w_1 = \begin{bmatrix}1 \\ -i\end{bmatrix}</math> :<math>w_2 = \begin{bmatrix}1 \\ i\end{bmatrix}</math> এখন, স্পেকট্রাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে, আমরা স্টেট ট্রাঞ্জিসন ম্যাট্রিক্স তৈরি করতে পারি: :<math>e^{At} = e^{it}\begin{bmatrix}1 \\ i\end{bmatrix}\begin{bmatrix}1 & -i\end{bmatrix} + e^{-it}\begin{bmatrix}1 \\ -i\end{bmatrix}\begin{bmatrix}1 & i\end{bmatrix}</math> যদি আমরা ''অয়লারের অভেদ'' -এর ধারনা মনে রাখতে পারি তাহলে,আমরা জটিল সূচকগুলিকে সাইনোসয়েডে বিভক্ত করতে পারব। ভেক্টর গুণন সম্পাদন করলে সূচক থেকে সমস্ত কাল্পনিক সংখ্যা বা ''ইমাজিনারি নাম্বার'' বাতিল হয়ে যায় এবং আমাদের ফলাফল বাকি থাকে: :<math>e^{At} = \begin{bmatrix}\cos t & \sin t \\ -\sin t & \cos t\end{bmatrix}</math> পাঠক চাইলে গুণন সম্পাদন করে ফলাফলটি বের করে দেখতে পারেন।}} === উদাহরণ: সিম্পি গননা === {{TextBox|1=অবাধে উপলব্ধ পাইথন প্রোগ্রামের লাইব্রেরি ''সিম্পি'' দিয়ে আমরা খুব সহজেই স্টেট-ট্রানজিশন ম্যাট্রিক্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনা করতে পারি: >>> from sympy import * >>> t = symbols('t', positive = true) >>> A = Matrix([[0,1],[-1,0]]) >>> exp(A*t).expand(complex=True) ⎡cos(t) sin(t)⎤ ⎢ ⎥ ⎣-sin(t) cos(t)⎦ আপনি এই ওয়েবসাইটের তথ্য দেখুন, নিজেও এটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন: [http://live.sympy.org/?evaluate=t%20%3D%20symbols%28%27t%27%2C%20positive%20%3D%20true%29%0A%23--%0AA%20%3D%20Matrix%28%5B%5B0%2C1%5D%2C%5B-1%2C0%5D%5D%29%0A%23--%0Aexp%28A*t%29.expand%28complex%3DTrue%29%0A%23--%0A সিম্পি লাইভ] }} === উদাহরণ: MATLAB গণনা === {{TextBox|1=MATLAB-তে প্রতীকী টুলবক্স ব্যবহার করে , আমরা একটি প্রদত্ত ইনপুট ম্যাট্রিক্স '''A'''- এর জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্টেট-ট্রানজিশন ম্যাট্রিক্স তৈরি করতে MATLAB কোড লিখতে পারি । এখানে MATLAB কোডের একটি উদাহরণ দেওয়া হল যার মাধ্যমে এই কাজটি সম্পাদন করা যেতে পারে: function [phi] = statetrans(A) t = sym('t'); phi = expm(A * t); end নিম্নলিখিত ম্যাট্রিক্সের জন্য স্টেট-ট্রানজিশন ম্যাট্রিক্স খুঁজে পেতে এই MATLAB ফাংশনটি ব্যবহার করুন (সতর্কতা, গণনায় কিছু সময় লাগতে পারে): #<math>A_1 = \begin{bmatrix}2 & 0 \\ 0 & 2\end{bmatrix}</math> #<math>A_2 = \begin{bmatrix}0 & 1 \\ -1 & 0\end{bmatrix}</math> #<math>A_3 = \begin{bmatrix}2 & 1 \\ 0 & 2\end{bmatrix}</math> ম্যাট্রিক্স <math>A_1</math> হল একটি তির্যক ম্যাট্রিক্স, ম্যাট্রিক্স ২ এর জটিল আইজেন মান রয়েছে এবং ম্যাট্রিক্স <math>A_3</math> হল জর্ডান ক্যানোনিকাল ফর্ম। এই তিনটি ম্যাট্রিক্স সিস্টেম ম্যাট্রিক্সের কিছু সাধারণ রূপের প্রতিনিধিত্বকারী হওয়া উচিত। নিম্নলিখিত কোড স্নিপেটগুলি হল MATLAB-তে এই ম্যাট্রিক্স তৈরি করার জন্য ইনপুট কমান্ড এবং আউটপুট ফলাফল: ;ম্যাট্রিক্স A1: >> A1 = [2 0 ; 0 2]; >> statetrans(A1) উত্তর = [ exp(2*t), 0] [ 0, exp(2*t)] ;ম্যাট্রিক্স A2: >> A2 = [0 1 ; -1 0]; >> statetrans(A1) উত্তর = [ cos(t), sin(t)] [ -sin(t), cos(t)] ;ম্যাট্রিক্স A3: >> A1 = [2 1 ; 0 2]; >> statetrans(A1) উত্তর = [ exp(2*t), t*exp(2*t)] [ 0, exp(2*t)] ; }} === উদাহরণ: MATLAB -এর একাধিক পদ্ধতি === {{TextBox|1=MATLAB-তে স্কেলার (সময়-নিরপেক্ষ) ম্যাট্রিক্স '''A''' থেকে স্টেট ট্রান্সশন ম্যাট্রিক্স গণনা করার জন্য একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি সমীকরণ ম্যানিপুলেশনগুলি সম্পাদন করার জন্য সিম্বলিক টুলবক্সের উপর নির্ভর করবে । প্রতিটি কোড স্নিপেটের শেষে, '''eAt''' cচলকটিতে ম্যাট্রিক্স '''A''' এর স্টেট-ট্রানজিশন ম্যাট্রিক্স থাকে। ;সরাসরি পদ্ধতি: t = sym('t'); eAt = expm(A * t); ;ল্যাপ্লেস ট্রান্সফর্ম পদ্ধতি: s = sym('s'); [n,n] = size(A); in = inv(s*eye(n) - A); eAt = ilaplace(in); ;স্পেকট্রাল বিশ্লেষণ: t = sym('t'); [n,n] = size(A); [V, e] = eig(A); W = inv(V); sum = [0 0;0 0]; for I = 1:n sum = sum + expm(e(I,I)*t)*V(:,I)*W(I,:); end; eAt = sum; এই তিনটি পদ্ধতিরই একই উত্তর তৈরি করা উচিত। শিক্ষার্থী চাইলে উত্তর যাচাই করতে পারেন।}} {{Control Systems/Nav|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/স্টেট-স্পেস সমীকরণ|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সময় ভেদে পরিবর্তনশীল সিস্টেম সমাধান}} 5kpwelo07nhbmy4vd41ampt46btnix7 নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/আধুনিক নিয়ন্ত্রণ 0 26193 84887 81570 2025-06-19T05:54:06Z RDasgupta2020 8748 /* ভূমিকা */ 84887 wikitext text/x-wiki {{Control Systems/Page}} ==ভূমিকা== এই বইটি আধুনিক নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থার অধ্যয়নের উপর আলোকপাত করে তৈরি হয়েছে। মূল বৃহত্তর বইটির একটি অংশবিশেষ এই বইতে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে রয়েছে: সিস্টেম তত্ত্বের একটি প্রাথমিক পরিচিতি, নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থার মৌলিক স্টেট-স্পেস পদ্ধতির পরিচয় ও ব্যাখ্যা এবং স্টেট-স্পেস পদ্ধতির সঙ্গে ব্যবহৃত নকশা-বিশেষ ও বিশ্লেষণ কৌশল। '''সতর্কতা'''<br> এটি নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থার মূল বইয়ের একটি শিশুপাঠ্য সংস্করণ । এখানে তালিকাভুক্ত পৃষ্ঠাগুলি একটি প্রস্তাবিত পাঠক্রম নির্দেশ করে এবং এগুলি কোন স্বতন্ত্র বই নয়। এসব পৃষ্ঠাকে এমনভাবে সম্পাদনা করবেন না যাতে মূল বইয়ের ধারার সঙ্গে আপনার লিখিত অংশের অসামঞ্জস্য হয়। যদি আপনার এই সংস্করণ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন, মন্তব্য বা প্রস্তাব থাকে, অনুগ্রহ করে মূল বইয়ের আলোচনা পাতায় বার্তা দিন। {{Control Systems/Child}} ==সূচিপত্র== {{BookCat}} i8a3toh5efl0lbm9hb0i4i6705pkvkw চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা 0 26207 84848 83604 2025-06-18T16:00:08Z NusJaS 8394 84848 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের (Self-Regulated Learning - SRL) মৌলিক ধারণাগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে, এবং কীভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। আমরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করেছি। মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের তাত্ত্বিক ভিত্তি আলোচনা করা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে, কীভাবে এই মৌলিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলি একাডেমিক পরিবেশে শেখার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে এবং শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সহজতর করতে কীভাবে সহায়তা করা যায়। এই অধ্যায়টি পড়ার পর আপনি শিখবেন: * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ধারণা এবং প্রধান মডেলসমূহ। * মেটাকগনিশনের ধারণা এবং কীভাবে এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পুনর্গঠন ও শেখার কৌশল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ও মেটাকগনিশনের উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদানসমূহ। * শেখার বিশ্লেষণ কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। * প্রযুক্তি কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সহজ করে তোলে। * স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিকাশের চারটি ধাপ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের চারটি ধরন। * কীভাবে শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উদ্দীপিত ও উৎসাহিত করা যায়। == ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়ন == [[চিত্র:SRL_Chapter_Map.jpg|থাম্ব|783x783পিক্সেল|চিত্র ১. মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] [[চিত্র:Section_1_Defining_the_Concepts_.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ২. ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়িত করা]] == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সংজ্ঞা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বলতে বোঝায় যে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).">Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.). Boston, MA: Pearson</ref>; এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ কৌশল ব্যবহার করে তাদের জ্ঞান, আচরণ ও প্রেষণা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। <ref name="Zimmerman2002">Zimmerman, B. J. (2002). Becoming a self-regulated learner: an overview. Theory Into Practice.41(2):64–70. doi:10.1207/s15430421tip4102\2.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে, শেখার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে এবং নিজেদের উৎসাহিত করতে পারে <ref name="Purdie, N., & Hattie, J. (1996).">Purdie, N., & Hattie, J. (1996). Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning. American Educational Research Journal 33.(4): 845–871.</ref>। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার পারফরম্যান্স ও আচরণকে আরও সক্রিয় ও দক্ষ করে তুলতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা নিজেদের বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে শেখার কৌশল পরিবর্তন ও উন্নয়ন করতে পারে <ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''">García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014). The effects of question-generation training on metacognitive knowledge, self regulation and learning approaches in Science. Psicothema, 26(3), 385-390.</ref> এবং গঠনমূলক কার্যকলাপ, সহযোগিতামূলক কাজ ও মুক্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের শেখাকে মূল্যায়ন করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রেষণামূলকভাবে সক্রিয় পদ্ধতি। উইন ও বেকার (২০১৩, পৃষ্ঠা ৩)-এর মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হচ্ছে "মেটাকগনিটিভভাবে পরিচালিত প্রেষণার আচরণগত প্রকাশ" <ref name="Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013).">Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013). The potentials of educational data mining for researching metacognition, motivation and self-regulated learning. Journal of Educational Data Mining, 5(1).</ref>। এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা, আচরণ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা শেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সফলভাবে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).">Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011). Encouraging self-regulated learning in the classroom: A review of the literature. Metropolitan Educational Research Consortium (MERC).</ref>। জিমারম্যান (২০০২) এর মতে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও আচরণগত কার্যকলাপ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: পূর্বচিন্তা পর্যায়, কার্যকরন পর্যায় এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে (স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ, কৌশলগত পরিকল্পনা) শেখার কাজ বিশ্লেষণ ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় <ref name="Zimmerman2002" />। কার্যকরন পর্যায়ে কৌশল প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ ঘটে এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়ে শেখার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয় <ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).">Furnes, B., & Norman, E. (2015). Metacognition and reading: Comparing three forms of metacognition in normally developing readers and readers with dyslexia. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 21(3), 273-284</ref>। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া আরও গভীরভাবে বুঝতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বৃহৎ কাঠামো পরবর্তী অংশে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। == মেটাকগনিশনের সংজ্ঞা == মেটাকগনিশন হলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের একটি মূল উপাদান, যা জ্ঞানীয় চিন্তা এবং চিন্তার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত। মেটাকগনিটিভ সক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতে পারে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। এই অংশে আমরা মেটাকগনিশনের সংজ্ঞার বিবর্তন বিশ্লেষণ করবো। ১৯৭৯ সালে ফ্ল্যাভেল প্রথম মেটাকগনিশনের ধারণা উপস্থাপন করেন তার গবেষণায় <ref name="Flavell, J. H. (1979).">Flavell, J. H. (1979). Metacognition and cognitive monitoring: A new area of cognitive–developmental inquiry. American Psychologist, 34(10), 906-911.</ref>। এটি শেখার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন পাঠ পড়া, লেখা, পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন। মেটাকগনিশনের দুটি মৌলিক কার্যাবলি হলো: জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ <ref name="Efklides, A. (2008).">Efklides, A. (2008). Metacognition: Defining its facets and levels of functioning in relation to self-regulation and co-regulation. European Psychologist, 13(4), 277-287.</ref>। ১৯৮০ সালে অ্যান ব্রাউন মেটাকগনিশনের একটি সংজ্ঞা দেন যা প্রথমবার “regulation” (নিয়ন্ত্রণ) শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। সাম্প্রতিক গবেষণায় মেটাকগনিশনকে তিনটি উপাদানে বিভক্ত করা হয়েছে <ref name="Efklides, A. (2008)." />: '''মেটাকগনিটিভ জ্ঞান''' (বা মেটাকগনিটিভ সচেতনতা): শিক্ষার্থীদের নিজেদের সম্পর্কে, কাজ, কৌশল, লক্ষ্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানার সক্ষমতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি তিন প্রকারের হতে পারে: ঘোষণামূলক জ্ঞান, পদ্ধতিগত জ্ঞান এবং শর্তাধীন জ্ঞান <ref name="Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987).''">Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987). Children's metacognition about reading: Issues in definition, measurement, and instruction.Educational Psychologist 22: 225–278.</ref>। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' শিক্ষার্থী যখন কোনও কাজের মুখোমুখি হয় এবং তার তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে, তখন সে কী অনুভব করে ও কীভাবে উপলব্ধি করে—তা হলো মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শেখার লক্ষ্য সংশোধনে সহায়তা করে। '''মেটাকগনিটিভ কৌশল/দক্ষতা:''' এগুলো হলো জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলের সচেতন ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে: দিকনির্দেশনা কৌশল, পরিকল্পনা কৌশল, জ্ঞান প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল, পরিকল্পিত কাজ সম্পাদনের পর্যবেক্ষণ কৌশল এবং ফলাফল মূল্যায়নের কৌশল <ref name="Efklides, A. (2008)." />। নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল দক্ষতা হলো পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন <ref name="Schraw, G. (1998).">Schraw, G. (1998). Promoting general metacognitive awareness. Instructional Science 26: 113–125.doi:10.1023/A:1003044231033.</ref>। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান হলো জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণের জন্য, আর মেটাকগনিটিভ দক্ষতা হলো নিয়ন্ত্রণের জন্য। মেটাকগনিশনের সংজ্ঞাগুলো এটিকে “বহুমাত্রিক”, “সচেতন প্রক্রিয়া” এবং “ব্যক্তিকেন্দ্রিক” হিসেবে তুলে ধরে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় মেটাকগনিশন নিয়ে গবেষণা করতে হলে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন <ref name="Efklides, A. (2008)." />। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম তৈরি হয়েছে। এটি মেটাকগনিশনের এই তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন, কিছু হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যাতে তারা নিজেদের জ্ঞানীয় শেখা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই কার্যক্রমগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত মেটাকগনিটিভ জ্ঞান ও প্রক্রিয়া জোর দিয়ে থাকে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মূল্যায়ন ও মেটাকগনিশনের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে <ref name="Efklides, A. (2008)." />। == অন্যান্য সম্পর্কিত ধারণা == === শিক্ষার বিচার === মেটাকগনিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ধারণা হলো শিক্ষার বিচার বা জাজমেন্ট অফ লার্নিং (JOLs)। শিক্ষার্থীরা কতটা ভালোভাবে কোনো তথ্য শিখেছে তা নিয়ে তাদের নিজেদের মূল্যায়নই শিক্ষার বিচার<ref name="Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005).">Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005). Judgments of learning: Evidence for a two-stage process. Memory & Cognition, 33(6), 1116-1129.</ref>। নেলসন ও ডানলস্কি (১৯৯১) বলেছেন, JOLs শেখার প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। শিখনের পর কিছুটা সময় অপেক্ষা করে মূল্যায়ন করলে এটি আরও নির্ভুল হয়, একে বলা হয় “বিলম্বিত-JOL প্রভাব” <ref name="Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991).">Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991). When People’s Judgments of Learning (JOLs) Are Extremely Accurate at Predicting Subsequent Recall: The “Delayed-JOL Effect”. Psychological Science, 2(4), 267–270. .</ref>। জানার অনুভূতি্র বিচার হলো, শিক্ষার্থী কোনও প্রশ্ন বা উত্তর কতটা বুঝে বা জানে তার পূর্বানুমান। <ref name="Bembenutty, H. (2009).">Bembenutty, H. (2009). Feeling-of-Knowing Judgment and Self-Regulation of Learning. Education, 129(4), 589-598.</ref>। এটি জাজমেন্ট অফ লার্নিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। উভয়েই স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার মাধ্যমে সংযুক্ত করে। এই অধ্যায়ে পরবর্তী অংশে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার ধারণা আলোচনা করা হবে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া বোঝায় নিয়ন্ত্রণ কীভাবে পরিচালিত হয়। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো—বস্তু এবং ক্রিয়া। বস্তু হলো শিক্ষার্থীর শেখার লক্ষ্য এবং ক্রিয়া হলো সেই লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতি। এই ক্রিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে: জ্ঞান, আবেগ, প্রেষণা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য এবং শারীরিক পরিবেশে পরিবর্তন <ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).">Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014). Development of metacognitive knowledge of reading strategies and attitudes toward reading in early adolescence: The effect on reading comprehension. Psychological Topics, 23(1), 77–98.</ref>। উদাহরণস্বরূপ, প্রেষণার ক্রিয়া নির্ভর করে শিক্ষার্থীরা কবে এবং কীভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তার উপর। একইভাবে, আচরণগত পরিবর্তন ব্যক্তিগত শেখার দক্ষতা ও লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলে। === আত্মমূল্যায়ন === আত্ম-মূল্যায়ন মানুষকে তাদের ক্ষমতা এবং তাদের কৌশলগুলো প্রতিফলিত করে। এটি শেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত কৌশলগুলো বেছে নেওয়া প্রয়োজন। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রথম পর্যায়ে ঘটে। স্ব-মূল্যায়ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত হওয়া এবং নতুন শেখার কৌশলগুলো গ্রহণ করার ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন। আত্ম-মূল্যায়নের জন্য শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রয়োজন।  শেখার কৌশল সম্পর্কে একটি ইতিবাচক মনোভাব এবং খোলা মন স্ব-মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনি নিজেকে যে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করতে পারেন তা হতে পারে: আমার দক্ষতা কী? আমার স্বার্থ কি? আমি কি ভিডিও দেখে বা নোট নিয়ে শিখব? আমি কি নোট লিখে বা টাইপ করে আরও ভাল শিখতে পারি? আমি কি মুখস্থ এবং ব্যাখ্যা করে সবচেয়ে ভাল শিখি? === বাগদানের উদ্দেশ্য === প্রবৃত্তির উদ্দেশ্য হলো স্ব-প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ক্রিয়াগুলোর সংমিশ্রণ যা একটি নির্দিষ্ট শেখার  প্রাসঙ্গিক। প্রতিটি স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীর নিজস্ব শেখার ব্যস্ততার জন্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু শিক্ষার্থী শিখতে চায় কারণ তারা নির্দিষ্ট জ্ঞান সম্পর্কে আকর্ষণীয়, এবং তাদের মধ্যে কিছু তাদের কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনের কারণে শিখতে পারে। এইভাবে, তাদের বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক উপাদান থাকবে, যা তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে নেতৃত্ব দেবে। শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রক্রিয়া চলাকালীন, তাদের ব্যস্ততা প্রধানত তাদের পরিকল্পনায় প্রদর্শিত হয়, তাদের শেখার নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া এবং শিক্ষার্থীরা কীভাবে তাদের ব্যক্তিগত কার্যকারিতা, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে তার আরও বিশদ সারণী নিম্নরূপ: === আত্মব্যাখ্যা === স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল যা শক্তিশালী শিক্ষার পক্ষে সহায়ক। বুচার বলেছেন যে স্ব-ব্যাখ্যার ধারণাটি প্রাথমিকভাবে চি এবং তার সহকর্মীরা ১৯৯ ১৯৯৭ সালে পরীক্ষা ও ব্যবহার করেছিলেন এবং এটি উচ্চারণের একটি অর্থবহ মৌখিক সেটকে বোঝায় যার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা যে বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করছেন তা ব্যাখ্যা করে। চি[ নিজেই স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি জ্ঞানীয় ক্রিয়াকলাপ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যার মাধ্যমে কেউ নতুন বিষয়বস্তু বুঝতে পারে বা নিজেকে ব্যাখ্যা করে একটি নতুন দক্ষতা শিখতে পারে, সাধারণত কোনও পাঠ্য বা অন্য কোনও মাধ্যম থেকে শেখার প্রসঙ্গে। স্ব-ব্যাখ্যা সম্প্রসারণের অনুরূপ, ব্যতীত লক্ষ্যটি কেবল বিষয়বস্তু মুখস্থ করা নয়, কোনও শিক্ষার্থী কী শিখছে বা পড়ছে তা বোঝা। এই বিষয়ে, স্ব-ব্যাখ্যা একটি জ্ঞান-নির্মাণ কার্যকলাপ যা স্ব-নির্দেশিত চি[। স্ব-ব্যাখ্যা প্রক্রিয়ায়, শিক্ষার্থীরা কার্যকারণ ধারণাগুলোর মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ খুঁজে পায় (বিসরা, লিউ, সালিমি, নেসবিট এবং উইন)। বিসরা এট  মতে, নতুন তথ্য বোঝার জন্য স্ব-ব্যাখ্যা নিজের দিকে পরিচালিত হয়। যেহেতু এটি স্ব-সম্বোধনযুক্ত, স্ব-ব্যাখ্যা প্রক্রিয়াটি নীরবে করা যেতে পারে বা যদি উচ্চস্বরে বলা হয় তবে এটি কেবল শিক্ষার্থীর কাছেই বোধগম্য। ওয়াইলি এবং চি[। স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি গঠনমূলক এবং জেনারেটিভ কৌশল হিসাবে বর্ণনা করুন যা শেখার গভীরতা করে এবং অন্যান্য জ্ঞানীয় দক্ষতার অনুরূপ, সময়ের সাথে সাথে বিকাশ ও উন্নতি করে। সাধারণত, স্ব-ব্যাখ্যা (এসই) শব্দটি নিজের কাছে ব্যাখ্যার মাধ্যমে উত্পন্ন উচ্চারণের একটি সেটকে বোঝায়। অন্য কথায়, এটি  একটি অংশ পড়ার পরে শিক্ষার্থীর দ্বারা উত্পাদিত কোনও সামগ্রী-সম্পর্কিত উচ্চারণ। == স্ব-ব্যাখ্যা বনাম নির্দেশমূলক ব্যাখ্যা == স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল যা শক্তিশালী শিক্ষার দিকে পরিচালিত করে। বিসরা এবং তার সহকর্মীদের উপর ভিত্তি করে[, স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর কার্যকলাপ যা কেবল সেই ব্যক্তির দ্বারা ব্যবহৃত হয় না যিনি এটি তৈরি করেছেন, এটি অন্যরাও ব্যবহার করতে পারে। এই ক্ষেত্রে, শেখার মাধ্যমে পণ্য মাধ্যমে ঘটে স্ব-ব্যাখ্যা প্রক্রিয়া নয় ঠিক যেমন প্রশিক্ষকের ব্যাখ্যা যিনি শিক্ষার্থীর পূর্ব জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন নন। হাউসম্যান এবং ভ্যানলেহন (বিসরা এট আল-এ উদ্ধৃত হিসাবে[) এই পণ্য-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যাটিকে কভারেজ হাইপোথিসিস বলে অভিহিত করে, বর্ণনা করে যে স্ব-ব্যাখ্যা "অতিরিক্ত সামগ্রী যা নির্দেশমূলক উপকরণগুলোতে উপস্থিত নেই" তৈরি করে কাজ করে (পৃষ্ঠা ৩০৩)। স্ব-ব্যাখ্যার আরও ব্যাপকভাবে গৃহীত তত্ত্বগুলো স্ব-ব্যাখ্যা পণ্যটিকে একটি জেনারেটিভ জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করে যখন কভারেজ হাইপোথিসিস স্ব-ব্যাখ্যার জ্ঞানীয় পণ্যটিকে নির্দেশমূলক ব্যাখ্যার পণ্যের অনুরূপ বিবেচনা করে। একটি নির্দেশমূলক ব্যাখ্যা পছন্দ করা হয়, যখন শিক্ষার্থী যথাযথ স্ব-ব্যাখ্যা তৈরি করতে ব্যর্থ হয় (বিসরা এল  ভ্যানলেহন, জোন্স এবং চি[ স্ব-ব্যাখ্যা কেন কার্যকর তার জন্য তিনটি সম্ভাব্য কারণ প্রস্তাব করে। প্রথমত, স্ব-ব্যাখ্যা একটি প্ররোচনামূলক পদ্ধতি। অর্থাৎ, এটি শিক্ষার্থীদের তাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারে শূন্যস্থান চিহ্নিত করে পূরণ করে। দ্বিতীয়ত, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের মূল প্রেক্ষাপটের সমাধান এবং পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে চিন্তা করতে সহায়তা করে বলে মনে হয় যেখানে তারা সমস্যার আরও সাধারণ অবস্থায় উত্পাদিত হয়েছিল। তৃতীয়ত, এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাদৃশ্যমূলক ক্ষমতা বাড়ায় যা অবশেষে সমস্যার একটি শক্তিশালী বিস্তার তৈরি করে। অতিরিক্তভাবে, ওয়াইলি এবং চি, প্রস্তাব দেয় যে স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়াটি শিক্ষার্থীদের অসঙ্গতিগুলো সনাক্ত করতে এবং তাদের মানসিক মডেলগুলোতে যথাযথ অভিযোজন করতে সহায়তা করে। স্ব-ব্যাখ্যা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ডোমেনের আরও ভাল ঘোষণামূলক জ্ঞান অর্জন করতে সহায়তা করে এবং তাদের সমস্যা সমাধানের  বাড়ায়। == নির্দেশমূলক ব্যাখ্যার চেয়ে স্ব-ব্যাখ্যার সুবিধা == বিসরা এবং তার সহকর্মীদের দ্বারা স্ব-ব্যাখ্যা সম্পর্কিত একটি মেটা-বিশ্লেষণ অধ্যয়নের ফলাফল কভারেজ হাইপোথিসিসের বিরুদ্ধে। এই মেটা-বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে স্ব-ব্যাখ্যা নির্দেশমূলক ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি কার্যকর। এই গবেষণায়, বিসরা এবং তার সহকর্মীরা দেখায় যে স্ব-ব্যাখ্যা (জি = .২৯) নির্দেশমূলক ব্যাখ্যার চেয়ে আরও সনাক্তযোগ্য সুবিধা রয়েছে। লেখকরা স্ব-ব্যাখ্যার এই শ্রেষ্ঠত্বকে নতুন জ্ঞানের সাথে পূর্ববর্তী জ্ঞানের মিলিত করার জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকে দায়ী করেন যা শিক্ষার্থী স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষার্থীদের একটি অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। যখন পূর্ববর্তী জ্ঞান এবং নতুন তথ্যের মধ্যে একটি অর্থপূর্ণ সমিতি গঠিত হয়, তখন জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলো সক্রিয় হয়, নতুন উত্পন্ন ব্যাখ্যাটি পরে স্মরণ করা হয় এবং আরও যুক্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয় (বিসরা এট আল)। ওয়াইলি এবং চি[ বলেছেন যে প্রম্পটগুলোর সাথে স্ব-ব্যাখ্যা নির্দেশমূলক ব্যাখ্যার সাথে যুক্ত স্ব-বহিষ্কারের চেয়ে আরও কার্যকর হতে পারে কারণ পূর্ববর্তী পদ্ধতিটি কোনও প্রশিক্ষণ না পাওয়া, কোনও ত্রুটি সংশোধন বা কোনও ব্যাখ্যা না পেয়েও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় দক্ষতাকে সক্রিয় করে। আয়নাস, সেরনুস্কা এবং কলিয়ার। তিনটি কারণে শিক্ষক, বই বা অন্যান্য উত্স দ্বারা প্রেরিত ব্যাখ্যার চেয়ে আত্ম-ব্যাখ্যা আরও কার্যকর বলে বিশ্বাস করুন: ১. এটি শিক্ষার্থীদের তাদের পূর্ব জ্ঞানকে সক্রিয় করে তোলে, তাই স্ব-ব্যাখ্যা একটি জ্ঞান-নির্মাণ কার্যকলাপ। ২. এটি শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করে এবং ৩. যখনই তাদের প্রয়োজন হয় তখন শিক্ষার্থীরা এই উত্সটিতে অ্যাক্সেস পায়। == মাল্টিমিডিয়া ঝোঁক পরিবেশ, পূর্ব জ্ঞান এবং স্ব-ব্যাখ্যা == [ মাল্টিমিডিয়া লার্নিং পরিবেশগুলো পাঠ্য, অ্যানিমেশন, চিত্রণ (যেমন চিত্র, ডায়াগ্রাম এবং ছবি), পাঠ্য এবং বর্ণনার সংমিশ্রণের মাধ্যমে শেখার সুবিধার্থে এবং সাধারণত কম্পিউটারাইজড। মাল্টিমিডিয়া শিক্ষার্থীদের উপকার করে কারণ এটি তাদের উপস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতি সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, ডায়াগ্রামগুলো শিক্ষার্থীদের স্থানিক তথ্য সম্পূর্ণরূপে বুঝতে সহায়তা করে এবং বর্ণনা একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করে যাতে শিক্ষার্থীরা কেবল পাঠ্যের চেয়ে এটি থেকে আরও বেশি অর্জন করে। মাল্টিমিডিয়া থেকে শেখার সময়, শিক্ষার্থীদের মৌখিক এবং অমৌখিক উভয় ডেটা এনকোড করার সুযোগ রয়েছে এবং তাদের  থেকে উপস্থাপিত তথ্য একত্রিত করতে সক্ষম হওয়া উচিত। তবে এটি লক্ষণীয় যে মাল্টিমোডাল উপস্থাপনার মাধ্যমে শেখা কেবল তখনই খুব উপকারী হয় যখন শিক্ষার্থীরা প্রতিটি উত্স জুড়ে তথ্য সংহত করার জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ায় নিজেকে জড়িত করতে পারে। ওয়াইলি এবং চি[ মনে করেন যে মাল্টিমিডিয়া লার্নিং পরিবেশে জ্ঞানীয়ভাবে জড়িত হওয়ার একটি উপায় হলো স্ব-ব্যাখ্যা যা তথ্যের একীকরণের পক্ষে সহায়ক। বুচার একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মাল্টিমিডিয়া উত্স নিয়ে কাজ করার সময় স্ব-ব্যাখ্যা করা শিক্ষার্থীরা একক মাঝারি সংস্থান (কেবল পাঠ্য) অধ্যয়ন করার সময় স্ব-ব্যাখ্যা করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি শিখেছে। আয়নাস, সার্নুস্কা এবং কলিয়ারের একটি গবেষণা[ গবেষণায় দেখা গেছে যে পূর্ব জ্ঞান থাকা রসায়ন সমস্যা সমাধানের জন্য স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা বাড়ায়। এই গবেষণায়, শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে যে তারা দুটি উপায়ে পূর্বের জ্ঞান এবং স্ব-ব্যাখ্যা পদ্ধতির মিথস্ক্রিয়া থেকে উপকৃত হয়েছে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা যত বেশি রসায়নের জ্ঞান নিজেদের কাছে প্রকাশ করেছিল, তাদের আত্ম-ব্যাখ্যা তত বেশি কার্যকর হয়েছিল। অন্য কথায়, স্ব-ব্যাখ্যার কর্মসংস্থান শিক্ষার্থীদের তাদের পূর্বের জ্ঞানকে হাতের ক্রিয়াকলাপগুলোর সাথে একীভূত করতে সহায়তা করে বলে মনে হয়। দ্বিতীয়ত, স্ব-ব্যাখ্যা-ভিত্তিক কৌশলগুলো কাজ করার জন্য, শিক্ষার্থীদের পূর্বের জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট স্তর, একটি "থ্রেশহোল্ড" অর্জন করা উচিত। এর অর্থ হলো স্ব-ব্যাখ্যা ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে সহায়ক নয় যখন তাদের ডোমেন সম্পর্কে সামান্য পূর্ব জ্ঞান থাকে। অন্য কথায়, সামান্য পূর্ব জ্ঞান কেবল শিক্ষার্থীদের কোনও জ্ঞান কাটাতে সহায়তা করে না তবে এটি সফল কর্মক্ষমতাকেও বাধা দেয়। যখন শিক্ষার্থীদের রসায়ন সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সম্পর্কে উচ্চ ধারণা থাকে তখন তারা শক্তিশালী স্ব-ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং যখন তারা থ্রেশহোল্ডে পৌঁছায় না, তখন তাদের একটি ডোমেনের বিভিন্ন অংশের বোঝাপড়া থাকতে পারে তবে তারা অংশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে সচেতন নয় এবং তাদের লিঙ্ক করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, তারা অংশগুলো এবং ধারণাগুলো আলাদাভাবে বোঝে তবে তারা তাদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া খুঁজে পায়। সুতরাং, যখন শিক্ষার্থীরা স্ব-ব্যাখ্যা করছে, তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের ভাণ্ডারে অনুরূপ ধারণা, শর্ত বা পদ্ধতিগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে যাতে তারা নতুন জ্ঞান তৈরি করতে পারে এবং প্রদত্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। লেখকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে পুরো পদ্ধতিটি মসৃণভাবে সরানো হয় না যখন শিক্ষার্থী পূর্বের জ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তি ধারণ করে না। এছাড়াও, ইয়েহ, চেন, হাং এবং হোয়াং দাবি করেছেন যে পূর্বের জ্ঞানের স্তর শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করার উপায়কে প্রভাবিত করে। তারা বিভিন্ন স্তরের প্রিও সহ ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর উপর একটি গবেষণা করেছিলেনগতিশীল মাল্টিমিডিয়া সামগ্রীর সাথে শেখার সময় শিক্ষার্থীদের প্রম্পট প্রভাব ব্যাখ্যা করার জন্য আর জ্ঞান। তারা দুটি ধরণের স্ব-ব্যাখ্যা প্রম্পট তৈরি করেছিল এবং শেখার ফলাফল, জ্ঞানীয় লোড, শেখার সময়কাল এবং শেখার দক্ষতা সহ বেশ কয়েকটি সূচক প্রয়োগ করেছিল। যুক্তি-ভিত্তিক প্রম্পটটি শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের ক্রিয়াটি যুক্তিযুক্ত করে তোলে এবং ভবিষ্যদ্বাণী-ভিত্তিক একটিতে শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের আসন্ন ক্রিয়াটি অনুমান করতে হবে এবং যদি তাদের ভবিষ্যদ্বাণীটি ভুল হয় তবে তাদের যুক্তি দিতে হবে। ফলাফলগুলো দেখায় যে কম পূর্ব জ্ঞান ছিল এমন শিক্ষার্থীরা যুক্তি-ভিত্তিক প্রম্পটগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় যখন উচ্চ-জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যদ্বাণী-ভিত্তিক প্রম্পটগুলো থেকে সর্বাধিক উপকৃত হয়। উপসংহারে, এটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে শিক্ষার্থীদের পূর্বের জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছানো উচিত এবং ডোমেনের একটি শালীন পটভূমি তৈরি করা উচিত, যাতে তারা নতুন তথ্য বুঝতে পারে এবং আরও ভালভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করতে পারে। তদুপরি, পূর্বের জ্ঞানের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে সম্পাদন করে। সুতরাং, পূর্ববর্তী জ্ঞান শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। মাল্টি-মিডিয়া পরিবেশের সাথে কাজ করার সময়, উচ্চতর জ্ঞানের সাথে শিক্ষার্থীরা অ্যানিমেশনের পরবর্তী দৃশ্যের পূর্বাভাস দিতে পছন্দ করে এবং কম জ্ঞানের সাথে অ্যানিমেশনের ক্রিয়াকে যুক্তি দেওয়ার পক্ষে থাকে। == আত্ম-ব্যাখ্যার নির্দেশের জন্য প্রভাব == আয়নাস, সার্নুস্কা এবং কলিয়ারের মতে[, স্ব-ব্যাখ্যার প্রয়োগ উত্পাদনশীল এমন একটি থ্রেশহোল্ড সন্ধানের জন্য পাঠ্যক্রমের নির্দেশমূলক নকশার পরামর্শ রয়েছে। যদিও স্ব-ব্যাখ্যা বিভিন্ন শেখার ক্রিয়াকলাপের সময় শিক্ষার্থীদের আরও নিবিড় জ্ঞানীয় জড়িততার মাধ্যমে টিউটরিং এবং পর্যালোচনা সেশন বা সংক্ষিপ্ত স্থানান্তর সমস্যার সুবিধা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে শিক্ষক বা প্রশিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের শেখার চক্রের খুব তাড়াতাড়ি স্ব-ব্যাখ্যা ব্যবহার করতে বলা উচিত নয়। সুতরাং শেখার চক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে, স্ব-ব্যাখ্যা সুপারিশ করা হয় না। পরিবর্তে, অন্যান্য জ্ঞানীয় পদ্ধতি এবং পদ্ধতি প্রয়োগ করার জন্য এটি অত্যন্ত পরামর্শ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিগুলো শেখার চক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছাতে সহায়তা করে যা স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহারকে উপকারী করে তোলে লেখকরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে স্ব-ব্যাখ্যার সুবিধাটি হলো শিক্ষার্থীরা যখন স্ব-ব্যাখ্যা করতে শেখে, তখন তারা অন্যান্য ক্ষেত্র এবং সমস্যাগুলোতে এটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করে কারণ স্ব-ব্যাখ্যা একটি ডোমেন-স্বাধীন জ্ঞানীয় কৌশল। স্ব-ব্যাখ্যার অসুবিধা হলো যখন শিক্ষার্থীদের সাধারণ ডোমেন প্রসারিত হয়, তখন তাদের ডোমেন-নির্দিষ্ট জ্ঞানটি এখনও প্রসারিত করা দরকার যাতে স্ব-ব্যাখ্যা সর্বোত্তমভাবে কাজ করতে পারে, তবে শিক্ষার্থীরা যদি কোনও নির্দিষ্ট ডোমেন অর্জনের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তবে তারা স্ব-ব্যাখ্যার অকার্যকারিতা অনুভব করতে পারে অতএব, যেমন আয়নাস, সেরনুস্কা এবং কলিয়ার যুক্তি দিয়েছিলেন, একটি নির্দেশমূলক নকশা ডিজাইন করার সময়, শিক্ষাবিদদের এই জাতীয় প্রবণতা বিবেচনা করা উচিত এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা উচিত যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের উপযুক্ত স্তরে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্ব-ব্যাখ্যা ব্যবহার থেকে নিষিদ্ধ করবে। সামগ্রিকভাবে, এই গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করতে বলার আগে, তাদের পূর্বের জ্ঞান প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। তারপরে, এই মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে শিক্ষাবিদরা কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা সামনে রাখবেন তা পরিকল্পনা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞানের মূল্যায়ন করার জন্য, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের একটি নতুন সমস্যা সমাধানের জন্য জিজ্ঞাসা করার আগে আরও নির্দিষ্ট গাইডিং প্রশ্ন দিতে পারেন। শিক্ষার্থীরা যখন বিষয়বস্তুটি বুঝতে পারে, তখন শিক্ষকরা স্ব-ব্যাখ্যা প্রকাশের জন্য সাধারণ প্রম্পট প্রয়োগ করতে পারেন। প্রশিক্ষকরা কোনও সমস্যা সমাধানের সময় শিক্ষার্থীদের নিজেরাই এই প্রম্পটগুলো ব্যবহার করতে বলতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, স্ব-ব্যাখ্যা ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব শিক্ষার্থীদের জন্য যা কোনও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করার সময় নিজেরাই স্ব-ব্যাখ্যা কৌশলগুলো সক্রিয় করার ক্ষমতা অর্জন করছে আইওনাসের মতে, সেরনুস্কা এবং কলিয়ার আরও একটি কৌশল হলো শিক্ষকদের যুক্তি কাঠামোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিজেরাই ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করা। এই ক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীরা প্রাক-পরিকল্পিত প্রম্পটগুলো ব্যবহার করে যা তাদের ইতিমধ্যে কোনও সমস্যা সমাধান করার উপায় সম্পর্কে একটি যুক্তি তৈরি করতে সহায়তা করে। অতএব, এই কৌশলে পূর্ব-পরিকল্পিত যুক্তি প্রম্পটগুলো হলো যা স্ব-ব্যাখ্যা প্রকাশ করে। স্ব-ব্যাখ্যা প্রম্পটগুলো ডিজাইন করার জন্য কোনও সর্বজনীন প্রেসক্রিপশন নেই কারণ তারা বিষয়-নির্ভর। প্ররোচিত প্রশ্নগুলো সাধারণ থেকে নির্দিষ্ট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয় এবং স্ব-ব্যাখ্যা আচরণ প্রকাশের জন্য সর্বোত্তম কৌশলটি বোঝার জন্য প্রশিক্ষকের দায়িত্ব। শিক্ষার্থীদের আরও সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করার জন্য একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে সহায়তা করার জন্য, শিক্ষকদের বিষয়টি পরিচিত না হলে সহজ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তারপরে ধীরে ধীরে আরও নির্দিষ্ট প্রশ্নের দিকে এগিয়ে যান == বিভিন্ন ধরনের আত্ম-ব্যাখ্যা == যদি আমরা একটি ধারাবাহিকতায় স্ব-ব্যাখ্যা রাখি, তবে এক চরম পর্যায়ে আমাদের কাছে খোলামেলা স্ব-ব্যাখ্যা প্রম্পট রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্যের সাথে পূর্বের জ্ঞানকে লিঙ্ক করতে প্ররোচিত করে। স্ব-ব্যাখ্যার এই ফর্মটিতে শিক্ষার্থীরা তাদের চিন্তাভাবনা বর্ণনা করতে মুক্ত এবং পূর্ব-আরোপিত ধারণাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয় না। যেহেতু শিক্ষার্থীর চিন্তা অন্যের ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না এবং মৌলিক হয় তাই এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাখ্যা। ধারাবাহিকতার অন্য প্রান্তে মেনু-ভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রম্পট। এই ধরণের ব্যাখ্যাগুলোর একটি তালিকা শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয়, তারপরে তাদের তালিকা থেকে চয়ন করতে বলা হয় এবং তাদের পছন্দের কারণটি স্ব-ব্যাখ্যা করার অনুরোধ জানানো হয় অ্যাটকিনসন, রেঙ্কল এবং মেরিলের একটি গবেষণার ফলাফল[ প্রমাণিত হয়েছে যে একাধিক-পছন্দ মেনু থেকে নির্বাচন করার সময় যে শিক্ষার্থীরা স্ব-ব্যাখ্যা করার জন্য প্ররোচিত হয়েছিল তারা স্ব-ব্যাখ্যা করার অনুরোধ জানানো হয়নি এমন শিক্ষার্থীদের তুলনায় নিকটবর্তী এবং দূরবর্তী উভয় স্থানান্তর পরিস্থিতিতে বেশি সফল হয়েছিল। এই সত্যটি পরামর্শ দেয় যে শিক্ষার্থীদের মেনুগুলোর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে প্ররোচিত করা একটি কার্যকর শিক্ষাগত কৌশল হতে পারে। ওপেন-এন্ডেড এবং মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতিগুলো ধারাবাহিকতার দুটি প্রান্তে স্থাপন করা হলেও, ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ডেড এবং সংস্থান-ভিত্তিক প্রম্পটগুলো দুটি প্রান্তের মধ্যে পড়ে। ফোকাসড প্রম্পট এবং ওপেন-এন্ডেড প্রম্পটগুলো দুটি উপায়ে অনুরূপ। উভয়ই জেনারেটিভ এবং শিক্ষার্থীদের ধারণাগুলোকে প্রভাবিত করে না। কিন্তু ফোকাসড অ্যাপ্রোচে স্ব-ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কে নির্দেশটি ওপেন-এন্ডেড টাইপের চেয়ে বেশি স্পষ্ট। ওপেন-এন্ডেড স্ব-ব্যাখ্যা প্রম্পটগুলোতে শিক্ষার্থীদের কেবল নতুন তথ্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, তবে কেন্দ্রীভূত স্ব-ব্যাখ্যায় শিক্ষার্থীদের সরাসরি একটি নির্দিষ্ট উপায়ে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। স্ব-ব্যাখ্যা ভারা আরও বেশি ফোকাসড। স্ক্যাফোল্ডেড বা সহায়তাযুক্ত স্ব-ব্যাখ্যা প্রম্পটগুলো একটি ক্লোজ বা ফিল-ইন-দ্য-গ্যাপ পদ্ধতির সাথে মোকাবিলা করে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শূন্যস্থান পূরণ করে ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ করতে হবে। ওয়াইলি এবং চি[, ধরে রেখেছেন যে এই পদ্ধতিটি কম অভিজ্ঞ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সুবিধাজনক হতে পারে যাদের নিজেরাই খোলামেলা স্ব-ব্যাখ্যা তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পূর্ব জ্ঞান নেই। সংস্থান-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যা মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতির অনুরূপ। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত শব্দকোষ থেকে নির্বাচন করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপগুলো ন্যায়সঙ্গত বা ব্যাখ্যা করতে হবে। তারা ব্যাখ্যাটি পরীক্ষা করার জন্য এই শব্দকোষটিকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের ব্যাখ্যাটি স্মরণ করার পরিবর্তে সমস্যার স্বীকৃতি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। ওয়াইলি এবং চি তার শব্দকোষের বৃহত আকারের বৈশিষ্ট্য দ্বারা মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতি থেকে সংস্থান-ভিত্তিক পদ্ধতির পার্থক্য করে। ওয়াইলি এবং চি[ বিশ্বাস করেন যে স্ব-ব্যাখ্যার সমস্ত বিভিন্ন রূপ শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে চিন্তা করতে এবং পূর্বের জ্ঞানের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি এবং তাদের মানসিক মডেলটি সংশোধন করার মাধ্যমে নতুন তথ্য শেখার জন্য জ্ঞানীয়ভাবে জড়িত করে। গবেষণার উপর ভিত্তি করে, বিভিন্ন ধরণের স্ব-ব্যাখ্যার মধ্যে, ওপেন-এন্ডেড স্ব-ব্যাখ্যা পদ্ধতির কৌশলগুলোর চেয়ে বিশেষত মাল্টিমিডিয়া লার্নিং পরিবেশে কম উপকারী যা আরও ফোকাস-ভিত্তিক দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করে। গবেষণাটি আরও পরামর্শ দেয় যে ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড এবং সংস্থান-ভিত্তিক পদ্ধতির সহ স্ব-ব্যাখ্যা প্রম্পটগুলো যা শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে তা খোলামেলা ব্যাখ্যার তুলনায় গভীর বোধগম্যতার পক্ষে সহায়ক। ভ্যান ডার মেইজ এবং ডি জনজি একটি সিমুলেশন-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের দুটি মডেল তৈরি করেছে যার মধ্যে মাল্টি মোডাল উপস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একটি মডেলে, শিক্ষার্থীদের একটি বিস্তৃত প্রম্পটের উত্তর দিয়ে স্ব-ব্যাখ্যা করতে বলা হয় যাতে তাদের উত্তরটি রক্ষা বা ন্যায়সঙ্গত করার প্রয়োজন হয় (ওপেন-এন্ডেড স্ব-ব্যাখ্যা)। অন্য মডেলটিতে, শিক্ষার্থীদের আরও সরাসরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের প্রদত্ত দুটি উপস্থাপনা কীভাবে সংযুক্ত ছিল তা স্পষ্ট করতে বলা হয়েছিল (ফোকাসড স্ব-ব্যাখ্যা)। গবেষণার ফলাফলগুলো সিমুলেশনগুলোর দুটি মডেলের উন্নত পারফরম্যান্সের ইঙ্গিত দেয়, তবে শিক্ষার্থীরা ফোকাসড স্ব-ব্যাখ্যা গ্রুপে আরও শেখার লাভ অর্জন করে। অতএব, ফলাফলগুলো মাল্টিমিডিয়া লার্নিং এনভায়রনমেন্টের জন্য অনুমানটি প্রমাণ করে যে আরও কেন্দ্রীভূত স্ব-ব্যাখ্যা প্রম্পট একটি বিস্তৃত ফ্রি-ফর্ম, ওপেন-এন্ডেড প্রম্পটের চেয়ে ভাল। = স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের মডেল = == জিমারম্যানের সাইক্লিক এসআরএল মডেল == জিমারম্যানের সাইক্লিক এসআরএল মডেল স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াটিকে তিনটি বিশিষ্ট পর্যায়ে বিভক্ত করে: ফোরথট ফেজ, পারফরম্যান্স ফেজ এবং স্ব-প্রতিবিম্ব পর্ব। পূর্বাভাস পর্বটি শেখার প্রচেষ্টার আগে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়া এবং বিশ্বাসকে বোঝায়। পারফরম্যান্স পর্বটি আচরণগত বাস্তবায়নের সময় ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াগুলোকে বোঝায় এবং স্ব-প্রতিবিম্ব প্রতিটি শেখার প্রচেষ্টার পরে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াগুলোকে বোঝায়। === পূর্বাভাস পর্ব === ফোরথট ফেজ প্রক্রিয়াগুলোর দুটি প্রধান শ্রেণি রয়েছে: টাস্ক বিশ্লেষণ এবং স্ব-অনুপ্রেরণা। টাস্ক বিশ্লেষণে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা জড়িত। স্ব-অনুপ্রেরণা শেখার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত হয়, যেমন শেখার ব্যক্তিগত ক্ষমতা এবং শেখার ব্যক্তিগত পরিণতি সম্পর্কে প্রত্যাশা সম্পর্কে স্ব-কার্যকারিতা বিশ্বাস। '''লক্ষ্য সেটিং''' আপনাকে কী অর্জন করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কীভাবে সেখানে পৌঁছাতে হবে  দেখছে। লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য তথ্যের একটি প্রাথমিক বোঝার প্রয়োজন যা শিখতে হবে, কারণ একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য শিক্ষার্থীদের ফলাফলটি কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে কিছু জ্ঞান থাকতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি অনুপ্রেরণা তৈরি করতে সহায়তা করে এবং শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শেখার লক্ষ্য অর্জনে অনুপ্রাণিত করতে পারে। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য তৈরি করা অপরিহার্য যা আপনি পৌঁছাতে সক্ষম। সুতরাং নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো খুব বেশি বা খুব কম হওয়া উচিত নয়। এটি আপনার অর্জন এবং সাফল্যের ক্ষেত্রে হওয়া উচিত। অর্জনযোগ্য লক্ষ্যগুলো আকাঙ্ক্ষা এবং অনুপ্রেরণা প্রচার করে কারণ সেগুলো সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমন শিক্ষার্থীদের দ্বারা একাডেমিক সাফল্যের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যারা নিজের জন্য নির্দিষ্ট প্রক্সিমাল লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যেমন বানান পরীক্ষার জন্য একটি শব্দ তালিকা মুখস্থ করা এবং বানান কৌশলগুলো ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে এমন শিক্ষার্থীদের দ্বারা, যেমন শব্দগুলোকে সিলেবলে বিভক্ত করা।  লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য কেউ নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে পারে এমন কিছু প্রশ্ন নিম্নরূপ: আমি কী অর্জন করতে চাই? কোন পদক্ষেপগুলো আমাকে আমার লক্ষ্যে নিয়ে যাবে? '''কৌশলগত পরিকল্পনা''' লক্ষ্য নির্ধারণের অনুরূপ যাতে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণের পরে, শিক্ষার্থীদের সেই শেখার লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা উচিত।  কৌশলগত পরিকল্পনা শেখার লক্ষ্যে পৌঁছানোর আরও বিস্তারিত উপায়। একটি কৌশলগত পরিকল্পনা একটি বড় লক্ষ্যের মধ্যে কয়েকটি ছোট লক্ষ্য নিয়ে গঠিত। একটি ভাল পরিকল্পনা করার জন্য, শিক্ষার্থীদের শেখার কাজগুলো, শেখার উদ্দেশ্যগুলো এবং তারা যে দিকটি অনুসরণ করতে চায় তা বুঝতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি চৌদ্দটা অধ্যায় নিয়ে একটা পরীক্ষার জন্য সাত দিন সময় পায়, তাহলে সে সেই শিক্ষাকে প্রতিদিন দুটো অধ্যায় পড়ার মধ্যে আলাদা করতে পারে। প্রতিদিন তাকে কতটুকু পড়াশুনা করতে হবে তা কৌশলগতভাবে পরিকল্পনা করে সাত দিনে চৌদ্দটি অধ্যায় শেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত হবে। কৌশলগত পরিকল্পনাগুলো অ্যাথলেটিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এক মাসের মধ্যে একটি ম্যারাথন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য, প্রতি সপ্তাহে তার কতটা উন্নতি করা উচিত এবং প্রতিদিন এবং প্রতি সপ্তাহে কতক্ষণ চালানো উচিত তার একটি টাইমলাইন তৈরি করতে পারে, যাতে তিনি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রতিটি দিন এবং প্রতিটি সপ্তাহের ওয়ার্কআউট যুক্ত করতে পারেন। কৌশলগত পরিকল্পনাগুলো বিকাশে সহায়তা করার জন্য, শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে, যেমন: আমার শেখার উদ্দেশ্য কী? আমি কীভাবে আমার শেখার লক্ষ্যে পৌঁছাব? আমি কীভাবে আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমার শেখার কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে পারি? প্রতিটি লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আমার কি যথেষ্ট সময় আছে? এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আমার লক্ষ্যগুলো কি বাস্তবসম্মত? এই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য আমার কীভাবে পড়াশোনা করা উচিত? আমার ব্যক্তিত্ব কীভাবে আমাকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রভাবিত করে? আমি যখন শিখছি তখন কী আমাকে বিভ্রান্ত করতে পারে? '''স্ব-প্রেরণা বিশ্বাসের''' মধ্যে স্ব-কার্যকারিতা, ফলাফলের প্রত্যাশা, অভ্যন্তরীণ আগ্রহ এবং শেখার লক্ষ্য অভিযোজন অন্তর্ভুক্ত।  এই ক্ষেত্রে স্ব-কার্যকারিতা হলো কোনও কাজ শেখার ক্ষমতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস। উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন শিক্ষার্থী ক্লাসে একটি কঠিন ধারণা শিখছে, তখন সে মনে করতে পারে যে সে এটি সহজেই বুঝতে যাচ্ছে বা সে ভয় পেতে পারে যে সে হারিয়ে যাচ্ছে। "স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের জন্য স্ব-কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে জড়িত এবং অবিচল থাকার পরিমাণকে প্রভাবিত করে। উচ্চতর স্তরের স্ব-কার্যকারিতা স্কুলের কৃতিত্ব এবং আত্ম-সম্মানের সাথে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত। শিক্ষকরা যথাযথ স্তরের অসুবিধা এবং উপযুক্ত পরিমাণে ভারা সহ শেখার কাজগুলো সরবরাহ করে স্ব-কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারেন। শ্রাও, ক্রিপেন এবং হার্টলি পরামর্শ দিয়েছেন যে শিক্ষার্থীদের স্ব-কার্যকারিতা বাড়ানোর দুটি উপায় রয়েছে। "একটি হলো বিশেষজ্ঞ (উদাঃ, শিক্ষক) এবং অ-বিশেষজ্ঞ (উদাঃ, শিক্ষার্থী সহকর্মী) মডেল উভয়ই ব্যবহার করা", "দ্বিতীয়টি হলো শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব তথ্যমূলক প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করা"।  ফলাফল প্রত্যাশা শেখার পরিণতি সম্পর্কে ব্যক্তিগত প্রত্যাশা, যেমন শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করে যে তারা অর্থনীতি ক্লাসে একটি কঠিন ধারণা শিখতে পারে এবং ভবিষ্যতে এই জ্ঞান ব্যবহার করতে যাচ্ছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফলাফলের প্রত্যাশা প্রচার করতে পারেন যে তথ্যটি ভবিষ্যতে কার্যকর হতে চলেছে। অন্তর্নিহিত আগ্রহ তার নিজস্ব যোগ্যতার জন্য শিক্ষার্থীদের টাস্ক দক্ষতার মূল্যায়নকে বোঝায় এবং শেখার লক্ষ্য অভিযোজন তার নিজস্ব যোগ্যতার জন্য শেখার প্রক্রিয়াটিকে মূল্যবান বোঝায়। উচ্চ অন্তর্নিহিত আগ্রহের সাথে শিক্ষার্থীরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত ফ্যাশনে শিখতে আরও অনুপ্রাণিত হয় কারণ তারা টাস্ক দক্ষতা অর্জন করতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষার্থী যিনি শিক্ষক হতে চান, তিনি শিক্ষাগত জ্ঞান সত্যিই কঠোরভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন।  শিক্ষকরা জ্ঞানের প্রয়োগ প্রবর্তন করে অন্তর্নিহিত আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে পারেন। শিক্ষকরা বিভিন্ন পদ্ধতি (ভিডিও ক্লিপ, গ্রাফ) ব্যবহার করে ক্লাসকে বিনোদনমূলক করে বা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে শেখার লক্ষ্য অভিযোজন বাড়িয়ে তুলতে পারেন। শ্ক্র এট আল বিজ্ঞানের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনয় স্ব-কার্যকারিতা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসের সংমিশ্রণ হিসাবে প্রেরণা উপাদানটি বিস্তৃত করেছিলেন। জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাস হল "জ্ঞানের উৎপত্তি এবং প্রকৃতি সম্পর্কে সেই বিশ্বাস"। এই বিশ্বাসগুলো সমস্যা সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করে, যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। === পারফরম্যান্স পর্ব === পারফরম্যান্স ফেজ প্রক্রিয়াগুলো দুটি প্রধান শ্রেণিতে পড়ে: স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ। আত্ম-নিয়ন্ত্রণ বলতে নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা কৌশলগুলোর স্থাপনাকে বোঝায় যা পূর্বাভাসের পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছিল। স্ব-পর্যবেক্ষণ বলতে এই ঘটনাগুলোর কারণ খুঁজে বের করার জন্য স্ব-রেকর্ডিং ব্যক্তিগত ঘটনা বা স্ব-পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের প্রায়শই তাদের সময় ব্যবহারের স্ব-রেকর্ড করতে বলা হয় যাতে তারা পড়াশোনায় কতটা সময় ব্যয় করে সে সম্পর্কে সচেতন হয়। স্ব-পর্যবেক্ষণ, স্ব-পর্যবেক্ষণের একটি গোপন রূপ, ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপের জ্ঞানীয় ট্র্যাকিংকে বোঝায়, যেমন কোনও প্রবন্ধ লেখার সময় শব্দগুলোকে মূলধন করতে ব্যর্থ হওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি। '''স্ব-নিয়ন্ত্রণ''' প্রক্রিয়া, যেমন স্ব-নির্দেশনা, চিত্রাবলী, মনোযোগ ফোকাসিং এবং টাস্ক কৌশলগুলো শিক্ষার্থী এবং পারফর্মারদের শারীরিক কার্যের দিকে মনোনিবেশ করতে এবং তাদের সমাধানের প্রচেষ্টাকে অনুকূল করতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, স্ব-নির্দেশের মধ্যে কোনও কাজ সম্পাদন করার সাথে সাথে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তা স্পষ্টভাবে বা গোপনে বর্ণনা করা জড়িত, যেমন গণিতের সমস্যা সমাধান করার সময় "উচ্চস্বরে চিন্তা করা"। চিত্রাবলী, বা প্রাণবন্ত মানসিক চিত্র গঠন, এনকোডিং এবং পারফরম্যান্সে সহায়তা করার জন্য আরেকটি বহুল ব্যবহৃত স্ব-নিয়ন্ত্রণ কৌশল। আত্ম-নিয়ন্ত্রণের একটি তৃতীয় রূপ, মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ, কারও ঘনত্বকে উন্নত করার জন্য এবং সমস্যা সমাধানের সময় অন্যান্য গোপন প্রক্রিয়া বা বাহ্যিক ঘটনাগুলো স্ক্রিন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।  নিয়ন্ত্রণের স্বেচ্ছাসেবী পদ্ধতিগুলো, যেমন বিভ্রান্তি উপেক্ষা করা এবং অতীতের ভুলগুলো সম্পর্কে গুঞ্জন এড়ানো, সমস্যা সমাধানের উন্নতিতে কার্যকর।  টাস্ক কৌশলগুলো কোনও কাজকে তার প্রয়োজনীয় অংশগুলোতে হ্রাস করে এবং অর্থপূর্ণভাবে পুনর্গঠন করে সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারে। পারফরম্যান্স ফেজ প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় প্রধান শ্রেণি হলো '''স্ব-পর্যবেক্ষণ'''। এটি কোনও ব্যক্তির নিজের পারফরম্যান্সের নির্দিষ্ট দিকগুলো, এটি ঘিরে থাকা পরিস্থিতি এবং এটি যে প্রভাবগুলো তৈরি করে তার ট্র্যাকিংকে বোঝায়।  পূর্বাভাসের সময় শ্রেণিবদ্ধ প্রক্রিয়া লক্ষ্য নির্ধারণ করা শিক্ষার্থীরা পারফরম্যান্সের সময় আরও কার্যকরভাবে স্ব-পর্যবেক্ষণ করতে পারে, কারণ এই কাঠামোগতভাবে সীমাবদ্ধ লক্ষ্যগুলো আরও বেশি ফোকাস সরবরাহ করে এবং অবশ্যই স্মরণ করা উচিত এমন তথ্যের পরিমাণ হ্রাস করে। স্ব-পর্যবেক্ষণের যথার্থতা সম্পর্কে, যে ব্যক্তিরা তাদের পূর্বের সমাধানের প্রচেষ্টাগুলো এনকোড করতে এবং স্মরণ করতে ব্যর্থ হয় তারা তাদের কৌশলগুলো সর্বোত্তমভাবে সামঞ্জস্য করতে পারে না। স্ব-রেকর্ডিং শিক্ষার্থীকে পূর্বের সমাধানের প্রচেষ্টা সম্পর্কিত আরও সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারে, সেই তথ্যটিকে সবচেয়ে অর্থবহ বলে গঠন করতে পারে এবং সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টার অগ্রগতির প্রমাণের জন্য একটি দীর্ঘ ডাটাবেস দিতে পারে।  কারও পারফরম্যান্সের স্ব-পর্যবেক্ষণ, বিশেষত অনানুষ্ঠানিক প্রসঙ্গে, নিয়মতান্ত্রিক স্ব-আবিষ্কার বা স্ব-পরীক্ষার দিকে পরিচালিত করতে পারে। '''কৌশল বাস্তবায়ন''' হলো প্রক্রিয়া যার শিক্ষার্থীরা কৌশলগত শিক্ষার পরিকল্পনা স্থাপন করে এবং প্রকৃতপক্ষে এই পরিকল্পনাগুলো শেখার অনুশীলনে প্রয়োগ করে।  কৌশল বাস্তবায়নের জন্য অনুপ্রেরণা এবং স্ব-সংকল্প প্রয়োজন। পরিবেশগত বিভ্রান্তি রোধ করার জন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই একটি দৃঢ় কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনে কী শেখার অনুপ্রেরণা ও নিরুৎসাহিত করবে তা বুঝতে হবে। শেখার অভিজ্ঞতার সাফল্যে কৌশল বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা প্রভাবিত করে। এটি কীভাবে এবং কোথায় শেখার ঘটনা ঘটবে তা সম্বোধন করে এবং শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। '''কৌশল পর্যবেক্ষণ''' হলো শেখার সুবিধার্থে কৌশলগত পরিকল্পনাগুলো কতটা কার্যকর তা পর্যবেক্ষণ করার প্রক্রিয়া। শেখার কৌশলগুলোর বাস্তবায়ন, শেখার কাজগুলোর অগ্রগতি এবং পরিবেশগুলো কীভাবে শেখার প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করে তা পর্যবেক্ষণ করে, শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার কতটা কার্যকর তা মূল্যায়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় কৌশলগুলো সামঞ্জস্য করতে পারে যাতে সর্বোত্তম শেখার অভিজ্ঞতা হতে পারে। === আত্ম-প্রতিফলন পর্ব === স্ব-প্রতিবিম্ব ফেজ প্রক্রিয়াগুলোর দুটি প্রধান শ্রেণি রয়েছে: স্ব-রায় এবং স্ব-প্রতিক্রিয়া। স্ব-বিচারের একটি রূপ, স্ব-মূল্যায়ন, কিছু স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধে স্ব-পর্যবেক্ষণ পারফরম্যান্সের তুলনা বোঝায়, যেমন কারও পূর্বের পারফরম্যান্স, অন্য ব্যক্তির পারফরম্যান্স বা পারফরম্যান্সের পরম মান। স্ব-বিচারের আরেকটি রূপ কার্যকারণ অ্যাট্রিবিউশন জড়িত, যা কারও ত্রুটি বা সাফল্যের কারণ সম্পর্কে বিশ্বাসকে বোঝায়, যেমন গণিত পরীক্ষায় স্কোর। '''আত্মবিচার:''' চারটি প্রধান ধরণের মানদণ্ড রয়েছে যা লোকেরা তাদের সমস্যা সমাধানের মূল্যায়ন করতে ব্যবহার করে: দক্ষতা, পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স, আদর্শিক এবং সহযোগী। মাস্টারি মানদণ্ড হলো সমাধানের পরম সূচক, যেমন লেখকের সমাধানের সাথে ক্রসওয়ার্ড ধাঁধা সমাধানের তুলনা করা। অসংগঠিত অনানুষ্ঠানিক প্রসঙ্গে সমস্যাগুলো সমাধান করার সময়, শিক্ষার্থীদের প্রায়শই অ-মাস্টারি মানগুলোর উপর নির্ভর করতে হবে, যেমন পূর্ববর্তী স্তরের পারফরম্যান্সের সাথে তাদের বর্তমান পারফরম্যান্সের তুলনা। স্ব-তুলনাগুলো কার্যকারিতায় অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর পরিবর্তনগুলো জড়িত এবং ফলস্বরূপ, তারা শেখার অগ্রগতি হাইলাইট করতে পারে, যা সাধারণত পুনরাবৃত্তি অনুশীলনের সাথে উন্নত হয়। কারও শেখার স্ব-মূল্যায়নের আদর্শিক মানদণ্ডে সহপাঠী বা জাতীয় প্রতিযোগিতার সময় অন্যের পারফরম্যান্সের সাথে সামাজিক তুলনা জড়িত। একটি সহযোগী মানদণ্ড প্রাথমিকভাবে শেখার কাজগুলো সম্পাদনের দিকে দলের প্রচেষ্টায় ব্যবহৃত হয়। স্ব-মূল্যায়নমূলক বিচারগুলো শেখার ফলাফল সম্পর্কে কার্যকারণ অ্যাট্রিবিউশনগুলোর সাথে যুক্ত, যেমন কোনও ব্যর্থতা কারও সীমিত দক্ষতার কারণে বা অপর্যাপ্ত প্রচেষ্টার কারণে কিনা। স্থির দক্ষতার সীমাবদ্ধতার জন্য একটি দুর্বল স্কোরকে দায়ী করা অনুপ্রেরণামূলকভাবে খুব ক্ষতিকারক হতে পারে কারণ এটি বোঝায় যে ভবিষ্যতের পরীক্ষায় উন্নতি করার প্রচেষ্টা কার্যকর হবে না। বিপরীতে, ভুল সমাধান কৌশল ব্যবহারের মতো নিয়ন্ত্রণযোগ্য প্রক্রিয়াগুলোতে একটি দুর্বল গণিত স্কোরকে দায়ী করা অনুপ্রেরণা বজায় রাখবে কারণ এটি বোঝায় যে একটি ভিন্ন কৌশল সাফল্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে। '''আত্ম প্রতিক্রিয়া''': স্ব-প্রতিক্রিয়ার একটি রূপ আত্ম-সন্তুষ্টির অনুভূতি এবং কারও কর্মক্ষমতা সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব জড়িত। আত্ম-সন্তুষ্টি বৃদ্ধি অনুপ্রেরণা বাড়ায়, অন্যদিকে আত্ম-সন্তুষ্টি হ্রাস শেখার আরও প্রচেষ্টাকে হ্রাস করে।  যখন শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তাদের আত্ম-সন্তুষ্টির শর্ত দেয়, তখন তারা তাদের ক্রিয়াগুলো পরিচালনা করতে পারে এবং তাদের প্রচেষ্টায় আরও ভালভাবে অবিচল থাকতে পারে।  স্ব-প্রতিক্রিয়াগুলোও অভিযোজিত / প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়াগুলোর রূপ নেয়। প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়াগুলো শেখার এবং সম্পাদন করার সুযোগগুলো প্রত্যাহার করে বা এড়িয়ে নিজের স্ব-চিত্র রক্ষার প্রচেষ্টাকে বোঝায়, যেমন কোনও কোর্স বাদ দেওয়া বা পরীক্ষার জন্য অনুপস্থিত থাকা। বিপরীতে, অভিযোজিত প্রতিক্রিয়াগুলো কারও শেখার পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা সমন্বয়গুলোকে বোঝায়, যেমন একটি অকার্যকর শেখার কৌশল বাতিল বা সংশোধন করা। '''ফলাফল মূল্যায়ন''' : শিখন হওয়ার পরে ফলাফল মূল্যায়ন হয়। এটি শেখার লক্ষ্যগুলো, কৌশলগত পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা করে এবং সেগুলো কতটা কার্যকর ছিল তা মূল্যায়ন করে।  ফলাফল মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার অনুশীলনের দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং ভবিষ্যতের শেখার প্রক্রিয়াগুলোর জন্য একটি ভাল পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে যে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করতে পারে তা হলো: আমার লক্ষ্যগুলো কতটা ব্যবহারিক ছিল? সেগুলো কি সম্ভব ছিল? আমার কৌশল পরিকল্পনা কতটা সঠিক ছিল? আমার কি অন্য কোনও কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল যা আমি করিনি? ভবিষ্যতে আমার শেখার বিষয়ে আমার কী পরিবর্তন করা উচিত? পরিবেশ কি বিঘ্নিত করছিল? == বোকার্টসের তিন স্তরযুক্ত এসআরএল মডেল == == এসআরএলের উইনের ফেজ মডেল == = বিষয় ও গবেষণার বিষয় = == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনয় সাংস্কৃতিক পার্থক্য == [ শেখার ধারণা, এবং বিশেষত স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ধারণা, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সাথে সম্পর্কিত। 'স্ব-নিয়ন্ত্রণ' এবং 'শেখার ধারণা' সম্পর্কিত বেশিরভাগ তথ্য পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রণ বোঝার জন্য একতরফা পদ্ধতি। বিভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার কারণে মানুষ বিভিন্ন চিন্তাভাবনার সাথেও পরিচিত হয়। যখন জাপানি শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেছিল,  তারা বিভিন্ন শেখার কৌশল শিখেছিল এবং তারা যা অভ্যস্ত তার চেয়ে জ্ঞান বোঝার নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি অচেতন হতে পারে তবে যেহেতু তাদের একটি ভিন্ন ভাষা এবং একটি ভিন্ন কাঠামোর সাথে একটি নতুন সিস্টেমে রাখা হয়েছিল, তারা তাদের কিছু শেখার কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শেখার বিষয়টি মানুষকে উপলব্ধি করে যে জ্ঞান অগত্যা দ্বৈতবাদী নয়। অর্থাৎ জ্ঞান সঠিক ও ভুল নয়, ভালো ও মন্দ নয়। জ্ঞান নমনীয় এবং গতিশীল কিছু এবং তাই, এটি প্রশ্ন করা যেতে পারে। শেখার বিষয়ে এশীয় সংস্কৃতির স্টেরিওটাইপিকাল দৃষ্টিভঙ্গি হলো জ্ঞান এমন কিছু যা একজন কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিত্ব দ্বারা শেখা হয় যিনি সঠিক এবং ভুল জানেন এবং এটি এমন কিছু যা মুখস্থ করা দরকার। এর ফলে এই ধারণা হয় যে এশিয়ার শিক্ষার্থীরা প্যাসিভ শিক্ষার্থী যারা অনুগত, বাধ্য এবং জ্ঞান বোঝার পরিবর্তে শোষণ করে। অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীদের স্টেরিওটাইপিকাল দৃষ্টিভঙ্গি হলো তারা আরও সক্রিয় শিক্ষার্থী, কারণ তারা "দৃঢ়তা, স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস, বৈচিত্র্যের গ্রহণযোগ্যতা এবং চিন্তাভাবনা এবং অভিনয়ের বিকল্প উপায়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করার এবং অন্বেষণ করার ইচ্ছা" দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। == মেটাকগনিশনে স্বতন্ত্র পার্থক্য == মেটাকগনিশনের গবেষণায় আরেকটি জনপ্রিয় বিষয় হলো স্বতন্ত্র পার্থক্যের বিষয়। মেটাকগনিটিভ ক্ষমতার স্বতন্ত্র পার্থক্যের গবেষণা দেখায় যে এই সমস্যাটি মেটাকগনিশনকে পরিমাপ করা খুব কঠিন করে তোলে। উইন (১৯৯ ১৯৯৬) প্রস্তাব করেছিলেন যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনয় মেটাকগনিটিভ পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে স্বতন্ত্র পার্থক্যের পাঁচটি উত্স রয়েছে। এগুলো হলো: "ডোমেন জ্ঞান, কৌশল এবং কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান, কৌশল এবং কৌশলগুলোর সম্পাদন, কৌশল এবং কৌশলগুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং বৈশ্বিক স্বভাব"। (উইন ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ৩২৭) বৈশ্বিক স্বভাব বলতে শেখার বিষয়ে স্বভাবকে বোঝায়। উইন জোর দিয়েছিলেন যে তার প্রস্তাবগুলো অস্থায়ী এবং আরও তদন্তের প্রয়োজন। তবে তার গবেষণা অন্যান্য গবেষকদের এই বিষয়ে ডুব দিতে উত্সাহিত করেছিল। বেশ কয়েকটি গবেষক পরামর্শ দিয়েছেন যে মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতার পৃথক পার্থক্যগুলো মেটাকগনিটিভ ক্ষমতার পার্থক্যকে প্রতিফলিত করে, তবে কেলেমেন, ফ্রস্ট এবং ওয়েভার (২০০০) পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এটি এমন নয়। মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতা "মেটাকগনিশন এবং ভবিষ্যতের মেমরি পারফরম্যান্সের মধ্যে সম্পর্ক" বোঝায় (কেলমেন এট আল।  গবেষণায় চারটি সাধারণ মেটাকগনিটিভ কাজ পরিমাপ করা হয়েছে: "শেখার সহজতা" সম্পর্কিত রায়, "জানার অনুভূতি" সম্পর্কিত রায়, শেখার বিচার এবং পাঠ্য বোঝার পর্যবেক্ষণ। প্রিটেস্ট এবং পোস্টটেস্ট সহ গবেষণায় মেমরি এবং আত্মবিশ্বাসের স্তর স্থিতিশীল ছিল। তবে মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতায় পৃথক পার্থক্য স্থিতিশীল ছিল না। এটি পরামর্শ দেয় যে মেটাকগনিটিভ ক্ষমতার পৃথক পার্থক্য পরিমাপের ক্ষেত্রে মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতা নির্ভরযোগ্য নয়। এটি লক্ষ করা উচিত যে গবেষণার বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ অনেক গবেষক মেটাকগনিশন পরিমাপের অসুবিধা স্বীকার করেন। ক্ষেত্রটিতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। মেটাকগনিটিভ ক্ষমতার স্বতন্ত্র পার্থক্যের ধারণাটিও পরামর্শ দেয় যে মেটাকগনিটিভ নির্দেশের জন্য কোনও এক-আকারের-ফিট-সমস্ত সমাধান নেই। লিন, শোয়ার্জ এবং হাতানো (২০০৫) পরামর্শ দেন যে পৃথক শিক্ষা এবং শ্রেণিকক্ষের পরিবেশের পার্থক্যের প্রতি সতর্ক মনোযোগ দিয়ে মেটাকগনিশন প্রয়োগ করা দরকার।  তারা শিক্ষকদের অভিযোজিত মেটাকগনিশন ব্যবহার করার পরামর্শ দেয় যার মধ্যে "শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তনশীলতার বিস্তৃত প্রতিক্রিয়া হিসাবে নিজের এবং নিজের পরিবেশ উভয়ই অভিযোজন" জড়িত (লিন এট আল। শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তনশীলতার মধ্যে সামাজিক এবং শিক্ষামূলক পরিবর্তনশীলতা অন্তর্ভুক্ত। অভিযোজিত মেটাকগনিশন বাস্তবায়নের জন্য, লিন এট আল ক্রিটিকাল ইভেন্ট ইনস্ট্রাকশন নামে একটি পদ্ধতির পরামর্শ দেয় যা "শিক্ষকদের মেটাকগনিটিভ অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তার প্রশংসা করতে সহায়তা করে, বিশেষত এমন পরিস্থিতিতে যা পৃষ্ঠের স্তরে নিয়মিত প্রদর্শিত হয়" (লিন এট আল।  এই পদ্ধতিটি প্রি-সার্ভিস শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে সাধারণত ঘটে যাওয়া সমস্যাগুলো মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন মান, লক্ষ্য এবং অভিজ্ঞতার সাথে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। == শেখার বিশ্লেষণ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণা == === শেখার বিশ্লেষণের সংজ্ঞা দেওয়া === ব্যবসা থেকে শুরু করে মহামারীবিদ্যা পর্যন্ত ক্ষেত্রগুলোতে, কম্পিউটার ব্যবহারের প্রচার এবং গণনামূলক শক্তি বৃদ্ধি বড় ডেটা-সেট থেকে দরকারী তথ্য আহরণ, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন করার সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষায়, 'বিগ ডেটা' মোকাবেলা করার জন্য অনুরূপ পদ্ধতিগুলো বিশ্লেষণ শেখার হিসাবে উল্লেখ করা হয়। যদিও প্রায়ই একটি নতুন শৃঙ্খলা হিসাবে উপস্থাপিত হয়, শেখার বিশ্লেষণগুলো কিছু সময়ের জন্য প্রায় ধারণা, নীতি এবং পদ্ধতি দ্বারা গঠিত হয়েছে। এর শিকড়গুলো বহু-শৃঙ্খলাবদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং, ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা, মানব-কম্পিউটার মিথস্ক্রিয়া এবং শিক্ষার উপাদানগুলোর সংমিশ্রণ। '''লার্নিং অ্যানালিটিক্স কি?''' সোসাইটি ফর লার্নিং অ্যানালিটিক্স রিসার্চ (এসওএলএআর) লার্নিং অ্যানালিটিক্সের ক্ষেত্রের জন্য নিম্নলিখিত সংজ্ঞা সরবরাহ করে: "লার্নিং অ্যানালিটিক্স হলো শিক্ষার্থীদের এবং তাদের প্রসঙ্গগুলো সম্পর্কে ডেটা পরিমাপ, সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন করা, শেখার এবং অপ্টিমাইজ করার উদ্দেশ্যে এবং যে পরিবেশে এটি ঘটে।  ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রস্তাবিত বিভিন্ন সংজ্ঞা সংশ্লেষণ, পয়েন্টগুলো শেখার বিশ্লেষণের প্রকৃতি সম্পর্কে অনুমান করা যেতে পারে: * শৃঙ্খলা কৌশল, পদ্ধতি, ফ্রেমওয়ার্ক এবং সরঞ্জামগুলো জড়িত যা ডেটা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। * এটি বিভিন্ন শিক্ষাগত সেটিংসে শিক্ষার্থীদের আচরণ এবং ক্রিয়াকলাপ থেকে প্রাপ্ত ডেটার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। প্রকৃতপক্ষে, সিমেন্স (২০১৩) যেমন পরামর্শ দেয়, তথ্যের উত্সটি পৃথক শ্রেণিকক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রম পর্যন্ত শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে সনাক্ত করা যেতে পারে। * এর সুযোগটি ডেটা ম্যানিপুলেশনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রসারিত: ডেটা ক্যাপচার, এমন সরঞ্জামগুলোর সাথে যা প্রকৃতপক্ষে প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়, ডেটা বিশ্লেষণ, এমন সরঞ্জামগুলোর সাথে যা ডেটাতে কাঠামো এবং নিদর্শনগুলো সন্ধান করার লক্ষ্যে এবং ডেটা উপস্থাপনা, সরঞ্জামগুলো আরও ব্যবহার করার জন্য ডেটার ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরি করে। * এটির একটি তাত্ত্বিক দিক রয়েছে, কারণ শিক্ষাগত তথ্যের বিশ্লেষণ আমাদের শেখার প্রক্রিয়াটির আরও ভাল বোঝার দিকে পরিচালিত করতে পারে, প্রাসঙ্গিক তত্ত্বগুলোকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ সরবরাহ করে। * এটির একটি ব্যবহারিক দিক রয়েছে, কারণ এই ডেটা বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যাগুলোর ফলাফলগুলো হেরফের করার নতুন উপায় সরবরাহ করতে পারে এবং এইভাবে শিক্ষার পরিবেশ এবং সাধারণভাবে শেখার প্রক্রিয়াটিকে অনুকূল করে তুলতে পারে। '''লার্নিং অ্যানালিটিক্সের বর্ধিত ব্যবহারকে সহজতর করে এমন কারণগুলো''' যদিও শেখার বিশ্লেষণের আখ্যান, তার ফোকাসের পরিপ্রেক্ষিতে, নতুন নয়, এমন কিছু বিকাশ এবং কারণ ছিল যা ক্ষেত্রের আগ্রহকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল, যার ফলে এটি একটি স্বতন্ত্র শৃঙ্খলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কারণগুলোর মধ্যে সর্বাধিক বিশিষ্ট নিম্নলিখিতগুলো হলো: * '''ডাটা পরিমাণ''' আরও বিশ্লেষণের জন্য উপলব্ধ শিক্ষাগত তথ্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত বিভিন্ন শিক্ষার প্রসঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো প্রবর্তনের পরে, যেমন নির্দেশের মিশ্রিত মোড, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি [ শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তখন তারা তাদের মিথস্ক্রিয়াগুলোর একটি "ডিজিটাল ট্রেস" ডেটা আকারে ছেড়ে দেয় যা সহজেই ক্যাপচার করা যায় এবং আরও বিশ্লেষণের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এই ধরনের ডেটাতে লগিংয়ের সময়, পোস্ট, ক্লিকের সংখ্যা, শিক্ষার্থীর দ্বারা পরিদর্শন করা উপাদানগুলোর বিভাগগুলো, ব্যবহৃত উপাদানগুলো এবং কতক্ষণ ধরে ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তথ্যগুলোর পরবর্তী বিশ্লেষণ শেখার ক্রিয়াকলাপ এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত গভীর জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে আকর্ষণীয় অন্তর্দৃষ্টি হতে পারে। * '''বর্ধিত প্রক্রিয়াকরণ / গণনা শক্তি এবং আরো দক্ষ অ্যালগরিদম''' গণনার কিছু অগ্রগতি উপলব্ধ বিপুল পরিমাণে শিক্ষাগত ডেটা বিশ্লেষণকে সহজতর করে। কম্পিউটেশনাল শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে ডেটা বিশ্লেষণ সম্ভব করে তুলেছে, যখন মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন অ্যালগরিদমগুলো প্রক্রিয়াটির তাত্ক্ষণিক মানবিক তত্ত্বাবধান ছাড়াই ডেটাতে নিদর্শন এবং নির্মাণের আবিষ্কারের অনুমতি দেয়। * '''ডাটা ফরম্যাট''' বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ক্যাপচার করা যথেষ্ট নয়। দক্ষতার সাথে প্রক্রিয়া করার জন্য ডেটা ব্যবহারযোগ্য আকারে থাকতে হবে। এটি নির্দিষ্ট ধরণের শিক্ষাগত ডেটা লগ করার জন্য প্রমিত ফর্ম্যাটগুলোর ভূমিকা। এই ফর্ম্যাটগুলো আগে থেকেই থাকা আমাদের বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যার জন্য ডেটা প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর সময় সাশ্রয় করে। === বিশ্লেষণ শেখার মূল পদ্ধতি এবং সরঞ্জাম === সিমেন্স (২০১৩) বিশ্লেষণ, কৌশল এবং অ্যাপ্লিকেশন শেখার দুটি প্রধান উপাদানকে আলাদা করে। কৌশলগুলো গণনামূলক উপাদান (অ্যালগরিদম এবং মডেল) অন্তর্ভুক্ত করে যা শিক্ষাগত তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। অ্যাপ্লিকেশনগুলো হলো শিক্ষাগত সেটিংসে এই কৌশলগুলোর প্রকৃত বাস্তবায়ন, যাতে ব্যবহারকারীর কাছে শেখার পরিবেশকে অভিযোজিত করা বা শেখার প্রোফাইল তৈরি করার মতো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা যায়। এই বিভাগে, লার্নিং অ্যানালিটিক্সে ব্যবহৃত প্রধান কৌশল এবং পদ্ধতিগুলো সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কয়েকটি উদাহরণ সহ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা এই কৌশলগুলো শেখার পরিবেশ এবং অন্যান্য শিক্ষাগত সেটিংসে প্রয়োগ করা যেতে পারে এমন উপায়গুলোর রূপরেখা দেয়। '''ভবিষ্যদ্বাণী পদ্ধতি''' এই পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতার একটি সরলীকৃত বিবরণ হলো অন্যান্য ভেরিয়েবলের সাথে সম্পর্কিত ডেটার অন্যান্য দিকগুলোর একটি সেট বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট ভেরিয়েবলের (যাকে '''পূর্বাভাস''' ভেরিয়েবল বলা হয়) মান সনাক্ত করা।  উদাহরণস্বরূপ, এমন ভবিষ্যদ্বাণী পদ্ধতি রয়েছে যা কোর্সে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণের জন্য একটি অনলাইন কোর্সে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ (লগ ইন সময়, ব্লগ কার্যকলাপ, মূল্যায়ন পরীক্ষায় পারফরম্যান্স - '''ভবিষ্যদ্বাণীকারী ভেরিয়েবল''') থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এই ভবিষ্যদ্বাণী মডেলগুলো দুটি ধরণের অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারে: ভবিষ্যতের ইভেন্টগুলোর পূর্বাভাস দিতে, যেমন শিক্ষার্থী ড্রপআউট[  শিক্ষার্থীদের ফলাফল। এমন তথ্যের ক্ষেত্রেও রয়েছে যা সরাসরি সংগ্রহ করা যায় না, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের ক্রিয়াকলাপে হস্তক্ষেপ করবে। এই ক্ষেত্রে, ভবিষ্যদ্বাণী মডেলগুলো গবেষকদের ভেরিয়েবলের অন্যান্য সেটগুলো পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় ডেটা অনুমান করতে দেয়। '''কাঠামো আবিষ্কার''' এই লার্নিং অ্যানালিটিক্স কৌশলটি পূর্ববর্তী এক থেকে বেশ আলাদা বলে মনে হচ্ছে, কারণ এতে এমন অ্যালগরিদম রয়েছে যা এটি কী পাওয়া যায় তার পূর্ববর্তী অনুমান ছাড়াই শিক্ষাগত ডেটাতে কাঠামো আবিষ্কার করার লক্ষ্য রাখে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। '''ক্লাস্টারিংয়ে''', উদ্দেশ্যটি হলো গ্রুপগুলোতে ডেটা সংগঠিত করা, ডেটা সেটটিকে ক্লাস্টারের একটি সেটে বিভক্ত করার ফলস্বরূপ। এই ক্লাস্টারগুলো, উদাহরণস্বরূপ, ছাত্র গোষ্ঠীগুলো, তারা কীভাবে অনুসন্ধানমূলক শিক্ষার পরিবেশ ব্যবহার করে তার উপর শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।  '''সামাজিক নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে''', শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কের নিদর্শন এবং / অথবা মিথস্ক্রিয়া সনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিটি বিভিন্ন গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন কোনও সামাজিক নেটওয়ার্কে শিক্ষার্থীদের আচরণ এবং স্থিতি কীভাবে কোনও সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার তাদের উপলব্ধির সাথে সম্পর্কিত তা নির্ধারণ করা। '''রিলেশনশিপ মাইনিং''' এই কৌশলটি উচ্চ সংখ্যক বিভিন্ন ভেরিয়েবলের সাথে বড় ডেটা সেটগুলোর ক্ষেত্রে ভেরিয়েবলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সনাক্ত করার পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতির সর্বাধিক সাধারণ লক্ষ্যগুলো হলো কোন ভেরিয়েবলগুলো একটি নির্দিষ্ট ভেরিয়েবলের সাথে আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত তা আবিষ্কার করা বা ভেরিয়েবলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করা। এই লার্নিং অ্যানালিটিক্স কৌশলটির জন্য বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। বেকার এট আল (২০০৯) ইন্টেলিজেন্ট টিউটরিং সিস্টেমের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এবং শিক্ষার্থীদের "সিস্টেমটি খেলা" করার প্রবণতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গণনা করতে সক্ষম হয়েছিল (= প্রকৃতপক্ষে উপাদানটি না শিখে কোর্সটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সিস্টেমের অপব্যবহার করে)।  অন্য একটি গবেষণায়, পেরেরা এট আল (২০০৯) ডেটা বিশ্লেষণের জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছিলেন, যাতে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার কোন পথটি গ্রুপ প্রকল্পগুলোর সফল সমাপ্তির দিকে পরিচালিত করে তা নির্ধারণ করতে। '''মানুষের বিচারের জন্য তথ্য পাতন''' এই কৌশলটিতে মৌলিক গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষার অনুশীলনকারীদের (শিক্ষক, স্কুল নেতা, প্রশাসক ইত্যাদি) সমর্থন করার জন্য উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশন ব্যবহার করে শিক্ষাগত ডেটা পরিমার্জন ও উপস্থাপনের বিভিন্ন পদ্ধতি জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, বোয়ার্স (২০১০) নিদর্শনগুলো সনাক্ত করতে বেশ কয়েক বছর ধরে বিস্তৃত শিক্ষার্থীদের ট্র্যাজেক্টরিগুলোর ভিজ্যুয়ালাইজেশন ব্যবহার করেছিলেন যা ভবিষ্যদ্বাণী করবে যে কোন শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে রয়েছে। যুক্তিটি ছিল যে সফল বা অসফল শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু সাধারণ নিদর্শন রয়েছে যা সনাক্ত করা যায় এবং যা উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীর সাফল্য বা ব্যর্থতার ইঙ্গিত হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। === Learning Analytics and research in স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন === লার্নিং অ্যানালিটিক্স পদ্ধতি এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর পূর্ববর্তী বিভাগটি বিবেচনা করে, এটি স্পষ্ট যে এই সরঞ্জামগুলো শেখার তত্ত্বগুলো গঠন এবং সমর্থন করার জন্য অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ সরবরাহ করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ক্ষেত্রে গবেষণা ব্যতিক্রম নয়। স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি এবং যে অবস্থার অধীনে এটি প্রদর্শিত হয় সে সম্পর্কে ক্ষেত্রটি অন্বেষণ এবং অনুমান পরীক্ষা করার জন্য শেখার বিশ্লেষণ পদ্ধতি এবং সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। '''স্ব-নিয়ন্ত্রণ গবেষণায় সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ''' কম্পিউটার-ভিত্তিক শিক্ষার পরিবেশের ক্রমাগত প্রসারিত ব্যবহার স্ব-নিয়ন্ত্রণের গবেষণায় আগ্রহের পরবর্তী বৃদ্ধি এনেছে। এর কারণ হলো এই নতুন শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলো শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগগুলো উপস্থাপন করে, গবেষকরা এই সম্ভাবনা এবং এই সাফল্যের শর্তগুলো গ্রহণ করতে কতটা সফল শিক্ষার্থী তা পরীক্ষা করতে নেতৃত্ব দেয়। এই শেখার পরিবেশগুলো উচ্চ মাত্রার শিখর নিয়ন্ত্রণ এবং তাই, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সুযোগ সরবরাহ করে। শিক্ষার্থীরা একাধিক উপায়ে বিষয়বস্তুর কাছে যেতে, উপস্থাপনার একাধিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নিতে, পরিবেশের বিভিন্ন পরামিতিগুলো পরিচালনা করতে ইত্যাদি সক্ষম হয়। যাইহোক, এর অর্থ হলো প্রয়োজনীয় স্ব-নিয়ন্ত্রণের দক্ষতার অভাবযুক্ত শিক্ষার্থীরা এই সংস্থানগুলোর শেখার উদ্দেশ্যগুলো ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনার মুখোমুখি হতে পারে। অতএব, এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলোর প্রকৃতি আরও বুঝতে এবং তাদের সমর্থন করার জন্য হস্তক্ষেপ এবং ভারা ডিজাইন করার জন্য এই পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার আচরণগুলো ক্যাপচার এবং মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের আচরণ ক্যাপচার এবং মূল্যায়নে বেশ কয়েকটি সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলো ক্ষেত্রের গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন, বিশেষত জড়িত প্রক্রিয়াগুলোর অভ্যন্তরীণ প্রকৃতির কারণে। কম্পিউটার ভিত্তিক শিক্ষার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা বা পরিমাপে, গবেষকদের জন্য এসআরএলের জন্য একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মডেল গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিয়াদাটি এট আল (২০১ ২০১৬) এই বিষয়টির উপর জোর দেয় যে, স্ব-নিয়ন্ত্রণের পরিমাপের বৈধ ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য, "একটি পরিমাপ পদ্ধতির নির্বাচন, বিকাশ এবং স্থাপনা (বা পদ্ধতির সংমিশ্রণ) আন্ডারপিনিং এসআরএল মডেল বা তত্ত্বের সাথে সারিবদ্ধ হওয়া উচিত" (সিয়াদাটি এট আল।  যাইহোক, এমন গবেষণার ক্ষেত্রে রয়েছে যা একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মডেল বা কাঠামো স্বীকার করে না, যার ফলে পরিভাষা এবং সংজ্ঞা সম্পর্কে স্পষ্টতার অভাব হয়।  অতিরিক্তভাবে, নির্দিষ্ট গবেষণা গবেষণায় স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মডেলগুলোর নির্দিষ্ট দিকগুলো লক্ষ্য নির্ধারণ, স্ব-পর্যবেক্ষণ বা স্ব-কার্যকারিতার মতো সম্বোধন করা হয়। এই পদ্ধতিগুলো, পৃথক উপাদান হিসাবে এই দিকগুলোকে বিচ্ছিন্ন এবং চিকিত্সা করা, এসআরএল-এর বৃহত্তর নির্মাণে টুকরোগুলো যে ভূমিকা পালন করে তার সঠিক চিত্র সরবরাহ করে না। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার গবেষণার আরেকটি সমস্যা বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতিতে রয়েছে। বেশিরভাগ আপেক্ষিক অধ্যয়ন শেখার সংস্থানগুলো ব্যবহার করে এমন শিক্ষার্থীদের ডেটা স্ব-প্রতিবেদনের প্রধান উত্স হিসাবে ব্যবহার করে। তথ্যের যথার্থতা এবং সামগ্রিক গুণমান শিক্ষার্থীদের শেখার সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার সময় তাদের কর্ম এবং কৌশলগুলো বর্ণনা করার দক্ষতার উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। উইন্টারস এট আল (২০০৮) উল্লেখ করেছেন, এই শিক্ষার্থীদের স্ব-প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণমূলক কৌশলগুলোর মতো সর্বদা সঠিক হয় না।  অন্যান্য গবেষণাগুলো তাদের তথ্যের প্রাথমিক উত্স হিসাবে চিন্তা-জোরে প্রোটোকলের উপর নির্ভর করে। এই পদ্ধতিগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়াগুলো ঘটার সাথে সাথে এবং আরও সঠিক উপায়ে ক্যাপচার করতে পারে। যাইহোক, এই প্রোটোকলগুলোর ব্যবহার ব্যবহৃত কৌশল এবং প্রক্রিয়াগুলো সনাক্তকরণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, তাদের গুণমানের পরীক্ষা বাতিল করে, অর্থাত্ শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার সময় এগুলো ব্যবহার এবং বাস্তবায়নে কতটা সফল হয়। উদাহরণস্বরূপ, সংক্ষিপ্তকরণ একটি খুব কার্যকর শেখার কৌশল। যাইহোক, কার্যকারিতা ডিগ্রী শুধুমাত্র এই কৌশল বাস্তবায়ন বা না দ্বারা নির্ধারিত হয় না, কিন্তু গুণমান এবং সংক্ষিপ্তকরণের শর্তাবলী দ্বারা, শেখার উদ্দেশ্য (সংক্ষিপ্তকরণের সময়, এটি কিভাবে পরিচালিত হয়, বিষয় পছন্দ ইত্যাদি) সম্পর্কিত। অবশেষে, তথ্য সংগ্রহ এবং পরিমাপ সরঞ্জামগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গবেষকদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তারা শেখার পদ্ধতিতে কতটা অনুপ্রবেশকারী। আদর্শ ক্যাপচারিং পদ্ধতিটি হলো যা সিস্টেমের সাথে শিক্ষার্থীর মিথস্ক্রিয়ার সাথে সমান্তরালভাবে কাজ করে এবং কোনওভাবেই শেখার প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ না করে ডেটা সংগ্রহ করে। বিশ্লেষণ ডেটা সংগ্রহের সরঞ্জামগুলো শেখার ক্ষেত্রে এই ধরণের "অবাধ্য" আচরণ উপস্থিত হয়। এই সরঞ্জামগুলো ব্যবহারকারীর ক্রিয়াকলাপগুলো ট্রেস করছে, কারণ তারা সিস্টেমের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে, লগ সময়, পরিবেশের বৈশিষ্ট্যগুলো যা আরও ঘন ঘন ব্যবহৃত হয়, মূল্যায়ন কার্যক্রমগুলোতে কর্মক্ষমতা ইত্যাদি ক্রিয়াগুলোর নিদর্শনগুলো আবিষ্কার করে যা স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ সরবরাহ করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের তদন্তে লার্নিং অ্যানালিটিক্সের ব্যবহার পরবর্তী বিভাগে আরও আলোচনা করা হবে। '''লার্নিং অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার আচরণগুলো ক্যাপচার করা''' শেখার বিশ্লেষণ কৌশল এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো শেখার পরিবেশের সাথে শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া চলাকালীন স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলোর অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণগুলো সনাক্ত এবং আরও বিশ্লেষণ করার জন্য সঠিক এবং অ-অনুপ্রবেশকারী ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতি সরবরাহ করে। অতিরিক্তভাবে, কম্পিউটার বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলো এই প্রক্রিয়াগুলোতে ট্রেস ডেটা সংগ্রহের জন্য অত্যন্ত পরিশীলিত পদ্ধতি সরবরাহ করে, গবেষকদের নিষ্পত্তিতে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জামকে সমৃদ্ধ করে। যেমনটি আমরা ইতিমধ্যে পূর্ববর্তী বিভাগে দেখেছি, স্ব-নিয়ন্ত্রণের উপর বেশিরভাগ আপেক্ষিক গবেষণাগুলো ডেটা শিক্ষার্থীদের স্ব-প্রতিবেদনের প্রাথমিক উত্স হিসাবে ব্যবহার করে, এই পছন্দটি যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের সাথে জড়িত। যাইহোক, এমন অধ্যয়ন রয়েছে যা স্ব-প্রতিবেদন জরিপ, অনলাইন আচরণগত ডেটা এবং শেখার ফলাফল পরিমাপের মিশ্রণ ব্যবহার করেছে। শা এট আল (২০১২) মোবাইল লার্নিং পরিবেশ ব্যবহারের সময় স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের নিদর্শনগুলো অন্বেষণ করার চেষ্টা করেছিল। এই নির্দিষ্ট গবেষণায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের (গ্রেড ৩ এবং ৪) জড়িত ছিল যা বিজ্ঞান শেখার জন্য একটি মোবাইল লার্নিং প্ল্যাটফর্মের সামর্থ্য ব্যবহার করেছিল। প্ল্যাটফর্মটি সিঙ্গাপুরের অফিসিয়াল পাঠ্যক্রমের প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছিল। লার্নিং প্ল্যাটফর্মটিতে অ্যানিমেশন অঙ্কন, ধারণার মানচিত্র তৈরি এবং কেডাব্লুএল টেবিল তৈরি করার মতো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তী অ্যাপ্লিকেশন (আইকেডাব্লুএল) এ শিক্ষার্থীদের ক্রিয়া এবং পারফরম্যান্স ছিল ডেটা উত্স যা গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছিল। আরও সুনির্দিষ্টভাবে, এই অ্যাপ্লিকেশনটিতে তিনটি প্রাক-পরিকল্পিত প্রশ্ন রয়েছে যা শিক্ষার্থীরা প্রতিটি পাঠের আগে, সময় এবং শেষে উত্তর দেয় (চিত্র ৮ আরও দেখুন): আমি কী জানি ?, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্বের জ্ঞান টাস্কটিতে নিয়ে আসে, আমি কী ভাবছি?, যা লক্ষ্য নির্ধারণের উপাদান হিসাবে কাজ করে এবং আমি কী শিখেছি?, যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের স্ব-প্রতিবিম্ব পর্বকে বোঝায়। গবেষকদের উদ্দেশ্য ছিল কেডাব্লুএল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততার বৈশিষ্ট্যগুলো অন্বেষণ করা। এটি পরিমাপ করার জন্য, দুটি ভেরিয়েবল প্রয়োগ করা হয়েছিল: একটি নির্দেশ করে যে কোনও শিক্ষার্থী কেডাব্লুএল টেবিলটি সম্পন্ন করেছে কিনা (০ যদি ক্ষেত্রগুলোর কোনওটিই সম্পন্ন না হয় এবং ১ যদি ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে কমপক্ষে একটি সম্পন্ন হয়) এবং অন্যটি প্রতিটি শিক্ষার্থী টেবিলটি যে ডিগ্রিতে সম্পন্ন করেছে তা নির্দেশ করে (রুব্রিক যা প্রতিটি বিভাগে সন্নিবেশ করা আইটেমের সংখ্যা পরিমাপ করে)। এই পরিমাপটি বরং সহজ, সুতরাং এই সন্নিবেশগুলোর জন্য সামগ্রীর গুণমান সম্পর্কে কিছু পরীক্ষা না করেই এটি সিস্টেম দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন করা যেতে পারে। এমন অধ্যয়ন রয়েছে যা কম্পিউটার ভিত্তিক শিক্ষার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের দ্বারা প্রয়োগ করা স্ব-নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলোর নির্দিষ্ট দিকগুলো তদন্তের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কুতুমিসু এট আল (২০১৫) তাদের গবেষণায় পোস্টারলেট নামে একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার ফলাফলগুলোতে "নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সন্ধান" এবং "সংশোধন" কৌশলগুলোর কার্যকারিতা তদন্ত করেছে। এই শিক্ষার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের একটি স্কুলের মজা মেলার জন্য পোস্টার ডিজাইন করতে সক্ষম করে। এই সম্পদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শেখার উদ্দেশ্যগুলো শিক্ষার্থীদের কার্যকর পোস্টার ডিজাইনের নীতি এবং অনুশীলনগুলো (সর্বোত্তম গ্রাফিকাল এবং পাঠ্য বৈশিষ্ট্য) শিখতে হয়। সেই নির্দিষ্ট শেখার আচরণটি ক্যাপচার করার উপাদানটি শেখার পরিবেশের বৈশিষ্ট্য হিসাবে এম্বেড করা হয়েছে। বিশেষত, শিক্ষার্থীরা পরিবেশ দ্বারা সরবরাহিত বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে একটি পোস্টার ডিজাইন করে এবং তারপর তাদের পণ্যের উপর প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করে, ইতিবাচক (আমি পছন্দ করি ...) বা নেতিবাচক (আমি পছন্দ করি না ...) প্রাণী - এজেন্টদের মন্তব্য (চিত্র ৯ দেখুন)। সিস্টেমটি শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি দুটি শেখার পছন্দগুলো ক্যাপচার করে, একজন শিক্ষার্থী কতবার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বিকল্পটি বেছে নিয়েছে এবং একজন শিক্ষার্থী তার পণ্যটি কতবার সংশোধন করেছে। সংগৃহীত তথ্য কঠোরভাবে সংখ্যাগত ছিল। অধ্যয়নের সময় সংশোধনের মানের কোনও পরিমাপ করা হয়নি (শিক্ষার্থীদের সংশোধনগুলো সিস্টেম দ্বারা প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল কিনা)। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ক্ষেত্রে কিছু শেখার পরিবেশ রয়েছে যা দ্বৈত ভূমিকা রাখে: শেখার সরঞ্জামগুলো, যা স্ব-নিয়ন্ত্রণের আচরণগুলো শেখানো এবং সমর্থন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং গবেষণা সরঞ্জামগুলো, শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের আচরণের ডেটা সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন যেমন একটি কেস মেটাটিউটর, আজেভেদো এট আল দ্বারা গবেষণা গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। মেটাটিউটর জীববিজ্ঞান বিজ্ঞান সামগ্রী সহ একটি শেখার পরিবেশ, প্ল্যাটফর্মের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার সময় স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলগুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের গাইড এবং সহায়তা করার জন্য একাধিক এজেন্ট ব্যবহার করে। এর বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রণের পর্যায় এবং প্রক্রিয়াগুলো (লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-পর্যবেক্ষণ, স্ব-প্রতিফলন) উল্লেখ করে এবং এগুলো সিস্টেমের ইন্টারফেসে নির্বিঘ্নে এম্বেড করা হয় (চিত্র ১০ দেখুন)। অতিরিক্তভাবে, মেটাটিউটরে ডেটা সংগ্রহের প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা ব্যবহারকারীর মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়, যাতে গবেষকরা স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াগুলো তদন্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সরবরাহ করতে পারে, তবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করার জন্য, যাতে তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা সমর্থন এবং আরও প্রসারিত করা যায়। সিস্টেমটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ক্যাপচার এবং মূল্যায়ন করার জন্য সাধারণগুলো (স্ব-প্রতিবেদন জরিপ, উচ্চস্বরে প্রোটোকল চিন্তা করুন) ছাড়াও পরিশীলিত শেখার বিশ্লেষণ কৌশলগুলোর একটি পরিসীমা ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিষয়বস্তু নেভিগেট করে এবং অন্বেষণ করে, কোন অংশে তারা ফোকাস করে, তারা যে ক্রমে তথ্য অ্যাক্সেস করে, ডায়াগ্রামের যে অংশগুলো তারা ব্যবহার করে ইত্যাদি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য অনুমান করতে একটি আই-ট্র্যাকিং উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই তথ্যগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা এমন প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-প্রতিবেদন বা চিন্তাভাবনা-জোরে সেশনগুলোতে উল্লেখ করা যায় না। সিস্টেমটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং মিথস্ক্রিয়া থেকে ডেটা সনাক্ত করে যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলগুলোর সাথে সম্পর্কিত এবং যা শেখার পদ্ধতিটি সহজতর করার জন্য শিক্ষার্থীদের দ্বারা মোতায়েন করা হচ্ছে। এই ডেটা ট্রেসগুলোর উদাহরণগুলোর মধ্যে নোট নেওয়ার নিদর্শন বা অঙ্কন আচরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়াগুলোর ইভেন্ট-ভিত্তিক ট্রেস (কী স্ট্রোক, মাউস ক্লিক, অ্যাক্সেস করা অধ্যায় বা ক্রিয়াকলাপ, কুইজে পারফরম্যান্স ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডেটা পরবর্তীকালে বিশ্লেষণ করা হয় এবং নির্দিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া এবং কৌশলগুলোর সাথে সম্পর্কিত কর্মের নিদর্শন বা ক্রমগুলো আবিষ্কার করা হয়। এই সমস্ত বিভিন্ন ধরণের তথ্যের সংশ্লেষণ গবেষকদের অধস্তন জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলোর অন্তর্দৃষ্টি সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনও পাঠ্য পড়ার সময় কোনও শিক্ষার্থী যে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে তা পাঠ্য সামগ্রীর বর্ধিত জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকরণকে নির্দেশ করে, বা পাঠ্য থেকে ডায়াগ্রাম এবং গ্রাফগুলোতে ব্যবহারকারীর রূপান্তরগুলো ট্র্যাক করা তথ্যমূলক উত্সগুলোর একাধিক উপস্থাপনাকে সংহত করার প্রয়াসকে নির্দেশ করে। একটি বিস্তৃত মুখের অভিব্যক্তি স্বীকৃতি উপাদানও রয়েছে। সিস্টেমটি শিক্ষার্থীদের মুখের অভিব্যক্তির ভিডিও ডেটা সংগ্রহ করে, যা পরবর্তীতে বিশেষ সফ্টওয়্যার (নল্ডাস ফেসরিডার ৩.০) দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা নির্ধারণ করা হয়। ত্রুটিটি হলো সিস্টেমটি সীমিত সংখ্যক মৌলিক, সর্বজনীন আবেগকে স্বীকৃতি দেয়, যা শেখার পরিবেশের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার সময় শিক্ষার্থীরা যে আবেগের পুরো পরিসর অনুভব করে তা প্রতিনিধিত্ব করে না। অবশেষে, এমন অধ্যয়ন রয়েছে যা শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলোর নির্দিষ্ট উপাদানগুলো ব্যবহার করে যা নির্দিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ের সাথে সম্পর্কিত, ডেটাতে কাঠামো আবিষ্কার করতে এই উপাদানগুলোর দ্বারা সংগৃহীত ডেটা প্রয়োগ করে (বিভাগ ২ এ ক্লাস্টারিংও দেখুন)। সেগেডি এট আল (২০১৫) স্ব-নিয়ন্ত্রণ শেখার গবেষণার পদ্ধতিতে অনুরূপ ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে যা তারা সমন্বয় '''বিশ্লেষণ''' বলে। তাদের গবেষণায় তারা বেটি'স ব্রেইন নামের একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছেন। এই শিক্ষার পরিবেশে, শিক্ষার্থীরা একটি কার্যকারণ মানচিত্র তৈরি করে একটি ভার্চুয়াল এজেন্ট, বেটিকে একটি বিজ্ঞানের ঘটনা সম্পর্কে শেখানোর চেষ্টা করে। এই মানচিত্রটি (চিত্র ১১ দেখুন) সত্তা নিয়ে গঠিত, যা নির্দেশিত লিঙ্ক দ্বারা সংযুক্ত, যা ধারণাগুলোর মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে। বেটি লিঙ্কগুলোর চেইন ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন কুইজ প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করতে এই কার্যকারণ মানচিত্রটি ব্যবহার করে। কার্যকারণ মানচিত্রের সঠিকতা এজেন্টের এই প্রশ্নগুলোর সঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা নির্ধারণ করবে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রদত্ত নির্দিষ্ট পাঠ্যগুলো থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য অর্জন করে এই কার্যকারণ লিঙ্কগুলো অনুমান করে, নির্দিষ্ট কুইজের বিরুদ্ধে তাদের কার্যকারণ মানচিত্রগুলো পরীক্ষা করে এবং প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে উচ্চতর নির্ভুলতা অর্জনের জন্য তাদের সংশোধন করে। প্রোগ্রামের সাথে শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া চলাকালীন সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণগুলো তাদের আচরণগত নিদর্শনগুলোর উপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের ৫ টি ভিন্ন গ্রুপ নির্ধারণ করে। প্রথম দলটি, ঘন ঘন গবেষক এবং সতর্ক সম্পাদকরা, তথ্যের উত্সগুলো দেখার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করেছিলেন এবং তাদের কার্যকারণ মানচিত্র সম্পাদনা করার জন্য এতটা ব্যয় করেননি। গ্রুপ ২, কৌশলগত পরীক্ষক, আসলে যে সুবিধা গ্রহণ না করে তথ্য দেখার জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয়। যদিও তাদের কার্যকারণ মানচিত্রের সম্পাদনাগুলো গ্রুপ ১ এর চেয়ে বেশি ঘন ঘন। গ্রুপ ৩ বিভ্রান্ত অনুমানকারী হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে এবং তারা তাদের কার্যকারণ মানচিত্রগুলো ঘন ঘন সম্পাদনা করে তবে বিজ্ঞান সংস্থানগুলোর সমর্থন ছাড়াই। গ্রুপ ৪ টাস্ক থেকে বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীদের জড়িত। এই শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত সম্পাদনাগুলোর একটি উচ্চ অনুপাত রয়েছে এবং তারা তাদের ৩০% এরও বেশি সময় সিস্টেমে বিচ্ছিন্ন মোডে ব্যয় করেছে। গ্রুপ ৫, নিযুক্ত এবং দক্ষ, তাদের কার্যকারণ মানচিত্রে একটি উচ্চ সম্পাদনা ফ্রিকোয়েন্সি আছে এবং এগুলোর বেশিরভাগই সমর্থিত ছিল। এই শিক্ষার্থীদের দেখার সময় এবং সম্ভাব্য প্রজন্মের সময়ও ছিল। এই আচরণই আসলে বেটির মস্তিষ্কে শিক্ষার্থীদের সফল করে তোলে। = তত্ত্ব থেকে অনুশীলনে = == মেটাকগনিশনের ফলিত তত্ত্ব == === পড়ায় মেটাকগনিশন === মেটাকগনিশন এবং পড়ার বোধগম্যতার উপর এর প্রভাব সম্পর্কে সাম্প্রতিক গবেষণায় ভাষা ব্যাধি এবং কিশোর-কিশোরীদের অধ্যয়ন এবং ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই অধ্যয়নগুলো পড়া এবং লেখার সাথে মেটাকগনিশনের সম্পর্কের পাশাপাশি মেটাকগনিটিভ হস্তক্ষেপের প্রয়োগযোগ্যতা দেখায়। ফার্নেস এবং নরম্যান (২০১৫) ডিসলেক্সিয়ার সাথে সাধারণত বিকাশকারী পাঠক এবং পাঠকদের মধ্যে মেটাকগনিটিভ জ্ঞানের তিনটি রূপ (যা মেটাকগনিটিভ জ্ঞান, মেটাকগনিটিভ দক্ষতা এবং মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা) তুলনা করেছেন।  অংশগ্রহণকারীরা দুটি বাস্তব পাঠ্য পড়েন এবং তাদের শেখার ফলাফলগুলো একটি মেমরি টাস্ক দ্বারা পরিমাপ করা হয়। মেটাকগনিটিভ জ্ঞান এবং দক্ষতাগুলো স্ব-প্রতিবেদন দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতাগুলো পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস এবং শেখার বিচার দ্বারা পরিমাপ করা হয়েছিল। ফলাফলগুলো দেখায় যে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের পড়া এবং বানান সমস্যাগুলো সাধারণত নিম্ন স্তরের মেটাকগনিটিভ জ্ঞান, মেটাকগনিটিভ কৌশল বা পড়ার পরিস্থিতিতে মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতার সংবেদনশীলতার সাথে সম্পর্কিত নয়। সাধারণত বিকাশমান শিশুদের উপর একটি অনুদৈর্ঘ্য গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ১০-১৪ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের আরও ভাল মেটাকগনিটিভ জ্ঞান রয়েছে।  গবেষণায় আরও জানা গেছে যে পাঠ্য বোঝার কৌশল ব্যবহারের মেটাকগনিটিভ জ্ঞানের পৃথক পার্থক্যের সাথে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত। এই দুটি গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে ডিসলেক্সিয়ায় পাঠ্য বোঝাপড়া শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ দক্ষতা, মেটাকগনিটিভ জ্ঞান বা মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত নয়। যাইহোক, সাধারণত বিকাশকারী শিশুদের জন্য, তাদের পাঠ্য বোধগম্যতা তাদের মেটাকগনিশনের স্তরের সাথে সম্পর্কিত। '''প্রশ্ন প্রজন্ম''' প্রায়শই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে। "একজন আদর্শ শিক্ষার্থী - স্ব-নিয়ন্ত্রিত থেকে সক্রিয় - এমন একজন ব্যক্তি যিনি গভীর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন এবং চিন্তা-উদ্দীপক প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করেন" (গার্সিয়া এট আল।  পড়ার ক্ষেত্রে প্রশ্ন সৃষ্টির প্রভাব নির্ধারণের জন্য বেশ কয়েকটি গবেষণা করা হয়েছে। গার্সিয়া এট আল (২০১৪) বিজ্ঞান ক্লাসে ৭২ জন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা করেছে। ফলাফলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে "প্রশ্ন-প্রজন্মের প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিখেছে এবং অধ্যয়ন করেছে, বিশেষত তাদের মেটাকগনিশনকে প্রভাবিত করেছে" (গার্সিয়া এট আল।  গ্রুপ ১ এর অংশগ্রহণকারীরা, যারা প্রম্পট সরবরাহ করে প্রশ্ন-প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন তাদের মেটাকগনিটিভ জ্ঞান এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণের উপর সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। এটি পরামর্শ দেয় যে প্রশ্ন প্রজন্মের কার্যকারিতা ব্যক্তির মেটাকগনিটিভ জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তৈরি করতে দেওয়ার আগে শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ দক্ষতাগুলো স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। === লেখায় মেটাকগনিশন === মেটাকগনিটিভ ক্ষমতা লেখার ক্ষেত্রে অপরিহার্য, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কোর্সে। যদিও প্রশিক্ষকরা প্রায়শই শিক্ষার্থীদের তাদের লেখার প্রতিফলন করতে এবং এটি বেশ কয়েকবার সংশোধন করার জন্য অনুরোধ করেন, তবে শিক্ষার্থীদের পক্ষে তাদের লেখাটি বিশদভাবে মূল্যায়ন এবং পুনরায় কাজ করা বিরল। তোতা এবং চেরি (২০১৫) এই উদ্বেগটি নিয়ে এসেছিল এবং শিক্ষার্থীদের তাদের লেখার বিষয়ে আরও সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করার জন্য একটি নতুন শিক্ষণ সরঞ্জামের পরামর্শ দিয়েছিল। কৌশলটিকে '''প্রক্রিয়া মেমো''' বলা হয়। প্রক্রিয়া মেমোগুলো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে জমা দেওয়া নির্দেশিত প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার্থীরা তাদের কাগজপত্রের প্রথম খসড়া এবং চূড়ান্ত সংস্করণ লেখার পরে প্রক্রিয়া মেমো জমা দেয়। প্রথম খসড়ার জন্য, শিক্ষার্থীদের তাদের কাগজ, রুব্রিকগুলোর সহায়তা, অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কিত প্রশ্ন, তাদের কাগজের শক্তি এবং দুর্বলতা এবং চূড়ান্ত সংস্করণে তাদের কী উন্নতি করা দরকার বলে মনে করে তা প্রতিফলিত করতে বলা হয়। এর পরে, শিক্ষকরা কাগজটি চিহ্নিত করেন এবং প্রতিক্রিয়া জানান। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া মেমোতে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত করতে বলা হয়। প্রশ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে "কোন মন্তব্যগুলো সবচেয়ে সহায়ক ছিল এবং কেন?" (তোতা এট আল, ২০১৫, পৃষ্ঠা ১৪৭)।  তোতা এট আল ২০০৫ সালে প্রক্রিয়া মেমোগুলো পরীক্ষা করা শুরু করে এবং ২০১৫ সালে একটি গবেষণায় এটি সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করে। গবেষণায় প্রারম্ভিক কোর্স এবং আরও উন্নত কোর্স সহ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানের কোর্সে ২৪২ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলাফলগুলো পরামর্শ দেয় যে প্রক্রিয়া মেমোগুলো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়কেই লেখার প্রক্রিয়াতে সক্রিয়ভাবে জড়িত হতে সহায়তা করে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষামূলক গুণাবলী সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া পান যাতে তারা ভবিষ্যতে তাদের শিক্ষার উন্নতি করতে পারেন এবং রুব্রিকগুলো পরিষ্কার রয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেন। যদিও কিছু শিক্ষার্থী প্রক্রিয়া মেমোগুলো গুরুত্ব সহকারে নেয়নি এবং অপর্যাপ্ত মন্তব্য সরবরাহ করে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের লেখার দক্ষতা উন্নত করতে এই পদ্ধতিটি দরকারী বলে মনে করেছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের মন্তব্যের বিষয়ে সৎ ছিল। প্রক্রিয়া মেমোগুলো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে যোগাযোগকেও উত্সাহিত করেছিল, কারণ তারা শিক্ষকদের সরাসরি শিক্ষার্থীদের প্রতিচ্ছবিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেয়। তোতা এবং চেরির মতে প্রক্রিয়া মেমোগুলো ব্যবহার করার আরেকটি সুবিধা হলো তারা ক্লাসে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে জড়িত করে, তাই যে শিক্ষার্থীরা হাত তুলতে এবং ক্লাসে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে খুব লজ্জা বোধ করে তারা উপকৃত হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ সচেতনতা বাড়ানোর এবং ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের লেখার গাইড করার একটি কার্যকর উপায়। === বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন === পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে মেটাকগনিশন গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিজ্ঞানের উচ্চতর স্তরের শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান এবং পদ্ধতিগত কৌশলগুলো পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের পক্ষে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা যথাক্রমে তাদের শেখার এবং শিক্ষাদানকে প্রভাবিত করে।  তবে অনেক শিক্ষক এই বিশ্বাসকে হালকাভাবে নেন। একটি গবেষণা (আব্দ-এল-খালিক এট আল, ১৯৯৮) যেখানে গবেষকরা প্রাক-পরিষেবা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন তা প্রকাশ করেছে যে অনেক শিক্ষক বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে বিশ্বাস শেখান না। এই অধ্যয়নের কিছু শিক্ষক বিশ্বাস করেন যে বিজ্ঞানের প্রকৃতি শেখানো বিজ্ঞানের অন্যান্য ধারণা শেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় এবং উচ্চতর স্তরের বিজ্ঞান শিখে তখন এটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এটি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান অধ্যয়নের অনুপ্রেরণাকেও প্রভাবিত করে কারণ এটি তাদের বিজ্ঞান বোঝার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। শ্রাও, ক্রিপেন এবং হার্টলি (২০০)) এর সাথে একমত হন এবং বলেন যে "কার্যকর নির্দেশনার উচিত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হতে সহায়তা করা" (শ্রাও, ক্রিপেন এবং হার্টলি ২০০৬, পৃষ্ঠা ১১৭)।  তাহলে, আমরা কীভাবে বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশনকে উন্নীত করব? শ্রাউ এট আল পরামর্শ দেয় যে "খাঁটি তদন্ত মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করে কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার নিরীক্ষণ করতে এবং তাদের চিন্তাভাবনার ত্রুটিগুলো বা তাদের ধারণাগত বোঝার ফাঁকগুলো মূল্যায়ন করতে আরও ভালভাবে সক্ষম হয়" (শ্ক্র এট আল, ২০০৬, পৃষ্ঠা ১১৯)।  এটি অনুসন্ধান ভিত্তিক শিক্ষার অংশ যা অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন যে এটি বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কার্যকর। অনুসন্ধান ভিত্তিক শিক্ষায়, শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং সমাধান তৈরি করে। শ্রাও, ক্রিপেন এবং হার্টলির পরামর্শ অনুসারে শ্রেণিকক্ষে মেটাকগনিশন বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগিতা। এটি প্রতিক্রিয়া, মডেলিং এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া প্রচার করবে, যা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসে উপকৃত হবে। একইভাবে, গণিত শেখার এবং নির্দেশনা গবেষণায় মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অত্যন্ত আলোচিত হয়। আরও তথ্যের জন্য দয়া করে গণিত শেখার অধ্যায়টি দেখুন। == উন্নয়নমূলক লেন্সের মাধ্যমে মেটাকগনিশন == গবেষণা দেখায় যে মেটাকগনিটিভ ক্ষমতাগুলো বয়স এবং জীববিজ্ঞানের মতো কারণগুলোর সাথে সম্পর্কিত (উদ্ধৃতি ৪). সুতরাং তত্ত্বটি প্রয়োগ করার জন্য উন্নয়নমূলক অগ্রগতি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। === পরিপক্কতা ঘাঁটি === '''একটি ফ্যাক্টর হিসাবে বয়স''' * ছোট বাচ্চারা ** মনের তত্ত্ব * বয়ঃসন্ধিকাল * প্রাপ্তবয়স্কদের === জৈবিক ভিত্তি === '''শেখার ঘাটতি''' == এসআরএল কৌশল == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন আগ্রহের একটি বিস্তৃত ক্রমবর্ধমান বিষয়, বিশেষত শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে (রোজম্যান এট আল। লক্ষ্যটি তত্ত্বগুলোকে একটি সমন্বিত কাঠামোর মধ্যে সংহত করার চেষ্টা করার মধ্যে রয়েছে যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের গাইড করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সম্পর্কিত সাহিত্যের পর্যালোচনাতে, প্যারিস এবং প্যারিস (২০০১) শ্রেণিকক্ষের পরিবেশে এসআরএলের ব্যবহারিক প্রয়োগ হিসাবে বেশ কয়েকটি নীতির সংক্ষিপ্তসার জানিয়েছে।  তারা তাদের চারটি ধারণার সীমার মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করেছে যা এই ক্ষেত্রে গবেষণাকে সংহত করে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা যখন স্ব-মূল্যায়ন করতে পারে তখন তারা কী শেখার সাথে জড়িত তা আরও ভালভাবে বুঝতে সক্ষম। এর অর্থ হলো তাদের শেখার উপায়গুলো বিশ্লেষণ করে এবং অন্যের সাথে তুলনা করে, তাদের কী আছে এবং কী জ্ঞান নেই তা মূল্যায়ন করে এবং তাদের প্রচেষ্টার মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীরা শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। দ্বিতীয়ত, চিন্তাভাবনা এবং প্রভাবের স্ব-ব্যবস্থাপনা অভিযোজিতভাবে সমস্যা সমাধানের দক্ষতায় বৃহত্তর নমনীয়তার অনুমতি দেয়। বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করে যা তাদের দক্ষতা উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করে, ক্রমাগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কার্যকরভাবে তাদের সময় পরিচালনা করে এবং শেখার কৌশলগুলো পর্যালোচনা / সংশোধন করে শিক্ষার্থীরা নিজের জন্য উচ্চতর পারফরম্যান্স মানগুলোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারে। তৃতীয়ত, নির্দেশের ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিভিন্ন উপায়ে শেখানো যেতে পারে যা বাসস্থানের অনুমতি দেয়। এসআরএল শিক্ষার্থীদের স্পষ্টভাবে শেখানো যেতে পারে (নির্দেশিত প্রতিচ্ছবি, মেটাকগনিশন সম্পর্কে আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সাথে অনুশীলন)। এটি পরোক্ষভাবে শেখানো যেতে পারে (মডেলিং, এবং প্রতিফলিত অনুশীলন)। এবং এটি বৃদ্ধির স্বতন্ত্র ম্যাপিংয়ের সাথে অনুরোধ করা যেতে পারে। পরিশেষে, এটি বিশ্বাস করা হয় যে স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য পরিচয় সম্পর্কিত বর্ণনামূলক অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত। শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের আচরণের মূল্যায়ন ও নিরীক্ষণ করতে পছন্দ করে তা তাদের পছন্দসই পরিচয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং শিক্ষার্থী / প্রশিক্ষকদের একটি প্রতিফলিত সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার মাধ্যমে, কেউ তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের দিকে নজর দেওয়ার গভীরতার স্তর বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদিও শিক্ষার্থীরা স্ব-নিয়ন্ত্রণের উপায়ে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে শিশুরা কীভাবে প্রথম স্থানে স্ব-নিয়ন্ত্রণে আসে তা বোঝার মধ্যে গুরুত্ব রয়েছে। প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) অনুসারে, এসআরএল তিনটি উপায়ে বাড়ানো যেতে পারে: (১) অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে: স্কুলে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি শিক্ষকের দ্বারা কী প্রত্যাশা করা হয় এবং শিক্ষার্থীর পক্ষে সবচেয়ে উপকারী কী তা শিখতে পারে।  এর একটি উদাহরণ হলো শেখা যে ডাবল-চেকিং কাজ, যদিও প্রাথমিকভাবে সময় সাপেক্ষ, দীর্ঘমেয়াদে উপকারী হতে পারে এবং তাই পরের বারও এটি করা সুবিধাজনক হবে। (২) এসআরএল সরাসরি শেখানো যেতে পারে: শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিদদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থেকে শিখতে পারে যারা কার্যকর কৌশল ব্যবহার তুলে ধরে এবং লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রশিক্ষক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনও শব্দ সমস্যা কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন তার কৌশলগত পদক্ষেপগুলোর উপর জোর দিতে পারেন। (৩) তাদের মধ্যে এসআরএলকে মূর্ত করে এমন সক্রিয় অনুশীলনগুলোর সাথে একীভূত হলে স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রকাশ করা যেতে পারে। একটি কার্যকর অনুশীলন যা এসআরএলকে এতে অন্তর্ভুক্ত করে তা হলো সহযোগী শেখার প্রকল্প যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সামগ্রিক প্রকল্পের একটি অংশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এই জাতীয় প্রকল্পগুলোতে উপস্থিত হয় কারণ শিক্ষার্থীরা অন্যের প্রতিক্রিয়া থেকে এবং সামগ্রিকভাবে অবদান রাখার জন্য তারা কী করেছে তার বিশ্লেষণ থেকে শিখতে বাধ্য। এসআরএল বাড়ানোর এই তিনটি রূপরেখা উপায় প্রায়শই একত্রে পাওয়া যায় কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাগত পরিবেশে তাদের সহকর্মী এবং প্রশিক্ষকদের সাথে অভিজ্ঞতার সংস্পর্শে আসে। শিক্ষা জুড়ে, শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশোনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন শেখার কৌশল শেখানো হয়। তবুও গবেষণা দেখায়, এই ধরনের শেখার কৌশলগুলো জানা সবসময় যথেষ্ট নয় তবে কৌশলটির ব্যবহারকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হওয়া (লেউটনার এট আল। লেউটনার, লিওপোল্ড এবং এলজেন-রাম্প (২০০৭) এর একটি কম্পিউটার-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় গবেষকরা শিক্ষার্থীদের কেবল একটি দরকারী জ্ঞানীয় শেখার কৌশল (হাইলাইটিং) শেখানোর সুবিধাই দেখাতে সক্ষম হননি, তবে কীভাবে মেটাকগনিটিভ লার্নিং কৌশলগুলোর সাথে এই সরঞ্জামটির ব্যবহার নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের সুবিধাও দেখাতে সক্ষম হন। গবেষণায় ৪৫ জন কলেজ শিক্ষার্থী এলোমেলোভাবে একটি চিকিত্সা গ্রুপে নিযুক্ত হয়েছিল যা কোনও প্রশিক্ষণ পায়নি, যার মধ্যে একটিতে তাদের কেবল হাইলাইটিংয়ের জ্ঞানীয় কৌশলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং অন্যটিতে হাইলাইট করার প্রশিক্ষণ নবজাতক শিশুদের সম্পর্কে শেখার ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের সাথে মিলিত হয়েছিল। সম্মিলিত স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ গোষ্ঠীর কম্পিউটার-প্রোগ্রামের একটি সংস্করণ ছিল যা নিয়ন্ত্রণ কৌশলটি অনুশীলন করার জন্য এবং তাদের পাঠ্য শিক্ষার পরবর্তী বিভাগে এটি প্রয়োগ করার জন্য সময়ের সাথে কীভাবে মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করা যায় তার পদক্ষেপগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছিল। গবেষণার ফলাফলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে এই কৌশল ব্যবহারের কৌশল-ব্যবহার এবং মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ উভয় ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণের পরে পরীক্ষা করার সময় লক্ষ্য-ভিত্তিক উপায়ে তাদের শেখার প্রয়োগে আরও সফল হয়েছিল। জ্ঞানীয়-কৌশল ব্যবহার শুধুমাত্র গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ গ্রুপের চেয়ে ভাল পারফর্ম করেছে, যা কোনও প্রশিক্ষণ পায়নি। তবে সম্মিলিত প্রশিক্ষণ গোষ্ঠী উভয়কেই ছাড়িয়ে গেছে, ইঙ্গিত দেয় যে, কৌশল ব্যবহার ফলাফলের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে, যখন শিক্ষার্থীদের এই জাতীয় কৌশলগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে শেখানো হয় তখন শেখার আরও বাড়ানো যেতে পারে। == প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি == === প্রযুক্তি এবং এসআরএলের মধ্যে লিঙ্ক === প্রযুক্তিগত ব্যবহারের অনস্বীকার্য বৃদ্ধি, প্রেনস্কি (২০০১) তার নিবন্ধে পরামর্শ দেয় যে শিক্ষার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহারের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়াও, শিক্ষকদের অবশ্যই শিক্ষার্থীদের "প্রয়োজনীয়তা" জানতে হবে এবং একটি সুবিধাজনক এবং আরামদায়ক পদ্ধতিতে ডিজিটাল নেটিভদের কাছে সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য কম্পিউটিং শক্তির সাথে মিলিত উপলব্ধ তথ্যের সুবিধা নিতে হবে।  আজ, প্রযুক্তি হস্তক্ষেপগুলোতে প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল নেটিভদের স্ব-নিয়ন্ত্রক শেখার প্রক্রিয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য শেখার সরঞ্জাম থাকতে পারে . শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে, নিজেদের নিরীক্ষণ করতে এবং তাদের নিজস্ব শিক্ষার ফলাফলগুলো স্ব-মূল্যায়ন করতে বিভিন্ন ধরণের নতুন প্রযুক্তি চেষ্টা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।  শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞান, আগ্রহ এবং অনুপ্রেরণা সরাসরি তাদের স্বতন্ত্র শেখার অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স এবং প্রযুক্তি বর্ধিত এসআরএল পরিবেশের ফলাফলগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। (২০১৫) শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলগুলোকে সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা এবং পদ্ধতির তদন্ত করার জন্য শেখার পরিবেশে প্রয়োগ করা ইন্টেলিজেন্ট টিউটরিং সিস্টেম (আইটিএস) এর উদাহরণ সরবরাহ করে। কম্পিউটার সিস্টেম হিসাবে আইটিএস, শিক্ষার্থীদের তাদের আচরণ অনুযায়ী শেখার ক্রিয়াকলাপ এবং মিথস্ক্রিয়ায় জড়িত করে কম্পিউটার ভিত্তিক নির্দেশনায় বুদ্ধি নিয়ে আসে।  আইটিএসগুলো বিষয় ডোমেনের জ্ঞান সরবরাহ করে এবং "প্রতিটি কাজকে এটি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উত্পাদন বিধিগুলোর একটি সেট হিসাবে চিহ্নিত করে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে উত্পাদন বিধিগুলোর একটি সেট হিসাবে চিহ্নিত করে কার্য নির্বাচন করতে পারে যা সর্বাধিক অনুশীলন করা দরকার এবং তারপরে সেরা ম্যাচটি সন্ধান করতে পারে" (মা এট আল। আইটিএসগুলো প্রতিটি পৃথক শিক্ষার্থীকে তাদের নিজস্ব কাজগুলো চয়ন এবং নিরীক্ষণের সুযোগ দেয়, যা বিভিন্ন জ্ঞানের স্তর এবং শেখার ক্ষমতা রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর এবং দরকারী হতে পারে। আইটিএস দ্বারা প্রদত্ত স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী-নিয়ন্ত্রণ বিকল্পগুলো শিক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষার উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে উত্সাহিত করতে পারে, যা তাদের স্ব-অনুপ্রেরণা প্রচার করবে এবং তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে উত্সাহিত করবে কাউফম্যান, ঝাও এবং ইয়াং (২০১১) শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং মেটাকগনিশনকে সহজতর ও সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে মা এট আল-এর মতো একই সিদ্ধান্তে এসেছেন।  আরও সুনির্দিষ্টভাবে, কফম্যান এট আল (২০১১) আবিষ্কার করেছেন যে শিক্ষাগত সেটিংসে প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে এবং কোর্সের বিষয়বস্তু সংগঠিত করতে শেখাতে সহায়তা করতে পারে। নির্দেশমূলক ডিজাইনার এবং প্রশিক্ষকদের জন্য, তারা তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে ওয়েব-ভিত্তিক শিক্ষাগত এবং মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম উভয়ের মাধ্যমে কোর্সের সামগ্রী তৈরি এবং বিতরণ করতে পারে। বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাটগুলো শিক্ষাবিদদের মনোযোগ বজায় রাখতে, তাদের শেখার আগ্রহ বাড়াতে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াতে তাদের আরও ভালভাবে সংহত করতে সহায়তা করতে পারে (কাফম্যান এট আল।  অন্যদিকে, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শেখা শিক্ষার্থীদের কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতে এবং "বিভিন্ন মিডিয়া ফর্ম্যাটে কোর্সের বিষয়বস্তু দেখার জন্য তাদের একাধিক বিকল্প সরবরাহ করতে" সহায়তা করতে পারে (কাফম্যান এট আল। উপরন্তু, কন্টেন্ট তৈরির সরঞ্জামগুলো শক্তিশালী শেখার কৌশলগুলো নিয়োগ করবে, যা শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়া নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন করার জন্য মিডিয়া ফরম্যাটের মাধ্যমে কোর্সের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের বোঝার প্রদর্শন করতে সক্ষম করবে (কাফম্যান এট আল। === শেখার প্রযুক্তিগুলো এসআরএল প্রসঙ্গে যে বিষয়গুলো নিয়ে এসেছে === [ শিক্ষার্থীরা যে বর্ধিত হারে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা এসআরএলে অনেক চ্যালেঞ্জ প্রবর্তন করেছে।  সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের বোঝার পুরোপুরি নিরীক্ষণ করতে পারে না এবং শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রিত হয়, যা এসআরএল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের দক্ষতা বিকাশে কম কার্যকর হতে পারে। এইভাবে, শিক্ষার্থীরা এসআরএল প্রক্রিয়ায় শেখার স্বাধীনতা হারায় এবং তথ্যের প্রবাহকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য তাদের শেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে মৌখিক প্রতিক্রিয়া এবং ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস (এলএমএস) শেখার সামগ্রী বিতরণ করে, শেখার প্রক্রিয়াগুলো সংগঠিত করে এবং ইন্টারফেসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। যাইহোক, শিক্ষার্থীরা এলএমএসে তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াতে সত্যই কোনও স্বাধীনতা পায় না। পরিবর্তে, শিক্ষকরা এলএমএস কোর্সে অংশ নেওয়ার সময় পুরো সময় তাদের বোঝার উপর নজর রাখেন।  বিপরীতে, পার্সোনাল লার্নিং এনভায়রনমেন্টস (পিএলই) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিষয়বস্তু এবং শেখার কৌশলগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে তারা যে পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে চান তা নির্বাচন এবং নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়। পিএলইতে কোর্সের বিষয়বস্তু এবং পদ্ধতিতে দিকনির্দেশনার অভাব শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াতে শেখাকে কম দক্ষ করে তোলে । পাশাপাশি, এসআরএল তাদের কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ। === শেখার প্রযুক্তি এসআরএল প্রসঙ্গে যে সুযোগগুলো নিয়ে এসেছে === [ যদিও এসআরএল-এ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অনেক উদ্বেগ রয়েছে, তবে আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে এসআরএল  জ্ঞানের সংক্রমণ এবং ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যের বিভিন্ন উত্স অ্যাক্সেস করে, সিমাও এট আল (২০০৮) আবিষ্কার করেছেন যে প্রযুক্তিতে শেখার কাজগুলো পরিকল্পনা এবং সম্পাদনের নতুন উপায় জড়িত, যার ফলে নির্দিষ্ট দক্ষতার বিকাশ হতে পারে।  শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে বা তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অর্জনের জন্য তাদের শেখার প্রক্রিয়াটি স্ব-নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতে হবে। অন্যদিকে, শিক্ষকদের সামাজিক ও বৌদ্ধিক পরিবেশকে উত্সাহিত করা উচিত যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করে। অনেক একাডেমিক নিবন্ধ এবং প্রতিবেদন একই দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে বলে মনে হয়। এটি দেখানো হয়েছে যে শেখার প্রযুক্তিগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রণকে উত্সাহিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসাবে কাজ করতে পারে।  প্রকৃতপক্ষে, এই কাগজের শেষ অংশটি এসআরএল-এ শেখার প্রযুক্তির সাথে সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার বেশ কয়েকটি প্রযুক্তির উদাহরণ সরবরাহ করবে। পর্যালোচনাটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত শেখার প্রযুক্তিগুলোর কার্যকারিতা প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে। বিশেষত, যখন শেখার প্রযুক্তিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রণ, অনুপ্রেরণা এবং অনলাইন শিক্ষার প্রসঙ্গে ব্যস্ততা সমর্থন করার জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স শেখার দিকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করবে। এছাড়াও, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সমর্থন করার জন্য শেখার প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি কিছু গবেষক, শিক্ষক, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছিল। তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের পরিবেশে শেখার প্রযুক্তিগুলো যে ভূমিকা পালন করে তা বুঝতে চায়। শেখার প্রযুক্তিগুলো কি শিক্ষণ এবং শেখার বিকল্প মোড বা যথেষ্ট পরিপূরক হিসাবে শিক্ষার ল্যান্ডস্কেপে ফিট করে? লার্নিং টেকনোলজি কি শিক্ষক/শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী/শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্ধিত মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ এনে দিতে পারে? কীভাবে শেখার প্রযুক্তি এসআরএল-এ তাদের শেখার লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিশন, অনুপ্রেরণা এবং আচরণ বিকাশ করতে পারে। উপরন্তু, শেষ অংশটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগুলো কী ভূমিকা পালন করে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের জন্য প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা কেন অপরিহার্য তা প্রকাশ করবে। শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণে জড়িত করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে, যেমন বেটির মস্তিষ্ক, মেটাটিউটর এবং এনস্টাডি। প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের এসআরএল ক্রিয়াকলাপগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা তাদের অনুসন্ধানের কৌশলগুলো নির্বাচন করতে, কৌশলগত প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে এবং অ্যাক্সেসকৃত তথ্যকে সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করতে দেয়, সবই মেটাকগনিটিভ প্রতিফলন প্রচার করে।  এই অংশটি তিনটি নির্দিষ্ট বিদ্যমান প্রযুক্তি বর্ণনা করবে এবং শিক্ষার্থীদের এসআরএলকে সমর্থন ও প্রচারের ক্ষেত্রে তাদের প্রভাবগুলো চিত্রিত করবে। * '''বেটির মস্তিষ্ক''' বেটির মস্তিষ্ক হলো একটি শিক্ষণীয় এজেন্ট সিস্টেম যা ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার এবং কৌশল ব্যবহারকে সমর্থন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে  মস্তিষ্কে, শিক্ষার্থীরা প্রথমে "বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ে শিখে" (রোসকো এট আল। তারা যে জ্ঞান অর্জন করে তার উপর ভিত্তি করে, তারা তাদের বোঝার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং তাদের তৈরি ধারণা মানচিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার এজেন্ট চরিত্র বেটিকে শেখানোর জন্য ধারণার মানচিত্রের একটি সরলীকৃত ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা তৈরি করবে।  রোসকো এট আল (২০১৩) তাদের নিবন্ধে ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে এই ধারণার মানচিত্রগুলো তৈরি করা শিক্ষার্থীদের "কীভাবে পৃথক ধারণাগুলো গভীর নীতিগুলোর মধ্যে একত্রিত হয়" (পৃষ্ঠা ২৮৭) বুঝতে সহায়তা করার সময় নতুন এবং পূর্ববর্তী উভয় জ্ঞানকে সংহত ও সংগঠিত করতে সহায়তা করতে পারে। অন্যকে শেখাতে হলে শিক্ষার্থীদের আগে শিখন প্রবলেমটি শিখতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে শেখার সময়, শিক্ষার্থীরা বেটি প্রোগ্রাম থেকে প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করে এবং এক প্রসঙ্গে থেকে অন্য প্রসঙ্গে জ্ঞান স্থানান্তর করতে অনুপ্রাণিত হয়, যার ফলস্বরূপ বৃহত্তর মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রক অনুশীলন হয়।  এইভাবে, তারা নিজেদের নিরীক্ষণ করতে এবং তাদের এজেন্টকে আরও ভাল সম্পাদন করতে শেখাতে সক্ষম হবে। শেষ পর্যন্ত, রোসকো এট আল (২০১৩) সংক্ষেপে বলেছে যে শিক্ষার্থীরা অবশেষে "নির্ভুলতা এবং সম্পূর্ণতা উন্নত করতে মানচিত্রের ত্রুটিগুলো সনাক্ত এবং মেরামত করতে মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়াগুলো প্রয়োগ করতে পারে" (পৃষ্ঠা ২৮৯) বেটির মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। * '''আজেভেদোর মেটাটিউটর''' খোসরাভিফার এট আল (২০১৩) এর মতে, মেটাটিউটর শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য একটি গবেষণা-ভিত্তিক শেখার সরঞ্জাম। বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ এবং কৌশলগত বৌদ্ধিক কৌশল প্রয়োগ করে, শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানীয়, সংবেদনশীল, মেটাকগনিশন এবং শেখার  অনুপ্রেরণা আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। মেটাটিউটরটি হাইপারমিডিয়ার মাধ্যমে হাই স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সম্পর্কে শেখার প্রশিক্ষণ ও উত্সাহ দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে  মেটাটিউটর মানব শারীরিক সিস্টেম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার সনাক্তকরণ, মডেল, ট্রেস এবং উত্সাহ দেয় , যা মূলত স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের জ্ঞানীয় মডেলগুলোর উপর ভিত্তি করে।  হাইপারমিডিয়া লার্নিং এনভায়রনমেন্টের সামগ্রী অন্বেষণ এবং অ্যাক্সেস শুরু করার আগে এসআরএল প্রক্রিয়াগুলোর উপর প্রশিক্ষণ সেশনটি সম্পূর্ণ করার জন্য মেটাটিউটর দ্বারা প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবহারকারী। হাইপারমিডিয়া লার্নিং এনভায়রনমেন্টে চারটি শিক্ষাগত এজেন্ট রয়েছে, যা কেবল অংশগ্রহণকারীদের এসআরএল দক্ষতা এবং সামগ্রী বোঝার জন্য প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করে না, তবে অংশগ্রহণকারীদের সিস্টেমটি নেভিগেট করতে, উপযুক্ত লক্ষ্য নির্ধারণে গাইড করতে, তাদের শেখার লক্ষ্যগুলোর দিকে তাদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে এবং এসআরএল জ্ঞানীয় কৌশলগুলো স্থাপন করতে সহায়তা করে  এবং নোট গ্রহণ[ মেটাটিউটর ব্যবহার করে, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে নির্দিষ্ট এসআরএল শেখার প্রক্রিয়াগুলো কার্যকর করতে পারে।  মেটাটিউটর সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের মিথস্ক্রিয়া ট্র্যাক করতে পারে এবং একটি লগ ফাইলে ব্যবহারকারীর আচরণ রেকর্ড করতে পারে। যখন ডেটা দেখায় যে কোনও শিক্ষার্থী অকার্যকর কৌশলগুলো ব্যবহার করছে, তখন এজেন্ট শিক্ষার্থীকে আরও ভাল শেখার কৌশল ব্যবহার করার জন্য সতর্ক করে প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পরিবেশে তাদের নিজস্ব শেখার পছন্দ এবং ফলাফলগুলো উন্নত করতে মেটাটিউটর থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করতে পারে। একই সময়ে, শিক্ষার্থীরা কীভাবে মেটাটিউটরের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রক  তাদের শেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও বেশি ধারণা অর্জনের জন্য শিক্ষকরা মেটাটিউটর থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে পারেন। যদিও মেটাটিউটরের শিক্ষাগত এজেন্টরা শিক্ষার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তবুও তারা পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সহায়তা করার জন্য দরকারী শেখার কৌশল সরবরাহ করে। * '''এন স্টাডি''' প্রফেসর উইন এবং তার গবেষক দল এনস্টাডি ডিজাইন করেছেন, একটি ওয়েব-ভিত্তিক লার্নিং টুল, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার  অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, একত্রিত হওয়া, মহড়া দিতে, অনুবাদ করতে পারে। এনস্টাডির নকশা শিক্ষার্থী এবং গবেষক উভয়কেই ওয়েব-ভিত্তিক শিক্ষার পরিবেশের মাধ্যমে তাদের শেখার এবং গবেষণায় সক্রিয় হতে দেয়। এনস্টাডিতে, তারা তাদের শেখার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন অনুসারে তাদের শেখার অবজেক্টগুলো তৈরি করে, ম্যানিপুলেট করে এবং লিঙ্ক করে সংগঠিত করতে পারে।  বেটির মস্তিষ্কের মতো, তারা শেখার ধারণার মানচিত্রও তৈরি করতে পারে এবং তারপরে লিঙ্ক, গ্রুপ এবং স্থানিকভাবে তাদের সাজাতে পারে। লিঙ্কিং শিক্ষার্থীদের তাদের ব্যক্তিগত লার্নিং নেটওয়ার্ক ডেটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং তাদের নিজস্ব উপায়ে তথ্যটি গঠন করতে দেয়, যা তাদের ইন্টারঅ্যাক্টিং, সম্প্রসারণ এবং তথ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা উন্নত করতে সর্বোত্তম হতে পারে। এনস্টাডি স্বতন্ত্র এবং গোষ্ঠী উভয় শিক্ষার্থীকে তাদের সহযোগিতা, তথ্য বিনিময় এবং অনলাইনে সামগ্রী নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি কর্মক্ষেত্র সরবরাহ করে, যা তাদের সহযোগী শিক্ষাকে সমর্থন করার জন্য একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ তৈরি করতে পারে।  এছাড়াও, কর্মক্ষেত্র জুড়ে তথ্য বিনিময় করার ক্ষমতা "ভূমিকা এবং প্রম্পট দ্বারা কাঠামোগত হতে পারে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ, একে অপরের কাজকে সহ-নিয়ন্ত্রণ করতে এবং প্রবিধান ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে" (উইন এবং হ্যাডউইন, ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩০২)। শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা অধ্যয়ন বা গবেষণার জন্য এনস্টাডির সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করার সাথে সাথে সিস্টেমটি তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সময় নির্দিষ্ট জ্ঞানীয় এবং মেটাকগনিটিভ ইভেন্টগুলো প্রতিফলিত করতে পারে এমন ট্রেস ডেটা সংগ্রহ করে == এসআরএলকে সহজতর করা এবং উত্সাহিত করা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন (এসআরএল) এমন একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীদের তাদের চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং আবেগ পরিচালনা করতে সহায়তা করে যাতে তাদের শেখার অভিজ্ঞতাগুলো সফলভাবে নেভিগেট করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটির জন্য শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে তাদের শেখার পরিকল্পনা, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।  এসএলআর শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রেরণা এবং কৃতিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীকারী। স্ব-নিয়ন্ত্রণের গঠন সেই ডিগ্রিকে বোঝায় যা শিক্ষার্থীরা শেখার সময় তাদের চিন্তাভাবনা, অনুপ্রেরণা এবং আচরণের দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অনুশীলনে, স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন শেখার প্রক্রিয়াগুলোর সক্রিয় পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণে উদ্ভাসিত হয়। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রকৃতি এবং উত্সে অসামাজিক নয়। স্ব-নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলো প্রায়শই এমন পরিবেশের মধ্যে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে যা স্বায়ত্তশাসনের সুযোগের সাথে কাঠামোর ভারসাম্য বজায় রাখে।  গবেষণা দেখায় যে স্ব-নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলো শিক্ষণীয় এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা এবং কৃতিত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রতিটি স্ব-নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া পিতামাতা, শিক্ষক, কোচ এবং সহকর্মীদের দ্বারা নির্দেশনা এবং মডেলিং থেকে শিখতে পারে।  উপরন্তু, অসংখ্য গবেষণা প্রকাশ করে যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের উপর হস্তক্ষেপ এবং প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে  উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণায়, লাবুহন এট আল (২০১০) দেখা গেছে যে পর্যবেক্ষণ এবং অনুকরণের মাধ্যমে এসআরএল দক্ষতা শেখানো শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকাশের সম্ভাবনা বেশি ছিল উচ্চতর স্তরের একাডেমিক স্ব-কার্যকারিতা (অর্থাত্, আত্মবিশ্বাস) এবং এসআরএল নির্দেশনা না পাওয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় একাডেমিক কৃতিত্বের পরিমাপে উচ্চতর পারফর্ম করে।  তদনুসারে, শিক্ষার্থীদের তাদের পুরো স্কুল ক্যারিয়ার জুড়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের অনুশীলন করা উচিত এবং শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের আচরণকে উত্সাহিত করার জন্য কাজটি মোকাবেলা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আরও স্ব-নিয়ন্ত্রক হতে শেখানোর মাধ্যমে, শিক্ষকরা একাডেমিক কৃতিত্ব, অনুপ্রেরণা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রচারে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারেন।  শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থী হয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারেন যারা কার্যকর কৌশলগুলো ব্যবহার করে তাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং শেখার কাজের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, শেখার প্রক্রিয়াটি নিরীক্ষণ করতে এবং পরের বার এটি উন্নত করার লক্ষ্যে শেখার পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে সহায়তা করতে পারে। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করতে পারেন হয় সরাসরি শেখার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে বা পরোক্ষভাবে এমন একটি শিক্ষার পরিবেশের ব্যবস্থা করে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করতে সক্ষম করে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিকাশ === জিমারম্যান (২০০২)  মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াটি তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে: ''ফোরথট এবং প্ল্যানিং ফেজে'' শেখার কাজটি বিশ্লেষণ করা এবং সেই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা জড়িত। এই পর্যায়ে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কার্যকর পদ্ধতির নির্দেশ দেন, কাঠামোগত এবং সুস্পষ্ট নির্দেশনা সরবরাহ করেন, কৌশলগুলো মডেল করেন এবং ব্যাখ্যা করেন এবং শিক্ষার্থীদের অন্যান্য অনুরূপ শেখার কাজগুলোতে কৌশলটি সাধারণীকরণ করতে সহায়তা করেন। ''পারফরম্যান্স মনিটরিং ফেজে'' শেখার কাজটিতে অগ্রগতি করার জন্য কৌশলগুলো নিয়োগ করা, কৌশলগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা এবং শেখার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রেরণা পর্যবেক্ষণ করা অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষকরা ক্রিয়াকলাপগুলো সংগঠিত করতে পারেন, শিক্ষার্থীদের নতুন কৌশলগুলো ব্যবহার করতে শিখতে সহায়তা করার জন্য ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ এবং নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা কীভাবে কৌশলগুলো স্বাধীনভাবে কার্যকর করতে শেখে, শিক্ষকরা ধীরে ধীরে নির্দেশকে ম্লান করে দেয় এবং গাইডের ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়। ''পারফরম্যান্স ফেজের প্রতিচ্ছবি শেখার'' কার্যের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন এবং শেখার অভিজ্ঞতার ফলাফলের সাথে সম্পর্কিত সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াগুলো পরিচালনা করার দিকে মনোনিবেশ করে। শিক্ষকরা পিয়ার মূল্যায়ন এবং প্রতিফলনকে উত্সাহিত করে, মূল্যায়নের সুবিধার্থে এবং ক্রমাগত শেখার লক্ষ্যগুলোতে ফলাফলগুলো সম্পর্কিত করে সহায়তা সরবরাহ করতে পারেন। শিক্ষকদের শেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন কী ভাল কাজ করেছে তা ভাগ করে নিতে, শিক্ষার্থীদের স্ব-কার্যকারিতা এবং অনুপ্রেরণায় অবদান রাখতে এবং তাদের প্রচেষ্টা এবং কার্যকর কৌশলগুলোর ব্যবহারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশংসা সরবরাহ করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করা উচিত। স্ব-নিয়ন্ত্রক দক্ষতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হয় না। স্ব-নিয়ন্ত্রক দক্ষতার বিকাশের পর্যায়ে চারটি স্তর রয়েছে: পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণ। পর্যবেক্ষণ স্তরের দক্ষতা মডেলিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয় যা শিক্ষার্থীদের সফল পারফরম্যান্সের চিত্র সরবরাহ করে। এটি শিক্ষার্থীদের সাধারণ পারফরম্যান্স মান প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে এবং দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়া চলাকালীন অনুপ্রেরণা নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানায়। অনুকরণ স্তরে, শিক্ষার্থীরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে শেখা একটি সাধারণ কৌশল ব্যবহার করে একটি দক্ষতা সম্পাদন করে, যখন পারফরম্যান্সের নির্ভুলতা উন্নত করতে শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া এবং নির্দেশিকা গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, সামাজিক শক্তিবৃদ্ধি, যেমন প্রশংসা বা উত্সাহ, এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি করে। স্ব-নিয়ন্ত্রণের স্তরে কাঠামোগত অনুশীলন এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ জড়িত। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কাঠামোগত সেটিংসে একটি দক্ষতা অনুশীলন করে। শিক্ষার্থীরা কোনও মডেলের পারফরম্যান্সকে উল্লেখ করতে এবং অভ্যন্তরীণ করতে পারে এবং ফলাফলের পরিবর্তে প্রক্রিয়াটিতে মনোনিবেশ করা উচিত। স্ব-নিয়ন্ত্রিত স্তরের দক্ষতা অসংগঠিত সেটিংসে সঞ্চালিত হয়। শিক্ষার্থীকে নিছক একটি শিখে নেওয়া দক্ষতা সম্পাদনের পরিবর্তে কার্যকারিতা বা পারফরম্যান্সের মানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত এবং ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত শর্ত অনুযায়ী তাদের কর্মক্ষমতা সামঞ্জস্য করা উচিত। তারা স্বাধীনভাবে দক্ষতা সম্পাদন করতে পারে তবে এখনও মাঝে মাঝে সামাজিক সমর্থন প্রয়োজন।  চিত্র ১৬. এসআরএলের চক্র দেখায়। === শিক্ষার্থীদের জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলগুলোর প্রকারগুলো''' চার ধরণের এসআরএল কৌশল রয়েছে যা শেখার সুবিধার্থে পারে: জ্ঞানীয় কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে মহড়া, চিত্রাবলী, সম্প্রসারণ এবং রূপান্তর বা উপকরণের সংগঠন। সম্প্রসারণ শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের সাথে নতুন উপাদান সংযুক্ত করতে সহায়তা করে। চিত্রাবলী মানসিক চিত্রগুলোকে বোঝায় যা শিক্ষার্থীরা তাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য গঠন করে। রিহার্সাল শিক্ষার্থীদের তাদের ওয়ার্কিং মেমরিতে তথ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। রূপান্তর এবং সংগঠিত কৌশলগুলোর মধ্যে শেখার সহজ করার জন্য সংক্ষিপ্তকরণ, রূপরেখা, নোট নেওয়া বা উপকরণগুলো পুনরায় সাজানো অন্তর্ভুক্ত। ''মেটাকগনিটিভ কৌশলগুলোর'' মধ্যে পরিকল্পনা, স্ব সচেতনতা এবং পর্যবেক্ষণ এবং স্ব-মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা কৌশল হল কার্য বিশ্লেষণ এবং লক্ষ্য নির্ধারণ। সাধারণত ব্যবহৃত পর্যবেক্ষণ কৌশলগুলো হলো স্ব-রেকর্ডিং এবং স্ব-পরীক্ষা।  স্ব-পরীক্ষা স্ব-পর্যবেক্ষণ এবং স্ব-মূল্যায়নের সাথে যুক্ত একটি কৌশল। স্ব-নির্দেশনা এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা মনোযোগ নিরীক্ষণ বা নিয়ন্ত্রণের কৌশল। স্ব-নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের কোনও কাজে মনোনিবেশ করতে এবং তাদের এনকোডিং এবং উপকরণগুলোর ধারণকে উন্নত করতে সহায়তা করে। মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কোনও কাজে মনোনিবেশ করার জন্য বিভ্রান্তি দূর করতে ব্যবহৃত হয়। ''ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলো'' সর্বোত্তম শিক্ষার শর্ত তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা এবং সহায়তা সন্ধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্ব-রেকর্ডিং সাধারণত সময় পরিচালনার দক্ষতা উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে উত্সাহিত করা শিক্ষার্থীদের সহায়তা চাওয়ার আচরণকে বাড়িয়ে তোলে। প্রতিক্রিয়া এবং মিথস্ক্রিয়া সহ শ্রেণিকক্ষের কাঠামোও শিক্ষার্থীদের সহায়তা সন্ধানকে প্রভাবিত করে। ''অনুপ্রেরণামূলক কৌশলগুলো'' শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে জড়িত হওয়ার জন্য তাদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে এবং বজায় রাখতে সহায়তা করে। উদাহরণগুলো হলো একটি শেখার উদ্দেশ্য প্রণয়ন, যা লক্ষ্য অভিযোজন বাড়ায়। অ্যাট্রিবিউশনের একটি ইতিবাচক শৈলীর বিকাশ, যা শিক্ষার্থীর স্ব-কার্যকারিতা বাড়ায়। সুদ বৃদ্ধি যা উপকরণগুলোকে আরও আকর্ষণীয় বা চ্যালেঞ্জিং করার জন্য ম্যানিপুলেট করে। এবং স্ব-কথা যা মৌখিক স্ব-উত্সাহকে বোঝায়। টেবিল ১. কৌশলের প্রকারভেদ: {| class="wikitable" |'''কৌশলের ধরন''' |'''বর্ণনা''' |'''উদাহরণ''' |- |জ্ঞানীয় কৌশল |এই ধরণের সামগ্রীর সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |মহড়া, চিত্রাবলী এবং উপকরণের সংগঠন |- |মেটাকগনিটিভ কৌশল |এই ধরণের শেখার সংগঠিত, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করার কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |টাস্ক বিশ্লেষণ, স্ব-রেকর্ডিং এবং স্ব-পরীক্ষা |- |ব্যবস্থাপনা কৌশল |এই ধরণের মধ্যে সর্বোত্তম শিক্ষার শর্ত তৈরি করতে ব্যবহৃত কৌশলগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |সময় ব্যবস্থাপনা, এবং সাহায্য চাইতে |- |অনুপ্রেরণামূলক কৌশল |এই ধরণের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়ানো এবং বজায় রাখার কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |একটি শেখার উদ্দেশ্য প্রণয়ন এবং অ্যাট্রিবিউশনের একটি ইতিবাচক শৈলীর বিকাশ |} '''শিক্ষার্থীদের এসআরএল কৌশলগুলো শেখান - স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীদের বিকাশ করুন''' শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বিকাশে শিক্ষকরা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। শ্রেণিকক্ষে এসআরএল প্রচারের জন্য, শিক্ষকদের অবশ্যই শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত কৌশলগুলো শেখাতে হবে যা শেখার সুবিধার্থে শেখায়। সর্বাধিক সাধারণ এবং কার্যকর এসআরএল কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে: লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-অনুপ্রেরণা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ, শেখার কৌশলগুলোর নমনীয় ব্যবহার, স্ব-পর্যবেক্ষণ, উপযুক্ত সাহায্য-সন্ধান এবং স্ব-মূল্যায়ন। ''লক্ষ্য নির্ধারণ:'' ব্যক্তিগত লক্ষ্য প্রতিষ্ঠা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক এবং নির্দিষ্ট ক্রিয়াগুলোতে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে যা তারা তাদের শিক্ষার উন্নতির জন্য গ্রহণ করতে পারে। স্বল্পমেয়াদী অর্জনযোগ্য লক্ষ্যগুলো প্রায়শই দীর্ঘমেয়াদী আকাঙ্ক্ষাগুলোতে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রক্সিমাল লক্ষ্য নির্ধারণ স্ব-কার্যকারিতা এবং দক্ষতা বিকাশ বাড়িয়ে তুলতে পারে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের তাদের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে সহায়তা করার জন্য স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণে উত্সাহিত করা, তারা কী শিখতে চায় এবং কী করতে সক্ষম হবে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে। ''পরিকল্পনা:'' পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের সফল হওয়ার জন্য সুচিন্তিত লক্ষ্য এবং কৌশল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের একটি পরিকল্পনার সাথে একাডেমিক কাজগুলোর কাছে যেতে শেখানো এসআরএল প্রচারের জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। শিক্ষকরা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের পরিকল্পনাগুলো অন্বেষণ করতে পারেন। এরপরে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য পদক্ষেপ এবং পদ্ধতিগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে এবং কোনও প্রয়োজনীয় সামঞ্জস্য করতে পরিকল্পনাটি ব্যবহার করতে পারে। ''স্ব-অনুপ্রেরণা:'' কাজের পছন্দ সম্পর্কিত শিক্ষার্থীদের আচরণ, পাশাপাশি একাডেমিক কাজগুলোতে তাদের প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায় সরাসরি তাদের অন্তর্নিহিত প্রেরণার সাথে সম্পর্কিত। উচ্চ অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণাযুক্ত শিক্ষার্থীরা মেটাকগনিটিভ কৌশলগুলো ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি। অনুভূত স্বায়ত্তশাসন, অনুভূত দক্ষতা এবং টাস্ক মাস্টারি লক্ষ্য অভিযোজন বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বাড়ানো যেতে পারে। শেখার প্রক্রিয়াটির গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া, পছন্দ সরবরাহ করা এবং স্ব-দিকনির্দেশনার সুযোগের অনুমতি দেওয়া স্বায়ত্তশাসনের অনুভূতি বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ''মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ:'' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীদের অবশ্যই তাদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে এমন উদ্দীপনাগুলো সরিয়ে যা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের তাদের মনোযোগের স্প্যানগুলো তৈরি করতে সহায়তা করার জন্য ঘন ঘন বিরতি সরবরাহ করে। ''কৌশলগুলোর নমনীয় ব্যবহার:'' সফল শিক্ষার্থীরা কার্য জুড়ে একাধিক শেখার কৌশল বাস্তবায়ন করতে এবং তাদের অগ্রগতির সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় হিসাবে তাদের সামঞ্জস্য করতে সক্ষম হয়। নতুন কৌশলগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা মডেল করে, সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপগুলোকে সমর্থন করার জন্য শ্রেণিকক্ষকে সংগঠিত করে এবং শিক্ষার্থীদের অনুশীলন হিসাবে উপযুক্ত ভারা সরবরাহ করে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বাধীন কৌশল ব্যবহারকারী হতে সহায়তা করতে পারেন। ''স্ব-পর্যবেক্ষণ:'' কৌশলগত শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার এবং কৃতিত্বের ফলাফলের জন্য মালিকানা গ্রহণ করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার কাজগুলোতে কতবার কাজ করেছেন, তারা যে কৌশলগুলো ব্যবহার করেছেন এবং কাজ করতে তারা যে পরিমাণ সময় ব্যয় করেছেন তার রেকর্ড রেখে স্ব-পর্যবেক্ষণকে উত্সাহিত করতে পারেন। এই অনুশীলনটি শিক্ষার্থীদের তাদের অগ্রগতি কল্পনা করতে এবং প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করতে দেয়। ''সাহায্য প্রার্থনাঃ'' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা প্রয়োজনে প্রায়শই অন্যের কাছ থেকে সহায়তা চায়। মাস্টারি লক্ষ্য ওরিয়েন্টেশন সহ শ্রেণিকক্ষগুলো শিক্ষার্থীদের বিব্রত বোধ না করে সহায়তা চাইতে উত্সাহিত করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের চলমান অগ্রগতি প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করে এবং শিক্ষার্থীদের যথাযথ পরিবর্তন করার পরে অ্যাসাইনমেন্ট পুনরায় জমা দেওয়ার সুযোগ দিয়ে ইতিবাচক সহায়তা চাইতে আচরণগুলো প্রচার করতে পারেন। স্ব-মূল্যায়ন: শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার লক্ষ্য এবং কৌশল ব্যবহার নিরীক্ষণ করতে এবং শেখার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সেই লক্ষ্য এবং কৌশলগুলোতে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে স্ব-মূল্যায়ন প্রচার করতে পারেন। স্ব-মূল্যায়ন ক্রিয়াকলাপগুলোর মধ্যে চেকলিস্ট ব্যবহার করা, শেখার সামগ্রীর সংক্ষিপ্তসার, স্ব-প্রশ্নগুলোর বিকাশ এবং প্রতিক্রিয়া জানানো এবং সমবয়সীদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া চাওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে  চিত্র। এসআরএল সম্পর্কিত মৌলিক ধারণা এবং সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াগুলো দেখায়। === শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে উত্সাহিত করার জন্য নির্দেশমূলক কৌশল''' শিক্ষকদের শিক্ষামূলক কৌশলগুলো শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করতে পারে। কোবায়াশি (২০০৬) নির্দেশনায় এসআরএল এম্বেড করার জন্য প্রশিক্ষকদের জন্য চারটি নীতি বর্ণনা করেছেন: শিক্ষার্থীদের একটি কার্যকর শিক্ষার পরিবেশ প্রস্তুত এবং গঠনের জন্য গাইড করুন। জ্ঞানীয় এবং মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়াগুলো সহজতর করার জন্য নির্দেশনা এবং ক্রিয়াকলাপগুলো সংগঠিত করুন। শিক্ষার্থী পর্যবেক্ষণের সুযোগগুলো উপস্থাপন করতে নির্দেশমূলক লক্ষ্য এবং প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করুন। এবং শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত মূল্যায়নের তথ্য এবং স্ব-মূল্যায়নের উপলক্ষ সরবরাহ করুন। * সরাসরি নির্দেশনা এবং মডেলিং বিভিন্ন শেখার কৌশলগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া শিক্ষার্থীদের শেখার মাধ্যমে কাজ করার সময় তারা যে সরঞ্জামগুলো থেকে আঁকতে পারে তার একটি স্যুট বিকাশ করতে সহায়তা করে। এসআরএল-এর সরাসরি নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন কৌশল স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি সেই কৌশলগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা জড়িত। এই ধরনের নির্দেশনা মডেলিং এবং বিক্ষোভের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। শিক্ষার্থীদের আরও স্ব-নিয়ন্ত্রক হতে উত্সাহিত করার জন্য এটি সর্বোত্তম প্রাথমিক কৌশল হতে পারে। শিক্ষকরা একটি কৌশল প্রয়োগ এবং চিন্তার প্রক্রিয়াগুলোকে মৌখিক করার ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসাবে কাজ করতে পারেন, বা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে শিক্ষার্থীদের কৌশলগত আচরণে জড়িত হতে সক্ষম করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভাষা ক্লাসে শিক্ষকরা স্ক্রিনে একটি পাঠ্য দেখাতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের এটি পড়ার সাথে সাথে এটি সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা বলতে পারেন, প্রশ্ন এবং মন্তব্যগুলোর জন্য বিরতি দিতে পারেন, যেমন: "এটি কি বোধগম্য? এখানে মূল আইডিয়াটা কী? আমি মনে করি আমাকে এই অনুচ্ছেদের শুরুতে ফিরে যেতে হবে পুনরায় পড়ার জন্য যাতে আমি নিশ্চিত যে আমি বুঝতে পারি। একইভাবে, শিক্ষকরা বোর্ডে লেখার সময় উচ্চস্বরে চিন্তা করে লেখার প্রক্রিয়াটি মডেল করতে পারেন। আত্ম-প্রশ্ন এবং মন্তব্যগুলো হতে পারে: "আমি কি আমার ধারণাগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছি? পাঠক কি বুঝতে পেরেছেন আমি কী বলতে চাইছি? আমি কি আমার পরিকল্পনা বা রূপরেখা অনুসরণ করছি? যদি তা না হয়, তবে আমার কি নতুন পরিকল্পনা করা দরকার?" পড়া বা লেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন, শিক্ষার্থীরা মূল ধারণা, শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন এবং তাদের ব্যক্তিগত মতামত বোঝার জন্য তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো রেকর্ড করে নোট তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, শিক্ষকরা স্পষ্টভাবে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট কার্যকলাপ সম্পর্কে বলতে পারেন, কীভাবে এই কৌশলটি শেখার কর্মক্ষমতা উন্নত করে এবং শিক্ষার্থীদের কীভাবে এই কৌশলটি নিয়োগ, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করতে হয় তা বলে [। প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষে, শিক্ষকরা "আপনি কী ভাবেন?" এর মতো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে শিক্ষার্থীদের তাদের ধারণাগুলো ভাগ করে নিতে উত্সাহিত করতে সংলাপ ব্যবহার করতে পারেন। "কেন এমন ভাবছ তুমি?" তারা সহযোগী দক্ষতা এবং যোগাযোগমূলক আচরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও সরবরাহ করতে পারে যা ভাগ করে নেওয়া অর্থ তৈরিকে সমর্থন করে * নির্দেশিত এবং স্বাধীন অনুশীলন গাইডেড অনুশীলন হলো শিক্ষকরা এসআরএল এবং অনুপ্রেরণা উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে এমন আরেকটি উপায়। নির্দেশিত অনুশীলনের সময়, শেখার কৌশল বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে স্থানান্তরিত হয়। ছাত্র-শিক্ষক সম্মেলন একমুখী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তাদের কৌশল ব্যবহার এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করতে পারে। স্বাধীন অনুশীলন নির্দেশিত অনুশীলন অনুসরণ করা উচিত। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব কৌশল অনুশীলন করার সুযোগ দেওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসনকে শক্তিশালী করতে পারে। শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের স্ব-প্রতিফলিত অনুশীলনের সুযোগ সরবরাহ করা উচিত যা শেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন তাদের কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সামঞ্জস্য করার জন্য তাদের দক্ষতা উন্নত করে।  কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্ত-সমাপ্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা, শিক্ষার্থীদের প্রতিচ্ছবি সরবরাহ করা, শেখার সামগ্রীর মূল পয়েন্টগুলোর সংক্ষিপ্তসার করা এবং তাদের প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা এবং উত্তর দেওয়ার সুযোগ সরবরাহ করা।  উদাহরণস্বরূপ, এসআরএল এবং ভাষা ক্লাসে পড়ার কৃতিত্ব বাড়ানোর জন্য, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়া বইয়ের শিরোনাম রেকর্ড করতে, পঠন লগে পড়া মিনিট এবং পৃষ্ঠাগুলো রেকর্ড এবং গ্রাফ করতে, বই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জের স্তর পদ্ধতিগতভাবে বাড়ানোর জন্য মাইলফলক সেট করতে এবং পড়ার লগে সাপ্তাহিক প্রতিচ্ছবি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের চলমান ভিত্তিতে বিভিন্ন শেখার কাজে কার্যকর কৌশল অনুশীলন করতে উত্সাহিত করা। এটি কৌশলটির সাধারণীকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ উভয়ই প্রচার করতে সহায়তা করে, শিক্ষার্থীদের কৌশলগুলোর ব্যবহারের মহড়া দেয়, তাদের কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণ ও মূল্যায়নের উপায়গুলো বিকাশ করে এবং নতুন কৌশলগুলোর সংশোধন ও নির্মাণে সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের জড়িত করে। * সামাজিক সমর্থন এবং প্রতিক্রিয়া শিক্ষক এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে সামাজিক সমর্থন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে কারণ শিক্ষার্থীরা আরও স্ব-নিয়ন্ত্রক হতে শিখছে। প্রায়শই, সামাজিক সমর্থন প্রতিক্রিয়া আকারে আসে। লাবুন এট আল। (২০১০) গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে যে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল তারা তাদের গণিতের স্কোর উন্নত করতে এসআরএল কৌশলগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি ছিল। কার্যকর প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শিক্ষার্থীরা কী ভাল করেছে, তাদের কী উন্নতি করতে হবে এবং তাদের কাজের উন্নতি করতে তারা কী পদক্ষেপ নিতে পারে সে সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে এবং লক্ষ্য, মানদণ্ড এবং মানগুলোর অভ্যন্তরীণ নির্মাণের মূল্যায়ন করতে সহায়তা করে।  শিক্ষকদের গঠনমূলক মূল্যায়ন সরবরাহ করা উচিত যা কেবল শিক্ষার্থীরা কীভাবে করছে তা দেখায় না, তবে কীভাবে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে হয় এবং তাদের নিজস্ব অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হয় তা শিখতে সহায়তা করে।  নিকোল এবং ম্যাকফারলেন-ডিকের (২০০৬) অনুসারে[, কার্যকর প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত: ভাল পারফরম্যান্স কী তা স্পষ্ট করুন। শিখনে স্ব-মূল্যায়নের বিকাশকে সহজতর করা। শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার বিষয়ে উচ্চ মানের তথ্য প্রদান। শেখার চারপাশে শিক্ষক এবং সহকর্মীদের কথোপকথনকে উত্সাহিত করা। ইতিবাচক অনুপ্রেরণামূলক বিশ্বাস এবং আত্ম-সম্মানকে উত্সাহিত করুন। বর্তমান এবং পছন্দসই পারফরম্যান্সের মধ্যে ব্যবধান বন্ধ করার সুযোগ প্রদান। এবং শিক্ষকদের এমন তথ্য সরবরাহ করুন যা শিক্ষাদান গঠনে সহায়তা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। শিক্ষকরা কার্যকর স্ব-মূল্যায়নের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যা শিক্ষার্থীদের সাফল্য এবং অনুপ্রেরণার বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে সংযুক্ত একটি মেটাকগনিটিভ দক্ষতা।  এসআরএল প্রচারের জন্য, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ইনপুট, মডেলিং এবং লক্ষ্যগুলোর জন্য অ্যাকাউন্টিংয়ের সাথে নির্ধারিত পরিমাপযোগ্য এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্যগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং শিক্ষার্থীদের স্তরের সাথে মেলে প্রশ্নগুলো সামঞ্জস্য ও পার্থক্য করে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের জড়িত করতে পারেন।  শিখন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা একটি ইতিবাচক শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। উচ্চশিক্ষায়, এসআরএলকে সহজতর করার একটি কার্যকর উপায় হলো কোর্সের ওয়েবসাইটে একটি ইন্টারেক্টিভ ফোরাম স্থাপন করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা কোর্সের উপাদান নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে, যার ফলে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার উন্নতি হয়। * অন্যান্য শিক্ষামূলক কৌশল স্ব-পর্যবেক্ষণমূলক কৌশল এসআরএলে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি সরঞ্জাম। স্ব-রেকর্ডিং তাদের করা ত্রুটিগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যাতে উপযুক্ত কৌশলগুলো বিকাশ ও প্রয়োগ করা যায়। গ্রাফিং একটি সহায়ক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের শেখার উপর নিয়ন্ত্রণের বিশ্বাস বিকাশে সহায়তা করে। একটি উদাহরণ হলো গ্রেডগুলো প্লট করা এবং ব্যবহৃত কৌশলগুলো এবং পারফরম্যান্স ফলাফলগুলোর মধ্যে লিঙ্কটি হাইলাইট করার জন্য এই গ্রেডগুলো অর্জনের জন্য ব্যবহৃত শেখার কৌশলগুলো লিখে রাখা। শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের জন্য শিক্ষাগত শৈলীগুলো খাপ খাইয়ে নিতে এবং সংশোধন করার জন্য প্রতিফলিত অনুশীলন শিক্ষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর সরঞ্জাম। এই অনুশীলনটি শিক্ষকদের সম্ভাব্য কারণগুলো তদন্ত করতে সক্ষম করে যা প্রদত্ত নির্দেশমূলক কৌশলটির কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে। চিন্তাশীল প্রতিফলন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থবহ শিক্ষার অভিজ্ঞতা আরও ভালভাবে তৈরি করতে পারেন। '''শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সুবিধার্থে''' এসআরএলকে উত্সাহিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো একটি সহায়ক শিক্ষার পরিবেশের ব্যবস্থা করা, যা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য, শেখার বিষয়বস্তু এবং কার্য এবং শিক্ষণ পদ্ধতি দিয়ে তৈরি। উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের স্ব-নির্ধারিত উপায়ে শিখতে সক্ষম এবং উত্সাহিত করতে পারে ইয়ং (২০০৫)  শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে এবং শ্রেণিকক্ষে এসআরএলকে উত্সাহিত করার জন্য নিম্নলিখিত নির্দেশিকাগুলো বর্ণনা করেছে, অর্থাত্, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে যা দক্ষতা এবং কার্য দক্ষতা অভিযোজনের বিকাশকে সমর্থন করে, স্ব-সংকল্প এবং স্বায়ত্তশাসনের বিকাশকে সমর্থন করার জন্য ক্রিয়াকলাপের পছন্দ সরবরাহ করে, শেখার ক্ষেত্রে সামাজিক সংযোগগুলোকে উত্সাহিত করে এবং অনুপ্রেরণা প্রচারের জন্য শেখার পারফরম্যান্সের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করে। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা শ্রেণিকক্ষে অনুভূত শিক্ষার্থী নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হতে পারে। উচ্চ টাস্ক স্বায়ত্তশাসন সহ একটি শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, একটি তথ্যমূলক শৈলীতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সহ, সর্বাধিক অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বৃদ্ধি করবে। শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করা উচিত। শিক্ষকরা যখন ঘন ঘন নির্দিষ্ট এবং গুণগত প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করেন এবং গ্রেডের গুরুত্বকে গুরুত্ব দেন তখন শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো গ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অর্থপূর্ণ ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়া, কাজের পছন্দ থাকা এবং সমবায়ভাবে কাজ করা শিক্ষার্থীদের স্ব-কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে শিক্ষকদের উদারতা এবং স্বতন্ত্র মতামতের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি প্রচার করা উচিত, যেমন ইতিবাচক এবং সহায়ক শিক্ষার পরিবেশের বিকাশের মাধ্যমে সহায়তা চাওয়া, সহায়তা দেওয়া এবং বিভিন্ন মতামতের আলোচনার প্রচার করা। এর মধ্যে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর প্রতি ইতিবাচক অনুভূতিকে উত্সাহিত করা, ভুলগুলো শেখার সুযোগ হিসাবে বোঝা, শেখার অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্ত নেতিবাচক আবেগগুলো স্বীকার করা এবং প্রতিক্রিয়া জানানো এবং শিক্ষার্থীদের অসহায় বিশ্বাসকে পুনরায় প্রশিক্ষণে সহায়তা করা জড়িত। '''শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের উত্সাহ দেওয়ার ক্রিয়াকলাপ''' বিভিন্ন ধরণের ক্রিয়াকলাপ রয়েছে যা এসআরএলকে উন্নীত করতে পারে। জটিল সহযোগী ক্রিয়াকলাপগুলো শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব কর্মক্ষমতা এবং অন্যের কার্য-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপগুলোর পর্যবেক্ষণকে উত্সাহ দেয়। এটি শিক্ষার্থীদের কর্মের পরিকল্পনা করতে, ধারণাগুলো তৈরি করতে, লক্ষ্যগুলোর বিরুদ্ধে অগ্রগতি পরীক্ষা করতে এবং গোষ্ঠীর অবদানের ভিত্তিতে বোঝার সংস্কার করতে সহায়তা করে। অর্থবহ কাজগুলো (যেমন, কাজগুলো শিক্ষার্থীদের অতীত অভিজ্ঞতা, তাদের আগ্রহের সাথে সম্পর্কিত এবং তাদের শেখার জন্য বাস্তব প্রভাব রয়েছে) অনুপ্রেরণা প্রচার করতে পারে এবং এসআরএলকে উত্সাহিত করতে পারে। প্রক্সিমাল বিকাশের পৃথক অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করে জ্ঞানীয় চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করে এমন ক্রিয়াকলাপগুলো এসআরএলের সাথেও যুক্ত। বহুমাত্রিক কাজগুলো শিক্ষার্থীকে চ্যালেঞ্জের আরামদায়ক স্তরগুলো খুঁজে পেতে দেয়। কৌতুকপূর্ণ ক্রিয়াকলাপগুলো প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য আকর্ষক সুযোগ সরবরাহ করতে পারে। প্যারিস এট আল (২০০১) চার ধরণের নীতি বর্ণনা করেছেন যা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এসআরএল প্রচারের জন্য শ্রেণিকক্ষে ক্রিয়াকলাপ ডিজাইন করতে ব্যবহার করতে পারেন, যার মধ্যে স্ব-মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা শেখার গভীর বোঝার দিকে পরিচালিত করে। চিন্তাভাবনা, প্রচেষ্টা এবং প্রভাবের স্ব-ব্যবস্থাপনা যা সমস্যা সমাধানের জন্য নমনীয় পদ্ধতির প্রচার করে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ যা বিভিন্ন উপায়ে শেখানো যেতে পারে। এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণ যা প্রতিটি ব্যক্তির আখ্যান অভিজ্ঞতা এবং পরিচয় প্রচেষ্টায় বোনা হয়। শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থী হয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জোড়া-কাজ এবং গ্রুপ-ওয়ার্কে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার এবং তারা যা শিখেছে তা স্থানান্তর করার সুযোগ তৈরি করতে পারেন। উদ্দেশ্য এবং শেখার কৌশল সম্পর্কে উন্মুক্ত শ্রেণীর আলোচনার আয়োজন করুন। উদ্দেশ্যগুলো প্রতিষ্ঠা এবং ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রাক-শিখন কার্যক্রম সরবরাহ করুন এবং কৌশল ব্যবহার এবং জ্ঞান অর্জনকে আরও সুসংহত করার জন্য পোস্ট-লার্নিং কার্যক্রম সরবরাহ করুন। এবং শিক্ষার্থীরা যা শিখেছে সে সম্পর্কে প্রতিফলিত করার জন্য ক্লাস শেষে প্রতিচ্ছবি মুহুর্ত তৈরি করুন।  শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের তাদের অনুপ্রেরণা, বিশ্বাস এবং শেখার কৌশল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে শেখার প্রশ্নাবলী (এমএসএলকিউ) বা লার্নিং অ্যান্ড স্টাডি স্ট্র্যাটেজিস ইনভেন্টরি (এলএএসএসআই) এর মতো প্রশ্নাবলীও ব্যবহার করতে পারেন। এসআরএলকে সহজতর করার জন্য শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন এমন নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপগুলোর কয়েকটি উদাহরণ নীচে দেওয়া হল: "থিংক-পেয়ার-শেয়ার" ক্রিয়াকলাপটি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নগুলো প্রতিফলিত করতে, অংশীদারের সাথে প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে আলোচনা করতে এবং পুরো ক্লাসের সাথে চিন্তাভাবনা ভাগ করে নেওয়ার অনুমতি দেয়। "পুনরুদ্ধার অনুশীলন" স্ব-পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে এবং অর্থপূর্ণ, ধারণাগত এবং দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষার প্রচার করে। "বাছাই-চাঙ্কিং-সংগঠিত তথ্য" ক্রিয়াকলাপ শিক্ষার্থীদের তথ্য থেকে বোঝার জন্য ধারণা এবং পরিভাষা সংগঠিত করতে সহায়তা করে। "রিডিং রিফ্লেকশনস" শিক্ষার্থীদের স্ব-পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিফলিত চিন্তাভাবনায় সহায়তা করতে পারে। "পরীক্ষার মোড়ক" কার্যকলাপ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলো বিবেচনা করে এবং কার্যকারিতা প্রতিফলিত করে। = শব্দকোষ = '''অ্যাকশন কন্ট্রোল:''' ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা (উদাঃ অনুপ্রেরণা, ঘনত্ব) যা কোনও ব্যক্তিকে স্ব-নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। '''কগনিটিভ মডেলিং:''' শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা বিকাশের পদ্ধতি যার মধ্যে পারফরম্যান্সের জন্য যুক্তি দেওয়া, কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা জড়িত। '''কগনিটিভ প্রসেসিং:''' একটি শব্দ যা চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞান প্রয়োগ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। '''সহযোগী শিক্ষা''': সহকর্মী / গোষ্ঠীর মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং শেখা। '''ক্রিটিক্যাল থিংকিং:''' তথ্য ওজন, মূল্যায়ন এবং বোঝার সমন্বয়ে একটি প্রতিফলিত চিন্তাভাবনা। '''পূর্বচিন্তা পর্ব:''' শেখার আগে কৌশল নিচ্ছে। স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। '''মেটাকগনিশন:''' ভাবনা নিয়ে ভাবনা। নিজের চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝাপড়া। '''মেটাকগনিটিভ নলেজ:''' ঘোষণামূলক জ্ঞান যেমন ভাষা এবং স্মৃতি। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' কোনও কাজ জুড়ে আসা এবং এর সাথে সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়া করার সময় ব্যক্তিটি কী সচেতন এবং সে কী অনুভব করে। '''মেটাকগনিটিভ দক্ষতা:''' জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগুলোর ইচ্ছাকৃত ব্যবহার (অর্থাত্ পদ্ধতিগত জ্ঞান)। '''অনুপ্রেরণা:'''আচরণ এবং চিন্তাভাবনা যা ব্যক্তিদের সম্পাদন করতে চালিত করে। '''পারফরম্যান্স পর্ব:''' শেখার সময় কৌশল গ্রহণ করা হয়। কৌশল বাস্তবায়ন, এবং কৌশল পর্যবেক্ষণ। '''এনগেজমেন্টের উদ্দেশ্য:'''স্ব-প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ক্রিয়াগুলো যা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক। '''আপেক্ষিকতাবাদী:''' জ্ঞান নমনীয় এবং পরিবর্তনযোগ্য। প্রশ্ন তোলা যায়। '''স্ব-কার্যকারিতা:''' ব্যক্তি কীভাবে নিজের ক্ষমতা এবং অনুভূত ক্ষমতা থেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাসের স্তরটি উপলব্ধি করে '''আত্ম-মূল্যায়ন:''' একটি মান অনুযায়ী নিজেকে মূল্যায়ন করা '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত কর্ম:''' যে উপায়ে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হয়। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন:'''কারও শেখার সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্টভাবে বোঝার ক্ষমতা। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত পর্ব:''' শেখার পর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। মূল্যায়ন। 9xr8yu8xy9sdjcptn3kvr7me34la2cr 84850 84848 2025-06-18T16:41:11Z NusJaS 8394 84850 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের (Self-Regulated Learning - SRL) মৌলিক ধারণাগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। আমরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করেছি। এখানে মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের তাত্ত্বিক ভিত্তি আলোচনা করার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এসব মৌলিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া অ্যাকাডেমিক পরিবেশে শেখার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সহজতর করতে কীভাবে সহায়তা করা যায়। এই অধ্যায়টি পড়ার পর আপনি শিখবেন: * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ধারণা এবং প্রধান মডেলসমূহ। * মেটাকগনিশনের ধারণা এবং কীভাবে এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পুনর্গঠন ও শেখার কৌশল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ও মেটাকগনিশনের উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদানসমূহ। * শেখার বিশ্লেষণ কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। * প্রযুক্তি কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সহজ করে তোলে। * স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিকাশের চারটি ধাপ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের চারটি ধরন। * কীভাবে শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উদ্দীপিত ও উৎসাহিত করা যায়। == ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়ন == [[চিত্র:SRL_Chapter_Map.jpg|থাম্ব|783x783পিক্সেল|চিত্র ১. মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] [[চিত্র:Section_1_Defining_the_Concepts_.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ২. ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়িত করা]] == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সংজ্ঞা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বলতে বোঝায় যে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).">Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.). Boston, MA: Pearson</ref>; এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ কৌশল ব্যবহার করে তাদের জ্ঞান, আচরণ ও প্রেষণা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। <ref name="Zimmerman2002">Zimmerman, B. J. (2002). Becoming a self-regulated learner: an overview. Theory Into Practice.41(2):64–70. doi:10.1207/s15430421tip4102\2.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে, শেখার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে এবং নিজেদের উৎসাহিত করতে পারে <ref name="Purdie, N., & Hattie, J. (1996).">Purdie, N., & Hattie, J. (1996). Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning. American Educational Research Journal 33.(4): 845–871.</ref>। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার পারফরম্যান্স ও আচরণকে আরও সক্রিয় ও দক্ষ করে তুলতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা নিজেদের বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে শেখার কৌশল পরিবর্তন ও উন্নয়ন করতে পারে <ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''">García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014). The effects of question-generation training on metacognitive knowledge, self regulation and learning approaches in Science. Psicothema, 26(3), 385-390.</ref> এবং গঠনমূলক কার্যকলাপ, সহযোগিতামূলক কাজ ও মুক্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের শেখাকে মূল্যায়ন করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রেষণামূলকভাবে সক্রিয় পদ্ধতি। উইন ও বেকার (২০১৩, পৃষ্ঠা ৩)-এর মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হচ্ছে "মেটাকগনিটিভভাবে পরিচালিত প্রেষণার আচরণগত প্রকাশ" <ref name="Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013).">Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013). The potentials of educational data mining for researching metacognition, motivation and self-regulated learning. Journal of Educational Data Mining, 5(1).</ref>। এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা, আচরণ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা শেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সফলভাবে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).">Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011). Encouraging self-regulated learning in the classroom: A review of the literature. Metropolitan Educational Research Consortium (MERC).</ref>। জিমারম্যান (২০০২) এর মতে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও আচরণগত কার্যকলাপ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: পূর্বচিন্তা পর্যায়, কার্যকরন পর্যায় এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে (স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ, কৌশলগত পরিকল্পনা) শেখার কাজ বিশ্লেষণ ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় <ref name="Zimmerman2002" />। কার্যকরন পর্যায়ে কৌশল প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ ঘটে এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়ে শেখার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয় <ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).">Furnes, B., & Norman, E. (2015). Metacognition and reading: Comparing three forms of metacognition in normally developing readers and readers with dyslexia. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 21(3), 273-284</ref>। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া আরও গভীরভাবে বুঝতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বৃহৎ কাঠামো পরবর্তী অংশে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। == মেটাকগনিশনের সংজ্ঞা == মেটাকগনিশন হলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের একটি মূল উপাদান। এটি জ্ঞানীয় চিন্তা এবং চিন্তার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত। মেটাকগনিটিভ সক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতে পারে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। এই অংশে আমরা মেটাকগনিশনের সংজ্ঞার বিবর্তন বিশ্লেষণ করবো। ১৯৭৯ সালে ফ্ল্যাভেল প্রথম মেটাকগনিশনের ধারণা উপস্থাপন করেন তার গবেষণায় <ref name="Flavell, J. H. (1979).">Flavell, J. H. (1979). Metacognition and cognitive monitoring: A new area of cognitive–developmental inquiry. American Psychologist, 34(10), 906-911.</ref>। এটি শেখার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন পাঠ পড়া, লেখা, পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন। মেটাকগনিশনের দুটি মৌলিক কার্যাবলি হলো: জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ <ref name="Efklides, A. (2008).">Efklides, A. (2008). Metacognition: Defining its facets and levels of functioning in relation to self-regulation and co-regulation. European Psychologist, 13(4), 277-287.</ref>। ১৯৮০ সালে অ্যান ব্রাউন মেটাকগনিশনের একটি সংজ্ঞা দেন যা প্রথমবার “regulation” (নিয়ন্ত্রণ) শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। সাম্প্রতিক গবেষণায় মেটাকগনিশনকে তিনটি উপাদানে বিভক্ত করা হয়েছে <ref name="Efklides, A. (2008)." />: '''মেটাকগনিটিভ জ্ঞান''' (বা মেটাকগনিটিভ সচেতনতা): শিক্ষার্থীদের নিজেদের সম্পর্কে, কাজ, কৌশল, লক্ষ্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানার সক্ষমতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি তিন প্রকারের হতে পারে: ঘোষণামূলক জ্ঞান, পদ্ধতিগত জ্ঞান এবং শর্তাধীন জ্ঞান <ref name="Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987).''">Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987). Children's metacognition about reading: Issues in definition, measurement, and instruction.Educational Psychologist 22: 225–278.</ref>। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' শিক্ষার্থী যখন কোনও কাজের মুখোমুখি হয় এবং তার তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে, তখন সে কী অনুভব করে ও কীভাবে উপলব্ধি করে—তা হলো মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শেখার লক্ষ্য সংশোধনে সহায়তা করে। '''মেটাকগনিটিভ কৌশল/দক্ষতা:''' এগুলো হলো জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলের সচেতন ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে: দিকনির্দেশনা কৌশল, পরিকল্পনা কৌশল, জ্ঞান প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল, পরিকল্পিত কাজ সম্পাদনের পর্যবেক্ষণ কৌশল এবং ফলাফল মূল্যায়নের কৌশল <ref name="Efklides, A. (2008)." />। নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল দক্ষতা হলো পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন <ref name="Schraw, G. (1998).">Schraw, G. (1998). Promoting general metacognitive awareness. Instructional Science 26: 113–125.doi:10.1023/A:1003044231033.</ref>। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান হলো জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণের জন্য, আর মেটাকগনিটিভ দক্ষতা হলো নিয়ন্ত্রণের জন্য। মেটাকগনিশনের সংজ্ঞাগুলো এটিকে “বহুমাত্রিক”, “সচেতন প্রক্রিয়া” এবং “ব্যক্তিকেন্দ্রিক” হিসেবে তুলে ধরে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় মেটাকগনিশন নিয়ে গবেষণা করতে হলে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন <ref name="Efklides, A. (2008)." />। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম তৈরি হয়েছে। এটি মেটাকগনিশনের এই তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন, কিছু হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যাতে তারা নিজেদের জ্ঞানীয় শেখা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই কার্যক্রমগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত মেটাকগনিটিভ জ্ঞান ও প্রক্রিয়া জোর দিয়ে থাকে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মূল্যায়ন ও মেটাকগনিশনের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে <ref name="Efklides, A. (2008)." />। == অন্যান্য সম্পর্কিত ধারণা == === শিক্ষার বিচার === মেটাকগনিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ধারণা হলো শিক্ষার বিচার বা জাজমেন্ট অফ লার্নিং (JOLs)। শিক্ষার্থীরা কতটা ভালোভাবে কোনো তথ্য শিখেছে তা নিয়ে তাদের নিজেদের মূল্যায়নই শিক্ষার বিচার<ref name="Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005).">Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005). Judgments of learning: Evidence for a two-stage process. Memory & Cognition, 33(6), 1116-1129.</ref>। নেলসন ও ডানলস্কি (১৯৯১) বলেছেন, JOLs শেখার প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। শিখনের পর কিছুটা সময় অপেক্ষা করে মূল্যায়ন করলে এটি আরও নির্ভুল হয়, একে বলা হয় “বিলম্বিত-JOL প্রভাব” <ref name="Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991).">Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991). When People’s Judgments of Learning (JOLs) Are Extremely Accurate at Predicting Subsequent Recall: The “Delayed-JOL Effect”. Psychological Science, 2(4), 267–270. .</ref>। জানার অনুভূতি্র বিচার হলো, শিক্ষার্থী কোনও প্রশ্ন বা উত্তর কতটা বুঝে বা জানে তার পূর্বানুমান। <ref name="Bembenutty, H. (2009).">Bembenutty, H. (2009). Feeling-of-Knowing Judgment and Self-Regulation of Learning. Education, 129(4), 589-598.</ref>। এটি জাজমেন্ট অফ লার্নিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। উভয়েই স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার মাধ্যমে সংযুক্ত করে। এই অধ্যায়ে পরবর্তী অংশে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার ধারণা আলোচনা করা হবে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া বোঝায় নিয়ন্ত্রণ কীভাবে পরিচালিত হয়। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো—বস্তু এবং ক্রিয়া। বস্তু হলো শিক্ষার্থীর শেখার লক্ষ্য এবং ক্রিয়া হলো সেই লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতি। এই ক্রিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে: জ্ঞান, আবেগ, প্রেষণা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক পরিবেশে পরিবর্তন <ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).">Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014). Development of metacognitive knowledge of reading strategies and attitudes toward reading in early adolescence: The effect on reading comprehension. Psychological Topics, 23(1), 77–98.</ref>। উদাহরণস্বরূপ, প্রেষণার ক্রিয়া নির্ভর করে শিক্ষার্থীরা কবে এবং কীভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তার উপর। একইভাবে, আচরণগত পরিবর্তন ব্যক্তিগত শেখার দক্ষতা ও লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলে। === স্ব-মূল্যায়ন === স্ব-মূল্যায়ন মানুষকে তাদের দক্ষতা ও কৌশল সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। এটি এমন কৌশল বেছে নিতে উৎসাহিত করে, যেগুলো শেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এটি আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রথম পর্যায়ে ঘটে। স্ব-মূল্যায়ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের মোটিভেটেড থাকতে হয় এবং নতুন শেখার কৌশল গ্রহণের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকতে হয়। স্ব-মূল্যায়নের জন্য শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব অপরিহার্য।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016).">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016)। ট্রেস-ভিত্তিক মাইক্রো-বিশ্লেষণাত্মক পরিমাপ আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার। জার্নাল অফ লার্নিং অ্যানালিটিক্স, ৩(১), পৃ. ১৮৩-২২০।</ref> শেখার কৌশল সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি স্ব-মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে: আমার কী কী দক্ষতা আছে? আমার আগ্রহ কী? আমি কি ভিডিও দেখে ভালো শিখি, নাকি নোট লিখে? আমি কি লিখে নাকি টাইপ করে ভালো শিখি? আমি কি মুখস্থ করে ও ব্যাখ্যা করে শিখতে পারি?<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''2" /> [[চিত্র:Reflection.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৩। আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া]] === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হল আত্ম-প্রক্রিয়া, লক্ষ্য এবং সম্ভাব্য কর্মকাণ্ডের সমন্বয়। এটি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক হয়<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).2" />। প্রতিটি শিক্ষার্থীরই নিজের শেখার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ নির্দিষ্ট জ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ থেকে শেখে, আবার কেউ শেখে চাকরির প্রয়োজনে। এর ফলে, তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে চালিত করে বিভিন্ন ধরনের প্রেরণা। আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ মূলত পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এটি দেখায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যক্তিগত কার্যক্রম, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে: === স্ব-ব্যাখ্যা === স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার সহায়ক। বুচার<ref name="Butcher2006">Butcher, K. R. (2006)। লেখার সঙ্গে চিত্র ব্যবহার করে শেখা: মানসিক মডেল উন্নয়ন ও অনুমান তৈরিতে সহায়তা। ''জার্নাল অফ এডুকেশনাল সাইকোলজি, ৯৮''(১), ১৮২-১৯৭। DOI: 10.1037/0022-0663.98.1.182</ref> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যার ধারণাটি প্রথম ও তার সহকর্মীরা ১৯৯৭ সালে ব্যবহার করেন এবং এটি এমন একটি অর্থবহ মৌখিক বিবৃতি নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই তারা যা শিখছে তা ব্যাখ্যা করে। চাই<ref name="Chi2000">Chi, M. T. H. (2000)। ব্যাখ্যামূলক পাঠ্য স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শেখা: অনুমান তৈরি ও মানসিক মডেল সংশোধনের দ্বৈত প্রক্রিয়া। ''Advances in instructional psychology'' (pp. 161–238)। Mahwah, NJ: Lawrence Erlbaum।</ref> নিজে স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি জ্ঞানগত কার্যকলাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে কেউ নতুন কোনো বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখে, সাধারণত পাঠ্য বা অন্য কোনো মাধ্যমে। স্ব-ব্যাখ্যা এবং বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য হলো—স্ব-ব্যাখ্যার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর শেখা বিষয়টি অনুধাবন করা, শুধুমাত্র মুখস্থ নয়। এ দিক থেকে, স্ব-ব্যাখ্যা একটি আত্ম-নির্দেশিত জ্ঞান নির্মাণমূলক কার্যক্রম<ref name="Chi2000" />। স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ধারণাসমূহের মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ খুঁজে পায় (বিসরা, লিউ, সালিমি, নেসবিট ও উইন<ref name="Bisra2018">Bisra, K., Liu, Q., Salimi, F., Nesbit, J.C. & Winne, Ph, H. ''স্ব-ব্যাখ্যা প্ররোচিতকরণ: একটি মেটা-বিশ্লেষণ''। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, Simon Fraser University, Burnaby, BC।</ref>)। বিসরা প্রমুখের মতে, স্ব-ব্যাখ্যা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আত্ম-উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন তথ্য বোঝার জন্য করা হয়। যেহেতু এটি আত্ম-কেন্দ্রিক, তাই স্ব-ব্যাখ্যা চুপচাপ করা যায় বা উচ্চস্বরে বললেও তা মূলত শিক্ষার্থীর কাছেই বোধগম্য। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014">Wylie, R., & Chi, M. T. H. (2014)। মাল্টিমিডিয়া শেখায় স্ব-ব্যাখ্যার নীতি। In R. E. Mayer (Ed.), ''The Cambridge handbook of multimedia learning'' (2nd ed., pp. 413e432)। নিউ ইয়র্ক, NY: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।</ref> স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি গঠনমূলক ও প্রজন্মমূলক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন যা শেখার গভীরতা বাড়ায় এবং অন্যান্য জ্ঞানগত দক্ষতার মতো সময়ের সাথে উন্নত হয়। সাধারণভাবে, 'স্ব-ব্যাখ্যা' (SE) বলতে নিজেকে কিছু বোঝানোর উদ্দেশ্যে তৈরি মৌখিক বিবৃতি বোঝায়। অর্থাৎ, এটি সেই সকল বিষয়ভিত্তিক বিবৃতি যা একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যাংশ পড়ার পর তৈরি করে<ref name="Chi2000" />। == স্ব-ব্যাখ্যা বনাম নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা == স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার দিকে নিয়ে যায়। বিসরা ও তার সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কেবল সেই ব্যক্তি দ্বারা নয়, অন্যদের দ্বারাও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে, শেখা ঘটে স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নয়, বরং তার ফলাফলের মাধ্যমে—যেমন একজন শিক্ষক যে ব্যাখ্যা দেন, সেটি শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান সম্পর্কে জানেন না। হাউসম্যান এবং ভ্যানলেহন (বিসরা প্রমুখের উদ্ধৃতি অনুযায়ী<ref name="Bisra2018" />) এই ধরণের ফলাফল-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যাকে "কভারেজ হাইপোথিসিস" বলেন। তার মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কার্যকর হয় কারণ এটি "নির্দেশনামূলক উপকরণে অনুপস্থিত অতিরিক্ত বিষয়বস্তু তৈরি করে" (পৃ. ৩০৩)। তবে অধিকাংশ স্বীকৃত তত্ত্ব মতে, স্ব-ব্যাখ্যার উৎপাদিত ফলাফল একটি প্রজন্মমূলক জ্ঞানগত প্রক্রিয়া। এখানে কভারেজ হাইপোথিসিস এটিকে নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার সমতুল্য ফলাফল হিসেবে দেখে। যদি শিক্ষার্থী নিজে থেকে সঠিক স্ব-ব্যাখ্যা তৈরি করতে না পারে, তখন নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় (বিসরা প্রমুখ<ref name="Bisra2018" />)। ভ্যানলেন, জোন্স ও চাই<ref name="vanlehn1992">VanLehn, K., Jones, R. M., & Chi, M. T. (1992)। স্ব-ব্যাখ্যার প্রভাবের একটি মডেল। জার্নাল অফ দ্য লার্নিং সায়েন্সেস, ২(১), ১-৫৯। doi:10.1207/s15327809jls0201_1।</ref> স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতার তিনটি কারণ উল্লেখ করেন: প্রথমত, এটি একটি প্ররোচনামূলক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ঘাটতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, এটি সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া ও ধাপগুলিকে সাধারণীকরণে সহায়তা করে। তৃতীয়ত, এটি শিক্ষার্থীদের উপমার মাধ্যমে সমস্যার গভীর ব্যাখ্যা তৈরি করে। এছাড়া, ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের চিন্তায় অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করে মানসিক মডেলে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনে। এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ঘোষণামূলক জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়<ref name="Wylie,Chi2014" />। == নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার তুলনায় স্ব-ব্যাখ্যার সুবিধা == বিসরা ও সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> পরিচালিত মেটা-বিশ্লেষণ স্ব-ব্যাখ্যার পক্ষে এবং কভারেজ হাইপোথিসিস-এর বিপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে। এই গবেষণায় দেখা যায়, স্ব-ব্যাখ্যা (g=.29) নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর। লেখকরা এই কার্যকারিতাকে ব্যাখ্যা করেন শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান এবং নতুন জ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল হিসেবে। এটি অর্থপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। যখন পূর্বজ্ঞান ও নতুন তথ্যের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন শিক্ষার্থীর জ্ঞানগত প্রক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং তৈরি হওয়া ব্যাখ্যাটি পরবর্তীতে মনে রাখা এবং যুক্তি প্রয়োগে সহায়তা করে<ref name="Bisra2018" />। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইঙ্গিত সহ স্ব-ব্যাখ্যা, নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়েও কার্যকর হতে পারে, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা সক্রিয় হয়—প্রশিক্ষণ, ভুল সংশোধন বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছাড়াই। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012">Ionas, I. G., Cernusca, D., & Collier, H. L. (2012)। পূর্বজ্ঞান কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে: বিজ্ঞানে সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত একটি অন্বেষণধর্মী গবেষণা। International Journal of Teaching and Learning in Higher Education, 24(3), 349-358।</ref> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষক, বই বা অন্যান্য উৎসের ব্যাখ্যার চেয়ে কার্যকর কারণ—১) এটি পূর্বজ্ঞান সক্রিয় করে, ফলে এটি জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে; ২) এটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব সমস্যাকে কেন্দ্র করে; এবং ৩) শিক্ষার্থী যখন ইচ্ছা তখন এটি ব্যবহার করতে পারে। == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশ, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যা == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশগুলো সাধারণত পাঠ্য, অ্যানিমেশন, চিত্র (যেমন: চিত্র, রেখাচিত্র), বিবরণী এবং ন্যারে‌শন একত্রে উপস্থাপন করে এবং কম্পিউটারভিত্তিক হয়<ref name="Wylie,Chi2014" />। মাল্টিমিডিয়ার সুবিধা হলো এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপস্থাপন পদ্ধতি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, রেখাচিত্র স্থানিক তথ্য বুঝতে সাহায্য করে এবং ন্যারেশন একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করে যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য অপেক্ষা বেশি কিছু শিখে। মাল্টিমিডিয়া থেকে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা মৌখিক ও অ-মৌখিক উভয় তথ্য এনকোড করতে পারে এবং প্রতিটি উৎস থেকে উপস্থাপিত তথ্য একত্রিত করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন<ref name="Wylie,Chi2014" />। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই ধরনের শেখা তখনই কার্যকর, যখন শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে তথ্য একত্রিত করার জ্ঞানগত প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, এই জ্ঞানগত অংশগ্রহণের একটি উপায় হলো স্ব-ব্যাখ্যা। বুচার<ref name="Butcher2006" /> একটি গবেষণায় দেখান, যেসব শিক্ষার্থী মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সময় স্ব-ব্যাখ্যা করেছে, তারা শুধুমাত্র পাঠ্য ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি শিখেছে। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012" /> পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বজ্ঞান থাকলে রসায়নের সমস্যা সমাধানে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা বাড়ে। গবেষণায় শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যার মিথস্ক্রিয়ার ফলে দুটি উপকার পাওয়া যায়: এক, যত বেশি তারা নিজেদের রসায়ন জ্ঞান প্রকাশ করেছে, তত বেশি কার্যকর ছিল স্ব-ব্যাখ্যা; দুই, স্ব-ব্যাখ্যাভিত্তিক কৌশল কার্যকর করতে হলে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট "থ্রেশহোল্ড" পরিমাণ পূর্বজ্ঞান থাকতে হয়। অর্থাৎ, পূর্বজ্ঞান কম থাকলে স্ব-ব্যাখ্যা তেমন ফলদায়ক নয়, বরং এটি শেখার কার্যকারিতা ব্যাহত করে<ref name="Ionas2012" />। যখন শিক্ষার্থীরা মনে করে তারা রসায়ন সম্পর্কে ভালো জানে, তখন তারা শক্তিশালী স্ব-ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু থ্রেশহোল্ডে না পৌঁছালে, তারা আলাদা আলাদা ধারণা জানলেও সেগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারে না<ref name="Ionas2012" />। অতএব, যখন শিক্ষার্থীরা স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিখতে চায়, তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে অনুরূপ ধারণা, শর্ত বা প্রক্রিয়াগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাতে তারা নতুন জ্ঞান গঠন করতে পারে এবং প্রদত্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীর যদি পূর্ব জ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তি না থাকে, তাহলে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে এগোয় না। এছাড়াও, Yeh, Chen, Hung, এবং Hwang<ref name="Yeh2010">Yeh, F., Y, Chen, C., M, Hung, H., P., & Hwang, J., G. (2010). Optimal self-explanation prompt design in dynamic multi-representational learning environments. Journal computers and education 54, 1089–1100.</ref> উল্লেখ করেছেন যে, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার পদ্ধতিতে পূর্ব জ্ঞানের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তারা বিভিন্ন স্তরের পূর্ব জ্ঞানের অধিকারী ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালান, যাতে বোঝা যায় গতিশীল মাল্টিমিডিয়া উপাদানের সঙ্গে শেখার সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা কীভাবে তাদের শেখাকে প্রভাবিত করে। তারা দুই ধরণের স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করেন এবং শেখার ফলাফল, মানসিক চাপ, শেখার সময়কাল এবং দক্ষতার মতো বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করেন। যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের কাজটি যুক্তিসংগতভাবে ব্যাখ্যা করতে বলেছে এবং পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করতে বলে, আর যদি অনুমান ভুল হয়, তাহলে তাদের ব্যাখ্যা করতে হয় কেন তা ভুল। ফলাফল দেখা যায়, যারা কম পূর্ব জ্ঞান নিয়ে এসেছিল, তারা যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকার পেয়েছে, আর যারা বেশি জ্ঞান রাখে, তারা পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকৃত হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে তাদের পর্যাপ্ত পূর্ব জ্ঞান থাকে এবং সেই নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে একটি যথাযথ পটভূমি গড়ে ওঠে, যাতে তারা নতুন তথ্য বুঝতে এবং স্ব-ব্যাখ্যা করতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন মাত্রার পূর্ব জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ভিন্নভাবে কাজ করে। অতএব, স্ব-ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব জ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাল্টিমিডিয়া পরিবেশে উচ্চতর জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অ্যানিমেশনের পরবর্তী দৃশ্য অনুমান করতে পছন্দ করে, যেখানে কম জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ঘটনার যুক্তি খুঁজতে বেশি আগ্রহী। == স্ব-ব্যাখ্যার শিক্ষণ পদ্ধতির প্রতিফলন == ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে যা শিক্ষাবিষয়ক পাঠ্যক্রম তৈরির সময় একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, যেখান থেকে স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হতে পারে। যদিও স্ব-ব্যাখ্যা শেখানোর এবং রিভিউ সেশনের সুবিধা প্রসারিত করতে ব্যবহৃত হয় বা ছোট ছোট ট্রান্সফার সমস্যার জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, তবুও শিক্ষকদের উচিত শেখার প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ না করা। অর্থাৎ, শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে স্ব-ব্যাখ্যা প্রয়োগ না করাই উত্তম। বরং, অন্য কৌশলগত পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। এটি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং তখন স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হয়<ref name="Ionas20122" />। লেখকরা উল্লেখ করেন, স্ব-ব্যাখ্যার একটি সুবিধা হলো—যখন শিক্ষার্থীরা একবার শিখে যায় কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করতে হয়, তখন তারা এটি অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে, কারণ এটি একটি বিষয়ে নিরপেক্ষ মানসিক কৌশল। তবে একটি অসুবিধাও রয়েছে, আর তা হলো—যখন শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ে, তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানও বাড়তে হয়, না হলে স্ব-ব্যাখ্যা ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে, যদি শিক্ষার্থীরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তারা স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা ঠিকভাবে অনুভব নাও করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। তাই ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" /> যুক্তি দেন, শিক্ষাদান পদ্ধতি তৈরি করার সময় শিক্ষকদের উচিত এমন ব্যবস্থা রাখা, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট জ্ঞানের স্তরে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্ব-ব্যাখ্যার প্রয়োগ না করে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার ফল অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করার আগে তাদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়ন করা জরুরি। এরপর এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষকেরা কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করাবেন, তা নির্ধারণ করবেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকরা নতুন সমস্যা সমাধানের আগে আরও নির্দিষ্ট নির্দেশনামূলক প্রশ্ন দিতে পারেন। যখন শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুটি বুঝে ফেলে, তখন সাধারণ অনুরোধের মাধ্যমে স্ব-ব্যাখ্যা আহ্বান করা যায়। শিক্ষকরা চাইলে শিক্ষার্থীদের এমন অনুরোধ নিজেরা ব্যবহার করতেও বলতে পারেন সমস্যা সমাধানের সময়। প্রকৃতপক্ষে, স্ব-ব্যাখ্যার দীর্ঘমেয়াদী উপকার হলো—শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এ কৌশল সক্রিয় করতে পারে এবং সমস্যার সমাধানের সময় এটি প্রয়োগ করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, আরও একটি কৌশল হলো—শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের যুক্তি উপস্থাপন কাঠামোর মাধ্যমে নিজেদের কাছে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করা। এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পূর্বনির্ধারিত অনুরোধ ব্যবহার করে এমনভাবে যুক্তি তৈরি করে যা সমস্যার সমাধান পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেয়। অর্থাৎ, এই কৌশলে পূর্বনির্ধারিত যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে<ref name="Ionas20122" />। তবে, স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করার কোনো সার্বজনীন নিয়ম নেই, কারণ এটি বিষয়-নির্ভর। নির্দেশনামূলক প্রশ্নগুলো কখনও সাধারণ, আবার কখনও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে এবং শিক্ষক বা শিক্ষকের দায়িত্ব এটি নির্ধারণ করা কোন অনুরোধ সবচেয়ে ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার আচরণে নিয়ে আসবে<ref name="Ionas20122" />। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যতে একটি কৌশল গ্রহণে সহায়তা করতে শিক্ষকদের উচিত যদি বিষয়টি অপরিচিত হয়, তাহলে সহজ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা এবং ধীরে ধীরে আরও নির্দিষ্ট প্রশ্নে অগ্রসর হওয়া<ref name="Ionas20122" />। == স্ব-ব্যাখ্যার বিভিন্ন ধরন == স্ব-ব্যাখ্যাকে যদি একটি ধারাবাহিক রেখায় রাখা হয়, তাহলে এক প্রান্তে থাকবে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ। এটি শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে নতুন তথ্যকে যুক্ত করতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের স্ব-ব্যাখ্যায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে এবং পূর্বনির্ধারিত ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কারণ এখানে শিক্ষার্থীদের চিন্তা মৌলিক এবং অন্য কারও প্রভাবিত নয়, তাই এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাখ্যা। ধারাবাহিক রেখার অন্য প্রান্তে থাকবে মেনু-ভিত্তিক ব্যাখ্যা অনুরোধ। এই ধরনের ব্যাখ্যায় একটি ব্যাখ্যার তালিকা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং সেখান থেকে বেছে নিতে বলা হয় ও নির্বাচনের যুক্তি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। অ্যাটকিনসন, রেনক্ল ও মেরিল<ref name="Atkinson2003">Atkinson, R. K.,Renkl , A. , & Merrill , M. M. (2003). Transitioning from studying examples to solving problems: Effects of self-explanation prompts and fading worked-out steps.''Journal of Educational Psychology, 95''(4), 774–783.</ref>–এর এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা মেনু থেকে বেছে নেওয়ার সময় স্ব-ব্যাখ্যা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে, তারা কাছাকাছি ও দূরবর্তী ট্রান্সফার পরিস্থিতিতে অন্যদের তুলনায় ভালো করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, মেনুর মাধ্যমে ব্যাখ্যার অনুরোধ শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হতে পারে। যেখানে উন্মুক্ত ও মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতি ধারাবাহিক রেখার দুই প্রান্তে অবস্থান করে, সেখানে ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড ও রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধ মাঝামাঝি থাকে। ফোকাসড ও উন্মুক্ত-প্রান্ত অনুরোধের মধ্যে দুটি মিল রয়েছে—উভয়ই জেনারেটিভ এবং শিক্ষার্থীর চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে না। তবে, ফোকাসড পদ্ধতিতে স্ব-ব্যাখ্যার বিষয়বস্তুর নির্দেশনা আরও স্পষ্ট থাকে। উন্মুক্ত অনুরোধে কেবল নতুন তথ্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, কিন্তু ফোকাসড অনুরোধে সরাসরি নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। স্ব-ব্যাখ্যা স্ক্যাফোল্ড আরও নির্দিষ্ট। স্ক্যাফোল্ড বা সহায়তাপূর্ণ স্ব-ব্যাখ্যা অনুরোধ ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে। এখানে শিক্ষার্থীদের ফাঁকা স্থান পূরণ করে ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ করতে হয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> ধারণা করেন, এই পদ্ধতি অভিজ্ঞতাহীন শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী, যাদের নিজে নিজে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যা গঠনের মতো যথেষ্ট পূর্ব জ্ঞান নেই। রিসোর্স-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যা মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতির মতো। এখানে শিক্ষার্থীদের একটি গ্লসারি থেকে বেছে নিয়ে সমস্যার সমাধানের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। তারা এই গ্লসারিকে একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতিটি ধাপের ব্যাখ্যাকে স্মরণ না করে চিনে নিতে পারে। ওয়াইলি ও চাই রিসোর্স-ভিত্তিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্লসারির বড় আকারকে তুলে ধরেন। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যার এই সকল ধরণ শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে এবং মানসিকভাবে জ্ঞান অর্জনে যুক্ত রাখে, পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে সেতুবন্ধন ঘটায় এবং মানসিক মডেল সংশোধন করে। গবেষণার ভিত্তিতে দেখা যায়, মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক কৌশল আরও উপকারী। গবেষণায় আরও জানা যায়, ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড এবং রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধগুলো যেগুলো শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে, সেগুলো আরও গভীর অনুধাবনে সহায়ক। ভ্যান ডের মেইজ প ডি জং<ref name="Vandermeij2011">Van der Meij , J. , & de Jong , T. (2011). The effects of directive self-explanation prompts to support active processing of multiple representations in a simulation-based learning environment. Journal of Computer Assisted Learning, 27(5), 411–423.</ref> দুটি সিমুলেশন-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের মডেল তৈরি করেন, যেখানে বহু রূপে উপস্থাপনাগুলো রয়েছে। এক মডেলে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত অনুরোধের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় এবং তাদের উত্তর ব্যাখ্যা বা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয়। অন্য মডেলে, আরও সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, তারা যেন ব্যাখ্যা করে কীভাবে প্রদত্ত দুটি উপস্থাপনা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, উভয় মডেলেই উন্নত পারফরম্যান্স দেখা যায়, তবে ফোকাসড স্ব-ব্যাখ্যা মডেল গ্রুপে শেখার উপকার বেশি হয়। ফলে মাল্টিমিডিয়া শেখার ক্ষেত্রে এই ফলাফল প্রমাণ করে, বিস্তৃত উন্মুক্ত অনুরোধের চেয়ে নির্দিষ্ট অনুরোধ ভালো কাজ করে। = স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেলসমূহ = [[চিত্র:Section_2_self_regulated_learning_model.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৪. স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেল]] == জিমারম্যানের চক্রাকারে SRL মডেল == জিমারম্যানের চক্রাকার SRL মডেল স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রক্রিয়াকে তিনটি আলাদা পর্যায়ে ভাগ করে: পূর্বচিন্তা পর্যায়, সম্পাদন পর্যায় এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে শেখার প্রচেষ্টা শুরুর আগে যে ধরণের প্রক্রিয়া ও বিশ্বাস তৈরি হয় তা অন্তর্ভুক্ত হয়; সম্পাদন পর্যায়ে শেখার বাস্তব প্রয়োগ চলাকালীন যা ঘটে; এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়ে প্রতিটি শেখার প্রচেষ্টার পর যা ঘটে তা বোঝানো হয়।<ref name="Zimmerman20022" /> === পূর্বচিন্তা পর্যায় === পূর্বচিন্তা পর্যায়ের দুটি প্রধান প্রক্রিয়া আছে: কাজ বিশ্লেষণ এবং আত্ম-প্রেরণা। কাজ বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশলগত পরিকল্পনা। আত্ম-প্রেরণা আসে শিক্ষার্থীর শেখা নিয়ে বিশ্বাস থেকে, যেমন—শেখার ব্যক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে আত্ম-দক্ষতা বিশ্বাস এবং শেখার ব্যক্তিগত ফলাফল নিয়ে প্রত্যাশা।<ref name="Zimmerman20022" /> '''লক্ষ্য নির্ধারণ''' বলতে বোঝানো হয় কী অর্জন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তা নির্ধারণ করা<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য শেখার প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক, কারণ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই জানাতে হবে চূড়ান্ত ফলাফলটি কেমন হওয়া উচিত। লক্ষ্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মোটিভেশন সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শেখার লক্ষ্য অর্জনে উদ্দীপিত করতে পারে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি যা বাস্তবে অর্জনযোগ্য। তাই লক্ষ্যগুলো খুব বেশি উচ্চ বা খুব নিচু হওয়া উচিত নয়; বরং এমন হওয়া উচিত যা বাস্তবতার মধ্যে পড়ে এবং অর্জনযোগ্য। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য আকাঙ্ক্ষা ও মোটিভেশন তৈরি করে কারণ সেগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যারা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যেমন বানান পরীক্ষার জন্য শব্দ তালিকা মুখস্থ করা, অথবা যেসব শিক্ষার্থী বানান শেখার জন্য শব্দকে ধ্বনি বা অক্ষরে ভাগ করার কৌশল প্রয়োগ করে, তাদের মধ্যে শিক্ষাগত সাফল্য বেশি দেখা যায়<ref name="Zimmerman20023" />। লক্ষ্য নির্ধারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কী অর্জন করতে চাই? কোন ধাপগুলো আমাকে লক্ষ্য পর্যন্ত নিয়ে যাবে? '''কৌশলগত পরিকল্পনা''' লক্ষ্য নির্ধারণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হয়। লক্ষ্য নির্ধারণের পর শিক্ষার্থীদের উচিত নির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা যাতে তারা ওই শেখার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশলগত পরিকল্পনা একটি অধিক বিস্তারিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শেখার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। একটি কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে ছোট ছোট একাধিক লক্ষ্য থাকে যা একটি বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। একটি ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার কাজ, উদ্দেশ্য ও যে দিক তারা অনুসরণ করতে চায়, তা ভালোভাবে বুঝতে হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো সাত দিনের মধ্যে চৌদ্দটি অধ্যায় অধ্যয়ন করতে হয়, সে প্রতিদিন দুটি অধ্যায় পড়ার পরিকল্পনা করতে পারে। প্রতিদিন কতটুকু পড়তে হবে তা পরিকল্পনা করে নিলে সাত দিনে সব অধ্যায় শেষ করা সম্ভব হবে। কৌশলগত পরিকল্পনা কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়াক্ষেত্রেও কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো লক্ষ্য এক মাসে ম্যারাথনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, তাহলে সে সাপ্তাহিক সময়সীমা অনুযায়ী দৈনিক কতদূর দৌড়াতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তার কসরতের পরিমাণ বাড়াতে পারে। কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরির জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কেন শিখছি? আমি কীভাবে আমার শেখার লক্ষ্য অর্জন করব? আমি কীভাবে আমার শেখার কৌশলগুলো প্রয়োগ করব? আমার কাছে পর্যাপ্ত সময় আছে কি? আমার লক্ষ্য কি এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্জনযোগ্য? আমি এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে পড়ব? আমার ব্যক্তিত্ব কি এই লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলবে? আমি শিখতে বসলে কী কী বিষয় আমাকে বিভ্রান্ত করতে পারে? '''স্ব-উদ্দীপনার বিশ্বাস''' অন্তর্ভুক্ত করে আত্ম-দক্ষতা, ফলাফলের প্রত্যাশা, অন্তর্নিহিত আগ্রহ এবং শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা<ref name="Zimmerman20023" />। এখানে আত্ম-দক্ষতা বলতে বোঝানো হয় শিক্ষার্থীদের নিজের শিখন ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস। যেমন, ক্লাসে একটি কঠিন ধারণা শেখার সময় কোনো শিক্ষার্থী হয়তো ভাবতে পারে সে সহজেই বুঝে ফেলবে অথবা সে ভয়ে থাকবে যে সে বিষয়টি বুঝতেই পারবে না। "আত্ম-দক্ষতা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী কতটা জড়িত হবে এবং চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে কতটা অটল থাকবে।" আত্ম-দক্ষতার উচ্চ মাত্রা সাধারণত বিদ্যালয়ের সাফল্য ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006).">Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006). Promoting Self-Regulation in Science Education: Metacognition as Part of a Broader Perspective on Learning. Research In Science Education, 36(1-2), 111-139.</ref>। শিক্ষকেরা উপযুক্ত স্তরের জটিলতার শেখার কাজ এবং প্রয়োজনে সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-দক্ষতা বাড়াতে পারে। শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি দুটি উপায়ে আত্ম-দক্ষতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। এক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের কাছ থেকে উদাহরণ দেখানো; দুই, শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব তথ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। ফলাফলের প্রত্যাশা বলতে বোঝানো হয় শেখার পর ফলাফল কেমন হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, যেমন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে যে সে অর্থনীতির একটি কঠিন ধারণা শিখতে পারবে এবং ভবিষ্যতে তা কাজে লাগাতে পারবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বিষয়বস্তুর উপযোগিতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই প্রত্যাশা বাড়াতে পারেন। অন্তর্নিহিত আগ্রহ বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতাকে তাদের নিজের স্বার্থে মূল্যায়ন করা। শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গুরুত্বে মূল্যায়ন করা। যেসব শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত আগ্রহ বেশি, তারা আত্মনিয়ন্ত্রিতভাবে শেখার প্রতি বেশি উদ্দীপিত থাকে কারণ তারা কাজের দক্ষতা অর্জন করতে চায়। যেমন, কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে চায়, সে শিক্ষা-সম্পর্কিত জ্ঞান গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারে<ref name="Zimmerman20023" />। শিক্ষকরা জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত আগ্রহ বাড়াতে পারে। ক্লাসকে উপভোগ্য করে তোলা বা ভিডিও ক্লিপ ও গ্রাফের মতো বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে শেখার প্রবণতা বাড়ানো যায়। শ্রাউ প্রমুখ বিজ্ঞান বিষয়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মোটিভেশন উপাদানকে ব্যাখ্যা করেছেন স্ব-দক্ষতা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসের সমন্বয়ে। জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাস বলতে বোঝায় "জ্ঞান কোথা থেকে আসে এবং এর প্রকৃতি কেমন" সে সম্পর্কে ধারণা। এই বিশ্বাস সমস্যার সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার উপর প্রভাব ফেলে। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। === পারফরম্যান্স ধাপ === [[চিত্র:3_Phase.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৫। জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মডেল]] পারফরম্যান্স ধাপের প্রক্রিয়া দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝানো হয় পূর্বপর্যায়ে নির্ধারিত নির্দিষ্ট কৌশল বা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। স্ব-পর্যবেক্ষণ হলো নিজের আচরণ সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর নথিপত্র তৈরি করা বা পরীক্ষামূলকভাবে এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের প্রায়ই তাদের সময় ব্যবহারের রেকর্ড রাখতে বলা হয় যাতে তারা বুঝতে পারে পড়াশোনায় কতটা সময় দিচ্ছে। আত্ম-নিরীক্ষা। এটি স্ব-পর্যবেক্ষণের একটি সূক্ষ্ম রূপ, বলতে বোঝায় নিজের মানসিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা, যেমন প্রবন্ধ লেখার সময় বড় অক্ষরে শব্দ না লেখার হার<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).">Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003). Motivating self-regulated problem solvers. The psychology of problem solving, 233-262.</ref>। '''স্ব-নিয়ন্ত্রণ''' প্রক্রিয়া যেমন আত্ম-নির্দেশনা, কল্পচিত্র, মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ এবং কাজের কৌশল শিক্ষার্থী ও কর্মীদের কাজের ওপর মনোযোগ দিতে এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আত্ম-নির্দেশনা হলো নিজের কাছে উচ্চ বা নিম্নস্বরে কীভাবে কাজটি সম্পাদন করতে হবে তা বলা, যেমন গণিত সমস্যার সমাধানের সময় "উচ্চস্বরে ভাবনা বলা"। কল্পচিত্র হলো উজ্জ্বল মানসিক চিত্র তৈরি করা। এটি শেখার ও পারফরম্যান্সে সহায়তা করে। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ, অর্থাৎ বাইরের ঘটনা বা ভিন্ন চিন্তা বাদ দিয়ে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ ধরে রাখা, তাৎপর্যপূর্ণ স্ব-নিয়ন্ত্রণ কৌশল।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." /> মনোসংযোগ বৃদ্ধির জন্য পূর্বের ভুল নিয়ে চিন্তা না করে মনোযোগ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ<ref name="Kuhl, J. (1985).">Kuhl, J. (1985). Volitional mediators of cognitive behavior consistency: Self-regulatory processes and action versus state orientation. In J. Kuhl & J. Beckman (Eds.), Action control (pp.101–128). New York: Springer.</ref>। কাজের কৌশল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে যখন তা কাজকে মৌলিক অংশে ভাগ করে অর্থপূর্ণভাবে পুনর্গঠন করে<ref name="Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995).">Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995). Cognitive psychology and instruction (2nd ed.). Upper Saddle River, NJ: Merrill.</ref>। পারফরম্যান্স ধাপের দ্বিতীয় প্রধান অংশ হলো '''স্ব-পর্যবেক্ষণ'''। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পারফরম্যান্সের নির্দিষ্ট দিক, প্রেক্ষাপট এবং এর ফলাফল নিরীক্ষণ করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995).">Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995). Self-monitoring during collegiate studying: An invaluable tool for academic self-regulation. In P. Pintrich (Ed.), New directions in college teaching and learning: Understanding self-regulated learning (No.63, Fall, pp.13–27). San Francisco, CA: Jossey-Bass, Inc.</ref>। যারা পরিকল্পিত কাঠামোতে ধাপভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তারা পারফরম্যান্স ধাপে আরও কার্যকরভাবে স্ব-পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কারণ এই সীমিত কাঠামো মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং মনে রাখার তথ্যের পরিমাণ হ্রাস করে। যদি কোনো ব্যক্তি পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা সঠিকভাবে মনে না রাখতে পারে, তবে সে তার কৌশল যথাযথভাবে পরিবর্তন করতে পারবে না<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." />। স্ব-নথিপত্র রক্ষণ শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার সঠিক রেকর্ড দেয়, সেগুলো গঠনমূলকভাবে সংগঠিত করে এবং অগ্রগতি বোঝার জন্য একটি দীর্ঘ তথ্যভান্ডার তৈরি করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996).">Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996). Self-regulated learning of a motoric skill: The role of goal setting and self-monitoring. Journal of Applied Sport Psychology, 8, 60–75.</ref>। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে স্ব-পর্যবেক্ষণ একটি নিয়মিত আত্ম-আবিষ্কার বা আত্ম-পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে পারে<ref name="Bandura, A. (1991).">Bandura, A. (1991). Self-regulation of motivation through anticipatory and self-reactive mechanisms. In R. A. Dienstbier (Ed.), Perspectives on motivation: Nebraska symposium on motivation (Vol. 38, pp.69–164). Lincoln: University of Nebraska Press.</ref>। '''কৌশল প্রয়োগ''' হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিত শেখার কৌশল বাস্তবে প্রয়োগ করে শেখার কাজে নিয়োজিত হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশল প্রয়োগের জন্য মোটিভেশন ও আত্মনির্ধারণ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের একটি মজবুত কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে তারা পরিবেশগত বিঘ্ন এড়াতে পারে এবং কী তাদের মোটিভেট বা ডিমোটিভেট করে তা বুঝতে পারে। কৌশল প্রয়োগ শেখার অভিজ্ঞতার সফলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উভয়ের উপর প্রভাব ফেলে। এটি নির্ধারণ করে কীভাবে এবং কোথায় শেখা হবে এবং এটি শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। '''কৌশল পর্যবেক্ষণ''' হচ্ছে শেখার ক্ষেত্রে প্রণীত কৌশলগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া। শেখার কৌশলগুলোর প্রয়োগ, শেখার কাজের অগ্রগতি এবং পরিবেশ কীভাবে শেখার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে—এসব বিষয়ে নজর রাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনে কৌশলগুলো পরিবর্তন করে আরও ভালো শেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারে। === আত্মপ্রতিফলন পর্যায় === আত্মপ্রতিফলন পর্যায়ে দুটি প্রধান প্রক্রিয়া রয়েছে: আত্মবিচার এবং আত্মপ্রতিক্রিয়া। আত্মবিচারের একটি রূপ হলো আত্মমূল্যায়ন, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের পর্যবেক্ষণভিত্তিক কর্মদক্ষতাকে কিছু মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে—যেমন পূর্ববর্তী কর্মদক্ষতা, অন্য কারও কর্মদক্ষতা বা একটি নির্দিষ্ট মান। আত্মবিচারের আরেকটি রূপ হলো কার্যকারণ বিশ্লেষণ বা কারণনির্ধারণ, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের সাফল্য বা ভুলের কারণ সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি করে, যেমন গাণিতিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর। '''আত্মবিচার''': মানুষ সাধারণত চারটি প্রধান মানদণ্ডের ভিত্তিতে নিজের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা মূল্যায়ন করে: দক্ষতা, পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স, তুলনামূলক সামাজিক মান, এবং যৌথ মানদণ্ড। দক্ষতা মানদণ্ড নির্ধারিত এবং পরিমাপযোগ্য—যেমন, একটি ক্রসওয়ার্ড পাজলের সমাধানকে মূল লেখকের সমাধানের সঙ্গে তুলনা করা। যখন শিক্ষার্থীরা অনানুষ্ঠানিক এবং অসংগঠিত পরিবেশে সমস্যা সমাধান করে, তখন তাদের অনেক সময়ই দক্ষতা মানদণ্ডের পরিবর্তে তাদের পূর্ববর্তী পারফরম্যান্সের সঙ্গে বর্তমান পারফরম্যান্সের তুলনার ওপর নির্ভর করতে হয়। এই আত্মতুলনা শিক্ষার উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। এটি সাধারণত বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। সামাজিক তুলনা বা তুলনামূলক মানদণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহপাঠী বা জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে শেখার মূল্যায়ন করে। যৌথ মানদণ্ড সাধারণত দলগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দলগতভাবে কাজ করা হয়।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).2" /> আত্মমূল্যায়নমূলক সিদ্ধান্ত সাধারণত শেখার ফলাফল সম্পর্কিত কার্যকারণ বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেমন: ব্যর্থতার কারণ নিজের সীমিত ক্ষমতা নাকি পর্যাপ্ত চেষ্টা না করা। যদি কেউ মনে করে যে তার খারাপ ফলাফল তার অক্ষমতার কারণে হয়েছে, তাহলে তা তার প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কারণ এটি ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনাকে অস্বীকার করে। অন্যদিকে, যদি কেউ মনে করে যে ভুল কৌশল ব্যবহারের কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে, তবে সে ভবিষ্যতে নতুন কৌশল গ্রহণ করে উন্নতি করতে প্রেরণা পাবে।<ref name="Zimmerman20024" /> '''আত্মপ্রতিক্রিয়া''': আত্মপ্রতিক্রিয়ার একটি রূপ হলো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আত্মতৃপ্তি বা ইতিবাচক অনুভূতি। আত্মতৃপ্তি বৃদ্ধি পেলে প্রেরণা বাড়ে, আর আত্মতৃপ্তি কমে গেলে শেখার প্রচেষ্টাও কমে যায়।<ref name="Schunk, D.H. (2001).">Schunk, D.H. (2001). Social cognitive theory and self-regulated learning. In B.J. Zimmerman & D.H Schunk (Eds.), Self-regulated learning and academic achievement: Theoretical perspectives (2nd ed., pp. 125-152). Mahwah, NJ: Erlbaum.</ref> শিক্ষার্থীরা যখন তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে আত্মতৃপ্তি বোধ করে, তখন তারা আরও সচেতনভাবে কাজ পরিচালনা করতে পারে এবং অধ্যবসায় ধরে রাখতে পারে।<ref name="Schunk, D.H. (1983 c).">Schunk, D. H. (1983 c). Progress self-monitoring: Effects on children’s self-efficacy and achievement. Journal of Experimental Education, 51, 89–93.</ref> আত্মপ্রতিক্রিয়া কখনও কখনও অভিযোজিত বা প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ার রূপ নিতে পারে। প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া হলো নিজের আত্মপরিচয় রক্ষা করতে শেখা বা পারফর্ম করার সুযোগ থেকে সরে যাওয়া, যেমন একটি কোর্স বাদ দেওয়া বা পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত থাকা। অপরদিকে, অভিযোজিত প্রতিক্রিয়া হলো শেখার পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে পরিবর্তন আনা, যেমন অকার্যকর কৌশল বাদ দেওয়া বা পরিবর্তন করা।<ref name="Zimmerman20024" /> '''ফলাফল মূল্যায়ন''' : ফলাফল মূল্যায়ন ঘটে তখন, যখন শেখার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই পর্যায়ে শেখার লক্ষ্য, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং সেগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''4" /> ফলাফল মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরা নিজের কাছে এই প্রশ্নগুলো করতে পারে: আমার লক্ষ্যগুলো কতটা বাস্তবসম্মত ছিল? সেগুলো কি অর্জনযোগ্য ছিল? আমার কৌশলগত পরিকল্পনা কতটা কার্যকর ছিল? এমন কোনও কৌশল কি বাদ পড়েছে যেটা রাখা উচিত ছিল? ভবিষ্যতে আমি কীভাবে আমার শেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করব? আমার পরিবেশ কি মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করছিল? == বোকার্টসের তিন-স্তরবিশিষ্ট SRL মডেল == == উইনের পর্যায়ভিত্তিক SRL মডেল == = গবেষণার বিষয় ও ক্ষেত্র = [[চিত্র:Section_3_Issues_and_Topics_of_Research.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|Figure 6. Issues and Topics of Research]] == স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সাংস্কৃতিক পার্থক্য == শেখার ধারণা, বিশেষ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ধারণাটি, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘স্বনিয়ন্ত্রণ’ এবং ‘শেখার ধারণা’ নিয়ে অধিকাংশ তথ্য পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি একপাক্ষিক উপস্থাপন। ভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে মানুষ ভিন্ন চিন্তাভাবনার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়। জাপানি শিক্ষার্থীরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছিল,<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''">Purdie, Nola, and John Hattie.(1996). “Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning”. American Educational Research Journal 33.4 (1996): 845–871.</ref> তারা শেখার ভিন্ন কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং পূর্ব পরিচিত পদ্ধতির বাইরে জ্ঞান অনুধাবনের নতুন পথ খুঁজে পায়। যদিও এই প্রক্রিয়াটি অবচেতনভাবে ঘটে থাকতে পারে, তবে ভিন্ন ভাষা ও গঠনের নতুন ব্যবস্থায় পড়ে তারা বাধ্য হয় শেখার কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করতে। শেখার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বোঝা যায়, জ্ঞান একরৈখিক নয়—এটা ভালো বা খারাপ, ঠিক বা ভুল—এমন দ্বৈততা দিয়ে সব সময় বোঝা যায় না। জ্ঞান হলো পরিবর্তনশীল ও গতিশীল এবং তাই এটি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। এশীয় সংস্কৃতিতে প্রচলিত ধারণা হলো, জ্ঞান একজন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসে, যিনি সঠিক ও ভুল জানেন, এবং সেটি মুখস্থ করতে হয়। এর ফলে এশীয় শিক্ষার্থীদের সাধারণভাবে দেখা হয় নীরব, অনুগত ও মুখস্থনির্ভর শিখনশীল হিসেবে। অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীদের ভাবা হয় বেশি সক্রিয়, যারা আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা, বৈচিত্র্য গ্রহণযোগ্য এবং চিন্তা ও আচরণের বিকল্প পথ অনুসন্ধানে ইচ্ছুক।<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''" /> == জ্ঞান-সচেতনতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য == [[চিত্র:Different_Mind.png|থাম্ব|322x322পিক্সেল|Figure 7. Different Mind]] মেটাকগনিশন সংক্রান্ত গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত পার্থক্য। এই পার্থক্য মেটাকগনিশন পরিমাপকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। উইনে (1996) প্রস্তাব করেছিলেন, স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় মেটাকগনিশন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এমন পাঁচটি উৎস রয়েছে: ‘‘ডোমেইন জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতির জ্ঞান, কৌশল প্রয়োগ, কৌশল নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক প্রবণতা’’। (Winne 1996, p. 327)<ref name="Winne, P. H. (1996).''">Winne, P. H. (1996). A metacognitive view of individual differences in self-regulated learning. Learning and Individual Differences, 8(4), 327-353.</ref> সামগ্রিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখা নিয়ে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। উইনে জানান যে তার এই প্রস্তাবনা প্রাথমিক এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে তার কাজ অন্যান্য গবেষকদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছে। অনেক গবেষক মনে করেন, মেটাকগনিশন নির্ভুলতার পার্থক্যগুলো আসলে মেটাকগনিটিভ দক্ষতার পার্থক্য। তবে কেলেমেন, ফ্রস্ট ও উইভার (2000) বলেছিলেন, এটা সবসময় ঠিক নয়। মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতা বলতে বোঝানো হয় ‘‘মেটাকগনিশন এবং ভবিষ্যৎ স্মৃতির কার্যকারিতার মধ্যকার সম্পর্ক’’ (Kelemen et al., 2000, p. 92)।<ref name="Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000).''">Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000). Individual differences in metacognition: Evidence against a general metacognitive ability. Memory & Cognition, 28(1), 92-107.</ref> এই গবেষণায় চারটি প্রচলিত মেটাকগনিটিভ কাজ পরিমাপ করা হয়েছিল: শেখার সহজতার অনুমান, জানার অনুভূতির অনুমান, শেখার অনুমান এবং পাঠ্য বোধগম্যতার পর্যবেক্ষণ। প্রাক-পরীক্ষা ও পর-পরীক্ষা মিলিয়ে স্মৃতি ও আত্মবিশ্বাসের মাত্রা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে ভিন্ন ছিল। এই ফলাফল বোঝায়, মেটাকগনিটিভ দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এই গবেষণার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, কারণ অনেক গবেষক একমত যে মেটাকগনিশন পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই পার্থক্যগুলো দেখায় যে মেটাকগনিশনের জন্য ‘একটি সমাধান সবার জন্য উপযোগী’—এমন ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। লিন, শোয়ার্টজ এবং হাতানো (2005) পরামর্শ দেন যে মেটাকগনিশনের প্রয়োগে ব্যক্তিগত শেখার ধরণ এবং শ্রেণিকক্ষ পরিবেশের পার্থক্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''">Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005). Toward Teachers' Adaptive Metacognition. Educational Psychologist, 40(4), 245-255.</ref> তারা "অভিযোজিত মেটাকগনিশন" ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এটি শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের প্রতি সাড়া দিয়ে ব্যক্তি ও পরিবেশ উভয়কেই মানিয়ে নিতে শেখায় (Lin et al., 2005, p. 245)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের মধ্যে সামাজিক ও পাঠদানের পার্থক্য অন্তর্ভুক্ত। অভিযোজিত মেটাকগনিশনের জন্য, লিন প্রস্তাব করেন “ক্রিটিকাল ইভেন্ট ইনস্ট্রাকশন” পদ্ধতি। এটি শিক্ষকদের শেখায় কীভাবে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় যেগুলো উপর থেকে দেখলে সাধারণ মনে হয় (Lin et al., 2005, p. 246)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> এটি নতুন শিক্ষকদের জন্য সহায়ক, যাতে তারা শিক্ষণিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে কার্যকরভাবে মানিয়ে নিতে পারে। == লার্নিং অ্যানালিটিকস এবং SRL গবেষণা == === লার্নিং অ্যানালিটিকসের সংজ্ঞা === ব্যবসা থেকে শুরু করে মহামারিবিদ্যার মতো ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার ও গণনাগত শক্তির প্রসার বড় ডেটা সেট থেকে উপকারী তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও এই ধরণের পদ্ধতিকে ‘‘লার্নিং অ্যানালিটিকস’’ বলা হয়। যদিও একে প্রায়ই নতুন একটি শাখা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, লার্নিং অ্যানালিটিকস মূলত বহু পুরোনো ধারার আইডিয়া, নীতি ও পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত। এটি একটি বহুমাত্রিক শাখা। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স, মানব-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশন এবং শিক্ষাবিদ্যার বিভিন্ন উপাদান একত্র করে তৈরি হয়েছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''">Siemens, G. (2013). Learning analytics: The emergence of a discipline. American Behavioral Scientist, 57 (10), p. 1380 - 1400.</ref> '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স কী?''' লার্নিং অ্যানালিটিক্স গবেষণা সংস্থা (Society for Learning Analytics Research বা SoLAR) লার্নিং অ্যানালিটিকসের ক্ষেত্রকে নিম্নরূপভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: “লার্নিং অ্যানালেটিক্স হলো শিক্ষার্থী ও তাদের প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার একটি প্রক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য হলো শেখার প্রক্রিয়া এবং যে পরিবেশে তা ঘটে, তা বোঝা ও আরও কার্যকর করে তোলা।”<ref name="Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).''">Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).Retrieved from http://solaresearch.org</ref> এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের দেওয়া সংজ্ঞাগুলোর একটি সমন্বয় থেকে<ref name="Larusson, J. A., & White, B. (2014).''">Larusson, J. A., & White, B. (2014). Learning Analytics. Springer</ref><ref name="Martin, T., & Sherin, B. (2013).''">Martin, T., & Sherin, B. (2013). Learning analytics and computational techniques for detecting and evaluating patterns in learning: An introduction to the special issue. Journal of the Learning Sciences, 22(4), p. 511-520.</ref> নিচের কয়েকটি মূল বিষয় নিরূপণ করা যায়: * এই শাখাটির মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি, পদ্ধতি, কাঠামো এবং সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেগুলো তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। * এটি বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আচরণ ও কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রকৃতপক্ষে, সিমেন্স (২০১৩) মতে, এই তথ্যসমূহের উৎস হতে পারে একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পাঠক্রম পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> * তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনের প্রতিটি ধাপেই এর পরিধি বিস্তৃত—যেমন তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম, তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাঠামো ও প্যাটার্ন বের করা, এবং তথ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত ভিজ্যুয়াল সরঞ্জাম। * এর একটি তাত্ত্বিক দিক রয়েছে, কারণ শিক্ষাগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীরতর বোঝাপড়া গড়ে উঠতে পারে। এটি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর পক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে। * এর একটি ব্যবহারিক দিকও রয়েছে, কারণ এসব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ফলাফল শেখার পরিবেশ এবং শেখার পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে সহায়তা করতে পারে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহারে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ''' যদিও লার্নিং অ্যানালেটিক্সের মূল লক্ষ্য নতুন নয়, তবুও কিছু বিশেষ উন্নয়ন ও কারণ এই ক্ষেত্রে আগ্রহ পুনর্জাগরিত করেছে এবং এটিকে একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো: * '''তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি''' বিশেষ করে ব্লেন্ডেড লার্নিং, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদির মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার চালুর পর থেকে বিশ্লেষণের জন্য উপলব্ধ শিক্ষামূলক তথ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> শিক্ষার্থীরা যখন ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করে, তখন তারা তাদের কর্মকাণ্ডের একটি “ডিজিটাল ছাপ” রেখে যায়। এটি সহজেই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। এই ধরনের তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে লগ ইন সময়, পোস্ট, ক্লিকের সংখ্যা, কোন উপকরণে কত সময় ব্যয় হয়েছে ইত্যাদি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখার কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট গভীর মানসিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া সম্ভব। * '''প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নত অ্যালগরিদম''' কিছু কম্পিউটেশনাল উন্নয়ন এই বিশাল পরিমাণ শিক্ষামূলক তথ্য বিশ্লেষণকে সহজ করে তুলেছে। এখন কম সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব, এবং মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নতুন অ্যালগরিদম ব্যবহারে ডেটা বিশ্লেষণে মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাঠামো ও প্যাটার্ন আবিষ্কার করা যায়। * '''তথ্যের বিন্যাস''' তথ্য সংগ্রহ যথেষ্ট নয়, সেগুলিকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হয় যাতে বিশ্লেষণ কার্যকরভাবে সম্ভব হয়। এজন্য নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক তথ্য লগ করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটের প্রয়োজন হয়।<ref name="Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010).''">Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010). A data repository for the EDM community: The PSLC DataShop. In Romero, C., Ventura, S., Pechenizkiy, M., & Baker, R. S. (Eds.). (2010) Handbook of educational data mining. CRC Press. p. 43-56.</ref> এই স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট আগে থেকেই থাকলে তথ্য প্রস্তুত করতে যে সময় ব্যয় হতো, তা অনেকাংশে হ্রাস পায়। === লার্নিং অ্যানালিটিকসের মূল পদ্ধতি ও সরঞ্জাম === সিমেন্স (২০১৩) লার্নিং অ্যানালেটিক্সের দুটি মূল উপাদান উল্লেখ করেন: কৌশল ও প্রয়োগ। প্রযুক্তির মধ্যে আছে অ্যালগরিদম ও মডেল। এটি তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর প্রয়োগ হলো শিক্ষাগত প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তিগুলোর বাস্তব ব্যবহার—যেমন শিক্ষার্থী অনুযায়ী শেখার পরিবেশ তৈরি করা কিংবা শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করা।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> এই অংশে লার্নিং অ্যানালেটিক্সে ব্যবহৃত প্রধান পদ্ধতি ও কৌশলগুলো তুলে ধরা হয়েছে, কিছু উদাহরণসহ যা দেখায় কীভাবে এগুলো শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োগ করা যায়। '''ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি''' এই পদ্ধতিগুলোর কার্যপ্রণালির সরল বিবরণ হলো—ডেটার কিছু নির্দিষ্ট দিক বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের মান নির্ধারণ করা (যেটিকে বলা হয় ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল), যেখানে অন্য দিকগুলোকে বলা হয় '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল'''।<ref name="Baker, R. S., & Yacef, K. (2009).''">Baker, R. S., & Yacef, K. (2009). The state of educational data mining in 2009: A review and future visions. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 3-17.</ref> উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি আছে যেগুলো শিক্ষার্থীরা একটি অনলাইন কোর্সে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা থেকে (লগ ইন সময়, ব্লগ কার্যকলাপ, মূল্যায়ন পরীক্ষায় ফলাফল—এগুলো হলো '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল''') এই পূর্বাভাস দেয় যে শিক্ষার্থীটি কোর্সে ব্যর্থ হতে পারে (ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল)। এই ধরনের মডেল দুটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়: ভবিষ্যতের ঘটনা যেমন শিক্ষার্থীর ড্রপআউট <ref name="Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July).''">Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July). Predicting students drop out: A case study. In Proceedings of the 2nd International Conference on Educational Data Mining, EDM 2009, p. 41-50.</ref> অথবা শিক্ষার্থীর কোর্সফলাফল <ref name="Ming, N., & Ming, V. (2012).''">Ming, N., & Ming, V. (2012). Predicting student outcomes from unstructured data. In Proceedings of UMAP Workshops, p. 11-16.</ref> ভবিষ্যদ্বাণী করা। আবার কিছু ক্ষেত্রে কিছু ডেটা সরাসরি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, কারণ তা শিক্ষার্থীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমন অবস্থায় পূর্বাভাস মডেল অন্য কিছু পরিবর্তনশীল পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুমান করতে সক্ষম হয়।<ref name="Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August).''">Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August). Detecting student misuse of intelligent tutoring systems. In International Conference on Intelligent Tutoring Systems, p. 531-540.</ref> '''কাঠামো অন্বেষণ''' এই লার্নিং অ্যানালিটিক্স কৌশলটি আগেরটির চেয়ে বেশ আলাদা, কারণ এতে এমন অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয় যার উদ্দেশ্য হলো পূর্বানুমান ছাড়াই শিক্ষাগত ডেটাতে গঠন খুঁজে বের করা। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। '''ক্লাস্টারিং'''-এ ডেটাকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে সেটিকে একাধিক ক্লাস্টারে রূপান্তর করা হয়। এই ক্লাস্টারগুলো, যেমন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল হতে পারে যাদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে তারা কীভাবে অনুসন্ধানভিত্তিক শেখার পরিবেশ ব্যবহার করে তার ভিত্তিতে।<ref name="Amershi, S., & Conati, C. (2009).''">Amershi, S., & Conati, C. (2009). Combining Unsupervised and Supervised Classification to Build User Models for Exploratory. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 18-71.</ref> আবার '''সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ'''-এ শেখার মাঝে সম্পর্ক বা পারস্পরিক ক্রিয়ার ধরন শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন ছাত্রদের আচরণ ও নেটওয়ার্কে তাদের অবস্থান কীভাবে তাদের সম্প্রদায়ের অংশ মনে হওয়ার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করা।<ref name="Dawson, S. (2008).''">Dawson, S. (2008). A study of the relationship between student social networks and sense of community. Educational Technology & Society, 11(3), p. 224-238.</ref> '''সম্পর্ক অনুসন্ধান''' এই কৌশলটি ব্যবহৃত হয় বড় ডেটাসেটের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনশীলের মধ্যকার সম্পর্ক শনাক্ত করতে। এই পদ্ধতির সাধারণ লক্ষ্য হলো নির্ধারণ করা কোন কোন পরিবর্তনশীল একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কযুক্ত, অথবা পরিবর্তনশীলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করা। এই কৌশলের বিভিন্ন ব্যবহার আছে। উদাহরণস্বরূপ, বেকার ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) বিভিন্ন বুদ্ধিমান শিক্ষণ সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে শিক্ষার্থীরা কীভাবে “সিস্টেমকে ফাঁকি দেয়” তা নিয়ে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন।<ref name="Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June).''">Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June). Educational software features that encourage and discourage “gaming the system”. In Proceedings of the 14th international conference on artificial intelligence in education, p. 475-482.</ref> আবার পেরেরা ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) এই কৌশল ব্যবহার করে দলগত প্রকল্পে সফলতা আনার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী ধরনের সহযোগিতামূলক পথ সবচেয়ে কার্যকর তা শনাক্ত করেছেন।<ref name="Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009).''">Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009). Clustering and sequential pattern mining of online collaborative learning data. IEEE Transactions on Knowledge and Data Engineering, 21(6), p. 759-772.</ref> '''মানব-বিচারের জন্য তথ্য পরিশোধন''' এই কৌশলে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষাগত ডেটা পরিশোধন ও উপস্থাপন করা হয়, উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে, যাতে গবেষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা (শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রশাসক ইত্যাদি) উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বওয়ার্স (২০১০) বহু বছরের ছাত্রদের শিক্ষা-অগ্রগতির ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা ব্যবহার করে শনাক্ত করেছেন কোন ছাত্ররা ঝুঁকিতে আছে। যুক্তি হলো সফল বা ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু সাধারণ প্যাটার্ন থাকে যেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব এবং যেগুলোর উপস্থিতি ছাত্রের সফলতা বা ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে।<ref name="Bowers, A. J. (2010).''">Bowers, A. J. (2010). Analyzing the longitudinal K-12 grading histories of entire cohorts of students: Grades, data driven decision making, dropping out and hierarchical cluster analysis. Practical Assessment Research and Evaluation, 15(7), p. 1-18.</ref> === লার্নিং অ্যানালেটিক্স এবং স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় (SRL) গবেষণা === লার্নিং অ্যানালেটিক্সের পদ্ধতি ও প্রয়োগ নিয়ে আগের অংশ বিবেচনা করলে এটি স্পষ্ট যে এই সরঞ্জামগুলো শেখা সম্পর্কে তত্ত্ব গঠনে এবং সেগুলোর পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনে সহায়তা করে। স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। এই ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং স্বনিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি ও কোন শর্তে তা ঘটে সে বিষয়ে ধারণা যাচাই করতে লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক পদ্ধতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে একাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। '''স্বনিয়ন্ত্রণভিত্তিক গবেষণার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা''' কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। কারণ, এই নতুন ধরনের শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলো শেখার দারুণ সুযোগ তৈরি করে। এটি গবেষকদের আগ্রহী করেছে—ছাত্ররা এই সম্ভাবনার কতটা সদ্ব্যবহার করছে এবং কী পরিস্থিতিতে তারা সফল হচ্ছে তা অন্বেষণে।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2">Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008). Self-regulation of learning within computer-based learning environments: A critical analysis. Educational Psychology Review, 20(4), 429-444.</ref> এসব শেখার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয় এবং তাই স্বনিয়ন্ত্রিত শেখারও সুযোগ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে বিষয়বস্তুর কাছে যেতে পারে, বিভিন্ন রূপে উপস্থাপন বেছে নিতে পারে এবং পরিবেশের একাধিক উপাদান নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এর মানে এটাও যে, যেসব শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই, তারা এই ধরনের শেখার লক্ষ্যে ব্যর্থও হতে পারে। এজন্য, এই পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমরা এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং এদের সহায়তায় হস্তক্ষেপ বা সহযোগী উপকরণ তৈরি করতে পারি। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন, বিশেষত যেহেতু এ প্রক্রিয়াগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ। কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত আচরণ পর্যবেক্ষণে গবেষকদের একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিয়াদাতি প্রমুখ (২০১৬) জোর দিয়ে বলেন যে স্বনিয়ন্ত্রণ মূল্যায়নের যথাযথ ব্যাখ্যা পেতে হলে “যে কোনও পরিমাপ পদ্ধতির নির্বাচন, উন্নয়ন ও প্রয়োগ তাতে ব্যবহৃত SRL মডেল বা তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে” (Siadaty et al., 2016 p. 190)।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). ''2">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). Trace-based micro-analytic measurement of self-regulated learning processes. Journal of Learning Analytics, 3(1), p. 183-220.</ref> তবে, কিছু গবেষণায় কোনও নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো অনুসরণ করা হয়নি, ফলে শব্দার্থ ও সংজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণা আবার SRL মডেলের নির্দিষ্ট উপাদান যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, স্ব-পর্যবেক্ষণ বা আত্ম-দক্ষতা নিয়ে কাজ করেছে। এই উপাদানগুলোকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে SRL কাঠামোর সামগ্রিক চিত্রটি পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয় না।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> আরেকটি বড় সমস্যা দেখা যায় তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে। অধিকাংশ গবেষণায় শিক্ষার্থীদের নিজেদের প্রতিবেদনকেই মূল তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর নির্ভরযোগ্যতা ও মান শিক্ষার্থীর আত্মজ্ঞান ও শেখার কৌশল বর্ণনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। উইন্টার্স প্রমুখ (২০০৮) উল্লেখ করেন, এই ধরনের আত্মপ্রতিবেদন সবসময় পর্যবেক্ষণমূলক কৌশলের মতো নির্ভরযোগ্য নয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণায় থিংক-এলাউড পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত চিন্তাপ্রক্রিয়া ধরা সম্ভব হয়। তবে, এগুলো সাধারণত ব্যবহৃত কৌশল শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, এই কৌশলগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় না। যেমন ধরুন, সারসংক্ষেপ করা একটি কার্যকর শিক্ষণ কৌশল হলেও এটি শুধু প্রয়োগ করলেই কার্যকর হবে না, বরং সারসংক্ষেপ কখন করা হচ্ছে, কীভাবে করা হচ্ছে, কী বিষয়কে সারসংক্ষেপ করা হচ্ছে এসব বিষয়ের ওপর এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। সবশেষে, গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো তথ্য সংগ্রহ ও পরিমাপ পদ্ধতি শিক্ষার সঙ্গে কতটা হস্তক্ষেপ করে। আদর্শ পদ্ধতি হলো এমন। এটি শিক্ষার্থীর শেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলে এবং শেখার প্রক্রিয়ায় কোনওরকম বিঘ্ন না ঘটিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এই ধরনের “অহস্তক্ষেপমূলক” আচরণ দেখা যায় লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক সরঞ্জামগুলোতে। এগুলো ব্যবহারকারীর ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে, যেমন লগ ইন/আউট সময়, কোন বৈশিষ্ট্য বেশি ব্যবহার হচ্ছে, মূল্যায়ন কার্যক্রমে পারফরম্যান্স ইত্যাদি, এবং এই তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্যাটার্ন চিহ্নিত করে। এই বিষয়ে আরও আলোচনা পরবর্তী অংশে করা হবে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহার করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ নিরীক্ষণ''' লার্নিং অ্যানালেটিক্স প্রযুক্তি ও প্রয়োগগুলো নির্ভুল ও অহস্তক্ষেপমূলক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সরবরাহ করে, যাতে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময় তাদের স্বনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার প্রমাণ নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা যায়। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রগতি গবেষকদের হাতে নতুন উন্নত প্রযুক্তি এনে দিয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রেস ডেটা সংগ্রহের পরিধি ও বৈচিত্র্য অনেক বেড়েছে। [[চিত্র:Kwlimage.jpg|থাম্ব|চিত্র ৮. কেডব্লিউএল]] আগের অংশে আমরা দেখেছি, স্বনিয়ন্ত্রিত শেখা নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণাই শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রতিবেদনকে প্রধান তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর সঙ্গে যুক্ত নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে কিছু গবেষণায় আত্মপ্রতিবেদন, অনলাইন আচরণগত তথ্য ও শেখার ফলাফল একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, শা প্রমুখ (২০১২) একটি মোবাইল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সময় স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করেন। এই গবেষণায় সিঙ্গাপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শেখার জন্য মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এতে অ্যানিমেশন আঁকা, কনসেপ্ট ম্যাপ তৈরি, এবং কেডব্লিউএল টেবিল তৈরি করার মতো অ্যাপ্লিকেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। iKWL অ্যাপে শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড ও পারফরম্যান্সই ছিল তথ্য সংগ্রহের ভিত্তি। অ্যাপ্লিকেশনটি তিনটি প্রশ্নের উত্তর চায়: “আমি কী জানি?”, “আমি কী জানতে চাই?” এবং “আমি কী শিখেছি?”। এটি SRL-এর যথাক্রমে পূর্বজ্ঞান, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আত্মমূল্যায়ন ধাপকে বোঝায়। গবেষকরা শিক্ষার্থীরা কেডব্লিউএল প্রশ্নে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা বিশ্লেষণ করেন। দুটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করা হয়: একজন শিক্ষার্থী কেডব্লিউএল টেবিল সম্পূর্ণ করেছে কি না (যদি কোনো ঘর পূরণ না হয় = ০, যদি অন্তত একটি পূরণ হয় = ১), এবং প্রতিটি ক্যাটাগরিতে কতগুলো তথ্য লিখেছে তা পরিমাপ করার রুব্রিক। এই পরিমাপটি সহজ, তাই সিস্টেম নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নির্ধারণ করতে পারে, তবে এতে লেখা কনটেন্টের মান বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). ''2">Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). Recognizing and measuring self-regulated learning in a mobile learning environment. Computers in Human Behavior, 28(2), p. 718-728.</ref> [[চিত্র:Posterlet_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ৯. পোস্টারলেট]] [[চিত্র:MetaTutor_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১০. মেটাটিউটর]] আরও কিছু গবেষণা নির্দিষ্ট SRL কৌশলের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছে। কুতুমিসু প্রমুখ (২০১৫) “নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ” এবং “পুনরায় সম্পাদনা” কৌশল দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষার জন্য পোস্টারলেট নামক একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন। এই অ্যাপে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ফান ফেয়ারের জন্য পোস্টার ডিজাইন করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা কার্যকর পোস্টার ডিজাইনের নীতিমালা ও অনুশীলন শেখে। শেখার আচরণ পর্যবেক্ষণের জন্য অ্যাপটিতে একটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পোস্টার তৈরি করে এবং পশু চরিত্রদের কাছ থেকে ইতিবাচক (“আমার ভালো লেগেছে...”) বা নেতিবাচক (“আমার পছন্দ হয়নি...”) প্রতিক্রিয়া পায়। সিস্টেম দুটি বিষয় রেকর্ড করে: কতবার শিক্ষার্থী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বেছে নিয়েছে এবং কতবার সে পোস্টারে পরিবর্তন এনেছে। এখানে কেবল সংখ্যাগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে—শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তন করেছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015).''2">Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015). Posterlet: A game-based assessment of children’s choices to seek feedback and to revise. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 49-71.</ref> আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষণ পরিবেশ রয়েছে, যেগুলো দ্বৈত ভূমিকা পালন করে: একটি হচ্ছে শেখার উপকরণ, যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ শেখানো ও সহায়তার জন্য তৈরি; অন্যটি গবেষণামূলক উপকরণ, যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ আচরণের উপর তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। এমন একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশন হলো MetaTutor, যা Azevedo ও তাঁর সহকর্মীদের (২০১৩) গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। MetaTutor একটি শিক্ষণ পরিবেশ যা জীববিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এতে একাধিক ডিজিটাল এজেন্ট রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশল প্রয়োগে সহায়তা করে। এর নানা বৈশিষ্ট্য আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট পর্যায় ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত (যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, আত্ম-প্রতিফলন) এবং সেগুলো ব্যবস্থার ইন্টারফেসে সুনিপুণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (দেখুন চিত্র ১০)। এছাড়াও MetaTutor-এ এমন ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থাও রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যাতে গবেষকরা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা আরও উন্নত করা যায়। এই সিস্টেমটি সাধারণ ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতির (যেমন স্ব-প্রতিবেদন জরিপ, চিন্তা প্রকাশ প্রোটোকল) পাশাপাশি উন্নততর শিক্ষণ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে অনুধাবন ও মূল্যায়ন করে। এখানে একটি আই-ট্র্যাকিং (চোখের গতি পর্যবেক্ষণ) উপাদান রয়েছে যা শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে, কোন অংশে মনোযোগ দেয়, কোন ক্রমে তথ্য পড়ে, কোন ডায়াগ্রামের অংশ বেশি ব্যবহার করে ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান তথ্য দেয়। এই ধরনের তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় শিক্ষার্থীর স্ব-প্রতিবেদন বা মুখে বলা চিন্তায় এসব বিষয় উঠে আসে না। সিস্টেমটি এমন বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ইন্টারঅ্যাকশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে যা আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং শিক্ষার্থীরা শেখার কাজে তা প্রয়োগ করে। যেমন: নোট নেওয়ার ধরণ, চিত্র অঙ্কনের ব্যবহার, কী-স্ট্রোক, মাউস ক্লিক, অধ্যায় বা কার্যকলাপ খোলা, কুইজে পারফরম্যান্স ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজের ধারা বা রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়। এই সব বিভিন্ন ধরণের ডেটার সমন্বয়ে গবেষকরা কগনিটিভ (জ্ঞানগত) প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পান। যেমন: যদি শিক্ষার্থী কোনো লেখাকে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে সে পাঠ্যবস্তুর উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। অথবা, যদি ব্যবহারকারী টেক্সট থেকে চিত্র বা গ্রাফে বারবার যায়, তাহলে বোঝা যায় সে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন পদ্ধতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। এছাড়াও, এখানে মুখাবয়ব অভিব্যক্তি শনাক্তকরণের একটি জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। সিস্টেমটি শিক্ষার্থীদের মুখাবয়বের ভিডিও সংগ্রহ করে এবং তা Noldus FaceReader 3.0 সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর আবেগগত অবস্থান নির্ধারণ করে। তবে, এই সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা হলো এটি কেবল কয়েকটি সাধারণ, সর্বজনীন আবেগ শনাক্ত করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের পুরো আবেগ অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করে না।<ref name="Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013).''">Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013). Using trace data to examine the complex roles of cognitive, metacognitive, and emotional self-regulatory processes during learning with multi-agent systems. In International handbook of metacognition and learning technologies, Springer New York, p. 427-449.</ref> [[চিত্র:System_bbbbb.png|থাম্ব|250x250পিক্সেল|Figure 11. Bretty's Brain]] পরিশেষে, কিছু গবেষণায় শিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশনের নির্দিষ্ট উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখার নির্দিষ্ট পর্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এসব উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ডেটার গঠন বা ধরন শনাক্ত করা হয়েছে (দেখুন ক্লাস্টারিং, অধ্যায় ২)। Segedy et al. (2015) একটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, যেটিকে তারা বলেন '''coherence analysis'''। তাঁদের গবেষণায়, তারা "Betty’s Brain" নামক একটি শিক্ষণ পরিবেশ ব্যবহার করেন। এখানে শিক্ষার্থীরা একটি ভার্চুয়াল এজেন্ট বেটিকে একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর চেষ্টা করে, একটি কারণমূলক মানচিত্র তৈরি করে। এই মানচিত্রে (দেখুন চিত্র ১১) বিষয়বস্তুর মূল ধারণাগুলোকে উপস্থাপনকারী সত্ত্বাগুলো থাকে, যেগুলো মধ্যে দিক-নির্দেশিত সংযোগ থাকে, যা ধারণাগুলোর মধ্যে কারণ-পরিণাম সম্পর্ক নির্দেশ করে। বেটি এই মানচিত্র ব্যবহার করে সংযোগ চেইনের মাধ্যমে যুক্তি করে এবং বিভিন্ন কুইজ প্রশ্নের উত্তর দেয়।<ref name="Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015).''">Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015). Using coherence analysis to characterize self-regulated learning behaviours in open-ended learning environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 13-48.</ref> এই কারণমূলক মানচিত্রের সঠিকতা নির্ধারণ করে যে, বেটি কতটা সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত টেক্সট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই সংযোগ স্থাপন করে, কুইজের মাধ্যমে মানচিত্র পরীক্ষা করে এবং প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে মানচিত্র সংশোধন করে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারঅ্যাকশনের সময় সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাঁচটি আলাদা আচরণগত গোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়। প্রথম দল ছিল ঘন ঘন তথ্য অনুসন্ধানকারী ও সতর্ক সম্পাদক, যারা তথ্য উৎস অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে কিন্তু মানচিত্র কম সম্পাদনা করেছে। দ্বিতীয় দল, কৌশলী পরীক্ষক, যারা তথ্য দেখেছে কিন্তু ততটা কাজে লাগাতে পারেনি। তবু তারা মানচিত্র বেশি সম্পাদনা করেছে। তৃতীয় দল ছিল বিভ্রান্ত অনুমানকারী, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে কিন্তু বিজ্ঞান উৎস ব্যবহার করেনি। চতুর্থ দল ছিল দায়িত্বহীন শিক্ষার্থী, যাদের অধিকাংশ সম্পাদনা অসমর্থিত এবং তারা ৩০% সময়ই নিষ্ক্রিয় ছিল। পঞ্চম দল ছিল সম্পৃক্ত ও দক্ষ, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে এবং বেশিরভাগই সমর্থিত। তারা তথ্য দেখার সময় এবং মানচিত্র তৈরির সময়ও বেশি ব্যয় করেছে। এই আচরণই বেটির ব্রেইনে সফলতা এনে দেয়। = তত্ত্ব থেকে প্রয়োগে = [[চিত্র:Section_4_From_Theory_to_Practice.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|Figure 12. From Theory to Practice]] == অভিজ্ঞ প্রয়োগে মেটাকগনিশন == === পাঠে মেটাকগনিশন === মেটাকগনিশন এবং পাঠ অনুধাবনের উপর এর প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ভাষাগত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি এবং কিশোরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব গবেষণায় পাঠ ও লেখার সঙ্গে মেটাকগনিশনের সম্পর্ক এবং মেটাকগনিশনমূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা উঠে এসেছে। Furnes এবং Norman (২০১৫) মেটাকগনিশনের তিনটি ধরন (জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা) তুলনা করেন স্বাভাবিক পাঠকের সঙ্গে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত পাঠকদের মধ্যে।<ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).2" /> অংশগ্রহণকারীরা দুটি তথ্যমূলক লেখা পড়ে এবং তাদের শেখার ফলাফল একটি মেমরি টাস্কের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। মেটাকগনিশনমূলক জ্ঞান ও দক্ষতা স্ব-প্রতিবেদনের মাধ্যমে এবং অভিজ্ঞতা পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস ও শেখার বিচার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। ফলাফল দেখায় যে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্তদের পাঠ ও বানান সমস্যা সাধারণত কম মেটাকগনিশন বা কৌশল ব্যবহারজনিত নয়। স্বাভাবিক শিশুদের উপর একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা যায়, ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের মেটাকগনিশন জ্ঞান তুলনামূলকভাবে ভালো।<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).3" /> গবেষণায় আরও উঠে আসে, পাঠ অনুধাবন ব্যক্তিগত কৌশল জ্ঞানভিত্তিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দুটি গবেষণাই বোঝায়, ডিসলেক্সিয়ায় পাঠ অনুধাবনের ঘাটতি মেটাকগনিশনের কারণে নয়, কিন্তু স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে পাঠ অনুধাবন তাদের মেটাকগনিশনের স্তরের উপর নির্ভর করে। '''প্রশ্ন তৈরি''' শিক্ষার্থীদের পাঠ্য অনুধাবনে সহায়তা করতে পারে। “একজন আদর্শ শিখনকারী – আত্ম-নিয়ন্ত্রিত ও সক্রিয় – হলো সেই ব্যক্তি যে গভীর প্রশ্ন তোলে এবং এর উত্তর অনুসন্ধান করে” (Garcia et al. ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> বিভিন্ন গবেষণায় প্রশ্ন তৈরির পাঠ্য অনুধাবনে প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে। Garcia et al. (২০১৪) নবম শ্রেণির ৭২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিজ্ঞানের ক্লাসে একটি গবেষণা করেন। ফলাফল অনুযায়ী, “প্রশ্ন তৈরির প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের শেখা ও অধ্যয়নের পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত তাদের মেটাকগনিশনে” (Garcia et al. ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা, যারা প্রম্পটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পায়, তাদের মেটাকগনিশন জ্ঞান ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ স্কোর সর্বোচ্চ হয়। এটি বোঝায় যে প্রশ্ন তৈরির কার্যকারিতা শিক্ষার্থীর মেটাকগনিশন জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তৈরি করানোর আগে তাদের মেটাকগনিশন দক্ষতা চিহ্নিত করা শিক্ষকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। === লেখায় মেটাকগনিশন === বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখালেখিতে মেটাকগনিশন দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিক্ষকরা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে চিন্তা ও পর্যালোচনার আহ্বান জানান, বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সচরাচর তাদের লেখাকে গভীরভাবে মূল্যায়ন বা পরিমার্জন করে না। প্যারট ও চেরি (২০১৫) এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও সক্রিয় লেখাচিন্তায় উৎসাহিত করতে নতুন শিক্ষণ কৌশল '''প্রক্রিয়া স্মারক''' (process memos) প্রস্তাব করেন।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> প্রক্রিয়া স্মারক হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠানো নির্দেশিত প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা তাদের রচনার প্রথম খসড়া এবং চূড়ান্ত সংস্করণ উভয়ের পর প্রক্রিয়া স্মারক জমা দেয়। প্রথম খসড়ায়, শিক্ষার্থীদের তাদের রচনা, রুব্রিকের সহায়কতা, অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন, নিজের রচনার শক্তি ও দুর্বলতা এবং চূড়ান্ত সংস্করণে উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়। এরপর শিক্ষক রচনা মূল্যায়ন করে প্রতিক্রিয়া দেন। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া স্মারকে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বলা হয়, যেমন “কোন মন্তব্য সবচেয়ে সহায়ক ছিল, এবং কেন?” (Parrott et al, ২০১৫, পৃ. ১৪৭)।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> Parrott ও Cherry প্রথমে ২০০৫ সালে প্রক্রিয়া স্মারক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন এবং ২০১৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় তা প্রয়োগ করেন। এই গবেষণায় সমাজতত্ত্বের বিভিন্ন স্তরের ২৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অংশ নেয়।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> === বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন === পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে মেটাকগনিশন গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিজ্ঞানের উচ্চতর স্তরের শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান এবং পদ্ধতিগত কৌশলগুলো পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের পক্ষে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা যথাক্রমে তাদের শেখার এবং শিক্ষাদানকে প্রভাবিত করে।  তবে অনেক শিক্ষক এই বিশ্বাসকে হালকাভাবে নেন। একটি গবেষণা (আব্দ-এল-খালিক এট আল, ১৯৯৮) যেখানে গবেষকরা প্রাক-পরিষেবা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন তা প্রকাশ করেছে যে অনেক শিক্ষক বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে বিশ্বাস শেখান না। এই অধ্যয়নের কিছু শিক্ষক বিশ্বাস করেন যে বিজ্ঞানের প্রকৃতি শেখানো বিজ্ঞানের অন্যান্য ধারণা শেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় এবং উচ্চতর স্তরের বিজ্ঞান শিখে তখন এটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এটি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান অধ্যয়নের অনুপ্রেরণাকেও প্রভাবিত করে কারণ এটি তাদের বিজ্ঞান বোঝার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। শ্রাও, ক্রিপেন এবং হার্টলি (২০০)) এর সাথে একমত হন এবং বলেন যে "কার্যকর নির্দেশনার উচিত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হতে সহায়তা করা" (শ্রাও, ক্রিপেন এবং হার্টলি ২০০৬, পৃষ্ঠা ১১৭)।  তাহলে, আমরা কীভাবে বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশনকে উন্নীত করব? শ্রাউ এট আল পরামর্শ দেয় যে "খাঁটি তদন্ত মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করে কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার নিরীক্ষণ করতে এবং তাদের চিন্তাভাবনার ত্রুটিগুলো বা তাদের ধারণাগত বোঝার ফাঁকগুলো মূল্যায়ন করতে আরও ভালভাবে সক্ষম হয়" (শ্ক্র এট আল, ২০০৬, পৃষ্ঠা ১১৯)।  এটি অনুসন্ধান ভিত্তিক শিক্ষার অংশ যা অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন যে এটি বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কার্যকর। অনুসন্ধান ভিত্তিক শিক্ষায়, শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং সমাধান তৈরি করে। শ্রাও, ক্রিপেন এবং হার্টলির পরামর্শ অনুসারে শ্রেণিকক্ষে মেটাকগনিশন বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগিতা। এটি প্রতিক্রিয়া, মডেলিং এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া প্রচার করবে। এটি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসে উপকৃত হবে। একইভাবে, গণিত শেখার এবং নির্দেশনা গবেষণায় মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অত্যন্ত আলোচিত হয়। আরও তথ্যের জন্য দয়া করে গণিত শেখার অধ্যায়টি দেখুন। == উন্নয়নমূলক লেন্সের মাধ্যমে মেটাকগনিশন == গবেষণা দেখায় যে মেটাকগনিটিভ ক্ষমতাগুলো বয়স এবং জীববিজ্ঞানের মতো কারণগুলোর সাথে সম্পর্কিত (উদ্ধৃতি ৪). সুতরাং তত্ত্বটি প্রয়োগ করার জন্য উন্নয়নমূলক অগ্রগতি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। === পরিপক্কতা ঘাঁটি === '''একটি ফ্যাক্টর হিসাবে বয়স''' * ছোট বাচ্চারা ** মনের তত্ত্ব * বয়ঃসন্ধিকাল * প্রাপ্তবয়স্কদের === জৈবিক ভিত্তি === '''শেখার ঘাটতি''' == এসআরএল কৌশল == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন আগ্রহের একটি বিস্তৃত ক্রমবর্ধমান বিষয়, বিশেষত শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে (রোজম্যান এট আল। লক্ষ্যটি তত্ত্বগুলোকে একটি সমন্বিত কাঠামোর মধ্যে সংহত করার চেষ্টা করার মধ্যে রয়েছে যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের গাইড করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সম্পর্কিত সাহিত্যের পর্যালোচনাতে, প্যারিস এবং প্যারিস (২০০১) শ্রেণিকক্ষের পরিবেশে এসআরএলের ব্যবহারিক প্রয়োগ হিসাবে বেশ কয়েকটি নীতির সংক্ষিপ্তসার জানিয়েছে।  তারা তাদের চারটি ধারণার সীমার মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করেছে যা এই ক্ষেত্রে গবেষণাকে সংহত করে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা যখন স্ব-মূল্যায়ন করতে পারে তখন তারা কী শেখার সাথে জড়িত তা আরও ভালভাবে বুঝতে সক্ষম। এর অর্থ হলো তাদের শেখার উপায়গুলো বিশ্লেষণ করে এবং অন্যের সাথে তুলনা করে, তাদের কী আছে এবং কী জ্ঞান নেই তা মূল্যায়ন করে এবং তাদের প্রচেষ্টার মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীরা শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। দ্বিতীয়ত, চিন্তাভাবনা এবং প্রভাবের স্ব-ব্যবস্থাপনা অভিযোজিতভাবে সমস্যা সমাধানের দক্ষতায় বৃহত্তর নমনীয়তার অনুমতি দেয়। বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করে যা তাদের দক্ষতা উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করে, ক্রমাগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কার্যকরভাবে তাদের সময় পরিচালনা করে এবং শেখার কৌশলগুলো পর্যালোচনা / সংশোধন করে শিক্ষার্থীরা নিজের জন্য উচ্চতর পারফরম্যান্স মানগুলোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারে। তৃতীয়ত, নির্দেশের ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিভিন্ন উপায়ে শেখানো যেতে পারে যা বাসস্থানের অনুমতি দেয়। এসআরএল শিক্ষার্থীদের স্পষ্টভাবে শেখানো যেতে পারে (নির্দেশিত প্রতিচ্ছবি, মেটাকগনিশন সম্পর্কে আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সাথে অনুশীলন)। এটি পরোক্ষভাবে শেখানো যেতে পারে (মডেলিং, এবং প্রতিফলিত অনুশীলন)। এবং এটি বৃদ্ধির স্বতন্ত্র ম্যাপিংয়ের সাথে অনুরোধ করা যেতে পারে। পরিশেষে, এটি বিশ্বাস করা হয় যে স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য পরিচয় সম্পর্কিত বর্ণনামূলক অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত। শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের আচরণের মূল্যায়ন ও নিরীক্ষণ করতে পছন্দ করে তা তাদের পছন্দসই পরিচয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং শিক্ষার্থী / প্রশিক্ষকদের একটি প্রতিফলিত সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার মাধ্যমে, কেউ তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের দিকে নজর দেওয়ার গভীরতার স্তর বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদিও শিক্ষার্থীরা স্ব-নিয়ন্ত্রণের উপায়ে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে শিশুরা কীভাবে প্রথম স্থানে স্ব-নিয়ন্ত্রণে আসে তা বোঝার মধ্যে গুরুত্ব রয়েছে। প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) অনুসারে, এসআরএল তিনটি উপায়ে বাড়ানো যেতে পারে: (১) অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে: স্কুলে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি শিক্ষকের দ্বারা কী প্রত্যাশা করা হয় এবং শিক্ষার্থীর পক্ষে সবচেয়ে উপকারী কী তা শিখতে পারে।  এর একটি উদাহরণ হলো শেখা যে ডাবল-চেকিং কাজ, যদিও প্রাথমিকভাবে সময় সাপেক্ষ, দীর্ঘমেয়াদে উপকারী হতে পারে এবং তাই পরের বারও এটি করা সুবিধাজনক হবে। (২) এসআরএল সরাসরি শেখানো যেতে পারে: শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিদদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থেকে শিখতে পারে যারা কার্যকর কৌশল ব্যবহার তুলে ধরে এবং লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রশিক্ষক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনও শব্দ সমস্যা কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন তার কৌশলগত পদক্ষেপগুলোর উপর জোর দিতে পারেন। (৩) তাদের মধ্যে এসআরএলকে মূর্ত করে এমন সক্রিয় অনুশীলনগুলোর সাথে একীভূত হলে স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রকাশ করা যেতে পারে। একটি কার্যকর অনুশীলন যা এসআরএলকে এতে অন্তর্ভুক্ত করে তা হলো সহযোগী শেখার প্রকল্প যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সামগ্রিক প্রকল্পের একটি অংশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এই জাতীয় প্রকল্পগুলোতে উপস্থিত হয় কারণ শিক্ষার্থীরা অন্যের প্রতিক্রিয়া থেকে এবং সামগ্রিকভাবে অবদান রাখার জন্য তারা কী করেছে তার বিশ্লেষণ থেকে শিখতে বাধ্য। এসআরএল বাড়ানোর এই তিনটি রূপরেখা উপায় প্রায়শই একত্রে পাওয়া যায় কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাগত পরিবেশে তাদের সহকর্মী এবং প্রশিক্ষকদের সাথে অভিজ্ঞতার সংস্পর্শে আসে। শিক্ষা জুড়ে, শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশোনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন শেখার কৌশল শেখানো হয়। তবুও গবেষণা দেখায়, এই ধরনের শেখার কৌশলগুলো জানা সবসময় যথেষ্ট নয় তবে কৌশলটির ব্যবহারকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হওয়া (লেউটনার এট আল। লেউটনার, লিওপোল্ড এবং এলজেন-রাম্প (২০০৭) এর একটি কম্পিউটার-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় গবেষকরা শিক্ষার্থীদের কেবল একটি দরকারী জ্ঞানীয় শেখার কৌশল (হাইলাইটিং) শেখানোর সুবিধাই দেখাতে সক্ষম হননি, তবে কীভাবে মেটাকগনিটিভ লার্নিং কৌশলগুলোর সাথে এই সরঞ্জামটির ব্যবহার নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের সুবিধাও দেখাতে সক্ষম হন। গবেষণায় ৪৫ জন কলেজ শিক্ষার্থী এলোমেলোভাবে একটি চিকিত্সা গ্রুপে নিযুক্ত হয়েছিল যা কোনও প্রশিক্ষণ পায়নি, যার মধ্যে একটিতে তাদের কেবল হাইলাইটিংয়ের জ্ঞানীয় কৌশলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং অন্যটিতে হাইলাইট করার প্রশিক্ষণ নবজাতক শিশুদের সম্পর্কে শেখার ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের সাথে মিলিত হয়েছিল। সম্মিলিত স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ গোষ্ঠীর কম্পিউটার-প্রোগ্রামের একটি সংস্করণ ছিল যা নিয়ন্ত্রণ কৌশলটি অনুশীলন করার জন্য এবং তাদের পাঠ্য শিক্ষার পরবর্তী বিভাগে এটি প্রয়োগ করার জন্য সময়ের সাথে কীভাবে মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করা যায় তার পদক্ষেপগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছিল। গবেষণার ফলাফলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে এই কৌশল ব্যবহারের কৌশল-ব্যবহার এবং মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ উভয় ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণের পরে পরীক্ষা করার সময় লক্ষ্য-ভিত্তিক উপায়ে তাদের শেখার প্রয়োগে আরও সফল হয়েছিল। জ্ঞানীয়-কৌশল ব্যবহার শুধুমাত্র গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ গ্রুপের চেয়ে ভাল পারফর্ম করেছে। এটি কোনও প্রশিক্ষণ পায়নি। তবে সম্মিলিত প্রশিক্ষণ গোষ্ঠী উভয়কেই ছাড়িয়ে গেছে, ইঙ্গিত দেয় যে, কৌশল ব্যবহার ফলাফলের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে, যখন শিক্ষার্থীদের এই জাতীয় কৌশলগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে শেখানো হয় তখন শেখার আরও বাড়ানো যেতে পারে। == প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি == === প্রযুক্তি এবং এসআরএলের মধ্যে লিঙ্ক === প্রযুক্তিগত ব্যবহারের অনস্বীকার্য বৃদ্ধি, প্রেনস্কি (২০০১) তার নিবন্ধে পরামর্শ দেয় যে শিক্ষার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহারের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়াও, শিক্ষকদের অবশ্যই শিক্ষার্থীদের "প্রয়োজনীয়তা" জানতে হবে এবং একটি সুবিধাজনক এবং আরামদায়ক পদ্ধতিতে ডিজিটাল নেটিভদের কাছে সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য কম্পিউটিং শক্তির সাথে মিলিত উপলব্ধ তথ্যের সুবিধা নিতে হবে।  আজ, প্রযুক্তি হস্তক্ষেপগুলোতে প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল নেটিভদের স্ব-নিয়ন্ত্রক শেখার প্রক্রিয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য শেখার সরঞ্জাম থাকতে পারে . শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে, নিজেদের নিরীক্ষণ করতে এবং তাদের নিজস্ব শিক্ষার ফলাফলগুলো স্ব-মূল্যায়ন করতে বিভিন্ন ধরণের নতুন প্রযুক্তি চেষ্টা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।  শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞান, আগ্রহ এবং অনুপ্রেরণা সরাসরি তাদের স্বতন্ত্র শেখার অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স এবং প্রযুক্তি বর্ধিত এসআরএল পরিবেশের ফলাফলগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। (২০১৫) শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলগুলোকে সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা এবং পদ্ধতির তদন্ত করার জন্য শেখার পরিবেশে প্রয়োগ করা ইন্টেলিজেন্ট টিউটরিং সিস্টেম (আইটিএস) এর উদাহরণ সরবরাহ করে। কম্পিউটার সিস্টেম হিসাবে আইটিএস, শিক্ষার্থীদের তাদের আচরণ অনুযায়ী শেখার ক্রিয়াকলাপ এবং মিথস্ক্রিয়ায় জড়িত করে কম্পিউটার ভিত্তিক নির্দেশনায় বুদ্ধি নিয়ে আসে।  আইটিএসগুলো বিষয় ডোমেনের জ্ঞান সরবরাহ করে এবং "প্রতিটি কাজকে এটি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উত্পাদন বিধিগুলোর একটি সেট হিসাবে চিহ্নিত করে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে উত্পাদন বিধিগুলোর একটি সেট হিসাবে চিহ্নিত করে কার্য নির্বাচন করতে পারে যা সর্বাধিক অনুশীলন করা দরকার এবং তারপরে সেরা ম্যাচটি সন্ধান করতে পারে" (মা এট আল। আইটিএসগুলো প্রতিটি পৃথক শিক্ষার্থীকে তাদের নিজস্ব কাজগুলো চয়ন এবং নিরীক্ষণের সুযোগ দেয়। এটি বিভিন্ন জ্ঞানের স্তর এবং শেখার ক্ষমতা রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর এবং দরকারী হতে পারে। আইটিএস দ্বারা প্রদত্ত স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী-নিয়ন্ত্রণ বিকল্পগুলো শিক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষার উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে উত্সাহিত করতে পারে। এটি তাদের স্ব-অনুপ্রেরণা প্রচার করবে এবং তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে উত্সাহিত করবে কাউফম্যান, ঝাও এবং ইয়াং (২০১১) শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং মেটাকগনিশনকে সহজতর ও সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে মা এট আল-এর মতো একই সিদ্ধান্তে এসেছেন।  আরও সুনির্দিষ্টভাবে, কফম্যান এট আল (২০১১) আবিষ্কার করেছেন যে শিক্ষাগত সেটিংসে প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে এবং কোর্সের বিষয়বস্তু সংগঠিত করতে শেখাতে সহায়তা করতে পারে। নির্দেশমূলক ডিজাইনার এবং প্রশিক্ষকদের জন্য, তারা তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে ওয়েব-ভিত্তিক শিক্ষাগত এবং মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম উভয়ের মাধ্যমে কোর্সের সামগ্রী তৈরি এবং বিতরণ করতে পারে। বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাটগুলো শিক্ষাবিদদের মনোযোগ বজায় রাখতে, তাদের শেখার আগ্রহ বাড়াতে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াতে তাদের আরও ভালভাবে সংহত করতে সহায়তা করতে পারে (কাফম্যান এট আল।  অন্যদিকে, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শেখা শিক্ষার্থীদের কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতে এবং "বিভিন্ন মিডিয়া ফর্ম্যাটে কোর্সের বিষয়বস্তু দেখার জন্য তাদের একাধিক বিকল্প সরবরাহ করতে" সহায়তা করতে পারে (কাফম্যান এট আল। উপরন্তু, কন্টেন্ট তৈরির সরঞ্জামগুলো শক্তিশালী শেখার কৌশলগুলো নিয়োগ করবে। এটি শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়া নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন করার জন্য মিডিয়া ফরম্যাটের মাধ্যমে কোর্সের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের বোঝার প্রদর্শন করতে সক্ষম করবে (কাফম্যান এট আল। === শেখার প্রযুক্তিগুলো এসআরএল প্রসঙ্গে যে বিষয়গুলো নিয়ে এসেছে === [ শিক্ষার্থীরা যে বর্ধিত হারে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা এসআরএলে অনেক চ্যালেঞ্জ প্রবর্তন করেছে।  সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের বোঝার পুরোপুরি নিরীক্ষণ করতে পারে না এবং শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি এসআরএল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের দক্ষতা বিকাশে কম কার্যকর হতে পারে। এইভাবে, শিক্ষার্থীরা এসআরএল প্রক্রিয়ায় শেখার স্বাধীনতা হারায় এবং তথ্যের প্রবাহকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য তাদের শেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে মৌখিক প্রতিক্রিয়া এবং ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস (এলএমএস) শেখার সামগ্রী বিতরণ করে, শেখার প্রক্রিয়াগুলো সংগঠিত করে এবং ইন্টারফেসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। যাইহোক, শিক্ষার্থীরা এলএমএসে তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াতে সত্যই কোনও স্বাধীনতা পায় না। পরিবর্তে, শিক্ষকরা এলএমএস কোর্সে অংশ নেওয়ার সময় পুরো সময় তাদের বোঝার উপর নজর রাখেন।  