উইকিবই bnwikibooks https://bn.wikibooks.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8_%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE MediaWiki 1.45.0-wmf.6 first-letter মিডিয়া বিশেষ আলাপ ব্যবহারকারী ব্যবহারকারী আলাপ উইকিবই উইকিবই আলোচনা চিত্র চিত্র আলোচনা মিডিয়াউইকি মিডিয়াউইকি আলোচনা টেমপ্লেট টেমপ্লেট আলোচনা সাহায্য সাহায্য আলোচনা বিষয়শ্রেণী বিষয়শ্রেণী আলোচনা উইকিশৈশব উইকিশৈশব আলাপ বিষয় বিষয় আলাপ রন্ধনপ্রণালী রন্ধনপ্রণালী আলোচনা TimedText TimedText talk মডিউল মডিউল আলাপ ব্যবহারকারী:R1F4T/খেলাঘর 2 18619 85175 85119 2025-06-22T06:00:49Z R1F4T 9121 85175 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৫৮ |- | ২ || NusJaS || ২৪৪ |- | ৩ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৪ || R1F4T || ১৫১ |- | ৫ || Tahmid || ১৪০ |- | ৬ || Yahya || ১৩৫ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১৩০ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১৩২০টি |} m0crbvvsyr7j05x88bhlb2jphoadmqt 85178 85175 2025-06-22T07:48:37Z R1F4T 9121 85178 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৫৮ |- | ২ || NusJaS || ২৪৪ |- | ৩ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৪ || R1F4T || ১৫১ |- | ৫ || Tahmid || ১৪০ |- | ৬ || Yahya || ১৩৫ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১৩০ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১৩২০টি |} [[W:bn:Bangladesh]] na68v9k1dw992esekyo1jearhy23d3b 85179 85178 2025-06-22T07:49:20Z R1F4T 9121 85179 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৫৮ |- | ২ || NusJaS || ২৪৪ |- | ৩ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৪ || R1F4T || ১৫১ |- | ৫ || Tahmid || ১৪০ |- | ৬ || Yahya || ১৩৫ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১৩০ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১৩২০টি |} [[W:bn:Bangladesh]] [[Bangladesh]] d94o6ru3itnrv3f31rcmalohxwmg2ji 85180 85179 2025-06-22T07:50:08Z R1F4T 9121 85180 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৫৮ |- | ২ || NusJaS || ২৪৪ |- | ৩ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৪ || R1F4T || ১৫১ |- | ৫ || Tahmid || ১৪০ |- | ৬ || Yahya || ১৩৫ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১৩০ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১৩২০টি |} [[W:bn:Bangladesh]] [[Bangladesh]] [[User:R1F4T]] 7li1z9m5c9af5s11r5o487iu2rdwkf3 85182 85180 2025-06-22T07:51:15Z R1F4T 9121 85182 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৫৮ |- | ২ || NusJaS || ২৪৪ |- | ৩ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৪ || R1F4T || ১৫১ |- | ৫ || Tahmid || ১৪০ |- | ৬ || Yahya || ১৩৫ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১৩০ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১৩২০টি |} m0crbvvsyr7j05x88bhlb2jphoadmqt 85190 85182 2025-06-22T08:07:58Z R1F4T 9121 85190 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৫৮ |- | ২ || NusJaS || ২৪৪ |- | ৩ || MS Sakib || ১৮৫ |- | ৪ || R1F4T || ১৫১ |- | ৫ || Tahmid || ১৪০ |- | ৬ || Yahya || ১৩৫ |- | ৭ || Mehedi Abedin || ১৩০ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ৭৩ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১৩২০টি |} [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৮:০৭, ২২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) tphdx4p151148pzbzllefsut0zdpdko আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 0 22682 85196 84674 2025-06-22T09:21:21Z Jonoikobangali 676 /* পর্ব ৩: বাংলা নাটক */ 85196 wikitext text/x-wiki {{অবস্থা|৫০%}}<p align=center><font size=7 color="DarkBlue"><b>আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস</b></font></p> ==সূচিপত্র== === ভূমিকা === # [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিকতার লক্ষণ|আধুনিকতার লক্ষণ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মানবতাবোধ|মানবতাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#জাতীয়তাবোধ|জাতীয়তাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ|বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ|আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#গদ্যসাহিত্য|গদ্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কথাসাহিত্য|কথাসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#নাট্যসাহিত্য|নাট্যসাহিত্য]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] === পর্ব ১: বাংলা গদ্যসাহিত্য === # [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত|বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত (উনিশ শতকের পূর্ববর্তী বাংলা গদ্যসাহিত্য)]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল|কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য|বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোমিঙ্গো দে সোসা|দোমিঙ্গো দে সোসা]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ|দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ''ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ|মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: ''কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#অন্যান্য নিদর্শন|অন্যান্য নিদর্শন]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব|দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব]] # [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#বাইবেল অনুবাদ|বাইবেল অনুবাদ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র|ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য|মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা|পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#উইলিয়াম কেরি|উইলিয়াম কেরি]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#রামরাম বসু|রামরাম বসু]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার|মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#অন্যান্য লেখকবর্গ|অন্যান্য লেখকবর্গ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য|পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা|মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা]] # [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র|উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদপত্রের সূচনা|সংবাদপত্রের সূচনা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#দিগ্‌দর্শন|দিগ্‌দর্শন]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-দর্পণ|সমাচার-দর্পণ]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বেঙ্গল গেজেট|গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ''বেঙ্গল গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সম্বাদ কৌমুদী|''সম্বাদ কৌমুদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-চন্দ্রিকা|''সমাচার-চন্দ্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদ প্রভাকর|''সংবাদ প্রভাকর'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা|''তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বিবিধার্থ সংগ্রহ|''বিবিধার্থ সংগ্রহ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#মাসিক পত্রিকা|''মাসিক পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#এডুকেশন গেজেট|''এডুকেশন গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সোমপ্রকাশ|''সোমপ্রকাশ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#রহস্য-সন্দর্ভ|''রহস্য-সন্দর্ভ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবোধবন্ধু|''অবোধবন্ধু'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন|''বঙ্গদর্শন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#প্রচার|''প্রচার'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#নবজীবন|''নবজীবন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী|''ভারতী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বালক|''বালক'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সাধনা|''সাধনা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গবাসী|''বঙ্গবাসী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#হিতবাদী|''হিতবাদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#জন্মভূমি|''জন্মভূমি'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বামাবোধিনী|''বামাবোধিনী'']] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী|পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী|তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী|বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী|ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবদান|অবদান]] # [[/রাজা রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের রচনাবলি|রামমোহন রায়ের রচনাবলি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি|রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব|গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব]] # [[/অক্ষয়কুমার দত্ত|অক্ষয়কুমার দত্ত]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#অনুবাদ সাহিত্য|অনুবাদ সাহিত্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#মৌলিক রচনা|মৌলিক রচনা]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য|বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#‘বাংলা গদ্যের জনক’|‘বাংলা গদ্যের জনক’]] # [[/দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর|দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায়]] # [[/রাজনারায়ণ বসু|রাজনারায়ণ বসু]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধসাহিত্যে বৈচিত্র্য|বৈচিত্র্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ|জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বিচারমূলক প্রবন্ধ|বিচারমূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ|রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান|অবদান]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-সমসাময়িক প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর|বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী|রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#প্রমথ চৌধুরী|প্রমথ চৌধুরী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়|পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য]] ===পরিশিষ্ট: বাংলা গদ্যসাহিত্য=== # [[/রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান|রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান]] # [[/বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন]] # [[/বাংলা গদ্যে চলিত রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে চলিত রীতি বিবর্তন]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] === পর্ব ২: বাংলা উপন্যাস ও ছোটোগল্প === # [[/উপন্যাসের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাসের সূত্রপাত|উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা|উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত|হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ''ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল|প্যারীচাঁদ মিত্রের ''আলালের ঘরের দুলাল'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নক্সা|কালীপ্রসন্ন সিংহের ''হুতোম প্যাঁচার নক্সা'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত|রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত: ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ও গোপীমোহন ঘোষ]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য|সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#রমেশচন্দ্র দত্ত|রমেশচন্দ্র দত্ত]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়|তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#প্রতাপচন্দ্র ঘোষ|প্রতাপচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক|বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক]] # [[/বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস|বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস]] # [[/প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস|প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প]] # [[/বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়|বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়|তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়|মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়|বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়]] # [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য|হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য|চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য|বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য|বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য|কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য]] === পর্ব ৩: বাংলা নাটক === # [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব|আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রার আদিরূপ|যাত্রার আদিরূপ]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস|মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রা|যাত্রা]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়|নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে|যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক|ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক]] # [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা|সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা|প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার|গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা|হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ওরিয়েন্টাল থিয়েটার|ওরিয়েন্টাল থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়|সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত|বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা|ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা]] # [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক|আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#মৌলিক নাটক|মৌলিক নাটক]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত|যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#তারাচরণ শিকদার|তারাচরণ শিকদার]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#হরচন্দ্র ঘোষ|হরচন্দ্র ঘোষ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#কালীপ্রসন্ন সিংহ|কালীপ্রসন্ন সিংহ]] # [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন|রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#কুলীনকুলসর্বস্ব|''কুলীনকুলসর্বস্ব'']] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন|প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''শর্মিষ্ঠা''|''শর্মিষ্ঠা'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''পদ্মাবতী''|''পদ্মাবতী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি|ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''কৃষ্ণকুমারী''|''কৃষ্ণকুমারী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|প্রহসন: ''একেই কি বলে সভ্যতা'' ও ''বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|অন্যান্য নাটক: ''মায়াকানন'' ও ''বিষ না ধনুর্গুণ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান|বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান]] # [[/দীনবন্ধু মিত্র|দীনবন্ধু মিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ|''নীলদর্পণ'']] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীল বিদ্রোহ ও নীলদর্পণ নাটক|নীল বিদ্রোহ ও ''নীলদর্পণ'' নাটক]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি|''নীলদর্পণ'' নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সমালোচনা|সমালোচনা]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#প্রহসন|প্রহসন]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সধবার একাদশী ও নিমচাঁদ চরিত্র|''সধবার একাদশী'' ও নিমচাঁদ চরিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান|বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান]] # [[/মনোমোহন বসু|মনোমোহন বসু]] # [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রহসন|প্রহসন]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুবাদ নাটক|অনুবাদ নাটক]] # [[/উপেন্দ্রনাথ দাস|উপেন্দ্রনাথ দাস]] # [[/রাজকৃষ্ণ রায়|রাজকৃষ্ণ রায়]] # [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#নাটক|নাটক]] # [[/অমৃতলাল বসু|অমৃতলাল বসু]] # [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রহসন|প্রহসন]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#কল্কি অবতার|''কল্কি অবতার'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বিরহ|''বিরহ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ত্র্যহস্পর্শ|''ত্র্যহস্পর্শ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রায়শ্চিত্ত|''প্রায়শ্চিত্ত'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পুনর্জন্ম|''পুনর্জন্ম'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#আনন্দবিদায়|''আনন্দবিদায়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পাষাণী|''পাষাণী'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সীতা|''সীতা'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ভীষ্ম|''ভীষ্ম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পরপারে|''পরপারে'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বঙ্গনারী|''বঙ্গনারী'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অপেরা|অপেরা]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সোরাব-রুস্তম|''সোরাব-রুস্তম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক|রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#তারাবাঈ|''তারাবাঈ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাণা প্রতাপ সিংহ|''রাণা প্রতাপ সিংহ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দুর্গাদাস|''দুর্গাদাস'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মেবার পতন|''মেবার পতন'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক|অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#নূরজাহান|''নূরজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সাজাহান|''সাজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#চন্দ্রগুপ্ত|''চন্দ্রগুপ্ত'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সিংহল বিজয়|''সিংহল বিজয়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা|দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ|ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#কাল্পনিক নাটক|কাল্পনিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক|বিশ শতকের বাংলা নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়|অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ|গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#যোগেশচন্দ্র চৌধুরী|যোগেশচন্দ্র চৌধুরী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#মন্মথ রায়|মন্মথ রায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিধায়ক ভট্টাচার্য|বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#প্রমথনাথ বিশী|প্রমথনাথ বিশী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#জীবনী নাটক|জীবনী নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#নবনাট্য আন্দোলন|নবনাট্য আন্দোলন]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ|বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ]] # [[/পৌরাণিক নাটক|বাংলা পৌরাণিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#প্রথম পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|প্রথম পর্ব: হরচন্দ্র ঘোষ, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|দ্বিতীয় পর্ব: মনোমোহন বসু, রাজকৃষ্ণ রায়, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#তৃতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|তৃতীয় পর্ব: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, মন্মথ রায় ও মহেন্দ্র গুপ্ত]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#বাংলা পৌরাণিক নাটকের পরিণতি|পরিণতি]] # [[/ঐতিহাসিক নাটক|বাংলা ঐতিহাসিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত|প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার|দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার|তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার]] # [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|বাংলা সামাজিক ও পারিবারিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক|প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক: রামনারায়ণ তর্করত্ন, উমেশচন্দ্র মিত্র, দীনবন্ধু মিত্র ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক: উপেন্দ্রনাথ দাস, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক|তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জলধর চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র গুপ্ত ও বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক|চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক: বিজন ভট্টাচার্য, তুলসী লাহিড়ী, সলিল সেন ও অন্যান্য]] # [[/প্রহসন|বাংলা প্রহসনের বিকাশ]] ## [[/প্রহসন#প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ|তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ]] === পর্ব ৪: আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্য === # [[/কবিওয়ালা|কবিওয়ালা]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত|ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত]] # [[/মদনমোহন তর্কালঙ্কার|মদনমোহন তর্কালঙ্কার]] # [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|উনিশ শতকের বাংলা মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য|আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য|মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য|মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি|বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি|বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি]] # [[/রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়|রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য|''তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মেঘনাদবধ কাব্য|''মেঘনাদবধ কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#ব্রজাঙ্গনা কাব্য|''ব্রজাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#বীরাঙ্গনা কাব্য|''বীরাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#চতুর্দশপদী কবিতাবলী|''চতুর্দশপদী কবিতাবলী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/নবীনচন্দ্র সেন|নবীনচন্দ্র সেন]] # [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী|বিহারীলাল চক্রবর্তী]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#রচনাবলি|রচনাবলি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য|কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#শৈল্পিক ত্রুটি|শৈল্পিক ত্রুটি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল|বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল]] # [[/আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম|বাংলা আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ|রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ|রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত|সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়|করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রমোহন বাগচি|যতীন্দ্রমোহন বাগচি]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়|কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কাজী নজরুল ইসলাম|কাজী নজরুল ইসলাম]] # [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ|উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়|মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী|গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মানকুমারী বসু|মানকুমারী বসু]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#কামিনী রায়|কামিনী রায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#সরোজকুমারী দেবী|সরোজকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#অন্যান্য মহিলা কবিগণ|অন্যান্য মহিলা কবিগণ]] # [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা|রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বুদ্ধদেব বসু|বুদ্ধদেব বসু]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দ দাশ]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অজিত দত্ত|অজিত দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুধীন্দ্রনাথ দত্ত|সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বিষ্ণু দে|বিষ্ণু দে]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#প্রেমেন্দ্র মিত্র|প্রেমেন্দ্র মিত্র]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অমিয় চক্রবর্তী|অমিয় চক্রবর্তী]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সমর সেন|সমর সেন]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুকান্ত ভট্টাচার্য|সুকান্ত ভট্টাচার্য]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অন্যান্য কবিগণ|অন্যান্য কবিগণ]] === পর্ব ৫: রবীন্দ্রসাহিত্য === # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা|কবিতা]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক|নাটক]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: বাল্মীকিপ্রতিভা, কালমৃগয়া ও মায়ার খেলা|রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: ''বাল্মীকিপ্রতিভা'', ''কালমৃগয়া'' ও ''মায়ার খেলা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য|কাব্যনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রকৃতির প্রতিশোধ|''প্রকৃতির প্রতিশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিত্রাঙ্গদা|''চিত্রাঙ্গদা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিদায় অভিশাপ|''বিদায় অভিশাপ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#কাহিনী গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ|''কাহিনী'' গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ: "গান্ধারীর আবেদন", "সতী", "নরকবাস", "লক্ষ্মীর পরীক্ষা" ও "কর্ণকুন্তীসংবাদ"]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রথানুগ নাটক|প্রথানুগ নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও রানী ও তপতী|''রাজা ও রানী'' ও ''তপতী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিসর্জন|''বিসর্জন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মালিনী|''মালিনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রায়শ্চিত্ত ও পরিত্রাণ|''প্রায়শ্চিত্ত'' ও ''পরিত্রাণ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: গৃহপ্রবেশ ও শোধবোধ|রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: ''গৃহপ্রবেশ'' ও ''শোধবোধ'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রহসন বা কৌতুকনাট্য|প্রহসন বা কৌতুকনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#গোড়ায় গলদ ও শেষরক্ষা|''গোড়ায় গলদ'' ও ''শেষরক্ষা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বৈকুণ্ঠের খাতা|''বৈকুণ্ঠের খাতা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক|''হাস্যকৌতুক'' ও ''ব্যঙ্গকৌতুক'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিরকুমার সভা|''চিরকুমার সভা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের রূপক-সাংকেতিক নাটক|রূপক-সাংকেতিক নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#শারদোৎসব ও ঋণশোধ|''শারদোৎসব'' ও ''ঋণশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও অরূপরতন|''রাজা'' ও ''অরূপরতন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#অচলায়তন ও গুরু|''অচলায়তন'' ও ''গুরু'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ডাকঘর|''ডাকঘর'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ফাল্গুনী|''ফাল্গুনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মুক্তধারা|''মুক্তধারা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রক্তকরবী|''রক্তকরবী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রথের রশি ও তাসের দেশ|''রথের রশি'' ও ''তাসের দেশ'']] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস|উপন্যাস]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প|ছোটোগল্প]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য|প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ|সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ|শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ|ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ভ্রমণসাহিত্য|ভ্রমণসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#পত্রসাহিত্য|পত্রসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আত্মকথা ও জীবনী|আত্মকথা ও জীবনী]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আবেগধর্মী প্রবন্ধ|আবেগধর্মী প্রবন্ধ]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/রবীন্দ্রসংগীত|রবীন্দ্রসংগীত]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|আ}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} r9l605qr6g2zggf66xej04dr01sfyrh 85198 85196 2025-06-22T09:24:34Z Jonoikobangali 676 /* পর্ব ৩: বাংলা নাটক */ 85198 wikitext text/x-wiki {{অবস্থা|৫০%}}<p align=center><font size=7 color="DarkBlue"><b>আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস</b></font></p> ==সূচিপত্র== === ভূমিকা === # [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিকতার লক্ষণ|আধুনিকতার লক্ষণ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মানবতাবোধ|মানবতাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#জাতীয়তাবোধ|জাতীয়তাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ|বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ|আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#গদ্যসাহিত্য|গদ্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কথাসাহিত্য|কথাসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#নাট্যসাহিত্য|নাট্যসাহিত্য]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] === পর্ব ১: বাংলা গদ্যসাহিত্য === # [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত|বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত (উনিশ শতকের পূর্ববর্তী বাংলা গদ্যসাহিত্য)]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল|কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য|বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোমিঙ্গো দে সোসা|দোমিঙ্গো দে সোসা]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ|দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ''ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ|মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: ''কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#অন্যান্য নিদর্শন|অন্যান্য নিদর্শন]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব|দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব]] # [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#বাইবেল অনুবাদ|বাইবেল অনুবাদ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র|ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য|মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা|পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#উইলিয়াম কেরি|উইলিয়াম কেরি]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#রামরাম বসু|রামরাম বসু]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার|মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#অন্যান্য লেখকবর্গ|অন্যান্য লেখকবর্গ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য|পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা|মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা]] # [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র|উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদপত্রের সূচনা|সংবাদপত্রের সূচনা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#দিগ্‌দর্শন|দিগ্‌দর্শন]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-দর্পণ|সমাচার-দর্পণ]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বেঙ্গল গেজেট|গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ''বেঙ্গল গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সম্বাদ কৌমুদী|''সম্বাদ কৌমুদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-চন্দ্রিকা|''সমাচার-চন্দ্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদ প্রভাকর|''সংবাদ প্রভাকর'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা|''তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বিবিধার্থ সংগ্রহ|''বিবিধার্থ সংগ্রহ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#মাসিক পত্রিকা|''মাসিক পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#এডুকেশন গেজেট|''এডুকেশন গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সোমপ্রকাশ|''সোমপ্রকাশ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#রহস্য-সন্দর্ভ|''রহস্য-সন্দর্ভ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবোধবন্ধু|''অবোধবন্ধু'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন|''বঙ্গদর্শন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#প্রচার|''প্রচার'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#নবজীবন|''নবজীবন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী|''ভারতী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বালক|''বালক'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সাধনা|''সাধনা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গবাসী|''বঙ্গবাসী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#হিতবাদী|''হিতবাদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#জন্মভূমি|''জন্মভূমি'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বামাবোধিনী|''বামাবোধিনী'']] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী|পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী|তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী|বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী|ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবদান|অবদান]] # [[/রাজা রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের রচনাবলি|রামমোহন রায়ের রচনাবলি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি|রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব|গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব]] # [[/অক্ষয়কুমার দত্ত|অক্ষয়কুমার দত্ত]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#অনুবাদ সাহিত্য|অনুবাদ সাহিত্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#মৌলিক রচনা|মৌলিক রচনা]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য|বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#‘বাংলা গদ্যের জনক’|‘বাংলা গদ্যের জনক’]] # [[/দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর|দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায়]] # [[/রাজনারায়ণ বসু|রাজনারায়ণ বসু]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধসাহিত্যে বৈচিত্র্য|বৈচিত্র্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ|জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বিচারমূলক প্রবন্ধ|বিচারমূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ|রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান|অবদান]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-সমসাময়িক প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর|বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী|রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#প্রমথ চৌধুরী|প্রমথ চৌধুরী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়|পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য]] ===পরিশিষ্ট: বাংলা গদ্যসাহিত্য=== # [[/রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান|রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান]] # [[/বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন]] # [[/বাংলা গদ্যে চলিত রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে চলিত রীতি বিবর্তন]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] === পর্ব ২: বাংলা উপন্যাস ও ছোটোগল্প === # [[/উপন্যাসের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাসের সূত্রপাত|উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা|উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত|হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ''ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল|প্যারীচাঁদ মিত্রের ''আলালের ঘরের দুলাল'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নক্সা|কালীপ্রসন্ন সিংহের ''হুতোম প্যাঁচার নক্সা'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত|রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত: ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ও গোপীমোহন ঘোষ]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য|সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#রমেশচন্দ্র দত্ত|রমেশচন্দ্র দত্ত]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়|তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#প্রতাপচন্দ্র ঘোষ|প্রতাপচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক|বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক]] # [[/বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস|বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস]] # [[/প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস|প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প]] # [[/বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়|বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়|তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়|মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়|বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়]] # [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য|হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য|চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য|বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য|বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য|কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য]] === পর্ব ৩: বাংলা নাটক === # [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব|আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রার আদিরূপ|যাত্রার আদিরূপ]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস|মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রা|যাত্রা]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়|নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে|যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক|ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক]] # [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা|সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা|প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার|গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা|হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ওরিয়েন্টাল থিয়েটার|ওরিয়েন্টাল থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়|সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত|বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা|ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা]] # [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক|আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#মৌলিক নাটক|মৌলিক নাটক]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত|যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#তারাচরণ শিকদার|তারাচরণ শিকদার]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#হরচন্দ্র ঘোষ|হরচন্দ্র ঘোষ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#কালীপ্রসন্ন সিংহ|কালীপ্রসন্ন সিংহ]] # [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন|রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#কুলীনকুলসর্বস্ব|''কুলীনকুলসর্বস্ব'']] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন|প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''শর্মিষ্ঠা''|''শর্মিষ্ঠা'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''পদ্মাবতী''|''পদ্মাবতী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি|ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''কৃষ্ণকুমারী''|''কৃষ্ণকুমারী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|প্রহসন: ''একেই কি বলে সভ্যতা'' ও ''বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|অন্যান্য নাটক: ''মায়াকানন'' ও ''বিষ না ধনুর্গুণ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান|বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান]] # [[/দীনবন্ধু মিত্র|দীনবন্ধু মিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ|''নীলদর্পণ'']] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীল বিদ্রোহ ও নীলদর্পণ নাটক|নীল বিদ্রোহ ও ''নীলদর্পণ'' নাটক]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি|''নীলদর্পণ'' নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সমালোচনা|সমালোচনা]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#প্রহসন|প্রহসন]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সধবার একাদশী ও নিমচাঁদ চরিত্র|''সধবার একাদশী'' ও নিমচাঁদ চরিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান|বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান]] # [[/মনোমোহন বসু|মনোমোহন বসু]] # [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রহসন|প্রহসন]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুবাদ নাটক|অনুবাদ নাটক]] # [[/উপেন্দ্রনাথ দাস|উপেন্দ্রনাথ দাস]] # [[/রাজকৃষ্ণ রায়|রাজকৃষ্ণ রায়]] # [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#নাটক|নাটক]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং|গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং]] # [[/অমৃতলাল বসু|অমৃতলাল বসু]] # [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রহসন|প্রহসন]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#কল্কি অবতার|''কল্কি অবতার'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বিরহ|''বিরহ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ত্র্যহস্পর্শ|''ত্র্যহস্পর্শ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রায়শ্চিত্ত|''প্রায়শ্চিত্ত'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পুনর্জন্ম|''পুনর্জন্ম'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#আনন্দবিদায়|''আনন্দবিদায়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পাষাণী|''পাষাণী'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সীতা|''সীতা'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ভীষ্ম|''ভীষ্ম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পরপারে|''পরপারে'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বঙ্গনারী|''বঙ্গনারী'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অপেরা|অপেরা]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সোরাব-রুস্তম|''সোরাব-রুস্তম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক|রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#তারাবাঈ|''তারাবাঈ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাণা প্রতাপ সিংহ|''রাণা প্রতাপ সিংহ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দুর্গাদাস|''দুর্গাদাস'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মেবার পতন|''মেবার পতন'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক|অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#নূরজাহান|''নূরজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সাজাহান|''সাজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#চন্দ্রগুপ্ত|''চন্দ্রগুপ্ত'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সিংহল বিজয়|''সিংহল বিজয়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা|দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ|ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#কাল্পনিক নাটক|কাল্পনিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক|বিশ শতকের বাংলা নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়|অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ|গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#যোগেশচন্দ্র চৌধুরী|যোগেশচন্দ্র চৌধুরী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#মন্মথ রায়|মন্মথ রায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিধায়ক ভট্টাচার্য|বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#প্রমথনাথ বিশী|প্রমথনাথ বিশী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#জীবনী নাটক|জীবনী নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#নবনাট্য আন্দোলন|নবনাট্য আন্দোলন]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ|বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ]] # [[/পৌরাণিক নাটক|বাংলা পৌরাণিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#প্রথম পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|প্রথম পর্ব: হরচন্দ্র ঘোষ, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|দ্বিতীয় পর্ব: মনোমোহন বসু, রাজকৃষ্ণ রায়, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#তৃতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|তৃতীয় পর্ব: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, মন্মথ রায় ও মহেন্দ্র গুপ্ত]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#বাংলা পৌরাণিক নাটকের পরিণতি|পরিণতি]] # [[/ঐতিহাসিক নাটক|বাংলা ঐতিহাসিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত|প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার|দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার|তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার]] # [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|বাংলা সামাজিক ও পারিবারিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক|প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক: রামনারায়ণ তর্করত্ন, উমেশচন্দ্র মিত্র, দীনবন্ধু মিত্র ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক: উপেন্দ্রনাথ দাস, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক|তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জলধর চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র গুপ্ত ও বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক|চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক: বিজন ভট্টাচার্য, তুলসী লাহিড়ী, সলিল সেন ও অন্যান্য]] # [[/প্রহসন|বাংলা প্রহসনের বিকাশ]] ## [[/প্রহসন#প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ|তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ]] === পর্ব ৪: আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্য === # [[/কবিওয়ালা|কবিওয়ালা]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত|ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত]] # [[/মদনমোহন তর্কালঙ্কার|মদনমোহন তর্কালঙ্কার]] # [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|উনিশ শতকের বাংলা মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য|আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য|মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য|মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি|বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি|বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি]] # [[/রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়|রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য|''তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মেঘনাদবধ কাব্য|''মেঘনাদবধ কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#ব্রজাঙ্গনা কাব্য|''ব্রজাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#বীরাঙ্গনা কাব্য|''বীরাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#চতুর্দশপদী কবিতাবলী|''চতুর্দশপদী কবিতাবলী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/নবীনচন্দ্র সেন|নবীনচন্দ্র সেন]] # [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী|বিহারীলাল চক্রবর্তী]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#রচনাবলি|রচনাবলি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য|কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#শৈল্পিক ত্রুটি|শৈল্পিক ত্রুটি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল|বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল]] # [[/আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম|বাংলা আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ|রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ|রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত|সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়|করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রমোহন বাগচি|যতীন্দ্রমোহন বাগচি]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়|কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কাজী নজরুল ইসলাম|কাজী নজরুল ইসলাম]] # [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ|উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়|মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী|গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মানকুমারী বসু|মানকুমারী বসু]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#কামিনী রায়|কামিনী রায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#সরোজকুমারী দেবী|সরোজকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#অন্যান্য মহিলা কবিগণ|অন্যান্য মহিলা কবিগণ]] # [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা|রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বুদ্ধদেব বসু|বুদ্ধদেব বসু]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দ দাশ]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অজিত দত্ত|অজিত দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুধীন্দ্রনাথ দত্ত|সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বিষ্ণু দে|বিষ্ণু দে]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#প্রেমেন্দ্র মিত্র|প্রেমেন্দ্র মিত্র]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অমিয় চক্রবর্তী|অমিয় চক্রবর্তী]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সমর সেন|সমর সেন]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুকান্ত ভট্টাচার্য|সুকান্ত ভট্টাচার্য]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অন্যান্য কবিগণ|অন্যান্য কবিগণ]] === পর্ব ৫: রবীন্দ্রসাহিত্য === # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা|কবিতা]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক|নাটক]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: বাল্মীকিপ্রতিভা, কালমৃগয়া ও মায়ার খেলা|রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: ''বাল্মীকিপ্রতিভা'', ''কালমৃগয়া'' ও ''মায়ার খেলা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য|কাব্যনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রকৃতির প্রতিশোধ|''প্রকৃতির প্রতিশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিত্রাঙ্গদা|''চিত্রাঙ্গদা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিদায় অভিশাপ|''বিদায় অভিশাপ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#কাহিনী গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ|''কাহিনী'' গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ: "গান্ধারীর আবেদন", "সতী", "নরকবাস", "লক্ষ্মীর পরীক্ষা" ও "কর্ণকুন্তীসংবাদ"]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রথানুগ নাটক|প্রথানুগ নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও রানী ও তপতী|''রাজা ও রানী'' ও ''তপতী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিসর্জন|''বিসর্জন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মালিনী|''মালিনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রায়শ্চিত্ত ও পরিত্রাণ|''প্রায়শ্চিত্ত'' ও ''পরিত্রাণ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: গৃহপ্রবেশ ও শোধবোধ|রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: ''গৃহপ্রবেশ'' ও ''শোধবোধ'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রহসন বা কৌতুকনাট্য|প্রহসন বা কৌতুকনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#গোড়ায় গলদ ও শেষরক্ষা|''গোড়ায় গলদ'' ও ''শেষরক্ষা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বৈকুণ্ঠের খাতা|''বৈকুণ্ঠের খাতা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক|''হাস্যকৌতুক'' ও ''ব্যঙ্গকৌতুক'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিরকুমার সভা|''চিরকুমার সভা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের রূপক-সাংকেতিক নাটক|রূপক-সাংকেতিক নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#শারদোৎসব ও ঋণশোধ|''শারদোৎসব'' ও ''ঋণশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও অরূপরতন|''রাজা'' ও ''অরূপরতন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#অচলায়তন ও গুরু|''অচলায়তন'' ও ''গুরু'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ডাকঘর|''ডাকঘর'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ফাল্গুনী|''ফাল্গুনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মুক্তধারা|''মুক্তধারা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রক্তকরবী|''রক্তকরবী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রথের রশি ও তাসের দেশ|''রথের রশি'' ও ''তাসের দেশ'']] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস|উপন্যাস]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প|ছোটোগল্প]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য|প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ|সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ|শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ|ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ভ্রমণসাহিত্য|ভ্রমণসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#পত্রসাহিত্য|পত্রসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আত্মকথা ও জীবনী|আত্মকথা ও জীবনী]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আবেগধর্মী প্রবন্ধ|আবেগধর্মী প্রবন্ধ]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/রবীন্দ্রসংগীত|রবীন্দ্রসংগীত]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|আ}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} k4xgu2joqjn6k4759cwjyac3z5wbocz 85202 85198 2025-06-22T09:30:06Z Jonoikobangali 676 /* পর্ব ৩: বাংলা নাটক */ 85202 wikitext text/x-wiki {{অবস্থা|৫০%}}<p align=center><font size=7 color="DarkBlue"><b>আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস</b></font></p> ==সূচিপত্র== === ভূমিকা === # [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিকতার লক্ষণ|আধুনিকতার লক্ষণ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মানবতাবোধ|মানবতাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#জাতীয়তাবোধ|জাতীয়তাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ|বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ|আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#গদ্যসাহিত্য|গদ্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কথাসাহিত্য|কথাসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#নাট্যসাহিত্য|নাট্যসাহিত্য]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] === পর্ব ১: বাংলা গদ্যসাহিত্য === # [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত|বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত (উনিশ শতকের পূর্ববর্তী বাংলা গদ্যসাহিত্য)]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল|কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য|বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোমিঙ্গো দে সোসা|দোমিঙ্গো দে সোসা]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ|দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ''ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ|মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: ''কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#অন্যান্য নিদর্শন|অন্যান্য নিদর্শন]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব|দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব]] # [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#বাইবেল অনুবাদ|বাইবেল অনুবাদ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র|ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য|মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা|পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#উইলিয়াম কেরি|উইলিয়াম কেরি]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#রামরাম বসু|রামরাম বসু]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার|মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#অন্যান্য লেখকবর্গ|অন্যান্য লেখকবর্গ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য|পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা|মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা]] # [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র|উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদপত্রের সূচনা|সংবাদপত্রের সূচনা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#দিগ্‌দর্শন|দিগ্‌দর্শন]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-দর্পণ|সমাচার-দর্পণ]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বেঙ্গল গেজেট|গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ''বেঙ্গল গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সম্বাদ কৌমুদী|''সম্বাদ কৌমুদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-চন্দ্রিকা|''সমাচার-চন্দ্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদ প্রভাকর|''সংবাদ প্রভাকর'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা|''তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বিবিধার্থ সংগ্রহ|''বিবিধার্থ সংগ্রহ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#মাসিক পত্রিকা|''মাসিক পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#এডুকেশন গেজেট|''এডুকেশন গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সোমপ্রকাশ|''সোমপ্রকাশ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#রহস্য-সন্দর্ভ|''রহস্য-সন্দর্ভ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবোধবন্ধু|''অবোধবন্ধু'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন|''বঙ্গদর্শন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#প্রচার|''প্রচার'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#নবজীবন|''নবজীবন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী|''ভারতী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বালক|''বালক'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সাধনা|''সাধনা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গবাসী|''বঙ্গবাসী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#হিতবাদী|''হিতবাদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#জন্মভূমি|''জন্মভূমি'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বামাবোধিনী|''বামাবোধিনী'']] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী|পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী|তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী|বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী|ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবদান|অবদান]] # [[/রাজা রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের রচনাবলি|রামমোহন রায়ের রচনাবলি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি|রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব|গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব]] # [[/অক্ষয়কুমার দত্ত|অক্ষয়কুমার দত্ত]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#অনুবাদ সাহিত্য|অনুবাদ সাহিত্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#মৌলিক রচনা|মৌলিক রচনা]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য|বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#‘বাংলা গদ্যের জনক’|‘বাংলা গদ্যের জনক’]] # [[/দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর|দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায়]] # [[/রাজনারায়ণ বসু|রাজনারায়ণ বসু]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধসাহিত্যে বৈচিত্র্য|বৈচিত্র্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ|জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বিচারমূলক প্রবন্ধ|বিচারমূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ|রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান|অবদান]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-সমসাময়িক প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর|বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী|রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#প্রমথ চৌধুরী|প্রমথ চৌধুরী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়|পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য]] ===পরিশিষ্ট: বাংলা গদ্যসাহিত্য=== # [[/রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান|রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান]] # [[/বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন]] # [[/বাংলা গদ্যে চলিত রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে চলিত রীতি বিবর্তন]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] === পর্ব ২: বাংলা উপন্যাস ও ছোটোগল্প === # [[/উপন্যাসের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাসের সূত্রপাত|উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা|উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত|হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ''ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল|প্যারীচাঁদ মিত্রের ''আলালের ঘরের দুলাল'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নক্সা|কালীপ্রসন্ন সিংহের ''হুতোম প্যাঁচার নক্সা'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত|রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত: ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ও গোপীমোহন ঘোষ]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য|সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#রমেশচন্দ্র দত্ত|রমেশচন্দ্র দত্ত]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়|তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#প্রতাপচন্দ্র ঘোষ|প্রতাপচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক|বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক]] # [[/বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস|বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস]] # [[/প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস|প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প]] # [[/বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়|বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়|তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়|মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়|বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়]] # [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য|হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য|চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য|বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য|বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য|কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য]] === পর্ব ৩: বাংলা নাটক === # [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব|আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রার আদিরূপ|যাত্রার আদিরূপ]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস|মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রা|যাত্রা]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়|নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে|যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক|ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক]] # [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা|সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা|প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার|গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা|হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ওরিয়েন্টাল থিয়েটার|ওরিয়েন্টাল থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়|সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত|বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা|ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা]] # [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক|আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#মৌলিক নাটক|মৌলিক নাটক]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত|যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#তারাচরণ শিকদার|তারাচরণ শিকদার]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#হরচন্দ্র ঘোষ|হরচন্দ্র ঘোষ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#কালীপ্রসন্ন সিংহ|কালীপ্রসন্ন সিংহ]] # [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন|রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#কুলীনকুলসর্বস্ব|''কুলীনকুলসর্বস্ব'']] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন|প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''শর্মিষ্ঠা''|''শর্মিষ্ঠা'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''পদ্মাবতী''|''পদ্মাবতী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি|ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''কৃষ্ণকুমারী''|''কৃষ্ণকুমারী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|প্রহসন: ''একেই কি বলে সভ্যতা'' ও ''বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|অন্যান্য নাটক: ''মায়াকানন'' ও ''বিষ না ধনুর্গুণ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান|বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান]] # [[/দীনবন্ধু মিত্র|দীনবন্ধু মিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ|''নীলদর্পণ'']] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীল বিদ্রোহ ও নীলদর্পণ নাটক|নীল বিদ্রোহ ও ''নীলদর্পণ'' নাটক]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি|''নীলদর্পণ'' নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সমালোচনা|সমালোচনা]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#প্রহসন|প্রহসন]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সধবার একাদশী ও নিমচাঁদ চরিত্র|''সধবার একাদশী'' ও নিমচাঁদ চরিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান|বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান]] # [[/মনোমোহন বসু|মনোমোহন বসু]] # [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রহসন|প্রহসন]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুবাদ নাটক|অনুবাদ নাটক]] # [[/উপেন্দ্রনাথ দাস|উপেন্দ্রনাথ দাস]] # [[/রাজকৃষ্ণ রায়|রাজকৃষ্ণ রায়]] # [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#নাটক|নাটক]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং|গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি|পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি]] # [[/অমৃতলাল বসু|অমৃতলাল বসু]] # [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রহসন|প্রহসন]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#কল্কি অবতার|''কল্কি অবতার'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বিরহ|''বিরহ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ত্র্যহস্পর্শ|''ত্র্যহস্পর্শ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রায়শ্চিত্ত|''প্রায়শ্চিত্ত'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পুনর্জন্ম|''পুনর্জন্ম'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#আনন্দবিদায়|''আনন্দবিদায়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পাষাণী|''পাষাণী'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সীতা|''সীতা'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ভীষ্ম|''ভীষ্ম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পরপারে|''পরপারে'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বঙ্গনারী|''বঙ্গনারী'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অপেরা|অপেরা]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সোরাব-রুস্তম|''সোরাব-রুস্তম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক|রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#তারাবাঈ|''তারাবাঈ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাণা প্রতাপ সিংহ|''রাণা প্রতাপ সিংহ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দুর্গাদাস|''দুর্গাদাস'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মেবার পতন|''মেবার পতন'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক|অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#নূরজাহান|''নূরজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সাজাহান|''সাজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#চন্দ্রগুপ্ত|''চন্দ্রগুপ্ত'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সিংহল বিজয়|''সিংহল বিজয়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা|দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ|ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#কাল্পনিক নাটক|কাল্পনিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক|বিশ শতকের বাংলা নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়|অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ|গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#যোগেশচন্দ্র চৌধুরী|যোগেশচন্দ্র চৌধুরী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#মন্মথ রায়|মন্মথ রায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিধায়ক ভট্টাচার্য|বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#প্রমথনাথ বিশী|প্রমথনাথ বিশী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#জীবনী নাটক|জীবনী নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#নবনাট্য আন্দোলন|নবনাট্য আন্দোলন]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ|বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ]] # [[/পৌরাণিক নাটক|বাংলা পৌরাণিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#প্রথম পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|প্রথম পর্ব: হরচন্দ্র ঘোষ, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|দ্বিতীয় পর্ব: মনোমোহন বসু, রাজকৃষ্ণ রায়, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#তৃতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|তৃতীয় পর্ব: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, মন্মথ রায় ও মহেন্দ্র গুপ্ত]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#বাংলা পৌরাণিক নাটকের পরিণতি|পরিণতি]] # [[/ঐতিহাসিক নাটক|বাংলা ঐতিহাসিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত|প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার|দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার|তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার]] # [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|বাংলা সামাজিক ও পারিবারিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক|প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক: রামনারায়ণ তর্করত্ন, উমেশচন্দ্র মিত্র, দীনবন্ধু মিত্র ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক: উপেন্দ্রনাথ দাস, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক|তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জলধর চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র গুপ্ত ও বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক|চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক: বিজন ভট্টাচার্য, তুলসী লাহিড়ী, সলিল সেন ও অন্যান্য]] # [[/প্রহসন|বাংলা প্রহসনের বিকাশ]] ## [[/প্রহসন#প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ|তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ]] === পর্ব ৪: আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্য === # [[/কবিওয়ালা|কবিওয়ালা]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত|ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত]] # [[/মদনমোহন তর্কালঙ্কার|মদনমোহন তর্কালঙ্কার]] # [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|উনিশ শতকের বাংলা মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য|আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য|মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য|মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি|বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি|বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি]] # [[/রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়|রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য|''তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মেঘনাদবধ কাব্য|''মেঘনাদবধ কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#ব্রজাঙ্গনা কাব্য|''ব্রজাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#বীরাঙ্গনা কাব্য|''বীরাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#চতুর্দশপদী কবিতাবলী|''চতুর্দশপদী কবিতাবলী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/নবীনচন্দ্র সেন|নবীনচন্দ্র সেন]] # [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী|বিহারীলাল চক্রবর্তী]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#রচনাবলি|রচনাবলি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য|কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#শৈল্পিক ত্রুটি|শৈল্পিক ত্রুটি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল|বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল]] # [[/আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম|বাংলা আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ|রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ|রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত|সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়|করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রমোহন বাগচি|যতীন্দ্রমোহন বাগচি]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়|কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কাজী নজরুল ইসলাম|কাজী নজরুল ইসলাম]] # [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ|উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়|মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী|গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মানকুমারী বসু|মানকুমারী বসু]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#কামিনী রায়|কামিনী রায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#সরোজকুমারী দেবী|সরোজকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#অন্যান্য মহিলা কবিগণ|অন্যান্য মহিলা কবিগণ]] # [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা|রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বুদ্ধদেব বসু|বুদ্ধদেব বসু]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দ দাশ]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অজিত দত্ত|অজিত দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুধীন্দ্রনাথ দত্ত|সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বিষ্ণু দে|বিষ্ণু দে]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#প্রেমেন্দ্র মিত্র|প্রেমেন্দ্র মিত্র]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অমিয় চক্রবর্তী|অমিয় চক্রবর্তী]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সমর সেন|সমর সেন]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুকান্ত ভট্টাচার্য|সুকান্ত ভট্টাচার্য]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অন্যান্য কবিগণ|অন্যান্য কবিগণ]] === পর্ব ৫: রবীন্দ্রসাহিত্য === # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা|কবিতা]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক|নাটক]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: বাল্মীকিপ্রতিভা, কালমৃগয়া ও মায়ার খেলা|রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: ''বাল্মীকিপ্রতিভা'', ''কালমৃগয়া'' ও ''মায়ার খেলা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য|কাব্যনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রকৃতির প্রতিশোধ|''প্রকৃতির প্রতিশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিত্রাঙ্গদা|''চিত্রাঙ্গদা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিদায় অভিশাপ|''বিদায় অভিশাপ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#কাহিনী গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ|''কাহিনী'' গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ: "গান্ধারীর আবেদন", "সতী", "নরকবাস", "লক্ষ্মীর পরীক্ষা" ও "কর্ণকুন্তীসংবাদ"]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রথানুগ নাটক|প্রথানুগ নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও রানী ও তপতী|''রাজা ও রানী'' ও ''তপতী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিসর্জন|''বিসর্জন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মালিনী|''মালিনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রায়শ্চিত্ত ও পরিত্রাণ|''প্রায়শ্চিত্ত'' ও ''পরিত্রাণ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: গৃহপ্রবেশ ও শোধবোধ|রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: ''গৃহপ্রবেশ'' ও ''শোধবোধ'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রহসন বা কৌতুকনাট্য|প্রহসন বা কৌতুকনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#গোড়ায় গলদ ও শেষরক্ষা|''গোড়ায় গলদ'' ও ''শেষরক্ষা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বৈকুণ্ঠের খাতা|''বৈকুণ্ঠের খাতা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক|''হাস্যকৌতুক'' ও ''ব্যঙ্গকৌতুক'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিরকুমার সভা|''চিরকুমার সভা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের রূপক-সাংকেতিক নাটক|রূপক-সাংকেতিক নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#শারদোৎসব ও ঋণশোধ|''শারদোৎসব'' ও ''ঋণশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও অরূপরতন|''রাজা'' ও ''অরূপরতন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#অচলায়তন ও গুরু|''অচলায়তন'' ও ''গুরু'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ডাকঘর|''ডাকঘর'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ফাল্গুনী|''ফাল্গুনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মুক্তধারা|''মুক্তধারা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রক্তকরবী|''রক্তকরবী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রথের রশি ও তাসের দেশ|''রথের রশি'' ও ''তাসের দেশ'']] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস|উপন্যাস]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প|ছোটোগল্প]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য|প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ|সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ|শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ|ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ভ্রমণসাহিত্য|ভ্রমণসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#পত্রসাহিত্য|পত্রসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আত্মকথা ও জীবনী|আত্মকথা ও জীবনী]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আবেগধর্মী প্রবন্ধ|আবেগধর্মী প্রবন্ধ]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/রবীন্দ্রসংগীত|রবীন্দ্রসংগীত]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|আ}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} kc0w3siokujoxdb8h0fd413s5k6bdap 85205 85202 2025-06-22T09:35:50Z Jonoikobangali 676 /* পর্ব ৩: বাংলা নাটক */ 85205 wikitext text/x-wiki {{অবস্থা|৫০%}}<p align=center><font size=7 color="DarkBlue"><b>আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস</b></font></p> ==সূচিপত্র== === ভূমিকা === # [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিকতার লক্ষণ|আধুনিকতার লক্ষণ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মানবতাবোধ|মানবতাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#জাতীয়তাবোধ|জাতীয়তাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ|বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ|আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#গদ্যসাহিত্য|গদ্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কথাসাহিত্য|কথাসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#নাট্যসাহিত্য|নাট্যসাহিত্য]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] === পর্ব ১: বাংলা গদ্যসাহিত্য === # [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত|বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত (উনিশ শতকের পূর্ববর্তী বাংলা গদ্যসাহিত্য)]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল|কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য|বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোমিঙ্গো দে সোসা|দোমিঙ্গো দে সোসা]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ|দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ''ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ|মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: ''কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#অন্যান্য নিদর্শন|অন্যান্য নিদর্শন]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব|দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব]] # [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#বাইবেল অনুবাদ|বাইবেল অনুবাদ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র|ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য|মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা|পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#উইলিয়াম কেরি|উইলিয়াম কেরি]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#রামরাম বসু|রামরাম বসু]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার|মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#অন্যান্য লেখকবর্গ|অন্যান্য লেখকবর্গ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য|পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা|মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা]] # [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র|উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদপত্রের সূচনা|সংবাদপত্রের সূচনা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#দিগ্‌দর্শন|দিগ্‌দর্শন]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-দর্পণ|সমাচার-দর্পণ]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বেঙ্গল গেজেট|গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ''বেঙ্গল গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সম্বাদ কৌমুদী|''সম্বাদ কৌমুদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-চন্দ্রিকা|''সমাচার-চন্দ্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদ প্রভাকর|''সংবাদ প্রভাকর'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা|''তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বিবিধার্থ সংগ্রহ|''বিবিধার্থ সংগ্রহ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#মাসিক পত্রিকা|''মাসিক পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#এডুকেশন গেজেট|''এডুকেশন গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সোমপ্রকাশ|''সোমপ্রকাশ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#রহস্য-সন্দর্ভ|''রহস্য-সন্দর্ভ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবোধবন্ধু|''অবোধবন্ধু'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন|''বঙ্গদর্শন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#প্রচার|''প্রচার'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#নবজীবন|''নবজীবন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী|''ভারতী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বালক|''বালক'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সাধনা|''সাধনা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গবাসী|''বঙ্গবাসী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#হিতবাদী|''হিতবাদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#জন্মভূমি|''জন্মভূমি'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বামাবোধিনী|''বামাবোধিনী'']] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী|পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী|তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী|বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী|ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবদান|অবদান]] # [[/রাজা রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের রচনাবলি|রামমোহন রায়ের রচনাবলি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি|রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব|গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব]] # [[/অক্ষয়কুমার দত্ত|অক্ষয়কুমার দত্ত]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#অনুবাদ সাহিত্য|অনুবাদ সাহিত্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#মৌলিক রচনা|মৌলিক রচনা]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য|বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#‘বাংলা গদ্যের জনক’|‘বাংলা গদ্যের জনক’]] # [[/দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর|দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায়]] # [[/রাজনারায়ণ বসু|রাজনারায়ণ বসু]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধসাহিত্যে বৈচিত্র্য|বৈচিত্র্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ|জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বিচারমূলক প্রবন্ধ|বিচারমূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ|রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান|অবদান]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-সমসাময়িক প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর|বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী|রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#প্রমথ চৌধুরী|প্রমথ চৌধুরী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়|পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য]] ===পরিশিষ্ট: বাংলা গদ্যসাহিত্য=== # [[/রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান|রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান]] # [[/বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন]] # [[/বাংলা গদ্যে চলিত রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে চলিত রীতি বিবর্তন]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] === পর্ব ২: বাংলা উপন্যাস ও ছোটোগল্প === # [[/উপন্যাসের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাসের সূত্রপাত|উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা|উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত|হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ''ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল|প্যারীচাঁদ মিত্রের ''আলালের ঘরের দুলাল'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নক্সা|কালীপ্রসন্ন সিংহের ''হুতোম প্যাঁচার নক্সা'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত|রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত: ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ও গোপীমোহন ঘোষ]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য|সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#রমেশচন্দ্র দত্ত|রমেশচন্দ্র দত্ত]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়|তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#প্রতাপচন্দ্র ঘোষ|প্রতাপচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক|বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক]] # [[/বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস|বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস]] # [[/প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস|প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প]] # [[/বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়|বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়|তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়|মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়|বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়]] # [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য|হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য|চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য|বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য|বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য|কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য]] === পর্ব ৩: বাংলা নাটক === # [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব|আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রার আদিরূপ|যাত্রার আদিরূপ]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস|মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রা|যাত্রা]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়|নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে|যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক|ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক]] # [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা|সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা|প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার|গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা|হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ওরিয়েন্টাল থিয়েটার|ওরিয়েন্টাল থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়|সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত|বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা|ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা]] # [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক|আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#মৌলিক নাটক|মৌলিক নাটক]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত|যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#তারাচরণ শিকদার|তারাচরণ শিকদার]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#হরচন্দ্র ঘোষ|হরচন্দ্র ঘোষ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#কালীপ্রসন্ন সিংহ|কালীপ্রসন্ন সিংহ]] # [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন|রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#কুলীনকুলসর্বস্ব|''কুলীনকুলসর্বস্ব'']] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন|প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''শর্মিষ্ঠা''|''শর্মিষ্ঠা'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''পদ্মাবতী''|''পদ্মাবতী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি|ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''কৃষ্ণকুমারী''|''কৃষ্ণকুমারী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|প্রহসন: ''একেই কি বলে সভ্যতা'' ও ''বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|অন্যান্য নাটক: ''মায়াকানন'' ও ''বিষ না ধনুর্গুণ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান|বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান]] # [[/দীনবন্ধু মিত্র|দীনবন্ধু মিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ|''নীলদর্পণ'']] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীল বিদ্রোহ ও নীলদর্পণ নাটক|নীল বিদ্রোহ ও ''নীলদর্পণ'' নাটক]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি|''নীলদর্পণ'' নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সমালোচনা|সমালোচনা]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#প্রহসন|প্রহসন]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সধবার একাদশী ও নিমচাঁদ চরিত্র|''সধবার একাদশী'' ও নিমচাঁদ চরিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান|বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান]] # [[/মনোমোহন বসু|মনোমোহন বসু]] # [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রহসন|প্রহসন]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুবাদ নাটক|অনুবাদ নাটক]] # [[/উপেন্দ্রনাথ দাস|উপেন্দ্রনাথ দাস]] # [[/রাজকৃষ্ণ রায়|রাজকৃষ্ণ রায়]] # [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#নাটক|নাটক]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং|গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি|পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন|গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা|পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা]] # [[/অমৃতলাল বসু|অমৃতলাল বসু]] # [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রহসন|প্রহসন]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#কল্কি অবতার|''কল্কি অবতার'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বিরহ|''বিরহ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ত্র্যহস্পর্শ|''ত্র্যহস্পর্শ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রায়শ্চিত্ত|''প্রায়শ্চিত্ত'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পুনর্জন্ম|''পুনর্জন্ম'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#আনন্দবিদায়|''আনন্দবিদায়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পাষাণী|''পাষাণী'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সীতা|''সীতা'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ভীষ্ম|''ভীষ্ম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পরপারে|''পরপারে'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বঙ্গনারী|''বঙ্গনারী'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অপেরা|অপেরা]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সোরাব-রুস্তম|''সোরাব-রুস্তম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক|রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#তারাবাঈ|''তারাবাঈ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাণা প্রতাপ সিংহ|''রাণা প্রতাপ সিংহ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দুর্গাদাস|''দুর্গাদাস'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মেবার পতন|''মেবার পতন'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক|অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#নূরজাহান|''নূরজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সাজাহান|''সাজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#চন্দ্রগুপ্ত|''চন্দ্রগুপ্ত'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সিংহল বিজয়|''সিংহল বিজয়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা|দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ|ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#কাল্পনিক নাটক|কাল্পনিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক|বিশ শতকের বাংলা নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়|অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ|গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#যোগেশচন্দ্র চৌধুরী|যোগেশচন্দ্র চৌধুরী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#মন্মথ রায়|মন্মথ রায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিধায়ক ভট্টাচার্য|বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#প্রমথনাথ বিশী|প্রমথনাথ বিশী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#জীবনী নাটক|জীবনী নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#নবনাট্য আন্দোলন|নবনাট্য আন্দোলন]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ|বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ]] # [[/পৌরাণিক নাটক|বাংলা পৌরাণিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#প্রথম পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|প্রথম পর্ব: হরচন্দ্র ঘোষ, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|দ্বিতীয় পর্ব: মনোমোহন বসু, রাজকৃষ্ণ রায়, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#তৃতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|তৃতীয় পর্ব: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, মন্মথ রায় ও মহেন্দ্র গুপ্ত]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#বাংলা পৌরাণিক নাটকের পরিণতি|পরিণতি]] # [[/ঐতিহাসিক নাটক|বাংলা ঐতিহাসিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত|প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার|দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার|তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার]] # [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|বাংলা সামাজিক ও পারিবারিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক|প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক: রামনারায়ণ তর্করত্ন, উমেশচন্দ্র মিত্র, দীনবন্ধু মিত্র ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক: উপেন্দ্রনাথ দাস, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক|তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জলধর চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র গুপ্ত ও বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক|চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক: বিজন ভট্টাচার্য, তুলসী লাহিড়ী, সলিল সেন ও অন্যান্য]] # [[/প্রহসন|বাংলা প্রহসনের বিকাশ]] ## [[/প্রহসন#প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ|তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ]] === পর্ব ৪: আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্য === # [[/কবিওয়ালা|কবিওয়ালা]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত|ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত]] # [[/মদনমোহন তর্কালঙ্কার|মদনমোহন তর্কালঙ্কার]] # [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|উনিশ শতকের বাংলা মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য|আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য|মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য|মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি|বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি|বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি]] # [[/রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়|রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য|''তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মেঘনাদবধ কাব্য|''মেঘনাদবধ কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#ব্রজাঙ্গনা কাব্য|''ব্রজাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#বীরাঙ্গনা কাব্য|''বীরাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#চতুর্দশপদী কবিতাবলী|''চতুর্দশপদী কবিতাবলী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/নবীনচন্দ্র সেন|নবীনচন্দ্র সেন]] # [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী|বিহারীলাল চক্রবর্তী]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#রচনাবলি|রচনাবলি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য|কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#শৈল্পিক ত্রুটি|শৈল্পিক ত্রুটি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল|বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল]] # [[/আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম|বাংলা আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ|রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ|রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত|সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়|করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রমোহন বাগচি|যতীন্দ্রমোহন বাগচি]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়|কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কাজী নজরুল ইসলাম|কাজী নজরুল ইসলাম]] # [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ|উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়|মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী|গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মানকুমারী বসু|মানকুমারী বসু]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#কামিনী রায়|কামিনী রায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#সরোজকুমারী দেবী|সরোজকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#অন্যান্য মহিলা কবিগণ|অন্যান্য মহিলা কবিগণ]] # [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা|রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বুদ্ধদেব বসু|বুদ্ধদেব বসু]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দ দাশ]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অজিত দত্ত|অজিত দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুধীন্দ্রনাথ দত্ত|সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বিষ্ণু দে|বিষ্ণু দে]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#প্রেমেন্দ্র মিত্র|প্রেমেন্দ্র মিত্র]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অমিয় চক্রবর্তী|অমিয় চক্রবর্তী]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সমর সেন|সমর সেন]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুকান্ত ভট্টাচার্য|সুকান্ত ভট্টাচার্য]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অন্যান্য কবিগণ|অন্যান্য কবিগণ]] === পর্ব ৫: রবীন্দ্রসাহিত্য === # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা|কবিতা]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক|নাটক]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: বাল্মীকিপ্রতিভা, কালমৃগয়া ও মায়ার খেলা|রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: ''বাল্মীকিপ্রতিভা'', ''কালমৃগয়া'' ও ''মায়ার খেলা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য|কাব্যনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রকৃতির প্রতিশোধ|''প্রকৃতির প্রতিশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিত্রাঙ্গদা|''চিত্রাঙ্গদা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিদায় অভিশাপ|''বিদায় অভিশাপ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#কাহিনী গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ|''কাহিনী'' গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ: "গান্ধারীর আবেদন", "সতী", "নরকবাস", "লক্ষ্মীর পরীক্ষা" ও "কর্ণকুন্তীসংবাদ"]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রথানুগ নাটক|প্রথানুগ নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও রানী ও তপতী|''রাজা ও রানী'' ও ''তপতী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিসর্জন|''বিসর্জন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মালিনী|''মালিনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রায়শ্চিত্ত ও পরিত্রাণ|''প্রায়শ্চিত্ত'' ও ''পরিত্রাণ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: গৃহপ্রবেশ ও শোধবোধ|রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: ''গৃহপ্রবেশ'' ও ''শোধবোধ'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রহসন বা কৌতুকনাট্য|প্রহসন বা কৌতুকনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#গোড়ায় গলদ ও শেষরক্ষা|''গোড়ায় গলদ'' ও ''শেষরক্ষা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বৈকুণ্ঠের খাতা|''বৈকুণ্ঠের খাতা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক|''হাস্যকৌতুক'' ও ''ব্যঙ্গকৌতুক'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিরকুমার সভা|''চিরকুমার সভা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের রূপক-সাংকেতিক নাটক|রূপক-সাংকেতিক নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#শারদোৎসব ও ঋণশোধ|''শারদোৎসব'' ও ''ঋণশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও অরূপরতন|''রাজা'' ও ''অরূপরতন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#অচলায়তন ও গুরু|''অচলায়তন'' ও ''গুরু'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ডাকঘর|''ডাকঘর'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ফাল্গুনী|''ফাল্গুনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মুক্তধারা|''মুক্তধারা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রক্তকরবী|''রক্তকরবী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রথের রশি ও তাসের দেশ|''রথের রশি'' ও ''তাসের দেশ'']] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস|উপন্যাস]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প|ছোটোগল্প]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য|প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ|সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ|শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ|ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ভ্রমণসাহিত্য|ভ্রমণসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#পত্রসাহিত্য|পত্রসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আত্মকথা ও জীবনী|আত্মকথা ও জীবনী]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আবেগধর্মী প্রবন্ধ|আবেগধর্মী প্রবন্ধ]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/রবীন্দ্রসংগীত|রবীন্দ্রসংগীত]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|আ}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} he5vl18ruql0rg4tv5gaguyze2gwqks 85208 85205 2025-06-22T09:50:27Z Jonoikobangali 676 /* পর্ব ৩: বাংলা নাটক */ 85208 wikitext text/x-wiki {{অবস্থা|৫০%}}<p align=center><font size=7 color="DarkBlue"><b>আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস</b></font></p> ==সূচিপত্র== === ভূমিকা === # [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিকতার লক্ষণ|আধুনিকতার লক্ষণ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মানবতাবোধ|মানবতাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#জাতীয়তাবোধ|জাতীয়তাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ|বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ|আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#গদ্যসাহিত্য|গদ্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কথাসাহিত্য|কথাসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#নাট্যসাহিত্য|নাট্যসাহিত্য]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] === পর্ব ১: বাংলা গদ্যসাহিত্য === # [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত|বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত (উনিশ শতকের পূর্ববর্তী বাংলা গদ্যসাহিত্য)]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল|কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য|বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোমিঙ্গো দে সোসা|দোমিঙ্গো দে সোসা]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ|দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ''ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ|মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: ''কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#অন্যান্য নিদর্শন|অন্যান্য নিদর্শন]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব|দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব]] # [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#বাইবেল অনুবাদ|বাইবেল অনুবাদ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র|ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য|মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা|পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#উইলিয়াম কেরি|উইলিয়াম কেরি]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#রামরাম বসু|রামরাম বসু]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার|মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#অন্যান্য লেখকবর্গ|অন্যান্য লেখকবর্গ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য|পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা|মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা]] # [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র|উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদপত্রের সূচনা|সংবাদপত্রের সূচনা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#দিগ্‌দর্শন|দিগ্‌দর্শন]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-দর্পণ|সমাচার-দর্পণ]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বেঙ্গল গেজেট|গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ''বেঙ্গল গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সম্বাদ কৌমুদী|''সম্বাদ কৌমুদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-চন্দ্রিকা|''সমাচার-চন্দ্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদ প্রভাকর|''সংবাদ প্রভাকর'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা|''তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বিবিধার্থ সংগ্রহ|''বিবিধার্থ সংগ্রহ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#মাসিক পত্রিকা|''মাসিক পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#এডুকেশন গেজেট|''এডুকেশন গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সোমপ্রকাশ|''সোমপ্রকাশ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#রহস্য-সন্দর্ভ|''রহস্য-সন্দর্ভ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবোধবন্ধু|''অবোধবন্ধু'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন|''বঙ্গদর্শন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#প্রচার|''প্রচার'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#নবজীবন|''নবজীবন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী|''ভারতী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বালক|''বালক'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সাধনা|''সাধনা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গবাসী|''বঙ্গবাসী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#হিতবাদী|''হিতবাদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#জন্মভূমি|''জন্মভূমি'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বামাবোধিনী|''বামাবোধিনী'']] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী|পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী|তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী|বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী|ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবদান|অবদান]] # [[/রাজা রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের রচনাবলি|রামমোহন রায়ের রচনাবলি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি|রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব|গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব]] # [[/অক্ষয়কুমার দত্ত|অক্ষয়কুমার দত্ত]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#অনুবাদ সাহিত্য|অনুবাদ সাহিত্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#মৌলিক রচনা|মৌলিক রচনা]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য|বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#‘বাংলা গদ্যের জনক’|‘বাংলা গদ্যের জনক’]] # [[/দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর|দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায়]] # [[/রাজনারায়ণ বসু|রাজনারায়ণ বসু]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধসাহিত্যে বৈচিত্র্য|বৈচিত্র্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ|জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বিচারমূলক প্রবন্ধ|বিচারমূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ|রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান|অবদান]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-সমসাময়িক প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর|বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী|রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#প্রমথ চৌধুরী|প্রমথ চৌধুরী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়|পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য]] ===পরিশিষ্ট: বাংলা গদ্যসাহিত্য=== # [[/রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান|রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান]] # [[/বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন]] # [[/বাংলা গদ্যে চলিত রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে চলিত রীতি বিবর্তন]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] === পর্ব ২: বাংলা উপন্যাস ও ছোটোগল্প === # [[/উপন্যাসের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাসের সূত্রপাত|উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা|উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত|হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ''ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল|প্যারীচাঁদ মিত্রের ''আলালের ঘরের দুলাল'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নক্সা|কালীপ্রসন্ন সিংহের ''হুতোম প্যাঁচার নক্সা'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত|রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত: ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ও গোপীমোহন ঘোষ]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য|সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#রমেশচন্দ্র দত্ত|রমেশচন্দ্র দত্ত]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়|তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#প্রতাপচন্দ্র ঘোষ|প্রতাপচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক|বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক]] # [[/বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস|বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস]] # [[/প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস|প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প]] # [[/বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়|বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়|তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়|মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়|বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়]] # [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য|হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য|চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য|বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য|বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য|কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য]] === পর্ব ৩: বাংলা নাটক === # [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব|আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রার আদিরূপ|যাত্রার আদিরূপ]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস|মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রা|যাত্রা]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়|নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে|যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক|ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক]] # [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা|সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা|প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার|গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা|হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ওরিয়েন্টাল থিয়েটার|ওরিয়েন্টাল থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়|সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত|বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা|ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা]] # [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক|আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#মৌলিক নাটক|মৌলিক নাটক]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত|যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#তারাচরণ শিকদার|তারাচরণ শিকদার]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#হরচন্দ্র ঘোষ|হরচন্দ্র ঘোষ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#কালীপ্রসন্ন সিংহ|কালীপ্রসন্ন সিংহ]] # [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন|রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#কুলীনকুলসর্বস্ব|''কুলীনকুলসর্বস্ব'']] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন|প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''শর্মিষ্ঠা''|''শর্মিষ্ঠা'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''পদ্মাবতী''|''পদ্মাবতী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি|ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''কৃষ্ণকুমারী''|''কৃষ্ণকুমারী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|প্রহসন: ''একেই কি বলে সভ্যতা'' ও ''বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|অন্যান্য নাটক: ''মায়াকানন'' ও ''বিষ না ধনুর্গুণ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান|বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান]] # [[/দীনবন্ধু মিত্র|দীনবন্ধু মিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ|''নীলদর্পণ'']] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীল বিদ্রোহ ও নীলদর্পণ নাটক|নীল বিদ্রোহ ও ''নীলদর্পণ'' নাটক]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি|''নীলদর্পণ'' নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সমালোচনা|সমালোচনা]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#প্রহসন|প্রহসন]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সধবার একাদশী ও নিমচাঁদ চরিত্র|''সধবার একাদশী'' ও নিমচাঁদ চরিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান|বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান]] # [[/মনোমোহন বসু|মনোমোহন বসু]] # [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রহসন|প্রহসন]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুবাদ নাটক|অনুবাদ নাটক]] # [[/উপেন্দ্রনাথ দাস|উপেন্দ্রনাথ দাস]] # [[/রাজকৃষ্ণ রায়|রাজকৃষ্ণ রায়]] # [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#নাটক|নাটক]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং|গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি|পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন|গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা|পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] # [[/অমৃতলাল বসু|অমৃতলাল বসু]] # [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রহসন|প্রহসন]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#কল্কি অবতার|''কল্কি অবতার'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বিরহ|''বিরহ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ত্র্যহস্পর্শ|''ত্র্যহস্পর্শ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রায়শ্চিত্ত|''প্রায়শ্চিত্ত'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পুনর্জন্ম|''পুনর্জন্ম'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#আনন্দবিদায়|''আনন্দবিদায়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পাষাণী|''পাষাণী'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সীতা|''সীতা'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ভীষ্ম|''ভীষ্ম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পরপারে|''পরপারে'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বঙ্গনারী|''বঙ্গনারী'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অপেরা|অপেরা]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সোরাব-রুস্তম|''সোরাব-রুস্তম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক|রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#তারাবাঈ|''তারাবাঈ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাণা প্রতাপ সিংহ|''রাণা প্রতাপ সিংহ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দুর্গাদাস|''দুর্গাদাস'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মেবার পতন|''মেবার পতন'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক|অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#নূরজাহান|''নূরজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সাজাহান|''সাজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#চন্দ্রগুপ্ত|''চন্দ্রগুপ্ত'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সিংহল বিজয়|''সিংহল বিজয়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা|দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ|ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#কাল্পনিক নাটক|কাল্পনিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক|বিশ শতকের বাংলা নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়|অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ|গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#যোগেশচন্দ্র চৌধুরী|যোগেশচন্দ্র চৌধুরী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#মন্মথ রায়|মন্মথ রায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিধায়ক ভট্টাচার্য|বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#প্রমথনাথ বিশী|প্রমথনাথ বিশী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#জীবনী নাটক|জীবনী নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#নবনাট্য আন্দোলন|নবনাট্য আন্দোলন]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ|বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ]] # [[/পৌরাণিক নাটক|বাংলা পৌরাণিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#প্রথম পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|প্রথম পর্ব: হরচন্দ্র ঘোষ, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|দ্বিতীয় পর্ব: মনোমোহন বসু, রাজকৃষ্ণ রায়, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#তৃতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|তৃতীয় পর্ব: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, মন্মথ রায় ও মহেন্দ্র গুপ্ত]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#বাংলা পৌরাণিক নাটকের পরিণতি|পরিণতি]] # [[/ঐতিহাসিক নাটক|বাংলা ঐতিহাসিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত|প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার|দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার|তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার]] # [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|বাংলা সামাজিক ও পারিবারিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক|প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক: রামনারায়ণ তর্করত্ন, উমেশচন্দ্র মিত্র, দীনবন্ধু মিত্র ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক: উপেন্দ্রনাথ দাস, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক|তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জলধর চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র গুপ্ত ও বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক|চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক: বিজন ভট্টাচার্য, তুলসী লাহিড়ী, সলিল সেন ও অন্যান্য]] # [[/প্রহসন|বাংলা প্রহসনের বিকাশ]] ## [[/প্রহসন#প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ|তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ]] === পর্ব ৪: আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্য === # [[/কবিওয়ালা|কবিওয়ালা]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত|ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত]] # [[/মদনমোহন তর্কালঙ্কার|মদনমোহন তর্কালঙ্কার]] # [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|উনিশ শতকের বাংলা মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য|আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য|মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য|মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি|বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি|বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি]] # [[/রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়|রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য|''তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মেঘনাদবধ কাব্য|''মেঘনাদবধ কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#ব্রজাঙ্গনা কাব্য|''ব্রজাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#বীরাঙ্গনা কাব্য|''বীরাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#চতুর্দশপদী কবিতাবলী|''চতুর্দশপদী কবিতাবলী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/নবীনচন্দ্র সেন|নবীনচন্দ্র সেন]] # [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী|বিহারীলাল চক্রবর্তী]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#রচনাবলি|রচনাবলি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য|কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#শৈল্পিক ত্রুটি|শৈল্পিক ত্রুটি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল|বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল]] # [[/আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম|বাংলা আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ|রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ|রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত|সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়|করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রমোহন বাগচি|যতীন্দ্রমোহন বাগচি]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়|কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কাজী নজরুল ইসলাম|কাজী নজরুল ইসলাম]] # [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ|উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়|মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী|গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মানকুমারী বসু|মানকুমারী বসু]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#কামিনী রায়|কামিনী রায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#সরোজকুমারী দেবী|সরোজকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#অন্যান্য মহিলা কবিগণ|অন্যান্য মহিলা কবিগণ]] # [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা|রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বুদ্ধদেব বসু|বুদ্ধদেব বসু]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দ দাশ]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অজিত দত্ত|অজিত দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুধীন্দ্রনাথ দত্ত|সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বিষ্ণু দে|বিষ্ণু দে]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#প্রেমেন্দ্র মিত্র|প্রেমেন্দ্র মিত্র]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অমিয় চক্রবর্তী|অমিয় চক্রবর্তী]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সমর সেন|সমর সেন]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুকান্ত ভট্টাচার্য|সুকান্ত ভট্টাচার্য]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অন্যান্য কবিগণ|অন্যান্য কবিগণ]] === পর্ব ৫: রবীন্দ্রসাহিত্য === # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা|কবিতা]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক|নাটক]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: বাল্মীকিপ্রতিভা, কালমৃগয়া ও মায়ার খেলা|রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: ''বাল্মীকিপ্রতিভা'', ''কালমৃগয়া'' ও ''মায়ার খেলা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য|কাব্যনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রকৃতির প্রতিশোধ|''প্রকৃতির প্রতিশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিত্রাঙ্গদা|''চিত্রাঙ্গদা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিদায় অভিশাপ|''বিদায় অভিশাপ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#কাহিনী গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ|''কাহিনী'' গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ: "গান্ধারীর আবেদন", "সতী", "নরকবাস", "লক্ষ্মীর পরীক্ষা" ও "কর্ণকুন্তীসংবাদ"]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রথানুগ নাটক|প্রথানুগ নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও রানী ও তপতী|''রাজা ও রানী'' ও ''তপতী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিসর্জন|''বিসর্জন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মালিনী|''মালিনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রায়শ্চিত্ত ও পরিত্রাণ|''প্রায়শ্চিত্ত'' ও ''পরিত্রাণ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: গৃহপ্রবেশ ও শোধবোধ|রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: ''গৃহপ্রবেশ'' ও ''শোধবোধ'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রহসন বা কৌতুকনাট্য|প্রহসন বা কৌতুকনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#গোড়ায় গলদ ও শেষরক্ষা|''গোড়ায় গলদ'' ও ''শেষরক্ষা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বৈকুণ্ঠের খাতা|''বৈকুণ্ঠের খাতা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক|''হাস্যকৌতুক'' ও ''ব্যঙ্গকৌতুক'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিরকুমার সভা|''চিরকুমার সভা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের রূপক-সাংকেতিক নাটক|রূপক-সাংকেতিক নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#শারদোৎসব ও ঋণশোধ|''শারদোৎসব'' ও ''ঋণশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও অরূপরতন|''রাজা'' ও ''অরূপরতন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#অচলায়তন ও গুরু|''অচলায়তন'' ও ''গুরু'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ডাকঘর|''ডাকঘর'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ফাল্গুনী|''ফাল্গুনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মুক্তধারা|''মুক্তধারা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রক্তকরবী|''রক্তকরবী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রথের রশি ও তাসের দেশ|''রথের রশি'' ও ''তাসের দেশ'']] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস|উপন্যাস]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প|ছোটোগল্প]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য|প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ|সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ|শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ|ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ভ্রমণসাহিত্য|ভ্রমণসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#পত্রসাহিত্য|পত্রসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আত্মকথা ও জীবনী|আত্মকথা ও জীবনী]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আবেগধর্মী প্রবন্ধ|আবেগধর্মী প্রবন্ধ]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/রবীন্দ্রসংগীত|রবীন্দ্রসংগীত]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|আ}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} n0bdst1f8u0l3hhmud7slita04m9tvx 85210 85208 2025-06-22T09:58:58Z Jonoikobangali 676 /* পর্ব ৩: বাংলা নাটক */ 85210 wikitext text/x-wiki {{অবস্থা|৫০%}}<p align=center><font size=7 color="DarkBlue"><b>আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস</b></font></p> ==সূচিপত্র== === ভূমিকা === # [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিকতার লক্ষণ|আধুনিকতার লক্ষণ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মানবতাবোধ|মানবতাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#জাতীয়তাবোধ|জাতীয়তাবোধ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ|বৈজ্ঞানিক চেতনা ও যুক্তিবাদ]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ|আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#গদ্যসাহিত্য|গদ্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কথাসাহিত্য|কথাসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#নাট্যসাহিত্য|নাট্যসাহিত্য]] ## [[/আধুনিক যুগের সূত্রপাত#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] === পর্ব ১: বাংলা গদ্যসাহিত্য === # [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত|বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত (উনিশ শতকের পূর্ববর্তী বাংলা গদ্যসাহিত্য)]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল|কোচবিহারের রাজার চিঠি ও অন্যান্য দলিল]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য|বৈষ্ণব নিবন্ধে গদ্য]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোমিঙ্গো দে সোসা|দোমিঙ্গো দে সোসা]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ|দোম আন্তোনিও দে রোজারিও: ''ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ|মানোএল দ্য আস্‌মুম্‌পসাঁউ: ''কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ'']] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#অন্যান্য নিদর্শন|অন্যান্য নিদর্শন]] ## [[/গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত#দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব|দেশীয় লেখকদের কৃতিত্ব]] # [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা|শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#বাইবেল অনুবাদ|বাইবেল অনুবাদ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র|ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও সাময়িকপত্র]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য|মিশনারিদের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা|ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা|পণ্ডিত-মুন্সিদের রচনা]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#উইলিয়াম কেরি|উইলিয়াম কেরি]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#রামরাম বসু|রামরাম বসু]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার|মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার]] #### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#অন্যান্য লেখকবর্গ|অন্যান্য লেখকবর্গ]] ### [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য|পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যের রচনার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ#মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা|মিশনারি ও কলেজের পণ্ডিত-মুন্সিদের গদ্যচর্চার তুলনা]] # [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র|উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদপত্রের সূচনা|সংবাদপত্রের সূচনা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#দিগ্‌দর্শন|দিগ্‌দর্শন]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-দর্পণ|সমাচার-দর্পণ]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বেঙ্গল গেজেট|গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ''বেঙ্গল গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সম্বাদ কৌমুদী|''সম্বাদ কৌমুদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সমাচার-চন্দ্রিকা|''সমাচার-চন্দ্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সংবাদ প্রভাকর|''সংবাদ প্রভাকর'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা|''তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যান্য পত্রপত্রিকা]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা|উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পত্রপত্রিকা]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বিবিধার্থ সংগ্রহ|''বিবিধার্থ সংগ্রহ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#মাসিক পত্রিকা|''মাসিক পত্রিকা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#এডুকেশন গেজেট|''এডুকেশন গেজেট'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সোমপ্রকাশ|''সোমপ্রকাশ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#রহস্য-সন্দর্ভ|''রহস্য-সন্দর্ভ'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবোধবন্ধু|''অবোধবন্ধু'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন|''বঙ্গদর্শন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#প্রচার|''প্রচার'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#নবজীবন|''নবজীবন'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী|''ভারতী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বালক|''বালক'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#সাধনা|''সাধনা'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গবাসী|''বঙ্গবাসী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#হিতবাদী|''হিতবাদী'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#জন্মভূমি|''জন্মভূমি'']] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বামাবোধিনী|''বামাবোধিনী'']] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী|পত্রিকাকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী|তত্ত্ববোধিনী গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী|বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী]] ### [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী|ভারতী ও সাধনা গোষ্ঠী]] ## [[/উনিশ শতকের সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র#অবদান|অবদান]] # [[/রাজা রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের রচনাবলি|রামমোহন রায়ের রচনাবলি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি|রামমোহন রায়ের গদ্যরীতি]] ## [[/রাজা রামমোহন রায়#গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব|গদ্যশিল্পে রামমোহন রায়ের প্রভাব]] # [[/অক্ষয়কুমার দত্ত|অক্ষয়কুমার দত্ত]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর|ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#অনুবাদ সাহিত্য|অনুবাদ সাহিত্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#মৌলিক রচনা|মৌলিক রচনা]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য|বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য]] ## [[/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর#‘বাংলা গদ্যের জনক’|‘বাংলা গদ্যের জনক’]] # [[/দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর|দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায়]] # [[/রাজনারায়ণ বসু|রাজনারায়ণ বসু]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধসাহিত্যে বৈচিত্র্য|বৈচিত্র্য]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ|জ্ঞানচর্চামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#বিচারমূলক প্রবন্ধ|বিচারমূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ|রসব্যঞ্জনামূলক প্রবন্ধ]] ## [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান|অবদান]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-সমসাময়িক প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর|বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী|রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#প্রমথ চৌধুরী|প্রমথ চৌধুরী]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়|পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য#রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য|রবীন্দ্র-পরবর্তীকালের বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য]] ===পরিশিষ্ট: বাংলা গদ্যসাহিত্য=== # [[/রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান|রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের অবদান]] # [[/বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে আলালী ও বিদ্যাসাগরী রীতির বিবর্তন]] # [[/বাংলা গদ্যে চলিত রীতির বিবর্তন|বাংলা গদ্যে চলিত রীতি বিবর্তন]] # [[/ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] === পর্ব ২: বাংলা উপন্যাস ও ছোটোগল্প === # [[/উপন্যাসের সূত্রপাত|বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাসের সূত্রপাত|উপন্যাসের সূত্রপাত]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা|উপন্যাস রচনার প্রথম প্রচেষ্টা]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত|হানা ক্যাথারিন মুলেন্সের ''ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল|প্যারীচাঁদ মিত্রের ''আলালের ঘরের দুলাল'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নক্সা|কালীপ্রসন্ন সিংহের ''হুতোম প্যাঁচার নক্সা'']] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত|রোম্যান্স রচনার সূত্রপাত: ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ও গোপীমোহন ঘোষ]] ## [[/উপন্যাসের সূত্রপাত#সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য|সূচনা পর্বের উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য]] # [[/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী|বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#রমেশচন্দ্র দত্ত|রমেশচন্দ্র দত্ত]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়|তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#প্রতাপচন্দ্র ঘোষ|প্রতাপচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/বঙ্কিম-সমকালীন ঔপন্যাসিক গোষ্ঠী#বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক|বঙ্কিমযুগের অন্যান্য ঔপন্যাসিক]] # [[/বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস|বিশ শতকের বাংলা উপন্যাস]] # [[/প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস|প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস]] # [[/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প|শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প]] # [[/বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়|বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়|তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়|মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়|বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়]] # [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য|হৃদয়বৃত্তিমূলক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য|চিন্তামূলক মননশীল কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য|বিকৃত-চিন্তামূলক বিদ্রোহাত্মক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য|বাস্তববুদ্ধিমূলক মানবিক কথাসাহিত্য]] ## [[/দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের ছোটোগল্প ও উপন্যাস#কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য|কৌতুকরসাত্মক কথাসাহিত্য]] === পর্ব ৩: বাংলা নাটক === # [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব|আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রার আদিরূপ|যাত্রার আদিরূপ]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস|মধ্যযুগে নাট্যরস পরিবেশনের প্রয়াস]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রা|যাত্রা]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়|নতুন যাত্রাপদ্ধতি ও গীতাভিনয়]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে|যাত্রাপালা এবং মির‍্যাকল প্লে ও মর‍্যালিটি প্লে]] ## [[/আধুনিক বাংলা নাটকের উদ্ভব#ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক|ইংরেজি নাট্যশালার আদর্শ ও বাংলা নাটক]] # [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা|সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা|প্লে হাউস ও অন্যান্য ইংরেজি নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার|গেরাসিম লেবেদেভ ও বেঙ্গলি থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা|হিন্দু থিয়েটার ও নবীন বসুর বাড়ির নাট্যশালা]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ওরিয়েন্টাল থিয়েটার|ওরিয়েন্টাল থিয়েটার]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়|সংস্কৃত নাটকের বঙ্গানুবাদ ও প্রথম মৌলিক বাংলা নাটকের অভিনয়]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত|বেলগাছিয়া থিয়েটার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী নাট্যশালা#ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা|ন্যাশনাল থিয়েটার: বাংলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালা]] # [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক|আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি ও সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#ইংরেজি নাটকের অনুবাদ|ইংরেজি নাটকের অনুবাদ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ|সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ]] ## [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#মৌলিক নাটক|মৌলিক নাটক]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত|যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#তারাচরণ শিকদার|তারাচরণ শিকদার]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#হরচন্দ্র ঘোষ|হরচন্দ্র ঘোষ]] ### [[/আদি পর্বের অনুবাদ ও মৌলিক নাটক#কালীপ্রসন্ন সিংহ|কালীপ্রসন্ন সিংহ]] # [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন|রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#কুলীনকুলসর্বস্ব|''কুলীনকুলসর্বস্ব'']] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ## [[/রামনারায়ণ তর্করত্ন#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন|প্রাক্‌-মধুসূদন যুগের বাংলা নাটক ও মধুসূদন]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''শর্মিষ্ঠা''|''শর্মিষ্ঠা'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''পদ্মাবতী''|''পদ্মাবতী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি|ঐতিহাসিক নাটক: ট্র্যাজেডি]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#''কৃষ্ণকুমারী''|''কৃষ্ণকুমারী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|প্রহসন: ''একেই কি বলে সভ্যতা'' ও ''বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#প্রহসন|অন্যান্য নাটক: ''মায়াকানন'' ও ''বিষ না ধনুর্গুণ'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্যসাহিত্য#বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান|বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্থান]] # [[/দীনবন্ধু মিত্র|দীনবন্ধু মিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ|''নীলদর্পণ'']] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীল বিদ্রোহ ও নীলদর্পণ নাটক|নীল বিদ্রোহ ও ''নীলদর্পণ'' নাটক]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#নীলদর্পণ নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি|''নীলদর্পণ'' নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সমালোচনা|সমালোচনা]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#অন্যান্য নাটক|অন্যান্য নাটক]] ### [[/দীনবন্ধু মিত্র#প্রহসন|প্রহসন]] #### [[/দীনবন্ধু মিত্র#সধবার একাদশী ও নিমচাঁদ চরিত্র|''সধবার একাদশী'' ও নিমচাঁদ চরিত্র]] ## [[/দীনবন্ধু মিত্র#বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান|বাংলা নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান]] # [[/মনোমোহন বসু|মনোমোহন বসু]] # [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রহসন|প্রহসন]] ## [[/জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর#জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুবাদ নাটক|অনুবাদ নাটক]] # [[/উপেন্দ্রনাথ দাস|উপেন্দ্রনাথ দাস]] # [[/রাজকৃষ্ণ রায়|রাজকৃষ্ণ রায়]] # [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#নাটক|নাটক]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং|গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি|পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন|গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন]] #### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা|পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ### [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#পারিবারিক ও সামাজিক নাটক|পারিবারিক ও সামাজিক নাটক]] ## [[/গিরিশচন্দ্র ঘোষ#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/অমৃতলাল বসু|অমৃতলাল বসু]] # [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রহসন|প্রহসন]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#কল্কি অবতার|''কল্কি অবতার'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বিরহ|''বিরহ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ত্র্যহস্পর্শ|''ত্র্যহস্পর্শ'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#প্রায়শ্চিত্ত|''প্রায়শ্চিত্ত'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পুনর্জন্ম|''পুনর্জন্ম'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#আনন্দবিদায়|''আনন্দবিদায়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পাষাণী|''পাষাণী'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সীতা|''সীতা'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ভীষ্ম|''ভীষ্ম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সামাজিক নাটক|সামাজিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#পরপারে|''পরপারে'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#বঙ্গনারী|''বঙ্গনারী'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অপেরা|অপেরা]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সোরাব-রুস্তম|''সোরাব-রুস্তম'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক|রাজপুত ইতিহাস-নির্ভর ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#তারাবাঈ|''তারাবাঈ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#রাণা প্রতাপ সিংহ|''রাণা প্রতাপ সিংহ'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দুর্গাদাস|''দুর্গাদাস'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মেবার পতন|''মেবার পতন'']] ### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক|অন্যান্য ঐতিহাসিক নাটক]] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#নূরজাহান|''নূরজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সাজাহান|''সাজাহান'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#চন্দ্রগুপ্ত|''চন্দ্রগুপ্ত'']] #### [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#সিংহল বিজয়|''সিংহল বিজয়'']] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা|দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সংলাপের ভাষা]] ## [[/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ|ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#পৌরাণিক নাটক|পৌরাণিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#কাল্পনিক নাটক|কাল্পনিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#অপেরা বা গীতিমুখর নাটক|অপেরা বা গীতিমুখর নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#ঐতিহাসিক নাটক|ঐতিহাসিক নাটক]] ## [[/ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক|বিশ শতকের বাংলা নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়|অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ|গতানুগতিক ধারার নাট্যকারগণ]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#যোগেশচন্দ্র চৌধুরী|যোগেশচন্দ্র চৌধুরী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#মন্মথ রায়|মন্মথ রায়]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিধায়ক ভট্টাচার্য|বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#প্রমথনাথ বিশী|প্রমথনাথ বিশী]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#জীবনী নাটক|জীবনী নাটক]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#নবনাট্য আন্দোলন|নবনাট্য আন্দোলন]] ## [[/বিশ শতকের বাংলা নাটক#বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ|বিদেশি নাটকের বঙ্গীকরণ]] # [[/পৌরাণিক নাটক|বাংলা পৌরাণিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#প্রথম পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|প্রথম পর্ব: হরচন্দ্র ঘোষ, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্ন]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|দ্বিতীয় পর্ব: মনোমোহন বসু, রাজকৃষ্ণ রায়, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও গিরিশচন্দ্র ঘোষ]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#তৃতীয় পর্বের বাংলা পৌরাণিক নাটক|তৃতীয় পর্ব: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, মন্মথ রায় ও মহেন্দ্র গুপ্ত]] ## [[/পৌরাণিক নাটক#বাংলা পৌরাণিক নাটকের পরিণতি|পরিণতি]] # [[/ঐতিহাসিক নাটক|বাংলা ঐতিহাসিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত|প্রথম পর্ব: মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার|দ্বিতীয় পর্ব: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য নাট্যকার]] ## [[/ঐতিহাসিক নাটক#তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার|তৃতীয় পর্ব: যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও অন্যান্য নাট্যকার]] # [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|বাংলা সামাজিক ও পারিবারিক নাটকের বিকাশ]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক|প্রথম পর্বের সামাজিক নাটক: রামনারায়ণ তর্করত্ন, উমেশচন্দ্র মিত্র, দীনবন্ধু মিত্র ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক|দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক ও পারিবারিক নাটক: উপেন্দ্রনাথ দাস, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অন্যান্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক|তৃতীয় পর্বের পারিবারিক নাটক: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জলধর চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র গুপ্ত ও বিধায়ক ভট্টাচার্য]] ## [[/সামাজিক ও পারিবারিক নাটক#চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক|চতুর্থ পর্বের আধুনিক সমাজ-সচেতন নাটক: বিজন ভট্টাচার্য, তুলসী লাহিড়ী, সলিল সেন ও অন্যান্য]] # [[/প্রহসন|বাংলা প্রহসনের বিকাশ]] ## [[/প্রহসন#প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|প্রথম পর্বের প্রহসন: রামনারায়ণ তর্করত্ন, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|দ্বিতীয় পর্বের প্রহসন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ## [[/প্রহসন#তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ|তৃতীয় পর্বের প্রহসন: রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য প্রমুখ]] === পর্ব ৪: আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্য === # [[/কবিওয়ালা|কবিওয়ালা]] # [[/ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত|ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত]] # [[/মদনমোহন তর্কালঙ্কার|মদনমোহন তর্কালঙ্কার]] # [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|উনিশ শতকের বাংলা মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য|আখ্যানকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য|মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য|মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ### [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য|নবীনচন্দ্র সেনের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি|বাংলা মহাকাব্যের পরিণতি]] ## [[/উনিশ শতকের মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্য#বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি|বাংলা আখ্যানকাব্যের পরিণতি]] # [[/রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়|রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#কাব্যসাহিত্য|কাব্যসাহিত্য]] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য|''তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মেঘনাদবধ কাব্য|''মেঘনাদবধ কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#ব্রজাঙ্গনা কাব্য|''ব্রজাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#বীরাঙ্গনা কাব্য|''বীরাঙ্গনা কাব্য'']] ### [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#চতুর্দশপদী কবিতাবলী|''চতুর্দশপদী কবিতাবলী'']] ## [[/মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়|হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]] # [[/নবীনচন্দ্র সেন|নবীনচন্দ্র সেন]] # [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী|বিহারীলাল চক্রবর্তী]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#রচনাবলি|রচনাবলি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য|কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#শৈল্পিক ত্রুটি|শৈল্পিক ত্রুটি]] ## [[/বিহারীলাল চক্রবর্তী#বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল|বিশুদ্ধ গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল]] # [[/আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম|বাংলা আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্যের ধারা ও পরিণাম]] # [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ|রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ|রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত কবিগণ]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্র-প্রভাবিক কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#দ্বিজেন্দ্রলাল রায়|দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত|সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়|করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায়]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রমোহন বাগচি|যতীন্দ্রমোহন বাগচি]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়|কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় ও কিরণধন চট্টোপাধ্যায়]] ## [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী|রবীন্দ্রবিরোধী কবিগোষ্ঠী]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#মোহিতলাল মজুমদার|মোহিতলাল মজুমদার]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত|যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত]] ### [[/রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবিগণ#কাজী নজরুল ইসলাম|কাজী নজরুল ইসলাম]] # [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ|উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়|মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#স্বর্ণকুমারী দেবী|স্বর্ণকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী|গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#মানকুমারী বসু|মানকুমারী বসু]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#কামিনী রায়|কামিনী রায়]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#সরোজকুমারী দেবী|সরোজকুমারী দেবী]] ## [[/উনিশ শতকের মহিলা কবিগণ#অন্যান্য মহিলা কবিগণ|অন্যান্য মহিলা কবিগণ]] # [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা|রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বুদ্ধদেব বসু|বুদ্ধদেব বসু]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দ দাশ]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অজিত দত্ত|অজিত দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুধীন্দ্রনাথ দত্ত|সুধীন্দ্রনাথ দত্ত]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#বিষ্ণু দে|বিষ্ণু দে]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#প্রেমেন্দ্র মিত্র|প্রেমেন্দ্র মিত্র]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অমিয় চক্রবর্তী|অমিয় চক্রবর্তী]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সমর সেন|সমর সেন]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#সুকান্ত ভট্টাচার্য|সুকান্ত ভট্টাচার্য]] ## [[/রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা#অন্যান্য কবিগণ|অন্যান্য কবিগণ]] === পর্ব ৫: রবীন্দ্রসাহিত্য === # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা|কবিতা]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক|নাটক]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: বাল্মীকিপ্রতিভা, কালমৃগয়া ও মায়ার খেলা|রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য: ''বাল্মীকিপ্রতিভা'', ''কালমৃগয়া'' ও ''মায়ার খেলা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য|কাব্যনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রকৃতির প্রতিশোধ|''প্রকৃতির প্রতিশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিত্রাঙ্গদা|''চিত্রাঙ্গদা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিদায় অভিশাপ|''বিদায় অভিশাপ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#কাহিনী গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ|''কাহিনী'' গ্রন্থের কাব্যনাট্যসমূহ: "গান্ধারীর আবেদন", "সতী", "নরকবাস", "লক্ষ্মীর পরীক্ষা" ও "কর্ণকুন্তীসংবাদ"]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রথানুগ নাটক|প্রথানুগ নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও রানী ও তপতী|''রাজা ও রানী'' ও ''তপতী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বিসর্জন|''বিসর্জন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মালিনী|''মালিনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#প্রায়শ্চিত্ত ও পরিত্রাণ|''প্রায়শ্চিত্ত'' ও ''পরিত্রাণ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: গৃহপ্রবেশ ও শোধবোধ|রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নাটক: ''গৃহপ্রবেশ'' ও ''শোধবোধ'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের প্রহসন বা কৌতুকনাট্য|প্রহসন বা কৌতুকনাট্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#গোড়ায় গলদ ও শেষরক্ষা|''গোড়ায় গলদ'' ও ''শেষরক্ষা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#বৈকুণ্ঠের খাতা|''বৈকুণ্ঠের খাতা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক|''হাস্যকৌতুক'' ও ''ব্যঙ্গকৌতুক'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#চিরকুমার সভা|''চিরকুমার সভা'']] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রবীন্দ্রনাথের রূপক-সাংকেতিক নাটক|রূপক-সাংকেতিক নাটক]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#শারদোৎসব ও ঋণশোধ|''শারদোৎসব'' ও ''ঋণশোধ'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রাজা ও অরূপরতন|''রাজা'' ও ''অরূপরতন'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#অচলায়তন ও গুরু|''অচলায়তন'' ও ''গুরু'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ডাকঘর|''ডাকঘর'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#ফাল্গুনী|''ফাল্গুনী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#মুক্তধারা|''মুক্তধারা'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রক্তকরবী|''রক্তকরবী'']] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক#রথের রশি ও তাসের দেশ|''রথের রশি'' ও ''তাসের দেশ'']] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস|উপন্যাস]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প|ছোটোগল্প]] # [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য|প্রবন্ধসাহিত্য]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ|প্রবন্ধসাহিত্যের শ্রেণিবিভাগ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ|সমালোচনা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য আলোচনা-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ|শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ|ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#ভ্রমণসাহিত্য|ভ্রমণসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#পত্রসাহিত্য|পত্রসাহিত্য]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আত্মকথা ও জীবনী|আত্মকথা ও জীবনী]] ### [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#আবেগধর্মী প্রবন্ধ|আবেগধর্মী প্রবন্ধ]] ## [[/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য#মূল্যায়ন|মূল্যায়ন]] # [[/রবীন্দ্রসংগীত|রবীন্দ্রসংগীত]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|আ}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} r6uw41caeoudjtzoi4vlruv0aeuhepp মানব শারীরতত্ত্ব/সংবহন তন্ত্র 0 23112 85130 84152 2025-06-21T15:26:07Z Asikur.rahman25 11164 85130 wikitext text/x-wiki {{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}} [[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]] ==ভূমিকা== হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত। ==হৃদপিণ্ড== হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে। এর অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে। ===এন্ডোকার্ডিয়াম=== এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়। ===মায়োকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ===এপিকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর। ===পেরিকার্ডিয়াম=== পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে। ===হৃদপিণ্ডের কক্ষ=== হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। ====অলিন্দ==== হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে। ====নিলয়==== নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত। ===সেপ্টাম=== ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। ===কপাটিকাসমূহ === দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদপিণ্ড যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদপিণ্ডের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে। ===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ=== কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে। ===হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা=== হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়। অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি। ==হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ== [[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]] যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ===হৃদপিণ্ড থেকে রক্তপ্রবাহের পথ=== অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা ===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ=== আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র== রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল। ===ধমনী=== ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে। ====আর্টেরিওল==== আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়। ===কৈশিকনালী=== [[Image:Illu capillary en.jpg‎|framed|right]] কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে। কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়। "কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়। ===শিরা=== শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে। শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য। ===ভেনিওল=== ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা। ==হৃদরক্ত নালির পথ== [[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]] রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদপিণ্ড অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ। ===ফুসফুস সঞ্চালন পথ=== ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। ===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ=== সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়। ===মহাধমনী=== মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়। ===ঊর্ধ্ব মহাশিরা=== ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে। ===নিম্ন মহাশিরা=== নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে। ===করোনারি ধমনীসমূহ=== [[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]] {{wikipedia|Coronary circulation}} হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান। • ডান করোনারি ধমনী • বাম করোনারি ধমনী উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে। ===হেপাটিক শিরাসমূহ=== মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না। ==হৃদ্পিণ্ডের চক্র== হৃদ্পিণ্ডের চক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদ্পিণ্ডের চক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। ===সিস্টোল=== [[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]] সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে। ===ডায়াস্টোল=== [[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]] ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে। ===লাব-ডাব=== প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়। ==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা== হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়। [http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)] ====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ==== হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে। ====এভি নোড==== অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। ====এভি বান্ডল==== [[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে। ====পারকিঞ্জি ফাইবার==== [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়। ====পেসমেকার==== হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে। ====ফিব্রিলেশন==== ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়। ==ইসিজি== ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে। ====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়==== {| class="wikitable" ! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র |- | [[Image:QRS normal.svg]] | ;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়। ;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়। ;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। ;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে। ;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে। |} ===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন=== কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ===রক্তচাপ=== রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে। ====সিস্টলিক চাপ==== সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়। ====ডায়াস্টলিক চাপ==== ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। ==হৃদরোগ== হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার। ====উচ্চ রক্তচাপ==== উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও। ====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস==== [[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]] অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ====প্লাক==== প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়। ====সার্কুলেটরি শক==== সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ====থ্রম্বাস==== থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে। ====এম্বোলিজম==== এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে। ====স্ট্রোক==== স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে। * '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়। * '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে। ====হার্ট অ্যাটাক==== {{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}} হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। ====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস==== অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়। ====করোনারি বাইপাস==== করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর==== কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়। ====অ্যানিউরিজম==== অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)। ====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা==== রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়। ====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা==== করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়। ===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা=== ====ভ্যারিকোজ শিরা==== ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি। ====ফ্লেবাইটিস==== ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে। ===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি=== [[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]] জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত। ====অসায়ানোটিক ত্রুটি==== অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে। ====সায়ানোটিক ত্রুটি==== সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম। ==হোমিওস্টেসিস== [[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে। ===লসিকা তন্ত্র=== লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে। ==দারুণ কিছু তথ্য== • হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br> • প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br> • চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br> • সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br> • আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে। ==সুস্থ হৃদপিণ্ডের জন্য করণীয়== • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br> • ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br> • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br> • এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br> • চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br> ==বৃদ্ধাবস্থা== বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়। ==শক== ;শারীরবৃত্তীয় চাপ শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়। "ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)। "প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি। ==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন== SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। ==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== • SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br> • AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br> • AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br> • বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br> [[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]] ==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম== • P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> [[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]] ==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে: * এপিনেফ্রিন * নরএপিনেফ্রিন * ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড * ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন * রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ== হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদপিণ্ডে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদপিণ্ডের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন। ====স্টোক==== সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে। স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়। ==সারাংশ== শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে। ==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী== ;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে] ১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে :ক) এপিকার্ডিয়াম :খ) পেরিকার্ডিয়াম :গ) মায়োকার্ডিয়াম :ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস :ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে ২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয় :ক) শিরা :খ) কৈশিকনালীর জালিকা :গ) শিরা :ঘ) অ্যাওর্টা :ঙ) ভেনা কেভা ৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে :ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে :খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল :গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ :ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি :ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন ৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার :ক) এভি নোড :খ) পারকিনজে ফাইবার :গ) এভি বান্ডল :ঘ) এসএ নোড :ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় ৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে :ক) S :খ) P :গ) U :ঘ) T :ঙ) Q ৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে :ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা :খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন :গ) এসএ নোড উদ্দীপনা :ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন :ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা ৭. রক্তচাপ হলো :ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ :খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ :গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ :ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ :ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ ৮. সিস্টলিক চাপ হলো :ক) গড়ে ১২০ mm Hg :খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায় :গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয় :ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg :ঙ) উভয় ক এবং গ :চ) উভয় খ এবং ঘ ৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে? :ক) একটি :খ) দুটি :গ) তিনটি :ঘ) চারটি :ঙ) পাঁচটি ==শব্দকোষ== <br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে। <br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী <br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ <br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। <br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে <br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে। <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে <br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে <br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ <br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ <br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে <br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ <br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে। <br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে <br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী <br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে <br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে <br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয় <br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে <br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব <br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড <br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায় <br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয় <br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে <br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার <br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে <br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা <br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা <br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর <br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে <br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয় <br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর <br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয় <br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে <br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু <br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন <br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ <br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট <br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে <br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা <br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে <br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''': <br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে <br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে <br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ <br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ <br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক <br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া <br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু <br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা <br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা <br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয় <br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন <br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া <br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে <br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ <br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায় ==তথ্যসূত্র== # Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002. # Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders # Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester. # Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>. {{reflist}} k7yk1mo78c6jlbzqarx3v0sv4mo69pm 85131 85130 2025-06-21T15:28:47Z Asikur.rahman25 11164 85131 wikitext text/x-wiki {{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}} [[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]] ==ভূমিকা== হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত। ==হৃদপিণ্ড== হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে। এর অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে। ===এন্ডোকার্ডিয়াম=== এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়। ===মায়োকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ===এপিকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর। ===পেরিকার্ডিয়াম=== পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে। ===হৃদপিণ্ডের কক্ষ=== হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। ====অলিন্দ==== হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে। ====নিলয়==== নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত। ===সেপ্টাম=== ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। ===কপাটিকাসমূহ === দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদপিণ্ড যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদপিণ্ডের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে। ===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ=== কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে। ===হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা=== হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়। অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি। ==হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ== [[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]] যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ===হৃদপিণ্ড থেকে রক্তপ্রবাহের পথ=== অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা ===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ=== আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র== রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল। ===ধমনী=== ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে। ====আর্টেরিওল==== আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়। ===কৈশিকনালী=== [[Image:Illu capillary en.jpg‎|framed|right]] কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে। কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়। "কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়। ===শিরা=== শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে। শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য। ===ভেনিওল=== ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা। ==হৃদরক্ত নালির পথ== [[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]] রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদপিণ্ড অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ। ===ফুসফুস সঞ্চালন পথ=== ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। ===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ=== সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়। ===মহাধমনী=== মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়। ===ঊর্ধ্ব মহাশিরা=== ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে। ===নিম্ন মহাশিরা=== নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে। ===করোনারি ধমনীসমূহ=== [[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]] {{wikipedia|Coronary circulation}} হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান। • ডান করোনারি ধমনী • বাম করোনারি ধমনী উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে। ===হেপাটিক শিরাসমূহ=== মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না। ==হৃদচক্র== হৃদচক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদচক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। ===সিস্টোল=== [[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]] সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে। ===ডায়াস্টোল=== [[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]] ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে। ===লাব-ডাব=== প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়। ==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা== হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়। [http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)] ====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ==== হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে। ====এভি নোড==== অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। ====এভি বান্ডল==== [[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে। ====পারকিঞ্জি ফাইবার==== [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়। ====পেসমেকার==== হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে। ====ফিব্রিলেশন==== ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়। ==ইসিজি== ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে। ====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়==== {| class="wikitable" ! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র |- | [[Image:QRS normal.svg]] | ;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়। ;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়। ;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। ;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে। ;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে। |} ===কার্ডিয়াক মাসল সংকোচন=== কার্ডিয়াক মাসল সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, কার্ডিয়াক মাসলের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ===রক্তচাপ=== রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে। ====সিস্টলিক চাপ==== সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়। ====ডায়াস্টলিক চাপ==== ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। ==হৃদরোগ== হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার। ====উচ্চ রক্তচাপ==== উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও। ====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস==== [[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]] অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ====প্লাক==== প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়। ====সার্কুলেটরি শক==== সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ====থ্রম্বাস==== থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে। ====এম্বোলিজম==== এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে। ====স্ট্রোক==== স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে। * '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়। * '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে। ====হার্ট অ্যাটাক==== {{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}} হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। ====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস==== অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়। ====করোনারি বাইপাস==== করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর==== কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়। ====অ্যানিউরিজম==== অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)। ====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা==== রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়। ====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা==== করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়। ===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা=== ====ভ্যারিকোজ শিরা==== ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি। ====ফ্লেবাইটিস==== ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে। ===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি=== [[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]] জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত। ====অসায়ানোটিক ত্রুটি==== অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে। ====সায়ানোটিক ত্রুটি==== সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম। ==হোমিওস্টেসিস== [[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে। ===লসিকা তন্ত্র=== লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে। ==দারুণ কিছু তথ্য== • হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br> • প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br> • চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br> • সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br> • আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে। ==সুস্থ হৃদপিণ্ডের জন্য করণীয়== • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br> • ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br> • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br> • এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br> • চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br> ==বৃদ্ধাবস্থা== বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়। ==শক== ;শারীরবৃত্তীয় চাপ শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়। "ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)। "প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি। ==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন== SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। ==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== • SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br> • AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br> • AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br> • বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br> [[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]] ==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম== • P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> [[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]] ==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে: * এপিনেফ্রিন * নরএপিনেফ্রিন * ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড * ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন * রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ== হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদপিণ্ডে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদপিণ্ডের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন। ====স্টোক==== সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে। স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়। ==সারাংশ== শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে। ==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী== ;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে] ১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে :ক) এপিকার্ডিয়াম :খ) পেরিকার্ডিয়াম :গ) মায়োকার্ডিয়াম :ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস :ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে ২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয় :ক) শিরা :খ) কৈশিকনালীর জালিকা :গ) শিরা :ঘ) অ্যাওর্টা :ঙ) ভেনা কেভা ৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে :ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে :খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল :গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ :ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি :ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন ৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার :ক) এভি নোড :খ) পারকিনজে ফাইবার :গ) এভি বান্ডল :ঘ) এসএ নোড :ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় ৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে :ক) S :খ) P :গ) U :ঘ) T :ঙ) Q ৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে :ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা :খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন :গ) এসএ নোড উদ্দীপনা :ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন :ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা ৭. রক্তচাপ হলো :ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ :খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ :গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ :ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ :ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ ৮. সিস্টলিক চাপ হলো :ক) গড়ে ১২০ mm Hg :খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায় :গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয় :ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg :ঙ) উভয় ক এবং গ :চ) উভয় খ এবং ঘ ৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে? :ক) একটি :খ) দুটি :গ) তিনটি :ঘ) চারটি :ঙ) পাঁচটি ==শব্দকোষ== <br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে। <br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী <br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ <br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। <br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে <br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে। <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে <br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে <br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ <br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ <br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে <br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ <br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে। <br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে <br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী <br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে <br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে <br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয় <br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে <br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব <br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড <br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায় <br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয় <br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে <br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার <br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে <br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা <br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা <br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর <br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে <br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয় <br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর <br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয় <br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে <br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু <br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন <br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ <br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট <br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে <br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা <br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে <br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''': <br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে <br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে <br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ <br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ <br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক <br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া <br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু <br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা <br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা <br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয় <br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন <br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া <br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে <br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ <br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায় ==তথ্যসূত্র== # Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002. # Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders # Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester. # Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>. {{reflist}} 1mhkkbrbsgcqgz9n7d4ocktpg342yqm 85132 85131 2025-06-21T15:31:07Z Asikur.rahman25 11164 85132 wikitext text/x-wiki {{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}} [[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]] ==ভূমিকা== হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত। ==হৃদপিণ্ড== হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে। এর অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে। ===এন্ডোকার্ডিয়াম=== এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়। ===মায়োকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ===এপিকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর। ===পেরিকার্ডিয়াম=== পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে। ===হৃদপিণ্ডের কক্ষ=== হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি অ্যাট্রিয়া এবং দুইটি নিলয়। অ্যাট্রিয়াগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। ====অলিন্দ==== হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। অ্যাট্রিয়া মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে। ====নিলয়==== নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত। ===সেপ্টাম=== ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। ===কপাটিকাসমূহ === দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদপিণ্ড যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদপিণ্ডের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে। ===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ=== কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে। ===হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা=== হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়। অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি। ==হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ== [[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]] যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ===হৃদপিণ্ড থেকে রক্তপ্রবাহের পথ=== অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা ===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ=== আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র== রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল। ===ধমনী=== ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে। ====আর্টেরিওল==== আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়। ===কৈশিকনালী=== [[Image:Illu capillary en.jpg‎|framed|right]] কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে। কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়। "কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়। ===শিরা=== শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে। শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য। ===ভেনিওল=== ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা। ==হৃদরক্ত নালির পথ== [[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]] রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদপিণ্ড অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ। ===ফুসফুস সঞ্চালন পথ=== ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। ===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ=== সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়। ===মহাধমনী=== মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়। ===ঊর্ধ্ব মহাশিরা=== ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে। ===নিম্ন মহাশিরা=== নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে। ===করোনারি ধমনীসমূহ=== [[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]] {{wikipedia|Coronary circulation}} হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান। • ডান করোনারি ধমনী • বাম করোনারি ধমনী উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে। ===হেপাটিক শিরাসমূহ=== মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না। ==হৃদচক্র== হৃদচক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদচক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। ===সিস্টোল=== [[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]] সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোঅ্যাট্রিয়াল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে। ===ডায়াস্টোল=== [[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]] ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন অ্যাট্রিয়া শিথিল হয়, তখন সেটিকে অ্যাট্রিয়াল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে। ===লাব-ডাব=== প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়। ==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা== হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়। [http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)] ====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ==== হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু অ্যাট্রিয়াল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে। ====এভি নোড==== অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়া ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা অ্যাট্রিয়া থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারঅ্যাট্রিয়াল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত অ্যাট্রিয়াল রিদম (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে অ্যাট্রিয়া সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। ====এভি বান্ডল==== [[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে। ====পারকিঞ্জি ফাইবার==== [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়। ====পেসমেকার==== হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে। ====ফিব্রিলেশন==== ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন|অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে অ্যাট্রিয়া ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়। ==ইসিজি== ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে। ====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়==== {| class="wikitable" ! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র |- | [[Image:QRS normal.svg]] | ;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে অ্যাট্রিয়া বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়। ;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়। ;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। ;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে। ;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে। |} ===হৃদপেশি সংকোচন=== হৃদপেশি সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, হৃদপেশিের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ===রক্তচাপ=== রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে। ====সিস্টলিক চাপ==== সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়। ====ডায়াস্টলিক চাপ==== ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। ==হৃদরোগ== হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার। ====উচ্চ রক্তচাপ==== উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও। ====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস==== [[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]] অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ====প্লাক==== প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়। ====সার্কুলেটরি শক==== সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ====থ্রম্বাস==== থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে। ====এম্বোলিজম==== এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে। ====স্ট্রোক==== স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে। * '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়। * '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে। ====হার্ট অ্যাটাক==== {{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}} হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। ====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস==== অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়। ====করোনারি বাইপাস==== করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর==== কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়। ====অ্যানিউরিজম==== অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)। ====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা==== রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়। ====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা==== করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়। ===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা=== ====ভ্যারিকোজ শিরা==== ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি। ====ফ্লেবাইটিস==== ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে। ===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি=== [[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]] জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত। ====অসায়ানোটিক ত্রুটি==== অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে। ====সায়ানোটিক ত্রুটি==== সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম। ==হোমিওস্টেসিস== [[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে। ===লসিকা তন্ত্র=== লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে। ==দারুণ কিছু তথ্য== • হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br> • প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br> • চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br> • সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br> • আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে। ==সুস্থ হৃদপিণ্ডের জন্য করণীয়== • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br> • ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br> • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br> • এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br> • চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br> ==বৃদ্ধাবস্থা== বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়। ==শক== ;শারীরবৃত্তীয় চাপ শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়। "ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)। "প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি। ==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন== SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। ==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== • SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br> • AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br> • AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br> • বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br> [[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]] ==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম== • P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> [[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]] ==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে: * এপিনেফ্রিন * নরএপিনেফ্রিন * ANP : অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড * ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন * রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ== হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদপিণ্ডে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদপিণ্ডের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন। ====স্টোক==== সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে। স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়। ==সারাংশ== শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে। ==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী== ;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে] ১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে :ক) এপিকার্ডিয়াম :খ) পেরিকার্ডিয়াম :গ) মায়োকার্ডিয়াম :ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস :ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে ২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয় :ক) শিরা :খ) কৈশিকনালীর জালিকা :গ) শিরা :ঘ) অ্যাওর্টা :ঙ) ভেনা কেভা ৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে :ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে :খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল :গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ :ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি :ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন ৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার :ক) এভি নোড :খ) পারকিনজে ফাইবার :গ) এভি বান্ডল :ঘ) এসএ নোড :ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় ৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে :ক) S :খ) P :গ) U :ঘ) T :ঙ) Q ৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে :ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা :খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন :গ) এসএ নোড উদ্দীপনা :ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন :ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা ৭. রক্তচাপ হলো :ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ :খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ :গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ :ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ :ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ ৮. সিস্টলিক চাপ হলো :ক) গড়ে ১২০ mm Hg :খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায় :গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয় :ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg :ঙ) উভয় ক এবং গ :চ) উভয় খ এবং ঘ ৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে? :ক) একটি :খ) দুটি :গ) তিনটি :ঘ) চারটি :ঙ) পাঁচটি ==শব্দকোষ== <br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে। <br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী <br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ <br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। <br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে <br>'''অ্যাট্রিয়াল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদপিণ্ডের অ্যাট্রিয়াতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে। <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': অ্যাট্রিয়া এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে <br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে <br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ <br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ <br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে <br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ <br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে। <br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে <br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী <br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে <br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে <br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয় <br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে <br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব <br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড <br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায় <br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয় <br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে <br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার <br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে <br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা <br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা <br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর <br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে <br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয় <br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর <br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয় <br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে <br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু <br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন <br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ <br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট <br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে <br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা <br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে <br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''': <br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে <br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে <br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ <br>'''সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ <br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক <br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া <br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু <br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা <br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা <br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয় <br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন <br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া <br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে <br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ <br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায় ==তথ্যসূত্র== # Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002. # Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders # Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester. # Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>. {{reflist}} m3ojs7myrkz0ee0xw6iccy2k8w26cz6 85133 85132 2025-06-21T15:34:22Z Asikur.rahman25 11164 85133 wikitext text/x-wiki {{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}} [[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]] ==ভূমিকা== হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত। ==হৃদপিণ্ড== হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে। এর অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-কক্ষবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে। ===এন্ডোকার্ডিয়াম=== এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়। ===মায়োকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ===এপিকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর। ===পেরিকার্ডিয়াম=== পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে। ===হৃদপিণ্ডের কক্ষ=== হৃদপিণ্ডে চারটি কক্ষ থাকে দুইটি আলিন্দ এবং দুইটি নিলয়। আলিন্দগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। ====অলিন্দ==== হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। আলিন্দ মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে। ====নিলয়==== নিলয় হলো এমন একটি কক্ষ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত। ===সেপ্টাম=== ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি কক্ষ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। ===কপাটিকাসমূহ === দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদপিণ্ড যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদপিণ্ডের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে। ===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ=== কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে। ===হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা=== হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়। অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি। ==হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ== [[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]] যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ===হৃদপিণ্ড থেকে রক্তপ্রবাহের পথ=== অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা ===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ=== আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র== রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল। ===ধমনী=== ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে। ====আর্টেরিওল==== আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়। ===কৈশিকনালী=== [[Image:Illu capillary en.jpg‎|framed|right]] কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে। কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়। "কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়। ===শিরা=== শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে। শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য। ===ভেনিওল=== ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা। ==হৃদরক্ত নালির পথ== [[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]] রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদপিণ্ড অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ। ===ফুসফুস সঞ্চালন পথ=== ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। ===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ=== সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়। ===মহাধমনী=== মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়। ===ঊর্ধ্ব মহাশিরা=== ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে। ===নিম্ন মহাশিরা=== নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে। ===করোনারি ধমনীসমূহ=== [[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]] {{wikipedia|Coronary circulation}} হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান। • ডান করোনারি ধমনী • বাম করোনারি ধমনী উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে। ===হেপাটিক শিরাসমূহ=== মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না। ==হৃদচক্র== হৃদচক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদচক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। ===সিস্টোল=== [[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]] সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোআলিন্দল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোআলিন্দল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে। ===ডায়াস্টোল=== [[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]] ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন আলিন্দ শিথিল হয়, তখন সেটিকে আলিন্দল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে। ===লাব-ডাব=== প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়। ==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা== হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়। [http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)] ====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ==== হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোআলিন্দল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোআলিন্দল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু আলিন্দল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে। ====এভি নোড==== অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের আলিন্দ ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা আলিন্দ থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারআলিন্দল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত আলিন্দল রিদম (যেমন আলিন্দল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে আলিন্দ সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। ====এভি বান্ডল==== [[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে। ====পারকিঞ্জি ফাইবার==== [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়। ====পেসমেকার==== হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে। ====ফিব্রিলেশন==== ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:আলিন্দল ফিব্রিলেশন|আলিন্দল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে আলিন্দ ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়। ==ইসিজি== ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে। ====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়==== {| class="wikitable" ! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র |- | [[Image:QRS normal.svg]] | ;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে আলিন্দ বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়। ;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়। ;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। ;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে। ;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে। |} ===হৃদপেশি সংকোচন=== হৃদপেশি সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, হৃদপেশিের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ===রক্তচাপ=== রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে। ====সিস্টলিক চাপ==== সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়। ====ডায়াস্টলিক চাপ==== ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। ==হৃদরোগ== হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার। ====উচ্চ রক্তচাপ==== উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও। ====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস==== [[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]] অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ====প্লাক==== প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়। ====সার্কুলেটরি শক==== সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ====থ্রম্বাস==== থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে। ====এম্বোলিজম==== এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে। ====স্ট্রোক==== স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে। * '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়। * '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে। ====হার্ট অ্যাটাক==== {{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}} হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। ====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস==== অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়। ====করোনারি বাইপাস==== করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর==== কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়। ====অ্যানিউরিজম==== অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)। ====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা==== রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়। ====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা==== করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়। ===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা=== ====ভ্যারিকোজ শিরা==== ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি। ====ফ্লেবাইটিস==== ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে। ===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি=== [[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]] জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত। ====অসায়ানোটিক ত্রুটি==== অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে। ====সায়ানোটিক ত্রুটি==== সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম। ==হোমিওস্টেসিস== [[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে। ===লসিকা তন্ত্র=== লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে। ==দারুণ কিছু তথ্য== • হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br> • প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br> • চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br> • সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br> • আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে। ==সুস্থ হৃদপিণ্ডের জন্য করণীয়== • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br> • ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br> • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br> • এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br> • চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br> ==বৃদ্ধাবস্থা== বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়। ==শক== ;শারীরবৃত্তীয় চাপ শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়। "ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)। "প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি। ==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন== SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। ==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== • SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br> • AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br> • AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br> • বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br> [[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]] ==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম== • P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> [[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]] ==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে: * এপিনেফ্রিন * নরএপিনেফ্রিন * ANP : আলিন্দল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড * ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন * রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ== হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদপিণ্ডে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদপিণ্ডের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন। ====স্টোক==== সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে। স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়। ==সারাংশ== শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে। ==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী== ;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে] ১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে :ক) এপিকার্ডিয়াম :খ) পেরিকার্ডিয়াম :গ) মায়োকার্ডিয়াম :ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস :ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে ২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয় :ক) শিরা :খ) কৈশিকনালীর জালিকা :গ) শিরা :ঘ) অ্যাওর্টা :ঙ) ভেনা কেভা ৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে :ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে :খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল :গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ :ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি :ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন ৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার :ক) এভি নোড :খ) পারকিনজে ফাইবার :গ) এভি বান্ডল :ঘ) এসএ নোড :ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় ৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে :ক) S :খ) P :গ) U :ঘ) T :ঙ) Q ৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে :ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা :খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন :গ) এসএ নোড উদ্দীপনা :ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন :ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা ৭. রক্তচাপ হলো :ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ :খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ :গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ :ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ :ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ ৮. সিস্টলিক চাপ হলো :ক) গড়ে ১২০ mm Hg :খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায় :গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয় :ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg :ঙ) উভয় ক এবং গ :চ) উভয় খ এবং ঘ ৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি কক্ষ থাকে? :ক) একটি :খ) দুটি :গ) তিনটি :ঘ) চারটি :ঙ) পাঁচটি ==শব্দকোষ== <br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে। <br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী <br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ <br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। <br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে <br>'''আলিন্দল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদপিণ্ডের আলিন্দতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে। <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': আলিন্দ এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা আলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে <br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে <br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ <br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ <br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে <br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ <br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে। <br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে <br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী <br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে <br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে <br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয় <br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে <br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব <br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড <br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায় <br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয় <br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে <br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার <br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে <br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা <br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা <br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি কক্ষকে পৃথককারী প্রাচীর <br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে <br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয় <br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর <br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয় <br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে <br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু <br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন <br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ <br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট <br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে <br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা <br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে <br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''': <br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে <br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে <br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ <br>'''সাইনোআলিন্দল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ <br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক <br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া <br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু <br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা <br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা <br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয় <br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন <br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া <br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে <br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের কক্ষ <br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায় ==তথ্যসূত্র== # Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002. # Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders # Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester. # Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>. {{reflist}} 6ny5rwdkpetp6zwbbhjsr3715iyq0td 85134 85133 2025-06-21T15:36:33Z Asikur.rahman25 11164 85134 wikitext text/x-wiki {{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}} [[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]] ==ভূমিকা== হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত। ==হৃদপিণ্ড== হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে। এর অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে। ===এন্ডোকার্ডিয়াম=== এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়। ===মায়োকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ===এপিকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর। ===পেরিকার্ডিয়াম=== পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে। ===হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ=== হৃদপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে দুইটি আলিন্দ এবং দুইটি নিলয়। আলিন্দগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। ====অলিন্দ==== হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। আলিন্দ মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে। ====নিলয়==== নিলয় হলো এমন একটি প্রকোষ্ঠ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত। ===সেপ্টাম=== ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি প্রকোষ্ঠ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। ===কপাটিকাসমূহ === দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি সেমিলুনার কপাটিকা হৃদপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদপিণ্ড যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদপিণ্ডের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে সেমিলুনার কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে। ===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ=== কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে। ===হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা=== হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়। অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি সেমিলুনার কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “সেমিলুনার” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি। ==হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ== [[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]] যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক সেমিলুনার কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ===হৃদপিণ্ড থেকে রক্তপ্রবাহের পথ=== অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা ===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ=== আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র== রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল। ===ধমনী=== ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে। ====আর্টেরিওল==== আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়। ===কৈশিকনালী=== [[Image:Illu capillary en.jpg‎|framed|right]] কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে। কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়। "কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়। ===শিরা=== শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে। শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য। ===ভেনিওল=== ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা। ==হৃদরক্ত নালির পথ== [[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]] রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদপিণ্ড অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ। ===ফুসফুস সঞ্চালন পথ=== ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। ===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ=== সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়। ===মহাধমনী=== মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়। ===ঊর্ধ্ব মহাশিরা=== ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে। ===নিম্ন মহাশিরা=== নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে। ===করোনারি ধমনীসমূহ=== [[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]] {{wikipedia|Coronary circulation}} হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান। • ডান করোনারি ধমনী • বাম করোনারি ধমনী উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে। ===হেপাটিক শিরাসমূহ=== মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না। ==হৃদচক্র== হৃদচক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদচক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। ===সিস্টোল=== [[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]] সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোআলিন্দল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোআলিন্দল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে। ===ডায়াস্টোল=== [[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]] ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন আলিন্দ শিথিল হয়, তখন সেটিকে আলিন্দল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে। ===লাব-ডাব=== প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়। ==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা== হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়। [http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)] ====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ==== হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোআলিন্দল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোআলিন্দল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু আলিন্দল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে। ====এভি নোড==== অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের আলিন্দ ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা আলিন্দ থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারআলিন্দল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত আলিন্দল রিদম (যেমন আলিন্দল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে আলিন্দ সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। ====এভি বান্ডল==== [[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে। ====পারকিঞ্জি ফাইবার==== [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়। ====পেসমেকার==== হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে। ====ফিব্রিলেশন==== ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:আলিন্দল ফিব্রিলেশন|আলিন্দল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে আলিন্দ ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়। ==ইসিজি== ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে। ====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়==== {| class="wikitable" ! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র |- | [[Image:QRS normal.svg]] | ;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে আলিন্দ বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়। ;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়। ;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। ;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে। ;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে। |} ===হৃদপেশি সংকোচন=== হৃদপেশি সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, হৃদপেশিের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ===রক্তচাপ=== রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে। ====সিস্টলিক চাপ==== সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়। ====ডায়াস্টলিক চাপ==== ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। ==হৃদরোগ== হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার। ====উচ্চ রক্তচাপ==== উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও। ====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস==== [[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]] অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ====প্লাক==== প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়। ====সার্কুলেটরি শক==== সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ====থ্রম্বাস==== থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে। ====এম্বোলিজম==== এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে। ====স্ট্রোক==== স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে। * '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়। * '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে। ====হার্ট অ্যাটাক==== {{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}} হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। ====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস==== অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়। ====করোনারি বাইপাস==== করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর==== কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়। ====অ্যানিউরিজম==== অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)। ====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা==== রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়। ====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা==== করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়। ===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা=== ====ভ্যারিকোজ শিরা==== ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি। ====ফ্লেবাইটিস==== ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে। ===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি=== [[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]] জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত। ====অসায়ানোটিক ত্রুটি==== অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে। ====সায়ানোটিক ত্রুটি==== সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম। ==হোমিওস্টেসিস== [[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে। ===লসিকা তন্ত্র=== লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে। ==দারুণ কিছু তথ্য== • হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br> • প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br> • চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br> • সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br> • আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে। ==সুস্থ হৃদপিণ্ডের জন্য করণীয়== • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br> • ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br> • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br> • এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br> • চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br> ==বৃদ্ধাবস্থা== বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়। ==শক== ;শারীরবৃত্তীয় চাপ শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়। "ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)। "প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি। ==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন== SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। ==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== • SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br> • AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br> • AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br> • বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br> [[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]] ==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম== • P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> [[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]] ==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে: * এপিনেফ্রিন * নরএপিনেফ্রিন * ANP : আলিন্দল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড * ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন * রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ== হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদপিণ্ডে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদপিণ্ডের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন। ====স্টোক==== সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে। স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়। ==সারাংশ== শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে। ==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী== ;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে] ১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে :ক) এপিকার্ডিয়াম :খ) পেরিকার্ডিয়াম :গ) মায়োকার্ডিয়াম :ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস :ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে ২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয় :ক) শিরা :খ) কৈশিকনালীর জালিকা :গ) শিরা :ঘ) অ্যাওর্টা :ঙ) ভেনা কেভা ৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে :ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে :খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল :গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ :ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি :ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন ৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার :ক) এভি নোড :খ) পারকিনজে ফাইবার :গ) এভি বান্ডল :ঘ) এসএ নোড :ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় ৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে :ক) S :খ) P :গ) U :ঘ) T :ঙ) Q ৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে :ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা :খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন :গ) এসএ নোড উদ্দীপনা :ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন :ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা ৭. রক্তচাপ হলো :ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ :খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ :গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ :ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ :ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ ৮. সিস্টলিক চাপ হলো :ক) গড়ে ১২০ mm Hg :খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায় :গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয় :ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg :ঙ) উভয় ক এবং গ :চ) উভয় খ এবং ঘ ৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি প্রকোষ্ঠ থাকে? :ক) একটি :খ) দুটি :গ) তিনটি :ঘ) চারটি :ঙ) পাঁচটি ==শব্দকোষ== <br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে। <br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী <br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ <br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। <br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে <br>'''আলিন্দল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদপিণ্ডের আলিন্দতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে। <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': আলিন্দ এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা আলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে <br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে <br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ <br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ <br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে <br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ <br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে। <br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে <br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী <br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে <br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে <br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয় <br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে <br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব <br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড <br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায় <br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয় <br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে <br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার <br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে <br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা <br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা <br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি প্রকোষ্ঠকে পৃথককারী প্রাচীর <br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে <br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয় <br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর <br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয় <br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে <br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু <br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন <br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ <br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট <br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে <br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা <br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে <br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''': <br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে <br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে <br>'''সেমিলুনার ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ <br>'''সাইনোআলিন্দল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ <br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক <br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া <br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু <br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা <br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা <br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয় <br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন <br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া <br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে <br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ <br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায় ==তথ্যসূত্র== # Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002. # Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders # Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester. # Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>. {{reflist}} 99gk7rcjrc4n2q6kn1i988czxsr9dv9 85135 85134 2025-06-21T15:41:55Z Asikur.rahman25 11164 85135 wikitext text/x-wiki {{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}} [[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]] ==ভূমিকা== হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত। ==হৃদপিণ্ড== হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে। এর অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হার্ট রেট বা সংকোচনের গতি স্নায়ু বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে। ===এন্ডোকার্ডিয়াম=== এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়। ===মায়োকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ===এপিকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর। ===পেরিকার্ডিয়াম=== পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে। ===হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ=== হৃদপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে দুইটি আলিন্দ এবং দুইটি নিলয়। আলিন্দগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। ====অলিন্দ==== হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। আলিন্দ মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে। ====নিলয়==== নিলয় হলো এমন একটি প্রকোষ্ঠ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত। ===সেপ্টাম=== ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি প্রকোষ্ঠ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। ===কপাটিকাসমূহ === দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা হৃদপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদপিণ্ড যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদপিণ্ডের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে। ===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ=== কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে। ===হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা=== হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়। অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “অর্ধচন্দ্রাকৃতির” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি। ==হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ== [[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]] যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ===হৃদপিণ্ড থেকে রক্তপ্রবাহের পথ=== অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা ===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ=== আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র== রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল। ===ধমনী=== ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে। ====আর্টেরিওল==== আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়। ===কৈশিকনালী=== [[Image:Illu capillary en.jpg‎|framed|right]] কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে। কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়। "কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়। ===শিরা=== শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে। শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য। ===ভেনিওল=== ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা। ==হৃদরক্ত নালির পথ== [[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]] রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদপিণ্ড অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ। ===ফুসফুস সঞ্চালন পথ=== ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। ===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ=== সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়। ===মহাধমনী=== মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়। ===ঊর্ধ্ব মহাশিরা=== ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে। ===নিম্ন মহাশিরা=== নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে। ===করোনারি ধমনীসমূহ=== [[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]] {{wikipedia|Coronary circulation}} হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান। • ডান করোনারি ধমনী • বাম করোনারি ধমনী উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে। ===হেপাটিক শিরাসমূহ=== মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না। ==হৃদচক্র== হৃদচক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদচক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। ===সিস্টোল=== [[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]] সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোআলিন্দল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোআলিন্দল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে। ===ডায়াস্টোল=== [[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]] ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন আলিন্দ শিথিল হয়, তখন সেটিকে আলিন্দল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে। ===লাব-ডাব=== প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়। ==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা== হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়। [http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)] ====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ==== হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোআলিন্দল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোআলিন্দল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু আলিন্দল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে। ====এভি নোড==== অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের আলিন্দ ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা আলিন্দ থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারআলিন্দল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত আলিন্দল রিদম (যেমন আলিন্দল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে আলিন্দ সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। ====এভি বান্ডল==== [[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে। ====পারকিঞ্জি ফাইবার==== [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়। ====পেসমেকার==== হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে। ====ফিব্রিলেশন==== ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:আলিন্দল ফিব্রিলেশন|আলিন্দল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে আলিন্দ ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়। ==ইসিজি== ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে। ====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়==== {| class="wikitable" ! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র |- | [[Image:QRS normal.svg]] | ;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে আলিন্দ বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়। ;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়। ;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। ;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে। ;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে। |} ===হৃদপেশি সংকোচন=== হৃদপেশি সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, হৃদপেশিের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ===রক্তচাপ=== রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে। ====সিস্টলিক চাপ==== সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়। ====ডায়াস্টলিক চাপ==== ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। ==হৃদরোগ== হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার। ====উচ্চ রক্তচাপ==== উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও। ====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস==== [[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]] অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ====প্লাক==== প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়। ====সার্কুলেটরি শক==== সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ====থ্রম্বাস==== থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে। ====এম্বোলিজম==== এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে। ====স্ট্রোক==== স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে। * '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়। * '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে। ====হার্ট অ্যাটাক==== {{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}} হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। ====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস==== অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়। ====করোনারি বাইপাস==== করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর==== কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়। ====অ্যানিউরিজম==== অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)। ====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা==== রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়। ====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা==== করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়। ===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা=== ====ভ্যারিকোজ শিরা==== ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি। ====ফ্লেবাইটিস==== ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে। ===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি=== [[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]] জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত। ====অসায়ানোটিক ত্রুটি==== অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে। ====সায়ানোটিক ত্রুটি==== সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম। ==হোমিওস্টেসিস== [[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে। ===লসিকা তন্ত্র=== লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে। ==দারুণ কিছু তথ্য== • হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br> • প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br> • চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br> • সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br> • আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে। ==সুস্থ হৃদপিণ্ডের জন্য করণীয়== • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br> • ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br> • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br> • এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br> • চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br> ==বৃদ্ধাবস্থা== বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়। ==শক== ;শারীরবৃত্তীয় চাপ শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়। "ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)। "প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি। ==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন== SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। ==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== • SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br> • AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br> • AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br> • বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br> [[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]] ==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম== • P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> [[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]] ==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে: * এপিনেফ্রিন * নরএপিনেফ্রিন * ANP : আলিন্দল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড * ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন * রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ== হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদপিণ্ডে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদপিণ্ডের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন। ====স্টোক==== সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে। স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়। ==সারাংশ== শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে। ==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী== ;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে] ১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে :ক) এপিকার্ডিয়াম :খ) পেরিকার্ডিয়াম :গ) মায়োকার্ডিয়াম :ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস :ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে ২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয় :ক) শিরা :খ) কৈশিকনালীর জালিকা :গ) শিরা :ঘ) অ্যাওর্টা :ঙ) ভেনা কেভা ৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে :ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে :খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল :গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ :ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি :ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন ৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার :ক) এভি নোড :খ) পারকিনজে ফাইবার :গ) এভি বান্ডল :ঘ) এসএ নোড :ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় ৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে :ক) S :খ) P :গ) U :ঘ) T :ঙ) Q ৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে :ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা :খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন :গ) এসএ নোড উদ্দীপনা :ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন :ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা ৭. রক্তচাপ হলো :ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ :খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ :গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ :ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ :ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ ৮. সিস্টলিক চাপ হলো :ক) গড়ে ১২০ mm Hg :খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায় :গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয় :ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg :ঙ) উভয় ক এবং গ :চ) উভয় খ এবং ঘ ৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি প্রকোষ্ঠ থাকে? :ক) একটি :খ) দুটি :গ) তিনটি :ঘ) চারটি :ঙ) পাঁচটি ==শব্দকোষ== <br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে। <br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী <br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ <br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। <br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে <br>'''আলিন্দল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদপিণ্ডের আলিন্দতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে। <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': আলিন্দ এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা আলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে <br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে <br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ <br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ <br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে <br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ <br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে। <br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে <br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী <br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে <br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে <br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয় <br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে <br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব <br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড <br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায় <br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয় <br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে <br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার <br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে <br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা <br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা <br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি প্রকোষ্ঠকে পৃথককারী প্রাচীর <br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে <br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয় <br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর <br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয় <br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে <br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু <br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন <br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ <br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট <br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে <br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা <br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে <br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''': <br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে <br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে <br>'''অর্ধচন্দ্রাকৃতির ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ <br>'''সাইনোআলিন্দল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ <br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক <br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া <br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু <br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা <br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা <br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয় <br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন <br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া <br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে <br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ <br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায় ==তথ্যসূত্র== # Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002. # Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders # Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester. # Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>. {{reflist}} m0m0qyln3pv92gfiu4wqchhw6tbi2t8 85193 85135 2025-06-22T09:16:51Z Asikur.rahman25 11164 /* হৃদপিণ্ড */ 85193 wikitext text/x-wiki {{মানব শারীরতত্ত্ব|সংবহন তন্ত্র|অনাক্রম্যতন্ত্র}} [[Image:Heart frontally PDA.jpg|right|thumb|500px|মানব হৃদপিণ্ডের মডেল]] ==ভূমিকা== হৃদপিণ্ড হল আমাদের বুকে অবস্থিত একটি জীবন্ত ও অবিরাম স্পন্দিত পেশি। গর্ভের ভেতর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি থেমে থাকে না। গড়ে একজন মানুষের হৃদপিণ্ড প্রায় ৩ বিলিয়ন বার সংকোচন-প্রসারণ করে। প্রতি বার্তায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিরতিতে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছালেও এটি প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন হৃদপিণ্ডই হলো প্রথম অঙ্গ যা গঠনের পরপরই কার্যকর হয়। গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমনকি ভ্রূণটি একটি বড় হাতের অক্ষরের চেয়েও ছোট থাকা অবস্থায়, এটি শরীরকে পুষ্টি সরবরাহের কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো ধমনি, কৈশিক ও শিরার মাধ্যমে রক্ত পাম্প করা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে আনুমানিক ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ রক্তনালী রয়েছে। এই রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন, পুষ্টি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন করা হয়। এই রক্তচলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ব্যবস্থা। আজকের দিনে মার্কিন নাগরিকদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই কাজটিকে সহজ করে তুলেছে। এই অধ্যায়টি হৃদপিণ্ড এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিবেদিত। ==হৃদপিণ্ড== হৃদপিণ্ড একটি ফাঁপা, পেশিবহুল অঙ্গ, যার আকার একটি মুষ্টির মতো। এটি নিয়মিত এবং ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্ত পাম্প করে। হৃদপিণ্ডের পেশিগুলো কার্ডিয়াক মাংসপেশি দ্বারা গঠিত, যা একটি অনৈচ্ছিক পেশি এবং শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডেই পাওয়া যায়। “কার্ডিয়াক” শব্দটি গ্রিক শব্দ "কার্ডিয়া" থেকে এসেছে। এর অর্থ “হৃদয়”। এটি চার-প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট একটি ডাবল পাম্প যা বক্ষগহ্বরের মধ্যে, ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থান করে। কার্ডিয়াক পেশি স্বনির্বেশিত অর্থাৎ এটি নিজস্ব স্নায়ুবাহিত সংকেতের মাধ্যমে সংকোচন করে। এটি কঙ্কালপেশির থেকে আলাদা, কারণ কঙ্কালপেশিকে সংকোচনের জন্য সচেতন বা প্রতিফলিত স্নায়ু উদ্দীপনা প্রয়োজন। হৃদপিণ্ডের সংকোচন নিজে নিজেই ঘটে, তবে হৃদস্পন্দন হার বা স্নায়ুর সংকোচনের গতি বা হরমোনের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন ব্যায়াম বা ভয় পেলে। ===এন্ডোকার্ডিয়াম=== এন্ডোকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তর, যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এটি কোথাও মসৃণ ঝিল্লির মতো আবার কোথাও (বিশেষত নিলয়ে) ছোট ছোট গহ্বর ও অসমতা নিয়ে গঠিত হয়। ===মায়োকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডের পেশিবহুল টিস্যু। এটি এমন বিশেষ ধরণের কার্ডিয়াক কোষ দ্বারা গঠিত যা শরীরের অন্য কোনো পেশিতে দেখা যায় না। এই কোষগুলো সংকোচনের পাশাপাশি স্নায়ুর মতো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। মায়োকার্ডিয়ামে রক্ত সরবরাহ করে করোনারি ধমনি। যদি এই ধমনি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা রক্ত জমাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এনজাইনা পেক্টরিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। যদি হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে সংকোচন না করে, তাহলে তা হার্ট ফেলিওর নামে পরিচিত। এর ফলে শরীরে তরল জমে যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জীবনকাল হ্রাস ও জীবনমান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ===এপিকার্ডিয়াম=== মায়োকার্ডিয়ামের পাশের বাইরের স্তরকে এপিকার্ডিয়াম বলা হয়। এটি একটি পাতলা সংযোজক টিস্যু ও চর্বির স্তর নিয়ে গঠিত, যা এন্ডোকার্ডিয়াম ও মায়োকার্ডিয়ামের পরবর্তী স্তর। ===পেরিকার্ডিয়াম=== পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃদপিণ্ডকে ঘিরে থাকা ঘন, ঝিল্লিবিশিষ্ট আবরণ। এটি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। পেরিকার্ডিয়ামের দুটি স্তর থাকে: ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম ও সিরাস পেরিকার্ডিয়াম। সিরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুটি স্তরে বিভক্ত, এবং এই দুটি স্তরের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যাকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি বলে। ===হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ=== হৃদপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে দুইটি আলিন্দ এবং দুইটি নিলয়। আলিন্দগুলো ছোট এবং পাতলা দেয়ালের হয়, অন্যদিকে নিলয়গুলো বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। ====অলিন্দ==== হৃদপিণ্ডের দুই পাশে দুটি অলিন্দ থাকে। ডান পাশে অবস্থিত অলিন্দে অক্সিজেন-স্বল্প রক্ত থাকে। বাম অলিন্দে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, যা শরীরের দিকে পাঠানো হয়। ডান অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে সুপিরিয়ার ভেনাকাভা ও ইনপিরিয়র ভেনাকাভা থেকে। বাম অলিন্দ রক্ত গ্রহণ করে বাম ও ডান পালমোনারি ভেইন থেকে। আলিন্দ মূলত ধারাবাহিকভাবে শিরার রক্ত প্রবাহ হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়, যাতে প্রতিবার নিলয় সংকোচনের সময় রক্ত প্রবাহে বাধা না পড়ে। ====নিলয়==== নিলয় হলো এমন একটি প্রকোষ্ঠ যা অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণ করে এবং তা হৃদপিণ্ডের বাইরে পাঠায়। দুটি নিলয় আছে: ডান নিলয় রক্ত পাঠায় পালমোনারি ধমনিতে, যা পালমোনারি সার্কিটে প্রবাহিত হয়। বাম নিলয় রক্ত পাঠায় অ্যাওর্টায়, যা সারা শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়। নিলয়ের দেয়াল অলিন্দের চেয়ে মোটা হয়, যার ফলে এগুলো বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। বাম ও ডান নিলয় তুলনা করলে দেখা যায়, বাম নিলয়ের দেয়াল বেশি মোটা, কারণ এটি সারা শরীরে রক্ত পাঠাতে হয়। এই কারণে অনেকের ভুল ধারণা হয় যে হৃদপিণ্ড বাম দিকে অবস্থিত। ===সেপ্টাম=== ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম (ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম, যা বিকাশের সময় সেপ্টাম ইনফেরিয়াস নামে পরিচিত) হলো হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি প্রকোষ্ঠ (নিলয়) এর মধ্যে থাকা পুরু প্রাচীর। এই সেপ্টাম পেছনের দিকে এবং ডান দিকে বাঁকানো, এবং ডান নিলয়ের দিকে বক্রাকারভাবে চলে গেছে। এর বড় অংশটি পুরু এবং পেশিবহুল, যাকে মাংসপেশিযুক্ত ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম বলা হয়। এর উপরের এবং পশ্চাদ্বর্তী অংশটি পাতলা ও তন্তুযুক্ত, যা অ্যাওয়ার্টিক ভেস্টিবিউল কে ডান অলিন্দের নিচের অংশ এবং ডান নিলয়ের উপরের অংশ থেকে পৃথক করে। এই অংশকে বলা হয় মেমব্রেনাস ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। ===কপাটিকাসমূহ === দুটি অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা একমুখী কপাটিকা, যেগুলো নিশ্চিত করে যে রক্ত শুধু অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবাহিত হয়, বিপরীত দিকে নয়। দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা হৃদপিণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধমনীতে অবস্থান করে; এগুলো রক্তকে আবার নিলয়ে ফিরে যেতে বাধা দেয়। হৃদস্পন্দনে যেসব শব্দ শোনা যায়, সেগুলো হলো হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বন্ধ হওয়ার শব্দ। ডান দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে তিনটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি ডান অলিন্দম এবং ডান নিলয়ের মাঝখানে থাকে। হৃদপিণ্ড যখন বিশ্রামে থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টলের সময়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা ডান অলিন্দম থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলাচল করতে দেয়। পরে, হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর্যায়ে যায় যাকে সিস্টল বলা হয় এবং অলিন্দম রক্ত নিলয়ে ঠেলে দেয়। এরপর নিলয় সংকুচিত হয় এবং ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দমের চেয়ে বেশি হয়, তখন ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। বাম দিকের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকাকে বাইকাসপিড কপাটিকা বলা হয় কারণ এতে দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এটি মাইট্রাল কপাটিকা নামেও পরিচিত, কারণ এটি বিশপদের মাথার টুপির মতো দেখতে। এই কপাটিকা বাম নিলয়ের রক্তকে বাম অলিন্দমে ফিরে যেতে বাধা দেয়। যেহেতু এটি হৃদপিণ্ডের বাম পাশে থাকে, তাই এটিকে অনেক চাপ সহ্য করতে হয়; এজন্য এটিকে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, কারণ সহজ গঠন মানে কম জটিলতা এবং কম ত্রুটির সম্ভাবনা। আরো দুটি কপাটিকা থাকে যেগুলোকে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা বলা হয়। এদের ফ্ল্যাপ অর্ধচন্দ্রাকার। পালমোনারি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা ডান নিলয় ও পালমোনারি ট্রাঙ্কের মাঝে থাকে। অ্যাওর্টিক অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা বাম নিলয় ও অ্যাওর্টার মাঝখানে অবস্থান করে। ===সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ=== কর্ডে টেনডিনি প্যাপিলারি মাংসপেশিতে সংযুক্ত থাকে, যেগুলো কপাটিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্যাপিলারি মাংসপেশি ও কর্ডে টেনডিনিকে একত্রে সাবভ্যালভুলার যন্ত্রাংশ বলা হয়। এর কাজ হলো কপাটিকা যখন বন্ধ হয় তখন তা অলিন্দমে ঢুকে পড়া থেকে রক্ষা করা। তবে, এই যন্ত্রাংশ কপাটিকার খোলা-বন্ধের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে কপাটিকার দুই পাশে চাপের পার্থক্যের মাধ্যমে ঘটে। ===হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা=== হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হলো বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক কপাটিকা। এই অবস্থায়, অ্যাওর্টিক কপাটিকাতে স্বাভাবিক তিনটি ফ্ল্যাপের বদলে মাত্র দুটি ফ্ল্যাপ থাকে। এই সমস্যা অনেক সময় শনাক্তই হয় না যতক্ষণ না রোগীর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে কপাটিকাতে ক্যালসিয়াম জমে এটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত এই সমস্যা ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক কপাটিকা থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগে হয়। রিউম্যাটিক জ্বরের আরেকটি সাধারণ জটিলতা হলো মাইট্রাল কপাটিকার পুরু হওয়া ও সংকীর্ণতা (আংশিকভাবে বন্ধ হওয়া)। যারা রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য দাঁতের চিকিৎসার আগে ডেন্টিস্টরা অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। এটি ঘটে যখন দাঁতের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কপাটিকায় সংযুক্ত হয়। অ্যাওর্টিক কপাটিকা একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা, কিন্তু একে বাইকাসপিড বলা হয় কারণ এটি সাধারণত তিনটি “ফ্ল্যাপ” বা “অর্ধচন্দ্রাকৃতির” অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকার সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যেটি সাধারণত মাইট্রাল কপাটিকা নামে পরিচিত এবং এটি দুটি কাস্পযুক্ত কপাটিকার একটি। ==হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ== [[Image:Diagram of the human heart (cropped).svg|thumb|left|300px|মানব হৃদপিণ্ডের চিত্র]] যদিও বর্ণনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ডান পাশে রক্তপ্রবাহ এবং পরে বাম পাশে রক্তপ্রবাহ ব্যাখ্যা করি, আসলে উভয় অলিন্দম একসাথে সংকুচিত হয় এবং উভয় নিলয়ও একসাথে সংকুচিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত দুইটি পাম্প হিসেবে কাজ করে—ডান পাশে একটি এবং বাম পাশে একটি—যেগুলো একযোগে কাজ করে। ডান পাশের পাম্প রক্তকে ফুসফুসে (পালমোনারি সিস্টেমে) পাঠায় এবং একই সময়ে বাম পাশের পাম্প রক্তকে পুরো দেহে (সিস্টেমিক সিস্টেমে) পাঠায়। দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অক্সিজেনবিহীন শিরার রক্ত সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র ভেনা কাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দমে প্রবেশ করে। ডান অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে ডান নিলয়ে পাঠায়। এরপর ডান নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে পালমোনারি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকার মাধ্যমে পালমোনারি ট্রাঙ্ক এবং পালমোনারি ধমনিতে পাঠায়। এই রক্ত ফুসফুসে যায়, যেখানে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে নতুন অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই নতুন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দমে ফিরে আসে। বাম অলিন্দম সংকুচিত হয়ে রক্তকে বাম অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা, বাইকাসপিড বা মাইট্রাল কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পাঠায়। এরপর বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে অ্যাওর্টিক অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকার মাধ্যমে অ্যাসেন্ডিং অ্যাওর্টায় পাঠায়। এরপর অ্যাওর্টা বিভিন্ন ধমনীতে শাখা হয়ে রক্তকে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে দেয়। ===হৃদপিণ্ড থেকে রক্তপ্রবাহের পথ=== অ্যাওর্টা → ধমনী → আর্টিরিওল → কৈশিকনালী → ভেনিউল → শিরা → ভেনা কাভা ===কৈশিকনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ=== আর্টিরিওল থেকে রক্ত এক বা একাধিক কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে। কৈশিকনালীর প্রাচীর এতটাই পাতলা ও ভঙ্গুর যে রক্তকণিকা কেবল এক সারিতে চলাচল করতে পারে। কৈশিকনালীর ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। লাল রক্তকণিকা তাদের মধ্যে থাকা অক্সিজেন কৈশিকনালীর দেয়াল দিয়ে টিস্যুতে ছেড়ে দেয়। এরপর টিস্যু তার বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেয়ালের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ==রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র== রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র আমাদের জীবিত থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করলে শরীরের সব কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, প্রোটিন ও কোষগুলোর চলাচল নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণ— হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ও স্ট্রোক— দুটোই ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধমনী ব্যবস্থার ফলাফল। ===ধমনী=== ধমনী হলো পেশিবহুল রক্তনালী, যা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বাইরে বহন করে। এটি অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন উভয় ধরনের রক্ত বহন করতে পারে। ফুসফুস ধমনীগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং সিস্টেমিক ধমনীগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোথেলিয়াম, মাঝের স্তরটি প্রধানত মসৃণ পেশি দিয়ে গঠিত এবং বাইরের স্তরটি সংযোগকারী কলা (কনেকটিভ টিস্যু) দিয়ে তৈরি। ধমনীর প্রাচীর পুরু হয়, যাতে উচ্চচাপে রক্ত প্রবেশ করলে এটি প্রসারিত হতে পারে। ====আর্টেরিওল==== আর্টেরিওল হলো ধমনীর ছোট রূপ, যা শেষ পর্যন্ত কৈশিকনালীতে নিয়ে যায়। এর পেশিবহুল প্রাচীর পুরু হয়। এই পেশিগুলো সংকোচন (রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়া) এবং প্রসারণ (রক্তনালী প্রসারিত হওয়া) করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়; যত বেশি রক্তনালী প্রসারিত হয়, তত কম রক্তচাপ হয়। আর্টেরিওল চোখে সামান্য দেখা যায়। ===কৈশিকনালী=== [[Image:Illu capillary en.jpg‎|framed|right]] কৈশিকনালী হলো দেহের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী, যা ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং টিস্যুগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। এগুলো শরীরজুড়ে বিস্তৃত, মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬,৩০০ বর্গমিটার। তাই কোনো কোষই কৈশিকনালী থেকে খুব বেশি দূরে নয়— সাধারণত ৫০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই থাকে। কৈশিকনালীর প্রাচীর একক স্তরের কোষ নিয়ে গঠিত, যাকে এন্ডোথেলিয়াম বলে। এটি এত পাতলা যে অক্সিজেন, পানি ও লিপিডের মতো অণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে (ডিফিউশন) এবং টিস্যুতে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ইউরিয়ার মতো বর্জ্য পদার্থও ছড়িয়ে পড়ে রক্তে ফিরে আসে, যাতে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়। "কৈশিকনালী বিছানা" হলো সারা শরীরে বিস্তৃত এই কৈশিকনালীগুলোর জাল। প্রয়োজনে এই বিছানাগুলো "খুলে" বা "বন্ধ" করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটো-রেগুলেশন। সাধারণত কৈশিকনালী বিছানাগুলো তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২৫% রক্ত ধারণ করে। যে কোষগুলো বেশি কাজ করে, তাদের বেশি কৈশিকনালী দরকার হয়। ===শিরা=== শিরা হলো সেই রক্তনালী যা রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। ফুসফুস শিরাগুলো অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত আনে এবং সিস্টেমিক শিরাগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। শরীরের মোট রক্তের প্রায় ৭০% শিরা ব্যবস্থায় থাকে। শিরার বাইরের প্রাচীর ধমনীর মতো তিনটি স্তরেই গঠিত, তবে এর ভেতরের স্তরে মসৃণ পেশি কম এবং বাইরের স্তরে সংযোগকারী কলাও কম থাকে। শিরায় রক্তচাপ কম থাকে, তাই রক্ত ফেরত আনার জন্য কঙ্কাল পেশির সহায়তা লাগে। বেশিরভাগ শিরায় একমুখী ভাল্ব থাকে, যাকে ভেনাস ভাল্ব বলে, যা রক্তকে উল্টো দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে। বাইরের পুরু কোলাজেন স্তর রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমে যাওয়া ঠেকায়। যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বা শয্যাশায়ী হয়, তাহলে শিরায় রক্ত জমে যেতে পারে এবং ভেরিকোজ শিরা তৈরি হতে পারে। শিরার মধ্যখানের ফাঁপা জায়গাকে বলে লুমেন, যেখানে রক্ত প্রবাহিত হয়। পেশিময় স্তর শিরাকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত দ্রুত চলাচল করে। চিকিৎসায় শিরা ব্যবহার করা হয় রক্ত নেওয়া এবং ওষুধ, পুষ্টি বা তরল দেওয়ার (ইন্ট্রাভেনাস ডেলিভারি) জন্য। ===ভেনিওল=== ভেনিওল হলো ছোট শিরা, যা কৈশিকনালী বিছানা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত বড় শিরায় ফেরত নিয়ে যায় (ফুসফুস চক্র ব্যতীত)। ভেনিওলের তিনটি স্তর থাকে; এটি ধমনীর মতো গঠিত হলেও মসৃণ পেশি কম থাকে বলে এটি তুলনামূলকভাবে পাতলা। ==হৃদরক্ত নালির পথ== [[Image:Grafik blutkreislauf.jpg|thumb|left|মানব রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র। ধমনীগুলো লাল, শিরাগুলো নীল রঙে দেখানো হয়েছে।]] রক্তপ্রবাহের দ্বৈত সঞ্চালন ব্যবস্থা বলতে ফুসফুস সঞ্চালন এবং সিস্টেমিক সঞ্চালন দুইটি পৃথক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা উভচর, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের (মানুষসহ) মধ্যে থাকে। এর বিপরীতে, মাছের একক সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড দুটি আলাদা পাম্প নিয়ে গঠিত। ডান পাশে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনবিহীন রক্ত ফুসফুসে পাঠায়), এবং বাম পাশে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় থাকে (যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়)। একটি সার্কিট থেকে অন্যটিতে যেতে হলে রক্তকে অবশ্যই হৃদপিণ্ড অতিক্রম করতে হয়। রক্ত প্রতিমিনিটে দুই-তিনবার সারা শরীর ঘুরে আসে। প্রতিদিন রক্ত প্রায় ১৯,০০০ কিমি (১২,০০০ মাইল) পথ অতিক্রম করে, যা আমেরিকার উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত দূরত্বের চার গুণ। ===ফুসফুস সঞ্চালন পথ=== ফুসফুস সঞ্চালন পথে হৃদপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে রক্ত ফুসফুসে পাম্প করা হয়। এটি ফুসফুস ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। ফুসফুসে অ্যালভিওলাইতে থাকা অক্সিজেন আশেপাশের কৈশিকনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যালভিওলাইতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুস শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন ব্যবহার করে জৈব পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। ===সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ=== সিস্টেমিক সঞ্চালন পথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। ফুসফুস থেকে আসা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে, এরপর নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্তকে মহাধমনীতে পাঠায়। সিস্টেমিক ধমনীগুলো মহাধমনী থেকে শাখায় বিভক্ত হয়ে কৈশিকনালীতে রক্ত পৌঁছায়। কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, বর্জ্য, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করে। শিরাগুলো কৈশিকনালী থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত সংগ্রহ করে ডান অলিন্দে ফেরত পাঠায়। ===মহাধমনী=== মহাধমনী হলো সিস্টেমিক সঞ্চালন পথের সবচেয়ে বড় ধমনী। বাম নিলয় থেকে রক্ত এতে পাম্প করা হয় এবং এটি শরীরের সব অংশে শাখা তৈরি করে রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী একটি স্থিতিস্থাপক ধমনী, যার ফলে এটি প্রসারিত হতে পারে। যখন বাম নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত এতে পাঠায়, তখন এটি প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে সঞ্চিত শক্তি ডায়াস্টল অবস্থায় রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ তখন এটি প্যাসিভভাবে সংকুচিত হয়। ===ঊর্ধ্ব মহাশিরা=== ঊর্ধ্ব মহাশিরা একটি ছোট শিরা, যা দেহের উপরের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ ব্র্যাকিওসেফালিক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা হাত, মাথা ও ঘাড় থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। অ্যাজাইগাস শিরা (যা পাঁজরের খাঁচা থেকে রক্ত আনে) এটিতে যুক্ত হয়, ঠিক ডান অলিন্দে ঢোকার আগে। ===নিম্ন মহাশিরা=== নিম্ন মহাশিরা একটি বড় শিরা, যা দেহের নিচের অর্ধাংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসে। এটি ডান ও বাঁ কমন ইলিয়াক শিরার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং রক্তকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে পাঠায়। এটি উদর গহ্বরের পেছনে অবস্থান করে এবং মেরুদণ্ডের ডান পাশে চলে। ===করোনারি ধমনীসমূহ=== [[Image:Gray492.png|right|thumb|Heart showing the Coronary Arteries]] {{wikipedia|Coronary circulation}} হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীসমূহ করোনারি রক্ত সঞ্চালন বলতে হৃদপিণ্ডের নিজস্ব পেশীতে রক্ত সরবরাহ এবং সেই রক্ত অপসারণকারী রক্তনালীগুলিকে বোঝানো হয়। যদিও হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো রক্তে পূর্ণ থাকে, তবুও হৃদপেশি বা মায়োকার্ডিয়াম এতটাই পুরু হয় যে, মায়োকার্ডিয়ামের গভীরে রক্ত পৌঁছাতে করোনারি রক্তনালীর প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালীগুলো মায়োকার্ডিয়ামে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলোকে করোনারি ধমনী বলা হয়। আর যে শিরাগুলো হৃদপেশি থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত অপসারণ করে, সেগুলো কার্ডিয়াক ভেইন বা হৃদীয় শিরা নামে পরিচিত। যেসব করোনারি ধমনী হৃদপিণ্ডের উপরিভাগ দিয়ে চলে, সেগুলোকে এপিকার্ডিয়াল করোনারি ধমনী বলা হয়। এই ধমনীগুলো যদি সুস্থ থাকে, তবে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে উপযুক্ত হারে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে এটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এই অপেক্ষাকৃত সরু রক্তনালীগুলো সাধারণত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয় এবং রুদ্ধ হতে পারে, যা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। করোনারি ধমনীগুলোকে "চূড়ান্ত রক্ত সরবরাহকারী" ধমনী বলা হয়, কারণ এগুলোর মাধ্যমেই একমাত্র রক্ত সরবরাহ হয় মায়োকার্ডিয়ামে। অতিরিক্ত বা বিকল্প রক্ত সরবরাহ খুবই সীমিত, এজন্য এই ধমনীগুলো রুদ্ধ হলে তা মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে দুটি প্রধান করোনারি ধমনী রয়েছে—বাম ও ডান। • ডান করোনারি ধমনী • বাম করোনারি ধমনী উভয় ধমনীর উৎপত্তি অ্যার্টার ধমনীর গোড়া (মূল) থেকে, ঠিক অ্যার্টিক ভালভের উপরে। নিচে আলোচনা অনুযায়ী, বাম করোনারি ধমনীর উৎপত্তি বাম অ্যার্টিক সাইনাস থেকে, আর ডান করোনারি ধমনীর উৎপত্তি ডান অ্যার্টিক সাইনাস থেকে। প্রায় ৪% মানুষের ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় ধমনী থাকে, যাকে পোষ্টেরিয়র করোনারি ধমনী বলা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির একটি মাত্র করোনারি ধমনী থাকে, যা অ্যার্টার মূলের চারপাশ ঘিরে থাকে। ===হেপাটিক শিরাসমূহ=== মানব দেহতত্ত্বে হেপাটিক শিরাগুলো এমন রক্তনালী যেগুলো যকৃত থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং যকৃতে পরিষ্কারকৃত রক্ত (যা পেট, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র থেকে আসে) নিম্ন মহাশিরাতে প্রবাহিত করে। এই শিরাগুলোর উৎপত্তি যকৃতের গভীর অংশ থেকে হয়, বিশেষ করে লিভার লোবিউলের কেন্দ্রীয় শিরা থেকে। এগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় উপরের ও নিচের দল। উপরের দলে সাধারণত তিনটি শিরা থাকে যেগুলো যকৃতের পশ্চাদ্ভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে কোয়াড্রেট লোব ও বাম লোব থেকে রক্ত নিঃসরণ করে। নিচের দল ডান লোব ও কডেট লোব থেকে উৎপন্ন হয়, সংখ্যা ভেদে পরিবর্তনশীল এবং এগুলো সাধারণত উপরের দলের চেয়ে ছোট হয়। কোনো হেপাটিক শিরাতেই ভাল্ব থাকে না। ==হৃদচক্র== হৃদচক্র বলতে হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রশমনের পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে রক্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত হয়। "হার্ট রেট" বলতে বোঝায় হৃদচক্রের হার বা ঘনত্ব, যা চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনী সংকেতের একটি। এটি সাধারণত প্রতি মিনিটে হৃদ্পিণ্ড কতবার সংকুচিত হয়, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং "বিটস পার মিনিট" বা বিপিএম এ প্রকাশ করা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের হৃদস্পন্দন প্রায় ৭০ বিপিএম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ বিপিএম হয়। তবে এই হার ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত এর পরিসীমা ৬০ বিপিএম (এর চেয়ে কম হলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়) থেকে ১০০ বিপিএম (এর বেশি হলে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়) পর্যন্ত ধরা হয়। ক্রীড়াবিদদের বিশ্রামকালীন হার অনেক কম হতে পারে এবং স্থূল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হতে পারে। শরীর বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে হৃদ্পিণ্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণ (কার্ডিয়াক আউটপুট) বৃদ্ধি করা যায়। ব্যায়াম, পরিবেশগত চাপ বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। পালস বা নাড়ি হৃদ্স্পন্দন পরিমাপের সহজ উপায় হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিটি স্পন্দনে যথেষ্ট রক্ত বের না হলে এটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এরকম কিছু অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (আরিথমিয়া) ক্ষেত্রে, বাস্তব হৃদ্স্পন্দন হার পালস থেকে অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিটি 'বিট' বা স্পন্দন তিনটি বড় ধাপে সম্পন্ন হয় আট্রিয়াল সিস্টোল, ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল এবং সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল। পুরো চক্রজুড়ে রক্তচাপ ওঠানামা করে। যখন নিলয় সংকুচিত হয়, চাপ বেড়ে যায়, ফলে এভি ভালভগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। ===সিস্টোল=== [[Image:Heart_systole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচনের পর্যায়]] সিস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন বা সিস্টোল প্রক্রিয়া শুরু হয় সাইনোআলিন্দল নোডের বৈদ্যুতিক কোষগুলোর মাধ্যমে, যা হৃদ্পিণ্ডের প্রাকৃতিক পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এই কোষগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তেজনার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডিপোলারাইজ হয়। তখন, কোষের ঝিল্লিতে থাকা ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খোলে এবং ক্যালসিয়াম আয়ন কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কিছু ক্যালসিয়াম আয়ন সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে আরো ক্যালসিয়ামকে সারকোপ্লাজমে প্রবেশ করায়। এরপর এই ক্যালসিয়াম ট্রোপোনিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ট্রপোমায়োসিন ও অ্যাক্টিন প্রোটিনের মাঝে থাকা বন্ধনকে ভেঙে দেয়, ফলে মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিনে যুক্ত হতে পারে। মায়োসিন হেডগুলো অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট টেনে সংকোচন ঘটায়। এরপর এটিপি যুক্ত হয়ে মায়োসিন হেডগুলোকে ছাড়িয়ে পুনরায় প্রস্তুত অবস্থানে নিয়ে যায়, এটিপি ভেঙে এডিপি ও ফসফেট উৎপন্ন করে। এই সংকেত প্রতিবেশী মায়োকার্ডিয়াল কোষের গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়নের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর টার্মিনাল থেকে নিঃসৃত নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সাইনোআলিন্দল ও অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে গিয়ে β1-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো জিপ্রোটিন-যুক্ত রিসেপ্টর। এই সংযুক্তি রিসেপ্টরের গঠন পরিবর্তন করে, যা G-প্রোটিনকে সক্রিয় করে। সক্রিয় G-প্রোটিন এটিপি থেকে সিএএমপি তৈরি করে, যা β-অ্যাড্রেনোরিসেপ্টর কিনেস এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে ফসফোরাইলেট করে, ফলে আরো বেশি ক্যালসিয়াম প্রবাহ ঘটে, ট্রোপোনিনের সঙ্গে আরো বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত হয় এবং সংকোচন আরও শক্তিশালী ও দ্রুত হয়। [ফসফোডায়েস্টারেজ এনজাইম সিএএমপি-কে ভেঙে এএমপি-তে পরিণত করে, ফলে এটি আর প্রোটিন কিনেস সক্রিয় করতে পারে না। এএমপি আবার এটিপি-তে পরিণত হয়ে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।] নরএপিনেফ্রিন এভি নোডেও কাজ করে, সংকেত পরিবহণের বিলম্ব কমিয়ে দেয় এবং বুন্ডল অব হিজ দিয়ে দ্রুত গমন নিশ্চিত করে। ===ডায়াস্টোল=== [[Image:Heart_diasystole.svg|thumb|left|200px|হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের পর্যায়]] ডায়াস্টোল অবস্থায় হৃদপিণ্ড কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল হলো সেই সময়কাল যখন হৃদপিণ্ড সংকোচনের পর শিথিল হয় এবং পুনরায় রক্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন নিলয় শিথিল হয়, তখন সেটিকে ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল বলা হয়; আর যখন আলিন্দ শিথিল হয়, তখন সেটিকে আলিন্দল ডায়াস্টোল বলা হয়। উভয় একসাথে সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ডায়াস্টোল গঠন করে। মনে রাখতে হবে, এই শিথিলতাও একটি সক্রিয় এবং শক্তি-ব্যয়ী প্রক্রিয়া। ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টোল চলাকালে (বাম ও ডান) নিলয়ের চাপ সিস্টোল অবস্থায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ চাপ থেকে কমে যায়। যখন বাম নিলয়ের চাপ বাম অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন মাইট্রাল ভালভ খুলে যায় এবং বাম অলিন্দে জমা হওয়া রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ যখন ডান অলিন্দের চেয়ে কমে যায়, তখন ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দের রক্ত ডান নিলয়ে চলে আসে। ===লাব-ডাব=== প্রথম হার্ট টোন বা S1, যাকে "লাব" বলা হয়, তা ঘটে তখন যখন হৃৎপিণ্ডের অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্বগুলো (মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড) বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটে নিলয় সংকোচনের শুরুতে বা সিস্টোল পর্বে। যখন নিলয়ের চাপ অলিন্দর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এই ভাল্বগুলো বন্ধ হয়ে যায় যাতে রক্ত আবার নিলয় থেকে অলিন্দমে ফিরে যেতে না পারে। দ্বিতীয় হার্ট টোন বা S2 (A2 ও P2), যাকে "ডাব" বলা হয়, তা ঘটে ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শেষ হওয়ার সময় অ্যায়োরটিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। যখন বাম নিলয় খালি হয়ে যায়, তখন তার চাপ অ্যায়োরটার চেয়ে কমে যায়, ফলে অ্যায়োরটিক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ডান নিলয়ের চাপ পালমোনারি ধমনী অপেক্ষা কমে গেলে পালমোনারি ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় (ইনস্পিরেশন), বুকে ঋণাত্মক চাপ তৈরি হয়, যা ডান দিকের হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডান নিলয়ে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পালমোনারি ভাল্ব কিছুটা বেশি সময় ধরে খোলা থাকে। ফলে S2-এর P2 অংশটি কিছুটা দেরিতে হয়। শ্বাস ছাড়ার সময় (এক্সপিরেশন), পজিটিভ চাপের কারণে ডান দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পালমোনারি ভাল্ব আগে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে P2 তাড়াতাড়ি ঘটে এবং A2-র আরও কাছাকাছি সময়ে ঘটে। তরুণদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় S2-এর দুটি অংশের আলাদা শোনা একেবারে স্বাভাবিক। শ্বাস ছাড়ার সময় এই ব্যবধান ছোট হয়ে একত্রে একটি শব্দ হিসেবে শোনা যায়। ==হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা ব্যবস্থা== হৃৎপিণ্ড মূলত পেশি টিস্যু দিয়ে তৈরি। একটি স্নায়ুবিন্যাস এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও শিথিলতা সমন্বয় করে যাতে হৃৎপিণ্ডে ঢেউয়ের মতো কার্যকর রক্ত পাম্পিং সম্ভব হয়। [http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory How Stuff Works (The Heart)] ====হৃদস্পন্দনের নিয়ন্ত্রণ==== হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রাকৃতিক পেসমেকার (কার্ডিয়াক পেসমেকার) থাকে, যেগুলো নিজের থেকেই হৃৎপিণ্ডকে স্পন্দিত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এবং অ্যাড্রেনালিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যদি হৃদপেশিগুলো স্বাভাবিক ছন্দে এলোমেলোভাবে সংকোচন-শিথিলতা করত, তবে তা বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং পাম্প হিসেবে হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত হতো। কখনো কখনো যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হয়, তবে হৃদচক্র এলোমেলো ও অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। তখন হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ সংকুচিত হয় আর কিছু অংশ শিথিল থাকে, ফলে পুরো হৃৎপিণ্ড একসঙ্গে সংকোচন-শিথিলতা না করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। একে বলা হয় ফাইব্রিলেশন এবং যদি ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। [[Image:bundleofhis.png|thumb|300px|right|সিনোআলিন্দল নোড ও এট্রিওভেন্ট্রিকুলার বান্ডেল অব হিস-এর স্কিম্যাটিক চিত্র। SA নোড-এর অবস্থান নীল রঙে দেখানো হয়েছে। বান্ডেলটি, যা লাল রঙে দেখানো হয়েছে, করোনারি সাইনাসের কাছাকাছি একটি বিস্তৃত অংশ তৈরি করে AV নোড গঠন করে। AV নোডটি হিশ বান্ডেলে পরিণত হয়, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটামে প্রবেশ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—বাম ও ডান বান্ডেল। এর চূড়ান্ত বিস্তার এই চিত্রে সম্পূর্ণভাবে দেখানো সম্ভব নয়।]]'''SA নোড''' সিনোআলিন্দল নোড (SA নোড বা SAN), যাকে সাইনাস নোডও বলা হয়, এটি একটি পেসমেকার টিস্যু যা হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত এবং বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। যদিও হৃৎপিণ্ডের সব কোষই সংকোচন সৃষ্টি করার মতো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করতে পারে, তবু SA নোড সবচেয়ে দ্রুত সংকেত তৈরি করে বলে এটি সাধারণত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু করে। কারণ, SA নোড অন্যান্য পেসমেকার অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি গতি নিয়ে সংকেত তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের মায়োসাইটগুলোও অন্যান্য স্নায়ুকোষের মতো একটি পুনরুদ্ধারকাল পেরিয়ে অতিরিক্ত সংকোচনে সাড়া দেয় না, তাই SA নোড আগেভাগেই নতুন সংকেত পাঠিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। SA নোড হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশ মুখের কাছে অবস্থিত কোষের একটি দল। এই কোষগুলো কিছুটা সংকোচনশীল ফাইবার রাখে, তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে সংকুচিত হয় না। SA নোডের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিনিটে প্রায় ৭০–৮০ বার বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে। এই নোড পুরো হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, তাই একে প্রাইমারি পেসমেকার বলা হয়। যদি SA নোড কাজ না করে বা এর সংকেত নিচের দিকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকে থাকা অন্য একদল কোষ সংকেত তৈরি শুরু করে। এরা এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড) গঠন করে, যা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝখানে অবস্থিত। AV নোড মিনিটে ৪০–৬০ বার সংকেত পাঠাতে পারে। যদি AV নোড বা পারকিঞ্জি ফাইবারে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে হৃৎপিণ্ডের অন্য কোথাও একটপিক পেসমেকার তৈরি হতে পারে, যেটি সাধারণত SA নোডের চেয়েও দ্রুত সংকেত দেয় এবং অস্বাভাবিক সংকোচন সৃষ্টি করে। SA নোড ভেগাল (প্যারাসিম্প্যাথেটিক) ও সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু দ্বারা ঘনভাবে ঘেরা থাকে। ফলে এটি স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা SA নোডের গতি কমিয়ে দেয়, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু এর বিপরীতে গতি বাড়িয়ে দেয়। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রায় সব অংশে বিস্তৃত থাকে, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু প্রধানত SA ও AV নোড, কিছু আলিন্দল পেশি এবং ভেন্ট্রিকুলার পেশিতে কাজ করে। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা AV নোডের গতি কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ করে K+ আয়নের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এই ভেগাল উদ্দীপনা SA নোড বন্ধ করে দিতে পারে, একে বলা হয় "ভেন্ট্রিকুলার এস্কেপ"। তখন AV বান্ডেলের পারকিঞ্জি ফাইবার নিজেদের সংকেত তৈরি করে নিজস্ব ছন্দে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের SA নোডে রক্ত সরবরাহ করে ডান করোনারি ধমনী। ফলে, যদি কোনো হার্ট অ্যাটাক এই ধমনী বন্ধ করে দেয় এবং বাম ধমনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ না থাকে, তবে SA নোডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মারা যেতে পারে। এতে SA নোড থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে যেতে পারে। ====এভি নোড==== অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড সংক্ষেপে এভি নোড হল হৃদপিণ্ডের আলিন্দ ও নিলয় এর মধ্যবর্তী একটি টিস্যু, যা আলিন্দ থেকে নিলয় পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করে। এভি নোড দুটি উৎস থেকে সংকেত পায় — পেছনের দিকে [[W:ক্রিস্টা টার্মিনালিস|ক্রিস্টা টার্মিনালিস]] এর মাধ্যমে এবং সামনের দিকে ইন্টারআলিন্দল সেপটামের মাধ্যমে। এভি নোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ডিক্রিমেন্টাল কন্ডাকশন"। এর ফলে দ্রুত আলিন্দল রিদম (যেমন আলিন্দল ফিব্রিলেশন বা ফ্লাটার) এর ক্ষেত্রে নিলয়ে অতিরিক্ত সংকেত প্রবাহ প্রতিরোধ করা যায়। এভি নোড ০.১ সেকেন্ডের জন্য সংকেত বিলম্ব করে রাখে, তারপর তা নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিলম্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে নিলয় সংকোচনের আগে আলিন্দ সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% মানুষের এভি নোডে রক্ত সরবরাহ আসে ডান করোনারি ধমনীর একটি শাখা থেকে এবং ১০% থেকে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে আসে বাম সার্কামফ্লেক্স ধমনীর একটি শাখা থেকে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের [[W:সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া|সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া]] তে একজন ব্যক্তির দুটি এভি নোড থাকতে পারে। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহে একটি লুপ তৈরি হয় এবং হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হয়। যখন এই বিদ্যুৎ প্রবাহ নিজেকেই ছুঁয়ে ফেলে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। ====এভি বান্ডল==== [[W:বান্ডল অফ হিজ|বান্ডল অফ হিজ]] হল একটি বিশেষ ধরণের হৃদপেশির কোষসমষ্টি, যা বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহণে দক্ষ এবং এভি নোড থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিচের দিকের ফ্যাসিকুলার শাখা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এই শাখাগুলো পরে [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] এর দিকে যায়, যেগুলো নিলয় ইননারভেট করে এবং নির্ধারিত ছন্দে নিলয় সংকোচন করায়। এই বিশেষ ধরনের ফাইবার আবিষ্কার করেছিলেন সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ জুনিয়র, ১৮৯৩ সালে।হৃদপেশি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত পেশি, কারণ এটি নিজে থেকেই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে এটিকে [[W:মায়োজেনিক|মায়োজেনিক]] বলা হয়। দুটি হৃদপেশি কোষ পাশাপাশি রাখা হলে তারা একসাথে স্পন্দিত হয়। বান্ডল অফ হিজ এর ফাইবারগুলো সাধারণ হৃদপেশির তুলনায় দ্রুত ও সহজে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবাহিত করতে পারে। এগুলি এভি নোড (যা নিলয়ের পেসমেকার হিসেবেও কাজ করে) থেকে সংকেত নিয়ে পুরো হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে দেয়। এই বান্ডল তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় — ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র ও বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ, যেগুলো [[W:ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম|ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম]] বরাবর চলে যায়। এই শাখাগুলো থেকে পারকিঞ্জি ফাইবার উৎপন্ন হয়, যেগুলো সংকেত নিলয়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। বান্ডল ব্রাঞ্চ ও পারকিঞ্জি নেটওয়ার্ক মিলে ভেন্ট্রিকুলার কন্ডাকশন সিস্টেম গঠন করে। বান্ডল অফ হিজ থেকে সংকেত নিলয় পেশিতে পৌঁছাতে প্রায় ০.০৩–০.০৪ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সব নোড থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এরা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ও সংকোচন-প্রসারণের সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সঠিক অনুক্রম বজায় রাখে। ====পারকিঞ্জি ফাইবার==== [[W:পারকিঞ্জি ফাইবার|পারকিঞ্জি ফাইবার]] ( পারকাইন টিস্যু) হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ ভেন্ট্রিকুলার দেয়ালে অবস্থিত, [[W:এন্ডোকার্ডিয়াম|এন্ডোকার্ডিয়াম]] এর ঠিক নিচে। এগুলো বিশেষ ধরনের মায়োকার্ডিয়াল ফাইবার যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। এসএ নোড ও এভি নোডের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারকিঞ্জি ফাইবার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। [[W:কার্ডিয়াক সাইকেল|কার্ডিয়াক সাইকেল]] এর ভেন্ট্রিকুলার সংকোচনের সময়, পারকিঞ্জি ফাইবার ডান ও বাম বান্ডল ব্রাঞ্চ থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা নিলয়ের মায়োকার্ডিয়ামে পৌঁছে দেয়। এর ফলে নিলয়ের পেশি সংকুচিত হয় এবং রক্ত বাহিরে নির্গত হয় — ডান নিলয় থেকে [[W:পালমোনারি সার্কুলেশন|ফুসফুসে]] এবং বাম নিলয় থেকে [[W:সিস্টেমিক সার্কুলেশন|শরীরের অন্য অংশে]]। ১৮৩৯ সালে ইয়ান ইভানজেলিস্টা পারকিঞ্জি এই ফাইবার আবিষ্কার করেন এবং তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা হয়। ====পেসমেকার==== হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয় বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে নির্গত হয় এবং হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংকেত উৎপাদনকারী কোষগুলোকে বলা হয় [[W:পেসমেকার কোষ|পেসমেকার কোষ]] এবং এরা সরাসরি হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে। যখন স্বাভাবিক কন্ডাকশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কৃত্রিম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়, যা কৃত্রিমভাবে এই সংকেত তৈরি করে। ====ফিব্রিলেশন==== ফিব্রিলেশন হল হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক ঝাপটানি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন। এটি [[W:ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম|ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম]] (ইসিজি) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, যা হৃদপিণ্ডে বৈদ্যুতিক উত্তেজনার তরঙ্গ পরিমাপ করে এবং একটি গ্রাফে [[W:পটেনশিয়াল ডিফারেন্স|ভোল্টেজ]] বনাম সময় প্রদর্শন করে। যদি হৃদপিণ্ড ও কার্ডিয়াক সাইকেল ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে ইসিজি একটি নিয়মিত ও পুনরাবৃত্ত প্যাটার্ন দেখায়। কিন্তু ফিব্রিলেশন হলে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যায় না। এটি হতে পারে [[W:আলিন্দল ফিব্রিলেশন|আলিন্দল ফিব্রিলেশন]] (সবচেয়ে সাধারণ) অথবা [[W:ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন|ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন]] (অল্প দেখা যায়, তবে বেশি বিপজ্জনক)। হাসপাতালে ভিএফ এর সময় মনিটর এলার্ম বাজিয়ে ডাক্তারদের সতর্ক করে। তারপর একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক বুকের ওপরে প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে ফিব্রিলেশন অবস্থা থেকে বের করে আনা হয়। এতে হৃদপিণ্ড ৫ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে এটি আবার স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। ফিব্রিলেশন একটি "সার্কাস মুভমেন্ট"-এর উদাহরণ, যেখানে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবার সেই স্থানে ফিরে এসে পুনরায় উত্তেজিত করে। এই সংকেত থামে না। সার্কাস মুভমেন্ট হয় যখন একটি সংকেত হৃদপিণ্ডের কোনো এক স্থানে শুরু হয় এবং হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার সেই কোষে ফিরে আসে, তখন যদি কোষটি পুনরায় উত্তেজিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে সংকেত আবার চালু হয়। এর ফলে সংকেতের অনন্ত চক্র তৈরি হয়। [[W:ফ্লাটার|ফ্লাটার]] হল একটি ধরণের সার্কাস মুভমেন্ট, যেখানে কম ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বিত তরঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন ঘটে। যদি বান্ডল অফ হিজ ব্লক হয়ে যায়, তাহলে আলিন্দ ও নিলয়ের কার্যকলাপে বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়, যাকে [[W:থার্ড ডিগ্রি হার্ট ব্লক|তৃতীয় ডিগ্রি হার্ট ব্লক]] বলা হয়। ডান, বাম অ্যান্টেরিয়র এবং বাম পস্টেরিয়র বান্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক হলেও তৃতীয় ডিগ্রি ব্লক হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং সাধারণত একজন রোগীর জন্য কৃত্রিম পেসমেকার প্রয়োজন হয়। ==ইসিজি== ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হলো হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রোফিজিওলজির একটি চিত্র। কার্ডিয়াক ইলেকট্রোফিজিওলজি হলো হৃদপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমের পদ্ধতি, কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি বিজ্ঞান। ইসিজি হচ্ছে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের একটি গ্রাফিকাল রেকর্ড। এই গ্রাফ হৃদস্পন্দনের হার এবং ছন্দ দেখাতে পারে, এটি হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া অথবা বর্তমান কিংবা অতীতের হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ইসিজি একটি সস্তা, অ আক্রমণাত্মক, দ্রুত এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়া। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা কিংবা ওষুধ ও জীবনধারার পরিবর্তন নির্ধারণ করা হতে পারে। ====ইসিজি কিভাবে পড়তে হয়==== {| class="wikitable" ! colspan=2 | ইসিজি তরঙ্গচিত্র |- | [[Image:QRS normal.svg]] | ;P: P তরঙ্গ - নির্দেশ করে যে আলিন্দ বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত (ডিপোলারাইজড) হয়েছে যাতে রক্ত নিলয়ে পাম্প করা যায়। ;QRS: QRS কমপ্লেক্স - নির্দেশ করে যে নিলয় বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছে যাতে রক্ত বাহিরে পাম্প হয়। ;ST: ST সেগমেন্ট - নিলয়ের সংকোচনের শেষ থেকে T তরঙ্গের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। ;T: T তরঙ্গ - নিলয়ের পুনরুদ্ধারের সময়কাল (রিপোলারাইজেশন) নির্দেশ করে। ;U: U তরঙ্গ - খুব কমই দেখা যায়, এবং ধারণা করা হয় এটি প্যাপিলারি মাসলের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করতে পারে। |} ===হৃদপেশি সংকোচন=== হৃদপেশি সেলের প্লাজমা মেমব্রেন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল দ্বারা উদ্দীপ্ত হওয়ার পর, সংকোচন ঘটে যখন সেলের ভিতরের তরলে ক্যালসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এটি কঙ্কাল পেশির মতোই, যেখানে সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে Ca+ আয়ন নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে আবদ্ধ হয় এবং এটি অ্যাকটিনকে মায়োসিনের সাথে যুক্ত হতে দেয়। তবে, হৃদপেশিের সঙ্গে পার্থক্য হলো যখন অ্যাকশন পোটেনশিয়াল T-টিউবুলে অবস্থিত ভোল্টেজ গেইটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয়। এর ফলে সেলের ভিতরের ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং এটি সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলামের রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়। এটি আরও ক্যালসিয়াম চ্যানেল খুলে দেয় এবং ক্যালসিয়াম নির্গত হয়ে ট্রোপোনিনে যুক্ত হয় এবং অ্যাকটিন ও মায়োসিনের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে সংকোচন ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্যালসিয়াম-প্ররোচিত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ। সংকোচন তখনই শেষ হয় যখন সেলের ভিতরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ===রক্তচাপ=== রক্তচাপ হলো রক্ত যখন রক্তনালীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে রক্তচাপ বলতে ধমনীতে থাকা চাপ বোঝানো হয়, যেমন বাহুর ব্র্যাকিয়াল ধমনিতে। শরীরের অন্য অংশে রক্তনালীতে চাপ সাধারণত কম থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার অফ মার্কিউরি (mmHg) এককে প্রকাশ করা হয়। সিস্টলিক চাপ হলো হৃদস্পন্দনের সময় ধমনিতে রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা; ডায়াস্টলিক চাপ হলো বিশ্রামের সময় সর্বনিম্ন চাপ। এছাড়াও, গড় ধমনিক চাপ এবং পালস চাপও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। একজন বিশ্রামরত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণ চাপ প্রায় ১২০/৮০ mmHg। তবে, এই মান হৃদস্পন্দন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং দিনভর বিভিন্ন কারণে (যেমন: স্ট্রেস, খাদ্য, ওষুধ, কিংবা রোগ) ওঠানামা করে। ====সিস্টলিক চাপ==== সিস্টলিক চাপ সর্বোচ্চ হয় যখন বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনিতে পাম্প হয়। গড়ে এই চাপ ১২০ mmHg হয়। ====ডায়াস্টলিক চাপ==== ডায়াস্টলিক চাপ ধীরে ধীরে কমে গিয়ে গড়ে ৮০ mmHg হয়, যখন নিলয় বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। ==হৃদরোগ== হৃদরোগ বলতে এমন রোগগুলিকে বোঝায় যা হৃদপিণ্ড এবং/অথবা রক্তনালী (ধমনী ও শিরা) কে প্রভাবিত করে। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ বলতে প্রযুক্তিগতভাবে সমস্ত হৃদরোগ সংক্রান্ত রোগ বোঝানো হয়, এটি সাধারণত ধমনীর রোগ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রোগের কারণ, পদ্ধতি এবং চিকিৎসা অনেকটাই একরকম। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগ ভুগছে এবং এ হার দিন দিন বাড়ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের মৃত্যুর প্রধান কারণ। যখন হৃদরোগ শনাক্ত হয়, তখন সাধারণত এর মূল কারণ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) অনেকটা অগ্রসর হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জোর দেওয়া হয়, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান পরিহার। ====উচ্চ রক্তচাপ==== উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেখানে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। কিছু গবেষক উচ্চ রক্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে সিস্টলিক চাপ ১৩০ মিমি পারদচাপের বেশি এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮৫ মিমি পারদচাপের বেশি। <ref name=Totora> Tortora, G. & Grabowski, S. (2000)Principles of anatomy and physiology. Ninth Edition. Wiley page 733. </ref> উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই নীরবেই শুরু হয়, তাই একে মাঝে মাঝে ''নীরব ঘাতক'' বলা হয়। কারণ এটি ধমনীগুলোকে প্রসারিত করে, ফলে ধমনির দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া সৃষ্টি হয় এবং ত্বরণ ঘটে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের। স্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা স্ট্রোক, হৃদরোগ, হৃদযন্ত্রের অকার্যকারিতা এবং ধমনিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (অ্যানিউরিজম) এর ঝুঁকি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি অকর্ম্যতার একটি প্রধান কারণও। ====অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস==== [[Image:Atherosclerosis, aorta, gross pathology PHIL 846 lores.jpg|thumb|230px|[[মহাধমনী]]তে গুরুতর অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। [[ময়নাতদন্ত]]ের নমুনা।]] অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো একটি রোগ যা ধমনী রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। একে সাধারণভাবে ধমনীর "কঠিন হয়ে যাওয়া" বা "চর্বি জমে যাওয়া" হিসেবেও বলা হয়। এটি ধমনির ভেতরে একাধিক প্লাক গঠনের কারণে হয়। আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হয় যখন রক্তনালির দেয়ালের ভেতরে এবং অ্যাথেরোমার চারপাশে শক্ত, অনমনীয় কোলাজেন জমা হয়। এতে ধমনির প্রাচীরের নমনীয়তা কমে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সাধারণত কৈশোরকালেই শুরু হয় এবং এটি প্রায় সব বড় ধমনীতেই দেখা যায়, তবে জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। যখন এটি হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তখন এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরসহ প্রায় সব কার্ডিওভাসকুলার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ====প্লাক==== প্লাক বা অ্যাথেরোমা হলো একটি অস্বাভাবিক প্রদাহজনিত উপাদান যা ধমনির দেয়ালের ভেতরে সাদা রক্তকণিকা ম্যাক্রোফেজ জমে তৈরি হয়। ====সার্কুলেটরি শক==== সার্কুলেটরি শক হলো এক ধরনের গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের রক্তসঞ্চালন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ====থ্রম্বাস==== থ্রম্বাস বা রক্ত জমাট একটি রক্তপাত বন্ধের প্রক্রিয়ায় তৈরি চূড়ান্ত রূপ। এটি প্লেটলেটগুলোর একত্রিত হয়ে প্লেটলেট প্লাগ তৈরি করার মাধ্যমে এবং রক্তজমাট সংক্রান্ত রাসায়নিক উপাদান (ক্লটিং ফ্যাক্টর) সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। আঘাতজনিত অবস্থায় থ্রম্বাস স্বাভাবিক হলেও, অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটি রোগজনিত (থ্রম্বোসিস)। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি হ্রাস পায়। হেপারিন এবং ওয়ারফারিন প্রায়ই ব্যবহৃত হয় বিদ্যমান রক্ত জমাট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে দেহ নিজে স্বাভাবিকভাবে ওই জমাট ভেঙে ফেলতে পারে। ====এম্বোলিজম==== এম্বোলিজম তখন ঘটে যখন দেহের এক অংশ থেকে কোনো বস্তু (এম্বোলাস) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অন্য অংশে গিয়ে কোনো রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ এম্বোলিক উপাদান হলো রক্ত জমাট। এছাড়া চর্বির কণিকা (ফ্যাট এম্বোলিজম), বাতাসের বুদবুদ (এয়ার এম্বোলিজম), পুঁজ ও ব্যাকটেরিয়া (সেপটিক এম্বোলি) অথবা অ্যামনিয়োটিক তরলও এম্বোলিজমের কারণ হতে পারে। ====স্ট্রোক==== স্ট্রোক, যাকে [[W:সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট|সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ]]-ও বলা হয়, হলো একটি তীব্র স্নায়বিক আঘাত, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ইস্কেমিক এবং হেমোরেজিক। স্ট্রোকের প্রায় ৮০% ঘটে ইস্কেমিয়ার কারণে। * '''ইস্কেমিক স্ট্রোক''': এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্কেমিক স্ট্রোককে আবার থ্রম্বোটিক স্ট্রোক, এম্বোলিক স্ট্রোক, সিস্টেমিক হাইপোপারফিউশন (ওয়াটারশেড স্ট্রোক), অথবা ভেনাস থ্রম্বোসিস হিসেবে ভাগ করা যায়। * '''হেমোরেজিক স্ট্রোক''': হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে যখন মস্তিষ্কে কোনো রক্তনালি ফেটে যায় বা রক্তপাত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়। উপরন্তু, রক্ত মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোককে ইস্কেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়: ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ ও সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্ট্রোককে "ব্রেইন অ্যাটাক" নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে "হার্ট অ্যাটাক" বলা হয়। অনেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে "ব্রেইন অ্যাটাক" টিম থাকে, যারা দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়। স্ট্রোকের উপসর্গ প্রথম দিকেই শনাক্ত করা গেলে বিশেষ ধরনের "ক্লট-বাস্টিং" ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রক্ত জমাট ভেঙে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। প্রথম দিকের একটি ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ছিল '''স্ট্রেপ্টোকাইনেজ'''। তবে এর ব্যবহারে শরীরের অন্য অংশেও জমাট ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে আরও নিরাপদ তৃতীয় প্রজন্মের থ্রোম্বোলাইটিক ওষুধ রয়েছে। ====হার্ট অ্যাটাক==== {{wikipedia|হার্ট অ্যাটাক}} হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনিতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এটি প্রায়ই হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (অ্যারিদমিয়া) ঘটায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই অংশের হৃদপেশি মারা যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে দাগে পরিণত হয়। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। ====অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস==== অ্যাঞ্জাইনা পেক্টরিস হলো এক ধরনের বুকের ব্যথা যা হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত এটি করোনারি ধমনির বাধা বা খিঁচুনি থাকার ফলে হয়। ====করোনারি বাইপাস==== করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারি এবং হার্ট বাইপাস—এই সমস্ত শল্যচিকিৎসাগুলি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাঞ্জাইনার ব্যথা থেকে উপশম এবং হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য। রোগীর শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে শিরা বা ধমনী নিয়ে মহাধমনী থেকে করোনারি ধমনিতে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে [[W:অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস|অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস]]-জনিত করোনারি ধমনির সংকোচন এড়িয়ে গিয়ে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ====কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর==== কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর যাকে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিউর বা শুধু হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা হৃৎপিণ্ডের গঠনগত বা কার্যগত যে কোনো গোলযোগের কারণে দেখা দিতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে বা ভর্তি করতে অক্ষম হয়। এটিকে হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া (যাকে অ্যাসিস্টোলি বলে) বা [[W:কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট|কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট]] এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেহেতু অনেক রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেশি না-ও থাকতে পারে রোগ নির্ণয়ের সময়, তাই "হার্ট ফেলিউর" শব্দটি "কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর"-এর তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই রোগ প্রাথমিক বা হালকা অবস্থায় সনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অনির্ণীত থেকে যায়। ডানদিকে হার্ট ফেলিউর সাধারণত হাত-পা ফুলে যাওয়া বা পারিফেরাল ইডিমা ঘটায়। বাঁদিকে হলে তা ফুসফুসে তরল জমা (পালমোনারি ইডিমা) ঘটায়। ====অ্যানিউরিজম==== অ্যানিউরিজম হল রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাভাবিক ব্যাসের চেয়ে ৫০% বা তার বেশি স্ফীতি বা ফোলাভাব, যা যেকোনো সময় হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের বেসে থাকা ধমনিগুলিতে (উইলিসের বৃত্তে) এবং মহাধমনীতে (হৃদপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনী) ঘটে এটিকে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম বলা হয়। এটি একটি অত্যধিক ফোলানো ইনার টিউবের মতো রক্তনালিতে একটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে যা হঠাৎ ফেটে যেতে পারে। অ্যানিউরিজম যত বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে। অ্যানিউরিজমের গঠন অনুসারে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: স্যাকুলার (ছোট থলির মতো) এবং ফিউসিফর্ম (চাকুর মতো লম্বাটে)। ====রক্ত জমাট গলিয়ে ফেলা==== রক্ত জমাট গলাতে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রক্তে থাকা প্লাজমিনোজেনকে প্লাজমিন-এ রূপান্তরিত করে। প্লাজমিন একটি উৎসেচক যা রক্ত জমাট গলিয়ে দেয়। ====রক্তনালির রুদ্ধতা দূর করা==== করোনারি ধমনী (অন্য কোনো রক্তনালি) খুলে দেওয়ার একটি উপায় হল পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। যার প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি তার পায়ের ফিমোরাল আর্টারি বা হাতের রেডিয়াল আর্টারি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত করোনারি ধমনির ভিতর দিয়ে চালানো হয়। এরপর সেই তারের ওপর দিয়ে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার পাঠানো হয় সংকুচিত অংশের ভিতরে। ক্যাথেটারের মাথায় একটি ছোট ভাঁজ করা বেলুন থাকে। জলচাপ প্রয়োগ করে বেলুনটি ফুলিয়ে দেওয়া হলে, এটি প্লাক চেপে দিয়ে ধমনির প্রাচীর প্রসারিত করে। যদি একইসঙ্গে একটি সম্প্রসারণযোগ্য জালাকার নল (স্টেন্ট) বেলুনে লাগানো থাকে, তাহলে সেটি ধমনির ভেতরে রেখে দেওয়া হয় যাতে খোলা অংশটি সাপোর্ট পায়। ===স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত শিরা=== ====ভ্যারিকোজ শিরা==== ভ্যারিকোজ শিরা হল পায়ের বড়, মোচড়ানো, দড়ির মতো দেখতে শিরাগুলি যা ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো [[W:টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া|টেল্যাংজিয়েক্টেশিয়া]] বা স্পাইডার ভেইন-এর একটি গুরুতর রূপ। ভ্যারিকোজ শিরার মূল কারণ হল যোগাযোগকারী শিরাগুলোর ভালভের ত্রুটি। এই শিরাগুলো পায়ের উপরের এবং গভীর শিরাগুলিকে সংযুক্ত করে। সাধারণত রক্ত উপরের দিক থেকে গভীর শিরায় প্রবাহিত হয়ে হৃদপিণ্ডে ফেরে। কিন্তু যখন ভালভ বিকল হয়ে যায়, তখন পেশির চাপে রক্ত ভুল পথে ফিরে গিয়ে উপরের শিরায় জমে যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে তাদের [[W:ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস|ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস]] এবং পালমোনারি এম্বোলিজমের ঝুঁকি বেশি। ====ফ্লেবাইটিস==== ফ্লেবাইটিস হল শিরার প্রদাহ, যা সাধারণত পায়ে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় যখন গভীর শিরায় এই প্রদাহ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটি বংশানুক্রমিক হতে পারে কারণ এই রোগ পরিবারে ছড়াতে দেখা গেছে। ===জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি=== [[Image:Heart vsd.svg|thumb|ভিএসডি এর চিত্রণ]] জন্মের সময় যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি থাকে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলা হয়। মোট শিশুর প্রায় ১% -এর একটু কম জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। আটটি প্রধান ত্রুটি রয়েছে, যেগুলো একত্রে ৮০% জন্মগত হৃদরোগের জন্য দায়ী, বাকি ২০% নানা বিরল এবং মিশ্র ত্রুটি দ্বারা গঠিত। ====অসায়ানোটিক ত্রুটি==== অসায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণ থাকে। সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট। যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ২০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়। ভিএসডিতে বাম নিলয় (নিলয়) থেকে ডান নিলয়ে রক্ত চলে যায়, ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আবার ফুসফুসে ফিরে যায়। এর ফলে [[W:পালমোনারি হাইপারটেনশন|পালমোনারি হাইপারটেনশন]] হতে পারে। ====সায়ানোটিক ত্রুটি==== সায়ানোটিক হৃদযন্ত্রের ত্রুটিতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই ধরনের ত্রুটিতে অক্সিজেনবিহীন রক্ত ডান নিলয় থেকে সরাসরি দেহে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে [[W:ফ্যালট টেট্রালজি|ফ্যালট টেট্রালজি]] এবং [[W:ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ|ট্রান্সপোজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ]] অন্যতম। ==হোমিওস্টেসিস== [[W:হোমিওস্টেসিস|হোমিওস্টেসিস]] বজায় রাখতে হলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঠিক কাজ করা আবশ্যক। এই সিস্টেম টিস্যু ফ্লুইডে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে। হৃদপিণ্ড ধমনির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে এবং শিরার মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে। এটি রক্তকে দুটি সার্কিটে পাম্প করে: পালমোনারি এবং সিস্টেমিক সার্কিট। পালমোনারি সার্কিটে ফুসফুসের মধ্য দিয়ে গ্যাস বিনিময় হয় এবং সিস্টেমিক সার্কিট দেহের সমস্ত অংশে রক্ত পাঠায়। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতে দেহের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে। ===লসিকা তন্ত্র=== লসিকা তন্ত্র কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই দুটি সিস্টেম তিনটি উপায়ে হোমিওস্টেসিস রক্ষা করে: লসিকা তন্ত্র অতিরিক্ত টিস্যু ফ্লুইড গ্রহণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেয়; [[W:ল্যাকটিয়াল|ল্যাকটিয়াল]] ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলি থেকে চর্বি গ্রহণ করে রক্তপ্রবাহে পৌঁছে দেয়; এবং উভয় সিস্টেম একত্রে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। লসিকা তন্ত্র সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিহত করে। ==দারুণ কিছু তথ্য== • হৃদরোগ আমেরিকান নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। <br> • প্রতি বছর ১৬.৭ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে মারা যায়। <br> • চাপ, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, স্থূলতা, তামাক ও মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। <br> • সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য অ্যাসপিরিন খেলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ হতে পারে (অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে)। <br> • আমাদের সমস্ত রক্তনালিকে এক লাইনে সাজালে সেটি প্রায় ৬০,০০০ মাইল দীর্ঘ হবে! পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিমি—অর্থাৎ রক্তনালির দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে দুইবার ঘুরে আসতে পারে। ==সুস্থ হৃদপিণ্ডের জন্য করণীয়== • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। <br> • ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা। <br> • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করা। <br> • এলডিএল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো। <br> • চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়া। <br> ==বৃদ্ধাবস্থা== বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদপেশী কম দক্ষ হয়ে পড়ে, ফলে হার্টের সর্বোচ্চ আউটপুট ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়, যদিও বিশ্রামের সময় এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট থাকে। মায়োকার্ডিয়ামের সুস্থতা নির্ভর করে এর রক্ত সরবরাহের ওপর, কিন্তু বয়স বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে করোনারি ধমনির সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে রক্তনালির ভেতরে এবং প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে ও রুক্ষ পৃষ্ঠ তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বাম নিলয়কে বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে এটি বড় হয়ে রক্ত সরবরাহের বাইরে চলে যেতে পারে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল নিলয় কার্যকর পাম্পিং করতে পারে না এবং এটি কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিউর-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধীরে বা দ্রুত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের ভালভগুলো ফাইব্রোসিসের কারণে ঘন হতে পারে, যার ফলে হার্ট মারমার শব্দ তৈরি করে এবং পাম্পিং দক্ষতা কমে যায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে [[W:অ্যারিথমিয়া|অ্যারিথমিয়া]] বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে, কারণ কন্ডাকশন সিস্টেমের কোষগুলো কম কার্যকর হয়। ==শক== ;শারীরবৃত্তীয় চাপ শারীরবৃত্তীয় চাপ যে কোনো আঘাত যেমন পোড়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এর দুটি ধাপ রয়েছে: "ইবিবি" ধাপ (প্রাথমিক ধাপ) যা আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং "প্রবাহ" ধাপ যা আঘাতের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হয়। "ইবিবি" (শক) ধাপে দেখা যায়: রক্তচলাচলে ঘাটতি, ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, অক্সিজেন গ্রহণ হ্রাস, হাইপোথার্মিয়া (নিম্ন শরীরের তাপমাত্রা), হাইপোভোলেমিয়া (রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া), এবং হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)। "প্রবাহ" ধাপে দেখা যায়: ক্যাটেকোলামিন, গ্লুকোকর্টিকয়েডস, এবং গ্লুকাগনের মাত্রা বৃদ্ধি; ইনসুলিনের স্বাভাবিক বা উচ্চ মাত্রা; বিপাকীয় ভাঙন বৃদ্ধি; হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি বৃদ্ধি); শ্বাসপ্রশ্বাস ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি; হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ তাপমাত্রা); জ্বর; হাইপারমেটাবলিজম এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি; হার্টের আউটপুট বৃদ্ধি। ==নিলয়ের অপরিপক্ক সঙ্কোচন== SA নোড থেকে AV নোডের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু যদি AV নোডে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বা কোনো ওষুধের প্রভাবে AV নোডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, তবে নিলয়গুলো প্রাথমিক উত্তেজনা পাবে না। তখন বান্ডেল শাখাগুলোর অটো-রিদমিক কোষগুলো নিজেরাই সংকেত তৈরি করতে শুরু করে এবং নিলয়ের জন্য পেসমেকার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে সঞ্চালন ব্যবস্থায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব সঞ্চালন সমস্যায় বান্ডেল শাখাগুলো আক্রান্ত হয়, সেখানে ডান ও বাম ধরনের নিলয়ের আগেভাগেই সঙ্কোচন হওয়া দেখা যায়। ডান দিকের পিভিসি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাম দিকের পিভিসি সবসময়ই গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। ==হৃদস্পন্দনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== • SA নোড (ডান অলিন্দের মধ্যে, ঊর্ধ্ব মহাশিরার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত) <br> • AV নোড (ডান অলিন্দের নিচের অংশে অবস্থিত) <br> • AV বান্ডেল (দুইটি নিলয়ের মাঝখানের ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটামে অবস্থিত, যেখান থেকে ডান ও বাম দুটি বান্ডেল শাখা বেরিয়ে আসে এবং নিলয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে) <br> • বান্ডেল শাখা (সেপটাম থেকে নিলয়ের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া শাখা, যা পরবর্তীতে পারকিঞ্জি ফাইবারে পৌঁছে যায় এবং ভেন্ট্রিকুলার মায়োকার্ডিয়াল কোষের সঙ্গে সংযোগ করে সংকেত ছড়িয়ে দেয়) <br> [[Image:ECG principle slow.gif|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি তরঙ্গের অ্যানিমেশন]] ==ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম== • P তরঙ্গ অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • QRS তরঙ্গ নিলয়ের ডিপোলারাইজেশন এবং অলিন্দের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> • T তরঙ্গ নিলয়ের রিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে <br> [[Image:SinusRhythmLabels.svg|300px|right|thumb|একটি স্বাভাবিক ইসিজি এর স্কিম্যাটিক উপস্থাপন]] ==হৃদস্পন্দনের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা== স্বায়ত্ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দুটি শাখা থাকে: সিমপ্যাথেটিক বিভাগ এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক বিভাগ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হরমোনীয় প্রভাব রয়েছে: * এপিনেফ্রিন * নরএপিনেফ্রিন * ANP : আলিন্দল ন্যাট্রিওরেটিক পেপটাইড * ADH: অ্যান্টিডায়িউরেটিক হরমোন * রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ==ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণ== হৃদপিণ্ডের প্রযুক্তির উন্নতির একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই গল্পটি: ১৯৫৫ সালে, যখন আমার বয়স ছিল পাঁচ, তখন পারিবারিক চিকিৎসক জানান যে আমার হৃদপিণ্ডে মারমার শব্দ আছে এবং ভবিষ্যতে তা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৬৫ সালে, আমি যখন পনেরো, তখন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালে দুইবার কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে কিছু নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আমাকে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যেতে এবং দেখা যাক কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা। ১৯৭৫ সালে আবার আমার পারিবারিক চিকিৎসক বলেন যে আবার হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা দরকার। ড. ডেভিড কিটজেস (মেরিয়াম হাসপাতাল) আবার একটি ক্যাথেটারাইজেশন করেন। এবার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়, আমার জন্মগতভাবে বিকৃত ভালভের কারণে মহাধমনী স্টেনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, আমি পঞ্চাশ বা ষাট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারব, তারপর অপারেশনের দরকার হতে পারে। ১৯৯৬ সালে ইকোকার্ডিওগ্রামে দেখা যায় আমার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসক বলেন, একজন কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আমি গুরুত্ব দিইনি, কারণ আগেও এমন শুনেছি। কিন্তু ড. জন ল্যামব্রেক্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার জীবন বদলে যায়। তিনি আমার ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপানির উপসর্গ, বিবর্ণ ত্বক ও মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ শুনে জানান, অবস্থা গুরুতর এবং একমাত্র সমাধান হলো জরুরি ওপেন-হার্ট সার্জারি করে মহাধমনী ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু তিনি বলেন, এটি নিরাময়যোগ্য এবং আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই। ১০ দিনের মধ্যেই আমি মেডিট্রনিক হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করি। অপারেশনটি করেন ড. রবার্ট ইনডেগ্লিয়া, মেরিয়াম হাসপাতালে, প্রভিডেন্স, আর.এ তে, ২০ মার্চ ১৯৯৬ সালে। অপারেশনের পর তিন বছর কেটে গেছে এবং আমি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি। ১৯৭৭ সালে আমার ছেলে কেভিন জন্মায় অপূর্ণ বিকশিত বাম হৃদযন্ত্র সিন্ড্রোম নিয়ে। সে মাত্র ২ দিন বেঁচেছিল কারণ তখন এই ধরনের সার্জারি হতো না। আমি কৃতজ্ঞ যে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বেঁচে আছি, যা আমাকে দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আপনাকে হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ বোঝানো, যেন আপনিও শিখে হৃদপিণ্ডের অসাধারণ কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারেন। ====স্টোক==== সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ — হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে। স্ট্রোক (সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট) হলো এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার কারণে ঘটে। রক্তপ্রবাহ হ্রাস, যাকে আইসকেমিয়া বলা হয়, শরীরের যেকোনো টিস্যুর জন্য বিপজ্জনক, তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ংকর, কারণ এখানে বিপাকক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। মাত্র তিন মিনিট রক্তপ্রবাহ বন্ধ থাকলেই বেশিরভাগ মস্তিষ্ক কোষ মারা যেতে পারে। এই কারণেই স্ট্রোক কয়েক মিনিটেই মৃত্যু ঘটাতে পারে বা মারাত্মক মস্তিষ্ক ক্ষতি করতে পারে। স্ট্রোক দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: অক্লুসিভ এবং হেমোরেজিক। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে বা উপরিভাগে ঘটতে পারে। অক্লুসিভ স্ট্রোকে রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তনালির ফেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়। ==সারাংশ== শরীরের অন্যান্য ব্যবস্থার মতো, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম হোমিওস্টেসিস বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্নায়ুতন্ত্র হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টিস্যুগুলিকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়, তবে এগুলো কেবল পাইপলাইন নয়। শিরা ও ধমনিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কৈশিক নালিগুলো রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ আদান-প্রদানের স্থান তৈরি করে। ==পুনরালোচনা প্রশ্নাবলী== ;এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে [http://en.wikibooks.org/wiki/Human_Physiology/Appendix_1:_answers_to_review_questions#The_cardiovascular_system এখানে] ১. এটি স্নায়ুর মতোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে :ক) এপিকার্ডিয়াম :খ) পেরিকার্ডিয়াম :গ) মায়োকার্ডিয়াম :ঘ) সাবভ্যালভুলার অ্যাপারেটাস :ঙ) এদের কেউ নয়, কেবল স্নায়ুই বিদ্যুৎ পরিবহন করে ২. শরীরের যেকোনো সময়ে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত এতে বহন হয় :ক) শিরা :খ) কৈশিকনালীর জালিকা :গ) শিরা :ঘ) অ্যাওর্টা :ঙ) ভেনা কেভা ৩. নিচের কোনগুলো একসাথে সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে :ক) ডান অলিন্দ ডান ভেন্ট্রিকেলের সাথে এবং বাম অলিন্দ বাম ভেন্ট্রিকেলের সাথে :খ) ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেল ও বাম ভেন্ট্রিকেল :গ) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ও মাইট্রাল ভাল্ভ :ঘ) অ্যাওর্টা ও পালমোনারি আর্টারি :ঙ) অ্যাওর্টা, পালমোনারি আর্টারি এবং পালমোনারি ভেইন ৪. এটি হৃদপিণ্ডের পেসমেকার :ক) এভি নোড :খ) পারকিনজে ফাইবার :গ) এভি বান্ডল :ঘ) এসএ নোড :ঙ) এদের কেউ নয়, পেসমেকার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় ৫. ইসিজি পড়ার সময়, এই অক্ষরটি এভি নোড থেকে এভি বান্ডলের দিকে ডিপোলারাইজেশন নির্দেশ করে :ক) S :খ) P :গ) U :ঘ) T :ঙ) Q ৬. ইসিজিতে T তরঙ্গ নির্দেশ করে :ক) বিশ্রাম সম্ভাবনা :খ) অলিন্দের ডিপোলারাইজেশন :গ) এসএ নোড উদ্দীপনা :ঘ) ভেন্ট্রিকেলের রিপোলারাইজেশন :ঙ) পারকিনজে উদ্দীপনা ৭. রক্তচাপ হলো :ক) রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদত্ত চাপ :খ) রক্তের দ্বারা ধমনীতে প্রদত্ত চাপ :গ) রক্তের দ্বারা শিরায় প্রদত্ত চাপ :ঘ) রক্তের দ্বারা অ্যাওর্টাতে প্রদত্ত চাপ :ঙ) রক্তের দ্বারা কেশিকায় প্রদত্ত চাপ ৮. সিস্টলিক চাপ হলো :ক) গড়ে ১২০ mm Hg :খ) ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় ক্রমাগত কমে যায় :গ) যখন বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হয় তখন সর্বোচ্চ হয় :ঘ) গড়ে ৮০ mm Hg :ঙ) উভয় ক এবং গ :চ) উভয় খ এবং ঘ ৯. হৃদপিণ্ডে মোট কতটি প্রকোষ্ঠ থাকে? :ক) একটি :খ) দুটি :গ) তিনটি :ঘ) চারটি :ঙ) পাঁচটি ==শব্দকোষ== <br>'''তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন''': সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত, এটি একটি রোগ অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপেশীতে ক্ষতি বা কোষমৃত্যু ঘটতে পারে। <br>'''অ্যাওর্টা''': সিস্টেমিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ধমনী <br>'''অ্যাওর্টিক ভাল্ভ''': বাম ভেন্ট্রিকেল এবং অ্যাওর্টার মধ্যবর্তী ভাল্ভ <br>'''অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন''': এটি পেছনের পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এডিএইচ বা ভ্যাসোপ্রেসিন মূলত কিডনির মাধ্যমে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। <br>'''অ্যার্টেরিওল''': একটি ছোট ব্যাসের রক্তনালী যা ধমনীর শাখা হয়ে কৈশিকনালীতে প্রবেশ করে <br>'''আলিন্দল ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড''': হৃদপিণ্ডের আলিন্দতে উৎপন্ন হয়, এটি সোডিয়ামের প্রস্রাব নির্গমণ বাড়ায়, ফলে পানির ক্ষয় ঘটে এবং রক্তের সান্দ্রতা কমে যায়, এতে রক্তচাপও কমে। <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড (AV নোড)''': আলিন্দ এবং ভেন্ট্রিকেল এর মাঝখানে অবস্থান করা টিস্যু যা আলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে <br>'''অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভসমূহ''': বড়, বহু-কাপযুক্ত ভাল্ভ যা সিস্টলের সময় ভেন্ট্রিকেল থেকে অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া প্রতিরোধ করে <br>'''AV বান্ডেল''': হার্টের পেশির বিশেষ কোষের একত্রিত রূপ যা AV নোড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করে <br>'''বার্বিচুরেটস''': কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দমনকারী, ঘুম ও প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ <br>'''রক্তচাপ''': রক্তনালীর প্রাচীরে রক্তের প্রদত্ত চাপ <br>'''কৈশিকনালীজ''': শরীরের সবচেয়ে ছোট রক্তনালী যা ধমনী ও শিরাকে সংযুক্ত করে <br>'''কার্ডিয়াক সাইকেল''': হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করার ক্রমান্বিত কার্যপ্রবাহ <br>'''সেরিব্রাল ভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট ''': স্ট্রোক নামেও পরিচিত, এটি হঠাৎ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্নায়ুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ এবং প্রভাব থাকতে পারে। <br>'''কর্ডি টেন্ডিনাই''': কর্ডের মতো টেনডন যা প্যাপিলারি মাসলকে ট্রাইকাসপিড এবং মাইট্রাল ভাল্ভের সাথে যুক্ত করে <br>'''করোনারি আর্টারিজ''': হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত অপসারণে সহায়ক ধমনী <br>'''কনটিনিউয়াস কৈশিকনালীজ''': এদের এপিথেলিয়াম সিল করা থাকে এবং কেবল ছোট অণু, পানি ও আয়ন ছাড়তে পারে <br>'''ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস''': একটি গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা যা সাধারণত পা বা পেলভিক অঞ্চলের শিরায় ঘটে <br>'''ডায়াস্টোল''': হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের সময়, যখন এটি আবার রক্তে পূর্ণ হয় <br>'''ডায়াস্টোলিক চাপ''': রক্তচাপের সর্বনিম্ন বিন্দু যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে <br>'''ইডিমা''': অতিরিক্ত টিস্যু তরল জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফোলাভাব <br>'''ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম''': হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের গ্রাফিক রেকর্ড <br>'''এপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ধমনীর সংকোচনের মাধ্যমে শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায় <br>'''ফেনেস্ট্রেটেড কৈশিকনালীজ''': এদের ছিদ্র থাকে যা বড় অণুকে প্রবাহের সুযোগ দেয় <br>'''ফাইব্রাস পেরিকার্ডিয়াম''': একটি ঘন সংযোজক টিস্যু যা হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে, স্থিতি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হওয়া রোধ করে <br>'''হার্ট রেট''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের ধাক্কা দেওয়ার হার <br>'''হেপাটিক ভেইন''': যকৃত থেকে বিশুদ্ধকৃত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তকে হার্টে ফেরত নিয়ে আসে <br>'''হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ''': দীর্ঘস্থায়ীভাবে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা <br>'''ইনফেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের নিচের অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে আসা বড় শিরা <br>'''ইনট্রাভেন্ট্রিকুলার সেপটাম''': হার্টের নিচের দুটি প্রকোষ্ঠকে পৃথককারী প্রাচীর <br>'''বাম অলিন্দ''': ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে <br>'''লাব''': প্রথম হৃদস্পন্দন শব্দ, যা সিস্টলের শুরুতে অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ভাল্ভ বন্ধ হলে সৃষ্টি হয় <br>'''লুমেন''': রক্তপ্রবাহের জন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ ফাঁপা গহ্বর <br>'''লিম্ফ''': রক্ত প্লাজমা থেকে উৎপন্ন তরল যা টিস্যু কোষগুলোর মাঝে প্রবাহিত হয় <br>'''মাইট্রাল ভাল্ভ''': বাইকাসপিড ভাল্ভ নামেও পরিচিত; বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে বাম অলিন্দে রক্ত ফেরত যাওয়া রোধ করে <br>'''মায়োকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডের পেশি টিস্যু <br>'''নরএপিনেফ্রিন''': অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ধমনী সংকোচকারী হরমোন <br>'''পেসমেকার কোষ''': হৃদপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনের জন্য দায়ী কোষ <br>'''প্লাক''': ধমনীর প্রাচীরে সাদা রক্তকণিকার (ম্যাক্রোফাজ) অস্বাভাবিক জমাট <br>'''পালমোনারি ভাল্ভ''': ডান ভেন্ট্রিকেল এবং পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অবস্থিত; রক্তের পুনঃপ্রবাহ রোধ করে <br>'''পালস''': প্রতি মিনিটে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সংখ্যা <br>'''পারকিনজে ফাইবার (বা পারকিনজে টিস্যু)''': হৃদপিণ্ডের ভেতরের প্রাচীর বরাবর বিশেষ পেশি টিস্যু যা বৈদ্যুতিক সংকেত বহন করে <br>'''রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম''': <br>'''ডান অলিন্দ''': ওপরের ও নিচের ভেনা কেভা থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে <br>'''সেরাস পেরিকার্ডিয়াম''': হৃদপিণ্ডকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করতে এটি তরল নিঃসরণ করে <br>'''অর্ধচন্দ্রাকৃতির ভাল্ভ''': পালমোনারি আর্টারি এবং অ্যাওর্টার উপর স্থাপিত ভাল্ভ <br>'''সাইনোআলিন্দল নোড (SA নোড/SAN)''': হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অবস্থিত সংকেত উৎপাদক কোষ <br>'''সাইনুসয়েডাল কৈশিকনালীজ''': বৃহৎ খোলা ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ কৈশিকনালী যা লোহিত রক্তকণিকা ও প্রোটিন প্রবেশে সহায়ক <br>'''সিস্টোল''': হৃদপিণ্ডের সংকোচনের প্রক্রিয়া <br>'''সিস্টোলিক চাপ''': ভেন্ট্রিকুলার সিস্টলের সময় বাম ভেন্ট্রিকেল থেকে অ্যাওর্টায় রক্ত পাম্প হওয়ার সময় রক্তচাপের সর্বোচ্চ বিন্দু <br>'''সুপেরিয়র ভেনা কাভা''': দেহের ওপরের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দে অক্সিজেনবিহীন রক্ত আনার ছোট কিন্তু বড় শিরা <br>'''থ্রম্বাস''': সুস্থ রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা <br>'''ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ''': হৃদপিণ্ডের ডান পাশে, ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকেলের মাঝে অবস্থিত; রক্তকে অলিন্দ থেকে ভেন্ট্রিকেলে যাওয়ার অনুমতি দেয় <br>'''ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন''': রক্তনালীর সংকোচন <br>'''ভ্যাসোডাইলেশন''': রক্তনালীর প্রশস্ত হওয়া <br>'''ভেইন''': কৈশিকনালী থেকে ডান দিকে রক্ত ফিরিয়ে আনে <br>'''ভেন্ট্রিকেল''': অলিন্দ থেকে রক্ত গ্রহণকারী হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ <br>'''ভেনিউল''': ছোট শিরা যা কৈশিকনালী থেকে ডিঅক্সিজেনেটেড রক্ত বৃহৎ শিরায় ফেরত নিয়ে যায় ==তথ্যসূত্র== # Van De Graaff, Kent M. Human Anatomy. McGraw Hill Publishing, Burr Ridge, IL. 2002. # Essentials of Anatomy and Physiology, Valerie C. Scanlon and Tina Sanders # Tortora, G. & Grabowski, S. (2000) Principles of Anatomy & Physiology. Wiley & Sons. Brisbane, Singapore & Chichester. # Anderson, RM. The Gross Physiology of the Cardiovascular System (1993) <http://cardiac-output.info>. {{reflist}} bjxyi657fodn11smb7ahkqmh6k4goyg ব্যবহারকারী আলাপ:Ei to ami akash 3 23420 85151 74601 2025-06-22T04:42:53Z Mehedi Abedin 7113 /* পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ */ নতুন অনুচ্ছেদ 85151 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০৯:৪০, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ]] == প্রতিযোগিতার জন্য জমা দেওয়া [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ]] পাতায় কিছু সমস্যা আছে এবং পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করা হয়নি। সমস্যাগুলোর সমাধান করে আমাকে মেনশন করে জানালে পাতাটি পর্যালোচনা করে গ্রহণ করে নিবো। দ্রুত ঠিক করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। [[ব্যবহারকারী:Mehedi Abedin|Mehedi Abedin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Mehedi Abedin|আলাপ]]) ০৪:৪২, ২২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) du74niaysazkawxd97sumhqfdseczht ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অক্টোপাস 0 24208 85124 77169 2025-06-21T14:47:34Z NusJaS 8394 85124 wikitext text/x-wiki == অক্টোপাস: সংবেদন ও চলন ব্যবস্থা == === ভূমিকা === অক্টোপাস হলো অপ্রাইমেটদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি প্রাণী। এই অমেরুদণ্ডীর সবচেয়ে চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হলো এর বাহুর মাধ্যমে চলাচল। অক্টোপাস এর বাহু যেকোনো দিকে চালাতে পারে। এর চলাচলের মাত্রা প্রায় অসীম। ফলে বাহুর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জটিল। অক্টোপাসের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক শুধু বাহুকে একটি আদেশ দেয় আর সেই কাজ কীভাবে করতে হবে তার সম্পূর্ণ নির্দেশনা বাহুর ভেতরেই থাকে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে অক্টোপাস তাদের বাহুর নিয়ন্ত্রণের জটিলতা কমানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থির প্যাটার্নে বাহু নাড়াচাড়া করে। গবেষকেরা বোঝার জন্য পরীক্ষা করে দেখেছেন বাহুগুলোর নিজস্ব 'চিন্তা' করার ক্ষমতা আছে কিনা। তারা একটি অক্টোপাসের বাহুর স্নায়ু শরীরের অন্যান্য স্নায়ু এবং মস্তিষ্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তারপর বাহুর ত্বক চুলকিয়ে ও উদ্দীপিত করে। দেখা যায় এই বাহুর আচরণ একটি সম্পূর্ণ সুস্থ অক্টোপাসের বাহুর মতোই। এ থেকে বোঝা যায় যে মস্তিষ্ক কেবল একটি ‘চল’ আদেশ দিলেই যথেষ্ট। এরপর বাহু নিজে থেকেই বাকিটা করে ফেলতে পারে। এই অধ্যায়ে আমরা অক্টোপাসের সংবেদন পদ্ধতি এবং এই অপ্রাইমেট প্রাণীর সংবেদন-চলন পদ্ধতি নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করবো। ==== অক্টোপাস: বুদ্ধিমান অপ্রাইমেট ==== [[File:Octopus2.jpg|thumb|সাধারণ অক্টোপাস, ''Octopus vulgaris''.]] অক্টোপাসের দুটি চোখ এবং চার জোড়া বাহু রয়েছে। এগুলো দ্বিপার্শ্বীয় সুষম গঠনবিশিষ্ট। এর মুখ বাহুগুলোর কেন্দ্রে অবস্থিত এবং মুখে একটি শক্ত ঠোঁট থাকে। অক্টোপাসের শরীরে কোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কঙ্কাল থাকে না (তবে কিছু প্রজাতির দেহে ম্যান্টলের ভেতরে খোলসের একটি ক্ষয়িষ্ণু অবশিষ্টাংশ থাকতে পারে)। এজন্য তারা খুব সংকীর্ণ জায়গার মধ্য দিয়ে সহজেই চুইয়ে যেতে পারে। অক্টোপাস অমেরুদণ্ডীদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও আচরণগতভাবে সবচেয়ে নমনীয় প্রাণীদের অন্যতম। অক্টোপাসের বাহুর চলাফেরাই এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দিকে বাহু বাড়ানোর জন্য, অক্টোপাসের স্নায়ুতন্ত্র একটি ধারাবাহিক মোটর কমান্ড তৈরি করে যা বাহুকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে নিয়ে যায়। বাহুর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জটিল, কারণ এটি যেকোনো দিকে চলতে পারে এবং এর চলাফেরার সীমা কার্যত অসীম। স্বেচ্ছাচালিত চলাচলের জন্য মূল মোটর প্রোগ্রামটি বাহুর স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যেই থাকে।<ref>G. S. et al., Control of Octopus Arm Extension by a Peripheral Motor Program . Science 293, 1845, 2001. </ref> === অক্টোপাসের বাহু চলন === অক্টোপাসের সংবেদন-চলন ব্যবস্থাটি একটি স্তরক্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে গঠিত। এতে মস্তিষ্ক কেবল বাহুকে একটি আদেশ পাঠায়। আর কীভাবে কাজটি করতে হবে সেই পদ্ধতিটি বাহুর ভেতরে নিজেই থাকে। অক্টোপাস তাদের বাহু ব্যবহার করে হাঁটে, শিকার ধরে, অপ্রয়োজনীয় বস্তু ফেলে দেয় এবং আশপাশের পরিবেশ থেকে বিভিন্ন যান্ত্রিক ও রাসায়নিক তথ্য সংগ্রহ করে। অক্টোপাসের বাহু কনুই মানুষের বাহুর মতো নয় কব্জি বা কাঁধের সন্ধি দিয়ে সীমিত নয়। তবে খাবার ধরার মতো লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের অবশ্যই এই আটটি অঙ্গকে সুনিপুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। অক্টোপাসের বাহু যেকোনো দিকে চলতে পারে কারণ এর চলাফেরার মাত্রা কার্যত অসীম। এই ক্ষমতা এসেছে বাহুর সারা জুড়ে ঘনভাবে ছড়িয়ে থাকা নমনীয় পেশি তন্তুর মাধ্যমে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অক্টোপাস বাহুর চলাচলের জটিলতা কমাতে নির্দিষ্ট ও পূর্বনির্ধারিত প্যাটার্নে চলাফেরা করে।<ref>Y. Gutfreund, Organization of octopus arm movements: a model system for study- ing the control of flexible arms. Journal of Neuroscience 16, 7297, 1996. </ref> উদাহরণস্বরূপ বাহু বাড়ানোর সময় সব সময় একটি বাঁক তৈরি হয় যা বাহুর প্রান্তের দিকে এগিয়ে যায়। যেহেতু তারা সব সময় একই ধরণের নড়াচড়া করে বাহু বাড়ায় তাই এই প্যাটার্ন তৈরির আদেশ মস্তিষ্কে নয় বাহুর ভেতরেই সংরক্ষিত থাকে। এই প্রক্রিয়া নমনীয় বাহু নিয়ন্ত্রণকে আরও সহজ করে তোলে। এই নমনীয় বাহুগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় একটি অত্যন্ত জটিল প্রান্তিক স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে, যেখানে প্রতিটি বাহুতে {{math|5 <VAR>&times;</VAR> 10<sup>7</sup>}} টি স্নায়ুকোষ ছড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে {{math|4 <VAR>&times;</VAR> 10<sup>5</sup>}} টি মোটর নিউরন, যেগুলো বাহুর অভ্যন্তরীণ পেশিগুলিকে উদ্দীপ্ত করে এবং স্থানীয়ভাবে পেশির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। যখনই প্রয়োজন হয় অক্টোপাসের স্নায়ুতন্ত্র একটির পর একটি মোটর কমান্ড তৈরি করে। এই কমান্ডগুলো শক্তি এবং সংশ্লিষ্ট গতি সৃষ্টি করে, যার ফলে বাহু লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে। এই গতিবিধি সহজ হয় একটি নির্দিষ্ট পথে চলার মাধ্যমে। এই পথ তৈরি হয় ভেক্টর যোগফল এবং মৌলিক গতিবিধিগুলোর সংযোজনের মাধ্যমে। এজন্য অক্টোপাসের পেশিগুলোকে খুবই নমনীয় হতে হয়। === কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র === অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের তুলনায় অক্টোপাস ও এ ধরনের প্রাণীদের (যেমন কাটলফিশ ও স্কুইড) তুলনামূলকভাবে বড় স্নায়ুতন্ত্র এবং আরও উন্নত মানসিক দক্ষতার রয়েছে। যদিও অক্টোপাসের মস্তিষ্কের গঠন মেরুদণ্ডী প্রাণীর মস্তিষ্কের মতো নয় তবুও এতে কিছু মিল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতির ধরণ, ঘুমের ধরণ, ব্যক্তি চিনে রাখা এবং বস্তু পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা<ref>Frank, Marcos G., et al. "A preliminary analysis of sleep-like states in the cuttlefish Sepia officinalis." ''PLoS One'' 7.6 (2012): e38125.</ref>। অক্টোপাস সহজ গোলকধাঁধায় চলাচল করতে পারে এবং চেনা পরিবেশ চিহ্নিত করতে চোখের সংকেত ব্যবহার করতে পারে। আরও আশ্চর্যজনক হলো [[:File:OctopusFeedingCSS.mpg|অক্টোপাস এমনকি তাদের বাহু ব্যবহার করে জারের ঢাকনা খুলে ভেতরের খাবার বের করতে পারে]]। [[File:OctopusFeedingCSS.mpg|thumb|400x400px|অক্টোপাস তার বাহু দিয়ে বোতলের ঢাকনা খুলে ভিতরের খাবার সংগ্রহ করতে পারে।]] অক্টোপাস, কাটলফিশ এবং স্কুইড সকলেই সিফালোপড শ্রেণিভুক্ত, যেখানে অ্যামোনয়েড এবং অ্যারোস্টোনের মতো বিলুপ্ত প্রাণীরাও অন্তর্ভুক্ত। সিফালোপডদের বিবর্তনের সময় তাদের খোলস অন্তর্নিহিত হয়ে গেছে অথবা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আরও একটি পরিবর্তন ঘটেছে কিছু সিফালোপডের বুদ্ধিমত্তার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। যদিও প্রাণীর বুদ্ধিমত্তার মাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন, তবে এই প্রাণীরা বড় মাপের স্নায়ুতন্ত্র এবং বাহ্যত একটি মস্তিষ্কের মতো গঠন তৈরি করেছে। সাধারণ অক্টোপাসের দেহে প্রায় ৫০ কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) থাকে, যা অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর সমান এবং কুকুরের কাছাকাছি<ref name=":0">P. Godfrey-Smith, The Mind of an Octopus, Sci Am Mind, vol. 28, no. 1, pp. 62–69, Dec. 2016</ref>। এই সংখ্যা অন্যান্য সব অমেরুদণ্ডী প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি। অক্টোপাসের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা একটি সংক্ষিপ্ত গল্পে সহজেই বোঝানো যায়। একটি পানির ট্যাংকে বন্দি অক্টোপাস লক্ষ্য রাখছিল মানুষ তাকে লক্ষ্য করছে কি না। যখন দেখে কেউ খেয়াল করছে না, তখন সে সরে যায় এবং ট্যাংক থেকে পালাতে চেষ্টা করে। আলাস্কা প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ডেভিড শিল এই ঘটনা জানান। এমনকি মানুষ মুখে মাস্ক পরলেও অক্টোপাস বুঝে ফেলে সে মানুষের উপস্থিতি আছে কি না<ref name=":0" />। অক্টোপাসের মস্তিষ্কের গঠন মেরুদণ্ডী প্রাণীর মস্তিষ্কের মতো নয়। অক্টোপাসের বেশিরভাগ স্নায়ুকোষ তার মস্তিষ্কে নয়, বরং তার বাহুতে থাকে। কার্যত, অক্টোপাসের মস্তিষ্ক বেশিরভাগ সংবেদনশীল তথ্য এবং মোটর কমান্ড প্রক্রিয়াকরণ করে না। বরং, মস্তিষ্ক কেবল একটি অংশ নেয় এবং সাধারণ কিছু নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশগুলো তখনই বাস্তবায়িত হয় যখন সেগুলো নির্দিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায়। এর মানে হলো অক্টোপাসের মস্তিষ্ক তার বাহুর কাজের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে না। তবে এর মানে এই নয় যে মস্তিষ্কের কোনো ভূমিকা নেই। যদি মেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের স্তরভিত্তিক গঠন দেখি (যেখানে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র পারিপার্শ্বিক স্নায়ুতন্ত্রের ইনপুট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়), তাহলে বলা যায় অক্টোপাসের মস্তিষ্ক এবং বাহুর সম্পর্ক সহযোগিতামূলক। ২০১১ সালে গবেষক তামার গুটনিক, রুথ বাইর্ন, হোচনার ও কুবা একটি পরীক্ষা চালান যাতে দেখা হয় অক্টোপাস কি নির্দিষ্ট অবস্থানে খাবার পেতে একক বাহু চালাতে শিখতে পারে কিনা<ref>Gutnick, Tamar et al. “Octopus vulgaris uses visual information to determine the location of its arm.” ''Current biology : CB'' vol. 21,6 (2011): 460-2. doi:10.1016/j.cub.2011.01.052</ref>। এই পরীক্ষায় দেখা যায় বাহুর রাসায়নিক সংবেদকগুলো খাবারের অবস্থান নির্ধারণে যথেষ্ট নয়। বাহুকে মাঝে মাঝে পানির বাইরে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু গোলকের দেয়াল স্বচ্ছ হওয়ায় অক্টোপাস চোখ দিয়ে খাবার দেখতে পারে। এইভাবে তাকে চোখের সাহায্যে বাহু পরিচালনা করে গোলকের ভিতরে খাবারে পৌঁছাতে হয়। যদিও এটি শিখতে কিছুটা সময় লেগেছিল তবুও পরীক্ষায় সব অক্টোপাসই শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিল। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে অক্টোপাসের দৃষ্টিশক্তি বাহুকে নির্দিষ্ট কাজ করাতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, যখন অক্টোপাস খাবার খোঁজে, তখন তার বাহুগুলো স্থানীয়ভাবে অন্বেষণ করতে করতে ধীরে ধীরে লক্ষ্যবস্তুতে অগ্রসর হয়। ফলে মনে হয় দুটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একসঙ্গে কাজ করে চোখের সাহায্যে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বাহুর সামগ্রিক পথ ঠিক করছে। আর বাহু নিজের কাছাকাছি স্থান অন্বেষণের জন্য সূক্ষ্মভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে। === বাহুর স্নায়ুতন্ত্র === অক্টোপাসের আটটি বাহু লম্বা, সরু, পেশিবহুল অঙ্গ যা মাথা থেকে নির্গত হয় এবং মুখের চারপাশে নিয়মিতভাবে সাজানো থাকে। প্রতিটি বাহুর ভেতরের পাশে দুটি সারিতে চোষক থাকে, যেখানে এক সারির চোষক আরেক সারির সঙ্গে পরস্পর পর্যায়ক্রমে বিন্যস্ত থাকে। প্রতিটি বাহুতে প্রায় ৩০০টি চোষক থাকে<ref>P. Graziadei, The anatomy of the nervous system of Octopus vulgaris, J. Z. Young. Clarendon, Oxford, 1971. </ref>। এই বাহুগুলো মোটর ও সংবেদনশীল—উভয় কাজই করে। বাহুর স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়েছে স্নায়ু গ্যাংলিয়া দ্বারা, যা মোটর কাজ ও আন্তঃসংযোগের ভূমিকা পালন করে। বাহুর প্রান্তবর্তী স্নায়ুকোষগুলো সংবেদনশীলতায় যুক্ত। স্নায়ু গ্যাংলিয়া এবং প্রান্তবর্তী স্নায়ুকোষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কার্যকর সম্পর্ক রয়েছে। ==== বাহুর সাধারণ গঠন ==== বাহুর পেশিগুলো তিনটি স্বতন্ত্র ভাগে ভাগ করা যায়, প্রতিটি অংশের একটি নির্দিষ্ট গঠনগত ও কার্যকরী স্বতন্ত্রতা রয়েছে: # বাহুর নিজস্ব পেশি (ইনট্রিনসিক মাংসপেশি) # চোষকের নিজস্ব পেশি # অ্যাসিটাবুলো-ব্রাকিয়াল পেশি (চোষককে বাহুর পেশির সঙ্গে সংযুক্ত করে)। এই প্রতিটি পেশি দল তিনটি করে পেশি বান্ডেল নিয়ে গঠিত, যেগুলো একে অপরের সাথে সমকোণে বিন্যস্ত। প্রতিটি বান্ডেল চারপাশের অংশ থেকে আলাদা স্নায়ু দ্বারা উদ্দীপ্ত হয় এবং অত্যন্ত স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে। অক্টোপাসের দেহে হাড় বা তরুণাস্থি না থাকলেও, পেশির সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সে বাহু চালাতে পারে। আচরণগত দিক থেকে দেখা যায়, লম্বালম্বি পেশিগুলো বাহুকে ছোট করে এবং মূলত বস্তু ধরে মুখের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আর তির্যক ও আড়াআড়ি পেশিগুলো বাহু লম্বা করে এবং অবাঞ্ছিত বস্তু ফেলে দিতে কাজে লাগে। [[File:OctopusArm CrossSection.jpg|thumb|অক্টোপাস বাহুর ক্রস সেকশন: পার্শীয় স্নায়ুর মূল বাহুর ভিতরের পেশি উদ্দীপ্ত করে এবং নিচের মূল চোষকেও উদ্দীপ্ত করে।]] বাহুর মধ্যে ছয়টি প্রধান স্নায়ু কেন্দ্র রয়েছে যেগুলো বাহুর বিভিন্ন পেশির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হলো অক্ষীয় স্নায়ু কর্ড। আটটি বাহুর প্রতিটিতে একটি করে অক্ষীয় স্নায়ু কর্ড থাকে। সবমিলে এতে প্রায় {{math|3.5 <VAR>&times;</VAR> 10<sup>8</sup>}}টি নিউরন থাকে। প্রতিটি অক্ষীয় কর্ড পাঁচটি বহিস্থ স্নায়ু কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর মধ্যে চারটি অন্তঃপেশী স্নায়ু কর্ড, যেগুলো বাহুর অভ্যন্তরীণ পেশির মধ্যে থাকে, এবং প্রতিটি চোষকের অ্যাসেটাবুলার কাপের নিচের অংশে অবস্থিত চোষকের গ্যাংলিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত। এই ছোট ছোট বহিস্থ স্নায়ুগুলোর মধ্যে মোটর নিউরন থাকে এবং এগুলো গভীর পেশির রিসেপ্টর থেকে সংবেদী সংকেত গ্রহণ করে। এই রিসেপ্টরগুলো স্থানীয় রিফ্লেক্স কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। বাহুর পেশিগুলোর মোটর স্নায়ু উদ্দীপনা শুধু অক্ষীয় স্নায়ু কর্ডের মোটর নিউরন থেকেই আসে না, বরং এসব বহিস্থ মোটর কেন্দ্র থেকেও আসে। ==== সংবেদী স্নায়ুতন্ত্র ==== অক্টোপাসের বাহুতে একটি জটিল ও বিস্তৃত সংবেদী সিস্টেম রয়েছে। বাহুর তিনটি প্রধান পেশি সিস্টেমের গভীরে থাকা রিসেপ্টরগুলো প্রাণীটিকে পেশি থেকে তথ্য সংগ্রহ করার বিস্তৃত সংবেদী ক্ষমতা দেয়। বাহুর বাইরের ত্বকে অনেক প্রাথমিক রিসেপ্টর থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংবেদী কোষ থাকে চোষকে, বিশেষ করে এর প্রান্তে। বাহুর ত্বক অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল। প্রতিটি চোষকে কয়েক হাজার রিসেপ্টর থাকে। অক্টোপাসের বাহুতে তিন ধরনের রিসেপ্টর পাওয়া যায় গোলাকার কোষ, অনিয়মিত বহুপ্রসারী কোষ, এবং সরু সিলিয়া-যুক্ত কোষ। এরা সবাই তাদের সংকেত গ্যাংলিয়ার দিকে প্রেরণ করে। এই তিন ধরনের রিসেপ্টরের কার্যকারিতা এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি শুধু অনুমান করা হয়েছে। ধারণা করা হয় যে গোলাকার ও বহুপ্রসারী কোষ যান্ত্রিক উদ্দীপনা অনুভব করতে পারে, আর সিলিয়াযুক্ত রিসেপ্টরগুলো রাসায়নিক উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় কাজ করে। সিলিয়াযুক্ত রিসেপ্টরগুলো সরাসরি গ্যাংলিয়াতে অ্যাক্সন পাঠায় না বরং এদের অ্যাক্সনগুলি ত্বকের নিচে অবস্থিত একটি আচ্ছাদিত নিউরনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। সেখানে ডেনড্রাইটিক শাখার সঙ্গে সিন্যাপটিক সংযোগ তৈরি হয়। এতে প্রাথমিক স্নায়ু কোষের মধ্যে সংকেত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে থাকে। অপরদিকে গোলাকার ও বহুপ্রসারী রিসেপ্টরগুলো সরাসরি গ্যাংলিয়াতে অ্যাক্সন পাঠায় যেখানে মোটর নিউরন থাকে। === বাহু নাড়ানোর ক্ষেত্রে বাহুর স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা === আচরণগত গবেষণায় দেখা গেছে বাহুর পেশি চলাচলের তথ্য মস্তিষ্কের শিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছে না। আর শারীরিক গঠন বিশ্লেষণে দেখা যায় যে গভীর রিসেপ্টরগুলো তাদের অ্যাক্সন প্রেরণ করে চোষকের গ্যাংলিয়া কিংবা অন্তঃপেশী স্নায়ু কর্ডের মতো বহিস্থ কেন্দ্রে।<ref>M. J. Wells, The orientation of octopus. Ergeb. Biol. 26, 40-54, 1963. </ref> ফলে পেশি প্রসারণ বা চলাচলের তথ্য কেবল স্থানীয় রিফ্লেক্সের জন্য ব্যবহৃত হয়। যখন অক্ষীয় স্নায়ু কর্ডের পৃষ্ঠীয় অংশে, যেখানে মস্তিষ্ক থেকে আগত স্নায়ুর সংযোগ দেওয়া থাকে সেখানে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা দেওয়া হয় ফলে পুরো বাহু নড়ে ওঠে। এই নড়াচড়া সম্পূর্ণভাবে দেওয়া উদ্দীপনার ফলে সৃষ্টি হয়। এটি সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে আগত সংকেত দ্বারা নয়। অর্থাৎ বাহুতে একটি সাধারণ সংকেত পাঠালেই মস্তিষ্কের কাজ শেষ এরপর বাহু নিজেই পুরো কাজটি করে। পৃষ্ঠমুখী একটি বাঁক বাহুর দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং চোষকগুলো নড়াচড়ার দিকে মুখ করে থাকে। বাঁকটি যতদূর যায় ততটুকু বাহু প্রসারিত অবস্থায় থাকে। অক্টোপাসের বাহু যেন নিজের মতো কাজ করে, এমন প্রমাণ আরও মেলে যখন বাহুর স্নায়ুগুলো দেহের অন্যান্য অংশ, এমনকি মস্তিষ্ক থেকেও বিচ্ছিন্ন করা হয়। তখনও বাহুর স্নায়ু কর্ড বা চামড়া বা চোষকে স্পর্শ করলে স্বাভাবিক প্রসারণের মতো নড়াচড়া দেখা যায়। বাহু যদি একেবারে শিথিল অবস্থায় থাকে এবং উদ্দীপনা দেওয়া হয়, তাহলেও প্রাথমিক নড়াচড়া একটি বাঁক তৈরি করে এবং সেটি ছড়িয়ে পড়ে। এর মানে বাহুর স্নায়ুতন্ত্র শুধু স্থানীয় রিফ্লেক্সই নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং সম্পূর্ণ বাহু জুড়ে জটিল গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণ করে। এই উদ্দীপিত নড়াচড়াগুলো আচরণগতভাবে অক্টোপাসের স্বাভাবিক নড়াচড়ার মতোই দেখা যায়। বিচ্ছিন্ন বাহুতে যখন উদ্দীপনা দেওয়া হয়, তখন পেশির সক্রিয়তা প্রাকৃতিক বাহু প্রসারণের মতো ছড়িয়ে পড়ে। একই ভঙ্গিমা থেকে উদ্ভূত নড়াচড়াগুলোর পথও একরকম হয়। আবার আলাদা ভঙ্গিমা থেকে শুরু করলে পথও ভিন্ন হয়। যেহেতু বিচ্ছিন্ন বাহুর নড়াচড়া প্রাকৃতিক বাহু চলাচলের মতোই দেখা যায়, তাই ধারণা করা হয়, এই নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণে একটি মোটর প্রোগ্রাম কাজ করে। এটি বাহুর স্নায়ু ও পেশি ব্যবস্থার মধ্যেই অন্তর্নিহিতভাবে সংরক্ষিত থাকে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের দরকার হয় না। == তথ্যসূত্র == {{সূত্র তালিকা}} {{BookCat}} 3tj18d1qjsidcuyb4zwn20nrbrxsqf2 ইন্দ্রিয়তন্ত্র/অন্যান্য প্রাণী/ইকোলোকেশনকারী দাঁতযুক্ত তিমি 0 24210 85121 79848 2025-06-21T14:42:14Z NusJaS 8394 85121 wikitext text/x-wiki == দাঁতওয়ালা তিমি: প্রতিধ্বনি নির্ধারণ == === পরিচিতি === [[File:Common dolphin noaa.jpg|thumb|সাধারণ ডলফিন, ''ডেলফিনাস জেনাস'']] তিমি, ডলফিন ও পারপয়েসের মতো সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীরা এমনসব অনুভূতির ক্ষমতা অর্জন করেছে, যা তাদের গভীর সমুদ্রে প্রবেশ করতে এবং বিশ্বজুড়ে মহাসাগরে বিস্তার লাভ করতে সাহায্য করেছে। এই স্তন্যপায়ীরা ''Cetacea'' বর্গের অন্তর্ভুক্ত। দাঁতওয়ালা তিমি -র একটি উপশ্রেণি। এই দলে অন্তত ৭১টি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন স্পার্ম হোয়েল, কিলার হোয়েল, পারপয়েস ও ডলফিন। তারা একটি চমকপ্রদ ধরণের সংবেদন পদ্ধতি অর্জন করেছে। একে বলা হয় প্রতিধ্বনি নির্ধারণ বা বায়ো-সোনার। যেখানে গভীরতা বা জলীয় আলোড়নের কারণে দৃষ্টিশক্তি সীমিত হয়, সেখানে এটি তাদের এমন জায়গায় সফলভাবে চলাফেরা ও শিকার করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি তাদের চারপাশের একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র সরবরাহ করে এবং বস্তুগুলির বৈশিষ্ট্য আলাদা করে শনাক্ত করার ক্ষমতা দেয়। তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক সুবিধা।<ref>Nachtigall, P.E. 1980, Odontocete echolocation performance on object size, shape and material, Pages 71-95 in Animal Sonar systems, ed. R. G. Busnel and J.F. Fish, New York: Plenum Press</ref> এই কারণে প্রতিধ্বনি নির্ধারণ দাঁতওয়ালা তিমির বিবর্তনগত সফলতায় একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তারা প্রায় ৩৪ মিলিয়ন বছর আগে আবির্ভূত হয়। তবে শুধু দাঁতওয়ালা তিমিই নয়, আরও অনেক প্রাণী এই ক্ষমতা ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, মাইক্রোকাইরোপ্টেরান বাদুড়দের একটি অত্যন্ত উন্নত বায়ো-সোনার ব্যবস্থা রয়েছে; এছাড়াও Shree, দুটি পাখির গণ ও বৃহৎ বাদুড়রাও এই সংবেদনশীল ক্ষমতা ব্যবহার করে।<ref>A.D. Grinnell, Echolocation I: Behavior, In Encyclopedia of Neuroscience, edited by Larry R. Squire,, Academic Press, Oxford, 2009, Pages 791-800, {{ISBN|9780080450469}}</ref> === প্রতিধ্বনি নির্ধারণ === ==== প্রতিধ্বনি নির্ধারণের নীতি ==== [[File:Delfinekko.gif|thumb|চিত্র_প্রতিধ্বনি: দাঁতওয়ালা তিমির প্রতিধ্বনি নির্ধারণের নীতি]] প্রতিধ্বনি নির্ধারণের মৌলিক নীতিটি হলো – পরিবেশ সম্পর্কিত তথ্য লাভ করা, নির্গত শব্দ তরঙ্গের প্রতিফলিত প্রতিধ্বনি থেকে (চিত্র দেখুন: প্রতিধ্বনি)। দাঁতওয়ালা তিমিরা ১০ কিলোহার্জ থেকে ২০০ কিলোহার্জ পর্যন্ত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির পালস জাতীয় ক্লিকিং শব্দ তৈরি করে। এই ক্লিকগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিস্বনক (২২.১ কিলোহার্জের বেশি) এবং তাই মানুষ শুনতে পায় না। উৎপন্ন ক্লিকের সময়কাল, ফ্রিকোয়েন্সি, ব্যবধান এবং উৎস স্তর বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয় এবং এটি পরিবেশগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে যেমন চারপাশের শব্দ, প্রতিধ্বনি, লক্ষ্যের দূরত্ব ও বৈশিষ্ট্য।<ref name="au">Au, W. W. L. 1993, The Sonar of Dolphins, Springer-Verlag, New York</ref> উদাহরণস্বরূপ, স্পার্ম হোয়েল ১০–৩০ কিলোহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে প্রতিধ্বনি নির্ধারণের জন্য, যেখানে অনেক ডলফিন ও পারপয়েস ১০০ কিলোহার্জেরও বেশি ফ্রিকোয়েন্সির সংকেত ব্যবহার করে।<ref>Richardson, W.J. Greene Jr, C.R., Malme, C.I., Thomson, D.H. 1995, Marine Mammals and Noise, Academic Press, San Diego</ref> একবার প্রতিফলিত শব্দ তরঙ্গ শনাক্ত হলে, তার সময় বিলম্ব এবং তীব্রতা থেকে লক্ষ্যের দূরত্ব ও দিক নির্ধারণ করা হয়। দাঁতওয়ালা তিমিরা সংকেত প্রেরণের ব্যবধান ও উৎস স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সাধারণত ক্লিকগুলো এমনভাবে প্রেরণ করা হয় যাতে প্রতিধ্বনি ফিরে আসার আগেই পরবর্তী ক্লিক না পাঠানো হয়। তাই, লক্ষ্যবস্তু যত কাছে আসে, ক্লিকের পুনরাবৃত্তির হার তত বাড়ে। এছাড়া, লক্ষ্যবস্তু যত দূরে থাকে, ক্লিকের তীব্রতা তত বেশি হয় এবং যত কাছে থাকে, তীব্রতা তত কম হয়। ==== প্রতিধ্বনি নির্ধারণের উৎস ==== উৎপন্ন ক্লিকগুলো দাঁতওয়ালা তিমির কপালের পেছনে নাসারন্ধ্রের পাশের দুটি ঠোঁট সদৃশ গঠন থেকে আসে, যেগুলোকে বলা হয় “ফোনিক ঠোঁট”।<ref name="au"/> এদের মাধ্যমে প্রাথমিক শব্দ তৈরি হয়। এই শব্দের তরঙ্গ পরে তিমির কপালের মধ্যস্থিত তেলের তৈরি গঠন "মেলন" -এর মধ্য দিয়ে যায়। মেলনটি একটি অ্যাকোস্টিক লেন্সের মতো কাজ করে, ক্লিকগুলোকে ফোকাস করে সামনের দিকে নির্দেশিত করে। এই গঠনটি ক্লিকের দিকনির্দেশনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে, তিমিরা মেলনের আকৃতি পরিবর্তন করে ক্লিকের দিকনির্দেশনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তিমিরা শুধুমাত্র প্রতিধ্বনির অবস্থানই নয়, প্রতিধ্বনি বিশ্লেষণের মাধ্যমেও বস্তুটির আকৃতি, গঠন ও অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে। ==== শব্দ গ্রহণের প্রক্রিয়া ==== [[File:Toothed whale sound production.png|thumb|চিত্র_শব্দ প্রক্রিয়া: দাঁতওয়ালা তিমির শব্দ উৎপাদন ও গ্রহণ প্রক্রিয়া]] দাঁতওয়ালা তিমিরা বিস্ময়করভাবে বিস্তৃত ফ্রিকোয়েন্সি পরিসরে শুনতে সক্ষম, এমনকি ১০০ কিলোহার্টজেরও বেশি ফ্রিকোয়েন্সি পর্যন্ত। শব্দ গ্রহণের জন্য ব্যবস্থাটি তিমির নিচের চোয়ালে অবস্থিত (চিত্র দেখুন: চিত্র_শব্দ প্রক্রিয়া)। নিচের চোয়ালের পেছনের অংশে একটি পাতলা হাড়ের গঠন থাকে, যাকে বলা হয় “প্যান বোন”, যা একটি চর্বিভর্তি চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রবণ বুলার সঙ্গে সংযুক্ত। এই নিম্ন-ঘনত্বের চ্যানেলের মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ চোয়াল থেকে বুলায় প্রবাহিত হয়। শ্রবণ বুলা, যার সঠিক নাম “টাইমপানো-পেরিওটিক কমপ্লেক্স”, দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত — মধ্যকর্ণ (টাইমপ্যানিক বুলা) এবং অভ্যন্তরীণ কর্ণ (পেরিওটিক বুলা)। চোয়াল ছাড়া এই গঠনটি খুলির (স্কাল) থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন, যা পানির নিচে শব্দের উৎস শনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।<ref>Au, W. W. and Fay, R. R 2000, The Tympano-Periotic Complex, Pages 66-69 in Hearing by Whales and Dolphins, Springer-Verlag, New York</ref> মধ্যকর্ণ, যা অ্যাকোস্টিক টিস্যুতে পূর্ণ, সেখান থেকে শব্দ অভ্যন্তরীণ কর্ণে যায়। অভ্যন্তরীণ কর্ণে, ককলিয়ার ভেতরে অবস্থিত লোমকোষগুলি শব্দ সংকেতকে বৈদ্যুতিক স্নায়ু সংকেতে রূপান্তর করে। এই লোমকোষগুলি গ্যাংলিয়ন কোষের সঙ্গে সংযুক্ত, যা শ্রবণ স্নায়ুর মাধ্যমে এই বৈদ্যুতিক সংকেত মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। মানুষের ও অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের তুলনায় তিমির অভ্যন্তরীণ কর্ণের গঠনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে — যেমন বৃহত্তর শ্রবণ স্নায়ু, দীর্ঘতর বেসিলার ঝিল্লি, ছোট সেমি-সার্কুলার ক্যানাল এবং লোমকোষের তুলনায় গ্যাংলিয়ন কোষের উচ্চ অনুপাত।<ref>Au, W. W. and Fay, R. R 2000, Cetacean Ears, Pages 43-108 in Hearing by Whales and Dolphins, Springer-Verlag, New York</ref> নির্গত ক্লিক ও শ্রবণ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সময় বিলম্ব, যাকে প্রতিক্রিয়া বিলম্ব বলা হয়, মাত্র ৭–১০ মাইক্রোসেকেন্ড পর্যন্ত কম হতে পারে। এই স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া একটি ইঁদুরের থেকেও দ্রুত, যদিও ইঁদুরের মাথা আকারে অনেক ছোট। শব্দের উৎস নির্ধারণ, অর্থাৎ আগত শব্দের দিক ও দূরত্ব শনাক্ত করার ক্ষমতা, পরিবেশের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। স্থলচর স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে, দুই কানে শব্দ পৌঁছানোর সময় ও তীব্রতার পার্থক্য — যাকে বাইনরাল ক্লু বলা হয় — সেই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দাঁতওয়ালা তিমিরাও এই কৌশল ব্যবহার করে। ধারণা করা হয় যে তাদের দুই কানের মধ্যে বড় ব্যবধান এবং খুলির সঙ্গে শ্রবণ যন্ত্রের কার্যকর বিচ্ছিন্নতা পানির নিচে শব্দের যথাযথ অবস্থান নির্ধারণে সহায়তা করে। যেহেতু তারা শব্দ গ্রহণ করে চোয়ালের টিস্যুর মাধ্যমে, আর স্থলচর প্রাণীর মতো কানের পর্দার মাধ্যমে নয়, তাই গভীর জলে চাপ বৃদ্ধির ফলে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা এদের ক্ষেত্রে কম। একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো নির্গত শব্দ রশ্মি অভেদ্য নয় বা অসমরূপ অর্থাৎ কেবল সেই সংকেতগুলো, যেগুলো রশ্মির সরল অক্ষ বরাবর চলে, তারা বিকৃত হয় না। তাই, শুধুমাত্র সেই বস্তুরাই স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব, যারা নির্গত রশ্মির প্রধান অক্ষ বরাবর অবস্থান করে। === উপসংহার === দাঁতওয়ালা তিমিদের প্রতিধ্বনি নির্ধারণ পদ্ধতি জলজ পরিবেশে অভিযোজিত এক বিস্ময়কর সংবেদন পদ্ধতি। এটি তাদের সফলভাবে চলাফেরা, শিকার ও যোগাযোগ করতে সক্ষম করে, এমনকি যেখানে আলো পৌঁছায় না সেখানেও। প্রতিধ্বনি নির্ধারণ ব্যবস্থার জৈবিক এবং প্রকৌশল দিকগুলি আরও গবেষণার বিষয়, যা মানুষকে কৃত্রিম সোনার এবং নেভিগেশন প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে। == আরও দেখুন == * [[শব্দ তরঙ্গ]] * [[সোনার প্রযুক্তি]] * [[ডলফিনের আচরণ]] == তথ্যসূত্র == <references/> 9yo8lnm40y7rej7h4vz5eea6mmfjmv1 ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দেহসংবেদী তন্ত্রে স্পর্শলোম 0 24216 85122 79803 2025-06-21T14:45:44Z NusJaS 8394 85122 wikitext text/x-wiki ==দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণী: লোমের স্পর্শসংবেদী উপলব্ধি== === পরিচিতি === {{multiple image | image1 = Overview of Whisker System.png | width1 = {{#expr: (250 * 388/520) round 0}} | caption1 = চিত্র ১এ. ইঁদুরের গোঁফ ব্যবস্থার সারসংক্ষেপ | image2 = Ascending pathways from whisker to barrel cortex.png | width2 = {{#expr: (250 * 624/1286) round 0}} | caption2 = চিত্র ১বি. গোঁফ থেকে ব্যারেল কর্টেক্স পর্যন্ত ঊর্ধ্বগামী পথের প্রণালিক পর্যায়ের বিবরণ। }} ব্যারেল কর্টেক্স হলো স্পর্শসংবেদী কর্টেক্সের একটি বিশেষায়িত অংশ যা লোমের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্পর্শগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত। অন্যান্য কর্টিকাল অঞ্চলের মতো, ব্যারেল কর্টেক্সেও স্তম্ভাকৃতির সংগঠন বজায় থাকে। এটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি লোম থেকে আগত তথ্য আলাদাভাবে স্বতন্ত্র স্তম্ভে উপস্থাপিত হয়। এটি “ব্যারেল” রূপে পরিচিত—এই কারণেই নামকরণ ব্যারেল কর্টেক্স। দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীরা পরিবেশ থেকে সংবেদী তথ্য সংগ্রহে নিয়মিতভাবে লোম ব্যবহার করে। এরা নিশাচর হওয়ায় লোমের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্পর্শগত তথ্যই পরিবেশের একটি উপলব্ধিগত মানচিত্র গঠনের জন্য মুখ্য সংকেত হিসেবে কাজ করে। চিত্র ১এ এবং ১বি-তে প্রদর্শিতভাবে, ইঁদুর ও ছুঁচোর নাকে অবস্থিত লোমগুলো অতি সংবেদনশীল স্পর্শসংবেদক হিসেবে কাজ করে। লোম ব্যবহার করে দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীরা পরিবেশের স্থানিক উপস্থাপনা গঠন করতে পারে, বস্তু নির্ধারণ করতে পারে এবং সূক্ষ্মভাবে পৃষ্ঠের গঠনভেদ বুঝতে পারে। স্পর্শসংবেদী প্রক্রিয়াকরণ অত্যন্ত সংগঠিত ও পূর্বনির্ধারিত মানচিত্র আকারে সংঘটিত হয়। এটি দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীদের মস্তিষ্কের একটি বড় অংশ দখল করে। অনুসন্ধান ও বস্তু স্পর্শ করার সময় লোম মোটর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে এবং প্রায়শই বড় অ্যামপ্লিটিউডের ছন্দময় দোলন করে থাকে। ফলে এই সংবেদী ব্যবস্থা সক্রিয় সংবেদন প্রক্রিয়া ও সংবেদন-মোটর সংযুক্তির একটি আকর্ষণীয় মডেল। এ প্রাণীদের নিউকোর্টেক্সের একটি বড় অংশ লোম-সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত। যেহেতু দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীরা নিশাচর, তাই তাদের দৃষ্টিশক্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং লোম-নির্ভর স্পর্শগত তথ্যের উপর তাদের নির্ভরতা বেশি। এই সংবেদী ব্যবস্থার সবচেয়ে বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য সম্ভবত হলো প্রাথমিক স্পর্শসংবেদী ‘‘ব্যারেল’’ কর্টেক্স, যেখানে প্রতিটি লোম একটি পৃথক ও সুসংজ্ঞায়িত গঠন দ্বারা উপস্থাপিত হয় যা স্তর ৪-এ অবস্থান করে। এই স্তর ৪-এর ব্যারেলগুলো স্নাউটে লোমের বিন্যাসের সাথে প্রায় অভিন্নভাবে সোমাটোটোপিকভাবে বিন্যস্ত থাকে, অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী লোম পার্শ্ববর্তী কর্টিকাল এলাকায় উপস্থাপিত হয় <sup>[1]</sup>। লোম-সম্পর্কিত কার্যকলাপের সংবেদন-মোটর সংযুক্তি প্যাটার্ন পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করে এবং দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীদের একটি নির্ভরযোগ্য পরিবেশের মানচিত্র গঠনে সক্ষম করে। এটি একটি আকর্ষণীয় গবেষণামূলক মডেল কারণ এরা লোম ব্যবহার করে "দেখে", এবং এই আন্তঃসংবেদী তথ্য প্রক্রিয়াকরণ আমাদের জন্যও উপকারী হতে পারে, বিশেষত যারা একটি সংবেদনশীলতা হারিয়েছে। বিশেষভাবে, অন্ধ মানুষদের স্পর্শসংবেদী তথ্য ব্যবহার করে স্থানিক মানচিত্র গঠনে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে <sup>[2]</sup>। === লোমের তথ্য ব্যারেল কর্টেক্সে বহনকারী স্নায়ুপথ === লোম থেকে স্পর্শসংবেদী সংকেত কর্টেক্স পর্যন্ত যাত্রা করে তিনটি প্রধান স্নায়ুকেন্দ্র অতিক্রম করে: ট্রাইজেমিনাল গ্যাংলিয়ন, ব্রেইনস্টেমের ট্রাইজেমিনাল নিউক্লিয়াস, এবং থ্যালামাস। ট্রাইজেমিনাল গ্যাংলিয়নে প্রথম অর্ডারের নিউরনগুলো লোমের বেসে অবস্থিত রিসেপ্টর থেকে সংকেত গ্রহণ করে। এরপর এই সংকেতগুলি ব্রেইনস্টেমের তিনটি অংশে পৌঁছায়: প্রধান স্পর্শসংবেদী নিউক্লিয়াস, স্পাইনাল ট্রাইজেমিনাল নিউক্লিয়াস, এবং মেসেনসেফালিক নিউক্লিয়াস। এর মধ্যে প্রধান স্পর্শসংবেদী নিউক্লিয়াস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকেই সংকেতগুলো দ্বিতীয় অর্ডারের নিউরনের মাধ্যমে থ্যালামাসে (বিশেষ করে ভেন্ট্রোপোস্টেরিওমেডিয়াল নিউক্লিয়াস - VPM) প্রেরিত হয়। তারপর এই সংকেত তৃতীয় অর্ডারের নিউরনের মাধ্যমে প্রাথমিক স্পর্শসংবেদী কর্টেক্স (S1)-এ পৌঁছে, যেখানে লোমের প্রতিফলন ব্যারেল নামে পরিচিত সংবেদনশীল স্তম্ভের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই লোম-থেকে-কর্টেক্স পথটিকে "ত্রি-সিন্যাপটিক চেইন" বলা হয়, কারণ এটি লোম থেকে কর্টেক্স পর্যন্ত তিনটি প্রধান সিন্যাপস অতিক্রম করে। এই নির্দিষ্ট পথের সুনির্দিষ্ট মানচিত্রিক বিন্যাস এবং সংবেদনশীল গঠন থাকায় গবেষকরা মস্তিষ্কে সংবেদনশীল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও মানচিত্রায়ন কিভাবে ঘটে, তা বিশ্লেষণ করতে পারেন <sup>[3]</sup>। === ব্যারেল কর্টেক্সের গঠন ও সংগঠন === ব্যারেল কর্টেক্স হল ইঁদুর ও অন্যান্য কিছু স্তন্যপায়ীর সেরিব্রাল কর্টেক্সের একটি বিশেষ এলাকা, যেখানে প্রতিটি লোমের জন্য নির্দিষ্ট করে একটি পৃথক গঠন থাকে, যাকে "ব্যারেল" বলা হয়। এই ব্যারেলগুলি প্রাথমিক স্পর্শসংবেদী কর্টেক্স (S1)-এর মধ্যে অবস্থিত এবং কর্টিকাল স্তর IV-এ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। প্রতিটি ব্যারেল একটি লোমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অবস্থান করে এবং এতে সুনির্দিষ্টভাবে সাজানো নিউরন থাকে যা ঐ লোম থেকে আসা স্পর্শসংবেদী সংকেতের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল। এই গঠনটি অত্যন্ত মানচিত্রিক এবং সুনির্দিষ্ট, যার ফলে এটি নিউরোসায়েন্স গবেষণার জন্য একটি জনপ্রিয় মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যারেল কর্টেক্সের সংগঠন একটি কলামার কাঠামো অনুসরণ করে, যেখানে প্রতিটি ব্যারেল একটি "কলাম" প্রতিনিধিত্ব করে যা কর্টেক্সের সব স্তর অতিক্রম করে। এই কলামগুলোতে নিউরনগুলি উল্লম্বভাবে সংযুক্ত থাকে এবং ঐ নির্দিষ্ট লোম থেকে আগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত থাকে। পাশাপাশি, কর্টেক্সের অন্যান্য স্তর যেমন স্তর II/III এবং স্তর V-VI, এই ব্যারেল কলাম থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং সেটিকে কর্টেক্সের অন্যান্য অংশ ও সাবকর্টিকাল কাঠামোর মধ্যে প্রেরণ করে। স্তর IV হলো যেখানে থ্যালামাস থেকে আগত ইনপুট আসে, এবং এখানেই ব্যারেল কাঠামো সবচেয়ে ভালভাবে সংজ্ঞায়িত। স্তর II/III হলো আন্তঃকর্টিকাল প্রক্ষেপণের উৎস, যেখানে সংকেত কর্টেক্সের অন্যান্য অংশে প্রেরণ করা হয়। স্তর V এবং VI থেকে সংকেত কর্টেক্সের নিচের স্তরে, যেমন স্ট্রিয়াটাম এবং থ্যালামাসে ফেরত পাঠানো হয়। এই কাঠামোগত বিন্যাস লোম-ভিত্তিক স্পর্শসংবেদী তথ্যের নির্ভুল প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করে, এবং গবেষকরা এটি ব্যবহার করে নিউরাল মানচিত্রায়ন, নিউরনাল প্লাস্টিসিটি, এবং সংবেদনশীল আচরণ বোঝার জন্য গবেষণা পরিচালনা করেন <sup>[4]</sup>। === লোম প্রক্রিয়াকরণের কার্যকরী দিক === লোম-ভিত্তিক সংবেদনশীলতা ইঁদুর ও অন্যান্য দণ্ডাকার স্তন্যপায়ীদের জন্য পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অন্বেষণ ও সনাক্তকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। লোমের আন্দোলন ও বিকৃতি বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিক উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এটি ত্বকে অবস্থিত স্পর্শ সংবেদনশীল রিসেপ্টর দ্বারা শনাক্ত হয় এবং পরে ত্রিজেমিনাল স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। এই ইনপুটগুলি অবশেষে থ্যালামাসের মাধ্যমে ব্যারেল কর্টেক্সে পৌঁছে, যেখানে তথ্য বিশ্লেষণ ও সমন্বয় ঘটে। ব্যারেল কর্টেক্সে, নিউরনগুলি বিভিন্ন দিক থেকে আগত সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্যের প্রতি সাড়া দেয়, যেমন লোমের গতি, দিক, গতি পরিবর্তন, এবং সংস্পর্শের সময়কাল। কিছু নিউরন নির্দিষ্ট লোমের প্রতি অতি-সংবেদনশীল, আবার অন্যরা পার্শ্ববর্তী লোম থেকেও তথ্য গ্রহণ করে। এটি স্থানিক ও সময়গত সংবেদন প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে। এই পদ্ধতি ইঁদুরকে খুব সূক্ষ্মভাবে পৃষ্ঠের গঠন শনাক্ত করতে ও বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করে। লোমের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুধুমাত্র প্যাসিভ সংবেদনশীলতার উপর নির্ভর করে না; বরং ইঁদুর সক্রিয়ভাবে লোম নাড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশ স্ক্যান করে, একে বলা হয় “হুইস্কিং”। এই হুইস্কিং আচরণটি মস্তিষ্কে লোম সংবেদনের রূপ পরিবর্তন করে, কারণ এটি ইচ্ছাকৃত আন্দোলনের সঙ্গে সংবেদনশীল ইনপুট একত্রিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হুইস্কার কর্টেক্সে নিউরনের কার্যকলাপ ইঁদুরের আচরণগত প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়—যেমন যখন প্রাণী কোনো বস্তুকে অন্বেষণ করছে বা কোনো কাজে নিযুক্ত। এই আচরণ-নির্ভর গতিশীলতা বোঝায় যে, ব্যারেল কর্টেক্স কেবল একটি সংবেদনশীল মানচিত্র নয়, বরং এটি একটি সক্রিয় ও অভিযোজিত প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা। এটি পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে <sup>[5]</sup>। === ব্যারেল কর্টেক্সের বিকাশ === ব্যারেল কর্টেক্সের গঠন স্তন্যপায়ীদের জীবনের প্রারম্ভিক সময়ে ঘটে এবং এটি অভ্যন্তরীণ জেনেটিক সংকেত এবং বাহ্যিক সংবেদনশীল উদ্দীপনার মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। জন্মের পরপরই লোম থেকে আসা ইনপুটসমূহ সঠিকভাবে সংবেদনশীল মানচিত্র তৈরি করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (যাকে বলা হয় “সংবেদনশীল সময়কাল”) লোম অপসারণ বা ধ্বংস করা হয়, তবে কর্টিকাল ব্যারেলের গঠন ব্যাহত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ত্রিজেমিনাল স্নায়ু থেকে থ্যালামাস এবং সেখান থেকে কর্টেক্স পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সংযোগ স্থাপিত হয়, যেখানে প্রতিটি ব্যারেল লোমের নির্দিষ্ট একটির প্রতিনিধিত্ব করে। থ্যালামাস থেকে আগত ইনপুটগুলি নিউরনের নির্দিষ্ট গুচ্ছের মধ্যে সিগন্যালকে কেন্দ্রীভূত করে এবং ব্যারেল-আকৃতির কাঠামো তৈরি করে। এই কাঠামোগুলি প্রধানত কর্টেক্সের চতুর্থ স্তরে অবস্থান করে এবং পরবর্তী স্তরসমূহে সংবেদনশীল তথ্য প্রেরণ করে। ব্যারেল কর্টেক্সের বিকাশ নিউরোট্রান্সমিটার, নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (যেমন BDNF), এবং জিন-নিয়ন্ত্রিত পথের ওপর নির্ভর করে। ইঁদুরে ব্যবহৃত জেনেটিক মিউটেশন ও অপসারণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, এই জৈব রাসায়নিক সংকেতগুলি ব্যারেল গঠন, নিউরন স্থাপন ও সংযোগের নিখুঁত নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ থেকে আগত সংবেদনশীল ইনপুটের উপর নির্ভর করেই এই কর্টিকাল মানচিত্র পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই লোম কেটে দেওয়া বা সংবেদনশীল উদ্দীপনার ঘাটতি থাকলে ব্যারেল গঠন ও কার্যকারিতা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে <sup>[6]</sup>। === ব্যারেল কর্টেক্সে নমনীয়তা === ব্যারেল কর্টেক্স তার কার্যকারিতা এবং গঠন উভয় ক্ষেত্রেই উচ্চমাত্রার স্নায়বৈকল্য প্রদর্শন করে। এই নমনীয়তা জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বিশিষ্টভাবে দেখা যায়, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কেও তা সীমিত আকারে বজায় থাকে। যখন লোম কেটে ফেলা হয়, লোম পুনরায় গজায় অথবা অতিরিক্ত সংবেদনশীল উদ্দীপনা দেওয়া হয়, তখন কর্টিকাল ব্যারেলগুলির কার্যকলাপ এবং অঙ্গসংস্থান পুনর্গঠিত হয়। একে অভিজ্ঞতাভিত্তিক প্লাস্টিসিটি বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘমেয়াদে লোম অপসারণ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যারেলের স্নায়ু সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পার্শ্ববর্তী ব্যারেলের নিউরোনগুলো সেই অঞ্চলে প্রসারিত হতে পারে। একইভাবে, একটি লোমের অতিরিক্ত উদ্দীপনা কর্টেক্সে তার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যারেল অঞ্চলকে প্রসারিত করতে পারে। এই রূপান্তরগুলি NMDA রিসেপ্টর এবং অন্যান্য সিন্যাপটিক প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতায় ঘটে। === ব্যারেল কর্টেক্সে গবেষণার গুরুত্ব === ব্যারেল কর্টেক্স হল একটি আদর্শ মডেল সিস্টেম যার মাধ্যমে স্নায়বিক উন্নয়ন, সংবেদনশীল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং স্নায়বিক নমনীয়তা বোঝা যায়। এর স্পষ্ট অ্যানাটমিক্যাল মানচিত্র এবং সংজ্ঞায়িত ইনপুট-আউটপুট পথগুলি গবেষকদের নির্দিষ্ট নিউরাল প্রক্রিয়া পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। ইঁদুর ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণীদের ব্যবহার করে, গবেষকরা বিভিন্ন নিউরাল কোডিং কৌশল, নিউরোট্রান্সমিটার, জিন প্রকাশ, এবং আচরণগত প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অন্বেষণ করতে সক্ষম হন। ব্যারেল কর্টেক্সের অন্তর্দৃষ্টি অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার সাধারণ নীতিগুলি বোঝার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক, যেমন দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণ সংবেদনের প্রসেসিং। === সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং ভবিষ্যত নির্দেশনা === সম্প্রতি ক্যালসিয়াম ইমেজিং, অপটোজেনেটিক্স, এবং একক-সেল ট্র্যাকিং কৌশল ব্যবহার করে ব্যারেল কর্টেক্সের নিউরাল ডায়নামিক্স বিশ্লেষণে অগ্রগতি হয়েছে। এগুলি সংবেদনশীল তথ্য কীভাবে রূপান্তরিত হয় এবং আচরণের সময় স্নায়ুগুলি কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা অনুধাবনে সহায়তা করে। ভবিষ্যত গবেষণা ব্যারেল কর্টেক্সে নিউরোন ও গ্লিয়া কোষের পারস্পরিক ক্রিয়া, নিউরাল সার্কিটে রোগ-সম্পর্কিত পরিবর্তন, এবং সংবেদনশীল শিক্ষা ও স্মৃতির সঙ্গে এর সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করতে পারে। === টীকা === <sup>1</sup> Petersen, C. C. H. (2007). The functional organization of the barrel cortex. Neuron, 56(2), 339–355. <sup>2</sup> Fox, K. (2008). Barrel Cortex. Cambridge University Press. <sup>3</sup> Woolsey, T. A., & Van der Loos, H. (1970). The structural organization of layer IV in the somatosensory region (SI) of mouse cerebral cortex. Brain Research, 17(2), 205–242. <sup>4</sup> Feldmeyer, D. (2012). Excitatory neuronal connectivity in the barrel cortex. Frontiers in Neuroanatomy, 6, 24. <sup>5</sup> Petersen, C. C. H. (2019). Sensorimotor processing in the rodent barrel cortex. Nature Reviews Neuroscience, 20(9), 533–546. <sup>6</sup> Erzurumlu, R. S., & Gaspar, P. (2012). Development and critical period plasticity of the barrel cortex. European Journal of Neuroscience, 35(10), 1540–1553. brmnmte35sftrg8dvzd4t1uvs2cvkkp 85123 85122 2025-06-21T14:46:49Z NusJaS 8394 85123 wikitext text/x-wiki ==দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণী: লোমের স্পর্শসংবেদী উপলব্ধি== === পরিচিতি === {{multiple image | image1 = Overview of Whisker System.png | width1 = {{#expr: (250 * 388/520) round 0}} | caption1 = চিত্র ১এ. ইঁদুরের গোঁফ ব্যবস্থার সারসংক্ষেপ | image2 = Ascending pathways from whisker to barrel cortex.png | width2 = {{#expr: (250 * 624/1286) round 0}} | caption2 = চিত্র ১বি. গোঁফ থেকে ব্যারেল কর্টেক্স পর্যন্ত ঊর্ধ্বগামী পথের প্রণালিক পর্যায়ের বিবরণ। }} ব্যারেল কর্টেক্স হলো স্পর্শসংবেদী কর্টেক্সের একটি বিশেষায়িত অংশ যা লোমের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্পর্শগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত। অন্যান্য কর্টিকাল অঞ্চলের মতো, ব্যারেল কর্টেক্সেও স্তম্ভাকৃতির সংগঠন বজায় থাকে। এটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি লোম থেকে আগত তথ্য আলাদাভাবে স্বতন্ত্র স্তম্ভে উপস্থাপিত হয়। এটি “ব্যারেল” রূপে পরিচিত—এই কারণেই নামকরণ ব্যারেল কর্টেক্স। দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীরা পরিবেশ থেকে সংবেদী তথ্য সংগ্রহে নিয়মিতভাবে লোম ব্যবহার করে। এরা নিশাচর হওয়ায় লোমের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্পর্শগত তথ্যই পরিবেশের একটি উপলব্ধিগত মানচিত্র গঠনের জন্য মুখ্য সংকেত হিসেবে কাজ করে। চিত্র ১এ এবং ১বি-তে প্রদর্শিতভাবে, ইঁদুর ও ছুঁচোর নাকে অবস্থিত গোঁফগুলো অতি সংবেদনশীল স্পর্শসংবেদক হিসেবে কাজ করে। লোম ব্যবহার করে দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীরা পরিবেশের স্থানিক উপস্থাপনা গঠন করতে পারে, বস্তু নির্ধারণ করতে পারে এবং সূক্ষ্মভাবে পৃষ্ঠের গঠনভেদ বুঝতে পারে। স্পর্শসংবেদী প্রক্রিয়াকরণ অত্যন্ত সংগঠিত ও পূর্বনির্ধারিত মানচিত্র আকারে সংঘটিত হয়। এটি দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীদের মস্তিষ্কের একটি বড় অংশ দখল করে। অনুসন্ধান ও বস্তু স্পর্শ করার সময় লোম মোটর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে এবং প্রায়শই বড় অ্যামপ্লিটিউডের ছন্দময় দোলন করে থাকে। ফলে এই সংবেদী ব্যবস্থা সক্রিয় সংবেদন প্রক্রিয়া ও সংবেদন-মোটর সংযুক্তির একটি আকর্ষণীয় মডেল। এ প্রাণীদের নিউকোর্টেক্সের একটি বড় অংশ লোম-সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত। যেহেতু দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীরা নিশাচর, তাই তাদের দৃষ্টিশক্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং লোম-নির্ভর স্পর্শগত তথ্যের উপর তাদের নির্ভরতা বেশি। এই সংবেদী ব্যবস্থার সবচেয়ে বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য সম্ভবত হলো প্রাথমিক স্পর্শসংবেদী ‘‘ব্যারেল’’ কর্টেক্স, যেখানে প্রতিটি লোম একটি পৃথক ও সুসংজ্ঞায়িত গঠন দ্বারা উপস্থাপিত হয় যা স্তর ৪-এ অবস্থান করে। এই স্তর ৪-এর ব্যারেলগুলো স্নাউটে লোমের বিন্যাসের সাথে প্রায় অভিন্নভাবে সোমাটোটোপিকভাবে বিন্যস্ত থাকে, অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী লোম পার্শ্ববর্তী কর্টিকাল এলাকায় উপস্থাপিত হয় <sup>[1]</sup>। লোম-সম্পর্কিত কার্যকলাপের সংবেদন-মোটর সংযুক্তি প্যাটার্ন পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করে এবং দাঁড়কাকজাতীয় প্রাণীদের একটি নির্ভরযোগ্য পরিবেশের মানচিত্র গঠনে সক্ষম করে। এটি একটি আকর্ষণীয় গবেষণামূলক মডেল কারণ এরা লোম ব্যবহার করে "দেখে", এবং এই আন্তঃসংবেদী তথ্য প্রক্রিয়াকরণ আমাদের জন্যও উপকারী হতে পারে, বিশেষত যারা একটি সংবেদনশীলতা হারিয়েছে। বিশেষভাবে, অন্ধ মানুষদের স্পর্শসংবেদী তথ্য ব্যবহার করে স্থানিক মানচিত্র গঠনে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে <sup>[2]</sup>। === লোমের তথ্য ব্যারেল কর্টেক্সে বহনকারী স্নায়ুপথ === লোম থেকে স্পর্শসংবেদী সংকেত কর্টেক্স পর্যন্ত যাত্রা করে তিনটি প্রধান স্নায়ুকেন্দ্র অতিক্রম করে: ট্রাইজেমিনাল গ্যাংলিয়ন, ব্রেইনস্টেমের ট্রাইজেমিনাল নিউক্লিয়াস, এবং থ্যালামাস। ট্রাইজেমিনাল গ্যাংলিয়নে প্রথম অর্ডারের নিউরনগুলো লোমের বেসে অবস্থিত রিসেপ্টর থেকে সংকেত গ্রহণ করে। এরপর এই সংকেতগুলি ব্রেইনস্টেমের তিনটি অংশে পৌঁছায়: প্রধান স্পর্শসংবেদী নিউক্লিয়াস, স্পাইনাল ট্রাইজেমিনাল নিউক্লিয়াস, এবং মেসেনসেফালিক নিউক্লিয়াস। এর মধ্যে প্রধান স্পর্শসংবেদী নিউক্লিয়াস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকেই সংকেতগুলো দ্বিতীয় অর্ডারের নিউরনের মাধ্যমে থ্যালামাসে (বিশেষ করে ভেন্ট্রোপোস্টেরিওমেডিয়াল নিউক্লিয়াস - VPM) প্রেরিত হয়। তারপর এই সংকেত তৃতীয় অর্ডারের নিউরনের মাধ্যমে প্রাথমিক স্পর্শসংবেদী কর্টেক্স (S1)-এ পৌঁছে, যেখানে লোমের প্রতিফলন ব্যারেল নামে পরিচিত সংবেদনশীল স্তম্ভের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই লোম-থেকে-কর্টেক্স পথটিকে "ত্রি-সিন্যাপটিক চেইন" বলা হয়, কারণ এটি লোম থেকে কর্টেক্স পর্যন্ত তিনটি প্রধান সিন্যাপস অতিক্রম করে। এই নির্দিষ্ট পথের সুনির্দিষ্ট মানচিত্রিক বিন্যাস এবং সংবেদনশীল গঠন থাকায় গবেষকরা মস্তিষ্কে সংবেদনশীল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও মানচিত্রায়ন কিভাবে ঘটে, তা বিশ্লেষণ করতে পারেন <sup>[3]</sup>। === ব্যারেল কর্টেক্সের গঠন ও সংগঠন === ব্যারেল কর্টেক্স হল ইঁদুর ও অন্যান্য কিছু স্তন্যপায়ীর সেরিব্রাল কর্টেক্সের একটি বিশেষ এলাকা, যেখানে প্রতিটি লোমের জন্য নির্দিষ্ট করে একটি পৃথক গঠন থাকে, যাকে "ব্যারেল" বলা হয়। এই ব্যারেলগুলি প্রাথমিক স্পর্শসংবেদী কর্টেক্স (S1)-এর মধ্যে অবস্থিত এবং কর্টিকাল স্তর IV-এ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। প্রতিটি ব্যারেল একটি লোমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অবস্থান করে এবং এতে সুনির্দিষ্টভাবে সাজানো নিউরন থাকে যা ঐ লোম থেকে আসা স্পর্শসংবেদী সংকেতের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল। এই গঠনটি অত্যন্ত মানচিত্রিক এবং সুনির্দিষ্ট, যার ফলে এটি নিউরোসায়েন্স গবেষণার জন্য একটি জনপ্রিয় মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যারেল কর্টেক্সের সংগঠন একটি কলামার কাঠামো অনুসরণ করে, যেখানে প্রতিটি ব্যারেল একটি "কলাম" প্রতিনিধিত্ব করে যা কর্টেক্সের সব স্তর অতিক্রম করে। এই কলামগুলোতে নিউরনগুলি উল্লম্বভাবে সংযুক্ত থাকে এবং ঐ নির্দিষ্ট লোম থেকে আগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত থাকে। পাশাপাশি, কর্টেক্সের অন্যান্য স্তর যেমন স্তর II/III এবং স্তর V-VI, এই ব্যারেল কলাম থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং সেটিকে কর্টেক্সের অন্যান্য অংশ ও সাবকর্টিকাল কাঠামোর মধ্যে প্রেরণ করে। স্তর IV হলো যেখানে থ্যালামাস থেকে আগত ইনপুট আসে, এবং এখানেই ব্যারেল কাঠামো সবচেয়ে ভালভাবে সংজ্ঞায়িত। স্তর II/III হলো আন্তঃকর্টিকাল প্রক্ষেপণের উৎস, যেখানে সংকেত কর্টেক্সের অন্যান্য অংশে প্রেরণ করা হয়। স্তর V এবং VI থেকে সংকেত কর্টেক্সের নিচের স্তরে, যেমন স্ট্রিয়াটাম এবং থ্যালামাসে ফেরত পাঠানো হয়। এই কাঠামোগত বিন্যাস লোম-ভিত্তিক স্পর্শসংবেদী তথ্যের নির্ভুল প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করে, এবং গবেষকরা এটি ব্যবহার করে নিউরাল মানচিত্রায়ন, নিউরনাল প্লাস্টিসিটি, এবং সংবেদনশীল আচরণ বোঝার জন্য গবেষণা পরিচালনা করেন <sup>[4]</sup>। === লোম প্রক্রিয়াকরণের কার্যকরী দিক === লোম-ভিত্তিক সংবেদনশীলতা ইঁদুর ও অন্যান্য দণ্ডাকার স্তন্যপায়ীদের জন্য পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অন্বেষণ ও সনাক্তকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। লোমের আন্দোলন ও বিকৃতি বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিক উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এটি ত্বকে অবস্থিত স্পর্শ সংবেদনশীল রিসেপ্টর দ্বারা শনাক্ত হয় এবং পরে ত্রিজেমিনাল স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। এই ইনপুটগুলি অবশেষে থ্যালামাসের মাধ্যমে ব্যারেল কর্টেক্সে পৌঁছে, যেখানে তথ্য বিশ্লেষণ ও সমন্বয় ঘটে। ব্যারেল কর্টেক্সে, নিউরনগুলি বিভিন্ন দিক থেকে আগত সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্যের প্রতি সাড়া দেয়, যেমন লোমের গতি, দিক, গতি পরিবর্তন, এবং সংস্পর্শের সময়কাল। কিছু নিউরন নির্দিষ্ট লোমের প্রতি অতি-সংবেদনশীল, আবার অন্যরা পার্শ্ববর্তী লোম থেকেও তথ্য গ্রহণ করে। এটি স্থানিক ও সময়গত সংবেদন প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে। এই পদ্ধতি ইঁদুরকে খুব সূক্ষ্মভাবে পৃষ্ঠের গঠন শনাক্ত করতে ও বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করে। লোমের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুধুমাত্র প্যাসিভ সংবেদনশীলতার উপর নির্ভর করে না; বরং ইঁদুর সক্রিয়ভাবে লোম নাড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশ স্ক্যান করে, একে বলা হয় “হুইস্কিং”। এই হুইস্কিং আচরণটি মস্তিষ্কে লোম সংবেদনের রূপ পরিবর্তন করে, কারণ এটি ইচ্ছাকৃত আন্দোলনের সঙ্গে সংবেদনশীল ইনপুট একত্রিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হুইস্কার কর্টেক্সে নিউরনের কার্যকলাপ ইঁদুরের আচরণগত প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়—যেমন যখন প্রাণী কোনো বস্তুকে অন্বেষণ করছে বা কোনো কাজে নিযুক্ত। এই আচরণ-নির্ভর গতিশীলতা বোঝায় যে, ব্যারেল কর্টেক্স কেবল একটি সংবেদনশীল মানচিত্র নয়, বরং এটি একটি সক্রিয় ও অভিযোজিত প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা। এটি পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে <sup>[5]</sup>। === ব্যারেল কর্টেক্সের বিকাশ === ব্যারেল কর্টেক্সের গঠন স্তন্যপায়ীদের জীবনের প্রারম্ভিক সময়ে ঘটে এবং এটি অভ্যন্তরীণ জেনেটিক সংকেত এবং বাহ্যিক সংবেদনশীল উদ্দীপনার মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। জন্মের পরপরই লোম থেকে আসা ইনপুটসমূহ সঠিকভাবে সংবেদনশীল মানচিত্র তৈরি করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (যাকে বলা হয় “সংবেদনশীল সময়কাল”) লোম অপসারণ বা ধ্বংস করা হয়, তবে কর্টিকাল ব্যারেলের গঠন ব্যাহত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ত্রিজেমিনাল স্নায়ু থেকে থ্যালামাস এবং সেখান থেকে কর্টেক্স পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সংযোগ স্থাপিত হয়, যেখানে প্রতিটি ব্যারেল লোমের নির্দিষ্ট একটির প্রতিনিধিত্ব করে। থ্যালামাস থেকে আগত ইনপুটগুলি নিউরনের নির্দিষ্ট গুচ্ছের মধ্যে সিগন্যালকে কেন্দ্রীভূত করে এবং ব্যারেল-আকৃতির কাঠামো তৈরি করে। এই কাঠামোগুলি প্রধানত কর্টেক্সের চতুর্থ স্তরে অবস্থান করে এবং পরবর্তী স্তরসমূহে সংবেদনশীল তথ্য প্রেরণ করে। ব্যারেল কর্টেক্সের বিকাশ নিউরোট্রান্সমিটার, নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (যেমন BDNF), এবং জিন-নিয়ন্ত্রিত পথের ওপর নির্ভর করে। ইঁদুরে ব্যবহৃত জেনেটিক মিউটেশন ও অপসারণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, এই জৈব রাসায়নিক সংকেতগুলি ব্যারেল গঠন, নিউরন স্থাপন ও সংযোগের নিখুঁত নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ থেকে আগত সংবেদনশীল ইনপুটের উপর নির্ভর করেই এই কর্টিকাল মানচিত্র পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই লোম কেটে দেওয়া বা সংবেদনশীল উদ্দীপনার ঘাটতি থাকলে ব্যারেল গঠন ও কার্যকারিতা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে <sup>[6]</sup>। === ব্যারেল কর্টেক্সে নমনীয়তা === ব্যারেল কর্টেক্স তার কার্যকারিতা এবং গঠন উভয় ক্ষেত্রেই উচ্চমাত্রার স্নায়বৈকল্য প্রদর্শন করে। এই নমনীয়তা জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বিশিষ্টভাবে দেখা যায়, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কেও তা সীমিত আকারে বজায় থাকে। যখন লোম কেটে ফেলা হয়, লোম পুনরায় গজায় অথবা অতিরিক্ত সংবেদনশীল উদ্দীপনা দেওয়া হয়, তখন কর্টিকাল ব্যারেলগুলির কার্যকলাপ এবং অঙ্গসংস্থান পুনর্গঠিত হয়। একে অভিজ্ঞতাভিত্তিক প্লাস্টিসিটি বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘমেয়াদে লোম অপসারণ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যারেলের স্নায়ু সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পার্শ্ববর্তী ব্যারেলের নিউরোনগুলো সেই অঞ্চলে প্রসারিত হতে পারে। একইভাবে, একটি লোমের অতিরিক্ত উদ্দীপনা কর্টেক্সে তার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যারেল অঞ্চলকে প্রসারিত করতে পারে। এই রূপান্তরগুলি NMDA রিসেপ্টর এবং অন্যান্য সিন্যাপটিক প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতায় ঘটে। === ব্যারেল কর্টেক্সে গবেষণার গুরুত্ব === ব্যারেল কর্টেক্স হল একটি আদর্শ মডেল সিস্টেম যার মাধ্যমে স্নায়বিক উন্নয়ন, সংবেদনশীল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং স্নায়বিক নমনীয়তা বোঝা যায়। এর স্পষ্ট অ্যানাটমিক্যাল মানচিত্র এবং সংজ্ঞায়িত ইনপুট-আউটপুট পথগুলি গবেষকদের নির্দিষ্ট নিউরাল প্রক্রিয়া পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। ইঁদুর ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণীদের ব্যবহার করে, গবেষকরা বিভিন্ন নিউরাল কোডিং কৌশল, নিউরোট্রান্সমিটার, জিন প্রকাশ, এবং আচরণগত প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অন্বেষণ করতে সক্ষম হন। ব্যারেল কর্টেক্সের অন্তর্দৃষ্টি অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যবস্থার সাধারণ নীতিগুলি বোঝার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক, যেমন দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণ সংবেদনের প্রসেসিং। === সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং ভবিষ্যত নির্দেশনা === সম্প্রতি ক্যালসিয়াম ইমেজিং, অপটোজেনেটিক্স, এবং একক-সেল ট্র্যাকিং কৌশল ব্যবহার করে ব্যারেল কর্টেক্সের নিউরাল ডায়নামিক্স বিশ্লেষণে অগ্রগতি হয়েছে। এগুলি সংবেদনশীল তথ্য কীভাবে রূপান্তরিত হয় এবং আচরণের সময় স্নায়ুগুলি কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা অনুধাবনে সহায়তা করে। ভবিষ্যত গবেষণা ব্যারেল কর্টেক্সে নিউরোন ও গ্লিয়া কোষের পারস্পরিক ক্রিয়া, নিউরাল সার্কিটে রোগ-সম্পর্কিত পরিবর্তন, এবং সংবেদনশীল শিক্ষা ও স্মৃতির সঙ্গে এর সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করতে পারে। === টীকা === <sup>1</sup> Petersen, C. C. H. (2007). The functional organization of the barrel cortex. Neuron, 56(2), 339–355. <sup>2</sup> Fox, K. (2008). Barrel Cortex. Cambridge University Press. <sup>3</sup> Woolsey, T. A., & Van der Loos, H. (1970). The structural organization of layer IV in the somatosensory region (SI) of mouse cerebral cortex. Brain Research, 17(2), 205–242. <sup>4</sup> Feldmeyer, D. (2012). Excitatory neuronal connectivity in the barrel cortex. Frontiers in Neuroanatomy, 6, 24. <sup>5</sup> Petersen, C. C. H. (2019). Sensorimotor processing in the rodent barrel cortex. Nature Reviews Neuroscience, 20(9), 533–546. <sup>6</sup> Erzurumlu, R. S., & Gaspar, P. (2012). Development and critical period plasticity of the barrel cortex. European Journal of Neuroscience, 35(10), 1540–1553. fk8yu93nnckik3oetpi36vo0ird6uuo প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/পর্যালোচনা: উন্নত বিষয় গ্রুপ 0 25217 85170 78780 2025-06-22T05:14:38Z RDasgupta2020 8748 /* কৌশল আলোচনা */ 85170 wikitext text/x-wiki [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] সংগ্রহ/পাঠ্যপুস্তকের একাধিক অধ্যায়গুলি পর্যালোচনা করুন। ==কৌশল আলোচনা== প্রোগ্রামিং অধ্যয়নের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একটি কৌশল অনুসরন করা উচিত। আপনার পঠনপাঠনের পদ্ধতি ও বিষয় আয়ত্তকরনের কৌশল বিভিন্ন প্রশিক্ষকের ক্ষেত্রে আলাধা আলাধা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক পর্যালোচনার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলোর উপর ব্যবহার করেন: #বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা #স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক প্রশ্নাবলীর অনুশীলন, যেমন সত্য/মিথ্যা নির্বাচনকারী প্রশ্ন, বহু বিকল্প নির্বাচনী প্রশ্ন অথবা সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নের চর্চা #প্রোগ্রামিং -এর মাধ্যমে সমস্যাভিত্তিক প্রশ্নের সামাধান [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] -এই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন অংশে এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য এগুলো ভালোভাবে অনুশীলনের পরামর্শ দেওয়া হয়। #যদি আপনার অধ্যাপক বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা আছে কিনা তা যাচাই করার পরীক্ষা নেন এবং যার জন্য আপনি বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলি মুখস্থ রাখার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি পাঠ্যবইয়ের অ্যাপেনডিক্স অংশে থাকা <code>Study Habits that Build the Brain</code> শীর্ষক অংশের <code>"Using the Flash Card Activity"</code> অংশটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। সংজ্ঞাগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। #বইয়ের অনুশীলনী অংশের যেকোনো অনুশীলন দ্রুত পর্যালোচনা করুন। পাশাপাশি আপনি যেসব মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোর উত্তর পর্যালোচনা করুন এবং আপনি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর ভুল করেছেন, সেগুলোর কারণ ভালোভাবে বুঝে নিন। #যদি আপনার অধ্যাপক ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন যে তিনি পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশ থেকে বেশ কয়েকটি সমস্যা পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুমতি থাকলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন যাতে উত্তর আরও উন্নত করা যায়। পরীক্ষার আগে প্রতিটি সমস্যা ও তার উত্তর সামান্য সময় নিয়ে পর্যালোচনা করুন। ==বিবিধ বিষয়াবলী== এই মুহূর্তে কিছু নেই। {{BookCat}} a2bqhmlbpzwl7zm9os9dwgtbxe4i06w প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/পর্যালোচনা: ফাউন্ডেশন টপিকস গ্রুপ 0 25218 85167 84885 2025-06-22T05:13:08Z RDasgupta2020 8748 /* কৌশল আলোচনা */ 85167 wikitext text/x-wiki [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] সংগ্রহ/পাঠ্যপুস্তকের একাধিক অধ্যায়গুলি পর্যালোচনা করুন। ==কৌশল আলোচনা== প্রোগ্রামিং অধ্যয়নের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একটি কৌশল অনুসরন করা উচিত। আপনার পঠনপাঠনের পদ্ধতি ও বিষয় আয়ত্তকরনের কৌশল বিভিন্ন প্রশিক্ষকের ক্ষেত্রে আলাধা আলাধা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক পর্যালোচনার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলোর উপর ব্যবহার করেন: #বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা #স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক প্রশ্নাবলীর অনুশীলন, যেমন সত্য/মিথ্যা নির্বাচনকারী প্রশ্ন, বহু বিকল্প নির্বাচনী প্রশ্ন অথবা সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নের চর্চা #প্রোগ্রামিং -এর মাধ্যমে সমস্যাভিত্তিক প্রশ্নের সমাধান [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] -এই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন অংশে এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য এগুলো ভালোভাবে অনুশীলনের পরামর্শ দেওয়া হয়। #যদি আপনার অধ্যাপক বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা আছে কিনা তা যাচাই করার পরীক্ষা নেন এবং যার জন্য আপনি বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলি মুখস্থ রাখার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি পাঠ্যবইয়ের অ্যাপেনডিক্স অংশে থাকা <code>Study Habits that Build the Brain</code> শীর্ষক অংশের <code>"Using the Flash Card Activity"</code> অংশটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। সংজ্ঞাগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। #বইয়ের অনুশীলনী অংশের যেকোনো অনুশীলন দ্রুত পর্যালোচনা করুন। পাশাপাশি আপনি যেসব মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোর উত্তর পর্যালোচনা করুন এবং আপনি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর ভুল করেছেন, সেগুলোর কারণ ভালোভাবে বুঝে নিন। #যদি আপনার অধ্যাপক ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন যে তিনি পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশ থেকে বেশ কয়েকটি সমস্যা পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুমতি থাকলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন যাতে উত্তর আরও উন্নত করা যায়। পরীক্ষার আগে প্রতিটি সমস্যা ও তার উত্তর সামান্য সময় নিয়ে পর্যালোচনা করুন। ==বিবিধ বিষয়াবলী== লিঙ্ক:[https://legacy.cnx.org/content/m22418/latest/Manipulation_Data_Part_1.pdf ডেটা ম্যানিপুলেশন পার্ট ১] {{BookCat}} q61nv50e8jmvtuhqyjonn60z4oxrxdq মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/সংবিধানের প্রাথমিক বছর 0 25247 85128 79827 2025-06-21T15:19:59Z SMontaha32 11242 85128 wikitext text/x-wiki == ১৭৯০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় প্রাথমিক অভিবাসন == নিম্নের সারণিটি ১৭৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আগত নতুন অভিবাসীদের আদি দেশের একটি আনুমানিক চিত্র উপস্থাপন করে।<ref>Meyerink, Kory L., and Loretto Dennis Szucs. ''The Source: A Guidebook of American Genealogy.''</ref> * চিহ্নিত অঞ্চলগুলো গ্রেট ব্রিটেনের অংশ ছিল। ১৭৯০ সালের জনগণনা অনুযায়ী আয়ারল্যান্ড থেকে আগতদের বেশিরভাগই সম্ভবত আইরিশ প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ফরাসি হুগেনট ছিলেন। ১৭৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক জনসংখ্যা সম্ভবত ৫% এরও কম ছিল।<ref>Meyerink and Szucs. 1790 সালের ৩.৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন উৎস থেকে অনুমান করা হয়েছে, যা ১৭৯০ সালের জনগণনার পদবিগুলোর নমুনা নিয়ে তাদের উৎসদেশ নির্ধারণের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই পদ্ধতিটি অনিশ্চিত, বিশেষ করে যখন স্কট-আইরিশ, আইরিশ এবং ইংরেজ পদবিগুলোর মধ্যে মিল থাকে। এই সংখ্যাগুলো নির্ধারক নয় এবং কেবলমাত্র "শিক্ষিত অনুমান"।</ref> <center> {| align="center" class=wikitable |- ! style="background:#efefef;" | জনগোষ্ঠী !! style="background:#efefef;" | ১৭৯০ সালের আগে আগত অভিবাসী সংখ্যা ||১৭৯০ সালের জনসংখ্যা |- | আফ্রিকা | ৩৬০,০০০ (অধিকাংশই দাস হিসেবে)||৮০০,০০০ |- | ইংল্যান্ড* | ২৩০,০০০ ||১,৯০০,০০০ |- | আলস্টারের স্কট-আইরিশ* | ১,৩৫,০০০ || ৩০০,০০০ |- | জার্মানি | ১,০৩,০০০ || ২৭০,০০০ |- | স্কটল্যান্ড* | ৪৮,৫০০ || ১,৫০,০০০ |- | আয়ারল্যান্ড* | ৮,০০০ || (স্কট-আইরিশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত) |- | নেদারল্যান্ডস | ৬,০০০ || ১,০০,০০০ |- | ওয়েলস* | ৪,০০০ || ১০,০০০ |- | ফ্রান্স | ৩,০০০ || ৫০,০০০ |- | ইহুদি | ১,০০০ || ২,০০০ |- | সুইডেন | ৫০০ || ২,০০০ |- | অন্যান্য | --- || ২,০০,০০০ |- |} </center>জেমস ওয়েবসহ অনেকেই যুক্তি দিয়েছেন যে প্রাথমিক আমেরিকান ইতিহাসে স্কট-আইরিশদের ভূমিকা যথাযথভাবে স্বীকৃতি পায়নি। আমেরিকান বিপ্লবী বাহিনীর ৪০% ছিল এই জনগোষ্ঠীর সদস্য; বর্তমানে তাদের সংস্কৃতি আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল, মধ্য-পশ্চিমাঞ্চল ও অ্যাপালাচিয়ান অঞ্চলে প্রভাবশালী। == কনফেডারেশনের অধীনে ব্যর্থতা == সংবিধানের মূল খসড়া ছিল কনফেডারেশনের প্রবন্ধ, যা একটি একীভূত সরকারের পরিবর্তে সার্বভৌম রাজ্যগুলোর একটি সংবদ্ধ সংঘ গঠনের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছিল। তবে, বিপ্লবের সময় রাজ্যগুলোর একত্রিত হওয়া এই আইনের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করে। এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে একই পণ্যের মূল্য এবং পরিশোধ পদ্ধতিতে ছিল ব্যাপক বৈচিত্র্য। পরিশোধ কি পণ্যের বিনিময়ে, যেমন গ্রামীণ অঞ্চলে চালু ছিল; তামাকের মাধ্যমে, যেমন ভার্জিনিয়ায়; স্বর্ণ ও রূপার আকরিক দিয়ে; না কি স্প্যানিশ ডলার বা ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে? যদি শেষোক্তটি হয়, তবে কীভাবে প্রমাণ করা যেত যে রাজ্যগুলো স্পেনীয় বা ব্রিটিশ ছিল না? আমেরিকান বিপ্লবের পরে কঠিন মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেয়। বিপ্লবের ব্যয় চলেছিল কনটিনেন্টাল কাগজমুদ্রা দ্বারা: মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই নোটগুলোর মূল্য ছিল এত কম যে একটা কনটিনেন্টালও মূল্যহীন হয়ে গিয়েছিল। কয়েকটি রাজ্য নিজেদের কাগজমুদ্রাও ছাপিয়েছিল, কিন্তু সেগুলোও কনটিনেন্টাল ডলারের মতোই ব্যাপক অবমূল্যায়নের শিকার হয়। ধারা বারো ঘোষণা করে যে যুদ্ধের ঋণ কেন্দ্রীয় সরকার পরিশোধ করবে, কিন্তু ধারা আট বলে এই অর্থ রাজ্য আইনসভাগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব ছাড়া অর্থায়নের সমতা কীভাবে নিশ্চিত করা যেত? বাস্তবে, ব্যক্তিগত বা জাতীয়, কোনো ঋণই এখনো পরিশোধ করা হয়নি, কারণ কনফেডারেশন সরকারের কর আরোপের ক্ষমতা ছিল না। সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও রাজ্যগুলো বাণিজ্য ঘাটতিতে ভুগছিল, কারণ তারা অনেক পণ্য ব্রিটেন থেকে আমদানি করছিল। কনফেডারেশন সরকারের কোনো ক্ষমতা ছিল না আমেরিকার নৌ-চলাচলের অধিকার রক্ষা করার, প্যারিস চুক্তি লঙ্ঘন করে ব্রিটিশদের দখলে থাকা দুর্গগুলো থেকে তাদের উচ্ছেদ করার, কিংবা দুই রাজ্যের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করার। এই দেউলিয়া কনফেডারেশন সরকার বিপ্লবী যুদ্ধের সৈন্যদের যথাযথভাবে পারিশ্রমিক দিতে পারছিল না। এর ফলে নিউবার্গ ষড়যন্ত্র নামে একটি ষড়যন্ত্র হয়, যেখানে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটনকে সামরিক জান্তার প্রধান হিসেবে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে, স্বৈরশাসক হওয়ার আগ্রহ না থাকায়, ওয়াশিংটন নিজেই এই ষড়যন্ত্র দমন করেন, সৈন্যদের বেতন ও পেনশনের ব্যাপারে আলোচনা করেন<ref>https://npg.si.edu/blog/newburgh-conspiracy</ref>, এবং তার কমিশন ত্যাগ করে মাউন্ট ভার্ননে ফিরে গিয়ে বেসামরিক জীবনে ফিরে আসেন। শাইসের বিদ্রোহ একটি ঘটনা যা স্পষ্ট করে তোলে যে কনফেডারেশনের প্রবন্ধ-এ সংস্কার প্রয়োজন ছিল। হাজার হাজার অসন্তুষ্ট ও দরিদ্র কৃষক-সৈন্য, ড্যানিয়েল শেইস-এর নেতৃত্বে, ম্যাসাচুসেটস সরকারের বিরুদ্ধে এক (শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ) সামরিক বিদ্রোহ শুরু করে এবং আদালতগুলো বন্ধ করে দেয়। == সাংবিধানিক কনভেনশন == [[File:Scene at the Signing of the Constitution of the United States.jpg|thumb|মার্কিন সংবিধানে স্বাক্ষরের দৃশ্য]] ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ায় একটি কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল Articles of Confederation সংস্কার করা। তবে অনেক প্রতিনিধি এই কনভেনশনকে একটি নতুন সংবিধান খসড়া তৈরির সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। রোড আইল্যান্ড ব্যতীত সব রাজ্য প্রতিনিধি পাঠায়, যদিও সবাই উপস্থিত ছিলেন না। কনভেনশনটির সভাপতিত্ব করেন জর্জ ওয়াশিংটন। অন্যান্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন ভার্জিনিয়ার জেমস ম্যাডিসন ও এডমন্ড র‍্যান্ডলফ, পেনসিলভানিয়ার বেন ফ্রাঙ্কলিন, গুভেনার মরিস ও রবার্ট মরিস, এবং নিউ ইয়র্কের অ্যালেকজান্ডার হ্যামিল্টন। কনভেনশনে প্রতিনিধিদের মধ্যে নানা বিভাজন ছিল—যেমন মুক্ত ও দাসপ্রথা-পালনকারী রাজ্যগুলোর মধ্যে, এবং বৃহৎ ও সীমিত সরকারের সমর্থকদের মধ্যে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন ছিল কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বড় রাজ্য ও ছোট রাজ্যগুলোর মধ্যে। Articles অনুসারে, প্রত্যেক রাজ্যের কংগ্রেসে এক ভোট ছিল। জনবহুল রাজ্যগুলো চেয়েছিল জনসংখ্যাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব। ভার্জিনিয়ার জেমস ম্যাডিসন "ভর্জিনিয়া পরিকল্পনা" প্রণয়ন করেন, যাতে এই ধরনের প্রতিনিধিত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয় এবং কংগ্রেসকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ছোট রাজ্যগুলো সমান প্রতিনিধিত্বের পক্ষ নেয়, যার পক্ষে উইলিয়াম প্যাটারসন "নিউ জার্সি পরিকল্পনা" প্রস্তাব করেন। এই পরিকল্পনাও কংগ্রেসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল, তবে ভর্জিনিয়া পরিকল্পনার মতো নয়। এই বিরোধ কনভেনশন ভেঙে যাওয়ার হুমকি সৃষ্টি করে, কিন্তু কানেকটিকাটের রজার শেরম্যান একটি সমঝোতা প্রস্তাব করেন—"গ্রেট কম্প্রোমাইস" বা "কানেকটিকাট কম্প্রোমাইস"—যেখানে কংগ্রেসের একটি কক্ষ জনসংখ্যাভিত্তিক এবং অন্যটি সমান প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে গঠিত হবে। অবশেষে এই সমঝোতা গৃহীত হয় এবং কনভেনশন টিকে যায়। প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হওয়ার পর, অন্যান্য বিষয়ে সমঝোতা সহজ হয়ে ওঠে। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল: রাজ্যের জনসংখ্যা গণনার সময় দাসদের কীভাবে গণনা করা হবে। এটি থ্রি-ফিফথস কম্প্রোমাইস দ্বারা সমাধান করা হয়, যেখানে প্রতি পাঁচজন দাসকে তিনজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হবে। আরেকটি সমঝোতায়, কংগ্রেসকে দাস বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়, কিন্তু তা কার্যকর হবে ১৮০৮ সালের পর। যদিও বেশিরভাগ প্রতিনিধি একটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী বিভাগের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক ছিল। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় যে প্রেসিডেন্ট ইলেক্টোরাল কলেজ দ্বারা নির্বাচিত হবেন। === ফেডারেলিস্ট পেপারস ও অনুমোদন === [[File:Alexander Hamilton portrait by John Trumbull 1806.jpg|thumb|upright|অ্যালেকজান্ডার হ্যামিল্টন ফেডারেলিস্ট পেপারস-এর অনেকগুলো লিখেছিলেন]] সংবিধান কার্যকর হওয়ার জন্য নয়টি রাজ্যের অনুমোদন (ratification) প্রয়োজন ছিল। এই অনুমোদনের জন্য লড়াই কঠিন ছিল, তবে অবশেষে ১৭৮৮ সালে সংবিধান কার্যকর হয়। ১৭৮৮ ও ১৭৮৯ সালে, নিউ ইয়র্ক রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদপত্রে মোট ৮৫টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল নিউ ইয়র্ক ও ভার্জিনিয়ার জনগণকে সংবিধান অনুমোদনের জন্য উৎসাহিত করা। সাধারণভাবে এই প্রবন্ধগুলোর লেখক হিসেবে অ্যালেকজান্ডার হ্যামিল্টন, জেমস ম্যাডিসন এবং জন জে-কে ধরা হয়। যেহেতু তারা সবাই ফেডারেলিস্ট ছিলেন, তাই এই প্রবন্ধগুলো "The Federalist Papers" নামে পরিচিত হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত প্রবন্ধগুলোর একটি হল Federalist No. 10, যা ম্যাডিসন লেখেন, এবং এতে দেখানো হয় সংবিধানে থাকা চেক ও ব্যালান্সের ব্যবস্থা কীভাবে "factions" বা বিভাজনমূলক গোষ্ঠীগুলোর হাত থেকে সরকারকে রক্ষা করে। অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টরা সংবিধান অনুমোদনে সমর্থন করেননি। প্যাট্রিক হেনরি, জর্জ ম্যাসন, ও রিচার্ড হেনরি লি ছিলেন বিশিষ্ট অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট। তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল সংবিধানে Bill of Rights নেই। তারা মনে করতেন সংবিধান কেন্দ্রীয় সরকারকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়েছে এবং রাজ্যগুলোর হাতে খুব কম ক্ষমতা রেখেছে। আরও একটি অভিযোগ ছিল যে সিনেটর ও প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন না এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর নির্বাচন বছরে একবার নয়, দুই বছরে একবার হয়। ডেলাওয়্যার প্রথম রাজ্য হিসেবে ৭ ডিসেম্বর, ১৭৮৭-এ সর্বসম্মতভাবে (৩০-০) সংবিধান অনুমোদন করে। পেনসিলভানিয়া ১২ ডিসেম্বর এবং নিউ জার্সি ১৮ ডিসেম্বর অনুমোদন করে, উভয় ক্ষেত্রেই সর্বসম্মত ভোটে। ১৭৮৮ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে জর্জিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, মেরিল্যান্ড, সাউথ ক্যারোলাইনা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ভার্জিনিয়া এবং নিউ ইয়র্ক সংবিধান অনুমোদন করে এবং এটি কার্যকর হয়। ২ আগস্ট, ১৭৮৮-এ নর্থ ক্যারোলাইনা সংশোধনী ছাড়া সংবিধান অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়, কিন্তু এক বছর পরে অনুমোদন করে। অনেক রাজ্য সংবিধান অনুমোদনের সময় পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দেয়, যেমন একটি Bill of Rights-এর দাবি। এর ফলেই ফেডারেল সরকারের প্রথম দিকে Bill of Rights তৈরি হয়। === বিল অব রাইটস === জর্জ ওয়াশিংটন ৩০ এপ্রিল, ১৭৮৯ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। তবে তখনো নর্থ ক্যারোলাইনা, রোড আইল্যান্ড ও ভার্মন্ট সংবিধান অনুমোদন করেনি। যদিও সরকার গঠিত হয়, তখনো নাগরিকদের ধর্ম, বাকস্বাধীনতা বা নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৭৮৯-এ কংগ্রেস ১২টি সংশোধনী অনুমোদনের জন্য রাজ্যগুলোর কাছে পাঠায়। এর মধ্যে ১০টি সংশোধনী বিল অব রাইটস হয়ে ওঠে। নর্থ ক্যারোলাইনা নভেম্বর ১৭৮৯-এ এবং রোড আইল্যান্ড মে ১৭৯০-এ সংবিধান অনুমোদন করে। ভার্মন্ট ১০ জানুয়ারি, ১৭৯১-এ সংবিধান অনুমোদন করে, এবং ১৪তম রাজ্য হিসেবে ইউনিয়নে যোগ দেয়। বিল অব রাইটস কার্যকর হয় ১৫ ডিসেম্বর, ১৭৯১। নিচে সেদিন গৃহীত ১০টি সংশোধনীর সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হলো: ধর্ম, বাকস্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যম, সভা এবং অভিযোগ জানানোর অধিকার নিশ্চিত করা। সুসজ্জিত মিলিশিয়ার অংশ হিসেবে অস্ত্র রাখার ও বহনের অধিকার। শান্তিকালে সৈন্যদের জোরপূর্বক গৃহে রাখা নিষিদ্ধ। অন্যায্য অনুসন্ধান ও জব্দ নিষিদ্ধ; অনুসন্ধানের জন্য ওয়ারেন্ট প্রয়োজন। অভিযুক্ত হওয়া, যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়া, আত্ম-অভিযোগ, দ্বৈত বিচারের নিষেধাজ্ঞা এবং মালিকানার অধিকার রক্ষা। দ্রুত, প্রকাশ্য ও ন্যায়সঙ্গত বিচার, অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হওয়া, সাক্ষীর মুখোমুখি হওয়া, সাক্ষী তলব ও আইনজীবী পাওয়ার অধিকার। দেওয়ানি মামলায় জুরি ট্রায়ালের অধিকার। নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি এবং অতিরিক্ত জরিমানা বা জামিন নিষিদ্ধ। সংবিধানে উল্লেখ না থাকা অধিকারও জনগণের রয়েছে। সংবিধানে নির্ধারিত ক্ষমতা ছাড়া ফেডারেল সরকার অতিরিক্ত ক্ষমতা নিতে পারবে না। == ওয়াশিংটন প্রশাসন == [[File:Gilbert Stuart Williamstown Portrait of George Washington.jpg|thumb|upright|জর্জ ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি]] আমেরিকান বিপ্লবযুদ্ধের সময় মহাদেশীয় সেনাবাহিনীর সফল প্রধান কমান্ডার হওয়ার পর, জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। <ref name="siwashington">https://www.si.edu/spotlight/highlights-george-washington-1732-1799</ref> ১৭৮৮ সালে, ইলেক্টররা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াশিংটনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন।<ref name="siwashington"/> তিনি সরকারের ভিত্তি স্থাপন করার কিছু সময় পরই তার নিকটবর্তী উপদেষ্টাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, বিশেষ করে পররাষ্ট্র সচিব থমাস জেফারসন এবং অর্থ সচিব আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের মধ্যে। এই ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়: ফেডারেলিস্টরা, যারা পূর্ববর্তী অনুমোদনপন্থী দলের নাম গ্রহণ করে এবং ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টি, যা জেফারসোনীয় দল নামেও পরিচিত বা অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট হিসেবেও পরিচিত ছিল। ওয়াশিংটনের দুই মেয়াদের প্রশাসন অনেক নীতিমালা ও প্রথা স্থাপন করে, যেগুলি আজও প্রচলিত। তাকে ১৭৯২ সালেও সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় নির্বাচিত করা হয়। তবে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেন, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য ভবিষ্যৎ প্রজাতন্ত্রের জন্য অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।<ref name="siwashington"/> ওয়াশিংটন উপাধি পরিহার করেছিলেন। তিনি "ইউর এক্সেলেন্সি" বা "ইউর ম্যাজেস্টি" নামে পরিচিত হতে চাননি। তিনি "মিস্টার প্রেসিডেন্ট" নামে পরিচিত হতে চান এবং "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি" হিসাবে উল্লেখ করতে বলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় তার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় জন্য তাকে প্রায়ই "জাতির জনক" বলা হয়। পণ্ডিতরা তাকে আব্রাহাম লিংকনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতিদের একজন হিসেবে গণ্য করেন। ===হ্যামিল্টনের আর্থিক পরিকল্পনা=== [[File:FirstBankofUS00 crop.jpg|thumb|ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ব্যাংক, যা আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়।]] ফেডারেলিস্ট এবং অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টদের মধ্যে প্রধান বিরোধের একটি বিষয় ছিল বিপ্লবী যুদ্ধের ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি। ১৭৯০ সালে, আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন তার '''প্রথম পাবলিক ক্রেডিট প্রতিবেদন''' লেখেন এই উদ্দেশ্যে। এতে তিনি যুক্তি দেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোর ঋণ নিজের ওপর নিয়ে নিয়ে একে একটি জাতীয় ঋণে রূপান্তর করবে। কিন্তু জেফারসন এবং অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টরা এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেন। ১৭৯০ সালের আপসচুক্তিতে, জাতীয় রাজধানীকে কলম্বিয়া জেলায় স্থানান্তরের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য ঋণ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়। '''দ্বিতীয় পাবলিক ক্রেডিট প্রতিবেদন'''-এ হ্যামিল্টন যুক্তি দেন যে, একটি জাতীয় ব্যাংক অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির জন্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয়। জেফারসন দাবি করেন যে এই জাতীয় ব্যাংক গঠন সংবিধানের ১০তম সংশোধনী লঙ্ঘন করে এবং তাই এটি অসাংবিধানিক। হ্যামিল্টন পাল্টা যুক্তি দেন যে, সংবিধান ফেডারেল সরকারকে "প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত" কাজ করার জন্য "অন্তর্নিহিত ক্ষমতা" দিয়েছে। ১৭৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক গঠনের আইন পাশ হয় এবং এটি ২০ বছরের চার্টার পায়। জেফারসন জাতীয় ব্যাংকের ধারণার সঙ্গে একমত ছিলেন না। তার দল এমন একটি আমেরিকা কল্পনা করত যা প্রাচীন এথেন্স বা প্রাক-সাম্রাজ্যিক রোমের মতো, যেখানে স্বাধীন কৃষকগৃহস্থ পরিবারগুলি তাদের নিজস্ব স্বার্থ অনুসরণ করে এবং স্বাধীনতা লালন করে। জেফারসন চেয়েছিলেন আমেরিকা কৃষিভিত্তিক আত্মনির্ভরশীল জনগণের দেশ হোক এবং কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য বিষয়গুলিতে হস্তক্ষেপ না করুক। (তবে কিছু প্রমাণ রয়েছে যে জেফারসন রাজ্য ঋণ পরিশোধে হ্যামিল্টনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছিলেন। কারণ তিনি হ্যামিল্টনের সঙ্গে আপস করে রাজধানী দক্ষিণে পটোম্যাক নদীর তীরে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, যেখানে পরবর্তীতে ওয়াশিংটন, ডি.সি. গড়ে ওঠে।) রাষ্ট্রপতি ওয়াশিংটন এবং কংগ্রেস হ্যামিল্টনের ব্যাংক পরিকল্পনার সঙ্গে একমত হন। জেফারসনের পরিকল্পনা বাতিল হয় এবং তিনি শেষমেশ পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ===হুইস্কি বিদ্রোহ (১৭৯৪)=== [[File:WhiskeyRebellion.jpg|thumb|হুইস্কি বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওয়াশিংটন।]] তার প্রেসিডেন্সির সময় ওয়াশিংটন একটি বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন, সেটি ছিল ১৭৯৪ সালের ''হুইস্কি বিদ্রোহ''। নতুন প্রজাতন্ত্রের অর্থের প্রয়োজন ছিল। এটি আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনকে কংগ্রেসে হুইস্কির বিক্রির উপর আবগারি কর চাপানোর প্রস্তাব দিতে উৎসাহিত করে। পেনসিলভানিয়ার গ্রামীণ কৃষকরা, যারা কখনো কেন্দ্রীয় আমেরিকান কর্তৃত্বের সম্মুখীন হননি, এই করকে তাদের লাভে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে এবং কর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ৫০০ জনের একটি জনতা এক কর সংগ্রাহকের বাড়িতে হামলা চালায়। এর জবাবে ওয়াশিংটন ও হ্যামিল্টন ১৫,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহ দমনে এগিয়ে যান, যা আমেরিকান বিপ্লবের সময় ওয়াশিংটনের অধীনস্থ বাহিনীর চেয়েও বড় ছিল। সেনাবাহিনী পৌঁছানোর পর বিদ্রোহীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এই হুইস্কি কর ১৮০১ সালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকানরা বাতিল করে দেয়। ===বিদেশনীতি=== ====ফরাসি বিপ্লব==== ফ্রান্সে ১৭৮৯ সালে বিপ্লব শুরু হয়, কয়েক মাস পরেই মার্কিন সংবিধান কার্যকর হয়। শুরুতে, ফ্রান্স রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে নিজেকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করলে, অনেক আমেরিকান এই বিপ্লবকে সমর্থন করেন। তারা বিশ্বাস করতেন তাদের ইংল্যান্ড-বিরোধী বিদ্রোহ ফ্রান্সকে প্রজাতন্ত্র গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু যখন "টেররের রাজত্ব" শুরু হয় এবং হাজার হাজার ফরাসি অভিজাতকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়, তখন অনেক আমেরিকান এই বিপ্লবের উগ্রতায় হতবাক হয়ে পড়েন। ১৭৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, ফ্রান্স প্রতিবেশী রাজতন্ত্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলে, এই বিপ্লব আমেরিকান জনমতকে বিভক্ত করে তোলে। ফেডারেলিস্টরা ইংল্যান্ডকে, ফ্রান্সের শত্রু হিসেবে নয় বরং স্থিতিশীল সরকারের রূপ হিসেবে দেখতেন; অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকানরা ফরাসি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেন এবং বিশ্বাস করেন যে টেররের যুগ একটি সাময়িক উগ্রতা মাত্র। রাষ্ট্রপতি ওয়াশিংটনের নীতি ছিল নিরপেক্ষতা। তিনি জানতেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স বা স্পেন—কোনো দেশই সুযোগ পেলে আমেরিকার সম্পদ বা ভূখণ্ড দখল করতে দ্বিধা করবে না। ১৭৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ছিল নবীন ও দুর্বল। ওয়াশিংটন আশা করতেন, যুক্তরাষ্ট্র যতদিন না শক্তিশালী হয়, ততদিন যেন ইউরোপীয় সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে। তবুও, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স উভয়ই নিজেদের স্বার্থে আমেরিকান সম্পদ ব্যবহার করার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রেও হ্যামিল্টন ও জেফারসনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। হ্যামিল্টন যুক্তি দেন যে ১৭৭৮ সালের ফ্রান্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি আর বৈধ নয়, কারণ পূর্ববর্তী ফরাসি সরকার আর অস্তিত্বে নেই। জেফারসন এতে একমত ছিলেন না। কিন্তু ওয়াশিংটন হ্যামিল্টনের পক্ষে অবস্থান নেন এবং ১৭৯৩ সালে একটি আনুষ্ঠানিক '''নিরপেক্ষতার ঘোষণাপত্র''' প্রকাশ করেন। ১৭৯৬ সালের বিদায়ী ভাষণেও তিনি নিরপেক্ষতার পক্ষে মত দেন এবং গোষ্ঠীবাদ বিরোধী বক্তব্য রাখেন। ঐ বছরই ফরাসি মন্ত্রী সিটিজেন এডমন্ড চার্লস জেনেট যুক্তরাষ্ট্রে আগমন করেন। তিনি শীঘ্রই আমেরিকান জাহাজগুলোর ক্যাপ্টেনদের প্রাইভেটিয়ার হিসেবে ফরাসি পক্ষে কাজ করতে কমিশন দিতে শুরু করেন। আমেরিকান নিরপেক্ষতার এই অগ্রাহ্যতা ওয়াশিংটনকে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং তিনি জেনেটের প্রত্যাহার দাবি করেন, যা পরে কার্যকর হয়। ====ইংল্যান্ড ও স্পেনের সঙ্গে আলোচনাসমূহ==== এদিকে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি মার্কিন বণিজ্যিক জাহাজের নাবিকদের ধরে নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের নৌবাহিনীতে নিয়োগ দিতে শুরু করে। অনেক ব্রিটিশ নাবিক ভালো বেতন ও উন্নত জীবনের আশায় মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু ইংল্যান্ড তাদের দরকার ছিল। এই মার্কিন পতাকার লঙ্ঘন এবং ১৭৮৩ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে ইংল্যান্ডের নর্থওয়েস্ট টেরিটরি থেকে সেনা প্রত্যাহার না করায় মার্কিন জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন জেকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি আলোচনার জন্য পাঠান। কিন্তু জে-এর হাতে দর কষাকষির মতো তেমন কিছু ছিল না: চূড়ান্ত চুক্তিতে সীমান্ত দুর্গগুলো থেকে ইংরেজ সেনা প্রত্যাহারের শর্ত থাকলেও জোরপূর্বক নাবিক নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। <b>জে চুক্তি</b> মার্কিন জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এটি অল্প ব্যবধানে সিনেটে অনুমোদন পায়। এই বিতর্ক চূড়ান্তভাবে ফেডারেলিস্ট ও রিপাবলিকান গোষ্ঠীদ্বয়কে পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করে তোলে—ফেডারেলিস্টরা চুক্তির পক্ষে এবং রিপাবলিকানরা একে ফ্রান্সবিরোধী ও ইংল্যান্ডপন্থী হিসেবে দেখেন। এদিকে স্পেন এই চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, তারা আশঙ্কা করছিল যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের মধ্যে জোট গঠিত হতে পারে। চুক্তির শর্ত নিশ্চিত না হয়েও, স্পেন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ছাড় দেয় যাতে ভবিষ্যতে নিউ অরলিন্স ও লুইজিয়ানা রক্ষা করা যায়। স্পেন ফ্লোরিডার উত্তরে ও মিসিসিপি নদীর পূর্বে তাদের সব দাবী পরিত্যাগ করে (নিউ অরলিন্স ব্যতিক্রম) এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মিসিসিপি নদী ব্যবহারের ও নিউ অরলিন্সে বাণিজ্যিক গুদাম স্থাপনের অধিকার প্রদান করে। এটি পশ্চিমাঞ্চলবাসীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে এবং বাইরের বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের সুযোগ দেয়। এই <b>সান লরেঞ্জোর চুক্তি</b>, যা মার্কিন কূটনীতিক চার্লস পিঙ্কনির নামে <b>পিঙ্কনির চুক্তি</b> নামেও পরিচিত, ১৭৯৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং পরের বছর অনুমোদিত হয়। এটি জে চুক্তির চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়। জে চুক্তি যেমন স্পেনকে আতঙ্কিত করেছিল, তেমনি ফ্রান্সকেও ক্ষুব্ধ করেছিল, কারণ তারা একে ১৭৭৮ সালের ফ্রাঙ্কো-আমেরিকান পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখেছিল। ১৭৯৭ সালের মধ্যে, ফরাসি প্রাইভেটিয়াররা ক্যারিবিয়ানে মার্কিন বাণিজ্য জাহাজে আক্রমণ শুরু করে। == ১৭৯৬ সালের নির্বাচন == [[File:ElectoralCollege1796.svg|thumb|১৭৯৬ সালের ইলেক্টোরাল কলেজের ফলাফল।]] প্রেসিডেন্সি পূর্বনির্ধারিত না থাকা প্রথম নির্বাচনে চারজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন: ওয়াশিংটনের ফেডারালিস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস, ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান থমাস জেফারসন, ফেডারালিস্ট থমাস পিন্কনি এবং ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান অ্যারন বুর। (বুর আসলে আশা করছিলেন, অন্য ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী জিতলে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন।) তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আলাদা কোনো প্রার্থী ছিলেন না, কারণ মূল সংবিধান অনুসারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এটিই ছিল সেই নির্বাচন, যেখানে প্রথমবারের মতো সংবিধানের ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার পরীক্ষা হয়। প্রতিটি রাজ্যের ভোটাররা সরাসরি প্রার্থী নির্বাচন করতেন না। বরং, তাদের ভোট রাজ্যের নির্বাচকদের দুটি ভোট দেওয়ার নির্দেশনা দিত। ১৭৯৬ সালের নির্বাচনে জন অ্যাডামস প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে জয়ী হন, কিন্তু থমাস জেফারসন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট দুই ভিন্ন দলের সদস্য হয়ে পড়েন। ভাইস প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ভূমিকা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল: এর বাইরে তার করণীয় খুবই সীমিত ছিল। জেফারসন এমন এক প্রশাসনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যা শক্তিশালী সরকার ও একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমর্থন করত, এবং তার বিপরীতমুখী মতামত অ্যাডামস প্রশাসনে উপেক্ষিত ছিল। == এক্সওয়াইজেড (XYZ) কাণ্ড == [[File:USSConstellationVsInsurgente.jpg|thumb|ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোয়াসি-যুদ্ধের সময় আমেরিকান ও ফরাসি জাহাজের সংঘর্ষ।]] নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস ফ্রান্সের সঙ্গে একটি সমঝোতার উদ্দেশ্যে প্যারিসে একটি প্রতিনিধিদল পাঠান। তবে, প্রতিনিধি দলটি ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্যালেয়রান্ডের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও পায়নি। বরং, তাদের কাছে তিনজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়, যারা দাবি করে যে আলোচনার শুরুতেই আমেরিকানদের ঘুষ দিতে হবে, নইলে "ফ্রান্সের শক্তি ও হিংস্রতা"র মুখোমুখি হতে হবে। প্রতিনিধি দল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ("উত্তর হচ্ছে না; না; এক পয়সাও না,"—এই প্রতিক্রিয়া জনমনে জনপ্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে: "প্রতিরক্ষার জন্য কোটি কোটি ডলার, কিন্তু খেসারতের জন্য এক পয়সাও নয়।") অ্যাডামস এই পত্রালাপ জনসমক্ষে প্রকাশ করেন, এবং ফরাসি কর্মকর্তাদের নাম X, Y, ও Z দ্বারা প্রতিস্থাপন করেন। এর ফলে আমেরিকান জনমত ব্যাপকভাবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে চলে যায়। ফেডারালিস্টদের নিয়ন্ত্রণাধীন কংগ্রেস একটি সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে, বেশ কিছু উৎকৃষ্ট যুদ্ধজাহাজ তৈরি করা হয় এবং জর্জ ওয়াশিংটনকে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। (ওয়াশিংটন সম্মত হন এই শর্তে যে তিনি কেবল তখনই নেতৃত্ব দেবেন, যদি সেনাবাহিনী বাস্তবে মাঠে নামে। তবে সেই সেনাবাহিনী কখনও গঠিত হয়নি।) ফলে একটি কোয়াসি-যুদ্ধ শুরু হয়, যা ছিল ফ্রান্সের সঙ্গে একটি ঘোষণা ছাড়াই শুরু হওয়া নৌযুদ্ধ। এটি ১৭৯৮ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পৃথক পৃথক জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হয় এবং ১৭৭৮ সালের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিও বাতিল করে। অ্যাডামস এটিকে তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করেন। == এলিয়েন ও সেডিশন আইনসমূহ == অ্যাডামসের অধীনে, ফেডারালিস্ট-শাসিত কংগ্রেস বিপজ্জনক "এলিয়েনদের" মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি আইন পাস করায়। বাস্তবে, এই চারটি আইন ব্যবহার করা হয়েছিল দেশীয় রাজনৈতিক বিরোধীদের চুপ করানোর জন্য। # '''এলিয়েন আইন''' রাষ্ট্রপতিকে অধিকার দেয় যে, তিনি যেকোন এলিয়েনকে যার জন্য "বিপদজনক" বলে বিবেচিত হবে, তাকে বিতাড়িত (ডিপোর্ট) করতে পারবেন। # '''এলিয়েন এনিমিস আইন''' রাষ্ট্রপতিকে অনুমতি দেয় যে, যেকোন এলিয়েনকে বিতাড়িত বা বন্দি করতে পারবেন যিনি এমন কোনো দেশের নাগরিক, যার সাথে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত যুদ্ধ করছে। # '''সেডিশন আইন''' সরকারী কর্মকর্তাদের সমালোচনা করা এবং সরকারের বা তার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে "মিথ্যা, কলঙ্কজনক ও অপবাদমূলক লেখা" প্রকাশ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। # '''ন্যাচারালাইজেশন আইন''' এলিয়েনদের নাগরিক হওয়ার আবাসিক সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়। যদিও এটি প্রকাশ্যেই একটি নিরাপত্তা আইন হিসেবে গণ্য ছিল, এটি শাসক ফেডারালিস্ট দলকে শক্তিশালী হাতিয়ার প্রদান করেছিল বাড়তে থাকা ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টির বিরোধ নিবারণে। নাগরিক হওয়ার জন্য আবাসিক সময় বাড়িয়ে তারা নতুন ভোটার সংখ্যা কমিয়েছিল, যারা সংখ্যালঘু পার্টির পক্ষে ভোট দিতে পারত। তবে, রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে এই আইনগুলো খুব কমই প্রয়োগ করা হয়েছিল, কারণ এর ফলে সৃষ্ট সংঘর্ষের সম্ভাবনা ছিল। ==শিক্ষা== সমৃদ্ধ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা উভয়েই শিশু স্কুল নামে পরিচিত একটি ধরনের প্রাথমিক স্কুলে যেত। তবে গ্রামার স্কুলে যেত শুধুমাত্র ছেলেরা। উচ্চবিত্তের মেয়েদের এবং কখনো কখনো ছেলেদের বাড়ির গৃহশিক্ষকরা পড়াতেন। মধ্যবিত্তের মেয়েদের মা নিজেই পড়াতেন। তদুপরি, ১৭শ শতাব্দীতে অনেক শহরে মেয়েদের জন্য বোর্ডিং স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বোর্ডিং স্কুলে মেয়েদের লেখাপড়া, সঙ্গীত এবং সূচিকর্মের মতো বিষয় শেখানো হত। গ্রামার স্কুলের পরিবেশ কঠোর ছিল। ছেলেরা সকাল ৬ বা ৭টায় কাজ শুরু করত এবং বিকেল ৫ বা ৫.৩০টা পর্যন্ত কাজ করত, মধ্যাহ্নভোজের বিরতি সহ। শারীরিক শাস্তি ছিল নিয়মিত। সাধারণত শিক্ষক দুষ্টু ছেলেদের খালি পেছনে বীচের ডাল দিয়ে মারতেন। শ্রেণীর অন্য ছেলেরা দুষ্টু ছেলেকে ধরে রাখত। ১৭শ এবং ১৮শ শতাব্দীর প্রথম দিকে নারীদের শিক্ষালাভ উৎসাহিত করা হত না। কিছু মানুষ বিশ্বাস করত, নারীরা যদি ভালভাবে শিক্ষিত হয় তাহলে তাদের বিয়ের সম্ভাবনা নষ্ট হবে এবং মনের জন্য ক্ষতিকর হবে। প্রোটেস্ট্যান্টরা বিশ্বাস করত, পুরুষদের মতো নারীদেরও বাইবেল পড়ার সুযোগ থাকা উচিত। শুধুমাত্র ধনী বা অভিজাত পরিবারের মেয়েরাই শিক্ষিত হতে পারত। ১৭শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তরুণ মেয়েদের ভাইদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো। কখনো কখনো টাকা থাকলে একজন বন্ধুর বাড়িতে রেখে সেখানে বিভিন্ন বিষয় শেখানো হতো। সেখানে পড়াশোনা, বাড়ি চালানো, এবং চিকিৎসা প্রয়োগ শেখানো হতো। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের পর কয়েকটি রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান হয়েছিল, যেখানে শিক্ষার বিষয়ে তথ্য ছিল। কিন্তু থমাস জেফারসন মনে করতেন শিক্ষাকে সরকারে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষায় ধর্মীয় পক্ষপাত থাকা উচিত নয় এবং সকল মানুষের জন্য শিক্ষাকে বিনামূল্যে করা উচিত, সামাজিক অবস্থার পার্থক্য না করে। তবে গণশিক্ষার ধারণা সহজে গ্রহণ করা কঠিন ছিল, কারণ অভিবাসীদের ব্যাপক সংখ্যা, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতামত এবং আর্থিক কষ্টের স্তরগুলো ছিল অনেক ভিন্ন।<ref>A People and a Nation, Eighth Edition.</ref> ==প্রযুক্তি== ১৭৯০-এর দশকে নিউ ইংল্যান্ডের কয়েকজন বুননশিল্পী বড়, স্বয়ংক্রিয় তাঁত তৈরি করতে শুরু করল, যা জলশক্তিতে চালিত হত। সেগুলো রাখার জন্য তারা প্রথম আমেরিকান কারখানা তৈরি করল। তাঁত চালানোর জন্য ঘরের শ্রমিকদের চেয়ে কম দক্ষতা আর বেশি গতি প্রয়োজন ছিল। তাঁতগুলোতে লোক নিয়ে আসতে হত; এবং এমন শ্রমিকও দরকার ছিল যারা ''সাবোটাজ'' শব্দের অর্থ জানত না। এই কারখানাগুলো যুবতী মেয়েদের নিয়োগের চেষ্টা করত। কারখানা মালিকরা বলতেন তারা এই মেয়েদের কয়েক বছর মাত্র নিয়োগ দিতে চায়, যাতে তারা বিয়ের জন্য যৌতুক যোগাড় করতে পারে। তাদের সময় সূচী অনুযায়ী কঠোর নিয়ন্ত্রণ করা হত। কিছু মিল মালিক সন্ধ্যায় ক্লাস চালাতেন যাতে মেয়েরা লিখতে এবং গৃহপরিচালনা করতে শিখতে পারে। এই কারখানাগুলো তুলো কাপড়ের সস্তা উৎস প্রদান করত, যা জাহাজে পাঠানো হত এবং শক্তিশালী সরকারের উন্নত সড়কে চলত। প্রথমবারের মতো কিছু মানুষ দুইটি পোশাকের বেশি, কাজের পোশাক এবং রবিবারের সেরা পোশাক কেনার সামর্থ্য পেল। তারা দক্ষিণের দাসপ্রথা রাজ্য থেকে তুলো সরবরাহের একটি উপায়ও তৈরি করল। তখন তুলো বিভিন্ন ফসলের একটি ছিল। অনেক দাসকে তুলোর বীজ থেকে তুলো আলাদা করতে হত এবং নুতন ইংল্যান্ডের কাপড়ের চাহিদা পূরণে পাঠাতে হত। ১৭৯৩ সালে এলি হুইটনির তুলো জিন আবিষ্কারে এই কাজ সহজ হয়েছিল। তুলো লাভজনক ফসল হয়ে উঠল, এবং অনেক দক্ষিণের খামার এখন এটিই একমাত্র ফসল বানাতে শুরু করল। তুলো চাষ এবং তোলা ছিল দীর্ঘ ও কঠোর শ্রম, এবং দক্ষিণের প্ল্যান্টেশন দাসদের এই কাজ দেওয়া হতো। উত্তরাঞ্চলের কারখানাগুলো দাসপ্রথার অর্থনীতির একটি অংশ হয়ে উঠল। এই দাসপ্রথার উপর পুনরায় নির্ভরশীলতা দেশের অন্য অংশের প্রবণতার বিপরীত ছিল। ভারমন্ট ১৭৭৭ সালে তার রাজ্য সংবিধানে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেছিল। পেনসিলভেনিয়া ১৭৮০ সালে ধীরে ধীরে এই অবস্থা বন্ধ করার আইন করল, এবং নিউ ইয়র্ক রাজ্য ১৭৯৯ সালে। শিক্ষা, সম্পদ, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক উত্তরের রাজ্যে শিল্পায়নের সূচনা করেছিল, আর গভীর দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে প্ল্যান্টেশন, দাসপ্রথা এবং কম উন্নয়ন দেখা যেত। <gallery mode="packed" heights="150px"> File:Pawtucket slater mill.jpg|[[w:Slater Mill Historic Site|স্লেটার মিল]], ১৭৯৩ সালে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক বস্ত্র কারখানা। File:Cotton gin EWM 2007.jpg|তুলো জিনের পুনরুত্পাদন। File:Mrs. Noah Smith and Her Children MET DT214720.jpg|১৭৯৮ সালের একটি আমেরিকান পরিবারের প্রতিকৃতি। বস্ত্র শিল্পের অগ্রগতি পোশাক জগতের পরিবর্তন আনে। </gallery> == পর্যালোচনার প্রশ্নাবলী == ১. নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের সনাক্ত করুন এবং তাদের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করুন: :(ক) জেমস ম্যাডিসন :(খ) উইলিয়াম প্যাটারসন :(গ) আলেকজান্ডার হ্যামিলটন :(ঘ) প্যাট্রিক হেনরি :(ঙ) থমাস জেফারসন :(চ) জর্জ ওয়াশিংটন :(ছ) জন অ্যাডামস :(জ) এডমন্ড জেনে :(ঝ) চার্লস পিঙ্কনি ২. সংবিধানসভায় রাজ্যগুলোর জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে কি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? ৩. হ্যামিলটন কীভাবে সংবিধান অনুমোদন নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? ৪. সংবিধানের ব্যাপারে অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টদের দুইটি সমস্যা বা অভিযোগ কী ছিল? ৫. জর্জ ওয়াশিংটন তার দুই মেয়াদের সরকারি কাজকর্মে কোন কোন রীতিনীতি স্থাপন করেছিলেন? ৬. জেফারসন ও হ্যামিলটনের মধ্যে কোন কোন বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য ছিল? এটি ওয়াশিংটনের প্রশাসনের নীতিতে কী প্রভাব ফেলেছিল? ৭. হুইস্কি বিদ্রোহ কী ছিল? কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? ৮. জে চুক্তি এবং পিঙ্কনি চুক্তি কী অর্জন করেছিল? ৯. ফরাসি বিপ্লবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল? ১০. এক্সওয়াইজেড এফেয়ার কী ছিল? এর ফলাফল কী হয়েছিল? ১১. এলিয়েন, সেডিশন, এবং ন্যাচারালাইজেশন আইনগুলোর মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? কীভাবে তাদের উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়েছিল? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} {{chapnav|আমেরিকান বিপ্লব|জেফারসনিয়ান গণতন্ত্র}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} m5kvi4cl4kaw6dtpzcbyxnnt0tzyoe2 85129 85128 2025-06-21T15:22:49Z SMontaha32 11242 /* সাংবিধানিক কনভেনশন */ 85129 wikitext text/x-wiki == ১৭৯০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় প্রাথমিক অভিবাসন == নিম্নের সারণিটি ১৭৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আগত নতুন অভিবাসীদের আদি দেশের একটি আনুমানিক চিত্র উপস্থাপন করে।<ref>Meyerink, Kory L., and Loretto Dennis Szucs. ''The Source: A Guidebook of American Genealogy.''</ref> * চিহ্নিত অঞ্চলগুলো গ্রেট ব্রিটেনের অংশ ছিল। ১৭৯০ সালের জনগণনা অনুযায়ী আয়ারল্যান্ড থেকে আগতদের বেশিরভাগই সম্ভবত আইরিশ প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ফরাসি হুগেনট ছিলেন। ১৭৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক জনসংখ্যা সম্ভবত ৫% এরও কম ছিল।<ref>Meyerink and Szucs. 1790 সালের ৩.৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন উৎস থেকে অনুমান করা হয়েছে, যা ১৭৯০ সালের জনগণনার পদবিগুলোর নমুনা নিয়ে তাদের উৎসদেশ নির্ধারণের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই পদ্ধতিটি অনিশ্চিত, বিশেষ করে যখন স্কট-আইরিশ, আইরিশ এবং ইংরেজ পদবিগুলোর মধ্যে মিল থাকে। এই সংখ্যাগুলো নির্ধারক নয় এবং কেবলমাত্র "শিক্ষিত অনুমান"।</ref> <center> {| align="center" class=wikitable |- ! style="background:#efefef;" | জনগোষ্ঠী !! style="background:#efefef;" | ১৭৯০ সালের আগে আগত অভিবাসী সংখ্যা ||১৭৯০ সালের জনসংখ্যা |- | আফ্রিকা | ৩৬০,০০০ (অধিকাংশই দাস হিসেবে)||৮০০,০০০ |- | ইংল্যান্ড* | ২৩০,০০০ ||১,৯০০,০০০ |- | আলস্টারের স্কট-আইরিশ* | ১,৩৫,০০০ || ৩০০,০০০ |- | জার্মানি | ১,০৩,০০০ || ২৭০,০০০ |- | স্কটল্যান্ড* | ৪৮,৫০০ || ১,৫০,০০০ |- | আয়ারল্যান্ড* | ৮,০০০ || (স্কট-আইরিশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত) |- | নেদারল্যান্ডস | ৬,০০০ || ১,০০,০০০ |- | ওয়েলস* | ৪,০০০ || ১০,০০০ |- | ফ্রান্স | ৩,০০০ || ৫০,০০০ |- | ইহুদি | ১,০০০ || ২,০০০ |- | সুইডেন | ৫০০ || ২,০০০ |- | অন্যান্য | --- || ২,০০,০০০ |- |} </center>জেমস ওয়েবসহ অনেকেই যুক্তি দিয়েছেন যে প্রাথমিক আমেরিকান ইতিহাসে স্কট-আইরিশদের ভূমিকা যথাযথভাবে স্বীকৃতি পায়নি। আমেরিকান বিপ্লবী বাহিনীর ৪০% ছিল এই জনগোষ্ঠীর সদস্য; বর্তমানে তাদের সংস্কৃতি আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল, মধ্য-পশ্চিমাঞ্চল ও অ্যাপালাচিয়ান অঞ্চলে প্রভাবশালী। == কনফেডারেশনের অধীনে ব্যর্থতা == সংবিধানের মূল খসড়া ছিল কনফেডারেশনের প্রবন্ধ, যা একটি একীভূত সরকারের পরিবর্তে সার্বভৌম রাজ্যগুলোর একটি সংবদ্ধ সংঘ গঠনের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছিল। তবে, বিপ্লবের সময় রাজ্যগুলোর একত্রিত হওয়া এই আইনের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করে। এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে একই পণ্যের মূল্য এবং পরিশোধ পদ্ধতিতে ছিল ব্যাপক বৈচিত্র্য। পরিশোধ কি পণ্যের বিনিময়ে, যেমন গ্রামীণ অঞ্চলে চালু ছিল; তামাকের মাধ্যমে, যেমন ভার্জিনিয়ায়; স্বর্ণ ও রূপার আকরিক দিয়ে; না কি স্প্যানিশ ডলার বা ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে? যদি শেষোক্তটি হয়, তবে কীভাবে প্রমাণ করা যেত যে রাজ্যগুলো স্পেনীয় বা ব্রিটিশ ছিল না? আমেরিকান বিপ্লবের পরে কঠিন মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেয়। বিপ্লবের ব্যয় চলেছিল কনটিনেন্টাল কাগজমুদ্রা দ্বারা: মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই নোটগুলোর মূল্য ছিল এত কম যে একটা কনটিনেন্টালও মূল্যহীন হয়ে গিয়েছিল। কয়েকটি রাজ্য নিজেদের কাগজমুদ্রাও ছাপিয়েছিল, কিন্তু সেগুলোও কনটিনেন্টাল ডলারের মতোই ব্যাপক অবমূল্যায়নের শিকার হয়। ধারা বারো ঘোষণা করে যে যুদ্ধের ঋণ কেন্দ্রীয় সরকার পরিশোধ করবে, কিন্তু ধারা আট বলে এই অর্থ রাজ্য আইনসভাগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব ছাড়া অর্থায়নের সমতা কীভাবে নিশ্চিত করা যেত? বাস্তবে, ব্যক্তিগত বা জাতীয়, কোনো ঋণই এখনো পরিশোধ করা হয়নি, কারণ কনফেডারেশন সরকারের কর আরোপের ক্ষমতা ছিল না। সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও রাজ্যগুলো বাণিজ্য ঘাটতিতে ভুগছিল, কারণ তারা অনেক পণ্য ব্রিটেন থেকে আমদানি করছিল। কনফেডারেশন সরকারের কোনো ক্ষমতা ছিল না আমেরিকার নৌ-চলাচলের অধিকার রক্ষা করার, প্যারিস চুক্তি লঙ্ঘন করে ব্রিটিশদের দখলে থাকা দুর্গগুলো থেকে তাদের উচ্ছেদ করার, কিংবা দুই রাজ্যের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করার। এই দেউলিয়া কনফেডারেশন সরকার বিপ্লবী যুদ্ধের সৈন্যদের যথাযথভাবে পারিশ্রমিক দিতে পারছিল না। এর ফলে নিউবার্গ ষড়যন্ত্র নামে একটি ষড়যন্ত্র হয়, যেখানে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটনকে সামরিক জান্তার প্রধান হিসেবে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে, স্বৈরশাসক হওয়ার আগ্রহ না থাকায়, ওয়াশিংটন নিজেই এই ষড়যন্ত্র দমন করেন, সৈন্যদের বেতন ও পেনশনের ব্যাপারে আলোচনা করেন<ref>https://npg.si.edu/blog/newburgh-conspiracy</ref>, এবং তার কমিশন ত্যাগ করে মাউন্ট ভার্ননে ফিরে গিয়ে বেসামরিক জীবনে ফিরে আসেন। শাইসের বিদ্রোহ একটি ঘটনা যা স্পষ্ট করে তোলে যে কনফেডারেশনের প্রবন্ধ-এ সংস্কার প্রয়োজন ছিল। হাজার হাজার অসন্তুষ্ট ও দরিদ্র কৃষক-সৈন্য, ড্যানিয়েল শেইস-এর নেতৃত্বে, ম্যাসাচুসেটস সরকারের বিরুদ্ধে এক (শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ) সামরিক বিদ্রোহ শুরু করে এবং আদালতগুলো বন্ধ করে দেয়। == সাংবিধানিক কনভেনশন == [[File:Scene at the Signing of the Constitution of the United States.jpg|thumb|মার্কিন সংবিধানে স্বাক্ষরের দৃশ্য]] ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ায় একটি কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য ছর করা। তবে অনেক প্রতিনিধি এই কনভেনশনকে একটি নতুন সংবিধান খসড়া তৈরির সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। রোড আইল্যান্ড ব্যতীত সব রাজ্য প্রতিনিধি পাঠায়, যদিও সবাই উপস্থিত ছিলেন না। কনভেনশনটির সভাপতিত্ব করেন জর্জ ওয়াশিংটন। অন্যান্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন ভার্জিনিয়ার জেমস ম্যাডিসন ও এডমন্ড র‍্যান্ডলফ, পেনসিলভানিয়ার বেন ফ্রাঙ্কলিন, গুভেনার মরিস ও রবার্ট মরিস, এবং নিউ ইয়র্কের অ্যালেকজান্ডার হ্যামিল্টন। কনভেনশনে প্রতিনিধিদের মধ্যে নানা বিভাজন ছিল—যেমন মুক্ত ও দাসপ্রথা-পালনকারী রাজ্যগুলোর মধ্যে, এবং বৃহৎ ও সীমিত সরকারের সমর্থকদের মধ্যে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন ছিল কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বড় রাজ্য ও ছোট রাজ্যগুলোর মধ্যে। ধারা অনুসারে, প্রত্যেক রাজ্যের কংগ্রেসে এক ভোট ছিল। জনবহুল রাজ্যগুলো চেয়েছিল জনসংখ্যাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব। ভার্জিনিয়ার জেমস ম্যাডিসন "ভর্জিনিয়া পরিকল্পনা" প্রণয়ন করেন, যাতে এই ধরনের প্রতিনিধিত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয় এবং কংগ্রেসকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ছোট রাজ্যগুলো সমান প্রতিনিধিত্বের পক্ষ নেয়, যার পক্ষে উইলিয়াম প্যাটারসন "নিউ জার্সি পরিকল্পনা" প্রস্তাব করেন। এই পরিকল্পনাও কংগ্রেসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল, তবে ভর্জিনিয়া পরিকল্পনার মতো নয়। এই বিরোধ কনভেনশন ভেঙে যাওয়ার হুমকি সৃষ্টি করে, কিন্তু কানেকটিকাটের রজার শেরম্যান একটি সমঝোতা প্রস্তাব করেন—"গ্রেট কম্প্রোমাইস" বা "কানেকটিকাট কম্প্রোমাইস"—যেখানে কংগ্রেসের একটি কক্ষ জনসংখ্যাভিত্তিক এবং অন্যটি সমান প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে গঠিত হবে। অবশেষে এই সমঝোতা গৃহীত হয় এবং কনভেনশন টিকে যায়। প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হওয়ার পর, অন্যান্য বিষয়ে সমঝোতা সহজ হয়ে ওঠে। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল: রাজ্যের জনসংখ্যা গণনার সময় দাসদের কীভাবে গণনা করা হবে। এটি থ্রি-ফিফথস কম্প্রোমাইস দ্বারা সমাধান করা হয়, যেখানে প্রতি পাঁচজন দাসকে তিনজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হবে। আরেকটি সমঝোতায়, কংগ্রেসকে দাস বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়, কিন্তু তা কার্যকর হবে ১৮০৮ সালের পর। যদিও বেশিরভাগ প্রতিনিধি একটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী বিভাগের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক ছিল। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় যে প্রেসিডেন্ট ইলেক্টোরাল কলেজ দ্বারা নির্বাচিত হবেন। === ফেডারেলিস্ট পেপারস ও অনুমোদন === [[File:Alexander Hamilton portrait by John Trumbull 1806.jpg|thumb|upright|অ্যালেকজান্ডার হ্যামিল্টন ফেডারেলিস্ট পেপারস-এর অনেকগুলো লিখেছিলেন]] সংবিধান কার্যকর হওয়ার জন্য নয়টি রাজ্যের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। এই অনুমোদনের জন্য লড়াই কঠিন ছিল, তবে অবশেষে ১৭৮৮ সালে সংবিধান কার্যকর হয়। ১৭৮৮ ও ১৭৮৯ সালে, নিউ ইয়র্ক রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদপত্রে মোট ৮৫টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল নিউ ইয়র্ক ও ভার্জিনিয়ার জনগণকে সংবিধান অনুমোদনের জন্য উৎসাহিত করা। সাধারণভাবে এই প্রবন্ধগুলোর লেখক হিসেবে অ্যালেকজান্ডার হ্যামিল্টন, জেমস ম্যাডিসন এবং জন জে-কে ধরা হয়। যেহেতু তারা সবাই ফেডারেলিস্ট ছিলেন, তাই এই প্রবন্ধগুলো "ফেডারালিস্ট পেপারস" নামে পরিচিত হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত প্রবন্ধগুলোর একটি হল ফেডারালিস্ট নং ১০, যা ম্যাডিসন লেখেন, এবং এতে দেখানো হয় সংবিধানে থাকা চেক ও ব্যালান্সের ব্যবস্থা কীভাবে বিভাজনমূলক গোষ্ঠীগুলোর হাত থেকে সরকারকে রক্ষা করে। অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টরা সংবিধান অনুমোদনে সমর্থন করেননি। প্যাট্রিক হেনরি, জর্জ ম্যাসন, ও রিচার্ড হেনরি লি ছিলেন বিশিষ্ট অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট। তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল সংবিধানে অধিকার বিল নেই। তারা মনে করতেন সংবিধান কেন্দ্রীয় সরকারকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়েছে এবং রাজ্যগুলোর হাতে খুব কম ক্ষমতা রেখেছে। আরও একটি অভিযোগ ছিল যে সিনেটর ও প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন না এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর নির্বাচন বছরে একবার নয়, দুই বছরে একবার হয়। ডেলাওয়্যার প্রথম রাজ্য হিসেবে ৭ ডিসেম্বর, ১৭৮৭-এ সর্বসম্মতভাবে (৩০-০) সংবিধান অনুমোদন করে। পেনসিলভানিয়া ১২ ডিসেম্বর এবং নিউ জার্সি ১৮ ডিসেম্বর অনুমোদন করে, উভয় ক্ষেত্রেই সর্বসম্মত ভোটে। ১৭৮৮ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে জর্জিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, মেরিল্যান্ড, সাউথ ক্যারোলাইনা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ভার্জিনিয়া এবং নিউ ইয়র্ক সংবিধান অনুমোদন করে এবং এটি কার্যকর হয়। ২ আগস্ট, ১৭৮৮-এ নর্থ ক্যারোলাইনা সংশোধনী ছাড়া সংবিধান অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়, কিন্তু এক বছর পরে অনুমোদন করে। অনেক রাজ্য সংবিধান অনুমোদনের সময় পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দেয়, যেমন একটি অধিকার বিল-এর দাবি। এর ফলেই ফেডারেল সরকারের প্রথম দিকে অধিকার বিল তৈরি হয়। === বিল অব রাইটস === জর্জ ওয়াশিংটন ৩০ এপ্রিল, ১৭৮৯ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। তবে তখনো নর্থ ক্যারোলাইনা, রোড আইল্যান্ড ও ভার্মন্ট সংবিধান অনুমোদন করেনি। যদিও সরকার গঠিত হয়, তখনো নাগরিকদের ধর্ম, বাকস্বাধীনতা বা নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৭৮৯-এ কংগ্রেস ১২টি সংশোধনী অনুমোদনের জন্য রাজ্যগুলোর কাছে পাঠায়। এর মধ্যে ১০টি সংশোধনী বিল অব রাইটস হয়ে ওঠে। নর্থ ক্যারোলাইনা নভেম্বর ১৭৮৯-এ এবং রোড আইল্যান্ড মে ১৭৯০-এ সংবিধান অনুমোদন করে। ভার্মন্ট ১০ জানুয়ারি, ১৭৯১-এ সংবিধান অনুমোদন করে, এবং ১৪তম রাজ্য হিসেবে ইউনিয়নে যোগ দেয়। বিল অব রাইটস কার্যকর হয় ১৫ ডিসেম্বর, ১৭৯১। নিচে সেদিন গৃহীত ১০টি সংশোধনীর সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হলো: ধর্ম, বাকস্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যম, সভা এবং অভিযোগ জানানোর অধিকার নিশ্চিত করা। সুসজ্জিত মিলিশিয়ার অংশ হিসেবে অস্ত্র রাখার ও বহনের অধিকার। শান্তিকালে সৈন্যদের জোরপূর্বক গৃহে রাখা নিষিদ্ধ। অন্যায্য অনুসন্ধান ও জব্দ নিষিদ্ধ; অনুসন্ধানের জন্য ওয়ারেন্ট প্রয়োজন। অভিযুক্ত হওয়া, যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়া, আত্ম-অভিযোগ, দ্বৈত বিচারের নিষেধাজ্ঞা এবং মালিকানার অধিকার রক্ষা। দ্রুত, প্রকাশ্য ও ন্যায়সঙ্গত বিচার, অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হওয়া, সাক্ষীর মুখোমুখি হওয়া, সাক্ষী তলব ও আইনজীবী পাওয়ার অধিকার। দেওয়ানি মামলায় জুরি ট্রায়ালের অধিকার। নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি এবং অতিরিক্ত জরিমানা বা জামিন নিষিদ্ধ। সংবিধানে উল্লেখ না থাকা অধিকারও জনগণের রয়েছে। সংবিধানে নির্ধারিত ক্ষমতা ছাড়া ফেডারেল সরকার অতিরিক্ত ক্ষমতা নিতে পারবে না। == ওয়াশিংটন প্রশাসন == [[File:Gilbert Stuart Williamstown Portrait of George Washington.jpg|thumb|upright|জর্জ ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি]] আমেরিকান বিপ্লবযুদ্ধের সময় মহাদেশীয় সেনাবাহিনীর সফল প্রধান কমান্ডার হওয়ার পর, জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। <ref name="siwashington">https://www.si.edu/spotlight/highlights-george-washington-1732-1799</ref> ১৭৮৮ সালে, ইলেক্টররা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াশিংটনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন।<ref name="siwashington"/> তিনি সরকারের ভিত্তি স্থাপন করার কিছু সময় পরই তার নিকটবর্তী উপদেষ্টাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, বিশেষ করে পররাষ্ট্র সচিব থমাস জেফারসন এবং অর্থ সচিব আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের মধ্যে। এই ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়: ফেডারেলিস্টরা, যারা পূর্ববর্তী অনুমোদনপন্থী দলের নাম গ্রহণ করে এবং ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টি, যা জেফারসোনীয় দল নামেও পরিচিত বা অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট হিসেবেও পরিচিত ছিল। ওয়াশিংটনের দুই মেয়াদের প্রশাসন অনেক নীতিমালা ও প্রথা স্থাপন করে, যেগুলি আজও প্রচলিত। তাকে ১৭৯২ সালেও সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় নির্বাচিত করা হয়। তবে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেন, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য ভবিষ্যৎ প্রজাতন্ত্রের জন্য অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।<ref name="siwashington"/> ওয়াশিংটন উপাধি পরিহার করেছিলেন। তিনি "ইউর এক্সেলেন্সি" বা "ইউর ম্যাজেস্টি" নামে পরিচিত হতে চাননি। তিনি "মিস্টার প্রেসিডেন্ট" নামে পরিচিত হতে চান এবং "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি" হিসাবে উল্লেখ করতে বলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় তার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় জন্য তাকে প্রায়ই "জাতির জনক" বলা হয়। পণ্ডিতরা তাকে আব্রাহাম লিংকনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতিদের একজন হিসেবে গণ্য করেন। ===হ্যামিল্টনের আর্থিক পরিকল্পনা=== [[File:FirstBankofUS00 crop.jpg|thumb|ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ব্যাংক, যা আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়।]] ফেডারেলিস্ট এবং অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টদের মধ্যে প্রধান বিরোধের একটি বিষয় ছিল বিপ্লবী যুদ্ধের ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি। ১৭৯০ সালে, আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন তার '''প্রথম পাবলিক ক্রেডিট প্রতিবেদন''' লেখেন এই উদ্দেশ্যে। এতে তিনি যুক্তি দেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোর ঋণ নিজের ওপর নিয়ে নিয়ে একে একটি জাতীয় ঋণে রূপান্তর করবে। কিন্তু জেফারসন এবং অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টরা এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেন। ১৭৯০ সালের আপসচুক্তিতে, জাতীয় রাজধানীকে কলম্বিয়া জেলায় স্থানান্তরের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য ঋণ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়। '''দ্বিতীয় পাবলিক ক্রেডিট প্রতিবেদন'''-এ হ্যামিল্টন যুক্তি দেন যে, একটি জাতীয় ব্যাংক অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির জন্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয়। জেফারসন দাবি করেন যে এই জাতীয় ব্যাংক গঠন সংবিধানের ১০তম সংশোধনী লঙ্ঘন করে এবং তাই এটি অসাংবিধানিক। হ্যামিল্টন পাল্টা যুক্তি দেন যে, সংবিধান ফেডারেল সরকারকে "প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত" কাজ করার জন্য "অন্তর্নিহিত ক্ষমতা" দিয়েছে। ১৭৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক গঠনের আইন পাশ হয় এবং এটি ২০ বছরের চার্টার পায়। জেফারসন জাতীয় ব্যাংকের ধারণার সঙ্গে একমত ছিলেন না। তার দল এমন একটি আমেরিকা কল্পনা করত যা প্রাচীন এথেন্স বা প্রাক-সাম্রাজ্যিক রোমের মতো, যেখানে স্বাধীন কৃষকগৃহস্থ পরিবারগুলি তাদের নিজস্ব স্বার্থ অনুসরণ করে এবং স্বাধীনতা লালন করে। জেফারসন চেয়েছিলেন আমেরিকা কৃষিভিত্তিক আত্মনির্ভরশীল জনগণের দেশ হোক এবং কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য বিষয়গুলিতে হস্তক্ষেপ না করুক। (তবে কিছু প্রমাণ রয়েছে যে জেফারসন রাজ্য ঋণ পরিশোধে হ্যামিল্টনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছিলেন। কারণ তিনি হ্যামিল্টনের সঙ্গে আপস করে রাজধানী দক্ষিণে পটোম্যাক নদীর তীরে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, যেখানে পরবর্তীতে ওয়াশিংটন, ডি.সি. গড়ে ওঠে।) রাষ্ট্রপতি ওয়াশিংটন এবং কংগ্রেস হ্যামিল্টনের ব্যাংক পরিকল্পনার সঙ্গে একমত হন। জেফারসনের পরিকল্পনা বাতিল হয় এবং তিনি শেষমেশ পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ===হুইস্কি বিদ্রোহ (১৭৯৪)=== [[File:WhiskeyRebellion.jpg|thumb|হুইস্কি বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওয়াশিংটন।]] তার প্রেসিডেন্সির সময় ওয়াশিংটন একটি বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন, সেটি ছিল ১৭৯৪ সালের ''হুইস্কি বিদ্রোহ''। নতুন প্রজাতন্ত্রের অর্থের প্রয়োজন ছিল। এটি আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনকে কংগ্রেসে হুইস্কির বিক্রির উপর আবগারি কর চাপানোর প্রস্তাব দিতে উৎসাহিত করে। পেনসিলভানিয়ার গ্রামীণ কৃষকরা, যারা কখনো কেন্দ্রীয় আমেরিকান কর্তৃত্বের সম্মুখীন হননি, এই করকে তাদের লাভে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে এবং কর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ৫০০ জনের একটি জনতা এক কর সংগ্রাহকের বাড়িতে হামলা চালায়। এর জবাবে ওয়াশিংটন ও হ্যামিল্টন ১৫,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহ দমনে এগিয়ে যান, যা আমেরিকান বিপ্লবের সময় ওয়াশিংটনের অধীনস্থ বাহিনীর চেয়েও বড় ছিল। সেনাবাহিনী পৌঁছানোর পর বিদ্রোহীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এই হুইস্কি কর ১৮০১ সালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকানরা বাতিল করে দেয়। ===বিদেশনীতি=== ====ফরাসি বিপ্লব==== ফ্রান্সে ১৭৮৯ সালে বিপ্লব শুরু হয়, কয়েক মাস পরেই মার্কিন সংবিধান কার্যকর হয়। শুরুতে, ফ্রান্স রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে নিজেকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করলে, অনেক আমেরিকান এই বিপ্লবকে সমর্থন করেন। তারা বিশ্বাস করতেন তাদের ইংল্যান্ড-বিরোধী বিদ্রোহ ফ্রান্সকে প্রজাতন্ত্র গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু যখন "টেররের রাজত্ব" শুরু হয় এবং হাজার হাজার ফরাসি অভিজাতকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়, তখন অনেক আমেরিকান এই বিপ্লবের উগ্রতায় হতবাক হয়ে পড়েন। ১৭৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, ফ্রান্স প্রতিবেশী রাজতন্ত্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলে, এই বিপ্লব আমেরিকান জনমতকে বিভক্ত করে তোলে। ফেডারেলিস্টরা ইংল্যান্ডকে, ফ্রান্সের শত্রু হিসেবে নয় বরং স্থিতিশীল সরকারের রূপ হিসেবে দেখতেন; অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকানরা ফরাসি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেন এবং বিশ্বাস করেন যে টেররের যুগ একটি সাময়িক উগ্রতা মাত্র। রাষ্ট্রপতি ওয়াশিংটনের নীতি ছিল নিরপেক্ষতা। তিনি জানতেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স বা স্পেন—কোনো দেশই সুযোগ পেলে আমেরিকার সম্পদ বা ভূখণ্ড দখল করতে দ্বিধা করবে না। ১৭৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ছিল নবীন ও দুর্বল। ওয়াশিংটন আশা করতেন, যুক্তরাষ্ট্র যতদিন না শক্তিশালী হয়, ততদিন যেন ইউরোপীয় সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে। তবুও, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স উভয়ই নিজেদের স্বার্থে আমেরিকান সম্পদ ব্যবহার করার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রেও হ্যামিল্টন ও জেফারসনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। হ্যামিল্টন যুক্তি দেন যে ১৭৭৮ সালের ফ্রান্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি আর বৈধ নয়, কারণ পূর্ববর্তী ফরাসি সরকার আর অস্তিত্বে নেই। জেফারসন এতে একমত ছিলেন না। কিন্তু ওয়াশিংটন হ্যামিল্টনের পক্ষে অবস্থান নেন এবং ১৭৯৩ সালে একটি আনুষ্ঠানিক '''নিরপেক্ষতার ঘোষণাপত্র''' প্রকাশ করেন। ১৭৯৬ সালের বিদায়ী ভাষণেও তিনি নিরপেক্ষতার পক্ষে মত দেন এবং গোষ্ঠীবাদ বিরোধী বক্তব্য রাখেন। ঐ বছরই ফরাসি মন্ত্রী সিটিজেন এডমন্ড চার্লস জেনেট যুক্তরাষ্ট্রে আগমন করেন। তিনি শীঘ্রই আমেরিকান জাহাজগুলোর ক্যাপ্টেনদের প্রাইভেটিয়ার হিসেবে ফরাসি পক্ষে কাজ করতে কমিশন দিতে শুরু করেন। আমেরিকান নিরপেক্ষতার এই অগ্রাহ্যতা ওয়াশিংটনকে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং তিনি জেনেটের প্রত্যাহার দাবি করেন, যা পরে কার্যকর হয়। ====ইংল্যান্ড ও স্পেনের সঙ্গে আলোচনাসমূহ==== এদিকে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি মার্কিন বণিজ্যিক জাহাজের নাবিকদের ধরে নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের নৌবাহিনীতে নিয়োগ দিতে শুরু করে। অনেক ব্রিটিশ নাবিক ভালো বেতন ও উন্নত জীবনের আশায় মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু ইংল্যান্ড তাদের দরকার ছিল। এই মার্কিন পতাকার লঙ্ঘন এবং ১৭৮৩ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে ইংল্যান্ডের নর্থওয়েস্ট টেরিটরি থেকে সেনা প্রত্যাহার না করায় মার্কিন জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন জেকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি আলোচনার জন্য পাঠান। কিন্তু জে-এর হাতে দর কষাকষির মতো তেমন কিছু ছিল না: চূড়ান্ত চুক্তিতে সীমান্ত দুর্গগুলো থেকে ইংরেজ সেনা প্রত্যাহারের শর্ত থাকলেও জোরপূর্বক নাবিক নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। <b>জে চুক্তি</b> মার্কিন জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এটি অল্প ব্যবধানে সিনেটে অনুমোদন পায়। এই বিতর্ক চূড়ান্তভাবে ফেডারেলিস্ট ও রিপাবলিকান গোষ্ঠীদ্বয়কে পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করে তোলে—ফেডারেলিস্টরা চুক্তির পক্ষে এবং রিপাবলিকানরা একে ফ্রান্সবিরোধী ও ইংল্যান্ডপন্থী হিসেবে দেখেন। এদিকে স্পেন এই চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, তারা আশঙ্কা করছিল যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের মধ্যে জোট গঠিত হতে পারে। চুক্তির শর্ত নিশ্চিত না হয়েও, স্পেন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ছাড় দেয় যাতে ভবিষ্যতে নিউ অরলিন্স ও লুইজিয়ানা রক্ষা করা যায়। স্পেন ফ্লোরিডার উত্তরে ও মিসিসিপি নদীর পূর্বে তাদের সব দাবী পরিত্যাগ করে (নিউ অরলিন্স ব্যতিক্রম) এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মিসিসিপি নদী ব্যবহারের ও নিউ অরলিন্সে বাণিজ্যিক গুদাম স্থাপনের অধিকার প্রদান করে। এটি পশ্চিমাঞ্চলবাসীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে এবং বাইরের বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের সুযোগ দেয়। এই <b>সান লরেঞ্জোর চুক্তি</b>, যা মার্কিন কূটনীতিক চার্লস পিঙ্কনির নামে <b>পিঙ্কনির চুক্তি</b> নামেও পরিচিত, ১৭৯৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং পরের বছর অনুমোদিত হয়। এটি জে চুক্তির চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়। জে চুক্তি যেমন স্পেনকে আতঙ্কিত করেছিল, তেমনি ফ্রান্সকেও ক্ষুব্ধ করেছিল, কারণ তারা একে ১৭৭৮ সালের ফ্রাঙ্কো-আমেরিকান পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখেছিল। ১৭৯৭ সালের মধ্যে, ফরাসি প্রাইভেটিয়াররা ক্যারিবিয়ানে মার্কিন বাণিজ্য জাহাজে আক্রমণ শুরু করে। == ১৭৯৬ সালের নির্বাচন == [[File:ElectoralCollege1796.svg|thumb|১৭৯৬ সালের ইলেক্টোরাল কলেজের ফলাফল।]] প্রেসিডেন্সি পূর্বনির্ধারিত না থাকা প্রথম নির্বাচনে চারজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন: ওয়াশিংটনের ফেডারালিস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস, ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান থমাস জেফারসন, ফেডারালিস্ট থমাস পিন্কনি এবং ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান অ্যারন বুর। (বুর আসলে আশা করছিলেন, অন্য ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী জিতলে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন।) তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আলাদা কোনো প্রার্থী ছিলেন না, কারণ মূল সংবিধান অনুসারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এটিই ছিল সেই নির্বাচন, যেখানে প্রথমবারের মতো সংবিধানের ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার পরীক্ষা হয়। প্রতিটি রাজ্যের ভোটাররা সরাসরি প্রার্থী নির্বাচন করতেন না। বরং, তাদের ভোট রাজ্যের নির্বাচকদের দুটি ভোট দেওয়ার নির্দেশনা দিত। ১৭৯৬ সালের নির্বাচনে জন অ্যাডামস প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে জয়ী হন, কিন্তু থমাস জেফারসন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট দুই ভিন্ন দলের সদস্য হয়ে পড়েন। ভাইস প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ভূমিকা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল: এর বাইরে তার করণীয় খুবই সীমিত ছিল। জেফারসন এমন এক প্রশাসনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যা শক্তিশালী সরকার ও একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমর্থন করত, এবং তার বিপরীতমুখী মতামত অ্যাডামস প্রশাসনে উপেক্ষিত ছিল। == এক্সওয়াইজেড (XYZ) কাণ্ড == [[File:USSConstellationVsInsurgente.jpg|thumb|ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোয়াসি-যুদ্ধের সময় আমেরিকান ও ফরাসি জাহাজের সংঘর্ষ।]] নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস ফ্রান্সের সঙ্গে একটি সমঝোতার উদ্দেশ্যে প্যারিসে একটি প্রতিনিধিদল পাঠান। তবে, প্রতিনিধি দলটি ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্যালেয়রান্ডের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও পায়নি। বরং, তাদের কাছে তিনজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়, যারা দাবি করে যে আলোচনার শুরুতেই আমেরিকানদের ঘুষ দিতে হবে, নইলে "ফ্রান্সের শক্তি ও হিংস্রতা"র মুখোমুখি হতে হবে। প্রতিনিধি দল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ("উত্তর হচ্ছে না; না; এক পয়সাও না,"—এই প্রতিক্রিয়া জনমনে জনপ্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে: "প্রতিরক্ষার জন্য কোটি কোটি ডলার, কিন্তু খেসারতের জন্য এক পয়সাও নয়।") অ্যাডামস এই পত্রালাপ জনসমক্ষে প্রকাশ করেন, এবং ফরাসি কর্মকর্তাদের নাম X, Y, ও Z দ্বারা প্রতিস্থাপন করেন। এর ফলে আমেরিকান জনমত ব্যাপকভাবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে চলে যায়। ফেডারালিস্টদের নিয়ন্ত্রণাধীন কংগ্রেস একটি সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে, বেশ কিছু উৎকৃষ্ট যুদ্ধজাহাজ তৈরি করা হয় এবং জর্জ ওয়াশিংটনকে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। (ওয়াশিংটন সম্মত হন এই শর্তে যে তিনি কেবল তখনই নেতৃত্ব দেবেন, যদি সেনাবাহিনী বাস্তবে মাঠে নামে। তবে সেই সেনাবাহিনী কখনও গঠিত হয়নি।) ফলে একটি কোয়াসি-যুদ্ধ শুরু হয়, যা ছিল ফ্রান্সের সঙ্গে একটি ঘোষণা ছাড়াই শুরু হওয়া নৌযুদ্ধ। এটি ১৭৯৮ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পৃথক পৃথক জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হয় এবং ১৭৭৮ সালের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিও বাতিল করে। অ্যাডামস এটিকে তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করেন। == এলিয়েন ও সেডিশন আইনসমূহ == অ্যাডামসের অধীনে, ফেডারালিস্ট-শাসিত কংগ্রেস বিপজ্জনক "এলিয়েনদের" মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি আইন পাস করায়। বাস্তবে, এই চারটি আইন ব্যবহার করা হয়েছিল দেশীয় রাজনৈতিক বিরোধীদের চুপ করানোর জন্য। # '''এলিয়েন আইন''' রাষ্ট্রপতিকে অধিকার দেয় যে, তিনি যেকোন এলিয়েনকে যার জন্য "বিপদজনক" বলে বিবেচিত হবে, তাকে বিতাড়িত (ডিপোর্ট) করতে পারবেন। # '''এলিয়েন এনিমিস আইন''' রাষ্ট্রপতিকে অনুমতি দেয় যে, যেকোন এলিয়েনকে বিতাড়িত বা বন্দি করতে পারবেন যিনি এমন কোনো দেশের নাগরিক, যার সাথে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত যুদ্ধ করছে। # '''সেডিশন আইন''' সরকারী কর্মকর্তাদের সমালোচনা করা এবং সরকারের বা তার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে "মিথ্যা, কলঙ্কজনক ও অপবাদমূলক লেখা" প্রকাশ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। # '''ন্যাচারালাইজেশন আইন''' এলিয়েনদের নাগরিক হওয়ার আবাসিক সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়। যদিও এটি প্রকাশ্যেই একটি নিরাপত্তা আইন হিসেবে গণ্য ছিল, এটি শাসক ফেডারালিস্ট দলকে শক্তিশালী হাতিয়ার প্রদান করেছিল বাড়তে থাকা ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টির বিরোধ নিবারণে। নাগরিক হওয়ার জন্য আবাসিক সময় বাড়িয়ে তারা নতুন ভোটার সংখ্যা কমিয়েছিল, যারা সংখ্যালঘু পার্টির পক্ষে ভোট দিতে পারত। তবে, রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে এই আইনগুলো খুব কমই প্রয়োগ করা হয়েছিল, কারণ এর ফলে সৃষ্ট সংঘর্ষের সম্ভাবনা ছিল। ==শিক্ষা== সমৃদ্ধ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা উভয়েই শিশু স্কুল নামে পরিচিত একটি ধরনের প্রাথমিক স্কুলে যেত। তবে গ্রামার স্কুলে যেত শুধুমাত্র ছেলেরা। উচ্চবিত্তের মেয়েদের এবং কখনো কখনো ছেলেদের বাড়ির গৃহশিক্ষকরা পড়াতেন। মধ্যবিত্তের মেয়েদের মা নিজেই পড়াতেন। তদুপরি, ১৭শ শতাব্দীতে অনেক শহরে মেয়েদের জন্য বোর্ডিং স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বোর্ডিং স্কুলে মেয়েদের লেখাপড়া, সঙ্গীত এবং সূচিকর্মের মতো বিষয় শেখানো হত। গ্রামার স্কুলের পরিবেশ কঠোর ছিল। ছেলেরা সকাল ৬ বা ৭টায় কাজ শুরু করত এবং বিকেল ৫ বা ৫.৩০টা পর্যন্ত কাজ করত, মধ্যাহ্নভোজের বিরতি সহ। শারীরিক শাস্তি ছিল নিয়মিত। সাধারণত শিক্ষক দুষ্টু ছেলেদের খালি পেছনে বীচের ডাল দিয়ে মারতেন। শ্রেণীর অন্য ছেলেরা দুষ্টু ছেলেকে ধরে রাখত। ১৭শ এবং ১৮শ শতাব্দীর প্রথম দিকে নারীদের শিক্ষালাভ উৎসাহিত করা হত না। কিছু মানুষ বিশ্বাস করত, নারীরা যদি ভালভাবে শিক্ষিত হয় তাহলে তাদের বিয়ের সম্ভাবনা নষ্ট হবে এবং মনের জন্য ক্ষতিকর হবে। প্রোটেস্ট্যান্টরা বিশ্বাস করত, পুরুষদের মতো নারীদেরও বাইবেল পড়ার সুযোগ থাকা উচিত। শুধুমাত্র ধনী বা অভিজাত পরিবারের মেয়েরাই শিক্ষিত হতে পারত। ১৭শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তরুণ মেয়েদের ভাইদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো। কখনো কখনো টাকা থাকলে একজন বন্ধুর বাড়িতে রেখে সেখানে বিভিন্ন বিষয় শেখানো হতো। সেখানে পড়াশোনা, বাড়ি চালানো, এবং চিকিৎসা প্রয়োগ শেখানো হতো। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের পর কয়েকটি রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান হয়েছিল, যেখানে শিক্ষার বিষয়ে তথ্য ছিল। কিন্তু থমাস জেফারসন মনে করতেন শিক্ষাকে সরকারে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষায় ধর্মীয় পক্ষপাত থাকা উচিত নয় এবং সকল মানুষের জন্য শিক্ষাকে বিনামূল্যে করা উচিত, সামাজিক অবস্থার পার্থক্য না করে। তবে গণশিক্ষার ধারণা সহজে গ্রহণ করা কঠিন ছিল, কারণ অভিবাসীদের ব্যাপক সংখ্যা, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতামত এবং আর্থিক কষ্টের স্তরগুলো ছিল অনেক ভিন্ন।<ref>A People and a Nation, Eighth Edition.</ref> ==প্রযুক্তি== ১৭৯০-এর দশকে নিউ ইংল্যান্ডের কয়েকজন বুননশিল্পী বড়, স্বয়ংক্রিয় তাঁত তৈরি করতে শুরু করল, যা জলশক্তিতে চালিত হত। সেগুলো রাখার জন্য তারা প্রথম আমেরিকান কারখানা তৈরি করল। তাঁত চালানোর জন্য ঘরের শ্রমিকদের চেয়ে কম দক্ষতা আর বেশি গতি প্রয়োজন ছিল। তাঁতগুলোতে লোক নিয়ে আসতে হত; এবং এমন শ্রমিকও দরকার ছিল যারা ''সাবোটাজ'' শব্দের অর্থ জানত না। এই কারখানাগুলো যুবতী মেয়েদের নিয়োগের চেষ্টা করত। কারখানা মালিকরা বলতেন তারা এই মেয়েদের কয়েক বছর মাত্র নিয়োগ দিতে চায়, যাতে তারা বিয়ের জন্য যৌতুক যোগাড় করতে পারে। তাদের সময় সূচী অনুযায়ী কঠোর নিয়ন্ত্রণ করা হত। কিছু মিল মালিক সন্ধ্যায় ক্লাস চালাতেন যাতে মেয়েরা লিখতে এবং গৃহপরিচালনা করতে শিখতে পারে। এই কারখানাগুলো তুলো কাপড়ের সস্তা উৎস প্রদান করত, যা জাহাজে পাঠানো হত এবং শক্তিশালী সরকারের উন্নত সড়কে চলত। প্রথমবারের মতো কিছু মানুষ দুইটি পোশাকের বেশি, কাজের পোশাক এবং রবিবারের সেরা পোশাক কেনার সামর্থ্য পেল। তারা দক্ষিণের দাসপ্রথা রাজ্য থেকে তুলো সরবরাহের একটি উপায়ও তৈরি করল। তখন তুলো বিভিন্ন ফসলের একটি ছিল। অনেক দাসকে তুলোর বীজ থেকে তুলো আলাদা করতে হত এবং নুতন ইংল্যান্ডের কাপড়ের চাহিদা পূরণে পাঠাতে হত। ১৭৯৩ সালে এলি হুইটনির তুলো জিন আবিষ্কারে এই কাজ সহজ হয়েছিল। তুলো লাভজনক ফসল হয়ে উঠল, এবং অনেক দক্ষিণের খামার এখন এটিই একমাত্র ফসল বানাতে শুরু করল। তুলো চাষ এবং তোলা ছিল দীর্ঘ ও কঠোর শ্রম, এবং দক্ষিণের প্ল্যান্টেশন দাসদের এই কাজ দেওয়া হতো। উত্তরাঞ্চলের কারখানাগুলো দাসপ্রথার অর্থনীতির একটি অংশ হয়ে উঠল। এই দাসপ্রথার উপর পুনরায় নির্ভরশীলতা দেশের অন্য অংশের প্রবণতার বিপরীত ছিল। ভারমন্ট ১৭৭৭ সালে তার রাজ্য সংবিধানে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেছিল। পেনসিলভেনিয়া ১৭৮০ সালে ধীরে ধীরে এই অবস্থা বন্ধ করার আইন করল, এবং নিউ ইয়র্ক রাজ্য ১৭৯৯ সালে। শিক্ষা, সম্পদ, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক উত্তরের রাজ্যে শিল্পায়নের সূচনা করেছিল, আর গভীর দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে প্ল্যান্টেশন, দাসপ্রথা এবং কম উন্নয়ন দেখা যেত। <gallery mode="packed" heights="150px"> File:Pawtucket slater mill.jpg|[[w:Slater Mill Historic Site|স্লেটার মিল]], ১৭৯৩ সালে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক বস্ত্র কারখানা। File:Cotton gin EWM 2007.jpg|তুলো জিনের পুনরুত্পাদন। File:Mrs. Noah Smith and Her Children MET DT214720.jpg|১৭৯৮ সালের একটি আমেরিকান পরিবারের প্রতিকৃতি। বস্ত্র শিল্পের অগ্রগতি পোশাক জগতের পরিবর্তন আনে। </gallery> == পর্যালোচনার প্রশ্নাবলী == ১. নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের সনাক্ত করুন এবং তাদের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করুন: :(ক) জেমস ম্যাডিসন :(খ) উইলিয়াম প্যাটারসন :(গ) আলেকজান্ডার হ্যামিলটন :(ঘ) প্যাট্রিক হেনরি :(ঙ) থমাস জেফারসন :(চ) জর্জ ওয়াশিংটন :(ছ) জন অ্যাডামস :(জ) এডমন্ড জেনে :(ঝ) চার্লস পিঙ্কনি ২. সংবিধানসভায় রাজ্যগুলোর জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে কি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? ৩. হ্যামিলটন কীভাবে সংবিধান অনুমোদন নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? ৪. সংবিধানের ব্যাপারে অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টদের দুইটি সমস্যা বা অভিযোগ কী ছিল? ৫. জর্জ ওয়াশিংটন তার দুই মেয়াদের সরকারি কাজকর্মে কোন কোন রীতিনীতি স্থাপন করেছিলেন? ৬. জেফারসন ও হ্যামিলটনের মধ্যে কোন কোন বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য ছিল? এটি ওয়াশিংটনের প্রশাসনের নীতিতে কী প্রভাব ফেলেছিল? ৭. হুইস্কি বিদ্রোহ কী ছিল? কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? ৮. জে চুক্তি এবং পিঙ্কনি চুক্তি কী অর্জন করেছিল? ৯. ফরাসি বিপ্লবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল? ১০. এক্সওয়াইজেড এফেয়ার কী ছিল? এর ফলাফল কী হয়েছিল? ১১. এলিয়েন, সেডিশন, এবং ন্যাচারালাইজেশন আইনগুলোর মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? কীভাবে তাদের উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়েছিল? ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} {{chapnav|আমেরিকান বিপ্লব|জেফারসনিয়ান গণতন্ত্র}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} 37ro60jlme4i4ep1qk447a3dqq0y9u7 প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/পর্যালোচনা: মডুলার প্রোগ্রামিং গ্রুপ 0 25251 85168 78863 2025-06-22T05:13:34Z RDasgupta2020 8748 /* কৌশল আলোচনা */ 85168 wikitext text/x-wiki [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] সংগ্রহ/পাঠ্যপুস্তকের একাধিক অধ্যায়গুলি পর্যালোচনা করুন। ==কৌশল আলোচনা== প্রোগ্রামিং অধ্যয়নের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একটি কৌশল অনুসরন করা উচিত। আপনার পঠনপাঠনের পদ্ধতি ও বিষয় আয়ত্তকরনের কৌশল বিভিন্ন প্রশিক্ষকের ক্ষেত্রে আলাধা আলাধা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক পর্যালোচনার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলোর উপর ব্যবহার করেন: #বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা #স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক প্রশ্নাবলীর অনুশীলন, যেমন সত্য/মিথ্যা নির্বাচনকারী প্রশ্ন, বহু বিকল্প নির্বাচনী প্রশ্ন অথবা সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নের চর্চা #প্রোগ্রামিং -এর মাধ্যমে সমস্যাভিত্তিক প্রশ্নের সামাধান [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] -এই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন অংশে এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য এগুলো ভালোভাবে অনুশীলনের পরামর্শ দেওয়া হয়। #যদি আপনার অধ্যাপক বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা আছে কিনা তা যাচাই করার পরীক্ষা নেন এবং যার জন্য আপনি বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলি মুখস্থ রাখার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি পাঠ্যবইয়ের অ্যাপেনডিক্স অংশে থাকা <code>Study Habits that Build the Brain</code> শীর্ষক অংশের <code>"Using the Flash Card Activity"</code> অংশটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। সংজ্ঞাগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। #বইয়ের অনুশীলনী অংশের যেকোনো অনুশীলন দ্রুত পর্যালোচনা করুন। পাশাপাশি আপনি যেসব মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোর উত্তর পর্যালোচনা করুন এবং আপনি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর ভুল করেছেন, সেগুলোর কারণ ভালোভাবে বুঝে নিন। #যদি আপনার অধ্যাপক ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন যে তিনি পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশ থেকে বেশ কয়েকটি সমস্যা পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুমতি থাকলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন যাতে উত্তর আরও উন্নত করা যায়। পরীক্ষার আগে প্রতিটি সমস্যা ও তার উত্তর সামান্য সময় নিয়ে পর্যালোচনা করুন। ==বিবিধ বিষয়াবলী== এই মুহূর্তে কিছুই উপলব্ধ নেই। {{BookCat}} pqoabmiekmdkn99l3lteej54598qz9y 85169 85168 2025-06-22T05:13:50Z RDasgupta2020 8748 /* কৌশল আলোচনা */ 85169 wikitext text/x-wiki [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] সংগ্রহ/পাঠ্যপুস্তকের একাধিক অধ্যায়গুলি পর্যালোচনা করুন। ==কৌশল আলোচনা== প্রোগ্রামিং অধ্যয়নের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একটি কৌশল অনুসরন করা উচিত। আপনার পঠনপাঠনের পদ্ধতি ও বিষয় আয়ত্তকরনের কৌশল বিভিন্ন প্রশিক্ষকের ক্ষেত্রে আলাধা আলাধা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক পর্যালোচনার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলোর উপর ব্যবহার করেন: #বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা #স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক প্রশ্নাবলীর অনুশীলন, যেমন সত্য/মিথ্যা নির্বাচনকারী প্রশ্ন, বহু বিকল্প নির্বাচনী প্রশ্ন অথবা সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নের চর্চা #প্রোগ্রামিং -এর মাধ্যমে সমস্যাভিত্তিক প্রশ্নের সমাধান [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] -এই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন অংশে এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য এগুলো ভালোভাবে অনুশীলনের পরামর্শ দেওয়া হয়। #যদি আপনার অধ্যাপক বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা আছে কিনা তা যাচাই করার পরীক্ষা নেন এবং যার জন্য আপনি বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলি মুখস্থ রাখার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি পাঠ্যবইয়ের অ্যাপেনডিক্স অংশে থাকা <code>Study Habits that Build the Brain</code> শীর্ষক অংশের <code>"Using the Flash Card Activity"</code> অংশটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। সংজ্ঞাগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। #বইয়ের অনুশীলনী অংশের যেকোনো অনুশীলন দ্রুত পর্যালোচনা করুন। পাশাপাশি আপনি যেসব মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোর উত্তর পর্যালোচনা করুন এবং আপনি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর ভুল করেছেন, সেগুলোর কারণ ভালোভাবে বুঝে নিন। #যদি আপনার অধ্যাপক ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন যে তিনি পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশ থেকে বেশ কয়েকটি সমস্যা পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুমতি থাকলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন যাতে উত্তর আরও উন্নত করা যায়। পরীক্ষার আগে প্রতিটি সমস্যা ও তার উত্তর সামান্য সময় নিয়ে পর্যালোচনা করুন। ==বিবিধ বিষয়াবলী== এই মুহূর্তে কিছুই উপলব্ধ নেই। {{BookCat}} i5yxij2a0cizdlz1j7yo5brxz9u4lxp মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/পুনর্গঠন 0 25252 85125 84873 2025-06-21T15:02:27Z NusJaS 8394 85125 wikitext text/x-wiki == পুনর্গঠনের সূচনা == [[File:Atlanta roundhouse ruin3.jpg|thumb|১৮৬৬ সালে জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি রেল ইয়ার্ড। গৃহযুদ্ধের পর দক্ষিণাঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল।]] ১৮৬৭ সালের ২ মার্চতারিখে কংগ্রেস প্রথম পুনর্গঠন আইন পাস করে। দক্ষিণকে পাঁচটি সামরিক জেলায় ভাগ করা হয়। প্রতিটিতে একজন মেজর জেনারেল নিযুক্ত হন। প্রতিটি রাজ্যে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত পুরুষ দাসদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। এই আইনে একটি সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাতে বলা ছিল যে, দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো ১৪তম সংশোধনী অনুমোদন এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করলে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারবে। রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জনসন তৎক্ষণাৎ এই বিলটিতে ভেটো দেন, কিন্তু কংগ্রেস একই দিনেই এটি আবার পাস করে। অ্যান্ড্রু জনসন সামরিক জেলার প্রশাসকের পদে নিয়োগের আগে জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্টের পরামর্শ নেন। পরে তিনি নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেন: জন স্কোফিল্ড (ভার্জিনিয়া), ড্যানিয়েল সিকলস (দ্য ক্যারোলিনাস), জন পোপ (জর্জিয়া, আলাবামা এবং ফ্লোরিডা), এডওয়ার্ড অর্ড (আর্কানসাস এবং মিসিসিপি), এবং ফিলিপ শেরিডান (লুইজিয়ানা এবং টেক্সাস)। মার্কিন গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) অবস্থান কী হবে।{{fix|text=what}} বেশিরভাগ গবেষক ১৮৬৫-১৮৭৭ সালকে পুনর্গঠনের সময়সীমা হিসেবে মেনে নেন। এই যুগটি ছিল বিতর্কিত এবং মার্কিন সমাজের বিভিন্ন অংশ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। কনফেডারেট অঙ্গরাজ্যগুলোকে কীভাবে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের মর্যাদা কী হবে — এই প্রশ্নে বিভিন্ন মতবিরোধ দেখা দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্বাধীনতার অর্থ নিয়েই দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সদ্য গঠিত রিপাবলিকান পার্টির একটি প্রধান অংশ চেয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কিছুটা সুরক্ষা, আর র‍্যাডিকালরা ]'চেয়েছিল দক্ষিণের সমাজব্যবস্থার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন। এই সময়ে কনজারভেটিভ (বিশেষত ডেমোক্র্যাটরা) বিশ্বাস করত যে, অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে এবং শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে পূর্ববর্তী সম্পর্কের ব্যবস্থাই টিকে থাকা উচিত। বেশিরভাগ আফ্রিকান-মার্কিন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং অনেকক্ষেত্রে জমির পুনর্বন্টন এবং কারখানা ব্যবস্থার ভাঙনের দাবি করেছিল। এই বিভিন্ন মতামতের মধ্য দিয়ে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত সময়কাল এক অর্থে আন্তবর্ণীয় গণতন্ত্রের একটি বিশাল পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এই সময়জুড়ে দক্ষিণে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সহিংসতাও বিরাজ করেছিল। == সংজ্ঞা == যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পুনর্গঠন বলতে সেই সময়কালকে বোঝায় যা মার্কিন গৃহযুদ্ধের পর শুরু হয়েছিল, যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কনফেডারেট স্টেটস অব আমেরিকার রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং এটি সেই প্রক্রিয়াকেও বোঝায় যার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয়। মার্কিন গৃহযুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য, উত্তরাঞ্চলের মধ্যপন্থী রিপাবলিকান এবং র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একমত হয়েছিল যে কনফেডারেসি এবং এর দাসপ্রথার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে হবে এবং যাতে এটি আর কখনও ফিরে আসতে না পারে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জন করা হবে এবং কখন তা অর্জিত হয়েছে তা নির্ধারণ করবে কে—এই বিষয়গুলো নিয়েই মূল বিতর্ক ছিল। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা বিশ্বাস করত যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনই ছিল স্লেভ পাওয়ার ধ্বংস করার জন্য অপরিহার্য এবং এটি অঙ্গরাজ্যগুলোর চিরস্থায়ী ঐক্য নিশ্চিত করার জন্য এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) নানা সমস্যার সমাধানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাসাচুসেটসের মার্কিন সিনেটর চার্লস সামনার একজন র‍্যাডিক্যাল রিপাবলিকান ছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেসকে দাসপ্রথার সাথে সাথে কনফেডারেসিও বিলুপ্ত করতে হবে, কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একসাথে শিক্ষা দিতে হবে। “মধ্যপন্থীরা” দাবি করেছিল যে, কনফেডারেটরা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করেছে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছে—এই নিশ্চয়তার মাধ্যমে তারা লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছে। আব্রাহাম লিংকন এবং অ্যান্ড্রু জনসনের মতো বেশিরভাগ মধ্যপন্থী চাইতেন শুধু কৃষ্ণাঙ্গ সাবেক সৈনিকদের ভোটাধিকার প্রদান করতে, অন্য আফ্রিকান-আমেরিকানদের নয়। দক্ষিণের রাজনৈতিক নেতারা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে, কিন্তু ১৮৬৭ সালে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যখন তাদের অঙ্গরাজ্য সরকারগুলোকে ফেডারেল সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সেগুলোর স্থলে র‍্যাডিক্যাল রিপাবলিকান সরকার গঠন করে, যেগুলোর নেতৃত্বে ছিল ফ্রিডম্যান, কার্পেটব্যাগার এবং স্ক্যালাওয়াগ। তাদের প্রধান হাতিয়ার ছিল ব্ল্যাক কোডস (১৮৬৫)। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার সীমিত করে অর্থনৈতিক ও শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণে চাকরির সুযোগ প্রায় ছিলই না। ইয়াঙ্কিরা দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য যুদ্ধ জিতলেও পুনর্গঠনকাল চাকরির জন্য সংগ্রাম করা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের উপকারে আসেনি। == পুনর্গঠনের সমস্যা == [[File:Wealth, per capita, in the United States, from 9th US Census (1872).jpg|thumb|upright|১৮৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু সম্পদ। দক্ষিণ ছিল বিপর্যস্ত।]] পুনর্গঠন ছিল দাসশ্রমের পরিবর্তে মুক্ত শ্রমের ভিত্তিতে দক্ষিণকে পুনর্গঠন করার একটি প্রয়াস। উত্তরের রাজনীতিকদের জন্য প্রধান প্রশ্ন ছিল—এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। গৃহযুদ্ধের শেষে কংগ্রেস ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রস্তাব করে। এটি দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়। সংশোধনীটি অনুমোদন করা ছাড়া তখন কোনো রাজ্যকে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। কিন্তু মিসিসিপির মতো কিছু রাজ্য সংশোধনীটি অনুমোদন না করেও অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৬৫ সালের ৬ ডিসেম্বরে সংশোধনীটি সংবিধানের অংশ হয়ে যায়। এই সময় বহু উত্তরাঞ্চলীয় ব্যক্তি নতুন জীবন শুরু করতে দক্ষিণে চলে যান। অনেকে কার্পেট দিয়ে তৈরি ব্রিফকেসে তাদের মালপত্র বহন করতেন। এজন্য কনফেডারেট দক্ষিণবাসীরা তাদের "কার্পেটব্যাগার" নামে ডাকত। দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গ রিপাবলিকানদের জন্যও তাদের কাছে একটি অবমাননাকর নাম ছিল—"স্ক্যালাওয়াগ"। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে "ব্ল্যাক কোডস" নামক আইন চালু হয়, যা মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মৌলিক মানবাধিকার সীমিত করে। এসব আইনের মধ্যে সাধারণ কিছু ছিল: জাত নির্ধারণে রক্তের ভিত্তি প্রযোজ্য—মানে শরীরে সামান্য পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ রক্ত থাকলেও তাকে কৃষ্ণাঙ্গ গণ্য করা হতো; মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গের অনুপস্থিতিতে একত্র হতে পারত না; গণশৌচাগারসহ অন্যান্য সুবিধা ছিল পৃথক।<ref>http://www.u-s-history.com/pages/h411.html</ref> এই সময় ছিল অত্যন্ত অস্থির। দেশজুড়ে বহু জাতিগত সহিংস দাঙ্গা শুরু হয়। দক্ষিণে উত্তরের প্রতি এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষ ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। === কু ক্লাক্স ক্লান === [[Image:Mississippi_ku_klux.jpg|thumb|upright|মিসিসিপিতে কু ক্লাক্স ক্লান]] *কু ক্লাক্স ক্লান" (Ku Klux Klan বা KKK) যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত বেশ কয়েকটি সংগঠনের নাম, যেগুলো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ইহুদিবিদ্বেষ, ক্যাথলিকবিদ্বেষ, বর্ণবাদ, সমকামবিদ্বেষ, সাম্যবাদবিরোধিতা এবং জাতীয়তাবাদ প্রচারে বিশ্বাসী ছিল। এই সংগঠনগুলো প্রায়শই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজ করত, যেমন: আগুনে ক্রুশ দাহ, লিঞ্চিং ইত্যাদি, যার লক্ষ্য ছিল আফ্রিকান-আমেরিকান এবং অন্যান্য সামাজিক ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর উপর নিপীড়ন চালানো। প্রথম কু ক্লাক্স ক্লান গঠিত হয় টেনেসির পুলাস্কিতে, ১৮৬৬ সালের মে মাসে। এক বছর পর, ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাশভিলে স্থানীয় ক্লানগুলোকে একত্র করে একটি সাধারণ সংগঠন গঠিত হয়। অধিকাংশ নেতাই ছিলেন কনফেডারেট সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং প্রথম "গ্র্যান্ড উইজার্ড" ছিলেন নাথান ফরেস্ট, যিনি গৃহযুদ্ধে একজন বিশিষ্ট জেনারেল ছিলেন। পরবর্তী দুই বছরে, মুখোশ পরা ক্লান সদস্যরা, সাদা টুপি ও চাদরে আবৃত হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এবং সহানুভূতিশীল শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন ও হত্যা করে। তারা অভিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করে, যাদের তারা র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানদের নির্বাচনের জন্য দায়ী মনে করত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে কু ক্লাক্স ক্লান উত্তর ক্যারোলিনা, টেনেসি এবং জর্জিয়ায় শ্বেতাঙ্গ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংগঠনের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৮৬৬ সালে। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কনফেডারেট সেনার সাবেক সৈনিকেরা। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুনর্গঠনের বিরোধিতা। তারা "কার্পেটব্যাগার" ও "স্ক্যালাওয়াগ" দমন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের দমন করার চেষ্টা করে। ক্লান দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। দক্ষিণের অভিজাত শ্রেণি ক্লানকে ত্যাগ করে, কারণ তারা এটি ফেডারেল সেনার দক্ষিণে থাকার একটি অজুহাত হিসেবে দেখত। সংগঠনটি ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৮৭১ সালের "সিভিল রাইটস অ্যাক্ট" (যা "কু ক্লাক্স ক্লান অ্যাক্ট" নামেও পরিচিত) এর আওতায় প্রেসিডেন্ট উলিসিস এস. গ্রান্টের দৃঢ় পদক্ষেপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ১৮৬৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস "ফ্রিডম্যান ব্যুরো" প্রতিষ্ঠা করে। এর লক্ষ্য ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের স্বার্থ রক্ষা করা। এর মধ্যে ছিল নতুন চাকরি খুঁজতে সাহায্য করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। পরবর্তী এক বছরে ব্যুরো প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ৪,০০০ স্কুল, ১০০ হাসপাতাল স্থাপন করে এবং দাসদের জন্য আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা পুনর্গঠনের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় এবং ১৮৬৭ সালের পর আরও সংগঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্লান পুনর্গঠন ব্যর্থ করতে এবং মুক্তি পাওয়া দাসদের দমন করতেই কাজ করত। কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাস এতটাই প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, রাতের বেলা হেনস্তা, চাবুক মারা, মারধর, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল সাধারণ ঘটনা। ক্লানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক—যদিও তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর অত্যাচার করত যারা তাদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়াত। সক্রিয় রিপাবলিকানরা ছিল অন্ধকার রাতের আইনবহির্ভূত আক্রমণের মূল লক্ষ্য। যখন দক্ষিণ ক্যারোলিনার একজন স্ক্যালাওয়াগের অধীনে কাজ করা মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা ভোট দিতে শুরু করে, তখন সন্ত্রাসীরা সেই বাগানে গিয়ে, এক ভুক্তভোগীর ভাষায়, “যে যত কৃষ্ণাঙ্গকে পেয়েছে, সবাইকে চাবুক মেরেছে।” == লিংকন ও পুনর্গঠন == [[File:Waud - 1867 - The First Vote.jpg|thumb|upright|আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রথমবারের মতো ভোটদান। জিম ক্রো আইন পরে আফ্রিকান-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার পুনরায় কেড়ে নিতে প্রণীত হয়।]] লিংকন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে কখনোই ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি, কারণ সংবিধান অনুযায়ী তারা তা করতে পারে না। তিনি আশা করেছিলেন যে বিচ্ছিন্ন হওয়া ১১টি অঙ্গরাজ্য কিছু রাজনৈতিক আনুগত্যের শর্ত পূরণ করে পুনরায় "পুনঃঅঙ্গীভূত" হতে পারে। লিংকন পুনঃঅঙ্গীভুক্তি নিয়ে অনেক আগেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। ১৮৬৩ সালে তাঁর জারি করা ক্ষমার ঘোষণা ও পুনর্গঠন প্রস্তাবে তিনি একটি সহজ প্রক্রিয়া স্থাপন করেন, যাতে ইউনিয়নপন্থীরা রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসতে পারে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নয়। এই পরিকল্পনায় সকল দক্ষিণী (সে সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের বাদে) যারা ভবিষ্যতে ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেবে, তাদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান করা হতো। ১৮৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানকারী জনগণের ১০ শতাংশ এই শপথ গ্রহণ করলেই কোনো অঙ্গরাজ্যকে বৈধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যেত এবং দাসমুক্তির নীতিকে মেনে একটি সরকার গঠন করা যেত। লিংকনের এই রাষ্ট্রপতি পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা দাবি করেছিল এটি খুবই কোমল। তারা ১৮৬৪ সালে ওয়েড-ডেভিস বিল পাশ করে, যা অনেক কঠোর শর্ত আরোপ করে। এই বিলে ৫০ শতাংশ ভোটারকে আনুগত্যের শপথ নিতে বলা হয় এবং শুধুমাত্র যারা কখনো কনফেডারেসিকে সমর্থন করেননি তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন বা ফেডারেল চাকরি পেতেন। লিংকন এই বিলটি গ্রহণ না করে পকেট ভেটো করেন। ১৮৬৫ সালের মার্চে কংগ্রেস ফ্রিডম্যান ব্যুরো নামে একটি নতুন সংস্থা গঠন করে। এই সংস্থা কৃষ্ণাঙ্গ ও দরিদ্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা, চাকরি খোঁজার সহায়তা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করত। এটি ছিল সে সময়ের বৃহত্তম সরকারি সাহায্য কার্যক্রম। এটি ছিল প্রথম বড় আকারের ফেডারেল কল্যাণ কর্মসূচি। [[File:Lincoln assassination slide c1900 - Restoration.jpg|thumb|রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকাণ্ডের চিত্র। এই ভয়াবহ ঘটনায় অ্যান্ড্রু জনসন রাষ্ট্রপতি হন, যার ফলে দক্ষিণের পুনর্গঠনের ধারা আমূল পাল্টে যায়।]] ১৮৬৪ সালে লিংকনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হন টেনেসির অ্যান্ড্রু জনসন, যিনি ছিলেন একমাত্র দক্ষিণী সেনেটর যিনি ইউনিয়নের প্রতি অনুগত ছিলেন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল লিংকন নিহত হলে জনসন রাষ্ট্রপতি হন এবং কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানদের জন্য তিনি একটি প্রধান বাধা হয়ে ওঠেন। তারা দক্ষিণের সরকার ও অর্থনীতিকে পুরোপুরি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছিলেন, যা আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করত। ১৮৬৫ সালের মে মাসে জনসন নিজস্ব এক ঘোষণা জারি করেন, যা লিংকনের ঘোষণার সঙ্গে খুবই মিল ছিল। তিনি ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেওয়া প্রায় সকল কনফেডারেটকে ক্ষমা প্রদানের প্রস্তাব দেন এবং ফ্রিডম্যানদের জন্য জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত শার্মানের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। জনসন রাষ্ট্রপতি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিকল্পনার আওতায় সব প্রাক্তন কনফেডারেট অঙ্গরাজ্য পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গীভূত হয়। ১৮৬৬ সালে জনসন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল ভেটো করেন — একটি ছিল ফ্রিডম্যান ব্যুরোর সুরক্ষা জোরদার করার জন্য এবং অন্যটি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য একটি নাগরিক অধিকার বিল। পরে রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে যে মধ্যপন্থী ও র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একত্রিত হলে তারা জনসনের ভেটো অতিক্রম করতে পারবে, এবং তারা ১৮৬৬ সালে নাগরিক অধিকার আইন এবং চতুর্দশ সংশোধনী পাশ করে। এই সংশোধনী যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিকে নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে এবং প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে তাদের অধিকার রক্ষা করতে বাধ্য করে। নাগরিক অধিকার আইন দক্ষিণে প্রচলিত ব্ল্যাক কোডসমূহকে অবৈধ ঘোষণা করে। জনসনের ভেটোর পরও কংগ্রেস ১৮৬৭ সালে তিনটি পুনর্গঠন আইন পাশ করে। এতে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোকে পাঁচটি সামরিক জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং সেখানে ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। প্রতিটি জেলার সামরিক কমান্ডার নিশ্চিত করতেন যে সংশ্লিষ্ট রাজ্য চতুর্দশ সংশোধনী অনুমোদন করছে এবং বর্ণবৈষম্যহীন ভোটাধিকার প্রদান করছে। টেনেসি ১৮৬৬ সালেই সংশোধনী অনুমোদন করায় এটি সামরিক জেলার বাইরে রাখা হয়। ১৮৬৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদ অ্যান্ড্রু জনসনকে অভিশংসিত করে। এর আগে কংগ্রেস টেনিওর অফ অফিস অ্যাক্ট পাশ করেছিল (জনসনের ভেটোর পর), যেখানে বলা হয় রাষ্ট্রপতির নিয়োগে সিনেটের পরামর্শ ও সম্মতির মাধ্যমে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার জন্যও একই পরামর্শ ও সম্মতি লাগবে। জনসন এই আইনের সাংবিধানিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন (এবং ১৯২৬ সালে সুপ্রিম কোর্টও একমত হয়) এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আইনটি লঙ্ঘন করেন একটি পরীক্ষা করার জন্য। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তাঁকে অভিশংসন করে, কিন্তু সেনেট এক ভোটের ব্যবধানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। ১৮৬৮ সালের নির্বাচনে উলিসিস গ্রান্ট রিপাবলিকান প্রার্থী হন এবং অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেন। রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে, তারা যদি দ্রুত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত না করে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। তাই কংগ্রেস ১৮৬৯ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে, যা বর্ণের কারণে পুরুষ নাগরিকদের ভোটাধিকার অস্বীকার করা যাবে না বলে বলে। এটি নারীবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় আঘাত ছিল, কারণ এই প্রথমবার লিঙ্গকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রিপাবলিকানরা দাবি করে, যদি এই সংশোধনীতে বর্ণ ও লিঙ্গ উভয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকত, তবে এটি কংগ্রেসে পাশ হতো না। === কংগ্রেসে আফ্রিকান-আমেরিকানরা === [[File:Hiram Rhodes Revels - Brady-Handy-(restored).png|thumb|upright|হাইরাম রোডস রেভেলস, কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান]] এই সময়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনেক আফ্রিকান-আমেরিকান কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। পুনর্গঠন আইন অনুসারে ফেডারেল সেনাবাহিনী দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রেরিত হয় এবং সাউথ ক্যারোলাইনা ও মিসিসিপিতে আফ্রিকান-আমেরিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং লুইজিয়ানা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও আলাবামায় শ্বেতাঙ্গদের প্রায় সমান সংখ্যায় ছিল, ফলে এসব রাজ্য থেকে কৃষ্ণাঙ্গরা কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। জন উইলিস মেনার্ড ১৮৬৮ সালে লুইজিয়ানার ২য় জেলা থেকে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যালেব হান্ট নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান এবং উভয় প্রার্থীর বক্তব্য শুনে প্রতিনিধি পরিষদ কাউকেই আসন দেয়নি। হাইরাম রেভেলস মিসিসিপির সিনেট দ্বারা ৮১-১৫ ভোটে নির্বাচিত হন, গৃহযুদ্ধ চলাকালে পদত্যাগকারী সেনেটর আলবার্ট জি. ব্রাউনের শূন্য আসন পূরণে। তিনি ১৮৭০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৭১ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। জোসেফ রেইনি ১৮৭০ সালের নির্বাচনে সাউথ ক্যারোলাইনার ১ম জেলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে উইলিয়াম এল. ডসনের আগে পর্যন্ত কংগ্রেসে দীর্ঘতম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য ছিলেন। ব্লাঞ্চ ব্রুস ১৮৭১ সালে মিসিসিপির স্টেট সিনেট দ্বারা পূর্ণ মেয়াদে মার্কিন সিনেটে নির্বাচিত হন। ব্রুস ছিলেন একমাত্র প্রাক্তন দাস, যিনি মার্কিন সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন। == আলাস্কা ক্রয় == [[File:Alaska purchase.jpg|thumb|১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ আলাস্কা চুক্তি স্বাক্ষরের একটি চিত্রকর্ম।]] ১৭৭০-এর দশক থেকে রুশ সাম্রাজ্য আলাস্কা উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে।<ref>{{cite web |title=Russians in Alaska and U.S. Purchase Federal Indian Law for Alaska Tribes |url=https://www.uaf.edu/tribal/112/unit_1/russiansinalaskaanduspurchase.php |website=www.uaf.edu |accessdate=18 September 2020}}</ref> ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ মার্কিন সরকার রুশ সাম্রাজ্য থেকে আলাস্কা ৭.২ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।<ref name="rochesteralaska">{{cite web |title=The myth—and memorabilia—of Seward's Folly |url=https://www.rochester.edu/newscenter/sewards-folly-308482/ |website=NewsCenter |accessdate=18 September 2020 |date=29 March 2018}}</ref> সে সময় এই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে উপহাস করা হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন সেখানে সোনা ও তেলের সন্ধান মেলে, তখন এটি একটি লাভজনক চুক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়।<ref name="rochesteralaska"/> সেই অঞ্চলে থাকা অল্পসংখ্যক রুশ বসবাসকারীকে তিন বছরের মধ্যে রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার অথবা থেকে গিয়ে আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।<ref name="rochesteralaska"/> == ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা == [[File:Panic of 1873 bank run.jpg|thumb|upright|১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হুড়োহুড়ি।]] ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা ছিল গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত প্রথম মন্দা। এই মন্দা আন্তর্জাতিকভাবে রূপার চাহিদা হ্রাস পাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়া যুদ্ধের পর জার্মানি রুপা মানদণ্ড ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৭৩ সালের কয়েনেজ আইন পাশ করে, যা আমাদের মুদ্রা ব্যবস্থাকে সোনা ও রুপার পরিবর্তে কেবলমাত্র সোনার ওপর নির্ভর করে তৈরি করে। এই আইন রুপার মান তৎক্ষণাৎ কমিয়ে দেয় এবং পশ্চিমাঞ্চলের খনিশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৮৭৩ সালের মন্দার আরেকটি কারণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেলপথ কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বিনিয়োগ, যা দ্রুত লাভ এনে দিতে পারেনি। জে কুক অ্যান্ড কোম্পানি নামক একটি মার্কিন ব্যাংক ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ সালে দেউলিয়া ঘোষণা করে। ব্যাংকটি অতিরিক্ত রেলপথ ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ থেকে দশ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেই মন্দার সময়ে ৩৬৪টি রেলপথ কোম্পানির মধ্যে ৮৯টি ব্যর্থ হয়। মন্দার সময়ে রিয়েল এস্টেটের মূল্য, মজুরি এবং কর্পোরেট মুনাফা হ্রাস পায়। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এই মন্দায় বন্ধ হয়ে যায়। এই মন্দা প্রেসিডেন্ট গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। == ১৮৭৭ সালের মহা রেল ধর্মঘট == [[File:Harpers 8 11 1877 Blockade of Engines at Martinsburg W VA.jpg|thumb|ধর্মঘট চলাকালে ইঞ্জিনগুলোর পথ অবরোধ।]] ১৮৭৭ সালের ১৪ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মার্টিন্সবার্গে এই ধর্মঘট শুরু হয়। এই ধর্মঘটের কারণ ছিল বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহিও রেলরোড কোম্পানির বেতন কর্তন। শ্রমিকরা রেলপথ চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। ধর্মঘট দমন করতে রাজ্য মিলিশিয়া পাঠানো হলেও তারা ধর্মঘটকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। গভর্নর হেনরি ম্যাথিউস ধর্মঘট দমন ও রেল চলাচল পুনরায় শুরু করতে ফেডারেল সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানান। ধর্মঘটটি কুম্বারল্যান্ড, মেরিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সেনারা ধর্মঘটকারীদের একটি জনতার ওপর গুলি চালায় এবং দশজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। এই ধর্মঘট ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর, পিটসবার্গ এবং এমনকি সেন্ট লুইস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মঘটে কোটি কোটি ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয় এবং বহু প্রাণহানি ঘটে। এই মহা ধর্মঘট ৪৫ দিন স্থায়ী হয়, শেষ পর্যন্ত শহর থেকে শহরে ফেডারেল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এটি দমন করা হয়। == রিপাবলিকানদের ক্ষমতাচ্যুতি == গ্রান্টের শাসনামলেই রিপাবলিকান পার্টির পতনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ফেডারেল পদ ও মন্ত্রিসভায় বিপুল সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেকেই পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যরা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ক্লান্ত হয়ে দক্ষিণের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্মিলনের প্রস্তাব দেন। এরা নিজেদের 'লিবারেল রিপাবলিকান' বলে পরিচয় দেন এবং ১৮৭২ সালে গ্রান্টের বিরুদ্ধে হোরেস গ্রিলিকে মনোনয়ন দেন। ডেমোক্র্যাটরাও গ্রিলিকে সমর্থন করে। তবে ব্যাপক সমর্থন সত্ত্বেও, গ্রান্ট ১৮৭২ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হন। নির্বাচনের মৌসুমে, লিবারেল রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে 'অ্যামনেস্টি অ্যাক্ট' (ক্ষমাপ্রদান আইন) পাশ করাতে ব্যস্ত ছিল এবং ১৮৭২ সালের মে মাসে এই আইন পাশ হয়। এই আইনটি অধিকাংশ সাবেক কনফেডারেট নাগরিকদের ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ উন্মুক্ত করে। এর ফলে দক্ষিণে ডেমোক্রেটদের রাজনৈতিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে। শীঘ্রই ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনার সরকারগুলো ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকানদের সংখ্যা ছিল বেশি, সেসব স্থানে কু ক্লুক্স ক্লান (গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠী) রিপাবলিকানদের আতঙ্কিত করে তোলে এবং তাদেরকে ডেমোক্রেটদের ভোট দিতে অথবা ভোট না দিতে বাধ্য করে। ১৮৭৬ সালের মধ্যে দক্ষিণে রিপাবলিকানরা কেবল তিনটি রাজ্যে—ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা এবং সাউথ ক্যারোলিনায়—ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়, যার সবকটিতেই তখনো ইউনিয়ন সেনা মোতায়েন ছিল। গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদকালে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেলে রিপাবলিকানদের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। জনসাধারণের কাছে সবচেয়ে আঘাতকর ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধসচিবকে জড়িত করে কেলেঙ্কারির ঘটনা। একই বছরে দেশ একটি মহামন্দার কবলে পড়লে উত্তরাঞ্চলের জনমত রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে চলে যায়। ১৮৭৪ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানরা উভয় কক্ষে ব্যাপক আসন হারায় এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর পূর্ববর্তী সময়ের পর এই প্রথম ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের একটি কক্ষে (প্রতিনিধি পরিষদ) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ফলে কংগ্রেস আর পুনর্গঠনের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকল না। [[Image:A certificate for the electoral vote for Rutherford B. Hayes and William A. Wheeler for the State of Louisiana dated 1876 part 6.jpg|thumb|upright|১৮৭৬ সালের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রাদারফোর্ড বি. হেইস ও উইলিয়াম এ. হুইলারের নির্বাচনী ভোটের প্রত্যয়নপত্র]] ১৮৭৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা নিউ ইয়র্কের গভর্নর এস. জে. টিলডেনকে প্রার্থী করে এবং রিপাবলিকানরা ওহাইওর গভর্নর রাদারফোর্ড বি. হেইসকে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনের দিন দেখা যায়, টিলডেন ২৫০,০০০-এরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু সাউথ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা এবং লুইজিয়ানার যথাক্রমে সাত, চার ও আটটি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় (এই তিন রাজ্যে তখনো উত্তরীয় সেনা মোতায়েন ছিল)। এছাড়াও, ওরেগনের তিনটি ইলেকটোরাল ভোটের একটি নিয়েও বিরোধ দেখা দেয়। যদি হেইস সব ২০টি ভোট পেতেন, তাহলে তিনি নির্বাচনে জয়ী হতেন। কংগ্রেস একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে, যাতে সাতজন ডেমোক্র্যাট, সাতজন রিপাবলিকান এবং একজন স্বাধীন সদস্য ছিলেন। তবে স্বাধীন সদস্য পদত্যাগ করলে তার স্থানে একজন রিপাবলিকান নিযুক্ত হন। কমিশন দলীয় বিভাজনের ভিত্তিতে ভোট দিয়ে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করে, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হুমকি দেয়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা গোপনে একত্র হয়ে একটি সমঝোতা খসড়া করেন, যা ‘১৮৭৭ সালের সমঝোতা’ নামে পরিচিত। এতে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, দক্ষিণ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয় এবং দক্ষিণে আরও সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়; এটি পুনর্গঠনের অবসান নির্দেশ করে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সমঝোতা ব্যর্থ হয়, কারণ ডেমোক্র্যাটরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং দক্ষিণে আফ্রিকান আমেরিকানদের অধিকারের সুরক্ষা দেয়নি। পুনর্গঠন-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণে ডেমোক্র্যাট ‘রিডিমার’দের উত্থান ঘটে। রিডিমাররা দক্ষিণে রিপাবলিকান শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রতিজ্ঞা করে। তারা ‘জিম ক্রো’ আইন প্রণয়ন করে, যা কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের পৃথকীকরণ করে এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সীমিত করে, যা পরবর্তী শতাব্দীর আগে বিলুপ্ত হয়নি। জিম ক্রো আইনকে চ্যালেঞ্জ করা হয় "প্লেসি বনাম ফার্গুসন" মামলায়। এতে সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে বৈধতা দেয় এই শর্তে যে পৃথক সুবিধাসমূহ হতে হবে "পৃথক কিন্তু সমান"। == সিঞ্চিমইয়াংগো == [[File:Sujagi.jpg|thumb|১৮৭১ সালে ইউএসএস কলোরাডোতে বন্দী হওয়া সুজাগি, একটি কমান্ডিং জেনারেলের পতাকা।]] ১৮৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোরিয়ার প্রতি অভিযান, যাকে সিঞ্চিমইয়াংগো বা 'সিনমি বর্ষের পশ্চিমা গোলযোগ' বলা হয়, ছিল কোরিয়ায় প্রথম আমেরিকান সামরিক অভিযান। এটি প্রধানত কোরিয়ার গাংহওয়া দ্বীপ ও এর আশেপাশে সংঘটিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র একটি সামরিক অভিযাত্রী বাহিনী কোরিয়ায় প্রেরণ করেছিল একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলকে সহায়তা করার জন্য, যা কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, জেনারেল শেরম্যান বাণিজ্যিক জাহাজের ভাগ্য নির্ণয় এবং জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার নাবিকদের সাহায্যের জন্য একটি চুক্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী জোসিয়ান রাজবংশের সরকার ও চাপদাতা আমেরিকানদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, যা কূটনৈতিক অভিযানকে সশস্ত্র সংঘর্ষে পরিণত করে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সামান্য বিজয় লাভ করলেও, কোরিয়ারা দেশটি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানায়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যথেষ্ট ক্ষমতা বা শক্তি ছিল না, তারা তাদের কূটনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। == ১৯শ শতাব্দীর ধর্ম == === ইহুদি নতুন তরঙ্গ অভিবাসন === [[File:Welcome to the land of freedom.png|thumb|১৮৮৭ সালের ছবি যা ইউরোপীয় অভিবাসীদের নিউইয়র্ক সিটিতে আগমন দেখায়।]] ১৮২০ থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে প্রায় ২,৫০,০০০ ইহুদি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অভিবাসন ছিল কেবল ইউরোপীয় অর্থনীতির সঙ্কটের কারণে নয়, ১৮৪৮ সালের জার্মান রাজ্যের লিবারেল বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণে।<ref>Stone, Amy. ''Jewish Americans''. Milwaukee, Wisconsin: World Almanac Library, 2007. Pp. 6-9.</ref> রেলপথ এবং বৃহৎ স্টিমার জাহাজগুলো ১৮০০ এবং ১৯০০ সালের শেষের দিকে আমেরিকায় অভিবাসনকে সহজতর করে। তবু যাত্রাটি ছিল অস্বচ্ছন্দকর, অসুস্থকর ও বিপজ্জনক। ধনী পরিবার যারা শীর্ষ বর্গের কামরায় ছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত কেবিন ছিল, কিন্তু অধিকাংশ অভিবাসী স্টিয়ারেজ শ্রেণীতে যাতায়াত করতেন: তিনশো মানুষ, পুরুষ, নারী ও শিশু, ঘনিষ্ঠভাবে গাদাগাদি করে, দ্বৈত বা ত্রৈত বেডে ঘুমাতেন। বেডগুলো প্রায় ছয় ফুট লম্বা এবং দুই ফুট চওড়া ছিল, বেডের মাঝে মাত্র দুই-আধা ফুটের ব্যবধান। তাদের সামান্য মালপত্র বেডের ওপর রাখা হতো। পানীয় জল ছিল খুবই কম বা ছিল না, দুর্গন্ধ অসহনীয় ছিল, এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না। এক প্রত্যক্ষদর্শী সোফিয়া ক্রেইটসবের্গ বলেছিলেন, "আপনি যখন মাথা খোঁচাতেন [...] তখন হাতেই লাউস ধরতো।"<ref>Stone, p.15</ref> এই ঘনিষ্ঠ পরিবেশ, অভাব-অনটন ও দীর্ঘ যাত্রার চাপের কারণে রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটত। ইহুদিরা অশুদ্ধ (কোষের নিয়মে নিষিদ্ধ) মাংস ও স্যুপ পরিবেশন পেত, যা অনেকেই খেতেন না। তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা শুকনো ফল, শক্ত রুটি, বা বেয়ানো পনির খানিক খেতেন।<ref>Stone.</ref> অন্য প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কয়েকটি বন্দর ছিল। ১৮৫৫ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত এটি মূলত ক্যাসেল গার্ডেন ছিল, ম্যানহাটনের প্রান্তে, যা পরবর্তীতে নিউইয়র্ক সিটি হিসেবে পরিচিত। ১৮৯০ সাল থেকে ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী এলিস দ্বীপে প্রবেশ করত।<ref>http://genealogy./od/ports/p/castle_garden.htm Retrieved on March 15, 2015.</ref> এই জায়গাগুলোতে মানুষকে যথাযথভাবে জাহাজ, উৎপত্তি দেশ, পূর্ব কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হতো।<ref>http://www.castlegarden.org/manifests.php Retrieved on March 15, 2015.</ref> === ক্যাথলিক আমেরিকা === [[File:GibbonsPhotoStanding.jpg|thumb|upright|জেমস গিবন্স, ১৮৬০ থেকে ১৯০০ সালের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী ক্যাথলিক নেতা।]] [[File:The American River Ganges (Thomas Nast cartoon).jpg|thumb|১৮৭৫ সালের একটি রাজনৈতিক কার্টুন, যা ক্যাথলিক চার্চকে আমেরিকান পাবলিক শিক্ষার শত্রু হিসেবে দেখায়। থমাস নাস্ট ভয় পেতেন যে সরকারী তহবিল পাবলিক শিক্ষার পরিবর্তে ক্যাথলিক শিক্ষাকে সমর্থন করবে।]] ==== ক্যাথলিক অভিবাসন ==== আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্য (বিশেষ করে পোল্যান্ড) থেকে ব্যাপক অভিবাসনের ফলে ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৪০ থেকে ১৮৫১ সালের মধ্যে আয়ারল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ ও অত্যাচার চলছিল। অন্যান্য অভিবাসন জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে হয়েছিল। ১৮৫০ সালের মধ্যে ক্যাথলিক ধর্ম যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সেক্টর হয়ে ওঠে; ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পায়, প্রধানত অভিবাসনের কারণে। এই ব্যাপক ক্যাথলিক অভিবাসনের ফলে ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ==== নির্যাতন ==== আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টরা ক্যাথলিকদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকত। গৃহযুদ্ধের আগে আমেরিকায় অ্যান্টি-ক্যাথলিক পূর্বাগ্রহ "নোথিংস" দল এবং আমেরিকার অরেঞ্জ ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে প্রকাশ পেত। যুদ্ধের পর আমেরিকান প্রোটেকটিভ অ্যাসোসিয়েশন ও কু ক্লাক্স ক্লান ক্যাথলিকদের নিয়মিতভাবে নির্যাতন ও বৈষম্য করত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ফিলাডেলফিয়ার নেটিভিস্ট দাঙ্গা, "ব্লাডি মান্ডে", এবং নিউইয়র্ক সিটির অরেঞ্জ দাঙ্গা ১৮৭১ ও ১৮৭২ সালে।<ref>Michael Gordon, The Orange riots: Irish political violence in New York City, 1870 and 1871 (1993</ref> ==== নেটিভিজম ==== কঠোর অ্যান্টি-ক্যাথলিক কার্যক্রম নেটিভিজমের অনুভূতিকে প্রকাশ করত, যা সমস্ত "দেশজ জন্মানো আমেরিকান পুরুষদের" বিদেশিদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে উৎসাহিত করত। (অর্থাৎ, এখানে আসল দেশীয় আমেরিকানদের নয়, বরং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত প্রোটেস্ট্যান্টদের কথা বলা হচ্ছে যারা এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন।) প্রথম নেটিভিস্ট প্রকাশনা ছিল ''The Protestant''; এর প্রথম সংখ্যা ১৮৩০ সালের ২ জানুয়ারি বিক্রি হয়। সম্পাদক ছিলেন জর্জ বর্ন, যিনি লিখেছিলেন, "পত্রিকার লক্ষ্য ক্যাথলিক বিশ্বাসের সমালোচনায় কেন্দ্রীভূত।"<ref>Baker, Sean. ''The American Religious Experience, American Nativism, 1830-1845.''</ref> অ্যান্টি-ক্যাথলিক বক্তব্য মাঝে মাঝে সহিংসতায় পরিণত হতো; ১৮৩৪ সালের আগস্ট ১০ তারিখে ৪০-৫০ জন মানুষ ইউর্সুলাইন কনভেন্ট স্কুলের বাইরে জমায়েত হয়ে সেটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।<ref>Baker, Sean</ref> ১৮৩৪ সালে এফ.বি. মরস, যিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অধ্যাপক ছিলেন এবং নেটিভিস্ট নেতা ছিলেন, "The Foreign Conspiracies Against the Liberties of the United States" গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষার কথা বলেন। প্রোটেস্ট্যান্টদের ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে আশঙ্কা ও ভয় মূলত ক্যাথলিক ধর্মের রাজতান্ত্রিক প্রবণতা নিয়ে ছিল। এই সময়ে শহরগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল অভিবাসীদের ব্যাপক আগমনের কারণে যারা একত্রিত হয়ে একই এলাকায় বসবাস করত। নেটিভিস্টরা এটিকে "গোষ্ঠীবদ্ধতা" হিসেবে দেখত এবং "আমেরিকানীকরণ" এড়ানোর বা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বলে মনে করত। মরস এবং তাঁর সমকালীন লিম্যান বীচারদের সফলতার সঙ্গে নেটিভিস্ট আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে জনতা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য না করে কাল্পনিক কাহিনীকেও সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৮৩৬ সালে মারিয়া মঙ্ক "Awful Disclosures of the Hotel Dieu Nunnery of Montreal" নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এতে তিনি ক্যাথলিক ধর্মের সঙ্গে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন পাদরিদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক এবং নন ও শিশুদের হত্যা ঘটেছিল; বইয়ের শেষ অংশে তিনি তার গর্ভে থাকা শিশুকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গেছেন। মঙ্কের মা এই লেখাকে অস্বীকার করেন এবং বলেন, মারিয়া কখনো কোন কনভেন্টে ছিলেন না, এবং মারিয়ার শৈশবে যে মস্তিষ্ক আঘাত হয়েছিল তা তার গল্পের কারণ হতে পারে। উত্তর-মধ্য আমেরিকা ও দেশের উত্তরের অংশে ক্যাথলিকদের স্বাধীন চিন্তার অক্ষম বলে মনে করা হত এবং তাদের "অ্যান্টি-আমেরিকান প্যাপিস্ট" বলা হতো, কারণ তারা রোমের পোপের আদেশ পালন করতেন বলে ধারণা ছিল। মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে মেক্সিকান ক্যাথলিকদের "প্যাপিস্ট কুসংস্কার" কারণে মিডিয়ায় হাস্যকর বা বোকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমেরিকার ক্যাথলিকদের সম্পর্কে সাধারণ মনোভাবের কারণেই প্রায় ১০০ জন আমেরিকান ক্যাথলিক, যাদের বেশিরভাগই সদ্য অভিবাসিত আইরিশ, মেক্সিকানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন; তাদের "সেন্ট প্যাট্রিকস ব্যাটালিয়ন" == শিক্ষা == [[File:General Oliver Otis Howard House - Howard University.jpg|thumb|জেনারেল অলিভার ওটিস হাওয়ার্ড হাউস, ১৮৬৭ সালে নির্মিত এবং হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও বিদ্যমান সবচেয়ে প্রাচীন ভবন।]] সারাদেশে প্রাক্তন দাসেরা শিক্ষা অর্জনের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। সব বয়সের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বইয়ে কী লেখা আছে তা জানার প্রবল আগ্রহ ছিল, যেগুলো একসময় শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্যই অনুমোদিত ছিল। স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা নিজেদের স্কুল শুরু করে এবং দিনে ও রাতে ক্লাস গুলো উপচে পড়ত। তারা গুঁড়ি গুঁড়ি বসত গাছের গুঁড়ির আসনে বা মাটির মেঝেতে। পুরানো পঞ্জিকা বা বাতিল হয়ে যাওয়া অভিধানে তারা অক্ষর চর্চা করত। দাসত্বের অজ্ঞতা থেকে মুক্তির প্রবল ইচ্ছার কারণে, দারিদ্র্য উপেক্ষা করেও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মাসে $১ বা $১.৫০ করে টিউশন ফি দিত।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গরা এবং তাদের শ্বেতাঙ্গ মিত্ররাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল, যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষক, পাদ্রি ও পেশাজীবী নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমেরিকান মিশনারি অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ফিস্ক এবং আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাতটি কলেজ ১৮৬৬ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রিডম্যান ব্যুরো ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। মেথডিস্ট, ব্যাপটিস্ট ও কনগ্রেগেশনালিস্টদের মতো উত্তরাঞ্চলীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও ডজনখানেক ধর্মতাত্ত্বিক ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজকে সমর্থন করে।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাথমিক শিক্ষা মূলত মিশনারিদের মাধ্যমে আসত, যাদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন কৃষ্ণাঙ্গদের শিক্ষার হার খুবই কম ছিল, যতক্ষণ না আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে মুক্তিপত্র ঘোষণা করেন। ১৮৬৭ সালে শিক্ষা বিভাগ গঠিত হয়, যাতে আরও কার্যকরী বিদ্যালয় ব্যবস্থা চালু করা যায়। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের জন্য “লিবারেল আর্টস ও বিজ্ঞানে” শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৯ সালে বোস্টনে প্রথম পাবলিক স্কুল ডে পালিত হয়। == প্রযুক্তি == [[File:Earlyoilfield.jpg|thumb|পেনসিলভানিয়ার একটি তেলক্ষেত্র।]] গৃহযুদ্ধের ঠিক আগে পেনসিলভানিয়ার টাইটাসভিল ও আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয় এবং যুদ্ধের পরে এটি ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে তেল শুধুমাত্র ঔষধি কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি শিল্পক্ষেত্রে এবং তিমির তেলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বিপজ্জনক ও ব্যয়বহুল তিমি শিকার শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু শহর রাতের আলো জ্বালানোর জন্য কয়লা গ্যাস ব্যবহার করলেও অন্য শহরগুলো তেল বাতি ব্যবহার শুরু করে এবং বড় বড় শহরগুলো রাতের আলোতে আলোকিত হয়। পেট্রোলিয়াম, বাতি তেল (বড় ইঞ্জিন বাতির জন্য) এবং যন্ত্র তেল রেলপথের কার্যকারিতা বাড়ায়। [[File:East and West Shaking hands at the laying of last rail Union Pacific Railroad - Restoration.jpg|thumb|প্রথম ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রেলরোড, ইউটাহ, ১৮৬৯]] দূরত্ব অতিক্রম করে তথ্য পরিবহন করা যেত টেলিগ্রাফের মাধ্যমে। ১৮৭০ ও ১৮৮০ দশকে আবিষ্কর্তারা মানুষের কণ্ঠস্বর পরিবহন করার প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এবং এলিশা গ্রে। ১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যন্ত্র ব্যবহার করে একটি স্টিলের রিডের শব্দ প্রেরণ করেন। ১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলের এক সহযোগী তাঁর পেটেন্ট ওয়াশিংটন ডিসির পেটেন্ট অফিসে জমা দেন, ঠিক একই দিনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এলিশা গ্রে ও পেটেন্ট দাখিল করেন। তিন সপ্তাহ পর, ৭ মার্চ, বেলের পেটেন্ট জয়ী হয়ে অনুমোদিত হয়। == যুদ্ধের পরে আদিবাসীরা == গৃহযুদ্ধ চলাকালীন আদিবাসীদের সাথে যে অবিচার হয়েছিল তা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দূর হয়নি। মার্কিন জাতীয় সরকার স্পষ্ট করেছিল যে এই মানুষগুলো যদিও এই মহাদেশের স্থানীয় অধিবাসী, তবে তারা দেশের নাগরিক হবে না। আদিবাসীদের পশ্চিমের আর্থসীমার বাইরে সংরক্ষিত জমিতে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়। তাদের চলাচল সরকারি এজেন্টরা নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি করত। শিকার করতে, মাছ ধরতে বা পাশের সংরক্ষিত জমিতে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত জমির বাইরে যাওয়া ভারতীয় বিষয়ক দফতর কর্তৃক নিষেধ ছিল। পরবর্তীতে, আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই দফতর একটি পাস ব্যবস্থা চালু করে। এই ব্যবস্থায় আদিবাসীদের সংরক্ষিত জমির বাইরে যেতে পাস নিতে হতো এজেন্টদের কাছ থেকে। সাদা বসবাসকারীদেরও ট্রেনে আদিবাসীদের চলাচলে আপত্তি ছিল। তবে, নেভাডার সেন্ট্রাল প্যাসিফিক রেলরোড আদিবাসীদের ট্রেনের ওপর চড়ে যাত্রা করার অনুমতি দেয় বিনিময়ে তাদের রেললাইন সংরক্ষিত জমির মধ্য দিয়ে চলার সুযোগ পায়। অনেক ভারতীয় এজেন্ট এই বিনামূল্যের যাত্রা ব্যবস্থা পছন্দ করতেন না এবং এটিকে বন্ধ করার জন্য দফতরে চিঠি লেখা শুরু করেন। একজন এজেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, "এই সীমাহীন স্বাধীনতা এবং বারবার অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আদিবাসীদের জন্য অতিরঞ্জিত করা যাবে না।" ১৪তম সংশোধনী এর মাধ্যমে নাগরিক অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে আদিবাসীদের জন্য তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলা হয়। ১৮৬৬ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্টে উল্লেখ আছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সমস্ত ব্যক্তি, যারা কোনো বিদেশি ক্ষমতার অন্তর্গত নয়, এবং কর প্রদানে অব্যাহত ভারতীয়রা ব্যতীত, তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে ঘোষণা করা হলো।” === লিটল বিঘর্নের যুদ্ধ === [[File:Little Big Horn.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|চিয়েনে একজন শিল্পীর আঁকা লিটল বিঘর্ন যুদ্ধের চিত্র।]] ১৮৭৬ সালে, কয়েকটি কম গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষের পর, কর্নেল জর্জ এ. কাস্টার এবং তার ছোট ক্যাভ্যালারি দল লিটল বিঘর্ন নদীর কাছে সিউক্স ও তাদের কিছু মিত্রের সাথে মুখোমুখি হন। বড় ভারতীয় বাহিনীকে সংরক্ষিত জমিতে ফিরিয়ে পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনী তিনটি ফৌজ পাঠায় আক্রমণের জন্য। একটি দলের মধ্যে ছিল লেফটেন্যান্ট কাস্টার ও সেভেন্থ ক্যাভ্যালারি। তারা সিউক্স গ্রামের সন্ধান পায়, যা প্রায় পনেরো মাইল দূরে রোজবাড নদীর পাশে ছিল। কাস্টার আরও একটি প্রায় চল্লিশ সদস্যের দলও দেখতে পান। তিনি আদেশ অগ্রাহ্য করে আগ্রাসী হয়ে উঠেন, কারণ তিনি মনে করতেন তারা মূল দলকে সতর্ক করে দেবে। তিনি বুঝতে পারেননি যে সংখ্যায় তারা তাকে তিন গুণে বেশি। কাস্টার তার বাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করেন। তিনি ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক বেন্টিনকে আদেশ দেন যাতে তারা লিটল বিঘর্ন নদীর উপরের উপত্যকায় ভারতীয়দের পালানোর পথ আটকায়। মেজর মার্কাস রেনো তার গ্রুপকে তাড়া করার এবং তারপর নদী পার হয়ে ভারতীয় গ্রাম আক্রমণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যেখানে তার অধীনে থাকা বাকি সৈন্যরা ছিল। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ থেকে ভারতীয় শিবির আঘাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না যে তাকে কঠোর ভৌগলিক বাধা অতিক্রম করতে হবে। যখন ভারতীয়রা আক্রমণ করতে নেমে আসে, কাস্টার তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন ঘোড়াগুলোকে গুলি করতে এবং তাদের লাশ সামনে গড়িয়ে দেয়াল বানাতে। কিন্তু এটি গুলির বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করতে পারেনি। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কাস্টার ও তার সকল সৈন্য নিহত হন, যা আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক বিপর্যয়ের মধ্যে একটি। একদিনের অতিরিক্ত লড়াইয়ের পর রেনো ও বেন্টিনের একত্রিত বাহিনী ভারতীয়রা যুদ্ধ থামানোর পর পালিয়ে যায়। তারা জানত যে আরও দুইটি সৈন্যদল তাদের দিকে আসছে, তাই দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। কাস্টারের এই শেষ যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা তার গৃহযুদ্ধে অর্জিত যেকোনো সাফল্যকে ছাপিয়ে যায়। কাস্টার ২৫ জুন, ১৮৭৬ সালে লিটল বিঘর্ন যুদ্ধে পরাজিত হন ও নিহত হন, যা "কাস্টারের শেষ প্রতিরোধ" নামে পরিচিত। == ঐ সময়কার নারীর ইতিহাস == === ভিক্টোরিয়া উডহাল === [[File:Victoria Claflin Woodhull by Mathew Brady - Oval Portrait.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ভিক্টোরিয়া উডহাল]] ১৮৭২ সালে ভিক্টোরিয়া উডহাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন। তিনি মে ১০ তারিখে ইকুয়াল রাইটস পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও এটি অনস্বীকার্য যে তিনি প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী, তার প্রার্থিতার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল; কারণ তার নাম আসলে ভোটের তালিকায় ছিল না এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে ৩৫ বছরের নিচে থাকা উচিত নয়। উডহাল কোনো ইলেক্টোরাল ভোট পাননি, তবে প্রমাণ আছে যে তিনি কিছু জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন যা গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন গঠিত হয় ২২ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ সালে। নিউ ইয়র্কের ফ্রেডোনিয়াকে এই গোষ্ঠীর জন্মস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। টেম্পারেন্স আন্দোলন ছিল একটি সামাজিক আন্দোলন যা মদ্যপানের পরিমাণ কমানোর জন্য কাজ করেছিল। এই আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং নারীরা বার ও ওষুধের দোকানে গিয়ে গান গেয়ে এবং প্রার্থনা করত। ১৮৭৪ সালে ক্লিভল্যান্ড, ওহায়োতে ন্যাশনাল উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীরা অ্যালকোহল সেবনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে সেলুনে গিয়ে প্রার্থনা করত। অনেক সময় তাদের প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত এবং বারকর্মীদের গালিগালাজ সহ্য করতে হত। এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা আইন প্রণয়নে সহায়ক হয়। ==সূত্রসমূহ== {{reflist|2}} {{chapnav|গৃহযুদ্ধ|আবিষ্কারের যুগ এবং গিল্ডেড যুগ}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} az4llusu3y8b40d04zkjxzwfopcd2fd 85126 85125 2025-06-21T15:02:56Z NusJaS 8394 85126 wikitext text/x-wiki == পুনর্গঠনের সূচনা == [[File:Atlanta roundhouse ruin3.jpg|thumb|১৮৬৬ সালে জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি রেল ইয়ার্ড। গৃহযুদ্ধের পর দক্ষিণাঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল।]] ১৮৬৭ সালের ২ মার্চতারিখে কংগ্রেস প্রথম পুনর্গঠন আইন পাস করে। দক্ষিণকে পাঁচটি সামরিক জেলায় ভাগ করা হয়। প্রতিটিতে একজন মেজর জেনারেল নিযুক্ত হন। প্রতিটি রাজ্যে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত পুরুষ দাসদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। এই আইনে একটি সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাতে বলা ছিল যে, দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো ১৪তম সংশোধনী অনুমোদন এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করলে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারবে। রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জনসন তৎক্ষণাৎ এই বিলটিতে ভেটো দেন, কিন্তু কংগ্রেস একই দিনেই এটি আবার পাস করে। অ্যান্ড্রু জনসন সামরিক জেলার প্রশাসকের পদে নিয়োগের আগে জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্টের পরামর্শ নেন। পরে তিনি নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেন: জন স্কোফিল্ড (ভার্জিনিয়া), ড্যানিয়েল সিকলস (দ্য ক্যারোলিনাস), জন পোপ (জর্জিয়া, আলাবামা এবং ফ্লোরিডা), এডওয়ার্ড অর্ড (আর্কানসাস এবং মিসিসিপি), এবং ফিলিপ শেরিডান (লুইজিয়ানা এবং টেক্সাস)। মার্কিন গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) অবস্থান কী হবে।{{fix|text=what}} বেশিরভাগ গবেষক ১৮৬৫-১৮৭৭ সালকে পুনর্গঠনের সময়সীমা হিসেবে মেনে নেন। এই যুগটি ছিল বিতর্কিত এবং মার্কিন সমাজের বিভিন্ন অংশ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। কনফেডারেট অঙ্গরাজ্যগুলোকে কীভাবে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের মর্যাদা কী হবে — এই প্রশ্নে বিভিন্ন মতবিরোধ দেখা দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্বাধীনতার অর্থ নিয়েই দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সদ্য গঠিত রিপাবলিকান পার্টির একটি প্রধান অংশ চেয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কিছুটা সুরক্ষা, আর র‍্যাডিকালরা ]'চেয়েছিল দক্ষিণের সমাজব্যবস্থার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন। এই সময়ে কনজারভেটিভ (বিশেষত ডেমোক্র্যাটরা) বিশ্বাস করত যে, অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে এবং শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে পূর্ববর্তী সম্পর্কের ব্যবস্থাই টিকে থাকা উচিত। বেশিরভাগ আফ্রিকান-মার্কিন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং অনেকক্ষেত্রে জমির পুনর্বন্টন এবং কারখানা ব্যবস্থার ভাঙনের দাবি করেছিল। এই বিভিন্ন মতামতের মধ্য দিয়ে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত সময়কাল এক অর্থে আন্তবর্ণীয় গণতন্ত্রের একটি বিশাল পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এই সময়জুড়ে দক্ষিণে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সহিংসতাও বিরাজ করেছিল। == সংজ্ঞা == যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পুনর্গঠন বলতে সেই সময়কালকে বোঝায় যা মার্কিন গৃহযুদ্ধের পর শুরু হয়েছিল, যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কনফেডারেট স্টেটস অব আমেরিকার রাজ্যগুলোকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং এটি সেই প্রক্রিয়াকেও বোঝায় যার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয়। মার্কিন গৃহযুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য, উত্তরাঞ্চলের মধ্যপন্থী রিপাবলিকান এবং র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একমত হয়েছিল যে কনফেডারেসি এবং এর দাসপ্রথার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে হবে এবং যাতে এটি আর কখনও ফিরে আসতে না পারে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জন করা হবে এবং কখন তা অর্জিত হয়েছে তা নির্ধারণ করবে কে—এই বিষয়গুলো নিয়েই মূল বিতর্ক ছিল। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা বিশ্বাস করত যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনই ছিল স্লেভ পাওয়ার ধ্বংস করার জন্য অপরিহার্য এবং এটি অঙ্গরাজ্যগুলোর চিরস্থায়ী ঐক্য নিশ্চিত করার জন্য এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের (ফ্রিডম্যান) নানা সমস্যার সমাধানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাসাচুসেটসের মার্কিন সিনেটর চার্লস সামনার একজন র‍্যাডিক্যাল রিপাবলিকান ছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেসকে দাসপ্রথার সাথে সাথে কনফেডারেসিও বিলুপ্ত করতে হবে, কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একসাথে শিক্ষা দিতে হবে। “মধ্যপন্থীরা” দাবি করেছিল যে, কনফেডারেটরা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করেছে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছে—এই নিশ্চয়তার মাধ্যমে তারা লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছে। আব্রাহাম লিংকন এবং অ্যান্ড্রু জনসনের মতো বেশিরভাগ মধ্যপন্থী চাইতেন শুধু কৃষ্ণাঙ্গ সাবেক সৈনিকদের ভোটাধিকার প্রদান করতে, অন্য আফ্রিকান-আমেরিকানদের নয়। দক্ষিণের রাজনৈতিক নেতারা বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করে এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে, কিন্তু ১৮৬৭ সালে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যখন তাদের অঙ্গরাজ্য সরকারগুলোকে ফেডারেল সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সেগুলোর স্থলে র‍্যাডিক্যাল রিপাবলিকান সরকার গঠন করে, যেগুলোর নেতৃত্বে ছিল ফ্রিডম্যান, কার্পেটব্যাগার এবং স্ক্যালাওয়াগ। তাদের প্রধান হাতিয়ার ছিল ব্ল্যাক কোডস (১৮৬৫)। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার সীমিত করে অর্থনৈতিক ও শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণে চাকরির সুযোগ প্রায় ছিলই না। ইয়াঙ্কিরা দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য যুদ্ধ জিতলেও পুনর্গঠনকাল চাকরির জন্য সংগ্রাম করা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের উপকারে আসেনি। == পুনর্গঠনের সমস্যা == [[File:Wealth, per capita, in the United States, from 9th US Census (1872).jpg|thumb|upright|১৮৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু সম্পদ। দক্ষিণ ছিল বিপর্যস্ত।]] পুনর্গঠন ছিল দাসশ্রমের পরিবর্তে মুক্ত শ্রমের ভিত্তিতে দক্ষিণকে পুনর্গঠন করার একটি প্রয়াস। উত্তরের রাজনীতিকদের জন্য প্রধান প্রশ্ন ছিল—এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। গৃহযুদ্ধের শেষে কংগ্রেস ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রস্তাব করে। এটি দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়। সংশোধনীটি অনুমোদন করা ছাড়া তখন কোনো রাজ্যকে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। কিন্তু মিসিসিপির মতো কিছু রাজ্য সংশোধনীটি অনুমোদন না করেও অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৬৫ সালের ৬ ডিসেম্বরে সংশোধনীটি সংবিধানের অংশ হয়ে যায়। এই সময় বহু উত্তরাঞ্চলীয় ব্যক্তি নতুন জীবন শুরু করতে দক্ষিণে চলে যান। অনেকে কার্পেট দিয়ে তৈরি ব্রিফকেসে তাদের মালপত্র বহন করতেন। এজন্য কনফেডারেট দক্ষিণবাসীরা তাদের "কার্পেটব্যাগার" নামে ডাকত। দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গ রিপাবলিকানদের জন্যও তাদের কাছে একটি অবমাননাকর নাম ছিল—"স্ক্যালাওয়াগ"। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে "ব্ল্যাক কোডস" নামক আইন চালু হয়, যা মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মৌলিক মানবাধিকার সীমিত করে। এসব আইনের মধ্যে সাধারণ কিছু ছিল: জাত নির্ধারণে রক্তের ভিত্তি প্রযোজ্য—মানে শরীরে সামান্য পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ রক্ত থাকলেও তাকে কৃষ্ণাঙ্গ গণ্য করা হতো; মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গের অনুপস্থিতিতে একত্র হতে পারত না; গণশৌচাগারসহ অন্যান্য সুবিধা ছিল পৃথক।<ref>http://www.u-s-history.com/pages/h411.html</ref> এই সময় ছিল অত্যন্ত অস্থির। দেশজুড়ে বহু জাতিগত সহিংস দাঙ্গা শুরু হয়। দক্ষিণে উত্তরের প্রতি এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষ ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। === কু ক্লাক্স ক্লান === [[Image:Mississippi_ku_klux.jpg|thumb|upright|মিসিসিপিতে কু ক্লাক্স ক্লান]] *কু ক্লাক্স ক্লান" (Ku Klux Klan বা KKK) যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত বেশ কয়েকটি সংগঠনের নাম, যেগুলো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ইহুদিবিদ্বেষ, ক্যাথলিকবিদ্বেষ, বর্ণবাদ, সমকামবিদ্বেষ, সাম্যবাদবিরোধিতা এবং জাতীয়তাবাদ প্রচারে বিশ্বাসী ছিল। এই সংগঠনগুলো প্রায়শই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজ করত, যেমন: আগুনে ক্রুশ দাহ, লিঞ্চিং ইত্যাদি, যার লক্ষ্য ছিল আফ্রিকান-আমেরিকান এবং অন্যান্য সামাজিক ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর উপর নিপীড়ন চালানো। প্রথম কু ক্লাক্স ক্লান গঠিত হয় টেনেসির পুলাস্কিতে, ১৮৬৬ সালের মে মাসে। এক বছর পর, ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাশভিলে স্থানীয় ক্লানগুলোকে একত্র করে একটি সাধারণ সংগঠন গঠিত হয়। অধিকাংশ নেতাই ছিলেন কনফেডারেট সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং প্রথম "গ্র্যান্ড উইজার্ড" ছিলেন নাথান ফরেস্ট, যিনি গৃহযুদ্ধে একজন বিশিষ্ট জেনারেল ছিলেন। পরবর্তী দুই বছরে, মুখোশ পরা ক্লান সদস্যরা, সাদা টুপি ও চাদরে আবৃত হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এবং সহানুভূতিশীল শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন ও হত্যা করে। তারা অভিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করে, যাদের তারা র‌্যাডিকাল রিপাবলিকানদের নির্বাচনের জন্য দায়ী মনে করত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে কু ক্লাক্স ক্লান উত্তর ক্যারোলিনা, টেনেসি এবং জর্জিয়ায় শ্বেতাঙ্গ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংগঠনের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৮৬৬ সালে। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কনফেডারেট সেনার সাবেক সৈনিকেরা। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুনর্গঠনের বিরোধিতা। তারা "কার্পেটব্যাগার" ও "স্ক্যালাওয়াগ" দমন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের দমন করার চেষ্টা করে। ক্লান দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। দক্ষিণের অভিজাত শ্রেণি ক্লানকে ত্যাগ করে, কারণ তারা এটি ফেডারেল সেনার দক্ষিণে থাকার একটি অজুহাত হিসেবে দেখত। সংগঠনটি ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৮৭১ সালের "সিভিল রাইটস অ্যাক্ট" (যা "কু ক্লাক্স ক্লান অ্যাক্ট" নামেও পরিচিত) এর আওতায় প্রেসিডেন্ট উলিসিস এস. গ্রান্টের দৃঢ় পদক্ষেপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের শেষে, কংগ্রেস বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ১৮৬৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস "ফ্রিডম্যান ব্যুরো" প্রতিষ্ঠা করে। এর লক্ষ্য ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের স্বার্থ রক্ষা করা। এর মধ্যে ছিল নতুন চাকরি খুঁজতে সাহায্য করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। পরবর্তী এক বছরে ব্যুরো প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ৪,০০০ স্কুল, ১০০ হাসপাতাল স্থাপন করে এবং দাসদের জন্য আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা পুনর্গঠনের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় এবং ১৮৬৭ সালের পর আরও সংগঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্লান পুনর্গঠন ব্যর্থ করতে এবং মুক্তি পাওয়া দাসদের দমন করতেই কাজ করত। কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাস এতটাই প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, রাতের বেলা হেনস্তা, চাবুক মারা, মারধর, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল সাধারণ ঘটনা। ক্লানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক—যদিও তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর অত্যাচার করত যারা তাদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়াত। সক্রিয় রিপাবলিকানরা ছিল অন্ধকার রাতের আইনবহির্ভূত আক্রমণের মূল লক্ষ্য। যখন দক্ষিণ ক্যারোলিনার একজন স্ক্যালাওয়াগের অধীনে কাজ করা মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা ভোট দিতে শুরু করে, তখন সন্ত্রাসীরা সেই বাগানে গিয়ে, এক ভুক্তভোগীর ভাষায়, “যে যত কৃষ্ণাঙ্গকে পেয়েছে, সবাইকে চাবুক মেরেছে।” == লিংকন ও পুনর্গঠন == [[File:Waud - 1867 - The First Vote.jpg|thumb|upright|আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রথমবারের মতো ভোটদান। জিম ক্রো আইন পরে আফ্রিকান-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার পুনরায় কেড়ে নিতে প্রণীত হয়।]] লিংকন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে কখনোই ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি, কারণ সংবিধান অনুযায়ী তারা তা করতে পারে না। তিনি আশা করেছিলেন যে বিচ্ছিন্ন হওয়া ১১টি অঙ্গরাজ্য কিছু রাজনৈতিক আনুগত্যের শর্ত পূরণ করে পুনরায় "পুনঃঅঙ্গীভূত" হতে পারে। লিংকন পুনঃঅঙ্গীভুক্তি নিয়ে অনেক আগেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। ১৮৬৩ সালে তাঁর জারি করা ক্ষমার ঘোষণা ও পুনর্গঠন প্রস্তাবে তিনি একটি সহজ প্রক্রিয়া স্থাপন করেন, যাতে ইউনিয়নপন্থীরা রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসতে পারে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নয়। এই পরিকল্পনায় সকল দক্ষিণী (সে সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের বাদে) যারা ভবিষ্যতে ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেবে, তাদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান করা হতো। ১৮৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানকারী জনগণের ১০ শতাংশ এই শপথ গ্রহণ করলেই কোনো অঙ্গরাজ্যকে বৈধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যেত এবং দাসমুক্তির নীতিকে মেনে একটি সরকার গঠন করা যেত। লিংকনের এই রাষ্ট্রপতি পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা দাবি করেছিল এটি খুবই কোমল। তারা ১৮৬৪ সালে ওয়েড-ডেভিস বিল পাশ করে, যা অনেক কঠোর শর্ত আরোপ করে। এই বিলে ৫০ শতাংশ ভোটারকে আনুগত্যের শপথ নিতে বলা হয় এবং শুধুমাত্র যারা কখনো কনফেডারেসিকে সমর্থন করেননি তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন বা ফেডারেল চাকরি পেতেন। লিংকন এই বিলটি গ্রহণ না করে পকেট ভেটো করেন। ১৮৬৫ সালের মার্চে কংগ্রেস ফ্রিডম্যান ব্যুরো নামে একটি নতুন সংস্থা গঠন করে। এই সংস্থা কৃষ্ণাঙ্গ ও দরিদ্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা, চাকরি খোঁজার সহায়তা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করত। এটি ছিল সে সময়ের বৃহত্তম সরকারি সাহায্য কার্যক্রম। এটি ছিল প্রথম বড় আকারের ফেডারেল কল্যাণ কর্মসূচি। [[File:Lincoln assassination slide c1900 - Restoration.jpg|thumb|রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকাণ্ডের চিত্র। এই ভয়াবহ ঘটনায় অ্যান্ড্রু জনসন রাষ্ট্রপতি হন, যার ফলে দক্ষিণের পুনর্গঠনের ধারা আমূল পাল্টে যায়।]] ১৮৬৪ সালে লিংকনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হন টেনেসির অ্যান্ড্রু জনসন, যিনি ছিলেন একমাত্র দক্ষিণী সেনেটর যিনি ইউনিয়নের প্রতি অনুগত ছিলেন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল লিংকন নিহত হলে জনসন রাষ্ট্রপতি হন এবং কংগ্রেসের র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানদের জন্য তিনি একটি প্রধান বাধা হয়ে ওঠেন। তারা দক্ষিণের সরকার ও অর্থনীতিকে পুরোপুরি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছিলেন, যা আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করত। ১৮৬৫ সালের মে মাসে জনসন নিজস্ব এক ঘোষণা জারি করেন, যা লিংকনের ঘোষণার সঙ্গে খুবই মিল ছিল। তিনি ইউনিয়নের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেওয়া প্রায় সকল কনফেডারেটকে ক্ষমা প্রদানের প্রস্তাব দেন এবং ফ্রিডম্যানদের জন্য জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত শার্মানের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। জনসন রাষ্ট্রপতি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিকল্পনার আওতায় সব প্রাক্তন কনফেডারেট অঙ্গরাজ্য পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গীভূত হয়। ১৮৬৬ সালে জনসন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল ভেটো করেন — একটি ছিল ফ্রিডম্যান ব্যুরোর সুরক্ষা জোরদার করার জন্য এবং অন্যটি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য একটি নাগরিক অধিকার বিল। পরে রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে যে মধ্যপন্থী ও র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা একত্রিত হলে তারা জনসনের ভেটো অতিক্রম করতে পারবে, এবং তারা ১৮৬৬ সালে নাগরিক অধিকার আইন এবং চতুর্দশ সংশোধনী পাশ করে। এই সংশোধনী যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিকে নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে এবং প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে তাদের অধিকার রক্ষা করতে বাধ্য করে। নাগরিক অধিকার আইন দক্ষিণে প্রচলিত ব্ল্যাক কোডসমূহকে অবৈধ ঘোষণা করে। জনসনের ভেটোর পরও কংগ্রেস ১৮৬৭ সালে তিনটি পুনর্গঠন আইন পাশ করে। এতে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোকে পাঁচটি সামরিক জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং সেখানে ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। প্রতিটি জেলার সামরিক কমান্ডার নিশ্চিত করতেন যে সংশ্লিষ্ট রাজ্য চতুর্দশ সংশোধনী অনুমোদন করছে এবং বর্ণবৈষম্যহীন ভোটাধিকার প্রদান করছে। টেনেসি ১৮৬৬ সালেই সংশোধনী অনুমোদন করায় এটি সামরিক জেলার বাইরে রাখা হয়। ১৮৬৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদ অ্যান্ড্রু জনসনকে অভিশংসিত করে। এর আগে কংগ্রেস টেনিওর অফ অফিস অ্যাক্ট পাশ করেছিল (জনসনের ভেটোর পর), যেখানে বলা হয় রাষ্ট্রপতির নিয়োগে সিনেটের পরামর্শ ও সম্মতির মাধ্যমে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার জন্যও একই পরামর্শ ও সম্মতি লাগবে। জনসন এই আইনের সাংবিধানিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন (এবং ১৯২৬ সালে সুপ্রিম কোর্টও একমত হয়) এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আইনটি লঙ্ঘন করেন একটি পরীক্ষা করার জন্য। র‍্যাডিকাল রিপাবলিকানরা এটি একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তাঁকে অভিশংসন করে, কিন্তু সেনেট এক ভোটের ব্যবধানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। ১৮৬৮ সালের নির্বাচনে উলিসিস গ্রান্ট রিপাবলিকান প্রার্থী হন এবং অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেন। রিপাবলিকানরা বুঝতে পারে, তারা যদি দ্রুত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত না করে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। তাই কংগ্রেস ১৮৬৯ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে, যা বর্ণের কারণে পুরুষ নাগরিকদের ভোটাধিকার অস্বীকার করা যাবে না বলে বলে। এটি নারীবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় আঘাত ছিল, কারণ এই প্রথমবার লিঙ্গকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রিপাবলিকানরা দাবি করে, যদি এই সংশোধনীতে বর্ণ ও লিঙ্গ উভয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকত, তবে এটি কংগ্রেসে পাশ হতো না। === কংগ্রেসে আফ্রিকান-আমেরিকানরা === [[File:Hiram Rhodes Revels - Brady-Handy-(restored).png|thumb|upright|হাইরাম রোডস রেভেলস, কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান]] এই সময়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনেক আফ্রিকান-আমেরিকান কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। পুনর্গঠন আইন অনুসারে ফেডারেল সেনাবাহিনী দক্ষিণী অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রেরিত হয় এবং সাউথ ক্যারোলাইনা ও মিসিসিপিতে আফ্রিকান-আমেরিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং লুইজিয়ানা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও আলাবামায় শ্বেতাঙ্গদের প্রায় সমান সংখ্যায় ছিল, ফলে এসব রাজ্য থেকে কৃষ্ণাঙ্গরা কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। জন উইলিস মেনার্ড ১৮৬৮ সালে লুইজিয়ানার ২য় জেলা থেকে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যালেব হান্ট নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান এবং উভয় প্রার্থীর বক্তব্য শুনে প্রতিনিধি পরিষদ কাউকেই আসন দেয়নি। হাইরাম রেভেলস মিসিসিপির সিনেট দ্বারা ৮১-১৫ ভোটে নির্বাচিত হন, গৃহযুদ্ধ চলাকালে পদত্যাগকারী সেনেটর আলবার্ট জি. ব্রাউনের শূন্য আসন পূরণে। তিনি ১৮৭০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৭১ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। জোসেফ রেইনি ১৮৭০ সালের নির্বাচনে সাউথ ক্যারোলাইনার ১ম জেলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে উইলিয়াম এল. ডসনের আগে পর্যন্ত কংগ্রেসে দীর্ঘতম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য ছিলেন। ব্লাঞ্চ ব্রুস ১৮৭১ সালে মিসিসিপির স্টেট সিনেট দ্বারা পূর্ণ মেয়াদে মার্কিন সিনেটে নির্বাচিত হন। ব্রুস ছিলেন একমাত্র প্রাক্তন দাস, যিনি মার্কিন সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন। == আলাস্কা ক্রয় == [[File:Alaska purchase.jpg|thumb|১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ আলাস্কা চুক্তি স্বাক্ষরের একটি চিত্রকর্ম।]] ১৭৭০-এর দশক থেকে রুশ সাম্রাজ্য আলাস্কা উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে।<ref>{{cite web |title=Russians in Alaska and U.S. Purchase Federal Indian Law for Alaska Tribes |url=https://www.uaf.edu/tribal/112/unit_1/russiansinalaskaanduspurchase.php |website=www.uaf.edu |accessdate=18 September 2020}}</ref> ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ মার্কিন সরকার রুশ সাম্রাজ্য থেকে আলাস্কা ৭.২ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।<ref name="rochesteralaska">{{cite web |title=The myth—and memorabilia—of Seward's Folly |url=https://www.rochester.edu/newscenter/sewards-folly-308482/ |website=NewsCenter |accessdate=18 September 2020 |date=29 March 2018}}</ref> সে সময় এই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে উপহাস করা হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন সেখানে সোনা ও তেলের সন্ধান মেলে, তখন এটি একটি লাভজনক চুক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়।<ref name="rochesteralaska"/> সেই অঞ্চলে থাকা অল্পসংখ্যক রুশ বসবাসকারীকে তিন বছরের মধ্যে রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার অথবা থেকে গিয়ে আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।<ref name="rochesteralaska"/> == ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা == [[File:Panic of 1873 bank run.jpg|thumb|upright|১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হুড়োহুড়ি।]] ১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দা ছিল গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত প্রথম মন্দা। এই মন্দা আন্তর্জাতিকভাবে রূপার চাহিদা হ্রাস পাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়া যুদ্ধের পর জার্মানি রুপা মানদণ্ড ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৭৩ সালের কয়েনেজ আইন পাশ করে, যা আমাদের মুদ্রা ব্যবস্থাকে সোনা ও রুপার পরিবর্তে কেবলমাত্র সোনার ওপর নির্ভর করে তৈরি করে। এই আইন রুপার মান তৎক্ষণাৎ কমিয়ে দেয় এবং পশ্চিমাঞ্চলের খনিশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৮৭৩ সালের মন্দার আরেকটি কারণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেলপথ কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বিনিয়োগ, যা দ্রুত লাভ এনে দিতে পারেনি। জে কুক অ্যান্ড কোম্পানি নামক একটি মার্কিন ব্যাংক ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ সালে দেউলিয়া ঘোষণা করে। ব্যাংকটি অতিরিক্ত রেলপথ ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৭৩ থেকে দশ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেই মন্দার সময়ে ৩৬৪টি রেলপথ কোম্পানির মধ্যে ৮৯টি ব্যর্থ হয়। মন্দার সময়ে রিয়েল এস্টেটের মূল্য, মজুরি এবং কর্পোরেট মুনাফা হ্রাস পায়। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এই মন্দায় বন্ধ হয়ে যায়। এই মন্দা প্রেসিডেন্ট গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। == ১৮৭৭ সালের মহা রেল ধর্মঘট == [[File:Harpers 8 11 1877 Blockade of Engines at Martinsburg W VA.jpg|thumb|ধর্মঘট চলাকালে ইঞ্জিনগুলোর পথ অবরোধ।]] ১৮৭৭ সালের ১৪ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মার্টিন্সবার্গে এই ধর্মঘট শুরু হয়। এই ধর্মঘটের কারণ ছিল বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহিও রেলরোড কোম্পানির বেতন কর্তন। শ্রমিকরা রেলপথ চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। ধর্মঘট দমন করতে রাজ্য মিলিশিয়া পাঠানো হলেও তারা ধর্মঘটকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। গভর্নর হেনরি ম্যাথিউস ধর্মঘট দমন ও রেল চলাচল পুনরায় শুরু করতে ফেডারেল সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানান। ধর্মঘটটি কুম্বারল্যান্ড, মেরিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সেনারা ধর্মঘটকারীদের একটি জনতার ওপর গুলি চালায় এবং দশজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। এই ধর্মঘট ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর, পিটসবার্গ এবং এমনকি সেন্ট লুইস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মঘটে কোটি কোটি ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয় এবং বহু প্রাণহানি ঘটে। এই মহা ধর্মঘট ৪৫ দিন স্থায়ী হয়, শেষ পর্যন্ত শহর থেকে শহরে ফেডারেল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এটি দমন করা হয়। == রিপাবলিকানদের ক্ষমতাচ্যুতি == গ্রান্টের শাসনামলেই রিপাবলিকান পার্টির পতনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ফেডারেল পদ ও মন্ত্রিসভায় বিপুল সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেকেই পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যরা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ক্লান্ত হয়ে দক্ষিণের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্মিলনের প্রস্তাব দেন। এরা নিজেদের 'লিবারেল রিপাবলিকান' বলে পরিচয় দেন এবং ১৮৭২ সালে গ্রান্টের বিরুদ্ধে হোরেস গ্রিলিকে মনোনয়ন দেন। ডেমোক্র্যাটরাও গ্রিলিকে সমর্থন করে। তবে ব্যাপক সমর্থন সত্ত্বেও, গ্রান্ট ১৮৭২ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হন। নির্বাচনের মৌসুমে, লিবারেল রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে 'অ্যামনেস্টি অ্যাক্ট' (ক্ষমাপ্রদান আইন) পাশ করাতে ব্যস্ত ছিল এবং ১৮৭২ সালের মে মাসে এই আইন পাশ হয়। এই আইনটি অধিকাংশ সাবেক কনফেডারেট নাগরিকদের ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ উন্মুক্ত করে। এর ফলে দক্ষিণে ডেমোক্রেটদের রাজনৈতিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে। শীঘ্রই ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনার সরকারগুলো ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকানদের সংখ্যা ছিল বেশি, সেসব স্থানে কু ক্লুক্স ক্লান (গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠী) রিপাবলিকানদের আতঙ্কিত করে তোলে এবং তাদেরকে ডেমোক্রেটদের ভোট দিতে অথবা ভোট না দিতে বাধ্য করে। ১৮৭৬ সালের মধ্যে দক্ষিণে রিপাবলিকানরা কেবল তিনটি রাজ্যে—ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা এবং সাউথ ক্যারোলিনায়—ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়, যার সবকটিতেই তখনো ইউনিয়ন সেনা মোতায়েন ছিল। গ্রান্টের দ্বিতীয় মেয়াদকালে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেলে রিপাবলিকানদের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। জনসাধারণের কাছে সবচেয়ে আঘাতকর ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধসচিবকে জড়িত করে কেলেঙ্কারির ঘটনা। একই বছরে দেশ একটি মহামন্দার কবলে পড়লে উত্তরাঞ্চলের জনমত রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে চলে যায়। ১৮৭৪ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানরা উভয় কক্ষে ব্যাপক আসন হারায় এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর পূর্ববর্তী সময়ের পর এই প্রথম ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের একটি কক্ষে (প্রতিনিধি পরিষদ) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ফলে কংগ্রেস আর পুনর্গঠনের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকল না। [[Image:A certificate for the electoral vote for Rutherford B. Hayes and William A. Wheeler for the State of Louisiana dated 1876 part 6.jpg|thumb|upright|১৮৭৬ সালের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রাদারফোর্ড বি. হেইস ও উইলিয়াম এ. হুইলারের নির্বাচনী ভোটের প্রত্যয়নপত্র]] ১৮৭৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা নিউ ইয়র্কের গভর্নর এস. জে. টিলডেনকে প্রার্থী করে এবং রিপাবলিকানরা ওহাইওর গভর্নর রাদারফোর্ড বি. হেইসকে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনের দিন দেখা যায়, টিলডেন ২৫০,০০০-এরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু সাউথ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা এবং লুইজিয়ানার যথাক্রমে সাত, চার ও আটটি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় (এই তিন রাজ্যে তখনো উত্তরীয় সেনা মোতায়েন ছিল)। এছাড়াও, ওরেগনের তিনটি ইলেকটোরাল ভোটের একটি নিয়েও বিরোধ দেখা দেয়। যদি হেইস সব ২০টি ভোট পেতেন, তাহলে তিনি নির্বাচনে জয়ী হতেন। কংগ্রেস একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে, যাতে সাতজন ডেমোক্র্যাট, সাতজন রিপাবলিকান এবং একজন স্বাধীন সদস্য ছিলেন। তবে স্বাধীন সদস্য পদত্যাগ করলে তার স্থানে একজন রিপাবলিকান নিযুক্ত হন। কমিশন দলীয় বিভাজনের ভিত্তিতে ভোট দিয়ে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করে, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হুমকি দেয়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা গোপনে একত্র হয়ে একটি সমঝোতা খসড়া করেন, যা ‘১৮৭৭ সালের সমঝোতা’ নামে পরিচিত। এতে হেইসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, দক্ষিণ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয় এবং দক্ষিণে আরও সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়; এটি পুনর্গঠনের অবসান নির্দেশ করে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সমঝোতা ব্যর্থ হয়, কারণ ডেমোক্র্যাটরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং দক্ষিণে আফ্রিকান আমেরিকানদের অধিকারের সুরক্ষা দেয়নি। পুনর্গঠন-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণে ডেমোক্র্যাট ‘রিডিমার’দের উত্থান ঘটে। রিডিমাররা দক্ষিণে রিপাবলিকান শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রতিজ্ঞা করে। তারা ‘জিম ক্রো’ আইন প্রণয়ন করে, যা কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের পৃথকীকরণ করে এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সীমিত করে, যা পরবর্তী শতাব্দীর আগে বিলুপ্ত হয়নি। জিম ক্রো আইনকে চ্যালেঞ্জ করা হয় "প্লেসি বনাম ফার্গুসন" মামলায়। এতে সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে বৈধতা দেয় এই শর্তে যে পৃথক সুবিধাসমূহ হতে হবে "পৃথক কিন্তু সমান"। == সিঞ্চিমইয়াংগো == [[File:Sujagi.jpg|thumb|১৮৭১ সালে ইউএসএস কলোরাডোতে বন্দী হওয়া সুজাগি, একটি কমান্ডিং জেনারেলের পতাকা।]] ১৮৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোরিয়ার প্রতি অভিযান, যাকে সিঞ্চিমইয়াংগো বা 'সিনমি বর্ষের পশ্চিমা গোলযোগ' বলা হয়, ছিল কোরিয়ায় প্রথম আমেরিকান সামরিক অভিযান। এটি প্রধানত কোরিয়ার গাংহওয়া দ্বীপ ও এর আশেপাশে সংঘটিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র একটি সামরিক অভিযাত্রী বাহিনী কোরিয়ায় প্রেরণ করেছিল একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলকে সহায়তা করার জন্য, যা কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, জেনারেল শেরম্যান বাণিজ্যিক জাহাজের ভাগ্য নির্ণয় এবং জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার নাবিকদের সাহায্যের জন্য একটি চুক্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী জোসিয়ান রাজবংশের সরকার ও চাপদাতা আমেরিকানদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, যা কূটনৈতিক অভিযানকে সশস্ত্র সংঘর্ষে পরিণত করে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সামান্য বিজয় লাভ করলেও, কোরিয়ারা দেশটি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানায়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যথেষ্ট ক্ষমতা বা শক্তি ছিল না, তারা তাদের কূটনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। == ১৯শ শতাব্দীর ধর্ম == === ইহুদি নতুন তরঙ্গ অভিবাসন === [[File:Welcome to the land of freedom.png|thumb|১৮৮৭ সালের ছবি যা ইউরোপীয় অভিবাসীদের নিউইয়র্ক সিটিতে আগমন দেখায়।]] ১৮২০ থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে প্রায় ২,৫০,০০০ ইহুদি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অভিবাসন ছিল কেবল ইউরোপীয় অর্থনীতির সঙ্কটের কারণে নয়, ১৮৪৮ সালের জার্মান রাজ্যের লিবারেল বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণে।<ref>Stone, Amy. ''Jewish Americans''. Milwaukee, Wisconsin: World Almanac Library, 2007. Pp. 6-9.</ref> রেলপথ এবং বৃহৎ স্টিমার জাহাজগুলো ১৮০০ এবং ১৯০০ সালের শেষের দিকে আমেরিকায় অভিবাসনকে সহজতর করে। তবু যাত্রাটি ছিল অস্বচ্ছন্দকর, অসুস্থকর ও বিপজ্জনক। ধনী পরিবার যারা শীর্ষ বর্গের কামরায় ছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত কেবিন ছিল, কিন্তু অধিকাংশ অভিবাসী স্টিয়ারেজ শ্রেণীতে যাতায়াত করতেন: তিনশো মানুষ, পুরুষ, নারী ও শিশু, ঘনিষ্ঠভাবে গাদাগাদি করে, দ্বৈত বা ত্রৈত বেডে ঘুমাতেন। বেডগুলো প্রায় ছয় ফুট লম্বা এবং দুই ফুট চওড়া ছিল, বেডের মাঝে মাত্র দুই-আধা ফুটের ব্যবধান। তাদের সামান্য মালপত্র বেডের ওপর রাখা হতো। পানীয় জল ছিল খুবই কম বা ছিল না, দুর্গন্ধ অসহনীয় ছিল, এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না। এক প্রত্যক্ষদর্শী সোফিয়া ক্রেইটসবের্গ বলেছিলেন, "আপনি যখন মাথা খোঁচাতেন [...] তখন হাতেই লাউস ধরতো।"<ref>Stone, p.15</ref> এই ঘনিষ্ঠ পরিবেশ, অভাব-অনটন ও দীর্ঘ যাত্রার চাপের কারণে রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটত। ইহুদিরা অশুদ্ধ (কোষের নিয়মে নিষিদ্ধ) মাংস ও স্যুপ পরিবেশন পেত, যা অনেকেই খেতেন না। তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা শুকনো ফল, শক্ত রুটি, বা বেয়ানো পনির খানিক খেতেন।<ref>Stone.</ref> অন্য প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কয়েকটি বন্দর ছিল। ১৮৫৫ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত এটি মূলত ক্যাসেল গার্ডেন ছিল, ম্যানহাটনের প্রান্তে, যা পরবর্তীতে নিউইয়র্ক সিটি হিসেবে পরিচিত। ১৮৯০ সাল থেকে ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী এলিস দ্বীপে প্রবেশ করত।<ref>http://genealogy./od/ports/p/castle_garden.htm Retrieved on March 15, 2015.</ref> এই জায়গাগুলোতে মানুষকে যথাযথভাবে জাহাজ, উৎপত্তি দেশ, পূর্ব কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হতো।<ref>http://www.castlegarden.org/manifests.php Retrieved on March 15, 2015.</ref> === ক্যাথলিক আমেরিকা === [[File:GibbonsPhotoStanding.jpg|thumb|upright|জেমস গিবন্স, ১৮৬০ থেকে ১৯০০ সালের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী ক্যাথলিক নেতা।]] [[File:The American River Ganges (Thomas Nast cartoon).jpg|thumb|১৮৭৫ সালের একটি রাজনৈতিক কার্টুন, যা ক্যাথলিক চার্চকে আমেরিকান পাবলিক শিক্ষার শত্রু হিসেবে দেখায়। থমাস নাস্ট ভয় পেতেন যে সরকারী তহবিল পাবলিক শিক্ষার পরিবর্তে ক্যাথলিক শিক্ষাকে সমর্থন করবে।]] ==== ক্যাথলিক অভিবাসন ==== আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্য (বিশেষ করে পোল্যান্ড) থেকে ব্যাপক অভিবাসনের ফলে ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৪০ থেকে ১৮৫১ সালের মধ্যে আয়ারল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ ও অত্যাচার চলছিল। অন্যান্য অভিবাসন জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে হয়েছিল। ১৮৫০ সালের মধ্যে ক্যাথলিক ধর্ম যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সেক্টর হয়ে ওঠে; ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পায়, প্রধানত অভিবাসনের কারণে। এই ব্যাপক ক্যাথলিক অভিবাসনের ফলে ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ==== নির্যাতন ==== আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টরা ক্যাথলিকদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকত। গৃহযুদ্ধের আগে আমেরিকায় অ্যান্টি-ক্যাথলিক পূর্বাগ্রহ "নোথিংস" দল এবং আমেরিকার অরেঞ্জ ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে প্রকাশ পেত। যুদ্ধের পর আমেরিকান প্রোটেকটিভ অ্যাসোসিয়েশন ও কু ক্লাক্স ক্লান ক্যাথলিকদের নিয়মিতভাবে নির্যাতন ও বৈষম্য করত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ফিলাডেলফিয়ার নেটিভিস্ট দাঙ্গা, "ব্লাডি মান্ডে", এবং নিউইয়র্ক সিটির অরেঞ্জ দাঙ্গা ১৮৭১ ও ১৮৭২ সালে।<ref>Michael Gordon, The Orange riots: Irish political violence in New York City, 1870 and 1871 (1993</ref> ==== নেটিভিজম ==== কঠোর অ্যান্টি-ক্যাথলিক কার্যক্রম নেটিভিজমের অনুভূতিকে প্রকাশ করত, যা সমস্ত "দেশজ জন্মানো আমেরিকান পুরুষদের" বিদেশিদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে উৎসাহিত করত। (অর্থাৎ, এখানে আসল দেশীয় আমেরিকানদের নয়, বরং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত প্রোটেস্ট্যান্টদের কথা বলা হচ্ছে যারা এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন।) প্রথম নেটিভিস্ট প্রকাশনা ছিল ''The Protestant''; এর প্রথম সংখ্যা ১৮৩০ সালের ২ জানুয়ারি বিক্রি হয়। সম্পাদক ছিলেন জর্জ বর্ন, যিনি লিখেছিলেন, "পত্রিকার লক্ষ্য ক্যাথলিক বিশ্বাসের সমালোচনায় কেন্দ্রীভূত।"<ref>Baker, Sean. ''The American Religious Experience, American Nativism, 1830-1845.''</ref> অ্যান্টি-ক্যাথলিক বক্তব্য মাঝে মাঝে সহিংসতায় পরিণত হতো; ১৮৩৪ সালের আগস্ট ১০ তারিখে ৪০-৫০ জন মানুষ ইউর্সুলাইন কনভেন্ট স্কুলের বাইরে জমায়েত হয়ে সেটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।<ref>Baker, Sean</ref> ১৮৩৪ সালে এফ.বি. মরস, যিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অধ্যাপক ছিলেন এবং নেটিভিস্ট নেতা ছিলেন, "The Foreign Conspiracies Against the Liberties of the United States" গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষার কথা বলেন। প্রোটেস্ট্যান্টদের ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে আশঙ্কা ও ভয় মূলত ক্যাথলিক ধর্মের রাজতান্ত্রিক প্রবণতা নিয়ে ছিল। এই সময়ে শহরগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল অভিবাসীদের ব্যাপক আগমনের কারণে যারা একত্রিত হয়ে একই এলাকায় বসবাস করত। নেটিভিস্টরা এটিকে "গোষ্ঠীবদ্ধতা" হিসেবে দেখত এবং "আমেরিকানীকরণ" এড়ানোর বা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বলে মনে করত। মরস এবং তাঁর সমকালীন লিম্যান বীচারদের সফলতার সঙ্গে নেটিভিস্ট আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে জনতা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য না করে কাল্পনিক কাহিনীকেও সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৮৩৬ সালে মারিয়া মঙ্ক "Awful Disclosures of the Hotel Dieu Nunnery of Montreal" নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এতে তিনি ক্যাথলিক ধর্মের সঙ্গে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন পাদরিদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক এবং নন ও শিশুদের হত্যা ঘটেছিল; বইয়ের শেষ অংশে তিনি তার গর্ভে থাকা শিশুকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গেছেন। মঙ্কের মা এই লেখাকে অস্বীকার করেন এবং বলেন, মারিয়া কখনো কোন কনভেন্টে ছিলেন না, এবং মারিয়ার শৈশবে যে মস্তিষ্ক আঘাত হয়েছিল তা তার গল্পের কারণ হতে পারে। উত্তর-মধ্য আমেরিকা ও দেশের উত্তরের অংশে ক্যাথলিকদের স্বাধীন চিন্তার অক্ষম বলে মনে করা হত এবং তাদের "অ্যান্টি-আমেরিকান প্যাপিস্ট" বলা হতো, কারণ তারা রোমের পোপের আদেশ পালন করতেন বলে ধারণা ছিল। মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে মেক্সিকান ক্যাথলিকদের "প্যাপিস্ট কুসংস্কার" কারণে মিডিয়ায় হাস্যকর বা বোকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমেরিকার ক্যাথলিকদের সম্পর্কে সাধারণ মনোভাবের কারণেই প্রায় ১০০ জন আমেরিকান ক্যাথলিক, যাদের বেশিরভাগই সদ্য অভিবাসিত আইরিশ, মেক্সিকানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন; তাদের "সেন্ট প্যাট্রিকস ব্যাটালিয়ন" == শিক্ষা == [[File:General Oliver Otis Howard House - Howard University.jpg|thumb|জেনারেল অলিভার ওটিস হাওয়ার্ড হাউস, ১৮৬৭ সালে নির্মিত এবং হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও বিদ্যমান সবচেয়ে প্রাচীন ভবন।]] সারাদেশে প্রাক্তন দাসেরা শিক্ষা অর্জনের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। সব বয়সের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বইয়ে কী লেখা আছে তা জানার প্রবল আগ্রহ ছিল, যেগুলো একসময় শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্যই অনুমোদিত ছিল। স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা নিজেদের স্কুল শুরু করে এবং দিনে ও রাতে ক্লাস গুলো উপচে পড়ত। তারা গুঁড়ি গুঁড়ি বসত গাছের গুঁড়ির আসনে বা মাটির মেঝেতে। পুরানো পঞ্জিকা বা বাতিল হয়ে যাওয়া অভিধানে তারা অক্ষর চর্চা করত। দাসত্বের অজ্ঞতা থেকে মুক্তির প্রবল ইচ্ছার কারণে, দারিদ্র্য উপেক্ষা করেও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মাসে $১ বা $১.৫০ করে টিউশন ফি দিত।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গরা এবং তাদের শ্বেতাঙ্গ মিত্ররাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল, যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষক, পাদ্রি ও পেশাজীবী নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমেরিকান মিশনারি অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ফিস্ক এবং আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাতটি কলেজ ১৮৬৬ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রিডম্যান ব্যুরো ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। মেথডিস্ট, ব্যাপটিস্ট ও কনগ্রেগেশনালিস্টদের মতো উত্তরাঞ্চলীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও ডজনখানেক ধর্মতাত্ত্বিক ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজকে সমর্থন করে।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাথমিক শিক্ষা মূলত মিশনারিদের মাধ্যমে আসত, যাদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন কৃষ্ণাঙ্গদের শিক্ষার হার খুবই কম ছিল, যতক্ষণ না আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে মুক্তিপত্র ঘোষণা করেন। ১৮৬৭ সালে শিক্ষা বিভাগ গঠিত হয়, যাতে আরও কার্যকরী বিদ্যালয় ব্যবস্থা চালু করা যায়। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের জন্য “লিবারেল আর্টস ও বিজ্ঞানে” শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৯ সালে বোস্টনে প্রথম পাবলিক স্কুল ডে পালিত হয়। == প্রযুক্তি == [[File:Earlyoilfield.jpg|thumb|পেনসিলভানিয়ার একটি তেলক্ষেত্র।]] গৃহযুদ্ধের ঠিক আগে পেনসিলভানিয়ার টাইটাসভিল ও আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয় এবং যুদ্ধের পরে এটি ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে তেল শুধুমাত্র ঔষধি কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি শিল্পক্ষেত্রে এবং তিমির তেলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বিপজ্জনক ও ব্যয়বহুল তিমি শিকার শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু শহর রাতের আলো জ্বালানোর জন্য কয়লা গ্যাস ব্যবহার করলেও অন্য শহরগুলো তেল বাতি ব্যবহার শুরু করে এবং বড় বড় শহরগুলো রাতের আলোতে আলোকিত হয়। পেট্রোলিয়াম, বাতি তেল (বড় ইঞ্জিন বাতির জন্য) এবং যন্ত্র তেল রেলপথের কার্যকারিতা বাড়ায়। [[File:East and West Shaking hands at the laying of last rail Union Pacific Railroad - Restoration.jpg|thumb|প্রথম ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রেলরোড, ইউটাহ, ১৮৬৯]] দূরত্ব অতিক্রম করে তথ্য পরিবহন করা যেত টেলিগ্রাফের মাধ্যমে। ১৮৭০ ও ১৮৮০ দশকে আবিষ্কর্তারা মানুষের কণ্ঠস্বর পরিবহন করার প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এবং এলিশা গ্রে। ১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যন্ত্র ব্যবহার করে একটি স্টিলের রিডের শব্দ প্রেরণ করেন। ১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলের এক সহযোগী তাঁর পেটেন্ট ওয়াশিংটন ডিসির পেটেন্ট অফিসে জমা দেন, ঠিক একই দিনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এলিশা গ্রে ও পেটেন্ট দাখিল করেন। তিন সপ্তাহ পর, ৭ মার্চ, বেলের পেটেন্ট জয়ী হয়ে অনুমোদিত হয়। == যুদ্ধের পরে আদিবাসীরা == গৃহযুদ্ধ চলাকালীন আদিবাসীদের সাথে যে অবিচার হয়েছিল তা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দূর হয়নি। মার্কিন জাতীয় সরকার স্পষ্ট করেছিল যে এই মানুষগুলো যদিও এই মহাদেশের স্থানীয় অধিবাসী, তবে তারা দেশের নাগরিক হবে না। আদিবাসীদের পশ্চিমের আর্থসীমার বাইরে সংরক্ষিত জমিতে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়। তাদের চলাচল সরকারি এজেন্টরা নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি করত। শিকার করতে, মাছ ধরতে বা পাশের সংরক্ষিত জমিতে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত জমির বাইরে যাওয়া ভারতীয় বিষয়ক দফতর কর্তৃক নিষেধ ছিল। পরবর্তীতে, আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই দফতর একটি পাস ব্যবস্থা চালু করে। এই ব্যবস্থায় আদিবাসীদের সংরক্ষিত জমির বাইরে যেতে পাস নিতে হতো এজেন্টদের কাছ থেকে। সাদা বসবাসকারীদেরও ট্রেনে আদিবাসীদের চলাচলে আপত্তি ছিল। তবে, নেভাডার সেন্ট্রাল প্যাসিফিক রেলরোড আদিবাসীদের ট্রেনের ওপর চড়ে যাত্রা করার অনুমতি দেয় বিনিময়ে তাদের রেললাইন সংরক্ষিত জমির মধ্য দিয়ে চলার সুযোগ পায়। অনেক ভারতীয় এজেন্ট এই বিনামূল্যের যাত্রা ব্যবস্থা পছন্দ করতেন না এবং এটিকে বন্ধ করার জন্য দফতরে চিঠি লেখা শুরু করেন। একজন এজেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, "এই সীমাহীন স্বাধীনতা এবং বারবার অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আদিবাসীদের জন্য অতিরঞ্জিত করা যাবে না।" ১৪তম সংশোধনী এর মাধ্যমে নাগরিক অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে আদিবাসীদের জন্য তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলা হয়। ১৮৬৬ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্টে উল্লেখ আছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সমস্ত ব্যক্তি, যারা কোনো বিদেশি ক্ষমতার অন্তর্গত নয়, এবং কর প্রদানে অব্যাহত ভারতীয়রা ব্যতীত, তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে ঘোষণা করা হলো।” === লিটল বিঘর্নের যুদ্ধ === [[File:Little Big Horn.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|চিয়েনে একজন শিল্পীর আঁকা লিটল বিঘর্ন যুদ্ধের চিত্র।]] ১৮৭৬ সালে কয়েকটি কম গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষের পর, কর্নেল জর্জ এ. কাস্টার এবং তার ছোট ক্যাভ্যালারি দল লিটল বিঘর্ন নদীর কাছে সিউক্স ও তাদের কিছু মিত্রের সাথে মুখোমুখি হন। বড় ভারতীয় বাহিনীকে সংরক্ষিত জমিতে ফিরিয়ে পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনী তিনটি ফৌজ পাঠায় আক্রমণের জন্য। একটি দলের মধ্যে ছিল লেফটেন্যান্ট কাস্টার ও সেভেন্থ ক্যাভ্যালারি। তারা সিউক্স গ্রামের সন্ধান পায়, যা প্রায় পনেরো মাইল দূরে রোজবাড নদীর পাশে ছিল। কাস্টার আরও একটি প্রায় চল্লিশ সদস্যের দলও দেখতে পান। তিনি আদেশ অগ্রাহ্য করে আগ্রাসী হয়ে উঠেন, কারণ তিনি মনে করতেন তারা মূল দলকে সতর্ক করে দেবে। তিনি বুঝতে পারেননি যে সংখ্যায় তারা তাকে তিন গুণে বেশি। কাস্টার তার বাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করেন। তিনি ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক বেন্টিনকে আদেশ দেন যাতে তারা লিটল বিঘর্ন নদীর উপরের উপত্যকায় ভারতীয়দের পালানোর পথ আটকায়। মেজর মার্কাস রেনো তার গ্রুপকে তাড়া করার এবং তারপর নদী পার হয়ে ভারতীয় গ্রাম আক্রমণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যেখানে তার অধীনে থাকা বাকি সৈন্যরা ছিল। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ থেকে ভারতীয় শিবির আঘাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না যে তাকে কঠোর ভৌগলিক বাধা অতিক্রম করতে হবে। যখন ভারতীয়রা আক্রমণ করতে নেমে আসে, কাস্টার তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন ঘোড়াগুলোকে গুলি করতে এবং তাদের লাশ সামনে গড়িয়ে দেয়াল বানাতে। কিন্তু এটি গুলির বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করতে পারেনি। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কাস্টার ও তার সকল সৈন্য নিহত হন, যা আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক বিপর্যয়ের মধ্যে একটি। একদিনের অতিরিক্ত লড়াইয়ের পর রেনো ও বেন্টিনের একত্রিত বাহিনী ভারতীয়রা যুদ্ধ থামানোর পর পালিয়ে যায়। তারা জানত যে আরও দুইটি সৈন্যদল তাদের দিকে আসছে, তাই দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। কাস্টারের এই শেষ যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা তার গৃহযুদ্ধে অর্জিত যেকোনো সাফল্যকে ছাপিয়ে যায়। কাস্টার ২৫ জুন, ১৮৭৬ সালে লিটল বিঘর্ন যুদ্ধে পরাজিত হন ও নিহত হন, যা "কাস্টারের শেষ প্রতিরোধ" নামে পরিচিত। == ঐ সময়কার নারীর ইতিহাস == === ভিক্টোরিয়া উডহাল === [[File:Victoria Claflin Woodhull by Mathew Brady - Oval Portrait.jpg|thumb|উচ্চতা সমন্বিত|রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ভিক্টোরিয়া উডহাল]] ১৮৭২ সালে ভিক্টোরিয়া উডহাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন। তিনি মে ১০ তারিখে ইকুয়াল রাইটস পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও এটি অনস্বীকার্য যে তিনি প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী, তার প্রার্থিতার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল; কারণ তার নাম আসলে ভোটের তালিকায় ছিল না এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে ৩৫ বছরের নিচে থাকা উচিত নয়। উডহাল কোনো ইলেক্টোরাল ভোট পাননি, তবে প্রমাণ আছে যে তিনি কিছু জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন যা গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন === উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন গঠিত হয় ২২ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ সালে। নিউ ইয়র্কের ফ্রেডোনিয়াকে এই গোষ্ঠীর জন্মস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। টেম্পারেন্স আন্দোলন ছিল একটি সামাজিক আন্দোলন যা মদ্যপানের পরিমাণ কমানোর জন্য কাজ করেছিল। এই আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং নারীরা বার ও ওষুধের দোকানে গিয়ে গান গেয়ে এবং প্রার্থনা করত। ১৮৭৪ সালে ক্লিভল্যান্ড, ওহায়োতে ন্যাশনাল উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীরা অ্যালকোহল সেবনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে সেলুনে গিয়ে প্রার্থনা করত। অনেক সময় তাদের প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত এবং বারকর্মীদের গালিগালাজ সহ্য করতে হত। এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা আইন প্রণয়নে সহায়ক হয়। ==সূত্রসমূহ== {{reflist|2}} {{chapnav|গৃহযুদ্ধ|আবিষ্কারের যুগ এবং গিল্ডেড যুগ}} {{status|১০০%}} {{BookCat}} 4bpuolqxk0n85s38qrpqtpi1eglyu00 প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/পর্যালোচনা: স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং গ্রুপ 0 25253 85166 78869 2025-06-22T05:12:47Z RDasgupta2020 8748 /* কৌশল আলোচনা */ 85166 wikitext text/x-wiki [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] সংগ্রহ/পাঠ্যপুস্তকের একাধিক অধ্যায়গুলি পর্যালোচনা করুন। ==কৌশল আলোচনা== প্রোগ্রামিং অধ্যয়নের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একটি কৌশল অনুসরন করা উচিত। আপনার পঠনপাঠনের পদ্ধতি ও বিষয় আয়ত্তকরনের কৌশল বিভিন্ন প্রশিক্ষকের ক্ষেত্রে আলাধা আলাধা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষক পর্যালোচনার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলোর উপর ব্যবহার করেন: #বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা #স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক প্রশ্নাবলীর অনুশীলন, যেমন সত্য/মিথ্যা নির্বাচনকারী প্রশ্ন, বহু বিকল্প নির্বাচনী প্রশ্ন অথবা সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নের চর্চা #প্রোগ্রামিং -এর মাধ্যমে সমস্যাভিত্তিক প্রশ্নের সমাধান [https://cnx.org/contents/MDgA8wfz@22.2:YzfkjC2r@17|"প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা- সি++ ব্যাবহার করে মডুলার স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রাম"] -এই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন অংশে এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য এগুলো ভালোভাবে অনুশীলনের পরামর্শ দেওয়া হয়। #যদি আপনার অধ্যাপক বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাসমূহের স্বচ্ছ ধারনা আছে কিনা তা যাচাই করার পরীক্ষা নেন এবং যার জন্য আপনি বিষয় সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলি মুখস্থ রাখার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি পাঠ্যবইয়ের অ্যাপেনডিক্স অংশে থাকা <code>Study Habits that Build the Brain</code> শীর্ষক অংশের <code>"Using the Flash Card Activity"</code> অংশটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। সংজ্ঞাগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। #বইয়ের অনুশীলনী অংশের যেকোনো অনুশীলন দ্রুত পর্যালোচনা করুন। পাশাপাশি আপনি যেসব মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোর উত্তর পর্যালোচনা করুন এবং আপনি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর ভুল করেছেন, সেগুলোর কারণ ভালোভাবে বুঝে নিন। #যদি আপনার অধ্যাপক ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন যে তিনি পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশ থেকে বেশ কয়েকটি সমস্যা পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুমতি থাকলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন যাতে উত্তর আরও উন্নত করা যায়। পরীক্ষার আগে প্রতিটি সমস্যা ও তার উত্তর সামান্য সময় নিয়ে পর্যালোচনা করুন। ==বিবিধ বিষয়াবলী== লিঙ্ক:[https://legacy.cnx.org/content/m21653/latest/if_then_else_flow.gif চলমান চিত্রসহ <code>if-then-else</code> -এর উদাহরন] লিঙ্ক:[https://legacy.cnx.org/content/m21653/latest/do_while_flow.gif চলমান চিত্রসহ <code>do-while</code> ''লুপ'' -এর উদাহরন] লিঙ্ক:[https://legacy.cnx.org/content/m21653/latest/while_flow.gif চলমান চিত্রসহ <code>while</code> -এর উদাহরন] লিঙ্ক: [https://legacy.cnx.org/content/m21653/latest/Manipulation_Data_Part_2.pdf ডেটা ম্যানিপুলেশন পার্ট ২] লিঙ্ক:[https://legacy.cnx.org/content/m21653/latest/Manipulation_Data_Part_3.pdf ডেটা ম্যানিপুলেশন পার্ট ৩] {{BookCat}} efw2wihjx7cims288kf3xm80tf8bpgy চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন 0 26207 85212 84856 2025-06-22T11:02:18Z NusJaS 8394 NusJaS [[চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা]] কে [[চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 84856 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে মেটাকগনিশন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের (Self-Regulated Learning - SRL) মৌলিক ধারণাগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। আমরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করেছি। এখানে মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের তাত্ত্বিক ভিত্তি আলোচনা করার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এসব মৌলিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া অ্যাকাডেমিক পরিবেশে শেখার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সহজতর করতে কীভাবে সহায়তা করা যায়। এই অধ্যায়টি পড়ার পর আপনি শিখবেন: * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের ধারণা এবং প্রধান মডেলসমূহ। * মেটাকগনিশনের ধারণা এবং কীভাবে এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পুনর্গঠন ও শেখার কৌশল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। * স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ও মেটাকগনিশনের উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদানসমূহ। * শেখার বিশ্লেষণ কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। * প্রযুক্তি কীভাবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে সহজ করে তোলে। * স্ব-নিয়ন্ত্রণ বিকাশের চারটি ধাপ এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের চারটি ধরন। * কীভাবে শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উদ্দীপিত ও উৎসাহিত করা যায়। == ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়ন == [[চিত্র:SRL_Chapter_Map.jpg|থাম্ব|783x783পিক্সেল|চিত্র ১. মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] [[চিত্র:Section_1_Defining_the_Concepts_.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ২. ধারণাসমূহ সংজ্ঞায়িত করা]] == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের সংজ্ঞা == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বলতে বোঝায় যে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).">Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011). Cognitive psychology and instruction (5th ed.). Boston, MA: Pearson</ref>; এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ কৌশল ব্যবহার করে তাদের জ্ঞান, আচরণ ও প্রেষণা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। <ref name="Zimmerman2002">Zimmerman, B. J. (2002). Becoming a self-regulated learner: an overview. Theory Into Practice.41(2):64–70. doi:10.1207/s15430421tip4102\2.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে, শেখার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে এবং নিজেদের উৎসাহিত করতে পারে <ref name="Purdie, N., & Hattie, J. (1996).">Purdie, N., & Hattie, J. (1996). Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning. American Educational Research Journal 33.(4): 845–871.</ref>। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার পারফরম্যান্স ও আচরণকে আরও সক্রিয় ও দক্ষ করে তুলতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের্থীরা নিজেদের বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে শেখার কৌশল পরিবর্তন ও উন্নয়ন করতে পারে <ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''">García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014). The effects of question-generation training on metacognitive knowledge, self regulation and learning approaches in Science. Psicothema, 26(3), 385-390.</ref> এবং গঠনমূলক কার্যকলাপ, সহযোগিতামূলক কাজ ও মুক্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের শেখাকে মূল্যায়ন করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষার একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রেষণামূলকভাবে সক্রিয় পদ্ধতি। উইন ও বেকার (২০১৩, পৃষ্ঠা ৩)-এর মতে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হচ্ছে "মেটাকগনিটিভভাবে পরিচালিত প্রেষণার আচরণগত প্রকাশ" <ref name="Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013).">Winne, P. H. & Baker, R. J. D. (2013). The potentials of educational data mining for researching metacognition, motivation and self-regulated learning. Journal of Educational Data Mining, 5(1).</ref>। এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা, আচরণ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা শেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সফলভাবে অগ্রসর হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).">Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011). Encouraging self-regulated learning in the classroom: A review of the literature. Metropolitan Educational Research Consortium (MERC).</ref>। জিমারম্যান (২০০২) এর মতে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানীয় ও আচরণগত কার্যকলাপ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: পূর্বচিন্তা পর্যায়, কার্যকরন পর্যায় এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে (স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ, কৌশলগত পরিকল্পনা) শেখার কাজ বিশ্লেষণ ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় <ref name="Zimmerman2002" />। কার্যকরন পর্যায়ে কৌশল প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ ঘটে এবং আত্ম-মূল্যায়ন পর্যায়ে শেখার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয় <ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).">Furnes, B., & Norman, E. (2015). Metacognition and reading: Comparing three forms of metacognition in normally developing readers and readers with dyslexia. Dyslexia: An International Journal Of Research And Practice, 21(3), 273-284</ref>। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া আরও গভীরভাবে বুঝতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের বৃহৎ কাঠামো পরবর্তী অংশে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। == মেটাকগনিশনের সংজ্ঞা == মেটাকগনিশন হলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের একটি মূল উপাদান। এটি জ্ঞানীয় চিন্তা এবং চিন্তার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত। মেটাকগনিটিভ সক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতে পারে <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। এই অংশে আমরা মেটাকগনিশনের সংজ্ঞার বিবর্তন বিশ্লেষণ করবো। ১৯৭৯ সালে ফ্ল্যাভেল প্রথম মেটাকগনিশনের ধারণা উপস্থাপন করেন তার গবেষণায় <ref name="Flavell, J. H. (1979).">Flavell, J. H. (1979). Metacognition and cognitive monitoring: A new area of cognitive–developmental inquiry. American Psychologist, 34(10), 906-911.</ref>। এটি শেখার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন পাঠ পড়া, লেখা, পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন। মেটাকগনিশনের দুটি মৌলিক কার্যাবলি হলো: জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ <ref name="Efklides, A. (2008).">Efklides, A. (2008). Metacognition: Defining its facets and levels of functioning in relation to self-regulation and co-regulation. European Psychologist, 13(4), 277-287.</ref>। ১৯৮০ সালে অ্যান ব্রাউন মেটাকগনিশনের একটি সংজ্ঞা দেন যা প্রথমবার “regulation” (নিয়ন্ত্রণ) শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় <ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011)." />। সাম্প্রতিক গবেষণায় মেটাকগনিশনকে তিনটি উপাদানে বিভক্ত করা হয়েছে <ref name="Efklides, A. (2008)." />: '''মেটাকগনিটিভ জ্ঞান''' (বা মেটাকগনিটিভ সচেতনতা): শিক্ষার্থীদের নিজেদের সম্পর্কে, কাজ, কৌশল, লক্ষ্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানার সক্ষমতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি তিন প্রকারের হতে পারে: ঘোষণামূলক জ্ঞান, পদ্ধতিগত জ্ঞান এবং শর্তাধীন জ্ঞান <ref name="Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987).''">Jacobs, J.E., & Paris, S.G. (1987). Children's metacognition about reading: Issues in definition, measurement, and instruction.Educational Psychologist 22: 225–278.</ref>। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' শিক্ষার্থী যখন কোনও কাজের মুখোমুখি হয় এবং তার তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে, তখন সে কী অনুভব করে ও কীভাবে উপলব্ধি করে—তা হলো মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা <ref name="Efklides, A. (2008)." />। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শেখার লক্ষ্য সংশোধনে সহায়তা করে। '''মেটাকগনিটিভ কৌশল/দক্ষতা:''' এগুলো হলো জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলের সচেতন ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে: দিকনির্দেশনা কৌশল, পরিকল্পনা কৌশল, জ্ঞান প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল, পরিকল্পিত কাজ সম্পাদনের পর্যবেক্ষণ কৌশল এবং ফলাফল মূল্যায়নের কৌশল <ref name="Efklides, A. (2008)." />। নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল দক্ষতা হলো পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন <ref name="Schraw, G. (1998).">Schraw, G. (1998). Promoting general metacognitive awareness. Instructional Science 26: 113–125.doi:10.1023/A:1003044231033.</ref>। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান হলো জ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণের জন্য, আর মেটাকগনিটিভ দক্ষতা হলো নিয়ন্ত্রণের জন্য। মেটাকগনিশনের সংজ্ঞাগুলো এটিকে “বহুমাত্রিক”, “সচেতন প্রক্রিয়া” এবং “ব্যক্তিকেন্দ্রিক” হিসেবে তুলে ধরে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় মেটাকগনিশন নিয়ে গবেষণা করতে হলে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন <ref name="Efklides, A. (2008)." />। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম তৈরি হয়েছে। এটি মেটাকগনিশনের এই তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন, কিছু হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যাতে তারা নিজেদের জ্ঞানীয় শেখা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই কার্যক্রমগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত মেটাকগনিটিভ জ্ঞান ও প্রক্রিয়া জোর দিয়ে থাকে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মূল্যায়ন ও মেটাকগনিশনের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে <ref name="Efklides, A. (2008)." />। == অন্যান্য সম্পর্কিত ধারণা == === শিক্ষার বিচার === মেটাকগনিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ধারণা হলো শিক্ষার বিচার বা জাজমেন্ট অফ লার্নিং (JOLs)। শিক্ষার্থীরা কতটা ভালোভাবে কোনো তথ্য শিখেছে তা নিয়ে তাদের নিজেদের মূল্যায়নই শিক্ষার বিচার<ref name="Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005).">Son, L.K., & Metcalfe, J. (2005). Judgments of learning: Evidence for a two-stage process. Memory & Cognition, 33(6), 1116-1129.</ref>। নেলসন ও ডানলস্কি (১৯৯১) বলেছেন, JOLs শেখার প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। শিখনের পর কিছুটা সময় অপেক্ষা করে মূল্যায়ন করলে এটি আরও নির্ভুল হয়, একে বলা হয় “বিলম্বিত-JOL প্রভাব” <ref name="Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991).">Nelson, T. O., & Dunlosky, J.. (1991). When People’s Judgments of Learning (JOLs) Are Extremely Accurate at Predicting Subsequent Recall: The “Delayed-JOL Effect”. Psychological Science, 2(4), 267–270. .</ref>। জানার অনুভূতি্র বিচার হলো, শিক্ষার্থী কোনও প্রশ্ন বা উত্তর কতটা বুঝে বা জানে তার পূর্বানুমান। <ref name="Bembenutty, H. (2009).">Bembenutty, H. (2009). Feeling-of-Knowing Judgment and Self-Regulation of Learning. Education, 129(4), 589-598.</ref>। এটি জাজমেন্ট অফ লার্নিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। উভয়েই স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার মাধ্যমে সংযুক্ত করে। এই অধ্যায়ে পরবর্তী অংশে মেটাকগনিটিভ নিখুঁততার ধারণা আলোচনা করা হবে। === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া === স্ব-নিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া বোঝায় নিয়ন্ত্রণ কীভাবে পরিচালিত হয়। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো—বস্তু এবং ক্রিয়া। বস্তু হলো শিক্ষার্থীর শেখার লক্ষ্য এবং ক্রিয়া হলো সেই লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতি। এই ক্রিয়াগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে: জ্ঞান, আবেগ, প্রেষণা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক পরিবেশে পরিবর্তন <ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).">Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014). Development of metacognitive knowledge of reading strategies and attitudes toward reading in early adolescence: The effect on reading comprehension. Psychological Topics, 23(1), 77–98.</ref>। উদাহরণস্বরূপ, প্রেষণার ক্রিয়া নির্ভর করে শিক্ষার্থীরা কবে এবং কীভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তার উপর। একইভাবে, আচরণগত পরিবর্তন ব্যক্তিগত শেখার দক্ষতা ও লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলে। === স্ব-মূল্যায়ন === স্ব-মূল্যায়ন মানুষকে তাদের দক্ষতা ও কৌশল সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। এটি এমন কৌশল বেছে নিতে উৎসাহিত করে, যেগুলো শেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর প্রথম পর্যায়ে ঘটে। স্ব-মূল্যায়ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের মোটিভেটেড থাকতে হয় এবং নতুন শেখার কৌশল গ্রহণের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকতে হয়। স্ব-মূল্যায়নের জন্য শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব অপরিহার্য।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016).">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016)। ট্রেস-ভিত্তিক মাইক্রো-বিশ্লেষণাত্মক পরিমাপ আত্ম-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার। জার্নাল অফ লার্নিং অ্যানালিটিক্স, ৩(১), পৃ. ১৮৩-২২০।</ref> শেখার কৌশল সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি স্ব-মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে: আমার কী কী দক্ষতা আছে? আমার আগ্রহ কী? আমি কি ভিডিও দেখে ভালো শিখি, নাকি নোট লিখে? আমি কি লিখে নাকি টাইপ করে ভালো শিখি? আমি কি মুখস্থ করে ও ব্যাখ্যা করে শিখতে পারি?<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''2" /> [[চিত্র:Reflection.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৩। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া]] === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য === সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হলো আত্ম-প্রক্রিয়া, লক্ষ্য এবং সম্ভাব্য কর্মকাণ্ডের সমন্বয়। এটি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক হয়<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).2" />। প্রতিটি শিক্ষার্থীরই নিজের শেখার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ নির্দিষ্ট জ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ থেকে শেখে, আবার কেউ শেখে চাকরির প্রয়োজনে। এর ফলে, তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে চালিত করে বিভিন্ন ধরনের প্রেরণা। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ মূলত পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এটি দেখায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যক্তিগত কার্যক্রম, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে: === স্ব-ব্যাখ্যা === স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার সহায়ক। বুচার<ref name="Butcher2006">Butcher, K. R. (2006)। লেখার সঙ্গে চিত্র ব্যবহার করে শেখা: মানসিক মডেল উন্নয়ন ও অনুমান তৈরিতে সহায়তা। ''জার্নাল অফ এডুকেশনাল সাইকোলজি, ৯৮''(১), ১৮২-১৯৭। DOI: 10.1037/0022-0663.98.1.182</ref> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যার ধারণাটি প্রথম ও তার সহকর্মীরা ১৯৯৭ সালে ব্যবহার করেন এবং এটি এমন একটি অর্থবহ মৌখিক বিবৃতি নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই তারা যা শিখছে তা ব্যাখ্যা করে। চাই<ref name="Chi2000">Chi, M. T. H. (2000)। ব্যাখ্যামূলক পাঠ্য স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শেখা: অনুমান তৈরি ও মানসিক মডেল সংশোধনের দ্বৈত প্রক্রিয়া। ''Advances in instructional psychology'' (pp. 161–238)। Mahwah, NJ: Lawrence Erlbaum।</ref> নিজে স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি জ্ঞানগত কার্যকলাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে কেউ নতুন কোনো বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখে, সাধারণত পাঠ্য বা অন্য কোনো মাধ্যমে। স্ব-ব্যাখ্যা এবং বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য হলো—স্ব-ব্যাখ্যার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর শেখা বিষয়টি অনুধাবন করা, শুধুমাত্র মুখস্থ নয়। এ দিক থেকে, স্ব-ব্যাখ্যা একটি আত্ম-নির্দেশিত জ্ঞান নির্মাণমূলক কার্যক্রম<ref name="Chi2000" />। স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ধারণাসমূহের মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ খুঁজে পায় (বিসরা, লিউ, সালিমি, নেসবিট ও উইন<ref name="Bisra2018">Bisra, K., Liu, Q., Salimi, F., Nesbit, J.C. & Winne, Ph, H. ''স্ব-ব্যাখ্যা প্ররোচিতকরণ: একটি মেটা-বিশ্লেষণ''। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, Simon Fraser University, Burnaby, BC।</ref>)। বিসরা প্রমুখের মতে, স্ব-ব্যাখ্যা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আত্ম-উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন তথ্য বোঝার জন্য করা হয়। যেহেতু এটি আত্ম-কেন্দ্রিক, তাই স্ব-ব্যাখ্যা চুপচাপ করা যায় বা উচ্চস্বরে বললেও তা মূলত শিক্ষার্থীর কাছেই বোধগম্য। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014">Wylie, R., & Chi, M. T. H. (2014)। মাল্টিমিডিয়া শেখায় স্ব-ব্যাখ্যার নীতি। In R. E. Mayer (Ed.), ''The Cambridge handbook of multimedia learning'' (2nd ed., pp. 413e432)। নিউ ইয়র্ক, NY: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।</ref> স্ব-ব্যাখ্যাকে একটি গঠনমূলক ও প্রজন্মমূলক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন যা শেখার গভীরতা বাড়ায় এবং অন্যান্য জ্ঞানগত দক্ষতার মতো সময়ের সাথে উন্নত হয়। সাধারণভাবে, 'স্ব-ব্যাখ্যা' (SE) বলতে নিজেকে কিছু বোঝানোর উদ্দেশ্যে তৈরি মৌখিক বিবৃতি বোঝায়। অর্থাৎ, এটি সেই সকল বিষয়ভিত্তিক বিবৃতি যা একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যাংশ পড়ার পর তৈরি করে<ref name="Chi2000" />। == স্ব-ব্যাখ্যা বনাম নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা == স্ব-ব্যাখ্যা একটি কার্যকর শেখার কৌশল। এটি দৃঢ় ও স্থায়ী শেখার দিকে নিয়ে যায়। বিসরা ও তার সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কেবল সেই ব্যক্তি দ্বারা নয়, অন্যদের দ্বারাও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে, শেখা ঘটে স্ব-ব্যাখ্যার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নয়, বরং তার ফলাফলের মাধ্যমে—যেমন একজন শিক্ষক যে ব্যাখ্যা দেন, সেটি শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান সম্পর্কে জানেন না। হাউসম্যান এবং ভ্যানলেহন (বিসরা প্রমুখের উদ্ধৃতি অনুযায়ী<ref name="Bisra2018" />) এই ধরণের ফলাফল-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যাকে "কভারেজ হাইপোথিসিস" বলেন। তার মতে, স্ব-ব্যাখ্যা কার্যকর হয় কারণ এটি "নির্দেশনামূলক উপকরণে অনুপস্থিত অতিরিক্ত বিষয়বস্তু তৈরি করে" (পৃ. ৩০৩)। তবে অধিকাংশ স্বীকৃত তত্ত্ব মতে, স্ব-ব্যাখ্যার উৎপাদিত ফলাফল একটি প্রজন্মমূলক জ্ঞানগত প্রক্রিয়া। এখানে কভারেজ হাইপোথিসিস এটিকে নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার সমতুল্য ফলাফল হিসেবে দেখে। যদি শিক্ষার্থী নিজে থেকে সঠিক স্ব-ব্যাখ্যা তৈরি করতে না পারে, তখন নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় (বিসরা প্রমুখ<ref name="Bisra2018" />)। ভ্যানলেন, জোন্স ও চাই<ref name="vanlehn1992">VanLehn, K., Jones, R. M., & Chi, M. T. (1992)। স্ব-ব্যাখ্যার প্রভাবের একটি মডেল। জার্নাল অফ দ্য লার্নিং সায়েন্সেস, ২(১), ১-৫৯। doi:10.1207/s15327809jls0201_1।</ref> স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতার তিনটি কারণ উল্লেখ করেন: প্রথমত, এটি একটি প্ররোচনামূলক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ঘাটতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, এটি সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া ও ধাপগুলিকে সাধারণীকরণে সহায়তা করে। তৃতীয়ত, এটি শিক্ষার্থীদের উপমার মাধ্যমে সমস্যার গভীর ব্যাখ্যা তৈরি করে। এছাড়া, ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের চিন্তায় অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করে মানসিক মডেলে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনে। এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ঘোষণামূলক জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়<ref name="Wylie,Chi2014" />। == নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার তুলনায় স্ব-ব্যাখ্যার সুবিধা == বিসরা ও তার সহকর্মীদের<ref name="Bisra2018" /> পরিচালিত মেটা-বিশ্লেষণ স্ব-ব্যাখ্যার পক্ষে এবং কভারেজ হাইপোথিসিস-এর বিপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে। এই গবেষণায় দেখা যায়, স্ব-ব্যাখ্যা (g=.২৯) নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর। লেখকরা এই কার্যকারিতাকে ব্যাখ্যা করেন শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান এবং নতুন জ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল হিসেবে। এটি অর্থপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। যখন পূর্বজ্ঞান ও নতুন তথ্যের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন শিক্ষার্থীর জ্ঞানগত প্রক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং তৈরি হওয়া ব্যাখ্যাটি পরবর্তীতে মনে রাখা এবং যুক্তি প্রয়োগে সহায়তা করে<ref name="Bisra2018" />। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, স্ব-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইঙ্গিত সহ স্ব-ব্যাখ্যা, নির্দেশনামূলক ব্যাখ্যার চেয়েও কার্যকর হতে পারে, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা সক্রিয় হয়—প্রশিক্ষণ, ভুল সংশোধন বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছাড়াই। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012">Ionas, I. G., Cernusca, D., & Collier, H. L. (2012)। পূর্বজ্ঞান কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে: বিজ্ঞানে সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত একটি অন্বেষণধর্মী গবেষণা। International Journal of Teaching and Learning in Higher Education, 24(3), 349-358।</ref> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যা শিক্ষক, বই বা অন্যান্য উৎসের ব্যাখ্যার চেয়ে কার্যকর কারণ—১) এটি পূর্বজ্ঞান সক্রিয় করে, ফলে এটি জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে; ২) এটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব সমস্যাকে কেন্দ্র করে; এবং ৩) শিক্ষার্থী যখন ইচ্ছা তখন এটি ব্যবহার করতে পারে। == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশ, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যা == মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশগুলো সাধারণত পাঠ্য, অ্যানিমেশন, চিত্র (যেমন: চিত্র, রেখাচিত্র), বিবরণী এবং ন্যারে‌শন একত্রে উপস্থাপন করে এবং কম্পিউটারভিত্তিক হয়<ref name="Wylie,Chi2014" />। মাল্টিমিডিয়ার সুবিধা হলো এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপস্থাপন পদ্ধতি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, রেখাচিত্র স্থানিক তথ্য বুঝতে সাহায্য করে এবং ন্যারেশন একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করে যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য অপেক্ষা বেশি কিছু শিখে। মাল্টিমিডিয়া থেকে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা মৌখিক ও অ-মৌখিক উভয় তথ্য এনকোড করতে পারে এবং প্রতিটি উৎস থেকে উপস্থাপিত তথ্য একত্রিত করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন<ref name="Wylie,Chi2014" />। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই ধরনের শেখা তখনই কার্যকর, যখন শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে তথ্য একত্রিত করার জ্ঞানগত প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi2014" /> বলেন, এই জ্ঞানগত অংশগ্রহণের একটি উপায় হলো স্ব-ব্যাখ্যা। বুচার<ref name="Butcher2006" /> একটি গবেষণায় দেখান, যেসব শিক্ষার্থী মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সময় স্ব-ব্যাখ্যা করেছে, তারা শুধুমাত্র পাঠ্য ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি শিখেছে। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas2012" /> পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বজ্ঞান থাকলে রসায়নের সমস্যা সমাধানে স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা বাড়ে। গবেষণায় শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, পূর্বজ্ঞান ও স্ব-ব্যাখ্যার মিথস্ক্রিয়ার ফলে দুটি উপকার পাওয়া যায়: এক, যত বেশি তারা নিজেদের রসায়ন জ্ঞান প্রকাশ করেছে, তত বেশি কার্যকর ছিল স্ব-ব্যাখ্যা; দুই, স্ব-ব্যাখ্যাভিত্তিক কৌশল কার্যকর করতে হলে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট "থ্রেশহোল্ড" পরিমাণ পূর্বজ্ঞান থাকতে হয়। অর্থাৎ, পূর্বজ্ঞান কম থাকলে স্ব-ব্যাখ্যা তেমন ফলদায়ক নয়, বরং এটি শেখার কার্যকারিতা ব্যাহত করে<ref name="Ionas2012" />। যখন শিক্ষার্থীরা মনে করে তারা রসায়ন সম্পর্কে ভালো জানে, তখন তারা শক্তিশালী স্ব-ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু থ্রেশহোল্ডে না পৌঁছালে, তারা আলাদা আলাদা ধারণা জানলেও সেগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারে না<ref name="Ionas2012" />। অতএব, যখন শিক্ষার্থীরা স্ব-ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিখতে চায়, তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে অনুরূপ ধারণা, শর্ত বা প্রক্রিয়াগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাতে তারা নতুন জ্ঞান গঠন করতে পারে এবং প্রদত্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীর যদি পূর্ব জ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তি না থাকে, তাহলে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে এগোয় না। এছাড়াও ইয়ে, চেন, হুং, ও হোয়াং<ref name="Yeh2010">Yeh, F., Y, Chen, C., M, Hung, H., P., & Hwang, J., G. (2010). Optimal self-explanation prompt design in dynamic multi-representational learning environments. Journal computers and education 54, 1089–1100.</ref> উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার পদ্ধতিতে পূর্ব জ্ঞানের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তারা বিভিন্ন স্তরের পূর্ব জ্ঞানের অধিকারী ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালান, যাতে বোঝা যায় গতিশীল মাল্টিমিডিয়া উপাদানের সঙ্গে শেখার সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা কীভাবে তাদের শেখাকে প্রভাবিত করে। তারা দুই ধরণের স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করেন এবং শেখার ফলাফল, মানসিক চাপ, শেখার সময়কাল এবং দক্ষতার মতো বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করেন। যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের কাজটি যুক্তিসংগতভাবে ব্যাখ্যা করতে বলেছে এবং পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশনের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করতে বলে, আর যদি অনুমান ভুল হয়, তাহলে তাদের ব্যাখ্যা করতে হয় কেন তা ভুল। ফলাফল দেখা যায়, যারা কম পূর্ব জ্ঞান নিয়ে এসেছিল, তারা যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকার পেয়েছে, আর যারা বেশি জ্ঞান রাখে, তারা পূর্বাভাসভিত্তিক অনুরোধ থেকে বেশি উপকৃত হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে তাদের পর্যাপ্ত পূর্ব জ্ঞান থাকে এবং সেই নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে একটি যথাযথ পটভূমি গড়ে ওঠে, যাতে তারা নতুন তথ্য বুঝতে এবং স্ব-ব্যাখ্যা করতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন মাত্রার পূর্ব জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ভিন্নভাবে কাজ করে। অতএব, স্ব-ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব জ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাল্টিমিডিয়া পরিবেশে উচ্চতর জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অ্যানিমেশনের পরবর্তী দৃশ্য অনুমান করতে পছন্দ করে, যেখানে কম জ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ঘটনার যুক্তি খুঁজতে বেশি আগ্রহী। == স্ব-ব্যাখ্যার শিক্ষণ পদ্ধতির প্রতিফলন == ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে যা শিক্ষাবিষয়ক পাঠ্যক্রম তৈরির সময় একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, যেখান থেকে স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হতে পারে। যদিও স্ব-ব্যাখ্যা শেখানোর এবং রিভিউ সেশনের সুবিধা প্রসারিত করতে ব্যবহৃত হয় বা ছোট ছোট ট্রান্সফার সমস্যার জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, তবুও শিক্ষকদের উচিত শেখার প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ না করা। অর্থাৎ, শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে স্ব-ব্যাখ্যা প্রয়োগ না করাই উত্তম। বরং, অন্য কৌশলগত পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। এটি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং তখন স্ব-ব্যাখ্যার ব্যবহার ফলপ্রসূ হয়<ref name="Ionas20122" />। লেখকরা উল্লেখ করেন, স্ব-ব্যাখ্যার একটি সুবিধা হলো—যখন শিক্ষার্থীরা একবার শিখে যায় কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করতে হয়, তখন তারা এটি অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে, কারণ এটি একটি বিষয়ে নিরপেক্ষ মানসিক কৌশল। তবে একটি অসুবিধাও রয়েছে, আর তা হলো—যখন শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ে, তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানও বাড়তে হয়, না হলে স্ব-ব্যাখ্যা ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে, যদি শিক্ষার্থীরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তারা স্ব-ব্যাখ্যার কার্যকারিতা ঠিকভাবে অনুভব নাও করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। তাই ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" /> যুক্তি দেন, শিক্ষাদান পদ্ধতি তৈরি করার সময় শিক্ষকদের উচিত এমন ব্যবস্থা রাখা, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট জ্ঞানের স্তরে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্ব-ব্যাখ্যার প্রয়োগ না করে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার ফল অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যা করার আগে তাদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়ন করা জরুরি। এরপর এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষকেরা কীভাবে স্ব-ব্যাখ্যা করাবেন, তা নির্ধারণ করবেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞান মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকরা নতুন সমস্যা সমাধানের আগে আরও নির্দিষ্ট নির্দেশনামূলক প্রশ্ন দিতে পারেন। যখন শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুটি বুঝে ফেলে, তখন সাধারণ অনুরোধের মাধ্যমে স্ব-ব্যাখ্যা আহ্বান করা যায়। শিক্ষকরা চাইলে শিক্ষার্থীদের এমন অনুরোধ নিজেরা ব্যবহার করতেও বলতে পারেন সমস্যা সমাধানের সময়। প্রকৃতপক্ষে, স্ব-ব্যাখ্যার দীর্ঘমেয়াদী উপকার হলো—শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এ কৌশল সক্রিয় করতে পারে এবং সমস্যার সমাধানের সময় এটি প্রয়োগ করতে পারে<ref name="Ionas20122" />। ইওনাস, সার্নুস্কা ও কোলিয়ার<ref name="Ionas20122" />–এর মতে, আরও একটি কৌশল হলো—শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের যুক্তি উপস্থাপন কাঠামোর মাধ্যমে নিজেদের কাছে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করা। এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পূর্বনির্ধারিত অনুরোধ ব্যবহার করে এমনভাবে যুক্তি তৈরি করে যা সমস্যার সমাধান পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেয়। অর্থাৎ, এই কৌশলে পূর্বনির্ধারিত যুক্তিভিত্তিক অনুরোধ শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে<ref name="Ionas20122" />। তবে, স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ তৈরি করার কোনো সার্বজনীন নিয়ম নেই, কারণ এটি বিষয়-নির্ভর। নির্দেশনামূলক প্রশ্নগুলো কখনও সাধারণ, আবার কখনও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে এবং শিক্ষক বা শিক্ষকের দায়িত্ব এটি নির্ধারণ করা কোন অনুরোধ সবচেয়ে ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের স্ব-ব্যাখ্যার আচরণে নিয়ে আসবে<ref name="Ionas20122" />। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যতে একটি কৌশল গ্রহণে সহায়তা করতে শিক্ষকদের উচিত যদি বিষয়টি অপরিচিত হয়, তাহলে সহজ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা এবং ধীরে ধীরে আরও নির্দিষ্ট প্রশ্নে অগ্রসর হওয়া<ref name="Ionas20122" />। == স্ব-ব্যাখ্যার বিভিন্ন ধরন == স্ব-ব্যাখ্যাকে যদি একটি ধারাবাহিক রেখায় রাখা হয়, তাহলে এক প্রান্তে থাকবে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার অনুরোধ। এটি শিক্ষার্থীদের পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে নতুন তথ্যকে যুক্ত করতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের স্ব-ব্যাখ্যায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে এবং পূর্বনির্ধারিত ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কারণ এখানে শিক্ষার্থীদের চিন্তা মৌলিক এবং অন্য কারও প্রভাবিত নয়, তাই এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাখ্যা। ধারাবাহিক রেখার অন্য প্রান্তে থাকবে মেনু-ভিত্তিক ব্যাখ্যা অনুরোধ। এই ধরনের ব্যাখ্যায় একটি ব্যাখ্যার তালিকা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং সেখান থেকে বেছে নিতে বলা হয় ও নির্বাচনের যুক্তি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। অ্যাটকিনসন, রেনক্ল ও মেরিল<ref name="Atkinson2003">Atkinson, R. K.,Renkl , A. , & Merrill , M. M. (2003). Transitioning from studying examples to solving problems: Effects of self-explanation prompts and fading worked-out steps.''Journal of Educational Psychology, 95''(4), 774–783.</ref>–এর এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা মেনু থেকে বেছে নেওয়ার সময় স্ব-ব্যাখ্যা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে, তারা কাছাকাছি ও দূরবর্তী ট্রান্সফার পরিস্থিতিতে অন্যদের তুলনায় ভালো করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, মেনুর মাধ্যমে ব্যাখ্যার অনুরোধ শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হতে পারে। যেখানে উন্মুক্ত ও মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতি ধারাবাহিক রেখার দুই প্রান্তে অবস্থান করে, সেখানে ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড ও রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধ মাঝামাঝি থাকে। ফোকাসড ও উন্মুক্ত-প্রান্ত অনুরোধের মধ্যে দুটি মিল রয়েছে—উভয়ই জেনারেটিভ এবং শিক্ষার্থীর চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে না। তবে, ফোকাসড পদ্ধতিতে স্ব-ব্যাখ্যার বিষয়বস্তুর নির্দেশনা আরও স্পষ্ট থাকে। উন্মুক্ত অনুরোধে কেবল নতুন তথ্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, কিন্তু ফোকাসড অনুরোধে সরাসরি নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়<ref name="Wylie,Chi20142" />। স্ব-ব্যাখ্যা স্ক্যাফোল্ড আরও নির্দিষ্ট। স্ক্যাফোল্ড বা সহায়তাপূর্ণ স্ব-ব্যাখ্যা অনুরোধ ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে। এখানে শিক্ষার্থীদের ফাঁকা স্থান পূরণ করে ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ করতে হয়। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> ধারণা করেন, এই পদ্ধতি অভিজ্ঞতাহীন শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী, যাদের নিজে নিজে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যা গঠনের মতো যথেষ্ট পূর্ব জ্ঞান নেই। রিসোর্স-ভিত্তিক স্ব-ব্যাখ্যা মেনু-ভিত্তিক পদ্ধতির মতো। এখানে শিক্ষার্থীদের একটি গ্লসারি থেকে বেছে নিয়ে সমস্যার সমাধানের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। তারা এই গ্লসারিকে একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতিটি ধাপের ব্যাখ্যাকে স্মরণ না করে চিনে নিতে পারে। ওয়াইলি ও চাই রিসোর্স-ভিত্তিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্লসারির বড় আকারকে তুলে ধরেন। ওয়াইলি ও চাই<ref name="Wylie,Chi20142" /> মনে করেন, স্ব-ব্যাখ্যার এই সকল ধরণ শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে এবং মানসিকভাবে জ্ঞান অর্জনে যুক্ত রাখে, পূর্ব জ্ঞানের সঙ্গে সেতুবন্ধন ঘটায় এবং মানসিক মডেল সংশোধন করে। গবেষণার ভিত্তিতে দেখা যায়, মাল্টিমিডিয়া শেখার পরিবেশে উন্মুক্ত-প্রান্ত স্ব-ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক কৌশল আরও উপকারী। গবেষণায় আরও জানা যায়, ফোকাসড, স্ক্যাফোল্ড এবং রিসোর্স-ভিত্তিক অনুরোধগুলো যেগুলো শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার দিকে পরিচালিত করে, সেগুলো আরও গভীর অনুধাবনে সহায়ক। ভ্যান ডের মেইজ প ডি জং<ref name="Vandermeij2011">Van der Meij , J. , & de Jong , T. (2011). The effects of directive self-explanation prompts to support active processing of multiple representations in a simulation-based learning environment. Journal of Computer Assisted Learning, 27(5), 411–423.</ref> দুটি সিমুলেশন-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের মডেল তৈরি করেন, যেখানে বহু রূপে উপস্থাপনাগুলো রয়েছে। এক মডেলে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত অনুরোধের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় এবং তাদের উত্তর ব্যাখ্যা বা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয়। অন্য মডেলে, আরও সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, তারা যেন ব্যাখ্যা করে কীভাবে প্রদত্ত দুটি উপস্থাপনা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, উভয় মডেলেই উন্নত পারফরম্যান্স দেখা যায়, তবে ফোকাসড স্ব-ব্যাখ্যা মডেল গ্রুপে শেখার উপকার বেশি হয়। ফলে মাল্টিমিডিয়া শেখার ক্ষেত্রে এই ফলাফল প্রমাণ করে, বিস্তৃত উন্মুক্ত অনুরোধের চেয়ে নির্দিষ্ট অনুরোধ ভালো কাজ করে। = স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেলসমূহ = [[চিত্র:Section_2_self_regulated_learning_model.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৪. স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মডেল]] == জিমারম্যানের চক্রাকারে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রক্রিয়াকে তিনটি আলাদা পর্যায়ে ভাগ করে: পূর্বচিন্তা পর্যায়, সম্পাদন পর্যায় এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়। পূর্বচিন্তা পর্যায়ে শেখার প্রচেষ্টা শুরুর আগে যে ধরণের প্রক্রিয়া ও বিশ্বাস তৈরি হয় তা অন্তর্ভুক্ত হয়; সম্পাদন পর্যায়ে শেখার বাস্তব প্রয়োগ চলাকালীন যা ঘটে; এবং আত্ম-প্রতিফলন পর্যায়ে প্রতিটি শেখার প্রচেষ্টার পর যা ঘটে তা বোঝানো হয়।<ref name="Zimmerman20022" /> === পূর্বচিন্তা পর্যায় === পূর্বচিন্তা পর্যায়ের দুটি প্রধান প্রক্রিয়া আছে: কাজ বিশ্লেষণ এবং আত্ম-প্রেরণা। কাজ বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশলগত পরিকল্পনা। আত্ম-প্রেরণা আসে শিক্ষার্থীর শেখা নিয়ে বিশ্বাস থেকে, যেমন—শেখার ব্যক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে আত্ম-দক্ষতা বিশ্বাস এবং শেখার ব্যক্তিগত ফলাফল নিয়ে প্রত্যাশা।<ref name="Zimmerman20022" /> '''লক্ষ্য নির্ধারণ''' বলতে বোঝানো হয় কী অর্জন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তা নির্ধারণ করা<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য শেখার প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক, কারণ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই জানাতে হবে চূড়ান্ত ফলাফলটি কেমন হওয়া উচিত। লক্ষ্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মোটিভেশন সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শেখার লক্ষ্য অর্জনে উদ্দীপিত করতে পারে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি যা বাস্তবে অর্জনযোগ্য। তাই লক্ষ্যগুলো খুব বেশি উচ্চ বা খুব নিচু হওয়া উচিত নয়; বরং এমন হওয়া উচিত যা বাস্তবতার মধ্যে পড়ে এবং অর্জনযোগ্য। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য আকাঙ্ক্ষা ও মোটিভেশন তৈরি করে কারণ সেগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যারা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যেমন বানান পরীক্ষার জন্য শব্দ তালিকা মুখস্থ করা, অথবা যেসব শিক্ষার্থী বানান শেখার জন্য শব্দকে ধ্বনি বা অক্ষরে ভাগ করার কৌশল প্রয়োগ করে, তাদের মধ্যে শিক্ষাগত সাফল্য বেশি দেখা যায়<ref name="Zimmerman20023" />। লক্ষ্য নির্ধারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কী অর্জন করতে চাই? কোন ধাপগুলো আমাকে লক্ষ্য পর্যন্ত নিয়ে যাবে? '''কৌশলগত পরিকল্পনা''' লক্ষ্য নির্ধারণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, কারণ এতে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হয়। লক্ষ্য নির্ধারণের পর শিক্ষার্থীদের উচিত নির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা যাতে তারা ওই শেখার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশলগত পরিকল্পনা একটি অধিক বিস্তারিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শেখার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। একটি কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে ছোট ছোট একাধিক লক্ষ্য থাকে যা একটি বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। একটি ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার কাজ, উদ্দেশ্য ও যে দিক তারা অনুসরণ করতে চায়, তা ভালোভাবে বুঝতে হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো সাত দিনের মধ্যে চৌদ্দটি অধ্যায় অধ্যয়ন করতে হয়, সে প্রতিদিন দুটি অধ্যায় পড়ার পরিকল্পনা করতে পারে। প্রতিদিন কতটুকু পড়তে হবে তা পরিকল্পনা করে নিলে সাত দিনে সব অধ্যায় শেষ করা সম্ভব হবে। কৌশলগত পরিকল্পনা কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়াক্ষেত্রেও কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো লক্ষ্য এক মাসে ম্যারাথনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, তাহলে সে সাপ্তাহিক সময়সীমা অনুযায়ী দৈনিক কতদূর দৌড়াতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তার কসরতের পরিমাণ বাড়াতে পারে। কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরির জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে, যেমন: আমি কেন শিখছি? আমি কীভাবে আমার শেখার লক্ষ্য অর্জন করব? আমি কীভাবে আমার শেখার কৌশলগুলো প্রয়োগ করব? আমার কাছে পর্যাপ্ত সময় আছে কি? আমার লক্ষ্য কি এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্জনযোগ্য? আমি এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে পড়ব? আমার ব্যক্তিত্ব কি এই লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলবে? আমি শিখতে বসলে কী কী বিষয় আমাকে বিভ্রান্ত করতে পারে? '''স্ব-উদ্দীপনার বিশ্বাস''' অন্তর্ভুক্ত করে আত্ম-দক্ষতা, ফলাফলের প্রত্যাশা, অন্তর্নিহিত আগ্রহ এবং শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা<ref name="Zimmerman20023" />। এখানে আত্ম-দক্ষতা বলতে বোঝানো হয় শিক্ষার্থীদের নিজের শিখন ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস। যেমন, ক্লাসে একটি কঠিন ধারণা শেখার সময় কোনো শিক্ষার্থী হয়তো ভাবতে পারে সে সহজেই বুঝে ফেলবে অথবা সে ভয়ে থাকবে যে সে বিষয়টি বুঝতেই পারবে না। "আত্ম-দক্ষতা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী কতটা জড়িত হবে এবং চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে কতটা অটল থাকবে।" আত্ম-দক্ষতার উচ্চ মাত্রা সাধারণত বিদ্যালয়ের সাফল্য ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006).">Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006). Promoting Self-Regulation in Science Education: Metacognition as Part of a Broader Perspective on Learning. Research In Science Education, 36(1-2), 111-139.</ref>। শিক্ষকেরা উপযুক্ত স্তরের জটিলতার শেখার কাজ এবং প্রয়োজনে সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-দক্ষতা বাড়াতে পারে। শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি দুটি উপায়ে আত্ম-দক্ষতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। এক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের কাছ থেকে উদাহরণ দেখানো; দুই, শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব তথ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। ফলাফলের প্রত্যাশা বলতে বোঝানো হয় শেখার পর ফলাফল কেমন হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, যেমন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে যে সে অর্থনীতির একটি কঠিন ধারণা শিখতে পারবে এবং ভবিষ্যতে তা কাজে লাগাতে পারবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বিষয়বস্তুর উপযোগিতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই প্রত্যাশা বাড়াতে পারেন। অন্তর্নিহিত আগ্রহ বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতাকে তাদের নিজের স্বার্থে মূল্যায়ন করা। শেখার লক্ষ্যভিত্তিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গুরুত্বে মূল্যায়ন করা। যেসব শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত আগ্রহ বেশি, তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিতভাবে শেখার প্রতি বেশি উদ্দীপিত থাকে কারণ তারা কাজের দক্ষতা অর্জন করতে চায়। যেমন, কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে চায়, সে শিক্ষা-সম্পর্কিত জ্ঞান গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারে<ref name="Zimmerman20023" />। শিক্ষকরা জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত আগ্রহ বাড়াতে পারে। ক্লাসকে উপভোগ্য করে তোলা বা ভিডিও ক্লিপ ও গ্রাফের মতো বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে শেখার প্রবণতা বাড়ানো যায়। শ্রাউ প্রমুখ বিজ্ঞান বিষয়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মোটিভেশন উপাদানকে ব্যাখ্যা করেছেন স্ব-দক্ষতা এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাসের সমন্বয়ে। জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্বাস বলতে বোঝায় "জ্ঞান কোথা থেকে আসে এবং এর প্রকৃতি কেমন" সে সম্পর্কে ধারণা। এই বিশ্বাস সমস্যার সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার উপর প্রভাব ফেলে। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ<ref name="Schraw, G., Crippen, K. J., & Hartley, K. (2006)." />। === পারফরম্যান্স ধাপ === [[চিত্র:3_Phase.png|থাম্ব|283x283পিক্সেল|চিত্র ৫। জিমারম্যানের চক্রাকার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার মডেল]] পারফরম্যান্স ধাপের প্রক্রিয়া দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝানো হয় পূর্বপর্যায়ে নির্ধারিত নির্দিষ্ট কৌশল বা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। স্ব-পর্যবেক্ষণ হলো নিজের আচরণ সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর নথিপত্র তৈরি করা বা পরীক্ষামূলকভাবে এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের প্রায়ই তাদের সময় ব্যবহারের রেকর্ড রাখতে বলা হয় যাতে তারা বুঝতে পারে পড়াশোনায় কতটা সময় দিচ্ছে। আত্ম-নিরীক্ষা। এটি স্ব-পর্যবেক্ষণের একটি সূক্ষ্ম রূপ, বলতে বোঝায় নিজের মানসিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা, যেমন প্রবন্ধ লেখার সময় বড় অক্ষরে শব্দ না লেখার হার<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).">Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003). Motivating self-regulated problem solvers. The psychology of problem solving, 233-262.</ref>। '''স্ব-নিয়ন্ত্রণ''' প্রক্রিয়া যেমন আত্ম-নির্দেশনা, কল্পচিত্র, মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ এবং কাজের কৌশল শিক্ষার্থী ও কর্মীদের কাজের ওপর মনোযোগ দিতে এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আত্ম-নির্দেশনা হলো নিজের কাছে উচ্চ বা নিম্নস্বরে কীভাবে কাজটি সম্পাদন করতে হবে তা বলা, যেমন গণিত সমস্যার সমাধানের সময় "উচ্চস্বরে ভাবনা বলা"। কল্পচিত্র হলো উজ্জ্বল মানসিক চিত্র তৈরি করা। এটি শেখার ও পারফরম্যান্সে সহায়তা করে। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ, অর্থাৎ বাইরের ঘটনা বা ভিন্ন চিন্তা বাদ দিয়ে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ ধরে রাখা, তাৎপর্যপূর্ণ স্ব-নিয়ন্ত্রণ কৌশল।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." /> মনোসংযোগ বৃদ্ধির জন্য পূর্বের ভুল নিয়ে চিন্তা না করে মনোযোগ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ<ref name="Kuhl, J. (1985).">Kuhl, J. (1985). Volitional mediators of cognitive behavior consistency: Self-regulatory processes and action versus state orientation. In J. Kuhl & J. Beckman (Eds.), Action control (pp.101–128). New York: Springer.</ref>। কাজের কৌশল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে যখন তা কাজকে মৌলিক অংশে ভাগ করে অর্থপূর্ণভাবে পুনর্গঠন করে<ref name="Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995).">Bruning, R. H., Schraw, G. J., & Ronning, R. R. (1995). Cognitive psychology and instruction (2nd ed.). Upper Saddle River, NJ: Merrill.</ref>। পারফরম্যান্স ধাপের দ্বিতীয় প্রধান অংশ হলো '''স্ব-পর্যবেক্ষণ'''। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পারফরম্যান্সের নির্দিষ্ট দিক, প্রেক্ষাপট এবং এর ফলাফল নিরীক্ষণ করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995).">Zimmerman, B. J., & Paulsen, A. S. (1995). Self-monitoring during collegiate studying: An invaluable tool for academic self-regulation. In P. Pintrich (Ed.), New directions in college teaching and learning: Understanding self-regulated learning (No.63, Fall, pp.13–27). San Francisco, CA: Jossey-Bass, Inc.</ref>। যারা পরিকল্পিত কাঠামোতে ধাপভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তারা পারফরম্যান্স ধাপে আরও কার্যকরভাবে স্ব-পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কারণ এই সীমিত কাঠামো মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং মনে রাখার তথ্যের পরিমাণ হ্রাস করে। যদি কোনো ব্যক্তি পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা সঠিকভাবে মনে না রাখতে পারে, তবে সে তার কৌশল যথাযথভাবে পরিবর্তন করতে পারবে না<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003)." />। স্ব-নথিপত্র রক্ষণ শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার সঠিক রেকর্ড দেয়, সেগুলো গঠনমূলকভাবে সংগঠিত করে এবং অগ্রগতি বোঝার জন্য একটি দীর্ঘ তথ্যভান্ডার তৈরি করে<ref name="Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996).">Zimmerman, B. J., & Kitsantas, A. (1996). Self-regulated learning of a motoric skill: The role of goal setting and self-monitoring. Journal of Applied Sport Psychology, 8, 60–75.</ref>। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে স্ব-পর্যবেক্ষণ একটি নিয়মিত আত্ম-আবিষ্কার বা আত্ম-পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে পারে<ref name="Bandura, A. (1991).">Bandura, A. (1991). Self-regulation of motivation through anticipatory and self-reactive mechanisms. In R. A. Dienstbier (Ed.), Perspectives on motivation: Nebraska symposium on motivation (Vol. 38, pp.69–164). Lincoln: University of Nebraska Press.</ref>। '''কৌশল প্রয়োগ''' হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিত শেখার কৌশল বাস্তবে প্রয়োগ করে শেখার কাজে নিয়োজিত হয়<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''3" />। কৌশল প্রয়োগের জন্য মোটিভেশন ও আত্মনির্ধারণ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের একটি মজবুত কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে তারা পরিবেশগত বিঘ্ন এড়াতে পারে এবং কী তাদের মোটিভেট বা ডিমোটিভেট করে তা বুঝতে পারে। কৌশল প্রয়োগ শেখার অভিজ্ঞতার সফলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উভয়ের উপর প্রভাব ফেলে। এটি নির্ধারণ করে কীভাবে এবং কোথায় শেখা হবে এবং এটি শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। '''কৌশল পর্যবেক্ষণ''' হচ্ছে শেখার ক্ষেত্রে প্রণীত কৌশলগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া। শেখার কৌশলগুলোর প্রয়োগ, শেখার কাজের অগ্রগতি এবং পরিবেশ কীভাবে শেখার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে—এসব বিষয়ে নজর রাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনে কৌশলগুলো পরিবর্তন করে আরও ভালো শেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারে। === আত্মপ্রতিফলন পর্যায় === আত্মপ্রতিফলন পর্যায়ে দুটি প্রধান প্রক্রিয়া রয়েছে: আত্মবিচার এবং আত্মপ্রতিক্রিয়া। আত্মবিচারের একটি রূপ হলো আত্মমূল্যায়ন, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের পর্যবেক্ষণভিত্তিক কর্মদক্ষতাকে কিছু মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে—যেমন পূর্ববর্তী কর্মদক্ষতা, অন্য কারও কর্মদক্ষতা বা একটি নির্দিষ্ট মান। আত্মবিচারের আরেকটি রূপ হলো কার্যকারণ বিশ্লেষণ বা কারণনির্ধারণ, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের সাফল্য বা ভুলের কারণ সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি করে, যেমন গাণিতিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর। '''আত্মবিচার''': মানুষ সাধারণত চারটি প্রধান মানদণ্ডের ভিত্তিতে নিজের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা মূল্যায়ন করে: দক্ষতা, পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স, তুলনামূলক সামাজিক মান, এবং যৌথ মানদণ্ড। দক্ষতা মানদণ্ড নির্ধারিত এবং পরিমাপযোগ্য—যেমন, একটি ক্রসওয়ার্ড পাজলের সমাধানকে মূল লেখকের সমাধানের সঙ্গে তুলনা করা। যখন শিক্ষার্থীরা অনানুষ্ঠানিক এবং অসংগঠিত পরিবেশে সমস্যা সমাধান করে, তখন তাদের অনেক সময়ই দক্ষতা মানদণ্ডের পরিবর্তে তাদের পূর্ববর্তী পারফরম্যান্সের সঙ্গে বর্তমান পারফরম্যান্সের তুলনার ওপর নির্ভর করতে হয়। এই আত্মতুলনা শিক্ষার উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। এটি সাধারণত বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। সামাজিক তুলনা বা তুলনামূলক মানদণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহপাঠী বা জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে শেখার মূল্যায়ন করে। যৌথ মানদণ্ড সাধারণত দলগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দলগতভাবে কাজ করা হয়।<ref name="Zimmerman, B. J., & Campillo, M. (2003).2" /> আত্মমূল্যায়নমূলক সিদ্ধান্ত সাধারণত শেখার ফলাফল সম্পর্কিত কার্যকারণ বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেমন: ব্যর্থতার কারণ নিজের সীমিত ক্ষমতা নাকি পর্যাপ্ত চেষ্টা না করা। যদি কেউ মনে করে যে তার খারাপ ফলাফল তার অক্ষমতার কারণে হয়েছে, তাহলে তা তার প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কারণ এটি ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনাকে অস্বীকার করে। অন্যদিকে, যদি কেউ মনে করে যে ভুল কৌশল ব্যবহারের কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে, তবে সে ভবিষ্যতে নতুন কৌশল গ্রহণ করে উন্নতি করতে প্রেরণা পাবে।<ref name="Zimmerman20024" /> '''আত্মপ্রতিক্রিয়া''': আত্মপ্রতিক্রিয়ার একটি রূপ হলো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আত্মতৃপ্তি বা ইতিবাচক অনুভূতি। আত্মতৃপ্তি বৃদ্ধি পেলে প্রেরণা বাড়ে, আর আত্মতৃপ্তি কমে গেলে শেখার প্রচেষ্টাও কমে যায়।<ref name="Schunk, D.H. (2001).">Schunk, D.H. (2001). Social cognitive theory and self-regulated learning. In B.J. Zimmerman & D.H Schunk (Eds.), Self-regulated learning and academic achievement: Theoretical perspectives (2nd ed., pp. 125-152). Mahwah, NJ: Erlbaum.</ref> শিক্ষার্থীরা যখন তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে আত্মতৃপ্তি বোধ করে, তখন তারা আরও সচেতনভাবে কাজ পরিচালনা করতে পারে এবং অধ্যবসায় ধরে রাখতে পারে।<ref name="Schunk, D.H. (1983 c).">Schunk, D. H. (1983 c). Progress self-monitoring: Effects on children’s self-efficacy and achievement. Journal of Experimental Education, 51, 89–93.</ref> আত্মপ্রতিক্রিয়া কখনও কখনও অভিযোজিত বা প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ার রূপ নিতে পারে। প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া হলো নিজের আত্মপরিচয় রক্ষা করতে শেখা বা পারফর্ম করার সুযোগ থেকে সরে যাওয়া, যেমন একটি কোর্স বাদ দেওয়া বা পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত থাকা। অপরদিকে, অভিযোজিত প্রতিক্রিয়া হলো শেখার পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে পরিবর্তন আনা, যেমন অকার্যকর কৌশল বাদ দেওয়া বা পরিবর্তন করা।<ref name="Zimmerman20024" /> '''ফলাফল মূল্যায়ন''' : ফলাফল মূল্যায়ন ঘটে তখন, যখন শেখার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই পর্যায়ে শেখার লক্ষ্য, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং সেগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''4" /> ফলাফল মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরা নিজের কাছে এই প্রশ্নগুলো করতে পারে: আমার লক্ষ্যগুলো কতটা বাস্তবসম্মত ছিল? সেগুলো কি অর্জনযোগ্য ছিল? আমার কৌশলগত পরিকল্পনা কতটা কার্যকর ছিল? এমন কোনও কৌশল কি বাদ পড়েছে যেটা রাখা উচিত ছিল? ভবিষ্যতে আমি কীভাবে আমার শেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করব? আমার পরিবেশ কি মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করছিল? == বোকার্টসের তিন-স্তরবিশিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == == উইনের পর্যায়ভিত্তিক স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল == = গবেষণার বিষয় ও ক্ষেত্র = [[চিত্র:Section_3_Issues_and_Topics_of_Research.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ৬. গবেষণার বিষয় এবং বিষয়বস্তু]] == স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সাংস্কৃতিক পার্থক্য == শেখার ধারণা, বিশেষ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ধারণাটি, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘স্বনিয়ন্ত্রণ’ এবং ‘শেখার ধারণা’ নিয়ে অধিকাংশ তথ্য পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি একপাক্ষিক উপস্থাপন। ভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে মানুষ ভিন্ন চিন্তাভাবনার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়। জাপানি শিক্ষার্থীরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছিল,<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''">Purdie, Nola, and John Hattie.(1996). “Cultural Differences in the Use of Strategies for Self-regulated Learning”. American Educational Research Journal 33.4 (1996): 845–871.</ref> তারা শেখার ভিন্ন কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং পূর্ব পরিচিত পদ্ধতির বাইরে জ্ঞান অনুধাবনের নতুন পথ খুঁজে পায়। যদিও এই প্রক্রিয়াটি অবচেতনভাবে ঘটে থাকতে পারে, তবে ভিন্ন ভাষা ও গঠনের নতুন ব্যবস্থায় পড়ে তারা বাধ্য হয় শেখার কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করতে। শেখার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বোঝা যায়, জ্ঞান একরৈখিক নয়—এটা ভালো বা খারাপ, ঠিক বা ভুল—এমন দ্বৈততা দিয়ে সব সময় বোঝা যায় না। জ্ঞান হলো পরিবর্তনশীল ও গতিশীল এবং তাই এটি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। এশীয় সংস্কৃতিতে প্রচলিত ধারণা হলো, জ্ঞান একজন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসে, যিনি সঠিক ও ভুল জানেন, এবং সেটি মুখস্থ করতে হয়। এর ফলে এশীয় শিক্ষার্থীদের সাধারণভাবে দেখা হয় নীরব, অনুগত ও মুখস্থনির্ভর শিখনশীল হিসেবে। অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীদের ভাবা হয় বেশি সক্রিয়, যারা আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা, বৈচিত্র্য গ্রহণযোগ্য এবং চিন্তা ও আচরণের বিকল্প পথ অনুসন্ধানে ইচ্ছুক।<ref name="Purdie, Nola, and John Hattie.(1996).''" /> == জ্ঞান-সচেতনতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য == [[চিত্র:Different_Mind.png|থাম্ব|322x322পিক্সেল|চিত্র ৭. Different Mind]] মেটাকগনিশন সংক্রান্ত গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত পার্থক্য। এই পার্থক্য মেটাকগনিশন পরিমাপকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। উইনে (১৯৯৬) প্রস্তাব করেছিলেন, স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় মেটাকগনিশন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এমন পাঁচটি উৎস রয়েছে: ‘‘ডোমেইন জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতির জ্ঞান, কৌশল প্রয়োগ, কৌশল নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক প্রবণতা’’। (উইন ১৯৯৬, পৃ. ৩২৭)<ref name="Winne, P. H. (1996).''">Winne, P. H. (1996). A metacognitive view of individual differences in self-regulated learning. Learning and Individual Differences, 8(4), 327-353.</ref> সামগ্রিক প্রবণতা বলতে বোঝায় শেখা নিয়ে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। উইনে জানান যে তার এই প্রস্তাবনা প্রাথমিক এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে তার কাজ অন্যান্য গবেষকদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছে। অনেক গবেষক মনে করেন, মেটাকগনিশন নির্ভুলতার পার্থক্যগুলো আসলে মেটাকগনিটিভ দক্ষতার পার্থক্য। তবে কেলেমেন, ফ্রস্ট ও উইভার (২০০০) বলেছিলেন, এটা সবসময় ঠিক নয়। মেটাকগনিটিভ নির্ভুলতা বলতে বোঝানো হয় ‘‘মেটাকগনিশন এবং ভবিষ্যৎ স্মৃতির কার্যকারিতার মধ্যকার সম্পর্ক’’ (কেলেমেন প্রমুখ, ২০০০, পৃ. ৯২)।<ref name="Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000).''">Kelemen, W. L., Frost, P. J., & Weaver, C. A. (2000). Individual differences in metacognition: Evidence against a general metacognitive ability. Memory & Cognition, 28(1), 92-107.</ref> এই গবেষণায় চারটি প্রচলিত মেটাকগনিটিভ কাজ পরিমাপ করা হয়েছিল: শেখার সহজতার অনুমান, জানার অনুভূতির অনুমান, শেখার অনুমান এবং পাঠ্য বোধগম্যতার পর্যবেক্ষণ। প্রাক-পরীক্ষা ও পর-পরীক্ষা মিলিয়ে স্মৃতি ও আত্মবিশ্বাসের মাত্রা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে ভিন্ন ছিল। এই ফলাফল বোঝায়, মেটাকগনিটিভ দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য মেটাকগনিশনের নির্ভুলতা নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এই গবেষণার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, কারণ অনেক গবেষক একমত যে মেটাকগনিশন পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই পার্থক্যগুলো দেখায় যে মেটাকগনিশনের জন্য ‘একটি সমাধান সবার জন্য উপযোগী’—এমন ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। লিন, শোয়ার্টজ এবং হাতানো (২০০৫) পরামর্শ দেন যে মেটাকগনিশনের প্রয়োগে ব্যক্তিগত শেখার ধরণ এবং শ্রেণিকক্ষ পরিবেশের পার্থক্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''">Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005). Toward Teachers' Adaptive Metacognition. Educational Psychologist, 40(4), 245-255.</ref> তারা "অভিযোজিত মেটাকগনিশন" ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এটি শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের প্রতি সাড়া দিয়ে ব্যক্তি ও পরিবেশ উভয়কেই মানিয়ে নিতে শেখায় (লিন প্রমুখ, ২০০৫, পৃ. ২৪৫)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্যের মধ্যে সামাজিক ও পাঠদানের পার্থক্য অন্তর্ভুক্ত। অভিযোজিত মেটাকগনিশনের জন্য, লিন প্রস্তাব করেন “ক্রিটিকাল ইভেন্ট ইনস্ট্রাকশন” পদ্ধতি। এটি শিক্ষকদের শেখায় কীভাবে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় যেগুলো উপর থেকে দেখলে সাধারণ মনে হয় (লিন প্রমুখ, ২০০৫, পৃ. ২৪৬)।<ref name="Lin, X., Schwartz, D. L., & Hatano, G. (2005).''" /> এটি নতুন শিক্ষকদের জন্য সহায়ক, যাতে তারা শিক্ষণিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে কার্যকরভাবে মানিয়ে নিতে পারে। == লার্নিং অ্যানালিটিকস এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন গবেষণা == === লার্নিং অ্যানালিটিকসের সংজ্ঞা === ব্যবসা থেকে শুরু করে মহামারিবিদ্যার মতো ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার ও গণনাগত শক্তির প্রসার বড় ডেটা সেট থেকে উপকারী তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও এই ধরণের পদ্ধতিকে ‘‘লার্নিং অ্যানালিটিকস’’ বলা হয়। যদিও একে প্রায়ই নতুন একটি শাখা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, লার্নিং অ্যানালিটিকস মূলত বহু পুরোনো ধারার আইডিয়া, নীতি ও পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত। এটি একটি বহুমাত্রিক শাখা। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স, মানব-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশন এবং শিক্ষাবিদ্যার বিভিন্ন উপাদান একত্র করে তৈরি হয়েছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''">Siemens, G. (2013). Learning analytics: The emergence of a discipline. American Behavioral Scientist, 57 (10), p. 1380 - 1400.</ref> '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স কী?''' লার্নিং অ্যানালিটিক্স গবেষণা সংস্থা (Society for Learning Analytics Research বা SoLAR) লার্নিং অ্যানালিটিকসের ক্ষেত্রকে নিম্নরূপভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: “লার্নিং অ্যানালেটিক্স হলো শিক্ষার্থী ও তাদের প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন করার একটি প্রক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য হলো শেখার প্রক্রিয়া এবং যে পরিবেশে তা ঘটে, তা বোঝা ও আরও কার্যকর করে তোলা।”<ref name="Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).''">Solar Society of Learning Analytics Research. (n.d.).Retrieved from http://solaresearch.org</ref> এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের দেওয়া সংজ্ঞাগুলোর একটি সমন্বয় থেকে<ref name="Larusson, J. A., & White, B. (2014).''">Larusson, J. A., & White, B. (2014). Learning Analytics. Springer</ref><ref name="Martin, T., & Sherin, B. (2013).''">Martin, T., & Sherin, B. (2013). Learning analytics and computational techniques for detecting and evaluating patterns in learning: An introduction to the special issue. Journal of the Learning Sciences, 22(4), p. 511-520.</ref> নিচের কয়েকটি মূল বিষয় নিরূপণ করা যায়: * এই শাখাটির মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি, পদ্ধতি, কাঠামো এবং সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেগুলো তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। * এটি বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আচরণ ও কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রকৃতপক্ষে, সিমেন্স (২০১৩) মতে, এই তথ্যসমূহের উৎস হতে পারে একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পাঠক্রম পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> * তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনের প্রতিটি ধাপেই এর পরিধি বিস্তৃত—যেমন তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম, তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাঠামো ও প্যাটার্ন বের করা, এবং তথ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত ভিজ্যুয়াল সরঞ্জাম। * এর একটি তাত্ত্বিক দিক রয়েছে, কারণ শিক্ষাগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীরতর বোঝাপড়া গড়ে উঠতে পারে। এটি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর পক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে। * এর একটি ব্যবহারিক দিকও রয়েছে, কারণ এসব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ফলাফল শেখার পরিবেশ এবং শেখার পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে সহায়তা করতে পারে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহারে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ''' যদিও লার্নিং অ্যানালেটিক্সের মূল লক্ষ্য নতুন নয়, তবুও কিছু বিশেষ উন্নয়ন ও কারণ এই ক্ষেত্রে আগ্রহ পুনর্জাগরিত করেছে এবং এটিকে একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো: * '''তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি''' বিশেষ করে ব্লেন্ডেড লার্নিং, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদির মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার চালুর পর থেকে বিশ্লেষণের জন্য উপলব্ধ শিক্ষামূলক তথ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> শিক্ষার্থীরা যখন ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করে, তখন তারা তাদের কর্মকাণ্ডের একটি “ডিজিটাল ছাপ” রেখে যায়। এটি সহজেই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। এই ধরনের তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে লগ ইন সময়, পোস্ট, ক্লিকের সংখ্যা, কোন উপকরণে কত সময় ব্যয় হয়েছে ইত্যাদি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখার কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট গভীর মানসিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া সম্ভব। * '''প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নত অ্যালগরিদম''' কিছু কম্পিউটেশনাল উন্নয়ন এই বিশাল পরিমাণ শিক্ষামূলক তথ্য বিশ্লেষণকে সহজ করে তুলেছে। এখন কম সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব, এবং মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নতুন অ্যালগরিদম ব্যবহারে ডেটা বিশ্লেষণে মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাঠামো ও প্যাটার্ন আবিষ্কার করা যায়। * '''তথ্যের বিন্যাস''' তথ্য সংগ্রহ যথেষ্ট নয়, সেগুলিকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হয় যাতে বিশ্লেষণ কার্যকরভাবে সম্ভব হয়। এজন্য নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক তথ্য লগ করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটের প্রয়োজন হয়।<ref name="Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010).''">Koedinger, K. R., Baker, R. S., Cunningham, K., Skogsholm, A., Leber, B., & Stamper, J. (2010). A data repository for the EDM community: The PSLC DataShop. In Romero, C., Ventura, S., Pechenizkiy, M., & Baker, R. S. (Eds.). (2010) Handbook of educational data mining. CRC Press. p. 43-56.</ref> এই স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট আগে থেকেই থাকলে তথ্য প্রস্তুত করতে যে সময় ব্যয় হতো, তা অনেকাংশে হ্রাস পায়। === লার্নিং অ্যানালিটিকসের মূল পদ্ধতি ও সরঞ্জাম === সিমেন্স (২০১৩) লার্নিং অ্যানালেটিক্সের দুটি মূল উপাদান উল্লেখ করেন: কৌশল ও প্রয়োগ। প্রযুক্তির মধ্যে আছে অ্যালগরিদম ও মডেল। এটি তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর প্রয়োগ হলো শিক্ষাগত প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তিগুলোর বাস্তব ব্যবহার—যেমন শিক্ষার্থী অনুযায়ী শেখার পরিবেশ তৈরি করা কিংবা শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করা।<ref name="Siemens, G. (2013).''2" /> এই অংশে লার্নিং অ্যানালেটিক্সে ব্যবহৃত প্রধান পদ্ধতি ও কৌশলগুলো তুলে ধরা হয়েছে, কিছু উদাহরণসহ যা দেখায় কীভাবে এগুলো শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োগ করা যায়। '''ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি''' এই পদ্ধতিগুলোর কার্যপ্রণালির সরল বিবরণ হলো—ডেটার কিছু নির্দিষ্ট দিক বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের মান নির্ধারণ করা (যেটিকে বলা হয় ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল), যেখানে অন্য দিকগুলোকে বলা হয় '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল'''।<ref name="Baker, R. S., & Yacef, K. (2009).''">Baker, R. S., & Yacef, K. (2009). The state of educational data mining in 2009: A review and future visions. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 3-17.</ref> উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পদ্ধতি আছে যেগুলো শিক্ষার্থীরা একটি অনলাইন কোর্সে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা থেকে (লগ ইন সময়, ব্লগ কার্যকলাপ, মূল্যায়ন পরীক্ষায় ফলাফল—এগুলো হলো '''পূর্বাভাসকারী পরিবর্তনশীল''') এই পূর্বাভাস দেয় যে শিক্ষার্থীটি কোর্সে ব্যর্থ হতে পারে (ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তনশীল)। এই ধরনের মডেল দুটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়: ভবিষ্যতের ঘটনা যেমন শিক্ষার্থীর ড্রপআউট <ref name="Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July).''">Dekker, G., Pechenizkiy, M., & Vleeshouwers, J. (2009, July). Predicting students drop out: A case study. In Proceedings of the 2nd International Conference on Educational Data Mining, EDM 2009, p. 41-50.</ref> অথবা শিক্ষার্থীর কোর্সফলাফল <ref name="Ming, N., & Ming, V. (2012).''">Ming, N., & Ming, V. (2012). Predicting student outcomes from unstructured data. In Proceedings of UMAP Workshops, p. 11-16.</ref> ভবিষ্যদ্বাণী করা। আবার কিছু ক্ষেত্রে কিছু ডেটা সরাসরি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, কারণ তা শিক্ষার্থীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমন অবস্থায় পূর্বাভাস মডেল অন্য কিছু পরিবর্তনশীল পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুমান করতে সক্ষম হয়।<ref name="Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August).''">Baker, R. S., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2004, August). Detecting student misuse of intelligent tutoring systems. In International Conference on Intelligent Tutoring Systems, p. 531-540.</ref> '''কাঠামো অন্বেষণ''' এই লার্নিং অ্যানালিটিক্স কৌশলটি আগেরটির চেয়ে বেশ আলাদা, কারণ এতে এমন অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয় যার উদ্দেশ্য হলো পূর্বানুমান ছাড়াই শিক্ষাগত ডেটাতে গঠন খুঁজে বের করা। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। '''ক্লাস্টারিং'''-এ ডেটাকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে সেটিকে একাধিক ক্লাস্টারে রূপান্তর করা হয়। এই ক্লাস্টারগুলো, যেমন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল হতে পারে যাদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে তারা কীভাবে অনুসন্ধানভিত্তিক শেখার পরিবেশ ব্যবহার করে তার ভিত্তিতে।<ref name="Amershi, S., & Conati, C. (2009).''">Amershi, S., & Conati, C. (2009). Combining Unsupervised and Supervised Classification to Build User Models for Exploratory. JEDM-Journal of Educational Data Mining, 1(1), p. 18-71.</ref> আবার '''সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ'''-এ শেখার মাঝে সম্পর্ক বা পারস্পরিক ক্রিয়ার ধরন শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন ছাত্রদের আচরণ ও নেটওয়ার্কে তাদের অবস্থান কীভাবে তাদের সম্প্রদায়ের অংশ মনে হওয়ার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করা।<ref name="Dawson, S. (2008).''">Dawson, S. (2008). A study of the relationship between student social networks and sense of community. Educational Technology & Society, 11(3), p. 224-238.</ref> '''সম্পর্ক অনুসন্ধান''' এই কৌশলটি ব্যবহৃত হয় বড় ডেটাসেটের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনশীলের মধ্যকার সম্পর্ক শনাক্ত করতে। এই পদ্ধতির সাধারণ লক্ষ্য হলো নির্ধারণ করা কোন কোন পরিবর্তনশীল একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীলের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কযুক্ত, অথবা পরিবর্তনশীলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করা। এই কৌশলের বিভিন্ন ব্যবহার আছে। উদাহরণস্বরূপ, বেকার ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) বিভিন্ন বুদ্ধিমান শিক্ষণ সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে শিক্ষার্থীরা কীভাবে “সিস্টেমকে ফাঁকি দেয়” তা নিয়ে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন।<ref name="Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June).''">Baker, R. S., de Carvalho, A. M. J. A., Raspat, J., Aleven, V., Corbett, A. T., & Koedinger, K. R. (2009, June). Educational software features that encourage and discourage “gaming the system”. In Proceedings of the 14th international conference on artificial intelligence in education, p. 475-482.</ref> আবার পেরেরা ও তার সহকর্মীরা (২০০৯) এই কৌশল ব্যবহার করে দলগত প্রকল্পে সফলতা আনার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী ধরনের সহযোগিতামূলক পথ সবচেয়ে কার্যকর তা শনাক্ত করেছেন।<ref name="Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009).''">Perera, D., Kay, J., Koprinska, I., Yacef, K., & Zaïane, O. R. (2009). Clustering and sequential pattern mining of online collaborative learning data. IEEE Transactions on Knowledge and Data Engineering, 21(6), p. 759-772.