বিপরীতে, পার্সোনাল লার্নিং এনভায়রনমেন্টস (পিএলই) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিষয়বস্তু এবং শেখার কৌশলগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে তারা যে পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে চান তা নির্বাচন এবং নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়। পিএলইতে কোর্সের বিষয়বস্তু এবং পদ্ধতিতে দিকনির্দেশনার অভাব শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াতে শেখাকে কম দক্ষ করে তোলে । পাশাপাশি, এসআরএল তাদের কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ। === শেখার প্রযুক্তি এসআরএল প্রসঙ্গে যে সুযোগগুলো নিয়ে এসেছে === [ যদিও এসআরএল-এ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অনেক উদ্বেগ রয়েছে, তবে আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে এসআরএল  জ্ঞানের সংক্রমণ এবং ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যের বিভিন্ন উত্স অ্যাক্সেস করে, সিমাও এট আল (২০০৮) আবিষ্কার করেছেন যে প্রযুক্তিতে শেখার কাজগুলো পরিকল্পনা এবং সম্পাদনের নতুন উপায় জড়িত। এর ফলে নির্দিষ্ট দক্ষতার বিকাশ হতে পারে।  শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে বা তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অর্জনের জন্য তাদের শেখার প্রক্রিয়াটি স্ব-নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতে হবে। অন্যদিকে, শিক্ষকদের সামাজিক ও বৌদ্ধিক পরিবেশকে উত্সাহিত করা উচিত যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করে। অনেক একাডেমিক নিবন্ধ এবং প্রতিবেদন একই দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে বলে মনে হয়। এটি দেখানো হয়েছে যে শেখার প্রযুক্তিগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রণকে উত্সাহিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসাবে কাজ করতে পারে।  প্রকৃতপক্ষে, এই কাগজের শেষ অংশটি এসআরএল-এ শেখার প্রযুক্তির সাথে সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার বেশ কয়েকটি প্রযুক্তির উদাহরণ সরবরাহ করবে। পর্যালোচনাটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত শেখার প্রযুক্তিগুলোর কার্যকারিতা প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে। বিশেষত, যখন শেখার প্রযুক্তিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রণ, অনুপ্রেরণা এবং অনলাইন শিক্ষার প্রসঙ্গে ব্যস্ততা সমর্থন করার জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স শেখার দিকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করবে। এছাড়াও, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সমর্থন করার জন্য শেখার প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি কিছু গবেষক, শিক্ষক, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছিল। তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের পরিবেশে শেখার প্রযুক্তিগুলো যে ভূমিকা পালন করে তা বুঝতে চায়। শেখার প্রযুক্তিগুলো কি শিক্ষণ এবং শেখার বিকল্প মোড বা যথেষ্ট পরিপূরক হিসাবে শিক্ষার ল্যান্ডস্কেপে ফিট করে? লার্নিং টেকনোলজি কি শিক্ষক/শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী/শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্ধিত মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ এনে দিতে পারে? কীভাবে শেখার প্রযুক্তি এসআরএল-এ তাদের শেখার লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিশন, অনুপ্রেরণা এবং আচরণ বিকাশ করতে পারে। উপরন্তু, শেষ অংশটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগুলো কী ভূমিকা পালন করে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের জন্য প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা কেন অপরিহার্য তা প্রকাশ করবে। শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণে জড়িত করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে, যেমন বেটির মস্তিষ্ক, মেটাটিউটর এবং এনস্টাডি। প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের এসআরএল ক্রিয়াকলাপগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি তাদের অনুসন্ধানের কৌশলগুলো নির্বাচন করতে, কৌশলগত প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে এবং অ্যাক্সেসকৃত তথ্যকে সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করতে দেয়, সবই মেটাকগনিটিভ প্রতিফলন প্রচার করে।  এই অংশটি তিনটি নির্দিষ্ট বিদ্যমান প্রযুক্তি বর্ণনা করবে এবং শিক্ষার্থীদের এসআরএলকে সমর্থন ও প্রচারের ক্ষেত্রে তাদের প্রভাবগুলো চিত্রিত করবে। * '''বেটির মস্তিষ্ক''' বেটির মস্তিষ্ক হলো একটি শিক্ষণীয় এজেন্ট সিস্টেম যা ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার এবং কৌশল ব্যবহারকে সমর্থন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে  মস্তিষ্কে, শিক্ষার্থীরা প্রথমে "বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ে শিখে" (রোসকো এট আল। তারা যে জ্ঞান অর্জন করে তার উপর ভিত্তি করে, তারা তাদের বোঝার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং তাদের তৈরি ধারণা মানচিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার এজেন্ট চরিত্র বেটিকে শেখানোর জন্য ধারণার মানচিত্রের একটি সরলীকৃত ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা তৈরি করবে।  রোসকো এট আল (২০১৩) তাদের নিবন্ধে ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে এই ধারণার মানচিত্রগুলো তৈরি করা শিক্ষার্থীদের "কীভাবে পৃথক ধারণাগুলো গভীর নীতিগুলোর মধ্যে একত্রিত হয়" (পৃষ্ঠা ২৮৭) বুঝতে সহায়তা করার সময় নতুন এবং পূর্ববর্তী উভয় জ্ঞানকে সংহত ও সংগঠিত করতে সহায়তা করতে পারে। অন্যকে শেখাতে হলে শিক্ষার্থীদের আগে শিখন প্রবলেমটি শিখতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে শেখার সময়, শিক্ষার্থীরা বেটি প্রোগ্রাম থেকে প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করে এবং এক প্রসঙ্গে থেকে অন্য প্রসঙ্গে জ্ঞান স্থানান্তর করতে অনুপ্রাণিত হয়, যার ফলস্বরূপ বৃহত্তর মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রক অনুশীলন হয়।  এইভাবে, তারা নিজেদের নিরীক্ষণ করতে এবং তাদের এজেন্টকে আরও ভাল সম্পাদন করতে শেখাতে সক্ষম হবে। শেষ পর্যন্ত, রোসকো এট আল (২০১৩) সংক্ষেপে বলেছে যে শিক্ষার্থীরা অবশেষে "নির্ভুলতা এবং সম্পূর্ণতা উন্নত করতে মানচিত্রের ত্রুটিগুলো সনাক্ত এবং মেরামত করতে মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়াগুলো প্রয়োগ করতে পারে" (পৃষ্ঠা ২৮৯) বেটির মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। * '''আজেভেদোর মেটাটিউটর''' খোসরাভিফার এট আল (২০১৩) এর মতে, মেটাটিউটর শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য একটি গবেষণা-ভিত্তিক শেখার সরঞ্জাম। বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ এবং কৌশলগত বৌদ্ধিক কৌশল প্রয়োগ করে, শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানীয়, সংবেদনশীল, মেটাকগনিশন এবং শেখার  অনুপ্রেরণা আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। মেটাটিউটরটি হাইপারমিডিয়ার মাধ্যমে হাই স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সম্পর্কে শেখার প্রশিক্ষণ ও উত্সাহ দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে  মেটাটিউটর মানব শারীরিক সিস্টেম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার সনাক্তকরণ, মডেল, ট্রেস এবং উত্সাহ দেয় । এটি মূলত স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের জ্ঞানীয় মডেলগুলোর উপর ভিত্তি করে।  হাইপারমিডিয়া লার্নিং এনভায়রনমেন্টের সামগ্রী অন্বেষণ এবং অ্যাক্সেস শুরু করার আগে এসআরএল প্রক্রিয়াগুলোর উপর প্রশিক্ষণ সেশনটি সম্পূর্ণ করার জন্য মেটাটিউটর দ্বারা প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবহারকারী। হাইপারমিডিয়া লার্নিং এনভায়রনমেন্টে চারটি শিক্ষাগত এজেন্ট রয়েছে। এটি কেবল অংশগ্রহণকারীদের এসআরএল দক্ষতা এবং সামগ্রী বোঝার জন্য প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করে না, তবে অংশগ্রহণকারীদের সিস্টেমটি নেভিগেট করতে, উপযুক্ত লক্ষ্য নির্ধারণে গাইড করতে, তাদের শেখার লক্ষ্যগুলোর দিকে তাদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে এবং এসআরএল জ্ঞানীয় কৌশলগুলো স্থাপন করতে সহায়তা করে  এবং নোট গ্রহণ[ মেটাটিউটর ব্যবহার করে, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে নির্দিষ্ট এসআরএল শেখার প্রক্রিয়াগুলো কার্যকর করতে পারে।  মেটাটিউটর সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের মিথস্ক্রিয়া ট্র্যাক করতে পারে এবং একটি লগ ফাইলে ব্যবহারকারীর আচরণ রেকর্ড করতে পারে। যখন ডেটা দেখায় যে কোনও শিক্ষার্থী অকার্যকর কৌশলগুলো ব্যবহার করছে, তখন এজেন্ট শিক্ষার্থীকে আরও ভাল শেখার কৌশল ব্যবহার করার জন্য সতর্ক করে প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পরিবেশে তাদের নিজস্ব শেখার পছন্দ এবং ফলাফলগুলো উন্নত করতে মেটাটিউটর থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করতে পারে। একই সময়ে, শিক্ষার্থীরা কীভাবে মেটাটিউটরের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রক  তাদের শেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও বেশি ধারণা অর্জনের জন্য শিক্ষকরা মেটাটিউটর থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে পারেন। যদিও মেটাটিউটরের শিক্ষাগত এজেন্টরা শিক্ষার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তবুও তারা পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সহায়তা করার জন্য দরকারী শেখার কৌশল সরবরাহ করে। * '''এন স্টাডি''' প্রফেসর উইন এবং তার গবেষক দল এনস্টাডি ডিজাইন করেছেন, একটি ওয়েব-ভিত্তিক লার্নিং টুল, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার  অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, একত্রিত হওয়া, মহড়া দিতে, অনুবাদ করতে পারে। এনস্টাডির নকশা শিক্ষার্থী এবং গবেষক উভয়কেই ওয়েব-ভিত্তিক শিক্ষার পরিবেশের মাধ্যমে তাদের শেখার এবং গবেষণায় সক্রিয় হতে দেয়। এনস্টাডিতে, তারা তাদের শেখার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন অনুসারে তাদের শেখার অবজেক্টগুলো তৈরি করে, ম্যানিপুলেট করে এবং লিঙ্ক করে সংগঠিত করতে পারে।  বেটির মস্তিষ্কের মতো, তারা শেখার ধারণার মানচিত্রও তৈরি করতে পারে এবং তারপরে লিঙ্ক, গ্রুপ এবং স্থানিকভাবে তাদের সাজাতে পারে। লিঙ্কিং শিক্ষার্থীদের তাদের ব্যক্তিগত লার্নিং নেটওয়ার্ক ডেটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং তাদের নিজস্ব উপায়ে তথ্যটি গঠন করতে দেয়। এটি তাদের ইন্টারঅ্যাক্টিং, সম্প্রসারণ এবং তথ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা উন্নত করতে সর্বোত্তম হতে পারে। এনস্টাডি স্বতন্ত্র এবং গোষ্ঠী উভয় শিক্ষার্থীকে তাদের সহযোগিতা, তথ্য বিনিময় এবং অনলাইনে সামগ্রী নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি কর্মক্ষেত্র সরবরাহ করে। এটি তাদের সহযোগী শিক্ষাকে সমর্থন করার জন্য একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ তৈরি করতে পারে।  এছাড়াও, কর্মক্ষেত্র জুড়ে তথ্য বিনিময় করার ক্ষমতা "ভূমিকা এবং প্রম্পট দ্বারা কাঠামোগত হতে পারে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ, একে অপরের কাজকে সহ-নিয়ন্ত্রণ করতে এবং প্রবিধান ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে" (উইন এবং হ্যাডউইন, ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩০২)। শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা অধ্যয়ন বা গবেষণার জন্য এনস্টাডির সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করার সাথে সাথে সিস্টেমটি তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সময় নির্দিষ্ট জ্ঞানীয় এবং মেটাকগনিটিভ ইভেন্টগুলো প্রতিফলিত করতে পারে এমন ট্রেস ডেটা সংগ্রহ করে == এসআরএলকে সহজতর করা এবং উত্সাহিত করা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন (এসআরএল) এমন একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীদের তাদের চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং আবেগ পরিচালনা করতে সহায়তা করে যাতে তাদের শেখার অভিজ্ঞতাগুলো সফলভাবে নেভিগেট করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটির জন্য শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে তাদের শেখার পরিকল্পনা, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।  এসএলআর শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রেরণা এবং কৃতিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীকারী। স্ব-নিয়ন্ত্রণের গঠন সেই ডিগ্রিকে বোঝায় যা শিক্ষার্থীরা শেখার সময় তাদের চিন্তাভাবনা, অনুপ্রেরণা এবং আচরণের দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অনুশীলনে, স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন শেখার প্রক্রিয়াগুলোর সক্রিয় পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণে উদ্ভাসিত হয়। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রকৃতি এবং উত্সে অসামাজিক নয়। স্ব-নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলো প্রায়শই এমন পরিবেশের মধ্যে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে যা স্বায়ত্তশাসনের সুযোগের সাথে কাঠামোর ভারসাম্য বজায় রাখে।  গবেষণা দেখায় যে স্ব-নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলো শিক্ষণীয় এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা এবং কৃতিত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রতিটি স্ব-নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া পিতামাতা, শিক্ষক, কোচ এবং সহকর্মীদের দ্বারা নির্দেশনা এবং মডেলিং থেকে শিখতে পারে।  উপরন্তু, অসংখ্য গবেষণা প্রকাশ করে যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের উপর হস্তক্ষেপ এবং প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে  উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণায়, লাবুহন এট আল (২০১০) দেখা গেছে যে পর্যবেক্ষণ এবং অনুকরণের মাধ্যমে এসআরএল দক্ষতা শেখানো শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকাশের সম্ভাবনা বেশি ছিল উচ্চতর স্তরের একাডেমিক স্ব-কার্যকারিতা (অর্থাত্, আত্মবিশ্বাস) এবং এসআরএল নির্দেশনা না পাওয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় একাডেমিক কৃতিত্বের পরিমাপে উচ্চতর পারফর্ম করে।  তদনুসারে, শিক্ষার্থীদের তাদের পুরো স্কুল ক্যারিয়ার জুড়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের অনুশীলন করা উচিত এবং শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের আচরণকে উত্সাহিত করার জন্য কাজটি মোকাবেলা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আরও স্ব-নিয়ন্ত্রক হতে শেখানোর মাধ্যমে, শিক্ষকরা একাডেমিক কৃতিত্ব, অনুপ্রেরণা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রচারে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারেন।  শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থী হয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারেন যারা কার্যকর কৌশলগুলো ব্যবহার করে তাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং শেখার কাজের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, শেখার প্রক্রিয়াটি নিরীক্ষণ করতে এবং পরের বার এটি উন্নত করার লক্ষ্যে শেখার পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে সহায়তা করতে পারে। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করতে পারেন হয় সরাসরি শেখার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে বা পরোক্ষভাবে এমন একটি শিক্ষার পরিবেশের ব্যবস্থা করে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করতে সক্ষম করে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিকাশ === জিমারম্যান (২০০২)  মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াটি তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে: ''ফোরথট এবং প্ল্যানিং ফেজে'' শেখার কাজটি বিশ্লেষণ করা এবং সেই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা জড়িত। এই পর্যায়ে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কার্যকর পদ্ধতির নির্দেশ দেন, কাঠামোগত এবং সুস্পষ্ট নির্দেশনা সরবরাহ করেন, কৌশলগুলো মডেল করেন এবং ব্যাখ্যা করেন এবং শিক্ষার্থীদের অন্যান্য অনুরূপ শেখার কাজগুলোতে কৌশলটি সাধারণীকরণ করতে সহায়তা করেন। ''পারফরম্যান্স মনিটরিং ফেজে'' শেখার কাজটিতে অগ্রগতি করার জন্য কৌশলগুলো নিয়োগ করা, কৌশলগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা এবং শেখার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রেরণা পর্যবেক্ষণ করা অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষকরা ক্রিয়াকলাপগুলো সংগঠিত করতে পারেন, শিক্ষার্থীদের নতুন কৌশলগুলো ব্যবহার করতে শিখতে সহায়তা করার জন্য ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ এবং নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা কীভাবে কৌশলগুলো স্বাধীনভাবে কার্যকর করতে শেখে, শিক্ষকরা ধীরে ধীরে নির্দেশকে ম্লান করে দেয় এবং গাইডের ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়। ''পারফরম্যান্স ফেজের প্রতিচ্ছবি শেখার'' কার্যের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন এবং শেখার অভিজ্ঞতার ফলাফলের সাথে সম্পর্কিত সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াগুলো পরিচালনা করার দিকে মনোনিবেশ করে। শিক্ষকরা পিয়ার মূল্যায়ন এবং প্রতিফলনকে উত্সাহিত করে, মূল্যায়নের সুবিধার্থে এবং ক্রমাগত শেখার লক্ষ্যগুলোতে ফলাফলগুলো সম্পর্কিত করে সহায়তা সরবরাহ করতে পারেন। শিক্ষকদের শেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন কী ভাল কাজ করেছে তা ভাগ করে নিতে, শিক্ষার্থীদের স্ব-কার্যকারিতা এবং অনুপ্রেরণায় অবদান রাখতে এবং তাদের প্রচেষ্টা এবং কার্যকর কৌশলগুলোর ব্যবহারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশংসা সরবরাহ করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করা উচিত। স্ব-নিয়ন্ত্রক দক্ষতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হয় না। স্ব-নিয়ন্ত্রক দক্ষতার বিকাশের পর্যায়ে চারটি স্তর রয়েছে: পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণ। পর্যবেক্ষণ স্তরের দক্ষতা মডেলিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয় যা শিক্ষার্থীদের সফল পারফরম্যান্সের চিত্র সরবরাহ করে। এটি শিক্ষার্থীদের সাধারণ পারফরম্যান্স মান প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে এবং দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়া চলাকালীন অনুপ্রেরণা নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানায়। অনুকরণ স্তরে, শিক্ষার্থীরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে শেখা একটি সাধারণ কৌশল ব্যবহার করে একটি দক্ষতা সম্পাদন করে, যখন পারফরম্যান্সের নির্ভুলতা উন্নত করতে শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া এবং নির্দেশিকা গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, সামাজিক শক্তিবৃদ্ধি, যেমন প্রশংসা বা উত্সাহ, এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি করে। স্ব-নিয়ন্ত্রণের স্তরে কাঠামোগত অনুশীলন এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ জড়িত। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কাঠামোগত সেটিংসে একটি দক্ষতা অনুশীলন করে। শিক্ষার্থীরা কোনও মডেলের পারফরম্যান্সকে উল্লেখ করতে এবং অভ্যন্তরীণ করতে পারে এবং ফলাফলের পরিবর্তে প্রক্রিয়াটিতে মনোনিবেশ করা উচিত। স্ব-নিয়ন্ত্রিত স্তরের দক্ষতা অসংগঠিত সেটিংসে সঞ্চালিত হয়। শিক্ষার্থীকে নিছক একটি শিখে নেওয়া দক্ষতা সম্পাদনের পরিবর্তে কার্যকারিতা বা পারফরম্যান্সের মানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত এবং ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত শর্ত অনুযায়ী তাদের কর্মক্ষমতা সামঞ্জস্য করা উচিত। তারা স্বাধীনভাবে দক্ষতা সম্পাদন করতে পারে তবে এখনও মাঝে মাঝে সামাজিক সমর্থন প্রয়োজন।  চিত্র ১৬. এসআরএলের চক্র দেখায়। === শিক্ষার্থীদের জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলগুলোর প্রকারগুলো''' চার ধরণের এসআরএল কৌশল রয়েছে যা শেখার সুবিধার্থে পারে: জ্ঞানীয় কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে মহড়া, চিত্রাবলী, সম্প্রসারণ এবং রূপান্তর বা উপকরণের সংগঠন। সম্প্রসারণ শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের সাথে নতুন উপাদান সংযুক্ত করতে সহায়তা করে। চিত্রাবলী মানসিক চিত্রগুলোকে বোঝায় যা শিক্ষার্থীরা তাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য গঠন করে। রিহার্সাল শিক্ষার্থীদের তাদের ওয়ার্কিং মেমরিতে তথ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। রূপান্তর এবং সংগঠিত কৌশলগুলোর মধ্যে শেখার সহজ করার জন্য সংক্ষিপ্তকরণ, রূপরেখা, নোট নেওয়া বা উপকরণগুলো পুনরায় সাজানো অন্তর্ভুক্ত। ''মেটাকগনিটিভ কৌশলগুলোর'' মধ্যে পরিকল্পনা, স্ব সচেতনতা এবং পর্যবেক্ষণ এবং স্ব-মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা কৌশল হল কার্য বিশ্লেষণ এবং লক্ষ্য নির্ধারণ। সাধারণত ব্যবহৃত পর্যবেক্ষণ কৌশলগুলো হলো স্ব-রেকর্ডিং এবং স্ব-পরীক্ষা।  স্ব-পরীক্ষা স্ব-পর্যবেক্ষণ এবং স্ব-মূল্যায়নের সাথে যুক্ত একটি কৌশল। স্ব-নির্দেশনা এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা মনোযোগ নিরীক্ষণ বা নিয়ন্ত্রণের কৌশল। স্ব-নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের কোনও কাজে মনোনিবেশ করতে এবং তাদের এনকোডিং এবং উপকরণগুলোর ধারণকে উন্নত করতে সহায়তা করে। মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কোনও কাজে মনোনিবেশ করার জন্য বিভ্রান্তি দূর করতে ব্যবহৃত হয়। ''ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলো'' সর্বোত্তম শিক্ষার শর্ত তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা এবং সহায়তা সন্ধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্ব-রেকর্ডিং সাধারণত সময় পরিচালনার দক্ষতা উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে উত্সাহিত করা শিক্ষার্থীদের সহায়তা চাওয়ার আচরণকে বাড়িয়ে তোলে। প্রতিক্রিয়া এবং মিথস্ক্রিয়া সহ শ্রেণিকক্ষের কাঠামোও শিক্ষার্থীদের সহায়তা সন্ধানকে প্রভাবিত করে। ''অনুপ্রেরণামূলক কৌশলগুলো'' শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে জড়িত হওয়ার জন্য তাদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে এবং বজায় রাখতে সহায়তা করে। উদাহরণগুলো হলো একটি শেখার উদ্দেশ্য প্রণয়ন। এটি লক্ষ্য অভিযোজন বাড়ায়। অ্যাট্রিবিউশনের একটি ইতিবাচক শৈলীর বিকাশ। এটি শিক্ষার্থীর স্ব-কার্যকারিতা বাড়ায়। সুদ বৃদ্ধি যা উপকরণগুলোকে আরও আকর্ষণীয় বা চ্যালেঞ্জিং করার জন্য ম্যানিপুলেট করে। এবং স্ব-কথা যা মৌখিক স্ব-উত্সাহকে বোঝায়। টেবিল ১. কৌশলের প্রকারভেদ: {| class="wikitable" |'''কৌশলের ধরন''' |'''বর্ণনা''' |'''উদাহরণ''' |- |জ্ঞানীয় কৌশল |এই ধরণের সামগ্রীর সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |মহড়া, চিত্রাবলী এবং উপকরণের সংগঠন |- |মেটাকগনিটিভ কৌশল |এই ধরণের শেখার সংগঠিত, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করার কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |টাস্ক বিশ্লেষণ, স্ব-রেকর্ডিং এবং স্ব-পরীক্ষা |- |ব্যবস্থাপনা কৌশল |এই ধরণের মধ্যে সর্বোত্তম শিক্ষার শর্ত তৈরি করতে ব্যবহৃত কৌশলগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |সময় ব্যবস্থাপনা, এবং সাহায্য চাইতে |- |অনুপ্রেরণামূলক কৌশল |এই ধরণের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়ানো এবং বজায় রাখার কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |একটি শেখার উদ্দেশ্য প্রণয়ন এবং অ্যাট্রিবিউশনের একটি ইতিবাচক শৈলীর বিকাশ |} '''শিক্ষার্থীদের এসআরএল কৌশলগুলো শেখান - স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীদের বিকাশ করুন''' শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বিকাশে শিক্ষকরা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। শ্রেণিকক্ষে এসআরএল প্রচারের জন্য, শিক্ষকদের অবশ্যই শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত কৌশলগুলো শেখাতে হবে যা শেখার সুবিধার্থে শেখায়। সর্বাধিক সাধারণ এবং কার্যকর এসআরএল কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে: লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-অনুপ্রেরণা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ, শেখার কৌশলগুলোর নমনীয় ব্যবহার, স্ব-পর্যবেক্ষণ, উপযুক্ত সাহায্য-সন্ধান এবং স্ব-মূল্যায়ন। ''লক্ষ্য নির্ধারণ:'' ব্যক্তিগত লক্ষ্য প্রতিষ্ঠা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক এবং নির্দিষ্ট ক্রিয়াগুলোতে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে যা তারা তাদের শিক্ষার উন্নতির জন্য গ্রহণ করতে পারে। স্বল্পমেয়াদী অর্জনযোগ্য লক্ষ্যগুলো প্রায়শই দীর্ঘমেয়াদী আকাঙ্ক্ষাগুলোতে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রক্সিমাল লক্ষ্য নির্ধারণ স্ব-কার্যকারিতা এবং দক্ষতা বিকাশ বাড়িয়ে তুলতে পারে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের তাদের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে সহায়তা করার জন্য স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণে উত্সাহিত করা, তারা কী শিখতে চায় এবং কী করতে সক্ষম হবে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে। ''পরিকল্পনা:'' পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের সফল হওয়ার জন্য সুচিন্তিত লক্ষ্য এবং কৌশল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের একটি পরিকল্পনার সাথে একাডেমিক কাজগুলোর কাছে যেতে শেখানো এসআরএল প্রচারের জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। শিক্ষকরা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের পরিকল্পনাগুলো অন্বেষণ করতে পারেন। এরপরে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য পদক্ষেপ এবং পদ্ধতিগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে এবং কোনও প্রয়োজনীয় সামঞ্জস্য করতে পরিকল্পনাটি ব্যবহার করতে পারে। ''স্ব-অনুপ্রেরণা:'' কাজের পছন্দ সম্পর্কিত শিক্ষার্থীদের আচরণ, পাশাপাশি একাডেমিক কাজগুলোতে তাদের প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায় সরাসরি তাদের অন্তর্নিহিত প্রেরণার সাথে সম্পর্কিত। উচ্চ অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণাযুক্ত শিক্ষার্থীরা মেটাকগনিটিভ কৌশলগুলো ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি। অনুভূত স্বায়ত্তশাসন, অনুভূত দক্ষতা এবং টাস্ক মাস্টারি লক্ষ্য অভিযোজন বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বাড়ানো যেতে পারে। শেখার প্রক্রিয়াটির গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া, পছন্দ সরবরাহ করা এবং স্ব-দিকনির্দেশনার সুযোগের অনুমতি দেওয়া স্বায়ত্তশাসনের অনুভূতি বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ''মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ:'' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীদের অবশ্যই তাদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে এমন উদ্দীপনাগুলো সরিয়ে যা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের তাদের মনোযোগের স্প্যানগুলো তৈরি করতে সহায়তা করার জন্য ঘন ঘন বিরতি সরবরাহ করে। ''কৌশলগুলোর নমনীয় ব্যবহার:'' সফল শিক্ষার্থীরা কার্য জুড়ে একাধিক শেখার কৌশল বাস্তবায়ন করতে এবং তাদের অগ্রগতির সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় হিসাবে তাদের সামঞ্জস্য করতে সক্ষম হয়। নতুন কৌশলগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা মডেল করে, সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপগুলোকে সমর্থন করার জন্য শ্রেণিকক্ষকে সংগঠিত করে এবং শিক্ষার্থীদের অনুশীলন হিসাবে উপযুক্ত ভারা সরবরাহ করে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বাধীন কৌশল ব্যবহারকারী হতে সহায়তা করতে পারেন। ''স্ব-পর্যবেক্ষণ:'' কৌশলগত শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার এবং কৃতিত্বের ফলাফলের জন্য মালিকানা গ্রহণ করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার কাজগুলোতে কতবার কাজ করেছেন, তারা যে কৌশলগুলো ব্যবহার করেছেন এবং কাজ করতে তারা যে পরিমাণ সময় ব্যয় করেছেন তার রেকর্ড রেখে স্ব-পর্যবেক্ষণকে উত্সাহিত করতে পারেন। এই অনুশীলনটি শিক্ষার্থীদের তাদের অগ্রগতি কল্পনা করতে এবং প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করতে দেয়। ''সাহায্য প্রার্থনাঃ'' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা প্রয়োজনে প্রায়শই অন্যের কাছ থেকে সহায়তা চায়। মাস্টারি লক্ষ্য ওরিয়েন্টেশন সহ শ্রেণিকক্ষগুলো শিক্ষার্থীদের বিব্রত বোধ না করে সহায়তা চাইতে উত্সাহিত করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের চলমান অগ্রগতি প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করে এবং শিক্ষার্থীদের যথাযথ পরিবর্তন করার পরে অ্যাসাইনমেন্ট পুনরায় জমা দেওয়ার সুযোগ দিয়ে ইতিবাচক সহায়তা চাইতে আচরণগুলো প্রচার করতে পারেন। স্ব-মূল্যায়ন: শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার লক্ষ্য এবং কৌশল ব্যবহার নিরীক্ষণ করতে এবং শেখার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সেই লক্ষ্য এবং কৌশলগুলোতে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে স্ব-মূল্যায়ন প্রচার করতে পারেন। স্ব-মূল্যায়ন ক্রিয়াকলাপগুলোর মধ্যে চেকলিস্ট ব্যবহার করা, শেখার সামগ্রীর সংক্ষিপ্তসার, স্ব-প্রশ্নগুলোর বিকাশ এবং প্রতিক্রিয়া জানানো এবং সমবয়সীদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া চাওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে  চিত্র। এসআরএল সম্পর্কিত মৌলিক ধারণা এবং সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াগুলো দেখায়। === শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে উত্সাহিত করার জন্য নির্দেশমূলক কৌশল''' শিক্ষকদের শিক্ষামূলক কৌশলগুলো শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের প্রচার করতে পারে। কোবায়াশি (২০০৬) নির্দেশনায় এসআরএল এম্বেড করার জন্য প্রশিক্ষকদের জন্য চারটি নীতি বর্ণনা করেছেন: শিক্ষার্থীদের একটি কার্যকর শিক্ষার পরিবেশ প্রস্তুত এবং গঠনের জন্য গাইড করুন। জ্ঞানীয় এবং মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়াগুলো সহজতর করার জন্য নির্দেশনা এবং ক্রিয়াকলাপগুলো সংগঠিত করুন। শিক্ষার্থী পর্যবেক্ষণের সুযোগগুলো উপস্থাপন করতে নির্দেশমূলক লক্ষ্য এবং প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করুন। এবং শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত মূল্যায়নের তথ্য এবং স্ব-মূল্যায়নের উপলক্ষ সরবরাহ করুন। * সরাসরি নির্দেশনা এবং মডেলিং বিভিন্ন শেখার কৌশলগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া শিক্ষার্থীদের শেখার মাধ্যমে কাজ করার সময় তারা যে সরঞ্জামগুলো থেকে আঁকতে পারে তার একটি স্যুট বিকাশ করতে সহায়তা করে। এসআরএল-এর সরাসরি নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন কৌশল স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি সেই কৌশলগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা জড়িত। এই ধরনের নির্দেশনা মডেলিং এবং বিক্ষোভের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। শিক্ষার্থীদের আরও স্ব-নিয়ন্ত্রক হতে উত্সাহিত করার জন্য এটি সর্বোত্তম প্রাথমিক কৌশল হতে পারে। শিক্ষকরা একটি কৌশল প্রয়োগ এবং চিন্তার প্রক্রিয়াগুলোকে মৌখিক করার ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসাবে কাজ করতে পারেন, বা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে শিক্ষার্থীদের কৌশলগত আচরণে জড়িত হতে সক্ষম করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভাষা ক্লাসে শিক্ষকরা স্ক্রিনে একটি পাঠ্য দেখাতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের এটি পড়ার সাথে সাথে এটি সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা বলতে পারেন, প্রশ্ন এবং মন্তব্যগুলোর জন্য বিরতি দিতে পারেন, যেমন: "এটি কি বোধগম্য? এখানে মূল আইডিয়াটা কী? আমি মনে করি আমাকে এই অনুচ্ছেদের শুরুতে ফিরে যেতে হবে পুনরায় পড়ার জন্য যাতে আমি নিশ্চিত যে আমি বুঝতে পারি। একইভাবে, শিক্ষকরা বোর্ডে লেখার সময় উচ্চস্বরে চিন্তা করে লেখার প্রক্রিয়াটি মডেল করতে পারেন। আত্ম-প্রশ্ন এবং মন্তব্যগুলো হতে পারে: "আমি কি আমার ধারণাগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছি? পাঠক কি বুঝতে পেরেছেন আমি কী বলতে চাইছি? আমি কি আমার পরিকল্পনা বা রূপরেখা অনুসরণ করছি? যদি তা না হয়, তবে আমার কি নতুন পরিকল্পনা করা দরকার?" পড়া বা লেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন, শিক্ষার্থীরা মূল ধারণা, শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন এবং তাদের ব্যক্তিগত মতামত বোঝার জন্য তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো রেকর্ড করে নোট তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, শিক্ষকরা স্পষ্টভাবে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট কার্যকলাপ সম্পর্কে বলতে পারেন, কীভাবে এই কৌশলটি শেখার কর্মক্ষমতা উন্নত করে এবং শিক্ষার্থীদের কীভাবে এই কৌশলটি নিয়োগ, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন করতে হয় তা বলে [। প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষে, শিক্ষকরা "আপনি কী ভাবেন?" এর মতো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে শিক্ষার্থীদের তাদের ধারণাগুলো ভাগ করে নিতে উত্সাহিত করতে সংলাপ ব্যবহার করতে পারেন। "কেন এমন ভাবছ তুমি?" তারা সহযোগী দক্ষতা এবং যোগাযোগমূলক আচরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও সরবরাহ করতে পারে যা ভাগ করে নেওয়া অর্থ তৈরিকে সমর্থন করে * নির্দেশিত এবং স্বাধীন অনুশীলন গাইডেড অনুশীলন হলো শিক্ষকরা এসআরএল এবং অনুপ্রেরণা উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে এমন আরেকটি উপায়। নির্দেশিত অনুশীলনের সময়, শেখার কৌশল বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে স্থানান্তরিত হয়। ছাত্র-শিক্ষক সম্মেলন একমুখী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তাদের কৌশল ব্যবহার এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করতে পারে। স্বাধীন অনুশীলন নির্দেশিত অনুশীলন অনুসরণ করা উচিত। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব কৌশল অনুশীলন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এটি শেষ পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসনকে শক্তিশালী করতে পারে। শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের স্ব-প্রতিফলিত অনুশীলনের সুযোগ সরবরাহ করা উচিত যা শেখার প্রক্রিয়া চলাকালীন তাদের কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সামঞ্জস্য করার জন্য তাদের দক্ষতা উন্নত করে।  কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্ত-সমাপ্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা, শিক্ষার্থীদের প্রতিচ্ছবি সরবরাহ করা, শেখার সামগ্রীর মূল পয়েন্টগুলোর সংক্ষিপ্তসার করা এবং তাদের প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা এবং উত্তর দেওয়ার সুযোগ সরবরাহ করা।  উদাহরণস্বরূপ, এসআরএল এবং ভাষা ক্লাসে পড়ার কৃতিত্ব বাড়ানোর জন্য, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়া বইয়ের শিরোনাম রেকর্ড করতে, পঠন লগে পড়া মিনিট এবং পৃষ্ঠাগুলো রেকর্ড এবং গ্রাফ করতে, বই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জের স্তর পদ্ধতিগতভাবে বাড়ানোর জন্য মাইলফলক সেট করতে এবং পড়ার লগে সাপ্তাহিক প্রতিচ্ছবি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের চলমান ভিত্তিতে বিভিন্ন শেখার কাজে কার্যকর কৌশল অনুশীলন করতে উত্সাহিত করা। এটি কৌশলটির সাধারণীকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ উভয়ই প্রচার করতে সহায়তা করে, শিক্ষার্থীদের কৌশলগুলোর ব্যবহারের মহড়া দেয়, তাদের কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণ ও মূল্যায়নের উপায়গুলো বিকাশ করে এবং নতুন কৌশলগুলোর সংশোধন ও নির্মাণে সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের জড়িত করে। * সামাজিক সমর্থন এবং প্রতিক্রিয়া শিক্ষক এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে সামাজিক সমর্থন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে কারণ শিক্ষার্থীরা আরও স্ব-নিয়ন্ত্রক হতে শিখছে। প্রায়শই, সামাজিক সমর্থন প্রতিক্রিয়া আকারে আসে। লাবুন এট আল। (২০১০) গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে যে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল তারা তাদের গণিতের স্কোর উন্নত করতে এসআরএল কৌশলগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি ছিল। কার্যকর প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শিক্ষার্থীরা কী ভাল করেছে, তাদের কী উন্নতি করতে হবে এবং তাদের কাজের উন্নতি করতে তারা কী পদক্ষেপ নিতে পারে সে সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে এবং লক্ষ্য, মানদণ্ড এবং মানগুলোর অভ্যন্তরীণ নির্মাণের মূল্যায়ন করতে সহায়তা করে।  শিক্ষকদের গঠনমূলক মূল্যায়ন সরবরাহ করা উচিত যা কেবল শিক্ষার্থীরা কীভাবে করছে তা দেখায় না, তবে কীভাবে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে হয় এবং তাদের নিজস্ব অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হয় তা শিখতে সহায়তা করে।  নিকোল এবং ম্যাকফারলেন-ডিকের (২০০৬) অনুসারে[, কার্যকর প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত: ভাল পারফরম্যান্স কী তা স্পষ্ট করুন। শিখনে স্ব-মূল্যায়নের বিকাশকে সহজতর করা। শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার বিষয়ে উচ্চ মানের তথ্য প্রদান। শেখার চারপাশে শিক্ষক এবং সহকর্মীদের কথোপকথনকে উত্সাহিত করা। ইতিবাচক অনুপ্রেরণামূলক বিশ্বাস এবং আত্ম-সম্মানকে উত্সাহিত করুন। বর্তমান এবং পছন্দসই পারফরম্যান্সের মধ্যে ব্যবধান বন্ধ করার সুযোগ প্রদান। এবং শিক্ষকদের এমন তথ্য সরবরাহ করুন যা শিক্ষাদান গঠনে সহায়তা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। শিক্ষকরা কার্যকর স্ব-মূল্যায়নের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যা শিক্ষার্থীদের সাফল্য এবং অনুপ্রেরণার বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে সংযুক্ত একটি মেটাকগনিটিভ দক্ষতা।  এসআরএল প্রচারের জন্য, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ইনপুট, মডেলিং এবং লক্ষ্যগুলোর জন্য অ্যাকাউন্টিংয়ের সাথে নির্ধারিত পরিমাপযোগ্য এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্যগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং শিক্ষার্থীদের স্তরের সাথে মেলে প্রশ্নগুলো সামঞ্জস্য ও পার্থক্য করে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের জড়িত করতে পারেন।  শিখন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা একটি ইতিবাচক শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। উচ্চশিক্ষায়, এসআরএলকে সহজতর করার একটি কার্যকর উপায় হলো কোর্সের ওয়েবসাইটে একটি ইন্টারেক্টিভ ফোরাম স্থাপন করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা কোর্সের উপাদান নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার উন্নতি হয়। * অন্যান্য শিক্ষামূলক কৌশল স্ব-পর্যবেক্ষণমূলক কৌশল এসআরএলে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি সরঞ্জাম। স্ব-রেকর্ডিং তাদের করা ত্রুটিগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যাতে উপযুক্ত কৌশলগুলো বিকাশ ও প্রয়োগ করা যায়। গ্রাফিং একটি সহায়ক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের শেখার উপর নিয়ন্ত্রণের বিশ্বাস বিকাশে সহায়তা করে। একটি উদাহরণ হলো গ্রেডগুলো প্লট করা এবং ব্যবহৃত কৌশলগুলো এবং পারফরম্যান্স ফলাফলগুলোর মধ্যে লিঙ্কটি হাইলাইট করার জন্য এই গ্রেডগুলো অর্জনের জন্য ব্যবহৃত শেখার কৌশলগুলো লিখে রাখা। শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের জন্য শিক্ষাগত শৈলীগুলো খাপ খাইয়ে নিতে এবং সংশোধন করার জন্য প্রতিফলিত অনুশীলন শিক্ষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর সরঞ্জাম। এই অনুশীলনটি শিক্ষকদের সম্ভাব্য কারণগুলো তদন্ত করতে সক্ষম করে যা প্রদত্ত নির্দেশমূলক কৌশলটির কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে। চিন্তাশীল প্রতিফলন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থবহ শিক্ষার অভিজ্ঞতা আরও ভালভাবে তৈরি করতে পারেন। '''শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সুবিধার্থে''' এসআরএলকে উত্সাহিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো একটি সহায়ক শিক্ষার পরিবেশের ব্যবস্থা করা। এটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য, শেখার বিষয়বস্তু এবং কার্য এবং শিক্ষণ পদ্ধতি দিয়ে তৈরি। উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের স্ব-নির্ধারিত উপায়ে শিখতে সক্ষম এবং উত্সাহিত করতে পারে ইয়ং (২০০৫)  শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে এবং শ্রেণিকক্ষে এসআরএলকে উত্সাহিত করার জন্য নিম্নলিখিত নির্দেশিকাগুলো বর্ণনা করেছে, অর্থাত্, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে যা দক্ষতা এবং কার্য দক্ষতা অভিযোজনের বিকাশকে সমর্থন করে, স্ব-সংকল্প এবং স্বায়ত্তশাসনের বিকাশকে সমর্থন করার জন্য ক্রিয়াকলাপের পছন্দ সরবরাহ করে, শেখার ক্ষেত্রে সামাজিক সংযোগগুলোকে উত্সাহিত করে এবং অনুপ্রেরণা প্রচারের জন্য শেখার পারফরম্যান্সের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করে। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা শ্রেণিকক্ষে অনুভূত শিক্ষার্থী নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হতে পারে। উচ্চ টাস্ক স্বায়ত্তশাসন সহ একটি শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, একটি তথ্যমূলক শৈলীতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সহ, সর্বাধিক অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বৃদ্ধি করবে। শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করা উচিত। শিক্ষকরা যখন ঘন ঘন নির্দিষ্ট এবং গুণগত প্রতিক্রিয়া সরবরাহ করেন এবং গ্রেডের গুরুত্বকে গুরুত্ব দেন তখন শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো গ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অর্থপূর্ণ ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়া, কাজের পছন্দ থাকা এবং সমবায়ভাবে কাজ করা শিক্ষার্থীদের স্ব-কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে শিক্ষকদের উদারতা এবং স্বতন্ত্র মতামতের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি প্রচার করা উচিত, যেমন ইতিবাচক এবং সহায়ক শিক্ষার পরিবেশের বিকাশের মাধ্যমে সহায়তা চাওয়া, সহায়তা দেওয়া এবং বিভিন্ন মতামতের আলোচনার প্রচার করা। এর মধ্যে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর প্রতি ইতিবাচক অনুভূতিকে উত্সাহিত করা, ভুলগুলো শেখার সুযোগ হিসাবে বোঝা, শেখার অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্ত নেতিবাচক আবেগগুলো স্বীকার করা এবং প্রতিক্রিয়া জানানো এবং শিক্ষার্থীদের অসহায় বিশ্বাসকে পুনরায় প্রশিক্ষণে সহায়তা করা জড়িত। '''শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের উত্সাহ দেওয়ার ক্রিয়াকলাপ''' বিভিন্ন ধরণের ক্রিয়াকলাপ রয়েছে যা এসআরএলকে উন্নীত করতে পারে। জটিল সহযোগী ক্রিয়াকলাপগুলো শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব কর্মক্ষমতা এবং অন্যের কার্য-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপগুলোর পর্যবেক্ষণকে উত্সাহ দেয়। এটি শিক্ষার্থীদের কর্মের পরিকল্পনা করতে, ধারণাগুলো তৈরি করতে, লক্ষ্যগুলোর বিরুদ্ধে অগ্রগতি পরীক্ষা করতে এবং গোষ্ঠীর অবদানের ভিত্তিতে বোঝার সংস্কার করতে সহায়তা করে। অর্থবহ কাজগুলো (যেমন, কাজগুলো শিক্ষার্থীদের অতীত অভিজ্ঞতা, তাদের আগ্রহের সাথে সম্পর্কিত এবং তাদের শেখার জন্য বাস্তব প্রভাব রয়েছে) অনুপ্রেরণা প্রচার করতে পারে এবং এসআরএলকে উত্সাহিত করতে পারে। প্রক্সিমাল বিকাশের পৃথক অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করে জ্ঞানীয় চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করে এমন ক্রিয়াকলাপগুলো এসআরএলের সাথেও যুক্ত। বহুমাত্রিক কাজগুলো শিক্ষার্থীকে চ্যালেঞ্জের আরামদায়ক স্তরগুলো খুঁজে পেতে দেয়। কৌতুকপূর্ণ ক্রিয়াকলাপগুলো প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য আকর্ষক সুযোগ সরবরাহ করতে পারে। প্যারিস এট আল (২০০১) চার ধরণের নীতি বর্ণনা করেছেন যা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এসআরএল প্রচারের জন্য শ্রেণিকক্ষে ক্রিয়াকলাপ ডিজাইন করতে ব্যবহার করতে পারেন, যার মধ্যে স্ব-মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা শেখার গভীর বোঝার দিকে পরিচালিত করে। চিন্তাভাবনা, প্রচেষ্টা এবং প্রভাবের স্ব-ব্যবস্থাপনা যা সমস্যা সমাধানের জন্য নমনীয় পদ্ধতির প্রচার করে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ যা বিভিন্ন উপায়ে শেখানো যেতে পারে। এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণ যা প্রতিটি ব্যক্তির আখ্যান অভিজ্ঞতা এবং পরিচয় প্রচেষ্টায় বোনা হয়। শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থী হয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জোড়া-কাজ এবং গ্রুপ-ওয়ার্কে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার এবং তারা যা শিখেছে তা স্থানান্তর করার সুযোগ তৈরি করতে পারেন। উদ্দেশ্য এবং শেখার কৌশল সম্পর্কে উন্মুক্ত শ্রেণীর আলোচনার আয়োজন করুন। উদ্দেশ্যগুলো প্রতিষ্ঠা এবং ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রাক-শিখন কার্যক্রম সরবরাহ করুন এবং কৌশল ব্যবহার এবং জ্ঞান অর্জনকে আরও সুসংহত করার জন্য পোস্ট-লার্নিং কার্যক্রম সরবরাহ করুন। এবং শিক্ষার্থীরা যা শিখেছে সে সম্পর্কে প্রতিফলিত করার জন্য ক্লাস শেষে প্রতিচ্ছবি মুহুর্ত তৈরি করুন।  শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের তাদের অনুপ্রেরণা, বিশ্বাস এবং শেখার কৌশল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে শেখার প্রশ্নাবলী (এমএসএলকিউ) বা লার্নিং অ্যান্ড স্টাডি স্ট্র্যাটেজিস ইনভেন্টরি (এলএএসএসআই) এর মতো প্রশ্নাবলীও ব্যবহার করতে পারেন। এসআরএলকে সহজতর করার জন্য শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন এমন নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপগুলোর কয়েকটি উদাহরণ নীচে দেওয়া হল: "থিংক-পেয়ার-শেয়ার" ক্রিয়াকলাপটি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নগুলো প্রতিফলিত করতে, অংশীদারের সাথে প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে আলোচনা করতে এবং পুরো ক্লাসের সাথে চিন্তাভাবনা ভাগ করে নেওয়ার অনুমতি দেয়। "পুনরুদ্ধার অনুশীলন" স্ব-পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে এবং অর্থপূর্ণ, ধারণাগত এবং দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষার প্রচার করে। "বাছাই-চাঙ্কিং-সংগঠিত তথ্য" ক্রিয়াকলাপ শিক্ষার্থীদের তথ্য থেকে বোঝার জন্য ধারণা এবং পরিভাষা সংগঠিত করতে সহায়তা করে। "রিডিং রিফ্লেকশনস" শিক্ষার্থীদের স্ব-পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিফলিত চিন্তাভাবনায় সহায়তা করতে পারে। "পরীক্ষার মোড়ক" কার্যকলাপ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলো বিবেচনা করে এবং কার্যকারিতা প্রতিফলিত করে। = শব্দকোষ = '''অ্যাকশন কন্ট্রোল:''' ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা (উদাঃ অনুপ্রেরণা, ঘনত্ব) যা কোনও ব্যক্তিকে স্ব-নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। '''কগনিটিভ মডেলিং:''' শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা বিকাশের পদ্ধতি যার মধ্যে পারফরম্যান্সের জন্য যুক্তি দেওয়া, কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা জড়িত। '''কগনিটিভ প্রসেসিং:''' একটি শব্দ যা চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞান প্রয়োগ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। '''সহযোগী শিক্ষা''': সহকর্মী / গোষ্ঠীর মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং শেখা। '''ক্রিটিক্যাল থিংকিং:''' তথ্য ওজন, মূল্যায়ন এবং বোঝার সমন্বয়ে একটি প্রতিফলিত চিন্তাভাবনা। '''পূর্বচিন্তা পর্ব:''' শেখার আগে কৌশল নিচ্ছে। স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। '''মেটাকগনিশন:''' ভাবনা নিয়ে ভাবনা। নিজের চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝাপড়া। '''মেটাকগনিটিভ নলেজ:''' ঘোষণামূলক জ্ঞান যেমন ভাষা এবং স্মৃতি। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' কোনও কাজ জুড়ে আসা এবং এর সাথে সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়া করার সময় ব্যক্তিটি কী সচেতন এবং সে কী অনুভব করে। '''মেটাকগনিটিভ দক্ষতা:''' জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগুলোর ইচ্ছাকৃত ব্যবহার (অর্থাত্ পদ্ধতিগত জ্ঞান)। '''অনুপ্রেরণা:'''আচরণ এবং চিন্তাভাবনা যা ব্যক্তিদের সম্পাদন করতে চালিত করে। '''পারফরম্যান্স পর্ব:''' শেখার সময় কৌশল গ্রহণ করা হয়। কৌশল বাস্তবায়ন, এবং কৌশল পর্যবেক্ষণ। '''এনগেজমেন্টের উদ্দেশ্য:'''স্ব-প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ক্রিয়াগুলো যা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক। '''আপেক্ষিকতাবাদী:''' জ্ঞান নমনীয় এবং পরিবর্তনযোগ্য। প্রশ্ন তোলা যায়। '''স্ব-কার্যকারিতা:''' ব্যক্তি কীভাবে নিজের ক্ষমতা এবং অনুভূত ক্ষমতা থেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাসের স্তরটি উপলব্ধি করে '''আত্ম-মূল্যায়ন:''' একটি মান অনুযায়ী নিজেকে মূল্যায়ন করা '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত কর্ম:''' যে উপায়ে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হয়। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন:'''কারও শেখার সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্টভাবে বোঝার ক্ষমতা। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত পর্ব:''' শেখার পর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। মূল্যায়ন। c86tsq2iw4aj2dnr4uqq7i47sp52zzb 84854 84850 2025-06-18T19:14:56Z NusJaS 8394 /* লেখায় মেটাকগনিশন */ 84854 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের (Self-Regulated Learning - SRL) মৌলিক ধারণাগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। আমরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করেছি। এখানে মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের তাত্ত্বিক ভিত্তি আলোচনা করার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এসব মৌলিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া অ্যাকাডেমিক পরিবেশে শেখার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সহজতর করতে কীভাবে সহায়তা করা যায়। এই অধ্যায়টি পড়ার পর আপনি শিখবেন: * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ধারণা এবং প্রধান মডেলসমূহ। * মেটাকগনিশনের ধারণা এবং কীভাবে এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পুনর্গঠন ও শেখার কৌশল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ও মেটাকগনিশনের উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদানসমূহ। * শেখার বিশ্লেষণ কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। * প্রযুক্তি কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সহজ করে তোলে। * স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিকাশের চারটি ধাপ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের চারটি ধরন। * কীভাবে শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উদ্দীপিত ও উৎসাহিত করা যায়। == ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়ন == [[চিত্র:SRL_Chapter_Map.jpg|থাম্ব|783x783পিক্সেল|চিত্র ১. মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] [[চিত্র:Section_1_Defining_the_Concepts_.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ২. ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়িত করা]] == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সংজ্ঞা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বলতে বোঝায় যে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).">Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.). Boston, MA: Pearson</ref>; এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ কৌশল ব্যবহার করে তাদের জ্ঞান, আচরণ ও প্রেষণা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। <ref name="Zimmerman2002">Zimmerman, B. J. (2002). Becoming a self-regulated learner: an overview. Theory Into Practice.41(2):64–70. doi:10.1207/s15430421tip4102\2.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে, শেখার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে এবং নিজেদের উৎসাহিত করতে পারে <ref name="Purdie, N., & Hattie, J. (1996).">Purdie, N., & Hattie, J. (1996). Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning. American Educational Research Journal 33.(4): 845–871.</ref>। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার পারফরম্যান্স ও আচরণকে আরও সক্রিয় ও দক্ষ করে তুলতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা নিজেদের বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে শেখার কৌশল পরিবর্তন ও উন্নয়ন করতে পারে <ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''">García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014). The effects of question-generation training on metacognitive knowledge, self regulation and learning approaches in Science. Psicothema, 26(3), 385-390.</ref> এবং গঠনমূলক কার্যকলাপ, সহযোগিতামূলক কাজ ও মুক্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের শেখাকে মূল্যায়ন করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রেষণামূলকভাবে সক্রিয় পদ্ধতি। উইন ও বেকার (২০১৩, পৃষ্ঠা ৩)-এর মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হচ্ছে "মেটাকগনিটিভভাবে পরিচালিত প্রেষণার আচরণগত প্রকাশ" <ref name="Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013).">Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013). The potentials of educational data mining for researching metacognition, motivation and self-regulated learning. Journal of Educational Data Mining, 5(1).</ref>। এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা, আচরণ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা শেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সফলভাবে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).">Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011). Encouraging self-regulated learning in the classroom: A review of the literature. Metropolitan Educational Research Consortium (MERC).</ref>। জিমারম্যান (২০০২) এর মতে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও আচরণগত কার্যকলাপ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: পূর্বচিন্তা পর্যায়, কার্যকরন পর্যায় এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে (স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ, কৌশলগত পরিকল্পনা) শেখার কাজ বিশ্লেষণ ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় <ref name="Zimmerman2002" />। কার্যকরন পর্যায়ে কৌশল প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ ঘটে এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়ে শেখার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয় <ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).">Furnes, B., & Norman, E. (2015). Metacognition and reading: Comparing three forms of metacognition in normally developing readers and readers with dyslexia. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 21(3), 273-284</ref>। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া আরও গভীরভাবে বুঝতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বৃহৎ কাঠামো পরবর্তী অংশে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। == মেটাকগনিশনের সংজ্ঞা == মেটাকগনিশন হলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের একটি মূল উপাদান। এটি জ্ঞানীয় চিন্তা এবং চিন্তার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত। মেটাকগনিটিভ সক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতে পারে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। এই অংশে আমরা মেটাকগনিশনের সংজ্ঞার বিবর্তন বিশ্লেষণ করবো। ১৯৭৯ সালে ফ্ল্যাভেল প্রথম মেটাকগনিশনের ধারণা উপস্থাপন করেন তার গবেষণায় <ref name="Flavell, J. H. (1979).">Flavell, J. H. (1979). Metacognition and cognitive monitoring: A new area of cognitive–developmental inquiry. American Psychologist, 34(10), 906-911.</ref>। এটি শেখার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন পাঠ পড়া, লেখা, পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন। মেটাকগনিশনের দুটি মৌলিক কার্যাবলি হলো: জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ <ref name="Efklides, A. (2008).">Efklides, A. (2008). Metacognition: Defining its facets and levels of functioning in relation to self-regulation and co-regulation. European Psychologist, 13(4), 277-287.</ref>। ১৯৮০ সালে অ্যান ব্রাউন মেটাকগনিশনের একটি সংজ্ঞা দেন যা প্রথমবার “regulation” (নিয়ন্ত্রণ) শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। সাম্প্রতিক গবেষণায় মেটাকগনিশনকে তিনটি উপাদানে বিভক্ত করা হয়েছে <ref name="Efklides, A. (2008)." />: '''মেটাকগনিটিভ জ্ঞান''' (বা মেটাকগনিটিভ সচেতনতা): শিক্ষার্থীদের নিজেদের সম্পর্কে, কাজ, কৌশল, লক্ষ্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানার সক্ষমতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি তিন প্রকারের হতে পারে: ঘোষণামূলক জ্ঞান, পদ্ধতিগত জ্ঞান এবং শর্তাধীন জ্ঞান <ref name="Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987).''">Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987). Children's metacognition about reading: Issues in definition, measurement, and instruction.Educational Psychologist 22: 225–278.</ref>। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' শিক্ষার্থী যখন কোনও কাজের মুখোমুখি হয় এবং তার তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে, তখন সে কী অনুভব করে ও কীভাবে উপলব্ধি করে—তা হলো মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শেখার লক্ষ্য সংশোধনে সহায়তা করে। '''মেটাকগনিটিভ কৌশল/দক্ষতা:''' এগুলো হলো জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলের সচেতন ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে: দিকনির্দেশনা কৌশল, পরিকল্পনা কৌশল, জ্ঞান প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল, পরিকল্পিত কাজ সম্পাদনের পর্যবেক্ষণ কৌশল এবং ফলাফল মূল্যায়নের কৌশল <ref name="Efklides, A. (2008)." />। নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল দক্ষতা হলো পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন <ref name="Schraw, G. (1998).">Schraw, G. (1998). Promoting general metacognitive awareness. Instructional Science 26: 113–125.doi:10.1023/A:1003044231033.</ref>। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান হলো জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণের জন্য, আর মেটাকগনিটিভ দক্ষতা হলো নিয়ন্ত্রণের জন্য। মেটাকগনিশনের সংজ্ঞাগুলো এটিকে “বহুমাত্রিক”, “সচেতন প্রক্রিয়া” এবং “ব্যক্তিকেন্দ্রিক” হিসেবে তুলে ধরে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় মেটাকগনিশন নিয়ে গবেষণা করতে হলে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন <ref name="Efklides, A. (2008)." />। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম তৈরি হয়েছে। এটি মেটাকগনিশনের এই তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন, কিছু হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যাতে তারা নিজেদের জ্ঞানীয় শেখা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই কার্যক্রমগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত মেটাকগনিটিভ জ্ঞান ও প্রক্রিয়া জোর দিয়ে থাকে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মূল্যায়ন ও মেটাকগনিশনের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে <ref name="Efklides, A. (2008)." />। == অন্যান্য সম্পর্কিত ধারণা == === শিক্ষার বিচার === মেটাকগনিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ধারণা হলো শিক্ষার বিচার বা জাজমেন্ট অফ লার্নিং (JOLs)। শিক্ষার্থীরা কতটা ভালোভাবে কোনো তথ্য শিখেছে তা নিয়ে তাদের নিজেদের মূল্যায়নই শিক্ষার বিচার<ref name="Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005).">Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005). Judgments of learning: Evidence for a two-stage process. Memory & Cognition, 33(6), 1116-1129.</ref>। নেলসন ও ডানলস্কি (১৯৯১) বলেছেন, JOLs শেখার প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। শিখনের পর কিছুটা সময় অপেক্ষা করে মূল্যায়ন করলে এটি আরও নির্ভুল হয়, একে বলা হয় “বিলম্বিত-JOL প্রভাব” <ref name="Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991).">Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991). When People’s Judgments of Learning (JOLs) Are Extremely Accurate at Predicting Subsequent Recall: The “Delayed-JOL Effect”. Psychological Science, 2(4), 267–270. .</ref>। জানার অনুভূতি্র বিচার হলো, শিক্ষার্থী কোনও প্রশ্ন বা উত্তর কতটা বুঝে বা জানে তার পূর্বানুমান। <ref name="Bembenutty, H. (2009).">Bembenutty, H. (2009). Feeling-of-Knowing Judgment and Self-Regulation of Learning. Education, 129(4), 589-598.</ref>। এটি জাজমেন্ট অফ লার্নিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। উভয়েই স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার মাধ্যমে সংযুক্ত করে। এই অধ্যায়ে পরবর্তী অংশে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার ধারণা আলোচনা করা হবে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া বোঝায় নিয়ন্ত্রণ কীভাবে পরিচালিত হয়। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো—বস্তু এবং ক্রিয়া। বস্তু হলো শিক্ষার্থীর শেখার লক্ষ্য এবং ক্রিয়া হলো সেই লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতি। এই ক্রিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে: জ্ঞান, আবেগ, প্রেষণা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক পরিবেশে পরিবর্তন <ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).">Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014). Development of metacognitive knowledge of reading strategies and attitudes toward reading in early adolescence: The effect on reading comprehension. Psychological Topics, 23(1), 77–98.</ref>। উদাহরণস্বরূপ, প্রেষণার ক্রিয়া নির্ভর করে শিক্ষার্থীরা কবে এবং কীভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তার উপর। একইভাবে, আচরণগত পরিবর্তন ব্যক্তিগত শেখার দক্ষতা ও লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলে। === স্ব-মূল্যায়ন === স্ব-মূল্যায়ন মানুষকে তাদের দক্ষতা ও কৌশল সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। এটি এমন কৌশল বেছে নিতে উৎসাহিত করে, যেগুলো শেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এটি আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রথম পর্যায়ে ঘটে। স্ব-মূল্যায়ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের মোটিভেটেড থাকতে হয় এবং নতুন শেখার কৌশল গ্রহণের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকতে হয়। স্ব-মূল্যায়নের জন্য শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব অপরিহার্য।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016).">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016)। ট্রেস-ভিত্তিক মাইক্রো-বিশ্লেষণাত্মক পরিমাপ আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার। জার্নাল অফ লার্নিং অ্যানালিটিক্স, ৩(১), পৃ. ১৮৩-২২০।</ref> শেখার কৌশল সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি স্ব-মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে: আমার কী কী দক্ষতা আছে? আমার আগ্রহ কী? আমি কি ভিডিও দেখে ভালো শিখি, নাকি নোট লিখে? আমি কি লিখে নাকি টাইপ করে ভালো শিখি? আমি কি মুখস্থ করে ও ব্যাখ্যা করে শিখতে পারি?<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''2" /> [[চিত্র:Reflection.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৩। আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া]] === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হল আত্ম-প্রক্রিয়া, লক্ষ্য এবং সম্ভাব্য কর্মকাণ্ডের সমন্বয়। এটি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক হয়<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).2" />। প্রতিটি শিক্ষার্থীরই নিজের শেখার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ নির্দিষ্ট জ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ থেকে শেখে, আবার কেউ শেখে চাকরির প্রয়োজনে। এর ফলে, তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে চালিত করে বিভিন্ন ধরনের প্রেরণা। আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ মূলত পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এটি দেখায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যক্তিগত কার্যক্রম, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে: === স্ব-ব্যাখ্যা === স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার সহায়ক। বুচার<ref name="Butcher2006">Butcher, K. R. (2006)। লেখার সঙ্গে চিত্র ব্যবহার করে শেখা: মানসিক মডেল উন্নয়ন ও অনুমান তৈরিতে সহায়তা। ''জার্নাল অফ এডুকেশনাল সাইকোলজি, ৯৮''(১), ১৮২-১৯৭। DOI: 10.1037/0022-0663.98.1.182</ref> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যার ধারণাটি প্রথম ও তার সহকর্মীরা ১৯৯৭ সালে ব্যবহার করেন এবং এটি এমন একটি অর্থবহ মৌখিক বিবৃতি নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই তারা যা শিখছে তা ব্যাখ্যা করে। চাই<ref name="Chi2000">Chi, M. T. H. (2000)। ব্যাখ্যামূলক পাঠ্য স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শেখা: অনুমান তৈরি ও মানসিক মডেল সংশোধনের দ্বৈত প্রক্রিয়া। ''Advances in instructional psychology'' (pp. 161–238)। Mahwah, NJ: Lawrence Erlbaum।</ref> নিজে স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি জ্ঞানগত কার্যকলাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে কেউ নতুন কোনো বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখে, সাধারণত পাঠ্য বা অন্য কোনো মাধ্যমে। স্ব-ব্যাখ্যা এবং বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য হলো—স্ব-ব্যাখ্যার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর শেখা বিষয়টি অনুধাবন করা, শুধুমাত্র মুখস্থ নয়। এ দিক থেকে, স্ব-ব্যাখ্যা একটি আত্ম-নির্দেশিত জ্ঞান নির্মাণমূলক কার্যক্রম<ref name="Chi2000" />। স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ধারণাসমূহের মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ খুঁজে পায় (বিসরা, লিউ, সালিমি, নেসবিট ও উইন<ref name="Bisra2018">Bisra, K., Liu, Q., Salimi, F., Nesbit, J.C. & Winne, Ph, H. ''স্ব-ব্যাখ্যা প্ররোচিতকরণ: একটি মেটা-বিশ্লেষণ''। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, Simon Fraser University, Burnaby, BC।</ref>)। বিসরা প্রমুখের মতে, স্ব-ব্যাখ্যা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আত্ম-উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন তথ্য বোঝার জন্য করা হয়। যেহেতু এটি আত্ম-কেন্দ্রিক, তাই স্ব-ব্যাখ্যা চুপচাপ করা যায় বা উচ্চস্বরে বললেও তা মূলত শিক্ষার্থীর কাছেই বোধগম্য। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014">Wylie, R., & Chi, M. T. H. (2014)। মাল্টিমিডিয়া শেখায় স্ব-ব্যাখ্যার নীতি। In R. E. Mayer (Ed.), ''The Cambridge handbook of multimedia learning'' (2nd ed., pp. 413e432)। নিউ ইয়র্ক, NY: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।</ref> স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি গঠনমূলক ও প্রজন্মমূলক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন যা শেখার গভীরতা বাড়ায় এবং অন্যান্য জ্ঞানগত দক্ষতার মতো সময়ের সাথে উন্নত হয়। সাধারণভাবে, 'স্ব-ব্যাখ্যা' (SE) বলতে নিজেকে কিছু বোঝানোর উদ্দেশ্যে তৈরি মৌখিক বিবৃতি বোঝায়। অর্থাৎ, এটি সেই সকল বিষয়ভিত্তিক বিবৃতি যা একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যাংশ পড়ার পর তৈরি করে<ref name="Chi2000" />। == স্ব-ব্যাখ্যা বনাম নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা == স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার দিকে নিয়ে যায়। বিসরা ও তার সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কেবল সেই ব্যক্তি দ্বারা নয়, অন্যদের দ্বারাও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে, শেখা ঘটে স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নয়, বরং তার ফলাফলের মাধ্যমে—যেমন একজন শিক্ষক যে ব্যাখ্যা দেন, সেটি শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান সম্পর্কে জানেন না। হাউসম্যান এবং ভ্যানলেহন (বিসরা প্রমুখের উদ্ধৃতি অনুযায়ী<ref name="Bisra2018" />) এই ধরণের ফলাফল-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যাকে "কভারেজ হাইপোথিসিস" বলেন। তার মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কার্যকর হয় কারণ এটি "নির্দেশনামূলক উপকরণে অনুপস্থিত অতিরিক্ত বিষয়বস্তু তৈরি করে" (পৃ. ৩০৩)। তবে অধিকাংশ স্বীকৃত তত্ত্ব মতে, স্ব-ব্যাখ্যার উৎপাদিত ফলাফল একটি প্রজন্মমূলক জ্ঞানগত প্রক্রিয়া। এখানে কভারেজ হাইপোথিসিস এটিকে নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার সমতুল্য ফলাফল হিসেবে দেখে। যদি শিক্ষার্থী নিজে থেকে সঠিক স্ব-ব্যাখ্যা তৈরি করতে না পারে, তখন নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় (বিসরা প্রমুখ<ref name="Bisra2018" />)। ভ্যানলেন, জোন্স ও চাই<ref name="vanlehn1992">VanLehn, K., Jones, R. M., & Chi, M. T. (1992)। স্ব-ব্যাখ্যার প্রভাবের একটি মডেল। জার্নাল অফ দ্য লার্নিং সায়েন্সেস, ২(১), ১-৫৯। doi:10.1207/s15327809jls0201_1।</ref> স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতার তিনটি কারণ উল্লেখ করেন: প্রথমত, এটি একটি প্ররোচনামূলক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ঘাটতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, এটি সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া ও ধাপগুলিকে সাধারণীকরণে সহায়তা করে। তৃতীয়ত, এটি শিক্ষার্থীদের উপমার মাধ্যমে সমস্যার গভীর ব্যাখ্যা তৈরি করে। এছাড়া, ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের চিন্তায় অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করে মানসিক মডেলে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনে। এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ঘোষণামূলক জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়<ref name="Wylie,Chi2014" />। == নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার তুলনায় স্ব-ব্যাখ্যার সুবিধা == বিসরা ও সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> পরিচালিত মেটা-বিশ্লেষণ স্ব-ব্যাখ্যার পক্ষে এবং কভারেজ হাইপোথিসিস-এর বিপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে। এই গবেষণায় দেখা যায়, স্ব-ব্যাখ্যা (g=.29) নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর। লেখকরা এই কার্যকারিতাকে ব্যাখ্যা করেন শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান এবং নতুন জ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল হিসেবে। এটি অর্থপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। যখন পূর্বজ্ঞান ও নতুন তথ্যের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন শিক্ষার্থীর জ্ঞানগত প্রক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং তৈরি হওয়া ব্যাখ্যাটি পরবর্তীতে মনে রাখা এবং যুক্তি প্রয়োগে সহায়তা করে<ref name="Bisra2018" />। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইঙ্গিত সহ স্ব-ব্যাখ্যা, নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়েও কার্যকর হতে পারে, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা সক্রিয় হয়—প্রশিক্ষণ, ভুল সংশোধন বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছাড়াই। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012">Ionas, I. G., Cernusca, D., & Collier, H. L. (2012)। পূর্বজ্ঞান কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে: বিজ্ঞানে সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত একটি অন্বেষণধর্মী গবেষণা। International Journal of Teaching and Learning in Higher Education, 24(3), 349-358।</ref> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষক, বই বা অন্যান্য উৎসের ব্যাখ্যার চেয়ে কার্যকর কারণ—১) এটি পূর্বজ্ঞান সক্রিয় করে, ফলে এটি জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে; ২) এটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব সমস্যাকে কেন্দ্র করে; এবং ৩) শিক্ষার্থী যখন ইচ্ছা তখন এটি ব্যবহার করতে পারে। == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশ, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যা == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশগুলো সাধারণত পাঠ্য, অ্যানিমেশন, চিত্র (যেমন: চিত্র, রেখাচিত্র), বিবরণী এবং ন্যারে‌শন একত্রে উপস্থাপন করে এবং কম্পিউটারভিত্তিক হয়<ref name="Wylie,Chi2014" />। মাল্টিমিডিয়ার সুবিধা হলো এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপস্থাপন পদ্ধতি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, রেখাচিত্র স্থানিক তথ্য বুঝতে সাহায্য করে এবং ন্যারেশন একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করে যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য অপেক্ষা বেশি কিছু শিখে। মাল্টিমিডিয়া থেকে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা মৌখিক ও অ-মৌখিক উভয় তথ্য এনকোড করতে পারে এবং প্রতিটি উৎস থেকে উপস্থাপিত তথ্য একত্রিত করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন<ref name="Wylie,Chi2014" />। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই ধরনের শেখা তখনই কার্যকর, যখন শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে তথ্য একত্রিত করার জ্ঞানগত প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, এই জ্ঞানগত অংশগ্রহণের একটি উপায় হলো স্ব-ব্যাখ্যা। বুচার<ref name="Butcher2006" /> একটি গবেষণায় দেখান, যেসব শিক্ষার্থী মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সময় স্ব-ব্যাখ্যা করেছে, তারা শুধুমাত্র পাঠ্য ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি শিখেছে। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012" /> পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বজ্ঞান থাকলে রসায়নের সমস্যা সমাধানে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা বাড়ে। গবেষণায় শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যার মিথস্ক্রিয়ার ফলে দুটি উপকার পাওয়া যায়: এক, যত বেশি তারা নিজেদের রসায়ন জ্ঞান প্রকাশ করেছে, তত বেশি কার্যকর ছিল স্ব-ব্যাখ্যা; দুই, স্ব-ব্যাখ্যাভিত্তিক কৌশল কার্যকর করতে হলে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট "থ্রেশহোল্ড" পরিমাণ পূর্বজ্ঞান থাকতে হয়। অর্থাৎ, পূর্বজ্ঞান কম থাকলে স্ব-ব্যাখ্যা তেমন ফলদায়ক নয়, বরং এটি শেখার কার্যকারিতা ব্যাহত করে<ref name="Ionas2012" />। যখন শিক্ষার্থীরা মনে করে তারা রসায়ন সম্পর্কে ভালো জানে, তখন তারা শক্তিশালী স্ব-ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু থ্রেশহোল্ডে না পৌঁছালে, তারা আলাদা আলাদা ধারণা জানলেও সেগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারে না<ref name="Ionas2012" />। অতএব, যখন শিক্ষার্থীরা স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিখতে চায়, তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে অনুরূপ ধারণা, শর্ত বা প্রক্রিয়াগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাতে তারা নতুন জ্ঞান গঠন করতে পারে এবং প্রদত্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীর যদি পূর্ব জ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তি না থাকে, তাহলে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে এগোয় না। এছাড়াও, Yeh, Chen, Hung, এবং Hwang<ref name="Yeh2010">Yeh, F., Y, Chen, C., M, Hung, H., P., & Hwang, J., G. (2010). Optimal self-explanation prompt design in dynamic multi-representational learning environments. Journal computers and education 54, 1089–1100.</ref> উল্লেখ করেছেন যে, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার পদ্ধতিতে পূর্ব জ্ঞানের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তারা বিভিন্ন স্তরের পূর্ব জ্ঞানের অধিকারী ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালান, যাতে বোঝা যায় গতিশীল মাল্টিমিডিয়া উপাদানের সঙ্গে শেখার সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা কীভাবে তাদের শেখাকে প্রভাবিত করে। তারা দুই ধরণের স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করেন এবং শেখার ফলাফল, মানসিক চাপ, শেখার সময়কাল এবং দক্ষতার মতো বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করেন। যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের কাজটি যুক্তিসংগতভাবে ব্যাখ্যা করতে বলেছে এবং পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করতে বলে, আর যদি অনুমান ভুল হয়, তাহলে তাদের ব্যাখ্যা করতে হয় কেন তা ভুল। ফলাফল দেখা যায়, যারা কম পূর্ব জ্ঞান নিয়ে এসেছিল, তারা যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকার পেয়েছে, আর যারা বেশি জ্ঞান রাখে, তারা পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকৃত হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে তাদের পর্যাপ্ত পূর্ব জ্ঞান থাকে এবং সেই নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে একটি যথাযথ পটভূমি গড়ে ওঠে, যাতে তারা নতুন তথ্য বুঝতে এবং স্ব-ব্যাখ্যা করতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন মাত্রার পূর্ব জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ভিন্নভাবে কাজ করে। অতএব, স্ব-ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব জ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাল্টিমিডিয়া পরিবেশে উচ্চতর জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অ্যানিমেশনের পরবর্তী দৃশ্য অনুমান করতে পছন্দ করে, যেখানে কম জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ঘটনার যুক্তি খুঁজতে বেশি আগ্রহী। == স্ব-ব্যাখ্যার শিক্ষণ পদ্ধতির প্রতিফলন == ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে যা শিক্ষাবিষয়ক পাঠ্যক্রম তৈরির সময় একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, যেখান থেকে স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হতে পারে। যদিও স্ব-ব্যাখ্যা শেখানোর এবং রিভিউ সেশনের সুবিধা প্রসারিত করতে ব্যবহৃত হয় বা ছোট ছোট ট্রান্সফার সমস্যার জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, তবুও শিক্ষকদের উচিত শেখার প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ না করা। অর্থাৎ, শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে স্ব-ব্যাখ্যা প্রয়োগ না করাই উত্তম। বরং, অন্য কৌশলগত পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। এটি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং তখন স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হয়<ref name="Ionas20122" />। লেখকরা উল্লেখ করেন, স্ব-ব্যাখ্যার একটি সুবিধা হলো—যখন শিক্ষার্থীরা একবার শিখে যায় কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করতে হয়, তখন তারা এটি অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে, কারণ এটি একটি বিষয়ে নিরপেক্ষ মানসিক কৌশল। তবে একটি অসুবিধাও রয়েছে, আর তা হলো—যখন শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ে, তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানও বাড়তে হয়, না হলে স্ব-ব্যাখ্যা ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে, যদি শিক্ষার্থীরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তারা স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা ঠিকভাবে অনুভব নাও করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। তাই ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" /> যুক্তি দেন, শিক্ষাদান পদ্ধতি তৈরি করার সময় শিক্ষকদের উচিত এমন ব্যবস্থা রাখা, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট জ্ঞানের স্তরে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্ব-ব্যাখ্যার প্রয়োগ না করে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার ফল অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করার আগে তাদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়ন করা জরুরি। এরপর এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষকেরা কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করাবেন, তা নির্ধারণ করবেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকরা নতুন সমস্যা সমাধানের আগে আরও নির্দিষ্ট নির্দেশনামূলক প্রশ্ন দিতে পারেন। যখন শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুটি বুঝে ফেলে, তখন সাধারণ অনুরোধের মাধ্যমে স্ব-ব্যাখ্যা আহ্বান করা যায়। শিক্ষকরা চাইলে শিক্ষার্থীদের এমন অনুরোধ নিজেরা ব্যবহার করতেও বলতে পারেন সমস্যা সমাধানের সময়। প্রকৃতপক্ষে, স্ব-ব্যাখ্যার দীর্ঘমেয়াদী উপকার হলো—শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এ কৌশল সক্রিয় করতে পারে এবং সমস্যার সমাধানের সময় এটি প্রয়োগ করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, আরও একটি কৌশল হলো—শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের যুক্তি উপস্থাপন কাঠামোর মাধ্যমে নিজেদের কাছে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করা। এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পূর্বনির্ধারিত অনুরোধ ব্যবহার করে এমনভাবে যুক্তি তৈরি করে যা সমস্যার সমাধান পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেয়। অর্থাৎ, এই কৌশলে পূর্বনির্ধারিত যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে<ref name="Ionas20122" />। তবে, স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করার কোনো সার্বজনীন নিয়ম নেই, কারণ এটি বিষয়-নির্ভর। নির্দেশনামূলক প্রশ্নগুলো কখনও সাধারণ, আবার কখনও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে এবং শিক্ষক বা শিক্ষকের দায়িত্ব এটি নির্ধারণ করা কোন অনুরোধ সবচেয়ে ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার আচরণে নিয়ে আসবে<ref name="Ionas20122" />। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যতে একটি কৌশল গ্রহণে সহায়তা করতে শিক্ষকদের উচিত যদি বিষয়টি অপরিচিত হয়, তাহলে সহজ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা এবং ধীরে ধীরে আরও নির্দিষ্ট প্রশ্নে অগ্রসর হওয়া<ref name="Ionas20122" />। == স্ব-ব্যাখ্যার বিভিন্ন ধরন == স্ব-ব্যাখ্যাকে যদি একটি ধারাবাহিক রেখায় রাখা হয়, তাহলে এক প্রান্তে থাকবে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ। এটি শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে নতুন তথ্যকে যুক্ত করতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের স্ব-ব্যাখ্যায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে এবং পূর্বনির্ধারিত ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কারণ এখানে শিক্ষার্থীদের চিন্তা মৌলিক এবং অন্য কারও প্রভাবিত নয়, তাই এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাখ্যা। ধারাবাহিক রেখার অন্য প্রান্তে থাকবে মেনু-ভিত্তিক ব্যাখ্যা অনুরোধ। এই ধরনের ব্যাখ্যায় একটি ব্যাখ্যার তালিকা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং সেখান থেকে বেছে নিতে বলা হয় ও নির্বাচনের যুক্তি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। অ্যাটকিনসন, রেনক্ল ও মেরিল<ref name="Atkinson2003">Atkinson, R. K.,Renkl , A. , & Merrill , M. M. (2003). Transitioning from studying examples to solving problems: Effects of self-explanation prompts and fading worked-out steps.''Journal of Educational Psychology, 95''(4), 774–783.</ref>–এর এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা মেনু থেকে বেছে নেওয়ার সময় স্ব-ব্যাখ্যা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে, তারা কাছাকাছি ও দূরবর্তী ট্রান্সফার পরিস্থিতিতে অন্যদের তুলনায় ভালো করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, মেনুর মাধ্যমে ব্যাখ্যার অনুরোধ শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হতে পারে। যেখানে উন্মুক্ত ও মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতি ধারাবাহিক রেখার দুই প্রান্তে অবস্থান করে, সেখানে ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড ও রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধ মাঝামাঝি থাকে। ফোকাসড ও উন্মুক্ত-প্রান্ত অনুরোধের মধ্যে দুটি মিল রয়েছে—উভয়ই জেনারেটিভ এবং শিক্ষার্থীর চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে না। তবে, ফোকাসড পদ্ধতিতে স্ব-ব্যাখ্যার বিষয়বস্তুর নির্দেশনা আরও স্পষ্ট থাকে। উন্মুক্ত অনুরোধে কেবল নতুন তথ্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, কিন্তু ফোকাসড অনুরোধে সরাসরি নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। স্ব-ব্যাখ্যা স্ক্যাফোল্ড আরও নির্দিষ্ট। স্ক্যাফোল্ড বা সহায়তাপূর্ণ স্ব-ব্যাখ্যা অনুরোধ ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে। এখানে শিক্ষার্থীদের ফাঁকা স্থান পূরণ করে ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ করতে হয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> ধারণা করেন, এই পদ্ধতি অভিজ্ঞতাহীন শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী, যাদের নিজে নিজে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যা গঠনের মতো যথেষ্ট পূর্ব জ্ঞান নেই। রিসোর্স-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যা মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতির মতো। এখানে শিক্ষার্থীদের একটি গ্লসারি থেকে বেছে নিয়ে সমস্যার সমাধানের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। তারা এই গ্লসারিকে একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতিটি ধাপের ব্যাখ্যাকে স্মরণ না করে চিনে নিতে পারে। ওয়াইলি ও চাই রিসোর্স-ভিত্তিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্লসারির বড় আকারকে তুলে ধরেন। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যার এই সকল ধরণ শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে এবং মানসিকভাবে জ্ঞান অর্জনে যুক্ত রাখে, পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে সেতুবন্ধন ঘটায় এবং মানসিক মডেল সংশোধন করে। গবেষণার ভিত্তিতে দেখা যায়, মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক কৌশল আরও উপকারী। গবেষণায় আরও জানা যায়, ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড এবং রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধগুলো যেগুলো শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে, সেগুলো আরও গভীর অনুধাবনে সহায়ক। ভ্যান ডের মেইজ প ডি জং<ref name="Vandermeij2011">Van der Meij , J. , & de Jong , T. (2011). The effects of directive self-explanation prompts to support active processing of multiple representations in a simulation-based learning environment. Journal of Computer Assisted Learning, 27(5), 411–423.</ref> দুটি সিমুলেশন-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের মডেল তৈরি করেন, যেখানে বহু রূপে উপস্থাপনাগুলো রয়েছে। এক মডেলে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত অনুরোধের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় এবং তাদের উত্তর ব্যাখ্যা বা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয়। অন্য মডেলে, আরও সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, তারা যেন ব্যাখ্যা করে কীভাবে প্রদত্ত দুটি উপস্থাপনা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, উভয় মডেলেই উন্নত পারফরম্যান্স দেখা যায়, তবে ফোকাসড স্ব-ব্যাখ্যা মডেল গ্রুপে শেখার উপকার বেশি হয়। ফলে মাল্টিমিডিয়া শেখার ক্ষেত্রে এই ফলাফল প্রমাণ করে, বিস্তৃত উন্মুক্ত অনুরোধের চেয়ে নির্দিষ্ট অনুরোধ ভালো কাজ করে। = স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেলসমূহ = [[চিত্র:Section_2_self_regulated_learning_model.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৪. স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেল]] == জিমারম্যানের চক্রাকারে SRL মডেল == জিমারম্যানের চক্রাকার SRL মডেল স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রক্রিয়াকে তিনটি আলাদা পর্যায়ে ভাগ করে: পূর্বচিন্তা পর্যায়, সম্পাদন পর্যায় এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে শেখার প্রচেষ্টা শুরুর আগে যে ধরণের প্রক্রিয়া ও বিশ্বাস তৈরি হয় তা অন্তর্ভুক্ত হয়; সম্পাদন পর্যায়ে শেখার বাস্তব প্রয়োগ চলাকালীন যা ঘটে; এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়ে প্রতিটি শেখার প্রচেষ্টার পর যা ঘটে তা বোঝানো হয়।<ref name="Zimmerman20022" /> === পূর্বচিন্তা পর্যায় === পূর্বচিন্তা পর্যায়ের দুটি প্রধান প্রক্রিয়া আছে: কাজ বিশ্লেষণ এবং আত্ম-প্রেরণা। কাজ বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশলগত পরিকল্পনা। আত্ম-প্রেরণা আসে শিক্ষার্থীর শেখা নিয়ে বিশ্বাস থেকে, যেমন—শেখার ব্যক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে আত্ম-দক্ষতা বিশ্বাস এবং শেখার ব্যক্তিগত ফলাফল নিয়ে প্রত্যাশা।<ref name="Zimmerman20022" /> '''লক্ষ্য নির্ধারণ''' বলতে বোঝানো হয় কী অর্জন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তা নির্ধারণ করা<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য শেখার প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক, কারণ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই জানাতে হবে চূড়ান্ত ফলাফলটি কেমন হওয়া উচিত। লক্ষ্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মোটিভেশন সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শেখার লক্ষ্য অর্জনে উদ্দীপিত করতে পারে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি যা বাস্তবে অর্জনযোগ্য। তাই লক্ষ্যগুলো খুব বেশি উচ্চ বা খুব নিচু হওয়া উচিত নয়; বরং এমন হওয়া উচিত যা বাস্তবতার মধ্যে পড়ে এবং অর্জনযোগ্য। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য আকাঙ্ক্ষা ও মোটিভেশন তৈরি করে কারণ সেগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যারা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যেমন বানান পরীক্ষার জন্য শব্দ তালিকা মুখস্থ করা, অথবা যেসব শিক্ষার্থী বানান শেখার জন্য শব্দকে ধ্বনি বা অক্ষরে ভাগ করার কৌশল প্রয়োগ করে, তাদের মধ্যে শিক্ষাগত সাফল্য বেশি দেখা যায়<ref name="Zimmerman20023" />। লক্ষ্য নির্ধারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কী অর্জন করতে চাই? কোন ধাপগুলো আমাকে লক্ষ্য পর্যন্ত নিয়ে যাবে? '''কৌশলগত পরিকল্পনা''' লক্ষ্য নির্ধারণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হয়। লক্ষ্য নির্ধারণের পর শিক্ষার্থীদের উচিত নির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা যাতে তারা ওই শেখার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশলগত পরিকল্পনা একটি অধিক বিস্তারিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শেখার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। একটি কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে ছোট ছোট একাধিক লক্ষ্য থাকে যা একটি বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। একটি ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার কাজ, উদ্দেশ্য ও যে দিক তারা অনুসরণ করতে চায়, তা ভালোভাবে বুঝতে হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো সাত দিনের মধ্যে চৌদ্দটি অধ্যায় অধ্যয়ন করতে হয়, সে প্রতিদিন দুটি অধ্যায় পড়ার পরিকল্পনা করতে পারে। প্রতিদিন কতটুকু পড়তে হবে তা পরিকল্পনা করে নিলে সাত দিনে সব অধ্যায় শেষ করা সম্ভব হবে। কৌশলগত পরিকল্পনা কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়াক্ষেত্রেও কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো লক্ষ্য এক মাসে ম্যারাথনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, তাহলে সে সাপ্তাহিক সময়সীমা অনুযায়ী দৈনিক কতদূর দৌড়াতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তার কসরতের পরিমাণ বাড়াতে পারে। কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরির জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কেন শিখছি? আমি কীভাবে আমার শেখার লক্ষ্য অর্জন করব? আমি কীভাবে আমার শেখার কৌশলগুলো প্রয়োগ করব? আমার কাছে পর্যাপ্ত সময় আছে কি? আমার লক্ষ্য কি এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্জনযোগ্য? আমি এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে পড়ব? আমার ব্যক্তিত্ব কি এই লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলবে? আমি শিখতে বসলে কী কী বিষয় আমাকে বিভ্রান্ত করতে পারে? '''স্ব-উদ্দীপনার বিশ্বাস''' অন্তর্ভুক্ত করে আত্ম-দক্ষতা, ফলাফলের প্রত্যাশা, অন্তর্নিহিত আগ্রহ এবং শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা<ref name="Zimmerman20023" />। এখানে আত্ম-দক্ষতা বলতে বোঝানো হয় শিক্ষার্থীদের নিজের শিখন ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস। যেমন, ক্লাসে একটি কঠিন ধারণা শেখার সময় কোনো শিক্ষার্থী হয়তো ভাবতে পারে সে সহজেই বুঝে ফেলবে অথবা সে ভয়ে থাকবে যে সে বিষয়টি বুঝতেই পারবে না। "আত্ম-দক্ষতা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী কতটা জড়িত হবে এবং চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে কতটা অটল থাকবে।" আত্ম-দক্ষতার উচ্চ মাত্রা সাধারণত বিদ্যালয়ের সাফল্য ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006).">Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006). Promoting Self-Regulation in Science Education: Metacognition as Part of a Broader Perspective on Learning. Research In Science Education, 36(1-2), 111-139.</ref>। শিক্ষকেরা উপযুক্ত স্তরের জটিলতার শেখার কাজ এবং প্রয়োজনে সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-দক্ষতা বাড়াতে পারে। শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি দুটি উপায়ে আত্ম-দক্ষতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। এক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের কাছ থেকে উদাহরণ দেখানো; দুই, শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব তথ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। ফলাফলের প্রত্যাশা বলতে বোঝানো হয় শেখার পর ফলাফল কেমন হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, যেমন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে যে সে অর্থনীতির একটি কঠিন ধারণা শিখতে পারবে এবং ভবিষ্যতে তা কাজে লাগাতে পারবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বিষয়বস্তুর উপযোগিতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই প্রত্যাশা বাড়াতে পারেন। অন্তর্নিহিত আগ্রহ বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতাকে তাদের নিজের স্বার্থে মূল্যায়ন করা। শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গুরুত্বে মূল্যায়ন করা। যেসব শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত আগ্রহ বেশি, তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিতভাবে শেখার প্রতি বেশি উদ্দীপিত থাকে কারণ তারা কাজের দক্ষতা অর্জন করতে চায়। যেমন, কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে চায়, সে শিক্ষা-সম্পর্কিত জ্ঞান গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারে<ref name="Zimmerman20023" />। শিক্ষকরা জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত আগ্রহ বাড়াতে পারে। ক্লাসকে উপভোগ্য করে তোলা বা ভিডিও ক্লিপ ও গ্রাফের মতো বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে শেখার প্রবণতা বাড়ানো যায়। শ্রাউ প্রমুখ বিজ্ঞান বিষয়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মোটিভেশন উপাদানকে ব্যাখ্যা করেছেন স্ব-দক্ষতা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসের সমন্বয়ে। জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাস বলতে বোঝায় "জ্ঞান কোথা থেকে আসে এবং এর প্রকৃতি কেমন" সে সম্পর্কে ধারণা। এই বিশ্বাস সমস্যার সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার উপর প্রভাব ফেলে। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। === পারফরম্যান্স ধাপ === [[চিত্র:3_Phase.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৫। জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মডেল]] পারফরম্যান্স ধাপের প্রক্রিয়া দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝানো হয় পূর্বপর্যায়ে নির্ধারিত নির্দিষ্ট কৌশল বা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। স্ব-পর্যবেক্ষণ হলো নিজের আচরণ সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর নথিপত্র তৈরি করা বা পরীক্ষামূলকভাবে এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের প্রায়ই তাদের সময় ব্যবহারের রেকর্ড রাখতে বলা হয় যাতে তারা বুঝতে পারে পড়াশোনায় কতটা সময় দিচ্ছে। আত্ম-নিরীক্ষা। এটি স্ব-পর্যবেক্ষণের একটি সূক্ষ্ম রূপ, বলতে বোঝায় নিজের মানসিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা, যেমন প্রবন্ধ লেখার সময় বড় অক্ষরে শব্দ না লেখার হার<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).">Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003). Motivating self-regulated problem solvers. The psychology of problem solving, 233-262.</ref>। '''স্ব-নিয়ন্ত্রণ''' প্রক্রিয়া যেমন আত্ম-নির্দেশনা, কল্পচিত্র, মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ এবং কাজের কৌশল শিক্ষার্থী ও কর্মীদের কাজের ওপর মনোযোগ দিতে এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আত্ম-নির্দেশনা হলো নিজের কাছে উচ্চ বা নিম্নস্বরে কীভাবে কাজটি সম্পাদন করতে হবে তা বলা, যেমন গণিত সমস্যার সমাধানের সময় "উচ্চস্বরে ভাবনা বলা"। কল্পচিত্র হলো উজ্জ্বল মানসিক চিত্র তৈরি করা। এটি শেখার ও পারফরম্যান্সে সহায়তা করে। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ, অর্থাৎ বাইরের ঘটনা বা ভিন্ন চিন্তা বাদ দিয়ে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ ধরে রাখা, তাৎপর্যপূর্ণ স্ব-নিয়ন্ত্রণ কৌশল।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." /> মনোসংযোগ বৃদ্ধির জন্য পূর্বের ভুল নিয়ে চিন্তা না করে মনোযোগ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ<ref name="Kuhl, J. (1985).">Kuhl, J. (1985). Volitional mediators of cognitive behavior consistency: Self-regulatory processes and action versus state orientation. In J. Kuhl & J. Beckman (Eds.), Action control (pp.101–128). New York: Springer.</ref>। কাজের কৌশল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে যখন তা কাজকে মৌলিক অংশে ভাগ করে অর্থপূর্ণভাবে পুনর্গঠন করে<ref name="Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995).">Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995). Cognitive psychology and instruction (2nd ed.). Upper Saddle River, NJ: Merrill.</ref>। পারফরম্যান্স ধাপের দ্বিতীয় প্রধান অংশ হলো '''স্ব-পর্যবেক্ষণ'''। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পারফরম্যান্সের নির্দিষ্ট দিক, প্রেক্ষাপট এবং এর ফলাফল নিরীক্ষণ করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995).">Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995). Self-monitoring during collegiate studying: An invaluable tool for academic self-regulation. In P. Pintrich (Ed.), New directions in college teaching and learning: Understanding self-regulated learning (No.63, Fall, pp.13–27). San Francisco, CA: Jossey-Bass, Inc.</ref>। যারা পরিকল্পিত কাঠামোতে ধাপভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তারা পারফরম্যান্স ধাপে আরও কার্যকরভাবে স্ব-পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কারণ এই সীমিত কাঠামো মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং মনে রাখার তথ্যের পরিমাণ হ্রাস করে। যদি কোনো ব্যক্তি পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা সঠিকভাবে মনে না রাখতে পারে, তবে সে তার কৌশল যথাযথভাবে পরিবর্তন করতে পারবে না<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." />। স্ব-নথিপত্র রক্ষণ শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার সঠিক রেকর্ড দেয়, সেগুলো গঠনমূলকভাবে সংগঠিত করে এবং অগ্রগতি বোঝার জন্য একটি দীর্ঘ তথ্যভান্ডার তৈরি করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996).">Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996). Self-regulated learning of a motoric skill: The role of goal setting and self-monitoring. Journal of Applied Sport Psychology, 8, 60–75.</ref>। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে স্ব-পর্যবেক্ষণ একটি নিয়মিত আত্ম-আবিষ্কার বা আত্ম-পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে পারে<ref name="Bandura, A. (1991).">Bandura, A. (1991). Self-regulation of motivation through anticipatory and self-reactive mechanisms. In R. A. Dienstbier (Ed.), Perspectives on motivation: Nebraska symposium on motivation (Vol. 38, pp.69–164). Lincoln: University of Nebraska Press.</ref>। '''কৌশল প্রয়োগ''' হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিত শেখার কৌশল বাস্তবে প্রয়োগ করে শেখার কাজে নিয়োজিত হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশল প্রয়োগের জন্য মোটিভেশন ও আত্মনির্ধারণ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের একটি মজবুত কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে তারা পরিবেশগত বিঘ্ন এড়াতে পারে এবং কী তাদের মোটিভেট বা ডিমোটিভেট করে তা বুঝতে পারে। কৌশল প্রয়োগ শেখার অভিজ্ঞতার সফলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উভয়ের উপর প্রভাব ফেলে। এটি নির্ধারণ করে কীভাবে এবং কোথায় শেখা হবে এবং এটি শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। '''কৌশল পর্যবেক্ষণ''' হচ্ছে শেখার ক্ষেত্রে প্রণীত কৌশলগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া। শেখার কৌশলগুলোর প্রয়োগ, শেখার কাজের অগ্রগতি এবং পরিবেশ কীভাবে শেখার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে—এসব বিষয়ে নজর রাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনে কৌশলগুলো পরিবর্তন করে আরও ভালো শেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারে। === আত্মপ্রতিফলন পর্যায় === আত্মপ্রতিফলন পর্যায়ে দুটি প্রধান প্রক্রিয়া রয়েছে: আত্মবিচার এবং আত্মপ্রতিক্রিয়া। আত্মবিচারের একটি রূপ হলো আত্মমূল্যায়ন, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের পর্যবেক্ষণভিত্তিক কর্মদক্ষতাকে কিছু মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে—যেমন পূর্ববর্তী কর্মদক্ষতা, অন্য কারও কর্মদক্ষতা বা একটি নির্দিষ্ট মান। আত্মবিচারের আরেকটি রূপ হলো কার্যকারণ বিশ্লেষণ বা কারণনির্ধারণ, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের সাফল্য বা ভুলের কারণ সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি করে, যেমন গাণিতিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর। '''আত্মবিচার''': মানুষ সাধারণত চারটি প্রধান মানদণ্ডের ভিত্তিতে নিজের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা মূল্যায়ন করে: দক্ষতা, পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স, তুলনামূলক সামাজিক মান, এবং যৌথ মানদণ্ড। দক্ষতা মানদণ্ড নির্ধারিত এবং পরিমাপযোগ্য—যেমন, একটি ক্রসওয়ার্ড পাজলের সমাধানকে মূল লেখকের সমাধানের সঙ্গে তুলনা করা। যখন শিক্ষার্থীরা অনানুষ্ঠানিক এবং অসংগঠিত পরিবেশে সমস্যা সমাধান করে, তখন তাদের অনেক সময়ই দক্ষতা মানদণ্ডের পরিবর্তে তাদের পূর্ববর্তী পারফরম্যান্সের সঙ্গে বর্তমান পারফরম্যান্সের তুলনার ওপর নির্ভর করতে হয়। এই আত্মতুলনা শিক্ষার উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। এটি সাধারণত বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। সামাজিক তুলনা বা তুলনামূলক মানদণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহপাঠী বা জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে শেখার মূল্যায়ন করে। যৌথ মানদণ্ড সাধারণত দলগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দলগতভাবে কাজ করা হয়।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).2" /> আত্মমূল্যায়নমূলক সিদ্ধান্ত সাধারণত শেখার ফলাফল সম্পর্কিত কার্যকারণ বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেমন: ব্যর্থতার কারণ নিজের সীমিত ক্ষমতা নাকি পর্যাপ্ত চেষ্টা না করা। যদি কেউ মনে করে যে তার খারাপ ফলাফল তার অক্ষমতার কারণে হয়েছে, তাহলে তা তার প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কারণ এটি ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনাকে অস্বীকার করে। অন্যদিকে, যদি কেউ মনে করে যে ভুল কৌশল ব্যবহারের কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে, তবে সে ভবিষ্যতে নতুন কৌশল গ্রহণ করে উন্নতি করতে প্রেরণা পাবে।<ref name="Zimmerman20024" /> '''আত্মপ্রতিক্রিয়া''': আত্মপ্রতিক্রিয়ার একটি রূপ হলো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আত্মতৃপ্তি বা ইতিবাচক অনুভূতি। আত্মতৃপ্তি বৃদ্ধি পেলে প্রেরণা বাড়ে, আর আত্মতৃপ্তি কমে গেলে শেখার প্রচেষ্টাও কমে যায়।<ref name="Schunk, D.H. (2001).">Schunk, D.H. (2001). Social cognitive theory and self-regulated learning. In B.J. Zimmerman & D.H Schunk (Eds.), Self-regulated learning and academic achievement: Theoretical perspectives (2nd ed., pp. 125-152). Mahwah, NJ: Erlbaum.</ref> শিক্ষার্থীরা যখন তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে আত্মতৃপ্তি বোধ করে, তখন তারা আরও সচেতনভাবে কাজ পরিচালনা করতে পারে এবং অধ্যবসায় ধরে রাখতে পারে।<ref name="Schunk, D.H. (1983 c).">Schunk, D. H. (1983 c). Progress self-monitoring: Effects on children’s self-efficacy and achievement. Journal of Experimental Education, 51, 89–93.</ref> আত্মপ্রতিক্রিয়া কখনও কখনও অভিযোজিত বা প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ার রূপ নিতে পারে। প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া হলো নিজের আত্মপরিচয় রক্ষা করতে শেখা বা পারফর্ম করার সুযোগ থেকে সরে যাওয়া, যেমন একটি কোর্স বাদ দেওয়া বা পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত থাকা। অপরদিকে, অভিযোজিত প্রতিক্রিয়া হলো শেখার পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে পরিবর্তন আনা, যেমন অকার্যকর কৌশল বাদ দেওয়া বা পরিবর্তন করা।<ref name="Zimmerman20024" /> '''ফলাফল মূল্যায়ন''' : ফলাফল মূল্যায়ন ঘটে তখন, যখন শেখার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই পর্যায়ে শেখার লক্ষ্য, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং সেগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''4" /> ফলাফল মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরা নিজের কাছে এই প্রশ্নগুলো করতে পারে: আমার লক্ষ্যগুলো কতটা বাস্তবসম্মত ছিল? সেগুলো কি অর্জনযোগ্য ছিল? আমার কৌশলগত পরিকল্পনা কতটা কার্যকর ছিল? এমন কোনও কৌশল কি বাদ পড়েছে যেটা রাখা উচিত ছিল? ভবিষ্যতে আমি কীভাবে আমার শেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করব? আমার পরিবেশ কি মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করছিল? == বোকার্টসের তিন-স্তরবিশিষ্ট SRL মডেল == == উইনের পর্যায়ভিত্তিক SRL মডেল == = গবেষণার বিষয় ও ক্ষেত্র = [[চিত্র:Section_3_Issues_and_Topics_of_Research.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|Figure 6. Issues and Topics of Research]] == স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সাংস্কৃতিক পার্থক্য == শেখার ধারণা, বিশেষ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ধারণাটি, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘স্বনিয়ন্ত্রণ’ এবং ‘শেখার ধারণা’ নিয়ে অধিকাংশ তথ্য পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি একপাক্ষিক উপস্থাপন। ভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে মানুষ ভিন্ন চিন্তাভাবনার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়। জাপানি শিক্ষার্থীরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছিল,<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''">Purdie, Nola, and John Hattie.(1996). “Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning”. American Educational Research Journal 33.4 (1996): 845–871.</ref> তারা শেখার ভিন্ন কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং পূর্ব পরিচিত পদ্ধতির বাইরে জ্ঞান অনুধাবনের নতুন পথ খুঁজে পায়। যদিও এই প্রক্রিয়াটি অবচেতনভাবে ঘটে থাকতে পারে, তবে ভিন্ন ভাষা ও গঠনের নতুন ব্যবস্থায় পড়ে তারা বাধ্য হয় শেখার কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করতে। শেখার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বোঝা যায়, জ্ঞান একরৈখিক নয়—এটা ভালো বা খারাপ, ঠিক বা ভুল—এমন দ্বৈততা দিয়ে সব সময় বোঝা যায় না। জ্ঞান হলো পরিবর্তনশীল ও গতিশীল এবং তাই এটি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। এশীয় সংস্কৃতিতে প্রচলিত ধারণা হলো, জ্ঞান একজন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসে, যিনি সঠিক ও ভুল জানেন, এবং সেটি মুখস্থ করতে হয়। এর ফলে এশীয় শিক্ষার্থীদের সাধারণভাবে দেখা হয় নীরব, অনুগত ও মুখস্থনির্ভর শিখনশীল হিসেবে। অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীদের ভাবা হয় বেশি সক্রিয়, যারা আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা, বৈচিত্র্য গ্রহণযোগ্য এবং চিন্তা ও আচরণের বিকল্প পথ অনুসন্ধানে ইচ্ছুক।<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''" /> == জ্ঞান-সচেতনতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য == [[চিত্র:Different_Mind.png|থাম্ব|322x322পিক্সেল|Figure 7. Different Mind]] মেটাকগনিশন সংক্রান্ত গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত পার্থক্য। এই পার্থক্য মেটাকগনিশন পরিমাপকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। উইনে (1996) প্রস্তাব করেছিলেন, স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় মেটাকগনিশন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এমন পাঁচটি উৎস রয়েছে: ‘‘ডোমেইন জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতির জ্ঞান, কৌশল প্রয়োগ, কৌশল নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক প্রবণতা’’। (Winne 1996, p. 327)<ref name="Winne, P. H. (1996).''">Winne, P. H. (1996). A metacognitive view of individual differences in self-regulated learning. Learning and Individual Differences, 8(4), 327-353.</ref> সামগ্রিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখা নিয়ে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। উইনে জানান যে তার এই প্রস্তাবনা প্রাথমিক এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে তার কাজ অন্যান্য গবেষকদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছে। অনেক গবেষক মনে করেন, মেটাকগনিশন নির্ভুলতার পার্থক্যগুলো আসলে মেটাকগনিটিভ দক্ষতার পার্থক্য। তবে কেলেমেন, ফ্রস্ট ও উইভার (2000) বলেছিলেন, এটা সবসময় ঠিক নয়। মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতা বলতে বোঝানো হয় ‘‘মেটাকগনিশন এবং ভবিষ্যৎ স্মৃতির কার্যকারিতার মধ্যকার সম্পর্ক’’ (Kelemen et al., 2000, p. 92)।<ref name="Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000).''">Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000). Individual differences in metacognition: Evidence against a general metacognitive ability. Memory & Cognition, 28(1), 92-107.</ref> এই গবেষণায় চারটি প্রচলিত মেটাকগনিটিভ কাজ পরিমাপ করা হয়েছিল: শেখার সহজতার অনুমান, জানার অনুভূতির অনুমান, শেখার অনুমান এবং পাঠ্য বোধগম্যতার পর্যবেক্ষণ। প্রাক-পরীক্ষা ও পর-পরীক্ষা মিলিয়ে স্মৃতি ও আত্মবিশ্বাসের মাত্রা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে ভিন্ন ছিল। এই ফলাফল বোঝায়, মেটাকগনিটিভ দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এই গবেষণার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, কারণ অনেক গবেষক একমত যে মেটাকগনিশন পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই পার্থক্যগুলো দেখায় যে মেটাকগনিশনের জন্য ‘একটি সমাধান সবার জন্য উপযোগী’—এমন ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। লিন, শোয়ার্টজ এবং হাতানো (2005) পরামর্শ দেন যে মেটাকগনিশনের প্রয়োগে ব্যক্তিগত শেখার ধরণ এবং শ্রেণিকক্ষ পরিবেশের পার্থক্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''">Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005). Toward Teachers' Adaptive Metacognition. Educational Psychologist, 40(4), 245-255.</ref> তারা "অভিযোজিত মেটাকগনিশন" ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এটি শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের প্রতি সাড়া দিয়ে ব্যক্তি ও পরিবেশ উভয়কেই মানিয়ে নিতে শেখায় (Lin et al., 2005, p. 245)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের মধ্যে সামাজিক ও পাঠদানের পার্থক্য অন্তর্ভুক্ত। অভিযোজিত মেটাকগনিশনের জন্য, লিন প্রস্তাব করেন “ক্রিটিকাল ইভেন্ট ইনস্ট্রাকশন” পদ্ধতি। এটি শিক্ষকদের শেখায় কীভাবে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় যেগুলো উপর থেকে দেখলে সাধারণ মনে হয় (Lin et al., 2005, p. 246)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> এটি নতুন শিক্ষকদের জন্য সহায়ক, যাতে তারা শিক্ষণিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে কার্যকরভাবে মানিয়ে নিতে পারে। == লার্নিং অ্যানালিটিকস এবং SRL গবেষণা == === লার্নিং অ্যানালিটিকসের সংজ্ঞা === ব্যবসা থেকে শুরু করে মহামারিবিদ্যার মতো ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার ও গণনাগত শক্তির প্রসার বড় ডেটা সেট থেকে উপকারী তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও এই ধরণের পদ্ধতিকে ‘‘লার্নিং অ্যানালিটিকস’’ বলা হয়। যদিও একে প্রায়ই নতুন একটি শাখা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, লার্নিং অ্যানালিটিকস মূলত বহু পুরোনো ধারার আইডিয়া, নীতি ও পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত। এটি একটি বহুমাত্রিক শাখা। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স, মানব-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশন এবং শিক্ষাবিদ্যার বিভিন্ন উপাদান একত্র করে তৈরি হয়েছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''">Siemens, G. (2013). Learning analytics: The emergence of a discipline. American Behavioral Scientist, 57 (10), p. 1380 - 1400.</ref> '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স কী?''' লার্নিং অ্যানালিটিক্স গবেষণা সংস্থা (Society for Learning Analytics Research বা SoLAR) লার্নিং অ্যানালিটিকসের ক্ষেত্রকে নিম্নরূপভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: “লার্নিং অ্যানালেটিক্স হলো শিক্ষার্থী ও তাদের প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার একটি প্রক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য হলো শেখার প্রক্রিয়া এবং যে পরিবেশে তা ঘটে, তা বোঝা ও আরও কার্যকর করে তোলা।”<ref name="Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).''">Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).Retrieved from http://solaresearch.org</ref> এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের দেওয়া সংজ্ঞাগুলোর একটি সমন্বয় থেকে<ref name="Larusson, J. A., & White, B. (2014).''">Larusson, J. A., & White, B. (2014). Learning Analytics. Springer</ref><ref name="Martin, T., & Sherin, B. (2013).''">Martin, T., & Sherin, B. (2013). Learning analytics and computational techniques for detecting and evaluating patterns in learning: An introduction to the special issue. Journal of the Learning Sciences, 22(4), p. 511-520.</ref> নিচের কয়েকটি মূল বিষয় নিরূপণ করা যায়: * এই শাখাটির মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি, পদ্ধতি, কাঠামো এবং সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেগুলো তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। * এটি বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আচরণ ও কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রকৃতপক্ষে, সিমেন্স (২০১৩) মতে, এই তথ্যসমূহের উৎস হতে পারে একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পাঠক্রম পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> * তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনের প্রতিটি ধাপেই এর পরিধি বিস্তৃত—যেমন তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম, তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাঠামো ও প্যাটার্ন বের করা, এবং তথ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত ভিজ্যুয়াল সরঞ্জাম। * এর একটি তাত্ত্বিক দিক রয়েছে, কারণ শিক্ষাগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীরতর বোঝাপড়া গড়ে উঠতে পারে। এটি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর পক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে। * এর একটি ব্যবহারিক দিকও রয়েছে, কারণ এসব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ফলাফল শেখার পরিবেশ এবং শেখার পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে সহায়তা করতে পারে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহারে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ''' যদিও লার্নিং অ্যানালেটিক্সের মূল লক্ষ্য নতুন নয়, তবুও কিছু বিশেষ উন্নয়ন ও কারণ এই ক্ষেত্রে আগ্রহ পুনর্জাগরিত করেছে এবং এটিকে একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো: * '''তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি''' বিশেষ করে ব্লেন্ডেড লার্নিং, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদির মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার চালুর পর থেকে বিশ্লেষণের জন্য উপলব্ধ শিক্ষামূলক তথ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> শিক্ষার্থীরা যখন ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করে, তখন তারা তাদের কর্মকাণ্ডের একটি “ডিজিটাল ছাপ” রেখে যায়। এটি সহজেই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। এই ধরনের তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে লগ ইন সময়, পোস্ট, ক্লিকের সংখ্যা, কোন উপকরণে কত সময় ব্যয় হয়েছে ইত্যাদি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখার কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট গভীর মানসিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া সম্ভব। * '''প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নত অ্যালগরিদম''' কিছু কম্পিউটেশনাল উন্নয়ন এই বিশাল পরিমাণ শিক্ষামূলক তথ্য বিশ্লেষণকে সহজ করে তুলেছে। এখন কম সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব, এবং মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নতুন অ্যালগরিদম ব্যবহারে ডেটা বিশ্লেষণে মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাঠামো ও প্যাটার্ন আবিষ্কার করা যায়। * '''তথ্যের বিন্যাস''' তথ্য সংগ্রহ যথেষ্ট নয়, সেগুলিকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হয় যাতে বিশ্লেষণ কার্যকরভাবে সম্ভব হয়। এজন্য নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক তথ্য লগ করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটের প্রয়োজন হয়।<ref name="Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010).''">Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010). A data repository for the EDM community: The PSLC DataShop. In Romero, C., Ventura, S., Pechenizkiy, M., & Baker, R. S. (Eds.). (2010) Handbook of educational data mining. CRC Press. p. 43-56.</ref> এই স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট আগে থেকেই থাকলে তথ্য প্রস্তুত করতে যে সময় ব্যয় হতো, তা অনেকাংশে হ্রাস পায়। === লার্নিং অ্যানালিটিকসের মূল পদ্ধতি ও সরঞ্জাম === সিমেন্স (২০১৩) লার্নিং অ্যানালেটিক্সের দুটি মূল উপাদান উল্লেখ করেন: কৌশল ও প্রয়োগ। প্রযুক্তির মধ্যে আছে অ্যালগরিদম ও মডেল। এটি তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর প্রয়োগ হলো শিক্ষাগত প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তিগুলোর বাস্তব ব্যবহার—যেমন শিক্ষার্থী অনুযায়ী শেখার পরিবেশ তৈরি করা কিংবা শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করা।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> এই অংশে লার্নিং অ্যানালেটিক্সে ব্যবহৃত প্রধান পদ্ধতি ও কৌশলগুলো তুলে ধরা হয়েছে, কিছু উদাহরণসহ যা দেখায় কীভাবে এগুলো শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োগ করা যায়। '''ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি''' এই পদ্ধতিগুলোর কার্যপ্রণালির সরল বিবরণ হলো—ডেটার কিছু নির্দিষ্ট দিক বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের মান নির্ধারণ করা (যেটিকে বলা হয় ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল), যেখানে অন্য দিকগুলোকে বলা হয় '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল'''।<ref name="Baker, R. S., & Yacef, K. (2009).''">Baker, R. S., & Yacef, K. (2009). The state of educational data mining in 2009: A review and future visions. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 3-17.</ref> উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি আছে যেগুলো শিক্ষার্থীরা একটি অনলাইন কোর্সে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা থেকে (লগ ইন সময়, ব্লগ কার্যকলাপ, মূল্যায়ন পরীক্ষায় ফলাফল—এগুলো হলো '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল''') এই পূর্বাভাস দেয় যে শিক্ষার্থীটি কোর্সে ব্যর্থ হতে পারে (ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল)। এই ধরনের মডেল দুটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়: ভবিষ্যতের ঘটনা যেমন শিক্ষার্থীর ড্রপআউট <ref name="Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July).''">Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July). Predicting students drop out: A case study. In Proceedings of the 2nd International Conference on Educational Data Mining, EDM 2009, p. 41-50.</ref> অথবা শিক্ষার্থীর কোর্সফলাফল <ref name="Ming, N., & Ming, V. (2012).''">Ming, N., & Ming, V. (2012). Predicting student outcomes from unstructured data. In Proceedings of UMAP Workshops, p. 11-16.</ref> ভবিষ্যদ্বাণী করা। আবার কিছু ক্ষেত্রে কিছু ডেটা সরাসরি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, কারণ তা শিক্ষার্থীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমন অবস্থায় পূর্বাভাস মডেল অন্য কিছু পরিবর্তনশীল পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুমান করতে সক্ষম হয়।<ref name="Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August).''">Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August). Detecting student misuse of intelligent tutoring systems. In International Conference on Intelligent Tutoring Systems, p. 531-540.</ref> '''কাঠামো অন্বেষণ''' এই লার্নিং অ্যানালিটিক্স কৌশলটি আগেরটির চেয়ে বেশ আলাদা, কারণ এতে এমন অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয় যার উদ্দেশ্য হলো পূর্বানুমান ছাড়াই শিক্ষাগত ডেটাতে গঠন খুঁজে বের করা। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। '''ক্লাস্টারিং'''-এ ডেটাকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে সেটিকে একাধিক ক্লাস্টারে রূপান্তর করা হয়। এই ক্লাস্টারগুলো, যেমন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল হতে পারে যাদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে তারা কীভাবে অনুসন্ধানভিত্তিক শেখার পরিবেশ ব্যবহার করে তার ভিত্তিতে।<ref name="Amershi, S., & Conati, C. (2009).''">Amershi, S., & Conati, C. (2009). Combining Unsupervised and Supervised Classification to Build User Models for Exploratory. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 18-71.</ref> আবার '''সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ'''-এ শেখার মাঝে সম্পর্ক বা পারস্পরিক ক্রিয়ার ধরন শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন ছাত্রদের আচরণ ও নেটওয়ার্কে তাদের অবস্থান কীভাবে তাদের সম্প্রদায়ের অংশ মনে হওয়ার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করা।<ref name="Dawson, S. (2008).''">Dawson, S. (2008). A study of the relationship between student social networks and sense of community. Educational Technology & Society, 11(3), p. 224-238.</ref> '''সম্পর্ক অনুসন্ধান''' এই কৌশলটি ব্যবহৃত হয় বড় ডেটাসেটের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনশীলের মধ্যকার সম্পর্ক শনাক্ত করতে। এই পদ্ধতির সাধারণ লক্ষ্য হলো নির্ধারণ করা কোন কোন পরিবর্তনশীল একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কযুক্ত, অথবা পরিবর্তনশীলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করা। এই কৌশলের বিভিন্ন ব্যবহার আছে। উদাহরণস্বরূপ, বেকার ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) বিভিন্ন বুদ্ধিমান শিক্ষণ সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে শিক্ষার্থীরা কীভাবে “সিস্টেমকে ফাঁকি দেয়” তা নিয়ে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন।<ref name="Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June).''">Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June). Educational software features that encourage and discourage “gaming the system”. In Proceedings of the 14th international conference on artificial intelligence in education, p. 475-482.</ref> আবার পেরেরা ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) এই কৌশল ব্যবহার করে দলগত প্রকল্পে সফলতা আনার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী ধরনের সহযোগিতামূলক পথ সবচেয়ে কার্যকর তা শনাক্ত করেছেন।<ref name="Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009).''">Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009). Clustering and sequential pattern mining of online collaborative learning data. IEEE Transactions on Knowledge and Data Engineering, 21(6), p. 759-772.</ref> '''মানব-বিচারের জন্য তথ্য পরিশোধন''' এই কৌশলে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষাগত ডেটা পরিশোধন ও উপস্থাপন করা হয়, উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে, যাতে গবেষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা (শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রশাসক ইত্যাদি) উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বওয়ার্স (২০১০) বহু বছরের ছাত্রদের শিক্ষা-অগ্রগতির ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা ব্যবহার করে শনাক্ত করেছেন কোন ছাত্ররা ঝুঁকিতে আছে। যুক্তি হলো সফল বা ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু সাধারণ প্যাটার্ন থাকে যেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব এবং যেগুলোর উপস্থিতি ছাত্রের সফলতা বা ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে।<ref name="Bowers, A. J. (2010).''">Bowers, A. J. (2010). Analyzing the longitudinal K-12 grading histories of entire cohorts of students: Grades, data driven decision making, dropping out and hierarchical cluster analysis. Practical Assessment Research and Evaluation, 15(7), p. 1-18.</ref> === লার্নিং অ্যানালেটিক্স এবং স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় (SRL) গবেষণা === লার্নিং অ্যানালেটিক্সের পদ্ধতি ও প্রয়োগ নিয়ে আগের অংশ বিবেচনা করলে এটি স্পষ্ট যে এই সরঞ্জামগুলো শেখা সম্পর্কে তত্ত্ব গঠনে এবং সেগুলোর পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনে সহায়তা করে। স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। এই ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং স্বনিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি ও কোন শর্তে তা ঘটে সে বিষয়ে ধারণা যাচাই করতে লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক পদ্ধতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে একাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। '''স্বনিয়ন্ত্রণভিত্তিক গবেষণার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা''' কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। কারণ, এই নতুন ধরনের শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলো শেখার দারুণ সুযোগ তৈরি করে। এটি গবেষকদের আগ্রহী করেছে—ছাত্ররা এই সম্ভাবনার কতটা সদ্ব্যবহার করছে এবং কী পরিস্থিতিতে তারা সফল হচ্ছে তা অন্বেষণে।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2">Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008). Self-regulation of learning within computer-based learning environments: A critical analysis. Educational Psychology Review, 20(4), 429-444.</ref> এসব শেখার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয় এবং তাই স্বনিয়ন্ত্রিত শেখারও সুযোগ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে বিষয়বস্তুর কাছে যেতে পারে, বিভিন্ন রূপে উপস্থাপন বেছে নিতে পারে এবং পরিবেশের একাধিক উপাদান নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এর মানে এটাও যে, যেসব শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই, তারা এই ধরনের শেখার লক্ষ্যে ব্যর্থও হতে পারে। এজন্য, এই পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমরা এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং এদের সহায়তায় হস্তক্ষেপ বা সহযোগী উপকরণ তৈরি করতে পারি। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন, বিশেষত যেহেতু এ প্রক্রিয়াগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ। কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত আচরণ পর্যবেক্ষণে গবেষকদের একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিয়াদাতি প্রমুখ (২০১৬) জোর দিয়ে বলেন যে স্বনিয়ন্ত্রণ মূল্যায়নের যথাযথ ব্যাখ্যা পেতে হলে “যে কোনও পরিমাপ পদ্ধতির নির্বাচন, উন্নয়ন ও প্রয়োগ তাতে ব্যবহৃত SRL মডেল বা তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে” (Siadaty et al., 2016 p. 190)।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). ''2">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). Trace-based micro-analytic measurement of self-regulated learning processes. Journal of Learning Analytics, 3(1), p. 183-220.</ref> তবে, কিছু গবেষণায় কোনও নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো অনুসরণ করা হয়নি, ফলে শব্দার্থ ও সংজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণা আবার SRL মডেলের নির্দিষ্ট উপাদান যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, স্ব-পর্যবেক্ষণ বা আত্ম-দক্ষতা নিয়ে কাজ করেছে। এই উপাদানগুলোকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে SRL কাঠামোর সামগ্রিক চিত্রটি পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয় না।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> আরেকটি বড় সমস্যা দেখা যায় তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে। অধিকাংশ গবেষণায় শিক্ষার্থীদের নিজেদের প্রতিবেদনকেই মূল তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর নির্ভরযোগ্যতা ও মান শিক্ষার্থীর আত্মজ্ঞান ও শেখার কৌশল বর্ণনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। উইন্টার্স প্রমুখ (২০০৮) উল্লেখ করেন, এই ধরনের আত্মপ্রতিবেদন সবসময় পর্যবেক্ষণমূলক কৌশলের মতো নির্ভরযোগ্য নয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণায় থিংক-এলাউড পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত চিন্তাপ্রক্রিয়া ধরা সম্ভব হয়। তবে, এগুলো সাধারণত ব্যবহৃত কৌশল শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, এই কৌশলগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় না। যেমন ধরুন, সারসংক্ষেপ করা একটি কার্যকর শিক্ষণ কৌশল হলেও এটি শুধু প্রয়োগ করলেই কার্যকর হবে না, বরং সারসংক্ষেপ কখন করা হচ্ছে, কীভাবে করা হচ্ছে, কী বিষয়কে সারসংক্ষেপ করা হচ্ছে এসব বিষয়ের ওপর এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। সবশেষে, গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো তথ্য সংগ্রহ ও পরিমাপ পদ্ধতি শিক্ষার সঙ্গে কতটা হস্তক্ষেপ করে। আদর্শ পদ্ধতি হলো এমন। এটি শিক্ষার্থীর শেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলে এবং শেখার প্রক্রিয়ায় কোনওরকম বিঘ্ন না ঘটিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এই ধরনের “অহস্তক্ষেপমূলক” আচরণ দেখা যায় লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক সরঞ্জামগুলোতে। এগুলো ব্যবহারকারীর ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে, যেমন লগ ইন/আউট সময়, কোন বৈশিষ্ট্য বেশি ব্যবহার হচ্ছে, মূল্যায়ন কার্যক্রমে পারফরম্যান্স ইত্যাদি, এবং এই তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্যাটার্ন চিহ্নিত করে। এই বিষয়ে আরও আলোচনা পরবর্তী অংশে করা হবে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহার করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ নিরীক্ষণ''' লার্নিং অ্যানালেটিক্স প্রযুক্তি ও প্রয়োগগুলো নির্ভুল ও অহস্তক্ষেপমূলক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সরবরাহ করে, যাতে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময় তাদের স্বনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার প্রমাণ নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা যায়। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রগতি গবেষকদের হাতে নতুন উন্নত প্রযুক্তি এনে দিয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রেস ডেটা সংগ্রহের পরিধি ও বৈচিত্র্য অনেক বেড়েছে। [[চিত্র:Kwlimage.jpg|থাম্ব|চিত্র ৮. কেডব্লিউএল]] আগের অংশে আমরা দেখেছি, স্বনিয়ন্ত্রিত শেখা নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণাই শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রতিবেদনকে প্রধান তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর সঙ্গে যুক্ত নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে কিছু গবেষণায় আত্মপ্রতিবেদন, অনলাইন আচরণগত তথ্য ও শেখার ফলাফল একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, শা প্রমুখ (২০১২) একটি মোবাইল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সময় স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করেন। এই গবেষণায় সিঙ্গাপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শেখার জন্য মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এতে অ্যানিমেশন আঁকা, কনসেপ্ট ম্যাপ তৈরি, এবং কেডব্লিউএল টেবিল তৈরি করার মতো অ্যাপ্লিকেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। iKWL অ্যাপে শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড ও পারফরম্যান্সই ছিল তথ্য সংগ্রহের ভিত্তি। অ্যাপ্লিকেশনটি তিনটি প্রশ্নের উত্তর চায়: “আমি কী জানি?”, “আমি কী জানতে চাই?” এবং “আমি কী শিখেছি?”। এটি SRL-এর যথাক্রমে পূর্বজ্ঞান, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আত্মমূল্যায়ন ধাপকে বোঝায়। গবেষকরা শিক্ষার্থীরা কেডব্লিউএল প্রশ্নে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা বিশ্লেষণ করেন। দুটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করা হয়: একজন শিক্ষার্থী কেডব্লিউএল টেবিল সম্পূর্ণ করেছে কি না (যদি কোনো ঘর পূরণ না হয় = ০, যদি অন্তত একটি পূরণ হয় = ১), এবং প্রতিটি ক্যাটাগরিতে কতগুলো তথ্য লিখেছে তা পরিমাপ করার রুব্রিক। এই পরিমাপটি সহজ, তাই সিস্টেম নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নির্ধারণ করতে পারে, তবে এতে লেখা কনটেন্টের মান বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). ''2">Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). Recognizing and measuring self-regulated learning in a mobile learning environment. Computers in Human Behavior, 28(2), p. 718-728.</ref> [[চিত্র:Posterlet_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ৯. পোস্টারলেট]] [[চিত্র:MetaTutor_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১০. মেটাটিউটর]] আরও কিছু গবেষণা নির্দিষ্ট SRL কৌশলের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছে। কুতুমিসু প্রমুখ (২০১৫) “নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ” এবং “পুনরায় সম্পাদনা” কৌশল দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষার জন্য পোস্টারলেট নামক একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন। এই অ্যাপে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ফান ফেয়ারের জন্য পোস্টার ডিজাইন করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা কার্যকর পোস্টার ডিজাইনের নীতিমালা ও অনুশীলন শেখে। শেখার আচরণ পর্যবেক্ষণের জন্য অ্যাপটিতে একটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পোস্টার তৈরি করে এবং পশু চরিত্রদের কাছ থেকে ইতিবাচক (“আমার ভালো লেগেছে...”) বা নেতিবাচক (“আমার পছন্দ হয়নি...”) প্রতিক্রিয়া পায়। সিস্টেম দুটি বিষয় রেকর্ড করে: কতবার শিক্ষার্থী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বেছে নিয়েছে এবং কতবার সে পোস্টারে পরিবর্তন এনেছে। এখানে কেবল সংখ্যাগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে—শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তন করেছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015).''2">Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015). Posterlet: A game-based assessment of children’s choices to seek feedback and to revise. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 49-71.</ref> আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষণ পরিবেশ রয়েছে, যেগুলো দ্বৈত ভূমিকা পালন করে: একটি হচ্ছে শেখার উপকরণ, যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ শেখানো ও সহায়তার জন্য তৈরি; অন্যটি গবেষণামূলক উপকরণ, যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ আচরণের উপর তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। এমন একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশন হলো MetaTutor, যা Azevedo ও তাঁর সহকর্মীদের (২০১৩) গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। MetaTutor একটি শিক্ষণ পরিবেশ যা জীববিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এতে একাধিক ডিজিটাল এজেন্ট রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশল প্রয়োগে সহায়তা করে। এর নানা বৈশিষ্ট্য আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট পর্যায় ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত (যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, আত্ম-প্রতিফলন) এবং সেগুলো ব্যবস্থার ইন্টারফেসে সুনিপুণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (দেখুন চিত্র ১০)। এছাড়াও MetaTutor-এ এমন ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থাও রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যাতে গবেষকরা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা আরও উন্নত করা যায়। এই সিস্টেমটি সাধারণ ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতির (যেমন স্ব-প্রতিবেদন জরিপ, চিন্তা প্রকাশ প্রোটোকল) পাশাপাশি উন্নততর শিক্ষণ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে অনুধাবন ও মূল্যায়ন করে। এখানে একটি আই-ট্র্যাকিং (চোখের গতি পর্যবেক্ষণ) উপাদান রয়েছে যা শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে, কোন অংশে মনোযোগ দেয়, কোন ক্রমে তথ্য পড়ে, কোন ডায়াগ্রামের অংশ বেশি ব্যবহার করে ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান তথ্য দেয়। এই ধরনের তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় শিক্ষার্থীর স্ব-প্রতিবেদন বা মুখে বলা চিন্তায় এসব বিষয় উঠে আসে না। সিস্টেমটি এমন বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ইন্টারঅ্যাকশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে যা আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং শিক্ষার্থীরা শেখার কাজে তা প্রয়োগ করে। যেমন: নোট নেওয়ার ধরণ, চিত্র অঙ্কনের ব্যবহার, কী-স্ট্রোক, মাউস ক্লিক, অধ্যায় বা কার্যকলাপ খোলা, কুইজে পারফরম্যান্স ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজের ধারা বা রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়। এই সব বিভিন্ন ধরণের ডেটার সমন্বয়ে গবেষকরা কগনিটিভ (জ্ঞানগত) প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পান। যেমন: যদি শিক্ষার্থী কোনো লেখাকে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে সে পাঠ্যবস্তুর উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। অথবা, যদি ব্যবহারকারী টেক্সট থেকে চিত্র বা গ্রাফে বারবার যায়, তাহলে বোঝা যায় সে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন পদ্ধতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। এছাড়াও, এখানে মুখাবয়ব অভিব্যক্তি শনাক্তকরণের একটি জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। সিস্টেমটি শিক্ষার্থীদের মুখাবয়বের ভিডিও সংগ্রহ করে এবং তা Noldus FaceReader 3.0 সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর আবেগগত অবস্থান নির্ধারণ করে। তবে, এই সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা হলো এটি কেবল কয়েকটি সাধারণ, সর্বজনীন আবেগ শনাক্ত করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের পুরো আবেগ অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করে না।<ref name="Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013).''">Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013). Using trace data to examine the complex roles of cognitive, metacognitive, and emotional self-regulatory processes during learning with multi-agent systems. In International handbook of metacognition and learning technologies, Springer New York, p. 427-449.</ref> [[চিত্র:System_bbbbb.png|থাম্ব|250x250পিক্সেল|Figure 11. Bretty's Brain]] পরিশেষে, কিছু গবেষণায় শিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশনের নির্দিষ্ট উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখার নির্দিষ্ট পর্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এসব উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ডেটার গঠন বা ধরন শনাক্ত করা হয়েছে (দেখুন ক্লাস্টারিং, অধ্যায় ২)। Segedy et al. (2015) একটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, যেটিকে তারা বলেন '''coherence analysis'''। তাঁদের গবেষণায়, তারা "Betty’s Brain" নামক একটি শিক্ষণ পরিবেশ ব্যবহার করেন। এখানে শিক্ষার্থীরা একটি ভার্চুয়াল এজেন্ট বেটিকে একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর চেষ্টা করে, একটি কারণমূলক মানচিত্র তৈরি করে। এই মানচিত্রে (দেখুন চিত্র ১১) বিষয়বস্তুর মূল ধারণাগুলোকে উপস্থাপনকারী সত্ত্বাগুলো থাকে, যেগুলো মধ্যে দিক-নির্দেশিত সংযোগ থাকে, যা ধারণাগুলোর মধ্যে কারণ-পরিণাম সম্পর্ক নির্দেশ করে। বেটি এই মানচিত্র ব্যবহার করে সংযোগ চেইনের মাধ্যমে যুক্তি করে এবং বিভিন্ন কুইজ প্রশ্নের উত্তর দেয়।<ref name="Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015).''">Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015). Using coherence analysis to characterize self-regulated learning behaviours in open-ended learning environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 13-48.</ref> এই কারণমূলক মানচিত্রের সঠিকতা নির্ধারণ করে যে, বেটি কতটা সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত টেক্সট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই সংযোগ স্থাপন করে, কুইজের মাধ্যমে মানচিত্র পরীক্ষা করে এবং প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে মানচিত্র সংশোধন করে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারঅ্যাকশনের সময় সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাঁচটি আলাদা আচরণগত গোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়। প্রথম দল ছিল ঘন ঘন তথ্য অনুসন্ধানকারী ও সতর্ক সম্পাদক, যারা তথ্য উৎস অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে কিন্তু মানচিত্র কম সম্পাদনা করেছে। দ্বিতীয় দল, কৌশলী পরীক্ষক, যারা তথ্য দেখেছে কিন্তু ততটা কাজে লাগাতে পারেনি। তবু তারা মানচিত্র বেশি সম্পাদনা করেছে। তৃতীয় দল ছিল বিভ্রান্ত অনুমানকারী, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে কিন্তু বিজ্ঞান উৎস ব্যবহার করেনি। চতুর্থ দল ছিল দায়িত্বহীন শিক্ষার্থী, যাদের অধিকাংশ সম্পাদনা অসমর্থিত এবং তারা ৩০% সময়ই নিষ্ক্রিয় ছিল। পঞ্চম দল ছিল সম্পৃক্ত ও দক্ষ, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে এবং বেশিরভাগই সমর্থিত। তারা তথ্য দেখার সময় এবং মানচিত্র তৈরির সময়ও বেশি ব্যয় করেছে। এই আচরণই বেটির ব্রেইনে সফলতা এনে দেয়। = তত্ত্ব থেকে প্রয়োগে = [[চিত্র:Section_4_From_Theory_to_Practice.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|Figure 12. From Theory to Practice]] == অভিজ্ঞ প্রয়োগে মেটাকগনিশন == === পাঠে মেটাকগনিশন === মেটাকগনিশন এবং পাঠ অনুধাবনের উপর এর প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ভাষাগত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি এবং কিশোরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব গবেষণায় পাঠ ও লেখার সঙ্গে মেটাকগনিশনের সম্পর্ক এবং মেটাকগনিশনমূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা উঠে এসেছে। Furnes এবং Norman (২০১৫) মেটাকগনিশনের তিনটি ধরন (জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা) তুলনা করেন স্বাভাবিক পাঠকের সঙ্গে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত পাঠকদের মধ্যে।<ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).2" /> অংশগ্রহণকারীরা দুটি তথ্যমূলক লেখা পড়ে এবং তাদের শেখার ফলাফল একটি মেমরি টাস্কের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। মেটাকগনিশনমূলক জ্ঞান ও দক্ষতা স্ব-প্রতিবেদনের মাধ্যমে এবং অভিজ্ঞতা পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস ও শেখার বিচার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। ফলাফল দেখায় যে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্তদের পাঠ ও বানান সমস্যা সাধারণত কম মেটাকগনিশন বা কৌশল ব্যবহারজনিত নয়। স্বাভাবিক শিশুদের উপর একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা যায়, ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের মেটাকগনিশন জ্ঞান তুলনামূলকভাবে ভালো।<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).3" /> গবেষণায় আরও উঠে আসে, পাঠ অনুধাবন ব্যক্তিগত কৌশল জ্ঞানভিত্তিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দুটি গবেষণাই বোঝায়, ডিসলেক্সিয়ায় পাঠ অনুধাবনের ঘাটতি মেটাকগনিশনের কারণে নয়, কিন্তু স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে পাঠ অনুধাবন তাদের মেটাকগনিশনের স্তরের উপর নির্ভর করে। '''প্রশ্ন তৈরি''' শিক্ষার্থীদের পাঠ্য অনুধাবনে সহায়তা করতে পারে। “একজন আদর্শ শিখনকারী – আত্ম-নিয়ন্ত্রিত ও সক্রিয় – হলো সেই ব্যক্তি যে গভীর প্রশ্ন তোলে এবং এর উত্তর অনুসন্ধান করে” (Garcia et al. ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> বিভিন্ন গবেষণায় প্রশ্ন তৈরির পাঠ্য অনুধাবনে প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে। Garcia et al. (২০১৪) নবম শ্রেণির ৭২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিজ্ঞানের ক্লাসে একটি গবেষণা করেন। ফলাফল অনুযায়ী, “প্রশ্ন তৈরির প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের শেখা ও অধ্যয়নের পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত তাদের মেটাকগনিশনে” (Garcia et al. ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা, যারা প্রম্পটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পায়, তাদের মেটাকগনিশন জ্ঞান ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ স্কোর সর্বোচ্চ হয়। এটি বোঝায় যে প্রশ্ন তৈরির কার্যকারিতা শিক্ষার্থীর মেটাকগনিশন জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তৈরি করানোর আগে তাদের মেটাকগনিশন দক্ষতা চিহ্নিত করা শিক্ষকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। === লেখায় মেটাকগনিশন === বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখালেখিতে মেটাকগনিশন দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিক্ষকরা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে চিন্তা ও পর্যালোচনার আহ্বান জানান, বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সচরাচর তাদের লেখাকে গভীরভাবে মূল্যায়ন বা পরিমার্জন করে না। প্যারট ও চেরি (২০১৫) এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও সক্রিয় লেখাচিন্তায় উৎসাহিত করতে নতুন শিক্ষণ কৌশল '''প্রক্রিয়া স্মারক''' (process memos) প্রস্তাব করেন।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> প্রক্রিয়া স্মারক হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠানো নির্দেশিত প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা তাদের রচনার প্রথম খসড়া এবং চূড়ান্ত সংস্করণ উভয়ের পর প্রক্রিয়া স্মারক জমা দেয়। প্রথম খসড়ায়, শিক্ষার্থীদের তাদের রচনা, রুব্রিকের সহায়কতা, অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন, নিজের রচনার শক্তি ও দুর্বলতা এবং চূড়ান্ত সংস্করণে উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়। এরপর শিক্ষক রচনা মূল্যায়ন করে প্রতিক্রিয়া দেন। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া স্মারকে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বলা হয়, যেমন “কোন মন্তব্য সবচেয়ে সহায়ক ছিল, এবং কেন?” (Parrott et al, ২০১৫, পৃ. ১৪৭)।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> Parrott ও Cherry প্রথমে ২০০৫ সালে প্রক্রিয়া স্মারক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন এবং ২০১৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় তা প্রয়োগ করেন। এই গবেষণায় সমাজতত্ত্বের বিভিন্ন স্তরের ২৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অংশ নেয়।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে যে, প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উভয়কেই লেখালেখির প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে সাহায্য করে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাদানের গুণমান সম্পর্কে মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন, যা ভবিষ্যতে তাদের পদ্ধতি উন্নত করতে এবং রুব্রিকগুলো আরও স্পষ্ট করতে সহায়ক হয়। যদিও কিছু শিক্ষার্থী প্রসেস মেমোকে গুরুত্ব দেয়নি এবং পর্যাপ্ত মন্তব্য করেনি, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই পদ্ধতিকে তাদের লেখার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কার্যকর মনে করেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সৎভাবে মন্তব্য প্রদান করেছে। প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে যোগাযোগকেও উৎসাহিত করেছে, কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষকরা সরাসরি শিক্ষার্থীর প্রতিফলনের জবাব দিতে পারেন। Parrot এবং Cherry-এর মতে প্রসেস মেমোর আরেকটি সুবিধা হলো, এটি শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করে, ফলে যারা ক্লাসে প্রশ্ন করার জন্য হাত তুলতে সংকোচ বোধ করে, তারাও উপকৃত হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ সচেতনতা বাড়াতে এবং ধাপে ধাপে লেখার পথে দিকনির্দেশনা দিতে একটি কার্যকর উপায়। === বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন === পূর্বে উল্লেখিতভাবে, মেটাকগনিশন বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চস্তরের বিজ্ঞান চর্চায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উপলব্ধি ও প্রক্রিয়াগত কৌশলগুলো পুনর্গঠন করতে হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যথাক্রমে তাদের শেখা ও শেখানোর উপরে প্রভাব ফেলে। তবে অনেক শিক্ষক এই বিশ্বাসগুলোকে স্বাভাবিক ধরে নেন। Abd-El-Khalick প্রমুখ (১৯৯৮) পরিচালিত এক গবেষণায় প্রাক-সেবা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দেখা যায় যে, খুব বেশি শিক্ষক বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস বা বিজ্ঞান প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষাদান করেন না। এই গবেষণায় কিছু শিক্ষক বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানের প্রকৃতি শেখানো অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই পরিস্থিতি সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়ায় যখন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উচ্চস্তরের বিজ্ঞান শেখে। এটি তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়, কারণ তাদের বিজ্ঞানকে বোঝার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। Schraw, Crippen ও Hartley (২০০৬) এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেন, “কার্যকর নির্দেশনা এমন হওয়া উচিত যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়কে তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলে”। তাহলে, বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন কীভাবে উৎসাহিত করা যায়? Schraw প্রমুখের মতে, “বাস্তব অনুসন্ধান (authentic inquiry) মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে উৎসাহিত করে, কারণ এতে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের চিন্তায় ভুল বা ধারণাগত ঘাটতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়।” এটি ইনকোয়ারি-ভিত্তিক শিক্ষণ পদ্ধতির অংশ, যাকে অনেক গবেষক বিজ্ঞান শিক্ষায় কার্যকর বলে মনে করেন। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলে এবং সমাধান তৈরি করে। শ্রেণিকক্ষে মেটাকগনিশন বৃদ্ধির আরেকটি উপায় হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, যা Schraw, Crippen ও Hartley উল্লেখ করেছেন। এটি প্রতিক্রিয়া, মডেলিং এবং সামাজিক যোগাযোগ উন্নত করে, ফলে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও জ্ঞানের বিশ্বাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনুরূপভাবে, গাণিতিক শিক্ষণ ও নির্দেশনার গবেষণাতেও মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে “Learning Mathematics” অধ্যায়টি দেখুন। == উন্নয়নমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে মেটাকগনিশন == গবেষণায় দেখা গেছে, মেটাকগনিটিভ ক্ষমতা বয়স ও জৈবিক বিষয়ের মতো বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই এই তত্ত্বকে প্রয়োগের জন্য উন্নয়নগত অগ্রগতির ধারণা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। === পরিপক্বতা ভিত্তিক === '''বয়স একটি উপাদান হিসেবে''' * ছোট শিশুরা ** "থিওরি অফ মাইন্ড" ধারণা * কৈশোর * প্রাপ্তবয়স্করা === জৈবিক ভিত্তি === '''শেখার ঘাটতি''' == SRL কৌশল == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন একটি দ্রুত বর্ধনশীল আগ্রহের ক্ষেত্র, বিশেষত শিক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্রের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন তত্ত্বকে একটি সংহত কাঠামোর মধ্যে একত্রিত করা, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণার পর্যালোচনায় প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) শ্রেণিকক্ষে SRL প্রয়োগের কয়েকটি মূল নীতিকে তুলে ধরেছেন। তারা এই নীতিগুলোকে চারটি ধারণার মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন, যা এই ক্ষেত্রের গবেষণাকে সংহত করে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা শিখনের প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হয় যখন তারা আত্ম-মূল্যায়ন করতে পারে। অর্থাৎ, তারা কীভাবে শিখছে তা বিশ্লেষণ করে, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে, কী জানে আর কী জানে না তা মূল্যায়ন করে, এবং নিজের প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করে—এই উপায়ে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, চিন্তা ও আবেগের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে বেশি নমনীয়তা প্রদান করে। তারা যদি বাস্তববাদী লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যা তাদের দক্ষতা উন্নয়নের দিকে কেন্দ্রীভূত থাকে, সময় ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে এবং শেখার কৌশলগুলো পুনর্বিবেচনা করে, তাহলে তারা নিজেদের জন্য উচ্চতর কর্মক্ষমতার মান নির্ধারণ করতে পারে। তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিভিন্নভাবে শেখানো যায়, যা শিখন প্রক্রিয়াকে অভিযোজিত করে। SRL শিক্ষার্থীদেরকে সরাসরি শেখানো যেতে পারে (নির্দেশিত প্রতিফলন, মেটাকগনিশন সম্পর্কিত আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনুশীলন); এটি পরোক্ষভাবে শেখানো যেতে পারে (মডেলিং ও প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে); এবং এটি ব্যক্তিকৃত অগ্রগতি চিত্রায়নের মাধ্যমেও উৎসাহিত করা যায়। সবশেষে, আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিচয়সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়। শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের আচরণ মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করে, তা তারা যেভাবে নিজেদের দেখতে চায় সেই পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। একটি প্রতিফলনশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার মাধ্যমে, একজন শিক্ষার্থী তার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়। যদিও শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের উপায়ে ভিন্নতা থাকতে পারে, মূল বিষয়টি হলো—তারা কীভাবে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে, তা বোঝা। প্যারিস ও প্যারিস (2001) অনুসারে, আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ (SRL) তিনটি উপায়ে উন্নত করা যায়: (১) পরোক্ষভাবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে: বিদ্যালয়ে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষক কী চান এবং কোনটি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী, তা শেখাতে পারে।<ref name="Paris, A.H. (2001)." /> এর একটি উদাহরণ হলো, কাজটি আবার যাচাই করা—যদিও শুরুতে সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক হয় এবং তাই পরবর্তীবারেও এটি করা উপকারী হবে। (২) আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ সরাসরি শেখানো যায়: শিক্ষার্থীরা এমন শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখতে পারে, যারা কার্যকর কৌশল ব্যবহারে জোর দেন এবং লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত একটি গাণিতিক সমস্যা বিশ্লেষণের কৌশলগত ধাপগুলো তুলে ধরতে পারেন। (৩) আত্ম-নিয়ন্ত্রণ তখন উদ্দীপিত হয়, যখন এটি এমন সক্রিয় অনুশীলনের সঙ্গে একীভূত হয়, যার মধ্যে SRL বিদ্যমান থাকে। একটি কার্যকর অনুশীলন হলো—সহযোগিতামূলক শিক্ষণ প্রকল্প, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সামগ্রিক প্রকল্পের একটি অংশের জন্য দায়িত্ব নেয়। এ ধরনের প্রকল্পে আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ বিদ্যমান থাকে, কারণ শিক্ষার্থীরা অন্যদের প্রতিক্রিয়া থেকে এবং তারা প্রকল্পে কীভাবে অবদান রেখেছে তার বিশ্লেষণ থেকে শিখে থাকে। SRL বৃদ্ধির এই তিনটি উপায় প্রায়শই মিলিতভাবে দেখা যায়, যেহেতু শিক্ষার্থীরা সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষাক্ষেত্র জুড়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষণ কৌশল শেখানো হয়, যেগুলো তাদের পড়াশোনায় প্রয়োগ করতে বলা হয়; তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র এই কৌশলগুলো জানা যথেষ্ট নয়, বরং এই কৌশলগুলোর ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাও জরুরি (Leutner et al., 2007)। Leutner, Leopold এবং Elzen-Rump (2007)-এর কম্পিউটারভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শুধু একটি কার্যকর জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষণ কৌশল (হাইলাইটিং) শেখানো নয়, বরং কৌশলটি কিভাবে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে—এ বিষয়ে মেটাকগনিটিভ প্রশিক্ষণ দেওয়াটাও উপকারী।<ref name="Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007).">Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007). Self-regulated learning with a text-highlighting strategyːA training experiment. Journal of Psychology, 215 (3), 174-182.</ref> এই গবেষণায় ৪৫ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে এলোমেলোভাবে তিনটি দলে ভাগ করা হয়—একটি দলে কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, একটি দলে শুধু হাইলাইটিং কৌশল শেখানো হয়েছে, এবং অন্যটিতে হাইলাইটিং কৌশলের সঙ্গে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়েছে। মিশ্র প্রশিক্ষণ দল এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের সংস্করণ পায়, যেখানে কীভাবে মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে হয়, তা ধাপে ধাপে শেখানো হয় এবং তা অনুশীলনের সময় ও প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যারা কৌশল ব্যবহারের পাশাপাশি এর মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণও শিখেছিল, তারা তাদের শেখাকে লক্ষ্যভিত্তিকভাবে আরও সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছিল। শুধুমাত্র কৌশল শিখানো দলটি যাদের কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, তাদের চেয়ে ভালো ফল করে; তবে মিশ্র প্রশিক্ষণ দল উভয় দলকেই ছাড়িয়ে যায়, যা প্রমাণ করে—যদিও কৌশল ব্যবহার ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবুও কৌশল নিয়ন্ত্রণ শেখানো হলে শেখার মান আরও উন্নত হয়। == প্রযুক্তি সংযুক্তকরণ == === প্রযুক্তি ও SRL এর সংযোগ === প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েছে, Prensky (2001) তার প্রবন্ধে পরামর্শ দেন—শিক্ষকদের উচিত এমন উপায় খুঁজে বের করা, যার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করা যায়। এছাড়াও, শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের “চাহিদা” বুঝে উপলব্ধ তথ্য ও কম্পিউটিং ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ উপায়ে পাঠ উপস্থাপন করতে হবে।<ref name="Beishuizen, J. (2007).''">Beishuizen, J. (2007). Self-regulated Learning in Technology Enhanced Learning Environments – a European review. In R. Carneiro, P. Lefrere, K. Steffens. (Eds). Kaleidoscope Seed Project, Retrieved from http://www.lmi.ub.es/ taconet/documents/srlinteles3.pdf.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''">Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008). Self- regulated Learning in Technology Enhanced Environments: Perspectives and Practice. Education – Line: European Conference on Educational Research, University of Goteborg.</ref><ref name="Prensky, M. (2001, September).''">Prensky, M. (2001, September). Digital natives, digital immigrants part 1. On the Horizon 9(5).</ref> আজকের দিনে, প্রযুক্তি-নির্ভর হস্তক্ষেপ প্রধানত ডিজিটাল প্রজন্মের আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।<ref name="Prensky, M. (2001, September).''" /><ref name="Kitsantas, A. (2013).''">Kitsantas, A. (2013). Fostering college students’ self-regualted learning with learning technologies. Hellenic Journal of Psychology, 10(2013), pp. 235 – 252.</ref> শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের শিক্ষণ কার্যক্রম পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়নে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''">Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011). Self-regulated learning in technology enhanced learning environments A European perspective. Sense Publishers Rotterdam/ Boston/ Taiper.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান, আগ্রহ এবং প্রেরণা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ SRL পরিবেশে তাদের ব্যক্তিগত শেখার অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স ও ফলাফলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> উদাহরণস্বরূপ, Ma et al. (2015) বুদ্ধিমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার (ITSs) ব্যবহারের কথা বলেন, যেগুলো শিক্ষার পরিবেশে প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফল উন্নয়নে প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে। কম্পিউটারভিত্তিক এই ITSs ব্যবস্থাগুলো শিক্ষার্থীদের আচরণের ভিত্তিতে শেখার কার্যক্রমে যুক্ত করে।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''">Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014). Intelligent tutoring systems and learning outcomes: A meta-analysis. Journal of Educational Psychology, 106(4), 901-918.</ref> ITSs বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করে এবং “প্রতিটি কাজকে একটি উৎপাদন নিয়মের সেট হিসেবে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সবচেয়ে বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন এমন নিয়মের একটি সেট হিসেবে বর্ণনা করে, এরপর সেরা মিল খুঁজে পায়” (Ma et al., 2015, p.4)।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''" /> ITSs প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজস্ব কাজ নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়, যা বিভিন্ন জ্ঞানের স্তর ও শেখার সক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর হতে পারে। ITSs-এর এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণের সুবিধা শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার নিয়ন্ত্রণ নিতে উৎসাহিত করে, যা আত্ম-প্রেরণা ও আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে উৎসাহিত করে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''">Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a). Support self-regulated learning. S. Kroop et al. (eds.), Responsive Open Learning Environments, pp. 17- 49. DOI 10.1007/978-3-319-02399-1_2.</ref><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''">Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b). A competence-based service for supporting self-regulated learning in virtual environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), 101–133.</ref> Kauffman, Zhao এবং Yang (2011) Ma et al.-এর মতোই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও মেটাকগনিশন উন্নত করার বিষয়ে উপসংহার টানেন।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''">Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011). Effects of online note taking formats and self-monitoring prompts on learning from online text: Using technology to enhance self-regulated learning. Contemporary Educational Psychology 36 (2011) 313–322.</ref> তারা আরও বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষাদানে মাল্টিমিডিয়া ও বিষয়বস্তুর সংগঠনের ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়া যায়। শিক্ষাবিষয়ক ডিজাইনার ও শিক্ষকরা ওয়েব-ভিত্তিক পদ্ধতি ও মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামের মাধ্যমে পাঠ্যবস্তু তৈরি ও বিতরণ করতে পারেন। বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাট শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে, তাদের শেখার আগ্রহ বাড়াতে এবং তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করতে সাহায্য করে (Kauffman et al., 2011)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> অন্যদিকে, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে কাজ সম্পন্ন করতে পারে এবং “তাদের বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাটে পাঠ্যবস্তু দেখার একাধিক বিকল্প প্রদান করা হয়” (Kauffman et al., 2011, p.43)<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> যা তাদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় ও আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার সঙ্গে যুক্ত করে। এছাড়াও, বিষয়বস্তু তৈরি করার সরঞ্জামগুলো শক্তিশালী শিক্ষণ কৌশল ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মিডিয়া ফরম্যাট ব্যবহার করে পাঠ্যবস্তুর ওপর নিজেদের বোঝাপড়া তুলে ধরতে পারে এবং তাদের শেখার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে পারে (Kauffman et al., 2011)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সমস্যা === ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্রুতগতিতে বাড়ায়, ফলে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ (SRL) প্রক্রিয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /><ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়াকে সম্পূর্ণরূপে নিরীক্ষণ করতে পারে না এবং এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা SRL চলাকালে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা বিকাশে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, শিক্ষার্থীরা SRL প্রক্রিয়ায় স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ হারায় এবং শিক্ষণ চলাকালীন তাদের তথ্য প্রবাহ ভালোভাবে বোঝার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে মৌখিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হয়।<ref name="Azevedo Roger. (2005).''" /> উদাহরণস্বরূপ, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) শেখার কনটেন্ট বিতরণ করে, শেখার প্রক্রিয়া সংগঠিত করে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে একটি ইন্টারফেসের মাধ্যমে। তবে শিক্ষার্থীরা LMS ব্যবহারের সময় তাদের নিজের শেখার প্রক্রিয়ায় প্রকৃত অর্থে কোনও স্বাধীনতা পায় না। বরং শিক্ষকরা তাদের বোঝাপড়া সার্বক্ষণিকভাবে নিরীক্ষণ করেন।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /> <ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /> এর বিপরীতে, পার্সোনাল লার্নিং এনভায়রনমেন্ট (PLE) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পছন্দমতো সেবা বাছাই ও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়, যদিও তারা কনটেন্ট ও শেখার কৌশলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। কিন্তু, PLE-তে কনটেন্ট এবং পদ্ধতির উপযুক্ত নির্দেশনার অভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ কম কার্যকর হয়ে ওঠে<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" />; এর ফলে SRL দক্ষতাও সীমিত হয়ে পড়ে। === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সুযোগ === যদিও SRL-এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উদ্বেগ রয়েছে, তথাপি অস্বীকার করা যায় না যে প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জ্ঞান অর্জন ও ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> বিভিন্ন তথ্যসূত্রে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে, Simao ও সহকর্মীরা (২০০৮) খুঁজে পান যে প্রযুক্তি নতুন উপায়ে শিক্ষণ পরিকল্পনা ও সম্পাদনের সুযোগ দেয়, যা নির্দিষ্ট দক্ষতা বিকাশে সহায়ক হতে পারে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া স্বনিয়ন্ত্রিত করার সক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে তারা নিজেরা নির্ধারিত বা তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে, শিক্ষকদের উচিত এমন সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তৈরি করা যা SRL উৎসাহিত করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> অনেক একাডেমিক প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, শিক্ষাগত প্রযুক্তি SRL উৎসাহিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /><ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> প্রকৃতপক্ষে, এই নিবন্ধের শেষাংশে কিছু প্রযুক্তির উদাহরণ তুলে ধরা হবে যা শিক্ষার্থীদের SRL অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি। এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেখানো যে, কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে কার্যকর। বিশেষ করে, যখন প্রযুক্তি সচেতনভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ, প্রেরণা এবং অনলাইন শিক্ষায় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> এছাড়াও, কিছু গবেষক, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় SRL-কে সহায়তা করতে শিক্ষাগত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা জানতে চায়, শিক্ষাগত প্রযুক্তি কি একটি বিকল্প শিক্ষণ কৌশল হিসেবে, নাকি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক হিসেবে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় স্থান পায়? প্রযুক্তি কি শিক্ষক/শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী/শিক্ষার্থী ইন্টারঅ্যাকশন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে? কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিশন, প্রেরণা এবং আচরণ উন্নত করতে পারে যাতে তারা SRL-এ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধানই নিবন্ধের শেষাংশে প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে, যেমন—Betty’s Brain, MetaTutor, এবং nStudy। এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের শেখার কৌশল নির্বাচন, কৌশলের প্রভাব পর্যবেক্ষণ এবং প্রাপ্ত তথ্য সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়নের সক্ষমতা দেয়, যা মেটাকগনিশন প্রতিফলনে সহায়ক।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> এই অংশে তিনটি বিদ্যমান প্রযুক্তি বর্ণনা করা হবে এবং কিভাবে তা SRL সমর্থন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, তা ব্যাখ্যা করা হবে। [[চিত্র:Betty's_Brain.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৩. Betty’s Brain এর প্রাথমিক ইন্টারফেস]] [[চিত্র:MetaTutor.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৪. MetaTutor ইন্টারফেস]] * '''Betty’s Brain''' Betty's Brain একটি "teachable agent system", যা Vanderbilt University-তে তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ এবং কৌশল ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> Betty's Brain-এ, শিক্ষার্থীরা প্রথমে বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ে শেখে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> তারপর তারা ধারণামূলক মানচিত্র (concept map) তৈরি করে এবং সেই মানচিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার এজেন্ট চরিত্র ‘Betty’ কে শেখায়।<ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).2" /> Roscoe ও সহকর্মীরা (২০১৩) ব্যাখ্যা করেন যে, এই মানচিত্র তৈরি শিক্ষার্থীদের নতুন ও পুরনো জ্ঞান সংহত ও সংগঠিত করতে সহায়তা করে এবং গভীরতর নীতির মধ্যে কিভাবে ধারণাগুলো সংযুক্ত, তা বুঝতে সাহায্য করে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> অন্যকে শেখানোর আগে শিক্ষার্থীদের নিজে শিখতে ও সমস্যার সমাধান করতে হয়। শেখানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা Betty প্রোগ্রাম থেকে প্রতিক্রিয়া পায় এবং এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে জ্ঞান স্থানান্তর করতে উদ্বুদ্ধ হয়, ফলে মেটাকগনিশন ও স্বনিয়ন্ত্রিত চর্চা বৃদ্ধি পায়।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Winne, P.H., Nesbit, J.C., Kumar, V., Hadwin, A.F., Lajoie, S.P., Azevedo, R., & Perry, N.E. (2006).''" /> এইভাবে তারা নিজেদের এবং তাদের এজেন্টের দক্ষতা মূল্যায়ন করতে ও উন্নত করতে সক্ষম হয়। শেষ পর্যন্ত, Roscoe ও সহকর্মীরা (২০১৩) বলেন, শিক্ষার্থীরা “মানচিত্রের ত্রুটি চিহ্নিত ও সংশোধন করতে মেটাকগনিশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সঠিকতা ও পূর্ণতা বৃদ্ধি করতে পারে” (পৃষ্ঠা ২৮৯)।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> * '''Azevedo-এর MetaTutor''' Khosravifar ও সহকর্মীদের (২০১৩) মতে, MetaTutor হলো গবেষণাভিত্তিক একটি শিক্ষণ টুল যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে তৈরি। বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাকটিভ ও কৌশলগত বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানগত, আবেগীয়, মেটাকগনিশন ও প্রেরণা স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করতে পারে।<ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /> এটি হাইপারমিডিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিজ্ঞান বিষয় শেখাতে তৈরি।<ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> MetaTutor শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সারসংক্ষেপ, নোট নেওয়া ইত্যাদি নিরীক্ষণ, মডেলিং এবং উৎসাহিত করে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''" /><ref name="Zimmerman, B. J. (2008). ''" /> শিক্ষার্থীদের MetaTutor ব্যবহারের আগে SRL বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এই হাইপারমিডিয়া পরিবেশে চারজন পেডাগজিক্যাল এজেন্ট থাকে, যারা অংশগ্রহণকারীদের শেখার দক্ষতা গঠনে প্রতিক্রিয়া প্রদান করে, সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে এবং cognitive কৌশল (যেমন—সারাংশ লেখা, নোট গ্রহণ) ব্যবহারে সহায়তা করে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> MetaTutor ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে এবং নিজের পছন্দমতো SRL কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> MetaTutor অংশগ্রহণকারীদের সব ধরনের ইন্টারঅ্যাকশন ট্র্যাক করতে এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ একটি লগ ফাইলে রেকর্ড করতে সক্ষম। যখন তথ্যগুলো দেখায় যে একজন শিক্ষার্থী অকার্যকর কৌশল ব্যবহার করছে, তখন MetaTutor-এর এজেন্ট শিক্ষার্থীকে আরও কার্যকর শেখার কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। শিক্ষার্থীরা এই প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করে শেখার পরিবেশে নিজেদের সিদ্ধান্ত ও ফলাফল উন্নত করতে পারে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''2" /> একই সময়ে, শিক্ষকরা MetaTutor থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বুঝতে পারেন শিক্ষার্থীরা কীভাবে MetaTutor-এর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করছে এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /> যদিও MetaTutor-এর পেডাগোজিকাল এজেন্টগুলো শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শেখার অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা এখনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কার্যকর কৌশল প্রদান করে, যা শেখার পরিকল্পনা ও তদারকিতে সহায়তা করে। [[চিত্র:NStudy.jpg|থাম্ব|355x355পিক্সেল|চিত্র ১৫: nStudy ব্রাউজার, উদ্ধৃতির তালিকা, এবং সংযুক্ত করার টুলসমূহ]] * '''nStudy''' প্রফেসর উইনে ও তার গবেষণা দল nStudy নামক একটি ওয়েবভিত্তিক শেখার টুল তৈরি করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান, নজরদারি, সংগঠন, অনুশীলন ও অনুবাদ করার জন্য সহায়তা করে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> এই ডিজাইনটি এমনভাবে তৈরি যাতে শিক্ষার্থী ও গবেষক উভয়েই ওয়েবভিত্তিক পরিবেশে সক্রিয়ভাবে শেখা ও গবেষণায় অংশ নিতে পারেন। nStudy-তে তারা শেখার উপাদান তৈরি, সম্পাদনা ও সংযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের মতো করে সংগঠিত করতে পারে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> Betty’s Brain-এর মতো, তারা ধারণার ম্যাপও তৈরি করতে পারে এবং সেগুলো সংযুক্ত, গুচ্ছিত ও স্থানীয়ভাবে সাজিয়ে নিতে পারে। এই সংযুক্তি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত শেখার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং তথ্য বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের ইন্টারঅ্যাকশন, ব্যাখ্যা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে।<ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> nStudy একক ও দলগত শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি ওয়ার্কস্পেস তৈরি করে যেখানে তারা তথ্য আদান-প্রদান, সহযোগিতা এবং বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে পারে, যা তাদের সম্মিলিত শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> তাছাড়া, ওয়ার্কস্পেস জুড়ে তথ্য আদান-প্রদান “ভূমিকা ও প্রম্পটের মাধ্যমে কাঠামোবদ্ধ হতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ, একে অপরের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয়” (Winne & Hadwin, 2013, পৃ. ৩০২)। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা যখন nStudy টুল ব্যবহার করে শেখে বা গবেষণা করে, তখন সিস্টেম ট্রেস ডেটা সংগ্রহ করে যা আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার সময় ঘটে যাওয়া নির্দিষ্ট জ্ঞানীয় ও অধিজ্ঞানীয় ঘটনাকে প্রতিফলিত করতে পারে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সহজতর ও উৎসাহ প্রদান == Self-regulated learning (SRL) হল একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীদের তাদের চিন্তা, আচরণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা সফলভাবে শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিজে নিজেই পরিকল্পনা, তদারকি ও মূল্যায়ন করতে হয়। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /> SRL শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মোটিভেশন ও সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা কতটা নিজেদের চিন্তা, মোটিভেশন ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা বোঝায়। বাস্তবে, স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন শেখার প্রক্রিয়ার সক্রিয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। <ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সামাজিক নয়, তবে তার বিকাশ সামাজিক পরিবেশে ঘটে যা কাঠামো ও স্বাধীনতার সুযোগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> গবেষণায় দেখা গেছে স্ব-নিয়ন্ত্রণ শেখানো যায় এবং এটি শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন ও অর্জন বৃদ্ধি করতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষক, কোচ ও সহপাঠীদের নির্দেশনা ও মডেলিং এর মাধ্যমে প্রতিটি স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া শেখা যায়।<ref name="Zimmerman20025" /> পাশাপাশি, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে SRL বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে পারে। <ref name="Dignath, C., & Büttner, G. (2008).”" /><ref name="Masui, C., & De Corte, E. (2005).”" /><ref name="Perels, F., Gürtler, T., & Schmitz, B. (2005).”" /><ref name="Schunk, D. H., & Ertmer, P. A. (2000).”" /> উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা মনিটরিং ও অনুকরণের মাধ্যমে SRL দক্ষতা শিখেছিল, তারা যারা এসব প্রশিক্ষণ পায়নি তাদের তুলনায় বেশি আত্মবিশ্বাসী ও ফলপ্রসূ ছিল। <ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”" /> তাই শিক্ষার্থীদের পুরো স্কুলজীবন জুড়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চর্চা করা উচিত এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব তাদের এই আচরণ গঠনে সহায়তা করা। <ref name="Waeytens, K., Lens, W., & Vandenberghe, R. (2002). ”" /> যখন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আরও স্বনিয়ন্ত্রিত হতে শেখান, তখন তারা একাডেমিক সাফল্য, মোটিভেশন এবং জীবনব্যাপী শেখার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। <ref name="Graham, S., & Harris, K.R. (2005).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এমন স্বনিয়ন্ত্রিত শেখায় সক্ষম করতে পারেন যাতে তারা পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ, শেখার অগ্রগতি তদারকি এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার লক্ষ্যে নিজেদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে পারে। শিক্ষকরা সরাসরি শেখার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে অথবা পরোক্ষভাবে এমন শেখার পরিবেশ তৈরি করে SRL উন্নীত করতে পারেন। <ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”" /> === স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার বিকাশ === Zimmerman (2002) অনুসারে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াটি তিনটি স্পষ্ট ধাপে বিভক্ত: ''অগ্রচিন্তা ও পরিকল্পনা ধাপ'': শেখার কাজ বিশ্লেষণ এবং সেই কাজ শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই ধাপে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কার্যকর পদ্ধতির নির্দেশনা দেন, কাঠামোবদ্ধ ও সুস্পষ্ট শিক্ষা প্রদান করেন, কৌশলগুলোর মডেল দেখান এবং কৌশলটি অন্য অনুরূপ কাজে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /><ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”" /> ''পারফরম্যান্স তদারকি ধাপ'': শেখার কাজ এগিয়ে নিতে কৌশল ব্যবহার, কৌশলের কার্যকারিতা তদারকি এবং শেখার প্রতি মোটিভেশন পর্যবেক্ষণ করা হয়। শিক্ষকরা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন, যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন কৌশল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। যখন শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে শিখে যায়, তখন শিক্ষকরা ধীরে ধীরে নির্দেশনা কমিয়ে গাইডের ভূমিকা পালন করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> ''পারফরম্যান্সের প্রতিফলন ধাপ'': শেখার কাজের উপর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এবং ফলাফলের প্রতি আবেগগত প্রতিক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। শিক্ষকরা সহপাঠী মূল্যায়ন ও প্রতিফলন উৎসাহিত করে, মূল্যায়ন সহজতর করে এবং সবকিছু শেখার লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রাখেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময় কী কাজ করেছে তা শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন, তাদের আত্মবিশ্বাস ও মোটিভেশন বাড়ান এবং কার্যকর কৌশল ব্যবহারের জন্য প্রশংসা প্রদান করেন। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> [[চিত্র:The_Cycle_of_SRL.png|থাম্ব|483x483পিক্সেল|চিত্র ১৬: স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চক্র]] স্ব-নিয়ন্ত্রিত দক্ষতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হয় না। এই দক্ষতার বিকাশ চারটি ধাপে ঘটে: পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ, স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ। পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে সফল পারফরম্যান্সের একটি ধারণা পায়। এটি তাদের সাধারণ পারফরম্যান্স মানদণ্ড গড়ে তুলতে এবং দক্ষতা অর্জনের সময় মোটিভেশন নিয়ন্ত্রণের কৌশল বুঝতে সহায়তা করে। অনুকরণের পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একটি সাধারণ কৌশল ব্যবহার করে পারফর্ম করে এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া ও নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের পারফরম্যান্সের যথার্থতা উন্নত হয়। তদ্ব্যতীত, সামাজিক উৎসাহ যেমন প্রশংসা বা উত্সাহও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে সহায়তা করে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণের স্তরটি কাঠামোবদ্ধ অনুশীলন এবং আত্ম-পর্যবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নিয়মিত পরিবেশে একটি দক্ষতা অনুশীলন করে। তারা কোনো মডেলের পারফরম্যান্সের দিকে নজর দিতে পারে এবং সেটিকে অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণ করতে পারে, এবং তাদের উচিত ফলাফলের পরিবর্তে প্রক্রিয়ার উপর জোর দেওয়া। আত্ম-নিয়ন্ত্রিত স্তরের দক্ষতাগুলো অনিয়মিত পরিবেশে সম্পাদিত হয়। শিক্ষার্থীদের উচিত শুধুমাত্র শিখিত দক্ষতার অনুশীলনের পরিবর্তে পারফরম্যান্সের গুণমান ও কার্যকারিতার উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আনা। তারা স্বতন্ত্রভাবে দক্ষতা সম্পাদন করতে পারে, তবে মাঝে মাঝে সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”">Zimmerman, B. J. (2000). Self-efficacy: An essential motive to learn. Contemporary educational psychology, 25(1), 82-91.</ref> ফিগার ১৬-তে SRL (Self-Regulated Learning)-এর চক্র চিত্রিত হয়েছে। === শিক্ষার্থীদের জন্য আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলসমূহ === '''আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের ধরনসমূহ''' চার ধরনের SRL কৌশল রয়েছে যা শিক্ষাকে সহায়তা করতে পারে<ref name="de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013).”">de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013). Effective strategies for self-regulated learning: A meta-analysis. GION/RUG.</ref><ref name="Kobayashi, M. (2006).”">Kobayashi, M. (2006). Facilitating Academic Achievement in High School Interactive Television Programs by Promoting Self-Regulated Learning (Doctoral dissertation, Virginia Polytechnic Institute and State University).</ref>: ** কগনিটিভ কৌশল**: পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, বিস্তার ও উপকরণের রূপান্তর বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। বিস্তার শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্য পূর্ব জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে; কল্পনা মানসিক চিত্রকে বোঝায় যা মেমোরি শক্তিশালী করে; পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের কার্যস্মৃতিতে তথ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে; রূপান্তর ও সংগঠনের কৌশলের মধ্যে সারসংক্ষেপ, রূপরেখা তৈরি, নোট নেওয়া বা উপকরণ পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত। ** মেটাকগনিটিভ কৌশল**: পরিকল্পনা, আত্ম-সচেতনতা, পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়ন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার কৌশল হলো কাজ বিশ্লেষণ ও লক্ষ্য নির্ধারণ। সাধারণ পর্যবেক্ষণের কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্ম-রেকর্ডিং ও আত্ম-পরীক্ষা।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> আত্ম-পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের সাথে সম্পর্কিত। আত্ম-নির্দেশনা ও মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ কৌশল মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আত্ম-নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের কাজের প্রতি মনোযোগী করে এবং উপকরণ মনে রাখার দক্ষতা বাড়ায়। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ বিঘ্ন অপসারণ করে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। ** পরিচালনাগত কৌশল**: শেখার সর্বোত্তম পরিবেশ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা ও সহায়তা চাওয়া অন্তর্ভুক্ত। আত্ম-রেকর্ডিং সাধারণত সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় উৎসাহ দেওয়া তাদের সহায়তা চাওয়ার আচরণ বৃদ্ধি করে। শ্রেণিকক্ষের কাঠামো, প্রতিক্রিয়া ও যোগাযোগের ধরণও সহায়তা চাওয়ার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। ** প্রেরণাগত কৌশল**: শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য তাদের অনুপ্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে শেখার উদ্দেশ্য নির্ধারণ, যা লক্ষ্যভিত্তিক মনোভাব গঠন করে; ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ, যা আত্ম-দক্ষতা বাড়ায়; উপকরণকে আকর্ষণীয় বা চ্যালেঞ্জিং করে আগ্রহ সৃষ্টি; এবং আত্ম-উৎসাহমূলক কথাবার্তা। ** সারণী ১: কৌশলের ধরনসমূহ** {| class="wikitable" |'''কৌশলের ধরন''' |'''বর্ণনা''' |'''উদাহরণ''' |- |কগনিটিভ কৌশল |বিষয়বস্তুর সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কৌশল। |পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, উপকরণ সংগঠন |- |মেটাকগনিটিভ কৌশল |শেখা সংগঠিত, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের কৌশল। |কাজ বিশ্লেষণ, আত্ম-রেকর্ডিং, আত্ম-পরীক্ষা |- |পরিচালনাগত কৌশল |শেখার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কৌশল। |সময় ব্যবস্থাপনা, সহায়তা চাওয়া |- |প্রেরণাগত কৌশল |অনুপ্রেরণা উন্নয়ন ও টিকিয়ে রাখার কৌশল। |লক্ষ্য নির্ধারণ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি |} '''শিক্ষার্থীদের SRL কৌশল শেখানো – আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী তৈরি করা''' শিক্ষকদের আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে SRL উৎসাহিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার সহায়ক আত্ম-নিয়ন্ত্রিত কৌশল শেখাতে হবে। সবচেয়ে কার্যকর ও প্রচলিত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে: লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-প্রেরণা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ, শেখার কৌশলের নমনীয় ব্যবহার, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, উপযুক্ত সহায়তা চাওয়া এবং আত্ম-মূল্যায়ন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** লক্ষ্য নির্ধারণ:** ব্যক্তিগত লক্ষ্য স্থাপন শিক্ষার্থীদের এমন বাস্তবিক ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে যা শেখার উন্নতিতে কাজে আসে। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক। কাছাকাছি লক্ষ্য আত্ম-দক্ষতা ও দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণে উৎসাহিত করতে পারেন যাতে তারা অগ্রগতি অনুসরণ করতে পারে, কী শিখবে তা ভেবে নিতে পারে। ** পরিকল্পনা:** পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করলে SRL উৎসাহিত হয়। লক্ষ্য পূরণে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরিকল্পনা করছে, তা আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রক্রিয়াটির ধাপগুলো মনে রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে পারে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-প্রেরণা:** কাজ বেছে নেওয়া, প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায় শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণার ওপর নির্ভরশীল। উচ্চ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা মেটাকগনিটিভ কৌশল বেশি ব্যবহার করে। স্বাধীনতা, দক্ষতা এবং কাজের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি বাড়ালে আত্ম-প্রেরণা বাড়ে। ** মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ:** আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হতে হয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে বিরতি ও বিঘ্ন অপসারণের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** কৌশলের নমনীয় ব্যবহার:** সফল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একাধিক কৌশল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। শিক্ষকরা নতুন কৌশল মডেলিং করে, শ্রেণিকক্ষকে সমর্থনময় করে এবং অনুশীলনের সময় সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-পর্যবেক্ষণ:** কৌশলগত শিক্ষার্থীরা নিজের শেখার দায়িত্ব নেয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময়, ব্যবহৃত কৌশল এবং ব্যয়িত সময় রেকর্ড করতে উৎসাহিত করতে পারেন, যা তাদের অগ্রগতি দৃশ্যমান করে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** সহায়তা চাওয়া:** আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে অন্যদের সহায়তা চায়। শ্রেণিকক্ষে গঠনমূলক পরিবেশ থাকলে শিক্ষার্থীরা সংকোচ ছাড়াই সাহায্য চাইতে পারে। শিক্ষকরা প্রতিক্রিয়া ও সংশোধনের সুযোগ দিয়ে ইতিবাচক সহায়তা চাওয়ার আচরণ উৎসাহিত করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-মূল্যায়ন:** শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য ও কৌশল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এর মধ্যে চেকলিস্ট ব্যবহার, শেখার বিষয় সারসংক্ষেপ, আত্ম-প্রশ্ন তৈরি ও উত্তর দেওয়া এবং সহপাঠীদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া অন্তর্ভুক্ত।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> [[চিত্র:Actions_SRL.png|কেন্দ্র|থাম্ব|483x483পিক্সেল|ফিগার ১৭: SRL-এর দিকসমূহ – ধারণা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম]] === শ্রেণিকক্ষে আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখা উৎসাহিত করা === '''আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য শিক্ষণ কৌশল''' শিক্ষকদের শিক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখা উন্নত করতে পারে। Kobayashi (2006)<ref name="Kobayashi, M. (2006).”" /> চারটি নীতির কথা বলেছেন যা শিক্ষকরা SRL অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবহার করতে পারেন: কার্যকর শেখার পরিবেশ তৈরিতে শিক্ষার্থীদের গাইড করা; জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখতে পাঠ ও কার্যক্রম সাজানো; শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে লক্ষ্য ও প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করা; এবং ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নের তথ্য ও আত্ম-মূল্যায়নের সুযোগ প্রদান। '''সরাসরি নির্দেশনা ও মডেলিং''' বিভিন্ন শেখার কৌশলের ব্যবহার শিক্ষার্থীদের শেখা সহজ করতে সাহায্য করে। SRL-এর সরাসরি নির্দেশনার মধ্যে বিভিন্ন কৌশল ব্যাখ্যা, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখানো অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের নির্দেশনা মডেলিং ও প্রদর্শনের উপর জোর দেয় যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> শিক্ষকেরা একটি কৌশল প্রয়োগ করে ও চিন্তার ধারা প্রকাশ করে মডেল হতে পারেন বা শিক্ষার্থীদের কৌশলগত আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশ্ন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভাষার ক্লাসে শিক্ষকরা পর্দায় একটি পাঠ্য দেখিয়ে পড়তে পড়তে ভাব প্রকাশ করতে পারেন: “এটা কি বোঝা যাচ্ছে? মূল ভাবটা কী? মনে হচ্ছে আবার শুরু থেকে পড়া উচিত যাতে ভালোভাবে বুঝতে পারি।” একইভাবে, শিক্ষকরা বোর্ডে লেখার সময় ভাব প্রকাশ করে লেখালেখির প্রক্রিয়া দেখাতে পারেন। যেমন: “আমি কি আমার ভাব স্পষ্ট করছি? পাঠকেরা কি বুঝবে আমি কী বলতে চাই? আমি কি আমার পরিকল্পনা অনুসরণ করছি?” শিক্ষার্থীরা তখন প্রধান ভাব, প্রশ্ন ও নিজস্ব মতামত নোট করে বুঝতে পারে। এছাড়া, শিক্ষকরা কোনো কৌশল ব্যাখ্যা করে, তার উপযোগিতা বলেও শেখাতে পারেন।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”2" /> প্রাথমিক শ্রেণিতে, শিক্ষকরা সংলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশে উৎসাহ দিতে পারেন, যেমন “তোমার কী মনে হয়?”, “তুমি কেন তা ভাবছো?” শিক্ষকরা যৌথ অর্থ তৈরির জন্য সহযোগী দক্ষতা ও যোগাযোগমূলক আচরণ শেখাতে পারেন।<ref name="Pino(2014).">Pino-Pasternak, D., Basilio, M., & Whitebread, D. (2014). Interventions and classroom contexts that promote self-regulated learning: Two intervention studies in United Kingdom primary classrooms. Psykhe, 23(2).</ref> * নির্দেশিত ও স্বতন্ত্র অনুশীলন নির্দেশিত অনুশীলন হল এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (SRL) ও অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারেন। এই পর্যায়ে, শেখার কৌশল প্রয়োগের দায়িত্ব ধীরে ধীরে শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের উপর সরে আসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্মেলন (student-teacher conferencing) এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশল ব্যবহারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা পেতে পারে। নির্দেশিত অনুশীলনের পর স্বতন্ত্র অনুশীলন হওয়া উচিত। এই পর্যায়ে, শিক্ষার্থীদের নিজেরাই কৌশল অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের স্বায়ত্তশাসনের বোধকে জোরদার করতে সহায়তা করে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের আত্ম-প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা, যা শেখার সময় তাদের দক্ষতা পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও কার্যকারিতা সমন্বয় করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> এই কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে উন্মুক্ত প্রশ্ন করা, শিক্ষার্থীদের প্রতিফলন প্রদান বাধ্যতামূলক করা, শেখার বিষয়বস্তুর মূল বিষয়গুলো সারাংশ আকারে তুলে ধরা এবং তাদের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা ও উত্তর দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> উদাহরণস্বরূপ, ভাষা শ্রেণিতে SRL এবং পাঠ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়া বইয়ের শিরোনাম লিপিবদ্ধ করতে, পড়ার লগে সময় ও পৃষ্ঠা সংখ্যা রেকর্ড ও গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করতে, বই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ স্তর ধাপে ধাপে বাড়ানোর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, এবং সাপ্তাহিক প্রতিফলন লিখতে বলতেই পারেন। শিক্ষকদের উচিত বিভিন্ন ধরনের শেখার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কার্যকর কৌশল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা। এটি কৌশলের সাধারণীকরণ ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, শিক্ষার্থীদের অনুশীলন, আত্ম-পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের পদ্ধতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং নতুন কৌশলের গঠন ও সংশোধনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।<ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”2" /> * সামাজিক সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া শিক্ষক ও সহপাঠীদের সামাজিক সহায়তা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রণমূলক শিখন দক্ষতা অর্জনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায়শই এই সহায়তা প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে আসে। Labuhn এবং সহকর্মীদের (২০১০)<ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”2" /> গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল, তারা SRL কৌশল আরও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছিল এবং গণিতে ভালো ফল করেছিল। কার্যকর প্রতিক্রিয়ার মধ্যে থাকে কী ভালো হয়েছে, কী উন্নতির প্রয়োজন এবং কীভাবে আরও উন্নতি করা যায় তার নির্দেশনা। শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য, মানদণ্ড ও মান সংক্রান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন গঠন ও মূল্যায়নে সহায়তা করে।<ref name="Omorogiuwa, K. O. (2012).”" /> শিক্ষকদের উচিত ফর্মেটিভ মূল্যায়ন প্রদান করা, যা কেবল শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি দেখায় না বরং তাদেরকে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া গঠন ও নিজস্ব অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।<ref name="Encouraging self-regulated learning in the classroom. (n. d.).”" /> Nicol ও Macfarlane-Dick (২০০৬)<ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”2" /> মতে, কার্যকর প্রতিক্রিয়ার উচিত: ভাল পারফরম্যান্স কী তা পরিষ্কার করা; আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা তৈরি করা; শেখা সম্পর্কে উচ্চমানের তথ্য প্রদান করা; শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে শেখা সম্পর্কিত আলোচনা উৎসাহিত করা; ইতিবাচক প্রেরণা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা; বর্তমান ও কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্সের ব্যবধান দূর করার সুযোগ প্রদান করা; এবং শিক্ষকদের জন্য এমন তথ্য প্রদান করা যা পাঠদানের কৌশল উন্নয়নে ব্যবহৃত হতে পারে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখেন, যা তাদের সফলতার কারণ ও প্রেরণার সাথে সম্পর্কিত একটি মেটা-জ্ঞাতিগ্রাহী দক্ষতা।<ref name="Pino(2014).2" /> SRL উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে একত্রে বাস্তব ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ, সেই লক্ষ্যগুলোর ব্যাখ্যা ও মডেলিং, এবং শিক্ষার্থীর স্তরের সাথে মিল রেখে প্রশ্নের ধরণ সমন্বয় করতে পারেন।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিবাচক শেখার পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উচ্চশিক্ষায়, SRL উন্নয়নের জন্য কোর্স ওয়েবসাইটে একটি ইন্টার‌্যাক্টিভ ফোরাম চালু করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে, ফলে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষা গড়ে ওঠে।<ref name="Ogawa, A. (2011).”" /> * অন্যান্য পাঠদানের কৌশল আত্ম-পর্যবেক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে SRL সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উপায়। নিজের ভুল লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং যথাযথ কৌশল তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারে। গ্রাফ তৈরি করার কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার উপর নিয়ন্ত্রণের ধারণা গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রেড একটি গ্রাফে প্রদর্শন করতে পারে এবং সেই গ্রেড অর্জনে তারা যেসব কৌশল ব্যবহার করেছে তা লিখে রাখলে, কৌশল ও ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট হয়।<ref name="Cleary, T. J., & Zimmerman, B. J. (2004).”" /> পর্যবেক্ষণমূলক অনুশীলন শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠদান কৌশল পরিবর্তন ও মানিয়ে নেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষণ কৌশল কতটা কার্যকর হয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ফলাফল অনুসারে আরও অর্থবহ শিক্ষার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”3" /> '''আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখনকে সহায়ক শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ''' SRL বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল একটি সহায়ক শেখার পরিবেশ তৈরি করা। এটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য, শেখার বিষয়বস্তু ও কাজ এবং পাঠদানের কৌশল দ্বারা গঠিত। উপযুক্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ধারিতভাবে শেখার জন্য সহায়তা ও উৎসাহ দিতে পারে।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”3" /> Young (২০০৫)<ref name="Young, M. R. (2005).”" /> নিম্নলিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন: দক্ষতা ও কাজ-কেন্দ্রিক মনোভাব গঠনের জন্য ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বায়ত্তশাসন উন্নয়নে কাজের পছন্দের সুযোগ প্রদান, শেখার মধ্যে সামাজিক সংযোগ উৎসাহিত করা এবং শেখার ফলাফলের উপর প্রতিক্রিয়া প্রদান। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়ার ধরন তাদের প্রেরণাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কাজের স্বাধীনতা ও তথ্যভিত্তিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাকে সর্বাধিকভাবে বাড়ায়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ঘন ঘন নির্দিষ্ট ও গুণগত প্রতিক্রিয়া প্রদান করা উচিত। শিক্ষার্থীরা আরও চ্যালেঞ্জিং কাজ গ্রহণে আগ্রহী হয় যখন শিক্ষকরা গ্রেডের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। অর্থবহ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, কাজের পছন্দের স্বাধীনতা ও দলগত সহযোগিতা শিক্ষার্থীদের আত্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> শিক্ষকদের উচিত উদারতা ও মতভেদের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যাতে সাহায্য চাওয়া, সাহায্য প্রদান ও ভিন্নমতের আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়। এর মধ্যে রয়েছে চ্যালেঞ্জিং কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা, ভুলকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা, শেখার সাথে যুক্ত নেতিবাচক আবেগকে স্বীকৃতি ও সমাধান দেওয়া এবং অসহায়ত্বজনিত বিশ্বাসগুলো কাটিয়ে ওঠার উপায় শেখানো।<ref name="Pino(2014).2" /> '''শ্রেণিকক্ষে SRL বিকাশে সহায়ক কার্যক্রম''' SRL উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যবহার করা যেতে পারে। জটিল দলগত কাজ শিক্ষার্থীদের নিজের ও অন্যের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে। এটি পরিকল্পনা, ধারণা গঠন, লক্ষ্য অনুযায়ী অগ্রগতি পর্যালোচনা ও দলগত অবদানের ভিত্তিতে বোঝাপড়া পুনর্গঠনে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীর আগ্রহ, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব প্রয়োগ সংবলিত অর্থবহ কার্যক্রম প্রেরণা ও SRL উন্নয়নে সহায়ক। এমন কার্যক্রম যেগুলোর জ্ঞানীয় চাহিদা শিক্ষার্থীর নিকটবর্তী উন্নয়ন অঞ্চলের সাথে মেলে, সেগুলো SRL-এর সাথে জড়িত। বহুমাত্রিক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সুযোগ দেয়। প্রাথমিক শ্রেণিতে আনন্দময় কার্যক্রম SRL অনুশীলনের আকর্ষণীয় উপায় হতে পারে।<ref name="Pino(2014).2" /> Paris ও সহকর্মীরা (২০০১)<ref name="Paris, S. G., & Paris, A. H. (2001).”" /> শ্রেণিকক্ষে SRL বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের চারটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন: আত্ম-মূল্যায়নের মাধ্যমে শেখার গভীরতা অর্জন; চিন্তা, প্রচেষ্টা ও আবেগের আত্ম-ব্যবস্থাপনা; বিভিন্ন উপায়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা প্রদান; এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত আত্মনিয়ন্ত্রণ। শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকরা দলগত বা জোড়ায় কাজ, উন্মুক্ত আলোচনা, শেখার পূর্ব ও পরবর্তী অনুশীলন, এবং ক্লাস শেষে প্রতিফলনের সুযোগ দিতে পারেন।<ref name="Ferreira, P. C., & Simão, A. M. V. (2012).”" /> এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রেরণা ও শেখার কৌশল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে Motivated Strategies for Learning Questionnaire (MSLQ) বা Learning and Study Strategies Inventory (LASSI) ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref name="Kuo, Y. H. (2010).”" /> নিচে কিছু কার্যকর কার্যক্রমের উদাহরণ দেওয়া হলো যেগুলো SRL বৃদ্ধিতে সহায়ক: “Think-Pair-Share” কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে, একসাথে আলোচনা করে এবং পুরো শ্রেণিতে তা ভাগ করে; “Retrieval Practice” কার্যক্রম আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী শেখাকে উৎসাহিত করে; “Sorting-Chunking-Organizing Information” তথ্য শ্রেণিবিন্যাস করে বোঝাপড়া উন্নত করে; “Reading Reflections” আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিফলনমূলক চিন্তনে সহায়তা করে; “Exam Wrappers” কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে চিন্তা ও মূল্যায়নের সুযোগ দেয়।<ref name="Activities that develop self-regulated learning. (n. d.).”" /> = শব্দকোষ = '''অ্যাকশন কন্ট্রোল:''' ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা (উদাঃ অনুপ্রেরণা, ঘনত্ব) যা কোনও ব্যক্তিকে স্ব-নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। '''কগনিটিভ মডেলিং:''' শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা বিকাশের পদ্ধতি যার মধ্যে পারফরম্যান্সের জন্য যুক্তি দেওয়া, কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা জড়িত। '''কগনিটিভ প্রসেসিং:''' একটি শব্দ যা চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞান প্রয়োগ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। '''সহযোগী শিক্ষা''': সহকর্মী / গোষ্ঠীর মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং শেখা। '''ক্রিটিক্যাল থিংকিং:''' তথ্য ওজন, মূল্যায়ন এবং বোঝার সমন্বয়ে একটি প্রতিফলিত চিন্তাভাবনা। '''পূর্বচিন্তা পর্ব:''' শেখার আগে কৌশল নিচ্ছে। স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। '''মেটাকগনিশন:''' ভাবনা নিয়ে ভাবনা। নিজের চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝাপড়া। '''মেটাকগনিটিভ নলেজ:''' ঘোষণামূলক জ্ঞান যেমন ভাষা এবং স্মৃতি। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' কোনও কাজ জুড়ে আসা এবং এর সাথে সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়া করার সময় ব্যক্তিটি কী সচেতন এবং সে কী অনুভব করে। '''মেটাকগনিটিভ দক্ষতা:''' জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগুলোর ইচ্ছাকৃত ব্যবহার (অর্থাত্ পদ্ধতিগত জ্ঞান)। '''অনুপ্রেরণা:'''আচরণ এবং চিন্তাভাবনা যা ব্যক্তিদের সম্পাদন করতে চালিত করে। '''পারফরম্যান্স পর্ব:''' শেখার সময় কৌশল গ্রহণ করা হয়। কৌশল বাস্তবায়ন, এবং কৌশল পর্যবেক্ষণ। '''এনগেজমেন্টের উদ্দেশ্য:'''স্ব-প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ক্রিয়াগুলো যা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক। '''আপেক্ষিকতাবাদী:''' জ্ঞান নমনীয় এবং পরিবর্তনযোগ্য। প্রশ্ন তোলা যায়। '''স্ব-কার্যকারিতা:''' ব্যক্তি কীভাবে নিজের ক্ষমতা এবং অনুভূত ক্ষমতা থেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাসের স্তরটি উপলব্ধি করে '''আত্ম-মূল্যায়ন:''' একটি মান অনুযায়ী নিজেকে মূল্যায়ন করা '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত কর্ম:''' যে উপায়ে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হয়। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন:'''কারও শেখার সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্টভাবে বোঝার ক্ষমতা। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত পর্ব:''' শেখার পর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। মূল্যায়ন। == তথ্যসূত্র == {{সূত্র তালিকা}} eqhdw1yvrusm4fyqnj81v4aey2603u2 84855 84854 2025-06-18T19:36:39Z NusJaS 8394 84855 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের (Self-Regulated Learning - SRL) মৌলিক ধারণাগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। আমরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করেছি। এখানে মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের তাত্ত্বিক ভিত্তি আলোচনা করার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এসব মৌলিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া অ্যাকাডেমিক পরিবেশে শেখার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সহজতর করতে কীভাবে সহায়তা করা যায়। এই অধ্যায়টি পড়ার পর আপনি শিখবেন: * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ধারণা এবং প্রধান মডেলসমূহ। * মেটাকগনিশনের ধারণা এবং কীভাবে এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পুনর্গঠন ও শেখার কৌশল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ও মেটাকগনিশনের উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদানসমূহ। * শেখার বিশ্লেষণ কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। * প্রযুক্তি কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সহজ করে তোলে। * স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিকাশের চারটি ধাপ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের চারটি ধরন। * কীভাবে শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উদ্দীপিত ও উৎসাহিত করা যায়। == ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়ন == [[চিত্র:SRL_Chapter_Map.jpg|থাম্ব|783x783পিক্সেল|চিত্র ১. মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] [[চিত্র:Section_1_Defining_the_Concepts_.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ২. ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়িত করা]] == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সংজ্ঞা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বলতে বোঝায় যে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).">Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.). Boston, MA: Pearson</ref>; এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ কৌশল ব্যবহার করে তাদের জ্ঞান, আচরণ ও প্রেষণা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। <ref name="Zimmerman2002">Zimmerman, B. J. (2002). Becoming a self-regulated learner: an overview. Theory Into Practice.41(2):64–70. doi:10.1207/s15430421tip4102\2.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে, শেখার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে এবং নিজেদের উৎসাহিত করতে পারে <ref name="Purdie, N., & Hattie, J. (1996).">Purdie, N., & Hattie, J. (1996). Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning. American Educational Research Journal 33.(4): 845–871.</ref>। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার পারফরম্যান্স ও আচরণকে আরও সক্রিয় ও দক্ষ করে তুলতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা নিজেদের বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে শেখার কৌশল পরিবর্তন ও উন্নয়ন করতে পারে <ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''">García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014). The effects of question-generation training on metacognitive knowledge, self regulation and learning approaches in Science. Psicothema, 26(3), 385-390.</ref> এবং গঠনমূলক কার্যকলাপ, সহযোগিতামূলক কাজ ও মুক্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের শেখাকে মূল্যায়ন করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রেষণামূলকভাবে সক্রিয় পদ্ধতি। উইন ও বেকার (২০১৩, পৃষ্ঠা ৩)-এর মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হচ্ছে "মেটাকগনিটিভভাবে পরিচালিত প্রেষণার আচরণগত প্রকাশ" <ref name="Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013).">Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013). The potentials of educational data mining for researching metacognition, motivation and self-regulated learning. Journal of Educational Data Mining, 5(1).</ref>। এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা, আচরণ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা শেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সফলভাবে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).">Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011). Encouraging self-regulated learning in the classroom: A review of the literature. Metropolitan Educational Research Consortium (MERC).</ref>। জিমারম্যান (২০০২) এর মতে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও আচরণগত কার্যকলাপ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: পূর্বচিন্তা পর্যায়, কার্যকরন পর্যায় এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে (স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ, কৌশলগত পরিকল্পনা) শেখার কাজ বিশ্লেষণ ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় <ref name="Zimmerman2002" />। কার্যকরন পর্যায়ে কৌশল প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ ঘটে এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়ে শেখার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয় <ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).">Furnes, B., & Norman, E. (2015). Metacognition and reading: Comparing three forms of metacognition in normally developing readers and readers with dyslexia. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 21(3), 273-284</ref>। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া আরও গভীরভাবে বুঝতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বৃহৎ কাঠামো পরবর্তী অংশে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। == মেটাকগনিশনের সংজ্ঞা == মেটাকগনিশন হলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের একটি মূল উপাদান। এটি জ্ঞানীয় চিন্তা এবং চিন্তার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত। মেটাকগনিটিভ সক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতে পারে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। এই অংশে আমরা মেটাকগনিশনের সংজ্ঞার বিবর্তন বিশ্লেষণ করবো। ১৯৭৯ সালে ফ্ল্যাভেল প্রথম মেটাকগনিশনের ধারণা উপস্থাপন করেন তার গবেষণায় <ref name="Flavell, J. H. (1979).">Flavell, J. H. (1979). Metacognition and cognitive monitoring: A new area of cognitive–developmental inquiry. American Psychologist, 34(10), 906-911.</ref>। এটি শেখার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন পাঠ পড়া, লেখা, পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন। মেটাকগনিশনের দুটি মৌলিক কার্যাবলি হলো: জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ <ref name="Efklides, A. (2008).">Efklides, A. (2008). Metacognition: Defining its facets and levels of functioning in relation to self-regulation and co-regulation. European Psychologist, 13(4), 277-287.</ref>। ১৯৮০ সালে অ্যান ব্রাউন মেটাকগনিশনের একটি সংজ্ঞা দেন যা প্রথমবার “regulation” (নিয়ন্ত্রণ) শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। সাম্প্রতিক গবেষণায় মেটাকগনিশনকে তিনটি উপাদানে বিভক্ত করা হয়েছে <ref name="Efklides, A. (2008)." />: '''মেটাকগনিটিভ জ্ঞান''' (বা মেটাকগনিটিভ সচেতনতা): শিক্ষার্থীদের নিজেদের সম্পর্কে, কাজ, কৌশল, লক্ষ্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানার সক্ষমতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি তিন প্রকারের হতে পারে: ঘোষণামূলক জ্ঞান, পদ্ধতিগত জ্ঞান এবং শর্তাধীন জ্ঞান <ref name="Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987).''">Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987). Children's metacognition about reading: Issues in definition, measurement, and instruction.Educational Psychologist 22: 225–278.</ref>। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' শিক্ষার্থী যখন কোনও কাজের মুখোমুখি হয় এবং তার তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে, তখন সে কী অনুভব করে ও কীভাবে উপলব্ধি করে—তা হলো মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শেখার লক্ষ্য সংশোধনে সহায়তা করে। '''মেটাকগনিটিভ কৌশল/দক্ষতা:''' এগুলো হলো জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলের সচেতন ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে: দিকনির্দেশনা কৌশল, পরিকল্পনা কৌশল, জ্ঞান প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল, পরিকল্পিত কাজ সম্পাদনের পর্যবেক্ষণ কৌশল এবং ফলাফল মূল্যায়নের কৌশল <ref name="Efklides, A. (2008)." />। নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল দক্ষতা হলো পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন <ref name="Schraw, G. (1998).">Schraw, G. (1998). Promoting general metacognitive awareness. Instructional Science 26: 113–125.doi:10.1023/A:1003044231033.</ref>। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান হলো জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণের জন্য, আর মেটাকগনিটিভ দক্ষতা হলো নিয়ন্ত্রণের জন্য। মেটাকগনিশনের সংজ্ঞাগুলো এটিকে “বহুমাত্রিক”, “সচেতন প্রক্রিয়া” এবং “ব্যক্তিকেন্দ্রিক” হিসেবে তুলে ধরে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় মেটাকগনিশন নিয়ে গবেষণা করতে হলে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন <ref name="Efklides, A. (2008)." />। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম তৈরি হয়েছে। এটি মেটাকগনিশনের এই তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন, কিছু হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যাতে তারা নিজেদের জ্ঞানীয় শেখা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই কার্যক্রমগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত মেটাকগনিটিভ জ্ঞান ও প্রক্রিয়া জোর দিয়ে থাকে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মূল্যায়ন ও মেটাকগনিশনের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে <ref name="Efklides, A. (2008)." />। == অন্যান্য সম্পর্কিত ধারণা == === শিক্ষার বিচার === মেটাকগনিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ধারণা হলো শিক্ষার বিচার বা জাজমেন্ট অফ লার্নিং (JOLs)। শিক্ষার্থীরা কতটা ভালোভাবে কোনো তথ্য শিখেছে তা নিয়ে তাদের নিজেদের মূল্যায়নই শিক্ষার বিচার<ref name="Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005).">Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005). Judgments of learning: Evidence for a two-stage process. Memory & Cognition, 33(6), 1116-1129.</ref>। নেলসন ও ডানলস্কি (১৯৯১) বলেছেন, JOLs শেখার প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। শিখনের পর কিছুটা সময় অপেক্ষা করে মূল্যায়ন করলে এটি আরও নির্ভুল হয়, একে বলা হয় “বিলম্বিত-JOL প্রভাব” <ref name="Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991).">Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991). When People’s Judgments of Learning (JOLs) Are Extremely Accurate at Predicting Subsequent Recall: The “Delayed-JOL Effect”. Psychological Science, 2(4), 267–270. .</ref>। জানার অনুভূতি্র বিচার হলো, শিক্ষার্থী কোনও প্রশ্ন বা উত্তর কতটা বুঝে বা জানে তার পূর্বানুমান। <ref name="Bembenutty, H. (2009).">Bembenutty, H. (2009). Feeling-of-Knowing Judgment and Self-Regulation of Learning. Education, 129(4), 589-598.</ref>। এটি জাজমেন্ট অফ লার্নিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। উভয়েই স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার মাধ্যমে সংযুক্ত করে। এই অধ্যায়ে পরবর্তী অংশে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার ধারণা আলোচনা করা হবে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া বোঝায় নিয়ন্ত্রণ কীভাবে পরিচালিত হয়। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো—বস্তু এবং ক্রিয়া। বস্তু হলো শিক্ষার্থীর শেখার লক্ষ্য এবং ক্রিয়া হলো সেই লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতি। এই ক্রিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে: জ্ঞান, আবেগ, প্রেষণা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক পরিবেশে পরিবর্তন <ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).">Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014). Development of metacognitive knowledge of reading strategies and attitudes toward reading in early adolescence: The effect on reading comprehension. Psychological Topics, 23(1), 77–98.</ref>। উদাহরণস্বরূপ, প্রেষণার ক্রিয়া নির্ভর করে শিক্ষার্থীরা কবে এবং কীভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তার উপর। একইভাবে, আচরণগত পরিবর্তন ব্যক্তিগত শেখার দক্ষতা ও লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলে। === স্ব-মূল্যায়ন === স্ব-মূল্যায়ন মানুষকে তাদের দক্ষতা ও কৌশল সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। এটি এমন কৌশল বেছে নিতে উৎসাহিত করে, যেগুলো শেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর প্রথম পর্যায়ে ঘটে। স্ব-মূল্যায়ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের মোটিভেটেড থাকতে হয় এবং নতুন শেখার কৌশল গ্রহণের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকতে হয়। স্ব-মূল্যায়নের জন্য শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব অপরিহার্য।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016).">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016)। ট্রেস-ভিত্তিক মাইক্রো-বিশ্লেষণাত্মক পরিমাপ আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার। জার্নাল অফ লার্নিং অ্যানালিটিক্স, ৩(১), পৃ. ১৮৩-২২০।</ref> শেখার কৌশল সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি স্ব-মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে: আমার কী কী দক্ষতা আছে? আমার আগ্রহ কী? আমি কি ভিডিও দেখে ভালো শিখি, নাকি নোট লিখে? আমি কি লিখে নাকি টাইপ করে ভালো শিখি? আমি কি মুখস্থ করে ও ব্যাখ্যা করে শিখতে পারি?<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''2" /> [[চিত্র:Reflection.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৩। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া]] === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হল আত্ম-প্রক্রিয়া, লক্ষ্য এবং সম্ভাব্য কর্মকাণ্ডের সমন্বয়। এটি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক হয়<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).2" />। প্রতিটি শিক্ষার্থীরই নিজের শেখার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ নির্দিষ্ট জ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ থেকে শেখে, আবার কেউ শেখে চাকরির প্রয়োজনে। এর ফলে, তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে চালিত করে বিভিন্ন ধরনের প্রেরণা। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ মূলত পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এটি দেখায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যক্তিগত কার্যক্রম, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে: === স্ব-ব্যাখ্যা === স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার সহায়ক। বুচার<ref name="Butcher2006">Butcher, K. R. (2006)। লেখার সঙ্গে চিত্র ব্যবহার করে শেখা: মানসিক মডেল উন্নয়ন ও অনুমান তৈরিতে সহায়তা। ''জার্নাল অফ এডুকেশনাল সাইকোলজি, ৯৮''(১), ১৮২-১৯৭। DOI: 10.1037/0022-0663.98.1.182</ref> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যার ধারণাটি প্রথম ও তার সহকর্মীরা ১৯৯৭ সালে ব্যবহার করেন এবং এটি এমন একটি অর্থবহ মৌখিক বিবৃতি নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই তারা যা শিখছে তা ব্যাখ্যা করে। চাই<ref name="Chi2000">Chi, M. T. H. (2000)। ব্যাখ্যামূলক পাঠ্য স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শেখা: অনুমান তৈরি ও মানসিক মডেল সংশোধনের দ্বৈত প্রক্রিয়া। ''Advances in instructional psychology'' (pp. 161–238)। Mahwah, NJ: Lawrence Erlbaum।</ref> নিজে স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি জ্ঞানগত কার্যকলাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে কেউ নতুন কোনো বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখে, সাধারণত পাঠ্য বা অন্য কোনো মাধ্যমে। স্ব-ব্যাখ্যা এবং বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য হলো—স্ব-ব্যাখ্যার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর শেখা বিষয়টি অনুধাবন করা, শুধুমাত্র মুখস্থ নয়। এ দিক থেকে, স্ব-ব্যাখ্যা একটি আত্ম-নির্দেশিত জ্ঞান নির্মাণমূলক কার্যক্রম<ref name="Chi2000" />। স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ধারণাসমূহের মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ খুঁজে পায় (বিসরা, লিউ, সালিমি, নেসবিট ও উইন<ref name="Bisra2018">Bisra, K., Liu, Q., Salimi, F., Nesbit, J.C. & Winne, Ph, H. ''স্ব-ব্যাখ্যা প্ররোচিতকরণ: একটি মেটা-বিশ্লেষণ''। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, Simon Fraser University, Burnaby, BC।</ref>)। বিসরা প্রমুখের মতে, স্ব-ব্যাখ্যা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আত্ম-উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন তথ্য বোঝার জন্য করা হয়। যেহেতু এটি আত্ম-কেন্দ্রিক, তাই স্ব-ব্যাখ্যা চুপচাপ করা যায় বা উচ্চস্বরে বললেও তা মূলত শিক্ষার্থীর কাছেই বোধগম্য। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014">Wylie, R., & Chi, M. T. H. (2014)। মাল্টিমিডিয়া শেখায় স্ব-ব্যাখ্যার নীতি। In R. E. Mayer (Ed.), ''The Cambridge handbook of multimedia learning'' (2nd ed., pp. 413e432)। নিউ ইয়র্ক, NY: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।</ref> স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি গঠনমূলক ও প্রজন্মমূলক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন যা শেখার গভীরতা বাড়ায় এবং অন্যান্য জ্ঞানগত দক্ষতার মতো সময়ের সাথে উন্নত হয়। সাধারণভাবে, 'স্ব-ব্যাখ্যা' (SE) বলতে নিজেকে কিছু বোঝানোর উদ্দেশ্যে তৈরি মৌখিক বিবৃতি বোঝায়। অর্থাৎ, এটি সেই সকল বিষয়ভিত্তিক বিবৃতি যা একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যাংশ পড়ার পর তৈরি করে<ref name="Chi2000" />। == স্ব-ব্যাখ্যা বনাম নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা == স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার দিকে নিয়ে যায়। বিসরা ও তার সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কেবল সেই ব্যক্তি দ্বারা নয়, অন্যদের দ্বারাও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে, শেখা ঘটে স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নয়, বরং তার ফলাফলের মাধ্যমে—যেমন একজন শিক্ষক যে ব্যাখ্যা দেন, সেটি শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান সম্পর্কে জানেন না। হাউসম্যান এবং ভ্যানলেহন (বিসরা প্রমুখের উদ্ধৃতি অনুযায়ী<ref name="Bisra2018" />) এই ধরণের ফলাফল-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যাকে "কভারেজ হাইপোথিসিস" বলেন। তার মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কার্যকর হয় কারণ এটি "নির্দেশনামূলক উপকরণে অনুপস্থিত অতিরিক্ত বিষয়বস্তু তৈরি করে" (পৃ. ৩০৩)। তবে অধিকাংশ স্বীকৃত তত্ত্ব মতে, স্ব-ব্যাখ্যার উৎপাদিত ফলাফল একটি প্রজন্মমূলক জ্ঞানগত প্রক্রিয়া। এখানে কভারেজ হাইপোথিসিস এটিকে নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার সমতুল্য ফলাফল হিসেবে দেখে। যদি শিক্ষার্থী নিজে থেকে সঠিক স্ব-ব্যাখ্যা তৈরি করতে না পারে, তখন নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় (বিসরা প্রমুখ<ref name="Bisra2018" />)। ভ্যানলেন, জোন্স ও চাই<ref name="vanlehn1992">VanLehn, K., Jones, R. M., & Chi, M. T. (1992)। স্ব-ব্যাখ্যার প্রভাবের একটি মডেল। জার্নাল অফ দ্য লার্নিং সায়েন্সেস, ২(১), ১-৫৯। doi:10.1207/s15327809jls0201_1।</ref> স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতার তিনটি কারণ উল্লেখ করেন: প্রথমত, এটি একটি প্ররোচনামূলক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ঘাটতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, এটি সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া ও ধাপগুলিকে সাধারণীকরণে সহায়তা করে। তৃতীয়ত, এটি শিক্ষার্থীদের উপমার মাধ্যমে সমস্যার গভীর ব্যাখ্যা তৈরি করে। এছাড়া, ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের চিন্তায় অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করে মানসিক মডেলে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনে। এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ঘোষণামূলক জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়<ref name="Wylie,Chi2014" />। == নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার তুলনায় স্ব-ব্যাখ্যার সুবিধা == বিসরা ও সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> পরিচালিত মেটা-বিশ্লেষণ স্ব-ব্যাখ্যার পক্ষে এবং কভারেজ হাইপোথিসিস-এর বিপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে। এই গবেষণায় দেখা যায়, স্ব-ব্যাখ্যা (g=.২৯) নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর। লেখকরা এই কার্যকারিতাকে ব্যাখ্যা করেন শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান এবং নতুন জ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল হিসেবে। এটি অর্থপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। যখন পূর্বজ্ঞান ও নতুন তথ্যের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন শিক্ষার্থীর জ্ঞানগত প্রক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং তৈরি হওয়া ব্যাখ্যাটি পরবর্তীতে মনে রাখা এবং যুক্তি প্রয়োগে সহায়তা করে<ref name="Bisra2018" />। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইঙ্গিত সহ স্ব-ব্যাখ্যা, নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়েও কার্যকর হতে পারে, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা সক্রিয় হয়—প্রশিক্ষণ, ভুল সংশোধন বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছাড়াই। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012">Ionas, I. G., Cernusca, D., & Collier, H. L. (2012)। পূর্বজ্ঞান কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে: বিজ্ঞানে সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত একটি অন্বেষণধর্মী গবেষণা। International Journal of Teaching and Learning in Higher Education, 24(3), 349-358।</ref> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষক, বই বা অন্যান্য উৎসের ব্যাখ্যার চেয়ে কার্যকর কারণ—১) এটি পূর্বজ্ঞান সক্রিয় করে, ফলে এটি জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে; ২) এটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব সমস্যাকে কেন্দ্র করে; এবং ৩) শিক্ষার্থী যখন ইচ্ছা তখন এটি ব্যবহার করতে পারে। == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশ, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যা == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশগুলো সাধারণত পাঠ্য, অ্যানিমেশন, চিত্র (যেমন: চিত্র, রেখাচিত্র), বিবরণী এবং ন্যারে‌শন একত্রে উপস্থাপন করে এবং কম্পিউটারভিত্তিক হয়<ref name="Wylie,Chi2014" />। মাল্টিমিডিয়ার সুবিধা হলো এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপস্থাপন পদ্ধতি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, রেখাচিত্র স্থানিক তথ্য বুঝতে সাহায্য করে এবং ন্যারেশন একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করে যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য অপেক্ষা বেশি কিছু শিখে। মাল্টিমিডিয়া থেকে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা মৌখিক ও অ-মৌখিক উভয় তথ্য এনকোড করতে পারে এবং প্রতিটি উৎস থেকে উপস্থাপিত তথ্য একত্রিত করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন<ref name="Wylie,Chi2014" />। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই ধরনের শেখা তখনই কার্যকর, যখন শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে তথ্য একত্রিত করার জ্ঞানগত প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, এই জ্ঞানগত অংশগ্রহণের একটি উপায় হলো স্ব-ব্যাখ্যা। বুচার<ref name="Butcher2006" /> একটি গবেষণায় দেখান, যেসব শিক্ষার্থী মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সময় স্ব-ব্যাখ্যা করেছে, তারা শুধুমাত্র পাঠ্য ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি শিখেছে। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012" /> পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বজ্ঞান থাকলে রসায়নের সমস্যা সমাধানে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা বাড়ে। গবেষণায় শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যার মিথস্ক্রিয়ার ফলে দুটি উপকার পাওয়া যায়: এক, যত বেশি তারা নিজেদের রসায়ন জ্ঞান প্রকাশ করেছে, তত বেশি কার্যকর ছিল স্ব-ব্যাখ্যা; দুই, স্ব-ব্যাখ্যাভিত্তিক কৌশল কার্যকর করতে হলে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট "থ্রেশহোল্ড" পরিমাণ পূর্বজ্ঞান থাকতে হয়। অর্থাৎ, পূর্বজ্ঞান কম থাকলে স্ব-ব্যাখ্যা তেমন ফলদায়ক নয়, বরং এটি শেখার কার্যকারিতা ব্যাহত করে<ref name="Ionas2012" />। যখন শিক্ষার্থীরা মনে করে তারা রসায়ন সম্পর্কে ভালো জানে, তখন তারা শক্তিশালী স্ব-ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু থ্রেশহোল্ডে না পৌঁছালে, তারা আলাদা আলাদা ধারণা জানলেও সেগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারে না<ref name="Ionas2012" />। অতএব, যখন শিক্ষার্থীরা স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিখতে চায়, তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে অনুরূপ ধারণা, শর্ত বা প্রক্রিয়াগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাতে তারা নতুন জ্ঞান গঠন করতে পারে এবং প্রদত্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীর যদি পূর্ব জ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তি না থাকে, তাহলে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে এগোয় না। এছাড়াও ইয়ে, চেন, হুং, ও হোয়াং<ref name="Yeh2010">Yeh, F., Y, Chen, C., M, Hung, H., P., & Hwang, J., G. (2010). Optimal self-explanation prompt design in dynamic multi-representational learning environments. Journal computers and education 54, 1089–1100.</ref> উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার পদ্ধতিতে পূর্ব জ্ঞানের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তারা বিভিন্ন স্তরের পূর্ব জ্ঞানের অধিকারী ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালান, যাতে বোঝা যায় গতিশীল মাল্টিমিডিয়া উপাদানের সঙ্গে শেখার সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা কীভাবে তাদের শেখাকে প্রভাবিত করে। তারা দুই ধরণের স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করেন এবং শেখার ফলাফল, মানসিক চাপ, শেখার সময়কাল এবং দক্ষতার মতো বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করেন। যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের কাজটি যুক্তিসংগতভাবে ব্যাখ্যা করতে বলেছে এবং পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করতে বলে, আর যদি অনুমান ভুল হয়, তাহলে তাদের ব্যাখ্যা করতে হয় কেন তা ভুল। ফলাফল দেখা যায়, যারা কম পূর্ব জ্ঞান নিয়ে এসেছিল, তারা যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকার পেয়েছে, আর যারা বেশি জ্ঞান রাখে, তারা পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকৃত হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে তাদের পর্যাপ্ত পূর্ব জ্ঞান থাকে এবং সেই নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে একটি যথাযথ পটভূমি গড়ে ওঠে, যাতে তারা নতুন তথ্য বুঝতে এবং স্ব-ব্যাখ্যা করতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন মাত্রার পূর্ব জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ভিন্নভাবে কাজ করে। অতএব, স্ব-ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব জ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাল্টিমিডিয়া পরিবেশে উচ্চতর জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অ্যানিমেশনের পরবর্তী দৃশ্য অনুমান করতে পছন্দ করে, যেখানে কম জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ঘটনার যুক্তি খুঁজতে বেশি আগ্রহী। == স্ব-ব্যাখ্যার শিক্ষণ পদ্ধতির প্রতিফলন == ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে যা শিক্ষাবিষয়ক পাঠ্যক্রম তৈরির সময় একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, যেখান থেকে স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হতে পারে। যদিও স্ব-ব্যাখ্যা শেখানোর এবং রিভিউ সেশনের সুবিধা প্রসারিত করতে ব্যবহৃত হয় বা ছোট ছোট ট্রান্সফার সমস্যার জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, তবুও শিক্ষকদের উচিত শেখার প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ না করা। অর্থাৎ, শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে স্ব-ব্যাখ্যা প্রয়োগ না করাই উত্তম। বরং, অন্য কৌশলগত পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। এটি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং তখন স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হয়<ref name="Ionas20122" />। লেখকরা উল্লেখ করেন, স্ব-ব্যাখ্যার একটি সুবিধা হলো—যখন শিক্ষার্থীরা একবার শিখে যায় কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করতে হয়, তখন তারা এটি অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে, কারণ এটি একটি বিষয়ে নিরপেক্ষ মানসিক কৌশল। তবে একটি অসুবিধাও রয়েছে, আর তা হলো—যখন শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ে, তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানও বাড়তে হয়, না হলে স্ব-ব্যাখ্যা ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে, যদি শিক্ষার্থীরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তারা স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা ঠিকভাবে অনুভব নাও করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। তাই ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" /> যুক্তি দেন, শিক্ষাদান পদ্ধতি তৈরি করার সময় শিক্ষকদের উচিত এমন ব্যবস্থা রাখা, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট জ্ঞানের স্তরে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্ব-ব্যাখ্যার প্রয়োগ না করে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার ফল অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করার আগে তাদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়ন করা জরুরি। এরপর এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষকেরা কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করাবেন, তা নির্ধারণ করবেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকরা নতুন সমস্যা সমাধানের আগে আরও নির্দিষ্ট নির্দেশনামূলক প্রশ্ন দিতে পারেন। যখন শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুটি বুঝে ফেলে, তখন সাধারণ অনুরোধের মাধ্যমে স্ব-ব্যাখ্যা আহ্বান করা যায়। শিক্ষকরা চাইলে শিক্ষার্থীদের এমন অনুরোধ নিজেরা ব্যবহার করতেও বলতে পারেন সমস্যা সমাধানের সময়। প্রকৃতপক্ষে, স্ব-ব্যাখ্যার দীর্ঘমেয়াদী উপকার হলো—শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এ কৌশল সক্রিয় করতে পারে এবং সমস্যার সমাধানের সময় এটি প্রয়োগ করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, আরও একটি কৌশল হলো—শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের যুক্তি উপস্থাপন কাঠামোর মাধ্যমে নিজেদের কাছে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করা। এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পূর্বনির্ধারিত অনুরোধ ব্যবহার করে এমনভাবে যুক্তি তৈরি করে যা সমস্যার সমাধান পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেয়। অর্থাৎ, এই কৌশলে পূর্বনির্ধারিত যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে<ref name="Ionas20122" />। তবে, স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করার কোনো সার্বজনীন নিয়ম নেই, কারণ এটি বিষয়-নির্ভর। নির্দেশনামূলক প্রশ্নগুলো কখনও সাধারণ, আবার কখনও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে এবং শিক্ষক বা শিক্ষকের দায়িত্ব এটি নির্ধারণ করা কোন অনুরোধ সবচেয়ে ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার আচরণে নিয়ে আসবে<ref name="Ionas20122" />। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যতে একটি কৌশল গ্রহণে সহায়তা করতে শিক্ষকদের উচিত যদি বিষয়টি অপরিচিত হয়, তাহলে সহজ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা এবং ধীরে ধীরে আরও নির্দিষ্ট প্রশ্নে অগ্রসর হওয়া<ref name="Ionas20122" />। == স্ব-ব্যাখ্যার বিভিন্ন ধরন == স্ব-ব্যাখ্যাকে যদি একটি ধারাবাহিক রেখায় রাখা হয়, তাহলে এক প্রান্তে থাকবে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ। এটি শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে নতুন তথ্যকে যুক্ত করতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের স্ব-ব্যাখ্যায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে এবং পূর্বনির্ধারিত ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কারণ এখানে শিক্ষার্থীদের চিন্তা মৌলিক এবং অন্য কারও প্রভাবিত নয়, তাই এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাখ্যা। ধারাবাহিক রেখার অন্য প্রান্তে থাকবে মেনু-ভিত্তিক ব্যাখ্যা অনুরোধ। এই ধরনের ব্যাখ্যায় একটি ব্যাখ্যার তালিকা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং সেখান থেকে বেছে নিতে বলা হয় ও নির্বাচনের যুক্তি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। অ্যাটকিনসন, রেনক্ল ও মেরিল<ref name="Atkinson2003">Atkinson, R. K.,Renkl , A. , & Merrill , M. M. (2003). Transitioning from studying examples to solving problems: Effects of self-explanation prompts and fading worked-out steps.''Journal of Educational Psychology, 95''(4), 774–783.</ref>–এর এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা মেনু থেকে বেছে নেওয়ার সময় স্ব-ব্যাখ্যা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে, তারা কাছাকাছি ও দূরবর্তী ট্রান্সফার পরিস্থিতিতে অন্যদের তুলনায় ভালো করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, মেনুর মাধ্যমে ব্যাখ্যার অনুরোধ শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হতে পারে। যেখানে উন্মুক্ত ও মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতি ধারাবাহিক রেখার দুই প্রান্তে অবস্থান করে, সেখানে ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড ও রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধ মাঝামাঝি থাকে। ফোকাসড ও উন্মুক্ত-প্রান্ত অনুরোধের মধ্যে দুটি মিল রয়েছে—উভয়ই জেনারেটিভ এবং শিক্ষার্থীর চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে না। তবে, ফোকাসড পদ্ধতিতে স্ব-ব্যাখ্যার বিষয়বস্তুর নির্দেশনা আরও স্পষ্ট থাকে। উন্মুক্ত অনুরোধে কেবল নতুন তথ্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, কিন্তু ফোকাসড অনুরোধে সরাসরি নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। স্ব-ব্যাখ্যা স্ক্যাফোল্ড আরও নির্দিষ্ট। স্ক্যাফোল্ড বা সহায়তাপূর্ণ স্ব-ব্যাখ্যা অনুরোধ ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে। এখানে শিক্ষার্থীদের ফাঁকা স্থান পূরণ করে ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ করতে হয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> ধারণা করেন, এই পদ্ধতি অভিজ্ঞতাহীন শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী, যাদের নিজে নিজে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যা গঠনের মতো যথেষ্ট পূর্ব জ্ঞান নেই। রিসোর্স-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যা মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতির মতো। এখানে শিক্ষার্থীদের একটি গ্লসারি থেকে বেছে নিয়ে সমস্যার সমাধানের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। তারা এই গ্লসারিকে একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতিটি ধাপের ব্যাখ্যাকে স্মরণ না করে চিনে নিতে পারে। ওয়াইলি ও চাই রিসোর্স-ভিত্তিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্লসারির বড় আকারকে তুলে ধরেন। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যার এই সকল ধরণ শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে এবং মানসিকভাবে জ্ঞান অর্জনে যুক্ত রাখে, পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে সেতুবন্ধন ঘটায় এবং মানসিক মডেল সংশোধন করে। গবেষণার ভিত্তিতে দেখা যায়, মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক কৌশল আরও উপকারী। গবেষণায় আরও জানা যায়, ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড এবং রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধগুলো যেগুলো শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে, সেগুলো আরও গভীর অনুধাবনে সহায়ক। ভ্যান ডের মেইজ প ডি জং<ref name="Vandermeij2011">Van der Meij , J. , & de Jong , T. (2011). The effects of directive self-explanation prompts to support active processing of multiple representations in a simulation-based learning environment. Journal of Computer Assisted Learning, 27(5), 411–423.</ref> দুটি সিমুলেশন-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের মডেল তৈরি করেন, যেখানে বহু রূপে উপস্থাপনাগুলো রয়েছে। এক মডেলে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত অনুরোধের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় এবং তাদের উত্তর ব্যাখ্যা বা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয়। অন্য মডেলে, আরও সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, তারা যেন ব্যাখ্যা করে কীভাবে প্রদত্ত দুটি উপস্থাপনা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, উভয় মডেলেই উন্নত পারফরম্যান্স দেখা যায়, তবে ফোকাসড স্ব-ব্যাখ্যা মডেল গ্রুপে শেখার উপকার বেশি হয়। ফলে মাল্টিমিডিয়া শেখার ক্ষেত্রে এই ফলাফল প্রমাণ করে, বিস্তৃত উন্মুক্ত অনুরোধের চেয়ে নির্দিষ্ট অনুরোধ ভালো কাজ করে। = স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেলসমূহ = [[চিত্র:Section_2_self_regulated_learning_model.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৪. স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেল]] == জিমারম্যানের চক্রাকারে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রক্রিয়াকে তিনটি আলাদা পর্যায়ে ভাগ করে: পূর্বচিন্তা পর্যায়, সম্পাদন পর্যায় এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে শেখার প্রচেষ্টা শুরুর আগে যে ধরণের প্রক্রিয়া ও বিশ্বাস তৈরি হয় তা অন্তর্ভুক্ত হয়; সম্পাদন পর্যায়ে শেখার বাস্তব প্রয়োগ চলাকালীন যা ঘটে; এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়ে প্রতিটি শেখার প্রচেষ্টার পর যা ঘটে তা বোঝানো হয়।<ref name="Zimmerman20022" /> === পূর্বচিন্তা পর্যায় === পূর্বচিন্তা পর্যায়ের দুটি প্রধান প্রক্রিয়া আছে: কাজ বিশ্লেষণ এবং আত্ম-প্রেরণা। কাজ বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশলগত পরিকল্পনা। আত্ম-প্রেরণা আসে শিক্ষার্থীর শেখা নিয়ে বিশ্বাস থেকে, যেমন—শেখার ব্যক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে আত্ম-দক্ষতা বিশ্বাস এবং শেখার ব্যক্তিগত ফলাফল নিয়ে প্রত্যাশা।<ref name="Zimmerman20022" /> '''লক্ষ্য নির্ধারণ''' বলতে বোঝানো হয় কী অর্জন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তা নির্ধারণ করা<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য শেখার প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক, কারণ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই জানাতে হবে চূড়ান্ত ফলাফলটি কেমন হওয়া উচিত। লক্ষ্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মোটিভেশন সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শেখার লক্ষ্য অর্জনে উদ্দীপিত করতে পারে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি যা বাস্তবে অর্জনযোগ্য। তাই লক্ষ্যগুলো খুব বেশি উচ্চ বা খুব নিচু হওয়া উচিত নয়; বরং এমন হওয়া উচিত যা বাস্তবতার মধ্যে পড়ে এবং অর্জনযোগ্য। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য আকাঙ্ক্ষা ও মোটিভেশন তৈরি করে কারণ সেগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যারা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যেমন বানান পরীক্ষার জন্য শব্দ তালিকা মুখস্থ করা, অথবা যেসব শিক্ষার্থী বানান শেখার জন্য শব্দকে ধ্বনি বা অক্ষরে ভাগ করার কৌশল প্রয়োগ করে, তাদের মধ্যে শিক্ষাগত সাফল্য বেশি দেখা যায়<ref name="Zimmerman20023" />। লক্ষ্য নির্ধারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কী অর্জন করতে চাই? কোন ধাপগুলো আমাকে লক্ষ্য পর্যন্ত নিয়ে যাবে? '''কৌশলগত পরিকল্পনা''' লক্ষ্য নির্ধারণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হয়। লক্ষ্য নির্ধারণের পর শিক্ষার্থীদের উচিত নির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা যাতে তারা ওই শেখার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশলগত পরিকল্পনা একটি অধিক বিস্তারিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শেখার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। একটি কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে ছোট ছোট একাধিক লক্ষ্য থাকে যা একটি বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। একটি ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার কাজ, উদ্দেশ্য ও যে দিক তারা অনুসরণ করতে চায়, তা ভালোভাবে বুঝতে হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো সাত দিনের মধ্যে চৌদ্দটি অধ্যায় অধ্যয়ন করতে হয়, সে প্রতিদিন দুটি অধ্যায় পড়ার পরিকল্পনা করতে পারে। প্রতিদিন কতটুকু পড়তে হবে তা পরিকল্পনা করে নিলে সাত দিনে সব অধ্যায় শেষ করা সম্ভব হবে। কৌশলগত পরিকল্পনা কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়াক্ষেত্রেও কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো লক্ষ্য এক মাসে ম্যারাথনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, তাহলে সে সাপ্তাহিক সময়সীমা অনুযায়ী দৈনিক কতদূর দৌড়াতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তার কসরতের পরিমাণ বাড়াতে পারে। কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরির জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কেন শিখছি? আমি কীভাবে আমার শেখার লক্ষ্য অর্জন করব? আমি কীভাবে আমার শেখার কৌশলগুলো প্রয়োগ করব? আমার কাছে পর্যাপ্ত সময় আছে কি? আমার লক্ষ্য কি এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্জনযোগ্য? আমি এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে পড়ব? আমার ব্যক্তিত্ব কি এই লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলবে? আমি শিখতে বসলে কী কী বিষয় আমাকে বিভ্রান্ত করতে পারে? '''স্ব-উদ্দীপনার বিশ্বাস''' অন্তর্ভুক্ত করে আত্ম-দক্ষতা, ফলাফলের প্রত্যাশা, অন্তর্নিহিত আগ্রহ এবং শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা<ref name="Zimmerman20023" />। এখানে আত্ম-দক্ষতা বলতে বোঝানো হয় শিক্ষার্থীদের নিজের শিখন ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস। যেমন, ক্লাসে একটি কঠিন ধারণা শেখার সময় কোনো শিক্ষার্থী হয়তো ভাবতে পারে সে সহজেই বুঝে ফেলবে অথবা সে ভয়ে থাকবে যে সে বিষয়টি বুঝতেই পারবে না। "আত্ম-দক্ষতা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী কতটা জড়িত হবে এবং চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে কতটা অটল থাকবে।" আত্ম-দক্ষতার উচ্চ মাত্রা সাধারণত বিদ্যালয়ের সাফল্য ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006).">Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006). Promoting Self-Regulation in Science Education: Metacognition as Part of a Broader Perspective on Learning. Research In Science Education, 36(1-2), 111-139.</ref>। শিক্ষকেরা উপযুক্ত স্তরের জটিলতার শেখার কাজ এবং প্রয়োজনে সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-দক্ষতা বাড়াতে পারে। শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি দুটি উপায়ে আত্ম-দক্ষতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। এক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের কাছ থেকে উদাহরণ দেখানো; দুই, শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব তথ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। ফলাফলের প্রত্যাশা বলতে বোঝানো হয় শেখার পর ফলাফল কেমন হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, যেমন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে যে সে অর্থনীতির একটি কঠিন ধারণা শিখতে পারবে এবং ভবিষ্যতে তা কাজে লাগাতে পারবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বিষয়বস্তুর উপযোগিতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই প্রত্যাশা বাড়াতে পারেন। অন্তর্নিহিত আগ্রহ বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতাকে তাদের নিজের স্বার্থে মূল্যায়ন করা। শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গুরুত্বে মূল্যায়ন করা। যেসব শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত আগ্রহ বেশি, তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিতভাবে শেখার প্রতি বেশি উদ্দীপিত থাকে কারণ তারা কাজের দক্ষতা অর্জন করতে চায়। যেমন, কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে চায়, সে শিক্ষা-সম্পর্কিত জ্ঞান গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারে<ref name="Zimmerman20023" />। শিক্ষকরা জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত আগ্রহ বাড়াতে পারে। ক্লাসকে উপভোগ্য করে তোলা বা ভিডিও ক্লিপ ও গ্রাফের মতো বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে শেখার প্রবণতা বাড়ানো যায়। শ্রাউ প্রমুখ বিজ্ঞান বিষয়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মোটিভেশন উপাদানকে ব্যাখ্যা করেছেন স্ব-দক্ষতা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসের সমন্বয়ে। জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাস বলতে বোঝায় "জ্ঞান কোথা থেকে আসে এবং এর প্রকৃতি কেমন" সে সম্পর্কে ধারণা। এই বিশ্বাস সমস্যার সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার উপর প্রভাব ফেলে। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। === পারফরম্যান্স ধাপ === [[চিত্র:3_Phase.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৫। জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মডেল]] পারফরম্যান্স ধাপের প্রক্রিয়া দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝানো হয় পূর্বপর্যায়ে নির্ধারিত নির্দিষ্ট কৌশল বা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। স্ব-পর্যবেক্ষণ হলো নিজের আচরণ সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর নথিপত্র তৈরি করা বা পরীক্ষামূলকভাবে এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের প্রায়ই তাদের সময় ব্যবহারের রেকর্ড রাখতে বলা হয় যাতে তারা বুঝতে পারে পড়াশোনায় কতটা সময় দিচ্ছে। আত্ম-নিরীক্ষা। এটি স্ব-পর্যবেক্ষণের একটি সূক্ষ্ম রূপ, বলতে বোঝায় নিজের মানসিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা, যেমন প্রবন্ধ লেখার সময় বড় অক্ষরে শব্দ না লেখার হার<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).">Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003). Motivating self-regulated problem solvers. The psychology of problem solving, 233-262.</ref>। '''স্ব-নিয়ন্ত্রণ''' প্রক্রিয়া যেমন আত্ম-নির্দেশনা, কল্পচিত্র, মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ এবং কাজের কৌশল শিক্ষার্থী ও কর্মীদের কাজের ওপর মনোযোগ দিতে এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আত্ম-নির্দেশনা হলো নিজের কাছে উচ্চ বা নিম্নস্বরে কীভাবে কাজটি সম্পাদন করতে হবে তা বলা, যেমন গণিত সমস্যার সমাধানের সময় "উচ্চস্বরে ভাবনা বলা"। কল্পচিত্র হলো উজ্জ্বল মানসিক চিত্র তৈরি করা। এটি শেখার ও পারফরম্যান্সে সহায়তা করে। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ, অর্থাৎ বাইরের ঘটনা বা ভিন্ন চিন্তা বাদ দিয়ে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ ধরে রাখা, তাৎপর্যপূর্ণ স্ব-নিয়ন্ত্রণ কৌশল।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." /> মনোসংযোগ বৃদ্ধির জন্য পূর্বের ভুল নিয়ে চিন্তা না করে মনোযোগ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ<ref name="Kuhl, J. (1985).">Kuhl, J. (1985). Volitional mediators of cognitive behavior consistency: Self-regulatory processes and action versus state orientation. In J. Kuhl & J. Beckman (Eds.), Action control (pp.101–128). New York: Springer.</ref>। কাজের কৌশল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে যখন তা কাজকে মৌলিক অংশে ভাগ করে অর্থপূর্ণভাবে পুনর্গঠন করে<ref name="Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995).">Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995). Cognitive psychology and instruction (2nd ed.). Upper Saddle River, NJ: Merrill.</ref>। পারফরম্যান্স ধাপের দ্বিতীয় প্রধান অংশ হলো '''স্ব-পর্যবেক্ষণ'''। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পারফরম্যান্সের নির্দিষ্ট দিক, প্রেক্ষাপট এবং এর ফলাফল নিরীক্ষণ করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995).">Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995). Self-monitoring during collegiate studying: An invaluable tool for academic self-regulation. In P. Pintrich (Ed.), New directions in college teaching and learning: Understanding self-regulated learning (No.63, Fall, pp.13–27). San Francisco, CA: Jossey-Bass, Inc.</ref>। যারা পরিকল্পিত কাঠামোতে ধাপভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তারা পারফরম্যান্স ধাপে আরও কার্যকরভাবে স্ব-পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কারণ এই সীমিত কাঠামো মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং মনে রাখার তথ্যের পরিমাণ হ্রাস করে। যদি কোনো ব্যক্তি পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা সঠিকভাবে মনে না রাখতে পারে, তবে সে তার কৌশল যথাযথভাবে পরিবর্তন করতে পারবে না<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." />। স্ব-নথিপত্র রক্ষণ শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার সঠিক রেকর্ড দেয়, সেগুলো গঠনমূলকভাবে সংগঠিত করে এবং অগ্রগতি বোঝার জন্য একটি দীর্ঘ তথ্যভান্ডার তৈরি করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996).">Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996). Self-regulated learning of a motoric skill: The role of goal setting and self-monitoring. Journal of Applied Sport Psychology, 8, 60–75.</ref>। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে স্ব-পর্যবেক্ষণ একটি নিয়মিত আত্ম-আবিষ্কার বা আত্ম-পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে পারে<ref name="Bandura, A. (1991).">Bandura, A. (1991). Self-regulation of motivation through anticipatory and self-reactive mechanisms. In R. A. Dienstbier (Ed.), Perspectives on motivation: Nebraska symposium on motivation (Vol. 38, pp.69–164). Lincoln: University of Nebraska Press.</ref>। '''কৌশল প্রয়োগ''' হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিত শেখার কৌশল বাস্তবে প্রয়োগ করে শেখার কাজে নিয়োজিত হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশল প্রয়োগের জন্য মোটিভেশন ও আত্মনির্ধারণ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের একটি মজবুত কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে তারা পরিবেশগত বিঘ্ন এড়াতে পারে এবং কী তাদের মোটিভেট বা ডিমোটিভেট করে তা বুঝতে পারে। কৌশল প্রয়োগ শেখার অভিজ্ঞতার সফলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উভয়ের উপর প্রভাব ফেলে। এটি নির্ধারণ করে কীভাবে এবং কোথায় শেখা হবে এবং এটি শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। '''কৌশল পর্যবেক্ষণ''' হচ্ছে শেখার ক্ষেত্রে প্রণীত কৌশলগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া। শেখার কৌশলগুলোর প্রয়োগ, শেখার কাজের অগ্রগতি এবং পরিবেশ কীভাবে শেখার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে—এসব বিষয়ে নজর রাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনে কৌশলগুলো পরিবর্তন করে আরও ভালো শেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারে। === আত্মপ্রতিফলন পর্যায় === আত্মপ্রতিফলন পর্যায়ে দুটি প্রধান প্রক্রিয়া রয়েছে: আত্মবিচার এবং আত্মপ্রতিক্রিয়া। আত্মবিচারের একটি রূপ হলো আত্মমূল্যায়ন, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের পর্যবেক্ষণভিত্তিক কর্মদক্ষতাকে কিছু মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে—যেমন পূর্ববর্তী কর্মদক্ষতা, অন্য কারও কর্মদক্ষতা বা একটি নির্দিষ্ট মান। আত্মবিচারের আরেকটি রূপ হলো কার্যকারণ বিশ্লেষণ বা কারণনির্ধারণ, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের সাফল্য বা ভুলের কারণ সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি করে, যেমন গাণিতিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর। '''আত্মবিচার''': মানুষ সাধারণত চারটি প্রধান মানদণ্ডের ভিত্তিতে নিজের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা মূল্যায়ন করে: দক্ষতা, পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স, তুলনামূলক সামাজিক মান, এবং যৌথ মানদণ্ড। দক্ষতা মানদণ্ড নির্ধারিত এবং পরিমাপযোগ্য—যেমন, একটি ক্রসওয়ার্ড পাজলের সমাধানকে মূল লেখকের সমাধানের সঙ্গে তুলনা করা। যখন শিক্ষার্থীরা অনানুষ্ঠানিক এবং অসংগঠিত পরিবেশে সমস্যা সমাধান করে, তখন তাদের অনেক সময়ই দক্ষতা মানদণ্ডের পরিবর্তে তাদের পূর্ববর্তী পারফরম্যান্সের সঙ্গে বর্তমান পারফরম্যান্সের তুলনার ওপর নির্ভর করতে হয়। এই আত্মতুলনা শিক্ষার উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। এটি সাধারণত বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। সামাজিক তুলনা বা তুলনামূলক মানদণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহপাঠী বা জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে শেখার মূল্যায়ন করে। যৌথ মানদণ্ড সাধারণত দলগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দলগতভাবে কাজ করা হয়।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).2" /> আত্মমূল্যায়নমূলক সিদ্ধান্ত সাধারণত শেখার ফলাফল সম্পর্কিত কার্যকারণ বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেমন: ব্যর্থতার কারণ নিজের সীমিত ক্ষমতা নাকি পর্যাপ্ত চেষ্টা না করা। যদি কেউ মনে করে যে তার খারাপ ফলাফল তার অক্ষমতার কারণে হয়েছে, তাহলে তা তার প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কারণ এটি ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনাকে অস্বীকার করে। অন্যদিকে, যদি কেউ মনে করে যে ভুল কৌশল ব্যবহারের কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে, তবে সে ভবিষ্যতে নতুন কৌশল গ্রহণ করে উন্নতি করতে প্রেরণা পাবে।<ref name="Zimmerman20024" /> '''আত্মপ্রতিক্রিয়া''': আত্মপ্রতিক্রিয়ার একটি রূপ হলো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আত্মতৃপ্তি বা ইতিবাচক অনুভূতি। আত্মতৃপ্তি বৃদ্ধি পেলে প্রেরণা বাড়ে, আর আত্মতৃপ্তি কমে গেলে শেখার প্রচেষ্টাও কমে যায়।<ref name="Schunk, D.H. (2001).">Schunk, D.H. (2001). Social cognitive theory and self-regulated learning. In B.J. Zimmerman & D.H Schunk (Eds.), Self-regulated learning and academic achievement: Theoretical perspectives (2nd ed., pp. 125-152). Mahwah, NJ: Erlbaum.</ref> শিক্ষার্থীরা যখন তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে আত্মতৃপ্তি বোধ করে, তখন তারা আরও সচেতনভাবে কাজ পরিচালনা করতে পারে এবং অধ্যবসায় ধরে রাখতে পারে।<ref name="Schunk, D.H. (1983 c).">Schunk, D. H. (1983 c). Progress self-monitoring: Effects on children’s self-efficacy and achievement. Journal of Experimental Education, 51, 89–93.</ref> আত্মপ্রতিক্রিয়া কখনও কখনও অভিযোজিত বা প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ার রূপ নিতে পারে। প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া হলো নিজের আত্মপরিচয় রক্ষা করতে শেখা বা পারফর্ম করার সুযোগ থেকে সরে যাওয়া, যেমন একটি কোর্স বাদ দেওয়া বা পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত থাকা। অপরদিকে, অভিযোজিত প্রতিক্রিয়া হলো শেখার পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে পরিবর্তন আনা, যেমন অকার্যকর কৌশল বাদ দেওয়া বা পরিবর্তন করা।<ref name="Zimmerman20024" /> '''ফলাফল মূল্যায়ন''' : ফলাফল মূল্যায়ন ঘটে তখন, যখন শেখার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই পর্যায়ে শেখার লক্ষ্য, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং সেগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''4" /> ফলাফল মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরা নিজের কাছে এই প্রশ্নগুলো করতে পারে: আমার লক্ষ্যগুলো কতটা বাস্তবসম্মত ছিল? সেগুলো কি অর্জনযোগ্য ছিল? আমার কৌশলগত পরিকল্পনা কতটা কার্যকর ছিল? এমন কোনও কৌশল কি বাদ পড়েছে যেটা রাখা উচিত ছিল? ভবিষ্যতে আমি কীভাবে আমার শেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করব? আমার পরিবেশ কি মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করছিল? == বোকার্টসের তিন-স্তরবিশিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == == উইনের পর্যায়ভিত্তিক স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == = গবেষণার বিষয় ও ক্ষেত্র = [[চিত্র:Section_3_Issues_and_Topics_of_Research.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৬. Issues and Topics of Research]] == স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সাংস্কৃতিক পার্থক্য == শেখার ধারণা, বিশেষ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ধারণাটি, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘স্বনিয়ন্ত্রণ’ এবং ‘শেখার ধারণা’ নিয়ে অধিকাংশ তথ্য পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি একপাক্ষিক উপস্থাপন। ভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে মানুষ ভিন্ন চিন্তাভাবনার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়। জাপানি শিক্ষার্থীরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছিল,<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''">Purdie, Nola, and John Hattie.(1996). “Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning”. American Educational Research Journal 33.4 (1996): 845–871.</ref> তারা শেখার ভিন্ন কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং পূর্ব পরিচিত পদ্ধতির বাইরে জ্ঞান অনুধাবনের নতুন পথ খুঁজে পায়। যদিও এই প্রক্রিয়াটি অবচেতনভাবে ঘটে থাকতে পারে, তবে ভিন্ন ভাষা ও গঠনের নতুন ব্যবস্থায় পড়ে তারা বাধ্য হয় শেখার কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করতে। শেখার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বোঝা যায়, জ্ঞান একরৈখিক নয়—এটা ভালো বা খারাপ, ঠিক বা ভুল—এমন দ্বৈততা দিয়ে সব সময় বোঝা যায় না। জ্ঞান হলো পরিবর্তনশীল ও গতিশীল এবং তাই এটি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। এশীয় সংস্কৃতিতে প্রচলিত ধারণা হলো, জ্ঞান একজন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসে, যিনি সঠিক ও ভুল জানেন, এবং সেটি মুখস্থ করতে হয়। এর ফলে এশীয় শিক্ষার্থীদের সাধারণভাবে দেখা হয় নীরব, অনুগত ও মুখস্থনির্ভর শিখনশীল হিসেবে। অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীদের ভাবা হয় বেশি সক্রিয়, যারা আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা, বৈচিত্র্য গ্রহণযোগ্য এবং চিন্তা ও আচরণের বিকল্প পথ অনুসন্ধানে ইচ্ছুক।<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''" /> == জ্ঞান-সচেতনতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য == [[চিত্র:Different_Mind.png|থাম্ব|322x322পিক্সেল|চিত্র ৭. Different Mind]] মেটাকগনিশন সংক্রান্ত গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত পার্থক্য। এই পার্থক্য মেটাকগনিশন পরিমাপকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। উইনে (১৯৯৬) প্রস্তাব করেছিলেন, স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় মেটাকগনিশন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এমন পাঁচটি উৎস রয়েছে: ‘‘ডোমেইন জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতির জ্ঞান, কৌশল প্রয়োগ, কৌশল নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক প্রবণতা’’। (Winne ১৯৯৬, p. ৩২৭)<ref name="Winne, P. H. (1996).''">Winne, P. H. (1996). A metacognitive view of individual differences in self-regulated learning. Learning and Individual Differences, 8(4), 327-353.</ref> সামগ্রিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখা নিয়ে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। উইনে জানান যে তার এই প্রস্তাবনা প্রাথমিক এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে তার কাজ অন্যান্য গবেষকদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছে। অনেক গবেষক মনে করেন, মেটাকগনিশন নির্ভুলতার পার্থক্যগুলো আসলে মেটাকগনিটিভ দক্ষতার পার্থক্য। তবে কেলেমেন, ফ্রস্ট ও উইভার (২০০০) বলেছিলেন, এটা সবসময় ঠিক নয়। মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতা বলতে বোঝানো হয় ‘‘মেটাকগনিশন এবং ভবিষ্যৎ স্মৃতির কার্যকারিতার মধ্যকার সম্পর্ক’’ (Kelemen et al., ২০০০, p. ৯২)।<ref name="Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000).''">Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000). Individual differences in metacognition: Evidence against a general metacognitive ability. Memory & Cognition, 28(1), 92-107.</ref> এই গবেষণায় চারটি প্রচলিত মেটাকগনিটিভ কাজ পরিমাপ করা হয়েছিল: শেখার সহজতার অনুমান, জানার অনুভূতির অনুমান, শেখার অনুমান এবং পাঠ্য বোধগম্যতার পর্যবেক্ষণ। প্রাক-পরীক্ষা ও পর-পরীক্ষা মিলিয়ে স্মৃতি ও আত্মবিশ্বাসের মাত্রা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে ভিন্ন ছিল। এই ফলাফল বোঝায়, মেটাকগনিটিভ দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এই গবেষণার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, কারণ অনেক গবেষক একমত যে মেটাকগনিশন পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই পার্থক্যগুলো দেখায় যে মেটাকগনিশনের জন্য ‘একটি সমাধান সবার জন্য উপযোগী’—এমন ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। লিন, শোয়ার্টজ এবং হাতানো (২০০৫) পরামর্শ দেন যে মেটাকগনিশনের প্রয়োগে ব্যক্তিগত শেখার ধরণ এবং শ্রেণিকক্ষ পরিবেশের পার্থক্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''">Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005). Toward Teachers' Adaptive Metacognition. Educational Psychologist, 40(4), 245-255.</ref> তারা "অভিযোজিত মেটাকগনিশন" ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এটি শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের প্রতি সাড়া দিয়ে ব্যক্তি ও পরিবেশ উভয়কেই মানিয়ে নিতে শেখায় (লিন প্রমুখ, ২০০৫, p. ২৪৫)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের মধ্যে সামাজিক ও পাঠদানের পার্থক্য অন্তর্ভুক্ত। অভিযোজিত মেটাকগনিশনের জন্য, লিন প্রস্তাব করেন “ক্রিটিকাল ইভেন্ট ইনস্ট্রাকশন” পদ্ধতি। এটি শিক্ষকদের শেখায় কীভাবে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় যেগুলো উপর থেকে দেখলে সাধারণ মনে হয় (লিন প্রমুখ, ২০০৫, p. ২৪৬)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> এটি নতুন শিক্ষকদের জন্য সহায়ক, যাতে তারা শিক্ষণিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে কার্যকরভাবে মানিয়ে নিতে পারে। == লার্নিং অ্যানালিটিকস এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণা == === লার্নিং অ্যানালিটিকসের সংজ্ঞা === ব্যবসা থেকে শুরু করে মহামারিবিদ্যার মতো ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার ও গণনাগত শক্তির প্রসার বড় ডেটা সেট থেকে উপকারী তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও এই ধরণের পদ্ধতিকে ‘‘লার্নিং অ্যানালিটিকস’’ বলা হয়। যদিও একে প্রায়ই নতুন একটি শাখা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, লার্নিং অ্যানালিটিকস মূলত বহু পুরোনো ধারার আইডিয়া, নীতি ও পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত। এটি একটি বহুমাত্রিক শাখা। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স, মানব-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশন এবং শিক্ষাবিদ্যার বিভিন্ন উপাদান একত্র করে তৈরি হয়েছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''">Siemens, G. (2013). Learning analytics: The emergence of a discipline. American Behavioral Scientist, 57 (10), p. 1380 - 1400.</ref> '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স কী?''' লার্নিং অ্যানালিটিক্স গবেষণা সংস্থা (Society for Learning Analytics Research বা SoLAR) লার্নিং অ্যানালিটিকসের ক্ষেত্রকে নিম্নরূপভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: “লার্নিং অ্যানালেটিক্স হলো শিক্ষার্থী ও তাদের প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার একটি প্রক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য হলো শেখার প্রক্রিয়া এবং যে পরিবেশে তা ঘটে, তা বোঝা ও আরও কার্যকর করে তোলা।”<ref name="Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).''">Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).Retrieved from http://solaresearch.org</ref> এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের দেওয়া সংজ্ঞাগুলোর একটি সমন্বয় থেকে<ref name="Larusson, J. A., & White, B. (2014).''">Larusson, J. A., & White, B. (2014). Learning Analytics. Springer</ref><ref name="Martin, T., & Sherin, B. (2013).''">Martin, T., & Sherin, B. (2013). Learning analytics and computational techniques for detecting and evaluating patterns in learning: An introduction to the special issue. Journal of the Learning Sciences, 22(4), p. 511-520.</ref> নিচের কয়েকটি মূল বিষয় নিরূপণ করা যায়: * এই শাখাটির মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি, পদ্ধতি, কাঠামো এবং সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেগুলো তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। * এটি বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আচরণ ও কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রকৃতপক্ষে, সিমেন্স (২০১৩) মতে, এই তথ্যসমূহের উৎস হতে পারে একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পাঠক্রম পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> * তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনের প্রতিটি ধাপেই এর পরিধি বিস্তৃত—যেমন তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম, তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাঠামো ও প্যাটার্ন বের করা, এবং তথ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত ভিজ্যুয়াল সরঞ্জাম। * এর একটি তাত্ত্বিক দিক রয়েছে, কারণ শিক্ষাগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীরতর বোঝাপড়া গড়ে উঠতে পারে। এটি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর পক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে। * এর একটি ব্যবহারিক দিকও রয়েছে, কারণ এসব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ফলাফল শেখার পরিবেশ এবং শেখার পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে সহায়তা করতে পারে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহারে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ''' যদিও লার্নিং অ্যানালেটিক্সের মূল লক্ষ্য নতুন নয়, তবুও কিছু বিশেষ উন্নয়ন ও কারণ এই ক্ষেত্রে আগ্রহ পুনর্জাগরিত করেছে এবং এটিকে একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো: * '''তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি''' বিশেষ করে ব্লেন্ডেড লার্নিং, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদির মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার চালুর পর থেকে বিশ্লেষণের জন্য উপলব্ধ শিক্ষামূলক তথ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> শিক্ষার্থীরা যখন ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করে, তখন তারা তাদের কর্মকাণ্ডের একটি “ডিজিটাল ছাপ” রেখে যায়। এটি সহজেই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। এই ধরনের তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে লগ ইন সময়, পোস্ট, ক্লিকের সংখ্যা, কোন উপকরণে কত সময় ব্যয় হয়েছে ইত্যাদি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখার কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট গভীর মানসিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া সম্ভব। * '''প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নত অ্যালগরিদম''' কিছু কম্পিউটেশনাল উন্নয়ন এই বিশাল পরিমাণ শিক্ষামূলক তথ্য বিশ্লেষণকে সহজ করে তুলেছে। এখন কম সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব, এবং মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নতুন অ্যালগরিদম ব্যবহারে ডেটা বিশ্লেষণে মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাঠামো ও প্যাটার্ন আবিষ্কার করা যায়। * '''তথ্যের বিন্যাস''' তথ্য সংগ্রহ যথেষ্ট নয়, সেগুলিকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হয় যাতে বিশ্লেষণ কার্যকরভাবে সম্ভব হয়। এজন্য নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক তথ্য লগ করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটের প্রয়োজন হয়।<ref name="Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010).''">Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010). A data repository for the EDM community: The PSLC DataShop. In Romero, C., Ventura, S., Pechenizkiy, M., & Baker, R. S. (Eds.). (2010) Handbook of educational data mining. CRC Press. p. 43-56.</ref> এই স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট আগে থেকেই থাকলে তথ্য প্রস্তুত করতে যে সময় ব্যয় হতো, তা অনেকাংশে হ্রাস পায়। === লার্নিং অ্যানালিটিকসের মূল পদ্ধতি ও সরঞ্জাম === সিমেন্স (২০১৩) লার্নিং অ্যানালেটিক্সের দুটি মূল উপাদান উল্লেখ করেন: কৌশল ও প্রয়োগ। প্রযুক্তির মধ্যে আছে অ্যালগরিদম ও মডেল। এটি তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর প্রয়োগ হলো শিক্ষাগত প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তিগুলোর বাস্তব ব্যবহার—যেমন শিক্ষার্থী অনুযায়ী শেখার পরিবেশ তৈরি করা কিংবা শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করা।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> এই অংশে লার্নিং অ্যানালেটিক্সে ব্যবহৃত প্রধান পদ্ধতি ও কৌশলগুলো তুলে ধরা হয়েছে, কিছু উদাহরণসহ যা দেখায় কীভাবে এগুলো শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োগ করা যায়। '''ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি''' এই পদ্ধতিগুলোর কার্যপ্রণালির সরল বিবরণ হলো—ডেটার কিছু নির্দিষ্ট দিক বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের মান নির্ধারণ করা (যেটিকে বলা হয় ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল), যেখানে অন্য দিকগুলোকে বলা হয় '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল'''।<ref name="Baker, R. S., & Yacef, K. (2009).''">Baker, R. S., & Yacef, K. (2009). The state of educational data mining in 2009: A review and future visions. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 3-17.</ref> উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি আছে যেগুলো শিক্ষার্থীরা একটি অনলাইন কোর্সে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা থেকে (লগ ইন সময়, ব্লগ কার্যকলাপ, মূল্যায়ন পরীক্ষায় ফলাফল—এগুলো হলো '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল''') এই পূর্বাভাস দেয় যে শিক্ষার্থীটি কোর্সে ব্যর্থ হতে পারে (ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল)। এই ধরনের মডেল দুটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়: ভবিষ্যতের ঘটনা যেমন শিক্ষার্থীর ড্রপআউট <ref name="Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July).''">Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July). Predicting students drop out: A case study. In Proceedings of the 2nd International Conference on Educational Data Mining, EDM 2009, p. 41-50.</ref> অথবা শিক্ষার্থীর কোর্সফলাফল <ref name="Ming, N., & Ming, V. (2012).''">Ming, N., & Ming, V. (2012). Predicting student outcomes from unstructured data. In Proceedings of UMAP Workshops, p. 11-16.</ref> ভবিষ্যদ্বাণী করা। আবার কিছু ক্ষেত্রে কিছু ডেটা সরাসরি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, কারণ তা শিক্ষার্থীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমন অবস্থায় পূর্বাভাস মডেল অন্য কিছু পরিবর্তনশীল পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুমান করতে সক্ষম হয়।<ref name="Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August).''">Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August). Detecting student misuse of intelligent tutoring systems. In International Conference on Intelligent Tutoring Systems, p. 531-540.