</ref> '''মানব-বিচারের জন্য তথ্য পরিশোধন''' এই কৌশলে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষাগত ডেটা পরিশোধন ও উপস্থাপন করা হয়, উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে, যাতে গবেষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা (শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রশাসক ইত্যাদি) উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বওয়ার্স (২০১০) বহু বছরের ছাত্রদের শিক্ষা-অগ্রগতির ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা ব্যবহার করে শনাক্ত করেছেন কোন ছাত্ররা ঝুঁকিতে আছে। যুক্তি হলো সফল বা ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু সাধারণ প্যাটার্ন থাকে যেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব এবং যেগুলোর উপস্থিতি ছাত্রের সফলতা বা ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে।<ref name="Bowers, A. J. (2010).''">Bowers, A. J. (2010). Analyzing the longitudinal K-12 grading histories of entire cohorts of students: Grades, data driven decision making, dropping out and hierarchical cluster analysis. Practical Assessment Research and Evaluation, 15(7), p. 1-18.</ref> === লার্নিং অ্যানালেটিক্স এবং স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) গবেষণা === লার্নিং অ্যানালেটিক্সের পদ্ধতি ও প্রয়োগ নিয়ে আগের অংশ বিবেচনা করলে এটি স্পষ্ট যে এই সরঞ্জামগুলো শেখা সম্পর্কে তত্ত্ব গঠনে এবং সেগুলোর পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনে সহায়তা করে। স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। এই ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং স্বনিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি ও কোন শর্তে তা ঘটে সে বিষয়ে ধারণা যাচাই করতে লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক পদ্ধতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে একাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। '''স্বনিয়ন্ত্রণভিত্তিক গবেষণার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা''' কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। কারণ, এই নতুন ধরনের শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলো শেখার দারুণ সুযোগ তৈরি করে। এটি গবেষকদের আগ্রহী করেছে—ছাত্ররা এই সম্ভাবনার কতটা সদ্ব্যবহার করছে এবং কী পরিস্থিতিতে তারা সফল হচ্ছে তা অন্বেষণে।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2">Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008). Self-regulation of learning within computer-based learning environments: A critical analysis. Educational Psychology Review, 20(4), 429-444.</ref> এসব শেখার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয় এবং তাই স্বনিয়ন্ত্রিত শেখারও সুযোগ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে বিষয়বস্তুর কাছে যেতে পারে, বিভিন্ন রূপে উপস্থাপন বেছে নিতে পারে এবং পরিবেশের একাধিক উপাদান নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এর মানে এটাও যে, যেসব শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই, তারা এই ধরনের শেখার লক্ষ্যে ব্যর্থও হতে পারে। এজন্য, এই পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমরা এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং এদের সহায়তায় হস্তক্ষেপ বা সহযোগী উপকরণ তৈরি করতে পারি। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন, বিশেষত যেহেতু এ প্রক্রিয়াগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ। কম্পিউটার-ভিত্তিক শেখার পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত আচরণ পর্যবেক্ষণে গবেষকদের একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিয়াদাতি প্রমুখ (২০১৬) জোর দিয়ে বলেন যে স্বনিয়ন্ত্রণ মূল্যায়নের যথাযথ ব্যাখ্যা পেতে হলে “যে কোনও পরিমাপ পদ্ধতির নির্বাচন, উন্নয়ন ও প্রয়োগ তাতে ব্যবহৃত স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেল বা তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে” (সিয়াদতি প্রমুখ, ২০১৬ পৃ. ১৯০)।<ref name="Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). ''2">Siadaty, M., Gašević, D., & Hatala, M. (2016). Trace-based micro-analytic measurement of self-regulated learning processes. Journal of Learning Analytics, 3(1), p. 183-220.</ref> তবে, কিছু গবেষণায় কোনও নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো অনুসরণ করা হয়নি, ফলে শব্দার্থ ও সংজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণা আবার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন মডেলের নির্দিষ্ট উপাদান যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, স্ব-পর্যবেক্ষণ বা আত্ম-দক্ষতা নিয়ে কাজ করেছে। এই উপাদানগুলোকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কাঠামোর সামগ্রিক চিত্রটি পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয় না।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> আরেকটি বড় সমস্যা দেখা যায় তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে। অধিকাংশ গবেষণায় শিক্ষার্থীদের নিজেদের প্রতিবেদনকেই মূল তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর নির্ভরযোগ্যতা ও মান শিক্ষার্থীর আত্মজ্ঞান ও শেখার কৌশল বর্ণনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। উইন্টার্স প্রমুখ (২০০৮) উল্লেখ করেন, এই ধরনের আত্মপ্রতিবেদন সবসময় পর্যবেক্ষণমূলক কৌশলের মতো নির্ভরযোগ্য নয়।<ref name="Winters, F. I., Greene, J. A., & Costich, C. M. (2008).''2" /> কিছু গবেষণায় থিংক-এলাউড পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীর স্বনিয়ন্ত্রিত চিন্তাপ্রক্রিয়া ধরা সম্ভব হয়। তবে, এগুলো সাধারণত ব্যবহৃত কৌশল শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, এই কৌশলগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় না। যেমন ধরুন, সারসংক্ষেপ করা একটি কার্যকর শিক্ষণ কৌশল হলেও এটি শুধু প্রয়োগ করলেই কার্যকর হবে না, বরং সারসংক্ষেপ কখন করা হচ্ছে, কীভাবে করা হচ্ছে, কী বিষয়কে সারসংক্ষেপ করা হচ্ছে এসব বিষয়ের ওপর এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। সবশেষে, গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো তথ্য সংগ্রহ ও পরিমাপ পদ্ধতি শিক্ষার সঙ্গে কতটা হস্তক্ষেপ করে। আদর্শ পদ্ধতি হলো এমন। এটি শিক্ষার্থীর শেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলে এবং শেখার প্রক্রিয়ায় কোনওরকম বিঘ্ন না ঘটিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এই ধরনের “অহস্তক্ষেপমূলক” আচরণ দেখা যায় লার্নিং অ্যানালেটিক্স ভিত্তিক সরঞ্জামগুলোতে। এগুলো ব্যবহারকারীর ক্রিয়াকলাপ ট্র্যাক করে, যেমন লগ ইন/আউট সময়, কোন বৈশিষ্ট্য বেশি ব্যবহার হচ্ছে, মূল্যায়ন কার্যক্রমে পারফরম্যান্স ইত্যাদি, এবং এই তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্যাটার্ন চিহ্নিত করে। এই বিষয়ে আরও আলোচনা পরবর্তী অংশে করা হবে। '''লার্নিং অ্যানালেটিক্স ব্যবহার করে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার আচরণ নিরীক্ষণ''' লার্নিং অ্যানালেটিক্স প্রযুক্তি ও প্রয়োগগুলো নির্ভুল ও অহস্তক্ষেপমূলক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সরবরাহ করে, যাতে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময় তাদের স্বনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার প্রমাণ নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা যায়। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রগতি গবেষকদের হাতে নতুন উন্নত প্রযুক্তি এনে দিয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রেস ডেটা সংগ্রহের পরিধি ও বৈচিত্র্য অনেক বেড়েছে। [[চিত্র:Kwlimage.jpg|থাম্ব|চিত্র ৮. কেডব্লিউএল]] আগের অংশে আমরা দেখেছি, স্বনিয়ন্ত্রিত শেখা নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণাই শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রতিবেদনকে প্রধান তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর সঙ্গে যুক্ত নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে কিছু গবেষণায় আত্মপ্রতিবেদন, অনলাইন আচরণগত তথ্য ও শেখার ফলাফল একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, শা প্রমুখ (২০১২) একটি মোবাইল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সময় স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করেন। এই গবেষণায় সিঙ্গাপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শেখার জন্য মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এতে অ্যানিমেশন আঁকা, কনসেপ্ট ম্যাপ তৈরি, এবং কেডব্লিউএল টেবিল তৈরি করার মতো অ্যাপ্লিকেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। iKWL অ্যাপে শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড ও পারফরম্যান্সই ছিল তথ্য সংগ্রহের ভিত্তি। অ্যাপ্লিকেশনটি তিনটি প্রশ্নের উত্তর চায়: “আমি কী জানি?”, “আমি কী জানতে চাই?” এবং “আমি কী শিখেছি?”। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর যথাক্রমে পূর্বজ্ঞান, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আত্মমূল্যায়ন ধাপকে বোঝায়। গবেষকরা শিক্ষার্থীরা কেডব্লিউএল প্রশ্নে কীভাবে অংশ নিচ্ছে তা বিশ্লেষণ করেন। দুটি ভেরিয়েবল ব্যবহার করা হয়: একজন শিক্ষার্থী কেডব্লিউএল টেবিল সম্পূর্ণ করেছে কি না (যদি কোনো ঘর পূরণ না হয় = ০, যদি অন্তত একটি পূরণ হয় = ১), এবং প্রতিটি ক্যাটাগরিতে কতগুলো তথ্য লিখেছে তা পরিমাপ করার রুব্রিক। এই পরিমাপটি সহজ, তাই সিস্টেম নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নির্ধারণ করতে পারে, তবে এতে লেখা কনটেন্টের মান বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). ''2">Sha, L., Looi, C. K., Chen, W., Seow, P., & Wong, L. H. (2012). Recognizing and measuring self-regulated learning in a mobile learning environment. Computers in Human Behavior, 28(2), p. 718-728.</ref> [[চিত্র:Posterlet_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ৯. পোস্টারলেট]] [[চিত্র:MetaTutor_interface.jpg|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১০. মেটাটিউটর]] আরও কিছু গবেষণা নির্দিষ্ট স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশলের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছে। কুতুমিসু প্রমুখ (২০১৫) “নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ” এবং “পুনরায় সম্পাদনা” কৌশল দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষার জন্য পোস্টারলেট নামক একটি লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন। এই অ্যাপে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ফান ফেয়ারের জন্য পোস্টার ডিজাইন করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা কার্যকর পোস্টার ডিজাইনের নীতিমালা ও অনুশীলন শেখে। শেখার আচরণ পর্যবেক্ষণের জন্য অ্যাপটিতে একটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পোস্টার তৈরি করে এবং পশু চরিত্রদের কাছ থেকে ইতিবাচক (“আমার ভালো লেগেছে...”) বা নেতিবাচক (“আমার পছন্দ হয়নি...”) প্রতিক্রিয়া পায়। সিস্টেম দুটি বিষয় রেকর্ড করে: কতবার শিক্ষার্থী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বেছে নিয়েছে এবং কতবার সে পোস্টারে পরিবর্তন এনেছে। এখানে কেবল সংখ্যাগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে—শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তন করেছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা হয়নি।<ref name="Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015).''2">Cutumisu, M., Blair, K. P., Chin, D. B., & Schwartz, D. L. (2015). Posterlet: A game-based assessment of children’s choices to seek feedback and to revise. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 49-71.</ref> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষণ পরিবেশ রয়েছে, যেগুলো দ্বৈত ভূমিকা পালন করে: একটি হচ্ছে শেখার উপকরণ, যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ শেখানো ও সহায়তার জন্য তৈরি; অন্যটি গবেষণামূলক উপকরণ, যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ আচরণের উপর তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। এমন একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশন হলো মেটাটিউটর, যা আজেভেদো ও তাঁর সহকর্মীদের (২০১৩) গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। মেটাটিউটর একটি শিক্ষণ পরিবেশ যা জীববিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এতে একাধিক ডিজিটাল এজেন্ট রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশল প্রয়োগে সহায়তা করে। এর নানা বৈশিষ্ট্য আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট পর্যায় ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত (যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, আত্ম-প্রতিফলন) এবং সেগুলো ব্যবস্থার ইন্টারফেসে সুনিপুণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (দেখুন চিত্র ১০)। এছাড়াও মেটাটিউটর-এ এমন ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থাও রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যাতে গবেষকরা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা আরও উন্নত করা যায়। এই সিস্টেমটি সাধারণ ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতির (যেমন স্ব-প্রতিবেদন জরিপ, চিন্তা প্রকাশ প্রোটোকল) পাশাপাশি উন্নততর শিক্ষণ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে অনুধাবন ও মূল্যায়ন করে। এখানে একটি আই-ট্র্যাকিং (চোখের গতি পর্যবেক্ষণ) উপাদান রয়েছে যা শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে, কোন অংশে মনোযোগ দেয়, কোন ক্রমে তথ্য পড়ে, কোন ডায়াগ্রামের অংশ বেশি ব্যবহার করে ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান তথ্য দেয়। এই ধরনের তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় শিক্ষার্থীর স্ব-প্রতিবেদন বা মুখে বলা চিন্তায় এসব বিষয় উঠে আসে না। সিস্টেমটি এমন বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ইন্টারঅ্যাকশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং শিক্ষার্থীরা শেখার কাজে তা প্রয়োগ করে। যেমন: নোট নেওয়ার ধরণ, চিত্র অঙ্কনের ব্যবহার, কী-স্ট্রোক, মাউস ক্লিক, অধ্যায় বা কার্যকলাপ খোলা, কুইজে পারফরম্যান্স ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজের ধারা বা রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়। এই সব বিভিন্ন ধরণের ডেটার সমন্বয়ে গবেষকরা কগনিটিভ (জ্ঞানগত) প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পান। যেমন: যদি শিক্ষার্থী কোনো লেখাকে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে সে পাঠ্যবস্তুর উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। অথবা, যদি ব্যবহারকারী টেক্সট থেকে চিত্র বা গ্রাফে বারবার যায়, তাহলে বোঝা যায় সে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন পদ্ধতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। এছাড়াও এখানে মুখাবয়ব অভিব্যক্তি শনাক্তকরণের একটি জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। সিস্টেমটি শিক্ষার্থীদের মুখাবয়বের ভিডিও সংগ্রহ করে এবং তা নলডাস ফেসরিডার ৩.০ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর আবেগগত অবস্থান নির্ধারণ করে। তবে, এই সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা হলো এটি কেবল কয়েকটি সাধারণ, সর্বজনীন আবেগ শনাক্ত করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের পুরো আবেগ অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করে না।<ref name="Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013).''">Azevedo, R., Harley, J., Trevors, G., Duffy, M., Feyzi-Behnagh, R., Bouchet, F., & Landis, R. (2013). Using trace data to examine the complex roles of cognitive, metacognitive, and emotional self-regulatory processes during learning with multi-agent systems. In International handbook of metacognition and learning technologies, Springer New York, p. 427-449.</ref> [[চিত্র:System_bbbbb.png|থাম্ব|250x250পিক্সেল|চিত্র ১১. ব্রেটির মস্তিষ্ক]] পরিশেষে, কিছু গবেষণায় শিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশনের নির্দিষ্ট উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখার নির্দিষ্ট পর্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এসব উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ডেটার গঠন বা ধরন শনাক্ত করা হয়েছে (দেখুন ক্লাস্টারিং, অধ্যায় ২)। সেজেডি প্রমুখ (২০১৫) একটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, যেটিকে তারা বলেন '''সুসংগতি বিশ্লেষণ'''। তাঁদের গবেষণায়, তারা "বেটি'স ব্রেইন" নামক একটি শিক্ষণ পরিবেশ ব্যবহার করেন। এখানে শিক্ষার্থীরা একটি ভার্চুয়াল এজেন্ট বেটিকে একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর চেষ্টা করে, একটি কারণমূলক মানচিত্র তৈরি করে। এই মানচিত্রে (দেখুন চিত্র ১১) বিষয়বস্তুর মূল ধারণাগুলোকে উপস্থাপনকারী সত্ত্বাগুলো থাকে, যেগুলো মধ্যে দিক-নির্দেশিত সংযোগ থাকে, যা ধারণাগুলোর মধ্যে কারণ-পরিণাম সম্পর্ক নির্দেশ করে। বেটি এই মানচিত্র ব্যবহার করে সংযোগ চেইনের মাধ্যমে যুক্তি করে এবং বিভিন্ন কুইজ প্রশ্নের উত্তর দেয়।<ref name="Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015).''">Segedy, J. R., Kinnebrew, J. S., & Biswas, G. (2015). Using coherence analysis to characterize self-regulated learning behaviours in open-ended learning environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), p. 13-48.</ref> এই কারণমূলক মানচিত্রের সঠিকতা নির্ধারণ করে যে, বেটি কতটা সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত টেক্সট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই সংযোগ স্থাপন করে, কুইজের মাধ্যমে মানচিত্র পরীক্ষা করে এবং প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে মানচিত্র সংশোধন করে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারঅ্যাকশনের সময় সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাঁচটি আলাদা আচরণগত গোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়। প্রথম দল ছিল ঘন ঘন তথ্য অনুসন্ধানকারী ও সতর্ক সম্পাদক, যারা তথ্য উৎস অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে কিন্তু মানচিত্র কম সম্পাদনা করেছে। দ্বিতীয় দল, কৌশলী পরীক্ষক, যারা তথ্য দেখেছে কিন্তু ততটা কাজে লাগাতে পারেনি। তবু তারা মানচিত্র বেশি সম্পাদনা করেছে। তৃতীয় দল ছিল বিভ্রান্ত অনুমানকারী, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে কিন্তু বিজ্ঞান উৎস ব্যবহার করেনি। চতুর্থ দল ছিল দায়িত্বহীন শিক্ষার্থী, যাদের অধিকাংশ সম্পাদনা অসমর্থিত এবং তারা ৩০% সময়ই নিষ্ক্রিয় ছিল। পঞ্চম দল ছিল সম্পৃক্ত ও দক্ষ, যারা বারবার মানচিত্র সম্পাদনা করেছে এবং বেশিরভাগই সমর্থিত। তারা তথ্য দেখার সময় এবং মানচিত্র তৈরির সময়ও বেশি ব্যয় করেছে। এই আচরণই বেটির ব্রেইনে সফলতা এনে দেয়। = তত্ত্ব থেকে প্রয়োগে = [[চিত্র:Section_4_From_Theory_to_Practice.png|কেন্দ্র|থাম্ব|600x600পিক্সেল|চিত্র ১২. তত্ত্ব থেকে অনুশীলনে]] == অভিজ্ঞ প্রয়োগে মেটাকগনিশন == === পাঠে মেটাকগনিশন === মেটাকগনিশন এবং পাঠ অনুধাবনের উপর এর প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ভাষাগত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি এবং কিশোরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব গবেষণায় পাঠ ও লেখার সঙ্গে মেটাকগনিশনের সম্পর্ক এবং মেটাকগনিশনমূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা উঠে এসেছে। Furnes এবং Norman (২০১৫) মেটাকগনিশনের তিনটি ধরন (জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা) তুলনা করেন স্বাভাবিক পাঠকের সঙ্গে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত পাঠকদের মধ্যে।<ref name="Furnes, B., & Norman, E. (2015).2" /> অংশগ্রহণকারীরা দুটি তথ্যমূলক লেখা পড়ে এবং তাদের শেখার ফলাফল একটি মেমরি টাস্কের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। মেটাকগনিশনমূলক জ্ঞান ও দক্ষতা স্ব-প্রতিবেদনের মাধ্যমে এবং অভিজ্ঞতা পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস ও শেখার বিচার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। ফলাফল দেখায় যে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্তদের পাঠ ও বানান সমস্যা সাধারণত কম মেটাকগনিশন বা কৌশল ব্যবহারজনিত নয়। স্বাভাবিক শিশুদের উপর একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা যায়, ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের মেটাকগনিশন জ্ঞান তুলনামূলকভাবে ভালো।<ref name="Kolić-Vehovec, S., Zubković, B. R., & Pahljina-Reinić, R. (2014).3" /> গবেষণায় আরও উঠে আসে, পাঠ অনুধাবন ব্যক্তিগত কৌশল জ্ঞানভিত্তিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দুটি গবেষণাই বোঝায়, ডিসলেক্সিয়ায় পাঠ অনুধাবনের ঘাটতি মেটাকগনিশনের কারণে নয়, কিন্তু স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে পাঠ অনুধাবন তাদের মেটাকগনিশনের স্তরের উপর নির্ভর করে। '''প্রশ্ন তৈরি''' শিক্ষার্থীদের পাঠ্য অনুধাবনে সহায়তা করতে পারে। “একজন আদর্শ শিখনকারী স্ব-নিয়ন্ত্রিত ও সক্রিয় হলো সেই ব্যক্তি যে গভীর প্রশ্ন তোলে এবং এর উত্তর অনুসন্ধান করে” (গার্সিয়া প্রমুখ ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> বিভিন্ন গবেষণায় প্রশ্ন তৈরির পাঠ্য অনুধাবনে প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে। গার্সিয়া প্রমুখ (২০১৪) নবম শ্রেণির ৭২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিজ্ঞানের ক্লাসে একটি গবেষণা করেন। ফলাফল অনুযায়ী, “প্রশ্ন তৈরির প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের শেখা ও অধ্যয়নের পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত তাদের মেটাকগনিশনে” (গার্সিয়া প্রমুখ ২০১৪, পৃ. ৩৮৫)।<ref name="García, F. C., García, Á., Berbén, A. G., Pichardo, M. C., & Justicia, F. (2014).''5" /> প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা, যারা প্রম্পটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পায়, তাদের মেটাকগনিশন জ্ঞান ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ স্কোর সর্বোচ্চ হয়। এটি বোঝায় যে প্রশ্ন তৈরির কার্যকারিতা শিক্ষার্থীর মেটাকগনিশন জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তৈরি করানোর আগে তাদের মেটাকগনিশন দক্ষতা চিহ্নিত করা শিক্ষকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। === লেখায় মেটাকগনিশন === বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখালেখিতে মেটাকগনিশন দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিক্ষকরা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে চিন্তা ও পর্যালোচনার আহ্বান জানান, বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সচরাচর তাদের লেখাকে গভীরভাবে মূল্যায়ন বা পরিমার্জন করে না। প্যারট ও চেরি (২০১৫) এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও সক্রিয় লেখাচিন্তায় উৎসাহিত করতে নতুন শিক্ষণ কৌশল '''প্রক্রিয়া স্মারক''' প্রস্তাব করেন।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> প্রক্রিয়া স্মারক হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠানো নির্দেশিত প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা তাদের রচনার প্রথম খসড়া এবং চূড়ান্ত সংস্করণ উভয়ের পর প্রক্রিয়া স্মারক জমা দেয়। প্রথম খসড়ায়, শিক্ষার্থীদের তাদের রচনা, রুব্রিকের সহায়কতা, অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন, নিজের রচনার শক্তি ও দুর্বলতা এবং চূড়ান্ত সংস্করণে উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়। এরপর শিক্ষক রচনা মূল্যায়ন করে প্রতিক্রিয়া দেন। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া স্মারকে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বলা হয়, যেমন “কোন মন্তব্য সবচেয়ে সহায়ক ছিল, এবং কেন?” (প্যারট প্রমুখ, ২০১৫, পৃ. ১৪৭)।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> প্যারট ও চেরি প্রথমে ২০০৫ সালে প্রক্রিয়া স্মারক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন এবং ২০১৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় তা প্রয়োগ করেন। এই গবেষণায় সমাজতত্ত্বের বিভিন্ন স্তরের ২৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অংশ নেয়।<ref name="Parrott, H. M., & Cherry, E. (2015).''" /> ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে যে, প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উভয়কেই লেখালেখির প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে সাহায্য করে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাদানের গুণমান সম্পর্কে মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন, যা ভবিষ্যতে তাদের পদ্ধতি উন্নত করতে এবং রুব্রিকগুলো আরও স্পষ্ট করতে সহায়ক হয়। যদিও কিছু শিক্ষার্থী প্রসেস মেমোকে গুরুত্ব দেয়নি এবং পর্যাপ্ত মন্তব্য করেনি, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই পদ্ধতিকে তাদের লেখার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কার্যকর মনে করেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সৎভাবে মন্তব্য প্রদান করেছে। প্রসেস মেমো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে যোগাযোগকেও উৎসাহিত করেছে, কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষকরা সরাসরি শিক্ষার্থীর প্রতিফলনের জবাব দিতে পারেন। প্যারট এবং চেরি-এর মতে প্রসেস মেমোর আরেকটি সুবিধা হলো, এটি শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করে, ফলে যারা ক্লাসে প্রশ্ন করার জন্য হাত তুলতে সংকোচ বোধ করে, তারাও উপকৃত হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিটিভ সচেতনতা বাড়াতে এবং ধাপে ধাপে লেখার পথে দিকনির্দেশনা দিতে একটি কার্যকর উপায়। === বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন === পূর্বে উল্লেখিতভাবে, মেটাকগনিশন বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চস্তরের বিজ্ঞান চর্চায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উপলব্ধি ও প্রক্রিয়াগত কৌশলগুলো পুনর্গঠন করতে হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যথাক্রমে তাদের শেখা ও শেখানোর উপরে প্রভাব ফেলে। তবে অনেক শিক্ষক এই বিশ্বাসগুলোকে স্বাভাবিক ধরে নেন। আবদ-এল-খালিক প্রমুখ (১৯৯৮) পরিচালিত এক গবেষণায় প্রাক-সেবা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দেখা যায় যে, খুব বেশি শিক্ষক বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস বা বিজ্ঞান প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষাদান করেন না। এই গবেষণায় কিছু শিক্ষক বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানের প্রকৃতি শেখানো অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ধারণা শেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই পরিস্থিতি সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়ায় যখন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উচ্চস্তরের বিজ্ঞান শেখে। এটি তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়, কারণ তাদের বিজ্ঞানকে বোঝার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি (২০০৬) এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেন, “কার্যকর নির্দেশনা এমন হওয়া উচিত যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়কে তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলে”। তাহলে, বিজ্ঞান শিক্ষায় মেটাকগনিশন কীভাবে উৎসাহিত করা যায়? শ্রাউ প্রমুখের মতে, “বাস্তব অনুসন্ধান মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে উৎসাহিত করে, কারণ এতে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখা পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের চিন্তায় ভুল বা ধারণাগত ঘাটতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়।” এটি ইনকোয়ারি-ভিত্তিক শিক্ষণ পদ্ধতির অংশ, যাকে অনেক গবেষক বিজ্ঞান শিক্ষায় কার্যকর বলে মনে করেন। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলে এবং সমাধান তৈরি করে। শ্রেণিকক্ষে মেটাকগনিশন বৃদ্ধির আরেকটি উপায় হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, যা শ্রাউ, ক্রিপেন ও হার্টলি উল্লেখ করেছেন। এটি প্রতিক্রিয়া, মডেলিং এবং সামাজিক যোগাযোগ উন্নত করে, ফলে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও জ্ঞানের বিশ্বাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনুরূপভাবে, গাণিতিক শিক্ষণ ও নির্দেশনার গবেষণাতেও মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে “[[চিন্তন ও নির্দেশনা/গণিত শেখা|গণিত শেখা]]” অধ্যায়টি দেখুন। == উন্নয়নমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে মেটাকগনিশন == গবেষণায় দেখা গেছে, মেটাকগনিটিভ ক্ষমতা বয়স ও জৈবিক বিষয়ের মতো বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই এই তত্ত্বকে প্রয়োগের জন্য উন্নয়নগত অগ্রগতির ধারণা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। === পরিপক্বতা ভিত্তিক === '''বয়স একটি উপাদান হিসেবে''' * ছোট শিশুরা ** "থিওরি অফ মাইন্ড" ধারণা * কৈশোর * প্রাপ্তবয়স্করা === জৈবিক ভিত্তি === '''শেখার ঘাটতি''' == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন একটি দ্রুত বর্ধনশীল আগ্রহের ক্ষেত্র, বিশেষত শিক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্রের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন তত্ত্বকে একটি সংহত কাঠামোর মধ্যে একত্রিত করা, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণার পর্যালোচনায় প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রয়োগের কয়েকটি মূল নীতিকে তুলে ধরেছেন। তারা এই নীতিগুলোকে চারটি ধারণার মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন, যা এই ক্ষেত্রের গবেষণাকে সংহত করে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা শিখনের প্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হয় যখন তারা আত্ম-মূল্যায়ন করতে পারে। অর্থাৎ, তারা কীভাবে শিখছে তা বিশ্লেষণ করে, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে, কী জানে আর কী জানে না তা মূল্যায়ন করে, এবং নিজের প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করে—এই উপায়ে শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, চিন্তা ও আবেগের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে বেশি নমনীয়তা প্রদান করে। তারা যদি বাস্তববাদী লক্ষ্য নির্ধারণ করে, যা তাদের দক্ষতা উন্নয়নের দিকে কেন্দ্রীভূত থাকে, সময় ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে এবং শেখার কৌশলগুলো পুনর্বিবেচনা করে, তাহলে তারা নিজেদের জন্য উচ্চতর কর্মক্ষমতার মান নির্ধারণ করতে পারে। তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিভিন্নভাবে শেখানো যায়, যা শিখন প্রক্রিয়াকে অভিযোজিত করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন শিক্ষার্থীদেরকে সরাসরি শেখানো যেতে পারে (নির্দেশিত প্রতিফলন, মেটাকগনিশন সম্পর্কিত আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনুশীলন); এটি পরোক্ষভাবে শেখানো যেতে পারে (মডেলিং ও প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে); এবং এটি ব্যক্তিকৃত অগ্রগতি চিত্রায়নের মাধ্যমেও উৎসাহিত করা যায়। সবশেষে, আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিচয়সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়। শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের আচরণ মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করে, তা তারা যেভাবে নিজেদের দেখতে চায় সেই পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। একটি প্রতিফলনশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার মাধ্যমে, একজন শিক্ষার্থী তার স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়। যদিও শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের উপায়ে ভিন্নতা থাকতে পারে, মূল বিষয়টি হলো—তারা কীভাবে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে, তা বোঝা। প্যারিস ও প্যারিস (২০০১) অনুসারে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) তিনটি উপায়ে উন্নত করা যায়: (১) পরোক্ষভাবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে: বিদ্যালয়ে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষক কী চান এবং কোনটি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী, তা শেখাতে পারে।<ref name="Paris, A.H. (2001)." /> এর একটি উদাহরণ হলো, কাজটি আবার যাচাই করা—যদিও শুরুতে সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক হয় এবং তাই পরবর্তীবারেও এটি করা উপকারী হবে। (২) স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সরাসরি শেখানো যায়: শিক্ষার্থীরা এমন শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখতে পারে, যারা কার্যকর কৌশল ব্যবহারে জোর দেন এবং লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত একটি গাণিতিক সমস্যা বিশ্লেষণের কৌশলগত ধাপগুলো তুলে ধরতে পারেন। (৩) আত্ম-নিয়ন্ত্রণ তখন উদ্দীপিত হয়, যখন এটি এমন সক্রিয় অনুশীলনের সঙ্গে একীভূত হয়, যার মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিদ্যমান থাকে। একটি কার্যকর অনুশীলন হলো—সহযোগিতামূলক শিক্ষণ প্রকল্প, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সামগ্রিক প্রকল্পের একটি অংশের জন্য দায়িত্ব নেয়। এ ধরনের প্রকল্পে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিদ্যমান থাকে, কারণ শিক্ষার্থীরা অন্যদের প্রতিক্রিয়া থেকে এবং তারা প্রকল্পে কীভাবে অবদান রেখেছে তার বিশ্লেষণ থেকে শিখে থাকে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির এই তিনটি উপায় প্রায়শই মিলিতভাবে দেখা যায়, যেহেতু শিক্ষার্থীরা সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষাক্ষেত্র জুড়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষণ কৌশল শেখানো হয়, যেগুলো তাদের পড়াশোনায় প্রয়োগ করতে বলা হয়; তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র এই কৌশলগুলো জানা যথেষ্ট নয়, বরং এই কৌশলগুলোর ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাও জরুরি (লিউটনার প্রমুখ, ২০০৭)। লিউটনার, লিওপোল্ড ও এলজেন-রাম্প (২০০৭)-এর কম্পিউটারভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শুধু একটি কার্যকর জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষণ কৌশল (হাইলাইটিং) শেখানো নয়, বরং কৌশলটি কিভাবে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে—এ বিষয়ে মেটাকগনিটিভ প্রশিক্ষণ দেওয়াটাও উপকারী।<ref name="Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007).">Leutner,D., Leopοld, C., & Elzen-Rump, V.D. (2007). Self-regulated learning with a text-highlighting strategyːA training experiment. Journal of Psychology, 215 (3), 174-182.</ref> এই গবেষণায় ৪৫ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে এলোমেলোভাবে তিনটি দলে ভাগ করা হয়—একটি দলে কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, একটি দলে শুধু হাইলাইটিং কৌশল শেখানো হয়েছে, এবং অন্যটিতে হাইলাইটিং কৌশলের সঙ্গে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়েছে। মিশ্র প্রশিক্ষণ দল এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের সংস্করণ পায়, যেখানে কীভাবে মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে হয়, তা ধাপে ধাপে শেখানো হয় এবং তা অনুশীলনের সময় ও প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যারা কৌশল ব্যবহারের পাশাপাশি এর মেটাকগনিটিভ নিয়ন্ত্রণও শিখেছিল, তারা তাদের শেখাকে লক্ষ্যভিত্তিকভাবে আরও সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছিল। শুধুমাত্র কৌশল শিখানো দলটি যাদের কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, তাদের চেয়ে ভালো ফল করে; তবে মিশ্র প্রশিক্ষণ দল উভয় দলকেই ছাড়িয়ে যায়, যা প্রমাণ করে—যদিও কৌশল ব্যবহার ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবুও কৌশল নিয়ন্ত্রণ শেখানো হলে শেখার মান আরও উন্নত হয়। == প্রযুক্তি সংযুক্তকরণ == === প্রযুক্তি ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এর সংযোগ === প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েছে, প্রেনস্কি (২০০১) তার প্রবন্ধে পরামর্শ দেন—শিক্ষকদের উচিত এমন উপায় খুঁজে বের করা, যার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করা যায়। এছাড়াও শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের “চাহিদা” বুঝে উপলব্ধ তথ্য ও কম্পিউটিং ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ উপায়ে পাঠ উপস্থাপন করতে হবে।<ref name="Beishuizen, J. (2007).''">Beishuizen, J. (2007). Self-regulated Learning in Technology Enhanced Learning Environments – a European review. In R. Carneiro, P. Lefrere, K. Steffens. (Eds). Kaleidoscope Seed Project, Retrieved from http://www.lmi.ub.es/ taconet/documents/srlinteles3.pdf.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''">Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008). Self- regulated Learning in Technology Enhanced Environments: Perspectives and Practice. Education – Line: European Conference on Educational Research, University of Goteborg.</ref><ref name="Prensky, M. (2001, September).''">Prensky, M. (2001, September). Digital natives, digital immigrants part 1. On the Horizon 9(5).</ref> আজকের দিনে, প্রযুক্তি-নির্ভর হস্তক্ষেপ প্রধানত ডিজিটাল প্রজন্মের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়া ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।<ref name="Prensky, M. (2001, September).''" /><ref name="Kitsantas, A. (2013).''">Kitsantas, A. (2013). Fostering college students’ self-regualted learning with learning technologies. Hellenic Journal of Psychology, 10(2013), pp. 235 – 252.</ref> শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের শিক্ষণ কার্যক্রম পরিকল্পনা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়নে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''">Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011). Self-regulated learning in technology enhanced learning environments A European perspective. Sense Publishers Rotterdam/ Boston/ Taiper.</ref><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান, আগ্রহ এবং প্রেরণা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন পরিবেশে তাদের ব্যক্তিগত শেখার অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স ও ফলাফলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''" /> উদাহরণস্বরূপ, মা প্রমুখ (২০১৫) বুদ্ধিমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার (ITSs) ব্যবহারের কথা বলেন, যেগুলো শিক্ষার পরিবেশে প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফল উন্নয়নে প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে। কম্পিউটারভিত্তিক এই ITSs ব্যবস্থাগুলো শিক্ষার্থীদের আচরণের ভিত্তিতে শেখার কার্যক্রমে যুক্ত করে।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''">Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014). Intelligent tutoring systems and learning outcomes: A meta-analysis. Journal of Educational Psychology, 106(4), 901-918.</ref> ITSs বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করে এবং “প্রতিটি কাজকে একটি উৎপাদন নিয়মের সেট হিসেবে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সবচেয়ে বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন এমন নিয়মের একটি সেট হিসেবে বর্ণনা করে, এরপর সেরা মিল খুঁজে পায়” (মা প্রমুখ, ২০১৫, p.৪)।<ref name="Ma, W., Adesope, O. O., Nesbit, J. C., & Liu, Q. (2014).''" /> ITSs প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজস্ব কাজ নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়, যা বিভিন্ন জ্ঞানের স্তর ও শেখার সক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর হতে পারে। ITSs-এর এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণের সুবিধা শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার নিয়ন্ত্রণ নিতে উৎসাহিত করে, যা আত্ম-প্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনকে উৎসাহিত করে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''">Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a). Support self-regulated learning. S. Kroop et al. (eds.), Responsive Open Learning Environments, pp. 17- 49. DOI 10.1007/978-3-319-02399-1_2.</ref><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''">Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b). A competence-based service for supporting self-regulated learning in virtual environments. Journal of Learning Analytics, 2(1), 101–133.</ref> কাউফম্যান, ঝাও ও ইয়াং (২০১১) মা প্রমুখ-এর মতোই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও মেটাকগনিশন উন্নত করার বিষয়ে উপসংহার টানেন।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''">Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011). Effects of online note taking formats and self-monitoring prompts on learning from online text: Using technology to enhance self-regulated learning. Contemporary Educational Psychology 36 (2011) 313–322.</ref> তারা আরও বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষাদানে মাল্টিমিডিয়া ও বিষয়বস্তুর সংগঠনের ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়া যায়। শিক্ষাবিষয়ক ডিজাইনার ও শিক্ষকরা ওয়েব-ভিত্তিক পদ্ধতি ও মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামের মাধ্যমে পাঠ্যবস্তু তৈরি ও বিতরণ করতে পারেন। বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাট শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে, তাদের শেখার আগ্রহ বাড়াতে এবং তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনয় আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করতে সাহায্য করে (কাউফম্যান প্রমুখ, ২০১১)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> অন্যদিকে, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে কাজ সম্পন্ন করতে পারে এবং “তাদের বিভিন্ন মিডিয়া ফরম্যাটে পাঠ্যবস্তু দেখার একাধিক বিকল্প প্রদান করা হয়” (কাউফম্যান প্রমুখ, ২০১১, p.৪৩)<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> যা তাদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার সঙ্গে যুক্ত করে। এছাড়াও বিষয়বস্তু তৈরি করার সরঞ্জামগুলো শক্তিশালী শিক্ষণ কৌশল ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মিডিয়া ফরম্যাট ব্যবহার করে পাঠ্যবস্তুর ওপর নিজেদের বোঝাপড়া তুলে ধরতে পারে এবং তাদের শেখার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে পারে (কাউফম্যান প্রমুখ, ২০১১)।<ref name="Kauffman, D.F., Zhao, R., & Yang, Y. (2011).''" /> === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সমস্যা === ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্রুতগতিতে বাড়ায়, ফলে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) প্রক্রিয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /><ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /><ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়াকে সম্পূর্ণরূপে নিরীক্ষণ করতে পারে না এবং এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন চলাকালে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত দক্ষতা বিকাশে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, শিক্ষার্থীরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ হারায় এবং শিক্ষণ চলাকালীন তাদের তথ্য প্রবাহ ভালোভাবে বোঝার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে মৌখিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হয়।<ref name="Azevedo Roger. (2005).''" /> উদাহরণস্বরূপ, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) শেখার কনটেন্ট বিতরণ করে, শেখার প্রক্রিয়া সংগঠিত করে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে একটি ইন্টারফেসের মাধ্যমে। তবে শিক্ষার্থীরা LMS ব্যবহারের সময় তাদের নিজের শেখার প্রক্রিয়ায় প্রকৃত অর্থে কোনও স্বাধীনতা পায় না। বরং শিক্ষকরা তাদের বোঝাপড়া সার্বক্ষণিকভাবে নিরীক্ষণ করেন।<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /> <ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" /> এর বিপরীতে, পার্সোনাল লার্নিং এনভায়রনমেন্ট (PLE) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পছন্দমতো সেবা বাছাই ও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়, যদিও তারা কনটেন্ট ও শেখার কৌশলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। কিন্তু, PLE-তে কনটেন্ট এবং পদ্ধতির উপযুক্ত নির্দেশনার অভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ কম কার্যকর হয়ে ওঠে<ref name="Nussbaumer, A., Dahn, I., Kroop, S.,Mikroyannidis, A.,& Albert, D. (2015 a).''2" /><ref name="Nussbaumer, A., Hillemann, E., Gütl, C., & Albert, D. (2015 b).''2" />; এর ফলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন দক্ষতাও সীমিত হয়ে পড়ে। === এসআরএল প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগত প্রযুক্তির আনীত সুযোগ === যদিও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উদ্বেগ রয়েছে, তথাপি অস্বীকার করা যায় না যে প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জ্ঞান অর্জন ও ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> বিভিন্ন তথ্যসূত্রে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে, সিমাও ও তার সহকর্মীরা (২০০৮) খুঁজে পান যে প্রযুক্তি নতুন উপায়ে শিক্ষণ পরিকল্পনা ও সম্পাদনের সুযোগ দেয়, যা নির্দিষ্ট দক্ষতা বিকাশে সহায়ক হতে পারে।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> শিক্ষার্থীদের নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া স্বনিয়ন্ত্রিত করার সক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে তারা নিজেরা নির্ধারিত বা তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে, শিক্ষকদের উচিত এমন সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তৈরি করা যা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /> অনেক একাডেমিক প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, শিক্ষাগত প্রযুক্তি স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে।<ref name="Carneiro, R., Lefrere,P., Steffens, K., &Underwood, J. (2011).''2" /><ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> প্রকৃতপক্ষে, এই নিবন্ধের শেষাংশে কিছু প্রযুক্তির উদাহরণ তুলে ধরা হবে যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি। এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেখানো যে, কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে কার্যকর। বিশেষ করে, যখন প্রযুক্তি সচেতনভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ, প্রেরণা এবং অনলাইন শিক্ষায় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /> এছাড়াও কিছু গবেষক, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-কে সহায়তা করতে শিক্ষাগত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা জানতে চায়, শিক্ষাগত প্রযুক্তি কি একটি বিকল্প শিক্ষণ কৌশল হিসেবে, নাকি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক হিসেবে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় স্থান পায়? প্রযুক্তি কি শিক্ষক/শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী/শিক্ষার্থী ইন্টারঅ্যাকশন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে? কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের মেটাকগনিশন, প্রেরণা এবং আচরণ উন্নত করতে পারে যাতে তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধানই নিবন্ধের শেষাংশে প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে, যেমন—বেটি'স ব্রেইন, মেটাটিউটর, এবং এনস্টাডি। এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের শেখার কৌশল নির্বাচন, কৌশলের প্রভাব পর্যবেক্ষণ এবং প্রাপ্ত তথ্য সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়নের সক্ষমতা দেয়, যা মেটাকগনিশন প্রতিফলনে সহায়ক।<ref name="Simao, A.M.V., Duarte, F.C., &Ferreira, P.C. (2008).''2" /> এই অংশে তিনটি বিদ্যমান প্রযুক্তি বর্ণনা করা হবে এবং কিভাবে তা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সমর্থন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, তা ব্যাখ্যা করা হবে। [[চিত্র:Betty's_Brain.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৩. বেটি'স ব্রেইন এর প্রাথমিক ইন্টারফেস]] [[চিত্র:MetaTutor.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|চিত্র ১৪. মেটাটিউটর ইন্টারফেস]] * '''বেটি'স ব্রেইন''' শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শিক্ষণ এবং কৌশল ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য একটি "শিক্ষণযোগ্য এজেন্ট সিস্টেম" হিসেবে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বেটি'স ব্রেইন তৈরি হয়।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> বেটি'স ব্রেইন-এ, শিক্ষার্থীরা প্রথমে বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ে শেখে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> তারপর তারা ধারণামূলক মানচিত্র (কনসেপ্ট ম্যাপ) তৈরি করে এবং সেই মানচিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার এজেন্ট চরিত্র ‘বেটি’ কে শেখায়।<ref name="Bruning, R.H., Schraw, G.J., & Norby, M.M. (2011).2" /> রোস্কো ও তার সহকর্মীরা (২০১৩) ব্যাখ্যা করেন যে, এই মানচিত্র তৈরি শিক্ষার্থীদের নতুন ও পুরনো জ্ঞান সংহত ও সংগঠিত করতে সহায়তা করে এবং গভীরতর নীতির মধ্যে কিভাবে ধারণাগুলো সংযুক্ত, তা বুঝতে সাহায্য করে।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> অন্যকে শেখানোর আগে শিক্ষার্থীদের নিজে শিখতে ও সমস্যার সমাধান করতে হয়। শেখানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বেটি প্রোগ্রাম থেকে প্রতিক্রিয়া পায় এবং এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে জ্ঞান স্থানান্তর করতে উদ্বুদ্ধ হয়, ফলে মেটাকগনিশন ও স্বনিয়ন্ত্রিত চর্চা বৃদ্ধি পায়।<ref name="Leelawong, K. & Biswas,G. (2008).''" /><ref name="Winne, P.H., Nesbit, J.C., Kumar, V., Hadwin, A.F., Lajoie, S.P., Azevedo, R., & Perry, N.E. (2006).''" /> এইভাবে তারা নিজেদের এবং তাদের এজেন্টের দক্ষতা মূল্যায়ন করতে ও উন্নত করতে সক্ষম হয়। শেষ পর্যন্ত, রোস্কো ও তার সহকর্মীরা (২০১৩) বলেন, শিক্ষার্থীরা “মানচিত্রের ত্রুটি চিহ্নিত ও সংশোধন করতে মেটাকগনিশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সঠিকতা ও পূর্ণতা বৃদ্ধি করতে পারে” (পৃষ্ঠা ২৮৯)।<ref name="Roscoe, R.D. , Segedy, J.R., Sulcer, B., Jeong, H., Biswas, G. (2013).''" /> * '''আজেভেদো-এর মেটাটিউটর''' খোসরাভিফার ও তার সহকর্মীদের (২০১৩) মতে, মেটাটিউটর হলো গবেষণাভিত্তিক একটি শিক্ষণ টুল যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে তৈরি। বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাকটিভ ও কৌশলগত বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানগত, আবেগীয়, মেটাকগনিশন ও প্রেরণা স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করতে পারে।<ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /> এটি হাইপারমিডিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিজ্ঞান বিষয় শেখাতে তৈরি।<ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> মেটাটিউটর শিক্ষার্থীদের স্বনিয়ন্ত্রিত শেখার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সারসংক্ষেপ, নোট নেওয়া ইত্যাদি নিরীক্ষণ, মডেলিং এবং উৎসাহিত করে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''" /><ref name="Zimmerman, B. J. (2008). ''" /> শিক্ষার্থীদের মেটাটিউটর ব্যবহারের আগে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এই হাইপারমিডিয়া পরিবেশে চারজন পেডাগজিক্যাল এজেন্ট থাকে, যারা অংশগ্রহণকারীদের শেখার দক্ষতা গঠনে প্রতিক্রিয়া প্রদান করে, সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে এবং জ্ঞানীয় কৌশল (যেমন—সারাংশ লেখা, নোট গ্রহণ) ব্যবহারে সহায়তা করে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> মেটাটিউটর ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে এবং নিজের পছন্দমতো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারে।<ref name="Kitsantas, A., Dabbagh, N., Hiller, S., &Mandell, B.(2015).''" /><ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''" /> মেটাটিউটর অংশগ্রহণকারীদের সব ধরনের ইন্টারঅ্যাকশন ট্র্যাক করতে এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ একটি লগ ফাইলে রেকর্ড করতে সক্ষম। যখন তথ্যগুলো দেখায় যে একজন শিক্ষার্থী অকার্যকর কৌশল ব্যবহার করছে, তখন মেটাটিউটর-এর এজেন্ট শিক্ষার্থীকে আরও কার্যকর শেখার কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। শিক্ষার্থীরা এই প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করে শেখার পরিবেশে নিজেদের সিদ্ধান্ত ও ফলাফল উন্নত করতে পারে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /><ref name="Azevedo, R., Witherspoon, A.,Chauncey, A., Burkett, C.,&Fike, A. (2009). ''2" /> একই সময়ে, শিক্ষকরা মেটাটিউটর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বুঝতে পারেন শিক্ষার্থীরা কীভাবে মেটাটিউটর-এর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করছে এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে। <ref name="Khosravifar, B., Bouchet, F., Feyzi-Behnagh, R., Azevedo,R., & Harley, J.M. (2013).''2" /> যদিও মেটাটিউটর-এর পেডাগোজিকাল এজেন্টগুলো শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শেখার অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা এখনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কার্যকর কৌশল প্রদান করে, যা শেখার পরিকল্পনা ও তদারকিতে সহায়তা করে। [[চিত্র:NStudy.jpg|থাম্ব|355x355পিক্সেল|চিত্র ১৫: এনস্টাডি ব্রাউজার, উদ্ধৃতির তালিকা, এবং সংযুক্ত করার টুলসমূহ]] * '''এনস্টাডি''' প্রফেসর উইনে ও তার গবেষণা দল এনস্টাডি নামক একটি ওয়েবভিত্তিক শেখার টুল তৈরি করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান, নজরদারি, সংগঠন, অনুশীলন ও অনুবাদ করার জন্য সহায়তা করে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> এই ডিজাইনটি এমনভাবে তৈরি যাতে শিক্ষার্থী ও গবেষক উভয়েই ওয়েবভিত্তিক পরিবেশে সক্রিয়ভাবে শেখা ও গবেষণায় অংশ নিতে পারেন। এনস্টাডি-তে তারা শেখার উপাদান তৈরি, সম্পাদনা ও সংযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের মতো করে সংগঠিত করতে পারে। <ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> বেটি'স ব্রেইন-এর মতো, তারা ধারণার ম্যাপও তৈরি করতে পারে এবং সেগুলো সংযুক্ত, গুচ্ছিত ও স্থানীয়ভাবে সাজিয়ে নিতে পারে। এই সংযুক্তি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত শেখার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং তথ্য বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের ইন্টারঅ্যাকশন, ব্যাখ্যা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে।<ref name="Winne, P. H. (2011).''" /><ref name="Winne, P. H., & Nesbit, J. C. (2009).''" /> এনস্টাডি একক ও দলগত শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি ওয়ার্কস্পেস তৈরি করে যেখানে তারা তথ্য আদান-প্রদান, সহযোগিতা এবং বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে পারে, যা তাদের সম্মিলিত শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> তাছাড়া, ওয়ার্কস্পেস জুড়ে তথ্য আদান-প্রদান “ভূমিকা ও প্রম্পটের মাধ্যমে কাঠামোবদ্ধ হতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ, একে অপরের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয়” (উইন ও হ্যাডউইন, ২০১৩, পৃ. ৩০২)। <ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা যখন এনস্টাডি টুল ব্যবহার করে শেখে বা গবেষণা করে, তখন সিস্টেম ট্রেস ডেটা সংগ্রহ করে যা আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখার সময় ঘটে যাওয়া নির্দিষ্ট জ্ঞানীয় ও অধিজ্ঞানীয় ঘটনাকে প্রতিফলিত করতে পারে।<ref name="Winne, P. H., & Hadwin, A. F. (2013).''2" /> == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সহজতর ও উৎসাহ প্রদান == স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন হলো একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীদের তাদের চিন্তা, আচরণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যাতে তারা সফলভাবে শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিজে নিজেই পরিকল্পনা, তদারকি ও মূল্যায়ন করতে হয়। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মোটিভেশন ও সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস। স্ব-নিয়ন্ত্রণ বলতে শেখার সময় শিক্ষার্থীরা কতটা নিজেদের চিন্তা, মোটিভেশন ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা বোঝায়। বাস্তবে, স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন শেখার প্রক্রিয়ার সক্রিয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। <ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা সামাজিক নয়, তবে তার বিকাশ সামাজিক পরিবেশে ঘটে যা কাঠামো ও স্বাধীনতার সুযোগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> গবেষণায় দেখা গেছে স্ব-নিয়ন্ত্রণ শেখানো যায় এবং এটি শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন ও অর্জন বৃদ্ধি করতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষক, কোচ ও সহপাঠীদের নির্দেশনা ও মডেলিং এর মাধ্যমে প্রতিটি স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া শেখা যায়।<ref name="Zimmerman20025" /> পাশাপাশি, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে পারে। <ref name="Dignath, C., & Büttner, G. (2008).”" /><ref name="Masui, C., & De Corte, E. (2005).”" /><ref name="Perels, F., Gürtler, T., & Schmitz, B. (2005).”" /><ref name="Schunk, D. H., & Ertmer, P. A. (2000).”" /> উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা মনিটরিং ও অনুকরণের মাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন দক্ষতা শিখেছিল, তারা যারা এসব প্রশিক্ষণ পায়নি তাদের তুলনায় বেশি আত্মবিশ্বাসী ও ফলপ্রসূ ছিল। <ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”" /> তাই শিক্ষার্থীদের পুরো স্কুলজীবন জুড়ে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চর্চা করা উচিত এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব তাদের এই আচরণ গঠনে সহায়তা করা। <ref name="Waeytens, K., Lens, W., & Vandenberghe, R. (2002). ”" /> যখন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আরও স্বনিয়ন্ত্রিত হতে শেখান, তখন তারা একাডেমিক সাফল্য, মোটিভেশন এবং জীবনব্যাপী শেখার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। <ref name="Graham, S., & Harris, K.R. (2005).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এমন স্বনিয়ন্ত্রিত শেখায় সক্ষম করতে পারেন যাতে তারা পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ, শেখার অগ্রগতি তদারকি এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার লক্ষ্যে নিজেদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে পারে। শিক্ষকরা সরাসরি শেখার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে অথবা পরোক্ষভাবে এমন শেখার পরিবেশ তৈরি করে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নীত করতে পারেন। <ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”" /> === স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার বিকাশ === জিমারম্যান (২০০২) অনুসারে, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার প্রক্রিয়াটি তিনটি স্পষ্ট ধাপে বিভক্ত: ''অগ্রচিন্তা ও পরিকল্পনা ধাপ'': শেখার কাজ বিশ্লেষণ এবং সেই কাজ শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই ধাপে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কার্যকর পদ্ধতির নির্দেশনা দেন, কাঠামোবদ্ধ ও সুস্পষ্ট শিক্ষা প্রদান করেন, কৌশলগুলোর মডেল দেখান এবং কৌশলটি অন্য অনুরূপ কাজে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /><ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”" /> ''পারফরম্যান্স তদারকি ধাপ'': শেখার কাজ এগিয়ে নিতে কৌশল ব্যবহার, কৌশলের কার্যকারিতা তদারকি এবং শেখার প্রতি মোটিভেশন পর্যবেক্ষণ করা হয়। শিক্ষকরা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন, যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন কৌশল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। যখন শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে শিখে যায়, তখন শিক্ষকরা ধীরে ধীরে নির্দেশনা কমিয়ে গাইডের ভূমিকা পালন করেন। <ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”" /><ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> ''পারফরম্যান্সের প্রতিফলন ধাপ'': শেখার কাজের উপর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এবং ফলাফলের প্রতি আবেগগত প্রতিক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। শিক্ষকরা সহপাঠী মূল্যায়ন ও প্রতিফলন উৎসাহিত করে, মূল্যায়ন সহজতর করে এবং সবকিছু শেখার লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রাখেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময় কী কাজ করেছে তা শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন, তাদের আত্মবিশ্বাস ও মোটিভেশন বাড়ান এবং কার্যকর কৌশল ব্যবহারের জন্য প্রশংসা প্রদান করেন। <ref name="English, M. C., & Kitsantas, A. (2013).”" /> [[চিত্র:The_Cycle_of_SRL.png|থাম্ব|483x483পিক্সেল|চিত্র ১৬: স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার চক্র]] স্ব-নিয়ন্ত্রিত দক্ষতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হয় না। এই দক্ষতার বিকাশ চারটি ধাপে ঘটে: পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ, স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ। পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে সফল পারফরম্যান্সের একটি ধারণা পায়। এটি তাদের সাধারণ পারফরম্যান্স মানদণ্ড গড়ে তুলতে এবং দক্ষতা অর্জনের সময় মোটিভেশন নিয়ন্ত্রণের কৌশল বুঝতে সহায়তা করে। অনুকরণের পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একটি সাধারণ কৌশল ব্যবহার করে পারফর্ম করে এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া ও নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের পারফরম্যান্সের যথার্থতা উন্নত হয়। তদ্ব্যতীত, সামাজিক উৎসাহ যেমন প্রশংসা বা উত্সাহও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা বাড়াতে সহায়তা করে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণের স্তরটি কাঠামোবদ্ধ অনুশীলন এবং আত্ম-পর্যবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নিয়মিত পরিবেশে একটি দক্ষতা অনুশীলন করে। তারা কোনো মডেলের পারফরম্যান্সের দিকে নজর দিতে পারে এবং সেটিকে অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণ করতে পারে, এবং তাদের উচিত ফলাফলের পরিবর্তে প্রক্রিয়ার উপর জোর দেওয়া। স্ব-নিয়ন্ত্রিত স্তরের দক্ষতাগুলো অনিয়মিত পরিবেশে সম্পাদিত হয়। শিক্ষার্থীদের উচিত শুধুমাত্র শিখিত দক্ষতার অনুশীলনের পরিবর্তে পারফরম্যান্সের গুণমান ও কার্যকারিতার উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আনা। তারা স্বতন্ত্রভাবে দক্ষতা সম্পাদন করতে পারে, তবে মাঝে মাঝে সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”">Zimmerman, B. J. (2000). Self-efficacy: An essential motive to learn. Contemporary educational psychology, 25(1), 82-91.</ref> ফিগার ১৬-তে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনের চক্র চিত্রিত হয়েছে। === শিক্ষার্থীদের জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলসমূহ === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার কৌশলের ধরনসমূহ''' চার ধরনের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল রয়েছে যা শিক্ষাকে সহায়তা করতে পারে<ref name="de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013).”">de Boer, H., Donker-Bergstra, A. S., Kostons, D. D. N. M., Korpershoek, H., & van der Werf, M. P. (2013). Effective strategies for self-regulated learning: A meta-analysis. GION/RUG.</ref><ref name="Kobayashi, M. (2006).”">Kobayashi, M. (2006). Facilitating Academic Achievement in High School Interactive Television Programs by Promoting Self-Regulated Learning (Doctoral dissertation, Virginia Polytechnic Institute and State University).</ref>: ** কগনিটিভ কৌশল**: পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, বিস্তার ও উপকরণের রূপান্তর বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। বিস্তার শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্য পূর্ব জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে; কল্পনা মানসিক চিত্রকে বোঝায় যা মেমোরি শক্তিশালী করে; পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের কার্যস্মৃতিতে তথ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে; রূপান্তর ও সংগঠনের কৌশলের মধ্যে সারসংক্ষেপ, রূপরেখা তৈরি, নোট নেওয়া বা উপকরণ পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত। ** মেটাকগনিটিভ কৌশল**: পরিকল্পনা, আত্ম-সচেতনতা, পর্যবেক্ষণ এবং আত্ম-মূল্যায়ন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার কৌশল হলো কাজ বিশ্লেষণ ও লক্ষ্য নির্ধারণ। সাধারণ পর্যবেক্ষণের কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্ম-রেকর্ডিং ও আত্ম-পরীক্ষা।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> আত্ম-পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের সাথে সম্পর্কিত। আত্ম-নির্দেশনা ও মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ কৌশল মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আত্ম-নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের কাজের প্রতি মনোযোগী করে এবং উপকরণ মনে রাখার দক্ষতা বাড়ায়। মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ বিঘ্ন অপসারণ করে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। ** পরিচালনাগত কৌশল**: শেখার সর্বোত্তম পরিবেশ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে শেখার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা ও সহায়তা চাওয়া অন্তর্ভুক্ত। আত্ম-রেকর্ডিং সাধারণত সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় উৎসাহ দেওয়া তাদের সহায়তা চাওয়ার আচরণ বৃদ্ধি করে। শ্রেণিকক্ষের কাঠামো, প্রতিক্রিয়া ও যোগাযোগের ধরণও সহায়তা চাওয়ার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। ** প্রেরণাগত কৌশল**: শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য তাদের অনুপ্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে শেখার উদ্দেশ্য নির্ধারণ, যা লক্ষ্যভিত্তিক মনোভাব গঠন করে; ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ, যা আত্ম-দক্ষতা বাড়ায়; উপকরণকে আকর্ষণীয় বা চ্যালেঞ্জিং করে আগ্রহ সৃষ্টি; এবং আত্ম-উৎসাহমূলক কথাবার্তা। ** সারণী ১: কৌশলের ধরনসমূহ** {| class="wikitable" |'''কৌশলের ধরন''' |'''বর্ণনা''' |'''উদাহরণ''' |- |কগনিটিভ কৌশল |বিষয়বস্তুর সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কৌশল। |পুনরাবৃত্তি, কল্পনা, উপকরণ সংগঠন |- |মেটাকগনিটিভ কৌশল |শেখা সংগঠিত, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের কৌশল। |কাজ বিশ্লেষণ, আত্ম-রেকর্ডিং, আত্ম-পরীক্ষা |- |পরিচালনাগত কৌশল |শেখার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কৌশল। |সময় ব্যবস্থাপনা, সহায়তা চাওয়া |- |প্রেরণাগত কৌশল |অনুপ্রেরণা উন্নয়ন ও টিকিয়ে রাখার কৌশল। |লক্ষ্য নির্ধারণ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি |} '''শিক্ষার্থীদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল শেখানো – স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থী তৈরি করা''' শিক্ষকদের স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের শেখার সহায়ক স্ব-নিয়ন্ত্রিত কৌশল শেখাতে হবে। সবচেয়ে কার্যকর ও প্রচলিত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে: লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, আত্ম-প্রেরণা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ, শেখার কৌশলের নমনীয় ব্যবহার, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, উপযুক্ত সহায়তা চাওয়া এবং আত্ম-মূল্যায়ন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** লক্ষ্য নির্ধারণ:** ব্যক্তিগত লক্ষ্য স্থাপন শিক্ষার্থীদের এমন বাস্তবিক ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে যা শেখার উন্নতিতে কাজে আসে। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক। কাছাকাছি লক্ষ্য আত্ম-দক্ষতা ও দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।<ref name="Zimmerman, B. J. (2000).”" /> শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণে উৎসাহিত করতে পারেন যাতে তারা অগ্রগতি অনুসরণ করতে পারে, কী শিখবে তা ভেবে নিতে পারে। ** পরিকল্পনা:** পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করলে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উৎসাহিত হয়। লক্ষ্য পূরণে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরিকল্পনা করছে, তা আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রক্রিয়াটির ধাপগুলো মনে রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে পারে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-প্রেরণা:** কাজ বেছে নেওয়া, প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায় শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণার ওপর নির্ভরশীল। উচ্চ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা মেটাকগনিটিভ কৌশল বেশি ব্যবহার করে। স্বাধীনতা, দক্ষতা এবং কাজের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি বাড়ালে আত্ম-প্রেরণা বাড়ে। ** মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ:** স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থীদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হতে হয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে বিরতি ও বিঘ্ন অপসারণের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** কৌশলের নমনীয় ব্যবহার:** সফল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একাধিক কৌশল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। শিক্ষকরা নতুন কৌশল মডেলিং করে, শ্রেণিকক্ষকে সমর্থনময় করে এবং অনুশীলনের সময় সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কৌশল ব্যবহার করতে সহায়তা করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-পর্যবেক্ষণ:** কৌশলগত শিক্ষার্থীরা নিজের শেখার দায়িত্ব নেয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার সময়, ব্যবহৃত কৌশল এবং ব্যয়িত সময় রেকর্ড করতে উৎসাহিত করতে পারেন, যা তাদের অগ্রগতি দৃশ্যমান করে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** সহায়তা চাওয়া:** স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখনর্থীরা প্রয়োজনে অন্যদের সহায়তা চায়। শ্রেণিকক্ষে গঠনমূলক পরিবেশ থাকলে শিক্ষার্থীরা সংকোচ ছাড়াই সাহায্য চাইতে পারে। শিক্ষকরা প্রতিক্রিয়া ও সংশোধনের সুযোগ দিয়ে ইতিবাচক সহায়তা চাওয়ার আচরণ উৎসাহিত করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> ** আত্ম-মূল্যায়ন:** শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার লক্ষ্য ও কৌশল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এর মধ্যে চেকলিস্ট ব্যবহার, শেখার বিষয় সারসংক্ষেপ, আত্ম-প্রশ্ন তৈরি ও উত্তর দেওয়া এবং সহপাঠীদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া অন্তর্ভুক্ত।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> [[চিত্র:Actions_SRL.png|কেন্দ্র|থাম্ব|483x483পিক্সেল|ফিগার ১৭: স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর দিকসমূহ – ধারণা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম]] === শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা উৎসাহিত করা === '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখার জন্য শিক্ষণ কৌশল''' শিক্ষকদের শিক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা উন্নত করতে পারে। কোবায়াশি (২০০৬)<ref name="Kobayashi, M. (2006).”" /> চারটি নীতির কথা বলেছেন যা শিক্ষকরা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবহার করতে পারেন: কার্যকর শেখার পরিবেশ তৈরিতে শিক্ষার্থীদের গাইড করা; জ্ঞানীয় ও মেটাকগনিটিভ প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখতে পাঠ ও কার্যক্রম সাজানো; শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে লক্ষ্য ও প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করা; এবং ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নের তথ্য ও আত্ম-মূল্যায়নের সুযোগ প্রদান। '''সরাসরি নির্দেশনা ও মডেলিং''' বিভিন্ন শেখার কৌশলের ব্যবহার শিক্ষার্থীদের শেখা সহজ করতে সাহায্য করে। স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর সরাসরি নির্দেশনার মধ্যে বিভিন্ন কৌশল ব্যাখ্যা, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখানো অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের নির্দেশনা মডেলিং ও প্রদর্শনের উপর জোর দেয় যা শিক্ষার্থীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করে।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”2" /> শিক্ষকেরা একটি কৌশল প্রয়োগ করে ও চিন্তার ধারা প্রকাশ করে মডেল হতে পারেন বা শিক্ষার্থীদের কৌশলগত আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশ্ন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভাষার ক্লাসে শিক্ষকরা পর্দায় একটি পাঠ্য দেখিয়ে পড়তে পড়তে ভাব প্রকাশ করতে পারেন: “এটা কি বোঝা যাচ্ছে? মূল ভাবটা কী? মনে হচ্ছে আবার শুরু থেকে পড়া উচিত যাতে ভালোভাবে বুঝতে পারি।” একইভাবে, শিক্ষকরা বোর্ডে লেখার সময় ভাব প্রকাশ করে লেখালেখির প্রক্রিয়া দেখাতে পারেন। যেমন: “আমি কি আমার ভাব স্পষ্ট করছি? পাঠকেরা কি বুঝবে আমি কী বলতে চাই? আমি কি আমার পরিকল্পনা অনুসরণ করছি?” শিক্ষার্থীরা তখন প্রধান ভাব, প্রশ্ন ও নিজস্ব মতামত নোট করে বুঝতে পারে। এছাড়া, শিক্ষকরা কোনো কৌশল ব্যাখ্যা করে, তার উপযোগিতা বলেও শেখাতে পারেন।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”2" /> প্রাথমিক শ্রেণিতে, শিক্ষকরা সংলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশে উৎসাহ দিতে পারেন, যেমন “তোমার কী মনে হয়?”, “তুমি কেন তা ভাবছো?” শিক্ষকরা যৌথ অর্থ তৈরির জন্য সহযোগী দক্ষতা ও যোগাযোগমূলক আচরণ শেখাতে পারেন।<ref name="Pino(2014).">Pino-Pasternak, D., Basilio, M., & Whitebread, D. (2014). Interventions and classroom contexts that promote self-regulated learning: Two intervention studies in United Kingdom primary classrooms. Psykhe, 23(2).</ref> * নির্দেশিত ও স্বতন্ত্র অনুশীলন নির্দেশিত অনুশীলন হলো এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন) ও অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারেন। এই পর্যায়ে, শেখার কৌশল প্রয়োগের দায়িত্ব ধীরে ধীরে শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের উপর সরে আসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্মেলন (student-teacher conferencing) এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশল ব্যবহারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা পেতে পারে। নির্দেশিত অনুশীলনের পর স্বতন্ত্র অনুশীলন হওয়া উচিত। এই পর্যায়ে, শিক্ষার্থীদের নিজেরাই কৌশল অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের স্বায়ত্তশাসনের বোধকে জোরদার করতে সহায়তা করে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের আত্ম-প্রতিফলনমূলক অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা, যা শেখার সময় তাদের দক্ষতা পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও কার্যকারিতা সমন্বয় করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> এই কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে উন্মুক্ত প্রশ্ন করা, শিক্ষার্থীদের প্রতিফলন প্রদান বাধ্যতামূলক করা, শেখার বিষয়বস্তুর মূল বিষয়গুলো সারাংশ আকারে তুলে ধরা এবং তাদের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা ও উত্তর দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> উদাহরণস্বরূপ, ভাষা শ্রেণিতে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন এবং পাঠ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়া বইয়ের শিরোনাম লিপিবদ্ধ করতে, পড়ার লগে সময় ও পৃষ্ঠা সংখ্যা রেকর্ড ও গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করতে, বই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ স্তর ধাপে ধাপে বাড়ানোর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, এবং সাপ্তাহিক প্রতিফলন লিখতে বলতেই পারেন। শিক্ষকদের উচিত বিভিন্ন ধরনের শেখার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কার্যকর কৌশল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা। এটি কৌশলের সাধারণীকরণ ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, শিক্ষার্থীদের অনুশীলন, আত্ম-পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের পদ্ধতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে এবং নতুন কৌশলের গঠন ও সংশোধনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।<ref name="Lapan, R. T., Kardash, C. M., & Turner, S. (2002).”2" /> * সামাজিক সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া শিক্ষক ও সহপাঠীদের সামাজিক সহায়তা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রণমূলক শিখন দক্ষতা অর্জনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায়শই এই সহায়তা প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে আসে। লাবুন ও তার সহকর্মীদের (২০১০)<ref name="Labuhn, A.S., Zimmerman, B.J., & Hasselhorn, M. (2010).”2" /> গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল, তারা স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন কৌশল আরও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছিল এবং গণিতে ভালো ফল করেছিল। কার্যকর প্রতিক্রিয়ার মধ্যে থাকে কী ভালো হয়েছে, কী উন্নতির প্রয়োজন এবং কীভাবে আরও উন্নতি করা যায় তার নির্দেশনা। শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য, মানদণ্ড ও মান সংক্রান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন গঠন ও মূল্যায়নে সহায়তা করে।<ref name="Omorogiuwa, K. O. (2012).”" /> শিক্ষকদের উচিত ফর্মেটিভ মূল্যায়ন প্রদান করা, যা কেবল শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি দেখায় না বরং তাদেরকে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া গঠন ও নিজস্ব অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।<ref name="Encouraging self-regulated learning in the classroom. (n. d.).”" /> নিকোল ও ম্যাকফারলেন-ডিক (২০০৬)<ref name="Nicol, D. J., & Macfarlane‐Dick, D. (2006).”2" /> মতে, কার্যকর প্রতিক্রিয়ার উচিত: ভাল পারফরম্যান্স কী তা পরিষ্কার করা; আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা তৈরি করা; শেখা সম্পর্কে উচ্চমানের তথ্য প্রদান করা; শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে শেখা সম্পর্কিত আলোচনা উৎসাহিত করা; ইতিবাচক প্রেরণা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা; বর্তমান ও কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্সের ব্যবধান দূর করার সুযোগ প্রদান করা; এবং শিক্ষকদের জন্য এমন তথ্য প্রদান করা যা পাঠদানের কৌশল উন্নয়নে ব্যবহৃত হতে পারে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের আত্ম-মূল্যায়ন দক্ষতা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখেন, যা তাদের সফলতার কারণ ও প্রেরণার সাথে সম্পর্কিত একটি মেটা-জ্ঞাতিগ্রাহী দক্ষতা।<ref name="Pino(2014).2" /> স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে একত্রে বাস্তব ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ, সেই লক্ষ্যগুলোর ব্যাখ্যা ও মডেলিং, এবং শিক্ষার্থীর স্তরের সাথে মিল রেখে প্রশ্নের ধরণ সমন্বয় করতে পারেন।<ref name="Housand, A., & Reis, S. M. (2008).”" /> শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিবাচক শেখার পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উচ্চশিক্ষায়, স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নের জন্য কোর্স ওয়েবসাইটে একটি ইন্টার‌্যাক্টিভ ফোরাম চালু করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে, ফলে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষা গড়ে ওঠে।<ref name="Ogawa, A. (2011).”" /> * অন্যান্য পাঠদানের কৌশল আত্ম-পর্যবেক্ষণ কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উপায়। নিজের ভুল লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং যথাযথ কৌশল তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারে। গ্রাফ তৈরি করার কৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার উপর নিয়ন্ত্রণের ধারণা গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রেড একটি গ্রাফে প্রদর্শন করতে পারে এবং সেই গ্রেড অর্জনে তারা যেসব কৌশল ব্যবহার করেছে তা লিখে রাখলে, কৌশল ও ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট হয়।<ref name="Cleary, T. J., & Zimmerman, B. J. (2004).”" /> পর্যবেক্ষণমূলক অনুশীলন শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠদান কৌশল পরিবর্তন ও মানিয়ে নেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষণ কৌশল কতটা কার্যকর হয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ফলাফল অনুসারে আরও অর্থবহ শিক্ষার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারেন।<ref name="Zumbrunn, S., Tadlock, J., & Roberts, E. D. (2011).”3" /> '''আত্মনিয়ন্ত্রিত শেখনকে সহায়ক শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ''' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো একটি সহায়ক শেখার পরিবেশ তৈরি করা। এটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য, শেখার বিষয়বস্তু ও কাজ এবং পাঠদানের কৌশল দ্বারা গঠিত। উপযুক্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ধারিতভাবে শেখার জন্য সহায়তা ও উৎসাহ দিতে পারে।<ref name="Kistner, S., Rakoczy, K., Otto, B., Dignath-van Ewijk, C., Büttner, G., & Klieme, E. (2010).”3" /> Young (২০০৫)<ref name="Young, M. R. (2005).”" /> নিম্নলিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন: দক্ষতা ও কাজ-কেন্দ্রিক মনোভাব গঠনের জন্য ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বায়ত্তশাসন উন্নয়নে কাজের পছন্দের সুযোগ প্রদান, শেখার মধ্যে সামাজিক সংযোগ উৎসাহিত করা এবং শেখার ফলাফলের উপর প্রতিক্রিয়া প্রদান। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি এবং শিক্ষকের প্রতিক্রিয়ার ধরন তাদের প্রেরণাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কাজের স্বাধীনতা ও তথ্যভিত্তিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণ অভ্যন্তরীণ প্রেরণাকে সর্বাধিকভাবে বাড়ায়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ঘন ঘন নির্দিষ্ট ও গুণগত প্রতিক্রিয়া প্রদান করা উচিত। শিক্ষার্থীরা আরও চ্যালেঞ্জিং কাজ গ্রহণে আগ্রহী হয় যখন শিক্ষকরা গ্রেডের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। অর্থবহ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, কাজের পছন্দের স্বাধীনতা ও দলগত সহযোগিতা শিক্ষার্থীদের আত্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।<ref name="Kobayashi, M. (2006).”2" /> শিক্ষকদের উচিত উদারতা ও মতভেদের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যাতে সাহায্য চাওয়া, সাহায্য প্রদান ও ভিন্নমতের আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়। এর মধ্যে রয়েছে চ্যালেঞ্জিং কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা, ভুলকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা, শেখার সাথে যুক্ত নেতিবাচক আবেগকে স্বীকৃতি ও সমাধান দেওয়া এবং অসহায়ত্বজনিত বিশ্বাসগুলো কাটিয়ে ওঠার উপায় শেখানো।<ref name="Pino(2014).2" /> '''শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বিকাশে সহায়ক কার্যক্রম''' স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যবহার করা যেতে পারে। জটিল দলগত কাজ শিক্ষার্থীদের নিজের ও অন্যের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে। এটি পরিকল্পনা, ধারণা গঠন, লক্ষ্য অনুযায়ী অগ্রগতি পর্যালোচনা ও দলগত অবদানের ভিত্তিতে বোঝাপড়া পুনর্গঠনে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীর আগ্রহ, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব প্রয়োগ সংবলিত অর্থবহ কার্যক্রম প্রেরণা ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন উন্নয়নে সহায়ক। এমন কার্যক্রম যেগুলোর জ্ঞানীয় চাহিদা শিক্ষার্থীর নিকটবর্তী উন্নয়ন অঞ্চলের সাথে মেলে, সেগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন-এর সাথে জড়িত। বহুমাত্রিক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সুযোগ দেয়। প্রাথমিক শ্রেণিতে আনন্দময় কার্যক্রম স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন অনুশীলনের আকর্ষণীয় উপায় হতে পারে।<ref name="Pino(2014).2" /> প্যারিস ও তার সহকর্মীরা (২০০১)<ref name="Paris, S. G., & Paris, A. H. (2001).”" /> শ্রেণিকক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের চারটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন: আত্ম-মূল্যায়নের মাধ্যমে শেখার গভীরতা অর্জন; চিন্তা, প্রচেষ্টা ও আবেগের আত্ম-ব্যবস্থাপনা; বিভিন্ন উপায়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা প্রদান; এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত আত্মনিয়ন্ত্রণ। শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকরা দলগত বা জোড়ায় কাজ, উন্মুক্ত আলোচনা, শেখার পূর্ব ও পরবর্তী অনুশীলন, এবং ক্লাস শেষে প্রতিফলনের সুযোগ দিতে পারেন।<ref name="Ferreira, P. C., & Simão, A. M. V. (2012).”" /> এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রেরণা ও শেখার কৌশল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে শিখন প্রশ্নাবলীর জন্য অনুপ্রাণিত কৌশল (MSLQ) বা শিখন ও অধ্যয়ন কৌশল তালিকা (LASSI) ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref name="Kuo, Y. H. (2010).”" /> নিচে কিছু কার্যকর কার্যক্রমের উদাহরণ দেওয়া হলো যেগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন বৃদ্ধিতে সহায়ক: “থিঙ্ক-পেয়ার-শেয়ার” কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে, একসাথে আলোচনা করে এবং পুরো শ্রেণিতে তা ভাগ করে; “পুনরুদ্ধার অনুশীলন” কার্যক্রম আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী শেখাকে উৎসাহিত করে; “বাছাই-বিভাজন-সংগঠনের তথ্য” তথ্য শ্রেণিবিন্যাস করে বোঝাপড়া উন্নত করে; “পঠন প্রতিফলন” আত্ম-পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিফলনমূলক চিন্তনে সহায়তা করে; “পরীক্ষার মোড়ক” কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে চিন্তা ও মূল্যায়নের সুযোগ দেয়।<ref name="Activities that develop self-regulated learning. (n. d.).”" /> = শব্দকোষ = '''অ্যাকশন কন্ট্রোল:''' ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা (উদাঃ অনুপ্রেরণা, ঘনত্ব) যা কোনও ব্যক্তিকে স্ব-নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। '''কগনিটিভ মডেলিং:''' শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা বিকাশের পদ্ধতি যার মধ্যে পারফরম্যান্সের জন্য যুক্তি দেওয়া, কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করা জড়িত। '''কগনিটিভ প্রসেসিং:''' একটি শব্দ যা চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞান প্রয়োগ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। '''সহযোগী শিক্ষা''': সহকর্মী / গোষ্ঠীর মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং শেখা। '''ক্রিটিক্যাল থিংকিং:''' তথ্য ওজন, মূল্যায়ন এবং বোঝার সমন্বয়ে একটি প্রতিফলিত চিন্তাভাবনা। '''পূর্বচিন্তা পর্ব:''' শেখার আগে কৌশল নিচ্ছে। স্ব-মূল্যায়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। '''মেটাকগনিশন:''' ভাবনা নিয়ে ভাবনা। নিজের চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝাপড়া। '''মেটাকগনিটিভ নলেজ:''' ঘোষণামূলক জ্ঞান যেমন ভাষা এবং স্মৃতি। '''মেটাকগনিটিভ অভিজ্ঞতা:''' কোনও কাজ জুড়ে আসা এবং এর সাথে সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়া করার সময় ব্যক্তিটি কী সচেতন এবং সে কী অনুভব করে। '''মেটাকগনিটিভ দক্ষতা:''' জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগুলোর ইচ্ছাকৃত ব্যবহার (অর্থাত্ পদ্ধতিগত জ্ঞান)। '''অনুপ্রেরণা:'''আচরণ এবং চিন্তাভাবনা যা ব্যক্তিদের সম্পাদন করতে চালিত করে। '''পারফরম্যান্স পর্ব:''' শেখার সময় কৌশল গ্রহণ করা হয়। কৌশল বাস্তবায়ন, এবং কৌশল পর্যবেক্ষণ। '''এনগেজমেন্টের উদ্দেশ্য:'''স্ব-প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ক্রিয়াগুলো যা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক। '''আপেক্ষিকতাবাদী:''' জ্ঞান নমনীয় এবং পরিবর্তনযোগ্য। প্রশ্ন তোলা যায়। '''স্ব-কার্যকারিতা:''' ব্যক্তি কীভাবে নিজের ক্ষমতা এবং অনুভূত ক্ষমতা থেকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাসের স্তরটি উপলব্ধি করে '''আত্ম-মূল্যায়ন:''' একটি মান অনুযায়ী নিজেকে মূল্যায়ন করা '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত কর্ম:''' যে উপায়ে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হয়। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন:'''কারও শেখার সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্টভাবে বোঝার ক্ষমতা। '''স্ব-নিয়ন্ত্রিত পর্ব:''' শেখার পর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। মূল্যায়ন। == তথ্যসূত্র == {{সূত্র তালিকা}} 5ojznpzvcudnkcqzjqf41p279spdkbm পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা/কাভার লেটার 0 26334 85156 82028 2025-06-22T04:52:50Z Mehedi Abedin 7113 85156 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} =কভার লেটারসমূহ= কভার লেটার সংহত ও সুপরিকল্পিত হওয়া উচিত। একটি জীবনবৃত্তান্ত প্রাথমিক ধারণা দেয়, আর একটি কভার লেটার দেখায় কীভাবে আপনার দক্ষতা ও সামর্থ্য কোম্পানির লক্ষ্য ও বিশ্বাসকে আরও জোরালো করবে। কভার লেটারটি নিয়োগকর্তার কাছে আরও ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। যদিও নিয়োগকর্তারা সাধারণত সবচেয়ে বেশি সময় জীবনবৃত্তান্তে ব্যয় করেন, যদি আপনার কভার লেটারটি বিশৃঙ্খল ও অপেশাদার দেখায়, তাহলে তারা আর আগ্রহ দেখাবেন না। মূল বিষয় হলো, পেশাদার এবং ব্যক্তিগত হওয়া, এবং কভার লেটারটি পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা। ==কেন কভার লেটার ব্যবহার করবেন== * এটি একটি তথ্যবহুল চিঠি, যা নিয়োগকর্তার জন্য আপনার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক দক্ষতাগুলো তুলে ধরে। * এটি একটি পরিচয়পত্র, যা আপনাকে এবং আপনার পটভূমিকে নিয়োগকর্তার কাছে উপস্থাপন করে। * এটি একটি বিক্রয় চিঠি, যা নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে চায় যে আপনার এমন কিছু দেওয়ার আছে যা আপনাকে সাক্ষাৎকারে ডাকার যোগ্য করে তোলে। ==কার্যাবলি== * সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে এবং ব্যাখ্যা করে আপনি কে এবং কী দিতে পারেন। * আপনার জীবনবৃত্তান্তকে সমৃদ্ধ করে, কারণ নিয়োগকর্তা যদি জীবনবৃত্তান্ত পছন্দ করেন, তবে পরবর্তী ধাপে তারা আপনার কভার লেটারটি পড়বেন। * ব্যাখ্যা করে কীভাবে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো আপনাকে উক্ত পদে একজন উপযুক্ত প্রার্থী করে তোলে। * একটি পদে আপনার আগ্রহ দেখায়। * আপনি কেন ওই পদে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম—তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। ==সতর্কতা== একটি ভালো কভার লেটার আপনার অর্জনগুলো তুলে ধরবে এবং কোম্পানির সঙ্গে আপনার মানানসই হওয়া ব্যাখ্যা করবে, কিন্তু এটি আত্মপ্রচার বা অহংকার করার সুযোগ নয়। অতিরঞ্জন বা মিথ্যা বললে আপনাকে তার দায় নিতে হবে এবং এটি আপনার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কভার লেটারে সৎ ও স্পষ্ট হওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, লক্ষ্য হলো সাক্ষাৎকার পাওয়া—নিজের জীবনকাহিনি বলার নয়। আপনার অভিজ্ঞতার নির্দিষ্ট বিবরণ সাক্ষাৎকারের জন্য রেখে দিন। জীবনবৃত্তান্তের তুলনায়, কভার লেটার অবশ্যই প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা হতে হবে। কোম্পানির মিশন ও লক্ষ্য সম্পর্কে জেনে এবং কিভাবে আপনি তাদের সঙ্গে মানানসই—তা বোঝাতে কভার লেটার তৈরি করতে হবে। গবেষণা করলে আপনি অনেক বেশি যোগ্য বলে মনে হবেন। সুতরাং, একটি সাধারণ চিঠি পাঠানো নির্দিষ্ট কোম্পানির বিবেচনায় নয় বরং সব কোম্পানির জন্য এক এমন ধারণা আপনাকে অনুত্তেজক এবং অস্পষ্ট প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করবে। ===নৈতিকতা=== চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়েই ভালো নৈতিক চর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা শুধু অপেশাদারই নয়, অনেক ক্ষেত্রে বেআইনিও। আপনার বর্তমান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন এবং তা সৎভাবে উপস্থাপন করুন। আপনার ব্যক্তিত্ব ও কাজের নৈতিকতা নিজেই নিয়োগকর্তাদের প্রভাবিত করবে। নিচে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দেখানো হয়েছে, যেখানে প্রার্থীরা প্রায়ই নৈতিক সীমা অতিক্রম করে থাকেন: '''দলগত প্রচেষ্টা''': যদিও একা একটি বড় প্রকল্পের কৃতিত্ব নেওয়া বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, এটি তখনই অনৈতিক যদি প্রকৃতপক্ষে আপনি একটি টিমের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। অনেক কোম্পানি টিমওয়ার্ককে গুরুত্ব দেয়, কারণ এটি দেখায় প্রার্থী দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে এবং প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতেও সক্ষম। অতীতে আপনি টিমে কাজ করে থাকলে, সরাসরি "আমি দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি" না লিখে সেটিকে একটি PAR [P - প্রবলেম (সমস্যা), A - অ্যাকশন (কর্ম), R - রেজাল্ট (ফলাফল)] বিবৃতির মাধ্যমে তুলে ধরুন। যেমন: "আমার টিমের সঙ্গে আমরা বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হলে, অপ্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে কোম্পানির খরচ বাঁচাতে সক্ষম হই।" '''অতিরঞ্জন''': অনেক প্রার্থী মনে করেন যে মিথ্যা বলাটা অনুচিত হলেও, অতিরঞ্জন ঠিক আছে। ''অতিরঞ্জন মানেই মিথ্যা বলা।'' নিয়োগকর্তারা এটিকে একইভাবে দেখে থাকেন। আপনি যদি এমন কিছু উল্লেখ করেন যা আপনি আসলে জানেন না বা পারেন না, চাকরির সময় সেটি প্রকাশ পেলে নিয়োগকর্তা আপনাকে বরখাস্ত এবং এমনকি ক্ষতিপূরণ দাবি করতেও পারেন। '''রেফারেন্স''': কভার লেটারে রেফারেন্স যুক্ত করার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নেওয়া উচিত। যাতে নিয়োগকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা প্রস্তুত থাকে এবং আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করতে পারে। তাদেরকে আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটারের একটি কপি দিন যাতে তারা জানে আপনি কী পদে আবেদন করছেন এবং কী দক্ষতা তুলে ধরছেন। =উদ্দেশ্যসমূহ= আপনার কভার লেটার তৈরি এবং ব্যক্তিকৃত করা একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া। আপনি নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করবেন এমনভাবে যাতে তিনি বুঝতে পারেন আপনি তাদের কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন। নিচের তিনটি প্রশ্ন মনে রেখে কভার লেটার তৈরি করুন: - আপনি কেন আমাদের কোম্পানিকে বেছে নিয়েছেন অন্য কোম্পানির চেয়ে? - আপনি কীভাবে আমাদের সফল হতে সাহায্য করবেন? - আমাদের কর্মচারী ও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আপনি কীভাবে মানানসই হবেন? ==কীভাবে শুরু করবেন== '''প্রত্যেক কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করুন যার জন্য আপনি আবেদন করছেন।''' নিয়োগকর্তারা প্রভাবিত হন যখন প্রার্থী কোম্পানির পটভূমি সম্পর্কে জানে। তবে কভার লেটার তথ্য দিয়ে ভরিয়ে ফেলবেন না। তারা নিজেরাই কোম্পানির তথ্য জানেন। কোম্পানির ওয়েবসাইট একটি ভালো জায়গা শুরু করার জন্য, তবে আপনি তাদের কর্মচারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। নিয়োগকর্তারা জানতে চান আপনি কীভাবে পদটির প্রভাব তাদের মুনাফায় ফেলবে। নিজেকে জানা প্রথম পদক্ষেপ, যাতে আপনি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। ==আপনার কাভার লেটার খসড়া প্রস্তুত করা== অধিকাংশ লেখার মতো, কাভার লেটারেরও তিনটি প্রধান অংশ থাকে: একটি '''ভূমিকা''', একটি '''মূল অংশ''', এবং একটি '''উপসংহার'''। আপনি কীভাবে এই তিনটি অংশ ব্যবহার করবেন তা আপনার সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করে; তবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত: আমি কোন চাকরি চাই? আমি এই কোম্পানি সম্পর্কে কী জানি? আমি কেন এই চাকরির জন্য অন্য কোনো চাকরির বদলে আবেদন করেছি? আমার যোগ্যতাগুলো কী এবং সেগুলো কীভাবে নিয়োগকর্তাকে সহায়তা করবে? আপনার কাভার লেটারের প্রথম খসড়াটি এক বা একাধিক বন্ধু, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, সহপাঠী, শিক্ষক বা যেকোনো ব্যক্তিকে পড়ে দেখতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক। যদিও আপনি ভাবতে পারেন আপনার চিঠি অর্থপূর্ণ এবং নিখুঁত, অন্যদের দৃষ্টিতে তা আলাদা হতে পারে। একটি "তাজা চোখের" জোড়া প্রায়শই গোপন ভুল, অনিচ্ছাকৃত অতিরঞ্জন বা অদ্ভুত বাক্য গঠন খুঁজে পেতে পারে যা লেখকের নজরে পড়ে না। যদি কেউ না থাকে প্রুফরিড করার মতো, নিজেই চিঠিটি জোরে পড়ে দেখুন। চূড়ান্ত কাভার লেটার পাঠানোর আগে '''একাধিক খসড়া তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ'''। সংশোধন প্রায়শই উপেক্ষিত হয়, কিন্তু এটি লেখার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এও বোঝা জরুরি যে একটি কোম্পানির জন্য একটি কাভার লেটার, অন্য আরেকটি কোম্পানির জন্য সম্পূর্ণ আলাদা হবে, যদিও তারা একই পেশার মধ্যে পড়ে। প্রতিটি কাভার লেটার অবশ্যই সেই নির্দিষ্ট পাঠক বা নিয়োগকর্তাকে লক্ষ্য করে লেখা উচিত। এটি প্রতিটি কোম্পানির সাথে পরিবর্তিত হবে, তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি জানাও অত্যন্ত জরুরি। এখানে একটি কাভার লেটারের বিন্যাসের উদাহরণ দেওয়া হলো: {{SAMPLE|sampletext=উদাহরণ খসড়া :. :আপনার পূর্ণ ঠিকানা :শহর, রাজ্য পোস্টাল কোড :. :আজকের তারিখ :. :নিয়োগকর্তার নাম :নিয়োগকর্তার পদবি :প্রতিষ্ঠানের নাম :সম্পূর্ণ ঠিকানা :. :প্রিয় জনাব/জনাবা [নিয়োগকর্তার শেষ নাম], :. :'''ভূমিকা অনুচ্ছেদ:''' :যে চাকরির জন্য আপনি আবেদন করছেন তা উল্লেখ করুন। কীভাবে আপনি এই পদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তা ব্যাখ্যা করুন। কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কী জানেন এবং কেন এই কোম্পানিতে আপনার আগ্রহ তা বলুন। :. :'''দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ:''' :এখানে আপনি আপনার PAR বিবৃতি দিন। PAR বিবৃতির বিস্তারিত পরবর্তী অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তবে সংক্ষেপে, একটি PAR বিবৃতি হলো একটি সমস্যা যা আপনি মোকাবিলা করেছেন, আপনি সেই সমস্যা সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং এর ফলাফল। :. :'''শেষ অনুচ্ছেদ:''' :আপনার কোম্পানিতে আগ্রহের সারসংক্ষেপ দিন এবং কীভাবে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সম্পদ হবেন তা ব্যাখ্যা করুন। তাদের বিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং কীভাবে আপনি ফলো আপ করবেন তা ব্যাখ্যা করুন। :. :বিশ্বস্তভাবে, :. :আপনার স্বাক্ষর :. :আপনার পুরো টাইপ করা নাম :. :সংযুক্তি: জীবনবৃত্তান্ত, রেফারেন্সসমূহ|caption=উদাহরণ খসড়া}} ==P.A.R. বিবৃতি== PAR বিবৃতি কভার লেটারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। '''সমস্যা :''' আগের কর্মস্থলে কোনো সমস্যা তুলে ধরুন। এটি এমন কিছু হওয়া উচিত যা আবেদনকৃত পদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং নিয়োগকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। যেমন: "কোম্পানিতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাগজ অপচয় হতো।" '''কর্ম:''' আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করুন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখানোর একটি সুযোগ যে আপনি কোম্পানিকে উন্নত করতে আগ্রহী এবং সৃজনশীল। যেমন: "আমি অফিসে বিভিন্ন জায়গায় পুনঃব্যবহারযোগ্য ডাস্টবিন বসাই।" '''ফলাফল :''' আপনি কোম্পানিকে কীভাবে উপকৃত করেছেন তা দেখানোর সুযোগ। যেমন: "এই পদক্ষেপের ফলে অপচয় ৮০% কমে যায়।" P.A.R. বিবৃতি ব্যবহার করলে নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় কারণ এতে আপনি কীভাবে বাস্তব সমস্যার সমাধান করেছেন তা স্পষ্ট হয়। ==পুনঃসংস্করণ== প্রথম কভার লেটার লেখা শেষ হলে, বানান ও ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করুন। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিতে পারেন। নতুন চোখ অনেক সময় ভুল ধরতে পারে যেগুলো আপনি মিস করে যেতে পারেন। নির্ভুল কভার লেটার আপনাকে এগিয়ে রাখে। সামান্য একটি ত্রুটিও অনেক নিয়োগকর্তা বাতিল করে দিতে পারে। নিজে পড়া এবং অন্যের সহায়তায় পুনঃসংস্করণ আপনার সাক্ষাৎকারের সম্ভাবনা অনেক বাড়াতে পারে। ==একটি কোম্পানি গবেষণা করা== আপনি যে কোম্পানির জন্য আবেদন করছেন, তাদের লক্ষ্য, মূল্যবোধ ও ইতিহাস সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেকে একজন আদর্শ প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখায় আপনি কোম্পানির সাফল্যের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে, অতিরিক্ত আগ্রহ বা "বিক্রির ভাষা" ব্যবহার করলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ===ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি=== মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[http://busref.lib.umn.edu](http://busref.lib.umn.edu) ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি] শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চমৎকার রিসোর্স। বিভিন্ন ডেটাবেস থেকে কোম্পানি গবেষণার জন্য এটি খুব কার্যকর। ===হুভার্স === হুভার্স ৪৩,০০০ কোম্পানির তথ্য এবং ৬০০টি শিল্পক্ষেত্রে বিশ্লেষণ সরবরাহ করে। এতে কোম্পানির কর্মকর্তা, অবস্থান, আর্থিক তথ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিবরণ থাকে। ===মিলিয়ন ডলার ডেটাবেস=== এই ডেটাবেসটি এমন মার্কিন কোম্পানিগুলোর তথ্য রাখে যাদের বার্ষিক বিক্রি কমপক্ষে $১ মিলিয়ন বা কর্মচারী সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন। এতে ছোট ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির তথ্যও পাওয়া যায়। ===রেফারেন্স ইউএসএ=== রেফারেন্স ইউএসএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১.৪ কোটি এবং কানাডার ১৫ লক্ষ কোম্পানির তথ্য সরবরাহ করে। এটি নিয়মিত আপডেট হয় এবং শিল্প, প্রতিযোগী, বিক্রি ও ব্যয়ের তথ্য প্রদান করে। ==কোন কোম্পানি আমার জন্য উপযুক্ত== প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন নৈতিক মূল্যবোধ ও নীতিগুলি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে নির্দিষ্ট বিষয়গুলিতে আপনার অবস্থান কোথায়, তখন সেই আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোম্পানি খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হবে। একটি ক্ষেত্র যা দেখায় যে কোনো কোম্পানি বড় ইস্যুগুলিতে কী অবস্থান নেয়, তা হলো রাজনৈতিক অনুদান। রাজনৈতিক অনুদান দেখতে সাহায্য করে এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যা কোম্পানির অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়। ===ওপেন সিক্রেটস=== [http://www.opensecrets.org ওপেন সিক্রেটস] একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি কোম্পানি ও বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে কত অনুদান দিয়েছে তা জানতে পারেন। এই সাইটের "প্রভাব এবং তদবির" ট্যাব-এর অধীনে "শিল্প" বিভাগে ক্লিক করলে, আপনি এমন একটি পৃষ্ঠায় পৌঁছাবেন যেখানে আপনি নির্দিষ্ট শিল্প খুঁজে পেতে পারেন যা আপনার আগ্রহের কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত। এখান থেকে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কত টাকা অনুদান দেয় এবং কোন রাজনৈতিক দল সেই অর্থের প্রধান গ্রহীতা। এইভাবে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কোন প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এবং আপনি তাদের আদর্শের সঙ্গে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারবেন। ===ম্যাপলাইট.অর্গ=== [http://www.maplight.org ম্যাপলাইট.অর্গ] একটি ওয়েবসাইট যা ওপেন সিক্রেটস-এর অনুরূপ এবং এখানে আপনি রাজনৈতিক অর্থ ও স্বার্থগোষ্ঠী সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পেতে পারেন। এই সাইটের পূর্ণ নাম হলো: "অর্থ এবং রাজনীতি: সংযোগ আলোকিত করা"। নির্বাচনী বছরগুলিতে, যেমন ২০০৮ সালে, এই ধরনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যেত যে অর্থ কোথা থেকে আসছে এবং রাজনীতিবিদদের তহবিল কীভাবে সংগৃহীত হচ্ছে। এটি এমন একটি কার্যকর হাতিয়ার যা আপনাকে নির্দিষ্ট শিল্প বা কোম্পানির সঙ্গে আপনার মূল্যবোধ মিলিয়ে নিতে সাহায্য করে। ==আমি কীভাবে এই তথ্য পেতে পারি?== একটি কার্যকর গবেষণার কৌশল হলো সেই ব্যক্তি বা কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যারা ইতিমধ্যে সেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং আপনি সফল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সেই শিল্পে প্রবেশের পরামর্শ পেতে পারেন। একটি প্রতিষ্ঠানের কাজের অভ্যন্তরীণ তথ্য আপনার কাভার লেটারকে অন্যান্য আবেদনকারীদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। বর্তমান কর্মীরা যা জানেন তা আপনি জানেন দেখালে প্রমাণ হয় যে আপনি ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর হতে আগ্রহী। কোম্পানিতে সরাসরি ফোন করে তাদের মিশন স্টেটমেন্ট এবং তারা কী বিক্রি করে সে সম্পর্কে জনসাধারণের জন্য যে তথ্য দেওয়া হয় তা জানতে পারেন। সম্ভবত আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যেই সেই নিয়োগকর্তা সম্পর্কে কিছু না কিছু জানেন। এই পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করলে আপনাকে যেন এইমাত্র কোম্পানিটি আবিষ্কার করেছেন এমন মিথ্যা আগ্রহ দেখাতে হবে না। আপনি যদি আপনার নির্বাচিত ক্ষেত্রে বছরের পর বছর অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন, তাহলে নিয়োগকর্তা সহজেই বুঝতে পারবেন কারা সত্যিকার আগ্রহী এবং কারা নয়। গবেষণার জন্য প্রায়শই লাইব্রেরিকে অবহেলা করা হয়, মূলত ইন্টারনেটের উপর নির্ভরতার কারণে। তবে লাইব্রেরিতে সাধারণ ওয়েব অনুসন্ধানে পাওয়া যায় না এমন বহু জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং বই থাকে। কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্দিষ্ট প্রবন্ধ উদ্ধৃত করলে আপনার কাভার লেটার আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়। গবেষণা করা ঠিক ততটাই কঠিন, যতটা আপনি তা করে তোলেন। আপনার আগ্রহ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চমৎকার কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচুর সম্পদ উপলব্ধ আছে। নির্দিষ্ট শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর জন্য ব্যয় করা সময় একটি কার্যকর কাভার লেটার তৈরির জন্য সত্যিই মূল্যবান। প্রতিটি কাভার লেটারে নির্দিষ্ট কোম্পানির মূল্যবোধকে লক্ষ্য করে লিখলে, আপনার কাজ নিজেই কথা বলবে। {{BookCat}} ====কাভার লেটার সংশোধনের জন্য চেকলিস্ট==== নিম্নলিখিত চেকলিস্টটি কাভার লেটারের মৌলিক উপাদানগুলো তুলে ধরে। '''প্রাথমিক গবেষণা''' _____ নিয়োগকর্তা কী চান তা যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি? _____ চাকরি ও নিয়োগকর্তা সম্পর্কে যথেষ্ট জানা হয়েছে কি, যেন লেটারটি তাদের উপযোগী করে লেখা যায়? '''ঠিকানা''' _____ যদি সম্ভব হয়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা হয়েছে কি? '''ভূমিকা''' _____ স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে কি আপনি কী চান? _____ প্রমাণ দেওয়া হয়েছে কি যে আপনি নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নির্দিষ্ট, প্রাসঙ্গিক তথ্য জানেন? _____ বোঝানো হয়েছে কি যে আপনি কোম্পানিটিকে পছন্দ করেন? '''যোগ্যতা''' _____ রিজুমেতে উল্লেখিত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলি নির্দিষ্ট চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে কি? '''সমাপ্তি''' _____ চিঠির শেষ অংশ সদয় কিন্তু একটি পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে কি? '''গদ্যশৈলী''' _____ স্পষ্ট, বিভিন্ন গঠনবিশিষ্ট বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে কি? _____ সহজে অনুসরণযোগ্য সংগঠন ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ আত্মবিশ্বাসী কিন্তু বিনয়ী ভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ ক্রিয়াবাচ্য ব্যবহার করা হয়েছে কি, বিশেষ্যবাচ্য নয়? _____ শক্তিশালী ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ বানান, ব্যাকরণ ও যতিচিহ্ন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি? '''চেহারা''' _____ গোছানো ও আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে কি? _____ ব্যবসায়িক চিঠির সব উপাদান অন্তর্ভুক্ত আছে কি? '''নৈতিকতা''' _____ আপনার যোগ্যতাগুলি সততার সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে কি? _____ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এড়ানো হয়েছে কি? '''সার্বিক''' _____ নিয়োগকর্তার লক্ষ্য ও উদ্বেগ সম্পর্কে আপনি সচেতন, তা বোঝানো হয়েছে কি? _____ প্রমাণ করা হয়েছে কি যে আপনি দক্ষ যোগাযোগকারী? ==কাভার লেটারের করণীয় ও বর্জনীয়== '''যা করবেন:''' প্রথম অনুচ্ছেদে নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করুন এবং কোম্পানির উপর আপনার গবেষণার দিকটি তুলে ধরুন। বিষয়বস্তু সহজ রাখুন – জটিল, দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করলে চিঠিটি ভারী ও কঠিন হয়ে যায়। পরিষ্কার ও বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করুন। চিঠিটি সংক্ষিপ্ত রাখুন। এক পৃষ্ঠার বেশি যেন না হয়। সাধারণত, প্রতিটি অনুচ্ছেদে তিনটির বেশি বাক্য না রাখাই ভালো। কোনো নেতিবাচক কথা লিখবেন না – আগের চাকরি, সুপারভাইজার, বা অন্য কিছু সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ এড়িয়ে চলুন। '''যা করবেন না:''' একই চিঠি ও রিজুমে অনেক কোম্পানিকে পাঠাবেন না। বর্তমান চাকরির বাজারে এই কৌশলের সফলতার সম্ভাবনা খুব কম। প্রতিটি চিঠি ব্যক্তিগত ও স্বতন্ত্র করুন। শুধুমাত্র কোম্পানির আপনার জন্য কী করতে পারে তা লিখবেন না। বরং আপনি কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন, সেটি তুলে ধরুন। কোম্পানির সফলতায় আপনার ভূমিকা কী হতে পারে, তা বলুন। আপনার রিজুমে কী আছে তা ধাপে ধাপে লিখে যাবেন না। নিয়োগকর্তা রিজুমে পড়তে পারেন। কাভার লেটার ব্যবহার করুন এমন বিষয়গুলো আলাদা করে তুলে ধরতে যেগুলো আপনি গুরুত্ব দিতে চান। চিঠিটি স্বাক্ষর করতে ভুলবেন না। আবার শুরু হয়, (২০০৪)। স্নাতক চাকরি অনুসন্ধান হ্যান্ডবুক। মিনিয়াপোলিস: কার্লসন স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট। ph8bbnx5kk52bg930o64tldr6b24lgc 85157 85156 2025-06-22T05:00:59Z Mehedi Abedin 7113 85157 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} =কভার লেটারসমূহ= কভার লেটার সংহত ও সুপরিকল্পিত হওয়া উচিত। একটি জীবনবৃত্তান্ত প্রাথমিক ধারণা দেয়, আর একটি কভার লেটার দেখায় কীভাবে আপনার দক্ষতা ও সামর্থ্য কোম্পানির লক্ষ্য ও বিশ্বাসকে আরও জোরালো করবে। কভার লেটারটি নিয়োগকর্তার কাছে আরও ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। যদিও নিয়োগকর্তারা সাধারণত সবচেয়ে বেশি সময় জীবনবৃত্তান্তে ব্যয় করেন, যদি আপনার কভার লেটারটি বিশৃঙ্খল ও অপেশাদার দেখায়, তাহলে তারা আর আগ্রহ দেখাবেন না। মূল বিষয় হলো, পেশাদার এবং ব্যক্তিগত হওয়া, এবং কভার লেটারটি পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা। ==কেন কভার লেটার ব্যবহার করবেন== * এটি একটি তথ্যবহুল চিঠি, যা নিয়োগকর্তার জন্য আপনার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক দক্ষতাগুলো তুলে ধরে। * এটি একটি পরিচয়পত্র, যা আপনাকে এবং আপনার পটভূমিকে নিয়োগকর্তার কাছে উপস্থাপন করে। * এটি একটি বিক্রয় চিঠি, যা নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে চায় যে আপনার এমন কিছু দেওয়ার আছে যা আপনাকে সাক্ষাৎকারে ডাকার যোগ্য করে তোলে। ==কার্যাবলি== * সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে এবং ব্যাখ্যা করে আপনি কে এবং কী দিতে পারেন। * আপনার জীবনবৃত্তান্তকে সমৃদ্ধ করে, কারণ নিয়োগকর্তা যদি জীবনবৃত্তান্ত পছন্দ করেন, তবে পরবর্তী ধাপে তারা আপনার কভার লেটারটি পড়বেন। * ব্যাখ্যা করে কীভাবে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো আপনাকে উক্ত পদে একজন উপযুক্ত প্রার্থী করে তোলে। * একটি পদে আপনার আগ্রহ দেখায়। * আপনি কেন ওই পদে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম—তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। ==সতর্কতা== একটি ভালো কভার লেটার আপনার অর্জনগুলো তুলে ধরবে এবং কোম্পানির সঙ্গে আপনার মানানসই হওয়া ব্যাখ্যা করবে, কিন্তু এটি আত্মপ্রচার বা অহংকার করার সুযোগ নয়। অতিরঞ্জন বা মিথ্যা বললে আপনাকে তার দায় নিতে হবে এবং এটি আপনার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কভার লেটারে সৎ ও স্পষ্ট হওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, লক্ষ্য হলো সাক্ষাৎকার পাওয়া—নিজের জীবনকাহিনি বলার নয়। আপনার অভিজ্ঞতার নির্দিষ্ট বিবরণ সাক্ষাৎকারের জন্য রেখে দিন। জীবনবৃত্তান্তের তুলনায়, কভার লেটার অবশ্যই প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা হতে হবে। কোম্পানির মিশন ও লক্ষ্য সম্পর্কে জেনে এবং কিভাবে আপনি তাদের সঙ্গে মানানসই—তা বোঝাতে কভার লেটার তৈরি করতে হবে। গবেষণা করলে আপনি অনেক বেশি যোগ্য বলে মনে হবেন। সুতরাং, একটি সাধারণ চিঠি পাঠানো নির্দিষ্ট কোম্পানির বিবেচনায় নয় বরং সব কোম্পানির জন্য এক এমন ধারণা আপনাকে অনুত্তেজক এবং অস্পষ্ট প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করবে। ===নৈতিকতা=== চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়েই ভালো নৈতিক চর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা শুধু অপেশাদারই নয়, অনেক ক্ষেত্রে বেআইনিও। আপনার বর্তমান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন এবং তা সৎভাবে উপস্থাপন করুন। আপনার ব্যক্তিত্ব ও কাজের নৈতিকতা নিজেই নিয়োগকর্তাদের প্রভাবিত করবে। নিচে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দেখানো হয়েছে, যেখানে প্রার্থীরা প্রায়ই নৈতিক সীমা অতিক্রম করে থাকেন: '''দলগত প্রচেষ্টা''': যদিও একা একটি বড় প্রকল্পের কৃতিত্ব নেওয়া বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, এটি তখনই অনৈতিক যদি প্রকৃতপক্ষে আপনি একটি টিমের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। অনেক কোম্পানি টিমওয়ার্ককে গুরুত্ব দেয়, কারণ এটি দেখায় প্রার্থী দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে এবং প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতেও সক্ষম। অতীতে আপনি টিমে কাজ করে থাকলে, সরাসরি "আমি দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি" না লিখে সেটিকে একটি PAR [P - প্রবলেম (সমস্যা), A - অ্যাকশন (কর্ম), R - রেজাল্ট (ফলাফল)] বিবৃতির মাধ্যমে তুলে ধরুন। যেমন: "আমার টিমের সঙ্গে আমরা বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হলে, অপ্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে কোম্পানির খরচ বাঁচাতে সক্ষম হই।" '''অতিরঞ্জন''': অনেক প্রার্থী মনে করেন যে মিথ্যা বলাটা অনুচিত হলেও, অতিরঞ্জন ঠিক আছে। ''অতিরঞ্জন মানেই মিথ্যা বলা।'' নিয়োগকর্তারা এটিকে একইভাবে দেখে থাকেন। আপনি যদি এমন কিছু উল্লেখ করেন যা আপনি আসলে জানেন না বা পারেন না, চাকরির সময় সেটি প্রকাশ পেলে নিয়োগকর্তা আপনাকে বরখাস্ত এবং এমনকি ক্ষতিপূরণ দাবি করতেও পারেন। '''রেফারেন্স''': কভার লেটারে রেফারেন্স যুক্ত করার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নেওয়া উচিত। যাতে নিয়োগকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা প্রস্তুত থাকে এবং আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করতে পারে। তাদেরকে আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটারের একটি কপি দিন যাতে তারা জানে আপনি কী পদে আবেদন করছেন এবং কী দক্ষতা তুলে ধরছেন। =উদ্দেশ্যসমূহ= আপনার কভার লেটার তৈরি এবং পারসোনালাইজেশন একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া। আপনি নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করবেন এমনভাবে যাতে তিনি বুঝতে পারেন আপনি তাদের কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন। নিচের তিনটি প্রশ্ন মনে রেখে কভার লেটার তৈরি করুন: - আপনি কেন অন্য কোম্পানির বদলে আমাদের কোম্পানিকে বেছে নিয়েছেন? - আপনি কীভাবে আমাদের সফল হতে সাহায্য করবেন? - আমাদের কর্মচারী ও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আপনি কীভাবে মানানসই হবেন? ==কীভাবে শুরু করবেন== '''প্রত্যেক কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করুন যেগুলোর জন্য আপনি আবেদন করছেন।''' নিয়োগকর্তারা প্রভাবিত হন যখন প্রার্থী কোম্পানির পটভূমি সম্পর্কে জানে। তবে কভার লেটার তথ্য দিয়ে ভরিয়ে ফেলবেন না। তারা নিজেরাই কোম্পানির তথ্য জানেন। কোম্পানির ওয়েবসাইট একটি ভালো জায়গা শুরু করার জন্য, তবে আপনি তাদের কর্মচারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। নিয়োগকর্তারা জানতে চান আপনি কীভাবে পদটির প্রভাব তাদের মুনাফা দিবে। নিজেকে জানা প্রথম পদক্ষেপ, যাতে আপনি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। ==আপনার কাভার লেটার খসড়া প্রস্তুত করা== অধিকাংশ লেখার মতো, কাভার লেটারেরও তিনটি প্রধান অংশ থাকে: একটি '''ভূমিকা''', একটি '''মূল অংশ''', এবং একটি '''উপসংহার'''। আপনি কীভাবে এই তিনটি অংশ ব্যবহার করবেন তা আপনার সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করে; তবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত: আমি কোন চাকরি চাই? আমি এই কোম্পানি সম্পর্কে কী জানি? আমি কেন এই চাকরির জন্য অন্য কোনো চাকরির বদলে আবেদন করেছি? আমার যোগ্যতাগুলো কী এবং সেগুলো কীভাবে নিয়োগকর্তাকে সহায়তা করবে? আপনার কাভার লেটারের প্রথম খসড়াটি এক বা একাধিক বন্ধু, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, সহপাঠী, শিক্ষক বা যেকোনো ব্যক্তিকে পড়ে দেখতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক। যদিও আপনি ভাবতে পারেন আপনার চিঠি অর্থপূর্ণ এবং নিখুঁত, অন্যদের দৃষ্টিতে তা আলাদা হতে পারে। একটি "তাজা চোখের" জোড়া প্রায়শই গোপন ভুল, অনিচ্ছাকৃত অতিরঞ্জন বা অদ্ভুত বাক্য গঠন খুঁজে পেতে পারে যা লেখকের নজরে পড়ে না। যদি কেউ না থাকে প্রুফরিড করার মতো, নিজেই চিঠিটি জোরে পড়ে দেখুন। চূড়ান্ত কাভার লেটার পাঠানোর আগে '''একাধিক খসড়া তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ'''। সংশোধন প্রায়শই উপেক্ষিত হয়, কিন্তু এটি লেখার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এও বোঝা জরুরি যে একটি কোম্পানির জন্য একটি কাভার লেটার, অন্য আরেকটি কোম্পানির জন্য সম্পূর্ণ আলাদা হবে, যদিও তারা একই পেশার মধ্যে পড়ে। প্রতিটি কাভার লেটার অবশ্যই সেই নির্দিষ্ট পাঠক বা নিয়োগকর্তাকে লক্ষ্য করে লেখা উচিত। এটি প্রতিটি কোম্পানির সাথে পরিবর্তিত হবে, তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি জানাও অত্যন্ত জরুরি। এখানে একটি কাভার লেটারের বিন্যাসের উদাহরণ দেওয়া হলো: {{SAMPLE|sampletext=উদাহরণ খসড়া :. :আপনার পূর্ণ ঠিকানা :শহর, রাজ্য, ডাক কোড :. :আজকের তারিখ :. :নিয়োগকর্তার নাম :নিয়োগকর্তার পদবি :প্রতিষ্ঠানের নাম :সম্পূর্ণ ঠিকানা :. :প্রিয় জনাব/জনাবা [নিয়োগকর্তার শেষ নাম], :. :'''ভূমিকা অনুচ্ছেদ:''' :যে চাকরির জন্য আপনি আবেদন করছেন তা উল্লেখ করুন। কীভাবে আপনি এই পদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তা ব্যাখ্যা করুন। কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কী জানেন এবং কেন এই কোম্পানিতে আপনার আগ্রহ তা বলুন। :. :'''দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ:''' :এখানে আপনি আপনার PAR বিবৃতি দিন। PAR বিবৃতির বিস্তারিত পরবর্তী অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তবে সংক্ষেপে, একটি PAR বিবৃতি হলো একটি সমস্যা যা আপনি মোকাবিলা করেছেন, আপনি সেই সমস্যা সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং এর ফলাফল। :. :'''শেষ অনুচ্ছেদ:''' :আপনার কোম্পানিতে আগ্রহের সারসংক্ষেপ দিন এবং কীভাবে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সম্পদ হবেন তা ব্যাখ্যা করুন। তাদের বিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং কীভাবে আপনি ফলো আপ করবেন তা ব্যাখ্যা করুন। :. :বিশ্বস্তভাবে, :. :আপনার স্বাক্ষর :. :আপনার পুরো টাইপ করা নাম :. :সংযুক্তি: জীবনবৃত্তান্ত, রেফারেন্সসমূহ|caption=উদাহরণ খসড়া}} ==P.A.R. বিবৃতি== PAR বিবৃতি কভার লেটারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। '''সমস্যা :''' আগের কর্মস্থলে কোনো সমস্যা তুলে ধরুন। এটি এমন কিছু হওয়া উচিত যা আবেদনকৃত পদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং নিয়োগকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। যেমন: "কোম্পানিতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাগজ অপচয় হতো।" '''কর্ম:''' আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করুন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখানোর একটি সুযোগ যে আপনি কোম্পানিকে উন্নত করতে আগ্রহী এবং সৃজনশীল। যেমন: "আমি অফিসে বিভিন্ন জায়গায় পুনঃব্যবহারযোগ্য ডাস্টবিন বসাই।" '''ফলাফল :''' আপনি কোম্পানিকে কীভাবে উপকৃত করেছেন তা দেখানোর সুযোগ। যেমন: "এই পদক্ষেপের ফলে অপচয় ৮০% কমে যায়।" P.A.R. বিবৃতি ব্যবহার করলে নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় কারণ এতে আপনি কীভাবে বাস্তব সমস্যার সমাধান করেছেন তা স্পষ্ট হয়। ==পুনঃসংস্করণ== প্রথম কভার লেটার লেখা শেষ হলে, বানান ও ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করুন। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিতে পারেন। নতুন চোখ অনেক সময় ভুল ধরতে পারে যেগুলো আপনি মিস করে যেতে পারেন। নির্ভুল কভার লেটার আপনাকে এগিয়ে রাখবে। সামান্য একটি ত্রুটির ফলেও অনেক নিয়োগকর্তা আপনাকে বাতিল করে দিতে পারে। নিজে পড়া এবং অন্যের সহায়তায় পুনঃসংস্করণ আপনার সাক্ষাৎকারের সম্ভাবনা অনেক বাড়াতে পারে। ==একটি কোম্পানির ব্যাপারে গবেষণা করা== আপনি যে কোম্পানির জন্য আবেদন করছেন, তাদের লক্ষ্য, মূল্যবোধ ও ইতিহাস সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেকে একজন আদর্শ প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখায় আপনি কোম্পানির সাফল্যের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে, অতিরিক্ত আগ্রহ বা "বিক্রির ভাষা" ব্যবহার করলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ===ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি=== মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[http://busref.lib.umn.edu](http://busref.lib.umn.edu) ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি] শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চমৎকার রিসোর্স। বিভিন্ন ডেটাবেস থেকে কোম্পানি গবেষণার জন্য এটি খুব কার্যকর। ===হুভার্স === হুভার্স ৪৩,০০০ কোম্পানির তথ্য এবং ৬০০টি শিল্পক্ষেত্রে বিশ্লেষণ সরবরাহ করে। এতে কোম্পানির কর্মকর্তা, অবস্থান, আর্থিক তথ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিবরণ থাকে। ===মিলিয়ন ডলার ডেটাবেস=== এই ডেটাবেসটি এমন মার্কিন কোম্পানিগুলোর তথ্য রাখে যাদের বার্ষিক বিক্রি কমপক্ষে $১ মিলিয়ন বা কর্মচারী সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন। এতে ছোট ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির তথ্যও পাওয়া যায়। ===রেফারেন্স ইউএসএ=== রেফারেন্স ইউএসএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১.৪ কোটি এবং কানাডার ১৫ লক্ষ কোম্পানির তথ্য সরবরাহ করে। এটি নিয়মিত আপডেট হয় এবং শিল্প, প্রতিযোগী, বিক্রি ও ব্যয়ের তথ্য প্রদান করে। ==কোন কোম্পানি আমার জন্য উপযুক্ত== প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন নৈতিক মূল্যবোধ ও নীতিগুলি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে নির্দিষ্ট বিষয়গুলিতে আপনার অবস্থান কোথায়, তখন সেই আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোম্পানি খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হবে। একটি ক্ষেত্র যা দেখায় যে কোনো কোম্পানি বড় ইস্যুগুলিতে কী অবস্থান নেয়, তা হলো রাজনৈতিক অনুদান। রাজনৈতিক অনুদান দেখতে সাহায্য করে এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যা কোম্পানির অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়। ===ওপেন সিক্রেটস=== [http://www.opensecrets.org ওপেন সিক্রেটস] একটি ওয়েবসাইট যেখানে কোম্পানি ও বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে কত অনুদান দিয়েছে তা আপনি জানতে পারেন। এই সাইটের "ইনফ্লুয়েন্স অ্যান্ড লবিয়িং" ট্যাবের অধীনে "ইন্ডাস্ট্রি" বিভাগে ক্লিক করলে, আপনি এমন একটি পৃষ্ঠায় পৌঁছাবেন যেখানে আপনি নির্দিষ্ট শিল্প খুঁজে পেতে পারেন যা আপনার আগ্রহের কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত। এখান থেকে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কত টাকা অনুদান দেয় এবং কোন রাজনৈতিক দল সেই অর্থের প্রধান গ্রহীতা। এইভাবে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কোন প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এবং আপনি তাদের আদর্শের সঙ্গে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারবেন। ===ম্যাপলাইট.অর্গ=== [http://www.maplight.org ম্যাপলাইট.অর্গ] একটি ওয়েবসাইট যা ওপেন সিক্রেটস-এর অনুরূপ এবং এখানে আপনি রাজনৈতিক অর্থ ও স্বার্থগোষ্ঠী সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পেতে পারেন। এই সাইটের পূর্ণ নামের অর্থ হলো: "অর্থ এবং রাজনীতি: সংযোগ আলোকিত করা"। নির্বাচনী বছরগুলিতে, যেমন ২০০৮ সালে, এই ধরনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যেত যে অর্থ কোথা থেকে আসছে এবং রাজনীতিবিদদের তহবিল কীভাবে সংগৃহীত হচ্ছে। এটি এমন একটি কার্যকর হাতিয়ার যা আপনাকে নির্দিষ্ট শিল্প বা কোম্পানির সঙ্গে আপনার মূল্যবোধ মিলিয়ে নিতে সাহায্য করে। ==আমি কীভাবে এই তথ্য পেতে পারি?== একটি কার্যকর গবেষণার কৌশল হলো সেই ব্যক্তি বা কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যারা ইতিমধ্যে সেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং আপনি সফল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সেই শিল্পে প্রবেশের পরামর্শ পেতে পারেন। একটি প্রতিষ্ঠানের কাজের অভ্যন্তরীণ তথ্য আপনার কাভার লেটারকে অন্যান্য আবেদনকারীদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। বর্তমান কর্মীরা যা জানেন তা আপনি জানেন দেখালে প্রমাণ হয় যে আপনি ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর হতে আগ্রহী। কোম্পানিতে সরাসরি ফোন করে তাদের মিশন স্টেটমেন্ট এবং তারা কী বিক্রি করে সে সম্পর্কে জনসাধারণের জন্য যে তথ্য দেওয়া হয় তা জানতে পারেন। সম্ভবত আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যেই সেই নিয়োগকর্তা সম্পর্কে কিছু না কিছু জানেন। এই পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করলে আপনাকে যেন এইমাত্র কোম্পানিটি আবিষ্কার করেছেন এমন মিথ্যা আগ্রহ দেখাতে হবে না। আপনি যদি আপনার নির্বাচিত ক্ষেত্রে বছরের পর বছর অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন, তাহলে নিয়োগকর্তা সহজেই বুঝতে পারবেন কারা সত্যিকার আগ্রহী এবং কারা নয়। মূলত ইন্টারনেটের উপর নির্ভরতার কারণে গবেষণার জন্য প্রায়শই লাইব্রেরিকে অবহেলা করা হয়। তবে লাইব্রেরিতে সাধারণ ওয়েব অনুসন্ধানে পাওয়া যায় না এমন বহু জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং বই থাকে। কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্দিষ্ট প্রবন্ধ উদ্ধৃত করলে আপনার কাভার লেটার আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়। গবেষণা করা ঠিক ততটাই কঠিন, যতটা আপনি তা করে তোলেন। আপনার আগ্রহ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চমৎকার কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচুর সম্পদ উপলব্ধ আছে। নির্দিষ্ট শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর জন্য ব্যয় করা সময় একটি কার্যকর কাভার লেটার তৈরির জন্য সত্যিই মূল্যবান। প্রতিটি কাভার লেটারে নির্দিষ্ট কোম্পানির মূল্যবোধকে লক্ষ্য করে লিখলে, আপনার কাজ নিজেই কথা বলবে। {{BookCat}} ====কাভার লেটার সংশোধনের জন্য চেকলিস্ট==== নিম্নলিখিত চেকলিস্টটি কাভার লেটারের মৌলিক উপাদানগুলো তুলে ধরে। '''প্রাথমিক গবেষণা''' _____ নিয়োগকর্তা কী চান তা যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি? _____ চাকরি ও নিয়োগকর্তা সম্পর্কে যথেষ্ট জানা হয়েছে কি, যেন লেটারটি তাদের উপযোগী করে লেখা যায়? '''ঠিকানা''' _____ যদি সম্ভব হয়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা হয়েছে কি? '''ভূমিকা''' _____ স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে কি আপনি কী চান? _____ প্রমাণ দেওয়া হয়েছে কি যে আপনি নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নির্দিষ্ট, প্রাসঙ্গিক তথ্য জানেন? _____ বোঝানো হয়েছে কি যে আপনি কোম্পানিটিকে পছন্দ করেন? '''যোগ্যতা''' _____ রিজুমেতে উল্লেখিত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলি নির্দিষ্ট চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে কি? '''সমাপ্তি''' _____ চিঠির শেষ অংশ সদয় কিন্তু একটি পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে কি? '''গদ্যশৈলী''' _____ স্পষ্ট, বিভিন্ন গঠনবিশিষ্ট বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে কি? _____ সহজে অনুসরণযোগ্য সংগঠন ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ আত্মবিশ্বাসী কিন্তু বিনয়ী ভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ ক্রিয়াবাচ্য ব্যবহার করা হয়েছে কি, বিশেষ্যবাচ্য নয়? _____ শক্তিশালী ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ বানান, ব্যাকরণ ও যতিচিহ্ন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি? '''চেহারা''' _____ গোছানো ও আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে কি? _____ ব্যবসায়িক চিঠির সব উপাদান অন্তর্ভুক্ত আছে কি? '''নৈতিকতা''' _____ আপনার যোগ্যতাগুলি সততার সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে কি? _____ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এড়ানো হয়েছে কি? '''সার্বিক''' _____ নিয়োগকর্তার লক্ষ্য ও উদ্বেগ সম্পর্কে আপনি সচেতন, তা বোঝানো হয়েছে কি? _____ প্রমাণ করা হয়েছে কি যে আপনি দক্ষ যোগাযোগকারী? ==কাভার লেটারের করণীয় ও বর্জনীয়== '''যা করবেন:''' প্রথম অনুচ্ছেদে নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করুন এবং কোম্পানির উপর আপনার গবেষণার দিকটি তুলে ধরুন। বিষয়বস্তু সহজ রাখুন – জটিল, দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করলে চিঠিটি ভারী ও কঠিন হয়ে যায়। পরিষ্কার ও বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করুন। চিঠিটি সংক্ষিপ্ত রাখুন। এক পৃষ্ঠার বেশি যেন না হয়। সাধারণত, প্রতিটি অনুচ্ছেদে তিনটির বেশি বাক্য না রাখাই ভালো। কোনো নেতিবাচক কথা লিখবেন না – আগের চাকরি, সুপারভাইজার, বা অন্য কিছু সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ এড়িয়ে চলুন। '''যা করবেন না:''' একই চিঠি ও রিজুমে অনেক কোম্পানিকে পাঠাবেন না। বর্তমান চাকরির বাজারে এই কৌশলের সফলতার সম্ভাবনা খুব কম। প্রতিটি চিঠি ব্যক্তিগত ও স্বতন্ত্র করুন। শুধুমাত্র কোম্পানির আপনার জন্য কী করতে পারে তা লিখবেন না। বরং আপনি কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন, সেটি তুলে ধরুন। কোম্পানির সফলতায় আপনার ভূমিকা কী হতে পারে, তা বলুন। আপনার রিজুমে কী আছে তা ধাপে ধাপে লিখে যাবেন না। নিয়োগকর্তা রিজুমে পড়তে পারেন। কাভার লেটার ব্যবহার করুন এমন বিষয়গুলো আলাদা করে তুলে ধরতে যেগুলো আপনি গুরুত্ব দিতে চান। চিঠিটি স্বাক্ষর করতে ভুলবেন না। আবার পড়ুন, (২০০৪)। স্নাতক চাকরি অনুসন্ধান হ্যান্ডবুক। মিনিয়াপোলিস: কার্লসন স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট। n9xsco5m75v8djokz5ky179ivegz2xz 85158 85157 2025-06-22T05:01:15Z Mehedi Abedin 7113 85158 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} =কভার লেটারসমূহ= কভার লেটার সংহত ও সুপরিকল্পিত হওয়া উচিত। একটি জীবনবৃত্তান্ত প্রাথমিক ধারণা দেয়, আর একটি কভার লেটার দেখায় কীভাবে আপনার দক্ষতা ও সামর্থ্য কোম্পানির লক্ষ্য ও বিশ্বাসকে আরও জোরালো করবে। কভার লেটারটি নিয়োগকর্তার কাছে আরও ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। যদিও নিয়োগকর্তারা সাধারণত সবচেয়ে বেশি সময় জীবনবৃত্তান্তে ব্যয় করেন, যদি আপনার কভার লেটারটি বিশৃঙ্খল ও অপেশাদার দেখায়, তাহলে তারা আর আগ্রহ দেখাবেন না। মূল বিষয় হলো, পেশাদার এবং ব্যক্তিগত হওয়া, এবং কভার লেটারটি পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা। ==কেন কভার লেটার ব্যবহার করবেন== * এটি একটি তথ্যবহুল চিঠি, যা নিয়োগকর্তার জন্য আপনার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক দক্ষতাগুলো তুলে ধরে। * এটি একটি পরিচয়পত্র, যা আপনাকে এবং আপনার পটভূমিকে নিয়োগকর্তার কাছে উপস্থাপন করে। * এটি একটি বিক্রয় চিঠি, যা নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে চায় যে আপনার এমন কিছু দেওয়ার আছে যা আপনাকে সাক্ষাৎকারে ডাকার যোগ্য করে তোলে। ==কার্যাবলি== * সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে এবং ব্যাখ্যা করে আপনি কে এবং কী দিতে পারেন। * আপনার জীবনবৃত্তান্তকে সমৃদ্ধ করে, কারণ নিয়োগকর্তা যদি জীবনবৃত্তান্ত পছন্দ করেন, তবে পরবর্তী ধাপে তারা আপনার কভার লেটারটি পড়বেন। * ব্যাখ্যা করে কীভাবে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো আপনাকে উক্ত পদে একজন উপযুক্ত প্রার্থী করে তোলে। * একটি পদে আপনার আগ্রহ দেখায়। * আপনি কেন ওই পদে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম—তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। ==সতর্কতা== একটি ভালো কভার লেটার আপনার অর্জনগুলো তুলে ধরবে এবং কোম্পানির সঙ্গে আপনার মানানসই হওয়া ব্যাখ্যা করবে, কিন্তু এটি আত্মপ্রচার বা অহংকার করার সুযোগ নয়। অতিরঞ্জন বা মিথ্যা বললে আপনাকে তার দায় নিতে হবে এবং এটি আপনার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কভার লেটারে সৎ ও স্পষ্ট হওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, লক্ষ্য হলো সাক্ষাৎকার পাওয়া—নিজের জীবনকাহিনি বলার নয়। আপনার অভিজ্ঞতার নির্দিষ্ট বিবরণ সাক্ষাৎকারের জন্য রেখে দিন। জীবনবৃত্তান্তের তুলনায়, কভার লেটার অবশ্যই প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা হতে হবে। কোম্পানির মিশন ও লক্ষ্য সম্পর্কে জেনে এবং কিভাবে আপনি তাদের সঙ্গে মানানসই—তা বোঝাতে কভার লেটার তৈরি করতে হবে। গবেষণা করলে আপনি অনেক বেশি যোগ্য বলে মনে হবেন। সুতরাং, একটি সাধারণ চিঠি পাঠানো নির্দিষ্ট কোম্পানির বিবেচনায় নয় বরং সব কোম্পানির জন্য এক এমন ধারণা আপনাকে অনুত্তেজক এবং অস্পষ্ট প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করবে। ===নৈতিকতা=== চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়েই ভালো নৈতিক চর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা শুধু অপেশাদারই নয়, অনেক ক্ষেত্রে বেআইনিও। আপনার বর্তমান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন এবং তা সৎভাবে উপস্থাপন করুন। আপনার ব্যক্তিত্ব ও কাজের নৈতিকতা নিজেই নিয়োগকর্তাদের প্রভাবিত করবে। নিচে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দেখানো হয়েছে, যেখানে প্রার্থীরা প্রায়ই নৈতিক সীমা অতিক্রম করে থাকেন: '''দলগত প্রচেষ্টা''': যদিও একা একটি বড় প্রকল্পের কৃতিত্ব নেওয়া বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, এটি তখনই অনৈতিক যদি প্রকৃতপক্ষে আপনি একটি টিমের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। অনেক কোম্পানি টিমওয়ার্ককে গুরুত্ব দেয়, কারণ এটি দেখায় প্রার্থী দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে এবং প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতেও সক্ষম। অতীতে আপনি টিমে কাজ করে থাকলে, সরাসরি "আমি দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি" না লিখে সেটিকে একটি PAR [P - প্রবলেম (সমস্যা), A - অ্যাকশন (কর্ম), R - রেজাল্ট (ফলাফল)] বিবৃতির মাধ্যমে তুলে ধরুন। যেমন: "আমার টিমের সঙ্গে আমরা বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হলে, অপ্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে কোম্পানির খরচ বাঁচাতে সক্ষম হই।" '''অতিরঞ্জন''': অনেক প্রার্থী মনে করেন যে মিথ্যা বলাটা অনুচিত হলেও, অতিরঞ্জন ঠিক আছে। ''অতিরঞ্জন মানেই মিথ্যা বলা।'' নিয়োগকর্তারা এটিকে একইভাবে দেখে থাকেন। আপনি যদি এমন কিছু উল্লেখ করেন যা আপনি আসলে জানেন না বা পারেন না, চাকরির সময় সেটি প্রকাশ পেলে নিয়োগকর্তা আপনাকে বরখাস্ত এবং এমনকি ক্ষতিপূরণ দাবি করতেও পারেন। '''রেফারেন্স''': কভার লেটারে রেফারেন্স যুক্ত করার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নেওয়া উচিত। যাতে নিয়োগকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা প্রস্তুত থাকে এবং আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করতে পারে। তাদেরকে আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটারের একটি কপি দিন যাতে তারা জানে আপনি কী পদে আবেদন করছেন এবং কী দক্ষতা তুলে ধরছেন। =উদ্দেশ্যসমূহ= আপনার কভার লেটার তৈরি এবং পারসোনালাইজেশন একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া। আপনি নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করবেন এমনভাবে যাতে তিনি বুঝতে পারেন আপনি তাদের কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন। নিচের তিনটি প্রশ্ন মনে রেখে কভার লেটার তৈরি করুন: - আপনি কেন অন্য কোম্পানির বদলে আমাদের কোম্পানিকে বেছে নিয়েছেন? - আপনি কীভাবে আমাদের সফল হতে সাহায্য করবেন? - আমাদের কর্মচারী ও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আপনি কীভাবে মানানসই হবেন? ==কীভাবে শুরু করবেন== '''প্রত্যেক কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করুন যেগুলোর জন্য আপনি আবেদন করছেন।''' নিয়োগকর্তারা প্রভাবিত হন যখন প্রার্থী কোম্পানির পটভূমি সম্পর্কে জানে। তবে কভার লেটার তথ্য দিয়ে ভরিয়ে ফেলবেন না। তারা নিজেরাই কোম্পানির তথ্য জানেন। কোম্পানির ওয়েবসাইট একটি ভালো জায়গা শুরু করার জন্য, তবে আপনি তাদের কর্মচারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। নিয়োগকর্তারা জানতে চান আপনি কীভাবে পদটির প্রভাব তাদের মুনাফা দিবে। নিজেকে জানা প্রথম পদক্ষেপ, যাতে আপনি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। ==আপনার কাভার লেটার খসড়া প্রস্তুত করা== অধিকাংশ লেখার মতো, কাভার লেটারেরও তিনটি প্রধান অংশ থাকে: একটি '''ভূমিকা''', একটি '''মূল অংশ''', এবং একটি '''উপসংহার'''। আপনি কীভাবে এই তিনটি অংশ ব্যবহার করবেন তা আপনার সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করে; তবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত: আমি কোন চাকরি চাই? আমি এই কোম্পানি সম্পর্কে কী জানি? আমি কেন এই চাকরির জন্য অন্য কোনো চাকরির বদলে আবেদন করেছি? আমার যোগ্যতাগুলো কী এবং সেগুলো কীভাবে নিয়োগকর্তাকে সহায়তা করবে? আপনার কাভার লেটারের প্রথম খসড়াটি এক বা একাধিক বন্ধু, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, সহপাঠী, শিক্ষক বা যেকোনো ব্যক্তিকে পড়ে দেখতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক। যদিও আপনি ভাবতে পারেন আপনার চিঠি অর্থপূর্ণ এবং নিখুঁত, অন্যদের দৃষ্টিতে তা আলাদা হতে পারে। একটি "তাজা চোখের" জোড়া প্রায়শই গোপন ভুল, অনিচ্ছাকৃত অতিরঞ্জন বা অদ্ভুত বাক্য গঠন খুঁজে পেতে পারে যা লেখকের নজরে পড়ে না। যদি কেউ না থাকে প্রুফরিড করার মতো, নিজেই চিঠিটি জোরে পড়ে দেখুন। চূড়ান্ত কাভার লেটার পাঠানোর আগে '''একাধিক খসড়া তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ'''। সংশোধন প্রায়শই উপেক্ষিত হয়, কিন্তু এটি লেখার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এও বোঝা জরুরি যে একটি কোম্পানির জন্য একটি কাভার লেটার, অন্য আরেকটি কোম্পানির জন্য সম্পূর্ণ আলাদা হবে, যদিও তারা একই পেশার মধ্যে পড়ে। প্রতিটি কাভার লেটার অবশ্যই সেই নির্দিষ্ট পাঠক বা নিয়োগকর্তাকে লক্ষ্য করে লেখা উচিত। এটি প্রতিটি কোম্পানির সাথে পরিবর্তিত হবে, তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি জানাও অত্যন্ত জরুরি। এখানে একটি কাভার লেটারের বিন্যাসের উদাহরণ দেওয়া হলো: {{SAMPLE|sampletext=উদাহরণ খসড়া :. :আপনার পূর্ণ ঠিকানা :শহর, রাজ্য, ডাক কোড :. :আজকের তারিখ :. :নিয়োগকর্তার নাম :নিয়োগকর্তার পদবি :প্রতিষ্ঠানের নাম :সম্পূর্ণ ঠিকানা :. :প্রিয় জনাব/জনাবা [নিয়োগকর্তার শেষ নাম], :. :'''ভূমিকা অনুচ্ছেদ:''' :যে চাকরির জন্য আপনি আবেদন করছেন তা উল্লেখ করুন। কীভাবে আপনি এই পদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তা ব্যাখ্যা করুন। কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কী জানেন এবং কেন এই কোম্পানিতে আপনার আগ্রহ তা বলুন। :. :'''দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ:''' :এখানে আপনি আপনার PAR বিবৃতি দিন। PAR বিবৃতির বিস্তারিত পরবর্তী অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তবে সংক্ষেপে, একটি PAR বিবৃতি হলো একটি সমস্যা যা আপনি মোকাবিলা করেছেন, আপনি সেই সমস্যা সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং এর ফলাফল। :. :'''শেষ অনুচ্ছেদ:''' :আপনার কোম্পানিতে আগ্রহের সারসংক্ষেপ দিন এবং কীভাবে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সম্পদ হবেন তা ব্যাখ্যা করুন। তাদের বিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং কীভাবে আপনি ফলো আপ করবেন তা ব্যাখ্যা করুন। :. :বিশ্বস্তভাবে, :. :আপনার স্বাক্ষর :. :আপনার পুরো টাইপ করা নাম :. :সংযুক্তি: জীবনবৃত্তান্ত, রেফারেন্সসমূহ|caption=উদাহরণ খসড়া}} ==P.A.R. বিবৃতি== PAR বিবৃতি কভার লেটারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। '''সমস্যা :''' আগের কর্মস্থলে কোনো সমস্যা তুলে ধরুন। এটি এমন কিছু হওয়া উচিত যা আবেদনকৃত পদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং নিয়োগকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। যেমন: "কোম্পানিতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাগজ অপচয় হতো।" '''কর্ম:''' আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করুন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখানোর একটি সুযোগ যে আপনি কোম্পানিকে উন্নত করতে আগ্রহী এবং সৃজনশীল। যেমন: "আমি অফিসে বিভিন্ন জায়গায় পুনঃব্যবহারযোগ্য ডাস্টবিন বসাই।" '''ফলাফল :''' আপনি কোম্পানিকে কীভাবে উপকৃত করেছেন তা দেখানোর সুযোগ। যেমন: "এই পদক্ষেপের ফলে অপচয় ৮০% কমে যায়।" P.A.R. বিবৃতি ব্যবহার করলে নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় কারণ এতে আপনি কীভাবে বাস্তব সমস্যার সমাধান করেছেন তা স্পষ্ট হয়। ==পুনঃসংস্করণ== প্রথম কভার লেটার লেখা শেষ হলে, বানান ও ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করুন। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিতে পারেন। নতুন চোখ অনেক সময় ভুল ধরতে পারে যেগুলো আপনি মিস করে যেতে পারেন। নির্ভুল কভার লেটার আপনাকে এগিয়ে রাখবে। সামান্য একটি ত্রুটির ফলেও অনেক নিয়োগকর্তা আপনাকে বাতিল করে দিতে পারে। নিজে পড়া এবং অন্যের সহায়তায় পুনঃসংস্করণ আপনার সাক্ষাৎকারের সম্ভাবনা অনেক বাড়াতে পারে। ==একটি কোম্পানির ব্যাপারে গবেষণা করা== আপনি যে কোম্পানির জন্য আবেদন করছেন, তাদের লক্ষ্য, মূল্যবোধ ও ইতিহাস সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেকে একজন আদর্শ প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখায় আপনি কোম্পানির সাফল্যের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে, অতিরিক্ত আগ্রহ বা "বিক্রির ভাষা" ব্যবহার করলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ===ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি=== মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[http://busref.lib.umn.edu](http://busref.lib.umn.edu) ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি] শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চমৎকার রিসোর্স। বিভিন্ন ডেটাবেস থেকে কোম্পানি গবেষণার জন্য এটি খুব কার্যকর। ===হুভার্স === হুভার্স ৪৩,০০০ কোম্পানির তথ্য এবং ৬০০টি শিল্পক্ষেত্রে বিশ্লেষণ সরবরাহ করে। এতে কোম্পানির কর্মকর্তা, অবস্থান, আর্থিক তথ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিবরণ থাকে। ===মিলিয়ন ডলার ডেটাবেস=== এই ডেটাবেসটি এমন মার্কিন কোম্পানিগুলোর তথ্য রাখে যাদের বার্ষিক বিক্রি কমপক্ষে $১ মিলিয়ন বা কর্মচারী সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন। এতে ছোট ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির তথ্যও পাওয়া যায়। ===রেফারেন্স ইউএসএ=== রেফারেন্স ইউএসএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১.৪ কোটি এবং কানাডার ১৫ লক্ষ কোম্পানির তথ্য সরবরাহ করে। এটি নিয়মিত আপডেট হয় এবং শিল্প, প্রতিযোগী, বিক্রি ও ব্যয়ের তথ্য প্রদান করে। ==কোন কোম্পানি আমার জন্য উপযুক্ত== প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন নৈতিক মূল্যবোধ ও নীতিগুলি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে নির্দিষ্ট বিষয়গুলিতে আপনার অবস্থান কোথায়, তখন সেই আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোম্পানি খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হবে। একটি ক্ষেত্র যা দেখায় যে কোনো কোম্পানি বড় ইস্যুগুলিতে কী অবস্থান নেয়, তা হলো রাজনৈতিক অনুদান। রাজনৈতিক অনুদান দেখতে সাহায্য করে এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যা কোম্পানির অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়। ===ওপেন সিক্রেটস=== [http://www.opensecrets.org ওপেন সিক্রেটস] একটি ওয়েবসাইট যেখানে কোম্পানি ও বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে কত অনুদান দিয়েছে তা আপনি জানতে পারেন। এই সাইটের "ইনফ্লুয়েন্স অ্যান্ড লবিয়িং" ট্যাবের অধীনে "ইন্ডাস্ট্রি" বিভাগে ক্লিক করলে, আপনি এমন একটি পৃষ্ঠায় পৌঁছাবেন যেখানে আপনি নির্দিষ্ট শিল্প খুঁজে পেতে পারেন যা আপনার আগ্রহের কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত। এখান থেকে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কত টাকা অনুদান দেয় এবং কোন রাজনৈতিক দল সেই অর্থের প্রধান গ্রহীতা। এইভাবে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কোন প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এবং আপনি তাদের আদর্শের সঙ্গে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারবেন। ===ম্যাপলাইট.অর্গ=== [http://www.maplight.org ম্যাপলাইট.অর্গ] একটি ওয়েবসাইট যা ওপেন সিক্রেটস-এর অনুরূপ এবং এখানে আপনি রাজনৈতিক অর্থ ও স্বার্থগোষ্ঠী সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পেতে পারেন। এই সাইটের পূর্ণ নামের অর্থ হলো: "অর্থ এবং রাজনীতি: সংযোগ আলোকিত করা"। নির্বাচনী বছরগুলিতে, যেমন ২০০৮ সালে, এই ধরনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যেত যে অর্থ কোথা থেকে আসছে এবং রাজনীতিবিদদের তহবিল কীভাবে সংগৃহীত হচ্ছে। এটি এমন একটি কার্যকর হাতিয়ার যা আপনাকে নির্দিষ্ট শিল্প বা কোম্পানির সঙ্গে আপনার মূল্যবোধ মিলিয়ে নিতে সাহায্য করে। ==আমি কীভাবে এই তথ্য পেতে পারি?== একটি কার্যকর গবেষণার কৌশল হলো সেই ব্যক্তি বা কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যারা ইতিমধ্যে সেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং আপনি সফল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সেই শিল্পে প্রবেশের পরামর্শ পেতে পারেন। একটি প্রতিষ্ঠানের কাজের অভ্যন্তরীণ তথ্য আপনার কাভার লেটারকে অন্যান্য আবেদনকারীদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। বর্তমান কর্মীরা যা জানেন তা আপনি জানেন দেখালে প্রমাণ হয় যে আপনি ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর হতে আগ্রহী। কোম্পানিতে সরাসরি ফোন করে তাদের মিশন স্টেটমেন্ট এবং তারা কী বিক্রি করে সে সম্পর্কে জনসাধারণের জন্য যে তথ্য দেওয়া হয় তা জানতে পারেন। সম্ভবত আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যেই সেই নিয়োগকর্তা সম্পর্কে কিছু না কিছু জানেন। এই পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করলে আপনাকে যেন এইমাত্র কোম্পানিটি আবিষ্কার করেছেন এমন মিথ্যা আগ্রহ দেখাতে হবে না। আপনি যদি আপনার নির্বাচিত ক্ষেত্রে বছরের পর বছর অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন, তাহলে নিয়োগকর্তা সহজেই বুঝতে পারবেন কারা সত্যিকার আগ্রহী এবং কারা নয়। মূলত ইন্টারনেটের উপর নির্ভরতার কারণে গবেষণার জন্য প্রায়শই লাইব্রেরিকে অবহেলা করা হয়। তবে লাইব্রেরিতে সাধারণ ওয়েব অনুসন্ধানে পাওয়া যায় না এমন বহু জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং বই থাকে। কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্দিষ্ট প্রবন্ধ উদ্ধৃত করলে আপনার কাভার লেটার আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়। গবেষণা করা ঠিক ততটাই কঠিন, যতটা আপনি তা করে তোলেন। আপনার আগ্রহ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চমৎকার কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচুর সম্পদ উপলব্ধ আছে। নির্দিষ্ট শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর জন্য ব্যয় করা সময় একটি কার্যকর কাভার লেটার তৈরির জন্য সত্যিই মূল্যবান। প্রতিটি কাভার লেটারে নির্দিষ্ট কোম্পানির মূল্যবোধকে লক্ষ্য করে লিখলে, আপনার কাজ নিজেই কথা বলবে। {{BookCat}} ====কাভার লেটার সংশোধনের জন্য চেকলিস্ট==== নিম্নলিখিত চেকলিস্টটি কাভার লেটারের মৌলিক উপাদানগুলো তুলে ধরে। '''প্রাথমিক গবেষণা''' _____ নিয়োগকর্তা কী চান তা যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি? _____ চাকরি ও নিয়োগকর্তা সম্পর্কে যথেষ্ট জানা হয়েছে কি, যেন লেটারটি তাদের উপযোগী করে লেখা যায়? '''ঠিকানা''' _____ যদি সম্ভব হয়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা হয়েছে কি? '''ভূমিকা''' _____ স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে কি আপনি কী চান? _____ প্রমাণ দেওয়া হয়েছে কি যে আপনি নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নির্দিষ্ট, প্রাসঙ্গিক তথ্য জানেন? _____ বোঝানো হয়েছে কি যে আপনি কোম্পানিটিকে পছন্দ করেন? '''যোগ্যতা''' _____ রিজুমেতে উল্লেখিত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলি নির্দিষ্ট চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে কি? '''সমাপ্তি''' _____ চিঠির শেষ অংশ সদয় কিন্তু একটি পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে কি? '''গদ্যশৈলী''' _____ স্পষ্ট, বিভিন্ন গঠনবিশিষ্ট বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে কি? _____ সহজে অনুসরণযোগ্য সংগঠন ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ আত্মবিশ্বাসী কিন্তু বিনয়ী ভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ ক্রিয়াবাচ্য ব্যবহার করা হয়েছে কি, বিশেষ্যবাচ্য নয়? _____ শক্তিশালী ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ বানান, ব্যাকরণ ও যতিচিহ্ন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি? '''চেহারা''' _____ গোছানো ও আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে কি? _____ ব্যবসায়িক চিঠির সব উপাদান অন্তর্ভুক্ত আছে কি? '''নৈতিকতা''' _____ আপনার যোগ্যতাগুলি সততার সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে কি? _____ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এড়ানো হয়েছে কি? '''সার্বিক''' _____ নিয়োগকর্তার লক্ষ্য ও উদ্বেগ সম্পর্কে আপনি সচেতন, তা বোঝানো হয়েছে কি? _____ প্রমাণ করা হয়েছে কি যে আপনি দক্ষ যোগাযোগকারী? ==কাভার লেটারের করণীয় ও বর্জনীয়== '''যা করবেন:''' প্রথম অনুচ্ছেদে নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করুন এবং কোম্পানির উপর আপনার গবেষণার দিকটি তুলে ধরুন। বিষয়বস্তু সহজ রাখুন – জটিল, দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করলে চিঠিটি ভারী ও কঠিন হয়ে যায়। পরিষ্কার ও বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করুন। চিঠিটি সংক্ষিপ্ত রাখুন। এক পৃষ্ঠার বেশি যেন না হয়। সাধারণত, প্রতিটি অনুচ্ছেদে তিনটির বেশি বাক্য না রাখাই ভালো। কোনো নেতিবাচক কথা লিখবেন না – আগের চাকরি, সুপারভাইজার, বা অন্য কিছু সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ এড়িয়ে চলুন। '''যা করবেন না:''' একই চিঠি ও রিজুমে অনেক কোম্পানিকে পাঠাবেন না। বর্তমান চাকরির বাজারে এই কৌশলের সফলতার সম্ভাবনা খুব কম। প্রতিটি চিঠি ব্যক্তিগত ও স্বতন্ত্র করুন। শুধুমাত্র কোম্পানির আপনার জন্য কী করতে পারে তা লিখবেন না। বরং আপনি কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন, সেটি তুলে ধরুন। কোম্পানির সফলতায় আপনার ভূমিকা কী হতে পারে, তা বলুন। আপনার রিজুমে কী আছে তা ধাপে ধাপে লিখে যাবেন না। নিয়োগকর্তা রিজুমে পড়তে পারেন। কাভার লেটার ব্যবহার করুন এমন বিষয়গুলো আলাদা করে তুলে ধরতে যেগুলো আপনি গুরুত্ব দিতে চান। চিঠিটি স্বাক্ষর করতে ভুলবেন না। পাশাপাশি পড়ুন, (২০০৪)। স্নাতক চাকরি অনুসন্ধান হ্যান্ডবুক। মিনিয়াপোলিস: কার্লসন স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট। ra17s902etsfi7okbe65h9gv1vat7qn 85159 85158 2025-06-22T05:01:33Z Mehedi Abedin 7113 85159 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} =কভার লেটারসমূহ= কভার লেটার সংহত ও সুপরিকল্পিত হওয়া উচিত। একটি জীবনবৃত্তান্ত প্রাথমিক ধারণা দেয়, আর একটি কভার লেটার দেখায় কীভাবে আপনার দক্ষতা ও সামর্থ্য কোম্পানির লক্ষ্য ও বিশ্বাসকে আরও জোরালো করবে। কভার লেটারটি নিয়োগকর্তার কাছে আরও ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। যদিও নিয়োগকর্তারা সাধারণত সবচেয়ে বেশি সময় জীবনবৃত্তান্তে ব্যয় করেন, যদি আপনার কভার লেটারটি বিশৃঙ্খল ও অপেশাদার দেখায়, তাহলে তারা আর আগ্রহ দেখাবেন না। মূল বিষয় হলো, পেশাদার এবং ব্যক্তিগত হওয়া, এবং কভার লেটারটি পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা। ==কেন কভার লেটার ব্যবহার করবেন== * এটি একটি তথ্যবহুল চিঠি, যা নিয়োগকর্তার জন্য আপনার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক দক্ষতাগুলো তুলে ধরে। * এটি একটি পরিচয়পত্র, যা আপনাকে এবং আপনার পটভূমিকে নিয়োগকর্তার কাছে উপস্থাপন করে। * এটি একটি বিক্রয় চিঠি, যা নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে চায় যে আপনার এমন কিছু দেওয়ার আছে যা আপনাকে সাক্ষাৎকারে ডাকার যোগ্য করে তোলে। ==কার্যাবলি== * সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে এবং ব্যাখ্যা করে আপনি কে এবং কী দিতে পারেন। * আপনার জীবনবৃত্তান্তকে সমৃদ্ধ করে, কারণ নিয়োগকর্তা যদি জীবনবৃত্তান্ত পছন্দ করেন, তবে পরবর্তী ধাপে তারা আপনার কভার লেটারটি পড়বেন। * ব্যাখ্যা করে কীভাবে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো আপনাকে উক্ত পদে একজন উপযুক্ত প্রার্থী করে তোলে। * একটি পদে আপনার আগ্রহ দেখায়। * আপনি কেন ওই পদে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম—তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। ==সতর্কতা== একটি ভালো কভার লেটার আপনার অর্জনগুলো তুলে ধরবে এবং কোম্পানির সঙ্গে আপনার মানানসই হওয়া ব্যাখ্যা করবে, কিন্তু এটি আত্মপ্রচার বা অহংকার করার সুযোগ নয়। অতিরঞ্জন বা মিথ্যা বললে আপনাকে তার দায় নিতে হবে এবং এটি আপনার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কভার লেটারে সৎ ও স্পষ্ট হওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, লক্ষ্য হলো সাক্ষাৎকার পাওয়া—নিজের জীবনকাহিনি বলার নয়। আপনার অভিজ্ঞতার নির্দিষ্ট বিবরণ সাক্ষাৎকারের জন্য রেখে দিন। জীবনবৃত্তান্তের তুলনায়, কভার লেটার অবশ্যই প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা হতে হবে। কোম্পানির মিশন ও লক্ষ্য সম্পর্কে জেনে এবং কিভাবে আপনি তাদের সঙ্গে মানানসই—তা বোঝাতে কভার লেটার তৈরি করতে হবে। গবেষণা করলে আপনি অনেক বেশি যোগ্য বলে মনে হবেন। সুতরাং, একটি সাধারণ চিঠি পাঠানো নির্দিষ্ট কোম্পানির বিবেচনায় নয় বরং সব কোম্পানির জন্য এক এমন ধারণা আপনাকে অনুত্তেজক এবং অস্পষ্ট প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করবে। ===নৈতিকতা=== চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়েই ভালো নৈতিক চর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা শুধু অপেশাদারই নয়, অনেক ক্ষেত্রে বেআইনিও। আপনার বর্তমান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন এবং তা সৎভাবে উপস্থাপন করুন। আপনার ব্যক্তিত্ব ও কাজের নৈতিকতা নিজেই নিয়োগকর্তাদের প্রভাবিত করবে। নিচে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দেখানো হয়েছে, যেখানে প্রার্থীরা প্রায়ই নৈতিক সীমা অতিক্রম করে থাকেন: '''দলগত প্রচেষ্টা''': যদিও একা একটি বড় প্রকল্পের কৃতিত্ব নেওয়া বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, এটি তখনই অনৈতিক যদি প্রকৃতপক্ষে আপনি একটি টিমের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। অনেক কোম্পানি টিমওয়ার্ককে গুরুত্ব দেয়, কারণ এটি দেখায় প্রার্থী দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে এবং প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতেও সক্ষম। অতীতে আপনি টিমে কাজ করে থাকলে, সরাসরি "আমি দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি" না লিখে সেটিকে একটি PAR [P - প্রবলেম (সমস্যা), A - অ্যাকশন (কর্ম), R - রেজাল্ট (ফলাফল)] বিবৃতির মাধ্যমে তুলে ধরুন। যেমন: "আমার টিমের সঙ্গে আমরা বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হলে, অপ্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে কোম্পানির খরচ বাঁচাতে সক্ষম হই।" '''অতিরঞ্জন''': অনেক প্রার্থী মনে করেন যে মিথ্যা বলাটা অনুচিত হলেও, অতিরঞ্জন ঠিক আছে। ''অতিরঞ্জন মানেই মিথ্যা বলা।'' নিয়োগকর্তারা এটিকে একইভাবে দেখে থাকেন। আপনি যদি এমন কিছু উল্লেখ করেন যা আপনি আসলে জানেন না বা পারেন না, চাকরির সময় সেটি প্রকাশ পেলে নিয়োগকর্তা আপনাকে বরখাস্ত এবং এমনকি ক্ষতিপূরণ দাবি করতেও পারেন। '''রেফারেন্স''': কভার লেটারে রেফারেন্স যুক্ত করার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নেওয়া উচিত। যাতে নিয়োগকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা প্রস্তুত থাকে এবং আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করতে পারে। তাদেরকে আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটারের একটি কপি দিন যাতে তারা জানে আপনি কী পদে আবেদন করছেন এবং কী দক্ষতা তুলে ধরছেন। =উদ্দেশ্যসমূহ= আপনার কভার লেটার তৈরি এবং পারসোনালাইজেশন একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া। আপনি নিয়োগকর্তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করবেন এমনভাবে যাতে তিনি বুঝতে পারেন আপনি তাদের কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন। নিচের তিনটি প্রশ্ন মনে রেখে কভার লেটার তৈরি করুন: - আপনি কেন অন্য কোম্পানির বদলে আমাদের কোম্পানিকে বেছে নিয়েছেন? - আপনি কীভাবে আমাদের সফল হতে সাহায্য করবেন? - আমাদের কর্মচারী ও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আপনি কীভাবে মানানসই হবেন? ==কীভাবে শুরু করবেন== '''প্রত্যেক কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করুন যেগুলোর জন্য আপনি আবেদন করছেন।''' নিয়োগকর্তারা প্রভাবিত হন যখন প্রার্থী কোম্পানির পটভূমি সম্পর্কে জানে। তবে কভার লেটার তথ্য দিয়ে ভরিয়ে ফেলবেন না। তারা নিজেরাই কোম্পানির তথ্য জানেন। কোম্পানির ওয়েবসাইট একটি ভালো জায়গা শুরু করার জন্য, তবে আপনি তাদের কর্মচারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। নিয়োগকর্তারা জানতে চান আপনি কীভাবে পদটির প্রভাব তাদের মুনাফা দিবে। নিজেকে জানা প্রথম পদক্ষেপ, যাতে আপনি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। ==আপনার কাভার লেটার খসড়া প্রস্তুত করা== অধিকাংশ লেখার মতো, কাভার লেটারেরও তিনটি প্রধান অংশ থাকে: একটি '''ভূমিকা''', একটি '''মূল অংশ''', এবং একটি '''উপসংহার'''। আপনি কীভাবে এই তিনটি অংশ ব্যবহার করবেন তা আপনার সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করে; তবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত: আমি কোন চাকরি চাই? আমি এই কোম্পানি সম্পর্কে কী জানি? আমি কেন এই চাকরির জন্য অন্য কোনো চাকরির বদলে আবেদন করেছি? আমার যোগ্যতাগুলো কী এবং সেগুলো কীভাবে নিয়োগকর্তাকে সহায়তা করবে? আপনার কাভার লেটারের প্রথম খসড়াটি এক বা একাধিক বন্ধু, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, সহপাঠী, শিক্ষক বা যেকোনো ব্যক্তিকে পড়ে দেখতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক। যদিও আপনি ভাবতে পারেন আপনার চিঠি অর্থপূর্ণ এবং নিখুঁত, অন্যদের দৃষ্টিতে তা আলাদা হতে পারে। একটি "তাজা চোখের" জোড়া প্রায়শই গোপন ভুল, অনিচ্ছাকৃত অতিরঞ্জন বা অদ্ভুত বাক্য গঠন খুঁজে পেতে পারে যা লেখকের নজরে পড়ে না। যদি কেউ না থাকে প্রুফরিড করার মতো, নিজেই চিঠিটি জোরে পড়ে দেখুন। চূড়ান্ত কাভার লেটার পাঠানোর আগে '''একাধিক খসড়া তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ'''। সংশোধন প্রায়শই উপেক্ষিত হয়, কিন্তু এটি লেখার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এও বোঝা জরুরি যে একটি কোম্পানির জন্য একটি কাভার লেটার, অন্য আরেকটি কোম্পানির জন্য সম্পূর্ণ আলাদা হবে, যদিও তারা একই পেশার মধ্যে পড়ে। প্রতিটি কাভার লেটার অবশ্যই সেই নির্দিষ্ট পাঠক বা নিয়োগকর্তাকে লক্ষ্য করে লেখা উচিত। এটি প্রতিটি কোম্পানির সাথে পরিবর্তিত হবে, তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি জানাও অত্যন্ত জরুরি। এখানে একটি কাভার লেটারের বিন্যাসের উদাহরণ দেওয়া হলো: {{SAMPLE|sampletext=উদাহরণ খসড়া :. :আপনার পূর্ণ ঠিকানা :শহর, রাজ্য, ডাক কোড :. :আজকের তারিখ :. :নিয়োগকর্তার নাম :নিয়োগকর্তার পদবি :প্রতিষ্ঠানের নাম :সম্পূর্ণ ঠিকানা :. :প্রিয় জনাব/জনাবা [নিয়োগকর্তার শেষ নাম], :. :'''ভূমিকা অনুচ্ছেদ:''' :যে চাকরির জন্য আপনি আবেদন করছেন তা উল্লেখ করুন। কীভাবে আপনি এই পদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তা ব্যাখ্যা করুন। কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কী জানেন এবং কেন এই কোম্পানিতে আপনার আগ্রহ তা বলুন। :. :'''দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ:''' :এখানে আপনি আপনার PAR বিবৃতি দিন। PAR বিবৃতির বিস্তারিত পরবর্তী অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তবে সংক্ষেপে, একটি PAR বিবৃতি হলো একটি সমস্যা যা আপনি মোকাবিলা করেছেন, আপনি সেই সমস্যা সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং এর ফলাফল। :. :'''শেষ অনুচ্ছেদ:''' :আপনার কোম্পানিতে আগ্রহের সারসংক্ষেপ দিন এবং কীভাবে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সম্পদ হবেন তা ব্যাখ্যা করুন। তাদের বিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং কীভাবে আপনি ফলো আপ করবেন তা ব্যাখ্যা করুন। :. :বিশ্বস্তভাবে, :. :আপনার স্বাক্ষর :. :আপনার পুরো টাইপ করা নাম :. :সংযুক্তি: জীবনবৃত্তান্ত, রেফারেন্সসমূহ|caption=উদাহরণ খসড়া}} ==P.A.R. বিবৃতি== PAR বিবৃতি কভার লেটারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। '''সমস্যা :''' আগের কর্মস্থলে কোনো সমস্যা তুলে ধরুন। এটি এমন কিছু হওয়া উচিত যা আবেদনকৃত পদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং নিয়োগকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। যেমন: "কোম্পানিতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাগজ অপচয় হতো।" '''কর্ম:''' আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করুন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখানোর একটি সুযোগ যে আপনি কোম্পানিকে উন্নত করতে আগ্রহী এবং সৃজনশীল। যেমন: "আমি অফিসে বিভিন্ন জায়গায় পুনঃব্যবহারযোগ্য ডাস্টবিন বসাই।" '''ফলাফল :''' আপনি কোম্পানিকে কীভাবে উপকৃত করেছেন তা দেখানোর সুযোগ। যেমন: "এই পদক্ষেপের ফলে অপচয় ৮০% কমে যায়।" P.A.R. বিবৃতি ব্যবহার করলে নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় কারণ এতে আপনি কীভাবে বাস্তব সমস্যার সমাধান করেছেন তা স্পষ্ট হয়। ==পুনঃসংস্করণ== প্রথম কভার লেটার লেখা শেষ হলে, বানান ও ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করুন। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিতে পারেন। নতুন চোখ অনেক সময় ভুল ধরতে পারে যেগুলো আপনি মিস করে যেতে পারেন। নির্ভুল কভার লেটার আপনাকে এগিয়ে রাখবে। সামান্য একটি ত্রুটির ফলেও অনেক নিয়োগকর্তা আপনাকে বাতিল করে দিতে পারে। নিজে পড়া এবং অন্যের সহায়তায় পুনঃসংস্করণ আপনার সাক্ষাৎকারের সম্ভাবনা অনেক বাড়াতে পারে। ==একটি কোম্পানির ব্যাপারে গবেষণা করা== আপনি যে কোম্পানির জন্য আবেদন করছেন, তাদের লক্ষ্য, মূল্যবোধ ও ইতিহাস সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেকে একজন আদর্শ প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। এটি নিয়োগকর্তাকে দেখায় আপনি কোম্পানির সাফল্যের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে, অতিরিক্ত আগ্রহ বা "বিক্রির ভাষা" ব্যবহার করলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ===ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি=== মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের [[http://busref.lib.umn.edu](http://busref.lib.umn.edu) ব্যবসায়িক রেফারেন্স লাইব্রেরি] শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চমৎকার রিসোর্স। বিভিন্ন ডেটাবেস থেকে কোম্পানি গবেষণার জন্য এটি খুব কার্যকর। ===হুভার্স === হুভার্স ৪৩,০০০ কোম্পানির তথ্য এবং ৬০০টি শিল্পক্ষেত্রে বিশ্লেষণ সরবরাহ করে। এতে কোম্পানির কর্মকর্তা, অবস্থান, আর্থিক তথ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিবরণ থাকে। ===মিলিয়ন ডলার ডেটাবেস=== এই ডেটাবেসটি এমন মার্কিন কোম্পানিগুলোর তথ্য রাখে যাদের বার্ষিক বিক্রি কমপক্ষে $১ মিলিয়ন বা কর্মচারী সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন। এতে ছোট ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির তথ্যও পাওয়া যায়। ===রেফারেন্স ইউএসএ=== রেফারেন্স ইউএসএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১.৪ কোটি এবং কানাডার ১৫ লক্ষ কোম্পানির তথ্য সরবরাহ করে। এটি নিয়মিত আপডেট হয় এবং শিল্প, প্রতিযোগী, বিক্রি ও ব্যয়ের তথ্য প্রদান করে। ==কোন কোম্পানি আমার জন্য উপযুক্ত== প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন নৈতিক মূল্যবোধ ও নীতিগুলি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে নির্দিষ্ট বিষয়গুলিতে আপনার অবস্থান কোথায়, তখন সেই আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোম্পানি খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হবে। একটি ক্ষেত্র যা দেখায় যে কোনো কোম্পানি বড় ইস্যুগুলিতে কী অবস্থান নেয়, তা হলো রাজনৈতিক অনুদান। রাজনৈতিক অনুদান দেখতে সাহায্য করে এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যা কোম্পানির অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়। ===ওপেন সিক্রেটস=== [http://www.opensecrets.org ওপেন সিক্রেটস] একটি ওয়েবসাইট যেখানে কোম্পানি ও বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে কত অনুদান দিয়েছে তা আপনি জানতে পারেন। এই সাইটের "ইনফ্লুয়েন্স অ্যান্ড লবিয়িং" ট্যাবের অধীনে "ইন্ডাস্ট্রি" বিভাগে ক্লিক করলে, আপনি এমন একটি পৃষ্ঠায় পৌঁছাবেন যেখানে আপনি নির্দিষ্ট শিল্প খুঁজে পেতে পারেন যা আপনার আগ্রহের কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত। এখান থেকে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কত টাকা অনুদান দেয় এবং কোন রাজনৈতিক দল সেই অর্থের প্রধান গ্রহীতা। এইভাবে আপনি জানতে পারবেন কোম্পানিটি কোন প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এবং আপনি তাদের আদর্শের সঙ্গে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারবেন। ===ম্যাপলাইট.অর্গ=== [http://www.maplight.org ম্যাপলাইট.অর্গ] একটি ওয়েবসাইট যা ওপেন সিক্রেটস-এর অনুরূপ এবং এখানে আপনি রাজনৈতিক অর্থ ও স্বার্থগোষ্ঠী সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পেতে পারেন। এই সাইটের পূর্ণ নামের অর্থ হলো: "অর্থ এবং রাজনীতি: সংযোগ আলোকিত করা"। নির্বাচনী বছরগুলিতে, যেমন ২০০৮ সালে, এই ধরনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যেত যে অর্থ কোথা থেকে আসছে এবং রাজনীতিবিদদের তহবিল কীভাবে সংগৃহীত হচ্ছে। এটি এমন একটি কার্যকর হাতিয়ার যা আপনাকে নির্দিষ্ট শিল্প বা কোম্পানির সঙ্গে আপনার মূল্যবোধ মিলিয়ে নিতে সাহায্য করে। ==আমি কীভাবে এই তথ্য পেতে পারি?== একটি কার্যকর গবেষণার কৌশল হলো সেই ব্যক্তি বা কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যারা ইতিমধ্যে সেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং আপনি সফল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সেই শিল্পে প্রবেশের পরামর্শ পেতে পারেন। একটি প্রতিষ্ঠানের কাজের অভ্যন্তরীণ তথ্য আপনার কাভার লেটারকে অন্যান্য আবেদনকারীদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। বর্তমান কর্মীরা যা জানেন তা আপনি জানেন দেখালে প্রমাণ হয় যে আপনি ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর হতে আগ্রহী। কোম্পানিতে সরাসরি ফোন করে তাদের মিশন স্টেটমেন্ট এবং তারা কী বিক্রি করে সে সম্পর্কে জনসাধারণের জন্য যে তথ্য দেওয়া হয় তা জানতে পারেন। সম্ভবত আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যেই সেই নিয়োগকর্তা সম্পর্কে কিছু না কিছু জানেন। এই পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করলে আপনাকে যেন এইমাত্র কোম্পানিটি আবিষ্কার করেছেন এমন মিথ্যা আগ্রহ দেখাতে হবে না। আপনি যদি আপনার নির্বাচিত ক্ষেত্রে বছরের পর বছর অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন, তাহলে নিয়োগকর্তা সহজেই বুঝতে পারবেন কারা সত্যিকার আগ্রহী এবং কারা নয়। মূলত ইন্টারনেটের উপর নির্ভরতার কারণে গবেষণার জন্য প্রায়শই লাইব্রেরিকে অবহেলা করা হয়। তবে লাইব্রেরিতে সাধারণ ওয়েব অনুসন্ধানে পাওয়া যায় না এমন বহু জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং বই থাকে। কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্দিষ্ট প্রবন্ধ উদ্ধৃত করলে আপনার কাভার লেটার আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়। গবেষণা করা ঠিক ততটাই কঠিন, যতটা আপনি তা করে তোলেন। আপনার আগ্রহ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চমৎকার কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচুর সম্পদ উপলব্ধ আছে। নির্দিষ্ট শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর জন্য ব্যয় করা সময় একটি কার্যকর কাভার লেটার তৈরির জন্য সত্যিই মূল্যবান। প্রতিটি কাভার লেটারে নির্দিষ্ট কোম্পানির মূল্যবোধকে লক্ষ্য করে লিখলে, আপনার কাজ নিজেই কথা বলবে। {{BookCat}} ====কাভার লেটার সংশোধনের জন্য চেকলিস্ট==== নিম্নলিখিত চেকলিস্টটি কাভার লেটারের মৌলিক উপাদানগুলো তুলে ধরে। '''প্রাথমিক গবেষণা''' _____ নিয়োগকর্তা কী চান তা যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি? _____ চাকরি ও নিয়োগকর্তা সম্পর্কে যথেষ্ট জানা হয়েছে কি, যেন লেটারটি তাদের উপযোগী করে লেখা যায়? '''ঠিকানা''' _____ যদি সম্ভব হয়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা হয়েছে কি? '''ভূমিকা''' _____ স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে কি আপনি কী চান? _____ প্রমাণ দেওয়া হয়েছে কি যে আপনি নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নির্দিষ্ট, প্রাসঙ্গিক তথ্য জানেন? _____ বোঝানো হয়েছে কি যে আপনি কোম্পানিটিকে পছন্দ করেন? '''যোগ্যতা''' _____ রিজুমেতে উল্লেখিত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলি নির্দিষ্ট চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে কি? '''সমাপ্তি''' _____ চিঠির শেষ অংশ সদয় কিন্তু একটি পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে কি? '''গদ্যশৈলী''' _____ স্পষ্ট, বিভিন্ন গঠনবিশিষ্ট বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে কি? _____ সহজে অনুসরণযোগ্য সংগঠন ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ আত্মবিশ্বাসী কিন্তু বিনয়ী ভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ ক্রিয়াবাচ্য ব্যবহার করা হয়েছে কি, বিশেষ্যবাচ্য নয়? _____ শক্তিশালী ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে কি? _____ বানান, ব্যাকরণ ও যতিচিহ্ন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি? '''চেহারা''' _____ গোছানো ও আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে কি? _____ ব্যবসায়িক চিঠির সব উপাদান অন্তর্ভুক্ত আছে কি? '''নৈতিকতা''' _____ আপনার যোগ্যতাগুলি সততার সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে কি? _____ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এড়ানো হয়েছে কি? '''সার্বিক''' _____ নিয়োগকর্তার লক্ষ্য ও উদ্বেগ সম্পর্কে আপনি সচেতন, তা বোঝানো হয়েছে কি? _____ প্রমাণ করা হয়েছে কি যে আপনি দক্ষ যোগাযোগকারী? ==কাভার লেটারের করণীয় ও বর্জনীয়== '''যা করবেন:''' প্রথম অনুচ্ছেদে নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করুন এবং কোম্পানির উপর আপনার গবেষণার দিকটি তুলে ধরুন। বিষয়বস্তু সহজ রাখুন – জটিল, দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করলে চিঠিটি বড় ও কঠিন হয়ে যায়। পরিষ্কার ও বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করুন। চিঠিটি সংক্ষিপ্ত রাখুন। এক পৃষ্ঠার বেশি যেন না হয়। সাধারণত, প্রতিটি অনুচ্ছেদে তিনটির বেশি বাক্য না রাখাই ভালো। কোনো নেতিবাচক কথা লিখবেন না – আগের চাকরি, সুপারভাইজার, বা অন্য কিছু সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ এড়িয়ে চলুন। '''যা করবেন না:''' একই চিঠি ও রিজুমে অনেক কোম্পানিকে পাঠাবেন না। বর্তমান চাকরির বাজারে এই কৌশলের সফলতার সম্ভাবনা খুব কম। প্রতিটি চিঠি ব্যক্তিগত ও স্বতন্ত্র করুন। শুধুমাত্র কোম্পানির আপনার জন্য কী করতে পারে তা লিখবেন না। বরং আপনি কোম্পানির জন্য কী করতে পারেন, সেটি তুলে ধরুন। কোম্পানির সফলতায় আপনার ভূমিকা কী হতে পারে, তা বলুন। আপনার রিজুমে কী আছে তা ধাপে ধাপে লিখে যাবেন না। নিয়োগকর্তা রিজুমে পড়তে পারেন। কাভার লেটার ব্যবহার করুন এমন বিষয়গুলো আলাদা করে তুলে ধরতে যেগুলো আপনি গুরুত্ব দিতে চান। চিঠিটি স্বাক্ষর করতে ভুলবেন না। পাশাপাশি পড়ুন, (২০০৪)। স্নাতক চাকরি অনুসন্ধান হ্যান্ডবুক। মিনিয়াপোলিস: কার্লসন স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট। opyvh1ac5vph09x27qpjbtwsc578p2p পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উপস্থাপনা 0 26361 85171 82203 2025-06-22T05:28:55Z Mehedi Abedin 7113 85171 wikitext text/x-wiki =উপস্থাপনা= == আপনার উপস্থাপনার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন == মৌখিক উপস্থাপনা অনেকটা লিখিত যোগাযোগের কৌশলের সাহায্যে তৈরি করা হয়; তবে যেহেতু মৌখিক উপস্থাপনা একটি ভিন্ন ধরণের যোগাযোগ, তাই এতে কিছু ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হয়। আপনি যা উপস্থাপন করতে চান তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা জরুরি—এটি চারটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা যেতে পারে। *''আপনার শ্রোতা এবং আপনার যোগাযোগের লক্ষ্য নিয়ে ভাবুন''– জানুন আপনার শ্রোতারা কারা এবং আপনি কীভাবে আপনার উপস্থাপনার মাধ্যমে তাদের প্রভাবিত করতে চান। উদাহরণস্বরূপ, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আপনি প্রকৃতপক্ষে কী বলতে চান এবং আপনার শ্রোতারা আপনার কাছ থেকে কী শুনতে চায়। *''শ্রোতারা কী আশা করে তা নিয়ে ভাবুন''– আপনার উপস্থাপনা সম্পর্কে শ্রোতাদের প্রত্যাশা কী তা বোঝার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, "আমার শ্রোতাদের আমাকে শোনার উদ্দেশ্য কী?" *''আপনার উপস্থাপনার সময়সীমা জানুন''– শ্রোতারা জানলে স্বস্তি বোধ করে যে উপস্থাপনাটি কতক্ষণ চলবে। উপস্থাপনার সময় সবসময় ঘড়ি বা ঘড়ি-যুক্ত ডিভাইস সঙ্গে রাখুন। *''আপনার উপস্থাপনার পরিবেশ মূল্যায়ন করুন''– **'''আপনার শ্রোতাদের আকার:''' যদি শ্রোতার সংখ্যা কম হয়, তাহলে ছোট আকারের চিত্র ব্যবহার করতে পারেন, কম আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন এবং মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন করে আপনাকে থামিয়ে দেওয়া হতে পারে। **'''শ্রোতাদের আসন বিন্যাস:''' আসন কেমন এবং শ্রোতারা কীভাবে তাদের চেয়ার সরিয়ে ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা ভালোভাবে দেখতে পারবে, সেটি বিবেচনা করুন। **'''উপলব্ধ সরঞ্জামের ধরন:''' কী ধরনের সরঞ্জাম সহজলভ্য, তা নির্ধারণ করে আপনি কী ধরণের গ্রাফিক্স ব্যবহার করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রজেক্টর না থাকে, তাহলে আপনি পাওয়ারপয়েন্ট বা স্লাইড ব্যবহার করতে পারবেন না। == আপনার উপস্থাপনার মৌখিক ও চাক্ষুষ অংশ পরিকল্পনা করা == === কেন ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করবেন? === '''গ্রাফিক্স ব্যবহারকারী বক্তারা সাধারণত বিবেচিত হন:''' আরও প্রস্তুত আরও পেশাদার আরও বোধগম্য আরও প্রভাবশালী আরও বিশ্বাসযোগ্য আরও আকর্ষণীয় আপনার উপস্থাপনায় মৌখিক ও চাক্ষুষ দুটি দিকের সম্মিলিত যোগাযোগক্ষমতার পুরো সুবিধা পেতে হলে, আপনাকে এগুলোকে সম্পূর্ণভাবে একীভূত করতে হবে। প্রথমে নির্ধারণ করুন আপনি কোন ধরনের মৌখিক উপস্থাপনা ও ভিজ্যুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করবেন। তারপর পরিকল্পনা করুন কীভাবে আপনি আপনার শব্দ ও চিত্রগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করবেন। === মৌখিক উপস্থাপনার ধরন নির্বাচন === কর্মক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের মৌখিক উপস্থাপনা ব্যবহার করা হয়: পাঠ্যভিত্তিক বক্তৃতা, রূপরেখাভিত্তিক বক্তৃতা, অথবা তাৎক্ষণিক বক্তৃতা। কখনও পরিস্থিতি বা শ্রোতাদের বৈশিষ্ট্য আপনার উপস্থাপনার ধরন নির্ধারণ করে দেয়। আবার কখনও আপনি নিজেই বেছে নিতে পারেন। '''''পাঠ্যভিত্তিক:''''' একটি পাঠ্যভিত্তিক বক্তৃতা হলো শব্দ-নির্ভর বা হুবহু লিখিত বক্তৃতা। এতে বক্তা যা বলতে চান, সব কিছু লিখে রাখেন। এটি পড়ে শোনানো বা মুখস্থ বলার জন্য ব্যবহার করা যায়। এই ধরনের বক্তৃতা সেই বক্তাদের জন্য সহায়ক যারা নার্ভাস হন অথবা অনেক নির্দিষ্ট ও জটিল তথ্য উপস্থাপন করতে চান। এটি সময়সীমার মধ্যে থাকার ক্ষেত্রেও সহায়ক। পাঠ্যভিত্তিক বক্তৃতায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে, তবে এতে বক্তৃতাটি অনুনয়হীন বা প্রাকৃতিক না-ও হতে পারে। '''''রূপরেখাভিত্তিক:''''' একটি রূপরেখাভিত্তিক বক্তৃতা হলো এমন একটি বক্তৃতা যেখানে মূল বিষয়গুলো চিহ্নিত করে রূপরেখা তৈরি করা হয়। এই রূপরেখা বক্তাকে নির্দিষ্ট বিষয়গুলো মনে রাখতে সাহায্য করে এবং শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী বক্তৃতা সামঞ্জস্য করার সুযোগ দেয়। এই ধরনের বক্তৃতার জন্য বক্তার বিষয় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি। কেউ কেউ রূপরেখা থেকে সঠিকভাবে বক্তৃতা উপস্থাপন করতে সমস্যা অনুভব করতে পারেন বা ভাষা জড়িয়ে যেতে পারে। যদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে রাখা না হয়, তাহলে বক্তা তা উপস্থাপন করতে ভুলে যেতে পারেন। পরিচিত বিষয়ে উপস্থাপনার জন্য এই পদ্ধতি আদর্শ। '''''তাৎক্ষণিক:''''' তাৎক্ষণিক বক্তৃতা খুব কম বা কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই দেওয়া হয়। বক্তার উচিত বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা। এই ধরনের বক্তৃতা প্রায়শই অগোছালো হতে পারে। সাধারণত এটি ব্যবহার করা হয় ছোটখাটো অনানুষ্ঠানিক সভায়, যেখানে শ্রোতারা বক্তাকে প্রশ্ন করে কথা এগিয়ে নিতে পারেন। তবে, যদি শ্রোতারা তেমনভাবে প্রশ্ন না করেন, তাহলে বক্তা পুরো বক্তব্যের মূল বিষয় এড়িয়ে যেতে পারেন। ==আপনার শ্রোতারা কারা?== আপনার বক্তব্য পরিকল্পনার সময় মনে রাখবেন যে, এটি কার্যকর করতে হলে অবশ্যই এটি নির্দিষ্ট শ্রোতাদের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। যদি আপনার শ্রোতারা বুঝতেই না পারেন আপনি কী বলতে চাইছেন, তাহলে আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এর অর্থ হলো, আপনাকে জানতে হবে আপনার শ্রোতা কারা, যাতে আপনি সেই অনুযায়ী আপনার উপস্থাপনার বিন্যাস নির্ধারণ করতে পারেন। শ্রোতাদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া। '''''আপনার শ্রোতাদের নিম্নলিখিত বিষয়ে সচেতন থাকুন:''''' * বয়স * জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার স্তর * লিঙ্গ * পেশা * জাতিগততা ও সংস্কৃতি * মূল্যবোধ ও নৈতিকতা * লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য '''''তবে মনে রাখবেন; আপনার শ্রোতারা <big>ব্যক্তিগত</big> কোনো ধরণের পূর্বধারণা বা গড়পড়তা ভাবনায় সীমাবদ্ধ নন।''''' যদি আপনি আপনার শ্রোতাদের সম্পর্কে তেমন কিছু না জানেন, তাহলে গবেষণা করুন! শ্রোতাদের সম্পর্কে যত বেশি জানবেন, তত ভালোভাবে আপনি প্রস্তুত হতে পারবেন। যদি আপনি অন্য কোনো সংস্কৃতি বা ইংরেজিতে পারদর্শী নন এমন শ্রোতার সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, তাহলে গবেষণার গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন সংস্কৃতির বক্তব্য উপস্থাপনের ধরন ভিন্ন হয়। যেমন, চীনা সংস্কৃতিতে বক্তব্যে মূল পয়েন্টগুলো পরোক্ষভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং তারা বক্তৃতার শুরুতেই উপস্থাপনার সারসংক্ষেপ দেয় না। বরং, তারা একটি বাস্তব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বক্তব্য শুরু করে এবং তারপর একটি গল্প বলে। →গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক: ''উদ্বোধনী বিন্যাস, সংগঠনের ধরন, প্রত্যক্ষতা, কণ্ঠস্বরের ধরণ, চোখের যোগাযোগ, অঙ্গভঙ্গি ও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা'' '''''যে কোনো বক্তৃতার জন্য অনুসরণযোগ্য কিছু মৌলিক নির্দেশিকা:''''' * স্ল্যাং বা আঞ্চলিক কথাবার্তা এড়িয়ে চলুন (বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে ব্যবধান থাকতে পারে) * মূল পয়েন্টগুলো হাইলাইট করার জন্য গ্রাফিক্স ব্যবহার করুন (ছবি বিভ্রান্তি দূর করতে বা ভাষাগত বাধা ভাঙতে সহায়ক হতে পারে) * পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করুন, খণ্ড বাক্য নয় (খণ্ড বাক্য আপনাকে অজ্ঞ বা অলস প্রমাণ করতে পারে) * অঙ্গভঙ্গি এড়িয়ে চলুন (একটি বন্ধুসুলভ অঙ্গভঙ্গি অন্য সংস্কৃতিতে অসম্মানজনক মনে হতে পারে) * পেশাগত জার্গন বা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের শব্দাবলি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন * কখনই বৈষম্য করবেন না (এতে বয়স, লিঙ্গ, জাতি, জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত) * দৃষ্টির ভালো যোগাযোগ বজায় রাখুন (শুধু কয়েকজনের সঙ্গে নয়, পুরো শ্রোতাদের সঙ্গে) * স্পষ্টভাবে কথা বলুন (আপনার আত্মবিশ্বাস ও জ্ঞানের পরিচয় দিতে হবে) == আপনি কীভাবে আপনার ভূমিকা শুরু করবেন? == '''''আপনি কি একটি উদ্ধৃতি, পরিসংখ্যান, ব্যক্তিগত গল্প, রসিকতা, নাকি একটি ওভারভিউ দিয়ে শুরু করবেন?''''' '''''শুরুর অংশ:''''' একটি বক্তৃতা শুরু করার অনেক উপায় রয়েছে ভূমিকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে। একটি উদ্ধৃতি, পরিসংখ্যান, ব্যক্তিগত গল্প, কিংবা এমনকি একটি রসিকতা দিয়ে শুরু করাও ভালো বিকল্প হতে পারে; তবে এগুলো কেবল সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলেই কার্যকর হয়। তাই সতর্ক থাকুন, কারণ রসিকতা তখনই হাস্যকর হয় যখন তা সঠিকভাবে বলা হয়, এবং যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয়, তবে তা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করতে পারে। আপনি যদি রসিকতা দিয়ে শুরু করেন, তাহলে অবশ্যই যৌন, ধর্মীয় এবং বর্ণগত বিষয়বস্তু এড়িয়ে চলুন। একটি পরিসংখ্যান, উদ্ধৃতি, বা ব্যক্তিগত গল্প দিয়ে শুরু করার বিষয়ে, আপনি যেটিই বেছে নিন না কেন, নিশ্চিত হোন যে সেটি আপনার বক্তৃতার মূল বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। '''''ওভারভিউ (সংক্ষিপ্ত বিবরণ):''''' আপনি যেভাবেই শুরু করুন না কেন, এরপর একটি ওভারভিউ আসা উচিত, অথবা আপনি সরাসরি ওভারভিউ দিয়েই শুরু করতে পারেন। আনুষ্ঠানিক বক্তৃতাগুলো সাধারণত ওভারভিউ দিয়েই শুরু হয়। যদি আপনি নিশ্চিত না হন শ্রোতারা একটি রসিকতা বা চমকপ্রদ পরিসংখ্যানে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তাহলে ওভারভিউ দিয়েই শুরু করাই উত্তম। আপনার ভূমিকার ওভারভিউতে থাকা উচিত: আপনার বিষয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, সেই বিষয়টি শ্রোতাদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা, আপনার উপস্থাপনার গঠন সম্পর্কে পূর্বাভাস, এবং প্রয়োজনে কিছু প্রেক্ষাপটগত তথ্য। == আপনার বক্তৃতার মূল অংশে কী থাকা উচিত এবং কী থাকা উচিত নয় == আপনার বক্তৃতার মূল অংশটি এমনভাবে গঠিত হওয়া উচিত যাতে আপনি আপনার মূল উদ্দেশ্যগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা ও সম্প্রসারিত করতে পারেন—মূল পয়েন্ট, উপ-পয়েন্ট এবং সেই উপ-পয়েন্টগুলোর জন্য সহায়তাকারী তথ্যের মাধ্যমে। চেষ্টা করুন আপনার মূল পয়েন্ট এবং উপ-পয়েন্ট—উভয়ই তিন বা চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে; এটি সহায়তাকারী পয়েন্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনার মূল পয়েন্টগুলো শ্রোতাদের প্রয়োজন ও আগ্রহ অনুযায়ী নির্বাচন করুন। আপনার বক্তব্যগুলোকে একটি যুক্তিপূর্ণ কাঠামো অনুযায়ী সাজান, শব্দ ও বাক্যাংশগুলো যেখানেই সম্ভব সংক্ষিপ্ত করুন, এবং কেবল দেখতে কেমন লাগে তা নয়, বরং উচ্চারণে কেমন শোনায় তাও বিবেচনা করুন। লেখার সময় শ্রোতাদের কথা মাথায় রাখুন, এবং প্রয়োজনে তথ্য উপস্থাপন করে এবং উদাহরণ দিয়ে একটি ভালো যুক্তি গঠন করুন। নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ব্যবহারের উপর জোর দিতে গিয়ে যেন বক্তৃতার মূল উদ্দেশ্যটি হারিয়ে না যায়। এছাড়াও, পুনরাবৃত্তি ব্যবহার করুন; এটি বক্তৃতায় ছন্দ যোগ করে এবং শ্রোতাদের মনে বক্তব্যটি গেঁথে যেতে সাহায্য করে। '''''জর্জ অরওয়েল ভালো লেখার নিয়ম সংক্ষেপে বলেছেন:''''' * যেখানে একটি ছোট শব্দ চলবে, সেখানে কখনো বড় শব্দ ব্যবহার করবেন না * যদি কোনো শব্দ বাদ দেওয়া যায়, তবে অবশ্যই তা বাদ দিন * যেখানে সক্রিয় রূপ ব্যবহার করা যায়, সেখানে নিষ্ক্রিয় রূপ ব্যবহার করবেন না * যদি আপনি একটি সাধারণ ইংরেজি শব্দ খুঁজে পান, তাহলে বিদেশি শব্দ, বৈজ্ঞানিক শব্দ, অথবা জার্গন ব্যবহার করবেন না * এই নিয়মগুলোর যেকোনো একটি ভাঙতে হবে তবুও বর্বর কিছু বলার চেয়ে তা ভালো == আপনার উপসংহার ভুলবেন না! == সবচেয়ে শেষের অংশটিই সাধারণত শ্রোতারা সবচেয়ে ভালোভাবে মনে রাখে। আপনার মূল পয়েন্টগুলো একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশে পুনরায় উল্লেখ করুন। আপনি বক্তৃতা শুরু করার জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলোর যেকোনো একটি—একটি পরিসংখ্যান, তথ্য, বা ব্যক্তিগত গল্প ব্যবহার করে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করতে পারেন, তবে মনে রাখবেন, কেবল তখনই করুন যদি তা সরাসরি প্রাসঙ্গিক হয়। যদি সম্ভব হয়, আপনার শ্রোতারা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী করতে পারে তার সংক্ষিপ্তসার দিন, এবং সবশেষে অবশ্যই শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানান। == একটি বক্তৃতার খসড়া রূপরেখার উদাহরণ == {{SAMPLE|sampletext=নমুনা খসড়া : :I. ভূমিকা (উদ্বোধন এবং/অথবা সারসংক্ষেপ) : :*A. সম্ভাষণ (নিজেকে এবং আপনার পদবী পরিচয় দিন) : :*B. মনোযোগ আকর্ষণের উপায় (উদ্ধৃতি, পরিসংখ্যান ইত্যাদি) : :*C. বক্তৃতার উদ্দেশ্য : :*D. মূল পয়েন্টগুলোর পূর্বাভাস (সংক্ষিপ্ত হোন, কারণ আপনি পরে বিস্তারিত আলোচনা করবেন) : : :→পরিবর্তন (এটি যতটা সম্ভব মসৃণভাবে করা গুরুত্বপূর্ণ) : :II. মূল অংশ : :*A. মূল পয়েন্ট #১ :** ১. উপ-পয়েন্ট :*** ক. সমর্থন :** ২. উপ-পয়েন্ট :*** ক. সমর্থন :*** খ. সমর্থন : :*B. মূল পয়েন্ট #২ :** ১. উপ-পয়েন্ট :*** ক. সমর্থন :** ২. উপ-পয়েন্ট :*** ক. সমর্থন :*** খ. সমর্থন : :*C. মূল পয়েন্ট #৩ :** ১. উপ-পয়েন্ট :*** ক. সমর্থন :** ২. উপ-পয়েন্ট :*** ক. সমর্থন :*** খ. সমর্থন : :→পরিবর্তন (এটি যতটা সম্ভব মসৃণভাবে করা গুরুত্বপূর্ণ) : : :III. উপসংহার : :*A. সমাপ্তির সংকেত দিন : :*B. বক্তৃতার উদ্দেশ্য পুনরুল্লেখ করুন : :*C. মূল পয়েন্টগুলোর পুনরালোচনা করুন :**১. মূল পয়েন্ট #১ :** ২. মূল পয়েন্ট #২ :** ৩. মূল পয়েন্ট #৩ :*D. স্মরণীয় বক্তব্য বা আহ্বান জানানো (প্রয়োজন হলে) : :*E. শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানান : :|caption=নমুনা খসড়া}} == কখন প্রশ্ন করার জন্য অনুরোধ করা উচিত? == প্রথাগতভাবে, বক্তা তার বক্তৃতা শেষ করার পর এবং শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানানোর পর প্রশ্ন করার জন্য বলেন। তবে সব সময় এমনটা নাও হতে পারে। একজন বক্তা তার বক্তব্য চলাকালীনও শ্রোতাদের থেকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতে পারেন, শুধু প্রতিটি মূল পয়েন্টের মাঝে বিরতি দিয়ে শ্রোতাদের প্রশ্ন করতে বললেই হয়। অন্যদিকে, বক্তা সৌজন্যমূলকভাবে শ্রোতাদের অনুরোধ করতে পারেন যেন তারা সব প্রশ্ন বক্তৃতার শেষে করেন। যদি বক্তা প্রশ্নগুলো শেষে রাখার অনুরোধ না করেন, তবে তাকে মাঝপথে প্রশ্ন আসার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী অনুশীলন করতে হবে। '''''প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরামর্শ:''''' * নিশ্চিত করুন যেন সকল শ্রোতা প্রশ্নটি শুনতে পান; আপনি যদি বড় ঘরে কথা বলছেন, তাহলে প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করুন এবং তারপর উত্তর দিন, যাতে প্রত্যেকেই অবগত থাকে। * যদি আপনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানেন, তাহলে সেটি স্বীকার করুন, মিথ্যা বলবেন না, এবং আপনি যেটুকু প্রাসঙ্গিক তথ্য জানেন, তা ব্যাখ্যা করুন। * যদি কোনো শ্রোতা আপনার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে প্রশ্ন করে, তবে শালীনতা বজায় রাখুন। সৌজন্য এবং শ্রদ্ধার সাথে ভিন্নমতটিকে স্বীকৃতি দিন। * যদি কোনো শ্রোতা আপনার বক্তৃতা চলাকালীন প্রশ্ন করে থামিয়ে দেন, তাহলে সেই প্রশ্নের উত্তর দিন এবং আপনি যেখানে থেমেছিলেন, সেখান থেকেই আবার শুরু করুন। == আপনি কোন ভিজ্যুয়াল এইড ব্যবহার করবেন? == আপনার শ্রোতাদের মূল বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগী রাখতে এবং তা মনে রাখতে সাহায্য করতে, আপনি আপনার বক্তব্য মৌখিকভাবে ও ভিজ্যুয়ালি উভয়ভাবেই উপস্থাপন করা উচিত। ভিজ্যুয়াল এইডগুলি শ্রোতাদের আপনার আলোচ্য বিষয় আরও ভালোভাবে বোঝাতে এবং আপনার উপস্থাপিত পয়েন্টকে আরও জোরালো করতে সাহায্য করে। কোন ধরনের ভিজ্যুয়াল এইড ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণের আগে আপনাকে জানতে হবে কোথায় উপস্থাপনা হবে, কী ধরনের প্রযুক্তি উপলব্ধ থাকবে এবং আপনার শ্রোতারা কারা। চেষ্টা করুন ঘরের বিন্যাস ও আসনবিন্যাস সম্পর্কে আগেই জানার, আসনগুলো সরানো যাবে কিনা (যদি প্রয়োজন হয়), এবং আপনার শ্রোতাদের সংখ্যা কতো হবে। এই সব দিক বিবেচনা করে আপনি ভিজ্যুয়াল এইড বেছে নেবেন। '''চারটি সবচেয়ে সাধারণ ভিজ্যুয়াল এইড:''' * '''পাওয়ারপয়েন্ট''' – এমন একটি ভিজ্যুয়াল এইড যা শব্দ, ভিডিও ক্লিপ, ছবি, চার্ট, টেবিল ও গ্রাফ অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। ''সুবিধাসমূহ'': বড় শ্রোতার জন্য কার্যকর, দ্রুত স্লাইড সম্পাদন সম্ভব, এবং রঙিন ও আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করা যায়। ''অসুবিধাসমূহ'': এটি এমন ঘরে দেখাতে হয় যেখানে হালকা আলো থাকে, যা শ্রোতাদের নোট নেওয়া কঠিন করে তোলে। আসনবিন্যাস, পর্দার আকার ও ঘরের বিন্যাস অনুযায়ী, সবাই স্লাইড দেখতে নাও পেতে পারে। প্রজেক্টর ও কম্পিউটার/ল্যাপটপ প্রয়োজন হয়, যা ব্যয়বহুল এবং ভাড়া করাও কঠিন হতে পারে। এছাড়াও, অনেকেই "খারাপ পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনা" করেন। উপস্থাপনার আগে সঠিক পাওয়ারপয়েন্ট শিষ্টাচার সম্পর্কে জেনে নিন। * '''ওভারহেড ট্রান্সপারেন্সি''' – স্লাইডে লেখা যায় এবং ওভারহেড প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা যায়। ''সুবিধাসমূহ'': শ্রোতাদের সঙ্গে চোখের যোগাযোগ বজায় রাখা যায়, শ্রোতার দিকে তাকিয়ে কথা বলার সময় লেখা যায়, এবং সহজে তৈরি করা যায়। নোট নেওয়ার জন্যও উপযোগী। ''অসুবিধাসমূহ'': এতে কোনো গতি বা শব্দ থাকে না এবং এটি অন্ধকার ঘরে দেখাতে হয়। বড় ও গভীর ঘরে পেছনের সারি থেকে দেখার অসুবিধা হতে পারে। ওভারহেড প্রজেক্টর পুরনো হয়ে যাচ্ছে এবং এতে ব্যবহৃত বাতি পুড়ে যেতে পারে। * '''চকবোর্ড/ড্রাই বোর্ড''' – যেখানে চক বা ড্রাই ইরেজ মার্কার দিয়ে লেখা যায়। ''সুবিধাসমূহ'': পূর্বপ্রস্তুতির দরকার নেই, খুবই নমনীয়, শ্রোতার প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করার জন্য উপযোগী, এবং আলোচনার জন্য দারুণ। দ্রুত, সহজ এবং ব্যবহারযোগ্য। শেখার প্রয়োজন নেই। ''অসুবিধাসমূহ'': বোর্ডে লেখার কারণে উপস্থাপনার গতি কমে যেতে পারে এবং আপনি বোর্ডের দিকে মুখ করে কথা বলতে পারেন, ফলে শ্রোতার সঙ্গে সংযোগ হারাতে পারেন। বড় দলের জন্য উপযোগী নয় এবং খারাপ বানান ও হাতের লেখা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। উপস্থাপনে কোনো শব্দ বা গতি থাকেনা। * '''হ্যান্ডআউট''' – শ্রোতাদের ব্যবহারের জন্য মূল পয়েন্ট ও তথ্যসম্বলিত উপকরণ। ''সুবিধাসমূহ'': ছোট ও বড় উভয় দলের জন্য উপযোগী এবং শ্রোতাদের নোট নেওয়ায় সহায়তা করে। শ্রোতারা পরবর্তীতে তথ্যগুলো দেখতে পারে। উপস্থাপনার মূল বিষয়গুলো আবার তুলে ধরে। ''অসুবিধাসমূহ'': প্রস্তুতি ও কপিয়ারের প্রয়োজন পড়ে। শ্রোতারা আগেই পড়ে ফেলতে পারে বা একবারও হ্যান্ডআউটটি না দেখতেও পারে। উপস্থাপনার জন্য বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। == আপনার ভিজ্যুয়াল এইড যেন সহজে পড়া যায় এমন লেখা ও গ্রাফিক্স ব্যবহার করে == গ্রাফিক্স ব্যবহার করুন! মানুষ শুধুমাত্র লেখার তুলনায় লেখার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ব্যবহার করলে আইটেমগুলোকে দ্রুত শনাক্ত করতে পারে। তবে, ভিজ্যুয়াল এইড তৈরি করার সময় নিশ্চিত করুন যেন লেখা ও গ্রাফিক্স সহজে পড়া যায়। '''লেবেলিং''' • বড় ফন্টে হেডলাইন এবং সাব হেডলাইন ব্যবহার করুন • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য '''বোল্ড''', ''ইটালিক'' অথবা বড় হাতের অক্ষরে লিখুন • উপস্থাপনার উপাদান সংগঠিত করতে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন বা তালিকা তৈরি করুন। এটি যেন দেখতে "মনোরম" হয় (সহজে পড়া যায়) '''চার্ট এবং গ্রাফ''' • উপস্থাপনায় সহায়ক পরিষ্কার তথ্য দিন। প্রয়োজনে চার্ট/গ্রাফে রঙের সমন্বয় করুন • আপনার চার্ট ও গ্রাফ বোঝাতে সংক্ষিপ্ত পাঠ্য ব্যবহার করুন (সংক্ষেপে উচ্চবিন্দু তুলে ধরুন) • পাঠকদের বিভ্রান্ত করতে পারে এমন চার্ট ও গ্রাফ এড়িয়ে চলুন '''শব্দচয়ন ও অক্ষর''' • বড় এবং সহজে পড়া যায় এমন ফন্ট ব্যবহার করুন • সংক্ষিপ্ত ও সহজ ভাষা ব্যবহার করুন যাতে বিভ্রান্তি না হয় • এক বা দুইটি ফন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুন • ফন্টের আকার ও ধরন নির্ধারণের সময় শ্রোতার বয়স বিবেচনায় নিন • স্লাইডের জন্য, প্রতি স্লাইডে ছয় লাইনের বেশি এবং প্রতি লাইনে ছয় শব্দের বেশি ব্যবহার করবেন না → অধিক টেক্সটযুক্ত স্লাইড সাধারণত দেখা যায় এবং এটি এড়ানো সহজ, শুধু কম টেক্সট ব্যবহার করুন '''রং''' • স্পষ্টতা এবং গুরুত্ব বোঝাতে রং ব্যবহার করুন, শুধুমাত্র সাজসজ্জার জন্য নয় • রঙের স্কিম ব্যবহার করুন • পুরো উপস্থাপনায় একই রঙের স্কিম বজায় রাখুন • প্রধান বিষয়বস্তু হাইলাইট করতে বিপরীত রঙ ব্যবহার করুন == একটি সঠিক পাওয়ারপয়েন্ট তৈরি করা == আমরা সকলেই এমন পাওয়ারপয়েন্ট দেখেছি যা অত্যধিক তথ্যপূর্ণ ও সৃজনশীলতার অভাবে বিরক্তিকর। নিচে কিছু সতর্কতা দেওয়া হলো যাতে আপনি পাওয়ারপয়েন্ট শিষ্টাচার অনুসরণ করে একটি সঠিক উপস্থাপনা তৈরি করতে পারেন। * পাওয়ারপয়েন্টে পুরো উপস্থাপনা লিখবেন না। বরং তিন থেকে পাঁচ শব্দের হেডিং ও বুলেট পয়েন্ট তৈরি করুন যা মূল বিষয় নির্দেশ করে। * প্রতি স্লাইডে পাঁচ থেকে সাত লাইনের বেশি দেবেন না। * একটি স্লাইডে বেশি তথ্য গুঁজে না দিয়ে বরং দুটি স্লাইড ব্যবহার করাই ভালো। * "থিম" এর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। (প্রতি স্লাইডে ভিন্ন থিম ব্যবহার করবেন না) * ট্রানজিশন অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। এগুলো আপনার উপস্থাপনাকে উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়, প্রাধান্য পেতে নয়। * রঙের স্কিম নিয়ে সতর্ক থাকুন। এটি আপনার উপস্থাপনাকে উন্নত করার জন্য ব্যবহার করুন। নিশ্চিত করুন যে শ্রোতারা পাঠ্য পড়তে পারে। * আপনার উপস্থাপনায় কী থাকছে তা বোঝাতে একটি রূপরেখা তৈরি করুন যাতে শ্রোতারা জানে কী আশা করা যায়। * অন্তত ১৮ পয়েন্ট ফন্ট ব্যবহার করুন, সাব-বুলেটের জন্য ছোট ফন্ট ব্যবহার করুন। * জটিল এবং পড়তে কষ্ট হয় এমন ফন্ট ব্যবহার করবেন না। * পাঠ্য যেন পটভূমির বিপরীতে দৃশ্যমান হয় এমন রঙ ব্যবহার করুন। == আপনার বক্তৃতার প্রস্তুতি == বক্তৃতার প্রস্তুতির সময় আপনি যেমন উপস্থাপন করতে চান ঠিক তেমন করেই অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে হলো, অনুশীলনের সময় ভিজ্যুয়াল এইড ব্যবহার করা আবশ্যক। এতে স্লাইড পরিবর্তনের সময় স্বাভাবিকভাবে রূপান্তর করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। সময় বিবেচনায় নিন – দীর্ঘ বক্তৃতা হলেও শ্রোতাদের জন্য এটি কঠিন হতে পারে। সাধারণত, মানুষ প্রায় বিশ মিনিটের বেশি মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। ফলে, যদি বক্তৃতা দীর্ঘ হয়, তাহলে সেটি দুই অংশে ভাগ করে দিন। এতে শ্রোতারা একটু বিরতি পাবে এবং নতুন করে মনোযোগ দিতে পারবে। '''''অনুশীলন''''' * মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপনের সময় সাবধান থাকুন; এ সময়েই সাধারণত সবচেয়ে বেশি ভুল হয়। * আলাপচারিতার ভঙ্গিতে কথা বলুন। আপনার শ্রোতাদের সঙ্গে '''কথা বলুন''', তাদের উপর '''বক্তৃতা ঝাড়বেন''' না। * ব্যাঘাত এবং প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত থাকুন। উপস্থাপনার শেষে প্রশ্নোত্তরের জন্য নির্দিষ্ট সময় রাখুন। * গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বলার পরে এবং একটি পয়েন্ট থেকে আরেকটিতে যাওয়ার সময় থেমে যান। এতে শ্রোতারা তথ্য ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারবে। * গ্রাফিক্স সহ অনুশীলন করুন এবং তা বক্তৃতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করুন। * শুধুমাত্র আপনি যখন গ্রাফিক্স নিয়ে কথা বলছেন তখনই তা প্রদর্শন করুন। গ্রাফিক্স আপনার বক্তব্যকে সহায়তা করবে, বাধা দিবেনা। * অনুশীলনের সময় প্রকৃত উপস্থাপনার মতো গতি বজায় রেখে সময় পরিমাপ করুন। * অন্যদের সামনে অনুশীলন করুন। প্রতিক্রিয়া আপনার বক্তৃতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং দুর্বলতা চিহ্নিত করতে সহায়ক। * সম্ভব হলে, যেই স্থানে বক্তৃতা দেবেন সেই জায়গায় অনুশীলন করুন। এতে সেই পরিবেশে আপনি আরামদায়ক অনুভব করবেন। * আপনার বক্তৃতা জোরে বলুন বা রেকর্ড করে শুনুন। এতে ভাষা প্রয়োগের মসৃণতা ও স্পষ্টতা নিশ্চিত হয়। == আপনার বক্তৃতা উপস্থাপন == আপনার উপস্থিতি ও উপস্থাপনার ধরন আপনার বক্তৃতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রোতারা যেন আপনাকে সম্মান করে ও গুরুত্ব দেয় সেজন্য ভালো পোশাক পরুন ও উপস্থাপনার ভঙ্গিতে তা প্রকাশ করুন। আপনার শ্রোতাদের কী ধরনের পোশাক প্রত্যাশা করতে পারে তা বিবেচনা করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক পরিপাটি পোশাক পরতে হয়, তবে কখনো কখনো স্যুট/ড্রেস প্রয়োজন হতে পারে। '''''প্রভাব ফেলতে পোশাক''''' * পুরুষ – বোতামযুক্ত শার্ট ও টাই, (বিকল্পভাবে ব্লেজার), ড্রেস প্যান্ট, ড্রেস জুতা। মুখমণ্ডল পরিষ্কার ও চুল সজ্জিত রাখুন। * নারী – বোতামযুক্ত শার্ট, ব্লাউজ অথবা ভালো মানের সোয়েটার, ড্রেস প্যান্ট অথবা হাঁটুর নিচে দীর্ঘ স্কার্ট, ড্রেস জুতা বা ফ্ল্যাট। অতিরিক্ত মেকআপ নয় এবং সজ্জিত চুল রাখুন। বড় ও ঝুলন্ত গয়না এড়িয়ে চলুন। '''''আপনার বার্তা দিন''''' আত্মবিশ্বাসী এবং পরিপাটি থাকুন; নার্ভাস হয়ে পড়বেন না। নার্ভাস হওয়া স্বাভাবিক, সবাই এটি বোঝে। অনুশীলনের সময় দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করুন এবং তা কাটিয়ে উঠুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর অনুশীলন করুন। অযথা হাত-পা নাড়ানো, মেঝের দিকে তাকানো, এবং বারবার “উঁ-আঁ” বলা এড়িয়ে চলুন। ধীরে ও সহজভাবে শ্বাস নিন এবং গতি বজায় রাখুন। মনে রাখবেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়া। কিছু পয়েন্ট ভুলে গেলে সমস্যা নেই, শুধু মূল বক্তব্য তুলে ধরুন। আপনি যতটা নার্ভাস বোধ করছেন, অন্যদের কাছে তা ততটা দৃশ্যমান নয়। '''''দেহভঙ্গি''''' ছোট বা বড় শ্রোতার সামনে দাঁড়িয়ে উপস্থাপনার সময় দেহভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লেজার পয়েন্টার নাড়াবেন না বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে কলম বা ক্লিপ নিয়ে খেলবেন না। শান্ত ও স্বাভাবিক থাকুন, প্রাণবন্ত মুখাবয়ব তৈরি করুন। সব সময় হাসুন, চোখের যোগাযোগ বজায় রাখুন এবং উপস্থাপনাটি উপভোগ করুন। '''''নার্ভ কমানোর কিছু কৌশল''''' * অনুশীলন করুন – যত বেশি অনুশীলন করবেন, নার্ভাস কম হবেন * আগে পৌঁছে যান * বক্তৃতার আগে কিছু শ্রোতার সঙ্গে কথা বলুন * শুরু করার আগে কয়েক মিনিট আরাম করুন * শুরু করার আগে একবার থেমে যান '''''শ্রোতাদের সম্পৃক্ত করুন''''' বক্তৃতার সময় আপনি আপনার শ্রোতাদের বোঝার মাত্রা যাচাই করতে পারেন। শ্রোতার মুখে বিভ্রান্তির ছাপ দেখলে এগিয়ে যাওয়ার আগে ব্যাখ্যা করুন। চোখের যোগাযোগ রাখুন এবং পুরো সময় নোট দেখে পড়বেন না। বড় শ্রোতা হলে ডানে, বামে এবং সামনে তাকিয়ে কথা বলুন। শুরুতেই শ্রোতার দিকে তাকান, নোটে নয়। আপনি আপনার বিষয় জানেন, তাই নতুন কাউকে পরিচয় করানোর মতো করে নিজেকে ও আপনার বিষয় তুলে ধরুন। ''শ্রোতাদের দিকে তাকানোর টিপস'' * শুরু করার আগে শ্রোতাদের দেখুন * তাকানোর একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন * শ্রোতার মুখাবয়বের নির্দিষ্ট অংশে দৃষ্টি রাখুন * অনুশীলনের সময় চোখের যোগাযোগের অনুশীলন করুন * শ্রোতার মুখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকবেন না == অতিরিক্ত: দলগত উপস্থাপনা == কর্মক্ষেত্রে দলগত উপস্থাপনা এখন অনেক সাধারণ। সাধারণত প্রত্যেক ব্যক্তি প্রকল্পের একটি নির্দিষ্ট অংশে দক্ষ হয়ে তার নিজ অংশ উপস্থাপন করে। '''''দলগত উপস্থাপনার টিপস''''' * আগেই পরিকল্পনা ও বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করুন * ভালোভাবে পরিকল্পনা করুন * ব্যক্তিগত পার্থক্য মেনে নিন * উপস্থাপকদের মধ্যে রূপান্তর প্রক্রিয়া কার্যকর করুন * পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান * একসঙ্গে অনুশীলন করুন * উপস্থাপনার সব অংশ সম্পর্কে পরিচিত থাকুন * যদি বিষয়ের সংযোগ পরিষ্কার না হয়, উপস্থাপকরা তা ব্যাখ্যা করুন == চেকলিস্ট: == '''''আপনার বক্তৃতার প্রস্তুতি''''' * আপনি কোন ধরনের বক্তৃতা উপস্থাপন করবেন? (স্ক্রিপ্টেড, আউটলাইন ভিত্তিক, না কি তাৎক্ষণিক?) * আপনার শ্রোতা কারা? (বয়স, লিঙ্গ, জ্ঞান ইত্যাদি বিবেচনা করুন) * আপনার ভূমিকা কী? (পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করবেন না কি গল্প দিয়ে? আপনি কী বলতে চান?) * বক্তৃতার মূল অংশে কী থাকবে? (মূল বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা) * আপনার উপসংহার কী? (শেষে পরিসংখ্যান দেবেন? মূল বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরুন এবং শ্রোতাদের ধন্যবাদ দিন) * আপনি কখন প্রশ্ন নেবেন? (বক্তৃতার সময় না শেষে?) * আপনি কোন ভিজ্যুয়াল এইড ব্যবহার করবেন? (পাওয়ারপয়েন্ট, সাদা বোর্ড, হ্যান্ডআউট, না কি ওভারহেড?) * আপনার গ্রাফিক্স সহজবোধ্য ও বোধগম্য কি? * অনুশীলন করতে ভুলবেন না! (গ্রাফিক্সসহ!) '''''উপকারী টিপস''''' * বক্তৃতার সময় চুইংগাম খাবেন না * হাতে কলম রাখুন কিন্তু তা নিয়ে খেলবেন না * নার্ভাস হলে শুরু করার আগে গভীর শ্বাস নিন * বড় শ্রোতায় নার্ভাস হলে, প্রথমে একজনের উপর মনোযোগ দিন * জায়গা ভুলে গেলে "উঁ-আঁ" না বলে নোটে শান্তভাবে চোখ দিন * অসুস্থ থাকলে পানি সঙ্গে রাখুন, মাঝে মাঝে পানি পান করতে পারেন * আয়নার সামনে অনুশীলন করুন, নিজের খারাপ অভ্যাস শনাক্ত করতে পারবেন '''''আপনার বক্তৃতা উপস্থাপন''''' * আকর্ষণীয় পোশাক পরুন! * আগে পৌঁছান! * নোট বা স্ক্রিনের দিকে নয়, শ্রোতার দিকে তাকান * শ্রোতাদের সম্পৃক্ত করুন! (তাদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের উপর বক্তৃতা ঝাড়বেন না!) * হাসুন ও উদ্যমের সঙ্গে উপস্থাপন করুন * আপনার বার্তা পৌঁছে দিন * আপনার শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানান! {{BookCat}} l6qnt8as4foy0wb56h9sjw28kerrrpk পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নৈতিকতা/সংস্কৃতি 0 26364 85160 82086 2025-06-22T05:06:08Z Mehedi Abedin 7113 85160 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} == '''বিভিন্ন সংস্কৃতির মূল্যায়ন''' == আজকের দিনগুলিতে অধিকাংশ কর্মস্থলই বহুসংস্কৃতির। কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীরা সাধারণত বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসেন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশ অন্তর্ভুক্ত। পল ভি. অ্যান্ডারসনের লেখা পাঠ্যপুস্তক প্রযুক্তিগত যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে একটি নথি কে পড়বে তা বিবেচনা করা। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখায় এবং কার্যকর লেখকদের দ্বারা বিবেচনা করা উচিত: *'''আশা করা বিস্তারিত পরিমাণ''' - উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি যেমন জাপান, চীন, এবং ফ্রান্স লেখায় কম বিস্তারিত দেয়। একটি উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি মানুষের সাথে কম কিন্তু গভীর সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল; এতে অনেক অজানা সামাজিক নিয়ম এবং বোঝাপড়া থাকে। এই সংস্কৃতির লোকেরা আশা করে যে পাঠকের কাছে যোগাযোগ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে পড়ার আগে থেকেই। উদাহরণস্বরূপ, নির্দেশনায়, ধরে নেওয়া হয় যে পাঠকের পর্যাপ্ত পটভূমি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আছে, তাই আলাদা আলাদা সরঞ্জাম ব্যাখ্যা করার বা প্রতিটি ধাপ দেখানোর প্রয়োজন হয় না। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিরা যেমন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, এবং জার্মানি ধারণা করে যে পাঠকরা পড়ার শুরুতে খুব কমই জানে। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিতে সম্পর্কগুলো সাধারণত সংক্রান্ত এবং নিয়মগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে, যাতে অন্যরা জানে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বিস্তারিত লেখা প্রত্যাশা করে যা পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে। লেখকরা তাদের পাঠক সমাজের সংস্কৃতি বিবেচনা করবেন যাতে অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত তথ্য দ্বারা পাঠকরা অবমানিত না হন। *'''প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এবং নিম্ন স্তরের মধ্যে দূরত্ব''' - যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিম্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে অনেক স্তর ও দূরত্ব থাকে। যখন দূরত্ব বেশি হয়, তখন উর্ধ্বতন ও নিম্নস্তরের কর্মীদের জন্য লেখা সাধারণত বেশি আনুষ্ঠানিক হয়। যেখানে প্রতিষ্ঠান সমতলে সংগঠিত, সেখানে স্তরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ কম আনুষ্ঠানিক হয়। *'''ব্যক্তিগত বনাম দলগত মনোভাব''' - অনেক এশীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি সম্মিলিত, অর্থাৎ মানুষ দলের লক্ষ্য অনুসরণ করে এবং দলের প্রয়োজন মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপের মতো ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতিতে মানুষ ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। লেখকদের জানা উচিত তারা "আমি-কেন্দ্রিক" নাকি "আমরা-কেন্দ্রিক" দর্শকের জন্য লিখছেন। *'''সশরীরে ব্যবসায়িক যোগাযোগ''' - ভিন্ন সংস্কৃতির সহকর্মীদের সাথে সাক্ষাতে কিছু পার্থক্য জানা জরুরি। যেমন, কিছু সংস্কৃতিতে কথা বলার সময় খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়, আবার কিছু সংস্কৃতিতে দূরত্ব পছন্দ করে। কিছু সংস্কৃতিতে চোখের যোগাযোগ ভালো মনে হয়, আবার কিছুতে তা অবজ্ঞাসূচক ধরা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে একজন কর্মচারী তার উর্ধ্বতনকে কখনো বিরোধ বা মতামত দেয় না কারণ তা অবজ্ঞাসূচক মনে হয়। এসব সংস্কৃতিতে সাধারণত প্রশ্ন করা অসম্ভব। *'''সরাসরি বা পরোক্ষ বক্তব্যের পছন্দ''' - যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপে সরাসরি যোগাযোগ পছন্দ, আর জাপান ও কোরিয়ায় সাধারণত পরোক্ষ যোগাযোগ পছন্দ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সময় লেখক সাধারণত দুঃখ প্রকাশ করে কিন্তু দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জানায়। জাপানে সরাসরি প্রত্যাখ্যান অভদ্র মনে হতে পারে। এজন্য জাপানি লেখক বলতে পারেন "এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি," যাতে অনুরোধকারী পুনরায় না জিজ্ঞাসা করে। জাপানে এটি বেশি শালীনতা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটি মিথ্যা আশা দেয়। *'''ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ভিত্তি''' - যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সাধারণত বিষয়ভিত্তিক হয়, যেখানে খরচ, বাস্তবায়নযোগ্যতা, সময়সীমা বিবেচনা করা হয়। আরব সংস্কৃতিতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর বেশি নির্ভর করে। লেখকদের জানা উচিত লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি ভালো নাকি সম্পর্কভিত্তিক যোগাযোগ। *'''ছবি, অঙ্গভঙ্গি, এবং শব্দের ব্যাখ্যা''' - শব্দ, ছবি, অঙ্গভঙ্গি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন অর্থ বহন করে। অপরিচিত দর্শকের কাছে নথি পাঠানোর আগে ছবি কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা জানা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, হাতের অঙ্গভঙ্গি বিশ্বজুড়ে ভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়; তাই হাতের ভঙ্গি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার পাঠকদের অপমান করতে পারে। যেমন, "আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে আশীর্বাদপ্রাপ্ত" ধরনের বাক্য এবং ধর্মীয় রেফারেন্স এড়ানো উচিত। == '''আন্তঃসাংস্কৃতিক পাঠক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন''' == আপনার নথি কে পড়বে তা নির্ধারণ করা প্রায়শই কঠিন। লেখার আগে আপনার পাঠক চিহ্নিত করা জরুরি। যদি আপনি বিভিন্ন মানুষের কাছে লিখেন, তবে তাদের সাংস্কৃতিক পক্ষপাত, অনুমান এবং রীতিনীতি জানা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। পার্থক্য বোঝা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে তারিখ লেখা হয় মাস, দিন, বছর, কিন্তু অন্য দেশে দিন, মাস, বছর। এটা জানলে সময়সীমা ও প্রেরণের বিভ্রান্তি কমে। অন্যান্য জাতীয়তার সম্পর্কে শেখা আপনাকে পাঠকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। পাঠকরা আপনার সাংস্কৃতিক জ্ঞানকে প্রশংসা করবে। === '''অনলাইন উৎস''' === ====[http://www.geert-hofstede.com Geert Hofstede Cultural Dimensions]==== প্রফেসর গিয়ার্ট হফস্টেডে আইবিএমের ৫০ দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলেন। এটি সবচেয়ে বিস্তৃত সাংস্কৃতিক গবেষণাগুলোর একটি। প্রফেসর হফস্টেডে সংস্কৃতিগুলিকে পাওয়ার ডিস্ট্যান্স, ব্যক্তিত্ব, পুরুষত্ব, অনিশ্চয়তা পরিহার এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। এই তথ্য আন্তঃসাংস্কৃতিক লেখাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ====[http://www.cyborlink.com Cyborlink]==== সাইবর্লিংক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ভদ্রতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে তথ্য দেয়। দেশ অনুযায়ী সাজানো, তাই লেখকরা সহজেই তাদের লক্ষ্য পাঠক খুঁজে পায়। সাইবর্লিংকের তথ্য হফস্টেডের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি দেশের পৃষ্ঠায় থাকে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি, আচরণ (খাবার, উপহার, বৈঠক, শিষ্টাচার, আলোচনা), এবং যোগাযোগ (অভিবাদন, পরিচয়, কথোপকথনের নিয়ম) সম্পর্কিত তথ্যসহ দেশের তথ্য, অতিরিক্ত উৎস ও হফস্টেডের বিশ্লেষণ। ====[http://globaledge.msu.edu/ globalEDGE]==== বিশ্বব্যাপীEDGE আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এটি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কেন্দ্র কর্তৃক তৈরি এবং আংশিকভাবে মার্কিন শিক্ষাবিভাগ দ্বারা অর্থায়িত। সাইটটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। রিসোর্স ডেস্ক হাজার হাজার উৎস অন্তর্ভুক্ত, যেমন গবেষণা, সংবাদ, তথ্যকোষ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহৃত শব্দকোষ। কান্ট্রি ইনসাইট বিভাগে ১৯৯টি দেশের তথ্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, এবং সংক্ষিপ্ত দেশ ইতিহাস থাকে। সংস্কৃতি বিভাগ বহুসংস্কৃতি পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, দেশভিত্তিক ব্যবসায়িক ভদ্রতার তথ্য দেয়। === '''অন্যান্য উৎস''' === সহকর্মীরা আন্তঃসাংস্কৃতিক তথ্যের একটি চমৎকার উৎস। যারা আপনাকে ও কোম্পানিকে চেনেন তারা আপনার লক্ষ্য পাঠক সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন। সহকর্মীরা যদি পূর্বে সেই পাঠককে লিখে থাকেন, তবে তারা আপনার লেখাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন। কোম্পানির পূর্বের যোগাযোগ সংরক্ষণও সাহায্য করতে পারে অন্য সংস্কৃতির জন্য কিভাবে লেখা উচিত তা নির্ধারণে। যদি সেই লেখা ভাল গ্রহণযোগ্য হয়, আপনি তার কাঠামো ও শৈলী অনুসরণ করতে পারেন। এমন লেখা যা নতুন অংশীদারিত্ব বা বিক্রয় সৃষ্টি করেছে, সেরাদের মধ্যে অন্যতম। {{BookCat}} === '''অজানা পাঠকগণ''' === প্রায়ই জানা যায় না কে আপনার পাঠক হতে পারে। অনেক ইমেইল বা স্মারকলিপি আপনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পাঠকের বাইরে বহুজনের মাধ্যমে যেতে পারে। যদিও আপনি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য লিখছেন, তবুও "ফ্যান্টম," "ভবিষ্যৎ," এবং "জটিল" পাঠকদের কথা মনে রাখা জরুরি। '''ফ্যান্টম পাঠকগণ''' - বাস্তব কিন্তু নামহীন পাঠকরা ফ্যান্টম পাঠক। তারা "পর্দার পিছনে" থেকে থাকে এবং লেখকের জন্য সাধারণত অজানা। ফ্যান্টম পাঠকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত হল যে যাকে লেখা হয়েছে সে যথেষ্ট উচ্চ পদস্থ নয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ফ্যান্টম পাঠকদের চাহিদা মেটানো জরুরি কারণ তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। '''ভবিষ্যৎ পাঠকগণ''' - লিখিত যোগাযোগ সপ্তাহ, মাস বা বছর পরে ব্যবহার হতে পারে। প্রতিটি কোম্পানির নথি আইনি নথি বলে বিবেচিত হয়, তাই আইনজীবী ও বিচারকরা ভবিষ্যৎ পাঠক হতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকরা পুরনো নথি থেকে তথ্য বা ধারণা খুঁজে নিতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকদের মাথায় রেখে লেখা সময় বাঁচায় এবং নথিকে বিস্তৃত পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। '''জটিল পাঠকগণ''' - যারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পড়েন এমন একগুচ্ছ মানুষের কাছে লেখা জটিল পাঠকগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়। জটিল পাঠকগণের জন্য লেখা আপনাকে বিভিন্ন পটভূমির মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। প্রতিটি পাঠকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সামগ্রিক যোগাযোগকে ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয়। ==='''লিখার সময় মনোযোগী টিপস'''=== *''''''<u>জাতিগত প্রোফাইলিং কখনো করবেন না</u>'''''': জাতিগত অবজ্ঞা, প্রোফাইলিং বা পেশাগত নথিতে অন্য কোনো ধরনের অবজ্ঞাজনক ভাষা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে, আপনার পাঠকের সাথে যতোই ঘনিষ্ঠ হোন না কেন। নথিটি ভুল হাতে গেলে এটি আপনার পক্ষে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেশাগত জগতে এরকম লেখা একেবারেই সহ্য হয় না। ব্যক্তিগত লেখালিখার জন্য এটি সংরক্ষণ করুন। *'''অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবেন না''': পেশাগত জগতে, এমনকি সহকর্মীদের মাঝে লেখালিখিতেও অশ্লীল ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আপনার বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। *'''ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল থাকুন''': 'আশীর্বাদ', 'ঈশ্বর', 'লোভ', 'বাইবেল' বা ধর্মীয় অর্থ বহনকারী শব্দ এড়িয়ে চলুন। ছুটির দিনের নাম উল্লেখ এড়িয়ে চলুন; যেমন, "ক্রিসমাস সিজন"-এর পরিবর্তন "এই ছুটির মরসুমে" ব্যবহার করুন। এতে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বঞ্চিত বা বৈষম্যমূলক বোধ করবে না। এটি শুধু পেশাগত ভদ্রতার নিয়ম। *'''স্ল্যাং এড়িয়ে চলুন''': এটি সমস্ত লেখার জন্য সাধারণ পরামর্শ, তবে স্ল্যাং শব্দ এড়ানো নিশ্চিত করে যে আপনার শব্দগুলি ভুল বোঝা হবে না। *'''বিশ্ব আপনার লেখালিখি পড়ছে এমনভাবে লিখুন''': আপনি যেকোন মাধ্যম যেমন কম্পিউটার, ইমেইল, কাগজে আপনার ভাবনা লিখুন, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার লেখা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আপনি জানবেন না কে পড়বে। তাই কোনো আপত্তিজনক বা ক্ষতিকর তথ্য রাখবেন না। qp04cqtqbqbw1ki02i4cjv28nsav3bu 85161 85160 2025-06-22T05:07:08Z Mehedi Abedin 7113 85161 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} == '''বিভিন্ন সংস্কৃতির মূল্যায়ন''' == আজকের দিনগুলিতে অধিকাংশ কর্মস্থলই বহুসংস্কৃতির। কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীরা সাধারণত বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসেন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশ অন্তর্ভুক্ত। পল ভি. অ্যান্ডারসনের লেখা পাঠ্যপুস্তক প্রযুক্তিগত যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে একটি নথি কে পড়বে তা বিবেচনা করা। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখায় এবং কার্যকর লেখকদের দ্বারা বিবেচনা করা উচিত: *'''আশা করা বিস্তারিত পরিমাণ''' - উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি যেমন জাপান, চীন, এবং ফ্রান্স লেখায় কম বিস্তারিত দেয়। একটি উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি মানুষের সাথে কম কিন্তু গভীর সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল; এতে অনেক অজানা সামাজিক নিয়ম এবং বোঝাপড়া থাকে। এই সংস্কৃতির লোকেরা আশা করে যে পাঠকের কাছে যোগাযোগ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে পড়ার আগে থেকেই। উদাহরণস্বরূপ, নির্দেশনায়, ধরে নেওয়া হয় যে পাঠকের পর্যাপ্ত পটভূমি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আছে, তাই আলাদা আলাদা সরঞ্জাম ব্যাখ্যা করার বা প্রতিটি ধাপ দেখানোর প্রয়োজন হয় না। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিরা যেমন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, এবং জার্মানি ধারণা করে যে পাঠকরা পড়ার শুরুতে খুব কমই জানে। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিতে সম্পর্কগুলো সাধারণত সংক্রান্ত এবং নিয়মগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে, যাতে অন্যরা জানে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বিস্তারিত লেখা প্রত্যাশা করে যা পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে। লেখকরা তাদের পাঠক সমাজের সংস্কৃতি বিবেচনা করবেন যাতে অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত তথ্য দ্বারা পাঠকরা অবমানিত না হন। *'''প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এবং নিম্ন স্তরের মধ্যে দূরত্ব''' - যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিম্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে অনেক স্তর ও দূরত্ব থাকে। যখন দূরত্ব বেশি হয়, তখন উর্ধ্বতন ও নিম্নস্তরের কর্মীদের জন্য লেখা সাধারণত বেশি আনুষ্ঠানিক হয়। যেখানে প্রতিষ্ঠান সমতলে সংগঠিত, সেখানে স্তরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ কম আনুষ্ঠানিক হয়। *'''ব্যক্তিগত বনাম দলগত মনোভাব''' - অনেক এশীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি সম্মিলিত, অর্থাৎ মানুষ দলের লক্ষ্য অনুসরণ করে এবং দলের প্রয়োজন মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপের মতো ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতিতে মানুষ ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। লেখকদের জানা উচিত তারা "আমি-কেন্দ্রিক" নাকি "আমরা-কেন্দ্রিক" দর্শকের জন্য লিখছেন। *'''সশরীরে ব্যবসায়িক যোগাযোগ''' - ভিন্ন সংস্কৃতির সহকর্মীদের সাথে সাক্ষাতে কিছু পার্থক্য জানা জরুরি। যেমন, কিছু সংস্কৃতিতে কথা বলার সময় খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়, আবার কিছু সংস্কৃতিতে দূরত্ব পছন্দ করে। কিছু সংস্কৃতিতে চোখের যোগাযোগ ভালো মনে হয়, আবার কিছুতে তা অবজ্ঞাসূচক ধরা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে একজন কর্মচারী তার উর্ধ্বতনকে কখনো বিরোধ বা মতামত দেয় না কারণ তা অবজ্ঞাসূচক মনে হয়। এসব সংস্কৃতিতে সাধারণত প্রশ্ন করা অসম্ভব। *'''সরাসরি বা পরোক্ষ বক্তব্যের পছন্দ''' - যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপে সরাসরি যোগাযোগ পছন্দ, আর জাপান ও কোরিয়ায় সাধারণত পরোক্ষ যোগাযোগ পছন্দ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সময় লেখক সাধারণত দুঃখ প্রকাশ করে কিন্তু দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জানায়। জাপানে সরাসরি প্রত্যাখ্যান অভদ্র মনে হতে পারে। এজন্য জাপানি লেখক বলতে পারেন "এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি," যাতে অনুরোধকারী পুনরায় না জিজ্ঞাসা করে। জাপানে এটি বেশি শালীনতা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটি মিথ্যা আশা দেয়। *'''ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ভিত্তি''' - যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সাধারণত বিষয়ভিত্তিক হয়, যেখানে খরচ, বাস্তবায়নযোগ্যতা, সময়সীমা বিবেচনা করা হয়। আরব সংস্কৃতিতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর বেশি নির্ভর করে। লেখকদের জানা উচিত লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি ভালো নাকি সম্পর্কভিত্তিক যোগাযোগ। *'''ছবি, অঙ্গভঙ্গি, এবং শব্দের ব্যাখ্যা''' - শব্দ, ছবি, অঙ্গভঙ্গি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন অর্থ বহন করে। অপরিচিত দর্শকের কাছে নথি পাঠানোর আগে ছবি কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা জানা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, হাতের অঙ্গভঙ্গি বিশ্বজুড়ে ভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়; তাই হাতের ভঙ্গি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার পাঠকদের অপমান করতে পারে। যেমন, "আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে আশীর্বাদপ্রাপ্ত" ধরনের বাক্য এবং ধর্মীয় রেফারেন্স এড়ানো উচিত। == '''আন্তঃসাংস্কৃতিক পাঠক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন''' == আপনার নথি কে পড়বে তা নির্ধারণ করা প্রায়শই কঠিন। লেখার আগে আপনার পাঠক চিহ্নিত করা জরুরি। যদি আপনি বিভিন্ন মানুষের কাছে লিখেন, তবে তাদের সাংস্কৃতিক পক্ষপাত, অনুমান এবং রীতিনীতি জানা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। পার্থক্য বোঝা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে তারিখ লেখা হয় মাস, দিন, বছর, কিন্তু অন্য দেশে দিন, মাস, বছর। এটা জানলে সময়সীমা ও প্রেরণের বিভ্রান্তি কমে। অন্যান্য জাতীয়তার সম্পর্কে শেখা আপনাকে পাঠকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। পাঠকরা আপনার সাংস্কৃতিক জ্ঞানকে প্রশংসা করবে। === '''অনলাইন উৎস''' === ====[http://www.geert-hofstede.com Geert Hofstede Cultural Dimensions]==== প্রফেসর গিয়ার্ট হফস্টেডে আইবিএমের ৫০ দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলেন। এটি সবচেয়ে বিস্তৃত সাংস্কৃতিক গবেষণাগুলোর একটি। প্রফেসর হফস্টেডে সংস্কৃতিগুলিকে পাওয়ার ডিস্ট্যান্স, ব্যক্তিত্ব, পুরুষত্ব, অনিশ্চয়তা পরিহার এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। এই তথ্য আন্তঃসাংস্কৃতিক লেখাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ====[http://www.cyborlink.com Cyborlink]==== সাইবর্লিংক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ভদ্রতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে তথ্য দেয়। এখানে দেশ অনুযায়ী সাজানো থাকে, তাই লেখকরা সহজেই তাদের লক্ষ্য পাঠক খুঁজে পায়। সাইবর্লিংকের তথ্য হফস্টেডের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি দেশের পৃষ্ঠায় থাকে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি, আচরণ (খাবার, উপহার, বৈঠক, শিষ্টাচার, আলোচনা), এবং যোগাযোগ (অভিবাদন, পরিচয়, কথোপকথনের নিয়ম) সম্পর্কিত তথ্যসহ দেশের তথ্য, অতিরিক্ত উৎস ও হফস্টেডের বিশ্লেষণ। ====[http://globaledge.msu.edu/ globalEDGE]==== বিশ্বব্যাপীEDGE আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এটি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কেন্দ্র কর্তৃক তৈরি এবং আংশিকভাবে মার্কিন শিক্ষাবিভাগ দ্বারা অর্থায়িত। সাইটটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। রিসোর্স ডেস্ক হাজার হাজার উৎস অন্তর্ভুক্ত, যেমন গবেষণা, সংবাদ, তথ্যকোষ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহৃত শব্দকোষ। কান্ট্রি ইনসাইট বিভাগে ১৯৯টি দেশের তথ্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, এবং সংক্ষিপ্ত দেশ ইতিহাস থাকে। সংস্কৃতি বিভাগ বহুসংস্কৃতি পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, দেশভিত্তিক ব্যবসায়িক ভদ্রতার তথ্য দেয়। === '''অন্যান্য উৎস''' === সহকর্মীরা আন্তঃসাংস্কৃতিক তথ্যের একটি চমৎকার উৎস। যারা আপনাকে ও কোম্পানিকে চেনেন তারা আপনার লক্ষ্য পাঠক সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন। সহকর্মীরা যদি পূর্বে সেই পাঠককে লিখে থাকেন, তবে তারা আপনার লেখাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন। কোম্পানির পূর্বের যোগাযোগ সংরক্ষণও সাহায্য করতে পারে অন্য সংস্কৃতির জন্য কিভাবে লেখা উচিত তা নির্ধারণে। যদি সেই লেখা ভাল গ্রহণযোগ্য হয়, আপনি তার কাঠামো ও শৈলী অনুসরণ করতে পারেন। এমন লেখা যা নতুন অংশীদারিত্ব বা বিক্রয় সৃষ্টি করেছে, সেরাদের মধ্যে অন্যতম। {{BookCat}} === '''অজানা পাঠকগণ''' === প্রায়ই জানা যায় না কে আপনার পাঠক হতে পারে। অনেক ইমেইল বা স্মারকলিপি আপনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পাঠকের বাইরে বহুজনের মাধ্যমে যেতে পারে। যদিও আপনি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য লিখছেন, তবুও "ফ্যান্টম," "ভবিষ্যৎ," এবং "জটিল" পাঠকদের কথা মনে রাখা জরুরি। '''ফ্যান্টম পাঠকগণ''' - বাস্তব কিন্তু নামহীন পাঠকরা ফ্যান্টম পাঠক। তারা "পর্দার পিছনে" থেকে থাকে এবং লেখকের জন্য সাধারণত অজানা। ফ্যান্টম পাঠকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত হল যে যাকে লেখা হয়েছে সে যথেষ্ট উচ্চ পদস্থ নয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ফ্যান্টম পাঠকদের চাহিদা মেটানো জরুরি কারণ তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। '''ভবিষ্যৎ পাঠকগণ''' - লিখিত যোগাযোগ সপ্তাহ, মাস বা বছর পরে ব্যবহার হতে পারে। প্রতিটি কোম্পানির নথি আইনি নথি বলে বিবেচিত হয়, তাই আইনজীবী ও বিচারকরা ভবিষ্যৎ পাঠক হতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকরা পুরনো নথি থেকে তথ্য বা ধারণা খুঁজে নিতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকদের মাথায় রেখে লেখা সময় বাঁচায় এবং নথিকে বিস্তৃত পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। '''জটিল পাঠকগণ''' - যারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পড়েন এমন একগুচ্ছ মানুষের কাছে লেখা জটিল পাঠকগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়। জটিল পাঠকগণের জন্য লেখা আপনাকে বিভিন্ন পটভূমির মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। প্রতিটি পাঠকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সামগ্রিক যোগাযোগকে ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয়। ==='''লিখার সময় মনোযোগী টিপস'''=== *''''''<u>জাতিগত প্রোফাইলিং কখনো করবেন না</u>'''''': জাতিগত অবজ্ঞা, প্রোফাইলিং বা পেশাগত নথিতে অন্য কোনো ধরনের অবজ্ঞাজনক ভাষা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে, আপনার পাঠকের সাথে যতোই ঘনিষ্ঠ হোন না কেন। নথিটি ভুল হাতে গেলে এটি আপনার পক্ষে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেশাগত জগতে এরকম লেখা একেবারেই সহ্য হয় না। ব্যক্তিগত লেখালিখার জন্য এটি সংরক্ষণ করুন। *'''অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবেন না''': পেশাগত জগতে, এমনকি সহকর্মীদের মাঝে লেখালিখিতেও অশ্লীল ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আপনার বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। *'''ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল থাকুন''': 'আশীর্বাদ', 'ঈশ্বর', 'লোভ', 'বাইবেল' বা ধর্মীয় অর্থ বহনকারী শব্দ এড়িয়ে চলুন। ছুটির দিনের নাম উল্লেখ এড়িয়ে চলুন; যেমন, "ক্রিসমাস সিজন"-এর পরিবর্তন "এই ছুটির মরসুমে" ব্যবহার করুন। এতে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বঞ্চিত বা বৈষম্যমূলক বোধ করবে না। এটি শুধু পেশাগত ভদ্রতার নিয়ম। *'''স্ল্যাং এড়িয়ে চলুন''': এটি সমস্ত লেখার জন্য সাধারণ পরামর্শ, তবে স্ল্যাং শব্দ এড়ানো নিশ্চিত করে যে আপনার শব্দগুলি ভুল বোঝা হবে না। *'''বিশ্ব আপনার লেখালিখি পড়ছে এমনভাবে লিখুন''': আপনি যেকোন মাধ্যম যেমন কম্পিউটার, ইমেইল, কাগজে আপনার ভাবনা লিখুন, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার লেখা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আপনি জানবেন না কে পড়বে। তাই কোনো আপত্তিজনক বা ক্ষতিকর তথ্য রাখবেন না। tdejqxjukbwovvfroe4tfmxuyl71js8 85162 85161 2025-06-22T05:07:30Z Mehedi Abedin 7113 85162 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} == '''বিভিন্ন সংস্কৃতির মূল্যায়ন''' == আজকের দিনগুলিতে অধিকাংশ কর্মস্থলই বহুসংস্কৃতির। কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীরা সাধারণত বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসেন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশ অন্তর্ভুক্ত। পল ভি. অ্যান্ডারসনের লেখা পাঠ্যপুস্তক প্রযুক্তিগত যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে একটি নথি কে পড়বে তা বিবেচনা করা। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখায় এবং কার্যকর লেখকদের দ্বারা বিবেচনা করা উচিত: *'''আশা করা বিস্তারিত পরিমাণ''' - উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি যেমন জাপান, চীন, এবং ফ্রান্স লেখায় কম বিস্তারিত দেয়। একটি উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি মানুষের সাথে কম কিন্তু গভীর সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল; এতে অনেক অজানা সামাজিক নিয়ম এবং বোঝাপড়া থাকে। এই সংস্কৃতির লোকেরা আশা করে যে পাঠকের কাছে যোগাযোগ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে পড়ার আগে থেকেই। উদাহরণস্বরূপ, নির্দেশনায়, ধরে নেওয়া হয় যে পাঠকের পর্যাপ্ত পটভূমি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আছে, তাই আলাদা আলাদা সরঞ্জাম ব্যাখ্যা করার বা প্রতিটি ধাপ দেখানোর প্রয়োজন হয় না। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিরা যেমন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, এবং জার্মানি ধারণা করে যে পাঠকরা পড়ার শুরুতে খুব কমই জানে। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিতে সম্পর্কগুলো সাধারণত সংক্রান্ত এবং নিয়মগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে, যাতে অন্যরা জানে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বিস্তারিত লেখা প্রত্যাশা করে যা পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে। লেখকরা তাদের পাঠক সমাজের সংস্কৃতি বিবেচনা করবেন যাতে অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত তথ্য দ্বারা পাঠকরা অবমানিত না হন। *'''প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এবং নিম্ন স্তরের মধ্যে দূরত্ব''' - যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিম্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে অনেক স্তর ও দূরত্ব থাকে। যখন দূরত্ব বেশি হয়, তখন উর্ধ্বতন ও নিম্নস্তরের কর্মীদের জন্য লেখা সাধারণত বেশি আনুষ্ঠানিক হয়। যেখানে প্রতিষ্ঠান সমতলে সংগঠিত, সেখানে স্তরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ কম আনুষ্ঠানিক হয়। *'''ব্যক্তিগত বনাম দলগত মনোভাব''' - অনেক এশীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি সম্মিলিত, অর্থাৎ মানুষ দলের লক্ষ্য অনুসরণ করে এবং দলের প্রয়োজন মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপের মতো ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতিতে মানুষ ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। লেখকদের জানা উচিত তারা "আমি-কেন্দ্রিক" নাকি "আমরা-কেন্দ্রিক" দর্শকের জন্য লিখছেন। *'''সশরীরে ব্যবসায়িক যোগাযোগ''' - ভিন্ন সংস্কৃতির সহকর্মীদের সাথে সাক্ষাতে কিছু পার্থক্য জানা জরুরি। যেমন, কিছু সংস্কৃতিতে কথা বলার সময় খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়, আবার কিছু সংস্কৃতিতে দূরত্ব পছন্দ করে। কিছু সংস্কৃতিতে চোখের যোগাযোগ ভালো মনে হয়, আবার কিছুতে তা অবজ্ঞাসূচক ধরা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে একজন কর্মচারী তার উর্ধ্বতনকে কখনো বিরোধ বা মতামত দেয় না কারণ তা অবজ্ঞাসূচক মনে হয়। এসব সংস্কৃতিতে সাধারণত প্রশ্ন করা অসম্ভব। *'''সরাসরি বা পরোক্ষ বক্তব্যের পছন্দ''' - যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপে সরাসরি যোগাযোগ পছন্দ, আর জাপান ও কোরিয়ায় সাধারণত পরোক্ষ যোগাযোগ পছন্দ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সময় লেখক সাধারণত দুঃখ প্রকাশ করে কিন্তু দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জানায়। জাপানে সরাসরি প্রত্যাখ্যান অভদ্র মনে হতে পারে। এজন্য জাপানি লেখক বলতে পারেন "এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি," যাতে অনুরোধকারী পুনরায় না জিজ্ঞাসা করে। জাপানে এটি বেশি শালীনতা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটি মিথ্যা আশা দেয়। *'''ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ভিত্তি''' - যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সাধারণত বিষয়ভিত্তিক হয়, যেখানে খরচ, বাস্তবায়নযোগ্যতা, সময়সীমা বিবেচনা করা হয়। আরব সংস্কৃতিতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর বেশি নির্ভর করে। লেখকদের জানা উচিত লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি ভালো নাকি সম্পর্কভিত্তিক যোগাযোগ। *'''ছবি, অঙ্গভঙ্গি, এবং শব্দের ব্যাখ্যা''' - শব্দ, ছবি, অঙ্গভঙ্গি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন অর্থ বহন করে। অপরিচিত দর্শকের কাছে নথি পাঠানোর আগে ছবি কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা জানা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, হাতের অঙ্গভঙ্গি বিশ্বজুড়ে ভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়; তাই হাতের ভঙ্গি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার পাঠকদের অপমান করতে পারে। যেমন, "আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে আশীর্বাদপ্রাপ্ত" ধরনের বাক্য এবং ধর্মীয় রেফারেন্স এড়ানো উচিত। == '''আন্তঃসাংস্কৃতিক পাঠক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন''' == আপনার নথি কে পড়বে তা নির্ধারণ করা প্রায়শই কঠিন। লেখার আগে আপনার পাঠক চিহ্নিত করা জরুরি। যদি আপনি বিভিন্ন মানুষের কাছে লিখেন, তবে তাদের সাংস্কৃতিক পক্ষপাত, অনুমান এবং রীতিনীতি জানা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। পার্থক্য বোঝা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে তারিখ লেখা হয় মাস, দিন, বছর, কিন্তু অন্য দেশে দিন, মাস, বছর। এটা জানলে সময়সীমা ও প্রেরণের বিভ্রান্তি কমে। অন্যান্য জাতীয়তার সম্পর্কে শেখা আপনাকে পাঠকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। পাঠকরা আপনার সাংস্কৃতিক জ্ঞানকে প্রশংসা করবে। === '''অনলাইন উৎস''' === ====[http://www.geert-hofstede.com Geert Hofstede Cultural Dimensions]==== প্রফেসর গিয়ার্ট হফস্টেডে আইবিএমের ৫০ দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলেন। এটি সবচেয়ে বিস্তৃত সাংস্কৃতিক গবেষণাগুলোর একটি। প্রফেসর হফস্টেডে সংস্কৃতিগুলিকে পাওয়ার ডিস্ট্যান্স, ব্যক্তিত্ব, পুরুষত্ব, অনিশ্চয়তা পরিহার এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। এই তথ্য আন্তঃসাংস্কৃতিক লেখাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ====[http://www.cyborlink.com Cyborlink]==== সাইবর্লিংক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ভদ্রতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে তথ্য দেয়। এখানে দেশ অনুযায়ী সাজানো থাকে, তাই লেখকরা সহজেই তাদের লক্ষ্য পাঠক খুঁজে পায়। সাইবর্লিংকের তথ্য হফস্টেডের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি দেশের পৃষ্ঠায় থাকে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি, আচরণ (খাবার, উপহার, বৈঠক, শিষ্টাচার, আলোচনা), এবং যোগাযোগ (অভিবাদন, পরিচয়, কথোপকথনের নিয়ম) সম্পর্কিত তথ্যসহ দেশের তথ্য, অতিরিক্ত উৎস ও হফস্টেডের বিশ্লেষণ। ====[http://globaledge.msu.edu/ globalEDGE]==== গ্লোবালএইজ আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এটি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কেন্দ্র কর্তৃক তৈরি এবং আংশিকভাবে মার্কিন শিক্ষাবিভাগ দ্বারা অর্থায়িত। সাইটটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। রিসোর্স ডেস্ক হাজার হাজার উৎস অন্তর্ভুক্ত, যেমন গবেষণা, সংবাদ, তথ্যকোষ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহৃত শব্দকোষ। কান্ট্রি ইনসাইট বিভাগে ১৯৯টি দেশের তথ্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, এবং সংক্ষিপ্ত দেশ ইতিহাস থাকে। সংস্কৃতি বিভাগ বহুসংস্কৃতি পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, দেশভিত্তিক ব্যবসায়িক ভদ্রতার তথ্য দেয়। === '''অন্যান্য উৎস''' === সহকর্মীরা আন্তঃসাংস্কৃতিক তথ্যের একটি চমৎকার উৎস। যারা আপনাকে ও কোম্পানিকে চেনেন তারা আপনার লক্ষ্য পাঠক সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন। সহকর্মীরা যদি পূর্বে সেই পাঠককে লিখে থাকেন, তবে তারা আপনার লেখাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন। কোম্পানির পূর্বের যোগাযোগ সংরক্ষণও সাহায্য করতে পারে অন্য সংস্কৃতির জন্য কিভাবে লেখা উচিত তা নির্ধারণে। যদি সেই লেখা ভাল গ্রহণযোগ্য হয়, আপনি তার কাঠামো ও শৈলী অনুসরণ করতে পারেন। এমন লেখা যা নতুন অংশীদারিত্ব বা বিক্রয় সৃষ্টি করেছে, সেরাদের মধ্যে অন্যতম। {{BookCat}} === '''অজানা পাঠকগণ''' === প্রায়ই জানা যায় না কে আপনার পাঠক হতে পারে। অনেক ইমেইল বা স্মারকলিপি আপনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পাঠকের বাইরে বহুজনের মাধ্যমে যেতে পারে। যদিও আপনি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য লিখছেন, তবুও "ফ্যান্টম," "ভবিষ্যৎ," এবং "জটিল" পাঠকদের কথা মনে রাখা জরুরি। '''ফ্যান্টম পাঠকগণ''' - বাস্তব কিন্তু নামহীন পাঠকরা ফ্যান্টম পাঠক। তারা "পর্দার পিছনে" থেকে থাকে এবং লেখকের জন্য সাধারণত অজানা। ফ্যান্টম পাঠকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত হল যে যাকে লেখা হয়েছে সে যথেষ্ট উচ্চ পদস্থ নয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ফ্যান্টম পাঠকদের চাহিদা মেটানো জরুরি কারণ তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। '''ভবিষ্যৎ পাঠকগণ''' - লিখিত যোগাযোগ সপ্তাহ, মাস বা বছর পরে ব্যবহার হতে পারে। প্রতিটি কোম্পানির নথি আইনি নথি বলে বিবেচিত হয়, তাই আইনজীবী ও বিচারকরা ভবিষ্যৎ পাঠক হতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকরা পুরনো নথি থেকে তথ্য বা ধারণা খুঁজে নিতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকদের মাথায় রেখে লেখা সময় বাঁচায় এবং নথিকে বিস্তৃত পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। '''জটিল পাঠকগণ''' - যারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পড়েন এমন একগুচ্ছ মানুষের কাছে লেখা জটিল পাঠকগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়। জটিল পাঠকগণের জন্য লেখা আপনাকে বিভিন্ন পটভূমির মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। প্রতিটি পাঠকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সামগ্রিক যোগাযোগকে ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয়। ==='''লিখার সময় মনোযোগী টিপস'''=== *''''''<u>জাতিগত প্রোফাইলিং কখনো করবেন না</u>'''''': জাতিগত অবজ্ঞা, প্রোফাইলিং বা পেশাগত নথিতে অন্য কোনো ধরনের অবজ্ঞাজনক ভাষা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে, আপনার পাঠকের সাথে যতোই ঘনিষ্ঠ হোন না কেন। নথিটি ভুল হাতে গেলে এটি আপনার পক্ষে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেশাগত জগতে এরকম লেখা একেবারেই সহ্য হয় না। ব্যক্তিগত লেখালিখার জন্য এটি সংরক্ষণ করুন। *'''অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবেন না''': পেশাগত জগতে, এমনকি সহকর্মীদের মাঝে লেখালিখিতেও অশ্লীল ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আপনার বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। *'''ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল থাকুন''': 'আশীর্বাদ', 'ঈশ্বর', 'লোভ', 'বাইবেল' বা ধর্মীয় অর্থ বহনকারী শব্দ এড়িয়ে চলুন। ছুটির দিনের নাম উল্লেখ এড়িয়ে চলুন; যেমন, "ক্রিসমাস সিজন"-এর পরিবর্তন "এই ছুটির মরসুমে" ব্যবহার করুন। এতে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বঞ্চিত বা বৈষম্যমূলক বোধ করবে না। এটি শুধু পেশাগত ভদ্রতার নিয়ম। *'''স্ল্যাং এড়িয়ে চলুন''': এটি সমস্ত লেখার জন্য সাধারণ পরামর্শ, তবে স্ল্যাং শব্দ এড়ানো নিশ্চিত করে যে আপনার শব্দগুলি ভুল বোঝা হবে না। *'''বিশ্ব আপনার লেখালিখি পড়ছে এমনভাবে লিখুন''': আপনি যেকোন মাধ্যম যেমন কম্পিউটার, ইমেইল, কাগজে আপনার ভাবনা লিখুন, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার লেখা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আপনি জানবেন না কে পড়বে। তাই কোনো আপত্তিজনক বা ক্ষতিকর তথ্য রাখবেন না। sbenxigqqh4dy0zlfm3b6ouu1e4nps6 85163 85162 2025-06-22T05:08:09Z Mehedi Abedin 7113 85163 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} == '''বিভিন্ন সংস্কৃতির মূল্যায়ন''' == আজকের দিনগুলিতে অধিকাংশ কর্মস্থলই বহুসংস্কৃতির। কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীরা সাধারণত বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসেন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশ অন্তর্ভুক্ত। পল ভি. অ্যান্ডারসনের লেখা পাঠ্যপুস্তক প্রযুক্তিগত যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে একটি নথি কে পড়বে তা বিবেচনা করা। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখায় এবং কার্যকর লেখকদের দ্বারা বিবেচনা করা উচিত: *'''আশা করা বিস্তারিত পরিমাণ''' - উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি যেমন জাপান, চীন, এবং ফ্রান্স লেখায় কম বিস্তারিত দেয়। একটি উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি মানুষের সাথে কম কিন্তু গভীর সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল; এতে অনেক অজানা সামাজিক নিয়ম এবং বোঝাপড়া থাকে। এই সংস্কৃতির লোকেরা আশা করে যে পাঠকের কাছে যোগাযোগ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে পড়ার আগে থেকেই। উদাহরণস্বরূপ, নির্দেশনায়, ধরে নেওয়া হয় যে পাঠকের পর্যাপ্ত পটভূমি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আছে, তাই আলাদা আলাদা সরঞ্জাম ব্যাখ্যা করার বা প্রতিটি ধাপ দেখানোর প্রয়োজন হয় না। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিরা যেমন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, এবং জার্মানি ধারণা করে যে পাঠকরা পড়ার শুরুতে খুব কমই জানে। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিতে সম্পর্কগুলো সাধারণত সংক্রান্ত এবং নিয়মগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে, যাতে অন্যরা জানে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বিস্তারিত লেখা প্রত্যাশা করে যা পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে। লেখকরা তাদের পাঠক সমাজের সংস্কৃতি বিবেচনা করবেন যাতে অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত তথ্য দ্বারা পাঠকরা অবমানিত না হন। *'''প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এবং নিম্ন স্তরের মধ্যে দূরত্ব''' - যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিম্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে অনেক স্তর ও দূরত্ব থাকে। যখন দূরত্ব বেশি হয়, তখন উর্ধ্বতন ও নিম্নস্তরের কর্মীদের জন্য লেখা সাধারণত বেশি আনুষ্ঠানিক হয়। যেখানে প্রতিষ্ঠান সমতলে সংগঠিত, সেখানে স্তরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ কম আনুষ্ঠানিক হয়। *'''ব্যক্তিগত বনাম দলগত মনোভাব''' - অনেক এশীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি সম্মিলিত, অর্থাৎ মানুষ দলের লক্ষ্য অনুসরণ করে এবং দলের প্রয়োজন মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপের মতো ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতিতে মানুষ ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। লেখকদের জানা উচিত তারা "আমি-কেন্দ্রিক" নাকি "আমরা-কেন্দ্রিক" দর্শকের জন্য লিখছেন। *'''সশরীরে ব্যবসায়িক যোগাযোগ''' - ভিন্ন সংস্কৃতির সহকর্মীদের সাথে সাক্ষাতে কিছু পার্থক্য জানা জরুরি। যেমন, কিছু সংস্কৃতিতে কথা বলার সময় খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়, আবার কিছু সংস্কৃতিতে দূরত্ব পছন্দ করে। কিছু সংস্কৃতিতে চোখের যোগাযোগ ভালো মনে হয়, আবার কিছুতে তা অবজ্ঞাসূচক ধরা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে একজন কর্মচারী তার উর্ধ্বতনকে কখনো বিরোধ বা মতামত দেয় না কারণ তা অবজ্ঞাসূচক মনে হয়। এসব সংস্কৃতিতে সাধারণত প্রশ্ন করা অসম্ভব। *'''সরাসরি বা পরোক্ষ বক্তব্যের পছন্দ''' - যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপে সরাসরি যোগাযোগ পছন্দ, আর জাপান ও কোরিয়ায় সাধারণত পরোক্ষ যোগাযোগ পছন্দ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সময় লেখক সাধারণত দুঃখ প্রকাশ করে কিন্তু দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জানায়। জাপানে সরাসরি প্রত্যাখ্যান অভদ্র মনে হতে পারে। এজন্য জাপানি লেখক বলতে পারেন "এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি," যাতে অনুরোধকারী পুনরায় না জিজ্ঞাসা করে। জাপানে এটি বেশি শালীনতা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটি মিথ্যা আশা দেয়। *'''ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ভিত্তি''' - যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সাধারণত বিষয়ভিত্তিক হয়, যেখানে খরচ, বাস্তবায়নযোগ্যতা, সময়সীমা বিবেচনা করা হয়। আরব সংস্কৃতিতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর বেশি নির্ভর করে। লেখকদের জানা উচিত লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি ভালো নাকি সম্পর্কভিত্তিক যোগাযোগ। *'''ছবি, অঙ্গভঙ্গি, এবং শব্দের ব্যাখ্যা''' - শব্দ, ছবি, অঙ্গভঙ্গি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন অর্থ বহন করে। অপরিচিত দর্শকের কাছে নথি পাঠানোর আগে ছবি কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা জানা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, হাতের অঙ্গভঙ্গি বিশ্বজুড়ে ভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়; তাই হাতের ভঙ্গি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার পাঠকদের অপমান করতে পারে। যেমন, "আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে আশীর্বাদপ্রাপ্ত" ধরনের বাক্য এবং ধর্মীয় রেফারেন্স এড়ানো উচিত। == '''আন্তঃসাংস্কৃতিক পাঠক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন''' == আপনার নথি কে পড়বে তা নির্ধারণ করা প্রায়শই কঠিন। লেখার আগে আপনার পাঠক চিহ্নিত করা জরুরি। যদি আপনি বিভিন্ন মানুষের কাছে লিখেন, তবে তাদের সাংস্কৃতিক পক্ষপাত, অনুমান এবং রীতিনীতি জানা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। পার্থক্য বোঝা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে তারিখ লেখা হয় মাস, দিন, বছর, কিন্তু অন্য দেশে দিন, মাস, বছর। এটা জানলে সময়সীমা ও প্রেরণের বিভ্রান্তি কমে। অন্যান্য জাতীয়তার সম্পর্কে শেখা আপনাকে পাঠকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। পাঠকরা আপনার সাংস্কৃতিক জ্ঞানকে প্রশংসা করবে। === '''অনলাইন উৎস''' === ====[http://www.geert-hofstede.com Geert Hofstede Cultural Dimensions]==== প্রফেসর গিয়ার্ট হফস্টেডে আইবিএমের ৫০ দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলেন। এটি সবচেয়ে বিস্তৃত সাংস্কৃতিক গবেষণাগুলোর একটি। প্রফেসর হফস্টেডে সংস্কৃতিগুলিকে পাওয়ার ডিস্ট্যান্স, ব্যক্তিত্ব, পুরুষত্ব, অনিশ্চয়তা পরিহার এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। এই তথ্য আন্তঃসাংস্কৃতিক লেখাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ====[http://www.cyborlink.com Cyborlink]==== সাইবর্লিংক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ভদ্রতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে তথ্য দেয়। এখানে দেশ অনুযায়ী সাজানো থাকে, তাই লেখকরা সহজেই তাদের লক্ষ্য পাঠক খুঁজে পায়। সাইবর্লিংকের তথ্য হফস্টেডের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি দেশের পৃষ্ঠায় থাকে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি, আচরণ (খাবার, উপহার, বৈঠক, শিষ্টাচার, আলোচনা), এবং যোগাযোগ (অভিবাদন, পরিচয়, কথোপকথনের নিয়ম) সম্পর্কিত তথ্যসহ দেশের তথ্য, অতিরিক্ত উৎস ও হফস্টেডের বিশ্লেষণ। ====[http://globaledge.msu.edu/ globalEDGE]==== গ্লোবালএইজ আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এটি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কেন্দ্র কর্তৃক তৈরি এবং আংশিকভাবে মার্কিন শিক্ষাবিভাগ দ্বারা অর্থায়িত। সাইটটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। রিসোর্স ডেস্ক হাজার হাজার উৎস অন্তর্ভুক্ত, যেমন গবেষণা, সংবাদ, তথ্যকোষ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহৃত শব্দকোষ। কান্ট্রি ইনসাইট বিভাগে ১৯৯টি দেশের তথ্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, এবং সংক্ষিপ্ত দেশ ইতিহাস থাকে। সংস্কৃতি বিভাগ বহুসংস্কৃতি পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, দেশভিত্তিক ব্যবসায়িক ভদ্রতার তথ্য দেয়। === '''অন্যান্য উৎস''' === সহকর্মীরা আন্তঃসাংস্কৃতিক তথ্যের একটি চমৎকার উৎস। যারা আপনাকে ও কোম্পানিকে চেনেন তারা আপনার লক্ষ্য পাঠক সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন। সহকর্মীরা যদি পূর্বে সেই পাঠককে লিখে থাকেন, তবে তারা আপনার লেখাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন। অন্য সংস্কৃতির জন্য কিভাবে লেখা উচিত তা নির্ধারণে কোম্পানির পূর্বের যোগাযোগ সংরক্ষণও সাহায্য করতে পারে। যদি সেই লেখা ভাল গ্রহণযোগ্য হয়, আপনি তার কাঠামো ও শৈলী অনুসরণ করতে পারেন। এমন লেখা যা নতুন অংশীদারিত্ব বা বিক্রয় সৃষ্টি করেছে তা সেরাদের মধ্যে অন্যতম। {{BookCat}} === '''অজানা পাঠকগণ''' === প্রায়ই জানা যায় না কে আপনার পাঠক হতে পারে। অনেক ইমেইল বা স্মারকলিপি আপনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পাঠকের বাইরে বহুজনের মাধ্যমে যেতে পারে। যদিও আপনি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য লিখছেন, তবুও "ফ্যান্টম," "ভবিষ্যৎ," এবং "জটিল" পাঠকদের কথা মনে রাখা জরুরি। '''ফ্যান্টম পাঠকগণ''' - বাস্তব কিন্তু নামহীন পাঠকরা ফ্যান্টম পাঠক। তারা "পর্দার পিছনে" থেকে থাকে এবং লেখকের জন্য সাধারণত অজানা। ফ্যান্টম পাঠকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত হল যে যাকে লেখা হয়েছে সে যথেষ্ট উচ্চ পদস্থ নয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ফ্যান্টম পাঠকদের চাহিদা মেটানো জরুরি কারণ তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। '''ভবিষ্যৎ পাঠকগণ''' - লিখিত যোগাযোগ সপ্তাহ, মাস বা বছর পরে ব্যবহার হতে পারে। প্রতিটি কোম্পানির নথি আইনি নথি বলে বিবেচিত হয়, তাই আইনজীবী ও বিচারকরা ভবিষ্যৎ পাঠক হতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকরা পুরনো নথি থেকে তথ্য বা ধারণা খুঁজে নিতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকদের মাথায় রেখে লেখা সময় বাঁচায় এবং নথিকে বিস্তৃত পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। '''জটিল পাঠকগণ''' - যারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পড়েন এমন একগুচ্ছ মানুষের কাছে লেখা জটিল পাঠকগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়। জটিল পাঠকগণের জন্য লেখা আপনাকে বিভিন্ন পটভূমির মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। প্রতিটি পাঠকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সামগ্রিক যোগাযোগকে ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয়। ==='''লিখার সময় মনোযোগী টিপস'''=== *''''''<u>জাতিগত প্রোফাইলিং কখনো করবেন না</u>'''''': জাতিগত অবজ্ঞা, প্রোফাইলিং বা পেশাগত নথিতে অন্য কোনো ধরনের অবজ্ঞাজনক ভাষা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে, আপনার পাঠকের সাথে যতোই ঘনিষ্ঠ হোন না কেন। নথিটি ভুল হাতে গেলে এটি আপনার পক্ষে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেশাগত জগতে এরকম লেখা একেবারেই সহ্য হয় না। ব্যক্তিগত লেখালিখার জন্য এটি সংরক্ষণ করুন। *'''অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবেন না''': পেশাগত জগতে, এমনকি সহকর্মীদের মাঝে লেখালিখিতেও অশ্লীল ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আপনার বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। *'''ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল থাকুন''': 'আশীর্বাদ', 'ঈশ্বর', 'লোভ', 'বাইবেল' বা ধর্মীয় অর্থ বহনকারী শব্দ এড়িয়ে চলুন। ছুটির দিনের নাম উল্লেখ এড়িয়ে চলুন; যেমন, "ক্রিসমাস সিজন"-এর পরিবর্তন "এই ছুটির মরসুমে" ব্যবহার করুন। এতে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বঞ্চিত বা বৈষম্যমূলক বোধ করবে না। এটি শুধু পেশাগত ভদ্রতার নিয়ম। *'''স্ল্যাং এড়িয়ে চলুন''': এটি সমস্ত লেখার জন্য সাধারণ পরামর্শ, তবে স্ল্যাং শব্দ এড়ানো নিশ্চিত করে যে আপনার শব্দগুলি ভুল বোঝা হবে না। *'''বিশ্ব আপনার লেখালিখি পড়ছে এমনভাবে লিখুন''': আপনি যেকোন মাধ্যম যেমন কম্পিউটার, ইমেইল, কাগজে আপনার ভাবনা লিখুন, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার লেখা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আপনি জানবেন না কে পড়বে। তাই কোনো আপত্তিজনক বা ক্ষতিকর তথ্য রাখবেন না। o43o1v9rzo5fy3v2v2h09opj3iob5t2 85164 85163 2025-06-22T05:09:16Z Mehedi Abedin 7113 85164 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} == '''বিভিন্ন সংস্কৃতির মূল্যায়ন''' == আজকের দিনগুলিতে অধিকাংশ কর্মস্থলই বহুসংস্কৃতির। কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীরা সাধারণত বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসেন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশ অন্তর্ভুক্ত। পল ভি. অ্যান্ডারসনের লেখা পাঠ্যপুস্তক প্রযুক্তিগত যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে একটি নথি কে পড়বে তা বিবেচনা করা। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখায় এবং কার্যকর লেখকদের দ্বারা বিবেচনা করা উচিত: *'''আশা করা বিস্তারিত পরিমাণ''' - উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি যেমন জাপান, চীন, এবং ফ্রান্স লেখায় কম বিস্তারিত দেয়। একটি উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি মানুষের সাথে কম কিন্তু গভীর সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল; এতে অনেক অজানা সামাজিক নিয়ম এবং বোঝাপড়া থাকে। এই সংস্কৃতির লোকেরা আশা করে যে পাঠকের কাছে যোগাযোগ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে পড়ার আগে থেকেই। উদাহরণস্বরূপ, নির্দেশনায়, ধরে নেওয়া হয় যে পাঠকের পর্যাপ্ত পটভূমি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আছে, তাই আলাদা আলাদা সরঞ্জাম ব্যাখ্যা করার বা প্রতিটি ধাপ দেখানোর প্রয়োজন হয় না। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিরা যেমন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, এবং জার্মানি ধারণা করে যে পাঠকরা পড়ার শুরুতে খুব কমই জানে। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিতে সম্পর্কগুলো সাধারণত সংক্রান্ত এবং নিয়মগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে, যাতে অন্যরা জানে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বিস্তারিত লেখা প্রত্যাশা করে যা পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে। লেখকরা তাদের পাঠক সমাজের সংস্কৃতি বিবেচনা করবেন যাতে অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত তথ্য দ্বারা পাঠকরা অবমানিত না হন। *'''প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এবং নিম্ন স্তরের মধ্যে দূরত্ব''' - যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিম্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে অনেক স্তর ও দূরত্ব থাকে। যখন দূরত্ব বেশি হয়, তখন উর্ধ্বতন ও নিম্নস্তরের কর্মীদের জন্য লেখা সাধারণত বেশি আনুষ্ঠানিক হয়। যেখানে প্রতিষ্ঠান সমতলে সংগঠিত, সেখানে স্তরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ কম আনুষ্ঠানিক হয়। *'''ব্যক্তিগত বনাম দলগত মনোভাব''' - অনেক এশীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি সম্মিলিত, অর্থাৎ মানুষ দলের লক্ষ্য অনুসরণ করে এবং দলের প্রয়োজন মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপের মতো ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতিতে মানুষ ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। লেখকদের জানা উচিত তারা "আমি-কেন্দ্রিক" নাকি "আমরা-কেন্দ্রিক" দর্শকের জন্য লিখছেন। *'''সশরীরে ব্যবসায়িক যোগাযোগ''' - ভিন্ন সংস্কৃতির সহকর্মীদের সাথে সাক্ষাতে কিছু পার্থক্য জানা জরুরি। যেমন, কিছু সংস্কৃতিতে কথা বলার সময় খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়, আবার কিছু সংস্কৃতিতে দূরত্ব পছন্দ করে। কিছু সংস্কৃতিতে চোখের যোগাযোগ ভালো মনে হয়, আবার কিছুতে তা অবজ্ঞাসূচক ধরা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে একজন কর্মচারী তার উর্ধ্বতনকে কখনো বিরোধ বা মতামত দেয় না কারণ তা অবজ্ঞাসূচক মনে হয়। এসব সংস্কৃতিতে সাধারণত প্রশ্ন করা অসম্ভব। *'''সরাসরি বা পরোক্ষ বক্তব্যের পছন্দ''' - যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপে সরাসরি যোগাযোগ পছন্দ, আর জাপান ও কোরিয়ায় সাধারণত পরোক্ষ যোগাযোগ পছন্দ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সময় লেখক সাধারণত দুঃখ প্রকাশ করে কিন্তু দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জানায়। জাপানে সরাসরি প্রত্যাখ্যান অভদ্র মনে হতে পারে। এজন্য জাপানি লেখক বলতে পারেন "এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি," যাতে অনুরোধকারী পুনরায় না জিজ্ঞাসা করে। জাপানে এটি বেশি শালীনতা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটি মিথ্যা আশা দেয়। *'''ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ভিত্তি''' - যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সাধারণত বিষয়ভিত্তিক হয়, যেখানে খরচ, বাস্তবায়নযোগ্যতা, সময়সীমা বিবেচনা করা হয়। আরব সংস্কৃতিতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর বেশি নির্ভর করে। লেখকদের জানা উচিত লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি ভালো নাকি সম্পর্কভিত্তিক যোগাযোগ। *'''ছবি, অঙ্গভঙ্গি, এবং শব্দের ব্যাখ্যা''' - শব্দ, ছবি, অঙ্গভঙ্গি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন অর্থ বহন করে। অপরিচিত দর্শকের কাছে নথি পাঠানোর আগে ছবি কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা জানা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, হাতের অঙ্গভঙ্গি বিশ্বজুড়ে ভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়; তাই হাতের ভঙ্গি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার পাঠকদের অপমান করতে পারে। যেমন, "আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে আশীর্বাদপ্রাপ্ত" ধরনের বাক্য এবং ধর্মীয় রেফারেন্স এড়ানো উচিত। == '''আন্তঃসাংস্কৃতিক পাঠক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন''' == আপনার নথি কে পড়বে তা নির্ধারণ করা প্রায়শই কঠিন। লেখার আগে আপনার পাঠক চিহ্নিত করা জরুরি। যদি আপনি বিভিন্ন মানুষের কাছে লিখেন, তবে তাদের সাংস্কৃতিক পক্ষপাত, অনুমান এবং রীতিনীতি জানা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। পার্থক্য বোঝা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে তারিখ লেখা হয় মাস, দিন, বছর, কিন্তু অন্য দেশে দিন, মাস, বছর। এটা জানলে সময়সীমা ও প্রেরণের বিভ্রান্তি কমে। অন্যান্য জাতীয়তার সম্পর্কে শেখা আপনাকে পাঠকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। পাঠকরা আপনার সাংস্কৃতিক জ্ঞানকে প্রশংসা করবে। === '''অনলাইন উৎস''' === ====[http://www.geert-hofstede.com Geert Hofstede Cultural Dimensions]==== প্রফেসর গিয়ার্ট হফস্টেডে আইবিএমের ৫০ দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলেন। এটি সবচেয়ে বিস্তৃত সাংস্কৃতিক গবেষণাগুলোর একটি। প্রফেসর হফস্টেডে সংস্কৃতিগুলিকে পাওয়ার ডিস্ট্যান্স, ব্যক্তিত্ব, পুরুষত্ব, অনিশ্চয়তা পরিহার এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। এই তথ্য আন্তঃসাংস্কৃতিক লেখাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ====[http://www.cyborlink.com Cyborlink]==== সাইবর্লিংক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ভদ্রতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে তথ্য দেয়। এখানে দেশ অনুযায়ী সাজানো থাকে, তাই লেখকরা সহজেই তাদের লক্ষ্য পাঠক খুঁজে পায়। সাইবর্লিংকের তথ্য হফস্টেডের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি দেশের পৃষ্ঠায় থাকে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি, আচরণ (খাবার, উপহার, বৈঠক, শিষ্টাচার, আলোচনা), এবং যোগাযোগ (অভিবাদন, পরিচয়, কথোপকথনের নিয়ম) সম্পর্কিত তথ্যসহ দেশের তথ্য, অতিরিক্ত উৎস ও হফস্টেডের বিশ্লেষণ। ====[http://globaledge.msu.edu/ globalEDGE]==== গ্লোবালএইজ আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এটি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কেন্দ্র কর্তৃক তৈরি এবং আংশিকভাবে মার্কিন শিক্ষাবিভাগ দ্বারা অর্থায়িত। সাইটটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। রিসোর্স ডেস্ক হাজার হাজার উৎস অন্তর্ভুক্ত, যেমন গবেষণা, সংবাদ, তথ্যকোষ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহৃত শব্দকোষ। কান্ট্রি ইনসাইট বিভাগে ১৯৯টি দেশের তথ্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, এবং সংক্ষিপ্ত দেশ ইতিহাস থাকে। সংস্কৃতি বিভাগ বহুসংস্কৃতি পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, দেশভিত্তিক ব্যবসায়িক ভদ্রতার তথ্য দেয়। === '''অন্যান্য উৎস''' === সহকর্মীরা আন্তঃসাংস্কৃতিক তথ্যের একটি চমৎকার উৎস। যারা আপনাকে ও কোম্পানিকে চেনেন তারা আপনার লক্ষ্য পাঠক সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন। সহকর্মীরা যদি পূর্বে সেই পাঠককে লিখে থাকেন, তবে তারা আপনার লেখাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন। অন্য সংস্কৃতির জন্য কিভাবে লেখা উচিত তা নির্ধারণে কোম্পানির পূর্বের যোগাযোগ সংরক্ষণও সাহায্য করতে পারে। যদি সেই লেখা ভাল গ্রহণযোগ্য হয়, আপনি তার কাঠামো ও শৈলী অনুসরণ করতে পারেন। এমন লেখা যা নতুন অংশীদারিত্ব বা বিক্রয় সৃষ্টি করেছে তা সেরাদের মধ্যে অন্যতম। {{BookCat}} === '''অজানা পাঠকগণ''' === প্রায়ই জানা যায় না কে আপনার পাঠক হতে পারে। অনেক ইমেইল বা স্মারকলিপি আপনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পাঠকের বাইরে বহুজনের মাধ্যমে যেতে পারে। যদিও আপনি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য লিখছেন, তবুও "ফ্যান্টম," "ভবিষ্যৎ," এবং "জটিল" পাঠকদের কথা মনে রাখা জরুরি। '''অশরীরী পাঠকগণ''' - বাস্তব কিন্তু নামহীন পাঠকরা অশরীরী পাঠক। তারা "পর্দার পিছনে" থেকে থাকে এবং লেখকের কাছে সাধারণত অজানা। অশরীরী পাঠকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত হল যে যাকে লেখা হয়েছে সে যথেষ্ট উচ্চ পদস্থ নয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। অশরীরী পাঠকদের চাহিদা মেটানো জরুরি কারণ তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। '''ভবিষ্যৎ পাঠকগণ''' - লিখিত যোগাযোগ সপ্তাহ, মাস বা বছর পরে ব্যবহার হতে পারে। প্রতিটি কোম্পানির নথি আইনি নথি বলে বিবেচিত হয়, তাই আইনজীবী ও বিচারকরা ভবিষ্যৎ পাঠক হতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকরা পুরনো নথি থেকে তথ্য বা ধারণা খুঁজে নিতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকদের মাথায় রেখে লেখা সময় বাঁচায় এবং নথিকে বিস্তৃত পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। '''জটিল পাঠকগণ''' - যারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পড়েন এমন একগুচ্ছ মানুষের কাছে লেখা জটিল পাঠকগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়। জটিল পাঠকগণের জন্য লেখা আপনাকে বিভিন্ন পটভূমির মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। প্রতিটি পাঠকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সামগ্রিক যোগাযোগকে ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয়। ==='''লিখার সময় মনোযোগী টিপস'''=== *''''''<u>জাতিগত প্রোফাইলিং কখনো করবেন না</u>'''''': জাতিগত অবজ্ঞা, প্রোফাইলিং বা পেশাগত নথিতে অন্য কোনো ধরনের অবজ্ঞাজনক ভাষা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে, আপনার পাঠকের সাথে যতোই ঘনিষ্ঠ হোন না কেন। নথিটি ভুল হাতে গেলে এটি আপনার পক্ষে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেশাগত জগতে এরকম লেখা একেবারেই সহ্য হয় না। ব্যক্তিগত লেখালিখার জন্য এটি সংরক্ষণ করুন। *'''অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবেন না''': পেশাগত জগতে, এমনকি সহকর্মীদের মাঝে লেখালিখিতেও অশ্লীল ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আপনার বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। *'''ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল থাকুন''': 'আশীর্বাদ', 'ঈশ্বর', 'লোভ', 'বাইবেল' বা ধর্মীয় অর্থ বহনকারী শব্দ এড়িয়ে চলুন। ছুটির দিনের নাম উল্লেখ এড়িয়ে চলুন; যেমন, "ক্রিসমাস সিজন"-এর পরিবর্তন "এই ছুটির মরসুমে" ব্যবহার করুন। এতে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বঞ্চিত বা বৈষম্যমূলক বোধ করবে না। এটি শুধু পেশাগত ভদ্রতার নিয়ম। *'''স্ল্যাং এড়িয়ে চলুন''': এটি সমস্ত লেখার জন্য সাধারণ পরামর্শ, তবে স্ল্যাং শব্দ এড়ানো নিশ্চিত করে যে আপনার শব্দগুলি ভুল বোঝা হবে না। *'''বিশ্ব আপনার লেখালিখি পড়ছে এমনভাবে লিখুন''': আপনি যেকোন মাধ্যম যেমন কম্পিউটার, ইমেইল, কাগজে আপনার ভাবনা লিখুন, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার লেখা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আপনি জানবেন না কে পড়বে। তাই কোনো আপত্তিজনক বা ক্ষতিকর তথ্য রাখবেন না। jvnp598ak5prkf6t33k35jj2fzw16ik 85165 85164 2025-06-22T05:10:32Z Mehedi Abedin 7113 85165 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} == '''বিভিন্ন সংস্কৃতির মূল্যায়ন''' == আজকের দিনগুলিতে অধিকাংশ কর্মস্থলই বহুসংস্কৃতির। কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীরা সাধারণত বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসেন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশ অন্তর্ভুক্ত। পল ভি. অ্যান্ডারসনের লেখা পাঠ্যপুস্তক প্রযুক্তিগত যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে একটি নথি কে পড়বে তা বিবেচনা করা। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখায় এবং কার্যকর লেখকদের দ্বারা বিবেচনা করা উচিত: *'''আশা করা বিস্তারিত পরিমাণ''' - উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি যেমন জাপান, চীন, এবং ফ্রান্স লেখায় কম বিস্তারিত দেয়। একটি উচ্চ-সন্দর্ভ সংস্কৃতি মানুষের সাথে কম কিন্তু গভীর সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল; এতে অনেক অজানা সামাজিক নিয়ম এবং বোঝাপড়া থাকে। এই সংস্কৃতির লোকেরা আশা করে যে পাঠকের কাছে যোগাযোগ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে পড়ার আগে থেকেই। উদাহরণস্বরূপ, নির্দেশনায়, ধরে নেওয়া হয় যে পাঠকের পর্যাপ্ত পটভূমি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আছে, তাই আলাদা আলাদা সরঞ্জাম ব্যাখ্যা করার বা প্রতিটি ধাপ দেখানোর প্রয়োজন হয় না। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিরা যেমন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, এবং জার্মানি ধারণা করে যে পাঠকরা পড়ার শুরুতে খুব কমই জানে। নীচ-সন্দর্ভ সংস্কৃতিতে সম্পর্কগুলো সাধারণত সংক্রান্ত এবং নিয়মগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে, যাতে অন্যরা জানে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বিস্তারিত লেখা প্রত্যাশা করে যা পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে। লেখকরা তাদের পাঠক সমাজের সংস্কৃতি বিবেচনা করবেন যাতে অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত তথ্য দ্বারা পাঠকরা অবমানিত না হন। *'''প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এবং নিম্ন স্তরের মধ্যে দূরত্ব''' - যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিম্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে অনেক স্তর ও দূরত্ব থাকে। যখন দূরত্ব বেশি হয়, তখন উর্ধ্বতন ও নিম্নস্তরের কর্মীদের জন্য লেখা সাধারণত বেশি আনুষ্ঠানিক হয়। যেখানে প্রতিষ্ঠান সমতলে সংগঠিত, সেখানে স্তরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ কম আনুষ্ঠানিক হয়। *'''ব্যক্তিগত বনাম দলগত মনোভাব''' - অনেক এশীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি সম্মিলিত, অর্থাৎ মানুষ দলের লক্ষ্য অনুসরণ করে এবং দলের প্রয়োজন মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপের মতো ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতিতে মানুষ ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। লেখকদের জানা উচিত তারা "আমি-কেন্দ্রিক" নাকি "আমরা-কেন্দ্রিক" দর্শকের জন্য লিখছেন। *'''সশরীরে ব্যবসায়িক যোগাযোগ''' - ভিন্ন সংস্কৃতির সহকর্মীদের সাথে সাক্ষাতে কিছু পার্থক্য জানা জরুরি। যেমন, কিছু সংস্কৃতিতে কথা বলার সময় খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়, আবার কিছু সংস্কৃতিতে দূরত্ব পছন্দ করে। কিছু সংস্কৃতিতে চোখের যোগাযোগ ভালো মনে হয়, আবার কিছুতে তা অবজ্ঞাসূচক ধরা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে একজন কর্মচারী তার উর্ধ্বতনকে কখনো বিরোধ বা মতামত দেয় না কারণ তা অবজ্ঞাসূচক মনে হয়। এসব সংস্কৃতিতে সাধারণত প্রশ্ন করা অসম্ভব। *'''সরাসরি বা পরোক্ষ বক্তব্যের পছন্দ''' - যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ইউরোপে সরাসরি যোগাযোগ পছন্দ, আর জাপান ও কোরিয়ায় সাধারণত পরোক্ষ যোগাযোগ পছন্দ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সময় লেখক সাধারণত দুঃখ প্রকাশ করে কিন্তু দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জানায়। জাপানে সরাসরি প্রত্যাখ্যান অভদ্র মনে হতে পারে। এজন্য জাপানি লেখক বলতে পারেন "এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি," যাতে অনুরোধকারী পুনরায় না জিজ্ঞাসা করে। জাপানে এটি বেশি শালীনতা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটি মিথ্যা আশা দেয়। *'''ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ভিত্তি''' - যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সাধারণত বিষয়ভিত্তিক হয়, যেখানে খরচ, বাস্তবায়নযোগ্যতা, সময়সীমা বিবেচনা করা হয়। আরব সংস্কৃতিতে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর বেশি নির্ভর করে। লেখকদের জানা উচিত লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি ভালো নাকি সম্পর্কভিত্তিক যোগাযোগ। *'''ছবি, অঙ্গভঙ্গি, এবং শব্দের ব্যাখ্যা''' - শব্দ, ছবি, অঙ্গভঙ্গি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন অর্থ বহন করে। অপরিচিত দর্শকের কাছে নথি পাঠানোর আগে ছবি কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা জানা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, হাতের অঙ্গভঙ্গি বিশ্বজুড়ে ভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়; তাই হাতের ভঙ্গি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার পাঠকদের অপমান করতে পারে। যেমন, "আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে আশীর্বাদপ্রাপ্ত" ধরনের বাক্য এবং ধর্মীয় রেফারেন্স এড়ানো উচিত। == '''আন্তঃসাংস্কৃতিক পাঠক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন''' == আপনার নথি কে পড়বে তা নির্ধারণ করা প্রায়শই কঠিন। লেখার আগে আপনার পাঠক চিহ্নিত করা জরুরি। যদি আপনি বিভিন্ন মানুষের কাছে লিখেন, তবে তাদের সাংস্কৃতিক পক্ষপাত, অনুমান এবং রীতিনীতি জানা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। পার্থক্য বোঝা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে তারিখ লেখা হয় মাস, দিন, বছর, কিন্তু অন্য দেশে দিন, মাস, বছর। এটা জানলে সময়সীমা ও প্রেরণের বিভ্রান্তি কমে। অন্যান্য জাতীয়তার সম্পর্কে শেখা আপনাকে পাঠকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। পাঠকরা আপনার সাংস্কৃতিক জ্ঞানকে প্রশংসা করবে। === '''অনলাইন উৎস''' === ====[http://www.geert-hofstede.com Geert Hofstede Cultural Dimensions]==== প্রফেসর গিয়ার্ট হফস্টেডে আইবিএমের ৫০ দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলেন। এটি সবচেয়ে বিস্তৃত সাংস্কৃতিক গবেষণাগুলোর একটি। প্রফেসর হফস্টেডে সংস্কৃতিগুলিকে পাওয়ার ডিস্ট্যান্স, ব্যক্তিত্ব, পুরুষত্ব, অনিশ্চয়তা পরিহার এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। এই তথ্য আন্তঃসাংস্কৃতিক লেখাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ====[http://www.cyborlink.com Cyborlink]==== সাইবর্লিংক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ভদ্রতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে তথ্য দেয়। এখানে দেশ অনুযায়ী সাজানো থাকে, তাই লেখকরা সহজেই তাদের লক্ষ্য পাঠক খুঁজে পায়। সাইবর্লিংকের তথ্য হফস্টেডের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি দেশের পৃষ্ঠায় থাকে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি, আচরণ (খাবার, উপহার, বৈঠক, শিষ্টাচার, আলোচনা), এবং যোগাযোগ (অভিবাদন, পরিচয়, কথোপকথনের নিয়ম) সম্পর্কিত তথ্যসহ দেশের তথ্য, অতিরিক্ত উৎস ও হফস্টেডের বিশ্লেষণ। ====[http://globaledge.msu.edu/ globalEDGE]==== গ্লোবালএইজ আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এটি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কেন্দ্র কর্তৃক তৈরি এবং আংশিকভাবে মার্কিন শিক্ষাবিভাগ দ্বারা অর্থায়িত। সাইটটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। রিসোর্স ডেস্ক হাজার হাজার উৎস অন্তর্ভুক্ত, যেমন গবেষণা, সংবাদ, তথ্যকোষ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহৃত শব্দকোষ। কান্ট্রি ইনসাইট বিভাগে ১৯৯টি দেশের তথ্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, এবং সংক্ষিপ্ত দেশ ইতিহাস থাকে। সংস্কৃতি বিভাগ বহুসংস্কৃতি পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, দেশভিত্তিক ব্যবসায়িক ভদ্রতার তথ্য দেয়। === '''অন্যান্য উৎস''' === সহকর্মীরা আন্তঃসাংস্কৃতিক তথ্যের একটি চমৎকার উৎস। যারা আপনাকে ও কোম্পানিকে চেনেন তারা আপনার লক্ষ্য পাঠক সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন। সহকর্মীরা যদি পূর্বে সেই পাঠককে লিখে থাকেন, তবে তারা আপনার লেখাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন। অন্য সংস্কৃতির জন্য কিভাবে লেখা উচিত তা নির্ধারণে কোম্পানির পূর্বের যোগাযোগ সংরক্ষণও সাহায্য করতে পারে। যদি সেই লেখা ভাল গ্রহণযোগ্য হয়, আপনি তার কাঠামো ও শৈলী অনুসরণ করতে পারেন। এমন লেখা যা নতুন অংশীদারিত্ব বা বিক্রয় সৃষ্টি করেছে তা সেরাদের মধ্যে অন্যতম। {{BookCat}} === '''অজানা পাঠকগণ''' === প্রায়ই জানা যায় না কে আপনার পাঠক হতে পারে। অনেক ইমেইল বা স্মারকলিপি আপনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পাঠকের বাইরে বহুজনের মাধ্যমে যেতে পারে। যদিও আপনি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য লিখছেন, তবুও "ফ্যান্টম," "ভবিষ্যৎ," এবং "জটিল" পাঠকদের কথা মনে রাখা জরুরি। '''অশরীরী পাঠকগণ''' - বাস্তব কিন্তু নামহীন পাঠকরা অশরীরী পাঠক। তারা "পর্দার পিছনে" থেকে থাকে এবং লেখকের কাছে সাধারণত অজানা। অশরীরী পাঠকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত হল যে যাকে লেখা হয়েছে সে যথেষ্ট উচ্চ পদস্থ নয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। অশরীরী পাঠকদের চাহিদা মেটানো জরুরি কারণ তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। '''ভবিষ্যৎ পাঠকগণ''' - লিখিত যোগাযোগ সপ্তাহ, মাস বা বছর পরে ব্যবহার হতে পারে। প্রতিটি কোম্পানির নথি আইনি নথি বলে বিবেচিত হয়, তাই আইনজীবী ও বিচারকরা ভবিষ্যৎ পাঠক হতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকরা পুরনো নথি থেকে তথ্য বা ধারণা খুঁজে নিতে পারেন। ভবিষ্যৎ পাঠকদের মাথায় রেখে লেখা সময় বাঁচায় এবং নথিকে বিস্তৃত পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। '''জটিল পাঠকগণ''' - যারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পড়েন এমন একগুচ্ছ মানুষের কাছে লেখা জটিল পাঠকগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়। জটিল পাঠকগণের জন্য লেখা আপনাকে বিভিন্ন পটভূমির মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। প্রতিটি পাঠকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সামগ্রিক যোগাযোগকে ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয়। ==='''লিখার সময় মনোযোগী টিপস'''=== *'''''<u>জাতিগত প্রোফাইলিং কখনো করবেন না</u>''''': জাতিগত অবজ্ঞা, প্রোফাইলিং বা পেশাগত নথিতে অন্য কোনো ধরনের অবজ্ঞাজনক ভাষা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে, আপনার পাঠকের সাথে যতোই ঘনিষ্ঠ হোন না কেন। নথিটি ভুল হাতে গেলে এটি আপনার পক্ষে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেশাগত জগতে এরকম লেখা একেবারেই সহ্য করা হয় না। ব্যক্তিগত লেখালিখার জন্য এটি সংরক্ষণ করুন। *'''অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবেন না''': পেশাগত জগতে, এমনকি সহকর্মীদের মাঝে লেখালিখিতেও অশ্লীল ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আপনার বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। *'''ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল থাকুন''': 'আশীর্বাদ', 'ঈশ্বর', 'লোভ', 'বাইবেল' বা ধর্মীয় অর্থ বহনকারী শব্দ এড়িয়ে চলুন। ছুটির দিনের নাম উল্লেখ এড়িয়ে চলুন; যেমন, "ক্রিসমাস সিজন"-এর বদলে "এই ছুটির মরসুমে" ব্যবহার করুন। এতে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বঞ্চিত বা বৈষম্যমূলক বোধ করবে না। এটি শুধু পেশাগত ভদ্রতার নিয়ম। *'''স্ল্যাং এড়িয়ে চলুন''': এটি সমস্ত লেখার জন্য সাধারণ পরামর্শ, তবে স্ল্যাং শব্দ এড়ানো নিশ্চিত করে যে আপনার শব্দগুলি ভুল বোঝা হবে না। *'''বিশ্ব আপনার লেখালিখি পড়ছে এমনভাবে লিখুন''': আপনি যেকোন মাধ্যম যেমন কম্পিউটার, ইমেইল, কাগজে আপনার ভাবনা লিখুন, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার লেখা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আপনি জানবেন না কে পড়বে। তাই কোনো আপত্তিজনক বা ক্ষতিকর তথ্য রাখবেন না। a0i1gbs6sihqrhxazq0apnmxjp3on3x পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/সম্ভাব্যতা 0 26365 85172 82081 2025-06-22T05:39:02Z Mehedi Abedin 7113 85172 wikitext text/x-wiki =সম্ভাব্যতা গবেষণা প্রস্তুতি= == সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন== ==='''সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন/গবেষণা কী?'''=== সম্ভাব্যতা গবেষণা/প্রতিবেদন তৈরির সময় যা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে: *সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন হলো একটি প্রমাণ যা কোনো কাজ সম্পাদনের সম্ভাবনা যাচাই করে। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন তৈরি করা হয় সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের সহায়তা বা প্ররোচিত করার জন্য যাতে তারা উপলব্ধ বিকল্পগুলোর মধ্যে সঠিকটি নির্বাচন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, আপনার বিকল্পই একমাত্র বিকল্প নয়; সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাছে অনেক বিকল্প থাকতে পারে। একটি সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন নির্ধারণ করে যে নিরীক্ষিত কাজটি কি নির্দিষ্ট সম্পদ দিয়ে করা সম্ভব, অথবা কাজ সম্পন্ন করতে কতটুকু সম্পদ প্রয়োজন হবে। সম্ভাব্যতা গবেষণা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উপকারী হতে পারে যেমন ইভেন্ট পরিকল্পনা, অর্থ, অথবা বাড়ির সংস্কার। ===সম্ভাব্যতা গবেষণা কী?=== সম্ভাব্যতা গবেষণা হলো একটি পদ্ধতি যা কোনো প্রকল্পের বাস্তবতা এবং আকাঙ্ক্ষনীয়তা মূল্যায়ন করে। কোনো প্রতিষ্ঠান সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করার আগে জানতে চায় প্রকল্পটি কতটা সফল হবে। কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় প্রদত্ত খরচ, গবেষণার পরিমাণ, অথবা প্রকল্পের বাজারজাতকরণের সম্ভাবনা। প্রদত্ত বা ইনপুট খরচ বোঝা অত্যন্ত জরুরি, কারণ গবেষণা ও সময় ব্যয় করার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্যের জন্য খরচের পূর্বাভাস জানা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় গবেষণার পরে তাদের পরিবর্তন বা পণ্যের প্রচার করলে মানুষ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। নতুন পণ্যের জন্য লড়াই হবে নাকি তা ব্যর্থ হবে? সম্ভাব্যতা গবেষণার উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানকে তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রদান করা যে তারা কি এই পদক্ষেপ অনুসরণ করবে কিনা। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন সাধারণত সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের একটি নির্দিষ্ট দিকেই প্রভাবিত করে। অনেক সময় একটি পথই থাকে, তবে বিকল্প পথও থাকা জরুরি। ==আপনার প্রতিবেদনের জন্য বিবেচ্য প্রশ্নসমূহ== ===সম্ভাব্যতা গবেষণা/প্রতিবেদন তৈরির সময় কী বিবেচনা করবেন?=== সম্ভাব্যতা গবেষণা তৈরি করার সময় বিকল্পগুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় কেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কেন নির্দিষ্ট বিকল্পটি বেছে নিতে হবে। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন সমস্যাটির বিস্তারিত তথ্য থাকতে হবে, যাতে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা বিকল্পগুলো বিবেচনা করতে পারে। ==='''আপনার যুক্তি কি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক?'''=== সম্ভাব্যতা গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ কিনা তা নির্ধারণ করার আগে আপনাকে লক্ষ্য পাঠককে চিনতে হবে। পেশাদার সংস্থাগুলো চায় আপনার যুক্তি তাদের প্রয়োজন বা লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত হোক। পেশাদার পরিবেশে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা আশা করেন যে মূল্যায়নের মানদণ্ড তাদের জানা থাকবে। অর্থাৎ, গবেষণাটি যুক্তিসঙ্গত হতে হবে এবং আপনি যা বাস্তবায়ন করতে চান তার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে। তথ্য আপনার যুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। তবে, সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা জানতে চায় আপনার তথ্যসূত্র কতটা বিশ্বাসযোগ্য। তারা নিশ্চিত হতে চায় যে তারা যে তথ্য পাচ্ছে তা শিল্পে বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে এসেছে। এটি সম্ভবত যে কোনো সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বা গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। কারণ, আপনার তথ্যসূত্র নির্ভরযোগ্য না হলে, তথ্য উপস্থাপনা যতই ভাল হোক, তা মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে। ==='''আপনার বিকল্পগুলো সম্পর্কে কী বিবেচনা করবেন?'''=== আপনার বিকল্পগুলো কিভাবে আপনার নির্ধারিত মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায় তা বোঝা জরুরি। পাঠকরা সাধারণত জানতে চায় আপনার ফলাফল অন্য বিকল্পের সঙ্গে কেমন তুলনা করা যায়। এতে তারা তথ্য এবং ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এন্ডারসনের মতে, এটি যে কোনো সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বা গবেষণার মূল। ==='''আপনি বিকল্পগুলোর বিরুদ্ধে কী পেয়েছেন?'''=== সম্ভাব্য বিকল্পসমূহের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এর উদ্দেশ্য অন্য বিকল্প বা পণ্যের সমালোচনা নয়, বরং আপনার পণ্য বা ধারণাটিকে আলাদা করে তোলা। প্রতিটি বিকল্পের ভালো দিকগুলোর সাধারণ জ্ঞান বা সিদ্ধান্ত প্রদান করা উচিত। কারণ সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা তুলনামূলক ভিত্তি চায়, যাতে তারা আপনার ধারণাটিকে অন্য বিকল্প থেকে আলাদা করতে পারে। ==='''উপসংহারে কী রাখা উচিত?'''=== উপসংহারে আপনাকে বলতে হবে কিভাবে আপনি আপনার ধারণা কোম্পানিতে বাস্তবায়ন করবেন এবং এটি কোম্পানির জন্য কীভাবে লাভজনক হবে। ব্যাখ্যা করুন কেন কোম্পানিকে আপনার প্রস্তাবিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলনা করুন এবং পাঠকদের বুঝতে সাহায্য করুন কোন বিকল্পটি যৌক্তিক ও কার্যকর। বিষয়বস্তুর ওপর আপনার দক্ষতার কথা তুলে ধরুন, যাতে তারা বুঝতে পারে আপনার ধারণা তাদের জন্য সেরা বিকল্প। আপনার দক্ষতার ভিত্তিতে তারা সম্ভবত আপনার পক্ষেই থাকবে, যদি আপনি যুক্তি দক্ষভাবে উপস্থাপন করেন। কোম্পানি আপনার প্রস্তাবিত পদক্ষেপ বেছে নেবে যদি আপনি গবেষণায় মূল পয়েন্টগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরেন। ==একটি সাধারণ সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য== নিচে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন-এর সাতটি উপাদান দেওয়া হলো: *'''প্রস্তাবনা''' - আপনাকে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা বিকল্পগুলো বিবেচনা করে। তাদের বোঝাতে হবে আপনার কাজ বা গবেষণা থেকে তারা কি লাভবান হবে। *'''মানদণ্ড/সীমাবদ্ধতা''' - আপনাকে স্পষ্টভাবে মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে যা আদর্শ ফলাফল নির্ধারণ করবে। এতে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। মানদণ্ড পৃথক একটি অংশে উপস্থাপন করা যেতে পারে বা প্রতিবেদন জুড়েই প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে যেকোনো ক্ষেত্রে মানদণ্ড আগে উল্লিখিত হওয়া উচিত। পাশাপাশি আপনার প্রস্তাবিত সমাধানের সীমাবদ্ধতাও উল্লেখ করতে হবে, যাতে পাঠক বুঝতে পারে কোন সমাধান নিখুঁত নয় এবং তারা তাদের সর্বোত্তম স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। *'''পদ্ধতি''' - নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করা জরুরি। তথ্যসূত্র ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে (ইন্টারনেট, সাক্ষাৎকার, বই ইত্যাদি)। বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি ছাড়া আপনার প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। *'''বিকল্প সমাধানগুলোর বিবরণ''' - প্রতিটি বিকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে হবে। সহজবোধ্য ও পাঠকবান্ধব ফরম্যাটে উপস্থাপন করুন, যাতে পাঠক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। *'''মূল্যায়ন''' - এটি প্রতিবেদনের প্রধান অংশ, যেখানে বিকল্পগুলো নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। গ্রাফ, চার্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে দেখান যে আপনি বিকল্পগুলো ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং কেন আপনার বিকল্পটি শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণ করুন। *'''উপসংহার''' - আপনি যেই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তা স্পষ্ট করুন। বিকল্পগুলো কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন এবং কোন বিকল্প প্রতিষ্ঠানটির জন্য শ্রেষ্ঠ। *'''প্রস্তাব''' - আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে কোন বিকল্প গ্রহণ করা উচিত তা বলুন। *মন্তব্য: উপরের সাতটি উপাদান প্রত্যেকটি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিবেদন থেকে বাদও যেতে পারে। এদের বিন্যাসও প্রতিবেদন অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। বিশেষত, উপসংহার প্রতিবেদন শেষে ছাড়া শুরুতে এবং প্রয়োজন হলে মাঝেও উল্লেখ করা উচিত। ==কার্যনির্বাহী সারাংশ== প্রতিবেদনের শুরুতে একটি কার্যনির্বাহী সারাংশ থাকা উচিত। ২-৩ পৃষ্ঠায় সম্ভাব্যতা গবেষণার মূল পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে, যা সময়কষ্টে থাকা প্রশাসক ও স্কুল বোর্ড সদস্যদের দ্রুত বুঝতে সাহায্য করবে। কার্যনির্বাহী সারাংশ পাঠককে পুরো গবেষণার একটি চিত্র দেয় এবং তারা বিস্তারিত পড়ার আগে এর ধারণা পায়। অনেক সিদ্ধান্তগ্রহণকারী শুধুমাত্র কার্যনির্বাহী সারাংশই পড়তে পারেন, তাই এটি সংক্ষিপ্ত হতে হবে এবং গবেষণার প্রধান ফলাফল ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ==ভূমিকা== '''সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির ভূমিকাংশের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে:''' *পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া: "আমাদের কেন এই বিকল্পগুলো যাচাই করার প্রয়োজন আছে—এগুলো কি গুরুত্বপূর্ণ?" এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, এমন সমস্যাটি শনাক্ত করা জরুরি যা আপনার প্রতিবেদন সমাধান করতে সাহায্য করবে অথবা যেটি আপনার প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করতে চায়। *আপনি যেসব অন্যান্য বিকল্প নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করেছেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা, এবং কীভাবে আপনি এই গবেষণা ও বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেছেন তা বলা। '''নোট''': সাধারণত, সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির ভূমিকাংশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিকল্পগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়। এই ধরণের প্রতিবেদনটির অন্যান্য উপাদান, যেমন মানদণ্ড, পদ্ধতি বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পটভূমি সংক্ষেপে এই অংশে উল্লেখ করা যেতে পারে। == মানদণ্ড/সীমাবদ্ধতা == '''সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন/প্রতিবেদনে কী বিষয় বিবেচনা করবেন।''' আপনি যখন কোন বিষয় বিবেচনার পরিকল্পনা করছেন তখন বোঝা উচিত যে সাধারণত মানদণ্ড নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর এক বা একাধিককে ঘিরে গঠিত হয়। '''আপনার পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ কি আসলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিবে?''' এটি সাধারণত কারিগরি দিকগুলোতে দেখা যায়। আপনাকে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনার পরিকল্পিত পরিবর্তন বা বাস্তবায়ন সত্যিই তেমন কোনো পার্থক্য আনবে কি না। ধরুন আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি দিক উন্নত করতে চাইছেন। তাহলে আপনার পরিবর্তন কি সত্যিই তাদের দক্ষতা ও গতি উন্নত করবে, নাকি এটি উল্টো উৎপাদন ধীর করে ফেলবে? অনেক সময় কর্মপরিবেশে একটি পরিবর্তন কোম্পানির কর্মপদ্ধতিতে উন্নয়ন আনে না। তবে এই বিষয়গুলো অনেক সময় গবেষণা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্পষ্ট হয় না, এবং খারাপ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের পর দেখা যায় নেতিবাচক প্রভাব। '''আপনার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে কী লাগবে?''' যদিও আপনার পরিকল্পনা কাগজে সঠিক ও দক্ষ মনে হতে পারে, তবে বাস্তবে তা প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে। আপনি যদি বিভিন্ন পেশাগত পরিস্থিতি বিবেচনা না করেন, তাহলে পরিকল্পনাটি একটি ক্ষেত্রে সফল হলেও অন্য ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারে। কখনও কখনও পরিকল্পনার জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হতে পারে—যেমন কার্যক্রমে পরিবর্তন, নতুন সরঞ্জাম বা উপকরণের প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় প্রয়োজন হতে পারে তা প্রাপ্ত সুবিধার তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। তাই এটি একটি ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণের মতো করে বিবেচনা করা উচিত। '''বাস্তবায়নের খরচ।''' এটি যে কোনো ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় বিষয় হতে পারে। খরচ কত? শুধু ব্যবসা নয়, যেকোনো পেশাগত ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে লাভ অবশ্যই খরচের চেয়ে বেশি হতে হবে। আপনাকে অনুমান করতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু হলে কত খরচ হবে। আবার ছোট বা বড় ব্যর্থতা হলে খরচ কত হতে পারে সেটাও জানা জরুরি। প্রথম বছর লাভ নাও হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে পরিকল্পনাটি লাভজনক হতে পারে। যেমন: স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি কি উচ্চমূল্যে নতুন যন্ত্রপাতি কিনবে, যদি এটি ভবিষ্যতে মুনাফা বয়ে আনে? '''আপনার ধারণা/পণ্য কি আকর্ষণীয়?''' সরলভাবে বলা যায়, এটি কি বিক্রি হবে? মানুষ কি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকবে, নাকি তারা এটি প্রত্যাখ্যান করবে? অনেক সময় একটি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী পরিবর্তনও সফল হয় না, কারণ এটি মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, কর্মীদের মনোবল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদিও পরিকল্পনা উৎপাদনশীলতা বাড়াবে বলে মনে হয়, কর্মীরা এর প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? কর্মীদের অনুপ্রাণিত না করতে পারলে, উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না। ==পদ্ধতি== ====='''মনে রাখার বিষয়:'''===== আপনার সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির এই অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে আপনি যা আবিষ্কার করেছেন এবং যেভাবে তা করেছেন, তা পাঠকদের জানানোর মাধ্যমে আপনি দেখিয়ে দেন যে আপনার তথ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ। যদি তথ্যপ্রাপ্তির পদ্ধতিগুলো সঠিক হয়, তবে পাঠকেরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ====='''সবকিছু উৎসভিত্তিক'''===== আপনার গবেষণায় কোন উৎস ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করে আপনি কী জানতে চাইছেন তার উপর। উৎসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে (কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়): *একাডেমিক জার্নাল বা প্রতিবেদন *লাইব্রেরি গবেষণা *ফোন কল *সাক্ষাৎকার *প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা *জরিপ *ব্যবহারযোগ্যতা পরীক্ষা *ল্যাব পরীক্ষণ ====='''পর্যাপ্ততা কতটুকু?'''===== প্রতিবেদনভেদে এর দৈর্ঘ্য ও বিশ্লেষণের গভীরতা ভিন্ন হতে পারে। পাঠক এবং প্রসঙ্গ বুঝে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মূল লক্ষ্য হলো এটা বোঝানো যে আপনার প্রতিবেদন বৈধ, কারণ তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগুলো সঠিক। পাঠক-কেন্দ্রিকভাবে লেখা নিশ্চিত করুন। ====='''এটি কোথায় বসবে?'''===== আপনার প্রতিবেদনের এই অংশ কোথায় থাকবে তা নির্ভর করে গবেষণার পদ্ধতির সংখ্যার উপর। যদি মাত্র দুই-একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে ভূমিকাংশেই একেকটি অনুচ্ছেদে সেগুলো ব্যাখ্যা করুন। যদি অনেক পদ্ধতি থাকে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষণ বা তথ্য অংশে যুক্ত করুন। ===='''গুরুত্বপূর্ণ টীকা'''==== যদি আপনি কীভাবে গবেষণা করেছেন তা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়, তাহলে কখনো কখনো পদ্ধতি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে নিশ্চিত করতে হবে পাঠকেরা যেন বুঝতে পারেন তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা বিশ্বাসযোগ্য কি না। {{BookCat}} =পুনঃমূল্যায়নের তালিকা= আপনার সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন সম্পূর্ণ হলে নিচের চেকলিস্ট অনুযায়ী নিশ্চিত করুন প্রতিটি অংশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না। '''ভূমিকা''' #এটি কি ব্যাখ্যা করে আপনি কেন এই গবেষণা করেছেন? #এটি কি প্রাসঙ্গিক পটভূমির তথ্য প্রদান করে? #এটি কি আপনার অনুসন্ধান করা বিকল্প বা পদক্ষেপগুলো সনাক্ত করে? #এটি কি পাঠককে এই গবেষণাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করতে উদ্বুদ্ধ করে? '''মানদণ্ড''' #এটি কি পদক্ষেপ বা বিকল্পের মূল্যায়নের মানদণ্ড নির্ধারণ করে? '''পদ্ধতি''' #এটি কি প্রতিবেদন উপস্থাপিত তথ্য কীভাবে সংগৃহীত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে? #এটি কি পাঠককে বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে? '''বিকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ''' #এটি কি প্রতিটি বিকল্পের সাধারণ বিবরণ দেয়? '''মূল্যায়ন''' #এটি কি মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ বা বিকল্প মূল্যায়ন করে? #এটি কি প্রতিটি মূল্যায়নের জন্য প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন করে? '''উপসংহার''' #এটি কি পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে? #এটি কি সরল ও পরিষ্কারভাবে উপসংহার উপস্থাপন করে? '''সুপারিশ''' #এটি কি কোন বিকল্প বা পদক্ষেপ সুপারিশ করে? #এটি কি স্পষ্টভাবে সুপারিশ উপস্থাপন করে? #এটি কি পাঠককে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে? jfzlw0n70uu9tqy3baf4quhryhkljw4 85173 85172 2025-06-22T05:39:23Z Mehedi Abedin 7113 85173 wikitext text/x-wiki =সম্ভাব্যতা গবেষণা প্রস্তুতি= == সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন== ==='''সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন/গবেষণা কী?'''=== সম্ভাব্যতা গবেষণা/প্রতিবেদন তৈরির সময় যা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে: *সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন হলো একটি প্রমাণ যা কোনো কাজ সম্পাদনের সম্ভাবনা যাচাই করে। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন তৈরি করা হয় সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের সহায়তা বা প্ররোচিত করার জন্য যাতে তারা উপলব্ধ বিকল্পগুলোর মধ্যে সঠিকটি নির্বাচন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, আপনার বিকল্পই একমাত্র বিকল্প নয়; সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাছে অনেক বিকল্প থাকতে পারে। একটি সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন নির্ধারণ করে যে নিরীক্ষিত কাজটি কি নির্দিষ্ট সম্পদ দিয়ে করা সম্ভব, অথবা কাজ সম্পন্ন করতে কতটুকু সম্পদ প্রয়োজন হবে। সম্ভাব্যতা গবেষণা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উপকারী হতে পারে যেমন ইভেন্ট পরিকল্পনা, অর্থ, অথবা বাড়ির সংস্কার। ===সম্ভাব্যতা গবেষণা কী?=== সম্ভাব্যতা গবেষণা হলো একটি পদ্ধতি যা কোনো প্রকল্পের বাস্তবতা এবং আকাঙ্ক্ষনীয়তা মূল্যায়ন করে। কোনো প্রতিষ্ঠান সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করার আগে জানতে চায় প্রকল্পটি কতটা সফল হবে। কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় প্রদত্ত খরচ, গবেষণার পরিমাণ, অথবা প্রকল্পের বাজারজাতকরণের সম্ভাবনা। প্রদত্ত বা ইনপুট খরচ বোঝা অত্যন্ত জরুরি, কারণ গবেষণা ও সময় ব্যয় করার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্যের জন্য খরচের পূর্বাভাস জানা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় গবেষণার পরে তাদের পরিবর্তন বা পণ্যের প্রচার করলে মানুষ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। নতুন পণ্যের জন্য লড়াই হবে নাকি তা ব্যর্থ হবে? সম্ভাব্যতা গবেষণার উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানকে তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রদান করা যে তারা কি এই পদক্ষেপ অনুসরণ করবে কিনা। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন সাধারণত সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের একটি নির্দিষ্ট দিকেই প্রভাবিত করে। অনেক সময় একটি পথই থাকে, তবে বিকল্প পথও থাকা জরুরি। ==আপনার প্রতিবেদনের জন্য বিবেচ্য প্রশ্নসমূহ== ===সম্ভাব্যতা গবেষণা/প্রতিবেদন তৈরির সময় কী বিবেচনা করবেন?=== সম্ভাব্যতা গবেষণা তৈরি করার সময় বিকল্পগুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় কেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কেন নির্দিষ্ট বিকল্পটি বেছে নিতে হবে। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন সমস্যাটির বিস্তারিত তথ্য থাকতে হবে, যাতে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা বিকল্পগুলো বিবেচনা করতে পারে। ==='''আপনার যুক্তি কি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক?'''=== সম্ভাব্যতা গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ কিনা তা নির্ধারণ করার আগে আপনাকে লক্ষ্য পাঠককে চিনতে হবে। পেশাদার সংস্থাগুলো চায় আপনার যুক্তি তাদের প্রয়োজন বা লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত হোক। পেশাদার পরিবেশে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা আশা করেন যে মূল্যায়নের মানদণ্ড তাদের জানা থাকবে। অর্থাৎ, গবেষণাটি যুক্তিসঙ্গত হতে হবে এবং আপনি যা বাস্তবায়ন করতে চান তার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে। তথ্য আপনার যুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। তবে, সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা জানতে চায় আপনার তথ্যসূত্র কতটা বিশ্বাসযোগ্য। তারা নিশ্চিত হতে চায় যে তারা যে তথ্য পাচ্ছে তা শিল্পে বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে এসেছে। এটি সম্ভবত যে কোনো সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বা গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। কারণ, আপনার তথ্যসূত্র নির্ভরযোগ্য না হলে, তথ্য উপস্থাপনা যতই ভাল হোক, তা মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে। ==='''আপনার বিকল্পগুলো সম্পর্কে কী বিবেচনা করবেন?'''=== আপনার বিকল্পগুলো কিভাবে আপনার নির্ধারিত মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায় তা বোঝা জরুরি। পাঠকরা সাধারণত জানতে চায় আপনার ফলাফল অন্য বিকল্পের সঙ্গে কেমন তুলনা করা যায়। এতে তারা তথ্য এবং ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এন্ডারসনের মতে, এটি যে কোনো সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বা গবেষণার মূল। ==='''আপনি বিকল্পগুলোর বিরুদ্ধে কী পেয়েছেন?'''=== সম্ভাব্য বিকল্পসমূহের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এর উদ্দেশ্য অন্য বিকল্প বা পণ্যের সমালোচনা নয়, বরং আপনার পণ্য বা ধারণাটিকে আলাদা করে তোলা। প্রতিটি বিকল্পের ভালো দিকগুলোর সাধারণ জ্ঞান বা সিদ্ধান্ত প্রদান করা উচিত। কারণ সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা তুলনামূলক ভিত্তি চায়, যাতে তারা আপনার ধারণাটিকে অন্য বিকল্প থেকে আলাদা করতে পারে। ==='''উপসংহারে কী রাখা উচিত?'''=== উপসংহারে আপনাকে বলতে হবে কিভাবে আপনি আপনার ধারণা কোম্পানিতে বাস্তবায়ন করবেন এবং এটি কোম্পানির জন্য কীভাবে লাভজনক হবে। ব্যাখ্যা করুন কেন কোম্পানিকে আপনার প্রস্তাবিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলনা করুন এবং পাঠকদের বুঝতে সাহায্য করুন কোন বিকল্পটি যৌক্তিক ও কার্যকর। বিষয়বস্তুর ওপর আপনার দক্ষতার কথা তুলে ধরুন, যাতে তারা বুঝতে পারে আপনার ধারণা তাদের জন্য সেরা বিকল্প। আপনার দক্ষতার ভিত্তিতে তারা সম্ভবত আপনার পক্ষেই থাকবে, যদি আপনি যুক্তি দক্ষভাবে উপস্থাপন করেন। কোম্পানি আপনার প্রস্তাবিত পদক্ষেপ বেছে নেবে যদি আপনি গবেষণায় মূল পয়েন্টগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরেন। ==একটি সাধারণ সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য== নিচে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন-এর সাতটি উপাদান দেওয়া হলো: *'''প্রস্তাবনা''' - আপনাকে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা বিকল্পগুলো বিবেচনা করে। তাদের বোঝাতে হবে আপনার কাজ বা গবেষণা থেকে তারা কি লাভবান হবে। *'''মানদণ্ড/সীমাবদ্ধতা''' - আপনাকে স্পষ্টভাবে মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে যা আদর্শ ফলাফল নির্ধারণ করবে। এতে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। মানদণ্ড পৃথক একটি অংশে উপস্থাপন করা যেতে পারে বা প্রতিবেদন জুড়েই প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে যেকোনো ক্ষেত্রে মানদণ্ড আগে উল্লিখিত হওয়া উচিত। পাশাপাশি আপনার প্রস্তাবিত সমাধানের সীমাবদ্ধতাও উল্লেখ করতে হবে, যাতে পাঠক বুঝতে পারে কোন সমাধান নিখুঁত নয় এবং তারা তাদের সর্বোত্তম স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। *'''পদ্ধতি''' - নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করা জরুরি। তথ্যসূত্র ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে (ইন্টারনেট, সাক্ষাৎকার, বই ইত্যাদি)। বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি ছাড়া আপনার প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। *'''বিকল্প সমাধানগুলোর বিবরণ''' - প্রতিটি বিকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে হবে। সহজবোধ্য ও পাঠকবান্ধব ফরম্যাটে উপস্থাপন করুন, যাতে পাঠক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। *'''মূল্যায়ন''' - এটি প্রতিবেদনের প্রধান অংশ, যেখানে বিকল্পগুলো নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। গ্রাফ, চার্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে দেখান যে আপনি বিকল্পগুলো ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং কেন আপনার বিকল্পটি শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণ করুন। *'''উপসংহার''' - আপনি যেই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তা স্পষ্ট করুন। বিকল্পগুলো কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন এবং কোন বিকল্প প্রতিষ্ঠানটির জন্য শ্রেষ্ঠ। *'''প্রস্তাব''' - আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে কোন বিকল্প গ্রহণ করা উচিত তা বলুন। *মন্তব্য: উপরের সাতটি উপাদান প্রত্যেকটি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিবেদন থেকে বাদও যেতে পারে। এদের বিন্যাসও প্রতিবেদন অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। বিশেষত, উপসংহার প্রতিবেদন শেষে ছাড়া শুরুতে এবং প্রয়োজন হলে মাঝেও উল্লেখ করা উচিত। ==কার্যনির্বাহী সারাংশ== প্রতিবেদনের শুরুতে একটি কার্যনির্বাহী সারাংশ থাকা উচিত। ২-৩ পৃষ্ঠায় সম্ভাব্যতা গবেষণার মূল পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে, যা সময়কষ্টে থাকা প্রশাসক ও স্কুল বোর্ড সদস্যদের দ্রুত বুঝতে সাহায্য করবে। কার্যনির্বাহী সারাংশ পাঠককে পুরো গবেষণার একটি চিত্র দেয় এবং তারা বিস্তারিত পড়ার আগে এর ধারণা পায়। অনেক সিদ্ধান্তগ্রহণকারী শুধুমাত্র কার্যনির্বাহী সারাংশই পড়তে পারেন, তাই এটি সংক্ষিপ্ত হতে হবে এবং গবেষণার প্রধান ফলাফল ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ==ভূমিকা== '''সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির ভূমিকাংশের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে:''' *পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া: "আমাদের কেন এই বিকল্পগুলো যাচাই করার প্রয়োজন আছে—এগুলো কি গুরুত্বপূর্ণ?" এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, এমন সমস্যাটি শনাক্ত করা জরুরি যা আপনার প্রতিবেদন সমাধান করতে সাহায্য করবে অথবা যেটি আপনার প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করতে চায়। *আপনি যেসব অন্যান্য বিকল্প নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করেছেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা, এবং কীভাবে আপনি এই গবেষণা ও বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেছেন তা বলা। '''নোট''': সাধারণত, সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির ভূমিকাংশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিকল্পগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়। এই ধরণের প্রতিবেদনটির অন্যান্য উপাদান, যেমন মানদণ্ড, পদ্ধতি বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পটভূমি সংক্ষেপে এই অংশে উল্লেখ করা যেতে পারে। == মানদণ্ড/সীমাবদ্ধতা == '''সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন/প্রতিবেদনে কী বিষয় বিবেচনা করবেন।''' আপনি যখন কোন বিষয় বিবেচনার পরিকল্পনা করছেন তখন বোঝা উচিত যে সাধারণত মানদণ্ড নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর এক বা একাধিককে ঘিরে গঠিত হয়। '''আপনার পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ কি আসলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিবে?''' এটি সাধারণত কারিগরি দিকগুলোতে দেখা যায়। আপনাকে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনার পরিকল্পিত পরিবর্তন বা বাস্তবায়ন সত্যিই তেমন কোনো পার্থক্য আনবে কি না। ধরুন আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি দিক উন্নত করতে চাইছেন। তাহলে আপনার পরিবর্তন কি সত্যিই তাদের দক্ষতা ও গতি উন্নত করবে, নাকি এটি উল্টো উৎপাদন ধীর করে ফেলবে? অনেক সময় কর্মপরিবেশে একটি পরিবর্তন কোম্পানির কর্মপদ্ধতিতে উন্নয়ন আনে না। তবে এই বিষয়গুলো অনেক সময় গবেষণা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্পষ্ট হয় না, এবং খারাপ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের পর দেখা যায় নেতিবাচক প্রভাব। '''আপনার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে কী লাগবে?''' যদিও আপনার পরিকল্পনা কাগজে সঠিক ও দক্ষ মনে হতে পারে, তবে বাস্তবে তা প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে। আপনি যদি বিভিন্ন পেশাগত পরিস্থিতি বিবেচনা না করেন, তাহলে পরিকল্পনাটি একটি ক্ষেত্রে সফল হলেও অন্য ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারে। কখনও কখনও পরিকল্পনার জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হতে পারে—যেমন কার্যক্রমে পরিবর্তন, নতুন সরঞ্জাম বা উপকরণের প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় প্রয়োজন হতে পারে তা প্রাপ্ত সুবিধার তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। তাই এটি একটি ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণের মতো করে বিবেচনা করা উচিত। '''বাস্তবায়নের খরচ।''' এটি যে কোনো ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় বিষয় হতে পারে। খরচ কত? শুধু ব্যবসা নয়, যেকোনো পেশাগত ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে লাভ অবশ্যই খরচের চেয়ে বেশি হতে হবে। আপনাকে অনুমান করতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু হলে কত খরচ হবে। আবার ছোট বা বড় ব্যর্থতা হলে খরচ কত হতে পারে সেটাও জানা জরুরি। প্রথম বছর লাভ নাও হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে পরিকল্পনাটি লাভজনক হতে পারে। যেমন: স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি কি উচ্চমূল্যে নতুন যন্ত্রপাতি কিনবে, যদি এটি ভবিষ্যতে মুনাফা বয়ে আনে? '''আপনার ধারণা/পণ্য কি আকর্ষণীয়?''' সরলভাবে বলা যায়, এটি কি বিক্রি হবে? মানুষ কি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকবে, নাকি তারা এটি প্রত্যাখ্যান করবে? অনেক সময় একটি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী পরিবর্তনও সফল হয় না, কারণ এটি মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, কর্মীদের মনোবল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদিও পরিকল্পনা উৎপাদনশীলতা বাড়াবে বলে মনে হয়, কর্মীরা এর প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? কর্মীদের অনুপ্রাণিত না করতে পারলে, উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না। ==পদ্ধতি== ====='''মনে রাখার বিষয়:'''===== আপনার সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির এই অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে আপনি যা আবিষ্কার করেছেন এবং যেভাবে তা করেছেন, তা পাঠকদের জানানোর মাধ্যমে আপনি দেখিয়ে দেন যে আপনার তথ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ। যদি তথ্যপ্রাপ্তির পদ্ধতিগুলো সঠিক হয়, তবে পাঠকেরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ====='''সবকিছু উৎসভিত্তিক'''===== আপনার গবেষণায় কোন উৎস ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করে আপনি কী জানতে চাইছেন তার উপর। উৎসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে (কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়): *একাডেমিক জার্নাল বা প্রতিবেদন *লাইব্রেরি গবেষণা *ফোন কল *সাক্ষাৎকার *প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা *জরিপ *ব্যবহারযোগ্যতা পরীক্ষা *ল্যাব পরীক্ষণ ====='''পর্যাপ্ততা কতটুকু?'''===== প্রতিবেদনভেদে এর দৈর্ঘ্য ও বিশ্লেষণের গভীরতা ভিন্ন হতে পারে। পাঠক এবং প্রসঙ্গ বুঝে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মূল লক্ষ্য হলো এটা বোঝানো যে আপনার প্রতিবেদন বৈধ, কারণ তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগুলো সঠিক। পাঠক-কেন্দ্রিকভাবে লেখা নিশ্চিত করুন। ====='''এটি কোথায় বসবে?'''===== আপনার প্রতিবেদনের এই অংশ কোথায় থাকবে তা নির্ভর করে গবেষণার পদ্ধতির সংখ্যার উপর। যদি মাত্র দুই-একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে ভূমিকাংশেই একেকটি অনুচ্ছেদে সেগুলো ব্যাখ্যা করুন। যদি অনেক পদ্ধতি থাকে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষণ বা তথ্য অংশে যুক্ত করুন। ===='''গুরুত্বপূর্ণ টীকা'''==== যদি আপনি কীভাবে গবেষণা করেছেন তা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়, তাহলে কখনো কখনো পদ্ধতি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে নিশ্চিত করতে হবে পাঠকেরা যেন বুঝতে পারেন তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা বিশ্বাসযোগ্য কি না। =পুনঃমূল্যায়নের তালিকা= আপনার সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন সম্পূর্ণ হলে নিচের চেকলিস্ট অনুযায়ী নিশ্চিত করুন প্রতিটি অংশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না। '''ভূমিকা''' #এটি কি ব্যাখ্যা করে আপনি কেন এই গবেষণা করেছেন? #এটি কি প্রাসঙ্গিক পটভূমির তথ্য প্রদান করে? #এটি কি আপনার অনুসন্ধান করা বিকল্প বা পদক্ষেপগুলো সনাক্ত করে? #এটি কি পাঠককে এই গবেষণাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করতে উদ্বুদ্ধ করে? '''মানদণ্ড''' #এটি কি পদক্ষেপ বা বিকল্পের মূল্যায়নের মানদণ্ড নির্ধারণ করে? '''পদ্ধতি''' #এটি কি প্রতিবেদন উপস্থাপিত তথ্য কীভাবে সংগৃহীত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে? #এটি কি পাঠককে বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে? '''বিকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ''' #এটি কি প্রতিটি বিকল্পের সাধারণ বিবরণ দেয়? '''মূল্যায়ন''' #এটি কি মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ বা বিকল্প মূল্যায়ন করে? #এটি কি প্রতিটি মূল্যায়নের জন্য প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন করে? '''উপসংহার''' #এটি কি পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে? #এটি কি সরল ও পরিষ্কারভাবে উপসংহার উপস্থাপন করে? '''সুপারিশ''' #এটি কি কোন বিকল্প বা পদক্ষেপ সুপারিশ করে? #এটি কি স্পষ্টভাবে সুপারিশ উপস্থাপন করে? #এটি কি পাঠককে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে? oj5b0sbjmuqp969f77qp6bstybbqe1w 85174 85173 2025-06-22T05:40:10Z Mehedi Abedin 7113 85174 wikitext text/x-wiki =সম্ভাব্যতা গবেষণা প্রস্তুতি= == সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন== ==='''সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন/গবেষণা কী?'''=== সম্ভাব্যতা গবেষণা/প্রতিবেদন তৈরির সময় যা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে: *সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন হলো একটি প্রমাণ যা কোনো কাজ সম্পাদনের সম্ভাবনা যাচাই করে। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন তৈরি করা হয় সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের সহায়তা বা প্ররোচিত করার জন্য যাতে তারা উপলব্ধ বিকল্পগুলোর মধ্যে সঠিকটি নির্বাচন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, আপনার বিকল্পই একমাত্র বিকল্প নয়; সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাছে অনেক বিকল্প থাকতে পারে। একটি সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন নির্ধারণ করে যে নিরীক্ষিত কাজটি কি নির্দিষ্ট সম্পদ দিয়ে করা সম্ভব, অথবা কাজ সম্পন্ন করতে কতটুকু সম্পদ প্রয়োজন হবে। সম্ভাব্যতা গবেষণা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উপকারী হতে পারে যেমন ইভেন্ট পরিকল্পনা, অর্থ, অথবা বাড়ির সংস্কার। ===সম্ভাব্যতা গবেষণা কী?=== সম্ভাব্যতা গবেষণা হলো একটি পদ্ধতি যা কোনো প্রকল্পের বাস্তবতা এবং আকাঙ্ক্ষনীয়তা মূল্যায়ন করে। কোনো প্রতিষ্ঠান সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করার আগে জানতে চায় প্রকল্পটি কতটা সফল হবে। কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় প্রদত্ত খরচ, গবেষণার পরিমাণ, অথবা প্রকল্পের বাজারজাতকরণের সম্ভাবনা। প্রদত্ত বা ইনপুট খরচ বোঝা অত্যন্ত জরুরি, কারণ গবেষণা ও সময় ব্যয় করার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্যের জন্য খরচের পূর্বাভাস জানা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় গবেষণার পরে তাদের পরিবর্তন বা পণ্যের প্রচার করলে মানুষ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। নতুন পণ্যের জন্য লড়াই হবে নাকি তা ব্যর্থ হবে? সম্ভাব্যতা গবেষণার উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানকে তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রদান করা যে তারা কি এই পদক্ষেপ অনুসরণ করবে কিনা। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন সাধারণত সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের একটি নির্দিষ্ট দিকেই প্রভাবিত করে। অনেক সময় একটি পথই থাকে, তবে বিকল্প পথও থাকা জরুরি। ==আপনার প্রতিবেদনের জন্য বিবেচ্য প্রশ্নসমূহ== ===সম্ভাব্যতা গবেষণা/প্রতিবেদন তৈরির সময় কী বিবেচনা করবেন?=== সম্ভাব্যতা গবেষণা তৈরি করার সময় বিকল্পগুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় কেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কেন নির্দিষ্ট বিকল্পটি বেছে নিতে হবে। সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন সমস্যাটির বিস্তারিত তথ্য থাকতে হবে, যাতে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা বিকল্পগুলো বিবেচনা করতে পারে। ==='''আপনার যুক্তি কি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক?'''=== সম্ভাব্যতা গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ কিনা তা নির্ধারণ করার আগে আপনাকে লক্ষ্য পাঠককে চিনতে হবে। পেশাদার সংস্থাগুলো চায় আপনার যুক্তি তাদের প্রয়োজন বা লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত হোক। পেশাদার পরিবেশে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা আশা করেন যে মূল্যায়নের মানদণ্ড তাদের জানা থাকবে। অর্থাৎ, গবেষণাটি যুক্তিসঙ্গত হতে হবে এবং আপনি যা বাস্তবায়ন করতে চান তার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে। তথ্য আপনার যুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। তবে, সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা জানতে চায় আপনার তথ্যসূত্র কতটা বিশ্বাসযোগ্য। তারা নিশ্চিত হতে চায় যে তারা যে তথ্য পাচ্ছে তা শিল্পে বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে এসেছে। এটি সম্ভবত যে কোনো সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বা গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। কারণ, আপনার তথ্যসূত্র নির্ভরযোগ্য না হলে, তথ্য উপস্থাপনা যতই ভাল হোক, তা মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে। ==='''আপনার বিকল্পগুলো সম্পর্কে কী বিবেচনা করবেন?'''=== আপনার বিকল্পগুলো কিভাবে আপনার নির্ধারিত মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায় তা বোঝা জরুরি। পাঠকরা সাধারণত জানতে চায় আপনার ফলাফল অন্য বিকল্পের সঙ্গে কেমন তুলনা করা যায়। এতে তারা তথ্য এবং ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এন্ডারসনের মতে, এটি যে কোনো সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বা গবেষণার মূল। ==='''আপনি বিকল্পগুলোর বিরুদ্ধে কী পেয়েছেন?'''=== সম্ভাব্য বিকল্পসমূহের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এর উদ্দেশ্য অন্য বিকল্প বা পণ্যের সমালোচনা নয়, বরং আপনার পণ্য বা ধারণাটিকে আলাদা করে তোলা। প্রতিটি বিকল্পের ভালো দিকগুলোর সাধারণ জ্ঞান বা সিদ্ধান্ত প্রদান করা উচিত। কারণ সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা তুলনামূলক ভিত্তি চায়, যাতে তারা আপনার ধারণাটিকে অন্য বিকল্প থেকে আলাদা করতে পারে। ==='''উপসংহারে কী রাখা উচিত?'''=== উপসংহারে আপনাকে বলতে হবে কিভাবে আপনি আপনার ধারণা কোম্পানিতে বাস্তবায়ন করবেন এবং এটি কোম্পানির জন্য কীভাবে লাভজনক হবে। ব্যাখ্যা করুন কেন কোম্পানিকে আপনার প্রস্তাবিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলনা করুন এবং পাঠকদের বুঝতে সাহায্য করুন কোন বিকল্পটি যৌক্তিক ও কার্যকর। বিষয়বস্তুর ওপর আপনার দক্ষতার কথা তুলে ধরুন, যাতে তারা বুঝতে পারে আপনার ধারণা তাদের জন্য সেরা বিকল্প। আপনার দক্ষতার ভিত্তিতে তারা সম্ভবত আপনার পক্ষেই থাকবে, যদি আপনি যুক্তি দক্ষভাবে উপস্থাপন করেন। কোম্পানি আপনার প্রস্তাবিত পদক্ষেপ বেছে নেবে যদি আপনি গবেষণায় মূল পয়েন্টগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরেন। ==একটি সাধারণ সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য== নিচে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন-এর সাতটি উপাদান দেওয়া হলো: *'''প্রস্তাবনা''' - আপনাকে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা বিকল্পগুলো বিবেচনা করে। তাদের বোঝাতে হবে আপনার কাজ বা গবেষণা থেকে তারা কি লাভবান হবে। *'''মানদণ্ড/সীমাবদ্ধতা''' - আপনাকে স্পষ্টভাবে মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে যা আদর্শ ফলাফল নির্ধারণ করবে। এতে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। মানদণ্ড পৃথক একটি অংশে উপস্থাপন করা যেতে পারে বা প্রতিবেদন জুড়েই প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে যেকোনো ক্ষেত্রে মানদণ্ড আগে উল্লিখিত হওয়া উচিত। পাশাপাশি আপনার প্রস্তাবিত সমাধানের সীমাবদ্ধতাও উল্লেখ করতে হবে, যাতে পাঠক বুঝতে পারে কোন সমাধান নিখুঁত নয় এবং তারা তাদের সর্বোত্তম স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। *'''পদ্ধতি''' - নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করা জরুরি। তথ্যসূত্র ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে (ইন্টারনেট, সাক্ষাৎকার, বই ইত্যাদি)। বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি ছাড়া আপনার প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। *'''বিকল্প সমাধানগুলোর বিবরণ''' - প্রতিটি বিকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে হবে। সহজবোধ্য ও পাঠকবান্ধব ফরম্যাটে উপস্থাপন করুন, যাতে পাঠক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। *'''মূল্যায়ন''' - এটি প্রতিবেদনের প্রধান অংশ, যেখানে বিকল্পগুলো নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। গ্রাফ, চার্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে দেখান যে আপনি বিকল্পগুলো ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং কেন আপনার বিকল্পটি শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণ করুন। *'''উপসংহার''' - আপনি যেই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তা স্পষ্ট করুন। বিকল্পগুলো কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন এবং কোন বিকল্প প্রতিষ্ঠানটির জন্য শ্রেষ্ঠ। *'''প্রস্তাব''' - আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে কোন বিকল্প গ্রহণ করা উচিত তা বলুন। *মন্তব্য: উপরের সাতটি উপাদান প্রত্যেকটি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিবেদন থেকে বাদও যেতে পারে। এদের বিন্যাসও প্রতিবেদন অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। বিশেষত, উপসংহার প্রতিবেদন শেষে ছাড়া শুরুতে এবং প্রয়োজন হলে মাঝেও উল্লেখ করা উচিত। ==কার্যনির্বাহী সারাংশ== প্রতিবেদনের শুরুতে একটি কার্যনির্বাহী সারাংশ থাকা উচিত। ২-৩ পৃষ্ঠায় সম্ভাব্যতা গবেষণার মূল পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে, যা সময়কষ্টে থাকা প্রশাসক ও স্কুল বোর্ড সদস্যদের দ্রুত বুঝতে সাহায্য করবে। কার্যনির্বাহী সারাংশ পাঠককে পুরো গবেষণার একটি চিত্র দেয় এবং তারা বিস্তারিত পড়ার আগে এর ধারণা পায়। অনেক সিদ্ধান্তগ্রহণকারী শুধুমাত্র কার্যনির্বাহী সারাংশই পড়তে পারেন, তাই এটি সংক্ষিপ্ত হতে হবে এবং গবেষণার প্রধান ফলাফল ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ==ভূমিকা== '''সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির ভূমিকাংশের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে:''' *পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া: "আমাদের কেন এই বিকল্পগুলো যাচাই করার প্রয়োজন আছে—এগুলো কি গুরুত্বপূর্ণ?" এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, এমন সমস্যাটি শনাক্ত করা জরুরি যা আপনার প্রতিবেদন সমাধান করতে সাহায্য করবে অথবা যেটি আপনার প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করতে চায়। *আপনি যেসব অন্যান্য বিকল্প নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করেছেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা, এবং কীভাবে আপনি এই গবেষণা ও বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেছেন তা বলা। '''নোট''': সাধারণত, সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির ভূমিকাংশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিকল্পগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়। এই ধরণের প্রতিবেদনটির অন্যান্য উপাদান, যেমন মানদণ্ড, পদ্ধতি বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পটভূমি সংক্ষেপে এই অংশে উল্লেখ করা যেতে পারে। == মানদণ্ড/সীমাবদ্ধতা == '''সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন/প্রতিবেদনে কী বিষয় বিবেচনা করবেন।''' আপনি যখন কোন বিষয় বিবেচনার পরিকল্পনা করছেন তখন বোঝা উচিত যে সাধারণত মানদণ্ড নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর এক বা একাধিককে ঘিরে গঠিত হয়। '''আপনার পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ কি আসলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিবে?''' এটি সাধারণত কারিগরি দিকগুলোতে দেখা যায়। আপনাকে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনার পরিকল্পিত পরিবর্তন বা বাস্তবায়ন সত্যিই তেমন কোনো পার্থক্য আনবে কি না। ধরুন আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি দিক উন্নত করতে চাইছেন। তাহলে আপনার পরিবর্তন কি সত্যিই তাদের দক্ষতা ও গতি উন্নত করবে, নাকি এটি উল্টো উৎপাদন ধীর করে ফেলবে? অনেক সময় কর্মপরিবেশে একটি পরিবর্তন কোম্পানির কর্মপদ্ধতিতে উন্নয়ন আনে না। তবে এই বিষয়গুলো অনেক সময় গবেষণা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্পষ্ট হয় না, এবং খারাপ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের পর দেখা যায় নেতিবাচক প্রভাব। '''আপনার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে কী লাগবে?''' যদিও আপনার পরিকল্পনা কাগজে সঠিক ও দক্ষ মনে হতে পারে, তবে বাস্তবে তা প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে। আপনি যদি বিভিন্ন পেশাগত পরিস্থিতি বিবেচনা না করেন, তাহলে পরিকল্পনাটি একটি ক্ষেত্রে সফল হলেও অন্য ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারে। কখনও কখনও পরিকল্পনার জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হতে পারে—যেমন কার্যক্রমে পরিবর্তন, নতুন সরঞ্জাম বা উপকরণের প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় প্রয়োজন হতে পারে তা প্রাপ্ত সুবিধার তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। তাই এটি একটি ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণের মতো করে বিবেচনা করা উচিত। '''বাস্তবায়নের খরচ।''' এটি যে কোনো ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় বিষয় হতে পারে। খরচ কত? শুধু ব্যবসা নয়, যেকোনো পেশাগত ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে লাভ অবশ্যই খরচের চেয়ে বেশি হতে হবে। আপনাকে অনুমান করতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু হলে কত খরচ হবে। আবার ছোট বা বড় ব্যর্থতা হলে খরচ কত হতে পারে সেটাও জানা জরুরি। প্রথম বছর লাভ নাও হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে পরিকল্পনাটি লাভজনক হতে পারে। যেমন: স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি কি উচ্চমূল্যে নতুন যন্ত্রপাতি কিনবে, যদি এটি ভবিষ্যতে মুনাফা বয়ে আনে? '''আপনার ধারণা/পণ্য কি আকর্ষণীয়?''' সরলভাবে বলা যায়, এটি কি বিক্রি হবে? মানুষ কি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকবে, নাকি তারা এটি প্রত্যাখ্যান করবে? অনেক সময় একটি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী পরিবর্তনও সফল হয় না, কারণ এটি মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, কর্মীদের মনোবল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদিও পরিকল্পনা উৎপাদনশীলতা বাড়াবে বলে মনে হয়, কর্মীরা এর প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? কর্মীদের অনুপ্রাণিত না করতে পারলে, উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না। ==পদ্ধতি== ====='''মনে রাখার বিষয়:'''===== আপনার সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটির এই অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে আপনি যা আবিষ্কার করেছেন এবং যেভাবে তা করেছেন, তা পাঠকদের জানানোর মাধ্যমে আপনি দেখিয়ে দেন যে আপনার তথ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ। যদি তথ্যপ্রাপ্তির পদ্ধতিগুলো সঠিক হয়, তবে পাঠকেরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ====='''সবকিছু উৎসভিত্তিক'''===== আপনার গবেষণায় কোন উৎস ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করে আপনি কী জানতে চাইছেন তার উপর। উৎসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে (কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়): *একাডেমিক জার্নাল বা প্রতিবেদন *লাইব্রেরি গবেষণা *ফোন কল *সাক্ষাৎকার *প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা *জরিপ *ব্যবহারযোগ্যতা পরীক্ষা *ল্যাব পরীক্ষণ ====='''পর্যাপ্ততা কতটুকু?'''===== প্রতিবেদনভেদে এর দৈর্ঘ্য ও বিশ্লেষণের গভীরতা ভিন্ন হতে পারে। পাঠক এবং প্রসঙ্গ বুঝে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মূল লক্ষ্য হলো এটা বোঝানো যে আপনার প্রতিবেদন বৈধ, কারণ তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগুলো সঠিক। পাঠক-কেন্দ্রিকভাবে লেখা নিশ্চিত করুন। ====='''এটি কোথায় বসবে?'''===== আপনার প্রতিবেদনের এই অংশ কোথায় থাকবে তা নির্ভর করে গবেষণার পদ্ধতির সংখ্যার উপর। যদি মাত্র দুই-একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে ভূমিকাংশেই একেকটি অনুচ্ছেদে সেগুলো ব্যাখ্যা করুন। যদি অনেক পদ্ধতি থাকে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষণ বা তথ্য অংশে যুক্ত করুন। ===='''গুরুত্বপূর্ণ টীকা'''==== যদি আপনি কীভাবে গবেষণা করেছেন তা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়, তাহলে কখনো কখনো পদ্ধতি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে নিশ্চিত করতে হবে পাঠকেরা যেন বুঝতে পারেন তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা বিশ্বাসযোগ্য কি না। =পুনঃমূল্যায়নের তালিকা= আপনার সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন সম্পূর্ণ হলে নিচের চেকলিস্ট অনুযায়ী নিশ্চিত করুন প্রতিটি অংশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না। '''ভূমিকা''' #এটি কি ব্যাখ্যা করে আপনি কেন এই গবেষণা করেছেন? #এটি কি প্রাসঙ্গিক পটভূমির তথ্য প্রদান করে? #এটি কি আপনার অনুসন্ধান করা বিকল্প বা পদক্ষেপগুলো সনাক্ত করে? #এটি কি পাঠককে এই গবেষণাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করতে উদ্বুদ্ধ করে? '''মানদণ্ড''' #এটি কি পদক্ষেপ বা বিকল্পের মূল্যায়নের মানদণ্ড নির্ধারণ করে? '''পদ্ধতি''' #এটি কি প্রতিবেদন উপস্থাপিত তথ্য কীভাবে সংগৃহীত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে? #এটি কি পাঠককে বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে? '''বিকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ''' #এটি কি প্রতিটি বিকল্পের সাধারণ বিবরণ দেয়? '''মূল্যায়ন''' #এটি কি মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ বা বিকল্প মূল্যায়ন করে? #এটি কি প্রতিটি মূল্যায়নের জন্য প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন করে? '''উপসংহার''' #এটি কি পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে? #এটি কি সরল ও পরিষ্কারভাবে উপসংহার উপস্থাপন করে? '''সুপারিশ''' #এটি কি কোন বিকল্প বা পদক্ষেপ সুপারিশ করে#এটি কি স্পষ্টভাবে সুপারিশ উপস্থাপন করে? #এটি কি পাঠককে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে? {{BookCat}} 3vicxe7n8m3vhxupab8qulqs98zjgo0 পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/চিত্রপট 0 26386 85138 82179 2025-06-22T04:19:06Z Mehedi Abedin 7113 85138 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} =চার্ট এবং গ্রাফ= গ্রাফ এবং চার্ট অনেক ব্যবসায়িক পরিবেশে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যেহেতু অনেক ব্যবসা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন স্থানে যায়, তাই প্রায়শই ভাষার বাধার সৃষ্টি হওয়ার ফলে ব্যবসায়ে হতাশার সৃষ্টি করে। কথোপকথন, নির্দেশাবলী এবং দিকনির্দেশনা সহজতর করার জন্য গ্রাফ এবং চার্টগুলি শব্দহীন যোগাযোগের একটি রূপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্রাফ এবং চার্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমন সংখ্যাসূচক পরিমাণ, প্রবণতা এবং মূল্যবোধের মধ্যে সম্পর্ক, প্রকাশ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সহজে এবং নির্ভুলভাবে তথ্য প্রকাশ করার জন্য সঠিক ধরণের গ্রাফ বা চার্ট নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাফ বা চার্টটি সংজ্ঞায়িত করুন, গ্রাফ বা চার্টের ব্যাখ্যা দিন এবং এমন একটি নির্বাচন করুন যা সহজেই পঠনযোগ্য যা আপনার তথ্য সঠিকভাবে প্রকাশ করে। চার্ট বা গ্রাফ ব্যবহার করার সময়, পাঠকের জন্য চার্ট বা গ্রাফ কী উপস্থাপন করছে তা বোঝার জন্য একটি কী এবং শিরোনাম অপরিহার্য। সাধারণত একটি চার্ট গ্রাফিক্যাল হয়, যার মধ্যে খুব কম লেখা থাকে। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে লোকেরা যখন তথ্য পাঠ্যের পরিবর্তে গ্রাফিক্যাল বিন্যাসে উপস্থাপন করা হয় তখন তথ্য আরও ভালভাবে বুঝতে এবং প্রক্রিয়া করতে সক্ষম হয়। সঠিক তথ্য সম্বলিত চার্ট ব্যবহার করে আপনি আপনার শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে পারবেন এবং আপনার বক্তব্য স্পষ্ট এবং কার্যকরভাবে তুলে ধরতে পারবেন। =='''বিক্ষিপ্ত প্লট'''== {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:R-car_stopping_distances_1920.svg‎|thumb|একটি স্ক্যাটার প্লটের উদাহরণ।]] |} বিক্ষিপ্ত প্লট হল ডেটা সেটের জন্য দুটি ভেরিয়েবলের মান প্রদর্শনের একটি ভালো উপায়। এর মানে হল গ্রাফে প্রতিটি পৃথক ডেটা পয়েন্টের জন্য, দুটি পৃথক ডেটা টুকরো, একটি স্বাধীন এবং নির্ভরশীল চলক, যা বিন্দুর অবস্থান নির্ধারণ করে। স্বাধীন বা নিয়ন্ত্রিত চলকটি সাধারণত অনুভূমিক অক্ষে থাকে। তারপর নির্ভরশীল চলকটি পরিমাপ করা হয় এবং উল্লম্ব অক্ষের উপর স্থাপন করা হয়। একাধিক সেট ডেটা পরিমাপের জন্য একটি বিক্ষিপ্ত প্লট ভালো নয়। একটি বিক্ষিপ্ত প্লটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধান বিষয়গুলি নিম্নরূপ: *'''শিরোনাম:''' সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (শিরোনাম ছাড়া চার্ট কী)। অবশ্যই বিন্দুতে থাকা উচিত। *'''X-অক্ষ''' (''অনুভূমিক'') এবং '''Y-অক্ষ''' (''উল্লম্ব''): উভয় অক্ষকে লেবেল করা উচিত এবং পরিমাপের একক প্রদান করা উচিত। *'''বিন্দু:''' ডেটা পয়েন্টগুলি পরীক্ষামূলক ফলাফল অনুসারে গ্রাফে স্থাপন করা উচিত স্বাধীন এবং নির্ভরশীল চলক। *'''R বর্গ মান:''' ডেটার প্রবণতা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। *'''সমীকরণ:''' যে কোনও সমীকরণ যা পাঠককে ডেটা আরও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। *'''ট্রেন্ড লাইন:''' ডেটার একটি ট্রেন্ড আছে কিনা তা দেখায় এবং বহির্মুখী এবং ডেটা কতটা ভালভাবে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত তাও দেখাতে পারে। উদাহরণ: x = ৩ এবং Y = ৫ বিক্ষিপ্ত প্লটে গ্রাফ করা হবে (৩, ৫)। <br clear="all"> =='''রেখা গ্রাফ'''== {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Common_Logarithms.svg‎|thumb|তুলনামূলক রেখা গ্রাফের উদাহরণ।]] |} রেখা গ্রাফ দুটি বা ততোধিক ভেরিয়েবলের মধ্যে যেকোনো কিছু তুলনা করার একটি ভালো উপায়। এগুলি দেখার জন্য সহজ ধরণের গ্রাফগুলির মধ্যে অন্যতম কারণ আপনি সময়ের সাথে সাথে রেখার পরিবর্তনগুলি স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিসংখ্যান দেখানোর জন্য একটি রেখা গ্রাফ কখনই ব্যবহার করা উচিত নয়। রেখা গ্রাফের একটি অসুবিধা হল, ডেটা পয়েন্টে ঠিক কোন সংখ্যাটি নির্দিষ্ট করা হচ্ছে তা দেখা কঠিন হতে পারে। যদি সংখ্যাগুলি সহজেই পড়া গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে সেগুলি তাদের নিজ নিজ ডেটা পয়েন্টে গ্রাফের মধ্যে সন্নিবেশ করা যেতে পারে। যেহেতু বেশিরভাগ রেখা গ্রাফ সময়ের সাথে সাথে একটি প্রবণতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, তবে, নির্দিষ্ট সংখ্যাগুলি সর্বদা প্রয়োজনীয় নয়। একটি লাইন গ্রাফে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধান জিনিসগুলি নিম্নরূপ: *'''শিরোনাম:''' সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস (শিরোনাম ছাড়া চার্ট কী)। অবশ্যই বিন্দুতে থাকা উচিত। *'''X-অক্ষ''' (''অনুভূমিক'') এবং '''Y-অক্ষ''' (''উল্লম্ব''): উভয় অক্ষকে লেবেলযুক্ত করা উচিত এবং পরিমাপের একক প্রদান করা উচিত। এগুলি সর্বোচ্চ গ্রাফ করা মানের সামান্য বেশি প্রসারিত হওয়া উচিত। *'''টিক চিহ্ন:''' ইউনিটগুলি দেখানোর জন্য উভয় অক্ষে টিক চিহ্ন ব্যবহার করুন। নিশ্চিত করুন যে তারা গ্রাফে বিশৃঙ্খলা করছে না। *'''রেখা:''' রেখাটি প্রকৃত ডেটা প্রদর্শন করছে। এটি একটি একক ডেটা পয়েন্ট, বিন্দুগুলিকে সংযুক্ত একটি রেখা সহ ডেটা পয়েন্ট, অথবা কোনও ডেটা পয়েন্ট ছাড়াই একটি একক মসৃণ রেখা হিসাবে প্রদর্শিত হতে পারে। বিভিন্ন উপাদান চিহ্নিত করতে বিভিন্ন রঙও ব্যবহার করা যেতে পারে। *'''উৎস:''' যদি উৎস পাঠকদের কাছে স্পষ্ট না হয় তবে এটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। লাইন গ্রাফ তৈরির টিপস: *পাঠক যাতে লাইনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করুন। যদি আপনি বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করতে না পারেন, তাহলে বিভিন্ন ধরণের লাইন ব্যবহার করুন, যেমন বিন্দু বা ড্যাশ। *যদি সম্ভব হয়, পাঠকদের বিভ্রান্ত করা এড়াতে অক্ষ শূন্য থেকে শুরু করুন। যদি এটি সম্ভব না হয়, তাহলে হ্যাশ চিহ্ন ব্যবহার করে আপনার পাঠকদের জানান যে আপনার গ্রাফটি শূন্য থেকে শুরু হচ্ছে না। <br clear="all"> =='''বার গ্রাফ'''== {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Incarceration_Rates_Worldwide_ZP.svg‎|thumb|বার গ্রাফের একটি উদাহরণ।]] |} পরিমাণ তুলনা করার জন্য বার গ্রাফ একটি সরল এবং সহজ উপায় হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বার গ্রাফের ভিত্তি থেকে উপরে প্রসারিত হতে পারে, অথবা গ্রাফের পাশ থেকে অনুভূমিকভাবে প্রসারিত হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে পরিমাণের তুলনা করার সময় বার গ্রাফ সবচেয়ে ভালো কাজ করে এবং পরিবর্তনগুলি বেশ বড় হলে আরও ভালো দৃশ্যমানতা প্রদান করে। *<big>'''শিরোনাম'''</big>: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন একটি শিরোনাম দিতে ভুলবেন না যা পাঠকরা সহজেই বুঝতে পারবেন এবং যা বার গ্রাফে থাকা তথ্য সফলভাবে প্রকাশ করবে। *<big>'''X-অক্ষ'''</big> (''অনুভূমিক'') এবং <big>'''Y-অক্ষ'''</big> (''উল্লম্ব''): উভয় অক্ষকে লেবেল করা উচিত এবং পরিমাপের একক প্রদান করা উচিত। *<big>'''বার'''</big>: এটিই প্রকৃত প্রদর্শিত ডেটা দেখায়। বার শূন্য থেকে শুরু হয় এবং প্রয়োজনীয় মান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। পড়ার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য একাধিক বার ব্যবহার করা যেতে পারে তবে উপযুক্ত রঙ এবং একটি কী ব্যবহার করা উচিত। স্থান এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে বারগুলি স্পর্শকাতর বা পৃথক হতে পারে। *<big>'''লেবেল'''</big>: প্রতিটি ডেটা লেবেল করুন যাতে গ্রাফের প্রতিটি বার কী প্রতিনিধিত্ব করে তা স্পষ্ট হয়। গ্রাফের স্বচ্ছতা এবং ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য এটি করা গুরুত্বপূর্ণ। *<big>'''উৎস'''</big>: পাঠকদের কাছে যদি এটি স্পষ্ট না হয় তবে এটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। *<big>'''কী'''</big>: যখন বারগুলি পুনরাবৃত্তি করা হয়, তখন রঙের একটি কী অন্তর্ভুক্ত করুন, অথবা তারা কী প্রতিনিধিত্ব করে তা স্পষ্ট করার জন্য প্রতিটি বারের পাশে লেবেল রাখুন। বার গ্রাফ তৈরির টিপস: *বারগুলিকে এমনভাবে সাজান যা পাঠকদের সবচেয়ে সহায়ক বলে মনে হয়। এগুলি বর্ণানুক্রমিকভাবে, কালানুক্রমিকভাবে, দীর্ঘতম থেকে ছোট পর্যন্ত, অথবা বিপরীতভাবে সাজানো যেতে পারে। *যদি সম্ভব হয়, শূন্য থেকে বার শুরু করুন। যদি এটি সম্ভব না হয়, তাহলে হ্যাশ চিহ্ন ব্যবহার করে আপনার পাঠকদের জানাতে হবে যে বারগুলি শূন্য থেকে শুরু হয় না। =='''পাই চার্ট'''== {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:English_dialects1997.svg‎|thumb|পাই চার্টের একটি উদাহরণ।]] |} পাই চার্টগুলি এমন তথ্যের টুকরো দেখানোর জন্য কার্যকর যা একে অপরের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। পাই চার্টগুলি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মান বা শতাংশের যোগাযোগের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত গ্রাফিক্সগুলির মধ্যে একটি। তবে, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনগুলি প্রদর্শনের জন্য এগুলি কার্যকর নয়। এগুলি কেবল সময়ের একটি নির্দিষ্ট মুহুর্তে একটি সম্পূর্ণ অংশ দেখায়। চার্টটি একটি বৃত্ত দিয়ে তৈরি যেখানে অনেকগুলি "স্লাইস" থাকে যা শতাংশ বা মাত্রায় মানগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে যা একটি সম্পূর্ণ বৃত্তে অথবা ১০০% যোগ করে। এগুলি ব্যবসায়িক জগতে ব্যবহৃত হয়, তবে পাইয়ের স্লাইসের মধ্যে পার্থক্য জানাতে অক্ষমতার কারণে, পাশাপাশি একাধিক পাই চার্ট একে অপরের সাথে তুলনা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে প্রযুক্তিগত বা বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে খুব কমই ব্যবহৃত হয়। পাই চার্টে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধান জিনিসগুলি হল: *শিরোনাম-সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। *পাইয়ের সমস্ত অংশে লেবেলিং (শতাংশ সহ)। -পাঠককে তুলনা করা তথ্যের সেট সম্পর্কে অবহিত করার জন্য একটি লেজেন্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। *রঙ ব্যবহার করুন, এটি চার্টটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে এবং চার্টের স্লাইসগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করতে পারে। যদি স্লাইসগুলি খুব ছোট হয় যা আলাদাভাবে লেবেল করা যায়, যদি আপনি স্লাইসগুলিকে আলাদাভাবে লেবেল করতে না চান তবে রঙ কোডিং এবং একটি লেজেন্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। =='''অন্যান্য চার্ট'''== '''সংগঠনের চার্ট''' :*মনে রাখবেন যে একটি প্রতিষ্ঠানের চার্টের উদ্দেশ্য হল একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ এবং দায়িত্বের স্তরগুলি ম্যাপ করা। *চার্টটিকে সংগঠনের মতোই সহজ করুন, শ্রেণিবিন্যাসের স্তরগুলি সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত সংগঠিত করুন এবং চার্টে উপরে থেকে নীচে পর্যন্ত অবস্থান করুন। প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিবিন্যাসের স্তর যত বেশি হবে, চার্টটি তত বেশি উল্লম্ব হবে; প্রতিষ্ঠানে যত বেশি বিভাগ হবে, চার্টটি তত বেশি অনুভূমিক হবে। *প্রতিষ্ঠানের সমস্ত বিভাগের জন্য একই আকারে একই আকার ব্যবহার করুন যা শ্রেণিবিন্যাসে একই স্তরে রয়েছে। *প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ লেবেল করুন। *যদি স্থান থাকে, লেবেলগুলি সরাসরি বিভাগে রাখুন; যদি না হয়, তাহলে লেবেলটি সাবজেক্টের সাথে পাতলা নিয়ম দিয়ে সংযুক্ত করুন (কখনও তীরচিহ্ন দিয়ে নয়)। :*সমস্ত লেবেল অনুভূমিকভাবে রাখুন যাতে লেবেলগুলি পড়ার জন্য ভিউকে পৃষ্ঠা বা স্ক্রিন ঘোরাতে না হয়। :*প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি স্তরকে একটি স্পষ্ট রেখা দিয়ে উচ্চ এবং নিম্ন স্তরের সাথে সংযুক্ত করুন (কখনও তীরচিহ্ন দিয়ে নয়)। :*একটি বিন্দুযুক্ত রেখা দিয়ে ঐচ্ছিক, অনানুষ্ঠানিক, অথবা অস্থায়ী সম্পর্ক সংযুক্ত করুন। '''ফ্লো চার্ট''' :*মনে রাখবেন যে একটি ফ্লো চার্টের উদ্দেশ্য হল একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির ধাপগুলির ক্রম দেখানো। *ফ্লো চার্টটিকে প্রক্রিয়াটির মতোই সহজ করুন। যদি একটি প্রক্রিয়া সহজ হয়, তাহলে ফ্লো চার্টটি এমনভাবে ডিজাইন করুন যাতে এটি একই দিকে অগ্রসর হয়, সাধারণত উপরে থেকে নীচে বা বাম থেকে ডানে। সর্পিল এবং আঁকাবাঁকা জটিল নকশাগুলি আরও জটিল প্রক্রিয়া নির্দেশ করে। *সমস্ত সমতুল্য ধাপ বা পর্যায়ের জন্য একই আকারে একই আকার ব্যবহার করুন, তবে ভিন্ন ধরণের ধাপ বা পর্যায়ের জন্য ভিন্ন আকার ব্যবহার করুন (যেমন, একটি নথি গবেষণার পর্যায়ের জন্য বৃত্ত, লেখার পর্যায়ের জন্য বর্গক্ষেত্র এবং মুদ্রণ এবং বাঁধাইয়ের উৎপাদন পর্যায়ের জন্য হীরা)। *প্রতিটি ধাপ বা পর্যায়ে লেবেল করুন। *যদি স্থান অনুমতি দেয়, তাহলে ধাপের উপর সরাসরি লেবেল রাখুন; যদি না থাকে, তাহলে পাতলা নিয়ম (কখনও তীর নয়) দিয়ে ধাপের সাথে লেবেল সংযুক্ত করুন। *সমস্ত লেবেল অনুভূমিকভাবে রাখুন যাতে দর্শকদের লেবেলগুলি পড়ার জন্য পৃষ্ঠা বা স্ক্রিন ঘোরাতে না হয়। :*ক্রমের প্রতিটি ধাপ বা পর্যায়কে পরবর্তী ধাপ বা পর্যায়ে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশক তীর দিয়ে সংযুক্ত করুন। *দ্বি-মুখী তীর দিয়ে বিপরীতমুখী বা ইন্টারেক্টিভ পদক্ষেপ বা পর্যায়গুলিকে সংযুক্ত করুন। *বৃত্তাকার তীর দিয়ে পুনরাবৃত্তিমূলক বা চক্রাকার পদক্ষেপ বা পর্যায়গুলিকে সংযুক্ত করুন। *বিন্দুযুক্ত তীর দিয়ে ঐচ্ছিক পদক্ষেপ বা পর্যায়গুলিকে সংযুক্ত করুন। '''চিত্র''' :*মনে রাখবেন যে একটি চিত্রের উদ্দেশ্য হল একটি বিষয়ের অংশ এবং তাদের স্থানিক বা কার্যকরী সম্পর্ক চিহ্নিত করা। *চিত্রটি যতটা সম্ভব সহজ রাখুন, অপ্রয়োজনীয় বিবরণ বা বিভ্রান্তিকর সাজসজ্জা এড়িয়ে যান এবং দর্শকের মনোযোগ বিষয়ের মূল বৈশিষ্ট্য বা অংশগুলিতে কেন্দ্রীভূত করুন। *বিষয়টির প্রতিটি প্রাসঙ্গিক অংশ লেবেল করুন। :*যদি স্থান অনুমতি দেয়, তাহলে লেবেলগুলি সরাসরি অংশে রাখুন; যদি না থাকে, তাহলে পাতলা নিয়ম (কখনও তীর নয়) দিয়ে অংশে লেবেলটি সংযুক্ত করুন। :*সমস্ত লেবেলগুলিকে অনুভূমিকভাবে রাখুন যাতে দর্শককে লেবেলগুলি পড়ার জন্য পৃষ্ঠা বা স্ক্রিন ঘোরাতে না হয়। =='''<big>চিত্রগ্রাফ</big>'''== চিত্রগ্রাফগুলি বার গ্রাফের মতো, তবে দেখার প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য বারের পরিবর্তে প্রতীক ব্যবহার করা হয়। পেশাদার কাজে চিত্রগ্রাফগুলি প্রায়শই দেখা যায় না। পর্যাপ্ত পড়ার দক্ষতা না থাকা শিশু বা তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে যোগাযোগের জন্য এগুলি সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিত্রগ্রাফে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধান বিষয়গুলি: *'''শিরোনাম:''' সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় *'''কী:''' প্রতিটি প্রতীক কতটা প্রতিনিধিত্ব করে তা দর্শকদের দেখানোর জন্য একটি "কী" বা চাবি উপস্থিত থাকা উচিত। প্রতিটি প্রতীক যতটা সম্ভব সহজ হওয়া উচিত। বিভিন্ন আইটেম উপস্থাপন করার জন্য রঙ, আকার বা অভিযোজন পরিবর্তন করা যেতে পারে। **'''উদাহরণস্বরূপ:''' একটি টিকিট স্টাব ২টি সিনেমা দেখা সমান হতে পারে। যদি প্রতীকটি যে সংখ্যাটিতে নির্ধারিত হয় তা সহজ হয়, তাহলে ভগ্নাংশ দেখানোর জন্য এটি অর্ধেক করে কাটা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: টিকিট স্টাবের অর্ধেক দেখা ১টি সিনেমা দেখা সমান। চিত্রলিপি বা চিত্রলিপির সংজ্ঞা হল এমন একটি প্রতীক যা এমন একটি বস্তু বা স্থানকে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যবহৃত হয় যা এমনকি কখনও কখনও বিভিন্ন সংস্কৃতিতেও ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং বোধগম্য। তথ্য প্রদর্শন এবং উপস্থাপনের এই ধরণটি বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষার সাথে কাজ করার সময় অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। চিত্রলিপির একটি সাধারণ উদাহরণ হল পুরুষ এবং মহিলার প্রতীক যা মহিলার বাথরুমকে পুরুষের বাথরুম থেকে আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। এই দুটি প্রতীক বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত এবং প্রতিটি পরিস্থিতিতে একই জিনিস বোঝায়। সুতরাং, একটি চিত্রলিপি ছোট শিশু বা বিভিন্ন ভাষার মানুষের কাছে যোগাযোগের জন্য উপযুক্ত হবে। একটি সঠিক কী সহ ছবি এবং প্রতীকগুলি শব্দের প্রয়োজন ছাড়াই অর্থ প্রকাশ করবে। {{BookCat}} s71ksqz7dfzm7a2e6giib6ld4lwcnkl পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/নথির বিন্যাস/সংগঠনের ধরন 0 26391 85139 82223 2025-06-22T04:24:14Z Mehedi Abedin 7113 /* তুলনা */ 85139 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} ==সাংগঠনিক ধরণ== সাধারণত নথি সংগঠিত করার জন্য সাতটি ভিন্ন ধরণ ব্যবহার করা হয়: আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ, অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ, তুলনা, বিভাজন, পৃথকীকরণ , কারণ/প্রভাব এবং সমস্যা/সমাধান। কোন সাংগঠনিক ধরণ ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করবে কোন ধরণের নথি তৈরি করা হচ্ছে তার উপর; তবে, কার্যকরভাবে সাজানোর লক্ষ্য হল নথিটি ব্যবহার করা সহজ করা এবং প্রায়শই একটি একক নথিতে বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক ধরণ ব্যবহার করা হয়। ===আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ=== আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ হল তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তথ্যগুলিকে একত্রিত করা। প্রতিটি দলকে প্রায়শই উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত করা হয় যাতে তথ্যগুলিকে সুনির্দিষ্টভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগের জন্য প্রয়োজন যে প্রতিটি তথ্য কেবল একটি দলে উপস্থিত থাকতে পারে এবং প্রতিটি দলকে একই নীতি অনুসরণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, তিনটি প্রাণীকে শ্রেণীবিভাগ করার জন্য, প্রতিটি প্রাণীকে কেবল একটি দলে ফিট করা উচিত। একটি বাঘ, নেকড়ে এবং জেব্রাকে বিড়াল, কুকুর এবং অশ্বারোহীর মতো শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। প্রতিটি দল তাদের জৈবিক পরিবার অনুসারে প্রাণীদের গোষ্ঠীবদ্ধ করার একই নীতি অনুসরণ করে। একটি ত্রুটিপূর্ণ শ্রেণীবিভাগ হবে বিড়াল, কুকুর এবং স্তন্যপায়ী কারণ বিড়াল এবং কুকুর হল জৈবিক পরিবার এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী বলতে একটি জৈবিক শ্রেণীকে বোঝায়। আরও, প্রতিটি প্রজাতিকে উপগোষ্ঠী এবং বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে যেমন গবাদি পশুর ক্ষেত্রে, হেয়ারফোর্ড এবং জার্সি উভয়ই গবাদি পশু, তবে একটি গরুর মাংসের প্রাণী এবং অন্যটি একটি দুগ্ধজাত প্রাণী। ===অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ=== অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ আপনাকে পাঠক-কেন্দ্রিক যোগাযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে যখন আপনাকে প্রচুর সংখ্যক আইটেম সম্পর্কে তথ্য সংগঠিত করতে হয় কিন্তু আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুনিষ্ঠ বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাদের শ্রেণীবিভাগ করা অসম্ভব বা অবাঞ্ছিত মনে হয়। অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ থেকে আলাদা কারণ গোষ্ঠীগুলিকে শ্রেণিবিভাগের একটি সুসংগত নীতি অনুসরণ করতে হয় না; তবে, আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগের মতো, প্রতিটি তথ্য এখনও কেবল একটি গোষ্ঠীতে ফিট করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একটি বাঘ, নেকড়ে এবং জেব্রাকে কুকুর এবং আফ্রিকান স্তন্যপায়ী প্রাণীতে শ্রেণীবিভাগ করা যেতে পারে। গোষ্ঠীগুলি একটি সুসংগত নীতি অনুসরণ করে না, তবে প্রতিটি প্রাণীকে কেবল একটি বিভাগে গোষ্ঠীবদ্ধ করা যেতে পারে। অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ একটি বৈধ সাংগঠনিক প্যাটার্ন এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে পাঠকদের জন্য খুব কার্যকর হতে পারে। ===তুলনা=== পাঠকদের সিদ্ধান্ত নিতে এবং গবেষণার ফলাফল বুঝতে সাহায্য করার জন্য ব্যবসায়িক নথিতে তুলনা ব্যবহার করা হয়। একই মানদণ্ডের ভিত্তিতে দুটি বিকল্প একে অপরের সাথে তুলনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোন স্থানে গুদাম তৈরি করা হবে তা নির্ধারণ করার জন্য দুটি বিল্ডিং সাইটের তুলনা করা যেতে পারে। সাইট A এবং সাইট B উভয়ের তুলনা উন্নয়ন খরচ, রাস্তা হতে প্রবেশ, সম্পত্তি কর, গ্রাহকদের দূরত্ব ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে করা যেতে পারে। পাঠকদের যখন বেশ কয়েকটি বিকল্প মূল্যায়ন করতে হয় তখন তুলনা কার্যকর। কিছু উপায়ে এটি শ্রেণীবিভাগের মতো। আপনি যে জিনিসগুলির তুলনা করছেন সে সম্পর্কে আপনি অনেকগুলি তথ্য দিয়ে শুরু করেন এবং তুলনার পয়েন্টগুলির চারপাশে তথ্যগুলিকে গোষ্ঠীভুক্ত করেন যা আপনার পাঠকদের দেখতে সক্ষম করে যে জিনিসগুলি কেমন এবং একে অপরের থেকে আলাদা। সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করার জন্য লেখা তুলনাগুলিতে, তুলনার পয়েন্টগুলিকে মানদণ্ড বলা হয়। তুলনা লেখার সময়, আপনি দুটি সাংগঠনিক প্যাটার্নের যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। উভয়ই একই বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করে তবে বিষয়বস্তুগুলিকে ভিন্নভাবে সাজান। উদাহরণস্বরূপ, টিফানির পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। টিফানির নিয়োগকর্তা বড় ট্রাকের বডির জন্য ধাতব যন্ত্রাংশ স্ট্যাম্প করার জন্য ব্যবহৃত পুরোনো মেশিনগুলি প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টিফানিকে কোম্পানি যে দুটি মেশিন বিবেচনা করছে তার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শত শত পৃষ্ঠার তথ্য সংগ্রহ করার পর, তাকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোম্পানির নির্বাহীদের কাছে তার প্রতিবেদন কীভাবে সংগঠিত করবেন। তার তুলনা সংগঠিত করার জন্য, টিফানি বিভক্ত প্যাটার্ন বা বিকল্প প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারেন। {|align="center" |+<u>'''বিভক্ত প্যাটার্ন'''</u> !'''