</ref> '''কাঠামো অন্বেষণ''' এই লার্নিং অ্যানালিটিক্স কৌশলটি আগেরটির চেয়ে বেশ আলাদা, কারণ এতে এমন অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয় যার উদ্দেশ্য হলো পূর্বানুমান ছাড়াই শিক্ষাগত ডেটাতে গঠন খুঁজে বের করা। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। '''ক্লাস্টারিং'''-এ ডেটাকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে সেটিকে একাধিক ক্লাস্টারে রূপান্তর করা হয়। এই ক্লাস্টারগুলো, যেমন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল হতে পারে যাদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে তারা কীভাবে অনুসন্ধানভিত্তিক শেখার পরিবেশ ব্যবহার করে তার ভিত্তিতে।<ref name="Amershi, S., & Conati, C. (2009).''">Amershi, S., & Conati, C. (2009). Combining Unsupervised and Supervised Classification to Build User Models for Exploratory. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 18-71.</ref> আবার '''সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ'''-এ শেখার মাঝে সম্পর্ক বা পারস্পরিক ক্রিয়ার ধরন শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন ছাত্রদের আচরণ ও নেটওয়ার্কে তাদের অবস্থান কীভাবে তাদের সম্প্রদায়ের অংশ মনে হওয়ার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করা।<ref name="Dawson, S. (2008).''">Dawson, S. (2008). A study of the relationship between student social networks and sense of community. Educational Technology & Society, 11(3), p. 224-238.</ref> '''সম্পর্ক অনুসন্ধান''' এই কৌশলটি ব্যবহৃত হয় বড় ডেটাসেটের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনশীলের মধ্যকার সম্পর্ক শনাক্ত করতে। এই পদ্ধতির সাধারণ লক্ষ্য হলো নির্ধারণ করা কোন কোন পরিবর্তনশীল একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কযুক্ত, অথবা পরিবর্তনশীলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করা। এই কৌশলের বিভিন্ন ব্যবহার আছে। উদাহরণস্বরূপ, বেকার ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) বিভিন্ন বুদ্ধিমান শিক্ষণ সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে শিক্ষার্থীরা কীভাবে “সিস্টেমকে ফাঁকি দেয়” তা নিয়ে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন।<ref name="Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June).''">Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June). Educational software features that encourage and discourage “gaming the system”. In Proceedings of the 14th international conference on artificial intelligence in education, p. 475-482.</ref> আবার পেরেরা ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) এই কৌশল ব্যবহার করে দলগত প্রকল্পে সফলতা আনার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী ধরনের সহযোগিতামূলক পথ সবচেয়ে কার্যকর তা শনাক্ত করেছেন।<ref name="Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009).''">Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009). Clustering and sequential pattern mining of online collaborative learning data. IEEE Transactions on Knowledge and Data Engineering, 21(6), p. 759-772.</ref> '''মানব-বিচারের জন্য তথ্য পরিশোধন''' এই কৌশলে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষাগত ডেটা পরিশোধন ও উপস্থাপন করা হয়, উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে, যাতে গবেষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা (শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রশাসক ইত্যাদি) উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বওয়ার্স (২০১০) বহু বছরের ছাত্রদের শিক্ষা-অগ্রগতির ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা ব্যবহার করে শনাক্ত করেছেন কোন ছাত্ররা ঝুঁকিতে আছে। যুক্তি হলো সফল বা ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু সাধারণ প্যাটার্ন থাকে যেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব এবং যেগুলোর উপস্থিতি ছাত্রের সফলতা বা ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে।<ref name="Bowers, A. J. (2010).''">Bowers, A. J. (2010). Analyzing the longitudinal K-12 grading histories of entire cohorts of students: Grades, data driven decision making, dropping out and hierarchical cluster analysis. Practical Assessment Research and Evaluation, 15(7), p. 1-18.</ref> === লার্নিং অ্যানালেটিক্স এবং স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) গবেষণা === লার্নিং অ্যানালেটিক্সের পদ্ধতি ও প্রয়োগ নিয়ে আগের অংশ বিবেচনা করলে এটি স্পষ্ট যে এই সরঞ্জামগুলো শেখা সম্পর্কে তত্ত্ব গঠনে এবং সেগুলোর পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনে সহায়তা করে। স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। এই ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং স্বনিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি ও কোন শর্তে তা ঘটে সে বিষয়ে ধারণা যাচাই করতে লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক পদ্ধতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে একাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। '''স্বনিয়ন্ত্রণভিত্তিক গবেষণার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা''' কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। কারণ, এই নতুন ধরনের শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলো শেখার দারুণ সুযোগ তৈরি করে। এটি গবেষকদের আগ্রহী করেছে—ছাত্ররা এই সম্ভাবনার কতটা সদ্ব্যবহার করছে এবং কী পরিস্থিতিতে তারা সফল হচ্ছে তা অন্বেষণে।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2">Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008). Self-regulation of learning within computer-based learning environments: A critical analysis. Educational Psychology Review, 20(4), 429-444.</ref> এসব শেখার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয় এবং তাই স্বনিয়ন্ত্রিত শেখারও সুযোগ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে বিষয়বস্তুর কাছে যেতে পারে, বিভিন্ন রূপে উপস্থাপন বেছে নিতে পারে এবং পরিবেশের একাধিক উপাদান নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এর মানে এটাও যে, যেসব শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই, তারা এই ধরনের শেখার লক্ষ্যে ব্যর্থও হতে পারে। এজন্য, এই পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমরা এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং এদের সহায়তায় হস্তক্ষেপ বা সহযোগী উপকরণ তৈরি করতে পারি। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন, বিশেষত যেহেতু এ প্রক্রিয়াগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ। কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত আচরণ পর্যবেক্ষণে গবেষকদের একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিয়াদাতি প্রমুখ (২০১৬) জোর দিয়ে বলেন যে স্বনিয়ন্ত্রণ মূল্যায়নের যথাযথ ব্যাখ্যা পেতে হলে “যে কোনও পরিমাপ পদ্ধতির নির্বাচন, উন্নয়ন ও প্রয়োগ তাতে ব্যবহৃত স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল বা তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে” (Siadaty et al., ২০১৬ p. ১৯০)।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). ''2">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). Trace-based micro-analytic measurement of self-regulated learning processes. Journal of Learning Analytics, 3(1), p. 183-220.</ref> তবে, কিছু গবেষণায় কোনও নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো অনুসরণ করা হয়নি, ফলে শব্দার্থ ও সংজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণা আবার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেলের নির্দিষ্ট উপাদান যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, স্ব-পর্যবেক্ষণ বা আত্ম-দক্ষতা নিয়ে কাজ করেছে। এই উপাদানগুলোকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কাঠামোর সামগ্রিক চিত্রটি পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয় না।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> আরেকটি বড় সমস্যা দেখা যায় তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে। অধিকাংশ গবেষণায় শিক্ষার্থীদের নিজেদের প্রতিবেদনকেই মূল তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর নির্ভরযোগ্যতা ও মান শিক্ষার্থীর আত্মজ্ঞান ও শেখার কৌশল বর্ণনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। উইন্টার্স প্রমুখ (২০০৮) উল্লেখ করেন, এই ধরনের আত্মপ্রতিবেদন সবসময় পর্যবেক্ষণমূলক কৌশলের মতো নির্ভরযোগ্য নয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণায় থিংক-এলাউড পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত চিন্তাপ্রক্রিয়া ধরা সম্ভব হয়। তবে, এগুলো সাধারণত ব্যবহৃত কৌশল শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, এই কৌশলগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় না। যেমন ধরুন, সারসংক্ষেপ করা একটি কার্যকর শিক্ষণ কৌশল হলেও এটি শুধু প্রয়োগ করলেই কার্যকর হবে না, বরং সারসংক্ষেপ কখন করা হচ্ছে, কীভাবে করা হচ্ছে, কী বিষয়কে সারসংক্ষেপ করা হচ্ছে এসব বিষয়ের ওপর এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। সবশেষে, গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো তথ্য সংগ্রহ ও পরিমাপ পদ্ধতি শিক্ষার সঙ্গে কতটা হস্তক্ষেপ করে। আদর্শ পদ্ধতি হলো এমন। এটি শিক্ষার্থীর শেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলে এবং শেখার প্রক্রিয়ায় কোনওরকম বিঘ্ন না ঘটিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এই ধরনের “অহস্তক্ষেপমূলক” আচরণ দেখা যায় লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক সরঞ্জামগুলোতে। এগুলো ব্যবহারকারীর ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে, যেমন লগ ইন/আউট সময়, কোন বৈশিষ্ট্য বেশি ব্যবহার হচ্ছে, মূল্যায়ন কার্যক্রমে পারফরম্যান্স ইত্যাদি, এবং এই তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্যাটার্ন চিহ্নিত করে। এই বিষয়ে আরও আলোচনা পরবর্তী অংশে করা হবে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহার করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ নিরীক্ষণ''' লার্নিং অ্যানালেটিক্স প্রযুক্তি ও প্রয়োগগুলো নির্ভুল ও অহস্তক্ষেপমূলক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সরবরাহ করে, যাতে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময় তাদের স্বনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার প্রমাণ নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা যায়। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রগতি গবেষকদের হাতে নতুন উন্নত প্রযুক্তি এনে দিয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রেস ডেটা সংগ্রহের পরিধি ও বৈচিত্র্য অনেক বেড়েছে। [[চিত্র:Kwlimage.jpg|থাম্ব|চিত্র ৮. কেডব্লিউএল]] আগের অংশে আমরা দেখেছি, স্বনিয়ন্ত্রিত শেখা নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণাই শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রতিবেদনকে প্রধান তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর সঙ্গে যুক্ত নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে কিছু গবেষণায় আত্মপ্রতিবেদন, অনলাইন আচরণগত তথ্য ও শেখার ফলাফল একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, শা প্রমুখ (২০১২) একটি মোবাইল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সময় স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করেন। এই গবেষণায় সিঙ্গাপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শেখার জন্য মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এতে অ্যানিমেশন আঁকা, কনসেপ্ট ম্যাপ তৈরি, এবং কেডব্লিউএল টেবিল তৈরি করার মতো অ্যাপ্লিকেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। iKWL অ্যাপে শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড ও পারফরম্যান্সই ছিল তথ্য সংগ্রহের ভিত্তি। অ্যাপ্লিকেশনটি তিনটি প্রশ্নের উত্তর চায়: “আমি কী জানি?”, “আমি কী জানতে চাই?” এবং “আমি কী শিখেছি?”। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর যথাক্রমে পূর্বজ্ঞান, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আত্মমূল্যায়ন ধাপকে বোঝায়। গবেষকরা শিক্ষার্থীরা কেডব্লিউএল প্রশ্নে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা বিশ্লেষণ করেন। দুটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করা হয়: একজন শিক্ষার্থী কেডব্লিউএল টেবিল সম্পূর্ণ করেছে কি না (যদি কোনো ঘর পূরণ না হয় = ০, যদি অন্তত একটি পূরণ হয় = ১), এবং প্রতিটি ক্যাটাগরিতে কতগুলো তথ্য লিখেছে তা পরিমাপ করার রুব্রিক। এই পরিমাপটি সহজ, তাই সিস্টেম নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নির্ধারণ করতে পারে, তবে এতে লেখা কনটেন্টের মান বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). ''2">Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). Recognizing and measuring self-regulated learning in a mobile learning environment. Computers in Human Behavior, 28(2), p. 718-728.</ref> [[চিত্র:Posterlet_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ৯. পোস্টারলেট]] [[চিত্র:MetaTutor_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১০. মেটাটিউটর]] আরও কিছু গবেষণা নির্দিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছে। কুতুমিসু প্রমুখ (২০১৫) “নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ” এবং “পুনরায় সম্পাদনা” কৌশল দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষার জন্য পোস্টারলেট নামক একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন। এই অ্যাপে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ফান ফেয়ারের জন্য পোস্টার ডিজাইন করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা কার্যকর পোস্টার ডিজাইনের নীতিমালা ও অনুশীলন শেখে। শেখার আচরণ পর্যবেক্ষণের জন্য অ্যাপটিতে একটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পোস্টার তৈরি করে এবং পশু চরিত্রদের কাছ থেকে ইতিবাচক (“আমার ভালো লেগেছে...”) বা নেতিবাচক (“আমার পছন্দ হয়নি...”) প্রতিক্রিয়া পায়। সিস্টেম দুটি বিষয় রেকর্ড করে: কতবার শিক্ষার্থী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বেছে নিয়েছে এবং কতবার সে পোস্টারে পরিবর্তন এনেছে। এখানে কেবল সংখ্যাগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে—শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তন করেছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015).''2">Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015). Posterlet: A game-based assessment of children’s choices to seek feedback and to revise. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 49-71.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষণ পরিবেশ রয়েছে, যেগুলো দ্বৈত ভূমিকা পালন করে: একটি হচ্ছে শেখার উপকরণ, যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ শেখানো ও সহায়তার জন্য তৈরি; অন্যটি গবেষণামূলক উপকরণ, যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ আচরণের উপর তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। এমন একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশন হলো MetaTutor, যা Azevedo ও তাঁর সহকর্মীদের (২০১৩) গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। MetaTutor একটি শিক্ষণ পরিবেশ যা জীববিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এতে একাধিক ডিজিটাল এজেন্ট রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশল প্রয়োগে সহায়তা করে। এর নানা বৈশিষ্ট্য আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট পর্যায় ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত (যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, আত্ম-প্রতিফলন) এবং সেগুলো ব্যবস্থার ইন্টারফেসে সুনিপুণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (দেখুন চিত্র ১০)। এছাড়াও MetaTutor-এ এমন ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থাও রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যাতে গবেষকরা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা আরও উন্নত করা যায়। এই সিস্টেমটি সাধারণ ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতির (যেমন স্ব-প্রতিবেদন জরিপ, চিন্তা প্রকাশ প্রোটোকল) পাশাপাশি উন্নততর শিক্ষণ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে অনুধাবন ও মূল্যায়ন করে। এখানে একটি আই-ট্র্যাকিং (চোখের গতি পর্যবেক্ষণ) উপাদান রয়েছে যা শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে, কোন অংশে মনোযোগ দেয়, কোন ক্রমে তথ্য পড়ে, কোন ডায়াগ্রামের অংশ বেশি ব্যবহার করে ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান তথ্য দেয়। এই ধরনের তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় শিক্ষার্থীর স্ব-প্রতিবেদন বা মুখে বলা চিন্তায় এসব বিষয় উঠে আসে না। সিস্টেমটি এমন বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ইন্টারঅ্যাকশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং শিক্ষার্থীরা শেখার কাজে তা প্রয়োগ করে। যেমন: নোট নেওয়ার ধরণ, চিত্র অঙ্কনের ব্যবহার, কী-স্ট্রোক, মাউস ক্লিক, অধ্যায় বা কার্যকলাপ খোলা, কুইজে পারফরম্যান্স ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজের ধারা বা রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়। এই সব বিভিন্ন ধরণের ডেটার সমন্বয়ে গবেষকরা কগনিটিভ (জ্ঞানগত) প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পান। যেমন: যদি শিক্ষার্থী কোনো লেখাকে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে সে পাঠ্যবস্তুর উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। অথবা, যদি ব্যবহারকারী টেক্সট থেকে চিত্র বা গ্রাফে বারবার যায়, তাহলে বোঝা যায় সে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন পদ্ধতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। এছাড়াও এখানে মুখাবয়ব অভিব্যক্তি শনাক্তকরণের একটি জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। সিস্টেমটি শিক্ষার্থীদের মুখাবয়বের ভিডিও সংগ্রহ করে এবং তা Noldus FaceReader ৩.০ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর আবেগগত অবস্থান নির্ধারণ করে। তবে, এই সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা হলো এটি কেবল কয়েকটি সাধারণ, সর্বজনীন আবেগ শনাক্ত করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের পুরো আবেগ অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করে না।<ref name="Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013).''">Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013). Using trace data to examine the complex roles of cognitive, metacognitive, and emotional self-regulatory processes during learning with multi-agent systems. In International handbook of metacognition and learning technologies, Springer New York, p. 427-449.</ref> [[চিত্র:System_bbbbb.png|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১১. Bretty's Brain]] পরিশেষে, কিছু গবেষণায় শিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশনের নির্দিষ্ট উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখার নির্দিষ্ট পর্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এসব উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ডেটার গঠন বা ধরন শনাক্ত করা হয়েছে (দেখুন ক্লাস্টারিং, অধ্যায় ২)। Segedy et al. (২০১৫) একটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, যেটিকে তারা বলেন '''coherence analysis'''। তাঁদের গবেষণায়, তারা "Betty’s Brain" নামক একটি শিক্ষণ পরিবেশ ব্যবহার করেন। এখানে শিক্ষার্থীরা একটি ভার্চুয়াল এজেন্ট বেটিকে একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর চেষ্টা করে, একটি কারণমূলক মানচিত্র তৈরি করে। এই মানচিত্রে (দেখুন চিত্র ১১) বিষয়বস্তুর মূল ধারণাগুলোকে উপস্থাপনকারী সত্ত্বাগুলো থাকে, যেগুলো মধ্যে দিক-নির্দেশিত সংযোগ থাকে, যা ধারণাগুলোর মধ্যে কারণ-পরিণাম সম্পর্ক নির্দেশ করে। বেটি এই মানচিত্র ব্যবহার করে সংযোগ চেইনের মাধ্যমে যুক্তি করে এবং বিভিন্ন কুইজ প্রশ্নের উত্তর দেয়।<ref name="Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015).''">Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015). Using coherence analysis to characterize self-regulated learning behaviours in open-ended learning environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 13-48.</ref> এই কারণমূলক মানচিত্রের সঠিকতা নির্ধারণ করে যে, বেটি কতটা সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত টেক্সট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই সংযোগ স্থাপন করে, কুইজের মাধ্যমে মানচিত্র পরীক্ষা করে এবং প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে মানচিত্র সংশোধন করে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারঅ্যাকশনের সময় সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাঁচটি আলাদা আচরণগত গোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়। প্রথম দল ছিল ঘন ঘন তথ্য অনুসন্ধানকারী ও সতর্ক সম্পাদক, যারা তথ্য উৎস অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে কিন্তু মানচিত্র কম সম্পাদনা করেছে। দ্বিতীয় দল, কৌশলী পরীক্ষক, যারা তথ্য দেখেছে কিন্তু ততটা কাজে লাগাতে পারেনি। তবু তারা মানচিত্র বেশি সম্পাদনা করেছে। তৃতীয় দল ছিল বিভ্রান্ত অনুমানকারী, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে কিন্তু বিজ্ঞান উৎস ব্যবহার করেনি। চতুর্থ দল ছিল দায়িত্বহীন শিক্ষার্থী, যাদের অধিকাংশ সম্পাদনা অসমর্থিত এবং তারা ৩০% সময়ই নিষ্ক্রিয় ছিল। পঞ্চম দল ছিল সম্পৃক্ত ও দক্ষ, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে এবং বেশিরভাগই সমর্থিত। তারা তথ্য দেখার সময় এবং মানচিত্র তৈরির সময়ও বেশি ব্যয় করেছে। এই আচরণই বেটির ব্রেইনে সফলতা এনে দেয়। = তত্ত্ব থেকে প্রয়োগে = [[চিত্র:Section_4_From_Theory_to_Practice.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ১২. From Theory to Practice]] == অভিজ্ঞ প্রয়োগে মেটাকগনিশন == === পাঠে মেটাকগনিশন === মেটাকগনিশন এবং পাঠ অনুধাবনের উপর এর প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ভাষাগত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি এবং কিশোরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব গবেষণায় পাঠ ও লেখার সঙ্গে মেটাকগনিশনের সম্পর্ক এবং মেটাকগনিশনমূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা উঠে এসেছে। Furnes এবং Norman (২০১৫) মেটাকগনিশনের তিনটি ধরন (জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা) তুলনা করেন স্বাভাবিক পাঠকের সঙ্গে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত পাঠকদের মধ্যে।<ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).2" /> অংশগ্রহণকারীরা দুটি তথ্যমূলক লেখা পড়ে এবং তাদের শেখার ফলাফল একটি মেমরি টাস্কের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। মেটাকগনিশনমূলক জ্ঞান ও দক্ষতা স্ব-প্রতিবেদনের মাধ্যমে এবং অভিজ্ঞতা পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস ও শেখার বিচার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। ফলাফল দেখায় যে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্তদের পাঠ ও বানান সমস্যা সাধারণত কম মেটাকগনিশন বা কৌশল ব্যবহারজনিত নয়। স্বাভাবিক শিশুদের উপর একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা যায়, ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের মেটাকগনিশন জ্ঞান তুলনামূলকভাবে ভালো।<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).3" /> গবেষণায় আরও উঠে আসে, পাঠ অনুধাবন ব্যক্তিগত কৌশল জ্ঞানভিত্তিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দুটি গবেষণাই বোঝায়, ডিসলেক্সিয়ায় পাঠ অনুধাবনের ঘাটতি মেটাকগনিশনের কারণে নয়, কিন্তু স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে পাঠ অনুধাবন তাদের মেটাকগনিশনের স্তরের উপর নির্ভর করে। '''প্রশ্ন তৈরি''' শিক্ষার্থীদের পাঠ্য অনুধাবনে সহায়তা করতে পারে। “একজন আদর্শ শিখনকারী – স্ব-নিয়ন্ত্রিত ও সক্রিয় – হলো সেই ব্যক্তি যে গভীর প্রশ্ন তোলে এবং এর উত্তর অনুসন্ধান করে” (Garcia et al. ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> বিভিন্ন গবেষণায় প্রশ্ন তৈরির পাঠ্য অনুধাবনে প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে। Garcia et al. (২০১৪) নবম শ্রেণির ৭২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিজ্ঞানের ক্লাসে একটি গবেষণা করেন। ফলাফল অনুযায়ী, “প্রশ্ন তৈরির প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের শেখা ও অধ্যয়নের পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত তাদের মেটাকগনিশনে” (Garcia et al. ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা, যারা প্রম্পটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পায়, তাদের মেটাকগনিশন জ্ঞান ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ স্কোর সর্বোচ্চ হয়। এটি বোঝায় যে প্রশ্ন তৈরির কার্যকারিতা শিক্ষার্থীর মেটাকগনিশন জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তৈরি করানোর আগে তাদের মেটাকগনিশন দক্ষতা চিহ্নিত করা শিক্ষকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। === লেখায় মেটাকগনিশন === বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখালেখিতে মেটাকগনিশন দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিক্ষকরা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে চিন্তা ও পর্যালোচনার আহ্বান জানান, বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সচরাচর তাদের লেখাকে গভীরভাবে মূল্যায়ন বা পরিমার্জন করে না। প্যারট ও চেরি (২০১৫) এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও সক্রিয় লেখাচিন্তায় উৎসাহিত করতে নতুন শিক্ষণ কৌশল '''প্রক্রিয়া স্মারক''' (process memos) প্রস্তাব করেন।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> প্রক্রিয়া স্মারক হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠানো নির্দেশিত প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা তাদের রচনার প্রথম খসড়া এবং চূড়ান্ত সংস্করণ উভয়ের পর প্রক্রিয়া স্মারক জমা দেয়। প্রথম খসড়ায়, শিক্ষার্থীদের তাদের রচনা, রুব্রিকের সহায়কতা, অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন, নিজের রচনার শক্তি ও দুর্বলতা এবং চূড়ান্ত সংস্করণে উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়। এরপর শিক্ষক রচনা মূল্যায়ন করে প্রতিক্রিয়া দেন। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া স্মারকে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বলা হয়, যেমন “কোন মন্তব্য সবচেয়ে সহায়ক ছিল, এবং কেন?” (Parrott et al, ২০১৫, পৃ. ১৪৭)।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> Parrott ও Cherry প্রথমে ২০০৫ সালে প্রক্রিয়া স্মারক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন এবং ২০১৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় তা প্রয়োগ করেন। এই গবেষণায় সমাজতত্ত্বের বিভিন্ন স্তরের ২৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অংশ নেয়।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে যে, প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উভয়কেই লেখালেখির প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে সাহায্য করে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাদানের গুণমান সম্পর্কে মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন, যা ভবিষ্যতে তাদের পদ্ধতি উন্নত করতে এবং রুব্রিকগুলো আরও স্পষ্ট করতে সহায়ক হয়। যদিও কিছু শিক্ষার্থী প্রসেস মেমোকে গুরুত্ব দেয়নি এবং পর্যাপ্ত মন্তব্য করেনি, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই পদ্ধতিকে তাদের লেখার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কার্যকর মনে করেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সৎভাবে মন্তব্য প্রদান করেছে। প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে যোগাযোগকেও উৎসাহিত করেছে, কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষকরা সরাসরি শিক্ষার্থীর প্রতিফলনের জবাব দিতে পারেন। Parrot এবং Cherry-এর মতে প্রসেস মেমোর আরেকটি সুবিধা হলো, এটি শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করে, ফলে যারা ক্লাসে প্রশ্ন করার জন্য হাত তুলতে সংকোচ বোধ করে, তারাও উপকৃত হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ সচেতনতা বাড়াতে এবং ধাপে ধাপে লেখার পথে দিকনির্দেশনা দিতে একটি কার্যকর উপায়। === বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন === পূর্বে উল্লেখিতভাবে, মেটাকগনিশন বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চস্তরের বিজ্ঞান চর্চায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উপলব্ধি ও প্রক্রিয়াগত কৌশলগুলো পুনর্গঠন করতে হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যথাক্রমে তাদের শেখা ও শেখানোর উপরে প্রভাব ফেলে। তবে অনেক শিক্ষক এই বিশ্বাসগুলোকে স্বাভাবিক ধরে নেন। Abd-El-Khalick প্রমুখ (১৯৯৮) পরিচালিত এক গবেষণায় প্রাক-সেবা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দেখা যায় যে, খুব বেশি শিক্ষক বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস বা বিজ্ঞান প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষাদান করেন না। এই গবেষণায় কিছু শিক্ষক বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানের প্রকৃতি শেখানো অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই পরিস্থিতি সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়ায় যখন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উচ্চস্তরের বিজ্ঞান শেখে। এটি তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়, কারণ তাদের বিজ্ঞানকে বোঝার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। Schraw, Crippen ও Hartley (২০০৬) এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেন, “কার্যকর নির্দেশনা এমন হওয়া উচিত যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়কে তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলে”। তাহলে, বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন কীভাবে উৎসাহিত করা যায়? Schraw প্রমুখের মতে, “বাস্তব অনুসন্ধান (authentic inquiry) মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে উৎসাহিত করে, কারণ এতে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের চিন্তায় ভুল বা ধারণাগত ঘাটতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়।” এটি ইনকোয়ারি-ভিত্তিক শিক্ষণ পদ্ধতির অংশ, যাকে অনেক গবেষক বিজ্ঞান শিক্ষায় কার্যকর বলে মনে করেন। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলে এবং সমাধান তৈরি করে। শ্রেণিকক্ষে মেটাকগনিশন বৃদ্ধির আরেকটি উপায় হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, যা Schraw, Crippen ও Hartley উল্লেখ করেছেন। এটি প্রতিক্রিয়া, মডেলিং এবং সামাজিক যোগাযোগ উন্নত করে, ফলে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও জ্ঞানের বিশ্বাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনুরূপভাবে, গাণিতিক শিক্ষণ ও নির্দেশনার গবেষণাতেও মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে “Learning Mathematics” অধ্যায়টি দেখুন। == উন্নয়নমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে মেটাকগনিশন == গবেষণায় দেখা গেছে, মেটাকগনিটিভ ক্ষমতা বয়স ও জৈবিক বিষয়ের মতো বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই এই তত্ত্বকে প্রয়োগের জন্য উন্নয়নগত অগ্রগতির ধারণা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। === পরিপক্বতা ভিত্তিক === '''বয়স একটি উপাদান হিসেবে''' * ছোট শিশুরা ** "থিওরি অফ মাইন্ড" ধারণা * কৈশোর * প্রাপ্তবয়স্করা === জৈবিক ভিত্তি === '''শেখার ঘাটতি''' == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন একটি দ্রুত বর্ধনশীল আগ্রহের ক্ষেত্র, বিশেষত শিক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্রের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন তত্ত্বকে একটি সংহত কাঠামোর মধ্যে একত্রিত করা, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণার পর্যালোচনায় প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রয়োগের কয়েকটি মূল নীতিকে তুলে ধরেছেন। তারা এই নীতিগুলোকে চারটি ধারণার মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন, যা এই ক্ষেত্রের গবেষণাকে সংহত করে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা শিখনের প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হয় যখন তারা আত্ম-মূল্যায়ন করতে পারে। অর্থাৎ, তারা কীভাবে শিখছে তা বিশ্লেষণ করে, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে, কী জানে আর কী জানে না তা মূল্যায়ন করে, এবং নিজের প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করে—এই উপায়ে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, চিন্তা ও আবেগের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে বেশি নমনীয়তা প্রদান করে। তারা যদি বাস্তববাদী লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যা তাদের দক্ষতা উন্নয়নের দিকে কেন্দ্রীভূত থাকে, সময় ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে এবং শেখার কৌশলগুলো পুনর্বিবেচনা করে, তাহলে তারা নিজেদের জন্য উচ্চতর কর্মক্ষমতার মান নির্ধারণ করতে পারে। তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিভিন্নভাবে শেখানো যায়, যা শিখন প্রক্রিয়াকে অভিযোজিত করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন শিক্ষার্থীদেরকে সরাসরি শেখানো যেতে পারে (নির্দেশিত প্রতিফলন, মেটাকগনিশন সম্পর্কিত আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনুশীলন); এটি পরোক্ষভাবে শেখানো যেতে পারে (মডেলিং ও প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে); এবং এটি ব্যক্তিকৃত অগ্রগতি চিত্রায়নের মাধ্যমেও উৎসাহিত করা যায়। সবশেষে, আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিচয়সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়। শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের আচরণ মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করে, তা তারা যেভাবে নিজেদের দেখতে চায় সেই পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। একটি প্রতিফলনশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার মাধ্যমে, একজন শিক্ষার্থী তার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়। যদিও শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের উপায়ে ভিন্নতা থাকতে পারে, মূল বিষয়টি হলো—তারা কীভাবে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে, তা বোঝা। প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) অনুসারে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) তিনটি উপায়ে উন্নত করা যায়: (১) পরোক্ষভাবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে: বিদ্যালয়ে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষক কী চান এবং কোনটি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী, তা শেখাতে পারে।<ref name="Paris, A.H. (2001)." /> এর একটি উদাহরণ হলো, কাজটি আবার যাচাই করা—যদিও শুরুতে সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক হয় এবং তাই পরবর্তীবারেও এটি করা উপকারী হবে। (২) স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সরাসরি শেখানো যায়: শিক্ষার্থীরা এমন শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখতে পারে, যারা কার্যকর কৌশল ব্যবহারে জোর দেন এবং লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত একটি গাণিতিক সমস্যা বিশ্লেষণের কৌশলগত ধাপগুলো তুলে ধরতে পারেন। (৩) আত্ম-নিয়ন্ত্রণ তখন উদ্দীপিত হয়, যখন এটি এমন সক্রিয় অনুশীলনের সঙ্গে একীভূত হয়, যার মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিদ্যমান থাকে। একটি কার্যকর অনুশীলন হলো—সহযোগিতামূলক শিক্ষণ প্রকল্প, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সামগ্রিক প্রকল্পের একটি অংশের জন্য দায়িত্ব নেয়। এ ধরনের প্রকল্পে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিদ্যমান থাকে, কারণ শিক্ষার্থীরা অন্যদের প্রতিক্রিয়া থেকে এবং তারা প্রকল্পে কীভাবে অবদান রেখেছে তার বিশ্লেষণ থেকে শিখে থাকে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির এই তিনটি উপায় প্রায়শই মিলিতভাবে দেখা যায়, যেহেতু শিক্ষার্থীরা সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষাক্ষেত্র জুড়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষণ কৌশল শেখানো হয়, যেগুলো তাদের পড়াশোনায় প্রয়োগ করতে বলা হয়; তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র এই কৌশলগুলো জানা যথেষ্ট নয়, বরং এই কৌশলগুলোর ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাও জরুরি (Leutner et al., ২০০৭)। Leutner, Leopold এবং Elzen-Rump (২০০৭)-এর কম্পিউটারভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শুধু একটি কার্যকর জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষণ কৌশল (হাইলাইটিং) শেখানো নয়, বরং কৌশলটি কিভাবে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে—এ বিষয়ে মেটাকগনিটিভ প্রশিক্ষণ দেওয়াটাও উপকারী।<ref name="Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007).">Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007). Self-regulated learning with a text-highlighting strategyːA training experiment. Journal of Psychology, 215 (3), 174-182.</ref> এই গবেষণায় ৪৫ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে এলোমেলোভাবে তিনটি দলে ভাগ করা হয়—একটি দলে কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, একটি দলে শুধু হাইলাইটিং কৌশল শেখানো হয়েছে, এবং অন্যটিতে হাইলাইটিং কৌশলের সঙ্গে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়েছে। মিশ্র প্রশিক্ষণ দল এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের সংস্করণ পায়, যেখানে কীভাবে মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে হয়, তা ধাপে ধাপে শেখানো হয় এবং তা অনুশীলনের সময় ও প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যারা কৌশল ব্যবহারের পাশাপাশি এর মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণও শিখেছিল, তারা তাদের শেখাকে লক্ষ্যভিত্তিকভাবে আরও সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছিল। শুধুমাত্র কৌশল শিখানো দলটি যাদের কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, তাদের চেয়ে ভালো ফল করে; তবে মিশ্র প্রশিক্ষণ দল উভয় দলকেই ছাড়িয়ে যায়, যা প্রমাণ করে—যদিও কৌশল ব্যবহার ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবুও কৌশল নিয়ন্ত্রণ শেখানো হলে শেখার মান আরও উন্নত হয়। == প্রযুক্তি সংযুক্তকরণ == === প্রযুক্তি ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এর সংযোগ === প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েছে, Prensky (২০০১) তার প্রবন্ধে পরামর্শ দেন—শিক্ষকদের উচিত এমন উপায় খুঁজে বের করা, যার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করা যায়। এছাড়াও শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের “চাহিদা” বুঝে উপলব্ধ তথ্য ও কম্পিউটিং ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ উপায়ে পাঠ উপস্থাপন করতে হবে।<ref name="Beishuizen, J. (2007).''">Beishuizen, J. (2007). Self-regulated Learning in Technology Enhanced Learning Environments – a European review. In R. Carneiro, P. Lefrere, K. Steffens. (Eds). Kaleidoscope Seed Project, Retrieved from http://www.lmi.ub.es/ taconet/documents/srlinteles3.pdf.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''">Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008). Self- regulated Learning in Technology Enhanced Environments: Perspectives and Practice. Education – Line: European Conference on Educational Research, University of Goteborg.</ref><ref name="Prensky, M. (2001, September).''">Prensky, M. (2001, September). Digital natives, digital immigrants part 1. On the Horizon 9(5).</ref> আজকের দিনে, প্রযুক্তি-নির্ভর হস্তক্ষেপ প্রধানত ডিজিটাল প্রজন্মের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।<ref name="Prensky, M. (2001, September).''" /><ref name="Kitsantas, A. (2013).''">Kitsantas, A. (2013). Fostering college students’ self-regualted learning with learning technologies. Hellenic Journal of Psychology, 10(2013), pp. 235 – 252.</ref> শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের শিক্ষণ কার্যক্রম পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়নে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''">Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011). Self-regulated learning in technology enhanced learning environments A European perspective. Sense Publishers Rotterdam/ Boston/ Taiper.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান, আগ্রহ এবং প্রেরণা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে তাদের ব্যক্তিগত শেখার অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স ও ফলাফলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> উদাহরণস্বরূপ, Ma et al. (২০১৫) বুদ্ধিমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার (ITSs) ব্যবহারের কথা বলেন, যেগুলো শিক্ষার পরিবেশে প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফল উন্নয়নে প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে। কম্পিউটারভিত্তিক এই ITSs ব্যবস্থাগুলো শিক্ষার্থীদের আচরণের ভিত্তিতে শেখার কার্যক্রমে যুক্ত করে।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''">Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014). Intelligent tutoring systems and learning outcomes: A meta-analysis. Journal of Educational Psychology, 106(4), 901-918.</ref> ITSs বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করে এবং “প্রতিটি কাজকে একটি উৎপাদন নিয়মের সেট হিসেবে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সবচেয়ে বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন এমন নিয়মের একটি সেট হিসেবে বর্ণনা করে, এরপর সেরা মিল খুঁজে পায়” (Ma et al., ২০১৫, p.৪)।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''" /> ITSs প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজস্ব কাজ নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়, যা বিভিন্ন জ্ঞানের স্তর ও শেখার সক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর হতে পারে। ITSs-এর এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণের সুবিধা শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার নিয়ন্ত্রণ নিতে উৎসাহিত করে, যা আত্ম-প্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে উৎসাহিত করে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''">Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a). Support self-regulated learning. S. Kroop et al. (eds.), Responsive Open Learning Environments, pp. 17- 49. DOI 10.1007/978-3-319-02399-1_2.</ref><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''">Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b). A competence-based service for supporting self-regulated learning in virtual environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), 101–133.</ref> Kauffman, Zhao এবং Yang (২০১১) Ma et al.-এর মতোই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও মেটাকগনিশন উন্নত করার বিষয়ে উপসংহার টানেন।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''">Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011). Effects of online note taking formats and self-monitoring prompts on learning from online text: Using technology to enhance self-regulated learning. Contemporary Educational Psychology 36 (2011) 313–322.</ref> তারা আরও বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষাদানে মাল্টিমিডিয়া ও বিষয়বস্তুর সংগঠনের ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়া যায়। শিক্ষাবিষয়ক ডিজাইনার ও শিক্ষকরা ওয়েব-ভিত্তিক পদ্ধতি ও মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামের মাধ্যমে পাঠ্যবস্তু তৈরি ও বিতরণ করতে পারেন। বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাট শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে, তাদের শেখার আগ্রহ বাড়াতে এবং তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনয় আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করতে সাহায্য করে (Kauffman et al., ২০১১)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> অন্যদিকে, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে কাজ সম্পন্ন করতে পারে এবং “তাদের বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাটে পাঠ্যবস্তু দেখার একাধিক বিকল্প প্রদান করা হয়” (Kauffman et al., ২০১১, p.৪৩)<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> যা তাদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার সঙ্গে যুক্ত করে। এছাড়াও বিষয়বস্তু তৈরি করার সরঞ্জামগুলো শক্তিশালী শিক্ষণ কৌশল ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মিডিয়া ফরম্যাট ব্যবহার করে পাঠ্যবস্তুর ওপর নিজেদের বোঝাপড়া তুলে ধরতে পারে এবং তাদের শেখার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে পারে (Kauffman et al., ২০১১)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সমস্যা === ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্রুতগতিতে বাড়ায়, ফলে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) প্রক্রিয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /><ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়াকে সম্পূর্ণরূপে নিরীক্ষণ করতে পারে না এবং এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন চলাকালে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা বিকাশে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, শিক্ষার্থীরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ হারায় এবং শিক্ষণ চলাকালীন তাদের তথ্য প্রবাহ ভালোভাবে বোঝার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে মৌখিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হয়।<ref name="Azevedo Roger. (2005).''" /> উদাহরণস্বরূপ, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) শেখার কনটেন্ট বিতরণ করে, শেখার প্রক্রিয়া সংগঠিত করে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে একটি ইন্টারফেসের মাধ্যমে। তবে শিক্ষার্থীরা LMS ব্যবহারের সময় তাদের নিজের শেখার প্রক্রিয়ায় প্রকৃত অর্থে কোনও স্বাধীনতা পায় না। বরং শিক্ষকরা তাদের বোঝাপড়া সার্বক্ষণিকভাবে নিরীক্ষণ করেন।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /> <ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /> এর বিপরীতে, পার্সোনাল লার্নিং এনভায়রনমেন্ট (PLE) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পছন্দমতো সেবা বাছাই ও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়, যদিও তারা কনটেন্ট ও শেখার কৌশলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। কিন্তু, PLE-তে কনটেন্ট এবং পদ্ধতির উপযুক্ত নির্দেশনার অভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ কম কার্যকর হয়ে ওঠে<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" />; এর ফলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন দক্ষতাও সীমিত হয়ে পড়ে। === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সুযোগ === যদিও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উদ্বেগ রয়েছে, তথাপি অস্বীকার করা যায় না যে প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জ্ঞান অর্জন ও ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> বিভিন্ন তথ্যসূত্রে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে, Simao ও সহকর্মীরা (২০০৮) খুঁজে পান যে প্রযুক্তি নতুন উপায়ে শিক্ষণ পরিকল্পনা ও সম্পাদনের সুযোগ দেয়, যা নির্দিষ্ট দক্ষতা বিকাশে সহায়ক হতে পারে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া স্বনিয়ন্ত্রিত করার সক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে তারা নিজেরা নির্ধারিত বা তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে, শিক্ষকদের উচিত এমন সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তৈরি করা যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> অনেক একাডেমিক প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, শিক্ষাগত প্রযুক্তি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /><ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> প্রকৃতপক্ষে, এই নিবন্ধের শেষাংশে কিছু প্রযুক্তির উদাহরণ তুলে ধরা হবে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি। এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেখানো যে, কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে কার্যকর। বিশেষ করে, যখন প্রযুক্তি সচেতনভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ, প্রেরণা এবং অনলাইন শিক্ষায় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> এছাড়াও কিছু গবেষক, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-কে সহায়তা করতে শিক্ষাগত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা জানতে চায়, শিক্ষাগত প্রযুক্তি কি একটি বিকল্প শিক্ষণ কৌশল হিসেবে, নাকি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক হিসেবে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় স্থান পায়? প্রযুক্তি কি শিক্ষক/শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী/শিক্ষার্থী ইন্টারঅ্যাকশন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে? কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিশন, প্রেরণা এবং আচরণ উন্নত করতে পারে যাতে তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধানই নিবন্ধের শেষাংশে প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে, যেমন—Betty’s Brain, MetaTutor, এবং nStudy। এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের শেখার কৌশল নির্বাচন, কৌশলের প্রভাব পর্যবেক্ষণ এবং প্রাপ্ত তথ্য সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়নের সক্ষমতা দেয়, যা মেটাকগনিশন প্রতিফলনে সহায়ক।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> এই অংশে তিনটি বিদ্যমান প্রযুক্তি বর্ণনা করা হবে এবং কিভাবে তা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সমর্থন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, তা ব্যাখ্যা করা হবে। [[চিত্র:Betty's_Brain.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৩. Betty’s Brain এর প্রাথমিক ইন্টারফেস]] [[চিত্র:MetaTutor.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৪. MetaTutor ইন্টারফেস]] * '''Betty’s Brain''' Betty's Brain একটি "teachable agent system", যা Vanderbilt University-তে তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ এবং কৌশল ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> Betty's Brain-এ, শিক্ষার্থীরা প্রথমে বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ে শেখে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> তারপর তারা ধারণামূলক মানচিত্র (concept map) তৈরি করে এবং সেই মানচিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার এজেন্ট চরিত্র ‘Betty’ কে শেখায়।<ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).2" /> Roscoe ও সহকর্মীরা (২০১৩) ব্যাখ্যা করেন যে, এই মানচিত্র তৈরি শিক্ষার্থীদের নতুন ও পুরনো জ্ঞান সংহত ও সংগঠিত করতে সহায়তা করে এবং গভীরতর নীতির মধ্যে কিভাবে ধারণাগুলো সংযুক্ত, তা বুঝতে সাহায্য করে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> অন্যকে শেখানোর আগে শিক্ষার্থীদের নিজে শিখতে ও সমস্যার সমাধান করতে হয়। শেখানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা Betty প্রোগ্রাম থেকে প্রতিক্রিয়া পায় এবং এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে জ্ঞান স্থানান্তর করতে উদ্বুদ্ধ হয়, ফলে মেটাকগনিশন ও স্বনিয়ন্ত্রিত চর্চা বৃদ্ধি পায়।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Winne, P.H., Nesbit, J.C., Kumar, V., Hadwin, A.F., Lajoie, S.P., Azevedo, R., & Perry, N.E. (2006).''" /> এইভাবে তারা নিজেদের এবং তাদের এজেন্টের দক্ষতা মূল্যায়ন করতে ও উন্নত করতে সক্ষম হয়। শেষ পর্যন্ত, Roscoe ও সহকর্মীরা (২০১৩) বলেন, শিক্ষার্থীরা “মানচিত্রের ত্রুটি চিহ্নিত ও সংশোধন করতে মেটাকগনিশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সঠিকতা ও পূর্ণতা বৃদ্ধি করতে পারে” (পৃষ্ঠা ২৮৯)।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> * '''Azevedo-এর MetaTutor''' Khosravifar ও সহকর্মীদের (২০১৩) মতে, MetaTutor হলো গবেষণাভিত্তিক একটি শিক্ষণ টুল যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে তৈরি। বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাকটিভ ও কৌশলগত বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানগত, আবেগীয়, মেটাকগনিশন ও প্রেরণা স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করতে পারে।<ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /> এটি হাইপারমিডিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিজ্ঞান বিষয় শেখাতে তৈরি।<ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> MetaTutor শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সারসংক্ষেপ, নোট নেওয়া ইত্যাদি নিরীক্ষণ, মডেলিং এবং উৎসাহিত করে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''" /><ref name="Zimmerman, B. J. (2008). ''" /> শিক্ষার্থীদের MetaTutor ব্যবহারের আগে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এই হাইপারমিডিয়া পরিবেশে চারজন পেডাগজিক্যাল এজেন্ট থাকে, যারা অংশগ্রহণকারীদের শেখার দক্ষতা গঠনে প্রতিক্রিয়া প্রদান করে, সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে এবং cognitive কৌশল (যেমন—সারাংশ লেখা, নোট গ্রহণ) ব্যবহারে সহায়তা করে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> MetaTutor ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে এবং নিজের পছন্দমতো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> MetaTutor অংশগ্রহণকারীদের সব ধরনের ইন্টারঅ্যাকশন ট্র্যাক করতে এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ একটি লগ ফাইলে রেকর্ড করতে সক্ষম। যখন তথ্যগুলো দেখায় যে একজন শিক্ষার্থী অকার্যকর কৌশল ব্যবহার করছে, তখন MetaTutor-এর এজেন্ট শিক্ষার্থীকে আরও কার্যকর শেখার কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। শিক্ষার্থীরা এই প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করে শেখার পরিবেশে নিজেদের সিদ্ধান্ত ও ফলাফল উন্নত করতে পারে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''2" /> একই সময়ে, শিক্ষকরা MetaTutor থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বুঝতে পারেন শিক্ষার্থীরা কীভাবে MetaTutor-এর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করছে এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /> যদিও MetaTutor-এর পেডাগোজিকাল এজেন্টগুলো শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শেখার অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা এখনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কার্যকর কৌশল প্রদান করে, যা শেখার পরিকল্পনা ও তদারকিতে সহায়তা করে। [[চিত্র:NStudy.jpg|থাম্ব|355x355পিক্সেল|চিত্র ১৫: nStudy ব্রাউজার, উদ্ধৃতির তালিকা, এবং সংযুক্ত করার টুলসমূহ]] * '''nStudy''' প্রফেসর উইনে ও তার গবেষণা দল nStudy নামক একটি ওয়েবভিত্তিক শেখার টুল তৈরি করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান, নজরদারি, সংগঠন, অনুশীলন ও অনুবাদ করার জন্য সহায়তা করে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> এই ডিজাইনটি এমনভাবে তৈরি যাতে শিক্ষার্থী ও গবেষক উভয়েই ওয়েবভিত্তিক পরিবেশে সক্রিয়ভাবে শেখা ও গবেষণায় অংশ নিতে পারেন। nStudy-তে তারা শেখার উপাদান তৈরি, সম্পাদনা ও সংযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের মতো করে সংগঠিত করতে পারে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> Betty’s Brain-এর মতো, তারা ধারণার ম্যাপও তৈরি করতে পারে এবং সেগুলো সংযুক্ত, গুচ্ছিত ও স্থানীয়ভাবে সাজিয়ে নিতে পারে। এই সংযুক্তি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত শেখার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং তথ্য বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের ইন্টারঅ্যাকশন, ব্যাখ্যা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে।<ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> nStudy একক ও দলগত শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি ওয়ার্কস্পেস তৈরি করে যেখানে তারা তথ্য আদান-প্রদান, সহযোগিতা এবং বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে পারে, যা তাদের সম্মিলিত শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> তাছাড়া, ওয়ার্কস্পেস জুড়ে তথ্য আদান-প্রদান “ভূমিকা ও প্রম্পটের মাধ্যমে কাঠামোবদ্ধ হতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ, একে অপরের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয়” (Winne & Hadwin, ২০১৩, পৃ. ৩০২)। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা যখন nStudy টুল ব্যবহার করে শেখে বা গবেষণা করে, তখন সিস্টেম ট্রেস ডেটা সংগ্রহ করে যা আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার সময় ঘটে যাওয়া নির্দিষ্ট জ্ঞানীয় ও অধিজ্ঞানীয় ঘটনাকে প্রতিফলিত করতে পারে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সহজতর ও উৎসাহ প্রদান == Self-regulated learning (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) হল একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীদের তাদের চিন্তা, আচরণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা সফলভাবে শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিজে নিজেই পরিকল্পনা, তদারকি ও মূল্যায়ন করতে হয়। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মোটিভেশন ও সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা কতটা নিজেদের চিন্তা, মোটিভেশন ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা বোঝায়। বাস্তবে, স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন শেখার প্রক্রিয়ার সক্রিয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। <ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সামাজিক নয়, তবে তার বিকাশ সামাজিক পরিবেশে ঘটে যা কাঠামো ও স্বাধীনতার সুযোগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> গবেষণায় দেখা গেছে স্ব-নিয়ন্ত্রণ শেখানো যায় এবং এটি শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন ও অর্জন বৃদ্ধি করতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষক, কোচ ও সহপাঠীদের নির্দেশনা ও মডেলিং এর মাধ্যমে প্রতিটি স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া শেখা যায়।<ref name="Zimmerman20025" /> পাশাপাশি, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে পারে। <ref name="Dignath, C., & Büttner, G. (2008).”" /><ref name="Masui, C., & De Corte, E. (2005).”" /><ref name="Perels, F., Gürtler, T., & Schmitz, B. (2005).”" /><ref name="Schunk, D. H., & Ertmer, P. A. (2000).”" /> উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা মনিটরিং ও অনুকরণের মাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন দক্ষতা শিখেছিল, তারা যারা এসব প্রশিক্ষণ পায়নি তাদের তুলনায় বেশি আত্মবিশ্বাসী ও ফলপ্রসূ ছিল। <ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”" /> তাই শিক্ষার্থীদের পুরো স্কুলজীবন জুড়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চর্চা করা উচিত এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব তাদের এই আচরণ গঠনে সহায়তা করা। <ref name="Waeytens, K., Lens, W., & Vandenberghe, R. (2002). ”" /> যখন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আরও স্বনিয়ন্ত্রিত হতে শেখান, তখন তারা একাডেমিক সাফল্য, মোটিভেশন এবং জীবনব্যাপী শেখার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। <ref name="Graham, S., & Harris, K.R. (2005).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এমন স্বনিয়ন্ত্রিত শেখায় সক্ষম করতে পারেন যাতে তারা পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ, শেখার অগ্রগতি তদারকি এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার লক্ষ্যে নিজেদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে পারে। শিক্ষকরা সরাসরি শেখার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে অথবা পরোক্ষভাবে এমন শেখার পরিবেশ তৈরি করে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নীত করতে পারেন। <ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”" /> === স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার বিকাশ === Zimmerman (২০০২) অনুসারে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াটি তিনটি স্পষ্ট ধাপে বিভক্ত: ''অগ্রচিন্তা ও পরিকল্পনা ধাপ'': শেখার কাজ বিশ্লেষণ এবং সেই কাজ শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই ধাপে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কার্যকর পদ্ধতির নির্দেশনা দেন, কাঠামোবদ্ধ ও সুস্পষ্ট শিক্ষা প্রদান করেন, কৌশলগুলোর মডেল দেখান এবং কৌশলটি অন্য অনুরূপ কাজে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /><ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”" /> ''পারফরম্যান্স তদারকি ধাপ'': শেখার কাজ এগিয়ে নিতে কৌশল ব্যবহার, কৌশলের কার্যকারিতা তদারকি এবং শেখার প্রতি মোটিভেশন পর্যবেক্ষণ করা হয়। শিক্ষকরা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন, যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন কৌশল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। যখন শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে শিখে যায়, তখন শিক্ষকরা ধীরে ধীরে নির্দেশনা কমিয়ে গাইডের ভূমিকা পালন করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> ''পারফরম্যান্সের প্রতিফলন ধাপ'': শেখার কাজের উপর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এবং ফলাফলের প্রতি আবেগগত প্রতিক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। শিক্ষকরা সহপাঠী মূল্যায়ন ও প্রতিফলন উৎসাহিত করে, মূল্যায়ন সহজতর করে এবং সবকিছু শেখার লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রাখেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময় কী কাজ করেছে তা শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন, তাদের আত্মবিশ্বাস ও মোটিভেশন বাড়ান এবং কার্যকর কৌশল ব্যবহারের জন্য প্রশংসা প্রদান করেন। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> [[চিত্র:The_Cycle_of_SRL.png|থাম্ব|483x483পিক্সেল|চিত্র ১৬: স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চক্র]] স্ব-নিয়ন্ত্রিত দক্ষতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হয় না। এই দক্ষতার বিকাশ চারটি ধাপে ঘটে: পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ, স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ। পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে সফল পারফরম্যান্সের একটি ধারণা পায়। এটি তাদের সাধারণ পারফরম্যান্স মানদণ্ড গড়ে তুলতে এবং দক্ষতা অর্জনের সময় মোটিভেশন নিয়ন্ত্রণের কৌশল বুঝতে সহায়তা করে। অনুকরণের পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একটি সাধারণ কৌশল ব্যবহার করে পারফর্ম করে এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া ও নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের পারফরম্যান্সের যথার্থতা উন্নত হয়। তদ্ব্যতীত, সামাজিক উৎসাহ যেমন প্রশংসা বা উত্সাহও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে সহায়তা করে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণের স্তরটি কাঠামোবদ্ধ অনুশীলন এবং আত্ম-পর্যবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নিয়মিত পরিবেশে একটি দক্ষতা অনুশীলন করে। তারা কোনো মডেলের পারফরম্যান্সের দিকে নজর দিতে পারে এবং সেটিকে অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণ করতে পারে, এবং তাদের উচিত ফলাফলের পরিবর্তে প্রক্রিয়ার উপর জোর দেওয়া। স্ব-নিয়ন্ত্রিত স্তরের দক্ষতাগুলো অনিয়মিত পরিবেশে সম্পাদিত হয়। শিক্ষার্থীদের উচিত শুধুমাত্র শিখিত দক্ষতার অনুশীলনের পরিবর্তে পারফরম্যান্সের গুণমান ও কার্যকারিতার উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আনা। তারা স্বতন্ত্রভাবে দক্ষতা সম্পাদন করতে পারে, তবে মাঝে মাঝে সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”">Zimmerman, B. J. (2000). Self-efficacy: An essential motive to learn. Contemporary educational psychology, 25(1), 82-91.</ref> ফিগার ১৬-তে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন (Self-Regulated Learning)-এর চক্র চিত্রিত হয়েছে। === শিক্ষার্থীদের জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলসমূহ === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের ধরনসমূহ''' চার ধরনের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল রয়েছে যা শিক্ষাকে সহায়তা করতে পারে<ref name="de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013).”">de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013). Effective strategies for self-regulated learning: A meta-analysis. GION/RUG.</ref><ref name="Kobayashi, M. (2006).”">Kobayashi, M. (2006). Facilitating Academic Achievement in High School Interactive Television Programs by Promoting Self-Regulated Learning (Doctoral dissertation, Virginia Polytechnic Institute and State University).</ref>: ** কগনিটিভ কৌশল**: পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, বিস্তার ও উপকরণের রূপান্তর বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। বিস্তার শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্য পূর্ব জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে; কল্পনা মানসিক চিত্রকে বোঝায় যা মেমোরি শক্তিশালী করে; পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের কার্যস্মৃতিতে তথ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে; রূপান্তর ও সংগঠনের কৌশলের মধ্যে সারসংক্ষেপ, রূপরেখা তৈরি, নোট নেওয়া বা উপকরণ পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত। ** মেটাকগনিটিভ কৌশল**: পরিকল্পনা, আত্ম-সচেতনতা, পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়ন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার কৌশল হলো কাজ বিশ্লেষণ ও লক্ষ্য নির্ধারণ। সাধারণ পর্যবেক্ষণের কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্ম-রেকর্ডিং ও আত্ম-পরীক্ষা।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> আত্ম-পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের সাথে সম্পর্কিত। আত্ম-নির্দেশনা ও মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ কৌশল মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আত্ম-নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের কাজের প্রতি মনোযোগী করে এবং উপকরণ মনে রাখার দক্ষতা বাড়ায়। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ বিঘ্ন অপসারণ করে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। ** পরিচালনাগত কৌশল**: শেখার সর্বোত্তম পরিবেশ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা ও সহায়তা চাওয়া অন্তর্ভুক্ত। আত্ম-রেকর্ডিং সাধারণত সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় উৎসাহ দেওয়া তাদের সহায়তা চাওয়ার আচরণ বৃদ্ধি করে। শ্রেণিকক্ষের কাঠামো, প্রতিক্রিয়া ও যোগাযোগের ধরণও সহায়তা চাওয়ার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। ** প্রেরণাগত কৌশল**: শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য তাদের অনুপ্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে শেখার উদ্দেশ্য নির্ধারণ, যা লক্ষ্যভিত্তিক মনোভাব গঠন করে; ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ, যা আত্ম-দক্ষতা বাড়ায়; উপকরণকে আকর্ষণীয় বা চ্যালেঞ্জিং করে আগ্রহ সৃষ্টি; এবং আত্ম-উৎসাহমূলক কথাবার্তা। ** সারণী ১: কৌশলের ধরনসমূহ** {| class="wikitable" |'''কৌশলের ধরন''' |'''বর্ণনা''' |'''উদাহরণ''' |- |কগনিটিভ কৌশল |বিষয়বস্তুর সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কৌশল। |পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, উপকরণ সংগঠন |- |মেটাকগনিটিভ কৌশল |শেখা সংগঠিত, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের কৌশল। |কাজ বিশ্লেষণ, আত্ম-রেকর্ডিং, আত্ম-পরীক্ষা |- |পরিচালনাগত কৌশল |শেখার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কৌশল। |সময় ব্যবস্থাপনা, সহায়তা চাওয়া |- |প্রেরণাগত কৌশল |অনুপ্রেরণা উন্নয়ন ও টিকিয়ে রাখার কৌশল। |লক্ষ্য নির্ধারণ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি |} '''শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল শেখানো – স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থী তৈরি করা''' শিক্ষকদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার সহায়ক স্ব-নিয়ন্ত্রিত কৌশল শেখাতে হবে। সবচেয়ে কার্যকর ও প্রচলিত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে: লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-প্রেরণা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ, শেখার কৌশলের নমনীয় ব্যবহার, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, উপযুক্ত সহায়তা চাওয়া এবং আত্ম-মূল্যায়ন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** লক্ষ্য নির্ধারণ:** ব্যক্তিগত লক্ষ্য স্থাপন শিক্ষার্থীদের এমন বাস্তবিক ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে যা শেখার উন্নতিতে কাজে আসে। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক। কাছাকাছি লক্ষ্য আত্ম-দক্ষতা ও দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণে উৎসাহিত করতে পারেন যাতে তারা অগ্রগতি অনুসরণ করতে পারে, কী শিখবে তা ভেবে নিতে পারে। ** পরিকল্পনা:** পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত হয়। লক্ষ্য পূরণে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরিকল্পনা করছে, তা আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রক্রিয়াটির ধাপগুলো মনে রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে পারে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-প্রেরণা:** কাজ বেছে নেওয়া, প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায় শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণার ওপর নির্ভরশীল। উচ্চ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা মেটাকগনিটিভ কৌশল বেশি ব্যবহার করে। স্বাধীনতা, দক্ষতা এবং কাজের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি বাড়ালে আত্ম-প্রেরণা বাড়ে। ** মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ:** স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থীদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হতে হয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে বিরতি ও বিঘ্ন অপসারণের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** কৌশলের নমনীয় ব্যবহার:** সফল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একাধিক কৌশল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। শিক্ষকরা নতুন কৌশল মডেলিং করে, শ্রেণিকক্ষকে সমর্থনময় করে এবং অনুশীলনের সময় সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-পর্যবেক্ষণ:** কৌশলগত শিক্ষার্থীরা নিজের শেখার দায়িত্ব নেয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময়, ব্যবহৃত কৌশল এবং ব্যয়িত সময় রেকর্ড করতে উৎসাহিত করতে পারেন, যা তাদের অগ্রগতি দৃশ্যমান করে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** সহায়তা চাওয়া:** স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থীরা প্রয়োজনে অন্যদের সহায়তা চায়। শ্রেণিকক্ষে গঠনমূলক পরিবেশ থাকলে শিক্ষার্থীরা সংকোচ ছাড়াই সাহায্য চাইতে পারে। শিক্ষকরা প্রতিক্রিয়া ও সংশোধনের সুযোগ দিয়ে ইতিবাচক সহায়তা চাওয়ার আচরণ উৎসাহিত করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-মূল্যায়ন:** শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য ও কৌশল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এর মধ্যে চেকলিস্ট ব্যবহার, শেখার বিষয় সারসংক্ষেপ, আত্ম-প্রশ্ন তৈরি ও উত্তর দেওয়া এবং সহপাঠীদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া অন্তর্ভুক্ত।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> [[চিত্র:Actions_SRL.png|কেন্দ্র|থাম্ব|483x483পিক্সেল|ফিগার ১৭: স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর দিকসমূহ – ধারণা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম]] === শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা উৎসাহিত করা === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য শিক্ষণ কৌশল''' শিক্ষকদের শিক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা উন্নত করতে পারে। Kobayashi (২০০৬)<ref name="Kobayashi, M. (2006).”" /> চারটি নীতির কথা বলেছেন যা শিক্ষকরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবহার করতে পারেন: কার্যকর শেখার পরিবেশ তৈরিতে শিক্ষার্থীদের গাইড করা; জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখতে পাঠ ও কার্যক্রম সাজানো; শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে লক্ষ্য ও প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করা; এবং ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নের তথ্য ও আত্ম-মূল্যায়নের সুযোগ প্রদান। '''সরাসরি নির্দেশনা ও মডেলিং''' বিভিন্ন শেখার কৌশলের ব্যবহার শিক্ষার্থীদের শেখা সহজ করতে সাহায্য করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর সরাসরি নির্দেশনার মধ্যে বিভিন্ন কৌশল ব্যাখ্যা, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখানো অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের নির্দেশনা মডেলিং ও প্রদর্শনের উপর জোর দেয় যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> শিক্ষকেরা একটি কৌশল প্রয়োগ করে ও চিন্তার ধারা প্রকাশ করে মডেল হতে পারেন বা শিক্ষার্থীদের কৌশলগত আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশ্ন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভাষার ক্লাসে শিক্ষকরা পর্দায় একটি পাঠ্য দেখিয়ে পড়তে পড়তে ভাব প্রকাশ করতে পারেন: “এটা কি বোঝা যাচ্ছে? মূল ভাবটা কী? মনে হচ্ছে আবার শুরু থেকে পড়া উচিত যাতে ভালোভাবে বুঝতে পারি।” একইভাবে, শিক্ষকরা বোর্ডে লেখার সময় ভাব প্রকাশ করে লেখালেখির প্রক্রিয়া দেখাতে পারেন। যেমন: “আমি কি আমার ভাব স্পষ্ট করছি? পাঠকেরা কি বুঝবে আমি কী বলতে চাই? আমি কি আমার পরিকল্পনা অনুসরণ করছি?” শিক্ষার্থীরা তখন প্রধান ভাব, প্রশ্ন ও নিজস্ব মতামত নোট করে বুঝতে পারে। এছাড়া, শিক্ষকরা কোনো কৌশল ব্যাখ্যা করে, তার উপযোগিতা বলেও শেখাতে পারেন।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”2" /> প্রাথমিক শ্রেণিতে, শিক্ষকরা সংলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশে উৎসাহ দিতে পারেন, যেমন “তোমার কী মনে হয়?”, “তুমি কেন তা ভাবছো?” শিক্ষকরা যৌথ অর্থ তৈরির জন্য সহযোগী দক্ষতা ও যোগাযোগমূলক আচরণ শেখাতে পারেন।<ref name="Pino(2014).">Pino-Pasternak, D., Basilio, M., & Whitebread, D. (2014). Interventions and classroom contexts that promote self-regulated learning: Two intervention studies in United Kingdom primary classrooms. Psykhe, 23(2).</ref> * নির্দেশিত ও স্বতন্ত্র অনুশীলন নির্দেশিত অনুশীলন হল এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) ও অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারেন। এই পর্যায়ে, শেখার কৌশল প্রয়োগের দায়িত্ব ধীরে ধীরে শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের উপর সরে আসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্মেলন (student-teacher conferencing) এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশল ব্যবহারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা পেতে পারে। নির্দেশিত অনুশীলনের পর স্বতন্ত্র অনুশীলন হওয়া উচিত। এই পর্যায়ে, শিক্ষার্থীদের নিজেরাই কৌশল অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের স্বায়ত্তশাসনের বোধকে জোরদার করতে সহায়তা করে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের আত্ম-প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা, যা শেখার সময় তাদের দক্ষতা পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও কার্যকারিতা সমন্বয় করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> এই কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে উন্মুক্ত প্রশ্ন করা, শিক্ষার্থীদের প্রতিফলন প্রদান বাধ্যতামূলক করা, শেখার বিষয়বস্তুর মূল বিষয়গুলো সারাংশ আকারে তুলে ধরা এবং তাদের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা ও উত্তর দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> উদাহরণস্বরূপ, ভাষা শ্রেণিতে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এবং পাঠ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়া বইয়ের শিরোনাম লিপিবদ্ধ করতে, পড়ার লগে সময় ও পৃষ্ঠা সংখ্যা রেকর্ড ও গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করতে, বই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ স্তর ধাপে ধাপে বাড়ানোর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, এবং সাপ্তাহিক প্রতিফলন লিখতে বলতেই পারেন। শিক্ষকদের উচিত বিভিন্ন ধরনের শেখার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কার্যকর কৌশল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা। এটি কৌশলের সাধারণীকরণ ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, শিক্ষার্থীদের অনুশীলন, আত্ম-পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের পদ্ধতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং নতুন কৌশলের গঠন ও সংশোধনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।<ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”2" /> * সামাজিক সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া শিক্ষক ও সহপাঠীদের সামাজিক সহায়তা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রণমূলক শিখন দক্ষতা অর্জনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায়শই এই সহায়তা প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে আসে। Labuhn এবং সহকর্মীদের (২০১০)<ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”2" /> গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল, তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল আরও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছিল এবং গণিতে ভালো ফল করেছিল। কার্যকর প্রতিক্রিয়ার মধ্যে থাকে কী ভালো হয়েছে, কী উন্নতির প্রয়োজন এবং কীভাবে আরও উন্নতি করা যায় তার নির্দেশনা। শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য, মানদণ্ড ও মান সংক্রান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন গঠন ও মূল্যায়নে সহায়তা করে।<ref name="Omorogiuwa, K. O. (2012).”" /> শিক্ষকদের উচিত ফর্মেটিভ মূল্যায়ন প্রদান করা, যা কেবল শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি দেখায় না বরং তাদেরকে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া গঠন ও নিজস্ব অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।<ref name="Encouraging self-regulated learning in the classroom. (n. d.).”" /> Nicol ও Macfarlane-Dick (২০০৬)<ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”2" /> মতে, কার্যকর প্রতিক্রিয়ার উচিত: ভাল পারফরম্যান্স কী তা পরিষ্কার করা; আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা তৈরি করা; শেখা সম্পর্কে উচ্চমানের তথ্য প্রদান করা; শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে শেখা সম্পর্কিত আলোচনা উৎসাহিত করা; ইতিবাচক প্রেরণা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা; বর্তমান ও কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্সের ব্যবধান দূর করার সুযোগ প্রদান করা; এবং শিক্ষকদের জন্য এমন তথ্য প্রদান করা যা পাঠদানের কৌশল উন্নয়নে ব্যবহৃত হতে পারে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখেন, যা তাদের সফলতার কারণ ও প্রেরণার সাথে সম্পর্কিত একটি মেটা-জ্ঞাতিগ্রাহী দক্ষতা।<ref name="Pino(2014).2" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে একত্রে বাস্তব ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ, সেই লক্ষ্যগুলোর ব্যাখ্যা ও মডেলিং, এবং শিক্ষার্থীর স্তরের সাথে মিল রেখে প্রশ্নের ধরণ সমন্বয় করতে পারেন।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিবাচক শেখার পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উচ্চশিক্ষায়, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নের জন্য কোর্স ওয়েবসাইটে একটি ইন্টার‌্যাক্টিভ ফোরাম চালু করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে, ফলে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষা গড়ে ওঠে।<ref name="Ogawa, A. (2011).”" /> * অন্যান্য পাঠদানের কৌশল আত্ম-পর্যবেক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উপায়। নিজের ভুল লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং যথাযথ কৌশল তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারে। গ্রাফ তৈরি করার কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার উপর নিয়ন্ত্রণের ধারণা গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রেড একটি গ্রাফে প্রদর্শন করতে পারে এবং সেই গ্রেড অর্জনে তারা যেসব কৌশল ব্যবহার করেছে তা লিখে রাখলে, কৌশল ও ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট হয়।<ref name="Cleary, T. J., & Zimmerman, B. J. (2004).”" /> পর্যবেক্ষণমূলক অনুশীলন শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠদান কৌশল পরিবর্তন ও মানিয়ে নেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষণ কৌশল কতটা কার্যকর হয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ফলাফল অনুসারে আরও অর্থবহ শিক্ষার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”3" /> '''আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখনকে সহায়ক শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ''' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল একটি সহায়ক শেখার পরিবেশ তৈরি করা। এটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য, শেখার বিষয়বস্তু ও কাজ এবং পাঠদানের কৌশল দ্বারা গঠিত। উপযুক্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ধারিতভাবে শেখার জন্য সহায়তা ও উৎসাহ দিতে পারে।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”3" /> Young (২০০৫)<ref name="Young, M. R. (2005).”" /> নিম্নলিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন: দক্ষতা ও কাজ-কেন্দ্রিক মনোভাব গঠনের জন্য ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বায়ত্তশাসন উন্নয়নে কাজের পছন্দের সুযোগ প্রদান, শেখার মধ্যে সামাজিক সংযোগ উৎসাহিত করা এবং শেখার ফলাফলের উপর প্রতিক্রিয়া প্রদান। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়ার ধরন তাদের প্রেরণাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কাজের স্বাধীনতা ও তথ্যভিত্তিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাকে সর্বাধিকভাবে বাড়ায়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ঘন ঘন নির্দিষ্ট ও গুণগত প্রতিক্রিয়া প্রদান করা উচিত। শিক্ষার্থীরা আরও চ্যালেঞ্জিং কাজ গ্রহণে আগ্রহী হয় যখন শিক্ষকরা গ্রেডের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। অর্থবহ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, কাজের পছন্দের স্বাধীনতা ও দলগত সহযোগিতা শিক্ষার্থীদের আত্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> শিক্ষকদের উচিত উদারতা ও মতভেদের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যাতে সাহায্য চাওয়া, সাহায্য প্রদান ও ভিন্নমতের আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়। এর মধ্যে রয়েছে চ্যালেঞ্জিং কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা, ভুলকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা, শেখার সাথে যুক্ত নেতিবাচক আবেগকে স্বীকৃতি ও সমাধান দেওয়া এবং অসহায়ত্বজনিত বিশ্বাসগুলো কাটিয়ে ওঠার উপায় শেখানো।<ref name="Pino(2014).2" /> '''শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিকাশে সহায়ক কার্যক্রম''' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যবহার করা যেতে পারে। জটিল দলগত কাজ শিক্ষার্থীদের নিজের ও অন্যের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে। এটি পরিকল্পনা, ধারণা গঠন, লক্ষ্য অনুযায়ী অগ্রগতি পর্যালোচনা ও দলগত অবদানের ভিত্তিতে বোঝাপড়া পুনর্গঠনে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীর আগ্রহ, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব প্রয়োগ সংবলিত অর্থবহ কার্যক্রম প্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নে সহায়ক। এমন কার্যক্রম যেগুলোর জ্ঞানীয় চাহিদা শিক্ষার্থীর নিকটবর্তী উন্নয়ন অঞ্চলের সাথে মেলে, সেগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর সাথে জড়িত। বহুমাত্রিক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সুযোগ দেয়। প্রাথমিক শ্রেণিতে আনন্দময় কার্যক্রম স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অনুশীলনের আকর্ষণীয় উপায় হতে পারে।<ref name="Pino(2014).2" /> Paris ও সহকর্মীরা (২০০১)<ref name="Paris, S. G., & Paris, A. H. (2001).”" /> শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের চারটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন: আত্ম-মূল্যায়নের মাধ্যমে শেখার গভীরতা অর্জন; চিন্তা, প্রচেষ্টা ও আবেগের আত্ম-ব্যবস্থাপনা; বিভিন্ন উপায়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা প্রদান; এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত আত্মনিয়ন্ত্রণ। শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকরা দলগত বা জোড়ায় কাজ, উন্মুক্ত আলোচনা, শেখার পূর্ব ও পরবর্তী অনুশীলন, এবং ক্লাস শেষে প্রতিফলনের সুযোগ দিতে পারেন।<ref name="Ferreira, P. C., & Simão, A. M. V. (2012).”" /> এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রেরণা ও শেখার কৌশল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে Motivated Strategies for Learning Questionnaire (MSLQ) বা Learning and Study Strategies Inventory (LASSI) ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref name="Kuo, Y. H. (2010).”" /> নিচে কিছু কার্যকর কার্যক্রমের উদাহরণ দেওয়া হলো যেগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধিতে সহায়ক: “Think-Pair-Share” কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে, একসাথে আলোচনা করে এবং পুরো শ্রেণিতে তা ভাগ করে; “Retrieval Practice” কার্যক্রম আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী শেখাকে উৎসাহিত করে; “Sorting-Chunking-Organizing Information” তথ্য শ্রেণিবিন্যাস করে বোঝাপড়া উন্নত করে; “Reading Reflections” আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিফলনমূলক চিন্তনে সহায়তা করে; “Exam Wrappers” কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে চিন্তা ও মূল্যায়নের সুযোগ দেয়।<ref name="Activities that develop self-regulated learning. (n. d.).”" /> = শব্দকোষ = '''অ্যাকশন কন্ট্রোল:''' ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা (উদাঃ অনুপ্রেরণা, ঘনত্ব) যা কোনও ব্যক্তিকে স্ব-নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। '''কগনিটিভ মডেলিং:''' শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা বিকাশের পদ্ধতি যার মধ্যে পারফরম্যান্সের জন্য যুক্তি দেওয়া, কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা জড়িত। '''কগনিটিভ প্রসেসিং:''' একটি শব্দ যা চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞান প্রয়োগ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। '''সহযোগী শিক্ষা''': সহকর্মী / গোষ্ঠীর মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং শেখা। '''ক্রিটিক্যাল থিংকিং:''' তথ্য ওজন, মূল্যায়ন এবং বোঝার সমন্বয়ে একটি প্রতিফলিত চিন্তাভাবনা। '''পূর্বচিন্তা পর্ব:''' শেখার আগে কৌশল নিচ্ছে। স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। '''মেটাকগনিশন:''' ভাবনা নিয়ে ভাবনা। নিজের চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝাপড়া। '''মেটাকগনিটিভ নলেজ:''' ঘোষণামূলক জ্ঞান যেমন ভাষা এবং স্মৃতি। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' কোনও কাজ জুড়ে আসা এবং এর সাথে সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়া করার সময় ব্যক্তিটি কী সচেতন এবং সে কী অনুভব করে। '''মেটাকগনিটিভ দক্ষতা:''' জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগুলোর ইচ্ছাকৃত ব্যবহার (অর্থাত্ পদ্ধতিগত জ্ঞান)। '''অনুপ্রেরণা:'''আচরণ এবং চিন্তাভাবনা যা ব্যক্তিদের সম্পাদন করতে চালিত করে। '''পারফরম্যান্স পর্ব:''' শেখার সময় কৌশল গ্রহণ করা হয়। কৌশল বাস্তবায়ন, এবং কৌশল পর্যবেক্ষণ। '''এনগেজমেন্টের উদ্দেশ্য:'''স্ব-প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ক্রিয়াগুলো যা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক। '''আপেক্ষিকতাবাদী:''' জ্ঞান নমনীয় এবং পরিবর্তনযোগ্য। প্রশ্ন তোলা যায়। '''স্ব-কার্যকারিতা:''' ব্যক্তি কীভাবে নিজের ক্ষমতা এবং অনুভূত ক্ষমতা থেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাসের স্তরটি উপলব্ধি করে '''আত্ম-মূল্যায়ন:''' একটি মান অনুযায়ী নিজেকে মূল্যায়ন করা '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত কর্ম:''' যে উপায়ে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হয়। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন:'''কারও শেখার সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্টভাবে বোঝার ক্ষমতা। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত পর্ব:''' শেখার পর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। মূল্যায়ন। == তথ্যসূত্র == {{সূত্র তালিকা}} 0qe5jyhmfwacgmphdajptnrtb0cjo5b 84856 84855 2025-06-18T19:58:59Z NusJaS 8394 84856 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের (Self-Regulated Learning - SRL) মৌলিক ধারণাগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। আমরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করেছি। এখানে মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের তাত্ত্বিক ভিত্তি আলোচনা করার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এসব মৌলিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া অ্যাকাডেমিক পরিবেশে শেখার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সহজতর করতে কীভাবে সহায়তা করা যায়। এই অধ্যায়টি পড়ার পর আপনি শিখবেন: * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ধারণা এবং প্রধান মডেলসমূহ। * মেটাকগনিশনের ধারণা এবং কীভাবে এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পুনর্গঠন ও শেখার কৌশল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ও মেটাকগনিশনের উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদানসমূহ। * শেখার বিশ্লেষণ কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। * প্রযুক্তি কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সহজ করে তোলে। * স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিকাশের চারটি ধাপ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের চারটি ধরন। * কীভাবে শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উদ্দীপিত ও উৎসাহিত করা যায়। == ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়ন == [[চিত্র:SRL_Chapter_Map.jpg|থাম্ব|783x783পিক্সেল|চিত্র ১. মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] [[চিত্র:Section_1_Defining_the_Concepts_.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ২. ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়িত করা]] == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সংজ্ঞা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বলতে বোঝায় যে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).">Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.). Boston, MA: Pearson</ref>; এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ কৌশল ব্যবহার করে তাদের জ্ঞান, আচরণ ও প্রেষণা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। <ref name="Zimmerman2002">Zimmerman, B. J. (2002). Becoming a self-regulated learner: an overview. Theory Into Practice.41(2):64–70. doi:10.1207/s15430421tip4102\2.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে, শেখার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে এবং নিজেদের উৎসাহিত করতে পারে <ref name="Purdie, N., & Hattie, J. (1996).">Purdie, N., & Hattie, J. (1996). Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning. American Educational Research Journal 33.(4): 845–871.</ref>। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার পারফরম্যান্স ও আচরণকে আরও সক্রিয় ও দক্ষ করে তুলতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা নিজেদের বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে শেখার কৌশল পরিবর্তন ও উন্নয়ন করতে পারে <ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''">García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014). The effects of question-generation training on metacognitive knowledge, self regulation and learning approaches in Science. Psicothema, 26(3), 385-390.</ref> এবং গঠনমূলক কার্যকলাপ, সহযোগিতামূলক কাজ ও মুক্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের শেখাকে মূল্যায়ন করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রেষণামূলকভাবে সক্রিয় পদ্ধতি। উইন ও বেকার (২০১৩, পৃষ্ঠা ৩)-এর মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হচ্ছে "মেটাকগনিটিভভাবে পরিচালিত প্রেষণার আচরণগত প্রকাশ" <ref name="Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013).">Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013). The potentials of educational data mining for researching metacognition, motivation and self-regulated learning. Journal of Educational Data Mining, 5(1).</ref>। এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা, আচরণ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা শেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সফলভাবে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).">Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011). Encouraging self-regulated learning in the classroom: A review of the literature. Metropolitan Educational Research Consortium (MERC).</ref>। জিমারম্যান (২০০২) এর মতে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও আচরণগত কার্যকলাপ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: পূর্বচিন্তা পর্যায়, কার্যকরন পর্যায় এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে (স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ, কৌশলগত পরিকল্পনা) শেখার কাজ বিশ্লেষণ ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় <ref name="Zimmerman2002" />। কার্যকরন পর্যায়ে কৌশল প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ ঘটে এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়ে শেখার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয় <ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).">Furnes, B., & Norman, E. (2015). Metacognition and reading: Comparing three forms of metacognition in normally developing readers and readers with dyslexia. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 21(3), 273-284</ref>। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া আরও গভীরভাবে বুঝতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বৃহৎ কাঠামো পরবর্তী অংশে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। == মেটাকগনিশনের সংজ্ঞা == মেটাকগনিশন হলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের একটি মূল উপাদান। এটি জ্ঞানীয় চিন্তা এবং চিন্তার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত। মেটাকগনিটিভ সক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতে পারে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। এই অংশে আমরা মেটাকগনিশনের সংজ্ঞার বিবর্তন বিশ্লেষণ করবো। ১৯৭৯ সালে ফ্ল্যাভেল প্রথম মেটাকগনিশনের ধারণা উপস্থাপন করেন তার গবেষণায় <ref name="Flavell, J. H. (1979).">Flavell, J. H. (1979). Metacognition and cognitive monitoring: A new area of cognitive–developmental inquiry. American Psychologist, 34(10), 906-911.</ref>। এটি শেখার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন পাঠ পড়া, লেখা, পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন। মেটাকগনিশনের দুটি মৌলিক কার্যাবলি হলো: জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ <ref name="Efklides, A. (2008).">Efklides, A. (2008). Metacognition: Defining its facets and levels of functioning in relation to self-regulation and co-regulation. European Psychologist, 13(4), 277-287.</ref>। ১৯৮০ সালে অ্যান ব্রাউন মেটাকগনিশনের একটি সংজ্ঞা দেন যা প্রথমবার “regulation” (নিয়ন্ত্রণ) শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। সাম্প্রতিক গবেষণায় মেটাকগনিশনকে তিনটি উপাদানে বিভক্ত করা হয়েছে <ref name="Efklides, A. (2008)." />: '''মেটাকগনিটিভ জ্ঞান''' (বা মেটাকগনিটিভ সচেতনতা): শিক্ষার্থীদের নিজেদের সম্পর্কে, কাজ, কৌশল, লক্ষ্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানার সক্ষমতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি তিন প্রকারের হতে পারে: ঘোষণামূলক জ্ঞান, পদ্ধতিগত জ্ঞান এবং শর্তাধীন জ্ঞান <ref name="Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987).''">Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987). Children's metacognition about reading: Issues in definition, measurement, and instruction.Educational Psychologist 22: 225–278.</ref>। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' শিক্ষার্থী যখন কোনও কাজের মুখোমুখি হয় এবং তার তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে, তখন সে কী অনুভব করে ও কীভাবে উপলব্ধি করে—তা হলো মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শেখার লক্ষ্য সংশোধনে সহায়তা করে। '''মেটাকগনিটিভ কৌশল/দক্ষতা:''' এগুলো হলো জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলের সচেতন ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে: দিকনির্দেশনা কৌশল, পরিকল্পনা কৌশল, জ্ঞান প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল, পরিকল্পিত কাজ সম্পাদনের পর্যবেক্ষণ কৌশল এবং ফলাফল মূল্যায়নের কৌশল <ref name="Efklides, A. (2008)." />। নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল দক্ষতা হলো পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন <ref name="Schraw, G. (1998).">Schraw, G. (1998). Promoting general metacognitive awareness. Instructional Science 26: 113–125.doi:10.1023/A:1003044231033.</ref>। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান হলো জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণের জন্য, আর মেটাকগনিটিভ দক্ষতা হলো নিয়ন্ত্রণের জন্য। মেটাকগনিশনের সংজ্ঞাগুলো এটিকে “বহুমাত্রিক”, “সচেতন প্রক্রিয়া” এবং “ব্যক্তিকেন্দ্রিক” হিসেবে তুলে ধরে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় মেটাকগনিশন নিয়ে গবেষণা করতে হলে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন <ref name="Efklides, A. (2008)." />। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম তৈরি হয়েছে। এটি মেটাকগনিশনের এই তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন, কিছু হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যাতে তারা নিজেদের জ্ঞানীয় শেখা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই কার্যক্রমগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত মেটাকগনিটিভ জ্ঞান ও প্রক্রিয়া জোর দিয়ে থাকে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মূল্যায়ন ও মেটাকগনিশনের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে <ref name="Efklides, A. (2008)." />। == অন্যান্য সম্পর্কিত ধারণা == === শিক্ষার বিচার === মেটাকগনিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ধারণা হলো শিক্ষার বিচার বা জাজমেন্ট অফ লার্নিং (JOLs)। শিক্ষার্থীরা কতটা ভালোভাবে কোনো তথ্য শিখেছে তা নিয়ে তাদের নিজেদের মূল্যায়নই শিক্ষার বিচার<ref name="Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005).">Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005). Judgments of learning: Evidence for a two-stage process. Memory & Cognition, 33(6), 1116-1129.</ref>। নেলসন ও ডানলস্কি (১৯৯১) বলেছেন, JOLs শেখার প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। শিখনের পর কিছুটা সময় অপেক্ষা করে মূল্যায়ন করলে এটি আরও নির্ভুল হয়, একে বলা হয় “বিলম্বিত-JOL প্রভাব” <ref name="Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991).">Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991). When People’s Judgments of Learning (JOLs) Are Extremely Accurate at Predicting Subsequent Recall: The “Delayed-JOL Effect”. Psychological Science, 2(4), 267–270. .</ref>। জানার অনুভূতি্র বিচার হলো, শিক্ষার্থী কোনও প্রশ্ন বা উত্তর কতটা বুঝে বা জানে তার পূর্বানুমান। <ref name="Bembenutty, H. (2009).">Bembenutty, H. (2009). Feeling-of-Knowing Judgment and Self-Regulation of Learning. Education, 129(4), 589-598.</ref>। এটি জাজমেন্ট অফ লার্নিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। উভয়েই স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার মাধ্যমে সংযুক্ত করে। এই অধ্যায়ে পরবর্তী অংশে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার ধারণা আলোচনা করা হবে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া বোঝায় নিয়ন্ত্রণ কীভাবে পরিচালিত হয়। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো—বস্তু এবং ক্রিয়া। বস্তু হলো শিক্ষার্থীর শেখার লক্ষ্য এবং ক্রিয়া হলো সেই লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতি। এই ক্রিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে: জ্ঞান, আবেগ, প্রেষণা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক পরিবেশে পরিবর্তন <ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).">Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014). Development of metacognitive knowledge of reading strategies and attitudes toward reading in early adolescence: The effect on reading comprehension. Psychological Topics, 23(1), 77–98.</ref>। উদাহরণস্বরূপ, প্রেষণার ক্রিয়া নির্ভর করে শিক্ষার্থীরা কবে এবং কীভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তার উপর। একইভাবে, আচরণগত পরিবর্তন ব্যক্তিগত শেখার দক্ষতা ও লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলে। === স্ব-মূল্যায়ন === স্ব-মূল্যায়ন মানুষকে তাদের দক্ষতা ও কৌশল সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। এটি এমন কৌশল বেছে নিতে উৎসাহিত করে, যেগুলো শেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর প্রথম পর্যায়ে ঘটে। স্ব-মূল্যায়ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের মোটিভেটেড থাকতে হয় এবং নতুন শেখার কৌশল গ্রহণের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকতে হয়। স্ব-মূল্যায়নের জন্য শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব অপরিহার্য।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016).">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016)। ট্রেস-ভিত্তিক মাইক্রো-বিশ্লেষণাত্মক পরিমাপ আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার। জার্নাল অফ লার্নিং অ্যানালিটিক্স, ৩(১), পৃ. ১৮৩-২২০।</ref> শেখার কৌশল সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি স্ব-মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে: আমার কী কী দক্ষতা আছে? আমার আগ্রহ কী? আমি কি ভিডিও দেখে ভালো শিখি, নাকি নোট লিখে? আমি কি লিখে নাকি টাইপ করে ভালো শিখি? আমি কি মুখস্থ করে ও ব্যাখ্যা করে শিখতে পারি?<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''2" /> [[চিত্র:Reflection.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৩। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া]] === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হলো আত্ম-প্রক্রিয়া, লক্ষ্য এবং সম্ভাব্য কর্মকাণ্ডের সমন্বয়। এটি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক হয়<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).2" />। প্রতিটি শিক্ষার্থীরই নিজের শেখার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ নির্দিষ্ট জ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ থেকে শেখে, আবার কেউ শেখে চাকরির প্রয়োজনে। এর ফলে, তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে চালিত করে বিভিন্ন ধরনের প্রেরণা। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ মূলত পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এটি দেখায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যক্তিগত কার্যক্রম, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে: === স্ব-ব্যাখ্যা === স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার সহায়ক। বুচার<ref name="Butcher2006">Butcher, K. R. (2006)। লেখার সঙ্গে চিত্র ব্যবহার করে শেখা: মানসিক মডেল উন্নয়ন ও অনুমান তৈরিতে সহায়তা। ''জার্নাল অফ এডুকেশনাল সাইকোলজি, ৯৮''(১), ১৮২-১৯৭। DOI: 10.1037/0022-0663.98.1.182</ref> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যার ধারণাটি প্রথম ও তার সহকর্মীরা ১৯৯৭ সালে ব্যবহার করেন এবং এটি এমন একটি অর্থবহ মৌখিক বিবৃতি নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই তারা যা শিখছে তা ব্যাখ্যা করে। চাই<ref name="Chi2000">Chi, M. T. H. (2000)। ব্যাখ্যামূলক পাঠ্য স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শেখা: অনুমান তৈরি ও মানসিক মডেল সংশোধনের দ্বৈত প্রক্রিয়া। ''Advances in instructional psychology'' (pp. 161–238)। Mahwah, NJ: Lawrence Erlbaum।</ref> নিজে স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি জ্ঞানগত কার্যকলাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে কেউ নতুন কোনো বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখে, সাধারণত পাঠ্য বা অন্য কোনো মাধ্যমে। স্ব-ব্যাখ্যা এবং বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য হলো—স্ব-ব্যাখ্যার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর শেখা বিষয়টি অনুধাবন করা, শুধুমাত্র মুখস্থ নয়। এ দিক থেকে, স্ব-ব্যাখ্যা একটি আত্ম-নির্দেশিত জ্ঞান নির্মাণমূলক কার্যক্রম<ref name="Chi2000" />। স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ধারণাসমূহের মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ খুঁজে পায় (বিসরা, লিউ, সালিমি, নেসবিট ও উইন<ref name="Bisra2018">Bisra, K., Liu, Q., Salimi, F., Nesbit, J.C. & Winne, Ph, H. ''স্ব-ব্যাখ্যা প্ররোচিতকরণ: একটি মেটা-বিশ্লেষণ''। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, Simon Fraser University, Burnaby, BC।</ref>)। বিসরা প্রমুখের মতে, স্ব-ব্যাখ্যা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আত্ম-উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন তথ্য বোঝার জন্য করা হয়। যেহেতু এটি আত্ম-কেন্দ্রিক, তাই স্ব-ব্যাখ্যা চুপচাপ করা যায় বা উচ্চস্বরে বললেও তা মূলত শিক্ষার্থীর কাছেই বোধগম্য। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014">Wylie, R., & Chi, M. T. H. (2014)। মাল্টিমিডিয়া শেখায় স্ব-ব্যাখ্যার নীতি। In R. E. Mayer (Ed.), ''The Cambridge handbook of multimedia learning'' (2nd ed., pp. 413e432)। নিউ ইয়র্ক, NY: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।</ref> স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি গঠনমূলক ও প্রজন্মমূলক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন যা শেখার গভীরতা বাড়ায় এবং অন্যান্য জ্ঞানগত দক্ষতার মতো সময়ের সাথে উন্নত হয়। সাধারণভাবে, 'স্ব-ব্যাখ্যা' (SE) বলতে নিজেকে কিছু বোঝানোর উদ্দেশ্যে তৈরি মৌখিক বিবৃতি বোঝায়। অর্থাৎ, এটি সেই সকল বিষয়ভিত্তিক বিবৃতি যা একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যাংশ পড়ার পর তৈরি করে<ref name="Chi2000" />। == স্ব-ব্যাখ্যা বনাম নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা == স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার দিকে নিয়ে যায়। বিসরা ও তার সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কেবল সেই ব্যক্তি দ্বারা নয়, অন্যদের দ্বারাও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে, শেখা ঘটে স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নয়, বরং তার ফলাফলের মাধ্যমে—যেমন একজন শিক্ষক যে ব্যাখ্যা দেন, সেটি শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান সম্পর্কে জানেন না। হাউসম্যান এবং ভ্যানলেহন (বিসরা প্রমুখের উদ্ধৃতি অনুযায়ী<ref name="Bisra2018" />) এই ধরণের ফলাফল-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যাকে "কভারেজ হাইপোথিসিস" বলেন। তার মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কার্যকর হয় কারণ এটি "নির্দেশনামূলক উপকরণে অনুপস্থিত অতিরিক্ত বিষয়বস্তু তৈরি করে" (পৃ. ৩০৩)। তবে অধিকাংশ স্বীকৃত তত্ত্ব মতে, স্ব-ব্যাখ্যার উৎপাদিত ফলাফল একটি প্রজন্মমূলক জ্ঞানগত প্রক্রিয়া। এখানে কভারেজ হাইপোথিসিস এটিকে নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার সমতুল্য ফলাফল হিসেবে দেখে। যদি শিক্ষার্থী নিজে থেকে সঠিক স্ব-ব্যাখ্যা তৈরি করতে না পারে, তখন নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় (বিসরা প্রমুখ<ref name="Bisra2018" />)। ভ্যানলেন, জোন্স ও চাই<ref name="vanlehn1992">VanLehn, K., Jones, R. M., & Chi, M. T. (1992)। স্ব-ব্যাখ্যার প্রভাবের একটি মডেল। জার্নাল অফ দ্য লার্নিং সায়েন্সেস, ২(১), ১-৫৯। doi:10.1207/s15327809jls0201_1।</ref> স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতার তিনটি কারণ উল্লেখ করেন: প্রথমত, এটি একটি প্ররোচনামূলক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ঘাটতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, এটি সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া ও ধাপগুলিকে সাধারণীকরণে সহায়তা করে। তৃতীয়ত, এটি শিক্ষার্থীদের উপমার মাধ্যমে সমস্যার গভীর ব্যাখ্যা তৈরি করে। এছাড়া, ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের চিন্তায় অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করে মানসিক মডেলে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনে। এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ঘোষণামূলক জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়<ref name="Wylie,Chi2014" />। == নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার তুলনায় স্ব-ব্যাখ্যার সুবিধা == বিসরা ও তার সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> পরিচালিত মেটা-বিশ্লেষণ স্ব-ব্যাখ্যার পক্ষে এবং কভারেজ হাইপোথিসিস-এর বিপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে। এই গবেষণায় দেখা যায়, স্ব-ব্যাখ্যা (g=.২৯) নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর। লেখকরা এই কার্যকারিতাকে ব্যাখ্যা করেন শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান এবং নতুন জ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল হিসেবে। এটি অর্থপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। যখন পূর্বজ্ঞান ও নতুন তথ্যের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন শিক্ষার্থীর জ্ঞানগত প্রক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং তৈরি হওয়া ব্যাখ্যাটি পরবর্তীতে মনে রাখা এবং যুক্তি প্রয়োগে সহায়তা করে<ref name="Bisra2018" />। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইঙ্গিত সহ স্ব-ব্যাখ্যা, নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়েও কার্যকর হতে পারে, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা সক্রিয় হয়—প্রশিক্ষণ, ভুল সংশোধন বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছাড়াই। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012">Ionas, I. G., Cernusca, D., & Collier, H. L. (2012)। পূর্বজ্ঞান কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে: বিজ্ঞানে সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত একটি অন্বেষণধর্মী গবেষণা। International Journal of Teaching and Learning in Higher Education, 24(3), 349-358।</ref> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষক, বই বা অন্যান্য উৎসের ব্যাখ্যার চেয়ে কার্যকর কারণ—১) এটি পূর্বজ্ঞান সক্রিয় করে, ফলে এটি জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে; ২) এটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব সমস্যাকে কেন্দ্র করে; এবং ৩) শিক্ষার্থী যখন ইচ্ছা তখন এটি ব্যবহার করতে পারে। == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশ, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যা == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশগুলো সাধারণত পাঠ্য, অ্যানিমেশন, চিত্র (যেমন: চিত্র, রেখাচিত্র), বিবরণী এবং ন্যারে‌শন একত্রে উপস্থাপন করে এবং কম্পিউটারভিত্তিক হয়<ref name="Wylie,Chi2014" />। মাল্টিমিডিয়ার সুবিধা হলো এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপস্থাপন পদ্ধতি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, রেখাচিত্র স্থানিক তথ্য বুঝতে সাহায্য করে এবং ন্যারেশন একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করে যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য অপেক্ষা বেশি কিছু শিখে। মাল্টিমিডিয়া থেকে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা মৌখিক ও অ-মৌখিক উভয় তথ্য এনকোড করতে পারে এবং প্রতিটি উৎস থেকে উপস্থাপিত তথ্য একত্রিত করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন<ref name="Wylie,Chi2014" />। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই ধরনের শেখা তখনই কার্যকর, যখন শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে তথ্য একত্রিত করার জ্ঞানগত প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, এই জ্ঞানগত অংশগ্রহণের একটি উপায় হলো স্ব-ব্যাখ্যা। বুচার<ref name="Butcher2006" /> একটি গবেষণায় দেখান, যেসব শিক্ষার্থী মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সময় স্ব-ব্যাখ্যা করেছে, তারা শুধুমাত্র পাঠ্য ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি শিখেছে। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012" /> পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বজ্ঞান থাকলে রসায়নের সমস্যা সমাধানে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা বাড়ে। গবেষণায় শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যার মিথস্ক্রিয়ার ফলে দুটি উপকার পাওয়া যায়: এক, যত বেশি তারা নিজেদের রসায়ন জ্ঞান প্রকাশ করেছে, তত বেশি কার্যকর ছিল স্ব-ব্যাখ্যা; দুই, স্ব-ব্যাখ্যাভিত্তিক কৌশল কার্যকর করতে হলে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট "থ্রেশহোল্ড" পরিমাণ পূর্বজ্ঞান থাকতে হয়। অর্থাৎ, পূর্বজ্ঞান কম থাকলে স্ব-ব্যাখ্যা তেমন ফলদায়ক নয়, বরং এটি শেখার কার্যকারিতা ব্যাহত করে<ref name="Ionas2012" />। যখন শিক্ষার্থীরা মনে করে তারা রসায়ন সম্পর্কে ভালো জানে, তখন তারা শক্তিশালী স্ব-ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু থ্রেশহোল্ডে না পৌঁছালে, তারা আলাদা আলাদা ধারণা জানলেও সেগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারে না<ref name="Ionas2012" />। অতএব, যখন শিক্ষার্থীরা স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিখতে চায়, তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে অনুরূপ ধারণা, শর্ত বা প্রক্রিয়াগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাতে তারা নতুন জ্ঞান গঠন করতে পারে এবং প্রদত্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীর যদি পূর্ব জ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তি না থাকে, তাহলে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে এগোয় না। এছাড়াও ইয়ে, চেন, হুং, ও হোয়াং<ref name="Yeh2010">Yeh, F., Y, Chen, C., M, Hung, H., P., & Hwang, J., G. (2010). Optimal self-explanation prompt design in dynamic multi-representational learning environments. Journal computers and education 54, 1089–1100.</ref> উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার পদ্ধতিতে পূর্ব জ্ঞানের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তারা বিভিন্ন স্তরের পূর্ব জ্ঞানের অধিকারী ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালান, যাতে বোঝা যায় গতিশীল মাল্টিমিডিয়া উপাদানের সঙ্গে শেখার সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা কীভাবে তাদের শেখাকে প্রভাবিত করে। তারা দুই ধরণের স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করেন এবং শেখার ফলাফল, মানসিক চাপ, শেখার সময়কাল এবং দক্ষতার মতো বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করেন। যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের কাজটি যুক্তিসংগতভাবে ব্যাখ্যা করতে বলেছে এবং পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করতে বলে, আর যদি অনুমান ভুল হয়, তাহলে তাদের ব্যাখ্যা করতে হয় কেন তা ভুল। ফলাফল দেখা যায়, যারা কম পূর্ব জ্ঞান নিয়ে এসেছিল, তারা যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকার পেয়েছে, আর যারা বেশি জ্ঞান রাখে, তারা পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকৃত হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে তাদের পর্যাপ্ত পূর্ব জ্ঞান থাকে এবং সেই নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে একটি যথাযথ পটভূমি গড়ে ওঠে, যাতে তারা নতুন তথ্য বুঝতে এবং স্ব-ব্যাখ্যা করতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন মাত্রার পূর্ব জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ভিন্নভাবে কাজ করে। অতএব, স্ব-ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব জ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাল্টিমিডিয়া পরিবেশে উচ্চতর জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অ্যানিমেশনের পরবর্তী দৃশ্য অনুমান করতে পছন্দ করে, যেখানে কম জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ঘটনার যুক্তি খুঁজতে বেশি আগ্রহী। == স্ব-ব্যাখ্যার শিক্ষণ পদ্ধতির প্রতিফলন == ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে যা শিক্ষাবিষয়ক পাঠ্যক্রম তৈরির সময় একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, যেখান থেকে স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হতে পারে। যদিও স্ব-ব্যাখ্যা শেখানোর এবং রিভিউ সেশনের সুবিধা প্রসারিত করতে ব্যবহৃত হয় বা ছোট ছোট ট্রান্সফার সমস্যার জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, তবুও শিক্ষকদের উচিত শেখার প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ না করা। অর্থাৎ, শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে স্ব-ব্যাখ্যা প্রয়োগ না করাই উত্তম। বরং, অন্য কৌশলগত পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। এটি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং তখন স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হয়<ref name="Ionas20122" />। লেখকরা উল্লেখ করেন, স্ব-ব্যাখ্যার একটি সুবিধা হলো—যখন শিক্ষার্থীরা একবার শিখে যায় কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করতে হয়, তখন তারা এটি অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে, কারণ এটি একটি বিষয়ে নিরপেক্ষ মানসিক কৌশল। তবে একটি অসুবিধাও রয়েছে, আর তা হলো—যখন শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ে, তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানও বাড়তে হয়, না হলে স্ব-ব্যাখ্যা ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে, যদি শিক্ষার্থীরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তারা স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা ঠিকভাবে অনুভব নাও করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। তাই ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" /> যুক্তি দেন, শিক্ষাদান পদ্ধতি তৈরি করার সময় শিক্ষকদের উচিত এমন ব্যবস্থা রাখা, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট জ্ঞানের স্তরে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্ব-ব্যাখ্যার প্রয়োগ না করে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার ফল অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করার আগে তাদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়ন করা জরুরি। এরপর এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষকেরা কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করাবেন, তা নির্ধারণ করবেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকরা নতুন সমস্যা সমাধানের আগে আরও নির্দিষ্ট নির্দেশনামূলক প্রশ্ন দিতে পারেন। যখন শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুটি বুঝে ফেলে, তখন সাধারণ অনুরোধের মাধ্যমে স্ব-ব্যাখ্যা আহ্বান করা যায়। শিক্ষকরা চাইলে শিক্ষার্থীদের এমন অনুরোধ নিজেরা ব্যবহার করতেও বলতে পারেন সমস্যা সমাধানের সময়। প্রকৃতপক্ষে, স্ব-ব্যাখ্যার দীর্ঘমেয়াদী উপকার হলো—শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এ কৌশল সক্রিয় করতে পারে এবং সমস্যার সমাধানের সময় এটি প্রয়োগ করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, আরও একটি কৌশল হলো—শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের যুক্তি উপস্থাপন কাঠামোর মাধ্যমে নিজেদের কাছে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করা। এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পূর্বনির্ধারিত অনুরোধ ব্যবহার করে এমনভাবে যুক্তি তৈরি করে যা সমস্যার সমাধান পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেয়। অর্থাৎ, এই কৌশলে পূর্বনির্ধারিত যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে<ref name="Ionas20122" />। তবে, স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করার কোনো সার্বজনীন নিয়ম নেই, কারণ এটি বিষয়-নির্ভর। নির্দেশনামূলক প্রশ্নগুলো কখনও সাধারণ, আবার কখনও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে এবং শিক্ষক বা শিক্ষকের দায়িত্ব এটি নির্ধারণ করা কোন অনুরোধ সবচেয়ে ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার আচরণে নিয়ে আসবে<ref name="Ionas20122" />। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যতে একটি কৌশল গ্রহণে সহায়তা করতে শিক্ষকদের উচিত যদি বিষয়টি অপরিচিত হয়, তাহলে সহজ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা এবং ধীরে ধীরে আরও নির্দিষ্ট প্রশ্নে অগ্রসর হওয়া<ref name="Ionas20122" />। == স্ব-ব্যাখ্যার বিভিন্ন ধরন == স্ব-ব্যাখ্যাকে যদি একটি ধারাবাহিক রেখায় রাখা হয়, তাহলে এক প্রান্তে থাকবে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ। এটি শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে নতুন তথ্যকে যুক্ত করতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের স্ব-ব্যাখ্যায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে এবং পূর্বনির্ধারিত ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কারণ এখানে শিক্ষার্থীদের চিন্তা মৌলিক এবং অন্য কারও প্রভাবিত নয়, তাই এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাখ্যা। ধারাবাহিক রেখার অন্য প্রান্তে থাকবে মেনু-ভিত্তিক ব্যাখ্যা অনুরোধ। এই ধরনের ব্যাখ্যায় একটি ব্যাখ্যার তালিকা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং সেখান থেকে বেছে নিতে বলা হয় ও নির্বাচনের যুক্তি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। অ্যাটকিনসন, রেনক্ল ও মেরিল<ref name="Atkinson2003">Atkinson, R. K.,Renkl , A. , & Merrill , M. M. (2003). Transitioning from studying examples to solving problems: Effects of self-explanation prompts and fading worked-out steps.''Journal of Educational Psychology, 95''(4), 774–783.</ref>–এর এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা মেনু থেকে বেছে নেওয়ার সময় স্ব-ব্যাখ্যা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে, তারা কাছাকাছি ও দূরবর্তী ট্রান্সফার পরিস্থিতিতে অন্যদের তুলনায় ভালো করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, মেনুর মাধ্যমে ব্যাখ্যার অনুরোধ শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হতে পারে। যেখানে উন্মুক্ত ও মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতি ধারাবাহিক রেখার দুই প্রান্তে অবস্থান করে, সেখানে ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড ও রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধ মাঝামাঝি থাকে। ফোকাসড ও উন্মুক্ত-প্রান্ত অনুরোধের মধ্যে দুটি মিল রয়েছে—উভয়ই জেনারেটিভ এবং শিক্ষার্থীর চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে না। তবে, ফোকাসড পদ্ধতিতে স্ব-ব্যাখ্যার বিষয়বস্তুর নির্দেশনা আরও স্পষ্ট থাকে। উন্মুক্ত অনুরোধে কেবল নতুন তথ্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, কিন্তু ফোকাসড অনুরোধে সরাসরি নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। স্ব-ব্যাখ্যা স্ক্যাফোল্ড আরও নির্দিষ্ট। স্ক্যাফোল্ড বা সহায়তাপূর্ণ স্ব-ব্যাখ্যা অনুরোধ ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে। এখানে শিক্ষার্থীদের ফাঁকা স্থান পূরণ করে ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ করতে হয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> ধারণা করেন, এই পদ্ধতি অভিজ্ঞতাহীন শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী, যাদের নিজে নিজে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যা গঠনের মতো যথেষ্ট পূর্ব জ্ঞান নেই। রিসোর্স-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যা মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতির মতো। এখানে শিক্ষার্থীদের একটি গ্লসারি থেকে বেছে নিয়ে সমস্যার সমাধানের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। তারা এই গ্লসারিকে একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতিটি ধাপের ব্যাখ্যাকে স্মরণ না করে চিনে নিতে পারে। ওয়াইলি ও চাই রিসোর্স-ভিত্তিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্লসারির বড় আকারকে তুলে ধরেন। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যার এই সকল ধরণ শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে এবং মানসিকভাবে জ্ঞান অর্জনে যুক্ত রাখে, পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে সেতুবন্ধন ঘটায় এবং মানসিক মডেল সংশোধন করে। গবেষণার ভিত্তিতে দেখা যায়, মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক কৌশল আরও উপকারী। গবেষণায় আরও জানা যায়, ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড এবং রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধগুলো যেগুলো শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে, সেগুলো আরও গভীর অনুধাবনে সহায়ক। ভ্যান ডের মেইজ প ডি জং<ref name="Vandermeij2011">Van der Meij , J. , & de Jong , T. (2011). The effects of directive self-explanation prompts to support active processing of multiple representations in a simulation-based learning environment. Journal of Computer Assisted Learning, 27(5), 411–423.</ref> দুটি সিমুলেশন-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের মডেল তৈরি করেন, যেখানে বহু রূপে উপস্থাপনাগুলো রয়েছে। এক মডেলে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত অনুরোধের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় এবং তাদের উত্তর ব্যাখ্যা বা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয়। অন্য মডেলে, আরও সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, তারা যেন ব্যাখ্যা করে কীভাবে প্রদত্ত দুটি উপস্থাপনা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, উভয় মডেলেই উন্নত পারফরম্যান্স দেখা যায়, তবে ফোকাসড স্ব-ব্যাখ্যা মডেল গ্রুপে শেখার উপকার বেশি হয়। ফলে মাল্টিমিডিয়া শেখার ক্ষেত্রে এই ফলাফল প্রমাণ করে, বিস্তৃত উন্মুক্ত অনুরোধের চেয়ে নির্দিষ্ট অনুরোধ ভালো কাজ করে। = স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেলসমূহ = [[চিত্র:Section_2_self_regulated_learning_model.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৪. স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেল]] == জিমারম্যানের চক্রাকারে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রক্রিয়াকে তিনটি আলাদা পর্যায়ে ভাগ করে: পূর্বচিন্তা পর্যায়, সম্পাদন পর্যায় এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে শেখার প্রচেষ্টা শুরুর আগে যে ধরণের প্রক্রিয়া ও বিশ্বাস তৈরি হয় তা অন্তর্ভুক্ত হয়; সম্পাদন পর্যায়ে শেখার বাস্তব প্রয়োগ চলাকালীন যা ঘটে; এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়ে প্রতিটি শেখার প্রচেষ্টার পর যা ঘটে তা বোঝানো হয়।<ref name="Zimmerman20022" /> === পূর্বচিন্তা পর্যায় === পূর্বচিন্তা পর্যায়ের দুটি প্রধান প্রক্রিয়া আছে: কাজ বিশ্লেষণ এবং আত্ম-প্রেরণা। কাজ বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশলগত পরিকল্পনা। আত্ম-প্রেরণা আসে শিক্ষার্থীর শেখা নিয়ে বিশ্বাস থেকে, যেমন—শেখার ব্যক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে আত্ম-দক্ষতা বিশ্বাস এবং শেখার ব্যক্তিগত ফলাফল নিয়ে প্রত্যাশা।<ref name="Zimmerman20022" /> '''লক্ষ্য নির্ধারণ''' বলতে বোঝানো হয় কী অর্জন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তা নির্ধারণ করা<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য শেখার প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক, কারণ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই জানাতে হবে চূড়ান্ত ফলাফলটি কেমন হওয়া উচিত। লক্ষ্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মোটিভেশন সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শেখার লক্ষ্য অর্জনে উদ্দীপিত করতে পারে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি যা বাস্তবে অর্জনযোগ্য। তাই লক্ষ্যগুলো খুব বেশি উচ্চ বা খুব নিচু হওয়া উচিত নয়; বরং এমন হওয়া উচিত যা বাস্তবতার মধ্যে পড়ে এবং অর্জনযোগ্য। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য আকাঙ্ক্ষা ও মোটিভেশন তৈরি করে কারণ সেগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যারা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যেমন বানান পরীক্ষার জন্য শব্দ তালিকা মুখস্থ করা, অথবা যেসব শিক্ষার্থী বানান শেখার জন্য শব্দকে ধ্বনি বা অক্ষরে ভাগ করার কৌশল প্রয়োগ করে, তাদের মধ্যে শিক্ষাগত সাফল্য বেশি দেখা যায়<ref name="Zimmerman20023" />। লক্ষ্য নির্ধারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কী অর্জন করতে চাই? কোন ধাপগুলো আমাকে লক্ষ্য পর্যন্ত নিয়ে যাবে? '''কৌশলগত পরিকল্পনা''' লক্ষ্য নির্ধারণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হয়। লক্ষ্য নির্ধারণের পর শিক্ষার্থীদের উচিত নির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা যাতে তারা ওই শেখার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশলগত পরিকল্পনা একটি অধিক বিস্তারিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শেখার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। একটি কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে ছোট ছোট একাধিক লক্ষ্য থাকে যা একটি বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। একটি ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার কাজ, উদ্দেশ্য ও যে দিক তারা অনুসরণ করতে চায়, তা ভালোভাবে বুঝতে হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো সাত দিনের মধ্যে চৌদ্দটি অধ্যায় অধ্যয়ন করতে হয়, সে প্রতিদিন দুটি অধ্যায় পড়ার পরিকল্পনা করতে পারে। প্রতিদিন কতটুকু পড়তে হবে তা পরিকল্পনা করে নিলে সাত দিনে সব অধ্যায় শেষ করা সম্ভব হবে। কৌশলগত পরিকল্পনা কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়াক্ষেত্রেও কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো লক্ষ্য এক মাসে ম্যারাথনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, তাহলে সে সাপ্তাহিক সময়সীমা অনুযায়ী দৈনিক কতদূর দৌড়াতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তার কসরতের পরিমাণ বাড়াতে পারে। কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরির জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কেন শিখছি? আমি কীভাবে আমার শেখার লক্ষ্য অর্জন করব? আমি কীভাবে আমার শেখার কৌশলগুলো প্রয়োগ করব? আমার কাছে পর্যাপ্ত সময় আছে কি? আমার লক্ষ্য কি এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্জনযোগ্য? আমি এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে পড়ব? আমার ব্যক্তিত্ব কি এই লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলবে? আমি শিখতে বসলে কী কী বিষয় আমাকে বিভ্রান্ত করতে পারে? '''স্ব-উদ্দীপনার বিশ্বাস''' অন্তর্ভুক্ত করে আত্ম-দক্ষতা, ফলাফলের প্রত্যাশা, অন্তর্নিহিত আগ্রহ এবং শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা<ref name="Zimmerman20023" />। এখানে আত্ম-দক্ষতা বলতে বোঝানো হয় শিক্ষার্থীদের নিজের শিখন ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস। যেমন, ক্লাসে একটি কঠিন ধারণা শেখার সময় কোনো শিক্ষার্থী হয়তো ভাবতে পারে সে সহজেই বুঝে ফেলবে অথবা সে ভয়ে থাকবে যে সে বিষয়টি বুঝতেই পারবে না। "আত্ম-দক্ষতা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী কতটা জড়িত হবে এবং চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে কতটা অটল থাকবে।" আত্ম-দক্ষতার উচ্চ মাত্রা সাধারণত বিদ্যালয়ের সাফল্য ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006).">Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006). Promoting Self-Regulation in Science Education: Metacognition as Part of a Broader Perspective on Learning. Research In Science Education, 36(1-2), 111-139.</ref>। শিক্ষকেরা উপযুক্ত স্তরের জটিলতার শেখার কাজ এবং প্রয়োজনে সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-দক্ষতা বাড়াতে পারে। শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি দুটি উপায়ে আত্ম-দক্ষতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। এক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের কাছ থেকে উদাহরণ দেখানো; দুই, শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব তথ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। ফলাফলের প্রত্যাশা বলতে বোঝানো হয় শেখার পর ফলাফল কেমন হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, যেমন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে যে সে অর্থনীতির একটি কঠিন ধারণা শিখতে পারবে এবং ভবিষ্যতে তা কাজে লাগাতে পারবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বিষয়বস্তুর উপযোগিতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই প্রত্যাশা বাড়াতে পারেন। অন্তর্নিহিত আগ্রহ বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতাকে তাদের নিজের স্বার্থে মূল্যায়ন করা। শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গুরুত্বে মূল্যায়ন করা। যেসব শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত আগ্রহ বেশি, তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিতভাবে শেখার প্রতি বেশি উদ্দীপিত থাকে কারণ তারা কাজের দক্ষতা অর্জন করতে চায়। যেমন, কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে চায়, সে শিক্ষা-সম্পর্কিত জ্ঞান গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারে<ref name="Zimmerman20023" />। শিক্ষকরা জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত আগ্রহ বাড়াতে পারে। ক্লাসকে উপভোগ্য করে তোলা বা ভিডিও ক্লিপ ও গ্রাফের মতো বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে শেখার প্রবণতা বাড়ানো যায়। শ্রাউ প্রমুখ বিজ্ঞান বিষয়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মোটিভেশন উপাদানকে ব্যাখ্যা করেছেন স্ব-দক্ষতা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসের সমন্বয়ে। জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাস বলতে বোঝায় "জ্ঞান কোথা থেকে আসে এবং এর প্রকৃতি কেমন" সে সম্পর্কে ধারণা। এই বিশ্বাস সমস্যার সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার উপর প্রভাব ফেলে। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। === পারফরম্যান্স ধাপ === [[চিত্র:3_Phase.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৫। জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মডেল]] পারফরম্যান্স ধাপের প্রক্রিয়া দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝানো হয় পূর্বপর্যায়ে নির্ধারিত নির্দিষ্ট কৌশল বা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। স্ব-পর্যবেক্ষণ হলো নিজের আচরণ সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর নথিপত্র তৈরি করা বা পরীক্ষামূলকভাবে এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের প্রায়ই তাদের সময় ব্যবহারের রেকর্ড রাখতে বলা হয় যাতে তারা বুঝতে পারে পড়াশোনায় কতটা সময় দিচ্ছে। আত্ম-নিরীক্ষা। এটি স্ব-পর্যবেক্ষণের একটি সূক্ষ্ম রূপ, বলতে বোঝায় নিজের মানসিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা, যেমন প্রবন্ধ লেখার সময় বড় অক্ষরে শব্দ না লেখার হার<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).">Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003). Motivating self-regulated problem solvers. The psychology of problem solving, 233-262.</ref>। '''স্ব-নিয়ন্ত্রণ''' প্রক্রিয়া যেমন আত্ম-নির্দেশনা, কল্পচিত্র, মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ এবং কাজের কৌশল শিক্ষার্থী ও কর্মীদের কাজের ওপর মনোযোগ দিতে এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আত্ম-নির্দেশনা হলো নিজের কাছে উচ্চ বা নিম্নস্বরে কীভাবে কাজটি সম্পাদন করতে হবে তা বলা, যেমন গণিত সমস্যার সমাধানের সময় "উচ্চস্বরে ভাবনা বলা"। কল্পচিত্র হলো উজ্জ্বল মানসিক চিত্র তৈরি করা। এটি শেখার ও পারফরম্যান্সে সহায়তা করে। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ, অর্থাৎ বাইরের ঘটনা বা ভিন্ন চিন্তা বাদ দিয়ে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ ধরে রাখা, তাৎপর্যপূর্ণ স্ব-নিয়ন্ত্রণ কৌশল।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." /> মনোসংযোগ বৃদ্ধির জন্য পূর্বের ভুল নিয়ে চিন্তা না করে মনোযোগ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ<ref name="Kuhl, J. (1985).">Kuhl, J. (1985). Volitional mediators of cognitive behavior consistency: Self-regulatory processes and action versus state orientation. In J. Kuhl & J. Beckman (Eds.), Action control (pp.101–128). New York: Springer.</ref>। কাজের কৌশল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে যখন তা কাজকে মৌলিক অংশে ভাগ করে অর্থপূর্ণভাবে পুনর্গঠন করে<ref name="Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995).">Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995). Cognitive psychology and instruction (2nd ed.). Upper Saddle River, NJ: Merrill.</ref>। পারফরম্যান্স ধাপের দ্বিতীয় প্রধান অংশ হলো '''স্ব-পর্যবেক্ষণ'''। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পারফরম্যান্সের নির্দিষ্ট দিক, প্রেক্ষাপট এবং এর ফলাফল নিরীক্ষণ করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995).">Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995). Self-monitoring during collegiate studying: An invaluable tool for academic self-regulation. In P. Pintrich (Ed.), New directions in college teaching and learning: Understanding self-regulated learning (No.63, Fall, pp.13–27). San Francisco, CA: Jossey-Bass, Inc.</ref>। যারা পরিকল্পিত কাঠামোতে ধাপভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তারা পারফরম্যান্স ধাপে আরও কার্যকরভাবে স্ব-পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কারণ এই সীমিত কাঠামো মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং মনে রাখার তথ্যের পরিমাণ হ্রাস করে। যদি কোনো ব্যক্তি পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা সঠিকভাবে মনে না রাখতে পারে, তবে সে তার কৌশল যথাযথভাবে পরিবর্তন করতে পারবে না<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." />। স্ব-নথিপত্র রক্ষণ শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার সঠিক রেকর্ড দেয়, সেগুলো গঠনমূলকভাবে সংগঠিত করে এবং অগ্রগতি বোঝার জন্য একটি দীর্ঘ তথ্যভান্ডার তৈরি করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996).">Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996). Self-regulated learning of a motoric skill: The role of goal setting and self-monitoring. Journal of Applied Sport Psychology, 8, 60–75.</ref>। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে স্ব-পর্যবেক্ষণ একটি নিয়মিত আত্ম-আবিষ্কার বা আত্ম-পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে পারে<ref name="Bandura, A. (1991).">Bandura, A. (1991). Self-regulation of motivation through anticipatory and self-reactive mechanisms. In R. A. Dienstbier (Ed.), Perspectives on motivation: Nebraska symposium on motivation (Vol. 38, pp.69–164). Lincoln: University of Nebraska Press.</ref>। '''কৌশল প্রয়োগ''' হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিত শেখার কৌশল বাস্তবে প্রয়োগ করে শেখার কাজে নিয়োজিত হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশল প্রয়োগের জন্য মোটিভেশন ও আত্মনির্ধারণ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের একটি মজবুত কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে তারা পরিবেশগত বিঘ্ন এড়াতে পারে এবং কী তাদের মোটিভেট বা ডিমোটিভেট করে তা বুঝতে পারে। কৌশল প্রয়োগ শেখার অভিজ্ঞতার সফলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উভয়ের উপর প্রভাব ফেলে। এটি নির্ধারণ করে কীভাবে এবং কোথায় শেখা হবে এবং এটি শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। '''কৌশল পর্যবেক্ষণ''' হচ্ছে শেখার ক্ষেত্রে প্রণীত কৌশলগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া। শেখার কৌশলগুলোর প্রয়োগ, শেখার কাজের অগ্রগতি এবং পরিবেশ কীভাবে শেখার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে—এসব বিষয়ে নজর রাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনে কৌশলগুলো পরিবর্তন করে আরও ভালো শেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারে। === আত্মপ্রতিফলন পর্যায় === আত্মপ্রতিফলন পর্যায়ে দুটি প্রধান প্রক্রিয়া রয়েছে: আত্মবিচার এবং আত্মপ্রতিক্রিয়া। আত্মবিচারের একটি রূপ হলো আত্মমূল্যায়ন, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের পর্যবেক্ষণভিত্তিক কর্মদক্ষতাকে কিছু মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে—যেমন পূর্ববর্তী কর্মদক্ষতা, অন্য কারও কর্মদক্ষতা বা একটি নির্দিষ্ট মান। আত্মবিচারের আরেকটি রূপ হলো কার্যকারণ বিশ্লেষণ বা কারণনির্ধারণ, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের সাফল্য বা ভুলের কারণ সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি করে, যেমন গাণিতিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর। '''আত্মবিচার''': মানুষ সাধারণত চারটি প্রধান মানদণ্ডের ভিত্তিতে নিজের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা মূল্যায়ন করে: দক্ষতা, পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স, তুলনামূলক সামাজিক মান, এবং যৌথ মানদণ্ড। দক্ষতা মানদণ্ড নির্ধারিত এবং পরিমাপযোগ্য—যেমন, একটি ক্রসওয়ার্ড পাজলের সমাধানকে মূল লেখকের সমাধানের সঙ্গে তুলনা করা। যখন শিক্ষার্থীরা অনানুষ্ঠানিক এবং অসংগঠিত পরিবেশে সমস্যা সমাধান করে, তখন তাদের অনেক সময়ই দক্ষতা মানদণ্ডের পরিবর্তে তাদের পূর্ববর্তী পারফরম্যান্সের সঙ্গে বর্তমান পারফরম্যান্সের তুলনার ওপর নির্ভর করতে হয়। এই আত্মতুলনা শিক্ষার উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। এটি সাধারণত বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। সামাজিক তুলনা বা তুলনামূলক মানদণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহপাঠী বা জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে শেখার মূল্যায়ন করে। যৌথ মানদণ্ড সাধারণত দলগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দলগতভাবে কাজ করা হয়।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).2" /> আত্মমূল্যায়নমূলক সিদ্ধান্ত সাধারণত শেখার ফলাফল সম্পর্কিত কার্যকারণ বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেমন: ব্যর্থতার কারণ নিজের সীমিত ক্ষমতা নাকি পর্যাপ্ত চেষ্টা না করা। যদি কেউ মনে করে যে তার খারাপ ফলাফল তার অক্ষমতার কারণে হয়েছে, তাহলে তা তার প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কারণ এটি ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনাকে অস্বীকার করে। অন্যদিকে, যদি কেউ মনে করে যে ভুল কৌশল ব্যবহারের কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে, তবে সে ভবিষ্যতে নতুন কৌশল গ্রহণ করে উন্নতি করতে প্রেরণা পাবে।<ref name="Zimmerman20024" /> '''আত্মপ্রতিক্রিয়া''': আত্মপ্রতিক্রিয়ার একটি রূপ হলো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আত্মতৃপ্তি বা ইতিবাচক অনুভূতি। আত্মতৃপ্তি বৃদ্ধি পেলে প্রেরণা বাড়ে, আর আত্মতৃপ্তি কমে গেলে শেখার প্রচেষ্টাও কমে যায়।<ref name="Schunk, D.H. (2001).">Schunk, D.H. (2001). Social cognitive theory and self-regulated learning. In B.J. Zimmerman & D.H Schunk (Eds.), Self-regulated learning and academic achievement: Theoretical perspectives (2nd ed., pp. 125-152). Mahwah, NJ: Erlbaum.</ref> শিক্ষার্থীরা যখন তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে আত্মতৃপ্তি বোধ করে, তখন তারা আরও সচেতনভাবে কাজ পরিচালনা করতে পারে এবং অধ্যবসায় ধরে রাখতে পারে।<ref name="Schunk, D.H. (1983 c).">Schunk, D. H. (1983 c). Progress self-monitoring: Effects on children’s self-efficacy and achievement. Journal of Experimental Education, 51, 89–93.</ref> আত্মপ্রতিক্রিয়া কখনও কখনও অভিযোজিত বা প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ার রূপ নিতে পারে। প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া হলো নিজের আত্মপরিচয় রক্ষা করতে শেখা বা পারফর্ম করার সুযোগ থেকে সরে যাওয়া, যেমন একটি কোর্স বাদ দেওয়া বা পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত থাকা। অপরদিকে, অভিযোজিত প্রতিক্রিয়া হলো শেখার পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে পরিবর্তন আনা, যেমন অকার্যকর কৌশল বাদ দেওয়া বা পরিবর্তন করা।<ref name="Zimmerman20024" /> '''ফলাফল মূল্যায়ন''' : ফলাফল মূল্যায়ন ঘটে তখন, যখন শেখার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই পর্যায়ে শেখার লক্ষ্য, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং সেগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''4" /> ফলাফল মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরা নিজের কাছে এই প্রশ্নগুলো করতে পারে: আমার লক্ষ্যগুলো কতটা বাস্তবসম্মত ছিল? সেগুলো কি অর্জনযোগ্য ছিল? আমার কৌশলগত পরিকল্পনা কতটা কার্যকর ছিল? এমন কোনও কৌশল কি বাদ পড়েছে যেটা রাখা উচিত ছিল? ভবিষ্যতে আমি কীভাবে আমার শেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করব? আমার পরিবেশ কি মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করছিল? == বোকার্টসের তিন-স্তরবিশিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == == উইনের পর্যায়ভিত্তিক স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == = গবেষণার বিষয় ও ক্ষেত্র = [[চিত্র:Section_3_Issues_and_Topics_of_Research.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৬. গবেষণার বিষয় এবং বিষয়বস্তু]] == স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সাংস্কৃতিক পার্থক্য == শেখার ধারণা, বিশেষ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ধারণাটি, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘স্বনিয়ন্ত্রণ’ এবং ‘শেখার ধারণা’ নিয়ে অধিকাংশ তথ্য পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি একপাক্ষিক উপস্থাপন। ভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে মানুষ ভিন্ন চিন্তাভাবনার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়। জাপানি শিক্ষার্থীরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছিল,<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''">Purdie, Nola, and John Hattie.(1996). “Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning”. American Educational Research Journal 33.4 (1996): 845–871.</ref> তারা শেখার ভিন্ন কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং পূর্ব পরিচিত পদ্ধতির বাইরে জ্ঞান অনুধাবনের নতুন পথ খুঁজে পায়। যদিও এই প্রক্রিয়াটি অবচেতনভাবে ঘটে থাকতে পারে, তবে ভিন্ন ভাষা ও গঠনের নতুন ব্যবস্থায় পড়ে তারা বাধ্য হয় শেখার কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করতে। শেখার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বোঝা যায়, জ্ঞান একরৈখিক নয়—এটা ভালো বা খারাপ, ঠিক বা ভুল—এমন দ্বৈততা দিয়ে সব সময় বোঝা যায় না। জ্ঞান হলো পরিবর্তনশীল ও গতিশীল এবং তাই এটি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। এশীয় সংস্কৃতিতে প্রচলিত ধারণা হলো, জ্ঞান একজন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসে, যিনি সঠিক ও ভুল জানেন, এবং সেটি মুখস্থ করতে হয়। এর ফলে এশীয় শিক্ষার্থীদের সাধারণভাবে দেখা হয় নীরব, অনুগত ও মুখস্থনির্ভর শিখনশীল হিসেবে। অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীদের ভাবা হয় বেশি সক্রিয়, যারা আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা, বৈচিত্র্য গ্রহণযোগ্য এবং চিন্তা ও আচরণের বিকল্প পথ অনুসন্ধানে ইচ্ছুক।<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''" /> == জ্ঞান-সচেতনতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য == [[চিত্র:Different_Mind.png|থাম্ব|322x322পিক্সেল|চিত্র ৭. Different Mind]] মেটাকগনিশন সংক্রান্ত গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত পার্থক্য। এই পার্থক্য মেটাকগনিশন পরিমাপকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। উইনে (১৯৯৬) প্রস্তাব করেছিলেন, স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় মেটাকগনিশন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এমন পাঁচটি উৎস রয়েছে: ‘‘ডোমেইন জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতির জ্ঞান, কৌশল প্রয়োগ, কৌশল নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক প্রবণতা’’। (উইন ১৯৯৬, পৃ. ৩২৭)<ref name="Winne, P. H. (1996).''">Winne, P. H. (1996). A metacognitive view of individual differences in self-regulated learning. Learning and Individual Differences, 8(4), 327-353.</ref> সামগ্রিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখা নিয়ে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। উইনে জানান যে তার এই প্রস্তাবনা প্রাথমিক এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে তার কাজ অন্যান্য গবেষকদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছে। অনেক গবেষক মনে করেন, মেটাকগনিশন নির্ভুলতার পার্থক্যগুলো আসলে মেটাকগনিটিভ দক্ষতার পার্থক্য। তবে কেলেমেন, ফ্রস্ট ও উইভার (২০০০) বলেছিলেন, এটা সবসময় ঠিক নয়। মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতা বলতে বোঝানো হয় ‘‘মেটাকগনিশন এবং ভবিষ্যৎ স্মৃতির কার্যকারিতার মধ্যকার সম্পর্ক’’ (কেলেমেন প্রমুখ, ২০০০, পৃ. ৯২)।<ref name="Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000).''">Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000). Individual differences in metacognition: Evidence against a general metacognitive ability. Memory & Cognition, 28(1), 92-107.</ref> এই গবেষণায় চারটি প্রচলিত মেটাকগনিটিভ কাজ পরিমাপ করা হয়েছিল: শেখার সহজতার অনুমান, জানার অনুভূতির অনুমান, শেখার অনুমান এবং পাঠ্য বোধগম্যতার পর্যবেক্ষণ। প্রাক-পরীক্ষা ও পর-পরীক্ষা মিলিয়ে স্মৃতি ও আত্মবিশ্বাসের মাত্রা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে ভিন্ন ছিল। এই ফলাফল বোঝায়, মেটাকগনিটিভ দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এই গবেষণার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, কারণ অনেক গবেষক একমত যে মেটাকগনিশন পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই পার্থক্যগুলো দেখায় যে মেটাকগনিশনের জন্য ‘একটি সমাধান সবার জন্য উপযোগী’—এমন ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। লিন, শোয়ার্টজ এবং হাতানো (২০০৫) পরামর্শ দেন যে মেটাকগনিশনের প্রয়োগে ব্যক্তিগত শেখার ধরণ এবং শ্রেণিকক্ষ পরিবেশের পার্থক্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''">Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005). Toward Teachers' Adaptive Metacognition. Educational Psychologist, 40(4), 245-255.</ref> তারা "অভিযোজিত মেটাকগনিশন" ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এটি শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের প্রতি সাড়া দিয়ে ব্যক্তি ও পরিবেশ উভয়কেই মানিয়ে নিতে শেখায় (লিন প্রমুখ, ২০০৫, পৃ. ২৪৫)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের মধ্যে সামাজিক ও পাঠদানের পার্থক্য অন্তর্ভুক্ত। অভিযোজিত মেটাকগনিশনের জন্য, লিন প্রস্তাব করেন “ক্রিটিকাল ইভেন্ট ইনস্ট্রাকশন” পদ্ধতি। এটি শিক্ষকদের শেখায় কীভাবে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় যেগুলো উপর থেকে দেখলে সাধারণ মনে হয় (লিন প্রমুখ, ২০০৫, পৃ. ২৪৬)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> এটি নতুন শিক্ষকদের জন্য সহায়ক, যাতে তারা শিক্ষণিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে কার্যকরভাবে মানিয়ে নিতে পারে। == লার্নিং অ্যানালিটিকস এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণা == === লার্নিং অ্যানালিটিকসের সংজ্ঞা === ব্যবসা থেকে শুরু করে মহামারিবিদ্যার মতো ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার ও গণনাগত শক্তির প্রসার বড় ডেটা সেট থেকে উপকারী তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও এই ধরণের পদ্ধতিকে ‘‘লার্নিং অ্যানালিটিকস’’ বলা হয়। যদিও একে প্রায়ই নতুন একটি শাখা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, লার্নিং অ্যানালিটিকস মূলত বহু পুরোনো ধারার আইডিয়া, নীতি ও পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত। এটি একটি বহুমাত্রিক শাখা। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স, মানব-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশন এবং শিক্ষাবিদ্যার বিভিন্ন উপাদান একত্র করে তৈরি হয়েছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''">Siemens, G. (2013). Learning analytics: The emergence of a discipline. American Behavioral Scientist, 57 (10), p. 1380 - 1400.</ref> '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স কী?''' লার্নিং অ্যানালিটিক্স গবেষণা সংস্থা (Society for Learning Analytics Research বা SoLAR) লার্নিং অ্যানালিটিকসের ক্ষেত্রকে নিম্নরূপভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: “লার্নিং অ্যানালেটিক্স হলো শিক্ষার্থী ও তাদের প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার একটি প্রক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য হলো শেখার প্রক্রিয়া এবং যে পরিবেশে তা ঘটে, তা বোঝা ও আরও কার্যকর করে তোলা।”<ref name="Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).''">Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).Retrieved from http://solaresearch.org</ref> এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের দেওয়া সংজ্ঞাগুলোর একটি সমন্বয় থেকে<ref name="Larusson, J. A., & White, B. (2014).''">Larusson, J. A., & White, B. (2014). Learning Analytics. Springer</ref><ref name="Martin, T., & Sherin, B. (2013).''">Martin, T., & Sherin, B. (2013). Learning analytics and computational techniques for detecting and evaluating patterns in learning: An introduction to the special issue. Journal of the Learning Sciences, 22(4), p. 511-520.</ref> নিচের কয়েকটি মূল বিষয় নিরূপণ করা যায়: * এই শাখাটির মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি, পদ্ধতি, কাঠামো এবং সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেগুলো তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। * এটি বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আচরণ ও কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রকৃতপক্ষে, সিমেন্স (২০১৩) মতে, এই তথ্যসমূহের উৎস হতে পারে একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পাঠক্রম পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> * তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনের প্রতিটি ধাপেই এর পরিধি বিস্তৃত—যেমন তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম, তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাঠামো ও প্যাটার্ন বের করা, এবং তথ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত ভিজ্যুয়াল সরঞ্জাম। * এর একটি তাত্ত্বিক দিক রয়েছে, কারণ শিক্ষাগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীরতর বোঝাপড়া গড়ে উঠতে পারে। এটি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর পক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে। * এর একটি ব্যবহারিক দিকও রয়েছে, কারণ এসব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ফলাফল শেখার পরিবেশ এবং শেখার পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে সহায়তা করতে পারে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহারে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ''' যদিও লার্নিং অ্যানালেটিক্সের মূল লক্ষ্য নতুন নয়, তবুও কিছু বিশেষ উন্নয়ন ও কারণ এই ক্ষেত্রে আগ্রহ পুনর্জাগরিত করেছে এবং এটিকে একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো: * '''তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি''' বিশেষ করে ব্লেন্ডেড লার্নিং, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদির মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার চালুর পর থেকে বিশ্লেষণের জন্য উপলব্ধ শিক্ষামূলক তথ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> শিক্ষার্থীরা যখন ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করে, তখন তারা তাদের কর্মকাণ্ডের একটি “ডিজিটাল ছাপ” রেখে যায়। এটি সহজেই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। এই ধরনের তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে লগ ইন সময়, পোস্ট, ক্লিকের সংখ্যা, কোন উপকরণে কত সময় ব্যয় হয়েছে ইত্যাদি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখার কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট গভীর মানসিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া সম্ভব। * '''প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নত অ্যালগরিদম''' কিছু কম্পিউটেশনাল উন্নয়ন এই বিশাল পরিমাণ শিক্ষামূলক তথ্য বিশ্লেষণকে সহজ করে তুলেছে। এখন কম সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব, এবং মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নতুন অ্যালগরিদম ব্যবহারে ডেটা বিশ্লেষণে মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাঠামো ও প্যাটার্ন আবিষ্কার করা যায়। * '''তথ্যের বিন্যাস''' তথ্য সংগ্রহ যথেষ্ট নয়, সেগুলিকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হয় যাতে বিশ্লেষণ কার্যকরভাবে সম্ভব হয়। এজন্য নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক তথ্য লগ করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটের প্রয়োজন হয়।<ref name="Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010).''">Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010). A data repository for the EDM community: The PSLC DataShop. In Romero, C., Ventura, S., Pechenizkiy, M., & Baker, R. S. (Eds.). (2010) Handbook of educational data mining. CRC Press. p. 43-56.</ref> এই স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট আগে থেকেই থাকলে তথ্য প্রস্তুত করতে যে সময় ব্যয় হতো, তা অনেকাংশে হ্রাস পায়। === লার্নিং অ্যানালিটিকসের মূল পদ্ধতি ও সরঞ্জাম === সিমেন্স (২০১৩) লার্নিং অ্যানালেটিক্সের দুটি মূল উপাদান উল্লেখ করেন: কৌশল ও প্রয়োগ। প্রযুক্তির মধ্যে আছে অ্যালগরিদম ও মডেল। এটি তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর প্রয়োগ হলো শিক্ষাগত প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তিগুলোর বাস্তব ব্যবহার—যেমন শিক্ষার্থী অনুযায়ী শেখার পরিবেশ তৈরি করা কিংবা শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করা।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> এই অংশে লার্নিং অ্যানালেটিক্সে ব্যবহৃত প্রধান পদ্ধতি ও কৌশলগুলো তুলে ধরা হয়েছে, কিছু উদাহরণসহ যা দেখায় কীভাবে এগুলো শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োগ করা যায়। '''ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি''' এই পদ্ধতিগুলোর কার্যপ্রণালির সরল বিবরণ হলো—ডেটার কিছু নির্দিষ্ট দিক বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের মান নির্ধারণ করা (যেটিকে বলা হয় ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল), যেখানে অন্য দিকগুলোকে বলা হয় '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল'''।<ref name="Baker, R. S., & Yacef, K. (2009).''">Baker, R. S., & Yacef, K. (2009). The state of educational data mining in 2009: A review and future visions. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 3-17.</ref> উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি আছে যেগুলো শিক্ষার্থীরা একটি অনলাইন কোর্সে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা থেকে (লগ ইন সময়, ব্লগ কার্যকলাপ, মূল্যায়ন পরীক্ষায় ফলাফল—এগুলো হলো '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল''') এই পূর্বাভাস দেয় যে শিক্ষার্থীটি কোর্সে ব্যর্থ হতে পারে (ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল)। এই ধরনের মডেল দুটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়: ভবিষ্যতের ঘটনা যেমন শিক্ষার্থীর ড্রপআউট <ref name="Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July).''">Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July). Predicting students drop out: A case study. In Proceedings of the 2nd International Conference on Educational Data Mining, EDM 2009, p. 41-50.</ref> অথবা শিক্ষার্থীর কোর্সফলাফল <ref name="Ming, N., & Ming, V. (2012).''">Ming, N., & Ming, V. (2012). Predicting student outcomes from unstructured data. In Proceedings of UMAP Workshops, p. 11-16.</ref> ভবিষ্যদ্বাণী করা। আবার কিছু ক্ষেত্রে কিছু ডেটা সরাসরি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, কারণ তা শিক্ষার্থীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমন অবস্থায় পূর্বাভাস মডেল অন্য কিছু পরিবর্তনশীল পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুমান করতে সক্ষম হয়।<ref name="Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August).''">Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August). Detecting student misuse of intelligent tutoring systems. In International Conference on Intelligent Tutoring Systems, p. 531-540.</ref> '''কাঠামো অন্বেষণ''' এই লার্নিং অ্যানালিটিক্স কৌশলটি আগেরটির চেয়ে বেশ আলাদা, কারণ এতে এমন অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয় যার উদ্দেশ্য হলো পূর্বানুমান ছাড়াই শিক্ষাগত ডেটাতে গঠন খুঁজে বের করা। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। '''ক্লাস্টারিং'''-এ ডেটাকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে সেটিকে একাধিক ক্লাস্টারে রূপান্তর করা হয়। এই ক্লাস্টারগুলো, যেমন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল হতে পারে যাদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে তারা কীভাবে অনুসন্ধানভিত্তিক শেখার পরিবেশ ব্যবহার করে তার ভিত্তিতে।<ref name="Amershi, S., & Conati, C. (2009).''">Amershi, S., & Conati, C. (2009). Combining Unsupervised and Supervised Classification to Build User Models for Exploratory. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 18-71.</ref> আবার '''সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ'''-এ শেখার মাঝে সম্পর্ক বা পারস্পরিক ক্রিয়ার ধরন শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন ছাত্রদের আচরণ ও নেটওয়ার্কে তাদের অবস্থান কীভাবে তাদের সম্প্রদায়ের অংশ মনে হওয়ার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করা।<ref name="Dawson, S. (2008).''">Dawson, S. (2008). A study of the relationship between student social networks and sense of community. Educational Technology & Society, 11(3), p. 224-238.</ref> '''সম্পর্ক অনুসন্ধান''' এই কৌশলটি ব্যবহৃত হয় বড় ডেটাসেটের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনশীলের মধ্যকার সম্পর্ক শনাক্ত করতে। এই পদ্ধতির সাধারণ লক্ষ্য হলো নির্ধারণ করা কোন কোন পরিবর্তনশীল একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কযুক্ত, অথবা পরিবর্তনশীলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করা। এই কৌশলের বিভিন্ন ব্যবহার আছে। উদাহরণস্বরূপ, বেকার ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) বিভিন্ন বুদ্ধিমান শিক্ষণ সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে শিক্ষার্থীরা কীভাবে “সিস্টেমকে ফাঁকি দেয়” তা নিয়ে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন।<ref name="Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June).''">Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June). Educational software features that encourage and discourage “gaming the system”. In Proceedings of the 14th international conference on artificial intelligence in education, p. 475-482.</ref> আবার পেরেরা ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) এই কৌশল ব্যবহার করে দলগত প্রকল্পে সফলতা আনার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী ধরনের সহযোগিতামূলক পথ সবচেয়ে কার্যকর তা শনাক্ত করেছেন।<ref name="Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009).''">Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009). Clustering and sequential pattern mining of online collaborative learning data. IEEE Transactions on Knowledge and Data Engineering, 21(6), p. 759-772.</ref> '''মানব-বিচারের জন্য তথ্য পরিশোধন''' এই কৌশলে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষাগত ডেটা পরিশোধন ও উপস্থাপন করা হয়, উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে, যাতে গবেষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা (শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রশাসক ইত্যাদি) উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বওয়ার্স (২০১০) বহু বছরের ছাত্রদের শিক্ষা-অগ্রগতির ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা ব্যবহার করে শনাক্ত করেছেন কোন ছাত্ররা ঝুঁকিতে আছে। যুক্তি হলো সফল বা ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু সাধারণ প্যাটার্ন থাকে যেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব এবং যেগুলোর উপস্থিতি ছাত্রের সফলতা বা ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে।<ref name="Bowers, A. J. (2010).''">Bowers, A. J. (2010). Analyzing the longitudinal K-12 grading histories of entire cohorts of students: Grades, data driven decision making, dropping out and hierarchical cluster analysis. Practical Assessment Research and Evaluation, 15(7), p. 1-18.</ref> === লার্নিং অ্যানালেটিক্স এবং স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) গবেষণা === লার্নিং অ্যানালেটিক্সের পদ্ধতি ও প্রয়োগ নিয়ে আগের অংশ বিবেচনা করলে এটি স্পষ্ট যে এই সরঞ্জামগুলো শেখা সম্পর্কে তত্ত্ব গঠনে এবং সেগুলোর পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনে সহায়তা করে। স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। এই ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং স্বনিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি ও কোন শর্তে তা ঘটে সে বিষয়ে ধারণা যাচাই করতে লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক পদ্ধতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে একাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। '''স্বনিয়ন্ত্রণভিত্তিক গবেষণার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা''' কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। কারণ, এই নতুন ধরনের শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলো শেখার দারুণ সুযোগ তৈরি করে। এটি গবেষকদের আগ্রহী করেছে—ছাত্ররা এই সম্ভাবনার কতটা সদ্ব্যবহার করছে এবং কী পরিস্থিতিতে তারা সফল হচ্ছে তা অন্বেষণে।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2">Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008). Self-regulation of learning within computer-based learning environments: A critical analysis. Educational Psychology Review, 20(4), 429-444.</ref> এসব শেখার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয় এবং তাই স্বনিয়ন্ত্রিত শেখারও সুযোগ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে বিষয়বস্তুর কাছে যেতে পারে, বিভিন্ন রূপে উপস্থাপন বেছে নিতে পারে এবং পরিবেশের একাধিক উপাদান নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এর মানে এটাও যে, যেসব শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই, তারা এই ধরনের শেখার লক্ষ্যে ব্যর্থও হতে পারে। এজন্য, এই পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমরা এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং এদের সহায়তায় হস্তক্ষেপ বা সহযোগী উপকরণ তৈরি করতে পারি। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন, বিশেষত যেহেতু এ প্রক্রিয়াগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ। কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত আচরণ পর্যবেক্ষণে গবেষকদের একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিয়াদাতি প্রমুখ (২০১৬) জোর দিয়ে বলেন যে স্বনিয়ন্ত্রণ মূল্যায়নের যথাযথ ব্যাখ্যা পেতে হলে “যে কোনও পরিমাপ পদ্ধতির নির্বাচন, উন্নয়ন ও প্রয়োগ তাতে ব্যবহৃত স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল বা তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে” (সিয়াদতি প্রমুখ, ২০১৬ পৃ. ১৯০)।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). ''2">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). Trace-based micro-analytic measurement of self-regulated learning processes. Journal of Learning Analytics, 3(1), p. 183-220.</ref> তবে, কিছু গবেষণায় কোনও নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো অনুসরণ করা হয়নি, ফলে শব্দার্থ ও সংজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণা আবার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেলের নির্দিষ্ট উপাদান যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, স্ব-পর্যবেক্ষণ বা আত্ম-দক্ষতা নিয়ে কাজ করেছে। এই উপাদানগুলোকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কাঠামোর সামগ্রিক চিত্রটি পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয় না।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> আরেকটি বড় সমস্যা দেখা যায় তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে। অধিকাংশ গবেষণায় শিক্ষার্থীদের নিজেদের প্রতিবেদনকেই মূল তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর নির্ভরযোগ্যতা ও মান শিক্ষার্থীর আত্মজ্ঞান ও শেখার কৌশল বর্ণনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। উইন্টার্স প্রমুখ (২০০৮) উল্লেখ করেন, এই ধরনের আত্মপ্রতিবেদন সবসময় পর্যবেক্ষণমূলক কৌশলের মতো নির্ভরযোগ্য নয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণায় থিংক-এলাউড পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত চিন্তাপ্রক্রিয়া ধরা সম্ভব হয়। তবে, এগুলো সাধারণত ব্যবহৃত কৌশল শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, এই কৌশলগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় না। যেমন ধরুন, সারসংক্ষেপ করা একটি কার্যকর শিক্ষণ কৌশল হলেও এটি শুধু প্রয়োগ করলেই কার্যকর হবে না, বরং সারসংক্ষেপ কখন করা হচ্ছে, কীভাবে করা হচ্ছে, কী বিষয়কে সারসংক্ষেপ করা হচ্ছে এসব বিষয়ের ওপর এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। সবশেষে, গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো তথ্য সংগ্রহ ও পরিমাপ পদ্ধতি শিক্ষার সঙ্গে কতটা হস্তক্ষেপ করে। আদর্শ পদ্ধতি হলো এমন। এটি শিক্ষার্থীর শেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলে এবং শেখার প্রক্রিয়ায় কোনওরকম বিঘ্ন না ঘটিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এই ধরনের “অহস্তক্ষেপমূলক” আচরণ দেখা যায় লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক সরঞ্জামগুলোতে। এগুলো ব্যবহারকারীর ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে, যেমন লগ ইন/আউট সময়, কোন বৈশিষ্ট্য বেশি ব্যবহার হচ্ছে, মূল্যায়ন কার্যক্রমে পারফরম্যান্স ইত্যাদি, এবং এই তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্যাটার্ন চিহ্নিত করে। এই বিষয়ে আরও আলোচনা পরবর্তী অংশে করা হবে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহার করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ নিরীক্ষণ''' লার্নিং অ্যানালেটিক্স প্রযুক্তি ও প্রয়োগগুলো নির্ভুল ও অহস্তক্ষেপমূলক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সরবরাহ করে, যাতে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময় তাদের স্বনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার প্রমাণ নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা যায়। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রগতি গবেষকদের হাতে নতুন উন্নত প্রযুক্তি এনে দিয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রেস ডেটা সংগ্রহের পরিধি ও বৈচিত্র্য অনেক বেড়েছে। [[চিত্র:Kwlimage.jpg|থাম্ব|চিত্র ৮. কেডব্লিউএল]] আগের অংশে আমরা দেখেছি, স্বনিয়ন্ত্রিত শেখা নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণাই শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রতিবেদনকে প্রধান তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর সঙ্গে যুক্ত নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে কিছু গবেষণায় আত্মপ্রতিবেদন, অনলাইন আচরণগত তথ্য ও শেখার ফলাফল একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, শা প্রমুখ (২০১২) একটি মোবাইল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সময় স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করেন। এই গবেষণায় সিঙ্গাপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শেখার জন্য মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এতে অ্যানিমেশন আঁকা, কনসেপ্ট ম্যাপ তৈরি, এবং কেডব্লিউএল টেবিল তৈরি করার মতো অ্যাপ্লিকেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। iKWL অ্যাপে শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড ও পারফরম্যান্সই ছিল তথ্য সংগ্রহের ভিত্তি। অ্যাপ্লিকেশনটি তিনটি প্রশ্নের উত্তর চায়: “আমি কী জানি?”, “আমি কী জানতে চাই?” এবং “আমি কী শিখেছি?”। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর যথাক্রমে পূর্বজ্ঞান, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আত্মমূল্যায়ন ধাপকে বোঝায়। গবেষকরা শিক্ষার্থীরা কেডব্লিউএল প্রশ্নে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা বিশ্লেষণ করেন। দুটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করা হয়: একজন শিক্ষার্থী কেডব্লিউএল টেবিল সম্পূর্ণ করেছে কি না (যদি কোনো ঘর পূরণ না হয় = ০, যদি অন্তত একটি পূরণ হয় = ১), এবং প্রতিটি ক্যাটাগরিতে কতগুলো তথ্য লিখেছে তা পরিমাপ করার রুব্রিক। এই পরিমাপটি সহজ, তাই সিস্টেম নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নির্ধারণ করতে পারে, তবে এতে লেখা কনটেন্টের মান বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). ''2">Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). Recognizing and measuring self-regulated learning in a mobile learning environment. Computers in Human Behavior, 28(2), p. 718-728.</ref> [[চিত্র:Posterlet_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ৯. পোস্টারলেট]] [[চিত্র:MetaTutor_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১০. মেটাটিউটর]] আরও কিছু গবেষণা নির্দিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছে। কুতুমিসু প্রমুখ (২০১৫) “নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ” এবং “পুনরায় সম্পাদনা” কৌশল দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষার জন্য পোস্টারলেট নামক একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন। এই অ্যাপে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ফান ফেয়ারের জন্য পোস্টার ডিজাইন করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা কার্যকর পোস্টার ডিজাইনের নীতিমালা ও অনুশীলন শেখে। শেখার আচরণ পর্যবেক্ষণের জন্য অ্যাপটিতে একটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পোস্টার তৈরি করে এবং পশু চরিত্রদের কাছ থেকে ইতিবাচক (“আমার ভালো লেগেছে...”) বা নেতিবাচক (“আমার পছন্দ হয়নি...”) প্রতিক্রিয়া পায়। সিস্টেম দুটি বিষয় রেকর্ড করে: কতবার শিক্ষার্থী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বেছে নিয়েছে এবং কতবার সে পোস্টারে পরিবর্তন এনেছে। এখানে কেবল সংখ্যাগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে—শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তন করেছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015).''2">Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015). Posterlet: A game-based assessment of children’s choices to seek feedback and to revise. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 49-71.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষণ পরিবেশ রয়েছে, যেগুলো দ্বৈত ভূমিকা পালন করে: একটি হচ্ছে শেখার উপকরণ, যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ শেখানো ও সহায়তার জন্য তৈরি; অন্যটি গবেষণামূলক উপকরণ, যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ আচরণের উপর তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। এমন একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশন হলো মেটাটিউটর, যা আজেভেদো ও তাঁর সহকর্মীদের (২০১৩) গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। মেটাটিউটর একটি শিক্ষণ পরিবেশ যা জীববিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এতে একাধিক ডিজিটাল এজেন্ট রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশল প্রয়োগে সহায়তা করে। এর নানা বৈশিষ্ট্য আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট পর্যায় ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত (যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, আত্ম-প্রতিফলন) এবং সেগুলো ব্যবস্থার ইন্টারফেসে সুনিপুণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (দেখুন চিত্র ১০)। এছাড়াও মেটাটিউটর-এ এমন ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থাও রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যাতে গবেষকরা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা আরও উন্নত করা যায়। এই সিস্টেমটি সাধারণ ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতির (যেমন স্ব-প্রতিবেদন জরিপ, চিন্তা প্রকাশ প্রোটোকল) পাশাপাশি উন্নততর শিক্ষণ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে অনুধাবন ও মূল্যায়ন করে। এখানে একটি আই-ট্র্যাকিং (চোখের গতি পর্যবেক্ষণ) উপাদান রয়েছে যা শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে, কোন অংশে মনোযোগ দেয়, কোন ক্রমে তথ্য পড়ে, কোন ডায়াগ্রামের অংশ বেশি ব্যবহার করে ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান তথ্য দেয়। এই ধরনের তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় শিক্ষার্থীর স্ব-প্রতিবেদন বা মুখে বলা চিন্তায় এসব বিষয় উঠে আসে না। সিস্টেমটি এমন বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ইন্টারঅ্যাকশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং শিক্ষার্থীরা শেখার কাজে তা প্রয়োগ করে। যেমন: নোট নেওয়ার ধরণ, চিত্র অঙ্কনের ব্যবহার, কী-স্ট্রোক, মাউস ক্লিক, অধ্যায় বা কার্যকলাপ খোলা, কুইজে পারফরম্যান্স ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজের ধারা বা রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়। এই সব বিভিন্ন ধরণের ডেটার সমন্বয়ে গবেষকরা কগনিটিভ (জ্ঞানগত) প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পান। যেমন: যদি শিক্ষার্থী কোনো লেখাকে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে সে পাঠ্যবস্তুর উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। অথবা, যদি ব্যবহারকারী টেক্সট থেকে চিত্র বা গ্রাফে বারবার যায়, তাহলে বোঝা যায় সে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন পদ্ধতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। এছাড়াও এখানে মুখাবয়ব অভিব্যক্তি শনাক্তকরণের একটি জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। সিস্টেমটি শিক্ষার্থীদের মুখাবয়বের ভিডিও সংগ্রহ করে এবং তা নলডাস ফেসরিডার ৩.০ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর আবেগগত অবস্থান নির্ধারণ করে। তবে, এই সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা হলো এটি কেবল কয়েকটি সাধারণ, সর্বজনীন আবেগ শনাক্ত করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের পুরো আবেগ অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করে না।<ref name="Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013).''">Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013). Using trace data to examine the complex roles of cognitive, metacognitive, and emotional self-regulatory processes during learning with multi-agent systems. In International handbook of metacognition and learning technologies, Springer New York, p. 427-449.</ref> [[চিত্র:System_bbbbb.png|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১১. ব্রেটির মস্তিষ্ক]] পরিশেষে, কিছু গবেষণায় শিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশনের নির্দিষ্ট উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখার নির্দিষ্ট পর্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এসব উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ডেটার গঠন বা ধরন শনাক্ত করা হয়েছে (দেখুন ক্লাস্টারিং, অধ্যায় ২)। সেজেডি প্রমুখ (২০১৫) একটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, যেটিকে তারা বলেন '''সুসংগতি বিশ্লেষণ'''। তাঁদের গবেষণায়, তারা "বেটি'স ব্রেইন" নামক একটি শিক্ষণ পরিবেশ ব্যবহার করেন। এখানে শিক্ষার্থীরা একটি ভার্চুয়াল এজেন্ট বেটিকে একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর চেষ্টা করে, একটি কারণমূলক মানচিত্র তৈরি করে। এই মানচিত্রে (দেখুন চিত্র ১১) বিষয়বস্তুর মূল ধারণাগুলোকে উপস্থাপনকারী সত্ত্বাগুলো থাকে, যেগুলো মধ্যে দিক-নির্দেশিত সংযোগ থাকে, যা ধারণাগুলোর মধ্যে কারণ-পরিণাম সম্পর্ক নির্দেশ করে। বেটি এই মানচিত্র ব্যবহার করে সংযোগ চেইনের মাধ্যমে যুক্তি করে এবং বিভিন্ন কুইজ প্রশ্নের উত্তর দেয়।<ref name="Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015).''">Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015). Using coherence analysis to characterize self-regulated learning behaviours in open-ended learning environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 13-48.</ref> এই কারণমূলক মানচিত্রের সঠিকতা নির্ধারণ করে যে, বেটি কতটা সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত টেক্সট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই সংযোগ স্থাপন করে, কুইজের মাধ্যমে মানচিত্র পরীক্ষা করে এবং প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে মানচিত্র সংশোধন করে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারঅ্যাকশনের সময় সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাঁচটি আলাদা আচরণগত গোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়। প্রথম দল ছিল ঘন ঘন তথ্য অনুসন্ধানকারী ও সতর্ক সম্পাদক, যারা তথ্য উৎস অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে কিন্তু মানচিত্র কম সম্পাদনা করেছে। দ্বিতীয় দল, কৌশলী পরীক্ষক, যারা তথ্য দেখেছে কিন্তু ততটা কাজে লাগাতে পারেনি। তবু তারা মানচিত্র বেশি সম্পাদনা করেছে। তৃতীয় দল ছিল বিভ্রান্ত অনুমানকারী, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে কিন্তু বিজ্ঞান উৎস ব্যবহার করেনি। চতুর্থ দল ছিল দায়িত্বহীন শিক্ষার্থী, যাদের অধিকাংশ সম্পাদনা অসমর্থিত এবং তারা ৩০% সময়ই নিষ্ক্রিয় ছিল। পঞ্চম দল ছিল সম্পৃক্ত ও দক্ষ, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে এবং বেশিরভাগই সমর্থিত। তারা তথ্য দেখার সময় এবং মানচিত্র তৈরির সময়ও বেশি ব্যয় করেছে। এই আচরণই বেটির ব্রেইনে সফলতা এনে দেয়। = তত্ত্ব থেকে প্রয়োগে = [[চিত্র:Section_4_From_Theory_to_Practice.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ১২. তত্ত্ব থেকে অনুশীলনে]] == অভিজ্ঞ প্রয়োগে মেটাকগনিশন == === পাঠে মেটাকগনিশন === মেটাকগনিশন এবং পাঠ অনুধাবনের উপর এর প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ভাষাগত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি এবং কিশোরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব গবেষণায় পাঠ ও লেখার সঙ্গে মেটাকগনিশনের সম্পর্ক এবং মেটাকগনিশনমূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা উঠে এসেছে। Furnes এবং Norman (২০১৫) মেটাকগনিশনের তিনটি ধরন (জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা) তুলনা করেন স্বাভাবিক পাঠকের সঙ্গে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত পাঠকদের মধ্যে।<ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).2" /> অংশগ্রহণকারীরা দুটি তথ্যমূলক লেখা পড়ে এবং তাদের শেখার ফলাফল একটি মেমরি টাস্কের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। মেটাকগনিশনমূলক জ্ঞান ও দক্ষতা স্ব-প্রতিবেদনের মাধ্যমে এবং অভিজ্ঞতা পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস ও শেখার বিচার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। ফলাফল দেখায় যে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্তদের পাঠ ও বানান সমস্যা সাধারণত কম মেটাকগনিশন বা কৌশল ব্যবহারজনিত নয়। স্বাভাবিক শিশুদের উপর একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা যায়, ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের মেটাকগনিশন জ্ঞান তুলনামূলকভাবে ভালো।<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).3" /> গবেষণায় আরও উঠে আসে, পাঠ অনুধাবন ব্যক্তিগত কৌশল জ্ঞানভিত্তিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দুটি গবেষণাই বোঝায়, ডিসলেক্সিয়ায় পাঠ অনুধাবনের ঘাটতি মেটাকগনিশনের কারণে নয়, কিন্তু স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে পাঠ অনুধাবন তাদের মেটাকগনিশনের স্তরের উপর নির্ভর করে। '''প্রশ্ন তৈরি''' শিক্ষার্থীদের পাঠ্য অনুধাবনে সহায়তা করতে পারে। “একজন আদর্শ শিখনকারী স্ব-নিয়ন্ত্রিত ও সক্রিয় হলো সেই ব্যক্তি যে গভীর প্রশ্ন তোলে এবং এর উত্তর অনুসন্ধান করে” (গার্সিয়া প্রমুখ ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> বিভিন্ন গবেষণায় প্রশ্ন তৈরির পাঠ্য অনুধাবনে প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে। গার্সিয়া প্রমুখ (২০১৪) নবম শ্রেণির ৭২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিজ্ঞানের ক্লাসে একটি গবেষণা করেন। ফলাফল অনুযায়ী, “প্রশ্ন তৈরির প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের শেখা ও অধ্যয়নের পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত তাদের মেটাকগনিশনে” (গার্সিয়া প্রমুখ ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা, যারা প্রম্পটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পায়, তাদের মেটাকগনিশন জ্ঞান ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ স্কোর সর্বোচ্চ হয়। এটি বোঝায় যে প্রশ্ন তৈরির কার্যকারিতা শিক্ষার্থীর মেটাকগনিশন জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তৈরি করানোর আগে তাদের মেটাকগনিশন দক্ষতা চিহ্নিত করা শিক্ষকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। === লেখায় মেটাকগনিশন === বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখালেখিতে মেটাকগনিশন দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিক্ষকরা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে চিন্তা ও পর্যালোচনার আহ্বান জানান, বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সচরাচর তাদের লেখাকে গভীরভাবে মূল্যায়ন বা পরিমার্জন করে না। প্যারট ও চেরি (২০১৫) এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও সক্রিয় লেখাচিন্তায় উৎসাহিত করতে নতুন শিক্ষণ কৌশল '''প্রক্রিয়া স্মারক''' প্রস্তাব করেন।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> প্রক্রিয়া স্মারক হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠানো নির্দেশিত প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা তাদের রচনার প্রথম খসড়া এবং চূড়ান্ত সংস্করণ উভয়ের পর প্রক্রিয়া স্মারক জমা দেয়। প্রথম খসড়ায়, শিক্ষার্থীদের তাদের রচনা, রুব্রিকের সহায়কতা, অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন, নিজের রচনার শক্তি ও দুর্বলতা এবং চূড়ান্ত সংস্করণে উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়। এরপর শিক্ষক রচনা মূল্যায়ন করে প্রতিক্রিয়া দেন। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া স্মারকে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বলা হয়, যেমন “কোন মন্তব্য সবচেয়ে সহায়ক ছিল, এবং কেন?” (প্যারট প্রমুখ, ২০১৫, পৃ. ১৪৭)।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> প্যারট ও চেরি প্রথমে ২০০৫ সালে প্রক্রিয়া স্মারক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন এবং ২০১৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় তা প্রয়োগ করেন। এই গবেষণায় সমাজতত্ত্বের বিভিন্ন স্তরের ২৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অংশ নেয়।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে যে, প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উভয়কেই লেখালেখির প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে সাহায্য করে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাদানের গুণমান সম্পর্কে মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন, যা ভবিষ্যতে তাদের পদ্ধতি উন্নত করতে এবং রুব্রিকগুলো আরও স্পষ্ট করতে সহায়ক হয়। যদিও কিছু শিক্ষার্থী প্রসেস মেমোকে গুরুত্ব দেয়নি এবং পর্যাপ্ত মন্তব্য করেনি, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই পদ্ধতিকে তাদের লেখার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কার্যকর মনে করেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সৎভাবে মন্তব্য প্রদান করেছে। প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে যোগাযোগকেও উৎসাহিত করেছে, কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষকরা সরাসরি শিক্ষার্থীর প্রতিফলনের জবাব দিতে পারেন। প্যারট এবং চেরি-এর মতে প্রসেস মেমোর আরেকটি সুবিধা হলো, এটি শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করে, ফলে যারা ক্লাসে প্রশ্ন করার জন্য হাত তুলতে সংকোচ বোধ করে, তারাও উপকৃত হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ সচেতনতা বাড়াতে এবং ধাপে ধাপে লেখার পথে দিকনির্দেশনা দিতে একটি কার্যকর উপায়। === বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন === পূর্বে উল্লেখিতভাবে, মেটাকগনিশন বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চস্তরের বিজ্ঞান চর্চায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উপলব্ধি ও প্রক্রিয়াগত কৌশলগুলো পুনর্গঠন করতে হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যথাক্রমে তাদের শেখা ও শেখানোর উপরে প্রভাব ফেলে। তবে অনেক শিক্ষক এই বিশ্বাসগুলোকে স্বাভাবিক ধরে নেন। আবদ-এল-খালিক প্রমুখ (১৯৯৮) পরিচালিত এক গবেষণায় প্রাক-সেবা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দেখা যায় যে, খুব বেশি শিক্ষক বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস বা বিজ্ঞান প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষাদান করেন না। এই গবেষণায় কিছু শিক্ষক বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানের প্রকৃতি শেখানো অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই পরিস্থিতি সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়ায় যখন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উচ্চস্তরের বিজ্ঞান শেখে। এটি তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়, কারণ তাদের বিজ্ঞানকে বোঝার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি (২০০৬) এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেন, “কার্যকর নির্দেশনা এমন হওয়া উচিত যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়কে তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলে”। তাহলে, বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন কীভাবে উৎসাহিত করা যায়? শ্রাউ প্রমুখের মতে, “বাস্তব অনুসন্ধান মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে উৎসাহিত করে, কারণ এতে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের চিন্তায় ভুল বা ধারণাগত ঘাটতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়।” এটি ইনকোয়ারি-ভিত্তিক শিক্ষণ পদ্ধতির অংশ, যাকে অনেক গবেষক বিজ্ঞান শিক্ষায় কার্যকর বলে মনে করেন। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলে এবং সমাধান তৈরি করে। শ্রেণিকক্ষে মেটাকগনিশন বৃদ্ধির আরেকটি উপায় হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, যা শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি উল্লেখ করেছেন। এটি প্রতিক্রিয়া, মডেলিং এবং সামাজিক যোগাযোগ উন্নত করে, ফলে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও জ্ঞানের বিশ্বাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনুরূপভাবে, গাণিতিক শিক্ষণ ও নির্দেশনার গবেষণাতেও মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে “[[চিন্তন ও নির্দেশনা/গণিত শেখা|গণিত শেখা]]” অধ্যায়টি দেখুন। == উন্নয়নমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে মেটাকগনিশন == গবেষণায় দেখা গেছে, মেটাকগনিটিভ ক্ষমতা বয়স ও জৈবিক বিষয়ের মতো বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই এই তত্ত্বকে প্রয়োগের জন্য উন্নয়নগত অগ্রগতির ধারণা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। === পরিপক্বতা ভিত্তিক === '''বয়স একটি উপাদান হিসেবে''' * ছোট শিশুরা ** "থিওরি অফ মাইন্ড" ধারণা * কৈশোর * প্রাপ্তবয়স্করা === জৈবিক ভিত্তি === '''শেখার ঘাটতি''' == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন একটি দ্রুত বর্ধনশীল আগ্রহের ক্ষেত্র, বিশেষত শিক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্রের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন তত্ত্বকে একটি সংহত কাঠামোর মধ্যে একত্রিত করা, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণার পর্যালোচনায় প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রয়োগের কয়েকটি মূল নীতিকে তুলে ধরেছেন। তারা এই নীতিগুলোকে চারটি ধারণার মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন, যা এই ক্ষেত্রের গবেষণাকে সংহত করে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা শিখনের প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হয় যখন তারা আত্ম-মূল্যায়ন করতে পারে। অর্থাৎ, তারা কীভাবে শিখছে তা বিশ্লেষণ করে, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে, কী জানে আর কী জানে না তা মূল্যায়ন করে, এবং নিজের প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করে—এই উপায়ে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, চিন্তা ও আবেগের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে বেশি নমনীয়তা প্রদান করে। তারা যদি বাস্তববাদী লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যা তাদের দক্ষতা উন্নয়নের দিকে কেন্দ্রীভূত থাকে, সময় ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে এবং শেখার কৌশলগুলো পুনর্বিবেচনা করে, তাহলে তারা নিজেদের জন্য উচ্চতর কর্মক্ষমতার মান নির্ধারণ করতে পারে। তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিভিন্নভাবে শেখানো যায়, যা শিখন প্রক্রিয়াকে অভিযোজিত করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন শিক্ষার্থীদেরকে সরাসরি শেখানো যেতে পারে (নির্দেশিত প্রতিফলন, মেটাকগনিশন সম্পর্কিত আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনুশীলন); এটি পরোক্ষভাবে শেখানো যেতে পারে (মডেলিং ও প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে); এবং এটি ব্যক্তিকৃত অগ্রগতি চিত্রায়নের মাধ্যমেও উৎসাহিত করা যায়। সবশেষে, আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিচয়সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়। শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের আচরণ মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করে, তা তারা যেভাবে নিজেদের দেখতে চায় সেই পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। একটি প্রতিফলনশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার মাধ্যমে, একজন শিক্ষার্থী তার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়। যদিও শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের উপায়ে ভিন্নতা থাকতে পারে, মূল বিষয়টি হলো—তারা কীভাবে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে, তা বোঝা। প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) অনুসারে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) তিনটি উপায়ে উন্নত করা যায়: (১) পরোক্ষভাবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে: বিদ্যালয়ে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষক কী চান এবং কোনটি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী, তা শেখাতে পারে।<ref name="Paris, A.H. (2001)." /> এর একটি উদাহরণ হলো, কাজটি আবার যাচাই করা—যদিও শুরুতে সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক হয় এবং তাই পরবর্তীবারেও এটি করা উপকারী হবে। (২) স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সরাসরি শেখানো যায়: শিক্ষার্থীরা এমন শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখতে পারে, যারা কার্যকর কৌশল ব্যবহারে জোর দেন এবং লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত একটি গাণিতিক সমস্যা বিশ্লেষণের কৌশলগত ধাপগুলো তুলে ধরতে পারেন। (৩) আত্ম-নিয়ন্ত্রণ তখন উদ্দীপিত হয়, যখন এটি এমন সক্রিয় অনুশীলনের সঙ্গে একীভূত হয়, যার মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিদ্যমান থাকে। একটি কার্যকর অনুশীলন হলো—সহযোগিতামূলক শিক্ষণ প্রকল্প, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সামগ্রিক প্রকল্পের একটি অংশের জন্য দায়িত্ব নেয়। এ ধরনের প্রকল্পে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিদ্যমান থাকে, কারণ শিক্ষার্থীরা অন্যদের প্রতিক্রিয়া থেকে এবং তারা প্রকল্পে কীভাবে অবদান রেখেছে তার বিশ্লেষণ থেকে শিখে থাকে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির এই তিনটি উপায় প্রায়শই মিলিতভাবে দেখা যায়, যেহেতু শিক্ষার্থীরা সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষাক্ষেত্র জুড়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষণ কৌশল শেখানো হয়, যেগুলো তাদের পড়াশোনায় প্রয়োগ করতে বলা হয়; তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র এই কৌশলগুলো জানা যথেষ্ট নয়, বরং এই কৌশলগুলোর ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাও জরুরি (লিউটনার প্রমুখ, ২০০৭)। লিউটনার, লিওপোল্ড ও এলজেন-রাম্প (২০০৭)-এর কম্পিউটারভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শুধু একটি কার্যকর জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষণ কৌশল (হাইলাইটিং) শেখানো নয়, বরং কৌশলটি কিভাবে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে—এ বিষয়ে মেটাকগনিটিভ প্রশিক্ষণ দেওয়াটাও উপকারী।<ref name="Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007).">Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007). Self-regulated learning with a text-highlighting strategyːA training experiment. Journal of Psychology, 215 (3), 174-182.</ref> এই গবেষণায় ৪৫ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে এলোমেলোভাবে তিনটি দলে ভাগ করা হয়—একটি দলে কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, একটি দলে শুধু হাইলাইটিং কৌশল শেখানো হয়েছে, এবং অন্যটিতে হাইলাইটিং কৌশলের সঙ্গে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়েছে। মিশ্র প্রশিক্ষণ দল এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের সংস্করণ পায়, যেখানে কীভাবে মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে হয়, তা ধাপে ধাপে শেখানো হয় এবং তা অনুশীলনের সময় ও প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যারা কৌশল ব্যবহারের পাশাপাশি এর মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণও শিখেছিল, তারা তাদের শেখাকে লক্ষ্যভিত্তিকভাবে আরও সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছিল। শুধুমাত্র কৌশল শিখানো দলটি যাদের কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, তাদের চেয়ে ভালো ফল করে; তবে মিশ্র প্রশিক্ষণ দল উভয় দলকেই ছাড়িয়ে যায়, যা প্রমাণ করে—যদিও কৌশল ব্যবহার ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবুও কৌশল নিয়ন্ত্রণ শেখানো হলে শেখার মান আরও উন্নত হয়। == প্রযুক্তি সংযুক্তকরণ == === প্রযুক্তি ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এর সংযোগ === প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েছে, প্রেনস্কি (২০০১) তার প্রবন্ধে পরামর্শ দেন—শিক্ষকদের উচিত এমন উপায় খুঁজে বের করা, যার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করা যায়। এছাড়াও শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের “চাহিদা” বুঝে উপলব্ধ তথ্য ও কম্পিউটিং ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ উপায়ে পাঠ উপস্থাপন করতে হবে।<ref name="Beishuizen, J. (2007).''">Beishuizen, J. (2007). Self-regulated Learning in Technology Enhanced Learning Environments – a European review. In R. Carneiro, P. Lefrere, K. Steffens. (Eds). Kaleidoscope Seed Project, Retrieved from http://www.lmi.ub.es/ taconet/documents/srlinteles3.pdf.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''">Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008). Self- regulated Learning in Technology Enhanced Environments: Perspectives and Practice. Education – Line: European Conference on Educational Research, University of Goteborg.</ref><ref name="Prensky, M. (2001, September).''">Prensky, M. (2001, September). Digital natives, digital immigrants part 1. On the Horizon 9(5).</ref> আজকের দিনে, প্রযুক্তি-নির্ভর হস্তক্ষেপ প্রধানত ডিজিটাল প্রজন্মের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।<ref name="Prensky, M. (2001, September).''" /><ref name="Kitsantas, A. (2013).''">Kitsantas, A. (2013). Fostering college students’ self-regualted learning with learning technologies. Hellenic Journal of Psychology, 10(2013), pp. 235 – 252.</ref> শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের শিক্ষণ কার্যক্রম পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়নে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''">Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011). Self-regulated learning in technology enhanced learning environments A European perspective. Sense Publishers Rotterdam/ Boston/ Taiper.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান, আগ্রহ এবং প্রেরণা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে তাদের ব্যক্তিগত শেখার অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স ও ফলাফলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> উদাহরণস্বরূপ, মা প্রমুখ (২০১৫) বুদ্ধিমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার (ITSs) ব্যবহারের কথা বলেন, যেগুলো শিক্ষার পরিবেশে প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফল উন্নয়নে প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে। কম্পিউটারভিত্তিক এই ITSs ব্যবস্থাগুলো শিক্ষার্থীদের আচরণের ভিত্তিতে শেখার কার্যক্রমে যুক্ত করে।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''">Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014). Intelligent tutoring systems and learning outcomes: A meta-analysis. Journal of Educational Psychology, 106(4), 901-918.</ref> ITSs বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করে এবং “প্রতিটি কাজকে একটি উৎপাদন নিয়মের সেট হিসেবে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সবচেয়ে বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন এমন নিয়মের একটি সেট হিসেবে বর্ণনা করে, এরপর সেরা মিল খুঁজে পায়” (মা প্রমুখ, ২০১৫, p.৪)।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''" /> ITSs প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজস্ব কাজ নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়, যা বিভিন্ন জ্ঞানের স্তর ও শেখার সক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর হতে পারে। ITSs-এর এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণের সুবিধা শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার নিয়ন্ত্রণ নিতে উৎসাহিত করে, যা আত্ম-প্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে উৎসাহিত করে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''">Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a). Support self-regulated learning. S. Kroop et al. (eds.), Responsive Open Learning Environments, pp. 17- 49. DOI 10.1007/978-3-319-02399-1_2.</ref><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''">Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b). A competence-based service for supporting self-regulated learning in virtual environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), 101–133.</ref> কাউফম্যান, ঝাও ও ইয়াং (২০১১) মা প্রমুখ-এর মতোই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও মেটাকগনিশন উন্নত করার বিষয়ে উপসংহার টানেন।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''">Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011). Effects of online note taking formats and self-monitoring prompts on learning from online text: Using technology to enhance self-regulated learning. Contemporary Educational Psychology 36 (2011) 313–322.</ref> তারা আরও বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষাদানে মাল্টিমিডিয়া ও বিষয়বস্তুর সংগঠনের ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়া যায়। শিক্ষাবিষয়ক ডিজাইনার ও শিক্ষকরা ওয়েব-ভিত্তিক পদ্ধতি ও মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামের মাধ্যমে পাঠ্যবস্তু তৈরি ও বিতরণ করতে পারেন। বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাট শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে, তাদের শেখার আগ্রহ বাড়াতে এবং তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনয় আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করতে সাহায্য করে (কাউফম্যান প্রমুখ, ২০১১)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> অন্যদিকে, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে কাজ সম্পন্ন করতে পারে এবং “তাদের বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাটে পাঠ্যবস্তু দেখার একাধিক বিকল্প প্রদান করা হয়” (কাউফম্যান প্রমুখ, ২০১১, p.৪৩)<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> যা তাদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার সঙ্গে যুক্ত করে। এছাড়াও বিষয়বস্তু তৈরি করার সরঞ্জামগুলো শক্তিশালী শিক্ষণ কৌশল ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মিডিয়া ফরম্যাট ব্যবহার করে পাঠ্যবস্তুর ওপর নিজেদের বোঝাপড়া তুলে ধরতে পারে এবং তাদের শেখার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে পারে (কাউফম্যান প্রমুখ, ২০১১)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সমস্যা === ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্রুতগতিতে বাড়ায়, ফলে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) প্রক্রিয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /><ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়াকে সম্পূর্ণরূপে নিরীক্ষণ করতে পারে না এবং এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন চলাকালে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা বিকাশে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, শিক্ষার্থীরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ হারায় এবং শিক্ষণ চলাকালীন তাদের তথ্য প্রবাহ ভালোভাবে বোঝার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে মৌখিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হয়।<ref name="Azevedo Roger. (2005).''" /> উদাহরণস্বরূপ, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) শেখার কনটেন্ট বিতরণ করে, শেখার প্রক্রিয়া সংগঠিত করে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে একটি ইন্টারফেসের মাধ্যমে। তবে শিক্ষার্থীরা LMS ব্যবহারের সময় তাদের নিজের শেখার প্রক্রিয়ায় প্রকৃত অর্থে কোনও স্বাধীনতা পায় না। বরং শিক্ষকরা তাদের বোঝাপড়া সার্বক্ষণিকভাবে নিরীক্ষণ করেন।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /> <ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /> এর বিপরীতে, পার্সোনাল লার্নিং এনভায়রনমেন্ট (PLE) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পছন্দমতো সেবা বাছাই ও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়, যদিও তারা কনটেন্ট ও শেখার কৌশলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। কিন্তু, PLE-তে কনটেন্ট এবং পদ্ধতির উপযুক্ত নির্দেশনার অভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ কম কার্যকর হয়ে ওঠে<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" />; এর ফলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন দক্ষতাও সীমিত হয়ে পড়ে। === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সুযোগ === যদিও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উদ্বেগ রয়েছে, তথাপি অস্বীকার করা যায় না যে প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জ্ঞান অর্জন ও ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> বিভিন্ন তথ্যসূত্রে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে, সিমাও ও তার সহকর্মীরা (২০০৮) খুঁজে পান যে প্রযুক্তি নতুন উপায়ে শিক্ষণ পরিকল্পনা ও সম্পাদনের সুযোগ দেয়, যা নির্দিষ্ট দক্ষতা বিকাশে সহায়ক হতে পারে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া স্বনিয়ন্ত্রিত করার সক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে তারা নিজেরা নির্ধারিত বা তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে, শিক্ষকদের উচিত এমন সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তৈরি করা যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> অনেক একাডেমিক প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, শিক্ষাগত প্রযুক্তি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /><ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> প্রকৃতপক্ষে, এই নিবন্ধের শেষাংশে কিছু প্রযুক্তির উদাহরণ তুলে ধরা হবে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি। এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেখানো যে, কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে কার্যকর। বিশেষ করে, যখন প্রযুক্তি সচেতনভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ, প্রেরণা এবং অনলাইন শিক্ষায় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> এছাড়াও কিছু গবেষক, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-কে সহায়তা করতে শিক্ষাগত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা জানতে চায়, শিক্ষাগত প্রযুক্তি কি একটি বিকল্প শিক্ষণ কৌশল হিসেবে, নাকি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক হিসেবে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় স্থান পায়? প্রযুক্তি কি শিক্ষক/শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী/শিক্ষার্থী ইন্টারঅ্যাকশন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে? কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিশন, প্রেরণা এবং আচরণ উন্নত করতে পারে যাতে তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধানই নিবন্ধের শেষাংশে প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে, যেমন—বেটি'স ব্রেইন, মেটাটিউটর, এবং এনস্টাডি। এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের শেখার কৌশল নির্বাচন, কৌশলের প্রভাব পর্যবেক্ষণ এবং প্রাপ্ত তথ্য সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়নের সক্ষমতা দেয়, যা মেটাকগনিশন প্রতিফলনে সহায়ক।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> এই অংশে তিনটি বিদ্যমান প্রযুক্তি বর্ণনা করা হবে এবং কিভাবে তা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সমর্থন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, তা ব্যাখ্যা করা হবে। [[চিত্র:Betty's_Brain.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৩. বেটি'স ব্রেইন এর প্রাথমিক ইন্টারফেস]] [[চিত্র:MetaTutor.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৪. মেটাটিউটর ইন্টারফেস]] * '''বেটি'স ব্রেইন''' শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ এবং কৌশল ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য একটি "শিক্ষণযোগ্য এজেন্ট সিস্টেম" হিসেবে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বেটি'স ব্রেইন তৈরি হয়।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> বেটি'স ব্রেইন-এ, শিক্ষার্থীরা প্রথমে বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ে শেখে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> তারপর তারা ধারণামূলক মানচিত্র (কনসেপ্ট ম্যাপ) তৈরি করে এবং সেই মানচিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার এজেন্ট চরিত্র ‘বেটি’ কে শেখায়।<ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).2" /> রোস্কো ও তার সহকর্মীরা (২০১৩) ব্যাখ্যা করেন যে, এই মানচিত্র তৈরি শিক্ষার্থীদের নতুন ও পুরনো জ্ঞান সংহত ও সংগঠিত করতে সহায়তা করে এবং গভীরতর নীতির মধ্যে কিভাবে ধারণাগুলো সংযুক্ত, তা বুঝতে সাহায্য করে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> অন্যকে শেখানোর আগে শিক্ষার্থীদের নিজে শিখতে ও সমস্যার সমাধান করতে হয়। শেখানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বেটি প্রোগ্রাম থেকে প্রতিক্রিয়া পায় এবং এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে জ্ঞান স্থানান্তর করতে উদ্বুদ্ধ হয়, ফলে মেটাকগনিশন ও স্বনিয়ন্ত্রিত চর্চা বৃদ্ধি পায়।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Winne, P.H., Nesbit, J.C., Kumar, V., Hadwin, A.F., Lajoie, S.P., Azevedo, R., & Perry, N.E. (2006).''" /> এইভাবে তারা নিজেদের এবং তাদের এজেন্টের দক্ষতা মূল্যায়ন করতে ও উন্নত করতে সক্ষম হয়। শেষ পর্যন্ত, রোস্কো ও তার সহকর্মীরা (২০১৩) বলেন, শিক্ষার্থীরা “মানচিত্রের ত্রুটি চিহ্নিত ও সংশোধন করতে মেটাকগনিশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সঠিকতা ও পূর্ণতা বৃদ্ধি করতে পারে” (পৃষ্ঠা ২৮৯)।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> * '''আজেভেদো-এর মেটাটিউটর''' খোসরাভিফার ও তার সহকর্মীদের (২০১৩) মতে, মেটাটিউটর হলো গবেষণাভিত্তিক একটি শিক্ষণ টুল যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে তৈরি। বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাকটিভ ও কৌশলগত বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানগত, আবেগীয়, মেটাকগনিশন ও প্রেরণা স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করতে পারে।<ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /> এটি হাইপারমিডিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিজ্ঞান বিষয় শেখাতে তৈরি।<ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> মেটাটিউটর শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সারসংক্ষেপ, নোট নেওয়া ইত্যাদি নিরীক্ষণ, মডেলিং এবং উৎসাহিত করে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''" /><ref name="Zimmerman, B. J. (2008). ''" /> শিক্ষার্থীদের মেটাটিউটর ব্যবহারের আগে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এই হাইপারমিডিয়া পরিবেশে চারজন পেডাগজিক্যাল এজেন্ট থাকে, যারা অংশগ্রহণকারীদের শেখার দক্ষতা গঠনে প্রতিক্রিয়া প্রদান করে, সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে এবং জ্ঞানীয় কৌশল (যেমন—সারাংশ লেখা, নোট গ্রহণ) ব্যবহারে সহায়তা করে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> মেটাটিউটর ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে এবং নিজের পছন্দমতো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> মেটাটিউটর অংশগ্রহণকারীদের সব ধরনের ইন্টারঅ্যাকশন ট্র্যাক করতে এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ একটি লগ ফাইলে রেকর্ড করতে সক্ষম। যখন তথ্যগুলো দেখায় যে একজন শিক্ষার্থী অকার্যকর কৌশল ব্যবহার করছে, তখন মেটাটিউটর-এর এজেন্ট শিক্ষার্থীকে আরও কার্যকর শেখার কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। শিক্ষার্থীরা এই প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করে শেখার পরিবেশে নিজেদের সিদ্ধান্ত ও ফলাফল উন্নত করতে পারে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''2" /> একই সময়ে, শিক্ষকরা মেটাটিউটর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বুঝতে পারেন শিক্ষার্থীরা কীভাবে মেটাটিউটর-এর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করছে এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /> যদিও মেটাটিউটর-এর পেডাগোজিকাল এজেন্টগুলো শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শেখার অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা এখনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কার্যকর কৌশল প্রদান করে, যা শেখার পরিকল্পনা ও তদারকিতে সহায়তা করে। [[চিত্র:NStudy.jpg|থাম্ব|355x355পিক্সেল|চিত্র ১৫: এনস্টাডি ব্রাউজার, উদ্ধৃতির তালিকা, এবং সংযুক্ত করার টুলসমূহ]] * '''এনস্টাডি''' প্রফেসর উইনে ও তার গবেষণা দল এনস্টাডি নামক একটি ওয়েবভিত্তিক শেখার টুল তৈরি করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান, নজরদারি, সংগঠন, অনুশীলন ও অনুবাদ করার জন্য সহায়তা করে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> এই ডিজাইনটি এমনভাবে তৈরি যাতে শিক্ষার্থী ও গবেষক উভয়েই ওয়েবভিত্তিক পরিবেশে সক্রিয়ভাবে শেখা ও গবেষণায় অংশ নিতে পারেন। এনস্টাডি-তে তারা শেখার উপাদান তৈরি, সম্পাদনা ও সংযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের মতো করে সংগঠিত করতে পারে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> বেটি'স ব্রেইন-এর মতো, তারা ধারণার ম্যাপও তৈরি করতে পারে এবং সেগুলো সংযুক্ত, গুচ্ছিত ও স্থানীয়ভাবে সাজিয়ে নিতে পারে। এই সংযুক্তি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত শেখার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং তথ্য বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের ইন্টারঅ্যাকশন, ব্যাখ্যা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে।<ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> এনস্টাডি একক ও দলগত শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি ওয়ার্কস্পেস তৈরি করে যেখানে তারা তথ্য আদান-প্রদান, সহযোগিতা এবং বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে পারে, যা তাদের সম্মিলিত শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> তাছাড়া, ওয়ার্কস্পেস জুড়ে তথ্য আদান-প্রদান “ভূমিকা ও প্রম্পটের মাধ্যমে কাঠামোবদ্ধ হতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ, একে অপরের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয়” (উইন ও হ্যাডউইন, ২০১৩, পৃ. ৩০২)। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা যখন এনস্টাডি টুল ব্যবহার করে শেখে বা গবেষণা করে, তখন সিস্টেম ট্রেস ডেটা সংগ্রহ করে যা আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার সময় ঘটে যাওয়া নির্দিষ্ট জ্ঞানীয় ও অধিজ্ঞানীয় ঘটনাকে প্রতিফলিত করতে পারে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সহজতর ও উৎসাহ প্রদান == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীদের তাদের চিন্তা, আচরণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা সফলভাবে শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিজে নিজেই পরিকল্পনা, তদারকি ও মূল্যায়ন করতে হয়। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মোটিভেশন ও সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা কতটা নিজেদের চিন্তা, মোটিভেশন ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা বোঝায়। বাস্তবে, স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন শেখার প্রক্রিয়ার সক্রিয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। <ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সামাজিক নয়, তবে তার বিকাশ সামাজিক পরিবেশে ঘটে যা কাঠামো ও স্বাধীনতার সুযোগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> গবেষণায় দেখা গেছে স্ব-নিয়ন্ত্রণ শেখানো যায় এবং এটি শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন ও অর্জন বৃদ্ধি করতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষক, কোচ ও সহপাঠীদের নির্দেশনা ও মডেলিং এর মাধ্যমে প্রতিটি স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া শেখা যায়।<ref name="Zimmerman20025" /> পাশাপাশি, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে পারে। <ref name="Dignath, C., & Büttner, G. (2008).”" /><ref name="Masui, C., & De Corte, E. (2005).”" /><ref name="Perels, F., Gürtler, T., & Schmitz, B. (2005).”" /><ref name="Schunk, D. H., & Ertmer, P. A. (2000).”" /> উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা মনিটরিং ও অনুকরণের মাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন দক্ষতা শিখেছিল, তারা যারা এসব প্রশিক্ষণ পায়নি তাদের তুলনায় বেশি আত্মবিশ্বাসী ও ফলপ্রসূ ছিল। <ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”" /> তাই শিক্ষার্থীদের পুরো স্কুলজীবন জুড়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চর্চা করা উচিত এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব তাদের এই আচরণ গঠনে সহায়তা করা। <ref name="Waeytens, K., Lens, W., & Vandenberghe, R. (2002). ”" /> যখন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আরও স্বনিয়ন্ত্রিত হতে শেখান, তখন তারা একাডেমিক সাফল্য, মোটিভেশন এবং জীবনব্যাপী শেখার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। <ref name="Graham, S., & Harris, K.R. (2005).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এমন স্বনিয়ন্ত্রিত শেখায় সক্ষম করতে পারেন যাতে তারা পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ, শেখার অগ্রগতি তদারকি এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার লক্ষ্যে নিজেদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে পারে। শিক্ষকরা সরাসরি শেখার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে অথবা পরোক্ষভাবে এমন শেখার পরিবেশ তৈরি করে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নীত করতে পারেন। <ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”" /> === স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার বিকাশ === জিমারম্যান (২০০২) অনুসারে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াটি তিনটি স্পষ্ট ধাপে বিভক্ত: ''অগ্রচিন্তা ও পরিকল্পনা ধাপ'': শেখার কাজ বিশ্লেষণ এবং সেই কাজ শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই ধাপে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কার্যকর পদ্ধতির নির্দেশনা দেন, কাঠামোবদ্ধ ও সুস্পষ্ট শিক্ষা প্রদান করেন, কৌশলগুলোর মডেল দেখান এবং কৌশলটি অন্য অনুরূপ কাজে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /><ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”" /> ''পারফরম্যান্স তদারকি ধাপ'': শেখার কাজ এগিয়ে নিতে কৌশল ব্যবহার, কৌশলের কার্যকারিতা তদারকি এবং শেখার প্রতি মোটিভেশন পর্যবেক্ষণ করা হয়। শিক্ষকরা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন, যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন কৌশল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। যখন শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে শিখে যায়, তখন শিক্ষকরা ধীরে ধীরে নির্দেশনা কমিয়ে গাইডের ভূমিকা পালন করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> ''পারফরম্যান্সের প্রতিফলন ধাপ'': শেখার কাজের উপর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এবং ফলাফলের প্রতি আবেগগত প্রতিক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। শিক্ষকরা সহপাঠী মূল্যায়ন ও প্রতিফলন উৎসাহিত করে, মূল্যায়ন সহজতর করে এবং সবকিছু শেখার লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রাখেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময় কী কাজ করেছে তা শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন, তাদের আত্মবিশ্বাস ও মোটিভেশন বাড়ান এবং কার্যকর কৌশল ব্যবহারের জন্য প্রশংসা প্রদান করেন। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> [[চিত্র:The_Cycle_of_SRL.png|থাম্ব|483x483পিক্সেল|চিত্র ১৬: স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চক্র]] স্ব-নিয়ন্ত্রিত দক্ষতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হয় না। এই দক্ষতার বিকাশ চারটি ধাপে ঘটে: পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ, স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ। পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে সফল পারফরম্যান্সের একটি ধারণা পায়। এটি তাদের সাধারণ পারফরম্যান্স মানদণ্ড গড়ে তুলতে এবং দক্ষতা অর্জনের সময় মোটিভেশন নিয়ন্ত্রণের কৌশল বুঝতে সহায়তা করে। অনুকরণের পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একটি সাধারণ কৌশল ব্যবহার করে পারফর্ম করে এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া ও নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের পারফরম্যান্সের যথার্থতা উন্নত হয়। তদ্ব্যতীত, সামাজিক উৎসাহ যেমন প্রশংসা বা উত্সাহও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে সহায়তা করে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণের স্তরটি কাঠামোবদ্ধ অনুশীলন এবং আত্ম-পর্যবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নিয়মিত পরিবেশে একটি দক্ষতা অনুশীলন করে। তারা কোনো মডেলের পারফরম্যান্সের দিকে নজর দিতে পারে এবং সেটিকে অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণ করতে পারে, এবং তাদের উচিত ফলাফলের পরিবর্তে প্রক্রিয়ার উপর জোর দেওয়া। স্ব-নিয়ন্ত্রিত স্তরের দক্ষতাগুলো অনিয়মিত পরিবেশে সম্পাদিত হয়। শিক্ষার্থীদের উচিত শুধুমাত্র শিখিত দক্ষতার অনুশীলনের পরিবর্তে পারফরম্যান্সের গুণমান ও কার্যকারিতার উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আনা। তারা স্বতন্ত্রভাবে দক্ষতা সম্পাদন করতে পারে, তবে মাঝে মাঝে সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”">Zimmerman, B. J. (2000). Self-efficacy: An essential motive to learn. Contemporary educational psychology, 25(1), 82-91.</ref> ফিগার ১৬-তে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের চক্র চিত্রিত হয়েছে। === শিক্ষার্থীদের জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলসমূহ === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের ধরনসমূহ''' চার ধরনের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল রয়েছে যা শিক্ষাকে সহায়তা করতে পারে<ref name="de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013).”">de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013). Effective strategies for self-regulated learning: A meta-analysis. GION/RUG.</ref><ref name="Kobayashi, M. (2006).”">Kobayashi, M. (2006). Facilitating Academic Achievement in High School Interactive Television Programs by Promoting Self-Regulated Learning (Doctoral dissertation, Virginia Polytechnic Institute and State University).</ref>: ** কগনিটিভ কৌশল**: পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, বিস্তার ও উপকরণের রূপান্তর বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। বিস্তার শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্য পূর্ব জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে; কল্পনা মানসিক চিত্রকে বোঝায় যা মেমোরি শক্তিশালী করে; পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের কার্যস্মৃতিতে তথ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে; রূপান্তর ও সংগঠনের কৌশলের মধ্যে সারসংক্ষেপ, রূপরেখা তৈরি, নোট নেওয়া বা উপকরণ পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত। ** মেটাকগনিটিভ কৌশল**: পরিকল্পনা, আত্ম-সচেতনতা, পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়ন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার কৌশল হলো কাজ বিশ্লেষণ ও লক্ষ্য নির্ধারণ। সাধারণ পর্যবেক্ষণের কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্ম-রেকর্ডিং ও আত্ম-পরীক্ষা।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> আত্ম-পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের সাথে সম্পর্কিত। আত্ম-নির্দেশনা ও মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ কৌশল মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আত্ম-নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের কাজের প্রতি মনোযোগী করে এবং উপকরণ মনে রাখার দক্ষতা বাড়ায়। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ বিঘ্ন অপসারণ করে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। ** পরিচালনাগত কৌশল**: শেখার সর্বোত্তম পরিবেশ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা ও সহায়তা চাওয়া অন্তর্ভুক্ত। আত্ম-রেকর্ডিং সাধারণত সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় উৎসাহ দেওয়া তাদের সহায়তা চাওয়ার আচরণ বৃদ্ধি করে। শ্রেণিকক্ষের কাঠামো, প্রতিক্রিয়া ও যোগাযোগের ধরণও সহায়তা চাওয়ার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। ** প্রেরণাগত কৌশল**: শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য তাদের অনুপ্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে শেখার উদ্দেশ্য নির্ধারণ, যা লক্ষ্যভিত্তিক মনোভাব গঠন করে; ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ, যা আত্ম-দক্ষতা বাড়ায়; উপকরণকে আকর্ষণীয় বা চ্যালেঞ্জিং করে আগ্রহ সৃষ্টি; এবং আত্ম-উৎসাহমূলক কথাবার্তা। ** সারণী ১: কৌশলের ধরনসমূহ** {| class="wikitable" |'''কৌশলের ধরন''' |'''বর্ণনা''' |'''উদাহরণ''' |- |কগনিটিভ কৌশল |বিষয়বস্তুর সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কৌশল। |পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, উপকরণ সংগঠন |- |মেটাকগনিটিভ কৌশল |শেখা সংগঠিত, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের কৌশল। |কাজ বিশ্লেষণ, আত্ম-রেকর্ডিং, আত্ম-পরীক্ষা |- |পরিচালনাগত কৌশল |শেখার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কৌশল। |সময় ব্যবস্থাপনা, সহায়তা চাওয়া |- |প্রেরণাগত কৌশল |অনুপ্রেরণা উন্নয়ন ও টিকিয়ে রাখার কৌশল। |লক্ষ্য নির্ধারণ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি |} '''শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল শেখানো – স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থী তৈরি করা''' শিক্ষকদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার সহায়ক স্ব-নিয়ন্ত্রিত কৌশল শেখাতে হবে। সবচেয়ে কার্যকর ও প্রচলিত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে: লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-প্রেরণা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ, শেখার কৌশলের নমনীয় ব্যবহার, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, উপযুক্ত সহায়তা চাওয়া এবং আত্ম-মূল্যায়ন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** লক্ষ্য নির্ধারণ:** ব্যক্তিগত লক্ষ্য স্থাপন শিক্ষার্থীদের এমন বাস্তবিক ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে যা শেখার উন্নতিতে কাজে আসে। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক। কাছাকাছি লক্ষ্য আত্ম-দক্ষতা ও দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণে উৎসাহিত করতে পারেন যাতে তারা অগ্রগতি অনুসরণ করতে পারে, কী শিখবে তা ভেবে নিতে পারে। ** পরিকল্পনা:** পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত হয়। লক্ষ্য পূরণে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরিকল্পনা করছে, তা আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রক্রিয়াটির ধাপগুলো মনে রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে পারে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-প্রেরণা:** কাজ বেছে নেওয়া, প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায় শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণার ওপর নির্ভরশীল। উচ্চ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা মেটাকগনিটিভ কৌশল বেশি ব্যবহার করে। স্বাধীনতা, দক্ষতা এবং কাজের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি বাড়ালে আত্ম-প্রেরণা বাড়ে। ** মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ:** স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থীদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হতে হয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে বিরতি ও বিঘ্ন অপসারণের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** কৌশলের নমনীয় ব্যবহার:** সফল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একাধিক কৌশল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। শিক্ষকরা নতুন কৌশল মডেলিং করে, শ্রেণিকক্ষকে সমর্থনময় করে এবং অনুশীলনের সময় সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-পর্যবেক্ষণ:** কৌশলগত শিক্ষার্থীরা নিজের শেখার দায়িত্ব নেয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময়, ব্যবহৃত কৌশল এবং ব্যয়িত সময় রেকর্ড করতে উৎসাহিত করতে পারেন, যা তাদের অগ্রগতি দৃশ্যমান করে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** সহায়তা চাওয়া:** স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থীরা প্রয়োজনে অন্যদের সহায়তা চায়। শ্রেণিকক্ষে গঠনমূলক পরিবেশ থাকলে শিক্ষার্থীরা সংকোচ ছাড়াই সাহায্য চাইতে পারে। শিক্ষকরা প্রতিক্রিয়া ও সংশোধনের সুযোগ দিয়ে ইতিবাচক সহায়তা চাওয়ার আচরণ উৎসাহিত করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-মূল্যায়ন:** শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য ও কৌশল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এর মধ্যে চেকলিস্ট ব্যবহার, শেখার বিষয় সারসংক্ষেপ, আত্ম-প্রশ্ন তৈরি ও উত্তর দেওয়া এবং সহপাঠীদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া অন্তর্ভুক্ত।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> [[চিত্র:Actions_SRL.png|কেন্দ্র|থাম্ব|483x483পিক্সেল|ফিগার ১৭: স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর দিকসমূহ – ধারণা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম]] === শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা উৎসাহিত করা === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য শিক্ষণ কৌশল''' শিক্ষকদের শিক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা উন্নত করতে পারে। কোবায়াশি (২০০৬)<ref name="Kobayashi, M. (2006).”" /> চারটি নীতির কথা বলেছেন যা শিক্ষকরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবহার করতে পারেন: কার্যকর শেখার পরিবেশ তৈরিতে শিক্ষার্থীদের গাইড করা; জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখতে পাঠ ও কার্যক্রম সাজানো; শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে লক্ষ্য ও প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করা; এবং ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নের তথ্য ও আত্ম-মূল্যায়নের সুযোগ প্রদান। '''সরাসরি নির্দেশনা ও মডেলিং''' বিভিন্ন শেখার কৌশলের ব্যবহার শিক্ষার্থীদের শেখা সহজ করতে সাহায্য করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর সরাসরি নির্দেশনার মধ্যে বিভিন্ন কৌশল ব্যাখ্যা, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখানো অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের নির্দেশনা মডেলিং ও প্রদর্শনের উপর জোর দেয় যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> শিক্ষকেরা একটি কৌশল প্রয়োগ করে ও চিন্তার ধারা প্রকাশ করে মডেল হতে পারেন বা শিক্ষার্থীদের কৌশলগত আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশ্ন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভাষার ক্লাসে শিক্ষকরা পর্দায় একটি পাঠ্য দেখিয়ে পড়তে পড়তে ভাব প্রকাশ করতে পারেন: “এটা কি বোঝা যাচ্ছে? মূল ভাবটা কী? মনে হচ্ছে আবার শুরু থেকে পড়া উচিত যাতে ভালোভাবে বুঝতে পারি।” একইভাবে, শিক্ষকরা বোর্ডে লেখার সময় ভাব প্রকাশ করে লেখালেখির প্রক্রিয়া দেখাতে পারেন। যেমন: “আমি কি আমার ভাব স্পষ্ট করছি? পাঠকেরা কি বুঝবে আমি কী বলতে চাই? আমি কি আমার পরিকল্পনা অনুসরণ করছি?” শিক্ষার্থীরা তখন প্রধান ভাব, প্রশ্ন ও নিজস্ব মতামত নোট করে বুঝতে পারে। এছাড়া, শিক্ষকরা কোনো কৌশল ব্যাখ্যা করে, তার উপযোগিতা বলেও শেখাতে পারেন।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”2" /> প্রাথমিক শ্রেণিতে, শিক্ষকরা সংলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশে উৎসাহ দিতে পারেন, যেমন “তোমার কী মনে হয়?”, “তুমি কেন তা ভাবছো?” শিক্ষকরা যৌথ অর্থ তৈরির জন্য সহযোগী দক্ষতা ও যোগাযোগমূলক আচরণ শেখাতে পারেন।<ref name="Pino(2014).">Pino-Pasternak, D., Basilio, M., & Whitebread, D. (2014). Interventions and classroom contexts that promote self-regulated learning: Two intervention studies in United Kingdom primary classrooms. Psykhe, 23(2).</ref> * নির্দেশিত ও স্বতন্ত্র অনুশীলন নির্দেশিত অনুশীলন হলো এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) ও অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারেন। এই পর্যায়ে, শেখার কৌশল প্রয়োগের দায়িত্ব ধীরে ধীরে শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের উপর সরে আসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্মেলন (student-teacher conferencing) এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশল ব্যবহারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা পেতে পারে। নির্দেশিত অনুশীলনের পর স্বতন্ত্র অনুশীলন হওয়া উচিত। এই পর্যায়ে, শিক্ষার্থীদের নিজেরাই কৌশল অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের স্বায়ত্তশাসনের বোধকে জোরদার করতে সহায়তা করে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের আত্ম-প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা, যা শেখার সময় তাদের দক্ষতা পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও কার্যকারিতা সমন্বয় করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> এই কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে উন্মুক্ত প্রশ্ন করা, শিক্ষার্থীদের প্রতিফলন প্রদান বাধ্যতামূলক করা, শেখার বিষয়বস্তুর মূল বিষয়গুলো সারাংশ আকারে তুলে ধরা এবং তাদের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা ও উত্তর দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> উদাহরণস্বরূপ, ভাষা শ্রেণিতে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এবং পাঠ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়া বইয়ের শিরোনাম লিপিবদ্ধ করতে, পড়ার লগে সময় ও পৃষ্ঠা সংখ্যা রেকর্ড ও গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করতে, বই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ স্তর ধাপে ধাপে বাড়ানোর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, এবং সাপ্তাহিক প্রতিফলন লিখতে বলতেই পারেন। শিক্ষকদের উচিত বিভিন্ন ধরনের শেখার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কার্যকর কৌশল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা। এটি কৌশলের সাধারণীকরণ ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, শিক্ষার্থীদের অনুশীলন, আত্ম-পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের পদ্ধতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং নতুন কৌশলের গঠন ও সংশোধনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।<ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”2" /> * সামাজিক সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া শিক্ষক ও সহপাঠীদের সামাজিক সহায়তা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রণমূলক শিখন দক্ষতা অর্জনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায়শই এই সহায়তা প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে আসে। লাবুন ও তার সহকর্মীদের (২০১০)<ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”2" /> গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল, তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল আরও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছিল এবং গণিতে ভালো ফল করেছিল। কার্যকর প্রতিক্রিয়ার মধ্যে থাকে কী ভালো হয়েছে, কী উন্নতির প্রয়োজন এবং কীভাবে আরও উন্নতি করা যায় তার নির্দেশনা। শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য, মানদণ্ড ও মান সংক্রান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন গঠন ও মূল্যায়নে সহায়তা করে।<ref name="Omorogiuwa, K. O. (2012).”" /> শিক্ষকদের উচিত ফর্মেটিভ মূল্যায়ন প্রদান করা, যা কেবল শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি দেখায় না বরং তাদেরকে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া গঠন ও নিজস্ব অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।<ref name="Encouraging self-regulated learning in the classroom. (n. d.).”" /> নিকোল ও ম্যাকফারলেন-ডিক (২০০৬)<ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”2" /> মতে, কার্যকর প্রতিক্রিয়ার উচিত: ভাল পারফরম্যান্স কী তা পরিষ্কার করা; আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা তৈরি করা; শেখা সম্পর্কে উচ্চমানের তথ্য প্রদান করা; শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে শেখা সম্পর্কিত আলোচনা উৎসাহিত করা; ইতিবাচক প্রেরণা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা; বর্তমান ও কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্সের ব্যবধান দূর করার সুযোগ প্রদান করা; এবং শিক্ষকদের জন্য এমন তথ্য প্রদান করা যা পাঠদানের কৌশল উন্নয়নে ব্যবহৃত হতে পারে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখেন, যা তাদের সফলতার কারণ ও প্রেরণার সাথে সম্পর্কিত একটি মেটা-জ্ঞাতিগ্রাহী দক্ষতা।<ref name="Pino(2014).2" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে একত্রে বাস্তব ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ, সেই লক্ষ্যগুলোর ব্যাখ্যা ও মডেলিং, এবং শিক্ষার্থীর স্তরের সাথে মিল রেখে প্রশ্নের ধরণ সমন্বয় করতে পারেন।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিবাচক শেখার পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উচ্চশিক্ষায়, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নের জন্য কোর্স ওয়েবসাইটে একটি ইন্টার‌্যাক্টিভ ফোরাম চালু করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে, ফলে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষা গড়ে ওঠে।<ref name="Ogawa, A. (2011).”" /> * অন্যান্য পাঠদানের কৌশল আত্ম-পর্যবেক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উপায়। নিজের ভুল লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং যথাযথ কৌশল তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারে। গ্রাফ তৈরি করার কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার উপর নিয়ন্ত্রণের ধারণা গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রেড একটি গ্রাফে প্রদর্শন করতে পারে এবং সেই গ্রেড অর্জনে তারা যেসব কৌশল ব্যবহার করেছে তা লিখে রাখলে, কৌশল ও ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট হয়।<ref name="Cleary, T. J., & Zimmerman, B. J. (2004).”" /> পর্যবেক্ষণমূলক অনুশীলন শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠদান কৌশল পরিবর্তন ও মানিয়ে নেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষণ কৌশল কতটা কার্যকর হয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ফলাফল অনুসারে আরও অর্থবহ শিক্ষার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”3" /> '''আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখনকে সহায়ক শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ''' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো একটি সহায়ক শেখার পরিবেশ তৈরি করা। এটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য, শেখার বিষয়বস্তু ও কাজ এবং পাঠদানের কৌশল দ্বারা গঠিত। উপযুক্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ধারিতভাবে শেখার জন্য সহায়তা ও উৎসাহ দিতে পারে।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”3" /> Young (২০০৫)<ref name="Young, M. R. (2005).”" /> নিম্নলিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন: দক্ষতা ও কাজ-কেন্দ্রিক মনোভাব গঠনের জন্য ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বায়ত্তশাসন উন্নয়নে কাজের পছন্দের সুযোগ প্রদান, শেখার মধ্যে সামাজিক সংযোগ উৎসাহিত করা এবং শেখার ফলাফলের উপর প্রতিক্রিয়া প্রদান। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়ার ধরন তাদের প্রেরণাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কাজের স্বাধীনতা ও তথ্যভিত্তিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাকে সর্বাধিকভাবে বাড়ায়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ঘন ঘন নির্দিষ্ট ও গুণগত প্রতিক্রিয়া প্রদান করা উচিত। শিক্ষার্থীরা আরও চ্যালেঞ্জিং কাজ গ্রহণে আগ্রহী হয় যখন শিক্ষকরা গ্রেডের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। অর্থবহ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, কাজের পছন্দের স্বাধীনতা ও দলগত সহযোগিতা শিক্ষার্থীদের আত্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> শিক্ষকদের উচিত উদারতা ও মতভেদের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যাতে সাহায্য চাওয়া, সাহায্য প্রদান ও ভিন্নমতের আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়। এর মধ্যে রয়েছে চ্যালেঞ্জিং কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা, ভুলকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা, শেখার সাথে যুক্ত নেতিবাচক আবেগকে স্বীকৃতি ও সমাধান দেওয়া এবং অসহায়ত্বজনিত বিশ্বাসগুলো কাটিয়ে ওঠার উপায় শেখানো।<ref name="Pino(2014).2" /> '''শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিকাশে সহায়ক কার্যক্রম''' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যবহার করা যেতে পারে। জটিল দলগত কাজ শিক্ষার্থীদের নিজের ও অন্যের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে। এটি পরিকল্পনা, ধারণা গঠন, লক্ষ্য অনুযায়ী অগ্রগতি পর্যালোচনা ও দলগত অবদানের ভিত্তিতে বোঝাপড়া পুনর্গঠনে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীর আগ্রহ, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব প্রয়োগ সংবলিত অর্থবহ কার্যক্রম প্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নে সহায়ক। এমন কার্যক্রম যেগুলোর জ্ঞানীয় চাহিদা শিক্ষার্থীর নিকটবর্তী উন্নয়ন অঞ্চলের সাথে মেলে, সেগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর সাথে জড়িত। বহুমাত্রিক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সুযোগ দেয়। প্রাথমিক শ্রেণিতে আনন্দময় কার্যক্রম স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অনুশীলনের আকর্ষণীয় উপায় হতে পারে।<ref name="Pino(2014).2" /> প্যারিস ও তার সহকর্মীরা (২০০১)<ref name="Paris, S. G., & Paris, A. H. (2001).”" /> শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের চারটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন: আত্ম-মূল্যায়নের মাধ্যমে শেখার গভীরতা অর্জন; চিন্তা, প্রচেষ্টা ও আবেগের আত্ম-ব্যবস্থাপনা; বিভিন্ন উপায়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা প্রদান; এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত আত্মনিয়ন্ত্রণ। শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকরা দলগত বা জোড়ায় কাজ, উন্মুক্ত আলোচনা, শেখার পূর্ব ও পরবর্তী অনুশীলন, এবং ক্লাস শেষে প্রতিফলনের সুযোগ দিতে পারেন।<ref name="Ferreira, P. C., & Simão, A. M. V. (2012).”" /> এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রেরণা ও শেখার কৌশল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে শিখন প্রশ্নাবলীর জন্য অনুপ্রাণিত কৌশল (MSLQ) বা শিখন ও অধ্যয়ন কৌশল তালিকা (LASSI) ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref name="Kuo, Y. H. (2010).”" /> নিচে কিছু কার্যকর কার্যক্রমের উদাহরণ দেওয়া হলো যেগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধিতে সহায়ক: “থিঙ্ক-পেয়ার-শেয়ার” কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে, একসাথে আলোচনা করে এবং পুরো শ্রেণিতে তা ভাগ করে; “পুনরুদ্ধার অনুশীলন” কার্যক্রম আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী শেখাকে উৎসাহিত করে; “বাছাই-বিভাজন-সংগঠনের তথ্য” তথ্য শ্রেণিবিন্যাস করে বোঝাপড়া উন্নত করে; “পঠন প্রতিফলন” আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিফলনমূলক চিন্তনে সহায়তা করে; “পরীক্ষার মোড়ক” কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে চিন্তা ও মূল্যায়নের সুযোগ দেয়।<ref name="Activities that develop self-regulated learning. (n. d.).”" /> = শব্দকোষ = '''অ্যাকশন কন্ট্রোল:''' ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা (উদাঃ অনুপ্রেরণা, ঘনত্ব) যা কোনও ব্যক্তিকে স্ব-নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। '''কগনিটিভ মডেলিং:''' শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা বিকাশের পদ্ধতি যার মধ্যে পারফরম্যান্সের জন্য যুক্তি দেওয়া, কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা জড়িত। '''কগনিটিভ প্রসেসিং:''' একটি শব্দ যা চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞান প্রয়োগ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। '''সহযোগী শিক্ষা''': সহকর্মী / গোষ্ঠীর মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং শেখা। '''ক্রিটিক্যাল থিংকিং:''' তথ্য ওজন, মূল্যায়ন এবং বোঝার সমন্বয়ে একটি প্রতিফলিত চিন্তাভাবনা। '''পূর্বচিন্তা পর্ব:''' শেখার আগে কৌশল নিচ্ছে। স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। '''মেটাকগনিশন:''' ভাবনা নিয়ে ভাবনা। নিজের চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝাপড়া। '''মেটাকগনিটিভ নলেজ:''' ঘোষণামূলক জ্ঞান যেমন ভাষা এবং স্মৃতি। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' কোনও কাজ জুড়ে আসা এবং এর সাথে সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়া করার সময় ব্যক্তিটি কী সচেতন এবং সে কী অনুভব করে। '''মেটাকগনিটিভ দক্ষতা:''' জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগুলোর ইচ্ছাকৃত ব্যবহার (অর্থাত্ পদ্ধতিগত জ্ঞান)। '''অনুপ্রেরণা:'''আচরণ এবং চিন্তাভাবনা যা ব্যক্তিদের সম্পাদন করতে চালিত করে। '''পারফরম্যান্স পর্ব:''' শেখার সময় কৌশল গ্রহণ করা হয়। কৌশল বাস্তবায়ন, এবং কৌশল পর্যবেক্ষণ। '''এনগেজমেন্টের উদ্দেশ্য:'''স্ব-প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ক্রিয়াগুলো যা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক। '''আপেক্ষিকতাবাদী:''' জ্ঞান নমনীয় এবং পরিবর্তনযোগ্য। প্রশ্ন তোলা যায়। '''স্ব-কার্যকারিতা:''' ব্যক্তি কীভাবে নিজের ক্ষমতা এবং অনুভূত ক্ষমতা থেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাসের স্তরটি উপলব্ধি করে '''আত্ম-মূল্যায়ন:''' একটি মান অনুযায়ী নিজেকে মূল্যায়ন করা '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত কর্ম:''' যে উপায়ে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হয়। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন:'''কারও শেখার সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্টভাবে বোঝার ক্ষমতা। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত পর্ব:''' শেখার পর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। মূল্যায়ন। == তথ্যসূত্র == {{সূত্র তালিকা}} 5ojznpzvcudnkcqzjqf41p279spdkbm নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/বাস্তবায়ন 0 26210 84891 81615 2025-06-19T06:14:23Z RDasgupta2020 8748 84891 wikitext text/x-wiki {{Control Systems/Page|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/MIMO সিস্টেম| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/গেইন}} ==বাস্তবায়ন== কোন সিস্টেমের গাণিতিক মডেলের নিরিখে (সেটি হয়তো ল্যাপ্লেস মডেল অথবা স্টেট স্পেস মডেল) একটি বাস্তব ভৌত ব্যাবস্থা বা সিস্টেম প্রস্তুতকরনের প্রক্রিয়াই হল '''বাস্তবায়বন''' বা '''রিয়ালাইজেশন'''। তবে সমস্ত সিস্টেম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ মাথায় রাখা উচিত যে, সিস্টেমের গাণিতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ল্যাপ্লেস ডোমেইন (ল্যাপ্লেস ক্ষেত্র) উপস্থাপনা এবং স্টেট স্পেস ডোমেইন (স্টেট স্পেস ক্ষেত্র) উপস্থাপনা একে অপরের সমতুল্য এবং উভয় ব্যাবস্থার মাধ্যমেই কোন ভৌত ব্যাবস্থা বা সিস্টেমকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং তার গাণিতিক বিশ্লেষণ করা হয়। তাই আমাদের এমন একটি উপায় প্রয়োজন যার মাধ্যমে আমরা এই দুই ধরনের গাণিতিক মডেলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি, কারণ সিস্টেমের নির্দিষ্ট বিশ্লেষণ পদ্ধতির জন্য প্রতিটি গাণিতিক মডেলই উপযোগী। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি সিস্টেমের নকশা থেকে আমরা বাস্তবে একটি সিস্টেম নির্মাণের পর্যায়ে পৌঁছেছি তখন সেক্ষেত্র স্টেট-স্পেস গাণিতিক মডেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। এই কারণেই, সিস্টেমের ল্যাপ্লেস উপস্থাপনাকে স্টেট-স্পেস উপস্থাপনায় রূপান্তর করার প্রক্রিয়াটি জানা জরুরী এবং সেই প্রক্রিয়াকেই বাস্তবায়ন বা রিয়ালাইজেশন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ==বাস্তবায়নের শর্ত== {{SideBox|'''মন্তব্য:'''<br>এই শর্তগুলির মাধ্যনে বিচ্ছিন্ন-সময় (ডিসক্রিট) নির্ভরশীল সমস্ত সিস্টেম ''G(z)'' -এর বাস্তবায়নযোগ্যতা বিচার করা যায়}} *ধরা যাক কোন সিস্টেমের গাণিতিক মডেল থেকে বিশ্লেষিত একটি ট্রান্সফার ফাংশন হল ''G(s)''। এবার এই সিস্টেমটি তখনই বাস্তবায়নযোগ্য, যখন সিস্টেমটিকে শুধুমাত্র একটি সীমাবদ্ধ মাত্রার স্টেট-স্পেস সমীকরণ বা অবস্থান সমীকরনের মাধ্যমেই বর্ণনা করা যাবে। *''(A B C D)'', হল চারটি ম্যাট্রিক্সের একটি নির্দিষ্ট অনুক্রমিক সেট। এই ম্যাট্রিক্রসে অনুক্রমিক সেটের মাধ্যমে ''G(s)'' ট্রান্সফার ফাংশন সম্পন্ন একটি সিস্টেমের বাস্তবায়নযোগ্যতা বিচার করা যেতে পারে। যদি কোনো সিস্টেমকে এইরূপ একটি অনুক্রমিক ম্যাট্রিক্সের সেট হিসাবে প্রকাশ করা যায়, তাহলে একমাত্র তখনই সেই সিস্টেমকে বাস্তবায়নযোগ্য বলা যেতে পারে। *কোনো সিস্টেম ''G'' তখনই বাস্তবায়নযোগ্য, যদি তার ট্রান্সফার ফাংশন '''G'''(s) একটি সুসংগত মূলদ(রেশিওনাল) ফাংশন হয়—অর্থাৎ, '''G'''(s) -এর গুণকের তুলনায় লঘুগণের ক্রম (ডিগ্রি) সমান বা বেশি হতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই ''সিসো'' (সিংগল ইনপুট-সিংগল আউটপুট, অর্থাৎ একটিমাত্র ইনপুট বা নিবেশ মানের জন্য একটি ফলাফল বা আউটপুট) সিস্টেম বাস্তবায়নের পদ্ধতিটি আলোচনা করেছি, এই অধ্যায়ের বাকি অংশে ''মিমো'' (মাল্টিপল ইনপুট-মাল্টিপল আউটপুট, অর্থাৎ একাধিক ইনপুট বা নিবেশ মানের জন্য একাধিক ফলাফল বা আউটপুট) সিস্টেম বাস্তবায়নের সাধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ==ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্স বাস্তবায়ন== আমরা একটি ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্স '''G'''(s) -কে একটি ''কঠোরভাবে সুসংগত'' ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে নিম্নরূপে প্রকাশ করতে পারি; :<math>\mathbf{G}(s) = \mathbf{G}(\infty) + \mathbf{G}_{sp}(s)</math> এখানে G<sub>sp</sub>(s) একটি কঠোর সুসংগত ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্স। আমরা এই মান ব্যাবহার করে ''D'' ম্যাট্রিক্সের মান গননা করতে পারি: :<math>D = \mathbf{G}(\infty)</math> এখন আমরা ''d(s)''-কে '''G'''(s) ট্রান্সফার ফাংশনের সর্বনিম্ন সাধারণ হরের বহুপদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি, {{SideBox|মনে রাখবেন, ''q'' হল সিস্টেমের ইনপুট সংখ্যা, ''p'' হল সিস্টেমের অন্তরবর্তী দশার সংখ্যা এবং ''r'' হল সিস্টেমের আউটপুটের সংখ্যা}} :<math>d(s) = s^r + a_1s^{r-1} + \cdots + a_{r-1}s + a_r</math> তাহলে আমরা'''G'''<sub>sp</sub> -কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি: :<math>\mathbf{G}_{sp}(s) = \frac{1}{d(s)}N(s)</math> যেখানে, :<math>N(s) = N_1s^{r-1} + \cdots + N_{r-1}s + N_r</math> এবং ''N<sub>i</sub>'' হল ''p &times; q'' ধ্রুবক ম্যাট্রিক্স যদি আমরা একটি ট্রান্সফার ফাংশনকে অবস্থান সমীকরণ বা স্টেট-স্পেস সমীকরণে রূপান্তর করার গাণিতিক পদ্ধতি মনে রাখি, তাহলে আমরা সেই একই সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি, কেবল নতুন ম্যাট্রিক্স ''A'' একটি ব্লক ম্যাট্রিক্স হবে, যেখানে প্রতিটি ব্লকের আকার হবে ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্সের আকারের সমান। :<math>A = \begin{bmatrix} -a_1I_p & -a_2I_p & \cdots & -a_{r-1}I_p & -a_rI_p \\ I_p & 0 & \cdots & 0 & 0 \\ 0 & I_p & \cdots & 0 & 0 \\ \vdots & \vdots & \ddots & \vdots & \vdots \\ 0 & 0 & \cdots & I_p & 0 \end{bmatrix}</math> :<math>B = \begin{bmatrix}I_p \\ 0 \\ 0 \\ \vdots \\ 0 \end{bmatrix}</math> :<math>C = \begin{bmatrix}N_1 & N_2 & N_3 & \cdots & Nr\end{bmatrix}</math> === ম্যাট্রিক্সের স্তম্ভ অনুসারে সিস্টেম বাস্তবায়ন === আমরা '''G(s)''' কে একাধিক স্তম্ভে ভাগ করতে পারি, এবং এগুলোকে পৃথকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি এবং পরে আবার একসাথে জোড়া দিয়ে সিস্টেমের ট্রান্সফার ফাংশন '''G(s)''' -এর গঠন করতে পারি: <math>G(s) =\begin{bmatrix} G_1 & G_2 & G_3 &\dots & G_n \end{bmatrix}</math> যেখানে আমরা সেগুলিকে বাস্তবায়ন করি এবং পাই: <math>G_i => (A_i,B_i,C_i,D_i)</math> এবং সিস্টেমের বাস্তবায়ন হবে: <math>A = \begin{bmatrix} A_1 & 0 & 0 & \dots &0\\ 0 & A_2 & 0&&\vdots\\ 0 & 0 & A_3\\ \vdots& & & \ddots &0\\ 0&0&0&\dots &A_n \end{bmatrix}</math> <math>B = \begin{bmatrix} B_1 & 0 & 0 & \dots &0\\ 0 & B_2 & 0&&\vdots\\ 0 & 0 & B_3\\ \vdots& & & \ddots &0\\ 0&0&0&\dots &B_n \end{bmatrix}</math> <math>C = \begin{bmatrix} C_1 & C_2 & C_3 &\dots& C_n \end{bmatrix}</math> <math>D = \begin{bmatrix} D_1 & D_2 & D_3 &\dots& D_n \end{bmatrix}</math> {{Control Systems/Nav|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/MIMO সিস্টেম| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/গেইন}} buzwn3zebx3ourhsla85d5zoup93dja নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মডেলিং 0 26228 84828 84787 2025-06-18T13:35:48Z RDasgupta2020 8748 /* অভ্যন্তরীণ বর্ণনা */ 84828 wikitext text/x-wiki {{Control Systems/Page|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রূপান্তর}} ==নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া== একজন নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা প্রকৌশলীর কাজ হলো বিদ্যমান সিস্টেম বিশ্লেষণ করা এবং নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের জন্য নতুন সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রায়শই বিদ্যমান সিস্টেম বা ব্যাবস্থার কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য সিস্টেমের একটি নিয়ন্ত্রনকারী একক যন্ত্রাংশ (কন্ট্রোল ইউনিট) -এর নকশা প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়। তবে কখনো কখনো সম্পূর্ন যান্ত্রিক সিস্টেমেরই নকশা প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়ে পরে। একটি সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করার সময়, অথবা একটি বিদ্যমান সিস্টেমকে উন্নত করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক প্রস্তুতির সময় কিছু মৌলিক পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়, যেগুলি সিস্টেমের মানদন্ড বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরী। এই মৌলিক পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে: #প্রথমে গাণিতিকভাবে সিস্টেমটির নকশা বা মডেল তৈরি করঅতে হয়। #এরপর গাণিতিক মডেল বা নকশার বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। #সিস্টেম/নিয়ন্ত্রক(কন্ট্রোলার) -এর জন্য প্রথম তার নকশা প্রস্তুত করতে হয়। #এবার সেই নকশার উপর ভিত্তি করে সিস্টেম/নিয়ন্ত্রকটি বাস্তবে তৈরী করা হয় এবং তারপর তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এই বইয়ের বেশিরভাগ অংশই উপরিউক্ত নির্দেশ তালিকার মধযে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ গাণিতিক পদ্ধতির বিশ্লেষণের উপর কেন্দ্রীভূত হবে। এই অধ্যাইয়ে শুধুমাত্র সিস্টেমগুলির গাণিতিক মডেল প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার করা হবে। ==বাহ্যিক বর্ণনা== একটি সিস্টেমের পূর্ণ অবয়ব সংক্ষেপে বর্ণনা করার সময় সিস্টেমের নিবেশিত অংশ বা ইনপুটের সাথে সিস্টেমের বাহ্যিক অংশ বা আউটপুটের সম্পর্ক প্রদর্শিত করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতা ও অন্যান্য জটিল বিষয় সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়না। একটি সিস্টেমের বাহ্যিক বর্ণনাকে কখনও কখনও সিস্টেমের ইনপুট-আউটপুট বর্ণনাও বলা হয় , কারণ এতে কেবলমাত্র সিস্টেমের ইনপুট এবং আউটপুটের উপরই মনোনিবেশ করা হয়। [[Image:Time-Domain Transfer Block.svg|center]] যদি সিস্টেমটিকে একতি গাণিতিক ফাংশন ''h(t, r)'' -এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় যেখানে ''t'' সময়ে সিস্টেম থেকে আউটপুট বা কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় এবং ''r'' হল সেই সময় যখন সিস্টেমে নিবেশিত মান বা ইনপুট প্রয়োগ করা হয়েছে, তাহলে সিস্টেম ফাংশন ''h(t, r)'' -এর সাথে ইনপুট মান ''x'' এবং আউটপুট মান ''y'' -এর সম্পর্ক নিম্নলিখিত সমাকলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়: {{eqn|সাধারণ সিস্টেমের বর্ণনা}} :<math>y(t) = \int_{-\infty}^\infty h(t, r)x(r)dr</math> এই সমীকরনের মাধ্যমে সমস্ত রৈখিক সিস্টেমের বর্ণনা করা যায়। যদি সিস্টেমে ''t=r'' সময়ে প্রয়োগীকৃত নিবেশ বা ইনপুট সংকেত সিস্টেমের কার্যকারিতাকে একমাত্র তখনই প্রভাবিত করতে পারে যখন, <math>t \ge r</math> এবং ''t=0'' সময়ের পূর্বে যদি সিস্টেমে কোন প্রকার ইনপুট প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে আমরা উপরের সমাকলনের সীমাতি নিম্নরূপে পরিবর্তিত করতে পারি: :<math>y(t) = \int_0^t h(t, r)x(r)dr</math> ===সময় নিরপেক্ষ ব্যাবস্থা=== যদি কোনও সিস্টেম বা ব্যাবস্থা সময় নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমরা সিস্টেম বর্ণনা সমীকরণটি নিম্নরূপে পুনর্লিখন করতে পারি: :<math>y(t) = \int_0^t h(t - r)x(r)dr</math> এই সমীকরণটি কনভোল্যুশন সমাকলন নামে পরিচিত , এবং আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে এটি সম্পর্কে আরও আলোচনা করব। প্রত্যেক সময়-নিরপেক্ষ রৈখিক সিস্টেম (এলটিআই) -কে '''ল্যাপ্লেস রুপান্তরন''', নামক গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এই বহু ব্যাবহৃত গানিতিক মডেলের মাধ্যমে কোন সময় নির্ভর সিস্টেমের গাণিতিক মডেলকে কম্পাঙ্ক নির্ভর ক্ষেত্র বা ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন -এ পরিবর্তিত করা যায় (ল্যাপ্লেস রূপান্তরনে ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইনকে এস-ডোমেইন বলা হয়), যার ফলে অনেক সমীকরনের সমাধান অত্যন্ত সহজ হয়। সময় নিরপেক্ষ সিস্টেমের ক্ষেত্রে ল্যাপ্লেস রুপান্তরন ব্যাবহার করা যায়না। ==অভ্যন্তরীণ বর্ণনা== যদি কোনো সিস্টেম রৈখিক এবং সমাকীর্ণ (লাম্পড) হয়, তাহলে সেটিকে একটি বিশেষ গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে বর্ণনা করা যায়। এই বিশেষ সমীকরণকে বলা হয় '''অবস্থান সমীকরন''' অথবা '''স্টেট-স্পেস সমীকরণ'''। স্টেট-স্পেস সমীকরণে আমরা সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বোঝাতে চলরাশি ''x'' ব্যবহার করি। সিস্টেমে ইনপুট বা নিবেশিত মান বোঝাতে ''u'' এবং সিস্টেমের আউটপুট বা ফলাফল বোঝাতে ''y'' ব্যবহার করা হয়। আমরা স্টেট-স্পেস সমীকরণগুলোকে নিম্নরূপে প্রকাশ করতে পারি: :<math>x'(t) = A(t)x(t) + B(t)u(t)</math> :<math>y(t) = C(t)x(t) + D(t)u(t)</math> আধুনিক নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থার আলোচনার সময় আমরা স্টেট-স্পেস সমীকরনের ব্যাপারে বিশদে আলোচনা করব। ==জটিল বর্ণনা== সময়-নিরপেক্ষ রৈখিক সিস্টেম এবং সমাকীর্ণ সিস্টেমসমূহকে স্টেট-স্পেস সমীকরণ এবং ল্যাপ্লেস রুপান্তরনের সংমিশ্রণ ব্যবহার করেও বর্ণনা করা যেতে পারে। যদি আমরা উপরে তালিকাভুক্ত স্টেট-স্পেস সমীকরণগুলির ল্যাপ্লেস রূপান্তরন নির্ধারণ করি, তাহলে আমরা রূপান্তরন ম্যাট্রিক্স (ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্স) ফাংশন নামে পরিচিত ফাংশনের একটি সেট পেতে পারি। আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে এই ফাংশনগুলি নিয়ে আলোচনা করব। ==উপস্থাপনা== নিম্নের তালিকায় বিভিন্ন সিস্টেম বা ব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্য এবং তাদের বিশ্লেশষনের জন্য বযাবহৃত একাধিক গাণিতিক মডেল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে: :{| class="wikitable" |- !বৈশিষ্ট্য !! স্টেট-স্পেস<br>সমীকরন !! ল্যাপ্লেস<br> রূপান্তর !! রূপান্তরন<br>ম্যাট্রিক্স |- |রৈখিক, সময়-সাপেক্ষ, বিন্যাস্ত || না || না || না |- |রৈখিক, সময়-সাপেক্, সমাকীর্ণ || হ্যাঁ || না || না |- |রৈখিক, সময়-নিরপেক্ষ, বিন্যাস্ত || না || হ্যাঁ || না |- |রৈখিক, সময়-নিরপেক্ষ, সমাকীর্ণ || হ্যাঁ || হ্যাঁ || হ্যাঁ |} আমরা পরের অধ্যায়ে এইরূপ নানা রকম সিস্টেমের উপস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করব। ==বিশ্লেষণ== উপরে তালিকাভুক্ত উপস্থাপনাগুলির যেকোন একটি ব্যবহার করে কোনো সিস্টেমের প্রাথমিক নকশা প্রস্তুত করা হলে, প্রথমে সেই সিস্টেমের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আমরা সিস্টেমের বিভিন্ন পরিমাপক নির্ধারণ করতে পারি এবং তারপর সেই পরিমাপগুলিকে আমাদের নির্ধারিত মানদন্ডের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যদি সিস্টেমটি সেই মানদন্ডগুলি পূরণ করে, তাহলে সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া শেষ। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিস্টেমটি নির্ধারিত মানদন্ড পূরণ করে না। সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) এবং যান্ত্রিক ক্ষতিপূরনকারী (কম্পেনসেটর) -এর নকশা প্রস্তুত করে সিস্টেমে যুক্ত করতে হয়। কিন্তু কন্ট্রোলার এবং কম্পেনসেটর ডিজাইন করলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না — নতুনভাবে তৈরি করা সম্মিলিত সিস্টেমটিকে বিশ্লেষণ করতে হয়, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে নতুন যুক্ত যন্ত্রাংশগুলি ঠিকভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি, আমাদের নিশ্চিত করতে হয় যে সিস্টেমটি স্থিতিশীল আছে — কারণ, অস্থিতিশীল সিস্টেম বিপজ্জনক হতে পারে। ===কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ=== সিস্টেমের প্রাথমিক ডিজাইন বা দ্রুত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন বা কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ, সময় এককের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের থেকে সহজ ও কার্যকর হয়। কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় সিস্টেমে উৎপন্ন অস্থিতার শক্তি বিভাজনকে (পাওয়ার স্পেক্ট্রাল ডেনসিটি বা পিএসডি) সরাসরি ব্যবহার করা যায়, ট্রান্সফার ফাংশনও সরাসরি প্রয়োগ করা যায়, এবং এর ফলাফলও সহজে পাওয়া যায়। এই বিশ্লেষণে যে আউটপুট বা ফলাফল পাওয়া যায় তা সাধারণত সময়ের সাপেক্ষে স্থিতিশীল থাকে (স্টেডি-স্টেট রেসপন্স) হয়। সিস্টেমের সাথে যুক্ত অনেক যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রকই আউটপুটের মান শূন্যে নামিয়ে আনতে চেষ্টা করে। তাই এই স্টেডি-স্টেট রেসপন্স আসলে সিস্টেমের একটি চূড়ান্ত ত্রুটি যা বিশ্লেষণের চূড়ান্ত ফলাফল বা মানদন্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। <div align="center"> {| style="width:600px; background:transparent; font-size:120%" align="center" border="5" |+ '''সারনী ১: কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে প্রস্তাবিত ইনপুট এবং আউটপুট''' ! ইনপুট !! প্রস্তাবনা !! আউটপুট |- style="background:transparent; color:#C00000;" align="center" | পিএসডি | স্থানান্তর ফাংশন | পিএসডি |} </div> ====গণিতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ==== ফ্রিকোয়েন্সি ডোমাইন বা কম্পাঙ্ক সাপেক্ষে সিস্টেমের বিশ্লেষণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সিস্টেমের স্পন্দন প্রতিক্রিয়া বা ইমপালস রেসপন্স নির্ধারণ করা যায়। [[Image:FreqDomainBlocks.png|thumb|center|500px|চিত্র ১: ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেন সিস্টেম]] :<math>S_{YY}\left(\omega\right)=G^*\left(\omega\right)G\left(\omega\right)S_{XX}= \left | G\left(\omega\right)\right \vert S_{XX}</math><ref>Sun, Jian-Qiao (2006). ''Stochastic Dynamics and Control, Volume 4''. Amsterdam: Elsevier Science. {{ISBN|0444522301}}.</ref> যেখানে, ::<math>S_{XX}\left(\omega\right)</math> হল সিস্টেমের অস্থিতার শক্তি বিভাজন বা পিএসডি, যার একক <math>\frac{magnitude^2}{Hz}</math> ::<math>G\left(\omega\right)</math> হল সিস্টেমের ফাংশন যা কম্পাঙ্ক ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়েছে। একে ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স ফাংশনও বলে ::<math>S_{YY}\left(\omega\right)</math> আউটপুট ফাংশনের পিএসডি। ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স ফাংশন, <math>G\left(\omega\right)</math>, সিস্টেমের রূপান্তরন ফাংশনের সাথে সম্পর্কিত। বিভিন্ন বইয়ে এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। কিছু বই বলে, উপরোক্ত সমীকরণ কেবলমাত্র স্থিতিশীল লক্ষ্যবিহীন (র‍্যান্ডম) প্রক্রিয়ার জন্যই প্রযোজ্য। অন্য কিছু বইতে অন্যান্য কিছু প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে উপরের সমীকরণ প্রযোজ্যতার কথা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু বইতে আবার কঠোরভাবে স্থিতিশীল (সমস্ত ক্রমের গাণিতিক গড় অপরিবর্তিত) এবং দুর্বল স্থিতিশীল সিস্টেমের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না তবে বাস্তব ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যা ধরা হয়, তা হলো: যদি সিস্টেমের ইনপুট সিগন্যালের শক্তি বিভাজন বা পি এস ডি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা দিনের পর দিন একরকম থাকে, তবে সেটিকে স্থিতিশীল সিস্টেম ধরা যায় এবং তখন উপরের সমীকরণটি ব্যবহারযোগ্য ও বৈধ। ==মন্তব্য== <references /> *[http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Frequency_Domain_Modeling উদাহরন সহ সিস্টেম মডেলিং -এর ব্যাখ্যা] ==নকশা প্রস্তুতকরনের উদাহরণ== নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থায় সিস্টেম মডেলিং একটি বিশদ বিচার-বিবেচনার বিষয়। এই বিষয়ে বাস্তবিক জ্ঞান অর্জনের জন্ শুধু লিখিত তথ্য নয় বরং অন্যদের তৈরী সিস্টেম বা যান্ত্রিক মডেল ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করা উচিত, তাহলে অনেক কিছু জানা যায়। কিছু সাইট যেখান সিস্টেম মডেলিং বা নকশা প্রস্তুতকরনের অনেক উদাহরণ রয়েছে। এখানে কয়েকটির লিঙ্ক দেওয়া হল। * [https://web.archive.org/web/20121214093707/http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Helicopter_Hover_Example হেলিকপ্টারের উদাহরণ] * [https://web.archive.org/web/20160325175552/wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Reaction_Cancellation_Example বিক্রিয়া টর্ক] * [https://web.archive.org/web/20150919081842/http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Category:Examples কন্ট্রোলথেরাপি প্রো ডট কম-এ সকল উদাহরণের তালিকা] ==উৎপাদন== সঠিকভাবে সিস্টেমটির নকশা প্রস্তুত করা হয়ে গেলে আমরা আমাদের সিস্টেমটির একটি প্রাথমিক মডেল তৈরি করতে পারি এবং তার পরীক্ষা করতে পারি। যদি আমরা ধরে নিই যে আমাদের বিশ্লেষণ সঠিক ছিল এবং আমাদের প্রস্তুত করা যান্ত্রিক সিস্টেমের নকশাটি যথোপযুক্ত, তাহলে প্রাথমিক মডেল হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবে তবে তা পরীক্ষা সাপেক্ষ। যদি সিস্টেমের পরীক্ষার ফল ভালো হয় তাহলে আমরা আমাদের সিস্টেমগুলি বাস্তবে তৈরি করার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি। {{Control Systems/Nav|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রূপান্তর}} mxmsopy76e670rltxymodg45k4nifpu 84829 84828 2025-06-18T13:37:59Z RDasgupta2020 8748 /* কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ */ 84829 wikitext text/x-wiki {{Control Systems/Page|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রূপান্তর}} ==নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া== একজন নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা প্রকৌশলীর কাজ হলো বিদ্যমান সিস্টেম বিশ্লেষণ করা এবং নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের জন্য নতুন সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রায়শই বিদ্যমান সিস্টেম বা ব্যাবস্থার কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য সিস্টেমের একটি নিয়ন্ত্রনকারী একক যন্ত্রাংশ (কন্ট্রোল ইউনিট) -এর নকশা প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়। তবে কখনো কখনো সম্পূর্ন যান্ত্রিক সিস্টেমেরই নকশা প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়ে পরে। একটি সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করার সময়, অথবা একটি বিদ্যমান সিস্টেমকে উন্নত করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক প্রস্তুতির সময় কিছু মৌলিক পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়, যেগুলি সিস্টেমের মানদন্ড বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরী। এই মৌলিক পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে: #প্রথমে গাণিতিকভাবে সিস্টেমটির নকশা বা মডেল তৈরি করঅতে হয়। #এরপর গাণিতিক মডেল বা নকশার বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। #সিস্টেম/নিয়ন্ত্রক(কন্ট্রোলার) -এর জন্য প্রথম তার নকশা প্রস্তুত করতে হয়। #এবার সেই নকশার উপর ভিত্তি করে সিস্টেম/নিয়ন্ত্রকটি বাস্তবে তৈরী করা হয় এবং তারপর তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এই বইয়ের বেশিরভাগ অংশই উপরিউক্ত নির্দেশ তালিকার মধযে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ গাণিতিক পদ্ধতির বিশ্লেষণের উপর কেন্দ্রীভূত হবে। এই অধ্যাইয়ে শুধুমাত্র সিস্টেমগুলির গাণিতিক মডেল প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার করা হবে। ==বাহ্যিক বর্ণনা== একটি সিস্টেমের পূর্ণ অবয়ব সংক্ষেপে বর্ণনা করার সময় সিস্টেমের নিবেশিত অংশ বা ইনপুটের সাথে সিস্টেমের বাহ্যিক অংশ বা আউটপুটের সম্পর্ক প্রদর্শিত করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতা ও অন্যান্য জটিল বিষয় সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়না। একটি সিস্টেমের বাহ্যিক বর্ণনাকে কখনও কখনও সিস্টেমের ইনপুট-আউটপুট বর্ণনাও বলা হয় , কারণ এতে কেবলমাত্র সিস্টেমের ইনপুট এবং আউটপুটের উপরই মনোনিবেশ করা হয়। [[Image:Time-Domain Transfer Block.svg|center]] যদি সিস্টেমটিকে একতি গাণিতিক ফাংশন ''h(t, r)'' -এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় যেখানে ''t'' সময়ে সিস্টেম থেকে আউটপুট বা কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় এবং ''r'' হল সেই সময় যখন সিস্টেমে নিবেশিত মান বা ইনপুট প্রয়োগ করা হয়েছে, তাহলে সিস্টেম ফাংশন ''h(t, r)'' -এর সাথে ইনপুট মান ''x'' এবং আউটপুট মান ''y'' -এর সম্পর্ক নিম্নলিখিত সমাকলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়: {{eqn|সাধারণ সিস্টেমের বর্ণনা}} :<math>y(t) = \int_{-\infty}^\infty h(t, r)x(r)dr</math> এই সমীকরনের মাধ্যমে সমস্ত রৈখিক সিস্টেমের বর্ণনা করা যায়। যদি সিস্টেমে ''t=r'' সময়ে প্রয়োগীকৃত নিবেশ বা ইনপুট সংকেত সিস্টেমের কার্যকারিতাকে একমাত্র তখনই প্রভাবিত করতে পারে যখন, <math>t \ge r</math> এবং ''t=0'' সময়ের পূর্বে যদি সিস্টেমে কোন প্রকার ইনপুট প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে আমরা উপরের সমাকলনের সীমাতি নিম্নরূপে পরিবর্তিত করতে পারি: :<math>y(t) = \int_0^t h(t, r)x(r)dr</math> ===সময় নিরপেক্ষ ব্যাবস্থা=== যদি কোনও সিস্টেম বা ব্যাবস্থা সময় নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমরা সিস্টেম বর্ণনা সমীকরণটি নিম্নরূপে পুনর্লিখন করতে পারি: :<math>y(t) = \int_0^t h(t - r)x(r)dr</math> এই সমীকরণটি কনভোল্যুশন সমাকলন নামে পরিচিত , এবং আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে এটি সম্পর্কে আরও আলোচনা করব। প্রত্যেক সময়-নিরপেক্ষ রৈখিক সিস্টেম (এলটিআই) -কে '''ল্যাপ্লেস রুপান্তরন''', নামক গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এই বহু ব্যাবহৃত গানিতিক মডেলের মাধ্যমে কোন সময় নির্ভর সিস্টেমের গাণিতিক মডেলকে কম্পাঙ্ক নির্ভর ক্ষেত্র বা ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন -এ পরিবর্তিত করা যায় (ল্যাপ্লেস রূপান্তরনে ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইনকে এস-ডোমেইন বলা হয়), যার ফলে অনেক সমীকরনের সমাধান অত্যন্ত সহজ হয়। সময় নিরপেক্ষ সিস্টেমের ক্ষেত্রে ল্যাপ্লেস রুপান্তরন ব্যাবহার করা যায়না। ==অভ্যন্তরীণ বর্ণনা== যদি কোনো সিস্টেম রৈখিক এবং সমাকীর্ণ (লাম্পড) হয়, তাহলে সেটিকে একটি বিশেষ গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে বর্ণনা করা যায়। এই বিশেষ সমীকরণকে বলা হয় '''অবস্থান সমীকরন''' অথবা '''স্টেট-স্পেস সমীকরণ'''। স্টেট-স্পেস সমীকরণে আমরা সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বোঝাতে চলরাশি ''x'' ব্যবহার করি। সিস্টেমে ইনপুট বা নিবেশিত মান বোঝাতে ''u'' এবং সিস্টেমের আউটপুট বা ফলাফল বোঝাতে ''y'' ব্যবহার করা হয়। আমরা স্টেট-স্পেস সমীকরণগুলোকে নিম্নরূপে প্রকাশ করতে পারি: :<math>x'(t) = A(t)x(t) + B(t)u(t)</math> :<math>y(t) = C(t)x(t) + D(t)u(t)</math> আধুনিক নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থার আলোচনার সময় আমরা স্টেট-স্পেস সমীকরনের ব্যাপারে বিশদে আলোচনা করব। ==জটিল বর্ণনা== সময়-নিরপেক্ষ রৈখিক সিস্টেম এবং সমাকীর্ণ সিস্টেমসমূহকে স্টেট-স্পেস সমীকরণ এবং ল্যাপ্লেস রুপান্তরনের সংমিশ্রণ ব্যবহার করেও বর্ণনা করা যেতে পারে। যদি আমরা উপরে তালিকাভুক্ত স্টেট-স্পেস সমীকরণগুলির ল্যাপ্লেস রূপান্তরন নির্ধারণ করি, তাহলে আমরা রূপান্তরন ম্যাট্রিক্স (ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্স) ফাংশন নামে পরিচিত ফাংশনের একটি সেট পেতে পারি। আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে এই ফাংশনগুলি নিয়ে আলোচনা করব। ==উপস্থাপনা== নিম্নের তালিকায় বিভিন্ন সিস্টেম বা ব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্য এবং তাদের বিশ্লেশষনের জন্য বযাবহৃত একাধিক গাণিতিক মডেল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে: :{| class="wikitable" |- !বৈশিষ্ট্য !! স্টেট-স্পেস<br>সমীকরন !! ল্যাপ্লেস<br> রূপান্তর !! রূপান্তরন<br>ম্যাট্রিক্স |- |রৈখিক, সময়-সাপেক্ষ, বিন্যাস্ত || না || না || না |- |রৈখিক, সময়-সাপেক্, সমাকীর্ণ || হ্যাঁ || না || না |- |রৈখিক, সময়-নিরপেক্ষ, বিন্যাস্ত || না || হ্যাঁ || না |- |রৈখিক, সময়-নিরপেক্ষ, সমাকীর্ণ || হ্যাঁ || হ্যাঁ || হ্যাঁ |} আমরা পরের অধ্যায়ে এইরূপ নানা রকম সিস্টেমের উপস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করব। ==বিশ্লেষণ== উপরে তালিকাভুক্ত উপস্থাপনাগুলির যেকোন একটি ব্যবহার করে কোনো সিস্টেমের প্রাথমিক নকশা প্রস্তুত করা হলে, প্রথমে সেই সিস্টেমের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আমরা সিস্টেমের বিভিন্ন পরিমাপক নির্ধারণ করতে পারি এবং তারপর সেই পরিমাপগুলিকে আমাদের নির্ধারিত মানদন্ডের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যদি সিস্টেমটি সেই মানদন্ডগুলি পূরণ করে, তাহলে সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া শেষ। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিস্টেমটি নির্ধারিত মানদন্ড পূরণ করে না। সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) এবং যান্ত্রিক ক্ষতিপূরনকারী (কম্পেনসেটর) -এর নকশা প্রস্তুত করে সিস্টেমে যুক্ত করতে হয়। কিন্তু কন্ট্রোলার এবং কম্পেনসেটর ডিজাইন করলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না — নতুনভাবে তৈরি করা সম্মিলিত সিস্টেমটিকে বিশ্লেষণ করতে হয়, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে নতুন যুক্ত যন্ত্রাংশগুলি ঠিকভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি, আমাদের নিশ্চিত করতে হয় যে সিস্টেমটি স্থিতিশীল আছে — কারণ, অস্থিতিশীল সিস্টেম বিপজ্জনক হতে পারে। ===কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ=== সিস্টেমের প্রাথমিক ডিজাইন বা দ্রুত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন বা কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ, সময় এককের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের থেকে সহজ ও কার্যকর হয়। কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় সিস্টেমে উৎপন্ন অস্থিতার শক্তি বিভাজনকে (পাওয়ার স্পেক্ট্রাল ডেনসিটি বা পিএসডি) সরাসরি ব্যবহার করা যায়, ট্রান্সফার ফাংশনও সরাসরি প্রয়োগ করা যায় এবং বিশ্লেষণের ফলাফলও সহজে পাওয়া যায়। এই বিশ্লেষণে যে আউটপুট বা ফলাফল পাওয়া যায় তা সাধারণত সময়ের সাপেক্ষে স্থিতিশীল (স্টেডি-স্টেট রেসপন্স) হয়। সিস্টেমের সাথে যুক্ত অনেক যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক আউটপুটের মান শূন্যে নামিয়ে আনতে চেষ্টা করে। তাই সিস্টেমের আউটপুট থেকে প্রাপ্ত এই স্টেডি-স্টেট রেসপন্স আসলে সিস্টেমের একটি চূড়ান্ত ত্রুটি যা বিশ্লেষণের চূড়ান্ত ফলাফল বা মানদন্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। <div align="center"> {| style="width:600px; background:transparent; font-size:120%" align="center" border="5" |+ '''সারনী ১: কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে প্রস্তাবিত ইনপুট এবং আউটপুট''' ! ইনপুট !! প্রস্তাবনা !! আউটপুট |- style="background:transparent; color:#C00000;" align="center" | পিএসডি | স্থানান্তর ফাংশন | পিএসডি |} </div> ====গণিতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ==== ফ্রিকোয়েন্সি ডোমাইন বা কম্পাঙ্ক সাপেক্ষে সিস্টেমের বিশ্লেষণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সিস্টেমের ঘাত প্রতিক্রিয়া বা ইমপালস রেসপন্স নির্ধারণ করা যায়। [[Image:FreqDomainBlocks.png|thumb|center|500px|চিত্র ১: ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেন সিস্টেম]] :<math>S_{YY}\left(\omega\right)=G^*\left(\omega\right)G\left(\omega\right)S_{XX}= \left | G\left(\omega\right)\right \vert S_{XX}</math><ref>Sun, Jian-Qiao (2006). ''Stochastic Dynamics and Control, Volume 4''. Amsterdam: Elsevier Science. {{ISBN|0444522301}}.</ref> যেখানে, ::<math>S_{XX}\left(\omega\right)</math> হল সিস্টেমের অস্থিতার শক্তি বিভাজন বা পিএসডি, যার একক <math>\frac{magnitude^2}{Hz}</math> ::<math>G\left(\omega\right)</math> হল সিস্টেমের ফাংশন যা কম্পাঙ্ক ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়েছে। একে ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স ফাংশনও বলে ::<math>S_{YY}\left(\omega\right)</math> আউটপুট ফাংশনের পিএসডি। ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স ফাংশন, <math>G\left(\omega\right)</math>, সিস্টেমের রূপান্তরন ফাংশনের সাথে সম্পর্কিত। বিভিন্ন বইয়ে এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। কিছু বই বলে, উপরোক্ত সমীকরণ কেবলমাত্র স্থিতিশীল লক্ষ্যবিহীন (র‍্যান্ডম) প্রক্রিয়ার জন্যই প্রযোজ্য। অন্য কিছু বইতে অন্যান্য কিছু প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে উপরের সমীকরণ প্রযোজ্যতার কথা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু বইতে আবার কঠোরভাবে স্থিতিশীল (সমস্ত ক্রমের গাণিতিক গড় অপরিবর্তিত) এবং দুর্বল স্থিতিশীল সিস্টেমের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না তবে বাস্তব ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যা ধরা হয়, তা হলো: যদি সিস্টেমের ইনপুট সিগন্যালের শক্তি বিভাজন বা পি এস ডি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা দিনের পর দিন একরকম থাকে, তবে সেটিকে স্থিতিশীল সিস্টেম ধরা যায় এবং তখন উপরের সমীকরণটি ব্যবহারযোগ্য ও বৈধ। ==মন্তব্য== <references /> *[http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Frequency_Domain_Modeling উদাহরন সহ সিস্টেম মডেলিং -এর ব্যাখ্যা] ==নকশা প্রস্তুতকরনের উদাহরণ== নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থায় সিস্টেম মডেলিং একটি বিশদ বিচার-বিবেচনার বিষয়। এই বিষয়ে বাস্তবিক জ্ঞান অর্জনের জন্ শুধু লিখিত তথ্য নয় বরং অন্যদের তৈরী সিস্টেম বা যান্ত্রিক মডেল ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করা উচিত, তাহলে অনেক কিছু জানা যায়। কিছু সাইট যেখান সিস্টেম মডেলিং বা নকশা প্রস্তুতকরনের অনেক উদাহরণ রয়েছে। এখানে কয়েকটির লিঙ্ক দেওয়া হল। * [https://web.archive.org/web/20121214093707/http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Helicopter_Hover_Example হেলিকপ্টারের উদাহরণ] * [https://web.archive.org/web/20160325175552/wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Reaction_Cancellation_Example বিক্রিয়া টর্ক] * [https://web.archive.org/web/20150919081842/http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Category:Examples কন্ট্রোলথেরাপি প্রো ডট কম-এ সকল উদাহরণের তালিকা] ==উৎপাদন== সঠিকভাবে সিস্টেমটির নকশা প্রস্তুত করা হয়ে গেলে আমরা আমাদের সিস্টেমটির একটি প্রাথমিক মডেল তৈরি করতে পারি এবং তার পরীক্ষা করতে পারি। যদি আমরা ধরে নিই যে আমাদের বিশ্লেষণ সঠিক ছিল এবং আমাদের প্রস্তুত করা যান্ত্রিক সিস্টেমের নকশাটি যথোপযুক্ত, তাহলে প্রাথমিক মডেল হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবে তবে তা পরীক্ষা সাপেক্ষ। যদি সিস্টেমের পরীক্ষার ফল ভালো হয় তাহলে আমরা আমাদের সিস্টেমগুলি বাস্তবে তৈরি করার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি। {{Control Systems/Nav|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রূপান্তর}} 02bzwgvcrhylz397zudmd9tun8qv822 84884 84829 2025-06-19T05:34:34Z RDasgupta2020 8748 84884 wikitext text/x-wiki {{Control Systems/Page|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রূপান্তর}} ==নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া== একজন নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা প্রকৌশলীর কাজ হলো বিদ্যমান সিস্টেম বিশ্লেষণ করা এবং নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের জন্য নতুন সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূলত বিদ্যমান সিস্টেম বা ব্যাবস্থার কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য সিস্টেমের একটি নিয়ন্ত্রনকারী একক যন্ত্রাংশ (কন্ট্রোল ইউনিট) -এর নকশা প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়। তবে কখনো কখনো সম্পূর্ন যান্ত্রিক সিস্টেমেরই নকশা প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়ে পরে। একটি সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করার সময়, অথবা একটি বিদ্যমান সিস্টেমকে উন্নত করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক প্রস্তুতির সময় কিছু মৌলিক পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়, যেগুলি সিস্টেমের মানদন্ড বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরী। এই মৌলিক পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে: #প্রথমে গাণিতিকভাবে সিস্টেমটির নকশা বা মডেল তৈরি করতে হয়। #এরপর গাণিতিক মডেল বা নকশার বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। #সিস্টেম/নিয়ন্ত্রক(কন্ট্রোলার) -এর জন্য প্রথমে তার নকশা প্রস্তুত করতে হয়। #এবার সেই নকশার উপর ভিত্তি করে সিস্টেম/নিয়ন্ত্রকটির বাস্তব রূপ প্রদান করা হয় এবং তারপর তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এই বইয়ের বেশিরভাগ আলোচনা উপরিউক্ত নির্দেশ তালিকার দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমে সিস্টেমের বিশ্লেষণের উপর কেন্দ্রীভূত হবে, অর্থাৎ এই অধ্যায়ে শুধুমাত্র সিস্টেমগুলির গাণিতিক মডেল প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার করা হবে। ==বাহ্যিক বর্ণনা== একটি সিস্টেমের পূর্ণ অবয়ব সংক্ষেপে বর্ণনা করার সময় সিস্টেমের নিবেশিত অংশ বা ইনপুটের সাথে সিস্টেমের বাহ্যিক অংশ বা আউটপুটের সম্পর্ক প্রদর্শিত করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতা ও অন্যান্য জটিল বিষয় সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়না। একটি সিস্টেমের বাহ্যিক বর্ণনাকে কখনও কখনও সিস্টেমের ইনপুট-আউটপুট বর্ণনাও বলা হয় , কারণ এতে কেবলমাত্র সিস্টেমের ইনপুট এবং আউটপুটের উপরই মনোনিবেশ করা হয়। [[Image:Time-Domain Transfer Block.svg|center]] যদি সিস্টেমটিকে একতি গাণিতিক ফাংশন ''h(t, r)'' -এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় যেখানে ''t'' সময়ে সিস্টেম থেকে আউটপুট বা কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় এবং ''r'' হল সেই নির্দিষ্ট সময়কাল যখন সিস্টেমে নিবেশিত মান বা ইনপুট প্রয়োগ করা হয়েছে, তাহলে সিস্টেম ফাংশন ''h(t, r)'' -এর সাথে ইনপুট মান ''x'' এবং আউটপুট মান ''y'' -এর সম্পর্ক নিম্নলিখিত সমাকলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়: {{eqn|সাধারণ সিস্টেমের বর্ণনা}} :<math>y(t) = \int_{-\infty}^\infty h(t, r)x(r)dr</math> এই সমীকরনের মাধ্যমে সমস্ত রৈখিক সিস্টেমের বর্ণনা করা যায়। সিস্টেমে ''t=r'' সময়ে প্রয়োগীকৃত নিবেশিত সংকেত বা ইনপুট সংকেত সিস্টেমের কার্যকারিতাকে একমাত্র তখনই প্রভাবিত করতে পারে যদি, <math>t \ge r</math> এবং ''t=0'' সময়ের পূর্বে যদি সিস্টেমে কোন প্রকার ইনপুট প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে আমরা উপরের সমাকলনের সীমাটি নিম্নরূপে পরিবর্তিত করতে পারি: :<math>y(t) = \int_0^t h(t, r)x(r)dr</math> ===সময় নিরপেক্ষ ব্যাবস্থা=== যদি কোনও সিস্টেম বা ব্যাবস্থা সময় নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমরা সিস্টেমের বিশ্লেষণকারী সমীকরণটি নিম্নরূপে পুনর্লিখন করতে পারি: :<math>y(t) = \int_0^t h(t - r)x(r)dr</math> এই সমীকরণটি কনভোল্যুশন সমাকলন নামে পরিচিত , এবং আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে এটি সম্পর্কে আরও আলোচনা করব। প্রত্যেক সময়-নিরপেক্ষ রৈখিক সিস্টেম (এলটিআই) -কে '''ল্যাপ্লেস রুপান্তরন''' নামক গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এই বহু ব্যাবহৃত গানিতিক মডেলের মাধ্যমে কোন সময় নির্ভর সিস্টেমের গাণিতিক মডেলকে কম্পাঙ্ক নির্ভর ক্ষেত্র বা ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন -এ পরিবর্তিত করা যায় (ল্যাপ্লেস রূপান্তরনে ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইনকে এস-ডোমেইন বলা হয়), যার ফলে অনেক সমীকরনের সমাধান অত্যন্ত সহজ হয়। সময় নিরপেক্ষ সিস্টেমের ক্ষেত্রে ল্যাপ্লেস রুপান্তরন ব্যাবহার করা যায়না। ==অভ্যন্তরীণ বর্ণনা== যদি কোনো সিস্টেম রৈখিক এবং সমাকীর্ণ (লাম্পড) হয়, তাহলে সেটিকে একটি বিশেষ গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে বর্ণনা করা যায়। এই বিশেষ সমীকরণকে বলা হয় '''অবস্থান সমীকরন''' অথবা '''স্টেট-স্পেস সমীকরণ'''। স্টেট-স্পেস সমীকরণে আমরা সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বোঝাতে চলরাশি ''x'' ব্যবহার করি। সিস্টেমে ইনপুট বা নিবেশিত মান বোঝাতে ''u'' এবং সিস্টেমের আউটপুট বা ফলাফল বোঝাতে ''y'' ব্যবহার করা হয়। আমরা স্টেট-স্পেস সমীকরণগুলোকে নিম্নরূপে প্রকাশ করতে পারি: :<math>x'(t) = A(t)x(t) + B(t)u(t)</math> :<math>y(t) = C(t)x(t) + D(t)u(t)</math> আধুনিক নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা সম্পর্কে আলোচনার সময় আমরা স্টেট-স্পেস সমীকরন বা অবস্থান সমীকরনের ব্যাপারে বিশদে আলোচনা করব। ==জটিল বর্ণনা== সময়-নিরপেক্ষ রৈখিক সিস্টেম এবং সমাকীর্ণ (লাম্পড) সিস্টেমসমূহকে স্টেট-স্পেস সমীকরণ এবং ল্যাপ্লেস রুপান্তরনের সংমিশ্রণ ব্যবহার করেও বর্ণনা করা যেতে পারে। যদি আমরা উপরে তালিকাভুক্ত স্টেট-স্পেস সমীকরণগুলির ল্যাপ্লেস রূপান্তরন নির্ধারণ করি, তাহলে আমরা রূপান্তরন ম্যাট্রিক্স (ট্রান্সফার ম্যাট্রিক্স) ফাংশন নামে পরিচিত ফাংশনের একটি সেট পেতে পারি। আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে এই ফাংশনগুলি নিয়ে আলোচনা করব। ==উপস্থাপনা== নিম্নের তালিকায় বিভিন্ন সিস্টেম বা ব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্য এবং তাদের বিশ্লেশষনের জন্য বযাবহৃত একাধিক গাণিতিক মডেল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে: :{| class="wikitable" |- !বৈশিষ্ট্য !! স্টেট-স্পেস<br>সমীকরন !! ল্যাপ্লেস<br> রূপান্তর !! রূপান্তরন<br>ম্যাট্রিক্স |- |রৈখিক, সময়-সাপেক্ষ, বিন্যাস্ত || না || না || না |- |রৈখিক, সময়-সাপেক্, সমাকীর্ণ || হ্যাঁ || না || না |- |রৈখিক, সময়-নিরপেক্ষ, বিন্যাস্ত || না || হ্যাঁ || না |- |রৈখিক, সময়-নিরপেক্ষ, সমাকীর্ণ || হ্যাঁ || হ্যাঁ || হ্যাঁ |} আমরা পরের অধ্যায়ে এইরূপ নানা রকম সিস্টেমের উপস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করব। ==বিশ্লেষণ== উপরে তালিকাভুক্ত গাণিতিক মডেলগুলির মধ্যে উপযুক্ত একটি মডেল ব্যবহার করে যে কোনো সিস্টেমের প্রাথমিক নকশা প্রস্তুত করা যায়, তবে প্রথমে সেই সিস্টেমের বিশদ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আমরা সিস্টেমের বিভিন্ন পরিমাপক নির্ধারণ করতে পারি এবং তারপর সেই পরিমাপগুলিকে আমাদের নির্ধারিত মানদন্ডের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যদি সিস্টেমটি সেই মানদন্ডগুলি পূরণ করে, তাহলে সিস্টেমের নকশা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া শেষ হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিস্টেমটি নির্ধারিত মানদন্ড পূরণ করে না। সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) এবং যান্ত্রিক ক্ষতিপূরনকারী (কম্পেনসেটর) -এর নকশা প্রস্তুত করে সিস্টেমে যুক্ত করতে হয়। কিন্তু কন্ট্রোলার এবং কম্পেনসেটর তৈরী করলেই সিস্টেম মডেলিং -এর কাজ শেষ হয়ে যায় না, বরঞ্চ কন্ট্রোলার ও কম্পেনসেটর যুক্ত সম্মিলিত সিস্টেমটিকে বিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে নতুন যুক্ত যন্ত্রাংশগুলি সঠিকভাবে কাজ করছে এবং সিস্টেম আশানুরূপ ফল দিচ্ছে। পাশাপাশি, আমাদের নিশ্চিত করতে হয় যে সিস্টেমটি স্থিতিশীল আছে — কারণ, অস্থিতিশীল সিস্টেম বিপজ্জনক হতে পারে। ===কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ=== সিস্টেমের প্রাথমিক ডিজাইন বা দ্রুত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন বা কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ, সময় এককের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের থেকে সহজ ও কার্যকর হয়। কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় সিস্টেমে উৎপন্ন অস্থিতার শক্তি বিভাজনকে (পাওয়ার স্পেক্ট্রাল ডেনসিটি বা পিএসডি) সরাসরি ব্যবহার করা যায়, সিস্টেমের ট্রান্সফার ফাংশনও সরাসরি প্রয়োগ করা যায় এবং বিশ্লেষণের ফলাফলও সহজে পাওয়া যায়। এই বিশ্লেষণে যে আউটপুট বা ফলাফল পাওয়া যায় তা সাধারণত সময়ের সাপেক্ষে স্থিতিশীল (স্টেডি-স্টেট রেসপন্স) হয়। সিস্টেমের সাথে যুক্ত অনেক যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক আউটপুটের মান শূন্যে নামিয়ে আনতে চেষ্টা করে। তাই সিস্টেমের আউটপুট থেকে প্রাপ্ত এই স্টেডি-স্টেট রেসপন্স আসলে সিস্টেমের একটি চূড়ান্ত ত্রুটি যা বিশ্লেষণের চূড়ান্ত ফলাফল বা মানদন্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। <div align="center"> {| style="width:600px; background:transparent; font-size:120%" align="center" border="5" |+ '''সারনী ১: কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে প্রস্তাবিত ইনপুট এবং আউটপুট''' ! ইনপুট !! প্রস্তাবনা !! আউটপুট |- style="background:transparent; color:#C00000;" align="center" | পিএসডি | স্থানান্তর ফাংশন | পিএসডি |} </div> ====গণিতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ==== ফ্রিকোয়েন্সি ডোমাইন বা কম্পাঙ্ক সাপেক্ষে সিস্টেমের বিশ্লেষণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সিস্টেমের ঘাত প্রতিক্রিয়া বা ইমপালস রেসপন্স নির্ধারণ করা যায়। [[Image:FreqDomainBlocks.png|thumb|center|500px|চিত্র ১: ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেন সিস্টেম]] :<math>S_{YY}\left(\omega\right)=G^*\left(\omega\right)G\left(\omega\right)S_{XX}= \left | G\left(\omega\right)\right \vert S_{XX}</math><ref>Sun, Jian-Qiao (2006). ''Stochastic Dynamics and Control, Volume 4''. Amsterdam: Elsevier Science. {{ISBN|0444522301}}.</ref> যেখানে, ::<math>S_{XX}\left(\omega\right)</math> হল সিস্টেমের অস্থিতার শক্তি বিভাজন বা পিএসডি, যার একক <math>\frac{magnitude^2}{Hz}</math> ::<math>G\left(\omega\right)</math> হল সিস্টেমের ফাংশন যা কম্পাঙ্ক ক্ষেত্রে (ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইনে) রূপান্তরিত করা হয়েছে। একে ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স ফাংশনও বলা হয় ::<math>S_{YY}\left(\omega\right)</math> আউটপুট ফাংশনের পিএসডি। ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স ফাংশন, <math>G\left(\omega\right)</math>, সিস্টেমের ঘাত প্রতিক্রিয়া বা ইম্পালস্‌ রেসপন্সের সাথে সম্পর্কিত। বিভিন্ন বইয়ে এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। কিছু বই বলে, উপরোক্ত সমীকরণ কেবলমাত্র স্থিতিশীল আকস্মিক (র‍্যান্ডম) প্রক্রিয়ার জন্যই প্রযোজ্য। অন্য কিছু বইতে র‍্যান্ডম প্রক্রিয়া ছাড়াও অন্যান্য কিছু প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে উপরের সমীকরণের প্রযোজ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু বইতে আবার কঠোরভাবে স্থিতিশীল (সমস্ত ক্রমের গাণিতিক গড় অপরিবর্তিত) এবং দুর্বল স্থিতিশীল সিস্টেমের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়না তবে বাস্তব ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যা ধরা হয়, তা হলো: যদি সিস্টেমের ইনপুট সিগন্যালের শক্তি বিভাজন বা পি এস ডি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা দিনের পর দিন একরকম থাকে, তবে সেটিকে স্থিতিশীল সিস্টেম ধরা যায় এবং তখন উপরের সমীকরণটি ব্যবহারযোগ্য ও বৈধ। ==মন্তব্য== <references /> *[http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Frequency_Domain_Modeling উদাহরন সহ সিস্টেম মডেলিং -এর ব্যাখ্যা] ==নকশা প্রস্তুতকরনের উদাহরণ== নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থায় সিস্টেম মডেলিং একটি বিশদ বিচার-বিবেচনার বিষয়। এই বিষয়ে বাস্তবিক জ্ঞান অর্জনের জন্য শুধু লিখিত তথ্য নয় বরং অন্যদের তৈরী সিস্টেম বা যান্ত্রিক মডেল ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করা উচিত, তাহলে অনেক কিছু জানা যায়। কিছু সাইট আছে যেখানে সিস্টেম মডেলিং বা নকশা প্রস্তুতকরনের অনেক বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। এখানে সেরকম কয়েকটি সাইটের লিঙ্ক দেওয়া হল; * [https://web.archive.org/web/20121214093707/http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Helicopter_Hover_Example হেলিকপ্টারের উদাহরণ] * [https://web.archive.org/web/20160325175552/wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Reaction_Cancellation_Example বিক্রিয়া টর্ক] * [https://web.archive.org/web/20150919081842/http://wikis.controltheorypro.com/index.php?title=Category:Examples কন্ট্রোলথেরাপি প্রো ডট কম-এ সকল উদাহরণের তালিকা] ==উৎপাদন== সঠিকভাবে সিস্টেমটির নকশা প্রস্তুত করা হয়ে গেলে আমরা আমাদের সিস্টেমটির একটি প্রাথমিক মডেল তৈরি করতে পারি এবং তার পরীক্ষা করতে পারি। যদি আমরা ধরে নিই যে আমাদের বিশ্লেষণ সঠিক ছিল এবং আমাদের প্রস্তুত করা যান্ত্রিক সিস্টেমের নকশাটি যথোপযুক্ত, তাহলে প্রাথমিক মডেল হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবে তবে তা পরীক্ষা সাপেক্ষ। যদি সিস্টেমের পরীক্ষার ফল ভালো হয় তাহলে আমরা আমাদের সিস্টেমগুলি বাস্তবে তৈরি করার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি। {{Control Systems/Nav|নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/সিস্টেম মেট্রিক্স| নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা/রূপান্তর}} 3k73hl2l0n3sgu44gbz3mog9csoz6z1 জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ 0 26657 84864 83914 2025-06-18T22:36:41Z Mehedi Abedin 7113 84864 wikitext text/x-wiki [[File:Horyu-ji06s3200.jpg|thumb|right|হোরিউ-জির প্যাগোডা]] '''''আসুকা 飛鳥''''' হলো নারা সমভূমির দক্ষিণ প্রান্তের একটি এলাকা, যেখানে জাপানে আদিম গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বেশি উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময়ে সেখানে এখনকার মতো কোনও শহর ছিল না। তবে রাজপ্রাসাদ এবং কিছু বৌদ্ধ মন্দির গড়ে উঠতে থাকে। কেইতাই সম্রাট আসুকার আশেপাশে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী ১৫ জন উত্তরসূরীর মধ্যে ৯ জনেরই প্রাসাদ ছিল এই এলাকায়। নারা শহর তৈরির আগের সময়কালটিকে সাধারণভাবে "আসুকা যুগ" বলা হয়। যদিও নারা ছিল এই সমভূমির প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে। আসুকা যুগ ছিল একটি পরিবর্তন কালীন সময়। সেসময় শাসন চলত সম্রাটের প্রাসাদ থেকে। প্রায় প্রতিটি সম্রাট তার নিজস্ব নতুন প্রাসাদ তৈরি করতেন। দীর্ঘ শাসনকালে প্রাসাদ একাধিকবার স্থানান্তরিত হত। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের আকার ছিল ছোট ও সরল—এমনকি দলিল-দস্তাবেজের সংরক্ষণাগারসহ তা সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল। ৬৪০ সালের দিকে প্রশাসন কিছুটা ভারী হতে শুরু করলে আগের মতো সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল না। পুরোপুরি স্থায়ী রাজধানী এবং প্রাসাদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসুকা যুগের একেবারে শেষ দিকে। তবে পরবর্তী ১০০ বছরে রাজধানী আরও তিনবার সরানো হয়। আরও কয়েকটি স্থানান্তরের প্রস্তাবও উঠেছিল। ==আসুকা যুগ== আসুকা যুগকে প্রধানত দুইটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বে, সোগা বংশের চারজন পরপর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজদরবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: সোগা নো ইনামে 蘇我の稲目, সোগা নো উমাকো 蘇我の馬子, সোগা নো এমিশি 蘇我の蝦夷 এবং সোগা নো ইরুকা 蘇我の入鹿। এই পর্বটি ৫৭২ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সোগা বংশের সহিংস পতনের পর। এই সময় রাজনীতির প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন তেন্‌চি 天智 (বা তেন্‌জি) তেন্নো, তাঁর ভাই তেম্মু 天武 তেন্নো এবং তেম্মুর বিধবা স্ত্রী জিতো 持統 তেন্নো; এই পর্বটি ৬৪৫ থেকে ৬৯২ সাল পর্যন্ত চলে। জিতো যখন তার ছেলে মোম্মু (文武) সম্রাটকে সিংহাসন হস্তান্তর করেন, তখন <i>নিহোন শোকি</i> নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থটির বিবরণ শেষ হয়। <i>কোজিকি</i> গ্রন্থটি ৬২৮ সালে সম্রাজ্ঞী সুইকো (搉古)-এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রথম ধাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন রাজপুত্র উমায়াদো (廐戸। তিনি "শোতোকু তাইশি" (聖徳太子) নামেও পরিচিত ছিলেন। তাকে “পবিত্র রাজপুত্র” বা “জ্ঞানী রাজপুত্র” বলা হত।তিনি সম্ভবতআসুকা যুগের একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নাম আজও প্রতিটি জাপানির কাছে পরিচিত। <i>নিহোন শোকি</i> গ্রন্থের লেখকরা তাঁকে আধুনিক জাপানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজও তিনি জাপানি সংস্কৃতিতে সম্মানীয় অবস্থানে আছেন, ঠিক যেমনভাবে আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটন বা ইংল্যান্ডে আলফ্রেড দ্য গ্রেট সম্মান পান। শোতোকু তাইশির ছবিও জাপানি মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। আসুকা যুগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই সময়ে জাপানে প্রচলিত আদি ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আদি ধর্মটি "শিন্তো" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কিছু জাপানি একচেটিয়াভাবে একটা ধর্মকে সমর্থন করলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উভয় ধর্মকে শ্রদ্ধা করত এবং জীবনের অংশ হিসেবে দুটিকেই অন্তর্ভুক্ত করার উপায় বের করত। সহজভাবে বলা যায়, শিন্‌তো বিয়ের ধর্ম হয়ে ওঠে, আর বৌদ্ধ ধর্ম শেষকৃত্যের ধর্ম। ===জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম=== জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা ঘটে ৫৩৮ সালে। এটি আসুকা যুগের শুরুর তারিখের আগের ঘটনা। ওই বছর পেকচে’র রাজা সং তাঁর রাজধানী পাহাড়ের নিরাপদ কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চল থেকে একটি প্রধান কৃষিভিত্তিক এলাকায় স্থানান্তর করেন। একইসঙ্গে তিনি পেকচের নাম পরিবর্তন করে “সাউদার্ন পুইয়ো” রাখেন, যদিও জাপানি ও চীনারা (এবং আধুনিক ইতিহাসবিদগণ) এটি উপেক্ষা করেন। তাঁর নতুন রাজধানীর স্থানটি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার পুইয়ো শহর (যেটিকে সাম্প্রতিক রোমানাইজেশনের সংস্কারে দক্ষিণ কোরিয়াররা বিভ্রান্তিকরভাবে “বুইয়ো” লিখে। তবে উচ্চারণ “পুইয়ো”)। এই নতুন রাজধানীতে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল একটি কাঠামোবদ্ধ শাসনব্যবস্থা গঠন যা আংশিকভাবে চীনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও তিনি সমসাময়িক কোগুরিও ও শিল্লা-তে চলমান সংস্কার দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাপানের রাজদরবারে দূত পাঠিয়ে বৌদ্ধ প্রতিমা ও ধর্মগ্রন্থ উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন যে এই ধর্ম জাদুকরীভাবে জাতিকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। তবে ওই সময় পেকচে রাজ্যের রাজধানীর বাইরে বৌদ্ধ ধর্মের তেমন কোনো প্রভাব পড়েছিল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ঘটনার প্রায় ২০০ বছর পরে, এক বিখ্যাত রাস্তাঘাটে উপদেশদাতা ভিক্ষুর কার্যক্রমের মাধ্যমে। যেহেতু জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হয়েছিল। তাই ৫৩৮ সালের ঘটনা এবং তার পরিণতি অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। <i>নিহন শোকি</i>-র পাশাপাশি প্রাচীন বৌদ্ধ উৎস থেকে অতিরিক্ত তথ্যও পাওয়া যায়। সংক্ষেপে, সোগা নো ইনামে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পক্ষে মত দেন এবং মনোনোবে 物部 বংশ এটি গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। কারণ এটি স্থানীয় দেবতাদের অবমাননা হিসেবে দেখা হয়। কিম্মেই তেন্নো ইনামেকে তাঁর বাড়িতে একটি ছোট বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি দেন এবং গোপনে উপাসনার সুযোগ দেন। ইনামের এক কন্যা ভিক্ষুণী হন। তবে, ৫৭১ সালে কিম্মেইর মৃত্যু হলে মনোনোবে নতুন শাসক বিদাৎসু-এর কাছ থেকে এই উপাসনালয় ধ্বংস ও ভিক্ষুণীদের গ্রেপ্তারের অনুমতি নেন। <i>নিহন শোকি</i>-তে এই ঘটনার বিবরণ অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেখানে বিদাৎসু তেন্নো ও তাঁর উত্তরসূরি ইয়োমেই তেন্নোর মৃত্যুশয্যায় বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। এটি ৮ম শতকের বৌদ্ধপন্থী মানদণ্ড অনুযায়ী তাঁদের আরও শ্রদ্ধাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা বলে মনে করা হয়। ৫৮৭ সালে সোগা ও মনোনোবে বংশের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়। এটি ইয়োমেইর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের ফলে ঘটে। এই যুদ্ধে সোগা বিজয়ী হয় এবং তখনই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা প্রকৃত অর্থে শুরু হয়। এটি ছিল সোগা বংশের প্রাধান্যের শুরু। প্রথমে এটা বোঝা কঠিন কেন জাপান বা কোরিয়ার যেকোনো রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে আত্মস্থ না করেও বৌদ্ধ ধর্মকে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্মের চেয়ে প্রাধান্য দেবে। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, জাপানে কোরীয় অভিবাসীদের মধ্যে কিছু বৌদ্ধ ছিল। তবে জাপানে এবং কোরিয়ার অন্যান্য রাজ্যেও বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হওয়া ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত, জনতার ইচ্ছা নয়। জাপানি সম্রাটকে বৌদ্ধ ধর্ম উপস্থাপন করার সময় পেকচের রাজা সং বলেন, এই ধর্ম একটি জাদুকরী শক্তি যা জাতিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। প্রাথমিক সময়ে জাপান ও কোরিয়াতে বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার মুক্তি বা আত্মদর্শনের মতো ব্যক্তিগত বার্তার চেয়ে, এর মূর্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের জাদুকরী শক্তির ওপরেই জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে অসুস্থতার সময় মানুষ বৌদ্ধ প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করত। শুরুতেই বৌদ্ধ ধর্মের স্বাগত জানানোর বড় কারণ ছিল কোরিয়া ও বিশেষ করে চীন থেকে আগত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তাঁরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং বাস্তব দক্ষতায় পারদর্শী, বিশেষত স্থাপত্যবিদ্যায়। আসুকা যুগ থেকে শুরু করে নারা যুগ পর্যন্ত জাপানে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প পরিচালিত হয় এসব অভিবাসী সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে। তাঁরা শুধু মন্দির নয়, সেতু ও দুর্গও নির্মাণ করতেন। সাধারণত চীন থেকে যারা জাপানে আসতেন, তাঁদের মধ্যে এরাই ছিলেন প্রধান। চীনা চিন্তাধারা ও প্রযুক্তি জাপানে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও ছিলেন তাঁরা। === সোগা বংশ === সোগা বংশের দাবি করা পূর্বপুরুষ ছিলেন জিংগু কোউগোর কোরিয়া বিজয়ে অংশগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি। এর ফলে তিনি ওজিন রাজবংশের সূচনালগ্নেই যুক্ত ছিলেন। সোগা নামক কোনো ব্যক্তির প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় নবম শতকের একটি গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে যে ওজিন রাজবংশের তৃতীয় শাসক রিচু তেন্নোর সময় কোরীয় অভিবাসীদের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা সংগঠিত করার প্রয়োজন পড়ে। এই উদ্দেশ্যে একটি দ্বিতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা হয় এবং তা তদারকির জন্য একটি নতুন পদ তৈরি করা হয়। ইউর্যাকু তেন্নোর শাসনকালে একটি তৃতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে এবং সোগা নো মাচি নো সুকুনে-কে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষয়গুলো সংগঠিত করার। তিনি একটি তালিকা প্রস্তুত করেন এবং (কোরীয়) হাতা বংশকে একটি সহায়ক ভাণ্ডার পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং (কোরীয়) আয়া বংশকে অন্যটির। ৬৪৫ সালে সোগা বংশ পরাজিত হলে আয়া বংশের সৈন্যরা তাদের পাশে দাঁড়ায়। সোগা বংশ কখনো সামরিক ঘটনায় জড়িত ছিল না, বরং সবসময়ই আর্থিক কার্যক্রম এবং কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৫৫৩ সালে সোগা নো ইনামে শাসকের আদেশে জাহাজ কর নিরীক্ষণের জন্য একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছর পর ইনামে সমুদ্রবন্দর নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেকটি দপ্তর স্থাপন করেন। এতে বোঝা যায়, সোগা বংশ যোদ্ধার চেয়ে প্রশাসক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। কেইতাই তেন্নোর মৃত্যুর পর যে সময়ে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজদরবার ছিল বলে মনে করা হয়, সেই সময়ে সোগা বংশ অত্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। সোগা বংশ কিম্মেই তেন্নোর রাজদরবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ওটোমো বংশ আনকান ও সেনকা নামক বিকল্প শাসকদের সমর্থন করত। সেনকার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় রাজদরবার বিলুপ্ত হলে ওটোমো বংশ রাজনৈতিক প্রভাব হারায় এবং সোগা বংশ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিফলিত হয় ‘সোগা নো ও-ওমি’ নামে সোগা প্রধানের উল্লেখে, যেখানে আগে ‘ও-ওমি’ (大臣) উপাধিটি কেবলমাত্র ওটোমো বংশের জন্যই ব্যবহৃত হতো। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইয়ামাতো রাষ্ট্র সামরিকমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে এক নতুন ধারা গ্রহণ করে। এটি ওজিন রাজবংশের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কেইতাইয়ের শাসনামলে পর্যন্ত বজায় ছিল। উল্লেখ্য, ‘ও-ওমি’ উপাধিটি বুঝতে হবে ‘ও’ (大) অর্থাৎ ‘বড়’ বা ‘মহান’ এবং ‘ওমি’ (臣)। এটি চীনা অক্ষরে লেখা ও ‘রাষ্ট্রের মন্ত্রী’ অর্থে ব্যবহৃত হতো। একই দুটি চীনা অক্ষর চীনা উচ্চারণে ‘দাইজিন’ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আপনি হয়তো এই রূপেও একে অন্যান্য গ্রন্থে দেখতে পারেন। আসুকা ও নারা যুগে এই শব্দগুলো সাধারণত জাপানি উচ্চারণেই উচ্চারিত হতো। তবে হেইয়ান যুগে এবং পরবর্তীকালে সেগুলো চীনা উচ্চারণে ব্যবহৃত হতে থাকে। নবম শতকে হেইয়ান যুগের শুরুতে প্রায় সব অভিজাত ব্যক্তি চীনা পড়তে ও লিখতে পারতেন, অধিকাংশ সরকারি দলিল চীনা ভাষায় লেখা হতো। সরকারের কারিগরি পরিভাষায় চীনা উচ্চারণ ব্যবহারের রীতি শুরু হয় যা এমনকি জাপানি ভাষার বিস্তৃত প্রচলনের পরও চালু থাকে এবং আজও বহাল রয়েছে। আধুনিক জাপানি গদ্যের একটি বড় অংশই চীনা ঋণশব্দে গঠিত। ৫৪৮ থেকে ৫৫৪ সালের মধ্যে কোরিয়ায় সিল্লা সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তারা কোগুর্যো ও পেকচেকে পরাজিত করে। ৫৫৪ সালে পেকচের রাজা সঙ যুদ্ধে নিহত হন এবং কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল পেকচে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে তা টিকে থাকে, যদিও আগের চেয়ে ছোট এবং দুর্বল অবস্থায়। এই সময়ে জাপান কোরিয়ায় ছোট আকারের বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তা সিল্লার মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সিল্লা ৫৬২ সালে মিমানা অঞ্চল পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে। জাপান এরপর একটি বড় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা পরাজিত হয় এবং তাদের নেতারা বন্দি হয়। এরপর থেকে ওটোমো বংশের উল্লেখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজদরবারে প্রধান দুই ব্যক্তি হিসেবে সোগা নো ইনামে এবং মোনোনোবি নো ওকোশির নাম উঠে আসে। এরপর ২০০ বছর ধরে জাপানি রাজদরবার সিল্লাকে আক্রমণ করে মিমানার উপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চিন্তা করে, মাঝে মাঝে বাহিনী ও রসদ সংগ্রহের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো থেকে বিশেষ কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সোগা বংশ সম্ভবত কাজুরাকি বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তারা ওজিন রাজবংশের শুরুতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। ওজিন রাজবংশের কয়েকজন শাসকের মা ছিলেন কাজুরাকি বংশীয়। সোগা বংশ কেইতাই রাজবংশের সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক স্থাপন করে। সোগা নো ইনামে তার দুই কন্যাকে কিম্মেই তেন্নোর সঙ্গে বিয়ে দেন—কিতাশিহিমে ছিলেন ইয়োমেই ও সুইকো তেন্নোর মা (সুইকো ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর বিধবা)। ওয়ানেকিমি ছিলেন সুশুন তেন্নোর মা। উমায়াদো রাজকুমারের দাদী ছিলেন কিতাশিহিমে পিতৃপক্ষ থেকে ও ওয়ানেকিমি মাতৃপক্ষ থেকে। লক্ষ্যণীয়, মোনোনোবি বংশের সামাজিক অবস্থান এ ধরনের সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কাজুরাকি ও সোগা বংশ রাজপরিবারের শাখা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু মোনোনোবি বংশ নয়। মোনোনোবি বংশ উত্তরাধিকারসূত্রে ‘ও-মুরাজি’ (大連) উপাধি ধারণ করত। এটি ওটোমো এবং পরে সোগা বংশের ‘ও-ওমি’ উপাধির সমপর্যায়ে ছিল। এই দুই উপাধিধারী ব্যক্তি সরকারের (যথাসম্ভব) সর্বোচ্চ "মন্ত্রী" হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও ‘ওমি’ বা ‘মুরাজি’ উপাধিধারী পরিবারগুলো ছিল। অধিকাংশ ‘ওমি’ উপাধিধারী পরিবারগুলোর নাম ছিল স্থাননামভিত্তিক। তারা কিনাই অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কাজুরাকি, হেগুরি, ওয়ানি, কোসে, কি এবং পরে সোগা—এইগুলো তার উদাহরণ। এদের বেশিরভাগই রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বংশধর বলে দাবি করত। যদি ‘হোর্স রাইডার’ তত্ত্ব সত্যি হয়। তবে এরা ছিল ওজিনের সম্প্রসারিত পরিবারের সদস্য এবং আগ্রাসী বাহিনীর অংশ। অপরদিকে, ‘মুরাজি’ পরিবারগুলোর নাম ছিল পেশাভিত্তিক। যেমন ইমবে (আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী), ইউকে (ধনুক প্রস্তুতকারী), কাগামিৎসুকুরি (আয়না নির্মাতা), হাজি (মৃৎপাত্র প্রস্তুতকারী), ত্সুমোরি (নিরাপত্তা রক্ষক), ইনুকাই (কুকুর পালক)। অবশ্যই মোনোনোবি (লোহার কাজ)। কৌতূহলজনকভাবে, ‘ও-ওমি’ ওটোমো বংশের নামও একটি পেশাভিত্তিক নাম ছিল। তবে তাদের পেশা ছিল বিশেষ—‘তোমো’ অর্থাৎ ‘সৈনিক’, যার পূর্বে ‘ও’ যুক্ত হওয়ায় বোঝানো হয় যে তারা সাধারণ সৈনিক নয়, বরং কমান্ডার। এই সব বংশই অভিজাত ছিল। তবে ধারণা করা হয় ‘মুরাজি’ পরিবারগুলো ওই পেশার কারিগরদের নেতৃত্ব দিত, নিজেরা সরাসরি সেই কাজ করত না। তবে তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল ‘ওমি’ বংশের চেয়ে কম। তাদের রাজপরিবারে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল। মোনোনোবি বংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত ‘নিগিহায়াহি নো মিকোতো’ ছিলেন এক দেবতার বংশধর। তিনি জিন্মু তেন্নো কর্তৃক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই পৃথিবীতে আগমন করেন। শুরুতে তিনি জিন্মুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে দেবতারা জিন্মুর পক্ষে আছেন। তখন পক্ষ পরিবর্তন করেন। মোনোনোবি নামটি ‘নিহন শোকি’-র সুইনিন তেন্নো এবং চুয়াই তেন্নোর অধ্যায়ে দেখা যায়, যেগুলো ওজিন রাজবংশের আগের। যদি এর কোনো সত্যতা থাকে। তবে মোনোনোবিরা ওজিনের নেতৃত্বে আগমনকারী আগ্রাসীদের আগেই জাপানে অভিজাত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইনগ্যো তেন্নোর মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র রাজকুমার কারু এবং রাজকুমার আনাহো (যিনি পরে আনকো তেন্নো হন)-র মধ্যে উত্তরাধিকারের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মোনোনোবি নো ওমায়ে নো সুকুনে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুরুতে রাজকুমার কারুর সমর্থক ছিলেন। ‘কোজিকি’-র মতে, তিনি কারুকে আনাহোর কাছে তুলে দেন যিনি তাকে হত্যা করেন, আর ‘নিহন শোকি’-র মতে, তিনি রাজকুমার কারুকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন। যেভাবেই হোক, তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই বংশের সদস্যদের নিয়ে অধিকাংশ কাহিনি সামরিক বা অপরাধী দমন সংক্রান্ত। ব্যতিক্রম কিছু থাকলেও, ওটোমো বংশ প্রধানত কোরিয়ায় যুদ্ধ করত, আর মোনোনোবি বংশ প্রধানত জাপানের অভ্যন্তরেই সক্রিয় ছিল। কোরিয়ায় তাদের একমাত্র যুদ্ধ ছিল মিমানায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, সিল্লার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ নয়। আরেকটি পার্থক্য ছিল, মোনোনোবি বংশ ধর্মের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। যেসব বংশ নিজেদের দেবতাদের বংশধর হিসেবে দাবি করত, তাদের নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ছিল। এটি পরবর্তীতে (বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর) ঐ দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতো। সুজিন রাজবংশের প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র মি (臣) পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ইসোনোকামি মন্দির ছিল মোনোনোবি বংশের বিশেষ উপাসনাস্থল। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করা যায়, সোগা নেতারা—অথবা অন্তত সোগা নো উমাকো—জাপানকে আরও সভ্য করে তোলার (অর্থাৎ চীনের মতো করে তোলার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি পেকচে ও কোগুর্যোতে চলমান পরিবর্তনের প্রতিফলন ছিল। এবং ঐ সময়ে ‘চীনের মতো’ হওয়া মানেই ছিল ‘বৌদ্ধ’ হওয়া। দুই বংশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বও এই সংঘাতের পিছনে ছিল। এটি প্রাচীন সময়ে বিরল একটি ঘটনা। জাপানে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে প্রচেষ্টা এই সময়কার ইতিহাসের মূল বিষয়, তার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিমমেইর শাসনামলে চীনের উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলো উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বন্টনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করছিল। এই পরিবর্তনগুলো কোগুরিয়োর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে কোগুরিও এসব তথ্য জাপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কারণ কিমমেইর শাসনের শেষদিকে কোগুরিও এবং জাপানের মধ্যে সিলা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের উত্তর দিয়ে জাপান সাগর অতিক্রম করে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই চীনা রাজবংশগুলো ছিল বর্বর উত্সের এবং প্রবলভাবে অভিজাত শ্রেণিনির্ভর। এটি জাপান এবং কোরিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মতোই। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা ছিল কৃষিজ আয় থেকে কর আদায় সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা, যেখানে প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে পর্যাপ্ত জমি বরাদ্দ দেওয়া হতো যাতে তারা নির্দিষ্ট হারে কর দিতে পারে—ফলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী কর নির্ধারণের জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এড়ানো যেত। এজন্য জনসংখ্যার নিয়মিত জনগণনা করতে হতো এবং যেসব পরিবার ছোট হয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে যেসব পরিবার বড় হয়েছে তাদের দেওয়া হতো। এ ব্যবস্থা তখনকার উত্তর চীনে সম্ভব ছিল, কারণ চীন রাজবংশ পতনের পর বর্বর আক্রমণের ফলে সেখানে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না, যদিও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল যথেষ্ট। কর আদায় হতো কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যার ভিত্তিতে। কোগুরিও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পরে জাপানও অনুসরণ করে। ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা কোগুরিও এবং জাপানে তখনকার প্রচলিত পদ্ধতির খুব ভিন্ন ছিল না, কারণ সেখানে বিদ্যমান কৃষক জনগোষ্ঠী দখল করে অভিজাত শ্রেণি গঠিত হয়েছিল। তবে এটি নিছক অনুমান, কারণ কৃষক ও অভিজাতদের সম্পর্ক সম্পর্কে আমাদের এই সময়ের কিছুই জানা নেই। শুধু “বে” নামক পদ্ধতিতে শিল্পীদের সংগঠিত করার ধরন করভিত্তিক উৎপাদন কোটার ভিত্তিতে পরিচালিত বলেই ধারণা করা যায় যে কৃষকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। এই সময়ে জাপানে কোগুরিয়োর প্রভাব যে ছিল তা প্রমাণ হয় “কোরিয়ো ফুট”-এর সর্বত্র উপস্থিতি থেকে (কোরিয়ো হলো কোগুরিয়োর বিকল্প নাম এবং পরবর্তী কোরিয়ো রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি “Korea” নামটি এসেছে)। এটি ছিল একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক। এটি চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪–৫৫০) নির্ধারণ করেছিল, পরে কোগুরিও তা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকে জাপানে পৌঁছে। এক ফুট বা “শাকু” ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন, এই এককটি জাপানের বহু প্রাচীন স্থাপনার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া আসুকাদেরা (দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির) অন্যতম। কোগুরিও থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হয়, ইশিবুতাই কোফুন (৬২৬ সালে মৃত সোগা নো উমাকোর সমাধি বলে মনে করা হয়) এবং বিদাতসু সম্রাটের পর সকল সম্রাটের কোফুন তৈরিতে কোরিয়ো ফুট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন জাপানি লেখাগুলোতেও বারবার উল্লেখ আছে যে কোগুরিওর আচার-আচরণ, ধর্ম, সংগীত ও নৃত্য জাপানিদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মিলপূর্ণ ছিল। বিশেষত কোগুরিও থেকে আগত নৃত্যশিল্পীরা খুব জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে ছোট আকারের কোফুনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, এতটাই যে বর্তমানে জাপানে টিকে থাকা প্রায় ৯০% কোফুনই এই শেষ কোফুন যুগের ছোট সমাধি। অনেকগুলোই গোলাকৃতি টিলা, প্রায় ১০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট, যেগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামো বড় কোফুনগুলোর মতোই। তবে অনেক কোফুন ছোট ছোট গুহার মতো, যেগুলো পাহাড় বা খাড়ির পাশে খোদাই করে কফিনের সমান আকারে বানানো হয়েছে। এ ধরনের কোফুন সাধারণত গুচ্ছাকারে পাওয়া যায় এবং প্রায়শই কাছাকাছি এলাকায় একই সময়ে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচের ছোট কোফুন পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় পাহাড়ের পাশে এমন অনেক কোফুন পাওয়া গেছে যার সংখ্যা ডজন বা শতাধিক। এ থেকে ধারণা করা যায়, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এই যুগে অনেক বেশি লোককে আলাদা সমাধি নির্মাণযোগ্য মনে করা হতো। রাজাদের ছাড়া আর বড় সমাধি নির্মাণ হতো না। যেহেতু সম্পদ বহুজনের মাঝে ভাগ করতে হতো। তাই প্রতিটি সমাধি ছোট ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হতে বাধ্য ছিল। ধারণা করা হয়, এটি অভিজাত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন নির্দেশ করে—গোত্রপ্রধানের ক্ষমতা হ্রাস এবং গোত্রের সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব জমিজমা ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিক যুগে গোত্রভিত্তিক অভিজাতরা যৌথভাবে গোত্রের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত এবং গোত্রপ্রধান তা বণ্টন করত। কিন্তু ৫৫০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে, যখন গোত্রের সদস্যরা নিজেদের আলাদা জমির ওপর অধিকারে থাকতেন এবং নিজের আয় নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে তারা এখনো সমাধিগুলো একই গোত্র কবরস্থানে তৈরি করতেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়, ফলে সম্মিলিত উপাদান পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। উল্লেখযোগ্য, “ছোট” সমাধি হলেও তাতে বহু টন ওজনের পাথর ব্যবহার করা হতো এবং অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হতো। ৬৪৬ সালের একটি ফরমান অনুযায়ী সমাধির আকার নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল—একজন রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে ৭ দিনে ১০০০ শ্রমিক, মন্ত্রীর জন্য ৫ দিনে ৫০০, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ৩ দিনে ২৫০, মধ্যমপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ১০০ এবং নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ৫০ শ্রমিক নিযুক্ত হবে। <i>নিহন শোকি</i>-তে ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে আগত দূত বন্ধুকে ঘিরে একটি অবিশ্বাস্য গল্প রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তখনকার জাপানি রাজদরবারে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুই দল লেখক ছিল, তারাই শুধু কোগুরিওর রাজার প্রেরিত চীনা ভাষায় চিঠি পড়তে পারত। এই দুই পরিবার ছিল কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে—দুজনেই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে)। যতদূর জানা যায়, ওমি শ্রেণির কোনো জাপানি অভিজাত চীনা ভাষায় পড়া-লেখা শেখার মতো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবেননি, যেমন রেশম বোনা শেখাও অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। এই অবস্থা দুই শতাব্দী ধরে চলেছে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবার শিক্ষিত হতে শুরু করে। ৫৮৫ সালে বিদাতসু সম্রাটের মৃত্যুর পর সোগা এবং মোনোনোবে গোত্রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। কোফুন যুগে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সমাধি নির্মাণে অনেক সময় লাগত—দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত। এসময় মরদেহ একটি অস্থায়ী ভবনে রাখা হতো, যাকে বলা হতো মোগারি নো মিয়া। এখানে মরদেহ স্থাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হতো এবং <i>নিহন শোকি</i> অনুযায়ী এই অনুষ্ঠানে সোগা নো উমাকো এবং মোনোনোবে নো মরিয়া পরস্পরের প্রতি প্রকাশ্যে অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিদাতসুর একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র ছিলেন, যার মা ছিলেন মর্যাদাসম্পন্ন, যার নাম ছিল রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাসকের ভাইয়েরও সিংহাসনের দাবির অধিকার ছিল। কিমমেই সম্রাটের বহু উচ্চস্তরের স্ত্রী ছিলেন, যার মধ্যে সোগা নো ইনামের দুই কন্যাও ছিলেন। নির্বাচিত উত্তরসূরি ছিলেন সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে। তিনি ইয়োমেই সম্রাট হন। বড় ভাই ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ওয়ে এবং আরেক ভাই রাজকুমার আনাহোবেও নিজের উত্তরাধিকারের দাবি জানান। ইয়োমেই রাজা হওয়ার পর আনাহোবে বিদাতসুর রানি কাশিকিয়াহিমেকে জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। তিনি তখন অস্থায়ী সমাধিস্থলে ছিলেন। সমাধির রক্ষী বাহিনীর প্রধান এতে বাধা দেন। এরপর রাজকুমার আনাহোবে সোগা এবং মোনোনোবে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন এবং রক্ষী পদারকে হত্যা করার অনুমতি চান। এটি তাকে দেওয়া হয়। ওই পদার পালানোর চেষ্টা করলেও আনাহোবে তার অবস্থান জেনে মোনোনোবে নো মরিয়াকে তাকে ও তার সন্তানদের হত্যা করতে বলেন। মরিয়া নিজেই তা করেন। সোগা নো উমাকো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। <i>নিহন শোকি</i> অনুসারে, এই ঘটনাই সোগা ও কাশিকিয়াহিমের (পরবর্তীকালে সুইকো সম্রাজ্ঞী) মধ্যে মোনোনোবে নো মরিয়ার প্রতি তীব্র শত্রুতা জন্ম দেয়। ইয়োমেই সম্রাট তেন্নো ৫৮৭ সালে রাজত্ব কাল দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান। তখন আবারও সিংহাসনের প্রশ্ন ওঠে। তার অসুস্থতা কয়েক মাস ধরে চলায় প্রতিযোগীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পায়। আক্রমণের আশঙ্কায় মোরিয়া ইয়ামাতোর বাইরে নিজের দূর্গে সরে গিয়ে সেনা সংগ্রহ শুরু করেন। তখন মোরিয়ার অন্যতম মিত্র ছিলেন নাকাতোমি নো কাতসুমি নো মুরাজি। ''নিহন শোকি'' অনুসারে তিনি ডাকিনীবিদ্যার মাধ্যমে মনোনীত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রাসাদে জাদুকরী বস্তু রাখার উদ্দেশ্যে যান। কিন্তু প্রাসাদ ত্যাগ করার সময় রাজকুমারের এক প্রহরীর হাতে নিহত হন। সবকিছু ইয়োমেইর মৃত্যুর আগেই ঘটে। তাঁর মৃত্যুর অল্প সময়ের মধ্যেই মনোনোব নো মোরিয়া রাজকুমার আনাহোবেকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি উত্তরাধিকার নিয়ে সংঘর্ষের জন্য সৈন্যদের জড়ো করার অজুহাত হিসাবে একটি শিকারের দল করতে চলেছেন। তবে এটি ফাঁস হয়ে যায়। সোগা নো উমাকো সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের আদেশে সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের অবিলম্বে যুবরাজ আনাহোবেকে হত্যার নির্দেশ দেন। তারা এই ধরনের কাজের প্রচলিত সেরা পদ্ধতি হিসেবে রাতের বেলায় তার প্রাসাদে হামলা চালান। এরপর সোগা একটি বড় বাহিনী গঠন করে মরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এতে বহু রাজকুমার, যেমন রাজকুমার হাতসুসেবে (ভবিষ্যতের সুশুন সম্রাট), রাজকুমার উমায়াদো সহ প্রচুর সংখ্যক রাজকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও ইয়ামাতোর প্রায় সমস্ত "ওমি" শ্রেণির আঞ্চলিক উজি সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট অভিজাত উজির দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরিয়া প্রস্তুত ছিলেন, ফলে কোনও গণহত্যা না হয়ে সরাসরি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে পরিণত হয়। ফলাফল কিছু সময়ের জন্য সন্দেহের মধ্যে ছিল। মনোনোবকে সমর্থনকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত গোষ্ঠীগুলি সকলেই ইয়ামাতোর বাইরের গোত্র থেকে ছিল। মনোনোবের বাহিনী ইয়ামাতোর পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। অন্যদিকে সোগার সেনাবাহিনী সম্ভবত আসুকা থেকে শুরু করে আনামুশি গিরিপথ পেরিয়ে একা নদীর কাছে হয়। একা নদীতে মনোনোব সেনাবাহিনী পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই নদীর অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এটি ফুরুচির ঠিক পশ্চিমে আধুনিক ইশি নদী ছিল বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এটি সম্ভবত বর্তমান ইশি নদী। মরিয়ার বাসভবন ছিল শিবুকাওয়াতে। অনুমিত যুদ্ধক্ষেত্রের উত্তর-পশ্চিমে অল্প দূরত্বে। যুবরাজ উমায়াদো তখন তরুণ কেবল তরুণ হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। তিনি সঙ্কটের মুহুর্তে একটি শপথ করেন যে তার পক্ষ বিজয়ী হলে একটি বৌদ্ধ মন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এই কথা শুনে সোগা নো উমাকো নিজেও একই শপথ নেন। এর পরপরই মনোনোব নো মোরিয়া একটি তীরের আঘাতে নিহত হন এবং তার বাহিনী ভেঙে পড়ে। <i>নিহন শোকি</i> জানায়, যুদ্ধস্থলে কয়েক শত লাশ পড়ে ছিল। এটি আরও বলেছে যে মনোনোব বংশের অনেক সদস্য অস্পষ্টতায় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্যরা বংশকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করার কোনও অভিপ্রায় অস্বীকার করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন উপাধি গ্রহণ করেন। আদালত নিঃসন্দেহে ইসোনোকামি বংশ গঠন সহ্য করেছিল। কারণ কেবলমাত্র মানুষের লড়াইয়ের কারণে মনোনোব বংশ প্রতিষ্ঠাকারী দেবতাকে অবহেলা করা অনুচিত হত। তারা ভেবেছি, যে দেবতাদের যথাযথভাবে পূজা করা হত না তারা ক্রুদ্ধ হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করত। মনোনোব বংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমরা ৬০৮ সালে একটি চীনা দূতাবাসের প্রেক্ষাপটে একজন মনোনোব নো ইউকিমি নো মুরাজি একজন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে দেখি। মনোনোবে গোত্র ধ্বংস হয়নি পুরোপুরি—৬০৮ সালে একজন মনোনোবে নো ইউকিমি নো মুরাজিকে চীনা দূতাবন্ধুর প্রেক্ষাপটে পদার হিসেবে দেখা যায়। নামটি পরবর্তীতেও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়। তবে আর কখনও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়নি। ইতিহাসের এই যুগের মূল বিষয় রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জাপানি প্রচেষ্টার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হলো কিম্মেইয়ের সময়েই উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলি উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বণ্টন ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করছিল। চীনের এই বিকাশগুলি কোগুরিওর উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। কোগুরিও জাপানকে এই জাতীয় জিনিস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ কিমেইয়ের রাজত্বের শেষার্ধে কোগুরিও এবং জাপান জাপান জুড়ে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এটি সিলার নিয়ন্ত্রণের অঞ্চলের উত্তরে চলে যায়। এই চীনা রাজবংশগুলি বর্বর বংশোদ্ভূত এবং অত্যন্ত অভিজাত ছিল, অনেকটা জাপান এবং কোরিয়ান রাজ্যগুলির মতো। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থাটি প্রতিটি কৃষক পরিবারকে স্থির কর প্রদানের অনুমতি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে এমন গ্যারান্টি দিয়ে কৃষিকাজ থেকে করের রিটার্নকে সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রতিটি পরিবারকে তাদের জমির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন করের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করার জন্য সমস্ত প্রশাসনিক মাথাব্যথা এবং ব্যয় সাশ্রয় করে। এর জন্য জনসংখ্যার একটি পর্যায়ক্রমিক আদমশুমারি নেওয়া এবং তারপরে আকারে সঙ্কুচিত পরিবারগুলির কাছ থেকে জমি নেওয়া এবং আকারে বেড়ে ওঠা পরিবারগুলিকে জমি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটি করা সম্ভব ছিল কারণ, এই সময়ে উত্তর চীনে সম্ভাব্য আবাদযোগ্য জমির পরিমাণের তুলনায় কৃষি জনশক্তির ঘাটতি ছিল। চিন রাজবংশের পতনের পরে বর্বর আক্রমণের কারণে স্থানচ্যুতির কারণে এই অবস্থা হয়। উপলব্ধ শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতে কর গণনা করা হয়েছিল। কোগুরিও এই সিস্টেমটি অনুলিপি করেছিল এবং জাপানও শেষ পর্যন্ত এটি করেছিল। এটি অনুমান করা হয় যে,এটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান কৃষক জনসংখ্যার বিজয়ের মাধ্যমে অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে কোগুরিও এবং জাপানে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির থেকে আলাদা ছিল না। এটি অনুমান হিসাবে রয়ে গেছে কারণ আমরা এই সময়কালে কৃষক এবং অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানি না, কারিগর শ্রমিকদের সংগঠিত করার "হতে" সিস্টেমটি উত্পাদন কোটার মাধ্যমে করের উপর ভিত্তি করে অনেকটা একের মতো দেখায়, এটি প্রশংসনীয় করে তোলে যে কৃষকরা একইভাবে সংগঠিত হয়েছিল। আমরা জানি যে "কোরিও ফুট" এর সর্বত্র উপস্থিতির কারণে এই সময় থেকে জাপানে কোগুরিওর যথেষ্ট প্রভাব ছিল (কোরিও কোগুরিওর একটি বিকল্প নাম এবং পরবর্তী সময়ের কোরিও রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি নাম "কোরিয়া" এর ভিত্তি)। এটি পরিমাপের একটি ইউনিট ছিল। চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪-৫৫০) কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোগুরিওতে গৃহীত হয়। সেখান থেকে এটি জাপানে চলে যায়। এক ফুট ("শাকু") ৩৫ সেন্টিমিটার ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন যে এই ইউনিটটি দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির (৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু) সহ অনেক প্রাচীন ভবন নির্মাণে নিযুক্ত ছিল। কোগুরিওর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা জাপানে বৌদ্ধধর্মের প্রাথমিক প্রসারে বিশিষ্ট ছিলেন। কোরিও পা স্পষ্টতই ইশিবুতাই কোফুন (সোগা নো উমাকোর নামী সমাধি। তিনি ৬২৬ সালে মারা গিয়েছিলেন) এবং বিদাতসু তেন্নোর সমস্ত রাজকীয় কোফুন স্থাপনেও ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রারম্ভিক জাপানি লেখাগুলিতেও অনেকগুলি উল্লেখ রয়েছে যা মন্তব্য করে যে তারা কোগুরিওকে রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার, (ঐতিহ্যবাহী) ধর্ম এবং সংগীত এবং নৃত্যের ক্ষেত্রে কতটা অনুরূপ বলে মনে করেছিল। কোগুরিওর নৃত্যশিল্পীরা স্পষ্টতই বিশেষত জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক জ্ঞানটি হলো ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতাব্দীর সময়কালে ছোট কোফুনের সংখ্যায় অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানের সমস্ত বেঁচে থাকা কোফুনের প্রায় ৯০% এর মধ্যে প্রায় ৯০% কোফুন যুগের শেষের দিকে ছোট সমাধি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকগুলি প্রায় ১০ মিটার জুড়ে গোলাকার ঢিবি রয়েছে যা একই ধরণের সমাধি কক্ষ যা বড় সমাধিগুলিতে পাওয়া যায়। বিশেষত প্রচুর সংখ্যক সমাধি রয়েছে। সেগুলোকে সাধারণত কফিনের চেয়ে সবেমাত্র বড় পাহাড়ের পাশে ছোট ছোট টানেল চালিয়ে দলবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই এটি একই বয়সের অন্যান্য ছোট কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে নির্মিত কোফুনের কাছাকাছি পাওয়া যায়। ক্লিফসাইড সমাধি সহ কিছু অঞ্চল রয়েছে। সেখানে কয়েক ডজন এবং এমনকি শত শত ছোট উন্মুক্ত স্থায়ী সমাধি রয়েছে। স্বভাবতই এর অর্থ এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে একটি বিস্তৃতভাবে নির্মিত সমাধি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হত। সত্যিই বিশাল সমাধি আর সম্রাটদের জন্য নির্মিত হয়নি। যখন উপলব্ধ সংস্থানগুলি অনেকগুলি জুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে, তখন পৃথক সমাধিগুলি অবশ্যই ছোট এবং কম ব্যয়বহুল হতে হবে। ধারণা করা হয় যে,এটি অভিজাত সমাজের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। অর্থাত এটি বংশ প্রধানের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং বংশের কম সদস্যদের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। একটি চিত্র পাওয়া যায়, প্রথম দিনগুলিতে অভিজাত গোষ্ঠী একটি সম্মিলিত গোষ্ঠী হিসাবে তার অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং বংশের মোট সম্পদ কোনও না কোনও অর্থে বংশের প্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। তবে ৫৫০ এবং তার পরে বংশের সদস্যরা ধীরে ধীরে তুলনামূলকভাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জমিদার এস্টেটের মালিকদের মতো হয়ে উঠেছিলেন। এর মধ্যে তারা তাদের নিজস্ব রাজস্ব নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যাইহোক, তারা এখনও ঘনীভূত বংশের কবরস্থানে তাদের সমাধিগুলি তৈরি করেছিল। তাই সম্মিলিত উপাদানটি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এটি উল্লেখ করা উচিত, যখন আমরা "ছোট" সমাধিগুলির কথা বলি, তখন তারা এখনও বহু-টন শিলাগুলির সংখ্যা নিয়োগ করে এবং নির্মাণের জন্য প্রচুর জনশক্তির প্রয়োজন হয়। সমাধিগুলির স্কেল নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ৬৪৬ এর একটি আদেশ রয়েছে যা কী প্রয়োজন ছিল তার একটি ধারণা দেয়। আদেশে বলা হয়, একজন রাজপুত্রের একটি সমাধি থাকতে হবে যাতে সাত দিনের জন্য ১০০০ শ্রমিক শ্রম দিতে হবে, একজন মন্ত্রীর সমাধি ৫০০ শ্রমিক দিয়ে ৫ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমাধি ২৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ৩ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ১০০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে এবং নিচু পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে। ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে দূতাবাসের আগমন সম্পর্কিত ''নিহন শোকিতে'' একটি বরং অবিশ্বাস্য উপাখ্যান রয়েছে যা চিত্রিত করে যে সেই সময়ে জাপানি আদালতে পূর্ব ও পশ্চিমের লিপিকার নামে পরিচিত লিপিকারদের দুটি কর্পস ছিল এবং কেবল তারাই কোগুরিও রাজার পাঠানো চিঠিটি এবং চীনা ভাষায় লেখা পড়ার আশা করা যেতে পারে। তারা দুটি পরিবার ছিল, কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে, উভয়ই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে ছিল)। যতদূর নির্ধারণ করা যায় যে ওমি শ্রেণীর কোনও উপযুক্ত জাপানি অভিজাত এখনও পর্যন্ত কীভাবে পড়তে এবং লিখতে হয় তা শিখতে পছন্দ করেনি (অগত্যা চীনা ভাষায়), তিনি কীভাবে রেশম বুনতে হয় তা শেখার চেয়ে বেশি পছন্দসই বলে মনে করেননি। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছিল। পরবর্তী প্রজন্মই প্রথম সাক্ষর হয়। সোগা এবং মনোনোব গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ অবিলম্বে ৫৮৫ সালে বিদাতসু তেন্নোর মৃত্যুর থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কোফুন সময়কালে, কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমাধির আকারের কারণে, মৃত্যুর সময় এবং দাফনের মধ্যে প্রায়শই যথেষ্ট বিলম্ব হত, দুই বছর পর্যন্ত, বা এমনকি চরম ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত। এই সময়ে মরদেহটি মোগারি নো মিয়া নামে একটি অস্থায়ী সুবিধায় রাখা হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' মতে, এই স্থানে দেহ স্থাপনের বিষয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল এবং এই অনুষ্ঠান চলাকালীন বিদাতসু তেন্নো সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়া পারস্পরিক অবজ্ঞা প্রকাশ করতে দেখা যায়। উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ ছিল। বিদাতসুর একজন বিশিষ্ট মায়ের সাথে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ছিল যার দৃঢ় দাবি ছিল। ইনি রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ও। যাইহোক, একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রথাও ছিল যে একজন শাসকের ভাইয়ের উত্তরাধিকারের দাবি ছিল এবং বিদাতসুর বেশ কয়েকটি ভাই ছিল। কিম্মেই তেন্নোর সোগা নো ইনামের দুই কন্যা সহ প্রচুর উচ্চ-মর্যাদার স্ত্রী ছিল। নির্বাচিত প্রার্থী আসলে সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে ছিলেন যিনি ইয়োমেই তেন্নো হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় ভাই ছিলেন ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ও, যার মা সেনকা তেন্নোর কন্যা ছিলেন এবং ''নিহন শোকির'' মতে আরেক বিশিষ্ট ভাই রাজকুমার আনাহোবে প্রকাশ্যে নিজের জন্য উত্তরাধিকার দাবি করেন। ইয়োমেই ইতিমধ্যে সিংহাসনে আরোহণ করার পরে যুবরাজ আনাহোবে অস্থায়ী সমাধি এবং বিদাতসুর সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টা করেন। তিনি শেষকৃত্য অবধি সেখানে শোকে বাস করছিলেন, যাকে তিনি সিংহাসনে তার দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। অস্থায়ী সমাধিতে রক্ষীদের কমান্ডার তাকে প্রতিহত করেন। যুবরাজ আনাহোবে তখন দুই মন্ত্রী, সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়ার কাছে গিয়েছিলেন এবং অভিযোগ করেন যে এই কর্মকর্তা তাকে অপমান করেছেন এবং তাকে হত্যা করার অধিকার দাবি করেছেন। এটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। পদার পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজপুত্র তিনি কোথায় ছিলেন (প্রাক্তন সম্রাজ্ঞীর একটি গ্রামীণ প্রাসাদ) তা খুঁজে পেয়েছিলেন এবং মনোনোবে নো মোরিয়াকে তাকে এবং তার সন্তানদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটি মোরিয়া ব্যক্তিগতভাবে করেন। সোগা নো উমাকো এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এই সময় থেকে সোগা নো উমাকো এবং কাশিকিয়াহিমে (ভবিষ্যতের সুইকো তেন্নো) মনোনোব নো মোরিয়ার প্রতি একটি শক্তিশালী শত্রুতা কল্পনা করেন। আগের মতোই উত্তরাধিকারের জন্য বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। যুবরাজ ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়োমেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে মনোনীত করেন এবং [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ|মুরোমাচি পর্বের]] বইয়ে বলা হয়েছে যে তাঁর পুত্র। তিনি জোমেই তেন্নো হয়েছিলেন, ৫৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোগা নো উমাকো পরিবর্তে রাজকুমার হাটসুবেকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সদ্য খুন হওয়া যুবরাজ আনাহোবের ভাই ছিলেন। তবে যিনি শুরু থেকেই সোগার সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন। উভয় রাজপুত্র ছিলেন সোগা নো ইনামের কন্যা ওনেকিমির পুত্র এবং তাই উমাকোর ভাগ্নে। যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরে সুশুন তেন্নো সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুশুন স্পষ্টতই খুব বেশি ব্যক্তিগত ক্ষমতা ছাড়াই ছিল। এটি লক্ষণীয় যে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর কোনও রাজকন্যা ছিল না এবং ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত তাঁর একমাত্র স্ত্রী ছিলেন ওটোমো বংশের। ''নিহন শোকির'' কাছ থেকে বিচার করার জন্য তৎকালীন শাসক বংশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজকন্যা কাশিকিয়াহিমে। তিনি সোগা নো উমাকোকে মনোনোবে নো মোরিয়া আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং যিনি সিংহাসনের জন্য রাজকুমার হাটসুসেবেকে সুপারিশ করেন। প্রায় ৫ বছর সিংহাসনে থাকা সত্ত্বেও ''নিহন শোকিতে'' সুশুনের নিবন্ধটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিনটি বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি ছিল পাইকচে থেকে একটি দূতাবাস যা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং উপকরণ নিয়ে এসেছিল। সোগা নো উমাকো সন্ন্যাসীদের আলোচনায় নিযুক্ত করেন এবং তার বোন ইনামের মেয়ে সহ জাপানি নানদের আরও পড়াশোনার জন্য পায়েচে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারা কোরিয়ায় ২ বছর কাটিয়েছিলেন, ৫৯০ সালে ফিরে আসেন। উমাকো তার মানত করা মন্দির নির্মাণের কাজও শুরু করেন। ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আসুকাদেরায় পরিণত হওয়ার স্থল ভেঙে যায়। ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে উল্লেখ করা হয় যে, অভিজাত পরিবারের বেশ কয়েকজন মহিলা সন্ন্যাসিনী হয়েছিলেন এবং চীন থেকে ৬ জন সন্ন্যাসী দেশে আসেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো "এমিশি" বর্বরদের সাথে সীমান্তের অবস্থা পরিদর্শন করার জন্য উত্তরের তিনটি প্রধান রুট, হোকুরিকুডো, তোসান্দো এবং টোকাইডো বরাবর ৫৮৯ সালে কর্মকর্তাদের প্রেরণ করা হয়েছিল। তৃতীয় বিষয়টি হলো ৫৯১ সালে আদালতে একটি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সিল্লা থেকে মিমানা পুনরুদ্ধার করা দরকার। পাঁচজন সেনাপতি (সমস্ত পুরুষ যারা মোরিয়ার বিরুদ্ধে উমাকোর পক্ষে লড়াই করেন) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ২০,০০০ পুরুষ দেওয়া হয়েছিল। তারা সুকুশি ভ্রমণ করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরিয়া অতিক্রম করেনি। সুশুন মারা গেলে তাদের ইয়ামাতোতে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কোরিয়াকে লক্ষ্য করে ৫৯১ অভিযানের ঠিক এক বছরেরও বেশি সময় পরে, সুশুন তেন্নো একটি শুয়োর শিকারের দলের সময় একটি মন্তব্য করেন যা কাউকে আমন্ত্রণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তিনি যে ব্যক্তির সাথে সমস্যায় পড়েছিলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তাকে অনুগ্রহ করার জন্য। যখন এটি সোগা নো উমাকোকে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে উল্লিখিত ব্যক্তিটি নিজেই ছিলেন। ফলে তিনি সুশনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি পাদটীকা রয়েছে যা বলে যে "একটি বই বলেছে যে" সুশুনের হুমকিমূলক মন্তব্য সম্পর্কে উমাকোর কাছে যে প্রতিবেদনটি শাসকের একজন অসন্তুষ্ট উপপত্নীর কাছ থেকে এসেছিল। উমাকো আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমা নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা অজুহাতে আদালতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এই লোকটি সম্রাটকে হত্যা করেছিল। এরপরে এটি বলে যে সুশুনকে একই দিনে ইতিমধ্যে বিদ্যমান রাজকীয় সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই যুগে তিনিই একমাত্র শাসক যেখানে এটি করা হয়েছিল। সুই রাজবংশের চীনা ইতিহাস অনুসারে। এটি জাপান সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ রয়েছে, প্রথাটি ছিল যে একজন আভিজাত্যকে কেবল তিন বছর পর্যন্ত শোকের পরে হস্তক্ষেপ করা হত এবং একজন সাধারণকে তার মৃত্যুর দিন সূর্যাস্তের আগে সমাধিস্থ করা আবশ্যক। সুশুনকে সাধারণের কবর দেওয়া হয়েছিল, মনে হয়। ''নিহন শোকির'' এই ঘটনার কভারেজ আমার চেয়ে বেশি নয় এবং সুশুন কেন উমাকোকে নির্মূল করতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই বলে না। এতে হত্যাকাণ্ডের পরিণতি বা এ বিষয়ে কারও প্রতিক্রিয়ার কোনো আভাসও উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র অতিরিক্ত উপাদান হলো একটি অদ্ভুত বিবৃতি যে আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমার উমাকোর এক কন্যার সাথে গোপন সম্পর্ক ছিল যিনি সুশুনের উপপত্নী ছিলেন এবং তাকে তার স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করেন। উমাকো প্রথমে এ বিষয়ে সচেতন ছিল না, ভেবেছিল যে মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে সে কোমাকে হত্যা করেছে। উপস্থাপিত হিসাবে এটি বোঝায় যে এটি না থাকলে কোমা বিনা শাস্তিতে হত। বিশ্বাস করতেই হবে যে, সুশুনের হত্যাকাণ্ডকে হত্যা নয়, ন্যায়সঙ্গত কারণে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিম্মেইকে অনুসরণ করা তিনজন শাসক সকলেই কিম্মেইয়ের পুত্র ছিলেন। তবে ভাইদের সরবরাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখননাতির দলটির দিকে তাকাতে হবে। বরাবরের মতোই ছিল বিদাতসু তেন্নোর ছেলে ওশিসাকা নো হিকোহিতো। রাজকুমার তাকেদাও ছিলেন। তিনি বিদাতসুর এক পুত্র এবং যার মা ছিলেন শক্তিশালী কাশিকিয়াহিমে। এরপরে ছিল ইয়োমেই তেন্নোর জ্যেষ্ঠ পুত্র উমায়াদো। উমায়াদোর বয়স তখন ১৯। তাকেদার বয়স জানা যায়নি। তবে তার একটি ছোট বোন ছিল যিনি ইতিমধ্যে উমায়াদোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হিকোহিতো সম্ভবত ইতিমধ্যে বেশ বৃদ্ধ ছিলেন এবং স্পষ্টতই বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না। অন্য সব সম্ভাবনা অবশ্যই খুব কম ছিল। ''নিহন শোকি'' আমাদের কোনও বিতর্ক বা আলোচনা সম্পর্কে ঠিক কিছুই বলেন না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, শেষ পর্যন্ত কাশিকিয়াহিমে নিজেই সিংহাসন গ্রহণ করেন, সুইকো তেন্নো হয়ে ওঠেন। তিনিই প্রথম শাসক (হিমিকো এবং আইয়োর পরে) যিনি মহিলা ছিলেন। যেহেতু সুইকো মহিলা সার্বভৌমদের একটি দীর্ঘ তালিকার প্রথম ছিল। তাই এটি অবশ্যই স্পষ্ট যে এটি সম্ভব করার জন্য অবশ্যই কিছু পরিবর্তন করা উচিত। তবে উত্সগুলি কী হতে পারে সে সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলার নেই। প্রাচীনকালে ছয়জন ভিন্ন মহিলা তেন্নো হিসাবে কাজ করেন (টোকুগাওয়া যুগে আরও বেশি ছিল)। তাদের মধ্যে দু'জন বিভিন্ন রাজত্বের নামে দু'বার রাজত্ব করেন, মোট ৮ টি রাজত্ব করেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় প্রথম চারজন ইতিমধ্যে সম্রাজ্ঞী (একটি তেন্নোর বিধবা) ছিলেন। এগুলিকে স্থান ধারক হিসাবে দেখা সহজ, পুত্র বা নাতির রাজত্ব করার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে মহিলা তেন্নোর ব্যবহার বন্ধ করার পরে দ্রুত এই নীতিটি পরিত্যাগ করা হয়েছিল যে কোনও শিশুকে সিংহাসনে বসানো সম্ভব নয়। একটি স্থানধারক ছাড়া, আপনি অপেক্ষা করতে পারবেন না। সুইকোর ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে সিংহাসন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার পুত্র রাজকুমার তাকেদা দ্বারা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলেন। সোগা নো উমাকোর সিদ্ধান্ত এড়ানোর যথেষ্ট কারণ ছিল। তার ভাগ্নে সুশুনকে সিংহাসনে বসিয়ে এবং তার সাথে একটি কন্যাকে বিয়ে দিয়ে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই দ্বিতীয় সুযোগের ব্যবস্থা করার জন্য তার কিছুটা সময় প্রয়োজন। তার একটি অতিরিক্ত কন্যা ছিল যাকে তিনি যুবরাজ উমায়াদোর সাথে বিয়ে করেন। তবে এটি তাকে সম্ভাব্য শাসক নাতির সাথে উপস্থাপন করতে চলেছে কিনা তা বলা খুব তাড়াতাড়ি ছিল। তবে, এটি আমাদের জানায় না যে এখানে নতুন কী ছিল। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি কেন? ওজিন রাজবংশের সময় দুটি পরিস্থিতি ছিল যখন পরবর্তী শাসক কে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একটি অন্তর্বর্তী পরিস্থিতি ছিল এবং উভয় ক্ষেত্রেই শাসক বংশের একজন মহিলা সদস্য শাসকের আনুষ্ঠানিক উপাধি গ্রহণ না করেই বিষয়গুলির সভাপতিত্ব করেন। আগেকার যুগে শাসকের স্ত্রীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাদের সবাইকে কেবল কিসাকি বলা হত। তার পিতার মর্যাদা থেকে উদ্ভূত কেবল অন্তর্নিহিত মর্যাদা ছিল। এটি অবশ্যই তার সন্তানরা উত্তরাধিকারের জন্য বিবেচিত হওয়ার যোগ্য কিনা তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। যাইহোক, আদালত চালানো আরও বড় এবং জটিল হয়ে ওঠার সাথে সাথে কিম্মেইয়ের সময়ে এটি পরিবর্তন হতে শুরু করে। আদালতের সাথে সংযুক্ত পদারদের একটি বিশেষ দল এসেছিল যারা মনোনীত যুবরাজের পরিবার পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিল। তিনি ও-ওমি এবং ও-মুরাজির পাশাপাশি এক ধরণের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং সম্রাটের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এর অর্থ হলো অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, রাজস্বের নির্দিষ্ট উত্সগুলি রাজপুত্র এবং স্ত্রীদের ভরণপোষণের জন্য বরাদ্দ করা হবে এবং এই একজনকে আরও বেশি এবং সেই ব্যক্তিকে কম বরাদ্দ করে মর্যাদা চিহ্নিত করার স্পষ্ট সুযোগ ছিল। সুইকোর রাজত্বকালে লেখা একটি বই রয়েছে যা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে সুইকোর আগে সমস্ত স্ত্রী কেবল "কিসাকি" ছিলেন। বিদাতসুর স্ত্রী থাকাকালীন তাকে "ও-কিসাকি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি কিসাকি থেকে একইভাবে ও-মুরাজি মুরাজি থেকে আলাদা। অন্য কথায়, তিনি কেবল একজন উপপত্নী ছিলেন না, সম্রাজ্ঞী ছিলেন। বিদাতসুর রাজত্বকালে কিসাইবে নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কিসাকিবের একটি সংকোচন। এর অর্থ কৃষকদের একটি ইউনিট যা একটি নির্দিষ্ট কিসাকিকে সমর্থন করার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। "ব্যক্তিগত হও" বা "ব্যক্তিগত হও" হিসাবে সর্বোত্তমভাবে অনুবাদ করা অক্ষর দিয়ে লেখা হয় তবে কিসাকিবে উচ্চারণ করা হয় তা চীনা প্রভাবের ফলাফল। চীনে সম্রাট ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার অবস্থানের সবকিছুই ছিল 'প্রকাশ্য'। যাইহোক, সম্রাজ্ঞী একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এখনও একটি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেন, রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত নয়। তার নিজের সম্পত্তি থাকতে পারত এবং ছিল। এটি তার পরিবার বা সম্রাটের কাছ থেকে উপহার দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। জাপানি কেসটি আলাদা ছিল, রাষ্ট্রীয় সংস্থানগুলি অর্পণ করে। এটি এখনও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে পরিচালিত হয়, কিসাকিতে। সুতরাং, আগের কিসাকির বিপরীতে, কাশিকিয়াহিমে এমন কর্মকর্তা ছিলেন যারা তাকে রিপোর্ট করেন এবং যে সংস্থানগুলি তিনি ব্যয় করতে পারেন। তিনি একজন খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে বিদাতসুর মৃত্যুর পরের পর্বে যখন যুবরাজ আনাহোবে তাকে অপহরণ ও বিয়ে করার চেষ্টা করেন, যে পদার তাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি কাশিকিয়াহিমের একটি গ্রামীণ প্রাসাদে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন, সম্ভবত তার সমর্থনের জন্য একটি অবস্থানের স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল। তিনি নিঃসন্দেহে এমন একজন কর্মকর্তা ছিলেন যিনি বিশেষভাবে তার সেবায় নিবেদিত ছিলেন। সম্রাজ্ঞীর এই অতিরিক্ত গুরুত্ব পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল, এমনকি সেই সময়েও যখন তারা তেন্নো হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সুইকোর রাজত্বকালে এবং তার পরে যা ঘটেছিল তার মধ্যে একটি ছিল যে অন্য সবার তুলনায় শাসকের মর্যাদা ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য একটি বড় প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং শাসকের মর্যাদা বাড়ার সাথে সাথে তার স্ত্রীদের। বিশেষত তার সম্রাজ্ঞী, তার উত্তরাধিকারীর মা। সম্রাজ্ঞীকে স্ত্রী হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে জীবিত সম্রাটের মা হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে মৃত সম্রাটের মা হিসাবে এবং আরও অনেক কিছু নির্দেশ করার জন্য চীনা থেকে নেওয়া উপাধিগুলির একটি সিরিজ দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। যেহেতু সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত হওয়ার অধিকারী বেশ কয়েকটি জীবিত মহিলা থাকতে পারে। তাই তাদের সকলকে আলাদা করার জন্য পর্যাপ্ত উপাধি থাকা দরকার ছিল। হেইয়ান যুগে, যখন মহিলারা আর তেন্নো হতে পারত না, একাধিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল কারণ একজন সম্রাজ্ঞী তার নিজের খেয়ালখুশিতে উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। একজন সম্রাজ্ঞী যিনি দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন সম্রাটের মা ছিলেন, যদি তার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা থাকে তবে তিনি যথেষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। === শোতোকু তাইশি === [[Image:Prince Shotoku with Two Princes by Kano Osanobu 1842.png|thumb|right|''তোহন মিয়েই'', রাজকুমার শোতোকু এবং তার দুই ছেলের প্রতিকৃতি]] <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে সুইকো তেন্নো সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের একেবারে শুরুতেই উমায়াদো নো তোয়োতোমিমিকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাস্টনের অনুবাদে বলা হয়েছে, "সে জন্ম নেওয়ার সাথেসাথেই কথা বলতে পারত। এতটাই প্রজ্ঞাবান ছিল যে দশজন লোকের মামলা একসাথে শুনে নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারত। সে আগে থেকেই জানত কী ঘটতে চলেছে।" সে শুধু উত্তরসূরি হিসেবেই নিযুক্ত হয়নি, বরং "সরকারের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ন্যস্ত ছিল এবং প্রশাসনের সকল বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।" <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যে কাহিনি বলার চেষ্টা করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন এই ব্যক্তি। তাঁকে বৌদ্ধ ও কনফুসীয় দর্শনে পারদর্শী এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের প্রথম ইতিহাস (যেটি টিকে নেই)। তাঁর আবির্ভাব থেকেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-এর লেখকদের দৃষ্টিকোণে আধুনিক জাপানের ইতিহাস শুরু হয়। মধ্যযুগে তাঁকে একজন বৌদ্ধ সাধু হিসেবে গণ্য করা হতো। আধুনিক কালে ১৮৮৫ সালে চালু হওয়া সংবিধানিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক সন্ন্যাসী হিসেবে বিবেচিত হন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যাঁর রচয়িতা বলে মনে করে সেই "সতেরো অনুচ্ছেদের সংবিধান" জাপানের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক দলিল হয়ে ওঠে। "যুবরাজ" শব্দটির ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তির ভিত্তিতে আপত্তি জানানো হয়েছে, কারণ এই সময়ে এই উপাধিটি উত্তরাধিকার নির্ধারণে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করত বলে মনে হয় না। তবে, এই পদবির মাধ্যমে নির্বাচিত রাজপুত্রকে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। এটাও মনে করা যেতে পারে যে, যেখানে তেন্নো সমগ্র জাতির শাসক হিসেবে দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিলেন, সেখানে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শাসক বংশের পক্ষে একপ্রকার দলের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন, যেমন সোগা এবং অন্যান্য বংশপ্রধানেরা তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন। পুরো নারা যুগজুড়ে এবং প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগেও রাজপুত্রদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং স্পষ্ট ছিল যে, সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর ক্ষমতা অন্যান্য অভিজাত বংশগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সাধারণত তেন্নো নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, সবসময়ই একজন "জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র" থাকতেন। তেন্নো-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী তাঁর অনেক স্থানে যাওয়া এবং অনেকের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। এই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। একজন নারী শাসকের জন্য এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর ছিল, ফলে তাঁর না থাকতে পারা সভায় পরিবারের একজন বিশ্বস্ত সদস্যের উপস্থিতি থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। তবে, এই বিষয়গুলো থেকেই ক্ষমতার উৎস বোঝা যায় না। ক্ষমতার অবস্থান সবসময়ই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল। তাই মনে করার কোনও কারণ নেই যে, সুইকো ওই সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন না। রাজকুমার উমায়াদোর বাবা-মা দুজনেই শাসক বংশের সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর পিতৃকুলের দাদি ছিলেন সোগা কিতাশিহিমে এবং মাতৃকুলের দাদি সোগা ওআনেকিমি—দুজনেই সোগা নো ইনামির কন্যা এবং সোগা নো উমাকোর বোন। তাঁর চারজন স্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়, যাঁদের একজন ছিলেন উমাকোর কন্যা। ৬০০ সালে একটি জাপানি দূতাবিদ দল চীনের স্যুই রাজবংশে গিয়েছিল এবং স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে "ওয়া"-র রাজা পরিবারের নাম ছিল আমে (অর্থাৎ স্বর্গ) এবং তাঁর ব্যক্তিগত নাম ছিল তরাশিহিকো। এটি চীনা অক্ষরে শব্দভিত্তিকভাবে লেখা হয়েছে। "তরাশি" ছিল এই সময়ে শাসকদের আনুষ্ঠানিক নামের সাধারণ উপাদান এবং সম্ভবত "শাসক" অর্থে ব্যবহৃত হতো। "হিকো" একটি নির্দিষ্ট পুরুষ নাম উপাদান, যার নারীস্বরূপ "হিমে"। ফলে মনে হয় এই পরিচিতিটি স্যুইকো তেন্নোর নয় বরং রাজকুমার উমায়াদোর। যদিও সম্ভব যে চীনাদের জানা ছিল না যে "ওয়া"-র রাজা একজন নারী (অথবা জাপানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা গোপন রেখেছিল)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে উমাকো এবং উমায়াদোর মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তাঁরা উভয়েই প্রাদেশিক অভিজাতদের তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রয়োজনে একমত ছিলেন এবং এ লক্ষ্যে শাসকের তাত্ত্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাসাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো সভাসদদের প্রকৃত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা উভয়েই চীনা সাহিত্যের পাণ্ডিত্যে পারদর্শী ছিলেন এবং অন্তত একটি বইয়ে সহযোগিতা করেন। ৫৮৯ সালে স্যুই রাজবংশের দ্বারা চীনের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ৫৮১ সালে উত্তরাঞ্চলের নর্দার্ন ঝৌ রাজবংশে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দক্ষিণাঞ্চল জয় করে একীকরণ সম্পন্ন করে। পেকচে ৫৮১ সাল থেকে এবং শিলা অন্তত ৫৯৪ সাল থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগে ছিল। ৬০০ সালে স্যুইকো রাজদরবার শিলায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল এবং একই বছর পঞ্চম শতাব্দীর পর প্রথমবারের মতো চীনে দূত পাঠানো হয়। যদিও <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই মিশনের সাফল্যের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা রয়েছে, এই বাহিনী কোরিয়ায় বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি এবং ৬০২ সালে একটি দ্বিতীয় ও বৃহৎ অভিযান পরিকল্পিত হয়। লক্ষণীয় যে এই বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন রাজকুমার কুমে, রাজকুমার উমায়াদোর ভাই, কোনও ঐতিহ্যবাহী সামরিক উজি সদস্য নয়। এটি কে প্রমাণ হিসেবে ধরা হয় যে এই প্রকল্পটি উমাকোর নয় বরং উমায়াদোর উদ্যোগে ছিল। এছাড়া, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে এই বাহিনী গঠিত হবে "কানতোমো" থেকে, যার মধ্যে ছিল ধর্মীয় দায়িত্বে নিয়োজিত ইম্বে ও নাকাতোমি বংশ, পাশাপাশি "কুনি নো মিয়াতসুকো" ও "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রা। অর্থাৎ কোনও "ওমি" শ্রেণির বংশ এতে অংশ নেয়নি। সমস্ত যোদ্ধা শাসক বংশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বংশ ও প্রাদেশিক অভিজাতদের মধ্য থেকে আসবে। এটি সম্ভবত এমন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা সরাসরি শাসকের প্রতি অনুগত থাকবে, বরং ঐতিহ্যগত বংশের মিলিশিয়ার বিকল্প হবে। এই বিশ্লেষণ সত্য হলে, ৬০২ সালে রাজকুমার উমায়াদোর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, প্রকল্পটি সফল হয়নি। বাহিনী কিউশুতে একত্রিত হওয়ার পর রাজকুমার কুমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক মাস পরে মারা যান। শোতোকু তাইশির ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি পরবর্তী গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজকুমার ধারণা করেন শিলা এজেন্টরা রাজকুমার কুমেকে হত্যা করেছে। এরপর তাঁর আরেক ভাই রাজকুমার তাকিমাকে বাহিনীর নেতৃত্বে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কিউশুর উদ্দেশে রওনা হন। পথে তাঁর স্ত্রী মারা যান এবং রাজকুমার ইয়ামাটোতে ফিরে আসেন, কিউশু আর পৌঁছাননি। বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও কেউ কেউ মনে করেন যে, কিউশুতে একটি বৃহৎ বাহিনী একত্রিত করাই শিলার ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে জাপান কূটনৈতিকভাবে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল। এই লক্ষ্য ছিল নিয়মিত "খাজনা" বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য, কারণ অনেক বিলাসপণ্য আমদানি করতে হতো। শিলা যখনই জাপানের ওপর অসন্তুষ্ট হতো, তখনই বাণিজ্য বন্ধ করে দিত, আর জাপান যুদ্ধের হুমকি দিত। ৬১০ সালে শিলা থেকে আসা একটি দূতাবিদের অভ্যর্থনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দূতদল স্যুইকোর আসুকার প্রাসাদের মূল হলের সামনে উঠানে জড়ো হয়। প্রত্যেক দূতের সঙ্গে এক একজন জাপানি অভিজাত নিযুক্ত ছিলেন যাঁরা তাঁদের সহায়তা ও সম্ভবত অনুবাদের কাজ করতেন। চারজন প্রধান মন্ত্রী তাঁদের স্বাগত জানান। যখন দূতরা শিলার রাজা কর্তৃক প্রেরিত সরকারি চিঠি পড়তে যান, তখন সোগা নো উমাকো হলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের কথা শুনে ফেরার পর তেন্নোকে রিপোর্ট করেন। রাজকুমার উমায়াদোর উপস্থিতির উল্লেখ নেই। তিনি যদি সম্পৃক্ত থাকতেনও। তবে পুরো সময়টি প্রাসাদের ভেতরেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যাবে, হয়তো তিনি তখন আসুকায় ছিলেন না। রাজকুমার তাকিমার কোরিয়া অভিযান বাতিল হওয়ার পরপরই, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে আদালতে "টুপি পদবী" নামে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এই পদ্ধতির বাস্তবতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই, কারণ এটি স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ আছে। চীনা দরবারে এমন একটি ব্যবস্থা ছিল। কোরিয়ার সব রাজ্যেও অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। জাপানি ব্যবস্থা বিশেষত কোগুরিও-র ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। বাইরের প্রকাশ ছিল কর্তব্যরত অবস্থায় কর্মকর্তা যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিধান করবেন, যাতে পদবীর পরিচয় বহন করবে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল এমন এক র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করা। এটি শাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। পূর্বে বিদ্যমান কাবানে পদগুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী ও বংশগত। এগুলো থেকে ব্যক্তিগত মর্যাদা স্পষ্ট হতো না। সেগুলো ছিল সম্পূর্ণরূপে গোত্রভিত্তিক, কোনও ব্যক্তির মর্যাদা নির্দেশ করত না। নতুন ব্যবস্থা ছিল বিশেষভাবে আদালতের পদবী এবং সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিভিত্তিক। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাসাদীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অভিজাতদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। টুপিগুলোর কোনও নমুনা আজ আর বিদ্যমান নেই। তবে কয়েকজন ব্যক্তিকে যে পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তার উল্লেখ আছে। কুরাতসুকুরি (স্যাডলমেকার) নো তোরি নামে এক খ্যাতনামা বৌদ্ধভক্ত। তিনি আসুকায় হোকোজি বৌদ্ধমন্দিরের প্রধান হল নির্মাণ করেন, তাঁকে স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রথম তিনটি পদমর্যাদায় নিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির নাম আমাদের জানা আছে। একজন যিনি প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন, তাঁর মর্যাদা সোগা নো উমাকো এবং শিলার দূতাবিদকে স্বাগত জানানো "চার মন্ত্রী"-র তুলনায় অনেক নিচে ছিল। ফলে ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র অপেক্ষাকৃত সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য ছিল, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য নয়। কিছু পণ্ডিত পরবর্তী দশকে চালু হওয়া বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার জন্য বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং ধারণা করা হয়, এখানে সর্বোচ্চ পদ ছিল <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় চালু থাকা ব্যবস্থায় জ্যেষ্ঠ চতুর্থ শ্রেণির সমতুল্য। এই স্তরটিই ছিল উচ্চ অভিজাতদের সাথে সাধারণ কর্মকর্তাদের বিভাজনের রেখা। কেবলমাত্র অভিজাত শ্রেণির শীর্ষ স্তরের সদস্যরাই তৃতীয় শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব মর্যাদা পেতেন। পরের বছর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে সব মন্ত্রীর জন্যও বিশেষ টুপি ডিজাইন করা হয়েছিল। একটি কাহিনিতে বলা হয়েছে ৬৪৩ সালে সোগা নো এমেশি অবসর নেওয়ার সময় তিনি নিজ হাতে মন্ত্রীর টুপি তাঁর পুত্র ইরুকার হাতে তুলে দেন। সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ৬০৭ সালে পায়কচে সুই রাজবংশে দূত পাঠিয়ে কোরিয়ার উপর চীনের আক্রমণের পরামর্শ দেয়। ইয়াং-তি পায়কচের সাথে যৌথ অভিযান প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর ফলে কোরিয়ায় একটি বিশাল পরিবর্তনের সময়শৃঙ্খলা শুরু হয়। জাপানও ৬০৭ সালে একটি দূতাবাস পাঠায়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘সুই ইতিহাস’ রাজকুমার উমায়াদো—"তারাশিহিকো"—কে 'ওয়া'র রাজা হিসেবে গণ্য করেছে। ইয়াং-তির কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছিল জাপানি শুনেছে যে সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে আগ্রহী এবং তারা চীনে পাঠিয়ে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ পাঠাতে চায় পাঠচর্চার উদ্দেশ্যে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে দূতদলের মধ্যে এমন একজন অভিবাসী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চীনা ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারতেন। চীনা রিপোর্ট অনুসারে, চিঠিতে রয়েছে ঐতিহাসিক বাক্য: “সূর্যোদয় দেশের সম্রাট, সূর্যাস্ত দেশের সম্রাটকে এই চিঠি প্রেরণ করছেন।” ইয়াং-তি সমতার ধারণা পছন্দ করেননি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি প্রথম সংকেত যে, জাপানের চাহিদা ছিল চীন চীন দেশে তাদের নাম 'ওয়া' না বলে 'নিহোন' হিসেবে জানুক। প্রকৃত নির্বাহীকরণ দেখা যায় ৬৪৮ সালে ট্যাং রাজবংশে প্রেরিত দূতাবাসের চীনা বিবরণে “日本” প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে। বিরক্ত সত্ত্বেও, ইয়াং-তি প্রতীয়মান দেশের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধ পরিকল্পনা করছিলেন। অবিলম্বে একটি চীনা দূতাবাস জাপানে পাঠানো হয়। এই বিনিময়েই জাপান প্রথমবার একটি উপযুক্ত চীনা শব্দ বেছে নেয় শাসককে উল্লেখ করার জন্য। প্রাথমিক নথিতে “大王” ব্যবহৃত হত, সম্ভবত "ওকিমি" উচ্চারণে। তবে দূতাবাস কাল নাগাদ চীনাদের সাথে সমতামূলক শিরোনাম ব্যবহার অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছিল। উচ্চারণ ও উপাধি বিষয় বিবেচনা করে "天皇" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি সম্রাটের উচ্চ মর্যাদার প্রতীক; চীনা ‘হুয়াংদি’ যা সমান মর্যাদার প্রতীক। জাপানি উচ্চারণে “সুমেরা মিকোতো”—যার বাংলা অর্থ 'সর্বোচ্চ শাসক'। চীনা চিঠিতেও এটি লক্ষ করা গেল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬২৮ ও অন্যান্য লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। সুইকর সময়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হতো সুমেরা মিকোতো। তবে আধুনিক জাপানে এটি 'তেন্নো' নামে পরিচিতি লাভ করে। ৬০৮ সালের দূতাবাস দেখে চীনারা এটি কে 'জাপানের হুয়াং' বা সর্বোচ্চ সম্মানিত সার্বভৌম হিসেবে মনেছেন; অ্যাস্টন এ এটি অনুবাদ করেছেন "সার্বভৌম". মোট চারটি দূতাবাস পাঠানো হয় উল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে। শেষ দূতাবাস প্রেরণের সময় সুই রাজবংশ ইতিমধ্যেই পতনের দিকে ঝুঁকছিল। জাপানি দূতরা নিরাপদে ফিরতে বিপাকে পড়েন। তার ১৬ বছর পর পুনরায় কোনো বিনিময় হয়নি। এখানে স্পষ্ট যে, চীন জাপানে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল—অসভ্য উচ্চাভিলাষ সহ্য করলেও তারা চেষ্টা করছে দেশে এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যত সম্ভব জানতে। এটি তাদের কোরিয়া নিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। তবে ট্যাংও কোরিয়ায় উচ্চাভিলাসী ছিল। অস্বীকার বা রাজবংশ পরিবর্তনের কারণে চীনের সাথে সম্পর্ক বন্ধ করা জাপানের স্বার্থে বাধ্যতামূলক ছিল না। এক মতামত বলছে, রাজকুমার উমায়াদোর রাজনীতির অর্ধ-অবসর ৬০৫ সালের পর এই দূতাবাস উদ্যোগগুলোর প্রসার প্রধান ব্যক্তি ছিলেন এবং অন্য কেউ ততটা ভাবতেন না। ৬২০ সালে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> রিপোর্ট করে যে, রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা নো উমাকো একত্রে “সম্রাটদের ইতিহাস, দেশের ইতিহাস। ওমি, মুরাজি, টোমো নো মিয়াতসুকো, কুনি নো মিয়াতসুকো, ১৮০ বে এবং মুক্ত প্রজাদের মৌলিক রেকর্ড” তৈরি করেন। যদি প্রকৃতপক্ষে এ সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। তবে এটি অমূল্য হত। কিন্তু একমাত্র একটি কপি ছিল এবং ৬৪৫ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জাপানের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে, কারণ ঐ ঐতিহাসিক কাজ তা অবশ্যই তুলে ধরত। আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে, ৬০২ সালে পায়কচে ভিক্ষু কানরোক প্রথমবার চীনা পদ্ধতিতে একটি বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে জাপানে। এরপর ৬০১ সালের ভিত্তিতে উমায়াদো ২১টি ৬০-বছরের চাকার ভিত্তিতে ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পিছিয়ে তার শাসকের বংশানুক্রম নির্ধারণ করেন। বর্ষপঞ্জির সেই চক্রের বিশেষ জ্যোতিষ্কীয় গুরুত্ব উপস্থাপন চীনা থেকে নেওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে রাজকুমার উমায়াদো ৬২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু যেকোনো জাপানি ঐতিহাসিক তালিকা জানায় এটি ঘটেছিল ৬২২ সালে। এই অংশে মুখ্য অনেক তারিখ এক বছর ভিন্ন। কেন তা এমন তা নিয়ে কোনো তত্ত্ব নেই। বিকল্প সূত্র একটি প্রাচীন জীবনী ভিত্তিক। এটি বছর ও মাসের দিন ভাগে পৃথক। জাপানিরা সেই দ্বিতীয় তারিখ মেনে নিতে উৎসাহী। এই সূত্রগুলোর একটি হচ্ছে আসুকা যুগের হোর্যুজি বৌদ্ধ মূর্তির উপচর্চা–যাতে খোদাই করা হয়েছে যে তার মা মৃত হন সুইকোর ২৯তম বর্ষের ১২তম মাসে (৬২১)। পরের মাসে তিনি অসুস্থ হন। প্রধান স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় মাসের ১১ তারিখে মারা যান (৬২২)। রাজকুমার মারা যান দ্বিতীয় মাসের ২২ তারিখে। তিনজন একই সমাধিতে দাফন হন। তাঁর বয়স ছিল ৪৯। সমাধি ইকারুগা থেকে ২০ কিমি দূরে, বিডাতসু ও ইয়োমেইএর সমাধির কাছে অবস্থিত। পরে সুইকো ও কোটোকুর সমাধি একই এলাকায় নির্মিত হয়েছে। প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে Shotoku Taishi প্রাচীন কাল থেকেই একজন অত্যুৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে সন্মানিত ছিলেন—প্রাথমিক কারণ ছিল বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৌদ্ধধর্ম ৮ম শতক পর্যন্ত রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কেবল অনুমোদিত ছিল এবং একারণে অনেকেই সন্দিহানে ছিলেন। তবে রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা উমাকো ব্যক্তিগতভাবে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং উমায়াদো এর কয়েকটি প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইকারুগা প্রাসাদের আশেপাশে মন্দিরগুলোর একটি ক্লাস্টার—বিশেষ করে হোর্যুজি। এটি ৬৭০ সালে আগুনে ধ্বংসের পর পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং জাপানের প্রাচীনতম কাঠের নির্মাণ। এটি ছিল উমায়াদোর ব্যক্তিগত মন্দির, তখন পরিচিত Ikarugadera, “ইকারুগা মন্দির” নামে। তিনি প্রথম জাপানি হিসেবে বই রচনার কারণে অর্থবহ ভূমিকাও রেখেছিলেন। ১৪শ শতক থেকে, তিনি সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা জাপানের ১৮৬৮ সালের পর ক্ষমতা লাভ করে। প্রতিটি জাপানি স্কুলছাত্র <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র ১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান অধ্যয়ন করতো। তবুও কেউ ২০শ শতাব্দীর সামরিক কর্তৃত্ববাদীদের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেনি; তাঁর মর্যাদা এখনও অনন্য উচ্চে রয়েছে। ৬২৩ সালে মিমানা থেকে শিলে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে কোরিয়ায় আক্রমণের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এটি ২০ বছরের বিরতি পর ঘটে। দরবারের কর্মকর্তারা দ্বিখণ্ডিত হন। এক পক্ষ, যার মুখপাত্র তানাকা নো ওমি, মিমানা যথার্থ ব্যবহারের তদন্তের জন্য দূত প্রেরণে সমর্থন করে; অন্য পক্ষ, যে নেতৃস্থানীয় হচ্ছেন নাকাতোমি নো কুনি নো মুরাজি, সেনাবাহিনী প্রেরণের পক্ষে, শিলেকে বের করে মিমানাকে পায়কচের নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তরের দিকে ধাবিত করেন। অবশেষে দূত প্রেরিত হয় এবং শিলা একটি দূতাবাস পাঠায় প্রস্তাব নিয়ে। পুরোনো ব্যবস্থা অনুযায়ী মিমানা নামমাত্র শুল্ক দিবে। শিলা ও জাপানি কর্মকর্তাদের একটি দল মিমানায় যান চুক্তি সম্পাদনের জন্য। কিন্তু তারা ফিরে আসার আগে বড় একটা জাপানি সেনাবাহিনী করণীয়ভাবে কোরিয়ায় প্রেরিত হয় সাকাাইবে নো ওমি ওমারোর নেতৃত্বে। তিনি সম্ভবত সোওগা উমাকোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে দূতরা বারংবার যাননি এবং সবকিছু লড়াই ছাড়াই নিষ্পত্তি হয়েছে। কোরিয়ার জাপানি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। এরপর চুক্তি হয়েছে যে যতবার জাপান দূতাবাস শিলায় যাবে, তারা আগমনের সময় দুইটি আনুষ্ঠানিক নৌকায় স্বাগত জানাবে—একটি শিলার জন্য এবং অন্যটি মিমানার জন্য। মিমানায় একটি সেনাবাহিনী এবং একই সময়ে কূটনৈতিক আলোচনা করা কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। সম্ভবত দরবারে দুটি পক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করছিল। ৬২৩ সালে একটি জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃক সংঘটিত প্রদর্শনী হত্যাকাণ্ডের (কুড়াল দিয়ে হত্যাকাণ্ড!) পরে, আদালত ধর্মীয় ব্যবস্থার উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং একটি (বৌদ্ধ) ধর্ম দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়, প্রধান পদগুলো ভিক্ষুদের জন্য নির্ধারিত হয়। এর ফলে একটি আনুষ্ঠানিক জনগণনা নেওয়া হয় এবং রিপোর্ট করা হয় যে দেশে ৪৬টি মন্দির, ৮১৬ জন ভিক্ষু এবং ৫৬৯ জন ভিক্ষুনী রয়েছে। == "তাইকা সংস্কার" == ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে সোওগা-নো উমাকো মারা যান এবং ৬২৮-এ ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় স্যুইকো সম্রাজ্ঞীর। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘটনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়। উমায়াদো, উমাকো ও স্যুইকোর মৃত্যুতে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যুর ঠিক আগে উমাকো স্যুইকোর কাছে অনুরোধ করেন যেন কাজুরাকি আগাতা তার হাতে দেওয়া হয়, কারণ এটি ছিল তার বংশের প্রাচীন নিবাস। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ছয়টি আগাতার একটি। এটি সরাসরি শাসকের ব্যয়ের উৎস ছিল। স্যুইকো এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এই দাবি মেনে নেওয়া হতো, তাহলে সোওগা বংশ একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এটি অন্য সব সোওগাদের থেকে স্বাধীন হতো। এই কৌশলই পরে নাকাতোমি-নো কামাতারির জন্য প্রয়োগ করা হয়; তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের একটি নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি শুধুই বয়স্ক উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা হারানোর একটি দৃষ্টান্ত এবং তার দাবি অযৌক্তিক ছিল। পরবর্তী সম্রাট ছিলেন বিদাতসু সম্রাটের পৌত্র ও দুর্ভাগাপ্রাপ্ত রাজপুত্র ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হন। স্যুইকোর মৃত্যুর কয়েক মাস পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোওগা-নো এমিশি, উমাকোর জ্যেষ্ঠপুত্র, তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এমিশি সিনিয়র কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জানান যে স্যুইকো দুই সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর কথা বলেছিলেন — রাজপুত্র তামুরা এবং রাজপুত্র উমায়াদোর পুত্র, রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে — এবং তাদের উভয়কেই বলেছিলেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ না করেন। তার নিজের পুত্র, রাজপুত্র তাকেদা, এর আগেই মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার সমাধিতে সমাহিত হওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এমিশির বিবরণে বোঝা যায় যে স্যুইকো রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন। কিন্তু স্পষ্ট করে কাউকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেননি। অধিকাংশ সদস্য রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন, যদিও কেউ কেউ রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়েকেও সমর্থন করেন, ফলে এমিশি সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি করেন। দুই রাজপুত্রই বংশগতভাবে সমান এবং বয়সেও প্রায় সমান ছিলেন। রাজপুত্র তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং ধারণা করা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের বয়সও অনুরূপ ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে জোর দিয়ে বলেন যে স্যুইকো তাকে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে তিনি এমিশিকে মিথ্যাবাদী বলেন। অবশেষে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; এক প্রতিপক্ষ কর্মকর্তাকে এমিশি হত্যা করেন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজপুত্র তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই সম্রাট নামে পরিচিত হন। এমিশি রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করার একটি সুস্পষ্ট কারণ ছিল — তার প্রধান স্ত্রী ছিলেন সোওগা-নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয়, তিনি ইতোমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, জন্ম দিয়েছেন। অন্যদিকে, বলা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হয়তো এমিশি ভেবেছিলেন তামুরার সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। জোমেইর অভিষেকে আরও এক তরুণ রাজপুত্র সামনে আসেন — নাকা-নো ওয়ে। জোমেইর সম্রাজ্ঞী ছিলেন না সোওগা-নো হোতে-নো ইরাতসুমে, বরং ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর নাতনি রাজকন্যা তাকারা। তিনি নাকা-নো ওয়ের মা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই সম্রাট সংক্রান্ত অংশটি সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যবর্জিত। উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হলো: ৬৩০ ও ৬৩২ সালে তাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে দূতাবিনিময়। চীনে ২৪ বছর অবস্থানকারী এক শিক্ষার্থী এই সময় দেশে ফেরেন। অপর একজন, তাকামুকু-নো কুরামারো, ৩০ বছর পর ৬৪৪ সালে দেশে ফিরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধ। এছাড়া জোমেই তার প্রাসাদ দুইবার স্থানান্তর করেন; প্রথমবার আগুন লাগার কারণে, দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে। এটি দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধাজনক ছিল। এই সময় কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ধারণা করা হয়, শাসকের প্রাসাদ রাজধানীতে রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছিল। এই শাসনামলে একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে প্রবীণতম জীবিত রাজপুত্র এমিশিকে ধমক দেন, কারণ মন্ত্রীরা যথাযথভাবে সভায় হাজির হচ্ছিলেন না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারত। কিন্তু এমিশি সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরবর্তী সময়ে রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময়সূচি নির্ধারণের রীতি চালু হয়। নতুন প্রাসাদ স্থানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ হয়। এটি কোনো শাসকের দ্বারা নির্মিত প্রথম মন্দির হিসেবে পরিচিত। জোমেই ৬৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন, কোনো উত্তরাধিকারী মনোনয়ন না করেই। তার উত্তরসূরি হন তার সম্রাজ্ঞী। তিনি দ্বিতীয় নারী সম্রাট হিসেবে পরিচিত হন কোগিয়োকু সম্রাজ্ঞী নামে (তার দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল সাইমেই সম্রাজ্ঞী হিসেবে)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই উত্তরণের বিষয়ে কিছুই বলে না। এখানে দুইজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন — রাজপুত্র ফুরুহিতো ও রাজপুত্র নাকা-নো ওয়ে, উভয়েই সম্রাটের সন্তান। তবে ভিন্ন মাতার গর্ভজাত। নাকা-নো ওয়ে ছিলেন সম্রাজ্ঞীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী (জাপানি গণনায়, আমাদের হিসেবে ১৫ বছর), সিংহাসনের জন্য কিছুটা তরুণ। তখনও শিশুদের সিংহাসনে বসানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে অনুমান করা যায়, কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি কারণ ছিল তার পুত্রকে ভবিষ্যতে সিংহাসনে বসানো। ফুরুহিতোর মর্যাদা কম হলেও, বয়সে তিনি নাকা-নো ওয়ের চেয়ে বড় ছিলেন, যদিও তার সঠিক বয়স জানা যায় না। কয়েক বছরের মধ্যে নাকা-নো ওয়ে ফুরুহিতোর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং তখন তার বয়স ২০ বছরের বেশি ছিল। এ ছাড়া রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের কথাও ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি থাকায় কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে ঘটেছিল। এটি সম্ভাব্য কারণ, কারণ সোওগা-নো এমিশি ছিলেন এমন ব্যক্তি। তিনি ঐকমত্য ছাড়া কিছু করতেন না। প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা করা যায় না। নতুন সম্রাজ্ঞীর বয়স তখন ৪৯। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগিয়োকুর শাসনকালকে সোওগা বংশের পতনের সূচনার সময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জোমেইর শাসনকালে সোওগা-নো এমিশির নেতৃত্বে সব কিছু মসৃণভাবে চলছিল। তিনি আদালতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে কোগিয়োকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা কার্যত সোওগা নেতৃত্বে তাকে অতিক্রম করে এবং পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন হয়ে ওঠে। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তিনি শৈশবে অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তিনি স্বেচ্ছাচারী, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে ওঠেন। তিনি শত্রু সৃষ্টি করতেন এবং এতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং নিজের ইচ্ছামতো এগিয়ে যেতেন। উমায়াদো, উমাকো এবং সুইকোর মৃত্যুর মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করা স্পষ্ট হয়ে যায়। মৃত্যুর কিছু আগে উমাকো সোগা দাবি করেন যে কাজুরাকি আগাতা তার বংশের প্রাচীন আবাসস্থান ছিল এবং সে কারণে তা তার মালিকানায় নেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন সুইকোর কাছে। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ৬টি আগাতার একটি, যেগুলো সরাসরি শাসকের ব্যয় নির্বাহ করত। সুইকো তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এটি অনুমোদিত হতো। তবে সোগা কাজুরাকি বংশের নাম পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করতে পারতেন। এতে করে তার বংশধররা অন্যান্য সোগাদের থেকে স্বাধীন একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন। এইরকমই পরে করা হয়েছিল নাকাতোমি নো কামাতারির ক্ষেত্রে, যখন মৃত্যুর পর তার পুত্রদের নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি ছিল একজন বৃদ্ধ উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে এমন কিছু চাওয়ার চেষ্টা। এটি কখনোই বাস্তবায়নযোগ্য ছিল না। পরবর্তী শাসক ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর নাতি এবং দুর্ভাগা রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হয়েছিলেন। তবে সইকোর মৃত্যুর পর কয়েক মাস পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। উমাকোর জ্যেষ্ঠ পুত্র সোগা নো এমিশি তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবশেষে এমিশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি সভা আহ্বান করে বলেন, সুইকো রাজকুমার তামুরা ও রাজকুমার ইয়ামাশিরো নো ওয়ে (রাজকুমার উমায়াদোর পুত্র) ।এই দুইজনকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং উভয়ের সাথেই সাক্ষাৎ করে অনুরোধ করেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই না করে। তার নিজের পুত্র রাজকুমার তাকেদা আগেই মারা গিয়েছিলেন। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার কবরেই তাকে সমাধিস্থ করা হোক। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র মতে, এমিশির বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি রাজকুমার তামুরার প্রতি স্যুইকোর পক্ষপাত দেখান। তবে কাউকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয়নি। অধিকাংশ সদস্য তামুরার পক্ষে থাকলেও কিছুজন ইয়ামাশিরো নো ওয়ের পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে এমিশি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সভা মুলতবি করেন। উভয় রাজপুত্র বংশগত ও বয়সের দিক থেকে সমান ছিলেন—তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং অনুমান করা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়েরও বয়স একইরকম। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেয়, যেখানে বলা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়ে দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে স্যুইকো তাকে ব্যক্তিগতভাবে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় তিনি সোগা নো এমিশিকে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেন। শেষ পর্যন্ত সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; একজন বিরোধী কর্মকর্তা এমিশির হাতে নিহত হন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজকুমার তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই তেন্নো নামে পরিচিত হন। তামুরাকে সমর্থন করার জন্য এমিশির স্পষ্ট কারণ ছিল—তামুরার প্রধান পত্নী ছিলেন সোগা নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয় যে তিনি ইতিমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, প্রসব করেন। অন্যদিকে, উল্লেখযোগ্য যে ইয়ামাশিরো নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হতে পারে এমিশি মনে করেন তামুরার সাথে তার সম্পর্ক আরও সদ্ভাবপূর্ণ হবে। জোমেইর সিংহাসনে আরোহণের ফলে এক তরুণ রাজপুত্র, নাকা নো ওয়ে, প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও জোমেইর রানী ছিলেন না সোগা নো হোতে নো ইরাতসুমে, বরং ছিলেন রাজকুমারেস তাকারা—ওশিসাকা নো হিকোহিতোর নাতনী এবং নাকা নো ওয়ে ছিলেন তারই পুত্র। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই তেন্নোর শাসনকাল নিয়ে খুব অল্প এবং অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। শুধু দুটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ৬৩০ এবং ৬৩২ সালে তাং রাজবংশের সঙ্গে দূতাবিনিময়। একজন শিক্ষার্থী যিনি ২৪ বছর ধরে চীনে ছিলেন, তিনি এই সময়ে দেশে ফিরে আসেন। আরেকজন, তাকামুকু নো কুরামারো, ৩০ বছর পরে ৬৪৪ সালে ফিরে আসেন এবং একজন মহা সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হন। দ্বিতীয় প্রধান ঘটনা হলো ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে প্রথম সীমানা যুদ্ধের নথিভুক্তি। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে জোমেই দুইবার তার রাজপ্রাসাদ স্থানান্তর করেন—প্রথমবার আগুন লাগার পরে এবং দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে, যেখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়। এটি ছিল বড় আকারের নির্মাণকাজের সূচনা। মনে করা হয়, শাসকের প্রাসাদ তখন রাজধানী নগরীতে রূপান্তরের পথে ছিল। তার শাসনকালের একটি গল্পে বলা হয়, জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক রাজপুত্র এমিশিকে ভর্ৎসনা করে বলেন যে, মন্ত্রীরা এবং কর্মকর্তারা আদালতে ঠিকভাবে উপস্থিত হন না। তাদের সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি একটি ঘণ্টার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এমিশি এই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরে, রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময় নির্ধারিত হয়। নতুন প্রাসাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল একটি বৌদ্ধ মন্দির—প্রথম যেটি কোনো শাসক কর্তৃক নির্মিত হয়। ৬৪১ সালে জোমেই কোনো উত্তরাধিকারী নিযুক্ত না করেই মারা যান। তার উত্তরসূরি হন তার রানী। তিনি দ্বিতীয় নারী তেন্নো হিসেবে কোগ্যোকু তেন্নো নামে পরিচিত হন (পরে তিনি সাইমেই তেন্নো হিসেবেও শাসন করেন)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে কিছুই বলে না যে কীভাবে এটি ঘটল। এখানে দুইজন সুস্পষ্ট প্রার্থী ছিলেন—ফুরুহিতো এবং নাকা নো ওয়ে। তারা সম্রাটের দুই ভিন্ন স্ত্রী থেকে জন্মগ্রহণ করেন। নাকা নো ওয়ে ছিলেন রানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। কিন্তু তখন তার বয়স মাত্র ১৬ (জাপানি হিসেবে; আমাদের হিসাবে ১৫)—এমন একজনকে সিংহাসনে বসানো তখনও প্রচলিত ছিল না। তাই একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি উদ্দেশ্য ছিল তার পুত্র নাকা নো ওয়ের জন্য ভবিষ্যতে সিংহাসন সংরক্ষণ করা। ফুরুহিতোর অবস্থান ছিল নিচু। কিন্তু বয়স নিশ্চিতভাবেই বেশি ছিল। কয়েক বছর পর নাকা নো ওয়ে ফুরুহিতোর এক কন্যাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স অবশ্যই ২০-এর বেশি ছিল। অন্যদিকে, ইয়ামাশিরো নো ওয়ে-কে ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন প্রার্থীর উপস্থিতি দেখায় যে, কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের পেছনে একটি কারণ ছিল—শীর্ষ অভিজাতদের মধ্যে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। এটি যুক্তিযুক্ত, কারণ সোগা নো এমিশি এমন একজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি সম্মতি ছাড়া কিছু করতেন না। নির্ভরযোগ্য প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। নতুন তেন্নোর বয়স তখন ৪৯ বছর ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগ্যোকুর শাসনকালের বর্ণনা প্রধানত সোগা বংশের পতনের দিকে কেন্দ্রীভূত। জোমেই শাসনকালে সবকিছু সোগা নো এমিশির তত্ত্বাবধানে মসৃণভাবে চলছিল বলে মনে হয়। তিনি বাকি গুরুত্বপূর্ণ দরবারিদের সঙ্গে ভালোই মিশতেন। কিন্তু কোগ্যোকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা তাকে সরিয়ে রেখে কার্যত সোগা বংশের প্রধান হয়ে ওঠেন—এবং এটাই ছিল একেবারে ভিন্ন ঘটনা। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে তিনি একজন অকালপক্ব ও মেধাবী শিশু ছিলেন। তিনি বড় হয়ে ওঠেন একগুঁয়ে, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি অবজ্ঞাশীল ব্যক্তি হিসেবে। তিনি শত্রু তৈরি করতেন এবং এতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হতেন না। এটি খুশি তাই করতেন। প্রথম ঘটনাটি হলো ৬৪২ সালে সোগা নো এমিশি নিজের ও তার পুত্রের জন্য কোফুন নির্মাণের বিবরণ। বলা হয়, তিনি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেন, যেন তিনি দেশের শাসক; এমনকি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের জমির লোকদেরও নিযুক্ত করেন। ইয়ামাশিরো নো ওয়ের বোন প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরের বছর এমিশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ব-উদ্যোগে দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি নিজেই একটি মন্ত্রীর টুপি তৈরি করে তা পুত্র ইরুকাকে দেন এবং ইরুকা ও-ওমি হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরুকা ষড়যন্ত্র শুরু করেন, যাতে ইয়ামাশিরো নো ওয়েকে উত্তরাধিকার থেকে সরিয়ে ফুরুহিতো নো ওয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একটি ফুটনোটে বলা হয়েছে, "অন্য একটি বই" বলেছে যে ইরুকা নিজেই সিংহাসনে বসার কথা চিন্তা করেন। ও-ওমি হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে, ইরুকা ইকারুগা প্রাসাদ আক্রমণের জন্য সৈন্য পাঠান। প্রাসাদ ধ্বংস হয়। তবে ইয়ামাশিরো নো ওয়ে এবং তার পরিবার পাহাড়ে পালিয়ে বাঁচেন। কিন্তু তাদের কোন সম্পদ না থাকায়, শেষে সবাই আত্মহত্যা করেন। সোগা নো এমিশি যখন এটি শুনেন, তিনি ইরুকাকে "মূর্খ" বলে ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, তুমি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের সাথে যা করেছ, অন্যরাও তোমার সাথে তাই করতে পারে। এটি ৬৪৩ সালের শেষদিকে ঘটে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এরপর বলে যে ইরুকার অভ্যুত্থানে নাকাতোমি নো কামাকো নো মুরাজি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং নিজ দায়িত্বে রাজবংশের জীবিত রাজপুত্রদের মধ্যে একজনকে সমর্থনের জন্য ঐক্য গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য যে ৬৪১ সালে কোগুরিয়োতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে স্বৈরশাসক অধিকাংশ অভিজাতকে হত্যা করেন। জাপানি অভিজাতদের এই ঘটনার বিষয়ে না জানার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি ইরুকার বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। নাকাতোমি সন্দেহ করেন যে রাজকুমার নাকা নো ওয়ে একজন ভালো নেতা হতে পারেন। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচিত না থাকায় একটি ফুটবল খেলার সময় তার সাথে পরিচয় ঘটান এবং দ্রুত তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যাতে তারা নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং সন্দেহ না জাগে, তারা উভয়ে কনফুসিয়ান দর্শন ও চীনা ভাষার পাঠে ভর্তি হন এবং একসাথে যাতায়াত করতেন। তাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল ইরুকাকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সোগা বংশের মধ্যেই সহযোগী খোঁজা। এই উদ্দেশ্যে নাকা নো ওয়ে সোগা বংশের একজন কন্যাকে বিয়ে করেন। এই মিত্রতা ছিল সোগা নো কুরোয়ামাদা নো ইশিকাওামারোর সঙ্গে। তিনি সোগা নো এমিশির ভাইপো ছিলেন। তার শাখা রাজপরিবারের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখে এবং তার তিন কন্যা শাসকদের বিয়ে করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইরুকাকে আদালতেই হত্যা করার একটি জটিল পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। যখন সময় আসে, ইরুকার ওপর আক্রমণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন রাজকুমার নাকা নো ওয়ে নিজেই তার তরবারি বের করে ইরুকাকে আঘাত করেন। ঘটনাটি তেন্নো (নাকা নো ওয়ের মা)-র উপস্থিতিতে ঘটে এবং রাজকুমার তাকে বলেন যে ইরুকা রাজবংশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। এরপর ইরুকার মরদেহ সৌজন্য সহকারে এমিশির কাছে পাঠানো হয়। তারা একদিন সময় নিয়েছিল সোগা নো এমিশির ওপর আক্রমণের জন্য সৈন্য জড়ো করতে, যুদ্ধে অংশ নেয় বহু রাজপুত্রের বাহিনী। এমিশি তার পক্ষে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজপুত্রের বাহিনী পৌঁছানোর পর এমিশির অধিকাংশ লোক তাকে পরিত্যাগ করে। নিজের পরিণতি অনুধাবন করে এমিশি ইতিহাসের সেই পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলেন যা সোগা নো উমাকো এবং রাজপুত্র উমায়াদো তৈরি করেন এবং যা তার কাছে ছিল, যদিও একজন লেখক সেই পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ অন্তত উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং তা নাকা নো ওএর কাছে হস্তান্তর করেন। এসব ঘটনার সময় নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন ৩১ বছর বয়সী এবং নাকা নো ওএ ছিলেন ১৯ বছর বয়সী। রাজপুত্র ফুরুহিতো নো ওএ ছিলেন নাকা নো ওএর (সৎ) বড় ভাই। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে, নাকাটোমি নো কামাকো নাকা নো ওএ-কে পরামর্শ দেন যে নিজের বড় ভাইয়ের আগে সিংহাসনে আরোহণ করা অনুচিত হবে। তাই তিনি প্রস্তাব দেন রাজপুত্র কারু। তিনি কোগিওকু তেন্নোর ভাই, তাকে সিংহাসনে বসানো হোক। সেটাই বাস্তবায়িত হয়। তিনি হলেন কোটোকু তেন্নো। কোগিওকু তার পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো সম্রাটের পদত্যাগ। এটি পরে নিয়মিত ঘটনার রূপ পায়। আরেকটি প্রথম ঘটনা হিসেবে, যার পুনরাবৃত্তি পরে বহুবার হয়েছে, রাজপুত্র ফুরুহিতো প্রকাশ্যে উত্তরাধিকার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে একটি প্রত্যন্ত মন্দিরে অবসর নিয়ে। এসমস্ত ঘটনা, রাজপুত্র কারুর আনুষ্ঠানিক সিংহাসনে আরোহণসহ, ঘটে সোগা নো এমিশির মৃত্যুর পরদিন। নতুন শাসন ব্যবস্থা কোনো সময় নষ্ট না করেই জানিয়ে দেয় যে পরিবর্তন আসন্ন। প্রাচীন উপাধি ও-ওমি ও ও-মুরাজি বিলুপ্ত করা হয় এবং তার পরিবর্তে নতুন উপাধি হিদারি নো ওমাচিগিমি এবং মিগি নো ওমাচিগিমি প্রবর্তন করা হয়, যেগুলো ইংরেজিতে সাধারণত চীনা উচ্চারণে সাদাইজিন (বামমন্ত্রী) ও উদাইজিন (ডানমন্ত্রী) নামে পরিচিত, যেখানে বাম মানে সিনিয়র এবং ডান মানে জুনিয়র। আবে নো ওমি নো কুওয়ারামারো প্রথম পদে এবং সোগা নো ওমি নো ইশিকাওয়ামারো দ্বিতীয় পদে নিয়োগ পান। নাকাটোমি নো কামাকো পান অপেক্ষাকৃত ছোট একটি উপাধি – উচিনোওমি বা নাইজিন। এটি পরে নাইদাইজিন নামে পরিচিত হয় এবং নারা যুগে উদাইজিনের পর তৃতীয় অবস্থানে ছিল। নতুন মন্ত্রীদের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাউন রাজকুমারের নিচে রাখা হয়। এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক মর্যাদাক্রম ছিল না। উচিনোওমি উপাধি প্যেকচে সরকারের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" এবং <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এটি বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে নাকাটোমি নো কামাকো প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ পাবেন, পদোন্নতি ও পদাবনতি সহ। তিনি যে অভ্যন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা হলো প্রাসাদের কাজের অভ্যন্তর। "মহামন্ত্রীরা" নীতিগত বিষয়ে মনোনিবেশ করবেন। কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণের পাঁচ দিন পর প্রাসাদের সব কর্মকর্তাদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উপরের পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করা হয়। সম্রাট, অবসরপ্রাপ্ত সম্রাজ্ঞী এবং ক্রাউন রাজকুমার সবাই উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের সম্রাটের ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতার শপথ করানো হয়। এ সময়ই তাইকা শাসনামলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত ধারাবাহিকভাবে রাজাদেশ জারি হতে থাকে, যেগুলো শুধু প্রাসাদ নয়, পুরো দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এই সময় থেকে শতকের শেষ পর্যন্ত ঘটা প্রায় প্রতিটি ঘটনার ওপরই গবেষকদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু লিখেছি, যেগুলো <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র উপর ভিত্তি করে, তা সম্পূর্ণ ভুল। বিশেষভাবে, কিছু দাবি করা হয় যে ইরুকার হত্যাকাণ্ড এবং কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ছিল না, বরং নাকা নো ওএ ছিলেন প্রচলিত "সিনিয়র রাজকুমার" মাত্র, যাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক সংবিধান অনুসারে থাকা প্রয়োজন ছিল। নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন মধ্যম স্তরের এক কর্মকর্তা যার কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। পুরো তার বিদ্রোহে ভূমিকা রাখার কাহিনী সাজানো হয়েছিল, কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় তার বংশধরেরা ক্ষমতাশালী ছিল। কোনো "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" পদ ছিল না। তাইকা শাসনামল ছিল না, এমনকি কোনো সংস্কার রাজাদেশও জারি হয়নি। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ অবশ্য তুলনামূলকভাবে মাঝামাঝি অবস্থান নেন। কিন্তু খুব কমই আছেন যারা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র সবকিছু যাচাই-বাছাই ছাড়া মেনে নেন। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> দাবি করে যে আমরা এখন যে শাসন ব্যবস্থা দেখছি, সেটির উৎপত্তি এই সময়েই ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রচারমূলক রচনা। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে কিছু পরিপূরক প্রমাণও রয়েছে—অষ্টম শতকের অন্যান্য কিছু বই যেগুলো সরকারি কমিটির মাধ্যমে লেখা হয়নি এবং এমনকি অল্প সংখ্যক প্রকৃত সরকারি নথিপত্রও আছে, যেমন কর বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের চিহ্ন। স্থানীয় প্রশাসনের জন্য প্রদেশ/জেলা পদ্ধতির সূচনার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অন্যান্য বইতেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ এত বেশি যে এসব কিছু পুরোপুরি বানানো বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। লেখকরা বইটি প্রকাশের মাত্র ৭৫ বছর আগের ঘটনা লিখেছেন। তাদের পিতামহ বা পিতারা এসব ঘটনার অংশ ছিলেন এবং পাঠকদেরও পূর্বপুরুষেরা তাতে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে, পঞ্চম শতকের বিষয়ে লেখার তুলনায় এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জনের সুযোগ অনেক কম ছিল। তবে, আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে এই বিবরণ নিছক নিরপেক্ষ নয়। নতুন সরকার প্রথম যে বিষয়টির মুখোমুখি হয় তা হলো কোরিয়ার তিনটি রাজ্য থেকে একযোগে দূতাবলীর আগমন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> তেমন স্পষ্ট নয় ঘটনাগুলো সম্পর্কে। তবে জাপানি পক্ষ প্যেকচের উপস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, যেখানে তারা মিনামা-কে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তোলে। অনুমান করা হয়, এটি এসেছে ৬৪২ সালে প্যেকচে ও কোগুরিয়োর মধ্যে একটি মৈত্রী গঠিত হওয়ার পরে। এটি সিলার উপর বড় পরাজয় আরোপ করে, সম্ভবত মিনামা কিংবা তার একটি অংশ দখল করে। আট মাস পর আবার দূতাবলী আসে এবং মিনামা নিয়ে নতুন বিবাদ শুরু হয়। তখন মনে হয় নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এমন এক অর্থহীন বিষয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বোকামি। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত তাকামুনে নো কুরামারো। তিনি চীন থেকে ৩০ বছর পর ফিরে আসেন। তাকে সিলায় পাঠানো হয় এবং তিনি বিষয়টির অবসান ঘটান। মিনামা কূটনৈতিক সত্তা হিসেবে অস্তিত্ব হারায় এবং জাপান অঞ্চলটির ওপর সব দাবি পরিত্যাগ করে। এটি একটি সাধারণ বাস্তবতা যে চীনের ক্রমাগত চাপে কোরিয়া তখন নিজেই নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছিল। ৬৪৪ সালে কোগুরিয়ো মাঞ্চুরিয়ায় লিয়াও নদী সীমান্তে চীনের একটি বিশাল হামলা প্রতিহত করে এবং আরও সংঘাত সামনে অপেক্ষা করছিল। জাপানিরা তখন যা ঘটছিল তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল। এটি জাপানকে আত্মরক্ষা উপযোগী করতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ তৈরি করেছিল। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই দুই সিনিয়র মন্ত্রীকে আদেশ দেওয়া হয় যে তারা "মায়েতসুকিমি" এবং "তোমো নো মিয়াতসুকো"দের থেকে মতামত নেবেন কীভাবে শ্রম কর নির্ধারণ করা যায় যাতে জনগণের আপত্তি না থাকে। মায়েতসুকিমি চীনা অক্ষর দ্বারা বোঝানো হয়। এটি চীনে প্রশাসনের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ করে। এখানে ধারণা করা হয় এটি ওমি ও মুরাজি অভিজাত গোত্রের জন্য একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হয়তো টুপি মর্যাদা ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের নির্দেশ করে। এটি আনুমানিক ১০ জন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী গোত্র প্রধানদের কমিটি সাধারণত ১০ জনের আশেপাশে থাকত, পারকিনসনের সীমা অনুযায়ী – ১২ জনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট কোনো কমিটি কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। "তোমো নো মিয়াতসুকো" ছিলেন স্থানীয় কর্মকর্তা, যারা সামরিক ও গণপূর্ত কাজের জন্য পুরুষদের নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন। আমি এখনো করব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলিনি, কারণ প্রাচীন সময়ের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে এ সময়ের সব এশীয় সমাজ, চীনসহ, তিন ধরনের করের ওপর নির্ভর করত—কৃষকদের কাছ থেকে ধান/শস্য, কৃষক নন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বস্ত্র)। জনসাধারণের কাজে শ্রম। আমরা অনুমান করি, এই প্রাচীন সময়ে ব্যবস্থাটি নারা যুগের মত এতটা সুবিন্যস্ত ছিল না। তবে কিছু না কিছু থাকতেই হতো। না হলে কোফুন (সমাধিস্তূপ) তৈরি হতো না। "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রাই এসব কাজের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করতেন এবং সম্ভবত তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করতেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে পরবর্তী ঘটনাবলি বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো আমরা জানি এই ঘটনাগুলো কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। আমাদের কাছে নারা যুগের শুরুর সময়ের সরকার কেমন ছিল তার অনেক তথ্য আছে, এমনকি কিছু আদমশুমারি রেজিস্টার ও কর নথিপত্রও আছে, যেগুলো দেখায় যে কিছু এলাকায় বাস্তবে সরকার কীভাবে কাজ করেছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>, যদিও প্রায় একমাত্র উৎস, আমাদের অনেক রাজাদেশের বিবরণ দেয়। তবে বলে খুব কমই যে এসব আদেশ কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বা পরবর্তীতে কীভাবে কাজ করেছে। বোঝা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতই একটি পরীক্ষানিরীক্ষার ধারা ছিল, কারণ কিছু আদেশ কোনো ফল দেয়নি এবং দ্রুতই নতুন আদেশে প্রতিস্থাপিত হয়। আমরা এই প্রক্রিয়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করতে পারি, সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত বিষয়। ধাপগুলো হলো ৬৪৫ সালের পরপর সময়কাল, এরপর কোরিয়ায় সঙ্কট যা ৬৬০ সালে তাং সাম্রাজ্যের প্যেকচে দখল ও তার জাপানের উপর প্রভাব। শেষে ৬৭২ সালে নাকা নো ওএর ছোট ভাই রাজপুত্র ওআমা সিংহাসন দখল করেন। অতিরিক্ত বিষয় হলো তথাকথিত "জিনশিন যুদ্ধ" যা ৬৭২ সালে ওআমাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> এটি বিশদভাবে বর্ণনা করে, ফলে আমরা আসুকা যুগের সমাজকে বাস্তবে কার্যকরভাবে কাজ করতে দেখি। আর যুদ্ধটি বই প্রকাশের মাত্র ৪৮ বছর আগের ঘটনা। তাই অনেক অংশগ্রহণকারী তখনো জীবিত ছিলেন। কারণ এই কাহিনী রাজাদেশের ধারাবাহিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, আমরা রাজপুত্র নাকা নো ওএ এবং নাকাটোমি নো কামাকো (পরবর্তীতে কামাতারিতে নামকরণ) – তাদের মধ্যে অনুমিত অংশীদারিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। সম্ভবত তাদের একজন ছিলেন চিন্তার মানুষ আর আরেকজন ছিলেন সেই কাজ বাস্তবায়নের জনশক্তি, কিংবা তারা দুজনেই উভয় ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। আমরা জানি যে রাজবংশ কামাকো-র প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ ছিল, কারণ তারা তার বংশধরদের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে এক অভূতপূর্ব মর্যাদা দিয়েছিল—একটি ঘটনা যা পরবর্তী কয়েক শতকে জাপানের সরকার কাঠামোর বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শুধুমাত্র এই ফুজিওয়ারার ভবিষ্যৎ উত্থানই প্রমাণ করে, আমার মতে, কামাকোর ৬৪৫ সালের ঘটনাবলিতে এবং তার পরবর্তী পরিবর্তনগুলিতে গভীর জড়িততা ছিল। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পর, তারা পাঁচটি প্রধান বিষয়ে নীতিনির্ধারণ করে একাধিক ফরমান জারি করে। প্রথম ফরমানে "পূর্ব প্রদেশসমূহে" গভর্নর নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয় জনসংখ্যার আদমশুমারি করতে, তা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক বা স্থানীয় অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে, তাতে কিছু আসে যায় না। একইসাথে তারা কতখানি জমি চাষ করছে, তাও নথিভুক্ত করতে বলা হয়। গভর্নর হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়, তারা সবাই রাজধানী থেকে আগত প্রভাবশালী অভিজাত। ফরমানে গভর্নরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা ছিল। এরা স্থায়ী গভর্নর ছিলেন না, যেমনটা পরে প্রতিষ্ঠিত হয়, বরং কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে রাজধানীতে ফিরে আসার নির্দেশ ছিল তাদের। তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন অপরাধ তদন্ত বা অন্যান্য বিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বরং জনসংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে রাজধানীতে ফিরে আসে। তবে, এটা স্পষ্ট যে এটি ছিল শুধুই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নিয়মিত প্রাদেশিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। "পূর্ব প্রদেশ" বলতে ফরমানে কী বোঝানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই কর্মকর্তারা প্রকৃতপক্ষে প্রায় এক মাস পর রাজধানী ত্যাগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণায় ইয়ামাতোর ৬টি আগাতায় কর্মকর্তাদের নিয়োগের কথা বলা হয়, যাদের একইভাবে আদমশুমারি ও ভূমি নিবন্ধন করার আদেশ দেওয়া হয়। এই এলাকাগুলো ছিল তাকেচি, কাতসুরাকি, তোচি, শিকি, ইয়ামাবে ও সো — যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে শাসক বংশকে সরাসরি রাজস্ব সরবরাহ করত। ধারণা করা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের বিবরণ নির্ধারণের জন্য এগুলো পরীক্ষামূলক এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তৃতীয় ঘোষণায় প্রাসাদে একটি ডাকবাক্স ও একটি ঘণ্টা স্থাপনের কথা বলা হয়। যাদের কোনো অভিযোগ ছিল, তারা প্রথমে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। কিন্তু যদি তাদের সমস্যা উপেক্ষা করা হতো, তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ ওই বাক্সে ফেলে দিতে পারত। এমনকি তাতেও ফল না হলে তারা ঘণ্টা বাজাতে পারত। একজন কর্মকর্তা এসে তাদের সাথে কথা বলত। এটি ছিল চীনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। চতুর্থ ঘোষণাটি ছিল সন্তানদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত। যদি কোনো সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ই স্বাধীন হতো, তাহলে তাকে পিতার পরিবারের সাথে নথিভুক্ত করা হতো। কিন্তু যদি একজন অস্বাধীন হতো, তাহলে সন্তানকে সেই অস্বাধীন পিতামাতার সাথেই নথিভুক্ত করা হতো — সে পিতা হোক বা মাতা। যদি দুটি ভিন্ন মনিবের অধীন দুই অস্বাধীন ব্যক্তি সন্তান জন্ম দিত, তাহলে সন্তান মায়ের সাথেই থাকত। আমরা এই সময়কার অস্বাধীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব কমই জানি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অসংখ্য শ্রেণির লোক ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে সেবক ছিল যারা দাস ছিল না এবং যাদের বিক্রি করা যেত না, আবার এমন লোক ছিল যারা প্রকৃত দাস হিসেবে বিবেচিত হতো — সম্ভবত যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে থেকেই এসেছে তারা। নারা যুগে অপরাধীদের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাসত্বে দণ্ডিত করা যেত। অপরাধীদের সন্তানরা নিজেদের ইচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে পারত যেন তাদের পিতা-মাতার স্বাধীনতা বজায় থাকে। ঋণের কারণেও কেউ দাসত্বে পড়তে পারত। এই ফরমানের উদ্দেশ্য ছিল কর নির্ধারণের জন্য ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করা। অস্বাধীন ব্যক্তিদের থেকে সরাসরি কর নেওয়া হতো না, বরং তাদের মনিবের উপর সেই কর আরোপ হতো। এই ঘোষণাসমূহের শেষ পদক্ষেপ ছিল বৌদ্ধ মঠগুলোর নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রতিটি মঠে তিনজন কর্মকর্তা সহ একটি আদর্শ অভ্যন্তরীণ প্রশাসন গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন প্রণয়নের তৎপরতার ঠিক পরেই, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> ঘোষণা করে যে রাজকুমার ফুরুহিতো ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিবি নো কাসা নো ওমি শিতারু স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সহ-ষড়যন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করলে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ফুরুহিতোকে হত্যা করার জন্য সৈন্য পাঠানো হয় এবং সফলভাবে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযোগভুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দুইজন ছিলেন সোগা ও আয়া বংশের সদস্য। এই ধরনের ঘটনা পরবর্তী একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায়শই ঘটেছে। কোনটা প্রকৃত ষড়যন্ত্র ছিল আর কোনটা ছিল অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নির্মূল করার অজুহাত — তা বলা কঠিন। আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে উভয় ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। রাজকুমার নাকা নো ওয়ে/তেনচি টেনো-র শাসনামলেও এধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। তার সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কেউ কেউ প্রতিরোধ গঠনের চেষ্টা করেছে — এটা খুব অবাক করার মতো কিছু নয়। কিন্তু একই সাথে এটা ভাবাও যথার্থ যে তিনি জোসেফ স্তালিনের মতো অপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করতেন। বছরের শেষে প্রাসাদ আসুকা থেকে নানিওয়া-তে স্থানান্তর করা হয়। এটি ইনল্যান্ড সি-র তীরে অবস্থিত। ওজিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ওজিন ও তার পুত্র নিন্তোকু তাদের প্রাসাদ নানিওয়া-তে স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর এই প্রথমবার। নতুন বছরের প্রথম দিনেই, নানিওয়া-তে সরকার প্রধান সংস্কার ফরমান জারি করে। এটি জাপানে "নিউ ইয়ার্স ডে এডিক্ট" নামে পরিচিত। এটি ছিল দেশ শাসনের জন্য তাদের পরিকল্পনার সবচেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে তখনকার সব ধরনের জমির মালিকানা বাতিল করে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, সমস্ত জমি ও জনগণ সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জমির আয়ে জীবনযাপন না করে, অভিজাতরা (যারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা হবেন) বেতন পাবেন। এরপর অংশটির বাকি অংশে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে একটি রাজধানী, যার নিজস্ব কাঠামো ও কর্মকর্তা থাকবে, প্রদেশ ও জেলা গঠন করতে হবে, সেইসাথে ছোট ছোট ইউনিট যেমন প্রহরীসহ চৌকি, ডাক স্টেশন ও ঘোড়ার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রথমে এই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলোর মধ্যেই কার্যকর করা হবে। কোন অঞ্চল এতে অন্তর্ভুক্ত তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় অংশে ব্যাপক আদমশুমারি প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল একটি নিয়মিত ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা — যেটি তখন চীন ও কোগুরিয়োতে প্রচলিত ছিল। ফরমানে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে কিভাবে জমি চীনা একক — চো (২.৪৫ একর) ও তান (এক চো-এর দশমাংশ) — অনুযায়ী পরিমাপ করা হবে। পাশাপাশি প্রতি চো জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ধানের গুচ্ছের ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ অংশে তৎকালীন সমস্ত কর ব্যবস্থা বাতিল করে একটি সরলীকৃত করব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। এতে থাকবে ধানে পরিশোধযোগ্য ভূমি কর, নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশমি কাপড়ে নির্ধারিত মাথাপিছু কর (যা সমমূল্যের অন্য স্থানীয় পণ্যে পরিশোধ করা যাবে), ও একটি মানক শ্রম কর — যার মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ সজ্জিত সৈনিক ও ঘোড়া প্রদান, সাধারণ শ্রমিক এবং অভিজাতদের প্রাসাদে কাজ করার জন্য দাসী ও পরিচারিকা পাঠানোর ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে এই শ্রম কর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়। এই পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হয়নি — বরং কয়েক দশকের কঠিন পরিশ্রমের পরই তা বাস্তবায়িত হয়। অনেকের ধারণা, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যেভাবে ফরমানটি উপস্থাপিত হয়েছে, তা আসলে অনেক পরে রচিত হয়েছে — যখন এই সব ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর হয়ে গেছে, ফলে এটি যা সফল হয়েছে তা বর্ণনা করে, আসল উদ্দেশ্য নয়। তবে এটা সরাসরি চীন বা কোগুরিয়োর প্রশাসনিক আইনবিধি থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দেশগুলোতে প্রচলিত ব্যবস্থারই একটি সংস্করণ জাপানে প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি সফল হলে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত মোট সম্পদের অনেক বেশি অংশ সরকারের হাতে আসত। এটি সরকারকে অর্থ ব্যয়ে আরও স্বাধীনতা দিত। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এমনভাবে গঠিত ছিল যাতে অধিকাংশ সম্পদ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। অভিজাতদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন ব্যয় কমে যায়। এর ফলে জাপানের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারত। এটি কোরিয়াকে ঘিরে শুরু হওয়া অস্থিরতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে অনেক গবেষক উদ্বিগ্ন তান (৩০ * ১২ তসুবো বা ১৮০ * ৭২ ফুট জমি) ও চো (১০ তান) এককের সংজ্ঞা এবং এগুলোর জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট করহারের বিষয়ে। এই পরিমাপ পদ্ধতি হুবহু ৫০ বছর পর প্রণীত তাইহো বিধির মতো। এর আগে জমি পরিমাপের জন্য চো, তান ও তসুবো ব্যবহারের আর কোনো উদাহরণ নেই — ৬৮৯ সালের "আসুকা নো কিয়োমিহারা কোড"-এ এগুলো প্রথম দেখা যায়। এর আগে ব্যবহৃত একক ছিল "শিরো"। এটি প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ। এছাড়াও প্রদেশগুলোকে যে জেলাগুলোতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফরমানে বলা হয়েছে, "যদি কোনো জেলায় ৪০টি গ্রাম থাকে তবে তা বড়, যদি ৪-৩০টি গ্রাম থাকে তবে তা মাঝারি, আর ৩টির কম হলে তা ছোট জেলা।" তাইহো বিধিতেও একই ধারা আছে। তবে সেখানে জেলা ৫ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং আকার ভিন্ন। যদিও বিষয়বস্তু ভিন্ন। কিন্তু বিন্যাস ও ভাষা এক। নারা যুগে ব্যবহৃত জেলার সাধারণ শব্দ ছিল "কোরি" (郡)। এটি ফরমানে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীর মূল নথিতে এর কোন ব্যবহার নেই; সেখানে "হিয়ো" (評) ব্যবহৃত হয়েছে। ফরমানে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্যও নারা যুগের পদবী ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর নথিতে আলাদা নাম দেখা যায়। 郡 ও সংশ্লিষ্ট পদগুলো ছিল চীনা প্রভাবাধীন, আর 評 ও তার পদগুলো ছিল কোরিয়ান রাজ্যসমূহ থেকে আগত। এর ফলে ধারণা করা হয় না যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উদ্ধৃত ফরমানটি আসলে আসুকা কিয়োমিহারা বিধিমালার আগে বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্ণনা দেয়; বরং এটি একটি পরবর্তী সংস্করণ। যদি ফরমানের ওই অংশগুলো বৈধ না হয়। তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিত হব যে অন্য অংশগুলো বৈধ? প্রাচীন জমি ধারণের প্রথা বিলুপ্ত করার বিষয়ে প্রথম অনুচ্ছেদটি নিশ্চয়ই নারা যুগের কোনো উৎস থেকে নেওয়া হতে পারে না। চতুর্থ অনুচ্ছেদের যে বিধানগুলিতে এক ধরনের করকে অন্য ধরনের করের সাথে রূপান্তরের জন্য রেশম কাপড়কে মূল্যমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা তাইহো বিধিমালার অংশ নয়, কারণ তাইহো বিধিমালা কোনো করপ্রকারের রূপান্তরের অনুমতি দেয় না। সংরক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র লেখকদের কাছে ফরমানটির পূর্ণ পাঠ্য ছিল না। তাই তারা অনুপস্থিত অংশগুলো পূরণ করেছে। তবে দলিলটির মূল উদ্দেশ্য—বিদ্যমান জমি মালিকানা ও করব্যবস্থা বিলুপ্ত করা এবং চীনা ও কোরিয়ান মডেলের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি ব্যবস্থা স্থাপন—তা সত্য। সবশেষে, এটাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। প্রাচীন জাপানিরা এটি কেই রূপান্তরের সূচনা বলে গণ্য করে। একটি বিতর্কিত বিষয় হলো প্রাথমিক জমি বন্টন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করার কথা ছিল। তাইহো বিধিমালায় পরিবারের প্রতিটি কর্মক্ষম সদস্যের জন্য (বয়স, লিঙ্গ ও অবস্থান অনুসারে) নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির হিসাব রাখা এবং তারপর তা যোগ করে একটি পরিবারের মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করার বিশদ নিয়ম ছিল। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত ফসল কর নির্ধারিত হতো। বিকল্প পদ্ধতি ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি প্রতিটি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া, পরিবারের গঠনের বিস্তারিত বিবেচনা না করেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, "নববর্ষ ফরমান"-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের সঙ্গে কৃষকদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ভেঙে ফেলা এবং অভিজাতদের বেতনভোগী কর্মকর্তায় পরিণত করা। একই সঙ্গে কৃষক পরিবারগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করা হতো অতিরিক্ত হয়ে যেত। বরং বিদ্যমান কৃষি সম্প্রদায় ও তাদের গৃহস্থালিকে ধরে রেখেই নতুন ব্যবস্থাকে অপেক্ষাকৃত সহজ রাখা ছিল বেশি বাস্তবসম্মত। পরবর্তী সময়ে তাইহো বিধিমালার আদমশুমারি ও জমি পুনর্বণ্টন চক্র বাস্তবায়ন এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা এত জটিল ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতেন না। এও ধারণা করা হয় যে ৬৪৬ সালে এই ধরনের ব্যবস্থা একযোগে সারা দেশে প্রয়োগ করা যাবে না, সেটা সবাই বুঝেছিল, বরং ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে—যদিও ফরমানে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এই ফরমানে সাধারণ কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান প্রভাব পড়বে এমন কিছু ছিল না, করহার ব্যতীত। করহার বৃদ্ধি না হ্রাস—তা জানা যায় না। যদি রাজস্বের বড় অংশ রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। তবে পরিবহনের জন্য উল্লেখযোগ্য শ্রম প্রয়োজন হতো। জমি বন্টন ব্যবস্থায় জমি চাষ এবং কর প্রদানের প্রধান দায়িত্ব পরিবার একককে দেওয়া হয়েছিল। এটি বিদ্যমান প্রথার ধারাবাহিকতা ছিল, না নতুন কিছু—তা স্পষ্ট নয়। বিকল্প পদ্ধতি ছিল গ্রামকে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে মূল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু বানানো, যেখানে প্রতিটি গ্রামকে নির্দিষ্ট কর ধার্য করা হতো এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বন্টনের স্বাধীনতা থাকত। যদি কৃষকদের জন্য "বে" ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতো। তবে কোফুন যুগের জাপান হয়তো অনুরূপ কাঠামোর অধীনে ছিল এবং নতুন ব্যবস্থা হতো একটি বড় পরিবর্তন। ৬৪৬ সালের দ্বিতীয় মাসে আরও একটি সাধারণ ফরমান জারি হয় যা দুইটি বিষয় নিয়ে ছিল। এটি জাতীয় অভিযোগ বাক্সের পূর্ববর্তী ঘোষণাকে জোরদার ও সম্প্রসারিত করে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে নামবিহীন পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি ও জানানো হয় যে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আসা কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলা হয়, শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার কারণে যারা রাজধানীতে এসেছিল, তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায়ই বাড়ি ফিরে যেতে পারত না, কারণ কর্মকর্তারা ও অভিজাতরা তাদের অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত রাখত। সরকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয় যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মাসে পূর্ব প্রদেশে পাঠানো কর্মকর্তারা রাজধানীতে ফিরে আসে। একটি ফরমানে ঘোষণা করা হয় যে আটজন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুজন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে একটি বিস্তারিত ফরমান প্রকাশিত হয় যেখানে অভিযুক্তদের নামও উল্লেখ করা হয়। প্রধান সমস্যা ছিল কিছু কর্মকর্তা তাদের অবস্থানের অপব্যবহার করে করের টাকা আত্মসাৎ ও ঘুষ আদায় করেছিল। তাদের সব অর্থ ফেরত দিতে এবং চুরির দ্বিগুণ জরিমানা দিতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগের মাধ্যমেই তাদের অপরাধ প্রকাশ পায়। কিছু স্থানীয় অভিজাত স্বেচ্ছায় ঘুষ প্রদান করেছিল। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেতনার অংশ হিসেবে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এবং, নতুন প্রাসাদ নির্মাণজনিত কারণে জনগণের ওপর সৃষ্টি হওয়া ভোগান্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি সাধারণ ক্ষমাও দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, যারা প্রাসাদ নির্মাণে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত থাকায় অন্য কর প্রদানে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের সেই কর মওকুফ করা হয়। কয়েক দিন পর রাজপুত্র নাকা নো ওয়ে সম্রাটকে একটি পিটিশন দেন যেখানে তিনি অভিজাতদের হাতে থাকা কিছু ঐতিহ্যবাহী জমির মালিকানা বিলুপ্ত করার দাবি জানান এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে থাকা ৫২৪ জন ইম্বে (মূলত শিন্তো মন্দিরের কর্মী) ও ১৬১টি মিয়াকে (বিভিন্ন ধরণের রাজস্ব উৎপাদনকারী ইউনিট) সম্রাটকে ফিরিয়ে দেন। এরপর আরেকটি ফরমান জারি হয়। এটি কোফুন সমাধি নির্মাণ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আচার নিয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আকার ও ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ এবং চাষযোগ্য জমিতে সমাধি না বানানোর নিয়ম চালু করা। পূর্বে বর্ণিত ফরমানটিতেই বলা হয়েছিল যে একটি রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭০০০ শ্রমদিবস খরচ করা যাবে। নিম্নতর শ্রেণির জন্য সেই অনুপাতে সীমা নির্ধারিত হবে। আজকের জাদুঘরগুলোতে থাকা অতিরঞ্জিত কবর উপকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও বিবাহ রীতিনীতি নিয়ন্ত্রণে একটি বিশদ ফরমান, স্থানীয় রীতিনীতি পরিবর্তনে একটি ফরমান—যা দেশের মধ্যে অবাধ চলাচলে বাধা দিত। ব্যক্তিগত জমি বিলুপ্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আরও নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই ফরমানগুলো এবং ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অভিজাত অসন্তুষ্ট ছিল—তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন নেই। কিছু প্রমাণ আছে যে স্থানীয় অভিজাতরা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের সহযোগিতা স্বাগত জানিয়েছিল। ৬৪৪ সালের শরতে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কান্তো অঞ্চলের এক এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থানীয় ব্যক্তি প্রচার করেন যে একটি বিশেষ পোকা (সম্ভবত কোনো শুঁয়োপোকা) এক দেবতার দূত, যাকে উপাসনা করলে পরিশ্রম ছাড়াই সবাই ধন-সম্পদ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে মানুষ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং দল বেঁধে গান গেয়ে ও মদ্যপান করে ঘুরে বেড়াতে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিছু করতে অক্ষম ছিল। রাজধানী থেকে হাতা নো মিয়াতসুকো কাওয়াকাতসু নামে এক কর্মকর্তা এসে প্রচারককে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত সঙ্কটকালে ঘটে। ধারণা করা হয়েছে, এই আন্দোলনটি কোরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের রেশম উৎপাদন প্রতিষ্ঠার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছিল। “রেশমপোকা কোরিয়ানদের ধনী করে তোলে, তাহলে আমাদের শুঁয়োপোকাও হয়তো আমাদের ধনী করবে”—এইরকম ভাবনা হতে পারে। হাতা বংশ রেশম উৎপাদনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। তাই কেউ কেউ অনুমান করেন যে হাতা কাওয়াকাতসুকে পাঠানো হয়েছিল এ খোঁজ নিতে যে, স্থানীয়রা এমন কোনো পোকা পেয়েছে কি না। এটি দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রেশম তৈরি করা সম্ভব। পরবর্তী কোফুনসমূহের সংখ্যা ও পরিসরের পরিবর্তনের ভিত্তিতে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন, গ্রামীণ গোত্র প্রধানরা—কুনি নো মিয়াতসুকো—তাদের আধা-রাজকীয় মর্যাদা ও ক্ষমতা হারিয়েছিল। এটি গ্রামীণ অভিজাতদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে একটি প্রবণতা নির্দেশ করে, যার ফলে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় প্রশাসন কার্যকারিতা হারিয়েছিল। যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভর্নর পাঠানো শুরু করল, তখন তারা কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ করছিল। স্থানীয় অভিজাতদের দমন না করে বরং তাদের অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা হচ্ছিল। তবে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক আয়ের পরিবর্তে সরকার-নিযুক্ত বেতনভোগী হয়ে ওঠা একটি বড় পরিবর্তন ছিল এবং এটি কার্যকর হবে কি না—তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬৪৬ সালের ফরমান ধারায় একটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল যে যেসব অভিজাতদের ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের সবাইকে সরকারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং সরকারি বেতন প্রদান করা হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল, যারা সরকারি পদে নিয়োগ পাবে না, তারা কার্যত সাধারণ নাগরিক বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি সতর্কবার্তা ছিল যে কেউ যদি অবৈধভাবে অভিজাত পরিচয় দাবি করে। তবে তাদের সনাক্ত করে অপসারণ করা হবে। পরিবর্তনের গতি ৬৪৭ সালে ধীর হয়ে গেল। একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল যাতে শাসকদের নামের মধ্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলি শতাধিকারদের ব্যক্তিগত নাম এবং স্থান নামের জন্য ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। চীনে সাধারণত এমন নিয়ম ছিল যে সম্রাটের নাম লেখায় ব্যবহৃত অক্ষর এবং বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে, বিশেষত সেইসব যজ্ঞে যেখানে সম্রাট ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতেন, সেগুলি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত না। মানুষকে বিকল্প অক্ষর খুঁজে বের করতে হতো। এটি মনে হয় জাপানে সেই নিয়ম প্রয়োগ করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রধান পরিবর্তন ছিল ক্যাপ র‍্যাঙ্ক সিস্টেমের সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠন। পূর্বের বারোটি র‍্যাঙ্ককে ছয়টি করে সংকুচিত করা হয়েছিল, নীচে একটি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয় এবং উপরে ছয়টি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয়, ফলে প্রথমবারের মতো শীর্ষ অর্স্তাধিকারীদেরও এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়। তারপর, মাত্র দুই বছর পরে এটি আবার পুনর্গঠিত হয়। সেই ছয়টি সংকুচিত র‍্যাঙ্ক আবার বারোটি হয়ে যায়। শীর্ষ ছয়টি র‍্যাঙ্ক ব্যতীত বাকিগুলোর নাম আবার পরিবর্তিত হয়। কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া বুরোক্র্যাসির জটিলতার কারণে হয়েছে। র‍্যাঙ্কগুলো বেতন নির্ধারণের ভিত্তি হওয়ায়, বেশি র‍্যাঙ্ক মানে আরও বিভিন্ন বেতন স্তর। এই পুনর্গঠনের পর ৬৪৯ সালে শাসনরত বংশের রাজকুমার ছাড়া সকল শতাধিকারী এই সিস্টেমের আওতায় আসেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬৪৮ সালের একটি উল্লেখ আছে যেখানে বলা হয়েছে ৬৪৭ সালের র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রীরা পুরানো ক্যাপ ব্যবহার চালিয়ে গেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু অসন্তোষ ছিল। তাই ৬৪৯ সালে র‍্যাঙ্কের সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধি ও পরিবর্তন একটি প্রতিক্রিয়া ছিল, যাতে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে তাকে তার নিচের কাউকে সঙ্গে একই স্তরে ফেলা হচ্ছে না। আরেকটি পরিবর্তনের লক্ষণ ছিল ৬৪৭ সালে হাজিরা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘণ্টা ব্যবস্থার চালু হওয়া। কর্মকর্তাদের সকাল ৫টার মধ্যে প্রাসাদের বাইরে শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন ধরে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। ৫টায় ঘণ্টা বাজানো হতো এবং অফিসের দরজা খোলা হতো, সবাই ভিতরে ঢুকতে যথেষ্ট সময় পেলে আবার ঘণ্টা বাজিয়ে দরজা বন্ধ করা হতো এবং যারা দেরি করতো তাদের ঢুকতে দেওয়া হত না। সবাই সকাল ৬টার মধ্যে তার ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতে হতো। দুপুর ১২টায় কাজের সময় শেষের ঘণ্টা বাজানো হতো। খুব প্রাচীন একটি রীতির অংশ ছিল যে আদালতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সূর্যোদয়ের আগে বা ঠিক সময়ে করা হতো এবং এই অফিস সময়ের কাঠামো অনেকদিন বজায় ছিল। ১৯ র‍্যাঙ্কের সংশোধিত সিস্টেম ৬৪৯ সালের শুরুতে কার্যকর হয় এবং তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চীনা সিস্টেমভিত্তিক সরকারের বিভাগ, অফিস এবং ব্যুরো গঠন করা হবে। এটি তকমুনে নো কুরামারো এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু বিন দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হবে। এখন পর্যন্ত যা অর্জিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার দেওয়া যাক। এক, সম্রাটকেন্দ্রিক সরকারের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‍্যাঙ্ক সিস্টেম সম্প্রসারণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মানে হল সম্রাট এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করেন, পদোন্নতি দেয়। শতাধিকারীরা তাদের র‍্যাঙ্ক ভিত্তিক মর্যাদায় সংজ্ঞায়িত হবেন। দুই, সরকারের কেন্দ্রীয়করণ নিশ্চিত হয়েছে, প্রদেশগুলো সরাসরি প্রাসাদ থেকে পরিচালিত হবে একটি একক বুরোক্র্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে। তিন, সব জমি এবং তার উপর কাজ করা সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সম্পত্তি হবে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সব বাস্তবায়ন এখনও বাকি। কিন্তু নীতিগুলো স্থাপন করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ নেই। চার, এই নতুন সিস্টেম পরিচালনা করবে একই শতাধিকারীদের দল যারা পূর্বে শীর্ষে ছিল, যমাতো ও কাওয়াচি প্রদেশ থেকে। সরকার কাঠামো ও কার্যকারিতায় বিপ্লব ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর সদস্যত্ব জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে বিপ্লবের আওতায় আনা হচ্ছে না। সবাইকে তার বর্তমান মর্যাদানুযায়ী র‍্যাঙ্ক, পদ ও বেতন দেওয়া হবে। নতুন একটি চীনা রাজবংশ সাধারণত যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করতো। রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সফল সেনাপতি যাঁর শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। তিনি নতুন সরকারের নকশায় স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তাকে এমন কিছু তৈরি করতে হয়েছিল যা কার্যকর হত, নাহলে রাজবংশ দীর্ঘস্থায়ী হত না। সফল রাজবংশগুলো সাধারণত চীনা সরকারের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে কাজ করত। তাই নকশার স্বাধীনতা সীমিত ছিল। এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাই হোক না কেন, দেশের শাসনের সূক্ষ্ম কাজগুলি করতেন ঐতিহ্যবাহী অর্স্তাধিকারীরা। বিকল্প ছিল না। পুরাতন শাসন ব্যবস্থা নতুন নাম দিয়ে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। আসুকা যুগের বাকী সময়ের চ্যালেঞ্জ ছিল তা নিশ্চিত করা যে সেটি হবে না এবং সরকার সত্যিই পরিবর্তিত হবে, কেন্দ্রীভূত ও সংগঠিত হবে যাতে জাতীয় সম্পদের বৃহত্তর অংশ প্রাসাদের হাতে আসে এবং এই দেশকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়িত হলে সরকার সত্যিই দেশের সমৃদ্ধির সম্পূর্ণ অংশ কর ব্যবস্থায় আনবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে তার পুনর্বণ্টন ও ব্যয়। অধিকাংশ বেতন আকারে শতাধিকারীদের কাছে যাবে। তবে বাকিটা জাতি গঠনের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং বেতন ব্যবস্থা শতাধিকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন মন্ত্রণালয় ও র‍্যাঙ্ক সবই ভালো। কিন্তু মূল বিষয় ছিল দেশের কৃষকদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই নতুন সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কফুন রাজনীতি আবার প্রবেশ করল। ৬৪৯ সালের তৃতীয় মাসে সিনিয়র মন্ত্রী আবে নো কুরাহাশিমারো মারা গেলেন। মাত্র সাত দিন পর সোগা নো হিমুকা গোপনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে, বিশেষ করে রাজকুমার নাকা নো ওয়ের হত্যার পরিকল্পনা। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন এটা সত্য নয়। হিমুকা ছিল ইশিকাওয়ামারোর ছোট ভাই এবং নিজেই শীর্ষ মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নাকা নো ওয়ে এই তথ্য কোতোকু তেননোর কাছে পৌঁছে দেন। তিনি ইশিকাওয়ামারোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য官 পাঠান। ইশিকাওয়ামারো মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং সম্রাটের সাক্ষাৎ চান। কোতোকু তা মানেননি এবং সৈন্য পাঠিয়ে তাকে আটকাতে বলেছিলেন। ইশিকাওয়ামারো তার প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যমাতোর যমাদেরাতে গিয়েছিলেন, যেখানে তার বড় ছেলে মন্দির নির্মাণ পরিচালনা করছিল। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী ছেলে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইশিকাওয়ামারো রাজি হননি। তিনি ও তার পরিবার আত্মহত্যা করেন ফাঁস দিয়ে। তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরও অনেককে সরকার পরে ফাঁসি দেয় এবং বহুজনকে নির্বাসিত করা হয়। আরিস্টোক্রেসির সরকার গঠন করা কঠিন কারণ কাউকে সহজে বরখাস্ত করা যায় না। পরবর্তী ২৫০ বছরে আমি কেবল দুটি ক্ষেত্রে দেখেছি কেউ ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই কম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি involved ছিলেন যারা নিজস্ব বাহিনী গড়ার ক্ষমতা রাখত না। তারা হলেন নারা যুগের পুরোহিত দোকিও এবং হেইয়ান যুগের সুগাওয়ারা নো মিচিজানে, যারা উচ্চপদে উঠে পরে সাপোর্ট হারানোর পর পড়ে যান। তখন বা পরে কোনো কারাগার ব্যবস্থা ছিল না। মৃত্যুর কম শাস্তি ছিল নির্বাসন, যেখানে নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করা হত এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বসবাস করতে হত। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বহুজন নির্বাসনে পাঠানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন নির্বাসনের পথে বা ততক্ষণে। নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন অনেক নির্বাসিত পালিয়ে আত্মীয়দের কাছে লুকিয়ে ছিলেন। এটি একধরনের নরম বাড়ি নিরোধ। এই ঘটনার পেছনে নাকা নো ওয়ের ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন না সোগা পরিবারের কেউ সর্বোচ্চ পদে উঠুক। সোগা নো হিমুকাকে কিউশুতে স্থানান্তর করা হয়। এটি পরবর্তীকালে মার্জিত নির্বাসনের একটি রূপ (এটাই হয়েছে সুগাওয়ারা নো মিচিজানের ক্ষেত্রে)। কখনো কখনো অর্স্তাধিকারীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ জটিল হয়। নাকা নো ওয়ের প্রধান স্ত্রী ছিলেন ইশিকাওয়ামারোর মেয়ে এবং জিতো তেননোর মা। তিনি তার বাবার পতনের পর শোকেই মারা গিয়েছিলেন। এর চূড়ান্ত ফলাফল ছিল যে সরকারের শীর্ষে দুইটি পদ শূন্য ছিল। নতুন সদাইজিন হলেন কুসে নো ওমি টোকুতা এবং নতুন উডাইজিন হলেন ওতোমো নো মুরাজি নাকাতোকো। তারা দুজনেই নতুন ব্যবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছিলেন এবং এখন ৫ম শ্রেণীতে পদোন্নত হন। কুসে ৬৪৫ সাল থেকে সরকারের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ওতোমো ছিলেন একটি প্রধান গোত্রের প্রধান। আবে নো কুরাহাশিমারো এবং সোগা নো ইশিকাওয়ামারো নতুন পদবীর ব্যাজ পরতে অস্বীকার করেন এবং পুরানো মন্ত্রীদের টুপি পরতে চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ছিলেন নতুন পদবী ব্যবস্থায় প্রথম মন্ত্রীরা। তাদের নতুন পদবীর মানে ছিল যে নতুন ব্যবস্থার শীর্ষ চারটি পদ তখনই খালি ছিল। পরের বছর, ৬৫০ সালে, শাসনখাতের নাম পরিবর্তিত হয়ে তাইকা থেকে হাকুচি হয়ে যায়। এটা সম্ভবত একটি সংকেত হিসেবে দেওয়া হয়েছিল যে প্রধান সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন নতুন ব্যবস্থার সংহতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। নামটি এসেছে একটি সাদা ময়ুর দেখার ও ধরা পড়ার প্রতিবেদনের থেকে। এটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই পরিবর্তনের সাথে যথেষ্ট ভোজ ও আয়োজন ছিল। যে প্রদেশ (হোন্সু দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে) পাখিটি উপহার দিয়েছিল তাকে তিন বছর করমুক্ত রাখা হয় এবং ওই প্রদেশে ময়ুর শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। 'নিহন শোকি' থেকে বিচার করলে দেখা যায় শাসক হওয়ার সঙ্গে সবসময়ই প্রচুর আনুষ্ঠানিকতা জড়িত ছিল। কিন্তু তা বেশির ভাগ সময়ে গোপনে অনুষ্ঠিত হত। এখন আমরা দেখতে পাই সরকার প্রায়ই সকল কর্মকর্তাদের বৃহৎ আনুষ্ঠানিকতার জন্য মুক্ত আকাশের নিচে জড়ো করে। এই পর্যায়ে পরিষ্কার নয় সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি পেত কি না। তবে নিশ্চিতভাবে নারা এবং হেইয়ান যুগে রাজ পরিবার সংক্রান্ত অনেক অনুষ্ঠান এমনভাবে অনুষ্ঠিত হত যাতে মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা দেখার সুযোগ পেত। এটা সরকারের এবং সম্রাটের জাতির জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবার অংশ। ৬৫১ সালে সরকার ওকোরিতে ছয় বছর অবস্থানের পর নানিভাতে নতুন একটি প্রাসাদে চলে যায়, যার নাম নাগারা নো টয়োসাকি প্রাসাদ। 'নিহন শোকি' অনুযায়ী এই প্রাসাদের নির্মাণে অনেক কফুন ধ্বংস হয় এবং অনেক কৃষক স্থানান্তরিত হন, যাদের সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এটি একটি বড় নির্মাণ প্রকল্প ছিল। সরকার প্রবেশের পরও কাজ চলতে থাকে এবং এক বছর ছয় মাস পরে সম্পূর্ণ হয়। 'নিহন শোকি' বলেছে যে এটি দেশের পূর্ববর্তী যেকোনো নির্মাণের চেয়েও ভাস্বর ছিল। প্রাসাদের অবস্থান আবিষ্কৃত ও পুরাতাত্ত্বিকভাবে খনন করা হয়েছে। এটি ওসাকা ক্যাসল এর সাইটের ঠিক পাশেই, আধুনিক ওসাকার সেই এলাকায় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচ্চতর। ৬৫১ সালে সিল্লা থেকে পাঠানো দূতরা কিউশুতে তাং রাজবংশের চীনা পোশাক পরেছিলেন। এটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান পোশাক থেকে আলাদা। এ কারণে সরকার অনুমান করেছিল সিল্লা জাপানের সঙ্গে পরামর্শ না করেই চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং দূতাবাস প্রত্যাখ্যাত হয়। সিল্লা ৬৪৯ সালে রাজার প্রাসাদের পোশাক পরিবর্তন করে চীনা শৈলীতে নিয়ে যায়। দুই বছর পর, ৬৫৩ সালে জাপান দুইটি জাহাজ এবং ২৪২ জন নিয়ে চীনে দূতাবাস পাঠায়। ৬৫৪ সালে একটি দ্বিতীয় দূতাবাস পাঠানো হয় যার নেতৃত্ব দেন তাকামুনে কুরোমারো এবং আবে নো ওমি মারো। 'ওল্ড টাং হিস্ট্রি' (যেখানে নিউ টাং হিস্ট্রি ও আছে) দ্বিতীয় দূতাবাসের কথা উল্লেখ করেছে। তখন তাকামুনে হয়তো খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং তিনি চীনে মৃত্যুবরণ করেন। ৬৫৩ সালের দূতাবাসের দুটি জাহাজের মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে যায়, ১২১ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন বেঁচে যায়। ৬৫২ সালের প্রথম মাসে 'নিহন শোকি' খুব সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছে যে ওই মাসে জমির পুনর্বন্টন করা হয় এবং একই বছরের চতুর্থ মাসে জনগণনার রেজিস্টার তৈরি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য খুব কম দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি একটু অদ্ভুত, যেখানে বলা হয়েছে "প্রথম মাস থেকে এই মাস পর্যন্ত জমির পুনর্বন্টন সম্পন্ন হয়েছে।" সাধারণত জনগণনা আগে হয় যাতে জানা যায় কতগুলো পরিবার জমি পাবে। তাইহো কোড অনুযায়ী জনগণনা এবং পুনর্বন্টন চক্র ছয় বছর। অনুমান করা হয় যে ৬৪৬ সালে শুরু হওয়া পুনর্বন্টন কার্যক্রমটি শেষ হয়েছে এবং তারপর তিন মাস পর পরবর্তী চক্রের জনগণনা শুরু হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে সম্ভবত এই কাজ ছিল ইয়ামাতো অঞ্চলের ছয় আগাতার এবং সম্ভবত সাম্রাজ্যিক মিয়াকের জমিতে একটি ছোট পরীক্ষা প্রকল্প। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরবর্তী নিশ্চিত জমির পুনর্বন্টন বিবেচনা করে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন না যে তখন জাতীয় স্তরে পুনর্বন্টন হয়েছে। হিতাচি ফুডোকি অনুযায়ী ৬৪৯ সালে কাশিমা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৬৬৩ সালে শিনোডা, নামেকাতা ও ইওয়াকি জেলা তৈরি হয়। মনে হয় সরকার গ্রামীণ প্রশাসনের কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছিল এবং জনগণনা ও পুনর্বন্টন এখনও অনেক দূরে ছিল। ৬৫৩ সালে কোটোকু তেন্নো এবং নাকা নো ওয়ের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়। নাকা নো ওয়ে প্রাসাদকে ইয়ামাতো প্রদেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন এবং সম্রাট তা অস্বীকার করেন। তবুও নাকা নো ওয়ে চলে যান, তার মা — প্রাক্তন কোগোকু তেন্নো এবং বর্তমান সম্রাজ্ঞী (নাকা নো ওয়ের বোন) ও তার সন্তানদের সঙ্গে। কোনো ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট তারিখ নেই, শুধু বছর উল্লেখ আছে। পরবর্তী বছরের ১০ম মাসে সম্রাট অসুস্থ হন এবং সবাই নানিভায় ফিরে আসেন এবং সম্রাটের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয় যে নাকা নো ওয়ে ভেবেছিলেন সম্রাটকে সরকারের কেন্দ্রে আনার প্রচেষ্টা খুব সফল হয়েছে এবং তার নিজের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তাই নতুন ও ব্যয়বহুল নাগারা প্রাসাদে তেমন প্রস্তাব দেওয়া যা সম্রাট নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করবেন। এরপর রাগে সরে গিয়ে ইয়ামাতো চলে যান এবং সবাইকে তাদের আসল ক্ষমতাধারী কে তা ভাবতে বাধ্য করেন। গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ ব্যক্তি তার অনুসরণ করে ইয়ামাতো যান। একটি আধুনিক মতবাদ আছে যে বিরোধের আসল কারণ ছিল নাকা নো ওয়ে তার বোন সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। 'নিহন শোকি' সম্রাজ্ঞীকে পাঠানো সম্রাটের একটি কবিতা উদ্ধৃত করেছে যা এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই তত্ত্ব বলে যে এর জন্যই নাকা নো ওয়ে ২৩ বছর ধরে সিংহাসনে আরোহণ করতে চাননি। সম্রাট হলে তার কোনো গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা থাকত না এবং তিনি গোপনে সম্পর্ক রাখতে পারতেন না। এছাড়াও বলা হয় কোটোকু তেন্নোর মৃত্যুর পর নাকা নো ওয়ে প্রকাশ্যভাবে তার বোনকে স্ত্রী হিসেবে দেখতেন। এমন কিছু বিবাহকে আমরা অজাচার দাম্পত্য মনে করলেও রাজবংশে এসব সাধারণ ছিল। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। যদি এই বিবাহ সত্যি হয়, তা নিয়ম ভঙ্গ করত। পূর্বে এমন উদাহরণ আছ। মানুষেরা মনে করত নাকা নো ওয়ে ঐ সম্পর্ক চলাকালীন রীতিগতভাবে দুষিত ছিলেন। তাই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেননি। তিনি তখনই (৬৬৮ সালে) সম্রাট হন যখন তার বোন মারা যান। কোটোকু তেন্নোর একমাত্র পুত্র ছিলেন রাজকুমার আরিমা। কোটোকুর মৃত্যুকালে তিনি ১৫ বছর বয়সী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। পরিবর্তে তার মা দ্বিতীয়বার সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবার সাইমেই তেন্নো নামে পরিচিত। 'নিহন শোকি' এতে কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। এতে একটি বড় ঝুঁকি ছিল যে নিজের সিংহাসন গ্রহণ না করায় ভবিষ্যতে রাজকুমার আরিমা সিংহাসন পেতে পারে। এই কথাটি সমর্থন করে ধারণাটি যে ব্যক্তিগত জীবনের কারণে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করতে পারেননি। মৃত সম্রাটের দেহ তার মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পরে দাফন করা হয় এবং একই দিন রাজসভা ইয়ামাটোতে চলে যায়, আসুকায় ইটাবুকি প্রাসাদে অবস্থান নেয়। এই প্রাসাদে সাইমেই বাস করতেন যখন সোগা নো ইরুকার হত্যাকাণ্ড হয় এবং তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সাইমেই তখন প্রায় ৬২ বছর বয়সী ছিলেন। প্রায় এই সময়েই নাকা নো ওয়ের ছোট ভাই রাজকুমার ওয়ামা ২৫ বছর বয়সে রাজকাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন। নাকা নো ওয়ের পুত্র রাজকুমার ওতোমো তখন ৮ বছর এবং তার কন্যা উনো নো সরারা। তিনি পরবর্তীতে ওয়ামা ও জিতো তেন্নোর সম্রাজ্ঞী হন, ছিলেন ১১ বছর বয়সী। ইটাবুকি প্রাসাদ একটি অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে পরিকল্পিত ছিল, যেখানে নতুন একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হচ্ছিল যা নানিওয়ার প্রাসাদের চেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ হবে। ৬৫৫ সালের শেষে ইটাবুকি প্রাসাদ আগুনে পুড়ে যায় এবং তারা ইয়াহারা প্রাসাদে চলে যায়। রাজসভা তখন একাধিক বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে। <nowiki>''নিহন শোকি'' এই কাজগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় ও বিলাসিতার বিষয়ে জনসাধারণের অভিযোগ উল্লেখ করে। ''নিহন শোকি'' অনুসারে, ৬৫৭ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার আরিমা বিদ্রোহের প্রস্তুতি শুরু করেন। বলা হয়, তিনি সাইমেই তেন্নোকে একটি নির্দিষ্ট গরম জলের উৎসের উপকারিতা প্রশংসা করে রাজধনি ছাড়িয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন, যাতে তিনি তার অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা দখল করতে পারেন। প্রায় এক বছর পরে সম্রাজ্ঞী গরম জলের উৎসে যান। তখন আসুকায় সোগা নো ওমি নো আকায় দায়িত্বে ছিলেন। আকায় রাজকুমার আরিমার কাছে সাইমেই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে যান। প্রথমটি ছিল যে সরকার জনগণ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করছে, দ্বিতীয়টি ছিল যে কাজের জন্য অনেক মানুষকে খাল খননে বাধ্য করা হচ্ছে। তৃতীয়টি ছিল যে তিনি পাহাড়ের উপরে একটি ফুল দেখার মঞ্চ নির্মাণে সম্পদ অপচয় করছেন। তারা আটায়ের বাড়িতে গোপনে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু কথোপকথনের সময় হঠাৎ একটি হাতার ভেঙে যাওয়াকে তারা একটি অশুভ সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে পরিকল্পনা ভেঙে যায়। আটায়ে সঙ্গে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে রাজকুমার আরিমার প্রাসাদ ঘেরাও করেন এবং বার্তা পাঠিয়ে জানান যে রাজকুমার আরিমা রাজদ্রোহের পরিকল্পনা করছেন। ''নিহন শোকি''</nowiki> একটি অন্য বই থেকে উদ্ধৃত করে যেটি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার আলোচনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়, যেখানে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী রাজকুমার আরিমাকে সফল অভ্যুত্থান চালানোর জন্য অযোগ্য মনে করেন। শেষপর্যন্ত রাজকুমার আরিমা ও দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং আরও দুই জনকে নির্বাসিত করা হয়। সোগা নো আটায়ে ছিলেন নাকা নো ওয়ের গভীর বিশ্বাসভাজন। তিনি রাজপরিবারের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তার মেয়েকে নাকা নো ওয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি নাকা নো ওয়ের আদেশে রাজকুমার আরিমাকে ফাঁসিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে ক্ষমতার জন্য কাউকেই হুমকি হিসেবে দেখতেন। রাজকুমার আরিমা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "স্বর্গ ও আকায় জানেন যা ঘটেছে, আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ।" এই কাহিনী বেশ কয়েকটি কবিতায় উল্লেখ আছে, যার মধ্যে দুইটি তার মৃত্যুর আগের এবং রাজকুমার আরিমার প্রতি অভিজাতদের মধ্যে সমবেদনা প্রতিফলিত হয়। ৬৫৮ সালেও পূর্ব সীমানায় সামরিক অভিযান হয়। প্রাচীনকালে পূর্বের বর্বরদের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ছিল 蝦夷। এটি টোকুগাওয়া যুগ থেকে ইজো হিসেবে উচ্চারিত হয়। সেই সময় হোক্কাইডো দ্বীপকেও ইজো বলা হতো। তবে প্রাচীনকালে এটি এমিশি উচ্চারিত হত। এটি সোগা নো এমিশির ব্যক্তিগত নামের সঙ্গেই সম্পর্কিত। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশির বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিযান কিয়েকো তেন্নোর শাসনামলে উল্লেখ আছে। তিনি জিম্মু ও সুজিনের মধ্যকার কাল্পনিক শাসক বলে মনে করা হয়। এই ধরনের অভিযান নিয়ে অনেক কিংবদন্তি আছে। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এদের বিষয়ে খুব বেশি বিশ্বাসী নন। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশি জাতি একবারও নামকরণ করা হয়নি। এটি সম্ভবত প্রাচীন ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত হলেও সরকারী প্রকল্প ছিল না। ৪৭৮ সালের চীনের দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে জাপানি শাসক পূর্বে ৫৫টি এবং পশ্চিমে ৬৬টি বর্বর জাতিকে জয় করেছেন। 毛人 শব্দটি সম্ভবত সোগা নো এমিশির নাম লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি সাধারণ চীনা ভাষায় বর্বরদের অর্থ বহন করে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ শতকের শেষভাগে জাপানের দূরপ্রাচ্যের অনিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠী একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে। ৫৮৯ সালে ওমি নো ওমি মাতসু তোসান্দো পথ দিয়ে এমিশিদের সীমানা পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিছু ঐতিহাসিক এ ঘটনাকে অস্বীকার করলেও বেশিরভাগই সত্য মনে করেন। ৬৪২ সালে "কয়েক হাজার" এমিশি হোকুরিকুডো অঞ্চলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে, যাদের নেতাদের সোগা নো এমিশির ভাণ্ডারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ৬৪৫ সালে কূটনীতিক পরিবর্তনের পর পূর্বাঞ্চল পরিদর্শনে বিশেষ গভর্নর পাঠানো হয় এবং ৬৪৭ সালে নুতারি নামে কাঠের ঘেরযুক্ত দুর্গ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী বছর আরও একটি দুর্গ ইওয়াফুনে নির্মিত হয়। তারপর অভ্যন্তরীণ এলাকা থেকে মানুষ স্থানান্তরিত করা হয় দুর্গগুলোর খাদ্য ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য। নুতারি দুর্গের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে নীইগাতার একটি এলাকা এই নামে পরিচিত। ইওয়াফুনেও একটি আধুনিক নাম। এটি নীইগাতা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বছরগুলোর আলোচনায় এমিশি আসলে আয়নু কিনা বা তারা জাতিগতভাবে জাপানি হলেও ইয়ামাটো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত ধারণা ছিল তারা আয়নু, কারণ 蝦夷 শব্দটি আয়নু বোঝাতো। তারপর জানা গেল জাপানি জাতি ইয়ায়ই সংস্কৃতির সঙ্গে দেশে এসেছে, আর জোমোন সংস্কৃতি অন্য জাতির ছিল, যার অবশিষ্ট আয়নু হতে পারে। আয়নুদের দেহে তুলনামূলক বেশি শরীরের লোম থাকার জন্য 毛人 শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তবে সন্দেহ বাড়তে শুরু করে। এজো শব্দ আয়নু বোঝালে ও ইমিশি শব্দের একই অর্থ হওয়ার প্রমাণ নেই। চীনা অক্ষরের বহুবিধ ব্যবহার জাপানি ভাষায় স্বাভাবিক। তাই ইমিশি জনজাতি বোঝায় না বলে ধারণা বেশি প্রবল। জোমোন কঙ্কালের মনুষ্যবিজ্ঞানের গবেষণায় আয়নুদের সাথে তাদের মিল পাওয়া যায়নি। এমিশি হয়তো জোমোন বংশোদ্ভূত হলেও আয়নু নাও হতে পারে। তবে তারা বর্তমান আয়নু জনগোষ্ঠীর একাংশ হতে পারে এবং সাইবেরিয়া থেকে লোকেদের বিভিন্ন ঢল হোক্কাইডোতে এসেছে এটাও পাওয়া গেছে। 毛人 শব্দটি সম্ভবত প্রাকৃতিক লোমযুক্ত লোকদের জন্য নয় বরং পশম পরিধানকারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই এটি বিতর্কে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়। কোফুন যুগের খননায় এমিশিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে অনেক কফুন পাওয়া গেছে। কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও নেই যে সংঘর্ষের সময়কালে এই অঞ্চলে কোনো স্বতন্ত্র জাতির উপস্থিতি ছিল। মুৎসু ফুজিওয়ারা পরিবারের চার ধারাবাহিক প্রজন্মের মমি হিরাইসুমির চুসোনজি-তে সংরক্ষিত আছে, যেগুলি ১৯৫১ সালে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা গিয়েছিল যে তারা আইনু নয়, বরং জাপানিদের মতোই। এই পরিবারকে ব্যাপকভাবে ইমিশি বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আইনু ও জোমন জনসংখ্যার মধ্যে কোনো সত্যিকারের সংযোগ নেই কারণ তাদের মধ্যে কোনো ধারাবাহিক সম্পর্ক পাওয়া যায় না। হক্কাইডোতে প্রথম নিশ্চিত আইনু জীবাশ্ম অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। তবে এ থেকে ইমিশিরা জোমন বংশধর ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন মিটে যায় না। এখানে দেখা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন যে ইয়ায়োই ধানের চাষের সংস্কৃতি উত্তরপূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অভিবাসীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল এবং অনেক জোমন মানুষ নতুন জীবনযাত্রায় "রূপান্তরিত" হয়েছিল। ইয়ায়োই ধানের চাষের সর্বোত্তর সীমা "ইমিশি" অঞ্চলের ভিতরে ছিল এবং একই কথা কোফুন যুগের জীবাশ্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্য তত্ত্বগুলোর সমর্থকরা এখনও আছেন। তবে আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন ইমিশি হওয়ার মূল কারণ ছিল তারা ইয়ামাটো রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে ছিল, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিকভাবে পূর্ববর্তী "জাপানি" থেকে খুব ভিন্ন ছিল না যারা সীমান্তের অন্য পাশে বাস করত। আমি লক্ষ্য করেছি যে কখনোই কারও দ্বারা "ইমিশি ভাষা" শেখার চেষ্টা করার উল্লেখ নেই, অথচ সিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে "সিলা ভাষা" শেখার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ আছে। আমার প্রশ্ন, যার কোনও উত্তর আমি কখনো দেখিনি, তা হলো কেন সোঘা নো ইমিশির নামটা হল? বিশেষ করে ৬৪২ সালে যখন ইমিশিদের একটি দল দরবারে আসলো, তখন তাকে তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অবশ্যই কোনো সম্পর্ক ছিল। এমন ব্যক্তি যার মর্যাদা এত বড়, তার ইমিশিদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে উল্লেখযোগ্য সময় কাটানো সম্ভব নয়। তবে দেখা যায় ষষ্ঠ শতকে অনেক ইমিশিকে ইয়ামাটো অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং শাসক বংশের সম্পত্তির পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সোঘাদের এই ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা ছিল বলেও মনে হয় এবং এর ফলে তিনি ইমিশিদের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হতে পারতেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক অভিজাত ব্যক্তি যে নাম ব্যবহার করতেন, তা তার শৈশবের নাম ছিল না। আমেরিকান ভারতের মতো, যখন আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হতেন, আপনাকে একটি নতুন নাম দেওয়া হতো। এটি আপনার জন্য বিশেষ মানানসই হতে পারত। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে অনেক অদ্ভুত নাম ছিল, যার মধ্যে ইমিশিও একটি। ৬৫৮ সালের অভিযান আবে নো হিরাউ-এর নেতৃত্বে ছিল এবং এটি ৬৫৯ ও ৬৬০ সালেও পুনরাবৃত্তি হয়। বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর। ধারণা করা হয় <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকগণ বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং আসলে অভিযানের সংখ্যা কম, সম্ভবত দুইটি। সংক্ষিপ্ত সারাংশ হলো, ৬৫৮ সালে আবে ১৮০টি নৌকায় উত্তরে গিয়ে আকিতা ও নুশিরো (সম্ভবত আধুনিক আকিতা ও নোশিরো) পৌঁছান। সেখানে তিনি তিনটি আলাদা ইমিশি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাদের আনুগত্যের শপথ করান, স্থানীয় প্রশাসনের পদে নিযুক্ত করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। পরের বছর ৬৫৯-এ আবার ১৮০ নৌকায় একই স্থানে গিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দেখা করেন, যাদের মধ্যে কেউ তাঁকে রাজধানীর জন্য একটি স্থান বেছে নিতে বলেন এবং তিনি তা করেন। আবারো তিনি পদবী ও প্রশাসনিক দায়িত্ব বন্টন করে ফিরে আসেন। ৬৬০ সালে পরিস্থিতি আলাদা। শুরুতেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> বলে যে তিনি সু-শেন (粛慎) দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। বিবরণে বলা হয়েছে, তিনি উত্তর দিকে একটি অবর্ণিত নদী পর্যন্ত যাত্রা করেন, যেখানে ২০টি সু-শেন জাহাজ থেকে পালাচ্ছিল ১০০০ জন ইমিশিকে। আবে সু-শেনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন, তারপর এমন এক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন যা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকদের বিভ্রান্ত করে তোলে, কিন্তু যেকোনো নৃতত্ত্বের ছাত্রের কাছে স্পষ্ট। শেষে সু-শেনদের একটি দুর্গায় অনুসরণ করে তাদের ধ্বংস করে দেন। এ ব্যাপারে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যেমন স্থানীয় নামগুলো কোথায় ছিল, আসলে তিনটি অভিযান হয়েছিল কি না, ৬৫৯ সালের অভিযানটি ৬৫৮ সালের ভুল পুনরাবৃত্তি কিনা। সু-শেন কারা ছিলেন। ভৌগোলিক বিতর্ক প্রধানত আবে হক্কাইডো পর্যন্ত গিয়েছিলেন কি না তা নিয়েই। ৬৫৮ সালের নোটিশ বলে আবে ১৮০ নৌকায় আকিতা ও নুশিরোতে পৌঁছান। আকিতা নোটারি ও ইওয়াফুনের চেয়ে অনেক উত্তরে। আকিতা নারা যুগে এই অঞ্চলের যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান কেন্দ্র ছিল। নুশিরো সম্ভবত আধুনিক নোশিরো, আকিতার কাছাকাছি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদ্বীপের অন্য পাশে। আকিতায় আবে স্থানীয় ইমিশিদের সঙ্গে মিলিত হন, যারা একত্রিত হয়ে দেবতার নামে দরবারের প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন। আজকের দিনে আকিতা কিল্লার স্থানে একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যাকে কোশিও জিনজা বলা হয়, অর্থাৎ "কোশির দেবতার মন্দির।" আবে ইমিশি নেতাদের সরকারি পদ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেন। তারপর, <nowiki>''নিহন শোকি'' বলে, তিনি ওয়াতারিনোশিমার অন্য একটি ইমিশি দলকে আরিমা বিচে ডেকে পাঠান, যারা তাদেরও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর তাদের দেশে পাঠানো হয়। এরপর আবে দেশে ফিরে আসেন। প্রশ্ন হলো, ওয়াতারিনোশিমা ("যে দ্বীপ পার হয়ে যায়") কোথায় ছিল? অনেকদিন ধরে ধরে নেওয়া হয়েছে যে এটি দক্ষিণ হক্কাইডো। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন আবে এত দূর যেতে পারেননি এবং এটি হয়তো উত্তরের ত্সুগারু উপদ্বীপ। এটি প্রাচীনকালে অনেকটাই দ্বীপের মতো ছিল কারণ এটি শুধুমাত্র নৌকায় যাত্রা করে পৌঁছানো যেত, কারণ এটি হনশু থেকে পর্বতমালার একটি বিস্তীর্ণ বেল্ট দ্বারা পৃথক ছিল। এমনকি তাও হয়তো অনেক দূর, কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকরা ত্সুগারু অঞ্চলকে হক্কাইডোর সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন, হনশুর আরও দক্ষিণের ইমিশিদের তুলনায়। একমাত্র সত্যিকারের ইঙ্গিত হলো ''নিহন শোকি''</nowiki> কোনো অতিরিক্ত যাত্রার কথা বলছে না, শুধু বলছে ওয়াতারিনোশিমার ইমিশিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ৬৬০ সালের অভিযান আরও জটিল। প্রথমত, সু-শেন (粛慎) নামটি প্রাচীন চীনা ইতিহাস থেকে, চৌ রাজবংশ থেকে। চীনারা মাঝে মাঝে এই নাম ব্যবহার করত মাঞ্চুরিয়ার মানুষের জন্য যাদের ইয়িলৌ বলা হত এবং যাদেরকে বিশ্বাস করা হয় জুরচেনদের পূর্বপুরুষ যারা লিয়াও রাজবংশ গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ, তারা এমন এক জনগোষ্ঠী যারা পুয়ো (পূর্বপুরুষের জাপানি ধারণা) এর মতো ছিল এবং একই মাঞ্চুরিয়ান অঞ্চলে বাস করত। তারা কীভাবে হক্কাইডোর চারপাশে নৌকা চালাত তা সহজে বোঝা যায় না। এক মত হলো, জাপানিরা কোনো চীনা গ্রন্থ থেকে নামটি তুলে নিয়েছিল। জাপানি উচ্চারণে এটা মিশিহাসে ছিল, কিন্তু এর কোনো প্রতিপাদ্য নেই। এই সময় জাপান কোগুরোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যাদের নিশ্চয়ই মাঞ্চুরিয়ার সব জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল। হয়তো তারা আমাদের চেয়ে বেশি জানত। অথবা ধারণা করা হয়, প্রাচীন সু-শেন চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছিল এবং এই লোকেরা জাপানের উত্তর-পূর্বে ছিল। তাই সু-শেন নামটি তাদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন এটি ওখোটস্ক জনগণের সঙ্গে মেল খায়, যারা সাইবেরিয়া থেকে হক্কাইডোর অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা সহজেই হনশুর দক্ষিণে অনুসন্ধানকারী দল পাঠিয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এই নিবন্ধে বর্ণিত একটি ধরনের অন্ধ ব্যবসা। এটি বিশ্বব্যাপী বহু স্থানে দেখা যায় যেখানে মানুষ দাসপ্রথার ভয়ে বা ভাষাগত অমিলের কারণে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলে। এক পক্ষ মাটিতে নানা পণ্য ছড়িয়ে রেখে চলে যায়। অন্য পক্ষ এসে তা দেখে তাদের পণ্য দেয়। এভাবে লেনদেন চলে যতক্ষণ দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়। তারপর প্রত্যেক দল তাদের কেনা জিনিস ও অবিক্রিত জিনিস নিয়ে চলে যায় এবং কেউ কারো কাছাকাছি আসেনা। এটি নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকরা বুঝতে পারেননি এটি একটি বাণিজ্য। এরপর বলা হয়েছে আবে তাদের শিবিরে অনুসরণ করে আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এর কোনো কারণ দেওয়া হয়নি। পুরো ঘটনা রহস্যময় এবং সম্ভবত <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র উপস্থাপনার চেয়ে অনেক জটিল ছিল। তবে এটি হনশুর দূর উত্তরে জাপানি সরকারের দীর্ঘমেয়াদী জড়িত হওয়ার সূচনা, যেখানে পরবর্তী ২০০ বছর ধরে একটি "সক্রিয়" সীমান্ত ছিল। == পাইকচের পতন == একই সাথে আবে নো হিরাওয়ের ৬৬০ অভিযানের সাথে সাথে জাপান তাং চীন এবং সিল্লার সম্মিলিত বাহিনীর হাতে পাইকচে ধ্বংসের কবলে পড়ে। এটি এই অঞ্চলে একটি অশান্ত সময়ের সূচনা করেছিল যা শেষ পর্যন্ত সিলার শাসনের অধীনে কোরিয়ার একীকরণের দিকে পরিচালিত করে। পুরানো এবং নতুন তাং রাজবংশীয় ইতিহাস, কোরিয়ান ''সামগুক সাগি'' এবং ''নিহন শোকিতে'' এই ঘটনাগুলির বিশদ বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যথায় অজানা কোরিয়ান উপকরণ থেকে বিস্তৃত উদ্ধৃতি রয়েছে। জাপান পাইকচেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য কোরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল এবং চীন বা সিল্লা বা উভয়ের আক্রমণের ভয়ে দীর্ঘকাল ধরে বাস করেছিল। জাপান দরবারে কমপক্ষে প্রথম নারা যুগে নির্বাসনে থাকা পাইকচের রাজাও বজায় রেখেছিল এবং হেইয়ান যুগের শেষের দিকে এখনও সক্রিয় ছিল 百済王 নামে একটি অভিজাত পরিবার সক্রিয় ছিল "পাইকচের রাজা" পায়েচের জাপানি নামটি রাজার জন্য কোরিয়ান শব্দের সাথে একত্রিত করে কুদারানোকোনিকিশি উচ্চারণ করেন। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ৬৪৯ সালে সিল্লা চীনা শৈলীর সাথে মেলে দরবারে সরকারী পোশাক পরিবর্তন করেন এবং ৬৫০ সালে এটি তাং রাজবংশের রাজত্বের উপাধিগুলি নিজের হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ৬৫৪ সালে কিম মুরিওল সিলার রাজা হন। এর আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিল্লা দূতাবাস নিয়ে জাপান ও চীন সফর করেন। পূর্ববর্তী দুই সিল্লা শাসক রানী ছিলেন। তাই তার অবস্থান সম্ভবত যুবরাজ নাকা নো ওয়ের মতো এতটা ভিন্ন ছিল না। পরিস্থিতি যেভাবে এগিয়েছে তা থেকে এটি যুক্তিসঙ্গতভাবে স্পষ্ট যে চীন এবং সিল্লা উভয়ই শুরু থেকেই তার নিকটতম শত্রু পাইকচে এবং কোগুরিওকে ধ্বংস করতে এবং তারপরে কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণে আবির্ভূত হওয়ার জন্য একে অপরকে ব্যবহার করার আশা করেছিল। পাইকচে এবং কোগুরিও একে অপরের সাথে মিত্রতা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল এবং ৬৫৯ সালে তারা সিল্লার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে যা ২০ টি দুর্গ দখল করে। সিল্লা চীন থেকে সাহায্যের অনুরোধ করেন এবং চীন সাড়া দিয়ে খুশি হয়েছিল। ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মুরিওলের এক পুত্রের সাথে একজন চীনা জেনারেলের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়। তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে সেই সময় চীনে ছিলেন। এই বাহিনীতে ১,৩০,০০০ সৈন্য ছিল এবং সমুদ্রপথে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল "সু-শেন" এর বিরুদ্ধে আবে নো হিরাওয়ের যুদ্ধের ঠিক একই সময়। বিস্মিত হয়ে পাইকচে সেনাবাহিনীর পতন ঘটে। পশ্চিম দিকের উপকূল থেকে অগ্রসর হওয়া চীনারা এবং পূর্ব দিক থেকে আসা একটি সিল্লা সেনাবাহিনী পাইকচে রাজধানীতে একত্রিত হয়েছিল। এটি দ্রুত আত্মসমর্পণ করেছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইকচে ধ্বংস হয়ে গেছে, বা তাই মনে হয়েছিল। রাজা এবং বিপুল সংখ্যক অভিজাতদের বন্দী হিসাবে চীনে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং পাইকচেকে চীনা অঞ্চল হিসাবে সংগঠিত করা হয়েছিল। চীনা সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশ তত্ক্ষণাত ফিরে আসে, প্রাক্তন পাইকচে রাজধানীতে আরও ৮,০০০ সিল্লা সেনার সমর্থনে ১০,০০০ লোকের একটি বাহিনী রেখে যায়। তবে, গ্রামাঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই করা হয়নি এবং চীনা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার শেষ করার আগেই বিদ্রোহী বাহিনী তাত্ক্ষণিকভাবে অনেক জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' এই বিদ্রোহের বিবরণ পয়েন্টগুলিতে কিছুটা বিভ্রান্তিকর। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাথমিক বিদ্রোহী ছিলেন 鬼室福信 নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত কৃষকদের দ্বারা একটি সিল্লা বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করেন এবং তাদের অস্ত্র নিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টতই একজন পাইকচে কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি পাইকচে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছিলেন। প্রায় একই সময়ে পাইকচে থেকে লোকেরা জাপানের দরবারে এসে কী ঘটেছিল তা জানায়। এক মাস পরে 鬼室福信 থেকে দূত এবং আরেকজন নেতৃস্থানীয় বিদ্রোহী কমান্ডার 佘自進 জাপানে এসে সাহায্য চেয়েছিলেন। জাপানি দরবারে একজন পাইকচে রাজপুত্র বাস করছিলেন এবং তারা তাকে রাজা বানানোর এবং পাইকচে পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করেন। এতে নিজেদের সম্পৃক্ত করা স্পষ্টতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কিছু না করাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বছরের শেষে আদালত তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেয় কারণ সাইমেই এবং আদালত নানিওয়ায় চলে যায় এবং পুরো আদালতকে উত্তর কিউশুতে স্থানান্তরিত করার প্রস্তুতি শুরু করে, যেখান থেকে তারা আসন্ন যুদ্ধের নির্দেশ দেবে। নানিওয়ায় পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পরে তারা ৬৬১ সালের প্রথম মাসে কিউশুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিন দিন পরে তারা কিবিতে পৌঁছেছিল, যেখানে এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এই পদক্ষেপটি কতটা বিস্তৃত ছিল কারণ রাজকুমার ওমার স্ত্রী একটি বাচ্চা মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। এই অভিযানের সময় আরও বেশ কয়েকটি রাজকীয় শিশুর জন্ম হয়েছিল। তারা আট দিনের মধ্যে পশ্চিম শিকোকুর আধুনিক মাতসুয়ামা অঞ্চলে পৌঁছেছিল এবং সেখানে কিছুক্ষণের জন্য শিবির স্থাপন করেছিল। দুই মাস পরে তারা কিউশুতে স্থানান্তর সম্পন্ন করে, হাকাটা বেতে পৌঁছে। তারা সেই সময়ে একটি অস্থায়ী প্রাসাদ স্থাপন করেছিল তবে দুই মাস পরে এটি একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬৬১ এর ৭ তম মাসে সাইমেই তেন্নো মারা যান। স্থানীয় ঐতিহ্য তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিল যে অস্থায়ী প্রাসাদের জন্য কাঠ নিকটবর্তী একটি মন্দির ভেঙে প্রাপ্ত হয়েছিল। যুবরাজ নাকা নো ওই সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন এবং সম্রাটের পদ গ্রহণের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেননি। সঠিকভাবে বলতে গেলে তখনএকটি অন্তর্বর্তী ছিল। তবে ৬৬২ সাল থেকে তেনচি তেন্নোর রাজত্বের বছর গণনা শুরু করা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম বিচ্ছিন্নতা ৬৬২ সালের প্রথম মাসে আজুমি নো মুরাজি হিরাউয়ের কমান্ডে কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। তাঁর সাথে ছিলেন পাইকচে রাজপুত্র, ইয়ামাবে নো ওমি মোমো, সাই নো মুরাজি আজিমাসা, হাতা নো মিয়াৎসুকো তাকুতসু এবং ৫,০০০ পুরুষ। তারা পঞ্চম মাসে কোরিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের কাছে ১০০,০০০ তীর এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ সরবরাহ করেছিল। ইতিমধ্যে চীনারা একজন নতুন কমান্ডার নিয়োগ করে এবং সিল্লা পাইকচেতে অতিরিক্ত সৈন্যও প্রেরণ করে। সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোরীয় বিদ্রোহীরা সাবেক রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেয়। ৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ বিদ্রোহীরা পাইকচের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬৬৩ এর গোড়ার দিকে সিল্লা একটি বড় আক্রমণ শুরু করে এবং বিদ্রোহীদের পিছু হটতে হয়েছিল। তবে চতুর্থ মাসে দ্বিতীয় জাপানি সেনাবাহিনী ২৭,০০০ পুরুষ নিয়ে এসেছিল। কমান্ডার ছিলেন কামিতসুকেনু নো কিমি ওয়াকাকো। এই নামের অর্থ তিনি পূর্ব জাপানের কান্টো অঞ্চল এবং কুনিনোমিয়াৎসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাশিহিতো নো ওমি ওফুতা, কোসে নো কামিসাকি নো ওমি ওসা, মিওয়া নো কিমি নেমারো, আবে নো হিকিতা নো ওমি হিরাও এবং ওয়াকে নো ওমি কামায়ে। এই শক্তিবৃদ্ধির সাথে, বিদ্রোহীরা আবার উপরের হাত অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো জাপানিদের কোরিয়ায় মোট ৩২,০০০ পুরুষ ছিল এবং বাহিনীটি স্পষ্টতই রচনায় দেশব্যাপী ছিল। ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত নামগুলি থেকে এটি বলা সম্ভব যে সেখানে কিউশু এবং শিকোকুর প্রায় প্রতিটি প্রদেশ এবং সুদূর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে সৈন্য ছিল। ধারণা করা হয় যে,দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর সাথে আবে নো ওমি হিরাও একই ব্যক্তি যিনি উত্তর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রায় একই সময়ে, পাইকচে বিজয়ের মূল চীনা কমান্ডার ৭,০০০ লোক নিয়ে ফিরে আসেন। ঠিক এই মুহুর্তে কোরিয়ান নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে বিদ্রোহটি প্রায় মারাত্মক আঘাত হানে। পাইকচে রাজকুমার রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাকে হত্যা করেন। ৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ম মাসে চীন ও সিল্লা উভয়ই কোরিয়ান উপকূলে মিলিত হয়ে একসাথে অভিযান চালানোর জন্য বিশাল শক্তিবৃদ্ধি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। একই সময়ে জাপানিরা একটি তৃতীয় বাহিনী প্রেরণ করেছিল যা চীনাদের দ্বারা বেছে নেওয়া ঠিক একই বিন্দুতে উপকূলে অবতরণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। এই পদক্ষেপটি রাজকুমার 豊璋 দ্বারা আক্রমণের সাথে সমন্বয় করার কথা ছিল। জড়িত জাপানি সেনারা একটি নতুন বাহিনী ছিল নাকি কামিতসুকেনু নো কিমি নো ওয়াকাকোর অধীনে ২৭,০০০ থেকে একটি বিচ্ছিন্নতা ছিল তা স্পষ্ট নয়। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে ১০,০০০ পুরুষ ছিল। চীনা ও সিল্লা অভিযাত্রীরা ৬৬৩ সালের ৮ম মাসের ১৭তম দিনে যোগাযোগ করে। চীনা নৌবহরে ১৭০টি জাহাজ ছিল। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে জাপানি বাহিনী ১০ দিন পরে এসে চীনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যা দু'দিন স্থায়ী হয়। জাপানিরা একে হাকুসুকি নো ই বা হাকুসুকি উপসাগরের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে। ''সামগুক সাগি'' অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে যে জাপানিদের "১০০০ জাহাজ ছিল", সম্ভবত এটি অতিরঞ্জিত। জাপানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং মূলত সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে দেখা যাচ্ছে যে জাপানিরা চীনা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য সমস্ত কিছু বাজি ধরেছিল এবং চীনা ডানা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে ঘিরে ফেলেছিল। ওল্ড তাং ইতিহাস বলছে যে চারটি পৃথক লড়াই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৪০০ জাপানি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল এবং তাদের ক্রুরা ডুবে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তির পরে, উপকূলে তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত যুবরাজ সংগ্রাম ত্যাগ করে কোগুরিওতে পালিয়ে যান। জাপানিরা বিপুল সংখ্যক পাইকচে শরণার্থী সহ তাদের অন্যান্য সেনাবাহিনীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। আসলে এখানেই গল্পের শেষ নয়। পরে চীনারা তাদের বেশিরভাগ বাহিনীকে কোগুরিও আক্রমণে স্থানান্তরিত করে এবং পাইকচে তাদের পিছনে আবার বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। এবার সিল্লা বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং চীনের বিরুদ্ধে কোগুরিওতে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের সাথে জোটবদ্ধ হন এবং চীনাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে সফল হন। এরপরে তারা সিল্লার একীভূত রাজ্যের অধীনে এই অঞ্চলের প্রাক্তন পাইকচে শাসক পরিবারের গভর্নর হন। স্বাভাবিকভাবেই, নাকা নো ওকে এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করতে হয়েছিল যে চীনা এবং বা সিল্লা বাহিনী অবিলম্বে বা ভবিষ্যতের কোনও সময়ে জাপান আক্রমণ করবে। তবে এই বিপর্যয় দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেবে কিনা তা নিয়েও তাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়েছে। এটি স্পষ্ট নয়। তবে এটি প্রদর্শিত হয় যে তিনি ৬৬৩ এর শেষের কিছু সময় আগে ইয়ামাতোতে ফিরে আসেন। আক্রমণ থেকে কিউশুর প্রতিরক্ষার জন্য তিনি যা করতে পারেন তা করেন। এই সময়ে তিনি সিংহাসনে আরোহণের বিষয়ে কিছুই করেননি এই বিষয়টি সাধারণত এই প্রস্তাবের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে গ্রহণ করা হয় যে,তিনি তার বোন রাজকুমারেস হাশিহিতোর সাথে অজাচার বিবাহ করেন। ''নিহন শোকির'' একটি বিবরণ রয়েছে যে ইঙ্গিও তেন্নোর মৃত্যুর পরে অভিজাতরা ঠিক একই কারণে তার উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে বসাতে অস্বীকার করেছিল এবং পরিবর্তে তার ছোট ভাইকে বেছে নিয়েছিল। এর অর্থ হলো নাকা নো ও এটি চেষ্টা করার সাহস করেনি। এবার তিনি কেবল সিংহাসন খালি রেখেছিলেন, উপযুক্ত আসন-ওয়ার্মার উপলব্ধ ছিল না। তবে, এটি অবশ্যই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে কেউ তার বিরুদ্ধে যেতে সক্ষম হতে পারে। এই সময়ে তার প্রধান সুবিধা ছিল যে যেহেতু তিনি ইতিমধ্যে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং রাজকুমার আরিমাকে নিষ্পত্তি করেন। তাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প ছিলেন তার নিজের ভাই রাজকুমার ওমা। এই যুগে ভাইয়েরা ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার প্রতিটি চেহারা দিয়েছিলেন। নাকা নো ওই তার দুই মেয়েকে ওমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। তারা হলেন রাজকুমারেস ওটা এবং রাজকুমারেস উনো নো সারারা। উনো নো সারারা ৬৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ বছর বয়সে ৬৫৭ সালে ওমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন (জাপানি গণনা)। ধারণা করা হয়, রাজকুমার ওমার বয়স তখন ২৭ বছর। অবশেষে, ওমা নাকা নো ওয়ের চার কন্যাকে বিয়ে করেন, শেষ দু'জন তিনি সম্রাট হওয়ার পরে। সাম্রাজ্যবাদী/অভিজাত যৌন জীবন সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত নোট রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। জাপানি কবিতার প্রথম সংকলন, ''মানিয়োশু'', একটি রাজকুমারী নুকাতার ৩ টি দীর্ঘ কবিতা এবং ৯ টি সংক্ষিপ্ত কবিতা রয়েছে। এই কবিতাগুলির মধ্যে কয়েকটি স্পষ্ট করে দেয় যে তিনি নাকা নো ও / তেনচি তেন্নোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তিনি ''নিহন শোকির'' তালিকাভুক্ত নন। সম্রাটদের স্ত্রীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া একমাত্র স্ত্রীই রাজপুত্র বা রাজকন্যার জন্ম দিয়েছেন। যে-সম্পর্ক কোনো সন্তান জন্ম দেয় না, সেটাকে প্রকৃত বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হতো না, যে-সম্পর্ক বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত ছিল। রাজকন্যা নুকাতা তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে ''নিহন শোকিতে'' তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এটি প্রথমে তাঁর সম্রাজ্ঞী এবং সমস্ত স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে যারা রাজকন্যা ছিলেন, তারপরে সমস্ত স্ত্রী যারা আভিজাত্যের কন্যা ছিলেন এবং তারপরে এটি রাজকন্যা নুকাতাকে কেবল একজন মহিলা হিসাবে উল্লেখ করে যার সাথে তার একটি সন্তান ছিল। এই শিশু, রাজকুমারেস তোচি, পরে তেনচি তেন্নোর ছেলে রাজকুমার ওটোমোকে বিয়ে করেন। আমাদের মানদণ্ড অনুসারে এই মানুষগুলোর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হিসেবে অত্যন্ত অজাচার। রাজকুমার নাকা নো ওই এবং রাজকুমারেস হাশিহিতো টাবুর মধ্যে একমাত্র যে বিষয়টি (অনুমিত) যোগাযোগ তৈরি করেছিল তা হলো তাদের মা একই ছিলেন। একই পিতার সাথে মানুষের মধ্যে বিবাহ কিন্তু ভিন্ন মায়ের মধ্যে সাধারণ ছিল। লোকেরা রাজকুমারেস নুকাতা এবং তার চক্র সম্পর্কে প্রচুর তথ্য বের করতে সক্ষম হয়েছে, চিত্রিত করে যে অভিজাতদের মধ্যে সাক্ষরতার বিস্তার এবং একটি সাহিত্যিক চরিত্রের বইয়ের উপস্থিতির সাথে সাথে লোকেরা কীভাবে তাদের জীবনযাপন করেছিল সে সম্পর্কে আমাদের জিনিসগুলি জানার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ৬৫৮ সালে সাদাইজিন কোসে নো টোকুটা মারা গিয়েছিলেন এবং প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে,যুবরাজ ওমা উপাধি গ্রহণ না করেই এই পদে কাজ করেন, যেহেতু এই সময় পর্যন্ত কোনও রাজপুত্রের মন্ত্রীর উপাধি গ্রহণের কোনও নজির ছিল না। সম্ভবত এটি ই সাদাইজিনের চেয়ে উচ্চতর একটি নতুন পদ তৈরির কারণ ছিল, যাকে বলা হয় দাজোদাইজিন বা ওমাতসুরিগোতো নো মায়েস্তুকিমি, প্রায়শই অনুবাদ করা হয় "চ্যান্সেলর"। নারা আমলের আগ পর্যন্ত এই পদ খালি না থাকলেও সবসময় একজন রাজপুত্র দ্বারা পূর্ণ থাকত। এটি মূলত "ক্রাউন রাজকুমার" অবস্থানের আমলাতন্ত্রের আমদানি ছিল। তারপরে, ৬৬৪ সালে উদাজিন সোগা নো মুরাজিকো মারা যান এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে সরকারের শীর্ষে রাজকুমার নাকা নো ও ও রাজকুমার ওমা একা ছিলেন। রাজকুমার ওমার নামে জারি করা একাধিক ফরমান স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে বর্তমান সঙ্কটে কিছু সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা এবং উচ্চতর অভিজাতদের সমর্থন বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্য করা দরকার। প্রথমত, ৬৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯ র্যাঙ্ক সিস্টেমটি একটি নতুন সিস্টেম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যার ২৬ গ্রেড ছিল। তাদের তুলনা করলে, এটি স্পষ্ট যে শীর্ষ ছয়টি র্যাঙ্ক একা রেখে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী তেরোটি বিশটিতে প্রসারিত হয়েছিল। মনে হয় যে সমস্ত অভিজাতদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে সরকারী নিয়োগ প্রাপ্ত লোকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে এই পরিবর্তনটি আসলে ৬৭১ সালে করা হয়েছিল। ''নিহন শোকিতে'' সেই বছরের জন্য রাজকুমার ওমা কর্তৃক আদেশিত র্যাঙ্ক সিস্টেমে পরিবর্তনের খুব সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। "তেনচি তেন্নোর রাজত্বের তৃতীয় বছর" বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে বিভ্রান্তির সম্ভাবনার কারণে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়। যদি ৬৬২ থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৬৪ হবে। তবে যদি ৬৬৮ (যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন) থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৭১ হবে। যদি পরিবর্তনটি ৬৭১ এ হত তবে এটি সঙ্কটের সময়ের সাথে যুক্ত হত না। এটা সম্ভব যে সিস্টেমে দুটি সামঞ্জস্য ছিল এবং তারিখগুলির মধ্যে সম্পর্কটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল। ৬৬৪ সালে জারি করা দ্বিতীয় আদেশটি বংশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। উজিনোকামি বা বংশ প্রধানের একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি তৈরি করা হয়েছিল। একটি "মহান বংশের" ক্ষেত্রে প্রধানকে একটি তাচি "দুর্দান্ত তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল এবং একটি "ছোট" বংশের সিএ-তে তাকে একটি কাতানা "ছোট তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল। তোমোনোমিয়াৎসুকো "ইত্যাদি" একটি ঢাল বা একটি ধনুক এবং তীর দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। এই বিভাগগুলি, ধরে নেওয়া হয় যে "ইত্যাদি" কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির জন্য জায়গা দেয়, কেবল অভিজাতদের উপরের অর্ধেককে আচ্ছাদিত করে, তাদের অন্যদের থেকে পৃথক করে। এছাড়াও, "বড় গোষ্ঠী" এবং "ছোট গোষ্ঠী" এর পৃথক স্বীকৃতি প্রথম ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,বংশ কাঠামোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে, নাকা নো ওই অভিজাতদের আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে আমলাতান্ত্রিকীকরণের দ্বারা তাদের বিশেষ মর্যাদা মুছে ফেলা হবে না। এই সময়ে সর্বশেষ যে আইটেমটি প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো "কাকিবে" এবং "ইয়াকাবে" এর স্বীকৃতি। এগুলি বেসরকারী সম্পত্তির বিভাগ ছিল যা ৬৪৬ সালের নববর্ষের দিন ফরমান দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। একটু সামনের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারা আমলের ভূমি পুনঃবণ্টন ব্যবস্থায় আভিজাত্যদের আসলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলি আদমশুমারির রেজিস্টারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং তারা কোনও কর দেয়নি (আসলে খুব নিম্নতম পদমর্যাদার লোকদের কিছু কর দিতে হয়েছিল কারণ কেবল প্রকৃত পদধারীই অব্যাহতি পেয়েছিল, তার পুরো পরিবার নয়)। নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা চালের গাঁট এবং কাপড়ের বোল্ট আকারে বেতন পেতেন। এটি তারা তাদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের জন্য বাণিজ্য করতে পারতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একই ধরনের বেতন পেতেন। তবে দুই ধরণের "পদ জমি"। মাঝারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়োগগুলি শ্রম কর সহ কৃষিজমির একটি ব্লক থেকে সংগৃহীত করের সরাসরি অর্থ প্রদানের পরিমাণ ছিল। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমাণ জমি পেতেন যা তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিচালনা করতেন। উচ্চ পদমর্যাদা বংশানুক্রমিক হওয়ায় তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব জমি আগলে রেখেছিল। কিছু পরিবারকে প্রকৃতপক্ষে সরকারী নিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জমির বৃহত্তম বরাদ্দ রাখার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও পুত্র তার বাবার সমান পদে না পৌঁছালেও সে পারিবারিক পদের জমি রাখতে পারে। এই অনুশীলনগুলির আলোকে, উচ্চতর আভিজাত্যকে সমর্থন করার জন্য জমির নির্দিষ্ট ব্লকগুলি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হবে তা স্বীকৃতি দেওয়া অগত্যা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করা ছিল না। যাইহোক, এই সময়ে এটি ঘোষণা করা অবশ্যই অভিজাতদের আশ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে ছিল যে নতুন সিস্টেমটি তাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি লক্ষ করা গেছে যে এই সময়ে এই জমিগুলির স্বীকৃতি বোঝায় যে এগুলি আসলে ৬৪৬ এর পরে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। নতুন সরকার ব্যবস্থার বিকাশ সম্পাদন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। এ সময় যথেষ্ট পরিমাণে সামরিক তৎপরতাও ছিল। সমস্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক কোরিয়ান ৬৬৩ সালে জাপানে পালিয়ে গিয়েছিল এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসতি স্থাপনের অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে এবং কীভাবে তাদের জাপানি অভিজাতদের মধ্যে ফিট করা যায় তা নির্ধারণের জন্য তাদের মধ্যে অভিজাতদের শ্রেণিবদ্ধ করার প্রচেষ্টাও রয়েছে। কোরিয়ান অভিজাতদের অনেকে যে অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল সেখানে দুর্গ নির্মাণের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল, বিশেষত উত্তর কিউশু এবং দ্বীপপুঞ্জে ইকি এবং সুশিমা কিউশু উপকূলে। সাকামোরি "কোস্টগার্ড" নামে পরিচিত দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে জাপানি সৈন্যদের শ্রম করের অংশ হিসাবে সীমান্তের দুর্গগুলি পরিচালনার জন্য কর্তব্যের মেয়াদে পশ্চিমে যাওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সাকামোরি এবং তাদের পরিবারের বাড়িতে ফেলে আসা পরীক্ষা এবং দুর্দশা সম্পর্কে প্রচুর কবিতা রয়েছে। অন্যান্য সৈন্যদের কিউশু থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রসারিত সিগন্যাল ফায়ারের একটি শৃঙ্খল পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে আক্রমণ ঘটলে সরকারকে দ্রুত অবহিত করা যায়। নারা যুগে সাকামোরিরা সকলেই এমিশি সীমান্তের নিকটবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে এই ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল যে এই লোকদের সকলেরই সামরিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ছিল। সম্ভবত ৬৬৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় পশ্চিমা সেনারা সম্ভবত ফিল্ড আর্মি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ছিল যখন সাকামোরি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি রক্ষা করত। নারা যুগে সিগন্যাল স্টেশনগুলিতে নিযুক্ত পুরুষরা সকলেই স্থানীয় ছিল এবং সম্ভবত এই সময়েও এটি সত্য ছিল। এটাই ছিল প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। দাজাইফু এলাকায় বড় আকারের দুর্গ আকারে একটি দ্বিতীয় লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বহু শতাব্দী ধরে কিউশু প্রতিরক্ষা সদর দফতর হিসাবে কাজ করেছিল। দাজাইফু উপকূল থেকে বেশ দূরে ফুকুওকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত যা রক্ষা করা সহজ। অনেক দুর্গ আজও দৃশ্যমান। নির্মাণগুলির মধ্যে একটি ছিল তথাকথিত "জলের দুর্গ"। এর কেন্দ্রস্থলটি একটি দীর্ঘ মাটির কাজ যা এখনও ১৪ মিটার উঁচু এবং ১ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। এটি স্পষ্টতই কাঠামোগত ছিল যাতে মিকাসা নদী দ্বারা পূর্ণ জলের একটি জলাধার প্রয়োজনে প্রাচীরের ঠিক নীচের অঞ্চলটি প্লাবিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি উপকূল থেকে দাজাইফুর দিকে আসা সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেবে। উত্তর প্রান্তটি প্রায় ৪১০ মিটার উঁচু একটি যথেষ্ট পাহাড়ে পৌঁছেছে যার উপরে ৬৬৫ সালে একটি বড় পাথরের দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। এগুলোর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক শহর দাজাইফু। পাহাড়ের একটি ফাঁক ঢাকতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে আরও একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল, যদিও একটি সেনাবাহিনী মূল প্রতিরক্ষা ফ্ল্যাঙ্ক করার চেষ্টা করতে পারে। এই দুটি দুর্গের গ্যারিসনগুলি কোরিয়ান ছিল। তারা সম্ভবত নির্মাণের নির্দেশনাও দিয়েছিল। এগুলো দেখতে অবিকল সমসাময়িক কোরিয়ান পাহাড়ি দুর্গের মতো। কোরিয়া খুব পর্বতময় এবং সমস্ত কোরিয়ান যুদ্ধ পাহাড়ের দুর্গের চারপাশে ঘোরাফেরা করে বলে মনে হয়। দাজাইফু দুর্গের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। তাই এটি র জন্য একটি বড় গ্যারিসন প্রয়োজন। এটি এত বড় যে দাজাইফুর পুরো জনগোষ্ঠী ভিতরে আশ্রয় নিতে পারে। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে হনশুর পশ্চিম প্রান্তে কোরিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি দুর্গ নির্মিত হয়। এর অবস্থান জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি শিমোনোসেকির কাছাকাছি কোথাও ছিল। এটি সর্বদা সেই অঞ্চলের সামরিক মূল বিন্দু। ৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসের প্রথম দিকে পায়েচে চীনা কমান্ডার জাপানে একটি দূত প্রেরণ করেন। তারা সাত মাস অবস্থান করেন। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি ''নিহন শোকি''। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের নবম মাসে চীন থেকে সরাসরি দ্বিতীয় দূতাবাস আসে এবং প্রথম দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত নিয়ে আসে। স্পষ্টতই চীনারা সিরিয়াস ছিল। যা ঘটেছিল তার উপর ভিত্তি করে একজনকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে চীনাদের প্লেটে অনেক কিছু ছিল (তাদের এখনও কোগুরিওর ধ্বংস সম্পূর্ণ করতে হবে। এটি বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রচুর সমস্যা দিয়েছিল)। সর্বশেষ যে জিনিসটি তারা চেয়েছিল তা হলো জাপানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ। দূতাবাসের আগমনের পরের মাসের জন্য ''নিহন শোকিতে'' একটি নোট রয়েছে যে উজিতে একটি "দুর্দান্ত সামরিক পর্যালোচনা" হয়েছিল, সম্ভবত চীনাদের প্রভাবিত করার জন্য। এই দূতাবাস তিন মাস ছিল। একই বছর জাপান চীনে নিজস্ব দূতাবাস স্থাপন করে। মজার ব্যাপার হলো, রাজকুমার আরিমার ঘটনার অংশ হিসেবে যেসব কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, রাষ্ট্রদূত তাদের একজন। শেষ পর্যন্ত চীন বা সিল্লা কেউই জাপানকে আক্রমণ করেনি (যদিও সিল্লা এমন একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল যা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি), যদিও জাপানিরা কমপক্ষে আরও একশ বছর ধরে পশ্চিমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বজায় রাখার প্রচেষ্টা কখনও শিথিল করেনি। দুর্গগুলি সুশিমাতে, পশ্চিম শিকোকুর সানুকিতে এবং অভ্যন্তরীণ সাগরের পূর্ব প্রান্তে এবং কাওয়াচি এবং ইয়ামাতোর সীমান্তে নানিওয়াতে নির্মিত হয়েছিল। সুশিমার দুর্গটি এখনও টিকে আছে এবং সানুকির দুর্গটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে জেনপেই যুদ্ধের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ৬৬৫ সালে এই প্রচেষ্টার মাঝপথে সম্রাজ্ঞী হাশিহিতো মারা যান। এটি সম্ভবত নাকা নো ওয়ের সিংহাসন গ্রহণের পথ পরিষ্কার করেছিল। তবে তিনি আরও তিন বছর বিলম্ব করতে থাকেন। ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সাইমেই তেন্নো ও সম্রাজ্ঞী হাশিহিতোকে একই সমাধিতে সমাহিত করা হয়। সাইমেইয়ের সমাধি নির্মাণের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও কেন এত সময় লাগল তা বোধগম্য নয়। হাশিহিতোর দেহাবশেষের জন্য থাকার ব্যবস্থা করার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এক মাস পরে, নাকা নো ও তার প্রাসাদটি বিওয়া লেকের ওটসুতে স্থানান্তরিত করেন। এটি পূর্ববর্তী কোনও অবস্থানের পূর্ব দিকে। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে অজনপ্রিয় ছিল এবং এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং ব্যঙ্গাত্মক গান ছিল। কেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরের একটি কবিতায় এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে এবং বোঝানো হয়েছে যে আসল বিরোধিতা ছিল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যারা চরম বর হিসাবে যা ভেবেছিল তার দিকে যেতে হবে। আমি মনে করি এটি বলা ন্যায্য যে হেইয়ানকিও (কিয়োটো) এর চূড়ান্ত পদক্ষেপে ভবিষ্যতের সমস্ত পদক্ষেপ একই রকম বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল, এমন পদক্ষেপগুলি ব্যতীত যা পরীক্ষামূলক অবস্থানগুলির মধ্যে একটিকে পরিত্যাগ করে পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসেছিল যেখানে বিল্ডিংগুলি ইতিমধ্যে ছিল। এতক্ষণে কেবল শাসকের পরিবারই সরে যায়নি, বরং উচ্চ ও নিম্ন পদমর্যাদার বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা, যাদের সকলকেই নতুন আবাসন তৈরি করতে হয়েছিল। কোনও কারণ দেওয়া হয়নি। তবে অনুমান করা হয় যে,দাজাইফু যেমন অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তেমনি নাকা নো ওই সামরিক সুরক্ষার কথা ভাবছিলেন। ওটসু নানিওয়া উপকূলের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পর্বত বাধার পূর্ব দিকে রয়েছে। তবে ইয়ামাতো প্রদেশটিও পর্বতমালা দ্বারা ভালভাবে সুরক্ষিত। ওটসুর এই গুণ রয়েছে যে বিওয়া হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে এর অবস্থান এটি কে হোকুরিকু অঞ্চলের সাথে দুর্দান্ত যোগাযোগ দেয়। তবে এটি সর্বদা পশ্চিমে যোগাযোগের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি তখনআরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আরেকটি তত্ত্ব আছে। এটি পরবর্তীকালের অসংখ্য সত্যায়িত ঘটনার কারণে উপেক্ষা করা যায় না। অর্থাৎ হাশিহিতোর ভূত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন নাকা নো ও। প্রতিহিংসাপরায়ণ ভূত অভিজাতদের মধ্যে একটি প্রধান উদ্বেগ ছিল এবং তারা রাজধানীর অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি মন্দির এবং মন্দিরগুলিতে প্রচুর ক্রিয়াকলাপ করেছিল। আমরা যদি ধরে নিই যে, তাদের অজাচার সম্পর্ক স্থাপনে তিনিই আক্রমণকারী ছিলেন, তা হলে তিনি যেখানে মারা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাওয়ার হয়তো উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে. যাই হোক না কেন, আদালত ওটসুতে ৫ বছরের জন্য স্থগিত ছিল। ৬৬৮ সালে প্রাসাদে ওটসু নাকা নো ও অবশেষে সিংহাসন গ্রহণ করেন। তার সম্রাজ্ঞী ছিলেন ইয়ামাতো নো হিমেমিকো, রাজকুমার ফুরুহিতোর কন্যা, যাকে তিনি হত্যা করেন। তার কোনও সন্তান ছিল না। তবে তার আরও ৮ জন মহিলার সন্তান ছিল, যার মধ্যে চারজন কিসাকি এবং যাদের মধ্যে চারজন অপেক্ষারত মহিলা ছিলেন। তাদের মধ্যে দশটি মেয়ে ও চারটি ছেলে ছিল। তার নির্বাচিত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওটোমোর নিম্ন মর্যাদার মা ছিলেন। তাঁর পিতামহের পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে,তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তেনচির একমাত্র উচ্চ মর্যাদার পুত্র ছিলেন যুবরাজ তাকেরু, যার মা ছিলেন সোগা নো ইশিকাওয়ামারোর কন্যা। যাইহোক, রাজকুমার তাকেরু ৮ বছর বয়সে ৬৫৮ সালে মারা গিয়েছিলেন। রাজকুমার ওমায় তেনচি তেন্নোর একটি শক্তিশালী এবং সম্মানিত ভাই ছিল, ইয়ামাতো রাজ্যের স্বাভাবিক গতিশীলতা প্রায় নিশ্চিত করে তুলেছিল যে ওমা তার উত্তরসূরি হবেন (যদি তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন) নিম্ন মর্যাদার মায়ের সাথে রাজপুত্রের সাথে কোনও প্রতিযোগিতায়। এমন রাজপুত্র এতদিন সিংহাসনে আরোহণ করেননি। অবশ্যই, তেনচি তেন্নো ইয়ামাতো রাজ্যকে একটি নতুন দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছিলেন যা চীনা লাইনে কাজ করেছিল, যেখানে সম্ভব। বিষয়গুলি সম্পর্কে চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ছিল, জ্যেষ্ঠ বৈধ পুত্রই একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী। তেনচি তেন্নো এবং পরবর্তীকালের বেশ কয়েকজন সম্রাট শাসক বংশের জন্য এই নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচণ্ড লড়াই করেন। কিন্তু তা কখনও ঘটেনি। ৬৬৯ সালে তেনচি তেন্নোর দীর্ঘদিনের সহযোগী নাকাতোমি নো কামাতারি ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর অব্যবহিত আগে সম্রাট নাইদাইজিনের নতুন পদ বিশেষভাবে তৈরি করেন যাতে কামাতারিকে পদোন্নতি দেওয়া যায়। তিনি কামাতারির বংশধরদের জন্য নতুন বংশের নাম ফুজিওয়ারা তৈরির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ফরমান প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশকে আচ্ছাদন করে একটি আদমশুমারি সম্পন্ন করার আদেশ দেয়। এটি করার জন্য, গ্রামীণ অভিজাতদের অংশগ্রহণের সাথে জড়িত প্রদেশগুলিতে এক ধরণের আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক অগ্রগতি করা উচিত। এই আদমশুমারির কোনও প্রকৃত রেকর্ড বেঁচে নেই। যাইহোক, আমরা জানি যে পরে, নারা সময়কালে, এই আদমশুমারির নিবন্ধগুলি এখনও বিদ্যমান ছিল এবং তাইহো কোডে নির্দিষ্ট সিস্টেমটি কাজ করার সূচনা পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আমরা আরও জানি যে কিউশুর রেকর্ডগুলি ৭৭০ খণ্ড নিয়েছিল এবং কান্টো অঞ্চলের কোজুকে প্রদেশের রেকর্ডগুলি ৯০ খণ্ড নিয়েছিল। এই সংখ্যাগুলি ৮ ম এবং ৯ ম শতাব্দীতে এই স্থানগুলির পরিচিত জনসংখ্যার সমানুপাতিক। নারাতে শোসোইন কোষাগার প্রকৃত ৮ ম শতাব্দীর রেজিস্টারগুলি সংরক্ষণ করে। এগুলিতে ক্রীতদাস পর্যন্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এটি জমির পরবর্তী বিতরণের পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ৬৭০টি নিবন্ধন তখনপর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়নি। কারণটি হলো পরে যখন জিতো তেন্নো একটি আদমশুমারি পরিচালনা করেন তখন এটি সরাসরি জমির পুনর্বণ্টনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তবে এখানে এটি ঘটেছিল এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। এছাড়াও, যদি আপনার কাছে প্রতিটি ব্যক্তির বিশদ বিবরণ রেজিস্টার থাকে তবে আপনি স্বাভাবিকভাবেই করের বোঝা নির্ধারণে সেগুলি ব্যবহার করবেন। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে,৬৪৬ সালে ডাকা নতুন কর ব্যবস্থা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এই রেজিস্টারগুলি পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনায় ব্যবহার করার জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হত। এটি পুনরায় বিতরণ এবং পুনরায় বিতরণ দ্বারা নিহিত কর ব্যবস্থার বাস্তবায়নের পরে আরও বিশদ আদমশুমারি হত। তেনচি তেন্নোর শেষ বছরগুলিতে প্রায়শই জমা দেওয়া অন্য কৃতিত্বটি ছিল "ওমি রিও" বা ওমি কোডের সৃষ্টি। ওমি সেই প্রদেশ যেখানে ওটসু অবস্থিত। এটি একটি খুব বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ''নিহন শোকি'' বা নবম শতাব্দীর চেয়ে পুরানো কোনও বই বা নথিতে এর উল্লেখ নেই। এটি প্রথম ''কোনিন কিয়াকুশিকির'' মুখবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে প্রকাশিত ধারাবাহিক বইগুলির মধ্যে একটি যা আদেশ, বিচারিক রায় এবং এর মতো অনুলিপি রয়েছে যা প্রশাসনিক আইন কোডগুলির প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করেছিল। ''দাইশোকুকান্দেন'' নামে একটি বই রয়েছে যা অষ্টম শতাব্দীতে ফুজিওয়ারা নো নাকামারো লিখেছিলেন এবং এটি তেনচি তেন্নোর রাজত্বকালের ফরমানগুলির নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা তৈরি একটি সংকলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে করা হয় যা এটি র উল্লেখ করে না। একটি তত্ত্ব উল্লেখ করে যে জিনশিন যুদ্ধের পরে তেম্মু তেন্নোর বংশধররা ১০০ বছর ধরে সিংহাসন ধরে রেখেছিলেন যতক্ষণ না এটি কোনিন তেন্নোর সাথে তেনচি তেন্নোর বংশধরদের লাইনে স্থানান্তরিত হয়। তেম্মু তেন্নোর কৃতিত্বের কৃতিত্ব তার ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এমন অনেকে থাকতে পারেন। যাই হোক না কেন, এর মধ্যে কী ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। তাই এটি আসলে কোনও ব্যাপার নয়। যাইহোক, চীনারা প্রশাসনিক আইনের বিশদ বিবরণ দিয়ে ভলিউম সংকলন করার অভ্যাসে ছিল এবং এটি অনিবার্য ছিল যে কোনও সময়ে জাপানিরাও একই কাজ করার কথা ভাববে। তবে সম্ভবত এখনও পুরোপুরি নয়। == জিনশিন যুদ্ধ == তেনচির রাজত্বের শেষের দিকে উত্তরাধিকার সম্পর্কে সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তেনচির তিন পুত্র জীবিত ছিল, সবচেয়ে বড় ছিল যুবরাজ ওটোমো। তিনি ইতিমধ্যে দাজোদাইজিন নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটি কখন ঘটেছিল তা নিয়ে উত্সগুলিতে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তেনচি যুবরাজ ওটোমোকে তার উত্তরসূরি বানাতে চেয়েছিলেন, যদিও তার মা নিম্ন মর্যাদার (রাজকীয় মান অনুসারে) প্রাসাদ কর্মচারী ছিলেন। এটি দীর্ঘকাল ধরে প্রথা ছিল যে কুনিনোমিয়াতসুকো এবং আগাতানুশি শ্রেণির প্রাদেশিক অভিজাতরা মেয়েদের স্ত্রী এবং রাজকন্যাদের উচ্চ স্তরের চাকর হিসাবে কাজ করার জন্য প্রাসাদে পাঠাতেন। এই প্রথা পরবর্তী শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল। তেনচি তেন্নো আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদগুলি দীর্ঘদিন ধরে খালি রেখেছিলেন। তবে একই সাথে তিনি ওটোমোকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তিনি সোগা নো ওমি আকে সাদাইজিন, নাকাতোমি নো মুরাজি কোগানে উদাইজিনকে তৈরি করেন এবং ওকিমোনোসুসুকাসা, সোগা নো ওমি হাতায়াসু, কুসে নো ওমি হিতো এবং কি নো ওমি উশির পদে তিনজনকে নিয়োগ করেন। এই শেষ পদটি পরবর্তী ব্যবস্থায় টিকে ছিল না তবে মোটামুটিভাবে দাইনাগনের সাথে মিলে যায়, সাধারণত অনুবাদ করা হয় কাউন্সিলর এবং মহান মন্ত্রীদের ঠিক নীচে র্যাঙ্কিং। সম্ভবত, তিনি শীর্ষস্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে রাজকুমার ওটোমোর পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন, যাকে তখনপর্যন্ত হাতের দৈর্ঘ্যে রাখা হয়েছিল। ওটোমোর পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব করার জন্য রাজকুমার ওমাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কারণ তেনচির মৃত্যুর পরে আভিজাত্যরা ওটোমোকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম ছিল। তার কৃতিত্বের জন্য, তেনচি তার ভাইকে হত্যা করতে চায়নি। তিনি মূলত রাজকুমার ফুরুহিতোকে নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি সংস্করণ নিয়ে আসেন। সম্রাট প্রকাশ্যে যুবরাজ ওমাকে উত্তরাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে সিংহাসনে সফল হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই, সম্রাজ্ঞী ইয়ামাতোহিমকে তেন্নো হওয়ার এবং বিষয়গুলির পরিচালনা রাজকুমার ওটোমোর হাতে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে দেশের কোনো নিরিবিলি মন্দিরে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। এটি ৬৭১ সালের ১০ তম মাসের ১৭ তম দিনে ঘটেছিল, যখন সম্রাট ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। একই দিনে, রাজকুমার ওমা মুণ্ডটি নিয়েছিলেন এবং তার প্রাসাদে রাখা সমস্ত অস্ত্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দু'দিন পরে তিনি ইয়োশিনোর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন, একই মন্দির যেখানে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং পরবর্তীকালে অনেক রাজকীয় আধা-নির্বাসিত ছিল। তা মঞ্জুর করা হয়েছে। এর পরপরই, পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে একত্রিত করা হয়েছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে তেনচি তেন্নোর উপস্থিতিতে শপথের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। তেনচি তেন্নো ৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২তম মাসের শুরুতে মৃত্যুবরণ করেন। রাজকুমার ওটোমো ধারাবাহিক সম্রাটদের সরকারী রেকর্ডে কোবুন তেন্নো হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি কেবল আধুনিক যুগেই করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' তত্ক্ষণাত তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে স্থানান্তরিত হন, যার সময় রাজকুমার ওটোমোকে কখনই সম্রাট হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটি উপরে বর্ণিত গল্পটি একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় বর্ণনা করে। এতে বলা হয়েছে, সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়লে নো ওমি ইয়াসুমারোকে রাজকুমার ওমাকে তার উপস্থিতিতে ডেকে আনার জন্য পাঠানো হয়। ভিতরে ঢোকার সময়, সোগা রাজপুত্রকে তিনি যা বলেছিলেন তা খুব সাবধানে থাকতে বলেছিলেন, যার ফলে রাজপুত্র একটি ষড়যন্ত্র সন্দেহ করেন। সুতরাং, যখন তাকে সিংহাসন অফার করা হয়েছিল তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন যেমনটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর সুস্পষ্ট তাৎপর্য হলো, তিনি যদি সিংহাসন গ্রহণ করতেন তাহলে সম্ভবত তাকে হত্যা করা হতো। স্বভাবতই এই গল্প সত্যি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে যা ঘটেছিল তার কেবল রাজকুমার ওমার সংস্করণ রয়েছে। ভালো গল্প হয়, হয়তো খুব ভালো। সম্ভবত তেনচি সরাসরি যুবরাজ ওমাকে প্রকাশ্যে সিংহাসন ত্যাগ করে একটি মঠে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাই হোক না কেন, তেনচি মরিয়া হয়ে তার ছেলের উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন এই সত্যের মুখে যে অভিজাতরা প্রায় নিশ্চিতভাবে ওমাকে সমর্থন করবে যদি এটি নিয়ে লড়াই হয়। যখন তিনি যোশিনোতে পৌঁছেছিলেন তখন রাজপুত্র তার "টোনারি" বা ব্যক্তিগত পরিচারক / দেহরক্ষীদের একত্রিত করেন এবং তাদের বলেছিলেন যে তিনি ধর্মের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন এবং যে কেউ ক্যারিয়ার চান তার কাছে গিয়ে নতুন চাকরি সন্ধান করার স্বাধীনতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অর্ধেক বামে আর অর্ধেক থেকে যায়। এরপর সম্রাট মারা যান। এই সময়ে কিউশুতে সবেমাত্র একটি বিশাল চীনা দূতাবাস এসেছিল, এত বড় যে তারা জাপানিদের আশ্বস্ত করার জন্য কয়েকটি জাহাজ পাঠিয়েছিল যে এটি আক্রমণকারী বহর নয়। রাষ্ট্রদূতদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। রাজকুমার ওটোমোর কোনও উল্লেখ ছাড়াই এই সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পুরো গল্পটি রাজকুমার ওমার দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে এবং ওমি আদালতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। রাজকুমার ওটোমো কখন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন বা আদৌ ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। ''নিহন শোকি'' অনুমানের অনুমতি দেয় যে তিনি শাসক হিসাবে তালিকাভুক্ত নন বলে তিনি ছিলেন না। নর যুগের অন্য কোন গ্রন্থে তাঁকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত শাসক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না। টোকুগাওয়া মিতসুকুনি দ্বারা ''দাই নিহন শিতে'' এডো পিরিয়ড পর্যন্ত এটি প্রথম দাবি করা হয়েছিল যে তাকে সিংহাসনে আরোহণ করা হয়েছিল তবে তেম্মু তেন্নোর বৈধতা সমর্থন করার জন্য ''নিহন শোকিতে'' এটি দমন করা হয়েছিল। মরণোত্তর রাজত্বের উপাধি কোবুন তেন্নো মেইজি সম্রাট কর্তৃক রাজকুমার ওটোমোকে ভূষিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি যে ৬ মাস ওৎসু দরবারে শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসে যুবরাজ ওমার একজন অনুচর তাকে বলেন যে তিনি প্রচুর সংখ্যক লোককে জড়ো হতে দেখেছেন যারা তেনচির সমাধিতে কাজ করতে আসার দাবি করেছিল। কিন্তু তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল। অপর এক ব্যক্তি তখন বলেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ এবং চেকপয়েন্টগুলি লক্ষ্য করেছেন। ওমা তদন্ত করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে এটি সত্য ছিল। তারপরে তিনি তার লোকদের বলেছিলেন যে ঝামেলা রোধ করার জন্য তিনি অবসর নিয়েছেন। তবে তারা যদি তাকে যেভাবেই হত্যা করতে চলেছে তবে তিনি লড়াই করতে যাচ্ছেন। তার প্রধান সমস্যা ছিল রাজধানী ছাড়ার আগে তাকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাই মূলত অরক্ষিত ছিল। ৬ষ্ঠ মাসের ২২তম দিনে তিনি তিনজন লোককে মিনো প্রদেশে (ঠিক পূর্বদিকে) যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং গভর্নরকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তিনি তার কাছে যা কিছু বাহিনী ছিল তা একত্রিত করেন এবং পূর্বের অন্যান্য গভর্নরদেরও একই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফুওয়াতে একটি সভা পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছিল। এটি ওমি এবং মিনো প্রদেশের সীমান্তের একটি গিরিপথ যা প্রধান পূর্ব-পশ্চিম রাস্তা দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং ওটসুর উপর আক্রমণ চালানোর জন্য একটি ভাল অবস্থান। এরপর আসে ইয়োশিনোর কাছ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তিনি একজন লোককে আসুকায় পাঠিয়েছিলেন পাস পাওয়ার আশায় যা তাদের পোস্ট ঘোড়া ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তাই তারা ২৪ তারিখ পায়ে হেঁটে পূর্ব দিকে রওনা দিল। আদালত ইয়োশিনোর ওপর হামলার কথা ভাবছে কি না, তা জানার কোনো উপায় আমাদের নেই। তবে ওমা চলে যাওয়ার পর আদালত অবাক হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। বেশ কয়েকদিন তারা সাড়া দেয়নি। এই প্রস্থানটি পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে নোটিশের পুরো এক মাস পরে ছিল এবং বর্ধিত বিপদের কোনও উল্লেখ নেই, সুতরাং এটি অবশ্যই ধরে নেওয়া উচিত যে পূর্ববর্তী মাসটি সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে পরিকল্পনা এবং যোগাযোগ করতে ব্যয় করা হয়েছিল। দলটি শীঘ্রই এমন এক সমর্থকের মুখোমুখি হয়েছিল যার একটি ঘোড়া ছিল, যাতে রাজপুত্র চড়তে পারে। তাঁর স্ত্রী (ভবিষ্যতের জিতো তেন্নো) এবং তাঁর দুই পুত্র, রাজকুমারেস কুসাকাবে এবং ওসাকাবেকে একটি পালকিতে বহন করা হয়েছিল। এই সময়ে রাজপুত্রের সাথে "প্রায়" ২০ জন পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৩ জনের নাম এবং ১০ জন মহিলা ছিলেন। শীঘ্রই তাদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিল এবং তারা যে রাজকীয় এস্টেটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সবাইকে খাওয়ালেন। আরও কিছুটা এগিয়ে তারা প্রায় ২০ জন অভিজাতদের একটি শিকারী দলের মুখোমুখি হয়েছিল, যাদের ছোট সেনাবাহিনীতে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও একজন "রাজকুমার মিনো"। তিনি সম্ভবত রুটের কাছাকাছি থাকতেন, তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরপর তারা ৫০টি প্যাক-ঘোড়ার একটি ট্রেন দেখতে পায় যারা চাল বহন করছে। তারা চাল ফেলে দিয়েছিল এবং তখনতাদের অশ্বারোহী ছিল। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই তারা টর্চ বানানোর জন্য একটি বেড়া টেনে ফেলল। অবশেষে তারা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে তারা মধ্যরাতে থামতে পারে। তারা পোস্টিং স্টেশনটি পুড়িয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষকে তাদের অনুসরণ করার জন্য জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। দ্বিতীয় দিনে তারা ৭০০ জনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপরে আরও লোক উপস্থিত হয়েছিল, এত বেশি যে তারা ফিরে যেতে এবং তাদের পিছনটি রক্ষা করার জন্য ৫০০ জন লোকের একটি বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। ২৬ তারিখে যুবরাজকে জানানো হয় যে মিনো থেকে ৩,০০০ লোক এসেছে এবং আদেশ অনুসারে ফুয়া রাস্তা অবরোধ করছে এবং আরও অনেক সমর্থক, যাদের অনেকের নাম রয়েছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ জন সমর্থকের নাম আমাদের কাছে রয়েছে। তারা ইসে প্রদেশের কুওয়ানায় ছিল এবং ওমা অনুভব করেন যে তিনি দৌড়ানো বন্ধ করতে পারেন। তিনি তখনসৈন্য সংগ্রহের জন্য চারদিকে দূত পাঠাতে শুরু করলেন। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এই মুহুর্তে রাজকুমার ওটোমোর সরকার কী ঘটছে তা জানতে পেরেছিল। খবরটি ওটসুর রাজধানীকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। কিছু অভিজাত যুবরাজ ওমায় যোগদানের আশায় পালিয়ে যায়, অন্যরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকার আশায় পালিয়ে যায়। ওটোমো তার কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। একজন মন্ত্রী তাদের কাছে যে কোনও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তাত্ক্ষণিক আক্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ওটোমো পরিবর্তে একটি যথাযথ সেনাবাহিনী সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব বার্তাবাহকদের প্রেরণ করেন। যেখানে ওমার বার্তাবাহকরা বেশিরভাগ পূর্ব দিকে প্রচারিত হচ্ছিল, ওটোমো তাকে পশ্চিমে প্রেরণ করেন। সুকুশির কমান্ডার এই ভিত্তিতে লোক পাঠাতে অস্বীকার করেন যে তার কাজ ছিল কোরিয়ান এবং চীনাদের কাছ থেকে কিউশুকে রক্ষা করা। ওটোমো কিবি এবং সুকুশির কমান্ডারদের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা আশা করেন কারণ তারা ওমার সাথে সংযুক্ত রাজপুত্র ছিলেন এবং তিনি তাঁর দূতদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা যদি রাষ্ট্রদ্রোহের লক্ষণ দেখায় তবে তাদের হত্যা করতে। তারা কিবিতে কমান্ডারকে হত্যা করতে সফল হয়েছিল। কিন্তু সুকুশির লোকটি খুব সুরক্ষিত ছিল এবং তারা চলে গেল। তারা খুব কমই সুকুশির কাছ থেকে কোনও ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত পুরুষদের আনার কথা ভাবতে পারেনি, সুতরাং এটি সম্ভবত এই অঞ্চলগুলিকে রাজকুমার ওমার পক্ষে ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল। প্রায় একই সময়ে একজন কর্মকর্তা, ওটোমো নো ফুকেই। তিনি এর আগে ওমির আদালত ত্যাগ করেন এবং আসুকা অঞ্চলে তার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার নিজস্ব ব্যক্তিগত বাহিনী এবং নিকটবর্তী আয়া বংশের লোকদের একত্রিত করেন এবং ২৯ শে যুবরাজ ওমার পক্ষে প্রাক্তন আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই অঞ্চলের মিওয়া এবং কামো গোষ্ঠীগুলি যুবরাজ ওটোমোকে সমর্থন করার জন্য ওমিতে সৈন্য প্রেরণ করেছিল। যুবরাজ ওমা তখনতার সদর দফতর কুওয়ানা থেকে সরিয়ে নিলেন। এটি সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে ছিল, ফুয়াতে। ২৭ তারিখে পূর্ব দিক থেকে আরও বিশ হাজার লোক তার সাথে যোগ দেয়। রাজকুমার ওমা তার ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজকুমার তাকেচিকে সামগ্রিক সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তার সেনাবাহিনী দুটি প্রধান কলামে বিভক্ত ছিল। অভিজ্ঞ যোদ্ধা কি নো ওমি এমারোর নেতৃত্বে প্রথমটি ছিল ইগা এবং ইসের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং ওটোমো নো ফুকেইয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আসুকার দিকে যাত্রা করা। দ্বিতীয়টি ছিল মুরাকানি নো মুরাজি ওয়োরির কমান্ডে সরাসরি ওটসুকে আক্রমণ করা। তিনি ইয়োশিনোতে রাজকুমার ওমার সাথে ছিলেন এমন একজন টোনেরি। এই বাহিনীকে তাদের পোশাকে লাল ব্যাজ সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা যুদ্ধের ময়দানে একে অপরকে চিনতে পারে। সপ্তম মাসের দ্বিতীয় দিনে ওমির আদালত ফুওয়া পাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণের নির্দেশ দেয়। ''নিহন শোকির'' মতে, এই আক্রমণটি প্রচণ্ড বিভ্রান্তিতে পড়েছিল এবং রাষ্ট্রের অন্যতম মন্ত্রী সোগা নো হাতায়াসু যুবরাজ ইয়ামাবের সাথে নিহত হন। রাজকুমার ওমার সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়েছিল এবং ১৩ তারিখে ইয়াসুকাওয়ায় শেষ হওয়া পরপর তিনটি যুদ্ধ জিতেছিল, যার পরে তারা সেটায় অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ওটসু প্রাসাদের বাইরের প্রতিরক্ষা গঠন করেছিল। সেখানে একটি সেতু সহ একটি স্রোত ছিল, যেখানে আদালতের সেনাবাহিনী তার অবস্থান তৈরি করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে, আদালতের অনুগত বাহিনী ওটোমো নো ফুকেই পরাজিত করে এবং আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চলেছিল। কিন্তু রাজকুমার ওমার কলামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং ফুকেই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,নির্ণায়ক যুদ্ধটি ৭ তম মাসের ৬ তম দিনে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের স্থানটি একটি সমাধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অনেক পতিত সৈন্য রয়েছে। দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর আদালতের সেনাবাহিনী উত্তর দিকে পিছু হটে। ২২ তম দিনে সেতা ব্রিজে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেতু রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী মাঝের অংশের মেঝে বের করে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি তক্তা প্রসারিত করেছিল যাতে সেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। ওমা বাহিনীর একজন সৈনিক দুই সেট বর্ম পরে তক্তা পেরিয়ে দৌড়ে গেল, যেতে যেতে দড়ি কেটে ফেলল। অতঃপর তিনি শত্রুপক্ষের অ্যারেতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এটি কে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিলেন। তার সেনাবাহিনী স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনুসরণ করেছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর সেনাবাহিনী ভেঙে পালিয়ে যায়। যিনি এই দায়িত্বে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি যুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিলেন। ৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ''নিহন শোকিতে'' তাঁর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধে নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে তেম্মু তেন্নো সরকারী নোটিশ নেওয়ার জন্য সতর্ক ছিলেন বলে মনে হয়। ওমার বাহিনী পরের দিন সফলভাবে আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং যুবরাজ ওটোমো তার সেনাবাহিনী থেকে আলাদা হয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে কেউ এটি জানত না। সারাদিন লড়াই অব্যাহত ছিল এবং রাজকুমার ওটোমোকে সমর্থনকারী বিশাল শক্তিবৃদ্ধি আসার সাথে সাথে খুব ভারী হয়ে ওঠে। ওমার বাহিনী শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এবং সাদাইজিন ও উদাইজিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ তারিখে রাজকুমার ওটোমোর মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং তার মাথা ওমার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর ঠিক এক মাস পর রাজকুমার ওটোমোর প্রধান সমর্থকদের সাজা ঘোষণা করা হয়। নাইদাইজিন নাকাতোমি নো মুরাজি নো কোগানে সহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, সাদাইজিন এবং উদাইজিন নামে দু'জনকে তাদের সমস্ত পরিবারের সাথে নির্বাসিত করা হয়েছিল, নাকাতোমির পরিবারকেও নির্বাসিত করা হয়েছিল যেমন সোগা নো হাতায়াসু নো ওমি যিনি লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন। বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তা যাকে ক্ষমা করা হত তিনি পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং আত্মহত্যা করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে পূর্ববর্তী সমস্ত দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে ছোট বিষয় ছিল। তবে এটি একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ ছিল যা যোশিনো থেকে রাজকুমার ওমার ফ্লাইট এবং তিন সপ্তাহের প্রকৃত ক্ষেত্রের অপারেশন থেকে এক মাস স্থায়ী হয়েছিল, এতে কয়েক হাজার লোক জড়িত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এর পেছনে অন্য কোনো বিবেচনার বিষয় জড়িত ছিল কি না, যার জন্য এতগুলো পুরুষকে এত কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। উনিশ শতক এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বাধিক জনপ্রিয় তত্ত্বটি ছিল যে যুবরাজ ওমা তেনচি তেন্নোর অধীনে পরিবর্তনের দ্রুত গতির বিরোধিতার সুযোগ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার অর্থ যুদ্ধটি একটি রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া ছিল। যাইহোক, বাস্তবে তেম্মু তেন্নো তার ভাইয়ের দ্বারা উদ্বোধন করা পরিবর্তনগুলি সমাপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাই যদি তার সমর্থকরা পুরানো উপায়ে ফিরে আসার আশা করে তবে তারা দুঃখজনকভাবে হতাশ হবে। প্রায় ১৯২০ এর দশক থেকে এটি ঠিক বিপরীত তর্ক করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল, যে রাজকুমার ওমা "প্রগতিশীল" পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন, সুতরাং রাজকুমার ওটোমো বা তার পিছনে কর্মকর্তারা অবশ্যই "রক্ষণশীল" দল ছিলেন। তার বিজয়ের মাধ্যমে, তেম্মো তেন্নো মূলত রাজকুমার নাকা নো ও এবং নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা পরিকল্পিত লাইন বরাবর সরকারের পুনর্গঠন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে লেখা রচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গির সারসংক্ষেপ করেন আইনাগা সাবুরো। তিনি ভেবেছিলেন যে রাজকুমার ওমা মূলত নিম্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা সমর্থিত ছিলেন এবং জ্যেষ্ঠ আভিজাত্যরা রাজকুমার ওটোমোর পিছনে ছিলেন। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেরী কোফুন যুগের সমাধিগুলির পরিবর্তিত নিদর্শনগুলির গবেষণায় যা দেখেন তার সাথে এক ধরণের শ্রেণি সংগ্রাম ছিল, সামগ্রিকভাবে আভিজাত্যের মধ্যে আরও অভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকটি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির অভিজাতদের কাছ থেকে শক্তি বিকশিত হয়েছিল। যাইহোক, এই যুক্তিটি ত্রুটিতে ভুগছে যে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে তেনচির রাজত্বের পরবর্তী বছরগুলিতে তাইকা সংস্কারের নীতিগুলি থেকে কোনও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৬৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সামরিক সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরে, সংস্কারের স্রোত আবার শুরু হয়েছিল এবং সম্রাটের চূড়ান্ত অসুস্থতা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি জাপানে ঐতিহাসিক চিন্তাধারার একটি সম্পূর্ণ নতুন পর্বের সূচনা করেছিল কারণ এটি ইতিহাসবিদদের প্রকাশ্যে মার্কসবাদী হতে মুক্তি দিয়েছিল। এটা বলা ন্যায্য, আমি মনে করি, মার্কসবাদ (একটি হালকা ধরনের) ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে, মূলত আগে যা ঘটেছিল তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে। এটি স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিকদের বিস্মিত করেছিল (প্রথমবারের মতো) ৬৪৫ সাল থেকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সম্ভবত কোনও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কিনা। কিতায়ামা শিজিও নামে একজন ইতিহাসবিদ প্রস্তাব করেন যে ৬৪৫ সাল থেকে পরিবর্তনগুলি মূলত কেন্দ্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য কাজ করেছিল এবং এর অর্থ হলো করের জোরপূর্বক শ্রম অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। যখন এটি স্থানীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন এটি সম্ভবত এপিসোডিক ছিল, এতে প্রতি বছর কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু ছিল না। তবে জাতীয় সরকার সর্বদা কিছু খুঁজে পেতে পারে। আদালত নিজেই, এটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রম করের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছিল। প্রহরী, রক্ষণাবেক্ষণের লোক, প্রাসাদের পরিচারক, বার্তাবাহক এবং কাজের ছেলেরা এবং সমস্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের শ্রমকরের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। এটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভ তৈরি করেছিল, তিনি ভেবেছিলেন। তবে সমস্যা হলো, জিনশিন যুদ্ধে কোনো পক্ষই জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উভয় পক্ষের যোদ্ধারা অভিজাত ছিল। তবে, এমন অনেকে আছেন যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এই ব্যবস্থার তীব্রতা নিয়ে যে কোনও জনপ্রিয় ক্ষোভ স্থানীয়ভাবে অনুভূত হত এবং গ্রামীণ আভিজাত্যের কৃষক জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলত। ''নিহন শোকির'' বিবরণ থেকে দৃঢ়ভাবে বোঝা যায় যে ইয়ামাতো প্রদেশের বেশিরভাগ আভিজাত্য ওমি আদালতকে সমর্থন করেছিল এবং যুবরাজ ওমা পূর্বের প্রাদেশিক আভিজাত্যের কাছ থেকে তার সমর্থন পেয়েছিলেন (এবং পশ্চিম, যদিও কোনও পশ্চিমা সেনা হস্তক্ষেপ করার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল)। এটি সুস্পষ্ট যে রাজকুমার ওমার দুটি কলামের একটির কমান্ডার ছিলেন টোনারি। এটি নিম্ন-পদমর্যাদার প্রাদেশিক অভিজাত বলতে হয়। রাজকুমার ওমা বছরের পর বছর ধরে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং এই লোকেরা তার প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল যে তিনি তাদের সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে নারা যুগে উদ্ভূত জটিল ব্যবস্থাটি প্রাদেশিক আভিজাত্যের দ্বারা সমর্থিত না হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। এটি তারা নিজেরা না দেখলে এটি করত না। আপনি যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিরোধিতার সামগ্রিক অনুপস্থিতি ৬৪৫ পরবর্তী পুরো রূপান্তরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়। উপসংহারটি হলো পুরানো কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণিকে সঙ্কুচিত করা হয়েছিল এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার এবং নিম্ন স্তরের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল যারা নতুন ব্যবস্থার অধীনে জেলা সরকারকে নিয়োগ করেছিল। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে জিনিসগুলি কার্যকর করার জন্য বিশদ জ্ঞান ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাদের জনপ্রিয় অস্থিরতা থেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা ছিল। এটি ছিল মৌলিক চুক্তি যা চীনা সাম্রাজ্যকে বহু শতাব্দী ধরে চালিত রেখেছিল এবং জাপানেও একই জিনিস করার উদ্দেশ্য ছিল। == তেম্মু তেন্নো == ৬৭২ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার ওয়ামা ওমি প্রাসাদ ত্যাগ করে আসুকা অঞ্চলে ফিরে আসেন। তিনি কিয়োমিহারা প্রাসাদ নামে পরিচিত একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন। ৬৭৩ সালের ২য় মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহন করেন। ৬৭৩ সাল তার শাসনকালের প্রথম বছর হিসেবে তার সরকারি নথিপত্রে সর্বদা স্বীকৃত ছিল। পরে যখন কোবুন তেন্নো তালিকায় যুক্ত হয়, তখন সরকারি কালানুক্রমিক তালিকা ৬৭২ সালকে "কোবুন প্রথম বছর" হিসেবে গণ্য করলেও ''নিহোন শোকি'' ধারাবাহিকভাবে ৬৭২ সালকে "তেম্মু প্রথম বছর" হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং এটি মেইজি যুগের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক লেখায় স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে স্থিত হয়েছিল। তেম্মুর শাসনকালে এবং জিতোর ৭ বছর পর্যন্ত সরকার কিয়োমিহারা প্রাসাদেই অবস্থান করেছিল, অর্থাৎ ৬৭৩ থেকে ৬৯৩ পর্যন্ত ২১ বছর। এটি পূর্বের যেকোনো প্রাসাদের তুলনায় বেশি স্থায়ী ছিল এবং স্থায়ী রাজধানী স্থাপনের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। ''মান্যোশু'' সংগ্রহে অনেক কবিতায় এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে যে, যুদ্ধজয়ের ফলে তেম্মু তেন্নোর অভূতপূর্ব ক্ষমতা ছিল যিনি যেকোনো কিছু ঘটাতে পারতেন। এক কবিতায় বলা হয়েছে, "ঈশ্বরের মতো" তিনি একটি পাহাড়কে সমুদ্রে রূপান্তরিত করতে পারেন। ঈশ্বরের ন্যায় ওয়াইশিমাগুনি রাজত্বকারী তেম্মু নিজেও ১২তম বছরের একটি আদেশে নিজেকে "যমাতো নেকো নো মিকোতো" বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওয়াইশিমাগুনি হল জাপানের প্রাচীন নাম। তার শাসনকালের শুরুতে কোন বড় যমাতো পরিবার থেকে আসা অভিজাতরা দরবারে প্রাধান্য পায়নি, এবং নাকাতোমি নো কামাতারির ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোও তখনো প্রভাবশালী ছিল না। সরকারে তিনি নিম্ন পদস্থ লোকদের উপর বেশ নির্ভরশীল ছিলেন, যার মধ্যে টোনেরিরাও ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুরাকুনি নো মুরাজি ওয়ায়রি, যাকে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন না এবং তাঁর সামরিক সফলতার জন্য মুরাজি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত অবসরের সময় বা মৃত্যুর কাছাকাছি উচ্চ পদমর্যাদা পেতেন, কিন্তু কর্মজীবনে তাদের পদমর্যাদা তুলনামূলকভাবে কম থাকত। মুরকুনিকে ১২০টি পরিবার থেকে আয় দেওয়া হয়েছিল। এটি মহান অভিজাতদের মানদণ্ডে খুব বেশি ছিল না। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষমতা ছিল কারণ সম্রাট তাদের পিছনে ছিলেন। তাদের উচ্চ পদ বা ব্যক্তিগত প্রতিপত্তির এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শাসনকালের শুরুতে তিনি সর্বোচ্চ পদ দাজোদাইজিন, সদাইজিন এবং উদাইজিন ফাঁকা রেখেছিলেন। বড় কোন অভিজাতকে উচ্চপদে নিয়োগের প্রথম ঘটনা ছিল ৬৭৫ সালে। তখন তিনি ওতোমো নো মুরাজি নো মিয়ুকিকে রাজকুমার কুরিকুমার অধীনে যুদ্ধমন্ত্রীর উপমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। মোট মিলিয়ে ''নিহোন শোকি''তে তেম্মু তেন্নোর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ৭ জন জোমাতো অভিজাত এবং ৫ জন রাজকুমারের নাম উল্লেখ আছে। ৫ জন রাজকুমারই অভিজাতদের থেকে উচ্চ পদ পেয়েছিলেন। আরও উল্লেখ আছে, তেম্মুর সম্রাজ্ঞী উনো (পরে জিতো তেন্নো) তাঁর শাসনকালে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং বিষয়াদি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া, তেম্মুর দুই পুত্রও যথাক্রমে ৬৮১ সাল থেকে রাজকুমার কুসাকাবে এবং ৬৮৩ সাল থেকে রাজকুমার ওৎসু সরকারে সক্রিয় হয়। কুসাকাবে শেষ পর্যন্ত দাজোদাইজিন হন। স্পষ্ট যে তেম্মুর সরকার ছিল সম্রাটের সরাসরি শাসন, যেটিতে শাসক পরিবারের সদস্যরাই সহযোগিতা করতেন। ৬৭৫ সালে তেম্মু সর্বোচ্চ অভিজাতদের সমস্ত ব্যক্তিগত জমি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন। ৬৬৪ সালে টেনচি এ জমিগুলো বেতন হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন, কিন্তু তখন পরিষ্কার হয়ে গেল যে পুরো দেশ জুড়ে সম্পূর্ণ কর ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে এবং অভিজাতরা কেবলমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করবেন। তিনি আরও আদেশ দেন যে "নিকটবর্তী রাজকুমার, অন্যান্য রাজকুমার, কর্মকর্তা ও মন্দিরগুলো" তাদের হাতে বছরের পর বছর ধরে পাওয়া সব ধরণের জমি — কৃষিজমি বা বনজ — ফেরত দেবে। ৬৮৫ সালে তেম্মু আবার পদমর্যাদা ব্যবস্থা সংস্কার করেন। প্রথমবারের মতো রাজকুমারদের জন্য নতুন পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। এটি পূর্বের ব্যবস্থার বাইরে ছিল। এটি নারা যুগ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুইটি সমান্তরাল পদমর্যাদা ব্যবস্থা চালু ছিল, একটি রাজকুমারদের জন্য এবং অন্যটি সকলের জন্য। এখন সরকারি পদমর্যাদা ব্যবস্থার বাইরে ছিলেন শুধুমাত্র সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবার, অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তানরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কিছু লক্ষণও ছিল। ৬৭৫ সালে একটি ঘটনা ঘটে যখন দুই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাকে "দরবারে উপস্থিত হওয়া থেকে নিষিদ্ধ" করা হয় এবং কয়েকদিন পরে তাদের একজনকে "সমস্ত পদ ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত" করা হয়। একই বছর রাজকুমার ওমি ও তাঁর দুই পুত্রকে গ্রামাঞ্চলে নির্বাসিত করা হয়, এবং পরের বছর দাজাইফুর প্রধান কর্মকর্তা রাজকুমার ইয়াকাকিকেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট বছর জানা না গেলেও, শাসক গোত্র থেকে কয়েকজনকে "মিকাতা" উপাধি ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাদ দেওয়া হয়। ৬৭৫ সালে একটি আদেশে সব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের বছর গভর্নরদের মধ্যে অস্ত্র ধারণের ব্যাপারে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। ৬৭৯ সালে রাজকুমার ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয় যে পরবর্তী বছর একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তারা সশস্ত্র ও সিংহাসনে চড়ে উপস্থিত হবে, এবং এটি বাস্তবে পরিচালিত হয়। ৬৮৪ সালে তেম্মু তেন্নো একটি আদেশে উল্লেখ করেন যে "সামরিক বিষয়গুলো সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।" ৬৪৫ সালের আগে শাসকের হাতে সরাসরি সীমিত সামরিক বাহিনী ছিল। সবসময় কিছু সংখ্যক টোনেরি ছিল, যারা প্রধানত পূর্বাঞ্চল থেকে আসত, এবং কিছু ইউকেইবে ছিল, যারা কিউশু থেকে চাপা কৃষক সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রাজধানীতে পাঠানো হতো এবং প্রধানত গার্ড হিসেবে কাজ করত। এই বিভাগের লোকসংখ্যা কত ছিল তা কেউ নিশ্চিত নয়। অন্যান্য সব কিছু নির্ভর করত যমাতো গ্রামের সামরিক মনোভাবাপন্ন উজি গোত্রের উপর। ধারণা করা হয় টোনেরিদেরকে নতুন রাষ্ট্রের "বাম" ও "ডান" হ্যোয়েফু 兵衛府 প্রহরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এবং ইউকেইবে গার্ডরা ছিলেন এমোনফু 衛門府-তে। বাকী দুটি গার্ড ইউনিট, "বাম" ও "ডান" ইজিফু 衛士府, শ্রম করের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধারণা করা হয় এই দায়িত্বে নিয়োজিত লোকেরা সাধারণ কৃষক ছিলেন না, বরং স্থানীয় ক্ষুদ্র অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মোটামুটি বলতে গেলে, রাজধানীর সরকারি সামরিক বাহিনী ছিল মূলত পুলিশ ও রক্ষী হিসেবে, বাস্তবিক সামরিক বাহিনী নয়। সম্ভবত তেম্মু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে সব কর্মকর্তা সশস্ত্র এবং অন্তঃপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও যেন সশস্ত্র থাকেন যাতে প্রয়োজনে তিনি দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করতে পারেন। প্রদেশগুলোতে সামরিক সংগঠনের তেমন চিত্র ছিল না। ৬৮৫ সালে তেম্মু আদেশ দেন যে ব্যক্তিগত নয়, বরং সংগঠিত সামরিক ইউনিটগুলোর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সামরিক উপকরণ — যেমন শিং, ঢোল, পতাকা থেকে শুরু করে ক্রূড অস্ত্র যেমন "পাথর নিক্ষেপক" এবং বড় আকারের ক্রসবো — কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। এটি জনগণকে নিরস্ত্র করার জন্য নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে এগুলো প্রয়োজনে দ্রুত পাওয়া যাবে এবং ঠিক করা থাকবে। প্রাচীন জাপানের একটি ছোট রহস্য হল কেন ইসের "মহান মন্দির" আমাতেরাসু ওমিকামি, যাকে শাসক গোত্রের পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়, এটি তাঁর পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন পূজার কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এটি এমন স্থানে অবস্থিত যা থেকে ধারণা করা হয় পূজার বিষয়বস্তু হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর, বিশেষ করে যারা সমুদ্রপথে পূর্ব জাপানে যাওয়ার পথে ছিলেন তাদের জন্য। এটি শাসক গোত্রের সাথে বিশেষ কোন সম্পর্কিত স্থান নয়। ধারণা করা হয়েছে মন্দিরটি তুলনামূলকভাবে দেরিতে আমাতেরাসুর সাথে সম্পর্কিত হয়েছিল, যার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হলো তেম্মু তেন্নোর শাসনকাল। ''নিহোন শোকি''তে কেতাই থেকে সুইকো পর্যন্ত সব শাসনের সময় রাজকুমারেসদের ইসে পাঠানো হত সাইগু বা ইটসুকি নো মিয়া হিসেবে, অর্থাৎ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত্রী হিসেবে। তবে এই প্রথা পরবর্তীতে লোপ পেয়ে যায় যতক্ষণ না ৬৭৪ সালে তেম্মু তার শাসনকালে নিজেই প্রথম ইসে যাত্রা করেন। এটি ছিল রাজ পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই যাত্রাটি তেম্মুর শাসনকালের একটি চিহ্নিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এভাবে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তী যুগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেম্মু আরও কৃতিত্ব পেয়েছেন এমন একটি কাজ শুরু করার জন্য যা পরবর্তীতে ''কোজিকি'' এবং ''নিহন শোকি'' রচনার সূচনা করেছিল। তিনি বিভিন্ন অভিজাত বংশের কাছে থাকা উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে জাপানের ইতিহাস রচনার উপকরণ পাওয়া যায়। এটি ''কোজিকি''র ভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে। ৬৮১ সালে তিনি রাজকুমার কাওশিমা নেতৃত্বাধীন শাসক বংশের ছয় সদস্যের একটি কমিটি এবং নাকাতোমি নো মুরাজি নো ওশিমা নেতৃত্বাধীন অন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তার একটি কমিটিকে জাতীয় ইতিহাস সম্পাদনার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এই প্রকল্পটি কখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এটির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তা পরে ''নিহন শোকি''তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই বৃহৎ প্রকল্প থেকে আলাদাভাবে, তিনি তাঁর এক টোনেরি হিয়েদা নো আরেকে সহজ একটি কাজ এককভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এটি একক লেখকের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। হিয়েদা তাঁর কাজ শেষ করার আগে মারা যান, কিন্তু এটি নারা যুগের শুরুর দিকে ও নো আসোন ইয়াসুমারো পুনরায় গ্রহণ করেন এবং ৭১২ সালে ''কোজিকি'' নামে প্রকাশ করেন। উভয় কাজেই অভিজাত বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এটি সম্ভবত ঐ বংশগুলি দ্বারা রক্ষিত কাহিনীগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। ''কোজিকি''তে প্রায় ২০০টি বংশ কাহিনী এবং ''নিহন শোকি''তে প্রায় ১১০টি পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো একত্রিত করার সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তাইকা সংস্কার এবং জিনশিন যুদ্ধের পর থেকে বহু প্রাচীন বংশ মুছে গেছে এবং নতুন অনেক বংশ প্রভাবশালী হয়েছে। এর ফলে প্রাচীন "কাবানে" উপাধিগুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বংশের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রতিপত্তির সাথে আর মিলছিল না। তাই ৬৮৪ সালে তেম্মু কাবানে ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি আটটি উপাধির ব্যবস্থা করেন, যাদের মধ্যে বেশকিছু নতুন সৃষ্টি ছিল। শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এগুলো ছিল—মাহিতো (মাঝে মাঝে মাবিতো লেখা হয়) 真人, আসোমি (প্রায় সবসময় আসোন লেখা হয়) 朝臣, সুকুনে 宿禰, ইমিকি 忌寸, মিচিনোশি 道師, ওমি 臣, মুরাজি 連, এবং ইনাগি 稲置। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি বংশের সম্রাট থেকে বিচ্ছেদের মাত্রা স্পষ্ট করা। যেসব বংশ আগে ওমি উপাধি পেত, তাদের অধিকাংশকে আসোমি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এটি শাসক বংশের শাখা থেকে আগত বংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যেসব বংশ আগে মুরাজি ব্যবহার করত, তাদের বেশির ভাগ সুকুনে উপাধি দেওয়া হয়। মাহিতো বিশেষভাবে শাসক বংশের প্রধান শাখার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত বংশের জন্য সংরক্ষিত ছিল, বিশেষ করে কেটাই তেন্নো বা পরবর্তীকালের শাসকদের বংশ থেকে আগত বংশগুলোর জন্য। ওজিন রাজবংশ থেকে আগত বংশগুলো সবাই আসোমি উপাধিতে আচ্ছাদিত হয়েছিল। ছোট উপাধিগুলো সাধারণত প্রাদেশিক বংশদের জন্য ছিল। তেম্মুর শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। এটি পরবর্তী প্রশাসনিক আইন বিধিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারা যুগে সরকারের মূল ভিত্তি ছিল আটটি মন্ত্রণালয়ের সমষ্টি যাকে দাজোকান বা "বড় দপ্তর" বলা হয়। এদের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তেম্মুর সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মাত্র একটি ছিল অনুপস্থিত, তা হলো নাকাতসুকাসা। এটি শাসকের আবাসিক প্রাসাদের পরিচালনা করত। এটি প্রশাসনিক প্রাসাদ থেকে আলাদা। তেম্মুর দিনে একটি মন্ত্রণালয়ই উভয় কাজ দেখাশোনা করত। নামগুলো সবই ভিন্ন ছিল। তবে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিম্নস্তরের বহু প্রশাসনিক সত্তার নাম এবং সরকারি পদবীও ভিন্ন ছিল। প্রধান পার্থক্য ছিল, শেষমেশ প্রতিষ্ঠিত কোডগুলো চীনা সমসাময়িক প্রথা থেকে নেওয়া নাম ও পদবী বেশি ব্যবহার করত। ৬৮১ সালের দ্বিতীয় মাসে সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী প্রাসাদের প্রধান মিলনকক্ষে গিয়ে সমস্ত রাজপুত্র ও কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। সম্রাট ঘোষণা করেন যে, সরকারের কাঠামো এবং কার্যাবলীর নিয়মাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রশাসনিক নীতিমালা প্রস্তুত করার সময় এসেছে। তিনি স্বীকার করেন এটি একটি বৃহৎ কাজ। এটি শেষ করতে সময় লাগবে এবং সরকারী কাজ ব্যাহত হওয়া উচিত নয়, তাই এই প্রকল্পের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। এটিই পরিচিত "অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরো"র সূচনা। তেম্মু তেন্নোর জীবদ্দশায় সম্ভবত এই কাজ শেষ হয়নি। তবে সরকারের কাঠামো এই প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সামঞ্জস্য করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তেম্মু তেন্নোর ১৭ জন সন্তান ছিল, যাদের নাম জানা গেছে, ৯ জন বিভিন্ন মাতার সন্তান, ১০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। সম্রাজ্ঞী উনোর একমাত্র সন্তান ছিলেন রাজকুমার কুসাকাবে। তিনজন অন্যান্য নারী কিসাকি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, যাঁরা রাজকুমার ওতসু, রাজকুমার নাগা, রাজকুমার ইউগে, এবং রাজকুমার টোনেরির মা ছিলেন, পাশাপাশি একটি কন্যাও ছিলেন। এই চারজন নারীই ছিলেন তেনচি তেন্নোর কন্যা। আরও তিনজন মহিলা ছিলেন, যাঁরা কনকুবাইন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিলেন। দুজন ছিলেন ফুজিওয়ারা নো কামাতারির কন্যা, যাঁরা রাজকুমার নিটাবে এবং এক কন্যার জন্ম দিয়েছেন। তৃতীয় ছিল সোগা নো ওমি নো আকের কন্যা, যিনি রাজকুমার হাটসুমি এবং দুই কন্যার জন্ম দেন। শেষমেশ তিনজন নারী ছিলেন যাদের প্রাসাদে কোন সরকারি পদবী ছিল না। রাজকুমারেস নুকাতা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এক কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন, রাজকুমারেস তোচি, যিনি শিশুকালে মারা যান। এটি আদালতে অনেক শোকের কারণ হয়। দুই প্রাসাদের সহকারী রাজকুমার টাকেচি, রাজকুমার ওসাকাবে এবং রাজকুমার শিকি ও দুই কন্যার জন্ম দেন। রাজকুমার টাকেচি উল্লেখযোগ্য কারণ তিনি জিনশিন যুদ্ধে কমান্ডার ছিলেন। রাজকুমার ওসাকাবে ও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। দুটি সর্বোচ্চ পদমর্যাদার রাজপুত্র ছিলেন নিঃসন্দেহে রাজকুমার কুসাকাবে এবং রাজকুমার ওতসু। ৬৮১ এবং ৬৮৩ সালে যথাক্রমে তারা এমন বয়সে পৌঁছান যেখানে সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। রাজকুমার কুসাকাবের মা ছিলেন সম্রাজ্ঞী, যেখানে রাজকুমার ওতসুর মা জিনশিন যুদ্ধে আগে মারা গিয়েছিলেন। তবে মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ রাজকুমার ওতসুকে বেশি প্রভাবশালী মনে করত। ''নিহন শোকি'' উল্লেখ করে যে, শিশু অবস্থায় তিনি তাঁর চাচা ও দাদা তেনচি তেন্নোর প্রিয় ছিলেন, এবং অন্যান্য প্রাচীন সূত্রে বলা হয়েছে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। রাজকুমার কুসাকাবে সম্পর্কে কোনও তথ্য অবশিষ্ট নেই। তিনি ২৮ বছর বয়সে মারা যান এবং ধারণা করা হয় যে তিনি সবসময় অসুস্থ ছিলেন। এটি সম্ভবত ব্যাখ্যা করে কেন তাঁকে তেম্মুর মৃত্যুর পর শাসক করা হয়নি। তেম্মুর শাসনকাল এমন ছিল যে তিনি সরাসরি শাসন করতেন, তাই এটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী শাসককে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হতে হয়েছিল। মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিল সম্রাজ্ঞী। যদি ধরা হয় যে রাজকুমার কুসাকাবে অনুপযুক্ত ছিলেন, তাহলে তিনি তাঁর শিশুসন্তান রাজকুমার কারুর (যিনি পরবর্তীতে মোম্মু তেন্নো হন) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনাক্রমে কুসাকাবে ৬৮১ সালে "সিংহাসন অধিকারী" করা হয়। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, এর সঙ্গে উত্তরাধিকার নিয়ে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে তাকে সরকারের একটি প্রখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই একই দিনে অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয় সরকারী নিয়মাবলী আনুষ্ঠানিককরণ সম্রাটের অবস্থান দৃঢ় করবে যাতে তিনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন এমনকি যদি তিনি সাধারণ ক্ষমতার ব্যক্তিও হন। ৬৮৩ সালে রাজকুমার ওতসুও সরকারে পদ পায়। যদি ধরা হয় তিনি তাঁর সৎভাই থেকে স্বাস্থ্যবান ও প্রতিভাবান ছিলেন, তাহলে সকল কারণ রয়েছে মনে করার যে তিনি তেম্মুর মৃত্যুর পর সম্রাট হওয়ার সুযোগ পেতেন। ৬৮৫ সালে তেম্মু অসুস্থ হন কিন্তু কিছুদিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ৬৮৬ সালের ৫ম মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন এবং ৭ম মাসে ঘোষণা করেন যে তিনি আর সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকবেন না। এটি সবকিছুই সম্রাজ্ঞী ও রাজকুমার কুসাকাবে দেখবেন। তিনি ৯ম মাসের ৯ তারিখে মারা যান, বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। ''নিহন শোকি'' জানায়, ১১ তারিখে তাঁকে সাময়িকভাবে তাঁর মোগারি নো মিয়ায় সমাহিত করা হয়, এবং ২৪ তারিখে "রাজকুমার ওতসু সিংহাসন অধিকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল"। পরবর্তী ঘটনা জিতো তেন্নো নিবন্ধে বর্ণিত। বলা হয়েছে, রাজকুমার ওতসুর বিশ্বাসঘাতকতা ১০ম মাসের ২ তারিখে প্রকাশ পায় এবং তিনি প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরের দিন তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তাঁর স্ত্রীও মারা যান। তবে স্পষ্ট নয় তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যা করেন। পরের দিন "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে দুই জন ছাড়া সবাই ক্ষমা পায়। ওই দুইজন নির্বাসিত হন। এর কয়েকদিন পরে সম্ভবত চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর রাজকুমার ওতসুর বোন রাজকুমারী এস ওকু রাজধানীতে ফিরে আসেন যিনি কয়েক বছর ইসেতে পুরোহিত ছিলেন। ''মানইশু''র একটি কবিতা প্রকাশ করে যে, রাজকুমার ওতসু গোপনে ইসেতে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন তেম্মুর মৃত্যুর সময়ের আশেপাশে। সম্ভবত এই ঘটনাটিই ''নিহন শোকি''র জন্য তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের কারণ। একজন রাজপুত্র রাজধানী ত্যাগ করে পূর্বদিকে যাওয়া এবং উত্তরাধিকার অস্থিতিশীল থাকা অবস্থায় যাত্রা করা বিদ্রোহী উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরা লক্ষ্য করেছেন যে, "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে কয়েকজন পরবর্তীকালে জিতোর আদালতে কর্মজীবন চালিয়েছেন। একজন প্রথম সম্পূর্ণ রিৎসুরো নীতিমালা তৈরির কমিটিতেও ছিলেন। এটা ইঙ্গিত দেয় যে রাজকুমার ওতসুকে অপরাধী বানানোর কূটনীতি করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' স্পষ্ট করে যে সম্রাজ্ঞী শাসনে ছিলেন। তবে কিছু সময়ের জন্য উত্তরাধিকার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করা হয়নি। মৃত সম্রাটকে শোক জানানো ও তাঁর সমাধি প্রস্তুতির সব সরকারি কার্যক্রমে সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ ছিল "সিংহাসন অধিকারী"। ৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১তম মাসে তেম্মুর দাফনের মধ্য দিয়ে এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। অবশ্যই ঐ সময়ে সম্রাটের বিধবা মোগারি নো মিয়ায় বসবাস করতেন এবং গভীর শোক পালন করতেন। এরপর ৬৮৯ সালের ৪ম মাসে যুবরাজ কুসাকাবে মারা যান। তাই ধারণা করা যায়, শোক পালন শেষ হলে রাজ্যাভিষেক করার পরিকল্পনা ছিল। তাঁর পুত্র যুবরাজ কারুর বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর এবং তাই সম্রাজ্ঞীর আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি জিতো তেন্নো নামে পরিচিত। এটি ৬৯০ সালের শুরুতে ঘটেছিল। এই সময়কালে ৬৮৯ সালের ৬ষ্ঠ মাসে অসুকা কিয়োমিহারা রিও ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয় এবং সরকারী দপ্তরগুলোতে বিতরণ করা হয়। এই ঘটনাকেই অসুকা যুগের সমাপ্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ৬৮৯ সালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, কামাতারির বড় ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোর প্রথমবারের মতো সরকারি পদে নিয়োগ। 3fo2bxp6nv3v2pj5ey9lm8hzimnc1mz 84865 84864 2025-06-18T22:56:53Z Mehedi Abedin 7113 84865 wikitext text/x-wiki [[File:Horyu-ji06s3200.jpg|thumb|right|হোরিউ-জির প্যাগোডা]] '''''আসুকা 飛鳥''''' হলো নারা সমভূমির দক্ষিণ প্রান্তের একটি এলাকা, যেখানে জাপানে আদিম গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বেশি উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময়ে সেখানে এখনকার মতো কোনও শহর ছিল না। তবে রাজপ্রাসাদ এবং কিছু বৌদ্ধ মন্দির গড়ে উঠতে থাকে। কেইতাই সম্রাট আসুকার আশেপাশে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী ১৫ জন উত্তরসূরীর মধ্যে ৯ জনেরই প্রাসাদ ছিল এই এলাকায়। নারা শহর তৈরির আগের সময়কালটিকে সাধারণভাবে "আসুকা যুগ" বলা হয়। যদিও নারা ছিল এই সমভূমির প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে। আসুকা যুগ ছিল একটি পরিবর্তনকালীন সময়। সেসময় শাসন চলত সম্রাটের প্রাসাদ থেকে। প্রায় প্রতিটি সম্রাট তার নিজস্ব নতুন প্রাসাদ তৈরি করতেন। দীর্ঘ শাসনকালে প্রাসাদ একাধিকবার স্থানান্তরিত হত। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের আকার ছিল ছোট ও সরল—এমনকি দলিল-দস্তাবেজের সংরক্ষণাগারসহ তা সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল। ৬৪০ সালের দিকে প্রশাসন কিছুটা ভারী হতে শুরু করলে আগের মতো সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল না। পুরোপুরি স্থায়ী রাজধানী এবং প্রাসাদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসুকা যুগের একেবারে শেষ দিকে। তবে পরবর্তী ১০০ বছরে রাজধানী আরও তিনবার সরানো হয়। আরও কয়েকটি স্থানান্তরের প্রস্তাবও উঠেছিল। ==আসুকা যুগ== আসুকা যুগকে প্রধানত দুইটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বে, সোগা বংশের চারজন পরপর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজদরবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: সোগা নো ইনামে 蘇我の稲目, সোগা নো উমাকো 蘇我の馬子, সোগা নো এমিশি 蘇我の蝦夷 এবং সোগা নো ইরুকা 蘇我の入鹿। এই পর্বটি ৫৭২ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সোগা বংশের সহিংস পতনের পর। এই সময় রাজনীতির প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন তেন্‌চি 天智 (বা তেন্‌জি) তেন্নো, তাঁর ভাই তেম্মু 天武 তেন্নো এবং তেম্মুর বিধবা স্ত্রী জিতো 持統 তেন্নো; এই পর্বটি ৬৪৫ থেকে ৬৯২ সাল পর্যন্ত চলে। জিতো যখন তার ছেলে মোম্মু (文武) সম্রাটকে সিংহাসন হস্তান্তর করেন, তখন <i>নিহোন শোকি</i> নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থটির বিবরণ শেষ হয়। <i>কোজিকি</i> গ্রন্থটি ৬২৮ সালে সম্রাজ্ঞী সুইকো (搉古)-এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রথম ধাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন রাজপুত্র উমায়াদো (廐戸। তিনি "শোতোকু তাইশি" (聖徳太子) নামেও পরিচিত ছিলেন। তাকে “পবিত্র রাজপুত্র” বা “জ্ঞানী রাজপুত্র” বলা হত।তিনি সম্ভবতআসুকা যুগের একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নাম আজও প্রতিটি জাপানির কাছে পরিচিত। <i>নিহোন শোকি</i> গ্রন্থের লেখকরা তাঁকে আধুনিক জাপানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজও তিনি জাপানি সংস্কৃতিতে সম্মানীয় অবস্থানে আছেন, ঠিক যেমনভাবে আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটন বা ইংল্যান্ডে আলফ্রেড দ্য গ্রেট সম্মান পান। শোতোকু তাইশির ছবিও জাপানি মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। আসুকা যুগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই সময়ে জাপানে প্রচলিত আদি ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আদি ধর্মটি "শিন্তো" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কিছু জাপানি একচেটিয়াভাবে একটা ধর্মকে সমর্থন করলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উভয় ধর্মকে শ্রদ্ধা করত এবং জীবনের অংশ হিসেবে দুটিকেই অন্তর্ভুক্ত করার উপায় বের করত। সহজভাবে বলা যায়, শিন্‌তো বিয়ের ধর্ম হয়ে ওঠে, আর বৌদ্ধ ধর্ম শেষকৃত্যের ধর্ম। ===জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম=== জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা ঘটে ৫৩৮ সালে। এটি আসুকা যুগের শুরুর তারিখের আগের ঘটনা। ওই বছর পেকচে’র রাজা সং তাঁর রাজধানী পাহাড়ের নিরাপদ কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চল থেকে একটি প্রধান কৃষিভিত্তিক এলাকায় স্থানান্তর করেন। একইসঙ্গে তিনি পেকচের নাম পরিবর্তন করে “সাউদার্ন পুইয়ো” রাখেন, যদিও জাপানি ও চীনারা (এবং আধুনিক ইতিহাসবিদগণ) এটি উপেক্ষা করেন। তাঁর নতুন রাজধানীর স্থানটি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার পুইয়ো শহর (যেটিকে সাম্প্রতিক রোমানাইজেশনের সংস্কারে দক্ষিণ কোরিয়াররা বিভ্রান্তিকরভাবে “বুইয়ো” লিখে। তবে উচ্চারণ “পুইয়ো”)। এই নতুন রাজধানীতে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল একটি কাঠামোবদ্ধ শাসনব্যবস্থা গঠন যা আংশিকভাবে চীনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও তিনি সমসাময়িক কোগুরিও ও শিল্লা-তে চলমান সংস্কার দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাপানের রাজদরবারে দূত পাঠিয়ে বৌদ্ধ প্রতিমা ও ধর্মগ্রন্থ উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন যে এই ধর্ম জাদুকরীভাবে জাতিকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। তবে ওই সময় পেকচে রাজ্যের রাজধানীর বাইরে বৌদ্ধ ধর্মের তেমন কোনো প্রভাব পড়েছিল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ঘটনার প্রায় ২০০ বছর পরে, এক বিখ্যাত রাস্তাঘাটে উপদেশদাতা ভিক্ষুর কার্যক্রমের মাধ্যমে। যেহেতু জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হয়েছিল। তাই ৫৩৮ সালের ঘটনা এবং তার পরিণতি অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। <i>নিহন শোকি</i>-র পাশাপাশি প্রাচীন বৌদ্ধ উৎস থেকে অতিরিক্ত তথ্যও পাওয়া যায়। সংক্ষেপে, সোগা নো ইনামে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পক্ষে মত দেন এবং মনোনোবে 物部 বংশ এটি গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। কারণ এটি স্থানীয় দেবতাদের অবমাননা হিসেবে দেখা হয়। কিম্মেই তেন্নো ইনামেকে তাঁর বাড়িতে একটি ছোট বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি দেন এবং গোপনে উপাসনার সুযোগ দেন। ইনামের এক কন্যা ভিক্ষুণী হন। তবে, ৫৭১ সালে কিম্মেইর মৃত্যু হলে মনোনোবে নতুন শাসক বিদাৎসু-এর কাছ থেকে এই উপাসনালয় ধ্বংস ও ভিক্ষুণীদের গ্রেপ্তারের অনুমতি নেন। <i>নিহন শোকি</i>-তে এই ঘটনার বিবরণ অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেখানে বিদাৎসু তেন্নো ও তাঁর উত্তরসূরি ইয়োমেই তেন্নোর মৃত্যুশয্যায় বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। এটি ৮ম শতকের বৌদ্ধপন্থী মানদণ্ড অনুযায়ী তাঁদের আরও শ্রদ্ধাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা বলে মনে করা হয়। ৫৮৭ সালে সোগা ও মনোনোবে বংশের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়। এটি ইয়োমেইর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের ফলে ঘটে। এই যুদ্ধে সোগা বিজয়ী হয় এবং তখনই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা প্রকৃত অর্থে শুরু হয়। এটি ছিল সোগা বংশের প্রাধান্যের শুরু। প্রথমে এটা বোঝা কঠিন কেন জাপান বা কোরিয়ার যেকোনো রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে আত্মস্থ না করেও বৌদ্ধ ধর্মকে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্মের চেয়ে প্রাধান্য দেবে। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, জাপানে কোরীয় অভিবাসীদের মধ্যে কিছু বৌদ্ধ ছিল। তবে জাপানে এবং কোরিয়ার অন্যান্য রাজ্যেও বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হওয়া ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত, জনতার ইচ্ছা নয়। জাপানি সম্রাটকে বৌদ্ধ ধর্ম উপস্থাপন করার সময় পেকচের রাজা সং বলেন, এই ধর্ম একটি জাদুকরী শক্তি যা জাতিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। প্রাথমিক সময়ে জাপান ও কোরিয়াতে বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার মুক্তি বা আত্মদর্শনের মতো ব্যক্তিগত বার্তার চেয়ে, এর মূর্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের জাদুকরী শক্তির ওপরেই জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে অসুস্থতার সময় মানুষ বৌদ্ধ প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করত। শুরুতেই বৌদ্ধ ধর্মের স্বাগত জানানোর বড় কারণ ছিল কোরিয়া ও বিশেষ করে চীন থেকে আগত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তাঁরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং বাস্তব দক্ষতায় পারদর্শী, বিশেষত স্থাপত্যবিদ্যায়। আসুকা যুগ থেকে শুরু করে নারা যুগ পর্যন্ত জাপানে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প পরিচালিত হয় এসব অভিবাসী সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে। তাঁরা শুধু মন্দির নয়, সেতু ও দুর্গও নির্মাণ করতেন। সাধারণত চীন থেকে যারা জাপানে আসতেন, তাঁদের মধ্যে এরাই ছিলেন প্রধান। চীনা চিন্তাধারা ও প্রযুক্তি জাপানে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও ছিলেন তাঁরা। === সোগা বংশ === সোগা বংশের দাবি করা পূর্বপুরুষ ছিলেন জিংগু কোউগোর কোরিয়া বিজয়ে অংশগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি। এর ফলে তিনি ওজিন রাজবংশের সূচনালগ্নেই যুক্ত ছিলেন। সোগা নামক কোনো ব্যক্তির প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় নবম শতকের একটি গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে যে ওজিন রাজবংশের তৃতীয় শাসক রিচু তেন্নোর সময় কোরীয় অভিবাসীদের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা সংগঠিত করার প্রয়োজন পড়ে। এই উদ্দেশ্যে একটি দ্বিতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা হয় এবং তা তদারকির জন্য একটি নতুন পদ তৈরি করা হয়। ইউর্যাকু তেন্নোর শাসনকালে একটি তৃতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে এবং সোগা নো মাচি নো সুকুনে-কে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষয়গুলো সংগঠিত করার। তিনি একটি তালিকা প্রস্তুত করেন এবং (কোরীয়) হাতা বংশকে একটি সহায়ক ভাণ্ডার পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং (কোরীয়) আয়া বংশকে অন্যটির। ৬৪৫ সালে সোগা বংশ পরাজিত হলে আয়া বংশের সৈন্যরা তাদের পাশে দাঁড়ায়। সোগা বংশ কখনো সামরিক ঘটনায় জড়িত ছিল না, বরং সবসময়ই আর্থিক কার্যক্রম এবং কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৫৫৩ সালে সোগা নো ইনামে শাসকের আদেশে জাহাজ কর নিরীক্ষণের জন্য একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছর পর ইনামে সমুদ্রবন্দর নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেকটি দপ্তর স্থাপন করেন। এতে বোঝা যায়, সোগা বংশ যোদ্ধার চেয়ে প্রশাসক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। কেইতাই তেন্নোর মৃত্যুর পর যে সময়ে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজদরবার ছিল বলে মনে করা হয়, সেই সময়ে সোগা বংশ অত্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। সোগা বংশ কিম্মেই তেন্নোর রাজদরবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ওটোমো বংশ আনকান ও সেনকা নামক বিকল্প শাসকদের সমর্থন করত। সেনকার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় রাজদরবার বিলুপ্ত হলে ওটোমো বংশ রাজনৈতিক প্রভাব হারায় এবং সোগা বংশ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিফলিত হয় ‘সোগা নো ও-ওমি’ নামে সোগা প্রধানের উল্লেখে, যেখানে আগে ‘ও-ওমি’ (大臣) উপাধিটি কেবলমাত্র ওটোমো বংশের জন্যই ব্যবহৃত হতো। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইয়ামাতো রাষ্ট্র সামরিকমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে এক নতুন ধারা গ্রহণ করে। এটি ওজিন রাজবংশের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কেইতাইয়ের শাসনামলে পর্যন্ত বজায় ছিল। উল্লেখ্য, ‘ও-ওমি’ উপাধিটি বুঝতে হবে ‘ও’ (大) অর্থাৎ ‘বড়’ বা ‘মহান’ এবং ‘ওমি’ (臣)। এটি চীনা অক্ষরে লেখা ও ‘রাষ্ট্রের মন্ত্রী’ অর্থে ব্যবহৃত হতো। একই দুটি চীনা অক্ষর চীনা উচ্চারণে ‘দাইজিন’ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আপনি হয়তো এই রূপেও একে অন্যান্য গ্রন্থে দেখতে পারেন। আসুকা ও নারা যুগে এই শব্দগুলো সাধারণত জাপানি উচ্চারণেই উচ্চারিত হতো। তবে হেইয়ান যুগে এবং পরবর্তীকালে সেগুলো চীনা উচ্চারণে ব্যবহৃত হতে থাকে। নবম শতকে হেইয়ান যুগের শুরুতে প্রায় সব অভিজাত ব্যক্তি চীনা পড়তে ও লিখতে পারতেন, অধিকাংশ সরকারি দলিল চীনা ভাষায় লেখা হতো। সরকারের কারিগরি পরিভাষায় চীনা উচ্চারণ ব্যবহারের রীতি শুরু হয় যা এমনকি জাপানি ভাষার বিস্তৃত প্রচলনের পরও চালু থাকে এবং আজও বহাল রয়েছে। আধুনিক জাপানি গদ্যের একটি বড় অংশই চীনা ঋণশব্দে গঠিত। ৫৪৮ থেকে ৫৫৪ সালের মধ্যে কোরিয়ায় সিল্লা সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তারা কোগুর্যো ও পেকচেকে পরাজিত করে। ৫৫৪ সালে পেকচের রাজা সঙ যুদ্ধে নিহত হন এবং কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল পেকচে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে তা টিকে থাকে, যদিও আগের চেয়ে ছোট এবং দুর্বল অবস্থায়। এই সময়ে জাপান কোরিয়ায় ছোট আকারের বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তা সিল্লার মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সিল্লা ৫৬২ সালে মিমানা অঞ্চল পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে। জাপান এরপর একটি বড় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা পরাজিত হয় এবং তাদের নেতারা বন্দি হয়। এরপর থেকে ওটোমো বংশের উল্লেখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজদরবারে প্রধান দুই ব্যক্তি হিসেবে সোগা নো ইনামে এবং মোনোনোবি নো ওকোশির নাম উঠে আসে। এরপর ২০০ বছর ধরে জাপানি রাজদরবার সিল্লাকে আক্রমণ করে মিমানার উপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চিন্তা করে, মাঝে মাঝে বাহিনী ও রসদ সংগ্রহের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো থেকে বিশেষ কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সোগা বংশ সম্ভবত কাজুরাকি বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তারা ওজিন রাজবংশের শুরুতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। ওজিন রাজবংশের কয়েকজন শাসকের মা ছিলেন কাজুরাকি বংশীয়। সোগা বংশ কেইতাই রাজবংশের সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক স্থাপন করে। সোগা নো ইনামে তার দুই কন্যাকে কিম্মেই তেন্নোর সঙ্গে বিয়ে দেন—কিতাশিহিমে ছিলেন ইয়োমেই ও সুইকো তেন্নোর মা (সুইকো ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর বিধবা)। ওয়ানেকিমি ছিলেন সুশুন তেন্নোর মা। উমায়াদো রাজকুমারের দাদী ছিলেন কিতাশিহিমে পিতৃপক্ষ থেকে ও ওয়ানেকিমি মাতৃপক্ষ থেকে। লক্ষ্যণীয়, মোনোনোবি বংশের সামাজিক অবস্থান এ ধরনের সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কাজুরাকি ও সোগা বংশ রাজপরিবারের শাখা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু মোনোনোবি বংশ নয়। মোনোনোবি বংশ উত্তরাধিকারসূত্রে ‘ও-মুরাজি’ (大連) উপাধি ধারণ করত। এটি ওটোমো এবং পরে সোগা বংশের ‘ও-ওমি’ উপাধির সমপর্যায়ে ছিল। এই দুই উপাধিধারী ব্যক্তি সরকারের (যথাসম্ভব) সর্বোচ্চ "মন্ত্রী" হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও ‘ওমি’ বা ‘মুরাজি’ উপাধিধারী পরিবারগুলো ছিল। অধিকাংশ ‘ওমি’ উপাধিধারী পরিবারগুলোর নাম ছিল স্থাননামভিত্তিক। তারা কিনাই অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কাজুরাকি, হেগুরি, ওয়ানি, কোসে, কি এবং পরে সোগা—এইগুলো তার উদাহরণ। এদের বেশিরভাগই রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বংশধর বলে দাবি করত। যদি ‘হোর্স রাইডার’ তত্ত্ব সত্যি হয়। তবে এরা ছিল ওজিনের সম্প্রসারিত পরিবারের সদস্য এবং আগ্রাসী বাহিনীর অংশ। অপরদিকে, ‘মুরাজি’ পরিবারগুলোর নাম ছিল পেশাভিত্তিক। যেমন ইমবে (আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী), ইউকে (ধনুক প্রস্তুতকারী), কাগামিৎসুকুরি (আয়না নির্মাতা), হাজি (মৃৎপাত্র প্রস্তুতকারী), ত্সুমোরি (নিরাপত্তা রক্ষক), ইনুকাই (কুকুর পালক)। অবশ্যই মোনোনোবি (লোহার কাজ)। কৌতূহলজনকভাবে, ‘ও-ওমি’ ওটোমো বংশের নামও একটি পেশাভিত্তিক নাম ছিল। তবে তাদের পেশা ছিল বিশেষ—‘তোমো’ অর্থাৎ ‘সৈনিক’, যার পূর্বে ‘ও’ যুক্ত হওয়ায় বোঝানো হয় যে তারা সাধারণ সৈনিক নয়, বরং কমান্ডার। এই সব বংশই অভিজাত ছিল। তবে ধারণা করা হয় ‘মুরাজি’ পরিবারগুলো ওই পেশার কারিগরদের নেতৃত্ব দিত, নিজেরা সরাসরি সেই কাজ করত না। তবে তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল ‘ওমি’ বংশের চেয়ে কম। তাদের রাজপরিবারে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল। মোনোনোবি বংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত ‘নিগিহায়াহি নো মিকোতো’ ছিলেন এক দেবতার বংশধর। তিনি জিন্মু তেন্নো কর্তৃক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই পৃথিবীতে আগমন করেন। শুরুতে তিনি জিন্মুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে দেবতারা জিন্মুর পক্ষে আছেন। তখন পক্ষ পরিবর্তন করেন। মোনোনোবি নামটি ‘নিহন শোকি’-র সুইনিন তেন্নো এবং চুয়াই তেন্নোর অধ্যায়ে দেখা যায়, যেগুলো ওজিন রাজবংশের আগের। যদি এর কোনো সত্যতা থাকে। তবে মোনোনোবিরা ওজিনের নেতৃত্বে আগমনকারী আগ্রাসীদের আগেই জাপানে অভিজাত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইনগ্যো তেন্নোর মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র রাজকুমার কারু এবং রাজকুমার আনাহো (যিনি পরে আনকো তেন্নো হন)-র মধ্যে উত্তরাধিকারের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মোনোনোবি নো ওমায়ে নো সুকুনে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুরুতে রাজকুমার কারুর সমর্থক ছিলেন। ‘কোজিকি’-র মতে, তিনি কারুকে আনাহোর কাছে তুলে দেন যিনি তাকে হত্যা করেন, আর ‘নিহন শোকি’-র মতে, তিনি রাজকুমার কারুকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন। যেভাবেই হোক, তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই বংশের সদস্যদের নিয়ে অধিকাংশ কাহিনি সামরিক বা অপরাধী দমন সংক্রান্ত। ব্যতিক্রম কিছু থাকলেও, ওটোমো বংশ প্রধানত কোরিয়ায় যুদ্ধ করত, আর মোনোনোবি বংশ প্রধানত জাপানের অভ্যন্তরেই সক্রিয় ছিল। কোরিয়ায় তাদের একমাত্র যুদ্ধ ছিল মিমানায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, সিল্লার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ নয়। আরেকটি পার্থক্য ছিল, মোনোনোবি বংশ ধর্মের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। যেসব বংশ নিজেদের দেবতাদের বংশধর হিসেবে দাবি করত, তাদের নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ছিল। এটি পরবর্তীতে (বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর) ঐ দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতো। সুজিন রাজবংশের প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র মি (臣) পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ইসোনোকামি মন্দির ছিল মোনোনোবি বংশের বিশেষ উপাসনাস্থল। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করা যায়, সোগা নেতারা—অথবা অন্তত সোগা নো উমাকো—জাপানকে আরও সভ্য করে তোলার (অর্থাৎ চীনের মতো করে তোলার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি পেকচে ও কোগুর্যোতে চলমান পরিবর্তনের প্রতিফলন ছিল। এবং ঐ সময়ে ‘চীনের মতো’ হওয়া মানেই ছিল ‘বৌদ্ধ’ হওয়া। দুই বংশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বও এই সংঘাতের পিছনে ছিল। এটি প্রাচীন সময়ে বিরল একটি ঘটনা। জাপানে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে প্রচেষ্টা এই সময়কার ইতিহাসের মূল বিষয়, তার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিমমেইর শাসনামলে চীনের উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলো উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বন্টনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করছিল। এই পরিবর্তনগুলো কোগুরিয়োর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে কোগুরিও এসব তথ্য জাপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কারণ কিমমেইর শাসনের শেষদিকে কোগুরিও এবং জাপানের মধ্যে সিলা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের উত্তর দিয়ে জাপান সাগর অতিক্রম করে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই চীনা রাজবংশগুলো ছিল বর্বর উত্সের এবং প্রবলভাবে অভিজাত শ্রেণিনির্ভর। এটি জাপান এবং কোরিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মতোই। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা ছিল কৃষিজ আয় থেকে কর আদায় সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা, যেখানে প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে পর্যাপ্ত জমি বরাদ্দ দেওয়া হতো যাতে তারা নির্দিষ্ট হারে কর দিতে পারে—ফলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী কর নির্ধারণের জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এড়ানো যেত। এজন্য জনসংখ্যার নিয়মিত জনগণনা করতে হতো এবং যেসব পরিবার ছোট হয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে যেসব পরিবার বড় হয়েছে তাদের দেওয়া হতো। এ ব্যবস্থা তখনকার উত্তর চীনে সম্ভব ছিল, কারণ চীন রাজবংশ পতনের পর বর্বর আক্রমণের ফলে সেখানে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না, যদিও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল যথেষ্ট। কর আদায় হতো কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যার ভিত্তিতে। কোগুরিও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পরে জাপানও অনুসরণ করে। ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা কোগুরিও এবং জাপানে তখনকার প্রচলিত পদ্ধতির খুব ভিন্ন ছিল না, কারণ সেখানে বিদ্যমান কৃষক জনগোষ্ঠী দখল করে অভিজাত শ্রেণি গঠিত হয়েছিল। তবে এটি নিছক অনুমান, কারণ কৃষক ও অভিজাতদের সম্পর্ক সম্পর্কে আমাদের এই সময়ের কিছুই জানা নেই। শুধু “বে” নামক পদ্ধতিতে শিল্পীদের সংগঠিত করার ধরন করভিত্তিক উৎপাদন কোটার ভিত্তিতে পরিচালিত বলেই ধারণা করা যায় যে কৃষকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। এই সময়ে জাপানে কোগুরিয়োর প্রভাব যে ছিল তা প্রমাণ হয় “কোরিয়ো ফুট”-এর সর্বত্র উপস্থিতি থেকে (কোরিয়ো হলো কোগুরিয়োর বিকল্প নাম এবং পরবর্তী কোরিয়ো রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি “Korea” নামটি এসেছে)। এটি ছিল একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক। এটি চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪–৫৫০) নির্ধারণ করেছিল, পরে কোগুরিও তা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকে জাপানে পৌঁছে। এক ফুট বা “শাকু” ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন, এই এককটি জাপানের বহু প্রাচীন স্থাপনার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া আসুকাদেরা (দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির) অন্যতম। কোগুরিও থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হয়, ইশিবুতাই কোফুন (৬২৬ সালে মৃত সোগা নো উমাকোর সমাধি বলে মনে করা হয়) এবং বিদাতসু সম্রাটের পর সকল সম্রাটের কোফুন তৈরিতে কোরিয়ো ফুট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন জাপানি লেখাগুলোতেও বারবার উল্লেখ আছে যে কোগুরিওর আচার-আচরণ, ধর্ম, সংগীত ও নৃত্য জাপানিদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মিলপূর্ণ ছিল। বিশেষত কোগুরিও থেকে আগত নৃত্যশিল্পীরা খুব জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে ছোট আকারের কোফুনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, এতটাই যে বর্তমানে জাপানে টিকে থাকা প্রায় ৯০% কোফুনই এই শেষ কোফুন যুগের ছোট সমাধি। অনেকগুলোই গোলাকৃতি টিলা, প্রায় ১০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট, যেগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামো বড় কোফুনগুলোর মতোই। তবে অনেক কোফুন ছোট ছোট গুহার মতো, যেগুলো পাহাড় বা খাড়ির পাশে খোদাই করে কফিনের সমান আকারে বানানো হয়েছে। এ ধরনের কোফুন সাধারণত গুচ্ছাকারে পাওয়া যায় এবং প্রায়শই কাছাকাছি এলাকায় একই সময়ে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচের ছোট কোফুন পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় পাহাড়ের পাশে এমন অনেক কোফুন পাওয়া গেছে যার সংখ্যা ডজন বা শতাধিক। এ থেকে ধারণা করা যায়, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এই যুগে অনেক বেশি লোককে আলাদা সমাধি নির্মাণযোগ্য মনে করা হতো। রাজাদের ছাড়া আর বড় সমাধি নির্মাণ হতো না। যেহেতু সম্পদ বহুজনের মাঝে ভাগ করতে হতো। তাই প্রতিটি সমাধি ছোট ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হতে বাধ্য ছিল। ধারণা করা হয়, এটি অভিজাত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন নির্দেশ করে—গোত্রপ্রধানের ক্ষমতা হ্রাস এবং গোত্রের সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব জমিজমা ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিক যুগে গোত্রভিত্তিক অভিজাতরা যৌথভাবে গোত্রের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত এবং গোত্রপ্রধান তা বণ্টন করত। কিন্তু ৫৫০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে, যখন গোত্রের সদস্যরা নিজেদের আলাদা জমির ওপর অধিকারে থাকতেন এবং নিজের আয় নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে তারা এখনো সমাধিগুলো একই গোত্র কবরস্থানে তৈরি করতেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়, ফলে সম্মিলিত উপাদান পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। উল্লেখযোগ্য, “ছোট” সমাধি হলেও তাতে বহু টন ওজনের পাথর ব্যবহার করা হতো এবং অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হতো। ৬৪৬ সালের একটি ফরমান অনুযায়ী সমাধির আকার নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল—একজন রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে ৭ দিনে ১০০০ শ্রমিক, মন্ত্রীর জন্য ৫ দিনে ৫০০, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ৩ দিনে ২৫০, মধ্যমপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ১০০ এবং নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ৫০ শ্রমিক নিযুক্ত হবে। <i>নিহন শোকি</i>-তে ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে আগত দূত বন্ধুকে ঘিরে একটি অবিশ্বাস্য গল্প রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তখনকার জাপানি রাজদরবারে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুই দল লেখক ছিল, তারাই শুধু কোগুরিওর রাজার প্রেরিত চীনা ভাষায় চিঠি পড়তে পারত। এই দুই পরিবার ছিল কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে—দুজনেই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে)। যতদূর জানা যায়, ওমি শ্রেণির কোনো জাপানি অভিজাত চীনা ভাষায় পড়া-লেখা শেখার মতো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবেননি, যেমন রেশম বোনা শেখাও অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। এই অবস্থা দুই শতাব্দী ধরে চলেছে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবার শিক্ষিত হতে শুরু করে। ৫৮৫ সালে বিদাতসু সম্রাটের মৃত্যুর পর সোগা এবং মোনোনোবে গোত্রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। কোফুন যুগে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সমাধি নির্মাণে অনেক সময় লাগত—দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত। এসময় মরদেহ একটি অস্থায়ী ভবনে রাখা হতো, যাকে বলা হতো মোগারি নো মিয়া। এখানে মরদেহ স্থাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হতো এবং <i>নিহন শোকি</i> অনুযায়ী এই অনুষ্ঠানে সোগা নো উমাকো এবং মোনোনোবে নো মরিয়া পরস্পরের প্রতি প্রকাশ্যে অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিদাতসুর একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র ছিলেন, যার মা ছিলেন মর্যাদাসম্পন্ন, যার নাম ছিল রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাসকের ভাইয়েরও সিংহাসনের দাবির অধিকার ছিল। কিমমেই সম্রাটের বহু উচ্চস্তরের স্ত্রী ছিলেন, যার মধ্যে সোগা নো ইনামের দুই কন্যাও ছিলেন। নির্বাচিত উত্তরসূরি ছিলেন সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে। তিনি ইয়োমেই সম্রাট হন। বড় ভাই ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ওয়ে এবং আরেক ভাই রাজকুমার আনাহোবেও নিজের উত্তরাধিকারের দাবি জানান। ইয়োমেই রাজা হওয়ার পর আনাহোবে বিদাতসুর রানি কাশিকিয়াহিমেকে জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। তিনি তখন অস্থায়ী সমাধিস্থলে ছিলেন। সমাধির রক্ষী বাহিনীর প্রধান এতে বাধা দেন। এরপর রাজকুমার আনাহোবে সোগা এবং মোনোনোবে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন এবং রক্ষী পদারকে হত্যা করার অনুমতি চান। এটি তাকে দেওয়া হয়। ওই পদার পালানোর চেষ্টা করলেও আনাহোবে তার অবস্থান জেনে মোনোনোবে নো মরিয়াকে তাকে ও তার সন্তানদের হত্যা করতে বলেন। মরিয়া নিজেই তা করেন। সোগা নো উমাকো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। <i>নিহন শোকি</i> অনুসারে, এই ঘটনাই সোগা ও কাশিকিয়াহিমের (পরবর্তীকালে সুইকো সম্রাজ্ঞী) মধ্যে মোনোনোবে নো মরিয়ার প্রতি তীব্র শত্রুতা জন্ম দেয়। ইয়োমেই সম্রাট তেন্নো ৫৮৭ সালে রাজত্ব কাল দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান। তখন আবারও সিংহাসনের প্রশ্ন ওঠে। তার অসুস্থতা কয়েক মাস ধরে চলায় প্রতিযোগীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পায়। আক্রমণের আশঙ্কায় মোরিয়া ইয়ামাতোর বাইরে নিজের দূর্গে সরে গিয়ে সেনা সংগ্রহ শুরু করেন। তখন মোরিয়ার অন্যতম মিত্র ছিলেন নাকাতোমি নো কাতসুমি নো মুরাজি। ''নিহন শোকি'' অনুসারে তিনি ডাকিনীবিদ্যার মাধ্যমে মনোনীত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রাসাদে জাদুকরী বস্তু রাখার উদ্দেশ্যে যান। কিন্তু প্রাসাদ ত্যাগ করার সময় রাজকুমারের এক প্রহরীর হাতে নিহত হন। সবকিছু ইয়োমেইর মৃত্যুর আগেই ঘটে। তাঁর মৃত্যুর অল্প সময়ের মধ্যেই মনোনোব নো মোরিয়া রাজকুমার আনাহোবেকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি উত্তরাধিকার নিয়ে সংঘর্ষের জন্য সৈন্যদের জড়ো করার অজুহাত হিসাবে একটি শিকারের দল করতে চলেছেন। তবে এটি ফাঁস হয়ে যায়। সোগা নো উমাকো সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের আদেশে সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের অবিলম্বে যুবরাজ আনাহোবেকে হত্যার নির্দেশ দেন। তারা এই ধরনের কাজের প্রচলিত সেরা পদ্ধতি হিসেবে রাতের বেলায় তার প্রাসাদে হামলা চালান। এরপর সোগা একটি বড় বাহিনী গঠন করে মরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এতে বহু রাজকুমার, যেমন রাজকুমার হাতসুসেবে (ভবিষ্যতের সুশুন সম্রাট), রাজকুমার উমায়াদো সহ প্রচুর সংখ্যক রাজকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও ইয়ামাতোর প্রায় সমস্ত "ওমি" শ্রেণির আঞ্চলিক উজি সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট অভিজাত উজির দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরিয়া প্রস্তুত ছিলেন, ফলে কোনও গণহত্যা না হয়ে সরাসরি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে পরিণত হয়। ফলাফল কিছু সময়ের জন্য সন্দেহের মধ্যে ছিল। মনোনোবকে সমর্থনকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত গোষ্ঠীগুলি সকলেই ইয়ামাতোর বাইরের গোত্র থেকে ছিল। মনোনোবের বাহিনী ইয়ামাতোর পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। অন্যদিকে সোগার সেনাবাহিনী সম্ভবত আসুকা থেকে শুরু করে আনামুশি গিরিপথ পেরিয়ে একা নদীর কাছে হয়। একা নদীতে মনোনোব সেনাবাহিনী পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই নদীর অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এটি ফুরুচির ঠিক পশ্চিমে আধুনিক ইশি নদী ছিল বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এটি সম্ভবত বর্তমান ইশি নদী। মরিয়ার বাসভবন ছিল শিবুকাওয়াতে। অনুমিত যুদ্ধক্ষেত্রের উত্তর-পশ্চিমে অল্প দূরত্বে। যুবরাজ উমায়াদো তখন তরুণ কেবল তরুণ হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। তিনি সঙ্কটের মুহুর্তে একটি শপথ করেন যে তার পক্ষ বিজয়ী হলে একটি বৌদ্ধ মন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এই কথা শুনে সোগা নো উমাকো নিজেও একই শপথ নেন। এর পরপরই মনোনোব নো মোরিয়া একটি তীরের আঘাতে নিহত হন এবং তার বাহিনী ভেঙে পড়ে। <i>নিহন শোকি</i> জানায়, যুদ্ধস্থলে কয়েক শত লাশ পড়ে ছিল। এটি আরও বলেছে যে মনোনোব বংশের অনেক সদস্য অস্পষ্টতায় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্যরা বংশকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করার কোনও অভিপ্রায় অস্বীকার করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন উপাধি গ্রহণ করেন। আদালত নিঃসন্দেহে ইসোনোকামি বংশ গঠন সহ্য করেছিল। কারণ কেবলমাত্র মানুষের লড়াইয়ের কারণে মনোনোব বংশ প্রতিষ্ঠাকারী দেবতাকে অবহেলা করা অনুচিত হত। তারা ভেবেছি, যে দেবতাদের যথাযথভাবে পূজা করা হত না তারা ক্রুদ্ধ হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করত। মনোনোব বংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমরা ৬০৮ সালে একটি চীনা দূতাবাসের প্রেক্ষাপটে একজন মনোনোব নো ইউকিমি নো মুরাজি একজন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে দেখি। মনোনোবে গোত্র ধ্বংস হয়নি পুরোপুরি—৬০৮ সালে একজন মনোনোবে নো ইউকিমি নো মুরাজিকে চীনা দূতাবন্ধুর প্রেক্ষাপটে পদার হিসেবে দেখা যায়। নামটি পরবর্তীতেও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়। তবে আর কখনও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়নি। ইতিহাসের এই যুগের মূল বিষয় রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জাপানি প্রচেষ্টার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হলো কিম্মেইয়ের সময়েই উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলি উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বণ্টন ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করছিল। চীনের এই বিকাশগুলি কোগুরিওর উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। কোগুরিও জাপানকে এই জাতীয় জিনিস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ কিমেইয়ের রাজত্বের শেষার্ধে কোগুরিও এবং জাপান জাপান জুড়ে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এটি সিলার নিয়ন্ত্রণের অঞ্চলের উত্তরে চলে যায়। এই চীনা রাজবংশগুলি বর্বর বংশোদ্ভূত এবং অত্যন্ত অভিজাত ছিল, অনেকটা জাপান এবং কোরিয়ান রাজ্যগুলির মতো। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থাটি প্রতিটি কৃষক পরিবারকে স্থির কর প্রদানের অনুমতি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে এমন গ্যারান্টি দিয়ে কৃষিকাজ থেকে করের রিটার্নকে সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রতিটি পরিবারকে তাদের জমির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন করের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করার জন্য সমস্ত প্রশাসনিক মাথাব্যথা এবং ব্যয় সাশ্রয় করে। এর জন্য জনসংখ্যার একটি পর্যায়ক্রমিক আদমশুমারি নেওয়া এবং তারপরে আকারে সঙ্কুচিত পরিবারগুলির কাছ থেকে জমি নেওয়া এবং আকারে বেড়ে ওঠা পরিবারগুলিকে জমি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটি করা সম্ভব ছিল কারণ, এই সময়ে উত্তর চীনে সম্ভাব্য আবাদযোগ্য জমির পরিমাণের তুলনায় কৃষি জনশক্তির ঘাটতি ছিল। চিন রাজবংশের পতনের পরে বর্বর আক্রমণের কারণে স্থানচ্যুতির কারণে এই অবস্থা হয়। উপলব্ধ শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতে কর গণনা করা হয়েছিল। কোগুরিও এই সিস্টেমটি অনুলিপি করেছিল এবং জাপানও শেষ পর্যন্ত এটি করেছিল। এটি অনুমান করা হয় যে,এটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান কৃষক জনসংখ্যার বিজয়ের মাধ্যমে অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে কোগুরিও এবং জাপানে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির থেকে আলাদা ছিল না। এটি অনুমান হিসাবে রয়ে গেছে কারণ আমরা এই সময়কালে কৃষক এবং অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানি না, কারিগর শ্রমিকদের সংগঠিত করার "হতে" সিস্টেমটি উত্পাদন কোটার মাধ্যমে করের উপর ভিত্তি করে অনেকটা একের মতো দেখায়, এটি প্রশংসনীয় করে তোলে যে কৃষকরা একইভাবে সংগঠিত হয়েছিল। আমরা জানি যে "কোরিও ফুট" এর সর্বত্র উপস্থিতির কারণে এই সময় থেকে জাপানে কোগুরিওর যথেষ্ট প্রভাব ছিল (কোরিও কোগুরিওর একটি বিকল্প নাম এবং পরবর্তী সময়ের কোরিও রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি নাম "কোরিয়া" এর ভিত্তি)। এটি পরিমাপের একটি ইউনিট ছিল। চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪-৫৫০) কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোগুরিওতে গৃহীত হয়। সেখান থেকে এটি জাপানে চলে যায়। এক ফুট ("শাকু") ৩৫ সেন্টিমিটার ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন যে এই ইউনিটটি দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির (৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু) সহ অনেক প্রাচীন ভবন নির্মাণে নিযুক্ত ছিল। কোগুরিওর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা জাপানে বৌদ্ধধর্মের প্রাথমিক প্রসারে বিশিষ্ট ছিলেন। কোরিও পা স্পষ্টতই ইশিবুতাই কোফুন (সোগা নো উমাকোর নামী সমাধি। তিনি ৬২৬ সালে মারা গিয়েছিলেন) এবং বিদাতসু তেন্নোর সমস্ত রাজকীয় কোফুন স্থাপনেও ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রারম্ভিক জাপানি লেখাগুলিতেও অনেকগুলি উল্লেখ রয়েছে যা মন্তব্য করে যে তারা কোগুরিওকে রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার, (ঐতিহ্যবাহী) ধর্ম এবং সংগীত এবং নৃত্যের ক্ষেত্রে কতটা অনুরূপ বলে মনে করেছিল। কোগুরিওর নৃত্যশিল্পীরা স্পষ্টতই বিশেষত জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক জ্ঞানটি হলো ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতাব্দীর সময়কালে ছোট কোফুনের সংখ্যায় অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানের সমস্ত বেঁচে থাকা কোফুনের প্রায় ৯০% এর মধ্যে প্রায় ৯০% কোফুন যুগের শেষের দিকে ছোট সমাধি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকগুলি প্রায় ১০ মিটার জুড়ে গোলাকার ঢিবি রয়েছে যা একই ধরণের সমাধি কক্ষ যা বড় সমাধিগুলিতে পাওয়া যায়। বিশেষত প্রচুর সংখ্যক সমাধি রয়েছে। সেগুলোকে সাধারণত কফিনের চেয়ে সবেমাত্র বড় পাহাড়ের পাশে ছোট ছোট টানেল চালিয়ে দলবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই এটি একই বয়সের অন্যান্য ছোট কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে নির্মিত কোফুনের কাছাকাছি পাওয়া যায়। ক্লিফসাইড সমাধি সহ কিছু অঞ্চল রয়েছে। সেখানে কয়েক ডজন এবং এমনকি শত শত ছোট উন্মুক্ত স্থায়ী সমাধি রয়েছে। স্বভাবতই এর অর্থ এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে একটি বিস্তৃতভাবে নির্মিত সমাধি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হত। সত্যিই বিশাল সমাধি আর সম্রাটদের জন্য নির্মিত হয়নি। যখন উপলব্ধ সংস্থানগুলি অনেকগুলি জুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে, তখন পৃথক সমাধিগুলি অবশ্যই ছোট এবং কম ব্যয়বহুল হতে হবে। ধারণা করা হয় যে,এটি অভিজাত সমাজের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। অর্থাত এটি বংশ প্রধানের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং বংশের কম সদস্যদের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। একটি চিত্র পাওয়া যায়, প্রথম দিনগুলিতে অভিজাত গোষ্ঠী একটি সম্মিলিত গোষ্ঠী হিসাবে তার অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং বংশের মোট সম্পদ কোনও না কোনও অর্থে বংশের প্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। তবে ৫৫০ এবং তার পরে বংশের সদস্যরা ধীরে ধীরে তুলনামূলকভাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জমিদার এস্টেটের মালিকদের মতো হয়ে উঠেছিলেন। এর মধ্যে তারা তাদের নিজস্ব রাজস্ব নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যাইহোক, তারা এখনও ঘনীভূত বংশের কবরস্থানে তাদের সমাধিগুলি তৈরি করেছিল। তাই সম্মিলিত উপাদানটি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এটি উল্লেখ করা উচিত, যখন আমরা "ছোট" সমাধিগুলির কথা বলি, তখন তারা এখনও বহু-টন শিলাগুলির সংখ্যা নিয়োগ করে এবং নির্মাণের জন্য প্রচুর জনশক্তির প্রয়োজন হয়। সমাধিগুলির স্কেল নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ৬৪৬ এর একটি আদেশ রয়েছে যা কী প্রয়োজন ছিল তার একটি ধারণা দেয়। আদেশে বলা হয়, একজন রাজপুত্রের একটি সমাধি থাকতে হবে যাতে সাত দিনের জন্য ১০০০ শ্রমিক শ্রম দিতে হবে, একজন মন্ত্রীর সমাধি ৫০০ শ্রমিক দিয়ে ৫ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমাধি ২৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ৩ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ১০০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে এবং নিচু পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে। ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে দূতাবাসের আগমন সম্পর্কিত ''নিহন শোকিতে'' একটি বরং অবিশ্বাস্য উপাখ্যান রয়েছে যা চিত্রিত করে যে সেই সময়ে জাপানি আদালতে পূর্ব ও পশ্চিমের লিপিকার নামে পরিচিত লিপিকারদের দুটি কর্পস ছিল এবং কেবল তারাই কোগুরিও রাজার পাঠানো চিঠিটি এবং চীনা ভাষায় লেখা পড়ার আশা করা যেতে পারে। তারা দুটি পরিবার ছিল, কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে, উভয়ই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে ছিল)। যতদূর নির্ধারণ করা যায় যে ওমি শ্রেণীর কোনও উপযুক্ত জাপানি অভিজাত এখনও পর্যন্ত কীভাবে পড়তে এবং লিখতে হয় তা শিখতে পছন্দ করেনি (অগত্যা চীনা ভাষায়), তিনি কীভাবে রেশম বুনতে হয় তা শেখার চেয়ে বেশি পছন্দসই বলে মনে করেননি। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছিল। পরবর্তী প্রজন্মই প্রথম সাক্ষর হয়। সোগা এবং মনোনোব গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ অবিলম্বে ৫৮৫ সালে বিদাতসু তেন্নোর মৃত্যুর থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কোফুন সময়কালে, কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমাধির আকারের কারণে, মৃত্যুর সময় এবং দাফনের মধ্যে প্রায়শই যথেষ্ট বিলম্ব হত, দুই বছর পর্যন্ত, বা এমনকি চরম ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত। এই সময়ে মরদেহটি মোগারি নো মিয়া নামে একটি অস্থায়ী সুবিধায় রাখা হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' মতে, এই স্থানে দেহ স্থাপনের বিষয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল এবং এই অনুষ্ঠান চলাকালীন বিদাতসু তেন্নো সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়া পারস্পরিক অবজ্ঞা প্রকাশ করতে দেখা যায়। উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ ছিল। বিদাতসুর একজন বিশিষ্ট মায়ের সাথে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ছিল যার দৃঢ় দাবি ছিল। ইনি রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ও। যাইহোক, একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রথাও ছিল যে একজন শাসকের ভাইয়ের উত্তরাধিকারের দাবি ছিল এবং বিদাতসুর বেশ কয়েকটি ভাই ছিল। কিম্মেই তেন্নোর সোগা নো ইনামের দুই কন্যা সহ প্রচুর উচ্চ-মর্যাদার স্ত্রী ছিল। নির্বাচিত প্রার্থী আসলে সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে ছিলেন যিনি ইয়োমেই তেন্নো হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় ভাই ছিলেন ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ও, যার মা সেনকা তেন্নোর কন্যা ছিলেন এবং ''নিহন শোকির'' মতে আরেক বিশিষ্ট ভাই রাজকুমার আনাহোবে প্রকাশ্যে নিজের জন্য উত্তরাধিকার দাবি করেন। ইয়োমেই ইতিমধ্যে সিংহাসনে আরোহণ করার পরে যুবরাজ আনাহোবে অস্থায়ী সমাধি এবং বিদাতসুর সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টা করেন। তিনি শেষকৃত্য অবধি সেখানে শোকে বাস করছিলেন, যাকে তিনি সিংহাসনে তার দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। অস্থায়ী সমাধিতে রক্ষীদের কমান্ডার তাকে প্রতিহত করেন। যুবরাজ আনাহোবে তখন দুই মন্ত্রী, সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়ার কাছে গিয়েছিলেন এবং অভিযোগ করেন যে এই কর্মকর্তা তাকে অপমান করেছেন এবং তাকে হত্যা করার অধিকার দাবি করেছেন। এটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। পদার পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজপুত্র তিনি কোথায় ছিলেন (প্রাক্তন সম্রাজ্ঞীর একটি গ্রামীণ প্রাসাদ) তা খুঁজে পেয়েছিলেন এবং মনোনোবে নো মোরিয়াকে তাকে এবং তার সন্তানদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটি মোরিয়া ব্যক্তিগতভাবে করেন। সোগা নো উমাকো এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এই সময় থেকে সোগা নো উমাকো এবং কাশিকিয়াহিমে (ভবিষ্যতের সুইকো তেন্নো) মনোনোব নো মোরিয়ার প্রতি একটি শক্তিশালী শত্রুতা কল্পনা করেন। আগের মতোই উত্তরাধিকারের জন্য বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। যুবরাজ ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়োমেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে মনোনীত করেন এবং [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ|মুরোমাচি পর্বের]] বইয়ে বলা হয়েছে যে তাঁর পুত্র। তিনি জোমেই তেন্নো হয়েছিলেন, ৫৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোগা নো উমাকো পরিবর্তে রাজকুমার হাটসুবেকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সদ্য খুন হওয়া যুবরাজ আনাহোবের ভাই ছিলেন। তবে যিনি শুরু থেকেই সোগার সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন। উভয় রাজপুত্র ছিলেন সোগা নো ইনামের কন্যা ওনেকিমির পুত্র এবং তাই উমাকোর ভাগ্নে। যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরে সুশুন তেন্নো সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুশুন স্পষ্টতই খুব বেশি ব্যক্তিগত ক্ষমতা ছাড়াই ছিল। এটি লক্ষণীয় যে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর কোনও রাজকন্যা ছিল না এবং ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত তাঁর একমাত্র স্ত্রী ছিলেন ওটোমো বংশের। ''নিহন শোকির'' কাছ থেকে বিচার করার জন্য তৎকালীন শাসক বংশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজকন্যা কাশিকিয়াহিমে। তিনি সোগা নো উমাকোকে মনোনোবে নো মোরিয়া আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং যিনি সিংহাসনের জন্য রাজকুমার হাটসুসেবেকে সুপারিশ করেন। প্রায় ৫ বছর সিংহাসনে থাকা সত্ত্বেও ''নিহন শোকিতে'' সুশুনের নিবন্ধটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিনটি বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি ছিল পাইকচে থেকে একটি দূতাবাস যা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং উপকরণ নিয়ে এসেছিল। সোগা নো উমাকো সন্ন্যাসীদের আলোচনায় নিযুক্ত করেন এবং তার বোন ইনামের মেয়ে সহ জাপানি নানদের আরও পড়াশোনার জন্য পায়েচে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারা কোরিয়ায় ২ বছর কাটিয়েছিলেন, ৫৯০ সালে ফিরে আসেন। উমাকো তার মানত করা মন্দির নির্মাণের কাজও শুরু করেন। ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আসুকাদেরায় পরিণত হওয়ার স্থল ভেঙে যায়। ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে উল্লেখ করা হয় যে, অভিজাত পরিবারের বেশ কয়েকজন মহিলা সন্ন্যাসিনী হয়েছিলেন এবং চীন থেকে ৬ জন সন্ন্যাসী দেশে আসেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো "এমিশি" বর্বরদের সাথে সীমান্তের অবস্থা পরিদর্শন করার জন্য উত্তরের তিনটি প্রধান রুট, হোকুরিকুডো, তোসান্দো এবং টোকাইডো বরাবর ৫৮৯ সালে কর্মকর্তাদের প্রেরণ করা হয়েছিল। তৃতীয় বিষয়টি হলো ৫৯১ সালে আদালতে একটি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সিল্লা থেকে মিমানা পুনরুদ্ধার করা দরকার। পাঁচজন সেনাপতি (সমস্ত পুরুষ যারা মোরিয়ার বিরুদ্ধে উমাকোর পক্ষে লড়াই করেন) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ২০,০০০ পুরুষ দেওয়া হয়েছিল। তারা সুকুশি ভ্রমণ করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরিয়া অতিক্রম করেনি। সুশুন মারা গেলে তাদের ইয়ামাতোতে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কোরিয়াকে লক্ষ্য করে ৫৯১ অভিযানের ঠিক এক বছরেরও বেশি সময় পরে, সুশুন তেন্নো একটি শুয়োর শিকারের দলের সময় একটি মন্তব্য করেন যা কাউকে আমন্ত্রণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তিনি যে ব্যক্তির সাথে সমস্যায় পড়েছিলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তাকে অনুগ্রহ করার জন্য। যখন এটি সোগা নো উমাকোকে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে উল্লিখিত ব্যক্তিটি নিজেই ছিলেন। ফলে তিনি সুশনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি পাদটীকা রয়েছে যা বলে যে "একটি বই বলেছে যে" সুশুনের হুমকিমূলক মন্তব্য সম্পর্কে উমাকোর কাছে যে প্রতিবেদনটি শাসকের একজন অসন্তুষ্ট উপপত্নীর কাছ থেকে এসেছিল। উমাকো আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমা নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা অজুহাতে আদালতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এই লোকটি সম্রাটকে হত্যা করেছিল। এরপরে এটি বলে যে সুশুনকে একই দিনে ইতিমধ্যে বিদ্যমান রাজকীয় সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই যুগে তিনিই একমাত্র শাসক যেখানে এটি করা হয়েছিল। সুই রাজবংশের চীনা ইতিহাস অনুসারে। এটি জাপান সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ রয়েছে, প্রথাটি ছিল যে একজন আভিজাত্যকে কেবল তিন বছর পর্যন্ত শোকের পরে হস্তক্ষেপ করা হত এবং একজন সাধারণকে তার মৃত্যুর দিন সূর্যাস্তের আগে সমাধিস্থ করা আবশ্যক। সুশুনকে সাধারণের কবর দেওয়া হয়েছিল, মনে হয়। ''নিহন শোকির'' এই ঘটনার কভারেজ আমার চেয়ে বেশি নয় এবং সুশুন কেন উমাকোকে নির্মূল করতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই বলে না। এতে হত্যাকাণ্ডের পরিণতি বা এ বিষয়ে কারও প্রতিক্রিয়ার কোনো আভাসও উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র অতিরিক্ত উপাদান হলো একটি অদ্ভুত বিবৃতি যে আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমার উমাকোর এক কন্যার সাথে গোপন সম্পর্ক ছিল যিনি সুশুনের উপপত্নী ছিলেন এবং তাকে তার স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করেন। উমাকো প্রথমে এ বিষয়ে সচেতন ছিল না, ভেবেছিল যে মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে সে কোমাকে হত্যা করেছে। উপস্থাপিত হিসাবে এটি বোঝায় যে এটি না থাকলে কোমা বিনা শাস্তিতে হত। বিশ্বাস করতেই হবে যে, সুশুনের হত্যাকাণ্ডকে হত্যা নয়, ন্যায়সঙ্গত কারণে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিম্মেইকে অনুসরণ করা তিনজন শাসক সকলেই কিম্মেইয়ের পুত্র ছিলেন। তবে ভাইদের সরবরাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখননাতির দলটির দিকে তাকাতে হবে। বরাবরের মতোই ছিল বিদাতসু তেন্নোর ছেলে ওশিসাকা নো হিকোহিতো। রাজকুমার তাকেদাও ছিলেন। তিনি বিদাতসুর এক পুত্র এবং যার মা ছিলেন শক্তিশালী কাশিকিয়াহিমে। এরপরে ছিল ইয়োমেই তেন্নোর জ্যেষ্ঠ পুত্র উমায়াদো। উমায়াদোর বয়স তখন ১৯। তাকেদার বয়স জানা যায়নি। তবে তার একটি ছোট বোন ছিল যিনি ইতিমধ্যে উমায়াদোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হিকোহিতো সম্ভবত ইতিমধ্যে বেশ বৃদ্ধ ছিলেন এবং স্পষ্টতই বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না। অন্য সব সম্ভাবনা অবশ্যই খুব কম ছিল। ''নিহন শোকি'' আমাদের কোনও বিতর্ক বা আলোচনা সম্পর্কে ঠিক কিছুই বলেন না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, শেষ পর্যন্ত কাশিকিয়াহিমে নিজেই সিংহাসন গ্রহণ করেন, সুইকো তেন্নো হয়ে ওঠেন। তিনিই প্রথম শাসক (হিমিকো এবং আইয়োর পরে) যিনি মহিলা ছিলেন। যেহেতু সুইকো মহিলা সার্বভৌমদের একটি দীর্ঘ তালিকার প্রথম ছিল। তাই এটি অবশ্যই স্পষ্ট যে এটি সম্ভব করার জন্য অবশ্যই কিছু পরিবর্তন করা উচিত। তবে উত্সগুলি কী হতে পারে সে সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলার নেই। প্রাচীনকালে ছয়জন ভিন্ন মহিলা তেন্নো হিসাবে কাজ করেন (টোকুগাওয়া যুগে আরও বেশি ছিল)। তাদের মধ্যে দু'জন বিভিন্ন রাজত্বের নামে দু'বার রাজত্ব করেন, মোট ৮ টি রাজত্ব করেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় প্রথম চারজন ইতিমধ্যে সম্রাজ্ঞী (একটি তেন্নোর বিধবা) ছিলেন। এগুলিকে স্থান ধারক হিসাবে দেখা সহজ, পুত্র বা নাতির রাজত্ব করার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে মহিলা তেন্নোর ব্যবহার বন্ধ করার পরে দ্রুত এই নীতিটি পরিত্যাগ করা হয়েছিল যে কোনও শিশুকে সিংহাসনে বসানো সম্ভব নয়। একটি স্থানধারক ছাড়া, আপনি অপেক্ষা করতে পারবেন না। সুইকোর ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে সিংহাসন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার পুত্র রাজকুমার তাকেদা দ্বারা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলেন। সোগা নো উমাকোর সিদ্ধান্ত এড়ানোর যথেষ্ট কারণ ছিল। তার ভাগ্নে সুশুনকে সিংহাসনে বসিয়ে এবং তার সাথে একটি কন্যাকে বিয়ে দিয়ে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই দ্বিতীয় সুযোগের ব্যবস্থা করার জন্য তার কিছুটা সময় প্রয়োজন। তার একটি অতিরিক্ত কন্যা ছিল যাকে তিনি যুবরাজ উমায়াদোর সাথে বিয়ে করেন। তবে এটি তাকে সম্ভাব্য শাসক নাতির সাথে উপস্থাপন করতে চলেছে কিনা তা বলা খুব তাড়াতাড়ি ছিল। তবে, এটি আমাদের জানায় না যে এখানে নতুন কী ছিল। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি কেন? ওজিন রাজবংশের সময় দুটি পরিস্থিতি ছিল যখন পরবর্তী শাসক কে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একটি অন্তর্বর্তী পরিস্থিতি ছিল এবং উভয় ক্ষেত্রেই শাসক বংশের একজন মহিলা সদস্য শাসকের আনুষ্ঠানিক উপাধি গ্রহণ না করেই বিষয়গুলির সভাপতিত্ব করেন। আগেকার যুগে শাসকের স্ত্রীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাদের সবাইকে কেবল কিসাকি বলা হত। তার পিতার মর্যাদা থেকে উদ্ভূত কেবল অন্তর্নিহিত মর্যাদা ছিল। এটি অবশ্যই তার সন্তানরা উত্তরাধিকারের জন্য বিবেচিত হওয়ার যোগ্য কিনা তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। যাইহোক, আদালত চালানো আরও বড় এবং জটিল হয়ে ওঠার সাথে সাথে কিম্মেইয়ের সময়ে এটি পরিবর্তন হতে শুরু করে। আদালতের সাথে সংযুক্ত পদারদের একটি বিশেষ দল এসেছিল যারা মনোনীত যুবরাজের পরিবার পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিল। তিনি ও-ওমি এবং ও-মুরাজির পাশাপাশি এক ধরণের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং সম্রাটের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এর অর্থ হলো অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, রাজস্বের নির্দিষ্ট উত্সগুলি রাজপুত্র এবং স্ত্রীদের ভরণপোষণের জন্য বরাদ্দ করা হবে এবং এই একজনকে আরও বেশি এবং সেই ব্যক্তিকে কম বরাদ্দ করে মর্যাদা চিহ্নিত করার স্পষ্ট সুযোগ ছিল। সুইকোর রাজত্বকালে লেখা একটি বই রয়েছে যা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে সুইকোর আগে সমস্ত স্ত্রী কেবল "কিসাকি" ছিলেন। বিদাতসুর স্ত্রী থাকাকালীন তাকে "ও-কিসাকি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি কিসাকি থেকে একইভাবে ও-মুরাজি মুরাজি থেকে আলাদা। অন্য কথায়, তিনি কেবল একজন উপপত্নী ছিলেন না, সম্রাজ্ঞী ছিলেন। বিদাতসুর রাজত্বকালে কিসাইবে নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কিসাকিবের একটি সংকোচন। এর অর্থ কৃষকদের একটি ইউনিট যা একটি নির্দিষ্ট কিসাকিকে সমর্থন করার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। "ব্যক্তিগত হও" বা "ব্যক্তিগত হও" হিসাবে সর্বোত্তমভাবে অনুবাদ করা অক্ষর দিয়ে লেখা হয় তবে কিসাকিবে উচ্চারণ করা হয় তা চীনা প্রভাবের ফলাফল। চীনে সম্রাট ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার অবস্থানের সবকিছুই ছিল 'প্রকাশ্য'। যাইহোক, সম্রাজ্ঞী একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এখনও একটি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেন, রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত নয়। তার নিজের সম্পত্তি থাকতে পারত এবং ছিল। এটি তার পরিবার বা সম্রাটের কাছ থেকে উপহার দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। জাপানি কেসটি আলাদা ছিল, রাষ্ট্রীয় সংস্থানগুলি অর্পণ করে। এটি এখনও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে পরিচালিত হয়, কিসাকিতে। সুতরাং, আগের কিসাকির বিপরীতে, কাশিকিয়াহিমে এমন কর্মকর্তা ছিলেন যারা তাকে রিপোর্ট করেন এবং যে সংস্থানগুলি তিনি ব্যয় করতে পারেন। তিনি একজন খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে বিদাতসুর মৃত্যুর পরের পর্বে যখন যুবরাজ আনাহোবে তাকে অপহরণ ও বিয়ে করার চেষ্টা করেন, যে পদার তাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি কাশিকিয়াহিমের একটি গ্রামীণ প্রাসাদে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন, সম্ভবত তার সমর্থনের জন্য একটি অবস্থানের স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল। তিনি নিঃসন্দেহে এমন একজন কর্মকর্তা ছিলেন যিনি বিশেষভাবে তার সেবায় নিবেদিত ছিলেন। সম্রাজ্ঞীর এই অতিরিক্ত গুরুত্ব পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল, এমনকি সেই সময়েও যখন তারা তেন্নো হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সুইকোর রাজত্বকালে এবং তার পরে যা ঘটেছিল তার মধ্যে একটি ছিল যে অন্য সবার তুলনায় শাসকের মর্যাদা ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য একটি বড় প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং শাসকের মর্যাদা বাড়ার সাথে সাথে তার স্ত্রীদের। বিশেষত তার সম্রাজ্ঞী, তার উত্তরাধিকারীর মা। সম্রাজ্ঞীকে স্ত্রী হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে জীবিত সম্রাটের মা হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে মৃত সম্রাটের মা হিসাবে এবং আরও অনেক কিছু নির্দেশ করার জন্য চীনা থেকে নেওয়া উপাধিগুলির একটি সিরিজ দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। যেহেতু সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত হওয়ার অধিকারী বেশ কয়েকটি জীবিত মহিলা থাকতে পারে। তাই তাদের সকলকে আলাদা করার জন্য পর্যাপ্ত উপাধি থাকা দরকার ছিল। হেইয়ান যুগে, যখন মহিলারা আর তেন্নো হতে পারত না, একাধিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল কারণ একজন সম্রাজ্ঞী তার নিজের খেয়ালখুশিতে উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। একজন সম্রাজ্ঞী যিনি দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন সম্রাটের মা ছিলেন, যদি তার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা থাকে তবে তিনি যথেষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। === শোতোকু তাইশি === [[Image:Prince Shotoku with Two Princes by Kano Osanobu 1842.png|thumb|right|''তোহন মিয়েই'', রাজকুমার শোতোকু এবং তার দুই ছেলের প্রতিকৃতি]] <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে সুইকো তেন্নো সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের একেবারে শুরুতেই উমায়াদো নো তোয়োতোমিমিকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাস্টনের অনুবাদে বলা হয়েছে, "সে জন্ম নেওয়ার সাথেসাথেই কথা বলতে পারত। এতটাই প্রজ্ঞাবান ছিল যে দশজন লোকের মামলা একসাথে শুনে নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারত। সে আগে থেকেই জানত কী ঘটতে চলেছে।" সে শুধু উত্তরসূরি হিসেবেই নিযুক্ত হয়নি, বরং "সরকারের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ন্যস্ত ছিল এবং প্রশাসনের সকল বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।" <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যে কাহিনি বলার চেষ্টা করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন এই ব্যক্তি। তাঁকে বৌদ্ধ ও কনফুসীয় দর্শনে পারদর্শী এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের প্রথম ইতিহাস (যেটি টিকে নেই)। তাঁর আবির্ভাব থেকেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-এর লেখকদের দৃষ্টিকোণে আধুনিক জাপানের ইতিহাস শুরু হয়। মধ্যযুগে তাঁকে একজন বৌদ্ধ সাধু হিসেবে গণ্য করা হতো। আধুনিক কালে ১৮৮৫ সালে চালু হওয়া সংবিধানিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক সন্ন্যাসী হিসেবে বিবেচিত হন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যাঁর রচয়িতা বলে মনে করে সেই "সতেরো অনুচ্ছেদের সংবিধান" জাপানের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক দলিল হয়ে ওঠে। "যুবরাজ" শব্দটির ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তির ভিত্তিতে আপত্তি জানানো হয়েছে, কারণ এই সময়ে এই উপাধিটি উত্তরাধিকার নির্ধারণে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করত বলে মনে হয় না। তবে, এই পদবির মাধ্যমে নির্বাচিত রাজপুত্রকে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। এটাও মনে করা যেতে পারে যে, যেখানে তেন্নো সমগ্র জাতির শাসক হিসেবে দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিলেন, সেখানে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শাসক বংশের পক্ষে একপ্রকার দলের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন, যেমন সোগা এবং অন্যান্য বংশপ্রধানেরা তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন। পুরো নারা যুগজুড়ে এবং প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগেও রাজপুত্রদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং স্পষ্ট ছিল যে, সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর ক্ষমতা অন্যান্য অভিজাত বংশগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সাধারণত তেন্নো নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, সবসময়ই একজন "জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র" থাকতেন। তেন্নো-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী তাঁর অনেক স্থানে যাওয়া এবং অনেকের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। এই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। একজন নারী শাসকের জন্য এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর ছিল, ফলে তাঁর না থাকতে পারা সভায় পরিবারের একজন বিশ্বস্ত সদস্যের উপস্থিতি থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। তবে, এই বিষয়গুলো থেকেই ক্ষমতার উৎস বোঝা যায় না। ক্ষমতার অবস্থান সবসময়ই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল। তাই মনে করার কোনও কারণ নেই যে, সুইকো ওই সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন না। রাজকুমার উমায়াদোর বাবা-মা দুজনেই শাসক বংশের সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর পিতৃকুলের দাদি ছিলেন সোগা কিতাশিহিমে এবং মাতৃকুলের দাদি সোগা ওআনেকিমি—দুজনেই সোগা নো ইনামির কন্যা এবং সোগা নো উমাকোর বোন। তাঁর চারজন স্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়, যাঁদের একজন ছিলেন উমাকোর কন্যা। ৬০০ সালে একটি জাপানি দূতাবিদ দল চীনের স্যুই রাজবংশে গিয়েছিল এবং স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে "ওয়া"-র রাজা পরিবারের নাম ছিল আমে (অর্থাৎ স্বর্গ) এবং তাঁর ব্যক্তিগত নাম ছিল তরাশিহিকো। এটি চীনা অক্ষরে শব্দভিত্তিকভাবে লেখা হয়েছে। "তরাশি" ছিল এই সময়ে শাসকদের আনুষ্ঠানিক নামের সাধারণ উপাদান এবং সম্ভবত "শাসক" অর্থে ব্যবহৃত হতো। "হিকো" একটি নির্দিষ্ট পুরুষ নাম উপাদান, যার নারীস্বরূপ "হিমে"। ফলে মনে হয় এই পরিচিতিটি স্যুইকো তেন্নোর নয় বরং রাজকুমার উমায়াদোর। যদিও সম্ভব যে চীনাদের জানা ছিল না যে "ওয়া"-র রাজা একজন নারী (অথবা জাপানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা গোপন রেখেছিল)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে উমাকো এবং উমায়াদোর মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তাঁরা উভয়েই প্রাদেশিক অভিজাতদের তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রয়োজনে একমত ছিলেন এবং এ লক্ষ্যে শাসকের তাত্ত্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাসাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো সভাসদদের প্রকৃত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা উভয়েই চীনা সাহিত্যের পাণ্ডিত্যে পারদর্শী ছিলেন এবং অন্তত একটি বইয়ে সহযোগিতা করেন। ৫৮৯ সালে স্যুই রাজবংশের দ্বারা চীনের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ৫৮১ সালে উত্তরাঞ্চলের নর্দার্ন ঝৌ রাজবংশে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দক্ষিণাঞ্চল জয় করে একীকরণ সম্পন্ন করে। পেকচে ৫৮১ সাল থেকে এবং শিলা অন্তত ৫৯৪ সাল থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগে ছিল। ৬০০ সালে স্যুইকো রাজদরবার শিলায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল এবং একই বছর পঞ্চম শতাব্দীর পর প্রথমবারের মতো চীনে দূত পাঠানো হয়। যদিও <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই মিশনের সাফল্যের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা রয়েছে, এই বাহিনী কোরিয়ায় বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি এবং ৬০২ সালে একটি দ্বিতীয় ও বৃহৎ অভিযান পরিকল্পিত হয়। লক্ষণীয় যে এই বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন রাজকুমার কুমে, রাজকুমার উমায়াদোর ভাই, কোনও ঐতিহ্যবাহী সামরিক উজি সদস্য নয়। এটি কে প্রমাণ হিসেবে ধরা হয় যে এই প্রকল্পটি উমাকোর নয় বরং উমায়াদোর উদ্যোগে ছিল। এছাড়া, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে এই বাহিনী গঠিত হবে "কানতোমো" থেকে, যার মধ্যে ছিল ধর্মীয় দায়িত্বে নিয়োজিত ইম্বে ও নাকাতোমি বংশ, পাশাপাশি "কুনি নো মিয়াতসুকো" ও "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রা। অর্থাৎ কোনও "ওমি" শ্রেণির বংশ এতে অংশ নেয়নি। সমস্ত যোদ্ধা শাসক বংশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বংশ ও প্রাদেশিক অভিজাতদের মধ্য থেকে আসবে। এটি সম্ভবত এমন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা সরাসরি শাসকের প্রতি অনুগত থাকবে, বরং ঐতিহ্যগত বংশের মিলিশিয়ার বিকল্প হবে। এই বিশ্লেষণ সত্য হলে, ৬০২ সালে রাজকুমার উমায়াদোর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, প্রকল্পটি সফল হয়নি। বাহিনী কিউশুতে একত্রিত হওয়ার পর রাজকুমার কুমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক মাস পরে মারা যান। শোতোকু তাইশির ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি পরবর্তী গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজকুমার ধারণা করেন শিলা এজেন্টরা রাজকুমার কুমেকে হত্যা করেছে। এরপর তাঁর আরেক ভাই রাজকুমার তাকিমাকে বাহিনীর নেতৃত্বে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কিউশুর উদ্দেশে রওনা হন। পথে তাঁর স্ত্রী মারা যান এবং রাজকুমার ইয়ামাটোতে ফিরে আসেন, কিউশু আর পৌঁছাননি। বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও কেউ কেউ মনে করেন যে, কিউশুতে একটি বৃহৎ বাহিনী একত্রিত করাই শিলার ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে জাপান কূটনৈতিকভাবে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল। এই লক্ষ্য ছিল নিয়মিত "খাজনা" বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য, কারণ অনেক বিলাসপণ্য আমদানি করতে হতো। শিলা যখনই জাপানের ওপর অসন্তুষ্ট হতো, তখনই বাণিজ্য বন্ধ করে দিত, আর জাপান যুদ্ধের হুমকি দিত। ৬১০ সালে শিলা থেকে আসা একটি দূতাবিদের অভ্যর্থনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দূতদল স্যুইকোর আসুকার প্রাসাদের মূল হলের সামনে উঠানে জড়ো হয়। প্রত্যেক দূতের সঙ্গে এক একজন জাপানি অভিজাত নিযুক্ত ছিলেন যাঁরা তাঁদের সহায়তা ও সম্ভবত অনুবাদের কাজ করতেন। চারজন প্রধান মন্ত্রী তাঁদের স্বাগত জানান। যখন দূতরা শিলার রাজা কর্তৃক প্রেরিত সরকারি চিঠি পড়তে যান, তখন সোগা নো উমাকো হলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের কথা শুনে ফেরার পর তেন্নোকে রিপোর্ট করেন। রাজকুমার উমায়াদোর উপস্থিতির উল্লেখ নেই। তিনি যদি সম্পৃক্ত থাকতেনও। তবে পুরো সময়টি প্রাসাদের ভেতরেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যাবে, হয়তো তিনি তখন আসুকায় ছিলেন না। রাজকুমার তাকিমার কোরিয়া অভিযান বাতিল হওয়ার পরপরই, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে আদালতে "টুপি পদবী" নামে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এই পদ্ধতির বাস্তবতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই, কারণ এটি স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ আছে। চীনা দরবারে এমন একটি ব্যবস্থা ছিল। কোরিয়ার সব রাজ্যেও অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। জাপানি ব্যবস্থা বিশেষত কোগুরিও-র ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। বাইরের প্রকাশ ছিল কর্তব্যরত অবস্থায় কর্মকর্তা যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিধান করবেন, যাতে পদবীর পরিচয় বহন করবে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল এমন এক র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করা। এটি শাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। পূর্বে বিদ্যমান কাবানে পদগুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী ও বংশগত। এগুলো থেকে ব্যক্তিগত মর্যাদা স্পষ্ট হতো না। সেগুলো ছিল সম্পূর্ণরূপে গোত্রভিত্তিক, কোনও ব্যক্তির মর্যাদা নির্দেশ করত না। নতুন ব্যবস্থা ছিল বিশেষভাবে আদালতের পদবী এবং সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিভিত্তিক। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাসাদীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অভিজাতদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। টুপিগুলোর কোনও নমুনা আজ আর বিদ্যমান নেই। তবে কয়েকজন ব্যক্তিকে যে পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তার উল্লেখ আছে। কুরাতসুকুরি (স্যাডলমেকার) নো তোরি নামে এক খ্যাতনামা বৌদ্ধভক্ত। তিনি আসুকায় হোকোজি বৌদ্ধমন্দিরের প্রধান হল নির্মাণ করেন, তাঁকে স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রথম তিনটি পদমর্যাদায় নিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির নাম আমাদের জানা আছে। একজন যিনি প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন, তাঁর মর্যাদা সোগা নো উমাকো এবং শিলার দূতাবিদকে স্বাগত জানানো "চার মন্ত্রী"-র তুলনায় অনেক নিচে ছিল। ফলে ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র অপেক্ষাকৃত সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য ছিল, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য নয়। কিছু পণ্ডিত পরবর্তী দশকে চালু হওয়া বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার জন্য বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং ধারণা করা হয়, এখানে সর্বোচ্চ পদ ছিল <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় চালু থাকা ব্যবস্থায় জ্যেষ্ঠ চতুর্থ শ্রেণির সমতুল্য। এই স্তরটিই ছিল উচ্চ অভিজাতদের সাথে সাধারণ কর্মকর্তাদের বিভাজনের রেখা। কেবলমাত্র অভিজাত শ্রেণির শীর্ষ স্তরের সদস্যরাই তৃতীয় শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব মর্যাদা পেতেন। পরের বছর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে সব মন্ত্রীর জন্যও বিশেষ টুপি ডিজাইন করা হয়েছিল। একটি কাহিনিতে বলা হয়েছে ৬৪৩ সালে সোগা নো এমেশি অবসর নেওয়ার সময় তিনি নিজ হাতে মন্ত্রীর টুপি তাঁর পুত্র ইরুকার হাতে তুলে দেন। সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ৬০৭ সালে পায়কচে সুই রাজবংশে দূত পাঠিয়ে কোরিয়ার উপর চীনের আক্রমণের পরামর্শ দেয়। ইয়াং-তি পায়কচের সাথে যৌথ অভিযান প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর ফলে কোরিয়ায় একটি বিশাল পরিবর্তনের সময়শৃঙ্খলা শুরু হয়। জাপানও ৬০৭ সালে একটি দূতাবাস পাঠায়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘সুই ইতিহাস’ রাজকুমার উমায়াদো—"তারাশিহিকো"—কে 'ওয়া'র রাজা হিসেবে গণ্য করেছে। ইয়াং-তির কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছিল জাপানি শুনেছে যে সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে আগ্রহী এবং তারা চীনে পাঠিয়ে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ পাঠাতে চায় পাঠচর্চার উদ্দেশ্যে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে দূতদলের মধ্যে এমন একজন অভিবাসী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চীনা ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারতেন। চীনা রিপোর্ট অনুসারে, চিঠিতে রয়েছে ঐতিহাসিক বাক্য: “সূর্যোদয় দেশের সম্রাট, সূর্যাস্ত দেশের সম্রাটকে এই চিঠি প্রেরণ করছেন।” ইয়াং-তি সমতার ধারণা পছন্দ করেননি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি প্রথম সংকেত যে, জাপানের চাহিদা ছিল চীন চীন দেশে তাদের নাম 'ওয়া' না বলে 'নিহোন' হিসেবে জানুক। প্রকৃত নির্বাহীকরণ দেখা যায় ৬৪৮ সালে ট্যাং রাজবংশে প্রেরিত দূতাবাসের চীনা বিবরণে “日本” প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে। বিরক্ত সত্ত্বেও, ইয়াং-তি প্রতীয়মান দেশের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধ পরিকল্পনা করছিলেন। অবিলম্বে একটি চীনা দূতাবাস জাপানে পাঠানো হয়। এই বিনিময়েই জাপান প্রথমবার একটি উপযুক্ত চীনা শব্দ বেছে নেয় শাসককে উল্লেখ করার জন্য। প্রাথমিক নথিতে “大王” ব্যবহৃত হত, সম্ভবত "ওকিমি" উচ্চারণে। তবে দূতাবাস কাল নাগাদ চীনাদের সাথে সমতামূলক শিরোনাম ব্যবহার অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছিল। উচ্চারণ ও উপাধি বিষয় বিবেচনা করে "天皇" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি সম্রাটের উচ্চ মর্যাদার প্রতীক; চীনা ‘হুয়াংদি’ যা সমান মর্যাদার প্রতীক। জাপানি উচ্চারণে “সুমেরা মিকোতো”—যার বাংলা অর্থ 'সর্বোচ্চ শাসক'। চীনা চিঠিতেও এটি লক্ষ করা গেল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬২৮ ও অন্যান্য লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। সুইকর সময়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হতো সুমেরা মিকোতো। তবে আধুনিক জাপানে এটি 'তেন্নো' নামে পরিচিতি লাভ করে। ৬০৮ সালের দূতাবাস দেখে চীনারা এটি কে 'জাপানের হুয়াং' বা সর্বোচ্চ সম্মানিত সার্বভৌম হিসেবে মনেছেন; অ্যাস্টন এ এটি অনুবাদ করেছেন "সার্বভৌম". মোট চারটি দূতাবাস পাঠানো হয় উল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে। শেষ দূতাবাস প্রেরণের সময় সুই রাজবংশ ইতিমধ্যেই পতনের দিকে ঝুঁকছিল। জাপানি দূতরা নিরাপদে ফিরতে বিপাকে পড়েন। তার ১৬ বছর পর পুনরায় কোনো বিনিময় হয়নি। এখানে স্পষ্ট যে, চীন জাপানে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল—অসভ্য উচ্চাভিলাষ সহ্য করলেও তারা চেষ্টা করছে দেশে এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যত সম্ভব জানতে। এটি তাদের কোরিয়া নিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। তবে ট্যাংও কোরিয়ায় উচ্চাভিলাসী ছিল। অস্বীকার বা রাজবংশ পরিবর্তনের কারণে চীনের সাথে সম্পর্ক বন্ধ করা জাপানের স্বার্থে বাধ্যতামূলক ছিল না। এক মতামত বলছে, রাজকুমার উমায়াদোর রাজনীতির অর্ধ-অবসর ৬০৫ সালের পর এই দূতাবাস উদ্যোগগুলোর প্রসার প্রধান ব্যক্তি ছিলেন এবং অন্য কেউ ততটা ভাবতেন না। ৬২০ সালে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> রিপোর্ট করে যে, রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা নো উমাকো একত্রে “সম্রাটদের ইতিহাস, দেশের ইতিহাস। ওমি, মুরাজি, টোমো নো মিয়াতসুকো, কুনি নো মিয়াতসুকো, ১৮০ বে এবং মুক্ত প্রজাদের মৌলিক রেকর্ড” তৈরি করেন। যদি প্রকৃতপক্ষে এ সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। তবে এটি অমূল্য হত। কিন্তু একমাত্র একটি কপি ছিল এবং ৬৪৫ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জাপানের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে, কারণ ঐ ঐতিহাসিক কাজ তা অবশ্যই তুলে ধরত। আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে, ৬০২ সালে পায়কচে ভিক্ষু কানরোক প্রথমবার চীনা পদ্ধতিতে একটি বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে জাপানে। এরপর ৬০১ সালের ভিত্তিতে উমায়াদো ২১টি ৬০-বছরের চাকার ভিত্তিতে ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পিছিয়ে তার শাসকের বংশানুক্রম নির্ধারণ করেন। বর্ষপঞ্জির সেই চক্রের বিশেষ জ্যোতিষ্কীয় গুরুত্ব উপস্থাপন চীনা থেকে নেওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে রাজকুমার উমায়াদো ৬২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু যেকোনো জাপানি ঐতিহাসিক তালিকা জানায় এটি ঘটেছিল ৬২২ সালে। এই অংশে মুখ্য অনেক তারিখ এক বছর ভিন্ন। কেন তা এমন তা নিয়ে কোনো তত্ত্ব নেই। বিকল্প সূত্র একটি প্রাচীন জীবনী ভিত্তিক। এটি বছর ও মাসের দিন ভাগে পৃথক। জাপানিরা সেই দ্বিতীয় তারিখ মেনে নিতে উৎসাহী। এই সূত্রগুলোর একটি হচ্ছে আসুকা যুগের হোর্যুজি বৌদ্ধ মূর্তির উপচর্চা–যাতে খোদাই করা হয়েছে যে তার মা মৃত হন সুইকোর ২৯তম বর্ষের ১২তম মাসে (৬২১)। পরের মাসে তিনি অসুস্থ হন। প্রধান স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় মাসের ১১ তারিখে মারা যান (৬২২)। রাজকুমার মারা যান দ্বিতীয় মাসের ২২ তারিখে। তিনজন একই সমাধিতে দাফন হন। তাঁর বয়স ছিল ৪৯। সমাধি ইকারুগা থেকে ২০ কিমি দূরে, বিডাতসু ও ইয়োমেইএর সমাধির কাছে অবস্থিত। পরে সুইকো ও কোটোকুর সমাধি একই এলাকায় নির্মিত হয়েছে। প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে Shotoku Taishi প্রাচীন কাল থেকেই একজন অত্যুৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে সন্মানিত ছিলেন—প্রাথমিক কারণ ছিল বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৌদ্ধধর্ম ৮ম শতক পর্যন্ত রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কেবল অনুমোদিত ছিল এবং একারণে অনেকেই সন্দিহানে ছিলেন। তবে রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা উমাকো ব্যক্তিগতভাবে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং উমায়াদো এর কয়েকটি প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইকারুগা প্রাসাদের আশেপাশে মন্দিরগুলোর একটি ক্লাস্টার—বিশেষ করে হোর্যুজি। এটি ৬৭০ সালে আগুনে ধ্বংসের পর পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং জাপানের প্রাচীনতম কাঠের নির্মাণ। এটি ছিল উমায়াদোর ব্যক্তিগত মন্দির, তখন পরিচিত Ikarugadera, “ইকারুগা মন্দির” নামে। তিনি প্রথম জাপানি হিসেবে বই রচনার কারণে অর্থবহ ভূমিকাও রেখেছিলেন। ১৪শ শতক থেকে, তিনি সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা জাপানের ১৮৬৮ সালের পর ক্ষমতা লাভ করে। প্রতিটি জাপানি স্কুলছাত্র <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র ১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান অধ্যয়ন করতো। তবুও কেউ ২০শ শতাব্দীর সামরিক কর্তৃত্ববাদীদের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেনি; তাঁর মর্যাদা এখনও অনন্য উচ্চে রয়েছে। ৬২৩ সালে মিমানা থেকে শিলে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে কোরিয়ায় আক্রমণের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এটি ২০ বছরের বিরতি পর ঘটে। দরবারের কর্মকর্তারা দ্বিখণ্ডিত হন। এক পক্ষ, যার মুখপাত্র তানাকা নো ওমি, মিমানা যথার্থ ব্যবহারের তদন্তের জন্য দূত প্রেরণে সমর্থন করে; অন্য পক্ষ, যে নেতৃস্থানীয় হচ্ছেন নাকাতোমি নো কুনি নো মুরাজি, সেনাবাহিনী প্রেরণের পক্ষে, শিলেকে বের করে মিমানাকে পায়কচের নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তরের দিকে ধাবিত করেন। অবশেষে দূত প্রেরিত হয় এবং শিলা একটি দূতাবাস পাঠায় প্রস্তাব নিয়ে। পুরোনো ব্যবস্থা অনুযায়ী মিমানা নামমাত্র শুল্ক দিবে। শিলা ও জাপানি কর্মকর্তাদের একটি দল মিমানায় যান চুক্তি সম্পাদনের জন্য। কিন্তু তারা ফিরে আসার আগে বড় একটা জাপানি সেনাবাহিনী করণীয়ভাবে কোরিয়ায় প্রেরিত হয় সাকাাইবে নো ওমি ওমারোর নেতৃত্বে। তিনি সম্ভবত সোওগা উমাকোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে দূতরা বারংবার যাননি এবং সবকিছু লড়াই ছাড়াই নিষ্পত্তি হয়েছে। কোরিয়ার জাপানি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। এরপর চুক্তি হয়েছে যে যতবার জাপান দূতাবাস শিলায় যাবে, তারা আগমনের সময় দুইটি আনুষ্ঠানিক নৌকায় স্বাগত জানাবে—একটি শিলার জন্য এবং অন্যটি মিমানার জন্য। মিমানায় একটি সেনাবাহিনী এবং একই সময়ে কূটনৈতিক আলোচনা করা কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। সম্ভবত দরবারে দুটি পক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করছিল। ৬২৩ সালে একটি জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃক সংঘটিত প্রদর্শনী হত্যাকাণ্ডের (কুড়াল দিয়ে হত্যাকাণ্ড!) পরে, আদালত ধর্মীয় ব্যবস্থার উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং একটি (বৌদ্ধ) ধর্ম দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়, প্রধান পদগুলো ভিক্ষুদের জন্য নির্ধারিত হয়। এর ফলে একটি আনুষ্ঠানিক জনগণনা নেওয়া হয় এবং রিপোর্ট করা হয় যে দেশে ৪৬টি মন্দির, ৮১৬ জন ভিক্ষু এবং ৫৬৯ জন ভিক্ষুনী রয়েছে। == "তাইকা সংস্কার" == ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে সোওগা-নো উমাকো মারা যান এবং ৬২৮-এ ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় স্যুইকো সম্রাজ্ঞীর। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘটনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়। উমায়াদো, উমাকো ও স্যুইকোর মৃত্যুতে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যুর ঠিক আগে উমাকো স্যুইকোর কাছে অনুরোধ করেন যেন কাজুরাকি আগাতা তার হাতে দেওয়া হয়, কারণ এটি ছিল তার বংশের প্রাচীন নিবাস। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ছয়টি আগাতার একটি। এটি সরাসরি শাসকের ব্যয়ের উৎস ছিল। স্যুইকো এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এই দাবি মেনে নেওয়া হতো, তাহলে সোওগা বংশ একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এটি অন্য সব সোওগাদের থেকে স্বাধীন হতো। এই কৌশলই পরে নাকাতোমি-নো কামাতারির জন্য প্রয়োগ করা হয়; তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের একটি নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি শুধুই বয়স্ক উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা হারানোর একটি দৃষ্টান্ত এবং তার দাবি অযৌক্তিক ছিল। পরবর্তী সম্রাট ছিলেন বিদাতসু সম্রাটের পৌত্র ও দুর্ভাগাপ্রাপ্ত রাজপুত্র ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হন। স্যুইকোর মৃত্যুর কয়েক মাস পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোওগা-নো এমিশি, উমাকোর জ্যেষ্ঠপুত্র, তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এমিশি সিনিয়র কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জানান যে স্যুইকো দুই সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর কথা বলেছিলেন — রাজপুত্র তামুরা এবং রাজপুত্র উমায়াদোর পুত্র, রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে — এবং তাদের উভয়কেই বলেছিলেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ না করেন। তার নিজের পুত্র, রাজপুত্র তাকেদা, এর আগেই মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার সমাধিতে সমাহিত হওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এমিশির বিবরণে বোঝা যায় যে স্যুইকো রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন। কিন্তু স্পষ্ট করে কাউকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেননি। অধিকাংশ সদস্য রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন, যদিও কেউ কেউ রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়েকেও সমর্থন করেন, ফলে এমিশি সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি করেন। দুই রাজপুত্রই বংশগতভাবে সমান এবং বয়সেও প্রায় সমান ছিলেন। রাজপুত্র তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং ধারণা করা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের বয়সও অনুরূপ ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে জোর দিয়ে বলেন যে স্যুইকো তাকে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে তিনি এমিশিকে মিথ্যাবাদী বলেন। অবশেষে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; এক প্রতিপক্ষ কর্মকর্তাকে এমিশি হত্যা করেন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজপুত্র তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই সম্রাট নামে পরিচিত হন। এমিশি রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করার একটি সুস্পষ্ট কারণ ছিল — তার প্রধান স্ত্রী ছিলেন সোওগা-নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয়, তিনি ইতোমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, জন্ম দিয়েছেন। অন্যদিকে, বলা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হয়তো এমিশি ভেবেছিলেন তামুরার সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। জোমেইর অভিষেকে আরও এক তরুণ রাজপুত্র সামনে আসেন — নাকা-নো ওয়ে। জোমেইর সম্রাজ্ঞী ছিলেন না সোওগা-নো হোতে-নো ইরাতসুমে, বরং ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর নাতনি রাজকন্যা তাকারা। তিনি নাকা-নো ওয়ের মা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই সম্রাট সংক্রান্ত অংশটি সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যবর্জিত। উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হলো: ৬৩০ ও ৬৩২ সালে তাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে দূতাবিনিময়। চীনে ২৪ বছর অবস্থানকারী এক শিক্ষার্থী এই সময় দেশে ফেরেন। অপর একজন, তাকামুকু-নো কুরামারো, ৩০ বছর পর ৬৪৪ সালে দেশে ফিরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধ। এছাড়া জোমেই তার প্রাসাদ দুইবার স্থানান্তর করেন; প্রথমবার আগুন লাগার কারণে, দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে। এটি দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধাজনক ছিল। এই সময় কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ধারণা করা হয়, শাসকের প্রাসাদ রাজধানীতে রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছিল। এই শাসনামলে একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে প্রবীণতম জীবিত রাজপুত্র এমিশিকে ধমক দেন, কারণ মন্ত্রীরা যথাযথভাবে সভায় হাজির হচ্ছিলেন না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারত। কিন্তু এমিশি সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরবর্তী সময়ে রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময়সূচি নির্ধারণের রীতি চালু হয়। নতুন প্রাসাদ স্থানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ হয়। এটি কোনো শাসকের দ্বারা নির্মিত প্রথম মন্দির হিসেবে পরিচিত। জোমেই ৬৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন, কোনো উত্তরাধিকারী মনোনয়ন না করেই। তার উত্তরসূরি হন তার সম্রাজ্ঞী। তিনি দ্বিতীয় নারী সম্রাট হিসেবে পরিচিত হন কোগিয়োকু সম্রাজ্ঞী নামে (তার দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল সাইমেই সম্রাজ্ঞী হিসেবে)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই উত্তরণের বিষয়ে কিছুই বলে না। এখানে দুইজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন — রাজপুত্র ফুরুহিতো ও রাজপুত্র নাকা-নো ওয়ে, উভয়েই সম্রাটের সন্তান। তবে ভিন্ন মাতার গর্ভজাত। নাকা-নো ওয়ে ছিলেন সম্রাজ্ঞীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী (জাপানি গণনায়, আমাদের হিসেবে ১৫ বছর), সিংহাসনের জন্য কিছুটা তরুণ। তখনও শিশুদের সিংহাসনে বসানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে অনুমান করা যায়, কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি কারণ ছিল তার পুত্রকে ভবিষ্যতে সিংহাসনে বসানো। ফুরুহিতোর মর্যাদা কম হলেও, বয়সে তিনি নাকা-নো ওয়ের চেয়ে বড় ছিলেন, যদিও তার সঠিক বয়স জানা যায় না। কয়েক বছরের মধ্যে নাকা-নো ওয়ে ফুরুহিতোর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং তখন তার বয়স ২০ বছরের বেশি ছিল। এ ছাড়া রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের কথাও ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি থাকায় কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে ঘটেছিল। এটি সম্ভাব্য কারণ, কারণ সোওগা-নো এমিশি ছিলেন এমন ব্যক্তি। তিনি ঐকমত্য ছাড়া কিছু করতেন না। প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা করা যায় না। নতুন সম্রাজ্ঞীর বয়স তখন ৪৯। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগিয়োকুর শাসনকালকে সোওগা বংশের পতনের সূচনার সময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জোমেইর শাসনকালে সোওগা-নো এমিশির নেতৃত্বে সব কিছু মসৃণভাবে চলছিল। তিনি আদালতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে কোগিয়োকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা কার্যত সোওগা নেতৃত্বে তাকে অতিক্রম করে এবং পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন হয়ে ওঠে। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তিনি শৈশবে অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তিনি স্বেচ্ছাচারী, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে ওঠেন। তিনি শত্রু সৃষ্টি করতেন এবং এতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং নিজের ইচ্ছামতো এগিয়ে যেতেন। উমায়াদো, উমাকো এবং সুইকোর মৃত্যুর মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করা স্পষ্ট হয়ে যায়। মৃত্যুর কিছু আগে উমাকো সোগা দাবি করেন যে কাজুরাকি আগাতা তার বংশের প্রাচীন আবাসস্থান ছিল এবং সে কারণে তা তার মালিকানায় নেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন সুইকোর কাছে। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ৬টি আগাতার একটি, যেগুলো সরাসরি শাসকের ব্যয় নির্বাহ করত। সুইকো তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এটি অনুমোদিত হতো। তবে সোগা কাজুরাকি বংশের নাম পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করতে পারতেন। এতে করে তার বংশধররা অন্যান্য সোগাদের থেকে স্বাধীন একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন। এইরকমই পরে করা হয়েছিল নাকাতোমি নো কামাতারির ক্ষেত্রে, যখন মৃত্যুর পর তার পুত্রদের নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি ছিল একজন বৃদ্ধ উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে এমন কিছু চাওয়ার চেষ্টা। এটি কখনোই বাস্তবায়নযোগ্য ছিল না। পরবর্তী শাসক ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর নাতি এবং দুর্ভাগা রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হয়েছিলেন। তবে সইকোর মৃত্যুর পর কয়েক মাস পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। উমাকোর জ্যেষ্ঠ পুত্র সোগা নো এমিশি তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবশেষে এমিশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি সভা আহ্বান করে বলেন, সুইকো রাজকুমার তামুরা ও রাজকুমার ইয়ামাশিরো নো ওয়ে (রাজকুমার উমায়াদোর পুত্র) ।এই দুইজনকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং উভয়ের সাথেই সাক্ষাৎ করে অনুরোধ করেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই না করে। তার নিজের পুত্র রাজকুমার তাকেদা আগেই মারা গিয়েছিলেন। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার কবরেই তাকে সমাধিস্থ করা হোক। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র মতে, এমিশির বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি রাজকুমার তামুরার প্রতি স্যুইকোর পক্ষপাত দেখান। তবে কাউকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয়নি। অধিকাংশ সদস্য তামুরার পক্ষে থাকলেও কিছুজন ইয়ামাশিরো নো ওয়ের পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে এমিশি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সভা মুলতবি করেন। উভয় রাজপুত্র বংশগত ও বয়সের দিক থেকে সমান ছিলেন—তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং অনুমান করা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়েরও বয়স একইরকম। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেয়, যেখানে বলা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়ে দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে স্যুইকো তাকে ব্যক্তিগতভাবে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় তিনি সোগা নো এমিশিকে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেন। শেষ পর্যন্ত সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; একজন বিরোধী কর্মকর্তা এমিশির হাতে নিহত হন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজকুমার তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই তেন্নো নামে পরিচিত হন। তামুরাকে সমর্থন করার জন্য এমিশির স্পষ্ট কারণ ছিল—তামুরার প্রধান পত্নী ছিলেন সোগা নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয় যে তিনি ইতিমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, প্রসব করেন। অন্যদিকে, উল্লেখযোগ্য যে ইয়ামাশিরো নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হতে পারে এমিশি মনে করেন তামুরার সাথে তার সম্পর্ক আরও সদ্ভাবপূর্ণ হবে। জোমেইর সিংহাসনে আরোহণের ফলে এক তরুণ রাজপুত্র, নাকা নো ওয়ে, প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও জোমেইর রানী ছিলেন না সোগা নো হোতে নো ইরাতসুমে, বরং ছিলেন রাজকুমারেস তাকারা—ওশিসাকা নো হিকোহিতোর নাতনী এবং নাকা নো ওয়ে ছিলেন তারই পুত্র। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই তেন্নোর শাসনকাল নিয়ে খুব অল্প এবং অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। শুধু দুটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ৬৩০ এবং ৬৩২ সালে তাং রাজবংশের সঙ্গে দূতাবিনিময়। একজন শিক্ষার্থী যিনি ২৪ বছর ধরে চীনে ছিলেন, তিনি এই সময়ে দেশে ফিরে আসেন। আরেকজন, তাকামুকু নো কুরামারো, ৩০ বছর পরে ৬৪৪ সালে ফিরে আসেন এবং একজন মহা সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হন। দ্বিতীয় প্রধান ঘটনা হলো ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে প্রথম সীমানা যুদ্ধের নথিভুক্তি। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে জোমেই দুইবার তার রাজপ্রাসাদ স্থানান্তর করেন—প্রথমবার আগুন লাগার পরে এবং দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে, যেখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়। এটি ছিল বড় আকারের নির্মাণকাজের সূচনা। মনে করা হয়, শাসকের প্রাসাদ তখন রাজধানী নগরীতে রূপান্তরের পথে ছিল। তার শাসনকালের একটি গল্পে বলা হয়, জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক রাজপুত্র এমিশিকে ভর্ৎসনা করে বলেন যে, মন্ত্রীরা এবং কর্মকর্তারা আদালতে ঠিকভাবে উপস্থিত হন না। তাদের সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি একটি ঘণ্টার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এমিশি এই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরে, রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময় নির্ধারিত হয়। নতুন প্রাসাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল একটি বৌদ্ধ মন্দির—প্রথম যেটি কোনো শাসক কর্তৃক নির্মিত হয়। ৬৪১ সালে জোমেই কোনো উত্তরাধিকারী নিযুক্ত না করেই মারা যান। তার উত্তরসূরি হন তার রানী। তিনি দ্বিতীয় নারী তেন্নো হিসেবে কোগ্যোকু তেন্নো নামে পরিচিত হন (পরে তিনি সাইমেই তেন্নো হিসেবেও শাসন করেন)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে কিছুই বলে না যে কীভাবে এটি ঘটল। এখানে দুইজন সুস্পষ্ট প্রার্থী ছিলেন—ফুরুহিতো এবং নাকা নো ওয়ে। তারা সম্রাটের দুই ভিন্ন স্ত্রী থেকে জন্মগ্রহণ করেন। নাকা নো ওয়ে ছিলেন রানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। কিন্তু তখন তার বয়স মাত্র ১৬ (জাপানি হিসেবে; আমাদের হিসাবে ১৫)—এমন একজনকে সিংহাসনে বসানো তখনও প্রচলিত ছিল না। তাই একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি উদ্দেশ্য ছিল তার পুত্র নাকা নো ওয়ের জন্য ভবিষ্যতে সিংহাসন সংরক্ষণ করা। ফুরুহিতোর অবস্থান ছিল নিচু। কিন্তু বয়স নিশ্চিতভাবেই বেশি ছিল। কয়েক বছর পর নাকা নো ওয়ে ফুরুহিতোর এক কন্যাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স অবশ্যই ২০-এর বেশি ছিল। অন্যদিকে, ইয়ামাশিরো নো ওয়ে-কে ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন প্রার্থীর উপস্থিতি দেখায় যে, কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের পেছনে একটি কারণ ছিল—শীর্ষ অভিজাতদের মধ্যে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। এটি যুক্তিযুক্ত, কারণ সোগা নো এমিশি এমন একজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি সম্মতি ছাড়া কিছু করতেন না। নির্ভরযোগ্য প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। নতুন তেন্নোর বয়স তখন ৪৯ বছর ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগ্যোকুর শাসনকালের বর্ণনা প্রধানত সোগা বংশের পতনের দিকে কেন্দ্রীভূত। জোমেই শাসনকালে সবকিছু সোগা নো এমিশির তত্ত্বাবধানে মসৃণভাবে চলছিল বলে মনে হয়। তিনি বাকি গুরুত্বপূর্ণ দরবারিদের সঙ্গে ভালোই মিশতেন। কিন্তু কোগ্যোকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা তাকে সরিয়ে রেখে কার্যত সোগা বংশের প্রধান হয়ে ওঠেন—এবং এটাই ছিল একেবারে ভিন্ন ঘটনা। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে তিনি একজন অকালপক্ব ও মেধাবী শিশু ছিলেন। তিনি বড় হয়ে ওঠেন একগুঁয়ে, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি অবজ্ঞাশীল ব্যক্তি হিসেবে। তিনি শত্রু তৈরি করতেন এবং এতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হতেন না। এটি খুশি তাই করতেন। প্রথম ঘটনাটি হলো ৬৪২ সালে সোগা নো এমিশি নিজের ও তার পুত্রের জন্য কোফুন নির্মাণের বিবরণ। বলা হয়, তিনি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেন, যেন তিনি দেশের শাসক; এমনকি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের জমির লোকদেরও নিযুক্ত করেন। ইয়ামাশিরো নো ওয়ের বোন প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরের বছর এমিশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ব-উদ্যোগে দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি নিজেই একটি মন্ত্রীর টুপি তৈরি করে তা পুত্র ইরুকাকে দেন এবং ইরুকা ও-ওমি হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরুকা ষড়যন্ত্র শুরু করেন, যাতে ইয়ামাশিরো নো ওয়েকে উত্তরাধিকার থেকে সরিয়ে ফুরুহিতো নো ওয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একটি ফুটনোটে বলা হয়েছে, "অন্য একটি বই" বলেছে যে ইরুকা নিজেই সিংহাসনে বসার কথা চিন্তা করেন। ও-ওমি হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে, ইরুকা ইকারুগা প্রাসাদ আক্রমণের জন্য সৈন্য পাঠান। প্রাসাদ ধ্বংস হয়। তবে ইয়ামাশিরো নো ওয়ে এবং তার পরিবার পাহাড়ে পালিয়ে বাঁচেন। কিন্তু তাদের কোন সম্পদ না থাকায়, শেষে সবাই আত্মহত্যা করেন। সোগা নো এমিশি যখন এটি শুনেন, তিনি ইরুকাকে "মূর্খ" বলে ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, তুমি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের সাথে যা করেছ, অন্যরাও তোমার সাথে তাই করতে পারে। এটি ৬৪৩ সালের শেষদিকে ঘটে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এরপর বলে যে ইরুকার অভ্যুত্থানে নাকাতোমি নো কামাকো নো মুরাজি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং নিজ দায়িত্বে রাজবংশের জীবিত রাজপুত্রদের মধ্যে একজনকে সমর্থনের জন্য ঐক্য গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য যে ৬৪১ সালে কোগুরিয়োতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে স্বৈরশাসক অধিকাংশ অভিজাতকে হত্যা করেন। জাপানি অভিজাতদের এই ঘটনার বিষয়ে না জানার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি ইরুকার বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। নাকাতোমি সন্দেহ করেন যে রাজকুমার নাকা নো ওয়ে একজন ভালো নেতা হতে পারেন। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচিত না থাকায় একটি ফুটবল খেলার সময় তার সাথে পরিচয় ঘটান এবং দ্রুত তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যাতে তারা নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং সন্দেহ না জাগে, তারা উভয়ে কনফুসিয়ান দর্শন ও চীনা ভাষার পাঠে ভর্তি হন এবং একসাথে যাতায়াত করতেন। তাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল ইরুকাকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সোগা বংশের মধ্যেই সহযোগী খোঁজা। এই উদ্দেশ্যে নাকা নো ওয়ে সোগা বংশের একজন কন্যাকে বিয়ে করেন। এই মিত্রতা ছিল সোগা নো কুরোয়ামাদা নো ইশিকাওামারোর সঙ্গে। তিনি সোগা নো এমিশির ভাইপো ছিলেন। তার শাখা রাজপরিবারের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখে এবং তার তিন কন্যা শাসকদের বিয়ে করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইরুকাকে আদালতেই হত্যা করার একটি জটিল পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। যখন সময় আসে, ইরুকার ওপর আক্রমণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন রাজকুমার নাকা নো ওয়ে নিজেই তার তরবারি বের করে ইরুকাকে আঘাত করেন। ঘটনাটি তেন্নো (নাকা নো ওয়ের মা)-র উপস্থিতিতে ঘটে এবং রাজকুমার তাকে বলেন যে ইরুকা রাজবংশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। এরপর ইরুকার মরদেহ সৌজন্য সহকারে এমিশির কাছে পাঠানো হয়। তারা একদিন সময় নিয়েছিল সোগা নো এমিশির ওপর আক্রমণের জন্য সৈন্য জড়ো করতে, যুদ্ধে অংশ নেয় বহু রাজপুত্রের বাহিনী। এমিশি তার পক্ষে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজপুত্রের বাহিনী পৌঁছানোর পর এমিশির অধিকাংশ লোক তাকে পরিত্যাগ করে। নিজের পরিণতি অনুধাবন করে এমিশি ইতিহাসের সেই পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলেন যা সোগা নো উমাকো এবং রাজপুত্র উমায়াদো তৈরি করেন এবং যা তার কাছে ছিল, যদিও একজন লেখক সেই পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ অন্তত উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং তা নাকা নো ওএর কাছে হস্তান্তর করেন। এসব ঘটনার সময় নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন ৩১ বছর বয়সী এবং নাকা নো ওএ ছিলেন ১৯ বছর বয়সী। রাজপুত্র ফুরুহিতো নো ওএ ছিলেন নাকা নো ওএর (সৎ) বড় ভাই। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে, নাকাটোমি নো কামাকো নাকা নো ওএ-কে পরামর্শ দেন যে নিজের বড় ভাইয়ের আগে সিংহাসনে আরোহণ করা অনুচিত হবে। তাই তিনি প্রস্তাব দেন রাজপুত্র কারু। তিনি কোগিওকু তেন্নোর ভাই, তাকে সিংহাসনে বসানো হোক। সেটাই বাস্তবায়িত হয়। তিনি হলেন কোটোকু তেন্নো। কোগিওকু তার পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো সম্রাটের পদত্যাগ। এটি পরে নিয়মিত ঘটনার রূপ পায়। আরেকটি প্রথম ঘটনা হিসেবে, যার পুনরাবৃত্তি পরে বহুবার হয়েছে, রাজপুত্র ফুরুহিতো প্রকাশ্যে উত্তরাধিকার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে একটি প্রত্যন্ত মন্দিরে অবসর নিয়ে। এসমস্ত ঘটনা, রাজপুত্র কারুর আনুষ্ঠানিক সিংহাসনে আরোহণসহ, ঘটে সোগা নো এমিশির মৃত্যুর পরদিন। নতুন শাসন ব্যবস্থা কোনো সময় নষ্ট না করেই জানিয়ে দেয় যে পরিবর্তন আসন্ন। প্রাচীন উপাধি ও-ওমি ও ও-মুরাজি বিলুপ্ত করা হয় এবং তার পরিবর্তে নতুন উপাধি হিদারি নো ওমাচিগিমি এবং মিগি নো ওমাচিগিমি প্রবর্তন করা হয়, যেগুলো ইংরেজিতে সাধারণত চীনা উচ্চারণে সাদাইজিন (বামমন্ত্রী) ও উদাইজিন (ডানমন্ত্রী) নামে পরিচিত, যেখানে বাম মানে সিনিয়র এবং ডান মানে জুনিয়র। আবে নো ওমি নো কুওয়ারামারো প্রথম পদে এবং সোগা নো ওমি নো ইশিকাওয়ামারো দ্বিতীয় পদে নিয়োগ পান। নাকাটোমি নো কামাকো পান অপেক্ষাকৃত ছোট একটি উপাধি – উচিনোওমি বা নাইজিন। এটি পরে নাইদাইজিন নামে পরিচিত হয় এবং নারা যুগে উদাইজিনের পর তৃতীয় অবস্থানে ছিল। নতুন মন্ত্রীদের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাউন রাজকুমারের নিচে রাখা হয়। এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক মর্যাদাক্রম ছিল না। উচিনোওমি উপাধি প্যেকচে সরকারের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" এবং <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এটি বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে নাকাটোমি নো কামাকো প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ পাবেন, পদোন্নতি ও পদাবনতি সহ। তিনি যে অভ্যন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা হলো প্রাসাদের কাজের অভ্যন্তর। "মহামন্ত্রীরা" নীতিগত বিষয়ে মনোনিবেশ করবেন। কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণের পাঁচ দিন পর প্রাসাদের সব কর্মকর্তাদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উপরের পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করা হয়। সম্রাট, অবসরপ্রাপ্ত সম্রাজ্ঞী এবং ক্রাউন রাজকুমার সবাই উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের সম্রাটের ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতার শপথ করানো হয়। এ সময়ই তাইকা শাসনামলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত ধারাবাহিকভাবে রাজাদেশ জারি হতে থাকে, যেগুলো শুধু প্রাসাদ নয়, পুরো দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এই সময় থেকে শতকের শেষ পর্যন্ত ঘটা প্রায় প্রতিটি ঘটনার ওপরই গবেষকদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু লিখেছি, যেগুলো <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র উপর ভিত্তি করে, তা সম্পূর্ণ ভুল। বিশেষভাবে, কিছু দাবি করা হয় যে ইরুকার হত্যাকাণ্ড এবং কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ছিল না, বরং নাকা নো ওএ ছিলেন প্রচলিত "সিনিয়র রাজকুমার" মাত্র, যাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক সংবিধান অনুসারে থাকা প্রয়োজন ছিল। নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন মধ্যম স্তরের এক কর্মকর্তা যার কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। পুরো তার বিদ্রোহে ভূমিকা রাখার কাহিনী সাজানো হয়েছিল, কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় তার বংশধরেরা ক্ষমতাশালী ছিল। কোনো "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" পদ ছিল না। তাইকা শাসনামল ছিল না, এমনকি কোনো সংস্কার রাজাদেশও জারি হয়নি। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ অবশ্য তুলনামূলকভাবে মাঝামাঝি অবস্থান নেন। কিন্তু খুব কমই আছেন যারা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র সবকিছু যাচাই-বাছাই ছাড়া মেনে নেন। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> দাবি করে যে আমরা এখন যে শাসন ব্যবস্থা দেখছি, সেটির উৎপত্তি এই সময়েই ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রচারমূলক রচনা। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে কিছু পরিপূরক প্রমাণও রয়েছে—অষ্টম শতকের অন্যান্য কিছু বই যেগুলো সরকারি কমিটির মাধ্যমে লেখা হয়নি এবং এমনকি অল্প সংখ্যক প্রকৃত সরকারি নথিপত্রও আছে, যেমন কর বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের চিহ্ন। স্থানীয় প্রশাসনের জন্য প্রদেশ/জেলা পদ্ধতির সূচনার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অন্যান্য বইতেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ এত বেশি যে এসব কিছু পুরোপুরি বানানো বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। লেখকরা বইটি প্রকাশের মাত্র ৭৫ বছর আগের ঘটনা লিখেছেন। তাদের পিতামহ বা পিতারা এসব ঘটনার অংশ ছিলেন এবং পাঠকদেরও পূর্বপুরুষেরা তাতে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে, পঞ্চম শতকের বিষয়ে লেখার তুলনায় এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জনের সুযোগ অনেক কম ছিল। তবে, আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে এই বিবরণ নিছক নিরপেক্ষ নয়। নতুন সরকার প্রথম যে বিষয়টির মুখোমুখি হয় তা হলো কোরিয়ার তিনটি রাজ্য থেকে একযোগে দূতাবলীর আগমন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> তেমন স্পষ্ট নয় ঘটনাগুলো সম্পর্কে। তবে জাপানি পক্ষ প্যেকচের উপস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, যেখানে তারা মিনামা-কে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তোলে। অনুমান করা হয়, এটি এসেছে ৬৪২ সালে প্যেকচে ও কোগুরিয়োর মধ্যে একটি মৈত্রী গঠিত হওয়ার পরে। এটি সিলার উপর বড় পরাজয় আরোপ করে, সম্ভবত মিনামা কিংবা তার একটি অংশ দখল করে। আট মাস পর আবার দূতাবলী আসে এবং মিনামা নিয়ে নতুন বিবাদ শুরু হয়। তখন মনে হয় নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এমন এক অর্থহীন বিষয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বোকামি। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত তাকামুনে নো কুরামারো। তিনি চীন থেকে ৩০ বছর পর ফিরে আসেন। তাকে সিলায় পাঠানো হয় এবং তিনি বিষয়টির অবসান ঘটান। মিনামা কূটনৈতিক সত্তা হিসেবে অস্তিত্ব হারায় এবং জাপান অঞ্চলটির ওপর সব দাবি পরিত্যাগ করে। এটি একটি সাধারণ বাস্তবতা যে চীনের ক্রমাগত চাপে কোরিয়া তখন নিজেই নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছিল। ৬৪৪ সালে কোগুরিয়ো মাঞ্চুরিয়ায় লিয়াও নদী সীমান্তে চীনের একটি বিশাল হামলা প্রতিহত করে এবং আরও সংঘাত সামনে অপেক্ষা করছিল। জাপানিরা তখন যা ঘটছিল তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল। এটি জাপানকে আত্মরক্ষা উপযোগী করতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ তৈরি করেছিল। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই দুই সিনিয়র মন্ত্রীকে আদেশ দেওয়া হয় যে তারা "মায়েতসুকিমি" এবং "তোমো নো মিয়াতসুকো"দের থেকে মতামত নেবেন কীভাবে শ্রম কর নির্ধারণ করা যায় যাতে জনগণের আপত্তি না থাকে। মায়েতসুকিমি চীনা অক্ষর দ্বারা বোঝানো হয়। এটি চীনে প্রশাসনের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ করে। এখানে ধারণা করা হয় এটি ওমি ও মুরাজি অভিজাত গোত্রের জন্য একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হয়তো টুপি মর্যাদা ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের নির্দেশ করে। এটি আনুমানিক ১০ জন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী গোত্র প্রধানদের কমিটি সাধারণত ১০ জনের আশেপাশে থাকত, পারকিনসনের সীমা অনুযায়ী – ১২ জনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট কোনো কমিটি কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। "তোমো নো মিয়াতসুকো" ছিলেন স্থানীয় কর্মকর্তা, যারা সামরিক ও গণপূর্ত কাজের জন্য পুরুষদের নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন। আমি এখনো করব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলিনি, কারণ প্রাচীন সময়ের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে এ সময়ের সব এশীয় সমাজ, চীনসহ, তিন ধরনের করের ওপর নির্ভর করত—কৃষকদের কাছ থেকে ধান/শস্য, কৃষক নন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বস্ত্র)। জনসাধারণের কাজে শ্রম। আমরা অনুমান করি, এই প্রাচীন সময়ে ব্যবস্থাটি নারা যুগের মত এতটা সুবিন্যস্ত ছিল না। তবে কিছু না কিছু থাকতেই হতো। না হলে কোফুন (সমাধিস্তূপ) তৈরি হতো না। "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রাই এসব কাজের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করতেন এবং সম্ভবত তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করতেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে পরবর্তী ঘটনাবলি বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো আমরা জানি এই ঘটনাগুলো কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। আমাদের কাছে নারা যুগের শুরুর সময়ের সরকার কেমন ছিল তার অনেক তথ্য আছে, এমনকি কিছু আদমশুমারি রেজিস্টার ও কর নথিপত্রও আছে, যেগুলো দেখায় যে কিছু এলাকায় বাস্তবে সরকার কীভাবে কাজ করেছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>, যদিও প্রায় একমাত্র উৎস, আমাদের অনেক রাজাদেশের বিবরণ দেয়। তবে বলে খুব কমই যে এসব আদেশ কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বা পরবর্তীতে কীভাবে কাজ করেছে। বোঝা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতই একটি পরীক্ষানিরীক্ষার ধারা ছিল, কারণ কিছু আদেশ কোনো ফল দেয়নি এবং দ্রুতই নতুন আদেশে প্রতিস্থাপিত হয়। আমরা এই প্রক্রিয়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করতে পারি, সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত বিষয়। ধাপগুলো হলো ৬৪৫ সালের পরপর সময়কাল, এরপর কোরিয়ায় সঙ্কট যা ৬৬০ সালে তাং সাম্রাজ্যের প্যেকচে দখল ও তার জাপানের উপর প্রভাব। শেষে ৬৭২ সালে নাকা নো ওএর ছোট ভাই রাজপুত্র ওআমা সিংহাসন দখল করেন। অতিরিক্ত বিষয় হলো তথাকথিত "জিনশিন যুদ্ধ" যা ৬৭২ সালে ওআমাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> এটি বিশদভাবে বর্ণনা করে, ফলে আমরা আসুকা যুগের সমাজকে বাস্তবে কার্যকরভাবে কাজ করতে দেখি। আর যুদ্ধটি বই প্রকাশের মাত্র ৪৮ বছর আগের ঘটনা। তাই অনেক অংশগ্রহণকারী তখনো জীবিত ছিলেন। কারণ এই কাহিনী রাজাদেশের ধারাবাহিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, আমরা রাজপুত্র নাকা নো ওএ এবং নাকাটোমি নো কামাকো (পরবর্তীতে কামাতারিতে নামকরণ) – তাদের মধ্যে অনুমিত অংশীদারিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। সম্ভবত তাদের একজন ছিলেন চিন্তার মানুষ আর আরেকজন ছিলেন সেই কাজ বাস্তবায়নের জনশক্তি, কিংবা তারা দুজনেই উভয় ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। আমরা জানি যে রাজবংশ কামাকো-র প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ ছিল, কারণ তারা তার বংশধরদের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে এক অভূতপূর্ব মর্যাদা দিয়েছিল—একটি ঘটনা যা পরবর্তী কয়েক শতকে জাপানের সরকার কাঠামোর বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শুধুমাত্র এই ফুজিওয়ারার ভবিষ্যৎ উত্থানই প্রমাণ করে, আমার মতে, কামাকোর ৬৪৫ সালের ঘটনাবলিতে এবং তার পরবর্তী পরিবর্তনগুলিতে গভীর জড়িততা ছিল। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পর, তারা পাঁচটি প্রধান বিষয়ে নীতিনির্ধারণ করে একাধিক ফরমান জারি করে। প্রথম ফরমানে "পূর্ব প্রদেশসমূহে" গভর্নর নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয় জনসংখ্যার আদমশুমারি করতে, তা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক বা স্থানীয় অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে, তাতে কিছু আসে যায় না। একইসাথে তারা কতখানি জমি চাষ করছে, তাও নথিভুক্ত করতে বলা হয়। গভর্নর হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়, তারা সবাই রাজধানী থেকে আগত প্রভাবশালী অভিজাত। ফরমানে গভর্নরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা ছিল। এরা স্থায়ী গভর্নর ছিলেন না, যেমনটা পরে প্রতিষ্ঠিত হয়, বরং কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে রাজধানীতে ফিরে আসার নির্দেশ ছিল তাদের। তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন অপরাধ তদন্ত বা অন্যান্য বিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বরং জনসংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে রাজধানীতে ফিরে আসে। তবে, এটা স্পষ্ট যে এটি ছিল শুধুই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নিয়মিত প্রাদেশিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। "পূর্ব প্রদেশ" বলতে ফরমানে কী বোঝানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই কর্মকর্তারা প্রকৃতপক্ষে প্রায় এক মাস পর রাজধানী ত্যাগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণায় ইয়ামাতোর ৬টি আগাতায় কর্মকর্তাদের নিয়োগের কথা বলা হয়, যাদের একইভাবে আদমশুমারি ও ভূমি নিবন্ধন করার আদেশ দেওয়া হয়। এই এলাকাগুলো ছিল তাকেচি, কাতসুরাকি, তোচি, শিকি, ইয়ামাবে ও সো — যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে শাসক বংশকে সরাসরি রাজস্ব সরবরাহ করত। ধারণা করা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের বিবরণ নির্ধারণের জন্য এগুলো পরীক্ষামূলক এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তৃতীয় ঘোষণায় প্রাসাদে একটি ডাকবাক্স ও একটি ঘণ্টা স্থাপনের কথা বলা হয়। যাদের কোনো অভিযোগ ছিল, তারা প্রথমে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। কিন্তু যদি তাদের সমস্যা উপেক্ষা করা হতো, তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ ওই বাক্সে ফেলে দিতে পারত। এমনকি তাতেও ফল না হলে তারা ঘণ্টা বাজাতে পারত। একজন কর্মকর্তা এসে তাদের সাথে কথা বলত। এটি ছিল চীনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। চতুর্থ ঘোষণাটি ছিল সন্তানদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত। যদি কোনো সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ই স্বাধীন হতো, তাহলে তাকে পিতার পরিবারের সাথে নথিভুক্ত করা হতো। কিন্তু যদি একজন অস্বাধীন হতো, তাহলে সন্তানকে সেই অস্বাধীন পিতামাতার সাথেই নথিভুক্ত করা হতো — সে পিতা হোক বা মাতা। যদি দুটি ভিন্ন মনিবের অধীন দুই অস্বাধীন ব্যক্তি সন্তান জন্ম দিত, তাহলে সন্তান মায়ের সাথেই থাকত। আমরা এই সময়কার অস্বাধীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব কমই জানি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অসংখ্য শ্রেণির লোক ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে সেবক ছিল যারা দাস ছিল না এবং যাদের বিক্রি করা যেত না, আবার এমন লোক ছিল যারা প্রকৃত দাস হিসেবে বিবেচিত হতো — সম্ভবত যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে থেকেই এসেছে তারা। নারা যুগে অপরাধীদের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাসত্বে দণ্ডিত করা যেত। অপরাধীদের সন্তানরা নিজেদের ইচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে পারত যেন তাদের পিতা-মাতার স্বাধীনতা বজায় থাকে। ঋণের কারণেও কেউ দাসত্বে পড়তে পারত। এই ফরমানের উদ্দেশ্য ছিল কর নির্ধারণের জন্য ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করা। অস্বাধীন ব্যক্তিদের থেকে সরাসরি কর নেওয়া হতো না, বরং তাদের মনিবের উপর সেই কর আরোপ হতো। এই ঘোষণাসমূহের শেষ পদক্ষেপ ছিল বৌদ্ধ মঠগুলোর নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রতিটি মঠে তিনজন কর্মকর্তা সহ একটি আদর্শ অভ্যন্তরীণ প্রশাসন গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন প্রণয়নের তৎপরতার ঠিক পরেই, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> ঘোষণা করে যে রাজকুমার ফুরুহিতো ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিবি নো কাসা নো ওমি শিতারু স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সহ-ষড়যন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করলে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ফুরুহিতোকে হত্যা করার জন্য সৈন্য পাঠানো হয় এবং সফলভাবে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযোগভুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দুইজন ছিলেন সোগা ও আয়া বংশের সদস্য। এই ধরনের ঘটনা পরবর্তী একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায়শই ঘটেছে। কোনটা প্রকৃত ষড়যন্ত্র ছিল আর কোনটা ছিল অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নির্মূল করার অজুহাত — তা বলা কঠিন। আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে উভয় ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। রাজকুমার নাকা নো ওয়ে/তেনচি টেনো-র শাসনামলেও এধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। তার সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কেউ কেউ প্রতিরোধ গঠনের চেষ্টা করেছে — এটা খুব অবাক করার মতো কিছু নয়। কিন্তু একই সাথে এটা ভাবাও যথার্থ যে তিনি জোসেফ স্তালিনের মতো অপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করতেন। বছরের শেষে প্রাসাদ আসুকা থেকে নানিওয়া-তে স্থানান্তর করা হয়। এটি ইনল্যান্ড সি-র তীরে অবস্থিত। ওজিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ওজিন ও তার পুত্র নিন্তোকু তাদের প্রাসাদ নানিওয়া-তে স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর এই প্রথমবার। নতুন বছরের প্রথম দিনেই, নানিওয়া-তে সরকার প্রধান সংস্কার ফরমান জারি করে। এটি জাপানে "নিউ ইয়ার্স ডে এডিক্ট" নামে পরিচিত। এটি ছিল দেশ শাসনের জন্য তাদের পরিকল্পনার সবচেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে তখনকার সব ধরনের জমির মালিকানা বাতিল করে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, সমস্ত জমি ও জনগণ সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জমির আয়ে জীবনযাপন না করে, অভিজাতরা (যারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা হবেন) বেতন পাবেন। এরপর অংশটির বাকি অংশে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে একটি রাজধানী, যার নিজস্ব কাঠামো ও কর্মকর্তা থাকবে, প্রদেশ ও জেলা গঠন করতে হবে, সেইসাথে ছোট ছোট ইউনিট যেমন প্রহরীসহ চৌকি, ডাক স্টেশন ও ঘোড়ার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রথমে এই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলোর মধ্যেই কার্যকর করা হবে। কোন অঞ্চল এতে অন্তর্ভুক্ত তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় অংশে ব্যাপক আদমশুমারি প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল একটি নিয়মিত ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা — যেটি তখন চীন ও কোগুরিয়োতে প্রচলিত ছিল। ফরমানে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে কিভাবে জমি চীনা একক — চো (২.৪৫ একর) ও তান (এক চো-এর দশমাংশ) — অনুযায়ী পরিমাপ করা হবে। পাশাপাশি প্রতি চো জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ধানের গুচ্ছের ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ অংশে তৎকালীন সমস্ত কর ব্যবস্থা বাতিল করে একটি সরলীকৃত করব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। এতে থাকবে ধানে পরিশোধযোগ্য ভূমি কর, নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশমি কাপড়ে নির্ধারিত মাথাপিছু কর (যা সমমূল্যের অন্য স্থানীয় পণ্যে পরিশোধ করা যাবে), ও একটি মানক শ্রম কর — যার মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ সজ্জিত সৈনিক ও ঘোড়া প্রদান, সাধারণ শ্রমিক এবং অভিজাতদের প্রাসাদে কাজ করার জন্য দাসী ও পরিচারিকা পাঠানোর ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে এই শ্রম কর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়। এই পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হয়নি — বরং কয়েক দশকের কঠিন পরিশ্রমের পরই তা বাস্তবায়িত হয়। অনেকের ধারণা, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যেভাবে ফরমানটি উপস্থাপিত হয়েছে, তা আসলে অনেক পরে রচিত হয়েছে — যখন এই সব ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর হয়ে গেছে, ফলে এটি যা সফল হয়েছে তা বর্ণনা করে, আসল উদ্দেশ্য নয়। তবে এটা সরাসরি চীন বা কোগুরিয়োর প্রশাসনিক আইনবিধি থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দেশগুলোতে প্রচলিত ব্যবস্থারই একটি সংস্করণ জাপানে প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি সফল হলে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত মোট সম্পদের অনেক বেশি অংশ সরকারের হাতে আসত। এটি সরকারকে অর্থ ব্যয়ে আরও স্বাধীনতা দিত। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এমনভাবে গঠিত ছিল যাতে অধিকাংশ সম্পদ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। অভিজাতদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন ব্যয় কমে যায়। এর ফলে জাপানের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারত। এটি কোরিয়াকে ঘিরে শুরু হওয়া অস্থিরতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে অনেক গবেষক উদ্বিগ্ন তান (৩০ * ১২ তসুবো বা ১৮০ * ৭২ ফুট জমি) ও চো (১০ তান) এককের সংজ্ঞা এবং এগুলোর জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট করহারের বিষয়ে। এই পরিমাপ পদ্ধতি হুবহু ৫০ বছর পর প্রণীত তাইহো বিধির মতো। এর আগে জমি পরিমাপের জন্য চো, তান ও তসুবো ব্যবহারের আর কোনো উদাহরণ নেই — ৬৮৯ সালের "আসুকা নো কিয়োমিহারা কোড"-এ এগুলো প্রথম দেখা যায়। এর আগে ব্যবহৃত একক ছিল "শিরো"। এটি প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ। এছাড়াও প্রদেশগুলোকে যে জেলাগুলোতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফরমানে বলা হয়েছে, "যদি কোনো জেলায় ৪০টি গ্রাম থাকে তবে তা বড়, যদি ৪-৩০টি গ্রাম থাকে তবে তা মাঝারি, আর ৩টির কম হলে তা ছোট জেলা।" তাইহো বিধিতেও একই ধারা আছে। তবে সেখানে জেলা ৫ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং আকার ভিন্ন। যদিও বিষয়বস্তু ভিন্ন। কিন্তু বিন্যাস ও ভাষা এক। নারা যুগে ব্যবহৃত জেলার সাধারণ শব্দ ছিল "কোরি" (郡)। এটি ফরমানে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীর মূল নথিতে এর কোন ব্যবহার নেই; সেখানে "হিয়ো" (評) ব্যবহৃত হয়েছে। ফরমানে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্যও নারা যুগের পদবী ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর নথিতে আলাদা নাম দেখা যায়। 郡 ও সংশ্লিষ্ট পদগুলো ছিল চীনা প্রভাবাধীন, আর 評 ও তার পদগুলো ছিল কোরিয়ান রাজ্যসমূহ থেকে আগত। এর ফলে ধারণা করা হয় না যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উদ্ধৃত ফরমানটি আসলে আসুকা কিয়োমিহারা বিধিমালার আগে বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্ণনা দেয়; বরং এটি একটি পরবর্তী সংস্করণ। যদি ফরমানের ওই অংশগুলো বৈধ না হয়। তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিত হব যে অন্য অংশগুলো বৈধ? প্রাচীন জমি ধারণের প্রথা বিলুপ্ত করার বিষয়ে প্রথম অনুচ্ছেদটি নিশ্চয়ই নারা যুগের কোনো উৎস থেকে নেওয়া হতে পারে না। চতুর্থ অনুচ্ছেদের যে বিধানগুলিতে এক ধরনের করকে অন্য ধরনের করের সাথে রূপান্তরের জন্য রেশম কাপড়কে মূল্যমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা তাইহো বিধিমালার অংশ নয়, কারণ তাইহো বিধিমালা কোনো করপ্রকারের রূপান্তরের অনুমতি দেয় না। সংরক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র লেখকদের কাছে ফরমানটির পূর্ণ পাঠ্য ছিল না। তাই তারা অনুপস্থিত অংশগুলো পূরণ করেছে। তবে দলিলটির মূল উদ্দেশ্য—বিদ্যমান জমি মালিকানা ও করব্যবস্থা বিলুপ্ত করা এবং চীনা ও কোরিয়ান মডেলের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি ব্যবস্থা স্থাপন—তা সত্য। সবশেষে, এটাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। প্রাচীন জাপানিরা এটি কেই রূপান্তরের সূচনা বলে গণ্য করে। একটি বিতর্কিত বিষয় হলো প্রাথমিক জমি বন্টন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করার কথা ছিল। তাইহো বিধিমালায় পরিবারের প্রতিটি কর্মক্ষম সদস্যের জন্য (বয়স, লিঙ্গ ও অবস্থান অনুসারে) নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির হিসাব রাখা এবং তারপর তা যোগ করে একটি পরিবারের মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করার বিশদ নিয়ম ছিল। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত ফসল কর নির্ধারিত হতো। বিকল্প পদ্ধতি ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি প্রতিটি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া, পরিবারের গঠনের বিস্তারিত বিবেচনা না করেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, "নববর্ষ ফরমান"-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের সঙ্গে কৃষকদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ভেঙে ফেলা এবং অভিজাতদের বেতনভোগী কর্মকর্তায় পরিণত করা। একই সঙ্গে কৃষক পরিবারগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করা হতো অতিরিক্ত হয়ে যেত। বরং বিদ্যমান কৃষি সম্প্রদায় ও তাদের গৃহস্থালিকে ধরে রেখেই নতুন ব্যবস্থাকে অপেক্ষাকৃত সহজ রাখা ছিল বেশি বাস্তবসম্মত। পরবর্তী সময়ে তাইহো বিধিমালার আদমশুমারি ও জমি পুনর্বণ্টন চক্র বাস্তবায়ন এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা এত জটিল ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতেন না। এও ধারণা করা হয় যে ৬৪৬ সালে এই ধরনের ব্যবস্থা একযোগে সারা দেশে প্রয়োগ করা যাবে না, সেটা সবাই বুঝেছিল, বরং ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে—যদিও ফরমানে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এই ফরমানে সাধারণ কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান প্রভাব পড়বে এমন কিছু ছিল না, করহার ব্যতীত। করহার বৃদ্ধি না হ্রাস—তা জানা যায় না। যদি রাজস্বের বড় অংশ রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। তবে পরিবহনের জন্য উল্লেখযোগ্য শ্রম প্রয়োজন হতো। জমি বন্টন ব্যবস্থায় জমি চাষ এবং কর প্রদানের প্রধান দায়িত্ব পরিবার একককে দেওয়া হয়েছিল। এটি বিদ্যমান প্রথার ধারাবাহিকতা ছিল, না নতুন কিছু—তা স্পষ্ট নয়। বিকল্প পদ্ধতি ছিল গ্রামকে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে মূল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু বানানো, যেখানে প্রতিটি গ্রামকে নির্দিষ্ট কর ধার্য করা হতো এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বন্টনের স্বাধীনতা থাকত। যদি কৃষকদের জন্য "বে" ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতো। তবে কোফুন যুগের জাপান হয়তো অনুরূপ কাঠামোর অধীনে ছিল এবং নতুন ব্যবস্থা হতো একটি বড় পরিবর্তন। ৬৪৬ সালের দ্বিতীয় মাসে আরও একটি সাধারণ ফরমান জারি হয় যা দুইটি বিষয় নিয়ে ছিল। এটি জাতীয় অভিযোগ বাক্সের পূর্ববর্তী ঘোষণাকে জোরদার ও সম্প্রসারিত করে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে নামবিহীন পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি ও জানানো হয় যে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আসা কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলা হয়, শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার কারণে যারা রাজধানীতে এসেছিল, তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায়ই বাড়ি ফিরে যেতে পারত না, কারণ কর্মকর্তারা ও অভিজাতরা তাদের অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত রাখত। সরকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয় যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মাসে পূর্ব প্রদেশে পাঠানো কর্মকর্তারা রাজধানীতে ফিরে আসে। একটি ফরমানে ঘোষণা করা হয় যে আটজন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুজন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে একটি বিস্তারিত ফরমান প্রকাশিত হয় যেখানে অভিযুক্তদের নামও উল্লেখ করা হয়। প্রধান সমস্যা ছিল কিছু কর্মকর্তা তাদের অবস্থানের অপব্যবহার করে করের টাকা আত্মসাৎ ও ঘুষ আদায় করেছিল। তাদের সব অর্থ ফেরত দিতে এবং চুরির দ্বিগুণ জরিমানা দিতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগের মাধ্যমেই তাদের অপরাধ প্রকাশ পায়। কিছু স্থানীয় অভিজাত স্বেচ্ছায় ঘুষ প্রদান করেছিল। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেতনার অংশ হিসেবে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এবং, নতুন প্রাসাদ নির্মাণজনিত কারণে জনগণের ওপর সৃষ্টি হওয়া ভোগান্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি সাধারণ ক্ষমাও দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, যারা প্রাসাদ নির্মাণে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত থাকায় অন্য কর প্রদানে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের সেই কর মওকুফ করা হয়। কয়েক দিন পর রাজপুত্র নাকা নো ওয়ে সম্রাটকে একটি পিটিশন দেন যেখানে তিনি অভিজাতদের হাতে থাকা কিছু ঐতিহ্যবাহী জমির মালিকানা বিলুপ্ত করার দাবি জানান এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে থাকা ৫২৪ জন ইম্বে (মূলত শিন্তো মন্দিরের কর্মী) ও ১৬১টি মিয়াকে (বিভিন্ন ধরণের রাজস্ব উৎপাদনকারী ইউনিট) সম্রাটকে ফিরিয়ে দেন। এরপর আরেকটি ফরমান জারি হয়। এটি কোফুন সমাধি নির্মাণ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আচার নিয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আকার ও ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ এবং চাষযোগ্য জমিতে সমাধি না বানানোর নিয়ম চালু করা। পূর্বে বর্ণিত ফরমানটিতেই বলা হয়েছিল যে একটি রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭০০০ শ্রমদিবস খরচ করা যাবে। নিম্নতর শ্রেণির জন্য সেই অনুপাতে সীমা নির্ধারিত হবে। আজকের জাদুঘরগুলোতে থাকা অতিরঞ্জিত কবর উপকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও বিবাহ রীতিনীতি নিয়ন্ত্রণে একটি বিশদ ফরমান, স্থানীয় রীতিনীতি পরিবর্তনে একটি ফরমান—যা দেশের মধ্যে অবাধ চলাচলে বাধা দিত। ব্যক্তিগত জমি বিলুপ্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আরও নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই ফরমানগুলো এবং ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অভিজাত অসন্তুষ্ট ছিল—তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন নেই। কিছু প্রমাণ আছে যে স্থানীয় অভিজাতরা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের সহযোগিতা স্বাগত জানিয়েছিল। ৬৪৪ সালের শরতে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কান্তো অঞ্চলের এক এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থানীয় ব্যক্তি প্রচার করেন যে একটি বিশেষ পোকা (সম্ভবত কোনো শুঁয়োপোকা) এক দেবতার দূত, যাকে উপাসনা করলে পরিশ্রম ছাড়াই সবাই ধন-সম্পদ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে মানুষ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং দল বেঁধে গান গেয়ে ও মদ্যপান করে ঘুরে বেড়াতে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিছু করতে অক্ষম ছিল। রাজধানী থেকে হাতা নো মিয়াতসুকো কাওয়াকাতসু নামে এক কর্মকর্তা এসে প্রচারককে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত সঙ্কটকালে ঘটে। ধারণা করা হয়েছে, এই আন্দোলনটি কোরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের রেশম উৎপাদন প্রতিষ্ঠার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছিল। “রেশমপোকা কোরিয়ানদের ধনী করে তোলে, তাহলে আমাদের শুঁয়োপোকাও হয়তো আমাদের ধনী করবে”—এইরকম ভাবনা হতে পারে। হাতা বংশ রেশম উৎপাদনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। তাই কেউ কেউ অনুমান করেন যে হাতা কাওয়াকাতসুকে পাঠানো হয়েছিল এ খোঁজ নিতে যে, স্থানীয়রা এমন কোনো পোকা পেয়েছে কি না। এটি দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রেশম তৈরি করা সম্ভব। পরবর্তী কোফুনসমূহের সংখ্যা ও পরিসরের পরিবর্তনের ভিত্তিতে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন, গ্রামীণ গোত্র প্রধানরা—কুনি নো মিয়াতসুকো—তাদের আধা-রাজকীয় মর্যাদা ও ক্ষমতা হারিয়েছিল। এটি গ্রামীণ অভিজাতদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে একটি প্রবণতা নির্দেশ করে, যার ফলে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় প্রশাসন কার্যকারিতা হারিয়েছিল। যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভর্নর পাঠানো শুরু করল, তখন তারা কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ করছিল। স্থানীয় অভিজাতদের দমন না করে বরং তাদের অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা হচ্ছিল। তবে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক আয়ের পরিবর্তে সরকার-নিযুক্ত বেতনভোগী হয়ে ওঠা একটি বড় পরিবর্তন ছিল এবং এটি কার্যকর হবে কি না—তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬৪৬ সালের ফরমান ধারায় একটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল যে যেসব অভিজাতদের ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের সবাইকে সরকারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং সরকারি বেতন প্রদান করা হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল, যারা সরকারি পদে নিয়োগ পাবে না, তারা কার্যত সাধারণ নাগরিক বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি সতর্কবার্তা ছিল যে কেউ যদি অবৈধভাবে অভিজাত পরিচয় দাবি করে। তবে তাদের সনাক্ত করে অপসারণ করা হবে। পরিবর্তনের গতি ৬৪৭ সালে ধীর হয়ে গেল। একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল যাতে শাসকদের নামের মধ্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলি শতাধিকারদের ব্যক্তিগত নাম এবং স্থান নামের জন্য ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। চীনে সাধারণত এমন নিয়ম ছিল যে সম্রাটের নাম লেখায় ব্যবহৃত অক্ষর এবং বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে, বিশেষত সেইসব যজ্ঞে যেখানে সম্রাট ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতেন, সেগুলি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত না। মানুষকে বিকল্প অক্ষর খুঁজে বের করতে হতো। এটি মনে হয় জাপানে সেই নিয়ম প্রয়োগ করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রধান পরিবর্তন ছিল ক্যাপ র‍্যাঙ্ক সিস্টেমের সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠন। পূর্বের বারোটি র‍্যাঙ্ককে ছয়টি করে সংকুচিত করা হয়েছিল, নীচে একটি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয় এবং উপরে ছয়টি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয়, ফলে প্রথমবারের মতো শীর্ষ অর্স্তাধিকারীদেরও এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়। তারপর, মাত্র দুই বছর পরে এটি আবার পুনর্গঠিত হয়। সেই ছয়টি সংকুচিত র‍্যাঙ্ক আবার বারোটি হয়ে যায়। শীর্ষ ছয়টি র‍্যাঙ্ক ব্যতীত বাকিগুলোর নাম আবার পরিবর্তিত হয়। কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া বুরোক্র্যাসির জটিলতার কারণে হয়েছে। র‍্যাঙ্কগুলো বেতন নির্ধারণের ভিত্তি হওয়ায়, বেশি র‍্যাঙ্ক মানে আরও বিভিন্ন বেতন স্তর। এই পুনর্গঠনের পর ৬৪৯ সালে শাসনরত বংশের রাজকুমার ছাড়া সকল শতাধিকারী এই সিস্টেমের আওতায় আসেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬৪৮ সালের একটি উল্লেখ আছে যেখানে বলা হয়েছে ৬৪৭ সালের র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রীরা পুরানো ক্যাপ ব্যবহার চালিয়ে গেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু অসন্তোষ ছিল। তাই ৬৪৯ সালে র‍্যাঙ্কের সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধি ও পরিবর্তন একটি প্রতিক্রিয়া ছিল, যাতে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে তাকে তার নিচের কাউকে সঙ্গে একই স্তরে ফেলা হচ্ছে না। আরেকটি পরিবর্তনের লক্ষণ ছিল ৬৪৭ সালে হাজিরা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘণ্টা ব্যবস্থার চালু হওয়া। কর্মকর্তাদের সকাল ৫টার মধ্যে প্রাসাদের বাইরে শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন ধরে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। ৫টায় ঘণ্টা বাজানো হতো এবং অফিসের দরজা খোলা হতো, সবাই ভিতরে ঢুকতে যথেষ্ট সময় পেলে আবার ঘণ্টা বাজিয়ে দরজা বন্ধ করা হতো এবং যারা দেরি করতো তাদের ঢুকতে দেওয়া হত না। সবাই সকাল ৬টার মধ্যে তার ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতে হতো। দুপুর ১২টায় কাজের সময় শেষের ঘণ্টা বাজানো হতো। খুব প্রাচীন একটি রীতির অংশ ছিল যে আদালতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সূর্যোদয়ের আগে বা ঠিক সময়ে করা হতো এবং এই অফিস সময়ের কাঠামো অনেকদিন বজায় ছিল। ১৯ র‍্যাঙ্কের সংশোধিত সিস্টেম ৬৪৯ সালের শুরুতে কার্যকর হয় এবং তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চীনা সিস্টেমভিত্তিক সরকারের বিভাগ, অফিস এবং ব্যুরো গঠন করা হবে। এটি তকমুনে নো কুরামারো এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু বিন দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হবে। এখন পর্যন্ত যা অর্জিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার দেওয়া যাক। এক, সম্রাটকেন্দ্রিক সরকারের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‍্যাঙ্ক সিস্টেম সম্প্রসারণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মানে হল সম্রাট এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করেন, পদোন্নতি দেয়। শতাধিকারীরা তাদের র‍্যাঙ্ক ভিত্তিক মর্যাদায় সংজ্ঞায়িত হবেন। দুই, সরকারের কেন্দ্রীয়করণ নিশ্চিত হয়েছে, প্রদেশগুলো সরাসরি প্রাসাদ থেকে পরিচালিত হবে একটি একক বুরোক্র্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে। তিন, সব জমি এবং তার উপর কাজ করা সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সম্পত্তি হবে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সব বাস্তবায়ন এখনও বাকি। কিন্তু নীতিগুলো স্থাপন করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ নেই। চার, এই নতুন সিস্টেম পরিচালনা করবে একই শতাধিকারীদের দল যারা পূর্বে শীর্ষে ছিল, যমাতো ও কাওয়াচি প্রদেশ থেকে। সরকার কাঠামো ও কার্যকারিতায় বিপ্লব ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর সদস্যত্ব জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে বিপ্লবের আওতায় আনা হচ্ছে না। সবাইকে তার বর্তমান মর্যাদানুযায়ী র‍্যাঙ্ক, পদ ও বেতন দেওয়া হবে। নতুন একটি চীনা রাজবংশ সাধারণত যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করতো। রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সফল সেনাপতি যাঁর শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। তিনি নতুন সরকারের নকশায় স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তাকে এমন কিছু তৈরি করতে হয়েছিল যা কার্যকর হত, নাহলে রাজবংশ দীর্ঘস্থায়ী হত না। সফল রাজবংশগুলো সাধারণত চীনা সরকারের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে কাজ করত। তাই নকশার স্বাধীনতা সীমিত ছিল। এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাই হোক না কেন, দেশের শাসনের সূক্ষ্ম কাজগুলি করতেন ঐতিহ্যবাহী অর্স্তাধিকারীরা। বিকল্প ছিল না। পুরাতন শাসন ব্যবস্থা নতুন নাম দিয়ে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। আসুকা যুগের বাকী সময়ের চ্যালেঞ্জ ছিল তা নিশ্চিত করা যে সেটি হবে না এবং সরকার সত্যিই পরিবর্তিত হবে, কেন্দ্রীভূত ও সংগঠিত হবে যাতে জাতীয় সম্পদের বৃহত্তর অংশ প্রাসাদের হাতে আসে এবং এই দেশকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়িত হলে সরকার সত্যিই দেশের সমৃদ্ধির সম্পূর্ণ অংশ কর ব্যবস্থায় আনবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে তার পুনর্বণ্টন ও ব্যয়। অধিকাংশ বেতন আকারে শতাধিকারীদের কাছে যাবে। তবে বাকিটা জাতি গঠনের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং বেতন ব্যবস্থা শতাধিকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন মন্ত্রণালয় ও র‍্যাঙ্ক সবই ভালো। কিন্তু মূল বিষয় ছিল দেশের কৃষকদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই নতুন সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কফুন রাজনীতি আবার প্রবেশ করল। ৬৪৯ সালের তৃতীয় মাসে সিনিয়র মন্ত্রী আবে নো কুরাহাশিমারো মারা গেলেন। মাত্র সাত দিন পর সোগা নো হিমুকা গোপনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে, বিশেষ করে রাজকুমার নাকা নো ওয়ের হত্যার পরিকল্পনা। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন এটা সত্য নয়। হিমুকা ছিল ইশিকাওয়ামারোর ছোট ভাই এবং নিজেই শীর্ষ মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নাকা নো ওয়ে এই তথ্য কোতোকু তেননোর কাছে পৌঁছে দেন। তিনি ইশিকাওয়ামারোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য官 পাঠান। ইশিকাওয়ামারো মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং সম্রাটের সাক্ষাৎ চান। কোতোকু তা মানেননি এবং সৈন্য পাঠিয়ে তাকে আটকাতে বলেছিলেন। ইশিকাওয়ামারো তার প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যমাতোর যমাদেরাতে গিয়েছিলেন, যেখানে তার বড় ছেলে মন্দির নির্মাণ পরিচালনা করছিল। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী ছেলে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইশিকাওয়ামারো রাজি হননি। তিনি ও তার পরিবার আত্মহত্যা করেন ফাঁস দিয়ে। তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরও অনেককে সরকার পরে ফাঁসি দেয় এবং বহুজনকে নির্বাসিত করা হয়। আরিস্টোক্রেসির সরকার গঠন করা কঠিন কারণ কাউকে সহজে বরখাস্ত করা যায় না। পরবর্তী ২৫০ বছরে আমি কেবল দুটি ক্ষেত্রে দেখেছি কেউ ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই কম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি involved ছিলেন যারা নিজস্ব বাহিনী গড়ার ক্ষমতা রাখত না। তারা হলেন নারা যুগের পুরোহিত দোকিও এবং হেইয়ান যুগের সুগাওয়ারা নো মিচিজানে, যারা উচ্চপদে উঠে পরে সাপোর্ট হারানোর পর পড়ে যান। তখন বা পরে কোনো কারাগার ব্যবস্থা ছিল না। মৃত্যুর কম শাস্তি ছিল নির্বাসন, যেখানে নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করা হত এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বসবাস করতে হত। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বহুজন নির্বাসনে পাঠানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন নির্বাসনের পথে বা ততক্ষণে। নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন অনেক নির্বাসিত পালিয়ে আত্মীয়দের কাছে লুকিয়ে ছিলেন। এটি একধরনের নরম বাড়ি নিরোধ। এই ঘটনার পেছনে নাকা নো ওয়ের ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন না সোগা পরিবারের কেউ সর্বোচ্চ পদে উঠুক। সোগা নো হিমুকাকে কিউশুতে স্থানান্তর করা হয়। এটি পরবর্তীকালে মার্জিত নির্বাসনের একটি রূপ (এটাই হয়েছে সুগাওয়ারা নো মিচিজানের ক্ষেত্রে)। কখনো কখনো অর্স্তাধিকারীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ জটিল হয়। নাকা নো ওয়ের প্রধান স্ত্রী ছিলেন ইশিকাওয়ামারোর মেয়ে এবং জিতো তেননোর মা। তিনি তার বাবার পতনের পর শোকেই মারা গিয়েছিলেন। এর চূড়ান্ত ফলাফল ছিল যে সরকারের শীর্ষে দুইটি পদ শূন্য ছিল। নতুন সদাইজিন হলেন কুসে নো ওমি টোকুতা এবং নতুন উডাইজিন হলেন ওতোমো নো মুরাজি নাকাতোকো। তারা দুজনেই নতুন ব্যবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছিলেন এবং এখন ৫ম শ্রেণীতে পদোন্নত হন। কুসে ৬৪৫ সাল থেকে সরকারের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ওতোমো ছিলেন একটি প্রধান গোত্রের প্রধান। আবে নো কুরাহাশিমারো এবং সোগা নো ইশিকাওয়ামারো নতুন পদবীর ব্যাজ পরতে অস্বীকার করেন এবং পুরানো মন্ত্রীদের টুপি পরতে চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ছিলেন নতুন পদবী ব্যবস্থায় প্রথম মন্ত্রীরা। তাদের নতুন পদবীর মানে ছিল যে নতুন ব্যবস্থার শীর্ষ চারটি পদ তখনই খালি ছিল। পরের বছর, ৬৫০ সালে, শাসনখাতের নাম পরিবর্তিত হয়ে তাইকা থেকে হাকুচি হয়ে যায়। এটা সম্ভবত একটি সংকেত হিসেবে দেওয়া হয়েছিল যে প্রধান সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন নতুন ব্যবস্থার সংহতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। নামটি এসেছে একটি সাদা ময়ুর দেখার ও ধরা পড়ার প্রতিবেদনের থেকে। এটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই পরিবর্তনের সাথে যথেষ্ট ভোজ ও আয়োজন ছিল। যে প্রদেশ (হোন্সু দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে) পাখিটি উপহার দিয়েছিল তাকে তিন বছর করমুক্ত রাখা হয় এবং ওই প্রদেশে ময়ুর শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। 'নিহন শোকি' থেকে বিচার করলে দেখা যায় শাসক হওয়ার সঙ্গে সবসময়ই প্রচুর আনুষ্ঠানিকতা জড়িত ছিল। কিন্তু তা বেশির ভাগ সময়ে গোপনে অনুষ্ঠিত হত। এখন আমরা দেখতে পাই সরকার প্রায়ই সকল কর্মকর্তাদের বৃহৎ আনুষ্ঠানিকতার জন্য মুক্ত আকাশের নিচে জড়ো করে। এই পর্যায়ে পরিষ্কার নয় সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি পেত কি না। তবে নিশ্চিতভাবে নারা এবং হেইয়ান যুগে রাজ পরিবার সংক্রান্ত অনেক অনুষ্ঠান এমনভাবে অনুষ্ঠিত হত যাতে মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা দেখার সুযোগ পেত। এটা সরকারের এবং সম্রাটের জাতির জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবার অংশ। ৬৫১ সালে সরকার ওকোরিতে ছয় বছর অবস্থানের পর নানিভাতে নতুন একটি প্রাসাদে চলে যায়, যার নাম নাগারা নো টয়োসাকি প্রাসাদ। 'নিহন শোকি' অনুযায়ী এই প্রাসাদের নির্মাণে অনেক কফুন ধ্বংস হয় এবং অনেক কৃষক স্থানান্তরিত হন, যাদের সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এটি একটি বড় নির্মাণ প্রকল্প ছিল। সরকার প্রবেশের পরও কাজ চলতে থাকে এবং এক বছর ছয় মাস পরে সম্পূর্ণ হয়। 'নিহন শোকি' বলেছে যে এটি দেশের পূর্ববর্তী যেকোনো নির্মাণের চেয়েও ভাস্বর ছিল। প্রাসাদের অবস্থান আবিষ্কৃত ও পুরাতাত্ত্বিকভাবে খনন করা হয়েছে। এটি ওসাকা ক্যাসল এর সাইটের ঠিক পাশেই, আধুনিক ওসাকার সেই এলাকায় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচ্চতর। ৬৫১ সালে সিল্লা থেকে পাঠানো দূতরা কিউশুতে তাং রাজবংশের চীনা পোশাক পরেছিলেন। এটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান পোশাক থেকে আলাদা। এ কারণে সরকার অনুমান করেছিল সিল্লা জাপানের সঙ্গে পরামর্শ না করেই চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং দূতাবাস প্রত্যাখ্যাত হয়। সিল্লা ৬৪৯ সালে রাজার প্রাসাদের পোশাক পরিবর্তন করে চীনা শৈলীতে নিয়ে যায়। দুই বছর পর, ৬৫৩ সালে জাপান দুইটি জাহাজ এবং ২৪২ জন নিয়ে চীনে দূতাবাস পাঠায়। ৬৫৪ সালে একটি দ্বিতীয় দূতাবাস পাঠানো হয় যার নেতৃত্ব দেন তাকামুনে কুরোমারো এবং আবে নো ওমি মারো। 'ওল্ড টাং হিস্ট্রি' (যেখানে নিউ টাং হিস্ট্রি ও আছে) দ্বিতীয় দূতাবাসের কথা উল্লেখ করেছে। তখন তাকামুনে হয়তো খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং তিনি চীনে মৃত্যুবরণ করেন। ৬৫৩ সালের দূতাবাসের দুটি জাহাজের মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে যায়, ১২১ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন বেঁচে যায়। ৬৫২ সালের প্রথম মাসে 'নিহন শোকি' খুব সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছে যে ওই মাসে জমির পুনর্বন্টন করা হয় এবং একই বছরের চতুর্থ মাসে জনগণনার রেজিস্টার তৈরি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য খুব কম দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি একটু অদ্ভুত, যেখানে বলা হয়েছে "প্রথম মাস থেকে এই মাস পর্যন্ত জমির পুনর্বন্টন সম্পন্ন হয়েছে।" সাধারণত জনগণনা আগে হয় যাতে জানা যায় কতগুলো পরিবার জমি পাবে। তাইহো কোড অনুযায়ী জনগণনা এবং পুনর্বন্টন চক্র ছয় বছর। অনুমান করা হয় যে ৬৪৬ সালে শুরু হওয়া পুনর্বন্টন কার্যক্রমটি শেষ হয়েছে এবং তারপর তিন মাস পর পরবর্তী চক্রের জনগণনা শুরু হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে সম্ভবত এই কাজ ছিল ইয়ামাতো অঞ্চলের ছয় আগাতার এবং সম্ভবত সাম্রাজ্যিক মিয়াকের জমিতে একটি ছোট পরীক্ষা প্রকল্প। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরবর্তী নিশ্চিত জমির পুনর্বন্টন বিবেচনা করে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন না যে তখন জাতীয় স্তরে পুনর্বন্টন হয়েছে। হিতাচি ফুডোকি অনুযায়ী ৬৪৯ সালে কাশিমা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৬৬৩ সালে শিনোডা, নামেকাতা ও ইওয়াকি জেলা তৈরি হয়। মনে হয় সরকার গ্রামীণ প্রশাসনের কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছিল এবং জনগণনা ও পুনর্বন্টন এখনও অনেক দূরে ছিল। ৬৫৩ সালে কোটোকু তেন্নো এবং নাকা নো ওয়ের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়। নাকা নো ওয়ে প্রাসাদকে ইয়ামাতো প্রদেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন এবং সম্রাট তা অস্বীকার করেন। তবুও নাকা নো ওয়ে চলে যান, তার মা — প্রাক্তন কোগোকু তেন্নো এবং বর্তমান সম্রাজ্ঞী (নাকা নো ওয়ের বোন) ও তার সন্তানদের সঙ্গে। কোনো ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট তারিখ নেই, শুধু বছর উল্লেখ আছে। পরবর্তী বছরের ১০ম মাসে সম্রাট অসুস্থ হন এবং সবাই নানিভায় ফিরে আসেন এবং সম্রাটের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয় যে নাকা নো ওয়ে ভেবেছিলেন সম্রাটকে সরকারের কেন্দ্রে আনার প্রচেষ্টা খুব সফল হয়েছে এবং তার নিজের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তাই নতুন ও ব্যয়বহুল নাগারা প্রাসাদে তেমন প্রস্তাব দেওয়া যা সম্রাট নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করবেন। এরপর রাগে সরে গিয়ে ইয়ামাতো চলে যান এবং সবাইকে তাদের আসল ক্ষমতাধারী কে তা ভাবতে বাধ্য করেন। গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ ব্যক্তি তার অনুসরণ করে ইয়ামাতো যান। একটি আধুনিক মতবাদ আছে যে বিরোধের আসল কারণ ছিল নাকা নো ওয়ে তার বোন সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। 'নিহন শোকি' সম্রাজ্ঞীকে পাঠানো সম্রাটের একটি কবিতা উদ্ধৃত করেছে যা এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই তত্ত্ব বলে যে এর জন্যই নাকা নো ওয়ে ২৩ বছর ধরে সিংহাসনে আরোহণ করতে চাননি। সম্রাট হলে তার কোনো গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা থাকত না এবং তিনি গোপনে সম্পর্ক রাখতে পারতেন না। এছাড়াও বলা হয় কোটোকু তেন্নোর মৃত্যুর পর নাকা নো ওয়ে প্রকাশ্যভাবে তার বোনকে স্ত্রী হিসেবে দেখতেন। এমন কিছু বিবাহকে আমরা অজাচার দাম্পত্য মনে করলেও রাজবংশে এসব সাধারণ ছিল। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। যদি এই বিবাহ সত্যি হয়, তা নিয়ম ভঙ্গ করত। পূর্বে এমন উদাহরণ আছ। মানুষেরা মনে করত নাকা নো ওয়ে ঐ সম্পর্ক চলাকালীন রীতিগতভাবে দুষিত ছিলেন। তাই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেননি। তিনি তখনই (৬৬৮ সালে) সম্রাট হন যখন তার বোন মারা যান। কোটোকু তেন্নোর একমাত্র পুত্র ছিলেন রাজকুমার আরিমা। কোটোকুর মৃত্যুকালে তিনি ১৫ বছর বয়সী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। পরিবর্তে তার মা দ্বিতীয়বার সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবার সাইমেই তেন্নো নামে পরিচিত। 'নিহন শোকি' এতে কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। এতে একটি বড় ঝুঁকি ছিল যে নিজের সিংহাসন গ্রহণ না করায় ভবিষ্যতে রাজকুমার আরিমা সিংহাসন পেতে পারে। এই কথাটি সমর্থন করে ধারণাটি যে ব্যক্তিগত জীবনের কারণে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করতে পারেননি। মৃত সম্রাটের দেহ তার মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পরে দাফন করা হয় এবং একই দিন রাজসভা ইয়ামাটোতে চলে যায়, আসুকায় ইটাবুকি প্রাসাদে অবস্থান নেয়। এই প্রাসাদে সাইমেই বাস করতেন যখন সোগা নো ইরুকার হত্যাকাণ্ড হয় এবং তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সাইমেই তখন প্রায় ৬২ বছর বয়সী ছিলেন। প্রায় এই সময়েই নাকা নো ওয়ের ছোট ভাই রাজকুমার ওয়ামা ২৫ বছর বয়সে রাজকাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন। নাকা নো ওয়ের পুত্র রাজকুমার ওতোমো তখন ৮ বছর এবং তার কন্যা উনো নো সরারা। তিনি পরবর্তীতে ওয়ামা ও জিতো তেন্নোর সম্রাজ্ঞী হন, ছিলেন ১১ বছর বয়সী। ইটাবুকি প্রাসাদ একটি অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে পরিকল্পিত ছিল, যেখানে নতুন একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হচ্ছিল যা নানিওয়ার প্রাসাদের চেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ হবে। ৬৫৫ সালের শেষে ইটাবুকি প্রাসাদ আগুনে পুড়ে যায় এবং তারা ইয়াহারা প্রাসাদে চলে যায়। রাজসভা তখন একাধিক বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে। <nowiki>''নিহন শোকি'' এই কাজগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় ও বিলাসিতার বিষয়ে জনসাধারণের অভিযোগ উল্লেখ করে। ''নিহন শোকি'' অনুসারে, ৬৫৭ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার আরিমা বিদ্রোহের প্রস্তুতি শুরু করেন। বলা হয়, তিনি সাইমেই তেন্নোকে একটি নির্দিষ্ট গরম জলের উৎসের উপকারিতা প্রশংসা করে রাজধনি ছাড়িয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন, যাতে তিনি তার অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা দখল করতে পারেন। প্রায় এক বছর পরে সম্রাজ্ঞী গরম জলের উৎসে যান। তখন আসুকায় সোগা নো ওমি নো আকায় দায়িত্বে ছিলেন। আকায় রাজকুমার আরিমার কাছে সাইমেই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে যান। প্রথমটি ছিল যে সরকার জনগণ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করছে, দ্বিতীয়টি ছিল যে কাজের জন্য অনেক মানুষকে খাল খননে বাধ্য করা হচ্ছে। তৃতীয়টি ছিল যে তিনি পাহাড়ের উপরে একটি ফুল দেখার মঞ্চ নির্মাণে সম্পদ অপচয় করছেন। তারা আটায়ের বাড়িতে গোপনে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু কথোপকথনের সময় হঠাৎ একটি হাতার ভেঙে যাওয়াকে তারা একটি অশুভ সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে পরিকল্পনা ভেঙে যায়। আটায়ে সঙ্গে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে রাজকুমার আরিমার প্রাসাদ ঘেরাও করেন এবং বার্তা পাঠিয়ে জানান যে রাজকুমার আরিমা রাজদ্রোহের পরিকল্পনা করছেন। ''নিহন শোকি''</nowiki> একটি অন্য বই থেকে উদ্ধৃত করে যেটি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার আলোচনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়, যেখানে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী রাজকুমার আরিমাকে সফল অভ্যুত্থান চালানোর জন্য অযোগ্য মনে করেন। শেষপর্যন্ত রাজকুমার আরিমা ও দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং আরও দুই জনকে নির্বাসিত করা হয়। সোগা নো আটায়ে ছিলেন নাকা নো ওয়ের গভীর বিশ্বাসভাজন। তিনি রাজপরিবারের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তার মেয়েকে নাকা নো ওয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি নাকা নো ওয়ের আদেশে রাজকুমার আরিমাকে ফাঁসিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে ক্ষমতার জন্য কাউকেই হুমকি হিসেবে দেখতেন। রাজকুমার আরিমা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "স্বর্গ ও আকায় জানেন যা ঘটেছে, আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ।" এই কাহিনী বেশ কয়েকটি কবিতায় উল্লেখ আছে, যার মধ্যে দুইটি তার মৃত্যুর আগের এবং রাজকুমার আরিমার প্রতি অভিজাতদের মধ্যে সমবেদনা প্রতিফলিত হয়। ৬৫৮ সালেও পূর্ব সীমানায় সামরিক অভিযান হয়। প্রাচীনকালে পূর্বের বর্বরদের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ছিল 蝦夷। এটি টোকুগাওয়া যুগ থেকে ইজো হিসেবে উচ্চারিত হয়। সেই সময় হোক্কাইডো দ্বীপকেও ইজো বলা হতো। তবে প্রাচীনকালে এটি এমিশি উচ্চারিত হত। এটি সোগা নো এমিশির ব্যক্তিগত নামের সঙ্গেই সম্পর্কিত। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশির বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিযান কিয়েকো তেন্নোর শাসনামলে উল্লেখ আছে। তিনি জিম্মু ও সুজিনের মধ্যকার কাল্পনিক শাসক বলে মনে করা হয়। এই ধরনের অভিযান নিয়ে অনেক কিংবদন্তি আছে। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এদের বিষয়ে খুব বেশি বিশ্বাসী নন। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশি জাতি একবারও নামকরণ করা হয়নি। এটি সম্ভবত প্রাচীন ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত হলেও সরকারী প্রকল্প ছিল না। ৪৭৮ সালের চীনের দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে জাপানি শাসক পূর্বে ৫৫টি এবং পশ্চিমে ৬৬টি বর্বর জাতিকে জয় করেছেন। 毛人 শব্দটি সম্ভবত সোগা নো এমিশির নাম লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি সাধারণ চীনা ভাষায় বর্বরদের অর্থ বহন করে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ শতকের শেষভাগে জাপানের দূরপ্রাচ্যের অনিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠী একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে। ৫৮৯ সালে ওমি নো ওমি মাতসু তোসান্দো পথ দিয়ে এমিশিদের সীমানা পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিছু ঐতিহাসিক এ ঘটনাকে অস্বীকার করলেও বেশিরভাগই সত্য মনে করেন। ৬৪২ সালে "কয়েক হাজার" এমিশি হোকুরিকুডো অঞ্চলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে, যাদের নেতাদের সোগা নো এমিশির ভাণ্ডারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ৬৪৫ সালে কূটনীতিক পরিবর্তনের পর পূর্বাঞ্চল পরিদর্শনে বিশেষ গভর্নর পাঠানো হয় এবং ৬৪৭ সালে নুতারি নামে কাঠের ঘেরযুক্ত দুর্গ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী বছর আরও একটি দুর্গ ইওয়াফুনে নির্মিত হয়। তারপর অভ্যন্তরীণ এলাকা থেকে মানুষ স্থানান্তরিত করা হয় দুর্গগুলোর খাদ্য ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য। নুতারি দুর্গের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে নীইগাতার একটি এলাকা এই নামে পরিচিত। ইওয়াফুনেও একটি আধুনিক নাম। এটি নীইগাতা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বছরগুলোর আলোচনায় এমিশি আসলে আয়নু কিনা বা তারা জাতিগতভাবে জাপানি হলেও ইয়ামাটো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত ধারণা ছিল তারা আয়নু, কারণ 蝦夷 শব্দটি আয়নু বোঝাতো। তারপর জানা গেল জাপানি জাতি ইয়ায়ই সংস্কৃতির সঙ্গে দেশে এসেছে, আর জোমোন সংস্কৃতি অন্য জাতির ছিল, যার অবশিষ্ট আয়নু হতে পারে। আয়নুদের দেহে তুলনামূলক বেশি শরীরের লোম থাকার জন্য 毛人 শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তবে সন্দেহ বাড়তে শুরু করে। এজো শব্দ আয়নু বোঝালে ও ইমিশি শব্দের একই অর্থ হওয়ার প্রমাণ নেই। চীনা অক্ষরের বহুবিধ ব্যবহার জাপানি ভাষায় স্বাভাবিক। তাই ইমিশি জনজাতি বোঝায় না বলে ধারণা বেশি প্রবল। জোমোন কঙ্কালের মনুষ্যবিজ্ঞানের গবেষণায় আয়নুদের সাথে তাদের মিল পাওয়া যায়নি। এমিশি হয়তো জোমোন বংশোদ্ভূত হলেও আয়নু নাও হতে পারে। তবে তারা বর্তমান আয়নু জনগোষ্ঠীর একাংশ হতে পারে এবং সাইবেরিয়া থেকে লোকেদের বিভিন্ন ঢল হোক্কাইডোতে এসেছে এটাও পাওয়া গেছে। 毛人 শব্দটি সম্ভবত প্রাকৃতিক লোমযুক্ত লোকদের জন্য নয় বরং পশম পরিধানকারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই এটি বিতর্কে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়। কোফুন যুগের খননায় এমিশিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে অনেক কফুন পাওয়া গেছে। কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও নেই যে সংঘর্ষের সময়কালে এই অঞ্চলে কোনো স্বতন্ত্র জাতির উপস্থিতি ছিল। মুৎসু ফুজিওয়ারা পরিবারের চার ধারাবাহিক প্রজন্মের মমি হিরাইসুমির চুসোনজি-তে সংরক্ষিত আছে, যেগুলি ১৯৫১ সালে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা গিয়েছিল যে তারা আইনু নয়, বরং জাপানিদের মতোই। এই পরিবারকে ব্যাপকভাবে ইমিশি বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আইনু ও জোমন জনসংখ্যার মধ্যে কোনো সত্যিকারের সংযোগ নেই কারণ তাদের মধ্যে কোনো ধারাবাহিক সম্পর্ক পাওয়া যায় না। হক্কাইডোতে প্রথম নিশ্চিত আইনু জীবাশ্ম অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। তবে এ থেকে ইমিশিরা জোমন বংশধর ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন মিটে যায় না। এখানে দেখা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন যে ইয়ায়োই ধানের চাষের সংস্কৃতি উত্তরপূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অভিবাসীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল এবং অনেক জোমন মানুষ নতুন জীবনযাত্রায় "রূপান্তরিত" হয়েছিল। ইয়ায়োই ধানের চাষের সর্বোত্তর সীমা "ইমিশি" অঞ্চলের ভিতরে ছিল এবং একই কথা কোফুন যুগের জীবাশ্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্য তত্ত্বগুলোর সমর্থকরা এখনও আছেন। তবে আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন ইমিশি হওয়ার মূল কারণ ছিল তারা ইয়ামাটো রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে ছিল, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিকভাবে পূর্ববর্তী "জাপানি" থেকে খুব ভিন্ন ছিল না যারা সীমান্তের অন্য পাশে বাস করত। আমি লক্ষ্য করেছি যে কখনোই কারও দ্বারা "ইমিশি ভাষা" শেখার চেষ্টা করার উল্লেখ নেই, অথচ সিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে "সিলা ভাষা" শেখার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ আছে। আমার প্রশ্ন, যার কোনও উত্তর আমি কখনো দেখিনি, তা হলো কেন সোঘা নো ইমিশির নামটা হল? বিশেষ করে ৬৪২ সালে যখন ইমিশিদের একটি দল দরবারে আসলো, তখন তাকে তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অবশ্যই কোনো সম্পর্ক ছিল। এমন ব্যক্তি যার মর্যাদা এত বড়, তার ইমিশিদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে উল্লেখযোগ্য সময় কাটানো সম্ভব নয়। তবে দেখা যায় ষষ্ঠ শতকে অনেক ইমিশিকে ইয়ামাটো অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং শাসক বংশের সম্পত্তির পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সোঘাদের এই ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা ছিল বলেও মনে হয় এবং এর ফলে তিনি ইমিশিদের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হতে পারতেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক অভিজাত ব্যক্তি যে নাম ব্যবহার করতেন, তা তার শৈশবের নাম ছিল না। আমেরিকান ভারতের মতো, যখন আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হতেন, আপনাকে একটি নতুন নাম দেওয়া হতো। এটি আপনার জন্য বিশেষ মানানসই হতে পারত। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে অনেক অদ্ভুত নাম ছিল, যার মধ্যে ইমিশিও একটি। ৬৫৮ সালের অভিযান আবে নো হিরাউ-এর নেতৃত্বে ছিল এবং এটি ৬৫৯ ও ৬৬০ সালেও পুনরাবৃত্তি হয়। বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর। ধারণা করা হয় <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকগণ বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং আসলে অভিযানের সংখ্যা কম, সম্ভবত দুইটি। সংক্ষিপ্ত সারাংশ হলো, ৬৫৮ সালে আবে ১৮০টি নৌকায় উত্তরে গিয়ে আকিতা ও নুশিরো (সম্ভবত আধুনিক আকিতা ও নোশিরো) পৌঁছান। সেখানে তিনি তিনটি আলাদা ইমিশি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাদের আনুগত্যের শপথ করান, স্থানীয় প্রশাসনের পদে নিযুক্ত করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। পরের বছর ৬৫৯-এ আবার ১৮০ নৌকায় একই স্থানে গিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দেখা করেন, যাদের মধ্যে কেউ তাঁকে রাজধানীর জন্য একটি স্থান বেছে নিতে বলেন এবং তিনি তা করেন। আবারো তিনি পদবী ও প্রশাসনিক দায়িত্ব বন্টন করে ফিরে আসেন। ৬৬০ সালে পরিস্থিতি আলাদা। শুরুতেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> বলে যে তিনি সু-শেন (粛慎) দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। বিবরণে বলা হয়েছে, তিনি উত্তর দিকে একটি অবর্ণিত নদী পর্যন্ত যাত্রা করেন, যেখানে ২০টি সু-শেন জাহাজ থেকে পালাচ্ছিল ১০০০ জন ইমিশিকে। আবে সু-শেনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন, তারপর এমন এক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন যা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকদের বিভ্রান্ত করে তোলে, কিন্তু যেকোনো নৃতত্ত্বের ছাত্রের কাছে স্পষ্ট। শেষে সু-শেনদের একটি দুর্গায় অনুসরণ করে তাদের ধ্বংস করে দেন। এ ব্যাপারে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যেমন স্থানীয় নামগুলো কোথায় ছিল, আসলে তিনটি অভিযান হয়েছিল কি না, ৬৫৯ সালের অভিযানটি ৬৫৮ সালের ভুল পুনরাবৃত্তি কিনা। সু-শেন কারা ছিলেন। ভৌগোলিক বিতর্ক প্রধানত আবে হক্কাইডো পর্যন্ত গিয়েছিলেন কি না তা নিয়েই। ৬৫৮ সালের নোটিশ বলে আবে ১৮০ নৌকায় আকিতা ও নুশিরোতে পৌঁছান। আকিতা নোটারি ও ইওয়াফুনের চেয়ে অনেক উত্তরে। আকিতা নারা যুগে এই অঞ্চলের যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান কেন্দ্র ছিল। নুশিরো সম্ভবত আধুনিক নোশিরো, আকিতার কাছাকাছি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদ্বীপের অন্য পাশে। আকিতায় আবে স্থানীয় ইমিশিদের সঙ্গে মিলিত হন, যারা একত্রিত হয়ে দেবতার নামে দরবারের প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন। আজকের দিনে আকিতা কিল্লার স্থানে একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যাকে কোশিও জিনজা বলা হয়, অর্থাৎ "কোশির দেবতার মন্দির।" আবে ইমিশি নেতাদের সরকারি পদ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেন। তারপর, <nowiki>''নিহন শোকি'' বলে, তিনি ওয়াতারিনোশিমার অন্য একটি ইমিশি দলকে আরিমা বিচে ডেকে পাঠান, যারা তাদেরও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর তাদের দেশে পাঠানো হয়। এরপর আবে দেশে ফিরে আসেন। প্রশ্ন হলো, ওয়াতারিনোশিমা ("যে দ্বীপ পার হয়ে যায়") কোথায় ছিল? অনেকদিন ধরে ধরে নেওয়া হয়েছে যে এটি দক্ষিণ হক্কাইডো। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন আবে এত দূর যেতে পারেননি এবং এটি হয়তো উত্তরের ত্সুগারু উপদ্বীপ। এটি প্রাচীনকালে অনেকটাই দ্বীপের মতো ছিল কারণ এটি শুধুমাত্র নৌকায় যাত্রা করে পৌঁছানো যেত, কারণ এটি হনশু থেকে পর্বতমালার একটি বিস্তীর্ণ বেল্ট দ্বারা পৃথক ছিল। এমনকি তাও হয়তো অনেক দূর, কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকরা ত্সুগারু অঞ্চলকে হক্কাইডোর সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন, হনশুর আরও দক্ষিণের ইমিশিদের তুলনায়। একমাত্র সত্যিকারের ইঙ্গিত হলো ''নিহন শোকি''</nowiki> কোনো অতিরিক্ত যাত্রার কথা বলছে না, শুধু বলছে ওয়াতারিনোশিমার ইমিশিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ৬৬০ সালের অভিযান আরও জটিল। প্রথমত, সু-শেন (粛慎) নামটি প্রাচীন চীনা ইতিহাস থেকে, চৌ রাজবংশ থেকে। চীনারা মাঝে মাঝে এই নাম ব্যবহার করত মাঞ্চুরিয়ার মানুষের জন্য যাদের ইয়িলৌ বলা হত এবং যাদেরকে বিশ্বাস করা হয় জুরচেনদের পূর্বপুরুষ যারা লিয়াও রাজবংশ গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ, তারা এমন এক জনগোষ্ঠী যারা পুয়ো (পূর্বপুরুষের জাপানি ধারণা) এর মতো ছিল এবং একই মাঞ্চুরিয়ান অঞ্চলে বাস করত। তারা কীভাবে হক্কাইডোর চারপাশে নৌকা চালাত তা সহজে বোঝা যায় না। এক মত হলো, জাপানিরা কোনো চীনা গ্রন্থ থেকে নামটি তুলে নিয়েছিল। জাপানি উচ্চারণে এটা মিশিহাসে ছিল, কিন্তু এর কোনো প্রতিপাদ্য নেই। এই সময় জাপান কোগুরোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যাদের নিশ্চয়ই মাঞ্চুরিয়ার সব জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল। হয়তো তারা আমাদের চেয়ে বেশি জানত। অথবা ধারণা করা হয়, প্রাচীন সু-শেন চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছিল এবং এই লোকেরা জাপানের উত্তর-পূর্বে ছিল। তাই সু-শেন নামটি তাদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন এটি ওখোটস্ক জনগণের সঙ্গে মেল খায়, যারা সাইবেরিয়া থেকে হক্কাইডোর অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা সহজেই হনশুর দক্ষিণে অনুসন্ধানকারী দল পাঠিয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এই নিবন্ধে বর্ণিত একটি ধরনের অন্ধ ব্যবসা। এটি বিশ্বব্যাপী বহু স্থানে দেখা যায় যেখানে মানুষ দাসপ্রথার ভয়ে বা ভাষাগত অমিলের কারণে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলে। এক পক্ষ মাটিতে নানা পণ্য ছড়িয়ে রেখে চলে যায়। অন্য পক্ষ এসে তা দেখে তাদের পণ্য দেয়। এভাবে লেনদেন চলে যতক্ষণ দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়। তারপর প্রত্যেক দল তাদের কেনা জিনিস ও অবিক্রিত জিনিস নিয়ে চলে যায় এবং কেউ কারো কাছাকাছি আসেনা। এটি নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকরা বুঝতে পারেননি এটি একটি বাণিজ্য। এরপর বলা হয়েছে আবে তাদের শিবিরে অনুসরণ করে আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এর কোনো কারণ দেওয়া হয়নি। পুরো ঘটনা রহস্যময় এবং সম্ভবত <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র উপস্থাপনার চেয়ে অনেক জটিল ছিল। তবে এটি হনশুর দূর উত্তরে জাপানি সরকারের দীর্ঘমেয়াদী জড়িত হওয়ার সূচনা, যেখানে পরবর্তী ২০০ বছর ধরে একটি "সক্রিয়" সীমান্ত ছিল। == পাইকচের পতন == একই সাথে আবে নো হিরাওয়ের ৬৬০ অভিযানের সাথে সাথে জাপান তাং চীন এবং সিল্লার সম্মিলিত বাহিনীর হাতে পাইকচে ধ্বংসের কবলে পড়ে। এটি এই অঞ্চলে একটি অশান্ত সময়ের সূচনা করেছিল যা শেষ পর্যন্ত সিলার শাসনের অধীনে কোরিয়ার একীকরণের দিকে পরিচালিত করে। পুরানো এবং নতুন তাং রাজবংশীয় ইতিহাস, কোরিয়ান ''সামগুক সাগি'' এবং ''নিহন শোকিতে'' এই ঘটনাগুলির বিশদ বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যথায় অজানা কোরিয়ান উপকরণ থেকে বিস্তৃত উদ্ধৃতি রয়েছে। জাপান পাইকচেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য কোরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল এবং চীন বা সিল্লা বা উভয়ের আক্রমণের ভয়ে দীর্ঘকাল ধরে বাস করেছিল। জাপান দরবারে কমপক্ষে প্রথম নারা যুগে নির্বাসনে থাকা পাইকচের রাজাও বজায় রেখেছিল এবং হেইয়ান যুগের শেষের দিকে এখনও সক্রিয় ছিল 百済王 নামে একটি অভিজাত পরিবার সক্রিয় ছিল "পাইকচের রাজা" পায়েচের জাপানি নামটি রাজার জন্য কোরিয়ান শব্দের সাথে একত্রিত করে কুদারানোকোনিকিশি উচ্চারণ করেন। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ৬৪৯ সালে সিল্লা চীনা শৈলীর সাথে মেলে দরবারে সরকারী পোশাক পরিবর্তন করেন এবং ৬৫০ সালে এটি তাং রাজবংশের রাজত্বের উপাধিগুলি নিজের হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ৬৫৪ সালে কিম মুরিওল সিলার রাজা হন। এর আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিল্লা দূতাবাস নিয়ে জাপান ও চীন সফর করেন। পূর্ববর্তী দুই সিল্লা শাসক রানী ছিলেন। তাই তার অবস্থান সম্ভবত যুবরাজ নাকা নো ওয়ের মতো এতটা ভিন্ন ছিল না। পরিস্থিতি যেভাবে এগিয়েছে তা থেকে এটি যুক্তিসঙ্গতভাবে স্পষ্ট যে চীন এবং সিল্লা উভয়ই শুরু থেকেই তার নিকটতম শত্রু পাইকচে এবং কোগুরিওকে ধ্বংস করতে এবং তারপরে কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণে আবির্ভূত হওয়ার জন্য একে অপরকে ব্যবহার করার আশা করেছিল। পাইকচে এবং কোগুরিও একে অপরের সাথে মিত্রতা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল এবং ৬৫৯ সালে তারা সিল্লার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে যা ২০ টি দুর্গ দখল করে। সিল্লা চীন থেকে সাহায্যের অনুরোধ করেন এবং চীন সাড়া দিয়ে খুশি হয়েছিল। ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মুরিওলের এক পুত্রের সাথে একজন চীনা জেনারেলের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়। তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে সেই সময় চীনে ছিলেন। এই বাহিনীতে ১,৩০,০০০ সৈন্য ছিল এবং সমুদ্রপথে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল "সু-শেন" এর বিরুদ্ধে আবে নো হিরাওয়ের যুদ্ধের ঠিক একই সময়। বিস্মিত হয়ে পাইকচে সেনাবাহিনীর পতন ঘটে। পশ্চিম দিকের উপকূল থেকে অগ্রসর হওয়া চীনারা এবং পূর্ব দিক থেকে আসা একটি সিল্লা সেনাবাহিনী পাইকচে রাজধানীতে একত্রিত হয়েছিল। এটি দ্রুত আত্মসমর্পণ করেছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইকচে ধ্বংস হয়ে গেছে, বা তাই মনে হয়েছিল। রাজা এবং বিপুল সংখ্যক অভিজাতদের বন্দী হিসাবে চীনে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং পাইকচেকে চীনা অঞ্চল হিসাবে সংগঠিত করা হয়েছিল। চীনা সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশ তত্ক্ষণাত ফিরে আসে, প্রাক্তন পাইকচে রাজধানীতে আরও ৮,০০০ সিল্লা সেনার সমর্থনে ১০,০০০ লোকের একটি বাহিনী রেখে যায়। তবে, গ্রামাঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই করা হয়নি এবং চীনা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার শেষ করার আগেই বিদ্রোহী বাহিনী তাত্ক্ষণিকভাবে অনেক জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' এই বিদ্রোহের বিবরণ পয়েন্টগুলিতে কিছুটা বিভ্রান্তিকর। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাথমিক বিদ্রোহী ছিলেন 鬼室福信 নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত কৃষকদের দ্বারা একটি সিল্লা বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করেন এবং তাদের অস্ত্র নিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টতই একজন পাইকচে কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি পাইকচে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছিলেন। প্রায় একই সময়ে পাইকচে থেকে লোকেরা জাপানের দরবারে এসে কী ঘটেছিল তা জানায়। এক মাস পরে 鬼室福信 থেকে দূত এবং আরেকজন নেতৃস্থানীয় বিদ্রোহী কমান্ডার 佘自進 জাপানে এসে সাহায্য চেয়েছিলেন। জাপানি দরবারে একজন পাইকচে রাজপুত্র বাস করছিলেন এবং তারা তাকে রাজা বানানোর এবং পাইকচে পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করেন। এতে নিজেদের সম্পৃক্ত করা স্পষ্টতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কিছু না করাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বছরের শেষে আদালত তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেয় কারণ সাইমেই এবং আদালত নানিওয়ায় চলে যায় এবং পুরো আদালতকে উত্তর কিউশুতে স্থানান্তরিত করার প্রস্তুতি শুরু করে, যেখান থেকে তারা আসন্ন যুদ্ধের নির্দেশ দেবে। নানিওয়ায় পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পরে তারা ৬৬১ সালের প্রথম মাসে কিউশুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিন দিন পরে তারা কিবিতে পৌঁছেছিল, যেখানে এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এই পদক্ষেপটি কতটা বিস্তৃত ছিল কারণ রাজকুমার ওমার স্ত্রী একটি বাচ্চা মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। এই অভিযানের সময় আরও বেশ কয়েকটি রাজকীয় শিশুর জন্ম হয়েছিল। তারা আট দিনের মধ্যে পশ্চিম শিকোকুর আধুনিক মাতসুয়ামা অঞ্চলে পৌঁছেছিল এবং সেখানে কিছুক্ষণের জন্য শিবির স্থাপন করেছিল। দুই মাস পরে তারা কিউশুতে স্থানান্তর সম্পন্ন করে, হাকাটা বেতে পৌঁছে। তারা সেই সময়ে একটি অস্থায়ী প্রাসাদ স্থাপন করেছিল তবে দুই মাস পরে এটি একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬৬১ এর ৭ তম মাসে সাইমেই তেন্নো মারা যান। স্থানীয় ঐতিহ্য তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিল যে অস্থায়ী প্রাসাদের জন্য কাঠ নিকটবর্তী একটি মন্দির ভেঙে প্রাপ্ত হয়েছিল। যুবরাজ নাকা নো ওই সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন এবং সম্রাটের পদ গ্রহণের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেননি। সঠিকভাবে বলতে গেলে তখনএকটি অন্তর্বর্তী ছিল। তবে ৬৬২ সাল থেকে তেনচি তেন্নোর রাজত্বের বছর গণনা শুরু করা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম বিচ্ছিন্নতা ৬৬২ সালের প্রথম মাসে আজুমি নো মুরাজি হিরাউয়ের কমান্ডে কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। তাঁর সাথে ছিলেন পাইকচে রাজপুত্র, ইয়ামাবে নো ওমি মোমো, সাই নো মুরাজি আজিমাসা, হাতা নো মিয়াৎসুকো তাকুতসু এবং ৫,০০০ পুরুষ। তারা পঞ্চম মাসে কোরিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের কাছে ১০০,০০০ তীর এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ সরবরাহ করেছিল। ইতিমধ্যে চীনারা একজন নতুন কমান্ডার নিয়োগ করে এবং সিল্লা পাইকচেতে অতিরিক্ত সৈন্যও প্রেরণ করে। সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোরীয় বিদ্রোহীরা সাবেক রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেয়। ৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ বিদ্রোহীরা পাইকচের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬৬৩ এর গোড়ার দিকে সিল্লা একটি বড় আক্রমণ শুরু করে এবং বিদ্রোহীদের পিছু হটতে হয়েছিল। তবে চতুর্থ মাসে দ্বিতীয় জাপানি সেনাবাহিনী ২৭,০০০ পুরুষ নিয়ে এসেছিল। কমান্ডার ছিলেন কামিতসুকেনু নো কিমি ওয়াকাকো। এই নামের অর্থ তিনি পূর্ব জাপানের কান্টো অঞ্চল এবং কুনিনোমিয়াৎসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাশিহিতো নো ওমি ওফুতা, কোসে নো কামিসাকি নো ওমি ওসা, মিওয়া নো কিমি নেমারো, আবে নো হিকিতা নো ওমি হিরাও এবং ওয়াকে নো ওমি কামায়ে। এই শক্তিবৃদ্ধির সাথে, বিদ্রোহীরা আবার উপরের হাত অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো জাপানিদের কোরিয়ায় মোট ৩২,০০০ পুরুষ ছিল এবং বাহিনীটি স্পষ্টতই রচনায় দেশব্যাপী ছিল। ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত নামগুলি থেকে এটি বলা সম্ভব যে সেখানে কিউশু এবং শিকোকুর প্রায় প্রতিটি প্রদেশ এবং সুদূর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে সৈন্য ছিল। ধারণা করা হয় যে,দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর সাথে আবে নো ওমি হিরাও একই ব্যক্তি যিনি উত্তর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রায় একই সময়ে, পাইকচে বিজয়ের মূল চীনা কমান্ডার ৭,০০০ লোক নিয়ে ফিরে আসেন। ঠিক এই মুহুর্তে কোরিয়ান নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে বিদ্রোহটি প্রায় মারাত্মক আঘাত হানে। পাইকচে রাজকুমার রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাকে হত্যা করেন। ৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ম মাসে চীন ও সিল্লা উভয়ই কোরিয়ান উপকূলে মিলিত হয়ে একসাথে অভিযান চালানোর জন্য বিশাল শক্তিবৃদ্ধি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। একই সময়ে জাপানিরা একটি তৃতীয় বাহিনী প্রেরণ করেছিল যা চীনাদের দ্বারা বেছে নেওয়া ঠিক একই বিন্দুতে উপকূলে অবতরণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। এই পদক্ষেপটি রাজকুমার 豊璋 দ্বারা আক্রমণের সাথে সমন্বয় করার কথা ছিল। জড়িত জাপানি সেনারা একটি নতুন বাহিনী ছিল নাকি কামিতসুকেনু নো কিমি নো ওয়াকাকোর অধীনে ২৭,০০০ থেকে একটি বিচ্ছিন্নতা ছিল তা স্পষ্ট নয়। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে ১০,০০০ পুরুষ ছিল। চীনা ও সিল্লা অভিযাত্রীরা ৬৬৩ সালের ৮ম মাসের ১৭তম দিনে যোগাযোগ করে। চীনা নৌবহরে ১৭০টি জাহাজ ছিল। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে জাপানি বাহিনী ১০ দিন পরে এসে চীনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যা দু'দিন স্থায়ী হয়। জাপানিরা একে হাকুসুকি নো ই বা হাকুসুকি উপসাগরের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে। ''সামগুক সাগি'' অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে যে জাপানিদের "১০০০ জাহাজ ছিল", সম্ভবত এটি অতিরঞ্জিত। জাপানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং মূলত সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে দেখা যাচ্ছে যে জাপানিরা চীনা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য সমস্ত কিছু বাজি ধরেছিল এবং চীনা ডানা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে ঘিরে ফেলেছিল। ওল্ড তাং ইতিহাস বলছে যে চারটি পৃথক লড়াই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৪০০ জাপানি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল এবং তাদের ক্রুরা ডুবে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তির পরে, উপকূলে তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত যুবরাজ সংগ্রাম ত্যাগ করে কোগুরিওতে পালিয়ে যান। জাপানিরা বিপুল সংখ্যক পাইকচে শরণার্থী সহ তাদের অন্যান্য সেনাবাহিনীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। আসলে এখানেই গল্পের শেষ নয়। পরে চীনারা তাদের বেশিরভাগ বাহিনীকে কোগুরিও আক্রমণে স্থানান্তরিত করে এবং পাইকচে তাদের পিছনে আবার বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। এবার সিল্লা বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং চীনের বিরুদ্ধে কোগুরিওতে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের সাথে জোটবদ্ধ হন এবং চীনাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে সফল হন। এরপরে তারা সিল্লার একীভূত রাজ্যের অধীনে এই অঞ্চলের প্রাক্তন পাইকচে শাসক পরিবারের গভর্নর হন। স্বাভাবিকভাবেই, নাকা নো ওকে এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করতে হয়েছিল যে চীনা এবং বা সিল্লা বাহিনী অবিলম্বে বা ভবিষ্যতের কোনও সময়ে জাপান আক্রমণ করবে। তবে এই বিপর্যয় দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেবে কিনা তা নিয়েও তাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়েছে। এটি স্পষ্ট নয়। তবে এটি প্রদর্শিত হয় যে তিনি ৬৬৩ এর শেষের কিছু সময় আগে ইয়ামাতোতে ফিরে আসেন। আক্রমণ থেকে কিউশুর প্রতিরক্ষার জন্য তিনি যা করতে পারেন তা করেন। এই সময়ে তিনি সিংহাসনে আরোহণের বিষয়ে কিছুই করেননি এই বিষয়টি সাধারণত এই প্রস্তাবের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে গ্রহণ করা হয় যে,তিনি তার বোন রাজকুমারেস হাশিহিতোর সাথে অজাচার বিবাহ করেন। ''নিহন শোকির'' একটি বিবরণ রয়েছে যে ইঙ্গিও তেন্নোর মৃত্যুর পরে অভিজাতরা ঠিক একই কারণে তার উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে বসাতে অস্বীকার করেছিল এবং পরিবর্তে তার ছোট ভাইকে বেছে নিয়েছিল। এর অর্থ হলো নাকা নো ও এটি চেষ্টা করার সাহস করেনি। এবার তিনি কেবল সিংহাসন খালি রেখেছিলেন, উপযুক্ত আসন-ওয়ার্মার উপলব্ধ ছিল না। তবে, এটি অবশ্যই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে কেউ তার বিরুদ্ধে যেতে সক্ষম হতে পারে। এই সময়ে তার প্রধান সুবিধা ছিল যে যেহেতু তিনি ইতিমধ্যে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং রাজকুমার আরিমাকে নিষ্পত্তি করেন। তাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প ছিলেন তার নিজের ভাই রাজকুমার ওমা। এই যুগে ভাইয়েরা ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার প্রতিটি চেহারা দিয়েছিলেন। নাকা নো ওই তার দুই মেয়েকে ওমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। তারা হলেন রাজকুমারেস ওটা এবং রাজকুমারেস উনো নো সারারা। উনো নো সারারা ৬৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ বছর বয়সে ৬৫৭ সালে ওমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন (জাপানি গণনা)। ধারণা করা হয়, রাজকুমার ওমার বয়স তখন ২৭ বছর। অবশেষে, ওমা নাকা নো ওয়ের চার কন্যাকে বিয়ে করেন, শেষ দু'জন তিনি সম্রাট হওয়ার পরে। সাম্রাজ্যবাদী/অভিজাত যৌন জীবন সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত নোট রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। জাপানি কবিতার প্রথম সংকলন, ''মানিয়োশু'', একটি রাজকুমারী নুকাতার ৩ টি দীর্ঘ কবিতা এবং ৯ টি সংক্ষিপ্ত কবিতা রয়েছে। এই কবিতাগুলির মধ্যে কয়েকটি স্পষ্ট করে দেয় যে তিনি নাকা নো ও / তেনচি তেন্নোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তিনি ''নিহন শোকির'' তালিকাভুক্ত নন। সম্রাটদের স্ত্রীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া একমাত্র স্ত্রীই রাজপুত্র বা রাজকন্যার জন্ম দিয়েছেন। যে-সম্পর্ক কোনো সন্তান জন্ম দেয় না, সেটাকে প্রকৃত বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হতো না, যে-সম্পর্ক বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত ছিল। রাজকন্যা নুকাতা তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে ''নিহন শোকিতে'' তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এটি প্রথমে তাঁর সম্রাজ্ঞী এবং সমস্ত স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে যারা রাজকন্যা ছিলেন, তারপরে সমস্ত স্ত্রী যারা আভিজাত্যের কন্যা ছিলেন এবং তারপরে এটি রাজকন্যা নুকাতাকে কেবল একজন মহিলা হিসাবে উল্লেখ করে যার সাথে তার একটি সন্তান ছিল। এই শিশু, রাজকুমারেস তোচি, পরে তেনচি তেন্নোর ছেলে রাজকুমার ওটোমোকে বিয়ে করেন। আমাদের মানদণ্ড অনুসারে এই মানুষগুলোর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হিসেবে অত্যন্ত অজাচার। রাজকুমার নাকা নো ওই এবং রাজকুমারেস হাশিহিতো টাবুর মধ্যে একমাত্র যে বিষয়টি (অনুমিত) যোগাযোগ তৈরি করেছিল তা হলো তাদের মা একই ছিলেন। একই পিতার সাথে মানুষের মধ্যে বিবাহ কিন্তু ভিন্ন মায়ের মধ্যে সাধারণ ছিল। লোকেরা রাজকুমারেস নুকাতা এবং তার চক্র সম্পর্কে প্রচুর তথ্য বের করতে সক্ষম হয়েছে, চিত্রিত করে যে অভিজাতদের মধ্যে সাক্ষরতার বিস্তার এবং একটি সাহিত্যিক চরিত্রের বইয়ের উপস্থিতির সাথে সাথে লোকেরা কীভাবে তাদের জীবনযাপন করেছিল সে সম্পর্কে আমাদের জিনিসগুলি জানার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ৬৫৮ সালে সাদাইজিন কোসে নো টোকুটা মারা গিয়েছিলেন এবং প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে,যুবরাজ ওমা উপাধি গ্রহণ না করেই এই পদে কাজ করেন, যেহেতু এই সময় পর্যন্ত কোনও রাজপুত্রের মন্ত্রীর উপাধি গ্রহণের কোনও নজির ছিল না। সম্ভবত এটি ই সাদাইজিনের চেয়ে উচ্চতর একটি নতুন পদ তৈরির কারণ ছিল, যাকে বলা হয় দাজোদাইজিন বা ওমাতসুরিগোতো নো মায়েস্তুকিমি, প্রায়শই অনুবাদ করা হয় "চ্যান্সেলর"। নারা আমলের আগ পর্যন্ত এই পদ খালি না থাকলেও সবসময় একজন রাজপুত্র দ্বারা পূর্ণ থাকত। এটি মূলত "ক্রাউন রাজকুমার" অবস্থানের আমলাতন্ত্রের আমদানি ছিল। তারপরে, ৬৬৪ সালে উদাজিন সোগা নো মুরাজিকো মারা যান এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে সরকারের শীর্ষে রাজকুমার নাকা নো ও ও রাজকুমার ওমা একা ছিলেন। রাজকুমার ওমার নামে জারি করা একাধিক ফরমান স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে বর্তমান সঙ্কটে কিছু সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা এবং উচ্চতর অভিজাতদের সমর্থন বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্য করা দরকার। প্রথমত, ৬৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯ র্যাঙ্ক সিস্টেমটি একটি নতুন সিস্টেম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যার ২৬ গ্রেড ছিল। তাদের তুলনা করলে, এটি স্পষ্ট যে শীর্ষ ছয়টি র্যাঙ্ক একা রেখে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী তেরোটি বিশটিতে প্রসারিত হয়েছিল। মনে হয় যে সমস্ত অভিজাতদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে সরকারী নিয়োগ প্রাপ্ত লোকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে এই পরিবর্তনটি আসলে ৬৭১ সালে করা হয়েছিল। ''নিহন শোকিতে'' সেই বছরের জন্য রাজকুমার ওমা কর্তৃক আদেশিত র্যাঙ্ক সিস্টেমে পরিবর্তনের খুব সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। "তেনচি তেন্নোর রাজত্বের তৃতীয় বছর" বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে বিভ্রান্তির সম্ভাবনার কারণে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়। যদি ৬৬২ থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৬৪ হবে। তবে যদি ৬৬৮ (যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন) থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৭১ হবে। যদি পরিবর্তনটি ৬৭১ এ হত তবে এটি সঙ্কটের সময়ের সাথে যুক্ত হত না। এটা সম্ভব যে সিস্টেমে দুটি সামঞ্জস্য ছিল এবং তারিখগুলির মধ্যে সম্পর্কটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল। ৬৬৪ সালে জারি করা দ্বিতীয় আদেশটি বংশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। উজিনোকামি বা বংশ প্রধানের একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি তৈরি করা হয়েছিল। একটি "মহান বংশের" ক্ষেত্রে প্রধানকে একটি তাচি "দুর্দান্ত তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল এবং একটি "ছোট" বংশের সিএ-তে তাকে একটি কাতানা "ছোট তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল। তোমোনোমিয়াৎসুকো "ইত্যাদি" একটি ঢাল বা একটি ধনুক এবং তীর দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। এই বিভাগগুলি, ধরে নেওয়া হয় যে "ইত্যাদি" কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির জন্য জায়গা দেয়, কেবল অভিজাতদের উপরের অর্ধেককে আচ্ছাদিত করে, তাদের অন্যদের থেকে পৃথক করে। এছাড়াও, "বড় গোষ্ঠী" এবং "ছোট গোষ্ঠী" এর পৃথক স্বীকৃতি প্রথম ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,বংশ কাঠামোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে, নাকা নো ওই অভিজাতদের আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে আমলাতান্ত্রিকীকরণের দ্বারা তাদের বিশেষ মর্যাদা মুছে ফেলা হবে না। এই সময়ে সর্বশেষ যে আইটেমটি প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো "কাকিবে" এবং "ইয়াকাবে" এর স্বীকৃতি। এগুলি বেসরকারী সম্পত্তির বিভাগ ছিল যা ৬৪৬ সালের নববর্ষের দিন ফরমান দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। একটু সামনের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারা আমলের ভূমি পুনঃবণ্টন ব্যবস্থায় আভিজাত্যদের আসলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলি আদমশুমারির রেজিস্টারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং তারা কোনও কর দেয়নি (আসলে খুব নিম্নতম পদমর্যাদার লোকদের কিছু কর দিতে হয়েছিল কারণ কেবল প্রকৃত পদধারীই অব্যাহতি পেয়েছিল, তার পুরো পরিবার নয়)। নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা চালের গাঁট এবং কাপড়ের বোল্ট আকারে বেতন পেতেন। এটি তারা তাদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের জন্য বাণিজ্য করতে পারতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একই ধরনের বেতন পেতেন। তবে দুই ধরণের "পদ জমি"। মাঝারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়োগগুলি শ্রম কর সহ কৃষিজমির একটি ব্লক থেকে সংগৃহীত করের সরাসরি অর্থ প্রদানের পরিমাণ ছিল। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমাণ জমি পেতেন যা তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিচালনা করতেন। উচ্চ পদমর্যাদা বংশানুক্রমিক হওয়ায় তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব জমি আগলে রেখেছিল। কিছু পরিবারকে প্রকৃতপক্ষে সরকারী নিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জমির বৃহত্তম বরাদ্দ রাখার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও পুত্র তার বাবার সমান পদে না পৌঁছালেও সে পারিবারিক পদের জমি রাখতে পারে। এই অনুশীলনগুলির আলোকে, উচ্চতর আভিজাত্যকে সমর্থন করার জন্য জমির নির্দিষ্ট ব্লকগুলি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হবে তা স্বীকৃতি দেওয়া অগত্যা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করা ছিল না। যাইহোক, এই সময়ে এটি ঘোষণা করা অবশ্যই অভিজাতদের আশ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে ছিল যে নতুন সিস্টেমটি তাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি লক্ষ করা গেছে যে এই সময়ে এই জমিগুলির স্বীকৃতি বোঝায় যে এগুলি আসলে ৬৪৬ এর পরে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। নতুন সরকার ব্যবস্থার বিকাশ সম্পাদন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। এ সময় যথেষ্ট পরিমাণে সামরিক তৎপরতাও ছিল। সমস্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক কোরিয়ান ৬৬৩ সালে জাপানে পালিয়ে গিয়েছিল এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসতি স্থাপনের অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে এবং কীভাবে তাদের জাপানি অভিজাতদের মধ্যে ফিট করা যায় তা নির্ধারণের জন্য তাদের মধ্যে অভিজাতদের শ্রেণিবদ্ধ করার প্রচেষ্টাও রয়েছে। কোরিয়ান অভিজাতদের অনেকে যে অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল সেখানে দুর্গ নির্মাণের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল, বিশেষত উত্তর কিউশু এবং দ্বীপপুঞ্জে ইকি এবং সুশিমা কিউশু উপকূলে। সাকামোরি "কোস্টগার্ড" নামে পরিচিত দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে জাপানি সৈন্যদের শ্রম করের অংশ হিসাবে সীমান্তের দুর্গগুলি পরিচালনার জন্য কর্তব্যের মেয়াদে পশ্চিমে যাওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সাকামোরি এবং তাদের পরিবারের বাড়িতে ফেলে আসা পরীক্ষা এবং দুর্দশা সম্পর্কে প্রচুর কবিতা রয়েছে। অন্যান্য সৈন্যদের কিউশু থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রসারিত সিগন্যাল ফায়ারের একটি শৃঙ্খল পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে আক্রমণ ঘটলে সরকারকে দ্রুত অবহিত করা যায়। নারা যুগে সাকামোরিরা সকলেই এমিশি সীমান্তের নিকটবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে এই ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল যে এই লোকদের সকলেরই সামরিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ছিল। সম্ভবত ৬৬৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় পশ্চিমা সেনারা সম্ভবত ফিল্ড আর্মি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ছিল যখন সাকামোরি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি রক্ষা করত। নারা যুগে সিগন্যাল স্টেশনগুলিতে নিযুক্ত পুরুষরা সকলেই স্থানীয় ছিল এবং সম্ভবত এই সময়েও এটি সত্য ছিল। এটাই ছিল প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। দাজাইফু এলাকায় বড় আকারের দুর্গ আকারে একটি দ্বিতীয় লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বহু শতাব্দী ধরে কিউশু প্রতিরক্ষা সদর দফতর হিসাবে কাজ করেছিল। দাজাইফু উপকূল থেকে বেশ দূরে ফুকুওকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত যা রক্ষা করা সহজ। অনেক দুর্গ আজও দৃশ্যমান। নির্মাণগুলির মধ্যে একটি ছিল তথাকথিত "জলের দুর্গ"। এর কেন্দ্রস্থলটি একটি দীর্ঘ মাটির কাজ যা এখনও ১৪ মিটার উঁচু এবং ১ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। এটি স্পষ্টতই কাঠামোগত ছিল যাতে মিকাসা নদী দ্বারা পূর্ণ জলের একটি জলাধার প্রয়োজনে প্রাচীরের ঠিক নীচের অঞ্চলটি প্লাবিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি উপকূল থেকে দাজাইফুর দিকে আসা সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেবে। উত্তর প্রান্তটি প্রায় ৪১০ মিটার উঁচু একটি যথেষ্ট পাহাড়ে পৌঁছেছে যার উপরে ৬৬৫ সালে একটি বড় পাথরের দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। এগুলোর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক শহর দাজাইফু। পাহাড়ের একটি ফাঁক ঢাকতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে আরও একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল, যদিও একটি সেনাবাহিনী মূল প্রতিরক্ষা ফ্ল্যাঙ্ক করার চেষ্টা করতে পারে। এই দুটি দুর্গের গ্যারিসনগুলি কোরিয়ান ছিল। তারা সম্ভবত নির্মাণের নির্দেশনাও দিয়েছিল। এগুলো দেখতে অবিকল সমসাময়িক কোরিয়ান পাহাড়ি দুর্গের মতো। কোরিয়া খুব পর্বতময় এবং সমস্ত কোরিয়ান যুদ্ধ পাহাড়ের দুর্গের চারপাশে ঘোরাফেরা করে বলে মনে হয়। দাজাইফু দুর্গের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। তাই এটি র জন্য একটি বড় গ্যারিসন প্রয়োজন। এটি এত বড় যে দাজাইফুর পুরো জনগোষ্ঠী ভিতরে আশ্রয় নিতে পারে। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে হনশুর পশ্চিম প্রান্তে কোরিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি দুর্গ নির্মিত হয়। এর অবস্থান জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি শিমোনোসেকির কাছাকাছি কোথাও ছিল। এটি সর্বদা সেই অঞ্চলের সামরিক মূল বিন্দু। ৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসের প্রথম দিকে পায়েচে চীনা কমান্ডার জাপানে একটি দূত প্রেরণ করেন। তারা সাত মাস অবস্থান করেন। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি ''নিহন শোকি''। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের নবম মাসে চীন থেকে সরাসরি দ্বিতীয় দূতাবাস আসে এবং প্রথম দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত নিয়ে আসে। স্পষ্টতই চীনারা সিরিয়াস ছিল। যা ঘটেছিল তার উপর ভিত্তি করে একজনকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে চীনাদের প্লেটে অনেক কিছু ছিল (তাদের এখনও কোগুরিওর ধ্বংস সম্পূর্ণ করতে হবে। এটি বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রচুর সমস্যা দিয়েছিল)। সর্বশেষ যে জিনিসটি তারা চেয়েছিল তা হলো জাপানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ। দূতাবাসের আগমনের পরের মাসের জন্য ''নিহন শোকিতে'' একটি নোট রয়েছে যে উজিতে একটি "দুর্দান্ত সামরিক পর্যালোচনা" হয়েছিল, সম্ভবত চীনাদের প্রভাবিত করার জন্য। এই দূতাবাস তিন মাস ছিল। একই বছর জাপান চীনে নিজস্ব দূতাবাস স্থাপন করে। মজার ব্যাপার হলো, রাজকুমার আরিমার ঘটনার অংশ হিসেবে যেসব কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, রাষ্ট্রদূত তাদের একজন। শেষ পর্যন্ত চীন বা সিল্লা কেউই জাপানকে আক্রমণ করেনি (যদিও সিল্লা এমন একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল যা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি), যদিও জাপানিরা কমপক্ষে আরও একশ বছর ধরে পশ্চিমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বজায় রাখার প্রচেষ্টা কখনও শিথিল করেনি। দুর্গগুলি সুশিমাতে, পশ্চিম শিকোকুর সানুকিতে এবং অভ্যন্তরীণ সাগরের পূর্ব প্রান্তে এবং কাওয়াচি এবং ইয়ামাতোর সীমান্তে নানিওয়াতে নির্মিত হয়েছিল। সুশিমার দুর্গটি এখনও টিকে আছে এবং সানুকির দুর্গটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে জেনপেই যুদ্ধের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ৬৬৫ সালে এই প্রচেষ্টার মাঝপথে সম্রাজ্ঞী হাশিহিতো মারা যান। এটি সম্ভবত নাকা নো ওয়ের সিংহাসন গ্রহণের পথ পরিষ্কার করেছিল। তবে তিনি আরও তিন বছর বিলম্ব করতে থাকেন। ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সাইমেই তেন্নো ও সম্রাজ্ঞী হাশিহিতোকে একই সমাধিতে সমাহিত করা হয়। সাইমেইয়ের সমাধি নির্মাণের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও কেন এত সময় লাগল তা বোধগম্য নয়। হাশিহিতোর দেহাবশেষের জন্য থাকার ব্যবস্থা করার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এক মাস পরে, নাকা নো ও তার প্রাসাদটি বিওয়া লেকের ওটসুতে স্থানান্তরিত করেন। এটি পূর্ববর্তী কোনও অবস্থানের পূর্ব দিকে। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে অজনপ্রিয় ছিল এবং এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং ব্যঙ্গাত্মক গান ছিল। কেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরের একটি কবিতায় এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে এবং বোঝানো হয়েছে যে আসল বিরোধিতা ছিল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যারা চরম বর হিসাবে যা ভেবেছিল তার দিকে যেতে হবে। আমি মনে করি এটি বলা ন্যায্য যে হেইয়ানকিও (কিয়োটো) এর চূড়ান্ত পদক্ষেপে ভবিষ্যতের সমস্ত পদক্ষেপ একই রকম বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল, এমন পদক্ষেপগুলি ব্যতীত যা পরীক্ষামূলক অবস্থানগুলির মধ্যে একটিকে পরিত্যাগ করে পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসেছিল যেখানে বিল্ডিংগুলি ইতিমধ্যে ছিল। এতক্ষণে কেবল শাসকের পরিবারই সরে যায়নি, বরং উচ্চ ও নিম্ন পদমর্যাদার বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা, যাদের সকলকেই নতুন আবাসন তৈরি করতে হয়েছিল। কোনও কারণ দেওয়া হয়নি। তবে অনুমান করা হয় যে,দাজাইফু যেমন অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তেমনি নাকা নো ওই সামরিক সুরক্ষার কথা ভাবছিলেন। ওটসু নানিওয়া উপকূলের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পর্বত বাধার পূর্ব দিকে রয়েছে। তবে ইয়ামাতো প্রদেশটিও পর্বতমালা দ্বারা ভালভাবে সুরক্ষিত। ওটসুর এই গুণ রয়েছে যে বিওয়া হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে এর অবস্থান এটি কে হোকুরিকু অঞ্চলের সাথে দুর্দান্ত যোগাযোগ দেয়। তবে এটি সর্বদা পশ্চিমে যোগাযোগের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি তখনআরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আরেকটি তত্ত্ব আছে। এটি পরবর্তীকালের অসংখ্য সত্যায়িত ঘটনার কারণে উপেক্ষা করা যায় না। অর্থাৎ হাশিহিতোর ভূত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন নাকা নো ও। প্রতিহিংসাপরায়ণ ভূত অভিজাতদের মধ্যে একটি প্রধান উদ্বেগ ছিল এবং তারা রাজধানীর অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি মন্দির এবং মন্দিরগুলিতে প্রচুর ক্রিয়াকলাপ করেছিল। আমরা যদি ধরে নিই যে, তাদের অজাচার সম্পর্ক স্থাপনে তিনিই আক্রমণকারী ছিলেন, তা হলে তিনি যেখানে মারা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাওয়ার হয়তো উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে. যাই হোক না কেন, আদালত ওটসুতে ৫ বছরের জন্য স্থগিত ছিল। ৬৬৮ সালে প্রাসাদে ওটসু নাকা নো ও অবশেষে সিংহাসন গ্রহণ করেন। তার সম্রাজ্ঞী ছিলেন ইয়ামাতো নো হিমেমিকো, রাজকুমার ফুরুহিতোর কন্যা, যাকে তিনি হত্যা করেন। তার কোনও সন্তান ছিল না। তবে তার আরও ৮ জন মহিলার সন্তান ছিল, যার মধ্যে চারজন কিসাকি এবং যাদের মধ্যে চারজন অপেক্ষারত মহিলা ছিলেন। তাদের মধ্যে দশটি মেয়ে ও চারটি ছেলে ছিল। তার নির্বাচিত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওটোমোর নিম্ন মর্যাদার মা ছিলেন। তাঁর পিতামহের পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে,তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তেনচির একমাত্র উচ্চ মর্যাদার পুত্র ছিলেন যুবরাজ তাকেরু, যার মা ছিলেন সোগা নো ইশিকাওয়ামারোর কন্যা। যাইহোক, রাজকুমার তাকেরু ৮ বছর বয়সে ৬৫৮ সালে মারা গিয়েছিলেন। রাজকুমার ওমায় তেনচি তেন্নোর একটি শক্তিশালী এবং সম্মানিত ভাই ছিল, ইয়ামাতো রাজ্যের স্বাভাবিক গতিশীলতা প্রায় নিশ্চিত করে তুলেছিল যে ওমা তার উত্তরসূরি হবেন (যদি তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন) নিম্ন মর্যাদার মায়ের সাথে রাজপুত্রের সাথে কোনও প্রতিযোগিতায়। এমন রাজপুত্র এতদিন সিংহাসনে আরোহণ করেননি। অবশ্যই, তেনচি তেন্নো ইয়ামাতো রাজ্যকে একটি নতুন দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছিলেন যা চীনা লাইনে কাজ করেছিল, যেখানে সম্ভব। বিষয়গুলি সম্পর্কে চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ছিল, জ্যেষ্ঠ বৈধ পুত্রই একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী। তেনচি তেন্নো এবং পরবর্তীকালের বেশ কয়েকজন সম্রাট শাসক বংশের জন্য এই নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচণ্ড লড়াই করেন। কিন্তু তা কখনও ঘটেনি। ৬৬৯ সালে তেনচি তেন্নোর দীর্ঘদিনের সহযোগী নাকাতোমি নো কামাতারি ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর অব্যবহিত আগে সম্রাট নাইদাইজিনের নতুন পদ বিশেষভাবে তৈরি করেন যাতে কামাতারিকে পদোন্নতি দেওয়া যায়। তিনি কামাতারির বংশধরদের জন্য নতুন বংশের নাম ফুজিওয়ারা তৈরির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ফরমান প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশকে আচ্ছাদন করে একটি আদমশুমারি সম্পন্ন করার আদেশ দেয়। এটি করার জন্য, গ্রামীণ অভিজাতদের অংশগ্রহণের সাথে জড়িত প্রদেশগুলিতে এক ধরণের আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক অগ্রগতি করা উচিত। এই আদমশুমারির কোনও প্রকৃত রেকর্ড বেঁচে নেই। যাইহোক, আমরা জানি যে পরে, নারা সময়কালে, এই আদমশুমারির নিবন্ধগুলি এখনও বিদ্যমান ছিল এবং তাইহো কোডে নির্দিষ্ট সিস্টেমটি কাজ করার সূচনা পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আমরা আরও জানি যে কিউশুর রেকর্ডগুলি ৭৭০ খণ্ড নিয়েছিল এবং কান্টো অঞ্চলের কোজুকে প্রদেশের রেকর্ডগুলি ৯০ খণ্ড নিয়েছিল। এই সংখ্যাগুলি ৮ ম এবং ৯ ম শতাব্দীতে এই স্থানগুলির পরিচিত জনসংখ্যার সমানুপাতিক। নারাতে শোসোইন কোষাগার প্রকৃত ৮ ম শতাব্দীর রেজিস্টারগুলি সংরক্ষণ করে। এগুলিতে ক্রীতদাস পর্যন্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এটি জমির পরবর্তী বিতরণের পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ৬৭০টি নিবন্ধন তখনপর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়নি। কারণটি হলো পরে যখন জিতো তেন্নো একটি আদমশুমারি পরিচালনা করেন তখন এটি সরাসরি জমির পুনর্বণ্টনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তবে এখানে এটি ঘটেছিল এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। এছাড়াও, যদি আপনার কাছে প্রতিটি ব্যক্তির বিশদ বিবরণ রেজিস্টার থাকে তবে আপনি স্বাভাবিকভাবেই করের বোঝা নির্ধারণে সেগুলি ব্যবহার করবেন। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে,৬৪৬ সালে ডাকা নতুন কর ব্যবস্থা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এই রেজিস্টারগুলি পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনায় ব্যবহার করার জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হত। এটি পুনরায় বিতরণ এবং পুনরায় বিতরণ দ্বারা নিহিত কর ব্যবস্থার বাস্তবায়নের পরে আরও বিশদ আদমশুমারি হত। তেনচি তেন্নোর শেষ বছরগুলিতে প্রায়শই জমা দেওয়া অন্য কৃতিত্বটি ছিল "ওমি রিও" বা ওমি কোডের সৃষ্টি। ওমি সেই প্রদেশ যেখানে ওটসু অবস্থিত। এটি একটি খুব বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ''নিহন শোকি'' বা নবম শতাব্দীর চেয়ে পুরানো কোনও বই বা নথিতে এর উল্লেখ নেই। এটি প্রথম ''কোনিন কিয়াকুশিকির'' মুখবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে প্রকাশিত ধারাবাহিক বইগুলির মধ্যে একটি যা আদেশ, বিচারিক রায় এবং এর মতো অনুলিপি রয়েছে যা প্রশাসনিক আইন কোডগুলির প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করেছিল। ''দাইশোকুকান্দেন'' নামে একটি বই রয়েছে যা অষ্টম শতাব্দীতে ফুজিওয়ারা নো নাকামারো লিখেছিলেন এবং এটি তেনচি তেন্নোর রাজত্বকালের ফরমানগুলির নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা তৈরি একটি সংকলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে করা হয় যা এটি র উল্লেখ করে না। একটি তত্ত্ব উল্লেখ করে যে জিনশিন যুদ্ধের পরে তেম্মু তেন্নোর বংশধররা ১০০ বছর ধরে সিংহাসন ধরে রেখেছিলেন যতক্ষণ না এটি কোনিন তেন্নোর সাথে তেনচি তেন্নোর বংশধরদের লাইনে স্থানান্তরিত হয়। তেম্মু তেন্নোর কৃতিত্বের কৃতিত্ব তার ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এমন অনেকে থাকতে পারেন। যাই হোক না কেন, এর মধ্যে কী ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। তাই এটি আসলে কোনও ব্যাপার নয়। যাইহোক, চীনারা প্রশাসনিক আইনের বিশদ বিবরণ দিয়ে ভলিউম সংকলন করার অভ্যাসে ছিল এবং এটি অনিবার্য ছিল যে কোনও সময়ে জাপানিরাও একই কাজ করার কথা ভাববে। তবে সম্ভবত এখনও পুরোপুরি নয়। == জিনশিন যুদ্ধ == তেনচির রাজত্বের শেষের দিকে উত্তরাধিকার সম্পর্কে সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তেনচির তিন পুত্র জীবিত ছিল, সবচেয়ে বড় ছিল যুবরাজ ওটোমো। তিনি ইতিমধ্যে দাজোদাইজিন নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটি কখন ঘটেছিল তা নিয়ে উত্সগুলিতে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তেনচি যুবরাজ ওটোমোকে তার উত্তরসূরি বানাতে চেয়েছিলেন, যদিও তার মা নিম্ন মর্যাদার (রাজকীয় মান অনুসারে) প্রাসাদ কর্মচারী ছিলেন। এটি দীর্ঘকাল ধরে প্রথা ছিল যে কুনিনোমিয়াতসুকো এবং আগাতানুশি শ্রেণির প্রাদেশিক অভিজাতরা মেয়েদের স্ত্রী এবং রাজকন্যাদের উচ্চ স্তরের চাকর হিসাবে কাজ করার জন্য প্রাসাদে পাঠাতেন। এই প্রথা পরবর্তী শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল। তেনচি তেন্নো আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদগুলি দীর্ঘদিন ধরে খালি রেখেছিলেন। তবে একই সাথে তিনি ওটোমোকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তিনি সোগা নো ওমি আকে সাদাইজিন, নাকাতোমি নো মুরাজি কোগানে উদাইজিনকে তৈরি করেন এবং ওকিমোনোসুসুকাসা, সোগা নো ওমি হাতায়াসু, কুসে নো ওমি হিতো এবং কি নো ওমি উশির পদে তিনজনকে নিয়োগ করেন। এই শেষ পদটি পরবর্তী ব্যবস্থায় টিকে ছিল না তবে মোটামুটিভাবে দাইনাগনের সাথে মিলে যায়, সাধারণত অনুবাদ করা হয় কাউন্সিলর এবং মহান মন্ত্রীদের ঠিক নীচে র্যাঙ্কিং। সম্ভবত, তিনি শীর্ষস্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে রাজকুমার ওটোমোর পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন, যাকে তখনপর্যন্ত হাতের দৈর্ঘ্যে রাখা হয়েছিল। ওটোমোর পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব করার জন্য রাজকুমার ওমাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কারণ তেনচির মৃত্যুর পরে আভিজাত্যরা ওটোমোকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম ছিল। তার কৃতিত্বের জন্য, তেনচি তার ভাইকে হত্যা করতে চায়নি। তিনি মূলত রাজকুমার ফুরুহিতোকে নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি সংস্করণ নিয়ে আসেন। সম্রাট প্রকাশ্যে যুবরাজ ওমাকে উত্তরাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে সিংহাসনে সফল হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই, সম্রাজ্ঞী ইয়ামাতোহিমকে তেন্নো হওয়ার এবং বিষয়গুলির পরিচালনা রাজকুমার ওটোমোর হাতে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে দেশের কোনো নিরিবিলি মন্দিরে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। এটি ৬৭১ সালের ১০ তম মাসের ১৭ তম দিনে ঘটেছিল, যখন সম্রাট ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। একই দিনে, রাজকুমার ওমা মুণ্ডটি নিয়েছিলেন এবং তার প্রাসাদে রাখা সমস্ত অস্ত্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দু'দিন পরে তিনি ইয়োশিনোর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন, একই মন্দির যেখানে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং পরবর্তীকালে অনেক রাজকীয় আধা-নির্বাসিত ছিল। তা মঞ্জুর করা হয়েছে। এর পরপরই, পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে একত্রিত করা হয়েছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে তেনচি তেন্নোর উপস্থিতিতে শপথের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। তেনচি তেন্নো ৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২তম মাসের শুরুতে মৃত্যুবরণ করেন। রাজকুমার ওটোমো ধারাবাহিক সম্রাটদের সরকারী রেকর্ডে কোবুন তেন্নো হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি কেবল আধুনিক যুগেই করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' তত্ক্ষণাত তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে স্থানান্তরিত হন, যার সময় রাজকুমার ওটোমোকে কখনই সম্রাট হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটি উপরে বর্ণিত গল্পটি একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় বর্ণনা করে। এতে বলা হয়েছে, সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়লে নো ওমি ইয়াসুমারোকে রাজকুমার ওমাকে তার উপস্থিতিতে ডেকে আনার জন্য পাঠানো হয়। ভিতরে ঢোকার সময়, সোগা রাজপুত্রকে তিনি যা বলেছিলেন তা খুব সাবধানে থাকতে বলেছিলেন, যার ফলে রাজপুত্র একটি ষড়যন্ত্র সন্দেহ করেন। সুতরাং, যখন তাকে সিংহাসন অফার করা হয়েছিল তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন যেমনটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর সুস্পষ্ট তাৎপর্য হলো, তিনি যদি সিংহাসন গ্রহণ করতেন তাহলে সম্ভবত তাকে হত্যা করা হতো। স্বভাবতই এই গল্প সত্যি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে যা ঘটেছিল তার কেবল রাজকুমার ওমার সংস্করণ রয়েছে। ভালো গল্প হয়, হয়তো খুব ভালো। সম্ভবত তেনচি সরাসরি যুবরাজ ওমাকে প্রকাশ্যে সিংহাসন ত্যাগ করে একটি মঠে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাই হোক না কেন, তেনচি মরিয়া হয়ে তার ছেলের উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন এই সত্যের মুখে যে অভিজাতরা প্রায় নিশ্চিতভাবে ওমাকে সমর্থন করবে যদি এটি নিয়ে লড়াই হয়। যখন তিনি যোশিনোতে পৌঁছেছিলেন তখন রাজপুত্র তার "টোনারি" বা ব্যক্তিগত পরিচারক / দেহরক্ষীদের একত্রিত করেন এবং তাদের বলেছিলেন যে তিনি ধর্মের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন এবং যে কেউ ক্যারিয়ার চান তার কাছে গিয়ে নতুন চাকরি সন্ধান করার স্বাধীনতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অর্ধেক বামে আর অর্ধেক থেকে যায়। এরপর সম্রাট মারা যান। এই সময়ে কিউশুতে সবেমাত্র একটি বিশাল চীনা দূতাবাস এসেছিল, এত বড় যে তারা জাপানিদের আশ্বস্ত করার জন্য কয়েকটি জাহাজ পাঠিয়েছিল যে এটি আক্রমণকারী বহর নয়। রাষ্ট্রদূতদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। রাজকুমার ওটোমোর কোনও উল্লেখ ছাড়াই এই সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পুরো গল্পটি রাজকুমার ওমার দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে এবং ওমি আদালতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। রাজকুমার ওটোমো কখন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন বা আদৌ ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। ''নিহন শোকি'' অনুমানের অনুমতি দেয় যে তিনি শাসক হিসাবে তালিকাভুক্ত নন বলে তিনি ছিলেন না। নর যুগের অন্য কোন গ্রন্থে তাঁকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত শাসক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না। টোকুগাওয়া মিতসুকুনি দ্বারা ''দাই নিহন শিতে'' এডো পিরিয়ড পর্যন্ত এটি প্রথম দাবি করা হয়েছিল যে তাকে সিংহাসনে আরোহণ করা হয়েছিল তবে তেম্মু তেন্নোর বৈধতা সমর্থন করার জন্য ''নিহন শোকিতে'' এটি দমন করা হয়েছিল। মরণোত্তর রাজত্বের উপাধি কোবুন তেন্নো মেইজি সম্রাট কর্তৃক রাজকুমার ওটোমোকে ভূষিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি যে ৬ মাস ওৎসু দরবারে শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসে যুবরাজ ওমার একজন অনুচর তাকে বলেন যে তিনি প্রচুর সংখ্যক লোককে জড়ো হতে দেখেছেন যারা তেনচির সমাধিতে কাজ করতে আসার দাবি করেছিল। কিন্তু তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল। অপর এক ব্যক্তি তখন বলেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ এবং চেকপয়েন্টগুলি লক্ষ্য করেছেন। ওমা তদন্ত করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে এটি সত্য ছিল। তারপরে তিনি তার লোকদের বলেছিলেন যে ঝামেলা রোধ করার জন্য তিনি অবসর নিয়েছেন। তবে তারা যদি তাকে যেভাবেই হত্যা করতে চলেছে তবে তিনি লড়াই করতে যাচ্ছেন। তার প্রধান সমস্যা ছিল রাজধানী ছাড়ার আগে তাকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাই মূলত অরক্ষিত ছিল। ৬ষ্ঠ মাসের ২২তম দিনে তিনি তিনজন লোককে মিনো প্রদেশে (ঠিক পূর্বদিকে) যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং গভর্নরকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তিনি তার কাছে যা কিছু বাহিনী ছিল তা একত্রিত করেন এবং পূর্বের অন্যান্য গভর্নরদেরও একই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফুওয়াতে একটি সভা পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছিল। এটি ওমি এবং মিনো প্রদেশের সীমান্তের একটি গিরিপথ যা প্রধান পূর্ব-পশ্চিম রাস্তা দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং ওটসুর উপর আক্রমণ চালানোর জন্য একটি ভাল অবস্থান। এরপর আসে ইয়োশিনোর কাছ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তিনি একজন লোককে আসুকায় পাঠিয়েছিলেন পাস পাওয়ার আশায় যা তাদের পোস্ট ঘোড়া ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তাই তারা ২৪ তারিখ পায়ে হেঁটে পূর্ব দিকে রওনা দিল। আদালত ইয়োশিনোর ওপর হামলার কথা ভাবছে কি না, তা জানার কোনো উপায় আমাদের নেই। তবে ওমা চলে যাওয়ার পর আদালত অবাক হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। বেশ কয়েকদিন তারা সাড়া দেয়নি। এই প্রস্থানটি পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে নোটিশের পুরো এক মাস পরে ছিল এবং বর্ধিত বিপদের কোনও উল্লেখ নেই, সুতরাং এটি অবশ্যই ধরে নেওয়া উচিত যে পূর্ববর্তী মাসটি সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে পরিকল্পনা এবং যোগাযোগ করতে ব্যয় করা হয়েছিল। দলটি শীঘ্রই এমন এক সমর্থকের মুখোমুখি হয়েছিল যার একটি ঘোড়া ছিল, যাতে রাজপুত্র চড়তে পারে। তাঁর স্ত্রী (ভবিষ্যতের জিতো তেন্নো) এবং তাঁর দুই পুত্র, রাজকুমারেস কুসাকাবে এবং ওসাকাবেকে একটি পালকিতে বহন করা হয়েছিল। এই সময়ে রাজপুত্রের সাথে "প্রায়" ২০ জন পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৩ জনের নাম এবং ১০ জন মহিলা ছিলেন। শীঘ্রই তাদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিল এবং তারা যে রাজকীয় এস্টেটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সবাইকে খাওয়ালেন। আরও কিছুটা এগিয়ে তারা প্রায় ২০ জন অভিজাতদের একটি শিকারী দলের মুখোমুখি হয়েছিল, যাদের ছোট সেনাবাহিনীতে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও একজন "রাজকুমার মিনো"। তিনি সম্ভবত রুটের কাছাকাছি থাকতেন, তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরপর তারা ৫০টি প্যাক-ঘোড়ার একটি ট্রেন দেখতে পায় যারা চাল বহন করছে। তারা চাল ফেলে দিয়েছিল এবং তখনতাদের অশ্বারোহী ছিল। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই তারা টর্চ বানানোর জন্য একটি বেড়া টেনে ফেলল। অবশেষে তারা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে তারা মধ্যরাতে থামতে পারে। তারা পোস্টিং স্টেশনটি পুড়িয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষকে তাদের অনুসরণ করার জন্য জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। দ্বিতীয় দিনে তারা ৭০০ জনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপরে আরও লোক উপস্থিত হয়েছিল, এত বেশি যে তারা ফিরে যেতে এবং তাদের পিছনটি রক্ষা করার জন্য ৫০০ জন লোকের একটি বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। ২৬ তারিখে যুবরাজকে জানানো হয় যে মিনো থেকে ৩,০০০ লোক এসেছে এবং আদেশ অনুসারে ফুয়া রাস্তা অবরোধ করছে এবং আরও অনেক সমর্থক, যাদের অনেকের নাম রয়েছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ জন সমর্থকের নাম আমাদের কাছে রয়েছে। তারা ইসে প্রদেশের কুওয়ানায় ছিল এবং ওমা অনুভব করেন যে তিনি দৌড়ানো বন্ধ করতে পারেন। তিনি তখনসৈন্য সংগ্রহের জন্য চারদিকে দূত পাঠাতে শুরু করলেন। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এই মুহুর্তে রাজকুমার ওটোমোর সরকার কী ঘটছে তা জানতে পেরেছিল। খবরটি ওটসুর রাজধানীকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। কিছু অভিজাত যুবরাজ ওমায় যোগদানের আশায় পালিয়ে যায়, অন্যরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকার আশায় পালিয়ে যায়। ওটোমো তার কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। একজন মন্ত্রী তাদের কাছে যে কোনও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তাত্ক্ষণিক আক্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ওটোমো পরিবর্তে একটি যথাযথ সেনাবাহিনী সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব বার্তাবাহকদের প্রেরণ করেন। যেখানে ওমার বার্তাবাহকরা বেশিরভাগ পূর্ব দিকে প্রচারিত হচ্ছিল, ওটোমো তাকে পশ্চিমে প্রেরণ করেন। সুকুশির কমান্ডার এই ভিত্তিতে লোক পাঠাতে অস্বীকার করেন যে তার কাজ ছিল কোরিয়ান এবং চীনাদের কাছ থেকে কিউশুকে রক্ষা করা। ওটোমো কিবি এবং সুকুশির কমান্ডারদের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা আশা করেন কারণ তারা ওমার সাথে সংযুক্ত রাজপুত্র ছিলেন এবং তিনি তাঁর দূতদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা যদি রাষ্ট্রদ্রোহের লক্ষণ দেখায় তবে তাদের হত্যা করতে। তারা কিবিতে কমান্ডারকে হত্যা করতে সফল হয়েছিল। কিন্তু সুকুশির লোকটি খুব সুরক্ষিত ছিল এবং তারা চলে গেল। তারা খুব কমই সুকুশির কাছ থেকে কোনও ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত পুরুষদের আনার কথা ভাবতে পারেনি, সুতরাং এটি সম্ভবত এই অঞ্চলগুলিকে রাজকুমার ওমার পক্ষে ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল। প্রায় একই সময়ে একজন কর্মকর্তা, ওটোমো নো ফুকেই। তিনি এর আগে ওমির আদালত ত্যাগ করেন এবং আসুকা অঞ্চলে তার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার নিজস্ব ব্যক্তিগত বাহিনী এবং নিকটবর্তী আয়া বংশের লোকদের একত্রিত করেন এবং ২৯ শে যুবরাজ ওমার পক্ষে প্রাক্তন আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই অঞ্চলের মিওয়া এবং কামো গোষ্ঠীগুলি যুবরাজ ওটোমোকে সমর্থন করার জন্য ওমিতে সৈন্য প্রেরণ করেছিল। যুবরাজ ওমা তখনতার সদর দফতর কুওয়ানা থেকে সরিয়ে নিলেন। এটি সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে ছিল, ফুয়াতে। ২৭ তারিখে পূর্ব দিক থেকে আরও বিশ হাজার লোক তার সাথে যোগ দেয়। রাজকুমার ওমা তার ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজকুমার তাকেচিকে সামগ্রিক সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তার সেনাবাহিনী দুটি প্রধান কলামে বিভক্ত ছিল। অভিজ্ঞ যোদ্ধা কি নো ওমি এমারোর নেতৃত্বে প্রথমটি ছিল ইগা এবং ইসের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং ওটোমো নো ফুকেইয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আসুকার দিকে যাত্রা করা। দ্বিতীয়টি ছিল মুরাকানি নো মুরাজি ওয়োরির কমান্ডে সরাসরি ওটসুকে আক্রমণ করা। তিনি ইয়োশিনোতে রাজকুমার ওমার সাথে ছিলেন এমন একজন টোনেরি। এই বাহিনীকে তাদের পোশাকে লাল ব্যাজ সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা যুদ্ধের ময়দানে একে অপরকে চিনতে পারে। সপ্তম মাসের দ্বিতীয় দিনে ওমির আদালত ফুওয়া পাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণের নির্দেশ দেয়। ''নিহন শোকির'' মতে, এই আক্রমণটি প্রচণ্ড বিভ্রান্তিতে পড়েছিল এবং রাষ্ট্রের অন্যতম মন্ত্রী সোগা নো হাতায়াসু যুবরাজ ইয়ামাবের সাথে নিহত হন। রাজকুমার ওমার সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়েছিল এবং ১৩ তারিখে ইয়াসুকাওয়ায় শেষ হওয়া পরপর তিনটি যুদ্ধ জিতেছিল, যার পরে তারা সেটায় অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ওটসু প্রাসাদের বাইরের প্রতিরক্ষা গঠন করেছিল। সেখানে একটি সেতু সহ একটি স্রোত ছিল, যেখানে আদালতের সেনাবাহিনী তার অবস্থান তৈরি করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে, আদালতের অনুগত বাহিনী ওটোমো নো ফুকেই পরাজিত করে এবং আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চলেছিল। কিন্তু রাজকুমার ওমার কলামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং ফুকেই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,নির্ণায়ক যুদ্ধটি ৭ তম মাসের ৬ তম দিনে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের স্থানটি একটি সমাধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অনেক পতিত সৈন্য রয়েছে। দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর আদালতের সেনাবাহিনী উত্তর দিকে পিছু হটে। ২২ তম দিনে সেতা ব্রিজে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেতু রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী মাঝের অংশের মেঝে বের করে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি তক্তা প্রসারিত করেছিল যাতে সেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। ওমা বাহিনীর একজন সৈনিক দুই সেট বর্ম পরে তক্তা পেরিয়ে দৌড়ে গেল, যেতে যেতে দড়ি কেটে ফেলল। অতঃপর তিনি শত্রুপক্ষের অ্যারেতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এটি কে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিলেন। তার সেনাবাহিনী স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনুসরণ করেছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর সেনাবাহিনী ভেঙে পালিয়ে যায়। যিনি এই দায়িত্বে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি যুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিলেন। ৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ''নিহন শোকিতে'' তাঁর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধে নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে তেম্মু তেন্নো সরকারী নোটিশ নেওয়ার জন্য সতর্ক ছিলেন বলে মনে হয়। ওমার বাহিনী পরের দিন সফলভাবে আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং যুবরাজ ওটোমো তার সেনাবাহিনী থেকে আলাদা হয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে কেউ এটি জানত না। সারাদিন লড়াই অব্যাহত ছিল এবং রাজকুমার ওটোমোকে সমর্থনকারী বিশাল শক্তিবৃদ্ধি আসার সাথে সাথে খুব ভারী হয়ে ওঠে। ওমার বাহিনী শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এবং সাদাইজিন ও উদাইজিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ তারিখে রাজকুমার ওটোমোর মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং তার মাথা ওমার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর ঠিক এক মাস পর রাজকুমার ওটোমোর প্রধান সমর্থকদের সাজা ঘোষণা করা হয়। নাইদাইজিন নাকাতোমি নো মুরাজি নো কোগানে সহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, সাদাইজিন এবং উদাইজিন নামে দু'জনকে তাদের সমস্ত পরিবারের সাথে নির্বাসিত করা হয়েছিল, নাকাতোমির পরিবারকেও নির্বাসিত করা হয়েছিল যেমন সোগা নো হাতায়াসু নো ওমি যিনি লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন। বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তা যাকে ক্ষমা করা হত তিনি পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং আত্মহত্যা করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে পূর্ববর্তী সমস্ত দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে ছোট বিষয় ছিল। তবে এটি একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ ছিল যা যোশিনো থেকে রাজকুমার ওমার ফ্লাইট এবং তিন সপ্তাহের প্রকৃত ক্ষেত্রের অপারেশন থেকে এক মাস স্থায়ী হয়েছিল, এতে কয়েক হাজার লোক জড়িত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এর পেছনে অন্য কোনো বিবেচনার বিষয় জড়িত ছিল কি না, যার জন্য এতগুলো পুরুষকে এত কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। উনিশ শতক এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বাধিক জনপ্রিয় তত্ত্বটি ছিল যে যুবরাজ ওমা তেনচি তেন্নোর অধীনে পরিবর্তনের দ্রুত গতির বিরোধিতার সুযোগ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার অর্থ যুদ্ধটি একটি রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া ছিল। যাইহোক, বাস্তবে তেম্মু তেন্নো তার ভাইয়ের দ্বারা উদ্বোধন করা পরিবর্তনগুলি সমাপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাই যদি তার সমর্থকরা পুরানো উপায়ে ফিরে আসার আশা করে তবে তারা দুঃখজনকভাবে হতাশ হবে। প্রায় ১৯২০ এর দশক থেকে এটি ঠিক বিপরীত তর্ক করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল, যে রাজকুমার ওমা "প্রগতিশীল" পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন, সুতরাং রাজকুমার ওটোমো বা তার পিছনে কর্মকর্তারা অবশ্যই "রক্ষণশীল" দল ছিলেন। তার বিজয়ের মাধ্যমে, তেম্মো তেন্নো মূলত রাজকুমার নাকা নো ও এবং নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা পরিকল্পিত লাইন বরাবর সরকারের পুনর্গঠন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে লেখা রচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গির সারসংক্ষেপ করেন আইনাগা সাবুরো। তিনি ভেবেছিলেন যে রাজকুমার ওমা মূলত নিম্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা সমর্থিত ছিলেন এবং জ্যেষ্ঠ আভিজাত্যরা রাজকুমার ওটোমোর পিছনে ছিলেন। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেরী কোফুন যুগের সমাধিগুলির পরিবর্তিত নিদর্শনগুলির গবেষণায় যা দেখেন তার সাথে এক ধরণের শ্রেণি সংগ্রাম ছিল, সামগ্রিকভাবে আভিজাত্যের মধ্যে আরও অভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকটি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির অভিজাতদের কাছ থেকে শক্তি বিকশিত হয়েছিল। যাইহোক, এই যুক্তিটি ত্রুটিতে ভুগছে যে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে তেনচির রাজত্বের পরবর্তী বছরগুলিতে তাইকা সংস্কারের নীতিগুলি থেকে কোনও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৬৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সামরিক সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরে, সংস্কারের স্রোত আবার শুরু হয়েছিল এবং সম্রাটের চূড়ান্ত অসুস্থতা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি জাপানে ঐতিহাসিক চিন্তাধারার একটি সম্পূর্ণ নতুন পর্বের সূচনা করেছিল কারণ এটি ইতিহাসবিদদের প্রকাশ্যে মার্কসবাদী হতে মুক্তি দিয়েছিল। এটা বলা ন্যায্য, আমি মনে করি, মার্কসবাদ (একটি হালকা ধরনের) ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে, মূলত আগে যা ঘটেছিল তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে। এটি স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিকদের বিস্মিত করেছিল (প্রথমবারের মতো) ৬৪৫ সাল থেকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সম্ভবত কোনও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কিনা। কিতায়ামা শিজিও নামে একজন ইতিহাসবিদ প্রস্তাব করেন যে ৬৪৫ সাল থেকে পরিবর্তনগুলি মূলত কেন্দ্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য কাজ করেছিল এবং এর অর্থ হলো করের জোরপূর্বক শ্রম অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। যখন এটি স্থানীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন এটি সম্ভবত এপিসোডিক ছিল, এতে প্রতি বছর কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু ছিল না। তবে জাতীয় সরকার সর্বদা কিছু খুঁজে পেতে পারে। আদালত নিজেই, এটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রম করের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছিল। প্রহরী, রক্ষণাবেক্ষণের লোক, প্রাসাদের পরিচারক, বার্তাবাহক এবং কাজের ছেলেরা এবং সমস্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের শ্রমকরের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। এটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভ তৈরি করেছিল, তিনি ভেবেছিলেন। তবে সমস্যা হলো, জিনশিন যুদ্ধে কোনো পক্ষই জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উভয় পক্ষের যোদ্ধারা অভিজাত ছিল। তবে, এমন অনেকে আছেন যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এই ব্যবস্থার তীব্রতা নিয়ে যে কোনও জনপ্রিয় ক্ষোভ স্থানীয়ভাবে অনুভূত হত এবং গ্রামীণ আভিজাত্যের কৃষক জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলত। ''নিহন শোকির'' বিবরণ থেকে দৃঢ়ভাবে বোঝা যায় যে ইয়ামাতো প্রদেশের বেশিরভাগ আভিজাত্য ওমি আদালতকে সমর্থন করেছিল এবং যুবরাজ ওমা পূর্বের প্রাদেশিক আভিজাত্যের কাছ থেকে তার সমর্থন পেয়েছিলেন (এবং পশ্চিম, যদিও কোনও পশ্চিমা সেনা হস্তক্ষেপ করার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল)। এটি সুস্পষ্ট যে রাজকুমার ওমার দুটি কলামের একটির কমান্ডার ছিলেন টোনারি। এটি নিম্ন-পদমর্যাদার প্রাদেশিক অভিজাত বলতে হয়। রাজকুমার ওমা বছরের পর বছর ধরে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং এই লোকেরা তার প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল যে তিনি তাদের সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে নারা যুগে উদ্ভূত জটিল ব্যবস্থাটি প্রাদেশিক আভিজাত্যের দ্বারা সমর্থিত না হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। এটি তারা নিজেরা না দেখলে এটি করত না। আপনি যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিরোধিতার সামগ্রিক অনুপস্থিতি ৬৪৫ পরবর্তী পুরো রূপান্তরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়। উপসংহারটি হলো পুরানো কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণিকে সঙ্কুচিত করা হয়েছিল এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার এবং নিম্ন স্তরের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল যারা নতুন ব্যবস্থার অধীনে জেলা সরকারকে নিয়োগ করেছিল। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে জিনিসগুলি কার্যকর করার জন্য বিশদ জ্ঞান ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাদের জনপ্রিয় অস্থিরতা থেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা ছিল। এটি ছিল মৌলিক চুক্তি যা চীনা সাম্রাজ্যকে বহু শতাব্দী ধরে চালিত রেখেছিল এবং জাপানেও একই জিনিস করার উদ্দেশ্য ছিল। == তেম্মু তেন্নো == ৬৭২ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার ওয়ামা ওমি প্রাসাদ ত্যাগ করে আসুকা অঞ্চলে ফিরে আসেন। তিনি কিয়োমিহারা প্রাসাদ নামে পরিচিত একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন। ৬৭৩ সালের ২য় মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহন করেন। ৬৭৩ সাল তার শাসনকালের প্রথম বছর হিসেবে তার সরকারি নথিপত্রে সর্বদা স্বীকৃত ছিল। পরে যখন কোবুন তেন্নো তালিকায় যুক্ত হয়, তখন সরকারি কালানুক্রমিক তালিকা ৬৭২ সালকে "কোবুন প্রথম বছর" হিসেবে গণ্য করলেও ''নিহোন শোকি'' ধারাবাহিকভাবে ৬৭২ সালকে "তেম্মু প্রথম বছর" হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং এটি মেইজি যুগের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক লেখায় স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে স্থিত হয়েছিল। তেম্মুর শাসনকালে এবং জিতোর ৭ বছর পর্যন্ত সরকার কিয়োমিহারা প্রাসাদেই অবস্থান করেছিল, অর্থাৎ ৬৭৩ থেকে ৬৯৩ পর্যন্ত ২১ বছর। এটি পূর্বের যেকোনো প্রাসাদের তুলনায় বেশি স্থায়ী ছিল এবং স্থায়ী রাজধানী স্থাপনের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। ''মান্যোশু'' সংগ্রহে অনেক কবিতায় এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে যে, যুদ্ধজয়ের ফলে তেম্মু তেন্নোর অভূতপূর্ব ক্ষমতা ছিল যিনি যেকোনো কিছু ঘটাতে পারতেন। এক কবিতায় বলা হয়েছে, "ঈশ্বরের মতো" তিনি একটি পাহাড়কে সমুদ্রে রূপান্তরিত করতে পারেন। ঈশ্বরের ন্যায় ওয়াইশিমাগুনি রাজত্বকারী তেম্মু নিজেও ১২তম বছরের একটি আদেশে নিজেকে "যমাতো নেকো নো মিকোতো" বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওয়াইশিমাগুনি হল জাপানের প্রাচীন নাম। তার শাসনকালের শুরুতে কোন বড় যমাতো পরিবার থেকে আসা অভিজাতরা দরবারে প্রাধান্য পায়নি, এবং নাকাতোমি নো কামাতারির ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোও তখনো প্রভাবশালী ছিল না। সরকারে তিনি নিম্ন পদস্থ লোকদের উপর বেশ নির্ভরশীল ছিলেন, যার মধ্যে টোনেরিরাও ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুরাকুনি নো মুরাজি ওয়ায়রি, যাকে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন না এবং তাঁর সামরিক সফলতার জন্য মুরাজি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত অবসরের সময় বা মৃত্যুর কাছাকাছি উচ্চ পদমর্যাদা পেতেন, কিন্তু কর্মজীবনে তাদের পদমর্যাদা তুলনামূলকভাবে কম থাকত। মুরকুনিকে ১২০টি পরিবার থেকে আয় দেওয়া হয়েছিল। এটি মহান অভিজাতদের মানদণ্ডে খুব বেশি ছিল না। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষমতা ছিল কারণ সম্রাট তাদের পিছনে ছিলেন। তাদের উচ্চ পদ বা ব্যক্তিগত প্রতিপত্তির এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শাসনকালের শুরুতে তিনি সর্বোচ্চ পদ দাজোদাইজিন, সদাইজিন এবং উদাইজিন ফাঁকা রেখেছিলেন। বড় কোন অভিজাতকে উচ্চপদে নিয়োগের প্রথম ঘটনা ছিল ৬৭৫ সালে। তখন তিনি ওতোমো নো মুরাজি নো মিয়ুকিকে রাজকুমার কুরিকুমার অধীনে যুদ্ধমন্ত্রীর উপমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। মোট মিলিয়ে ''নিহোন শোকি''তে তেম্মু তেন্নোর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ৭ জন জোমাতো অভিজাত এবং ৫ জন রাজকুমারের নাম উল্লেখ আছে। ৫ জন রাজকুমারই অভিজাতদের থেকে উচ্চ পদ পেয়েছিলেন। আরও উল্লেখ আছে, তেম্মুর সম্রাজ্ঞী উনো (পরে জিতো তেন্নো) তাঁর শাসনকালে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং বিষয়াদি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া, তেম্মুর দুই পুত্রও যথাক্রমে ৬৮১ সাল থেকে রাজকুমার কুসাকাবে এবং ৬৮৩ সাল থেকে রাজকুমার ওৎসু সরকারে সক্রিয় হয়। কুসাকাবে শেষ পর্যন্ত দাজোদাইজিন হন। স্পষ্ট যে তেম্মুর সরকার ছিল সম্রাটের সরাসরি শাসন, যেটিতে শাসক পরিবারের সদস্যরাই সহযোগিতা করতেন। ৬৭৫ সালে তেম্মু সর্বোচ্চ অভিজাতদের সমস্ত ব্যক্তিগত জমি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন। ৬৬৪ সালে টেনচি এ জমিগুলো বেতন হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন, কিন্তু তখন পরিষ্কার হয়ে গেল যে পুরো দেশ জুড়ে সম্পূর্ণ কর ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে এবং অভিজাতরা কেবলমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করবেন। তিনি আরও আদেশ দেন যে "নিকটবর্তী রাজকুমার, অন্যান্য রাজকুমার, কর্মকর্তা ও মন্দিরগুলো" তাদের হাতে বছরের পর বছর ধরে পাওয়া সব ধরণের জমি — কৃষিজমি বা বনজ — ফেরত দেবে। ৬৮৫ সালে তেম্মু আবার পদমর্যাদা ব্যবস্থা সংস্কার করেন। প্রথমবারের মতো রাজকুমারদের জন্য নতুন পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। এটি পূর্বের ব্যবস্থার বাইরে ছিল। এটি নারা যুগ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুইটি সমান্তরাল পদমর্যাদা ব্যবস্থা চালু ছিল, একটি রাজকুমারদের জন্য এবং অন্যটি সকলের জন্য। এখন সরকারি পদমর্যাদা ব্যবস্থার বাইরে ছিলেন শুধুমাত্র সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবার, অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তানরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কিছু লক্ষণও ছিল। ৬৭৫ সালে একটি ঘটনা ঘটে যখন দুই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাকে "দরবারে উপস্থিত হওয়া থেকে নিষিদ্ধ" করা হয় এবং কয়েকদিন পরে তাদের একজনকে "সমস্ত পদ ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত" করা হয়। একই বছর রাজকুমার ওমি ও তাঁর দুই পুত্রকে গ্রামাঞ্চলে নির্বাসিত করা হয়, এবং পরের বছর দাজাইফুর প্রধান কর্মকর্তা রাজকুমার ইয়াকাকিকেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট বছর জানা না গেলেও, শাসক গোত্র থেকে কয়েকজনকে "মিকাতা" উপাধি ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাদ দেওয়া হয়। ৬৭৫ সালে একটি আদেশে সব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের বছর গভর্নরদের মধ্যে অস্ত্র ধারণের ব্যাপারে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। ৬৭৯ সালে রাজকুমার ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয় যে পরবর্তী বছর একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তারা সশস্ত্র ও সিংহাসনে চড়ে উপস্থিত হবে, এবং এটি বাস্তবে পরিচালিত হয়। ৬৮৪ সালে তেম্মু তেন্নো একটি আদেশে উল্লেখ করেন যে "সামরিক বিষয়গুলো সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।" ৬৪৫ সালের আগে শাসকের হাতে সরাসরি সীমিত সামরিক বাহিনী ছিল। সবসময় কিছু সংখ্যক টোনেরি ছিল, যারা প্রধানত পূর্বাঞ্চল থেকে আসত, এবং কিছু ইউকেইবে ছিল, যারা কিউশু থেকে চাপা কৃষক সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রাজধানীতে পাঠানো হতো এবং প্রধানত গার্ড হিসেবে কাজ করত। এই বিভাগের লোকসংখ্যা কত ছিল তা কেউ নিশ্চিত নয়। অন্যান্য সব কিছু নির্ভর করত যমাতো গ্রামের সামরিক মনোভাবাপন্ন উজি গোত্রের উপর। ধারণা করা হয় টোনেরিদেরকে নতুন রাষ্ট্রের "বাম" ও "ডান" হ্যোয়েফু 兵衛府 প্রহরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এবং ইউকেইবে গার্ডরা ছিলেন এমোনফু 衛門府-তে। বাকী দুটি গার্ড ইউনিট, "বাম" ও "ডান" ইজিফু 衛士府, শ্রম করের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধারণা করা হয় এই দায়িত্বে নিয়োজিত লোকেরা সাধারণ কৃষক ছিলেন না, বরং স্থানীয় ক্ষুদ্র অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মোটামুটি বলতে গেলে, রাজধানীর সরকারি সামরিক বাহিনী ছিল মূলত পুলিশ ও রক্ষী হিসেবে, বাস্তবিক সামরিক বাহিনী নয়। সম্ভবত তেম্মু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে সব কর্মকর্তা সশস্ত্র এবং অন্তঃপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও যেন সশস্ত্র থাকেন যাতে প্রয়োজনে তিনি দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করতে পারেন। প্রদেশগুলোতে সামরিক সংগঠনের তেমন চিত্র ছিল না। ৬৮৫ সালে তেম্মু আদেশ দেন যে ব্যক্তিগত নয়, বরং সংগঠিত সামরিক ইউনিটগুলোর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সামরিক উপকরণ — যেমন শিং, ঢোল, পতাকা থেকে শুরু করে ক্রূড অস্ত্র যেমন "পাথর নিক্ষেপক" এবং বড় আকারের ক্রসবো — কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। এটি জনগণকে নিরস্ত্র করার জন্য নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে এগুলো প্রয়োজনে দ্রুত পাওয়া যাবে এবং ঠিক করা থাকবে। প্রাচীন জাপানের একটি ছোট রহস্য হল কেন ইসের "মহান মন্দির" আমাতেরাসু ওমিকামি, যাকে শাসক গোত্রের পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়, এটি তাঁর পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন পূজার কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এটি এমন স্থানে অবস্থিত যা থেকে ধারণা করা হয় পূজার বিষয়বস্তু হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর, বিশেষ করে যারা সমুদ্রপথে পূর্ব জাপানে যাওয়ার পথে ছিলেন তাদের জন্য। এটি শাসক গোত্রের সাথে বিশেষ কোন সম্পর্কিত স্থান নয়। ধারণা করা হয়েছে মন্দিরটি তুলনামূলকভাবে দেরিতে আমাতেরাসুর সাথে সম্পর্কিত হয়েছিল, যার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হলো তেম্মু তেন্নোর শাসনকাল। ''নিহোন শোকি''তে কেতাই থেকে সুইকো পর্যন্ত সব শাসনের সময় রাজকুমারেসদের ইসে পাঠানো হত সাইগু বা ইটসুকি নো মিয়া হিসেবে, অর্থাৎ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত্রী হিসেবে। তবে এই প্রথা পরবর্তীতে লোপ পেয়ে যায় যতক্ষণ না ৬৭৪ সালে তেম্মু তার শাসনকালে নিজেই প্রথম ইসে যাত্রা করেন। এটি ছিল রাজ পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই যাত্রাটি তেম্মুর শাসনকালের একটি চিহ্নিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এভাবে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তী যুগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেম্মু আরও কৃতিত্ব পেয়েছেন এমন একটি কাজ শুরু করার জন্য যা পরবর্তীতে ''কোজিকি'' এবং ''নিহন শোকি'' রচনার সূচনা করেছিল। তিনি বিভিন্ন অভিজাত বংশের কাছে থাকা উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে জাপানের ইতিহাস রচনার উপকরণ পাওয়া যায়। এটি ''কোজিকি''র ভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে। ৬৮১ সালে তিনি রাজকুমার কাওশিমা নেতৃত্বাধীন শাসক বংশের ছয় সদস্যের একটি কমিটি এবং নাকাতোমি নো মুরাজি নো ওশিমা নেতৃত্বাধীন অন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তার একটি কমিটিকে জাতীয় ইতিহাস সম্পাদনার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এই প্রকল্পটি কখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এটির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তা পরে ''নিহন শোকি''তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই বৃহৎ প্রকল্প থেকে আলাদাভাবে, তিনি তাঁর এক টোনেরি হিয়েদা নো আরেকে সহজ একটি কাজ এককভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এটি একক লেখকের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। হিয়েদা তাঁর কাজ শেষ করার আগে মারা যান, কিন্তু এটি নারা যুগের শুরুর দিকে ও নো আসোন ইয়াসুমারো পুনরায় গ্রহণ করেন এবং ৭১২ সালে ''কোজিকি'' নামে প্রকাশ করেন। উভয় কাজেই অভিজাত বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এটি সম্ভবত ঐ বংশগুলি দ্বারা রক্ষিত কাহিনীগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। ''কোজিকি''তে প্রায় ২০০টি বংশ কাহিনী এবং ''নিহন শোকি''তে প্রায় ১১০টি পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো একত্রিত করার সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তাইকা সংস্কার এবং জিনশিন যুদ্ধের পর থেকে বহু প্রাচীন বংশ মুছে গেছে এবং নতুন অনেক বংশ প্রভাবশালী হয়েছে। এর ফলে প্রাচীন "কাবানে" উপাধিগুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বংশের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রতিপত্তির সাথে আর মিলছিল না। তাই ৬৮৪ সালে তেম্মু কাবানে ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি আটটি উপাধির ব্যবস্থা করেন, যাদের মধ্যে বেশকিছু নতুন সৃষ্টি ছিল। শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এগুলো ছিল—মাহিতো (মাঝে মাঝে মাবিতো লেখা হয়) 真人, আসোমি (প্রায় সবসময় আসোন লেখা হয়) 朝臣, সুকুনে 宿禰, ইমিকি 忌寸, মিচিনোশি 道師, ওমি 臣, মুরাজি 連, এবং ইনাগি 稲置। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি বংশের সম্রাট থেকে বিচ্ছেদের মাত্রা স্পষ্ট করা। যেসব বংশ আগে ওমি উপাধি পেত, তাদের অধিকাংশকে আসোমি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এটি শাসক বংশের শাখা থেকে আগত বংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যেসব বংশ আগে মুরাজি ব্যবহার করত, তাদের বেশির ভাগ সুকুনে উপাধি দেওয়া হয়। মাহিতো বিশেষভাবে শাসক বংশের প্রধান শাখার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত বংশের জন্য সংরক্ষিত ছিল, বিশেষ করে কেটাই তেন্নো বা পরবর্তীকালের শাসকদের বংশ থেকে আগত বংশগুলোর জন্য। ওজিন রাজবংশ থেকে আগত বংশগুলো সবাই আসোমি উপাধিতে আচ্ছাদিত হয়েছিল। ছোট উপাধিগুলো সাধারণত প্রাদেশিক বংশদের জন্য ছিল। তেম্মুর শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। এটি পরবর্তী প্রশাসনিক আইন বিধিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারা যুগে সরকারের মূল ভিত্তি ছিল আটটি মন্ত্রণালয়ের সমষ্টি যাকে দাজোকান বা "বড় দপ্তর" বলা হয়। এদের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তেম্মুর সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মাত্র একটি ছিল অনুপস্থিত, তা হলো নাকাতসুকাসা। এটি শাসকের আবাসিক প্রাসাদের পরিচালনা করত। এটি প্রশাসনিক প্রাসাদ থেকে আলাদা। তেম্মুর দিনে একটি মন্ত্রণালয়ই উভয় কাজ দেখাশোনা করত। নামগুলো সবই ভিন্ন ছিল। তবে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিম্নস্তরের বহু প্রশাসনিক সত্তার নাম এবং সরকারি পদবীও ভিন্ন ছিল। প্রধান পার্থক্য ছিল, শেষমেশ প্রতিষ্ঠিত কোডগুলো চীনা সমসাময়িক প্রথা থেকে নেওয়া নাম ও পদবী বেশি ব্যবহার করত। ৬৮১ সালের দ্বিতীয় মাসে সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী প্রাসাদের প্রধান মিলনকক্ষে গিয়ে সমস্ত রাজপুত্র ও কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। সম্রাট ঘোষণা করেন যে, সরকারের কাঠামো এবং কার্যাবলীর নিয়মাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রশাসনিক নীতিমালা প্রস্তুত করার সময় এসেছে। তিনি স্বীকার করেন এটি একটি বৃহৎ কাজ। এটি শেষ করতে সময় লাগবে এবং সরকারী কাজ ব্যাহত হওয়া উচিত নয়, তাই এই প্রকল্পের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। এটিই পরিচিত "অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরো"র সূচনা। তেম্মু তেন্নোর জীবদ্দশায় সম্ভবত এই কাজ শেষ হয়নি। তবে সরকারের কাঠামো এই প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সামঞ্জস্য করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তেম্মু তেন্নোর ১৭ জন সন্তান ছিল, যাদের নাম জানা গেছে, ৯ জন বিভিন্ন মাতার সন্তান, ১০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। সম্রাজ্ঞী উনোর একমাত্র সন্তান ছিলেন রাজকুমার কুসাকাবে। তিনজন অন্যান্য নারী কিসাকি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, যাঁরা রাজকুমার ওতসু, রাজকুমার নাগা, রাজকুমার ইউগে, এবং রাজকুমার টোনেরির মা ছিলেন, পাশাপাশি একটি কন্যাও ছিলেন। এই চারজন নারীই ছিলেন তেনচি তেন্নোর কন্যা। আরও তিনজন মহিলা ছিলেন, যাঁরা কনকুবাইন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিলেন। দুজন ছিলেন ফুজিওয়ারা নো কামাতারির কন্যা, যাঁরা রাজকুমার নিটাবে এবং এক কন্যার জন্ম দিয়েছেন। তৃতীয় ছিল সোগা নো ওমি নো আকের কন্যা, যিনি রাজকুমার হাটসুমি এবং দুই কন্যার জন্ম দেন। শেষমেশ তিনজন নারী ছিলেন যাদের প্রাসাদে কোন সরকারি পদবী ছিল না। রাজকুমারেস নুকাতা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এক কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন, রাজকুমারেস তোচি, যিনি শিশুকালে মারা যান। এটি আদালতে অনেক শোকের কারণ হয়। দুই প্রাসাদের সহকারী রাজকুমার টাকেচি, রাজকুমার ওসাকাবে এবং রাজকুমার শিকি ও দুই কন্যার জন্ম দেন। রাজকুমার টাকেচি উল্লেখযোগ্য কারণ তিনি জিনশিন যুদ্ধে কমান্ডার ছিলেন। রাজকুমার ওসাকাবে ও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। দুটি সর্বোচ্চ পদমর্যাদার রাজপুত্র ছিলেন নিঃসন্দেহে রাজকুমার কুসাকাবে এবং রাজকুমার ওতসু। ৬৮১ এবং ৬৮৩ সালে যথাক্রমে তারা এমন বয়সে পৌঁছান যেখানে সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। রাজকুমার কুসাকাবের মা ছিলেন সম্রাজ্ঞী, যেখানে রাজকুমার ওতসুর মা জিনশিন যুদ্ধে আগে মারা গিয়েছিলেন। তবে মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ রাজকুমার ওতসুকে বেশি প্রভাবশালী মনে করত। ''নিহন শোকি'' উল্লেখ করে যে, শিশু অবস্থায় তিনি তাঁর চাচা ও দাদা তেনচি তেন্নোর প্রিয় ছিলেন, এবং অন্যান্য প্রাচীন সূত্রে বলা হয়েছে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। রাজকুমার কুসাকাবে সম্পর্কে কোনও তথ্য অবশিষ্ট নেই। তিনি ২৮ বছর বয়সে মারা যান এবং ধারণা করা হয় যে তিনি সবসময় অসুস্থ ছিলেন। এটি সম্ভবত ব্যাখ্যা করে কেন তাঁকে তেম্মুর মৃত্যুর পর শাসক করা হয়নি। তেম্মুর শাসনকাল এমন ছিল যে তিনি সরাসরি শাসন করতেন, তাই এটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী শাসককে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হতে হয়েছিল। মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিল সম্রাজ্ঞী। যদি ধরা হয় যে রাজকুমার কুসাকাবে অনুপযুক্ত ছিলেন, তাহলে তিনি তাঁর শিশুসন্তান রাজকুমার কারুর (যিনি পরবর্তীতে মোম্মু তেন্নো হন) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনাক্রমে কুসাকাবে ৬৮১ সালে "সিংহাসন অধিকারী" করা হয়। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, এর সঙ্গে উত্তরাধিকার নিয়ে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে তাকে সরকারের একটি প্রখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই একই দিনে অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয় সরকারী নিয়মাবলী আনুষ্ঠানিককরণ সম্রাটের অবস্থান দৃঢ় করবে যাতে তিনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন এমনকি যদি তিনি সাধারণ ক্ষমতার ব্যক্তিও হন। ৬৮৩ সালে রাজকুমার ওতসুও সরকারে পদ পায়। যদি ধরা হয় তিনি তাঁর সৎভাই থেকে স্বাস্থ্যবান ও প্রতিভাবান ছিলেন, তাহলে সকল কারণ রয়েছে মনে করার যে তিনি তেম্মুর মৃত্যুর পর সম্রাট হওয়ার সুযোগ পেতেন। ৬৮৫ সালে তেম্মু অসুস্থ হন কিন্তু কিছুদিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ৬৮৬ সালের ৫ম মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন এবং ৭ম মাসে ঘোষণা করেন যে তিনি আর সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকবেন না। এটি সবকিছুই সম্রাজ্ঞী ও রাজকুমার কুসাকাবে দেখবেন। তিনি ৯ম মাসের ৯ তারিখে মারা যান, বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। ''নিহন শোকি'' জানায়, ১১ তারিখে তাঁকে সাময়িকভাবে তাঁর মোগারি নো মিয়ায় সমাহিত করা হয়, এবং ২৪ তারিখে "রাজকুমার ওতসু সিংহাসন অধিকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল"। পরবর্তী ঘটনা জিতো তেন্নো নিবন্ধে বর্ণিত। বলা হয়েছে, রাজকুমার ওতসুর বিশ্বাসঘাতকতা ১০ম মাসের ২ তারিখে প্রকাশ পায় এবং তিনি প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরের দিন তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তাঁর স্ত্রীও মারা যান। তবে স্পষ্ট নয় তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যা করেন। পরের দিন "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে দুই জন ছাড়া সবাই ক্ষমা পায়। ওই দুইজন নির্বাসিত হন। এর কয়েকদিন পরে সম্ভবত চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর রাজকুমার ওতসুর বোন রাজকুমারী এস ওকু রাজধানীতে ফিরে আসেন যিনি কয়েক বছর ইসেতে পুরোহিত ছিলেন। ''মানইশু''র একটি কবিতা প্রকাশ করে যে, রাজকুমার ওতসু গোপনে ইসেতে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন তেম্মুর মৃত্যুর সময়ের আশেপাশে। সম্ভবত এই ঘটনাটিই ''নিহন শোকি''র জন্য তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের কারণ। একজন রাজপুত্র রাজধানী ত্যাগ করে পূর্বদিকে যাওয়া এবং উত্তরাধিকার অস্থিতিশীল থাকা অবস্থায় যাত্রা করা বিদ্রোহী উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরা লক্ষ্য করেছেন যে, "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে কয়েকজন পরবর্তীকালে জিতোর আদালতে কর্মজীবন চালিয়েছেন। একজন প্রথম সম্পূর্ণ রিৎসুরো নীতিমালা তৈরির কমিটিতেও ছিলেন। এটা ইঙ্গিত দেয় যে রাজকুমার ওতসুকে অপরাধী বানানোর কূটনীতি করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' স্পষ্ট করে যে সম্রাজ্ঞী শাসনে ছিলেন। তবে কিছু সময়ের জন্য উত্তরাধিকার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করা হয়নি। মৃত সম্রাটকে শোক জানানো ও তাঁর সমাধি প্রস্তুতির সব সরকারি কার্যক্রমে সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ ছিল "সিংহাসন অধিকারী"। ৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১তম মাসে তেম্মুর দাফনের মধ্য দিয়ে এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। অবশ্যই ঐ সময়ে সম্রাটের বিধবা মোগারি নো মিয়ায় বসবাস করতেন এবং গভীর শোক পালন করতেন। এরপর ৬৮৯ সালের ৪ম মাসে যুবরাজ কুসাকাবে মারা যান। তাই ধারণা করা যায়, শোক পালন শেষ হলে রাজ্যাভিষেক করার পরিকল্পনা ছিল। তাঁর পুত্র যুবরাজ কারুর বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর এবং তাই সম্রাজ্ঞীর আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি জিতো তেন্নো নামে পরিচিত। এটি ৬৯০ সালের শুরুতে ঘটেছিল। এই সময়কালে ৬৮৯ সালের ৬ষ্ঠ মাসে অসুকা কিয়োমিহারা রিও ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয় এবং সরকারী দপ্তরগুলোতে বিতরণ করা হয়। এই ঘটনাকেই অসুকা যুগের সমাপ্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ৬৮৯ সালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, কামাতারির বড় ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোর প্রথমবারের মতো সরকারি পদে নিয়োগ। 7542u5qvjf1ge0oi04h7hfdwv4j8h8y 84866 84865 2025-06-18T23:13:36Z Mehedi Abedin 7113 84866 wikitext text/x-wiki [[File:Horyu-ji06s3200.jpg|thumb|right|হোরিউ-জির প্যাগোডা]] '''''আসুকা 飛鳥''''' হলো নারা সমভূমির দক্ষিণ প্রান্তের একটি এলাকা, যেখানে জাপানে আদিম গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বেশি উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময়ে সেখানে এখনকার মতো কোনও শহর ছিল না। তবে রাজপ্রাসাদ এবং কিছু বৌদ্ধ মন্দির গড়ে উঠতে থাকে। কেইতাই সম্রাট আসুকার আশেপাশে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী ১৫ জন উত্তরসূরীর মধ্যে ৯ জনেরই প্রাসাদ ছিল এই এলাকায়। নারা শহর তৈরির আগের সময়কালটিকে সাধারণভাবে "আসুকা যুগ" বলা হয়। যদিও নারা ছিল এই সমভূমির প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে। আসুকা যুগ ছিল একটি পরিবর্তনকালীন সময়। সেসময় শাসন চলত সম্রাটের প্রাসাদ থেকে। প্রায় প্রতিটি সম্রাট তার নিজস্ব নতুন প্রাসাদ তৈরি করতেন। দীর্ঘ শাসনকালে প্রাসাদ একাধিকবার স্থানান্তরিত হত। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের আকার ছিল ছোট ও সরল—এমনকি দলিল-দস্তাবেজের সংরক্ষণাগারসহ তা সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল। ৬৪০ সালের দিকে প্রশাসন কিছুটা ভারী হতে শুরু করলে আগের মতো সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল না। পুরোপুরি স্থায়ী রাজধানী এবং প্রাসাদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসুকা যুগের একেবারে শেষ দিকে। তবে পরবর্তী ১০০ বছরে রাজধানী আরও তিনবার সরানো হয়। আরও কয়েকটি স্থানান্তরের প্রস্তাবও উঠেছিল। ==আসুকা যুগ== আসুকা যুগকে প্রধানত দুইটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বে, সোগা বংশের চারজন পরপর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজদরবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: সোগা নো ইনামে 蘇我の稲目, সোগা নো উমাকো 蘇我の馬子, সোগা নো এমিশি 蘇我の蝦夷 এবং সোগা নো ইরুকা 蘇我の入鹿। এই পর্বটি ৫৭২ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সোগা বংশের সহিংস পতনের পর। এই সময় রাজনীতির প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন তেন্‌চি 天智 (বা তেন্‌জি) তেন্নো, তাঁর ভাই তেম্মু 天武 তেন্নো এবং তেম্মুর বিধবা স্ত্রী জিতো 持統 তেন্নো; এই পর্বটি ৬৪৫ থেকে ৬৯২ সাল পর্যন্ত চলে। জিতো যখন তার ছেলে মোম্মু (文武) সম্রাটকে সিংহাসন হস্তান্তর করেন, তখন <i>নিহোন শোকি</i> নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থটির বিবরণ শেষ হয়। <i>কোজিকি</i> গ্রন্থটি ৬২৮ সালে সম্রাজ্ঞী সুইকো (搉古)-এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রথম ধাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন রাজপুত্র উমায়াদো (廐戸। তিনি "শোতোকু তাইশি" (聖徳太子) নামেও পরিচিত ছিলেন। তাকে “পবিত্র রাজপুত্র” বা “জ্ঞানী রাজপুত্র” বলা হত।তিনি সম্ভবতআসুকা যুগের একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নাম আজও প্রতিটি জাপানির কাছে পরিচিত। <i>নিহোন শোকি</i> গ্রন্থের লেখকরা তাঁকে আধুনিক জাপানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজও তিনি জাপানি সংস্কৃতিতে সম্মানীয় অবস্থানে আছেন, ঠিক যেমনভাবে আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটন বা ইংল্যান্ডে আলফ্রেড দ্য গ্রেট সম্মান পান। শোতোকু তাইশির ছবিও জাপানি মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। আসুকা যুগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই সময়ে জাপানে প্রচলিত আদি ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আদি ধর্মটি "শিন্তো" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কিছু জাপানি একচেটিয়াভাবে একটা ধর্মকে সমর্থন করলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উভয় ধর্মকে শ্রদ্ধা করত এবং জীবনের অংশ হিসেবে দুটিকেই অন্তর্ভুক্ত করার উপায় বের করত। সহজভাবে বলা যায়, শিন্‌তো বিয়ের ধর্ম হয়ে ওঠে, আর বৌদ্ধ ধর্ম শেষকৃত্যের ধর্ম। ===জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম=== জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা ঘটে ৫৩৮ সালে। এটি আসুকা যুগের শুরুর তারিখের আগের ঘটনা। ওই বছর পেকচে’র রাজা সং তাঁর রাজধানী পাহাড়ের নিরাপদ কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চল থেকে একটি প্রধান কৃষিভিত্তিক এলাকায় স্থানান্তর করেন। একইসঙ্গে তিনি পেকচের নাম পরিবর্তন করে “সাউদার্ন পুইয়ো” রাখেন, যদিও জাপানি ও চীনারা (এবং আধুনিক ইতিহাসবিদগণ) এটি উপেক্ষা করেন। তাঁর নতুন রাজধানীর স্থানটি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার পুইয়ো শহর (যেটিকে সাম্প্রতিক রোমানাইজেশনের সংস্কারে দক্ষিণ কোরিয়াররা বিভ্রান্তিকরভাবে “বুইয়ো” লিখে। তবে উচ্চারণ “পুইয়ো”)। এই নতুন রাজধানীতে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল একটি কাঠামোবদ্ধ শাসনব্যবস্থা গঠন যা আংশিকভাবে চীনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও তিনি সমসাময়িক কোগুরিও ও শিল্লা-তে চলমান সংস্কার দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাপানের রাজদরবারে দূত পাঠিয়ে বৌদ্ধ প্রতিমা ও ধর্মগ্রন্থ উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন যে এই ধর্ম জাদুকরীভাবে জাতিকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। তবে ওই সময় পেকচে রাজ্যের রাজধানীর বাইরে বৌদ্ধ ধর্মের তেমন কোনো প্রভাব পড়েছিল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ঘটনার প্রায় ২০০ বছর পরে, এক বিখ্যাত রাস্তাঘাটে উপদেশদাতা ভিক্ষুর কার্যক্রমের মাধ্যমে। যেহেতু জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হয়েছিল। তাই ৫৩৮ সালের ঘটনা এবং তার পরিণতি অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। <i>নিহন শোকি</i>-র পাশাপাশি প্রাচীন বৌদ্ধ উৎস থেকে অতিরিক্ত তথ্যও পাওয়া যায়। সংক্ষেপে, সোগা নো ইনামে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পক্ষে মত দেন এবং মনোনোবে 物部 বংশ এটি গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। কারণ এটি স্থানীয় দেবতাদের অবমাননা হিসেবে দেখা হয়। কিম্মেই তেন্নো ইনামেকে তাঁর বাড়িতে একটি ছোট বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি দেন এবং গোপনে উপাসনার সুযোগ দেন। ইনামের এক কন্যা ভিক্ষুণী হন। তবে, ৫৭১ সালে কিম্মেইর মৃত্যু হলে মনোনোবে নতুন শাসক বিদাৎসু-এর কাছ থেকে এই উপাসনালয় ধ্বংস ও ভিক্ষুণীদের গ্রেপ্তারের অনুমতি নেন। <i>নিহন শোকি</i>-তে এই ঘটনার বিবরণ অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেখানে বিদাৎসু তেন্নো ও তাঁর উত্তরসূরি ইয়োমেই তেন্নোর মৃত্যুশয্যায় বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। এটি ৮ম শতকের বৌদ্ধপন্থী মানদণ্ড অনুযায়ী তাঁদের আরও শ্রদ্ধাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা বলে মনে করা হয়। ৫৮৭ সালে সোগা ও মনোনোবে বংশের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়। এটি ইয়োমেইর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের ফলে ঘটে। এই যুদ্ধে সোগা বিজয়ী হয় এবং তখনই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা প্রকৃত অর্থে শুরু হয়। এটি ছিল সোগা বংশের প্রাধান্যের শুরু। প্রথমে এটা বোঝা কঠিন কেন জাপান বা কোরিয়ার যেকোনো রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে আত্মস্থ না করেও বৌদ্ধ ধর্মকে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্মের চেয়ে প্রাধান্য দেবে। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, জাপানে কোরীয় অভিবাসীদের মধ্যে কিছু বৌদ্ধ ছিল। তবে জাপানে এবং কোরিয়ার অন্যান্য রাজ্যেও বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হওয়া ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত, জনতার ইচ্ছা নয়। জাপানি সম্রাটকে বৌদ্ধ ধর্ম উপস্থাপন করার সময় পেকচের রাজা সং বলেন, এই ধর্ম একটি জাদুকরী শক্তি যা জাতিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। প্রাথমিক সময়ে জাপান ও কোরিয়াতে বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার মুক্তি বা আত্মদর্শনের মতো ব্যক্তিগত বার্তার চেয়ে, এর মূর্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের জাদুকরী শক্তির ওপরেই জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে অসুস্থতার সময় মানুষ বৌদ্ধ প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করত। শুরুতেই বৌদ্ধ ধর্মের স্বাগত জানানোর বড় কারণ ছিল কোরিয়া ও বিশেষ করে চীন থেকে আগত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তাঁরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং বাস্তব দক্ষতায় পারদর্শী, বিশেষত স্থাপত্যবিদ্যায়। আসুকা যুগ থেকে শুরু করে নারা যুগ পর্যন্ত জাপানে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প পরিচালিত হয় এসব অভিবাসী সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে। তাঁরা শুধু মন্দির নয়, সেতু ও দুর্গও নির্মাণ করতেন। সাধারণত চীন থেকে যারা জাপানে আসতেন, তাঁদের মধ্যে এরাই ছিলেন প্রধান। চীনা চিন্তাধারা ও প্রযুক্তি জাপানে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও ছিলেন তাঁরা। === সোগা বংশ === সোগা বংশের দাবি করা পূর্বপুরুষ ছিলেন জিংগু কোউগোর কোরিয়া বিজয়ে অংশগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি। এর ফলে তিনি ওজিন রাজবংশের সূচনালগ্নেই যুক্ত ছিলেন। সোগা নামক কোনো ব্যক্তির প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় নবম শতকের একটি গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে যে ওজিন রাজবংশের তৃতীয় শাসক রিচু তেন্নোর সময় কোরীয় অভিবাসীদের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা সংগঠিত করার প্রয়োজন পড়ে। এই উদ্দেশ্যে একটি দ্বিতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা হয় এবং তা তদারকির জন্য একটি নতুন পদ তৈরি করা হয়। ইউর্যাকু তেন্নোর শাসনকালে একটি তৃতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে এবং সোগা নো মাচি নো সুকুনে-কে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষয়গুলো সংগঠিত করার। তিনি একটি তালিকা প্রস্তুত করেন এবং (কোরীয়) হাতা বংশকে একটি সহায়ক ভাণ্ডার পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং (কোরীয়) আয়া বংশকে অন্যটির। ৬৪৫ সালে সোগা বংশ পরাজিত হলে আয়া বংশের সৈন্যরা তাদের পাশে দাঁড়ায়। সোগা বংশ কখনো সামরিক ঘটনায় জড়িত ছিল না, বরং সবসময়ই আর্থিক কার্যক্রম এবং কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৫৫৩ সালে সোগা নো ইনামে শাসকের আদেশে জাহাজ কর নিরীক্ষণের জন্য একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছর পর ইনামে সমুদ্রবন্দর নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেকটি দপ্তর স্থাপন করেন। এতে বোঝা যায়, সোগা বংশ যোদ্ধার চেয়ে প্রশাসক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। কেইতাই তেন্নোর মৃত্যুর পর যে সময়ে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজদরবার ছিল বলে মনে করা হয়, সেই সময়ে সোগা বংশ অত্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। সোগা বংশ কিম্মেই তেন্নোর রাজদরবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ওটোমো বংশ আনকান ও সেনকা নামক বিকল্প শাসকদের সমর্থন করত। সেনকার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় রাজদরবার বিলুপ্ত হলে ওটোমো বংশ রাজনৈতিক প্রভাব হারায় এবং সোগা বংশ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিফলিত হয় ‘সোগা নো ও-ওমি’ নামে সোগা প্রধানের উল্লেখে, যেখানে আগে ‘ও-ওমি’ (大臣) উপাধিটি কেবলমাত্র ওটোমো বংশের জন্যই ব্যবহৃত হতো। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইয়ামাতো রাষ্ট্র সামরিকমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে এক নতুন ধারা গ্রহণ করে। এটি ওজিন রাজবংশের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কেইতাইয়ের শাসনামলে পর্যন্ত বজায় ছিল। উল্লেখ্য, ‘ও-ওমি’ উপাধিটি বুঝতে হবে ‘ও’ (大) অর্থাৎ ‘বড়’ বা ‘মহান’ এবং ‘ওমি’ (臣)। এটি চীনা অক্ষরে লেখা ও ‘রাষ্ট্রের মন্ত্রী’ অর্থে ব্যবহৃত হতো। একই দুটি চীনা অক্ষর চীনা উচ্চারণে ‘দাইজিন’ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আপনি হয়তো এই রূপেও একে অন্যান্য গ্রন্থে দেখতে পারেন। আসুকা ও নারা যুগে এই শব্দগুলো সাধারণত জাপানি উচ্চারণেই উচ্চারিত হতো। তবে হেইয়ান যুগে এবং পরবর্তীকালে সেগুলো চীনা উচ্চারণে ব্যবহৃত হতে থাকে। নবম শতকে হেইয়ান যুগের শুরুতে প্রায় সব অভিজাত ব্যক্তি চীনা পড়তে ও লিখতে পারতেন, অধিকাংশ সরকারি দলিল চীনা ভাষায় লেখা হতো। সরকারের কারিগরি পরিভাষায় চীনা উচ্চারণ ব্যবহারের রীতি শুরু হয় যা এমনকি জাপানি ভাষার বিস্তৃত প্রচলনের পরও চালু থাকে এবং আজও বহাল রয়েছে। আধুনিক জাপানি গদ্যের একটি বড় অংশই চীনা ঋণশব্দে গঠিত। ৫৪৮ থেকে ৫৫৪ সালের মধ্যে কোরিয়ায় সিল্লা সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তারা কোগুর্যো ও পেকচেকে পরাজিত করে। ৫৫৪ সালে পেকচের রাজা সঙ যুদ্ধে নিহত হন এবং কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল পেকচে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে তা টিকে থাকে, যদিও আগের চেয়ে ছোট এবং দুর্বল অবস্থায়। এই সময়ে জাপান কোরিয়ায় ছোট আকারের বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তা সিল্লার মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সিল্লা ৫৬২ সালে মিমানা অঞ্চল পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে। জাপান এরপর একটি বড় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা পরাজিত হয় এবং তাদের নেতারা বন্দি হয়। এরপর থেকে ওটোমো বংশের উল্লেখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজদরবারে প্রধান দুই ব্যক্তি হিসেবে সোগা নো ইনামে এবং মোনোনোবি নো ওকোশির নাম উঠে আসে। এরপর ২০০ বছর ধরে জাপানি রাজদরবার সিল্লাকে আক্রমণ করে মিমানার উপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চিন্তা করে, মাঝে মাঝে বাহিনী ও রসদ সংগ্রহের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো থেকে বিশেষ কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সোগা বংশ সম্ভবত কাজুরাকি বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তারা ওজিন রাজবংশের শুরুতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। ওজিন রাজবংশের কয়েকজন শাসকের মা ছিলেন কাজুরাকি বংশীয়। সোগা বংশ কেইতাই রাজবংশের সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক স্থাপন করে। সোগা নো ইনামে তার দুই কন্যাকে কিম্মেই তেন্নোর সঙ্গে বিয়ে দেন—কিতাশিহিমে ছিলেন ইয়োমেই ও সুইকো তেন্নোর মা (সুইকো ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর বিধবা)। ওয়ানেকিমি ছিলেন সুশুন তেন্নোর মা। উমায়াদো রাজকুমারের দাদী ছিলেন কিতাশিহিমে পিতৃপক্ষ থেকে ও ওয়ানেকিমি মাতৃপক্ষ থেকে। লক্ষ্যণীয়, মোনোনোবি বংশের সামাজিক অবস্থান এ ধরনের সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কাজুরাকি ও সোগা বংশ রাজপরিবারের শাখা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু মোনোনোবি বংশ নয়। মোনোনোবি বংশ উত্তরাধিকারসূত্রে ‘ও-মুরাজি’ (大連) উপাধি ধারণ করত। এটি ওটোমো এবং পরে সোগা বংশের ‘ও-ওমি’ উপাধির সমপর্যায়ে ছিল। এই দুই উপাধিধারী ব্যক্তি সরকারের (যথাসম্ভব) সর্বোচ্চ "মন্ত্রী" হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও ‘ওমি’ বা ‘মুরাজি’ উপাধিধারী পরিবারগুলো ছিল। অধিকাংশ ‘ওমি’ উপাধিধারী পরিবারগুলোর নাম ছিল স্থাননামভিত্তিক। তারা কিনাই অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কাজুরাকি, হেগুরি, ওয়ানি, কোসে, কি এবং পরে সোগা—এইগুলো তার উদাহরণ। এদের বেশিরভাগই রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বংশধর বলে দাবি করত। যদি ‘হোর্স রাইডার’ তত্ত্ব সত্যি হয়। তবে এরা ছিল ওজিনের সম্প্রসারিত পরিবারের সদস্য এবং আগ্রাসী বাহিনীর অংশ। অপরদিকে, ‘মুরাজি’ পরিবারগুলোর নাম ছিল পেশাভিত্তিক। যেমন ইমবে (আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী), ইউকে (ধনুক প্রস্তুতকারী), কাগামিৎসুকুরি (আয়না নির্মাতা), হাজি (মৃৎপাত্র প্রস্তুতকারী), ত্সুমোরি (নিরাপত্তা রক্ষক), ইনুকাই (কুকুর পালক)। অবশ্যই মোনোনোবি (লোহার কাজ)। কৌতূহলজনকভাবে, ‘ও-ওমি’ ওটোমো বংশের নামও একটি পেশাভিত্তিক নাম ছিল। তবে তাদের পেশা ছিল বিশেষ—‘তোমো’ অর্থাৎ ‘সৈনিক’, যার পূর্বে ‘ও’ যুক্ত হওয়ায় বোঝানো হয় যে তারা সাধারণ সৈনিক নয়, বরং কমান্ডার। এই সব বংশই অভিজাত ছিল। তবে ধারণা করা হয় ‘মুরাজি’ পরিবারগুলো ওই পেশার কারিগরদের নেতৃত্ব দিত, নিজেরা সরাসরি সেই কাজ করত না। তবে তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল ‘ওমি’ বংশের চেয়ে কম। তাদের রাজপরিবারে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল। মোনোনোবি বংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত ‘নিগিহায়াহি নো মিকোতো’ ছিলেন এক দেবতার বংশধর। তিনি জিন্মু তেন্নো কর্তৃক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই পৃথিবীতে আগমন করেন। শুরুতে তিনি জিন্মুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে দেবতারা জিন্মুর পক্ষে আছেন। তখন পক্ষ পরিবর্তন করেন। মোনোনোবি নামটি ‘নিহন শোকি’-র সুইনিন তেন্নো এবং চুয়াই তেন্নোর অধ্যায়ে দেখা যায়, যেগুলো ওজিন রাজবংশের আগের। যদি এর কোনো সত্যতা থাকে। তবে মোনোনোবিরা ওজিনের নেতৃত্বে আগমনকারী আগ্রাসীদের আগেই জাপানে অভিজাত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইনগ্যো তেন্নোর মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র রাজকুমার কারু এবং রাজকুমার আনাহো (যিনি পরে আনকো তেন্নো হন)-র মধ্যে উত্তরাধিকারের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মোনোনোবি নো ওমায়ে নো সুকুনে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুরুতে রাজকুমার কারুর সমর্থক ছিলেন। ‘কোজিকি’-র মতে, তিনি কারুকে আনাহোর কাছে তুলে দেন যিনি তাকে হত্যা করেন, আর ‘নিহন শোকি’-র মতে, তিনি রাজকুমার কারুকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন। যেভাবেই হোক, তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই বংশের সদস্যদের নিয়ে অধিকাংশ কাহিনি সামরিক বা অপরাধী দমন সংক্রান্ত। ব্যতিক্রম কিছু থাকলেও, ওটোমো বংশ প্রধানত কোরিয়ায় যুদ্ধ করত, আর মোনোনোবি বংশ প্রধানত জাপানের অভ্যন্তরেই সক্রিয় ছিল। কোরিয়ায় তাদের একমাত্র যুদ্ধ ছিল মিমানায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, সিল্লার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ নয়। আরেকটি পার্থক্য ছিল, মোনোনোবি বংশ ধর্মের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। যেসব বংশ নিজেদের দেবতাদের বংশধর হিসেবে দাবি করত, তাদের নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ছিল। এটি পরবর্তীতে (বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর) ঐ দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতো। সুজিন রাজবংশের প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র মি (臣) পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ইসোনোকামি মন্দির ছিল মোনোনোবি বংশের বিশেষ উপাসনাস্থল। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করা যায়, সোগা নেতারা—অথবা অন্তত সোগা নো উমাকো—জাপানকে আরও সভ্য করে তোলার (অর্থাৎ চীনের মতো করে তোলার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি পেকচে ও কোগুর্যোতে চলমান পরিবর্তনের প্রতিফলন ছিল। এবং ঐ সময়ে ‘চীনের মতো’ হওয়া মানেই ছিল ‘বৌদ্ধ’ হওয়া। দুই বংশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বও এই সংঘাতের পিছনে ছিল। এটি প্রাচীন সময়ে বিরল একটি ঘটনা। জাপানে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে প্রচেষ্টা এই সময়কার ইতিহাসের মূল বিষয়, তার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিমমেইর শাসনামলে চীনের উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলো উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বন্টনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করছিল। এই পরিবর্তনগুলো কোগুরিয়োর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে কোগুরিও এসব তথ্য জাপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কারণ কিমমেইর শাসনের শেষদিকে কোগুরিও এবং জাপানের মধ্যে সিলা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের উত্তর দিয়ে জাপান সাগর অতিক্রম করে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই চীনা রাজবংশগুলো ছিল বর্বর উত্সের এবং প্রবলভাবে অভিজাত শ্রেণিনির্ভর। এটি জাপান এবং কোরিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মতোই। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা ছিল কৃষিজ আয় থেকে কর আদায় সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা, যেখানে প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে পর্যাপ্ত জমি বরাদ্দ দেওয়া হতো যাতে তারা নির্দিষ্ট হারে কর দিতে পারে—ফলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী কর নির্ধারণের জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এড়ানো যেত। এজন্য জনসংখ্যার নিয়মিত জনগণনা করতে হতো এবং যেসব পরিবার ছোট হয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে যেসব পরিবার বড় হয়েছে তাদের দেওয়া হতো। এ ব্যবস্থা তখনকার উত্তর চীনে সম্ভব ছিল, কারণ চীন রাজবংশ পতনের পর বর্বর আক্রমণের ফলে সেখানে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না, যদিও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল যথেষ্ট। কর আদায় হতো কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যার ভিত্তিতে। কোগুরিও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পরে জাপানও অনুসরণ করে। ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা কোগুরিও এবং জাপানে তখনকার প্রচলিত পদ্ধতির খুব ভিন্ন ছিল না, কারণ সেখানে বিদ্যমান কৃষক জনগোষ্ঠী দখল করে অভিজাত শ্রেণি গঠিত হয়েছিল। তবে এটি নিছক অনুমান, কারণ কৃষক ও অভিজাতদের সম্পর্ক সম্পর্কে আমাদের এই সময়ের কিছুই জানা নেই। শুধু “বে” নামক পদ্ধতিতে শিল্পীদের সংগঠিত করার ধরন করভিত্তিক উৎপাদন কোটার ভিত্তিতে পরিচালিত বলেই ধারণা করা যায় যে কৃষকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। এই সময়ে জাপানে কোগুরিয়োর প্রভাব যে ছিল তা প্রমাণ হয় “কোরিয়ো ফুট”-এর সর্বত্র উপস্থিতি থেকে (কোরিয়ো হলো কোগুরিয়োর বিকল্প নাম এবং পরবর্তী কোরিয়ো রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি “Korea” নামটি এসেছে)। এটি ছিল একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক। এটি চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪–৫৫০) নির্ধারণ করেছিল, পরে কোগুরিও তা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকে জাপানে পৌঁছে। এক ফুট বা “শাকু” ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন, এই এককটি জাপানের বহু প্রাচীন স্থাপনার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া আসুকাদেরা (দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির) অন্যতম। কোগুরিও থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হয়, ইশিবুতাই কোফুন (৬২৬ সালে মৃত সোগা নো উমাকোর সমাধি বলে মনে করা হয়) এবং বিদাতসু সম্রাটের পর সকল সম্রাটের কোফুন তৈরিতে কোরিয়ো ফুট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন জাপানি লেখাগুলোতেও বারবার উল্লেখ আছে যে কোগুরিওর আচার-আচরণ, ধর্ম, সংগীত ও নৃত্য জাপানিদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মিলপূর্ণ ছিল। বিশেষত কোগুরিও থেকে আগত নৃত্যশিল্পীরা খুব জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে ছোট আকারের কোফুনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, এতটাই যে বর্তমানে জাপানে টিকে থাকা প্রায় ৯০% কোফুনই এই শেষ কোফুন যুগের ছোট সমাধি। অনেকগুলোই গোলাকৃতি টিলা, প্রায় ১০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট, যেগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামো বড় কোফুনগুলোর মতোই। তবে অনেক কোফুন ছোট ছোট গুহার মতো, যেগুলো পাহাড় বা খাড়ির পাশে খোদাই করে কফিনের সমান আকারে বানানো হয়েছে। এ ধরনের কোফুন সাধারণত গুচ্ছাকারে পাওয়া যায় এবং প্রায়শই কাছাকাছি এলাকায় একই সময়ে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচের ছোট কোফুন পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় পাহাড়ের পাশে এমন অনেক কোফুন পাওয়া গেছে যার সংখ্যা ডজন বা শতাধিক। এ থেকে ধারণা করা যায়, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এই যুগে অনেক বেশি লোককে আলাদা সমাধি নির্মাণযোগ্য মনে করা হতো। রাজাদের ছাড়া আর বড় সমাধি নির্মাণ হতো না। যেহেতু সম্পদ বহুজনের মাঝে ভাগ করতে হতো। তাই প্রতিটি সমাধি ছোট ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হতে বাধ্য ছিল। ধারণা করা হয়, এটি অভিজাত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন নির্দেশ করে—গোত্রপ্রধানের ক্ষমতা হ্রাস এবং গোত্রের সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব জমিজমা ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিক যুগে গোত্রভিত্তিক অভিজাতরা যৌথভাবে গোত্রের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত এবং গোত্রপ্রধান তা বণ্টন করত। কিন্তু ৫৫০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে, যখন গোত্রের সদস্যরা নিজেদের আলাদা জমির ওপর অধিকারে থাকতেন এবং নিজের আয় নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে তারা এখনো সমাধিগুলো একই গোত্র কবরস্থানে তৈরি করতেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়, ফলে সম্মিলিত উপাদান পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। উল্লেখযোগ্য, “ছোট” সমাধি হলেও তাতে বহু টন ওজনের পাথর ব্যবহার করা হতো এবং অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হতো। ৬৪৬ সালের একটি ফরমান অনুযায়ী সমাধির আকার নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল—একজন রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে ৭ দিনে ১০০০ শ্রমিক, মন্ত্রীর জন্য ৫ দিনে ৫০০, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ৩ দিনে ২৫০, মধ্যমপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ১০০ এবং নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ৫০ শ্রমিক নিযুক্ত হবে। <i>নিহন শোকি</i>-তে ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে আগত দূত বন্ধুকে ঘিরে একটি অবিশ্বাস্য গল্প রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তখনকার জাপানি রাজদরবারে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুই দল লেখক ছিল, তারাই শুধু কোগুরিওর রাজার প্রেরিত চীনা ভাষায় চিঠি পড়তে পারত। এই দুই পরিবার ছিল কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে—দুজনেই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে)। যতদূর জানা যায়, ওমি শ্রেণির কোনো জাপানি অভিজাত চীনা ভাষায় পড়া-লেখা শেখার মতো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবেননি, যেমন রেশম বোনা শেখাও অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। এই অবস্থা দুই শতাব্দী ধরে চলেছে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবার শিক্ষিত হতে শুরু করে। ৫৮৫ সালে বিদাতসু সম্রাটের মৃত্যুর পর সোগা এবং মোনোনোবে গোত্রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। কোফুন যুগে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সমাধি নির্মাণে অনেক সময় লাগত—দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত। এসময় মরদেহ একটি অস্থায়ী ভবনে রাখা হতো, যাকে বলা হতো মোগারি নো মিয়া। এখানে মরদেহ স্থাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হতো এবং <i>নিহন শোকি</i> অনুযায়ী এই অনুষ্ঠানে সোগা নো উমাকো এবং মোনোনোবে নো মরিয়া পরস্পরের প্রতি প্রকাশ্যে অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিদাতসুর একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র ছিলেন, যার মা ছিলেন মর্যাদাসম্পন্ন, যার নাম ছিল রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাসকের ভাইয়েরও সিংহাসনের দাবির অধিকার ছিল। কিমমেই সম্রাটের বহু উচ্চস্তরের স্ত্রী ছিলেন, যার মধ্যে সোগা নো ইনামের দুই কন্যাও ছিলেন। নির্বাচিত উত্তরসূরি ছিলেন সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে। তিনি ইয়োমেই সম্রাট হন। বড় ভাই ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ওয়ে এবং আরেক ভাই রাজকুমার আনাহোবেও নিজের উত্তরাধিকারের দাবি জানান। ইয়োমেই রাজা হওয়ার পর আনাহোবে বিদাতসুর রানি কাশিকিয়াহিমেকে জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। তিনি তখন অস্থায়ী সমাধিস্থলে ছিলেন। সমাধির রক্ষী বাহিনীর প্রধান এতে বাধা দেন। এরপর রাজকুমার আনাহোবে সোগা এবং মোনোনোবে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন এবং রক্ষী পদারকে হত্যা করার অনুমতি চান। এটি তাকে দেওয়া হয়। ওই পদার পালানোর চেষ্টা করলেও আনাহোবে তার অবস্থান জেনে মোনোনোবে নো মরিয়াকে তাকে ও তার সন্তানদের হত্যা করতে বলেন। মরিয়া নিজেই তা করেন। সোগা নো উমাকো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। <i>নিহন শোকি</i> অনুসারে, এই ঘটনাই সোগা ও কাশিকিয়াহিমের (পরবর্তীকালে সুইকো সম্রাজ্ঞী) মধ্যে মোনোনোবে নো মরিয়ার প্রতি তীব্র শত্রুতা জন্ম দেয়। ইয়োমেই সম্রাট তেন্নো ৫৮৭ সালে রাজত্ব কাল দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান। তখন আবারও সিংহাসনের প্রশ্ন ওঠে। তার অসুস্থতা কয়েক মাস ধরে চলায় প্রতিযোগীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পায়। আক্রমণের আশঙ্কায় মোরিয়া ইয়ামাতোর বাইরে নিজের দূর্গে সরে গিয়ে সেনা সংগ্রহ শুরু করেন। তখন মোরিয়ার অন্যতম মিত্র ছিলেন নাকাতোমি নো কাতসুমি নো মুরাজি। ''নিহন শোকি'' অনুসারে তিনি ডাকিনীবিদ্যার মাধ্যমে মনোনীত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রাসাদে জাদুকরী বস্তু রাখার উদ্দেশ্যে যান। কিন্তু প্রাসাদ ত্যাগ করার সময় রাজকুমারের এক প্রহরীর হাতে নিহত হন। সবকিছু ইয়োমেইর মৃত্যুর আগেই ঘটে। তাঁর মৃত্যুর অল্প সময়ের মধ্যেই মনোনোব নো মোরিয়া রাজকুমার আনাহোবেকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি উত্তরাধিকার নিয়ে সংঘর্ষের জন্য সৈন্যদের জড়ো করার অজুহাত হিসাবে একটি শিকারের দল করতে চলেছেন। তবে এটি ফাঁস হয়ে যায়। সোগা নো উমাকো সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের আদেশে সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের অবিলম্বে যুবরাজ আনাহোবেকে হত্যার নির্দেশ দেন। তারা এই ধরনের কাজের প্রচলিত সেরা পদ্ধতি হিসেবে রাতের বেলায় তার প্রাসাদে হামলা চালান। এরপর সোগা একটি বড় বাহিনী গঠন করে মরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এতে বহু রাজকুমার, যেমন রাজকুমার হাতসুসেবে (ভবিষ্যতের সুশুন সম্রাট), রাজকুমার উমায়াদো সহ প্রচুর সংখ্যক রাজকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও ইয়ামাতোর প্রায় সমস্ত "ওমি" শ্রেণির আঞ্চলিক উজি সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট অভিজাত উজির দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরিয়া প্রস্তুত ছিলেন, ফলে কোনও গণহত্যা না হয়ে সরাসরি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে পরিণত হয়। ফলাফল কিছু সময়ের জন্য সন্দেহের মধ্যে ছিল। মনোনোবকে সমর্থনকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত গোষ্ঠীগুলি সকলেই ইয়ামাতোর বাইরের গোত্র থেকে ছিল। মনোনোবের বাহিনী ইয়ামাতোর পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। অন্যদিকে সোগার সেনাবাহিনী সম্ভবত আসুকা থেকে শুরু করে আনামুশি গিরিপথ পেরিয়ে একা নদীর কাছে হয়। একা নদীতে মনোনোব সেনাবাহিনী পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই নদীর অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এটি ফুরুচির ঠিক পশ্চিমে আধুনিক ইশি নদী ছিল বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এটি সম্ভবত বর্তমান ইশি নদী। মরিয়ার বাসভবন ছিল শিবুকাওয়াতে। অনুমিত যুদ্ধক্ষেত্রের উত্তর-পশ্চিমে অল্প দূরত্বে। যুবরাজ উমায়াদো তখন তরুণ কেবল তরুণ হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। তিনি সঙ্কটের মুহুর্তে একটি শপথ করেন যে তার পক্ষ বিজয়ী হলে একটি বৌদ্ধ মন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এই কথা শুনে সোগা নো উমাকো নিজেও একই শপথ নেন। এর পরপরই মনোনোব নো মোরিয়া একটি তীরের আঘাতে নিহত হন এবং তার বাহিনী ভেঙে পড়ে। <i>নিহন শোকি</i> জানায়, যুদ্ধস্থলে কয়েক শত লাশ পড়ে ছিল। এটি আরও বলেছে যে মনোনোব বংশের অনেক সদস্য অস্পষ্টতায় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্যরা বংশকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করার কোনও অভিপ্রায় অস্বীকার করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন উপাধি গ্রহণ করেন। আদালত নিঃসন্দেহে ইসোনোকামি বংশ গঠন সহ্য করেছিল। কারণ কেবলমাত্র মানুষের লড়াইয়ের কারণে মনোনোব বংশ প্রতিষ্ঠাকারী দেবতাকে অবহেলা করা অনুচিত হত। তারা ভেবেছি, যে দেবতাদের যথাযথভাবে পূজা করা হত না তারা ক্রুদ্ধ হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করত। মনোনোব বংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমরা ৬০৮ সালে একটি চীনা দূতাবাসের প্রেক্ষাপটে একজন মনোনোব নো ইউকিমি নো মুরাজি একজন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে দেখি। মনোনোবে গোত্র ধ্বংস হয়নি পুরোপুরি—৬০৮ সালে একজন মনোনোবে নো ইউকিমি নো মুরাজিকে চীনা দূতাবন্ধুর প্রেক্ষাপটে পদার হিসেবে দেখা যায়। নামটি পরবর্তীতেও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়। তবে আর কখনও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়নি। ইতিহাসের এই যুগের মূল বিষয় রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জাপানি প্রচেষ্টার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হলো কিম্মেইয়ের সময়েই উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলি উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বণ্টন ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করছিল। চীনের এই বিকাশগুলি কোগুরিওর উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। কোগুরিও জাপানকে এই জাতীয় জিনিস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ কিমেইয়ের রাজত্বের শেষার্ধে কোগুরিও এবং জাপান জাপান জুড়ে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এটি সিলার নিয়ন্ত্রণের অঞ্চলের উত্তরে চলে যায়। এই চীনা রাজবংশগুলি বর্বর বংশোদ্ভূত এবং অত্যন্ত অভিজাত ছিল, অনেকটা জাপান এবং কোরিয়ান রাজ্যগুলির মতো। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থাটি প্রতিটি কৃষক পরিবারকে স্থির কর প্রদানের অনুমতি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে এমন গ্যারান্টি দিয়ে কৃষিকাজ থেকে করের রিটার্নকে সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রতিটি পরিবারকে তাদের জমির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন করের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করার জন্য সমস্ত প্রশাসনিক মাথাব্যথা এবং ব্যয় সাশ্রয় করে। এর জন্য জনসংখ্যার একটি পর্যায়ক্রমিক আদমশুমারি নেওয়া এবং তারপরে আকারে সঙ্কুচিত পরিবারগুলির কাছ থেকে জমি নেওয়া এবং আকারে বেড়ে ওঠা পরিবারগুলিকে জমি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটি করা সম্ভব ছিল কারণ, এই সময়ে উত্তর চীনে সম্ভাব্য আবাদযোগ্য জমির পরিমাণের তুলনায় কৃষি জনশক্তির ঘাটতি ছিল। চিন রাজবংশের পতনের পরে বর্বর আক্রমণের কারণে স্থানচ্যুতির কারণে এই অবস্থা হয়। উপলব্ধ শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতে কর গণনা করা হয়েছিল। কোগুরিও এই সিস্টেমটি অনুলিপি করেছিল এবং জাপানও শেষ পর্যন্ত এটি করেছিল। এটি অনুমান করা হয় যে,এটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান কৃষক জনসংখ্যার বিজয়ের মাধ্যমে অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে কোগুরিও এবং জাপানে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির থেকে আলাদা ছিল না। এটি অনুমান হিসাবে রয়ে গেছে কারণ আমরা এই সময়কালে কৃষক এবং অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানি না, কারিগর শ্রমিকদের সংগঠিত করার "হতে" সিস্টেমটি উত্পাদন কোটার মাধ্যমে করের উপর ভিত্তি করে অনেকটা একের মতো দেখায়, এটি প্রশংসনীয় করে তোলে যে কৃষকরা একইভাবে সংগঠিত হয়েছিল। আমরা জানি যে "কোরিও ফুট" এর সর্বত্র উপস্থিতির কারণে এই সময় থেকে জাপানে কোগুরিওর যথেষ্ট প্রভাব ছিল (কোরিও কোগুরিওর একটি বিকল্প নাম এবং পরবর্তী সময়ের কোরিও রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি নাম "কোরিয়া" এর ভিত্তি)। এটি পরিমাপের একটি ইউনিট ছিল। চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪-৫৫০) কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোগুরিওতে গৃহীত হয়। সেখান থেকে এটি জাপানে চলে যায়। এক ফুট ("শাকু") ৩৫ সেন্টিমিটার ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন যে এই ইউনিটটি দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির (৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু) সহ অনেক প্রাচীন ভবন নির্মাণে নিযুক্ত ছিল। কোগুরিওর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা জাপানে বৌদ্ধধর্মের প্রাথমিক প্রসারে বিশিষ্ট ছিলেন। কোরিও পা স্পষ্টতই ইশিবুতাই কোফুন (সোগা নো উমাকোর নামী সমাধি। তিনি ৬২৬ সালে মারা গিয়েছিলেন) এবং বিদাতসু তেন্নোর সমস্ত রাজকীয় কোফুন স্থাপনেও ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রারম্ভিক জাপানি লেখাগুলিতেও অনেকগুলি উল্লেখ রয়েছে যা মন্তব্য করে যে তারা কোগুরিওকে রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার, (ঐতিহ্যবাহী) ধর্ম এবং সংগীত এবং নৃত্যের ক্ষেত্রে কতটা অনুরূপ বলে মনে করেছিল। কোগুরিওর নৃত্যশিল্পীরা স্পষ্টতই বিশেষত জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক জ্ঞানটি হলো ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতাব্দীর সময়কালে ছোট কোফুনের সংখ্যায় অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানের সমস্ত বেঁচে থাকা কোফুনের প্রায় ৯০% এর মধ্যে প্রায় ৯০% কোফুন যুগের শেষের দিকে ছোট সমাধি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকগুলি প্রায় ১০ মিটার জুড়ে গোলাকার ঢিবি রয়েছে যা একই ধরণের সমাধি কক্ষ যা বড় সমাধিগুলিতে পাওয়া যায়। বিশেষত প্রচুর সংখ্যক সমাধি রয়েছে। সেগুলোকে সাধারণত কফিনের চেয়ে সবেমাত্র বড় পাহাড়ের পাশে ছোট ছোট টানেল চালিয়ে দলবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই এটি একই বয়সের অন্যান্য ছোট কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে নির্মিত কোফুনের কাছাকাছি পাওয়া যায়। ক্লিফসাইড সমাধি সহ কিছু অঞ্চল রয়েছে। সেখানে কয়েক ডজন এবং এমনকি শত শত ছোট উন্মুক্ত স্থায়ী সমাধি রয়েছে। স্বভাবতই এর অর্থ এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে একটি বিস্তৃতভাবে নির্মিত সমাধি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হত। সত্যিই বিশাল সমাধি আর সম্রাটদের জন্য নির্মিত হয়নি। যখন উপলব্ধ সংস্থানগুলি অনেকগুলি জুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে, তখন পৃথক সমাধিগুলি অবশ্যই ছোট এবং কম ব্যয়বহুল হতে হবে। ধারণা করা হয় যে,এটি অভিজাত সমাজের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। অর্থাত এটি বংশ প্রধানের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং বংশের কম সদস্যদের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। একটি চিত্র পাওয়া যায়, প্রথম দিনগুলিতে অভিজাত গোষ্ঠী একটি সম্মিলিত গোষ্ঠী হিসাবে তার অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং বংশের মোট সম্পদ কোনও না কোনও অর্থে বংশের প্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। তবে ৫৫০ এবং তার পরে বংশের সদস্যরা ধীরে ধীরে তুলনামূলকভাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জমিদার এস্টেটের মালিকদের মতো হয়ে উঠেছিলেন। এর মধ্যে তারা তাদের নিজস্ব রাজস্ব নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যাইহোক, তারা এখনও ঘনীভূত বংশের কবরস্থানে তাদের সমাধিগুলি তৈরি করেছিল। তাই সম্মিলিত উপাদানটি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এটি উল্লেখ করা উচিত, যখন আমরা "ছোট" সমাধিগুলির কথা বলি, তখন তারা এখনও বহু-টন শিলাগুলির সংখ্যা নিয়োগ করে এবং নির্মাণের জন্য প্রচুর জনশক্তির প্রয়োজন হয়। সমাধিগুলির স্কেল নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ৬৪৬ এর একটি আদেশ রয়েছে যা কী প্রয়োজন ছিল তার একটি ধারণা দেয়। আদেশে বলা হয়, একজন রাজপুত্রের একটি সমাধি থাকতে হবে যাতে সাত দিনের জন্য ১০০০ শ্রমিক শ্রম দিতে হবে, একজন মন্ত্রীর সমাধি ৫০০ শ্রমিক দিয়ে ৫ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমাধি ২৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ৩ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ১০০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে এবং নিচু পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে। ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে দূতাবাসের আগমন সম্পর্কিত ''নিহন শোকিতে'' একটি বরং অবিশ্বাস্য উপাখ্যান রয়েছে যা চিত্রিত করে যে সেই সময়ে জাপানি আদালতে পূর্ব ও পশ্চিমের লিপিকার নামে পরিচিত লিপিকারদের দুটি কর্পস ছিল এবং কেবল তারাই কোগুরিও রাজার পাঠানো চিঠিটি এবং চীনা ভাষায় লেখা পড়ার আশা করা যেতে পারে। তারা দুটি পরিবার ছিল, কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে, উভয়ই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে ছিল)। যতদূর নির্ধারণ করা যায় যে ওমি শ্রেণীর কোনও উপযুক্ত জাপানি অভিজাত এখনও পর্যন্ত কীভাবে পড়তে এবং লিখতে হয় তা শিখতে পছন্দ করেনি (অগত্যা চীনা ভাষায়), তিনি কীভাবে রেশম বুনতে হয় তা শেখার চেয়ে বেশি পছন্দসই বলে মনে করেননি। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছিল। পরবর্তী প্রজন্মই প্রথম সাক্ষর হয়। সোগা এবং মনোনোব গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ অবিলম্বে ৫৮৫ সালে বিদাতসু তেন্নোর মৃত্যুর থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কোফুন সময়কালে, কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমাধির আকারের কারণে, মৃত্যুর সময় এবং দাফনের মধ্যে প্রায়শই যথেষ্ট বিলম্ব হত, দুই বছর পর্যন্ত, বা এমনকি চরম ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত। এই সময়ে মরদেহটি মোগারি নো মিয়া নামে একটি অস্থায়ী সুবিধায় রাখা হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' মতে, এই স্থানে দেহ স্থাপনের বিষয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল এবং এই অনুষ্ঠান চলাকালীন বিদাতসু তেন্নো সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়া পারস্পরিক অবজ্ঞা প্রকাশ করতে দেখা যায়। উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ ছিল। বিদাতসুর একজন বিশিষ্ট মায়ের সাথে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ছিল যার দৃঢ় দাবি ছিল। ইনি রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ও। যাইহোক, একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রথাও ছিল যে একজন শাসকের ভাইয়ের উত্তরাধিকারের দাবি ছিল এবং বিদাতসুর বেশ কয়েকটি ভাই ছিল। কিম্মেই তেন্নোর সোগা নো ইনামের দুই কন্যা সহ প্রচুর উচ্চ-মর্যাদার স্ত্রী ছিল। নির্বাচিত প্রার্থী আসলে সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে ছিলেন যিনি ইয়োমেই তেন্নো হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় ভাই ছিলেন ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ও, যার মা সেনকা তেন্নোর কন্যা ছিলেন এবং ''নিহন শোকির'' মতে আরেক বিশিষ্ট ভাই রাজকুমার আনাহোবে প্রকাশ্যে নিজের জন্য উত্তরাধিকার দাবি করেন। ইয়োমেই ইতিমধ্যে সিংহাসনে আরোহণ করার পরে যুবরাজ আনাহোবে অস্থায়ী সমাধি এবং বিদাতসুর সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টা করেন। তিনি শেষকৃত্য অবধি সেখানে শোকে বাস করছিলেন, যাকে তিনি সিংহাসনে তার দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। অস্থায়ী সমাধিতে রক্ষীদের কমান্ডার তাকে প্রতিহত করেন। যুবরাজ আনাহোবে তখন দুই মন্ত্রী, সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়ার কাছে গিয়েছিলেন এবং অভিযোগ করেন যে এই কর্মকর্তা তাকে অপমান করেছেন এবং তাকে হত্যা করার অধিকার দাবি করেছেন। এটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। পদার পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজপুত্র তিনি কোথায় ছিলেন (প্রাক্তন সম্রাজ্ঞীর একটি গ্রামীণ প্রাসাদ) তা খুঁজে পেয়েছিলেন এবং মনোনোবে নো মোরিয়াকে তাকে এবং তার সন্তানদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটি মোরিয়া ব্যক্তিগতভাবে করেন। সোগা নো উমাকো এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এই সময় থেকে সোগা নো উমাকো এবং কাশিকিয়াহিমে (ভবিষ্যতের সুইকো তেন্নো) মনোনোব নো মোরিয়ার প্রতি একটি শক্তিশালী শত্রুতা কল্পনা করেন। আগের মতোই উত্তরাধিকারের জন্য বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। যুবরাজ ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়োমেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে মনোনীত করেন এবং [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ|মুরোমাচি পর্বের]] বইয়ে বলা হয়েছে যে তাঁর পুত্র। তিনি জোমেই তেন্নো হয়েছিলেন, ৫৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোগা নো উমাকো পরিবর্তে রাজকুমার হাটসুবেকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সদ্য খুন হওয়া যুবরাজ আনাহোবের ভাই ছিলেন। তবে যিনি শুরু থেকেই সোগার সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন। উভয় রাজপুত্র ছিলেন সোগা নো ইনামের কন্যা ওনেকিমির পুত্র এবং তাই উমাকোর ভাগ্নে। যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরে সুশুন তেন্নো সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুশুন স্পষ্টতই খুব বেশি ব্যক্তিগত ক্ষমতা ছাড়াই ছিল। এটি লক্ষণীয় যে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর কোনও রাজকন্যা ছিল না এবং ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত তাঁর একমাত্র স্ত্রী ছিলেন ওটোমো বংশের। ''নিহন শোকির'' কাছ থেকে বিচার করার জন্য তৎকালীন শাসক বংশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজকন্যা কাশিকিয়াহিমে। তিনি সোগা নো উমাকোকে মনোনোবে নো মোরিয়া আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং যিনি সিংহাসনের জন্য রাজকুমার হাটসুসেবেকে সুপারিশ করেন। প্রায় ৫ বছর সিংহাসনে থাকা সত্ত্বেও ''নিহন শোকিতে'' সুশুনের নিবন্ধটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিনটি বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি ছিল পাইকচে থেকে একটি দূতাবাস যা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং উপকরণ নিয়ে এসেছিল। সোগা নো উমাকো সন্ন্যাসীদের আলোচনায় নিযুক্ত করেন এবং তার বোন ইনামের মেয়ে সহ জাপানি নানদের আরও পড়াশোনার জন্য পায়েচে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারা কোরিয়ায় ২ বছর কাটিয়েছিলেন, ৫৯০ সালে ফিরে আসেন। উমাকো তার মানত করা মন্দির নির্মাণের কাজও শুরু করেন। ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আসুকাদেরায় পরিণত হওয়ার স্থল ভেঙে যায়। ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে উল্লেখ করা হয় যে, অভিজাত পরিবারের বেশ কয়েকজন মহিলা সন্ন্যাসিনী হয়েছিলেন এবং চীন থেকে ৬ জন সন্ন্যাসী দেশে আসেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো "এমিশি" বর্বরদের সাথে সীমান্তের অবস্থা পরিদর্শন করার জন্য উত্তরের তিনটি প্রধান রুট, হোকুরিকুডো, তোসান্দো এবং টোকাইডো বরাবর ৫৮৯ সালে কর্মকর্তাদের প্রেরণ করা হয়েছিল। তৃতীয় বিষয়টি হলো ৫৯১ সালে আদালতে একটি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সিল্লা থেকে মিমানা পুনরুদ্ধার করা দরকার। পাঁচজন সেনাপতি (সমস্ত পুরুষ যারা মোরিয়ার বিরুদ্ধে উমাকোর পক্ষে লড়াই করেন) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ২০,০০০ পুরুষ দেওয়া হয়েছিল। তারা সুকুশি ভ্রমণ করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরিয়া অতিক্রম করেনি। সুশুন মারা গেলে তাদের ইয়ামাতোতে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কোরিয়াকে লক্ষ্য করে ৫৯১ অভিযানের ঠিক এক বছরেরও বেশি সময় পরে, সুশুন তেন্নো একটি শুয়োর শিকারের দলের সময় একটি মন্তব্য করেন যা কাউকে আমন্ত্রণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তিনি যে ব্যক্তির সাথে সমস্যায় পড়েছিলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তাকে অনুগ্রহ করার জন্য। যখন এটি সোগা নো উমাকোকে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে উল্লিখিত ব্যক্তিটি নিজেই ছিলেন। ফলে তিনি সুশনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি পাদটীকা রয়েছে যা বলে যে "একটি বই বলেছে যে" সুশুনের হুমকিমূলক মন্তব্য সম্পর্কে উমাকোর কাছে যে প্রতিবেদনটি শাসকের একজন অসন্তুষ্ট উপপত্নীর কাছ থেকে এসেছিল। উমাকো আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমা নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা অজুহাতে আদালতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এই লোকটি সম্রাটকে হত্যা করেছিল। এরপরে এটি বলে যে সুশুনকে একই দিনে ইতিমধ্যে বিদ্যমান রাজকীয় সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই যুগে তিনিই একমাত্র শাসক যেখানে এটি করা হয়েছিল। সুই রাজবংশের চীনা ইতিহাস অনুসারে। এটি জাপান সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ রয়েছে, প্রথাটি ছিল যে একজন আভিজাত্যকে কেবল তিন বছর পর্যন্ত শোকের পরে হস্তক্ষেপ করা হত এবং একজন সাধারণকে তার মৃত্যুর দিন সূর্যাস্তের আগে সমাধিস্থ করা আবশ্যক। সুশুনকে সাধারণের কবর দেওয়া হয়েছিল, মনে হয়। ''নিহন শোকির'' এই ঘটনার কভারেজ আমার চেয়ে বেশি নয় এবং সুশুন কেন উমাকোকে নির্মূল করতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই বলে না। এতে হত্যাকাণ্ডের পরিণতি বা এ বিষয়ে কারও প্রতিক্রিয়ার কোনো আভাসও উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র অতিরিক্ত উপাদান হলো একটি অদ্ভুত বিবৃতি যে আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমার উমাকোর এক কন্যার সাথে গোপন সম্পর্ক ছিল যিনি সুশুনের উপপত্নী ছিলেন এবং তাকে তার স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করেন। উমাকো প্রথমে এ বিষয়ে সচেতন ছিল না, ভেবেছিল যে মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে সে কোমাকে হত্যা করেছে। উপস্থাপিত হিসাবে এটি বোঝায় যে এটি না থাকলে কোমা বিনা শাস্তিতে হত। বিশ্বাস করতেই হবে যে, সুশুনের হত্যাকাণ্ডকে হত্যা নয়, ন্যায়সঙ্গত কারণে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিম্মেইকে অনুসরণ করা তিনজন শাসক সকলেই কিম্মেইয়ের পুত্র ছিলেন। তবে ভাইদের সরবরাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখননাতির দলটির দিকে তাকাতে হবে। বরাবরের মতোই ছিল বিদাতসু তেন্নোর ছেলে ওশিসাকা নো হিকোহিতো। রাজকুমার তাকেদাও ছিলেন। তিনি বিদাতসুর এক পুত্র এবং যার মা ছিলেন শক্তিশালী কাশিকিয়াহিমে। এরপরে ছিল ইয়োমেই তেন্নোর জ্যেষ্ঠ পুত্র উমায়াদো। উমায়াদোর বয়স তখন ১৯। তাকেদার বয়স জানা যায়নি। তবে তার একটি ছোট বোন ছিল যিনি ইতিমধ্যে উমায়াদোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হিকোহিতো সম্ভবত ইতিমধ্যে বেশ বৃদ্ধ ছিলেন এবং স্পষ্টতই বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না। অন্য সব সম্ভাবনা অবশ্যই খুব কম ছিল। ''নিহন শোকি'' আমাদের কোনও বিতর্ক বা আলোচনা সম্পর্কে ঠিক কিছুই বলেন না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, শেষ পর্যন্ত কাশিকিয়াহিমে নিজেই সিংহাসন গ্রহণ করেন, সুইকো তেন্নো হয়ে ওঠেন। তিনিই প্রথম শাসক (হিমিকো এবং আইয়োর পরে) যিনি মহিলা ছিলেন। যেহেতু সুইকো মহিলা সার্বভৌমদের একটি দীর্ঘ তালিকার প্রথম ছিল। তাই এটি অবশ্যই স্পষ্ট যে এটি সম্ভব করার জন্য অবশ্যই কিছু পরিবর্তন করা উচিত। তবে উত্সগুলি কী হতে পারে সে সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলার নেই। প্রাচীনকালে ছয়জন ভিন্ন মহিলা তেন্নো হিসাবে কাজ করেন (টোকুগাওয়া যুগে আরও বেশি ছিল)। তাদের মধ্যে দু'জন বিভিন্ন রাজত্বের নামে দু'বার রাজত্ব করেন, মোট ৮ টি রাজত্ব করেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় প্রথম চারজন ইতিমধ্যে সম্রাজ্ঞী (একটি তেন্নোর বিধবা) ছিলেন। এগুলিকে স্থান ধারক হিসাবে দেখা সহজ, পুত্র বা নাতির রাজত্ব করার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে মহিলা তেন্নোর ব্যবহার বন্ধ করার পরে দ্রুত এই নীতিটি পরিত্যাগ করা হয়েছিল যে কোনও শিশুকে সিংহাসনে বসানো সম্ভব নয়। একটি স্থানধারক ছাড়া, আপনি অপেক্ষা করতে পারবেন না। সুইকোর ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে সিংহাসন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার পুত্র রাজকুমার তাকেদা দ্বারা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলেন। সোগা নো উমাকোর সিদ্ধান্ত এড়ানোর যথেষ্ট কারণ ছিল। তার ভাগ্নে সুশুনকে সিংহাসনে বসিয়ে এবং তার সাথে একটি কন্যাকে বিয়ে দিয়ে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই দ্বিতীয় সুযোগের ব্যবস্থা করার জন্য তার কিছুটা সময় প্রয়োজন। তার একটি অতিরিক্ত কন্যা ছিল যাকে তিনি যুবরাজ উমায়াদোর সাথে বিয়ে করেন। তবে এটি তাকে সম্ভাব্য শাসক নাতির সাথে উপস্থাপন করতে চলেছে কিনা তা বলা খুব তাড়াতাড়ি ছিল। তবে, এটি আমাদের জানায় না যে এখানে নতুন কী ছিল। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি কেন? ওজিন রাজবংশের সময় দুটি পরিস্থিতি ছিল যখন পরবর্তী শাসক কে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একটি অন্তর্বর্তী পরিস্থিতি ছিল এবং উভয় ক্ষেত্রেই শাসক বংশের একজন মহিলা সদস্য শাসকের আনুষ্ঠানিক উপাধি গ্রহণ না করেই বিষয়গুলির সভাপতিত্ব করেন। আগেকার যুগে শাসকের স্ত্রীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাদের সবাইকে কেবল কিসাকি বলা হত। তার পিতার মর্যাদা থেকে উদ্ভূত কেবল অন্তর্নিহিত মর্যাদা ছিল। এটি অবশ্যই তার সন্তানরা উত্তরাধিকারের জন্য বিবেচিত হওয়ার যোগ্য কিনা তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। যাইহোক, আদালত চালানো আরও বড় এবং জটিল হয়ে ওঠার সাথে সাথে কিম্মেইয়ের সময়ে এটি পরিবর্তন হতে শুরু করে। আদালতের সাথে সংযুক্ত পদারদের একটি বিশেষ দল এসেছিল যারা মনোনীত যুবরাজের পরিবার পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিল। তিনি ও-ওমি এবং ও-মুরাজির পাশাপাশি এক ধরণের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং সম্রাটের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এর অর্থ হলো অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, রাজস্বের নির্দিষ্ট উত্সগুলি রাজপুত্র এবং স্ত্রীদের ভরণপোষণের জন্য বরাদ্দ করা হবে এবং এই একজনকে আরও বেশি এবং সেই ব্যক্তিকে কম বরাদ্দ করে মর্যাদা চিহ্নিত করার স্পষ্ট সুযোগ ছিল। সুইকোর রাজত্বকালে লেখা একটি বই রয়েছে যা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে সুইকোর আগে সমস্ত স্ত্রী কেবল "কিসাকি" ছিলেন। বিদাতসুর স্ত্রী থাকাকালীন তাকে "ও-কিসাকি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি কিসাকি থেকে একইভাবে ও-মুরাজি মুরাজি থেকে আলাদা। অন্য কথায়, তিনি কেবল একজন উপপত্নী ছিলেন না, সম্রাজ্ঞী ছিলেন। বিদাতসুর রাজত্বকালে কিসাইবে নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কিসাকিবের একটি সংকোচন। এর অর্থ কৃষকদের একটি ইউনিট যা একটি নির্দিষ্ট কিসাকিকে সমর্থন করার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। "ব্যক্তিগত হও" বা "ব্যক্তিগত হও" হিসাবে সর্বোত্তমভাবে অনুবাদ করা অক্ষর দিয়ে লেখা হয় তবে কিসাকিবে উচ্চারণ করা হয় তা চীনা প্রভাবের ফলাফল। চীনে সম্রাট ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার অবস্থানের সবকিছুই ছিল 'প্রকাশ্য'। যাইহোক, সম্রাজ্ঞী একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এখনও একটি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেন, রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত নয়। তার নিজের সম্পত্তি থাকতে পারত এবং ছিল। এটি তার পরিবার বা সম্রাটের কাছ থেকে উপহার দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। জাপানি কেসটি আলাদা ছিল, রাষ্ট্রীয় সংস্থানগুলি অর্পণ করে। এটি এখনও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে পরিচালিত হয়, কিসাকিতে। সুতরাং, আগের কিসাকির বিপরীতে, কাশিকিয়াহিমে এমন কর্মকর্তা ছিলেন যারা তাকে রিপোর্ট করেন এবং যে সংস্থানগুলি তিনি ব্যয় করতে পারেন। তিনি একজন খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে বিদাতসুর মৃত্যুর পরের পর্বে যখন যুবরাজ আনাহোবে তাকে অপহরণ ও বিয়ে করার চেষ্টা করেন, যে পদার তাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি কাশিকিয়াহিমের একটি গ্রামীণ প্রাসাদে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন, সম্ভবত তার সমর্থনের জন্য একটি অবস্থানের স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল। তিনি নিঃসন্দেহে এমন একজন কর্মকর্তা ছিলেন যিনি বিশেষভাবে তার সেবায় নিবেদিত ছিলেন। সম্রাজ্ঞীর এই অতিরিক্ত গুরুত্ব পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল, এমনকি সেই সময়েও যখন তারা তেন্নো হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সুইকোর রাজত্বকালে এবং তার পরে যা ঘটেছিল তার মধ্যে একটি ছিল যে অন্য সবার তুলনায় শাসকের মর্যাদা ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য একটি বড় প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং শাসকের মর্যাদা বাড়ার সাথে সাথে তার স্ত্রীদের। বিশেষত তার সম্রাজ্ঞী, তার উত্তরাধিকারীর মা। সম্রাজ্ঞীকে স্ত্রী হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে জীবিত সম্রাটের মা হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে মৃত সম্রাটের মা হিসাবে এবং আরও অনেক কিছু নির্দেশ করার জন্য চীনা থেকে নেওয়া উপাধিগুলির একটি সিরিজ দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। যেহেতু সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত হওয়ার অধিকারী বেশ কয়েকটি জীবিত মহিলা থাকতে পারে। তাই তাদের সকলকে আলাদা করার জন্য পর্যাপ্ত উপাধি থাকা দরকার ছিল। হেইয়ান যুগে, যখন মহিলারা আর তেন্নো হতে পারত না, একাধিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল কারণ একজন সম্রাজ্ঞী তার নিজের খেয়ালখুশিতে উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। একজন সম্রাজ্ঞী যিনি দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন সম্রাটের মা ছিলেন, যদি তার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা থাকে তবে তিনি যথেষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। === শোতোকু তাইশি === [[Image:Prince Shotoku with Two Princes by Kano Osanobu 1842.png|thumb|right|''তোহন মিয়েই'', রাজকুমার শোতোকু এবং তার দুই ছেলের প্রতিকৃতি]] <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে সুইকো তেন্নো সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের একেবারে শুরুতেই উমায়াদো নো তোয়োতোমিমিকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাস্টনের অনুবাদে বলা হয়েছে, "সে জন্ম নেওয়ার সাথেসাথেই কথা বলতে পারত। এতটাই প্রজ্ঞাবান ছিল যে দশজন লোকের মামলা একসাথে শুনে নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারত। সে আগে থেকেই জানত কী ঘটতে চলেছে।" সে শুধু উত্তরসূরি হিসেবেই নিযুক্ত হয়নি, বরং "সরকারের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ন্যস্ত ছিল এবং প্রশাসনের সকল বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।" <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যে কাহিনি বলার চেষ্টা করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন এই ব্যক্তি। তাঁকে বৌদ্ধ ও কনফুসীয় দর্শনে পারদর্শী এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের প্রথম ইতিহাস (যেটি টিকে নেই)। তাঁর আবির্ভাব থেকেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-এর লেখকদের দৃষ্টিকোণে আধুনিক জাপানের ইতিহাস শুরু হয়। মধ্যযুগে তাঁকে একজন বৌদ্ধ সাধু হিসেবে গণ্য করা হতো। আধুনিক কালে ১৮৮৫ সালে চালু হওয়া সংবিধানিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক সন্ন্যাসী হিসেবে বিবেচিত হন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যাঁর রচয়িতা বলে মনে করে সেই "সতেরো অনুচ্ছেদের সংবিধান" জাপানের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক দলিল হয়ে ওঠে। "যুবরাজ" শব্দটির ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তির ভিত্তিতে আপত্তি জানানো হয়েছে, কারণ এই সময়ে এই উপাধিটি উত্তরাধিকার নির্ধারণে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করত বলে মনে হয় না। তবে, এই পদবির মাধ্যমে নির্বাচিত রাজপুত্রকে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। এটাও মনে করা যেতে পারে যে, যেখানে তেন্নো সমগ্র জাতির শাসক হিসেবে দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিলেন, সেখানে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শাসক বংশের পক্ষে একপ্রকার দলের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন, যেমন সোগা এবং অন্যান্য বংশপ্রধানেরা তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন। পুরো নারা যুগজুড়ে এবং প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগেও রাজপুত্রদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং স্পষ্ট ছিল যে, সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর ক্ষমতা অন্যান্য অভিজাত বংশগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সাধারণত তেন্নো নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, সবসময়ই একজন "জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র" থাকতেন। তেন্নো-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী তাঁর অনেক স্থানে যাওয়া এবং অনেকের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। এই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। একজন নারী শাসকের জন্য এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর ছিল, ফলে তাঁর না থাকতে পারা সভায় পরিবারের একজন বিশ্বস্ত সদস্যের উপস্থিতি থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। তবে, এই বিষয়গুলো থেকেই ক্ষমতার উৎস বোঝা যায় না। ক্ষমতার অবস্থান সবসময়ই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল। তাই মনে করার কোনও কারণ নেই যে, সুইকো ওই সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন না। রাজকুমার উমায়াদোর বাবা-মা দুজনেই শাসক বংশের সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর পিতৃকুলের দাদি ছিলেন সোগা কিতাশিহিমে এবং মাতৃকুলের দাদি সোগা ওআনেকিমি—দুজনেই সোগা নো ইনামির কন্যা এবং সোগা নো উমাকোর বোন। তাঁর চারজন স্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়, যাঁদের একজন ছিলেন উমাকোর কন্যা। ৬০০ সালে একটি জাপানি দূতাবিদ দল চীনের স্যুই রাজবংশে গিয়েছিল এবং স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে "ওয়া"-র রাজা পরিবারের নাম ছিল আমে (অর্থাৎ স্বর্গ) এবং তাঁর ব্যক্তিগত নাম ছিল তরাশিহিকো। এটি চীনা অক্ষরে শব্দভিত্তিকভাবে লেখা হয়েছে। "তরাশি" ছিল এই সময়ে শাসকদের আনুষ্ঠানিক নামের সাধারণ উপাদান এবং সম্ভবত "শাসক" অর্থে ব্যবহৃত হতো। "হিকো" একটি নির্দিষ্ট পুরুষ নাম উপাদান, যার নারীস্বরূপ "হিমে"। ফলে মনে হয় এই পরিচিতিটি স্যুইকো তেন্নোর নয় বরং রাজকুমার উমায়াদোর। যদিও সম্ভব যে চীনাদের জানা ছিল না যে "ওয়া"-র রাজা একজন নারী (অথবা জাপানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা গোপন রেখেছিল)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে উমাকো এবং উমায়াদোর মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তাঁরা উভয়েই প্রাদেশিক অভিজাতদের তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রয়োজনে একমত ছিলেন এবং এ লক্ষ্যে শাসকের তাত্ত্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাসাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো সভাসদদের প্রকৃত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা উভয়েই চীনা সাহিত্যের পাণ্ডিত্যে পারদর্শী ছিলেন এবং অন্তত একটি বইয়ে সহযোগিতা করেন। ৫৮৯ সালে স্যুই রাজবংশের দ্বারা চীনের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ৫৮১ সালে উত্তরাঞ্চলের নর্দার্ন ঝৌ রাজবংশে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দক্ষিণাঞ্চল জয় করে একীকরণ সম্পন্ন করে। পেকচে ৫৮১ সাল থেকে এবং শিলা অন্তত ৫৯৪ সাল থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগে ছিল। ৬০০ সালে স্যুইকো রাজদরবার শিলায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল এবং একই বছর পঞ্চম শতাব্দীর পর প্রথমবারের মতো চীনে দূত পাঠানো হয়। যদিও <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই মিশনের সাফল্যের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা রয়েছে, এই বাহিনী কোরিয়ায় বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি এবং ৬০২ সালে একটি দ্বিতীয় ও বৃহৎ অভিযান পরিকল্পিত হয়। লক্ষণীয় যে এই বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন রাজকুমার কুমে, রাজকুমার উমায়াদোর ভাই, কোনও ঐতিহ্যবাহী সামরিক উজি সদস্য নয়। এটি কে প্রমাণ হিসেবে ধরা হয় যে এই প্রকল্পটি উমাকোর নয় বরং উমায়াদোর উদ্যোগে ছিল। এছাড়া, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে এই বাহিনী গঠিত হবে "কানতোমো" থেকে, যার মধ্যে ছিল ধর্মীয় দায়িত্বে নিয়োজিত ইম্বে ও নাকাতোমি বংশ, পাশাপাশি "কুনি নো মিয়াতসুকো" ও "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রা। অর্থাৎ কোনও "ওমি" শ্রেণির বংশ এতে অংশ নেয়নি। সমস্ত যোদ্ধা শাসক বংশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বংশ ও প্রাদেশিক অভিজাতদের মধ্য থেকে আসবে। এটি সম্ভবত এমন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা সরাসরি শাসকের প্রতি অনুগত থাকবে, বরং ঐতিহ্যগত বংশের মিলিশিয়ার বিকল্প হবে। এই বিশ্লেষণ সত্য হলে, ৬০২ সালে রাজকুমার উমায়াদোর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, প্রকল্পটি সফল হয়নি। বাহিনী কিউশুতে একত্রিত হওয়ার পর রাজকুমার কুমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক মাস পরে মারা যান। শোতোকু তাইশির ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি পরবর্তী গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজকুমার ধারণা করেন শিলা এজেন্টরা রাজকুমার কুমেকে হত্যা করেছে। এরপর তাঁর আরেক ভাই রাজকুমার তাকিমাকে বাহিনীর নেতৃত্বে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কিউশুর উদ্দেশে রওনা হন। পথে তাঁর স্ত্রী মারা যান এবং রাজকুমার ইয়ামাটোতে ফিরে আসেন, কিউশু আর পৌঁছাননি। বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও কেউ কেউ মনে করেন যে, কিউশুতে একটি বৃহৎ বাহিনী একত্রিত করাই শিলার ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে জাপান কূটনৈতিকভাবে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল। এই লক্ষ্য ছিল নিয়মিত "খাজনা" বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য, কারণ অনেক বিলাসপণ্য আমদানি করতে হতো। শিলা যখনই জাপানের ওপর অসন্তুষ্ট হতো, তখনই বাণিজ্য বন্ধ করে দিত, আর জাপান যুদ্ধের হুমকি দিত। ৬১০ সালে শিলা থেকে আসা একটি দূতাবিদের অভ্যর্থনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দূতদল স্যুইকোর আসুকার প্রাসাদের মূল হলের সামনে উঠানে জড়ো হয়। প্রত্যেক দূতের সঙ্গে এক একজন জাপানি অভিজাত নিযুক্ত ছিলেন যাঁরা তাঁদের সহায়তা ও সম্ভবত অনুবাদের কাজ করতেন। চারজন প্রধান মন্ত্রী তাঁদের স্বাগত জানান। যখন দূতরা শিলার রাজা কর্তৃক প্রেরিত সরকারি চিঠি পড়তে যান, তখন সোগা নো উমাকো হলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের কথা শুনে ফেরার পর তেন্নোকে রিপোর্ট করেন। রাজকুমার উমায়াদোর উপস্থিতির উল্লেখ নেই। তিনি যদি সম্পৃক্ত থাকতেনও। তবে পুরো সময়টি প্রাসাদের ভেতরেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যাবে, হয়তো তিনি তখন আসুকায় ছিলেন না। রাজকুমার তাকিমার কোরিয়া অভিযান বাতিল হওয়ার পরপরই, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে আদালতে "টুপি পদবী" নামে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এই পদ্ধতির বাস্তবতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই, কারণ এটি স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ আছে। চীনা দরবারে এমন একটি ব্যবস্থা ছিল। কোরিয়ার সব রাজ্যেও অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। জাপানি ব্যবস্থা বিশেষত কোগুরিও-র ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। বাইরের প্রকাশ ছিল কর্তব্যরত অবস্থায় কর্মকর্তা যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিধান করবেন, যাতে পদবীর পরিচয় বহন করবে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল এমন এক র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করা। এটি শাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। পূর্বে বিদ্যমান কাবানে পদগুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী ও বংশগত। এগুলো থেকে ব্যক্তিগত মর্যাদা স্পষ্ট হতো না। সেগুলো ছিল সম্পূর্ণরূপে গোত্রভিত্তিক, কোনও ব্যক্তির মর্যাদা নির্দেশ করত না। নতুন ব্যবস্থা ছিল বিশেষভাবে আদালতের পদবী এবং সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিভিত্তিক। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাসাদীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অভিজাতদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। টুপিগুলোর কোনও নমুনা আজ আর বিদ্যমান নেই। তবে কয়েকজন ব্যক্তিকে যে পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তার উল্লেখ আছে। কুরাতসুকুরি (স্যাডলমেকার) নো তোরি নামে এক খ্যাতনামা বৌদ্ধভক্ত। তিনি আসুকায় হোকোজি বৌদ্ধমন্দিরের প্রধান হল নির্মাণ করেন, তাঁকে স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রথম তিনটি পদমর্যাদায় নিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির নাম আমাদের জানা আছে। একজন যিনি প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন, তাঁর মর্যাদা সোগা নো উমাকো এবং শিলার দূতাবিদকে স্বাগত জানানো "চার মন্ত্রী"-র তুলনায় অনেক নিচে ছিল। ফলে ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র অপেক্ষাকৃত সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য ছিল, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য নয়। কিছু পণ্ডিত পরবর্তী দশকে চালু হওয়া বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার জন্য বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং ধারণা করা হয়, এখানে সর্বোচ্চ পদ ছিল <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় চালু থাকা ব্যবস্থায় জ্যেষ্ঠ চতুর্থ শ্রেণির সমতুল্য। এই স্তরটিই ছিল উচ্চ অভিজাতদের সাথে সাধারণ কর্মকর্তাদের বিভাজনের রেখা। কেবলমাত্র অভিজাত শ্রেণির শীর্ষ স্তরের সদস্যরাই তৃতীয় শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব মর্যাদা পেতেন। পরের বছর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে সব মন্ত্রীর জন্যও বিশেষ টুপি ডিজাইন করা হয়েছিল। একটি কাহিনিতে বলা হয়েছে ৬৪৩ সালে সোগা নো এমেশি অবসর নেওয়ার সময় তিনি নিজ হাতে মন্ত্রীর টুপি তাঁর পুত্র ইরুকার হাতে তুলে দেন। সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ৬০৭ সালে পায়কচে সুই রাজবংশে দূত পাঠিয়ে কোরিয়ার উপর চীনের আক্রমণের পরামর্শ দেয়। ইয়াং-তি পায়কচের সাথে যৌথ অভিযান প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর ফলে কোরিয়ায় একটি বিশাল পরিবর্তনের সময়শৃঙ্খলা শুরু হয়। জাপানও ৬০৭ সালে একটি দূতাবাস পাঠায়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘সুই ইতিহাস’ রাজকুমার উমায়াদো—"তারাশিহিকো"—কে 'ওয়া'র রাজা হিসেবে গণ্য করেছে। ইয়াং-তির কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছিল জাপানি শুনেছে যে সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে আগ্রহী এবং তারা চীনে পাঠিয়ে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ পাঠাতে চায় পাঠচর্চার উদ্দেশ্যে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে দূতদলের মধ্যে এমন একজন অভিবাসী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চীনা ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারতেন। চীনা রিপোর্ট অনুসারে, চিঠিতে রয়েছে ঐতিহাসিক বাক্য: “সূর্যোদয় দেশের সম্রাট, সূর্যাস্ত দেশের সম্রাটকে এই চিঠি প্রেরণ করছেন।” ইয়াং-তি সমতার ধারণা পছন্দ করেননি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি প্রথম সংকেত যে, জাপানের চাহিদা ছিল চীন চীন দেশে তাদের নাম 'ওয়া' না বলে 'নিহোন' হিসেবে জানুক। প্রকৃত নির্বাহীকরণ দেখা যায় ৬৪৮ সালে ট্যাং রাজবংশে প্রেরিত দূতাবাসের চীনা বিবরণে “日本” প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে। বিরক্ত সত্ত্বেও, ইয়াং-তি প্রতীয়মান দেশের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধ পরিকল্পনা করছিলেন। অবিলম্বে একটি চীনা দূতাবাস জাপানে পাঠানো হয়। এই বিনিময়েই জাপান প্রথমবার একটি উপযুক্ত চীনা শব্দ বেছে নেয় শাসককে উল্লেখ করার জন্য। প্রাথমিক নথিতে “大王” ব্যবহৃত হত, সম্ভবত "ওকিমি" উচ্চারণে। তবে দূতাবাস কাল নাগাদ চীনাদের সাথে সমতামূলক শিরোনাম ব্যবহার অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছিল। উচ্চারণ ও উপাধি বিষয় বিবেচনা করে "天皇" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি সম্রাটের উচ্চ মর্যাদার প্রতীক; চীনা ‘হুয়াংদি’ যা সমান মর্যাদার প্রতীক। জাপানি উচ্চারণে “সুমেরা মিকোতো”—যার বাংলা অর্থ 'সর্বোচ্চ শাসক'। চীনা চিঠিতেও এটি লক্ষ করা গেল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬২৮ ও অন্যান্য লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। সুইকর সময়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হতো সুমেরা মিকোতো। তবে আধুনিক জাপানে এটি 'তেন্নো' নামে পরিচিতি লাভ করে। ৬০৮ সালের দূতাবাস দেখে চীনারা এটি কে 'জাপানের হুয়াং' বা সর্বোচ্চ সম্মানিত সার্বভৌম হিসেবে মনেছেন; অ্যাস্টন এ এটি অনুবাদ করেছেন "সার্বভৌম". মোট চারটি দূতাবাস পাঠানো হয় উল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে। শেষ দূতাবাস প্রেরণের সময় সুই রাজবংশ ইতিমধ্যেই পতনের দিকে ঝুঁকছিল। জাপানি দূতরা নিরাপদে ফিরতে বিপাকে পড়েন। তার ১৬ বছর পর পুনরায় কোনো বিনিময় হয়নি। এখানে স্পষ্ট যে, চীন জাপানে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল—অসভ্য উচ্চাভিলাষ সহ্য করলেও তারা চেষ্টা করছে দেশে এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যত সম্ভব জানতে। এটি তাদের কোরিয়া নিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। তবে ট্যাংও কোরিয়ায় উচ্চাভিলাসী ছিল। অস্বীকার বা রাজবংশ পরিবর্তনের কারণে চীনের সাথে সম্পর্ক বন্ধ করা জাপানের স্বার্থে বাধ্যতামূলক ছিল না। এক মতামত বলছে, রাজকুমার উমায়াদোর রাজনীতির অর্ধ-অবসর ৬০৫ সালের পর এই দূতাবাস উদ্যোগগুলোর প্রসার প্রধান ব্যক্তি ছিলেন এবং অন্য কেউ ততটা ভাবতেন না। ৬২০ সালে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> রিপোর্ট করে যে, রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা নো উমাকো একত্রে “সম্রাটদের ইতিহাস, দেশের ইতিহাস। ওমি, মুরাজি, টোমো নো মিয়াতসুকো, কুনি নো মিয়াতসুকো, ১৮০ বে এবং মুক্ত প্রজাদের মৌলিক রেকর্ড” তৈরি করেন। যদি প্রকৃতপক্ষে এ সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। তবে এটি অমূল্য হত। কিন্তু একমাত্র একটি কপি ছিল এবং ৬৪৫ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জাপানের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে, কারণ ঐ ঐতিহাসিক কাজ তা অবশ্যই তুলে ধরত। আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে, ৬০২ সালে পায়কচে ভিক্ষু কানরোক প্রথমবার চীনা পদ্ধতিতে একটি বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে জাপানে। এরপর ৬০১ সালের ভিত্তিতে উমায়াদো ২১টি ৬০-বছরের চাকার ভিত্তিতে ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পিছিয়ে তার শাসকের বংশানুক্রম নির্ধারণ করেন। বর্ষপঞ্জির সেই চক্রের বিশেষ জ্যোতিষ্কীয় গুরুত্ব উপস্থাপন চীনা থেকে নেওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে রাজকুমার উমায়াদো ৬২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু যেকোনো জাপানি ঐতিহাসিক তালিকা জানায় এটি ঘটেছিল ৬২২ সালে। এই অংশে মুখ্য অনেক তারিখ এক বছর ভিন্ন। কেন তা এমন তা নিয়ে কোনো তত্ত্ব নেই। বিকল্প সূত্র একটি প্রাচীন জীবনী ভিত্তিক। এটি বছর ও মাসের দিন ভাগে পৃথক। জাপানিরা সেই দ্বিতীয় তারিখ মেনে নিতে উৎসাহী। এই সূত্রগুলোর একটি হচ্ছে আসুকা যুগের হোর্যুজি বৌদ্ধ মূর্তির উপচর্চা–যাতে খোদাই করা হয়েছে যে তার মা মৃত হন সুইকোর ২৯তম বর্ষের ১২তম মাসে (৬২১)। পরের মাসে তিনি অসুস্থ হন। প্রধান স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় মাসের ১১ তারিখে মারা যান (৬২২)। রাজকুমার মারা যান দ্বিতীয় মাসের ২২ তারিখে। তিনজন একই সমাধিতে দাফন হন। তাঁর বয়স ছিল ৪৯। সমাধি ইকারুগা থেকে ২০ কিমি দূরে, বিডাতসু ও ইয়োমেইএর সমাধির কাছে অবস্থিত। পরে সুইকো ও কোটোকুর সমাধি একই এলাকায় নির্মিত হয়েছে। প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে Shotoku Taishi প্রাচীন কাল থেকেই একজন অত্যুৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে সন্মানিত ছিলেন—প্রাথমিক কারণ ছিল বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৌদ্ধধর্ম ৮ম শতক পর্যন্ত রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কেবল অনুমোদিত ছিল এবং একারণে অনেকেই সন্দিহানে ছিলেন। তবে রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা উমাকো ব্যক্তিগতভাবে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং উমায়াদো এর কয়েকটি প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইকারুগা প্রাসাদের আশেপাশে মন্দিরগুলোর একটি ক্লাস্টার—বিশেষ করে হোর্যুজি। এটি ৬৭০ সালে আগুনে ধ্বংসের পর পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং জাপানের প্রাচীনতম কাঠের নির্মাণ। এটি ছিল উমায়াদোর ব্যক্তিগত মন্দির, তখন পরিচিত Ikarugadera, “ইকারুগা মন্দির” নামে। তিনি প্রথম জাপানি হিসেবে বই রচনার কারণে অর্থবহ ভূমিকাও রেখেছিলেন। ১৪শ শতক থেকে, তিনি সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা জাপানের ১৮৬৮ সালের পর ক্ষমতা লাভ করে। প্রতিটি জাপানি স্কুলছাত্র <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র ১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান অধ্যয়ন করতো। তবুও কেউ ২০শ শতাব্দীর সামরিক কর্তৃত্ববাদীদের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেনি; তাঁর মর্যাদা এখনও অনন্য উচ্চে রয়েছে। ৬২৩ সালে মিমানা থেকে শিলে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে কোরিয়ায় আক্রমণের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এটি ২০ বছরের বিরতি পর ঘটে। দরবারের কর্মকর্তারা দ্বিখণ্ডিত হন। এক পক্ষ, যার মুখপাত্র তানাকা নো ওমি, মিমানা যথার্থ ব্যবহারের তদন্তের জন্য দূত প্রেরণে সমর্থন করে; অন্য পক্ষ, যে নেতৃস্থানীয় হচ্ছেন নাকাতোমি নো কুনি নো মুরাজি, সেনাবাহিনী প্রেরণের পক্ষে, শিলেকে বের করে মিমানাকে পায়কচের নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তরের দিকে ধাবিত করেন। অবশেষে দূত প্রেরিত হয় এবং শিলা একটি দূতাবাস পাঠায় প্রস্তাব নিয়ে। পুরোনো ব্যবস্থা অনুযায়ী মিমানা নামমাত্র শুল্ক দিবে। শিলা ও জাপানি কর্মকর্তাদের একটি দল মিমানায় যান চুক্তি সম্পাদনের জন্য। কিন্তু তারা ফিরে আসার আগে বড় একটা জাপানি সেনাবাহিনী করণীয়ভাবে কোরিয়ায় প্রেরিত হয় সাকাাইবে নো ওমি ওমারোর নেতৃত্বে। তিনি সম্ভবত সোওগা উমাকোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে দূতরা বারংবার যাননি এবং সবকিছু লড়াই ছাড়াই নিষ্পত্তি হয়েছে। কোরিয়ার জাপানি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। এরপর চুক্তি হয়েছে যে যতবার জাপান দূতাবাস শিলায় যাবে, তারা আগমনের সময় দুইটি আনুষ্ঠানিক নৌকায় স্বাগত জানাবে—একটি শিলার জন্য এবং অন্যটি মিমানার জন্য। মিমানায় একটি সেনাবাহিনী এবং একই সময়ে কূটনৈতিক আলোচনা করা কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। সম্ভবত দরবারে দুটি পক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করছিল। ৬২৩ সালে একটি জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃক সংঘটিত প্রদর্শনী হত্যাকাণ্ডের (কুড়াল দিয়ে হত্যাকাণ্ড!) পরে, আদালত ধর্মীয় ব্যবস্থার উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং একটি (বৌদ্ধ) ধর্ম দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়, প্রধান পদগুলো ভিক্ষুদের জন্য নির্ধারিত হয়। এর ফলে একটি আনুষ্ঠানিক জনগণনা নেওয়া হয় এবং রিপোর্ট করা হয় যে দেশে ৪৬টি মন্দির, ৮১৬ জন ভিক্ষু এবং ৫৬৯ জন ভিক্ষুনী রয়েছে। == "তাইকা সংস্কার" == ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে সোওগা-নো উমাকো মারা যান এবং ৬২৮-এ ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় স্যুইকো সম্রাজ্ঞীর। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘটনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়। উমায়াদো, উমাকো ও স্যুইকোর মৃত্যুতে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যুর ঠিক আগে উমাকো স্যুইকোর কাছে অনুরোধ করেন যেন কাজুরাকি আগাতা তার হাতে দেওয়া হয়, কারণ এটি ছিল তার বংশের প্রাচীন নিবাস। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ছয়টি আগাতার একটি। এটি সরাসরি শাসকের ব্যয়ের উৎস ছিল। স্যুইকো এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এই দাবি মেনে নেওয়া হতো, তাহলে সোওগা বংশ একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এটি অন্য সব সোওগাদের থেকে স্বাধীন হতো। এই কৌশলই পরে নাকাতোমি-নো কামাতারির জন্য প্রয়োগ করা হয়; তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের একটি নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি শুধুই বয়স্ক উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা হারানোর একটি দৃষ্টান্ত এবং তার দাবি অযৌক্তিক ছিল। পরবর্তী সম্রাট ছিলেন বিদাতসু সম্রাটের পৌত্র ও দুর্ভাগাপ্রাপ্ত রাজপুত্র ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হন। স্যুইকোর মৃত্যুর কয়েক মাস পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোওগা-নো এমিশি, উমাকোর জ্যেষ্ঠপুত্র, তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এমিশি সিনিয়র কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জানান যে স্যুইকো দুই সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর কথা বলেছিলেন — রাজপুত্র তামুরা এবং রাজপুত্র উমায়াদোর পুত্র, রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে — এবং তাদের উভয়কেই বলেছিলেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ না করেন। তার নিজের পুত্র, রাজপুত্র তাকেদা, এর আগেই মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার সমাধিতে সমাহিত হওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এমিশির বিবরণে বোঝা যায় যে স্যুইকো রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন। কিন্তু স্পষ্ট করে কাউকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেননি। অধিকাংশ সদস্য রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন, যদিও কেউ কেউ রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়েকেও সমর্থন করেন, ফলে এমিশি সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি করেন। দুই রাজপুত্রই বংশগতভাবে সমান এবং বয়সেও প্রায় সমান ছিলেন। রাজপুত্র তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং ধারণা করা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের বয়সও অনুরূপ ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে জোর দিয়ে বলেন যে স্যুইকো তাকে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে তিনি এমিশিকে মিথ্যাবাদী বলেন। অবশেষে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; এক প্রতিপক্ষ কর্মকর্তাকে এমিশি হত্যা করেন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজপুত্র তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই সম্রাট নামে পরিচিত হন। এমিশি রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করার একটি সুস্পষ্ট কারণ ছিল — তার প্রধান স্ত্রী ছিলেন সোওগা-নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয়, তিনি ইতোমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, জন্ম দিয়েছেন। অন্যদিকে, বলা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হয়তো এমিশি ভেবেছিলেন তামুরার সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। জোমেইর অভিষেকে আরও এক তরুণ রাজপুত্র সামনে আসেন — নাকা-নো ওয়ে। জোমেইর সম্রাজ্ঞী ছিলেন না সোওগা-নো হোতে-নো ইরাতসুমে, বরং ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর নাতনি রাজকন্যা তাকারা। তিনি নাকা-নো ওয়ের মা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই সম্রাট সংক্রান্ত অংশটি সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যবর্জিত। উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হলো: ৬৩০ ও ৬৩২ সালে তাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে দূতাবিনিময়। চীনে ২৪ বছর অবস্থানকারী এক শিক্ষার্থী এই সময় দেশে ফেরেন। অপর একজন, তাকামুকু-নো কুরামারো, ৩০ বছর পর ৬৪৪ সালে দেশে ফিরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধ। এছাড়া জোমেই তার প্রাসাদ দুইবার স্থানান্তর করেন; প্রথমবার আগুন লাগার কারণে, দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে। এটি দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধাজনক ছিল। এই সময় কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ধারণা করা হয়, শাসকের প্রাসাদ রাজধানীতে রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছিল। এই শাসনামলে একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে প্রবীণতম জীবিত রাজপুত্র এমিশিকে ধমক দেন, কারণ মন্ত্রীরা যথাযথভাবে সভায় হাজির হচ্ছিলেন না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারত। কিন্তু এমিশি সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরবর্তী সময়ে রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময়সূচি নির্ধারণের রীতি চালু হয়। নতুন প্রাসাদ স্থানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ হয়। এটি কোনো শাসকের দ্বারা নির্মিত প্রথম মন্দির হিসেবে পরিচিত। জোমেই ৬৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন, কোনো উত্তরাধিকারী মনোনয়ন না করেই। তার উত্তরসূরি হন তার সম্রাজ্ঞী। তিনি দ্বিতীয় নারী সম্রাট হিসেবে পরিচিত হন কোগিয়োকু সম্রাজ্ঞী নামে (তার দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল সাইমেই সম্রাজ্ঞী হিসেবে)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই উত্তরণের বিষয়ে কিছুই বলে না। এখানে দুইজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন — রাজপুত্র ফুরুহিতো ও রাজপুত্র নাকা-নো ওয়ে, উভয়েই সম্রাটের সন্তান। তবে ভিন্ন মাতার গর্ভজাত। নাকা-নো ওয়ে ছিলেন সম্রাজ্ঞীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী (জাপানি গণনায়, আমাদের হিসেবে ১৫ বছর), সিংহাসনের জন্য কিছুটা তরুণ। তখনও শিশুদের সিংহাসনে বসানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে অনুমান করা যায়, কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি কারণ ছিল তার পুত্রকে ভবিষ্যতে সিংহাসনে বসানো। ফুরুহিতোর মর্যাদা কম হলেও, বয়সে তিনি নাকা-নো ওয়ের চেয়ে বড় ছিলেন, যদিও তার সঠিক বয়স জানা যায় না। কয়েক বছরের মধ্যে নাকা-নো ওয়ে ফুরুহিতোর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং তখন তার বয়স ২০ বছরের বেশি ছিল। এ ছাড়া রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের কথাও ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি থাকায় কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে ঘটেছিল। এটি সম্ভাব্য কারণ, কারণ সোওগা-নো এমিশি ছিলেন এমন ব্যক্তি। তিনি ঐকমত্য ছাড়া কিছু করতেন না। প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা করা যায় না। নতুন সম্রাজ্ঞীর বয়স তখন ৪৯। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগিয়োকুর শাসনকালকে সোওগা বংশের পতনের সূচনার সময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জোমেইর শাসনকালে সোওগা-নো এমিশির নেতৃত্বে সব কিছু মসৃণভাবে চলছিল। তিনি আদালতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে কোগিয়োকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা কার্যত সোওগা নেতৃত্বে তাকে অতিক্রম করে এবং পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন হয়ে ওঠে। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তিনি শৈশবে অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তিনি স্বেচ্ছাচারী, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে ওঠেন। তিনি শত্রু সৃষ্টি করতেন এবং এতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং নিজের ইচ্ছামতো এগিয়ে যেতেন। উমায়াদো, উমাকো এবং সুইকোর মৃত্যুর মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করা স্পষ্ট হয়ে যায়। মৃত্যুর কিছু আগে উমাকো সোগা দাবি করেন যে কাজুরাকি আগাতা তার বংশের প্রাচীন আবাসস্থান ছিল এবং সে কারণে তা তার মালিকানায় নেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন সুইকোর কাছে। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ৬টি আগাতার একটি, যেগুলো সরাসরি শাসকের ব্যয় নির্বাহ করত। সুইকো তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এটি অনুমোদিত হতো। তবে সোগা কাজুরাকি বংশের নাম পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করতে পারতেন। এতে করে তার বংশধররা অন্যান্য সোগাদের থেকে স্বাধীন একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন। এইরকমই পরে করা হয়েছিল নাকাতোমি নো কামাতারির ক্ষেত্রে, যখন মৃত্যুর পর তার পুত্রদের নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি ছিল একজন বৃদ্ধ উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে এমন কিছু চাওয়ার চেষ্টা। এটি কখনোই বাস্তবায়নযোগ্য ছিল না। পরবর্তী শাসক ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর নাতি এবং দুর্ভাগা রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হয়েছিলেন। তবে সইকোর মৃত্যুর পর কয়েক মাস পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। উমাকোর জ্যেষ্ঠ পুত্র সোগা নো এমিশি তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবশেষে এমিশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি সভা আহ্বান করে বলেন, সুইকো রাজকুমার তামুরা ও রাজকুমার ইয়ামাশিরো নো ওয়ে (রাজকুমার উমায়াদোর পুত্র) ।এই দুইজনকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং উভয়ের সাথেই সাক্ষাৎ করে অনুরোধ করেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই না করে। তার নিজের পুত্র রাজকুমার তাকেদা আগেই মারা গিয়েছিলেন। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার কবরেই তাকে সমাধিস্থ করা হোক। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র মতে, এমিশির বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি রাজকুমার তামুরার প্রতি স্যুইকোর পক্ষপাত দেখান। তবে কাউকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয়নি। অধিকাংশ সদস্য তামুরার পক্ষে থাকলেও কিছুজন ইয়ামাশিরো নো ওয়ের পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে এমিশি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সভা মুলতবি করেন। উভয় রাজপুত্র বংশগত ও বয়সের দিক থেকে সমান ছিলেন—তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং অনুমান করা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়েরও বয়স একইরকম। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেয়, যেখানে বলা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়ে দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে স্যুইকো তাকে ব্যক্তিগতভাবে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় তিনি সোগা নো এমিশিকে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেন। শেষ পর্যন্ত সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; একজন বিরোধী কর্মকর্তা এমিশির হাতে নিহত হন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজকুমার তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই তেন্নো নামে পরিচিত হন। তামুরাকে সমর্থন করার জন্য এমিশির স্পষ্ট কারণ ছিল—তামুরার প্রধান পত্নী ছিলেন সোগা নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয় যে তিনি ইতিমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, প্রসব করেন। অন্যদিকে, উল্লেখযোগ্য যে ইয়ামাশিরো নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হতে পারে এমিশি মনে করেন তামুরার সাথে তার সম্পর্ক আরও সদ্ভাবপূর্ণ হবে। জোমেইর সিংহাসনে আরোহণের ফলে এক তরুণ রাজপুত্র, নাকা নো ওয়ে, প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও জোমেইর রানী ছিলেন না সোগা নো হোতে নো ইরাতসুমে, বরং ছিলেন রাজকুমারেস তাকারা—ওশিসাকা নো হিকোহিতোর নাতনী এবং নাকা নো ওয়ে ছিলেন তারই পুত্র। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই তেন্নোর শাসনকাল নিয়ে খুব অল্প এবং অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। শুধু দুটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ৬৩০ এবং ৬৩২ সালে তাং রাজবংশের সঙ্গে দূতাবিনিময়। একজন শিক্ষার্থী যিনি ২৪ বছর ধরে চীনে ছিলেন, তিনি এই সময়ে দেশে ফিরে আসেন। আরেকজন, তাকামুকু নো কুরামারো, ৩০ বছর পরে ৬৪৪ সালে ফিরে আসেন এবং একজন মহা সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হন। দ্বিতীয় প্রধান ঘটনা হলো ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে প্রথম সীমানা যুদ্ধের নথিভুক্তি। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে জোমেই দুইবার তার রাজপ্রাসাদ স্থানান্তর করেন—প্রথমবার আগুন লাগার পরে এবং দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে, যেখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়। এটি ছিল বড় আকারের নির্মাণকাজের সূচনা। মনে করা হয়, শাসকের প্রাসাদ তখন রাজধানী নগরীতে রূপান্তরের পথে ছিল। তার শাসনকালের একটি গল্পে বলা হয়, জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক রাজপুত্র এমিশিকে ভর্ৎসনা করে বলেন যে, মন্ত্রীরা এবং কর্মকর্তারা আদালতে ঠিকভাবে উপস্থিত হন না। তাদের সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি একটি ঘণ্টার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এমিশি এই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরে, রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময় নির্ধারিত হয়। নতুন প্রাসাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল একটি বৌদ্ধ মন্দির—প্রথম যেটি কোনো শাসক কর্তৃক নির্মিত হয়। ৬৪১ সালে জোমেই কোনো উত্তরাধিকারী নিযুক্ত না করেই মারা যান। তার উত্তরসূরি হন তার রানী। তিনি দ্বিতীয় নারী তেন্নো হিসেবে কোগ্যোকু তেন্নো নামে পরিচিত হন (পরে তিনি সাইমেই তেন্নো হিসেবেও শাসন করেন)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে কিছুই বলে না যে কীভাবে এটি ঘটল। এখানে দুইজন সুস্পষ্ট প্রার্থী ছিলেন—ফুরুহিতো এবং নাকা নো ওয়ে। তারা সম্রাটের দুই ভিন্ন স্ত্রী থেকে জন্মগ্রহণ করেন। নাকা নো ওয়ে ছিলেন রানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। কিন্তু তখন তার বয়স মাত্র ১৬ (জাপানি হিসেবে; আমাদের হিসাবে ১৫)—এমন একজনকে সিংহাসনে বসানো তখনও প্রচলিত ছিল না। তাই একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি উদ্দেশ্য ছিল তার পুত্র নাকা নো ওয়ের জন্য ভবিষ্যতে সিংহাসন সংরক্ষণ করা। ফুরুহিতোর অবস্থান ছিল নিচু। কিন্তু বয়স নিশ্চিতভাবেই বেশি ছিল। কয়েক বছর পর নাকা নো ওয়ে ফুরুহিতোর এক কন্যাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স অবশ্যই ২০-এর বেশি ছিল। অন্যদিকে, ইয়ামাশিরো নো ওয়ে-কে ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন প্রার্থীর উপস্থিতি দেখায় যে, কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের পেছনে একটি কারণ ছিল—শীর্ষ অভিজাতদের মধ্যে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। এটি যুক্তিযুক্ত, কারণ সোগা নো এমিশি এমন একজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি সম্মতি ছাড়া কিছু করতেন না। নির্ভরযোগ্য প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। নতুন তেন্নোর বয়স তখন ৪৯ বছর ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগ্যোকুর শাসনকালের বর্ণনা প্রধানত সোগা বংশের পতনের দিকে কেন্দ্রীভূত। জোমেই শাসনকালে সবকিছু সোগা নো এমিশির তত্ত্বাবধানে মসৃণভাবে চলছিল বলে মনে হয়। তিনি বাকি গুরুত্বপূর্ণ দরবারিদের সঙ্গে ভালোই মিশতেন। কিন্তু কোগ্যোকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা তাকে সরিয়ে রেখে কার্যত সোগা বংশের প্রধান হয়ে ওঠেন—এবং এটাই ছিল একেবারে ভিন্ন ঘটনা। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে তিনি একজন অকালপক্ব ও মেধাবী শিশু ছিলেন। তিনি বড় হয়ে ওঠেন একগুঁয়ে, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি অবজ্ঞাশীল ব্যক্তি হিসেবে। তিনি শত্রু তৈরি করতেন এবং এতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হতেন না। এটি খুশি তাই করতেন। প্রথম ঘটনাটি হলো ৬৪২ সালে সোগা নো এমিশি নিজের ও তার পুত্রের জন্য কোফুন নির্মাণের বিবরণ। বলা হয়, তিনি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেন, যেন তিনি দেশের শাসক; এমনকি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের জমির লোকদেরও নিযুক্ত করেন। ইয়ামাশিরো নো ওয়ের বোন প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরের বছর এমিশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ব-উদ্যোগে দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি নিজেই একটি মন্ত্রীর টুপি তৈরি করে তা পুত্র ইরুকাকে দেন এবং ইরুকা ও-ওমি হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরুকা ষড়যন্ত্র শুরু করেন, যাতে ইয়ামাশিরো নো ওয়েকে উত্তরাধিকার থেকে সরিয়ে ফুরুহিতো নো ওয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একটি ফুটনোটে বলা হয়েছে, "অন্য একটি বই" বলেছে যে ইরুকা নিজেই সিংহাসনে বসার কথা চিন্তা করেন। ও-ওমি হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে, ইরুকা ইকারুগা প্রাসাদ আক্রমণের জন্য সৈন্য পাঠান। প্রাসাদ ধ্বংস হয়। তবে ইয়ামাশিরো নো ওয়ে এবং তার পরিবার পাহাড়ে পালিয়ে বাঁচেন। কিন্তু তাদের কোন সম্পদ না থাকায়, শেষে সবাই আত্মহত্যা করেন। সোগা নো এমিশি যখন এটি শুনেন, তিনি ইরুকাকে "মূর্খ" বলে ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, তুমি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের সাথে যা করেছ, অন্যরাও তোমার সাথে তাই করতে পারে। এটি ৬৪৩ সালের শেষদিকে ঘটে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এরপর বলে যে ইরুকার অভ্যুত্থানে নাকাতোমি নো কামাকো নো মুরাজি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং নিজ দায়িত্বে রাজবংশের জীবিত রাজপুত্রদের মধ্যে একজনকে সমর্থনের জন্য ঐক্য গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য যে ৬৪১ সালে কোগুরিয়োতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে স্বৈরশাসক অধিকাংশ অভিজাতকে হত্যা করেন। জাপানি অভিজাতদের এই ঘটনার বিষয়ে না জানার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি ইরুকার বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। নাকাতোমি সন্দেহ করেন যে রাজকুমার নাকা নো ওয়ে একজন ভালো নেতা হতে পারেন। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচিত না থাকায় একটি ফুটবল খেলার সময় তার সাথে পরিচয় ঘটান এবং দ্রুত তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যাতে তারা নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং সন্দেহ না জাগে, তারা উভয়ে কনফুসিয়ান দর্শন ও চীনা ভাষার পাঠে ভর্তি হন এবং একসাথে যাতায়াত করতেন। তাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল ইরুকাকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সোগা বংশের মধ্যেই সহযোগী খোঁজা। এই উদ্দেশ্যে নাকা নো ওয়ে সোগা বংশের একজন কন্যাকে বিয়ে করেন। এই মিত্রতা ছিল সোগা নো কুরোয়ামাদা নো ইশিকাওামারোর সঙ্গে। তিনি সোগা নো এমিশির ভাইপো ছিলেন। তার শাখা রাজপরিবারের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখে এবং তার তিন কন্যা শাসকদের বিয়ে করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইরুকাকে আদালতেই হত্যা করার একটি জটিল পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। যখন সময় আসে, ইরুকার ওপর আক্রমণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন রাজকুমার নাকা নো ওয়ে নিজেই তার তরবারি বের করে ইরুকাকে আঘাত করেন। ঘটনাটি তেন্নো (নাকা নো ওয়ের মা)-র উপস্থিতিতে ঘটে এবং রাজকুমার তাকে বলেন যে ইরুকা রাজবংশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। এরপর ইরুকার মরদেহ সৌজন্য সহকারে এমিশির কাছে পাঠানো হয়। তারা একদিন সময় নিয়েছিল সোগা নো এমিশির ওপর আক্রমণের জন্য সৈন্য জড়ো করতে, যুদ্ধে অংশ নেয় বহু রাজপুত্রের বাহিনী। এমিশি তার পক্ষে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজপুত্রের বাহিনী পৌঁছানোর পর এমিশির অধিকাংশ লোক তাকে পরিত্যাগ করে। নিজের পরিণতি অনুধাবন করে এমিশি ইতিহাসের সেই পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলেন যা সোগা নো উমাকো এবং রাজপুত্র উমায়াদো তৈরি করেন এবং যা তার কাছে ছিল, যদিও একজন লেখক সেই পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ অন্তত উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং তা নাকা নো ওএর কাছে হস্তান্তর করেন। এসব ঘটনার সময় নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন ৩১ বছর বয়সী এবং নাকা নো ওএ ছিলেন ১৯ বছর বয়সী। রাজপুত্র ফুরুহিতো নো ওএ ছিলেন নাকা নো ওএর (সৎ) বড় ভাই। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে, নাকাটোমি নো কামাকো নাকা নো ওএ-কে পরামর্শ দেন যে নিজের বড় ভাইয়ের আগে সিংহাসনে আরোহণ করা অনুচিত হবে। তাই তিনি প্রস্তাব দেন রাজপুত্র কারু। তিনি কোগিওকু তেন্নোর ভাই, তাকে সিংহাসনে বসানো হোক। সেটাই বাস্তবায়িত হয়। তিনি হলেন কোটোকু তেন্নো। কোগিওকু তার পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো সম্রাটের পদত্যাগ। এটি পরে নিয়মিত ঘটনার রূপ পায়। আরেকটি প্রথম ঘটনা হিসেবে, যার পুনরাবৃত্তি পরে বহুবার হয়েছে, রাজপুত্র ফুরুহিতো প্রকাশ্যে উত্তরাধিকার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে একটি প্রত্যন্ত মন্দিরে অবসর নিয়ে। এসমস্ত ঘটনা, রাজপুত্র কারুর আনুষ্ঠানিক সিংহাসনে আরোহণসহ, ঘটে সোগা নো এমিশির মৃত্যুর পরদিন। নতুন শাসন ব্যবস্থা কোনো সময় নষ্ট না করেই জানিয়ে দেয় যে পরিবর্তন আসন্ন। প্রাচীন উপাধি ও-ওমি ও ও-মুরাজি বিলুপ্ত করা হয় এবং তার পরিবর্তে নতুন উপাধি হিদারি নো ওমাচিগিমি এবং মিগি নো ওমাচিগিমি প্রবর্তন করা হয়, যেগুলো ইংরেজিতে সাধারণত চীনা উচ্চারণে সাদাইজিন (বামমন্ত্রী) ও উদাইজিন (ডানমন্ত্রী) নামে পরিচিত, যেখানে বাম মানে সিনিয়র এবং ডান মানে জুনিয়র। আবে নো ওমি নো কুওয়ারামারো প্রথম পদে এবং সোগা নো ওমি নো ইশিকাওয়ামারো দ্বিতীয় পদে নিয়োগ পান। নাকাটোমি নো কামাকো পান অপেক্ষাকৃত ছোট একটি উপাধি – উচিনোওমি বা নাইজিন। এটি পরে নাইদাইজিন নামে পরিচিত হয় এবং নারা যুগে উদাইজিনের পর তৃতীয় অবস্থানে ছিল। নতুন মন্ত্রীদের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাউন রাজকুমারের নিচে রাখা হয়। এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক মর্যাদাক্রম ছিল না। উচিনোওমি উপাধি প্যেকচে সরকারের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" এবং <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এটি বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে নাকাটোমি নো কামাকো প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ পাবেন, পদোন্নতি ও পদাবনতি সহ। তিনি যে অভ্যন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা হলো প্রাসাদের কাজের অভ্যন্তর। "মহামন্ত্রীরা" নীতিগত বিষয়ে মনোনিবেশ করবেন। কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণের পাঁচ দিন পর প্রাসাদের সব কর্মকর্তাদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উপরের পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করা হয়। সম্রাট, অবসরপ্রাপ্ত সম্রাজ্ঞী এবং ক্রাউন রাজকুমার সবাই উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের সম্রাটের ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতার শপথ করানো হয়। এ সময়ই তাইকা শাসনামলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত ধারাবাহিকভাবে রাজাদেশ জারি হতে থাকে, যেগুলো শুধু প্রাসাদ নয়, পুরো দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এই সময় থেকে শতকের শেষ পর্যন্ত ঘটা প্রায় প্রতিটি ঘটনার ওপরই গবেষকদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু লিখেছি, যেগুলো <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র উপর ভিত্তি করে, তা সম্পূর্ণ ভুল। বিশেষভাবে, কিছু দাবি করা হয় যে ইরুকার হত্যাকাণ্ড এবং কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ছিল না, বরং নাকা নো ওএ ছিলেন প্রচলিত "সিনিয়র রাজকুমার" মাত্র, যাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক সংবিধান অনুসারে থাকা প্রয়োজন ছিল। নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন মধ্যম স্তরের এক কর্মকর্তা যার কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। পুরো তার বিদ্রোহে ভূমিকা রাখার কাহিনী সাজানো হয়েছিল, কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় তার বংশধরেরা ক্ষমতাশালী ছিল। কোনো "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" পদ ছিল না। তাইকা শাসনামল ছিল না, এমনকি কোনো সংস্কার রাজাদেশও জারি হয়নি। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ অবশ্য তুলনামূলকভাবে মাঝামাঝি অবস্থান নেন। কিন্তু খুব কমই আছেন যারা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র সবকিছু যাচাই-বাছাই ছাড়া মেনে নেন। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> দাবি করে যে আমরা এখন যে শাসন ব্যবস্থা দেখছি, সেটির উৎপত্তি এই সময়েই ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রচারমূলক রচনা। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে কিছু পরিপূরক প্রমাণও রয়েছে—অষ্টম শতকের অন্যান্য কিছু বই যেগুলো সরকারি কমিটির মাধ্যমে লেখা হয়নি এবং এমনকি অল্প সংখ্যক প্রকৃত সরকারি নথিপত্রও আছে, যেমন কর বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের চিহ্ন। স্থানীয় প্রশাসনের জন্য প্রদেশ/জেলা পদ্ধতির সূচনার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অন্যান্য বইতেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ এত বেশি যে এসব কিছু পুরোপুরি বানানো বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। লেখকরা বইটি প্রকাশের মাত্র ৭৫ বছর আগের ঘটনা লিখেছেন। তাদের পিতামহ বা পিতারা এসব ঘটনার অংশ ছিলেন এবং পাঠকদেরও পূর্বপুরুষেরা তাতে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে, পঞ্চম শতকের বিষয়ে লেখার তুলনায় এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জনের সুযোগ অনেক কম ছিল। তবে, আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে এই বিবরণ নিছক নিরপেক্ষ নয়। নতুন সরকার প্রথম যে বিষয়টির মুখোমুখি হয় তা হলো কোরিয়ার তিনটি রাজ্য থেকে একযোগে দূতাবলীর আগমন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> তেমন স্পষ্ট নয় ঘটনাগুলো সম্পর্কে। তবে জাপানি পক্ষ প্যেকচের উপস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, যেখানে তারা মিনামা-কে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তোলে। অনুমান করা হয়, এটি এসেছে ৬৪২ সালে প্যেকচে ও কোগুরিয়োর মধ্যে একটি মৈত্রী গঠিত হওয়ার পরে। এটি সিলার উপর বড় পরাজয় আরোপ করে, সম্ভবত মিনামা কিংবা তার একটি অংশ দখল করে। আট মাস পর আবার দূতাবলী আসে এবং মিনামা নিয়ে নতুন বিবাদ শুরু হয়। তখন মনে হয় নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এমন এক অর্থহীন বিষয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বোকামি। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত তাকামুনে নো কুরামারো। তিনি চীন থেকে ৩০ বছর পর ফিরে আসেন। তাকে সিলায় পাঠানো হয় এবং তিনি বিষয়টির অবসান ঘটান। মিনামা কূটনৈতিক সত্তা হিসেবে অস্তিত্ব হারায় এবং জাপান অঞ্চলটির ওপর সব দাবি পরিত্যাগ করে। এটি একটি সাধারণ বাস্তবতা যে চীনের ক্রমাগত চাপে কোরিয়া তখন নিজেই নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছিল। ৬৪৪ সালে কোগুরিয়ো মাঞ্চুরিয়ায় লিয়াও নদী সীমান্তে চীনের একটি বিশাল হামলা প্রতিহত করে এবং আরও সংঘাত সামনে অপেক্ষা করছিল। জাপানিরা তখন যা ঘটছিল তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল। এটি জাপানকে আত্মরক্ষা উপযোগী করতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ তৈরি করেছিল। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই দুই সিনিয়র মন্ত্রীকে আদেশ দেওয়া হয় যে তারা "মায়েতসুকিমি" এবং "তোমো নো মিয়াতসুকো"দের থেকে মতামত নেবেন কীভাবে শ্রম কর নির্ধারণ করা যায় যাতে জনগণের আপত্তি না থাকে। মায়েতসুকিমি চীনা অক্ষর দ্বারা বোঝানো হয়। এটি চীনে প্রশাসনের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ করে। এখানে ধারণা করা হয় এটি ওমি ও মুরাজি অভিজাত গোত্রের জন্য একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হয়তো টুপি মর্যাদা ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের নির্দেশ করে। এটি আনুমানিক ১০ জন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী গোত্র প্রধানদের কমিটি সাধারণত ১০ জনের আশেপাশে থাকত, পারকিনসনের সীমা অনুযায়ী – ১২ জনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট কোনো কমিটি কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। "তোমো নো মিয়াতসুকো" ছিলেন স্থানীয় কর্মকর্তা, যারা সামরিক ও গণপূর্ত কাজের জন্য পুরুষদের নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন। আমি এখনো করব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলিনি, কারণ প্রাচীন সময়ের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে এ সময়ের সব এশীয় সমাজ, চীনসহ, তিন ধরনের করের ওপর নির্ভর করত—কৃষকদের কাছ থেকে ধান/শস্য, কৃষক নন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বস্ত্র)। জনসাধারণের কাজে শ্রম। আমরা অনুমান করি, এই প্রাচীন সময়ে ব্যবস্থাটি নারা যুগের মত এতটা সুবিন্যস্ত ছিল না। তবে কিছু না কিছু থাকতেই হতো। না হলে কোফুন (সমাধিস্তূপ) তৈরি হতো না। "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রাই এসব কাজের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করতেন এবং সম্ভবত তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করতেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে পরবর্তী ঘটনাবলি বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো আমরা জানি এই ঘটনাগুলো কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। আমাদের কাছে নারা যুগের শুরুর সময়ের সরকার কেমন ছিল তার অনেক তথ্য আছে, এমনকি কিছু আদমশুমারি রেজিস্টার ও কর নথিপত্রও আছে, যেগুলো দেখায় যে কিছু এলাকায় বাস্তবে সরকার কীভাবে কাজ করেছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>, যদিও প্রায় একমাত্র উৎস, আমাদের অনেক রাজাদেশের বিবরণ দেয়। তবে বলে খুব কমই যে এসব আদেশ কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বা পরবর্তীতে কীভাবে কাজ করেছে। বোঝা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতই একটি পরীক্ষানিরীক্ষার ধারা ছিল, কারণ কিছু আদেশ কোনো ফল দেয়নি এবং দ্রুতই নতুন আদেশে প্রতিস্থাপিত হয়। আমরা এই প্রক্রিয়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করতে পারি, সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত বিষয়। ধাপগুলো হলো ৬৪৫ সালের পরপর সময়কাল, এরপর কোরিয়ায় সঙ্কট যা ৬৬০ সালে তাং সাম্রাজ্যের প্যেকচে দখল ও তার জাপানের উপর প্রভাব। শেষে ৬৭২ সালে নাকা নো ওএর ছোট ভাই রাজপুত্র ওআমা সিংহাসন দখল করেন। অতিরিক্ত বিষয় হলো তথাকথিত "জিনশিন যুদ্ধ" যা ৬৭২ সালে ওআমাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> এটি বিশদভাবে বর্ণনা করে, ফলে আমরা আসুকা যুগের সমাজকে বাস্তবে কার্যকরভাবে কাজ করতে দেখি। আর যুদ্ধটি বই প্রকাশের মাত্র ৪৮ বছর আগের ঘটনা। তাই অনেক অংশগ্রহণকারী তখনো জীবিত ছিলেন। কারণ এই কাহিনী রাজাদেশের ধারাবাহিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, আমরা রাজপুত্র নাকা নো ওএ এবং নাকাটোমি নো কামাকো (পরবর্তীতে কামাতারিতে নামকরণ) – তাদের মধ্যে অনুমিত অংশীদারিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। সম্ভবত তাদের একজন ছিলেন চিন্তার মানুষ আর আরেকজন ছিলেন সেই কাজ বাস্তবায়নের জনশক্তি, কিংবা তারা দুজনেই উভয় ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। আমরা জানি যে রাজবংশ কামাকো-র প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ ছিল, কারণ তারা তার বংশধরদের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে এক অভূতপূর্ব মর্যাদা দিয়েছিল—একটি ঘটনা যা পরবর্তী কয়েক শতকে জাপানের সরকার কাঠামোর বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শুধুমাত্র এই ফুজিওয়ারার ভবিষ্যৎ উত্থানই প্রমাণ করে, আমার মতে, কামাকোর ৬৪৫ সালের ঘটনাবলিতে এবং তার পরবর্তী পরিবর্তনগুলিতে গভীর জড়িততা ছিল। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পর, তারা পাঁচটি প্রধান বিষয়ে নীতিনির্ধারণ করে একাধিক ফরমান জারি করে। প্রথম ফরমানে "পূর্ব প্রদেশসমূহে" গভর্নর নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয় জনসংখ্যার আদমশুমারি করতে, তা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক বা স্থানীয় অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে, তাতে কিছু আসে যায় না। একইসাথে তারা কতখানি জমি চাষ করছে, তাও নথিভুক্ত করতে বলা হয়। গভর্নর হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়, তারা সবাই রাজধানী থেকে আগত প্রভাবশালী অভিজাত। ফরমানে গভর্নরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা ছিল। এরা স্থায়ী গভর্নর ছিলেন না, যেমনটা পরে প্রতিষ্ঠিত হয়, বরং কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে রাজধানীতে ফিরে আসার নির্দেশ ছিল তাদের। তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন অপরাধ তদন্ত বা অন্যান্য বিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বরং জনসংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে রাজধানীতে ফিরে আসে। তবে, এটা স্পষ্ট যে এটি ছিল শুধুই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নিয়মিত প্রাদেশিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। "পূর্ব প্রদেশ" বলতে ফরমানে কী বোঝানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই কর্মকর্তারা প্রকৃতপক্ষে প্রায় এক মাস পর রাজধানী ত্যাগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণায় ইয়ামাতোর ৬টি আগাতায় কর্মকর্তাদের নিয়োগের কথা বলা হয়, যাদের একইভাবে আদমশুমারি ও ভূমি নিবন্ধন করার আদেশ দেওয়া হয়। এই এলাকাগুলো ছিল তাকেচি, কাতসুরাকি, তোচি, শিকি, ইয়ামাবে ও সো — যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে শাসক বংশকে সরাসরি রাজস্ব সরবরাহ করত। ধারণা করা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের বিবরণ নির্ধারণের জন্য এগুলো পরীক্ষামূলক এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তৃতীয় ঘোষণায় প্রাসাদে একটি ডাকবাক্স ও একটি ঘণ্টা স্থাপনের কথা বলা হয়। যাদের কোনো অভিযোগ ছিল, তারা প্রথমে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। কিন্তু যদি তাদের সমস্যা উপেক্ষা করা হতো, তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ ওই বাক্সে ফেলে দিতে পারত। এমনকি তাতেও ফল না হলে তারা ঘণ্টা বাজাতে পারত। একজন কর্মকর্তা এসে তাদের সাথে কথা বলত। এটি ছিল চীনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। চতুর্থ ঘোষণাটি ছিল সন্তানদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত। যদি কোনো সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ই স্বাধীন হতো, তাহলে তাকে পিতার পরিবারের সাথে নথিভুক্ত করা হতো। কিন্তু যদি একজন অস্বাধীন হতো, তাহলে সন্তানকে সেই অস্বাধীন পিতামাতার সাথেই নথিভুক্ত করা হতো — সে পিতা হোক বা মাতা। যদি দুটি ভিন্ন মনিবের অধীন দুই অস্বাধীন ব্যক্তি সন্তান জন্ম দিত, তাহলে সন্তান মায়ের সাথেই থাকত। আমরা এই সময়কার অস্বাধীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব কমই জানি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অসংখ্য শ্রেণির লোক ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে সেবক ছিল যারা দাস ছিল না এবং যাদের বিক্রি করা যেত না, আবার এমন লোক ছিল যারা প্রকৃত দাস হিসেবে বিবেচিত হতো — সম্ভবত যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে থেকেই এসেছে তারা। নারা যুগে অপরাধীদের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাসত্বে দণ্ডিত করা যেত। অপরাধীদের সন্তানরা নিজেদের ইচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে পারত যেন তাদের পিতা-মাতার স্বাধীনতা বজায় থাকে। ঋণের কারণেও কেউ দাসত্বে পড়তে পারত। এই ফরমানের উদ্দেশ্য ছিল কর নির্ধারণের জন্য ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করা। অস্বাধীন ব্যক্তিদের থেকে সরাসরি কর নেওয়া হতো না, বরং তাদের মনিবের উপর সেই কর আরোপ হতো। এই ঘোষণাসমূহের শেষ পদক্ষেপ ছিল বৌদ্ধ মঠগুলোর নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রতিটি মঠে তিনজন কর্মকর্তা সহ একটি আদর্শ অভ্যন্তরীণ প্রশাসন গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন প্রণয়নের তৎপরতার ঠিক পরেই, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> ঘোষণা করে যে রাজকুমার ফুরুহিতো ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিবি নো কাসা নো ওমি শিতারু স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সহ-ষড়যন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করলে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ফুরুহিতোকে হত্যা করার জন্য সৈন্য পাঠানো হয় এবং সফলভাবে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযোগভুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দুইজন ছিলেন সোগা ও আয়া বংশের সদস্য। এই ধরনের ঘটনা পরবর্তী একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায়শই ঘটেছে। কোনটা প্রকৃত ষড়যন্ত্র ছিল আর কোনটা ছিল অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নির্মূল করার অজুহাত — তা বলা কঠিন। আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে উভয় ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। রাজকুমার নাকা নো ওয়ে/তেনচি টেনো-র শাসনামলেও এধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। তার সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কেউ কেউ প্রতিরোধ গঠনের চেষ্টা করেছে — এটা খুব অবাক করার মতো কিছু নয়। কিন্তু একই সাথে এটা ভাবাও যথার্থ যে তিনি জোসেফ স্তালিনের মতো অপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করতেন। বছরের শেষে প্রাসাদ আসুকা থেকে নানিওয়া-তে স্থানান্তর করা হয়। এটি ইনল্যান্ড সি-র তীরে অবস্থিত। ওজিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ওজিন ও তার পুত্র নিন্তোকু তাদের প্রাসাদ নানিওয়া-তে স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর এই প্রথমবার। নতুন বছরের প্রথম দিনেই, নানিওয়া-তে সরকার প্রধান সংস্কার ফরমান জারি করে। এটি জাপানে "নিউ ইয়ার্স ডে এডিক্ট" নামে পরিচিত। এটি ছিল দেশ শাসনের জন্য তাদের পরিকল্পনার সবচেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে তখনকার সব ধরনের জমির মালিকানা বাতিল করে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, সমস্ত জমি ও জনগণ সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জমির আয়ে জীবনযাপন না করে, অভিজাতরা (যারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা হবেন) বেতন পাবেন। এরপর অংশটির বাকি অংশে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে একটি রাজধানী, যার নিজস্ব কাঠামো ও কর্মকর্তা থাকবে, প্রদেশ ও জেলা গঠন করতে হবে, সেইসাথে ছোট ছোট ইউনিট যেমন প্রহরীসহ চৌকি, ডাক স্টেশন ও ঘোড়ার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রথমে এই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলোর মধ্যেই কার্যকর করা হবে। কোন অঞ্চল এতে অন্তর্ভুক্ত তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় অংশে ব্যাপক আদমশুমারি প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল একটি নিয়মিত ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা — যেটি তখন চীন ও কোগুরিয়োতে প্রচলিত ছিল। ফরমানে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে কিভাবে জমি চীনা একক — চো (২.৪৫ একর) ও তান (এক চো-এর দশমাংশ) — অনুযায়ী পরিমাপ করা হবে। পাশাপাশি প্রতি চো জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ধানের গুচ্ছের ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ অংশে তৎকালীন সমস্ত কর ব্যবস্থা বাতিল করে একটি সরলীকৃত করব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। এতে থাকবে ধানে পরিশোধযোগ্য ভূমি কর, নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশমি কাপড়ে নির্ধারিত মাথাপিছু কর (যা সমমূল্যের অন্য স্থানীয় পণ্যে পরিশোধ করা যাবে), ও একটি মানক শ্রম কর — যার মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ সজ্জিত সৈনিক ও ঘোড়া প্রদান, সাধারণ শ্রমিক এবং অভিজাতদের প্রাসাদে কাজ করার জন্য দাসী ও পরিচারিকা পাঠানোর ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে এই শ্রম কর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়। এই পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হয়নি — বরং কয়েক দশকের কঠিন পরিশ্রমের পরই তা বাস্তবায়িত হয়। অনেকের ধারণা, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যেভাবে ফরমানটি উপস্থাপিত হয়েছে, তা আসলে অনেক পরে রচিত হয়েছে — যখন এই সব ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর হয়ে গেছে, ফলে এটি যা সফল হয়েছে তা বর্ণনা করে, আসল উদ্দেশ্য নয়। তবে এটা সরাসরি চীন বা কোগুরিয়োর প্রশাসনিক আইনবিধি থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দেশগুলোতে প্রচলিত ব্যবস্থারই একটি সংস্করণ জাপানে প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি সফল হলে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত মোট সম্পদের অনেক বেশি অংশ সরকারের হাতে আসত। এটি সরকারকে অর্থ ব্যয়ে আরও স্বাধীনতা দিত। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এমনভাবে গঠিত ছিল যাতে অধিকাংশ সম্পদ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। অভিজাতদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন ব্যয় কমে যায়। এর ফলে জাপানের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারত। এটি কোরিয়াকে ঘিরে শুরু হওয়া অস্থিরতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে অনেক গবেষক উদ্বিগ্ন তান (৩০ * ১২ তসুবো বা ১৮০ * ৭২ ফুট জমি) ও চো (১০ তান) এককের সংজ্ঞা এবং এগুলোর জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট করহারের বিষয়ে। এই পরিমাপ পদ্ধতি হুবহু ৫০ বছর পর প্রণীত তাইহো বিধির মতো। এর আগে জমি পরিমাপের জন্য চো, তান ও তসুবো ব্যবহারের আর কোনো উদাহরণ নেই — ৬৮৯ সালের "আসুকা নো কিয়োমিহারা কোড"-এ এগুলো প্রথম দেখা যায়। এর আগে ব্যবহৃত একক ছিল "শিরো"। এটি প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ। এছাড়াও প্রদেশগুলোকে যে জেলাগুলোতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফরমানে বলা হয়েছে, "যদি কোনো জেলায় ৪০টি গ্রাম থাকে তবে তা বড়, যদি ৪-৩০টি গ্রাম থাকে তবে তা মাঝারি, আর ৩টির কম হলে তা ছোট জেলা।" তাইহো বিধিতেও একই ধারা আছে। তবে সেখানে জেলা ৫ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং আকার ভিন্ন। যদিও বিষয়বস্তু ভিন্ন। কিন্তু বিন্যাস ও ভাষা এক। নারা যুগে ব্যবহৃত জেলার সাধারণ শব্দ ছিল "কোরি" (郡)। এটি ফরমানে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীর মূল নথিতে এর কোন ব্যবহার নেই; সেখানে "হিয়ো" (評) ব্যবহৃত হয়েছে। ফরমানে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্যও নারা যুগের পদবী ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর নথিতে আলাদা নাম দেখা যায়। 郡 ও সংশ্লিষ্ট পদগুলো ছিল চীনা প্রভাবাধীন, আর 評 ও তার পদগুলো ছিল কোরিয়ান রাজ্যসমূহ থেকে আগত। এর ফলে ধারণা করা হয় না যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উদ্ধৃত ফরমানটি আসলে আসুকা কিয়োমিহারা বিধিমালার আগে বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্ণনা দেয়; বরং এটি একটি পরবর্তী সংস্করণ। যদি ফরমানের ওই অংশগুলো বৈধ না হয়। তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিত হব যে অন্য অংশগুলো বৈধ? প্রাচীন জমি ধারণের প্রথা বিলুপ্ত করার বিষয়ে প্রথম অনুচ্ছেদটি নিশ্চয়ই নারা যুগের কোনো উৎস থেকে নেওয়া হতে পারে না। চতুর্থ অনুচ্ছেদের যে বিধানগুলিতে এক ধরনের করকে অন্য ধরনের করের সাথে রূপান্তরের জন্য রেশম কাপড়কে মূল্যমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা তাইহো বিধিমালার অংশ নয়, কারণ তাইহো বিধিমালা কোনো করপ্রকারের রূপান্তরের অনুমতি দেয় না। সংরক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র লেখকদের কাছে ফরমানটির পূর্ণ পাঠ্য ছিল না। তাই তারা অনুপস্থিত অংশগুলো পূরণ করেছে। তবে দলিলটির মূল উদ্দেশ্য—বিদ্যমান জমি মালিকানা ও করব্যবস্থা বিলুপ্ত করা এবং চীনা ও কোরিয়ান মডেলের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি ব্যবস্থা স্থাপন—তা সত্য। সবশেষে, এটাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। প্রাচীন জাপানিরা এটি কেই রূপান্তরের সূচনা বলে গণ্য করে। একটি বিতর্কিত বিষয় হলো প্রাথমিক জমি বন্টন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করার কথা ছিল। তাইহো বিধিমালায় পরিবারের প্রতিটি কর্মক্ষম সদস্যের জন্য (বয়স, লিঙ্গ ও অবস্থান অনুসারে) নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির হিসাব রাখা এবং তারপর তা যোগ করে একটি পরিবারের মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করার বিশদ নিয়ম ছিল। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত ফসল কর নির্ধারিত হতো। বিকল্প পদ্ধতি ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি প্রতিটি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া, পরিবারের গঠনের বিস্তারিত বিবেচনা না করেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, "নববর্ষ ফরমান"-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের সঙ্গে কৃষকদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ভেঙে ফেলা এবং অভিজাতদের বেতনভোগী কর্মকর্তায় পরিণত করা। একই সঙ্গে কৃষক পরিবারগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করা হতো অতিরিক্ত হয়ে যেত। বরং বিদ্যমান কৃষি সম্প্রদায় ও তাদের গৃহস্থালিকে ধরে রেখেই নতুন ব্যবস্থাকে অপেক্ষাকৃত সহজ রাখা ছিল বেশি বাস্তবসম্মত। পরবর্তী সময়ে তাইহো বিধিমালার আদমশুমারি ও জমি পুনর্বণ্টন চক্র বাস্তবায়ন এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা এত জটিল ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতেন না। এও ধারণা করা হয় যে ৬৪৬ সালে এই ধরনের ব্যবস্থা একযোগে সারা দেশে প্রয়োগ করা যাবে না, সেটা সবাই বুঝেছিল, বরং ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে—যদিও ফরমানে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এই ফরমানে সাধারণ কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান প্রভাব পড়বে এমন কিছু ছিল না, করহার ব্যতীত। করহার বৃদ্ধি না হ্রাস—তা জানা যায় না। যদি রাজস্বের বড় অংশ রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। তবে পরিবহনের জন্য উল্লেখযোগ্য শ্রম প্রয়োজন হতো। জমি বন্টন ব্যবস্থায় জমি চাষ এবং কর প্রদানের প্রধান দায়িত্ব পরিবার একককে দেওয়া হয়েছিল। এটি বিদ্যমান প্রথার ধারাবাহিকতা ছিল, না নতুন কিছু—তা স্পষ্ট নয়। বিকল্প পদ্ধতি ছিল গ্রামকে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে মূল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু বানানো, যেখানে প্রতিটি গ্রামকে নির্দিষ্ট কর ধার্য করা হতো এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বন্টনের স্বাধীনতা থাকত। যদি কৃষকদের জন্য "বে" ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতো। তবে কোফুন যুগের জাপান হয়তো অনুরূপ কাঠামোর অধীনে ছিল এবং নতুন ব্যবস্থা হতো একটি বড় পরিবর্তন। ৬৪৬ সালের দ্বিতীয় মাসে আরও একটি সাধারণ ফরমান জারি হয় যা দুইটি বিষয় নিয়ে ছিল। এটি জাতীয় অভিযোগ বাক্সের পূর্ববর্তী ঘোষণাকে জোরদার ও সম্প্রসারিত করে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে নামবিহীন পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি ও জানানো হয় যে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আসা কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলা হয়, শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার কারণে যারা রাজধানীতে এসেছিল, তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায়ই বাড়ি ফিরে যেতে পারত না, কারণ কর্মকর্তারা ও অভিজাতরা তাদের অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত রাখত। সরকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয় যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মাসে পূর্ব প্রদেশে পাঠানো কর্মকর্তারা রাজধানীতে ফিরে আসে। একটি ফরমানে ঘোষণা করা হয় যে আটজন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুজন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে একটি বিস্তারিত ফরমান প্রকাশিত হয় যেখানে অভিযুক্তদের নামও উল্লেখ করা হয়। প্রধান সমস্যা ছিল কিছু কর্মকর্তা তাদের অবস্থানের অপব্যবহার করে করের টাকা আত্মসাৎ ও ঘুষ আদায় করেছিল। তাদের সব অর্থ ফেরত দিতে এবং চুরির দ্বিগুণ জরিমানা দিতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগের মাধ্যমেই তাদের অপরাধ প্রকাশ পায়। কিছু স্থানীয় অভিজাত স্বেচ্ছায় ঘুষ প্রদান করেছিল। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেতনার অংশ হিসেবে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এবং, নতুন প্রাসাদ নির্মাণজনিত কারণে জনগণের ওপর সৃষ্টি হওয়া ভোগান্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি সাধারণ ক্ষমাও দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, যারা প্রাসাদ নির্মাণে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত থাকায় অন্য কর প্রদানে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের সেই কর মওকুফ করা হয়। কয়েক দিন পর রাজপুত্র নাকা নো ওয়ে সম্রাটকে একটি পিটিশন দেন যেখানে তিনি অভিজাতদের হাতে থাকা কিছু ঐতিহ্যবাহী জমির মালিকানা বিলুপ্ত করার দাবি জানান এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে থাকা ৫২৪ জন ইম্বে (মূলত শিন্তো মন্দিরের কর্মী) ও ১৬১টি মিয়াকে (বিভিন্ন ধরণের রাজস্ব উৎপাদনকারী ইউনিট) সম্রাটকে ফিরিয়ে দেন। এরপর আরেকটি ফরমান জারি হয়। এটি কোফুন সমাধি নির্মাণ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আচার নিয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আকার ও ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ এবং চাষযোগ্য জমিতে সমাধি না বানানোর নিয়ম চালু করা। পূর্বে বর্ণিত ফরমানটিতেই বলা হয়েছিল যে একটি রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭০০০ শ্রমদিবস খরচ করা যাবে। নিম্নতর শ্রেণির জন্য সেই অনুপাতে সীমা নির্ধারিত হবে। আজকের জাদুঘরগুলোতে থাকা অতিরঞ্জিত কবর উপকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও বিবাহ রীতিনীতি নিয়ন্ত্রণে একটি বিশদ ফরমান, স্থানীয় রীতিনীতি পরিবর্তনে একটি ফরমান—যা দেশের মধ্যে অবাধ চলাচলে বাধা দিত। ব্যক্তিগত জমি বিলুপ্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আরও নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই ফরমানগুলো এবং ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অভিজাত অসন্তুষ্ট ছিল—তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন নেই। কিছু প্রমাণ আছে যে স্থানীয় অভিজাতরা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের সহযোগিতা স্বাগত জানিয়েছিল। ৬৪৪ সালের শরতে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কান্তো অঞ্চলের এক এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থানীয় ব্যক্তি প্রচার করেন যে একটি বিশেষ পোকা (সম্ভবত কোনো শুঁয়োপোকা) এক দেবতার দূত, যাকে উপাসনা করলে পরিশ্রম ছাড়াই সবাই ধন-সম্পদ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে মানুষ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং দল বেঁধে গান গেয়ে ও মদ্যপান করে ঘুরে বেড়াতে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিছু করতে অক্ষম ছিল। রাজধানী থেকে হাতা নো মিয়াতসুকো কাওয়াকাতসু নামে এক কর্মকর্তা এসে প্রচারককে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত সঙ্কটকালে ঘটে। ধারণা করা হয়েছে, এই আন্দোলনটি কোরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের রেশম উৎপাদন প্রতিষ্ঠার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছিল। “রেশমপোকা কোরিয়ানদের ধনী করে তোলে, তাহলে আমাদের শুঁয়োপোকাও হয়তো আমাদের ধনী করবে”—এইরকম ভাবনা হতে পারে। হাতা বংশ রেশম উৎপাদনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। তাই কেউ কেউ অনুমান করেন যে হাতা কাওয়াকাতসুকে পাঠানো হয়েছিল এ খোঁজ নিতে যে, স্থানীয়রা এমন কোনো পোকা পেয়েছে কি না। এটি দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রেশম তৈরি করা সম্ভব। পরবর্তী কোফুনসমূহের সংখ্যা ও পরিসরের পরিবর্তনের ভিত্তিতে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন, গ্রামীণ গোত্র প্রধানরা—কুনি নো মিয়াতসুকো—তাদের আধা-রাজকীয় মর্যাদা ও ক্ষমতা হারিয়েছিল। এটি গ্রামীণ অভিজাতদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে একটি প্রবণতা নির্দেশ করে, যার ফলে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় প্রশাসন কার্যকারিতা হারিয়েছিল। যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভর্নর পাঠানো শুরু করল, তখন তারা কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ করছিল। স্থানীয় অভিজাতদের দমন না করে বরং তাদের অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা হচ্ছিল। তবে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক আয়ের পরিবর্তে সরকার-নিযুক্ত বেতনভোগী হয়ে ওঠা একটি বড় পরিবর্তন ছিল এবং এটি কার্যকর হবে কি না—তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬৪৬ সালের ফরমান ধারায় একটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল যে যেসব অভিজাতদের ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের সবাইকে সরকারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং সরকারি বেতন প্রদান করা হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল, যারা সরকারি পদে নিয়োগ পাবে না, তারা কার্যত সাধারণ নাগরিক বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি সতর্কবার্তা ছিল যে কেউ যদি অবৈধভাবে অভিজাত পরিচয় দাবি করে। তবে তাদের সনাক্ত করে অপসারণ করা হবে। পরিবর্তনের গতি ৬৪৭ সালে ধীর হয়ে গেল। একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল যাতে শাসকদের নামের মধ্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলি শতাধিকারদের ব্যক্তিগত নাম এবং স্থান নামের জন্য ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। চীনে সাধারণত এমন নিয়ম ছিল যে সম্রাটের নাম লেখায় ব্যবহৃত অক্ষর এবং বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে, বিশেষত সেইসব যজ্ঞে যেখানে সম্রাট ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতেন, সেগুলি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত না। মানুষকে বিকল্প অক্ষর খুঁজে বের করতে হতো। এটি মনে হয় জাপানে সেই নিয়ম প্রয়োগ করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রধান পরিবর্তন ছিল ক্যাপ র‍্যাঙ্ক সিস্টেমের সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠন। পূর্বের বারোটি র‍্যাঙ্ককে ছয়টি করে সংকুচিত করা হয়েছিল, নীচে একটি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয় এবং উপরে ছয়টি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয়, ফলে প্রথমবারের মতো শীর্ষ অর্স্তাধিকারীদেরও এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়। তারপর, মাত্র দুই বছর পরে এটি আবার পুনর্গঠিত হয়। সেই ছয়টি সংকুচিত র‍্যাঙ্ক আবার বারোটি হয়ে যায়। শীর্ষ ছয়টি র‍্যাঙ্ক ব্যতীত বাকিগুলোর নাম আবার পরিবর্তিত হয়। কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া বুরোক্র্যাসির জটিলতার কারণে হয়েছে। র‍্যাঙ্কগুলো বেতন নির্ধারণের ভিত্তি হওয়ায়, বেশি র‍্যাঙ্ক মানে আরও বিভিন্ন বেতন স্তর। এই পুনর্গঠনের পর ৬৪৯ সালে শাসনরত বংশের রাজকুমার ছাড়া সকল শতাধিকারী এই সিস্টেমের আওতায় আসেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬৪৮ সালের একটি উল্লেখ আছে যেখানে বলা হয়েছে ৬৪৭ সালের র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রীরা পুরানো ক্যাপ ব্যবহার চালিয়ে গেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু অসন্তোষ ছিল। তাই ৬৪৯ সালে র‍্যাঙ্কের সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধি ও পরিবর্তন একটি প্রতিক্রিয়া ছিল, যাতে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে তাকে তার নিচের কাউকে সঙ্গে একই স্তরে ফেলা হচ্ছে না। আরেকটি পরিবর্তনের লক্ষণ ছিল ৬৪৭ সালে হাজিরা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘণ্টা ব্যবস্থার চালু হওয়া। কর্মকর্তাদের সকাল ৫টার মধ্যে প্রাসাদের বাইরে শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন ধরে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। ৫টায় ঘণ্টা বাজানো হতো এবং অফিসের দরজা খোলা হতো, সবাই ভিতরে ঢুকতে যথেষ্ট সময় পেলে আবার ঘণ্টা বাজিয়ে দরজা বন্ধ করা হতো এবং যারা দেরি করতো তাদের ঢুকতে দেওয়া হত না। সবাই সকাল ৬টার মধ্যে তার ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতে হতো। দুপুর ১২টায় কাজের সময় শেষের ঘণ্টা বাজানো হতো। খুব প্রাচীন একটি রীতির অংশ ছিল যে আদালতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সূর্যোদয়ের আগে বা ঠিক সময়ে করা হতো এবং এই অফিস সময়ের কাঠামো অনেকদিন বজায় ছিল। ১৯ র‍্যাঙ্কের সংশোধিত সিস্টেম ৬৪৯ সালের শুরুতে কার্যকর হয় এবং তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চীনা সিস্টেমভিত্তিক সরকারের বিভাগ, অফিস এবং ব্যুরো গঠন করা হবে। এটি তকমুনে নো কুরামারো এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু বিন দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হবে। এখন পর্যন্ত যা অর্জিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার দেওয়া যাক। এক, সম্রাটকেন্দ্রিক সরকারের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‍্যাঙ্ক সিস্টেম সম্প্রসারণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মানে হল সম্রাট এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করেন, পদোন্নতি দেয়। শতাধিকারীরা তাদের র‍্যাঙ্ক ভিত্তিক মর্যাদায় সংজ্ঞায়িত হবেন। দুই, সরকারের কেন্দ্রীয়করণ নিশ্চিত হয়েছে, প্রদেশগুলো সরাসরি প্রাসাদ থেকে পরিচালিত হবে একটি একক বুরোক্র্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে। তিন, সব জমি এবং তার উপর কাজ করা সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সম্পত্তি হবে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সব বাস্তবায়ন এখনও বাকি। কিন্তু নীতিগুলো স্থাপন করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ নেই। চার, এই নতুন সিস্টেম পরিচালনা করবে একই শতাধিকারীদের দল যারা পূর্বে শীর্ষে ছিল, যমাতো ও কাওয়াচি প্রদেশ থেকে। সরকার কাঠামো ও কার্যকারিতায় বিপ্লব ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর সদস্যত্ব জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে বিপ্লবের আওতায় আনা হচ্ছে না। সবাইকে তার বর্তমান মর্যাদানুযায়ী র‍্যাঙ্ক, পদ ও বেতন দেওয়া হবে। নতুন একটি চীনা রাজবংশ সাধারণত যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করতো। রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সফল সেনাপতি যাঁর শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। তিনি নতুন সরকারের নকশায় স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তাকে এমন কিছু তৈরি করতে হয়েছিল যা কার্যকর হত, নাহলে রাজবংশ দীর্ঘস্থায়ী হত না। সফল রাজবংশগুলো সাধারণত চীনা সরকারের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে কাজ করত। তাই নকশার স্বাধীনতা সীমিত ছিল। এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাই হোক না কেন, দেশের শাসনের সূক্ষ্ম কাজগুলি করতেন ঐতিহ্যবাহী অর্স্তাধিকারীরা। বিকল্প ছিল না। পুরাতন শাসন ব্যবস্থা নতুন নাম দিয়ে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। আসুকা যুগের বাকী সময়ের চ্যালেঞ্জ ছিল তা নিশ্চিত করা যে সেটি হবে না এবং সরকার সত্যিই পরিবর্তিত হবে, কেন্দ্রীভূত ও সংগঠিত হবে যাতে জাতীয় সম্পদের বৃহত্তর অংশ প্রাসাদের হাতে আসে এবং এই দেশকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়িত হলে সরকার সত্যিই দেশের সমৃদ্ধির সম্পূর্ণ অংশ কর ব্যবস্থায় আনবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে তার পুনর্বণ্টন ও ব্যয়। অধিকাংশ বেতন আকারে শতাধিকারীদের কাছে যাবে। তবে বাকিটা জাতি গঠনের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং বেতন ব্যবস্থা শতাধিকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন মন্ত্রণালয় ও র‍্যাঙ্ক সবই ভালো। কিন্তু মূল বিষয় ছিল দেশের কৃষকদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই নতুন সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কফুন রাজনীতি আবার প্রবেশ করল। ৬৪৯ সালের তৃতীয় মাসে সিনিয়র মন্ত্রী আবে নো কুরাহাশিমারো মারা গেলেন। মাত্র সাত দিন পর সোগা নো হিমুকা গোপনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে, বিশেষ করে রাজকুমার নাকা নো ওয়ের হত্যার পরিকল্পনা। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন এটা সত্য নয়। হিমুকা ছিল ইশিকাওয়ামারোর ছোট ভাই এবং নিজেই শীর্ষ মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নাকা নো ওয়ে এই তথ্য কোতোকু তেননোর কাছে পৌঁছে দেন। তিনি ইশিকাওয়ামারোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য官 পাঠান। ইশিকাওয়ামারো মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং সম্রাটের সাক্ষাৎ চান। কোতোকু তা মানেননি এবং সৈন্য পাঠিয়ে তাকে আটকাতে বলেছিলেন। ইশিকাওয়ামারো তার প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যমাতোর যমাদেরাতে গিয়েছিলেন, যেখানে তার বড় ছেলে মন্দির নির্মাণ পরিচালনা করছিল। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী ছেলে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইশিকাওয়ামারো রাজি হননি। তিনি ও তার পরিবার আত্মহত্যা করেন ফাঁস দিয়ে। তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরও অনেককে সরকার পরে ফাঁসি দেয় এবং বহুজনকে নির্বাসিত করা হয়। আরিস্টোক্রেসির সরকার গঠন করা কঠিন কারণ কাউকে সহজে বরখাস্ত করা যায় না। পরবর্তী ২৫০ বছরে আমি কেবল দুটি ক্ষেত্রে দেখেছি কেউ ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই কম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি involved ছিলেন যারা নিজস্ব বাহিনী গড়ার ক্ষমতা রাখত না। তারা হলেন নারা যুগের পুরোহিত দোকিও এবং হেইয়ান যুগের সুগাওয়ারা নো মিচিজানে, যারা উচ্চপদে উঠে পরে সাপোর্ট হারানোর পর পড়ে যান। তখন বা পরে কোনো কারাগার ব্যবস্থা ছিল না। মৃত্যুর কম শাস্তি ছিল নির্বাসন, যেখানে নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করা হত এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বসবাস করতে হত। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বহুজন নির্বাসনে পাঠানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন নির্বাসনের পথে বা ততক্ষণে। নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন অনেক নির্বাসিত পালিয়ে আত্মীয়দের কাছে লুকিয়ে ছিলেন। এটি একধরনের নরম বাড়ি নিরোধ। এই ঘটনার পেছনে নাকা নো ওয়ের ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন না সোগা পরিবারের কেউ সর্বোচ্চ পদে উঠুক। সোগা নো হিমুকাকে কিউশুতে স্থানান্তর করা হয়। এটি পরবর্তীকালে মার্জিত নির্বাসনের একটি রূপ (এটাই হয়েছে সুগাওয়ারা নো মিচিজানের ক্ষেত্রে)। কখনো কখনো অর্স্তাধিকারীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ জটিল হয়। নাকা নো ওয়ের প্রধান স্ত্রী ছিলেন ইশিকাওয়ামারোর মেয়ে এবং জিতো তেননোর মা। তিনি তার বাবার পতনের পর শোকেই মারা গিয়েছিলেন। এর চূড়ান্ত ফলাফল ছিল যে সরকারের শীর্ষে দুইটি পদ শূন্য ছিল। নতুন সদাইজিন হলেন কুসে নো ওমি টোকুতা এবং নতুন উডাইজিন হলেন ওতোমো নো মুরাজি নাকাতোকো। তারা দুজনেই নতুন ব্যবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছিলেন এবং এখন ৫ম শ্রেণীতে পদোন্নত হন। কুসে ৬৪৫ সাল থেকে সরকারের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ওতোমো ছিলেন একটি প্রধান গোত্রের প্রধান। আবে নো কুরাহাশিমারো এবং সোগা নো ইশিকাওয়ামারো নতুন পদবীর ব্যাজ পরতে অস্বীকার করেন এবং পুরানো মন্ত্রীদের টুপি পরতে চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ছিলেন নতুন পদবী ব্যবস্থায় প্রথম মন্ত্রীরা। তাদের নতুন পদবীর মানে ছিল যে নতুন ব্যবস্থার শীর্ষ চারটি পদ তখনই খালি ছিল। পরের বছর, ৬৫০ সালে, শাসনখাতের নাম পরিবর্তিত হয়ে তাইকা থেকে হাকুচি হয়ে যায়। এটা সম্ভবত একটি সংকেত হিসেবে দেওয়া হয়েছিল যে প্রধান সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন নতুন ব্যবস্থার সংহতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। নামটি এসেছে একটি সাদা ময়ুর দেখার ও ধরা পড়ার প্রতিবেদনের থেকে। এটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই পরিবর্তনের সাথে যথেষ্ট ভোজ ও আয়োজন ছিল। যে প্রদেশ (হোন্সু দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে) পাখিটি উপহার দিয়েছিল তাকে তিন বছর করমুক্ত রাখা হয় এবং ওই প্রদেশে ময়ুর শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। 'নিহন শোকি' থেকে বিচার করলে দেখা যায় শাসক হওয়ার সঙ্গে সবসময়ই প্রচুর আনুষ্ঠানিকতা জড়িত ছিল। কিন্তু তা বেশির ভাগ সময়ে গোপনে অনুষ্ঠিত হত। এখন আমরা দেখতে পাই সরকার প্রায়ই সকল কর্মকর্তাদের বৃহৎ আনুষ্ঠানিকতার জন্য মুক্ত আকাশের নিচে জড়ো করে। এই পর্যায়ে পরিষ্কার নয় সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি পেত কি না। তবে নিশ্চিতভাবে নারা এবং হেইয়ান যুগে রাজ পরিবার সংক্রান্ত অনেক অনুষ্ঠান এমনভাবে অনুষ্ঠিত হত যাতে মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা দেখার সুযোগ পেত। এটা সরকারের এবং সম্রাটের জাতির জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবার অংশ। ৬৫১ সালে সরকার ওকোরিতে ছয় বছর অবস্থানের পর নানিভাতে নতুন একটি প্রাসাদে চলে যায়, যার নাম নাগারা নো টয়োসাকি প্রাসাদ। 'নিহন শোকি' অনুযায়ী এই প্রাসাদের নির্মাণে অনেক কফুন ধ্বংস হয় এবং অনেক কৃষক স্থানান্তরিত হন, যাদের সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এটি একটি বড় নির্মাণ প্রকল্প ছিল। সরকার প্রবেশের পরও কাজ চলতে থাকে এবং এক বছর ছয় মাস পরে সম্পূর্ণ হয়। 'নিহন শোকি' বলেছে যে এটি দেশের পূর্ববর্তী যেকোনো নির্মাণের চেয়েও ভাস্বর ছিল। প্রাসাদের অবস্থান আবিষ্কৃত ও পুরাতাত্ত্বিকভাবে খনন করা হয়েছে। এটি ওসাকা ক্যাসল এর সাইটের ঠিক পাশেই, আধুনিক ওসাকার সেই এলাকায় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচ্চতর। ৬৫১ সালে সিল্লা থেকে পাঠানো দূতরা কিউশুতে তাং রাজবংশের চীনা পোশাক পরেছিলেন। এটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান পোশাক থেকে আলাদা। এ কারণে সরকার অনুমান করেছিল সিল্লা জাপানের সঙ্গে পরামর্শ না করেই চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং দূতাবাস প্রত্যাখ্যাত হয়। সিল্লা ৬৪৯ সালে রাজার প্রাসাদের পোশাক পরিবর্তন করে চীনা শৈলীতে নিয়ে যায়। দুই বছর পর, ৬৫৩ সালে জাপান দুইটি জাহাজ এবং ২৪২ জন নিয়ে চীনে দূতাবাস পাঠায়। ৬৫৪ সালে একটি দ্বিতীয় দূতাবাস পাঠানো হয় যার নেতৃত্ব দেন তাকামুনে কুরোমারো এবং আবে নো ওমি মারো। 'ওল্ড টাং হিস্ট্রি' (যেখানে নিউ টাং হিস্ট্রি ও আছে) দ্বিতীয় দূতাবাসের কথা উল্লেখ করেছে। তখন তাকামুনে হয়তো খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং তিনি চীনে মৃত্যুবরণ করেন। ৬৫৩ সালের দূতাবাসের দুটি জাহাজের মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে যায়, ১২১ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন বেঁচে যায়। ৬৫২ সালের প্রথম মাসে 'নিহন শোকি' খুব সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছে যে ওই মাসে জমির পুনর্বন্টন করা হয় এবং একই বছরের চতুর্থ মাসে জনগণনার রেজিস্টার তৈরি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য খুব কম দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি একটু অদ্ভুত, যেখানে বলা হয়েছে "প্রথম মাস থেকে এই মাস পর্যন্ত জমির পুনর্বন্টন সম্পন্ন হয়েছে।" সাধারণত জনগণনা আগে হয় যাতে জানা যায় কতগুলো পরিবার জমি পাবে। তাইহো কোড অনুযায়ী জনগণনা এবং পুনর্বন্টন চক্র ছয় বছর। অনুমান করা হয় যে ৬৪৬ সালে শুরু হওয়া পুনর্বন্টন কার্যক্রমটি শেষ হয়েছে এবং তারপর তিন মাস পর পরবর্তী চক্রের জনগণনা শুরু হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে সম্ভবত এই কাজ ছিল ইয়ামাতো অঞ্চলের ছয় আগাতার এবং সম্ভবত সাম্রাজ্যিক মিয়াকের জমিতে একটি ছোট পরীক্ষা প্রকল্প। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরবর্তী নিশ্চিত জমির পুনর্বন্টন বিবেচনা করে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন না যে তখন জাতীয় স্তরে পুনর্বন্টন হয়েছে। হিতাচি ফুডোকি অনুযায়ী ৬৪৯ সালে কাশিমা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৬৬৩ সালে শিনোডা, নামেকাতা ও ইওয়াকি জেলা তৈরি হয়। মনে হয় সরকার গ্রামীণ প্রশাসনের কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছিল এবং জনগণনা ও পুনর্বন্টন এখনও অনেক দূরে ছিল। ৬৫৩ সালে কোটোকু তেন্নো এবং নাকা নো ওয়ের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়। নাকা নো ওয়ে প্রাসাদকে ইয়ামাতো প্রদেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন এবং সম্রাট তা অস্বীকার করেন। তবুও নাকা নো ওয়ে চলে যান, তার মা — প্রাক্তন কোগোকু তেন্নো এবং বর্তমান সম্রাজ্ঞী (নাকা নো ওয়ের বোন) ও তার সন্তানদের সঙ্গে। কোনো ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট তারিখ নেই, শুধু বছর উল্লেখ আছে। পরবর্তী বছরের ১০ম মাসে সম্রাট অসুস্থ হন এবং সবাই নানিভায় ফিরে আসেন এবং সম্রাটের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয় যে নাকা নো ওয়ে ভেবেছিলেন সম্রাটকে সরকারের কেন্দ্রে আনার প্রচেষ্টা খুব সফল হয়েছে এবং তার নিজের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তাই নতুন ও ব্যয়বহুল নাগারা প্রাসাদে তেমন প্রস্তাব দেওয়া যা সম্রাট নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করবেন। এরপর রাগে সরে গিয়ে ইয়ামাতো চলে যান এবং সবাইকে তাদের আসল ক্ষমতাধারী কে তা ভাবতে বাধ্য করেন। গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ ব্যক্তি তার অনুসরণ করে ইয়ামাতো যান। একটি আধুনিক মতবাদ আছে যে বিরোধের আসল কারণ ছিল নাকা নো ওয়ে তার বোন সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। 'নিহন শোকি' সম্রাজ্ঞীকে পাঠানো সম্রাটের একটি কবিতা উদ্ধৃত করেছে যা এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই তত্ত্ব বলে যে এর জন্যই নাকা নো ওয়ে ২৩ বছর ধরে সিংহাসনে আরোহণ করতে চাননি। সম্রাট হলে তার কোনো গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা থাকত না এবং তিনি গোপনে সম্পর্ক রাখতে পারতেন না। এছাড়াও বলা হয় কোটোকু তেন্নোর মৃত্যুর পর নাকা নো ওয়ে প্রকাশ্যভাবে তার বোনকে স্ত্রী হিসেবে দেখতেন। এমন কিছু বিবাহকে আমরা অজাচার দাম্পত্য মনে করলেও রাজবংশে এসব সাধারণ ছিল। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। যদি এই বিবাহ সত্যি হয়, তা নিয়ম ভঙ্গ করত। পূর্বে এমন উদাহরণ আছ। মানুষেরা মনে করত নাকা নো ওয়ে ঐ সম্পর্ক চলাকালীন রীতিগতভাবে দুষিত ছিলেন। তাই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেননি। তিনি তখনই (৬৬৮ সালে) সম্রাট হন যখন তার বোন মারা যান। কোটোকু তেন্নোর একমাত্র পুত্র ছিলেন রাজকুমার আরিমা। কোটোকুর মৃত্যুকালে তিনি ১৫ বছর বয়সী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। পরিবর্তে তার মা দ্বিতীয়বার সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবার সাইমেই তেন্নো নামে পরিচিত। 'নিহন শোকি' এতে কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। এতে একটি বড় ঝুঁকি ছিল যে নিজের সিংহাসন গ্রহণ না করায় ভবিষ্যতে রাজকুমার আরিমা সিংহাসন পেতে পারে। এই কথাটি সমর্থন করে ধারণাটি যে ব্যক্তিগত জীবনের কারণে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করতে পারেননি। মৃত সম্রাটের দেহ তার মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পরে দাফন করা হয় এবং একই দিন রাজসভা ইয়ামাটোতে চলে যায়, আসুকায় ইটাবুকি প্রাসাদে অবস্থান নেয়। এই প্রাসাদে সাইমেই বাস করতেন যখন সোগা নো ইরুকার হত্যাকাণ্ড হয় এবং তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সাইমেই তখন প্রায় ৬২ বছর বয়সী ছিলেন। প্রায় এই সময়েই নাকা নো ওয়ের ছোট ভাই রাজকুমার ওয়ামা ২৫ বছর বয়সে রাজকাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন। নাকা নো ওয়ের পুত্র রাজকুমার ওতোমো তখন ৮ বছর এবং তার কন্যা উনো নো সরারা। তিনি পরবর্তীতে ওয়ামা ও জিতো তেন্নোর সম্রাজ্ঞী হন, ছিলেন ১১ বছর বয়সী। ইটাবুকি প্রাসাদ একটি অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে পরিকল্পিত ছিল, যেখানে নতুন একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হচ্ছিল যা নানিওয়ার প্রাসাদের চেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ হবে। ৬৫৫ সালের শেষে ইটাবুকি প্রাসাদ আগুনে পুড়ে যায় এবং তারা ইয়াহারা প্রাসাদে চলে যায়। রাজসভা তখন একাধিক বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে। <nowiki>''নিহন শোকি'' এই কাজগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় ও বিলাসিতার বিষয়ে জনসাধারণের অভিযোগ উল্লেখ করে। ''নিহন শোকি'' অনুসারে, ৬৫৭ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার আরিমা বিদ্রোহের প্রস্তুতি শুরু করেন। বলা হয়, তিনি সাইমেই তেন্নোকে একটি নির্দিষ্ট গরম জলের উৎসের উপকারিতা প্রশংসা করে রাজধনি ছাড়িয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন, যাতে তিনি তার অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা দখল করতে পারেন। প্রায় এক বছর পরে সম্রাজ্ঞী গরম জলের উৎসে যান। তখন আসুকায় সোগা নো ওমি নো আকায় দায়িত্বে ছিলেন। আকায় রাজকুমার আরিমার কাছে সাইমেই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে যান। প্রথমটি ছিল যে সরকার জনগণ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করছে, দ্বিতীয়টি ছিল যে কাজের জন্য অনেক মানুষকে খাল খননে বাধ্য করা হচ্ছে। তৃতীয়টি ছিল যে তিনি পাহাড়ের উপরে একটি ফুল দেখার মঞ্চ নির্মাণে সম্পদ অপচয় করছেন। তারা আটায়ের বাড়িতে গোপনে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু কথোপকথনের সময় হঠাৎ একটি হাতার ভেঙে যাওয়াকে তারা একটি অশুভ সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে পরিকল্পনা ভেঙে যায়। আটায়ে সঙ্গে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে রাজকুমার আরিমার প্রাসাদ ঘেরাও করেন এবং বার্তা পাঠিয়ে জানান যে রাজকুমার আরিমা রাজদ্রোহের পরিকল্পনা করছেন। ''নিহন শোকি''</nowiki> একটি অন্য বই থেকে উদ্ধৃত করে যেটি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার আলোচনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়, যেখানে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী রাজকুমার আরিমাকে সফল অভ্যুত্থান চালানোর জন্য অযোগ্য মনে করেন। শেষপর্যন্ত রাজকুমার আরিমা ও দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং আরও দুই জনকে নির্বাসিত করা হয়। সোগা নো আটায়ে ছিলেন নাকা নো ওয়ের গভীর বিশ্বাসভাজন। তিনি রাজপরিবারের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তার মেয়েকে নাকা নো ওয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি নাকা নো ওয়ের আদেশে রাজকুমার আরিমাকে ফাঁসিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে ক্ষমতার জন্য কাউকেই হুমকি হিসেবে দেখতেন। রাজকুমার আরিমা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "স্বর্গ ও আকায় জানেন যা ঘটেছে, আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ।" এই কাহিনী বেশ কয়েকটি কবিতায় উল্লেখ আছে, যার মধ্যে দুইটি তার মৃত্যুর আগের এবং রাজকুমার আরিমার প্রতি অভিজাতদের মধ্যে সমবেদনা প্রতিফলিত হয়। ৬৫৮ সালেও পূর্ব সীমানায় সামরিক অভিযান হয়। প্রাচীনকালে পূর্বের বর্বরদের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ছিল 蝦夷। এটি টোকুগাওয়া যুগ থেকে ইজো হিসেবে উচ্চারিত হয়। সেই সময় হোক্কাইডো দ্বীপকেও ইজো বলা হতো। তবে প্রাচীনকালে এটি এমিশি উচ্চারিত হত। এটি সোগা নো এমিশির ব্যক্তিগত নামের সঙ্গেই সম্পর্কিত। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশির বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিযান কিয়েকো তেন্নোর শাসনামলে উল্লেখ আছে। তিনি জিম্মু ও সুজিনের মধ্যকার কাল্পনিক শাসক বলে মনে করা হয়। এই ধরনের অভিযান নিয়ে অনেক কিংবদন্তি আছে। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এদের বিষয়ে খুব বেশি বিশ্বাসী নন। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশি জাতি একবারও নামকরণ করা হয়নি। এটি সম্ভবত প্রাচীন ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত হলেও সরকারী প্রকল্প ছিল না। ৪৭৮ সালের চীনের দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে জাপানি শাসক পূর্বে ৫৫টি এবং পশ্চিমে ৬৬টি বর্বর জাতিকে জয় করেছেন। 毛人 শব্দটি সম্ভবত সোগা নো এমিশির নাম লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি সাধারণ চীনা ভাষায় বর্বরদের অর্থ বহন করে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ শতকের শেষভাগে জাপানের দূরপ্রাচ্যের অনিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠী একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে। ৫৮৯ সালে ওমি নো ওমি মাতসু তোসান্দো পথ দিয়ে এমিশিদের সীমানা পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিছু ঐতিহাসিক এ ঘটনাকে অস্বীকার করলেও বেশিরভাগই সত্য মনে করেন। ৬৪২ সালে "কয়েক হাজার" এমিশি হোকুরিকুডো অঞ্চলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে, যাদের নেতাদের সোগা নো এমিশির ভাণ্ডারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ৬৪৫ সালে কূটনীতিক পরিবর্তনের পর পূর্বাঞ্চল পরিদর্শনে বিশেষ গভর্নর পাঠানো হয় এবং ৬৪৭ সালে নুতারি নামে কাঠের ঘেরযুক্ত দুর্গ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী বছর আরও একটি দুর্গ ইওয়াফুনে নির্মিত হয়। তারপর অভ্যন্তরীণ এলাকা থেকে মানুষ স্থানান্তরিত করা হয় দুর্গগুলোর খাদ্য ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য। নুতারি দুর্গের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে নীইগাতার একটি এলাকা এই নামে পরিচিত। ইওয়াফুনেও একটি আধুনিক নাম। এটি নীইগাতা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বছরগুলোর আলোচনায় এমিশি আসলে আয়নু কিনা বা তারা জাতিগতভাবে জাপানি হলেও ইয়ামাটো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত ধারণা ছিল তারা আয়নু, কারণ 蝦夷 শব্দটি আয়নু বোঝাতো। তারপর জানা গেল জাপানি জাতি ইয়ায়ই সংস্কৃতির সঙ্গে দেশে এসেছে, আর জোমোন সংস্কৃতি অন্য জাতির ছিল, যার অবশিষ্ট আয়নু হতে পারে। আয়নুদের দেহে তুলনামূলক বেশি শরীরের লোম থাকার জন্য 毛人 শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তবে সন্দেহ বাড়তে শুরু করে। এজো শব্দ আয়নু বোঝালে ও ইমিশি শব্দের একই অর্থ হওয়ার প্রমাণ নেই। চীনা অক্ষরের বহুবিধ ব্যবহার জাপানি ভাষায় স্বাভাবিক। তাই ইমিশি জনজাতি বোঝায় না বলে ধারণা বেশি প্রবল। জোমোন কঙ্কালের মনুষ্যবিজ্ঞানের গবেষণায় আয়নুদের সাথে তাদের মিল পাওয়া যায়নি। এমিশি হয়তো জোমোন বংশোদ্ভূত হলেও আয়নু নাও হতে পারে। তবে তারা বর্তমান আয়নু জনগোষ্ঠীর একাংশ হতে পারে এবং সাইবেরিয়া থেকে লোকেদের বিভিন্ন ঢল হোক্কাইডোতে এসেছে এটাও পাওয়া গেছে। 毛人 শব্দটি সম্ভবত প্রাকৃতিক লোমযুক্ত লোকদের জন্য নয় বরং পশম পরিধানকারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই এটি বিতর্কে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়। কোফুন যুগের খননায় এমিশিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে অনেক কফুন পাওয়া গেছে। কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও নেই যে সংঘর্ষের সময়কালে এই অঞ্চলে কোনো স্বতন্ত্র জাতির উপস্থিতি ছিল। মুৎসু ফুজিওয়ারা পরিবারের চার ধারাবাহিক প্রজন্মের মমি হিরাইসুমির চুসোনজি-তে সংরক্ষিত আছে, যেগুলি ১৯৫১ সালে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা গিয়েছিল যে তারা আইনু নয়, বরং জাপানিদের মতোই। এই পরিবারকে ব্যাপকভাবে ইমিশি বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আইনু ও জোমন জনসংখ্যার মধ্যে কোনো সত্যিকারের সংযোগ নেই কারণ তাদের মধ্যে কোনো ধারাবাহিক সম্পর্ক পাওয়া যায় না। হক্কাইডোতে প্রথম নিশ্চিত আইনু জীবাশ্ম অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। তবে এ থেকে ইমিশিরা জোমন বংশধর ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন মিটে যায় না। এখানে দেখা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন যে ইয়ায়োই ধানের চাষের সংস্কৃতি উত্তরপূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অভিবাসীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল এবং অনেক জোমন মানুষ নতুন জীবনযাত্রায় "রূপান্তরিত" হয়েছিল। ইয়ায়োই ধানের চাষের সর্বোত্তর সীমা "ইমিশি" অঞ্চলের ভিতরে ছিল এবং একই কথা কোফুন যুগের জীবাশ্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্য তত্ত্বগুলোর সমর্থকরা এখনও আছেন। তবে আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন ইমিশি হওয়ার মূল কারণ ছিল তারা ইয়ামাটো রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে ছিল, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিকভাবে পূর্ববর্তী "জাপানি" থেকে খুব ভিন্ন ছিল না যারা সীমান্তের অন্য পাশে বাস করত। আমি লক্ষ্য করেছি যে কখনোই কারও দ্বারা "ইমিশি ভাষা" শেখার চেষ্টা করার উল্লেখ নেই, অথচ সিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে "সিলা ভাষা" শেখার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ আছে। আমার প্রশ্ন, যার কোনও উত্তর আমি কখনো দেখিনি, তা হলো কেন সোঘা নো ইমিশির নামটা হল? বিশেষ করে ৬৪২ সালে যখন ইমিশিদের একটি দল দরবারে আসলো, তখন তাকে তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অবশ্যই কোনো সম্পর্ক ছিল। এমন ব্যক্তি যার মর্যাদা এত বড়, তার ইমিশিদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে উল্লেখযোগ্য সময় কাটানো সম্ভব নয়। তবে দেখা যায় ষষ্ঠ শতকে অনেক ইমিশিকে ইয়ামাটো অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং শাসক বংশের সম্পত্তির পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সোঘাদের এই ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা ছিল বলেও মনে হয় এবং এর ফলে তিনি ইমিশিদের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হতে পারতেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক অভিজাত ব্যক্তি যে নাম ব্যবহার করতেন, তা তার শৈশবের নাম ছিল না। আমেরিকান ভারতের মতো, যখন আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হতেন, আপনাকে একটি নতুন নাম দেওয়া হতো। এটি আপনার জন্য বিশেষ মানানসই হতে পারত। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে অনেক অদ্ভুত নাম ছিল, যার মধ্যে ইমিশিও একটি। ৬৫৮ সালের অভিযান আবে নো হিরাউ-এর নেতৃত্বে ছিল এবং এটি ৬৫৯ ও ৬৬০ সালেও পুনরাবৃত্তি হয়। বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর। ধারণা করা হয় <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকগণ বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং আসলে অভিযানের সংখ্যা কম, সম্ভবত দুইটি। সংক্ষিপ্ত সারাংশ হলো, ৬৫৮ সালে আবে ১৮০টি নৌকায় উত্তরে গিয়ে আকিতা ও নুশিরো (সম্ভবত আধুনিক আকিতা ও নোশিরো) পৌঁছান। সেখানে তিনি তিনটি আলাদা ইমিশি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাদের আনুগত্যের শপথ করান, স্থানীয় প্রশাসনের পদে নিযুক্ত করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। পরের বছর ৬৫৯-এ আবার ১৮০ নৌকায় একই স্থানে গিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দেখা করেন, যাদের মধ্যে কেউ তাঁকে রাজধানীর জন্য একটি স্থান বেছে নিতে বলেন এবং তিনি তা করেন। আবারো তিনি পদবী ও প্রশাসনিক দায়িত্ব বন্টন করে ফিরে আসেন। ৬৬০ সালে পরিস্থিতি আলাদা। শুরুতেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> বলে যে তিনি সু-শেন (粛慎) দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। বিবরণে বলা হয়েছে, তিনি উত্তর দিকে একটি অবর্ণিত নদী পর্যন্ত যাত্রা করেন, যেখানে ২০টি সু-শেন জাহাজ থেকে পালাচ্ছিল ১০০০ জন ইমিশিকে। আবে সু-শেনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন, তারপর এমন এক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন যা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকদের বিভ্রান্ত করে তোলে, কিন্তু যেকোনো নৃতত্ত্বের ছাত্রের কাছে স্পষ্ট। শেষে সু-শেনদের একটি দুর্গায় অনুসরণ করে তাদের ধ্বংস করে দেন। এ ব্যাপারে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যেমন স্থানীয় নামগুলো কোথায় ছিল, আসলে তিনটি অভিযান হয়েছিল কি না, ৬৫৯ সালের অভিযানটি ৬৫৮ সালের ভুল পুনরাবৃত্তি কিনা। সু-শেন কারা ছিলেন। ভৌগোলিক বিতর্ক প্রধানত আবে হক্কাইডো পর্যন্ত গিয়েছিলেন কি না তা নিয়েই। ৬৫৮ সালের নোটিশ বলে আবে ১৮০ নৌকায় আকিতা ও নুশিরোতে পৌঁছান। আকিতা নোটারি ও ইওয়াফুনের চেয়ে অনেক উত্তরে। আকিতা নারা যুগে এই অঞ্চলের যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান কেন্দ্র ছিল। নুশিরো সম্ভবত আধুনিক নোশিরো, আকিতার কাছাকাছি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদ্বীপের অন্য পাশে। আকিতায় আবে স্থানীয় ইমিশিদের সঙ্গে মিলিত হন, যারা একত্রিত হয়ে দেবতার নামে দরবারের প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন। আজকের দিনে আকিতা কিল্লার স্থানে একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যাকে কোশিও জিনজা বলা হয়, অর্থাৎ "কোশির দেবতার মন্দির।" আবে ইমিশি নেতাদের সরকারি পদ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেন। তারপর, <nowiki>''নিহন শোকি'' বলে, তিনি ওয়াতারিনোশিমার অন্য একটি ইমিশি দলকে আরিমা বিচে ডেকে পাঠান, যারা তাদেরও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর তাদের দেশে পাঠানো হয়। এরপর আবে দেশে ফিরে আসেন। প্রশ্ন হলো, ওয়াতারিনোশিমা ("যে দ্বীপ পার হয়ে যায়") কোথায় ছিল? অনেকদিন ধরে ধরে নেওয়া হয়েছে যে এটি দক্ষিণ হক্কাইডো। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন আবে এত দূর যেতে পারেননি এবং এটি হয়তো উত্তরের ত্সুগারু উপদ্বীপ। এটি প্রাচীনকালে অনেকটাই দ্বীপের মতো ছিল কারণ এটি শুধুমাত্র নৌকায় যাত্রা করে পৌঁছানো যেত, কারণ এটি হনশু থেকে পর্বতমালার একটি বিস্তীর্ণ বেল্ট দ্বারা পৃথক ছিল। এমনকি তাও হয়তো অনেক দূর, কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকরা ত্সুগারু অঞ্চলকে হক্কাইডোর সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন, হনশুর আরও দক্ষিণের ইমিশিদের তুলনায়। একমাত্র সত্যিকারের ইঙ্গিত হলো ''নিহন শোকি''</nowiki> কোনো অতিরিক্ত যাত্রার কথা বলছে না, শুধু বলছে ওয়াতারিনোশিমার ইমিশিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ৬৬০ সালের অভিযান আরও জটিল। প্রথমত, সু-শেন (粛慎) নামটি প্রাচীন চীনা ইতিহাস থেকে, চৌ রাজবংশ থেকে। চীনারা মাঝে মাঝে এই নাম ব্যবহার করত মাঞ্চুরিয়ার মানুষের জন্য যাদের ইয়িলৌ বলা হত এবং যাদেরকে বিশ্বাস করা হয় জুরচেনদের পূর্বপুরুষ যারা লিয়াও রাজবংশ গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ, তারা এমন এক জনগোষ্ঠী যারা পুয়ো (পূর্বপুরুষের জাপানি ধারণা) এর মতো ছিল এবং একই মাঞ্চুরিয়ান অঞ্চলে বাস করত। তারা কীভাবে হক্কাইডোর চারপাশে নৌকা চালাত তা সহজে বোঝা যায় না। এক মত হলো, জাপানিরা কোনো চীনা গ্রন্থ থেকে নামটি তুলে নিয়েছিল। জাপানি উচ্চারণে এটা মিশিহাসে ছিল, কিন্তু এর কোনো প্রতিপাদ্য নেই। এই সময় জাপান কোগুরোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যাদের নিশ্চয়ই মাঞ্চুরিয়ার সব জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল। হয়তো তারা আমাদের চেয়ে বেশি জানত। অথবা ধারণা করা হয়, প্রাচীন সু-শেন চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছিল এবং এই লোকেরা জাপানের উত্তর-পূর্বে ছিল। তাই সু-শেন নামটি তাদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন এটি ওখোটস্ক জনগণের সঙ্গে মেল খায়, যারা সাইবেরিয়া থেকে হক্কাইডোর অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা সহজেই হনশুর দক্ষিণে অনুসন্ধানকারী দল পাঠিয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এই নিবন্ধে বর্ণিত একটি ধরনের অন্ধ ব্যবসা। এটি বিশ্বব্যাপী বহু স্থানে দেখা যায় যেখানে মানুষ দাসপ্রথার ভয়ে বা ভাষাগত অমিলের কারণে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলে। এক পক্ষ মাটিতে নানা পণ্য ছড়িয়ে রেখে চলে যায়। অন্য পক্ষ এসে তা দেখে তাদের পণ্য দেয়। এভাবে লেনদেন চলে যতক্ষণ দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়। তারপর প্রত্যেক দল তাদের কেনা জিনিস ও অবিক্রিত জিনিস নিয়ে চলে যায় এবং কেউ কারো কাছাকাছি আসেনা। এটি নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকরা বুঝতে পারেননি এটি একটি বাণিজ্য। এরপর বলা হয়েছে আবে তাদের শিবিরে অনুসরণ করে আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এর কোনো কারণ দেওয়া হয়নি। পুরো ঘটনা রহস্যময় এবং সম্ভবত <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র উপস্থাপনার চেয়ে অনেক জটিল ছিল। তবে এটি হনশুর দূর উত্তরে জাপানি সরকারের দীর্ঘমেয়াদী জড়িত হওয়ার সূচনা, যেখানে পরবর্তী ২০০ বছর ধরে একটি "সক্রিয়" সীমান্ত ছিল। == পাইকচের পতন == একই সাথে আবে নো হিরাওয়ের ৬৬০ অভিযানের সাথে সাথে জাপান তাং চীন এবং সিল্লার সম্মিলিত বাহিনীর হাতে পাইকচে ধ্বংসের কবলে পড়ে। এটি এই অঞ্চলে একটি অশান্ত সময়ের সূচনা করেছিল যা শেষ পর্যন্ত সিলার শাসনের অধীনে কোরিয়ার একীকরণের দিকে পরিচালিত করে। পুরানো এবং নতুন তাং রাজবংশীয় ইতিহাস, কোরিয়ান ''সামগুক সাগি'' এবং ''নিহন শোকিতে'' এই ঘটনাগুলির বিশদ বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যথায় অজানা কোরিয়ান উপকরণ থেকে বিস্তৃত উদ্ধৃতি রয়েছে। জাপান পাইকচেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য কোরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল এবং চীন বা সিল্লা বা উভয়ের আক্রমণের ভয়ে দীর্ঘকাল ধরে বাস করেছিল। জাপান দরবারে কমপক্ষে প্রথম নারা যুগে নির্বাসনে থাকা পাইকচের রাজাও বজায় রেখেছিল এবং হেইয়ান যুগের শেষের দিকে এখনও সক্রিয় ছিল 百済王 নামে একটি অভিজাত পরিবার সক্রিয় ছিল "পাইকচের রাজা" পায়েচের জাপানি নামটি রাজার জন্য কোরিয়ান শব্দের সাথে একত্রিত করে কুদারানোকোনিকিশি উচ্চারণ করেন। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ৬৪৯ সালে সিল্লা চীনা শৈলীর সাথে মেলে দরবারে সরকারী পোশাক পরিবর্তন করেন এবং ৬৫০ সালে এটি তাং রাজবংশের রাজত্বের উপাধিগুলি নিজের হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ৬৫৪ সালে কিম মুরিওল সিলার রাজা হন। এর আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিল্লা দূতাবাস নিয়ে জাপান ও চীন সফর করেন। পূর্ববর্তী দুই সিল্লা শাসক রানী ছিলেন। তাই তার অবস্থান সম্ভবত যুবরাজ নাকা নো ওয়ের মতো এতটা ভিন্ন ছিল না। পরিস্থিতি যেভাবে এগিয়েছে তা থেকে এটি যুক্তিসঙ্গতভাবে স্পষ্ট যে চীন এবং সিল্লা উভয়ই শুরু থেকেই তার নিকটতম শত্রু পাইকচে এবং কোগুরিওকে ধ্বংস করতে এবং তারপরে কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণে আবির্ভূত হওয়ার জন্য একে অপরকে ব্যবহার করার আশা করেছিল। পাইকচে এবং কোগুরিও একে অপরের সাথে মিত্রতা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল এবং ৬৫৯ সালে তারা সিল্লার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে যা ২০ টি দুর্গ দখল করে। সিল্লা চীন থেকে সাহায্যের অনুরোধ করেন এবং চীন সাড়া দিয়ে খুশি হয়েছিল। ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মুরিওলের এক পুত্রের সাথে একজন চীনা জেনারেলের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়। তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে সেই সময় চীনে ছিলেন। এই বাহিনীতে ১,৩০,০০০ সৈন্য ছিল এবং সমুদ্রপথে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল "সু-শেন" এর বিরুদ্ধে আবে নো হিরাওয়ের যুদ্ধের ঠিক একই সময়। বিস্মিত হয়ে পাইকচে সেনাবাহিনীর পতন ঘটে। পশ্চিম দিকের উপকূল থেকে অগ্রসর হওয়া চীনারা এবং পূর্ব দিক থেকে আসা একটি সিল্লা সেনাবাহিনী পাইকচে রাজধানীতে একত্রিত হয়েছিল। এটি দ্রুত আত্মসমর্পণ করেছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইকচে ধ্বংস হয়ে গেছে, বা তাই মনে হয়েছিল। রাজা এবং বিপুল সংখ্যক অভিজাতদের বন্দী হিসাবে চীনে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং পাইকচেকে চীনা অঞ্চল হিসাবে সংগঠিত করা হয়েছিল। চীনা সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশ তত্ক্ষণাত ফিরে আসে, প্রাক্তন পাইকচে রাজধানীতে আরও ৮,০০০ সিল্লা সেনার সমর্থনে ১০,০০০ লোকের একটি বাহিনী রেখে যায়। তবে, গ্রামাঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই করা হয়নি এবং চীনা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার শেষ করার আগেই বিদ্রোহী বাহিনী তাত্ক্ষণিকভাবে অনেক জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' এই বিদ্রোহের বিবরণ পয়েন্টগুলিতে কিছুটা বিভ্রান্তিকর। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাথমিক বিদ্রোহী ছিলেন 鬼室福信 নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত কৃষকদের দ্বারা একটি সিল্লা বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করেন এবং তাদের অস্ত্র নিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টতই একজন পাইকচে কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি পাইকচে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছিলেন। প্রায় একই সময়ে পাইকচে থেকে লোকেরা জাপানের দরবারে এসে কী ঘটেছিল তা জানায়। এক মাস পরে 鬼室福信 থেকে দূত এবং আরেকজন নেতৃস্থানীয় বিদ্রোহী কমান্ডার 佘自進 জাপানে এসে সাহায্য চেয়েছিলেন। জাপানি দরবারে একজন পাইকচে রাজপুত্র বাস করছিলেন এবং তারা তাকে রাজা বানানোর এবং পাইকচে পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করেন। এতে নিজেদের সম্পৃক্ত করা স্পষ্টতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কিছু না করাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বছরের শেষে আদালত তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেয় কারণ সাইমেই এবং আদালত নানিওয়ায় চলে যায় এবং পুরো আদালতকে উত্তর কিউশুতে স্থানান্তরিত করার প্রস্তুতি শুরু করে, যেখান থেকে তারা আসন্ন যুদ্ধের নির্দেশ দেবে। নানিওয়ায় পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পরে তারা ৬৬১ সালের প্রথম মাসে কিউশুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিন দিন পরে তারা কিবিতে পৌঁছেছিল, যেখানে এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এই পদক্ষেপটি কতটা বিস্তৃত ছিল কারণ রাজকুমার ওমার স্ত্রী একটি বাচ্চা মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। এই অভিযানের সময় আরও বেশ কয়েকটি রাজকীয় শিশুর জন্ম হয়েছিল। তারা আট দিনের মধ্যে পশ্চিম শিকোকুর আধুনিক মাতসুয়ামা অঞ্চলে পৌঁছেছিল এবং সেখানে কিছুক্ষণের জন্য শিবির স্থাপন করেছিল। দুই মাস পরে তারা কিউশুতে স্থানান্তর সম্পন্ন করে, হাকাটা বেতে পৌঁছে। তারা সেই সময়ে একটি অস্থায়ী প্রাসাদ স্থাপন করেছিল তবে দুই মাস পরে এটি একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬৬১ এর ৭ তম মাসে সাইমেই তেন্নো মারা যান। স্থানীয় ঐতিহ্য তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিল যে অস্থায়ী প্রাসাদের জন্য কাঠ নিকটবর্তী একটি মন্দির ভেঙে প্রাপ্ত হয়েছিল। যুবরাজ নাকা নো ওই সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন এবং সম্রাটের পদ গ্রহণের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেননি। সঠিকভাবে বলতে গেলে তখনএকটি অন্তর্বর্তী ছিল। তবে ৬৬২ সাল থেকে তেনচি তেন্নোর রাজত্বের বছর গণনা শুরু করা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম বিচ্ছিন্নতা ৬৬২ সালের প্রথম মাসে আজুমি নো মুরাজি হিরাউয়ের কমান্ডে কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। তাঁর সাথে ছিলেন পাইকচে রাজপুত্র, ইয়ামাবে নো ওমি মোমো, সাই নো মুরাজি আজিমাসা, হাতা নো মিয়াৎসুকো তাকুতসু এবং ৫,০০০ পুরুষ। তারা পঞ্চম মাসে কোরিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের কাছে ১০০,০০০ তীর এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ সরবরাহ করেছিল। ইতিমধ্যে চীনারা একজন নতুন কমান্ডার নিয়োগ করে এবং সিল্লা পাইকচেতে অতিরিক্ত সৈন্যও প্রেরণ করে। সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোরীয় বিদ্রোহীরা সাবেক রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেয়। ৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ বিদ্রোহীরা পাইকচের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬৬৩ এর গোড়ার দিকে সিল্লা একটি বড় আক্রমণ শুরু করে এবং বিদ্রোহীদের পিছু হটতে হয়েছিল। তবে চতুর্থ মাসে দ্বিতীয় জাপানি সেনাবাহিনী ২৭,০০০ পুরুষ নিয়ে এসেছিল। কমান্ডার ছিলেন কামিতসুকেনু নো কিমি ওয়াকাকো। এই নামের অর্থ তিনি পূর্ব জাপানের কান্টো অঞ্চল এবং কুনিনোমিয়াৎসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাশিহিতো নো ওমি ওফুতা, কোসে নো কামিসাকি নো ওমি ওসা, মিওয়া নো কিমি নেমারো, আবে নো হিকিতা নো ওমি হিরাও এবং ওয়াকে নো ওমি কামায়ে। এই শক্তিবৃদ্ধির সাথে, বিদ্রোহীরা আবার উপরের হাত অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো জাপানিদের কোরিয়ায় মোট ৩২,০০০ পুরুষ ছিল এবং বাহিনীটি স্পষ্টতই রচনায় দেশব্যাপী ছিল। ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত নামগুলি থেকে এটি বলা সম্ভব যে সেখানে কিউশু এবং শিকোকুর প্রায় প্রতিটি প্রদেশ এবং সুদূর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে সৈন্য ছিল। ধারণা করা হয় যে,দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর সাথে আবে নো ওমি হিরাও একই ব্যক্তি যিনি উত্তর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রায় একই সময়ে, পাইকচে বিজয়ের মূল চীনা কমান্ডার ৭,০০০ লোক নিয়ে ফিরে আসেন। ঠিক এই মুহুর্তে কোরিয়ান নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে বিদ্রোহটি প্রায় মারাত্মক আঘাত হানে। পাইকচে রাজকুমার রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাকে হত্যা করেন। ৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ম মাসে চীন ও সিল্লা উভয়ই কোরিয়ান উপকূলে মিলিত হয়ে একসাথে অভিযান চালানোর জন্য বিশাল শক্তিবৃদ্ধি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। একই সময়ে জাপানিরা একটি তৃতীয় বাহিনী প্রেরণ করেছিল যা চীনাদের দ্বারা বেছে নেওয়া ঠিক একই বিন্দুতে উপকূলে অবতরণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। এই পদক্ষেপটি রাজকুমার 豊璋 দ্বারা আক্রমণের সাথে সমন্বয় করার কথা ছিল। জড়িত জাপানি সেনারা একটি নতুন বাহিনী ছিল নাকি কামিতসুকেনু নো কিমি নো ওয়াকাকোর অধীনে ২৭,০০০ থেকে একটি বিচ্ছিন্নতা ছিল তা স্পষ্ট নয়। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে ১০,০০০ পুরুষ ছিল। চীনা ও সিল্লা অভিযাত্রীরা ৬৬৩ সালের ৮ম মাসের ১৭তম দিনে যোগাযোগ করে। চীনা নৌবহরে ১৭০টি জাহাজ ছিল। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে জাপানি বাহিনী ১০ দিন পরে এসে চীনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যা দু'দিন স্থায়ী হয়। জাপানিরা একে হাকুসুকি নো ই বা হাকুসুকি উপসাগরের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে। ''সামগুক সাগি'' অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে যে জাপানিদের "১০০০ জাহাজ ছিল", সম্ভবত এটি অতিরঞ্জিত। জাপানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং মূলত সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে দেখা যাচ্ছে যে জাপানিরা চীনা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য সমস্ত কিছু বাজি ধরেছিল এবং চীনা ডানা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে ঘিরে ফেলেছিল। ওল্ড তাং ইতিহাস বলছে যে চারটি পৃথক লড়াই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৪০০ জাপানি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল এবং তাদের ক্রুরা ডুবে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তির পরে, উপকূলে তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত যুবরাজ সংগ্রাম ত্যাগ করে কোগুরিওতে পালিয়ে যান। জাপানিরা বিপুল সংখ্যক পাইকচে শরণার্থী সহ তাদের অন্যান্য সেনাবাহিনীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। আসলে এখানেই গল্পের শেষ নয়। পরে চীনারা তাদের বেশিরভাগ বাহিনীকে কোগুরিও আক্রমণে স্থানান্তরিত করে এবং পাইকচে তাদের পিছনে আবার বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। এবার সিল্লা বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং চীনের বিরুদ্ধে কোগুরিওতে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের সাথে জোটবদ্ধ হন এবং চীনাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে সফল হন। এরপরে তারা সিল্লার একীভূত রাজ্যের অধীনে এই অঞ্চলের প্রাক্তন পাইকচে শাসক পরিবারের গভর্নর হন। স্বাভাবিকভাবেই, নাকা নো ওকে এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করতে হয়েছিল যে চীনা এবং বা সিল্লা বাহিনী অবিলম্বে বা ভবিষ্যতের কোনও সময়ে জাপান আক্রমণ করবে। তবে এই বিপর্যয় দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেবে কিনা তা নিয়েও তাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়েছে। এটি স্পষ্ট নয়। তবে এটি প্রদর্শিত হয় যে তিনি ৬৬৩ এর শেষের কিছু সময় আগে ইয়ামাতোতে ফিরে আসেন। আক্রমণ থেকে কিউশুর প্রতিরক্ষার জন্য তিনি যা করতে পারেন তা করেন। এই সময়ে তিনি সিংহাসনে আরোহণের বিষয়ে কিছুই করেননি এই বিষয়টি সাধারণত এই প্রস্তাবের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে গ্রহণ করা হয় যে,তিনি তার বোন রাজকুমারেস হাশিহিতোর সাথে অজাচার বিবাহ করেন। ''নিহন শোকির'' একটি বিবরণ রয়েছে যে ইঙ্গিও তেন্নোর মৃত্যুর পরে অভিজাতরা ঠিক একই কারণে তার উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে বসাতে অস্বীকার করেছিল এবং পরিবর্তে তার ছোট ভাইকে বেছে নিয়েছিল। এর অর্থ হলো নাকা নো ও এটি চেষ্টা করার সাহস করেনি। এবার তিনি কেবল সিংহাসন খালি রেখেছিলেন, উপযুক্ত আসন-ওয়ার্মার উপলব্ধ ছিল না। তবে, এটি অবশ্যই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে কেউ তার বিরুদ্ধে যেতে সক্ষম হতে পারে। এই সময়ে তার প্রধান সুবিধা ছিল যে যেহেতু তিনি ইতিমধ্যে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং রাজকুমার আরিমাকে নিষ্পত্তি করেন। তাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প ছিলেন তার নিজের ভাই রাজকুমার ওমা। এই যুগে ভাইয়েরা ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার প্রতিটি চেহারা দিয়েছিলেন। নাকা নো ওই তার দুই মেয়েকে ওমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। তারা হলেন রাজকুমারেস ওটা এবং রাজকুমারেস উনো নো সারারা। উনো নো সারারা ৬৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ বছর বয়সে ৬৫৭ সালে ওমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন (জাপানি গণনা)। ধারণা করা হয়, রাজকুমার ওমার বয়স তখন ২৭ বছর। অবশেষে, ওমা নাকা নো ওয়ের চার কন্যাকে বিয়ে করেন, শেষ দু'জন তিনি সম্রাট হওয়ার পরে। সাম্রাজ্যবাদী/অভিজাত যৌন জীবন সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত নোট রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। জাপানি কবিতার প্রথম সংকলন, ''মানিয়োশু'', একটি রাজকুমারী নুকাতার ৩ টি দীর্ঘ কবিতা এবং ৯ টি সংক্ষিপ্ত কবিতা রয়েছে। এই কবিতাগুলির মধ্যে কয়েকটি স্পষ্ট করে দেয় যে তিনি নাকা নো ও / তেনচি তেন্নোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তিনি ''নিহন শোকির'' তালিকাভুক্ত নন। সম্রাটদের স্ত্রীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া একমাত্র স্ত্রীই রাজপুত্র বা রাজকন্যার জন্ম দিয়েছেন। যে-সম্পর্ক কোনো সন্তান জন্ম দেয় না, সেটাকে প্রকৃত বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হতো না, যে-সম্পর্ক বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত ছিল। রাজকন্যা নুকাতা তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে ''নিহন শোকিতে'' তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এটি প্রথমে তাঁর সম্রাজ্ঞী এবং সমস্ত স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে যারা রাজকন্যা ছিলেন, তারপরে সমস্ত স্ত্রী যারা আভিজাত্যের কন্যা ছিলেন এবং তারপরে এটি রাজকন্যা নুকাতাকে কেবল একজন মহিলা হিসাবে উল্লেখ করে যার সাথে তার একটি সন্তান ছিল। এই শিশু, রাজকুমারেস তোচি, পরে তেনচি তেন্নোর ছেলে রাজকুমার ওটোমোকে বিয়ে করেন। আমাদের মানদণ্ড অনুসারে এই মানুষগুলোর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হিসেবে অত্যন্ত অজাচার। রাজকুমার নাকা নো ওই এবং রাজকুমারেস হাশিহিতো টাবুর মধ্যে একমাত্র যে বিষয়টি (অনুমিত) যোগাযোগ তৈরি করেছিল তা হলো তাদের মা একই ছিলেন। একই পিতার সাথে মানুষের মধ্যে বিবাহ কিন্তু ভিন্ন মায়ের মধ্যে সাধারণ ছিল। লোকেরা রাজকুমারেস নুকাতা এবং তার চক্র সম্পর্কে প্রচুর তথ্য বের করতে সক্ষম হয়েছে, চিত্রিত করে যে অভিজাতদের মধ্যে সাক্ষরতার বিস্তার এবং একটি সাহিত্যিক চরিত্রের বইয়ের উপস্থিতির সাথে সাথে লোকেরা কীভাবে তাদের জীবনযাপন করেছিল সে সম্পর্কে আমাদের জিনিসগুলি জানার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ৬৫৮ সালে সাদাইজিন কোসে নো টোকুটা মারা গিয়েছিলেন এবং প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে,যুবরাজ ওমা উপাধি গ্রহণ না করেই এই পদে কাজ করেন, যেহেতু এই সময় পর্যন্ত কোনও রাজপুত্রের মন্ত্রীর উপাধি গ্রহণের কোনও নজির ছিল না। সম্ভবত এটি ই সাদাইজিনের চেয়ে উচ্চতর একটি নতুন পদ তৈরির কারণ ছিল, যাকে বলা হয় দাজোদাইজিন বা ওমাতসুরিগোতো নো মায়েস্তুকিমি, প্রায়শই অনুবাদ করা হয় "চ্যান্সেলর"। নারা আমলের আগ পর্যন্ত এই পদ খালি না থাকলেও সবসময় একজন রাজপুত্র দ্বারা পূর্ণ থাকত। এটি মূলত "ক্রাউন রাজকুমার" অবস্থানের আমলাতন্ত্রের আমদানি ছিল। তারপরে, ৬৬৪ সালে উদাজিন সোগা নো মুরাজিকো মারা যান এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে সরকারের শীর্ষে রাজকুমার নাকা নো ও ও রাজকুমার ওমা একা ছিলেন। রাজকুমার ওমার নামে জারি করা একাধিক ফরমান স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে বর্তমান সঙ্কটে কিছু সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা এবং উচ্চতর অভিজাতদের সমর্থন বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্য করা দরকার। প্রথমত, ৬৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯ র্যাঙ্ক সিস্টেমটি একটি নতুন সিস্টেম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যার ২৬ গ্রেড ছিল। তাদের তুলনা করলে, এটি স্পষ্ট যে শীর্ষ ছয়টি র্যাঙ্ক একা রেখে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী তেরোটি বিশটিতে প্রসারিত হয়েছিল। মনে হয় যে সমস্ত অভিজাতদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে সরকারী নিয়োগ প্রাপ্ত লোকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে এই পরিবর্তনটি আসলে ৬৭১ সালে করা হয়েছিল। ''নিহন শোকিতে'' সেই বছরের জন্য রাজকুমার ওমা কর্তৃক আদেশিত র্যাঙ্ক সিস্টেমে পরিবর্তনের খুব সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। "তেনচি তেন্নোর রাজত্বের তৃতীয় বছর" বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে বিভ্রান্তির সম্ভাবনার কারণে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়। যদি ৬৬২ থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৬৪ হবে। তবে যদি ৬৬৮ (যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন) থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৭১ হবে। যদি পরিবর্তনটি ৬৭১ এ হত তবে এটি সঙ্কটের সময়ের সাথে যুক্ত হত না। এটা সম্ভব যে সিস্টেমে দুটি সামঞ্জস্য ছিল এবং তারিখগুলির মধ্যে সম্পর্কটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল। ৬৬৪ সালে জারি করা দ্বিতীয় আদেশটি বংশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। উজিনোকামি বা বংশ প্রধানের একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি তৈরি করা হয়েছিল। একটি "মহান বংশের" ক্ষেত্রে প্রধানকে একটি তাচি "দুর্দান্ত তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল এবং একটি "ছোট" বংশের সিএ-তে তাকে একটি কাতানা "ছোট তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল। তোমোনোমিয়াৎসুকো "ইত্যাদি" একটি ঢাল বা একটি ধনুক এবং তীর দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। এই বিভাগগুলি, ধরে নেওয়া হয় যে "ইত্যাদি" কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির জন্য জায়গা দেয়, কেবল অভিজাতদের উপরের অর্ধেককে আচ্ছাদিত করে, তাদের অন্যদের থেকে পৃথক করে। এছাড়াও, "বড় গোষ্ঠী" এবং "ছোট গোষ্ঠী" এর পৃথক স্বীকৃতি প্রথম ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,বংশ কাঠামোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে, নাকা নো ওই অভিজাতদের আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে আমলাতান্ত্রিকীকরণের দ্বারা তাদের বিশেষ মর্যাদা মুছে ফেলা হবে না। এই সময়ে সর্বশেষ যে আইটেমটি প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো "কাকিবে" এবং "ইয়াকাবে" এর স্বীকৃতি। এগুলি বেসরকারী সম্পত্তির বিভাগ ছিল যা ৬৪৬ সালের নববর্ষের দিন ফরমান দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। একটু সামনের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারা আমলের ভূমি পুনঃবণ্টন ব্যবস্থায় আভিজাত্যদের আসলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলি আদমশুমারির রেজিস্টারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং তারা কোনও কর দেয়নি (আসলে খুব নিম্নতম পদমর্যাদার লোকদের কিছু কর দিতে হয়েছিল কারণ কেবল প্রকৃত পদধারীই অব্যাহতি পেয়েছিল, তার পুরো পরিবার নয়)। নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা চালের গাঁট এবং কাপড়ের বোল্ট আকারে বেতন পেতেন। এটি তারা তাদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের জন্য বাণিজ্য করতে পারতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একই ধরনের বেতন পেতেন। তবে দুই ধরণের "পদ জমি"। মাঝারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়োগগুলি শ্রম কর সহ কৃষিজমির একটি ব্লক থেকে সংগৃহীত করের সরাসরি অর্থ প্রদানের পরিমাণ ছিল। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমাণ জমি পেতেন যা তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিচালনা করতেন। উচ্চ পদমর্যাদা বংশানুক্রমিক হওয়ায় তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব জমি আগলে রেখেছিল। কিছু পরিবারকে প্রকৃতপক্ষে সরকারী নিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জমির বৃহত্তম বরাদ্দ রাখার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও পুত্র তার বাবার সমান পদে না পৌঁছালেও সে পারিবারিক পদের জমি রাখতে পারে। এই অনুশীলনগুলির আলোকে, উচ্চতর আভিজাত্যকে সমর্থন করার জন্য জমির নির্দিষ্ট ব্লকগুলি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হবে তা স্বীকৃতি দেওয়া অগত্যা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করা ছিল না। যাইহোক, এই সময়ে এটি ঘোষণা করা অবশ্যই অভিজাতদের আশ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে ছিল যে নতুন সিস্টেমটি তাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি লক্ষ করা গেছে যে এই সময়ে এই জমিগুলির স্বীকৃতি বোঝায় যে এগুলি আসলে ৬৪৬ এর পরে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। নতুন সরকার ব্যবস্থার বিকাশ সম্পাদন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। এ সময় যথেষ্ট পরিমাণে সামরিক তৎপরতাও ছিল। সমস্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক কোরিয়ান ৬৬৩ সালে জাপানে পালিয়ে গিয়েছিল এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসতি স্থাপনের অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে এবং কীভাবে তাদের জাপানি অভিজাতদের মধ্যে ফিট করা যায় তা নির্ধারণের জন্য তাদের মধ্যে অভিজাতদের শ্রেণিবদ্ধ করার প্রচেষ্টাও রয়েছে। কোরিয়ান অভিজাতদের অনেকে যে অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল সেখানে দুর্গ নির্মাণের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল, বিশেষত উত্তর কিউশু এবং দ্বীপপুঞ্জে ইকি এবং সুশিমা কিউশু উপকূলে। সাকামোরি "কোস্টগার্ড" নামে পরিচিত দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে জাপানি সৈন্যদের শ্রম করের অংশ হিসাবে সীমান্তের দুর্গগুলি পরিচালনার জন্য কর্তব্যের মেয়াদে পশ্চিমে যাওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সাকামোরি এবং তাদের পরিবারের বাড়িতে ফেলে আসা পরীক্ষা এবং দুর্দশা সম্পর্কে প্রচুর কবিতা রয়েছে। অন্যান্য সৈন্যদের কিউশু থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রসারিত সিগন্যাল ফায়ারের একটি শৃঙ্খল পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে আক্রমণ ঘটলে সরকারকে দ্রুত অবহিত করা যায়। নারা যুগে সাকামোরিরা সকলেই এমিশি সীমান্তের নিকটবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে এই ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল যে এই লোকদের সকলেরই সামরিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ছিল। সম্ভবত ৬৬৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় পশ্চিমা সেনারা সম্ভবত ফিল্ড আর্মি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ছিল যখন সাকামোরি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি রক্ষা করত। নারা যুগে সিগন্যাল স্টেশনগুলিতে নিযুক্ত পুরুষরা সকলেই স্থানীয় ছিল এবং সম্ভবত এই সময়েও এটি সত্য ছিল। এটাই ছিল প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। দাজাইফু এলাকায় বড় আকারের দুর্গ আকারে একটি দ্বিতীয় লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বহু শতাব্দী ধরে কিউশু প্রতিরক্ষা সদর দফতর হিসাবে কাজ করেছিল। দাজাইফু উপকূল থেকে বেশ দূরে ফুকুওকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত যা রক্ষা করা সহজ। অনেক দুর্গ আজও দৃশ্যমান। নির্মাণগুলির মধ্যে একটি ছিল তথাকথিত "জলের দুর্গ"। এর কেন্দ্রস্থলটি একটি দীর্ঘ মাটির কাজ যা এখনও ১৪ মিটার উঁচু এবং ১ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। এটি স্পষ্টতই কাঠামোগত ছিল যাতে মিকাসা নদী দ্বারা পূর্ণ জলের একটি জলাধার প্রয়োজনে প্রাচীরের ঠিক নীচের অঞ্চলটি প্লাবিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি উপকূল থেকে দাজাইফুর দিকে আসা সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেবে। উত্তর প্রান্তটি প্রায় ৪১০ মিটার উঁচু একটি যথেষ্ট পাহাড়ে পৌঁছেছে যার উপরে ৬৬৫ সালে একটি বড় পাথরের দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। এগুলোর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক শহর দাজাইফু। পাহাড়ের একটি ফাঁক ঢাকতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে আরও একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল, যদিও একটি সেনাবাহিনী মূল প্রতিরক্ষা ফ্ল্যাঙ্ক করার চেষ্টা করতে পারে। এই দুটি দুর্গের গ্যারিসনগুলি কোরিয়ান ছিল। তারা সম্ভবত নির্মাণের নির্দেশনাও দিয়েছিল। এগুলো দেখতে অবিকল সমসাময়িক কোরিয়ান পাহাড়ি দুর্গের মতো। কোরিয়া খুব পর্বতময় এবং সমস্ত কোরিয়ান যুদ্ধ পাহাড়ের দুর্গের চারপাশে ঘোরাফেরা করে বলে মনে হয়। দাজাইফু দুর্গের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। তাই এটি র জন্য একটি বড় গ্যারিসন প্রয়োজন। এটি এত বড় যে দাজাইফুর পুরো জনগোষ্ঠী ভিতরে আশ্রয় নিতে পারে। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে হনশুর পশ্চিম প্রান্তে কোরিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি দুর্গ নির্মিত হয়। এর অবস্থান জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি শিমোনোসেকির কাছাকাছি কোথাও ছিল। এটি সর্বদা সেই অঞ্চলের সামরিক মূল বিন্দু। ৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসের প্রথম দিকে পায়েচে চীনা কমান্ডার জাপানে একটি দূত প্রেরণ করেন। তারা সাত মাস অবস্থান করেন। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি ''নিহন শোকি''। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের নবম মাসে চীন থেকে সরাসরি দ্বিতীয় দূতাবাস আসে এবং প্রথম দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত নিয়ে আসে। স্পষ্টতই চীনারা সিরিয়াস ছিল। যা ঘটেছিল তার উপর ভিত্তি করে একজনকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে চীনাদের প্লেটে অনেক কিছু ছিল (তাদের এখনও কোগুরিওর ধ্বংস সম্পূর্ণ করতে হবে। এটি বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রচুর সমস্যা দিয়েছিল)। সর্বশেষ যে জিনিসটি তারা চেয়েছিল তা হলো জাপানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ। দূতাবাসের আগমনের পরের মাসের জন্য ''নিহন শোকিতে'' একটি নোট রয়েছে যে উজিতে একটি "দুর্দান্ত সামরিক পর্যালোচনা" হয়েছিল, সম্ভবত চীনাদের প্রভাবিত করার জন্য। এই দূতাবাস তিন মাস ছিল। একই বছর জাপান চীনে নিজস্ব দূতাবাস স্থাপন করে। মজার ব্যাপার হলো, রাজকুমার আরিমার ঘটনার অংশ হিসেবে যেসব কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, রাষ্ট্রদূত তাদের একজন। শেষ পর্যন্ত চীন বা সিল্লা কেউই জাপানকে আক্রমণ করেনি (যদিও সিল্লা এমন একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল যা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি), যদিও জাপানিরা কমপক্ষে আরও একশ বছর ধরে পশ্চিমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বজায় রাখার প্রচেষ্টা কখনও শিথিল করেনি। দুর্গগুলি সুশিমাতে, পশ্চিম শিকোকুর সানুকিতে এবং অভ্যন্তরীণ সাগরের পূর্ব প্রান্তে এবং কাওয়াচি এবং ইয়ামাতোর সীমান্তে নানিওয়াতে নির্মিত হয়েছিল। সুশিমার দুর্গটি এখনও টিকে আছে এবং সানুকির দুর্গটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে জেনপেই যুদ্ধের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ৬৬৫ সালে এই প্রচেষ্টার মাঝপথে সম্রাজ্ঞী হাশিহিতো মারা যান। এটি সম্ভবত নাকা নো ওয়ের সিংহাসন গ্রহণের পথ পরিষ্কার করেছিল। তবে তিনি আরও তিন বছর বিলম্ব করতে থাকেন। ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সাইমেই তেন্নো ও সম্রাজ্ঞী হাশিহিতোকে একই সমাধিতে সমাহিত করা হয়। সাইমেইয়ের সমাধি নির্মাণের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও কেন এত সময় লাগল তা বোধগম্য নয়। হাশিহিতোর দেহাবশেষের জন্য থাকার ব্যবস্থা করার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এক মাস পরে, নাকা নো ও তার প্রাসাদটি বিওয়া লেকের ওটসুতে স্থানান্তরিত করেন। এটি পূর্ববর্তী কোনও অবস্থানের পূর্ব দিকে। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে অজনপ্রিয় ছিল এবং এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং ব্যঙ্গাত্মক গান ছিল। কেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরের একটি কবিতায় এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে এবং বোঝানো হয়েছে যে আসল বিরোধিতা ছিল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যারা চরম বর হিসাবে যা ভেবেছিল তার দিকে যেতে হবে। আমি মনে করি এটি বলা ন্যায্য যে হেইয়ানকিও (কিয়োটো) এর চূড়ান্ত পদক্ষেপে ভবিষ্যতের সমস্ত পদক্ষেপ একই রকম বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল, এমন পদক্ষেপগুলি ব্যতীত যা পরীক্ষামূলক অবস্থানগুলির মধ্যে একটিকে পরিত্যাগ করে পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসেছিল যেখানে বিল্ডিংগুলি ইতিমধ্যে ছিল। এতক্ষণে কেবল শাসকের পরিবারই সরে যায়নি, বরং উচ্চ ও নিম্ন পদমর্যাদার বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা, যাদের সকলকেই নতুন আবাসন তৈরি করতে হয়েছিল। কোনও কারণ দেওয়া হয়নি। তবে অনুমান করা হয় যে,দাজাইফু যেমন অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তেমনি নাকা নো ওই সামরিক সুরক্ষার কথা ভাবছিলেন। ওটসু নানিওয়া উপকূলের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পর্বত বাধার পূর্ব দিকে রয়েছে। তবে ইয়ামাতো প্রদেশটিও পর্বতমালা দ্বারা ভালভাবে সুরক্ষিত। ওটসুর এই গুণ রয়েছে যে বিওয়া হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে এর অবস্থান এটি কে হোকুরিকু অঞ্চলের সাথে দুর্দান্ত যোগাযোগ দেয়। তবে এটি সর্বদা পশ্চিমে যোগাযোগের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি তখনআরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আরেকটি তত্ত্ব আছে। এটি পরবর্তীকালের অসংখ্য সত্যায়িত ঘটনার কারণে উপেক্ষা করা যায় না। অর্থাৎ হাশিহিতোর ভূত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন নাকা নো ও। প্রতিহিংসাপরায়ণ ভূত অভিজাতদের মধ্যে একটি প্রধান উদ্বেগ ছিল এবং তারা রাজধানীর অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি মন্দির এবং মন্দিরগুলিতে প্রচুর ক্রিয়াকলাপ করেছিল। আমরা যদি ধরে নিই যে, তাদের অজাচার সম্পর্ক স্থাপনে তিনিই আক্রমণকারী ছিলেন, তা হলে তিনি যেখানে মারা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাওয়ার হয়তো উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে. যাই হোক না কেন, আদালত ওটসুতে ৫ বছরের জন্য স্থগিত ছিল। ৬৬৮ সালে প্রাসাদে ওটসু নাকা নো ও অবশেষে সিংহাসন গ্রহণ করেন। তার সম্রাজ্ঞী ছিলেন ইয়ামাতো নো হিমেমিকো, রাজকুমার ফুরুহিতোর কন্যা, যাকে তিনি হত্যা করেন। তার কোনও সন্তান ছিল না। তবে তার আরও ৮ জন মহিলার সন্তান ছিল, যার মধ্যে চারজন কিসাকি এবং যাদের মধ্যে চারজন অপেক্ষারত মহিলা ছিলেন। তাদের মধ্যে দশটি মেয়ে ও চারটি ছেলে ছিল। তার নির্বাচিত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওটোমোর নিম্ন মর্যাদার মা ছিলেন। তাঁর পিতামহের পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে,তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তেনচির একমাত্র উচ্চ মর্যাদার পুত্র ছিলেন যুবরাজ তাকেরু, যার মা ছিলেন সোগা নো ইশিকাওয়ামারোর কন্যা। যাইহোক, রাজকুমার তাকেরু ৮ বছর বয়সে ৬৫৮ সালে মারা গিয়েছিলেন। রাজকুমার ওমায় তেনচি তেন্নোর একটি শক্তিশালী এবং সম্মানিত ভাই ছিল, ইয়ামাতো রাজ্যের স্বাভাবিক গতিশীলতা প্রায় নিশ্চিত করে তুলেছিল যে ওমা তার উত্তরসূরি হবেন (যদি তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন) নিম্ন মর্যাদার মায়ের সাথে রাজপুত্রের সাথে কোনও প্রতিযোগিতায়। এমন রাজপুত্র এতদিন সিংহাসনে আরোহণ করেননি। অবশ্যই, তেনচি তেন্নো ইয়ামাতো রাজ্যকে একটি নতুন দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছিলেন যা চীনা লাইনে কাজ করেছিল, যেখানে সম্ভব। বিষয়গুলি সম্পর্কে চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ছিল, জ্যেষ্ঠ বৈধ পুত্রই একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী। তেনচি তেন্নো এবং পরবর্তীকালের বেশ কয়েকজন সম্রাট শাসক বংশের জন্য এই নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচণ্ড লড়াই করেন। কিন্তু তা কখনও ঘটেনি। ৬৬৯ সালে তেনচি তেন্নোর দীর্ঘদিনের সহযোগী নাকাতোমি নো কামাতারি ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর অব্যবহিত আগে সম্রাট নাইদাইজিনের নতুন পদ বিশেষভাবে তৈরি করেন যাতে কামাতারিকে পদোন্নতি দেওয়া যায়। তিনি কামাতারির বংশধরদের জন্য নতুন বংশের নাম ফুজিওয়ারা তৈরির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ফরমান প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশকে আচ্ছাদন করে একটি আদমশুমারি সম্পন্ন করার আদেশ দেয়। এটি করার জন্য, গ্রামীণ অভিজাতদের অংশগ্রহণের সাথে জড়িত প্রদেশগুলিতে এক ধরণের আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক অগ্রগতি করা উচিত। এই আদমশুমারির কোনও প্রকৃত রেকর্ড বেঁচে নেই। যাইহোক, আমরা জানি যে পরে, নারা সময়কালে, এই আদমশুমারির নিবন্ধগুলি এখনও বিদ্যমান ছিল এবং তাইহো কোডে নির্দিষ্ট সিস্টেমটি কাজ করার সূচনা পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আমরা আরও জানি যে কিউশুর রেকর্ডগুলি ৭৭০ খণ্ড নিয়েছিল এবং কান্টো অঞ্চলের কোজুকে প্রদেশের রেকর্ডগুলি ৯০ খণ্ড নিয়েছিল। এই সংখ্যাগুলি ৮ ম এবং ৯ ম শতাব্দীতে এই স্থানগুলির পরিচিত জনসংখ্যার সমানুপাতিক। নারাতে শোসোইন কোষাগার প্রকৃত ৮ ম শতাব্দীর রেজিস্টারগুলি সংরক্ষণ করে। এগুলিতে ক্রীতদাস পর্যন্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এটি জমির পরবর্তী বিতরণের পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ৬৭০টি নিবন্ধন তখনপর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়নি। কারণটি হলো পরে যখন জিতো তেন্নো একটি আদমশুমারি পরিচালনা করেন তখন এটি সরাসরি জমির পুনর্বণ্টনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তবে এখানে এটি ঘটেছিল এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। এছাড়াও, যদি আপনার কাছে প্রতিটি ব্যক্তির বিশদ বিবরণ রেজিস্টার থাকে তবে আপনি স্বাভাবিকভাবেই করের বোঝা নির্ধারণে সেগুলি ব্যবহার করবেন। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে,৬৪৬ সালে ডাকা নতুন কর ব্যবস্থা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এই রেজিস্টারগুলি পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনায় ব্যবহার করার জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হত। এটি পুনরায় বিতরণ এবং পুনরায় বিতরণ দ্বারা নিহিত কর ব্যবস্থার বাস্তবায়নের পরে আরও বিশদ আদমশুমারি হত। তেনচি তেন্নোর শেষ বছরগুলিতে প্রায়শই জমা দেওয়া অন্য কৃতিত্বটি ছিল "ওমি রিও" বা ওমি কোডের সৃষ্টি। ওমি সেই প্রদেশ যেখানে ওটসু অবস্থিত। এটি একটি খুব বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ''নিহন শোকি'' বা নবম শতাব্দীর চেয়ে পুরানো কোনও বই বা নথিতে এর উল্লেখ নেই। এটি প্রথম ''কোনিন কিয়াকুশিকির'' মুখবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে প্রকাশিত ধারাবাহিক বইগুলির মধ্যে একটি যা আদেশ, বিচারিক রায় এবং এর মতো অনুলিপি রয়েছে যা প্রশাসনিক আইন কোডগুলির প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করেছিল। ''দাইশোকুকান্দেন'' নামে একটি বই রয়েছে যা অষ্টম শতাব্দীতে ফুজিওয়ারা নো নাকামারো লিখেছিলেন এবং এটি তেনচি তেন্নোর রাজত্বকালের ফরমানগুলির নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা তৈরি একটি সংকলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে করা হয় যা এটি র উল্লেখ করে না। একটি তত্ত্ব উল্লেখ করে যে জিনশিন যুদ্ধের পরে তেম্মু তেন্নোর বংশধররা ১০০ বছর ধরে সিংহাসন ধরে রেখেছিলেন যতক্ষণ না এটি কোনিন তেন্নোর সাথে তেনচি তেন্নোর বংশধরদের লাইনে স্থানান্তরিত হয়। তেম্মু তেন্নোর কৃতিত্বের কৃতিত্ব তার ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এমন অনেকে থাকতে পারেন। যাই হোক না কেন, এর মধ্যে কী ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। তাই এটি আসলে কোনও ব্যাপার নয়। যাইহোক, চীনারা প্রশাসনিক আইনের বিশদ বিবরণ দিয়ে ভলিউম সংকলন করার অভ্যাসে ছিল এবং এটি অনিবার্য ছিল যে কোনও সময়ে জাপানিরাও একই কাজ করার কথা ভাববে। তবে সম্ভবত এখনও পুরোপুরি নয়। == জিনশিন যুদ্ধ == তেনচির রাজত্বের শেষের দিকে উত্তরাধিকার সম্পর্কে সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তেনচির তিন পুত্র জীবিত ছিল, সবচেয়ে বড় ছিল যুবরাজ ওটোমো। তিনি ইতিমধ্যে দাজোদাইজিন নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটি কখন ঘটেছিল তা নিয়ে উৎসে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তেনচি যুবরাজ ওটোমোকে তার উত্তরসূরি বানাতে চেয়েছিলেন, যদিও তার মা নিম্ন মর্যাদার (রাজকীয় মান অনুসারে) প্রাসাদ কর্মচারী ছিলেন। এটি দীর্ঘকাল ধরে প্রথা ছিল যে কুনিনোমিয়াতসুকো এবং আগাতানুশি শ্রেণির প্রাদেশিক অভিজাতরা মেয়েদের স্ত্রী এবং রাজকন্যাদের উচ্চ স্তরের চাকর হিসাবে কাজ করার জন্য প্রাসাদে পাঠাতেন। এই প্রথা পরবর্তী শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল। তেনচি তেন্নো আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদগুলি দীর্ঘদিন ধরে খালি রেখেছিলেন। তবে একই সাথে তিনি ওটোমোকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তিনি সোগা নো ওমি আকে সাদাইজিন, নাকাতোমি নো মুরাজি কোগানে উদাইজিনকে তৈরি করেন এবং ওকিমোনোসুসুকাসা, সোগা নো ওমি হাতায়াসু, কুসে নো ওমি হিতো এবং কি নো ওমি উশির পদে তিনজনকে নিয়োগ করেন। এই শেষ পদটি পরবর্তী ব্যবস্থায় টিকে ছিল না তবে মোটামুটিভাবে দাইনাগনের সাথে মিলে যায়, এর অনুবাদ সাধারণত কাউন্সিলর এবং মহান মন্ত্রীদের ঠিক নীচে এর পদমর্যাদা। সম্ভবত, তিনি শীর্ষস্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে রাজকুমার ওটোমোর পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন, যাকে তখন পর্যন্ত হাতের মুঠোয় রাখা হয়েছিল। ওটোমোর পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব করার জন্য রাজকুমার ওমাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কারণ তেনচির মৃত্যুর পরে আভিজাত্যরা ওটোমোকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম ছিল। কৃতিত্বের জন্য, তেনচি তার ভাইকে হত্যা করতে চায়নি। তিনি মূলত রাজকুমার ফুরুহিতোকে নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি সংস্করণ নিয়ে আসেন। সম্রাট প্রকাশ্যে যুবরাজ ওমাকে উত্তরাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে সিংহাসনে সফল হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই, সম্রাজ্ঞী ইয়ামাতোহিমকে তেন্নো হওয়ার এবং বিষয়গুলির পরিচালনা রাজকুমার ওটোমোর হাতে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে দেশের কোনো নিরিবিলি মন্দিরে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। এটি ৬৭১ সালের ১০ তম মাসের ১৭ তম দিনে ঘটেছিল, যখন সম্রাট ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। একই দিনে, রাজকুমার ওমা মুণ্ডটি নিয়েছিলেন এবং তার প্রাসাদে রাখা সমস্ত অস্ত্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দু'দিন পরে তিনি একই মন্দিরে তথা ইয়োশিনোর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন, যেখানে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং পরবর্তীকালে অনেক রাজকীয় আধা-নির্বাসিত ছিল। তা মঞ্জুর করা হয়। এর পরপরই, পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে একত্রিত করা হয়েছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে তেনচি তেন্নোর উপস্থিতিতে শপথের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। তেনচি তেন্নো ৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২তম মাসের শুরুতে মৃত্যুবরণ করেন। রাজকুমার ওটোমো ধারাবাহিক সম্রাটদের সরকারী নথিপত্রে কোবুন তেন্নো হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি কেবল আধুনিক যুগেই করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' তৎক্ষনাৎ তেম্মু তেন্নোর ধারায় স্থানান্তরিত হয়, যার সময় রাজকুমার ওটোমোকে কখনই সম্রাট হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটি উপরে বর্ণিত গল্পটি একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় বর্ণনা করে। এতে বলা হয়েছে, সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়লে নো ওমি ইয়াসুমারোকে রাজকুমার ওমাকে তার উপস্থিতিতে ডেকে আনার জন্য পাঠানো হয়। ভিতরে ঢোকার সময়, সোগা রাজপুত্রকে তিনি যা বলেছিলেন তা খুব সাবধানে রাখতে বলেছিলেন, যার ফলে রাজপুত্র একটি ষড়যন্ত্র সন্দেহ করেন। সুতরাং, যখন তাকে সিংহাসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন যেমনটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর সুস্পষ্ট তাৎপর্য হলো, তিনি যদি সিংহাসন গ্রহণ করতেন তাহলে সম্ভবত তাকে হত্যা করা হতো। স্বভাবতই এই গল্প সত্যি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে যা ঘটেছিল তার কেবল রাজকুমার ওমার সংস্করণ রয়েছে। গল্পটি ভালো, হয়তো খুব ভালো। সম্ভবত তেনচি সরাসরি যুবরাজ ওমাকে প্রকাশ্যে সিংহাসন ত্যাগ করে একটি মঠে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাই হোক না কেন, তেনচি মরিয়া হয়ে তার ছেলের উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন এই সত্যের মুখে যে অভিজাতরা প্রায় নিশ্চিতভাবে ওমাকে সমর্থন করবে যদি এটি নিয়ে লড়াই হয়। যখন তিনি যোশিনোতে পৌঁছেছিলেন তখন রাজপুত্র তার "টোনারি" বা ব্যক্তিগত পরিচারক / দেহরক্ষীদের একত্রিত করেন এবং তাদের বলেছিলেন যে তিনি ধর্মের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন এবং যে কেউ পদ চান তার কাছে গিয়ে নতুন চাকরি সন্ধান করার স্বাধীনতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অর্ধেক পেছনে আর অর্ধেক থেকে যায়। এরপর সম্রাট মারা যান। এই সময়ে কিউশুতে সবেমাত্র একটি বিশাল চীনা দূতাবাস এসেছিল, এত বড় যে তারা জাপানিদের আশ্বস্ত করার জন্য কয়েকটি জাহাজ পাঠিয়েছিল যে এটি আক্রমণকারী বহর নয়। রাষ্ট্রদূতদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। রাজকুমার ওটোমোর কোনও উল্লেখ ছাড়াই এই সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পুরো গল্পটি রাজকুমার ওমার দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে এবং ওমি আদালতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। রাজকুমার ওটোমো কখন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন বা আদৌ ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। ''নিহন শোকি'' অনুমানের অনুমতি দেয় যে তিনি শাসক হিসাবে তালিকাভুক্ত নন বলে তিনি ছিলেন না। নর যুগের অন্য কোন গ্রন্থে তাঁকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত শাসক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না। টোকুগাওয়া মিতসুকুনি দ্বারা ''দাই নিহন শিতে'' এডো পিরিয়ড পর্যন্ত এটি প্রথম দাবি করা হয়েছিল যে তাকে সিংহাসনে আরোহণ করা হয়েছিল তবে তেম্মু তেন্নোর বৈধতা সমর্থন করার জন্য ''নিহন শোকিতে'' এটি দমন করা হয়েছিল। মরণোত্তর রাজত্বের উপাধি কোবুন তেন্নো মেইজি সম্রাট কর্তৃক রাজকুমার ওটোমোকে ভূষিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি যে ৬ মাস ওৎসু দরবারে শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসে যুবরাজ ওমার একজন অনুচর তাকে বলেন যে তিনি প্রচুর সংখ্যক লোককে জড়ো হতে দেখেছেন যারা তেনচির সমাধিতে কাজ করতে আসার দাবি করেছিল। কিন্তু তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল। অপর এক ব্যক্তি তখন বলেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ এবং চেকপয়েন্টগুলি লক্ষ্য করেছেন। ওমা তদন্ত করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে এটি সত্য ছিল। তারপরে তিনি তার লোকদের বলেছিলেন যে ঝামেলা রোধ করার জন্য তিনি অবসর নিয়েছেন। তবে তারা যদি তাকে যেভাবেই হত্যা করতে চলেছে তবে তিনি লড়াই করতে যাচ্ছেন। তার প্রধান সমস্যা ছিল রাজধানী ছাড়ার আগে তাকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাই মূলত অরক্ষিত ছিল। ৬ষ্ঠ মাসের ২২তম দিনে তিনি তিনজন লোককে মিনো প্রদেশে (ঠিক পূর্বদিকে) যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং গভর্নরকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তিনি তার কাছে যা কিছু বাহিনী ছিল তা একত্রিত করেন এবং পূর্বের অন্যান্য গভর্নরদেরও একই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফুওয়াতে একটি সভা পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছিল। এটি ওমি এবং মিনো প্রদেশের সীমান্তের একটি গিরিপথ যা প্রধান পূর্ব-পশ্চিম রাস্তা দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং ওটসুর উপর আক্রমণ চালানোর জন্য একটি ভাল অবস্থান। এরপর আসে ইয়োশিনোর কাছ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তিনি একজন লোককে আসুকায় পাঠিয়েছিলেন পাস পাওয়ার আশায় যা তাদের পোস্ট ঘোড়া ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তাই তারা ২৪ তারিখ পায়ে হেঁটে পূর্ব দিকে রওনা দিল। আদালত ইয়োশিনোর ওপর হামলার কথা ভাবছে কি না, তা জানার কোনো উপায় আমাদের নেই। তবে ওমা চলে যাওয়ার পর আদালত অবাক হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। বেশ কয়েকদিন তারা সাড়া দেয়নি। এই প্রস্থানটি পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে নোটিশের পুরো এক মাস পরে ছিল এবং বর্ধিত বিপদের কোনও উল্লেখ নেই, সুতরাং এটি অবশ্যই ধরে নেওয়া উচিত যে পূর্ববর্তী মাসটি সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে পরিকল্পনা এবং যোগাযোগ করতে ব্যয় করা হয়েছিল। দলটি শীঘ্রই এমন এক সমর্থকের মুখোমুখি হয়েছিল যার একটি ঘোড়া ছিল, যাতে রাজপুত্র চড়তে পারে। তাঁর স্ত্রী (ভবিষ্যতের জিতো তেন্নো) এবং তাঁর দুই পুত্র, রাজকুমারেস কুসাকাবে এবং ওসাকাবেকে একটি পালকিতে বহন করা হয়েছিল। এই সময়ে রাজপুত্রের সাথে "প্রায়" ২০ জন পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৩ জনের নাম ছিল এবং ১০ জন মহিলা ছিলেন। শীঘ্রই তাদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিল এবং তারা যে রাজকীয় এস্টেটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সবাইকে খাওয়ালেন। আরও কিছুটা এগিয়ে তারা প্রায় ২০ জন অভিজাতদের একটি শিকারী দলের মুখোমুখি হয়েছিল, যাদের ছোট সেনাবাহিনীতে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও একজন "রাজকুমার মিনো"। তিনি সম্ভবত যাত্রাপথের কাছাকাছি থাকতেন, তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরপর তারা ৫০টি মালবাহী ঘোড়ার একটি ট্রেন দেখতে পায় যারা চাল বহন করছে। তারা চাল ফেলে দিয়েছিল এবং তখন তাদের অশ্বারোহী ছিল। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই তারা মশাল বানানোর জন্য একটি বেড়া টেনে ফেলল। অবশেষে তারা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে তারা মধ্যরাতে থামতে পারে। তারা পোস্টিং স্টেশনটি পুড়িয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষকে তাদের অনুসরণ করার জন্য জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। দ্বিতীয় দিনে তারা ৭০০ জনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপরে আরও লোক উপস্থিত হয়েছিল, এত বেশি যে তারা ফিরে যেতে এবং তাদের পেছনের দিক রক্ষা করার জন্য ৫০০ জন লোকের একটি বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। ২৬ তারিখে যুবরাজকে জানানো হয় যে মিনো থেকে ৩,০০০ লোক এসেছে এবং আদেশ অনুসারে ফুয়া রাস্তা অবরোধ করছে এবং আরও অনেক সমর্থক, যাদের অনেকের নাম রয়েছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ জন সমর্থকের নাম আমাদের কাছে রয়েছে। তারা ইসে প্রদেশের কুওয়ানায় ছিল এবং ওমা অনুভব করেন যে তিনি দৌড়ানো বন্ধ করতে পারেন। তিনি তখন সৈন্য সংগ্রহের জন্য চারদিকে দূত পাঠাতে শুরু করলেন। ''নিহন শোকি'' বলছে যে এই মুহুর্তে রাজকুমার ওটোমোর সরকার কী ঘটছে তা জানতে পেরেছিল। খবরটি ওটসুর রাজধানীকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। কিছু অভিজাত যুবরাজ ওমায় যোগদানের আশায় পালিয়ে যায়, অন্যরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকার আশায় পালিয়ে যায়। ওটোমো তার কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। একজন মন্ত্রী তাদের কাছে যে কোনও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তাৎক্ষণিক আক্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ওটোমোর পরিবর্তে একটি যথাযথ সেনাবাহিনী সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব বার্তাবাহকদের প্রেরণ করেন। যেখানে ওমার বার্তাবাহকরা বেশিরভাগ পূর্ব দিকে প্রচারিত হচ্ছিল, ওটোমো তাকে পশ্চিমে প্রেরণ করেন। সুকুশির কমান্ডার এই ভিত্তিতে লোক পাঠাতে অস্বীকার করেন যে তার কাজ ছিল কোরীয় এবং চীনাদের কাছ থেকে কিউশুকে রক্ষা করা। ওটোমো কিবি এবং সুকুশির কমান্ডারদের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা আশা করেছিলেন কারণ তারা ওমার সাথে সংযুক্ত রাজপুত্র ছিলেন এবং তিনি তাঁর দূতদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা যদি রাষ্ট্রদ্রোহের লক্ষণ দেখায় তবে তাদের হত্যা করতে। তারা কিবিতে কমান্ডারকে হত্যা করতে সফল হয়েছিল। কিন্তু সুকুশির লোকটি খুব সুরক্ষিত ছিল এবং তারা চলে গেল। তারা খুব কমই সুকুশির কাছ থেকে কোনও ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত পুরুষদের আনার কথা ভাবতে পারেনি, সুতরাং এটি সম্ভবত এই অঞ্চলগুলিকে রাজকুমার ওমার পক্ষে ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল। প্রায় একই সময়ে একজন কর্মকর্তা, ওটোমো নো ফুকেই এর আগে ওমির আদালত ত্যাগ করেন এবং আসুকা অঞ্চলে তার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার নিজস্ব ব্যক্তিগত বাহিনী এবং নিকটবর্তী আয়া বংশের লোকদের একত্রিত করেন এবং ২৯ শে যুবরাজ ওমার পক্ষে প্রাক্তন আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই অঞ্চলের মিওয়া এবং কামো গোষ্ঠীগুলি যুবরাজ ওটোমোকে সমর্থন করার জন্য ওমিতে সৈন্য প্রেরণ করেছিল। যুবরাজ ওমা তখনতার সদর দফতর কুওয়ানা থেকে সরিয়ে নিলেন। এটি সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে ফুয়াতে ছিল। ২৭ তারিখে পূর্ব দিক থেকে আরও বিশ হাজার লোক তার সাথে যোগ দেয়। রাজকুমার ওমা তার ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজকুমার তাকেচিকে সামগ্রিক সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তার সেনাবাহিনী দুটি প্রধান কলামে বিভক্ত ছিল। অভিজ্ঞ যোদ্ধা কি নো ওমি এমারোর নেতৃত্বে প্রথমটি ছিল ইগা এবং ইসের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং ওটোমো নো ফুকেইয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আসুকার দিকে যাত্রা করা। দ্বিতীয়টি ছিল মুরাকানি নো মুরাজি ওয়োরির কমান্ডে সরাসরি ওটসুকে আক্রমণ করা। তিনি ইয়োশিনোতে রাজকুমার ওমার সাথে ছিলেন এমন একজন টোনেরি। এই বাহিনীকে তাদের পোশাকে লাল ব্যাজ সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা যুদ্ধের ময়দানে একে অপরকে চিনতে পারে। সপ্তম মাসের দ্বিতীয় দিনে ওমির আদালত ফুওয়া পাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণের নির্দেশ দেয়। ''নিহন শোকির'' মতে, এই আক্রমণটি প্রচণ্ড বিভ্রান্তিতে পড়েছিল এবং রাষ্ট্রের অন্যতম মন্ত্রী সোগা নো হাতায়াসু যুবরাজ ইয়ামাবের সাথে নিহত হন। রাজকুমার ওমার সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়েছিল এবং ১৩ তারিখে ইয়াসুকাওয়ায় শেষ হওয়া পরপর তিনটি যুদ্ধ জিতেছিল, যার পরে তারা সেটায় অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ওটসু প্রাসাদের বাইরের প্রতিরক্ষা গঠন করেছিল। সেখানে একটি সেতু সহ একটি স্রোত ছিল, যেখানে আদালতের সেনাবাহিনী তার অবস্থান তৈরি করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে, আদালতের অনুগত বাহিনী ওটোমো নো ফুকেই পরাজিত করে এবং আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চলেছিল। কিন্তু রাজকুমার ওমার কলামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং ফুকেই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, নির্ণায়ক যুদ্ধটি ৭ম মাসের ৬ষ্ঠ দিনে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের স্থানটি একটি সমাধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অনেক পতিত সৈন্য রয়েছে। দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর আদালতের সেনাবাহিনী উত্তর দিকে পিছু হটে। ২২শ দিনে সেতা ব্রিজে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেতু রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী মাঝের অংশের মেঝে বের করে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি তক্তা প্রসারিত করেছিল যাতে সেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। ওমা বাহিনীর একজন সৈনিক দুই সেট বর্ম পরে তক্তা পেরিয়ে দৌড়ে গেল, যেতে যেতে দড়ি কেটে ফেলল। অতঃপর তিনি শত্রুপক্ষের সারীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এটি কে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিলেন। তার সেনাবাহিনী স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনুসরণ করেছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর সেনাবাহিনী ভেঙে পালিয়ে যায়। যিনি এই দায়িত্বে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি যুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিলেন। ৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ''নিহন শোকিতে'' তাঁর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধে নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে তেম্মু তেন্নো সরকারী নোটিশ নেওয়ার জন্য সতর্ক ছিলেন বলে মনে হয়। ওমার বাহিনী পরের দিন সফলভাবে আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং যুবরাজ ওটোমো তার সেনাবাহিনী থেকে আলাদা হয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে কেউ এটি জানত না। সারাদিন লড়াই অব্যাহত ছিল এবং রাজকুমার ওটোমোকে সমর্থনকারী বিশাল শক্তিবৃদ্ধি আসার সাথে সাথে খুব ভারী হয়ে ওঠে। ওমার বাহিনী শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এবং সাদাইজিন ও উদাইজিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ তারিখে রাজকুমার ওটোমোর মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং তার মাথা ওমার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর ঠিক এক মাস পর রাজকুমার ওটোমোর প্রধান সমর্থকদের সাজা ঘোষণা করা হয়। নাইদাইজিন নাকাতোমি নো মুরাজি নো কোগানে সহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, সাদাইজিন এবং উদাইজিন নামে দু'জনকে তাদের সমস্ত পরিবারের সাথে নির্বাসিত করা হয়েছিল, নাকাতোমির পরিবারকেও নির্বাসিত করা হয়েছিল যেমন সোগা নো হাতায়াসু নো ওমি যিনি লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন। বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। একজন কর্মকর্তা যাকে ক্ষমা করা হত তিনি পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং আত্মহত্যা করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে পূর্ববর্তী সমস্ত দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে ছোট বিষয় ছিল। তবে এটি একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ ছিল যা যোশিনো থেকে রাজকুমার ওমার ফ্লাইট এবং তিন সপ্তাহের প্রকৃত ক্ষেত্রের লড়াই থেকে এক মাস স্থায়ী হয়েছিল, এতে কয়েক হাজার লোক জড়িত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এর পেছনে অন্য কোনো বিবেচনার বিষয় জড়িত ছিল কি না, যার জন্য এতগুলো পুরুষকে এত কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। উনিশ শতক এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বাধিক জনপ্রিয় তত্ত্বটি ছিল যে যুবরাজ ওমা তেনচি তেন্নোর অধীনে পরিবর্তনের দ্রুত গতির বিরোধিতার সুযোগ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার অর্থ যুদ্ধটি একটি রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া ছিল। যাইহোক, বাস্তবে তেম্মু তেন্নো তার ভাইয়ের দ্বারা উদ্বোধন করা পরিবর্তনগুলি সমাপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাই যদি তার সমর্থকরা পুরানো উপায়ে ফিরে আসার আশা করে তবে তারা দুঃখজনকভাবে হতাশ হবে। প্রায় ১৯২০-এর দশক থেকে এটি ঠিক বিপরীত তর্ক করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল, যে রাজকুমার ওমা "প্রগতিশীল" পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন, সুতরাং রাজকুমার ওটোমো বা তার পিছনে কর্মকর্তারা অবশ্যই "রক্ষণশীল" দল ছিলেন। তার বিজয়ের মাধ্যমে, তেম্মো তেন্নো মূলত রাজকুমার নাকা নো ও এবং নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা পরিকল্পিত লাইন বরাবর সরকারের পুনর্গঠন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে লেখা রচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গির সারসংক্ষেপ করেন আইনাগা সাবুরো। তিনি ভেবেছিলেন যে রাজকুমার ওমা মূলত নিম্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা সমর্থিত ছিলেন এবং জ্যেষ্ঠ আভিজাত্যরা রাজকুমার ওটোমোর পিছনে ছিলেন। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেরী কোফুন যুগের সমাধিগুলির পরিবর্তিত নিদর্শনগুলির গবেষণায় যা দেখেন তার সাথে এক ধরণের শ্রেণি সংগ্রাম ছিল, সামগ্রিকভাবে আভিজাত্যের মধ্যে আরও অভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকটি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির অভিজাতদের কাছ থেকে শক্তি বিকশিত হয়েছিল। যাইহোক, এই যুক্তিতে ত্রুটি আছে যে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে তেনচির রাজত্বের পরবর্তী বছরগুলিতে তাইকা সংস্কারের নীতিগুলি থেকে কোনও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৬৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সামরিক সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরে, সংস্কারের স্রোত আবার শুরু হয়েছিল এবং সম্রাটের চূড়ান্ত অসুস্থতা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি জাপানে ঐতিহাসিক চিন্তাধারার একটি সম্পূর্ণ নতুন পর্বের সূচনা করেছিল কারণ এটি ইতিহাসবিদদের প্রকাশ্যে মার্কসবাদী হতে মুক্তি দিয়েছিল। এটা বলা ন্যায্য, আমরা মনে করি, মূলত আগে যা ঘটেছিল তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে মার্কসবাদ (একটি হালকা ধরনের) ১৯৫০ থেকে ১৯৬০-এর দশকে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে। এটি স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিকদের বিস্মিত করেছিল (প্রথমবারের মতো) ৬৪৫ সাল থেকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সম্ভবত কোনও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কিনা। কিতায়ামা শিজিও নামে একজন ইতিহাসবিদ প্রস্তাব করেন যে ৬৪৫ সাল থেকে পরিবর্তনগুলি মূলত কেন্দ্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য কাজ করেছিল এবং এর অর্থ হলো করের জোরপূর্বক শ্রম অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। যখন এটি স্থানীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন এটি সম্ভবত এপিসোডিক ছিল, এতে প্রতি বছর কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু ছিল না। তবে জাতীয় সরকার সর্বদা কিছু খুঁজে পেতে পারে। আদালত নিজেই এটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রম করের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছিল। প্রহরী, রক্ষণাবেক্ষণের লোক, প্রাসাদের পরিচারক, বার্তাবাহক এবং কাজের ছেলেরা এবং সমস্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের শ্রমকরের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। এটি ব্যবস্থায় বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভ তৈরি করেছিল বলে তিনি ভেবেছিলেন। তবে সমস্যা হলো, জিনশিন যুদ্ধে কোনো পক্ষই জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উভয় পক্ষের যোদ্ধারা অভিজাত ছিল। তবে, এমন অনেকে আছেন যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এই ব্যবস্থার তীব্রতা নিয়ে যে কোনও জনপ্রিয় ক্ষোভ স্থানীয়ভাবে অনুভূত হত এবং গ্রামীণ আভিজাত্যের কৃষক জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলত। ''নিহন শোকির'' বিবরণ থেকে দৃঢ়ভাবে বোঝা যায় যে ইয়ামাতো প্রদেশের বেশিরভাগ অভিজাত ওমির দরবারকে সমর্থন করেছিল এবং যুবরাজ ওমা পূর্বের প্রাদেশিক আভিজাত্যের কাছ থেকে তার সমর্থন পেয়েছিলেন (এবং পশ্চিম, যদিও কোনও পশ্চিমা সেনা হস্তক্ষেপ করার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল)। এটি সুস্পষ্ট যে রাজকুমার ওমার দুটি কলামের একটির কমান্ডার ছিলেন টোনারি। একে নিম্ন-পদমর্যাদার প্রাদেশিক অভিজাত বলতে হয়। রাজকুমার ওমা বছরের পর বছর ধরে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং এই লোকেরা তার প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল যে তিনি তাদের সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে নারা যুগে উদ্ভূত জটিল ব্যবস্থাটি প্রাদেশিক আভিজাত্যের দ্বারা সমর্থিত না হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। এটি তারা নিজেরা না দেখলে এটি করত না। আপনারা যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিরোধিতার সামগ্রিক অনুপস্থিতি ৬৪৫ পরবর্তী পুরো রূপান্তরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়। উপসংহারটি হলো পুরানো কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণিকে সঙ্কুচিত করা হয়েছিল এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার এবং নিম্ন স্তরের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল যারা নতুন ব্যবস্থার অধীনে জেলা সরকারকে নিয়োগ করেছিল। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে জিনিসগুলি কার্যকর করার জন্য বিশদ জ্ঞান ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাদের জনপ্রিয় অস্থিরতা থেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা ছিল। এটি ছিল মৌলিক চুক্তি যা চীনা সাম্রাজ্যকে বহু শতাব্দী ধরে চালিত রেখেছিল এবং জাপানেও একই জিনিস করার উদ্দেশ্য ছিল। == তেম্মু তেন্নো == ৬৭২ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার ওয়ামা ওমি প্রাসাদ ত্যাগ করে আসুকা অঞ্চলে ফিরে আসেন। তিনি কিয়োমিহারা প্রাসাদ নামে পরিচিত একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন। ৬৭৩ সালের ২য় মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহন করেন। ৬৭৩ সাল তার শাসনকালের প্রথম বছর হিসেবে তার সরকারি নথিপত্রে সর্বদা স্বীকৃত ছিল। পরে যখন কোবুন তেন্নো তালিকায় যুক্ত হয়, তখন সরকারি কালানুক্রমিক তালিকা ৬৭২ সালকে "কোবুন প্রথম বছর" হিসেবে গণ্য করলেও ''নিহোন শোকি'' ধারাবাহিকভাবে ৬৭২ সালকে "তেম্মু প্রথম বছর" হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং এটি মেইজি যুগের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক লেখায় স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে স্থিত হয়েছিল। তেম্মুর শাসনকালে এবং জিতোর ৭ বছর পর্যন্ত সরকার কিয়োমিহারা প্রাসাদেই অবস্থান করেছিল, অর্থাৎ ৬৭৩ থেকে ৬৯৩ পর্যন্ত ২১ বছর। এটি পূর্বের যেকোনো প্রাসাদের তুলনায় বেশি স্থায়ী ছিল এবং স্থায়ী রাজধানী স্থাপনের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। ''মান্যোশু'' সংগ্রহে অনেক কবিতায় এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে যে, যুদ্ধজয়ের ফলে তেম্মু তেন্নোর অভূতপূর্ব ক্ষমতা ছিল যিনি যেকোনো কিছু ঘটাতে পারতেন। এক কবিতায় বলা হয়েছে, "ঈশ্বরের মতো" তিনি একটি পাহাড়কে সমুদ্রে রূপান্তরিত করতে পারেন। ঈশ্বরের ন্যায় ওয়াইশিমাগুনি রাজত্বকারী তেম্মু নিজেও ১২তম বছরের একটি আদেশে নিজেকে "যমাতো নেকো নো মিকোতো" বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওয়াইশিমাগুনি হল জাপানের প্রাচীন নাম। তার শাসনকালের শুরুতে কোন বড় যমাতো পরিবার থেকে আসা অভিজাতরা দরবারে প্রাধান্য পায়নি, এবং নাকাতোমি নো কামাতারির ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোও তখনো প্রভাবশালী ছিল না। সরকারে তিনি নিম্ন পদস্থ লোকদের উপর বেশ নির্ভরশীল ছিলেন, যার মধ্যে টোনেরিরাও ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুরাকুনি নো মুরাজি ওয়ায়রি, যাকে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন না এবং তাঁর সামরিক সফলতার জন্য মুরাজি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত অবসরের সময় বা মৃত্যুর কাছাকাছি উচ্চ পদমর্যাদা পেতেন, কিন্তু কর্মজীবনে তাদের পদমর্যাদা তুলনামূলকভাবে কম থাকত। মুরকুনিকে ১২০টি পরিবার থেকে আয় দেওয়া হয়েছিল। এটি মহান অভিজাতদের মানদণ্ডে খুব বেশি ছিল না। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষমতা ছিল কারণ সম্রাট তাদের পিছনে ছিলেন। তাদের উচ্চ পদ বা ব্যক্তিগত প্রতিপত্তির এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শাসনকালের শুরুতে তিনি সর্বোচ্চ পদ দাজোদাইজিন, সদাইজিন এবং উদাইজিন ফাঁকা রেখেছিলেন। বড় কোন অভিজাতকে উচ্চপদে নিয়োগের প্রথম ঘটনা ছিল ৬৭৫ সালে। তখন তিনি ওতোমো নো মুরাজি নো মিয়ুকিকে রাজকুমার কুরিকুমার অধীনে যুদ্ধমন্ত্রীর উপমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। মোট মিলিয়ে ''নিহোন শোকি''তে তেম্মু তেন্নোর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ৭ জন জোমাতো অভিজাত এবং ৫ জন রাজকুমারের নাম উল্লেখ আছে। ৫ জন রাজকুমারই অভিজাতদের থেকে উচ্চ পদ পেয়েছিলেন। আরও উল্লেখ আছে, তেম্মুর সম্রাজ্ঞী উনো (পরে জিতো তেন্নো) তাঁর শাসনকালে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং বিষয়াদি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া, তেম্মুর দুই পুত্রও যথাক্রমে ৬৮১ সাল থেকে রাজকুমার কুসাকাবে এবং ৬৮৩ সাল থেকে রাজকুমার ওৎসু সরকারে সক্রিয় হয়। কুসাকাবে শেষ পর্যন্ত দাজোদাইজিন হন। স্পষ্ট যে তেম্মুর সরকার ছিল সম্রাটের সরাসরি শাসন, যেটিতে শাসক পরিবারের সদস্যরাই সহযোগিতা করতেন। ৬৭৫ সালে তেম্মু সর্বোচ্চ অভিজাতদের সমস্ত ব্যক্তিগত জমি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন। ৬৬৪ সালে টেনচি এ জমিগুলো বেতন হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন, কিন্তু তখন পরিষ্কার হয়ে গেল যে পুরো দেশ জুড়ে সম্পূর্ণ কর ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে এবং অভিজাতরা কেবলমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করবেন। তিনি আরও আদেশ দেন যে "নিকটবর্তী রাজকুমার, অন্যান্য রাজকুমার, কর্মকর্তা ও মন্দিরগুলো" তাদের হাতে বছরের পর বছর ধরে পাওয়া সব ধরণের জমি — কৃষিজমি বা বনজ — ফেরত দেবে। ৬৮৫ সালে তেম্মু আবার পদমর্যাদা ব্যবস্থা সংস্কার করেন। প্রথমবারের মতো রাজকুমারদের জন্য নতুন পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। এটি পূর্বের ব্যবস্থার বাইরে ছিল। এটি নারা যুগ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুইটি সমান্তরাল পদমর্যাদা ব্যবস্থা চালু ছিল, একটি রাজকুমারদের জন্য এবং অন্যটি সকলের জন্য। এখন সরকারি পদমর্যাদা ব্যবস্থার বাইরে ছিলেন শুধুমাত্র সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবার, অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তানরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কিছু লক্ষণও ছিল। ৬৭৫ সালে একটি ঘটনা ঘটে যখন দুই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাকে "দরবারে উপস্থিত হওয়া থেকে নিষিদ্ধ" করা হয় এবং কয়েকদিন পরে তাদের একজনকে "সমস্ত পদ ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত" করা হয়। একই বছর রাজকুমার ওমি ও তাঁর দুই পুত্রকে গ্রামাঞ্চলে নির্বাসিত করা হয়, এবং পরের বছর দাজাইফুর প্রধান কর্মকর্তা রাজকুমার ইয়াকাকিকেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট বছর জানা না গেলেও, শাসক গোত্র থেকে কয়েকজনকে "মিকাতা" উপাধি ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাদ দেওয়া হয়। ৬৭৫ সালে একটি আদেশে সব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের বছর গভর্নরদের মধ্যে অস্ত্র ধারণের ব্যাপারে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। ৬৭৯ সালে রাজকুমার ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয় যে পরবর্তী বছর একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তারা সশস্ত্র ও সিংহাসনে চড়ে উপস্থিত হবে, এবং এটি বাস্তবে পরিচালিত হয়। ৬৮৪ সালে তেম্মু তেন্নো একটি আদেশে উল্লেখ করেন যে "সামরিক বিষয়গুলো সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।" ৬৪৫ সালের আগে শাসকের হাতে সরাসরি সীমিত সামরিক বাহিনী ছিল। সবসময় কিছু সংখ্যক টোনেরি ছিল, যারা প্রধানত পূর্বাঞ্চল থেকে আসত, এবং কিছু ইউকেইবে ছিল, যারা কিউশু থেকে চাপা কৃষক সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রাজধানীতে পাঠানো হতো এবং প্রধানত গার্ড হিসেবে কাজ করত। এই বিভাগের লোকসংখ্যা কত ছিল তা কেউ নিশ্চিত নয়। অন্যান্য সব কিছু নির্ভর করত যমাতো গ্রামের সামরিক মনোভাবাপন্ন উজি গোত্রের উপর। ধারণা করা হয় টোনেরিদেরকে নতুন রাষ্ট্রের "বাম" ও "ডান" হ্যোয়েফু 兵衛府 প্রহরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এবং ইউকেইবে গার্ডরা ছিলেন এমোনফু 衛門府-তে। বাকী দুটি গার্ড ইউনিট, "বাম" ও "ডান" ইজিফু 衛士府, শ্রম করের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধারণা করা হয় এই দায়িত্বে নিয়োজিত লোকেরা সাধারণ কৃষক ছিলেন না, বরং স্থানীয় ক্ষুদ্র অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মোটামুটি বলতে গেলে, রাজধানীর সরকারি সামরিক বাহিনী ছিল মূলত পুলিশ ও রক্ষী হিসেবে, বাস্তবিক সামরিক বাহিনী নয়। সম্ভবত তেম্মু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে সব কর্মকর্তা সশস্ত্র এবং অন্তঃপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও যেন সশস্ত্র থাকেন যাতে প্রয়োজনে তিনি দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করতে পারেন। প্রদেশগুলোতে সামরিক সংগঠনের তেমন চিত্র ছিল না। ৬৮৫ সালে তেম্মু আদেশ দেন যে ব্যক্তিগত নয়, বরং সংগঠিত সামরিক ইউনিটগুলোর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সামরিক উপকরণ — যেমন শিং, ঢোল, পতাকা থেকে শুরু করে ক্রূড অস্ত্র যেমন "পাথর নিক্ষেপক" এবং বড় আকারের ক্রসবো — কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। এটি জনগণকে নিরস্ত্র করার জন্য নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে এগুলো প্রয়োজনে দ্রুত পাওয়া যাবে এবং ঠিক করা থাকবে। প্রাচীন জাপানের একটি ছোট রহস্য হল কেন ইসের "মহান মন্দির" আমাতেরাসু ওমিকামি, যাকে শাসক গোত্রের পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়, এটি তাঁর পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন পূজার কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এটি এমন স্থানে অবস্থিত যা থেকে ধারণা করা হয় পূজার বিষয়বস্তু হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর, বিশেষ করে যারা সমুদ্রপথে পূর্ব জাপানে যাওয়ার পথে ছিলেন তাদের জন্য। এটি শাসক গোত্রের সাথে বিশেষ কোন সম্পর্কিত স্থান নয়। ধারণা করা হয়েছে মন্দিরটি তুলনামূলকভাবে দেরিতে আমাতেরাসুর সাথে সম্পর্কিত হয়েছিল, যার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হলো তেম্মু তেন্নোর শাসনকাল। ''নিহোন শোকি''তে কেতাই থেকে সুইকো পর্যন্ত সব শাসনের সময় রাজকুমারেসদের ইসে পাঠানো হত সাইগু বা ইটসুকি নো মিয়া হিসেবে, অর্থাৎ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত্রী হিসেবে। তবে এই প্রথা পরবর্তীতে লোপ পেয়ে যায় যতক্ষণ না ৬৭৪ সালে তেম্মু তার শাসনকালে নিজেই প্রথম ইসে যাত্রা করেন। এটি ছিল রাজ পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই যাত্রাটি তেম্মুর শাসনকালের একটি চিহ্নিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এভাবে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তী যুগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেম্মু আরও কৃতিত্ব পেয়েছেন এমন একটি কাজ শুরু করার জন্য যা পরবর্তীতে ''কোজিকি'' এবং ''নিহন শোকি'' রচনার সূচনা করেছিল। তিনি বিভিন্ন অভিজাত বংশের কাছে থাকা উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে জাপানের ইতিহাস রচনার উপকরণ পাওয়া যায়। এটি ''কোজিকি''র ভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে। ৬৮১ সালে তিনি রাজকুমার কাওশিমা নেতৃত্বাধীন শাসক বংশের ছয় সদস্যের একটি কমিটি এবং নাকাতোমি নো মুরাজি নো ওশিমা নেতৃত্বাধীন অন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তার একটি কমিটিকে জাতীয় ইতিহাস সম্পাদনার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এই প্রকল্পটি কখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এটির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তা পরে ''নিহন শোকি''তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই বৃহৎ প্রকল্প থেকে আলাদাভাবে, তিনি তাঁর এক টোনেরি হিয়েদা নো আরেকে সহজ একটি কাজ এককভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এটি একক লেখকের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। হিয়েদা তাঁর কাজ শেষ করার আগে মারা যান, কিন্তু এটি নারা যুগের শুরুর দিকে ও নো আসোন ইয়াসুমারো পুনরায় গ্রহণ করেন এবং ৭১২ সালে ''কোজিকি'' নামে প্রকাশ করেন। উভয় কাজেই অভিজাত বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এটি সম্ভবত ঐ বংশগুলি দ্বারা রক্ষিত কাহিনীগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। ''কোজিকি''তে প্রায় ২০০টি বংশ কাহিনী এবং ''নিহন শোকি''তে প্রায় ১১০টি পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো একত্রিত করার সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তাইকা সংস্কার এবং জিনশিন যুদ্ধের পর থেকে বহু প্রাচীন বংশ মুছে গেছে এবং নতুন অনেক বংশ প্রভাবশালী হয়েছে। এর ফলে প্রাচীন "কাবানে" উপাধিগুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বংশের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রতিপত্তির সাথে আর মিলছিল না। তাই ৬৮৪ সালে তেম্মু কাবানে ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি আটটি উপাধির ব্যবস্থা করেন, যাদের মধ্যে বেশকিছু নতুন সৃষ্টি ছিল। শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এগুলো ছিল—মাহিতো (মাঝে মাঝে মাবিতো লেখা হয়) 真人, আসোমি (প্রায় সবসময় আসোন লেখা হয়) 朝臣, সুকুনে 宿禰, ইমিকি 忌寸, মিচিনোশি 道師, ওমি 臣, মুরাজি 連, এবং ইনাগি 稲置। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি বংশের সম্রাট থেকে বিচ্ছেদের মাত্রা স্পষ্ট করা। যেসব বংশ আগে ওমি উপাধি পেত, তাদের অধিকাংশকে আসোমি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এটি শাসক বংশের শাখা থেকে আগত বংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যেসব বংশ আগে মুরাজি ব্যবহার করত, তাদের বেশির ভাগ সুকুনে উপাধি দেওয়া হয়। মাহিতো বিশেষভাবে শাসক বংশের প্রধান শাখার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত বংশের জন্য সংরক্ষিত ছিল, বিশেষ করে কেটাই তেন্নো বা পরবর্তীকালের শাসকদের বংশ থেকে আগত বংশগুলোর জন্য। ওজিন রাজবংশ থেকে আগত বংশগুলো সবাই আসোমি উপাধিতে আচ্ছাদিত হয়েছিল। ছোট উপাধিগুলো সাধারণত প্রাদেশিক বংশদের জন্য ছিল। তেম্মুর শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। এটি পরবর্তী প্রশাসনিক আইন বিধিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারা যুগে সরকারের মূল ভিত্তি ছিল আটটি মন্ত্রণালয়ের সমষ্টি যাকে দাজোকান বা "বড় দপ্তর" বলা হয়। এদের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তেম্মুর সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মাত্র একটি ছিল অনুপস্থিত, তা হলো নাকাতসুকাসা। এটি শাসকের আবাসিক প্রাসাদের পরিচালনা করত। এটি প্রশাসনিক প্রাসাদ থেকে আলাদা। তেম্মুর দিনে একটি মন্ত্রণালয়ই উভয় কাজ দেখাশোনা করত। নামগুলো সবই ভিন্ন ছিল। তবে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিম্নস্তরের বহু প্রশাসনিক সত্তার নাম এবং সরকারি পদবীও ভিন্ন ছিল। প্রধান পার্থক্য ছিল, শেষমেশ প্রতিষ্ঠিত কোডগুলো চীনা সমসাময়িক প্রথা থেকে নেওয়া নাম ও পদবী বেশি ব্যবহার করত। ৬৮১ সালের দ্বিতীয় মাসে সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী প্রাসাদের প্রধান মিলনকক্ষে গিয়ে সমস্ত রাজপুত্র ও কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। সম্রাট ঘোষণা করেন যে, সরকারের কাঠামো এবং কার্যাবলীর নিয়মাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রশাসনিক নীতিমালা প্রস্তুত করার সময় এসেছে। তিনি স্বীকার করেন এটি একটি বৃহৎ কাজ। এটি শেষ করতে সময় লাগবে এবং সরকারী কাজ ব্যাহত হওয়া উচিত নয়, তাই এই প্রকল্পের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। এটিই পরিচিত "অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরো"র সূচনা। তেম্মু তেন্নোর জীবদ্দশায় সম্ভবত এই কাজ শেষ হয়নি। তবে সরকারের কাঠামো এই প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সামঞ্জস্য করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তেম্মু তেন্নোর ১৭ জন সন্তান ছিল, যাদের নাম জানা গেছে, ৯ জন বিভিন্ন মাতার সন্তান, ১০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। সম্রাজ্ঞী উনোর একমাত্র সন্তান ছিলেন রাজকুমার কুসাকাবে। তিনজন অন্যান্য নারী কিসাকি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, যাঁরা রাজকুমার ওতসু, রাজকুমার নাগা, রাজকুমার ইউগে, এবং রাজকুমার টোনেরির মা ছিলেন, পাশাপাশি একটি কন্যাও ছিলেন। এই চারজন নারীই ছিলেন তেনচি তেন্নোর কন্যা। আরও তিনজন মহিলা ছিলেন, যাঁরা কনকুবাইন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিলেন। দুজন ছিলেন ফুজিওয়ারা নো কামাতারির কন্যা, যাঁরা রাজকুমার নিটাবে এবং এক কন্যার জন্ম দিয়েছেন। তৃতীয় ছিল সোগা নো ওমি নো আকের কন্যা, যিনি রাজকুমার হাটসুমি এবং দুই কন্যার জন্ম দেন। শেষমেশ তিনজন নারী ছিলেন যাদের প্রাসাদে কোন সরকারি পদবী ছিল না। রাজকুমারেস নুকাতা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এক কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন, রাজকুমারেস তোচি, যিনি শিশুকালে মারা যান। এটি আদালতে অনেক শোকের কারণ হয়। দুই প্রাসাদের সহকারী রাজকুমার টাকেচি, রাজকুমার ওসাকাবে এবং রাজকুমার শিকি ও দুই কন্যার জন্ম দেন। রাজকুমার টাকেচি উল্লেখযোগ্য কারণ তিনি জিনশিন যুদ্ধে কমান্ডার ছিলেন। রাজকুমার ওসাকাবে ও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। দুটি সর্বোচ্চ পদমর্যাদার রাজপুত্র ছিলেন নিঃসন্দেহে রাজকুমার কুসাকাবে এবং রাজকুমার ওতসু। ৬৮১ এবং ৬৮৩ সালে যথাক্রমে তারা এমন বয়সে পৌঁছান যেখানে সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। রাজকুমার কুসাকাবের মা ছিলেন সম্রাজ্ঞী, যেখানে রাজকুমার ওতসুর মা জিনশিন যুদ্ধে আগে মারা গিয়েছিলেন। তবে মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ রাজকুমার ওতসুকে বেশি প্রভাবশালী মনে করত। ''নিহন শোকি'' উল্লেখ করে যে, শিশু অবস্থায় তিনি তাঁর চাচা ও দাদা তেনচি তেন্নোর প্রিয় ছিলেন, এবং অন্যান্য প্রাচীন সূত্রে বলা হয়েছে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। রাজকুমার কুসাকাবে সম্পর্কে কোনও তথ্য অবশিষ্ট নেই। তিনি ২৮ বছর বয়সে মারা যান এবং ধারণা করা হয় যে তিনি সবসময় অসুস্থ ছিলেন। এটি সম্ভবত ব্যাখ্যা করে কেন তাঁকে তেম্মুর মৃত্যুর পর শাসক করা হয়নি। তেম্মুর শাসনকাল এমন ছিল যে তিনি সরাসরি শাসন করতেন, তাই এটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী শাসককে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হতে হয়েছিল। মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিল সম্রাজ্ঞী। যদি ধরা হয় যে রাজকুমার কুসাকাবে অনুপযুক্ত ছিলেন, তাহলে তিনি তাঁর শিশুসন্তান রাজকুমার কারুর (যিনি পরবর্তীতে মোম্মু তেন্নো হন) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনাক্রমে কুসাকাবে ৬৮১ সালে "সিংহাসন অধিকারী" করা হয়। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, এর সঙ্গে উত্তরাধিকার নিয়ে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে তাকে সরকারের একটি প্রখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই একই দিনে অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয় সরকারী নিয়মাবলী আনুষ্ঠানিককরণ সম্রাটের অবস্থান দৃঢ় করবে যাতে তিনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন এমনকি যদি তিনি সাধারণ ক্ষমতার ব্যক্তিও হন। ৬৮৩ সালে রাজকুমার ওতসুও সরকারে পদ পায়। যদি ধরা হয় তিনি তাঁর সৎভাই থেকে স্বাস্থ্যবান ও প্রতিভাবান ছিলেন, তাহলে সকল কারণ রয়েছে মনে করার যে তিনি তেম্মুর মৃত্যুর পর সম্রাট হওয়ার সুযোগ পেতেন। ৬৮৫ সালে তেম্মু অসুস্থ হন কিন্তু কিছুদিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ৬৮৬ সালের ৫ম মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন এবং ৭ম মাসে ঘোষণা করেন যে তিনি আর সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকবেন না। এটি সবকিছুই সম্রাজ্ঞী ও রাজকুমার কুসাকাবে দেখবেন। তিনি ৯ম মাসের ৯ তারিখে মারা যান, বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। ''নিহন শোকি'' জানায়, ১১ তারিখে তাঁকে সাময়িকভাবে তাঁর মোগারি নো মিয়ায় সমাহিত করা হয়, এবং ২৪ তারিখে "রাজকুমার ওতসু সিংহাসন অধিকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল"। পরবর্তী ঘটনা জিতো তেন্নো নিবন্ধে বর্ণিত। বলা হয়েছে, রাজকুমার ওতসুর বিশ্বাসঘাতকতা ১০ম মাসের ২ তারিখে প্রকাশ পায় এবং তিনি প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরের দিন তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তাঁর স্ত্রীও মারা যান। তবে স্পষ্ট নয় তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যা করেন। পরের দিন "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে দুই জন ছাড়া সবাই ক্ষমা পায়। ওই দুইজন নির্বাসিত হন। এর কয়েকদিন পরে সম্ভবত চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর রাজকুমার ওতসুর বোন রাজকুমারী এস ওকু রাজধানীতে ফিরে আসেন যিনি কয়েক বছর ইসেতে পুরোহিত ছিলেন। ''মানইশু''র একটি কবিতা প্রকাশ করে যে, রাজকুমার ওতসু গোপনে ইসেতে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন তেম্মুর মৃত্যুর সময়ের আশেপাশে। সম্ভবত এই ঘটনাটিই ''নিহন শোকি''র জন্য তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের কারণ। একজন রাজপুত্র রাজধানী ত্যাগ করে পূর্বদিকে যাওয়া এবং উত্তরাধিকার অস্থিতিশীল থাকা অবস্থায় যাত্রা করা বিদ্রোহী উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরা লক্ষ্য করেছেন যে, "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে কয়েকজন পরবর্তীকালে জিতোর আদালতে কর্মজীবন চালিয়েছেন। একজন প্রথম সম্পূর্ণ রিৎসুরো নীতিমালা তৈরির কমিটিতেও ছিলেন। এটা ইঙ্গিত দেয় যে রাজকুমার ওতসুকে অপরাধী বানানোর কূটনীতি করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' স্পষ্ট করে যে সম্রাজ্ঞী শাসনে ছিলেন। তবে কিছু সময়ের জন্য উত্তরাধিকার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করা হয়নি। মৃত সম্রাটকে শোক জানানো ও তাঁর সমাধি প্রস্তুতির সব সরকারি কার্যক্রমে সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ ছিল "সিংহাসন অধিকারী"। ৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১তম মাসে তেম্মুর দাফনের মধ্য দিয়ে এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। অবশ্যই ঐ সময়ে সম্রাটের বিধবা মোগারি নো মিয়ায় বসবাস করতেন এবং গভীর শোক পালন করতেন। এরপর ৬৮৯ সালের ৪ম মাসে যুবরাজ কুসাকাবে মারা যান। তাই ধারণা করা যায়, শোক পালন শেষ হলে রাজ্যাভিষেক করার পরিকল্পনা ছিল। তাঁর পুত্র যুবরাজ কারুর বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর এবং তাই সম্রাজ্ঞীর আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি জিতো তেন্নো নামে পরিচিত। এটি ৬৯০ সালের শুরুতে ঘটেছিল। এই সময়কালে ৬৮৯ সালের ৬ষ্ঠ মাসে অসুকা কিয়োমিহারা রিও ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয় এবং সরকারী দপ্তরগুলোতে বিতরণ করা হয়। এই ঘটনাকেই অসুকা যুগের সমাপ্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ৬৮৯ সালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, কামাতারির বড় ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোর প্রথমবারের মতো সরকারি পদে নিয়োগ। 5roxmkvkg0grkof84nxomrphcgzu418 84867 84866 2025-06-18T23:43:41Z Mehedi Abedin 7113 84867 wikitext text/x-wiki [[File:Horyu-ji06s3200.jpg|thumb|right|হোরিউ-জির প্যাগোডা]] '''''আসুকা 飛鳥''''' হলো নারা সমভূমির দক্ষিণ প্রান্তের একটি এলাকা, যেখানে জাপানে আদিম গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বেশি উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময়ে সেখানে এখনকার মতো কোনও শহর ছিল না। তবে রাজপ্রাসাদ এবং কিছু বৌদ্ধ মন্দির গড়ে উঠতে থাকে। কেইতাই সম্রাট আসুকার আশেপাশে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী ১৫ জন উত্তরসূরীর মধ্যে ৯ জনেরই প্রাসাদ ছিল এই এলাকায়। নারা শহর তৈরির আগের সময়কালটিকে সাধারণভাবে "আসুকা যুগ" বলা হয়। যদিও নারা ছিল এই সমভূমির প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে। আসুকা যুগ ছিল একটি পরিবর্তনকালীন সময়। সেসময় শাসন চলত সম্রাটের প্রাসাদ থেকে। প্রায় প্রতিটি সম্রাট তার নিজস্ব নতুন প্রাসাদ তৈরি করতেন। দীর্ঘ শাসনকালে প্রাসাদ একাধিকবার স্থানান্তরিত হত। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের আকার ছিল ছোট ও সরল—এমনকি দলিল-দস্তাবেজের সংরক্ষণাগারসহ তা সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল। ৬৪০ সালের দিকে প্রশাসন কিছুটা ভারী হতে শুরু করলে আগের মতো সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল না। পুরোপুরি স্থায়ী রাজধানী এবং প্রাসাদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসুকা যুগের একেবারে শেষ দিকে। তবে পরবর্তী ১০০ বছরে রাজধানী আরও তিনবার সরানো হয়। আরও কয়েকটি স্থানান্তরের প্রস্তাবও উঠেছিল। ==আসুকা যুগ== আসুকা যুগকে প্রধানত দুইটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বে, সোগা বংশের চারজন পরপর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজদরবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: সোগা নো ইনামে 蘇我の稲目, সোগা নো উমাকো 蘇我の馬子, সোগা নো এমিশি 蘇我の蝦夷 এবং সোগা নো ইরুকা 蘇我の入鹿। এই পর্বটি ৫৭২ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সোগা বংশের সহিংস পতনের পর। এই সময় রাজনীতির প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন তেন্‌চি 天智 (বা তেন্‌জি) তেন্নো, তাঁর ভাই তেম্মু 天武 তেন্নো এবং তেম্মুর বিধবা স্ত্রী জিতো 持統 তেন্নো; এই পর্বটি ৬৪৫ থেকে ৬৯২ সাল পর্যন্ত চলে। জিতো যখন তার ছেলে মোম্মু (文武) সম্রাটকে সিংহাসন হস্তান্তর করেন, তখন <i>নিহোন শোকি</i> নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থটির বিবরণ শেষ হয়। <i>কোজিকি</i> গ্রন্থটি ৬২৮ সালে সম্রাজ্ঞী সুইকো (搉古)-এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রথম ধাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন রাজপুত্র উমায়াদো (廐戸। তিনি "শোতোকু তাইশি" (聖徳太子) নামেও পরিচিত ছিলেন। তাকে “পবিত্র রাজপুত্র” বা “জ্ঞানী রাজপুত্র” বলা হত।তিনি সম্ভবতআসুকা যুগের একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নাম আজও প্রতিটি জাপানির কাছে পরিচিত। <i>নিহোন শোকি</i> গ্রন্থের লেখকরা তাঁকে আধুনিক জাপানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজও তিনি জাপানি সংস্কৃতিতে সম্মানীয় অবস্থানে আছেন, ঠিক যেমনভাবে আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটন বা ইংল্যান্ডে আলফ্রেড দ্য গ্রেট সম্মান পান। শোতোকু তাইশির ছবিও জাপানি মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। আসুকা যুগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই সময়ে জাপানে প্রচলিত আদি ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আদি ধর্মটি "শিন্তো" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কিছু জাপানি একচেটিয়াভাবে একটা ধর্মকে সমর্থন করলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উভয় ধর্মকে শ্রদ্ধা করত এবং জীবনের অংশ হিসেবে দুটিকেই অন্তর্ভুক্ত করার উপায় বের করত। সহজভাবে বলা যায়, শিন্‌তো বিয়ের ধর্ম হয়ে ওঠে, আর বৌদ্ধ ধর্ম শেষকৃত্যের ধর্ম। ===জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম=== জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা ঘটে ৫৩৮ সালে। এটি আসুকা যুগের শুরুর তারিখের আগের ঘটনা। ওই বছর পেকচে’র রাজা সং তাঁর রাজধানী পাহাড়ের নিরাপদ কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চল থেকে একটি প্রধান কৃষিভিত্তিক এলাকায় স্থানান্তর করেন। একইসঙ্গে তিনি পেকচের নাম পরিবর্তন করে “সাউদার্ন পুইয়ো” রাখেন, যদিও জাপানি ও চীনারা (এবং আধুনিক ইতিহাসবিদগণ) এটি উপেক্ষা করেন। তাঁর নতুন রাজধানীর স্থানটি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার পুইয়ো শহর (যেটিকে সাম্প্রতিক রোমানাইজেশনের সংস্কারে দক্ষিণ কোরিয়াররা বিভ্রান্তিকরভাবে “বুইয়ো” লিখে। তবে উচ্চারণ “পুইয়ো”)। এই নতুন রাজধানীতে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল একটি কাঠামোবদ্ধ শাসনব্যবস্থা গঠন যা আংশিকভাবে চীনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও তিনি সমসাময়িক কোগুরিও ও শিল্লা-তে চলমান সংস্কার দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাপানের রাজদরবারে দূত পাঠিয়ে বৌদ্ধ প্রতিমা ও ধর্মগ্রন্থ উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন যে এই ধর্ম জাদুকরীভাবে জাতিকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। তবে ওই সময় পেকচে রাজ্যের রাজধানীর বাইরে বৌদ্ধ ধর্মের তেমন কোনো প্রভাব পড়েছিল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ঘটনার প্রায় ২০০ বছর পরে, এক বিখ্যাত রাস্তাঘাটে উপদেশদাতা ভিক্ষুর কার্যক্রমের মাধ্যমে। যেহেতু জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হয়েছিল। তাই ৫৩৮ সালের ঘটনা এবং তার পরিণতি অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। <i>নিহন শোকি</i>-র পাশাপাশি প্রাচীন বৌদ্ধ উৎস থেকে অতিরিক্ত তথ্যও পাওয়া যায়। সংক্ষেপে, সোগা নো ইনামে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পক্ষে মত দেন এবং মনোনোবে 物部 বংশ এটি গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। কারণ এটি স্থানীয় দেবতাদের অবমাননা হিসেবে দেখা হয়। কিম্মেই তেন্নো ইনামেকে তাঁর বাড়িতে একটি ছোট বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি দেন এবং গোপনে উপাসনার সুযোগ দেন। ইনামের এক কন্যা ভিক্ষুণী হন। তবে, ৫৭১ সালে কিম্মেইর মৃত্যু হলে মনোনোবে নতুন শাসক বিদাৎসু-এর কাছ থেকে এই উপাসনালয় ধ্বংস ও ভিক্ষুণীদের গ্রেপ্তারের অনুমতি নেন। <i>নিহন শোকি</i>-তে এই ঘটনার বিবরণ অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেখানে বিদাৎসু তেন্নো ও তাঁর উত্তরসূরি ইয়োমেই তেন্নোর মৃত্যুশয্যায় বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। এটি ৮ম শতকের বৌদ্ধপন্থী মানদণ্ড অনুযায়ী তাঁদের আরও শ্রদ্ধাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা বলে মনে করা হয়। ৫৮৭ সালে সোগা ও মনোনোবে বংশের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়। এটি ইয়োমেইর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের ফলে ঘটে। এই যুদ্ধে সোগা বিজয়ী হয় এবং তখনই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা প্রকৃত অর্থে শুরু হয়। এটি ছিল সোগা বংশের প্রাধান্যের শুরু। প্রথমে এটা বোঝা কঠিন কেন জাপান বা কোরিয়ার যেকোনো রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে আত্মস্থ না করেও বৌদ্ধ ধর্মকে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্মের চেয়ে প্রাধান্য দেবে। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, জাপানে কোরীয় অভিবাসীদের মধ্যে কিছু বৌদ্ধ ছিল। তবে জাপানে এবং কোরিয়ার অন্যান্য রাজ্যেও বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হওয়া ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত, জনতার ইচ্ছা নয়। জাপানি সম্রাটকে বৌদ্ধ ধর্ম উপস্থাপন করার সময় পেকচের রাজা সং বলেন, এই ধর্ম একটি জাদুকরী শক্তি যা জাতিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। প্রাথমিক সময়ে জাপান ও কোরিয়াতে বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার মুক্তি বা আত্মদর্শনের মতো ব্যক্তিগত বার্তার চেয়ে, এর মূর্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের জাদুকরী শক্তির ওপরেই জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে অসুস্থতার সময় মানুষ বৌদ্ধ প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করত। শুরুতেই বৌদ্ধ ধর্মের স্বাগত জানানোর বড় কারণ ছিল কোরিয়া ও বিশেষ করে চীন থেকে আগত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তাঁরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং বাস্তব দক্ষতায় পারদর্শী, বিশেষত স্থাপত্যবিদ্যায়। আসুকা যুগ থেকে শুরু করে নারা যুগ পর্যন্ত জাপানে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প পরিচালিত হয় এসব অভিবাসী সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে। তাঁরা শুধু মন্দির নয়, সেতু ও দুর্গও নির্মাণ করতেন। সাধারণত চীন থেকে যারা জাপানে আসতেন, তাঁদের মধ্যে এরাই ছিলেন প্রধান। চীনা চিন্তাধারা ও প্রযুক্তি জাপানে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও ছিলেন তাঁরা। === সোগা বংশ === সোগা বংশের দাবি করা পূর্বপুরুষ ছিলেন জিংগু কোউগোর কোরিয়া বিজয়ে অংশগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি। এর ফলে তিনি ওজিন রাজবংশের সূচনালগ্নেই যুক্ত ছিলেন। সোগা নামক কোনো ব্যক্তির প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় নবম শতকের একটি গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে যে ওজিন রাজবংশের তৃতীয় শাসক রিচু তেন্নোর সময় কোরীয় অভিবাসীদের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা সংগঠিত করার প্রয়োজন পড়ে। এই উদ্দেশ্যে একটি দ্বিতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা হয় এবং তা তদারকির জন্য একটি নতুন পদ তৈরি করা হয়। ইউর্যাকু তেন্নোর শাসনকালে একটি তৃতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে এবং সোগা নো মাচি নো সুকুনে-কে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষয়গুলো সংগঠিত করার। তিনি একটি তালিকা প্রস্তুত করেন এবং (কোরীয়) হাতা বংশকে একটি সহায়ক ভাণ্ডার পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং (কোরীয়) আয়া বংশকে অন্যটির। ৬৪৫ সালে সোগা বংশ পরাজিত হলে আয়া বংশের সৈন্যরা তাদের পাশে দাঁড়ায়। সোগা বংশ কখনো সামরিক ঘটনায় জড়িত ছিল না, বরং সবসময়ই আর্থিক কার্যক্রম এবং কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৫৫৩ সালে সোগা নো ইনামে শাসকের আদেশে জাহাজ কর নিরীক্ষণের জন্য একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছর পর ইনামে সমুদ্রবন্দর নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেকটি দপ্তর স্থাপন করেন। এতে বোঝা যায়, সোগা বংশ যোদ্ধার চেয়ে প্রশাসক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। কেইতাই তেন্নোর মৃত্যুর পর যে সময়ে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজদরবার ছিল বলে মনে করা হয়, সেই সময়ে সোগা বংশ অত্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। সোগা বংশ কিম্মেই তেন্নোর রাজদরবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ওটোমো বংশ আনকান ও সেনকা নামক বিকল্প শাসকদের সমর্থন করত। সেনকার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় রাজদরবার বিলুপ্ত হলে ওটোমো বংশ রাজনৈতিক প্রভাব হারায় এবং সোগা বংশ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিফলিত হয় ‘সোগা নো ও-ওমি’ নামে সোগা প্রধানের উল্লেখে, যেখানে আগে ‘ও-ওমি’ (大臣) উপাধিটি কেবলমাত্র ওটোমো বংশের জন্যই ব্যবহৃত হতো। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইয়ামাতো রাষ্ট্র সামরিকমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে এক নতুন ধারা গ্রহণ করে। এটি ওজিন রাজবংশের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কেইতাইয়ের শাসনামলে পর্যন্ত বজায় ছিল। উল্লেখ্য, ‘ও-ওমি’ উপাধিটি বুঝতে হবে ‘ও’ (大) অর্থাৎ ‘বড়’ বা ‘মহান’ এবং ‘ওমি’ (臣)। এটি চীনা অক্ষরে লেখা ও ‘রাষ্ট্রের মন্ত্রী’ অর্থে ব্যবহৃত হতো। একই দুটি চীনা অক্ষর চীনা উচ্চারণে ‘দাইজিন’ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আপনি হয়তো এই রূপেও একে অন্যান্য গ্রন্থে দেখতে পারেন। আসুকা ও নারা যুগে এই শব্দগুলো সাধারণত জাপানি উচ্চারণেই উচ্চারিত হতো। তবে হেইয়ান যুগে এবং পরবর্তীকালে সেগুলো চীনা উচ্চারণে ব্যবহৃত হতে থাকে। নবম শতকে হেইয়ান যুগের শুরুতে প্রায় সব অভিজাত ব্যক্তি চীনা পড়তে ও লিখতে পারতেন, অধিকাংশ সরকারি দলিল চীনা ভাষায় লেখা হতো। সরকারের কারিগরি পরিভাষায় চীনা উচ্চারণ ব্যবহারের রীতি শুরু হয় যা এমনকি জাপানি ভাষার বিস্তৃত প্রচলনের পরও চালু থাকে এবং আজও বহাল রয়েছে। আধুনিক জাপানি গদ্যের একটি বড় অংশই চীনা ঋণশব্দে গঠিত। ৫৪৮ থেকে ৫৫৪ সালের মধ্যে কোরিয়ায় সিল্লা সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তারা কোগুর্যো ও পেকচেকে পরাজিত করে। ৫৫৪ সালে পেকচের রাজা সঙ যুদ্ধে নিহত হন এবং কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল পেকচে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে তা টিকে থাকে, যদিও আগের চেয়ে ছোট এবং দুর্বল অবস্থায়। এই সময়ে জাপান কোরিয়ায় ছোট আকারের বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তা সিল্লার মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সিল্লা ৫৬২ সালে মিমানা অঞ্চল পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে। জাপান এরপর একটি বড় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা পরাজিত হয় এবং তাদের নেতারা বন্দি হয়। এরপর থেকে ওটোমো বংশের উল্লেখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজদরবারে প্রধান দুই ব্যক্তি হিসেবে সোগা নো ইনামে এবং মোনোনোবি নো ওকোশির নাম উঠে আসে। এরপর ২০০ বছর ধরে জাপানি রাজদরবার সিল্লাকে আক্রমণ করে মিমানার উপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চিন্তা করে, মাঝে মাঝে বাহিনী ও রসদ সংগ্রহের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো থেকে বিশেষ কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সোগা বংশ সম্ভবত কাজুরাকি বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তারা ওজিন রাজবংশের শুরুতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। ওজিন রাজবংশের কয়েকজন শাসকের মা ছিলেন কাজুরাকি বংশীয়। সোগা বংশ কেইতাই রাজবংশের সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক স্থাপন করে। সোগা নো ইনামে তার দুই কন্যাকে কিম্মেই তেন্নোর সঙ্গে বিয়ে দেন—কিতাশিহিমে ছিলেন ইয়োমেই ও সুইকো তেন্নোর মা (সুইকো ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর বিধবা)। ওয়ানেকিমি ছিলেন সুশুন তেন্নোর মা। উমায়াদো রাজকুমারের দাদী ছিলেন কিতাশিহিমে পিতৃপক্ষ থেকে ও ওয়ানেকিমি মাতৃপক্ষ থেকে। লক্ষ্যণীয়, মোনোনোবি বংশের সামাজিক অবস্থান এ ধরনের সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কাজুরাকি ও সোগা বংশ রাজপরিবারের শাখা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু মোনোনোবি বংশ নয়। মোনোনোবি বংশ উত্তরাধিকারসূত্রে ‘ও-মুরাজি’ (大連) উপাধি ধারণ করত। এটি ওটোমো এবং পরে সোগা বংশের ‘ও-ওমি’ উপাধির সমপর্যায়ে ছিল। এই দুই উপাধিধারী ব্যক্তি সরকারের (যথাসম্ভব) সর্বোচ্চ "মন্ত্রী" হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও ‘ওমি’ বা ‘মুরাজি’ উপাধিধারী পরিবারগুলো ছিল। অধিকাংশ ‘ওমি’ উপাধিধারী পরিবারগুলোর নাম ছিল স্থাননামভিত্তিক। তারা কিনাই অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কাজুরাকি, হেগুরি, ওয়ানি, কোসে, কি এবং পরে সোগা—এইগুলো তার উদাহরণ। এদের বেশিরভাগই রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বংশধর বলে দাবি করত। যদি ‘হোর্স রাইডার’ তত্ত্ব সত্যি হয়। তবে এরা ছিল ওজিনের সম্প্রসারিত পরিবারের সদস্য এবং আগ্রাসী বাহিনীর অংশ। অপরদিকে, ‘মুরাজি’ পরিবারগুলোর নাম ছিল পেশাভিত্তিক। যেমন ইমবে (আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী), ইউকে (ধনুক প্রস্তুতকারী), কাগামিৎসুকুরি (আয়না নির্মাতা), হাজি (মৃৎপাত্র প্রস্তুতকারী), ত্সুমোরি (নিরাপত্তা রক্ষক), ইনুকাই (কুকুর পালক)। অবশ্যই মোনোনোবি (লোহার কাজ)। কৌতূহলজনকভাবে, ‘ও-ওমি’ ওটোমো বংশের নামও একটি পেশাভিত্তিক নাম ছিল। তবে তাদের পেশা ছিল বিশেষ—‘তোমো’ অর্থাৎ ‘সৈনিক’, যার পূর্বে ‘ও’ যুক্ত হওয়ায় বোঝানো হয় যে তারা সাধারণ সৈনিক নয়, বরং কমান্ডার। এই সব বংশই অভিজাত ছিল। তবে ধারণা করা হয় ‘মুরাজি’ পরিবারগুলো ওই পেশার কারিগরদের নেতৃত্ব দিত, নিজেরা সরাসরি সেই কাজ করত না। তবে তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল ‘ওমি’ বংশের চেয়ে কম। তাদের রাজপরিবারে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল। মোনোনোবি বংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত ‘নিগিহায়াহি নো মিকোতো’ ছিলেন এক দেবতার বংশধর। তিনি জিন্মু তেন্নো কর্তৃক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই পৃথিবীতে আগমন করেন। শুরুতে তিনি জিন্মুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে দেবতারা জিন্মুর পক্ষে আছেন। তখন পক্ষ পরিবর্তন করেন। মোনোনোবি নামটি ‘নিহন শোকি’-র সুইনিন তেন্নো এবং চুয়াই তেন্নোর অধ্যায়ে দেখা যায়, যেগুলো ওজিন রাজবংশের আগের। যদি এর কোনো সত্যতা থাকে। তবে মোনোনোবিরা ওজিনের নেতৃত্বে আগমনকারী আগ্রাসীদের আগেই জাপানে অভিজাত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইনগ্যো তেন্নোর মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র রাজকুমার কারু এবং রাজকুমার আনাহো (যিনি পরে আনকো তেন্নো হন)-র মধ্যে উত্তরাধিকারের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মোনোনোবি নো ওমায়ে নো সুকুনে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুরুতে রাজকুমার কারুর সমর্থক ছিলেন। ‘কোজিকি’-র মতে, তিনি কারুকে আনাহোর কাছে তুলে দেন যিনি তাকে হত্যা করেন, আর ‘নিহন শোকি’-র মতে, তিনি রাজকুমার কারুকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন। যেভাবেই হোক, তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই বংশের সদস্যদের নিয়ে অধিকাংশ কাহিনি সামরিক বা অপরাধী দমন সংক্রান্ত। ব্যতিক্রম কিছু থাকলেও, ওটোমো বংশ প্রধানত কোরিয়ায় যুদ্ধ করত, আর মোনোনোবি বংশ প্রধানত জাপানের অভ্যন্তরেই সক্রিয় ছিল। কোরিয়ায় তাদের একমাত্র যুদ্ধ ছিল মিমানায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, সিল্লার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ নয়। আরেকটি পার্থক্য ছিল, মোনোনোবি বংশ ধর্মের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। যেসব বংশ নিজেদের দেবতাদের বংশধর হিসেবে দাবি করত, তাদের নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ছিল। এটি পরবর্তীতে (বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর) ঐ দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতো। সুজিন রাজবংশের প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র মি (臣) পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ইসোনোকামি মন্দির ছিল মোনোনোবি বংশের বিশেষ উপাসনাস্থল। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করা যায়, সোগা নেতারা—অথবা অন্তত সোগা নো উমাকো—জাপানকে আরও সভ্য করে তোলার (অর্থাৎ চীনের মতো করে তোলার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি পেকচে ও কোগুর্যোতে চলমান পরিবর্তনের প্রতিফলন ছিল। এবং ঐ সময়ে ‘চীনের মতো’ হওয়া মানেই ছিল ‘বৌদ্ধ’ হওয়া। দুই বংশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বও এই সংঘাতের পিছনে ছিল। এটি প্রাচীন সময়ে বিরল একটি ঘটনা। জাপানে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে প্রচেষ্টা এই সময়কার ইতিহাসের মূল বিষয়, তার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিমমেইর শাসনামলে চীনের উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলো উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বন্টনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করছিল। এই পরিবর্তনগুলো কোগুরিয়োর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে কোগুরিও এসব তথ্য জাপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কারণ কিমমেইর শাসনের শেষদিকে কোগুরিও এবং জাপানের মধ্যে সিলা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের উত্তর দিয়ে জাপান সাগর অতিক্রম করে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই চীনা রাজবংশগুলো ছিল বর্বর উত্সের এবং প্রবলভাবে অভিজাত শ্রেণিনির্ভর। এটি জাপান এবং কোরিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মতোই। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা ছিল কৃষিজ আয় থেকে কর আদায় সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা, যেখানে প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে পর্যাপ্ত জমি বরাদ্দ দেওয়া হতো যাতে তারা নির্দিষ্ট হারে কর দিতে পারে—ফলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী কর নির্ধারণের জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এড়ানো যেত। এজন্য জনসংখ্যার নিয়মিত জনগণনা করতে হতো এবং যেসব পরিবার ছোট হয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে যেসব পরিবার বড় হয়েছে তাদের দেওয়া হতো। এ ব্যবস্থা তখনকার উত্তর চীনে সম্ভব ছিল, কারণ চীন রাজবংশ পতনের পর বর্বর আক্রমণের ফলে সেখানে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না, যদিও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল যথেষ্ট। কর আদায় হতো কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যার ভিত্তিতে। কোগুরিও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পরে জাপানও অনুসরণ করে। ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা কোগুরিও এবং জাপানে তখনকার প্রচলিত পদ্ধতির খুব ভিন্ন ছিল না, কারণ সেখানে বিদ্যমান কৃষক জনগোষ্ঠী দখল করে অভিজাত শ্রেণি গঠিত হয়েছিল। তবে এটি নিছক অনুমান, কারণ কৃষক ও অভিজাতদের সম্পর্ক সম্পর্কে আমাদের এই সময়ের কিছুই জানা নেই। শুধু “বে” নামক পদ্ধতিতে শিল্পীদের সংগঠিত করার ধরন করভিত্তিক উৎপাদন কোটার ভিত্তিতে পরিচালিত বলেই ধারণা করা যায় যে কৃষকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। এই সময়ে জাপানে কোগুরিয়োর প্রভাব যে ছিল তা প্রমাণ হয় “কোরিয়ো ফুট”-এর সর্বত্র উপস্থিতি থেকে (কোরিয়ো হলো কোগুরিয়োর বিকল্প নাম এবং পরবর্তী কোরিয়ো রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি “Korea” নামটি এসেছে)। এটি ছিল একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক। এটি চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪–৫৫০) নির্ধারণ করেছিল, পরে কোগুরিও তা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকে জাপানে পৌঁছে। এক ফুট বা “শাকু” ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন, এই এককটি জাপানের বহু প্রাচীন স্থাপনার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া আসুকাদেরা (দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির) অন্যতম। কোগুরিও থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হয়, ইশিবুতাই কোফুন (৬২৬ সালে মৃত সোগা নো উমাকোর সমাধি বলে মনে করা হয়) এবং বিদাতসু সম্রাটের পর সকল সম্রাটের কোফুন তৈরিতে কোরিয়ো ফুট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন জাপানি লেখাগুলোতেও বারবার উল্লেখ আছে যে কোগুরিওর আচার-আচরণ, ধর্ম, সংগীত ও নৃত্য জাপানিদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মিলপূর্ণ ছিল। বিশেষত কোগুরিও থেকে আগত নৃত্যশিল্পীরা খুব জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে ছোট আকারের কোফুনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, এতটাই যে বর্তমানে জাপানে টিকে থাকা প্রায় ৯০% কোফুনই এই শেষ কোফুন যুগের ছোট সমাধি। অনেকগুলোই গোলাকৃতি টিলা, প্রায় ১০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট, যেগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামো বড় কোফুনগুলোর মতোই। তবে অনেক কোফুন ছোট ছোট গুহার মতো, যেগুলো পাহাড় বা খাড়ির পাশে খোদাই করে কফিনের সমান আকারে বানানো হয়েছে। এ ধরনের কোফুন সাধারণত গুচ্ছাকারে পাওয়া যায় এবং প্রায়শই কাছাকাছি এলাকায় একই সময়ে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচের ছোট কোফুন পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় পাহাড়ের পাশে এমন অনেক কোফুন পাওয়া গেছে যার সংখ্যা ডজন বা শতাধিক। এ থেকে ধারণা করা যায়, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এই যুগে অনেক বেশি লোককে আলাদা সমাধি নির্মাণযোগ্য মনে করা হতো। রাজাদের ছাড়া আর বড় সমাধি নির্মাণ হতো না। যেহেতু সম্পদ বহুজনের মাঝে ভাগ করতে হতো। তাই প্রতিটি সমাধি ছোট ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হতে বাধ্য ছিল। ধারণা করা হয়, এটি অভিজাত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন নির্দেশ করে—গোত্রপ্রধানের ক্ষমতা হ্রাস এবং গোত্রের সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব জমিজমা ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিক যুগে গোত্রভিত্তিক অভিজাতরা যৌথভাবে গোত্রের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত এবং গোত্রপ্রধান তা বণ্টন করত। কিন্তু ৫৫০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে, যখন গোত্রের সদস্যরা নিজেদের আলাদা জমির ওপর অধিকারে থাকতেন এবং নিজের আয় নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে তারা এখনো সমাধিগুলো একই গোত্র কবরস্থানে তৈরি করতেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়, ফলে সম্মিলিত উপাদান পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। উল্লেখযোগ্য, “ছোট” সমাধি হলেও তাতে বহু টন ওজনের পাথর ব্যবহার করা হতো এবং অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হতো। ৬৪৬ সালের একটি ফরমান অনুযায়ী সমাধির আকার নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল—একজন রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে ৭ দিনে ১০০০ শ্রমিক, মন্ত্রীর জন্য ৫ দিনে ৫০০, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ৩ দিনে ২৫০, মধ্যমপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ১০০ এবং নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ৫০ শ্রমিক নিযুক্ত হবে। <i>নিহন শোকি</i>-তে ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে আগত দূত বন্ধুকে ঘিরে একটি অবিশ্বাস্য গল্প রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তখনকার জাপানি রাজদরবারে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুই দল লেখক ছিল, তারাই শুধু কোগুরিওর রাজার প্রেরিত চীনা ভাষায় চিঠি পড়তে পারত। এই দুই পরিবার ছিল কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে—দুজনেই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে)। যতদূর জানা যায়, ওমি শ্রেণির কোনো জাপানি অভিজাত চীনা ভাষায় পড়া-লেখা শেখার মতো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবেননি, যেমন রেশম বোনা শেখাও অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। এই অবস্থা দুই শতাব্দী ধরে চলেছে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবার শিক্ষিত হতে শুরু করে। ৫৮৫ সালে বিদাতসু সম্রাটের মৃত্যুর পর সোগা এবং মোনোনোবে গোত্রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। কোফুন যুগে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সমাধি নির্মাণে অনেক সময় লাগত—দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত। এসময় মরদেহ একটি অস্থায়ী ভবনে রাখা হতো, যাকে বলা হতো মোগারি নো মিয়া। এখানে মরদেহ স্থাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হতো এবং <i>নিহন শোকি</i> অনুযায়ী এই অনুষ্ঠানে সোগা নো উমাকো এবং মোনোনোবে নো মরিয়া পরস্পরের প্রতি প্রকাশ্যে অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিদাতসুর একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র ছিলেন, যার মা ছিলেন মর্যাদাসম্পন্ন, যার নাম ছিল রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাসকের ভাইয়েরও সিংহাসনের দাবির অধিকার ছিল। কিমমেই সম্রাটের বহু উচ্চস্তরের স্ত্রী ছিলেন, যার মধ্যে সোগা নো ইনামের দুই কন্যাও ছিলেন। নির্বাচিত উত্তরসূরি ছিলেন সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে। তিনি ইয়োমেই সম্রাট হন। বড় ভাই ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ওয়ে এবং আরেক ভাই রাজকুমার আনাহোবেও নিজের উত্তরাধিকারের দাবি জানান। ইয়োমেই রাজা হওয়ার পর আনাহোবে বিদাতসুর রানি কাশিকিয়াহিমেকে জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। তিনি তখন অস্থায়ী সমাধিস্থলে ছিলেন। সমাধির রক্ষী বাহিনীর প্রধান এতে বাধা দেন। এরপর রাজকুমার আনাহোবে সোগা এবং মোনোনোবে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন এবং রক্ষী পদারকে হত্যা করার অনুমতি চান। এটি তাকে দেওয়া হয়। ওই পদার পালানোর চেষ্টা করলেও আনাহোবে তার অবস্থান জেনে মোনোনোবে নো মরিয়াকে তাকে ও তার সন্তানদের হত্যা করতে বলেন। মরিয়া নিজেই তা করেন। সোগা নো উমাকো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। <i>নিহন শোকি</i> অনুসারে, এই ঘটনাই সোগা ও কাশিকিয়াহিমের (পরবর্তীকালে সুইকো সম্রাজ্ঞী) মধ্যে মোনোনোবে নো মরিয়ার প্রতি তীব্র শত্রুতা জন্ম দেয়। ইয়োমেই সম্রাট তেন্নো ৫৮৭ সালে রাজত্ব কাল দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান। তখন আবারও সিংহাসনের প্রশ্ন ওঠে। তার অসুস্থতা কয়েক মাস ধরে চলায় প্রতিযোগীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পায়। আক্রমণের আশঙ্কায় মোরিয়া ইয়ামাতোর বাইরে নিজের দূর্গে সরে গিয়ে সেনা সংগ্রহ শুরু করেন। তখন মোরিয়ার অন্যতম মিত্র ছিলেন নাকাতোমি নো কাতসুমি নো মুরাজি। ''নিহন শোকি'' অনুসারে তিনি ডাকিনীবিদ্যার মাধ্যমে মনোনীত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রাসাদে জাদুকরী বস্তু রাখার উদ্দেশ্যে যান। কিন্তু প্রাসাদ ত্যাগ করার সময় রাজকুমারের এক প্রহরীর হাতে নিহত হন। সবকিছু ইয়োমেইর মৃত্যুর আগেই ঘটে। তাঁর মৃত্যুর অল্প সময়ের মধ্যেই মনোনোব নো মোরিয়া রাজকুমার আনাহোবেকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি উত্তরাধিকার নিয়ে সংঘর্ষের জন্য সৈন্যদের জড়ো করার অজুহাত হিসাবে একটি শিকারের দল করতে চলেছেন। তবে এটি ফাঁস হয়ে যায়। সোগা নো উমাকো সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের আদেশে সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের অবিলম্বে যুবরাজ আনাহোবেকে হত্যার নির্দেশ দেন। তারা এই ধরনের কাজের প্রচলিত সেরা পদ্ধতি হিসেবে রাতের বেলায় তার প্রাসাদে হামলা চালান। এরপর সোগা একটি বড় বাহিনী গঠন করে মরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এতে বহু রাজকুমার, যেমন রাজকুমার হাতসুসেবে (ভবিষ্যতের সুশুন সম্রাট), রাজকুমার উমায়াদো সহ প্রচুর সংখ্যক রাজকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও ইয়ামাতোর প্রায় সমস্ত "ওমি" শ্রেণির আঞ্চলিক উজি সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট অভিজাত উজির দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরিয়া প্রস্তুত ছিলেন, ফলে কোনও গণহত্যা না হয়ে সরাসরি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে পরিণত হয়। ফলাফল কিছু সময়ের জন্য সন্দেহের মধ্যে ছিল। মনোনোবকে সমর্থনকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত গোষ্ঠীগুলি সকলেই ইয়ামাতোর বাইরের গোত্র থেকে ছিল। মনোনোবের বাহিনী ইয়ামাতোর পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। অন্যদিকে সোগার সেনাবাহিনী সম্ভবত আসুকা থেকে শুরু করে আনামুশি গিরিপথ পেরিয়ে একা নদীর কাছে হয়। একা নদীতে মনোনোব সেনাবাহিনী পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই নদীর অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এটি ফুরুচির ঠিক পশ্চিমে আধুনিক ইশি নদী ছিল বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এটি সম্ভবত বর্তমান ইশি নদী। মরিয়ার বাসভবন ছিল শিবুকাওয়াতে। অনুমিত যুদ্ধক্ষেত্রের উত্তর-পশ্চিমে অল্প দূরত্বে। যুবরাজ উমায়াদো তখন তরুণ কেবল তরুণ হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। তিনি সঙ্কটের মুহুর্তে একটি শপথ করেন যে তার পক্ষ বিজয়ী হলে একটি বৌদ্ধ মন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এই কথা শুনে সোগা নো উমাকো নিজেও একই শপথ নেন। এর পরপরই মনোনোব নো মোরিয়া একটি তীরের আঘাতে নিহত হন এবং তার বাহিনী ভেঙে পড়ে। <i>নিহন শোকি</i> জানায়, যুদ্ধস্থলে কয়েক শত লাশ পড়ে ছিল। এটি আরও বলেছে যে মনোনোব বংশের অনেক সদস্য অস্পষ্টতায় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্যরা বংশকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করার কোনও অভিপ্রায় অস্বীকার করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন উপাধি গ্রহণ করেন। আদালত নিঃসন্দেহে ইসোনোকামি বংশ গঠন সহ্য করেছিল। কারণ কেবলমাত্র মানুষের লড়াইয়ের কারণে মনোনোব বংশ প্রতিষ্ঠাকারী দেবতাকে অবহেলা করা অনুচিত হত। তারা ভেবেছি, যে দেবতাদের যথাযথভাবে পূজা করা হত না তারা ক্রুদ্ধ হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করত। মনোনোব বংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমরা ৬০৮ সালে একটি চীনা দূতাবাসের প্রেক্ষাপটে একজন মনোনোব নো ইউকিমি নো মুরাজি একজন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে দেখি। মনোনোবে গোত্র ধ্বংস হয়নি পুরোপুরি—৬০৮ সালে একজন মনোনোবে নো ইউকিমি নো মুরাজিকে চীনা দূতাবন্ধুর প্রেক্ষাপটে পদার হিসেবে দেখা যায়। নামটি পরবর্তীতেও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়। তবে আর কখনও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়নি। ইতিহাসের এই যুগের মূল বিষয় রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জাপানি প্রচেষ্টার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হলো কিম্মেইয়ের সময়েই উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলি উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বণ্টন ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করছিল। চীনের এই বিকাশগুলি কোগুরিওর উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। কোগুরিও জাপানকে এই জাতীয় জিনিস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ কিমেইয়ের রাজত্বের শেষার্ধে কোগুরিও এবং জাপান জাপান জুড়ে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এটি সিলার নিয়ন্ত্রণের অঞ্চলের উত্তরে চলে যায়। এই চীনা রাজবংশগুলি বর্বর বংশোদ্ভূত এবং অত্যন্ত অভিজাত ছিল, অনেকটা জাপান এবং কোরিয়ান রাজ্যগুলির মতো। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থাটি প্রতিটি কৃষক পরিবারকে স্থির কর প্রদানের অনুমতি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে এমন গ্যারান্টি দিয়ে কৃষিকাজ থেকে করের রিটার্নকে সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রতিটি পরিবারকে তাদের জমির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন করের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করার জন্য সমস্ত প্রশাসনিক মাথাব্যথা এবং ব্যয় সাশ্রয় করে। এর জন্য জনসংখ্যার একটি পর্যায়ক্রমিক আদমশুমারি নেওয়া এবং তারপরে আকারে সঙ্কুচিত পরিবারগুলির কাছ থেকে জমি নেওয়া এবং আকারে বেড়ে ওঠা পরিবারগুলিকে জমি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটি করা সম্ভব ছিল কারণ, এই সময়ে উত্তর চীনে সম্ভাব্য আবাদযোগ্য জমির পরিমাণের তুলনায় কৃষি জনশক্তির ঘাটতি ছিল। চিন রাজবংশের পতনের পরে বর্বর আক্রমণের কারণে স্থানচ্যুতির কারণে এই অবস্থা হয়। উপলব্ধ শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতে কর গণনা করা হয়েছিল। কোগুরিও এই সিস্টেমটি অনুলিপি করেছিল এবং জাপানও শেষ পর্যন্ত এটি করেছিল। এটি অনুমান করা হয় যে,এটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান কৃষক জনসংখ্যার বিজয়ের মাধ্যমে অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে কোগুরিও এবং জাপানে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির থেকে আলাদা ছিল না। এটি অনুমান হিসাবে রয়ে গেছে কারণ আমরা এই সময়কালে কৃষক এবং অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানি না, কারিগর শ্রমিকদের সংগঠিত করার "হতে" সিস্টেমটি উত্পাদন কোটার মাধ্যমে করের উপর ভিত্তি করে অনেকটা একের মতো দেখায়, এটি প্রশংসনীয় করে তোলে যে কৃষকরা একইভাবে সংগঠিত হয়েছিল। আমরা জানি যে "কোরিও ফুট" এর সর্বত্র উপস্থিতির কারণে এই সময় থেকে জাপানে কোগুরিওর যথেষ্ট প্রভাব ছিল (কোরিও কোগুরিওর একটি বিকল্প নাম এবং পরবর্তী সময়ের কোরিও রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি নাম "কোরিয়া" এর ভিত্তি)। এটি পরিমাপের একটি ইউনিট ছিল। চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪-৫৫০) কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোগুরিওতে গৃহীত হয়। সেখান থেকে এটি জাপানে চলে যায়। এক ফুট ("শাকু") ৩৫ সেন্টিমিটার ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন যে এই ইউনিটটি দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির (৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু) সহ অনেক প্রাচীন ভবন নির্মাণে নিযুক্ত ছিল। কোগুরিওর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা জাপানে বৌদ্ধধর্মের প্রাথমিক প্রসারে বিশিষ্ট ছিলেন। কোরিও পা স্পষ্টতই ইশিবুতাই কোফুন (সোগা নো উমাকোর নামী সমাধি। তিনি ৬২৬ সালে মারা গিয়েছিলেন) এবং বিদাতসু তেন্নোর সমস্ত রাজকীয় কোফুন স্থাপনেও ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রারম্ভিক জাপানি লেখাগুলিতেও অনেকগুলি উল্লেখ রয়েছে যা মন্তব্য করে যে তারা কোগুরিওকে রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার, (ঐতিহ্যবাহী) ধর্ম এবং সংগীত এবং নৃত্যের ক্ষেত্রে কতটা অনুরূপ বলে মনে করেছিল। কোগুরিওর নৃত্যশিল্পীরা স্পষ্টতই বিশেষত জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক জ্ঞানটি হলো ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতাব্দীর সময়কালে ছোট কোফুনের সংখ্যায় অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানের সমস্ত বেঁচে থাকা কোফুনের প্রায় ৯০% এর মধ্যে প্রায় ৯০% কোফুন যুগের শেষের দিকে ছোট সমাধি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকগুলি প্রায় ১০ মিটার জুড়ে গোলাকার ঢিবি রয়েছে যা একই ধরণের সমাধি কক্ষ যা বড় সমাধিগুলিতে পাওয়া যায়। বিশেষত প্রচুর সংখ্যক সমাধি রয়েছে। সেগুলোকে সাধারণত কফিনের চেয়ে সবেমাত্র বড় পাহাড়ের পাশে ছোট ছোট টানেল চালিয়ে দলবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই এটি একই বয়সের অন্যান্য ছোট কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে নির্মিত কোফুনের কাছাকাছি পাওয়া যায়। ক্লিফসাইড সমাধি সহ কিছু অঞ্চল রয়েছে। সেখানে কয়েক ডজন এবং এমনকি শত শত ছোট উন্মুক্ত স্থায়ী সমাধি রয়েছে। স্বভাবতই এর অর্থ এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে একটি বিস্তৃতভাবে নির্মিত সমাধি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হত। সত্যিই বিশাল সমাধি আর সম্রাটদের জন্য নির্মিত হয়নি। যখন উপলব্ধ সংস্থানগুলি অনেকগুলি জুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে, তখন পৃথক সমাধিগুলি অবশ্যই ছোট এবং কম ব্যয়বহুল হতে হবে। ধারণা করা হয় যে,এটি অভিজাত সমাজের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। অর্থাত এটি বংশ প্রধানের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং বংশের কম সদস্যদের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। একটি চিত্র পাওয়া যায়, প্রথম দিনগুলিতে অভিজাত গোষ্ঠী একটি সম্মিলিত গোষ্ঠী হিসাবে তার অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং বংশের মোট সম্পদ কোনও না কোনও অর্থে বংশের প্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। তবে ৫৫০ এবং তার পরে বংশের সদস্যরা ধীরে ধীরে তুলনামূলকভাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জমিদার এস্টেটের মালিকদের মতো হয়ে উঠেছিলেন। এর মধ্যে তারা তাদের নিজস্ব রাজস্ব নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যাইহোক, তারা এখনও ঘনীভূত বংশের কবরস্থানে তাদের সমাধিগুলি তৈরি করেছিল। তাই সম্মিলিত উপাদানটি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এটি উল্লেখ করা উচিত, যখন আমরা "ছোট" সমাধিগুলির কথা বলি, তখন তারা এখনও বহু-টন শিলাগুলির সংখ্যা নিয়োগ করে এবং নির্মাণের জন্য প্রচুর জনশক্তির প্রয়োজন হয়। সমাধিগুলির স্কেল নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ৬৪৬ এর একটি আদেশ রয়েছে যা কী প্রয়োজন ছিল তার একটি ধারণা দেয়। আদেশে বলা হয়, একজন রাজপুত্রের একটি সমাধি থাকতে হবে যাতে সাত দিনের জন্য ১০০০ শ্রমিক শ্রম দিতে হবে, একজন মন্ত্রীর সমাধি ৫০০ শ্রমিক দিয়ে ৫ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমাধি ২৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ৩ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ১০০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে এবং নিচু পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে। ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে দূতাবাসের আগমন সম্পর্কিত ''নিহন শোকিতে'' একটি বরং অবিশ্বাস্য উপাখ্যান রয়েছে যা চিত্রিত করে যে সেই সময়ে জাপানি আদালতে পূর্ব ও পশ্চিমের লিপিকার নামে পরিচিত লিপিকারদের দুটি কর্পস ছিল এবং কেবল তারাই কোগুরিও রাজার পাঠানো চিঠিটি এবং চীনা ভাষায় লেখা পড়ার আশা করা যেতে পারে। তারা দুটি পরিবার ছিল, কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে, উভয়ই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে ছিল)। যতদূর নির্ধারণ করা যায় যে ওমি শ্রেণীর কোনও উপযুক্ত জাপানি অভিজাত এখনও পর্যন্ত কীভাবে পড়তে এবং লিখতে হয় তা শিখতে পছন্দ করেনি (অগত্যা চীনা ভাষায়), তিনি কীভাবে রেশম বুনতে হয় তা শেখার চেয়ে বেশি পছন্দসই বলে মনে করেননি। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছিল। পরবর্তী প্রজন্মই প্রথম সাক্ষর হয়। সোগা এবং মনোনোব গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ অবিলম্বে ৫৮৫ সালে বিদাতসু তেন্নোর মৃত্যুর থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কোফুন সময়কালে, কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমাধির আকারের কারণে, মৃত্যুর সময় এবং দাফনের মধ্যে প্রায়শই যথেষ্ট বিলম্ব হত, দুই বছর পর্যন্ত, বা এমনকি চরম ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত। এই সময়ে মরদেহটি মোগারি নো মিয়া নামে একটি অস্থায়ী সুবিধায় রাখা হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' মতে, এই স্থানে দেহ স্থাপনের বিষয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল এবং এই অনুষ্ঠান চলাকালীন বিদাতসু তেন্নো সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়া পারস্পরিক অবজ্ঞা প্রকাশ করতে দেখা যায়। উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ ছিল। বিদাতসুর একজন বিশিষ্ট মায়ের সাথে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ছিল যার দৃঢ় দাবি ছিল। ইনি রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ও। যাইহোক, একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রথাও ছিল যে একজন শাসকের ভাইয়ের উত্তরাধিকারের দাবি ছিল এবং বিদাতসুর বেশ কয়েকটি ভাই ছিল। কিম্মেই তেন্নোর সোগা নো ইনামের দুই কন্যা সহ প্রচুর উচ্চ-মর্যাদার স্ত্রী ছিল। নির্বাচিত প্রার্থী আসলে সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে ছিলেন যিনি ইয়োমেই তেন্নো হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় ভাই ছিলেন ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ও, যার মা সেনকা তেন্নোর কন্যা ছিলেন এবং ''নিহন শোকির'' মতে আরেক বিশিষ্ট ভাই রাজকুমার আনাহোবে প্রকাশ্যে নিজের জন্য উত্তরাধিকার দাবি করেন। ইয়োমেই ইতিমধ্যে সিংহাসনে আরোহণ করার পরে যুবরাজ আনাহোবে অস্থায়ী সমাধি এবং বিদাতসুর সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টা করেন। তিনি শেষকৃত্য অবধি সেখানে শোকে বাস করছিলেন, যাকে তিনি সিংহাসনে তার দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। অস্থায়ী সমাধিতে রক্ষীদের কমান্ডার তাকে প্রতিহত করেন। যুবরাজ আনাহোবে তখন দুই মন্ত্রী, সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়ার কাছে গিয়েছিলেন এবং অভিযোগ করেন যে এই কর্মকর্তা তাকে অপমান করেছেন এবং তাকে হত্যা করার অধিকার দাবি করেছেন। এটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। পদার পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজপুত্র তিনি কোথায় ছিলেন (প্রাক্তন সম্রাজ্ঞীর একটি গ্রামীণ প্রাসাদ) তা খুঁজে পেয়েছিলেন এবং মনোনোবে নো মোরিয়াকে তাকে এবং তার সন্তানদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটি মোরিয়া ব্যক্তিগতভাবে করেন। সোগা নো উমাকো এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এই সময় থেকে সোগা নো উমাকো এবং কাশিকিয়াহিমে (ভবিষ্যতের সুইকো তেন্নো) মনোনোব নো মোরিয়ার প্রতি একটি শক্তিশালী শত্রুতা কল্পনা করেন। আগের মতোই উত্তরাধিকারের জন্য বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। যুবরাজ ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়োমেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে মনোনীত করেন এবং [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ|মুরোমাচি পর্বের]] বইয়ে বলা হয়েছে যে তাঁর পুত্র। তিনি জোমেই তেন্নো হয়েছিলেন, ৫৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোগা নো উমাকো পরিবর্তে রাজকুমার হাটসুবেকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সদ্য খুন হওয়া যুবরাজ আনাহোবের ভাই ছিলেন। তবে যিনি শুরু থেকেই সোগার সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন। উভয় রাজপুত্র ছিলেন সোগা নো ইনামের কন্যা ওনেকিমির পুত্র এবং তাই উমাকোর ভাগ্নে। যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরে সুশুন তেন্নো সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুশুন স্পষ্টতই খুব বেশি ব্যক্তিগত ক্ষমতা ছাড়াই ছিল। এটি লক্ষণীয় যে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর কোনও রাজকন্যা ছিল না এবং ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত তাঁর একমাত্র স্ত্রী ছিলেন ওটোমো বংশের। ''নিহন শোকির'' কাছ থেকে বিচার করার জন্য তৎকালীন শাসক বংশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজকন্যা কাশিকিয়াহিমে। তিনি সোগা নো উমাকোকে মনোনোবে নো মোরিয়া আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং যিনি সিংহাসনের জন্য রাজকুমার হাটসুসেবেকে সুপারিশ করেন। প্রায় ৫ বছর সিংহাসনে থাকা সত্ত্বেও ''নিহন শোকিতে'' সুশুনের নিবন্ধটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিনটি বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি ছিল পাইকচে থেকে একটি দূতাবাস যা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং উপকরণ নিয়ে এসেছিল। সোগা নো উমাকো সন্ন্যাসীদের আলোচনায় নিযুক্ত করেন এবং তার বোন ইনামের মেয়ে সহ জাপানি নানদের আরও পড়াশোনার জন্য পায়েচে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারা কোরিয়ায় ২ বছর কাটিয়েছিলেন, ৫৯০ সালে ফিরে আসেন। উমাকো তার মানত করা মন্দির নির্মাণের কাজও শুরু করেন। ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আসুকাদেরায় পরিণত হওয়ার স্থল ভেঙে যায়। ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে উল্লেখ করা হয় যে, অভিজাত পরিবারের বেশ কয়েকজন মহিলা সন্ন্যাসিনী হয়েছিলেন এবং চীন থেকে ৬ জন সন্ন্যাসী দেশে আসেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো "এমিশি" বর্বরদের সাথে সীমান্তের অবস্থা পরিদর্শন করার জন্য উত্তরের তিনটি প্রধান রুট, হোকুরিকুডো, তোসান্দো এবং টোকাইডো বরাবর ৫৮৯ সালে কর্মকর্তাদের প্রেরণ করা হয়েছিল। তৃতীয় বিষয়টি হলো ৫৯১ সালে আদালতে একটি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সিল্লা থেকে মিমানা পুনরুদ্ধার করা দরকার। পাঁচজন সেনাপতি (সমস্ত পুরুষ যারা মোরিয়ার বিরুদ্ধে উমাকোর পক্ষে লড়াই করেন) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ২০,০০০ পুরুষ দেওয়া হয়েছিল। তারা সুকুশি ভ্রমণ করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরিয়া অতিক্রম করেনি। সুশুন মারা গেলে তাদের ইয়ামাতোতে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কোরিয়াকে লক্ষ্য করে ৫৯১ অভিযানের ঠিক এক বছরেরও বেশি সময় পরে, সুশুন তেন্নো একটি শুয়োর শিকারের দলের সময় একটি মন্তব্য করেন যা কাউকে আমন্ত্রণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তিনি যে ব্যক্তির সাথে সমস্যায় পড়েছিলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তাকে অনুগ্রহ করার জন্য। যখন এটি সোগা নো উমাকোকে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে উল্লিখিত ব্যক্তিটি নিজেই ছিলেন। ফলে তিনি সুশনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি পাদটীকা রয়েছে যা বলে যে "একটি বই বলেছে যে" সুশুনের হুমকিমূলক মন্তব্য সম্পর্কে উমাকোর কাছে যে প্রতিবেদনটি শাসকের একজন অসন্তুষ্ট উপপত্নীর কাছ থেকে এসেছিল। উমাকো আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমা নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা অজুহাতে আদালতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এই লোকটি সম্রাটকে হত্যা করেছিল। এরপরে এটি বলে যে সুশুনকে একই দিনে ইতিমধ্যে বিদ্যমান রাজকীয় সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই যুগে তিনিই একমাত্র শাসক যেখানে এটি করা হয়েছিল। সুই রাজবংশের চীনা ইতিহাস অনুসারে। এটি জাপান সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ রয়েছে, প্রথাটি ছিল যে একজন আভিজাত্যকে কেবল তিন বছর পর্যন্ত শোকের পরে হস্তক্ষেপ করা হত এবং একজন সাধারণকে তার মৃত্যুর দিন সূর্যাস্তের আগে সমাধিস্থ করা আবশ্যক। সুশুনকে সাধারণের কবর দেওয়া হয়েছিল, মনে হয়। ''নিহন শোকির'' এই ঘটনার কভারেজ আমার চেয়ে বেশি নয় এবং সুশুন কেন উমাকোকে নির্মূল করতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই বলে না। এতে হত্যাকাণ্ডের পরিণতি বা এ বিষয়ে কারও প্রতিক্রিয়ার কোনো আভাসও উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র অতিরিক্ত উপাদান হলো একটি অদ্ভুত বিবৃতি যে আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমার উমাকোর এক কন্যার সাথে গোপন সম্পর্ক ছিল যিনি সুশুনের উপপত্নী ছিলেন এবং তাকে তার স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করেন। উমাকো প্রথমে এ বিষয়ে সচেতন ছিল না, ভেবেছিল যে মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে সে কোমাকে হত্যা করেছে। উপস্থাপিত হিসাবে এটি বোঝায় যে এটি না থাকলে কোমা বিনা শাস্তিতে হত। বিশ্বাস করতেই হবে যে, সুশুনের হত্যাকাণ্ডকে হত্যা নয়, ন্যায়সঙ্গত কারণে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিম্মেইকে অনুসরণ করা তিনজন শাসক সকলেই কিম্মেইয়ের পুত্র ছিলেন। তবে ভাইদের সরবরাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখননাতির দলটির দিকে তাকাতে হবে। বরাবরের মতোই ছিল বিদাতসু তেন্নোর ছেলে ওশিসাকা নো হিকোহিতো। রাজকুমার তাকেদাও ছিলেন। তিনি বিদাতসুর এক পুত্র এবং যার মা ছিলেন শক্তিশালী কাশিকিয়াহিমে। এরপরে ছিল ইয়োমেই তেন্নোর জ্যেষ্ঠ পুত্র উমায়াদো। উমায়াদোর বয়স তখন ১৯। তাকেদার বয়স জানা যায়নি। তবে তার একটি ছোট বোন ছিল যিনি ইতিমধ্যে উমায়াদোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হিকোহিতো সম্ভবত ইতিমধ্যে বেশ বৃদ্ধ ছিলেন এবং স্পষ্টতই বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না। অন্য সব সম্ভাবনা অবশ্যই খুব কম ছিল। ''নিহন শোকি'' আমাদের কোনও বিতর্ক বা আলোচনা সম্পর্কে ঠিক কিছুই বলেন না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, শেষ পর্যন্ত কাশিকিয়াহিমে নিজেই সিংহাসন গ্রহণ করেন, সুইকো তেন্নো হয়ে ওঠেন। তিনিই প্রথম শাসক (হিমিকো এবং আইয়োর পরে) যিনি মহিলা ছিলেন। যেহেতু সুইকো মহিলা সার্বভৌমদের একটি দীর্ঘ তালিকার প্রথম ছিল। তাই এটি অবশ্যই স্পষ্ট যে এটি সম্ভব করার জন্য অবশ্যই কিছু পরিবর্তন করা উচিত। তবে উত্সগুলি কী হতে পারে সে সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলার নেই। প্রাচীনকালে ছয়জন ভিন্ন মহিলা তেন্নো হিসাবে কাজ করেন (টোকুগাওয়া যুগে আরও বেশি ছিল)। তাদের মধ্যে দু'জন বিভিন্ন রাজত্বের নামে দু'বার রাজত্ব করেন, মোট ৮ টি রাজত্ব করেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় প্রথম চারজন ইতিমধ্যে সম্রাজ্ঞী (একটি তেন্নোর বিধবা) ছিলেন। এগুলিকে স্থান ধারক হিসাবে দেখা সহজ, পুত্র বা নাতির রাজত্ব করার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে মহিলা তেন্নোর ব্যবহার বন্ধ করার পরে দ্রুত এই নীতিটি পরিত্যাগ করা হয়েছিল যে কোনও শিশুকে সিংহাসনে বসানো সম্ভব নয়। একটি স্থানধারক ছাড়া, আপনি অপেক্ষা করতে পারবেন না। সুইকোর ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে সিংহাসন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার পুত্র রাজকুমার তাকেদা দ্বারা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলেন। সোগা নো উমাকোর সিদ্ধান্ত এড়ানোর যথেষ্ট কারণ ছিল। তার ভাগ্নে সুশুনকে সিংহাসনে বসিয়ে এবং তার সাথে একটি কন্যাকে বিয়ে দিয়ে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই দ্বিতীয় সুযোগের ব্যবস্থা করার জন্য তার কিছুটা সময় প্রয়োজন। তার একটি অতিরিক্ত কন্যা ছিল যাকে তিনি যুবরাজ উমায়াদোর সাথে বিয়ে করেন। তবে এটি তাকে সম্ভাব্য শাসক নাতির সাথে উপস্থাপন করতে চলেছে কিনা তা বলা খুব তাড়াতাড়ি ছিল। তবে, এটি আমাদের জানায় না যে এখানে নতুন কী ছিল। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি কেন? ওজিন রাজবংশের সময় দুটি পরিস্থিতি ছিল যখন পরবর্তী শাসক কে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একটি অন্তর্বর্তী পরিস্থিতি ছিল এবং উভয় ক্ষেত্রেই শাসক বংশের একজন মহিলা সদস্য শাসকের আনুষ্ঠানিক উপাধি গ্রহণ না করেই বিষয়গুলির সভাপতিত্ব করেন। আগেকার যুগে শাসকের স্ত্রীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাদের সবাইকে কেবল কিসাকি বলা হত। তার পিতার মর্যাদা থেকে উদ্ভূত কেবল অন্তর্নিহিত মর্যাদা ছিল। এটি অবশ্যই তার সন্তানরা উত্তরাধিকারের জন্য বিবেচিত হওয়ার যোগ্য কিনা তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। যাইহোক, আদালত চালানো আরও বড় এবং জটিল হয়ে ওঠার সাথে সাথে কিম্মেইয়ের সময়ে এটি পরিবর্তন হতে শুরু করে। আদালতের সাথে সংযুক্ত পদারদের একটি বিশেষ দল এসেছিল যারা মনোনীত যুবরাজের পরিবার পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিল। তিনি ও-ওমি এবং ও-মুরাজির পাশাপাশি এক ধরণের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং সম্রাটের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এর অর্থ হলো অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, রাজস্বের নির্দিষ্ট উত্সগুলি রাজপুত্র এবং স্ত্রীদের ভরণপোষণের জন্য বরাদ্দ করা হবে এবং এই একজনকে আরও বেশি এবং সেই ব্যক্তিকে কম বরাদ্দ করে মর্যাদা চিহ্নিত করার স্পষ্ট সুযোগ ছিল। সুইকোর রাজত্বকালে লেখা একটি বই রয়েছে যা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে সুইকোর আগে সমস্ত স্ত্রী কেবল "কিসাকি" ছিলেন। বিদাতসুর স্ত্রী থাকাকালীন তাকে "ও-কিসাকি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি কিসাকি থেকে একইভাবে ও-মুরাজি মুরাজি থেকে আলাদা। অন্য কথায়, তিনি কেবল একজন উপপত্নী ছিলেন না, সম্রাজ্ঞী ছিলেন। বিদাতসুর রাজত্বকালে কিসাইবে নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কিসাকিবের একটি সংকোচন। এর অর্থ কৃষকদের একটি ইউনিট যা একটি নির্দিষ্ট কিসাকিকে সমর্থন করার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। "ব্যক্তিগত হও" বা "ব্যক্তিগত হও" হিসাবে সর্বোত্তমভাবে অনুবাদ করা অক্ষর দিয়ে লেখা হয় তবে কিসাকিবে উচ্চারণ করা হয় তা চীনা প্রভাবের ফলাফল। চীনে সম্রাট ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার অবস্থানের সবকিছুই ছিল 'প্রকাশ্য'। যাইহোক, সম্রাজ্ঞী একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এখনও একটি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেন, রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত নয়। তার নিজের সম্পত্তি থাকতে পারত এবং ছিল। এটি তার পরিবার বা সম্রাটের কাছ থেকে উপহার দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। জাপানি কেসটি আলাদা ছিল, রাষ্ট্রীয় সংস্থানগুলি অর্পণ করে। এটি এখনও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে পরিচালিত হয়, কিসাকিতে। সুতরাং, আগের কিসাকির বিপরীতে, কাশিকিয়াহিমে এমন কর্মকর্তা ছিলেন যারা তাকে রিপোর্ট করেন এবং যে সংস্থানগুলি তিনি ব্যয় করতে পারেন। তিনি একজন খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে বিদাতসুর মৃত্যুর পরের পর্বে যখন যুবরাজ আনাহোবে তাকে অপহরণ ও বিয়ে করার চেষ্টা করেন, যে পদার তাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি কাশিকিয়াহিমের একটি গ্রামীণ প্রাসাদে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন, সম্ভবত তার সমর্থনের জন্য একটি অবস্থানের স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল। তিনি নিঃসন্দেহে এমন একজন কর্মকর্তা ছিলেন যিনি বিশেষভাবে তার সেবায় নিবেদিত ছিলেন। সম্রাজ্ঞীর এই অতিরিক্ত গুরুত্ব পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল, এমনকি সেই সময়েও যখন তারা তেন্নো হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সুইকোর রাজত্বকালে এবং তার পরে যা ঘটেছিল তার মধ্যে একটি ছিল যে অন্য সবার তুলনায় শাসকের মর্যাদা ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য একটি বড় প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং শাসকের মর্যাদা বাড়ার সাথে সাথে তার স্ত্রীদের। বিশেষত তার সম্রাজ্ঞী, তার উত্তরাধিকারীর মা। সম্রাজ্ঞীকে স্ত্রী হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে জীবিত সম্রাটের মা হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে মৃত সম্রাটের মা হিসাবে এবং আরও অনেক কিছু নির্দেশ করার জন্য চীনা থেকে নেওয়া উপাধিগুলির একটি সিরিজ দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। যেহেতু সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত হওয়ার অধিকারী বেশ কয়েকটি জীবিত মহিলা থাকতে পারে। তাই তাদের সকলকে আলাদা করার জন্য পর্যাপ্ত উপাধি থাকা দরকার ছিল। হেইয়ান যুগে, যখন মহিলারা আর তেন্নো হতে পারত না, একাধিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল কারণ একজন সম্রাজ্ঞী তার নিজের খেয়ালখুশিতে উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। একজন সম্রাজ্ঞী যিনি দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন সম্রাটের মা ছিলেন, যদি তার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা থাকে তবে তিনি যথেষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। === শোতোকু তাইশি === [[Image:Prince Shotoku with Two Princes by Kano Osanobu 1842.png|thumb|right|''তোহন মিয়েই'', রাজকুমার শোতোকু এবং তার দুই ছেলের প্রতিকৃতি]] <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে সুইকো তেন্নো সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের একেবারে শুরুতেই উমায়াদো নো তোয়োতোমিমিকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাস্টনের অনুবাদে বলা হয়েছে, "সে জন্ম নেওয়ার সাথেসাথেই কথা বলতে পারত। এতটাই প্রজ্ঞাবান ছিল যে দশজন লোকের মামলা একসাথে শুনে নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারত। সে আগে থেকেই জানত কী ঘটতে চলেছে।" সে শুধু উত্তরসূরি হিসেবেই নিযুক্ত হয়নি, বরং "সরকারের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ন্যস্ত ছিল এবং প্রশাসনের সকল বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।" <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যে কাহিনি বলার চেষ্টা করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন এই ব্যক্তি। তাঁকে বৌদ্ধ ও কনফুসীয় দর্শনে পারদর্শী এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের প্রথম ইতিহাস (যেটি টিকে নেই)। তাঁর আবির্ভাব থেকেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-এর লেখকদের দৃষ্টিকোণে আধুনিক জাপানের ইতিহাস শুরু হয়। মধ্যযুগে তাঁকে একজন বৌদ্ধ সাধু হিসেবে গণ্য করা হতো। আধুনিক কালে ১৮৮৫ সালে চালু হওয়া সংবিধানিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক সন্ন্যাসী হিসেবে বিবেচিত হন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যাঁর রচয়িতা বলে মনে করে সেই "সতেরো অনুচ্ছেদের সংবিধান" জাপানের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক দলিল হয়ে ওঠে। "যুবরাজ" শব্দটির ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তির ভিত্তিতে আপত্তি জানানো হয়েছে, কারণ এই সময়ে এই উপাধিটি উত্তরাধিকার নির্ধারণে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করত বলে মনে হয় না। তবে, এই পদবির মাধ্যমে নির্বাচিত রাজপুত্রকে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। এটাও মনে করা যেতে পারে যে, যেখানে তেন্নো সমগ্র জাতির শাসক হিসেবে দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিলেন, সেখানে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শাসক বংশের পক্ষে একপ্রকার দলের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন, যেমন সোগা এবং অন্যান্য বংশপ্রধানেরা তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন। পুরো নারা যুগজুড়ে এবং প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগেও রাজপুত্রদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং স্পষ্ট ছিল যে, সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর ক্ষমতা অন্যান্য অভিজাত বংশগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সাধারণত তেন্নো নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, সবসময়ই একজন "জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র" থাকতেন। তেন্নো-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী তাঁর অনেক স্থানে যাওয়া এবং অনেকের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। এই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। একজন নারী শাসকের জন্য এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর ছিল, ফলে তাঁর না থাকতে পারা সভায় পরিবারের একজন বিশ্বস্ত সদস্যের উপস্থিতি থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। তবে, এই বিষয়গুলো থেকেই ক্ষমতার উৎস বোঝা যায় না। ক্ষমতার অবস্থান সবসময়ই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল। তাই মনে করার কোনও কারণ নেই যে, সুইকো ওই সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন না। রাজকুমার উমায়াদোর বাবা-মা দুজনেই শাসক বংশের সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর পিতৃকুলের দাদি ছিলেন সোগা কিতাশিহিমে এবং মাতৃকুলের দাদি সোগা ওআনেকিমি—দুজনেই সোগা নো ইনামির কন্যা এবং সোগা নো উমাকোর বোন। তাঁর চারজন স্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়, যাঁদের একজন ছিলেন উমাকোর কন্যা। ৬০০ সালে একটি জাপানি দূতাবিদ দল চীনের স্যুই রাজবংশে গিয়েছিল এবং স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে "ওয়া"-র রাজা পরিবারের নাম ছিল আমে (অর্থাৎ স্বর্গ) এবং তাঁর ব্যক্তিগত নাম ছিল তরাশিহিকো। এটি চীনা অক্ষরে শব্দভিত্তিকভাবে লেখা হয়েছে। "তরাশি" ছিল এই সময়ে শাসকদের আনুষ্ঠানিক নামের সাধারণ উপাদান এবং সম্ভবত "শাসক" অর্থে ব্যবহৃত হতো। "হিকো" একটি নির্দিষ্ট পুরুষ নাম উপাদান, যার নারীস্বরূপ "হিমে"। ফলে মনে হয় এই পরিচিতিটি স্যুইকো তেন্নোর নয় বরং রাজকুমার উমায়াদোর। যদিও সম্ভব যে চীনাদের জানা ছিল না যে "ওয়া"-র রাজা একজন নারী (অথবা জাপানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা গোপন রেখেছিল)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে উমাকো এবং উমায়াদোর মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তাঁরা উভয়েই প্রাদেশিক অভিজাতদের তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রয়োজনে একমত ছিলেন এবং এ লক্ষ্যে শাসকের তাত্ত্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাসাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো সভাসদদের প্রকৃত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা উভয়েই চীনা সাহিত্যের পাণ্ডিত্যে পারদর্শী ছিলেন এবং অন্তত একটি বইয়ে সহযোগিতা করেন। ৫৮৯ সালে স্যুই রাজবংশের দ্বারা চীনের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ৫৮১ সালে উত্তরাঞ্চলের নর্দার্ন ঝৌ রাজবংশে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দক্ষিণাঞ্চল জয় করে একীকরণ সম্পন্ন করে। পেকচে ৫৮১ সাল থেকে এবং শিলা অন্তত ৫৯৪ সাল থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগে ছিল। ৬০০ সালে স্যুইকো রাজদরবার শিলায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল এবং একই বছর পঞ্চম শতাব্দীর পর প্রথমবারের মতো চীনে দূত পাঠানো হয়। যদিও <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই মিশনের সাফল্যের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা রয়েছে, এই বাহিনী কোরিয়ায় বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি এবং ৬০২ সালে একটি দ্বিতীয় ও বৃহৎ অভিযান পরিকল্পিত হয়। লক্ষণীয় যে এই বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন রাজকুমার কুমে, রাজকুমার উমায়াদোর ভাই, কোনও ঐতিহ্যবাহী সামরিক উজি সদস্য নয়। এটি কে প্রমাণ হিসেবে ধরা হয় যে এই প্রকল্পটি উমাকোর নয় বরং উমায়াদোর উদ্যোগে ছিল। এছাড়া, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে এই বাহিনী গঠিত হবে "কানতোমো" থেকে, যার মধ্যে ছিল ধর্মীয় দায়িত্বে নিয়োজিত ইম্বে ও নাকাতোমি বংশ, পাশাপাশি "কুনি নো মিয়াতসুকো" ও "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রা। অর্থাৎ কোনও "ওমি" শ্রেণির বংশ এতে অংশ নেয়নি। সমস্ত যোদ্ধা শাসক বংশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বংশ ও প্রাদেশিক অভিজাতদের মধ্য থেকে আসবে। এটি সম্ভবত এমন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা সরাসরি শাসকের প্রতি অনুগত থাকবে, বরং ঐতিহ্যগত বংশের মিলিশিয়ার বিকল্প হবে। এই বিশ্লেষণ সত্য হলে, ৬০২ সালে রাজকুমার উমায়াদোর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, প্রকল্পটি সফল হয়নি। বাহিনী কিউশুতে একত্রিত হওয়ার পর রাজকুমার কুমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক মাস পরে মারা যান। শোতোকু তাইশির ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি পরবর্তী গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজকুমার ধারণা করেন শিলা এজেন্টরা রাজকুমার কুমেকে হত্যা করেছে। এরপর তাঁর আরেক ভাই রাজকুমার তাকিমাকে বাহিনীর নেতৃত্বে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কিউশুর উদ্দেশে রওনা হন। পথে তাঁর স্ত্রী মারা যান এবং রাজকুমার ইয়ামাটোতে ফিরে আসেন, কিউশু আর পৌঁছাননি। বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও কেউ কেউ মনে করেন যে, কিউশুতে একটি বৃহৎ বাহিনী একত্রিত করাই শিলার ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে জাপান কূটনৈতিকভাবে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল। এই লক্ষ্য ছিল নিয়মিত "খাজনা" বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য, কারণ অনেক বিলাসপণ্য আমদানি করতে হতো। শিলা যখনই জাপানের ওপর অসন্তুষ্ট হতো, তখনই বাণিজ্য বন্ধ করে দিত, আর জাপান যুদ্ধের হুমকি দিত। ৬১০ সালে শিলা থেকে আসা একটি দূতাবিদের অভ্যর্থনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দূতদল স্যুইকোর আসুকার প্রাসাদের মূল হলের সামনে উঠানে জড়ো হয়। প্রত্যেক দূতের সঙ্গে এক একজন জাপানি অভিজাত নিযুক্ত ছিলেন যাঁরা তাঁদের সহায়তা ও সম্ভবত অনুবাদের কাজ করতেন। চারজন প্রধান মন্ত্রী তাঁদের স্বাগত জানান। যখন দূতরা শিলার রাজা কর্তৃক প্রেরিত সরকারি চিঠি পড়তে যান, তখন সোগা নো উমাকো হলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের কথা শুনে ফেরার পর তেন্নোকে রিপোর্ট করেন। রাজকুমার উমায়াদোর উপস্থিতির উল্লেখ নেই। তিনি যদি সম্পৃক্ত থাকতেনও। তবে পুরো সময়টি প্রাসাদের ভেতরেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যাবে, হয়তো তিনি তখন আসুকায় ছিলেন না। রাজকুমার তাকিমার কোরিয়া অভিযান বাতিল হওয়ার পরপরই, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে আদালতে "টুপি পদবী" নামে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এই পদ্ধতির বাস্তবতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই, কারণ এটি স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ আছে। চীনা দরবারে এমন একটি ব্যবস্থা ছিল। কোরিয়ার সব রাজ্যেও অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। জাপানি ব্যবস্থা বিশেষত কোগুরিও-র ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। বাইরের প্রকাশ ছিল কর্তব্যরত অবস্থায় কর্মকর্তা যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিধান করবেন, যাতে পদবীর পরিচয় বহন করবে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল এমন এক র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করা। এটি শাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। পূর্বে বিদ্যমান কাবানে পদগুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী ও বংশগত। এগুলো থেকে ব্যক্তিগত মর্যাদা স্পষ্ট হতো না। সেগুলো ছিল সম্পূর্ণরূপে গোত্রভিত্তিক, কোনও ব্যক্তির মর্যাদা নির্দেশ করত না। নতুন ব্যবস্থা ছিল বিশেষভাবে আদালতের পদবী এবং সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিভিত্তিক। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাসাদীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অভিজাতদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। টুপিগুলোর কোনও নমুনা আজ আর বিদ্যমান নেই। তবে কয়েকজন ব্যক্তিকে যে পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তার উল্লেখ আছে। কুরাতসুকুরি (স্যাডলমেকার) নো তোরি নামে এক খ্যাতনামা বৌদ্ধভক্ত। তিনি আসুকায় হোকোজি বৌদ্ধমন্দিরের প্রধান হল নির্মাণ করেন, তাঁকে স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রথম তিনটি পদমর্যাদায় নিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির নাম আমাদের জানা আছে। একজন যিনি প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন, তাঁর মর্যাদা সোগা নো উমাকো এবং শিলার দূতাবিদকে স্বাগত জানানো "চার মন্ত্রী"-র তুলনায় অনেক নিচে ছিল। ফলে ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র অপেক্ষাকৃত সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য ছিল, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য নয়। কিছু পণ্ডিত পরবর্তী দশকে চালু হওয়া বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার জন্য বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং ধারণা করা হয়, এখানে সর্বোচ্চ পদ ছিল <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় চালু থাকা ব্যবস্থায় জ্যেষ্ঠ চতুর্থ শ্রেণির সমতুল্য। এই স্তরটিই ছিল উচ্চ অভিজাতদের সাথে সাধারণ কর্মকর্তাদের বিভাজনের রেখা। কেবলমাত্র অভিজাত শ্রেণির শীর্ষ স্তরের সদস্যরাই তৃতীয় শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব মর্যাদা পেতেন। পরের বছর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে সব মন্ত্রীর জন্যও বিশেষ টুপি ডিজাইন করা হয়েছিল। একটি কাহিনিতে বলা হয়েছে ৬৪৩ সালে সোগা নো এমেশি অবসর নেওয়ার সময় তিনি নিজ হাতে মন্ত্রীর টুপি তাঁর পুত্র ইরুকার হাতে তুলে দেন। সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ৬০৭ সালে পায়কচে সুই রাজবংশে দূত পাঠিয়ে কোরিয়ার উপর চীনের আক্রমণের পরামর্শ দেয়। ইয়াং-তি পায়কচের সাথে যৌথ অভিযান প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর ফলে কোরিয়ায় একটি বিশাল পরিবর্তনের সময়শৃঙ্খলা শুরু হয়। জাপানও ৬০৭ সালে একটি দূতাবাস পাঠায়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘সুই ইতিহাস’ রাজকুমার উমায়াদো—"তারাশিহিকো"—কে 'ওয়া'র রাজা হিসেবে গণ্য করেছে। ইয়াং-তির কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছিল জাপানি শুনেছে যে সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে আগ্রহী এবং তারা চীনে পাঠিয়ে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ পাঠাতে চায় পাঠচর্চার উদ্দেশ্যে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে দূতদলের মধ্যে এমন একজন অভিবাসী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চীনা ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারতেন। চীনা রিপোর্ট অনুসারে, চিঠিতে রয়েছে ঐতিহাসিক বাক্য: “সূর্যোদয় দেশের সম্রাট, সূর্যাস্ত দেশের সম্রাটকে এই চিঠি প্রেরণ করছেন।” ইয়াং-তি সমতার ধারণা পছন্দ করেননি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি প্রথম সংকেত যে, জাপানের চাহিদা ছিল চীন চীন দেশে তাদের নাম 'ওয়া' না বলে 'নিহোন' হিসেবে জানুক। প্রকৃত নির্বাহীকরণ দেখা যায় ৬৪৮ সালে ট্যাং রাজবংশে প্রেরিত দূতাবাসের চীনা বিবরণে “日本” প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে। বিরক্ত সত্ত্বেও, ইয়াং-তি প্রতীয়মান দেশের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধ পরিকল্পনা করছিলেন। অবিলম্বে একটি চীনা দূতাবাস জাপানে পাঠানো হয়। এই বিনিময়েই জাপান প্রথমবার একটি উপযুক্ত চীনা শব্দ বেছে নেয় শাসককে উল্লেখ করার জন্য। প্রাথমিক নথিতে “大王” ব্যবহৃত হত, সম্ভবত "ওকিমি" উচ্চারণে। তবে দূতাবাস কাল নাগাদ চীনাদের সাথে সমতামূলক শিরোনাম ব্যবহার অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছিল। উচ্চারণ ও উপাধি বিষয় বিবেচনা করে "天皇" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি সম্রাটের উচ্চ মর্যাদার প্রতীক; চীনা ‘হুয়াংদি’ যা সমান মর্যাদার প্রতীক। জাপানি উচ্চারণে “সুমেরা মিকোতো”—যার বাংলা অর্থ 'সর্বোচ্চ শাসক'। চীনা চিঠিতেও এটি লক্ষ করা গেল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬২৮ ও অন্যান্য লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। সুইকর সময়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হতো সুমেরা মিকোতো। তবে আধুনিক জাপানে এটি 'তেন্নো' নামে পরিচিতি লাভ করে। ৬০৮ সালের দূতাবাস দেখে চীনারা এটি কে 'জাপানের হুয়াং' বা সর্বোচ্চ সম্মানিত সার্বভৌম হিসেবে মনেছেন; অ্যাস্টন এ এটি অনুবাদ করেছেন "সার্বভৌম". মোট চারটি দূতাবাস পাঠানো হয় উল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে। শেষ দূতাবাস প্রেরণের সময় সুই রাজবংশ ইতিমধ্যেই পতনের দিকে ঝুঁকছিল। জাপানি দূতরা নিরাপদে ফিরতে বিপাকে পড়েন। তার ১৬ বছর পর পুনরায় কোনো বিনিময় হয়নি। এখানে স্পষ্ট যে, চীন জাপানে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল—অসভ্য উচ্চাভিলাষ সহ্য করলেও তারা চেষ্টা করছে দেশে এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যত সম্ভব জানতে। এটি তাদের কোরিয়া নিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। তবে ট্যাংও কোরিয়ায় উচ্চাভিলাসী ছিল। অস্বীকার বা রাজবংশ পরিবর্তনের কারণে চীনের সাথে সম্পর্ক বন্ধ করা জাপানের স্বার্থে বাধ্যতামূলক ছিল না। এক মতামত বলছে, রাজকুমার উমায়াদোর রাজনীতির অর্ধ-অবসর ৬০৫ সালের পর এই দূতাবাস উদ্যোগগুলোর প্রসার প্রধান ব্যক্তি ছিলেন এবং অন্য কেউ ততটা ভাবতেন না। ৬২০ সালে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> রিপোর্ট করে যে, রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা নো উমাকো একত্রে “সম্রাটদের ইতিহাস, দেশের ইতিহাস। ওমি, মুরাজি, টোমো নো মিয়াতসুকো, কুনি নো মিয়াতসুকো, ১৮০ বে এবং মুক্ত প্রজাদের মৌলিক রেকর্ড” তৈরি করেন। যদি প্রকৃতপক্ষে এ সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। তবে এটি অমূল্য হত। কিন্তু একমাত্র একটি কপি ছিল এবং ৬৪৫ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জাপানের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে, কারণ ঐ ঐতিহাসিক কাজ তা অবশ্যই তুলে ধরত। আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে, ৬০২ সালে পায়কচে ভিক্ষু কানরোক প্রথমবার চীনা পদ্ধতিতে একটি বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে জাপানে। এরপর ৬০১ সালের ভিত্তিতে উমায়াদো ২১টি ৬০-বছরের চাকার ভিত্তিতে ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পিছিয়ে তার শাসকের বংশানুক্রম নির্ধারণ করেন। বর্ষপঞ্জির সেই চক্রের বিশেষ জ্যোতিষ্কীয় গুরুত্ব উপস্থাপন চীনা থেকে নেওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে রাজকুমার উমায়াদো ৬২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু যেকোনো জাপানি ঐতিহাসিক তালিকা জানায় এটি ঘটেছিল ৬২২ সালে। এই অংশে মুখ্য অনেক তারিখ এক বছর ভিন্ন। কেন তা এমন তা নিয়ে কোনো তত্ত্ব নেই। বিকল্প সূত্র একটি প্রাচীন জীবনী ভিত্তিক। এটি বছর ও মাসের দিন ভাগে পৃথক। জাপানিরা সেই দ্বিতীয় তারিখ মেনে নিতে উৎসাহী। এই সূত্রগুলোর একটি হচ্ছে আসুকা যুগের হোর্যুজি বৌদ্ধ মূর্তির উপচর্চা–যাতে খোদাই করা হয়েছে যে তার মা মৃত হন সুইকোর ২৯তম বর্ষের ১২তম মাসে (৬২১)। পরের মাসে তিনি অসুস্থ হন। প্রধান স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় মাসের ১১ তারিখে মারা যান (৬২২)। রাজকুমার মারা যান দ্বিতীয় মাসের ২২ তারিখে। তিনজন একই সমাধিতে দাফন হন। তাঁর বয়স ছিল ৪৯। সমাধি ইকারুগা থেকে ২০ কিমি দূরে, বিডাতসু ও ইয়োমেইএর সমাধির কাছে অবস্থিত। পরে সুইকো ও কোটোকুর সমাধি একই এলাকায় নির্মিত হয়েছে। প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে Shotoku Taishi প্রাচীন কাল থেকেই একজন অত্যুৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে সন্মানিত ছিলেন—প্রাথমিক কারণ ছিল বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৌদ্ধধর্ম ৮ম শতক পর্যন্ত রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কেবল অনুমোদিত ছিল এবং একারণে অনেকেই সন্দিহানে ছিলেন। তবে রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা উমাকো ব্যক্তিগতভাবে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং উমায়াদো এর কয়েকটি প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইকারুগা প্রাসাদের আশেপাশে মন্দিরগুলোর একটি ক্লাস্টার—বিশেষ করে হোর্যুজি। এটি ৬৭০ সালে আগুনে ধ্বংসের পর পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং জাপানের প্রাচীনতম কাঠের নির্মাণ। এটি ছিল উমায়াদোর ব্যক্তিগত মন্দির, তখন পরিচিত Ikarugadera, “ইকারুগা মন্দির” নামে। তিনি প্রথম জাপানি হিসেবে বই রচনার কারণে অর্থবহ ভূমিকাও রেখেছিলেন। ১৪শ শতক থেকে, তিনি সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা জাপানের ১৮৬৮ সালের পর ক্ষমতা লাভ করে। প্রতিটি জাপানি স্কুলছাত্র <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র ১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান অধ্যয়ন করতো। তবুও কেউ ২০শ শতাব্দীর সামরিক কর্তৃত্ববাদীদের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেনি; তাঁর মর্যাদা এখনও অনন্য উচ্চে রয়েছে। ৬২৩ সালে মিমানা থেকে শিলে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে কোরিয়ায় আক্রমণের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এটি ২০ বছরের বিরতি পর ঘটে। দরবারের কর্মকর্তারা দ্বিখণ্ডিত হন। এক পক্ষ, যার মুখপাত্র তানাকা নো ওমি, মিমানা যথার্থ ব্যবহারের তদন্তের জন্য দূত প্রেরণে সমর্থন করে; অন্য পক্ষ, যে নেতৃস্থানীয় হচ্ছেন নাকাতোমি নো কুনি নো মুরাজি, সেনাবাহিনী প্রেরণের পক্ষে, শিলেকে বের করে মিমানাকে পায়কচের নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তরের দিকে ধাবিত করেন। অবশেষে দূত প্রেরিত হয় এবং শিলা একটি দূতাবাস পাঠায় প্রস্তাব নিয়ে। পুরোনো ব্যবস্থা অনুযায়ী মিমানা নামমাত্র শুল্ক দিবে। শিলা ও জাপানি কর্মকর্তাদের একটি দল মিমানায় যান চুক্তি সম্পাদনের জন্য। কিন্তু তারা ফিরে আসার আগে বড় একটা জাপানি সেনাবাহিনী করণীয়ভাবে কোরিয়ায় প্রেরিত হয় সাকাাইবে নো ওমি ওমারোর নেতৃত্বে। তিনি সম্ভবত সোওগা উমাকোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে দূতরা বারংবার যাননি এবং সবকিছু লড়াই ছাড়াই নিষ্পত্তি হয়েছে। কোরিয়ার জাপানি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। এরপর চুক্তি হয়েছে যে যতবার জাপান দূতাবাস শিলায় যাবে, তারা আগমনের সময় দুইটি আনুষ্ঠানিক নৌকায় স্বাগত জানাবে—একটি শিলার জন্য এবং অন্যটি মিমানার জন্য। মিমানায় একটি সেনাবাহিনী এবং একই সময়ে কূটনৈতিক আলোচনা করা কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। সম্ভবত দরবারে দুটি পক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করছিল। ৬২৩ সালে একটি জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃক সংঘটিত প্রদর্শনী হত্যাকাণ্ডের (কুড়াল দিয়ে হত্যাকাণ্ড!) পরে, আদালত ধর্মীয় ব্যবস্থার উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং একটি (বৌদ্ধ) ধর্ম দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়, প্রধান পদগুলো ভিক্ষুদের জন্য নির্ধারিত হয়। এর ফলে একটি আনুষ্ঠানিক জনগণনা নেওয়া হয় এবং রিপোর্ট করা হয় যে দেশে ৪৬টি মন্দির, ৮১৬ জন ভিক্ষু এবং ৫৬৯ জন ভিক্ষুনী রয়েছে। == "তাইকা সংস্কার" == ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে সোওগা-নো উমাকো মারা যান এবং ৬২৮-এ ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় স্যুইকো সম্রাজ্ঞীর। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘটনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়। উমায়াদো, উমাকো ও স্যুইকোর মৃত্যুতে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যুর ঠিক আগে উমাকো স্যুইকোর কাছে অনুরোধ করেন যেন কাজুরাকি আগাতা তার হাতে দেওয়া হয়, কারণ এটি ছিল তার বংশের প্রাচীন নিবাস। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ছয়টি আগাতার একটি। এটি সরাসরি শাসকের ব্যয়ের উৎস ছিল। স্যুইকো এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এই দাবি মেনে নেওয়া হতো, তাহলে সোওগা বংশ একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এটি অন্য সব সোওগাদের থেকে স্বাধীন হতো। এই কৌশলই পরে নাকাতোমি-নো কামাতারির জন্য প্রয়োগ করা হয়; তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের একটি নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি শুধুই বয়স্ক উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা হারানোর একটি দৃষ্টান্ত এবং তার দাবি অযৌক্তিক ছিল। পরবর্তী সম্রাট ছিলেন বিদাতসু সম্রাটের পৌত্র ও দুর্ভাগাপ্রাপ্ত রাজপুত্র ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হন। স্যুইকোর মৃত্যুর কয়েক মাস পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোওগা-নো এমিশি, উমাকোর জ্যেষ্ঠপুত্র, তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এমিশি সিনিয়র কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জানান যে স্যুইকো দুই সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর কথা বলেছিলেন — রাজপুত্র তামুরা এবং রাজপুত্র উমায়াদোর পুত্র, রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে — এবং তাদের উভয়কেই বলেছিলেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ না করেন। তার নিজের পুত্র, রাজপুত্র তাকেদা, এর আগেই মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার সমাধিতে সমাহিত হওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এমিশির বিবরণে বোঝা যায় যে স্যুইকো রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন। কিন্তু স্পষ্ট করে কাউকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেননি। অধিকাংশ সদস্য রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন, যদিও কেউ কেউ রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়েকেও সমর্থন করেন, ফলে এমিশি সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি করেন। দুই রাজপুত্রই বংশগতভাবে সমান এবং বয়সেও প্রায় সমান ছিলেন। রাজপুত্র তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং ধারণা করা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের বয়সও অনুরূপ ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে জোর দিয়ে বলেন যে স্যুইকো তাকে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে তিনি এমিশিকে মিথ্যাবাদী বলেন। অবশেষে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; এক প্রতিপক্ষ কর্মকর্তাকে এমিশি হত্যা করেন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজপুত্র তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই সম্রাট নামে পরিচিত হন। এমিশি রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করার একটি সুস্পষ্ট কারণ ছিল — তার প্রধান স্ত্রী ছিলেন সোওগা-নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয়, তিনি ইতোমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, জন্ম দিয়েছেন। অন্যদিকে, বলা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হয়তো এমিশি ভেবেছিলেন তামুরার সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। জোমেইর অভিষেকে আরও এক তরুণ রাজপুত্র সামনে আসেন — নাকা-নো ওয়ে। জোমেইর সম্রাজ্ঞী ছিলেন না সোওগা-নো হোতে-নো ইরাতসুমে, বরং ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর নাতনি রাজকন্যা তাকারা। তিনি নাকা-নো ওয়ের মা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই সম্রাট সংক্রান্ত অংশটি সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যবর্জিত। উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হলো: ৬৩০ ও ৬৩২ সালে তাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে দূতাবিনিময়। চীনে ২৪ বছর অবস্থানকারী এক শিক্ষার্থী এই সময় দেশে ফেরেন। অপর একজন, তাকামুকু-নো কুরামারো, ৩০ বছর পর ৬৪৪ সালে দেশে ফিরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধ। এছাড়া জোমেই তার প্রাসাদ দুইবার স্থানান্তর করেন; প্রথমবার আগুন লাগার কারণে, দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে। এটি দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধাজনক ছিল। এই সময় কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ধারণা করা হয়, শাসকের প্রাসাদ রাজধানীতে রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছিল। এই শাসনামলে একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে প্রবীণতম জীবিত রাজপুত্র এমিশিকে ধমক দেন, কারণ মন্ত্রীরা যথাযথভাবে সভায় হাজির হচ্ছিলেন না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারত। কিন্তু এমিশি সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরবর্তী সময়ে রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময়সূচি নির্ধারণের রীতি চালু হয়। নতুন প্রাসাদ স্থানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ হয়। এটি কোনো শাসকের দ্বারা নির্মিত প্রথম মন্দির হিসেবে পরিচিত। জোমেই ৬৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন, কোনো উত্তরাধিকারী মনোনয়ন না করেই। তার উত্তরসূরি হন তার সম্রাজ্ঞী। তিনি দ্বিতীয় নারী সম্রাট হিসেবে পরিচিত হন কোগিয়োকু সম্রাজ্ঞী নামে (তার দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল সাইমেই সম্রাজ্ঞী হিসেবে)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই উত্তরণের বিষয়ে কিছুই বলে না। এখানে দুইজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন — রাজপুত্র ফুরুহিতো ও রাজপুত্র নাকা-নো ওয়ে, উভয়েই সম্রাটের সন্তান। তবে ভিন্ন মাতার গর্ভজাত। নাকা-নো ওয়ে ছিলেন সম্রাজ্ঞীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী (জাপানি গণনায়, আমাদের হিসেবে ১৫ বছর), সিংহাসনের জন্য কিছুটা তরুণ। তখনও শিশুদের সিংহাসনে বসানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে অনুমান করা যায়, কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি কারণ ছিল তার পুত্রকে ভবিষ্যতে সিংহাসনে বসানো। ফুরুহিতোর মর্যাদা কম হলেও, বয়সে তিনি নাকা-নো ওয়ের চেয়ে বড় ছিলেন, যদিও তার সঠিক বয়স জানা যায় না। কয়েক বছরের মধ্যে নাকা-নো ওয়ে ফুরুহিতোর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং তখন তার বয়স ২০ বছরের বেশি ছিল। এ ছাড়া রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের কথাও ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি থাকায় কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে ঘটেছিল। এটি সম্ভাব্য কারণ, কারণ সোওগা-নো এমিশি ছিলেন এমন ব্যক্তি। তিনি ঐকমত্য ছাড়া কিছু করতেন না। প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা করা যায় না। নতুন সম্রাজ্ঞীর বয়স তখন ৪৯। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগিয়োকুর শাসনকালকে সোওগা বংশের পতনের সূচনার সময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জোমেইর শাসনকালে সোওগা-নো এমিশির নেতৃত্বে সব কিছু মসৃণভাবে চলছিল। তিনি আদালতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে কোগিয়োকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা কার্যত সোওগা নেতৃত্বে তাকে অতিক্রম করে এবং পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন হয়ে ওঠে। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তিনি শৈশবে অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তিনি স্বেচ্ছাচারী, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে ওঠেন। তিনি শত্রু সৃষ্টি করতেন এবং এতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং নিজের ইচ্ছামতো এগিয়ে যেতেন। উমায়াদো, উমাকো এবং সুইকোর মৃত্যুর মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করা স্পষ্ট হয়ে যায়। মৃত্যুর কিছু আগে উমাকো সোগা দাবি করেন যে কাজুরাকি আগাতা তার বংশের প্রাচীন আবাসস্থান ছিল এবং সে কারণে তা তার মালিকানায় নেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন সুইকোর কাছে। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ৬টি আগাতার একটি, যেগুলো সরাসরি শাসকের ব্যয় নির্বাহ করত। সুইকো তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এটি অনুমোদিত হতো। তবে সোগা কাজুরাকি বংশের নাম পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করতে পারতেন। এতে করে তার বংশধররা অন্যান্য সোগাদের থেকে স্বাধীন একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন। এইরকমই পরে করা হয়েছিল নাকাতোমি নো কামাতারির ক্ষেত্রে, যখন মৃত্যুর পর তার পুত্রদের নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি ছিল একজন বৃদ্ধ উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে এমন কিছু চাওয়ার চেষ্টা। এটি কখনোই বাস্তবায়নযোগ্য ছিল না। পরবর্তী শাসক ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর নাতি এবং দুর্ভাগা রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হয়েছিলেন। তবে সইকোর মৃত্যুর পর কয়েক মাস পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। উমাকোর জ্যেষ্ঠ পুত্র সোগা নো এমিশি তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবশেষে এমিশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি সভা আহ্বান করে বলেন, সুইকো রাজকুমার তামুরা ও রাজকুমার ইয়ামাশিরো নো ওয়ে (রাজকুমার উমায়াদোর পুত্র) ।এই দুইজনকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং উভয়ের সাথেই সাক্ষাৎ করে অনুরোধ করেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই না করে। তার নিজের পুত্র রাজকুমার তাকেদা আগেই মারা গিয়েছিলেন। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার কবরেই তাকে সমাধিস্থ করা হোক। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র মতে, এমিশির বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি রাজকুমার তামুরার প্রতি স্যুইকোর পক্ষপাত দেখান। তবে কাউকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয়নি। অধিকাংশ সদস্য তামুরার পক্ষে থাকলেও কিছুজন ইয়ামাশিরো নো ওয়ের পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে এমিশি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সভা মুলতবি করেন। উভয় রাজপুত্র বংশগত ও বয়সের দিক থেকে সমান ছিলেন—তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং অনুমান করা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়েরও বয়স একইরকম। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেয়, যেখানে বলা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়ে দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে স্যুইকো তাকে ব্যক্তিগতভাবে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় তিনি সোগা নো এমিশিকে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেন। শেষ পর্যন্ত সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; একজন বিরোধী কর্মকর্তা এমিশির হাতে নিহত হন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজকুমার তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই তেন্নো নামে পরিচিত হন। তামুরাকে সমর্থন করার জন্য এমিশির স্পষ্ট কারণ ছিল—তামুরার প্রধান পত্নী ছিলেন সোগা নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয় যে তিনি ইতিমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, প্রসব করেন। অন্যদিকে, উল্লেখযোগ্য যে ইয়ামাশিরো নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হতে পারে এমিশি মনে করেন তামুরার সাথে তার সম্পর্ক আরও সদ্ভাবপূর্ণ হবে। জোমেইর সিংহাসনে আরোহণের ফলে এক তরুণ রাজপুত্র, নাকা নো ওয়ে, প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও জোমেইর রানী ছিলেন না সোগা নো হোতে নো ইরাতসুমে, বরং ছিলেন রাজকুমারেস তাকারা—ওশিসাকা নো হিকোহিতোর নাতনী এবং নাকা নো ওয়ে ছিলেন তারই পুত্র। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে জোমেই তেন্নোর শাসনকাল নিয়ে খুব অল্প এবং অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। শুধু দুটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ৬৩০ এবং ৬৩২ সালে তাং রাজবংশের সঙ্গে দূতাবিনিময়। একজন শিক্ষার্থী যিনি ২৪ বছর ধরে চীনে ছিলেন, তিনি এই সময়ে দেশে ফিরে আসেন। আরেকজন, তাকামুকু নো কুরামারো, ৩০ বছর পরে ৬৪৪ সালে ফিরে আসেন এবং একজন মহা সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হন। দ্বিতীয় প্রধান ঘটনা হলো ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে প্রথম সীমানা যুদ্ধের নথিভুক্তি। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে জোমেই দুইবার তার রাজপ্রাসাদ স্থানান্তর করেন—প্রথমবার আগুন লাগার পরে এবং দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে, যেখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়। এটি ছিল বড় আকারের নির্মাণকাজের সূচনা। মনে করা হয়, শাসকের প্রাসাদ তখন রাজধানী নগরীতে রূপান্তরের পথে ছিল। তার শাসনকালের একটি গল্পে বলা হয়, জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক রাজপুত্র এমিশিকে ভর্ৎসনা করে বলেন যে, মন্ত্রীরা এবং কর্মকর্তারা আদালতে ঠিকভাবে উপস্থিত হন না। তাদের সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি একটি ঘণ্টার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এমিশি এই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরে, রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময় নির্ধারিত হয়। নতুন প্রাসাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল একটি বৌদ্ধ মন্দির—প্রথম যেটি কোনো শাসক কর্তৃক নির্মিত হয়। ৬৪১ সালে জোমেই কোনো উত্তরাধিকারী নিযুক্ত না করেই মারা যান। তার উত্তরসূরি হন তার রানী। তিনি দ্বিতীয় নারী তেন্নো হিসেবে কোগ্যোকু তেন্নো নামে পরিচিত হন (পরে তিনি সাইমেই তেন্নো হিসেবেও শাসন করেন)। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই বিষয়ে কিছুই বলে না যে কীভাবে এটি ঘটল। এখানে দুইজন সুস্পষ্ট প্রার্থী ছিলেন—ফুরুহিতো এবং নাকা নো ওয়ে। তারা সম্রাটের দুই ভিন্ন স্ত্রী থেকে জন্মগ্রহণ করেন। নাকা নো ওয়ে ছিলেন রানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। কিন্তু তখন তার বয়স মাত্র ১৬ (জাপানি হিসেবে; আমাদের হিসাবে ১৫)—এমন একজনকে সিংহাসনে বসানো তখনও প্রচলিত ছিল না। তাই একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি উদ্দেশ্য ছিল তার পুত্র নাকা নো ওয়ের জন্য ভবিষ্যতে সিংহাসন সংরক্ষণ করা। ফুরুহিতোর অবস্থান ছিল নিচু। কিন্তু বয়স নিশ্চিতভাবেই বেশি ছিল। কয়েক বছর পর নাকা নো ওয়ে ফুরুহিতোর এক কন্যাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স অবশ্যই ২০-এর বেশি ছিল। অন্যদিকে, ইয়ামাশিরো নো ওয়ে-কে ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন প্রার্থীর উপস্থিতি দেখায় যে, কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের পেছনে একটি কারণ ছিল—শীর্ষ অভিজাতদের মধ্যে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। এটি যুক্তিযুক্ত, কারণ সোগা নো এমিশি এমন একজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি সম্মতি ছাড়া কিছু করতেন না। নির্ভরযোগ্য প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। নতুন তেন্নোর বয়স তখন ৪৯ বছর ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগ্যোকুর শাসনকালের বর্ণনা প্রধানত সোগা বংশের পতনের দিকে কেন্দ্রীভূত। জোমেই শাসনকালে সবকিছু সোগা নো এমিশির তত্ত্বাবধানে মসৃণভাবে চলছিল বলে মনে হয়। তিনি বাকি গুরুত্বপূর্ণ দরবারিদের সঙ্গে ভালোই মিশতেন। কিন্তু কোগ্যোকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা তাকে সরিয়ে রেখে কার্যত সোগা বংশের প্রধান হয়ে ওঠেন—এবং এটাই ছিল একেবারে ভিন্ন ঘটনা। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে তিনি একজন অকালপক্ব ও মেধাবী শিশু ছিলেন। তিনি বড় হয়ে ওঠেন একগুঁয়ে, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি অবজ্ঞাশীল ব্যক্তি হিসেবে। তিনি শত্রু তৈরি করতেন এবং এতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হতেন না। এটি খুশি তাই করতেন। প্রথম ঘটনাটি হলো ৬৪২ সালে সোগা নো এমিশি নিজের ও তার পুত্রের জন্য কোফুন নির্মাণের বিবরণ। বলা হয়, তিনি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেন, যেন তিনি দেশের শাসক; এমনকি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের জমির লোকদেরও নিযুক্ত করেন। ইয়ামাশিরো নো ওয়ের বোন প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরের বছর এমিশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ব-উদ্যোগে দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি নিজেই একটি মন্ত্রীর টুপি তৈরি করে তা পুত্র ইরুকাকে দেন এবং ইরুকা ও-ওমি হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরুকা ষড়যন্ত্র শুরু করেন, যাতে ইয়ামাশিরো নো ওয়েকে উত্তরাধিকার থেকে সরিয়ে ফুরুহিতো নো ওয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একটি ফুটনোটে বলা হয়েছে, "অন্য একটি বই" বলেছে যে ইরুকা নিজেই সিংহাসনে বসার কথা চিন্তা করেন। ও-ওমি হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে, ইরুকা ইকারুগা প্রাসাদ আক্রমণের জন্য সৈন্য পাঠান। প্রাসাদ ধ্বংস হয়। তবে ইয়ামাশিরো নো ওয়ে এবং তার পরিবার পাহাড়ে পালিয়ে বাঁচেন। কিন্তু তাদের কোন সম্পদ না থাকায়, শেষে সবাই আত্মহত্যা করেন। সোগা নো এমিশি যখন এটি শুনেন, তিনি ইরুকাকে "মূর্খ" বলে ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, তুমি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের সাথে যা করেছ, অন্যরাও তোমার সাথে তাই করতে পারে। এটি ৬৪৩ সালের শেষদিকে ঘটে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এরপর বলে যে ইরুকার অভ্যুত্থানে নাকাতোমি নো কামাকো নো মুরাজি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং নিজ দায়িত্বে রাজবংশের জীবিত রাজপুত্রদের মধ্যে একজনকে সমর্থনের জন্য ঐক্য গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য যে ৬৪১ সালে কোগুরিয়োতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে স্বৈরশাসক অধিকাংশ অভিজাতকে হত্যা করেন। জাপানি অভিজাতদের এই ঘটনার বিষয়ে না জানার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি ইরুকার বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। নাকাতোমি সন্দেহ করেন যে রাজকুমার নাকা নো ওয়ে একজন ভালো নেতা হতে পারেন। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচিত না থাকায় একটি ফুটবল খেলার সময় তার সাথে পরিচয় ঘটান এবং দ্রুত তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যাতে তারা নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং সন্দেহ না জাগে, তারা উভয়ে কনফুসিয়ান দর্শন ও চীনা ভাষার পাঠে ভর্তি হন এবং একসাথে যাতায়াত করতেন। তাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল ইরুকাকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সোগা বংশের মধ্যেই সহযোগী খোঁজা। এই উদ্দেশ্যে নাকা নো ওয়ে সোগা বংশের একজন কন্যাকে বিয়ে করেন। এই মিত্রতা ছিল সোগা নো কুরোয়ামাদা নো ইশিকাওামারোর সঙ্গে। তিনি সোগা নো এমিশির ভাইপো ছিলেন। তার শাখা রাজপরিবারের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখে এবং তার তিন কন্যা শাসকদের বিয়ে করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইরুকাকে আদালতেই হত্যা করার একটি জটিল পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। যখন সময় আসে, ইরুকার ওপর আক্রমণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন রাজকুমার নাকা নো ওয়ে নিজেই তার তরবারি বের করে ইরুকাকে আঘাত করেন। ঘটনাটি তেন্নো (নাকা নো ওয়ের মা)-র উপস্থিতিতে ঘটে এবং রাজকুমার তাকে বলেন যে ইরুকা রাজবংশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। এরপর ইরুকার মরদেহ সৌজন্য সহকারে এমিশির কাছে পাঠানো হয়। তারা একদিন সময় নিয়েছিল সোগা নো এমিশির ওপর আক্রমণের জন্য সৈন্য জড়ো করতে, যুদ্ধে অংশ নেয় বহু রাজপুত্রের বাহিনী। এমিশি তার পক্ষে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজপুত্রের বাহিনী পৌঁছানোর পর এমিশির অধিকাংশ লোক তাকে পরিত্যাগ করে। নিজের পরিণতি অনুধাবন করে এমিশি ইতিহাসের সেই পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলেন যা সোগা নো উমাকো এবং রাজপুত্র উমায়াদো তৈরি করেন এবং যা তার কাছে ছিল, যদিও একজন লেখক সেই পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ অন্তত উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং তা নাকা নো ওএর কাছে হস্তান্তর করেন। এসব ঘটনার সময় নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন ৩১ বছর বয়সী এবং নাকা নো ওএ ছিলেন ১৯ বছর বয়সী। রাজপুত্র ফুরুহিতো নো ওএ ছিলেন নাকা নো ওএর (সৎ) বড় ভাই। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে, নাকাটোমি নো কামাকো নাকা নো ওএ-কে পরামর্শ দেন যে নিজের বড় ভাইয়ের আগে সিংহাসনে আরোহণ করা অনুচিত হবে। তাই তিনি প্রস্তাব দেন রাজপুত্র কারু। তিনি কোগিওকু তেন্নোর ভাই, তাকে সিংহাসনে বসানো হোক। সেটাই বাস্তবায়িত হয়। তিনি হলেন কোটোকু তেন্নো। কোগিওকু তার পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো সম্রাটের পদত্যাগ। এটি পরে নিয়মিত ঘটনার রূপ পায়। আরেকটি প্রথম ঘটনা হিসেবে, যার পুনরাবৃত্তি পরে বহুবার হয়েছে, রাজপুত্র ফুরুহিতো প্রকাশ্যে উত্তরাধিকার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে একটি প্রত্যন্ত মন্দিরে অবসর নিয়ে। এসমস্ত ঘটনা, রাজপুত্র কারুর আনুষ্ঠানিক সিংহাসনে আরোহণসহ, ঘটে সোগা নো এমিশির মৃত্যুর পরদিন। নতুন শাসন ব্যবস্থা কোনো সময় নষ্ট না করেই জানিয়ে দেয় যে পরিবর্তন আসন্ন। প্রাচীন উপাধি ও-ওমি ও ও-মুরাজি বিলুপ্ত করা হয় এবং তার পরিবর্তে নতুন উপাধি হিদারি নো ওমাচিগিমি এবং মিগি নো ওমাচিগিমি প্রবর্তন করা হয়, যেগুলো ইংরেজিতে সাধারণত চীনা উচ্চারণে সাদাইজিন (বামমন্ত্রী) ও উদাইজিন (ডানমন্ত্রী) নামে পরিচিত, যেখানে বাম মানে সিনিয়র এবং ডান মানে জুনিয়র। আবে নো ওমি নো কুওয়ারামারো প্রথম পদে এবং সোগা নো ওমি নো ইশিকাওয়ামারো দ্বিতীয় পদে নিয়োগ পান। নাকাটোমি নো কামাকো পান অপেক্ষাকৃত ছোট একটি উপাধি – উচিনোওমি বা নাইজিন। এটি পরে নাইদাইজিন নামে পরিচিত হয় এবং নারা যুগে উদাইজিনের পর তৃতীয় অবস্থানে ছিল। নতুন মন্ত্রীদের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাউন রাজকুমারের নিচে রাখা হয়। এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক মর্যাদাক্রম ছিল না। উচিনোওমি উপাধি প্যেকচে সরকারের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" এবং <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এটি বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে নাকাটোমি নো কামাকো প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ পাবেন, পদোন্নতি ও পদাবনতি সহ। তিনি যে অভ্যন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা হলো প্রাসাদের কাজের অভ্যন্তর। "মহামন্ত্রীরা" নীতিগত বিষয়ে মনোনিবেশ করবেন। কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণের পাঁচ দিন পর প্রাসাদের সব কর্মকর্তাদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উপরের পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করা হয়। সম্রাট, অবসরপ্রাপ্ত সম্রাজ্ঞী এবং ক্রাউন রাজকুমার সবাই উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের সম্রাটের ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতার শপথ করানো হয়। এ সময়ই তাইকা শাসনামলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত ধারাবাহিকভাবে রাজাদেশ জারি হতে থাকে, যেগুলো শুধু প্রাসাদ নয়, পুরো দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এই সময় থেকে শতকের শেষ পর্যন্ত ঘটা প্রায় প্রতিটি ঘটনার ওপরই গবেষকদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু লিখেছি, যেগুলো <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র উপর ভিত্তি করে, তা সম্পূর্ণ ভুল। বিশেষভাবে, কিছু দাবি করা হয় যে ইরুকার হত্যাকাণ্ড এবং কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ছিল না, বরং নাকা নো ওএ ছিলেন প্রচলিত "সিনিয়র রাজকুমার" মাত্র, যাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক সংবিধান অনুসারে থাকা প্রয়োজন ছিল। নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন মধ্যম স্তরের এক কর্মকর্তা যার কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। পুরো তার বিদ্রোহে ভূমিকা রাখার কাহিনী সাজানো হয়েছিল, কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় তার বংশধরেরা ক্ষমতাশালী ছিল। কোনো "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" পদ ছিল না। তাইকা শাসনামল ছিল না, এমনকি কোনো সংস্কার রাজাদেশও জারি হয়নি। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ অবশ্য তুলনামূলকভাবে মাঝামাঝি অবস্থান নেন। কিন্তু খুব কমই আছেন যারা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র সবকিছু যাচাই-বাছাই ছাড়া মেনে নেন। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> দাবি করে যে আমরা এখন যে শাসন ব্যবস্থা দেখছি, সেটির উৎপত্তি এই সময়েই ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রচারমূলক রচনা। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে কিছু পরিপূরক প্রমাণও রয়েছে—অষ্টম শতকের অন্যান্য কিছু বই যেগুলো সরকারি কমিটির মাধ্যমে লেখা হয়নি এবং এমনকি অল্প সংখ্যক প্রকৃত সরকারি নথিপত্রও আছে, যেমন কর বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের চিহ্ন। স্থানীয় প্রশাসনের জন্য প্রদেশ/জেলা পদ্ধতির সূচনার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অন্যান্য বইতেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ এত বেশি যে এসব কিছু পুরোপুরি বানানো বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। লেখকরা বইটি প্রকাশের মাত্র ৭৫ বছর আগের ঘটনা লিখেছেন। তাদের পিতামহ বা পিতারা এসব ঘটনার অংশ ছিলেন এবং পাঠকদেরও পূর্বপুরুষেরা তাতে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে, পঞ্চম শতকের বিষয়ে লেখার তুলনায় এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জনের সুযোগ অনেক কম ছিল। তবে, আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে এই বিবরণ নিছক নিরপেক্ষ নয়। নতুন সরকার প্রথম যে বিষয়টির মুখোমুখি হয় তা হলো কোরিয়ার তিনটি রাজ্য থেকে একযোগে দূতাবলীর আগমন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> তেমন স্পষ্ট নয় ঘটনাগুলো সম্পর্কে। তবে জাপানি পক্ষ প্যেকচের উপস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, যেখানে তারা মিনামা-কে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তোলে। অনুমান করা হয়, এটি এসেছে ৬৪২ সালে প্যেকচে ও কোগুরিয়োর মধ্যে একটি মৈত্রী গঠিত হওয়ার পরে। এটি সিলার উপর বড় পরাজয় আরোপ করে, সম্ভবত মিনামা কিংবা তার একটি অংশ দখল করে। আট মাস পর আবার দূতাবলী আসে এবং মিনামা নিয়ে নতুন বিবাদ শুরু হয়। তখন মনে হয় নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এমন এক অর্থহীন বিষয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বোকামি। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত তাকামুনে নো কুরামারো। তিনি চীন থেকে ৩০ বছর পর ফিরে আসেন। তাকে সিলায় পাঠানো হয় এবং তিনি বিষয়টির অবসান ঘটান। মিনামা কূটনৈতিক সত্তা হিসেবে অস্তিত্ব হারায় এবং জাপান অঞ্চলটির ওপর সব দাবি পরিত্যাগ করে। এটি একটি সাধারণ বাস্তবতা যে চীনের ক্রমাগত চাপে কোরিয়া তখন নিজেই নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছিল। ৬৪৪ সালে কোগুরিয়ো মাঞ্চুরিয়ায় লিয়াও নদী সীমান্তে চীনের একটি বিশাল হামলা প্রতিহত করে এবং আরও সংঘাত সামনে অপেক্ষা করছিল। জাপানিরা তখন যা ঘটছিল তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল। এটি জাপানকে আত্মরক্ষা উপযোগী করতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ তৈরি করেছিল। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই দুই সিনিয়র মন্ত্রীকে আদেশ দেওয়া হয় যে তারা "মায়েতসুকিমি" এবং "তোমো নো মিয়াতসুকো"দের থেকে মতামত নেবেন কীভাবে শ্রম কর নির্ধারণ করা যায় যাতে জনগণের আপত্তি না থাকে। মায়েতসুকিমি চীনা অক্ষর দ্বারা বোঝানো হয়। এটি চীনে প্রশাসনের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ করে। এখানে ধারণা করা হয় এটি ওমি ও মুরাজি অভিজাত গোত্রের জন্য একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হয়তো টুপি মর্যাদা ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের নির্দেশ করে। এটি আনুমানিক ১০ জন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী গোত্র প্রধানদের কমিটি সাধারণত ১০ জনের আশেপাশে থাকত, পারকিনসনের সীমা অনুযায়ী – ১২ জনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট কোনো কমিটি কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। "তোমো নো মিয়াতসুকো" ছিলেন স্থানীয় কর্মকর্তা, যারা সামরিক ও গণপূর্ত কাজের জন্য পুরুষদের নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন। আমি এখনো করব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলিনি, কারণ প্রাচীন সময়ের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে এ সময়ের সব এশীয় সমাজ, চীনসহ, তিন ধরনের করের ওপর নির্ভর করত—কৃষকদের কাছ থেকে ধান/শস্য, কৃষক নন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বস্ত্র)। জনসাধারণের কাজে শ্রম। আমরা অনুমান করি, এই প্রাচীন সময়ে ব্যবস্থাটি নারা যুগের মত এতটা সুবিন্যস্ত ছিল না। তবে কিছু না কিছু থাকতেই হতো। না হলে কোফুন (সমাধিস্তূপ) তৈরি হতো না। "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রাই এসব কাজের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করতেন এবং সম্ভবত তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করতেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে পরবর্তী ঘটনাবলি বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো আমরা জানি এই ঘটনাগুলো কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। আমাদের কাছে নারা যুগের শুরুর সময়ের সরকার কেমন ছিল তার অনেক তথ্য আছে, এমনকি কিছু আদমশুমারি রেজিস্টার ও কর নথিপত্রও আছে, যেগুলো দেখায় যে কিছু এলাকায় বাস্তবে সরকার কীভাবে কাজ করেছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>, যদিও প্রায় একমাত্র উৎস, আমাদের অনেক রাজাদেশের বিবরণ দেয়। তবে বলে খুব কমই যে এসব আদেশ কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বা পরবর্তীতে কীভাবে কাজ করেছে। বোঝা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতই একটি পরীক্ষানিরীক্ষার ধারা ছিল, কারণ কিছু আদেশ কোনো ফল দেয়নি এবং দ্রুতই নতুন আদেশে প্রতিস্থাপিত হয়। আমরা এই প্রক্রিয়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করতে পারি, সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত বিষয়। ধাপগুলো হলো ৬৪৫ সালের পরপর সময়কাল, এরপর কোরিয়ায় সঙ্কট যা ৬৬০ সালে তাং সাম্রাজ্যের প্যেকচে দখল ও তার জাপানের উপর প্রভাব। শেষে ৬৭২ সালে নাকা নো ওএর ছোট ভাই রাজপুত্র ওআমা সিংহাসন দখল করেন। অতিরিক্ত বিষয় হলো তথাকথিত "জিনশিন যুদ্ধ" যা ৬৭২ সালে ওআমাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> এটি বিশদভাবে বর্ণনা করে, ফলে আমরা আসুকা যুগের সমাজকে বাস্তবে কার্যকরভাবে কাজ করতে দেখি। আর যুদ্ধটি বই প্রকাশের মাত্র ৪৮ বছর আগের ঘটনা। তাই অনেক অংশগ্রহণকারী তখনো জীবিত ছিলেন। কারণ এই কাহিনী রাজাদেশের ধারাবাহিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, আমরা রাজপুত্র নাকা নো ওএ এবং নাকাটোমি নো কামাকো (পরবর্তীতে কামাতারিতে নামকরণ) – তাদের মধ্যে অনুমিত অংশীদারিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। সম্ভবত তাদের একজন ছিলেন চিন্তার মানুষ আর আরেকজন ছিলেন সেই কাজ বাস্তবায়নের জনশক্তি, কিংবা তারা দুজনেই উভয় ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। আমরা জানি যে রাজবংশ কামাকো-র প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ ছিল, কারণ তারা তার বংশধরদের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে এক অভূতপূর্ব মর্যাদা দিয়েছিল—একটি ঘটনা যা পরবর্তী কয়েক শতকে জাপানের সরকার কাঠামোর বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শুধুমাত্র এই ফুজিওয়ারার ভবিষ্যৎ উত্থানই প্রমাণ করে, আমার মতে, কামাকোর ৬৪৫ সালের ঘটনাবলিতে এবং তার পরবর্তী পরিবর্তনগুলিতে গভীর জড়িততা ছিল। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পর, তারা পাঁচটি প্রধান বিষয়ে নীতিনির্ধারণ করে একাধিক ফরমান জারি করে। প্রথম ফরমানে "পূর্ব প্রদেশসমূহে" গভর্নর নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয় জনসংখ্যার আদমশুমারি করতে, তা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক বা স্থানীয় অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে, তাতে কিছু আসে যায় না। একইসাথে তারা কতখানি জমি চাষ করছে, তাও নথিভুক্ত করতে বলা হয়। গভর্নর হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়, তারা সবাই রাজধানী থেকে আগত প্রভাবশালী অভিজাত। ফরমানে গভর্নরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা ছিল। এরা স্থায়ী গভর্নর ছিলেন না, যেমনটা পরে প্রতিষ্ঠিত হয়, বরং কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে রাজধানীতে ফিরে আসার নির্দেশ ছিল তাদের। তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন অপরাধ তদন্ত বা অন্যান্য বিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বরং জনসংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে রাজধানীতে ফিরে আসে। তবে, এটা স্পষ্ট যে এটি ছিল শুধুই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নিয়মিত প্রাদেশিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। "পূর্ব প্রদেশ" বলতে ফরমানে কী বোঝানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই কর্মকর্তারা প্রকৃতপক্ষে প্রায় এক মাস পর রাজধানী ত্যাগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণায় ইয়ামাতোর ৬টি আগাতায় কর্মকর্তাদের নিয়োগের কথা বলা হয়, যাদের একইভাবে আদমশুমারি ও ভূমি নিবন্ধন করার আদেশ দেওয়া হয়। এই এলাকাগুলো ছিল তাকেচি, কাতসুরাকি, তোচি, শিকি, ইয়ামাবে ও সো — যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে শাসক বংশকে সরাসরি রাজস্ব সরবরাহ করত। ধারণা করা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের বিবরণ নির্ধারণের জন্য এগুলো পরীক্ষামূলক এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তৃতীয় ঘোষণায় প্রাসাদে একটি ডাকবাক্স ও একটি ঘণ্টা স্থাপনের কথা বলা হয়। যাদের কোনো অভিযোগ ছিল, তারা প্রথমে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। কিন্তু যদি তাদের সমস্যা উপেক্ষা করা হতো, তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ ওই বাক্সে ফেলে দিতে পারত। এমনকি তাতেও ফল না হলে তারা ঘণ্টা বাজাতে পারত। একজন কর্মকর্তা এসে তাদের সাথে কথা বলত। এটি ছিল চীনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। চতুর্থ ঘোষণাটি ছিল সন্তানদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত। যদি কোনো সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ই স্বাধীন হতো, তাহলে তাকে পিতার পরিবারের সাথে নথিভুক্ত করা হতো। কিন্তু যদি একজন অস্বাধীন হতো, তাহলে সন্তানকে সেই অস্বাধীন পিতামাতার সাথেই নথিভুক্ত করা হতো — সে পিতা হোক বা মাতা। যদি দুটি ভিন্ন মনিবের অধীন দুই অস্বাধীন ব্যক্তি সন্তান জন্ম দিত, তাহলে সন্তান মায়ের সাথেই থাকত। আমরা এই সময়কার অস্বাধীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব কমই জানি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অসংখ্য শ্রেণির লোক ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে সেবক ছিল যারা দাস ছিল না এবং যাদের বিক্রি করা যেত না, আবার এমন লোক ছিল যারা প্রকৃত দাস হিসেবে বিবেচিত হতো — সম্ভবত যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে থেকেই এসেছে তারা। নারা যুগে অপরাধীদের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাসত্বে দণ্ডিত করা যেত। অপরাধীদের সন্তানরা নিজেদের ইচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে পারত যেন তাদের পিতা-মাতার স্বাধীনতা বজায় থাকে। ঋণের কারণেও কেউ দাসত্বে পড়তে পারত। এই ফরমানের উদ্দেশ্য ছিল কর নির্ধারণের জন্য ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করা। অস্বাধীন ব্যক্তিদের থেকে সরাসরি কর নেওয়া হতো না, বরং তাদের মনিবের উপর সেই কর আরোপ হতো। এই ঘোষণাসমূহের শেষ পদক্ষেপ ছিল বৌদ্ধ মঠগুলোর নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রতিটি মঠে তিনজন কর্মকর্তা সহ একটি আদর্শ অভ্যন্তরীণ প্রশাসন গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন প্রণয়নের তৎপরতার ঠিক পরেই, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> ঘোষণা করে যে রাজকুমার ফুরুহিতো ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিবি নো কাসা নো ওমি শিতারু স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সহ-ষড়যন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করলে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ফুরুহিতোকে হত্যা করার জন্য সৈন্য পাঠানো হয় এবং সফলভাবে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযোগভুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দুইজন ছিলেন সোগা ও আয়া বংশের সদস্য। এই ধরনের ঘটনা পরবর্তী একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায়শই ঘটেছে। কোনটা প্রকৃত ষড়যন্ত্র ছিল আর কোনটা ছিল অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নির্মূল করার অজুহাত — তা বলা কঠিন। আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে উভয় ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। রাজকুমার নাকা নো ওয়ে/তেনচি টেনো-র শাসনামলেও এধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। তার সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কেউ কেউ প্রতিরোধ গঠনের চেষ্টা করেছে — এটা খুব অবাক করার মতো কিছু নয়। কিন্তু একই সাথে এটা ভাবাও যথার্থ যে তিনি জোসেফ স্তালিনের মতো অপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করতেন। বছরের শেষে প্রাসাদ আসুকা থেকে নানিওয়া-তে স্থানান্তর করা হয়। এটি ইনল্যান্ড সি-র তীরে অবস্থিত। ওজিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ওজিন ও তার পুত্র নিন্তোকু তাদের প্রাসাদ নানিওয়া-তে স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর এই প্রথমবার। নতুন বছরের প্রথম দিনেই, নানিওয়া-তে সরকার প্রধান সংস্কার ফরমান জারি করে। এটি জাপানে "নিউ ইয়ার্স ডে এডিক্ট" নামে পরিচিত। এটি ছিল দেশ শাসনের জন্য তাদের পরিকল্পনার সবচেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে তখনকার সব ধরনের জমির মালিকানা বাতিল করে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, সমস্ত জমি ও জনগণ সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জমির আয়ে জীবনযাপন না করে, অভিজাতরা (যারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা হবেন) বেতন পাবেন। এরপর অংশটির বাকি অংশে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে একটি রাজধানী, যার নিজস্ব কাঠামো ও কর্মকর্তা থাকবে, প্রদেশ ও জেলা গঠন করতে হবে, সেইসাথে ছোট ছোট ইউনিট যেমন প্রহরীসহ চৌকি, ডাক স্টেশন ও ঘোড়ার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রথমে এই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলোর মধ্যেই কার্যকর করা হবে। কোন অঞ্চল এতে অন্তর্ভুক্ত তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় অংশে ব্যাপক আদমশুমারি প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল একটি নিয়মিত ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা — যেটি তখন চীন ও কোগুরিয়োতে প্রচলিত ছিল। ফরমানে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে কিভাবে জমি চীনা একক — চো (২.৪৫ একর) ও তান (এক চো-এর দশমাংশ) — অনুযায়ী পরিমাপ করা হবে। পাশাপাশি প্রতি চো জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ধানের গুচ্ছের ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ অংশে তৎকালীন সমস্ত কর ব্যবস্থা বাতিল করে একটি সরলীকৃত করব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। এতে থাকবে ধানে পরিশোধযোগ্য ভূমি কর, নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশমি কাপড়ে নির্ধারিত মাথাপিছু কর (যা সমমূল্যের অন্য স্থানীয় পণ্যে পরিশোধ করা যাবে), ও একটি মানক শ্রম কর — যার মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ সজ্জিত সৈনিক ও ঘোড়া প্রদান, সাধারণ শ্রমিক এবং অভিজাতদের প্রাসাদে কাজ করার জন্য দাসী ও পরিচারিকা পাঠানোর ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে এই শ্রম কর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়। এই পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হয়নি — বরং কয়েক দশকের কঠিন পরিশ্রমের পরই তা বাস্তবায়িত হয়। অনেকের ধারণা, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যেভাবে ফরমানটি উপস্থাপিত হয়েছে, তা আসলে অনেক পরে রচিত হয়েছে — যখন এই সব ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর হয়ে গেছে, ফলে এটি যা সফল হয়েছে তা বর্ণনা করে, আসল উদ্দেশ্য নয়। তবে এটা সরাসরি চীন বা কোগুরিয়োর প্রশাসনিক আইনবিধি থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দেশগুলোতে প্রচলিত ব্যবস্থারই একটি সংস্করণ জাপানে প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি সফল হলে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত মোট সম্পদের অনেক বেশি অংশ সরকারের হাতে আসত। এটি সরকারকে অর্থ ব্যয়ে আরও স্বাধীনতা দিত। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এমনভাবে গঠিত ছিল যাতে অধিকাংশ সম্পদ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। অভিজাতদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন ব্যয় কমে যায়। এর ফলে জাপানের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারত। এটি কোরিয়াকে ঘিরে শুরু হওয়া অস্থিরতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে অনেক গবেষক উদ্বিগ্ন তান (৩০ * ১২ তসুবো বা ১৮০ * ৭২ ফুট জমি) ও চো (১০ তান) এককের সংজ্ঞা এবং এগুলোর জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট করহারের বিষয়ে। এই পরিমাপ পদ্ধতি হুবহু ৫০ বছর পর প্রণীত তাইহো বিধির মতো। এর আগে জমি পরিমাপের জন্য চো, তান ও তসুবো ব্যবহারের আর কোনো উদাহরণ নেই — ৬৮৯ সালের "আসুকা নো কিয়োমিহারা কোড"-এ এগুলো প্রথম দেখা যায়। এর আগে ব্যবহৃত একক ছিল "শিরো"। এটি প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ। এছাড়াও প্রদেশগুলোকে যে জেলাগুলোতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফরমানে বলা হয়েছে, "যদি কোনো জেলায় ৪০টি গ্রাম থাকে তবে তা বড়, যদি ৪-৩০টি গ্রাম থাকে তবে তা মাঝারি, আর ৩টির কম হলে তা ছোট জেলা।" তাইহো বিধিতেও একই ধারা আছে। তবে সেখানে জেলা ৫ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং আকার ভিন্ন। যদিও বিষয়বস্তু ভিন্ন। কিন্তু বিন্যাস ও ভাষা এক। নারা যুগে ব্যবহৃত জেলার সাধারণ শব্দ ছিল "কোরি" (郡)। এটি ফরমানে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীর মূল নথিতে এর কোন ব্যবহার নেই; সেখানে "হিয়ো" (評) ব্যবহৃত হয়েছে। ফরমানে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্যও নারা যুগের পদবী ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর নথিতে আলাদা নাম দেখা যায়। 郡 ও সংশ্লিষ্ট পদগুলো ছিল চীনা প্রভাবাধীন, আর 評 ও তার পদগুলো ছিল কোরিয়ান রাজ্যসমূহ থেকে আগত। এর ফলে ধারণা করা হয় না যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উদ্ধৃত ফরমানটি আসলে আসুকা কিয়োমিহারা বিধিমালার আগে বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্ণনা দেয়; বরং এটি একটি পরবর্তী সংস্করণ। যদি ফরমানের ওই অংশগুলো বৈধ না হয়। তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিত হব যে অন্য অংশগুলো বৈধ? প্রাচীন জমি ধারণের প্রথা বিলুপ্ত করার বিষয়ে প্রথম অনুচ্ছেদটি নিশ্চয়ই নারা যুগের কোনো উৎস থেকে নেওয়া হতে পারে না। চতুর্থ অনুচ্ছেদের যে বিধানগুলিতে এক ধরনের করকে অন্য ধরনের করের সাথে রূপান্তরের জন্য রেশম কাপড়কে মূল্যমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা তাইহো বিধিমালার অংশ নয়, কারণ তাইহো বিধিমালা কোনো করপ্রকারের রূপান্তরের অনুমতি দেয় না। সংরক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র লেখকদের কাছে ফরমানটির পূর্ণ পাঠ্য ছিল না। তাই তারা অনুপস্থিত অংশগুলো পূরণ করেছে। তবে দলিলটির মূল উদ্দেশ্য—বিদ্যমান জমি মালিকানা ও করব্যবস্থা বিলুপ্ত করা এবং চীনা ও কোরিয়ান মডেলের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি ব্যবস্থা স্থাপন—তা সত্য। সবশেষে, এটাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। প্রাচীন জাপানিরা এটি কেই রূপান্তরের সূচনা বলে গণ্য করে। একটি বিতর্কিত বিষয় হলো প্রাথমিক জমি বন্টন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করার কথা ছিল। তাইহো বিধিমালায় পরিবারের প্রতিটি কর্মক্ষম সদস্যের জন্য (বয়স, লিঙ্গ ও অবস্থান অনুসারে) নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির হিসাব রাখা এবং তারপর তা যোগ করে একটি পরিবারের মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করার বিশদ নিয়ম ছিল। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত ফসল কর নির্ধারিত হতো। বিকল্প পদ্ধতি ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি প্রতিটি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া, পরিবারের গঠনের বিস্তারিত বিবেচনা না করেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, "নববর্ষ ফরমান"-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের সঙ্গে কৃষকদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ভেঙে ফেলা এবং অভিজাতদের বেতনভোগী কর্মকর্তায় পরিণত করা। একই সঙ্গে কৃষক পরিবারগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করা হতো অতিরিক্ত হয়ে যেত। বরং বিদ্যমান কৃষি সম্প্রদায় ও তাদের গৃহস্থালিকে ধরে রেখেই নতুন ব্যবস্থাকে অপেক্ষাকৃত সহজ রাখা ছিল বেশি বাস্তবসম্মত। পরবর্তী সময়ে তাইহো বিধিমালার আদমশুমারি ও জমি পুনর্বণ্টন চক্র বাস্তবায়ন এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা এত জটিল ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতেন না। এও ধারণা করা হয় যে ৬৪৬ সালে এই ধরনের ব্যবস্থা একযোগে সারা দেশে প্রয়োগ করা যাবে না, সেটা সবাই বুঝেছিল, বরং ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে—যদিও ফরমানে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এই ফরমানে সাধারণ কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান প্রভাব পড়বে এমন কিছু ছিল না, করহার ব্যতীত। করহার বৃদ্ধি না হ্রাস—তা জানা যায় না। যদি রাজস্বের বড় অংশ রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। তবে পরিবহনের জন্য উল্লেখযোগ্য শ্রম প্রয়োজন হতো। জমি বন্টন ব্যবস্থায় জমি চাষ এবং কর প্রদানের প্রধান দায়িত্ব পরিবার একককে দেওয়া হয়েছিল। এটি বিদ্যমান প্রথার ধারাবাহিকতা ছিল, না নতুন কিছু—তা স্পষ্ট নয়। বিকল্প পদ্ধতি ছিল গ্রামকে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে মূল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু বানানো, যেখানে প্রতিটি গ্রামকে নির্দিষ্ট কর ধার্য করা হতো এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বন্টনের স্বাধীনতা থাকত। যদি কৃষকদের জন্য "বে" ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতো। তবে কোফুন যুগের জাপান হয়তো অনুরূপ কাঠামোর অধীনে ছিল এবং নতুন ব্যবস্থা হতো একটি বড় পরিবর্তন। ৬৪৬ সালের দ্বিতীয় মাসে আরও একটি সাধারণ ফরমান জারি হয় যা দুইটি বিষয় নিয়ে ছিল। এটি জাতীয় অভিযোগ বাক্সের পূর্ববর্তী ঘোষণাকে জোরদার ও সম্প্রসারিত করে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে নামবিহীন পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি ও জানানো হয় যে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আসা কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলা হয়, শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার কারণে যারা রাজধানীতে এসেছিল, তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায়ই বাড়ি ফিরে যেতে পারত না, কারণ কর্মকর্তারা ও অভিজাতরা তাদের অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত রাখত। সরকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয় যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মাসে পূর্ব প্রদেশে পাঠানো কর্মকর্তারা রাজধানীতে ফিরে আসে। একটি ফরমানে ঘোষণা করা হয় যে আটজন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুজন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে একটি বিস্তারিত ফরমান প্রকাশিত হয় যেখানে অভিযুক্তদের নামও উল্লেখ করা হয়। প্রধান সমস্যা ছিল কিছু কর্মকর্তা তাদের অবস্থানের অপব্যবহার করে করের টাকা আত্মসাৎ ও ঘুষ আদায় করেছিল। তাদের সব অর্থ ফেরত দিতে এবং চুরির দ্বিগুণ জরিমানা দিতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগের মাধ্যমেই তাদের অপরাধ প্রকাশ পায়। কিছু স্থানীয় অভিজাত স্বেচ্ছায় ঘুষ প্রদান করেছিল। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেতনার অংশ হিসেবে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এবং, নতুন প্রাসাদ নির্মাণজনিত কারণে জনগণের ওপর সৃষ্টি হওয়া ভোগান্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি সাধারণ ক্ষমাও দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, যারা প্রাসাদ নির্মাণে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত থাকায় অন্য কর প্রদানে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের সেই কর মওকুফ করা হয়। কয়েক দিন পর রাজপুত্র নাকা নো ওয়ে সম্রাটকে একটি পিটিশন দেন যেখানে তিনি অভিজাতদের হাতে থাকা কিছু ঐতিহ্যবাহী জমির মালিকানা বিলুপ্ত করার দাবি জানান এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে থাকা ৫২৪ জন ইম্বে (মূলত শিন্তো মন্দিরের কর্মী) ও ১৬১টি মিয়াকে (বিভিন্ন ধরণের রাজস্ব উৎপাদনকারী ইউনিট) সম্রাটকে ফিরিয়ে দেন। এরপর আরেকটি ফরমান জারি হয়। এটি কোফুন সমাধি নির্মাণ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আচার নিয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আকার ও ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ এবং চাষযোগ্য জমিতে সমাধি না বানানোর নিয়ম চালু করা। পূর্বে বর্ণিত ফরমানটিতেই বলা হয়েছিল যে একটি রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭০০০ শ্রমদিবস খরচ করা যাবে। নিম্নতর শ্রেণির জন্য সেই অনুপাতে সীমা নির্ধারিত হবে। আজকের জাদুঘরগুলোতে থাকা অতিরঞ্জিত কবর উপকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও বিবাহ রীতিনীতি নিয়ন্ত্রণে একটি বিশদ ফরমান, স্থানীয় রীতিনীতি পরিবর্তনে একটি ফরমান—যা দেশের মধ্যে অবাধ চলাচলে বাধা দিত। ব্যক্তিগত জমি বিলুপ্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আরও নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই ফরমানগুলো এবং ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অভিজাত অসন্তুষ্ট ছিল—তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন নেই। কিছু প্রমাণ আছে যে স্থানীয় অভিজাতরা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের সহযোগিতা স্বাগত জানিয়েছিল। ৬৪৪ সালের শরতে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কান্তো অঞ্চলের এক এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থানীয় ব্যক্তি প্রচার করেন যে একটি বিশেষ পোকা (সম্ভবত কোনো শুঁয়োপোকা) এক দেবতার দূত, যাকে উপাসনা করলে পরিশ্রম ছাড়াই সবাই ধন-সম্পদ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে মানুষ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং দল বেঁধে গান গেয়ে ও মদ্যপান করে ঘুরে বেড়াতে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিছু করতে অক্ষম ছিল। রাজধানী থেকে হাতা নো মিয়াতসুকো কাওয়াকাতসু নামে এক কর্মকর্তা এসে প্রচারককে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত সঙ্কটকালে ঘটে। ধারণা করা হয়েছে, এই আন্দোলনটি কোরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের রেশম উৎপাদন প্রতিষ্ঠার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছিল। “রেশমপোকা কোরিয়ানদের ধনী করে তোলে, তাহলে আমাদের শুঁয়োপোকাও হয়তো আমাদের ধনী করবে”—এইরকম ভাবনা হতে পারে। হাতা বংশ রেশম উৎপাদনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। তাই কেউ কেউ অনুমান করেন যে হাতা কাওয়াকাতসুকে পাঠানো হয়েছিল এ খোঁজ নিতে যে, স্থানীয়রা এমন কোনো পোকা পেয়েছে কি না। এটি দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রেশম তৈরি করা সম্ভব। পরবর্তী কোফুনসমূহের সংখ্যা ও পরিসরের পরিবর্তনের ভিত্তিতে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন, গ্রামীণ গোত্র প্রধানরা—কুনি নো মিয়াতসুকো—তাদের আধা-রাজকীয় মর্যাদা ও ক্ষমতা হারিয়েছিল। এটি গ্রামীণ অভিজাতদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে একটি প্রবণতা নির্দেশ করে, যার ফলে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় প্রশাসন কার্যকারিতা হারিয়েছিল। যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভর্নর পাঠানো শুরু করল, তখন তারা কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ করছিল। স্থানীয় অভিজাতদের দমন না করে বরং তাদের অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা হচ্ছিল। তবে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক আয়ের পরিবর্তে সরকার-নিযুক্ত বেতনভোগী হয়ে ওঠা একটি বড় পরিবর্তন ছিল এবং এটি কার্যকর হবে কি না—তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬৪৬ সালের ফরমান ধারায় একটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল যে যেসব অভিজাতদের ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের সবাইকে সরকারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং সরকারি বেতন প্রদান করা হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল, যারা সরকারি পদে নিয়োগ পাবে না, তারা কার্যত সাধারণ নাগরিক বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি সতর্কবার্তা ছিল যে কেউ যদি অবৈধভাবে অভিজাত পরিচয় দাবি করে। তবে তাদের সনাক্ত করে অপসারণ করা হবে। পরিবর্তনের গতি ৬৪৭ সালে ধীর হয়ে গেল। একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল যাতে শাসকদের নামের মধ্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলি শতাধিকারদের ব্যক্তিগত নাম এবং স্থান নামের জন্য ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। চীনে সাধারণত এমন নিয়ম ছিল যে সম্রাটের নাম লেখায় ব্যবহৃত অক্ষর এবং বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে, বিশেষত সেইসব যজ্ঞে যেখানে সম্রাট ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতেন, সেগুলি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত না। মানুষকে বিকল্প অক্ষর খুঁজে বের করতে হতো। এটি মনে হয় জাপানে সেই নিয়ম প্রয়োগ করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রধান পরিবর্তন ছিল ক্যাপ র‍্যাঙ্ক সিস্টেমের সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠন। পূর্বের বারোটি র‍্যাঙ্ককে ছয়টি করে সংকুচিত করা হয়েছিল, নীচে একটি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয় এবং উপরে ছয়টি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয়, ফলে প্রথমবারের মতো শীর্ষ অর্স্তাধিকারীদেরও এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়। তারপর, মাত্র দুই বছর পরে এটি আবার পুনর্গঠিত হয়। সেই ছয়টি সংকুচিত র‍্যাঙ্ক আবার বারোটি হয়ে যায়। শীর্ষ ছয়টি র‍্যাঙ্ক ব্যতীত বাকিগুলোর নাম আবার পরিবর্তিত হয়। কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া বুরোক্র্যাসির জটিলতার কারণে হয়েছে। র‍্যাঙ্কগুলো বেতন নির্ধারণের ভিত্তি হওয়ায়, বেশি র‍্যাঙ্ক মানে আরও বিভিন্ন বেতন স্তর। এই পুনর্গঠনের পর ৬৪৯ সালে শাসনরত বংশের রাজকুমার ছাড়া সকল শতাধিকারী এই সিস্টেমের আওতায় আসেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬৪৮ সালের একটি উল্লেখ আছে যেখানে বলা হয়েছে ৬৪৭ সালের র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রীরা পুরানো ক্যাপ ব্যবহার চালিয়ে গেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু অসন্তোষ ছিল। তাই ৬৪৯ সালে র‍্যাঙ্কের সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধি ও পরিবর্তন একটি প্রতিক্রিয়া ছিল, যাতে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে তাকে তার নিচের কাউকে সঙ্গে একই স্তরে ফেলা হচ্ছে না। আরেকটি পরিবর্তনের লক্ষণ ছিল ৬৪৭ সালে হাজিরা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘণ্টা ব্যবস্থার চালু হওয়া। কর্মকর্তাদের সকাল ৫টার মধ্যে প্রাসাদের বাইরে শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন ধরে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। ৫টায় ঘণ্টা বাজানো হতো এবং অফিসের দরজা খোলা হতো, সবাই ভিতরে ঢুকতে যথেষ্ট সময় পেলে আবার ঘণ্টা বাজিয়ে দরজা বন্ধ করা হতো এবং যারা দেরি করতো তাদের ঢুকতে দেওয়া হত না। সবাই সকাল ৬টার মধ্যে তার ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতে হতো। দুপুর ১২টায় কাজের সময় শেষের ঘণ্টা বাজানো হতো। খুব প্রাচীন একটি রীতির অংশ ছিল যে আদালতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সূর্যোদয়ের আগে বা ঠিক সময়ে করা হতো এবং এই অফিস সময়ের কাঠামো অনেকদিন বজায় ছিল। ১৯ র‍্যাঙ্কের সংশোধিত সিস্টেম ৬৪৯ সালের শুরুতে কার্যকর হয় এবং তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চীনা সিস্টেমভিত্তিক সরকারের বিভাগ, অফিস এবং ব্যুরো গঠন করা হবে। এটি তকমুনে নো কুরামারো এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু বিন দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হবে। এখন পর্যন্ত যা অর্জিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার দেওয়া যাক। এক, সম্রাটকেন্দ্রিক সরকারের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‍্যাঙ্ক সিস্টেম সম্প্রসারণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মানে হল সম্রাট এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করেন, পদোন্নতি দেয়। শতাধিকারীরা তাদের র‍্যাঙ্ক ভিত্তিক মর্যাদায় সংজ্ঞায়িত হবেন। দুই, সরকারের কেন্দ্রীয়করণ নিশ্চিত হয়েছে, প্রদেশগুলো সরাসরি প্রাসাদ থেকে পরিচালিত হবে একটি একক বুরোক্র্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে। তিন, সব জমি এবং তার উপর কাজ করা সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সম্পত্তি হবে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সব বাস্তবায়ন এখনও বাকি। কিন্তু নীতিগুলো স্থাপন করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ নেই। চার, এই নতুন সিস্টেম পরিচালনা করবে একই শতাধিকারীদের দল যারা পূর্বে শীর্ষে ছিল, যমাতো ও কাওয়াচি প্রদেশ থেকে। সরকার কাঠামো ও কার্যকারিতায় বিপ্লব ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর সদস্যত্ব জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে বিপ্লবের আওতায় আনা হচ্ছে না। সবাইকে তার বর্তমান মর্যাদানুযায়ী র‍্যাঙ্ক, পদ ও বেতন দেওয়া হবে। নতুন একটি চীনা রাজবংশ সাধারণত যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করতো। রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সফল সেনাপতি যাঁর শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। তিনি নতুন সরকারের নকশায় স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তাকে এমন কিছু তৈরি করতে হয়েছিল যা কার্যকর হত, নাহলে রাজবংশ দীর্ঘস্থায়ী হত না। সফল রাজবংশগুলো সাধারণত চীনা সরকারের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে কাজ করত। তাই নকশার স্বাধীনতা সীমিত ছিল। এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাই হোক না কেন, দেশের শাসনের সূক্ষ্ম কাজগুলি করতেন ঐতিহ্যবাহী অর্স্তাধিকারীরা। বিকল্প ছিল না। পুরাতন শাসন ব্যবস্থা নতুন নাম দিয়ে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। আসুকা যুগের বাকী সময়ের চ্যালেঞ্জ ছিল তা নিশ্চিত করা যে সেটি হবে না এবং সরকার সত্যিই পরিবর্তিত হবে, কেন্দ্রীভূত ও সংগঠিত হবে যাতে জাতীয় সম্পদের বৃহত্তর অংশ প্রাসাদের হাতে আসে এবং এই দেশকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়িত হলে সরকার সত্যিই দেশের সমৃদ্ধির সম্পূর্ণ অংশ কর ব্যবস্থায় আনবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে তার পুনর্বণ্টন ও ব্যয়। অধিকাংশ বেতন আকারে শতাধিকারীদের কাছে যাবে। তবে বাকিটা জাতি গঠনের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং বেতন ব্যবস্থা শতাধিকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন মন্ত্রণালয় ও র‍্যাঙ্ক সবই ভালো। কিন্তু মূল বিষয় ছিল দেশের কৃষকদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই নতুন সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কফুন রাজনীতি আবার প্রবেশ করল। ৬৪৯ সালের তৃতীয় মাসে সিনিয়র মন্ত্রী আবে নো কুরাহাশিমারো মারা গেলেন। মাত্র সাত দিন পর সোগা নো হিমুকা গোপনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে, বিশেষ করে রাজকুমার নাকা নো ওয়ের হত্যার পরিকল্পনা। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন এটা সত্য নয়। হিমুকা ছিল ইশিকাওয়ামারোর ছোট ভাই এবং নিজেই শীর্ষ মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নাকা নো ওয়ে এই তথ্য কোতোকু তেননোর কাছে পৌঁছে দেন। তিনি ইশিকাওয়ামারোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য官 পাঠান। ইশিকাওয়ামারো মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং সম্রাটের সাক্ষাৎ চান। কোতোকু তা মানেননি এবং সৈন্য পাঠিয়ে তাকে আটকাতে বলেছিলেন। ইশিকাওয়ামারো তার প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যমাতোর যমাদেরাতে গিয়েছিলেন, যেখানে তার বড় ছেলে মন্দির নির্মাণ পরিচালনা করছিল। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী ছেলে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইশিকাওয়ামারো রাজি হননি। তিনি ও তার পরিবার আত্মহত্যা করেন ফাঁস দিয়ে। তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরও অনেককে সরকার পরে ফাঁসি দেয় এবং বহুজনকে নির্বাসিত করা হয়। আরিস্টোক্রেসির সরকার গঠন করা কঠিন কারণ কাউকে সহজে বরখাস্ত করা যায় না। পরবর্তী ২৫০ বছরে আমি কেবল দুটি ক্ষেত্রে দেখেছি কেউ ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই কম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি involved ছিলেন যারা নিজস্ব বাহিনী গড়ার ক্ষমতা রাখত না। তারা হলেন নারা যুগের পুরোহিত দোকিও এবং হেইয়ান যুগের সুগাওয়ারা নো মিচিজানে, যারা উচ্চপদে উঠে পরে সাপোর্ট হারানোর পর পড়ে যান। তখন বা পরে কোনো কারাগার ব্যবস্থা ছিল না। মৃত্যুর কম শাস্তি ছিল নির্বাসন, যেখানে নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করা হত এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বসবাস করতে হত। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বহুজন নির্বাসনে পাঠানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন নির্বাসনের পথে বা ততক্ষণে। নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন অনেক নির্বাসিত পালিয়ে আত্মীয়দের কাছে লুকিয়ে ছিলেন। এটি একধরনের নরম বাড়ি নিরোধ। এই ঘটনার পেছনে নাকা নো ওয়ের ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন না সোগা পরিবারের কেউ সর্বোচ্চ পদে উঠুক। সোগা নো হিমুকাকে কিউশুতে স্থানান্তর করা হয়। এটি পরবর্তীকালে মার্জিত নির্বাসনের একটি রূপ (এটাই হয়েছে সুগাওয়ারা নো মিচিজানের ক্ষেত্রে)। কখনো কখনো অর্স্তাধিকারীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ জটিল হয়। নাকা নো ওয়ের প্রধান স্ত্রী ছিলেন ইশিকাওয়ামারোর মেয়ে এবং জিতো তেননোর মা। তিনি তার বাবার পতনের পর শোকেই মারা গিয়েছিলেন। এর চূড়ান্ত ফলাফল ছিল যে সরকারের শীর্ষে দুইটি পদ শূন্য ছিল। নতুন সদাইজিন হলেন কুসে নো ওমি টোকুতা এবং নতুন উডাইজিন হলেন ওতোমো নো মুরাজি নাকাতোকো। তারা দুজনেই নতুন ব্যবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছিলেন এবং এখন ৫ম শ্রেণীতে পদোন্নত হন। কুসে ৬৪৫ সাল থেকে সরকারের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ওতোমো ছিলেন একটি প্রধান গোত্রের প্রধান। আবে নো কুরাহাশিমারো এবং সোগা নো ইশিকাওয়ামারো নতুন পদবীর ব্যাজ পরতে অস্বীকার করেন এবং পুরানো মন্ত্রীদের টুপি পরতে চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ছিলেন নতুন পদবী ব্যবস্থায় প্রথম মন্ত্রীরা। তাদের নতুন পদবীর মানে ছিল যে নতুন ব্যবস্থার শীর্ষ চারটি পদ তখনই খালি ছিল। পরের বছর, ৬৫০ সালে, শাসনখাতের নাম পরিবর্তিত হয়ে তাইকা থেকে হাকুচি হয়ে যায়। এটা সম্ভবত একটি সংকেত হিসেবে দেওয়া হয়েছিল যে প্রধান সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন নতুন ব্যবস্থার সংহতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। নামটি এসেছে একটি সাদা ময়ুর দেখার ও ধরা পড়ার প্রতিবেদনের থেকে। এটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই পরিবর্তনের সাথে যথেষ্ট ভোজ ও আয়োজন ছিল। যে প্রদেশ (হোন্সু দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে) পাখিটি উপহার দিয়েছিল তাকে তিন বছর করমুক্ত রাখা হয় এবং ওই প্রদেশে ময়ুর শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। 'নিহন শোকি' থেকে বিচার করলে দেখা যায় শাসক হওয়ার সঙ্গে সবসময়ই প্রচুর আনুষ্ঠানিকতা জড়িত ছিল। কিন্তু তা বেশির ভাগ সময়ে গোপনে অনুষ্ঠিত হত। এখন আমরা দেখতে পাই সরকার প্রায়ই সকল কর্মকর্তাদের বৃহৎ আনুষ্ঠানিকতার জন্য মুক্ত আকাশের নিচে জড়ো করে। এই পর্যায়ে পরিষ্কার নয় সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি পেত কি না। তবে নিশ্চিতভাবে নারা এবং হেইয়ান যুগে রাজ পরিবার সংক্রান্ত অনেক অনুষ্ঠান এমনভাবে অনুষ্ঠিত হত যাতে মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা দেখার সুযোগ পেত। এটা সরকারের এবং সম্রাটের জাতির জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবার অংশ। ৬৫১ সালে সরকার ওকোরিতে ছয় বছর অবস্থানের পর নানিভাতে নতুন একটি প্রাসাদে চলে যায়, যার নাম নাগারা নো টয়োসাকি প্রাসাদ। 'নিহন শোকি' অনুযায়ী এই প্রাসাদের নির্মাণে অনেক কফুন ধ্বংস হয় এবং অনেক কৃষক স্থানান্তরিত হন, যাদের সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এটি একটি বড় নির্মাণ প্রকল্প ছিল। সরকার প্রবেশের পরও কাজ চলতে থাকে এবং এক বছর ছয় মাস পরে সম্পূর্ণ হয়। 'নিহন শোকি' বলেছে যে এটি দেশের পূর্ববর্তী যেকোনো নির্মাণের চেয়েও ভাস্বর ছিল। প্রাসাদের অবস্থান আবিষ্কৃত ও পুরাতাত্ত্বিকভাবে খনন করা হয়েছে। এটি ওসাকা ক্যাসল এর সাইটের ঠিক পাশেই, আধুনিক ওসাকার সেই এলাকায় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচ্চতর। ৬৫১ সালে সিল্লা থেকে পাঠানো দূতরা কিউশুতে তাং রাজবংশের চীনা পোশাক পরেছিলেন। এটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান পোশাক থেকে আলাদা। এ কারণে সরকার অনুমান করেছিল সিল্লা জাপানের সঙ্গে পরামর্শ না করেই চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং দূতাবাস প্রত্যাখ্যাত হয়। সিল্লা ৬৪৯ সালে রাজার প্রাসাদের পোশাক পরিবর্তন করে চীনা শৈলীতে নিয়ে যায়। দুই বছর পর, ৬৫৩ সালে জাপান দুইটি জাহাজ এবং ২৪২ জন নিয়ে চীনে দূতাবাস পাঠায়। ৬৫৪ সালে একটি দ্বিতীয় দূতাবাস পাঠানো হয় যার নেতৃত্ব দেন তাকামুনে কুরোমারো এবং আবে নো ওমি মারো। 'ওল্ড টাং হিস্ট্রি' (যেখানে নিউ টাং হিস্ট্রি ও আছে) দ্বিতীয় দূতাবাসের কথা উল্লেখ করেছে। তখন তাকামুনে হয়তো খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং তিনি চীনে মৃত্যুবরণ করেন। ৬৫৩ সালের দূতাবাসের দুটি জাহাজের মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে যায়, ১২১ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন বেঁচে যায়। ৬৫২ সালের প্রথম মাসে 'নিহন শোকি' খুব সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছে যে ওই মাসে জমির পুনর্বন্টন করা হয় এবং একই বছরের চতুর্থ মাসে জনগণনার রেজিস্টার তৈরি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য খুব কম দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি একটু অদ্ভুত, যেখানে বলা হয়েছে "প্রথম মাস থেকে এই মাস পর্যন্ত জমির পুনর্বন্টন সম্পন্ন হয়েছে।" সাধারণত জনগণনা আগে হয় যাতে জানা যায় কতগুলো পরিবার জমি পাবে। তাইহো কোড অনুযায়ী জনগণনা এবং পুনর্বন্টন চক্র ছয় বছর। অনুমান করা হয় যে ৬৪৬ সালে শুরু হওয়া পুনর্বন্টন কার্যক্রমটি শেষ হয়েছে এবং তারপর তিন মাস পর পরবর্তী চক্রের জনগণনা শুরু হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে সম্ভবত এই কাজ ছিল ইয়ামাতো অঞ্চলের ছয় আগাতার এবং সম্ভবত সাম্রাজ্যিক মিয়াকের জমিতে একটি ছোট পরীক্ষা প্রকল্প। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরবর্তী নিশ্চিত জমির পুনর্বন্টন বিবেচনা করে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন না যে তখন জাতীয় স্তরে পুনর্বন্টন হয়েছে। হিতাচি ফুডোকি অনুযায়ী ৬৪৯ সালে কাশিমা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৬৬৩ সালে শিনোডা, নামেকাতা ও ইওয়াকি জেলা তৈরি হয়। মনে হয় সরকার গ্রামীণ প্রশাসনের কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছিল এবং জনগণনা ও পুনর্বন্টন এখনও অনেক দূরে ছিল। ৬৫৩ সালে কোটোকু তেন্নো এবং নাকা নো ওয়ের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়। নাকা নো ওয়ে প্রাসাদকে ইয়ামাতো প্রদেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন এবং সম্রাট তা অস্বীকার করেন। তবুও নাকা নো ওয়ে চলে যান, তার মা — প্রাক্তন কোগোকু তেন্নো এবং বর্তমান সম্রাজ্ঞী (নাকা নো ওয়ের বোন) ও তার সন্তানদের সঙ্গে। কোনো ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট তারিখ নেই, শুধু বছর উল্লেখ আছে। পরবর্তী বছরের ১০ম মাসে সম্রাট অসুস্থ হন এবং সবাই নানিভায় ফিরে আসেন এবং সম্রাটের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয় যে নাকা নো ওয়ে ভেবেছিলেন সম্রাটকে সরকারের কেন্দ্রে আনার প্রচেষ্টা খুব সফল হয়েছে এবং তার নিজের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তাই নতুন ও ব্যয়বহুল নাগারা প্রাসাদে তেমন প্রস্তাব দেওয়া যা সম্রাট নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করবেন। এরপর রাগে সরে গিয়ে ইয়ামাতো চলে যান এবং সবাইকে তাদের আসল ক্ষমতাধারী কে তা ভাবতে বাধ্য করেন। গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ ব্যক্তি তার অনুসরণ করে ইয়ামাতো যান। একটি আধুনিক মতবাদ আছে যে বিরোধের আসল কারণ ছিল নাকা নো ওয়ে তার বোন সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। 'নিহন শোকি' সম্রাজ্ঞীকে পাঠানো সম্রাটের একটি কবিতা উদ্ধৃত করেছে যা এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই তত্ত্ব বলে যে এর জন্যই নাকা নো ওয়ে ২৩ বছর ধরে সিংহাসনে আরোহণ করতে চাননি। সম্রাট হলে তার কোনো গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা থাকত না এবং তিনি গোপনে সম্পর্ক রাখতে পারতেন না। এছাড়াও বলা হয় কোটোকু তেন্নোর মৃত্যুর পর নাকা নো ওয়ে প্রকাশ্যভাবে তার বোনকে স্ত্রী হিসেবে দেখতেন। এমন কিছু বিবাহকে আমরা অজাচার দাম্পত্য মনে করলেও রাজবংশে এসব সাধারণ ছিল। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। যদি এই বিবাহ সত্যি হয়, তা নিয়ম ভঙ্গ করত। পূর্বে এমন উদাহরণ আছ। মানুষেরা মনে করত নাকা নো ওয়ে ঐ সম্পর্ক চলাকালীন রীতিগতভাবে দুষিত ছিলেন। তাই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেননি। তিনি তখনই (৬৬৮ সালে) সম্রাট হন যখন তার বোন মারা যান। কোটোকু তেন্নোর একমাত্র পুত্র ছিলেন রাজকুমার আরিমা। কোটোকুর মৃত্যুকালে তিনি ১৫ বছর বয়সী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। পরিবর্তে তার মা দ্বিতীয়বার সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবার সাইমেই তেন্নো নামে পরিচিত। 'নিহন শোকি' এতে কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। এতে একটি বড় ঝুঁকি ছিল যে নিজের সিংহাসন গ্রহণ না করায় ভবিষ্যতে রাজকুমার আরিমা সিংহাসন পেতে পারে। এই কথাটি সমর্থন করে ধারণাটি যে ব্যক্তিগত জীবনের কারণে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করতে পারেননি। মৃত সম্রাটের দেহ তার মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পরে দাফন করা হয় এবং একই দিন রাজসভা ইয়ামাটোতে চলে যায়, আসুকায় ইটাবুকি প্রাসাদে অবস্থান নেয়। এই প্রাসাদে সাইমেই বাস করতেন যখন সোগা নো ইরুকার হত্যাকাণ্ড হয় এবং তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সাইমেই তখন প্রায় ৬২ বছর বয়সী ছিলেন। প্রায় এই সময়েই নাকা নো ওয়ের ছোট ভাই রাজকুমার ওয়ামা ২৫ বছর বয়সে রাজকাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন। নাকা নো ওয়ের পুত্র রাজকুমার ওতোমো তখন ৮ বছর এবং তার কন্যা উনো নো সরারা। তিনি পরবর্তীতে ওয়ামা ও জিতো তেন্নোর সম্রাজ্ঞী হন, ছিলেন ১১ বছর বয়সী। ইটাবুকি প্রাসাদ একটি অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে পরিকল্পিত ছিল, যেখানে নতুন একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হচ্ছিল যা নানিওয়ার প্রাসাদের চেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ হবে। ৬৫৫ সালের শেষে ইটাবুকি প্রাসাদ আগুনে পুড়ে যায় এবং তারা ইয়াহারা প্রাসাদে চলে যায়। রাজসভা তখন একাধিক বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে। <nowiki>''নিহন শোকি'' এই কাজগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় ও বিলাসিতার বিষয়ে জনসাধারণের অভিযোগ উল্লেখ করে। ''নিহন শোকি'' অনুসারে, ৬৫৭ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার আরিমা বিদ্রোহের প্রস্তুতি শুরু করেন। বলা হয়, তিনি সাইমেই তেন্নোকে একটি নির্দিষ্ট গরম জলের উৎসের উপকারিতা প্রশংসা করে রাজধনি ছাড়িয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন, যাতে তিনি তার অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা দখল করতে পারেন। প্রায় এক বছর পরে সম্রাজ্ঞী গরম জলের উৎসে যান। তখন আসুকায় সোগা নো ওমি নো আকায় দায়িত্বে ছিলেন। আকায় রাজকুমার আরিমার কাছে সাইমেই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে যান। প্রথমটি ছিল যে সরকার জনগণ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করছে, দ্বিতীয়টি ছিল যে কাজের জন্য অনেক মানুষকে খাল খননে বাধ্য করা হচ্ছে। তৃতীয়টি ছিল যে তিনি পাহাড়ের উপরে একটি ফুল দেখার মঞ্চ নির্মাণে সম্পদ অপচয় করছেন। তারা আটায়ের বাড়িতে গোপনে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু কথোপকথনের সময় হঠাৎ একটি হাতার ভেঙে যাওয়াকে তারা একটি অশুভ সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে পরিকল্পনা ভেঙে যায়। আটায়ে সঙ্গে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে রাজকুমার আরিমার প্রাসাদ ঘেরাও করেন এবং বার্তা পাঠিয়ে জানান যে রাজকুমার আরিমা রাজদ্রোহের পরিকল্পনা করছেন। ''নিহন শোকি''</nowiki> একটি অন্য বই থেকে উদ্ধৃত করে যেটি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার আলোচনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়, যেখানে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী রাজকুমার আরিমাকে সফল অভ্যুত্থান চালানোর জন্য অযোগ্য মনে করেন। শেষপর্যন্ত রাজকুমার আরিমা ও দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং আরও দুই জনকে নির্বাসিত করা হয়। সোগা নো আটায়ে ছিলেন নাকা নো ওয়ের গভীর বিশ্বাসভাজন। তিনি রাজপরিবারের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তার মেয়েকে নাকা নো ওয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি নাকা নো ওয়ের আদেশে রাজকুমার আরিমাকে ফাঁসিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে ক্ষমতার জন্য কাউকেই হুমকি হিসেবে দেখতেন। রাজকুমার আরিমা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "স্বর্গ ও আকায় জানেন যা ঘটেছে, আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ।" এই কাহিনী বেশ কয়েকটি কবিতায় উল্লেখ আছে, যার মধ্যে দুইটি তার মৃত্যুর আগের এবং রাজকুমার আরিমার প্রতি অভিজাতদের মধ্যে সমবেদনা প্রতিফলিত হয়। ৬৫৮ সালেও পূর্ব সীমানায় সামরিক অভিযান হয়। প্রাচীনকালে পূর্বের বর্বরদের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ছিল 蝦夷। এটি টোকুগাওয়া যুগ থেকে ইজো হিসেবে উচ্চারিত হয়। সেই সময় হোক্কাইডো দ্বীপকেও ইজো বলা হতো। তবে প্রাচীনকালে এটি এমিশি উচ্চারিত হত। এটি সোগা নো এমিশির ব্যক্তিগত নামের সঙ্গেই সম্পর্কিত। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশির বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিযান কিয়েকো তেন্নোর শাসনামলে উল্লেখ আছে। তিনি জিম্মু ও সুজিনের মধ্যকার কাল্পনিক শাসক বলে মনে করা হয়। এই ধরনের অভিযান নিয়ে অনেক কিংবদন্তি আছে। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এদের বিষয়ে খুব বেশি বিশ্বাসী নন। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশি জাতি একবারও নামকরণ করা হয়নি। এটি সম্ভবত প্রাচীন ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত হলেও সরকারী প্রকল্প ছিল না। ৪৭৮ সালের চীনের দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে জাপানি শাসক পূর্বে ৫৫টি এবং পশ্চিমে ৬৬টি বর্বর জাতিকে জয় করেছেন। 毛人 শব্দটি সম্ভবত সোগা নো এমিশির নাম লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি সাধারণ চীনা ভাষায় বর্বরদের অর্থ বহন করে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ শতকের শেষভাগে জাপানের দূরপ্রাচ্যের অনিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠী একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে। ৫৮৯ সালে ওমি নো ওমি মাতসু তোসান্দো পথ দিয়ে এমিশিদের সীমানা পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিছু ঐতিহাসিক এ ঘটনাকে অস্বীকার করলেও বেশিরভাগই সত্য মনে করেন। ৬৪২ সালে "কয়েক হাজার" এমিশি হোকুরিকুডো অঞ্চলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে, যাদের নেতাদের সোগা নো এমিশির ভাণ্ডারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ৬৪৫ সালে কূটনীতিক পরিবর্তনের পর পূর্বাঞ্চল পরিদর্শনে বিশেষ গভর্নর পাঠানো হয় এবং ৬৪৭ সালে নুতারি নামে কাঠের ঘেরযুক্ত দুর্গ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী বছর আরও একটি দুর্গ ইওয়াফুনে নির্মিত হয়। তারপর অভ্যন্তরীণ এলাকা থেকে মানুষ স্থানান্তরিত করা হয় দুর্গগুলোর খাদ্য ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য। নুতারি দুর্গের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে নীইগাতার একটি এলাকা এই নামে পরিচিত। ইওয়াফুনেও একটি আধুনিক নাম। এটি নীইগাতা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বছরগুলোর আলোচনায় এমিশি আসলে আয়নু কিনা বা তারা জাতিগতভাবে জাপানি হলেও ইয়ামাটো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত ধারণা ছিল তারা আয়নু, কারণ 蝦夷 শব্দটি আয়নু বোঝাতো। তারপর জানা গেল জাপানি জাতি ইয়ায়ই সংস্কৃতির সঙ্গে দেশে এসেছে, আর জোমোন সংস্কৃতি অন্য জাতির ছিল, যার অবশিষ্ট আয়নু হতে পারে। আয়নুদের দেহে তুলনামূলক বেশি শরীরের লোম থাকার জন্য 毛人 শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তবে সন্দেহ বাড়তে শুরু করে। এজো শব্দ আয়নু বোঝালে ও ইমিশি শব্দের একই অর্থ হওয়ার প্রমাণ নেই। চীনা অক্ষরের বহুবিধ ব্যবহার জাপানি ভাষায় স্বাভাবিক। তাই ইমিশি জনজাতি বোঝায় না বলে ধারণা বেশি প্রবল। জোমোন কঙ্কালের মনুষ্যবিজ্ঞানের গবেষণায় আয়নুদের সাথে তাদের মিল পাওয়া যায়নি। এমিশি হয়তো জোমোন বংশোদ্ভূত হলেও আয়নু নাও হতে পারে। তবে তারা বর্তমান আয়নু জনগোষ্ঠীর একাংশ হতে পারে এবং সাইবেরিয়া থেকে লোকেদের বিভিন্ন ঢল হোক্কাইডোতে এসেছে এটাও পাওয়া গেছে। 毛人 শব্দটি সম্ভবত প্রাকৃতিক লোমযুক্ত লোকদের জন্য নয় বরং পশম পরিধানকারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই এটি বিতর্কে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়। কোফুন যুগের খননায় এমিশিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে অনেক কফুন পাওয়া গেছে। কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও নেই যে সংঘর্ষের সময়কালে এই অঞ্চলে কোনো স্বতন্ত্র জাতির উপস্থিতি ছিল। মুৎসু ফুজিওয়ারা পরিবারের চার ধারাবাহিক প্রজন্মের মমি হিরাইসুমির চুসোনজি-তে সংরক্ষিত আছে, যেগুলি ১৯৫১ সালে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা গিয়েছিল যে তারা আইনু নয়, বরং জাপানিদের মতোই। এই পরিবারকে ব্যাপকভাবে ইমিশি বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আইনু ও জোমন জনসংখ্যার মধ্যে কোনো সত্যিকারের সংযোগ নেই কারণ তাদের মধ্যে কোনো ধারাবাহিক সম্পর্ক পাওয়া যায় না। হক্কাইডোতে প্রথম নিশ্চিত আইনু জীবাশ্ম অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। তবে এ থেকে ইমিশিরা জোমন বংশধর ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন মিটে যায় না। এখানে দেখা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন যে ইয়ায়োই ধানের চাষের সংস্কৃতি উত্তরপূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অভিবাসীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল এবং অনেক জোমন মানুষ নতুন জীবনযাত্রায় "রূপান্তরিত" হয়েছিল। ইয়ায়োই ধানের চাষের সর্বোত্তর সীমা "ইমিশি" অঞ্চলের ভিতরে ছিল এবং একই কথা কোফুন যুগের জীবাশ্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্য তত্ত্বগুলোর সমর্থকরা এখনও আছেন। তবে আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন ইমিশি হওয়ার মূল কারণ ছিল তারা ইয়ামাটো রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে ছিল, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিকভাবে পূর্ববর্তী "জাপানি" থেকে খুব ভিন্ন ছিল না যারা সীমান্তের অন্য পাশে বাস করত। আমি লক্ষ্য করেছি যে কখনোই কারও দ্বারা "ইমিশি ভাষা" শেখার চেষ্টা করার উল্লেখ নেই, অথচ সিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে "সিলা ভাষা" শেখার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ আছে। আমার প্রশ্ন, যার কোনও উত্তর আমি কখনো দেখিনি, তা হলো কেন সোঘা নো ইমিশির নামটা হল? বিশেষ করে ৬৪২ সালে যখন ইমিশিদের একটি দল দরবারে আসলো, তখন তাকে তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অবশ্যই কোনো সম্পর্ক ছিল। এমন ব্যক্তি যার মর্যাদা এত বড়, তার ইমিশিদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে উল্লেখযোগ্য সময় কাটানো সম্ভব নয়। তবে দেখা যায় ষষ্ঠ শতকে অনেক ইমিশিকে ইয়ামাটো অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং শাসক বংশের সম্পত্তির পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সোঘাদের এই ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা ছিল বলেও মনে হয় এবং এর ফলে তিনি ইমিশিদের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হতে পারতেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক অভিজাত ব্যক্তি যে নাম ব্যবহার করতেন, তা তার শৈশবের নাম ছিল না। আমেরিকান ভারতের মতো, যখন আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হতেন, আপনাকে একটি নতুন নাম দেওয়া হতো। এটি আপনার জন্য বিশেষ মানানসই হতে পারত। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে অনেক অদ্ভুত নাম ছিল, যার মধ্যে ইমিশিও একটি। ৬৫৮ সালের অভিযান আবে নো হিরাউ-এর নেতৃত্বে ছিল এবং এটি ৬৫৯ ও ৬৬০ সালেও পুনরাবৃত্তি হয়। বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর। ধারণা করা হয় <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকগণ বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং আসলে অভিযানের সংখ্যা কম, সম্ভবত দুইটি। সংক্ষিপ্ত সারাংশ হলো, ৬৫৮ সালে আবে ১৮০টি নৌকায় উত্তরে গিয়ে আকিতা ও নুশিরো (সম্ভবত আধুনিক আকিতা ও নোশিরো) পৌঁছান। সেখানে তিনি তিনটি আলাদা ইমিশি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাদের আনুগত্যের শপথ করান, স্থানীয় প্রশাসনের পদে নিযুক্ত করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। পরের বছর ৬৫৯-এ আবার ১৮০ নৌকায় একই স্থানে গিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দেখা করেন, যাদের মধ্যে কেউ তাঁকে রাজধানীর জন্য একটি স্থান বেছে নিতে বলেন এবং তিনি তা করেন। আবারো তিনি পদবী ও প্রশাসনিক দায়িত্ব বন্টন করে ফিরে আসেন। ৬৬০ সালে পরিস্থিতি আলাদা। শুরুতেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> বলে যে তিনি সু-শেন (粛慎) দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। বিবরণে বলা হয়েছে, তিনি উত্তর দিকে একটি অবর্ণিত নদী পর্যন্ত যাত্রা করেন, যেখানে ২০টি সু-শেন জাহাজ থেকে পালাচ্ছিল ১০০০ জন ইমিশিকে। আবে সু-শেনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন, তারপর এমন এক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন যা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকদের বিভ্রান্ত করে তোলে, কিন্তু যেকোনো নৃতত্ত্বের ছাত্রের কাছে স্পষ্ট। শেষে সু-শেনদের একটি দুর্গায় অনুসরণ করে তাদের ধ্বংস করে দেন। এ ব্যাপারে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যেমন স্থানীয় নামগুলো কোথায় ছিল, আসলে তিনটি অভিযান হয়েছিল কি না, ৬৫৯ সালের অভিযানটি ৬৫৮ সালের ভুল পুনরাবৃত্তি কিনা। সু-শেন কারা ছিলেন। ভৌগোলিক বিতর্ক প্রধানত আবে হক্কাইডো পর্যন্ত গিয়েছিলেন কি না তা নিয়েই। ৬৫৮ সালের নোটিশ বলে আবে ১৮০ নৌকায় আকিতা ও নুশিরোতে পৌঁছান। আকিতা নোটারি ও ইওয়াফুনের চেয়ে অনেক উত্তরে। আকিতা নারা যুগে এই অঞ্চলের যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান কেন্দ্র ছিল। নুশিরো সম্ভবত আধুনিক নোশিরো, আকিতার কাছাকাছি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদ্বীপের অন্য পাশে। আকিতায় আবে স্থানীয় ইমিশিদের সঙ্গে মিলিত হন, যারা একত্রিত হয়ে দেবতার নামে দরবারের প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন। আজকের দিনে আকিতা কিল্লার স্থানে একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যাকে কোশিও জিনজা বলা হয়, অর্থাৎ "কোশির দেবতার মন্দির।" আবে ইমিশি নেতাদের সরকারি পদ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেন। তারপর, <nowiki>''নিহন শোকি'' বলে, তিনি ওয়াতারিনোশিমার অন্য একটি ইমিশি দলকে আরিমা বিচে ডেকে পাঠান, যারা তাদেরও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর তাদের দেশে পাঠানো হয়। এরপর আবে দেশে ফিরে আসেন। প্রশ্ন হলো, ওয়াতারিনোশিমা ("যে দ্বীপ পার হয়ে যায়") কোথায় ছিল? অনেকদিন ধরে ধরে নেওয়া হয়েছে যে এটি দক্ষিণ হক্কাইডো। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন আবে এত দূর যেতে পারেননি এবং এটি হয়তো উত্তরের ত্সুগারু উপদ্বীপ। এটি প্রাচীনকালে অনেকটাই দ্বীপের মতো ছিল কারণ এটি শুধুমাত্র নৌকায় যাত্রা করে পৌঁছানো যেত, কারণ এটি হনশু থেকে পর্বতমালার একটি বিস্তীর্ণ বেল্ট দ্বারা পৃথক ছিল। এমনকি তাও হয়তো অনেক দূর, কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকরা ত্সুগারু অঞ্চলকে হক্কাইডোর সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন, হনশুর আরও দক্ষিণের ইমিশিদের তুলনায়। একমাত্র সত্যিকারের ইঙ্গিত হলো ''নিহন শোকি''</nowiki> কোনো অতিরিক্ত যাত্রার কথা বলছে না, শুধু বলছে ওয়াতারিনোশিমার ইমিশিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ৬৬০ সালের অভিযান আরও জটিল। প্রথমত, সু-শেন (粛慎) নামটি প্রাচীন চীনা ইতিহাস থেকে, চৌ রাজবংশ থেকে। চীনারা মাঝে মাঝে এই নাম ব্যবহার করত মাঞ্চুরিয়ার মানুষের জন্য যাদের ইয়িলৌ বলা হত এবং যাদেরকে বিশ্বাস করা হয় জুরচেনদের পূর্বপুরুষ যারা লিয়াও রাজবংশ গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ, তারা এমন এক জনগোষ্ঠী যারা পুয়ো (পূর্বপুরুষের জাপানি ধারণা) এর মতো ছিল এবং একই মাঞ্চুরিয়ান অঞ্চলে বাস করত। তারা কীভাবে হক্কাইডোর চারপাশে নৌকা চালাত তা সহজে বোঝা যায় না। এক মত হলো, জাপানিরা কোনো চীনা গ্রন্থ থেকে নামটি তুলে নিয়েছিল। জাপানি উচ্চারণে এটা মিশিহাসে ছিল, কিন্তু এর কোনো প্রতিপাদ্য নেই। এই সময় জাপান কোগুরোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যাদের নিশ্চয়ই মাঞ্চুরিয়ার সব জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল। হয়তো তারা আমাদের চেয়ে বেশি জানত। অথবা ধারণা করা হয়, প্রাচীন সু-শেন চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছিল এবং এই লোকেরা জাপানের উত্তর-পূর্বে ছিল। তাই সু-শেন নামটি তাদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন এটি ওখোটস্ক জনগণের সঙ্গে মেল খায়, যারা সাইবেরিয়া থেকে হক্কাইডোর অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা সহজেই হনশুর দক্ষিণে অনুসন্ধানকারী দল পাঠিয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এই নিবন্ধে বর্ণিত একটি ধরনের অন্ধ ব্যবসা। এটি বিশ্বব্যাপী বহু স্থানে দেখা যায় যেখানে মানুষ দাসপ্রথার ভয়ে বা ভাষাগত অমিলের কারণে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলে। এক পক্ষ মাটিতে নানা পণ্য ছড়িয়ে রেখে চলে যায়। অন্য পক্ষ এসে তা দেখে তাদের পণ্য দেয়। এভাবে লেনদেন চলে যতক্ষণ দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়। তারপর প্রত্যেক দল তাদের কেনা জিনিস ও অবিক্রিত জিনিস নিয়ে চলে যায় এবং কেউ কারো কাছাকাছি আসেনা। এটি নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকরা বুঝতে পারেননি এটি একটি বাণিজ্য। এরপর বলা হয়েছে আবে তাদের শিবিরে অনুসরণ করে আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এর কোনো কারণ দেওয়া হয়নি। পুরো ঘটনা রহস্যময় এবং সম্ভবত <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র উপস্থাপনার চেয়ে অনেক জটিল ছিল। তবে এটি হনশুর দূর উত্তরে জাপানি সরকারের দীর্ঘমেয়াদী জড়িত হওয়ার সূচনা, যেখানে পরবর্তী ২০০ বছর ধরে একটি "সক্রিয়" সীমান্ত ছিল। == পাইকচের পতন == একই সাথে আবে নো হিরাওয়ের ৬৬০ সালের অভিযানের সাথে সাথে জাপান তাং চীন এবং সিল্লার সম্মিলিত বাহিনীর হাতে পাইকচে ধ্বংসের কবলে পড়ে। এটি এই অঞ্চলে একটি অশান্ত সময়ের সূচনা করেছিল যা শেষ পর্যন্ত সিলার শাসনের অধীনে কোরিয়ার একীকরণের দিকে পরিচালিত করে। পুরোনো এবং নতুন তাং রাজবংশীয় ইতিহাস, কোরীয় ''সামগুক সাগি'' এবং ''নিহন শোকিতে'' এই ঘটনাগুলির বিশদ বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যথায় অজানা কোরীয় উপকরণ থেকে বিস্তৃত উদ্ধৃতি রয়েছে। জাপান পাইকচেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য কোরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল এবং চীন বা সিল্লা বা উভয়ের আক্রমণের ভয়ে দীর্ঘকাল ধরে বাস করেছিল। জাপান দরবারে কমপক্ষে প্রথম নারা যুগে নির্বাসনে থাকা পাইকচের রাজাও বজায় রেখেছিল এবং হেইয়ান যুগের শেষের দিকে এখনও সক্রিয় ছিল 百済王 নামে একটি অভিজাত পরিবার "পাইকচের রাজা" পায়েচের জাপানি নামটি রাজার জন্য কোরীয় শব্দের সাথে একত্রিত করে কুদারানোকোনিকিশি উচ্চারণ করেন। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ৬৪৯ সালে সিল্লা চীনা শৈলীর সাথে মেলে দরবারে সরকারী পোশাক পরিবর্তন করেন এবং ৬৫০ সালে এটি তাং রাজবংশের রাজত্বের উপাধিগুলি নিজের হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ৬৫৪ সালে কিম মুরিওল সিলার রাজা হন। এর আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিল্লা দূতাবাস নিয়ে জাপান ও চীন সফর করেন। পূর্ববর্তী দুই সিল্লা শাসক রানী ছিলেন। তাই তার অবস্থান সম্ভবত যুবরাজ নাকা নো ওয়ের মতো এতটা ভিন্ন ছিল না। পরিস্থিতি যেভাবে এগিয়েছে তা থেকে এটি যুক্তিসঙ্গতভাবে স্পষ্ট যে চীন এবং সিল্লা উভয়ই শুরু থেকেই তার নিকটতম শত্রু পাইকচে এবং কোগুরিওকে ধ্বংস করতে এবং তারপরে কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণে আবির্ভূত হওয়ার জন্য একে অপরকে ব্যবহার করার আশা করেছিল। পাইকচে এবং কোগুরিও একে অপরের সাথে মিত্রতা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল এবং ৬৫৯ সালে তারা সিল্লার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে যা ২০ টি দুর্গ দখল করে। সিল্লা চীন থেকে সাহায্যের অনুরোধ করে এবং চীন সাড়া দিয়ে খুশি হয়েছিল। ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মুরিওলের এক পুত্রের সাথে একজন চীনা জেনারেলের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়। তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে সেই সময় চীনে ছিলেন। এই বাহিনীতে ১,৩০,০০০ সৈন্য ছিল এবং সমুদ্রপথে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল "সু-শেন" এর বিরুদ্ধে আবে নো হিরাওয়ের যুদ্ধের ঠিক একই সময়। বিস্মিত হয়ে পাইকচে সেনাবাহিনীর পতন ঘটে। পশ্চিম দিকের উপকূল থেকে অগ্রসর হওয়া চীনারা এবং পূর্ব দিক থেকে আসা একটি সিল্লা সেনাবাহিনী পাইকচে রাজধানীতে একত্রিত হয়েছিল। এটি দ্রুত আত্মসমর্পণ করেছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইকচে ধ্বংস হয়ে যায় বা তাই মনে হয়েছিল। রাজা এবং বিপুল সংখ্যক অভিজাতদের বন্দী হিসাবে চীনে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং পাইকচেকে চীনা অঞ্চল হিসাবে সংগঠিত করা হয়েছিল। চীনা সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশ তৎক্ষণাৎ ফিরে আসে, প্রাক্তন পাইকচে রাজধানীতে আরও ৮,০০০ সিল্লা সেনার সমর্থনে ১০,০০০ লোকের একটি বাহিনী রেখে যায়। তবে, গ্রামাঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই করা হয়নি এবং চীনা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার শেষ করার আগেই বিদ্রোহী বাহিনী তাৎক্ষনিকভাবে অনেক জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' এই বিদ্রোহের বিবরণের বিষয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিকর। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাথমিক বিদ্রোহী ছিলেন 鬼室福信 নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত কৃষকদের দ্বারা একটি সিল্লা বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করেন এবং তাদের অস্ত্র নিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টতই একজন পাইকচে কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি পাইকচে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছিলেন। প্রায় একই সময়ে পাইকচে থেকে লোকেরা জাপানের দরবারে এসে কী ঘটেছিল তা জানায়। এক মাস পরে 鬼室福信 থেকে দূত এবং আরেকজন নেতৃস্থানীয় বিদ্রোহী কমান্ডার 佘自進 জাপানে এসে সাহায্য চেয়েছিলেন। জাপানি দরবারে একজন পাইকচে রাজপুত্র বাস করছিলেন এবং তারা তাকে রাজা বানানোর এবং পাইকচে পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করেন। এতে নিজেদের সম্পৃক্ত করা স্পষ্টতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কিছু না করাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বছরের শেষে আদালত তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেয় কারণ সাইমেই এবং দরবার নানিওয়ায় চলে যায় এবং পুরো দরবারকে উত্তর কিউশুতে স্থানান্তরিত করার প্রস্তুতি শুরু করে, যেখান থেকে তারা আসন্ন যুদ্ধের নির্দেশ দেবে। নানিওয়ায় পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পরে তারা ৬৬১ সালের প্রথম মাসে কিউশুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিন দিন পরে তারা কিবিতে পৌঁছেছিল, যেখানে এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এই পদক্ষেপটি কতটা বিস্তৃত ছিল কারণ রাজকুমার ওমার স্ত্রী একটি বাচ্চা মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। এই অভিযানের সময় আরও বেশ কয়েকটি রাজকীয় শিশুর জন্ম হয়েছিল। তারা আট দিনের মধ্যে পশ্চিম শিকোকুর আধুনিক মাতসুয়ামা অঞ্চলে পৌঁছেছিল এবং সেখানে কিছুক্ষণের জন্য শিবির স্থাপন করেছিল। দুই মাস পরে তারা কিউশুতে স্থানান্তর সম্পন্ন করে, হাকাটা বেতে পৌঁছে। তারা সেই সময়ে একটি অস্থায়ী প্রাসাদ স্থাপন করেছিল তবে দুই মাস পরে এটি একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬৬১ এর ৭ তম মাসে সাইমেই তেন্নো মারা যান। স্থানীয় ঐতিহ্য তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিল যে অস্থায়ী প্রাসাদের জন্য কাঠ নিকটবর্তী একটি মন্দির ভেঙে উপরে পড়েছিল। যুবরাজ নাকা নো ওই সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন এবং সম্রাটের পদ গ্রহণের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেননি। সঠিকভাবে বলতে গেলে তখন একটি অন্তর্বর্তীকাল ছিল। তবে ৬৬২ সাল থেকে তেনচি তেন্নোর রাজত্বের বছর গণনা শুরু করা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম বিচ্ছিন্নতা ৬৬২ সালের প্রথম মাসে আজুমি নো মুরাজি হিরাউয়ের কমান্ডে কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় শুরু হয়। তাঁর সাথে ছিলেন পাইকচে রাজপুত্র, ইয়ামাবে নো ওমি মোমো, সাই নো মুরাজি আজিমাসা, হাতা নো মিয়াৎসুকো তাকুতসু এবং ৫,০০০ পুরুষ। তারা পঞ্চম মাসে কোরিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের কাছে ১০০,০০০ তীর এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ সরবরাহ করেছিল। ইতিমধ্যে চীনারা একজন নতুন কমান্ডার নিয়োগ করে এবং সিল্লা পাইকচেতে অতিরিক্ত সৈন্যও প্রেরণ করে। সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোরীয় বিদ্রোহীরা সাবেক রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেয়। ৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ বিদ্রোহীরা পাইকচের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬৬৩ এর গোড়ার দিকে সিল্লা একটি বড় আক্রমণ শুরু করে এবং বিদ্রোহীদের পিছু হটতে হয়েছিল। তবে চতুর্থ মাসে দ্বিতীয় জাপানি সেনাবাহিনী ২৭,০০০ পুরুষ নিয়ে এসেছিল। কমান্ডার ছিলেন কামিতসুকেনু নো কিমি ওয়াকাকো। এই নামের অর্থ তিনি পূর্ব জাপানের কান্টো অঞ্চল এবং কুনিনোমিয়াৎসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাশিহিতো নো ওমি ওফুতা, কোসে নো কামিসাকি নো ওমি ওসা, মিওয়া নো কিমি নেমারো, আবে নো হিকিতা নো ওমি হিরাও এবং ওয়াকে নো ওমি কামায়ে। এই শক্তিবৃদ্ধির সাথে বিদ্রোহীরা আবার আধিপত্য অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো জাপানিদের কোরিয়ায় মোট ৩২,০০০ পুরুষ ছিল এবং বাহিনীটি স্পষ্টতই রচনায় দেশব্যাপী ছিল। ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত নামগুলি থেকে এটি বলা সম্ভব যে সেখানে কিউশু এবং শিকোকুর প্রায় প্রতিটি প্রদেশ এবং সুদূর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে সৈন্য ছিল। ধারণা করা হয় যে, দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর সাথে আবে নো ওমি হিরাও একই ব্যক্তি যিনি উত্তর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রায় একই সময়ে, পাইকচে বিজয়ের মূল চীনা কমান্ডার ৭,০০০ লোক নিয়ে ফিরে আসেন। ঠিক এই মুহুর্তে কোরীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে বিদ্রোহটি প্রায় মারাত্মক আঘাত হানে। পাইকচে রাজকুমার রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। ৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ম মাসে চীন ও সিল্লা উভয়ই কোরিয়ান উপকূলে মিলিত হয়ে একসাথে অভিযান চালানোর জন্য বিশাল শক্তিবৃদ্ধি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। একই সময়ে জাপানিরা একটি তৃতীয় বাহিনী প্রেরণ করেছিল যা চীনাদের দ্বারা বেঁছে নেওয়া ঠিক একই বিন্দুতে উপকূলে অবতরণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। এই পদক্ষেপটি রাজকুমার 豊璋 দ্বারা আক্রমণের সাথে সমন্বয় করার কথা ছিল। জড়িত জাপানি সেনারা একটি নতুন বাহিনী ছিল নাকি কামিতসুকেনু নো কিমি নো ওয়াকাকোর অধীনে ২৭,০০০ থেকে একটি বিচ্ছিন্নতা ছিল তা স্পষ্ট নয়। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে ১০,০০০ পুরুষ ছিল। চীনা ও সিল্লা অভিযাত্রীরা ৬৬৩ সালের ৮ম মাসের ১৭তম দিনে যোগাযোগ করে। চীনা নৌবহরে ১৭০টি জাহাজ ছিল। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে জাপানি বাহিনী ১০ দিন পরে এসে চীনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যা দু'দিন স্থায়ী হয়। জাপানিরা একে হাকুসুকি নো ই বা হাকুসুকি উপসাগরের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে। ''সামগুক সাগি'' বিবরণে বলা হয়েছে যে জাপানিদের "১০০০ জাহাজ ছিল", সম্ভবত এটি অতিরঞ্জিত। জাপানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং মূলত সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে দেখা যাচ্ছে যে জাপানিরা চীনা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য সমস্ত কিছু বাজি ধরেছিল এবং চীনা ডানা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে ঘিরে ফেলেছিল। পুরোনো তাংয়ের ইতিহাস বলছে যে চারটি পৃথক লড়াই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৪০০ জাপানি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল এবং এগুলোর কর্মীরা ডুবে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তির পরে উপকূলে সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত যুবরাজ সংগ্রাম ত্যাগ করে কোগুরিওতে পালিয়ে যান। জাপানিরা বিপুল সংখ্যক পাইকচে শরণার্থী সহ তাদের অন্যান্য সেনাবাহিনীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। আসলে এখানেই গল্পের শেষ নয়। পরে চীনারা তাদের বেশিরভাগ বাহিনীকে কোগুরিও আক্রমণের জন্য স্থানান্তরিত করে এবং পাইকচে আবার বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। এবার সিল্লা বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং চীনের বিরুদ্ধে কোগুরিওতে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের সাথে জোটবদ্ধ হয় এবং চীনাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে সফল হয়। এরপরে তারা সিল্লার একীভূত রাজ্যের অধীনে এই অঞ্চলের প্রাক্তন পাইকচে শাসক পরিবারের গভর্নর হন। স্বাভাবিকভাবেই, নাকা নো ওকে এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করতে হয়েছিল যে চীনা এবং বা সিল্লা বাহিনী অবিলম্বে বা ভবিষ্যতের কোনও সময়ে জাপান আক্রমণ করবে। তবে এই বিপর্যয় দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেবে কিনা তা নিয়েও তাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়েছে। এটি স্পষ্ট নয়। তবে এটি প্রদর্শিত হয় যে তিনি ৬৬৩ এর শেষের কিছু সময় আগে ইয়ামাতোতে ফিরে আসেন। আক্রমণ থেকে কিউশুর প্রতিরক্ষার জন্য তিনি যা করতে পারেন তা করেন। এই সময়ে তিনি সিংহাসনে আরোহণের বিষয়ে কিছুই করেননি এই বিষয়টি সাধারণত এই প্রস্তাবের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে গ্রহণ করা হয় যে, তিনি তার বোন রাজকুমারেস হাশিহিতোর সাথে অজাচারি বিবাহ করেন। ''নিহন শোকির'' একটি বিবরণ রয়েছে যে ইঙ্গিও তেন্নোর মৃত্যুর পরে অভিজাতরা ঠিক একই কারণে তার উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে বসাতে অস্বীকার করেছিল এবং পরিবর্তে তার ছোট ভাইকে বেছে নিয়েছিল। এর অর্থ হলো নাকা নো ও এটি চেষ্টা করার সাহস করেনি। এবার তিনি কেবল সিংহাসন খালি রেখেছিলেন, উপযুক্ত আসন গ্রহীতা উপলব্ধ ছিল না। তবে, এটি অবশ্যই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে কেউ তার বিরুদ্ধে যেতে সক্ষম হতে পারে। এই সময়ে তার প্রধান সুবিধা ছিল যে যেহেতু তিনি ইতিমধ্যে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং রাজকুমার আরিমাকে নিষ্পত্তি করেন। তাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প ছিলেন তার নিজের ভাই রাজকুমার ওমা। এই যুগে ভাইয়েরা ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার প্রতিটি বৈশিষ্ট্য দিয়েছিলেন। নাকা নো ওই তার দুই মেয়েকে ওমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। তারা হলেন রাজকুমারী ওটা এবং রাজকুমরী উনো নো সারারা। উনো নো সারারা ৬৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ বছর বয়সে ৬৫৭ সালে ওমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন (জাপানি গণনা)। ধারণা করা হয়, রাজকুমার ওমার বয়স তখন ২৭ বছর। অবশেষে, ওমা নাকা নো ওয়ের চার কন্যাকে বিয়ে করেন, শেষ দু'জন তিনি সম্রাট হওয়ার পরে। সাম্রাজ্যবাদী/অভিজাত যৌন জীবন সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত টীকা রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। জাপানি কবিতার প্রথম সংকলন ''মানিয়োশু''-এ একটি রাজকুমারী নুকাতার ৩ টি দীর্ঘ কবিতা এবং ৯ টি সংক্ষিপ্ত কবিতা রয়েছে। এই কবিতাগুলির মধ্যে কয়েকটি স্পষ্ট করে দেয় যে তিনি নাকা নো ও / তেনচি তেন্নোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তিনি ''নিহন শোকির'' তালিকাভুক্ত নন। সম্রাটদের স্ত্রীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া একমাত্র স্ত্রীই রাজপুত্র বা রাজকন্যার জন্ম দিয়েছেন। যে-সম্পর্ক কোনো সন্তান জন্ম দেয় না, সেটাকে প্রকৃত বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হতো না, এটি বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত ছিল। রাজকন্যা নুকাতা তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে ''নিহন শোকিতে'' তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এটি প্রথমে তাঁর সম্রাজ্ঞী এবং সমস্ত স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে যারা রাজকন্যা ছিলেন, তারপরে সমস্ত স্ত্রী যারা আভিজাত্যের কন্যা ছিলেন এবং তারপরে এটি রাজকন্যা নুকাতাকে কেবল একজন মহিলা হিসাবে উল্লেখ করে যার সাথে তার একটি সন্তান ছিল। এই শিশু, রাজকুমারী তোচি, পরে তেনচি তেন্নোর ছেলে রাজকুমার ওটোমোকে বিয়ে করেন। আমাদের মানদণ্ড অনুসারে এই মানুষগুলোর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হিসেবে অত্যন্ত অজাচার। রাজকুমার নাকা নো ওই এবং রাজকুমারেস হাশিহিতো টাবুর মধ্যে একমাত্র যে বিষয়টি (অনুমিত) যোগাযোগ তৈরি করেছিল তা হলো তাদের মা একই ছিলেন। একই পিতার সাথে মানুষের মধ্যে বিবাহ কিন্তু ভিন্ন মায়ের মধ্যে সাধারণ ছিল। লোকেরা রাজকুমারেস নুকাতা এবং তার চক্র সম্পর্কে প্রচুর তথ্য বের করতে সক্ষম হয়েছে, চিত্রিত করে যে অভিজাতদের মধ্যে সাক্ষরতার বিস্তার এবং একটি সাহিত্যিক চরিত্রের বইয়ের উপস্থিতির সাথে সাথে লোকেরা কীভাবে তাদের জীবনযাপন করেছিল সে সম্পর্কে আমাদের জিনিসগুলি জানার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ৬৫৮ সালে সাদাইজিন কোসে নো টোকুটা মারা গিয়েছিলেন এবং প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, যুবরাজ ওমা উপাধি গ্রহণ না করেই এই পদে কাজ করেন, যেহেতু এই সময় পর্যন্ত কোনও রাজপুত্রের মন্ত্রীর উপাধি গ্রহণের কোনও নজির ছিল না। সম্ভবত এটিই সাদাইজিনের চেয়ে উচ্চতর একটি নতুন পদ তৈরির কারণ ছিল, যাকে বলা হয় দাজোদাইজিন বা ওমাতসুরিগোতো নো মায়েস্তুকিমি, একে প্রায়শই অনুবাদ করা হয় "চ্যান্সেলর"। নারা আমলের আগ পর্যন্ত এই পদ খালি না থাকলেও সবসময় একজন রাজপুত্র দ্বারা পূর্ণ থাকত। এটি মূলত "যুবরাজ" অবস্থানের আমলাতন্ত্রের আমদানি ছিল। তারপরে, ৬৬৪ সালে উদাজিন সোগা নো মুরাজিকো মারা যান এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে সরকারের শীর্ষে রাজকুমার নাকা নো ও এবং রাজকুমার ওমা একা ছিলেন। রাজকুমার ওমার নামে জারি করা একাধিক ফরমান স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তৎকালীন সঙ্কটে কিছু সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা এবং উচ্চতর অভিজাতদের সমর্থন বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্য করা দরকার ছিল। প্রথমত, ৬৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯ পদের ব্যবস্থা একটি নতুন ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যার ২৬ গ্রেড ছিল। তাদের তুলনা করলে, এটি স্পষ্ট যে শীর্ষ ছয়টি মর্যাদা রেখে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী তেরোটি বিশটিতে প্রসারিত হয়েছিল। মনে হয় যে সমস্ত অভিজাতদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে সরকারী নিয়োগ প্রাপ্ত লোকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে এই পরিবর্তনটি আসলে ৬৭১ সালে করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি''তে সেই বছরের জন্য রাজকুমার ওমা কর্তৃক আদেশিত পদমর্যাদায় পরিবর্তনের খুব সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। "তেনচি তেন্নোর রাজত্বের তৃতীয় বছর" বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে বিভ্রান্তির সম্ভাবনার কারণে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়। যদি ৬৬২ থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৬৪ হবে। তবে যদি ৬৬৮ (যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন) থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৭১ হবে। যদি পরিবর্তনটি ৬৭১ সালে হত তবে এটি সঙ্কটের সময়ের সাথে যুক্ত হত না। এটা সম্ভব যে ব্যবস্থায় দুটি সামঞ্জস্য ছিল এবং তারিখগুলির মধ্যে সম্পর্কটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল। ৬৬৪ সালে জারি করা দ্বিতীয় আদেশটি বংশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। উজিনোকামি বা বংশ প্রধানের একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি তৈরি করা হয়েছিল। একটি "মহান বংশের" ক্ষেত্রে প্রধানকে একটি তাচি "দুর্দান্ত তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল এবং একটি "ছোট" বংশের সিএতে একটি কাতানা "ছোট তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল। তোমোনোমিয়াৎসুকো "ইত্যাদি" একটি ঢাল বা একটি ধনুক এবং তীর দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। এই বিভাগগুলি ধরে নেওয়া হয় যে "ইত্যাদি" কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির জন্য জায়গা দেয়, কেবল অভিজাতদের উপরের অর্ধেককে আচ্ছাদিত করে, তাদের অন্যদের থেকে পৃথক করে। এছাড়াও, "বড় গোষ্ঠী" এবং "ছোট গোষ্ঠী" এর পৃথক স্বীকৃতি প্রথম ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,বংশ কাঠামোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে, নাকা নো ওই অভিজাতদের আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে আমলাতান্ত্রিকীকরণের দ্বারা তাদের বিশেষ মর্যাদা মুছে ফেলা হবে না। এই সময়ে সর্বশেষ যে জিনিস প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো "কাকিবে" এবং "ইয়াকাবে" এর স্বীকৃতি। এগুলি বেসরকারী সম্পত্তির বিভাগ ছিল যা ৬৪৬ সালের নববর্ষের দিন ফরমান দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। একটু সামনের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারা আমলের ভূমি পুনঃবণ্টন ব্যবস্থায় অভিজাতদের আসলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলি আদমশুমারির রেজিস্টারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং তারা কোনও কর দেয়নি (আসলে খুব নিম্নতম পদমর্যাদার লোকদের কিছু কর দিতে হয়েছিল কারণ কেবল প্রকৃত পদধারীই অব্যাহতি পেয়েছিল, তার পুরো পরিবার নয়)। নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা চালের গাঁট এবং কাপড়ের বোল্ট আকারে বেতন পেতেন। এটি তারা তাদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের জন্য বাণিজ্য করতে পারতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একই ধরনের বেতন পেতেন। তবে দুই ধরণের "পদ জমি"। মাঝারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়োগগুলি শ্রম কর সহ কৃষিজমির একটি ব্লক থেকে সংগৃহীত করের সরাসরি অর্থ প্রদানের পরিমাণ ছিল। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমাণ জমি পেতেন যা তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিচালনা করতেন। উচ্চ পদমর্যাদা বংশানুক্রমিক হওয়ায় তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব জমি আগলে রেখেছিল। কিছু পরিবারকে প্রকৃতপক্ষে সরকারী নিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জমির বৃহত্তম বরাদ্দ রাখার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও পুত্র তার বাবার সমান পদে না পৌঁছালেও সে পারিবারিক পদের জমি রাখতে পারে। এই অনুশীলনগুলির আলোকে, উচ্চতর আভিজাত্যকে সমর্থন করার জন্য জমির নির্দিষ্ট ব্লকগুলি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হবে তা স্বীকৃতি দেওয়া অগত্যা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করা ছিল না। যাইহোক, এই সময়ে এটি ঘোষণা করা অবশ্যই অভিজাতদের আশ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে ছিল যে নতুন ব্যবস্থা তাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি লক্ষ্য করা গেছে যে এই সময়ে এই জমিগুলির স্বীকৃতি বোঝায় যে এগুলি আসলে ৬৪৬ সালের পরে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। নতুন সরকার ব্যবস্থার বিকাশ সম্পাদন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। এ সময় যথেষ্ট পরিমাণে সামরিক তৎপরতাও ছিল। সমস্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক কোরীয় ৬৬৩ সালে জাপানে পালিয়ে গিয়েছিল এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসতি স্থাপনের অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে এবং কীভাবে তাদের জাপানি অভিজাতদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নির্ধারণের জন্য তাদের মধ্যে অভিজাতদের শ্রেণিবদ্ধ করার প্রচেষ্টাও রয়েছে। কোরীয় অভিজাতদের অনেকে যে অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল সেখানে দুর্গ নির্মাণের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল, বিশেষত উত্তর কিউশু এবং দ্বীপপুঞ্জে ইকি এবং সুশিমা কিউশু উপকূলে। সাকামোরি "সমুদ্রপ্রহরী" নামে পরিচিত দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে জাপানি সৈন্যদের শ্রম করের অংশ হিসাবে সীমান্তের দুর্গগুলি পরিচালনার জন্য কর্তব্যের মেয়াদে পশ্চিমে যাওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সাকামোরি এবং তাদের পরিবারের বাড়িতে ফেলে আসা পরীক্ষা এবং দুর্দশা সম্পর্কে প্রচুর কবিতা রয়েছে। অন্যান্য সৈন্যদের কিউশু থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রসারিত সিগন্যাল ফায়ারের একটি শৃঙ্খল পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে আক্রমণ ঘটলে সরকারকে দ্রুত অবহিত করা যায়। নারা যুগে সাকামোরিরা সকলেই এমিশি সীমান্তের নিকটবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে এই ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল যে এই লোকদের সকলেরই সামরিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ছিল। সম্ভবত ৬৬৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় পশ্চিমা সেনারা সম্ভবত ফিল্ড আর্মি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ছিল যখন সাকামোরি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি রক্ষা করত। নারা যুগে সিগন্যাল স্টেশনগুলিতে নিযুক্ত পুরুষরা সকলেই স্থানীয় ছিল এবং সম্ভবত এই সময়েও এটি সত্য ছিল। এটাই ছিল প্রতিরক্ষার প্রথম সারি। দাজাইফু এলাকায় বড় আকারের দুর্গ আকারে একটি দ্বিতীয় সারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বহু শতাব্দী ধরে কিউশু প্রতিরক্ষা সদর দফতর হিসাবে কাজ করেছিল। দাজাইফু উপকূল থেকে বেশ দূরে ফুকুওকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত যা রক্ষা করা সহজ। অনেক দুর্গ আজও দৃশ্যমান। নির্মাণগুলির মধ্যে একটি ছিল তথাকথিত "জলের দুর্গ"। এর কেন্দ্রস্থলটি একটি দীর্ঘ মাটির কাজ যা এখনও ১৪ মিটার উঁচু এবং ১ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। এটি স্পষ্টতই কাঠামোগত ছিল যাতে মিকাসা নদী দ্বারা পূর্ণ জলের একটি জলাধার প্রয়োজনে প্রাচীরের ঠিক নীচের অঞ্চলটি প্লাবিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি উপকূল থেকে দাজাইফুর দিকে আসা সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেবে। উত্তর প্রান্তটি প্রায় ৪১০ মিটার উঁচু একটি যথেষ্ট পাহাড়ে পৌঁছেছে যার উপরে ৬৬৫ সালে একটি বড় পাথরের দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। এগুলোর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক শহর দাজাইফু। পাহাড়ের একটি ফাঁক ঢাকতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে আরও একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল, যদিও একটি সেনাবাহিনী মূল প্রতিরক্ষা ফ্ল্যাঙ্ক করার চেষ্টা করতে পারে। এই দুটি দুর্গের বাহিনীদল কোরীয় ছিল। তারা সম্ভবত নির্মাণের নির্দেশনাও দিয়েছিল। এগুলো দেখতে অবিকল সমসাময়িক কোরীয় পাহাড়ি দুর্গের মতো। কোরিয়া খুব পর্বতময় এবং সমস্ত কোরীয় যুদ্ধ পাহাড়ের দুর্গের চারপাশে ঘোরাফেরা করে বলে মনে হয়। দাজাইফু দুর্গের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। তাই এটির জন্য একটি বড় বাহিনী প্রয়োজন। এটি এত বড় যে দাজাইফুর পুরো জনগোষ্ঠী ভিতরে আশ্রয় নিতে পারে। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে হনশুর পশ্চিম প্রান্তে কোরিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি দুর্গ নির্মিত হয়। এর অবস্থান জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি শিমোনোসেকির কাছাকাছি কোথাও ছিল। এটি সর্বদা সেই অঞ্চলের সামরিক মূল বিন্দু। ৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসের প্রথম দিকে পায়েচে চীনা কমান্ডার জাপানে একটি দূত প্রেরণ করেন। তারা সাত মাস অবস্থান করেন। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি ''নিহন শোকি''। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের নবম মাসে চীন থেকে সরাসরি দ্বিতীয় দূতাবাস আসে এবং প্রথম দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত নিয়ে আসে। স্পষ্টতই চীনারা সিরিয়াস ছিল। যা ঘটেছিল তার উপর ভিত্তি করে একজনকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে চীনাদের মাথায় অনেক কিছু ছিল (তাদের তখনো কোগুরিওর ধ্বংস সম্পূর্ণ করতে হতো। এটি বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রচুর সমস্যা দিয়েছিল)। সর্বশেষ যে জিনিসটি তারা চেয়েছিল তা হলো জাপানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ। দূতাবাসের আগমনের পরের মাসের জন্য ''নিহন শোকি''তে একটি টীকা রয়েছে যে উজিতে একটি "দুর্দান্ত সামরিক পর্যালোচনা" হয়েছিল, সম্ভবত চীনাদের প্রভাবিত করার জন্য। এই দূতাবাস তিন মাস ছিল। একই বছর জাপান চীনে নিজস্ব দূতাবাস স্থাপন করে। মজার ব্যাপার হলো, রাজকুমার আরিমার ঘটনার অংশ হিসেবে যেসব কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, রাষ্ট্রদূত তাদের একজন। শেষ পর্যন্ত চীন বা সিল্লা কেউই জাপানকে আক্রমণ করেনি (যদিও সিল্লা এমন একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল যা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি), যদিও জাপানিরা কমপক্ষে আরও একশ বছর ধরে পশ্চিমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বজায় রাখার প্রচেষ্টা কখনও শিথিল করেনি। দুর্গগুলি সুশিমাতে, পশ্চিম শিকোকুর সানুকিতে এবং অভ্যন্তরীণ সাগরের পূর্ব প্রান্তে এবং কাওয়াচি এবং ইয়ামাতোর সীমান্তে নানিওয়াতে নির্মিত হয়েছিল। সুশিমার দুর্গটি এখনও টিকে আছে এবং সানুকির দুর্গটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে জেনপেই যুদ্ধের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ৬৬৫ সালে এই প্রচেষ্টার মাঝপথে সম্রাজ্ঞী হাশিহিতো মারা যান। এটি সম্ভবত নাকা নো ওয়ের সিংহাসন গ্রহণের পথ পরিষ্কার করেছিল। তবে তিনি আরও তিন বছর বিলম্ব করতে থাকেন। ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সাইমেই তেন্নো ও সম্রাজ্ঞী হাশিহিতোকে একই সমাধিতে সমাহিত করা হয়। সাইমেইয়ের সমাধি নির্মাণের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও কেন এত সময় লাগল তা বোধগম্য নয়। হাশিহিতোর দেহাবশেষ রাখার ব্যবস্থা করার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এক মাস পরে, নাকা নো ও তার প্রাসাদটি বিওয়া লেকের ওটসুতে স্থানান্তরিত করেন। এটি পূর্ববর্তী কোনও অবস্থানের পূর্ব দিকে। ''নিহন শোকি'' বলেছে যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে অজনপ্রিয় ছিল এবং এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং ব্যঙ্গাত্মক গান ছিল। কেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরের একটি কবিতায় এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে এবং বোঝানো হয়েছে যে আসল বিরোধিতা ছিল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যারা চরম বর হিসাবে যা ভেবেছিল তার দিকে যেতে হবে। আমি মনে করি এটি বলা ন্যায্য যে হেইয়ানকিও (কিয়োটো) এর চূড়ান্ত পদক্ষেপে ভবিষ্যতের সমস্ত পদক্ষেপ একই রকম বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল, এমন পদক্ষেপগুলি ব্যতীত যা পরীক্ষামূলক অবস্থানগুলির মধ্যে একটিকে পরিত্যাগ করে পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসেছিল যেখানে ভবনগুলো ইতিমধ্যে ছিল। ততদিনে কেবল শাসকের পরিবারই যায়নি, বরং উচ্চ ও নিম্ন পদমর্যাদার বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা সরে যায়, যাদের সকলকেই নতুন আবাসন তৈরি করতে হয়েছিল। কোনও কারণ দেওয়া হয়নি। তবে অনুমান করা হয় যে, দাজাইফু যেমন অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তেমনি নাকা নো ওই সামরিক সুরক্ষার কথা ভাবছিলেন। ওটসু নানিওয়া উপকূলের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পর্বত বাধার পূর্ব দিকে রয়েছে। তবে ইয়ামাতো প্রদেশটিও পর্বতমালা দ্বারা ভালভাবে সুরক্ষিত। ওটসুর এই গুণ রয়েছে যে বিওয়া হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে এর অবস্থান এটি কে হোকুরিকু অঞ্চলের সাথে দুর্দান্ত যোগাযোগ দেয়। তবে এটি সর্বদা পশ্চিমে যোগাযোগের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি তখন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আরেকটি তত্ত্ব আছে। এটি পরবর্তীকালের অসংখ্য সত্যায়িত ঘটনার কারণে উপেক্ষা করা যায় না। অর্থাৎ হাশিহিতোর ভূত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন নাকা নো ও। প্রতিহিংসাপরায়ণ ভূত অভিজাতদের মধ্যে একটি প্রধান উদ্বেগ ছিল এবং তারা রাজধানীর অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি মন্দির এবং মন্দিরগুলিতে প্রচুর ক্রিয়াকলাপ করেছিল। আমরা যদি ধরে নিই যে, তাদের অজাচার সম্পর্ক স্থাপনে তিনিই আক্রমণকারী ছিলেন, তা হলে তিনি যেখানে মারা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাওয়ার হয়তো উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে. যাই হোক না কেন, দরবার ওটসুতে ৫ বছরের জন্য স্থগিত ছিল। ৬৬৮ সালে প্রাসাদে ওটসু নাকা নো ও অবশেষে সিংহাসন গ্রহণ করেন। তার সম্রাজ্ঞী ছিলেন ইয়ামাতো নো হিমেমিকো, রাজকুমার ফুরুহিতোর কন্যা, যাকে তিনি হত্যা করেন। তার কোনও সন্তান ছিল না। তবে তার আরও ৮ জন মহিলার সন্তান ছিল, যার মধ্যে চারজন কিসাকি এবং যাদের মধ্যে চারজন অপেক্ষারত মহিলা ছিলেন। তাদের মধ্যে দশটি মেয়ে ও চারটি ছেলে ছিল। তার নির্বাচিত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওটোমোর নিম্ন মর্যাদার মা ছিলেন। তাঁর পিতামহের পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে, তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তেনচির একমাত্র উচ্চ মর্যাদার পুত্র ছিলেন যুবরাজ তাকেরু, যার মা ছিলেন সোগা নো ইশিকাওয়ামারোর কন্যা। যাইহোক, রাজকুমার তাকেরু ৮ বছর বয়সে ৬৫৮ সালে মারা গিয়েছিলেন। রাজকুমার ওমায় তেনচি তেন্নোর একটি শক্তিশালী এবং সম্মানিত ভাই ছিল, ইয়ামাতো রাজ্যের স্বাভাবিক গতিশীলতা প্রায় নিশ্চিত করে তুলেছিল যে ওমা তার উত্তরসূরি হবেন (যদি তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন) নিম্ন মর্যাদার মায়ের সাথে রাজপুত্রের সাথে কোনও প্রতিযোগিতায়। এমন রাজপুত্র এতদিন সিংহাসনে আরোহণ করেননি। অবশ্যই, তেনচি তেন্নো ইয়ামাতো রাজ্যকে একটি নতুন উত্তরাধিকারী দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছিলেন যা চীনা রীতিত্ব কাজ করেছিল। বিষয়গুলি সম্পর্কে চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ছিল, জ্যেষ্ঠ বৈধ পুত্রই একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী। তেনচি তেন্নো এবং পরবর্তীকালের বেশ কয়েকজন সম্রাট শাসক বংশের জন্য এই নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচণ্ড লড়াই করেন। কিন্তু তা কখনও ঘটেনি। ৬৬৯ সালে তেনচি তেন্নোর দীর্ঘদিনের সহযোগী নাকাতোমি নো কামাতারি ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর অব্যবহিত আগে সম্রাট নাইদাইজিনের নতুন পদ বিশেষভাবে তৈরি করেন যাতে কামাতারিকে পদোন্নতি দেওয়া যায়। তিনি কামাতারির বংশধরদের জন্য নতুন বংশের নাম ফুজিওয়ারা তৈরির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ফরমান প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশকে আচ্ছাদন করে একটি আদমশুমারি সম্পন্ন করার আদেশ দেয়। এটি করার জন্য, গ্রামীণ অভিজাতদের অংশগ্রহণের সাথে জড়িত প্রদেশগুলিতে এক ধরণের আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক অগ্রগতি হওয়া উচিত। এই আদমশুমারির কোনও প্রকৃত নথি টিকে নেই। যাইহোক, আমরা জানি যে পরে নারা সময়কালে এই আদমশুমারির নিবন্ধগুলি তখনো বিদ্যমান ছিল এবং তাইহো নীতিমালায় নির্দিষ্ট ব্যবস্থা কাজ করার সূচনা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আমরা আরও জানি যে কিউশুর নথি ৭৭০ খণ্ড পর্যন্ত ছিল এবং কান্টো অঞ্চলের কোজুকে প্রদেশের নথি ৯০ খণ্ড ছিল। এই সংখ্যাগুলি ৮ম এবং ৯ম শতাব্দীতে এই স্থানগুলির পরিচিত জনসংখ্যার সমানুপাতিক। নারাতে শোসোইন কোষাগার প্রকৃত ৮ম শতাব্দীর রেজিস্টারগুলি সংরক্ষণ করে। এগুলিতে ক্রীতদাস পর্যন্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এটি জমির পরবর্তী বিতরণের পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ৬৭০টি নিবন্ধন তখন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়নি। কারণটি হলো পরে যখন জিতো তেন্নো একটি আদমশুমারি পরিচালনা করেন তখন এটি সরাসরি জমির পুনর্বণ্টনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তবে এখানে এটি ঘটেছিল এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। এছাড়াও, যদি কারো কাছে প্রতিটি ব্যক্তির বিশদ বিবরণ রেজিস্টার থাকে তবে কেউ স্বাভাবিকভাবেই করের বোঝা নির্ধারণে সেগুলি ব্যবহার করবেন। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে, ৬৪৬ সালে ডাকা নতুন কর ব্যবস্থা তখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এই রেজিস্টারগুলি পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনায় ব্যবহার করার জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হত। এটি পুনরায় বিতরণ এবং পুনরায় বিতরণ দ্বারা নিহিত কর ব্যবস্থার বাস্তবায়নের পরে আরও বিশদ আদমশুমারি হত। তেনচি তেন্নোর শেষ বছরগুলিতে প্রায়শই জমা দেওয়া অন্য কৃতিত্বটি ছিল "ওমি রিও" বা ওমি রীতির সৃষ্টি। ওমি সেই প্রদেশ যেখানে ওটসু অবস্থিত। এটি একটি খুব বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ''নিহন শোকি'' বা নবম শতাব্দীর চেয়ে পুরোনো কোনও বই বা নথিতে এর উল্লেখ নেই। এটি প্রথম ''কোনিন কিয়াকুশিকির'' মুখবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি বছরের পর বছর ধরে প্রকাশিত ধারাবাহিক বইগুলির মধ্যে অন্যতম যা আদেশ, বিচারিক রায় এবং এর মতো অনুলিপি রয়েছে যা প্রশাসনিক আইন নীতিমালার প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করেছিল। ''দাইশোকুকান্দেন'' নামে একটি বই রয়েছে যা অষ্টম শতাব্দীতে ফুজিওয়ারা নো নাকামারো লিখেছিলেন এবং এটি তেনচি তেন্নোর রাজত্বকালের ফরমানগুলির নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা তৈরি একটি সংকলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে করা হয় যা এটি র উল্লেখ করে না। একটি তত্ত্ব উল্লেখ করে যে জিনশিন যুদ্ধের পরে তেম্মু তেন্নোর বংশধররা ১০০ বছর ধরে সিংহাসন ধরে রেখেছিলেন যতক্ষণ না এটি কোনিন তেন্নোর সাথে তেনচি তেন্নোর বংশধরদের লাইনে স্থানান্তরিত হয়। তেম্মু তেন্নোর কৃতিত্বের কৃতিত্ব তার ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এমন অনেকে থাকতে পারেন। যাই হোক না কেন, এর মধ্যে কী ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। তাই এটি আসলে কোনও ব্যাপার নয়। যাইহোক, চীনারা প্রশাসনিক আইনের বিশদ বিবরণ দিয়ে খণ্ড সংকলন করার অভ্যাসে ছিল এবং এটি অনিবার্য ছিল যে কোনও সময়ে জাপানিরাও একই কাজ করার কথা ভাববে। তবে সম্ভবত তখনো পুরোপুরি প্রচলিত ছিল না। == জিনশিন যুদ্ধ == তেনচির রাজত্বের শেষের দিকে উত্তরাধিকার সম্পর্কে সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তেনচির তিন পুত্র জীবিত ছিল, সবচেয়ে বড় ছিল যুবরাজ ওটোমো। তিনি ইতিমধ্যে দাজোদাইজিন নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটি কখন ঘটেছিল তা নিয়ে উৎসে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তেনচি যুবরাজ ওটোমোকে তার উত্তরসূরি বানাতে চেয়েছিলেন, যদিও তার মা নিম্ন মর্যাদার (রাজকীয় মান অনুসারে) প্রাসাদ কর্মচারী ছিলেন। এটি দীর্ঘকাল ধরে প্রথা ছিল যে কুনিনোমিয়াতসুকো এবং আগাতানুশি শ্রেণির প্রাদেশিক অভিজাতরা মেয়েদের স্ত্রী এবং রাজকন্যাদের উচ্চ স্তরের চাকর হিসাবে কাজ করার জন্য প্রাসাদে পাঠাতেন। এই প্রথা পরবর্তী শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল। তেনচি তেন্নো আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদগুলি দীর্ঘদিন ধরে খালি রেখেছিলেন। তবে একই সাথে তিনি ওটোমোকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তিনি সোগা নো ওমি আকে সাদাইজিন, নাকাতোমি নো মুরাজি কোগানে উদাইজিনকে তৈরি করেন এবং ওকিমোনোসুসুকাসা, সোগা নো ওমি হাতায়াসু, কুসে নো ওমি হিতো এবং কি নো ওমি উশির পদে তিনজনকে নিয়োগ করেন। এই শেষ পদটি পরবর্তী ব্যবস্থায় টিকে ছিল না তবে মোটামুটিভাবে দাইনাগনের সাথে মিলে যায়, এর অনুবাদ সাধারণত কাউন্সিলর এবং মহান মন্ত্রীদের ঠিক নীচে এর পদমর্যাদা। সম্ভবত, তিনি শীর্ষস্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে রাজকুমার ওটোমোর পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন, যাকে তখন পর্যন্ত হাতের মুঠোয় রাখা হয়েছিল। ওটোমোর পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব করার জন্য রাজকুমার ওমাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কারণ তেনচির মৃত্যুর পরে আভিজাত্যরা ওটোমোকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম ছিল। কৃতিত্বের জন্য, তেনচি তার ভাইকে হত্যা করতে চায়নি। তিনি মূলত রাজকুমার ফুরুহিতোকে নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি সংস্করণ নিয়ে আসেন। সম্রাট প্রকাশ্যে যুবরাজ ওমাকে উত্তরাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে সিংহাসনে সফল হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই, সম্রাজ্ঞী ইয়ামাতোহিমকে তেন্নো হওয়ার এবং বিষয়গুলির পরিচালনা রাজকুমার ওটোমোর হাতে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে দেশের কোনো নিরিবিলি মন্দিরে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। এটি ৬৭১ সালের ১০ তম মাসের ১৭ তম দিনে ঘটেছিল, যখন সম্রাট ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। একই দিনে, রাজকুমার ওমা মুণ্ডটি নিয়েছিলেন এবং তার প্রাসাদে রাখা সমস্ত অস্ত্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দু'দিন পরে তিনি একই মন্দিরে তথা ইয়োশিনোর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন, যেখানে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং পরবর্তীকালে অনেক রাজকীয় আধা-নির্বাসিত ছিল। তা মঞ্জুর করা হয়। এর পরপরই, পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে একত্রিত করা হয়েছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে তেনচি তেন্নোর উপস্থিতিতে শপথের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। তেনচি তেন্নো ৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২তম মাসের শুরুতে মৃত্যুবরণ করেন। রাজকুমার ওটোমো ধারাবাহিক সম্রাটদের সরকারী নথিপত্রে কোবুন তেন্নো হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি কেবল আধুনিক যুগেই করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' তৎক্ষনাৎ তেম্মু তেন্নোর ধারায় স্থানান্তরিত হয়, যার সময় রাজকুমার ওটোমোকে কখনই সম্রাট হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটি উপরে বর্ণিত গল্পটি একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় বর্ণনা করে। এতে বলা হয়েছে, সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়লে নো ওমি ইয়াসুমারোকে রাজকুমার ওমাকে তার উপস্থিতিতে ডেকে আনার জন্য পাঠানো হয়। ভিতরে ঢোকার সময়, সোগা রাজপুত্রকে তিনি যা বলেছিলেন তা খুব সাবধানে রাখতে বলেছিলেন, যার ফলে রাজপুত্র একটি ষড়যন্ত্র সন্দেহ করেন। সুতরাং, যখন তাকে সিংহাসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন যেমনটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর সুস্পষ্ট তাৎপর্য হলো, তিনি যদি সিংহাসন গ্রহণ করতেন তাহলে সম্ভবত তাকে হত্যা করা হতো। স্বভাবতই এই গল্প সত্যি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে যা ঘটেছিল তার কেবল রাজকুমার ওমার সংস্করণ রয়েছে। গল্পটি ভালো, হয়তো খুব ভালো। সম্ভবত তেনচি সরাসরি যুবরাজ ওমাকে প্রকাশ্যে সিংহাসন ত্যাগ করে একটি মঠে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাই হোক না কেন, তেনচি মরিয়া হয়ে তার ছেলের উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন এই সত্যের মুখে যে অভিজাতরা প্রায় নিশ্চিতভাবে ওমাকে সমর্থন করবে যদি এটি নিয়ে লড়াই হয়। যখন তিনি যোশিনোতে পৌঁছেছিলেন তখন রাজপুত্র তার "টোনারি" বা ব্যক্তিগত পরিচারক / দেহরক্ষীদের একত্রিত করেন এবং তাদের বলেছিলেন যে তিনি ধর্মের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন এবং যে কেউ পদ চান তার কাছে গিয়ে নতুন চাকরি সন্ধান করার স্বাধীনতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অর্ধেক পেছনে আর অর্ধেক থেকে যায়। এরপর সম্রাট মারা যান। এই সময়ে কিউশুতে সবেমাত্র একটি বিশাল চীনা দূতাবাস এসেছিল, এত বড় যে তারা জাপানিদের আশ্বস্ত করার জন্য কয়েকটি জাহাজ পাঠিয়েছিল যে এটি আক্রমণকারী বহর নয়। রাষ্ট্রদূতদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। রাজকুমার ওটোমোর কোনও উল্লেখ ছাড়াই এই সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পুরো গল্পটি রাজকুমার ওমার দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে এবং ওমি আদালতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। রাজকুমার ওটোমো কখন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন বা আদৌ ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। ''নিহন শোকি'' অনুমানের অনুমতি দেয় যে তিনি শাসক হিসাবে তালিকাভুক্ত নন বলে তিনি ছিলেন না। নর যুগের অন্য কোন গ্রন্থে তাঁকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত শাসক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না। টোকুগাওয়া মিতসুকুনি দ্বারা ''দাই নিহন শিতে'' এডো পিরিয়ড পর্যন্ত এটি প্রথম দাবি করা হয়েছিল যে তাকে সিংহাসনে আরোহণ করা হয়েছিল তবে তেম্মু তেন্নোর বৈধতা সমর্থন করার জন্য ''নিহন শোকিতে'' এটি দমন করা হয়েছিল। মরণোত্তর রাজত্বের উপাধি কোবুন তেন্নো মেইজি সম্রাট কর্তৃক রাজকুমার ওটোমোকে ভূষিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি যে ৬ মাস ওৎসু দরবারে শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসে যুবরাজ ওমার একজন অনুচর তাকে বলেন যে তিনি প্রচুর সংখ্যক লোককে জড়ো হতে দেখেছেন যারা তেনচির সমাধিতে কাজ করতে আসার দাবি করেছিল। কিন্তু তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল। অপর এক ব্যক্তি তখন বলেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ এবং চেকপয়েন্টগুলি লক্ষ্য করেছেন। ওমা তদন্ত করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে এটি সত্য ছিল। তারপরে তিনি তার লোকদের বলেছিলেন যে ঝামেলা রোধ করার জন্য তিনি অবসর নিয়েছেন। তবে তারা যদি তাকে যেভাবেই হত্যা করতে চলেছে তবে তিনি লড়াই করতে যাচ্ছেন। তার প্রধান সমস্যা ছিল রাজধানী ছাড়ার আগে তাকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাই মূলত অরক্ষিত ছিল। ৬ষ্ঠ মাসের ২২তম দিনে তিনি তিনজন লোককে মিনো প্রদেশে (ঠিক পূর্বদিকে) যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং গভর্নরকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তিনি তার কাছে যা কিছু বাহিনী ছিল তা একত্রিত করেন এবং পূর্বের অন্যান্য গভর্নরদেরও একই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফুওয়াতে একটি সভা পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছিল। এটি ওমি এবং মিনো প্রদেশের সীমান্তের একটি গিরিপথ যা প্রধান পূর্ব-পশ্চিম রাস্তা দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং ওটসুর উপর আক্রমণ চালানোর জন্য একটি ভাল অবস্থান। এরপর আসে ইয়োশিনোর কাছ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তিনি একজন লোককে আসুকায় পাঠিয়েছিলেন পাস পাওয়ার আশায় যা তাদের পোস্ট ঘোড়া ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তাই তারা ২৪ তারিখ পায়ে হেঁটে পূর্ব দিকে রওনা দিল। আদালত ইয়োশিনোর ওপর হামলার কথা ভাবছে কি না, তা জানার কোনো উপায় আমাদের নেই। তবে ওমা চলে যাওয়ার পর আদালত অবাক হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। বেশ কয়েকদিন তারা সাড়া দেয়নি। এই প্রস্থানটি পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে নোটিশের পুরো এক মাস পরে ছিল এবং বর্ধিত বিপদের কোনও উল্লেখ নেই, সুতরাং এটি অবশ্যই ধরে নেওয়া উচিত যে পূর্ববর্তী মাসটি সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে পরিকল্পনা এবং যোগাযোগ করতে ব্যয় করা হয়েছিল। দলটি শীঘ্রই এমন এক সমর্থকের মুখোমুখি হয়েছিল যার একটি ঘোড়া ছিল, যাতে রাজপুত্র চড়তে পারে। তাঁর স্ত্রী (ভবিষ্যতের জিতো তেন্নো) এবং তাঁর দুই পুত্র, রাজকুমারেস কুসাকাবে এবং ওসাকাবেকে একটি পালকিতে বহন করা হয়েছিল। এই সময়ে রাজপুত্রের সাথে "প্রায়" ২০ জন পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৩ জনের নাম ছিল এবং ১০ জন মহিলা ছিলেন। শীঘ্রই তাদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিল এবং তারা যে রাজকীয় এস্টেটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সবাইকে খাওয়ালেন। আরও কিছুটা এগিয়ে তারা প্রায় ২০ জন অভিজাতদের একটি শিকারী দলের মুখোমুখি হয়েছিল, যাদের ছোট সেনাবাহিনীতে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও একজন "রাজকুমার মিনো"। তিনি সম্ভবত যাত্রাপথের কাছাকাছি থাকতেন, তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরপর তারা ৫০টি মালবাহী ঘোড়ার একটি ট্রেন দেখতে পায় যারা চাল বহন করছে। তারা চাল ফেলে দিয়েছিল এবং তখন তাদের অশ্বারোহী ছিল। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই তারা মশাল বানানোর জন্য একটি বেড়া টেনে ফেলল। অবশেষে তারা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে তারা মধ্যরাতে থামতে পারে। তারা পোস্টিং স্টেশনটি পুড়িয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষকে তাদের অনুসরণ করার জন্য জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। দ্বিতীয় দিনে তারা ৭০০ জনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপরে আরও লোক উপস্থিত হয়েছিল, এত বেশি যে তারা ফিরে যেতে এবং তাদের পেছনের দিক রক্ষা করার জন্য ৫০০ জন লোকের একটি বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। ২৬ তারিখে যুবরাজকে জানানো হয় যে মিনো থেকে ৩,০০০ লোক এসেছে এবং আদেশ অনুসারে ফুয়া রাস্তা অবরোধ করছে এবং আরও অনেক সমর্থক, যাদের অনেকের নাম রয়েছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ জন সমর্থকের নাম আমাদের কাছে রয়েছে। তারা ইসে প্রদেশের কুওয়ানায় ছিল এবং ওমা অনুভব করেন যে তিনি দৌড়ানো বন্ধ করতে পারেন। তিনি তখন সৈন্য সংগ্রহের জন্য চারদিকে দূত পাঠাতে শুরু করলেন। ''নিহন শোকি'' বলছে যে এই মুহুর্তে রাজকুমার ওটোমোর সরকার কী ঘটছে তা জানতে পেরেছিল। খবরটি ওটসুর রাজধানীকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। কিছু অভিজাত যুবরাজ ওমায় যোগদানের আশায় পালিয়ে যায়, অন্যরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকার আশায় পালিয়ে যায়। ওটোমো তার কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। একজন মন্ত্রী তাদের কাছে যে কোনও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তাৎক্ষণিক আক্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ওটোমোর পরিবর্তে একটি যথাযথ সেনাবাহিনী সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব বার্তাবাহকদের প্রেরণ করেন। যেখানে ওমার বার্তাবাহকরা বেশিরভাগ পূর্ব দিকে প্রচারিত হচ্ছিল, ওটোমো তাকে পশ্চিমে প্রেরণ করেন। সুকুশির কমান্ডার এই ভিত্তিতে লোক পাঠাতে অস্বীকার করেন যে তার কাজ ছিল কোরীয় এবং চীনাদের কাছ থেকে কিউশুকে রক্ষা করা। ওটোমো কিবি এবং সুকুশির কমান্ডারদের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা আশা করেছিলেন কারণ তারা ওমার সাথে সংযুক্ত রাজপুত্র ছিলেন এবং তিনি তাঁর দূতদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা যদি রাষ্ট্রদ্রোহের লক্ষণ দেখায় তবে তাদের হত্যা করতে। তারা কিবিতে কমান্ডারকে হত্যা করতে সফল হয়েছিল। কিন্তু সুকুশির লোকটি খুব সুরক্ষিত ছিল এবং তারা চলে গেল। তারা খুব কমই সুকুশির কাছ থেকে কোনও ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত পুরুষদের আনার কথা ভাবতে পারেনি, সুতরাং এটি সম্ভবত এই অঞ্চলগুলিকে রাজকুমার ওমার পক্ষে ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল। প্রায় একই সময়ে একজন কর্মকর্তা, ওটোমো নো ফুকেই এর আগে ওমির আদালত ত্যাগ করেন এবং আসুকা অঞ্চলে তার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার নিজস্ব ব্যক্তিগত বাহিনী এবং নিকটবর্তী আয়া বংশের লোকদের একত্রিত করেন এবং ২৯ শে যুবরাজ ওমার পক্ষে প্রাক্তন আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই অঞ্চলের মিওয়া এবং কামো গোষ্ঠীগুলি যুবরাজ ওটোমোকে সমর্থন করার জন্য ওমিতে সৈন্য প্রেরণ করেছিল। যুবরাজ ওমা তখনতার সদর দফতর কুওয়ানা থেকে সরিয়ে নিলেন। এটি সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে ফুয়াতে ছিল। ২৭ তারিখে পূর্ব দিক থেকে আরও বিশ হাজার লোক তার সাথে যোগ দেয়। রাজকুমার ওমা তার ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজকুমার তাকেচিকে সামগ্রিক সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তার সেনাবাহিনী দুটি প্রধান কলামে বিভক্ত ছিল। অভিজ্ঞ যোদ্ধা কি নো ওমি এমারোর নেতৃত্বে প্রথমটি ছিল ইগা এবং ইসের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং ওটোমো নো ফুকেইয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আসুকার দিকে যাত্রা করা। দ্বিতীয়টি ছিল মুরাকানি নো মুরাজি ওয়োরির কমান্ডে সরাসরি ওটসুকে আক্রমণ করা। তিনি ইয়োশিনোতে রাজকুমার ওমার সাথে ছিলেন এমন একজন টোনেরি। এই বাহিনীকে তাদের পোশাকে লাল ব্যাজ সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা যুদ্ধের ময়দানে একে অপরকে চিনতে পারে। সপ্তম মাসের দ্বিতীয় দিনে ওমির আদালত ফুওয়া পাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণের নির্দেশ দেয়। ''নিহন শোকির'' মতে, এই আক্রমণটি প্রচণ্ড বিভ্রান্তিতে পড়েছিল এবং রাষ্ট্রের অন্যতম মন্ত্রী সোগা নো হাতায়াসু যুবরাজ ইয়ামাবের সাথে নিহত হন। রাজকুমার ওমার সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়েছিল এবং ১৩ তারিখে ইয়াসুকাওয়ায় শেষ হওয়া পরপর তিনটি যুদ্ধ জিতেছিল, যার পরে তারা সেটায় অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ওটসু প্রাসাদের বাইরের প্রতিরক্ষা গঠন করেছিল। সেখানে একটি সেতু সহ একটি স্রোত ছিল, যেখানে আদালতের সেনাবাহিনী তার অবস্থান তৈরি করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে, আদালতের অনুগত বাহিনী ওটোমো নো ফুকেই পরাজিত করে এবং আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চলেছিল। কিন্তু রাজকুমার ওমার কলামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং ফুকেই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, নির্ণায়ক যুদ্ধটি ৭ম মাসের ৬ষ্ঠ দিনে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের স্থানটি একটি সমাধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অনেক পতিত সৈন্য রয়েছে। দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর আদালতের সেনাবাহিনী উত্তর দিকে পিছু হটে। ২২শ দিনে সেতা ব্রিজে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেতু রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী মাঝের অংশের মেঝে বের করে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি তক্তা প্রসারিত করেছিল যাতে সেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। ওমা বাহিনীর একজন সৈনিক দুই সেট বর্ম পরে তক্তা পেরিয়ে দৌড়ে গেল, যেতে যেতে দড়ি কেটে ফেলল। অতঃপর তিনি শত্রুপক্ষের সারীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এটি কে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিলেন। তার সেনাবাহিনী স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনুসরণ করেছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর সেনাবাহিনী ভেঙে পালিয়ে যায়। যিনি এই দায়িত্বে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি যুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিলেন। ৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ''নিহন শোকিতে'' তাঁর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধে নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে তেম্মু তেন্নো সরকারী নোটিশ নেওয়ার জন্য সতর্ক ছিলেন বলে মনে হয়। ওমার বাহিনী পরের দিন সফলভাবে আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং যুবরাজ ওটোমো তার সেনাবাহিনী থেকে আলাদা হয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে কেউ এটি জানত না। সারাদিন লড়াই অব্যাহত ছিল এবং রাজকুমার ওটোমোকে সমর্থনকারী বিশাল শক্তিবৃদ্ধি আসার সাথে সাথে খুব ভারী হয়ে ওঠে। ওমার বাহিনী শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এবং সাদাইজিন ও উদাইজিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ তারিখে রাজকুমার ওটোমোর মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং তার মাথা ওমার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর ঠিক এক মাস পর রাজকুমার ওটোমোর প্রধান সমর্থকদের সাজা ঘোষণা করা হয়। নাইদাইজিন নাকাতোমি নো মুরাজি নো কোগানে সহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, সাদাইজিন এবং উদাইজিন নামে দু'জনকে তাদের সমস্ত পরিবারের সাথে নির্বাসিত করা হয়েছিল, নাকাতোমির পরিবারকেও নির্বাসিত করা হয়েছিল যেমন সোগা নো হাতায়াসু নো ওমি যিনি লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন। বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। একজন কর্মকর্তা যাকে ক্ষমা করা হত তিনি পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং আত্মহত্যা করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে পূর্ববর্তী সমস্ত দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে ছোট বিষয় ছিল। তবে এটি একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ ছিল যা যোশিনো থেকে রাজকুমার ওমার ফ্লাইট এবং তিন সপ্তাহের প্রকৃত ক্ষেত্রের লড়াই থেকে এক মাস স্থায়ী হয়েছিল, এতে কয়েক হাজার লোক জড়িত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এর পেছনে অন্য কোনো বিবেচনার বিষয় জড়িত ছিল কি না, যার জন্য এতগুলো পুরুষকে এত কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। উনিশ শতক এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বাধিক জনপ্রিয় তত্ত্বটি ছিল যে যুবরাজ ওমা তেনচি তেন্নোর অধীনে পরিবর্তনের দ্রুত গতির বিরোধিতার সুযোগ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার অর্থ যুদ্ধটি একটি রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া ছিল। যাইহোক, বাস্তবে তেম্মু তেন্নো তার ভাইয়ের দ্বারা উদ্বোধন করা পরিবর্তনগুলি সমাপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাই যদি তার সমর্থকরা পুরানো উপায়ে ফিরে আসার আশা করে তবে তারা দুঃখজনকভাবে হতাশ হবে। প্রায় ১৯২০-এর দশক থেকে এটি ঠিক বিপরীত তর্ক করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল, যে রাজকুমার ওমা "প্রগতিশীল" পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন, সুতরাং রাজকুমার ওটোমো বা তার পিছনে কর্মকর্তারা অবশ্যই "রক্ষণশীল" দল ছিলেন। তার বিজয়ের মাধ্যমে, তেম্মো তেন্নো মূলত রাজকুমার নাকা নো ও এবং নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা পরিকল্পিত লাইন বরাবর সরকারের পুনর্গঠন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে লেখা রচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গির সারসংক্ষেপ করেন আইনাগা সাবুরো। তিনি ভেবেছিলেন যে রাজকুমার ওমা মূলত নিম্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা সমর্থিত ছিলেন এবং জ্যেষ্ঠ আভিজাত্যরা রাজকুমার ওটোমোর পিছনে ছিলেন। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেরী কোফুন যুগের সমাধিগুলির পরিবর্তিত নিদর্শনগুলির গবেষণায় যা দেখেন তার সাথে এক ধরণের শ্রেণি সংগ্রাম ছিল, সামগ্রিকভাবে আভিজাত্যের মধ্যে আরও অভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকটি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির অভিজাতদের কাছ থেকে শক্তি বিকশিত হয়েছিল। যাইহোক, এই যুক্তিতে ত্রুটি আছে যে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে তেনচির রাজত্বের পরবর্তী বছরগুলিতে তাইকা সংস্কারের নীতিগুলি থেকে কোনও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৬৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সামরিক সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরে, সংস্কারের স্রোত আবার শুরু হয়েছিল এবং সম্রাটের চূড়ান্ত অসুস্থতা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি জাপানে ঐতিহাসিক চিন্তাধারার একটি সম্পূর্ণ নতুন পর্বের সূচনা করেছিল কারণ এটি ইতিহাসবিদদের প্রকাশ্যে মার্কসবাদী হতে মুক্তি দিয়েছিল। এটা বলা ন্যায্য, আমরা মনে করি, মূলত আগে যা ঘটেছিল তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে মার্কসবাদ (একটি হালকা ধরনের) ১৯৫০ থেকে ১৯৬০-এর দশকে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে। এটি স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিকদের বিস্মিত করেছিল (প্রথমবারের মতো) ৬৪৫ সাল থেকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সম্ভবত কোনও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কিনা। কিতায়ামা শিজিও নামে একজন ইতিহাসবিদ প্রস্তাব করেন যে ৬৪৫ সাল থেকে পরিবর্তনগুলি মূলত কেন্দ্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য কাজ করেছিল এবং এর অর্থ হলো করের জোরপূর্বক শ্রম অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। যখন এটি স্থানীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন এটি সম্ভবত এপিসোডিক ছিল, এতে প্রতি বছর কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু ছিল না। তবে জাতীয় সরকার সর্বদা কিছু খুঁজে পেতে পারে। আদালত নিজেই এটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রম করের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছিল। প্রহরী, রক্ষণাবেক্ষণের লোক, প্রাসাদের পরিচারক, বার্তাবাহক এবং কাজের ছেলেরা এবং সমস্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের শ্রমকরের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। এটি ব্যবস্থায় বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভ তৈরি করেছিল বলে তিনি ভেবেছিলেন। তবে সমস্যা হলো, জিনশিন যুদ্ধে কোনো পক্ষই জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উভয় পক্ষের যোদ্ধারা অভিজাত ছিল। তবে, এমন অনেকে আছেন যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এই ব্যবস্থার তীব্রতা নিয়ে যে কোনও জনপ্রিয় ক্ষোভ স্থানীয়ভাবে অনুভূত হত এবং গ্রামীণ আভিজাত্যের কৃষক জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলত। ''নিহন শোকির'' বিবরণ থেকে দৃঢ়ভাবে বোঝা যায় যে ইয়ামাতো প্রদেশের বেশিরভাগ অভিজাত ওমির দরবারকে সমর্থন করেছিল এবং যুবরাজ ওমা পূর্বের প্রাদেশিক আভিজাত্যের কাছ থেকে তার সমর্থন পেয়েছিলেন (এবং পশ্চিম, যদিও কোনও পশ্চিমা সেনা হস্তক্ষেপ করার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল)। এটি সুস্পষ্ট যে রাজকুমার ওমার দুটি কলামের একটির কমান্ডার ছিলেন টোনারি। একে নিম্ন-পদমর্যাদার প্রাদেশিক অভিজাত বলতে হয়। রাজকুমার ওমা বছরের পর বছর ধরে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং এই লোকেরা তার প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল যে তিনি তাদের সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে নারা যুগে উদ্ভূত জটিল ব্যবস্থাটি প্রাদেশিক আভিজাত্যের দ্বারা সমর্থিত না হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। এটি তারা নিজেরা না দেখলে এটি করত না। আপনারা যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিরোধিতার সামগ্রিক অনুপস্থিতি ৬৪৫ পরবর্তী পুরো রূপান্তরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়। উপসংহারটি হলো পুরানো কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণিকে সঙ্কুচিত করা হয়েছিল এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার এবং নিম্ন স্তরের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল যারা নতুন ব্যবস্থার অধীনে জেলা সরকারকে নিয়োগ করেছিল। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে জিনিসগুলি কার্যকর করার জন্য বিশদ জ্ঞান ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাদের জনপ্রিয় অস্থিরতা থেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা ছিল। এটি ছিল মৌলিক চুক্তি যা চীনা সাম্রাজ্যকে বহু শতাব্দী ধরে চালিত রেখেছিল এবং জাপানেও একই জিনিস করার উদ্দেশ্য ছিল। == তেম্মু তেন্নো == ৬৭২ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার ওয়ামা ওমি প্রাসাদ ত্যাগ করে আসুকা অঞ্চলে ফিরে আসেন। তিনি কিয়োমিহারা প্রাসাদ নামে পরিচিত একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন। ৬৭৩ সালের ২য় মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহন করেন। ৬৭৩ সাল তার শাসনকালের প্রথম বছর হিসেবে তার সরকারি নথিপত্রে সর্বদা স্বীকৃত ছিল। পরে যখন কোবুন তেন্নো তালিকায় যুক্ত হয়, তখন সরকারি কালানুক্রমিক তালিকা ৬৭২ সালকে "কোবুন প্রথম বছর" হিসেবে গণ্য করলেও ''নিহোন শোকি'' ধারাবাহিকভাবে ৬৭২ সালকে "তেম্মু প্রথম বছর" হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং এটি মেইজি যুগের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক লেখায় স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে স্থিত হয়েছিল। তেম্মুর শাসনকালে এবং জিতোর ৭ বছর পর্যন্ত সরকার কিয়োমিহারা প্রাসাদেই অবস্থান করেছিল, অর্থাৎ ৬৭৩ থেকে ৬৯৩ পর্যন্ত ২১ বছর। এটি পূর্বের যেকোনো প্রাসাদের তুলনায় বেশি স্থায়ী ছিল এবং স্থায়ী রাজধানী স্থাপনের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। ''মান্যোশু'' সংগ্রহে অনেক কবিতায় এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে যে, যুদ্ধজয়ের ফলে তেম্মু তেন্নোর অভূতপূর্ব ক্ষমতা ছিল যিনি যেকোনো কিছু ঘটাতে পারতেন। এক কবিতায় বলা হয়েছে, "ঈশ্বরের মতো" তিনি একটি পাহাড়কে সমুদ্রে রূপান্তরিত করতে পারেন। ঈশ্বরের ন্যায় ওয়াইশিমাগুনি রাজত্বকারী তেম্মু নিজেও ১২তম বছরের একটি আদেশে নিজেকে "যমাতো নেকো নো মিকোতো" বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওয়াইশিমাগুনি হল জাপানের প্রাচীন নাম। তার শাসনকালের শুরুতে কোন বড় যমাতো পরিবার থেকে আসা অভিজাতরা দরবারে প্রাধান্য পায়নি, এবং নাকাতোমি নো কামাতারির ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোও তখনো প্রভাবশালী ছিল না। সরকারে তিনি নিম্ন পদস্থ লোকদের উপর বেশ নির্ভরশীল ছিলেন, যার মধ্যে টোনেরিরাও ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুরাকুনি নো মুরাজি ওয়ায়রি, যাকে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন না এবং তাঁর সামরিক সফলতার জন্য মুরাজি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত অবসরের সময় বা মৃত্যুর কাছাকাছি উচ্চ পদমর্যাদা পেতেন, কিন্তু কর্মজীবনে তাদের পদমর্যাদা তুলনামূলকভাবে কম থাকত। মুরকুনিকে ১২০টি পরিবার থেকে আয় দেওয়া হয়েছিল। এটি মহান অভিজাতদের মানদণ্ডে খুব বেশি ছিল না। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষমতা ছিল কারণ সম্রাট তাদের পিছনে ছিলেন। তাদের উচ্চ পদ বা ব্যক্তিগত প্রতিপত্তির এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শাসনকালের শুরুতে তিনি সর্বোচ্চ পদ দাজোদাইজিন, সদাইজিন এবং উদাইজিন ফাঁকা রেখেছিলেন। বড় কোন অভিজাতকে উচ্চপদে নিয়োগের প্রথম ঘটনা ছিল ৬৭৫ সালে। তখন তিনি ওতোমো নো মুরাজি নো মিয়ুকিকে রাজকুমার কুরিকুমার অধীনে যুদ্ধমন্ত্রীর উপমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। মোট মিলিয়ে ''নিহোন শোকি''তে তেম্মু তেন্নোর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ৭ জন জোমাতো অভিজাত এবং ৫ জন রাজকুমারের নাম উল্লেখ আছে। ৫ জন রাজকুমারই অভিজাতদের থেকে উচ্চ পদ পেয়েছিলেন। আরও উল্লেখ আছে, তেম্মুর সম্রাজ্ঞী উনো (পরে জিতো তেন্নো) তাঁর শাসনকালে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং বিষয়াদি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া, তেম্মুর দুই পুত্রও যথাক্রমে ৬৮১ সাল থেকে রাজকুমার কুসাকাবে এবং ৬৮৩ সাল থেকে রাজকুমার ওৎসু সরকারে সক্রিয় হয়। কুসাকাবে শেষ পর্যন্ত দাজোদাইজিন হন। স্পষ্ট যে তেম্মুর সরকার ছিল সম্রাটের সরাসরি শাসন, যেটিতে শাসক পরিবারের সদস্যরাই সহযোগিতা করতেন। ৬৭৫ সালে তেম্মু সর্বোচ্চ অভিজাতদের সমস্ত ব্যক্তিগত জমি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন। ৬৬৪ সালে টেনচি এ জমিগুলো বেতন হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন, কিন্তু তখন পরিষ্কার হয়ে গেল যে পুরো দেশ জুড়ে সম্পূর্ণ কর ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে এবং অভিজাতরা কেবলমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করবেন। তিনি আরও আদেশ দেন যে "নিকটবর্তী রাজকুমার, অন্যান্য রাজকুমার, কর্মকর্তা ও মন্দিরগুলো" তাদের হাতে বছরের পর বছর ধরে পাওয়া সব ধরণের জমি — কৃষিজমি বা বনজ — ফেরত দেবে। ৬৮৫ সালে তেম্মু আবার পদমর্যাদা ব্যবস্থা সংস্কার করেন। প্রথমবারের মতো রাজকুমারদের জন্য নতুন পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। এটি পূর্বের ব্যবস্থার বাইরে ছিল। এটি নারা যুগ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুইটি সমান্তরাল পদমর্যাদা ব্যবস্থা চালু ছিল, একটি রাজকুমারদের জন্য এবং অন্যটি সকলের জন্য। এখন সরকারি পদমর্যাদা ব্যবস্থার বাইরে ছিলেন শুধুমাত্র সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবার, অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তানরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কিছু লক্ষণও ছিল। ৬৭৫ সালে একটি ঘটনা ঘটে যখন দুই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাকে "দরবারে উপস্থিত হওয়া থেকে নিষিদ্ধ" করা হয় এবং কয়েকদিন পরে তাদের একজনকে "সমস্ত পদ ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত" করা হয়। একই বছর রাজকুমার ওমি ও তাঁর দুই পুত্রকে গ্রামাঞ্চলে নির্বাসিত করা হয়, এবং পরের বছর দাজাইফুর প্রধান কর্মকর্তা রাজকুমার ইয়াকাকিকেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট বছর জানা না গেলেও, শাসক গোত্র থেকে কয়েকজনকে "মিকাতা" উপাধি ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাদ দেওয়া হয়। ৬৭৫ সালে একটি আদেশে সব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের বছর গভর্নরদের মধ্যে অস্ত্র ধারণের ব্যাপারে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। ৬৭৯ সালে রাজকুমার ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয় যে পরবর্তী বছর একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তারা সশস্ত্র ও সিংহাসনে চড়ে উপস্থিত হবে, এবং এটি বাস্তবে পরিচালিত হয়। ৬৮৪ সালে তেম্মু তেন্নো একটি আদেশে উল্লেখ করেন যে "সামরিক বিষয়গুলো সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।" ৬৪৫ সালের আগে শাসকের হাতে সরাসরি সীমিত সামরিক বাহিনী ছিল। সবসময় কিছু সংখ্যক টোনেরি ছিল, যারা প্রধানত পূর্বাঞ্চল থেকে আসত, এবং কিছু ইউকেইবে ছিল, যারা কিউশু থেকে চাপা কৃষক সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রাজধানীতে পাঠানো হতো এবং প্রধানত গার্ড হিসেবে কাজ করত। এই বিভাগের লোকসংখ্যা কত ছিল তা কেউ নিশ্চিত নয়। অন্যান্য সব কিছু নির্ভর করত যমাতো গ্রামের সামরিক মনোভাবাপন্ন উজি গোত্রের উপর। ধারণা করা হয় টোনেরিদেরকে নতুন রাষ্ট্রের "বাম" ও "ডান" হ্যোয়েফু 兵衛府 প্রহরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এবং ইউকেইবে গার্ডরা ছিলেন এমোনফু 衛門府-তে। বাকী দুটি গার্ড ইউনিট, "বাম" ও "ডান" ইজিফু 衛士府, শ্রম করের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধারণা করা হয় এই দায়িত্বে নিয়োজিত লোকেরা সাধারণ কৃষক ছিলেন না, বরং স্থানীয় ক্ষুদ্র অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মোটামুটি বলতে গেলে, রাজধানীর সরকারি সামরিক বাহিনী ছিল মূলত পুলিশ ও রক্ষী হিসেবে, বাস্তবিক সামরিক বাহিনী নয়। সম্ভবত তেম্মু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে সব কর্মকর্তা সশস্ত্র এবং অন্তঃপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও যেন সশস্ত্র থাকেন যাতে প্রয়োজনে তিনি দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করতে পারেন। প্রদেশগুলোতে সামরিক সংগঠনের তেমন চিত্র ছিল না। ৬৮৫ সালে তেম্মু আদেশ দেন যে ব্যক্তিগত নয়, বরং সংগঠিত সামরিক ইউনিটগুলোর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সামরিক উপকরণ — যেমন শিং, ঢোল, পতাকা থেকে শুরু করে ক্রূড অস্ত্র যেমন "পাথর নিক্ষেপক" এবং বড় আকারের ক্রসবো — কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। এটি জনগণকে নিরস্ত্র করার জন্য নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে এগুলো প্রয়োজনে দ্রুত পাওয়া যাবে এবং ঠিক করা থাকবে। প্রাচীন জাপানের একটি ছোট রহস্য হল কেন ইসের "মহান মন্দির" আমাতেরাসু ওমিকামি, যাকে শাসক গোত্রের পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়, এটি তাঁর পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন পূজার কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এটি এমন স্থানে অবস্থিত যা থেকে ধারণা করা হয় পূজার বিষয়বস্তু হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর, বিশেষ করে যারা সমুদ্রপথে পূর্ব জাপানে যাওয়ার পথে ছিলেন তাদের জন্য। এটি শাসক গোত্রের সাথে বিশেষ কোন সম্পর্কিত স্থান নয়। ধারণা করা হয়েছে মন্দিরটি তুলনামূলকভাবে দেরিতে আমাতেরাসুর সাথে সম্পর্কিত হয়েছিল, যার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হলো তেম্মু তেন্নোর শাসনকাল। ''নিহোন শোকি''তে কেতাই থেকে সুইকো পর্যন্ত সব শাসনের সময় রাজকুমারেসদের ইসে পাঠানো হত সাইগু বা ইটসুকি নো মিয়া হিসেবে, অর্থাৎ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত্রী হিসেবে। তবে এই প্রথা পরবর্তীতে লোপ পেয়ে যায় যতক্ষণ না ৬৭৪ সালে তেম্মু তার শাসনকালে নিজেই প্রথম ইসে যাত্রা করেন। এটি ছিল রাজ পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই যাত্রাটি তেম্মুর শাসনকালের একটি চিহ্নিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এভাবে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তী যুগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেম্মু আরও কৃতিত্ব পেয়েছেন এমন একটি কাজ শুরু করার জন্য যা পরবর্তীতে ''কোজিকি'' এবং ''নিহন শোকি'' রচনার সূচনা করেছিল। তিনি বিভিন্ন অভিজাত বংশের কাছে থাকা উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে জাপানের ইতিহাস রচনার উপকরণ পাওয়া যায়। এটি ''কোজিকি''র ভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে। ৬৮১ সালে তিনি রাজকুমার কাওশিমা নেতৃত্বাধীন শাসক বংশের ছয় সদস্যের একটি কমিটি এবং নাকাতোমি নো মুরাজি নো ওশিমা নেতৃত্বাধীন অন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তার একটি কমিটিকে জাতীয় ইতিহাস সম্পাদনার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এই প্রকল্পটি কখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এটির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তা পরে ''নিহন শোকি''তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই বৃহৎ প্রকল্প থেকে আলাদাভাবে, তিনি তাঁর এক টোনেরি হিয়েদা নো আরেকে সহজ একটি কাজ এককভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এটি একক লেখকের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। হিয়েদা তাঁর কাজ শেষ করার আগে মারা যান, কিন্তু এটি নারা যুগের শুরুর দিকে ও নো আসোন ইয়াসুমারো পুনরায় গ্রহণ করেন এবং ৭১২ সালে ''কোজিকি'' নামে প্রকাশ করেন। উভয় কাজেই অভিজাত বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এটি সম্ভবত ঐ বংশগুলি দ্বারা রক্ষিত কাহিনীগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। ''কোজিকি''তে প্রায় ২০০টি বংশ কাহিনী এবং ''নিহন শোকি''তে প্রায় ১১০টি পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো একত্রিত করার সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তাইকা সংস্কার এবং জিনশিন যুদ্ধের পর থেকে বহু প্রাচীন বংশ মুছে গেছে এবং নতুন অনেক বংশ প্রভাবশালী হয়েছে। এর ফলে প্রাচীন "কাবানে" উপাধিগুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বংশের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রতিপত্তির সাথে আর মিলছিল না। তাই ৬৮৪ সালে তেম্মু কাবানে ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি আটটি উপাধির ব্যবস্থা করেন, যাদের মধ্যে বেশকিছু নতুন সৃষ্টি ছিল। শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এগুলো ছিল—মাহিতো (মাঝে মাঝে মাবিতো লেখা হয়) 真人, আসোমি (প্রায় সবসময় আসোন লেখা হয়) 朝臣, সুকুনে 宿禰, ইমিকি 忌寸, মিচিনোশি 道師, ওমি 臣, মুরাজি 連, এবং ইনাগি 稲置। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি বংশের সম্রাট থেকে বিচ্ছেদের মাত্রা স্পষ্ট করা। যেসব বংশ আগে ওমি উপাধি পেত, তাদের অধিকাংশকে আসোমি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এটি শাসক বংশের শাখা থেকে আগত বংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যেসব বংশ আগে মুরাজি ব্যবহার করত, তাদের বেশির ভাগ সুকুনে উপাধি দেওয়া হয়। মাহিতো বিশেষভাবে শাসক বংশের প্রধান শাখার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত বংশের জন্য সংরক্ষিত ছিল, বিশেষ করে কেটাই তেন্নো বা পরবর্তীকালের শাসকদের বংশ থেকে আগত বংশগুলোর জন্য। ওজিন রাজবংশ থেকে আগত বংশগুলো সবাই আসোমি উপাধিতে আচ্ছাদিত হয়েছিল। ছোট উপাধিগুলো সাধারণত প্রাদেশিক বংশদের জন্য ছিল। তেম্মুর শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। এটি পরবর্তী প্রশাসনিক আইন বিধিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারা যুগে সরকারের মূল ভিত্তি ছিল আটটি মন্ত্রণালয়ের সমষ্টি যাকে দাজোকান বা "বড় দপ্তর" বলা হয়। এদের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তেম্মুর সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মাত্র একটি ছিল অনুপস্থিত, তা হলো নাকাতসুকাসা। এটি শাসকের আবাসিক প্রাসাদের পরিচালনা করত। এটি প্রশাসনিক প্রাসাদ থেকে আলাদা। তেম্মুর দিনে একটি মন্ত্রণালয়ই উভয় কাজ দেখাশোনা করত। নামগুলো সবই ভিন্ন ছিল। তবে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিম্নস্তরের বহু প্রশাসনিক সত্তার নাম এবং সরকারি পদবীও ভিন্ন ছিল। প্রধান পার্থক্য ছিল, শেষমেশ প্রতিষ্ঠিত কোডগুলো চীনা সমসাময়িক প্রথা থেকে নেওয়া নাম ও পদবী বেশি ব্যবহার করত। ৬৮১ সালের দ্বিতীয় মাসে সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী প্রাসাদের প্রধান মিলনকক্ষে গিয়ে সমস্ত রাজপুত্র ও কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। সম্রাট ঘোষণা করেন যে, সরকারের কাঠামো এবং কার্যাবলীর নিয়মাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রশাসনিক নীতিমালা প্রস্তুত করার সময় এসেছে। তিনি স্বীকার করেন এটি একটি বৃহৎ কাজ। এটি শেষ করতে সময় লাগবে এবং সরকারী কাজ ব্যাহত হওয়া উচিত নয়, তাই এই প্রকল্পের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। এটিই পরিচিত "অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরো"র সূচনা। তেম্মু তেন্নোর জীবদ্দশায় সম্ভবত এই কাজ শেষ হয়নি। তবে সরকারের কাঠামো এই প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সামঞ্জস্য করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তেম্মু তেন্নোর ১৭ জন সন্তান ছিল, যাদের নাম জানা গেছে, ৯ জন বিভিন্ন মাতার সন্তান, ১০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। সম্রাজ্ঞী উনোর একমাত্র সন্তান ছিলেন রাজকুমার কুসাকাবে। তিনজন অন্যান্য নারী কিসাকি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, যাঁরা রাজকুমার ওতসু, রাজকুমার নাগা, রাজকুমার ইউগে, এবং রাজকুমার টোনেরির মা ছিলেন, পাশাপাশি একটি কন্যাও ছিলেন। এই চারজন নারীই ছিলেন তেনচি তেন্নোর কন্যা। আরও তিনজন মহিলা ছিলেন, যাঁরা কনকুবাইন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিলেন। দুজন ছিলেন ফুজিওয়ারা নো কামাতারির কন্যা, যাঁরা রাজকুমার নিটাবে এবং এক কন্যার জন্ম দিয়েছেন। তৃতীয় ছিল সোগা নো ওমি নো আকের কন্যা, যিনি রাজকুমার হাটসুমি এবং দুই কন্যার জন্ম দেন। শেষমেশ তিনজন নারী ছিলেন যাদের প্রাসাদে কোন সরকারি পদবী ছিল না। রাজকুমারেস নুকাতা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এক কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন, রাজকুমারেস তোচি, যিনি শিশুকালে মারা যান। এটি আদালতে অনেক শোকের কারণ হয়। দুই প্রাসাদের সহকারী রাজকুমার টাকেচি, রাজকুমার ওসাকাবে এবং রাজকুমার শিকি ও দুই কন্যার জন্ম দেন। রাজকুমার টাকেচি উল্লেখযোগ্য কারণ তিনি জিনশিন যুদ্ধে কমান্ডার ছিলেন। রাজকুমার ওসাকাবে ও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। দুটি সর্বোচ্চ পদমর্যাদার রাজপুত্র ছিলেন নিঃসন্দেহে রাজকুমার কুসাকাবে এবং রাজকুমার ওতসু। ৬৮১ এবং ৬৮৩ সালে যথাক্রমে তারা এমন বয়সে পৌঁছান যেখানে সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। রাজকুমার কুসাকাবের মা ছিলেন সম্রাজ্ঞী, যেখানে রাজকুমার ওতসুর মা জিনশিন যুদ্ধে আগে মারা গিয়েছিলেন। তবে মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ রাজকুমার ওতসুকে বেশি প্রভাবশালী মনে করত। ''নিহন শোকি'' উল্লেখ করে যে, শিশু অবস্থায় তিনি তাঁর চাচা ও দাদা তেনচি তেন্নোর প্রিয় ছিলেন, এবং অন্যান্য প্রাচীন সূত্রে বলা হয়েছে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। রাজকুমার কুসাকাবে সম্পর্কে কোনও তথ্য অবশিষ্ট নেই। তিনি ২৮ বছর বয়সে মারা যান এবং ধারণা করা হয় যে তিনি সবসময় অসুস্থ ছিলেন। এটি সম্ভবত ব্যাখ্যা করে কেন তাঁকে তেম্মুর মৃত্যুর পর শাসক করা হয়নি। তেম্মুর শাসনকাল এমন ছিল যে তিনি সরাসরি শাসন করতেন, তাই এটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী শাসককে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হতে হয়েছিল। মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিল সম্রাজ্ঞী। যদি ধরা হয় যে রাজকুমার কুসাকাবে অনুপযুক্ত ছিলেন, তাহলে তিনি তাঁর শিশুসন্তান রাজকুমার কারুর (যিনি পরবর্তীতে মোম্মু তেন্নো হন) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনাক্রমে কুসাকাবে ৬৮১ সালে "সিংহাসন অধিকারী" করা হয়। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, এর সঙ্গে উত্তরাধিকার নিয়ে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে তাকে সরকারের একটি প্রখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই একই দিনে অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয় সরকারী নিয়মাবলী আনুষ্ঠানিককরণ সম্রাটের অবস্থান দৃঢ় করবে যাতে তিনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন এমনকি যদি তিনি সাধারণ ক্ষমতার ব্যক্তিও হন। ৬৮৩ সালে রাজকুমার ওতসুও সরকারে পদ পায়। যদি ধরা হয় তিনি তাঁর সৎভাই থেকে স্বাস্থ্যবান ও প্রতিভাবান ছিলেন, তাহলে সকল কারণ রয়েছে মনে করার যে তিনি তেম্মুর মৃত্যুর পর সম্রাট হওয়ার সুযোগ পেতেন। ৬৮৫ সালে তেম্মু অসুস্থ হন কিন্তু কিছুদিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ৬৮৬ সালের ৫ম মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন এবং ৭ম মাসে ঘোষণা করেন যে তিনি আর সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকবেন না। এটি সবকিছুই সম্রাজ্ঞী ও রাজকুমার কুসাকাবে দেখবেন। তিনি ৯ম মাসের ৯ তারিখে মারা যান, বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। ''নিহন শোকি'' জানায়, ১১ তারিখে তাঁকে সাময়িকভাবে তাঁর মোগারি নো মিয়ায় সমাহিত করা হয়, এবং ২৪ তারিখে "রাজকুমার ওতসু সিংহাসন অধিকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল"। পরবর্তী ঘটনা জিতো তেন্নো নিবন্ধে বর্ণিত। বলা হয়েছে, রাজকুমার ওতসুর বিশ্বাসঘাতকতা ১০ম মাসের ২ তারিখে প্রকাশ পায় এবং তিনি প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরের দিন তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তাঁর স্ত্রীও মারা যান। তবে স্পষ্ট নয় তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যা করেন। পরের দিন "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে দুই জন ছাড়া সবাই ক্ষমা পায়। ওই দুইজন নির্বাসিত হন। এর কয়েকদিন পরে সম্ভবত চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর রাজকুমার ওতসুর বোন রাজকুমারী এস ওকু রাজধানীতে ফিরে আসেন যিনি কয়েক বছর ইসেতে পুরোহিত ছিলেন। ''মানইশু''র একটি কবিতা প্রকাশ করে যে, রাজকুমার ওতসু গোপনে ইসেতে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন তেম্মুর মৃত্যুর সময়ের আশেপাশে। সম্ভবত এই ঘটনাটিই ''নিহন শোকি''র জন্য তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের কারণ। একজন রাজপুত্র রাজধানী ত্যাগ করে পূর্বদিকে যাওয়া এবং উত্তরাধিকার অস্থিতিশীল থাকা অবস্থায় যাত্রা করা বিদ্রোহী উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরা লক্ষ্য করেছেন যে, "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে কয়েকজন পরবর্তীকালে জিতোর আদালতে কর্মজীবন চালিয়েছেন। একজন প্রথম সম্পূর্ণ রিৎসুরো নীতিমালা তৈরির কমিটিতেও ছিলেন। এটা ইঙ্গিত দেয় যে রাজকুমার ওতসুকে অপরাধী বানানোর কূটনীতি করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' স্পষ্ট করে যে সম্রাজ্ঞী শাসনে ছিলেন। তবে কিছু সময়ের জন্য উত্তরাধিকার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করা হয়নি। মৃত সম্রাটকে শোক জানানো ও তাঁর সমাধি প্রস্তুতির সব সরকারি কার্যক্রমে সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ ছিল "সিংহাসন অধিকারী"। ৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১তম মাসে তেম্মুর দাফনের মধ্য দিয়ে এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। অবশ্যই ঐ সময়ে সম্রাটের বিধবা মোগারি নো মিয়ায় বসবাস করতেন এবং গভীর শোক পালন করতেন। এরপর ৬৮৯ সালের ৪ম মাসে যুবরাজ কুসাকাবে মারা যান। তাই ধারণা করা যায়, শোক পালন শেষ হলে রাজ্যাভিষেক করার পরিকল্পনা ছিল। তাঁর পুত্র যুবরাজ কারুর বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর এবং তাই সম্রাজ্ঞীর আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি জিতো তেন্নো নামে পরিচিত। এটি ৬৯০ সালের শুরুতে ঘটেছিল। এই সময়কালে ৬৮৯ সালের ৬ষ্ঠ মাসে অসুকা কিয়োমিহারা রিও ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয় এবং সরকারী দপ্তরগুলোতে বিতরণ করা হয়। এই ঘটনাকেই অসুকা যুগের সমাপ্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ৬৮৯ সালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, কামাতারির বড় ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোর প্রথমবারের মতো সরকারি পদে নিয়োগ। b8t16140mr4rn92k9lrw9c2gra9j53x 84868 84867 2025-06-18T23:55:07Z Mehedi Abedin 7113 84868 wikitext text/x-wiki [[File:Horyu-ji06s3200.jpg|thumb|right|হোরিউ-জির প্যাগোডা]] '''''আসুকা 飛鳥''''' হলো নারা সমভূমির দক্ষিণ প্রান্তের একটি এলাকা, যেখানে জাপানে আদিম গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বেশি উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময়ে সেখানে এখনকার মতো কোনও শহর ছিল না। তবে রাজপ্রাসাদ এবং কিছু বৌদ্ধ মন্দির গড়ে উঠতে থাকে। কেইতাই সম্রাট আসুকার আশেপাশে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী ১৫ জন উত্তরসূরীর মধ্যে ৯ জনেরই প্রাসাদ ছিল এই এলাকায়। নারা শহর তৈরির আগের সময়কালটিকে সাধারণভাবে "আসুকা যুগ" বলা হয়। যদিও নারা ছিল এই সমভূমির প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে। আসুকা যুগ ছিল একটি পরিবর্তনকালীন সময়। সেসময় শাসন চলত সম্রাটের প্রাসাদ থেকে। প্রায় প্রতিটি সম্রাট তার নিজস্ব নতুন প্রাসাদ তৈরি করতেন। দীর্ঘ শাসনকালে প্রাসাদ একাধিকবার স্থানান্তরিত হত। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের আকার ছিল ছোট ও সরল—এমনকি দলিল-দস্তাবেজের সংরক্ষণাগারসহ তা সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল। ৬৪০ সালের দিকে প্রশাসন কিছুটা ভারী হতে শুরু করলে আগের মতো সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল না। পুরোপুরি স্থায়ী রাজধানী এবং প্রাসাদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসুকা যুগের একেবারে শেষ দিকে। তবে পরবর্তী ১০০ বছরে রাজধানী আরও তিনবার সরানো হয়। আরও কয়েকটি স্থানান্তরের প্রস্তাবও উঠেছিল। ==আসুকা যুগ== আসুকা যুগকে প্রধানত দুইটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বে, সোগা বংশের চারজন পরপর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজদরবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: সোগা নো ইনামে 蘇我の稲目, সোগা নো উমাকো 蘇我の馬子, সোগা নো এমিশি 蘇我の蝦夷 এবং সোগা নো ইরুকা 蘇我の入鹿। এই পর্বটি ৫৭২ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সোগা বংশের সহিংস পতনের পর। এই সময় রাজনীতির প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন তেন্‌চি 天智 (বা তেন্‌জি) তেন্নো, তাঁর ভাই তেম্মু 天武 তেন্নো এবং তেম্মুর বিধবা স্ত্রী জিতো 持統 তেন্নো; এই পর্বটি ৬৪৫ থেকে ৬৯২ সাল পর্যন্ত চলে। জিতো যখন তার ছেলে মোম্মু (文武) সম্রাটকে সিংহাসন হস্তান্তর করেন, তখন <i>নিহোন শোকি</i> নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থটির বিবরণ শেষ হয়। <i>কোজিকি</i> গ্রন্থটি ৬২৮ সালে সম্রাজ্ঞী সুইকো (搉古)-এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রথম ধাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন রাজপুত্র উমায়াদো (廐戸। তিনি "শোতোকু তাইশি" (聖徳太子) নামেও পরিচিত ছিলেন। তাকে “পবিত্র রাজপুত্র” বা “জ্ঞানী রাজপুত্র” বলা হত।তিনি সম্ভবতআসুকা যুগের একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নাম আজও প্রতিটি জাপানির কাছে পরিচিত। <i>নিহোন শোকি</i> গ্রন্থের লেখকরা তাঁকে আধুনিক জাপানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজও তিনি জাপানি সংস্কৃতিতে সম্মানীয় অবস্থানে আছেন, ঠিক যেমনভাবে আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটন বা ইংল্যান্ডে আলফ্রেড দ্য গ্রেট সম্মান পান। শোতোকু তাইশির ছবিও জাপানি মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। আসুকা যুগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই সময়ে জাপানে প্রচলিত আদি ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আদি ধর্মটি "শিন্তো" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কিছু জাপানি একচেটিয়াভাবে একটা ধর্মকে সমর্থন করলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উভয় ধর্মকে শ্রদ্ধা করত এবং জীবনের অংশ হিসেবে দুটিকেই অন্তর্ভুক্ত করার উপায় বের করত। সহজভাবে বলা যায়, শিন্‌তো বিয়ের ধর্ম হয়ে ওঠে, আর বৌদ্ধ ধর্ম শেষকৃত্যের ধর্ম। ===জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম=== জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা ঘটে ৫৩৮ সালে। এটি আসুকা যুগের শুরুর তারিখের আগের ঘটনা। ওই বছর পেকচে’র রাজা সং তাঁর রাজধানী পাহাড়ের নিরাপদ কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চল থেকে একটি প্রধান কৃষিভিত্তিক এলাকায় স্থানান্তর করেন। একইসঙ্গে তিনি পেকচের নাম পরিবর্তন করে “সাউদার্ন পুইয়ো” রাখেন, যদিও জাপানি ও চীনারা (এবং আধুনিক ইতিহাসবিদগণ) এটি উপেক্ষা করেন। তাঁর নতুন রাজধানীর স্থানটি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার পুইয়ো শহর (যেটিকে সাম্প্রতিক রোমানাইজেশনের সংস্কারে দক্ষিণ কোরিয়াররা বিভ্রান্তিকরভাবে “বুইয়ো” লিখে। তবে উচ্চারণ “পুইয়ো”)। এই নতুন রাজধানীতে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল একটি কাঠামোবদ্ধ শাসনব্যবস্থা গঠন যা আংশিকভাবে চীনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও তিনি সমসাময়িক কোগুরিও ও শিল্লা-তে চলমান সংস্কার দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাপানের রাজদরবারে দূত পাঠিয়ে বৌদ্ধ প্রতিমা ও ধর্মগ্রন্থ উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন যে এই ধর্ম জাদুকরীভাবে জাতিকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। তবে ওই সময় পেকচে রাজ্যের রাজধানীর বাইরে বৌদ্ধ ধর্মের তেমন কোনো প্রভাব পড়েছিল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ঘটনার প্রায় ২০০ বছর পরে, এক বিখ্যাত রাস্তাঘাটে উপদেশদাতা ভিক্ষুর কার্যক্রমের মাধ্যমে। যেহেতু জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হয়েছিল। তাই ৫৩৮ সালের ঘটনা এবং তার পরিণতি অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। <i>নিহন শোকি</i>-র পাশাপাশি প্রাচীন বৌদ্ধ উৎস থেকে অতিরিক্ত তথ্যও পাওয়া যায়। সংক্ষেপে, সোগা নো ইনামে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পক্ষে মত দেন এবং মনোনোবে 物部 বংশ এটি গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। কারণ এটি স্থানীয় দেবতাদের অবমাননা হিসেবে দেখা হয়। কিম্মেই তেন্নো ইনামেকে তাঁর বাড়িতে একটি ছোট বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি দেন এবং গোপনে উপাসনার সুযোগ দেন। ইনামের এক কন্যা ভিক্ষুণী হন। তবে, ৫৭১ সালে কিম্মেইর মৃত্যু হলে মনোনোবে নতুন শাসক বিদাৎসু-এর কাছ থেকে এই উপাসনালয় ধ্বংস ও ভিক্ষুণীদের গ্রেপ্তারের অনুমতি নেন। <i>নিহন শোকি</i>-তে এই ঘটনার বিবরণ অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেখানে বিদাৎসু তেন্নো ও তাঁর উত্তরসূরি ইয়োমেই তেন্নোর মৃত্যুশয্যায় বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। এটি ৮ম শতকের বৌদ্ধপন্থী মানদণ্ড অনুযায়ী তাঁদের আরও শ্রদ্ধাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা বলে মনে করা হয়। ৫৮৭ সালে সোগা ও মনোনোবে বংশের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়। এটি ইয়োমেইর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের ফলে ঘটে। এই যুদ্ধে সোগা বিজয়ী হয় এবং তখনই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা প্রকৃত অর্থে শুরু হয়। এটি ছিল সোগা বংশের প্রাধান্যের শুরু। প্রথমে এটা বোঝা কঠিন কেন জাপান বা কোরিয়ার যেকোনো রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে আত্মস্থ না করেও বৌদ্ধ ধর্মকে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্মের চেয়ে প্রাধান্য দেবে। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, জাপানে কোরীয় অভিবাসীদের মধ্যে কিছু বৌদ্ধ ছিল। তবে জাপানে এবং কোরিয়ার অন্যান্য রাজ্যেও বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হওয়া ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত, জনতার ইচ্ছা নয়। জাপানি সম্রাটকে বৌদ্ধ ধর্ম উপস্থাপন করার সময় পেকচের রাজা সং বলেন, এই ধর্ম একটি জাদুকরী শক্তি যা জাতিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। প্রাথমিক সময়ে জাপান ও কোরিয়াতে বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার মুক্তি বা আত্মদর্শনের মতো ব্যক্তিগত বার্তার চেয়ে, এর মূর্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের জাদুকরী শক্তির ওপরেই জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে অসুস্থতার সময় মানুষ বৌদ্ধ প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করত। শুরুতেই বৌদ্ধ ধর্মের স্বাগত জানানোর বড় কারণ ছিল কোরিয়া ও বিশেষ করে চীন থেকে আগত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তাঁরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং বাস্তব দক্ষতায় পারদর্শী, বিশেষত স্থাপত্যবিদ্যায়। আসুকা যুগ থেকে শুরু করে নারা যুগ পর্যন্ত জাপানে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প পরিচালিত হয় এসব অভিবাসী সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে। তাঁরা শুধু মন্দির নয়, সেতু ও দুর্গও নির্মাণ করতেন। সাধারণত চীন থেকে যারা জাপানে আসতেন, তাঁদের মধ্যে এরাই ছিলেন প্রধান। চীনা চিন্তাধারা ও প্রযুক্তি জাপানে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও ছিলেন তাঁরা। === সোগা বংশ === সোগা বংশের দাবি করা পূর্বপুরুষ ছিলেন জিংগু কোউগোর কোরিয়া বিজয়ে অংশগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি। এর ফলে তিনি ওজিন রাজবংশের সূচনালগ্নেই যুক্ত ছিলেন। সোগা নামক কোনো ব্যক্তির প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় নবম শতকের একটি গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে যে ওজিন রাজবংশের তৃতীয় শাসক রিচু তেন্নোর সময় কোরীয় অভিবাসীদের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা সংগঠিত করার প্রয়োজন পড়ে। এই উদ্দেশ্যে একটি দ্বিতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা হয় এবং তা তদারকির জন্য একটি নতুন পদ তৈরি করা হয়। ইউর্যাকু তেন্নোর শাসনকালে একটি তৃতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে এবং সোগা নো মাচি নো সুকুনে-কে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষয়গুলো সংগঠিত করার। তিনি একটি তালিকা প্রস্তুত করেন এবং (কোরীয়) হাতা বংশকে একটি সহায়ক ভাণ্ডার পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং (কোরীয়) আয়া বংশকে অন্যটির। ৬৪৫ সালে সোগা বংশ পরাজিত হলে আয়া বংশের সৈন্যরা তাদের পাশে দাঁড়ায়। সোগা বংশ কখনো সামরিক ঘটনায় জড়িত ছিল না, বরং সবসময়ই আর্থিক কার্যক্রম এবং কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৫৫৩ সালে সোগা নো ইনামে শাসকের আদেশে জাহাজ কর নিরীক্ষণের জন্য একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছর পর ইনামে সমুদ্রবন্দর নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেকটি দপ্তর স্থাপন করেন। এতে বোঝা যায়, সোগা বংশ যোদ্ধার চেয়ে প্রশাসক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। কেইতাই তেন্নোর মৃত্যুর পর যে সময়ে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজদরবার ছিল বলে মনে করা হয়, সেই সময়ে সোগা বংশ অত্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। সোগা বংশ কিম্মেই তেন্নোর রাজদরবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ওটোমো বংশ আনকান ও সেনকা নামক বিকল্প শাসকদের সমর্থন করত। সেনকার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় রাজদরবার বিলুপ্ত হলে ওটোমো বংশ রাজনৈতিক প্রভাব হারায় এবং সোগা বংশ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিফলিত হয় ‘সোগা নো ও-ওমি’ নামে সোগা প্রধানের উল্লেখে, যেখানে আগে ‘ও-ওমি’ (大臣) উপাধিটি কেবলমাত্র ওটোমো বংশের জন্যই ব্যবহৃত হতো। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইয়ামাতো রাষ্ট্র সামরিকমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে এক নতুন ধারা গ্রহণ করে। এটি ওজিন রাজবংশের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কেইতাইয়ের শাসনামলে পর্যন্ত বজায় ছিল। উল্লেখ্য, ‘ও-ওমি’ উপাধিটি বুঝতে হবে ‘ও’ (大) অর্থাৎ ‘বড়’ বা ‘মহান’ এবং ‘ওমি’ (臣)। এটি চীনা অক্ষরে লেখা ও ‘রাষ্ট্রের মন্ত্রী’ অর্থে ব্যবহৃত হতো। একই দুটি চীনা অক্ষর চীনা উচ্চারণে ‘দাইজিন’ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আপনি হয়তো এই রূপেও একে অন্যান্য গ্রন্থে দেখতে পারেন। আসুকা ও নারা যুগে এই শব্দগুলো সাধারণত জাপানি উচ্চারণেই উচ্চারিত হতো। তবে হেইয়ান যুগে এবং পরবর্তীকালে সেগুলো চীনা উচ্চারণে ব্যবহৃত হতে থাকে। নবম শতকে হেইয়ান যুগের শুরুতে প্রায় সব অভিজাত ব্যক্তি চীনা পড়তে ও লিখতে পারতেন, অধিকাংশ সরকারি দলিল চীনা ভাষায় লেখা হতো। সরকারের কারিগরি পরিভাষায় চীনা উচ্চারণ ব্যবহারের রীতি শুরু হয় যা এমনকি জাপানি ভাষার বিস্তৃত প্রচলনের পরও চালু থাকে এবং আজও বহাল রয়েছে। আধুনিক জাপানি গদ্যের একটি বড় অংশই চীনা ঋণশব্দে গঠিত। ৫৪৮ থেকে ৫৫৪ সালের মধ্যে কোরিয়ায় সিল্লা সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তারা কোগুর্যো ও পেকচেকে পরাজিত করে। ৫৫৪ সালে পেকচের রাজা সঙ যুদ্ধে নিহত হন এবং কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল পেকচে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে তা টিকে থাকে, যদিও আগের চেয়ে ছোট এবং দুর্বল অবস্থায়। এই সময়ে জাপান কোরিয়ায় ছোট আকারের বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তা সিল্লার মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সিল্লা ৫৬২ সালে মিমানা অঞ্চল পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে। জাপান এরপর একটি বড় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা পরাজিত হয় এবং তাদের নেতারা বন্দি হয়। এরপর থেকে ওটোমো বংশের উল্লেখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজদরবারে প্রধান দুই ব্যক্তি হিসেবে সোগা নো ইনামে এবং মোনোনোবি নো ওকোশির নাম উঠে আসে। এরপর ২০০ বছর ধরে জাপানি রাজদরবার সিল্লাকে আক্রমণ করে মিমানার উপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চিন্তা করে, মাঝে মাঝে বাহিনী ও রসদ সংগ্রহের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো থেকে বিশেষ কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সোগা বংশ সম্ভবত কাজুরাকি বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তারা ওজিন রাজবংশের শুরুতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। ওজিন রাজবংশের কয়েকজন শাসকের মা ছিলেন কাজুরাকি বংশীয়। সোগা বংশ কেইতাই রাজবংশের সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক স্থাপন করে। সোগা নো ইনামে তার দুই কন্যাকে কিম্মেই তেন্নোর সঙ্গে বিয়ে দেন—কিতাশিহিমে ছিলেন ইয়োমেই ও সুইকো তেন্নোর মা (সুইকো ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর বিধবা)। ওয়ানেকিমি ছিলেন সুশুন তেন্নোর মা। উমায়াদো রাজকুমারের দাদী ছিলেন কিতাশিহিমে পিতৃপক্ষ থেকে ও ওয়ানেকিমি মাতৃপক্ষ থেকে। লক্ষ্যণীয়, মোনোনোবি বংশের সামাজিক অবস্থান এ ধরনের সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কাজুরাকি ও সোগা বংশ রাজপরিবারের শাখা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু মোনোনোবি বংশ নয়। মোনোনোবি বংশ উত্তরাধিকারসূত্রে ‘ও-মুরাজি’ (大連) উপাধি ধারণ করত। এটি ওটোমো এবং পরে সোগা বংশের ‘ও-ওমি’ উপাধির সমপর্যায়ে ছিল। এই দুই উপাধিধারী ব্যক্তি সরকারের (যথাসম্ভব) সর্বোচ্চ "মন্ত্রী" হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও ‘ওমি’ বা ‘মুরাজি’ উপাধিধারী পরিবারগুলো ছিল। অধিকাংশ ‘ওমি’ উপাধিধারী পরিবারগুলোর নাম ছিল স্থাননামভিত্তিক। তারা কিনাই অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কাজুরাকি, হেগুরি, ওয়ানি, কোসে, কি এবং পরে সোগা—এইগুলো তার উদাহরণ। এদের বেশিরভাগই রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বংশধর বলে দাবি করত। যদি ‘হোর্স রাইডার’ তত্ত্ব সত্যি হয়। তবে এরা ছিল ওজিনের সম্প্রসারিত পরিবারের সদস্য এবং আগ্রাসী বাহিনীর অংশ। অপরদিকে, ‘মুরাজি’ পরিবারগুলোর নাম ছিল পেশাভিত্তিক। যেমন ইমবে (আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী), ইউকে (ধনুক প্রস্তুতকারী), কাগামিৎসুকুরি (আয়না নির্মাতা), হাজি (মৃৎপাত্র প্রস্তুতকারী), ত্সুমোরি (নিরাপত্তা রক্ষক), ইনুকাই (কুকুর পালক)। অবশ্যই মোনোনোবি (লোহার কাজ)। কৌতূহলজনকভাবে, ‘ও-ওমি’ ওটোমো বংশের নামও একটি পেশাভিত্তিক নাম ছিল। তবে তাদের পেশা ছিল বিশেষ—‘তোমো’ অর্থাৎ ‘সৈনিক’, যার পূর্বে ‘ও’ যুক্ত হওয়ায় বোঝানো হয় যে তারা সাধারণ সৈনিক নয়, বরং কমান্ডার। এই সব বংশই অভিজাত ছিল। তবে ধারণা করা হয় ‘মুরাজি’ পরিবারগুলো ওই পেশার কারিগরদের নেতৃত্ব দিত, নিজেরা সরাসরি সেই কাজ করত না। তবে তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল ‘ওমি’ বংশের চেয়ে কম। তাদের রাজপরিবারে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল। মোনোনোবি বংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত ‘নিগিহায়াহি নো মিকোতো’ ছিলেন এক দেবতার বংশধর। তিনি জিন্মু তেন্নো কর্তৃক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই পৃথিবীতে আগমন করেন। শুরুতে তিনি জিন্মুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে দেবতারা জিন্মুর পক্ষে আছেন। তখন পক্ষ পরিবর্তন করেন। মোনোনোবি নামটি ‘নিহন শোকি’-র সুইনিন তেন্নো এবং চুয়াই তেন্নোর অধ্যায়ে দেখা যায়, যেগুলো ওজিন রাজবংশের আগের। যদি এর কোনো সত্যতা থাকে। তবে মোনোনোবিরা ওজিনের নেতৃত্বে আগমনকারী আগ্রাসীদের আগেই জাপানে অভিজাত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইনগ্যো তেন্নোর মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র রাজকুমার কারু এবং রাজকুমার আনাহো (যিনি পরে আনকো তেন্নো হন)-র মধ্যে উত্তরাধিকারের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মোনোনোবি নো ওমায়ে নো সুকুনে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুরুতে রাজকুমার কারুর সমর্থক ছিলেন। ‘কোজিকি’-র মতে, তিনি কারুকে আনাহোর কাছে তুলে দেন যিনি তাকে হত্যা করেন, আর ‘নিহন শোকি’-র মতে, তিনি রাজকুমার কারুকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন। যেভাবেই হোক, তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই বংশের সদস্যদের নিয়ে অধিকাংশ কাহিনি সামরিক বা অপরাধী দমন সংক্রান্ত। ব্যতিক্রম কিছু থাকলেও, ওটোমো বংশ প্রধানত কোরিয়ায় যুদ্ধ করত, আর মোনোনোবি বংশ প্রধানত জাপানের অভ্যন্তরেই সক্রিয় ছিল। কোরিয়ায় তাদের একমাত্র যুদ্ধ ছিল মিমানায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, সিল্লার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ নয়। আরেকটি পার্থক্য ছিল, মোনোনোবি বংশ ধর্মের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। যেসব বংশ নিজেদের দেবতাদের বংশধর হিসেবে দাবি করত, তাদের নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ছিল। এটি পরবর্তীতে (বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর) ঐ দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতো। সুজিন রাজবংশের প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র মি (臣) পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ইসোনোকামি মন্দির ছিল মোনোনোবি বংশের বিশেষ উপাসনাস্থল। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করা যায়, সোগা নেতারা—অথবা অন্তত সোগা নো উমাকো—জাপানকে আরও সভ্য করে তোলার (অর্থাৎ চীনের মতো করে তোলার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি পেকচে ও কোগুর্যোতে চলমান পরিবর্তনের প্রতিফলন ছিল। এবং ঐ সময়ে ‘চীনের মতো’ হওয়া মানেই ছিল ‘বৌদ্ধ’ হওয়া। দুই বংশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বও এই সংঘাতের পিছনে ছিল। এটি প্রাচীন সময়ে বিরল একটি ঘটনা। জাপানে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে প্রচেষ্টা এই সময়কার ইতিহাসের মূল বিষয়, তার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিমমেইর শাসনামলে চীনের উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলো উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বন্টনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করছিল। এই পরিবর্তনগুলো কোগুরিয়োর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে কোগুরিও এসব তথ্য জাপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কারণ কিমমেইর শাসনের শেষদিকে কোগুরিও এবং জাপানের মধ্যে সিলা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের উত্তর দিয়ে জাপান সাগর অতিক্রম করে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই চীনা রাজবংশগুলো ছিল বর্বর উত্সের এবং প্রবলভাবে অভিজাত শ্রেণিনির্ভর। এটি জাপান এবং কোরিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মতোই। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা ছিল কৃষিজ আয় থেকে কর আদায় সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা, যেখানে প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে পর্যাপ্ত জমি বরাদ্দ দেওয়া হতো যাতে তারা নির্দিষ্ট হারে কর দিতে পারে—ফলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী কর নির্ধারণের জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এড়ানো যেত। এজন্য জনসংখ্যার নিয়মিত জনগণনা করতে হতো এবং যেসব পরিবার ছোট হয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে যেসব পরিবার বড় হয়েছে তাদের দেওয়া হতো। এ ব্যবস্থা তখনকার উত্তর চীনে সম্ভব ছিল, কারণ চীন রাজবংশ পতনের পর বর্বর আক্রমণের ফলে সেখানে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না, যদিও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল যথেষ্ট। কর আদায় হতো কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যার ভিত্তিতে। কোগুরিও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পরে জাপানও অনুসরণ করে। ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা কোগুরিও এবং জাপানে তখনকার প্রচলিত পদ্ধতির খুব ভিন্ন ছিল না, কারণ সেখানে বিদ্যমান কৃষক জনগোষ্ঠী দখল করে অভিজাত শ্রেণি গঠিত হয়েছিল। তবে এটি নিছক অনুমান, কারণ কৃষক ও অভিজাতদের সম্পর্ক সম্পর্কে আমাদের এই সময়ের কিছুই জানা নেই। শুধু “বে” নামক পদ্ধতিতে শিল্পীদের সংগঠিত করার ধরন করভিত্তিক উৎপাদন কোটার ভিত্তিতে পরিচালিত বলেই ধারণা করা যায় যে কৃষকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। এই সময়ে জাপানে কোগুরিয়োর প্রভাব যে ছিল তা প্রমাণ হয় “কোরিয়ো ফুট”-এর সর্বত্র উপস্থিতি থেকে (কোরিয়ো হলো কোগুরিয়োর বিকল্প নাম এবং পরবর্তী কোরিয়ো রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি “Korea” নামটি এসেছে)। এটি ছিল একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক। এটি চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪–৫৫০) নির্ধারণ করেছিল, পরে কোগুরিও তা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকে জাপানে পৌঁছে। এক ফুট বা “শাকু” ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন, এই এককটি জাপানের বহু প্রাচীন স্থাপনার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া আসুকাদেরা (দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির) অন্যতম। কোগুরিও থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হয়, ইশিবুতাই কোফুন (৬২৬ সালে মৃত সোগা নো উমাকোর সমাধি বলে মনে করা হয়) এবং বিদাতসু সম্রাটের পর সকল সম্রাটের কোফুন তৈরিতে কোরিয়ো ফুট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন জাপানি লেখাগুলোতেও বারবার উল্লেখ আছে যে কোগুরিওর আচার-আচরণ, ধর্ম, সংগীত ও নৃত্য জাপানিদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মিলপূর্ণ ছিল। বিশেষত কোগুরিও থেকে আগত নৃত্যশিল্পীরা খুব জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে ছোট আকারের কোফুনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, এতটাই যে বর্তমানে জাপানে টিকে থাকা প্রায় ৯০% কোফুনই এই শেষ কোফুন যুগের ছোট সমাধি। অনেকগুলোই গোলাকৃতি টিলা, প্রায় ১০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট, যেগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামো বড় কোফুনগুলোর মতোই। তবে অনেক কোফুন ছোট ছোট গুহার মতো, যেগুলো পাহাড় বা খাড়ির পাশে খোদাই করে কফিনের সমান আকারে বানানো হয়েছে। এ ধরনের কোফুন সাধারণত গুচ্ছাকারে পাওয়া যায় এবং প্রায়শই কাছাকাছি এলাকায় একই সময়ে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচের ছোট কোফুন পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় পাহাড়ের পাশে এমন অনেক কোফুন পাওয়া গেছে যার সংখ্যা ডজন বা শতাধিক। এ থেকে ধারণা করা যায়, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এই যুগে অনেক বেশি লোককে আলাদা সমাধি নির্মাণযোগ্য মনে করা হতো। রাজাদের ছাড়া আর বড় সমাধি নির্মাণ হতো না। যেহেতু সম্পদ বহুজনের মাঝে ভাগ করতে হতো। তাই প্রতিটি সমাধি ছোট ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হতে বাধ্য ছিল। ধারণা করা হয়, এটি অভিজাত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন নির্দেশ করে—গোত্রপ্রধানের ক্ষমতা হ্রাস এবং গোত্রের সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব জমিজমা ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিক যুগে গোত্রভিত্তিক অভিজাতরা যৌথভাবে গোত্রের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত এবং গোত্রপ্রধান তা বণ্টন করত। কিন্তু ৫৫০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে, যখন গোত্রের সদস্যরা নিজেদের আলাদা জমির ওপর অধিকারে থাকতেন এবং নিজের আয় নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে তারা এখনো সমাধিগুলো একই গোত্র কবরস্থানে তৈরি করতেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়, ফলে সম্মিলিত উপাদান পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। উল্লেখযোগ্য, “ছোট” সমাধি হলেও তাতে বহু টন ওজনের পাথর ব্যবহার করা হতো এবং অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হতো। ৬৪৬ সালের একটি ফরমান অনুযায়ী সমাধির আকার নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল—একজন রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে ৭ দিনে ১০০০ শ্রমিক, মন্ত্রীর জন্য ৫ দিনে ৫০০, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ৩ দিনে ২৫০, মধ্যমপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ১০০ এবং নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ৫০ শ্রমিক নিযুক্ত হবে। <i>নিহন শোকি</i>-তে ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে আগত দূত বন্ধুকে ঘিরে একটি অবিশ্বাস্য গল্প রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তখনকার জাপানি রাজদরবারে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুই দল লেখক ছিল, তারাই শুধু কোগুরিওর রাজার প্রেরিত চীনা ভাষায় চিঠি পড়তে পারত। এই দুই পরিবার ছিল কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে—দুজনেই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে)। যতদূর জানা যায়, ওমি শ্রেণির কোনো জাপানি অভিজাত চীনা ভাষায় পড়া-লেখা শেখার মতো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবেননি, যেমন রেশম বোনা শেখাও অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। এই অবস্থা দুই শতাব্দী ধরে চলেছে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবার শিক্ষিত হতে শুরু করে। ৫৮৫ সালে বিদাতসু সম্রাটের মৃত্যুর পর সোগা এবং মোনোনোবে গোত্রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। কোফুন যুগে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সমাধি নির্মাণে অনেক সময় লাগত—দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত। এসময় মরদেহ একটি অস্থায়ী ভবনে রাখা হতো, যাকে বলা হতো মোগারি নো মিয়া। এখানে মরদেহ স্থাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হতো এবং <i>নিহন শোকি</i> অনুযায়ী এই অনুষ্ঠানে সোগা নো উমাকো এবং মোনোনোবে নো মরিয়া পরস্পরের প্রতি প্রকাশ্যে অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিদাতসুর একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র ছিলেন, যার মা ছিলেন মর্যাদাসম্পন্ন, যার নাম ছিল রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাসকের ভাইয়েরও সিংহাসনের দাবির অধিকার ছিল। কিমমেই সম্রাটের বহু উচ্চস্তরের স্ত্রী ছিলেন, যার মধ্যে সোগা নো ইনামের দুই কন্যাও ছিলেন। নির্বাচিত উত্তরসূরি ছিলেন সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে। তিনি ইয়োমেই সম্রাট হন। বড় ভাই ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ওয়ে এবং আরেক ভাই রাজকুমার আনাহোবেও নিজের উত্তরাধিকারের দাবি জানান। ইয়োমেই রাজা হওয়ার পর আনাহোবে বিদাতসুর রানি কাশিকিয়াহিমেকে জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। তিনি তখন অস্থায়ী সমাধিস্থলে ছিলেন। সমাধির রক্ষী বাহিনীর প্রধান এতে বাধা দেন। এরপর রাজকুমার আনাহোবে সোগা এবং মোনোনোবে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন এবং রক্ষী পদারকে হত্যা করার অনুমতি চান। এটি তাকে দেওয়া হয়। ওই পদার পালানোর চেষ্টা করলেও আনাহোবে তার অবস্থান জেনে মোনোনোবে নো মরিয়াকে তাকে ও তার সন্তানদের হত্যা করতে বলেন। মরিয়া নিজেই তা করেন। সোগা নো উমাকো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। <i>নিহন শোকি</i> অনুসারে, এই ঘটনাই সোগা ও কাশিকিয়াহিমের (পরবর্তীকালে সুইকো সম্রাজ্ঞী) মধ্যে মোনোনোবে নো মরিয়ার প্রতি তীব্র শত্রুতা জন্ম দেয়। ইয়োমেই সম্রাট তেন্নো ৫৮৭ সালে রাজত্ব কাল দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান। তখন আবারও সিংহাসনের প্রশ্ন ওঠে। তার অসুস্থতা কয়েক মাস ধরে চলায় প্রতিযোগীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পায়। আক্রমণের আশঙ্কায় মোরিয়া ইয়ামাতোর বাইরে নিজের দূর্গে সরে গিয়ে সেনা সংগ্রহ শুরু করেন। তখন মোরিয়ার অন্যতম মিত্র ছিলেন নাকাতোমি নো কাতসুমি নো মুরাজি। ''নিহন শোকি'' অনুসারে তিনি ডাকিনীবিদ্যার মাধ্যমে মনোনীত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রাসাদে জাদুকরী বস্তু রাখার উদ্দেশ্যে যান। কিন্তু প্রাসাদ ত্যাগ করার সময় রাজকুমারের এক প্রহরীর হাতে নিহত হন। সবকিছু ইয়োমেইর মৃত্যুর আগেই ঘটে। তাঁর মৃত্যুর অল্প সময়ের মধ্যেই মনোনোব নো মোরিয়া রাজকুমার আনাহোবেকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি উত্তরাধিকার নিয়ে সংঘর্ষের জন্য সৈন্যদের জড়ো করার অজুহাত হিসাবে একটি শিকারের দল করতে চলেছেন। তবে এটি ফাঁস হয়ে যায়। সোগা নো উমাকো সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের আদেশে সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের অবিলম্বে যুবরাজ আনাহোবেকে হত্যার নির্দেশ দেন। তারা এই ধরনের কাজের প্রচলিত সেরা পদ্ধতি হিসেবে রাতের বেলায় তার প্রাসাদে হামলা চালান। এরপর সোগা একটি বড় বাহিনী গঠন করে মরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এতে বহু রাজকুমার, যেমন রাজকুমার হাতসুসেবে (ভবিষ্যতের সুশুন সম্রাট), রাজকুমার উমায়াদো সহ প্রচুর সংখ্যক রাজকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও ইয়ামাতোর প্রায় সমস্ত "ওমি" শ্রেণির আঞ্চলিক উজি সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট অভিজাত উজির দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরিয়া প্রস্তুত ছিলেন, ফলে কোনও গণহত্যা না হয়ে সরাসরি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে পরিণত হয়। ফলাফল কিছু সময়ের জন্য সন্দেহের মধ্যে ছিল। মনোনোবকে সমর্থনকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত গোষ্ঠীগুলি সকলেই ইয়ামাতোর বাইরের গোত্র থেকে ছিল। মনোনোবের বাহিনী ইয়ামাতোর পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। অন্যদিকে সোগার সেনাবাহিনী সম্ভবত আসুকা থেকে শুরু করে আনামুশি গিরিপথ পেরিয়ে একা নদীর কাছে হয়। একা নদীতে মনোনোব সেনাবাহিনী পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই নদীর অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এটি ফুরুচির ঠিক পশ্চিমে আধুনিক ইশি নদী ছিল বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এটি সম্ভবত বর্তমান ইশি নদী। মরিয়ার বাসভবন ছিল শিবুকাওয়াতে। অনুমিত যুদ্ধক্ষেত্রের উত্তর-পশ্চিমে অল্প দূরত্বে। যুবরাজ উমায়াদো তখন তরুণ কেবল তরুণ হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। তিনি সঙ্কটের মুহুর্তে একটি শপথ করেন যে তার পক্ষ বিজয়ী হলে একটি বৌদ্ধ মন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এই কথা শুনে সোগা নো উমাকো নিজেও একই শপথ নেন। এর পরপরই মনোনোব নো মোরিয়া একটি তীরের আঘাতে নিহত হন এবং তার বাহিনী ভেঙে পড়ে। <i>নিহন শোকি</i> জানায়, যুদ্ধস্থলে কয়েক শত লাশ পড়ে ছিল। এটি আরও বলেছে যে মনোনোব বংশের অনেক সদস্য অস্পষ্টতায় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্যরা বংশকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করার কোনও অভিপ্রায় অস্বীকার করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন উপাধি গ্রহণ করেন। আদালত নিঃসন্দেহে ইসোনোকামি বংশ গঠন সহ্য করেছিল। কারণ কেবলমাত্র মানুষের লড়াইয়ের কারণে মনোনোব বংশ প্রতিষ্ঠাকারী দেবতাকে অবহেলা করা অনুচিত হত। তারা ভেবেছি, যে দেবতাদের যথাযথভাবে পূজা করা হত না তারা ক্রুদ্ধ হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করত। মনোনোব বংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমরা ৬০৮ সালে একটি চীনা দূতাবাসের প্রেক্ষাপটে একজন মনোনোব নো ইউকিমি নো মুরাজি একজন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে দেখি। মনোনোবে গোত্র ধ্বংস হয়নি পুরোপুরি—৬০৮ সালে একজন মনোনোবে নো ইউকিমি নো মুরাজিকে চীনা দূতাবন্ধুর প্রেক্ষাপটে পদার হিসেবে দেখা যায়। নামটি পরবর্তীতেও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়। তবে আর কখনও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়নি। ইতিহাসের এই যুগের মূল বিষয় রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জাপানি প্রচেষ্টার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হলো কিম্মেইয়ের সময়েই উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলি উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বণ্টন ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করছিল। চীনের এই বিকাশগুলি কোগুরিওর উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। কোগুরিও জাপানকে এই জাতীয় জিনিস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ কিমেইয়ের রাজত্বের শেষার্ধে কোগুরিও এবং জাপান জাপান জুড়ে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এটি সিলার নিয়ন্ত্রণের অঞ্চলের উত্তরে চলে যায়। এই চীনা রাজবংশগুলি বর্বর বংশোদ্ভূত এবং অত্যন্ত অভিজাত ছিল, অনেকটা জাপান এবং কোরিয়ান রাজ্যগুলির মতো। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থাটি প্রতিটি কৃষক পরিবারকে স্থির কর প্রদানের অনুমতি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে এমন গ্যারান্টি দিয়ে কৃষিকাজ থেকে করের রিটার্নকে সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রতিটি পরিবারকে তাদের জমির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন করের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করার জন্য সমস্ত প্রশাসনিক মাথাব্যথা এবং ব্যয় সাশ্রয় করে। এর জন্য জনসংখ্যার একটি পর্যায়ক্রমিক আদমশুমারি নেওয়া এবং তারপরে আকারে সঙ্কুচিত পরিবারগুলির কাছ থেকে জমি নেওয়া এবং আকারে বেড়ে ওঠা পরিবারগুলিকে জমি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটি করা সম্ভব ছিল কারণ, এই সময়ে উত্তর চীনে সম্ভাব্য আবাদযোগ্য জমির পরিমাণের তুলনায় কৃষি জনশক্তির ঘাটতি ছিল। চিন রাজবংশের পতনের পরে বর্বর আক্রমণের কারণে স্থানচ্যুতির কারণে এই অবস্থা হয়। উপলব্ধ শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতে কর গণনা করা হয়েছিল। কোগুরিও এই সিস্টেমটি অনুলিপি করেছিল এবং জাপানও শেষ পর্যন্ত এটি করেছিল। এটি অনুমান করা হয় যে,এটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান কৃষক জনসংখ্যার বিজয়ের মাধ্যমে অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে কোগুরিও এবং জাপানে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির থেকে আলাদা ছিল না। এটি অনুমান হিসাবে রয়ে গেছে কারণ আমরা এই সময়কালে কৃষক এবং অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানি না, কারিগর শ্রমিকদের সংগঠিত করার "হতে" সিস্টেমটি উত্পাদন কোটার মাধ্যমে করের উপর ভিত্তি করে অনেকটা একের মতো দেখায়, এটি প্রশংসনীয় করে তোলে যে কৃষকরা একইভাবে সংগঠিত হয়েছিল। আমরা জানি যে "কোরিও ফুট" এর সর্বত্র উপস্থিতির কারণে এই সময় থেকে জাপানে কোগুরিওর যথেষ্ট প্রভাব ছিল (কোরিও কোগুরিওর একটি বিকল্প নাম এবং পরবর্তী সময়ের কোরিও রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি নাম "কোরিয়া" এর ভিত্তি)। এটি পরিমাপের একটি ইউনিট ছিল। চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪-৫৫০) কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোগুরিওতে গৃহীত হয়। সেখান থেকে এটি জাপানে চলে যায়। এক ফুট ("শাকু") ৩৫ সেন্টিমিটার ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন যে এই ইউনিটটি দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির (৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু) সহ অনেক প্রাচীন ভবন নির্মাণে নিযুক্ত ছিল। কোগুরিওর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা জাপানে বৌদ্ধধর্মের প্রাথমিক প্রসারে বিশিষ্ট ছিলেন। কোরিও পা স্পষ্টতই ইশিবুতাই কোফুন (সোগা নো উমাকোর নামী সমাধি। তিনি ৬২৬ সালে মারা গিয়েছিলেন) এবং বিদাতসু তেন্নোর সমস্ত রাজকীয় কোফুন স্থাপনেও ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রারম্ভিক জাপানি লেখাগুলিতেও অনেকগুলি উল্লেখ রয়েছে যা মন্তব্য করে যে তারা কোগুরিওকে রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার, (ঐতিহ্যবাহী) ধর্ম এবং সংগীত এবং নৃত্যের ক্ষেত্রে কতটা অনুরূপ বলে মনে করেছিল। কোগুরিওর নৃত্যশিল্পীরা স্পষ্টতই বিশেষত জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক জ্ঞানটি হলো ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতাব্দীর সময়কালে ছোট কোফুনের সংখ্যায় অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানের সমস্ত বেঁচে থাকা কোফুনের প্রায় ৯০% এর মধ্যে প্রায় ৯০% কোফুন যুগের শেষের দিকে ছোট সমাধি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকগুলি প্রায় ১০ মিটার জুড়ে গোলাকার ঢিবি রয়েছে যা একই ধরণের সমাধি কক্ষ যা বড় সমাধিগুলিতে পাওয়া যায়। বিশেষত প্রচুর সংখ্যক সমাধি রয়েছে। সেগুলোকে সাধারণত কফিনের চেয়ে সবেমাত্র বড় পাহাড়ের পাশে ছোট ছোট টানেল চালিয়ে দলবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই এটি একই বয়সের অন্যান্য ছোট কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে নির্মিত কোফুনের কাছাকাছি পাওয়া যায়। ক্লিফসাইড সমাধি সহ কিছু অঞ্চল রয়েছে। সেখানে কয়েক ডজন এবং এমনকি শত শত ছোট উন্মুক্ত স্থায়ী সমাধি রয়েছে। স্বভাবতই এর অর্থ এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে একটি বিস্তৃতভাবে নির্মিত সমাধি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হত। সত্যিই বিশাল সমাধি আর সম্রাটদের জন্য নির্মিত হয়নি। যখন উপলব্ধ সংস্থানগুলি অনেকগুলি জুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে, তখন পৃথক সমাধিগুলি অবশ্যই ছোট এবং কম ব্যয়বহুল হতে হবে। ধারণা করা হয় যে,এটি অভিজাত সমাজের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। অর্থাত এটি বংশ প্রধানের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং বংশের কম সদস্যদের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। একটি চিত্র পাওয়া যায়, প্রথম দিনগুলিতে অভিজাত গোষ্ঠী একটি সম্মিলিত গোষ্ঠী হিসাবে তার অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং বংশের মোট সম্পদ কোনও না কোনও অর্থে বংশের প্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। তবে ৫৫০ এবং তার পরে বংশের সদস্যরা ধীরে ধীরে তুলনামূলকভাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জমিদার এস্টেটের মালিকদের মতো হয়ে উঠেছিলেন। এর মধ্যে তারা তাদের নিজস্ব রাজস্ব নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যাইহোক, তারা এখনও ঘনীভূত বংশের কবরস্থানে তাদের সমাধিগুলি তৈরি করেছিল। তাই সম্মিলিত উপাদানটি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এটি উল্লেখ করা উচিত, যখন আমরা "ছোট" সমাধিগুলির কথা বলি, তখন তারা এখনও বহু-টন শিলাগুলির সংখ্যা নিয়োগ করে এবং নির্মাণের জন্য প্রচুর জনশক্তির প্রয়োজন হয়। সমাধিগুলির স্কেল নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ৬৪৬ এর একটি আদেশ রয়েছে যা কী প্রয়োজন ছিল তার একটি ধারণা দেয়। আদেশে বলা হয়, একজন রাজপুত্রের একটি সমাধি থাকতে হবে যাতে সাত দিনের জন্য ১০০০ শ্রমিক শ্রম দিতে হবে, একজন মন্ত্রীর সমাধি ৫০০ শ্রমিক দিয়ে ৫ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমাধি ২৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ৩ দিনে নির্মাণ করতে হবে, একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ১০০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে এবং নিচু পর্যায়ের কর্মকর্তার সমাধি ৫০ জন শ্রমিক দিয়ে ১ দিনে নির্মাণ করতে হবে। ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে দূতাবাসের আগমন সম্পর্কিত ''নিহন শোকিতে'' একটি বরং অবিশ্বাস্য উপাখ্যান রয়েছে যা চিত্রিত করে যে সেই সময়ে জাপানি আদালতে পূর্ব ও পশ্চিমের লিপিকার নামে পরিচিত লিপিকারদের দুটি কর্পস ছিল এবং কেবল তারাই কোগুরিও রাজার পাঠানো চিঠিটি এবং চীনা ভাষায় লেখা পড়ার আশা করা যেতে পারে। তারা দুটি পরিবার ছিল, কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে, উভয়ই কোরিয়ান অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে ছিল)। যতদূর নির্ধারণ করা যায় যে ওমি শ্রেণীর কোনও উপযুক্ত জাপানি অভিজাত এখনও পর্যন্ত কীভাবে পড়তে এবং লিখতে হয় তা শিখতে পছন্দ করেনি (অগত্যা চীনা ভাষায়), তিনি কীভাবে রেশম বুনতে হয় তা শেখার চেয়ে বেশি পছন্দসই বলে মনে করেননি। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছিল। পরবর্তী প্রজন্মই প্রথম সাক্ষর হয়। সোগা এবং মনোনোব গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ অবিলম্বে ৫৮৫ সালে বিদাতসু তেন্নোর মৃত্যুর থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কোফুন সময়কালে, কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমাধির আকারের কারণে, মৃত্যুর সময় এবং দাফনের মধ্যে প্রায়শই যথেষ্ট বিলম্ব হত, দুই বছর পর্যন্ত, বা এমনকি চরম ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত। এই সময়ে মরদেহটি মোগারি নো মিয়া নামে একটি অস্থায়ী সুবিধায় রাখা হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' মতে, এই স্থানে দেহ স্থাপনের বিষয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল এবং এই অনুষ্ঠান চলাকালীন বিদাতসু তেন্নো সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়া পারস্পরিক অবজ্ঞা প্রকাশ করতে দেখা যায়। উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ ছিল। বিদাতসুর একজন বিশিষ্ট মায়ের সাথে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ছিল যার দৃঢ় দাবি ছিল। ইনি রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ও। যাইহোক, একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রথাও ছিল যে একজন শাসকের ভাইয়ের উত্তরাধিকারের দাবি ছিল এবং বিদাতসুর বেশ কয়েকটি ভাই ছিল। কিম্মেই তেন্নোর সোগা নো ইনামের দুই কন্যা সহ প্রচুর উচ্চ-মর্যাদার স্ত্রী ছিল। নির্বাচিত প্রার্থী আসলে সোগা নো উমাকোর ভাগ্নে ছিলেন যিনি ইয়োমেই তেন্নো হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় ভাই ছিলেন ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ও, যার মা সেনকা তেন্নোর কন্যা ছিলেন এবং ''নিহন শোকির'' মতে আরেক বিশিষ্ট ভাই রাজকুমার আনাহোবে প্রকাশ্যে নিজের জন্য উত্তরাধিকার দাবি করেন। ইয়োমেই ইতিমধ্যে সিংহাসনে আরোহণ করার পরে যুবরাজ আনাহোবে অস্থায়ী সমাধি এবং বিদাতসুর সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টা করেন। তিনি শেষকৃত্য অবধি সেখানে শোকে বাস করছিলেন, যাকে তিনি সিংহাসনে তার দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। অস্থায়ী সমাধিতে রক্ষীদের কমান্ডার তাকে প্রতিহত করেন। যুবরাজ আনাহোবে তখন দুই মন্ত্রী, সোগা নো উমাকো এবং মনোনোবে নো মোরিয়ার কাছে গিয়েছিলেন এবং অভিযোগ করেন যে এই কর্মকর্তা তাকে অপমান করেছেন এবং তাকে হত্যা করার অধিকার দাবি করেছেন। এটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। পদার পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজপুত্র তিনি কোথায় ছিলেন (প্রাক্তন সম্রাজ্ঞীর একটি গ্রামীণ প্রাসাদ) তা খুঁজে পেয়েছিলেন এবং মনোনোবে নো মোরিয়াকে তাকে এবং তার সন্তানদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটি মোরিয়া ব্যক্তিগতভাবে করেন। সোগা নো উমাকো এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ''নিহন শোকি'' বলেছেন যে এই সময় থেকে সোগা নো উমাকো এবং কাশিকিয়াহিমে (ভবিষ্যতের সুইকো তেন্নো) মনোনোব নো মোরিয়ার প্রতি একটি শক্তিশালী শত্রুতা কল্পনা করেন। আগের মতোই উত্তরাধিকারের জন্য বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। যুবরাজ ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়োমেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে মনোনীত করেন এবং [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ|মুরোমাচি পর্বের]] বইয়ে বলা হয়েছে যে তাঁর পুত্র। তিনি জোমেই তেন্নো হয়েছিলেন, ৫৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোগা নো উমাকো পরিবর্তে রাজকুমার হাটসুবেকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সদ্য খুন হওয়া যুবরাজ আনাহোবের ভাই ছিলেন। তবে যিনি শুরু থেকেই সোগার সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন। উভয় রাজপুত্র ছিলেন সোগা নো ইনামের কন্যা ওনেকিমির পুত্র এবং তাই উমাকোর ভাগ্নে। যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরে সুশুন তেন্নো সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুশুন স্পষ্টতই খুব বেশি ব্যক্তিগত ক্ষমতা ছাড়াই ছিল। এটি লক্ষণীয় যে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর কোনও রাজকন্যা ছিল না এবং ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত তাঁর একমাত্র স্ত্রী ছিলেন ওটোমো বংশের। ''নিহন শোকির'' কাছ থেকে বিচার করার জন্য তৎকালীন শাসক বংশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজকন্যা কাশিকিয়াহিমে। তিনি সোগা নো উমাকোকে মনোনোবে নো মোরিয়া আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং যিনি সিংহাসনের জন্য রাজকুমার হাটসুসেবেকে সুপারিশ করেন। প্রায় ৫ বছর সিংহাসনে থাকা সত্ত্বেও ''নিহন শোকিতে'' সুশুনের নিবন্ধটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিনটি বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি ছিল পাইকচে থেকে একটি দূতাবাস যা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং উপকরণ নিয়ে এসেছিল। সোগা নো উমাকো সন্ন্যাসীদের আলোচনায় নিযুক্ত করেন এবং তার বোন ইনামের মেয়ে সহ জাপানি নানদের আরও পড়াশোনার জন্য পায়েচে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারা কোরিয়ায় ২ বছর কাটিয়েছিলেন, ৫৯০ সালে ফিরে আসেন। উমাকো তার মানত করা মন্দির নির্মাণের কাজও শুরু করেন। ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আসুকাদেরায় পরিণত হওয়ার স্থল ভেঙে যায়। ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে উল্লেখ করা হয় যে, অভিজাত পরিবারের বেশ কয়েকজন মহিলা সন্ন্যাসিনী হয়েছিলেন এবং চীন থেকে ৬ জন সন্ন্যাসী দেশে আসেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো "এমিশি" বর্বরদের সাথে সীমান্তের অবস্থা পরিদর্শন করার জন্য উত্তরের তিনটি প্রধান রুট, হোকুরিকুডো, তোসান্দো এবং টোকাইডো বরাবর ৫৮৯ সালে কর্মকর্তাদের প্রেরণ করা হয়েছিল। তৃতীয় বিষয়টি হলো ৫৯১ সালে আদালতে একটি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সিল্লা থেকে মিমানা পুনরুদ্ধার করা দরকার। পাঁচজন সেনাপতি (সমস্ত পুরুষ যারা মোরিয়ার বিরুদ্ধে উমাকোর পক্ষে লড়াই করেন) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ২০,০০০ পুরুষ দেওয়া হয়েছিল। তারা সুকুশি ভ্রমণ করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরিয়া অতিক্রম করেনি। সুশুন মারা গেলে তাদের ইয়ামাতোতে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কোরিয়াকে লক্ষ্য করে ৫৯১ অভিযানের ঠিক এক বছরেরও বেশি সময় পরে, সুশুন তেন্নো একটি শুয়োর শিকারের দলের সময় একটি মন্তব্য করেন যা কাউকে আমন্ত্রণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তিনি যে ব্যক্তির সাথে সমস্যায় পড়েছিলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তাকে অনুগ্রহ করার জন্য। যখন এটি সোগা নো উমাকোকে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে উল্লিখিত ব্যক্তিটি নিজেই ছিলেন। ফলে তিনি সুশনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি পাদটীকা রয়েছে যা বলে যে "একটি বই বলেছে যে" সুশুনের হুমকিমূলক মন্তব্য সম্পর্কে উমাকোর কাছে যে প্রতিবেদনটি শাসকের একজন অসন্তুষ্ট উপপত্নীর কাছ থেকে এসেছিল। উমাকো আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমা নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা অজুহাতে আদালতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এই লোকটি সম্রাটকে হত্যা করেছিল। এরপরে এটি বলে যে সুশুনকে একই দিনে ইতিমধ্যে বিদ্যমান রাজকীয় সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই যুগে তিনিই একমাত্র শাসক যেখানে এটি করা হয়েছিল। সুই রাজবংশের চীনা ইতিহাস অনুসারে। এটি জাপান সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ রয়েছে, প্রথাটি ছিল যে একজন আভিজাত্যকে কেবল তিন বছর পর্যন্ত শোকের পরে হস্তক্ষেপ করা হত এবং একজন সাধারণকে তার মৃত্যুর দিন সূর্যাস্তের আগে সমাধিস্থ করা আবশ্যক। সুশুনকে সাধারণের কবর দেওয়া হয়েছিল, মনে হয়। ''নিহন শোকির'' এই ঘটনার কভারেজ আমার চেয়ে বেশি নয় এবং সুশুন কেন উমাকোকে নির্মূল করতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই বলে না। এতে হত্যাকাণ্ডের পরিণতি বা এ বিষয়ে কারও প্রতিক্রিয়ার কোনো আভাসও উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র অতিরিক্ত উপাদান হলো একটি অদ্ভুত বিবৃতি যে আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমার উমাকোর এক কন্যার সাথে গোপন সম্পর্ক ছিল যিনি সুশুনের উপপত্নী ছিলেন এবং তাকে তার স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করেন। উমাকো প্রথমে এ বিষয়ে সচেতন ছিল না, ভেবেছিল যে মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে সে কোমাকে হত্যা করেছে। উপস্থাপিত হিসাবে এটি বোঝায় যে এটি না থাকলে কোমা বিনা শাস্তিতে হত। বিশ্বাস করতেই হবে যে, সুশুনের হত্যাকাণ্ডকে হত্যা নয়, ন্যায়সঙ্গত কারণে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিম্মেইকে অনুসরণ করা তিনজন শাসক সকলেই কিম্মেইয়ের পুত্র ছিলেন। তবে ভাইদের সরবরাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখননাতির দলটির দিকে তাকাতে হবে। বরাবরের মতোই ছিল বিদাতসু তেন্নোর ছেলে ওশিসাকা নো হিকোহিতো। রাজকুমার তাকেদাও ছিলেন। তিনি বিদাতসুর এক পুত্র এবং যার মা ছিলেন শক্তিশালী কাশিকিয়াহিমে। এরপরে ছিল ইয়োমেই তেন্নোর জ্যেষ্ঠ পুত্র উমায়াদো। উমায়াদোর বয়স তখন ১৯। তাকেদার বয়স জানা যায়নি। তবে তার একটি ছোট বোন ছিল যিনি ইতিমধ্যে উমায়াদোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হিকোহিতো সম্ভবত ইতিমধ্যে বেশ বৃদ্ধ ছিলেন এবং স্পষ্টতই বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না। অন্য সব সম্ভাবনা অবশ্যই খুব কম ছিল। ''নিহন শোকি'' আমাদের কোনও বিতর্ক বা আলোচনা সম্পর্কে ঠিক কিছুই বলেন না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, শেষ পর্যন্ত কাশিকিয়াহিমে নিজেই সিংহাসন গ্রহণ করেন, সুইকো তেন্নো হয়ে ওঠেন। তিনিই প্রথম শাসক (হিমিকো এবং আইয়োর পরে) যিনি মহিলা ছিলেন। যেহেতু সুইকো মহিলা সার্বভৌমদের একটি দীর্ঘ তালিকার প্রথম ছিল। তাই এটি অবশ্যই স্পষ্ট যে এটি সম্ভব করার জন্য অবশ্যই কিছু পরিবর্তন করা উচিত। তবে উত্সগুলি কী হতে পারে সে সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলার নেই। প্রাচীনকালে ছয়জন ভিন্ন মহিলা তেন্নো হিসাবে কাজ করেন (টোকুগাওয়া যুগে আরও বেশি ছিল)। তাদের মধ্যে দু'জন বিভিন্ন রাজত্বের নামে দু'বার রাজত্ব করেন, মোট ৮ টি রাজত্ব করেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় প্রথম চারজন ইতিমধ্যে সম্রাজ্ঞী (একটি তেন্নোর বিধবা) ছিলেন। এগুলিকে স্থান ধারক হিসাবে দেখা সহজ, পুত্র বা নাতির রাজত্ব করার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে মহিলা তেন্নোর ব্যবহার বন্ধ করার পরে দ্রুত এই নীতিটি পরিত্যাগ করা হয়েছিল যে কোনও শিশুকে সিংহাসনে বসানো সম্ভব নয়। একটি স্থানধারক ছাড়া, আপনি অপেক্ষা করতে পারবেন না। সুইকোর ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে সিংহাসন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার পুত্র রাজকুমার তাকেদা দ্বারা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলেন। সোগা নো উমাকোর সিদ্ধান্ত এড়ানোর যথেষ্ট কারণ ছিল। তার ভাগ্নে সুশুনকে সিংহাসনে বসিয়ে এবং তার সাথে একটি কন্যাকে বিয়ে দিয়ে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই দ্বিতীয় সুযোগের ব্যবস্থা করার জন্য তার কিছুটা সময় প্রয়োজন। তার একটি অতিরিক্ত কন্যা ছিল যাকে তিনি যুবরাজ উমায়াদোর সাথে বিয়ে করেন। তবে এটি তাকে সম্ভাব্য শাসক নাতির সাথে উপস্থাপন করতে চলেছে কিনা তা বলা খুব তাড়াতাড়ি ছিল। তবে, এটি আমাদের জানায় না যে এখানে নতুন কী ছিল। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি কেন? ওজিন রাজবংশের সময় দুটি পরিস্থিতি ছিল যখন পরবর্তী শাসক কে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একটি অন্তর্বর্তী পরিস্থিতি ছিল এবং উভয় ক্ষেত্রেই শাসক বংশের একজন মহিলা সদস্য শাসকের আনুষ্ঠানিক উপাধি গ্রহণ না করেই বিষয়গুলির সভাপতিত্ব করেন। আগেকার যুগে শাসকের স্ত্রীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাদের সবাইকে কেবল কিসাকি বলা হত। তার পিতার মর্যাদা থেকে উদ্ভূত কেবল অন্তর্নিহিত মর্যাদা ছিল। এটি অবশ্যই তার সন্তানরা উত্তরাধিকারের জন্য বিবেচিত হওয়ার যোগ্য কিনা তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। যাইহোক, আদালত চালানো আরও বড় এবং জটিল হয়ে ওঠার সাথে সাথে কিম্মেইয়ের সময়ে এটি পরিবর্তন হতে শুরু করে। আদালতের সাথে সংযুক্ত পদারদের একটি বিশেষ দল এসেছিল যারা মনোনীত যুবরাজের পরিবার পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিল। তিনি ও-ওমি এবং ও-মুরাজির পাশাপাশি এক ধরণের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং সম্রাটের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এর অর্থ হলো অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, রাজস্বের নির্দিষ্ট উত্সগুলি রাজপুত্র এবং স্ত্রীদের ভরণপোষণের জন্য বরাদ্দ করা হবে এবং এই একজনকে আরও বেশি এবং সেই ব্যক্তিকে কম বরাদ্দ করে মর্যাদা চিহ্নিত করার স্পষ্ট সুযোগ ছিল। সুইকোর রাজত্বকালে লেখা একটি বই রয়েছে যা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে সুইকোর আগে সমস্ত স্ত্রী কেবল "কিসাকি" ছিলেন। বিদাতসুর স্ত্রী থাকাকালীন তাকে "ও-কিসাকি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি কিসাকি থেকে একইভাবে ও-মুরাজি মুরাজি থেকে আলাদা। অন্য কথায়, তিনি কেবল একজন উপপত্নী ছিলেন না, সম্রাজ্ঞী ছিলেন। বিদাতসুর রাজত্বকালে কিসাইবে নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কিসাকিবের একটি সংকোচন। এর অর্থ কৃষকদের একটি ইউনিট যা একটি নির্দিষ্ট কিসাকিকে সমর্থন করার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। "ব্যক্তিগত হও" বা "ব্যক্তিগত হও" হিসাবে সর্বোত্তমভাবে অনুবাদ করা অক্ষর দিয়ে লেখা হয় তবে কিসাকিবে উচ্চারণ করা হয় তা চীনা প্রভাবের ফলাফল। চীনে সম্রাট ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার অবস্থানের সবকিছুই ছিল 'প্রকাশ্য'। যাইহোক, সম্রাজ্ঞী একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এখনও একটি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেন, রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত নয়। তার নিজের সম্পত্তি থাকতে পারত এবং ছিল। এটি তার পরিবার বা সম্রাটের কাছ থেকে উপহার দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। জাপানি কেসটি আলাদা ছিল, রাষ্ট্রীয় সংস্থানগুলি অর্পণ করে। এটি এখনও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে পরিচালিত হয়, কিসাকিতে। সুতরাং, আগের কিসাকির বিপরীতে, কাশিকিয়াহিমে এমন কর্মকর্তা ছিলেন যারা তাকে রিপোর্ট করেন এবং যে সংস্থানগুলি তিনি ব্যয় করতে পারেন। তিনি একজন খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে বিদাতসুর মৃত্যুর পরের পর্বে যখন যুবরাজ আনাহোবে তাকে অপহরণ ও বিয়ে করার চেষ্টা করেন, যে পদার তাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি কাশিকিয়াহিমের একটি গ্রামীণ প্রাসাদে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন, সম্ভবত তার সমর্থনের জন্য একটি অবস্থানের স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল। তিনি নিঃসন্দেহে এমন একজন কর্মকর্তা ছিলেন যিনি বিশেষভাবে তার সেবায় নিবেদিত ছিলেন। সম্রাজ্ঞীর এই অতিরিক্ত গুরুত্ব পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল, এমনকি সেই সময়েও যখন তারা তেন্নো হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সুইকোর রাজত্বকালে এবং তার পরে যা ঘটেছিল তার মধ্যে একটি ছিল যে অন্য সবার তুলনায় শাসকের মর্যাদা ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য একটি বড় প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং শাসকের মর্যাদা বাড়ার সাথে সাথে তার স্ত্রীদের। বিশেষত তার সম্রাজ্ঞী, তার উত্তরাধিকারীর মা। সম্রাজ্ঞীকে স্ত্রী হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে জীবিত সম্রাটের মা হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে মৃত সম্রাটের মা হিসাবে এবং আরও অনেক কিছু নির্দেশ করার জন্য চীনা থেকে নেওয়া উপাধিগুলির একটি সিরিজ দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। যেহেতু সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত হওয়ার অধিকারী বেশ কয়েকটি জীবিত মহিলা থাকতে পারে। তাই তাদের সকলকে আলাদা করার জন্য পর্যাপ্ত উপাধি থাকা দরকার ছিল। হেইয়ান যুগে, যখন মহিলারা আর তেন্নো হতে পারত না, একাধিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল কারণ একজন সম্রাজ্ঞী তার নিজের খেয়ালখুশিতে উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। একজন সম্রাজ্ঞী যিনি দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন সম্রাটের মা ছিলেন, যদি তার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা থাকে তবে তিনি যথেষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। === শোতোকু তাইশি === [[Image:Prince Shotoku with Two Princes by Kano Osanobu 1842.png|thumb|right|''তোহন মিয়েই'', রাজকুমার শোতোকু এবং তার দুই ছেলের প্রতিকৃতি]] <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে সুইকো তেন্নো সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের একেবারে শুরুতেই উমায়াদো নো তোয়োতোমিমিকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাস্টনের অনুবাদে বলা হয়েছে, "সে জন্ম নেওয়ার সাথেসাথেই কথা বলতে পারত। এতটাই প্রজ্ঞাবান ছিল যে দশজন লোকের মামলা একসাথে শুনে নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারত। সে আগে থেকেই জানত কী ঘটতে চলেছে।" সে শুধু উত্তরসূরি হিসেবেই নিযুক্ত হয়নি, বরং "সরকারের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ন্যস্ত ছিল এবং প্রশাসনের সকল বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।" <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যে কাহিনি বলার চেষ্টা করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন এই ব্যক্তি। তাঁকে বৌদ্ধ ও কনফুসীয় দর্শনে পারদর্শী এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের প্রথম ইতিহাস (যেটি টিকে নেই)। তাঁর আবির্ভাব থেকেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-এর লেখকদের দৃষ্টিকোণে আধুনিক জাপানের ইতিহাস শুরু হয়। মধ্যযুগে তাঁকে একজন বৌদ্ধ সাধু হিসেবে গণ্য করা হতো। আধুনিক কালে ১৮৮৫ সালে চালু হওয়া সংবিধানিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক সন্ন্যাসী হিসেবে বিবেচিত হন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> যাঁর রচয়িতা বলে মনে করে সেই "সতেরো অনুচ্ছেদের সংবিধান" জাপানের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক দলিল হয়ে ওঠে। "যুবরাজ" শব্দটির ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তির ভিত্তিতে আপত্তি জানানো হয়েছে, কারণ এই সময়ে এই উপাধিটি উত্তরাধিকার নির্ধারণে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করত বলে মনে হয় না। তবে, এই পদবির মাধ্যমে নির্বাচিত রাজপুত্রকে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। এটাও মনে করা যেতে পারে যে, যেখানে তেন্নো সমগ্র জাতির শাসক হিসেবে দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিলেন, সেখানে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শাসক বংশের পক্ষে একপ্রকার দলের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন, যেমন সোগা এবং অন্যান্য বংশপ্রধানেরা তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন। পুরো নারা যুগজুড়ে এবং প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগেও রাজপুত্রদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং স্পষ্ট ছিল যে, সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর ক্ষমতা অন্যান্য অভিজাত বংশগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সাধারণত তেন্নো নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, সবসময়ই একজন "জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র" থাকতেন। তেন্নো-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী তাঁর অনেক স্থানে যাওয়া এবং অনেকের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। এই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। একজন নারী শাসকের জন্য এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর ছিল, ফলে তাঁর না থাকতে পারা সভায় পরিবারের একজন বিশ্বস্ত সদস্যের উপস্থিতি থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। তবে, এই বিষয়গুলো থেকেই ক্ষমতার উৎস বোঝা যায় না। ক্ষমতার অবস্থান সবসময়ই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল। তাই মনে করার কোনও কারণ নেই যে, সুইকো ওই সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন না। রাজকুমার উমায়াদোর বাবা-মা দুজনেই শাসক বংশের সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর পিতৃকুলের দাদি ছিলেন সোগা কিতাশিহিমে এবং মাতৃকুলের দাদি সোগা ওআনেকিমি—দুজনেই সোগা নো ইনামির কন্যা এবং সোগা নো উমাকোর বোন। তাঁর চারজন স্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়, যাঁদের একজন ছিলেন উমাকোর কন্যা। ৬০০ সালে একটি জাপানি দূতাবিদ দল চীনের স্যুই রাজবংশে গিয়েছিল এবং স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে "ওয়া"-র রাজা পরিবারের নাম ছিল আমে (অর্থাৎ স্বর্গ) এবং তাঁর ব্যক্তিগত নাম ছিল তরাশিহিকো। এটি চীনা অক্ষরে শব্দভিত্তিকভাবে লেখা হয়েছে। "তরাশি" ছিল এই সময়ে শাসকদের আনুষ্ঠানিক নামের সাধারণ উপাদান এবং সম্ভবত "শাসক" অর্থে ব্যবহৃত হতো। "হিকো" একটি নির্দিষ্ট পুরুষ নাম উপাদান, যার নারীস্বরূপ "হিমে"। ফলে মনে হয় এই পরিচিতিটি স্যুইকো তেন্নোর নয় বরং রাজকুমার উমায়াদোর। যদিও সম্ভব যে চীনাদের জানা ছিল না যে "ওয়া"-র রাজা একজন নারী (অথবা জাপানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা গোপন রেখেছিল)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে উমাকো এবং উমায়াদোর মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তাঁরা উভয়েই প্রাদেশিক অভিজাতদের তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রয়োজনে একমত ছিলেন এবং এ লক্ষ্যে শাসকের তাত্ত্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাসাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো সভাসদদের প্রকৃত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা উভয়েই চীনা সাহিত্যের পাণ্ডিত্যে পারদর্শী ছিলেন এবং অন্তত একটি বইয়ে সহযোগিতা করেন। ৫৮৯ সালে স্যুই রাজবংশের দ্বারা চীনের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ৫৮১ সালে উত্তরাঞ্চলের নর্দার্ন ঝৌ রাজবংশে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দক্ষিণাঞ্চল জয় করে একীকরণ সম্পন্ন করে। পেকচে ৫৮১ সাল থেকে এবং শিলা অন্তত ৫৯৪ সাল থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগে ছিল। ৬০০ সালে স্যুইকো রাজদরবার শিলায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল এবং একই বছর পঞ্চম শতাব্দীর পর প্রথমবারের মতো চীনে দূত পাঠানো হয়। যদিও <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এই মিশনের সাফল্যের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা রয়েছে, এই বাহিনী কোরিয়ায় বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি এবং ৬০২ সালে একটি দ্বিতীয় ও বৃহৎ অভিযান পরিকল্পিত হয়। লক্ষণীয় যে এই বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন রাজকুমার কুমে, রাজকুমার উমায়াদোর ভাই, কোনও ঐতিহ্যবাহী সামরিক উজি সদস্য নয়। এটি কে প্রমাণ হিসেবে ধরা হয় যে এই প্রকল্পটি উমাকোর নয় বরং উমায়াদোর উদ্যোগে ছিল। এছাড়া, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে এই বাহিনী গঠিত হবে "কানতোমো" থেকে, যার মধ্যে ছিল ধর্মীয় দায়িত্বে নিয়োজিত ইম্বে ও নাকাতোমি বংশ, পাশাপাশি "কুনি নো মিয়াতসুকো" ও "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রা। অর্থাৎ কোনও "ওমি" শ্রেণির বংশ এতে অংশ নেয়নি। সমস্ত যোদ্ধা শাসক বংশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বংশ ও প্রাদেশিক অভিজাতদের মধ্য থেকে আসবে। এটি সম্ভবত এমন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা সরাসরি শাসকের প্রতি অনুগত থাকবে, বরং ঐতিহ্যগত বংশের মিলিশিয়ার বিকল্প হবে। এই বিশ্লেষণ সত্য হলে, ৬০২ সালে রাজকুমার উমায়াদোর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, প্রকল্পটি সফল হয়নি। বাহিনী কিউশুতে একত্রিত হওয়ার পর রাজকুমার কুমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক মাস পরে মারা যান। শোতোকু তাইশির ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি পরবর্তী গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজকুমার ধারণা করেন শিলা এজেন্টরা রাজকুমার কুমেকে হত্যা করেছে। এরপর তাঁর আরেক ভাই রাজকুমার তাকিমাকে বাহিনীর নেতৃত্বে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কিউশুর উদ্দেশে রওনা হন। পথে তাঁর স্ত্রী মারা যান এবং রাজকুমার ইয়ামাটোতে ফিরে আসেন, কিউশু আর পৌঁছাননি। বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও কেউ কেউ মনে করেন যে, কিউশুতে একটি বৃহৎ বাহিনী একত্রিত করাই শিলার ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে জাপান কূটনৈতিকভাবে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল। এই লক্ষ্য ছিল নিয়মিত "খাজনা" বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য, কারণ অনেক বিলাসপণ্য আমদানি করতে হতো। শিলা যখনই জাপানের ওপর অসন্তুষ্ট হতো, তখনই বাণিজ্য বন্ধ করে দিত, আর জাপান যুদ্ধের হুমকি দিত। ৬১০ সালে শিলা থেকে আসা একটি দূতাবিদের অভ্যর্থনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দূতদল স্যুইকোর আসুকার প্রাসাদের মূল হলের সামনে উঠানে জড়ো হয়। প্রত্যেক দূতের সঙ্গে এক একজন জাপানি অভিজাত নিযুক্ত ছিলেন যাঁরা তাঁদের সহায়তা ও সম্ভবত অনুবাদের কাজ করতেন। চারজন প্রধান মন্ত্রী তাঁদের স্বাগত জানান। যখন দূতরা শিলার রাজা কর্তৃক প্রেরিত সরকারি চিঠি পড়তে যান, তখন সোগা নো উমাকো হলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের কথা শুনে ফেরার পর তেন্নোকে রিপোর্ট করেন। রাজকুমার উমায়াদোর উপস্থিতির উল্লেখ নেই। তিনি যদি সম্পৃক্ত থাকতেনও। তবে পুরো সময়টি প্রাসাদের ভেতরেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যাবে, হয়তো তিনি তখন আসুকায় ছিলেন না। রাজকুমার তাকিমার কোরিয়া অভিযান বাতিল হওয়ার পরপরই, <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে আদালতে "টুপি পদবী" নামে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এই পদ্ধতির বাস্তবতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই, কারণ এটি স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ আছে। চীনা দরবারে এমন একটি ব্যবস্থা ছিল। কোরিয়ার সব রাজ্যেও অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। জাপানি ব্যবস্থা বিশেষত কোগুরিও-র ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। বাইরের প্রকাশ ছিল কর্তব্যরত অবস্থায় কর্মকর্তা যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিধান করবেন, যাতে পদবীর পরিচয় বহন করবে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল এমন এক র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করা। এটি শাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। পূর্বে বিদ্যমান কাবানে পদগুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী ও বংশগত। এগুলো থেকে ব্যক্তিগত মর্যাদা স্পষ্ট হতো না। সেগুলো ছিল সম্পূর্ণরূপে গোত্রভিত্তিক, কোনও ব্যক্তির মর্যাদা নির্দেশ করত না। নতুন ব্যবস্থা ছিল বিশেষভাবে আদালতের পদবী এবং সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিভিত্তিক। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাসাদীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অভিজাতদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। টুপিগুলোর কোনও নমুনা আজ আর বিদ্যমান নেই। তবে কয়েকজন ব্যক্তিকে যে পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তার উল্লেখ আছে। কুরাতসুকুরি (স্যাডলমেকার) নো তোরি নামে এক খ্যাতনামা বৌদ্ধভক্ত। তিনি আসুকায় হোকোজি বৌদ্ধমন্দিরের প্রধান হল নির্মাণ করেন, তাঁকে স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রথম তিনটি পদমর্যাদায় নিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির নাম আমাদের জানা আছে। একজন যিনি প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন, তাঁর মর্যাদা সোগা নো উমাকো এবং শিলার দূতাবিদকে স্বাগত জানানো "চার মন্ত্রী"-র তুলনায় অনেক নিচে ছিল। ফলে ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র অপেক্ষাকৃত সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য ছিল, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য নয়। কিছু পণ্ডিত পরবর্তী দশকে চালু হওয়া বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার জন্য বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং ধারণা করা হয়, এখানে সর্বোচ্চ পদ ছিল <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় চালু থাকা ব্যবস্থায় জ্যেষ্ঠ চতুর্থ শ্রেণির সমতুল্য। এই স্তরটিই ছিল উচ্চ অভিজাতদের সাথে সাধারণ কর্মকর্তাদের বিভাজনের রেখা। কেবলমাত্র অভিজাত শ্রেণির শীর্ষ স্তরের সদস্যরাই তৃতীয় শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব মর্যাদা পেতেন। পরের বছর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে সব মন্ত্রীর জন্যও বিশেষ টুপি ডিজাইন করা হয়েছিল। একটি কাহিনিতে বলা হয়েছে ৬৪৩ সালে সোগা নো এমেশি অবসর নেওয়ার সময় তিনি নিজ হাতে মন্ত্রীর টুপি তাঁর পুত্র ইরুকার হাতে তুলে দেন। সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ক্যাপ র‍্যাংক প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন না হয়ে নৈতিক বিধির একটি তালিকা। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। <nowiki>''নিহোন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে হোর্যুজি নির্মিত হয়, তার মৃত্যুর পর। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। ক্যাপ র‍্যাংক পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশি-র সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে, সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশের, ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ নর্দান ওয়েই-এর সরাসরি উত্তরসূরি। নর্দান ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে, সুই ও ট্যাং রাজবংশগুলোর মধ্যে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রধান রাজবংশগুলোর তুলনায় আলাদা। جزত এই পার্থক্যটির কারণ হলো, সুই ও ট্যাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থান করছিল। হান রাজবংশ ও তার উত্তরসূরিরা ছিল পুরোপুরি অভিজাতভিত্তিক। রাজদরবার কয়েকটি বংশীয় গোত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তারা বংশানুক্রমে সকল কর্মকর্তার যোগান দিত। সুই ও ট্যাং প্রাথমিকভাবে সেই একই রীতির অনুসরণ করে। তবে হান রাজারা দেশের প্রশাসনের উপর একটি শিথিল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রাখত এবং সেটিই ক্ষমতা ধরে রাখতে যথেষ্ট ছিল। তারা বড় বড় জেলায় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিত। তবে ঐ জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি স্থানীয় অভিজাতরা প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করত। নিয়ম ছিল, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিচারকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। তবে প্রার্থী মনোনয়ন করতেন এলাকার "সম্মানীয় লোকেরা"। সুই ও ট্যাং-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হান রাজবংশ প্রায় শতাধিক বড় জেলা পরিচালনা করত, সুই ও ট্যাং চালু করে এক হাজারেরও বেশি ছোট জেলা, যেগুলো প্রদেশভিত্তিক গঠিত ছিল। প্রতিটি জেলার বিচারক কেন্দ্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাকে একটি নতুন জেলায় স্থানান্তর করা হতো, নিজ জেলা বাদ দিয়ে। জেলার অভ্যন্তরে প্রশাসন ছিল ক্ষীণ। বিচারক কাজ করতেন "সম্মানীয়" স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে। এটি ছিল পূর্বতন ব্যবস্থার চেয়ে ব্যয়বহুল। তবে তখনকার চীন অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল। তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও, বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাং-এ বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ৬০৭ সালে পায়কচে সুই রাজবংশে দূত পাঠিয়ে কোরিয়ার উপর চীনের আক্রমণের পরামর্শ দেয়। ইয়াং-তি পায়কচের সাথে যৌথ অভিযান প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর ফলে কোরিয়ায় একটি বিশাল পরিবর্তনের সময়শৃঙ্খলা শুরু হয়। জাপানও ৬০৭ সালে একটি দূতাবাস পাঠায়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘সুই ইতিহাস’ রাজকুমার উমায়াদো—"তারাশিহিকো"—কে 'ওয়া'র রাজা হিসেবে গণ্য করেছে। ইয়াং-তির কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছিল জাপানি শুনেছে যে সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে আগ্রহী এবং তারা চীনে পাঠিয়ে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ পাঠাতে চায় পাঠচর্চার উদ্দেশ্যে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে দূতদলের মধ্যে এমন একজন অভিবাসী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চীনা ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারতেন। চীনা রিপোর্ট অনুসারে, চিঠিতে রয়েছে ঐতিহাসিক বাক্য: “সূর্যোদয় দেশের সম্রাট, সূর্যাস্ত দেশের সম্রাটকে এই চিঠি প্রেরণ করছেন।” ইয়াং-তি সমতার ধারণা পছন্দ করেননি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি প্রথম সংকেত যে, জাপানের চাহিদা ছিল চীন চীন দেশে তাদের নাম 'ওয়া' না বলে 'নিহোন' হিসেবে জানুক। প্রকৃত নির্বাহীকরণ দেখা যায় ৬৪৮ সালে ট্যাং রাজবংশে প্রেরিত দূতাবাসের চীনা বিবরণে “日本” প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে। বিরক্ত সত্ত্বেও, ইয়াং-তি প্রতীয়মান দেশের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধ পরিকল্পনা করছিলেন। অবিলম্বে একটি চীনা দূতাবাস জাপানে পাঠানো হয়। এই বিনিময়েই জাপান প্রথমবার একটি উপযুক্ত চীনা শব্দ বেছে নেয় শাসককে উল্লেখ করার জন্য। প্রাথমিক নথিতে “大王” ব্যবহৃত হত, সম্ভবত "ওকিমি" উচ্চারণে। তবে দূতাবাস কাল নাগাদ চীনাদের সাথে সমতামূলক শিরোনাম ব্যবহার অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছিল। উচ্চারণ ও উপাধি বিষয় বিবেচনা করে "天皇" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি সম্রাটের উচ্চ মর্যাদার প্রতীক; চীনা ‘হুয়াংদি’ যা সমান মর্যাদার প্রতীক। জাপানি উচ্চারণে “সুমেরা মিকোতো”—যার বাংলা অর্থ 'সর্বোচ্চ শাসক'। চীনা চিঠিতেও এটি লক্ষ করা গেল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬২৮ ও অন্যান্য লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। সুইকর সময়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হতো সুমেরা মিকোতো। তবে আধুনিক জাপানে এটি 'তেন্নো' নামে পরিচিতি লাভ করে। ৬০৮ সালের দূতাবাস দেখে চীনারা এটি কে 'জাপানের হুয়াং' বা সর্বোচ্চ সম্মানিত সার্বভৌম হিসেবে মনেছেন; অ্যাস্টন এ এটি অনুবাদ করেছেন "সার্বভৌম". মোট চারটি দূতাবাস পাঠানো হয় উল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে। শেষ দূতাবাস প্রেরণের সময় সুই রাজবংশ ইতিমধ্যেই পতনের দিকে ঝুঁকছিল। জাপানি দূতরা নিরাপদে ফিরতে বিপাকে পড়েন। তার ১৬ বছর পর পুনরায় কোনো বিনিময় হয়নি। এখানে স্পষ্ট যে, চীন জাপানে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল—অসভ্য উচ্চাভিলাষ সহ্য করলেও তারা চেষ্টা করছে দেশে এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যত সম্ভব জানতে। এটি তাদের কোরিয়া নিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। তবে ট্যাংও কোরিয়ায় উচ্চাভিলাসী ছিল। অস্বীকার বা রাজবংশ পরিবর্তনের কারণে চীনের সাথে সম্পর্ক বন্ধ করা জাপানের স্বার্থে বাধ্যতামূলক ছিল না। এক মতামত বলছে, রাজকুমার উমায়াদোর রাজনীতির অর্ধ-অবসর ৬০৫ সালের পর এই দূতাবাস উদ্যোগগুলোর প্রসার প্রধান ব্যক্তি ছিলেন এবং অন্য কেউ ততটা ভাবতেন না। ৬২০ সালে <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> রিপোর্ট করে যে, রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা নো উমাকো একত্রে “সম্রাটদের ইতিহাস, দেশের ইতিহাস। ওমি, মুরাজি, টোমো নো মিয়াতসুকো, কুনি নো মিয়াতসুকো, ১৮০ বে এবং মুক্ত প্রজাদের মৌলিক রেকর্ড” তৈরি করেন। যদি প্রকৃতপক্ষে এ সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। তবে এটি অমূল্য হত। কিন্তু একমাত্র একটি কপি ছিল এবং ৬৪৫ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জাপানের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে, কারণ ঐ ঐতিহাসিক কাজ তা অবশ্যই তুলে ধরত। আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে, ৬০২ সালে পায়কচে ভিক্ষু কানরোক প্রথমবার চীনা পদ্ধতিতে একটি বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে জাপানে। এরপর ৬০১ সালের ভিত্তিতে উমায়াদো ২১টি ৬০-বছরের চাকার ভিত্তিতে ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পিছিয়ে তার শাসকের বংশানুক্রম নির্ধারণ করেন। বর্ষপঞ্জির সেই চক্রের বিশেষ জ্যোতিষ্কীয় গুরুত্ব উপস্থাপন চীনা থেকে নেওয়া। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উল্লেখ আছে রাজকুমার উমায়াদো ৬২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু যেকোনো জাপানি ঐতিহাসিক তালিকা জানায় এটি ঘটেছিল ৬২২ সালে। এই অংশে মুখ্য অনেক তারিখ এক বছর ভিন্ন। কেন তা এমন তা নিয়ে কোনো তত্ত্ব নেই। বিকল্প সূত্র একটি প্রাচীন জীবনী ভিত্তিক। এটি বছর ও মাসের দিন ভাগে পৃথক। জাপানিরা সেই দ্বিতীয় তারিখ মেনে নিতে উৎসাহী। এই সূত্রগুলোর একটি হচ্ছে আসুকা যুগের হোর্যুজি বৌদ্ধ মূর্তির উপচর্চা–যাতে খোদাই করা হয়েছে যে তার মা মৃত হন সুইকোর ২৯তম বর্ষের ১২তম মাসে (৬২১)। পরের মাসে তিনি অসুস্থ হন। প্রধান স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় মাসের ১১ তারিখে মারা যান (৬২২)। রাজকুমার মারা যান দ্বিতীয় মাসের ২২ তারিখে। তিনজন একই সমাধিতে দাফন হন। তাঁর বয়স ছিল ৪৯। সমাধি ইকারুগা থেকে ২০ কিমি দূরে, বিডাতসু ও ইয়োমেইএর সমাধির কাছে অবস্থিত। পরে সুইকো ও কোটোকুর সমাধি একই এলাকায় নির্মিত হয়েছে। প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে Shotoku Taishi প্রাচীন কাল থেকেই একজন অত্যুৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে সন্মানিত ছিলেন—প্রাথমিক কারণ ছিল বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৌদ্ধধর্ম ৮ম শতক পর্যন্ত রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কেবল অনুমোদিত ছিল এবং একারণে অনেকেই সন্দিহানে ছিলেন। তবে রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা উমাকো ব্যক্তিগতভাবে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং উমায়াদো এর কয়েকটি প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইকারুগা প্রাসাদের আশেপাশে মন্দিরগুলোর একটি ক্লাস্টার—বিশেষ করে হোর্যুজি। এটি ৬৭০ সালে আগুনে ধ্বংসের পর পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং জাপানের প্রাচীনতম কাঠের নির্মাণ। এটি ছিল উমায়াদোর ব্যক্তিগত মন্দির, তখন পরিচিত Ikarugadera, “ইকারুগা মন্দির” নামে। তিনি প্রথম জাপানি হিসেবে বই রচনার কারণে অর্থবহ ভূমিকাও রেখেছিলেন। ১৪শ শতক থেকে, তিনি সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা জাপানের ১৮৬৮ সালের পর ক্ষমতা লাভ করে। প্রতিটি জাপানি স্কুলছাত্র <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র ১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান অধ্যয়ন করতো। তবুও কেউ ২০শ শতাব্দীর সামরিক কর্তৃত্ববাদীদের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেনি; তাঁর মর্যাদা এখনও অনন্য উচ্চে রয়েছে। ৬২৩ সালে মিমানা থেকে শিলে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে কোরিয়ায় আক্রমণের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এটি ২০ বছরের বিরতি পর ঘটে। দরবারের কর্মকর্তারা দ্বিখণ্ডিত হন। এক পক্ষ, যার মুখপাত্র তানাকা নো ওমি, মিমানা যথার্থ ব্যবহারের তদন্তের জন্য দূত প্রেরণে সমর্থন করে; অন্য পক্ষ, যে নেতৃস্থানীয় হচ্ছেন নাকাতোমি নো কুনি নো মুরাজি, সেনাবাহিনী প্রেরণের পক্ষে, শিলেকে বের করে মিমানাকে পায়কচের নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তরের দিকে ধাবিত করেন। অবশেষে দূত প্রেরিত হয় এবং শিলা একটি দূতাবাস পাঠায় প্রস্তাব নিয়ে। পুরোনো ব্যবস্থা অনুযায়ী মিমানা নামমাত্র শুল্ক দিবে। শিলা ও জাপানি কর্মকর্তাদের একটি দল মিমানায় যান চুক্তি সম্পাদনের জন্য। কিন্তু তারা ফিরে আসার আগে বড় একটা জাপানি সেনাবাহিনী করণীয়ভাবে কোরিয়ায় প্রেরিত হয় সাকাাইবে নো ওমি ওমারোর নেতৃত্বে। তিনি সম্ভবত সোওগা উমাকোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে দূতরা বারংবার যাননি এবং সবকিছু লড়াই ছাড়াই নিষ্পত্তি হয়েছে। কোরিয়ার জাপানি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। এরপর চুক্তি হয়েছে যে যতবার জাপান দূতাবাস শিলায় যাবে, তারা আগমনের সময় দুইটি আনুষ্ঠানিক নৌকায় স্বাগত জানাবে—একটি শিলার জন্য এবং অন্যটি মিমানার জন্য। মিমানায় একটি সেনাবাহিনী এবং একই সময়ে কূটনৈতিক আলোচনা করা কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। সম্ভবত দরবারে দুটি পক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করছিল। ৬২৩ সালে একটি জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃক সংঘটিত প্রদর্শনী হত্যাকাণ্ডের (কুড়াল দিয়ে হত্যাকাণ্ড!) পরে, আদালত ধর্মীয় ব্যবস্থার উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং একটি (বৌদ্ধ) ধর্ম দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়, প্রধান পদগুলো ভিক্ষুদের জন্য নির্ধারিত হয়। এর ফলে একটি আনুষ্ঠানিক জনগণনা নেওয়া হয় এবং রিপোর্ট করা হয় যে দেশে ৪৬টি মন্দির, ৮১৬ জন ভিক্ষু এবং ৫৬৯ জন ভিক্ষুনী রয়েছে। == "তাইকা সংস্কার" == ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে সোওগা-নো উমাকো মারা যান এবং ৬২৮-এ ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় স্যুইকো সম্রাজ্ঞীর। ''কোজিকি'' এই ঘটনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়। উমায়াদো, উমাকো ও স্যুইকোর মৃত্যুতে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যুর ঠিক আগে উমাকো স্যুইকোর কাছে অনুরোধ করেন যেন কাজুরাকি আগাতা তার হাতে দেওয়া হয়, কারণ এটি ছিল তার বংশের প্রাচীন নিবাস। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ছয়টি আগাতার একটি। এটি সরাসরি শাসকের ব্যয়ের উৎস ছিল। স্যুইকো এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এই দাবি মেনে নেওয়া হতো, তাহলে সোওগা বংশ একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এটি অন্য সব সোওগাদের থেকে স্বাধীন হতো। এই কৌশলই পরে নাকাতোমি-নো কামাতারির জন্য প্রয়োগ করা হয়; তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের একটি নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি শুধুই বয়স্ক উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা হারানোর একটি দৃষ্টান্ত এবং তার দাবি অযৌক্তিক ছিল। পরবর্তী সম্রাট ছিলেন বিদাতসু সম্রাটের পৌত্র ও দুর্ভাগাপ্রাপ্ত রাজপুত্র ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হন। স্যুইকোর মৃত্যুর কয়েক মাস পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোওগা-নো এমিশি, উমাকোর জ্যেষ্ঠপুত্র, তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এমিশি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জানান যে স্যুইকো সম্ভাব্য দুই উত্তরাধিকারীর কথা বলেছিলেন — রাজপুত্র তামুরা এবং রাজপুত্র উমায়াদোর পুত্র রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে — এবং তাদের উভয়কেই বলেছিলেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ না করেন। তার নিজের পুত্র, রাজপুত্র তাকেদা, এর আগেই মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার সমাধিতে সমাহিত হওয়া। ''নিহোন শোকি'' অনুসারে এমিশির বিবরণে বোঝা যায় যে স্যুইকো রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন। কিন্তু স্পষ্ট করে কাউকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেননি। অধিকাংশ সদস্য রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন, যদিও কেউ কেউ রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়েকেও সমর্থন করেন, ফলে এমিশি সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি করেন। দুই রাজপুত্রই বংশগতভাবে সমান এবং বয়সেও প্রায় সমান ছিলেন। রাজপুত্র তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং ধারণা করা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের বয়সও অনুরূপ ছিল। ''নিহোন শোকি''তে এই নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে জোর দিয়ে বলেন যে স্যুইকো তাকে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে তিনি এমিশিকে মিথ্যাবাদী বলেন। অবশেষে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; এক প্রতিপক্ষ কর্মকর্তাকে এমিশি হত্যা করেন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজপুত্র তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই সম্রাট নামে পরিচিত হন। এমিশি রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করার একটি সুস্পষ্ট কারণ ছিল — তার প্রধান স্ত্রী ছিলেন সোওগা-নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয়, তিনি ইতোমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, জন্ম দিয়েছেন। অন্যদিকে, বলা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হয়তো এমিশি ভেবেছিলেন তামুরার সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। জোমেইর অভিষেকে আরও এক তরুণ রাজপুত্র সামনে আসেন — নাকা-নো ওয়ে। জোমেইর সম্রাজ্ঞী ছিলেন না সোওগা-নো হোতে-নো ইরাতসুমে, বরং ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর নাতনি রাজকন্যা তাকারা। তিনি নাকা-নো ওয়ের মা। ''নিহোন শোকি''তে জোমেই সম্রাট সংক্রান্ত অংশটি সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যবর্জিত। উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হলো: ৬৩০ ও ৬৩২ সালে তাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে দূতাবিনিময়। চীনে ২৪ বছর অবস্থানকারী এক শিক্ষার্থী এই সময় দেশে ফেরেন। অপর একজন, তাকামুকু-নো কুরামারো, ৩০ বছর পর ৬৪৪ সালে দেশে ফিরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধ। এছাড়া জোমেই তার প্রাসাদ দুইবার স্থানান্তর করেন; প্রথমবার আগুন লাগার কারণে, দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে। এটি দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধাজনক ছিল। এই সময় কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ধারণা করা হয়, শাসকের প্রাসাদ রাজধানীতে রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছিল। এই শাসনামলে একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে প্রবীণতম জীবিত রাজপুত্র এমিশি ধমক দেন, কারণ মন্ত্রীরা যথাযথভাবে সভায় হাজির হচ্ছিলেন না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারত। কিন্তু এমিশি সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরবর্তী সময়ে রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময়সূচি নির্ধারণের রীতি চালু হয়। নতুন প্রাসাদ স্থানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ হয়। এটি কোনো শাসকের দ্বারা নির্মিত প্রথম মন্দির হিসেবে পরিচিত। কোনো উত্তরাধিকারী মনোনয়ন না করেই জোমেই ৬৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার উত্তরসূরি হন তার সম্রাজ্ঞী। তিনি দ্বিতীয় নারী সম্রাট হিসেবে পরিচিত হন কোগিয়োকু সম্রাজ্ঞী নামে (তার দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল সাইমেই সম্রাজ্ঞী হিসেবে)। ''নিহোন শোকি'' এই উত্তরণের বিষয়ে কিছুই বলে না। এখানে দুইজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন — রাজপুত্র ফুরুহিতো ও রাজপুত্র নাকা-নো ওয়ে, উভয়েই সম্রাটের সন্তান তবে ভিন্ন মাতার গর্ভজাত। নাকা-নো ওয়ে ছিলেন সম্রাজ্ঞীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী (জাপানি গণনায়, আমাদের হিসেবে ১৫ বছর), সিংহাসনের জন্য কিছুটা তরুণ। তখনও শিশুদের সিংহাসনে বসানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে অনুমান করা যায়, কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি কারণ ছিল তার পুত্রকে ভবিষ্যতে সিংহাসনে বসানো। ফুরুহিতোর মর্যাদা কম হলেও, বয়সে তিনি নাকা-নো ওয়ের চেয়ে বড় ছিলেন, যদিও তার সঠিক বয়স জানা যায় না। কয়েক বছরের মধ্যে নাকা-নো ওয়ে ফুরুহিতোর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং তখন তার বয়স ২০ বছরের বেশি ছিল। এ ছাড়া রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের কথাও ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি থাকায় কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে ঘটেছিল। এটি সম্ভাব্য কারণ, কারণ সোওগা-নো এমিশি ছিলেন এমন ব্যক্তি যে তিনি ঐকমত্য ছাড়া কিছু করতেন না। প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা করা যায় না। নতুন সম্রাজ্ঞীর বয়স তখন ৪৯। ''নিহোন শোকি''তে কোগিয়োকুর শাসনকালকে সোওগা বংশের পতনের সূচনার সময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জোমেইর শাসনকালে সোওগা-নো এমিশির নেতৃত্বে সব কিছু মসৃণভাবে চলছিল। তিনি আদালতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে কোগিয়োকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা কার্যত সোওগা নেতৃত্বে তাকে অতিক্রম করে এবং পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন হয়ে ওঠে। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তিনি শৈশবে অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তিনি স্বেচ্ছাচারী, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে ওঠেন। তিনি শত্রু সৃষ্টি করতেন এবং এতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং নিজের ইচ্ছামতো এগিয়ে যেতেন। উমায়াদো, উমাকো এবং সুইকোর মৃত্যুর মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করা স্পষ্ট হয়ে যায়। মৃত্যুর কিছু আগে উমাকো সোগা দাবি করেন যে কাজুরাকি আগাতা তার বংশের প্রাচীন আবাসস্থান ছিল এবং সে কারণে তা তার মালিকানায় নেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন সুইকোর কাছে। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ৬টি আগাতার একটি, যেগুলো সরাসরি শাসকের ব্যয় নির্বাহ করত। সুইকো তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এটি অনুমোদিত হতো তবে সোগা কাজুরাকি বংশের নাম পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করতে পারতেন। এতে করে তার বংশধররা অন্যান্য সোগাদের থেকে স্বাধীন একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন। এইরকমই পরে করা হয়েছিল নাকাতোমি নো কামাতারির ক্ষেত্রে, যখন মৃত্যুর পর তার পুত্রদের নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি ছিল একজন বৃদ্ধ উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে এমন কিছু চাওয়ার চেষ্টা। এটি কখনোই বাস্তবায়নযোগ্য ছিল না। পরবর্তী শাসক ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর নাতি এবং দুর্ভাগা রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হয়েছিলেন। তবে সইকোর মৃত্যুর পর কয়েক মাস পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। উমাকোর জ্যেষ্ঠ পুত্র সোগা নো এমিশি তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবশেষে এমিশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি সভা আহ্বান করে বলেন, সুইকো রাজকুমার তামুরা ও রাজকুমার ইয়ামাশিরো নো ওয়ে (রাজকুমার উমায়াদোর পুত্র) ।এই দুইজনকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং উভয়ের সাথেই সাক্ষাৎ করে অনুরোধ করেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই না করে। তার নিজের পুত্র রাজকুমার তাকেদা আগেই মারা গিয়েছিলেন। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার কবরেই তাকে সমাধিস্থ করা হোক। ''নিহোন শোকি''র মতে, এমিশির বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি রাজকুমার তামুরার প্রতি স্যুইকোর পক্ষপাত দেখান। তবে কাউকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয়নি। অধিকাংশ সদস্য তামুরার পক্ষে থাকলেও কিছুজন ইয়ামাশিরো নো ওয়ের পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে এমিশি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সভা মুলতবি করেন। উভয় রাজপুত্র বংশগত ও বয়সের দিক থেকে সমান ছিলেন—তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং অনুমান করা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়েরও বয়স একইরকম। ''নিহোন শোকি'' এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেয়, যেখানে বলা হয় ইয়ামাশিরো নো ওয়ে দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে স্যুইকো তাকে ব্যক্তিগতভাবে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় তিনি সোগা নো এমিশিকে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেন। শেষ পর্যন্ত সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; একজন বিরোধী কর্মকর্তা এমিশির হাতে নিহত হন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজকুমার তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই তেন্নো নামে পরিচিত হন। তামুরাকে সমর্থন করার জন্য এমিশির স্পষ্ট কারণ ছিল—তামুরার প্রধান পত্নী ছিলেন সোগা নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয় যে তিনি ইতমধ্যে একটি পুত্র ফুরুহিতোকে প্রসব করেন। অন্যদিকে, উল্লেখযোগ্য যে ইয়ামাশিরো নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হতে পারে এমিশি মনে করেন তামুরার সাথে তার সম্পর্ক আরও সদ্ভাবপূর্ণ হবে। জোমেইর সিংহাসনে আরোহণের ফলে এক তরুণ রাজপুত্র, নাকা নো ওয়ে, প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও জোমেইর রানী ছিলেন না সোগা নো হোতে নো ইরাতসুমে, বরং ছিলেন রাজকুমারেস তাকারা—ওশিসাকা নো হিকোহিতোর নাতনী এবং নাকা নো ওয়ে ছিলেন তারই পুত্র। ''নিহোন শোকি''তে জোমেই তেন্নোর শাসনকাল নিয়ে খুব অল্প এবং অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। শুধু দুটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ৬৩০ এবং ৬৩২ সালে তাং রাজবংশের সঙ্গে দূতাবিনিময়। একজন শিক্ষার্থী যিনি ২৪ বছর ধরে চীনে ছিলেন, তিনি এই সময়ে দেশে ফিরে আসেন। আরেকজন, তাকামুকু নো কুরামারো, ৩০ বছর পরে ৬৪৪ সালে ফিরে আসেন এবং একজন মহা সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হন। দ্বিতীয় প্রধান ঘটনা হলো ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে প্রথম সীমানা যুদ্ধের নথিভুক্তি। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে জোমেই দুইবার তার রাজপ্রাসাদ স্থানান্তর করেন—প্রথমবার আগুন লাগার পরে এবং দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে, যেখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়। এটি ছিল বড় আকারের নির্মাণকাজের সূচনা। মনে করা হয়, শাসকের প্রাসাদ তখন রাজধানী নগরীতে রূপান্তরের পথে ছিল। তার শাসনকালের একটি গল্পে বলা হয়, জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক রাজপুত্র এমিশিকে ভর্ৎসনা করে বলেন যে, মন্ত্রীরা এবং কর্মকর্তারা আদালতে ঠিকভাবে উপস্থিত হন না। তাদের সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি একটি ঘণ্টার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এমিশি এই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরে, রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময় নির্ধারিত হয়। নতুন প্রাসাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল একটি বৌদ্ধ মন্দির—প্রথম যেটি কোনো শাসক কর্তৃক নির্মিত হয়। ৬৪১ সালে জোমেই কোনো উত্তরাধিকারী নিযুক্ত না করেই মারা যান। তার উত্তরসূরি হন তার রানী। তিনি দ্বিতীয় নারী তেন্নো হিসেবে কোগ্যোকু তেন্নো নামে পরিচিত হন (পরে তিনি সাইমেই তেন্নো হিসেবেও শাসন করেন)। ''নিহোন শোকি'' এই বিষয়ে কিছুই বলে না যে কীভাবে এটি ঘটল। এখানে দুইজন সুস্পষ্ট প্রার্থী ছিলেন—ফুরুহিতো এবং নাকা নো ওয়ে। তারা সম্রাটের দুই ভিন্ন স্ত্রী থেকে জন্মগ্রহণ করেন। নাকা নো ওয়ে ছিলেন রানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। কিন্তু তখন তার বয়স মাত্র ১৬ (জাপানি হিসেবে; আমাদের হিসাবে ১৫)—এমন একজনকে সিংহাসনে বসানো তখনও প্রচলিত ছিল না। তাই একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি উদ্দেশ্য ছিল তার পুত্র নাকা নো ওয়ের জন্য ভবিষ্যতে সিংহাসন সংরক্ষণ করা। ফুরুহিতোর অবস্থান ছিল নিচু। কিন্তু বয়স নিশ্চিতভাবেই বেশি ছিল। কয়েক বছর পর নাকা নো ওয়ে ফুরুহিতোর এক কন্যাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স অবশ্যই ২০-এর বেশি ছিল। অন্যদিকে, ইয়ামাশিরো নো ওয়ে-কে ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন প্রার্থীর উপস্থিতি দেখায় যে, কোগ্যোকুর সিংহাসনে আরোহণের পেছনে একটি কারণ ছিল—শীর্ষ অভিজাতদের মধ্যে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। এটি যুক্তিযুক্ত, কারণ সোগা নো এমিশি এমন একজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি সম্মতি ছাড়া কিছু করতেন না। নির্ভরযোগ্য প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। নতুন তেন্নোর বয়স তখন ৪৯ বছর ছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কোগ্যোকুর শাসনকালের বর্ণনা প্রধানত সোগা বংশের পতনের দিকে কেন্দ্রীভূত। জোমেই শাসনকালে সবকিছু সোগা নো এমিশির তত্ত্বাবধানে মসৃণভাবে চলছিল বলে মনে হয়। তিনি বাকি গুরুত্বপূর্ণ দরবারিদের সঙ্গে ভালোই মিশতেন। কিন্তু কোগ্যোকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা তাকে সরিয়ে রেখে কার্যত সোগা বংশের প্রধান হয়ে ওঠেন—এবং এটাই ছিল একেবারে ভিন্ন ঘটনা। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে তিনি একজন অকালপক্ব ও মেধাবী শিশু ছিলেন। তিনি বড় হয়ে ওঠেন একগুঁয়ে, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি অবজ্ঞাশীল ব্যক্তি হিসেবে। তিনি শত্রু তৈরি করতেন এবং এতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হতেন না। এটি খুশি তাই করতেন। প্রথম ঘটনাটি হলো ৬৪২ সালে সোগা নো এমিশি নিজের ও তার পুত্রের জন্য কোফুন নির্মাণের বিবরণ। বলা হয়, তিনি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেন, যেন তিনি দেশের শাসক; এমনকি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের জমির লোকদেরও নিযুক্ত করেন। ইয়ামাশিরো নো ওয়ের বোন প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরের বছর এমিশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ব-উদ্যোগে দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি নিজেই একটি মন্ত্রীর টুপি তৈরি করে তা পুত্র ইরুকাকে দেন এবং ইরুকা ও-ওমি হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরুকা ষড়যন্ত্র শুরু করেন, যাতে ইয়ামাশিরো নো ওয়েকে উত্তরাধিকার থেকে সরিয়ে ফুরুহিতো নো ওয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একটি ফুটনোটে বলা হয়েছে, "অন্য একটি বই" বলেছে যে ইরুকা নিজেই সিংহাসনে বসার কথা চিন্তা করেন। ও-ওমি হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে, ইরুকা ইকারুগা প্রাসাদ আক্রমণের জন্য সৈন্য পাঠান। প্রাসাদ ধ্বংস হয়। তবে ইয়ামাশিরো নো ওয়ে এবং তার পরিবার পাহাড়ে পালিয়ে বাঁচেন। কিন্তু তাদের কোন সম্পদ না থাকায়, শেষে সবাই আত্মহত্যা করেন। সোগা নো এমিশি যখন এটি শুনেন, তিনি ইরুকাকে "মূর্খ" বলে ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, তুমি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের সাথে যা করেছ, অন্যরাও তোমার সাথে তাই করতে পারে। এটি ৬৪৩ সালের শেষদিকে ঘটে। <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> এরপর বলে যে ইরুকার অভ্যুত্থানে নাকাতোমি নো কামাকো নো মুরাজি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং নিজ দায়িত্বে রাজবংশের জীবিত রাজপুত্রদের মধ্যে একজনকে সমর্থনের জন্য ঐক্য গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য যে ৬৪১ সালে কোগুরিয়োতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে স্বৈরশাসক অধিকাংশ অভিজাতকে হত্যা করেন। জাপানি অভিজাতদের এই ঘটনার বিষয়ে না জানার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি ইরুকার বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। নাকাতোমি সন্দেহ করেন যে রাজকুমার নাকা নো ওয়ে একজন ভালো নেতা হতে পারেন। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচিত না থাকায় একটি ফুটবল খেলার সময় তার সাথে পরিচয় ঘটান এবং দ্রুত তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যাতে তারা নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং সন্দেহ না জাগে, তারা উভয়ে কনফুসিয়ান দর্শন ও চীনা ভাষার পাঠে ভর্তি হন এবং একসাথে যাতায়াত করতেন। তাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল ইরুকাকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সোগা বংশের মধ্যেই সহযোগী খোঁজা। এই উদ্দেশ্যে নাকা নো ওয়ে সোগা বংশের একজন কন্যাকে বিয়ে করেন। এই মিত্রতা ছিল সোগা নো কুরোয়ামাদা নো ইশিকাওামারোর সঙ্গে। তিনি সোগা নো এমিশির ভাইপো ছিলেন। তার শাখা রাজপরিবারের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখে এবং তার তিন কন্যা শাসকদের বিয়ে করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইরুকাকে আদালতেই হত্যা করার একটি জটিল পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। যখন সময় আসে, ইরুকার ওপর আক্রমণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন রাজকুমার নাকা নো ওয়ে নিজেই তার তরবারি বের করে ইরুকাকে আঘাত করেন। ঘটনাটি তেন্নো (নাকা নো ওয়ের মা)-র উপস্থিতিতে ঘটে এবং রাজকুমার তাকে বলেন যে ইরুকা রাজবংশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। এরপর ইরুকার মরদেহ সৌজন্য সহকারে এমিশির কাছে পাঠানো হয়। তারা একদিন সময় নিয়েছিল সোগা নো এমিশির ওপর আক্রমণের জন্য সৈন্য জড়ো করতে, যুদ্ধে অংশ নেয় বহু রাজপুত্রের বাহিনী। এমিশি তার পক্ষে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজপুত্রের বাহিনী পৌঁছানোর পর এমিশির অধিকাংশ লোক তাকে পরিত্যাগ করে। নিজের পরিণতি অনুধাবন করে এমিশি ইতিহাসের সেই পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলেন যা সোগা নো উমাকো এবং রাজপুত্র উমায়াদো তৈরি করেন এবং যা তার কাছে ছিল, যদিও একজন লেখক সেই পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ অন্তত উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং তা নাকা নো ওএর কাছে হস্তান্তর করেন। এসব ঘটনার সময় নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন ৩১ বছর বয়সী এবং নাকা নো ওএ ছিলেন ১৯ বছর বয়সী। রাজপুত্র ফুরুহিতো নো ওএ ছিলেন নাকা নো ওএর (সৎ) বড় ভাই। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে বলা হয়েছে, নাকাটোমি নো কামাকো নাকা নো ওএ-কে পরামর্শ দেন যে নিজের বড় ভাইয়ের আগে সিংহাসনে আরোহণ করা অনুচিত হবে। তাই তিনি প্রস্তাব দেন রাজপুত্র কারু। তিনি কোগিওকু তেন্নোর ভাই, তাকে সিংহাসনে বসানো হোক। সেটাই বাস্তবায়িত হয়। তিনি হলেন কোটোকু তেন্নো। কোগিওকু তার পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো সম্রাটের পদত্যাগ। এটি পরে নিয়মিত ঘটনার রূপ পায়। আরেকটি প্রথম ঘটনা হিসেবে, যার পুনরাবৃত্তি পরে বহুবার হয়েছে, রাজপুত্র ফুরুহিতো প্রকাশ্যে উত্তরাধিকার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে একটি প্রত্যন্ত মন্দিরে অবসর নিয়ে। এসমস্ত ঘটনা, রাজপুত্র কারুর আনুষ্ঠানিক সিংহাসনে আরোহণসহ, ঘটে সোগা নো এমিশির মৃত্যুর পরদিন। নতুন শাসন ব্যবস্থা কোনো সময় নষ্ট না করেই জানিয়ে দেয় যে পরিবর্তন আসন্ন। প্রাচীন উপাধি ও-ওমি ও ও-মুরাজি বিলুপ্ত করা হয় এবং তার পরিবর্তে নতুন উপাধি হিদারি নো ওমাচিগিমি এবং মিগি নো ওমাচিগিমি প্রবর্তন করা হয়, যেগুলো ইংরেজিতে সাধারণত চীনা উচ্চারণে সাদাইজিন (বামমন্ত্রী) ও উদাইজিন (ডানমন্ত্রী) নামে পরিচিত, যেখানে বাম মানে সিনিয়র এবং ডান মানে জুনিয়র। আবে নো ওমি নো কুওয়ারামারো প্রথম পদে এবং সোগা নো ওমি নো ইশিকাওয়ামারো দ্বিতীয় পদে নিয়োগ পান। নাকাটোমি নো কামাকো পান অপেক্ষাকৃত ছোট একটি উপাধি – উচিনোওমি বা নাইজিন। এটি পরে নাইদাইজিন নামে পরিচিত হয় এবং নারা যুগে উদাইজিনের পর তৃতীয় অবস্থানে ছিল। নতুন মন্ত্রীদের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাউন রাজকুমারের নিচে রাখা হয়। এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক মর্যাদাক্রম ছিল না। উচিনোওমি উপাধি প্যেকচে সরকারের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" এবং <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> অনুসারে এটি বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে নাকাটোমি নো কামাকো প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ পাবেন, পদোন্নতি ও পদাবনতি সহ। তিনি যে অভ্যন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা হলো প্রাসাদের কাজের অভ্যন্তর। "মহামন্ত্রীরা" নীতিগত বিষয়ে মনোনিবেশ করবেন। কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণের পাঁচ দিন পর প্রাসাদের সব কর্মকর্তাদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উপরের পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করা হয়। সম্রাট, অবসরপ্রাপ্ত সম্রাজ্ঞী এবং ক্রাউন রাজকুমার সবাই উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের সম্রাটের ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতার শপথ করানো হয়। এ সময়ই তাইকা শাসনামলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত ধারাবাহিকভাবে রাজাদেশ জারি হতে থাকে, যেগুলো শুধু প্রাসাদ নয়, পুরো দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এই সময় থেকে শতকের শেষ পর্যন্ত ঘটা প্রায় প্রতিটি ঘটনার ওপরই গবেষকদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু লিখেছি, যেগুলো <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র উপর ভিত্তি করে, তা সম্পূর্ণ ভুল। বিশেষভাবে, কিছু দাবি করা হয় যে ইরুকার হত্যাকাণ্ড এবং কোটোকুর সিংহাসনে আরোহণ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ছিল না, বরং নাকা নো ওএ ছিলেন প্রচলিত "সিনিয়র রাজকুমার" মাত্র, যাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক সংবিধান অনুসারে থাকা প্রয়োজন ছিল। নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন মধ্যম স্তরের এক কর্মকর্তা যার কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। পুরো তার বিদ্রোহে ভূমিকা রাখার কাহিনী সাজানো হয়েছিল, কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> রচনার সময় তার বংশধরেরা ক্ষমতাশালী ছিল। কোনো "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" পদ ছিল না। তাইকা শাসনামল ছিল না, এমনকি কোনো সংস্কার রাজাদেশও জারি হয়নি। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ অবশ্য তুলনামূলকভাবে মাঝামাঝি অবস্থান নেন। কিন্তু খুব কমই আছেন যারা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র সবকিছু যাচাই-বাছাই ছাড়া মেনে নেন। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> দাবি করে যে আমরা এখন যে শাসন ব্যবস্থা দেখছি, সেটির উৎপত্তি এই সময়েই ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রচারমূলক রচনা। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে কিছু পরিপূরক প্রমাণও রয়েছে—অষ্টম শতকের অন্যান্য কিছু বই যেগুলো সরকারি কমিটির মাধ্যমে লেখা হয়নি এবং এমনকি অল্প সংখ্যক প্রকৃত সরকারি নথিপত্রও আছে, যেমন কর বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের চিহ্ন। স্থানীয় প্রশাসনের জন্য প্রদেশ/জেলা পদ্ধতির সূচনার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অন্যান্য বইতেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ এত বেশি যে এসব কিছু পুরোপুরি বানানো বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। লেখকরা বইটি প্রকাশের মাত্র ৭৫ বছর আগের ঘটনা লিখেছেন। তাদের পিতামহ বা পিতারা এসব ঘটনার অংশ ছিলেন এবং পাঠকদেরও পূর্বপুরুষেরা তাতে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে, পঞ্চম শতকের বিষয়ে লেখার তুলনায় এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জনের সুযোগ অনেক কম ছিল। তবে, আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে এই বিবরণ নিছক নিরপেক্ষ নয়। নতুন সরকার প্রথম যে বিষয়টির মুখোমুখি হয় তা হলো কোরিয়ার তিনটি রাজ্য থেকে একযোগে দূতাবলীর আগমন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> তেমন স্পষ্ট নয় ঘটনাগুলো সম্পর্কে। তবে জাপানি পক্ষ প্যেকচের উপস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, যেখানে তারা মিনামা-কে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তোলে। অনুমান করা হয়, এটি এসেছে ৬৪২ সালে প্যেকচে ও কোগুরিয়োর মধ্যে একটি মৈত্রী গঠিত হওয়ার পরে। এটি সিলার উপর বড় পরাজয় আরোপ করে, সম্ভবত মিনামা কিংবা তার একটি অংশ দখল করে। আট মাস পর আবার দূতাবলী আসে এবং মিনামা নিয়ে নতুন বিবাদ শুরু হয়। তখন মনে হয় নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এমন এক অর্থহীন বিষয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বোকামি। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত তাকামুনে নো কুরামারো। তিনি চীন থেকে ৩০ বছর পর ফিরে আসেন। তাকে সিলায় পাঠানো হয় এবং তিনি বিষয়টির অবসান ঘটান। মিনামা কূটনৈতিক সত্তা হিসেবে অস্তিত্ব হারায় এবং জাপান অঞ্চলটির ওপর সব দাবি পরিত্যাগ করে। এটি একটি সাধারণ বাস্তবতা যে চীনের ক্রমাগত চাপে কোরিয়া তখন নিজেই নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছিল। ৬৪৪ সালে কোগুরিয়ো মাঞ্চুরিয়ায় লিয়াও নদী সীমান্তে চীনের একটি বিশাল হামলা প্রতিহত করে এবং আরও সংঘাত সামনে অপেক্ষা করছিল। জাপানিরা তখন যা ঘটছিল তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল। এটি জাপানকে আত্মরক্ষা উপযোগী করতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ তৈরি করেছিল। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই দুই সিনিয়র মন্ত্রীকে আদেশ দেওয়া হয় যে তারা "মায়েতসুকিমি" এবং "তোমো নো মিয়াতসুকো"দের থেকে মতামত নেবেন কীভাবে শ্রম কর নির্ধারণ করা যায় যাতে জনগণের আপত্তি না থাকে। মায়েতসুকিমি চীনা অক্ষর দ্বারা বোঝানো হয়। এটি চীনে প্রশাসনের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ করে। এখানে ধারণা করা হয় এটি ওমি ও মুরাজি অভিজাত গোত্রের জন্য একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হয়তো টুপি মর্যাদা ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের নির্দেশ করে। এটি আনুমানিক ১০ জন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী গোত্র প্রধানদের কমিটি সাধারণত ১০ জনের আশেপাশে থাকত, পারকিনসনের সীমা অনুযায়ী – ১২ জনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট কোনো কমিটি কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। "তোমো নো মিয়াতসুকো" ছিলেন স্থানীয় কর্মকর্তা, যারা সামরিক ও গণপূর্ত কাজের জন্য পুরুষদের নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন। আমি এখনো করব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলিনি, কারণ প্রাচীন সময়ের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে এ সময়ের সব এশীয় সমাজ, চীনসহ, তিন ধরনের করের ওপর নির্ভর করত—কৃষকদের কাছ থেকে ধান/শস্য, কৃষক নন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বস্ত্র)। জনসাধারণের কাজে শ্রম। আমরা অনুমান করি, এই প্রাচীন সময়ে ব্যবস্থাটি নারা যুগের মত এতটা সুবিন্যস্ত ছিল না। তবে কিছু না কিছু থাকতেই হতো। না হলে কোফুন (সমাধিস্তূপ) তৈরি হতো না। "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রাই এসব কাজের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করতেন এবং সম্ভবত তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করতেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে পরবর্তী ঘটনাবলি বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো আমরা জানি এই ঘটনাগুলো কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। আমাদের কাছে নারা যুগের শুরুর সময়ের সরকার কেমন ছিল তার অনেক তথ্য আছে, এমনকি কিছু আদমশুমারি রেজিস্টার ও কর নথিপত্রও আছে, যেগুলো দেখায় যে কিছু এলাকায় বাস্তবে সরকার কীভাবে কাজ করেছিল। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>, যদিও প্রায় একমাত্র উৎস, আমাদের অনেক রাজাদেশের বিবরণ দেয়। তবে বলে খুব কমই যে এসব আদেশ কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বা পরবর্তীতে কীভাবে কাজ করেছে। বোঝা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতই একটি পরীক্ষানিরীক্ষার ধারা ছিল, কারণ কিছু আদেশ কোনো ফল দেয়নি এবং দ্রুতই নতুন আদেশে প্রতিস্থাপিত হয়। আমরা এই প্রক্রিয়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করতে পারি, সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত বিষয়। ধাপগুলো হলো ৬৪৫ সালের পরপর সময়কাল, এরপর কোরিয়ায় সঙ্কট যা ৬৬০ সালে তাং সাম্রাজ্যের প্যেকচে দখল ও তার জাপানের উপর প্রভাব। শেষে ৬৭২ সালে নাকা নো ওএর ছোট ভাই রাজপুত্র ওআমা সিংহাসন দখল করেন। অতিরিক্ত বিষয় হলো তথাকথিত "জিনশিন যুদ্ধ" যা ৬৭২ সালে ওআমাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> এটি বিশদভাবে বর্ণনা করে, ফলে আমরা আসুকা যুগের সমাজকে বাস্তবে কার্যকরভাবে কাজ করতে দেখি। আর যুদ্ধটি বই প্রকাশের মাত্র ৪৮ বছর আগের ঘটনা। তাই অনেক অংশগ্রহণকারী তখনো জীবিত ছিলেন। কারণ এই কাহিনী রাজাদেশের ধারাবাহিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, আমরা রাজপুত্র নাকা নো ওএ এবং নাকাটোমি নো কামাকো (পরবর্তীতে কামাতারিতে নামকরণ) – তাদের মধ্যে অনুমিত অংশীদারিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। সম্ভবত তাদের একজন ছিলেন চিন্তার মানুষ আর আরেকজন ছিলেন সেই কাজ বাস্তবায়নের জনশক্তি, কিংবা তারা দুজনেই উভয় ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। আমরা জানি যে রাজবংশ কামাকো-র প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ ছিল, কারণ তারা তার বংশধরদের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে এক অভূতপূর্ব মর্যাদা দিয়েছিল—একটি ঘটনা যা পরবর্তী কয়েক শতকে জাপানের সরকার কাঠামোর বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শুধুমাত্র এই ফুজিওয়ারার ভবিষ্যৎ উত্থানই প্রমাণ করে, আমার মতে, কামাকোর ৬৪৫ সালের ঘটনাবলিতে এবং তার পরবর্তী পরিবর্তনগুলিতে গভীর জড়িততা ছিল। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পর, তারা পাঁচটি প্রধান বিষয়ে নীতিনির্ধারণ করে একাধিক ফরমান জারি করে। প্রথম ফরমানে "পূর্ব প্রদেশসমূহে" গভর্নর নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয় জনসংখ্যার আদমশুমারি করতে, তা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক বা স্থানীয় অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে, তাতে কিছু আসে যায় না। একইসাথে তারা কতখানি জমি চাষ করছে, তাও নথিভুক্ত করতে বলা হয়। গভর্নর হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়, তারা সবাই রাজধানী থেকে আগত প্রভাবশালী অভিজাত। ফরমানে গভর্নরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা ছিল। এরা স্থায়ী গভর্নর ছিলেন না, যেমনটা পরে প্রতিষ্ঠিত হয়, বরং কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে রাজধানীতে ফিরে আসার নির্দেশ ছিল তাদের। তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন অপরাধ তদন্ত বা অন্যান্য বিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বরং জনসংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে রাজধানীতে ফিরে আসে। তবে, এটা স্পষ্ট যে এটি ছিল শুধুই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নিয়মিত প্রাদেশিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। "পূর্ব প্রদেশ" বলতে ফরমানে কী বোঝানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই কর্মকর্তারা প্রকৃতপক্ষে প্রায় এক মাস পর রাজধানী ত্যাগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণায় ইয়ামাতোর ৬টি আগাতায় কর্মকর্তাদের নিয়োগের কথা বলা হয়, যাদের একইভাবে আদমশুমারি ও ভূমি নিবন্ধন করার আদেশ দেওয়া হয়। এই এলাকাগুলো ছিল তাকেচি, কাতসুরাকি, তোচি, শিকি, ইয়ামাবে ও সো — যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে শাসক বংশকে সরাসরি রাজস্ব সরবরাহ করত। ধারণা করা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের বিবরণ নির্ধারণের জন্য এগুলো পরীক্ষামূলক এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তৃতীয় ঘোষণায় প্রাসাদে একটি ডাকবাক্স ও একটি ঘণ্টা স্থাপনের কথা বলা হয়। যাদের কোনো অভিযোগ ছিল, তারা প্রথমে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। কিন্তু যদি তাদের সমস্যা উপেক্ষা করা হতো, তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ ওই বাক্সে ফেলে দিতে পারত। এমনকি তাতেও ফল না হলে তারা ঘণ্টা বাজাতে পারত। একজন কর্মকর্তা এসে তাদের সাথে কথা বলত। এটি ছিল চীনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। চতুর্থ ঘোষণাটি ছিল সন্তানদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত। যদি কোনো সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ই স্বাধীন হতো, তাহলে তাকে পিতার পরিবারের সাথে নথিভুক্ত করা হতো। কিন্তু যদি একজন অস্বাধীন হতো, তাহলে সন্তানকে সেই অস্বাধীন পিতামাতার সাথেই নথিভুক্ত করা হতো — সে পিতা হোক বা মাতা। যদি দুটি ভিন্ন মনিবের অধীন দুই অস্বাধীন ব্যক্তি সন্তান জন্ম দিত, তাহলে সন্তান মায়ের সাথেই থাকত। আমরা এই সময়কার অস্বাধীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব কমই জানি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অসংখ্য শ্রেণির লোক ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে সেবক ছিল যারা দাস ছিল না এবং যাদের বিক্রি করা যেত না, আবার এমন লোক ছিল যারা প্রকৃত দাস হিসেবে বিবেচিত হতো — সম্ভবত যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে থেকেই এসেছে তারা। নারা যুগে অপরাধীদের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাসত্বে দণ্ডিত করা যেত। অপরাধীদের সন্তানরা নিজেদের ইচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে পারত যেন তাদের পিতা-মাতার স্বাধীনতা বজায় থাকে। ঋণের কারণেও কেউ দাসত্বে পড়তে পারত। এই ফরমানের উদ্দেশ্য ছিল কর নির্ধারণের জন্য ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করা। অস্বাধীন ব্যক্তিদের থেকে সরাসরি কর নেওয়া হতো না, বরং তাদের মনিবের উপর সেই কর আরোপ হতো। এই ঘোষণাসমূহের শেষ পদক্ষেপ ছিল বৌদ্ধ মঠগুলোর নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রতিটি মঠে তিনজন কর্মকর্তা সহ একটি আদর্শ অভ্যন্তরীণ প্রশাসন গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন প্রণয়নের তৎপরতার ঠিক পরেই, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki> ঘোষণা করে যে রাজকুমার ফুরুহিতো ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিবি নো কাসা নো ওমি শিতারু স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সহ-ষড়যন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করলে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ফুরুহিতোকে হত্যা করার জন্য সৈন্য পাঠানো হয় এবং সফলভাবে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযোগভুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দুইজন ছিলেন সোগা ও আয়া বংশের সদস্য। এই ধরনের ঘটনা পরবর্তী একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায়শই ঘটেছে। কোনটা প্রকৃত ষড়যন্ত্র ছিল আর কোনটা ছিল অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নির্মূল করার অজুহাত — তা বলা কঠিন। আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে উভয় ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। রাজকুমার নাকা নো ওয়ে/তেনচি টেনো-র শাসনামলেও এধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। তার সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কেউ কেউ প্রতিরোধ গঠনের চেষ্টা করেছে — এটা খুব অবাক করার মতো কিছু নয়। কিন্তু একই সাথে এটা ভাবাও যথার্থ যে তিনি জোসেফ স্তালিনের মতো অপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করতেন। বছরের শেষে প্রাসাদ আসুকা থেকে নানিওয়া-তে স্থানান্তর করা হয়। এটি ইনল্যান্ড সি-র তীরে অবস্থিত। ওজিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ওজিন ও তার পুত্র নিন্তোকু তাদের প্রাসাদ নানিওয়া-তে স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর এই প্রথমবার। নতুন বছরের প্রথম দিনেই, নানিওয়া-তে সরকার প্রধান সংস্কার ফরমান জারি করে। এটি জাপানে "নিউ ইয়ার্স ডে এডিক্ট" নামে পরিচিত। এটি ছিল দেশ শাসনের জন্য তাদের পরিকল্পনার সবচেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে তখনকার সব ধরনের জমির মালিকানা বাতিল করে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, সমস্ত জমি ও জনগণ সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জমির আয়ে জীবনযাপন না করে, অভিজাতরা (যারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা হবেন) বেতন পাবেন। এরপর অংশটির বাকি অংশে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে একটি রাজধানী, যার নিজস্ব কাঠামো ও কর্মকর্তা থাকবে, প্রদেশ ও জেলা গঠন করতে হবে, সেইসাথে ছোট ছোট ইউনিট যেমন প্রহরীসহ চৌকি, ডাক স্টেশন ও ঘোড়ার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রথমে এই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলোর মধ্যেই কার্যকর করা হবে। কোন অঞ্চল এতে অন্তর্ভুক্ত তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় অংশে ব্যাপক আদমশুমারি প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল একটি নিয়মিত ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা — যেটি তখন চীন ও কোগুরিয়োতে প্রচলিত ছিল। ফরমানে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে কিভাবে জমি চীনা একক — চো (২.৪৫ একর) ও তান (এক চো-এর দশমাংশ) — অনুযায়ী পরিমাপ করা হবে। পাশাপাশি প্রতি চো জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ধানের গুচ্ছের ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ অংশে তৎকালীন সমস্ত কর ব্যবস্থা বাতিল করে একটি সরলীকৃত করব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। এতে থাকবে ধানে পরিশোধযোগ্য ভূমি কর, নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশমি কাপড়ে নির্ধারিত মাথাপিছু কর (যা সমমূল্যের অন্য স্থানীয় পণ্যে পরিশোধ করা যাবে), ও একটি মানক শ্রম কর — যার মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ সজ্জিত সৈনিক ও ঘোড়া প্রদান, সাধারণ শ্রমিক এবং অভিজাতদের প্রাসাদে কাজ করার জন্য দাসী ও পরিচারিকা পাঠানোর ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে এই শ্রম কর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়। এই পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হয়নি — বরং কয়েক দশকের কঠিন পরিশ্রমের পরই তা বাস্তবায়িত হয়। অনেকের ধারণা, <nowiki>''</nowiki>নিহোন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে যেভাবে ফরমানটি উপস্থাপিত হয়েছে, তা আসলে অনেক পরে রচিত হয়েছে — যখন এই সব ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর হয়ে গেছে, ফলে এটি যা সফল হয়েছে তা বর্ণনা করে, আসল উদ্দেশ্য নয়। তবে এটা সরাসরি চীন বা কোগুরিয়োর প্রশাসনিক আইনবিধি থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দেশগুলোতে প্রচলিত ব্যবস্থারই একটি সংস্করণ জাপানে প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি সফল হলে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত মোট সম্পদের অনেক বেশি অংশ সরকারের হাতে আসত। এটি সরকারকে অর্থ ব্যয়ে আরও স্বাধীনতা দিত। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এমনভাবে গঠিত ছিল যাতে অধিকাংশ সম্পদ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। অভিজাতদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন ব্যয় কমে যায়। এর ফলে জাপানের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারত। এটি কোরিয়াকে ঘিরে শুরু হওয়া অস্থিরতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে অনেক গবেষক উদ্বিগ্ন তান (৩০ * ১২ তসুবো বা ১৮০ * ৭২ ফুট জমি) ও চো (১০ তান) এককের সংজ্ঞা এবং এগুলোর জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট করহারের বিষয়ে। এই পরিমাপ পদ্ধতি হুবহু ৫০ বছর পর প্রণীত তাইহো বিধির মতো। এর আগে জমি পরিমাপের জন্য চো, তান ও তসুবো ব্যবহারের আর কোনো উদাহরণ নেই — ৬৮৯ সালের "আসুকা নো কিয়োমিহারা কোড"-এ এগুলো প্রথম দেখা যায়। এর আগে ব্যবহৃত একক ছিল "শিরো"। এটি প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ। এছাড়াও প্রদেশগুলোকে যে জেলাগুলোতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফরমানে বলা হয়েছে, "যদি কোনো জেলায় ৪০টি গ্রাম থাকে তবে তা বড়, যদি ৪-৩০টি গ্রাম থাকে তবে তা মাঝারি, আর ৩টির কম হলে তা ছোট জেলা।" তাইহো বিধিতেও একই ধারা আছে। তবে সেখানে জেলা ৫ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং আকার ভিন্ন। যদিও বিষয়বস্তু ভিন্ন। কিন্তু বিন্যাস ও ভাষা এক। নারা যুগে ব্যবহৃত জেলার সাধারণ শব্দ ছিল "কোরি" (郡)। এটি ফরমানে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীর মূল নথিতে এর কোন ব্যবহার নেই; সেখানে "হিয়ো" (評) ব্যবহৃত হয়েছে। ফরমানে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্যও নারা যুগের পদবী ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর নথিতে আলাদা নাম দেখা যায়। 郡 ও সংশ্লিষ্ট পদগুলো ছিল চীনা প্রভাবাধীন, আর 評 ও তার পদগুলো ছিল কোরিয়ান রাজ্যসমূহ থেকে আগত। এর ফলে ধারণা করা হয় না যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে উদ্ধৃত ফরমানটি আসলে আসুকা কিয়োমিহারা বিধিমালার আগে বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্ণনা দেয়; বরং এটি একটি পরবর্তী সংস্করণ। যদি ফরমানের ওই অংশগুলো বৈধ না হয়। তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিত হব যে অন্য অংশগুলো বৈধ? প্রাচীন জমি ধারণের প্রথা বিলুপ্ত করার বিষয়ে প্রথম অনুচ্ছেদটি নিশ্চয়ই নারা যুগের কোনো উৎস থেকে নেওয়া হতে পারে না। চতুর্থ অনুচ্ছেদের যে বিধানগুলিতে এক ধরনের করকে অন্য ধরনের করের সাথে রূপান্তরের জন্য রেশম কাপড়কে মূল্যমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা তাইহো বিধিমালার অংশ নয়, কারণ তাইহো বিধিমালা কোনো করপ্রকারের রূপান্তরের অনুমতি দেয় না। সংরক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-র লেখকদের কাছে ফরমানটির পূর্ণ পাঠ্য ছিল না। তাই তারা অনুপস্থিত অংশগুলো পূরণ করেছে। তবে দলিলটির মূল উদ্দেশ্য—বিদ্যমান জমি মালিকানা ও করব্যবস্থা বিলুপ্ত করা এবং চীনা ও কোরিয়ান মডেলের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি ব্যবস্থা স্থাপন—তা সত্য। সবশেষে, এটাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। প্রাচীন জাপানিরা এটি কেই রূপান্তরের সূচনা বলে গণ্য করে। একটি বিতর্কিত বিষয় হলো প্রাথমিক জমি বন্টন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করার কথা ছিল। তাইহো বিধিমালায় পরিবারের প্রতিটি কর্মক্ষম সদস্যের জন্য (বয়স, লিঙ্গ ও অবস্থান অনুসারে) নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির হিসাব রাখা এবং তারপর তা যোগ করে একটি পরিবারের মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করার বিশদ নিয়ম ছিল। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত ফসল কর নির্ধারিত হতো। বিকল্প পদ্ধতি ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি প্রতিটি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া, পরিবারের গঠনের বিস্তারিত বিবেচনা না করেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, "নববর্ষ ফরমান"-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের সঙ্গে কৃষকদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ভেঙে ফেলা এবং অভিজাতদের বেতনভোগী কর্মকর্তায় পরিণত করা। একই সঙ্গে কৃষক পরিবারগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করা হতো অতিরিক্ত হয়ে যেত। বরং বিদ্যমান কৃষি সম্প্রদায় ও তাদের গৃহস্থালিকে ধরে রেখেই নতুন ব্যবস্থাকে অপেক্ষাকৃত সহজ রাখা ছিল বেশি বাস্তবসম্মত। পরবর্তী সময়ে তাইহো বিধিমালার আদমশুমারি ও জমি পুনর্বণ্টন চক্র বাস্তবায়ন এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা এত জটিল ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতেন না। এও ধারণা করা হয় যে ৬৪৬ সালে এই ধরনের ব্যবস্থা একযোগে সারা দেশে প্রয়োগ করা যাবে না, সেটা সবাই বুঝেছিল, বরং ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে—যদিও ফরমানে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এই ফরমানে সাধারণ কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান প্রভাব পড়বে এমন কিছু ছিল না, করহার ব্যতীত। করহার বৃদ্ধি না হ্রাস—তা জানা যায় না। যদি রাজস্বের বড় অংশ রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। তবে পরিবহনের জন্য উল্লেখযোগ্য শ্রম প্রয়োজন হতো। জমি বন্টন ব্যবস্থায় জমি চাষ এবং কর প্রদানের প্রধান দায়িত্ব পরিবার একককে দেওয়া হয়েছিল। এটি বিদ্যমান প্রথার ধারাবাহিকতা ছিল, না নতুন কিছু—তা স্পষ্ট নয়। বিকল্প পদ্ধতি ছিল গ্রামকে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে মূল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু বানানো, যেখানে প্রতিটি গ্রামকে নির্দিষ্ট কর ধার্য করা হতো এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বন্টনের স্বাধীনতা থাকত। যদি কৃষকদের জন্য "বে" ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতো। তবে কোফুন যুগের জাপান হয়তো অনুরূপ কাঠামোর অধীনে ছিল এবং নতুন ব্যবস্থা হতো একটি বড় পরিবর্তন। ৬৪৬ সালের দ্বিতীয় মাসে আরও একটি সাধারণ ফরমান জারি হয় যা দুইটি বিষয় নিয়ে ছিল। এটি জাতীয় অভিযোগ বাক্সের পূর্ববর্তী ঘোষণাকে জোরদার ও সম্প্রসারিত করে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে নামবিহীন পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি ও জানানো হয় যে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আসা কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলা হয়, শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার কারণে যারা রাজধানীতে এসেছিল, তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায়ই বাড়ি ফিরে যেতে পারত না, কারণ কর্মকর্তারা ও অভিজাতরা তাদের অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত রাখত। সরকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয় যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মাসে পূর্ব প্রদেশে পাঠানো কর্মকর্তারা রাজধানীতে ফিরে আসে। একটি ফরমানে ঘোষণা করা হয় যে আটজন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুজন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে একটি বিস্তারিত ফরমান প্রকাশিত হয় যেখানে অভিযুক্তদের নামও উল্লেখ করা হয়। প্রধান সমস্যা ছিল কিছু কর্মকর্তা তাদের অবস্থানের অপব্যবহার করে করের টাকা আত্মসাৎ ও ঘুষ আদায় করেছিল। তাদের সব অর্থ ফেরত দিতে এবং চুরির দ্বিগুণ জরিমানা দিতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগের মাধ্যমেই তাদের অপরাধ প্রকাশ পায়। কিছু স্থানীয় অভিজাত স্বেচ্ছায় ঘুষ প্রদান করেছিল। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেতনার অংশ হিসেবে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এবং, নতুন প্রাসাদ নির্মাণজনিত কারণে জনগণের ওপর সৃষ্টি হওয়া ভোগান্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি সাধারণ ক্ষমাও দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, যারা প্রাসাদ নির্মাণে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত থাকায় অন্য কর প্রদানে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের সেই কর মওকুফ করা হয়। কয়েক দিন পর রাজপুত্র নাকা নো ওয়ে সম্রাটকে একটি পিটিশন দেন যেখানে তিনি অভিজাতদের হাতে থাকা কিছু ঐতিহ্যবাহী জমির মালিকানা বিলুপ্ত করার দাবি জানান এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে থাকা ৫২৪ জন ইম্বে (মূলত শিন্তো মন্দিরের কর্মী) ও ১৬১টি মিয়াকে (বিভিন্ন ধরণের রাজস্ব উৎপাদনকারী ইউনিট) সম্রাটকে ফিরিয়ে দেন। এরপর আরেকটি ফরমান জারি হয়। এটি কোফুন সমাধি নির্মাণ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আচার নিয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আকার ও ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ এবং চাষযোগ্য জমিতে সমাধি না বানানোর নিয়ম চালু করা। পূর্বে বর্ণিত ফরমানটিতেই বলা হয়েছিল যে একটি রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭০০০ শ্রমদিবস খরচ করা যাবে। নিম্নতর শ্রেণির জন্য সেই অনুপাতে সীমা নির্ধারিত হবে। আজকের জাদুঘরগুলোতে থাকা অতিরঞ্জিত কবর উপকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও বিবাহ রীতিনীতি নিয়ন্ত্রণে একটি বিশদ ফরমান, স্থানীয় রীতিনীতি পরিবর্তনে একটি ফরমান—যা দেশের মধ্যে অবাধ চলাচলে বাধা দিত। ব্যক্তিগত জমি বিলুপ্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আরও নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই ফরমানগুলো এবং ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অভিজাত অসন্তুষ্ট ছিল—তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন নেই। কিছু প্রমাণ আছে যে স্থানীয় অভিজাতরা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের সহযোগিতা স্বাগত জানিয়েছিল। ৬৪৪ সালের শরতে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে কান্তো অঞ্চলের এক এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থানীয় ব্যক্তি প্রচার করেন যে একটি বিশেষ পোকা (সম্ভবত কোনো শুঁয়োপোকা) এক দেবতার দূত, যাকে উপাসনা করলে পরিশ্রম ছাড়াই সবাই ধন-সম্পদ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে মানুষ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং দল বেঁধে গান গেয়ে ও মদ্যপান করে ঘুরে বেড়াতে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিছু করতে অক্ষম ছিল। রাজধানী থেকে হাতা নো মিয়াতসুকো কাওয়াকাতসু নামে এক কর্মকর্তা এসে প্রচারককে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত সঙ্কটকালে ঘটে। ধারণা করা হয়েছে, এই আন্দোলনটি কোরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের রেশম উৎপাদন প্রতিষ্ঠার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছিল। “রেশমপোকা কোরিয়ানদের ধনী করে তোলে, তাহলে আমাদের শুঁয়োপোকাও হয়তো আমাদের ধনী করবে”—এইরকম ভাবনা হতে পারে। হাতা বংশ রেশম উৎপাদনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। তাই কেউ কেউ অনুমান করেন যে হাতা কাওয়াকাতসুকে পাঠানো হয়েছিল এ খোঁজ নিতে যে, স্থানীয়রা এমন কোনো পোকা পেয়েছে কি না। এটি দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রেশম তৈরি করা সম্ভব। পরবর্তী কোফুনসমূহের সংখ্যা ও পরিসরের পরিবর্তনের ভিত্তিতে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন, গ্রামীণ গোত্র প্রধানরা—কুনি নো মিয়াতসুকো—তাদের আধা-রাজকীয় মর্যাদা ও ক্ষমতা হারিয়েছিল। এটি গ্রামীণ অভিজাতদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে একটি প্রবণতা নির্দেশ করে, যার ফলে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় প্রশাসন কার্যকারিতা হারিয়েছিল। যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভর্নর পাঠানো শুরু করল, তখন তারা কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ করছিল। স্থানীয় অভিজাতদের দমন না করে বরং তাদের অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা হচ্ছিল। তবে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক আয়ের পরিবর্তে সরকার-নিযুক্ত বেতনভোগী হয়ে ওঠা একটি বড় পরিবর্তন ছিল এবং এটি কার্যকর হবে কি না—তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬৪৬ সালের ফরমান ধারায় একটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল যে যেসব অভিজাতদের ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের সবাইকে সরকারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং সরকারি বেতন প্রদান করা হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল, যারা সরকারি পদে নিয়োগ পাবে না, তারা কার্যত সাধারণ নাগরিক বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি সতর্কবার্তা ছিল যে কেউ যদি অবৈধভাবে অভিজাত পরিচয় দাবি করে। তবে তাদের সনাক্ত করে অপসারণ করা হবে। পরিবর্তনের গতি ৬৪৭ সালে ধীর হয়ে গেল। একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল যাতে শাসকদের নামের মধ্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলি শতাধিকারদের ব্যক্তিগত নাম এবং স্থান নামের জন্য ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। চীনে সাধারণত এমন নিয়ম ছিল যে সম্রাটের নাম লেখায় ব্যবহৃত অক্ষর এবং বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে, বিশেষত সেইসব যজ্ঞে যেখানে সম্রাট ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতেন, সেগুলি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত না। মানুষকে বিকল্প অক্ষর খুঁজে বের করতে হতো। এটি মনে হয় জাপানে সেই নিয়ম প্রয়োগ করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রধান পরিবর্তন ছিল ক্যাপ র‍্যাঙ্ক সিস্টেমের সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠন। পূর্বের বারোটি র‍্যাঙ্ককে ছয়টি করে সংকুচিত করা হয়েছিল, নীচে একটি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয় এবং উপরে ছয়টি নতুন র‍্যাঙ্ক যোগ করা হয়, ফলে প্রথমবারের মতো শীর্ষ অর্স্তাধিকারীদেরও এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়। তারপর, মাত্র দুই বছর পরে এটি আবার পুনর্গঠিত হয়। সেই ছয়টি সংকুচিত র‍্যাঙ্ক আবার বারোটি হয়ে যায়। শীর্ষ ছয়টি র‍্যাঙ্ক ব্যতীত বাকিগুলোর নাম আবার পরিবর্তিত হয়। কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া বুরোক্র্যাসির জটিলতার কারণে হয়েছে। র‍্যাঙ্কগুলো বেতন নির্ধারণের ভিত্তি হওয়ায়, বেশি র‍্যাঙ্ক মানে আরও বিভিন্ন বেতন স্তর। এই পুনর্গঠনের পর ৬৪৯ সালে শাসনরত বংশের রাজকুমার ছাড়া সকল শতাধিকারী এই সিস্টেমের আওতায় আসেন। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে ৬৪৮ সালের একটি উল্লেখ আছে যেখানে বলা হয়েছে ৬৪৭ সালের র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রীরা পুরানো ক্যাপ ব্যবহার চালিয়ে গেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু অসন্তোষ ছিল। তাই ৬৪৯ সালে র‍্যাঙ্কের সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধি ও পরিবর্তন একটি প্রতিক্রিয়া ছিল, যাতে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে তাকে তার নিচের কাউকে সঙ্গে একই স্তরে ফেলা হচ্ছে না। আরেকটি পরিবর্তনের লক্ষণ ছিল ৬৪৭ সালে হাজিরা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘণ্টা ব্যবস্থার চালু হওয়া। কর্মকর্তাদের সকাল ৫টার মধ্যে প্রাসাদের বাইরে শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন ধরে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। ৫টায় ঘণ্টা বাজানো হতো এবং অফিসের দরজা খোলা হতো, সবাই ভিতরে ঢুকতে যথেষ্ট সময় পেলে আবার ঘণ্টা বাজিয়ে দরজা বন্ধ করা হতো এবং যারা দেরি করতো তাদের ঢুকতে দেওয়া হত না। সবাই সকাল ৬টার মধ্যে তার ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতে হতো। দুপুর ১২টায় কাজের সময় শেষের ঘণ্টা বাজানো হতো। খুব প্রাচীন একটি রীতির অংশ ছিল যে আদালতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সূর্যোদয়ের আগে বা ঠিক সময়ে করা হতো এবং এই অফিস সময়ের কাঠামো অনেকদিন বজায় ছিল। ১৯ র‍্যাঙ্কের সংশোধিত সিস্টেম ৬৪৯ সালের শুরুতে কার্যকর হয় এবং তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চীনা সিস্টেমভিত্তিক সরকারের বিভাগ, অফিস এবং ব্যুরো গঠন করা হবে। এটি তকমুনে নো কুরামারো এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু বিন দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হবে। এখন পর্যন্ত যা অর্জিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার দেওয়া যাক। এক, সম্রাটকেন্দ্রিক সরকারের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‍্যাঙ্ক সিস্টেম সম্প্রসারণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মানে হল সম্রাট এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করেন, পদোন্নতি দেয়। শতাধিকারীরা তাদের র‍্যাঙ্ক ভিত্তিক মর্যাদায় সংজ্ঞায়িত হবেন। দুই, সরকারের কেন্দ্রীয়করণ নিশ্চিত হয়েছে, প্রদেশগুলো সরাসরি প্রাসাদ থেকে পরিচালিত হবে একটি একক বুরোক্র্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে। তিন, সব জমি এবং তার উপর কাজ করা সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সম্পত্তি হবে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সব বাস্তবায়ন এখনও বাকি। কিন্তু নীতিগুলো স্থাপন করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ নেই। চার, এই নতুন সিস্টেম পরিচালনা করবে একই শতাধিকারীদের দল যারা পূর্বে শীর্ষে ছিল, যমাতো ও কাওয়াচি প্রদেশ থেকে। সরকার কাঠামো ও কার্যকারিতায় বিপ্লব ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর সদস্যত্ব জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে বিপ্লবের আওতায় আনা হচ্ছে না। সবাইকে তার বর্তমান মর্যাদানুযায়ী র‍্যাঙ্ক, পদ ও বেতন দেওয়া হবে। নতুন একটি চীনা রাজবংশ সাধারণত যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করতো। রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সফল সেনাপতি যাঁর শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। তিনি নতুন সরকারের নকশায় স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তাকে এমন কিছু তৈরি করতে হয়েছিল যা কার্যকর হত, নাহলে রাজবংশ দীর্ঘস্থায়ী হত না। সফল রাজবংশগুলো সাধারণত চীনা সরকারের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে কাজ করত। তাই নকশার স্বাধীনতা সীমিত ছিল। এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাই হোক না কেন, দেশের শাসনের সূক্ষ্ম কাজগুলি করতেন ঐতিহ্যবাহী অর্স্তাধিকারীরা। বিকল্প ছিল না। পুরাতন শাসন ব্যবস্থা নতুন নাম দিয়ে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। আসুকা যুগের বাকী সময়ের চ্যালেঞ্জ ছিল তা নিশ্চিত করা যে সেটি হবে না এবং সরকার সত্যিই পরিবর্তিত হবে, কেন্দ্রীভূত ও সংগঠিত হবে যাতে জাতীয় সম্পদের বৃহত্তর অংশ প্রাসাদের হাতে আসে এবং এই দেশকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়িত হলে সরকার সত্যিই দেশের সমৃদ্ধির সম্পূর্ণ অংশ কর ব্যবস্থায় আনবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে তার পুনর্বণ্টন ও ব্যয়। অধিকাংশ বেতন আকারে শতাধিকারীদের কাছে যাবে। তবে বাকিটা জাতি গঠনের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং বেতন ব্যবস্থা শতাধিকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন মন্ত্রণালয় ও র‍্যাঙ্ক সবই ভালো। কিন্তু মূল বিষয় ছিল দেশের কৃষকদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই নতুন সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কফুন রাজনীতি আবার প্রবেশ করল। ৬৪৯ সালের তৃতীয় মাসে সিনিয়র মন্ত্রী আবে নো কুরাহাশিমারো মারা গেলেন। মাত্র সাত দিন পর সোগা নো হিমুকা গোপনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে, বিশেষ করে রাজকুমার নাকা নো ওয়ের হত্যার পরিকল্পনা। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন এটা সত্য নয়। হিমুকা ছিল ইশিকাওয়ামারোর ছোট ভাই এবং নিজেই শীর্ষ মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নাকা নো ওয়ে এই তথ্য কোতোকু তেননোর কাছে পৌঁছে দেন। তিনি ইশিকাওয়ামারোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য官 পাঠান। ইশিকাওয়ামারো মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং সম্রাটের সাক্ষাৎ চান। কোতোকু তা মানেননি এবং সৈন্য পাঠিয়ে তাকে আটকাতে বলেছিলেন। ইশিকাওয়ামারো তার প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যমাতোর যমাদেরাতে গিয়েছিলেন, যেখানে তার বড় ছেলে মন্দির নির্মাণ পরিচালনা করছিল। <nowiki>''নিহন শোকি''</nowiki> অনুযায়ী ছেলে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইশিকাওয়ামারো রাজি হননি। তিনি ও তার পরিবার আত্মহত্যা করেন ফাঁস দিয়ে। তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরও অনেককে সরকার পরে ফাঁসি দেয় এবং বহুজনকে নির্বাসিত করা হয়। আরিস্টোক্রেসির সরকার গঠন করা কঠিন কারণ কাউকে সহজে বরখাস্ত করা যায় না। পরবর্তী ২৫০ বছরে আমি কেবল দুটি ক্ষেত্রে দেখেছি কেউ ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই কম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি involved ছিলেন যারা নিজস্ব বাহিনী গড়ার ক্ষমতা রাখত না। তারা হলেন নারা যুগের পুরোহিত দোকিও এবং হেইয়ান যুগের সুগাওয়ারা নো মিচিজানে, যারা উচ্চপদে উঠে পরে সাপোর্ট হারানোর পর পড়ে যান। তখন বা পরে কোনো কারাগার ব্যবস্থা ছিল না। মৃত্যুর কম শাস্তি ছিল নির্বাসন, যেখানে নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করা হত এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বসবাস করতে হত। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বহুজন নির্বাসনে পাঠানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন নির্বাসনের পথে বা ততক্ষণে। নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন অনেক নির্বাসিত পালিয়ে আত্মীয়দের কাছে লুকিয়ে ছিলেন। এটি একধরনের নরম বাড়ি নিরোধ। এই ঘটনার পেছনে নাকা নো ওয়ের ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন না সোগা পরিবারের কেউ সর্বোচ্চ পদে উঠুক। সোগা নো হিমুকাকে কিউশুতে স্থানান্তর করা হয়। এটি পরবর্তীকালে মার্জিত নির্বাসনের একটি রূপ (এটাই হয়েছে সুগাওয়ারা নো মিচিজানের ক্ষেত্রে)। কখনো কখনো অর্স্তাধিকারীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ জটিল হয়। নাকা নো ওয়ের প্রধান স্ত্রী ছিলেন ইশিকাওয়ামারোর মেয়ে এবং জিতো তেননোর মা। তিনি তার বাবার পতনের পর শোকেই মারা গিয়েছিলেন। এর চূড়ান্ত ফলাফল ছিল যে সরকারের শীর্ষে দুইটি পদ শূন্য ছিল। নতুন সদাইজিন হলেন কুসে নো ওমি টোকুতা এবং নতুন উডাইজিন হলেন ওতোমো নো মুরাজি নাকাতোকো। তারা দুজনেই নতুন ব্যবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছিলেন এবং এখন ৫ম শ্রেণীতে পদোন্নত হন। কুসে ৬৪৫ সাল থেকে সরকারের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ওতোমো ছিলেন একটি প্রধান গোত্রের প্রধান। আবে নো কুরাহাশিমারো এবং সোগা নো ইশিকাওয়ামারো নতুন পদবীর ব্যাজ পরতে অস্বীকার করেন এবং পুরানো মন্ত্রীদের টুপি পরতে চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ছিলেন নতুন পদবী ব্যবস্থায় প্রথম মন্ত্রীরা। তাদের নতুন পদবীর মানে ছিল যে নতুন ব্যবস্থার শীর্ষ চারটি পদ তখনই খালি ছিল। পরের বছর, ৬৫০ সালে, শাসনখাতের নাম পরিবর্তিত হয়ে তাইকা থেকে হাকুচি হয়ে যায়। এটা সম্ভবত একটি সংকেত হিসেবে দেওয়া হয়েছিল যে প্রধান সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন নতুন ব্যবস্থার সংহতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। নামটি এসেছে একটি সাদা ময়ুর দেখার ও ধরা পড়ার প্রতিবেদনের থেকে। এটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই পরিবর্তনের সাথে যথেষ্ট ভোজ ও আয়োজন ছিল। যে প্রদেশ (হোন্সু দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে) পাখিটি উপহার দিয়েছিল তাকে তিন বছর করমুক্ত রাখা হয় এবং ওই প্রদেশে ময়ুর শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। 'নিহন শোকি' থেকে বিচার করলে দেখা যায় শাসক হওয়ার সঙ্গে সবসময়ই প্রচুর আনুষ্ঠানিকতা জড়িত ছিল। কিন্তু তা বেশির ভাগ সময়ে গোপনে অনুষ্ঠিত হত। এখন আমরা দেখতে পাই সরকার প্রায়ই সকল কর্মকর্তাদের বৃহৎ আনুষ্ঠানিকতার জন্য মুক্ত আকাশের নিচে জড়ো করে। এই পর্যায়ে পরিষ্কার নয় সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি পেত কি না। তবে নিশ্চিতভাবে নারা এবং হেইয়ান যুগে রাজ পরিবার সংক্রান্ত অনেক অনুষ্ঠান এমনভাবে অনুষ্ঠিত হত যাতে মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা দেখার সুযোগ পেত। এটা সরকারের এবং সম্রাটের জাতির জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবার অংশ। ৬৫১ সালে সরকার ওকোরিতে ছয় বছর অবস্থানের পর নানিভাতে নতুন একটি প্রাসাদে চলে যায়, যার নাম নাগারা নো টয়োসাকি প্রাসাদ। 'নিহন শোকি' অনুযায়ী এই প্রাসাদের নির্মাণে অনেক কফুন ধ্বংস হয় এবং অনেক কৃষক স্থানান্তরিত হন, যাদের সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এটি একটি বড় নির্মাণ প্রকল্প ছিল। সরকার প্রবেশের পরও কাজ চলতে থাকে এবং এক বছর ছয় মাস পরে সম্পূর্ণ হয়। 'নিহন শোকি' বলেছে যে এটি দেশের পূর্ববর্তী যেকোনো নির্মাণের চেয়েও ভাস্বর ছিল। প্রাসাদের অবস্থান আবিষ্কৃত ও পুরাতাত্ত্বিকভাবে খনন করা হয়েছে। এটি ওসাকা ক্যাসল এর সাইটের ঠিক পাশেই, আধুনিক ওসাকার সেই এলাকায় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচ্চতর। ৬৫১ সালে সিল্লা থেকে পাঠানো দূতরা কিউশুতে তাং রাজবংশের চীনা পোশাক পরেছিলেন। এটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান পোশাক থেকে আলাদা। এ কারণে সরকার অনুমান করেছিল সিল্লা জাপানের সঙ্গে পরামর্শ না করেই চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং দূতাবাস প্রত্যাখ্যাত হয়। সিল্লা ৬৪৯ সালে রাজার প্রাসাদের পোশাক পরিবর্তন করে চীনা শৈলীতে নিয়ে যায়। দুই বছর পর, ৬৫৩ সালে জাপান দুইটি জাহাজ এবং ২৪২ জন নিয়ে চীনে দূতাবাস পাঠায়। ৬৫৪ সালে একটি দ্বিতীয় দূতাবাস পাঠানো হয় যার নেতৃত্ব দেন তাকামুনে কুরোমারো এবং আবে নো ওমি মারো। 'ওল্ড টাং হিস্ট্রি' (যেখানে নিউ টাং হিস্ট্রি ও আছে) দ্বিতীয় দূতাবাসের কথা উল্লেখ করেছে। তখন তাকামুনে হয়তো খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং তিনি চীনে মৃত্যুবরণ করেন। ৬৫৩ সালের দূতাবাসের দুটি জাহাজের মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে যায়, ১২১ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন বেঁচে যায়। ৬৫২ সালের প্রথম মাসে 'নিহন শোকি' খুব সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছে যে ওই মাসে জমির পুনর্বন্টন করা হয় এবং একই বছরের চতুর্থ মাসে জনগণনার রেজিস্টার তৈরি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য খুব কম দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি একটু অদ্ভুত, যেখানে বলা হয়েছে "প্রথম মাস থেকে এই মাস পর্যন্ত জমির পুনর্বন্টন সম্পন্ন হয়েছে।" সাধারণত জনগণনা আগে হয় যাতে জানা যায় কতগুলো পরিবার জমি পাবে। তাইহো কোড অনুযায়ী জনগণনা এবং পুনর্বন্টন চক্র ছয় বছর। অনুমান করা হয় যে ৬৪৬ সালে শুরু হওয়া পুনর্বন্টন কার্যক্রমটি শেষ হয়েছে এবং তারপর তিন মাস পর পরবর্তী চক্রের জনগণনা শুরু হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে সম্ভবত এই কাজ ছিল ইয়ামাতো অঞ্চলের ছয় আগাতার এবং সম্ভবত সাম্রাজ্যিক মিয়াকের জমিতে একটি ছোট পরীক্ষা প্রকল্প। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরবর্তী নিশ্চিত জমির পুনর্বন্টন বিবেচনা করে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন না যে তখন জাতীয় স্তরে পুনর্বন্টন হয়েছে। হিতাচি ফুডোকি অনুযায়ী ৬৪৯ সালে কাশিমা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৬৬৩ সালে শিনোডা, নামেকাতা ও ইওয়াকি জেলা তৈরি হয়। মনে হয় সরকার গ্রামীণ প্রশাসনের কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছিল এবং জনগণনা ও পুনর্বন্টন এখনও অনেক দূরে ছিল। ৬৫৩ সালে কোটোকু তেন্নো এবং নাকা নো ওয়ের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়। নাকা নো ওয়ে প্রাসাদকে ইয়ামাতো প্রদেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন এবং সম্রাট তা অস্বীকার করেন। তবুও নাকা নো ওয়ে চলে যান, তার মা — প্রাক্তন কোগোকু তেন্নো এবং বর্তমান সম্রাজ্ঞী (নাকা নো ওয়ের বোন) ও তার সন্তানদের সঙ্গে। কোনো ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট তারিখ নেই, শুধু বছর উল্লেখ আছে। পরবর্তী বছরের ১০ম মাসে সম্রাট অসুস্থ হন এবং সবাই নানিভায় ফিরে আসেন এবং সম্রাটের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয় যে নাকা নো ওয়ে ভেবেছিলেন সম্রাটকে সরকারের কেন্দ্রে আনার প্রচেষ্টা খুব সফল হয়েছে এবং তার নিজের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তাই নতুন ও ব্যয়বহুল নাগারা প্রাসাদে তেমন প্রস্তাব দেওয়া যা সম্রাট নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করবেন। এরপর রাগে সরে গিয়ে ইয়ামাতো চলে যান এবং সবাইকে তাদের আসল ক্ষমতাধারী কে তা ভাবতে বাধ্য করেন। গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ ব্যক্তি তার অনুসরণ করে ইয়ামাতো যান। একটি আধুনিক মতবাদ আছে যে বিরোধের আসল কারণ ছিল নাকা নো ওয়ে তার বোন সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। 'নিহন শোকি' সম্রাজ্ঞীকে পাঠানো সম্রাটের একটি কবিতা উদ্ধৃত করেছে যা এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই তত্ত্ব বলে যে এর জন্যই নাকা নো ওয়ে ২৩ বছর ধরে সিংহাসনে আরোহণ করতে চাননি। সম্রাট হলে তার কোনো গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা থাকত না এবং তিনি গোপনে সম্পর্ক রাখতে পারতেন না। এছাড়াও বলা হয় কোটোকু তেন্নোর মৃত্যুর পর নাকা নো ওয়ে প্রকাশ্যভাবে তার বোনকে স্ত্রী হিসেবে দেখতেন। এমন কিছু বিবাহকে আমরা অজাচার দাম্পত্য মনে করলেও রাজবংশে এসব সাধারণ ছিল। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। যদি এই বিবাহ সত্যি হয়, তা নিয়ম ভঙ্গ করত। পূর্বে এমন উদাহরণ আছ। মানুষেরা মনে করত নাকা নো ওয়ে ঐ সম্পর্ক চলাকালীন রীতিগতভাবে দুষিত ছিলেন। তাই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেননি। তিনি তখনই (৬৬৮ সালে) সম্রাট হন যখন তার বোন মারা যান। কোটোকু তেন্নোর একমাত্র পুত্র ছিলেন রাজকুমার আরিমা। কোটোকুর মৃত্যুকালে তিনি ১৫ বছর বয়সী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। পরিবর্তে তার মা দ্বিতীয়বার সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবার সাইমেই তেন্নো নামে পরিচিত। 'নিহন শোকি' এতে কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। এতে একটি বড় ঝুঁকি ছিল যে নিজের সিংহাসন গ্রহণ না করায় ভবিষ্যতে রাজকুমার আরিমা সিংহাসন পেতে পারে। এই কথাটি সমর্থন করে ধারণাটি যে ব্যক্তিগত জীবনের কারণে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করতে পারেননি। মৃত সম্রাটের দেহ তার মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পরে দাফন করা হয় এবং একই দিন রাজসভা ইয়ামাটোতে চলে যায়, আসুকায় ইটাবুকি প্রাসাদে অবস্থান নেয়। এই প্রাসাদে সাইমেই বাস করতেন যখন সোগা নো ইরুকার হত্যাকাণ্ড হয় এবং তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সাইমেই তখন প্রায় ৬২ বছর বয়সী ছিলেন। প্রায় এই সময়েই নাকা নো ওয়ের ছোট ভাই রাজকুমার ওয়ামা ২৫ বছর বয়সে রাজকাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন। নাকা নো ওয়ের পুত্র রাজকুমার ওতোমো তখন ৮ বছর এবং তার কন্যা উনো নো সরারা। তিনি পরবর্তীতে ওয়ামা ও জিতো তেন্নোর সম্রাজ্ঞী হন, ছিলেন ১১ বছর বয়সী। ইটাবুকি প্রাসাদ একটি অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে পরিকল্পিত ছিল, যেখানে নতুন একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হচ্ছিল যা নানিওয়ার প্রাসাদের চেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ হবে। ৬৫৫ সালের শেষে ইটাবুকি প্রাসাদ আগুনে পুড়ে যায় এবং তারা ইয়াহারা প্রাসাদে চলে যায়। রাজসভা তখন একাধিক বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে। <nowiki>''নিহন শোকি'' এই কাজগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় ও বিলাসিতার বিষয়ে জনসাধারণের অভিযোগ উল্লেখ করে। ''নিহন শোকি'' অনুসারে, ৬৫৭ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার আরিমা বিদ্রোহের প্রস্তুতি শুরু করেন। বলা হয়, তিনি সাইমেই তেন্নোকে একটি নির্দিষ্ট গরম জলের উৎসের উপকারিতা প্রশংসা করে রাজধনি ছাড়িয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন, যাতে তিনি তার অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা দখল করতে পারেন। প্রায় এক বছর পরে সম্রাজ্ঞী গরম জলের উৎসে যান। তখন আসুকায় সোগা নো ওমি নো আকায় দায়িত্বে ছিলেন। আকায় রাজকুমার আরিমার কাছে সাইমেই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে যান। প্রথমটি ছিল যে সরকার জনগণ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করছে, দ্বিতীয়টি ছিল যে কাজের জন্য অনেক মানুষকে খাল খননে বাধ্য করা হচ্ছে। তৃতীয়টি ছিল যে তিনি পাহাড়ের উপরে একটি ফুল দেখার মঞ্চ নির্মাণে সম্পদ অপচয় করছেন। তারা আটায়ের বাড়িতে গোপনে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু কথোপকথনের সময় হঠাৎ একটি হাতার ভেঙে যাওয়াকে তারা একটি অশুভ সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে পরিকল্পনা ভেঙে যায়। আটায়ে সঙ্গে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে রাজকুমার আরিমার প্রাসাদ ঘেরাও করেন এবং বার্তা পাঠিয়ে জানান যে রাজকুমার আরিমা রাজদ্রোহের পরিকল্পনা করছেন। ''নিহন শোকি''</nowiki> একটি অন্য বই থেকে উদ্ধৃত করে যেটি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার আলোচনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়, যেখানে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী রাজকুমার আরিমাকে সফল অভ্যুত্থান চালানোর জন্য অযোগ্য মনে করেন। শেষপর্যন্ত রাজকুমার আরিমা ও দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং আরও দুই জনকে নির্বাসিত করা হয়। সোগা নো আটায়ে ছিলেন নাকা নো ওয়ের গভীর বিশ্বাসভাজন। তিনি রাজপরিবারের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তার মেয়েকে নাকা নো ওয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি নাকা নো ওয়ের আদেশে রাজকুমার আরিমাকে ফাঁসিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে ক্ষমতার জন্য কাউকেই হুমকি হিসেবে দেখতেন। রাজকুমার আরিমা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "স্বর্গ ও আকায় জানেন যা ঘটেছে, আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ।" এই কাহিনী বেশ কয়েকটি কবিতায় উল্লেখ আছে, যার মধ্যে দুইটি তার মৃত্যুর আগের এবং রাজকুমার আরিমার প্রতি অভিজাতদের মধ্যে সমবেদনা প্রতিফলিত হয়। ৬৫৮ সালেও পূর্ব সীমানায় সামরিক অভিযান হয়। প্রাচীনকালে পূর্বের বর্বরদের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ছিল 蝦夷। এটি টোকুগাওয়া যুগ থেকে ইজো হিসেবে উচ্চারিত হয়। সেই সময় হোক্কাইডো দ্বীপকেও ইজো বলা হতো। তবে প্রাচীনকালে এটি এমিশি উচ্চারিত হত। এটি সোগা নো এমিশির ব্যক্তিগত নামের সঙ্গেই সম্পর্কিত। <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশির বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিযান কিয়েকো তেন্নোর শাসনামলে উল্লেখ আছে। তিনি জিম্মু ও সুজিনের মধ্যকার কাল্পনিক শাসক বলে মনে করা হয়। এই ধরনের অভিযান নিয়ে অনেক কিংবদন্তি আছে। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এদের বিষয়ে খুব বেশি বিশ্বাসী নন। <nowiki>''</nowiki>কোজিকি<nowiki>''</nowiki>-তে এমিশি জাতি একবারও নামকরণ করা হয়নি। এটি সম্ভবত প্রাচীন ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত হলেও সরকারী প্রকল্প ছিল না। ৪৭৮ সালের চীনের দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে জাপানি শাসক পূর্বে ৫৫টি এবং পশ্চিমে ৬৬টি বর্বর জাতিকে জয় করেছেন। 毛人 শব্দটি সম্ভবত সোগা নো এমিশির নাম লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি সাধারণ চীনা ভাষায় বর্বরদের অর্থ বহন করে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ শতকের শেষভাগে জাপানের দূরপ্রাচ্যের অনিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠী একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে। ৫৮৯ সালে ওমি নো ওমি মাতসু তোসান্দো পথ দিয়ে এমিশিদের সীমানা পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিছু ঐতিহাসিক এ ঘটনাকে অস্বীকার করলেও বেশিরভাগই সত্য মনে করেন। ৬৪২ সালে "কয়েক হাজার" এমিশি হোকুরিকুডো অঞ্চলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে, যাদের নেতাদের সোগা নো এমিশির ভাণ্ডারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ৬৪৫ সালে কূটনীতিক পরিবর্তনের পর পূর্বাঞ্চল পরিদর্শনে বিশেষ গভর্নর পাঠানো হয় এবং ৬৪৭ সালে নুতারি নামে কাঠের ঘেরযুক্ত দুর্গ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী বছর আরও একটি দুর্গ ইওয়াফুনে নির্মিত হয়। তারপর অভ্যন্তরীণ এলাকা থেকে মানুষ স্থানান্তরিত করা হয় দুর্গগুলোর খাদ্য ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য। নুতারি দুর্গের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে নীইগাতার একটি এলাকা এই নামে পরিচিত। ইওয়াফুনেও একটি আধুনিক নাম। এটি নীইগাতা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বছরগুলোর আলোচনায় এমিশি আসলে আয়নু কিনা বা তারা জাতিগতভাবে জাপানি হলেও ইয়ামাটো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত ধারণা ছিল তারা আয়নু, কারণ 蝦夷 শব্দটি আয়নু বোঝাতো। তারপর জানা গেল জাপানি জাতি ইয়ায়ই সংস্কৃতির সঙ্গে দেশে এসেছে, আর জোমোন সংস্কৃতি অন্য জাতির ছিল, যার অবশিষ্ট আয়নু হতে পারে। আয়নুদের দেহে তুলনামূলক বেশি শরীরের লোম থাকার জন্য 毛人 শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তবে সন্দেহ বাড়তে শুরু করে। এজো শব্দ আয়নু বোঝালে ও ইমিশি শব্দের একই অর্থ হওয়ার প্রমাণ নেই। চীনা অক্ষরের বহুবিধ ব্যবহার জাপানি ভাষায় স্বাভাবিক। তাই ইমিশি জনজাতি বোঝায় না বলে ধারণা বেশি প্রবল। জোমোন কঙ্কালের মনুষ্যবিজ্ঞানের গবেষণায় আয়নুদের সাথে তাদের মিল পাওয়া যায়নি। এমিশি হয়তো জোমোন বংশোদ্ভূত হলেও আয়নু নাও হতে পারে। তবে তারা বর্তমান আয়নু জনগোষ্ঠীর একাংশ হতে পারে এবং সাইবেরিয়া থেকে লোকেদের বিভিন্ন ঢল হোক্কাইডোতে এসেছে এটাও পাওয়া গেছে। 毛人 শব্দটি সম্ভবত প্রাকৃতিক লোমযুক্ত লোকদের জন্য নয় বরং পশম পরিধানকারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই এটি বিতর্কে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়। কোফুন যুগের খননায় এমিশিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে অনেক কফুন পাওয়া গেছে। কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও নেই যে সংঘর্ষের সময়কালে এই অঞ্চলে কোনো স্বতন্ত্র জাতির উপস্থিতি ছিল। মুৎসু ফুজিওয়ারা পরিবারের চার ধারাবাহিক প্রজন্মের মমি হিরাইসুমির চুসোনজি-তে সংরক্ষিত আছে, যেগুলি ১৯৫১ সালে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা গিয়েছিল যে তারা আইনু নয়, বরং জাপানিদের মতোই। এই পরিবারকে ব্যাপকভাবে ইমিশি বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আইনু ও জোমন জনসংখ্যার মধ্যে কোনো সত্যিকারের সংযোগ নেই কারণ তাদের মধ্যে কোনো ধারাবাহিক সম্পর্ক পাওয়া যায় না। হক্কাইডোতে প্রথম নিশ্চিত আইনু জীবাশ্ম অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। তবে এ থেকে ইমিশিরা জোমন বংশধর ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন মিটে যায় না। এখানে দেখা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন যে ইয়ায়োই ধানের চাষের সংস্কৃতি উত্তরপূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অভিবাসীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল এবং অনেক জোমন মানুষ নতুন জীবনযাত্রায় "রূপান্তরিত" হয়েছিল। ইয়ায়োই ধানের চাষের সর্বোত্তর সীমা "ইমিশি" অঞ্চলের ভিতরে ছিল এবং একই কথা কোফুন যুগের জীবাশ্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্য তত্ত্বগুলোর সমর্থকরা এখনও আছেন। তবে আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন ইমিশি হওয়ার মূল কারণ ছিল তারা ইয়ামাটো রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে ছিল, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিকভাবে পূর্ববর্তী "জাপানি" থেকে খুব ভিন্ন ছিল না যারা সীমান্তের অন্য পাশে বাস করত। আমি লক্ষ্য করেছি যে কখনোই কারও দ্বারা "ইমিশি ভাষা" শেখার চেষ্টা করার উল্লেখ নেই, অথচ সিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে "সিলা ভাষা" শেখার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ আছে। আমার প্রশ্ন, যার কোনও উত্তর আমি কখনো দেখিনি, তা হলো কেন সোঘা নো ইমিশির নামটা হল? বিশেষ করে ৬৪২ সালে যখন ইমিশিদের একটি দল দরবারে আসলো, তখন তাকে তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অবশ্যই কোনো সম্পর্ক ছিল। এমন ব্যক্তি যার মর্যাদা এত বড়, তার ইমিশিদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে উল্লেখযোগ্য সময় কাটানো সম্ভব নয়। তবে দেখা যায় ষষ্ঠ শতকে অনেক ইমিশিকে ইয়ামাটো অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং শাসক বংশের সম্পত্তির পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সোঘাদের এই ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা ছিল বলেও মনে হয় এবং এর ফলে তিনি ইমিশিদের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হতে পারতেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক অভিজাত ব্যক্তি যে নাম ব্যবহার করতেন, তা তার শৈশবের নাম ছিল না। আমেরিকান ভারতের মতো, যখন আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হতেন, আপনাকে একটি নতুন নাম দেওয়া হতো। এটি আপনার জন্য বিশেষ মানানসই হতে পারত। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে অনেক অদ্ভুত নাম ছিল, যার মধ্যে ইমিশিও একটি। ৬৫৮ সালের অভিযান আবে নো হিরাউ-এর নেতৃত্বে ছিল এবং এটি ৬৫৯ ও ৬৬০ সালেও পুনরাবৃত্তি হয়। বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর। ধারণা করা হয় <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকগণ বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং আসলে অভিযানের সংখ্যা কম, সম্ভবত দুইটি। সংক্ষিপ্ত সারাংশ হলো, ৬৫৮ সালে আবে ১৮০টি নৌকায় উত্তরে গিয়ে আকিতা ও নুশিরো (সম্ভবত আধুনিক আকিতা ও নোশিরো) পৌঁছান। সেখানে তিনি তিনটি আলাদা ইমিশি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাদের আনুগত্যের শপথ করান, স্থানীয় প্রশাসনের পদে নিযুক্ত করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। পরের বছর ৬৫৯-এ আবার ১৮০ নৌকায় একই স্থানে গিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দেখা করেন, যাদের মধ্যে কেউ তাঁকে রাজধানীর জন্য একটি স্থান বেছে নিতে বলেন এবং তিনি তা করেন। আবারো তিনি পদবী ও প্রশাসনিক দায়িত্ব বন্টন করে ফিরে আসেন। ৬৬০ সালে পরিস্থিতি আলাদা। শুরুতেই <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki> বলে যে তিনি সু-শেন (粛慎) দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। বিবরণে বলা হয়েছে, তিনি উত্তর দিকে একটি অবর্ণিত নদী পর্যন্ত যাত্রা করেন, যেখানে ২০টি সু-শেন জাহাজ থেকে পালাচ্ছিল ১০০০ জন ইমিশিকে। আবে সু-শেনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন, তারপর এমন এক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন যা <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকদের বিভ্রান্ত করে তোলে, কিন্তু যেকোনো নৃতত্ত্বের ছাত্রের কাছে স্পষ্ট। শেষে সু-শেনদের একটি দুর্গায় অনুসরণ করে তাদের ধ্বংস করে দেন। এ ব্যাপারে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যেমন স্থানীয় নামগুলো কোথায় ছিল, আসলে তিনটি অভিযান হয়েছিল কি না, ৬৫৯ সালের অভিযানটি ৬৫৮ সালের ভুল পুনরাবৃত্তি কিনা। সু-শেন কারা ছিলেন। ভৌগোলিক বিতর্ক প্রধানত আবে হক্কাইডো পর্যন্ত গিয়েছিলেন কি না তা নিয়েই। ৬৫৮ সালের নোটিশ বলে আবে ১৮০ নৌকায় আকিতা ও নুশিরোতে পৌঁছান। আকিতা নোটারি ও ইওয়াফুনের চেয়ে অনেক উত্তরে। আকিতা নারা যুগে এই অঞ্চলের যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান কেন্দ্র ছিল। নুশিরো সম্ভবত আধুনিক নোশিরো, আকিতার কাছাকাছি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদ্বীপের অন্য পাশে। আকিতায় আবে স্থানীয় ইমিশিদের সঙ্গে মিলিত হন, যারা একত্রিত হয়ে দেবতার নামে দরবারের প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন। আজকের দিনে আকিতা কিল্লার স্থানে একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যাকে কোশিও জিনজা বলা হয়, অর্থাৎ "কোশির দেবতার মন্দির।" আবে ইমিশি নেতাদের সরকারি পদ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেন। তারপর, <nowiki>''নিহন শোকি'' বলে, তিনি ওয়াতারিনোশিমার অন্য একটি ইমিশি দলকে আরিমা বিচে ডেকে পাঠান, যারা তাদেরও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর তাদের দেশে পাঠানো হয়। এরপর আবে দেশে ফিরে আসেন। প্রশ্ন হলো, ওয়াতারিনোশিমা ("যে দ্বীপ পার হয়ে যায়") কোথায় ছিল? অনেকদিন ধরে ধরে নেওয়া হয়েছে যে এটি দক্ষিণ হক্কাইডো। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন আবে এত দূর যেতে পারেননি এবং এটি হয়তো উত্তরের ত্সুগারু উপদ্বীপ। এটি প্রাচীনকালে অনেকটাই দ্বীপের মতো ছিল কারণ এটি শুধুমাত্র নৌকায় যাত্রা করে পৌঁছানো যেত, কারণ এটি হনশু থেকে পর্বতমালার একটি বিস্তীর্ণ বেল্ট দ্বারা পৃথক ছিল। এমনকি তাও হয়তো অনেক দূর, কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকরা ত্সুগারু অঞ্চলকে হক্কাইডোর সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন, হনশুর আরও দক্ষিণের ইমিশিদের তুলনায়। একমাত্র সত্যিকারের ইঙ্গিত হলো ''নিহন শোকি''</nowiki> কোনো অতিরিক্ত যাত্রার কথা বলছে না, শুধু বলছে ওয়াতারিনোশিমার ইমিশিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ৬৬০ সালের অভিযান আরও জটিল। প্রথমত, সু-শেন (粛慎) নামটি প্রাচীন চীনা ইতিহাস থেকে, চৌ রাজবংশ থেকে। চীনারা মাঝে মাঝে এই নাম ব্যবহার করত মাঞ্চুরিয়ার মানুষের জন্য যাদের ইয়িলৌ বলা হত এবং যাদেরকে বিশ্বাস করা হয় জুরচেনদের পূর্বপুরুষ যারা লিয়াও রাজবংশ গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ, তারা এমন এক জনগোষ্ঠী যারা পুয়ো (পূর্বপুরুষের জাপানি ধারণা) এর মতো ছিল এবং একই মাঞ্চুরিয়ান অঞ্চলে বাস করত। তারা কীভাবে হক্কাইডোর চারপাশে নৌকা চালাত তা সহজে বোঝা যায় না। এক মত হলো, জাপানিরা কোনো চীনা গ্রন্থ থেকে নামটি তুলে নিয়েছিল। জাপানি উচ্চারণে এটা মিশিহাসে ছিল, কিন্তু এর কোনো প্রতিপাদ্য নেই। এই সময় জাপান কোগুরোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যাদের নিশ্চয়ই মাঞ্চুরিয়ার সব জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল। হয়তো তারা আমাদের চেয়ে বেশি জানত। অথবা ধারণা করা হয়, প্রাচীন সু-শেন চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছিল এবং এই লোকেরা জাপানের উত্তর-পূর্বে ছিল। তাই সু-শেন নামটি তাদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন এটি ওখোটস্ক জনগণের সঙ্গে মেল খায়, যারা সাইবেরিয়া থেকে হক্কাইডোর অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা সহজেই হনশুর দক্ষিণে অনুসন্ধানকারী দল পাঠিয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এই নিবন্ধে বর্ণিত একটি ধরনের অন্ধ ব্যবসা। এটি বিশ্বব্যাপী বহু স্থানে দেখা যায় যেখানে মানুষ দাসপ্রথার ভয়ে বা ভাষাগত অমিলের কারণে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলে। এক পক্ষ মাটিতে নানা পণ্য ছড়িয়ে রেখে চলে যায়। অন্য পক্ষ এসে তা দেখে তাদের পণ্য দেয়। এভাবে লেনদেন চলে যতক্ষণ দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়। তারপর প্রত্যেক দল তাদের কেনা জিনিস ও অবিক্রিত জিনিস নিয়ে চলে যায় এবং কেউ কারো কাছাকাছি আসেনা। এটি নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তবে <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র লেখকরা বুঝতে পারেননি এটি একটি বাণিজ্য। এরপর বলা হয়েছে আবে তাদের শিবিরে অনুসরণ করে আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এর কোনো কারণ দেওয়া হয়নি। পুরো ঘটনা রহস্যময় এবং সম্ভবত <nowiki>''</nowiki>নিহন শোকি<nowiki>''</nowiki>র উপস্থাপনার চেয়ে অনেক জটিল ছিল। তবে এটি হনশুর দূর উত্তরে জাপানি সরকারের দীর্ঘমেয়াদী জড়িত হওয়ার সূচনা, যেখানে পরবর্তী ২০০ বছর ধরে একটি "সক্রিয়" সীমান্ত ছিল। == পাইকচের পতন == একই সাথে আবে নো হিরাওয়ের ৬৬০ সালের অভিযানের সাথে সাথে জাপান তাং চীন এবং সিল্লার সম্মিলিত বাহিনীর হাতে পাইকচে ধ্বংসের কবলে পড়ে। এটি এই অঞ্চলে একটি অশান্ত সময়ের সূচনা করেছিল যা শেষ পর্যন্ত সিলার শাসনের অধীনে কোরিয়ার একীকরণের দিকে পরিচালিত করে। পুরোনো এবং নতুন তাং রাজবংশীয় ইতিহাস, কোরীয় ''সামগুক সাগি'' এবং ''নিহন শোকিতে'' এই ঘটনাগুলির বিশদ বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যথায় অজানা কোরীয় উপকরণ থেকে বিস্তৃত উদ্ধৃতি রয়েছে। জাপান পাইকচেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য কোরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল এবং চীন বা সিল্লা বা উভয়ের আক্রমণের ভয়ে দীর্ঘকাল ধরে বাস করেছিল। জাপান দরবারে কমপক্ষে প্রথম নারা যুগে নির্বাসনে থাকা পাইকচের রাজাও বজায় রেখেছিল এবং হেইয়ান যুগের শেষের দিকে এখনও সক্রিয় ছিল 百済王 নামে একটি অভিজাত পরিবার "পাইকচের রাজা" পায়েচের জাপানি নামটি রাজার জন্য কোরীয় শব্দের সাথে একত্রিত করে কুদারানোকোনিকিশি উচ্চারণ করেন। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ৬৪৯ সালে সিল্লা চীনা শৈলীর সাথে মেলে দরবারে সরকারী পোশাক পরিবর্তন করেন এবং ৬৫০ সালে এটি তাং রাজবংশের রাজত্বের উপাধিগুলি নিজের হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ৬৫৪ সালে কিম মুরিওল সিলার রাজা হন। এর আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিল্লা দূতাবাস নিয়ে জাপান ও চীন সফর করেন। পূর্ববর্তী দুই সিল্লা শাসক রানী ছিলেন। তাই তার অবস্থান সম্ভবত যুবরাজ নাকা নো ওয়ের মতো এতটা ভিন্ন ছিল না। পরিস্থিতি যেভাবে এগিয়েছে তা থেকে এটি যুক্তিসঙ্গতভাবে স্পষ্ট যে চীন এবং সিল্লা উভয়ই শুরু থেকেই তার নিকটতম শত্রু পাইকচে এবং কোগুরিওকে ধ্বংস করতে এবং তারপরে কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণে আবির্ভূত হওয়ার জন্য একে অপরকে ব্যবহার করার আশা করেছিল। পাইকচে এবং কোগুরিও একে অপরের সাথে মিত্রতা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল এবং ৬৫৯ সালে তারা সিল্লার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে যা ২০ টি দুর্গ দখল করে। সিল্লা চীন থেকে সাহায্যের অনুরোধ করে এবং চীন সাড়া দিয়ে খুশি হয়েছিল। ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মুরিওলের এক পুত্রের সাথে একজন চীনা জেনারেলের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়। তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে সেই সময় চীনে ছিলেন। এই বাহিনীতে ১,৩০,০০০ সৈন্য ছিল এবং সমুদ্রপথে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল "সু-শেন" এর বিরুদ্ধে আবে নো হিরাওয়ের যুদ্ধের ঠিক একই সময়। বিস্মিত হয়ে পাইকচে সেনাবাহিনীর পতন ঘটে। পশ্চিম দিকের উপকূল থেকে অগ্রসর হওয়া চীনারা এবং পূর্ব দিক থেকে আসা একটি সিল্লা সেনাবাহিনী পাইকচে রাজধানীতে একত্রিত হয়েছিল। এটি দ্রুত আত্মসমর্পণ করেছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইকচে ধ্বংস হয়ে যায় বা তাই মনে হয়েছিল। রাজা এবং বিপুল সংখ্যক অভিজাতদের বন্দী হিসাবে চীনে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং পাইকচেকে চীনা অঞ্চল হিসাবে সংগঠিত করা হয়েছিল। চীনা সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশ তৎক্ষণাৎ ফিরে আসে, প্রাক্তন পাইকচে রাজধানীতে আরও ৮,০০০ সিল্লা সেনার সমর্থনে ১০,০০০ লোকের একটি বাহিনী রেখে যায়। তবে, গ্রামাঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই করা হয়নি এবং চীনা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার শেষ করার আগেই বিদ্রোহী বাহিনী তাৎক্ষনিকভাবে অনেক জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' এই বিদ্রোহের বিবরণের বিষয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিকর। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাথমিক বিদ্রোহী ছিলেন 鬼室福信 নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত কৃষকদের দ্বারা একটি সিল্লা বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করেন এবং তাদের অস্ত্র নিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টতই একজন পাইকচে কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি পাইকচে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছিলেন। প্রায় একই সময়ে পাইকচে থেকে লোকেরা জাপানের দরবারে এসে কী ঘটেছিল তা জানায়। এক মাস পরে 鬼室福信 থেকে দূত এবং আরেকজন নেতৃস্থানীয় বিদ্রোহী কমান্ডার 佘自進 জাপানে এসে সাহায্য চেয়েছিলেন। জাপানি দরবারে একজন পাইকচে রাজপুত্র বাস করছিলেন এবং তারা তাকে রাজা বানানোর এবং পাইকচে পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করেন। এতে নিজেদের সম্পৃক্ত করা স্পষ্টতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কিছু না করাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বছরের শেষে আদালত তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেয় কারণ সাইমেই এবং দরবার নানিওয়ায় চলে যায় এবং পুরো দরবারকে উত্তর কিউশুতে স্থানান্তরিত করার প্রস্তুতি শুরু করে, যেখান থেকে তারা আসন্ন যুদ্ধের নির্দেশ দেবে। নানিওয়ায় পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পরে তারা ৬৬১ সালের প্রথম মাসে কিউশুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিন দিন পরে তারা কিবিতে পৌঁছেছিল, যেখানে এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এই পদক্ষেপটি কতটা বিস্তৃত ছিল কারণ রাজকুমার ওমার স্ত্রী একটি বাচ্চা মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। এই অভিযানের সময় আরও বেশ কয়েকটি রাজকীয় শিশুর জন্ম হয়েছিল। তারা আট দিনের মধ্যে পশ্চিম শিকোকুর আধুনিক মাতসুয়ামা অঞ্চলে পৌঁছেছিল এবং সেখানে কিছুক্ষণের জন্য শিবির স্থাপন করেছিল। দুই মাস পরে তারা কিউশুতে স্থানান্তর সম্পন্ন করে, হাকাটা বেতে পৌঁছে। তারা সেই সময়ে একটি অস্থায়ী প্রাসাদ স্থাপন করেছিল তবে দুই মাস পরে এটি একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬৬১ এর ৭ তম মাসে সাইমেই তেন্নো মারা যান। স্থানীয় ঐতিহ্য তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিল যে অস্থায়ী প্রাসাদের জন্য কাঠ নিকটবর্তী একটি মন্দির ভেঙে উপরে পড়েছিল। যুবরাজ নাকা নো ওই সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন এবং সম্রাটের পদ গ্রহণের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেননি। সঠিকভাবে বলতে গেলে তখন একটি অন্তর্বর্তীকাল ছিল। তবে ৬৬২ সাল থেকে তেনচি তেন্নোর রাজত্বের বছর গণনা শুরু করা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম বিচ্ছিন্নতা ৬৬২ সালের প্রথম মাসে আজুমি নো মুরাজি হিরাউয়ের কমান্ডে কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় শুরু হয়। তাঁর সাথে ছিলেন পাইকচে রাজপুত্র, ইয়ামাবে নো ওমি মোমো, সাই নো মুরাজি আজিমাসা, হাতা নো মিয়াৎসুকো তাকুতসু এবং ৫,০০০ পুরুষ। তারা পঞ্চম মাসে কোরিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের কাছে ১০০,০০০ তীর এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ সরবরাহ করেছিল। ইতিমধ্যে চীনারা একজন নতুন কমান্ডার নিয়োগ করে এবং সিল্লা পাইকচেতে অতিরিক্ত সৈন্যও প্রেরণ করে। সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোরীয় বিদ্রোহীরা সাবেক রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেয়। ৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ বিদ্রোহীরা পাইকচের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬৬৩ এর গোড়ার দিকে সিল্লা একটি বড় আক্রমণ শুরু করে এবং বিদ্রোহীদের পিছু হটতে হয়েছিল। তবে চতুর্থ মাসে দ্বিতীয় জাপানি সেনাবাহিনী ২৭,০০০ পুরুষ নিয়ে এসেছিল। কমান্ডার ছিলেন কামিতসুকেনু নো কিমি ওয়াকাকো। এই নামের অর্থ তিনি পূর্ব জাপানের কান্টো অঞ্চল এবং কুনিনোমিয়াৎসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাশিহিতো নো ওমি ওফুতা, কোসে নো কামিসাকি নো ওমি ওসা, মিওয়া নো কিমি নেমারো, আবে নো হিকিতা নো ওমি হিরাও এবং ওয়াকে নো ওমি কামায়ে। এই শক্তিবৃদ্ধির সাথে বিদ্রোহীরা আবার আধিপত্য অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো জাপানিদের কোরিয়ায় মোট ৩২,০০০ পুরুষ ছিল এবং বাহিনীটি স্পষ্টতই রচনায় দেশব্যাপী ছিল। ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত নামগুলি থেকে এটি বলা সম্ভব যে সেখানে কিউশু এবং শিকোকুর প্রায় প্রতিটি প্রদেশ এবং সুদূর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে সৈন্য ছিল। ধারণা করা হয় যে, দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর সাথে আবে নো ওমি হিরাও একই ব্যক্তি যিনি উত্তর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রায় একই সময়ে, পাইকচে বিজয়ের মূল চীনা কমান্ডার ৭,০০০ লোক নিয়ে ফিরে আসেন। ঠিক এই মুহুর্তে কোরীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে বিদ্রোহটি প্রায় মারাত্মক আঘাত হানে। পাইকচে রাজকুমার রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। ৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ম মাসে চীন ও সিল্লা উভয়ই কোরিয়ান উপকূলে মিলিত হয়ে একসাথে অভিযান চালানোর জন্য বিশাল শক্তিবৃদ্ধি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। একই সময়ে জাপানিরা একটি তৃতীয় বাহিনী প্রেরণ করেছিল যা চীনাদের দ্বারা বেঁছে নেওয়া ঠিক একই বিন্দুতে উপকূলে অবতরণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। এই পদক্ষেপটি রাজকুমার 豊璋 দ্বারা আক্রমণের সাথে সমন্বয় করার কথা ছিল। জড়িত জাপানি সেনারা একটি নতুন বাহিনী ছিল নাকি কামিতসুকেনু নো কিমি নো ওয়াকাকোর অধীনে ২৭,০০০ থেকে একটি বিচ্ছিন্নতা ছিল তা স্পষ্ট নয়। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে ১০,০০০ পুরুষ ছিল। চীনা ও সিল্লা অভিযাত্রীরা ৬৬৩ সালের ৮ম মাসের ১৭তম দিনে যোগাযোগ করে। চীনা নৌবহরে ১৭০টি জাহাজ ছিল। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে জাপানি বাহিনী ১০ দিন পরে এসে চীনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যা দু'দিন স্থায়ী হয়। জাপানিরা একে হাকুসুকি নো ই বা হাকুসুকি উপসাগরের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে। ''সামগুক সাগি'' বিবরণে বলা হয়েছে যে জাপানিদের "১০০০ জাহাজ ছিল", সম্ভবত এটি অতিরঞ্জিত। জাপানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং মূলত সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে দেখা যাচ্ছে যে জাপানিরা চীনা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য সমস্ত কিছু বাজি ধরেছিল এবং চীনা ডানা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে ঘিরে ফেলেছিল। পুরোনো তাংয়ের ইতিহাস বলছে যে চারটি পৃথক লড়াই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৪০০ জাপানি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল এবং এগুলোর কর্মীরা ডুবে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তির পরে উপকূলে সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত যুবরাজ সংগ্রাম ত্যাগ করে কোগুরিওতে পালিয়ে যান। জাপানিরা বিপুল সংখ্যক পাইকচে শরণার্থী সহ তাদের অন্যান্য সেনাবাহিনীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। আসলে এখানেই গল্পের শেষ নয়। পরে চীনারা তাদের বেশিরভাগ বাহিনীকে কোগুরিও আক্রমণের জন্য স্থানান্তরিত করে এবং পাইকচে আবার বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। এবার সিল্লা বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং চীনের বিরুদ্ধে কোগুরিওতে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের সাথে জোটবদ্ধ হয় এবং চীনাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে সফল হয়। এরপরে তারা সিল্লার একীভূত রাজ্যের অধীনে এই অঞ্চলের প্রাক্তন পাইকচে শাসক পরিবারের গভর্নর হন। স্বাভাবিকভাবেই, নাকা নো ওকে এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করতে হয়েছিল যে চীনা এবং বা সিল্লা বাহিনী অবিলম্বে বা ভবিষ্যতের কোনও সময়ে জাপান আক্রমণ করবে। তবে এই বিপর্যয় দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেবে কিনা তা নিয়েও তাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়েছে। এটি স্পষ্ট নয়। তবে এটি প্রদর্শিত হয় যে তিনি ৬৬৩ এর শেষের কিছু সময় আগে ইয়ামাতোতে ফিরে আসেন। আক্রমণ থেকে কিউশুর প্রতিরক্ষার জন্য তিনি যা করতে পারেন তা করেন। এই সময়ে তিনি সিংহাসনে আরোহণের বিষয়ে কিছুই করেননি এই বিষয়টি সাধারণত এই প্রস্তাবের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে গ্রহণ করা হয় যে, তিনি তার বোন রাজকুমারেস হাশিহিতোর সাথে অজাচারি বিবাহ করেন। ''নিহন শোকির'' একটি বিবরণ রয়েছে যে ইঙ্গিও তেন্নোর মৃত্যুর পরে অভিজাতরা ঠিক একই কারণে তার উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে বসাতে অস্বীকার করেছিল এবং পরিবর্তে তার ছোট ভাইকে বেছে নিয়েছিল। এর অর্থ হলো নাকা নো ও এটি চেষ্টা করার সাহস করেনি। এবার তিনি কেবল সিংহাসন খালি রেখেছিলেন, উপযুক্ত আসন গ্রহীতা উপলব্ধ ছিল না। তবে, এটি অবশ্যই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে কেউ তার বিরুদ্ধে যেতে সক্ষম হতে পারে। এই সময়ে তার প্রধান সুবিধা ছিল যে যেহেতু তিনি ইতিমধ্যে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং রাজকুমার আরিমাকে নিষ্পত্তি করেন। তাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প ছিলেন তার নিজের ভাই রাজকুমার ওমা। এই যুগে ভাইয়েরা ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার প্রতিটি বৈশিষ্ট্য দিয়েছিলেন। নাকা নো ওই তার দুই মেয়েকে ওমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। তারা হলেন রাজকুমারী ওটা এবং রাজকুমরী উনো নো সারারা। উনো নো সারারা ৬৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ বছর বয়সে ৬৫৭ সালে ওমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন (জাপানি গণনা)। ধারণা করা হয়, রাজকুমার ওমার বয়স তখন ২৭ বছর। অবশেষে, ওমা নাকা নো ওয়ের চার কন্যাকে বিয়ে করেন, শেষ দু'জন তিনি সম্রাট হওয়ার পরে। সাম্রাজ্যবাদী/অভিজাত যৌন জীবন সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত টীকা রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। জাপানি কবিতার প্রথম সংকলন ''মানিয়োশু''-এ একটি রাজকুমারী নুকাতার ৩ টি দীর্ঘ কবিতা এবং ৯ টি সংক্ষিপ্ত কবিতা রয়েছে। এই কবিতাগুলির মধ্যে কয়েকটি স্পষ্ট করে দেয় যে তিনি নাকা নো ও / তেনচি তেন্নোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তিনি ''নিহন শোকির'' তালিকাভুক্ত নন। সম্রাটদের স্ত্রীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া একমাত্র স্ত্রীই রাজপুত্র বা রাজকন্যার জন্ম দিয়েছেন। যে-সম্পর্ক কোনো সন্তান জন্ম দেয় না, সেটাকে প্রকৃত বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হতো না, এটি বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত ছিল। রাজকন্যা নুকাতা তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে ''নিহন শোকিতে'' তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এটি প্রথমে তাঁর সম্রাজ্ঞী এবং সমস্ত স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে যারা রাজকন্যা ছিলেন, তারপরে সমস্ত স্ত্রী যারা আভিজাত্যের কন্যা ছিলেন এবং তারপরে এটি রাজকন্যা নুকাতাকে কেবল একজন মহিলা হিসাবে উল্লেখ করে যার সাথে তার একটি সন্তান ছিল। এই শিশু, রাজকুমারী তোচি, পরে তেনচি তেন্নোর ছেলে রাজকুমার ওটোমোকে বিয়ে করেন। আমাদের মানদণ্ড অনুসারে এই মানুষগুলোর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হিসেবে অত্যন্ত অজাচার। রাজকুমার নাকা নো ওই এবং রাজকুমারেস হাশিহিতো টাবুর মধ্যে একমাত্র যে বিষয়টি (অনুমিত) যোগাযোগ তৈরি করেছিল তা হলো তাদের মা একই ছিলেন। একই পিতার সাথে মানুষের মধ্যে বিবাহ কিন্তু ভিন্ন মায়ের মধ্যে সাধারণ ছিল। লোকেরা রাজকুমারেস নুকাতা এবং তার চক্র সম্পর্কে প্রচুর তথ্য বের করতে সক্ষম হয়েছে, চিত্রিত করে যে অভিজাতদের মধ্যে সাক্ষরতার বিস্তার এবং একটি সাহিত্যিক চরিত্রের বইয়ের উপস্থিতির সাথে সাথে লোকেরা কীভাবে তাদের জীবনযাপন করেছিল সে সম্পর্কে আমাদের জিনিসগুলি জানার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ৬৫৮ সালে সাদাইজিন কোসে নো টোকুটা মারা গিয়েছিলেন এবং প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, যুবরাজ ওমা উপাধি গ্রহণ না করেই এই পদে কাজ করেন, যেহেতু এই সময় পর্যন্ত কোনও রাজপুত্রের মন্ত্রীর উপাধি গ্রহণের কোনও নজির ছিল না। সম্ভবত এটিই সাদাইজিনের চেয়ে উচ্চতর একটি নতুন পদ তৈরির কারণ ছিল, যাকে বলা হয় দাজোদাইজিন বা ওমাতসুরিগোতো নো মায়েস্তুকিমি, একে প্রায়শই অনুবাদ করা হয় "চ্যান্সেলর"। নারা আমলের আগ পর্যন্ত এই পদ খালি না থাকলেও সবসময় একজন রাজপুত্র দ্বারা পূর্ণ থাকত। এটি মূলত "যুবরাজ" অবস্থানের আমলাতন্ত্রের আমদানি ছিল। তারপরে, ৬৬৪ সালে উদাজিন সোগা নো মুরাজিকো মারা যান এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে সরকারের শীর্ষে রাজকুমার নাকা নো ও এবং রাজকুমার ওমা একা ছিলেন। রাজকুমার ওমার নামে জারি করা একাধিক ফরমান স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তৎকালীন সঙ্কটে কিছু সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা এবং উচ্চতর অভিজাতদের সমর্থন বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্য করা দরকার ছিল। প্রথমত, ৬৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯ পদের ব্যবস্থা একটি নতুন ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যার ২৬ গ্রেড ছিল। তাদের তুলনা করলে, এটি স্পষ্ট যে শীর্ষ ছয়টি মর্যাদা রেখে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী তেরোটি বিশটিতে প্রসারিত হয়েছিল। মনে হয় যে সমস্ত অভিজাতদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে সরকারী নিয়োগ প্রাপ্ত লোকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে এই পরিবর্তনটি আসলে ৬৭১ সালে করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি''তে সেই বছরের জন্য রাজকুমার ওমা কর্তৃক আদেশিত পদমর্যাদায় পরিবর্তনের খুব সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। "তেনচি তেন্নোর রাজত্বের তৃতীয় বছর" বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে বিভ্রান্তির সম্ভাবনার কারণে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়। যদি ৬৬২ থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৬৪ হবে। তবে যদি ৬৬৮ (যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন) থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৭১ হবে। যদি পরিবর্তনটি ৬৭১ সালে হত তবে এটি সঙ্কটের সময়ের সাথে যুক্ত হত না। এটা সম্ভব যে ব্যবস্থায় দুটি সামঞ্জস্য ছিল এবং তারিখগুলির মধ্যে সম্পর্কটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল। ৬৬৪ সালে জারি করা দ্বিতীয় আদেশটি বংশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। উজিনোকামি বা বংশ প্রধানের একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি তৈরি করা হয়েছিল। একটি "মহান বংশের" ক্ষেত্রে প্রধানকে একটি তাচি "দুর্দান্ত তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল এবং একটি "ছোট" বংশের সিএতে একটি কাতানা "ছোট তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল। তোমোনোমিয়াৎসুকো "ইত্যাদি" একটি ঢাল বা একটি ধনুক এবং তীর দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। এই বিভাগগুলি ধরে নেওয়া হয় যে "ইত্যাদি" কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির জন্য জায়গা দেয়, কেবল অভিজাতদের উপরের অর্ধেককে আচ্ছাদিত করে, তাদের অন্যদের থেকে পৃথক করে। এছাড়াও, "বড় গোষ্ঠী" এবং "ছোট গোষ্ঠী" এর পৃথক স্বীকৃতি প্রথম ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,বংশ কাঠামোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে, নাকা নো ওই অভিজাতদের আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে আমলাতান্ত্রিকীকরণের দ্বারা তাদের বিশেষ মর্যাদা মুছে ফেলা হবে না। এই সময়ে সর্বশেষ যে জিনিস প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো "কাকিবে" এবং "ইয়াকাবে" এর স্বীকৃতি। এগুলি বেসরকারী সম্পত্তির বিভাগ ছিল যা ৬৪৬ সালের নববর্ষের দিন ফরমান দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। একটু সামনের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারা আমলের ভূমি পুনঃবণ্টন ব্যবস্থায় অভিজাতদের আসলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলি আদমশুমারির রেজিস্টারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং তারা কোনও কর দেয়নি (আসলে খুব নিম্নতম পদমর্যাদার লোকদের কিছু কর দিতে হয়েছিল কারণ কেবল প্রকৃত পদধারীই অব্যাহতি পেয়েছিল, তার পুরো পরিবার নয়)। নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা চালের গাঁট এবং কাপড়ের বোল্ট আকারে বেতন পেতেন। এটি তারা তাদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের জন্য বাণিজ্য করতে পারতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একই ধরনের বেতন পেতেন। তবে দুই ধরণের "পদ জমি"। মাঝারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়োগগুলি শ্রম কর সহ কৃষিজমির একটি ব্লক থেকে সংগৃহীত করের সরাসরি অর্থ প্রদানের পরিমাণ ছিল। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমাণ জমি পেতেন যা তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিচালনা করতেন। উচ্চ পদমর্যাদা বংশানুক্রমিক হওয়ায় তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব জমি আগলে রেখেছিল। কিছু পরিবারকে প্রকৃতপক্ষে সরকারী নিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জমির বৃহত্তম বরাদ্দ রাখার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও পুত্র তার বাবার সমান পদে না পৌঁছালেও সে পারিবারিক পদের জমি রাখতে পারে। এই অনুশীলনগুলির আলোকে, উচ্চতর আভিজাত্যকে সমর্থন করার জন্য জমির নির্দিষ্ট ব্লকগুলি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হবে তা স্বীকৃতি দেওয়া অগত্যা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করা ছিল না। যাইহোক, এই সময়ে এটি ঘোষণা করা অবশ্যই অভিজাতদের আশ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে ছিল যে নতুন ব্যবস্থা তাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি লক্ষ্য করা গেছে যে এই সময়ে এই জমিগুলির স্বীকৃতি বোঝায় যে এগুলি আসলে ৬৪৬ সালের পরে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। নতুন সরকার ব্যবস্থার বিকাশ সম্পাদন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। এ সময় যথেষ্ট পরিমাণে সামরিক তৎপরতাও ছিল। সমস্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক কোরীয় ৬৬৩ সালে জাপানে পালিয়ে গিয়েছিল এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসতি স্থাপনের অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে এবং কীভাবে তাদের জাপানি অভিজাতদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নির্ধারণের জন্য তাদের মধ্যে অভিজাতদের শ্রেণিবদ্ধ করার প্রচেষ্টাও রয়েছে। কোরীয় অভিজাতদের অনেকে যে অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল সেখানে দুর্গ নির্মাণের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল, বিশেষত উত্তর কিউশু এবং দ্বীপপুঞ্জে ইকি এবং সুশিমা কিউশু উপকূলে। সাকামোরি "সমুদ্রপ্রহরী" নামে পরিচিত দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে জাপানি সৈন্যদের শ্রম করের অংশ হিসাবে সীমান্তের দুর্গগুলি পরিচালনার জন্য কর্তব্যের মেয়াদে পশ্চিমে যাওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সাকামোরি এবং তাদের পরিবারের বাড়িতে ফেলে আসা পরীক্ষা এবং দুর্দশা সম্পর্কে প্রচুর কবিতা রয়েছে। অন্যান্য সৈন্যদের কিউশু থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রসারিত সিগন্যাল ফায়ারের একটি শৃঙ্খল পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে আক্রমণ ঘটলে সরকারকে দ্রুত অবহিত করা যায়। নারা যুগে সাকামোরিরা সকলেই এমিশি সীমান্তের নিকটবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে এই ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল যে এই লোকদের সকলেরই সামরিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ছিল। সম্ভবত ৬৬৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় পশ্চিমা সেনারা সম্ভবত ফিল্ড আর্মি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ছিল যখন সাকামোরি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি রক্ষা করত। নারা যুগে সিগন্যাল স্টেশনগুলিতে নিযুক্ত পুরুষরা সকলেই স্থানীয় ছিল এবং সম্ভবত এই সময়েও এটি সত্য ছিল। এটাই ছিল প্রতিরক্ষার প্রথম সারি। দাজাইফু এলাকায় বড় আকারের দুর্গ আকারে একটি দ্বিতীয় সারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বহু শতাব্দী ধরে কিউশু প্রতিরক্ষা সদর দফতর হিসাবে কাজ করেছিল। দাজাইফু উপকূল থেকে বেশ দূরে ফুকুওকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত যা রক্ষা করা সহজ। অনেক দুর্গ আজও দৃশ্যমান। নির্মাণগুলির মধ্যে একটি ছিল তথাকথিত "জলের দুর্গ"। এর কেন্দ্রস্থলটি একটি দীর্ঘ মাটির কাজ যা এখনও ১৪ মিটার উঁচু এবং ১ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। এটি স্পষ্টতই কাঠামোগত ছিল যাতে মিকাসা নদী দ্বারা পূর্ণ জলের একটি জলাধার প্রয়োজনে প্রাচীরের ঠিক নীচের অঞ্চলটি প্লাবিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি উপকূল থেকে দাজাইফুর দিকে আসা সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেবে। উত্তর প্রান্তটি প্রায় ৪১০ মিটার উঁচু একটি যথেষ্ট পাহাড়ে পৌঁছেছে যার উপরে ৬৬৫ সালে একটি বড় পাথরের দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। এগুলোর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক শহর দাজাইফু। পাহাড়ের একটি ফাঁক ঢাকতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে আরও একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল, যদিও একটি সেনাবাহিনী মূল প্রতিরক্ষা ফ্ল্যাঙ্ক করার চেষ্টা করতে পারে। এই দুটি দুর্গের বাহিনীদল কোরীয় ছিল। তারা সম্ভবত নির্মাণের নির্দেশনাও দিয়েছিল। এগুলো দেখতে অবিকল সমসাময়িক কোরীয় পাহাড়ি দুর্গের মতো। কোরিয়া খুব পর্বতময় এবং সমস্ত কোরীয় যুদ্ধ পাহাড়ের দুর্গের চারপাশে ঘোরাফেরা করে বলে মনে হয়। দাজাইফু দুর্গের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। তাই এটির জন্য একটি বড় বাহিনী প্রয়োজন। এটি এত বড় যে দাজাইফুর পুরো জনগোষ্ঠী ভিতরে আশ্রয় নিতে পারে। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে হনশুর পশ্চিম প্রান্তে কোরিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি দুর্গ নির্মিত হয়। এর অবস্থান জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি শিমোনোসেকির কাছাকাছি কোথাও ছিল। এটি সর্বদা সেই অঞ্চলের সামরিক মূল বিন্দু। ৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসের প্রথম দিকে পায়েচে চীনা কমান্ডার জাপানে একটি দূত প্রেরণ করেন। তারা সাত মাস অবস্থান করেন। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি ''নিহন শোকি''। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের নবম মাসে চীন থেকে সরাসরি দ্বিতীয় দূতাবাস আসে এবং প্রথম দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত নিয়ে আসে। স্পষ্টতই চীনারা সিরিয়াস ছিল। যা ঘটেছিল তার উপর ভিত্তি করে একজনকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে চীনাদের মাথায় অনেক কিছু ছিল (তাদের তখনো কোগুরিওর ধ্বংস সম্পূর্ণ করতে হতো। এটি বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রচুর সমস্যা দিয়েছিল)। সর্বশেষ যে জিনিসটি তারা চেয়েছিল তা হলো জাপানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ। দূতাবাসের আগমনের পরের মাসের জন্য ''নিহন শোকি''তে একটি টীকা রয়েছে যে উজিতে একটি "দুর্দান্ত সামরিক পর্যালোচনা" হয়েছিল, সম্ভবত চীনাদের প্রভাবিত করার জন্য। এই দূতাবাস তিন মাস ছিল। একই বছর জাপান চীনে নিজস্ব দূতাবাস স্থাপন করে। মজার ব্যাপার হলো, রাজকুমার আরিমার ঘটনার অংশ হিসেবে যেসব কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, রাষ্ট্রদূত তাদের একজন। শেষ পর্যন্ত চীন বা সিল্লা কেউই জাপানকে আক্রমণ করেনি (যদিও সিল্লা এমন একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল যা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি), যদিও জাপানিরা কমপক্ষে আরও একশ বছর ধরে পশ্চিমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বজায় রাখার প্রচেষ্টা কখনও শিথিল করেনি। দুর্গগুলি সুশিমাতে, পশ্চিম শিকোকুর সানুকিতে এবং অভ্যন্তরীণ সাগরের পূর্ব প্রান্তে এবং কাওয়াচি এবং ইয়ামাতোর সীমান্তে নানিওয়াতে নির্মিত হয়েছিল। সুশিমার দুর্গটি এখনও টিকে আছে এবং সানুকির দুর্গটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে জেনপেই যুদ্ধের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ৬৬৫ সালে এই প্রচেষ্টার মাঝপথে সম্রাজ্ঞী হাশিহিতো মারা যান। এটি সম্ভবত নাকা নো ওয়ের সিংহাসন গ্রহণের পথ পরিষ্কার করেছিল। তবে তিনি আরও তিন বছর বিলম্ব করতে থাকেন। ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সাইমেই তেন্নো ও সম্রাজ্ঞী হাশিহিতোকে একই সমাধিতে সমাহিত করা হয়। সাইমেইয়ের সমাধি নির্মাণের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও কেন এত সময় লাগল তা বোধগম্য নয়। হাশিহিতোর দেহাবশেষ রাখার ব্যবস্থা করার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এক মাস পরে, নাকা নো ও তার প্রাসাদটি বিওয়া লেকের ওটসুতে স্থানান্তরিত করেন। এটি পূর্ববর্তী কোনও অবস্থানের পূর্ব দিকে। ''নিহন শোকি'' বলেছে যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে অজনপ্রিয় ছিল এবং এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং ব্যঙ্গাত্মক গান ছিল। কেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরের একটি কবিতায় এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে এবং বোঝানো হয়েছে যে আসল বিরোধিতা ছিল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যারা চরম বর হিসাবে যা ভেবেছিল তার দিকে যেতে হবে। আমি মনে করি এটি বলা ন্যায্য যে হেইয়ানকিও (কিয়োটো) এর চূড়ান্ত পদক্ষেপে ভবিষ্যতের সমস্ত পদক্ষেপ একই রকম বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল, এমন পদক্ষেপগুলি ব্যতীত যা পরীক্ষামূলক অবস্থানগুলির মধ্যে একটিকে পরিত্যাগ করে পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসেছিল যেখানে ভবনগুলো ইতিমধ্যে ছিল। ততদিনে কেবল শাসকের পরিবারই যায়নি, বরং উচ্চ ও নিম্ন পদমর্যাদার বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা সরে যায়, যাদের সকলকেই নতুন আবাসন তৈরি করতে হয়েছিল। কোনও কারণ দেওয়া হয়নি। তবে অনুমান করা হয় যে, দাজাইফু যেমন অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তেমনি নাকা নো ওই সামরিক সুরক্ষার কথা ভাবছিলেন। ওটসু নানিওয়া উপকূলের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পর্বত বাধার পূর্ব দিকে রয়েছে। তবে ইয়ামাতো প্রদেশটিও পর্বতমালা দ্বারা ভালভাবে সুরক্ষিত। ওটসুর এই গুণ রয়েছে যে বিওয়া হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে এর অবস্থান এটি কে হোকুরিকু অঞ্চলের সাথে দুর্দান্ত যোগাযোগ দেয়। তবে এটি সর্বদা পশ্চিমে যোগাযোগের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি তখন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আরেকটি তত্ত্ব আছে। এটি পরবর্তীকালের অসংখ্য সত্যায়িত ঘটনার কারণে উপেক্ষা করা যায় না। অর্থাৎ হাশিহিতোর ভূত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন নাকা নো ও। প্রতিহিংসাপরায়ণ ভূত অভিজাতদের মধ্যে একটি প্রধান উদ্বেগ ছিল এবং তারা রাজধানীর অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি মন্দির এবং মন্দিরগুলিতে প্রচুর ক্রিয়াকলাপ করেছিল। আমরা যদি ধরে নিই যে, তাদের অজাচার সম্পর্ক স্থাপনে তিনিই আক্রমণকারী ছিলেন, তা হলে তিনি যেখানে মারা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাওয়ার হয়তো উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে. যাই হোক না কেন, দরবার ওটসুতে ৫ বছরের জন্য স্থগিত ছিল। ৬৬৮ সালে প্রাসাদে ওটসু নাকা নো ও অবশেষে সিংহাসন গ্রহণ করেন। তার সম্রাজ্ঞী ছিলেন ইয়ামাতো নো হিমেমিকো, রাজকুমার ফুরুহিতোর কন্যা, যাকে তিনি হত্যা করেন। তার কোনও সন্তান ছিল না। তবে তার আরও ৮ জন মহিলার সন্তান ছিল, যার মধ্যে চারজন কিসাকি এবং যাদের মধ্যে চারজন অপেক্ষারত মহিলা ছিলেন। তাদের মধ্যে দশটি মেয়ে ও চারটি ছেলে ছিল। তার নির্বাচিত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওটোমোর নিম্ন মর্যাদার মা ছিলেন। তাঁর পিতামহের পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে, তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তেনচির একমাত্র উচ্চ মর্যাদার পুত্র ছিলেন যুবরাজ তাকেরু, যার মা ছিলেন সোগা নো ইশিকাওয়ামারোর কন্যা। যাইহোক, রাজকুমার তাকেরু ৮ বছর বয়সে ৬৫৮ সালে মারা গিয়েছিলেন। রাজকুমার ওমায় তেনচি তেন্নোর একটি শক্তিশালী এবং সম্মানিত ভাই ছিল, ইয়ামাতো রাজ্যের স্বাভাবিক গতিশীলতা প্রায় নিশ্চিত করে তুলেছিল যে ওমা তার উত্তরসূরি হবেন (যদি তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন) নিম্ন মর্যাদার মায়ের সাথে রাজপুত্রের সাথে কোনও প্রতিযোগিতায়। এমন রাজপুত্র এতদিন সিংহাসনে আরোহণ করেননি। অবশ্যই, তেনচি তেন্নো ইয়ামাতো রাজ্যকে একটি নতুন উত্তরাধিকারী দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছিলেন যা চীনা রীতিত্ব কাজ করেছিল। বিষয়গুলি সম্পর্কে চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ছিল, জ্যেষ্ঠ বৈধ পুত্রই একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী। তেনচি তেন্নো এবং পরবর্তীকালের বেশ কয়েকজন সম্রাট শাসক বংশের জন্য এই নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচণ্ড লড়াই করেন। কিন্তু তা কখনও ঘটেনি। ৬৬৯ সালে তেনচি তেন্নোর দীর্ঘদিনের সহযোগী নাকাতোমি নো কামাতারি ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর অব্যবহিত আগে সম্রাট নাইদাইজিনের নতুন পদ বিশেষভাবে তৈরি করেন যাতে কামাতারিকে পদোন্নতি দেওয়া যায়। তিনি কামাতারির বংশধরদের জন্য নতুন বংশের নাম ফুজিওয়ারা তৈরির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ফরমান প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশকে আচ্ছাদন করে একটি আদমশুমারি সম্পন্ন করার আদেশ দেয়। এটি করার জন্য, গ্রামীণ অভিজাতদের অংশগ্রহণের সাথে জড়িত প্রদেশগুলিতে এক ধরণের আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক অগ্রগতি হওয়া উচিত। এই আদমশুমারির কোনও প্রকৃত নথি টিকে নেই। যাইহোক, আমরা জানি যে পরে নারা সময়কালে এই আদমশুমারির নিবন্ধগুলি তখনো বিদ্যমান ছিল এবং তাইহো নীতিমালায় নির্দিষ্ট ব্যবস্থা কাজ করার সূচনা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আমরা আরও জানি যে কিউশুর নথি ৭৭০ খণ্ড পর্যন্ত ছিল এবং কান্টো অঞ্চলের কোজুকে প্রদেশের নথি ৯০ খণ্ড ছিল। এই সংখ্যাগুলি ৮ম এবং ৯ম শতাব্দীতে এই স্থানগুলির পরিচিত জনসংখ্যার সমানুপাতিক। নারাতে শোসোইন কোষাগার প্রকৃত ৮ম শতাব্দীর রেজিস্টারগুলি সংরক্ষণ করে। এগুলিতে ক্রীতদাস পর্যন্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এটি জমির পরবর্তী বিতরণের পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ৬৭০টি নিবন্ধন তখন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়নি। কারণটি হলো পরে যখন জিতো তেন্নো একটি আদমশুমারি পরিচালনা করেন তখন এটি সরাসরি জমির পুনর্বণ্টনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তবে এখানে এটি ঘটেছিল এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। এছাড়াও, যদি কারো কাছে প্রতিটি ব্যক্তির বিশদ বিবরণ রেজিস্টার থাকে তবে কেউ স্বাভাবিকভাবেই করের বোঝা নির্ধারণে সেগুলি ব্যবহার করবেন। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে, ৬৪৬ সালে ডাকা নতুন কর ব্যবস্থা তখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এই রেজিস্টারগুলি পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনায় ব্যবহার করার জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হত। এটি পুনরায় বিতরণ এবং পুনরায় বিতরণ দ্বারা নিহিত কর ব্যবস্থার বাস্তবায়নের পরে আরও বিশদ আদমশুমারি হত। তেনচি তেন্নোর শেষ বছরগুলিতে প্রায়শই জমা দেওয়া অন্য কৃতিত্বটি ছিল "ওমি রিও" বা ওমি রীতির সৃষ্টি। ওমি সেই প্রদেশ যেখানে ওটসু অবস্থিত। এটি একটি খুব বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ''নিহন শোকি'' বা নবম শতাব্দীর চেয়ে পুরোনো কোনও বই বা নথিতে এর উল্লেখ নেই। এটি প্রথম ''কোনিন কিয়াকুশিকির'' মুখবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি বছরের পর বছর ধরে প্রকাশিত ধারাবাহিক বইগুলির মধ্যে অন্যতম যা আদেশ, বিচারিক রায় এবং এর মতো অনুলিপি রয়েছে যা প্রশাসনিক আইন নীতিমালার প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করেছিল। ''দাইশোকুকান্দেন'' নামে একটি বই রয়েছে যা অষ্টম শতাব্দীতে ফুজিওয়ারা নো নাকামারো লিখেছিলেন এবং এটি তেনচি তেন্নোর রাজত্বকালের ফরমানগুলির নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা তৈরি একটি সংকলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে করা হয় যা এটি র উল্লেখ করে না। একটি তত্ত্ব উল্লেখ করে যে জিনশিন যুদ্ধের পরে তেম্মু তেন্নোর বংশধররা ১০০ বছর ধরে সিংহাসন ধরে রেখেছিলেন যতক্ষণ না এটি কোনিন তেন্নোর সাথে তেনচি তেন্নোর বংশধরদের লাইনে স্থানান্তরিত হয়। তেম্মু তেন্নোর কৃতিত্বের কৃতিত্ব তার ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এমন অনেকে থাকতে পারেন। যাই হোক না কেন, এর মধ্যে কী ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। তাই এটি আসলে কোনও ব্যাপার নয়। যাইহোক, চীনারা প্রশাসনিক আইনের বিশদ বিবরণ দিয়ে খণ্ড সংকলন করার অভ্যাসে ছিল এবং এটি অনিবার্য ছিল যে কোনও সময়ে জাপানিরাও একই কাজ করার কথা ভাববে। তবে সম্ভবত তখনো পুরোপুরি প্রচলিত ছিল না। == জিনশিন যুদ্ধ == তেনচির রাজত্বের শেষের দিকে উত্তরাধিকার সম্পর্কে সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তেনচির তিন পুত্র জীবিত ছিল, সবচেয়ে বড় ছিল যুবরাজ ওটোমো। তিনি ইতিমধ্যে দাজোদাইজিন নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটি কখন ঘটেছিল তা নিয়ে উৎসে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তেনচি যুবরাজ ওটোমোকে তার উত্তরসূরি বানাতে চেয়েছিলেন, যদিও তার মা নিম্ন মর্যাদার (রাজকীয় মান অনুসারে) প্রাসাদ কর্মচারী ছিলেন। এটি দীর্ঘকাল ধরে প্রথা ছিল যে কুনিনোমিয়াতসুকো এবং আগাতানুশি শ্রেণির প্রাদেশিক অভিজাতরা মেয়েদের স্ত্রী এবং রাজকন্যাদের উচ্চ স্তরের চাকর হিসাবে কাজ করার জন্য প্রাসাদে পাঠাতেন। এই প্রথা পরবর্তী শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল। তেনচি তেন্নো আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদগুলি দীর্ঘদিন ধরে খালি রেখেছিলেন। তবে একই সাথে তিনি ওটোমোকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তিনি সোগা নো ওমি আকে সাদাইজিন, নাকাতোমি নো মুরাজি কোগানে উদাইজিনকে তৈরি করেন এবং ওকিমোনোসুসুকাসা, সোগা নো ওমি হাতায়াসু, কুসে নো ওমি হিতো এবং কি নো ওমি উশির পদে তিনজনকে নিয়োগ করেন। এই শেষ পদটি পরবর্তী ব্যবস্থায় টিকে ছিল না তবে মোটামুটিভাবে দাইনাগনের সাথে মিলে যায়, এর অনুবাদ সাধারণত কাউন্সিলর এবং মহান মন্ত্রীদের ঠিক নীচে এর পদমর্যাদা। সম্ভবত, তিনি শীর্ষস্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে রাজকুমার ওটোমোর পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন, যাকে তখন পর্যন্ত হাতের মুঠোয় রাখা হয়েছিল। ওটোমোর পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব করার জন্য রাজকুমার ওমাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কারণ তেনচির মৃত্যুর পরে আভিজাত্যরা ওটোমোকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম ছিল। কৃতিত্বের জন্য, তেনচি তার ভাইকে হত্যা করতে চায়নি। তিনি মূলত রাজকুমার ফুরুহিতোকে নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি সংস্করণ নিয়ে আসেন। সম্রাট প্রকাশ্যে যুবরাজ ওমাকে উত্তরাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে সিংহাসনে সফল হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই, সম্রাজ্ঞী ইয়ামাতোহিমকে তেন্নো হওয়ার এবং বিষয়গুলির পরিচালনা রাজকুমার ওটোমোর হাতে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে দেশের কোনো নিরিবিলি মন্দিরে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। এটি ৬৭১ সালের ১০ তম মাসের ১৭ তম দিনে ঘটেছিল, যখন সম্রাট ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। একই দিনে, রাজকুমার ওমা মুণ্ডটি নিয়েছিলেন এবং তার প্রাসাদে রাখা সমস্ত অস্ত্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দু'দিন পরে তিনি একই মন্দিরে তথা ইয়োশিনোর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন, যেখানে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং পরবর্তীকালে অনেক রাজকীয় আধা-নির্বাসিত ছিল। তা মঞ্জুর করা হয়। এর পরপরই, পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে একত্রিত করা হয়েছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে তেনচি তেন্নোর উপস্থিতিতে শপথের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। তেনচি তেন্নো ৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২তম মাসের শুরুতে মৃত্যুবরণ করেন। রাজকুমার ওটোমো ধারাবাহিক সম্রাটদের সরকারী নথিপত্রে কোবুন তেন্নো হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি কেবল আধুনিক যুগেই করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' তৎক্ষনাৎ তেম্মু তেন্নোর ধারায় স্থানান্তরিত হয়, যার সময় রাজকুমার ওটোমোকে কখনই সম্রাট হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটি উপরে বর্ণিত গল্পটি একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় বর্ণনা করে। এতে বলা হয়েছে, সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়লে নো ওমি ইয়াসুমারোকে রাজকুমার ওমাকে তার উপস্থিতিতে ডেকে আনার জন্য পাঠানো হয়। ভিতরে ঢোকার সময়, সোগা রাজপুত্রকে তিনি যা বলেছিলেন তা খুব সাবধানে রাখতে বলেছিলেন, যার ফলে রাজপুত্র একটি ষড়যন্ত্র সন্দেহ করেন। সুতরাং, যখন তাকে সিংহাসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন যেমনটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর সুস্পষ্ট তাৎপর্য হলো, তিনি যদি সিংহাসন গ্রহণ করতেন তাহলে সম্ভবত তাকে হত্যা করা হতো। স্বভাবতই এই গল্প সত্যি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে যা ঘটেছিল তার কেবল রাজকুমার ওমার সংস্করণ রয়েছে। গল্পটি ভালো, হয়তো খুব ভালো। সম্ভবত তেনচি সরাসরি যুবরাজ ওমাকে প্রকাশ্যে সিংহাসন ত্যাগ করে একটি মঠে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাই হোক না কেন, তেনচি মরিয়া হয়ে তার ছেলের উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন এই সত্যের মুখে যে অভিজাতরা প্রায় নিশ্চিতভাবে ওমাকে সমর্থন করবে যদি এটি নিয়ে লড়াই হয়। যখন তিনি যোশিনোতে পৌঁছেছিলেন তখন রাজপুত্র তার "টোনারি" বা ব্যক্তিগত পরিচারক / দেহরক্ষীদের একত্রিত করেন এবং তাদের বলেছিলেন যে তিনি ধর্মের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন এবং যে কেউ পদ চান তার কাছে গিয়ে নতুন চাকরি সন্ধান করার স্বাধীনতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অর্ধেক পেছনে আর অর্ধেক থেকে যায়। এরপর সম্রাট মারা যান। এই সময়ে কিউশুতে সবেমাত্র একটি বিশাল চীনা দূতাবাস এসেছিল, এত বড় যে তারা জাপানিদের আশ্বস্ত করার জন্য কয়েকটি জাহাজ পাঠিয়েছিল যে এটি আক্রমণকারী বহর নয়। রাষ্ট্রদূতদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। রাজকুমার ওটোমোর কোনও উল্লেখ ছাড়াই এই সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পুরো গল্পটি রাজকুমার ওমার দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে এবং ওমি আদালতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। রাজকুমার ওটোমো কখন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন বা আদৌ ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। ''নিহন শোকি'' অনুমানের অনুমতি দেয় যে তিনি শাসক হিসাবে তালিকাভুক্ত নন বলে তিনি ছিলেন না। নর যুগের অন্য কোন গ্রন্থে তাঁকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত শাসক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না। টোকুগাওয়া মিতসুকুনি দ্বারা ''দাই নিহন শিতে'' এডো পিরিয়ড পর্যন্ত এটি প্রথম দাবি করা হয়েছিল যে তাকে সিংহাসনে আরোহণ করা হয়েছিল তবে তেম্মু তেন্নোর বৈধতা সমর্থন করার জন্য ''নিহন শোকিতে'' এটি দমন করা হয়েছিল। মরণোত্তর রাজত্বের উপাধি কোবুন তেন্নো মেইজি সম্রাট কর্তৃক রাজকুমার ওটোমোকে ভূষিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি যে ৬ মাস ওৎসু দরবারে শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসে যুবরাজ ওমার একজন অনুচর তাকে বলেন যে তিনি প্রচুর সংখ্যক লোককে জড়ো হতে দেখেছেন যারা তেনচির সমাধিতে কাজ করতে আসার দাবি করেছিল। কিন্তু তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল। অপর এক ব্যক্তি তখন বলেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ এবং চেকপয়েন্টগুলি লক্ষ্য করেছেন। ওমা তদন্ত করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে এটি সত্য ছিল। তারপরে তিনি তার লোকদের বলেছিলেন যে ঝামেলা রোধ করার জন্য তিনি অবসর নিয়েছেন। তবে তারা যদি তাকে যেভাবেই হত্যা করতে চলেছে তবে তিনি লড়াই করতে যাচ্ছেন। তার প্রধান সমস্যা ছিল রাজধানী ছাড়ার আগে তাকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাই মূলত অরক্ষিত ছিল। ৬ষ্ঠ মাসের ২২তম দিনে তিনি তিনজন লোককে মিনো প্রদেশে (ঠিক পূর্বদিকে) যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং গভর্নরকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তিনি তার কাছে যা কিছু বাহিনী ছিল তা একত্রিত করেন এবং পূর্বের অন্যান্য গভর্নরদেরও একই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফুওয়াতে একটি সভা পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছিল। এটি ওমি এবং মিনো প্রদেশের সীমান্তের একটি গিরিপথ যা প্রধান পূর্ব-পশ্চিম রাস্তা দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং ওটসুর উপর আক্রমণ চালানোর জন্য একটি ভাল অবস্থান। এরপর আসে ইয়োশিনোর কাছ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তিনি একজন লোককে আসুকায় পাঠিয়েছিলেন পাস পাওয়ার আশায় যা তাদের পোস্ট ঘোড়া ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তাই তারা ২৪ তারিখ পায়ে হেঁটে পূর্ব দিকে রওনা দিল। আদালত ইয়োশিনোর ওপর হামলার কথা ভাবছে কি না, তা জানার কোনো উপায় আমাদের নেই। তবে ওমা চলে যাওয়ার পর আদালত অবাক হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। বেশ কয়েকদিন তারা সাড়া দেয়নি। এই প্রস্থানটি পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে নোটিশের পুরো এক মাস পরে ছিল এবং বর্ধিত বিপদের কোনও উল্লেখ নেই, সুতরাং এটি অবশ্যই ধরে নেওয়া উচিত যে পূর্ববর্তী মাসটি সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে পরিকল্পনা এবং যোগাযোগ করতে ব্যয় করা হয়েছিল। দলটি শীঘ্রই এমন এক সমর্থকের মুখোমুখি হয়েছিল যার একটি ঘোড়া ছিল, যাতে রাজপুত্র চড়তে পারে। তাঁর স্ত্রী (ভবিষ্যতের জিতো তেন্নো) এবং তাঁর দুই পুত্র, রাজকুমারেস কুসাকাবে এবং ওসাকাবেকে একটি পালকিতে বহন করা হয়েছিল। এই সময়ে রাজপুত্রের সাথে "প্রায়" ২০ জন পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৩ জনের নাম ছিল এবং ১০ জন মহিলা ছিলেন। শীঘ্রই তাদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিল এবং তারা যে রাজকীয় এস্টেটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সবাইকে খাওয়ালেন। আরও কিছুটা এগিয়ে তারা প্রায় ২০ জন অভিজাতদের একটি শিকারী দলের মুখোমুখি হয়েছিল, যাদের ছোট সেনাবাহিনীতে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও একজন "রাজকুমার মিনো"। তিনি সম্ভবত যাত্রাপথের কাছাকাছি থাকতেন, তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরপর তারা ৫০টি মালবাহী ঘোড়ার একটি ট্রেন দেখতে পায় যারা চাল বহন করছে। তারা চাল ফেলে দিয়েছিল এবং তখন তাদের অশ্বারোহী ছিল। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই তারা মশাল বানানোর জন্য একটি বেড়া টেনে ফেলল। অবশেষে তারা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে তারা মধ্যরাতে থামতে পারে। তারা পোস্টিং স্টেশনটি পুড়িয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষকে তাদের অনুসরণ করার জন্য জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। দ্বিতীয় দিনে তারা ৭০০ জনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপরে আরও লোক উপস্থিত হয়েছিল, এত বেশি যে তারা ফিরে যেতে এবং তাদের পেছনের দিক রক্ষা করার জন্য ৫০০ জন লোকের একটি বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। ২৬ তারিখে যুবরাজকে জানানো হয় যে মিনো থেকে ৩,০০০ লোক এসেছে এবং আদেশ অনুসারে ফুয়া রাস্তা অবরোধ করছে এবং আরও অনেক সমর্থক, যাদের অনেকের নাম রয়েছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ জন সমর্থকের নাম আমাদের কাছে রয়েছে। তারা ইসে প্রদেশের কুওয়ানায় ছিল এবং ওমা অনুভব করেন যে তিনি দৌড়ানো বন্ধ করতে পারেন। তিনি তখন সৈন্য সংগ্রহের জন্য চারদিকে দূত পাঠাতে শুরু করলেন। ''নিহন শোকি'' বলছে যে এই মুহুর্তে রাজকুমার ওটোমোর সরকার কী ঘটছে তা জানতে পেরেছিল। খবরটি ওটসুর রাজধানীকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। কিছু অভিজাত যুবরাজ ওমায় যোগদানের আশায় পালিয়ে যায়, অন্যরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকার আশায় পালিয়ে যায়। ওটোমো তার কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। একজন মন্ত্রী তাদের কাছে যে কোনও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তাৎক্ষণিক আক্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ওটোমোর পরিবর্তে একটি যথাযথ সেনাবাহিনী সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব বার্তাবাহকদের প্রেরণ করেন। যেখানে ওমার বার্তাবাহকরা বেশিরভাগ পূর্ব দিকে প্রচারিত হচ্ছিল, ওটোমো তাকে পশ্চিমে প্রেরণ করেন। সুকুশির কমান্ডার এই ভিত্তিতে লোক পাঠাতে অস্বীকার করেন যে তার কাজ ছিল কোরীয় এবং চীনাদের কাছ থেকে কিউশুকে রক্ষা করা। ওটোমো কিবি এবং সুকুশির কমান্ডারদের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা আশা করেছিলেন কারণ তারা ওমার সাথে সংযুক্ত রাজপুত্র ছিলেন এবং তিনি তাঁর দূতদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা যদি রাষ্ট্রদ্রোহের লক্ষণ দেখায় তবে তাদের হত্যা করতে। তারা কিবিতে কমান্ডারকে হত্যা করতে সফল হয়েছিল। কিন্তু সুকুশির লোকটি খুব সুরক্ষিত ছিল এবং তারা চলে গেল। তারা খুব কমই সুকুশির কাছ থেকে কোনও ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত পুরুষদের আনার কথা ভাবতে পারেনি, সুতরাং এটি সম্ভবত এই অঞ্চলগুলিকে রাজকুমার ওমার পক্ষে ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল। প্রায় একই সময়ে একজন কর্মকর্তা, ওটোমো নো ফুকেই এর আগে ওমির আদালত ত্যাগ করেন এবং আসুকা অঞ্চলে তার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার নিজস্ব ব্যক্তিগত বাহিনী এবং নিকটবর্তী আয়া বংশের লোকদের একত্রিত করেন এবং ২৯ শে যুবরাজ ওমার পক্ষে প্রাক্তন আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই অঞ্চলের মিওয়া এবং কামো গোষ্ঠীগুলি যুবরাজ ওটোমোকে সমর্থন করার জন্য ওমিতে সৈন্য প্রেরণ করেছিল। যুবরাজ ওমা তখনতার সদর দফতর কুওয়ানা থেকে সরিয়ে নিলেন। এটি সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে ফুয়াতে ছিল। ২৭ তারিখে পূর্ব দিক থেকে আরও বিশ হাজার লোক তার সাথে যোগ দেয়। রাজকুমার ওমা তার ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজকুমার তাকেচিকে সামগ্রিক সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তার সেনাবাহিনী দুটি প্রধান কলামে বিভক্ত ছিল। অভিজ্ঞ যোদ্ধা কি নো ওমি এমারোর নেতৃত্বে প্রথমটি ছিল ইগা এবং ইসের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং ওটোমো নো ফুকেইয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আসুকার দিকে যাত্রা করা। দ্বিতীয়টি ছিল মুরাকানি নো মুরাজি ওয়োরির কমান্ডে সরাসরি ওটসুকে আক্রমণ করা। তিনি ইয়োশিনোতে রাজকুমার ওমার সাথে ছিলেন এমন একজন টোনেরি। এই বাহিনীকে তাদের পোশাকে লাল ব্যাজ সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা যুদ্ধের ময়দানে একে অপরকে চিনতে পারে। সপ্তম মাসের দ্বিতীয় দিনে ওমির আদালত ফুওয়া পাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণের নির্দেশ দেয়। ''নিহন শোকির'' মতে, এই আক্রমণটি প্রচণ্ড বিভ্রান্তিতে পড়েছিল এবং রাষ্ট্রের অন্যতম মন্ত্রী সোগা নো হাতায়াসু যুবরাজ ইয়ামাবের সাথে নিহত হন। রাজকুমার ওমার সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়েছিল এবং ১৩ তারিখে ইয়াসুকাওয়ায় শেষ হওয়া পরপর তিনটি যুদ্ধ জিতেছিল, যার পরে তারা সেটায় অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ওটসু প্রাসাদের বাইরের প্রতিরক্ষা গঠন করেছিল। সেখানে একটি সেতু সহ একটি স্রোত ছিল, যেখানে আদালতের সেনাবাহিনী তার অবস্থান তৈরি করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে, আদালতের অনুগত বাহিনী ওটোমো নো ফুকেই পরাজিত করে এবং আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চলেছিল। কিন্তু রাজকুমার ওমার কলামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং ফুকেই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, নির্ণায়ক যুদ্ধটি ৭ম মাসের ৬ষ্ঠ দিনে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের স্থানটি একটি সমাধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অনেক পতিত সৈন্য রয়েছে। দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর আদালতের সেনাবাহিনী উত্তর দিকে পিছু হটে। ২২শ দিনে সেতা ব্রিজে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেতু রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী মাঝের অংশের মেঝে বের করে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি তক্তা প্রসারিত করেছিল যাতে সেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। ওমা বাহিনীর একজন সৈনিক দুই সেট বর্ম পরে তক্তা পেরিয়ে দৌড়ে গেল, যেতে যেতে দড়ি কেটে ফেলল। অতঃপর তিনি শত্রুপক্ষের সারীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এটি কে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিলেন। তার সেনাবাহিনী স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনুসরণ করেছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর সেনাবাহিনী ভেঙে পালিয়ে যায়। যিনি এই দায়িত্বে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি যুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিলেন। ৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ''নিহন শোকিতে'' তাঁর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধে নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে তেম্মু তেন্নো সরকারী নোটিশ নেওয়ার জন্য সতর্ক ছিলেন বলে মনে হয়। ওমার বাহিনী পরের দিন সফলভাবে আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং যুবরাজ ওটোমো তার সেনাবাহিনী থেকে আলাদা হয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে কেউ এটি জানত না। সারাদিন লড়াই অব্যাহত ছিল এবং রাজকুমার ওটোমোকে সমর্থনকারী বিশাল শক্তিবৃদ্ধি আসার সাথে সাথে খুব ভারী হয়ে ওঠে। ওমার বাহিনী শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এবং সাদাইজিন ও উদাইজিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ তারিখে রাজকুমার ওটোমোর মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং তার মাথা ওমার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর ঠিক এক মাস পর রাজকুমার ওটোমোর প্রধান সমর্থকদের সাজা ঘোষণা করা হয়। নাইদাইজিন নাকাতোমি নো মুরাজি নো কোগানে সহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, সাদাইজিন এবং উদাইজিন নামে দু'জনকে তাদের সমস্ত পরিবারের সাথে নির্বাসিত করা হয়েছিল, নাকাতোমির পরিবারকেও নির্বাসিত করা হয়েছিল যেমন সোগা নো হাতায়াসু নো ওমি যিনি লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন। বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। একজন কর্মকর্তা যাকে ক্ষমা করা হত তিনি পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং আত্মহত্যা করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে পূর্ববর্তী সমস্ত দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে ছোট বিষয় ছিল। তবে এটি একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ ছিল যা যোশিনো থেকে রাজকুমার ওমার ফ্লাইট এবং তিন সপ্তাহের প্রকৃত ক্ষেত্রের লড়াই থেকে এক মাস স্থায়ী হয়েছিল, এতে কয়েক হাজার লোক জড়িত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এর পেছনে অন্য কোনো বিবেচনার বিষয় জড়িত ছিল কি না, যার জন্য এতগুলো পুরুষকে এত কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। উনিশ শতক এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বাধিক জনপ্রিয় তত্ত্বটি ছিল যে যুবরাজ ওমা তেনচি তেন্নোর অধীনে পরিবর্তনের দ্রুত গতির বিরোধিতার সুযোগ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার অর্থ যুদ্ধটি একটি রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া ছিল। যাইহোক, বাস্তবে তেম্মু তেন্নো তার ভাইয়ের দ্বারা উদ্বোধন করা পরিবর্তনগুলি সমাপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাই যদি তার সমর্থকরা পুরানো উপায়ে ফিরে আসার আশা করে তবে তারা দুঃখজনকভাবে হতাশ হবে। প্রায় ১৯২০-এর দশক থেকে এটি ঠিক বিপরীত তর্ক করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল, যে রাজকুমার ওমা "প্রগতিশীল" পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন, সুতরাং রাজকুমার ওটোমো বা তার পিছনে কর্মকর্তারা অবশ্যই "রক্ষণশীল" দল ছিলেন। তার বিজয়ের মাধ্যমে, তেম্মো তেন্নো মূলত রাজকুমার নাকা নো ও এবং নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা পরিকল্পিত লাইন বরাবর সরকারের পুনর্গঠন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে লেখা রচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গির সারসংক্ষেপ করেন আইনাগা সাবুরো। তিনি ভেবেছিলেন যে রাজকুমার ওমা মূলত নিম্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা সমর্থিত ছিলেন এবং জ্যেষ্ঠ আভিজাত্যরা রাজকুমার ওটোমোর পিছনে ছিলেন। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেরী কোফুন যুগের সমাধিগুলির পরিবর্তিত নিদর্শনগুলির গবেষণায় যা দেখেন তার সাথে এক ধরণের শ্রেণি সংগ্রাম ছিল, সামগ্রিকভাবে আভিজাত্যের মধ্যে আরও অভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকটি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির অভিজাতদের কাছ থেকে শক্তি বিকশিত হয়েছিল। যাইহোক, এই যুক্তিতে ত্রুটি আছে যে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে তেনচির রাজত্বের পরবর্তী বছরগুলিতে তাইকা সংস্কারের নীতিগুলি থেকে কোনও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৬৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সামরিক সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরে, সংস্কারের স্রোত আবার শুরু হয়েছিল এবং সম্রাটের চূড়ান্ত অসুস্থতা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি জাপানে ঐতিহাসিক চিন্তাধারার একটি সম্পূর্ণ নতুন পর্বের সূচনা করেছিল কারণ এটি ইতিহাসবিদদের প্রকাশ্যে মার্কসবাদী হতে মুক্তি দিয়েছিল। এটা বলা ন্যায্য, আমরা মনে করি, মূলত আগে যা ঘটেছিল তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে মার্কসবাদ (একটি হালকা ধরনের) ১৯৫০ থেকে ১৯৬০-এর দশকে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে। এটি স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিকদের বিস্মিত করেছিল (প্রথমবারের মতো) ৬৪৫ সাল থেকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সম্ভবত কোনও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কিনা। কিতায়ামা শিজিও নামে একজন ইতিহাসবিদ প্রস্তাব করেন যে ৬৪৫ সাল থেকে পরিবর্তনগুলি মূলত কেন্দ্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য কাজ করেছিল এবং এর অর্থ হলো করের জোরপূর্বক শ্রম অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। যখন এটি স্থানীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন এটি সম্ভবত এপিসোডিক ছিল, এতে প্রতি বছর কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু ছিল না। তবে জাতীয় সরকার সর্বদা কিছু খুঁজে পেতে পারে। আদালত নিজেই এটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রম করের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছিল। প্রহরী, রক্ষণাবেক্ষণের লোক, প্রাসাদের পরিচারক, বার্তাবাহক এবং কাজের ছেলেরা এবং সমস্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের শ্রমকরের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। এটি ব্যবস্থায় বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভ তৈরি করেছিল বলে তিনি ভেবেছিলেন। তবে সমস্যা হলো, জিনশিন যুদ্ধে কোনো পক্ষই জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উভয় পক্ষের যোদ্ধারা অভিজাত ছিল। তবে, এমন অনেকে আছেন যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এই ব্যবস্থার তীব্রতা নিয়ে যে কোনও জনপ্রিয় ক্ষোভ স্থানীয়ভাবে অনুভূত হত এবং গ্রামীণ আভিজাত্যের কৃষক জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলত। ''নিহন শোকির'' বিবরণ থেকে দৃঢ়ভাবে বোঝা যায় যে ইয়ামাতো প্রদেশের বেশিরভাগ অভিজাত ওমির দরবারকে সমর্থন করেছিল এবং যুবরাজ ওমা পূর্বের প্রাদেশিক আভিজাত্যের কাছ থেকে তার সমর্থন পেয়েছিলেন (এবং পশ্চিম, যদিও কোনও পশ্চিমা সেনা হস্তক্ষেপ করার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল)। এটি সুস্পষ্ট যে রাজকুমার ওমার দুটি কলামের একটির কমান্ডার ছিলেন টোনারি। একে নিম্ন-পদমর্যাদার প্রাদেশিক অভিজাত বলতে হয়। রাজকুমার ওমা বছরের পর বছর ধরে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং এই লোকেরা তার প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল যে তিনি তাদের সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে নারা যুগে উদ্ভূত জটিল ব্যবস্থাটি প্রাদেশিক আভিজাত্যের দ্বারা সমর্থিত না হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। এটি তারা নিজেরা না দেখলে এটি করত না। আপনারা যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিরোধিতার সামগ্রিক অনুপস্থিতি ৬৪৫ পরবর্তী পুরো রূপান্তরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়। উপসংহারটি হলো পুরানো কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণিকে সঙ্কুচিত করা হয়েছিল এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার এবং নিম্ন স্তরের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল যারা নতুন ব্যবস্থার অধীনে জেলা সরকারকে নিয়োগ করেছিল। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে জিনিসগুলি কার্যকর করার জন্য বিশদ জ্ঞান ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাদের জনপ্রিয় অস্থিরতা থেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা ছিল। এটি ছিল মৌলিক চুক্তি যা চীনা সাম্রাজ্যকে বহু শতাব্দী ধরে চালিত রেখেছিল এবং জাপানেও একই জিনিস করার উদ্দেশ্য ছিল। == তেম্মু তেন্নো == ৬৭২ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার ওয়ামা ওমি প্রাসাদ ত্যাগ করে আসুকা অঞ্চলে ফিরে আসেন। তিনি কিয়োমিহারা প্রাসাদ নামে পরিচিত একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন। ৬৭৩ সালের ২য় মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহন করেন। ৬৭৩ সাল তার শাসনকালের প্রথম বছর হিসেবে তার সরকারি নথিপত্রে সর্বদা স্বীকৃত ছিল। পরে যখন কোবুন তেন্নো তালিকায় যুক্ত হয়, তখন সরকারি কালানুক্রমিক তালিকা ৬৭২ সালকে "কোবুন প্রথম বছর" হিসেবে গণ্য করলেও ''নিহোন শোকি'' ধারাবাহিকভাবে ৬৭২ সালকে "তেম্মু প্রথম বছর" হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং এটি মেইজি যুগের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক লেখায় স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে স্থিত হয়েছিল। তেম্মুর শাসনকালে এবং জিতোর ৭ বছর পর্যন্ত সরকার কিয়োমিহারা প্রাসাদেই অবস্থান করেছিল, অর্থাৎ ৬৭৩ থেকে ৬৯৩ পর্যন্ত ২১ বছর। এটি পূর্বের যেকোনো প্রাসাদের তুলনায় বেশি স্থায়ী ছিল এবং স্থায়ী রাজধানী স্থাপনের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। ''মান্যোশু'' সংগ্রহে অনেক কবিতায় এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে যে, যুদ্ধজয়ের ফলে তেম্মু তেন্নোর অভূতপূর্ব ক্ষমতা ছিল যিনি যেকোনো কিছু ঘটাতে পারতেন। এক কবিতায় বলা হয়েছে, "ঈশ্বরের মতো" তিনি একটি পাহাড়কে সমুদ্রে রূপান্তরিত করতে পারেন। ঈশ্বরের ন্যায় ওয়াইশিমাগুনি রাজত্বকারী তেম্মু নিজেও ১২তম বছরের একটি আদেশে নিজেকে "যমাতো নেকো নো মিকোতো" বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওয়াইশিমাগুনি হল জাপানের প্রাচীন নাম। তার শাসনকালের শুরুতে কোন বড় যমাতো পরিবার থেকে আসা অভিজাতরা দরবারে প্রাধান্য পায়নি, এবং নাকাতোমি নো কামাতারির ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোও তখনো প্রভাবশালী ছিল না। সরকারে তিনি নিম্ন পদস্থ লোকদের উপর বেশ নির্ভরশীল ছিলেন, যার মধ্যে টোনেরিরাও ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুরাকুনি নো মুরাজি ওয়ায়রি, যাকে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন না এবং তাঁর সামরিক সফলতার জন্য মুরাজি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত অবসরের সময় বা মৃত্যুর কাছাকাছি উচ্চ পদমর্যাদা পেতেন, কিন্তু কর্মজীবনে তাদের পদমর্যাদা তুলনামূলকভাবে কম থাকত। মুরকুনিকে ১২০টি পরিবার থেকে আয় দেওয়া হয়েছিল। এটি মহান অভিজাতদের মানদণ্ডে খুব বেশি ছিল না। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষমতা ছিল কারণ সম্রাট তাদের পিছনে ছিলেন। তাদের উচ্চ পদ বা ব্যক্তিগত প্রতিপত্তির এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শাসনকালের শুরুতে তিনি সর্বোচ্চ পদ দাজোদাইজিন, সদাইজিন এবং উদাইজিন ফাঁকা রেখেছিলেন। বড় কোন অভিজাতকে উচ্চপদে নিয়োগের প্রথম ঘটনা ছিল ৬৭৫ সালে। তখন তিনি ওতোমো নো মুরাজি নো মিয়ুকিকে রাজকুমার কুরিকুমার অধীনে যুদ্ধমন্ত্রীর উপমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। মোট মিলিয়ে ''নিহোন শোকি''তে তেম্মু তেন্নোর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ৭ জন জোমাতো অভিজাত এবং ৫ জন রাজকুমারের নাম উল্লেখ আছে। ৫ জন রাজকুমারই অভিজাতদের থেকে উচ্চ পদ পেয়েছিলেন। আরও উল্লেখ আছে, তেম্মুর সম্রাজ্ঞী উনো (পরে জিতো তেন্নো) তাঁর শাসনকালে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং বিষয়াদি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া, তেম্মুর দুই পুত্রও যথাক্রমে ৬৮১ সাল থেকে রাজকুমার কুসাকাবে এবং ৬৮৩ সাল থেকে রাজকুমার ওৎসু সরকারে সক্রিয় হয়। কুসাকাবে শেষ পর্যন্ত দাজোদাইজিন হন। স্পষ্ট যে তেম্মুর সরকার ছিল সম্রাটের সরাসরি শাসন, যেটিতে শাসক পরিবারের সদস্যরাই সহযোগিতা করতেন। ৬৭৫ সালে তেম্মু সর্বোচ্চ অভিজাতদের সমস্ত ব্যক্তিগত জমি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন। ৬৬৪ সালে টেনচি এ জমিগুলো বেতন হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন, কিন্তু তখন পরিষ্কার হয়ে গেল যে পুরো দেশ জুড়ে সম্পূর্ণ কর ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে এবং অভিজাতরা কেবলমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করবেন। তিনি আরও আদেশ দেন যে "নিকটবর্তী রাজকুমার, অন্যান্য রাজকুমার, কর্মকর্তা ও মন্দিরগুলো" তাদের হাতে বছরের পর বছর ধরে পাওয়া সব ধরণের জমি — কৃষিজমি বা বনজ — ফেরত দেবে। ৬৮৫ সালে তেম্মু আবার পদমর্যাদা ব্যবস্থা সংস্কার করেন। প্রথমবারের মতো রাজকুমারদের জন্য নতুন পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। এটি পূর্বের ব্যবস্থার বাইরে ছিল। এটি নারা যুগ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুইটি সমান্তরাল পদমর্যাদা ব্যবস্থা চালু ছিল, একটি রাজকুমারদের জন্য এবং অন্যটি সকলের জন্য। এখন সরকারি পদমর্যাদা ব্যবস্থার বাইরে ছিলেন শুধুমাত্র সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবার, অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তানরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কিছু লক্ষণও ছিল। ৬৭৫ সালে একটি ঘটনা ঘটে যখন দুই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাকে "দরবারে উপস্থিত হওয়া থেকে নিষিদ্ধ" করা হয় এবং কয়েকদিন পরে তাদের একজনকে "সমস্ত পদ ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত" করা হয়। একই বছর রাজকুমার ওমি ও তাঁর দুই পুত্রকে গ্রামাঞ্চলে নির্বাসিত করা হয়, এবং পরের বছর দাজাইফুর প্রধান কর্মকর্তা রাজকুমার ইয়াকাকিকেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট বছর জানা না গেলেও, শাসক গোত্র থেকে কয়েকজনকে "মিকাতা" উপাধি ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাদ দেওয়া হয়। ৬৭৫ সালে একটি আদেশে সব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের বছর গভর্নরদের মধ্যে অস্ত্র ধারণের ব্যাপারে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। ৬৭৯ সালে রাজকুমার ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয় যে পরবর্তী বছর একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তারা সশস্ত্র ও সিংহাসনে চড়ে উপস্থিত হবে, এবং এটি বাস্তবে পরিচালিত হয়। ৬৮৪ সালে তেম্মু তেন্নো একটি আদেশে উল্লেখ করেন যে "সামরিক বিষয়গুলো সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।" ৬৪৫ সালের আগে শাসকের হাতে সরাসরি সীমিত সামরিক বাহিনী ছিল। সবসময় কিছু সংখ্যক টোনেরি ছিল, যারা প্রধানত পূর্বাঞ্চল থেকে আসত, এবং কিছু ইউকেইবে ছিল, যারা কিউশু থেকে চাপা কৃষক সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রাজধানীতে পাঠানো হতো এবং প্রধানত গার্ড হিসেবে কাজ করত। এই বিভাগের লোকসংখ্যা কত ছিল তা কেউ নিশ্চিত নয়। অন্যান্য সব কিছু নির্ভর করত যমাতো গ্রামের সামরিক মনোভাবাপন্ন উজি গোত্রের উপর। ধারণা করা হয় টোনেরিদেরকে নতুন রাষ্ট্রের "বাম" ও "ডান" হ্যোয়েফু 兵衛府 প্রহরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এবং ইউকেইবে গার্ডরা ছিলেন এমোনফু 衛門府-তে। বাকী দুটি গার্ড ইউনিট, "বাম" ও "ডান" ইজিফু 衛士府, শ্রম করের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধারণা করা হয় এই দায়িত্বে নিয়োজিত লোকেরা সাধারণ কৃষক ছিলেন না, বরং স্থানীয় ক্ষুদ্র অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মোটামুটি বলতে গেলে, রাজধানীর সরকারি সামরিক বাহিনী ছিল মূলত পুলিশ ও রক্ষী হিসেবে, বাস্তবিক সামরিক বাহিনী নয়। সম্ভবত তেম্মু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে সব কর্মকর্তা সশস্ত্র এবং অন্তঃপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও যেন সশস্ত্র থাকেন যাতে প্রয়োজনে তিনি দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করতে পারেন। প্রদেশগুলোতে সামরিক সংগঠনের তেমন চিত্র ছিল না। ৬৮৫ সালে তেম্মু আদেশ দেন যে ব্যক্তিগত নয়, বরং সংগঠিত সামরিক ইউনিটগুলোর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সামরিক উপকরণ — যেমন শিং, ঢোল, পতাকা থেকে শুরু করে ক্রূড অস্ত্র যেমন "পাথর নিক্ষেপক" এবং বড় আকারের ক্রসবো — কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। এটি জনগণকে নিরস্ত্র করার জন্য নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে এগুলো প্রয়োজনে দ্রুত পাওয়া যাবে এবং ঠিক করা থাকবে। প্রাচীন জাপানের একটি ছোট রহস্য হল কেন ইসের "মহান মন্দির" আমাতেরাসু ওমিকামি, যাকে শাসক গোত্রের পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়, এটি তাঁর পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন পূজার কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এটি এমন স্থানে অবস্থিত যা থেকে ধারণা করা হয় পূজার বিষয়বস্তু হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর, বিশেষ করে যারা সমুদ্রপথে পূর্ব জাপানে যাওয়ার পথে ছিলেন তাদের জন্য। এটি শাসক গোত্রের সাথে বিশেষ কোন সম্পর্কিত স্থান নয়। ধারণা করা হয়েছে মন্দিরটি তুলনামূলকভাবে দেরিতে আমাতেরাসুর সাথে সম্পর্কিত হয়েছিল, যার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হলো তেম্মু তেন্নোর শাসনকাল। ''নিহোন শোকি''তে কেতাই থেকে সুইকো পর্যন্ত সব শাসনের সময় রাজকুমারেসদের ইসে পাঠানো হত সাইগু বা ইটসুকি নো মিয়া হিসেবে, অর্থাৎ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত্রী হিসেবে। তবে এই প্রথা পরবর্তীতে লোপ পেয়ে যায় যতক্ষণ না ৬৭৪ সালে তেম্মু তার শাসনকালে নিজেই প্রথম ইসে যাত্রা করেন। এটি ছিল রাজ পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই যাত্রাটি তেম্মুর শাসনকালের একটি চিহ্নিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এভাবে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তী যুগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেম্মু আরও কৃতিত্ব পেয়েছেন এমন একটি কাজ শুরু করার জন্য যা পরবর্তীতে ''কোজিকি'' এবং ''নিহন শোকি'' রচনার সূচনা করেছিল। তিনি বিভিন্ন অভিজাত বংশের কাছে থাকা উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে জাপানের ইতিহাস রচনার উপকরণ পাওয়া যায়। এটি ''কোজিকি''র ভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে। ৬৮১ সালে তিনি রাজকুমার কাওশিমা নেতৃত্বাধীন শাসক বংশের ছয় সদস্যের একটি কমিটি এবং নাকাতোমি নো মুরাজি নো ওশিমা নেতৃত্বাধীন অন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তার একটি কমিটিকে জাতীয় ইতিহাস সম্পাদনার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এই প্রকল্পটি কখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এটির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তা পরে ''নিহন শোকি''তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই বৃহৎ প্রকল্প থেকে আলাদাভাবে, তিনি তাঁর এক টোনেরি হিয়েদা নো আরেকে সহজ একটি কাজ এককভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এটি একক লেখকের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। হিয়েদা তাঁর কাজ শেষ করার আগে মারা যান, কিন্তু এটি নারা যুগের শুরুর দিকে ও নো আসোন ইয়াসুমারো পুনরায় গ্রহণ করেন এবং ৭১২ সালে ''কোজিকি'' নামে প্রকাশ করেন। উভয় কাজেই অভিজাত বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এটি সম্ভবত ঐ বংশগুলি দ্বারা রক্ষিত কাহিনীগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। ''কোজিকি''তে প্রায় ২০০টি বংশ কাহিনী এবং ''নিহন শোকি''তে প্রায় ১১০টি পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো একত্রিত করার সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তাইকা সংস্কার এবং জিনশিন যুদ্ধের পর থেকে বহু প্রাচীন বংশ মুছে গেছে এবং নতুন অনেক বংশ প্রভাবশালী হয়েছে। এর ফলে প্রাচীন "কাবানে" উপাধিগুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বংশের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রতিপত্তির সাথে আর মিলছিল না। তাই ৬৮৪ সালে তেম্মু কাবানে ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি আটটি উপাধির ব্যবস্থা করেন, যাদের মধ্যে বেশকিছু নতুন সৃষ্টি ছিল। শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এগুলো ছিল—মাহিতো (মাঝে মাঝে মাবিতো লেখা হয়) 真人, আসোমি (প্রায় সবসময় আসোন লেখা হয়) 朝臣, সুকুনে 宿禰, ইমিকি 忌寸, মিচিনোশি 道師, ওমি 臣, মুরাজি 連, এবং ইনাগি 稲置। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি বংশের সম্রাট থেকে বিচ্ছেদের মাত্রা স্পষ্ট করা। যেসব বংশ আগে ওমি উপাধি পেত, তাদের অধিকাংশকে আসোমি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এটি শাসক বংশের শাখা থেকে আগত বংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যেসব বংশ আগে মুরাজি ব্যবহার করত, তাদের বেশির ভাগ সুকুনে উপাধি দেওয়া হয়। মাহিতো বিশেষভাবে শাসক বংশের প্রধান শাখার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত বংশের জন্য সংরক্ষিত ছিল, বিশেষ করে কেটাই তেন্নো বা পরবর্তীকালের শাসকদের বংশ থেকে আগত বংশগুলোর জন্য। ওজিন রাজবংশ থেকে আগত বংশগুলো সবাই আসোমি উপাধিতে আচ্ছাদিত হয়েছিল। ছোট উপাধিগুলো সাধারণত প্রাদেশিক বংশদের জন্য ছিল। তেম্মুর শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। এটি পরবর্তী প্রশাসনিক আইন বিধিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারা যুগে সরকারের মূল ভিত্তি ছিল আটটি মন্ত্রণালয়ের সমষ্টি যাকে দাজোকান বা "বড় দপ্তর" বলা হয়। এদের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তেম্মুর সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মাত্র একটি ছিল অনুপস্থিত, তা হলো নাকাতসুকাসা। এটি শাসকের আবাসিক প্রাসাদের পরিচালনা করত। এটি প্রশাসনিক প্রাসাদ থেকে আলাদা। তেম্মুর দিনে একটি মন্ত্রণালয়ই উভয় কাজ দেখাশোনা করত। নামগুলো সবই ভিন্ন ছিল। তবে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিম্নস্তরের বহু প্রশাসনিক সত্তার নাম এবং সরকারি পদবীও ভিন্ন ছিল। প্রধান পার্থক্য ছিল, শেষমেশ প্রতিষ্ঠিত কোডগুলো চীনা সমসাময়িক প্রথা থেকে নেওয়া নাম ও পদবী বেশি ব্যবহার করত। ৬৮১ সালের দ্বিতীয় মাসে সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী প্রাসাদের প্রধান মিলনকক্ষে গিয়ে সমস্ত রাজপুত্র ও কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। সম্রাট ঘোষণা করেন যে, সরকারের কাঠামো এবং কার্যাবলীর নিয়মাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রশাসনিক নীতিমালা প্রস্তুত করার সময় এসেছে। তিনি স্বীকার করেন এটি একটি বৃহৎ কাজ। এটি শেষ করতে সময় লাগবে এবং সরকারী কাজ ব্যাহত হওয়া উচিত নয়, তাই এই প্রকল্পের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। এটিই পরিচিত "অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরো"র সূচনা। তেম্মু তেন্নোর জীবদ্দশায় সম্ভবত এই কাজ শেষ হয়নি। তবে সরকারের কাঠামো এই প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সামঞ্জস্য করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তেম্মু তেন্নোর ১৭ জন সন্তান ছিল, যাদের নাম জানা গেছে, ৯ জন বিভিন্ন মাতার সন্তান, ১০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। সম্রাজ্ঞী উনোর একমাত্র সন্তান ছিলেন রাজকুমার কুসাকাবে। তিনজন অন্যান্য নারী কিসাকি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, যাঁরা রাজকুমার ওতসু, রাজকুমার নাগা, রাজকুমার ইউগে, এবং রাজকুমার টোনেরির মা ছিলেন, পাশাপাশি একটি কন্যাও ছিলেন। এই চারজন নারীই ছিলেন তেনচি তেন্নোর কন্যা। আরও তিনজন মহিলা ছিলেন, যাঁরা কনকুবাইন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিলেন। দুজন ছিলেন ফুজিওয়ারা নো কামাতারির কন্যা, যাঁরা রাজকুমার নিটাবে এবং এক কন্যার জন্ম দিয়েছেন। তৃতীয় ছিল সোগা নো ওমি নো আকের কন্যা, যিনি রাজকুমার হাটসুমি এবং দুই কন্যার জন্ম দেন। শেষমেশ তিনজন নারী ছিলেন যাদের প্রাসাদে কোন সরকারি পদবী ছিল না। রাজকুমারেস নুকাতা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এক কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন, রাজকুমারেস তোচি, যিনি শিশুকালে মারা যান। এটি আদালতে অনেক শোকের কারণ হয়। দুই প্রাসাদের সহকারী রাজকুমার টাকেচি, রাজকুমার ওসাকাবে এবং রাজকুমার শিকি ও দুই কন্যার জন্ম দেন। রাজকুমার টাকেচি উল্লেখযোগ্য কারণ তিনি জিনশিন যুদ্ধে কমান্ডার ছিলেন। রাজকুমার ওসাকাবে ও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। দুটি সর্বোচ্চ পদমর্যাদার রাজপুত্র ছিলেন নিঃসন্দেহে রাজকুমার কুসাকাবে এবং রাজকুমার ওতসু। ৬৮১ এবং ৬৮৩ সালে যথাক্রমে তারা এমন বয়সে পৌঁছান যেখানে সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। রাজকুমার কুসাকাবের মা ছিলেন সম্রাজ্ঞী, যেখানে রাজকুমার ওতসুর মা জিনশিন যুদ্ধে আগে মারা গিয়েছিলেন। তবে মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ রাজকুমার ওতসুকে বেশি প্রভাবশালী মনে করত। ''নিহন শোকি'' উল্লেখ করে যে, শিশু অবস্থায় তিনি তাঁর চাচা ও দাদা তেনচি তেন্নোর প্রিয় ছিলেন, এবং অন্যান্য প্রাচীন সূত্রে বলা হয়েছে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। রাজকুমার কুসাকাবে সম্পর্কে কোনও তথ্য অবশিষ্ট নেই। তিনি ২৮ বছর বয়সে মারা যান এবং ধারণা করা হয় যে তিনি সবসময় অসুস্থ ছিলেন। এটি সম্ভবত ব্যাখ্যা করে কেন তাঁকে তেম্মুর মৃত্যুর পর শাসক করা হয়নি। তেম্মুর শাসনকাল এমন ছিল যে তিনি সরাসরি শাসন করতেন, তাই এটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী শাসককে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হতে হয়েছিল। মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিল সম্রাজ্ঞী। যদি ধরা হয় যে রাজকুমার কুসাকাবে অনুপযুক্ত ছিলেন, তাহলে তিনি তাঁর শিশুসন্তান রাজকুমার কারুর (যিনি পরবর্তীতে মোম্মু তেন্নো হন) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনাক্রমে কুসাকাবে ৬৮১ সালে "সিংহাসন অধিকারী" করা হয়। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, এর সঙ্গে উত্তরাধিকার নিয়ে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে তাকে সরকারের একটি প্রখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই একই দিনে অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয় সরকারী নিয়মাবলী আনুষ্ঠানিককরণ সম্রাটের অবস্থান দৃঢ় করবে যাতে তিনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন এমনকি যদি তিনি সাধারণ ক্ষমতার ব্যক্তিও হন। ৬৮৩ সালে রাজকুমার ওতসুও সরকারে পদ পায়। যদি ধরা হয় তিনি তাঁর সৎভাই থেকে স্বাস্থ্যবান ও প্রতিভাবান ছিলেন, তাহলে সকল কারণ রয়েছে মনে করার যে তিনি তেম্মুর মৃত্যুর পর সম্রাট হওয়ার সুযোগ পেতেন। ৬৮৫ সালে তেম্মু অসুস্থ হন কিন্তু কিছুদিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ৬৮৬ সালের ৫ম মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন এবং ৭ম মাসে ঘোষণা করেন যে তিনি আর সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকবেন না। এটি সবকিছুই সম্রাজ্ঞী ও রাজকুমার কুসাকাবে দেখবেন। তিনি ৯ম মাসের ৯ তারিখে মারা যান, বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। ''নিহন শোকি'' জানায়, ১১ তারিখে তাঁকে সাময়িকভাবে তাঁর মোগারি নো মিয়ায় সমাহিত করা হয়, এবং ২৪ তারিখে "রাজকুমার ওতসু সিংহাসন অধিকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল"। পরবর্তী ঘটনা জিতো তেন্নো নিবন্ধে বর্ণিত। বলা হয়েছে, রাজকুমার ওতসুর বিশ্বাসঘাতকতা ১০ম মাসের ২ তারিখে প্রকাশ পায় এবং তিনি প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরের দিন তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তাঁর স্ত্রীও মারা যান। তবে স্পষ্ট নয় তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যা করেন। পরের দিন "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে দুই জন ছাড়া সবাই ক্ষমা পায়। ওই দুইজন নির্বাসিত হন। এর কয়েকদিন পরে সম্ভবত চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর রাজকুমার ওতসুর বোন রাজকুমারী এস ওকু রাজধানীতে ফিরে আসেন যিনি কয়েক বছর ইসেতে পুরোহিত ছিলেন। ''মানইশু''র একটি কবিতা প্রকাশ করে যে, রাজকুমার ওতসু গোপনে ইসেতে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন তেম্মুর মৃত্যুর সময়ের আশেপাশে। সম্ভবত এই ঘটনাটিই ''নিহন শোকি''র জন্য তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের কারণ। একজন রাজপুত্র রাজধানী ত্যাগ করে পূর্বদিকে যাওয়া এবং উত্তরাধিকার অস্থিতিশীল থাকা অবস্থায় যাত্রা করা বিদ্রোহী উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরা লক্ষ্য করেছেন যে, "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে কয়েকজন পরবর্তীকালে জিতোর আদালতে কর্মজীবন চালিয়েছেন। একজন প্রথম সম্পূর্ণ রিৎসুরো নীতিমালা তৈরির কমিটিতেও ছিলেন। এটা ইঙ্গিত দেয় যে রাজকুমার ওতসুকে অপরাধী বানানোর কূটনীতি করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' স্পষ্ট করে যে সম্রাজ্ঞী শাসনে ছিলেন। তবে কিছু সময়ের জন্য উত্তরাধিকার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করা হয়নি। মৃত সম্রাটকে শোক জানানো ও তাঁর সমাধি প্রস্তুতির সব সরকারি কার্যক্রমে সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ ছিল "সিংহাসন অধিকারী"। ৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১তম মাসে তেম্মুর দাফনের মধ্য দিয়ে এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। অবশ্যই ঐ সময়ে সম্রাটের বিধবা মোগারি নো মিয়ায় বসবাস করতেন এবং গভীর শোক পালন করতেন। এরপর ৬৮৯ সালের ৪ম মাসে যুবরাজ কুসাকাবে মারা যান। তাই ধারণা করা যায়, শোক পালন শেষ হলে রাজ্যাভিষেক করার পরিকল্পনা ছিল। তাঁর পুত্র যুবরাজ কারুর বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর এবং তাই সম্রাজ্ঞীর আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি জিতো তেন্নো নামে পরিচিত। এটি ৬৯০ সালের শুরুতে ঘটেছিল। এই সময়কালে ৬৮৯ সালের ৬ষ্ঠ মাসে অসুকা কিয়োমিহারা রিও ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয় এবং সরকারী দপ্তরগুলোতে বিতরণ করা হয়। এই ঘটনাকেই অসুকা যুগের সমাপ্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ৬৮৯ সালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, কামাতারির বড় ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোর প্রথমবারের মতো সরকারি পদে নিয়োগ। hgdahlrbb1kkzsuyoq16c6rb1pgpxya জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/তাইশো যুগ 0 26671 84917 82771 2025-06-19T07:29:11Z Asikur.rahman25 11164 84917 wikitext text/x-wiki তাইশো যুগ (তাইশো জিদাই?, "মহান ন্যায়পরায়ণতার যুগ") বা তাইশো যুগকাল হল জাপানের ইতিহাসের একটি সময়কাল, যা ৩০ জুলাই, ১৯১২ থেকে ২৫ ডিসেম্বর, ১৯২৬ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি তাইশো সম্রাটের শাসনামলের সাথে মিলে যায়। নতুন সম্রাট শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। এই কারণে রাজনীতিতে পুরনো অভিজাত প্রবীণ রাষ্ট্রনায়কদের (জেনরো) হাত থেকে ক্ষমতা সরে এসে জাপানের জাতীয় সংসদ (ডায়েট) ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে পৌঁছায়। তাই, এই সময়টিকে জাপানে "তাইশো গণতন্ত্র" নামে পরিচিত একটি উদারপন্থী আন্দোলনের যুগ হিসেবে ধরা হয়। এই যুগটিকে সাধারণত তার আগের বিশৃঙ্খল মেইজি যুগ এবং পরবর্তী সামরিকতন্ত্রে চালিত শোয়া যুগের প্রথম দিক থেকে পৃথক বিবেচনা করা হয়। ==মেইজি যুগের উত্তরাধিকার== ৩০ জুলাই, ১৯১২ সালে মেইজি সম্রাট মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর যুবরাজ ইয়োশিহিতো জাপানের নতুন সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন, যার মাধ্যমে শুরু হয় তাইশো যুগ। মেইজি যুগের শেষ দিকে সরকার দেশীয় এবং বিদেশি ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা কর্মসূচি হাতে নেয়। এতে সরকারি ঋণের সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং ঋণ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষিত ছিল না। মেইজি যুগে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব দেখা গিয়েছিল, তা এই যুগেও অব্যাহত ছিল। কোবায়াশি কিওচিকা পাশ্চাত্য চিত্রকলার ধারা গ্রহণ করেন, যদিও তিনি উকিও-এ শৈলীতেও কাজ চালিয়ে যান। ওকাকুরা কাকুজো ঐতিহ্যবাহী জাপানি চিত্রকলায় আগ্রহ ধরে রাখেন। মোরি ওগাই ও নাতসুমে সোসেকি পাশ্চাত্যে অধ্যয়ন করেন এবং মানুষের জীবন সম্পর্কে আরও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন। ১৮৬৮ সালের মেইজি পুনরুদ্ধার থেকে উদ্ভূত ঘটনাগুলো শুধু দেশীয় ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণই করেনি যার মাধ্যমে জাপান অন্যান্য এশীয় দেশের মতো উপনিবেশে পরিণত হয়নি বরং এই সময়টিতে একটি নতুন বৌদ্ধিক আলোড়নও দেখা দেয়। তখন গোটা বিশ্বেই সমাজতন্ত্র নিয়ে আগ্রহ ছিল এবং শহুরে শ্রমিক শ্রেণি গঠিত হচ্ছিল। সার্বজনীন পুরুষ ভোটাধিকার, সমাজকল্যাণ, শ্রমিক অধিকার এবং অহিংস প্রতিবাদ ছিল সেই প্রাথমিক বামপন্থী আন্দোলনের মূল আদর্শ। তবে, সরকার বামপন্থী কর্মকাণ্ড দমন করায় আরও চরমপন্থী পদক্ষেপ দেখা দেয় এবং এই দমন আরও বাড়ে। এর ফলে ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায় জাপান সমাজতান্ত্রিক পার্টি (নিপ্পন শাকাইতো) ভেঙে যায় এবং সমগ্র সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাইশো যুগের শুরুতেই ১৯১২–১৩ সালে ঘটে তাইশো রাজনৈতিক সংকট, যা পূর্বের আপসহীন রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত করে। যখন সাইওনজি কিনমোচি সামরিক বাজেট কমানোর চেষ্টা করেন, তখন সেনা মন্ত্রী পদত্যাগ করেন এবং এর ফলে রিক্কেন সেইউকাই সরকার ভেঙে পড়ে। ইয়ামাগাতা আরিতোমো এবং সাইওনজি দুজনেই নতুন করে দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং জেনরো গোষ্ঠীও কোনও সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়। মন্ত্রিসভাকে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরিচালনার ঘটনায় জনরোষ দেখা দেয় এবং কাতসুরা তারোর তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্তে আরও বেশি প্রতিবাদ উঠে আসে। ফলে জেনরো রাজনীতির অবসানের দাবিও জোরালো হয়। পুরনো অভিজাতদের বিরোধিতা সত্ত্বেও, রক্ষণশীল গোষ্ঠী ১৯১৩ সালে নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠন করে, যার নাম ছিল রিক্কেন দোশিকাই। এই দলটি ১৯১৪ সালের শেষ দিকে সেইউকাই দলের তুলনায় পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৩ সালে ইয়ামামোতো গননোহিওয়ে কাতসুরার স্থলাভিষিক্ত হন। এরপর ১৯১৪ সালের এপ্রিল মাসে ওকুমা শিগেনোবু ইয়ামামোতোর স্থলাভিষিক্ত হন। ==প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও চীনে আধিপত্য== বার্লিন যখন ইউরোপীয় যুদ্ধ (যা পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত হয়) নিয়ে ব্যস্ত, সেই সুযোগে চীনে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে জাপান ২৩ আগস্ট, ১৯১৪ সালে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর তারা দ্রুত চীনের শানডং প্রদেশে জার্মানির লিজকৃত এলাকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা, ক্যারোলাইন ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয়। ৭ নভেম্বর, জার্মান গোলাবারুদের ঘাটতির কারণে ঘিরে রাখা কিংতাও শহর জাপানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। যেহেতু পাশ্চাত্যের মিত্ররা ইউরোপে যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তাই জাপান জানুয়ারি ১৯১৫-এ চীনের কাছে বিখ্যাত একুশ দফা দাবি পেশ করে। এতে জার্মানির দখলকৃত অঞ্চল, মানচুরিয়া এবং অন্তর্দেশীয় মঙ্গোলিয়ায় আরও প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি, চীনের একটি বড় খনি ও ধাতব শিল্প কমপ্লেক্সের যৌথ মালিকানা, তৃতীয় কোনও শক্তির কাছে উপকূলীয় এলাকা লিজ বা হস্তান্তর বন্ধ, এবং নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হয়। এই সব দাবি পূরণ হলে চীন কার্যত জাপানের অধীনস্থ রাষ্ট্রে পরিণত হত। তবে, চীনা সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার ধীরগতি, চীনে ব্যাপক বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে জাপান শেষ পর্যায়ের দাবি তুলে নেয় এবং ১৯১৫ সালের মে মাসে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চীনের উত্তরাঞ্চলসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে জাপানের আধিপত্য আরও মজবুত হয় আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে। ১৯১৬ সালে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি মানচুরিয়া ও অন্তর্মঙ্গোলিয়ায় জাপানের প্রভাব আরও জোরদার করে। ১৯১৭ সালে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের চীন ও প্রশান্ত মহাসাগরের দখলকৃত অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯১৭ ও ১৯১৮ সালের মধ্যে নিশিহারা ঋণ (বেইজিংয়ে নিযুক্ত নিশিহারা কামেজোর নামে নামকরণ) চীন সরকারকে সহায়তা করলেও, এতে চীন আরও বেশি জাপানের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যুদ্ধের শেষ দিকে জাপান ইউরোপীয় মিত্রদের জন্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখে। এতে জাপানের শিল্প খাত বহুমুখীকরণ লাভ করে, রপ্তানি বাড়ে এবং জাপান প্রথমবারের মতো ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা দেশে রূপান্তরিত হয়। রাশিয়ায় রাজতান্ত্রিক শাসনের পতন ও ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব পরবর্তী সাইবেরিয়ার বিশৃঙ্খলার ফলে এশিয়ায় জাপানের শক্তি আরও বেড়ে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়ে জাপান সেনাবাহিনী সাইবেরিয়া দখলের পরিকল্পনা করে, যার পরিসীমা লেক বাইকাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ জন্য জাপানকে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হয়, যাতে চীনা ভূখণ্ড দিয়ে জাপানি সেনাদের যাতায়াত সম্ভব হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে বিরক্ত না করতে সেনা প্রেরণ সীমিত করা হয়, তবুও ৭০,০০০-এর বেশি জাপানি সেনা ১৯১৮ সালে মিত্র বাহিনীর সাইবেরিয়া অভিযানে যোগ দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্র শক্তির অংশ হিসেবে জাপান এশিয়ায় প্রভাব ও প্রশান্ত মহাসাগরের ভূখণ্ড দখলে বড় সুযোগ পায়। প্রায় সম্পূর্ণভাবে অসামরিক সরকারের বাইরে থেকে সম্রাটীয় জাপানি নৌবাহিনী জার্মানির মাইক্রোনেশীয় উপনিবেশগুলো দখল করে। ৯ অক্টোবর, ১৯১৬ সালে তেরাউচি মাসাতাকে ওকুমা শিগেনোবুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। ২ নভেম্বর, ১৯১৭ সালে ল্যানসিং-ইশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে চীনে জাপানের স্বার্থ স্বীকার করে এবং "উন্মুক্ত দরজা নীতি" বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ১৯১৮ সালের জুলাইয়ে সাইবেরিয়া অভিযান শুরু হয়, যেখানে ৭৫,০০০ জাপানি সেনা পাঠানো হয়। ১৯১৮ সালের আগস্টে জাপানের শহর ও গ্রামগুলোতে চাল দাঙ্গা শুরু হয়। ==প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান: তাইশো গণতন্ত্র== যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান এক অভূতপূর্ব সমৃদ্ধির মুখ দেখে। ১৯১৯ সালে ভার্সাই শান্তি সম্মেলনে জাপান এক সামরিক ও শিল্পশক্তি হিসেবে অংশগ্রহণ করে এবং নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার "বিগ ফাইভ" বা পাঁচ প্রধান শক্তির অন্যতম হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। টোকিও জাতিসংঘের পরিষদে একটি স্থায়ী আসন পায় এবং শান্তিচুক্তিতে জার্মানির শানডংয়ে থাকা অধিকার জাপানের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর ফলে চীনে ব্যাপকভাবে জাপানবিরোধী দাঙ্গা ও রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়। একইভাবে, প্রশান্ত মহাসাগরের জার্মান নিয়ন্ত্রিত দ্বীপগুলোও জাপানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। জাপান রুশ গৃহযুদ্ধের পরে মিত্র শক্তির হস্তক্ষেপে অংশ নেয় এবং ১৯২৫ সাল পর্যন্ত সেখানে থেকে যায়। যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল এবং শান্তিচুক্তিতে জাতিগত সমতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়, তবুও যুদ্ধ শেষে জাপান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি প্রধান শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উনিশ শতকের শুরু থেকেই গঠিত হয়ে আসা দুই-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ণতা লাভ করে। এই সময়কেই বলা হয় "তাইশো গণতন্ত্র"। ১৯১৮ সালে হারা তাকাশি, যিনি সাইওনজির ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং সেইউকাই দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, জাপানের প্রথম সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি তার পূর্বের সরকারি যোগাযোগ, জীবিত জেনরোদের সমর্থন এবং পিয়ার্স পরিষদের সহায়তায় সরকার গঠন করেন। তার মন্ত্রিসভায় সেনামন্ত্রী হন তানাকা গিইচি, যিনি পূর্বতনদের তুলনায় বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝতেন। তবে হারাকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মুদ্রাস্ফীতি, যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনীতির পুনর্বিন্যাস, বিদেশি চিন্তার আগমন এবং শ্রমিক আন্দোলনের উত্থান তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। তিনি পূর্বতন পন্থায় সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন এবং সরকারে কাঠামোগত সংস্কার খুব একটা করেননি। নির্বাচনী আইন পরিবর্তন ও নতুন এলাকা বিভাজনের মাধ্যমে সেইউকাই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন এবং সরকার-নিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেন। তবে জনগণ ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ে। ঋণের বোঝা ও নির্বাচনী আইনের কারণে অসন্তোষ দেখা দেয়। ভোটারদের জন্য পুরনো করযোগ্যতা বাধা রাখা হয়েছিল। সার্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি ওঠে এবং পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার আহ্বান জানানো হয়। ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত গণতন্ত্রবাদী, সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট ও নিঅরাজ্যবাদীরা ১৯১৯ ও ১৯২০ সালে বিশাল কিন্তু শান্তিপূর্ণ মিছিল করে সার্বজনীন পুরুষ ভোটাধিকারের দাবি তোলে। নতুন নির্বাচনে সেইউকাই আবারও জয়লাভ করে, যদিও এবার তাদের জয় ছিল খুবই সামান্য ব্যবধানে। এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেই ১৯২১ সালে এক অসন্তুষ্ট রেলকর্মী হারাকে হত্যা করে। এরপর কয়েকজন অদলীয় প্রধানমন্ত্রী ও জোট সরকার আসে। বৃহত্তর ভোটারদের অংশগ্রহণ, বামপন্থীদের উত্থান এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে সমাজে যে পরিবর্তন আসছিল, তাতে ভয় পেয়ে সরকার ১৯২৫ সালে "শান্তি সংরক্ষণ আইন" পাশ করে। এই আইনে রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলুপ্তির যে কোনো চিন্তাকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সংসদের ভাঙন ও জোট সরকারের অস্থিরতা থেকে বের হতে কেন্সেইকাই ও সেইউ হন্তো মিলে ১৯২৭ সালে রিক্কেন মিনসেইতো দল গঠন করে। এই দল সংসদীয় ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও বিশ্ব শান্তির পক্ষে ছিল। এরপর থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত সেইউকাই ও রিক্কেন মিনসেইতো পালাক্রমে ক্ষমতায় ছিল। তবে রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও স্থিতিশীল সরকারের প্রত্যাশা সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক সংকট সব দলকেই সমস্যায় ফেলে। খরচ কমানোর পরিকল্পনা ও জনগণের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য সরকার নানা প্রচেষ্টা চালায়। জনগণকে সম্রাট ও রাষ্ট্রের জন্য আত্মত্যাগের নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। যদিও ১৯২০-এর দশকের শেষভাগ ও ১৯৩০-এর দশকের শুরুর বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব জাপানে খুব একটা পড়েনি বরং জাপানি রপ্তানি এ সময়ে বেড়েছিল তারপরও জনগণের মধ্যে এক অসন্তোষ তৈরি হয়। ১৯৩০ সালে প্রধানমন্ত্রী হামাগুচি ওসাচির ওপর হামলা সেই অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে তোলে। হামাগুচি বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন এবং পরের বছর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর বেশি দিন বাঁচেননি। ==কমিউনিজম এবং এর প্রতিক্রিয়া== ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিকদের বিজয়ের পর তারা বিশ্বব্যাপী বিপ্লবের আশা করে "কমিনটার্ন" প্রতিষ্ঠা করে। পূর্ব এশিয়ায় বিপ্লব ঘটাতে জাপানের গুরুত্ব তারা অনুধাবন করে এবং ১৯২২ সালের জুলাইয়ে জাপানে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করে। ১৯২৩ সালে এই পার্টির ঘোষিত লক্ষ্য ছিল সামন্ততন্ত্রের অবসান, রাজতন্ত্র বিলুপ্তি, সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বীকৃতি এবং সাইবেরিয়া, সাখালিন, চীন, কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে জাপানি সেনা প্রত্যাহার। এই ঘোষণার পর সরকার দলটির ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালায়। প্রতিক্রিয়ায় কিছু উগ্রপন্থী যুবরাজ হিরোহিতোর ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। ১৯২৫ সালের "শান্তি সংরক্ষণ আইন" মূলত এই "বিপজ্জনক চিন্তা" রুখতেই করা হয়। ১৯২৫ সালে সাধারণ নির্বাচন আইনের মাধ্যমে ভোটের সুযোগ সম্প্রসারিত হলেও জাপান কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। ১৯২৮ সালের নতুন "শান্তি সংরক্ষণ আইন" আরও কঠোরভাবে কমিউনিস্টদের দমন করে। যেসব দল তারা প্রভাবিত করেছিল, সেগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হয়। পুলিশ তখন সর্বত্র নজরদারি চালাত এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। ১৯২৬ সালের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টিকে গোপনে চলতে বাধ্য করা হয়, ১৯২৯ সালের মাঝামাঝি পার্টির নেতৃত্ব ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং ১৯৩৩ সালের মধ্যে দলটি কার্যত ভেঙে পড়ে। প্যান-এশিয়ানবাদ ছিল ডানপন্থী রাজনীতি ও রক্ষণশীল সামরিক চেতনার একটি বৈশিষ্ট্য, যা মেইজি পুনর্গঠনের শুরু থেকেই ছিল। ১৮৭০-এর দশকে যুদ্ধপ্রবণ রাজনীতিতে এর বড় অবদান ছিল। কিছু অসন্তুষ্ট সাবেক সামুরাই ১৮৮১ সালে গঠিত গেনইওশা ও ১৯০১ সালে গঠিত কোকুরিউকাই (কালো ড্রাগন সংঘ) নামে গোয়েন্দা ও প্যান-এশিয়ান সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এই সংগঠনগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয় হয়, যুদ্ধপন্থা উসকে দেয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত প্যান-এশিয়ান মতবাদকে সমর্থন করে চলে। == বিশ্বযুদ্ধের পর তাইশো পররাষ্ট্রনীতি== চীনের জাতীয়তাবাদের উত্থান, রাশিয়ায় কমিউনিস্টদের বিজয় এবং পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই তিনটি বিষয়ই যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের পররাষ্ট্রনীতির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাইবেরিয়ায় চার বছরব্যাপী অভিযান এবং চীনে সক্রিয়তা, তার সঙ্গে দেশীয়ভাবে ব্যাপক ব্যয়বহুল কর্মসূচির কারণে জাপান যুদ্ধকালীন আয়ের প্রায় সবটুকুই হারায়। তাই, এশিয়ায় আধিপত্য অর্জনের জন্য জাপানকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক কৌশল, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নের পথেই এগোতে হয়। এই লক্ষ্য অর্জনে জাইবাতসুদের বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদিকে, উন্নয়নের জন্য জাপান যেসব পণ্য ও ঋণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশবাদ-বিরোধী নীতিই জাপানের জন্য বড় বাধা হয়ে ওঠে। সামরিক কূটনীতিতে আন্তর্জাতিক মোড় বদলের সূচনা হয় ১৯২১–২২ সালের ওয়াশিংটন সম্মেলনে। এই সম্মেলনে একাধিক চুক্তির মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি নতুন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা গঠিত হয়। জাপানের অর্থনৈতিক দুরবস্থা নৌবাহিনী সম্প্রসারণকে অসম্ভব করে তোলে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক প্রতিযোগিতার বদলে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার পথ বেছে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। জাপান চীনের গৃহযুদ্ধে নিরপেক্ষ মনোভাব গ্রহণ করে, চীনে নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে মিলে চীনের আত্মউন্নয়নকে উৎসাহিত করে। ১৯২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত "চার জাতির দ্বীপপুঞ্জ চুক্তি" তে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স প্রশান্ত মহাসাগরে বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বীকৃতি দেয়। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান ও ব্রিটেন তাদের পুরনো মৈত্রী চুক্তির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তিও ঘটায়। ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত "পাঁচ জাতির নৌ নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি"-তে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, ফ্রান্স ও ইতালির জন্য যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় (অনুপাতে ৫ : ৫ : ৩ : ১.৭৫ : ১.৭৫)। পাশাপাশি, বিদ্যমান যুদ্ধজাহাজ এবং নির্মাণাধীন জাহাজগুলোর আকার ও অস্ত্রসজ্জাও সীমিত করা হয়। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন সম্মত হয় যে, তারা সিঙ্গাপুর থেকে হাওয়াই পর্যন্ত কোনো নতুন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করবে না। এতে জাপানের নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরে তুলনামূলক স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। একই দিনে স্বাক্ষরিত "নয় জাতির চুক্তি" তে বেলজিয়াম, চীন, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালসহ মূল পাঁচ দেশ অংশ নেয়। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল প্রশান্ত মহাসাগরে যুদ্ধ প্রতিরোধ করা। এতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো চীনের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা স্বীকার করে, চীনে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। চীনে বিশেষ অধিকার দাবি না করাসহ অন্য জাতিগুলোর অবস্থান হুমকির মুখে না ফেলার অঙ্গীকার করা হয়। সব দেশের জন্য চীনে সমান বাণিজ্য ও শিল্পের সুযোগ সৃষ্টির নীতিও এতে উল্লেখ করা হয়। এই চুক্তির আওতায় জাপান শানডং থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে এবং সেখানে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অধিকার রেখে অন্যসব দাবি ত্যাগে সম্মত হয়। এছাড়াও, জাপান সাইবেরিয়া থেকেও সৈন্য প্রত্যাহার করে। ==তাইশো গণতন্ত্রের অবসান== মোটের ওপর, ১৯২০-এর দশকে জাপান একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে এই সংসদীয় শাসনব্যবস্থা টিকে থাকতে পারেনি। এই সময়ে সামরিক নেতাদের প্রভাব ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। এমন পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয় মেইজি সংবিধানের অস্পষ্টতা ও দুর্বলতার কারণে, বিশেষ করে সম্রাটের অবস্থান নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায়। এই গণতন্ত্রের সময় শেষ হওয়ার পর, জাপানের শাসনব্যবস্থা কার্যত সামরিক একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়। ==সময়কাল== *১৯১২: তাইশো সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন (৩০ জুলাই)। জেনারেল কাতসুরা তারো তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন (২১ ডিসেম্বর)। *১৯১৩: কাতসুরা পদত্যাগে বাধ্য হন এবং অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতো গোনোহিও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন (২০ ফেব্রুয়ারি)। *১৯১৪: ওকুমা শিগেনোবু দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন (১৬ এপ্রিল)। জাপান জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ও মিত্রদের পক্ষ নেয় (২৩ আগস্ট)। *১৯১৫: জাপান চীনকে একুশ দফা দাবি পাঠায় (১৮ জানুয়ারি)। *১৯১৬: তেরাউচি মাসাতাকে প্রধানমন্ত্রী হন (৯ অক্টোবর)। *১৯১৭: ল্যানসিং-ইশি চুক্তি কার্যকর হয় (২ নভেম্বর)। *১৯১৮: সাইবেরিয়া অভিযান শুরু হয় (জুলাই)। হারা তাকাশি প্রধানমন্ত্রী হন (২৯ সেপ্টেম্বর)। *১৯১৯: কোরিয়ায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ১ মার্চ আন্দোলন শুরু হয় (১ মার্চ)। *১৯২০: জাপান জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। *১৯২১: হারা আততায়ীর হাতে নিহত হন এবং তাকাহাশি কোরেকিও প্রধানমন্ত্রী হন (৪ নভেম্বর)। হিরোহিতো রিজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন (২৯ নভেম্বর)। চার জাতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (১৩ ডিসেম্বর)। *১৯২২: পাঁচ জাতির নৌ নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (৬ ফেব্রুয়ারি)। অ্যাডমিরাল কাতো তোমোসাবুরো প্রধানমন্ত্রী হন (১২ জুন)। জাপান সাইবেরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে (২৮ আগস্ট)। *১৯২৩: গ্রেট কান্তো ভূমিকম্পে টোকিও ধ্বংস হয় (১ সেপ্টেম্বর)। ইয়ামামোতো দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন (২ সেপ্টেম্বর)। *১৯২৪: কিয়োরা কেইগো প্রধানমন্ত্রী হন (৭ জানুয়ারি)। রাজপুত্র হিরোহিতো (ভবিষ্যতের সম্রাট শোওয়া) কুনি পরিবারের নাগাকো নিয়ো-র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন (২৬ জানুয়ারি)। কাতো তাকাআকি প্রধানমন্ত্রী হন (১১ জুন)। *১৯২৫: সাধারণ নির্বাচন আইন পাস হয়, ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব পুরুষ ভোটাধিকার লাভ করেন (৫ মে)। এছাড়া, শান্তি সংরক্ষণ আইনও পাস হয়। রাজকুমারী শিগেকো, হিরোহিতোর প্রথম কন্যা, জন্মগ্রহণ করেন (৯ ডিসেম্বর)। *১৯২৬: সম্রাট তাইশোর মৃত্যু হয়; হিরোহিতো সম্রাট হন (২৫ ডিসেম্বর)। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} n3h18pxn1m3kmi1nuume41p48dq2sej জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান 0 26675 84896 82781 2025-06-19T06:31:50Z Asikur.rahman25 11164 /* পেশা-পরবর্তী সংস্কৃতি */ 84896 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে ১৯৫২ সালে মিত্রশক্তির দখল শেষ হওয়ার পরের সময়কালটি তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে, জাপান আবারও বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি এটি একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবেও গড়ে ওঠে। ==দখল পরবর্তী রাজনীতি== সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির শর্ত কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল মিত্রশক্তির দখলের অবসান ঘটে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সব এলাকা জাপানের দখলে ছিল, তার অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সাখালিন। এছাড়াও, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপের উপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়, যেগুলো আগে জাতিপুঞ্জের অধীনে জাপান পরিচালনা করত। নতুন এই চুক্তি জাপানকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও দেয়। একই দিনে, জাপান সান ফ্রান্সিসকো চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এতে শিগেরু ইয়োশিদা ও হ্যারি ট্রুম্যান এমন একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে জাপানে ঘাঁটি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। জাপান পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আগেই, সরকার প্রায় ৮০,০০০ ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করে। এদের অনেকেই পূর্বের রাজনৈতিক বা সরকারি পদে ফিরে যান। এরপর সামরিক ব্যয় সীমিতকরণ এবং সম্রাটের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে অক্টোবর ১৯৫২ সালের প্রথম দখল-পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যায় বড় ধরনের পতন ঘটে। কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনের পর, ১৯৫৪ সালে একটি বেসামরিক পরিচালকের অধীনে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। এই সময়ে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা এবং কাছাকাছি কোরিয়ায় চলমান গরম যুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সাম্যবাদ দমন এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নিরুৎসাহিত করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দলগুলোর বারবার বিভাজন ও একের পর এক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের কারণে রক্ষণশীল শক্তিগুলো একত্রিত হয়। তারা লিবারেল পার্টি (জিয়ুতো) এবং জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি (নিপ্পন মিনশুতো) — যা পূর্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে গঠিত হয়েছিল — একত্র করে ১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জিয়ু-মিনশুতো; এলডিপি) গঠন করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই দলই ক্ষমতায় ছিল। এরপর একটি নতুন সংখ্যালঘু সরকার তাদের প্রতিস্থাপন করে। এলডিপির নেতৃত্বে ছিলেন সেইসব অভিজাত ব্যক্তি যারা জাপানকে পরাজয় ও দখলকাল অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলেন। এই দলে যোগ দেন সাবেক আমলারা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়পাস ব্যক্তিরা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জাপান সোশালিস্ট পার্টি গঠন করে। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে কোমেইতো (স্বচ্ছ সরকার পার্টি), যা ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়। এটি ছিল সোকা গাক্কাই (মানবিক মূল্য সৃষ্টির সমাজ) নামক বৌদ্ধ মতাদর্শভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা। কোমেইতো জাপানি ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় এবং শহুরে শ্রমিক, গ্রাম থেকে আসা বাসিন্দা ও বহু নারীকে আকর্ষণ করে। জাপান সোশালিস্ট পার্টির মতো, কোমেইতো-ও ধাপে ধাপে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন ও বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে কোমেইতো ও ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চুক্তি মেনে নেয়। এমনকি ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি একটি সীমিত পরিসরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পক্ষেও সমর্থন জানায়। জাপান সোশালিস্ট পার্টিকেও তাদের পূর্বের কঠোর সামরিকবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর চাপ অব্যাহত রাখে, যাতে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GNP) ১ শতাংশের বেশি করে। এই নিয়ে ডায়েটে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধিতা মূলত সংখ্যালঘু দল বা জনগণ থেকে নয়, বরং অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সচেতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আসে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েইকে ১৯৭৪ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে লকহিড ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার করে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে এলডিপির বিভক্ত রাজনীতি ডায়েটে ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৮০ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির হঠাৎ মৃত্যুতে দলের প্রতি সহানুভূতি ভোট দেখা যায়। এর ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুজুকি জেনকো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি এক পাঠ্যবই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতে, বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা এবং গুরুতর আর্থিক সমস্যার কারণে সুজুকির মন্ত্রিসভা, যা এলডিপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ছিল, পতনের মুখে পড়ে। ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে নাকাসোনে ইয়াসুহিরো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক ছিলেন এবং তানাকা ও সুজুকি গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে প্রতিরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে নাকাসোনেকে আবারও এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা জনমত জরিপে অস্বাভাবিকভাবে ৫০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পায়। বিপরীতে, বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশ করার সময় নাকাসোনে ডায়েট ও জাতির মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখেন। যদিও ১৯৮৩ সালে তানাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও ১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি দলীয় কাঠামোর মাধ্যমে পর্দার আড়ালে শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তাশীল নাকাসোনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর ১৯৮৭ সালে নাকাসোনের মেয়াদ শেষ হয়। তার দ্বিতীয় দুই বছরের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। এটি ছিল আধুনিক জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নাকাসোনের অবসরের মাত্র ১৫ মাস আগে এলডিপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ৫১২টি আসনের মধ্যে ৩০৪টি জিতে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এমন শক্ত অবস্থান সত্ত্বেও সরকার নানা সংকটের মুখে পড়ে। জাপানের সম্পদমূল্য বুদবুদের কারণে জমির দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বেকারত্ব ৩.২ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ে এবং এলডিপির প্রস্তাবিত কর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও ২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে, যেদিন নাকাসোনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকেশিতা নোবোরুকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, সেদিনই টোকিওর শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়নের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যার প্রভাব ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে। ==অর্থনীতি== এলডিপি সরকার জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জাপানি শিল্পকে বিদেশে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জাপানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই কৌশলগুলো এবং প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা মিলিয়ে জাপানের অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সাল নাগাদ জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসসহ বহু পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হতে থাকে। শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এর দশকে মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা চলতে থাকে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক অনেকের মতে জাপানের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় আবির্ভাবের প্রতীক। সেই সময়ে শিনকানসেন হাই স্পিড রেলসহ নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়ন বিশ্বকে দেখানো হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত জাপানে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে ১৯৭৩ সালে ওপেক চার গুণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে জাপান তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তেলের জন্য জাপান প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপানে মন্দা দেখা দেয়। ==পররাষ্ট্রনীতি== আর্থিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় অবস্থানের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-এর দশকে জাপান বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে। যেমন, ১৯৫৬ সালে জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৫ সালে জার্মানির সঙ্গে জাপান নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা মূলত অর্থনৈতিক বিনিময়কে কেন্দ্র করে ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ১৯৬০ সালে, যখন জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন হয়। নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাপানের সামরিক রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে। এতে জাপানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ, রাস্তার বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চুক্তিটি ডায়েটে অনুমোদনের এক মাস পরেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্র এবং নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও, ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দখল থেকে জাপানের সার্বভৌমত্বে ফিরে আসে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান গণচীন প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং যখন সেই জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে নির্বাসনে যায়, তখনও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এই নীতির ফলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী জাপানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। পরে যখন চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে, তখন ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে হঠাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন (যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত) জাপানকে চমকে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালে টোকিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল ছিল। তবে ১৯৫৬ সালের ১৯ অক্টোবর একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, যা যুদ্ধের অবসান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। প্রধান বিরোধের বিষয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকা অঞ্চল, যেগুলো জাপান 'উত্তর অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করে। এই এলাকাগুলো হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুটি দ্বীপ—এতোরোফু ও কুনাশিরি—এছাড়া শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ (হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে)। এই দ্বীপগুলো জাপানের আত্মসমর্পণের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েই (১৯৭২–৭৪) সরকারের সময়ে জাপান একটু দৃঢ়তর হলেও নীরবভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। তানাকার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও সেগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরের সময় জনরোষ ও দাঙ্গার সম্মুখীন হন, যা দীর্ঘদিনের জাপানের বিরুদ্ধ মতামতের প্রতিফলন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মধ্যে একাধিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা। জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে নাকাসোনের কঠোর মনোভাব কিছু মার্কিন কর্মকর্তার কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। তবে জাপান ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তা জনপ্রিয় ছিল না। জাপানকে "অডুব্ব ডুবে না যাওয়া বিমানবাহী রণতরী" হিসেবে বর্ণনা করা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করা, এবং সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মতো মন্তব্য দেশে ও বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারপরও ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জাপানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, যা নাকাসোনের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে যায়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা ইয়েনের মূল্য বাড়ায় এবং মার্কিন পণ্যের আমদানি সহজ করতে বাজার আরও উন্মুক্ত করে। জাপান সরকার নিজেদের মূল শিল্পগুলোকে সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। টোকিও এই সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তারা নিজেদের শিল্প নীতি রক্ষা করে এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হ্রাসে খুবই অনিচ্ছুক ছিল। তারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব অল্প কিছু চুক্তি করেছিল। ==দখল-পরবর্তী সংস্কৃতি== দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে জাপানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহত থাকে, যার অনেকটাই আসে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ে। সেই সময় বহু এলাকায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান সংগীত ও চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে এক নতুন জাপানি শিল্পী প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে, যারা পশ্চিমা ও স্থানীয় উভয় প্রভাবকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এই সময় জাপান নিজেও সাংস্কৃতিক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা জাপানি "কাইজু" (দানব চলচ্চিত্র), "অ্যানিমে" (কার্টুন), "মাঙ্গা" (কমিক বই) ও অন্যান্য আধুনিক জাপানি সংস্কৃতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ও ইউকিও মিশিমার মতো জাপানি সাহিত্যিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দখলদারিত্ব শেষে আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে যান গল্প ও নানা সামগ্রী নিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের সৈন্যরা জাপান থেকে মার্শাল আর্টসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ধারাও বহন করেন। ==টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯)== *১৯৫২: মিত্রবাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান (২৮ এপ্রিল)। *১৯৫৪: জাপান আত্মরক্ষাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। *১৯৫৫: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠিত হয়। *১৯৫৬: জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। *১৯৬০: দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৬৪: টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। শিনকানসেন ট্রেন চলাচল শুরু করে। *১৯৬৫: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিন’ইচিরো তোমোনাগা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৬৮: পারমাণবিক রণতরী "এন্টারপ্রাইজ" বিতর্কের মধ্যে সাসেবোতে পৌঁছে। "ইটাই-ইটাই" রোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। একজন ব্যক্তি পুলিশ সেজে ৩০ কোটি ইয়েন চুরি করে (২০০৩ সাল পর্যন্ত আটক নয়)। *১৯৬৯: প্রধানমন্ত্রী আইসাকু সাতো ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর বৈঠক। ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর তারিখ ১৯৭২ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। *১৯৭০: ওসাকায় বিশ্ব মেলা (EXPO 70) অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৭১: ইয়েনের মান পরিবর্তন করে ভাসমান বিনিময় হারে আনা হয়, যার ফলে স্বল্পমেয়াদী মন্দা দেখা দেয়। *১৯৭২: ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। *১৯৮০: বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক হয়ে ওঠে। ইয়োমিউরি জায়ান্টস-এর সাদাহারু ওহ খেলা থেকে অবসর নেন। *১৯৮১: কেনিচি ফুকুই রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৮২: তোহোকু শিনকানসেন ওমিয়া থেকে মোরিওকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। *১৯৮৩: ইজু দ্বীপপুঞ্জের মিয়াকেজিমায় ওয়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে। কিতোরা কোফুনে জেনবুর রঙিন চিত্র আবিষ্কৃত হয়। কাকুয়েই তানাকা চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। *১৯৮৪: মিষ্টির কোম্পানি ইজাকি গ্লিকোর সভাপতিকে অপহরণ করে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ও ১০০ কেজি সোনার মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তবে তিনি পালিয়ে আসেন। পরে একজন চাঁদাবাজ কোম্পানির পণ্য বিষাক্ত করার হুমকি দিয়ে ৬০ মিলিয়ন ইয়েন (পরে ১২০ মিলিয়ন ইয়েন) দাবি করে। অপরাধী ধরা পড়েনি। নতুন মুদ্রা চালু হয়, যাতে ১০,০০০ ইয়েন নোটে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ৫,০০০ ইয়েন নোটে ইনাজো নিতোবে ও ১,০০০ ইয়েন নোটে নাটসুমে সোসেকির ছবি ছাপা হয়। *১৯৮৫: জাপানে প্রথম এইডস রোগী আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয়। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ ওমিতাকা-ইয়ামায় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে ৫২০ জন নিহত ও মাত্র ৪ জন বেঁচে যান—এই দুর্ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড গড়ে। *১৯৮৬: ইজু ওওশিমার মিহারায়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে, তবে আগেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। *১৯৮৭: জাপান জাতীয় রেলওয়ে বেসরকারি খাতে যায় ও সাতটি কোম্পানিতে ভাগ হয়—ছয়টি আঞ্চলিক এবং একটি মালবাহী। অভিনেতা ইউজিরো ইশিহারা মারা যান। *১৯৮৮: হোক্কাইডো ও হোনশুকে সংযুক্ত করা সেইকান টানেল নির্মিত হয়। মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স-এর সাবমেরিন "নাদাশিও" একটি মাছ ধরার জাহাজ "দাই ইচি ফুজিমারু"-র সঙ্গে ধাক্কা খায়। *১৯৮৯: ৭ জানুয়ারি শোওয়া সম্রাট মারা যান। পরদিন আকিহিতো সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নতুন যুগের নাম ঘোষণা করা হয়—"হেইসেই"। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} 8go58msxg4q5gz4fqp43j4bnoupx4y0 84897 84896 2025-06-19T06:33:12Z Asikur.rahman25 11164 /* টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯) */ 84897 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে ১৯৫২ সালে মিত্রশক্তির দখল শেষ হওয়ার পরের সময়কালটি তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে, জাপান আবারও বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি এটি একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবেও গড়ে ওঠে। ==দখল পরবর্তী রাজনীতি== সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির শর্ত কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল মিত্রশক্তির দখলের অবসান ঘটে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সব এলাকা জাপানের দখলে ছিল, তার অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সাখালিন। এছাড়াও, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপের উপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়, যেগুলো আগে জাতিপুঞ্জের অধীনে জাপান পরিচালনা করত। নতুন এই চুক্তি জাপানকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও দেয়। একই দিনে, জাপান সান ফ্রান্সিসকো চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এতে শিগেরু ইয়োশিদা ও হ্যারি ট্রুম্যান এমন একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে জাপানে ঘাঁটি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। জাপান পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আগেই, সরকার প্রায় ৮০,০০০ ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করে। এদের অনেকেই পূর্বের রাজনৈতিক বা সরকারি পদে ফিরে যান। এরপর সামরিক ব্যয় সীমিতকরণ এবং সম্রাটের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে অক্টোবর ১৯৫২ সালের প্রথম দখল-পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যায় বড় ধরনের পতন ঘটে। কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনের পর, ১৯৫৪ সালে একটি বেসামরিক পরিচালকের অধীনে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। এই সময়ে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা এবং কাছাকাছি কোরিয়ায় চলমান গরম যুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সাম্যবাদ দমন এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নিরুৎসাহিত করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দলগুলোর বারবার বিভাজন ও একের পর এক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের কারণে রক্ষণশীল শক্তিগুলো একত্রিত হয়। তারা লিবারেল পার্টি (জিয়ুতো) এবং জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি (নিপ্পন মিনশুতো) — যা পূর্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে গঠিত হয়েছিল — একত্র করে ১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জিয়ু-মিনশুতো; এলডিপি) গঠন করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই দলই ক্ষমতায় ছিল। এরপর একটি নতুন সংখ্যালঘু সরকার তাদের প্রতিস্থাপন করে। এলডিপির নেতৃত্বে ছিলেন সেইসব অভিজাত ব্যক্তি যারা জাপানকে পরাজয় ও দখলকাল অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলেন। এই দলে যোগ দেন সাবেক আমলারা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়পাস ব্যক্তিরা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জাপান সোশালিস্ট পার্টি গঠন করে। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে কোমেইতো (স্বচ্ছ সরকার পার্টি), যা ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়। এটি ছিল সোকা গাক্কাই (মানবিক মূল্য সৃষ্টির সমাজ) নামক বৌদ্ধ মতাদর্শভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা। কোমেইতো জাপানি ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় এবং শহুরে শ্রমিক, গ্রাম থেকে আসা বাসিন্দা ও বহু নারীকে আকর্ষণ করে। জাপান সোশালিস্ট পার্টির মতো, কোমেইতো-ও ধাপে ধাপে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন ও বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে কোমেইতো ও ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চুক্তি মেনে নেয়। এমনকি ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি একটি সীমিত পরিসরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পক্ষেও সমর্থন জানায়। জাপান সোশালিস্ট পার্টিকেও তাদের পূর্বের কঠোর সামরিকবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর চাপ অব্যাহত রাখে, যাতে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GNP) ১ শতাংশের বেশি করে। এই নিয়ে ডায়েটে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধিতা মূলত সংখ্যালঘু দল বা জনগণ থেকে নয়, বরং অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সচেতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আসে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েইকে ১৯৭৪ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে লকহিড ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার করে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে এলডিপির বিভক্ত রাজনীতি ডায়েটে ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৮০ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির হঠাৎ মৃত্যুতে দলের প্রতি সহানুভূতি ভোট দেখা যায়। এর ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুজুকি জেনকো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি এক পাঠ্যবই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতে, বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা এবং গুরুতর আর্থিক সমস্যার কারণে সুজুকির মন্ত্রিসভা, যা এলডিপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ছিল, পতনের মুখে পড়ে। ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে নাকাসোনে ইয়াসুহিরো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক ছিলেন এবং তানাকা ও সুজুকি গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে প্রতিরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে নাকাসোনেকে আবারও এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা জনমত জরিপে অস্বাভাবিকভাবে ৫০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পায়। বিপরীতে, বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশ করার সময় নাকাসোনে ডায়েট ও জাতির মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখেন। যদিও ১৯৮৩ সালে তানাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও ১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি দলীয় কাঠামোর মাধ্যমে পর্দার আড়ালে শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তাশীল নাকাসোনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর ১৯৮৭ সালে নাকাসোনের মেয়াদ শেষ হয়। তার দ্বিতীয় দুই বছরের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। এটি ছিল আধুনিক জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নাকাসোনের অবসরের মাত্র ১৫ মাস আগে এলডিপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ৫১২টি আসনের মধ্যে ৩০৪টি জিতে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এমন শক্ত অবস্থান সত্ত্বেও সরকার নানা সংকটের মুখে পড়ে। জাপানের সম্পদমূল্য বুদবুদের কারণে জমির দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বেকারত্ব ৩.২ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ে এবং এলডিপির প্রস্তাবিত কর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও ২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে, যেদিন নাকাসোনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকেশিতা নোবোরুকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, সেদিনই টোকিওর শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়নের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যার প্রভাব ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে। ==অর্থনীতি== এলডিপি সরকার জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জাপানি শিল্পকে বিদেশে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জাপানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই কৌশলগুলো এবং প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা মিলিয়ে জাপানের অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সাল নাগাদ জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসসহ বহু পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হতে থাকে। শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এর দশকে মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা চলতে থাকে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক অনেকের মতে জাপানের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় আবির্ভাবের প্রতীক। সেই সময়ে শিনকানসেন হাই স্পিড রেলসহ নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়ন বিশ্বকে দেখানো হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত জাপানে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে ১৯৭৩ সালে ওপেক চার গুণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে জাপান তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তেলের জন্য জাপান প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপানে মন্দা দেখা দেয়। ==পররাষ্ট্রনীতি== আর্থিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় অবস্থানের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-এর দশকে জাপান বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে। যেমন, ১৯৫৬ সালে জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৫ সালে জার্মানির সঙ্গে জাপান নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা মূলত অর্থনৈতিক বিনিময়কে কেন্দ্র করে ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ১৯৬০ সালে, যখন জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন হয়। নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাপানের সামরিক রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে। এতে জাপানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ, রাস্তার বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চুক্তিটি ডায়েটে অনুমোদনের এক মাস পরেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্র এবং নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও, ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দখল থেকে জাপানের সার্বভৌমত্বে ফিরে আসে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান গণচীন প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং যখন সেই জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে নির্বাসনে যায়, তখনও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এই নীতির ফলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী জাপানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। পরে যখন চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে, তখন ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে হঠাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন (যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত) জাপানকে চমকে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালে টোকিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল ছিল। তবে ১৯৫৬ সালের ১৯ অক্টোবর একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, যা যুদ্ধের অবসান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। প্রধান বিরোধের বিষয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকা অঞ্চল, যেগুলো জাপান 'উত্তর অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করে। এই এলাকাগুলো হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুটি দ্বীপ—এতোরোফু ও কুনাশিরি—এছাড়া শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ (হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে)। এই দ্বীপগুলো জাপানের আত্মসমর্পণের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েই (১৯৭২–৭৪) সরকারের সময়ে জাপান একটু দৃঢ়তর হলেও নীরবভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। তানাকার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও সেগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরের সময় জনরোষ ও দাঙ্গার সম্মুখীন হন, যা দীর্ঘদিনের জাপানের বিরুদ্ধ মতামতের প্রতিফলন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মধ্যে একাধিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা। জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে নাকাসোনের কঠোর মনোভাব কিছু মার্কিন কর্মকর্তার কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। তবে জাপান ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তা জনপ্রিয় ছিল না। জাপানকে "অডুব্ব ডুবে না যাওয়া বিমানবাহী রণতরী" হিসেবে বর্ণনা করা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করা, এবং সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মতো মন্তব্য দেশে ও বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারপরও ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জাপানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, যা নাকাসোনের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে যায়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা ইয়েনের মূল্য বাড়ায় এবং মার্কিন পণ্যের আমদানি সহজ করতে বাজার আরও উন্মুক্ত করে। জাপান সরকার নিজেদের মূল শিল্পগুলোকে সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। টোকিও এই সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তারা নিজেদের শিল্প নীতি রক্ষা করে এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হ্রাসে খুবই অনিচ্ছুক ছিল। তারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব অল্প কিছু চুক্তি করেছিল। ==দখল-পরবর্তী সংস্কৃতি== দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে জাপানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহত থাকে, যার অনেকটাই আসে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ে। সেই সময় বহু এলাকায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান সংগীত ও চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে এক নতুন জাপানি শিল্পী প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে, যারা পশ্চিমা ও স্থানীয় উভয় প্রভাবকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এই সময় জাপান নিজেও সাংস্কৃতিক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা জাপানি "কাইজু" (দানব চলচ্চিত্র), "অ্যানিমে" (কার্টুন), "মাঙ্গা" (কমিক বই) ও অন্যান্য আধুনিক জাপানি সংস্কৃতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ও ইউকিও মিশিমার মতো জাপানি সাহিত্যিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দখলদারিত্ব শেষে আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে যান গল্প ও নানা সামগ্রী নিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের সৈন্যরা জাপান থেকে মার্শাল আর্টসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ধারাও বহন করেন। ==টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯)== *১৯৫২: মিত্রবাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান (২৮ এপ্রিল)। *১৯৫৪: জাপান আত্মরক্ষাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। *১৯৫৫: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠিত হয়। *১৯৫৬: জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। *১৯৬০: দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৬৪: টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। শিনকানসেন ট্রেন চলাচল শুরু করে। *১৯৬৫: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিন’ইচিরো তোমোনাগা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৬৮: পারমাণবিক রণতরী "এন্টারপ্রাইজ" বিতর্কের মধ্যে সাসেবোতে পৌঁছে। "ইটাই-ইটাই" রোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। একজন ব্যক্তি পুলিশ সেজে ৩০ কোটি ইয়েন চুরি করে (২০০৩ সাল পর্যন্ত আটক নয়)। *১৯৬৯: প্রধানমন্ত্রী আইসাকু সাতো ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর বৈঠক। ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর তারিখ ১৯৭২ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। *১৯৭০: ওসাকায় বিশ্ব মেলা (এক্সপো ৭০) অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৭১: ইয়েনের মান পরিবর্তন করে ভাসমান বিনিময় হারে আনা হয়, যার ফলে স্বল্পমেয়াদী মন্দা দেখা দেয়। *১৯৭২: ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। *১৯৮০: বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক হয়ে ওঠে। ইয়োমিউরি জায়ান্টস-এর সাদাহারু ওহ খেলা থেকে অবসর নেন। *১৯৮১: কেনিচি ফুকুই রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৮২: তোহোকু শিনকানসেন ওমিয়া থেকে মোরিওকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। *১৯৮৩: ইজু দ্বীপপুঞ্জের মিয়াকেজিমায় ওয়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে। কিতোরা কোফুনে জেনবুর রঙিন চিত্র আবিষ্কৃত হয়। কাকুয়েই তানাকা চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। *১৯৮৪: মিষ্টির কোম্পানি ইজাকি গ্লিকোর সভাপতিকে অপহরণ করে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ও ১০০ কেজি সোনার মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তবে তিনি পালিয়ে আসেন। পরে একজন চাঁদাবাজ কোম্পানির পণ্য বিষাক্ত করার হুমকি দিয়ে ৬০ মিলিয়ন ইয়েন (পরে ১২০ মিলিয়ন ইয়েন) দাবি করে। অপরাধী ধরা পড়েনি। নতুন মুদ্রা চালু হয়, যাতে ১০,০০০ ইয়েন নোটে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ৫,০০০ ইয়েন নোটে ইনাজো নিতোবে ও ১,০০০ ইয়েন নোটে নাটসুমে সোসেকির ছবি ছাপা হয়। *১৯৮৫: জাপানে প্রথম এইডস রোগী আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয়। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ ওমিতাকা-ইয়ামায় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে ৫২০ জন নিহত ও মাত্র ৪ জন বেঁচে যান—এই দুর্ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড গড়ে। *১৯৮৬: ইজু ওওশিমার মিহারায়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে, তবে আগেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। *১৯৮৭: জাপান জাতীয় রেলওয়ে বেসরকারি খাতে যায় ও সাতটি কোম্পানিতে ভাগ হয়—ছয়টি আঞ্চলিক এবং একটি মালবাহী। অভিনেতা ইউজিরো ইশিহারা মারা যান। *১৯৮৮: হোক্কাইডো ও হোনশুকে সংযুক্ত করা সেইকান টানেল নির্মিত হয়। মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স-এর সাবমেরিন "নাদাশিও" একটি মাছ ধরার জাহাজ "দাই ইচি ফুজিমারু"-র সঙ্গে ধাক্কা খায়। *১৯৮৯: ৭ জানুয়ারি শোওয়া সম্রাট মারা যান। পরদিন আকিহিতো সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নতুন যুগের নাম ঘোষণা করা হয়—"হেইসেই"। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} jarveznscjxpxmfbcb9n2ionu9e9ngn 84898 84897 2025-06-19T06:35:38Z Asikur.rahman25 11164 /* পররাষ্ট্রনীতি */ 84898 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে ১৯৫২ সালে মিত্রশক্তির দখল শেষ হওয়ার পরের সময়কালটি তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে, জাপান আবারও বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি এটি একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবেও গড়ে ওঠে। ==দখল পরবর্তী রাজনীতি== সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির শর্ত কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল মিত্রশক্তির দখলের অবসান ঘটে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সব এলাকা জাপানের দখলে ছিল, তার অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সাখালিন। এছাড়াও, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপের উপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়, যেগুলো আগে জাতিপুঞ্জের অধীনে জাপান পরিচালনা করত। নতুন এই চুক্তি জাপানকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও দেয়। একই দিনে, জাপান সান ফ্রান্সিসকো চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এতে শিগেরু ইয়োশিদা ও হ্যারি ট্রুম্যান এমন একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে জাপানে ঘাঁটি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। জাপান পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আগেই, সরকার প্রায় ৮০,০০০ ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করে। এদের অনেকেই পূর্বের রাজনৈতিক বা সরকারি পদে ফিরে যান। এরপর সামরিক ব্যয় সীমিতকরণ এবং সম্রাটের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে অক্টোবর ১৯৫২ সালের প্রথম দখল-পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যায় বড় ধরনের পতন ঘটে। কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনের পর, ১৯৫৪ সালে একটি বেসামরিক পরিচালকের অধীনে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। এই সময়ে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা এবং কাছাকাছি কোরিয়ায় চলমান গরম যুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সাম্যবাদ দমন এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নিরুৎসাহিত করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দলগুলোর বারবার বিভাজন ও একের পর এক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের কারণে রক্ষণশীল শক্তিগুলো একত্রিত হয়। তারা লিবারেল পার্টি (জিয়ুতো) এবং জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি (নিপ্পন মিনশুতো) — যা পূর্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে গঠিত হয়েছিল — একত্র করে ১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জিয়ু-মিনশুতো; এলডিপি) গঠন করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই দলই ক্ষমতায় ছিল। এরপর একটি নতুন সংখ্যালঘু সরকার তাদের প্রতিস্থাপন করে। এলডিপির নেতৃত্বে ছিলেন সেইসব অভিজাত ব্যক্তি যারা জাপানকে পরাজয় ও দখলকাল অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলেন। এই দলে যোগ দেন সাবেক আমলারা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়পাস ব্যক্তিরা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জাপান সোশালিস্ট পার্টি গঠন করে। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে কোমেইতো (স্বচ্ছ সরকার পার্টি), যা ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়। এটি ছিল সোকা গাক্কাই (মানবিক মূল্য সৃষ্টির সমাজ) নামক বৌদ্ধ মতাদর্শভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা। কোমেইতো জাপানি ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় এবং শহুরে শ্রমিক, গ্রাম থেকে আসা বাসিন্দা ও বহু নারীকে আকর্ষণ করে। জাপান সোশালিস্ট পার্টির মতো, কোমেইতো-ও ধাপে ধাপে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন ও বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে কোমেইতো ও ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চুক্তি মেনে নেয়। এমনকি ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি একটি সীমিত পরিসরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পক্ষেও সমর্থন জানায়। জাপান সোশালিস্ট পার্টিকেও তাদের পূর্বের কঠোর সামরিকবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর চাপ অব্যাহত রাখে, যাতে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GNP) ১ শতাংশের বেশি করে। এই নিয়ে ডায়েটে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধিতা মূলত সংখ্যালঘু দল বা জনগণ থেকে নয়, বরং অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সচেতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আসে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েইকে ১৯৭৪ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে লকহিড ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার করে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে এলডিপির বিভক্ত রাজনীতি ডায়েটে ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৮০ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির হঠাৎ মৃত্যুতে দলের প্রতি সহানুভূতি ভোট দেখা যায়। এর ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুজুকি জেনকো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি এক পাঠ্যবই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতে, বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা এবং গুরুতর আর্থিক সমস্যার কারণে সুজুকির মন্ত্রিসভা, যা এলডিপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ছিল, পতনের মুখে পড়ে। ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে নাকাসোনে ইয়াসুহিরো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক ছিলেন এবং তানাকা ও সুজুকি গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে প্রতিরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে নাকাসোনেকে আবারও এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা জনমত জরিপে অস্বাভাবিকভাবে ৫০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পায়। বিপরীতে, বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশ করার সময় নাকাসোনে ডায়েট ও জাতির মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখেন। যদিও ১৯৮৩ সালে তানাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও ১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি দলীয় কাঠামোর মাধ্যমে পর্দার আড়ালে শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তাশীল নাকাসোনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর ১৯৮৭ সালে নাকাসোনের মেয়াদ শেষ হয়। তার দ্বিতীয় দুই বছরের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। এটি ছিল আধুনিক জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নাকাসোনের অবসরের মাত্র ১৫ মাস আগে এলডিপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ৫১২টি আসনের মধ্যে ৩০৪টি জিতে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এমন শক্ত অবস্থান সত্ত্বেও সরকার নানা সংকটের মুখে পড়ে। জাপানের সম্পদমূল্য বুদবুদের কারণে জমির দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বেকারত্ব ৩.২ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ে এবং এলডিপির প্রস্তাবিত কর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও ২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে, যেদিন নাকাসোনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকেশিতা নোবোরুকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, সেদিনই টোকিওর শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়নের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যার প্রভাব ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে। ==অর্থনীতি== এলডিপি সরকার জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জাপানি শিল্পকে বিদেশে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জাপানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই কৌশলগুলো এবং প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা মিলিয়ে জাপানের অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সাল নাগাদ জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসসহ বহু পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হতে থাকে। শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এর দশকে মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা চলতে থাকে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক অনেকের মতে জাপানের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় আবির্ভাবের প্রতীক। সেই সময়ে শিনকানসেন হাই স্পিড রেলসহ নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়ন বিশ্বকে দেখানো হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত জাপানে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে ১৯৭৩ সালে ওপেক চার গুণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে জাপান তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তেলের জন্য জাপান প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপানে মন্দা দেখা দেয়। ==পররাষ্ট্রনীতি== আর্থিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় অবস্থানের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-এর দশকে জাপান বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে। যেমন, ১৯৫৬ সালে জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৫ সালে জার্মানির সঙ্গে জাপান নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা মূলত অর্থনৈতিক বিনিময়কে কেন্দ্র করে ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ১৯৬০ সালে, যখন জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন হয়। নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাপানের সামরিক রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে। এতে জাপানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ, রাস্তার বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চুক্তিটি ডায়েটে অনুমোদনের এক মাস পরেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্র এবং নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও, ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দখল থেকে জাপানের সার্বভৌমত্বে ফিরে আসে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান গণচীন প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং যখন সেই জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে নির্বাসনে যায়, তখনও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এই নীতির ফলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী জাপানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। পরে যখন চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে, তখন ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে হঠাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন (যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত) জাপানকে চমকে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালে টোকিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল ছিল। তবে ১৯৫৬ সালের ১৯ অক্টোবর একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, যা যুদ্ধের অবসান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। প্রধান বিরোধের বিষয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকা অঞ্চল, যেগুলো জাপান 'উত্তর অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করে। এই এলাকাগুলো হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুটি দ্বীপ—এতোরোফু ও কুনাশিরি—এছাড়া শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ (হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে)। এই দ্বীপগুলো জাপানের আত্মসমর্পণের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েই (১৯৭২–৭৪) সরকারের সময়ে জাপান একটু দৃঢ়তর হলেও নীরবভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। তানাকার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও সেগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরের সময় জনরোষ ও দাঙ্গার সম্মুখীন হন, যা দীর্ঘদিনের জাপানের বিরুদ্ধ মতামতের প্রতিফলন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মধ্যে একাধিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা। জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে নাকাসোনের কঠোর মনোভাব কিছু মার্কিন কর্মকর্তার কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। তবে জাপান ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তা জনপ্রিয় ছিল না। জাপানকে "অডুব্ব ডুবে না যাওয়া বিমানবাহী রণতরী" হিসেবে বর্ণনা করা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করা, এবং সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মতো মন্তব্য দেশে ও বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারপরও ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জাপানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, যা নাকাসোনের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে যায়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা ইয়েনের মূল্য বাড়ায় এবং মার্কিন পণ্যের আমদানি সহজ করতে বাজার আরও উন্মুক্ত করে। জাপান সরকার নিজেদের মূল শিল্পগুলোকে সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। টোকিও এই সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তারা নিজেদের শিল্প নীতি রক্ষা করে এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হ্রাসে খুবই অনিচ্ছুক ছিল। তারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব অল্প কিছু চুক্তি করেছিল। ==দখল-পরবর্তী সংস্কৃতি== দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে জাপানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহত থাকে, যার অনেকটাই আসে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ে। সেই সময় বহু এলাকায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান সংগীত ও চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে এক নতুন জাপানি শিল্পী প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে, যারা পশ্চিমা ও স্থানীয় উভয় প্রভাবকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এই সময় জাপান নিজেও সাংস্কৃতিক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা জাপানি "কাইজু" (দানব চলচ্চিত্র), "অ্যানিমে" (কার্টুন), "মাঙ্গা" (কমিক বই) ও অন্যান্য আধুনিক জাপানি সংস্কৃতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ও ইউকিও মিশিমার মতো জাপানি সাহিত্যিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দখলদারিত্ব শেষে আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে যান গল্প ও নানা সামগ্রী নিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের সৈন্যরা জাপান থেকে মার্শাল আর্টসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ধারাও বহন করেন। ==টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯)== *১৯৫২: মিত্রবাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান (২৮ এপ্রিল)। *১৯৫৪: জাপান আত্মরক্ষাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। *১৯৫৫: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠিত হয়। *১৯৫৬: জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। *১৯৬০: দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৬৪: টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। শিনকানসেন ট্রেন চলাচল শুরু করে। *১৯৬৫: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিন’ইচিরো তোমোনাগা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৬৮: পারমাণবিক রণতরী "এন্টারপ্রাইজ" বিতর্কের মধ্যে সাসেবোতে পৌঁছে। "ইটাই-ইটাই" রোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। একজন ব্যক্তি পুলিশ সেজে ৩০ কোটি ইয়েন চুরি করে (২০০৩ সাল পর্যন্ত আটক নয়)। *১৯৬৯: প্রধানমন্ত্রী আইসাকু সাতো ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর বৈঠক। ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর তারিখ ১৯৭২ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। *১৯৭০: ওসাকায় বিশ্ব মেলা (এক্সপো ৭০) অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৭১: ইয়েনের মান পরিবর্তন করে ভাসমান বিনিময় হারে আনা হয়, যার ফলে স্বল্পমেয়াদী মন্দা দেখা দেয়। *১৯৭২: ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। *১৯৮০: বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক হয়ে ওঠে। ইয়োমিউরি জায়ান্টস-এর সাদাহারু ওহ খেলা থেকে অবসর নেন। *১৯৮১: কেনিচি ফুকুই রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৮২: তোহোকু শিনকানসেন ওমিয়া থেকে মোরিওকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। *১৯৮৩: ইজু দ্বীপপুঞ্জের মিয়াকেজিমায় ওয়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে। কিতোরা কোফুনে জেনবুর রঙিন চিত্র আবিষ্কৃত হয়। কাকুয়েই তানাকা চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। *১৯৮৪: মিষ্টির কোম্পানি ইজাকি গ্লিকোর সভাপতিকে অপহরণ করে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ও ১০০ কেজি সোনার মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তবে তিনি পালিয়ে আসেন। পরে একজন চাঁদাবাজ কোম্পানির পণ্য বিষাক্ত করার হুমকি দিয়ে ৬০ মিলিয়ন ইয়েন (পরে ১২০ মিলিয়ন ইয়েন) দাবি করে। অপরাধী ধরা পড়েনি। নতুন মুদ্রা চালু হয়, যাতে ১০,০০০ ইয়েন নোটে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ৫,০০০ ইয়েন নোটে ইনাজো নিতোবে ও ১,০০০ ইয়েন নোটে নাটসুমে সোসেকির ছবি ছাপা হয়। *১৯৮৫: জাপানে প্রথম এইডস রোগী আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয়। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ ওমিতাকা-ইয়ামায় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে ৫২০ জন নিহত ও মাত্র ৪ জন বেঁচে যান—এই দুর্ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড গড়ে। *১৯৮৬: ইজু ওওশিমার মিহারায়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে, তবে আগেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। *১৯৮৭: জাপান জাতীয় রেলওয়ে বেসরকারি খাতে যায় ও সাতটি কোম্পানিতে ভাগ হয়—ছয়টি আঞ্চলিক এবং একটি মালবাহী। অভিনেতা ইউজিরো ইশিহারা মারা যান। *১৯৮৮: হোক্কাইডো ও হোনশুকে সংযুক্ত করা সেইকান টানেল নির্মিত হয়। মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স-এর সাবমেরিন "নাদাশিও" একটি মাছ ধরার জাহাজ "দাই ইচি ফুজিমারু"-র সঙ্গে ধাক্কা খায়। *১৯৮৯: ৭ জানুয়ারি শোওয়া সম্রাট মারা যান। পরদিন আকিহিতো সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নতুন যুগের নাম ঘোষণা করা হয়—"হেইসেই"। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} a4acxexr7affn8zgl7nrfgzu5m9zo4p 84899 84898 2025-06-19T06:36:27Z Asikur.rahman25 11164 /* অর্থনীতি */ 84899 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে ১৯৫২ সালে মিত্রশক্তির দখল শেষ হওয়ার পরের সময়কালটি তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে, জাপান আবারও বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি এটি একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবেও গড়ে ওঠে। ==দখল পরবর্তী রাজনীতি== সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির শর্ত কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল মিত্রশক্তির দখলের অবসান ঘটে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সব এলাকা জাপানের দখলে ছিল, তার অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সাখালিন। এছাড়াও, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপের উপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়, যেগুলো আগে জাতিপুঞ্জের অধীনে জাপান পরিচালনা করত। নতুন এই চুক্তি জাপানকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও দেয়। একই দিনে, জাপান সান ফ্রান্সিসকো চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এতে শিগেরু ইয়োশিদা ও হ্যারি ট্রুম্যান এমন একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে জাপানে ঘাঁটি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। জাপান পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আগেই, সরকার প্রায় ৮০,০০০ ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করে। এদের অনেকেই পূর্বের রাজনৈতিক বা সরকারি পদে ফিরে যান। এরপর সামরিক ব্যয় সীমিতকরণ এবং সম্রাটের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে অক্টোবর ১৯৫২ সালের প্রথম দখল-পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যায় বড় ধরনের পতন ঘটে। কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনের পর, ১৯৫৪ সালে একটি বেসামরিক পরিচালকের অধীনে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। এই সময়ে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা এবং কাছাকাছি কোরিয়ায় চলমান গরম যুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সাম্যবাদ দমন এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নিরুৎসাহিত করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দলগুলোর বারবার বিভাজন ও একের পর এক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের কারণে রক্ষণশীল শক্তিগুলো একত্রিত হয়। তারা লিবারেল পার্টি (জিয়ুতো) এবং জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি (নিপ্পন মিনশুতো) — যা পূর্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে গঠিত হয়েছিল — একত্র করে ১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জিয়ু-মিনশুতো; এলডিপি) গঠন করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই দলই ক্ষমতায় ছিল। এরপর একটি নতুন সংখ্যালঘু সরকার তাদের প্রতিস্থাপন করে। এলডিপির নেতৃত্বে ছিলেন সেইসব অভিজাত ব্যক্তি যারা জাপানকে পরাজয় ও দখলকাল অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলেন। এই দলে যোগ দেন সাবেক আমলারা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়পাস ব্যক্তিরা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জাপান সোশালিস্ট পার্টি গঠন করে। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে কোমেইতো (স্বচ্ছ সরকার পার্টি), যা ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়। এটি ছিল সোকা গাক্কাই (মানবিক মূল্য সৃষ্টির সমাজ) নামক বৌদ্ধ মতাদর্শভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা। কোমেইতো জাপানি ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় এবং শহুরে শ্রমিক, গ্রাম থেকে আসা বাসিন্দা ও বহু নারীকে আকর্ষণ করে। জাপান সোশালিস্ট পার্টির মতো, কোমেইতো-ও ধাপে ধাপে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন ও বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে কোমেইতো ও ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চুক্তি মেনে নেয়। এমনকি ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি একটি সীমিত পরিসরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পক্ষেও সমর্থন জানায়। জাপান সোশালিস্ট পার্টিকেও তাদের পূর্বের কঠোর সামরিকবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর চাপ অব্যাহত রাখে, যাতে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GNP) ১ শতাংশের বেশি করে। এই নিয়ে ডায়েটে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধিতা মূলত সংখ্যালঘু দল বা জনগণ থেকে নয়, বরং অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সচেতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আসে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েইকে ১৯৭৪ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে লকহিড ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার করে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে এলডিপির বিভক্ত রাজনীতি ডায়েটে ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৮০ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির হঠাৎ মৃত্যুতে দলের প্রতি সহানুভূতি ভোট দেখা যায়। এর ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুজুকি জেনকো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি এক পাঠ্যবই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতে, বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা এবং গুরুতর আর্থিক সমস্যার কারণে সুজুকির মন্ত্রিসভা, যা এলডিপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ছিল, পতনের মুখে পড়ে। ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে নাকাসোনে ইয়াসুহিরো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক ছিলেন এবং তানাকা ও সুজুকি গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে প্রতিরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে নাকাসোনেকে আবারও এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা জনমত জরিপে অস্বাভাবিকভাবে ৫০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পায়। বিপরীতে, বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশ করার সময় নাকাসোনে ডায়েট ও জাতির মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখেন। যদিও ১৯৮৩ সালে তানাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও ১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি দলীয় কাঠামোর মাধ্যমে পর্দার আড়ালে শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তাশীল নাকাসোনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর ১৯৮৭ সালে নাকাসোনের মেয়াদ শেষ হয়। তার দ্বিতীয় দুই বছরের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। এটি ছিল আধুনিক জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নাকাসোনের অবসরের মাত্র ১৫ মাস আগে এলডিপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ৫১২টি আসনের মধ্যে ৩০৪টি জিতে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এমন শক্ত অবস্থান সত্ত্বেও সরকার নানা সংকটের মুখে পড়ে। জাপানের সম্পদমূল্য বুদবুদের কারণে জমির দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বেকারত্ব ৩.২ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ে এবং এলডিপির প্রস্তাবিত কর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও ২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে, যেদিন নাকাসোনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকেশিতা নোবোরুকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, সেদিনই টোকিওর শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়নের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যার প্রভাব ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে। ==অর্থনীতি== এলডিপি সরকার জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জাপানি শিল্পকে বিদেশে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জাপানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই কৌশলগুলো এবং প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা মিলিয়ে জাপানের অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সাল নাগাদ জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসসহ বহু পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হতে থাকে। শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এর দশকে মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা চলতে থাকে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক অনেকের মতে জাপানের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় আবির্ভাবের প্রতীক। সেই সময়ে শিনকানসেন হাই স্পিড রেলসহ নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়ন বিশ্বকে দেখানো হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত জাপানে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে ১৯৭৩ সালে ওপেক চার গুণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে জাপান তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তেলের জন্য জাপান প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপানে মন্দা দেখা দেয়। ==পররাষ্ট্রনীতি== আর্থিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় অবস্থানের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-এর দশকে জাপান বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে। যেমন, ১৯৫৬ সালে জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৫ সালে জার্মানির সঙ্গে জাপান নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা মূলত অর্থনৈতিক বিনিময়কে কেন্দ্র করে ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ১৯৬০ সালে, যখন জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন হয়। নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাপানের সামরিক রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে। এতে জাপানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ, রাস্তার বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চুক্তিটি ডায়েটে অনুমোদনের এক মাস পরেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্র এবং নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও, ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দখল থেকে জাপানের সার্বভৌমত্বে ফিরে আসে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান গণচীন প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং যখন সেই জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে নির্বাসনে যায়, তখনও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এই নীতির ফলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী জাপানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। পরে যখন চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে, তখন ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে হঠাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন (যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত) জাপানকে চমকে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালে টোকিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল ছিল। তবে ১৯৫৬ সালের ১৯ অক্টোবর একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, যা যুদ্ধের অবসান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। প্রধান বিরোধের বিষয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকা অঞ্চল, যেগুলো জাপান 'উত্তর অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করে। এই এলাকাগুলো হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুটি দ্বীপ—এতোরোফু ও কুনাশিরি—এছাড়া শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ (হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে)। এই দ্বীপগুলো জাপানের আত্মসমর্পণের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েই (১৯৭২–৭৪) সরকারের সময়ে জাপান একটু দৃঢ়তর হলেও নীরবভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। তানাকার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও সেগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরের সময় জনরোষ ও দাঙ্গার সম্মুখীন হন, যা দীর্ঘদিনের জাপানের বিরুদ্ধ মতামতের প্রতিফলন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মধ্যে একাধিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা। জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে নাকাসোনের কঠোর মনোভাব কিছু মার্কিন কর্মকর্তার কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। তবে জাপান ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তা জনপ্রিয় ছিল না। জাপানকে "অডুব্ব ডুবে না যাওয়া বিমানবাহী রণতরী" হিসেবে বর্ণনা করা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করা, এবং সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মতো মন্তব্য দেশে ও বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারপরও ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জাপানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, যা নাকাসোনের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে যায়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা ইয়েনের মূল্য বাড়ায় এবং মার্কিন পণ্যের আমদানি সহজ করতে বাজার আরও উন্মুক্ত করে। জাপান সরকার নিজেদের মূল শিল্পগুলোকে সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। টোকিও এই সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তারা নিজেদের শিল্প নীতি রক্ষা করে এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হ্রাসে খুবই অনিচ্ছুক ছিল। তারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব অল্প কিছু চুক্তি করেছিল। ==দখল-পরবর্তী সংস্কৃতি== দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে জাপানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহত থাকে, যার অনেকটাই আসে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ে। সেই সময় বহু এলাকায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান সংগীত ও চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে এক নতুন জাপানি শিল্পী প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে, যারা পশ্চিমা ও স্থানীয় উভয় প্রভাবকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এই সময় জাপান নিজেও সাংস্কৃতিক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা জাপানি "কাইজু" (দানব চলচ্চিত্র), "অ্যানিমে" (কার্টুন), "মাঙ্গা" (কমিক বই) ও অন্যান্য আধুনিক জাপানি সংস্কৃতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ও ইউকিও মিশিমার মতো জাপানি সাহিত্যিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দখলদারিত্ব শেষে আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে যান গল্প ও নানা সামগ্রী নিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের সৈন্যরা জাপান থেকে মার্শাল আর্টসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ধারাও বহন করেন। ==টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯)== *১৯৫২: মিত্রবাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান (২৮ এপ্রিল)। *১৯৫৪: জাপান আত্মরক্ষাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। *১৯৫৫: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠিত হয়। *১৯৫৬: জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। *১৯৬০: দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৬৪: টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। শিনকানসেন ট্রেন চলাচল শুরু করে। *১৯৬৫: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিন’ইচিরো তোমোনাগা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৬৮: পারমাণবিক রণতরী "এন্টারপ্রাইজ" বিতর্কের মধ্যে সাসেবোতে পৌঁছে। "ইটাই-ইটাই" রোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। একজন ব্যক্তি পুলিশ সেজে ৩০ কোটি ইয়েন চুরি করে (২০০৩ সাল পর্যন্ত আটক নয়)। *১৯৬৯: প্রধানমন্ত্রী আইসাকু সাতো ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর বৈঠক। ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর তারিখ ১৯৭২ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। *১৯৭০: ওসাকায় বিশ্ব মেলা (এক্সপো ৭০) অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৭১: ইয়েনের মান পরিবর্তন করে ভাসমান বিনিময় হারে আনা হয়, যার ফলে স্বল্পমেয়াদী মন্দা দেখা দেয়। *১৯৭২: ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। *১৯৮০: বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক হয়ে ওঠে। ইয়োমিউরি জায়ান্টস-এর সাদাহারু ওহ খেলা থেকে অবসর নেন। *১৯৮১: কেনিচি ফুকুই রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৮২: তোহোকু শিনকানসেন ওমিয়া থেকে মোরিওকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। *১৯৮৩: ইজু দ্বীপপুঞ্জের মিয়াকেজিমায় ওয়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে। কিতোরা কোফুনে জেনবুর রঙিন চিত্র আবিষ্কৃত হয়। কাকুয়েই তানাকা চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। *১৯৮৪: মিষ্টির কোম্পানি ইজাকি গ্লিকোর সভাপতিকে অপহরণ করে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ও ১০০ কেজি সোনার মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তবে তিনি পালিয়ে আসেন। পরে একজন চাঁদাবাজ কোম্পানির পণ্য বিষাক্ত করার হুমকি দিয়ে ৬০ মিলিয়ন ইয়েন (পরে ১২০ মিলিয়ন ইয়েন) দাবি করে। অপরাধী ধরা পড়েনি। নতুন মুদ্রা চালু হয়, যাতে ১০,০০০ ইয়েন নোটে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ৫,০০০ ইয়েন নোটে ইনাজো নিতোবে ও ১,০০০ ইয়েন নোটে নাটসুমে সোসেকির ছবি ছাপা হয়। *১৯৮৫: জাপানে প্রথম এইডস রোগী আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয়। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ ওমিতাকা-ইয়ামায় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে ৫২০ জন নিহত ও মাত্র ৪ জন বেঁচে যান—এই দুর্ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড গড়ে। *১৯৮৬: ইজু ওওশিমার মিহারায়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে, তবে আগেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। *১৯৮৭: জাপান জাতীয় রেলওয়ে বেসরকারি খাতে যায় ও সাতটি কোম্পানিতে ভাগ হয়—ছয়টি আঞ্চলিক এবং একটি মালবাহী। অভিনেতা ইউজিরো ইশিহারা মারা যান। *১৯৮৮: হোক্কাইডো ও হোনশুকে সংযুক্ত করা সেইকান টানেল নির্মিত হয়। মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স-এর সাবমেরিন "নাদাশিও" একটি মাছ ধরার জাহাজ "দাই ইচি ফুজিমারু"-র সঙ্গে ধাক্কা খায়। *১৯৮৯: ৭ জানুয়ারি শোওয়া সম্রাট মারা যান। পরদিন আকিহিতো সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নতুন যুগের নাম ঘোষণা করা হয়—"হেইসেই"। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} q7bz69t72w6jxuq4iv4tu941440ruls 84900 84899 2025-06-19T06:43:39Z Asikur.rahman25 11164 /* দখল পরবর্তী রাজনীতি */ 84900 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে ১৯৫২ সালে মিত্রশক্তির দখল শেষ হওয়ার পরের সময়কালটি তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে, জাপান আবারও বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি এটি একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবেও গড়ে ওঠে। ==দখল পরবর্তী রাজনীতি== সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির শর্ত কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল মিত্রশক্তির দখলের অবসান ঘটে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সব এলাকা জাপানের দখলে ছিল, তার অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সাখালিন। এছাড়াও, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপের উপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। যেগুলো আগে জাতিপুঞ্জের অধীনে জাপান পরিচালনা করত। নতুন এই চুক্তি জাপানকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও দেয়। একই দিনে, জাপান সান ফ্রান্সিসকো চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এতে শিগেরু ইয়োশিদা ও হ্যারি ট্রুম্যান এমন একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে জাপানে ঘাঁটি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। জাপান পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আগেই, সরকার প্রায় ৮০,০০০ ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করে। এদের অনেকেই পূর্বের রাজনৈতিক বা সরকারি পদে ফিরে যান। এরপর সামরিক ব্যয় সীমিতকরণ এবং সম্রাটের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে অক্টোবর ১৯৫২ সালের প্রথম দখল-পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যায় বড় ধরনের পতন ঘটে। কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনের পর, ১৯৫৪ সালে একটি বেসামরিক পরিচালকের অধীনে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। এই সময়ে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা এবং কাছাকাছি কোরিয়ায় চলমান গরম যুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সাম্যবাদ দমন এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নিরুৎসাহিত করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দলগুলোর বারবার বিভাজন ও একের পর এক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের কারণে রক্ষণশীল শক্তিগুলো একত্রিত হয়। তারা লিবারেল পার্টি (জিয়ুতো) এবং জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি (নিপ্পন মিনশুতো) — যা পূর্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে গঠিত হয়েছিল একত্র করে ১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জিয়ু-মিনশুতো; এলডিপি) গঠন করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই দলই ক্ষমতায় ছিল। এরপর একটি নতুন সংখ্যালঘু সরকার তাদের প্রতিস্থাপন করে। এলডিপির নেতৃত্বে ছিলেন সেইসব অভিজাত ব্যক্তি যারা জাপানকে পরাজয় ও দখলকাল অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলেন। এই দলে যোগ দেন সাবেক আমলারা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়পাস ব্যক্তিরা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জাপান সোশালিস্ট পার্টি গঠন করে। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে কোমেইতো (স্বচ্ছ সরকার পার্টি), যা ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়। এটি ছিল সোকা গাক্কাই (মানবিক মূল্য সৃষ্টির সমাজ) নামক বৌদ্ধ মতাদর্শভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা। কোমেইতো জাপানি ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় এবং শহুরে শ্রমিক, গ্রাম থেকে আসা বাসিন্দা ও বহু নারীকে আকর্ষণ করে। জাপান সোশালিস্ট পার্টির মতো, কোমেইতো-ও ধাপে ধাপে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন ও বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে কোমেইতো ও ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চুক্তি মেনে নেয়। এমনকি ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি একটি সীমিত পরিসরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পক্ষেও সমর্থন জানায়। জাপান সোশালিস্ট পার্টিকেও তাদের পূর্বের কঠোর সামরিকবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর চাপ অব্যাহত রাখে, যাতে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GNP) ১ শতাংশের বেশি করে। এই নিয়ে ডায়েটে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধিতা মূলত সংখ্যালঘু দল বা জনগণ থেকে নয়, বরং অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সচেতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আসে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েইকে ১৯৭৪ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে লকহিড ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার করে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে এলডিপির বিভক্ত রাজনীতি ডায়েটে ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৮০ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির হঠাৎ মৃত্যুতে দলের প্রতি সহানুভূতি ভোট দেখা যায়। এর ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুজুকি জেনকো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি এক পাঠ্যবই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতে, বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা এবং গুরুতর আর্থিক সমস্যার কারণে সুজুকির মন্ত্রিসভা, যা এলডিপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ছিল, পতনের মুখে পড়ে। ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে নাকাসোনে ইয়াসুহিরো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক ছিলেন এবং তানাকা ও সুজুকি গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে প্রতিরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে নাকাসোনেকে আবারও এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা জনমত জরিপে অস্বাভাবিকভাবে ৫০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পায়। বিপরীতে, বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশ করার সময় নাকাসোনে ডায়েট ও জাতির মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখেন। যদিও ১৯৮৩ সালে তানাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও ১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি দলীয় কাঠামোর মাধ্যমে পর্দার আড়ালে শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তাশীল নাকাসোনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর ১৯৮৭ সালে নাকাসোনের মেয়াদ শেষ হয়। তার দ্বিতীয় দুই বছরের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। এটি ছিল আধুনিক জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নাকাসোনের অবসরের মাত্র ১৫ মাস আগে এলডিপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ৫১২টি আসনের মধ্যে ৩০৪টি জিতে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এমন শক্ত অবস্থান সত্ত্বেও সরকার নানা সংকটের মুখে পড়ে। জাপানের সম্পদমূল্য বুদবুদের কারণে জমির দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বেকারত্ব ৩.২ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ে এবং এলডিপির প্রস্তাবিত কর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও ২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে, যেদিন নাকাসোনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকেশিতা নোবোরুকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, সেদিনই টোকিওর শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়নের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যার প্রভাব ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে। ==অর্থনীতি== এলডিপি সরকার জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জাপানি শিল্পকে বিদেশে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জাপানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই কৌশলগুলো এবং প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা মিলিয়ে জাপানের অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সাল নাগাদ জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসসহ বহু পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হতে থাকে। শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এর দশকে মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা চলতে থাকে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক অনেকের মতে জাপানের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় আবির্ভাবের প্রতীক। সেই সময়ে শিনকানসেন হাই স্পিড রেলসহ নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়ন বিশ্বকে দেখানো হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত জাপানে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে ১৯৭৩ সালে ওপেক চার গুণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে জাপান তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তেলের জন্য জাপান প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপানে মন্দা দেখা দেয়। ==পররাষ্ট্রনীতি== আর্থিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় অবস্থানের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-এর দশকে জাপান বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে। যেমন, ১৯৫৬ সালে জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৫ সালে জার্মানির সঙ্গে জাপান নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা মূলত অর্থনৈতিক বিনিময়কে কেন্দ্র করে ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ১৯৬০ সালে, যখন জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন হয়। নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাপানের সামরিক রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে। এতে জাপানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ, রাস্তার বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চুক্তিটি ডায়েটে অনুমোদনের এক মাস পরেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্র এবং নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও, ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দখল থেকে জাপানের সার্বভৌমত্বে ফিরে আসে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান গণচীন প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং যখন সেই জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে নির্বাসনে যায়, তখনও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এই নীতির ফলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী জাপানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। পরে যখন চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে, তখন ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে হঠাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন (যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত) জাপানকে চমকে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালে টোকিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল ছিল। তবে ১৯৫৬ সালের ১৯ অক্টোবর একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, যা যুদ্ধের অবসান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। প্রধান বিরোধের বিষয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকা অঞ্চল, যেগুলো জাপান 'উত্তর অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করে। এই এলাকাগুলো হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুটি দ্বীপ—এতোরোফু ও কুনাশিরি—এছাড়া শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ (হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে)। এই দ্বীপগুলো জাপানের আত্মসমর্পণের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েই (১৯৭২–৭৪) সরকারের সময়ে জাপান একটু দৃঢ়তর হলেও নীরবভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। তানাকার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও সেগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরের সময় জনরোষ ও দাঙ্গার সম্মুখীন হন, যা দীর্ঘদিনের জাপানের বিরুদ্ধ মতামতের প্রতিফলন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মধ্যে একাধিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা। জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে নাকাসোনের কঠোর মনোভাব কিছু মার্কিন কর্মকর্তার কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। তবে জাপান ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তা জনপ্রিয় ছিল না। জাপানকে "অডুব্ব ডুবে না যাওয়া বিমানবাহী রণতরী" হিসেবে বর্ণনা করা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করা, এবং সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মতো মন্তব্য দেশে ও বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারপরও ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জাপানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, যা নাকাসোনের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে যায়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা ইয়েনের মূল্য বাড়ায় এবং মার্কিন পণ্যের আমদানি সহজ করতে বাজার আরও উন্মুক্ত করে। জাপান সরকার নিজেদের মূল শিল্পগুলোকে সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। টোকিও এই সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তারা নিজেদের শিল্প নীতি রক্ষা করে এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হ্রাসে খুবই অনিচ্ছুক ছিল। তারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব অল্প কিছু চুক্তি করেছিল। ==দখল-পরবর্তী সংস্কৃতি== দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে জাপানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহত থাকে, যার অনেকটাই আসে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ে। সেই সময় বহু এলাকায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান সংগীত ও চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে এক নতুন জাপানি শিল্পী প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে, যারা পশ্চিমা ও স্থানীয় উভয় প্রভাবকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এই সময় জাপান নিজেও সাংস্কৃতিক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা জাপানি "কাইজু" (দানব চলচ্চিত্র), "অ্যানিমে" (কার্টুন), "মাঙ্গা" (কমিক বই) ও অন্যান্য আধুনিক জাপানি সংস্কৃতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ও ইউকিও মিশিমার মতো জাপানি সাহিত্যিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দখলদারিত্ব শেষে আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে যান গল্প ও নানা সামগ্রী নিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের সৈন্যরা জাপান থেকে মার্শাল আর্টসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ধারাও বহন করেন। ==টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯)== *১৯৫২: মিত্রবাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান (২৮ এপ্রিল)। *১৯৫৪: জাপান আত্মরক্ষাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। *১৯৫৫: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠিত হয়। *১৯৫৬: জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। *১৯৬০: দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৬৪: টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। শিনকানসেন ট্রেন চলাচল শুরু করে। *১৯৬৫: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিন’ইচিরো তোমোনাগা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৬৮: পারমাণবিক রণতরী "এন্টারপ্রাইজ" বিতর্কের মধ্যে সাসেবোতে পৌঁছে। "ইটাই-ইটাই" রোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। একজন ব্যক্তি পুলিশ সেজে ৩০ কোটি ইয়েন চুরি করে (২০০৩ সাল পর্যন্ত আটক নয়)। *১৯৬৯: প্রধানমন্ত্রী আইসাকু সাতো ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর বৈঠক। ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর তারিখ ১৯৭২ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। *১৯৭০: ওসাকায় বিশ্ব মেলা (এক্সপো ৭০) অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৭১: ইয়েনের মান পরিবর্তন করে ভাসমান বিনিময় হারে আনা হয়, যার ফলে স্বল্পমেয়াদী মন্দা দেখা দেয়। *১৯৭২: ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। *১৯৮০: বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক হয়ে ওঠে। ইয়োমিউরি জায়ান্টস-এর সাদাহারু ওহ খেলা থেকে অবসর নেন। *১৯৮১: কেনিচি ফুকুই রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৮২: তোহোকু শিনকানসেন ওমিয়া থেকে মোরিওকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। *১৯৮৩: ইজু দ্বীপপুঞ্জের মিয়াকেজিমায় ওয়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে। কিতোরা কোফুনে জেনবুর রঙিন চিত্র আবিষ্কৃত হয়। কাকুয়েই তানাকা চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। *১৯৮৪: মিষ্টির কোম্পানি ইজাকি গ্লিকোর সভাপতিকে অপহরণ করে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ও ১০০ কেজি সোনার মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তবে তিনি পালিয়ে আসেন। পরে একজন চাঁদাবাজ কোম্পানির পণ্য বিষাক্ত করার হুমকি দিয়ে ৬০ মিলিয়ন ইয়েন (পরে ১২০ মিলিয়ন ইয়েন) দাবি করে। অপরাধী ধরা পড়েনি। নতুন মুদ্রা চালু হয়, যাতে ১০,০০০ ইয়েন নোটে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ৫,০০০ ইয়েন নোটে ইনাজো নিতোবে ও ১,০০০ ইয়েন নোটে নাটসুমে সোসেকির ছবি ছাপা হয়। *১৯৮৫: জাপানে প্রথম এইডস রোগী আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয়। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ ওমিতাকা-ইয়ামায় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে ৫২০ জন নিহত ও মাত্র ৪ জন বেঁচে যান—এই দুর্ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড গড়ে। *১৯৮৬: ইজু ওওশিমার মিহারায়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে, তবে আগেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। *১৯৮৭: জাপান জাতীয় রেলওয়ে বেসরকারি খাতে যায় ও সাতটি কোম্পানিতে ভাগ হয়—ছয়টি আঞ্চলিক এবং একটি মালবাহী। অভিনেতা ইউজিরো ইশিহারা মারা যান। *১৯৮৮: হোক্কাইডো ও হোনশুকে সংযুক্ত করা সেইকান টানেল নির্মিত হয়। মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স-এর সাবমেরিন "নাদাশিও" একটি মাছ ধরার জাহাজ "দাই ইচি ফুজিমারু"-র সঙ্গে ধাক্কা খায়। *১৯৮৯: ৭ জানুয়ারি শোওয়া সম্রাট মারা যান। পরদিন আকিহিতো সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নতুন যুগের নাম ঘোষণা করা হয়—"হেইসেই"। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} 3t11wwkvbhce7agsrwxn8rudvg9gl5q 84901 84900 2025-06-19T06:47:52Z Asikur.rahman25 11164 /* দখল পরবর্তী রাজনীতি */ 84901 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে ১৯৫২ সালে মিত্রশক্তির দখল শেষ হওয়ার পরের সময়কালটি তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে, জাপান আবারও বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি এটি একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবেও গড়ে ওঠে। ==দখল পরবর্তী রাজনীতি== সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির শর্ত কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল মিত্রশক্তির দখলের অবসান ঘটে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সব এলাকা জাপানের দখলে ছিল, তার অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সাখালিন। এছাড়াও, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপের উপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। যেগুলো আগে জাতিপুঞ্জের অধীনে জাপান পরিচালনা করত। নতুন এই চুক্তি জাপানকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও দেয়। একই দিনে, জাপান সান ফ্রান্সিসকো চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এতে শিগেরু ইয়োশিদা ও হ্যারি ট্রুম্যান এমন একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে জাপানে ঘাঁটি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। জাপান পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আগেই, সরকার প্রায় ৮০,০০০ ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করে। এদের অনেকেই পূর্বের রাজনৈতিক বা সরকারি পদে ফিরে যান। এরপর সামরিক ব্যয় সীমিতকরণ এবং সম্রাটের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে অক্টোবর ১৯৫২ সালের প্রথম দখল-পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যায় বড় ধরনের পতন ঘটে। কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনের পর, ১৯৫৪ সালে একটি বেসামরিক পরিচালকের অধীনে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। এই সময়ে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা এবং কাছাকাছি কোরিয়ায় চলমান গরম যুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সাম্যবাদ দমন এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নিরুৎসাহিত করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দলগুলোর বারবার বিভাজন ও একের পর এক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের কারণে রক্ষণশীল শক্তিগুলো একত্রিত হয়। তারা লিবারেল পার্টি (জিয়ুতো) এবং জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি (নিপ্পন মিনশুতো) যা পূর্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে গঠিত হয়েছিল একত্র করে ১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জিয়ু-মিনশুতো; এলডিপি) গঠন করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই দলই ক্ষমতায় ছিল। এরপর একটি নতুন সংখ্যালঘু সরকার তাদের প্রতিস্থাপন করে। এলডিপির নেতৃত্বে ছিলেন সেইসব অভিজাত ব্যক্তি যারা জাপানকে পরাজয় ও দখলকাল অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলেন। এই দলে যোগ দেন সাবেক আমলারা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়পাস ব্যক্তিরা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জাপান সোশালিস্ট পার্টি গঠন করে। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে কোমেইতো (স্বচ্ছ সরকার পার্টি), যা ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়। এটি ছিল সোকা গাক্কাই (মানবিক মূল্য সৃষ্টির সমাজ) নামক বৌদ্ধ মতাদর্শভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা। কোমেইতো জাপানি ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় এবং শহুরে শ্রমিক, গ্রাম থেকে আসা বাসিন্দা ও বহু নারীকে আকর্ষণ করে। জাপান সোশালিস্ট পার্টির মতো, কোমেইতো-ও ধাপে ধাপে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন ও বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে কোমেইতো ও ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চুক্তি মেনে নেয়। এমনকি ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি একটি সীমিত পরিসরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পক্ষেও সমর্থন জানায়। জাপান সোশালিস্ট পার্টিকেও তাদের পূর্বের কঠোর সামরিকবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর চাপ অব্যাহত রাখে, যাতে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GNP) ১ শতাংশের বেশি করে। এই নিয়ে ডায়েটে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধিতা মূলত সংখ্যালঘু দল বা জনগণ থেকে নয়, বরং অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সচেতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আসে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েইকে ১৯৭৪ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে লকহিড ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার করে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে এলডিপির বিভক্ত রাজনীতি ডায়েটে ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৮০ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির হঠাৎ মৃত্যুতে দলের প্রতি সহানুভূতি ভোট দেখা যায়। এর ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুজুকি জেনকো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি এক পাঠ্যবই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতে, বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা এবং গুরুতর আর্থিক সমস্যার কারণে সুজুকির মন্ত্রিসভা পতনের মুখে পড়ে, যেটি গঠিত হয়েছিল এলডিপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে । ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে নাকাসোনে ইয়াসুহিরো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক ছিলেন এবং তানাকা ও সুজুকি গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে প্রতিরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে নাকাসোনেকে আবারও এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা জনমত জরিপে অস্বাভাবিকভাবে ৫০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পায়। বিপরীতে, বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশ করার সময় নাকাসোনে ডায়েট ও জাতির মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখেন। যদিও ১৯৮৩ সালে তানাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও ১৯৮০ এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি দলীয় কাঠামোর মাধ্যমে পর্দার আড়ালে শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তাশীল নাকাসোনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর ১৯৮৭ সালে নাকাসোনের মেয়াদ শেষ হয়। তার দ্বিতীয় দুই বছরের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। এটি ছিল আধুনিক জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নাকাসোনের অবসরের মাত্র ১৫ মাস আগে এলডিপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ৫১২টি আসনের মধ্যে ৩০৪টি জিতে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এমন শক্ত অবস্থান সত্ত্বেও সরকার নানা সংকটের মুখে পড়ে। জাপানের সম্পদমূল্য বুদবুদের কারণে জমির দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বেকারত্ব ৩.২ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ে এবং এলডিপির প্রস্তাবিত কর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও ২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে, যেদিন নাকাসোনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকেশিতা নোবোরুকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, সেদিনই টোকিওর শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়নের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যার প্রভাব ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে। ==অর্থনীতি== এলডিপি সরকার জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জাপানি শিল্পকে বিদেশে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জাপানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই কৌশলগুলো এবং প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা মিলিয়ে জাপানের অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সাল নাগাদ জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসসহ বহু পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হতে থাকে। শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এর দশকে মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা চলতে থাকে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক অনেকের মতে জাপানের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় আবির্ভাবের প্রতীক। সেই সময়ে শিনকানসেন হাই স্পিড রেলসহ নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়ন বিশ্বকে দেখানো হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত জাপানে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে ১৯৭৩ সালে ওপেক চার গুণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে জাপান তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তেলের জন্য জাপান প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপানে মন্দা দেখা দেয়। ==পররাষ্ট্রনীতি== আর্থিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় অবস্থানের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-এর দশকে জাপান বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে। যেমন, ১৯৫৬ সালে জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৫ সালে জার্মানির সঙ্গে জাপান নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা মূলত অর্থনৈতিক বিনিময়কে কেন্দ্র করে ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ১৯৬০ সালে, যখন জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন হয়। নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাপানের সামরিক রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে। এতে জাপানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ, রাস্তার বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চুক্তিটি ডায়েটে অনুমোদনের এক মাস পরেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্র এবং নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও, ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দখল থেকে জাপানের সার্বভৌমত্বে ফিরে আসে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান গণচীন প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং যখন সেই জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে নির্বাসনে যায়, তখনও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এই নীতির ফলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী জাপানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। পরে যখন চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে, তখন ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে হঠাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন (যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত) জাপানকে চমকে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালে টোকিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল ছিল। তবে ১৯৫৬ সালের ১৯ অক্টোবর একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, যা যুদ্ধের অবসান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। প্রধান বিরোধের বিষয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকা অঞ্চল, যেগুলো জাপান 'উত্তর অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করে। এই এলাকাগুলো হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুটি দ্বীপ—এতোরোফু ও কুনাশিরি—এছাড়া শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ (হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে)। এই দ্বীপগুলো জাপানের আত্মসমর্পণের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েই (১৯৭২–৭৪) সরকারের সময়ে জাপান একটু দৃঢ়তর হলেও নীরবভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। তানাকার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও সেগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরের সময় জনরোষ ও দাঙ্গার সম্মুখীন হন, যা দীর্ঘদিনের জাপানের বিরুদ্ধ মতামতের প্রতিফলন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মধ্যে একাধিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা। জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে নাকাসোনের কঠোর মনোভাব কিছু মার্কিন কর্মকর্তার কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। তবে জাপান ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তা জনপ্রিয় ছিল না। জাপানকে "অডুব্ব ডুবে না যাওয়া বিমানবাহী রণতরী" হিসেবে বর্ণনা করা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করা, এবং সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মতো মন্তব্য দেশে ও বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারপরও ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জাপানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, যা নাকাসোনের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে যায়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা ইয়েনের মূল্য বাড়ায় এবং মার্কিন পণ্যের আমদানি সহজ করতে বাজার আরও উন্মুক্ত করে। জাপান সরকার নিজেদের মূল শিল্পগুলোকে সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। টোকিও এই সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তারা নিজেদের শিল্প নীতি রক্ষা করে এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হ্রাসে খুবই অনিচ্ছুক ছিল। তারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব অল্প কিছু চুক্তি করেছিল। ==দখল-পরবর্তী সংস্কৃতি== দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে জাপানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহত থাকে, যার অনেকটাই আসে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ে। সেই সময় বহু এলাকায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান সংগীত ও চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে এক নতুন জাপানি শিল্পী প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে, যারা পশ্চিমা ও স্থানীয় উভয় প্রভাবকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এই সময় জাপান নিজেও সাংস্কৃতিক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা জাপানি "কাইজু" (দানব চলচ্চিত্র), "অ্যানিমে" (কার্টুন), "মাঙ্গা" (কমিক বই) ও অন্যান্য আধুনিক জাপানি সংস্কৃতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ও ইউকিও মিশিমার মতো জাপানি সাহিত্যিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দখলদারিত্ব শেষে আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে যান গল্প ও নানা সামগ্রী নিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের সৈন্যরা জাপান থেকে মার্শাল আর্টসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ধারাও বহন করেন। ==টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯)== *১৯৫২: মিত্রবাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান (২৮ এপ্রিল)। *১৯৫৪: জাপান আত্মরক্ষাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। *১৯৫৫: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠিত হয়। *১৯৫৬: জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। *১৯৬০: দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৬৪: টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। শিনকানসেন ট্রেন চলাচল শুরু করে। *১৯৬৫: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিন’ইচিরো তোমোনাগা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৬৮: পারমাণবিক রণতরী "এন্টারপ্রাইজ" বিতর্কের মধ্যে সাসেবোতে পৌঁছে। "ইটাই-ইটাই" রোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। একজন ব্যক্তি পুলিশ সেজে ৩০ কোটি ইয়েন চুরি করে (২০০৩ সাল পর্যন্ত আটক নয়)। *১৯৬৯: প্রধানমন্ত্রী আইসাকু সাতো ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর বৈঠক। ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর তারিখ ১৯৭২ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। *১৯৭০: ওসাকায় বিশ্ব মেলা (এক্সপো ৭০) অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৭১: ইয়েনের মান পরিবর্তন করে ভাসমান বিনিময় হারে আনা হয়, যার ফলে স্বল্পমেয়াদী মন্দা দেখা দেয়। *১৯৭২: ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। *১৯৮০: বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক হয়ে ওঠে। ইয়োমিউরি জায়ান্টস-এর সাদাহারু ওহ খেলা থেকে অবসর নেন। *১৯৮১: কেনিচি ফুকুই রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৮২: তোহোকু শিনকানসেন ওমিয়া থেকে মোরিওকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। *১৯৮৩: ইজু দ্বীপপুঞ্জের মিয়াকেজিমায় ওয়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে। কিতোরা কোফুনে জেনবুর রঙিন চিত্র আবিষ্কৃত হয়। কাকুয়েই তানাকা চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। *১৯৮৪: মিষ্টির কোম্পানি ইজাকি গ্লিকোর সভাপতিকে অপহরণ করে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ও ১০০ কেজি সোনার মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তবে তিনি পালিয়ে আসেন। পরে একজন চাঁদাবাজ কোম্পানির পণ্য বিষাক্ত করার হুমকি দিয়ে ৬০ মিলিয়ন ইয়েন (পরে ১২০ মিলিয়ন ইয়েন) দাবি করে। অপরাধী ধরা পড়েনি। নতুন মুদ্রা চালু হয়, যাতে ১০,০০০ ইয়েন নোটে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ৫,০০০ ইয়েন নোটে ইনাজো নিতোবে ও ১,০০০ ইয়েন নোটে নাটসুমে সোসেকির ছবি ছাপা হয়। *১৯৮৫: জাপানে প্রথম এইডস রোগী আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয়। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ ওমিতাকা-ইয়ামায় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে ৫২০ জন নিহত ও মাত্র ৪ জন বেঁচে যান—এই দুর্ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড গড়ে। *১৯৮৬: ইজু ওওশিমার মিহারায়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে, তবে আগেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। *১৯৮৭: জাপান জাতীয় রেলওয়ে বেসরকারি খাতে যায় ও সাতটি কোম্পানিতে ভাগ হয়—ছয়টি আঞ্চলিক এবং একটি মালবাহী। অভিনেতা ইউজিরো ইশিহারা মারা যান। *১৯৮৮: হোক্কাইডো ও হোনশুকে সংযুক্ত করা সেইকান টানেল নির্মিত হয়। মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স-এর সাবমেরিন "নাদাশিও" একটি মাছ ধরার জাহাজ "দাই ইচি ফুজিমারু"-র সঙ্গে ধাক্কা খায়। *১৯৮৯: ৭ জানুয়ারি শোওয়া সম্রাট মারা যান। পরদিন আকিহিতো সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নতুন যুগের নাম ঘোষণা করা হয়—"হেইসেই"। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} he46gt7jmyh053hgoxino5rl8gqj1sx রন্ধনপ্রণালী:হালিম 104 26762 84845 83103 2025-06-18T14:49:27Z RDasgupta2020 8748 /* রন্ধনপ্রণালী */ 84845 wikitext text/x-wiki {{রন্ধনপ্রণালী সারাংশ | রন্ধনপ্রণালী বিভাগ = মাংস রন্ধনপ্রণালী | পরিবেশন = পরিমান অনুসারে, কমপক্ষে ৬-৭ জন। | তৈরির সময় = প্রায় ১-২ ঘন্টা | কষ্টসাধ্য = 5 | চিত্র = }} {{রন্ধনপ্রণালী}} <center><big>'''হালিম'''</big></center> রমজান মাস আর হালিম যেন সমার্থক। রোজা অর্থাৎ উপোস ভেঙে, নমাজ পড়ে ইফতার শুরু হয়। নানা ধরনের খাবার ও পানীয়ের সঙ্গে থাকে হালিমও। এই সময়টা এলেই খোঁজ পড়ে ভাল হালিমের। অনেকেই ডাল গোস্ত কিংবা খিচুড়ির সঙ্গে হালিমের মিল খুঁজে পান। কিন্তু তাদের সঙ্গে হালিমের বিস্তর ফারাক রয়েছে। ইতিহাস বলছে, এই পদটির জন্ম আসলে আরবে। সেখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে হালিম এসে পৌঁছয় এ দেশে। ভারতে কে প্রথম হালিম খাওয়ার চল শুরু করেছিলেন সে নিয়ে বিস্তর ‘ভাগাভাগি’ রয়েছে। স্থানভেদে বদলেছে হালিমের উপকরণ, নাম এবং স্বাদ। ==উপকরন== ===প্রধান উপকরন=== {| class="wikitable" |- ! উপকরণ !! পরিমাণ |- | পাঁঠার মাংস (হাড় ছাড়া) || ৫০০ গ্রাম |- | ছোলার ডাল || আধ কাপ |- | মুগ ডাল || আধ কাপ |- | মুসুর ডাল || আধ কাপ |- | বিউলির ডাল || আধ কাপ |- | গম (পরিবর্তে ডালিয়া) || আধ কাপ |- | গোবিন্দভোগ চাল || আধ কাপ |- | জিরে গুঁড়ো || ২ টেবিল চামচ |- | ধনে গুঁড়ো || ২ টেবিল চামচ |- | হলুদ গুঁড়ো || ১ টেবিল চামচ |- | লঙ্কা গুঁড়ো || আধ চা-চামচ |- | সাদা তেল || ২ কাপ |- | ঘি || ১ কাপ |- | পেঁয়াজ || ৫০০ গ্রাম |- | পুদিনা পাতা || ১০০ গ্রাম |- | আদা || ১০০ গ্রাম |- | রসুন || ২০০ গ্রাম |- | নুন || স্বাদমতো |} ===হালিমের মশলা বানানোর উপকরন=== {| class="wikitable" |- ! উপকরণ !! পরিমাণ |- | তেজপাতা || ১টি |- | জয়িত্রী || ১টি |- | জায়ফল || অর্ধেক |- | শুকনো লঙ্কা || ১টি |- | ধনে || ১ চা-চামচ |- | জিরে || ১ চা-চামচ |- | দারচিনির টুকরো || ৩-৪টি |- | লবঙ্গ || ৫টি |- | বড় এলাচ || ১টি |- | ছোট এলাচ || ৫টি |- | তারামৌরি || ১টি |} == রন্ধনপ্রণালী == #প্রথমে মশলা বানানোর জন্য শুকনো খোলায় ১টি তেজপাতা, ১টি জয়িত্রী, অর্ধেক জায়ফল, ১টি শুকনো লঙ্কা, ১ চা-চামচ ধনে, ১ চা-চামচ জিরে, ৩-৪টি দারচিনির টুকরো, ৫টি লবঙ্গ, ১টি বড় এলাচ, ৫টি ছোট এলাচ, ১টি তারামৌরি— ভাল করে নাড়াচাড়া করে মিক্সিতে গুঁড়িয়ে নিন। #প্রথমে সব রকম ডাল, দালিয়া ও চাল শুকনো খোলায় হালকা করে নাড়াচাড়া করে নিন। #বাটা মশলা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে সমস্তটা মিক্সিতে দিয়ে গুঁড়ো করে ফেলুন। তবে একেবারে মিহি গুঁড়ো করার প্রয়োজন নেই। #এ বার চাল-ডাল-দালিয়ার গুঁড়ো ঈষদুষ্ণ জলে ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা দুয়েক। #মাংসটা ভাল করে ধুয়ে নিন। তার পর মাংসে আদাবাটা, রসুনবাটা, একটু নুন, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো ও সামান্য হলুদ গুঁড়ো মাখিয়ে রেখে দিন ঘণ্টাখানেক। #এ বার আসল রান্না শুরু করার পালা। হালিম রাঁধতে হলে বড় হাঁড়ি থাকা চাই। কড়াই বা অন্য পাত্রে হালিম রেঁধে মজা নেই। #বড় হাঁড়িতে তেল এবং ঘি গরম করুন। তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি দিন। ভাল করে ভেজে নিয়ে আদাবাটা, রসুনবাটা দিয়ে কষিয়ে নিন। #সব ধরনের গুঁড়ো মশলা দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। এ বার মাংসটা দিয়ে দিন। আঁচ কমিয়ে, হাঁড়ির মুখ ঢাকা দিয়ে মাংস সেদ্ধ হতে দিন। #মিনিট দশেক পরে ভিজিয়ে রাখা চাল-ডাল-দালিয়ার মিশ্রণ ঢালুন। ভাল করে নাড়াচাড়া করুন। গ্যাসের আঁচ একেবারে কমিয়ে রাখবেন। কিছু ক্ষণ রান্না করার পরে হালিমের মশলাটা দিয়ে দিন। #অন্য একটি কড়াইয়ে সামান্য তেল নিন। গরম হলে তার মধ্যে দিয়ে দিন রসুন কুচি। ভাল করে ভেজে সেদ্ধ হওয়া ডালের উপর থেকে তা ছড়িয়ে দিন। হালকা আঁচে আস্তে আস্তে ফোটান আধ ঘণ্টা ধরে। #উপর থেকে ভেজে রাখা পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা কুচি, পাতিলেবুর রস, ধনেপাতা এবং পুদিনাপাতা ছড়িয়ে দিন।<span style=color:red;><center>'''গরম গরম পরিবেশন করুন হালিম'''</center></span> ==তথ্যসূত্র== *[https://www.anandabazar.com/recipes/how-to-cook-traditional-haleem-at-home-dgtl/cid/1585469 হালিমের জন্য হিল্লি-দিল্লি ছুটতে হবে না! সহজেই তা বানিয়ে ফেলতে পারেন, রইল প্রণালী] [[বিষয়শ্রেণী:রন্ধনপ্রণালী]] [[বিষয়শ্রেণী:মাংস রন্ধনপ্রণালী]] rk2xcx9lqncsfnh1upxmtx0db3j9cgm ব্যবহারকারী আলাপ:Fagun chy 3 27176 84827 2025-06-18T12:40:06Z KanikBot 8129 স্বাগতম! 84827 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১২:৪০, ১৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) rkltyhwzeo8zek5vdpp01w40ohka3mg ব্যবহারকারী আলাপ:阿南之人 3 27177 84830 2025-06-18T13:40:22Z KanikBot 8129 স্বাগতম! 84830 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৩:৪০, ১৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) 18ucr9q641rerkgx67shpxpprwly8mz আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় 0 27178 84838 2025-06-18T14:02:19Z Jonoikobangali 676 "মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনুবর্তী রূপে বাংলা কাব্যে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৩৮ সালে কলকাতার খিদিরপুরে তাঁর জন্ম। শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয..." দিয়ে পাতা তৈরি 84838 wikitext text/x-wiki মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনুবর্তী রূপে বাংলা কাব্যে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৩৮ সালে কলকাতার খিদিরপুরে তাঁর জন্ম। শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয়ে যান এবং আর্থিক কষ্ট ও পারিবারিক অশান্তি ভোগ করেন। ১৯০৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। হেমচন্দ্র ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং রসজ্ঞ সমালোচক। মধুসূদন তাঁকে ‘A real B.A.’ বলে সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। হেমচন্দ্রের গভীর স্বদেশপ্রেম, ধর্মানুরাগ, জাতীয়তাবোধ প্রভৃতি গুণ তাঁর রচনায় প্রকাশ পেয়েছে। উনিশ শতকের ভাবধারাকে জাতীয় জীবনের এবং হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য দান করে বাঙালির জীবনাদর্শকে নিয়ন্ত্রিত করার অভিলাষও তাঁর সাহিত্যরচনার অন্যতম প্রেরণা বলে মনে করা যেতে পারে। হেমচন্দ্র অল্পবয়স থেকেই কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর কোনও কোনও রচনা সেকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য হয়েছিল। হেমচন্দ্রের কাব্য ''চিন্তা তরঙ্গিনী'' (১৮৬১) তাঁর বন্ধু রামকমল ভট্টাচার্যের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে রচিত। এরপর স্বদেশপ্রেমের আবেগ নিয়ে কাল্পনিক ইতিহাসের পটভূমিকায় ''বীরবাহু কাব্য'' (১৮৬৪) নামে একটি আখ্যানকাব্য রচনা করেন তিনি। তাঁর ''আশাকানন'' (১৮৭৬) একটি রূপকাশ্রিত তত্ত্বমূলক কাব্য। দান্তে আলিগিয়েরির ''Divina Commedia'' কাব্যের অনুকরণে হেমচন্দ্র ''ছায়াময়ী'' নামে একটি কাব্য রচনা করেন। এরপর পৌরাণিক চণ্ডীতত্ত্বের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের বিবর্তনবাদ মিশ্রিত করে ''দশমহাবিদ্যা'' (১৮৮২) নামে একটি অভিনব কাব্য রচনা করেন তিনি। কাব্যটির শিল্পসৌন্দর্য প্রশংসিত হয়নি, কিন্তু ভাব-কল্পনার অভিনবত্ব বাঙালির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। হেমচন্দ্রের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি তাঁর ''বৃত্রসংহার কাব্য'' (প্রথম খণ্ড ১৮৭৫, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৭৭)। এটি প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁকে মধুসূদনের প্রতিদ্বন্দ্বী কবি রূপে অভ্যর্থনা করা হয়। দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গে বৃত্রের বিরোধের কাহিনি বেদে, পুরাণে, এমনকি প্রাচীনতম ইন্দো-ইরানীয় সাহিত্যেও আছে। হেমচন্দ্র সেই কাহিনি অবলম্বনে বৃত্র কর্তৃক স্বর্গ বিজয়, দেবতাদের লাঞ্ছনা, দধীচির অস্থি দ্বারা বজ্র নির্মাণ এবং বজ্রাঘাতে বৃত্রের মৃত্যু ও স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধার প্রভৃতি প্রসঙ্গ বর্ণনা করে ধর্মের জয় ও অধর্মের পরাজয় দেখিয়েছেন। এই বিশাল মহাকাব্য হেমচন্দ্রের অতুলনীয় কীর্তি। এছাড়া তিনি বহু ইংরেজি কবির বিখ্যাত কবি অনুবাদ করেন এবং নিজেও বহু খণ্ড কবিতা রচনা করেন। তাঁর অপর দুই কাব্যগ্রন্থ হল ''কবিতাবলী'' (প্রথম খণ্ড ১৮৭০, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৮০) এবং ''বিবিধ কবিতা'' (১৮৯৩)। তাঁর অন্ধত্বের বেদনা-করুণ অনুভূতি প্রকাশ পায় ''চিত্তবিকাশ'' (১৮৯৮) কাব্যে। কাব্যগ্রন্থ ছাড়া হেমচন্দ্র উইলিয়াম শেকসপিয়রের ''দ্য টেম্পেস্ট'' ও ''রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট'' অবলম্বনে রচনা করেন যথাক্রমে ''নলিনীবসন্ত নাটক'' (১৮৭০) ও ''রোমিও-জুলিয়েত'' (১৮৯৫)। মহাকাব্য-রচয়িতা রূপে হেমচন্দ্র একদা মধুসূদনের সমকক্ষ বলে গণ্য হতেন। মধুসূদন ঐতিহ্যবিরোধী ভাবকল্পনা অবলম্বনে দেবচরিত্রের হীনতা দেখিয়েছিলেন এবং রাক্ষস রাবণকে রাম-লক্ষ্মণের তুলনায় মহত্তর করেছিলেন—এই অভিযোগে অনেকে হেমচন্দ্রের কাব্যকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে করতেন। কিন্তু আধুনিক শিল্পবিচারের পথ ধরে হেমচন্দ্রের মহাকাব্যে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ''বৃত্রসংহার কাব্য''-এর কাহিনির বিশালতা মহাকাব্যের অনুরূপ, আদর্শ মহৎ এবং মহান চরিত্র সৃষ্টির প্রচেষ্টাও প্রশংসনীয়। কিন্তু হেমচন্দ্র মধুসূদনের সমতুল্য উৎকর্ষ দেখাতে পারেননি। রাবণ বৃত্র অপেক্ষা মহত্তর চরিত্র, ইন্দ্র চরিত্রের তুলনায় রামচন্দ্রের চরিত্র স্পষ্টতর, জয়ন্ত অপেক্ষা লক্ষ্মণ মহান, ইন্দ্রজিতের গুণাবলির সামান্যতম প্রকাশও রুদ্রপীড়ের মধ্যে নেই। সীতার করুণ অবস্থার সঙ্গে শচীর বেদনার তুলনা হয় না, আবার প্রমীলার প্রখর দীপ্তি ইন্দুমতীকে অত্যন্ত ম্লান করে দিয়েছে। মধুসূদনের মতো চরিত্রসৃষ্টির প্রতিভা হেমচন্দ্রের ছিল না। রচনাপদ্ধতিতেও মধুসূদনের শ্রেষ্ঠত্ব। হেমচন্দ্র অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করতে পারেননি, মিলবিহীন পয়ার লিখেছিলেন। তাঁর কাহিনির বন্ধন অত্যন্ত শিথিল। বৃত্রের পারিবারিক প্রসঙ্গ, ঐন্দ্রিলার ভোগস্পৃহা ও আত্মাভিমান, বৃত্রের দম্ভ প্রকাশ, ঘটনা বর্ণনায় অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস এবং গীতিকবি-সুলভ ভাবালুতায় মহাকাব্যের উপযুক্ত গাম্ভীর্য, সংহতি ও সমুন্নতি প্রকাশ পায়নি। প্রকৃতপক্ষে হেমচন্দ্রের মূল প্রতিভায় মহাকবি-সুলভ সংযম ও কল্পনার সমৃদ্ধি ছিল না। হেমচন্দ্র আখ্যানকাব্যেও বিস্ময়কর কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। ''বীরবাহু কাব্য''-এর আখ্যান মনোরম, কিন্তু রচনা শিল্পসম্মত নয়। “হিন্দুকুলতিলক বীরবৃন্দ স্বদেশরক্ষার্থ কি প্রকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন” তা প্রদর্শনের জন্য লেখক একটি কাল্পনিক ইতিহাস রচনা করেন। নায়ক মুসলমান অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করলেন। এই নায়ক রোম্যান্টিকও বটে। রীতিমতো উপকথার ভঙ্গিতে গল্পটিকে সাজাবার জন্য রচনায় সংহতি নেই, চরিত্রগুলিও ফুটে ওঠেনি। নায়কের জীবনাদর্শ ছিল: <poem> :: লক্ষ তরী ভাসাইব :: ম্লেচ্ছ দেশ মজাইব ::: বাণিজ্য করিব ছারখার :: তোর সিংহাসন পাত :: ম্লেচ্ছকুল ভস্মসাৎ ::: প্রেয়সীরে করিব উদ্ধার। </poem> স্বদেশপ্রেমের এই ভাবাবেগ কাব্যটিকে উদ্বেল করেছে, কিন্তু রসসৃষ্টির সহায়ক হয়নি। বীরবাহু চরিত্রের সূচনাটি ''মেঘনাদবধ কাব্য''-এর ইন্দ্রজিৎ চরিত্রের অনুরূপ। কিন্তু দ্বন্দ্বযুদ্ধ, দিল্লির সিংহাসন অধিকার ও পত্নী হেমলতার উদ্ধার প্রভৃতি ঘটনা আখ্যানরস ও কাব্যরসকে উপভোগ্য করতে দেয়নি। ''আশাকানন'' সাঙ্গরূপক কাব্য। দশটি ‘কল্পনা’-য় লঘু ত্রিপদী ছন্দে মানবপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য গল্পচ্ছলে রূপক চরিত্রের মাধ্যমে বলা হয়েছে। কিন্তু এতে কোনও উল্লেখযোগ্য কবিত্বশক্তির পরিচয় পাওয়া যায় না। দান্তের মূল কাব্যের অনুসরণে ''ছায়াময়ী'' সাতটি ‘পল্লব’-এ রচিত। নরকে পাপীদের বর্ণনা বেশ কৌতুকপূর্ণ, কিন্তু রসের কোনও উৎকর্ষ নেই। বস্তুত আখ্যানকাব্য রচনায় যে বস্তুনিষ্ঠা ও পরিমিতিবোধ প্রয়োজন হেমচন্দ্রের কবিপ্রতিভায় তার কিছু অভাব ছিল। হেমচন্দ্রের কবিত্বের সার্থক পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর গীতিকবিতায়। তিনি বহু গীতিকবিতা রচনা করে কল্পনাশক্তি ও সরস প্রাণের পরিচয় দিয়েছেন। মৌলিক গীতিকবিতা রচনা, ইংরেজি লিরিক কবিতার অনুবাদ এবং ব্যঙ্গাত্মক কবিতা রচনায় তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। মৌলিক গীতিকবিতায় স্বদেশপ্রেমের আবেগ, সৌন্দর্যচেতনা, জীবনবোধ ও আশাবাদের পরিচয় দেন তিনি। ‘যমুনাতটে’, ‘লজ্জাবতী’, ‘জীবন মরীচিকা’, ‘হতাশের আক্ষেপ’, ‘প্রিয়তমার প্রতি’ প্রভৃতি কবিতায় তিনি সাবলীল ভঙ্গিতে নিজের অনুভূতিকে বাঙ্ময় করে তুলেছেন। ‘ভারত সঙ্গীত’ হেমচন্দ্রের একটি বিখ্যাত কবিতা। এতে স্বদেশপ্রেমের উদ্বোধনের জাগরণমন্ত্র ধ্বনিত হয়েছে। ‘কাশীদৃশ্য’, ‘মণিকর্ণিকা’, ‘বিশ্বশ্বরের আরতি’ প্রভৃতি কবিতায় হৃদয়ের ভক্তিভাব প্রকাশ পেয়েছে। কবির সৌন্দর্যবোধের পরিচয় ফুটেছে ‘শিশুর হাসি’, ‘গঙ্গার মূর্তি’, ‘বিন্ধ্যগিরি’, ‘পদ্মফুল’ প্রভৃতি কবিতায়। লিরিক মাধুর্যে হৃদয়ভাব প্রকাশ করার দক্ষতায় হেমচন্দ্র তাঁর সমকালে অদ্বিতীয় ছিলেন। হেমচন্দ্রের অনূদিত কবিতাগুলি বাঙালি পাঠককে ইংরেজি কবিতার রসাস্বাদন করিয়েছিল। ড্রাইডেনের ‘আলেকজান্ডার’স ফিস্ট’ অবলম্বনে ‘ইন্দ্রের সুধাপান’, পোপের ‘এলোইসা টু এবেলার্ড’ অবলম্বনে ‘মদন পারিজাত’, লংফেলো-র ‘সাম অফ লাইফ’ অবলম্বনে ‘জীবনসঙ্গীত’, শেলির ‘স্কাইলার্ক’ অবলম্বনে ‘চাতক পক্ষীর প্রতি’, টেনিসনের ‘নিউ ইয়ার’ অবলম্বনে ‘নববর্ষ’ প্রভৃতি অনুবাদমূলক কবিতাগুলি বাঙালি পাঠকসমাজে বেশ আদৃত হয়েছিল। হেমচন্দ্রের ব্যঙ্গাত্মক কবিতাগুলির অধিকাংশই ''কবিতাবলী'' কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে এবং ''বিবিধ কবিতা'' সংকলনে প্রকাশিত হয়। সমসাময়িক সরস ঘটনা অবলম্বনে ব্যঙ্গকবিতা রচনায় তিনি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কাব্যরীতির সার্থক ব্যবহার করেছেন। এই জাতীয় রচনায় হেমচন্দ্র বেশ দক্ষতার পরিচয়ও দিয়েছেন। হাল্কা চালের এই কবিতাগুলি বেশ সুখপাঠ্য। ইংরেজ শাসকদের হিন্দুপ্রীতিকে ব্যঙ্গ করে তিনি লিখেছেন: <poem> :: লাথি কিল পটাপট, :: জুতো চড় চটাচট, ::: লিভর-পীলে ফটাফট আপনি যেতো ফেটে। :: আমরাই করুণায়, :: মলম মাখায়ে গায় ::: রাখিতাম কোলে করে হিন্দুর সন্তানে। ::: সিংহ যেন মৃগে রাখে স্বর্গের বাগানে। </poem> ‘বাজীমাৎ’ কবিতায় কবি ইংরেজের পদলেহনকারী জাতীয়তাবোধ-বর্জিত বাঙালির প্রতি শাণিত ব্যঙ্গ প্রয়োগ করেছেন। ‘বাঙালির মেয়ে’, ‘সাবাস হুজুগ আজব শহরে’, ‘হায় কি হলো’, ‘নেভার নেভার’, ‘দেশলাইয়ের স্তব’ প্রভৃতি কবিতায় হেমচন্দ্রের ভাষাভঙ্গি ও ছন্দ-অলগকারের প্রয়োগে শিল্পীর নৈপুণ্য প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর গীতিকবিতা ও ব্যঙ্গকবিতা মামুলি রচনা নয়। {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} akomu86u4gf9z9hkrgiw1wprxfu1nuo আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস/নবীনচন্দ্র সেন 0 27179 84851 2025-06-18T17:51:31Z Jonoikobangali 676 "বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে মহাকাব্য-রচয়িতা রূপে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবীনচন্দ্র সেনের নামও একদা একযোগে উচ্চারিত হত। ১৮৪৮ সালে চ..." দিয়ে পাতা তৈরি 84851 wikitext text/x-wiki বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে মহাকাব্য-রচয়িতা রূপে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবীনচন্দ্র সেনের নামও একদা একযোগে উচ্চারিত হত। ১৮৪৮ সালে চট্টগ্রামের নবীনচন্দ্রের জন্ম। তাঁর পিতা সেখানে বিখ্যাত উকিল ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই নবীনচন্দ্র উচ্ছ্বাসপ্রবণ ও কাব্যপ্রিয় ছিলেন। কলকাতায় এফ.এ. পড়ার সময় থেকে তিনি গীতিকবিতা রচনা করতে থাকেন। এরপর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মধ্যে দেশপ্রেমের আবেগ লক্ষ্য করে ইংরেজ সরকার তাঁকে পুরী, রাজগির প্রভৃতি নানা জায়গায় বদলির চাকরিতে নিযুক্ত করে। সেই সব স্থানের প্রাচীন স্মৃতি কল্পনাপ্রবণ কবির মনে এক বিশেষ ভাবাবেগ জাগিয়ে তোলে। তিনি গভীর অধ্যবসায়ের সঙ্গে মহাভারত, ভাগবত ইত্যাদি প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থাদি পাঠ করেন। সেই জ্ঞান ও প্রেরণার ফলে তিনি কয়েকটি আখ্যানকাব্য, জীবনীকাব্য এবং তাঁর বিখ্যাত ত্রয়ী মহাকাব্য রচনা করেন। ১৯০৯ সালে নবীনচন্দ্র প্রয়াত হন। মহাকবির সম্মান তিনি জীবদ্দশাতেই পেয়েছিলেন। তাঁর কবিপ্রতিভায় বায়রনের উচ্ছ্বাস, কীটসের সৌন্দর্যপ্রিয়তা এবং শেলির অতীন্দ্রিয়-বিশ্বাসবোধ সঞ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু মিলটন ও ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো সংযম-শাসন ও ক্লাসিক-সংহতি তাঁর কাব্যে বা ব্যক্তিচরিত্রে না থাকায় পরবর্তীকালে তিনি সার্থক মহাকবি রূপে গৃহীত হননি। নবীনচন্দ্র তাঁর জীবনের উপলব্ধি, জ্ঞান ও মনীষার পরিচয় তাঁর রচনার মধ্যে রেখেছেন। তিনি গীতিকবিতা, আখ্যানকাব্য ও মহাকাব্য রচনা করেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গদ্যরচনা ''প্রবাসের পত্র'' ও ''আমার জীবন'' (পাঁচ খণ্ডে) এবং উপন্যাস ''ভানুমতী'' বিশেষ আলোচিত হয় না। কবি হিসেবেই তাঁর সমধিক পরিচিতি। রোম্যান্টিক গীতিকবিতার মাধ্যমেই তাঁর কাব্যরচনার সূত্রপাত। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ''অবকাশরঞ্জিনী'' (প্রথম খণ্ড১৮৭১, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৭৮)। ''পলাশীর যুদ্ধ'' (১৮৭৫), ''ক্লিওপেট্রা'' (১৮৭৭) ও ''রঙ্গমতী'' (১৮৮০) নামে তিনটি আখ্যানকাব্য এবং ''খৃষ্ট'' (১৮৯১), ''অমিতাভ'' (১৮৯৫) ও ''অমৃতাভ'' (১৯০৯) নামে তিনটি জীবনীকাব্য তাঁর রচনা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিকৃতি, চোদ্দ বছরের নিরলস সাধনার ফল তিনটি মহাকাব্য: ''রৈবতক'' (১৮৮৭), ''কুরুক্ষেত্র'' (১৮৯৩) ও ''প্রভাস'' (১৮৯৬)। কাব্য তিনটি পরস্পর সম্পৃক্ত, একই নায়ক এবং একই কাহিনির বিস্তার। তাই এগুলিকে ত্রয়ী কাব্য বলা হয় এবং এগুলির কাব্যবিচারও একই সঙ্গে করা হয়। এছাড়া তিনি ভগবদ্গীতা ও মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর পদ্যানুবাদও করেছিলেন। নবীনচন্দ্রের কবিপ্রতিভায় গীতিকবির আবেগ, রোম্যান্টিক কল্পনার অতিচার ও ভাববিহ্বলতার প্রাধান্য দেখা যায়। ''অবকাশরঞ্জিনী'' উৎকৃষ্ট গীতিকবিতার সংকলন। কবিতাগুলিতে তাঁর ব্যক্তি-আত্মার চমৎকার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রথম খণ্ডে বাইশটি কবিতা সংকলিত হয়েছিল। ‘বিধবাকামিনী’ কবিতায় কবির সহানুভূতির স্পর্শে বিধবার করুণ মূর্তি বেশ জীবন্ত হয়ে উঠেছে: <poem> :: এখনও দেখি যেন নয়নের কাছে, :: দীনভাবে, ম্লানমুখে, বসিয়া দুঃখিনী, :: ভাবিতেছে এ সংসারে কার ভাবে বাঁচে, :: নীরবে বিরলে বসি, কাঁদে অনাথিনী। </poem> ‘পিতৃহীন যুবক’, ‘পতিপ্রেমে দুঃখিনী কামিনী’, ‘হৃদয়-উচ্ছ্বাস’, ‘বিষণ্ণ কমল’ প্রভৃতি কবিতায় কবির ব্যক্তিমনের রোম্যান্টিক রস স্বতঃস্ফূর্ত সাবলীলতায় প্রকাশিত। দ্বিতীয় খণ্ডে তেতাল্লিশটি কবিতা ছিল। যুবরাজ এডওয়ার্ডের ভারত-ভ্রমণ উপলক্ষ্যে লেখা ‘ভারত-উচ্ছ্বাস’ কবিতাটির জন্য কবি ইংল্যান্ড থেকে পঞ্চাশ গিনি পুরস্কার পান। দ্বিতীয় খণ্ডে সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে লেখা এই জাতীয় কিছু কবিতা থাকলেও কবির প্রধান সুর ছিল রোম্যান্টিক ব্যাকুলতা। ‘কেন দেখিলাম’, ‘কি করি’, ‘উত্তর’ প্রভৃতি কবিতায় কবির প্রণয়ানুভূতি, বাসনার আবেগ, সৌন্দর্যের আকর্ষণ, প্রেমের স্বপ্ন ললিত-মধুর ছন্দে প্রকাশ পেয়েছে। এই জাতীয় গীতিকবিতায় নবীনচন্দ্র ছিলেন বিহারীলাল-রবীন্দ্রনাথ গোষ্ঠীর সমগোত্রীয়। নবীনচন্দ্রের রোম্যান্টিক মনের আখ্যানপ্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর আখ্যানকাব্যগুলিতে। এগুলির মধ্যে জাতীয় ভাবের অনুপ্রেরণায় লেখা ''পলাশীর যুদ্ধ'' কাব্যটিই প্রধান। মতিলাল ঘোষের উৎসাহে তিনি বাঙালির স্বাধীনতা হারানোর কাহিনি রচনা করেন। ক্লাইভের অপকৌশল, জগৎশেঠ ও মিরজাফরের ষড়যন্ত্রের সিরাজদ্দৌলার পতনের কাহিনি এই কাব্যের বিষয়। মোহনলালের স্বগতোক্তির মধ্যে কবিমনের পরাধীনতার বেদনাবোধ পরিস্ফুট। এই ঐতিহাসিক আখ্যানকাব্যটি পাঁচ সর্গে বিভক্ত। চরিত্রগুলি খুব সুস্পষ্ট হয়নি। অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসে কবি কাহিনির বন্ধন শিথিল করেছেন এবং পরিমিতিবোধ রক্ষা করতে পারেননি। তাঁর দ্বিতীয় আখ্যানকাব্য ''ক্লিওপেট্রা''। মিশরের দুশ্চরিত্রা রূপসী রানি অনেক রাষ্ট্রনায়কের সর্বনাশ করেছিলেন। নবীনচন্দ্র ইতিহাস-খ্যাত এই নারীকে এই ক্ষুদ্র কাব্যে সহানুভূতির সঙ্গে চিত্রিত করেছেন। কাব্যটি খুব একটা আলোচিত না হলেও, এটির রোম্যান্টিক সৌন্দর্য উপেক্ষণীয় নয়। নবীনচন্দ্রের অপর আখ্যানকাব্য ''রঙ্গমতী'' পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি অঞ্চলের কাহিনি। কাব্যের নায়ক বীরেন্দ্র, নায়িকা কুসুমিকা। কাব্যটির পরিণাম বড়োই করুণ। কবির ভাষায়, “এক বৃন্তে ফুটেছিল দুটি ফুল সংসার-কাননে; একসঙ্গে দুটি ফুল পড়িল ঝরিয়া।” ছয় সর্গে কবি এক অদ্ভুত রোম্যান্টিক কাহিনি রচনা করেছেন ইতিহাসের পটভূমিতে, কিন্তু সে ইতিহাস আগাগোড়াই কল্পনা দিয়ে গড়া। স্কটের ''লেডি অফ দ্য লেক'' কাব্যের প্রভাব এতে আছে, সম্ভবত অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর ''উদাসিনী'' কাব্যের রোম্যান্টিক প্রেমকাহিনি নবীনচন্দ্রের কল্পনাকে উজ্জীবিত করেছিল। কিন্তু নবীনচন্দ্রের কবিস্বপ্ন, হিন্দু-জাতিত্ববোধের অনুভূতি-তীক্ষ্ণতা এবং রোম্যান্টিক প্রেমের ব্যাকুলতা এই কাব্যের বয়নশিল্পে কবির নিজস্ব সাক্ষর মুদ্রিত করে দিয়েছে। ধর্মসাহিত্য চর্চার ফলে নবীনচন্দ্রের মনে মহাপুরুষদের জীবনকাহিনি সম্পর্কে কৌতূহল জেগেছিল। তার ফলে তাঁদের জীবনকথাকে কাব্যকথায় রূপান্তরিত করেছিলেন তিনি। অবতারতত্ত্ব সম্পর্কে কবির মনের এক বিশেষ অনুভূতি এই কাব্যগুলিতে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যথা এগুলির বিশেষ কোনও কাব্যগুণ নেই। ''খৃষ্ট'' কাব্যে বাইবেলের কাহিনির অনুসরণ এবং মানবপ্রেমিক যিশুর মূর্তি অঙ্কনের চেষ্টা করা হয়েছে। বুদ্ধদেবের জীবনকথা ''অমৃতাভ'' কাব্যে বর্ণিত হয়েছে। সিদ্ধার্থে জীবে প্রেম ও ত্যাগের মাহাত্ম্যকে কবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন অবলম্বনে ''অমৃতাভ'' তাঁর শেষ জীবনের রচনা ও মৃত্যুর পরে প্রকাশিত। ভক্তিভাবের উচ্ছ্বাস এই কাব্যের বিশেষত্ব। এই জাতীয় কাব্যগুলিতে ছন্দে লেখা বিবৃতিই প্রধান, শিল্প-কুশলতার একান্ত অভাব। ত্রয়ী কাব্যের জন্যই নবীনচন্দ্রের নিন্দা ও প্রশংসা। কৃষ্ণের পৌরাণিক আখ্যানকে উনিশ শতকের মানবতাবাদে জারিত করে তিনি ত্রয়ী কাব্য রচনা করেন। ''রৈবতক''-এ সুভদ্রাহরণ, ''কুরুক্ষেত্র''-এ অভিমন্যু বধ এবং ''প্রভাস''-এ যদুবংশ ধ্বংস কাব্য তিনটির কেন্দ্রীয় ঘটনা। মহাভারতের কাহিনির সঙ্গে কল্পিত ঘটনা ও চরিত্র জুড়ে নবীনচন্দ্র যে নতুন মহাভারত রচনা করেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেটিকে “The Mahabharata of the Nineteenth Century” বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন। মূল কাহিনির রূপান্তরে বা ব্যতিক্রমে কাব্যগুলির ক্ষতি যত না হয়েছে, তার চেয়ে ক্ষতি হয়েছে কবির অসংযত কল্পনায় এবং অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস ও প্রসঙ্গান্তর সৃষ্টি করে মহাকাব্যের সংহতি ও মহিমা ক্ষুণ্ণ করায়। প্রথম মহাকাব্যের উপযোগী ঘটনাসংস্থান (plot) ও চরিত্রসৃষ্টি (characters) এই কাব্যে নেই। কৃষ্ণ “এক ধর্ম এক রাজ্য এক সিংহাসন” স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সংকল্প করলেন “খণ্ড ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভারতে এক সূত্রে গেঁথে দেব আমি”। আর্য-অনার্যের মিলন ঘটিয়ে মহান ভারতবর্ষ রচনার সংকল্প মহাকাব্যের উপযুক্ত বিষয় বটে। কিন্তু প্রথমেই দুর্বাসাকে নিয়ে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ে গোল বাধল এবং কাহিনিটি হয়ে উঠল এক রোম্যান্টিক প্রেমের উপাখ্যান। অর্জুন সুভদ্রার অনুরাগী, এদিকে বাসুকি ব্যাকুল সুভদ্রাকে পাওয়ার জন্য। অন্যদিকে জরুৎকারু কৃষ্ণের অনুরাগিনী, প্রেমে প্রত্যাখ্যাতা হওয়ায় সে প্রতিহিংসার বশে বিবাহ করল কৃষ্ণবিদ্বেষী দুর্বাসাকে। শৈলজাকে বাসুকি অর্জুন হত্যায় নিয়োগ করলে সে পুরুষের ছদ্মবেশে অর্জুনের সান্নিধ্যে এসে অর্জুনেরই প্রেমে পড়ল। এইভাবে এক বিস্ময়কর প্রেমের গল্পে মহাকাব্যের আদর্শ ভেসে গেল, কাহিনি হয়ে পড়ল কক্ষচ্যুত। আবার নায়ক কৃষ্ণ একেবারেই নিষ্ক্রিয় চরিত্র। মুখে তাঁর বড়ো বড়ো তত্ত্বকথা, কিন্তু কাজ পারিবারিক জীবনে লঘু হাস্যরসে অবসর বিনোদন। সুভদ্রা, সুলোচনা প্রভৃতি চরিত্র নিতান্তই অবাস্তব। অপৌরাণিক ও অনৈতিহাসিক আখ্যান পরিকল্পনা এবং অবাস্তব চরিত্র সৃষ্টির জন্য ত্রয়ী কাব্য ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া কবি গীতিকবিতার উচ্ছ্বাসেরই আতিশায্যে বর্ণনাগুলিকে তরল করে মহাকাব্যের সংযম নষ্ট করেছেন, ছন্দ ও অলংকার প্রয়োগেও নৈপুণ্যের অভাব দেখা গিয়েছে। চরিত্রে ও পরিস্থিতিতে কিছুটা নাটকীয়তা থাকায় নানা স্থলে কাহিনি আকর্ষণীয় হয়েছে বটে, কিন্তু মহাকাব্যের গঠন-শিল্প ও চরিত্রসৃষ্টির বিশেষত্ব সম্পর্কে নবীনচন্দ্রের ধারণা স্পষ্ট ছিল না। তাই মহাকাব্য রচনায় তিনি ব্যর্থই হয়েছেন বলা যায়। {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} nyid9fm9wiehsr8cplifhiglioifuqj ব্যবহারকারী আলাপ:Nagor chakma 3 27180 84876 2025-06-19T02:40:20Z KanikBot 8129 স্বাগতম! 84876 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০২:৪০, ১৯ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) dgshn5iatvqnmo1990x6c62u625z03u