মেশিন A''' |- |ব্যয় |- |দক্ষতা |- |নির্মাণের সময় |- |বায়ু দূষণ |- |ইত্যাদি |- !'''মেশিন B''' |- |ব্যয় |- |দক্ষতা |- |নির্মাণের সময় |- |বায়ু দূষণ |- |ইত্যাদি |} {|align="center" |+<u>'''বিকল্প প্যাটার্ন'''</u> !'''ব্যয়''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''দক্ষতা''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''নির্মাণ সময়''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''বায়ু দূষণ''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''ইত্যাদি''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |} ===বিভাজন=== বিভাজন বলতে কোনও বস্তুর বর্ণনা বোঝায়। যদি কোনও নথি একটি সাইকেল সম্পর্কে লিখতে হয়, তবে একজন লেখক বর্ণনাটিকে সাইকেলের ছোট ছোট অংশে ভাগ করতে পারেন। একজন লেখক প্রথমে ব্রেকিং সিস্টেম, তারপর গিয়ার সিস্টেম, তারপর ফ্রেম, সিট এবং টায়ার বর্ণনা করতে পারেন। ডকুমেন্টটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করলে, তথ্য খুঁজে পাওয়া সহজ হয় এবং ডকুমেন্টটি পাঠকের জন্য আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। ====একটি বস্তু বর্ণনা করার নির্দেশিকা==== # '''আপনার পাঠক এবং উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত শ্রেণীবিভাগের নীতি নির্বাচন করুন।''' # '''একবারে বিভাজনের জন্য শুধুমাত্র একটি ভিত্তি ব্যবহার করুন।''' # '''আপনার বর্ণনার অংশগুলিকে এমনভাবে সাজান যাতে আপনার পাঠকরা দরকারী বলে মনে করেন।''' # '''প্রতিটি অংশ বর্ণনা করার সময়, আপনার পাঠকদের জন্য দরকারী বলে মনে হয় এমন বিশদ বিবরণ প্রদান করুন।''' # '''যদি গ্রাফিক্স আপনার পাঠকদের বুঝতে এবং বস্তু সম্পর্কে আপনার তথ্য ব্যবহার করতে সাহায্য করে তবে তা অন্তর্ভুক্ত করুন।''' ===পৃথকীকরণ=== পৃথকীকরণ বিভাজনের অনুরূপ, তবে পৃথকীকরণ বলতে কোনও প্রক্রিয়া বর্ণনা করা বোঝায় না। সাধারণত, একজন লেখক পৃথকীকরণ ব্যবহার করবেন যখন নথির লক্ষ্য পাঠক প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করা। রান্নার বইয়ের রেসিপিগুলি প্রায়শই পৃথকীকরণ করা হয়। কেক কীভাবে প্রস্তুত করবেন তা বর্ণনা করার সময়, প্রথমে কেক তৈরির প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করতে হবে। তারপরে, ফ্রস্টিং তৈরির প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হবে। এর পরে, রেসিপিটি ব্যাখ্যা করতে পারে কিভাবে কেক ফ্রস্ট করতে হয়। ডকুমেন্টটি ভাগ করে, রেসিপিটিকে ছোট ছোট, পরিচালনাযোগ্য ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে। এটি পাঠকের জন্য প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করা সহজ করে তোলে। একটি প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ বর্ণনা সময়ের সাথে সাথে ঘটনাগুলির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। একটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করার ক্ষেত্রে আপনার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে: * আপনার পাঠকদের প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করতে সক্ষম করা। উদাহরণস্বরূপ, আপনি এমন নির্দেশাবলী লিখতে পারেন যা আপনার পাঠকদের জীবন্ত টিস্যুর নমুনায় রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে, একটি ফটোভোলটাইক কোষ তৈরি করতে, ঋণের জন্য আবেদন করতে বা একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম চালাতে সক্ষম করবে। * আপনার পাঠকদের প্রক্রিয়াটি বুঝতে সক্ষম করার জন্য, আপনি আপনার পাঠকদের নিম্নলিখিতগুলি বুঝতে চাইতে পারেন: ** কীভাবে কিছু করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে কয়লা সিন্থেটিক হীরাতে রূপান্তরিত হয়। ** কীভাবে কিছু কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে ফুসফুস রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ** কীভাবে কিছু ঘটেছিল। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ প্রোগ্রামগুলি তৈরি করেছিল যা অবশেষে চাঁদে মহাকাশচারীদের অবতরণ করেছিল। ====পৃথকীকরণের জন্য শ্রেণিবিন্যাসের নীতি==== প্রক্রিয়াটি কোথায় ভাগ করবেন তা নির্ধারণ করতে, আপনার শ্রেণিবিন্যাসের একটি নীতি প্রয়োজন। সাধারণত ব্যবহৃত নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে ধাপগুলি কখন সম্পন্ন করা হয় (প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন; বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ), ধাপগুলির উদ্দেশ্য (সরঞ্জাম প্রস্তুত করা, ফলাফল পরীক্ষা করা), এবং ধাপগুলি সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলি (উদাহরণস্বরূপ, টেবিল করাত, ড্রিল প্রেস, ইত্যাদি)। প্রক্রিয়াগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণীবদ্ধ নীতি অনুসারে ভাগ করা যেতে পারে। আপনার পাঠকদের লক্ষ্যগুলিকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করে এমন নীতিটি বেছে নিন। ====পৃথকীকরণের জন্য নির্দেশিকা==== # আপনার পাঠকদের এবং আপনার উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত ভাগ করার জন্য একটি নীতি চয়ন করুন। # আপনার ক্ষুদ্রতম গোষ্ঠীগুলিকে পরিচালনাযোগ্য করুন। # ধাপ এবং ধাপের গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সম্পর্কগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন। # আপনার পাঠকদের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে পর্যাপ্ত বিশদ প্রদান করুন। # গ্রাফিক্স অন্তর্ভুক্ত করুন যদি সেগুলি আপনার পাঠকদের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার তথ্য বুঝতে এবং ব্যবহার করতে সহায়তা করে। ===কারণ এবং প্রভাব=== কারণ এবং প্রভাব দ্বারা সংগঠিত নথিগুলি পাঠকদের বুঝতে সাহায্য করে যে কীভাবে একটি ঘটনা অন্যটির দ্বারা সৃষ্ট হয়। কারণ এবং প্রভাব নথিগুলি প্রায়শই পাঠকদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে একটি কারণ এবং প্রভাব সম্পর্ক আসলে বিদ্যমান। কারণ এবং প্রভাবকে সংযুক্ত করা কঠিন হতে পারে। সম্পর্কের প্রমাণ সাবধানে নির্বাচন করতে হবে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে, কারণ এবং প্রভাব দ্বারা সংগঠিত একটি নথি পাঠকের জন্য খুবই প্ররোচিত এবং কার্যকর হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে, আপনি দুটি স্বতন্ত্র উদ্দেশ্যে কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে লিখতে পারেন। * আপনার পাঠকদের একটি কারণ এবং প্রভাব সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করার জন্য। * আপনার পাঠকদের বোঝাতে যে একটি নির্দিষ্ট কারণ এবং প্রভাব সম্পর্ক বিদ্যমান। এই দুটি উদ্দেশ্যে সংগঠিত করার কৌশলগুলি কিছুটা আলাদা। ===সমস্যা এবং সমাধান=== সমস্যা এবং তাদের সমাধানগুলি আপনার কর্মক্ষেত্রে লেখার সবচেয়ে ঘন ঘন বিষয়গুলির মধ্যে একটি হবে। আপনি যে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করবেন তা কিছু কৌশল, পণ্য, প্রক্রিয়া বা নীতির প্রতি অসন্তুষ্টি থেকে উদ্ভূত হতে পারে। বিকল্পভাবে, এগুলি একটি নতুন লক্ষ্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হতে পারে, যেমন দুর্দান্ত দক্ষতা, অথবা অন্য দেশে ব্যবসা করার সম্ভাবনার মতো একটি নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার। সমস্যা এবং সমাধান দ্বারা সংগঠিত একটি নথির লক্ষ্য হল ভবিষ্যতের পদক্ষেপ প্রস্তাব করা। কারণ এবং প্রভাব নথির মতো, সমস্যা এবং সমাধান নথিগুলিকে প্ররোচিত করতে হবে। লেখককে প্রথমে দেখাতে হবে যে একটি সমস্যা বিদ্যমান, এবং তারপর দেখাতে হবে যে প্রস্তাবিত সমাধানই সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম পদ্ধতি। সমস্যা এবং সমাধান নথি ব্যবসায়িক লেখায় খুবই সাধারণ এবং প্রায়শই [[পেশাদার_এবং_প্রযুক্তিগত_লেখা/প্রস্তাব|ব্যবসায়িক প্রস্তাব]] আকার ধারণ করে। ====পাঠকদের আপনার প্রস্তাবিত সমাধান গ্রহণে রাজি করানোর জন্য নির্দেশিকা==== # সমস্যাটি এমনভাবে বর্ণনা করুন যাতে এটি আপনার পাঠকদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। # আপনার পদ্ধতি বর্ণনা করুন। # আপনার পদ্ধতি বর্ণনা করার সময়, এটি কীভাবে সমস্যার সমাধান করবে তা ব্যাখ্যা করুন। তাদের দেখান যে তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনার পদ্ধতিটি তাদের জন্য সেরা বিকল্প। # আপত্তিগুলি অনুমান করুন এবং প্রতিক্রিয়া জানান। # সুবিধাগুলি উল্লেখ করুন। # আপনার সমাধানের দুর্বলতাগুলি স্বীকার করুন। আপনি সেগুলি উপস্থাপন করুন বা না করুন, আপনার শ্রোতারা দুর্বলতাগুলি খুঁজে পাবেন। আপনার সমাধানের দুর্বলতাগুলো স্বীকার করলে এবং তারপর সেগুলো কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা দেখালে আপনার ধারণাগুলো আরও বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে। # যদি গ্রাফিক্স আপনার পাঠকদের আপনার প্রস্তাবিত সমাধান বুঝতে এবং অনুমোদন করতে সাহায্য করে, তাহলে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন। # দ্বন্দ্বমূলক কথা বলা এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার পাঠকদের নিরুৎসাহিত করবে। আপনার ধারণাগুলোর প্রতি তাদের খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত, তাদের ধারণার প্রতিরক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নয়। # মনে রাখবেন যে আপনি আপনার সমস্ত পাঠককে সর্বদা রাজি করাতে পারবেন না। কখনও কখনও, আপনাকে মেনে নিতে হবে যে তারা আপনার পরামর্শ গ্রহণ করে। সময়ের সাথে সাথে, তারা এখনও তাদের মতামত পরিবর্তন করতে পারে। # সরাসরি মূল বিষয়ে আসুন। ব্যবসায়ীরা আপনার কথা শুনে সময় নষ্ট করতে চান না; কেবল তাদের যা প্রয়োজন তা দিন। {{BookCat}} 6ixbklxlp20ifpvv7h8pkvk0gqhear0 85140 85139 2025-06-22T04:25:57Z Mehedi Abedin 7113 85140 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} ==সাংগঠনিক ধরণ== সাধারণত নথি সংগঠিত করার জন্য সাতটি ভিন্ন ধরণ ব্যবহার করা হয়: আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ, অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ, তুলনা, বিভাজন, পৃথকীকরণ , কারণ/প্রভাব এবং সমস্যা/সমাধান। কোন সাংগঠনিক ধরণ ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করবে কোন ধরণের নথি তৈরি করা হচ্ছে তার উপর; তবে, কার্যকরভাবে সাজানোর লক্ষ্য হল নথিটি ব্যবহার করা সহজ করা এবং প্রায়শই একটি একক নথিতে বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক ধরণ ব্যবহার করা হয়। ===আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ=== আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ হল তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তথ্যগুলিকে একত্রিত করা। প্রতিটি দলকে প্রায়শই উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত করা হয় যাতে তথ্যগুলিকে সুনির্দিষ্টভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগের জন্য প্রয়োজন যে প্রতিটি তথ্য কেবল একটি দলে উপস্থিত থাকতে পারে এবং প্রতিটি দলকে একই নীতি অনুসরণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, তিনটি প্রাণীকে শ্রেণীবিভাগ করার জন্য, প্রতিটি প্রাণীকে কেবল একটি দলে ফিট করা উচিত। একটি বাঘ, নেকড়ে এবং জেব্রাকে বিড়াল, কুকুর এবং অশ্বারোহীর মতো শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। প্রতিটি দল তাদের জৈবিক পরিবার অনুসারে প্রাণীদের গোষ্ঠীবদ্ধ করার একই নীতি অনুসরণ করে। একটি ত্রুটিপূর্ণ শ্রেণীবিভাগ হবে বিড়াল, কুকুর এবং স্তন্যপায়ী কারণ বিড়াল এবং কুকুর হল জৈবিক পরিবার এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী বলতে একটি জৈবিক শ্রেণীকে বোঝায়। আরও, প্রতিটি প্রজাতিকে উপগোষ্ঠী এবং বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে যেমন গবাদি পশুর ক্ষেত্রে, হেয়ারফোর্ড এবং জার্সি উভয়ই গবাদি পশু, তবে একটি গরুর মাংসের প্রাণী এবং অন্যটি একটি দুগ্ধজাত প্রাণী। ===অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ=== অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ আপনাকে পাঠক-কেন্দ্রিক যোগাযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে যখন আপনাকে প্রচুর সংখ্যক আইটেম সম্পর্কে তথ্য সংগঠিত করতে হয় কিন্তু আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুনিষ্ঠ বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাদের শ্রেণীবিভাগ করা অসম্ভব বা অবাঞ্ছিত মনে হয়। অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ থেকে আলাদা কারণ গোষ্ঠীগুলিকে শ্রেণিবিভাগের একটি সুসংগত নীতি অনুসরণ করতে হয় না; তবে, আনুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগের মতো, প্রতিটি তথ্য এখনও কেবল একটি গোষ্ঠীতে ফিট করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একটি বাঘ, নেকড়ে এবং জেব্রাকে কুকুর এবং আফ্রিকান স্তন্যপায়ী প্রাণীতে শ্রেণীবিভাগ করা যেতে পারে। গোষ্ঠীগুলি একটি সুসংগত নীতি অনুসরণ করে না, তবে প্রতিটি প্রাণীকে কেবল একটি বিভাগে গোষ্ঠীবদ্ধ করা যেতে পারে। অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীবিভাগ একটি বৈধ সাংগঠনিক প্যাটার্ন এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে পাঠকদের জন্য খুব কার্যকর হতে পারে। ===তুলনা=== পাঠকদের সিদ্ধান্ত নিতে এবং গবেষণার ফলাফল বুঝতে সাহায্য করার জন্য ব্যবসায়িক নথিতে তুলনা ব্যবহার করা হয়। একই মানদণ্ডের ভিত্তিতে দুটি বিকল্প একে অপরের সাথে তুলনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোন স্থানে গুদাম তৈরি করা হবে তা নির্ধারণ করার জন্য দুটি বিল্ডিং সাইটের তুলনা করা যেতে পারে। সাইট A এবং সাইট B উভয়ের তুলনা উন্নয়ন খরচ, রাস্তা হতে প্রবেশ, সম্পত্তি কর, গ্রাহকদের দূরত্ব ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে করা যেতে পারে। পাঠকদের যখন বেশ কয়েকটি বিকল্প মূল্যায়ন করতে হয় তখন তুলনা কার্যকর। কিছু উপায়ে এটি শ্রেণীবিভাগের মতো। আপনি যে জিনিসগুলির তুলনা করছেন সে সম্পর্কে আপনি অনেকগুলি তথ্য দিয়ে শুরু করেন এবং তুলনার পয়েন্টগুলির চারপাশে তথ্যগুলিকে গোষ্ঠীভুক্ত করেন যা আপনার পাঠকদের দেখতে সক্ষম করে যে জিনিসগুলি কেমন এবং একে অপরের থেকে আলাদা। সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করার জন্য লেখা তুলনাগুলিতে, তুলনার পয়েন্টগুলিকে মানদণ্ড বলা হয়। তুলনা লেখার সময়, আপনি দুটি সাংগঠনিক প্যাটার্নের যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। উভয়ই একই বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করে তবে বিষয়বস্তুগুলিকে ভিন্নভাবে সাজান। উদাহরণস্বরূপ, টিফানির পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। টিফানির নিয়োগকর্তা বড় ট্রাকের বডির জন্য ধাতব যন্ত্রাংশ স্ট্যাম্প করার জন্য ব্যবহৃত পুরোনো মেশিনগুলি প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টিফানিকে কোম্পানি যে দুটি মেশিন বিবেচনা করছে তার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শত শত পৃষ্ঠার তথ্য সংগ্রহ করার পর, তাকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোম্পানির নির্বাহীদের কাছে তার প্রতিবেদন কীভাবে সংগঠিত করবেন। তার তুলনা সংগঠিত করার জন্য, টিফানি বিভক্ত প্যাটার্ন বা বিকল্প প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারেন। {|align="center" |+<u>'''বিভক্ত প্যাটার্ন'''</u> !'''মেশিন A''' |- |ব্যয় |- |দক্ষতা |- |নির্মাণের সময় |- |বায়ু দূষণ |- |ইত্যাদি |- !'''মেশিন B''' |- |ব্যয় |- |দক্ষতা |- |নির্মাণের সময় |- |বায়ু দূষণ |- |ইত্যাদি |} {|align="center" |+<u>'''বিকল্প প্যাটার্ন'''</u> !'''ব্যয়''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''দক্ষতা''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''নির্মাণ সময়''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''বায়ু দূষণ''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |- !'''ইত্যাদি''' |- |মেশিন A |- |মেশিন B |} ===বিভাজন=== বিভাজন বলতে কোনও বস্তুর বর্ণনা বোঝায়। যদি কোনও নথি একটি সাইকেল সম্পর্কে লিখতে হয়, তবে একজন লেখক বর্ণনাটিকে সাইকেলের ছোট ছোট অংশে ভাগ করতে পারেন। একজন লেখক প্রথমে ব্রেকিং সিস্টেম, তারপর গিয়ার সিস্টেম, তারপর ফ্রেম, সিট এবং টায়ার বর্ণনা করতে পারেন। ডকুমেন্টটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করলে, তথ্য খুঁজে পাওয়া সহজ হয় এবং ডকুমেন্টটি পাঠকের জন্য আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। ====একটি বস্তু বর্ণনা করার নির্দেশিকা==== # '''আপনার পাঠক এবং উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত শ্রেণীবিভাগের নীতি নির্বাচন করুন।''' # '''একবারে বিভাজনের জন্য শুধুমাত্র একটি ভিত্তি ব্যবহার করুন।''' # '''আপনার বর্ণনার অংশগুলিকে এমনভাবে সাজান যাতে আপনার পাঠকরা দরকারী বলে মনে করেন।''' # '''প্রতিটি অংশ বর্ণনা করার সময়, আপনার পাঠকদের জন্য দরকারী বলে মনে হয় এমন বিশদ বিবরণ প্রদান করুন।''' # '''যদি গ্রাফিক্স আপনার পাঠকদের বুঝতে এবং বস্তু সম্পর্কে আপনার তথ্য ব্যবহার করতে সাহায্য করে তবে তা অন্তর্ভুক্ত করুন।''' ===পৃথকীকরণ=== পৃথকীকরণ বিভাজনের অনুরূপ, তবে পৃথকীকরণ বলতে কোনও প্রক্রিয়া বর্ণনা করা বোঝায় না। সাধারণত, একজন লেখক পৃথকীকরণ ব্যবহার করবেন যখন নথির লক্ষ্য পাঠক প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করা। রান্নার বইয়ের রেসিপিগুলি প্রায়শই পৃথকীকরণ করা হয়। কেক কীভাবে প্রস্তুত করবেন তা বর্ণনা করার সময়, প্রথমে কেক তৈরির প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করতে হবে। তারপরে, ফ্রস্টিং তৈরির প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হবে। এর পরে, রেসিপিটি ব্যাখ্যা করতে পারে কিভাবে কেক ফ্রস্ট করতে হয়। ডকুমেন্টটি ভাগ করে, রেসিপিটিকে ছোট ছোট, পরিচালনাযোগ্য ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে। এটি পাঠকের জন্য প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করা সহজ করে তোলে। একটি প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ বর্ণনা সময়ের সাথে সাথে ঘটনাগুলির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। একটি প্রক্রিয়া বর্ণনা করার ক্ষেত্রে আপনার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে: * আপনার পাঠকদের প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করতে সক্ষম করা। উদাহরণস্বরূপ, আপনি এমন নির্দেশাবলী লিখতে পারেন যা আপনার পাঠকদের জীবন্ত টিস্যুর নমুনায় রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে, একটি ফটোভোলটাইক কোষ তৈরি করতে, ঋণের জন্য আবেদন করতে বা একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম চালাতে সক্ষম করবে। * আপনার পাঠকদের প্রক্রিয়াটি বুঝতে সক্ষম করার জন্য, আপনি আপনার পাঠকদের নিম্নলিখিতগুলি বুঝতে চাইতে পারেন: ** কীভাবে কিছু করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে কয়লা সিন্থেটিক হীরাতে রূপান্তরিত হয়। ** কীভাবে কিছু কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে ফুসফুস রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ** কীভাবে কিছু ঘটেছিল। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ প্রোগ্রামগুলি তৈরি করেছিল যা অবশেষে চাঁদে মহাকাশচারীদের অবতরণ করেছিল। ====পৃথকীকরণের জন্য শ্রেণিবিন্যাসের নীতি==== প্রক্রিয়াটি কোথায় ভাগ করবেন তা নির্ধারণ করতে, আপনার শ্রেণিবিন্যাসের একটি নীতি প্রয়োজন। সাধারণত ব্যবহৃত নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে ধাপগুলি কখন সম্পন্ন করা হয় (প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন; বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ), ধাপগুলির উদ্দেশ্য (সরঞ্জাম প্রস্তুত করা, ফলাফল পরীক্ষা করা), এবং ধাপগুলি সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলি (উদাহরণস্বরূপ, টেবিল করাত, ড্রিল প্রেস, ইত্যাদি)। প্রক্রিয়াগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণীবদ্ধ নীতি অনুসারে ভাগ করা যেতে পারে। আপনার পাঠকদের লক্ষ্যগুলিকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করে এমন নীতিটি বেছে নিন। ====পৃথকীকরণের জন্য নির্দেশিকা==== # আপনার পাঠকদের এবং আপনার উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত ভাগ করার জন্য একটি নীতি চয়ন করুন। # আপনার ক্ষুদ্রতম গোষ্ঠীগুলিকে পরিচালনাযোগ্য করুন। # ধাপ এবং ধাপের গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সম্পর্কগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন। # আপনার পাঠকদের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে পর্যাপ্ত বিশদ প্রদান করুন। # গ্রাফিক্স অন্তর্ভুক্ত করুন যদি সেগুলি আপনার পাঠকদের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার তথ্য বুঝতে এবং ব্যবহার করতে সহায়তা করে। ===কারণ এবং প্রভাব=== কারণ এবং প্রভাব দ্বারা সংগঠিত নথিগুলি পাঠকদের বুঝতে সাহায্য করে যে কীভাবে একটি ঘটনা অন্যটির দ্বারা সৃষ্ট হয়। কারণ এবং প্রভাব নথিগুলি প্রায়শই পাঠকদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে একটি কারণ এবং প্রভাব সম্পর্ক আসলে বিদ্যমান। কারণ এবং প্রভাবকে সংযুক্ত করা কঠিন হতে পারে। সম্পর্কের প্রমাণ সাবধানে নির্বাচন করতে হবে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে, কারণ এবং প্রভাব দ্বারা সংগঠিত একটি নথি পাঠকের জন্য খুবই প্ররোচিত এবং কার্যকর হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে, আপনি দুটি স্বতন্ত্র উদ্দেশ্যে কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে লিখতে পারেন। * আপনার পাঠকদের একটি কারণ এবং প্রভাব সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করার জন্য। * আপনার পাঠকদের বোঝাতে যে একটি নির্দিষ্ট কারণ এবং প্রভাব সম্পর্ক বিদ্যমান। এই দুটি উদ্দেশ্যে সংগঠিত করার কৌশলগুলি কিছুটা আলাদা। ===সমস্যা এবং সমাধান=== সমস্যা এবং তাদের সমাধানগুলি আপনার কর্মক্ষেত্রে লেখার সবচেয়ে ঘন ঘন বিষয়গুলির মধ্যে একটি হবে। আপনি যে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করবেন তা কিছু কৌশল, পণ্য, প্রক্রিয়া বা নীতির প্রতি অসন্তুষ্টি থেকে উদ্ভূত হতে পারে। বিকল্পভাবে, এগুলি একটি নতুন লক্ষ্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হতে পারে, যেমন দুর্দান্ত দক্ষতা, অথবা অন্য দেশে ব্যবসা করার সম্ভাবনার মতো একটি নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার। সমস্যা এবং সমাধান দ্বারা সংগঠিত একটি নথির লক্ষ্য হল ভবিষ্যতের পদক্ষেপ প্রস্তাব করা। কারণ এবং প্রভাব নথির মতো, সমস্যা এবং সমাধান নথিগুলিকে প্ররোচিত করতে হবে। লেখককে প্রথমে দেখাতে হবে যে একটি সমস্যা বিদ্যমান, এবং তারপর দেখাতে হবে যে প্রস্তাবিত সমাধানই সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম পদ্ধতি। সমস্যা এবং সমাধান নথি ব্যবসায়িক লেখায় খুবই সাধারণ এবং প্রায়শই [[পেশাদার_এবং_প্রযুক্তিগত_লেখা/প্রস্তাব|ব্যবসায়িক প্রস্তাব]] আকার ধারণ করে। ====পাঠকদের আপনার প্রস্তাবিত সমাধান গ্রহণে রাজি করানোর জন্য নির্দেশিকা==== # সমস্যাটি এমনভাবে বর্ণনা করুন যাতে এটি আপনার পাঠকদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। # আপনার পদ্ধতি বর্ণনা করুন। # আপনার পদ্ধতি বর্ণনা করার সময়, এটি কীভাবে সমস্যার সমাধান করবে তা ব্যাখ্যা করুন। তাদের দেখান যে তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনার পদ্ধতিটি তাদের জন্য সেরা বিকল্প। # আপত্তিগুলি অনুমান করুন এবং প্রতিক্রিয়া জানান। # সুবিধাগুলি উল্লেখ করুন। # আপনার সমাধানের দুর্বলতাগুলি স্বীকার করুন। আপনি সেগুলি উপস্থাপন করুন বা না করুন, আপনার শ্রোতারা দুর্বলতাগুলি খুঁজে পাবেন। আপনার সমাধানের দুর্বলতাগুলো স্বীকার করলে এবং তারপর সেগুলো কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা দেখালে আপনার ধারণাগুলো আরও বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে। # যদি গ্রাফিক্স আপনার পাঠকদের আপনার প্রস্তাবিত সমাধান বুঝতে এবং অনুমোদন করতে সাহায্য করে, তাহলে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন # দ্বন্দ্বমূলক কথা বলা এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার পাঠকদের নিরুৎসাহিত করবে। আপনার ধারণাগুলোর প্রতি তাদের খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত, তাদের ধারণার প্রতিরক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নয়। # মনে রাখবেন যে আপনি আপনার সমস্ত পাঠককে সর্বদা রাজি করাতে পারবেন না। কখনও কখনও, আপনাকে মেনে নিতে হবে যে তারা আপনার পরামর্শ গ্রহণ করে। সময়ের সাথে সাথে, তারা এখনও তাদের মতামত পরিবর্তন করতে পারে। # সরাসরি মূল বিষয়ে আসুন। ব্যবসায়ীরা আপনার কথা শুনে সময় নষ্ট করতে চান না; কেবল তাদের যা প্রয়োজন তা দিন। {{BookCat}} 1staqbeshir6t90t9vivyp90phqmcd5 পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/চিত্র 0 26392 85141 82187 2025-06-22T04:29:44Z Mehedi Abedin 7113 85141 wikitext text/x-wiki =ছবি এবং চিত্র= পেশাদার নথিতে ছবি ব্যবহার করা হয় এমন একটি বার্তা প্রেরণের হাতিয়ার হিসেবে যা একজন লেখক মনে করেন সঠিক চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। ছবি একটি বার্তা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিছু উদাহরণ এখানে দেখা যাবে: ===চিত্রের চেকলিস্ট=== '''পরিকল্পনা''' * আপনার শ্রোতারা কোন ধরণের চিত্রের সাথে পরিচিত? * আপনার কি এমন তথ্য আছে যা আপনার শ্রোতাদের কাছে দৃশ্যমানভাবে বা শব্দ এবং গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে আরও সহজে বা দ্রুত জানানো যেতে পারে? * আপনার কি এমন সংজ্ঞা আছে যা দৃশ্যমানভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যা একটি ফ্লোচার্টে চিত্রিত করা যেতে পারে? * আপনার কি ট্রেন্ড বা সম্পর্ক সম্পর্কে তথ্য আছে যা টেবিল এবং গ্রাফিক্সে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন পরিসংখ্যান আছে যা টেবিলে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে? * আপনার কি বস্তু চিত্রিত করার প্রয়োজন? যদি তাই হয়, তাহলে বস্তু সম্পর্কে আপনার কী প্রদর্শন করার প্রয়োজন? আপনার কি বস্তুর নির্দিষ্ট দিকগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন? আপনার কি ছবির বাস্তবতা প্রয়োজন? * আপনার চিত্রের নকশার নিয়মাবলী কী কী? * আপনি কি ধার করতে বা অভিযোজিত করতে পারেন এমন উপযুক্ত চিত্রাবলী আছে? নাকি আপনার নিজের তৈরি করতে হবে? '''সংশোধন''' * আপনার চিত্রাবলী কি আপনার উদ্দেশ্য এবং দর্শকদের জন্য উপযুক্ত? * আপনার চিত্রাবলী কি নীতিগতভাবে তথ্য যোগাযোগ করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কার্যকরভাবে অবস্থিত এবং খুঁজে পাওয়া সহজ? * আপনার চিত্রাবলী কি নম্বরযুক্ত এবং লেবেলযুক্ত? * আপনার মৌখিক এবং দৃশ্যমান উপাদানগুলি কি একে অপরকে শক্তিশালী করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কেবল সাজসজ্জার পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে তথ্যবহুল? * প্রয়োজনে, আপনি কি আপনার পাঠকদের ভাষ্য বা টীকা দিয়ে আপনার চিত্রাবলী ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছেন? * আপনি কি ধার করা বা অভিযোজিত টেবিল এবং চিত্রের উৎসগুলি স্বীকার করেছেন? ===কিভাবে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করবেন=== কোনও কিছু করার জন্য দৃশ্যমান উপস্থাপনা দেওয়ার জন্য ছবিগুলি একটি কার্যকর হাতিয়ার। এগুলি একা প্রদর্শন করা যেতে পারে বা প্রদত্ত পাঠ্যের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এগুলি একটি বার্তাকে উন্নত করতে পারে। ''যদি আপনি লেখার সাথে ছবি ব্যবহার করেন:'' নির্দেশাবলীর একটি সেটের মতো, চিত্রকর্মটি কাজের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি শুধুমাত্র লেখা থেকে উদ্ভূত বিভ্রান্তি হ্রাস করে। কোনও কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হয় তা চিত্রিত করতে সাহায্য করার জন্য কোনও ছবি ব্যবহার করার সময় ছবিটি পাঠ্যের সাথে মিলে যায় কিনা তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। আপনাকে লেখা বা পাঠ্য ব্যবহার করে ছবিটি ব্যাখ্যা করতে হবে এবং বিপরীতভাবে, একটি ছবি ব্যবহার করে পাঠ্য ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও, দর্শক যখন ছবিটি দেখতে পাবে তখন কাজটি আরও বেশি করে সম্পন্ন করবে যদি তারা কাজটি দেখছিল, যদি তারা এটি অনুভব করছিল তবে তা অগত্যা নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে: যদি আপনার কাজটি একটি কার্টহুইল করা হয়, তাহলে আপনি এমন কোণে ছবিগুলি চাইবেন না যেখানে ব্যক্তি কার্টহুইল করা ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখছে। আপনি চাইবেন ছবিগুলি এমন কারও কাছ থেকে হোক, যাতে দর্শক যা দেখতে পাচ্ছে না (যেমন যখন তারা তাদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তখন তাদের পা কোথায়) তা দেখে বিভ্রান্ত না হয়। ছবি ব্যবহার করার সময় সহজ জিনিসগুলি একটি নথি তৈরি করে বা নষ্ট করে দেয়। আপনি যে ছবিগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি নিয়ে ভাবুন এবং পুনরায় ভাবুন এবং প্রথমবারের মতো কেউ সেগুলি দেখলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ===একটি সমাপ্ত পণ্য কেমন হওয়া উচিত=== যখন টেক্সট সম্পর্কিত তথ্য আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার সারমর্ম ধারণ করতে না পারে, তখন ডকুমেন্টে আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার একটি প্রকৃত ছবি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ছবি আপনাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে সক্ষম করে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ছবিগুলি রঙিন এবং উচ্চ মানের। কালো এবং সাদা ছবিগুলি কাগজে সহজেই ঝাপসা হয়ে যায় এবং কোনও ছবি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণের অভাব থাকে। বর্ণনামূলক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারে ছবিগুলি হ্রাস পায়। "একটি ছবি হাজার শব্দের সমান" এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সট মোড়ানোর ক্ষমতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। পরিষ্কার টেক্সট মোড়ানো সহ একটি ভালভাবে স্থাপন করা ছবি অন্যথায় অপ্রতিরোধ্য টেক্সট ব্লককে যুক্তিসঙ্গতভাবে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। 25 পৃষ্ঠার ব্লক, ন্যায্য সারিবদ্ধকরণ, সাধারণ কালো টেক্সট দেখা একটি প্রতিবেদন দেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। একটি ছবি একটি প্রতিবেদনকে প্রাণবন্ত করতে পারে, এটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে এবং প্রতিবেদনটিকে এক গতিতে স্পষ্ট করতে সহায়তা করতে পারে। ===একটি বস্তু, স্থান, বা প্রক্রিয়ার মানচিত্র তৈরি করুন=== এই ধরণের ছবির উদাহরণ একটি মোটরগাড়ি ম্যানুয়াল বা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যেতে পারে। এটি একটি মেশিনের ছবি থেকে শুরু করে সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে কাজ করে তার উদাহরণ পর্যন্ত যেকোনো কিছু হতে পারে। সবকিছু কোথায় এবং প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা দেখানোর জন্য তীর এবং লেবেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবিতে যথেষ্ট বড় পটভূমি থাকা উচিত যাতে পাঠক তার চারপাশের জিনিসগুলির সাথে সম্পর্কিত এলাকাটি সনাক্ত করতে পারেন। ছবিগুলি দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভাগ করা লিখিত ভাষা বিদ্যমান নাও থাকতে পারে তখন এগুলি কার্যকর। ছবিগুলি শব্দের চেয়ে জোরে কথা বলতে পারে এবং সাধারণত বার্তাটি দ্রুত চিত্রিত করে। আপনার নথিতে আপনি যে ছবিটি রাখবেন তা নির্বাচন করার সময় প্রথম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ছবিগুলি এড়িয়ে চলুন যার একাধিক অর্থ হতে পারে, অথবা প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে, আপনি যে দর্শকদের জন্য লিখছেন তাদের মধ্যে নিজেকে রাখুন এবং ছবিটি দেখার সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন। আরও ভালো, এমন কারো উপর ছবিটি পরীক্ষা করে দেখুন যিনি আপনার ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে ছবিটি তাদের কাছে কী বার্তা পাঠায়। আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পষ্টতা অপরিহার্য। তবে ছবির উপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। দর্শকদের সবচেয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবি এবং লেখা একসাথে ব্যবহার করা উচিত। ছবিগুলি শব্দের মধ্যে দুর্দান্ত বিরতি তৈরি করতে পারে, তবে শব্দের মতো কোনও বিষয় বোঝার জন্য সবসময় ততটা কার্যকর নয়। ==সফ্টওয়্যার ফটোগ্রাফের কার্যকারিতা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি করতে পারে== কম্পিউটারে প্রচুর ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম রয়েছে যা ছবির সঠিক কোণ, জুম, ভিউ এবং রঙ বের করে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, কোরেল এবং ইমেজ স্মার্ট। অনেক কম্পিউটার এখন মৌলিক চিত্র সম্পাদনা সফ্টওয়্যারের সাথে আসে, যা রঙ, উজ্জ্বলতা, ক্রপ এবং অন্যান্য মৌলিক সম্পাদনাগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। '''ক্রপিং''' হল একটি অপরিহার্য মূল বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে পাঠককে দেখানো ছবির ক্ষেত্রফল বাড়াতে দেয়, পটভূমি এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্র বাদ দিয়ে। ক্রপিং হল মাইক্রোস্কোপের নিচে ছবি দেখার সমতুল্য যেখানে আপনি পাঠকদের সবচেয়ে স্পষ্ট দেখতে চান এমন জায়গাগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। তবে, এটি ছবির মান হ্রাস করতে পারে এবং ছবিটি দেখা কঠিন করে তুলতে পারে। যখন সম্ভব হয়, এমন ছবি ব্যবহার করা ভাল যেগুলিতে খুব কম বা কোনও সম্পাদনার প্রয়োজন হয় না। ছবি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি উচ্চ রেজোলিউশনের (মুদ্রণের জন্য 300 dpi, স্ক্রিনের জন্য 72 dpi) এবং আপনার নথিতে সন্নিবেশ করার জন্য সঠিক ফর্ম্যাট। সাধারণত, ক্যামেরা বা অন্যান্য .jpg বা .tif ফাইলের মতো মূল উৎস থেকে ছবিগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি দেখেন যে আপনার ছবিতে সঠিক রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাহলে ফটোশপ, কোরেল ইত্যাদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম আপনাকে বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং আলো সামঞ্জস্য করতে দেবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যখন ছবিটি পেশাদারভাবে তোলা হয়নি বা সেটিং এর জন্য উপযুক্ত আলোর অভাব রয়েছে। ফটোগ্রাফিটি অতিরিক্ত বা কম প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। '''লেবেলিং''' হল আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আপনি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামে করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশদ লেবেল করার জন্য আপনি একটি ছবিতে টেক্সট এবং তীরচিহ্ন সহ বাক্স সন্নিবেশ করতে পারেন। আপনার ছবিগুলিকে লেবেল করার ফলে আপনি যে তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট থাকে। এই কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কীভাবে এগুলিকে তাদের সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই প্রোগ্রামগুলির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি মূল্যবান। ইন্টারনেটে বা প্রকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ==শিল্পীদের গ্রাফিক্স ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য বিবিধ উৎস == যদি আপনি জানেন যে কীভাবে সেগুলি অনুসন্ধান করতে হয় এবং শিল্পীকে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে হয় তবে প্রায় যেকোনো বিষয়ের জন্য গ্রাফিক্স তুলনামূলকভাবে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যেকোনো লিখিত উপাদানের মতো, ছবিগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মূল শিল্পীর সম্পত্তি। প্রয়োজনে ভালো নীতিশাস্ত্র ব্যবহার করা এবং শিল্পীদের উদ্ধৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট এবং আপনার কম্পিউটারের ক্লিপ আর্ট ফাইলেও অসংখ্য ছবি এবং গ্রাফিক্স রয়েছে। এই কৌশল এবং সরঞ্জামগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা ছবিগুলি খুঁজে বের করা এবং ব্যবহার করা সহজ করে তুলবে। ====ছবির উদ্ধৃতি==== ইন্টারনেট বা অন্য কোনও উৎস থেকে আপনার নিজস্ব নয় এমন কোনও ছবি বা গ্রাফিক ব্যবহার বা হেরফের করার জন্য, আপনাকে সেই ছবিটি তৈরি করেছেন বা যার অধিকার আছে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাধারণত আপনার এবং এই ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে কোনও ধরণের চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। এটি চিত্র ব্যবহারের অধিকারের জন্য অর্থ প্রদান করা বা মালিকের দ্বারা প্রকাশ করা উপায়ে চিত্রটি উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু হতে পারে। কখনও কখনও গ্রাফিক্সকে পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কোনও ছবির কপিরাইট তথ্য অধ্যয়ন করা হল এটি পাবলিক ডোমেইন কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায়। কোনও সরকারি সংস্থার বা এমনকি আপনার নিয়োগকর্তার মালিকানাধীন ছবিগুলিকে সাধারণত পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবুও, এই ছবিগুলি এখনও উদ্ধৃত করা উচিত। বই এবং ইন্টারনেট থেকে ছবি উদ্ধৃত করার জন্য একটি দ্রুত নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যাবে, [[http://www.libraries.uc.edu/libraries/daap/resources/visualresources/how_to/cite_image.html]] ====ইন্টারনেটে ছবি খুঁজে বের করা==== আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি খুঁজছেন, তাহলে আপনি গুগল হেডার বারে নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনি কেবল "বড় ছবি, অথবা অতিরিক্ত বড় ছবি" অনুসন্ধান করতে চান। আপনি যা খুঁজছেন তা যদি খুঁজে না পান, তাহলে অনেক স্টক ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেখানে আপনি খুব কম অর্থের বিনিময়ে রয়্যালটি মুক্ত ছবি পেতে পারেন। বিবেচনা করার জন্য কিছু সাইট হল: Stock.XCHNG (এটি একটি বিনামূল্যের সাইট, কিছু বিধিনিষেধ সহ), Stock Xpert, Corbis, Getty, অথবা অন্যান্য, শুধু সার্চ বারে stock photography টাইপ করুন। == ক্লিপ আর্ট/চিত্র == {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Polar_bear_clip_art.svg|thumb|ক্লিপ আর্টের একটি উদাহরণ]] |} সকল বয়সের দর্শকদের কাছে তথ্য সহজে এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিত্রগুলি একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে, চিত্রগুলি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে চিত্রটি আপনার আলোচনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। আলোচিত বিষয়ের সাথে যদি চিত্রগুলির কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকে তবে চিত্রগুলি স্পর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তা তুলে ধরার জন্য চিত্রগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং পাঠকদের তা থেকে বিভ্রান্ত না করার জন্য। গ্রাফিক্স একটি ছবির চেয়ে ধারণাগুলিকে আরও সহজে চিত্রিত করতে পারে। তারা নথিতে লেখার চেয়ে ভিন্ন ধরণের গুণমান দেয়। তবে, সুশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞানী পেশাদারদের কাছে ধারণাগুলি উপস্থাপন করার সময়, ক্লিপ আর্ট দক্ষতার সাথে তথ্য উপস্থাপন নাও করতে পারে। কম চিত্রের রেজোলিউশনের চিত্রগুলি আপনার দর্শকদের কাছে আপনি যে বিবরণগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। যদি এটি হয় তবে ফটোগুলি একটি ভাল পছন্দ হতে পারে কারণ সেগুলি আরও স্পষ্ট এবং আপনাকে আরও ভালভাবে নির্দেশ করতে পারে। {{BookCat}} == শিরোনাম লেখা == শিরোনাম লেখা গ্রাফিক্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আশা করা হয় যে আপনি আপনার সমস্ত গ্রাফিক্সকে কোনও না কোনওভাবে লেবেল করবেন যাতে আপনি যখন আপনার নথিতে সেগুলি উল্লেখ করবেন তখন পাঠক জানতে পারবেন যে আপনি কোন গ্রাফিকের কথা বলছেন। শিরোনাম লেখা গ্রাফের শিরোনামের মতো সহজ হতে পারে অথবা ছবির উৎপত্তি এবং প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ছবির নীচে একটি ছোট অনুচ্ছেদের মতো জটিল হতে পারে। শিরোনাম ছাড়াই আপনার ছবি এবং লেখা যুক্তিসঙ্গতভাবে একসাথে চলে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার পাঠকরা আপনার সাথে একই রকম পরিচিত হবে না। socsxx7b1t2my5d5fkuo8n43900hus4 85142 85141 2025-06-22T04:30:54Z Mehedi Abedin 7113 85142 wikitext text/x-wiki =ছবি এবং চিত্র= পেশাদার নথিতে ছবি ব্যবহার করা হয় এমন একটি বার্তা প্রেরণের হাতিয়ার হিসেবে যা একজন লেখক মনে করেন সঠিক চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। ছবি একটি বার্তা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিছু উদাহরণ এখানে দেখা যাবে: ===চিত্রের চেকলিস্ট=== '''পরিকল্পনা''' * আপনার শ্রোতারা কোন ধরণের চিত্রের সাথে পরিচিত? * আপনার কি এমন তথ্য আছে যা আপনার শ্রোতাদের কাছে দৃশ্যমানভাবে বা শব্দ এবং গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে আরও সহজে বা দ্রুত জানানো যেতে পারে? * আপনার কি এমন সংজ্ঞা আছে যা দৃশ্যমানভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যা একটি ফ্লোচার্টে চিত্রিত করা যেতে পারে? * আপনার কি ট্রেন্ড বা সম্পর্ক সম্পর্কে তথ্য আছে যা টেবিল এবং গ্রাফিক্সে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন পরিসংখ্যান আছে যা টেবিলে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে? * আপনার কি বস্তু চিত্রিত করার প্রয়োজন? যদি তাই হয়, তাহলে বস্তু সম্পর্কে আপনার কী প্রদর্শন করার প্রয়োজন? আপনার কি বস্তুর নির্দিষ্ট দিকগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন? আপনার কি ছবির বাস্তবতা প্রয়োজন? * আপনার চিত্রের নকশার নিয়মাবলী কী কী? * আপনি কি ধার করতে বা অভিযোজিত করতে পারেন এমন উপযুক্ত চিত্রাবলী আছে? নাকি আপনার নিজের তৈরি করতে হবে? '''সংশোধন''' * আপনার চিত্রাবলী কি আপনার উদ্দেশ্য এবং দর্শকদের জন্য উপযুক্ত? * আপনার চিত্রাবলী কি নীতিগতভাবে তথ্য যোগাযোগ করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কার্যকরভাবে অবস্থিত এবং খুঁজে পাওয়া সহজ? * আপনার চিত্রাবলী কি নম্বরযুক্ত এবং লেবেলযুক্ত? * আপনার মৌখিক এবং দৃশ্যমান উপাদানগুলি কি একে অপরকে শক্তিশালী করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কেবল সাজসজ্জার পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে তথ্যবহুল? * প্রয়োজনে, আপনি কি আপনার পাঠকদের ভাষ্য বা টীকা দিয়ে আপনার চিত্রাবলী ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছেন? * আপনি কি ধার করা বা অভিযোজিত টেবিল এবং চিত্রের উৎসগুলি স্বীকার করেছেন? ===কিভাবে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করবেন=== কোনও কিছু করার জন্য দৃশ্যমান উপস্থাপনা দেওয়ার জন্য ছবিগুলি একটি কার্যকর হাতিয়ার। এগুলি একা প্রদর্শন করা যেতে পারে বা প্রদত্ত পাঠ্যের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এগুলি একটি বার্তাকে উন্নত করতে পারে। ''যদি আপনি লেখার সাথে ছবি ব্যবহার করেন:'' নির্দেশাবলীর একটি সেটের মতো, চিত্রকর্মটি কাজের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি শুধুমাত্র লেখা থেকে উদ্ভূত বিভ্রান্তি হ্রাস করে। কোনও কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হয় তা চিত্রিত করতে সাহায্য করার জন্য কোনও ছবি ব্যবহার করার সময় ছবিটি পাঠ্যের সাথে মিলে যায় কিনা তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। আপনাকে লেখা বা পাঠ্য ব্যবহার করে ছবিটি ব্যাখ্যা করতে হবে এবং বিপরীতভাবে, একটি ছবি ব্যবহার করে পাঠ্য ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও, দর্শক যখন ছবিটি দেখতে পাবে তখন কাজটি আরও বেশি করে সম্পন্ন করবে যদি তারা কাজটি দেখছিল, যদি তারা এটি অনুভব করছিল তবে তা অগত্যা নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে: যদি আপনার কাজটি একটি কার্টহুইল করা হয়, তাহলে আপনি এমন কোণে ছবিগুলি চাইবেন না যেখানে ব্যক্তি কার্টহুইল করা ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখছে। আপনি চাইবেন ছবিগুলি এমন কারও কাছ থেকে হোক, যাতে দর্শক যা দেখতে পাচ্ছে না (যেমন যখন তারা তাদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তখন তাদের পা কোথায়) তা দেখে বিভ্রান্ত না হয়। ছবি ব্যবহার করার সময় সহজ জিনিসগুলি একটি নথি তৈরি করে বা নষ্ট করে দেয়। আপনি যে ছবিগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি নিয়ে ভাবুন এবং পুনরায় ভাবুন এবং প্রথমবারের মতো কেউ সেগুলি দেখলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ===একটি সমাপ্ত পণ্য কেমন হওয়া উচিত=== যখন টেক্সট সম্পর্কিত তথ্য আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার সারমর্ম ধারণ করতে না পারে, তখন ডকুমেন্টে আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার একটি প্রকৃত ছবি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ছবি আপনাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে সক্ষম করে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ছবিগুলি রঙিন এবং উচ্চ মানের। কালো এবং সাদা ছবিগুলি কাগজে সহজেই ঝাপসা হয়ে যায় এবং কোনও ছবি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণের অভাব থাকে। বর্ণনামূলক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারে ছবিগুলি হ্রাস পায়। "একটি ছবি হাজার শব্দের সমান" এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সট মোড়ানোর ক্ষমতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। পরিষ্কার টেক্সট মোড়ানো সহ একটি ভালভাবে স্থাপন করা ছবি অন্যথায় অপ্রতিরোধ্য টেক্সট ব্লককে যুক্তিসঙ্গতভাবে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। 25 পৃষ্ঠার ব্লক, ন্যায্য সারিবদ্ধকরণ, সাধারণ কালো টেক্সট দেখা একটি প্রতিবেদন দেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। একটি ছবি একটি প্রতিবেদনকে প্রাণবন্ত করতে পারে, এটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে এবং প্রতিবেদনটিকে এক গতিতে স্পষ্ট করতে সহায়তা করতে পারে। ===একটি বস্তু, স্থান, বা প্রক্রিয়ার মানচিত্র তৈরি করুন=== এই ধরণের ছবির উদাহরণ একটি মোটরগাড়ি ম্যানুয়াল বা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যেতে পারে। এটি একটি মেশিনের ছবি থেকে শুরু করে সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে কাজ করে তার উদাহরণ পর্যন্ত যেকোনো কিছু হতে পারে। সবকিছু কোথায় এবং প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা দেখানোর জন্য তীর এবং লেবেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবিতে যথেষ্ট বড় পটভূমি থাকা উচিত যাতে পাঠক তার চারপাশের জিনিসগুলির সাথে সম্পর্কিত এলাকাটি সনাক্ত করতে পারেন। ছবিগুলি দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভাগ করা লিখিত ভাষা বিদ্যমান নাও থাকতে পারে তখন এগুলি কার্যকর। ছবিগুলি শব্দের চেয়ে জোরালো বার্তা দিতে পারে এবং সাধারণত বার্তাটি দ্রুত চিত্রিত করে। আপনার নথিতে আপনি যে ছবিটি রাখবেন তা নির্বাচন করার সময় প্রথম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ছবিগুলি এড়িয়ে চলুন যার একাধিক অর্থ হতে পারে, অথবা প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে, আপনি যে দর্শকদের জন্য লিখছেন তাদের মধ্যে নিজেকে রাখুন এবং ছবিটি দেখার সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন। আরও ভালো, এমন কারো উপর ছবিটি পরীক্ষা করে দেখুন যিনি আপনার ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে ছবিটি তাদের কাছে কী বার্তা পাঠায়। আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পষ্টতা অপরিহার্য। তবে ছবির উপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। দর্শকদের সবচেয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবি এবং লেখা একসাথে ব্যবহার করা উচিত। ছবিগুলি শব্দের মধ্যে দুর্দান্ত বিরতি তৈরি করতে পারে, তবে শব্দের মতো কোনও বিষয় বোঝার জন্য সবসময় ততটা কার্যকর নয়। ==সফ্টওয়্যার ফটোগ্রাফের কার্যকারিতা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি করতে পারে== কম্পিউটারে প্রচুর ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম রয়েছে যা ছবির সঠিক কোণ, জুম, ভিউ এবং রঙ বের করে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, কোরেল এবং ইমেজ স্মার্ট। অনেক কম্পিউটার এখন মৌলিক চিত্র সম্পাদনা সফ্টওয়্যারের সাথে আসে, যা রঙ, উজ্জ্বলতা, ক্রপ এবং অন্যান্য মৌলিক সম্পাদনাগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। '''ক্রপিং''' হল একটি অপরিহার্য মূল বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে পাঠককে দেখানো ছবির ক্ষেত্রফল বাড়াতে দেয়, পটভূমি এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্র বাদ দিয়ে। ক্রপিং হল মাইক্রোস্কোপের নিচে ছবি দেখার সমতুল্য যেখানে আপনি পাঠকদের সবচেয়ে স্পষ্ট দেখতে চান এমন জায়গাগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। তবে, এটি ছবির মান হ্রাস করতে পারে এবং ছবিটি দেখা কঠিন করে তুলতে পারে। যখন সম্ভব হয়, এমন ছবি ব্যবহার করা ভাল যেগুলিতে খুব কম বা কোনও সম্পাদনার প্রয়োজন হয় না। ছবি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি উচ্চ রেজোলিউশনের (মুদ্রণের জন্য 300 dpi, স্ক্রিনের জন্য 72 dpi) এবং আপনার নথিতে সন্নিবেশ করার জন্য সঠিক ফর্ম্যাট। সাধারণত, ক্যামেরা বা অন্যান্য .jpg বা .tif ফাইলের মতো মূল উৎস থেকে ছবিগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি দেখেন যে আপনার ছবিতে সঠিক রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাহলে ফটোশপ, কোরেল ইত্যাদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম আপনাকে বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং আলো সামঞ্জস্য করতে দেবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যখন ছবিটি পেশাদারভাবে তোলা হয়নি বা সেটিং এর জন্য উপযুক্ত আলোর অভাব রয়েছে। ফটোগ্রাফিটি অতিরিক্ত বা কম প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। '''লেবেলিং''' হল আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আপনি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামে করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশদ লেবেল করার জন্য আপনি একটি ছবিতে টেক্সট এবং তীরচিহ্ন সহ বাক্স সন্নিবেশ করতে পারেন। আপনার ছবিগুলিকে লেবেল করার ফলে আপনি যে তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট থাকে। এই কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কীভাবে এগুলিকে তাদের সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই প্রোগ্রামগুলির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি মূল্যবান। ইন্টারনেটে বা প্রকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ==শিল্পীদের গ্রাফিক্স ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য বিবিধ উৎস == যদি আপনি জানেন যে কীভাবে সেগুলি অনুসন্ধান করতে হয় এবং শিল্পীকে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে হয় তবে প্রায় যেকোনো বিষয়ের জন্য গ্রাফিক্স তুলনামূলকভাবে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যেকোনো লিখিত উপাদানের মতো, ছবিগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মূল শিল্পীর সম্পত্তি। প্রয়োজনে ভালো নীতিশাস্ত্র ব্যবহার করা এবং শিল্পীদের উদ্ধৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট এবং আপনার কম্পিউটারের ক্লিপ আর্ট ফাইলেও অসংখ্য ছবি এবং গ্রাফিক্স রয়েছে। এই কৌশল এবং সরঞ্জামগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা ছবিগুলি খুঁজে বের করা এবং ব্যবহার করা সহজ করে তুলবে। ====ছবির উদ্ধৃতি==== ইন্টারনেট বা অন্য কোনও উৎস থেকে আপনার নিজস্ব নয় এমন কোনও ছবি বা গ্রাফিক ব্যবহার বা হেরফের করার জন্য, আপনাকে সেই ছবিটি তৈরি করেছেন বা যার অধিকার আছে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাধারণত আপনার এবং এই ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে কোনও ধরণের চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। এটি চিত্র ব্যবহারের অধিকারের জন্য অর্থ প্রদান করা বা মালিকের দ্বারা প্রকাশ করা উপায়ে চিত্রটি উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু হতে পারে। কখনও কখনও গ্রাফিক্সকে পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কোনও ছবির কপিরাইট তথ্য অধ্যয়ন করা হল এটি পাবলিক ডোমেইন কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায়। কোনও সরকারি সংস্থার বা এমনকি আপনার নিয়োগকর্তার মালিকানাধীন ছবিগুলিকে সাধারণত পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবুও, এই ছবিগুলি এখনও উদ্ধৃত করা উচিত। বই এবং ইন্টারনেট থেকে ছবি উদ্ধৃত করার জন্য একটি দ্রুত নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যাবে, [[http://www.libraries.uc.edu/libraries/daap/resources/visualresources/how_to/cite_image.html]] ====ইন্টারনেটে ছবি খুঁজে বের করা==== আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি খুঁজছেন, তাহলে আপনি গুগল হেডার বারে নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনি কেবল "বড় ছবি, অথবা অতিরিক্ত বড় ছবি" অনুসন্ধান করতে চান। আপনি যা খুঁজছেন তা যদি খুঁজে না পান, তাহলে অনেক স্টক ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেখানে আপনি খুব কম অর্থের বিনিময়ে রয়্যালটি মুক্ত ছবি পেতে পারেন। বিবেচনা করার জন্য কিছু সাইট হল: Stock.XCHNG (এটি একটি বিনামূল্যের সাইট, কিছু বিধিনিষেধ সহ), Stock Xpert, Corbis, Getty, অথবা অন্যান্য, শুধু সার্চ বারে stock photography টাইপ করুন। == ক্লিপ আর্ট/চিত্র == {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Polar_bear_clip_art.svg|thumb|ক্লিপ আর্টের একটি উদাহরণ]] |} সকল বয়সের দর্শকদের কাছে তথ্য সহজে এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিত্রগুলি একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে, চিত্রগুলি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে চিত্রটি আপনার আলোচনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। আলোচিত বিষয়ের সাথে যদি চিত্রগুলির কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকে তবে চিত্রগুলি স্পর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তা তুলে ধরার জন্য চিত্রগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং পাঠকদের তা থেকে বিভ্রান্ত না করার জন্য। গ্রাফিক্স একটি ছবির চেয়ে ধারণাগুলিকে আরও সহজে চিত্রিত করতে পারে। তারা নথিতে লেখার চেয়ে ভিন্ন ধরণের গুণমান দেয়। তবে, সুশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞানী পেশাদারদের কাছে ধারণাগুলি উপস্থাপন করার সময়, ক্লিপ আর্ট দক্ষতার সাথে তথ্য উপস্থাপন নাও করতে পারে। কম চিত্রের রেজোলিউশনের চিত্রগুলি আপনার দর্শকদের কাছে আপনি যে বিবরণগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। যদি এটি হয় তবে ফটোগুলি একটি ভাল পছন্দ হতে পারে কারণ সেগুলি আরও স্পষ্ট এবং আপনাকে আরও ভালভাবে নির্দেশ করতে পারে। {{BookCat}} == শিরোনাম লেখা == শিরোনাম লেখা গ্রাফিক্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আশা করা হয় যে আপনি আপনার সমস্ত গ্রাফিক্সকে কোনও না কোনওভাবে লেবেল করবেন যাতে আপনি যখন আপনার নথিতে সেগুলি উল্লেখ করবেন তখন পাঠক জানতে পারবেন যে আপনি কোন গ্রাফিকের কথা বলছেন। শিরোনাম লেখা গ্রাফের শিরোনামের মতো সহজ হতে পারে অথবা ছবির উৎপত্তি এবং প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ছবির নীচে একটি ছোট অনুচ্ছেদের মতো জটিল হতে পারে। শিরোনাম ছাড়াই আপনার ছবি এবং লেখা যুক্তিসঙ্গতভাবে একসাথে চলে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার পাঠকরা আপনার সাথে একই রকম পরিচিত হবে না। qkdkoy8yoopzkz2nipwk6ubtbjzah4p 85143 85142 2025-06-22T04:33:16Z Mehedi Abedin 7113 85143 wikitext text/x-wiki =ছবি এবং চিত্র= পেশাদার নথিতে ছবি ব্যবহার করা হয় এমন একটি বার্তা প্রেরণের হাতিয়ার হিসেবে যা একজন লেখক মনে করেন সঠিক চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। ছবি একটি বার্তা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিছু উদাহরণ এখানে দেখা যাবে: ===চিত্রের চেকলিস্ট=== '''পরিকল্পনা''' * আপনার শ্রোতারা কোন ধরণের চিত্রের সাথে পরিচিত? * আপনার কি এমন তথ্য আছে যা আপনার শ্রোতাদের কাছে দৃশ্যমানভাবে বা শব্দ এবং গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে আরও সহজে বা দ্রুত জানানো যেতে পারে? * আপনার কি এমন সংজ্ঞা আছে যা দৃশ্যমানভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যা একটি ফ্লোচার্টে চিত্রিত করা যেতে পারে? * আপনার কি ট্রেন্ড বা সম্পর্ক সম্পর্কে তথ্য আছে যা টেবিল এবং গ্রাফিক্সে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন পরিসংখ্যান আছে যা টেবিলে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে? * আপনার কি বস্তু চিত্রিত করার প্রয়োজন? যদি তাই হয়, তাহলে বস্তু সম্পর্কে আপনার কী প্রদর্শন করার প্রয়োজন? আপনার কি বস্তুর নির্দিষ্ট দিকগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন? আপনার কি ছবির বাস্তবতা প্রয়োজন? * আপনার চিত্রের নকশার নিয়মাবলী কী কী? * আপনি কি ধার করতে বা অভিযোজিত করতে পারেন এমন উপযুক্ত চিত্রাবলী আছে? নাকি আপনার নিজের তৈরি করতে হবে? '''সংশোধন''' * আপনার চিত্রাবলী কি আপনার উদ্দেশ্য এবং দর্শকদের জন্য উপযুক্ত? * আপনার চিত্রাবলী কি নীতিগতভাবে তথ্য যোগাযোগ করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কার্যকরভাবে অবস্থিত এবং খুঁজে পাওয়া সহজ? * আপনার চিত্রাবলী কি নম্বরযুক্ত এবং লেবেলযুক্ত? * আপনার মৌখিক এবং দৃশ্যমান উপাদানগুলি কি একে অপরকে শক্তিশালী করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কেবল সাজসজ্জার পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে তথ্যবহুল? * প্রয়োজনে, আপনি কি আপনার পাঠকদের ভাষ্য বা টীকা দিয়ে আপনার চিত্রাবলী ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছেন? * আপনি কি ধার করা বা অভিযোজিত টেবিল এবং চিত্রের উৎসগুলি স্বীকার করেছেন? ===কিভাবে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করবেন=== কোনও কিছু করার জন্য দৃশ্যমান উপস্থাপনা দেওয়ার জন্য ছবিগুলি একটি কার্যকর হাতিয়ার। এগুলি একা প্রদর্শন করা যেতে পারে বা প্রদত্ত পাঠ্যের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এগুলি একটি বার্তাকে উন্নত করতে পারে। ''যদি আপনি লেখার সাথে ছবি ব্যবহার করেন:'' নির্দেশাবলীর একটি সেটের মতো, চিত্রকর্মটি কাজের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি শুধুমাত্র লেখা থেকে উদ্ভূত বিভ্রান্তি হ্রাস করে। কোনও কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হয় তা চিত্রিত করতে সাহায্য করার জন্য কোনও ছবি ব্যবহার করার সময় ছবিটি পাঠ্যের সাথে মিলে যায় কিনা তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। আপনাকে লেখা বা পাঠ্য ব্যবহার করে ছবিটি ব্যাখ্যা করতে হবে এবং বিপরীতভাবে, একটি ছবি ব্যবহার করে পাঠ্য ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও, দর্শক যখন ছবিটি দেখতে পাবে তখন কাজটি আরও বেশি করে সম্পন্ন করবে যদি তারা কাজটি দেখছিল, যদি তারা এটি অনুভব করছিল তবে তা অগত্যা নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে: যদি আপনার কাজটি একটি কার্টহুইল করা হয়, তাহলে আপনি এমন কোণে ছবিগুলি চাইবেন না যেখানে ব্যক্তি কার্টহুইল করা ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখছে। আপনি চাইবেন ছবিগুলি এমন কারও কাছ থেকে হোক, যাতে দর্শক যা দেখতে পাচ্ছে না (যেমন যখন তারা তাদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তখন তাদের পা কোথায়) তা দেখে বিভ্রান্ত না হয়। ছবি ব্যবহার করার সময় সহজ জিনিসগুলি একটি নথি তৈরি করে বা নষ্ট করে দেয়। আপনি যে ছবিগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি নিয়ে ভাবুন এবং পুনরায় ভাবুন এবং প্রথমবারের মতো কেউ সেগুলি দেখলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ===একটি সমাপ্ত পণ্য কেমন হওয়া উচিত=== যখন টেক্সট সম্পর্কিত তথ্য আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার সারমর্ম ধারণ করতে না পারে, তখন ডকুমেন্টে আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার একটি প্রকৃত ছবি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ছবি আপনাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে সক্ষম করে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ছবিগুলি রঙিন এবং উচ্চ মানের। কালো এবং সাদা ছবিগুলি কাগজে সহজেই ঝাপসা হয়ে যায় এবং কোনও ছবি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণের অভাব থাকে। বর্ণনামূলক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারে ছবিগুলি হ্রাস পায়। "একটি ছবি হাজার শব্দের সমান" এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সট মোড়ানোর ক্ষমতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। পরিষ্কার টেক্সট মোড়ানো সহ একটি ভালভাবে স্থাপন করা ছবি অন্যথায় অপ্রতিরোধ্য টেক্সট ব্লককে যুক্তিসঙ্গতভাবে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। 25 পৃষ্ঠার ব্লক, ন্যায্য সারিবদ্ধকরণ, সাধারণ কালো টেক্সট দেখা একটি প্রতিবেদন দেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। একটি ছবি একটি প্রতিবেদনকে প্রাণবন্ত করতে পারে, এটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে এবং প্রতিবেদনটিকে এক গতিতে স্পষ্ট করতে সহায়তা করতে পারে। ===একটি বস্তু, স্থান, বা প্রক্রিয়ার মানচিত্র তৈরি করুন=== এই ধরণের ছবির উদাহরণ একটি মোটরগাড়ি ম্যানুয়াল বা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যেতে পারে। এটি একটি মেশিনের ছবি থেকে শুরু করে সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে কাজ করে তার উদাহরণ পর্যন্ত যেকোনো কিছু হতে পারে। সবকিছু কোথায় এবং প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা দেখানোর জন্য তীর এবং লেবেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবিতে যথেষ্ট বড় পটভূমি থাকা উচিত যাতে পাঠক তার চারপাশের জিনিসগুলির সাথে সম্পর্কিত এলাকাটি সনাক্ত করতে পারেন। ছবিগুলি দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভাগ করা লিখিত ভাষা বিদ্যমান নাও থাকতে পারে তখন এগুলি কার্যকর। ছবিগুলি শব্দের চেয়ে জোরালো বার্তা দিতে পারে এবং সাধারণত বার্তাটি দ্রুত চিত্রিত করে। আপনার নথিতে আপনি যে ছবিটি রাখবেন তা নির্বাচন করার সময় প্রথম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ছবিগুলি এড়িয়ে চলুন যার একাধিক অর্থ হতে পারে, অথবা প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে, আপনি যে দর্শকদের জন্য লিখছেন তাদের মধ্যে নিজেকে রাখুন এবং ছবিটি দেখার সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন। আরও ভালো, এমন কারো উপর ছবিটি পরীক্ষা করে দেখুন যিনি আপনার ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে ছবিটি তাদের কাছে কী বার্তা পাঠায়। আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পষ্টতা অপরিহার্য। তবে ছবির উপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। দর্শকদের সবচেয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবি এবং লেখা একসাথে ব্যবহার করা উচিত। ছবিগুলি শব্দের মধ্যে দুর্দান্ত বিরতি তৈরি করতে পারে, তবে শব্দের মতো কোনও বিষয় বোঝার জন্য সবসময় ততটা কার্যকর নয়। ==সফ্টওয়্যার ফটোগ্রাফের কার্যকারিতা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি করতে পারে== কম্পিউটারে প্রচুর ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম রয়েছে যা ছবির সঠিক কোণ, জুম, ভিউ এবং রঙ বের করে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, কোরেল এবং ইমেজ স্মার্ট। অনেক কম্পিউটারের সাথে এখন মৌলিক চিত্র সম্পাদনা সফ্টওয়্যারের দেওয়া হয়, যা রঙ, উজ্জ্বলতা, ক্রপ এবং অন্যান্য মৌলিক সম্পাদনাগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। '''ক্রপিং''' হল একটি অপরিহার্য মূল বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে পাঠককে দেখানো ছবির ক্ষেত্রফল বাড়াতে এবং পটভূমি ও অপ্রচলিত ক্ষেত্র বাদ দিতে দেয়। ক্রপিং হল মাইক্রোস্কোপের নিচে ছবি দেখার সমতুল্য যেখানে আপনি পাঠকদের সবচেয়ে স্পষ্ট দেখতে চান এমন জায়গাগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। তবে, এটি ছবির মান হ্রাস করতে পারে এবং ছবিটি দেখা কঠিন করে তুলতে পারে। যখন সম্ভব হয়, এমন ছবি ব্যবহার করা ভাল যেগুলিতে খুব কম বা কোনও সম্পাদনার প্রয়োজন হয় না। ছবি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি উচ্চ রেজোলিউশনের (মুদ্রণের জন্য 300 dpi, স্ক্রিনের জন্য 72 dpi) এবং আপনার নথিতে সন্নিবেশ করার জন্য সঠিক ফর্ম্যাট। সাধারণত, ক্যামেরা বা অন্যান্য .jpg বা .tif ফাইলের মতো মূল উৎস থেকে ছবিগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি দেখবেন যে আপনার ছবিতে সঠিক রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাহলে ফটোশপ, কোরেল ইত্যাদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়ে আপনাকে বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং আলো সামঞ্জস্য করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যখন ছবিটি পেশাদারিত্বের সাথে তোলা হয়নি বা সেটিং এর জন্য উপযুক্ত আলোর অভাব রয়েছে। ফটোগ্রাফি অতিরিক্ত বা কম প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। '''লেবেলিং''' হল আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আপনি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামে করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশদ লেবেল করার জন্য আপনি একটি ছবিতে টেক্সট এবং তীরচিহ্ন সহ বাক্স সন্নিবেশ করতে পারেন। আপনার ছবিগুলিকে লেবেল করার ফলে আপনি যে তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট থাকে। এই কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কীভাবে এগুলিকে তাদের সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই প্রোগ্রামগুলির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি মূল্যবান। ইন্টারনেটে বা প্রকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ==শিল্পীদের গ্রাফিক্স ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য বিবিধ উৎস == যদি আপনি জানেন যে কীভাবে সেগুলি অনুসন্ধান করতে হয় এবং শিল্পীকে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে হয় তবে প্রায় যেকোনো বিষয়ের জন্য গ্রাফিক্স তুলনামূলকভাবে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যেকোনো লিখিত উপাদানের মতো, ছবিগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মূল শিল্পীর সম্পত্তি। প্রয়োজনে ভালো নীতিশাস্ত্র ব্যবহার করা এবং শিল্পীদের উদ্ধৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট এবং আপনার কম্পিউটারের ক্লিপ আর্ট ফাইলেও অসংখ্য ছবি এবং গ্রাফিক্স রয়েছে। এই কৌশল এবং সরঞ্জামগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা ছবিগুলি খুঁজে বের করা এবং ব্যবহার করা সহজ করে তুলবে। ====ছবির উদ্ধৃতি==== ইন্টারনেট বা অন্য কোনও উৎস থেকে আপনার নিজস্ব নয় এমন কোনও ছবি বা গ্রাফিক ব্যবহার বা হেরফের করার জন্য, আপনাকে সেই ছবিটি তৈরি করেছেন বা যার অধিকার আছে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাধারণত আপনার এবং এই ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে কোনও ধরণের চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। এটি চিত্র ব্যবহারের অধিকারের জন্য অর্থ প্রদান করা বা মালিকের দ্বারা প্রকাশ করা উপায়ে চিত্রটি উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু হতে পারে। কখনও কখনও গ্রাফিক্সকে পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কোনও ছবির কপিরাইট তথ্য অধ্যয়ন করা হল এটি পাবলিক ডোমেইন কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায়। কোনও সরকারি সংস্থার বা এমনকি আপনার নিয়োগকর্তার মালিকানাধীন ছবিগুলিকে সাধারণত পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবুও, এই ছবিগুলি এখনও উদ্ধৃত করা উচিত। বই এবং ইন্টারনেট থেকে ছবি উদ্ধৃত করার জন্য একটি দ্রুত নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যাবে, [[http://www.libraries.uc.edu/libraries/daap/resources/visualresources/how_to/cite_image.html]] ====ইন্টারনেটে ছবি খুঁজে বের করা==== আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি খুঁজছেন, তাহলে আপনি গুগল হেডার বারে নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনি কেবল "বড় ছবি, অথবা অতিরিক্ত বড় ছবি" অনুসন্ধান করতে চান। আপনি যা খুঁজছেন তা যদি খুঁজে না পান, তাহলে অনেক স্টক ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেখানে আপনি খুব কম অর্থের বিনিময়ে রয়্যালটি মুক্ত ছবি পেতে পারেন। বিবেচনা করার জন্য কিছু সাইট হল: Stock.XCHNG (এটি একটি বিনামূল্যের সাইট, কিছু বিধিনিষেধ সহ), Stock Xpert, Corbis, Getty, অথবা অন্যান্য, শুধু সার্চ বারে stock photography টাইপ করুন। == ক্লিপ আর্ট/চিত্র == {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Polar_bear_clip_art.svg|thumb|ক্লিপ আর্টের একটি উদাহরণ]] |} সকল বয়সের দর্শকদের কাছে তথ্য সহজে এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিত্রগুলি একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে, চিত্রগুলি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে চিত্রটি আপনার আলোচনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। আলোচিত বিষয়ের সাথে যদি চিত্রগুলির কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকে তবে চিত্রগুলি স্পর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তা তুলে ধরার জন্য চিত্রগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং পাঠকদের তা থেকে বিভ্রান্ত না করার জন্য। গ্রাফিক্স একটি ছবির চেয়ে ধারণাগুলিকে আরও সহজে চিত্রিত করতে পারে। তারা নথিতে লেখার চেয়ে ভিন্ন ধরণের গুণমান দেয়। তবে, সুশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞানী পেশাদারদের কাছে ধারণাগুলি উপস্থাপন করার সময়, ক্লিপ আর্ট দক্ষতার সাথে তথ্য উপস্থাপন নাও করতে পারে। কম চিত্রের রেজোলিউশনের চিত্রগুলি আপনার দর্শকদের কাছে আপনি যে বিবরণগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। যদি এটি হয় তবে ফটোগুলি একটি ভাল পছন্দ হতে পারে কারণ সেগুলি আরও স্পষ্ট এবং আপনাকে আরও ভালভাবে নির্দেশ করতে পারে। {{BookCat}} == শিরোনাম লেখা == শিরোনাম লেখা গ্রাফিক্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আশা করা হয় যে আপনি আপনার সমস্ত গ্রাফিক্সকে কোনও না কোনওভাবে লেবেল করবেন যাতে আপনি যখন আপনার নথিতে সেগুলি উল্লেখ করবেন তখন পাঠক জানতে পারবেন যে আপনি কোন গ্রাফিকের কথা বলছেন। শিরোনাম লেখা গ্রাফের শিরোনামের মতো সহজ হতে পারে অথবা ছবির উৎপত্তি এবং প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ছবির নীচে একটি ছোট অনুচ্ছেদের মতো জটিল হতে পারে। শিরোনাম ছাড়াই আপনার ছবি এবং লেখা যুক্তিসঙ্গতভাবে একসাথে চলে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার পাঠকরা আপনার সাথে একই রকম পরিচিত হবে না। ncynyqdupq77dd0xega43kd5hzs4l4z 85144 85143 2025-06-22T04:34:43Z Mehedi Abedin 7113 85144 wikitext text/x-wiki =ছবি এবং চিত্র= পেশাদার নথিতে ছবি ব্যবহার করা হয় এমন একটি বার্তা প্রেরণের হাতিয়ার হিসেবে যা একজন লেখক মনে করেন সঠিক চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। ছবি একটি বার্তা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিছু উদাহরণ এখানে দেখা যাবে: ===চিত্রের চেকলিস্ট=== '''পরিকল্পনা''' * আপনার শ্রোতারা কোন ধরণের চিত্রের সাথে পরিচিত? * আপনার কি এমন তথ্য আছে যা আপনার শ্রোতাদের কাছে দৃশ্যমানভাবে বা শব্দ এবং গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে আরও সহজে বা দ্রুত জানানো যেতে পারে? * আপনার কি এমন সংজ্ঞা আছে যা দৃশ্যমানভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যা একটি ফ্লোচার্টে চিত্রিত করা যেতে পারে? * আপনার কি ট্রেন্ড বা সম্পর্ক সম্পর্কে তথ্য আছে যা টেবিল এবং গ্রাফিক্সে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন পরিসংখ্যান আছে যা টেবিলে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে? * আপনার কি বস্তু চিত্রিত করার প্রয়োজন? যদি তাই হয়, তাহলে বস্তু সম্পর্কে আপনার কী প্রদর্শন করার প্রয়োজন? আপনার কি বস্তুর নির্দিষ্ট দিকগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন? আপনার কি ছবির বাস্তবতা প্রয়োজন? * আপনার চিত্রের নকশার নিয়মাবলী কী কী? * আপনি কি ধার করতে বা অভিযোজিত করতে পারেন এমন উপযুক্ত চিত্রাবলী আছে? নাকি আপনার নিজের তৈরি করতে হবে? '''সংশোধন''' * আপনার চিত্রাবলী কি আপনার উদ্দেশ্য এবং দর্শকদের জন্য উপযুক্ত? * আপনার চিত্রাবলী কি নীতিগতভাবে তথ্য যোগাযোগ করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কার্যকরভাবে অবস্থিত এবং খুঁজে পাওয়া সহজ? * আপনার চিত্রাবলী কি নম্বরযুক্ত এবং লেবেলযুক্ত? * আপনার মৌখিক এবং দৃশ্যমান উপাদানগুলি কি একে অপরকে শক্তিশালী করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কেবল সাজসজ্জার পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে তথ্যবহুল? * প্রয়োজনে, আপনি কি আপনার পাঠকদের ভাষ্য বা টীকা দিয়ে আপনার চিত্রাবলী ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছেন? * আপনি কি ধার করা বা অভিযোজিত টেবিল এবং চিত্রের উৎসগুলি স্বীকার করেছেন? ===কিভাবে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করবেন=== কোনও কিছু করার জন্য দৃশ্যমান উপস্থাপনা দেওয়ার জন্য ছবিগুলি একটি কার্যকর হাতিয়ার। এগুলি একা প্রদর্শন করা যেতে পারে বা প্রদত্ত পাঠ্যের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এগুলি একটি বার্তাকে উন্নত করতে পারে। ''যদি আপনি লেখার সাথে ছবি ব্যবহার করেন:'' নির্দেশাবলীর একটি সেটের মতো, চিত্রকর্মটি কাজের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি শুধুমাত্র লেখা থেকে উদ্ভূত বিভ্রান্তি হ্রাস করে। কোনও কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হয় তা চিত্রিত করতে সাহায্য করার জন্য কোনও ছবি ব্যবহার করার সময় ছবিটি পাঠ্যের সাথে মিলে যায় কিনা তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। আপনাকে লেখা বা পাঠ্য ব্যবহার করে ছবিটি ব্যাখ্যা করতে হবে এবং বিপরীতভাবে, একটি ছবি ব্যবহার করে পাঠ্য ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও, দর্শক যখন ছবিটি দেখতে পাবে তখন কাজটি আরও বেশি করে সম্পন্ন করবে যদি তারা কাজটি দেখছিল, যদি তারা এটি অনুভব করছিল তবে তা অগত্যা নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে: যদি আপনার কাজটি একটি কার্টহুইল করা হয়, তাহলে আপনি এমন কোণে ছবিগুলি চাইবেন না যেখানে ব্যক্তি কার্টহুইল করা ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখছে। আপনি চাইবেন ছবিগুলি এমন কারও কাছ থেকে হোক, যাতে দর্শক যা দেখতে পাচ্ছে না (যেমন যখন তারা তাদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তখন তাদের পা কোথায়) তা দেখে বিভ্রান্ত না হয়। ছবি ব্যবহার করার সময় সহজ জিনিসগুলি একটি নথি তৈরি করে বা নষ্ট করে দেয়। আপনি যে ছবিগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি নিয়ে ভাবুন এবং পুনরায় ভাবুন এবং প্রথমবারের মতো কেউ সেগুলি দেখলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ===একটি সমাপ্ত পণ্য কেমন হওয়া উচিত=== যখন টেক্সট সম্পর্কিত তথ্য আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার সারমর্ম ধারণ করতে না পারে, তখন ডকুমেন্টে আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার একটি প্রকৃত ছবি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ছবি আপনাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে সক্ষম করে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ছবিগুলি রঙিন এবং উচ্চ মানের। কালো এবং সাদা ছবিগুলি কাগজে সহজেই ঝাপসা হয়ে যায় এবং কোনও ছবি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণের অভাব থাকে। বর্ণনামূলক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারে ছবিগুলি হ্রাস পায়। "একটি ছবি হাজার শব্দের সমান" এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সট মোড়ানোর ক্ষমতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। পরিষ্কার টেক্সট মোড়ানো সহ একটি ভালভাবে স্থাপন করা ছবি অন্যথায় অপ্রতিরোধ্য টেক্সট ব্লককে যুক্তিসঙ্গতভাবে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। 25 পৃষ্ঠার ব্লক, ন্যায্য সারিবদ্ধকরণ, সাধারণ কালো টেক্সট দেখা একটি প্রতিবেদন দেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। একটি ছবি একটি প্রতিবেদনকে প্রাণবন্ত করতে পারে, এটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে এবং প্রতিবেদনটিকে এক গতিতে স্পষ্ট করতে সহায়তা করতে পারে। ===একটি বস্তু, স্থান, বা প্রক্রিয়ার মানচিত্র তৈরি করুন=== এই ধরণের ছবির উদাহরণ একটি মোটরগাড়ি ম্যানুয়াল বা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যেতে পারে। এটি একটি মেশিনের ছবি থেকে শুরু করে সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে কাজ করে তার উদাহরণ পর্যন্ত যেকোনো কিছু হতে পারে। সবকিছু কোথায় এবং প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা দেখানোর জন্য তীর এবং লেবেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবিতে যথেষ্ট বড় পটভূমি থাকা উচিত যাতে পাঠক তার চারপাশের জিনিসগুলির সাথে সম্পর্কিত এলাকাটি সনাক্ত করতে পারেন। ছবিগুলি দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভাগ করা লিখিত ভাষা বিদ্যমান নাও থাকতে পারে তখন এগুলি কার্যকর। ছবিগুলি শব্দের চেয়ে জোরালো বার্তা দিতে পারে এবং সাধারণত বার্তাটি দ্রুত চিত্রিত করে। আপনার নথিতে আপনি যে ছবিটি রাখবেন তা নির্বাচন করার সময় প্রথম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ছবিগুলি এড়িয়ে চলুন যার একাধিক অর্থ হতে পারে, অথবা প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে, আপনি যে দর্শকদের জন্য লিখছেন তাদের মধ্যে নিজেকে রাখুন এবং ছবিটি দেখার সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন। আরও ভালো, এমন কারো উপর ছবিটি পরীক্ষা করে দেখুন যিনি আপনার ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে ছবিটি তাদের কাছে কী বার্তা পাঠায়। আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পষ্টতা অপরিহার্য। তবে ছবির উপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। দর্শকদের সবচেয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবি এবং লেখা একসাথে ব্যবহার করা উচিত। ছবিগুলি শব্দের মধ্যে দুর্দান্ত বিরতি তৈরি করতে পারে, তবে শব্দের মতো কোনও বিষয় বোঝার জন্য সবসময় ততটা কার্যকর নয়। ==সফ্টওয়্যার ফটোগ্রাফের কার্যকারিতা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি করতে পারে== কম্পিউটারে প্রচুর ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম রয়েছে যা ছবির সঠিক কোণ, জুম, ভিউ এবং রঙ বের করে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, কোরেল এবং ইমেজ স্মার্ট। অনেক কম্পিউটারের সাথে এখন মৌলিক চিত্র সম্পাদনা সফ্টওয়্যারের দেওয়া হয়, যা রঙ, উজ্জ্বলতা, ক্রপ এবং অন্যান্য মৌলিক সম্পাদনাগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। '''ক্রপিং''' হল একটি অপরিহার্য মূল বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে পাঠককে দেখানো ছবির ক্ষেত্রফল বাড়াতে এবং পটভূমি ও অপ্রচলিত ক্ষেত্র বাদ দিতে দেয়। ক্রপিং হল মাইক্রোস্কোপের নিচে ছবি দেখার সমতুল্য যেখানে আপনি পাঠকদের সবচেয়ে স্পষ্ট দেখতে চান এমন জায়গাগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। তবে, এটি ছবির মান হ্রাস করতে পারে এবং ছবিটি দেখা কঠিন করে তুলতে পারে। যখন সম্ভব হয়, এমন ছবি ব্যবহার করা ভাল যেগুলিতে খুব কম বা কোনও সম্পাদনার প্রয়োজন হয় না। ছবি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি উচ্চ রেজোলিউশনের (মুদ্রণের জন্য 300 dpi, স্ক্রিনের জন্য 72 dpi) এবং আপনার নথিতে সন্নিবেশ করার জন্য সঠিক ফর্ম্যাট। সাধারণত, ক্যামেরা বা অন্যান্য .jpg বা .tif ফাইলের মতো মূল উৎস থেকে ছবিগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি দেখবেন যে আপনার ছবিতে সঠিক রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাহলে ফটোশপ, কোরেল ইত্যাদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়ে আপনাকে বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং আলো সামঞ্জস্য করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যখন ছবিটি পেশাদারিত্বের সাথে তোলা হয়নি বা সেটিং এর জন্য উপযুক্ত আলোর অভাব রয়েছে। ফটোগ্রাফি অতিরিক্ত বা কম প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। '''লেবেলিং''' হল আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আপনি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামে করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশদ লেবেল করার জন্য আপনি একটি ছবিতে টেক্সট এবং তীরচিহ্ন সহ বাক্স সন্নিবেশ করতে পারেন। আপনার ছবিগুলিকে লেবেল করার ফলে আপনি যে তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট থাকে। এই কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কীভাবে এগুলিকে তাদের সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই প্রোগ্রামগুলির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি মূল্যবান। ইন্টারনেটে বা প্রকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ==শিল্পীদের গ্রাফিক্স ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য বিবিধ উৎস == যদি আপনি জানেন যে কীভাবে সেগুলি অনুসন্ধান করতে হয় এবং শিল্পীকে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে হয় তবে প্রায় যেকোনো বিষয়ের জন্য গ্রাফিক্স তুলনামূলকভাবে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যেকোনো লিখিত উপাদানের মতো, ছবিগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মূল শিল্পীর সম্পত্তি। প্রয়োজনে ভালো নীতিশাস্ত্র ব্যবহার করা এবং শিল্পীদের উদ্ধৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট এবং আপনার কম্পিউটারের ক্লিপ আর্ট ফাইলেও অসংখ্য ছবি এবং গ্রাফিক্স রয়েছে। এই কৌশল এবং সরঞ্জামগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা ছবিগুলি খুঁজে বের করা এবং ব্যবহার করা সহজ করে তুলবে। ====ছবির উদ্ধৃতি==== ইন্টারনেট বা অন্য কোনও উৎস থেকে আপনার নিজস্ব নয় এমন কোনও ছবি বা গ্রাফিক ব্যবহার বা হেরফের করার জন্য, আপনাকে সেই ছবিটি তৈরি করেছেন বা যার অধিকার আছে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাধারণত আপনার এবং এই ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে কোনও ধরণের চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। এটি চিত্র ব্যবহারের অধিকারের জন্য অর্থ প্রদান করা বা মালিকের দ্বারা প্রকাশ করা উপায়ে চিত্রটি উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু হতে পারে। কখনও কখনও গ্রাফিক্সকে পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কোনও ছবির কপিরাইট তথ্য অধ্যয়ন করা হল এটি পাবলিক ডোমেইন কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায়। কোনও সরকারি সংস্থার বা এমনকি আপনার নিয়োগকর্তার মালিকানাধীন ছবিগুলিকে সাধারণত পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এই ছবিগুলি উদ্ধৃত করা উচিত। বই এবং ইন্টারনেট থেকে ছবি উদ্ধৃত করার জন্য একটি দ্রুত নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যাবে, [[http://www.libraries.uc.edu/libraries/daap/resources/visualresources/how_to/cite_image.html]] ====ইন্টারনেটে ছবি খুঁজে বের করা==== আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি খুঁজছেন, তাহলে আপনি গুগল হেডার বারে নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনি কেবল "বড় ছবি, অথবা অতিরিক্ত বড় ছবি" অনুসন্ধান করতে চান। আপনি যা খুঁজছেন তা যদি খুঁজে না পান, তাহলে অনেক স্টক ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেখানে আপনি খুব কম অর্থের বিনিময়ে রয়্যালটি মুক্ত ছবি পেতে পারেন। বিবেচনা করার জন্য কিছু সাইট হল: Stock.XCHNG (এটি একটি বিনামূল্যের সাইট, কিছু বিধিনিষেধ সহ), Stock Xpert, Corbis, Getty, অথবা অন্যান্য, শুধু সার্চ বারে stock photography টাইপ করুন। == ক্লিপ আর্ট/চিত্র == {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Polar_bear_clip_art.svg|thumb|ক্লিপ আর্টের একটি উদাহরণ]] |} সকল বয়সের দর্শকদের কাছে তথ্য সহজে এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিত্রগুলি একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে, চিত্রগুলি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে চিত্রটি আপনার আলোচনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। আলোচিত বিষয়ের সাথে যদি চিত্রগুলির কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকে তবে চিত্রগুলি স্পর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তা তুলে ধরার জন্য চিত্রগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং পাঠকদের তা থেকে বিভ্রান্ত না করার জন্য। গ্রাফিক্স একটি ছবির চেয়ে ধারণাগুলিকে আরও সহজে চিত্রিত করতে পারে। তারা নথিতে লেখার চেয়ে ভিন্ন ধরণের গুণমান দেয়। তবে, সুশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞানী পেশাদারদের কাছে ধারণাগুলি উপস্থাপন করার সময়, ক্লিপ আর্ট দক্ষতার সাথে তথ্য উপস্থাপন নাও করতে পারে। কম চিত্রের রেজোলিউশনের চিত্রগুলি আপনার দর্শকদের কাছে আপনি যে বিবরণগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। যদি এটি হয় তবে ফটোগুলি একটি ভাল পছন্দ হতে পারে কারণ সেগুলি আরও স্পষ্ট এবং আপনাকে আরও ভালভাবে নির্দেশ করতে পারে। {{BookCat}} == শিরোনাম লেখা == শিরোনাম লেখা গ্রাফিক্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আশা করা হয় যে আপনি আপনার সমস্ত গ্রাফিক্সকে কোনও না কোনওভাবে লেবেল করবেন যাতে আপনি যখন আপনার নথিতে সেগুলি উল্লেখ করবেন তখন পাঠক জানতে পারবেন যে আপনি কোন গ্রাফিকের কথা বলছেন। শিরোনাম লেখা গ্রাফের শিরোনামের মতো সহজ হতে পারে অথবা ছবির উৎপত্তি এবং প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ছবির নীচে একটি ছোট অনুচ্ছেদের মতো জটিল হতে পারে। শিরোনাম ছাড়াই আপনার ছবি এবং লেখা যুক্তিসঙ্গতভাবে একসাথে চলে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার পাঠকরা আপনার সাথে একই রকম পরিচিত হবে না। fbn2vhhkru9fctm6bqdmctuqdrk66ld 85145 85144 2025-06-22T04:35:35Z Mehedi Abedin 7113 85145 wikitext text/x-wiki =ছবি এবং চিত্র= পেশাদার নথিতে ছবি ব্যবহার করা হয় এমন একটি বার্তা প্রেরণের হাতিয়ার হিসেবে যা একজন লেখক মনে করেন সঠিক চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। ছবি একটি বার্তা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিছু উদাহরণ এখানে দেখা যাবে: ===চিত্রের চেকলিস্ট=== '''পরিকল্পনা''' * আপনার শ্রোতারা কোন ধরণের চিত্রের সাথে পরিচিত? * আপনার কি এমন তথ্য আছে যা আপনার শ্রোতাদের কাছে দৃশ্যমানভাবে বা শব্দ এবং গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে আরও সহজে বা দ্রুত জানানো যেতে পারে? * আপনার কি এমন সংজ্ঞা আছে যা দৃশ্যমানভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যা একটি ফ্লোচার্টে চিত্রিত করা যেতে পারে? * আপনার কি ট্রেন্ড বা সম্পর্ক সম্পর্কে তথ্য আছে যা টেবিল এবং গ্রাফিক্সে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন পরিসংখ্যান আছে যা টেবিলে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে? * আপনার কি বস্তু চিত্রিত করার প্রয়োজন? যদি তাই হয়, তাহলে বস্তু সম্পর্কে আপনার কী প্রদর্শন করার প্রয়োজন? আপনার কি বস্তুর নির্দিষ্ট দিকগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন? আপনার কি ছবির বাস্তবতা প্রয়োজন? * আপনার চিত্রের নকশার নিয়মাবলী কী কী? * আপনি কি ধার করতে বা অভিযোজিত করতে পারেন এমন উপযুক্ত চিত্রাবলী আছে? নাকি আপনার নিজের তৈরি করতে হবে? '''সংশোধন''' * আপনার চিত্রাবলী কি আপনার উদ্দেশ্য এবং দর্শকদের জন্য উপযুক্ত? * আপনার চিত্রাবলী কি নীতিগতভাবে তথ্য যোগাযোগ করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কার্যকরভাবে অবস্থিত এবং খুঁজে পাওয়া সহজ? * আপনার চিত্রাবলী কি নম্বরযুক্ত এবং লেবেলযুক্ত? * আপনার মৌখিক এবং দৃশ্যমান উপাদানগুলি কি একে অপরকে শক্তিশালী করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কেবল সাজসজ্জার পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে তথ্যবহুল? * প্রয়োজনে, আপনি কি আপনার পাঠকদের ভাষ্য বা টীকা দিয়ে আপনার চিত্রাবলী ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছেন? * আপনি কি ধার করা বা অভিযোজিত টেবিল এবং চিত্রের উৎসগুলি স্বীকার করেছেন? ===কিভাবে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করবেন=== কোনও কিছু করার জন্য দৃশ্যমান উপস্থাপনা দেওয়ার জন্য ছবিগুলি একটি কার্যকর হাতিয়ার। এগুলি একা প্রদর্শন করা যেতে পারে বা প্রদত্ত পাঠ্যের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এগুলি একটি বার্তাকে উন্নত করতে পারে। ''যদি আপনি লেখার সাথে ছবি ব্যবহার করেন:'' নির্দেশাবলীর একটি সেটের মতো, চিত্রকর্মটি কাজের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি শুধুমাত্র লেখা থেকে উদ্ভূত বিভ্রান্তি হ্রাস করে। কোনও কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হয় তা চিত্রিত করতে সাহায্য করার জন্য কোনও ছবি ব্যবহার করার সময় ছবিটি পাঠ্যের সাথে মিলে যায় কিনা তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। আপনাকে লেখা বা পাঠ্য ব্যবহার করে ছবিটি ব্যাখ্যা করতে হবে এবং বিপরীতভাবে, একটি ছবি ব্যবহার করে পাঠ্য ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও, দর্শক যখন ছবিটি দেখতে পাবে তখন কাজটি আরও বেশি করে সম্পন্ন করবে যদি তারা কাজটি দেখছিল, যদি তারা এটি অনুভব করছিল তবে তা অগত্যা নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে: যদি আপনার কাজটি একটি কার্টহুইল করা হয়, তাহলে আপনি এমন কোণে ছবিগুলি চাইবেন না যেখানে ব্যক্তি কার্টহুইল করা ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখছে। আপনি চাইবেন ছবিগুলি এমন কারও কাছ থেকে হোক, যাতে দর্শক যা দেখতে পাচ্ছে না (যেমন যখন তারা তাদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তখন তাদের পা কোথায়) তা দেখে বিভ্রান্ত না হয়। ছবি ব্যবহার করার সময় সহজ জিনিসগুলি একটি নথি তৈরি করে বা নষ্ট করে দেয়। আপনি যে ছবিগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি নিয়ে ভাবুন এবং পুনরায় ভাবুন এবং প্রথমবারের মতো কেউ সেগুলি দেখলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ===একটি সমাপ্ত পণ্য কেমন হওয়া উচিত=== যখন টেক্সট সম্পর্কিত তথ্য আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার সারমর্ম ধারণ করতে না পারে, তখন ডকুমেন্টে আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার একটি প্রকৃত ছবি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ছবি আপনাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে সক্ষম করে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ছবিগুলি রঙিন এবং উচ্চ মানের। কালো এবং সাদা ছবিগুলি কাগজে সহজেই ঝাপসা হয়ে যায় এবং কোনও ছবি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণের অভাব থাকে। বর্ণনামূলক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারে ছবিগুলি হ্রাস পায়। "একটি ছবি হাজার শব্দের সমান" এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সট মোড়ানোর ক্ষমতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। পরিষ্কার টেক্সট মোড়ানো সহ একটি ভালভাবে স্থাপন করা ছবি অন্যথায় অপ্রতিরোধ্য টেক্সট ব্লককে যুক্তিসঙ্গতভাবে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। 25 পৃষ্ঠার ব্লক, ন্যায্য সারিবদ্ধকরণ, সাধারণ কালো টেক্সট দেখা একটি প্রতিবেদন দেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। একটি ছবি একটি প্রতিবেদনকে প্রাণবন্ত করতে পারে, এটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে এবং প্রতিবেদনটিকে এক গতিতে স্পষ্ট করতে সহায়তা করতে পারে। ===একটি বস্তু, স্থান, বা প্রক্রিয়ার মানচিত্র তৈরি করুন=== এই ধরণের ছবির উদাহরণ একটি মোটরগাড়ি ম্যানুয়াল বা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যেতে পারে। এটি একটি মেশিনের ছবি থেকে শুরু করে সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে কাজ করে তার উদাহরণ পর্যন্ত যেকোনো কিছু হতে পারে। সবকিছু কোথায় এবং প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা দেখানোর জন্য তীর এবং লেবেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবিতে যথেষ্ট বড় পটভূমি থাকা উচিত যাতে পাঠক তার চারপাশের জিনিসগুলির সাথে সম্পর্কিত এলাকাটি সনাক্ত করতে পারেন। ছবিগুলি দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভাগ করা লিখিত ভাষা বিদ্যমান নাও থাকতে পারে তখন এগুলি কার্যকর। ছবিগুলি শব্দের চেয়ে জোরালো বার্তা দিতে পারে এবং সাধারণত বার্তাটি দ্রুত চিত্রিত করে। আপনার নথিতে আপনি যে ছবিটি রাখবেন তা নির্বাচন করার সময় প্রথম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ছবিগুলি এড়িয়ে চলুন যার একাধিক অর্থ হতে পারে, অথবা প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে, আপনি যে দর্শকদের জন্য লিখছেন তাদের মধ্যে নিজেকে রাখুন এবং ছবিটি দেখার সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন। আরও ভালো, এমন কারো উপর ছবিটি পরীক্ষা করে দেখুন যিনি আপনার ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে ছবিটি তাদের কাছে কী বার্তা পাঠায়। আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পষ্টতা অপরিহার্য। তবে ছবির উপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। দর্শকদের সবচেয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবি এবং লেখা একসাথে ব্যবহার করা উচিত। ছবিগুলি শব্দের মধ্যে দুর্দান্ত বিরতি তৈরি করতে পারে, তবে শব্দের মতো কোনও বিষয় বোঝার জন্য সবসময় ততটা কার্যকর নয়। ==সফ্টওয়্যার ফটোগ্রাফের কার্যকারিতা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি করতে পারে== কম্পিউটারে প্রচুর ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম রয়েছে যা ছবির সঠিক কোণ, জুম, ভিউ এবং রঙ বের করে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, কোরেল এবং ইমেজ স্মার্ট। অনেক কম্পিউটারের সাথে এখন মৌলিক চিত্র সম্পাদনা সফ্টওয়্যারের দেওয়া হয়, যা রঙ, উজ্জ্বলতা, ক্রপ এবং অন্যান্য মৌলিক সম্পাদনাগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। '''ক্রপিং''' হল একটি অপরিহার্য মূল বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে পাঠককে দেখানো ছবির ক্ষেত্রফল বাড়াতে এবং পটভূমি ও অপ্রচলিত ক্ষেত্র বাদ দিতে দেয়। ক্রপিং হল মাইক্রোস্কোপের নিচে ছবি দেখার সমতুল্য যেখানে আপনি পাঠকদের সবচেয়ে স্পষ্ট দেখতে চান এমন জায়গাগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। তবে, এটি ছবির মান হ্রাস করতে পারে এবং ছবিটি দেখা কঠিন করে তুলতে পারে। যখন সম্ভব হয়, এমন ছবি ব্যবহার করা ভাল যেগুলিতে খুব কম বা কোনও সম্পাদনার প্রয়োজন হয় না। ছবি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি উচ্চ রেজোলিউশনের (মুদ্রণের জন্য 300 dpi, স্ক্রিনের জন্য 72 dpi) এবং আপনার নথিতে সন্নিবেশ করার জন্য সঠিক ফর্ম্যাট। সাধারণত, ক্যামেরা বা অন্যান্য .jpg বা .tif ফাইলের মতো মূল উৎস থেকে ছবিগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি দেখবেন যে আপনার ছবিতে সঠিক রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাহলে ফটোশপ, কোরেল ইত্যাদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়ে আপনাকে বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং আলো সামঞ্জস্য করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যখন ছবিটি পেশাদারিত্বের সাথে তোলা হয়নি বা সেটিং এর জন্য উপযুক্ত আলোর অভাব রয়েছে। ফটোগ্রাফি অতিরিক্ত বা কম প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। '''লেবেলিং''' হল আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আপনি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামে করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশদ লেবেল করার জন্য আপনি একটি ছবিতে টেক্সট এবং তীরচিহ্ন সহ বাক্স সন্নিবেশ করতে পারেন। আপনার ছবিগুলিকে লেবেল করার ফলে আপনি যে তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট থাকে। এই কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কীভাবে এগুলিকে তাদের সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই প্রোগ্রামগুলির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি মূল্যবান। ইন্টারনেটে বা প্রকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ==শিল্পীদের গ্রাফিক্স ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য বিবিধ উৎস == যদি আপনি জানেন যে কীভাবে সেগুলি অনুসন্ধান করতে হয় এবং শিল্পীকে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে হয় তবে প্রায় যেকোনো বিষয়ের জন্য গ্রাফিক্স তুলনামূলকভাবে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যেকোনো লিখিত উপাদানের মতো, ছবিগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মূল শিল্পীর সম্পত্তি। প্রয়োজনে ভালো নীতিশাস্ত্র ব্যবহার করা এবং শিল্পীদের উদ্ধৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট এবং আপনার কম্পিউটারের ক্লিপ আর্ট ফাইলেও অসংখ্য ছবি এবং গ্রাফিক্স রয়েছে। এই কৌশল এবং সরঞ্জামগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা ছবিগুলি খুঁজে বের করা এবং ব্যবহার করা সহজ করে তুলবে। ====ছবির উদ্ধৃতি==== ইন্টারনেট বা অন্য কোনও উৎস থেকে আপনার নিজস্ব নয় এমন কোনও ছবি বা গ্রাফিক ব্যবহার বা হেরফের করার জন্য, আপনাকে সেই ছবিটি তৈরি করেছেন বা যার অধিকার আছে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাধারণত আপনার এবং এই ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে কোনও ধরণের চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। এটি চিত্র ব্যবহারের অধিকারের জন্য অর্থ প্রদান করা বা মালিকের দ্বারা প্রকাশ করা উপায়ে চিত্রটি উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু হতে পারে। কখনও কখনও গ্রাফিক্সকে পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কোনও ছবির কপিরাইট তথ্য অধ্যয়ন করা হল এটি পাবলিক ডোমেইন কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায়। কোনও সরকারি সংস্থার বা এমনকি আপনার নিয়োগকর্তার মালিকানাধীন ছবিগুলিকে সাধারণত পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এই ছবিগুলি উদ্ধৃত করা উচিত। বই এবং ইন্টারনেট থেকে ছবি উদ্ধৃত করার জন্য একটি দ্রুত নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যাবে, [[http://www.libraries.uc.edu/libraries/daap/resources/visualresources/how_to/cite_image.html]] ====ইন্টারনেটে ছবি খুঁজে বের করা==== আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি খুঁজেন, তাহলে আপনি গুগল হেডার বার নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনি কেবল "বড় ছবি, অথবা অতিরিক্ত বড় ছবি" অনুসন্ধান করতে দিবে। আপনি যা খুঁজছেন তা যদি খুঁজে না পান, তাহলে অনেক স্টক ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেখানে আপনি খুব কম অর্থের বিনিময়ে রয়্যালটি মুক্ত ছবি পেতে পারেন। বিবেচনা করার জন্য কিছু সাইট হল: Stock.XCHNG (এটি একটি বিনামূল্যের সাইট, কিছু বিধিনিষেধ সহ), Stock Xpert, Corbis, Getty, অথবা অন্যান্য, শুধু সার্চ বারে stock photography টাইপ করুন। == ক্লিপ আর্ট/চিত্র == {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Polar_bear_clip_art.svg|thumb|ক্লিপ আর্টের একটি উদাহরণ]] |} সকল বয়সের দর্শকদের কাছে তথ্য সহজে এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিত্রগুলি একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে, চিত্রগুলি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে চিত্রটি আপনার আলোচনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। আলোচিত বিষয়ের সাথে যদি চিত্রগুলির কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকে তবে চিত্রগুলি স্পর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তা তুলে ধরার জন্য চিত্রগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং পাঠকদের তা থেকে বিভ্রান্ত না করার জন্য। গ্রাফিক্স একটি ছবির চেয়ে ধারণাগুলিকে আরও সহজে চিত্রিত করতে পারে। তারা নথিতে লেখার চেয়ে ভিন্ন ধরণের গুণমান দেয়। তবে, সুশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞানী পেশাদারদের কাছে ধারণাগুলি উপস্থাপন করার সময়, ক্লিপ আর্ট দক্ষতার সাথে তথ্য উপস্থাপন নাও করতে পারে। কম চিত্রের রেজোলিউশনের চিত্রগুলি আপনার দর্শকদের কাছে আপনি যে বিবরণগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। যদি এটি হয় তবে ফটোগুলি একটি ভাল পছন্দ হতে পারে কারণ সেগুলি আরও স্পষ্ট এবং আপনাকে আরও ভালভাবে নির্দেশ করতে পারে। {{BookCat}} == শিরোনাম লেখা == শিরোনাম লেখা গ্রাফিক্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আশা করা হয় যে আপনি আপনার সমস্ত গ্রাফিক্সকে কোনও না কোনওভাবে লেবেল করবেন যাতে আপনি যখন আপনার নথিতে সেগুলি উল্লেখ করবেন তখন পাঠক জানতে পারবেন যে আপনি কোন গ্রাফিকের কথা বলছেন। শিরোনাম লেখা গ্রাফের শিরোনামের মতো সহজ হতে পারে অথবা ছবির উৎপত্তি এবং প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ছবির নীচে একটি ছোট অনুচ্ছেদের মতো জটিল হতে পারে। শিরোনাম ছাড়াই আপনার ছবি এবং লেখা যুক্তিসঙ্গতভাবে একসাথে চলে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার পাঠকরা আপনার সাথে একই রকম পরিচিত হবে না। c8os5pvzshxucu6o2lnkrya3kxqn4fe 85146 85145 2025-06-22T04:36:13Z Mehedi Abedin 7113 85146 wikitext text/x-wiki =ছবি এবং চিত্র= পেশাদার নথিতে ছবি ব্যবহার করা হয় এমন একটি বার্তা প্রেরণের হাতিয়ার হিসেবে যা একজন লেখক মনে করেন সঠিক চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। ছবি একটি বার্তা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিছু উদাহরণ এখানে দেখা যাবে: ===চিত্রের চেকলিস্ট=== '''পরিকল্পনা''' * আপনার শ্রোতারা কোন ধরণের চিত্রের সাথে পরিচিত? * আপনার কি এমন তথ্য আছে যা আপনার শ্রোতাদের কাছে দৃশ্যমানভাবে বা শব্দ এবং গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে আরও সহজে বা দ্রুত জানানো যেতে পারে? * আপনার কি এমন সংজ্ঞা আছে যা দৃশ্যমানভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যা একটি ফ্লোচার্টে চিত্রিত করা যেতে পারে? * আপনার কি ট্রেন্ড বা সম্পর্ক সম্পর্কে তথ্য আছে যা টেবিল এবং গ্রাফিক্সে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন পরিসংখ্যান আছে যা টেবিলে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে? * আপনার কি বস্তু চিত্রিত করার প্রয়োজন? যদি তাই হয়, তাহলে বস্তু সম্পর্কে আপনার কী প্রদর্শন করার প্রয়োজন? আপনার কি বস্তুর নির্দিষ্ট দিকগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন? আপনার কি ছবির বাস্তবতা প্রয়োজন? * আপনার চিত্রের নকশার নিয়মাবলী কী কী? * আপনি কি ধার করতে বা অভিযোজিত করতে পারেন এমন উপযুক্ত চিত্রাবলী আছে? নাকি আপনার নিজের তৈরি করতে হবে? '''সংশোধন''' * আপনার চিত্রাবলী কি আপনার উদ্দেশ্য এবং দর্শকদের জন্য উপযুক্ত? * আপনার চিত্রাবলী কি নীতিগতভাবে তথ্য যোগাযোগ করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কার্যকরভাবে অবস্থিত এবং খুঁজে পাওয়া সহজ? * আপনার চিত্রাবলী কি নম্বরযুক্ত এবং লেবেলযুক্ত? * আপনার মৌখিক এবং দৃশ্যমান উপাদানগুলি কি একে অপরকে শক্তিশালী করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কেবল সাজসজ্জার পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে তথ্যবহুল? * প্রয়োজনে, আপনি কি আপনার পাঠকদের ভাষ্য বা টীকা দিয়ে আপনার চিত্রাবলী ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছেন? * আপনি কি ধার করা বা অভিযোজিত টেবিল এবং চিত্রের উৎসগুলি স্বীকার করেছেন? ===কিভাবে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করবেন=== কোনও কিছু করার জন্য দৃশ্যমান উপস্থাপনা দেওয়ার জন্য ছবিগুলি একটি কার্যকর হাতিয়ার। এগুলি একা প্রদর্শন করা যেতে পারে বা প্রদত্ত পাঠ্যের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এগুলি একটি বার্তাকে উন্নত করতে পারে। ''যদি আপনি লেখার সাথে ছবি ব্যবহার করেন:'' নির্দেশাবলীর একটি সেটের মতো, চিত্রকর্মটি কাজের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি শুধুমাত্র লেখা থেকে উদ্ভূত বিভ্রান্তি হ্রাস করে। কোনও কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হয় তা চিত্রিত করতে সাহায্য করার জন্য কোনও ছবি ব্যবহার করার সময় ছবিটি পাঠ্যের সাথে মিলে যায় কিনা তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। আপনাকে লেখা বা পাঠ্য ব্যবহার করে ছবিটি ব্যাখ্যা করতে হবে এবং বিপরীতভাবে, একটি ছবি ব্যবহার করে পাঠ্য ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও, দর্শক যখন ছবিটি দেখতে পাবে তখন কাজটি আরও বেশি করে সম্পন্ন করবে যদি তারা কাজটি দেখছিল, যদি তারা এটি অনুভব করছিল তবে তা অগত্যা নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে: যদি আপনার কাজটি একটি কার্টহুইল করা হয়, তাহলে আপনি এমন কোণে ছবিগুলি চাইবেন না যেখানে ব্যক্তি কার্টহুইল করা ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখছে। আপনি চাইবেন ছবিগুলি এমন কারও কাছ থেকে হোক, যাতে দর্শক যা দেখতে পাচ্ছে না (যেমন যখন তারা তাদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তখন তাদের পা কোথায়) তা দেখে বিভ্রান্ত না হয়। ছবি ব্যবহার করার সময় সহজ জিনিসগুলি একটি নথি তৈরি করে বা নষ্ট করে দেয়। আপনি যে ছবিগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি নিয়ে ভাবুন এবং পুনরায় ভাবুন এবং প্রথমবারের মতো কেউ সেগুলি দেখলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ===একটি সমাপ্ত পণ্য কেমন হওয়া উচিত=== যখন টেক্সট সম্পর্কিত তথ্য আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার সারমর্ম ধারণ করতে না পারে, তখন ডকুমেন্টে আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার একটি প্রকৃত ছবি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ছবি আপনাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে সক্ষম করে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ছবিগুলি রঙিন এবং উচ্চ মানের। কালো এবং সাদা ছবিগুলি কাগজে সহজেই ঝাপসা হয়ে যায় এবং কোনও ছবি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণের অভাব থাকে। বর্ণনামূলক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারে ছবিগুলি হ্রাস পায়। "একটি ছবি হাজার শব্দের সমান" এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সট মোড়ানোর ক্ষমতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। পরিষ্কার টেক্সট মোড়ানো সহ একটি ভালভাবে স্থাপন করা ছবি অন্যথায় অপ্রতিরোধ্য টেক্সট ব্লককে যুক্তিসঙ্গতভাবে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। 25 পৃষ্ঠার ব্লক, ন্যায্য সারিবদ্ধকরণ, সাধারণ কালো টেক্সট দেখা একটি প্রতিবেদন দেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। একটি ছবি একটি প্রতিবেদনকে প্রাণবন্ত করতে পারে, এটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে এবং প্রতিবেদনটিকে এক গতিতে স্পষ্ট করতে সহায়তা করতে পারে। ===একটি বস্তু, স্থান, বা প্রক্রিয়ার মানচিত্র তৈরি করুন=== এই ধরণের ছবির উদাহরণ একটি মোটরগাড়ি ম্যানুয়াল বা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যেতে পারে। এটি একটি মেশিনের ছবি থেকে শুরু করে সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে কাজ করে তার উদাহরণ পর্যন্ত যেকোনো কিছু হতে পারে। সবকিছু কোথায় এবং প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা দেখানোর জন্য তীর এবং লেবেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবিতে যথেষ্ট বড় পটভূমি থাকা উচিত যাতে পাঠক তার চারপাশের জিনিসগুলির সাথে সম্পর্কিত এলাকাটি সনাক্ত করতে পারেন। ছবিগুলি দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভাগ করা লিখিত ভাষা বিদ্যমান নাও থাকতে পারে তখন এগুলি কার্যকর। ছবিগুলি শব্দের চেয়ে জোরালো বার্তা দিতে পারে এবং সাধারণত বার্তাটি দ্রুত চিত্রিত করে। আপনার নথিতে আপনি যে ছবিটি রাখবেন তা নির্বাচন করার সময় প্রথম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ছবিগুলি এড়িয়ে চলুন যার একাধিক অর্থ হতে পারে, অথবা প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে, আপনি যে দর্শকদের জন্য লিখছেন তাদের মধ্যে নিজেকে রাখুন এবং ছবিটি দেখার সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন। আরও ভালো, এমন কারো উপর ছবিটি পরীক্ষা করে দেখুন যিনি আপনার ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে ছবিটি তাদের কাছে কী বার্তা পাঠায়। আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পষ্টতা অপরিহার্য। তবে ছবির উপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। দর্শকদের সবচেয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবি এবং লেখা একসাথে ব্যবহার করা উচিত। ছবিগুলি শব্দের মধ্যে দুর্দান্ত বিরতি তৈরি করতে পারে, তবে শব্দের মতো কোনও বিষয় বোঝার জন্য সবসময় ততটা কার্যকর নয়। ==সফ্টওয়্যার ফটোগ্রাফের কার্যকারিতা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি করতে পারে== কম্পিউটারে প্রচুর ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম রয়েছে যা ছবির সঠিক কোণ, জুম, ভিউ এবং রঙ বের করে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, কোরেল এবং ইমেজ স্মার্ট। অনেক কম্পিউটারের সাথে এখন মৌলিক চিত্র সম্পাদনা সফ্টওয়্যারের দেওয়া হয়, যা রঙ, উজ্জ্বলতা, ক্রপ এবং অন্যান্য মৌলিক সম্পাদনাগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। '''ক্রপিং''' হল একটি অপরিহার্য মূল বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে পাঠককে দেখানো ছবির ক্ষেত্রফল বাড়াতে এবং পটভূমি ও অপ্রচলিত ক্ষেত্র বাদ দিতে দেয়। ক্রপিং হল মাইক্রোস্কোপের নিচে ছবি দেখার সমতুল্য যেখানে আপনি পাঠকদের সবচেয়ে স্পষ্ট দেখতে চান এমন জায়গাগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। তবে, এটি ছবির মান হ্রাস করতে পারে এবং ছবিটি দেখা কঠিন করে তুলতে পারে। যখন সম্ভব হয়, এমন ছবি ব্যবহার করা ভাল যেগুলিতে খুব কম বা কোনও সম্পাদনার প্রয়োজন হয় না। ছবি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি উচ্চ রেজোলিউশনের (মুদ্রণের জন্য 300 dpi, স্ক্রিনের জন্য 72 dpi) এবং আপনার নথিতে সন্নিবেশ করার জন্য সঠিক ফর্ম্যাট। সাধারণত, ক্যামেরা বা অন্যান্য .jpg বা .tif ফাইলের মতো মূল উৎস থেকে ছবিগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি দেখবেন যে আপনার ছবিতে সঠিক রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাহলে ফটোশপ, কোরেল ইত্যাদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়ে আপনাকে বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং আলো সামঞ্জস্য করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যখন ছবিটি পেশাদারিত্বের সাথে তোলা হয়নি বা সেটিং এর জন্য উপযুক্ত আলোর অভাব রয়েছে। ফটোগ্রাফি অতিরিক্ত বা কম প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। '''লেবেলিং''' হল আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আপনি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামে করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশদ লেবেল করার জন্য আপনি একটি ছবিতে টেক্সট এবং তীরচিহ্ন সহ বাক্স সন্নিবেশ করতে পারেন। আপনার ছবিগুলিকে লেবেল করার ফলে আপনি যে তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট থাকে। এই কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কীভাবে এগুলিকে তাদের সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই প্রোগ্রামগুলির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি মূল্যবান। ইন্টারনেটে বা প্রকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ==শিল্পীদের গ্রাফিক্স ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য বিবিধ উৎস == যদি আপনি জানেন যে কীভাবে সেগুলি অনুসন্ধান করতে হয় এবং শিল্পীকে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে হয় তবে প্রায় যেকোনো বিষয়ের জন্য গ্রাফিক্স তুলনামূলকভাবে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যেকোনো লিখিত উপাদানের মতো, ছবিগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মূল শিল্পীর সম্পত্তি। প্রয়োজনে ভালো নীতিশাস্ত্র ব্যবহার করা এবং শিল্পীদের উদ্ধৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট এবং আপনার কম্পিউটারের ক্লিপ আর্ট ফাইলেও অসংখ্য ছবি এবং গ্রাফিক্স রয়েছে। এই কৌশল এবং সরঞ্জামগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা ছবিগুলি খুঁজে বের করা এবং ব্যবহার করা সহজ করে তুলবে। ====ছবির উদ্ধৃতি==== ইন্টারনেট বা অন্য কোনও উৎস থেকে আপনার নিজস্ব নয় এমন কোনও ছবি বা গ্রাফিক ব্যবহার বা হেরফের করার জন্য, আপনাকে সেই ছবিটি তৈরি করেছেন বা যার অধিকার আছে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাধারণত আপনার এবং এই ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে কোনও ধরণের চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। এটি চিত্র ব্যবহারের অধিকারের জন্য অর্থ প্রদান করা বা মালিকের দ্বারা প্রকাশ করা উপায়ে চিত্রটি উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু হতে পারে। কখনও কখনও গ্রাফিক্সকে পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কোনও ছবির কপিরাইট তথ্য অধ্যয়ন করা হল এটি পাবলিক ডোমেইন কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায়। কোনও সরকারি সংস্থার বা এমনকি আপনার নিয়োগকর্তার মালিকানাধীন ছবিগুলিকে সাধারণত পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এই ছবিগুলি উদ্ধৃত করা উচিত। বই এবং ইন্টারনেট থেকে ছবি উদ্ধৃত করার জন্য একটি দ্রুত নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যাবে, [[http://www.libraries.uc.edu/libraries/daap/resources/visualresources/how_to/cite_image.html]] ====ইন্টারনেটে ছবি খুঁজে বের করা==== আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি খুঁজেন, তাহলে আপনি গুগল হেডার বার নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনি কেবল "বড় ছবি, অথবা অতিরিক্ত বড় ছবি" অনুসন্ধান করতে দিবে। আপনি যা খুঁজছেন তা যদি খুঁজে না পান, তাহলে অনেক স্টক ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেখানে আপনি খুব কম অর্থের বিনিময়ে রয়্যালটি মুক্ত ছবি পেতে পারেন। বিবেচনা করার জন্য কিছু সাইট হল: Stock.XCHNG (এটি একটি বিনামূল্যের সাইট, কিছু বিধিনিষেধ সহ), Stock Xpert, Corbis, Getty, অথবা অন্যান্য, শুধু সার্চ বারে stock photography টাইপ করুন। == ক্লিপ আর্ট/চিত্র == {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Polar_bear_clip_art.svg|thumb|ক্লিপ আর্টের একটি উদাহরণ]] |} সকল বয়সের দর্শকদের কাছে তথ্য সহজে এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিত্র একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে চিত্রটি আপনার আলোচনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। আলোচিত বিষয়ের সাথে যদি চিত্রগুলির কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকে তবে চিত্রগুলি স্পর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তা তুলে ধরার জন্য চিত্রগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং পাঠকদের তা থেকে বিভ্রান্ত না করার জন্য। গ্রাফিক্স একটি ছবির চেয়ে ধারণাগুলিকে আরও সহজে চিত্রিত করতে পারে। তারা নথিতে লেখার চেয়ে ভিন্ন ধরণের গুণমান দেয়। তবে, সুশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞানী পেশাদারদের কাছে ধারণাগুলি উপস্থাপন করার সময়, ক্লিপ আর্ট দক্ষতার সাথে তথ্য উপস্থাপন নাও করতে পারে। কম চিত্রের রেজোলিউশনের চিত্রগুলি আপনার দর্শকদের কাছে আপনি যে বিবরণগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। যদি এটি হয় তবে ফটোগুলি একটি ভাল পছন্দ হতে পারে কারণ সেগুলি আরও স্পষ্ট এবং আপনাকে আরও ভালভাবে নির্দেশ করতে পারে। {{BookCat}} == শিরোনাম লেখা == শিরোনাম লেখা গ্রাফিক্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আশা করা হয় যে আপনি আপনার সমস্ত গ্রাফিক্সকে কোনও না কোনওভাবে লেবেল করবেন যাতে আপনি যখন আপনার নথিতে সেগুলি উল্লেখ করবেন তখন পাঠক জানতে পারবেন যে আপনি কোন গ্রাফিকের কথা বলছেন। শিরোনাম লেখা গ্রাফের শিরোনামের মতো সহজ হতে পারে অথবা ছবির উৎপত্তি এবং প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ছবির নীচে একটি ছোট অনুচ্ছেদের মতো জটিল হতে পারে। শিরোনাম ছাড়াই আপনার ছবি এবং লেখা যুক্তিসঙ্গতভাবে একসাথে চলে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার পাঠকরা আপনার সাথে একই রকম পরিচিত হবে না। 15wphkweh9eln8hd3oew3ymt4y0k68e 85147 85146 2025-06-22T04:36:54Z Mehedi Abedin 7113 85147 wikitext text/x-wiki =ছবি এবং চিত্র= পেশাদার নথিতে ছবি ব্যবহার করা হয় এমন একটি বার্তা প্রেরণের হাতিয়ার হিসেবে যা একজন লেখক মনে করেন সঠিক চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। ছবি একটি বার্তা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিছু উদাহরণ এখানে দেখা যাবে: ===চিত্রের চেকলিস্ট=== '''পরিকল্পনা''' * আপনার শ্রোতারা কোন ধরণের চিত্রের সাথে পরিচিত? * আপনার কি এমন তথ্য আছে যা আপনার শ্রোতাদের কাছে দৃশ্যমানভাবে বা শব্দ এবং গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে আরও সহজে বা দ্রুত জানানো যেতে পারে? * আপনার কি এমন সংজ্ঞা আছে যা দৃশ্যমানভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যা একটি ফ্লোচার্টে চিত্রিত করা যেতে পারে? * আপনার কি ট্রেন্ড বা সম্পর্ক সম্পর্কে তথ্য আছে যা টেবিল এবং গ্রাফিক্সে প্রদর্শিত হতে পারে? * আপনার কি এমন পরিসংখ্যান আছে যা টেবিলে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে? * আপনার কি বস্তু চিত্রিত করার প্রয়োজন? যদি তাই হয়, তাহলে বস্তু সম্পর্কে আপনার কী প্রদর্শন করার প্রয়োজন? আপনার কি বস্তুর নির্দিষ্ট দিকগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন? আপনার কি ছবির বাস্তবতা প্রয়োজন? * আপনার চিত্রের নকশার নিয়মাবলী কী কী? * আপনি কি ধার করতে বা অভিযোজিত করতে পারেন এমন উপযুক্ত চিত্রাবলী আছে? নাকি আপনার নিজের তৈরি করতে হবে? '''সংশোধন''' * আপনার চিত্রাবলী কি আপনার উদ্দেশ্য এবং দর্শকদের জন্য উপযুক্ত? * আপনার চিত্রাবলী কি নীতিগতভাবে তথ্য যোগাযোগ করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কার্যকরভাবে অবস্থিত এবং খুঁজে পাওয়া সহজ? * আপনার চিত্রাবলী কি নম্বরযুক্ত এবং লেবেলযুক্ত? * আপনার মৌখিক এবং দৃশ্যমান উপাদানগুলি কি একে অপরকে শক্তিশালী করে? * আপনার চিত্রাবলী কি কেবল সাজসজ্জার পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে তথ্যবহুল? * প্রয়োজনে, আপনি কি আপনার পাঠকদের ভাষ্য বা টীকা দিয়ে আপনার চিত্রাবলী ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছেন? * আপনি কি ধার করা বা অভিযোজিত টেবিল এবং চিত্রের উৎসগুলি স্বীকার করেছেন? ===কিভাবে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করবেন=== কোনও কিছু করার জন্য দৃশ্যমান উপস্থাপনা দেওয়ার জন্য ছবিগুলি একটি কার্যকর হাতিয়ার। এগুলি একা প্রদর্শন করা যেতে পারে বা প্রদত্ত পাঠ্যের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এগুলি একটি বার্তাকে উন্নত করতে পারে। ''যদি আপনি লেখার সাথে ছবি ব্যবহার করেন:'' নির্দেশাবলীর একটি সেটের মতো, চিত্রকর্মটি কাজের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি শুধুমাত্র লেখা থেকে উদ্ভূত বিভ্রান্তি হ্রাস করে। কোনও কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হয় তা চিত্রিত করতে সাহায্য করার জন্য কোনও ছবি ব্যবহার করার সময় ছবিটি পাঠ্যের সাথে মিলে যায় কিনা তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। আপনাকে লেখা বা পাঠ্য ব্যবহার করে ছবিটি ব্যাখ্যা করতে হবে এবং বিপরীতভাবে, একটি ছবি ব্যবহার করে পাঠ্য ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও, দর্শক যখন ছবিটি দেখতে পাবে তখন কাজটি আরও বেশি করে সম্পন্ন করবে যদি তারা কাজটি দেখছিল, যদি তারা এটি অনুভব করছিল তবে তা অগত্যা নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে: যদি আপনার কাজটি একটি কার্টহুইল করা হয়, তাহলে আপনি এমন কোণে ছবিগুলি চাইবেন না যেখানে ব্যক্তি কার্টহুইল করা ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখছে। আপনি চাইবেন ছবিগুলি এমন কারও কাছ থেকে হোক, যাতে দর্শক যা দেখতে পাচ্ছে না (যেমন যখন তারা তাদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তখন তাদের পা কোথায়) তা দেখে বিভ্রান্ত না হয়। ছবি ব্যবহার করার সময় সহজ জিনিসগুলি একটি নথি তৈরি করে বা নষ্ট করে দেয়। আপনি যে ছবিগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি নিয়ে ভাবুন এবং পুনরায় ভাবুন এবং প্রথমবারের মতো কেউ সেগুলি দেখলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ===একটি সমাপ্ত পণ্য কেমন হওয়া উচিত=== যখন টেক্সট সম্পর্কিত তথ্য আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার সারমর্ম ধারণ করতে না পারে, তখন ডকুমেন্টে আপনি যা বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন তার একটি প্রকৃত ছবি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ছবি আপনাকে যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে সক্ষম করে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ছবিগুলি রঙিন এবং উচ্চ মানের। কালো এবং সাদা ছবিগুলি কাগজে সহজেই ঝাপসা হয়ে যায় এবং কোনও ছবি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিশদ বিবরণের অভাব থাকে। বর্ণনামূলক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারে ছবিগুলি হ্রাস পায়। "একটি ছবি হাজার শব্দের সমান" এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সট মোড়ানোর ক্ষমতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। পরিষ্কার টেক্সট মোড়ানো সহ একটি ভালভাবে স্থাপন করা ছবি অন্যথায় অপ্রতিরোধ্য টেক্সট ব্লককে যুক্তিসঙ্গতভাবে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। 25 পৃষ্ঠার ব্লক, ন্যায্য সারিবদ্ধকরণ, সাধারণ কালো টেক্সট দেখা একটি প্রতিবেদন দেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। একটি ছবি একটি প্রতিবেদনকে প্রাণবন্ত করতে পারে, এটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে এবং প্রতিবেদনটিকে এক গতিতে স্পষ্ট করতে সহায়তা করতে পারে। ===একটি বস্তু, স্থান, বা প্রক্রিয়ার মানচিত্র তৈরি করুন=== এই ধরণের ছবির উদাহরণ একটি মোটরগাড়ি ম্যানুয়াল বা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যেতে পারে। এটি একটি মেশিনের ছবি থেকে শুরু করে সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে কাজ করে তার উদাহরণ পর্যন্ত যেকোনো কিছু হতে পারে। সবকিছু কোথায় এবং প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা দেখানোর জন্য তীর এবং লেবেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবিতে যথেষ্ট বড় পটভূমি থাকা উচিত যাতে পাঠক তার চারপাশের জিনিসগুলির সাথে সম্পর্কিত এলাকাটি সনাক্ত করতে পারেন। ছবিগুলি দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে যখন একটি ভাগ করা লিখিত ভাষা বিদ্যমান নাও থাকতে পারে তখন এগুলি কার্যকর। ছবিগুলি শব্দের চেয়ে জোরালো বার্তা দিতে পারে এবং সাধারণত বার্তাটি দ্রুত চিত্রিত করে। আপনার নথিতে আপনি যে ছবিটি রাখবেন তা নির্বাচন করার সময় প্রথম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ছবিগুলি এড়িয়ে চলুন যার একাধিক অর্থ হতে পারে, অথবা প্রকৃত অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে, আপনি যে দর্শকদের জন্য লিখছেন তাদের মধ্যে নিজেকে রাখুন এবং ছবিটি দেখার সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন। আরও ভালো, এমন কারো উপর ছবিটি পরীক্ষা করে দেখুন যিনি আপনার ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে ছবিটি তাদের কাছে কী বার্তা পাঠায়। আপনার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পষ্টতা অপরিহার্য। তবে ছবির উপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। দর্শকদের সবচেয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবি এবং লেখা একসাথে ব্যবহার করা উচিত। ছবিগুলি শব্দের মধ্যে দুর্দান্ত বিরতি তৈরি করতে পারে, তবে শব্দের মতো কোনও বিষয় বোঝার জন্য সবসময় ততটা কার্যকর নয়। ==সফ্টওয়্যার ফটোগ্রাফের কার্যকারিতা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি করতে পারে== কম্পিউটারে প্রচুর ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম রয়েছে যা ছবির সঠিক কোণ, জুম, ভিউ এবং রঙ বের করে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, কোরেল এবং ইমেজ স্মার্ট। অনেক কম্পিউটারের সাথে এখন মৌলিক চিত্র সম্পাদনা সফ্টওয়্যারের দেওয়া হয়, যা রঙ, উজ্জ্বলতা, ক্রপ এবং অন্যান্য মৌলিক সম্পাদনাগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। '''ক্রপিং''' হল একটি অপরিহার্য মূল বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে পাঠককে দেখানো ছবির ক্ষেত্রফল বাড়াতে এবং পটভূমি ও অপ্রচলিত ক্ষেত্র বাদ দিতে দেয়। ক্রপিং হল মাইক্রোস্কোপের নিচে ছবি দেখার সমতুল্য যেখানে আপনি পাঠকদের সবচেয়ে স্পষ্ট দেখতে চান এমন জায়গাগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। তবে, এটি ছবির মান হ্রাস করতে পারে এবং ছবিটি দেখা কঠিন করে তুলতে পারে। যখন সম্ভব হয়, এমন ছবি ব্যবহার করা ভাল যেগুলিতে খুব কম বা কোনও সম্পাদনার প্রয়োজন হয় না। ছবি ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি উচ্চ রেজোলিউশনের (মুদ্রণের জন্য 300 dpi, স্ক্রিনের জন্য 72 dpi) এবং আপনার নথিতে সন্নিবেশ করার জন্য সঠিক ফর্ম্যাট। সাধারণত, ক্যামেরা বা অন্যান্য .jpg বা .tif ফাইলের মতো মূল উৎস থেকে ছবিগুলি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি দেখবেন যে আপনার ছবিতে সঠিক রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাহলে ফটোশপ, কোরেল ইত্যাদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়ে আপনাকে বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং আলো সামঞ্জস্য করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যখন ছবিটি পেশাদারিত্বের সাথে তোলা হয়নি বা সেটিং এর জন্য উপযুক্ত আলোর অভাব রয়েছে। ফটোগ্রাফি অতিরিক্ত বা কম প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। '''লেবেলিং''' হল আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আপনি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামে করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশদ লেবেল করার জন্য আপনি একটি ছবিতে টেক্সট এবং তীরচিহ্ন সহ বাক্স সন্নিবেশ করতে পারেন। আপনার ছবিগুলিকে লেবেল করার ফলে আপনি যে তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট থাকে। এই কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কীভাবে এগুলিকে তাদের সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই প্রোগ্রামগুলির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি মূল্যবান। ইন্টারনেটে বা প্রকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ==শিল্পীদের গ্রাফিক্স ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য বিবিধ উৎস == যদি আপনি জানেন যে কীভাবে সেগুলি অনুসন্ধান করতে হয় এবং শিল্পীকে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে হয় তবে প্রায় যেকোনো বিষয়ের জন্য গ্রাফিক্স তুলনামূলকভাবে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। যেকোনো লিখিত উপাদানের মতো, ছবিগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মূল শিল্পীর সম্পত্তি। প্রয়োজনে ভালো নীতিশাস্ত্র ব্যবহার করা এবং শিল্পীদের উদ্ধৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট এবং আপনার কম্পিউটারের ক্লিপ আর্ট ফাইলেও অসংখ্য ছবি এবং গ্রাফিক্স রয়েছে। এই কৌশল এবং সরঞ্জামগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা ছবিগুলি খুঁজে বের করা এবং ব্যবহার করা সহজ করে তুলবে। ====ছবির উদ্ধৃতি==== ইন্টারনেট বা অন্য কোনও উৎস থেকে আপনার নিজস্ব নয় এমন কোনও ছবি বা গ্রাফিক ব্যবহার বা হেরফের করার জন্য, আপনাকে সেই ছবিটি তৈরি করেছেন বা যার অধিকার আছে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাধারণত আপনার এবং এই ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে কোনও ধরণের চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। এটি চিত্র ব্যবহারের অধিকারের জন্য অর্থ প্রদান করা বা মালিকের দ্বারা প্রকাশ করা উপায়ে চিত্রটি উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু হতে পারে। কখনও কখনও গ্রাফিক্সকে পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কোনও ছবির কপিরাইট তথ্য অধ্যয়ন করা হল এটি পাবলিক ডোমেইন কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায়। কোনও সরকারি সংস্থার বা এমনকি আপনার নিয়োগকর্তার মালিকানাধীন ছবিগুলিকে সাধারণত পাবলিক ডোমেইন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এই ছবিগুলি উদ্ধৃত করা উচিত। বই এবং ইন্টারনেট থেকে ছবি উদ্ধৃত করার জন্য একটি দ্রুত নির্দেশিকা এখানে পাওয়া যাবে, [[http://www.libraries.uc.edu/libraries/daap/resources/visualresources/how_to/cite_image.html]] ====ইন্টারনেটে ছবি খুঁজে বের করা==== আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি খুঁজেন, তাহলে আপনি গুগল হেডার বার নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনি কেবল "বড় ছবি, অথবা অতিরিক্ত বড় ছবি" অনুসন্ধান করতে দিবে। আপনি যা খুঁজছেন তা যদি খুঁজে না পান, তাহলে অনেক স্টক ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেখানে আপনি খুব কম অর্থের বিনিময়ে রয়্যালটি মুক্ত ছবি পেতে পারেন। বিবেচনা করার জন্য কিছু সাইট হল: Stock.XCHNG (এটি একটি বিনামূল্যের সাইট, কিছু বিধিনিষেধ সহ), Stock Xpert, Corbis, Getty, অথবা অন্যান্য, শুধু সার্চ বারে stock photography টাইপ করুন। == ক্লিপ আর্ট/চিত্র == {| style="padding:2px; text-align:center; float:right;" | [[Image:Polar_bear_clip_art.svg|thumb|ক্লিপ আর্টের একটি উদাহরণ]] |} সকল বয়সের দর্শকদের কাছে তথ্য সহজে এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিত্র একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন যে চিত্রটি আপনার আলোচনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। আলোচিত বিষয়ের সাথে যদি চিত্রগুলির কোনও প্রাসঙ্গিকতা না থাকে তবে চিত্রগুলি স্পর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তা তুলে ধরার জন্য চিত্রগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং পাঠকদের তা থেকে বিভ্রান্ত না করার জন্য। গ্রাফিক্স একটি ছবির চেয়ে ধারণাগুলিকে আরও সহজে চিত্রিত করতে পারে। তারা নথিতে লেখার চেয়ে ভিন্ন ধরণের গুণমান দেয়। তবে, সুশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞানী পেশাদারদের কাছে ধারণাগুলি উপস্থাপন করার সময়, ক্লিপ আর্ট দক্ষতার সাথে তথ্য উপস্থাপন নাও করতে পারে। কম চিত্রের রেজোলিউশনের চিত্রগুলি আপনার দর্শকদের কাছে আপনি যে বিবরণগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। যদি এটি হয় তবে ফটোগুলি একটি ভাল পছন্দ হতে পারে কারণ সেগুলি আরও স্পষ্ট এবং আপনাকে আরও ভালভাবে নির্দেশ করতে পারে। {{BookCat}} == শিরোনাম লেখা == শিরোনাম লেখা গ্রাফিক্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আশা করা হয় যে আপনি আপনার সমস্ত গ্রাফিক্সকে কোনও না কোনওভাবে লেবেল করবেন যাতে আপনি যখন আপনার নথিতে সেগুলি উল্লেখ করবেন তখন পাঠক জানতে পারবেন যে আপনি কোন গ্রাফিকের কথা বলছেন। শিরোনাম লেখা গ্রাফের শিরোনামের মতো সহজ হতে পারে অথবা ছবির উৎপত্তি এবং প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ছবির নীচে একটি ছোট অনুচ্ছেদের মতো জটিল হতে পারে। শিরোনাম ছাড়াই আপনার ছবি এবং লেখা যুক্তিসঙ্গতভাবে একসাথে চলে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার পাঠকরা আপনার সাথে একইভাবে একমত নাও হতে পারে। 4jmss710tp7kgkr4klteuvwzchv2q0f পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ 0 26409 85148 82227 2025-06-22T04:37:48Z Mehedi Abedin 7113 85148 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==কভার== একটি কভার পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। কভার পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং স্কেলেবল হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের কভারটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের কভার পৃষ্ঠাটি ভাবুন। কভার পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''--[[ব্যবহারকারী:Nardi82|Nardi82]] ([[ব্যবহারকারী:Nardi82|আলাপ]]) ১৭:১২, ২৩ এপ্রিল ২০১০ (UTC) এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;312) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারাংশ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলি সহায়ক ভিজ্যুয়াল যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের 15 শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটি নেভিগেট করার জন্য সহায়ক। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী এবং/অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত স্ক্যান করার অনুমতি দেবে। এটি যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভাল ওভারভিউ পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর নেভিগেশনের সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখা জুড়ে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় 15 পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} rxtjlyu9rz1juw9cw8pu99pbswkurp1 পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/পেশা 0 26440 85152 83037 2025-06-22T04:44:04Z Mehedi Abedin 7113 85152 wikitext text/x-wiki {{Navigate|Prev=প্রাথমিক ধারণা|Next=ব্যবসায়িক যোগাযোগ}} {{TOCright}} = ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট = == ''পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি'' == জীবনবৃত্তান্ত (রিজ়ুমে) এবং কভার লেটার হলো ব্যবসায়িক দুনিয়ায় সর্বাধিক প্রচলিত দুটি নথি, যা একজন প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট কর্ম-অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করে। এই নথিগুলোর যেকোনো একটি লেখার সময় পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি সর্বদা পাঠক এবং তারা কী খুঁজছেন তা মাথায় রাখে। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণকারী একজন লেখককে সর্বদা এই তিনটি উপাদান বিবেচনা করতে হয়: * পাঠকের বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য, প্রত্যাশা, প্রেক্ষাপট এবং অন্যান্য যেকোনো বিষয় যা তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নির্ধারণ করে * পাঠকের জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং প্রভাবশালী একটি বার্তা তৈরি করা * পাঠক নথিটি পড়ার প্রতিটি মুহূর্তে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেই বিষয়ে মনোযোগ রাখা পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং পাঠক কী চায় ও কেন চায় তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাই আপনাকে পদটি প্রদান করবে, তাই এই ক্যারিয়ার ডকুমেন্টগুলো তাদের পছন্দ অনুসারে তৈরি করা উচিত। নথির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারযোগ্যতা। পাঠক যেন সহজেই নথিটি পড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে এবং আপনাকে বোঝার সুযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই নথিগুলো অবশ্যই প্রভাবশালী হওয়া উচিত। জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটার পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাকে বোঝাতে হবে যে আপনি ওই পদটির জন্য সেরা প্রার্থী। যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় ও প্রভাবশালী উপস্থাপনাই আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। == ''জীবনবৃত্তান্ত লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == জীবনবৃত্তান্ত লেখার সময় সর্বদা মনে রাখতে হবে নিয়োগকর্তা একজন সম্ভাব্য কর্মচারীর মধ্যে কী খুঁজছে, এবং এর সহজ উপায় হলো পাঠকের বিষয়ে চিন্তা করা। নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন: * তারা কী খুঁজবে? ** কীভাবে তারা সেই তথ্য খুঁজবে? * তথ্য পেলে তারা কীভাবে ব্যবহার করবে? ** বিষয়টি সম্পর্কে তাদের মনোভাব কেমন? * পড়া শেষ করার পর আপনি চান তাদের মনোভাব ও চিন্তা কী হোক? পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে জানতে হবে আপনি কাকে লক্ষ্য করে লিখছেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছেন সে সম্পর্কে আরও জানার জন্য বর্তমান কর্মচারী, ওয়েবসাইট, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং বইয়ের সাহায্য নিন। এটি শুধু জীবনবৃত্তান্ত লেখার জন্যই নয়, ভবিষ্যতের সাক্ষাৎকারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি। পাঠক নির্ধারণ করার পর জানতে হবে তারা কী ধরনের যোগ্যতা খুঁজছেন। এই যোগ্যতা সাধারণত কারিগরি দক্ষতা, সহায়ক দক্ষতা এবং পেশাগত গুণাবলি অন্তর্ভুক্ত করে। যাঁরা ইতিমধ্যে ঐ পদের অধিকারী, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। নিজের অর্জন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার তালিকা করুন এবং এরপর সেই তালিকা থেকে পদের সঙ্গে মিল আছে এমন বিষয়গুলো বেছে নিন। আপনার জীবনবৃত্তান্ত একটি প্ররোচনামূলক দলিল, যার মাধ্যমে নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে হবে আপনি পদটির জন্য উপযুক্ত। "আপনি"–কে যথাযথভাবে তুলে ধরুন! ''আরও দেখুন: [http://en.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing/Career/Resumes জীবনবৃত্তান্ত ও সিভি]'' == ''কভার লেটার লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == কভার লেটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট, কারণ এটি আপনাকে আপনার সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা এবং আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। নিয়োগকর্তা যদি আপনার কভার লেটার পড়েন, তাহলে বুঝতে হবে তারা আপনার জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহারযোগ্য ও প্রভাবশালী মনে করেছেন এবং আপনার সম্পর্কে আরও জানতে চান। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কভার লেটার লেখা উচিত এবং এটিকে জীবনবৃত্তান্তের তুলনায় আরও বেশি প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। এর ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন: * আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কেন আগ্রহী? ** আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কীভাবে অবদান রাখবেন? * আপনি কি আমার অন্যান্য কর্মীদের এবং গ্রাহকদের সঙ্গে ভালভাবে কাজ করতে পারবেন? এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তরের মাধ্যমে কভার লেটারকে প্ররোচনামূলক করে তুলুন যাতে নিয়োগকর্তা আপনাকে চাকরির জন্য বিবেচনা করেন। এতে আপনার উৎসাহ, সৃজনশীলতা, অঙ্গীকার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে যা জীবনবৃত্তান্তে প্রকাশ করা কঠিন। কভার লেটার একটি প্ররোচনামূলক চিঠি, যা পাঠকের মনোযোগ কেড়ে নেয়। এতে বলা উচিত আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান এবং কীভাবে প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারবেন। প্রশ্নটির উত্তর দিন: "আমি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কী করতে পারি?" আপনি অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় কীভাবে আলাদা তা দেখান এবং প্রমাণ করুন যে আপনি ইতিমধ্যেই কোম্পানি বা পদের সম্পর্কে জানেন — যা আপনার আগ্রহ এবং প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। একটি কভার লেটার আপনার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরে। এর ভাষা-শৈলী (টোন) গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা আপনার মনোভাব প্রকাশ করে। আপনি যদি জানেন কোম্পানি কী ধরনের কর্মী খুঁজছে, তাহলে সেই অনুযায়ী ভাষার ধরন ঠিক করতে পারবেন। কেউ খোঁজে উদ্যমী, পরিশ্রমী কর্মী; কেউ চায় আত্মবিশ্বাসী, ঠান্ডা মাথার, বা বিশ্লেষণধর্মী কর্মী — তাই পাঠক সম্পর্কে জানাটাই সবচেয়ে জরুরি। == ''অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়'' == * পেশাগত লেখালেখিতে সর্বদা সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা উচিত — অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও তথ্য এড়িয়ে চলুন * কভার লেটারে নির্দিষ্ট কাউকে সম্বোধন করুন * কভার লেটারের প্রথম অনুচ্ছেদে পদের প্রতি আগ্রহ, পদের পরিচিতি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জানা উল্লেখ করুন * কভার লেটারের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আপনার যোগ্যতা দিন * কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার তথ্য দিন, যদি না উচ্চ মাধ্যমিক অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয় * জীবনবৃত্তান্তে স্কুল, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শহর ও রাজ্যের নাম অন্তর্ভুক্ত করুন * প্রতিটি বুলেট পয়েন্ট একটি কর্মবাচ্য ক্রিয়াপদ দিয়ে শুরু করুন ==জীবনবৃত্তান্ত== [[Professional and Technical Writing/Career/Resumes|এই অংশে]] ব্যাখ্যা করা হয়েছে জীবনবৃত্তান্ত কী, বিভিন্ন ধরনের জীবনবৃত্তান্ত এবং কীভাবে একটি জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করবেন। ==কভার লেটার== [[Professional and Technical Writing/Career/Cover Letters|এই অংশে]] কভার লেটারের কার্যকারিতা এবং কীভাবে একটি কভার লেটার তৈরি করবেন তা আলোচনা করা হয়েছে। [http://en.wikibooks.org/wiki/Technical_and_professional_writing প্রধান পৃষ্ঠা] {{BookCat}} 9zf3fafusq1lrrk5j7x3hi7uhadjd89 85153 85152 2025-06-22T04:45:01Z Mehedi Abedin 7113 85153 wikitext text/x-wiki {{Navigate|Prev=প্রাথমিক ধারণা|Next=ব্যবসায়িক যোগাযোগ}} {{TOCright}} = ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট = == ''পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি'' == জীবনবৃত্তান্ত (রিজ়ুমে) এবং কভার লেটার হলো ব্যবসায়িক দুনিয়ায় সর্বাধিক প্রচলিত দুটি নথি, যা একজন প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট কর্ম-অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করে। এই নথিগুলোর যেকোনো একটি লেখার সময় পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি সর্বদা পাঠক এবং তারা কী খুঁজছেন তা মাথায় রাখে। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণকারী একজন লেখককে সর্বদা এই তিনটি উপাদান বিবেচনা করতে হয়: * পাঠকের বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য, প্রত্যাশা, প্রেক্ষাপট এবং অন্যান্য যেকোনো বিষয় যা তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নির্ধারণ করে * পাঠকের জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং প্রভাবশালী একটি বার্তা তৈরি করা * পাঠক নথিটি পড়ার প্রতিটি মুহূর্তে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেই বিষয়ে মনোযোগ রাখা পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং পাঠক কী চায় ও কেন চায় তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাই আপনাকে পদটি প্রদান করবে, তাই এই ক্যারিয়ার ডকুমেন্টগুলো তাদের পছন্দ অনুসারে তৈরি করা উচিত। নথির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারযোগ্যতা। পাঠক যেন সহজেই নথিটি পড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে এবং আপনাকে বোঝার সুযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই নথিগুলো অবশ্যই প্রভাবশালী হওয়া উচিত। জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটার দিয়ে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাকে বোঝাতে হবে যে আপনি ওই পদটির জন্য সেরা প্রার্থী। যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় ও প্রভাবশালী উপস্থাপনাই আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। == ''জীবনবৃত্তান্ত লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == জীবনবৃত্তান্ত লেখার সময় সর্বদা মনে রাখতে হবে নিয়োগকর্তা একজন সম্ভাব্য কর্মচারীর মধ্যে কী খুঁজছে, এবং এর সহজ উপায় হলো পাঠকের বিষয়ে চিন্তা করা। নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন: * তারা কী খুঁজবে? ** কীভাবে তারা সেই তথ্য খুঁজবে? * তথ্য পেলে তারা কীভাবে ব্যবহার করবে? ** বিষয়টি সম্পর্কে তাদের মনোভাব কেমন? * পড়া শেষ করার পর আপনি চান তাদের মনোভাব ও চিন্তা কী হোক? পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে জানতে হবে আপনি কাকে লক্ষ্য করে লিখছেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছেন সে সম্পর্কে আরও জানার জন্য বর্তমান কর্মচারী, ওয়েবসাইট, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং বইয়ের সাহায্য নিন। এটি শুধু জীবনবৃত্তান্ত লেখার জন্যই নয়, ভবিষ্যতের সাক্ষাৎকারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি। পাঠক নির্ধারণ করার পর জানতে হবে তারা কী ধরনের যোগ্যতা খুঁজছেন। এই যোগ্যতা সাধারণত কারিগরি দক্ষতা, সহায়ক দক্ষতা এবং পেশাগত গুণাবলি অন্তর্ভুক্ত করে। যাঁরা ইতিমধ্যে ঐ পদের অধিকারী, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। নিজের অর্জন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার তালিকা করুন এবং এরপর সেই তালিকা থেকে পদের সঙ্গে মিল আছে এমন বিষয়গুলো বেছে নিন। আপনার জীবনবৃত্তান্ত একটি প্ররোচনামূলক দলিল, যার মাধ্যমে নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে হবে আপনি পদটির জন্য উপযুক্ত। "আপনি"–কে যথাযথভাবে তুলে ধরুন! ''আরও দেখুন: [http://en.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing/Career/Resumes জীবনবৃত্তান্ত ও সিভি]'' == ''কভার লেটার লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == কভার লেটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট, কারণ এটি আপনাকে আপনার সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা এবং আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। নিয়োগকর্তা যদি আপনার কভার লেটার পড়েন, তাহলে বুঝতে হবে তারা আপনার জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহারযোগ্য ও প্রভাবশালী মনে করেছেন এবং আপনার সম্পর্কে আরও জানতে চান। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কভার লেটার লেখা উচিত এবং এটিকে জীবনবৃত্তান্তের তুলনায় আরও বেশি প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। এর ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন: * আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কেন আগ্রহী? ** আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কীভাবে অবদান রাখবেন? * আপনি কি আমার অন্যান্য কর্মীদের এবং গ্রাহকদের সঙ্গে ভালভাবে কাজ করতে পারবেন? এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তরের মাধ্যমে কভার লেটারকে প্ররোচনামূলক করে তুলুন যাতে নিয়োগকর্তা আপনাকে চাকরির জন্য বিবেচনা করেন। এতে আপনার উৎসাহ, সৃজনশীলতা, অঙ্গীকার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে যা জীবনবৃত্তান্তে প্রকাশ করা কঠিন। কভার লেটার একটি প্ররোচনামূলক চিঠি, যা পাঠকের মনোযোগ কেড়ে নেয়। এতে বলা উচিত আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান এবং কীভাবে প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারবেন। প্রশ্নটির উত্তর দিন: "আমি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কী করতে পারি?" আপনি অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় কীভাবে আলাদা তা দেখান এবং প্রমাণ করুন যে আপনি ইতিমধ্যেই কোম্পানি বা পদের সম্পর্কে জানেন — যা আপনার আগ্রহ এবং প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। একটি কভার লেটার আপনার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরে। এর ভাষা-শৈলী (টোন) গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা আপনার মনোভাব প্রকাশ করে। আপনি যদি জানেন কোম্পানি কী ধরনের কর্মী খুঁজছে, তাহলে সেই অনুযায়ী ভাষার ধরন ঠিক করতে পারবেন। কেউ খোঁজে উদ্যমী, পরিশ্রমী কর্মী; কেউ চায় আত্মবিশ্বাসী, ঠান্ডা মাথার, বা বিশ্লেষণধর্মী কর্মী — তাই পাঠক সম্পর্কে জানাটাই সবচেয়ে জরুরি। == ''অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়'' == * পেশাগত লেখালেখিতে সর্বদা সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা উচিত — অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও তথ্য এড়িয়ে চলুন * কভার লেটারে নির্দিষ্ট কাউকে সম্বোধন করুন * কভার লেটারের প্রথম অনুচ্ছেদে পদের প্রতি আগ্রহ, পদের পরিচিতি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জানা উল্লেখ করুন * কভার লেটারের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আপনার যোগ্যতা দিন * কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার তথ্য দিন, যদি না উচ্চ মাধ্যমিক অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয় * জীবনবৃত্তান্তে স্কুল, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শহর ও রাজ্যের নাম অন্তর্ভুক্ত করুন * প্রতিটি বুলেট পয়েন্ট একটি কর্মবাচ্য ক্রিয়াপদ দিয়ে শুরু করুন ==জীবনবৃত্তান্ত== [[Professional and Technical Writing/Career/Resumes|এই অংশে]] ব্যাখ্যা করা হয়েছে জীবনবৃত্তান্ত কী, বিভিন্ন ধরনের জীবনবৃত্তান্ত এবং কীভাবে একটি জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করবেন। ==কভার লেটার== [[Professional and Technical Writing/Career/Cover Letters|এই অংশে]] কভার লেটারের কার্যকারিতা এবং কীভাবে একটি কভার লেটার তৈরি করবেন তা আলোচনা করা হয়েছে। [http://en.wikibooks.org/wiki/Technical_and_professional_writing প্রধান পৃষ্ঠা] {{BookCat}} i8op7sqguczmanvyu2cnztkkcps78j5 85154 85153 2025-06-22T04:45:58Z Mehedi Abedin 7113 85154 wikitext text/x-wiki {{Navigate|Prev=প্রাথমিক ধারণা|Next=ব্যবসায়িক যোগাযোগ}} {{TOCright}} = ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট = == ''পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি'' == জীবনবৃত্তান্ত (রিজ়ুমে) এবং কভার লেটার হলো ব্যবসায়িক দুনিয়ায় সর্বাধিক প্রচলিত দুটি নথি, যা একজন প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট কর্ম-অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করে। এই নথিগুলোর যেকোনো একটি লেখার সময় পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি সর্বদা পাঠক এবং তারা কী খুঁজছেন তা মাথায় রাখে। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণকারী একজন লেখককে সর্বদা এই তিনটি উপাদান বিবেচনা করতে হয়: * পাঠকের বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য, প্রত্যাশা, প্রেক্ষাপট এবং অন্যান্য যেকোনো বিষয় যা তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নির্ধারণ করে * পাঠকের জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং প্রভাবশালী একটি বার্তা তৈরি করা * পাঠক নথিটি পড়ার প্রতিটি মুহূর্তে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেই বিষয়ে মনোযোগ রাখা পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং পাঠক কী চায় ও কেন চায় তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাই আপনাকে পদটি প্রদান করবে, তাই এই ক্যারিয়ার ডকুমেন্টগুলো তাদের পছন্দ অনুসারে তৈরি করা উচিত। নথির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারযোগ্যতা। পাঠক যেন সহজেই নথিটি পড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে এবং আপনাকে বোঝার সুযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই নথিগুলো অবশ্যই প্রভাবশালী হওয়া উচিত। জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটার দিয়ে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাকে বোঝাতে হবে যে আপনি ওই পদটির জন্য সেরা প্রার্থী। যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় ও প্রভাবশালী উপস্থাপনাই আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। == ''জীবনবৃত্তান্ত লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == জীবনবৃত্তান্ত লেখার সময় সর্বদা মনে রাখতে হবে নিয়োগকর্তা একজন সম্ভাব্য কর্মচারীর মধ্যে কী খুঁজছে, এবং এর সহজ উপায় হলো পাঠকের বিষয়ে চিন্তা করা। নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন: * তারা কী খুঁজবে? ** কীভাবে তারা সেই তথ্য খুঁজবে? * তথ্য পেলে তারা কীভাবে ব্যবহার করবে? ** বিষয়টি সম্পর্কে তাদের মনোভাব কেমন? * পড়া শেষ করার পর আপনি চান তাদের মনোভাব ও চিন্তা কী হবে? পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে জানতে হবে আপনি কাকে লক্ষ্য করে লিখছেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছেন সে সম্পর্কে আরও জানার জন্য বর্তমান কর্মচারী, ওয়েবসাইট, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং বইয়ের সাহায্য নিন। এটি শুধু জীবনবৃত্তান্ত লেখার জন্যই নয়, ভবিষ্যতের সাক্ষাৎকারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি। পাঠক নির্ধারণ করার পর জানতে হবে তারা কী ধরনের যোগ্যতা খুঁজছেন। এই যোগ্যতা সাধারণত কারিগরি দক্ষতা, সহায়ক দক্ষতা এবং পেশাগত গুণাবলি অন্তর্ভুক্ত করে। যাঁরা ইতিমধ্যে ঐ পদের অধিকারী, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। নিজের অর্জন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার তালিকা করুন এবং এরপর সেই তালিকা থেকে পদের সঙ্গে মিল আছে এমন বিষয়গুলো বেছে নিন। আপনার জীবনবৃত্তান্ত একটি প্ররোচনামূলক দলিল, যার মাধ্যমে নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে হবে আপনি পদটির জন্য উপযুক্ত। "নিজেকে" যথাযথভাবে তুলে ধরুন! ''আরও দেখুন: [http://en.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing/Career/Resumes জীবনবৃত্তান্ত ও সিভি]'' == ''কভার লেটার লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == কভার লেটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট, কারণ এটি আপনাকে আপনার সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা এবং আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। নিয়োগকর্তা যদি আপনার কভার লেটার পড়েন, তাহলে বুঝতে হবে তারা আপনার জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহারযোগ্য ও প্রভাবশালী মনে করেছেন এবং আপনার সম্পর্কে আরও জানতে চান। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কভার লেটার লেখা উচিত এবং এটিকে জীবনবৃত্তান্তের তুলনায় আরও বেশি প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। এর ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন: * আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কেন আগ্রহী? ** আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কীভাবে অবদান রাখবেন? * আপনি কি আমার অন্যান্য কর্মীদের এবং গ্রাহকদের সঙ্গে ভালভাবে কাজ করতে পারবেন? এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তরের মাধ্যমে কভার লেটারকে প্ররোচনামূলক করে তুলুন যাতে নিয়োগকর্তা আপনাকে চাকরির জন্য বিবেচনা করেন। এতে আপনার উৎসাহ, সৃজনশীলতা, অঙ্গীকার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে যা জীবনবৃত্তান্তে প্রকাশ করা কঠিন। কভার লেটার একটি প্ররোচনামূলক চিঠি, যা পাঠকের মনোযোগ কেড়ে নেয়। এতে বলা উচিত আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান এবং কীভাবে প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারবেন। প্রশ্নটির উত্তর দিন: "আমি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কী করতে পারি?" আপনি অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় কীভাবে আলাদা তা দেখান এবং প্রমাণ করুন যে আপনি ইতিমধ্যেই কোম্পানি বা পদের সম্পর্কে জানেন — যা আপনার আগ্রহ এবং প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। একটি কভার লেটার আপনার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরে। এর ভাষা-শৈলী (টোন) গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা আপনার মনোভাব প্রকাশ করে। আপনি যদি জানেন কোম্পানি কী ধরনের কর্মী খুঁজছে, তাহলে সেই অনুযায়ী ভাষার ধরন ঠিক করতে পারবেন। কেউ খোঁজে উদ্যমী, পরিশ্রমী কর্মী; কেউ চায় আত্মবিশ্বাসী, ঠান্ডা মাথার, বা বিশ্লেষণধর্মী কর্মী — তাই পাঠক সম্পর্কে জানাটাই সবচেয়ে জরুরি। == ''অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়'' == * পেশাগত লেখালেখিতে সর্বদা সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা উচিত — অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও তথ্য এড়িয়ে চলুন * কভার লেটারে নির্দিষ্ট কাউকে সম্বোধন করুন * কভার লেটারের প্রথম অনুচ্ছেদে পদের প্রতি আগ্রহ, পদের পরিচিতি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জানা উল্লেখ করুন * কভার লেটারের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আপনার যোগ্যতা দিন * কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার তথ্য দিন, যদি না উচ্চ মাধ্যমিক অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয় * জীবনবৃত্তান্তে স্কুল, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শহর ও রাজ্যের নাম অন্তর্ভুক্ত করুন * প্রতিটি বুলেট পয়েন্ট একটি কর্মবাচ্য ক্রিয়াপদ দিয়ে শুরু করুন ==জীবনবৃত্তান্ত== [[Professional and Technical Writing/Career/Resumes|এই অংশে]] ব্যাখ্যা করা হয়েছে জীবনবৃত্তান্ত কী, বিভিন্ন ধরনের জীবনবৃত্তান্ত এবং কীভাবে একটি জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করবেন। ==কভার লেটার== [[Professional and Technical Writing/Career/Cover Letters|এই অংশে]] কভার লেটারের কার্যকারিতা এবং কীভাবে একটি কভার লেটার তৈরি করবেন তা আলোচনা করা হয়েছে। [http://en.wikibooks.org/wiki/Technical_and_professional_writing প্রধান পৃষ্ঠা] {{BookCat}} 7sbg5nrnjc152fmi13yxx1qx6c7vo4j 85155 85154 2025-06-22T04:47:09Z Mehedi Abedin 7113 85155 wikitext text/x-wiki {{Navigate|Prev=প্রাথমিক ধারণা|Next=ব্যবসায়িক যোগাযোগ}} {{TOCright}} = ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট = == ''পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি'' == জীবনবৃত্তান্ত (রিজ়ুমে) এবং কভার লেটার হলো ব্যবসায়িক দুনিয়ায় সর্বাধিক প্রচলিত দুটি নথি, যা একজন প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট কর্ম-অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করে। এই নথিগুলোর যেকোনো একটি লেখার সময় পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি সর্বদা পাঠক এবং তারা কী খুঁজছেন তা মাথায় রাখে। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণকারী একজন লেখককে সর্বদা এই তিনটি উপাদান বিবেচনা করতে হয়: * পাঠকের বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য, প্রত্যাশা, প্রেক্ষাপট এবং অন্যান্য যেকোনো বিষয় যা তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নির্ধারণ করে * পাঠকের জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং প্রভাবশালী একটি বার্তা তৈরি করা * পাঠক নথিটি পড়ার প্রতিটি মুহূর্তে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেই বিষয়ে মনোযোগ রাখা পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং পাঠক কী চায় ও কেন চায় তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাই আপনাকে পদটি প্রদান করবে, তাই এই ক্যারিয়ার ডকুমেন্টগুলো তাদের পছন্দ অনুসারে তৈরি করা উচিত। নথির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারযোগ্যতা। পাঠক যেন সহজেই নথিটি পড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে এবং আপনাকে বোঝার সুযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই নথিগুলো অবশ্যই প্রভাবশালী হওয়া উচিত। জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটার দিয়ে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাকে বোঝাতে হবে যে আপনি ওই পদটির জন্য সেরা প্রার্থী। যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় ও প্রভাবশালী উপস্থাপনাই আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। == ''জীবনবৃত্তান্ত লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == জীবনবৃত্তান্ত লেখার সময় সর্বদা মনে রাখতে হবে নিয়োগকর্তা একজন সম্ভাব্য কর্মচারীর মধ্যে কী খুঁজছে, এবং এর সহজ উপায় হলো পাঠকের বিষয়ে চিন্তা করা। নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন: * তারা কী খুঁজবে? ** কীভাবে তারা সেই তথ্য খুঁজবে? * তথ্য পেলে তারা কীভাবে ব্যবহার করবে? ** বিষয়টি সম্পর্কে তাদের মনোভাব কেমন? * পড়া শেষ করার পর আপনি চান তাদের মনোভাব ও চিন্তা কী হবে? পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে জানতে হবে আপনি কাকে লক্ষ্য করে লিখছেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছেন সে সম্পর্কে আরও জানার জন্য বর্তমান কর্মচারী, ওয়েবসাইট, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং বইয়ের সাহায্য নিন। এটি শুধু জীবনবৃত্তান্ত লেখার জন্যই নয়, ভবিষ্যতের সাক্ষাৎকারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি। পাঠক নির্ধারণ করার পর জানতে হবে তারা কী ধরনের যোগ্যতা খুঁজছেন। এই যোগ্যতা সাধারণত কারিগরি দক্ষতা, সহায়ক দক্ষতা এবং পেশাগত গুণাবলি অন্তর্ভুক্ত করে। যাঁরা ইতিমধ্যে ঐ পদের অধিকারী, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। নিজের অর্জন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার তালিকা করুন এবং এরপর সেই তালিকা থেকে পদের সঙ্গে মিল আছে এমন বিষয়গুলো বেছে নিন। আপনার জীবনবৃত্তান্ত একটি প্ররোচনামূলক দলিল, যার মাধ্যমে নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে হবে আপনি পদটির জন্য উপযুক্ত। "নিজেকে" যথাযথভাবে তুলে ধরুন! ''আরও দেখুন: [http://en.wikibooks.org/wiki/Professional_and_Technical_Writing/Career/Resumes জীবনবৃত্তান্ত ও সিভি]'' == ''কভার লেটার লেখার পাঠক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি'' == কভার লেটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার ডকুমেন্ট, কারণ এটি আপনাকে আপনার সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা এবং আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। নিয়োগকর্তা যদি আপনার কভার লেটার পড়েন, তাহলে বুঝতে হবে তারা আপনার জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহারযোগ্য ও প্রভাবশালী মনে করেছেন এবং আপনার সম্পর্কে আরও জানতে চান। পাঠক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কভার লেটার লেখা উচিত এবং এটিকে জীবনবৃত্তান্তের তুলনায় আরও বেশি প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। এর ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন: * আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কেন আগ্রহী? ** আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কীভাবে অবদান রাখবেন? * আপনি কি আমার অন্যান্য কর্মীদের এবং গ্রাহকদের সঙ্গে ভালভাবে কাজ করতে পারবেন? এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তরের মাধ্যমে কভার লেটারকে প্ররোচনামূলক করে তুলুন যাতে নিয়োগকর্তা আপনাকে চাকরির জন্য বিবেচনা করেন। এতে আপনার উৎসাহ, সৃজনশীলতা, অঙ্গীকার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে যা জীবনবৃত্তান্তে প্রকাশ করা কঠিন। কভার লেটার একটি প্ররোচনামূলক চিঠি, যা পাঠকের মনোযোগ কেড়ে নেয়। এতে বলা উচিত আপনি কেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান এবং কীভাবে প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারবেন। এই প্রশ্নের উত্তর দিন: "আমি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কী করতে পারি?" আপনি অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় কীভাবে আলাদা তা দেখান এবং প্রমাণ করুন যে আপনি ইতিমধ্যেই কোম্পানি বা পদের সম্পর্কে জানেন — যা আপনার আগ্রহ এবং প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। একটি কভার লেটার আপনার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরে। এর ভাষা-শৈলী (টোন) গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা আপনার মনোভাব প্রকাশ করে। আপনি যদি জানেন কোম্পানি কী ধরনের কর্মী খুঁজছে, তাহলে সেই অনুযায়ী ভাষার ধরন ঠিক করতে পারবেন। কেউ খোঁজে উদ্যমী, পরিশ্রমী কর্মী; কেউ চায় আত্মবিশ্বাসী, ঠান্ডা মাথার বা বিশ্লেষণধর্মী কর্মী — তাই পাঠক সম্পর্কে জানাটাই সবচেয়ে জরুরি। == ''অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়'' == * পেশাগত লেখালেখিতে সর্বদা সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা উচিত — অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও তথ্য এড়িয়ে চলুন * কভার লেটারে নির্দিষ্ট কাউকে সম্বোধন করুন * কভার লেটারের প্রথম অনুচ্ছেদে পদের প্রতি আগ্রহ, পদের পরিচিতি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জানা উল্লেখ করুন * কভার লেটারের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আপনার যোগ্যতা দিন * কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার তথ্য দিন, যদি না উচ্চ মাধ্যমিক অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয় * জীবনবৃত্তান্তে স্কুল, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শহর ও রাজ্যের নাম অন্তর্ভুক্ত করুন * প্রতিটি বুলেট পয়েন্ট একটি কর্মবাচ্য ক্রিয়াপদ দিয়ে শুরু করুন ==জীবনবৃত্তান্ত== [[Professional and Technical Writing/Career/Resumes|এই অংশে]] ব্যাখ্যা করা হয়েছে জীবনবৃত্তান্ত কী, বিভিন্ন ধরনের জীবনবৃত্তান্ত এবং কীভাবে একটি জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করবেন। ==কভার লেটার== [[Professional and Technical Writing/Career/Cover Letters|এই অংশে]] কভার লেটারের কার্যকারিতা এবং কীভাবে একটি কভার লেটার তৈরি করবেন তা আলোচনা করা হয়েছে। [http://en.wikibooks.org/wiki/Technical_and_professional_writing প্রধান পৃষ্ঠা] {{BookCat}} mz3o0cb4mgym7qiafjmkgb2pmne7mz5 জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আসুকা যুগ 0 26657 85137 85076 2025-06-22T04:07:25Z Mehedi Abedin 7113 85137 wikitext text/x-wiki [[File:Horyu-ji06s3200.jpg|thumb|right|হোরিউ-জির প্যাগোডা]] '''''আসুকা 飛鳥''''' হলো নারা সমভূমির দক্ষিণ প্রান্তের একটি এলাকা, যেখানে জাপানে আদিম গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বেশি উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময়ে সেখানে এখনকার মতো কোনও শহর ছিল না। তবে রাজপ্রাসাদ এবং কিছু বৌদ্ধ মন্দির গড়ে উঠতে থাকে। কেইতাই সম্রাট আসুকার আশেপাশে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী ১৫ জন উত্তরসূরীর মধ্যে ৯ জনেরই প্রাসাদ ছিল এই এলাকায়। নারা শহর তৈরির আগের সময়কালটিকে সাধারণভাবে "আসুকা যুগ" বলা হয়। যদিও নারা ছিল এই সমভূমির প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে। আসুকা যুগ ছিল একটি পরিবর্তনকালীন সময়। সেসময় শাসন চলত সম্রাটের প্রাসাদ থেকে। প্রায় প্রতিটি সম্রাট তার নিজস্ব নতুন প্রাসাদ তৈরি করতেন। দীর্ঘ শাসনকালে প্রাসাদ একাধিকবার স্থানান্তরিত হত। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের আকার ছিল ছোট ও সরল—এমনকি দলিল-দস্তাবেজের সংরক্ষণাগারসহ তা সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল। ৬৪০ সালের দিকে প্রশাসন কিছুটা ভারী হতে শুরু করলে আগের মতো সহজে স্থানান্তরযোগ্য ছিল না। পুরোপুরি স্থায়ী রাজধানী এবং প্রাসাদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসুকা যুগের একেবারে শেষ দিকে। তবে পরবর্তী ১০০ বছরে রাজধানী আরও তিনবার সরানো হয়। আরও কয়েকটি স্থানান্তরের প্রস্তাবও উঠেছিল। ==আসুকা যুগ== আসুকা যুগকে প্রধানত দুইটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বে সোগা বংশের চারজন পরপর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজদরবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন: সোগা নো ইনামে 蘇我の稲目, সোগা নো উমাকো 蘇我の馬子, সোগা নো এমিশি 蘇我の蝦夷 এবং সোগা নো ইরুকা 蘇我の入鹿। এই পর্বটি ৫৭২ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সোগা বংশের সহিংস পতনের পর। এই সময় রাজনীতির প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন তেন্‌চি 天智 (বা তেন্‌জি) তেন্নো, তাঁর ভাই তেম্মু 天武 তেন্নো এবং তেম্মুর বিধবা স্ত্রী জিতো 持統 তেন্নো; এই পর্বটি ৬৪৫ থেকে ৬৯২ সাল পর্যন্ত চলে। জিতো যখন তার ছেলে মোম্মু (文武) সম্রাটকে সিংহাসন হস্তান্তর করেন, তখন ''নিহোন শোকি'' নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থটির বিবরণ শেষ হয়। ''কোজিকি'' গ্রন্থটি ৬২৮ সালে সম্রাজ্ঞী সুইকোর (搉古) মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রথম ধাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন রাজপুত্র উমায়াদো (廐戸)। তিনি "শোতোকু তাইশি" (聖徳太子) নামেও পরিচিত ছিলেন। তাকে "পবিত্র রাজপুত্র" বা "জ্ঞানী রাজপুত্র" বলা হত। তিনি সম্ভবত আসুকা যুগের একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নাম আজও প্রতিটি জাপানির কাছে পরিচিত। ''নিহোন শোকি'' গ্রন্থের লেখকরা তাঁকে আধুনিক জাপানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজও তিনি জাপানি সংস্কৃতিতে সম্মানিত অবস্থানে আছেন, ঠিক যেমনভাবে আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটন বা ইংল্যান্ডে মহামতি আলফ্রেড সম্মান পান। শোতোকু তাইশির ছবিও জাপানি মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। আসুকা যুগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই সময়ে জাপানে প্রচলিত আদি ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আদি ধর্মটি "শিন্তো" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এটি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কিছু জাপানি একচেটিয়াভাবে একটা ধর্মকে সমর্থন করলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উভয় ধর্মকে শ্রদ্ধা করত এবং জীবনের অংশ হিসেবে দুটিকেই অন্তর্ভুক্ত করার উপায় বের করত। সহজভাবে বলা যায়, শিন্‌তো বিয়ের ধর্ম হয়ে ওঠে, আর বৌদ্ধ ধর্ম শেষকৃত্যের ধর্ম। ===জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম=== জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনা ঘটে ৫৩৮ সালে। এটি আসুকা যুগের শুরুর তারিখের আগের ঘটনা। ওই বছর পেকচে'র রাজা সং তাঁর রাজধানী পাহাড়ের নিরাপদ কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চল থেকে একটি প্রধান কৃষিভিত্তিক এলাকায় স্থানান্তর করেন। একইসঙ্গে তিনি পেকচের নাম পরিবর্তন করে "দক্ষিণ পুইয়ো" রাখেন, যদিও জাপানি ও চীনারা (এবং আধুনিক ইতিহাসবিদগণ) এটি উপেক্ষা করেন। তাঁর নতুন রাজধানীর স্থানটি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার পুইয়ো শহর (যেটিকে সাম্প্রতিক রোমানীকরণ সংস্কারে দক্ষিণ কোরিয়াররা বিভ্রান্তিকরভাবে “বুইয়ো” লিখলেও উচ্চারণ “পুইয়ো”)। এই নতুন রাজধানীতে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল একটি কাঠামোবদ্ধ শাসনব্যবস্থা গঠন যা আংশিকভাবে চীনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও তিনি সমসাময়িক কোগুরিও ও সিল্লাতে চলমান সংস্কার দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাপানের রাজদরবারে দূত পাঠিয়ে বৌদ্ধ প্রতিমা ও ধর্মগ্রন্থ উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন যে এই ধর্ম জাদুকরীভাবে জাতিকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। তবে ওই সময় পেকচে রাজ্যের রাজধানীর বাইরে বৌদ্ধ ধর্মের তেমন কোনো প্রভাব পড়েছিল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ঘটনার প্রায় ২০০ বছর পরে, এক বিখ্যাত রাস্তাঘাটের উপদেশদাতা ভিক্ষুর কার্যক্রমের মাধ্যমে। যেহেতু জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হয়েছিল। তাই ৫৩৮ সালের ঘটনা এবং তার পরিণতি অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ''নিহন শোকি''র পাশাপাশি প্রাচীন বৌদ্ধ উৎস থেকে অতিরিক্ত তথ্যও পাওয়া যায়। সংক্ষেপে, সোগা নো ইনামে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পক্ষে মত দেন এবং মনোনোবে 物部 বংশ এটি গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। কারণ এটি স্থানীয় দেবতাদের অবমাননা হিসেবে দেখা হয়। কিম্মেই তেন্নো ইনামেকে তাঁর বাড়িতে একটি ছোট বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি দেন এবং গোপনে উপাসনার সুযোগ দেন। ইনামের এক কন্যা ভিক্ষুণী হন। তবে, ৫৭১ সালে কিম্মেইর মৃত্যু হলে মনোনোবে নতুন শাসক বিদাৎসুর কাছ থেকে এই উপাসনালয় ধ্বংস ও ভিক্ষুণীদের গ্রেপ্তারের অনুমতি নেন। ''নিহন শোকি''তে এই ঘটনার বিবরণ অবিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেখানে বিদাৎসু তেন্নো ও তাঁর উত্তরসূরি ইয়োমেই তেন্নোর মৃত্যুশয্যায় বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। এটি ৮ম শতকের বৌদ্ধপন্থী মানদণ্ড অনুযায়ী তাঁদের আরও শ্রদ্ধাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা বলে মনে করা হয়। ৫৮৭ সালে সোগা ও মনোনোবে বংশের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়। এটি ইয়োমেইর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের ফলে ঘটে। এই যুদ্ধে সোগা বিজয়ী হয় এবং তখনই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা প্রকৃত অর্থে শুরু হয়। এটি ছিল সোগা বংশের প্রাধান্যের শুরু। প্রথমে এটা বোঝা কঠিন কেন জাপান বা কোরিয়ার যেকোনো রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে আত্মস্থ না করেও বৌদ্ধ ধর্মকে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্মের চেয়ে প্রাধান্য দেবে। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, জাপানে কোরীয় অভিবাসীদের মধ্যে কিছু বৌদ্ধ ছিল। তবে জাপানে এবং কোরিয়ার অন্যান্য রাজ্যেও বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীত হওয়া ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত, জনতার ইচ্ছা নয়। জাপানি সম্রাটকে বৌদ্ধ ধর্ম উপস্থাপন করার সময় পেকচের রাজা সং বলেন, এই ধর্ম একটি জাদুকরী শক্তি যা জাতিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। প্রাথমিক সময়ে জাপান ও কোরিয়াতে বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার মুক্তি বা আত্মদর্শনের মতো ব্যক্তিগত বার্তার চেয়ে এর মূর্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের জাদুকরী শক্তির ওপরেই জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে অসুস্থতার সময় মানুষ বৌদ্ধ প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করত। শুরুতেই বৌদ্ধ ধর্মের স্বাগত জানানোর বড় কারণ ছিল কোরিয়া ও বিশেষ করে চীন থেকে আগত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তাঁরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং বাস্তব দক্ষতায় পারদর্শী, বিশেষত স্থাপত্যবিদ্যায়। আসুকা যুগ থেকে শুরু করে নারা যুগ পর্যন্ত জাপানে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প পরিচালিত হয় এসব অভিবাসী সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে। তাঁরা শুধু মন্দির নয়, সেতু ও দুর্গও নির্মাণ করতেন। সাধারণত চীন থেকে যারা জাপানে আসতেন, তাঁদের মধ্যে এরাই ছিলেন প্রধান। চীনা চিন্তাধারা ও প্রযুক্তি জাপানে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও ছিলেন তাঁরা। === সোগা বংশ === সোগা বংশের দাবিকৃত পূর্বপুরুষ ছিলেন জিংগু কোউগোর কোরিয়া বিজয়ে অংশগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি। এর ফলে তিনি ওজিন রাজবংশের সূচনালগ্নেই যুক্ত ছিলেন। সোগা নামক কোনো ব্যক্তির প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় নবম শতকের একটি গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে যে ওজিন রাজবংশের তৃতীয় শাসক রিচু তেন্নোর সময় কোরীয় অভিবাসীদের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা সংগঠিত করার প্রয়োজন পড়ে। এই উদ্দেশ্যে একটি দ্বিতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা হয় এবং তা তদারকির জন্য একটি নতুন পদ তৈরি করা হয়। ইউর্যাকু তেন্নোর শাসনকালে একটি তৃতীয় ভাণ্ডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে এবং সোগা নো মাচি নো সুকুনেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষয়গুলো সংগঠিত করার। তিনি একটি তালিকা প্রস্তুত করেন এবং (কোরীয়) হাতা বংশকে একটি সহায়ক ভাণ্ডার পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং (কোরীয়) আয়া বংশকে অন্যটির। ৬৪৫ সালে সোগা বংশ পরাজিত হলে আয়া বংশের সৈন্যরা তাদের পাশে দাঁড়ায়। সোগা বংশ কখনো সামরিক ঘটনায় জড়িত ছিল না, বরং সবসময়ই আর্থিক কার্যক্রম এবং কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৫৫৩ সালে সোগা নো ইনামে শাসকের আদেশে জাহাজ কর নিরীক্ষণের জন্য একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছর পর ইনামে সমুদ্রবন্দর নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেকটি দপ্তর স্থাপন করেন। এতে বোঝা যায়, সোগা বংশ যোদ্ধার চেয়ে প্রশাসক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। কেইতাই তেন্নোর মৃত্যুর পর যে সময়ে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজদরবার ছিল বলে মনে করা হয়, সেই সময়ে সোগা বংশ অত্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। সোগা বংশ কিম্মেই তেন্নোর রাজদরবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ওটোমো বংশ আনকান ও সেনকা নামক বিকল্প শাসকদের সমর্থন করত। সেনকার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় রাজদরবার বিলুপ্ত হলে ওটোমো বংশ রাজনৈতিক প্রভাব হারায় এবং সোগা বংশ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিফলিত হয় 'সোগা নো ও-ওমি' নামে সোগা প্রধানের উল্লেখে, যেখানে আগে 'ও-ওমি' (大臣) উপাধিটি কেবলমাত্র ওটোমো বংশের জন্যই ব্যবহৃত হতো। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইয়ামাতো রাষ্ট্র সামরিকমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে এক নতুন ধারা গ্রহণ করে। এটি ওজিন রাজবংশের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কেইতাইয়ের শাসনামলে পর্যন্ত বজায় ছিল। উল্লেখ্য, 'ও-ওমি' উপাধিটি বুঝতে হবে 'ও' (大) অর্থাৎ 'বড়' বা 'মহান' এবং 'ওমি' (臣)। এটি চীনা অক্ষরে লেখা ও ‘রাষ্ট্রের মন্ত্রী’ অর্থে ব্যবহৃত হতো। একই দুটি চীনা অক্ষর চীনা উচ্চারণে 'দাইজিন' হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আপনি হয়তো এই রূপেও একে অন্যান্য গ্রন্থে দেখতে পারেন। আসুকা ও নারা যুগে এই শব্দগুলো সাধারণত জাপানি উচ্চারণেই উচ্চারিত হতো। তবে হেইয়ান যুগে এবং পরবর্তীকালে সেগুলো চীনা উচ্চারণে ব্যবহৃত হতে থাকে। নবম শতকে হেইয়ান যুগের শুরুতে প্রায় সব অভিজাত ব্যক্তি চীনা পড়তে ও লিখতে পারতেন, অধিকাংশ সরকারি দলিল চীনা ভাষায় লেখা হতো। সরকারের কারিগরি পরিভাষায় চীনা উচ্চারণ ব্যবহারের রীতি শুরু হয় যা এমনকি জাপানি ভাষার বিস্তৃত প্রচলনের পরও চালু থাকে এবং আজও বহাল রয়েছে। আধুনিক জাপানি গদ্যের একটি বড় অংশই চীনা ঋণশব্দে গঠিত। ৫৪৮ থেকে ৫৫৪ সালের মধ্যে কোরিয়ায় সিল্লা সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তারা কোগুর্যো ও পেকচেকে পরাজিত করে। ৫৫৪ সালে পেকচের রাজা সং যুদ্ধে নিহত হন এবং কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল পেকচে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে তা আগের চেয়ে ছোট এবং দুর্বল অবস্থায় টিকে থাকে। এই সময়ে জাপান কোরিয়ায় ছোট আকারের বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তা সিল্লার মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সিল্লা ৫৬২ সালে মিমানা অঞ্চল পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে। জাপান এরপর একটি বড় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা পরাজিত হয় এবং তাদের নেতারা বন্দি হয়। এরপর থেকে ওটোমো বংশের উল্লেখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজদরবারে প্রধান দুই ব্যক্তি হিসেবে সোগা নো ইনামে এবং মোনোনোবি নো ওকোশির নাম উঠে আসে। এরপর ২০০ বছর ধরে জাপানি রাজদরবার সিল্লাকে আক্রমণ করে মিমানার উপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চিন্তা করে, মাঝে মাঝে বাহিনী ও রসদ সংগ্রহের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো থেকে বিশেষ কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সোগা বংশ সম্ভবত কাজুরাকি বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তারা ওজিন রাজবংশের শুরুতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। ওজিন রাজবংশের কয়েকজন শাসকের মা ছিলেন কাজুরাকি বংশীয়। সোগা বংশ কেইতাই রাজবংশের সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক স্থাপন করে। সোগা নো ইনামে তার দুই কন্যাকে কিম্মেই তেন্নোর সঙ্গে বিয়ে দেন—কিতাশিহিমে ছিলেন ইয়োমেই ও সুইকো তেন্নোর মা (সুইকো ছিলেন বিদাতসু তেন্নোর বিধবা)। ওয়ানেকিমি ছিলেন সুশুন তেন্নোর মা। উমায়াদো রাজকুমারের দাদী ছিলেন কিতাশিহিমে পিতৃপক্ষ থেকে ও ওয়ানেকিমি মাতৃপক্ষ থেকে। লক্ষ্যণীয়, মোনোনোবি বংশের সামাজিক অবস্থান এ ধরনের সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কাজুরাকি ও সোগা বংশ রাজপরিবারের শাখা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু মোনোনোবি বংশ নয়। মোনোনোবি বংশ উত্তরাধিকারসূত্রে 'ও-মুরাজি' (大連) উপাধি ধারণ করত। এটি ওটোমো এবং পরে সোগা বংশের 'ও-ওমি' উপাধির সমপর্যায়ে ছিল। এই দুই উপাধিধারী ব্যক্তি সরকারের (যথাসম্ভব) সর্বোচ্চ "মন্ত্রী" হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও 'ওমি' বা 'মুরাজি' উপাধিধারী পরিবারগুলো ছিল। অধিকাংশ 'ওমি' উপাধিধারী পরিবারগুলোর নাম ছিল স্থাননামভিত্তিক। তারা কিনাই অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কাজুরাকি, হেগুরি, ওয়ানি, কোসে, কি এবং পরে সোগা—এইগুলো তার উদাহরণ। এদের বেশিরভাগই রাজপরিবারের কোনো সদস্যের বংশধর বলে দাবি করত। যদি 'হোর্স রাইডার' তত্ত্ব সত্যি হয়। তবে এরা ছিল ওজিনের সম্প্রসারিত পরিবারের সদস্য এবং আগ্রাসী বাহিনীর অংশ। অপরদিকে, 'মুরাজি' পরিবারগুলোর নাম ছিল পেশাভিত্তিক। যেমন ইমবে (আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী), ইউকে (ধনুক প্রস্তুতকারী), কাগামিৎসুকুরি (আয়না নির্মাতা), হাজি (মৃৎপাত্র প্রস্তুতকারী), ত্সুমোরি (নিরাপত্তা রক্ষক), ইনুকাই (কুকুর পালক)। অবশ্যই মোনোনোবি (লোহার কাজ)। কৌতূহলজনকভাবে, 'ও-ওমি' ওটোমো বংশের নামও একটি পেশাভিত্তিক নাম ছিল। তবে তাদের পেশা ছিল বিশেষ—'তোমো' অর্থাৎ 'সৈনিক', যার পূর্বে 'ও' যুক্ত হওয়ায় বোঝানো হয় যে তারা সাধারণ সৈনিক নয়, বরং কমান্ডার। এই সব বংশই অভিজাত ছিল। তবে ধারণা করা হয় 'মুরাজি' পরিবারগুলো ওই পেশার কারিগরদের নেতৃত্ব দিত, নিজেরা সরাসরি সেই কাজ করত না। তবে তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল 'ওমি' বংশের চেয়ে কম। তাদের রাজপরিবারে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল। মোনোনোবি বংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত 'নিগিহায়াহি নো মিকোতো' ছিলেন এক দেবতার বংশধর। তিনি জিন্মু তেন্নো কর্তৃক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই পৃথিবীতে আগমন করেন। শুরুতে তিনি জিন্মুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে দেবতারা জিন্মুর পক্ষে আছেন। তখন পক্ষ পরিবর্তন করেন। মোনোনোবি নামটি 'নিহন শোক'র সুইনিন তেন্নো এবং চুয়াই তেন্নোর অধ্যায়ে দেখা যায়, যেগুলো ওজিন রাজবংশের আগের। যদি এর কোনো সত্যতা থাকে। তবে মোনোনোবিরা ওজিনের নেতৃত্বে আগমনকারী আগ্রাসীদের আগেই জাপানে অভিজাত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইনগ্যো তেন্নোর মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র রাজকুমার কারু এবং রাজকুমার আনাহোর (যিনি পরে আনকো তেন্নো হন) মধ্যে উত্তরাধিকারের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মোনোনোবি নো ওমায়ে নো সুকুনে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুরুতে রাজকুমার কারুর সমর্থক ছিলেন। 'কোজিকি'র মতে, তিনি কারুকে আনাহোর কাছে তুলে দেন যিনি তাকে হত্যা করেন, আর 'নিহন শোকি'র মতে, তিনি রাজকুমার কারুকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন। যেভাবেই হোক, তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই বংশের সদস্যদের নিয়ে অধিকাংশ কাহিনি সামরিক বা অপরাধী দমন সংক্রান্ত। ব্যতিক্রম কিছু থাকলেও, ওটোমো বংশ প্রধানত কোরিয়ায় যুদ্ধ করত, আর মোনোনোবি বংশ প্রধানত জাপানের অভ্যন্তরেই সক্রিয় ছিল। কোরিয়ায় তাদের একমাত্র যুদ্ধ ছিল মিমানায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, সিল্লার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ নয়। আরেকটি পার্থক্য ছিল, মোনোনোবি বংশ ধর্মের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। যেসব বংশ নিজেদের দেবতাদের বংশধর হিসেবে দাবি করত, তাদের নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ছিল। এটি পরবর্তীতে (বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর) ঐ দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতো। সুজিন রাজবংশের প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র মি (臣) পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ইসোনোকামি মন্দির ছিল মোনোনোবি বংশের বিশেষ উপাসনাস্থল। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করা যায়, সোগা নেতারা—অথবা অন্তত সোগা নো উমাকো—জাপানকে আরও সভ্য করে তোলার (অর্থাৎ চীনের মতো করে তোলার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি পেকচে ও কোগুর্যোতে চলমান পরিবর্তনের প্রতিফলন ছিল। এবং ঐ সময়ে 'চীনের মতো' হওয়া মানেই ছিল 'বৌদ্ধ' হওয়া। দুই বংশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বও এই সংঘাতের পিছনে ছিল। এটি প্রাচীন সময়ে বিরল একটি ঘটনা। জাপানে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে প্রচেষ্টা এই সময়কার ইতিহাসের মূল বিষয়, তার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিমমেইর শাসনামলে চীনের উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলো উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বন্টনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করছিল। এই পরিবর্তনগুলো কোগুরিয়োর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে কোগুরিও এসব তথ্য জাপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কারণ কিমমেইর শাসনের শেষদিকে কোগুরিও এবং জাপানের মধ্যে সিলা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের উত্তর দিয়ে জাপান সাগর অতিক্রম করে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই চীনা রাজবংশগুলো ছিল বর্বর উত্সের এবং প্রবলভাবে অভিজাত শ্রেণিনির্ভর। এটি জাপান এবং কোরিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মতোই। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা ছিল কৃষিজ আয় থেকে কর আদায় সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা, যেখানে প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে পর্যাপ্ত জমি বরাদ্দ দেওয়া হতো যাতে তারা নির্দিষ্ট হারে কর দিতে পারে—ফলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী কর নির্ধারণের জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এড়ানো যেত। এজন্য জনসংখ্যার নিয়মিত জনগণনা করতে হতো এবং যেসব পরিবার ছোট হয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে যেসব পরিবার বড় হয়েছে তাদের দেওয়া হতো। এ ব্যবস্থা তখনকার উত্তর চীনে সম্ভব ছিল, কারণ চীন রাজবংশ পতনের পর বর্বর আক্রমণের ফলে সেখানে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না, যদিও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল যথেষ্ট। কর আদায় হতো কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যার ভিত্তিতে। কোগুরিও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পরে জাপানও অনুসরণ করে। ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা কোগুরিও এবং জাপানে তখনকার প্রচলিত পদ্ধতির খুব ভিন্ন ছিল না, কারণ সেখানে বিদ্যমান কৃষক জনগোষ্ঠী দখল করে অভিজাত শ্রেণি গঠিত হয়েছিল। তবে এটি নিছক অনুমান, কারণ কৃষক ও অভিজাতদের সম্পর্ক সম্পর্কে আমাদের এই সময়ের কিছুই জানা নেই। শুধু “বে” নামক পদ্ধতিতে শিল্পীদের সংগঠিত করার ধরন করভিত্তিক উৎপাদন কোটার ভিত্তিতে পরিচালিত বলেই ধারণা করা যায় যে কৃষকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। এই সময়ে জাপানে কোগুরিয়োর প্রভাব যে ছিল তা প্রমাণ হয় "কোরিয়ো ফুট"-এর সর্বত্র উপস্থিতি থেকে (কোরিয়ো হলো কোগুরিয়োর বিকল্প নাম এবং পরবর্তী কোরিয়ো রাজবংশের মাধ্যমে ইংরেজি "Korea" নামটি এসেছে)। এটি ছিল একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক। এটি চীনের পূর্ব ওয়েই রাজবংশ (৫৩৪–৫৫০) নির্ধারণ করেছিল, পরে কোগুরিও তা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকে জাপানে পৌঁছে। এক ফুট বা "শাকু" ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন, এই এককটি জাপানের বহু প্রাচীন স্থাপনার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮৮ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া আসুকাদেরা (দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির) অন্যতম। কোগুরিও থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হয়, ইশিবুতাই কোফুন (৬২৬ সালে মৃত সোগা নো উমাকোর সমাধি বলে মনে করা হয়) এবং বিদাতসু সম্রাটের পর সকল সম্রাটের কোফুন তৈরিতে কোরিয়ো ফুট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন জাপানি লেখাগুলোতেও বারবার উল্লেখ আছে যে কোগুরিওর আচার-আচরণ, ধর্ম, সংগীত ও নৃত্য জাপানিদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মিলপূর্ণ ছিল। বিশেষত কোগুরিও থেকে আগত নৃত্যশিল্পীরা খুব জনপ্রিয় ছিলেন। এই সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে ছোট আকারের কোফুনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, এতটাই যে বর্তমানে জাপানে টিকে থাকা প্রায় ৯০% কোফুনই এই শেষ কোফুন যুগের ছোট সমাধি। অনেকগুলোই গোলাকৃতি টিলা, প্রায় ১০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট, যেগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামো বড় কোফুনগুলোর মতোই। তবে অনেক কোফুন ছোট ছোট গুহার মতো, যেগুলো পাহাড় বা খাড়ির পাশে খোদাই করে কফিনের সমান আকারে বানানো হয়েছে। এ ধরনের কোফুন সাধারণত গুচ্ছাকারে পাওয়া যায় এবং প্রায়শই কাছাকাছি এলাকায় একই সময়ে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ধাঁচের ছোট কোফুন পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় পাহাড়ের পাশে এমন অনেক কোফুন পাওয়া গেছে যার সংখ্যা ডজন বা শতাধিক। এ থেকে ধারণা করা যায়, পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এই যুগে অনেক বেশি লোককে আলাদা সমাধি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হতো। রাজাদের ছাড়া আর বড় সমাধি নির্মাণ হতো না। যেহেতু সম্পদ বহুজনের মাঝে ভাগ করতে হতো। তাই প্রতিটি সমাধি ছোট ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হতে বাধ্য ছিল। ধারণা করা হয়, এটি অভিজাত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন নির্দেশ করে। এর ফলে বুঝা যায় তখন গোত্র প্রধানের ক্ষমতা হ্রাস এবং গোত্রের সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব জমিজমা ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিক যুগে গোত্রভিত্তিক অভিজাতরা যৌথভাবে গোত্রের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত এবং গোত্রপ্রধান তা বণ্টন করত। কিন্তু ৫৫০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। তখন গোত্রের সদস্যরা নিজেদের আলাদা জমির ওপর অধিকারে থাকতেন এবং নিজের আয় নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে তারা তখনো সমাধিগুলো একই গোত্রীয় কবরস্থানে তৈরি করতেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়। ফলে সম্মিলিত উপাদান পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। উল্লেখযোগ্য, "ছোট" সমাধি হলেও তাতে বহু টন ওজনের পাথর ব্যবহার করা হতো এবং অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হতো। ৬৪৬ সালের একটি ফরমান অনুযায়ী সমাধির আকার নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল—একজন রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে ৭ দিনে ১০০০ শ্রমিক, মন্ত্রীর জন্য ৫ দিনে ৫০০, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ৩ দিনে ২৫০, মধ্যমপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ১০০ এবং নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ১ দিনে ৫০ শ্রমিক নিযুক্ত হবে। ''নিহন শোকি''তে ৫৭১ সালে কোগুরিও থেকে আগত দূত বন্ধুকে ঘিরে একটি অবিশ্বাস্য গল্প রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তখনকার জাপানি রাজদরবারে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুই দল লেখক ছিল, তারাই শুধু কোগুরিওর রাজার প্রেরিত চীনা ভাষায় চিঠি পড়তে পারত। এই দুই পরিবার ছিল কাওয়াচি নো ফুমি নো ফুবিতো এবং ইয়ামাতো নো আয়া নো আতায়ে—দুজনেই কোরীয় অভিবাসীদের বংশধর (কাওয়াচি ইয়ামাতোর পশ্চিমে)। যতদূর জানা যায়, ওমি শ্রেণির কোনো জাপানি অভিজাত চীনা ভাষায় পড়া-লেখা শেখার মতো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবেননি, যেমন রেশম বোনা শেখাও অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। এই অবস্থা দুই শতাব্দী ধরে চলেছে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবার শিক্ষিত হতে শুরু করে। ৫৮৫ সালে বিদাতসু সম্রাটের মৃত্যুর পর সোগা এবং মোনোনোবে গোত্রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। কোফুন যুগে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সমাধির বিশাল আকারের কারণে সমাধি নির্মাণে অনেক সময় লাগত। ফলে স্থায়ীভাবে দাফনে প্রায়ই যথেষ্ট বিলম্ব হত। সাধারণত এই কাজে দুই বছর লাগলেও চরম ক্ষেত্রে কখনও কখনও তিন বছর পর্যন্তও লাগতো। এসময় মরদেহ একটি অস্থায়ী ভবনে রাখা হতো। একে বলা হতো মোগারি নো মিয়া। এখানে মরদেহ স্থাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হতো। ''নিহন শোকি'' অনুযায়ী এই অনুষ্ঠানে সোগা নো উমাকো এবং মোনোনোবে নো মরিয়া পরস্পরের প্রতি প্রকাশ্যে অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। ফলে উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিদাতসুর একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র ছিলেন, যার মা ছিলেন উচ্চ-মর্যাদার। তার নাম ছিল রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাসকের ভাইয়েরও সিংহাসনের দাবির অধিকার ছিল। বিদাতসুর বেশ কয়েকটি ভাই ছিল। কিমমেই সম্রাটের বহু উচ্চ-মর্যাদা সম্পন্ন স্ত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে সোগা নো ইনামের দুই কন্যাও ছিলেন। নির্বাচিত উত্তরসূরি ছিলেন সোগা নো উমাকোর ভাতুষ্পুত্র। তিনি ইয়োমেই সম্রাট হন। বড় ভাই ইয়াতা নো তামাকাতসু নো ওয়ের মা সেনকা টেনোর কন্যা ছিলেন। ''নিহন শোকির'' মতে বড় ভাই ইয়াতার পাশাপাশি আরেক ভাই রাজকুমার আনাহোবেও নিজের উত্তরাধিকারের দাবি জানান। ইয়োমেই ইতিমধ্যে সিংহাসনে আরোহণ করার পরে যুবরাজ আনাহোবে অস্থায়ী সমাধি দখলের চেষ্টা করে বিদাতসুর সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাকে জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। তিনি তখন শেষকৃত্য অবধি সেখানে শোক পালনের উদ্দেশ্যে অস্থায়ী সমাধিস্থলে ছিলেন। সিংহাসনে তার দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য জোর করে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সমাধির রক্ষীবাহিনীর প্রধান এতে বাধা দেন। এরপর রাজকুমার আনাহোবে সোগা এবং মোনোনোবে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন এবং রক্ষী পদারকে হত্যা করার অনুমতি চান। এই দাবি তখন মঞ্জুর করা হয়। ওই পদার পালানোর চেষ্টা করলেও আনাহোবে তার অবস্থান জেনে (প্রাক্তন সম্রাজ্ঞীর একটি গ্রামীণ প্রাসাদ) মোনোনোবে নো মরিয়াকে তাকে ও তার সন্তানদের হত্যা করতে বলেন। মরিয়া নিজেই তা করেন। সোগা নো উমাকো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ''নিহন শোকি'' অনুসারে, এই ঘটনাই সোগা ও কাশিকিয়াহিমের (পরবর্তীকালে সুইকো সম্রাজ্ঞী) মধ্যে মোনোনোবে নো মরিয়ার প্রতি তীব্র শত্রুতা জন্ম দেয়। ইয়োমেই সম্রাট তেন্নো ৫৮৭ সালে রাজত্ব কাল দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান। তখন আবারও সিংহাসনের প্রশ্ন ওঠে। তার অসুস্থতা কয়েক মাস ধরে চলায় প্রতিযোগীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পায়। আক্রমণের আশঙ্কায় মোরিয়া ইয়ামাতোর বাইরে নিজের দূর্গে সরে গিয়ে সেনা সংগ্রহ শুরু করেন। তখন মোরিয়ার অন্যতম মিত্র ছিলেন নাকাতোমি নো কাতসুমি নো মুরাজি। ''নিহন শোকি'' অনুসারে তিনি ডাকিনীবিদ্যার মাধ্যমে মনোনীত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রাসাদে জাদুকরী বস্তু রাখার উদ্দেশ্যে যান। কিন্তু প্রাসাদ ত্যাগ করার সময় রাজকুমারের এক প্রহরীর হাতে নিহত হন। সবকিছু ইয়োমেইর মৃত্যুর আগেই ঘটে। তাঁর মৃত্যুর অল্প সময়ের মধ্যেই মনোনোব নো মোরিয়া রাজকুমার আনাহোবেকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি উত্তরাধিকার নিয়ে সংঘর্ষের জন্য সৈন্যদের জড়ো করার অজুহাত হিসাবে একটি শিকারের দল করতে চলেছেন। তবে এটি ফাঁস হয়ে যায়। সোগা নো উমাকো সম্রাজ্ঞী কাশিকিয়াহিমের আদেশে সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের অবিলম্বে যুবরাজ আনাহোবেকে হত্যার নির্দেশ দেন। তারা এই ধরনের কাজের প্রচলিত সেরা পদ্ধতি হিসেবে রাতের বেলায় তার প্রাসাদে হামলা চালান। এরপর সোগা একটি বড় বাহিনী গঠন করে মরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এতে বহু রাজকুমার, যেমন রাজকুমার হাতসুসেবে (ভবিষ্যতের সুশুন সম্রাট), রাজকুমার উমায়াদো সহ প্রচুর সংখ্যক রাজকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও ইয়ামাতোর প্রায় সমস্ত "ওমি" শ্রেণির আঞ্চলিক উজি সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট অভিজাত উজির দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরিয়া প্রস্তুত ছিলেন, ফলে কোনও গণহত্যা না হয়ে সরাসরি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে পরিণত হয়। ফলাফল কিছু সময়ের জন্য সন্দেহের মধ্যে ছিল। মনোনোবকে সমর্থনকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত গোষ্ঠীগুলি সকলেই ইয়ামাতোর বাইরের গোত্র থেকে ছিল। মনোনোবের বাহিনী ইয়ামাতোর পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। অন্যদিকে সোগার সেনাবাহিনী সম্ভবত আসুকা থেকে শুরু করে আনামুশি গিরিপথ পেরিয়ে একা নদীর কাছে হয়। একা নদীতে মনোনোব সেনাবাহিনী পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই নদীর অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এটি ফুরুচির ঠিক পশ্চিমে আধুনিক ইশি নদী ছিল বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এটি সম্ভবত বর্তমান ইশি নদী। মরিয়ার বাসভবন ছিল শিবুকাওয়াতে। অনুমিত যুদ্ধক্ষেত্রের উত্তর-পশ্চিমে অল্প দূরত্বে। যুবরাজ উমায়াদো তখন তরুণ কেবল তরুণ হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। তিনি সঙ্কটের মুহুর্তে একটি শপথ করেন যে তার পক্ষ বিজয়ী হলে একটি বৌদ্ধ মন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এই কথা শুনে সোগা নো উমাকো নিজেও একই শপথ নেন। এর পরপরই মনোনোব নো মোরিয়া একটি তীরের আঘাতে নিহত হন এবং তার বাহিনী ভেঙে পড়ে। ''নিহন শোকি'' জানায়, যুদ্ধস্থলে কয়েক শত লাশ পড়ে ছিল। এটি আরও বলেছে যে মনোনোব বংশের অনেক সদস্য অস্পষ্টতায় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্যরা বংশকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করার কোনও অভিপ্রায় অস্বীকার করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন উপাধি গ্রহণ করেন। দরবার নিঃসন্দেহে ইসোনোকামি বংশ গঠন সহ্য করেছিল। কারণ কেবলমাত্র মানুষের লড়াইয়ের কারণে মনোনোব বংশ প্রতিষ্ঠাকারী দেবতাকে অবহেলা করা অনুচিত হত। তারা ভেবেছিল যে দেবতাদের যথাযথভাবে পূজা করা হত না তারা ক্রুদ্ধ হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করত। মনোনোব বংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমরা ৬০৮ সালে একটি চীনা দূতাবাসের প্রেক্ষাপটে একজন মনোনোব নো ইউকিমি নো মুরাজি একজন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে দেখি। নামটি পরবর্তীতেও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়। তবে আর কখনও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়নি। ইতিহাসের এই যুগের মূল বিষয় রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জাপানি প্রচেষ্টার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হলো কিম্মেইয়ের সময়েই উত্তর ওয়েই এবং উত্তর চৌ রাজবংশগুলি উত্তর চীনে প্রথম ভূমি পুনর্বণ্টন ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করছিল। চীনের এই বিকাশগুলি কোগুরিওর উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। কোগুরিও জাপানকে এই জাতীয় জিনিস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ কিমেইয়ের রাজত্বের শেষার্ধে কোগুরিও এবং জাপান জাপান জুড়ে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এটি সিলার নিয়ন্ত্রণের অঞ্চলের উত্তরে চলে যায়। এই চীনা রাজবংশগুলি বর্বর বংশোদ্ভূত এবং অত্যন্ত অভিজাত ছিল, অনেকটা জাপান এবং কোরীয় রাজ্যগুলির মতো। ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থাটি প্রতিটি কৃষক পরিবারকে স্থির কর প্রদানের অনুমতি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে এমন গ্যারান্টি দিয়ে কৃষিকাজ থেকে করের রিটার্নকে সর্বাধিক করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রতিটি পরিবারকে তাদের জমির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন করের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করার জন্য সমস্ত প্রশাসনিক মাথাব্যথা এবং ব্যয় সাশ্রয় করে। এর জন্য জনসংখ্যার একটি পর্যায়ক্রমিক আদমশুমারি নেওয়া এবং তারপরে আকারে সঙ্কুচিত পরিবারগুলির কাছ থেকে জমি নেওয়া এবং আকারে বেড়ে ওঠা পরিবারগুলিকে জমি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটি করা সম্ভব ছিল কারণ, এই সময়ে উত্তর চীনে সম্ভাব্য আবাদযোগ্য জমির পরিমাণের তুলনায় কৃষি জনশক্তির ঘাটতি ছিল। চিন রাজবংশের পতনের পরে বর্বর আক্রমণের কারণে স্থানচ্যুতির কারণে এই অবস্থা হয়। উপলব্ধ শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতে কর গণনা করা হয়েছিল। কোগুরিও এই ব্যবস্থার অনুলিপি করেছিল এবং জাপানও শেষ পর্যন্ত এটি করেছিল। এটি অনুমান করা হয় যে,এটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান কৃষক জনসংখ্যার বিজয়ের মাধ্যমে অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে কোগুরিও এবং জাপানে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির থেকে আলাদা ছিল না। এটি অনুমান হিসাবে রয়ে গেছে কারণ আমরা এই সময়কালে কৃষক এবং অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানি না, কারিগর শ্রমিকদের সংগঠিত করার "হতে" ব্যবস্থা উৎপাদন কোটার মাধ্যমে করের উপর ভিত্তি করে অনেকটা একের মতো দেখায়, এটি প্রশংসনীয় করে তোলে যে কৃষকরা একইভাবে সংগঠিত হয়েছিল। আগের মতোই উত্তরাধিকারের জন্য বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। যুবরাজ ওশিসাকা নো হিকোহিতো নো ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়োমেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে মনোনীত করেন এবং [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/মুরোমাচি যুগ|মুরোমাচি পর্বের]] বইয়ে বলা হয়েছে যে তাঁর পুত্র। তিনি জোমেই তেন্নো হয়েছিলেন যিনি ৫৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোগা নো উমাকো পরিবর্তে রাজকুমার হাটসুবেকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সদ্য খুন হওয়া যুবরাজ আনাহোবের ভাই ছিলেন। তবে যিনি শুরু থেকেই সোগার সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন। উভয় রাজপুত্র ছিলেন সোগা নো ইনামের কন্যা ওনেকিমির পুত্র এবং তাই উমাকোর ভাগ্নে। যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরে সুশুন তেন্নো সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুশুন স্পষ্টতই খুব বেশি ব্যক্তিগত ক্ষমতা ছাড়াই ছিল। এটি লক্ষণীয় যে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর কোনও রাজকন্যা ছিল না এবং ''নিহন শোকি''তে উল্লিখিত তাঁর একমাত্র স্ত্রী ছিলেন ওটোমো বংশের। ''নিহন শোকি''র কাছ থেকে বিচার করার জন্য তৎকালীন শাসক বংশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজকন্যা কাশিকিয়াহিমে। তিনি সোগা নো উমাকোকে মনোনোবে নো মোরিয়া আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং যিনি সিংহাসনের জন্য রাজকুমার হাটসুসেবেকে সুপারিশ করেন। প্রায় ৫ বছর সিংহাসনে থাকা সত্ত্বেও ''নিহন শোকি''তে সুশুনের নিবন্ধটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিনটি বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি ছিল পাইকচে থেকে একটি দূতাবাস যা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং উপকরণ নিয়ে এসেছিল। সোগা নো উমাকো সন্ন্যাসীদের আলোচনায় নিযুক্ত করেন এবং তার বোন ইনামের মেয়ে সহ জাপানি নানদের আরও পড়াশোনার জন্য পায়েচে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারা কোরিয়ায় ২ বছর কাটিয়েছিলেন, ৫৯০ সালে ফিরে আসেন। উমাকো তার মানত করা মন্দির নির্মাণের কাজও শুরু করেন। ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আসুকাদেরায় পরিণত হওয়ার স্থল ভেঙে যায়। ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে উল্লেখ করা হয় যে, অভিজাত পরিবারের বেশ কয়েকজন মহিলা সন্ন্যাসিনী হয়েছিলেন এবং চীন থেকে ৬ জন সন্ন্যাসী দেশে আসেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো "এমিশি" বর্বরদের সাথে সীমান্তের অবস্থা পরিদর্শন করার জন্য উত্তরের তিনটি প্রধান যাত্রাপথ, হোকুরিকুডো, তোসান্দো এবং টোকাইডো বরাবর ৫৮৯ সালে কর্মকর্তাদের প্রেরণ করা হয়েছিল। তৃতীয় বিষয়টি হলো ৫৯১ সালে দরবারে একটি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সিল্লা থেকে মিমানা পুনরুদ্ধার করা দরকার। পাঁচজন সেনাপতি (সমস্ত পুরুষ যারা মোরিয়ার বিরুদ্ধে উমাকোর পক্ষে লড়াই করেন) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ২০,০০০ পুরুষ দেওয়া হয়েছিল। তারা সুকুশি ভ্রমণ করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরিয়া অতিক্রম করেনি। সুশুন মারা গেলে তাদের ইয়ামাতোতে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কোরিয়াকে লক্ষ্য করে ৫৯১ অভিযানের ঠিক এক বছরেরও বেশি সময় পরে, সুশুন তেন্নো একটি শুয়োর শিকারের দলের সময় একটি মন্তব্য করেন যা কাউকে আমন্ত্রণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তিনি যে ব্যক্তির সাথে সমস্যায় পড়েছিলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তাকে অনুগ্রহ করার জন্য। যখন এটি সোগা নো উমাকোকে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে উল্লিখিত ব্যক্তিটি নিজেই ছিলেন। ফলে তিনি সুশনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি পাদটীকা রয়েছে যা বলে যে "একটি বই বলেছে যে" সুশুনের হুমকিমূলক মন্তব্য সম্পর্কে উমাকোর কাছে যে প্রতিবেদনটি শাসকের একজন অসন্তুষ্ট উপপত্নীর কাছ থেকে এসেছিল। উমাকো আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমা নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা অজুহাতে দরবারে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এই লোকটি সম্রাটকে হত্যা করেছিল। এরপরে এটি বলে যে সুশুনকে একই দিনে ইতিমধ্যে বিদ্যমান রাজকীয় সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই যুগে তিনিই একমাত্র শাসক যেখানে এটি করা হয়েছিল। সুই রাজবংশের চীনা ইতিহাস অনুসারে। এটি জাপান সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ রয়েছে, প্রথাটি ছিল যে একজন আভিজাত্যকে কেবল তিন বছর পর্যন্ত শোকের পরে হস্তক্ষেপ করা হত এবং একজন সাধারণকে তার মৃত্যুর দিন সূর্যাস্তের আগে সমাধিস্থ করা আবশ্যক। সুশুনকে সাধারণের কবর দেওয়া হয়েছিল, মনে হয়। ''নিহন শোকি''র এই ঘটনার উল্লেখ আমার চেয়ে বেশি নয় এবং সুশুন কেন উমাকোকে নির্মূল করতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই বলে না। এতে হত্যাকাণ্ডের পরিণতি বা এ বিষয়ে কারও প্রতিক্রিয়ার কোনো আভাসও উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র অতিরিক্ত উপাদান হলো একটি অদ্ভুত বিবৃতি যে আজুমা নো আয়া নো আতাই কোমার উমাকোর এক কন্যার সাথে গোপন সম্পর্ক ছিল যিনি সুশুনের উপপত্নী ছিলেন এবং তাকে তার স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করেন। উমাকো প্রথমে এ বিষয়ে সচেতন ছিল না, ভেবেছিল যে মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে সে কোমাকে হত্যা করেছে। উপস্থাপিত হিসাবে এটি বোঝায় যে এটি না থাকলে কোমা বিনা শাস্তিতে হত। বিশ্বাস করতেই হবে যে, সুশুনের হত্যাকাণ্ডকে হত্যা নয়, ন্যায়সঙ্গত কারণে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিম্মেইকে অনুসরণ করা তিনজন শাসক সকলেই কিম্মেইয়ের পুত্র ছিলেন। তবে ভাইদের সরবরাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখননাতির দলটির দিকে তাকাতে হবে। বরাবরের মতোই ছিল বিদাতসু তেন্নোর ছেলে ওশিসাকা নো হিকোহিতো। রাজকুমার তাকেদাও ছিলেন। তিনি বিদাতসুর এক পুত্র এবং যার মা ছিলেন শক্তিশালী কাশিকিয়াহিমে। এরপরে ছিল ইয়োমেই তেন্নোর জ্যেষ্ঠ পুত্র উমায়াদো। উমায়াদোর বয়স তখন ১৯। তাকেদার বয়স জানা যায়নি। তবে তার একটি ছোট বোন ছিল যিনি ইতিমধ্যে উমায়াদোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হিকোহিতো সম্ভবত ইতিমধ্যে বেশ বৃদ্ধ ছিলেন এবং স্পষ্টতই বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না। অন্য সব সম্ভাবনা অবশ্যই খুব কম ছিল। ''নিহন শোকি'' আমাদের কোনও বিতর্ক বা আলোচনা সম্পর্কে ঠিক কিছুই বলেন না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, শেষ পর্যন্ত কাশিকিয়াহিমে নিজেই সিংহাসন গ্রহণ করেন, সুইকো তেন্নো হয়ে ওঠেন। তিনিই প্রথম শাসক (হিমিকো এবং আইয়োর পরে) যিনি মহিলা ছিলেন। যেহেতু সুইকো মহিলা সার্বভৌমদের একটি দীর্ঘ তালিকার প্রথম ছিল। তাই এটি অবশ্যই স্পষ্ট যে এটি সম্ভব করার জন্য অবশ্যই কিছু পরিবর্তন করা উচিত। তবে উত্সগুলি কী হতে পারে সে সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলার নেই। প্রাচীনকালে ছয়জন ভিন্ন মহিলা তেন্নো হিসাবে কাজ করেন (টোকুগাওয়া যুগে আরও বেশি ছিল)। তাদের মধ্যে দু'জন বিভিন্ন রাজত্বের নামে দু'বার রাজত্ব করেন, মোট ৮ টি রাজত্ব করেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় প্রথম চারজন ইতিমধ্যে সম্রাজ্ঞী (একটি তেন্নোর বিধবা) ছিলেন। এগুলিকে স্থান ধারক হিসাবে দেখা সহজ, পুত্র বা নাতির রাজত্ব করার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে মহিলা তেন্নোর ব্যবহার বন্ধ করার পরে দ্রুত এই নীতিটি পরিত্যাগ করা হয়েছিল যে কোনও শিশুকে সিংহাসনে বসানো সম্ভব নয়। একটি স্থানধারক ছাড়া, আপনি অপেক্ষা করতে পারবেন না। সুইকোর ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে সিংহাসন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার পুত্র রাজকুমার তাকেদা দ্বারা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলেন। সোগা নো উমাকোর সিদ্ধান্ত এড়ানোর যথেষ্ট কারণ ছিল। তার ভাগ্নে সুশুনকে সিংহাসনে বসিয়ে এবং তার সাথে একটি কন্যাকে বিয়ে দিয়ে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই দ্বিতীয় সুযোগের ব্যবস্থা করার জন্য তার কিছুটা সময় প্রয়োজন। তার একটি অতিরিক্ত কন্যা ছিল যাকে তিনি যুবরাজ উমায়াদোর সাথে বিয়ে করেন। তবে এটি তাকে সম্ভাব্য শাসক নাতির সাথে উপস্থাপন করতে চলেছে কিনা তা বলা খুব তাড়াতাড়ি ছিল। তবে, এটি আমাদের জানায় না যে এখানে নতুন কী ছিল। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি কেন? ওজিন রাজবংশের সময় দুটি পরিস্থিতি ছিল যখন পরবর্তী শাসক কে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একটি অন্তর্বর্তী পরিস্থিতি ছিল এবং উভয় ক্ষেত্রেই শাসক বংশের একজন মহিলা সদস্য শাসকের আনুষ্ঠানিক উপাধি গ্রহণ না করেই বিষয়গুলির সভাপতিত্ব করেন। আগেকার যুগে শাসকের স্ত্রীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাদের সবাইকে কেবল কিসাকি বলা হত। তার পিতার মর্যাদা থেকে উদ্ভূত কেবল অন্তর্নিহিত মর্যাদা ছিল। এটি অবশ্যই তার সন্তানরা উত্তরাধিকারের জন্য বিবেচিত হওয়ার যোগ্য কিনা তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। যাইহোক, আদালত চালানো আরও বড় এবং জটিল হয়ে ওঠার সাথে সাথে কিম্মেইয়ের সময়ে এটি পরিবর্তন হতে শুরু করে। আদালতের সাথে সংযুক্ত পদারদের একটি বিশেষ দল এসেছিল যারা মনোনীত যুবরাজের পরিবার পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিল। তিনি ও-ওমি এবং ও-মুরাজির পাশাপাশি এক ধরণের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং সম্রাটের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এর অর্থ হলো অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, রাজস্বের নির্দিষ্ট উত্সগুলি রাজপুত্র এবং স্ত্রীদের ভরণপোষণের জন্য বরাদ্দ করা হবে এবং এই একজনকে আরও বেশি এবং সেই ব্যক্তিকে কম বরাদ্দ করে মর্যাদা চিহ্নিত করার স্পষ্ট সুযোগ ছিল। সুইকোর রাজত্বকালে লেখা একটি বই রয়েছে যা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে সুইকোর আগে সমস্ত স্ত্রী কেবল "কিসাকি" ছিলেন। বিদাতসুর স্ত্রী থাকাকালীন তাকে "ও-কিসাকি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি কিসাকি থেকে একইভাবে ও-মুরাজি মুরাজি থেকে আলাদা। অন্য কথায়, তিনি কেবল একজন উপপত্নী ছিলেন না, সম্রাজ্ঞী ছিলেন। বিদাতসুর রাজত্বকালে কিসাইবে নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কিসাকিবের একটি সংকোচন। এর অর্থ কৃষকদের একটি ইউনিট যা একটি নির্দিষ্ট কিসাকিকে সমর্থন করার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। "ব্যক্তিগত হও" বা "ব্যক্তিগত হও" হিসাবে সর্বোত্তমভাবে অনুবাদ করা অক্ষর দিয়ে লেখা হয় তবে কিসাকিবে উচ্চারণ করা হয় তা চীনা প্রভাবের ফলাফল। চীনে সম্রাট ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার অবস্থানের সবকিছুই ছিল 'প্রকাশ্য'। যাইহোক, সম্রাজ্ঞী একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এখনও একটি ব্যক্তিগত ব্যক্তি ছিলেন, রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত নয়। তার নিজের সম্পত্তি থাকতে পারত এবং ছিল। এটি তার পরিবার বা সম্রাটের কাছ থেকে উপহার দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। জাপানি কেসটি আলাদা ছিল, রাষ্ট্রীয় সংস্থানগুলি অর্পণ করে। এটি এখনও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে পরিচালিত হয়, কিসাকিতে। সুতরাং, আগের কিসাকির বিপরীতে, কাশিকিয়াহিমে এমন কর্মকর্তা ছিলেন যারা তাকে রিপোর্ট করেন এবং যে সংস্থানগুলি তিনি ব্যয় করতে পারেন। তিনি একজন খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। এটি লক্ষ করা যেতে পারে যে বিদাতসুর মৃত্যুর পরের পর্বে যখন যুবরাজ আনাহোবে তাকে অপহরণ ও বিয়ে করার চেষ্টা করেন, যে পদার তাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি কাশিকিয়াহিমের একটি গ্রামীণ প্রাসাদে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন, সম্ভবত তার সমর্থনের জন্য একটি অবস্থানের স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল। তিনি নিঃসন্দেহে এমন একজন কর্মকর্তা ছিলেন যিনি বিশেষভাবে তার সেবায় নিবেদিত ছিলেন। সম্রাজ্ঞীর এই অতিরিক্ত গুরুত্ব পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল, এমনকি সেই সময়েও যখন তারা তেন্নো হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সুইকোর রাজত্বকালে এবং তার পরে যা ঘটেছিল তার মধ্যে একটি ছিল যে অন্য সবার তুলনায় শাসকের মর্যাদা ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য একটি বড় প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং শাসকের মর্যাদা বাড়ার সাথে সাথে তার স্ত্রীদের। বিশেষত তার সম্রাজ্ঞী তথা তার উত্তরাধিকারীর মা। সম্রাজ্ঞীকে স্ত্রী হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে জীবিত সম্রাটের মা হিসাবে, সম্রাজ্ঞীকে মৃত সম্রাটের মা হিসাবে এবং আরও অনেক কিছু নির্দেশ করার জন্য চীনা থেকে নেওয়া উপাধিগুলির একটি ধারাবাহিকতা দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। যেহেতু সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত হওয়ার অধিকারী বেশ কয়েকটি জীবিত মহিলা থাকতে পারে, তাই তাদের সকলকে আলাদা করার জন্য পর্যাপ্ত উপাধি থাকা দরকার ছিল। হেইয়ান যুগে, যখন মহিলারা আর তেন্নো হতে পারত না, একাধিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল কারণ একজন সম্রাজ্ঞী তার নিজের খেয়ালখুশিতে উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। একজন সম্রাজ্ঞী যিনি দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন সম্রাটের মা ছিলেন, যদি তার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা থাকে তবে তিনি যথেষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। === শোতোকু তাইশি === [[Image:Prince Shotoku with Two Princes by Kano Osanobu 1842.png|thumb|right|''তোহন মিয়েই'', রাজকুমার শোতোকু এবং তার দুই ছেলের প্রতিকৃতি]] ''নিহন শোকি''তে সুইকো তেন্নো সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের একেবারে শুরুতেই উমায়াদো নো তোয়োতোমিমিকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাস্টনের অনুবাদে বলা হয়েছে, "সে জন্ম নেওয়ার সাথেসাথেই কথা বলতে পারত। এতটাই প্রজ্ঞাবান ছিল যে দশজন লোকের মামলা একসাথে শুনে নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারত। সে আগে থেকেই জানত কী ঘটতে চলেছে।" সে শুধু উত্তরসূরি হিসেবেই নিযুক্ত হয়নি, বরং "সরকারের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ন্যস্ত ছিল এবং প্রশাসনের সকল বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।" ''নিহন শোকি'' যে কাহিনি বলার চেষ্টা করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন এই ব্যক্তি। তাঁকে বৌদ্ধ ও কনফুসীয় দর্শনে পারদর্শী এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের প্রথম ইতিহাস (যেটি টিকে নেই)। তাঁর আবির্ভাব থেকেই ''নিহন শোকি''র লেখকদের দৃষ্টিকোণে আধুনিক জাপানের ইতিহাস শুরু হয়। মধ্যযুগে তাঁকে একজন বৌদ্ধ সাধু হিসেবে গণ্য করা হতো। আধুনিক কালে ১৮৮৫ সালে চালু হওয়া সংবিধানিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক সন্ন্যাসী হিসেবে তিনি বিবেচিত হন। ''নিহন শোকি'' যাঁর রচয়িতা বলে মনে করে সেই "সতেরো অনুচ্ছেদের সংবিধান" জাপানের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক দলিল হয়ে ওঠে। "যুবরাজ" শব্দটির ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তির ভিত্তিতে আপত্তি জানানো হয়েছে, কারণ এই সময়ে এই উপাধিটি উত্তরাধিকার নির্ধারণে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করত বলে মনে হয় না। তবে, এই পদবির মাধ্যমে নির্বাচিত রাজপুত্রকে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। এটাও মনে করা যেতে পারে যে, যেখানে তেন্নো সমগ্র জাতির শাসক হিসেবে দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিলেন, সেখানে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র শাসক বংশের পক্ষে একপ্রকার দলের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন, যেমন সোগা এবং অন্যান্য বংশপ্রধানেরা তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন। পুরো নারা যুগজুড়ে এবং প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগেও রাজপুত্রদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং স্পষ্ট ছিল যে, সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর ক্ষমতা অন্যান্য অভিজাত বংশগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সাধারণত তেন্নো নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, সবসময়ই একজন "জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র" থাকতেন। তেন্নো-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী তাঁর অনেক স্থানে যাওয়া এবং অনেকের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। এই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। একজন নারী শাসকের জন্য এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর ছিল, ফলে তাঁর না থাকতে পারা সভায় পরিবারের একজন বিশ্বস্ত সদস্যের উপস্থিতি থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। তবে, এই বিষয়গুলো থেকেই ক্ষমতার উৎস বোঝা যায় না। ক্ষমতার অবস্থান সবসময়ই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল। তাই মনে করার কোনও কারণ নেই যে, সুইকো ওই সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন না। যুবরাজ উমায়াদোর বাবা-মা দুজনেই শাসক বংশের সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর পিতৃকুলের দাদি ছিলেন সোগা কিতাশিহিমে এবং মাতৃকুলের দাদি সোগা ওআনেকিমি—দুজনেই সোগা নো ইনামির কন্যা এবং সোগা নো উমাকোর বোন। তাঁর চারজন স্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়, যাঁদের একজন ছিলেন উমাকোর কন্যা। ৬০০ সালে একটি জাপানি দূতা দল চীনের স্যুই রাজবংশে গিয়েছিল এবং স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে "ওয়া"-র রাজা পরিবারের নাম ছিল আমে (অর্থাৎ স্বর্গ) এবং তাঁর ব্যক্তিগত নাম ছিল তরাশিহিকো। এটি চীনা অক্ষরে শব্দভিত্তিকভাবে লেখা হয়েছে। "তরাশি" ছিল এই সময়ে শাসকদের আনুষ্ঠানিক নামের সাধারণ উপাদান এবং সম্ভবত "শাসক" অর্থে ব্যবহৃত হতো। "হিকো" একটি নির্দিষ্ট পুরুষ নাম উপাদান, যার নারীস্বরূপ "হিমে"। ফলে মনে হয় এই পরিচিতিটি স্যুইকো তেন্নোর নয় বরং রাজকুমার উমায়াদোর। যদিও সম্ভব যে চীনাদের জানা ছিল না যে "ওয়া"-র রাজা একজন নারী (অথবা জাপানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা গোপন রেখেছিল)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে উমাকো এবং উমায়াদোর মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তাঁরা উভয়েই প্রাদেশিক অভিজাতদের তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রয়োজনে একমত ছিলেন এবং এ লক্ষ্যে শাসকের তাত্ত্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাসাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো সভাসদদের প্রকৃত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা উভয়েই চীনা সাহিত্যের পাণ্ডিত্যে পারদর্শী ছিলেন এবং অন্তত একটি বইয়ে সহযোগিতা করেন। ৫৮৯ সালে স্যুই রাজবংশের দ্বারা চীনের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ৫৮১ সালে উত্তরাঞ্চলের উত্তর চৌ রাজবংশের এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দক্ষিণাঞ্চল জয় করে একীকরণ সম্পন্ন করে। পেকচে ৫৮১ সাল থেকে এবং শিলা অন্তত ৫৯৪ সাল থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগে ছিল। ৬০০ সালে স্যুইকো রাজদরবার শিলায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল এবং একই বছর পঞ্চম শতাব্দীর পর প্রথমবারের মতো চীনে দূত পাঠানো হয়। যদিও ''নিহন শোকি''তে এই মিশনের সাফল্যের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা রয়েছে, এই বাহিনী কোরিয়ায় বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি এবং ৬০২ সালে একটি দ্বিতীয় ও বৃহৎ অভিযান পরিকল্পিত হয়। লক্ষণীয় যে এই বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন রাজকুমার উমায়াদোর ভাই রাজকুমার কুমে কোনও ঐতিহ্যবাহী সামরিক উজি সদস্য নয়। এটিকে প্রমাণ হিসেবে ধরা হয় যে এই প্রকল্পটি উমাকোর নয় বরং উমায়াদোর উদ্যোগে ছিল। এছাড়া, ''নিহন শোকি''তে বলা হয়েছে এই বাহিনী গঠিত হয় "কানতোমো" থেকে, যার মধ্যে ছিল ধর্মীয় দায়িত্বে নিয়োজিত ইম্বে ও নাকাতোমি বংশ, পাশাপাশি "কুনি নো মিয়াতসুকো" ও "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রা। অর্থাৎ কোনও "ওমি" শ্রেণির বংশ এতে অংশ নেয়নি। সমস্ত যোদ্ধা শাসক বংশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বংশ ও প্রাদেশিক অভিজাতদের মধ্য থেকে আসবে। এটি সম্ভবত এমন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা সরাসরি শাসকের প্রতি অনুগত থাকবে, বরং ঐতিহ্যগত বংশের মিলিশিয়ার বিকল্প হবে। এই বিশ্লেষণ সত্য হলে, ৬০২ সালে রাজকুমার উমায়াদোর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, প্রকল্পটি সফল হয়নি। বাহিনী কিউশুতে একত্রিত হওয়ার পর রাজকুমার কুমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক মাস পরে মারা যান। শোতোকু তাইশির ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি পরবর্তী গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজকুমার ধারণা করেন শিলা এজেন্টরা রাজকুমার কুমেকে হত্যা করেছে। এরপর তাঁর আরেক ভাই রাজকুমার তাকিমাকে বাহিনীর নেতৃত্বে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কিউশুর উদ্দেশে রওনা হন। পথে তাঁর স্ত্রী মারা যান এবং রাজকুমার ইয়ামাটোতে ফিরে আসেন, কিউশু আর পৌঁছাননি। বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও কেউ কেউ মনে করেন যে, কিউশুতে একটি বৃহৎ বাহিনী একত্রিত করাই শিলার ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে জাপান কূটনৈতিকভাবে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল। এই লক্ষ্য ছিল নিয়মিত "খাজনা" বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য, কারণ অনেক বিলাসপণ্য আমদানি করতে হতো। শিলা যখনই জাপানের ওপর অসন্তুষ্ট হতো, তখনই বাণিজ্য বন্ধ করে দিত, আর জাপান যুদ্ধের হুমকি দিত। ৬১০ সালে সিল্লা থেকে আসা একটি দূতদের অভ্যর্থনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দূতদল স্যুইকোর আসুকার প্রাসাদের মূল হলের সামনে উঠানে জড়ো হয়। প্রত্যেক দূতের সঙ্গে এক একজন জাপানি অভিজাত নিযুক্ত ছিলেন যাঁরা তাঁদের সহায়তা ও সম্ভবত অনুবাদের কাজ করতেন। চারজন প্রধান মন্ত্রী তাঁদের স্বাগত জানান। যখন দূতরা শিলার রাজা কর্তৃক প্রেরিত সরকারি চিঠি পড়তে যান, তখন সোগা নো উমাকো হলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের কথা শুনে ফেরার পর তেন্নোকে রিপোর্ট করেন। রাজকুমার উমায়াদোর উপস্থিতির উল্লেখ নেই। তিনি যদি সম্পৃক্ত থাকতেনও। তবে পুরো সময়টি প্রাসাদের ভেতরেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যাবে, হয়তো তিনি তখন আসুকায় ছিলেন না। রাজকুমার তাকিমার কোরিয়া অভিযান বাতিল হওয়ার পরপরই ''নিহন শোকি''তে আদালতে "টুপি পদবী" নামে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এই পদ্ধতির বাস্তবতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই, কারণ এটি স্যুই ইতিহাসে উল্লেখ আছে। চীনা দরবারে এমন একটি ব্যবস্থা ছিল। কোরিয়ার সব রাজ্যেও অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। জাপানি ব্যবস্থা বিশেষত কোগুরিও-র ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। বাইরের প্রকাশ ছিল কর্তব্যরত অবস্থায় কর্মকর্তা যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিধান করবেন, যাতে পদবীর পরিচয় বহন করবে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল এমন এক পদমর্যাদার ব্যবস্থা চালু করা। এটি শাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। পূর্বে বিদ্যমান কাবানে পদগুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী ও বংশগত। এগুলো থেকে ব্যক্তিগত মর্যাদা স্পষ্ট হতো না। সেগুলো ছিল সম্পূর্ণরূপে গোত্রভিত্তিক, কোনও ব্যক্তির মর্যাদা নির্দেশ করত না। নতুন ব্যবস্থা ছিল বিশেষভাবে আদালতের পদবী এবং সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিভিত্তিক। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাসাদীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অভিজাতদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। টুপিগুলোর কোনও নমুনা আজ আর বিদ্যমান নেই। তবে কয়েকজন ব্যক্তিকে যে পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তার উল্লেখ আছে। কুরাতসুকুরি (স্যাডলমেকার) নো তোরি নামে এক খ্যাতনামা বৌদ্ধভক্ত। তিনি আসুকায় হোকোজি বৌদ্ধমন্দিরের প্রধান হল নির্মাণ করেন, তাঁকে স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রথম তিনটি পদমর্যাদায় নিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির নাম আমাদের জানা আছে। একজন যিনি প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন, তাঁর মর্যাদা সোগা নো উমাকো এবং শিলার দূতাবিদকে স্বাগত জানানো "চার মন্ত্রী"-র তুলনায় অনেক নিচে ছিল। ফলে ধারণা করা হয়, এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র অপেক্ষাকৃত সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য ছিল, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য নয়। কিছু পণ্ডিত পরবর্তী দশকে চালু হওয়া বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার জন্য বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং ধারণা করা হয়, এখানে সর্বোচ্চ পদ ছিল ''নিহন শোকি'' রচনার সময় চালু থাকা ব্যবস্থায় জ্যেষ্ঠ চতুর্থ শ্রেণির সমতুল্য। এই স্তরটিই ছিল উচ্চ অভিজাতদের সাথে সাধারণ কর্মকর্তাদের বিভাজনের রেখা। কেবলমাত্র অভিজাত শ্রেণির শীর্ষ স্তরের সদস্যরাই তৃতীয় শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব মর্যাদা পেতেন। পরের বছর ''নিহন শোকি''তে বলা হয়েছে সব মন্ত্রীর জন্যও বিশেষ টুপি নকশা করা হয়েছিল। একটি কাহিনিতে বলা হয়েছে ৬৪৩ সালে সোগা নো এমেশি অবসর নেওয়ার সময় তিনি নিজ হাতে মন্ত্রীর টুপি তাঁর পুত্র ইরুকার হাতে তুলে দেন। সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। টুপি ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরের বছর, রাজদরবার একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি ''নিহোন শোকি'' অনুযায়ী রাজকুমার উমায়াদো ব্যক্তিগতভাবে জারি করেন। ইংরেজিতে এটি প্রায়ই "১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান" নামে পরিচিত হলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক আইন নয় বরং নৈতিক বিধির একটি তালিকা। ''নিহোন শোকি'' এই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করেছে। অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাজকুমার উমায়াদো (অথবা জাপানে অন্য কেউ) সে সময় এই লেখাটি লিখতে সক্ষম ছিলেন কিনা। ধারণা করেন যে এটি অন্তত পঞ্চাশ বা ষাট বছর পরে লেখা হয়েছে, যখন জাপানে অনেকেই চীনা সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এতে অন্তত ১৪টি চীনা গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে, বৌদ্ধ সাহিত্য বাদ দিয়েই। এছাড়াও, অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে এমন অনেক দিক রয়েছে যেগুলো সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না; যেমন, ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে "প্রাদেশিক গভর্নরদের" উল্লেখ রয়েছে, অথচ প্রথম গভর্নর নিয়োগ পেতে তখনো বহু বছর বাকি ছিল। সামগ্রিকভাবে, এই লেখাটিকে চীনা চিন্তাধারার একটি গ্রহণ বলেই ধরা যায়। সুইকোর সময়কার বাস্তবতার সাথে কিছু অমিল থাকা নিয়ে অতিরিক্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হয়তো অপ্রয়োজনীয়। নতুন কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে উমায়াদো সম্ভবত ঐ সময়ে কোনো ধরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে ''নিহোন শোকি''তে যে লেখা রয়েছে তা অনেক পরে রচিত হয়েছে, যখন শোতোকু তাইশিকে একজন পূজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ধারণা করা হয়, মূল ঘোষণাপত্রটি হারিয়ে যাওয়ায় ''নিহোন শোকি''র জন্য একটি বিকল্প তৈরি করা হয়েছিল। ''নিহোন শোকি'' অনুযায়ী, রাজকুমার উমায়াদো ৬০১ সালে আসুকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইকারুগায় একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যেখানে পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর হোর্যুজি নির্মিত হয়। তিনি ৬০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত হন। যদি তিনি তখন অধিকাংশ সময় ইকারুগায় কাটাতেন, তাহলে সরকার পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হতো না। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তিনি সেই দায়িত্ব সোওগা নো উমাকোর কাছে ছেড়ে দেন। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, ইকারুগা আসুকা থেকে এত দূরে ছিল না যে প্রয়োজন হলে সেখানে যাতায়াত করা যেত না, বরং তা নানিওয়া এবং বিদেশি যোগাযোগ ও বই সংগ্রহের সুযোগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক ছিল। ইকারুগা ছিল আসুকা ও নানিওয়ার মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তাগুলোর একটিতে অবস্থিত। উমায়াদো ইকারুগায় কনফুসিয়ান ও বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সমবেত করেন এবং বেশিরভাগ সময় পাঠ ও অধ্যয়নে ব্যয় করেন। টুপি পদ্ধতি আলোচনা করার পর, সুই ইতিহাসে জাপানের আঞ্চলিক প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপানে "কুনি" নামে ১২০ জন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে কুনিনোমিয়াতসুকো বোঝানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের চীনা বিচারকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এছাড়া, বলা হয়েছে ৮০টি পরিবার একটি "ইনাগি"-র অধীনে ছিল, যাকে একটি গ্রামের প্রধানের সাথে তুলনা করা যায়। ইনাগি ছিল আগাতানুশির সাথে সংশ্লিষ্ট কাবানে উপাধি। এধরনের ১০টি গ্রাম মিলে একটি কুনি গঠিত হতো। এই তথ্য সম্ভবত জাপানি দূতদের মাধ্যমে চীনে পৌঁছেছিল, কারণ চীনা দূতেরা জাপানে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন না। চীনারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করত। এখানে যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নারা যুগে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তুলনামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রধান পার্থক্য ছিল— কুনিনোমিয়াতসুকো পদের অধিকারীরা বংশগতভাবে ক্ষমতায় থাকতেন, আর নারা যুগের গভর্নররা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। তাদেরকে নির্ভুল হিসাবরক্ষণ রাখতে হতো এবং মেয়াদ শেষে অডিট হতো। আগের কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের বংশধররা পরবর্তীতে প্রাদেশিক প্রশাসনে নিম্ন পদে কাজ করতেন। তবে সুইকোর সময়, আসুকার দরবার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানা যায় না। তদ্ব্যতীত, কুনিনোমিয়াতসুকো ও আগাতানুশির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল তাও অনির্দিষ্ট। জানা যায়, আগাতা ছিল ছোট একক এবং ভূগোলগতভাবে কুনির অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আগাতানুশিরা সরাসরি দরবারের সাথে যুক্ত ছিল এবং শাসকের জন্য রাজস্ব পাঠাত, কুনিনোমিয়াতসুকোর মাধ্যমে নয়, যার রাজস্ব স্থানীয় অভিজাতদের সমর্থন করত। তবে এই তথ্য কেবল ইয়ামাতোর অন্তর্গত ৬টি আগাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর নাম প্রায়শই পাওয়া যায় এবং যেগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বলে বোঝা যায়। অন্তত সপ্তম শতাব্দীতে, এই আগাতাগুলোর আর নিজস্ব আগাতানুশি ছিল না, বরং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতো। চীনে সুই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬০৪ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ইয়াং-তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ইয়াং-তিকে চীনা ইতিহাসের অন্যতম "দুর্নীতিপরায়ণ সম্রাট" বলা হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত এই রাজবংশ ধ্বংস করেন, সম্ভবত অতি ব্যয়বহুল জনকল্যাণ প্রকল্প ও গগুরিয়োর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, যেগুলোর জন্য তার অর্থ ছিল না। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, যাদেরকে সরানো ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। হলুদ নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের একটি প্রকল্পে এক মিলিয়ন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এর ফলে ব্যাপক গণবিদ্রোহ শুরু হয়। এটি সরকার পতনে 導 করে এবং সুইয়ের প্রাক্তন জেনারেলদের মধ্যে এক তীব্র গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, যার ফলাফল ছিল ৬১৮ সালে তৎক্ষণাৎ একটি নতুন রাজবংশ ট্যাং-এর অভ্যুদয়। এই দুটি রাজবংশই ছিল ষষ্ঠ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল উত্তর রাজবংশ উত্তর ওয়েইয়ের সরাসরি উত্তরসূরি। উত্তর ওয়েই রাজবংশের শাসক পরিবার ছিল তুর্কি। উত্তরাঞ্চলের অভিজাত শ্রেণি ছিল তুর্কি ও চীনা উপাদানের মিশ্রণ। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লি শি-মিন একটি সুপরিচিত চীনা অভিজাত নাম ধারণ করলেও, তার বংশধারায় তুর্কি উপাদান থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই পটভূমির কারণে সুই এবং তাং রাজবংশের অনেকগুলি দিক ছিল যা তাদের আগে এবং পরে প্রধান রাজবংশগুলির সাথে তুলনা করলে অস্বাভাবিক ছিল। আংশিকভাবে এটি এই কারণে ছিল যে সুই এবং তাং চীনা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনে একটি ক্রান্তিকালীন অবস্থান দখল করে। হান রাজবংশ এবং তার তাত্ক্ষণিক উত্তরসূরিরা কাঠামোগত দিক থেকে পুরোপুরি অভিজাত ছিল। দরবার অল্প সংখ্যক গোষ্ঠী দ্বারা বেষ্টিত ছিল যারা সমস্ত কর্মকর্তাকে মূলত বংশগত ভিত্তিতে সরবরাহ করেছিল। সুই এবং তাং প্রাথমিকভাবে একই প্যাটার্ন অনুসরণ করেছিল। তবে, হানরা বৃহত্তর দেশের প্রশাসনের উপর কেবল একটি আলগা নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী রেখেছিল এবং এটি তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। তারা তুলনামূলকভাবে বড় জেলাগুলিতে কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিল, তবে জেলাগুলির মধ্যে সমস্ত বিষয় স্থানীয় অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, বেশিরভাগ স্বায়ত্তশাসিতভাবে। ব্যবস্থাটি ছিল যে স্থানীয় কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে, তবে তারা জেলার "সম্মানিত ব্যক্তিদের" দ্বারা মনোনীত হয়েছিল। সুই এবং তাং এর প্রশাসনিক কাঠামো অনেক শক্তিশালী ছিল। যেখানে হানরা একশত বা তারও বেশি বড় জেলা বজায় রেখেছিল, সেখানে সুই এবং তাংয়ে এক হাজারেরও বেশি ছোট ছোট জেলা ছিল, যা প্রদেশগুলিতে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং একটি নতুন জেলায় ঘোরানো হয়েছিল এবং তার নিজের জেলায় কর্মরত একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি রুল ছিল। জেলার মধ্যে, প্রশাসন এখনও খুব পাতলা ছিল, এবং ম্যাজিস্ট্রেট "সম্মানিত" স্থানীয়দের মাধ্যমে কাজ করেছিলেন। এটি পুরানো সিস্টেমের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল ছিল, তবে চীন এখন অনেক ধনী ছিল। হান যুগে প্রকৃত অর্থে কোনো শহর ছিল না, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুদ্রা ছিল, তবে তা খুব কম ব্যবহৃত হতো। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। একমাত্র ধনী সাধারণ মানুষ ছিলেন সরকারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুই ও ট্যাং যুগে একটি সমাজ গঠিত হয়। এটি পুরনো ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য বহন করলেও বিশেষ করে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজাত ছিল, তা ধীরে ধীরে পরবর্তী ধরনের চীনা "জেন্ট্রি" ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল, বিশেষ করে ট্যাং রাজবংশের শেষ শতকে। তখন প্রকৃত শহর, প্রকৃত ব্যবসায়ী শ্রেণি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জনসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। ট্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার দ্বারা প্রবর্তিত কর ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা রাজবংশের শেষ পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। সম্রাটের আত্মীয়দের অভিজাত উপাধি প্রদান বিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু হান যুগ বা লি শি-মিন-এর সময়কার অভিজাত শ্রেণি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ট্যাং রাজবংশ ছিল ক্রমাগত পরিবর্তন ও অস্থিরতার একটি যুগ। এবং, সুই ও ট্যাং, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ট্যাং-র মাধ্যমেই জাপানিরা চীনা সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থার সাথে প্রথম ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়। নিজেরাও একটি প্রবল অভিজাত সমাজ হওয়ায়, তারা প্রারম্ভিক ট্যাং পদ্ধতির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। তবে এমনকি ১৫০ বছর পরের চীনকেও তাদের কাছে দুর্বোধ্য ও অনুকরণীয়হীন মনে হতো। প্রারম্ভিক ট্যাংয়ে বিদ্যমান বিশেষ তুর্কি উপাদানসমূহও তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল, কারণ সেগুলো কোরীয় রাজ্য ও জাপানে তখনকার প্রচলিত অনুশীলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। ৬০৭ সালে পায়কচে সুই রাজবংশে দূত পাঠিয়ে কোরিয়ার উপর চীনের আক্রমণের পরামর্শ দেয়। ইয়াং-তি পায়কচের সাথে যৌথ অভিযান প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর ফলে কোরিয়ায় একটি বিশাল পরিবর্তনের সময়শৃঙ্খলা শুরু হয়। জাপানও ৬০৭ সালে একটি দূতাবাস পাঠায়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে যে, 'সুই ইতিহাস' রাজকুমার উমায়াদো—"তারাশিহিকো"—কে 'ওয়া'র রাজা হিসেবে গণ্য করেছে। ইয়াং-তির কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছিল জাপানি শুনেছে যে সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে আগ্রহী এবং তারা চীনে পাঠিয়ে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ পাঠাতে চায় পাঠচর্চার উদ্দেশ্যে। ''নিহোন শোকি''তে উল্লেখ আছে দূতদলের মধ্যে এমন একজন অভিবাসী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চীনা ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারতেন। চীনা রিপোর্ট অনুসারে, চিঠিতে রয়েছে ঐতিহাসিক বাক্য: "সূর্যোদয় দেশের সম্রাট, সূর্যাস্ত দেশের সম্রাটকে এই চিঠি প্রেরণ করছেন।" ইয়াং-তি সমতার ধারণা পছন্দ করেননি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি প্রথম সংকেত যে, জাপানের চাহিদা ছিল চীন চীন দেশে তাদের নাম 'ওয়া' না বলে 'নিহোন' হিসেবে জানুক। প্রকৃত নির্বাহীকরণ দেখা যায় ৬৪৮ সালে ট্যাং রাজবংশে প্রেরিত দূতাবাসের চীনা বিবরণে “日本” প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে। বিরক্ত সত্ত্বেও, ইয়াং-তি প্রতীয়মান দেশের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধ পরিকল্পনা করছিলেন। অবিলম্বে একটি চীনা দূতাবাস জাপানে পাঠানো হয়। এই বিনিময়েই জাপান প্রথমবার একটি উপযুক্ত চীনা শব্দ বেছে নেয় শাসককে উল্লেখ করার জন্য। প্রাথমিক নথিতে "大王" ব্যবহৃত হত, সম্ভবত "ওকিমি" উচ্চারণে। তবে দূতাবাস কাল নাগাদ চীনাদের সাথে সমতামূলক শিরোনাম ব্যবহার অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছিল। উচ্চারণ ও উপাধি বিষয় বিবেচনা করে "天皇" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি সম্রাটের উচ্চ মর্যাদার প্রতীক; চীনা 'হুয়াংদি' যা সমান মর্যাদার প্রতীক। জাপানি উচ্চারণে “সুমেরা মিকোতো”—যার বাংলা অর্থ 'সর্বোচ্চ শাসক'। চীনা চিঠিতেও এটি লক্ষ করা গেল। ''নিহোন শোকি''তে ৬২৮ ও অন্যান্য লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। সুইকর সময়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হতো সুমেরা মিকোতো। তবে আধুনিক জাপানে এটি 'তেন্নো' নামে পরিচিতি লাভ করে। ৬০৮ সালের দূতাবাস দেখে চীনারা এটি কে 'জাপানের হুয়াং' বা সর্বোচ্চ সম্মানিত সার্বভৌম হিসেবে মনেছেন; অ্যাস্টন এ এটি অনুবাদ করেছেন "সার্বভৌম". মোট চারটি দূতাবাস পাঠানো হয় উল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে। শেষ দূতাবাস প্রেরণের সময় সুই রাজবংশ ইতিমধ্যেই পতনের দিকে ঝুঁকছিল। জাপানি দূতরা নিরাপদে ফিরতে বিপাকে পড়েন। তার ১৬ বছর পর পুনরায় কোনো বিনিময় হয়নি। এখানে স্পষ্ট যে, চীন জাপানে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল—অসভ্য উচ্চাভিলাষ সহ্য করলেও তারা চেষ্টা করছে দেশে এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যত সম্ভব জানতে। এটি তাদের কোরিয়া নিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। তবে ট্যাংও কোরিয়ায় উচ্চাভিলাসী ছিল। অস্বীকার বা রাজবংশ পরিবর্তনের কারণে চীনের সাথে সম্পর্ক বন্ধ করা জাপানের স্বার্থে বাধ্যতামূলক ছিল না। এক মতামত বলছে, রাজকুমার উমায়াদোর রাজনীতির অর্ধ-অবসর ৬০৫ সালের পর এই দূতাবাস উদ্যোগগুলোর প্রসার প্রধান ব্যক্তি ছিলেন এবং অন্য কেউ ততটা ভাবতেন না। ৬২০ সালে ''নিহোন শোকি'' জানায় যে, রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা নো উমাকো একত্রে "সম্রাটদের ইতিহাস, দেশের ইতিহাস। ওমি, মুরাজি, টোমো নো মিয়াতসুকো, কুনি নো মিয়াতসুকো, ১৮০ বে এবং মুক্ত প্রজাদের মৌলিক নথি" তৈরি করেন। যদি প্রকৃতপক্ষে এ সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। তবে এটি অমূল্য হত। কিন্তু একমাত্র একটি কপি ছিল এবং ৬৪৫ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জাপানের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে, কারণ ঐ ঐতিহাসিক কাজ তা অবশ্যই তুলে ধরত। আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে, ৬০২ সালে পায়কচে ভিক্ষু কানরোক প্রথমবার চীনা পদ্ধতিতে একটি বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে জাপানে। এরপর ৬০১ সালের ভিত্তিতে উমায়াদো ২১টি ৬০-বছরের চাকার ভিত্তিতে ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পিছিয়ে তার শাসকের বংশানুক্রম নির্ধারণ করেন। বর্ষপঞ্জির সেই চক্রের বিশেষ জ্যোতিষ্কীয় গুরুত্ব উপস্থাপন চীনা থেকে নেওয়া। ''নিহোন শোকি''তে উল্লেখ আছে রাজকুমার উমায়াদো ৬২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু যেকোনো জাপানি ঐতিহাসিক তালিকা জানায় এটি ঘটেছিল ৬২২ সালে। এই অংশে মুখ্য অনেক তারিখ এক বছর ভিন্ন। কেন তা এমন তা নিয়ে কোনো তত্ত্ব নেই। বিকল্প সূত্র একটি প্রাচীন জীবনী ভিত্তিক। এটি বছর ও মাসের দিন ভাগে পৃথক। জাপানিরা সেই দ্বিতীয় তারিখ মেনে নিতে উৎসাহী। এই সূত্রগুলোর একটি হচ্ছে আসুকা যুগের হোর্যুজি বৌদ্ধ মূর্তির উপচর্চা–যাতে খোদাই করা হয়েছে যে তার মা মৃত হন সুইকোর ২৯তম বর্ষের ১২তম মাসে (৬২১)। পরের মাসে তিনি অসুস্থ হন। প্রধান স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় মাসের ১১ তারিখে মারা যান (৬২২)। রাজকুমার মারা যান দ্বিতীয় মাসের ২২ তারিখে। তিনজন একই সমাধিতে দাফন হন। তাঁর বয়স ছিল ৪৯। সমাধি ইকারুগা থেকে ২০ কিমি দূরে, বিডাতসু ও ইয়োমেইএর সমাধির কাছে অবস্থিত। পরে সুইকো ও কোতোকুর সমাধি একই এলাকায় নির্মিত হয়েছে। প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে শোতোকু তাইশি প্রাচীন কাল থেকেই একজন অত্যুৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে সন্মানিত ছিলেন—প্রাথমিক কারণ ছিল বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৌদ্ধধর্ম ৮ম শতক পর্যন্ত রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কেবল অনুমোদিত ছিল এবং একারণে অনেকেই সন্দিহানে ছিলেন। তবে রাজকুমার উমায়াদো ও সোওগা উমাকো ব্যক্তিগতভাবে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং উমায়াদো এর কয়েকটি প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইকারুগা প্রাসাদের আশেপাশে মন্দিরগুলোর একটি ক্লাস্টার—বিশেষ করে হোর্যুজি। এটি ৬৭০ সালে আগুনে ধ্বংসের পর পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং জাপানের প্রাচীনতম কাঠের নির্মাণ। এটি ছিল উমায়াদোর ব্যক্তিগত মন্দির, তখন পরিচিত ইকারুগারেদা তথা "ইকারুগা মন্দির" নামে। তিনি প্রথম জাপানি হিসেবে বই রচনার কারণে অর্থবহ ভূমিকাও রেখেছিলেন। ১৪শ শতক থেকে, তিনি সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা জাপানের ১৮৬৮ সালের পর ক্ষমতা লাভ করে। প্রতিটি জাপানি স্কুলছাত্র ''<নিহোন শোকি''র ১৭ অনুচ্ছেদের সংবিধান অধ্যয়ন করতো। তবুও কেউ ২০শ শতাব্দীর সামরিক কর্তৃত্ববাদীদের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেনি; তাঁর মর্যাদা এখনও অনন্য উচ্চে রয়েছে। ৬২৩ সালে মিমানা থেকে সিল্লা নির্মূল করার উদ্দেশ্যে কোরিয়ায় আক্রমণের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এটি ২০ বছরের বিরতি পর ঘটে। দরবারের কর্মকর্তাদের মতামত দ্বিখণ্ডিত হয়। এক পক্ষ (যার মুখপাত্র তানাকা নো ওমি) মিমানা যথার্থ ব্যবহারের তদন্তের জন্য দূত প্রেরণে সমর্থন করে; অন্য পক্ষ (যার নেতৃস্থানীয় হচ্ছেন নাকাতোমি নো কুনি নো মুরাজি) সেনাবাহিনী প্রেরণের পক্ষে, শিলেকে বের করে মিমানাকে পায়কচের নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তরের দিকে ধাবিত করেন। অবশেষে দূত প্রেরিত হয় এবং সিল্লা একটি দূতাবাস পাঠায় প্রস্তাব নিয়ে। পুরোনো ব্যবস্থা অনুযায়ী মিমানা নামমাত্র শুল্ক দিবে। সিল্লা ও জাপানি কর্মকর্তাদের একটি দল মিমানায় যান চুক্তি সম্পাদনের জন্য। কিন্তু তারা ফিরে আসার আগে বড় একটা জাপানি সেনাবাহিনী করণীয়ভাবে কোরিয়ায় প্রেরিত হয় সাকাাইবে নো ওমি ওমারোর নেতৃত্বে। তিনি সম্ভবত সোওগা উমাকোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে দূতরা বারংবার যাননি এবং সবকিছু লড়াই ছাড়াই নিষ্পত্তি হয়। কোরিয়ার জাপানি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। এরপর চুক্তি হয়েছে যে যতবার জাপান দূতাবাস সিল্লা যাবে, তারা আগমনের সময় দুইটি আনুষ্ঠানিক নৌকায় স্বাগত জানাবে—একটি সিল্লা জন্য এবং অন্যটি মিমানার জন্য। মিমানায় একটি সেনাবাহিনী এবং একই সময়ে কূটনৈতিক আলোচনা করা কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। সম্ভবত দরবারে দুটি পক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করছিল। ৬২৩ সালে একটি জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃক সংঘটিত প্রদর্শনী হত্যাকাণ্ডের (কুড়াল দিয়ে হত্যাকাণ্ড!) পরে, আদালত ধর্মীয় ব্যবস্থার উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং একটি (বৌদ্ধ) ধর্ম দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়, প্রধান পদগুলো ভিক্ষুদের জন্য নির্ধারিত হয়। এর ফলে একটি আনুষ্ঠানিক জনগণনা নেওয়া হয় এবং জানানো হয় যে দেশে ৪৬টি মন্দির, ৮১৬ জন ভিক্ষু এবং ৫৬৯ জন ভিক্ষুনী রয়েছে। == "তাইকা সংস্কার" == ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে সোওগা-নো উমাকো মারা যান এবং ৬২৮-এ ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় স্যুইকো সম্রাজ্ঞীর। ''কোজিকি'' এই ঘটনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়। উমায়াদো, উমাকো ও স্যুইকোর মৃত্যুতে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যুর ঠিক আগে উমাকো স্যুইকোর কাছে অনুরোধ করেন যেন কাজুরাকি আগাতা তার হাতে দেওয়া হয়, কারণ এটি ছিল তার বংশের প্রাচীন নিবাস। তখন এটি ছিল ইয়ামাতোর ছয়টি আগাতার একটি। এটি সরাসরি শাসকের ব্যয়ের উৎস ছিল। স্যুইকো এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। যদি এই দাবি মেনে নেওয়া হতো, তাহলে সোওগা বংশ একটি নতুন অভিজাত বংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এটি অন্য সব সোওগাদের থেকে স্বাধীন হতো। এই কৌশলই পরে নাকাতোমি-নো কামাতারির জন্য প্রয়োগ করা হয়; তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের একটি নতুন ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি শুধুই বয়স্ক উমাকোর রাজনৈতিক বাস্তবতা হারানোর একটি দৃষ্টান্ত এবং তার দাবি অযৌক্তিক ছিল। পরবর্তী সম্রাট ছিলেন বিদাতসু সম্রাটের পৌত্র ও দুর্ভাগাপ্রাপ্ত রাজপুত্র ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর পুত্র। তিনি এর আগে একাধিকবার উপেক্ষিত হন। স্যুইকোর মৃত্যুর কয়েক মাস পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোওগা-নো এমিশি, উমাকোর জ্যেষ্ঠপুত্র, তখন ও-ওমি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এমিশি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জানান যে স্যুইকো সম্ভাব্য দুই উত্তরাধিকারীর কথা বলেছিলেন — রাজপুত্র তামুরা এবং রাজপুত্র উমায়াদোর পুত্র রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে — এবং তাদের উভয়কেই বলেছিলেন যেন তারা উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ না করেন। তার নিজের পুত্র, রাজপুত্র তাকেদা, এর আগেই মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকেদার সমাধিতে সমাহিত হওয়া। ''নিহোন শোকি'' অনুসারে এমিশির বিবরণে বোঝা যায় যে স্যুইকো রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন। কিন্তু স্পষ্ট করে কাউকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেননি। অধিকাংশ সদস্য রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করেন, যদিও কেউ কেউ রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়েকেও সমর্থন করেন, ফলে এমিশি সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি করেন। দুই রাজপুত্রই বংশগতভাবে সমান এবং বয়সেও প্রায় সমান ছিলেন। রাজপুত্র তামুরার বয়স ছিল ৩৬ এবং ধারণা করা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের বয়সও অনুরূপ ছিল। ''নিহোন শোকি''তে এই নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইয়ামাশিরো-নো ওয়ে জোর দিয়ে বলেন যে স্যুইকো তাকে উত্তরাধিকারী হতে বলেছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে তিনি এমিশিকে মিথ্যাবাদী বলেন। অবশেষে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হয়; এক প্রতিপক্ষ কর্মকর্তাকে এমিশি হত্যা করেন এবং ৬২৯ সালের শুরুতে রাজপুত্র তামুরাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি জোমেই সম্রাট নামে পরিচিত হন। এমিশি রাজপুত্র তামুরাকে সমর্থন করার একটি সুস্পষ্ট কারণ ছিল — তার প্রধান স্ত্রী ছিলেন সোওগা-নো উমাকোর কন্যা এবং ধারণা করা হয়, তিনি ইতোমধ্যে একটি পুত্র, ফুরুহিতো, জন্ম দিয়েছেন। অন্যদিকে, বলা হয় ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের মাও ছিলেন উমাকোর কন্যা। হয়তো এমিশি ভেবেছিলেন তামুরার সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। জোমেইর অভিষেকে আরও এক তরুণ রাজপুত্র সামনে আসেন — নাকা-নো ওয়ে। জোমেইর সম্রাজ্ঞী ছিলেন না সোওগা-নো হোতে-নো ইরাতসুমে, বরং ওশিসাকা-নো হিকোহিতোর নাতনি রাজকন্যা তাকারা। তিনি নাকা-নো ওয়ের মা। ''নিহোন শোকি''তে জোমেই সম্রাট সংক্রান্ত অংশটি সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যবর্জিত। উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা হলো: ৬৩০ ও ৬৩২ সালে তাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে দূতাবিনিময়। চীনে ২৪ বছর অবস্থানকারী এক শিক্ষার্থী এই সময় দেশে ফেরেন। অপর একজন, তাকামুকু-নো কুরামারো, ৩০ বছর পর ৬৪৪ সালে দেশে ফিরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধ। এছাড়া জোমেই তার প্রাসাদ দুইবার স্থানান্তর করেন; প্রথমবার আগুন লাগার কারণে, দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে। এটি দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধাজনক ছিল। এই সময় কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ধারণা করা হয়, শাসকের প্রাসাদ রাজধানীতে রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছিল। এই শাসনামলে একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে প্রবীণতম জীবিত রাজপুত্র এমিশি ধমক দেন, কারণ মন্ত্রীরা যথাযথভাবে সভায় হাজির হচ্ছিলেন না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারত। কিন্তু এমিশি সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরবর্তী সময়ে রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময়সূচি নির্ধারণের রীতি চালু হয়। নতুন প্রাসাদ স্থানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ হয়। এটি কোনো শাসকের দ্বারা নির্মিত প্রথম মন্দির হিসেবে পরিচিত। কোনো উত্তরাধিকারী মনোনয়ন না করেই জোমেই ৬৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার উত্তরসূরি হন তার সম্রাজ্ঞী। তিনি দ্বিতীয় নারী সম্রাট হিসেবে পরিচিত হন কোগিয়োকু সম্রাজ্ঞী নামে (তার দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল সাইমেই সম্রাজ্ঞী হিসেবে)। ''নিহোন শোকি'' এই উত্তরণের বিষয়ে কিছুই বলে না। এখানে দুইজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন — রাজপুত্র ফুরুহিতো ও রাজপুত্র নাকা-নো ওয়ে, উভয়েই সম্রাটের সন্তান তবে ভিন্ন মাতার গর্ভজাত। নাকা-নো ওয়ে ছিলেন সম্রাজ্ঞীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী (জাপানি গণনায়, আমাদের হিসেবে ১৫ বছর), সিংহাসনের জন্য কিছুটা তরুণ। তখনও শিশুদের সিংহাসনে বসানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে অনুমান করা যায়, কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণের একটি কারণ ছিল তার পুত্রকে ভবিষ্যতে সিংহাসনে বসানো। ফুরুহিতোর মর্যাদা কম হলেও, বয়সে তিনি নাকা-নো ওয়ের চেয়ে বড় ছিলেন, যদিও তার সঠিক বয়স জানা যায় না। কয়েক বছরের মধ্যে নাকা-নো ওয়ে ফুরুহিতোর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং তখন তার বয়স ২০ বছরের বেশি ছিল। এ ছাড়া রাজপুত্র ইয়ামাশিরো-নো ওয়ের কথাও ভুলে যাওয়া যায় না। তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি থাকায় কোগিয়োকুর সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে ঘটেছিল। এটি সম্ভাব্য কারণ, কারণ সোওগা-নো এমিশি ছিলেন এমন ব্যক্তি যে তিনি ঐকমত্য ছাড়া কিছু করতেন না। প্রমাণের অভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা করা যায় না। নতুন সম্রাজ্ঞীর বয়স তখন ৪৯। ''নিহোন শোকি''তে কোগিয়োকুর শাসনকালকে সোওগা বংশের পতনের সূচনার সময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জোমেইর শাসনকালে সোওগা-নো এমিশির নেতৃত্বে সব কিছু মসৃণভাবে চলছিল। তিনি আদালতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে কোগিয়োকুর শাসনকালে তার পুত্র ইরুকা কার্যত সোওগা নেতৃত্বে তাকে অতিক্রম করে এবং পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন হয়ে ওঠে। ইরুকা সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তিনি শৈশবে অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তিনি স্বেচ্ছাচারী, আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্যদের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে ওঠেন। তিনি শত্রু সৃষ্টি করতেন এবং এতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং নিজের ইচ্ছামতো এগিয়ে যেতেন। ''নিহোন শোকি''তে জোমেই তেন্নোর শাসনকাল নিয়ে খুব অল্প এবং অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। শুধু দুটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ৬৩০ এবং ৬৩২ সালে তাং রাজবংশের সঙ্গে দূতাবিনিময়। একজন শিক্ষার্থী যিনি ২৪ বছর ধরে চীনে ছিলেন, তিনি এই সময়ে দেশে ফিরে আসেন। আরেকজন, তাকামুকু নো কুরামারো, ৩০ বছর পরে ৬৪৪ সালে ফিরে আসেন এবং একজন মহা সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হন। দ্বিতীয় প্রধান ঘটনা হলো ৬৩৭ সালে এমিশি বর্বরদের সঙ্গে প্রথম সীমানা যুদ্ধের নথিভুক্তি। তবে উল্লেখ করা হয়েছে যে জোমেই দুইবার তার রাজপ্রাসাদ স্থানান্তর করেন—প্রথমবার আগুন লাগার পরে এবং দ্বিতীয়বার আসুকার উত্তরে এমন স্থানে, যেখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়। এটি ছিল বড় আকারের নির্মাণকাজের সূচনা। মনে করা হয়, শাসকের প্রাসাদ তখন রাজধানী নগরীতে রূপান্তরের পথে ছিল। তার শাসনকালের একটি গল্পে বলা হয়, জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক রাজপুত্র এমিশিকে ভর্ৎসনা করে বলেন যে, মন্ত্রীরা এবং কর্মকর্তারা আদালতে ঠিকভাবে উপস্থিত হন না। তাদের সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিল। এটি একটি ঘণ্টার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এমিশি এই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। পরে, রাজপ্রাসাদে ঘণ্টার মাধ্যমে কাজের সময় নির্ধারিত হয়। নতুন প্রাসাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল একটি বৌদ্ধ মন্দির—প্রথম যেটি কোনো শাসক কর্তৃক নির্মিত হয়। প্রথম ঘটনাটি হলো ৬৪২ সালে সোগা নো এমিশি নিজের ও তার পুত্রের জন্য কোফুন নির্মাণের বিবরণ। বলা হয়, তিনি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেন, যেন তিনি দেশের শাসক; এমনকি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের জমির লোকদেরও নিযুক্ত করেন। ইয়ামাশিরো নো ওয়ের বোন প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরের বছর এমিশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ব-উদ্যোগে দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি নিজেই একটি মন্ত্রীর টুপি তৈরি করে তা পুত্র ইরুকাকে দেন এবং ইরুকা ও-ওমি হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইরুকা ষড়যন্ত্র শুরু করেন, যাতে ইয়ামাশিরো নো ওয়েকে উত্তরাধিকার থেকে সরিয়ে ফুরুহিতো নো ওয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একটি পাদটীকায় বলা হয়েছে, "অন্য একটি বই" বলেছে যে ইরুকা নিজেই সিংহাসনে বসার কথা চিন্তা করেন। ও-ওমি হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে, ইরুকা ইকারুগা প্রাসাদ আক্রমণের জন্য সৈন্য পাঠান। প্রাসাদ ধ্বংস হয়। তবে ইয়ামাশিরো নো ওয়ে এবং তার পরিবার পাহাড়ে পালিয়ে বাঁচেন। কিন্তু তাদের কোন সম্পদ না থাকায়, শেষে সবাই আত্মহত্যা করেন। সোগা নো এমিশি যখন এটি শুনেন, তিনি ইরুকাকে "মূর্খ" বলে ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, তুমি ইয়ামাশিরো নো ওয়ের সাথে যা করেছ, অন্যরাও তোমার সাথে তাই করতে পারে। এটি ৬৪৩ সালের শেষদিকে ঘটে। ''নিহোন শোকি'' এরপর বলে যে ইরুকার অভ্যুত্থানে নাকাতোমি নো কামাকো নো মুরাজি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং নিজ দায়িত্বে রাজবংশের জীবিত রাজপুত্রদের মধ্যে একজনকে সমর্থনের জন্য ঐক্য গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য যে ৬৪১ সালে কোগুরিয়োতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে স্বৈরশাসক অধিকাংশ অভিজাতকে হত্যা করেন। জাপানি অভিজাতদের এই ঘটনার বিষয়ে না জানার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি ইরুকার বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। নাকাতোমি ধারণা করেছিলেন যে রাজকুমার নাকা নো ওয়ে একজন ভালো নেতা হতে পারেন। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচিত না থাকায় একটি ফুটবল খেলার সময় তার সাথে পরিচয় ঘটান এবং দ্রুত তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যাতে তারা নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং সন্দেহ না জাগে, তারা উভয়ে কনফুসিয়ান দর্শন ও চীনা ভাষার পাঠে ভর্তি হন এবং একসাথে যাতায়াত করতেন। তাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল ইরুকাকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সোগা বংশের মধ্যেই সহযোগী খোঁজা। এই উদ্দেশ্যে নাকা নো ওয়ে সোগা বংশের একজন কন্যাকে বিয়ে করেন। এই মিত্রতা ছিল সোগা নো কুরোয়ামাদা নো ইশিকাওামারোর সঙ্গে। তিনি সোগা নো এমিশির ভাইপো ছিলেন। তিনি তার শাখা রাজপরিবারের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখে এবং তার তিন কন্যা শাসকদের বিয়ে করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইরুকাকে দরবারেই হত্যা করার একটি জটিল পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। যখন সময় আসে, ইরুকার ওপর আক্রমণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন রাজকুমার নাকা নো ওয়ে নিজেই তার তরবারি বের করে ইরুকাকে আঘাত করেন। ঘটনাটি তেন্নোর (নাকা নো ওয়ের মা) উপস্থিতিতে ঘটে এবং রাজকুমার তাকে বলেন যে ইরুকা রাজবংশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। এরপর ইরুকার মরদেহ সৌজন্য সহকারে এমিশির কাছে পাঠানো হয়। তারা একদিন সময় নিয়েছিল সোগা নো এমিশির ওপর আক্রমণের জন্য সৈন্য জড়ো করতে, যুদ্ধে অংশ নেয় বহু রাজপুত্রের বাহিনী। এমিশি তার পক্ষে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজপুত্রের বাহিনী পৌঁছানোর পর এমিশির অধিকাংশ লোক তাকে পরিত্যাগ করে। নিজের পরিণতি অনুধাবন করে এমিশি ইতিহাসের সেই পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলেন যা সোগা নো উমাকো এবং রাজপুত্র উমায়াদো তৈরি করেন এবং যা তার কাছে ছিল, যদিও একজন লেখক সেই পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ অন্তত উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং তা নাকা নো ওএর কাছে হস্তান্তর করেন। এসব ঘটনার সময় নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন ৩১ বছর বয়সী এবং নাকা নো ওএ ছিলেন ১৯ বছর বয়সী। রাজপুত্র ফুরুহিতো নো ওএ ছিলেন নাকা নো ওএর (সৎ) বড় ভাই। ''নিহন শোকি''তে বলা হয়েছে, নাকাটোমি নো কামাকো নাকা নো ওএকে পরামর্শ দেন যে নিজের বড় ভাইয়ের আগে সিংহাসনে আরোহণ করা অনুচিত হবে। তাই তিনি প্রস্তাব দেন কোগিওকু তেন্নোর ভাই রাজপুত্র কারুকে সিংহাসনে বসানো হোক। সেটাই বাস্তবায়িত হয়। তিনি হলেন কোতোকু তেন্নো। কোগিওকু তার পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো সম্রাটের পদত্যাগ। এটি পরে নিয়মিত ঘটনার রূপ পায়। আরেকটি প্রথম ঘটনা হিসেবে, যার পুনরাবৃত্তি পরে বহুবার হয়েছে, রাজপুত্র ফুরুহিতো প্রকাশ্যে উত্তরাধিকার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে একটি প্রত্যন্ত মন্দিরে অবসর নিয়ে। এসমস্ত ঘটনা সোগা নো এমিশির মৃত্যুর পরদিন রাজপুত্র কারুর আনুষ্ঠানিক সিংহাসনে আরোহণসহ ঘটে। নতুন শাসন ব্যবস্থা কোনো সময় নষ্ট না করেই জানিয়ে দেয় যে পরিবর্তন আসন্ন। প্রাচীন উপাধি ও-ওমি ও ও-মুরাজি বিলুপ্ত করা হয় এবং তার পরিবর্তে নতুন উপাধি হিদারি নো ওমাচিগিমি এবং মিগি নো ওমাচিগিমি প্রবর্তন করা হয়, যেগুলো ইংরেজিতে সাধারণত চীনা উচ্চারণে সাদাইজিন (বামমন্ত্রী) ও উদাইজিন (ডানমন্ত্রী) নামে পরিচিত, যেখানে বাম মানে উর্ধ্বতন এবং ডান মানে নিম্নতম। আবে নো ওমি নো কুওয়ারামারো প্রথম পদে এবং সোগা নো ওমি নো ইশিকাওয়ামারো দ্বিতীয় পদে নিয়োগ পান। নাকাটোমি নো কামাকো পান অপেক্ষাকৃত ছোট একটি উপাধি – উচিনোওমি বা নাইজিন। এটি পরে নাইদাইজিন নামে পরিচিত হয় এবং নারা যুগে উদাইজিনের পর তৃতীয় অবস্থানে ছিল। নতুন মন্ত্রীদের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে যুবরাজের নিচে রাখা হয়। এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক মর্যাদাক্রম ছিল না। উচিনোওমি উপাধি প্যেকচে সরকারের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" এবং ''নিহন শোকি'' অনুসারে এটি বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে পদোন্নতি ও পদাবনতি সহ নাকাটোমি নো কামাকো প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ পাবেন। তিনি যে অভ্যন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা হলো প্রাসাদের কাজের অভ্যন্তর। "মহামন্ত্রীরা" নীতিগত বিষয়ে মনোনিবেশ করবেন। কোতোকুর সিংহাসনে আরোহণের পাঁচ দিন পর প্রাসাদের সব কর্মকর্তাদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উপরের পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করা হয়। সম্রাট, অবসরপ্রাপ্ত সম্রাজ্ঞী এবং যুবরাজ সবাই উপস্থিত ছিলেন। লকর্মকর্তাদের সম্রাটের ইচ্ছার প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতার শপথ করানো হয়। এ সময়ই তাইকা শাসনামলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত ধারাবাহিকভাবে রাজাদেশ জারি হতে থাকে, যেগুলো শুধু প্রাসাদ নয়, পুরো দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এই সময় থেকে শতকের শেষ পর্যন্ত ঘটা প্রায় প্রতিটি ঘটনার ওপরই গবেষকদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আমি এখন পর্যন্ত ''নিহন শোকি''র উপর ভিত্তি করে যা কিছু লিখেছি, যেগুলো তা সম্পূর্ণ ভুল। বিশেষভাবে, কিছু দাবি করা হয় যে ইরুকার হত্যাকাণ্ড এবং কোতোকুর সিংহাসনে আরোহণ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ছিল না, বরং নাকা নো ওএ ছিলেন প্রচলিত "উর্ধ্বতন রাজকুমার" মাত্র, যাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক সংবিধান অনুসারে থাকা প্রয়োজন ছিল। নাকাটোমি নো কামাকো ছিলেন মধ্যম স্তরের এক কর্মকর্তা যার কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। পুরো তার বিদ্রোহে ভূমিকা রাখার কাহিনী সাজানো হয়েছিল, কারণ ''নিহন শোকি'' রচনার সময় তার বংশধরেরা ক্ষমতাশালী ছিল। কোনো "অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী" পদ ছিল না। তাইকা শাসনামল ছিল না, এমনকি কোনো সংস্কার রাজাদেশও জারি হয়নি। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ অবশ্য তুলনামূলকভাবে মাঝামাঝি অবস্থান নেন। কিন্তু খুব কমই আছেন যারা ''নিহন শোকি''র সবকিছু যাচাই-বাছাই ছাড়া মেনে নেন। ''নিহন শোকি'' দাবি করে যে আমরা এখন যে শাসন ব্যবস্থা দেখছি, সেটির উৎপত্তি এই সময়েই ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রচারমূলক রচনা। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে কিছু পরিপূরক প্রমাণও রয়েছে—অষ্টম শতকের অন্যান্য কিছু বই যেগুলো সরকারি কমিটির মাধ্যমে লেখা হয়নি এবং এমনকি অল্প সংখ্যক প্রকৃত সরকারি নথিপত্রও আছে, যেমন কর বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের চিহ্ন। স্থানীয় প্রশাসনের জন্য প্রদেশ/জেলা পদ্ধতির সূচনার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অন্যান্য বইতেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ এত বেশি যে এসব কিছু পুরোপুরি বানানো বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। লেখকরা বইটি প্রকাশের মাত্র ৭৫ বছর আগের ঘটনা লিখেছেন। তাদের পিতামহ বা পিতারা এসব ঘটনার অংশ ছিলেন এবং পাঠকদেরও পূর্বপুরুষেরা তাতে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে, পঞ্চম শতকের বিষয়ে লেখার তুলনায় এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জনের সুযোগ অনেক কম ছিল। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে এই বিবরণ নিছক নিরপেক্ষ নয়। নতুন সরকার প্রথম যে বিষয়টির মুখোমুখি হয় তা হলো কোরিয়ার তিনটি রাজ্য থেকে একযোগে দূতাবলীর আগমন। ''নিহন শোকি'' তেমন স্পষ্ট নয় ঘটনাগুলো সম্পর্কে। তবে জাপানি পক্ষ প্যেকচের উপস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, যেখানে তারা মিনামাকে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তোলে। অনুমান করা হয়, এটি এসেছে ৬৪২ সালে প্যেকচে ও কোগুরিয়োর মধ্যে একটি মৈত্রী গঠিত হওয়ার পরে। এটি সিলার উপর বড় পরাজয় আরোপ করে, সম্ভবত মিনামা কিংবা তার একটি অংশ দখল করার মাধ্যমে। আট মাস পর আবার দূতাবলী আসে এবং মিনামা নিয়ে নতুন বিবাদ শুরু হয়। তখন মনে হয় নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এমন এক অর্থহীন বিষয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বোকামি। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত তাকামুনে নো কুরামারো। তিনি চীন থেকে ৩০ বছর পর ফিরে আসেন। তাকে সিলায় পাঠানো হয় এবং তিনি বিষয়টির অবসান ঘটান। মিনামা কূটনৈতিক সত্তা হিসেবে অস্তিত্ব হারায় এবং জাপান অঞ্চলটির ওপর সব দাবি পরিত্যাগ করে। এটি একটি সাধারণ বাস্তবতা যে চীনের ক্রমাগত চাপে কোরিয়া তখন নিজেই নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছিল। ৬৪৪ সালে কোগুরিয়ো মাঞ্চুরিয়ায় লিয়াও নদী সীমান্তে চীনের একটি বিশাল হামলা প্রতিহত করে এবং আরও সংঘাত সামনে অপেক্ষা করছিল। জাপানিরা তখন যা ঘটছিল তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল। এটি জাপানকে আত্মরক্ষা উপযোগী করতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ তৈরি করেছিল। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই দুই উর্ধ্বতন মন্ত্রীকে আদেশ দেওয়া হয় যে তারা "মায়েতসুকিমি" এবং "তোমো নো মিয়াতসুকো"দের থেকে মতামত নেবেন কীভাবে শ্রম কর নির্ধারণ করা যায় যাতে জনগণের আপত্তি না থাকে। মায়েতসুকিমি চীনা অক্ষর দ্বারা বোঝানো হয়। এটি চীনে প্রশাসনের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ করে। এখানে ধারণা করা হয় এটি ওমি ও মুরাজি অভিজাত গোত্রের জন্য একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হয়তো টুপি মর্যাদা ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের নির্দেশ করে। এটি আনুমানিক ১০ জন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী গোত্র প্রধানদের কমিটি সাধারণত ১০ জনের আশেপাশে থাকত, পারকিনসনের সীমা অনুযায়ী – ১২ জনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট কোনো কমিটি কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। "তোমো নো মিয়াতসুকো" স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে সামরিক ও গণপূর্ত কাজের জন্য পুরুষদের নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন। আমি এখনো করব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলিনি, কারণ প্রাচীন সময়ের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে এ সময়ের সব এশীয় সমাজ, চীনসহ, তিন ধরনের করের ওপর নির্ভর করত—কৃষকদের কাছ থেকে ধান/শস্য, কৃষক নন এমন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বস্ত্র)। জনসাধারণের কাজে শ্রম। আমরা অনুমান করি, এই প্রাচীন সময়ে ব্যবস্থাটি নারা যুগের মত এতটা সুবিন্যস্ত ছিল না। তবে কিছু না কিছু থাকতেই হতো। না হলে কোফুন (সমাধিস্তূপ) তৈরি হতো না। "তোমো নো মিয়াতসুকো"-রাই এসব কাজের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করতেন এবং সম্ভবত তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করতেন। ''নিহন শোকি''তে পরবর্তী ঘটনাবলি বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো আমরা জানি এই ঘটনাগুলো কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। আমাদের কাছে নারা যুগের শুরুর সময়ের সরকার কেমন ছিল তার অনেক তথ্য আছে, এমনকি কিছু আদমশুমারি রেজিস্টার ও কর নথিপত্রও আছে, যেগুলো দেখায় যে কিছু এলাকায় বাস্তবে সরকার কীভাবে কাজ করেছিল। ''নিহন শোকি'' যদিও প্রায় একমাত্র উৎস, এটি আমাদের অনেক রাজাদেশের বিবরণ দেয়। তবে এটি খুব কমই বলে যে এসব আদেশ কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বা পরবর্তীতে কীভাবে কাজ করেছে। বোঝা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতই একটি পরীক্ষানিরীক্ষার ধারা ছিল, কারণ কিছু আদেশ কোনো ফল দেয়নি এবং দ্রুতই নতুন আদেশে প্রতিস্থাপিত হয়। আমরা এই প্রক্রিয়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করতে পারি, সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত বিষয়। ধাপগুলো হলো ৬৪৫ সালের পরপর সময়কাল, এরপর কোরিয়ায় সঙ্কট যা ৬৬০ সালে তাং সাম্রাজ্যের প্যেকচে দখল ও তার জাপানের উপর প্রভাব। শেষে ৬৭২ সালে নাকা নো ওএর ছোট ভাই রাজপুত্র ওআমা সিংহাসন দখল করেন। অতিরিক্ত বিষয় হলো তথাকথিত "জিনশিন যুদ্ধ" যা ৬৭২ সালে ওআমাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ''নিহন শোকিল'' এটি বিশদভাবে বর্ণনা করে, ফলে আমরা আসুকা যুগের সমাজকে বাস্তবে কার্যকরভাবে কাজ করতে দেখি। আর যুদ্ধটি বই প্রকাশের মাত্র ৪৮ বছর আগের ঘটনা। তাই অনেক অংশগ্রহণকারী তখনো জীবিত ছিলেন। কারণ এই কাহিনী রাজাদেশের ধারাবাহিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, আমরা রাজপুত্র নাকা নো ওএ এবং নাকাটোমি নো কামাকো (পরবর্তীতে কামাতারিতে নামকরণ) – তাদের মধ্যে অনুমিত অংশীদারিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। সম্ভবত তাদের একজন ছিলেন চিন্তার মানুষ আর আরেকজন ছিলেন সেই কাজ বাস্তবায়নের জনশক্তি, কিংবা তারা দুজনেই উভয় ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। আমরা জানি যে রাজবংশ কামাকোর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ ছিল, কারণ তারা তার বংশধরদের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে ফুজিওয়ারা বংশ হিসেবে এক অভূতপূর্ব মর্যাদা দিয়েছিল—একটি ঘটনা যা পরবর্তী কয়েক শতকে জাপানের সরকার কাঠামোর বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আমার মতে, শুধুমাত্র এই ফুজিওয়ারার ভবিষ্যৎ উত্থানই প্রমাণ করে কামাকোর ৬৪৫ সালের ঘটনাবলিতে এবং তার পরবর্তী পরিবর্তনগুলিতে গভীর জড়িততা ছিল। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পর, তারা পাঁচটি প্রধান বিষয়ে নীতিনির্ধারণ করে একাধিক ফরমান জারি করে। প্রথম ফরমানে "পূর্ব প্রদেশসমূহে" গভর্নর নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয় জনসংখ্যার আদমশুমারি করতে, তা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক বা স্থানীয় অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে, তাতে কিছু আসে যায় না। একইসাথে তারা কতখানি জমি চাষ করছে, তাও নথিভুক্ত করতে বলা হয়। গভর্নর হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়, তারা সবাই রাজধানী থেকে আগত প্রভাবশালী অভিজাত। ফরমানে গভর্নরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা ছিল। এরা স্থায়ী গভর্নর ছিলেন না, যেমনটা পরে প্রতিষ্ঠিত হয়, বরং কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে রাজধানীতে ফিরে আসার নির্দেশ ছিল তাদের। তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন অপরাধ তদন্ত বা অন্যান্য বিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বরং জনসংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে রাজধানীতে ফিরে আসে। তবে, এটা স্পষ্ট যে এটি ছিল শুধুই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নিয়মিত প্রাদেশিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। "পূর্ব প্রদেশ" বলতে ফরমানে কী বোঝানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই কর্মকর্তারা প্রকৃতপক্ষে প্রায় এক মাস পর রাজধানী ত্যাগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণায় ইয়ামাতোর ৬টি আগাতায় কর্মকর্তাদের নিয়োগের কথা বলা হয়, যাদের একইভাবে আদমশুমারি ও ভূমি নিবন্ধন করার আদেশ দেওয়া হয়। এই এলাকাগুলো ছিল তাকেচি, কাতসুরাকি, তোচি, শিকি, ইয়ামাবে ও সো — যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে শাসক বংশকে সরাসরি রাজস্ব সরবরাহ করত। ধারণা করা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের বিবরণ নির্ধারণের জন্য এগুলো পরীক্ষামূলক এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তৃতীয় ঘোষণায় প্রাসাদে একটি ডাকবাক্স ও একটি ঘণ্টা স্থাপনের কথা বলা হয়। যাদের কোনো অভিযোগ ছিল, তারা প্রথমে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। কিন্তু যদি তাদের সমস্যা উপেক্ষা করা হতো, তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ ওই বাক্সে ফেলে দিতে পারত। এমনকি তাতেও ফল না হলে তারা ঘণ্টা বাজাতে পারত। একজন কর্মকর্তা এসে তাদের সাথে কথা বলত। এটি ছিল চীনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। চতুর্থ ঘোষণাটি ছিল সন্তানদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত। যদি কোনো সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ই স্বাধীন হতো, তাহলে তাকে পিতার পরিবারের সাথে নথিভুক্ত করা হতো। কিন্তু যদি একজন পরাধীন হতো, তাহলে সন্তানকে সেই অস্বাধীন পিতামাতার সাথেই নথিভুক্ত করা হতো — সে পিতা হোক বা মাতা। যদি দুটি ভিন্ন মনিবের অধীন দুই পরাধীন ব্যক্তি সন্তান জন্ম দিত, তাহলে সন্তান মায়ের সাথেই থাকত। আমরা এই সময়কার পরাধীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব কমই জানি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অসংখ্য শ্রেণির লোক ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে সেবক ছিল যারা দাস ছিল না এবং যাদের বিক্রি করা যেত না, আবার এমন লোক ছিল যারা প্রকৃত দাস হিসেবে বিবেচিত হতো — সম্ভবত যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে থেকেই এসেছে তারা। নারা যুগে অপরাধীদের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাসত্বে দণ্ডিত করা যেত। অপরাধীদের সন্তানরা নিজেদের ইচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে পারত যেন তাদের পিতা-মাতার স্বাধীনতা বজায় থাকে। ঋণের কারণেও কেউ দাসত্বে পড়তে পারত। এই ফরমানের উদ্দেশ্য ছিল কর নির্ধারণের জন্য ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করা। অস্বাধীন ব্যক্তিদের থেকে সরাসরি কর নেওয়া হতো না, বরং তাদের মনিবের উপর সেই কর আরোপ হতো। এই ঘোষণাসমূহের শেষ পদক্ষেপ ছিল বৌদ্ধ মঠগুলোর নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রতিটি মঠে তিনজন কর্মকর্তা সহ একটি আদর্শ অভ্যন্তরীণ প্রশাসন গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন প্রণয়নের তৎপরতার ঠিক পরেই, ''নিহোন শোকি'' ঘোষণা করে যে রাজকুমার ফুরুহিতো ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিবি নো কাসা নো ওমি শিতারু স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সহ-ষড়যন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করলে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ফুরুহিতোকে হত্যা করার জন্য সৈন্য পাঠানো হয় এবং সফলভাবে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযোগভুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দুইজন ছিলেন সোগা ও আয়া বংশের সদস্য। এই ধরনের ঘটনা পরবর্তী একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায়শই ঘটেছে। কোনটা প্রকৃত ষড়যন্ত্র ছিল আর কোনটা ছিল অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নির্মূল করার অজুহাত — তা বলা কঠিন। আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে উভয় ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। রাজকুমার নাকা নো ওয়ে/তেনচি টেনোর শাসনামলেও এধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। তার সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কেউ কেউ প্রতিরোধ গঠনের চেষ্টা করেছে — এটা খুব অবাক করার মতো কিছু নয়। কিন্তু একই সাথে এটা ভাবাও যথার্থ যে তিনি জোসেফ স্তালিনের মতো অপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করতেন। বছরের শেষে প্রাসাদ আসুকা থেকে নানিওয়াতে স্থানান্তর করা হয়। এটি অভ্যন্তরীণ সমুদ্রের তীরে অবস্থিত। ওজিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ওজিন ও তার পুত্র নিন্তোকু তাদের প্রাসাদ নানিওয়াতে স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর এই প্রথমবার নতুন বছরের প্রথম দিনেই নানিওয়াতে সরকার প্রধান সংস্কার ফরমান জারি করে। এটি জাপানে "নববর্ষ ফরমান" নামে পরিচিত। এটি ছিল দেশ শাসনের জন্য তাদের পরিকল্পনার সবচেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে তখনকার সব ধরনের জমির মালিকানা বাতিল করে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, সমস্ত জমি ও জনগণ সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জমির আয়ে জীবনযাপন না করে, অভিজাতরা (যারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা হবেন) বেতন পাবেন। এরপর অংশটির বাকি অংশে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে একটি রাজধানী, যার নিজস্ব কাঠামো ও কর্মকর্তা থাকবে, প্রদেশ ও জেলা গঠন করতে হবে, সেইসাথে ছোট ছোট ইউনিট যেমন প্রহরীসহ চৌকি, ডাক স্টেশন ও ঘোড়ার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রথমে এই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলোর মধ্যেই কার্যকর করা হবে। কোন অঞ্চল এতে অন্তর্ভুক্ত তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় অংশে ব্যাপক আদমশুমারি প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল একটি নিয়মিত ভূমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা — যেটি তখন চীন ও কোগুরিয়োতে প্রচলিত ছিল। ফরমানে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে কিভাবে জমি চীনা একক — চো (২.৪৫ একর) ও তান (এক চো-এর দশমাংশ) — অনুযায়ী পরিমাপ করা হবে। পাশাপাশি প্রতি চো জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ধানের গুচ্ছের ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ অংশে তৎকালীন সমস্ত কর ব্যবস্থা বাতিল করে একটি সরলীকৃত করব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। এতে থাকবে ধানে পরিশোধযোগ্য ভূমি কর, নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশমি কাপড়ে নির্ধারিত মাথাপিছু কর (যা সমমূল্যের অন্য স্থানীয় পণ্যে পরিশোধ করা যাবে) ও একটি মানক শ্রম কর — যার মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ সজ্জিত সৈনিক ও ঘোড়া প্রদান, সাধারণ শ্রমিক এবং অভিজাতদের প্রাসাদে কাজ করার জন্য দাসী ও পরিচারিকা পাঠানোর ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে এই শ্রম কর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়। এই পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হয়নি — বরং কয়েক দশকের কঠিন পরিশ্রমের পরই তা বাস্তবায়িত হয়। অনেকের ধারণা, ''নিহোন শোকি''তে যেভাবে ফরমানটি উপস্থাপিত হয়েছে, তা আসলে অনেক পরে রচিত হয়েছে — যখন এই সব ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর হয়ে গেছে, ফলে এটি যা সফল হয়েছে তা বর্ণনা করে, আসল উদ্দেশ্য নয়। তবে এটা সরাসরি চীন বা কোগুরিয়োর প্রশাসনিক আইনবিধি থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দেশগুলোতে প্রচলিত ব্যবস্থারই একটি সংস্করণ জাপানে প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি সফল হলে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত মোট সম্পদের অনেক বেশি অংশ সরকারের হাতে আসত। এটি সরকারকে অর্থ ব্যয়ে আরও স্বাধীনতা দিত। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এমনভাবে গঠিত ছিল যাতে অধিকাংশ সম্পদ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। অভিজাতদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন ব্যয় কমে যায়। এর ফলে জাপানের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারত। এটি কোরিয়াকে ঘিরে শুরু হওয়া অস্থিরতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে অনেক গবেষক তান (৩০ * ১২ তসুবো বা ১৮০ * ৭২ ফুট জমি) ও চো (১০ তান) এককের সংজ্ঞা এবং এগুলোর জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট করহারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই পরিমাপ পদ্ধতি হুবহু ৫০ বছর পর প্রণীত তাইহো বিধির মতো। এর আগে জমি পরিমাপের জন্য চো, তান ও তসুবো ব্যবহারের আর কোনো উদাহরণ নেই — ৬৮৯ সালের "আসুকা নো কিয়োমিহারা বিধি"-এ এগুলো প্রথম দেখা যায়। এর আগে ব্যবহৃত একক ছিল "শিরো"। এটি প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ। এছাড়াও প্রদেশগুলোকে যে জেলাগুলোতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফরমানে বলা হয়েছে, "যদি কোনো জেলায় ৪০টি গ্রাম থাকে তবে তা বড়, যদি ৪-৩০টি গ্রাম থাকে তবে তা মাঝারি, আর ৩টির কম হলে তা ছোট জেলা।" তাইহো বিধিতেও একই ধারা আছে। তবে সেখানে জেলা ৫ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং আকার ভিন্ন। যদিও বিষয়বস্তু ভিন্ন। কিন্তু বিন্যাস ও ভাষা এক। নারা যুগে ব্যবহৃত জেলার সাধারণ শব্দ ছিল "কোরি" (郡)। এটি ফরমানে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীর মূল নথিতে এর কোন ব্যবহার নেই; সেখানে "হিয়ো" (評) ব্যবহৃত হয়েছে। ফরমানে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্যও নারা যুগের পদবী ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর নথিতে আলাদা নাম দেখা যায়। 郡 ও সংশ্লিষ্ট পদগুলো ছিল চীনা প্রভাবাধীন, আর 評 ও তার পদগুলো ছিল কোরীয় রাজ্যসমূহ থেকে আগত। এর ফলে ধারণা করা হয় না যে ''নিহন শোকি''তে উদ্ধৃত ফরমানটি আসলে আসুকা কিয়োমিহারা বিধিমালার আগে বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্ণনা দেয়; বরং এটি একটি পরবর্তী সংস্করণ। যদি ফরমানের ওই অংশগুলো বৈধ না হয়। তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিত হব যে অন্য অংশগুলো বৈধ? প্রাচীন জমি ধারণের প্রথা বিলুপ্ত করার বিষয়ে প্রথম অনুচ্ছেদটি নিশ্চয়ই নারা যুগের কোনো উৎস থেকে নেওয়া হতে পারে না। চতুর্থ অনুচ্ছেদের যে বিধানগুলিতে এক ধরনের করকে অন্য ধরনের করের সাথে রূপান্তরের জন্য রেশম কাপড়কে মূল্যমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা তাইহো বিধিমালার অংশ নয়, কারণ তাইহো বিধিমালা কোনো করপ্রকারের রূপান্তরের অনুমতি দেয় না। সংরক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে ''নিহন শোকি''র লেখকদের কাছে ফরমানটির পূর্ণ পাঠ্য ছিল না। তাই তারা অনুপস্থিত অংশগুলো পূরণ করেছে। তবে দলিলটির মূল উদ্দেশ্য—বিদ্যমান জমি মালিকানা ও করব্যবস্থা বিলুপ্ত করা এবং চীনা ও কোরীয় মডেলের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি ব্যবস্থা স্থাপন—তা সত্য। সবশেষে, এটাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। প্রাচীন জাপানিরা এটি কেই রূপান্তরের সূচনা বলে গণ্য করে। একটি বিতর্কিত বিষয় হলো প্রাথমিক জমি বন্টন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করার কথা ছিল। তাইহো বিধিমালায় পরিবারের প্রতিটি কর্মক্ষম সদস্যের জন্য (বয়স, লিঙ্গ ও অবস্থান অনুসারে) নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির হিসাব রাখা এবং তারপর তা যোগ করে একটি পরিবারের মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করার বিশদ নিয়ম ছিল। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত ফসল কর নির্ধারিত হতো। বিকল্প পদ্ধতি ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি প্রতিটি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া, পরিবারের গঠনের বিস্তারিত বিবেচনা না করেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, "নববর্ষ ফরমান"-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের সঙ্গে কৃষকদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ভেঙে ফেলা এবং অভিজাতদের বেতনভোগী কর্মকর্তায় পরিণত করা। একই সঙ্গে কৃষক পরিবারগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করা হতো অতিরিক্ত হয়ে যেত। বরং বিদ্যমান কৃষি সম্প্রদায় ও তাদের গৃহস্থালিকে ধরে রেখেই নতুন ব্যবস্থাকে অপেক্ষাকৃত সহজ রাখা ছিল বেশি বাস্তবসম্মত। পরবর্তী সময়ে তাইহো বিধিমালার আদমশুমারি ও জমি পুনর্বণ্টন চক্র বাস্তবায়ন এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা এত জটিল ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতেন না। এও ধারণা করা হয় যে ৬৪৬ সালে এই ধরনের ব্যবস্থা একযোগে সারা দেশে প্রয়োগ করা যাবে না, সেটা সবাই বুঝেছিল, বরং ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে—যদিও ফরমানে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এই ফরমানে সাধারণ কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান প্রভাব পড়বে এমন কিছু ছিল না, করহার ব্যতীত। করহার বৃদ্ধি না হ্রাস—তা জানা যায় না। যদি রাজস্বের বড় অংশ রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো তবে পরিবহনের জন্য উল্লেখযোগ্য শ্রম প্রয়োজন হতো। জমি বন্টন ব্যবস্থায় জমি চাষ এবং কর প্রদানের প্রধান দায়িত্ব পরিবার একককে দেওয়া হয়েছিল। এটি বিদ্যমান প্রথার ধারাবাহিকতা ছিল, না নতুন কিছু—তা স্পষ্ট নয়। বিকল্প পদ্ধতি ছিল গ্রামকে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে মূল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু বানানো, যেখানে প্রতিটি গ্রামকে নির্দিষ্ট কর ধার্য করা হতো এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বন্টনের স্বাধীনতা থাকত। যদি কৃষকদের জন্য "বে" ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতো। তবে কোফুন যুগের জাপান হয়তো অনুরূপ কাঠামোর অধীনে ছিল এবং নতুন ব্যবস্থা হতো একটি বড় পরিবর্তন। ৬৪৬ সালের দ্বিতীয় মাসে আরও একটি সাধারণ ফরমান জারি হয় যা দুইটি বিষয় নিয়ে ছিল। এটি জাতীয় অভিযোগ বাক্সের পূর্ববর্তী ঘোষণাকে জোরদার ও সম্প্রসারিত করে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে নামবিহীন পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি ও জানানো হয় যে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আসা কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলা হয়, শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার কারণে যারা রাজধানীতে এসেছিল তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায়ই বাড়ি ফিরে যেতে পারত না, কারণ কর্মকর্তারা ও অভিজাতরা তাদের অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত রাখত। সরকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয় যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মাসে পূর্ব প্রদেশে পাঠানো কর্মকর্তারা রাজধানীতে ফিরে আসে। একটি ফরমানে ঘোষণা করা হয় যে আটজন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুজন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর ''</nowiki>নিহন শোকি''তে একটি বিস্তারিত ফরমান প্রকাশিত হয় যেখানে অভিযুক্তদের নামও উল্লেখ করা হয়। প্রধান সমস্যা ছিল কিছু কর্মকর্তা তাদের অবস্থানের অপব্যবহার করে করের টাকা আত্মসাৎ ও ঘুষ আদায় করেছিল। তাদের সব অর্থ ফেরত দিতে এবং চুরির দ্বিগুণ জরিমানা দিতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগের মাধ্যমেই তাদের অপরাধ প্রকাশ পায়। কিছু স্থানীয় অভিজাত স্বেচ্ছায় ঘুষ প্রদান করেছিল। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেতনার অংশ হিসেবে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং নতুন প্রাসাদ নির্মাণজনিত কারণে জনগণের ওপর সৃষ্টি হওয়া ভোগান্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি সাধারণ ক্ষমাও দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, যারা প্রাসাদ নির্মাণে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত থাকায় অন্য কর প্রদানে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের সেই কর মওকুফ করা হয়। কয়েক দিন পর রাজপুত্র নাকা নো ওয়ে সম্রাটকে একটি পিটিশন দেন যেখানে তিনি অভিজাতদের হাতে থাকা কিছু ঐতিহ্যবাহী জমির মালিকানা বিলুপ্ত করার দাবি জানান এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে থাকা ৫২৪ জন ইম্বে (মূলত শিন্তো মন্দিরের কর্মী) ও ১৬১টি মিয়াকে (বিভিন্ন ধরণের রাজস্ব উৎপাদনকারী ইউনিট) সম্রাটকে ফিরিয়ে দেন। এরপর আরেকটি ফরমান জারি হয়। এটি কোফুন সমাধি নির্মাণ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আচার নিয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আকার ও ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ এবং চাষযোগ্য জমিতে সমাধি না বানানোর নিয়ম চালু করা। পূর্বে বর্ণিত ফরমানটিতেই বলা হয়েছিল যে একটি রাজপুত্রের সমাধি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭০০০ শ্রমদিবস খরচ করা যাবে। নিম্নতর শ্রেণির জন্য সেই অনুপাতে সীমা নির্ধারিত হবে। আজকের জাদুঘরগুলোতে থাকা অতিরঞ্জিত কবর উপকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও বিবাহ রীতিনীতি নিয়ন্ত্রণে একটি বিশদ ফরমান, স্থানীয় রীতিনীতি পরিবর্তনে একটি ফরমান জারি করা হয়—যা দেশের মধ্যে অবাধ চলাচলে বাধা দিত। ব্যক্তিগত জমি বিলুপ্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আরও নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই ফরমানগুলো এবং ঘোষিত ব্যবস্থাগুলো নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অভিজাত অসন্তুষ্ট ছিল—তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন নেই। কিছু প্রমাণ আছে যে স্থানীয় অভিজাতরা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের সহযোগিতা স্বাগত জানিয়েছিল। ৬৪৪ সালের শরতে ''নিহন শোকি''তে কান্তো অঞ্চলের এক এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থানীয় ব্যক্তি প্রচার করেন যে একটি বিশেষ পোকা (সম্ভবত কোনো শুঁয়োপোকা) এক দেবতার দূত, যাকে উপাসনা করলে পরিশ্রম ছাড়াই সবাই ধন-সম্পদ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে মানুষ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং দল বেঁধে গান গেয়ে ও মদ্যপান করে ঘুরে বেড়াতে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিছু করতে অক্ষম ছিল। রাজধানী থেকে হাতা নো মিয়াতসুকো কাওয়াকাতসু নামে এক কর্মকর্তা এসে প্রচারককে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত সঙ্কটকালে ঘটে। ধারণা করা হয়েছে, এই আন্দোলনটি কোরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের রেশম উৎপাদন প্রতিষ্ঠার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছিল। "রেশমপোকা কোরীয়দের ধনী করে তোলে, তাহলে আমাদের শুঁয়োপোকাও হয়তো আমাদের ধনী করবে"—এইরকম ভাবনা হতে পারে। হাতা বংশ রেশম উৎপাদনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। তাই কেউ কেউ অনুমান করেন যে হাতা কাওয়াকাতসুকে পাঠানো হয়েছিল এ খোঁজ নিতে যে, স্থানীয়রা এমন কোনো পোকা পেয়েছে কি না। এটি দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রেশম তৈরি করা সম্ভব। পরবর্তী কোফুনসমূহের সংখ্যা ও পরিসরের পরিবর্তনের ভিত্তিতে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন, গ্রামীণ গোত্র প্রধানরা (কুনি নো মিয়াতসুকো) তাদের আধা-রাজকীয় মর্যাদা ও ক্ষমতা হারিয়েছিল। এটি গ্রামীণ অভিজাতদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে একটি প্রবণতা নির্দেশ করে, যার ফলে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় প্রশাসন কার্যকারিতা হারিয়েছিল। যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভর্নর পাঠানো শুরু করল, তখন তারা কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ করছিল। স্থানীয় অভিজাতদের দমন না করে বরং তাদের অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা হচ্ছিল। তবে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক আয়ের পরিবর্তে সরকার-নিযুক্ত বেতনভোগী হয়ে ওঠা একটি বড় পরিবর্তন ছিল এবং এটি কার্যকর হবে কি না—তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬৪৬ সালের ফরমান ধারায় একটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল যে যেসব অভিজাতদের ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদের সবাইকে সরকারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং সরকারি বেতন প্রদান করা হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল, যারা সরকারি পদে নিয়োগ পাবে না, তারা কার্যত সাধারণ নাগরিক বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি সতর্কবার্তা ছিল যে কেউ যদি অবৈধভাবে অভিজাত পরিচয় দাবি করে। তবে তাদের সনাক্ত করে অপসারণ করা হবে। ৬৪৭ সালে এই পরিবর্তনের গতি শ্লথ হয়ে যায়। একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল যাতে শাসকদের নামের মধ্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলি শতাধিকারদের ব্যক্তিগত নাম এবং স্থান নামের জন্য ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। চীনে সাধারণত এমন নিয়ম ছিল যে সম্রাটের নাম লেখায় ব্যবহৃত অক্ষর এবং বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে (বিশেষত সেইসব যজ্ঞে যেখানে সম্রাট ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতেন) সেগুলি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত না। মানুষকে বিকল্প অক্ষর খুঁজে বের করতে হতো। এটি মনে হয় জাপানে সেই নিয়ম প্রয়োগ করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। প্রধান পরিবর্তন ছিল টুপি পদমর্যাদা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠন। পূর্বের বারোটি মর্যাদাকে ছয়টিতে এনে সংকুচিত করা হয়েছিল, নীচে একটি নতুন পদমর্যাদা যোগ করা হয় এবং উপরে ছয়টি নতুন পদমর্যাদা যোগ করা হয়, ফলে প্রথমবারের মতো শীর্ষ অর্স্তাধিকারীদেরও এই ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়। তারপর, মাত্র দুই বছর পরে এটি আবার পুনর্গঠিত হয়। সেই ছয়টি সংকুচিত পদমর্যাদা আবার বারোটি হয়ে যায়। শীর্ষ ছয়টি ব্যতীত বাকিগুলোর নাম আবার পরিবর্তিত হয়। কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া প্রশাসনিক জটিলতার কারণে হয়েছে। পদমর্যাদাগুলো বেতন নির্ধারণের ভিত্তি হওয়ায়, বেশি পদমর্যাদা মানে আরও বিভিন্ন বেতন স্তর। এই পুনর্গঠনের পর ৬৪৯ সালে শাসনরত বংশের রাজকুমার ছাড়া সকল শতাধিকারী এই ব্যবস্থার আওতায় আসেন। ''নিহন শোকি''তে ৬৪৮ সালের একটি উল্লেখ আছে যেখানে বলা হয়েছে ৬৪৭ সালের পদমর্যাদা পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রীরা পুরানো টুপি ব্যবহার চালিয়ে গেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু অসন্তোষ ছিল। তাই ৬৪৯ সালে পদমর্যাদার সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধি ও পরিবর্তন একটি প্রতিক্রিয়া ছিল, যাতে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে তাকে তার নিচের কাউকে সঙ্গে একই স্তরে ফেলা হচ্ছে না। আরেকটি পরিবর্তনের লক্ষণ ছিল ৬৪৭ সালে হাজিরা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘণ্টা ব্যবস্থার চালু হওয়া। কর্মকর্তাদের সকাল ৫টার মধ্যে প্রাসাদের বাইরে শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন ধরে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। ৫টায় ঘণ্টা বাজানো হতো এবং দপ্তরের দরজা খোলা হতো, সবাই ভিতরে ঢুকতে যথেষ্ট সময় পেলে আবার ঘণ্টা বাজিয়ে দরজা বন্ধ করা হতো এবং যারা দেরি করতো তাদের ঢুকতে দেওয়া হত না। সবাই সকাল ৬টার মধ্যে তার ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতে হতো। দুপুর ১২টায় কাজের সময় শেষের ঘণ্টা বাজানো হতো। খুব প্রাচীন একটি রীতির অংশ ছিল যে আদালতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সূর্যোদয়ের আগে বা ঠিক সময়ে করা হতো এবং এই অফিস সময়ের কাঠামো অনেকদিন বজায় ছিল। ১৯ মর্যাদার সংশোধিত ব্যবস্থা ৬৪৯ সালের শুরুতে কার্যকর হয় এবং তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চীনা ব্যবস্থা ভিত্তিক সরকারের বিভাগ, দপ্তর এবং ব্যুরো গঠন করা হবে। এটি তকমুনে নো কুরামারো এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু বিন দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হবে। এখন পর্যন্ত যা অর্জিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার দেওয়া যাক। এক, সম্রাটকেন্দ্রিক সরকারের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পদমর্যাদা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মানে হল সম্রাট এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করেন, পদোন্নতি দেয়। শতাধিকারীরা তাদের পদ ভিত্তিক মর্যাদায় সংজ্ঞায়িত হবেন। দুই, সরকারের কেন্দ্রীয়করণ নিশ্চিত হয়েছে, প্রদেশগুলো সরাসরি প্রাসাদ থেকে পরিচালিত হবে একটি একক প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। তিন, সব জমি এবং তার উপর কাজ করা সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সম্পত্তি হবে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সব বাস্তবায়ন এখনও বাকি। কিন্তু নীতিগুলো স্থাপন করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ নেই। চার, এই নতুন ব্যবস্থা পরিচালনা করবে একই শতাধিকারীদের দল যারা পূর্বে শীর্ষে ছিল, যমাতো ও কাওয়াচি প্রদেশ থেকে। সরকার কাঠামো ও কার্যকারিতায় বিপ্লব ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর সদস্যত্ব জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে বিপ্লবের আওতায় আনা হচ্ছে না। সবাইকে তার বর্তমান মর্যাদানুযায়ী পদমর্যাদা, পদ ও বেতন দেওয়া হবে। নতুন একটি চীনা রাজবংশ সাধারণত যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করতো। রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সফল সেনাপতি যাঁর শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। তিনি নতুন সরকারের নকশায় স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তাকে এমন কিছু তৈরি করতে হয়েছিল যা কার্যকর হত, নাহলে রাজবংশ দীর্ঘস্থায়ী হত না। সফল রাজবংশগুলো সাধারণত চীনা সরকারের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে কাজ করত। তাই নকশার স্বাধীনতা সীমিত ছিল। এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাই হোক না কেন, দেশের শাসনের সূক্ষ্ম কাজগুলি করতেন ঐতিহ্যবাহী অর্স্তাধিকারীরা। বিকল্প ছিল না। পুরাতন শাসন ব্যবস্থা নতুন নাম দিয়ে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। আসুকা যুগের বাকী সময়ের চ্যালেঞ্জ ছিল তা নিশ্চিত করা যে সেটি হবে না এবং সরকার সত্যিই পরিবর্তিত হবে, কেন্দ্রীভূত ও সংগঠিত হবে যাতে জাতীয় সম্পদের বৃহত্তর অংশ প্রাসাদের হাতে আসে এবং এই দেশকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জমি পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়িত হলে সরকার সত্যিই দেশের সমৃদ্ধির সম্পূর্ণ অংশ কর ব্যবস্থায় আনবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে তার পুনর্বণ্টন ও ব্যয়। অধিকাংশ বেতন আকারে শতাধিকারীদের কাছে যাবে। তবে বাকিটা জাতি গঠনের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং বেতন ব্যবস্থা শতাধিকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন মন্ত্রণালয় ও র‍্যাঙ্ক সবই ভালো। কিন্তু মূল বিষয় ছিল দেশের কৃষকদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই নতুন সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কফুন রাজনীতি আবার প্রবেশ করল। ৬৪৯ সালের তৃতীয় মাসে উর্ধ্বতন মন্ত্রী আবে নো কুরাহাশিমারো মারা গেলেন। মাত্র সাত দিন পর সোগা নো হিমুকা গোপনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে, বিশেষ করে রাজকুমার নাকা নো ওয়ের হত্যার পরিকল্পনা। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন এটা সত্য নয়। হিমুকা ছিল ইশিকাওয়ামারোর ছোট ভাই এবং নিজেই শীর্ষ মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নাকা নো ওয়ে এই তথ্য কোতোকু তেননোর কাছে পৌঁছে দেন। তিনি ইশিকাওয়ামারোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য 官 পাঠান। ইশিকাওয়ামারো মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং সম্রাটের সাক্ষাৎ চান। কোতোকু তা মানেননি এবং সৈন্য পাঠিয়ে তাকে আটকাতে বলেছিলেন। ইশিকাওয়ামারো তার প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যমাতোর যমাদেরাতে গিয়েছিলেন, যেখানে তার বড় ছেলে মন্দির নির্মাণ পরিচালনা করছিল। ''নিহন শোকি'' অনুযায়ী ছেলে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইশিকাওয়ামারো রাজি হননি। তিনি ও তার পরিবার আত্মহত্যা করেন ফাঁস দিয়ে। তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরও অনেককে সরকার পরে ফাঁসি দেয় এবং বহুজনকে নির্বাসিত করা হয়। অভিজাততান্ত্রিক সরকার গঠন করা কঠিন কারণ কাউকে সহজে বরখাস্ত করা যায় না। পরবর্তী ২৫০ বছরে আমি কেবল দুটি ক্ষেত্রে দেখেছি কেউ ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই কম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি জড়িত ছিলেন যারা নিজস্ব বাহিনী গড়ার ক্ষমতা রাখত না। তারা হলেন নারা যুগের পুরোহিত দোকিও এবং হেইয়ান যুগের সুগাওয়ারা নো মিচিজানে, যারা উচ্চপদে উঠে পরে সমর্থন হারানোর পর পড়ে যান। তখন বা পরে কোনো কারাগার ব্যবস্থা ছিল না। মৃত্যুর কম শাস্তি ছিল নির্বাসন, যেখানে নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করা হত এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বসবাস করতে হত। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বহুজন নির্বাসনে পাঠানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন নির্বাসনের পথে বা ততক্ষণে। নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন অনেক নির্বাসিত পালিয়ে আত্মীয়দের কাছে লুকিয়ে ছিলেন। এটি একধরনের নরম বাড়ি নিরোধ। এই ঘটনার পেছনে নাকা নো ওয়ের ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন না সোগা পরিবারের কেউ সর্বোচ্চ পদে উঠুক। সোগা নো হিমুকাকে কিউশুতে স্থানান্তর করা হয়। এটি পরবর্তীকালে মার্জিত নির্বাসনের একটি রূপ (এটাই হয়েছে সুগাওয়ারা নো মিচিজানের ক্ষেত্রে)। কখনো কখনো অর্স্তাধিকারীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ জটিল হয়। নাকা নো ওয়ের প্রধান স্ত্রী ছিলেন ইশিকাওয়ামারোর মেয়ে এবং জিতো তেননোর মা। তিনি তার বাবার পতনের পর শোকেই মারা গিয়েছিলেন। এর চূড়ান্ত ফলাফল ছিল যে সরকারের শীর্ষে দুইটি পদ শূন্য ছিল। নতুন সদাইজিন হলেন কুসে নো ওমি টোকুতা এবং নতুন উডাইজিন হলেন ওতোমো নো মুরাজি নাকাতোকো। তারা দুজনেই নতুন ব্যবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছিলেন এবং এখন ৫ম শ্রেণীতে পদোন্নত হন। কুসে ৬৪৫ সাল থেকে সরকারের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ওতোমো ছিলেন একটি প্রধান গোত্রের প্রধান। আবে নো কুরাহাশিমারো এবং সোগা নো ইশিকাওয়ামারো নতুন পদবীর ব্যাজ পরতে অস্বীকার করেন এবং পুরোনো মন্ত্রীদের টুপি পরে চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ছিলেন নতুন পদবী ব্যবস্থায় প্রথম মন্ত্রীরা। তাদের নতুন পদবীর মানে ছিল যে নতুন ব্যবস্থার শীর্ষ চারটি পদ তখনই খালি ছিল। পরের বছর ৬৫০ সালে শাসনখাতের নাম পরিবর্তিত হয়ে তাইকা থেকে হাকুচি হয়ে যায়। এটা সম্ভবত একটি সংকেত হিসেবে দেওয়া হয়েছিল যে প্রধান সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন নতুন ব্যবস্থার সংহতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। নামটি এসেছে একটি সাদা ময়ুর দেখার ও ধরা পড়ার প্রতিবেদনের থেকে। এটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই পরিবর্তনের সাথে যথেষ্ট ভোজ ও আয়োজন ছিল। যে প্রদেশ (হোনশু দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে) পাখিটি উপহার দিয়েছিল তাকে তিন বছর করমুক্ত রাখা হয় এবং ওই প্রদেশে ময়ুর শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। 'নিহন শোকি' থেকে বিচার করলে দেখা যায় শাসক হওয়ার সঙ্গে সবসময়ই প্রচুর আনুষ্ঠানিকতা জড়িত ছিল। কিন্তু তা বেশির ভাগ সময়ে গোপনে অনুষ্ঠিত হত। এখন আমরা দেখতে পাই সরকার প্রায়ই সকল কর্মকর্তাদের বৃহৎ আনুষ্ঠানিকতার জন্য মুক্ত আকাশের নিচে জড়ো করে। এই পর্যায়ে পরিষ্কার নয় সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি পেত কি না। তবে নিশ্চিতভাবে নারা এবং হেইয়ান যুগে রাজ পরিবার সংক্রান্ত অনেক অনুষ্ঠান এমনভাবে অনুষ্ঠিত হত যাতে মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা দেখার সুযোগ পেত। এটা সরকারের এবং সম্রাটের জাতির জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবার অংশ। ৬৫১ সালে সরকার ওকোরিতে ছয় বছর অবস্থানের পর নানিভাতে নতুন একটি প্রাসাদে চলে যায়, যার নাম নাগারা নো টয়োসাকি প্রাসাদ। 'নিহন শোকি' অনুযায়ী এই প্রাসাদের নির্মাণে অনেক কফুন ধ্বংস হয় এবং অনেক কৃষক স্থানান্তরিত হন, যাদের সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এটি একটি বড় নির্মাণ প্রকল্প ছিল। সরকার প্রবেশের পরও কাজ চলতে থাকে এবং এক বছর ছয় মাস পরে সম্পূর্ণ হয়। 'নিহন শোকি' বলেছে যে এটি দেশের পূর্ববর্তী যেকোনো নির্মাণের চেয়েও ভাস্বর ছিল। প্রাসাদের অবস্থান আবিষ্কৃত ও পুরাতাত্ত্বিকভাবে খনন করা হয়েছে। এটি ওসাকা ক্যাসল এর সাইটের ঠিক পাশেই, আধুনিক ওসাকার সেই এলাকায় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচ্চতর। ৬৫১ সালে সিল্লা থেকে পাঠানো দূতরা কিউশুতে তাং রাজবংশের চীনা পোশাক পরেছিলেন। এটি ঐতিহ্যবাহী কোরীয় পোশাক থেকে আলাদা। এ কারণে সরকার অনুমান করেছিল সিল্লা জাপানের সঙ্গে পরামর্শ না করেই চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং দূতাবাস প্রত্যাখ্যাত হয়। সিল্লা ৬৪৯ সালে রাজার প্রাসাদের পোশাক পরিবর্তন করে চীনা শৈলীতে নিয়ে যায়। দুই বছর পর, ৬৫৩ সালে জাপান দুইটি জাহাজ এবং ২৪২ জন নিয়ে চীনে দূতাবাস পাঠায়। ৬৫৪ সালে একটি দ্বিতীয় দূতাবাস পাঠানো হয় যার নেতৃত্ব দেন তাকামুনে কুরোমারো এবং আবে নো ওমি মারো। 'ওল্ড টাং হিস্ট্রি' (যেখানে নিউ টাং হিস্ট্রি ও আছে) দ্বিতীয় দূতাবাসের কথা উল্লেখ করেছে। তখন তাকামুনে হয়তো খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং তিনি চীনে মৃত্যুবরণ করেন। ৬৫৩ সালের দূতাবাসের দুটি জাহাজের মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে যায়, ১২১ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন বেঁচে যায়। ৬৫২ সালের প্রথম মাসে 'নিহন শোকি' খুব সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছে যে ওই মাসে জমি পুনর্বন্টন করা হয় এবং একই বছরের চতুর্থ মাসে জনগণনার রেজিস্টার তৈরি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য খুব কম দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি একটু অদ্ভুত, যেখানে বলা হয়েছে "প্রথম মাস থেকে এই মাস পর্যন্ত জমির পুনর্বন্টন সম্পন্ন হয়েছে।" সাধারণত জনগণনা আগে হয় যাতে জানা যায় কতগুলো পরিবার জমি পাবে। তাইহো বিধি অনুযায়ী জনগণনা এবং পুনর্বন্টন চক্র ছয় বছর। অনুমান করা হয় যে ৬৪৬ সালে শুরু হওয়া পুনর্বন্টন কার্যক্রমটি শেষ হয়েছে এবং তারপর তিন মাস পর পরবর্তী চক্রের জনগণনা শুরু হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে সম্ভবত এই কাজ ছিল ইয়ামাতো অঞ্চলের ছয় আগাতার এবং সম্ভবত সাম্রাজ্যিক মিয়াকের জমিতে একটি ছোট পরীক্ষা প্রকল্প। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরবর্তী নিশ্চিত জমির পুনর্বন্টন বিবেচনা করে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন না যে তখন জাতীয় স্তরে পুনর্বন্টন হয়েছে। হিতাচি ফুডোকি অনুযায়ী ৬৪৯ সালে কাশিমা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৬৬৩ সালে শিনোডা, নামেকাতা ও ইওয়াকি জেলা তৈরি হয়। মনে হয় সরকার গ্রামীণ প্রশাসনের কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছিল এবং জনগণনা ও পুনর্বন্টন এখনও অনেক দূরে ছিল। ৬৫৩ সালে কোতোকু তেন্নো এবং নাকা নো ওয়ের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়। নাকা নো ওয়ে প্রাসাদকে ইয়ামাতো প্রদেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন এবং সম্রাট তা অস্বীকার করেন। তবুও নাকা নো ওয়ে চলে যান, তার মা — প্রাক্তন কোগোকু তেন্নো এবং বর্তমান সম্রাজ্ঞী (নাকা নো ওয়ের বোন) ও তার সন্তানদের সঙ্গে। কোনো ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট তারিখ নেই, শুধু বছর উল্লেখ আছে। পরবর্তী বছরের ১০ম মাসে সম্রাট অসুস্থ হন এবং সবাই নানিভায় ফিরে আসেন এবং সম্রাটের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয় যে নাকা নো ওয়ে ভেবেছিলেন সম্রাটকে সরকারের কেন্দ্রে আনার প্রচেষ্টা খুব সফল হয়েছে এবং তার নিজের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তাই নতুন ও ব্যয়বহুল নাগারা প্রাসাদে তেমন প্রস্তাব দেওয়া যা সম্রাট নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করবেন। এরপর রাগে সরে গিয়ে ইয়ামাতো চলে যান এবং সবাইকে তাদের আসল ক্ষমতাধারী কে তা ভাবতে বাধ্য করেন। গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ ব্যক্তি তার অনুসরণ করে ইয়ামাতো যান। একটি আধুনিক মতবাদ আছে যে বিরোধের আসল কারণ ছিল নাকা নো ওয়ে তার বোন সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। 'নিহন শোকি' সম্রাজ্ঞীকে পাঠানো সম্রাটের একটি কবিতা উদ্ধৃত করেছে যা এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই তত্ত্ব বলে যে এর জন্যই নাকা নো ওয়ে ২৩ বছর ধরে সিংহাসনে আরোহণ করতে চাননি। সম্রাট হলে তার কোনো গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা থাকত না এবং তিনি গোপনে সম্পর্ক রাখতে পারতেন না। এছাড়াও বলা হয় কোতোকু তেন্নোর মৃত্যুর পর নাকা নো ওয়ে প্রকাশ্যভাবে তার বোনকে স্ত্রী হিসেবে দেখতেন। এমন কিছু বিবাহকে আমরা অজাচার দাম্পত্য মনে করলেও রাজবংশে এসব সাধারণ ছিল। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। যদি এই বিবাহ সত্যি হয়, তা নিয়ম ভঙ্গ করত। পূর্বে এমন উদাহরণ আছ। মানুষেরা মনে করত নাকা নো ওয়ে ঐ সম্পর্ক চলাকালীন রীতিগতভাবে দুষিত ছিলেন। তাই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেননি। তিনি তখনই (৬৬৮ সালে) সম্রাট হন যখন তার বোন মারা যান। কোতোকু তেন্নোর একমাত্র পুত্র ছিলেন রাজকুমার আরিমা। কোতোকুর মৃত্যুকালে তিনি ১৫ বছর বয়সী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। পরিবর্তে তার মা দ্বিতীয়বার সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবার সাইমেই তেন্নো নামে পরিচিত। 'নিহন শোকি' এতে কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। এতে একটি বড় ঝুঁকি ছিল যে নিজের সিংহাসন গ্রহণ না করায় ভবিষ্যতে রাজকুমার আরিমা সিংহাসন পেতে পারে। এই কথাটি সমর্থন করে ধারণাটি যে ব্যক্তিগত জীবনের কারণে নাকা নো ওয়ে তখন সিংহাসন গ্রহণ করতে পারেননি। মৃত সম্রাটের দেহ তার মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পরে দাফন করা হয় এবং একই দিন রাজসভা ইয়ামাটোতে চলে যায়, আসুকায় ইটাবুকি প্রাসাদে অবস্থান নেয়। এই প্রাসাদে সাইমেই বাস করতেন যখন সোগা নো ইরুকার হত্যাকাণ্ড হয় এবং তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সাইমেই তখন প্রায় ৬২ বছর বয়সী ছিলেন। প্রায় এই সময়েই নাকা নো ওয়ের ছোট ভাই রাজকুমার ওয়ামা ২৫ বছর বয়সে রাজকাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন। নাকা নো ওয়ের পুত্র রাজকুমার ওতোমো তখন ৮ বছর এবং তার কন্যা উনো নো সরারা। তিনি পরবর্তীতে ওয়ামা ও জিতো তেন্নোর সম্রাজ্ঞী হন, ছিলেন ১১ বছর বয়সী। ইটাবুকি প্রাসাদ একটি অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে পরিকল্পিত ছিল, যেখানে নতুন একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হচ্ছিল যা নানিওয়ার প্রাসাদের চেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ হওয়ার কথা ছিল। ৬৫৫ সালের শেষে ইটাবুকি প্রাসাদ আগুনে পুড়ে যায় এবং তারা ইয়াহারা প্রাসাদে চলে যায়। ইতিহাসের এই পর্যায়ে রাজ দরবার বেশ কয়েকটি বড় নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে। ''নিহন শোকি'' কাজের অমিতব্যয়িতা এবং ব্যয় সম্পর্কে জনপ্রিয় অভিযোগগুলি নথিভুক্ত করেছে। ''নিহন শোকি''র মতে ৬৫৭ সালের নবম মাসে যুবরাজ আরিমা বিদ্রোহের ভিত্তি স্থাপন শুরু করেন। অভিযোগ করা হয় যে তিনি সাইমেই তেন্নোতে একটি নির্দিষ্ট উষ্ণ প্রস্রবণ পরিদর্শন করার সুবিধার প্রশংসা করেছিলেন যাতে তাকে রাজধানী ছেড়ে এটি দেখার জন্য রাজি করানো যায়, যাতে তিনি পথের বাইরে থাকাকালীন একটি অভ্যুত্থান মঞ্চস্থ করতে পারেন। সম্রাজ্ঞী প্রায় এক বছর পরে উষ্ণ প্রস্রবণ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন, সোগা নো ওমি নো আকাইকে আসুকায় দায়িত্বে রেখেছিলেন। আকাই প্রিন্স আরিমার কাছে সাইমেইয়ের শাসন সম্পর্কে একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রথমটি হল সরকার জনগণের কাছ থেকে খুব বেশি কর আদায় করছিল, দ্বিতীয়টি হল এটি খালের কাজের জন্য প্রচুর লোককে খসড়া করছিল এবং তৃতীয়টি হল তিনি একটি পাহাড়ের উপরে বড় বড় পাথর টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পদ নষ্ট করছিলেন (আসুকার বাইরে একটি পাহাড়ের উপরে একটি ফুল দেখার স্থান তৈরি করতে)। তারা বিদ্রোহের ছক কষতে আতাইয়ের বাড়িতে চলে যায়। যাইহোক, তারা কথা বলার সময় একটি আর্মরেস্ট স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙে যায় এবং তারা এটিকে একটি অশুভ লক্ষণ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ভেঙে যায়। আতাই তৎক্ষনাৎ একদল লোককে সশস্ত্র করেছিলেন যারা নতুন প্রাসাদ নির্মাণে কাজ করছিল এবং আরিমার প্রাসাদ ঘিরে ফেলেছিল এবং রাজপুত্র আরিমা রাষ্ট্রদ্রোহের কথা বলেছিলেন বলে তাদের জানিয়ে আদালতে দূত প্রেরণ করেছিলেন। এরপরে ''নিহন শোকি'' "অন্য একটি বই" উদ্ধৃত করেছে যা বেশ কয়েকটি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে আলোচনার আরও বিশদ এবং প্রশংসনীয় বিবরণ দেয় যা বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শেষ হয় যে রাজপুত্র আরিমা একটি সফল অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত রাজপুত্র আরিমা এবং আরও দু'জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং আরও দু'জনকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সোগা নো আতাই এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি নাকা নো ওয়ের খুব আস্থাভাজন ছিলেন। সর্বোপরি, রাজপরিবার দূরে থাকাকালীন তাকে রাজধানীর দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর একটি কন্যাও ছিল যার সাথে নাকা নো ওয়ের বিয়ে হয়েছিল। সুতরাং এটি প্রশংসনীয় যে সোগা নো আতাই ইচ্ছাকৃতভাবে নাকা নো ওয়ের আদেশে যুবরাজ আরিমাকে পতনের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, যিনি স্পষ্টভাবে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে উত্তরাধিকারের দাবিদার যে কোনও ব্যক্তিকে তিনি হুমকি হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে রাজপুত্র আরিমাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, 'স্বর্গ ও আকাই জানে কী ঘটেছিল। আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এই গল্পটি বেশ কয়েকটি বেঁচে থাকা কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে, দুটি মৃত্যুদণ্ডের আগে রাজপুত্রকে দায়ী করা হয়েছিল এবং এটি প্রদর্শিত হয় যে আভিজাত্যের মধ্যে যুবরাজ আরিমার প্রতি প্রচুর সহানুভূতি ছিল। ৬৫৮ সাল পূর্ব সীমান্তে সামরিক কার্যকলাপের উপলক্ষও ছিল। পূর্ব বর্বরদের জন্য ব্যবহৃত শব্দ 蝦夷 সাধারণত টোকুগাওয়া আমল থেকে এজো উচ্চারণ করা হয়। এজো সেই সময়ে হোক্কাইডো দ্বীপের সাধারণ নামও ছিল। যাইহোক, এটি ভালভাবে বোঝা যায় যে প্রাচীনকালে শব্দটি এমিশি উচ্চারণ করা হতো। এটি সোগা নো এমিশির ব্যক্তিগত নামের মতো একই শব্দ। ''নিহন শোকি''তে এমিশির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রথম উল্লেখটি জিম্মু এবং সুজিনের মধ্যে অনুমিত কাল্পনিক শাসকদের মধ্যে অন্যতম কেইকো টেনোর রাজত্বকে অর্পণ করা হয়। তাকেউচি নো সুকুনে, ইয়ামাতো তাকেরু নো মিকোটো এবং প্রিন্স মিমোরোয়াকে সম্পর্কে গল্পগুলিতে এই জাতীয় অভিযানের গল্প রয়েছে। চতুর্থ এবং পঞ্চম শতাব্দীতে ওজিন, নিন্টোকু, ইউরিয়াকু এবং সেইনির নিবন্ধগুলিতে এমিশির শ্রদ্ধা নিবেদনের উল্লেখও রয়েছে। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই উপাদানগুলির কোনওটিতেই খুব বেশি আস্থা রাখেন না। আমার পর্যবেক্ষণে ''কোজিকি''র খুব বেশি উল্লেখ করা হয়নি কারণ এতে খুব কম উপাদান রয়েছে যা সারগর্ভ ইতিহাস হিসাবে অভিপ্রেত, তবে এটি ''নিহন শোকি''র চেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে আরও খাঁটিভাবে বিশ্বাস করা হয়। এটি কোনও সরকারী প্রকল্প ছিল না, তবে একক লেখক ছিলেন। ''কোজিকি''তে একবারের জন্যও এমিশির নাম নেই। ৪৭৮ দূতাবাসের অংশ হিসাবে চীনাদের কাছে জমা দেওয়া বিখ্যাত চিঠিতে বলা হয়েছে যে জাপানি শাসক পূর্বের ৫৫টি দেশ জয় করেছিলেন, যার নাম আক্ষরিক অর্থে "লোমশ মানুষ", এবং পশ্চিমে ৬৬ টি দেশ জয় করেছিলেন (衆夷)। শোটোকু তাইশি সম্পর্কে একটি বই রয়েছে যা সোগা নো এমিশির নাম লেখার জন্য 毛人 ব্যবহার করে, তাই সম্ভবত এটিই উদ্দেশ্য ছিল। 毛人 নিজেই বর্বরদের জন্য একটি সাধারণ চীনা শব্দ। সব মিলিয়ে মনে হয়, জাপানের সুদূর পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী অনিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠী কেবল ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষার্ধে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৫৮৯ সালে ওমি নো ওমি মাতসুকে এমিশির সাথে সীমান্ত পরিদর্শন করার জন্য তোসান্ডো যাত্রাপথ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছিল। কিছু ঐতিহাসিক এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন তবে বেশিরভাগই এটিকে প্রামাণিক হিসাবে গ্রহণ করেছেন। অন্যান্য কর্মকর্তাদের একই সাথে হোকুরিকুডো এবং টোকাইডো যাত্রাপথ বরাবর পূর্ব পরিদর্শনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। যাইহোক, কোনও টীকাত পরবর্তী উল্লেখটি ৬৪২ অবধি আরও অর্ধ শতাব্দীর জন্য ঘটে না যখন কোশি অঞ্চলের "কয়েক হাজার" এমিশি (হোকুরিকুডো) দরবারে "জমা দিয়েছিলেন"। এই লোকদের নেতারা দরবারে এসেছিলেন, যেখানে তারা সোগা নো এমিশির প্রাসাদে আপ্যায়ন করেছিলেন। ৬৫৪ সালে অভ্যুত্থানের পরে বিশেষ গভর্নরদের পূর্বের পরিস্থিতি পরিদর্শন করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল এবং ৬৪৭ সালে নুটারি নামে একটি জায়গায় একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। ব্যবহৃত অক্ষরটি একটি কাঠের স্টকেড ধরণের দুর্গকে বোঝায়। পরের বছর ইওয়াফুনে একটি দ্বিতীয় দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। এরপরে দুর্গগুলির জন্য খাদ্য উৎপাদন এবং কিনোব বা "দুর্গ" হিসাবে পরিচিত অন্যান্য পরিষেবা সরবরাহের জন্য আরও অভ্যন্তরীণ অঞ্চল থেকে লোকদের স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। নুতারি দুর্গের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে নিগাতা শহরে এই নামের একটি পাড়া রয়েছে। আইওয়াফুন একটি আধুনিক স্থাননামও। এটি নিগাতা থেকে উপকূল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কাছাকাছি একটি বন্দর এবং কৃষিজমি সহ একটি অনুকূল সাইটে অবস্থিত। বছরগুলোর আলোচনায় এমিশি আসলে আয়নু কিনা বা তারা জাতিগতভাবে জাপানি হলেও ইয়ামাটো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত ধারণা ছিল তারা আয়নু, কারণ 蝦夷 শব্দটি আয়নু বোঝাতো। তারপর জানা গেল জাপানি জাতি ইয়ায়ই সংস্কৃতির সঙ্গে দেশে এসেছে, আর জোমোন সংস্কৃতি অন্য জাতির ছিল, যার অবশিষ্ট আয়নু হতে পারে। আয়নুদের দেহে তুলনামূলক বেশি শরীরের লোম থাকার জন্য 毛人 শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তবে সন্দেহ বাড়তে শুরু করে যে এজো শব্দ আয়নু বোঝালে ও ইমিশি শব্দের একই অর্থ হওয়ার প্রমাণ নেই। চীনা অক্ষরের বহুবিধ ব্যবহার জাপানি ভাষায় স্বাভাবিক। তাই ইমিশি জনজাতি বোঝায় না বলে ধারণা বেশি প্রবল। জোমোন কঙ্কালের মনুষ্যবিজ্ঞানের গবেষণায় আয়নুদের সাথে তাদের মিল পাওয়া যায়নি। এমিশি হয়তো জোমোন বংশোদ্ভূত হলেও আয়নু নাও হতে পারে। তবে তারা বর্তমান আয়নু জনগোষ্ঠীর একাংশ হতে পারে এবং সাইবেরিয়া থেকে লোকেদের বিভিন্ন ঢল হোক্কাইডোতে এসেছে এটাও পাওয়া গেছে। 毛人 শব্দটি সম্ভবত প্রাকৃতিক লোমযুক্ত লোকদের জন্য নয় বরং পশম পরিধানকারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই এটি বিতর্কে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়। কোফুন যুগের খননায় এমিশিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে অনেক কফুন পাওয়া গেছে। কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও নেই যে সংঘর্ষের সময়কালে এই অঞ্চলে কোনো স্বতন্ত্র জাতির উপস্থিতি ছিল। মুৎসু ফুজিওয়ারা পরিবারের চার ধারাবাহিক প্রজন্মের মমি হিরাইসুমির চুসোনজিতে সংরক্ষিত আছে, যেগুলি ১৯৫১ সালে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা গিয়েছিল যে তারা আইনু নয়, বরং জাপানিদের মতোই। এই পরিবারকে ব্যাপকভাবে ইমিশি বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আইনু ও জোমন জনসংখ্যার মধ্যে কোনো সত্যিকারের সংযোগ নেই কারণ তাদের মধ্যে কোনো ধারাবাহিক সম্পর্ক পাওয়া যায় না। হক্কাইডোতে প্রথম নিশ্চিত আইনু জীবাশ্ম অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। তবে এ থেকে ইমিশিরা জোমন বংশধর ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন মিটে যায় না। এখানে দেখা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন যে ইয়ায়োই ধানের চাষের সংস্কৃতি উত্তরপূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অভিবাসীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল এবং অনেক জোমন মানুষ নতুন জীবনযাত্রায় "রূপান্তরিত" হয়েছিল। ইয়ায়োই ধানের চাষের সর্বোত্তর সীমা "ইমিশি" অঞ্চলের ভিতরে ছিল এবং একই কথা কোফুন যুগের জীবাশ্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্য তত্ত্বগুলোর সমর্থকরা এখনও আছেন। তবে আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন ইমিশি হওয়ার মূল কারণ ছিল তারা ইয়ামাটো রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে ছিল, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিকভাবে পূর্ববর্তী "জাপানি" থেকে তারা খুব ভিন্ন ছিল না যারা সীমান্তের অন্য পাশে বাস করত। আমি লক্ষ্য করেছি যে কখনোই কারও দ্বারা "ইমিশি ভাষা" শেখার চেষ্টা করার উল্লেখ নেই, অথচ সিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে "সিলা ভাষা" শেখার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ আছে। আমার প্রশ্ন, যার কোনও উত্তর আমি কখনো দেখিনি, তা হলো কেন সোঘা নো ইমিশির নামটা হল? বিশেষ করে ৬৪২ সালে যখন ইমিশিদের একটি দল দরবারে আসলো, তখন তাকে তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অবশ্যই কোনো সম্পর্ক ছিল। এমন ব্যক্তি যার মর্যাদা এত বড়, তার ইমিশিদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে উল্লেখযোগ্য সময় কাটানো সম্ভব নয়। তবে দেখা যায় ষষ্ঠ শতকে অনেক ইমিশিকে ইয়ামাটো অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং শাসক বংশের সম্পত্তির পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সোঘাদের এই ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা ছিল বলেও মনে হয় এবং এর ফলে তিনি ইমিশিদের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হতে পারতেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক অভিজাত ব্যক্তি যে নাম ব্যবহার করতেন, তা তার শৈশবের নাম ছিল না। আমেরিকান ভারতের মতো, যখন আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হতেন, আপনাকে একটি নতুন নাম দেওয়া হতো। এটি আপনার জন্য বিশেষ মানানসই হতে পারত। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে অনেক অদ্ভুত নাম ছিল, যার মধ্যে ইমিশিও একটি। ৬৫৮ সালের অভিযান আবে নো হিরাউয়ের নেতৃত্বে ছিল এবং এটি ৬৫৯ ও ৬৬০ সালেও পুনরাবৃত্তি হয়। বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর। ধারণা করা হয় ''নিহন শোকি''র লেখকগণ বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং আসলে অভিযানের সংখ্যা কম, বা সম্ভবত দুইটি। সংক্ষিপ্ত সারাংশ হলো, ৬৫৮ সালে আবে ১৮০টি নৌকায় উত্তরে গিয়ে আকিতা ও নুশিরো (সম্ভবত আধুনিক আকিতা ও নোশিরো) পৌঁছান। সেখানে তিনি তিনটি আলাদা ইমিশি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাদের আনুগত্যের শপথ করান, স্থানীয় প্রশাসনের পদে নিযুক্ত করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। পরের বছর ৬৫৯-এ আবার ১৮০ নৌকায় একই স্থানে গিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দেখা করেন, যাদের মধ্যে কেউ তাঁকে রাজধানীর জন্য একটি স্থান বেছে নিতে বলেন এবং তিনি তা করেন। আবারো তিনি পদবী ও প্রশাসনিক দায়িত্ব বন্টন করে ফিরে আসেন। ৬৬০ সালে পরিস্থিতি আলাদা। শুরুতেই নিহন শোকি বলে যে তিনি সু-শেন (粛慎) দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। বিবরণে বলা হয়েছে, তিনি উত্তর দিকে একটি অবর্ণিত নদী পর্যন্ত যাত্রা করেন, যেখানে ২০টি সু-শেন জাহাজ থেকে পালাচ্ছিল ১০০০ জন ইমিশি। আবে সু-শেনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন, তারপর এমন এক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন যা নিহন শোকির লেখকদের বিভ্রান্ত করে তোলে, কিন্তু যেকোনো নৃতত্ত্বের ছাত্রের কাছে স্পষ্ট। শেষে সু-শেনদের একটি দুর্গতে অনুসরণ করে তাদের ধ্বংস করে দেন। এ ব্যাপারে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যেমন স্থানীয় নামগুলো কোথায় ছিল, আসলে তিনটি অভিযান হয়েছিল কি না, ৬৫৯ সালের অভিযানটি ৬৫৮ সালের ভুল পুনরাবৃত্তি কিনা। সু-শেন কারা ছিলেন। ভৌগোলিক বিতর্ক প্রধানত আবে হক্কাইডো পর্যন্ত গিয়েছিলেন কি না তা নিয়েই। ৬৫৮ সালের টীকা বলে আবে ১৮০ নৌকায় আকিতা ও নুশিরোতে পৌঁছান। আকিতা নোটারি ও ইওয়াফুনের চেয়ে অনেক উত্তরে। আকিতা নারা যুগে এই অঞ্চলের যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান কেন্দ্র ছিল। নুশিরো সম্ভবত আধুনিক নোশিরো, আকিতার কাছাকাছি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদ্বীপের অন্য পাশে। আকিতায় আবে স্থানীয় ইমিশিদের সঙ্গে মিলিত হন, যারা একত্রিত হয়ে দেবতার নামে দরবারের প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন। আজকের দিনে আকিতা কিল্লার স্থানে একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যাকে কোশিও জিনজা বলা হয়, অর্থাৎ "কোশির দেবতার মন্দির।" আবে ইমিশি নেতাদের সরকারি পদ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেন। তারপর, ''নিহন শোকি'' বলে, তিনি ওয়াতারিনোশিমার অন্য একটি ইমিশি দলকে আরিমা সৈকতে ডেকে পাঠান, যারা তাদেরও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর তাদের দেশে পাঠানো হয়। এরপর আবে দেশে ফিরে আসেন। প্রশ্ন হলো, ওয়াতারিনোশিমা ("যে দ্বীপ পার হয়ে যায়") কোথায় ছিল? অনেকদিন ধরে ধরে নেওয়া হয়েছে যে এটি দক্ষিণ হক্কাইডো। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন আবে এত দূর যেতে পারেননি এবং এটি হয়তো উত্তরের ত্সুগারু উপদ্বীপ। এটি প্রাচীনকালে অনেকটাই দ্বীপের মতো ছিল কারণ এটি শুধুমাত্র নৌকায় যাত্রা করে পৌঁছানো যেত, কারণ এটি হনশু থেকে পর্বতমালার একটি বিস্তীর্ণ বলয় দ্বারা পৃথক ছিল। এমনকি তাও হয়তো অনেক দূর, কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকরা ত্সুগারু অঞ্চলকে হক্কাইডোর সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন, হনশুর আরও দক্ষিণের ইমিশিদের তুলনায়। একমাত্র সত্যিকারের ইঙ্গিত হলো ''নিহন শোকি'' কোনো অতিরিক্ত যাত্রার কথা বলছে না, শুধু বলছে ওয়াতারিনোশিমার ইমিশিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ৬৬০ সালের অভিযান আরও জটিল। প্রথমত, সু-শেন (粛慎) নামটি প্রাচীন চীনা ইতিহাস থেকে, চৌ রাজবংশ থেকে। চীনারা মাঝে মাঝে এই নাম ব্যবহার করত মাঞ্চুরিয়ার মানুষের জন্য যাদের ইয়িলৌ বলা হত এবং যাদেরকে বিশ্বাস করা হয় জুরচেনদের পূর্বপুরুষ যারা লিয়াও রাজবংশ গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ, তারা এমন এক জনগোষ্ঠী যারা পুয়োদের (পূর্বপুরুষের জাপানি ধারণা) মতো ছিল এবং একই মাঞ্চুরিয়ান অঞ্চলে বাস করত। তারা কীভাবে হক্কাইডোর চারপাশে নৌকা চালাত তা সহজে বোঝা যায় না। এক মত হলো, জাপানিরা কোনো চীনা গ্রন্থ থেকে নামটি তুলে নিয়েছিল। জাপানি উচ্চারণে এটা মিশিহাসে ছিল, কিন্তু এর কোনো প্রতিপাদ্য নেই। এই সময় জাপান কোগুরোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যাদের নিশ্চয়ই মাঞ্চুরিয়ার সব জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল। হয়তো তারা আমাদের চেয়ে বেশি জানত। অথবা ধারণা করা হয়, প্রাচীন সু-শেন চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছিল এবং এই লোকেরা জাপানের উত্তর-পূর্বে ছিল। তাই সু-শেন নামটি তাদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন এটি ওখোটস্ক জনগণের সঙ্গে মিলে যায়, যারা সাইবেরিয়া থেকে হক্কাইডোর অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা সহজেই হনশুর দক্ষিণে অনুসন্ধানকারী দল পাঠিয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এই নিবন্ধে বর্ণিত একটি ধরনের অন্ধ ব্যবসা। এটি বিশ্বব্যাপী বহু স্থানে দেখা যায় যেখানে মানুষ দাসপ্রথার ভয়ে বা ভাষাগত অমিলের কারণে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলে। এক পক্ষ মাটিতে নানা পণ্য ছড়িয়ে রেখে চলে যায়। অন্য পক্ষ এসে তা দেখে তাদের পণ্য দেয়। এভাবে লেনদেন চলে যতক্ষণ দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হয়। তারপর প্রত্যেক দল তাদের কেনা জিনিস ও অবিক্রিত জিনিস নিয়ে চলে যায় এবং কেউ কারো কাছাকাছি আসেনা। এটি নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তবে নিহন শোকির লেখকরা বুঝতে পারেননি এটি একটি বাণিজ্য। এরপর বলা হয়েছে আবে তাদের শিবিরে অনুসরণ করে আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এর কোনো কারণ দেওয়া হয়নি। পুরো ঘটনা রহস্যময় এবং সম্ভবত নিহন শোকির উপস্থাপনার চেয়ে অনেক জটিল ছিল। তবে এটি হনশুর দূর উত্তরে জাপানি সরকারের দীর্ঘমেয়াদী জড়িত হওয়ার সূচনা, যেখানে পরবর্তী ২০০ বছর ধরে একটি "সক্রিয়" সীমান্ত ছিল। == পাইকচের পতন == একই সাথে আবে নো হিরাওয়ের ৬৬০ সালের অভিযানের সাথে সাথে জাপান তাং চীন এবং সিল্লার সম্মিলিত বাহিনীর হাতে পাইকচে ধ্বংসের কবলে পড়ে। এটি এই অঞ্চলে একটি অশান্ত সময়ের সূচনা করেছিল যা শেষ পর্যন্ত সিলার শাসনের অধীনে কোরিয়ার একীকরণের দিকে পরিচালিত করে। পুরোনো এবং নতুন তাং রাজবংশীয় ইতিহাস, কোরীয় ''সামগুক সাগি'' এবং ''নিহন শোকিতে'' এই ঘটনাগুলির বিশদ বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যথায় অজানা কোরীয় উপকরণ থেকে বিস্তৃত উদ্ধৃতি রয়েছে। জাপান পাইকচেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য কোরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল এবং চীন বা সিল্লা বা উভয়ের আক্রমণের ভয়ে দীর্ঘকাল ধরে বাস করেছিল। জাপান দরবারে কমপক্ষে প্রথম নারা যুগে নির্বাসনে থাকা পাইকচের রাজাও বজায় রেখেছিল এবং হেইয়ান যুগের শেষের দিকে এখনও সক্রিয় ছিল 百済王 নামে একটি অভিজাত পরিবার "পাইকচের রাজা" পায়েচের জাপানি নামটি রাজার জন্য কোরীয় শব্দের সাথে একত্রিত করে কুদারানোকোনিকিশি উচ্চারণ করেন। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ৬৪৯ সালে সিল্লা চীনা শৈলীর সাথে মেলে দরবারে সরকারী পোশাক পরিবর্তন করেন এবং ৬৫০ সালে এটি তাং রাজবংশের রাজত্বের উপাধিগুলি নিজের হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ৬৫৪ সালে কিম মুরিওল সিলার রাজা হন। এর আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিল্লা দূতাবাস নিয়ে জাপান ও চীন সফর করেন। পূর্ববর্তী দুই সিল্লা শাসক রানী ছিলেন। তাই তার অবস্থান সম্ভবত যুবরাজ নাকা নো ওয়ের মতো এতটা ভিন্ন ছিল না। পরিস্থিতি যেভাবে এগিয়েছে তা থেকে এটি যুক্তিসঙ্গতভাবে স্পষ্ট যে চীন এবং সিল্লা উভয়ই শুরু থেকেই তার নিকটতম শত্রু পাইকচে এবং কোগুরিওকে ধ্বংস করতে এবং তারপরে কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণে আবির্ভূত হওয়ার জন্য একে অপরকে ব্যবহার করার আশা করেছিল। পাইকচে এবং কোগুরিও একে অপরের সাথে মিত্রতা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল এবং ৬৫৯ সালে তারা সিল্লার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে যা ২০ টি দুর্গ দখল করে। সিল্লা চীন থেকে সাহায্যের অনুরোধ করে এবং চীন সাড়া দিয়ে খুশি হয়েছিল। ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মুরিওলের এক পুত্রের সাথে একজন চীনা জেনারেলের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়। তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে সেই সময় চীনে ছিলেন। এই বাহিনীতে ১,৩০,০০০ সৈন্য ছিল এবং সমুদ্রপথে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল "সু-শেন" এর বিরুদ্ধে আবে নো হিরাওয়ের যুদ্ধের ঠিক একই সময়। বিস্মিত হয়ে পাইকচে সেনাবাহিনীর পতন ঘটে। পশ্চিম দিকের উপকূল থেকে অগ্রসর হওয়া চীনারা এবং পূর্ব দিক থেকে আসা একটি সিল্লা সেনাবাহিনী পাইকচে রাজধানীতে একত্রিত হয়েছিল। এটি দ্রুত আত্মসমর্পণ করেছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইকচে ধ্বংস হয়ে যায় বা তাই মনে হয়েছিল। রাজা এবং বিপুল সংখ্যক অভিজাতদের বন্দী হিসাবে চীনে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং পাইকচেকে চীনা অঞ্চল হিসাবে সংগঠিত করা হয়েছিল। চীনা সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশ তৎক্ষণাৎ ফিরে আসে, প্রাক্তন পাইকচে রাজধানীতে আরও ৮,০০০ সিল্লা সেনার সমর্থনে ১০,০০০ লোকের একটি বাহিনী রেখে যায়। তবে, গ্রামাঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই করা হয়নি এবং চীনা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার শেষ করার আগেই বিদ্রোহী বাহিনী তাৎক্ষনিকভাবে অনেক জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল। ''নিহন শোকির'' এই বিদ্রোহের বিবরণের বিষয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিকর। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাথমিক বিদ্রোহী ছিলেন 鬼室福信 নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত কৃষকদের দ্বারা একটি সিল্লা বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করেন এবং তাদের অস্ত্র নিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টতই একজন পাইকচে কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি পাইকচে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছিলেন। প্রায় একই সময়ে পাইকচে থেকে লোকেরা জাপানের দরবারে এসে কী ঘটেছিল তা জানায়। এক মাস পরে 鬼室福信 থেকে দূত এবং আরেকজন নেতৃস্থানীয় বিদ্রোহী কমান্ডার 佘自進 জাপানে এসে সাহায্য চেয়েছিলেন। জাপানি দরবারে একজন পাইকচে রাজপুত্র বাস করছিলেন এবং তারা তাকে রাজা বানানোর এবং পাইকচে পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করেন। এতে নিজেদের সম্পৃক্ত করা স্পষ্টতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কিছু না করাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বছরের শেষে আদালত তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেয় কারণ সাইমেই এবং দরবার নানিওয়ায় চলে যায় এবং পুরো দরবারকে উত্তর কিউশুতে স্থানান্তরিত করার প্রস্তুতি শুরু করে, যেখান থেকে তারা আসন্ন যুদ্ধের নির্দেশ দেবে। নানিওয়ায় পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পরে তারা ৬৬১ সালের প্রথম মাসে কিউশুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিন দিন পরে তারা কিবিতে পৌঁছেছিল, যেখানে এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এই পদক্ষেপটি কতটা বিস্তৃত ছিল কারণ রাজকুমার ওমার স্ত্রী একটি বাচ্চা মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। এই অভিযানের সময় আরও বেশ কয়েকটি রাজকীয় শিশুর জন্ম হয়েছিল। তারা আট দিনের মধ্যে পশ্চিম শিকোকুর আধুনিক মাতসুয়ামা অঞ্চলে পৌঁছেছিল এবং সেখানে কিছুক্ষণের জন্য শিবির স্থাপন করেছিল। দুই মাস পরে তারা কিউশুতে স্থানান্তর সম্পন্ন করে, হাকাটা বেতে পৌঁছে। তারা সেই সময়ে একটি অস্থায়ী প্রাসাদ স্থাপন করেছিল তবে দুই মাস পরে এটি একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬৬১ এর ৭ তম মাসে সাইমেই তেন্নো মারা যান। স্থানীয় ঐতিহ্য তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিল যে অস্থায়ী প্রাসাদের জন্য কাঠ নিকটবর্তী একটি মন্দির ভেঙে উপরে পড়েছিল। যুবরাজ নাকা নো ওই সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন এবং সম্রাটের পদ গ্রহণের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেননি। সঠিকভাবে বলতে গেলে তখন একটি অন্তর্বর্তীকাল ছিল। তবে ৬৬২ সাল থেকে তেনচি তেন্নোর রাজত্বের বছর গণনা শুরু করা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম বিচ্ছিন্নতা ৬৬২ সালের প্রথম মাসে আজুমি নো মুরাজি হিরাউয়ের কমান্ডে কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় শুরু হয়। তাঁর সাথে ছিলেন পাইকচে রাজপুত্র, ইয়ামাবে নো ওমি মোমো, সাই নো মুরাজি আজিমাসা, হাতা নো মিয়াৎসুকো তাকুতসু এবং ৫,০০০ পুরুষ। তারা পঞ্চম মাসে কোরিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের কাছে ১০০,০০০ তীর এবং অন্যান্য সামরিক সরবরাহ সরবরাহ করেছিল। ইতিমধ্যে চীনারা একজন নতুন কমান্ডার নিয়োগ করে এবং সিল্লা পাইকচেতে অতিরিক্ত সৈন্যও প্রেরণ করে। সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোরীয় বিদ্রোহীরা সাবেক রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেয়। ৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ বিদ্রোহীরা পাইকচের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬৬৩ এর গোড়ার দিকে সিল্লা একটি বড় আক্রমণ শুরু করে এবং বিদ্রোহীদের পিছু হটতে হয়েছিল। তবে চতুর্থ মাসে দ্বিতীয় জাপানি সেনাবাহিনী ২৭,০০০ পুরুষ নিয়ে এসেছিল। কমান্ডার ছিলেন কামিতসুকেনু নো কিমি ওয়াকাকো। এই নামের অর্থ তিনি পূর্ব জাপানের কান্টো অঞ্চল এবং কুনিনোমিয়াৎসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাশিহিতো নো ওমি ওফুতা, কোসে নো কামিসাকি নো ওমি ওসা, মিওয়া নো কিমি নেমারো, আবে নো হিকিতা নো ওমি হিরাও এবং ওয়াকে নো ওমি কামায়ে। এই শক্তিবৃদ্ধির সাথে বিদ্রোহীরা আবার আধিপত্য অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো জাপানিদের কোরিয়ায় মোট ৩২,০০০ পুরুষ ছিল এবং বাহিনীটি স্পষ্টতই রচনায় দেশব্যাপী ছিল। ''নিহন শোকিতে'' উল্লিখিত নামগুলি থেকে এটি বলা সম্ভব যে সেখানে কিউশু এবং শিকোকুর প্রায় প্রতিটি প্রদেশ এবং সুদূর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে সৈন্য ছিল। ধারণা করা হয় যে, দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর সাথে আবে নো ওমি হিরাও একই ব্যক্তি যিনি উত্তর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রায় একই সময়ে, পাইকচে বিজয়ের মূল চীনা কমান্ডার ৭,০০০ লোক নিয়ে ফিরে আসেন। ঠিক এই মুহুর্তে কোরীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে বিদ্রোহটি প্রায় মারাত্মক আঘাত হানে। পাইকচে রাজকুমার রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। ৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ম মাসে চীন ও সিল্লা উভয়ই কোরিয়ান উপকূলে মিলিত হয়ে একসাথে অভিযান চালানোর জন্য বিশাল শক্তিবৃদ্ধি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। একই সময়ে জাপানিরা একটি তৃতীয় বাহিনী প্রেরণ করেছিল যা চীনাদের দ্বারা বেঁছে নেওয়া ঠিক একই বিন্দুতে উপকূলে অবতরণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। এই পদক্ষেপটি রাজকুমার 豊璋 দ্বারা আক্রমণের সাথে সমন্বয় করার কথা ছিল। জড়িত জাপানি সেনারা একটি নতুন বাহিনী ছিল নাকি কামিতসুকেনু নো কিমি নো ওয়াকাকোর অধীনে ২৭,০০০ থেকে একটি বিচ্ছিন্নতা ছিল তা স্পষ্ট নয়। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে ১০,০০০ পুরুষ ছিল। চীনা ও সিল্লা অভিযাত্রীরা ৬৬৩ সালের ৮ম মাসের ১৭তম দিনে যোগাযোগ করে। চীনা নৌবহরে ১৭০টি জাহাজ ছিল। ইওহারা নো কিমির নেতৃত্বে জাপানি বাহিনী ১০ দিন পরে এসে চীনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যা দু'দিন স্থায়ী হয়। জাপানিরা একে হাকুসুকি নো ই বা হাকুসুকি উপসাগরের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে। ''সামগুক সাগি'' বিবরণে বলা হয়েছে যে জাপানিদের "১০০০ জাহাজ ছিল", সম্ভবত এটি অতিরঞ্জিত। জাপানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং মূলত সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে দেখা যাচ্ছে যে জাপানিরা চীনা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য সমস্ত কিছু বাজি ধরেছিল এবং চীনা ডানা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে ঘিরে ফেলেছিল। পুরোনো তাংয়ের ইতিহাস বলছে যে চারটি পৃথক লড়াই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৪০০ জাপানি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল এবং এগুলোর কর্মীরা ডুবে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সমাপ্তির পরে উপকূলে সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত যুবরাজ সংগ্রাম ত্যাগ করে কোগুরিওতে পালিয়ে যান। জাপানিরা বিপুল সংখ্যক পাইকচে শরণার্থী সহ তাদের অন্যান্য সেনাবাহিনীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। আসলে এখানেই গল্পের শেষ নয়। পরে চীনারা তাদের বেশিরভাগ বাহিনীকে কোগুরিও আক্রমণের জন্য স্থানান্তরিত করে এবং পাইকচে আবার বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। এবার সিল্লা বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং চীনের বিরুদ্ধে কোগুরিওতে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের সাথে জোটবদ্ধ হয় এবং চীনাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে সফল হয়। এরপরে তারা সিল্লার একীভূত রাজ্যের অধীনে এই অঞ্চলের প্রাক্তন পাইকচে শাসক পরিবারের গভর্নর হন। স্বাভাবিকভাবেই, নাকা নো ওকে এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করতে হয়েছিল যে চীনা এবং বা সিল্লা বাহিনী অবিলম্বে বা ভবিষ্যতের কোনও সময়ে জাপান আক্রমণ করবে। তবে এই বিপর্যয় দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেবে কিনা তা নিয়েও তাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়েছে। এটি স্পষ্ট নয়। তবে এটি প্রদর্শিত হয় যে তিনি ৬৬৩ এর শেষের কিছু সময় আগে ইয়ামাতোতে ফিরে আসেন। আক্রমণ থেকে কিউশুর প্রতিরক্ষার জন্য তিনি যা করতে পারেন তা করেন। এই সময়ে তিনি সিংহাসনে আরোহণের বিষয়ে কিছুই করেননি এই বিষয়টি সাধারণত এই প্রস্তাবের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে গ্রহণ করা হয় যে, তিনি তার বোন রাজকুমারেস হাশিহিতোর সাথে অজাচারি বিবাহ করেন। ''নিহন শোকির'' একটি বিবরণ রয়েছে যে ইঙ্গিও তেন্নোর মৃত্যুর পরে অভিজাতরা ঠিক একই কারণে তার উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে বসাতে অস্বীকার করেছিল এবং পরিবর্তে তার ছোট ভাইকে বেছে নিয়েছিল। এর অর্থ হলো নাকা নো ও এটি চেষ্টা করার সাহস করেনি। এবার তিনি কেবল সিংহাসন খালি রেখেছিলেন, উপযুক্ত আসন গ্রহীতা উপলব্ধ ছিল না। তবে, এটি অবশ্যই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে কেউ তার বিরুদ্ধে যেতে সক্ষম হতে পারে। এই সময়ে তার প্রধান সুবিধা ছিল যে যেহেতু তিনি ইতিমধ্যে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং রাজকুমার আরিমাকে নিষ্পত্তি করেন। তাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প ছিলেন তার নিজের ভাই রাজকুমার ওমা। এই যুগে ভাইয়েরা ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার প্রতিটি বৈশিষ্ট্য দিয়েছিলেন। নাকা নো ওই তার দুই মেয়েকে ওমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। তারা হলেন রাজকুমারী ওটা এবং রাজকুমরী উনো নো সারারা। উনো নো সারারা ৬৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ বছর বয়সে ৬৫৭ সালে ওমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন (জাপানি গণনা)। ধারণা করা হয়, রাজকুমার ওমার বয়স তখন ২৭ বছর। অবশেষে, ওমা নাকা নো ওয়ের চার কন্যাকে বিয়ে করেন, শেষ দু'জন তিনি সম্রাট হওয়ার পরে। সাম্রাজ্যবাদী/অভিজাত যৌন জীবন সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত টীকা রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। জাপানি কবিতার প্রথম সংকলন ''মানিয়োশু''-এ একটি রাজকুমারী নুকাতার ৩ টি দীর্ঘ কবিতা এবং ৯ টি সংক্ষিপ্ত কবিতা রয়েছে। এই কবিতাগুলির মধ্যে কয়েকটি স্পষ্ট করে দেয় যে তিনি নাকা নো ও / তেনচি তেন্নোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তিনি ''নিহন শোকির'' তালিকাভুক্ত নন। সম্রাটদের স্ত্রীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া একমাত্র স্ত্রীই রাজপুত্র বা রাজকন্যার জন্ম দিয়েছেন। যে-সম্পর্ক কোনো সন্তান জন্ম দেয় না, সেটাকে প্রকৃত বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হতো না, এটি বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত ছিল। রাজকন্যা নুকাতা তেম্মু তেন্নোর নিবন্ধে ''নিহন শোকিতে'' তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এটি প্রথমে তাঁর সম্রাজ্ঞী এবং সমস্ত স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে যারা রাজকন্যা ছিলেন, তারপরে সমস্ত স্ত্রী যারা আভিজাত্যের কন্যা ছিলেন এবং তারপরে এটি রাজকন্যা নুকাতাকে কেবল একজন মহিলা হিসাবে উল্লেখ করে যার সাথে তার একটি সন্তান ছিল। এই শিশু, রাজকুমারী তোচি, পরে তেনচি তেন্নোর ছেলে রাজকুমার ওটোমোকে বিয়ে করেন। আমাদের মানদণ্ড অনুসারে এই মানুষগুলোর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হিসেবে অত্যন্ত অজাচার। রাজকুমার নাকা নো ওই এবং রাজকুমারেস হাশিহিতো টাবুর মধ্যে একমাত্র যে বিষয়টি (অনুমিত) যোগাযোগ তৈরি করেছিল তা হলো তাদের মা একই ছিলেন। একই পিতার সাথে মানুষের মধ্যে বিবাহ কিন্তু ভিন্ন মায়ের মধ্যে সাধারণ ছিল। লোকেরা রাজকুমারেস নুকাতা এবং তার চক্র সম্পর্কে প্রচুর তথ্য বের করতে সক্ষম হয়েছে, চিত্রিত করে যে অভিজাতদের মধ্যে সাক্ষরতার বিস্তার এবং একটি সাহিত্যিক চরিত্রের বইয়ের উপস্থিতির সাথে সাথে লোকেরা কীভাবে তাদের জীবনযাপন করেছিল সে সম্পর্কে আমাদের জিনিসগুলি জানার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ৬৫৮ সালে সাদাইজিন কোসে নো টোকুটা মারা গিয়েছিলেন এবং প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, যুবরাজ ওমা উপাধি গ্রহণ না করেই এই পদে কাজ করেন, যেহেতু এই সময় পর্যন্ত কোনও রাজপুত্রের মন্ত্রীর উপাধি গ্রহণের কোনও নজির ছিল না। সম্ভবত এটিই সাদাইজিনের চেয়ে উচ্চতর একটি নতুন পদ তৈরির কারণ ছিল, যাকে বলা হয় দাজোদাইজিন বা ওমাতসুরিগোতো নো মায়েস্তুকিমি, একে প্রায়শই অনুবাদ করা হয় "চ্যান্সেলর"। নারা আমলের আগ পর্যন্ত এই পদ খালি না থাকলেও সবসময় একজন রাজপুত্র দ্বারা পূর্ণ থাকত। এটি মূলত "যুবরাজ" অবস্থানের আমলাতন্ত্রের আমদানি ছিল। তারপরে, ৬৬৪ সালে উদাজিন সোগা নো মুরাজিকো মারা যান এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে সরকারের শীর্ষে রাজকুমার নাকা নো ও এবং রাজকুমার ওমা একা ছিলেন। রাজকুমার ওমার নামে জারি করা একাধিক ফরমান স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তৎকালীন সঙ্কটে কিছু সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা এবং উচ্চতর অভিজাতদের সমর্থন বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্য করা দরকার ছিল। প্রথমত, ৬৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯ পদের ব্যবস্থা একটি নতুন ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যার ২৬ গ্রেড ছিল। তাদের তুলনা করলে, এটি স্পষ্ট যে শীর্ষ ছয়টি মর্যাদা রেখে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী তেরোটি বিশটিতে প্রসারিত হয়েছিল। মনে হয় যে সমস্ত অভিজাতদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে সরকারী নিয়োগ প্রাপ্ত লোকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে এই পরিবর্তনটি আসলে ৬৭১ সালে করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি''তে সেই বছরের জন্য রাজকুমার ওমা কর্তৃক আদেশিত পদমর্যাদায় পরিবর্তনের খুব সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। "তেনচি তেন্নোর রাজত্বের তৃতীয় বছর" বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে বিভ্রান্তির সম্ভাবনার কারণে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়। যদি ৬৬২ থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৬৪ হবে। তবে যদি ৬৬৮ (যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন) থেকে গণনা করা হয় তবে এটি ৬৭১ হবে। যদি পরিবর্তনটি ৬৭১ সালে হত তবে এটি সঙ্কটের সময়ের সাথে যুক্ত হত না। এটা সম্ভব যে ব্যবস্থায় দুটি সামঞ্জস্য ছিল এবং তারিখগুলির মধ্যে সম্পর্কটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল। ৬৬৪ সালে জারি করা দ্বিতীয় আদেশটি বংশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। উজিনোকামি বা বংশ প্রধানের একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি তৈরি করা হয়েছিল। একটি "মহান বংশের" ক্ষেত্রে প্রধানকে একটি তাচি "দুর্দান্ত তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল এবং একটি "ছোট" বংশের সিএতে একটি কাতানা "ছোট তরোয়াল" উপহার দেওয়া হয়েছিল। তোমোনোমিয়াৎসুকো "ইত্যাদি" একটি ঢাল বা একটি ধনুক এবং তীর দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। এই বিভাগগুলি ধরে নেওয়া হয় যে "ইত্যাদি" কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির জন্য জায়গা দেয়, কেবল অভিজাতদের উপরের অর্ধেককে আচ্ছাদিত করে, তাদের অন্যদের থেকে পৃথক করে। এছাড়াও, "বড় গোষ্ঠী" এবং "ছোট গোষ্ঠী" এর পৃথক স্বীকৃতি প্রথম ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,বংশ কাঠামোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে, নাকা নো ওই অভিজাতদের আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে আমলাতান্ত্রিকীকরণের দ্বারা তাদের বিশেষ মর্যাদা মুছে ফেলা হবে না। এই সময়ে সর্বশেষ যে জিনিস প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো "কাকিবে" এবং "ইয়াকাবে" এর স্বীকৃতি। এগুলি বেসরকারী সম্পত্তির বিভাগ ছিল যা ৬৪৬ সালের নববর্ষের দিন ফরমান দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। একটু সামনের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারা আমলের ভূমি পুনঃবণ্টন ব্যবস্থায় অভিজাতদের আসলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলি আদমশুমারির রেজিস্টারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং তারা কোনও কর দেয়নি (আসলে খুব নিম্নতম পদমর্যাদার লোকদের কিছু কর দিতে হয়েছিল কারণ কেবল প্রকৃত পদধারীই অব্যাহতি পেয়েছিল, তার পুরো পরিবার নয়)। নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা চালের গাঁট এবং কাপড়ের বোল্ট আকারে বেতন পেতেন। এটি তারা তাদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের জন্য বাণিজ্য করতে পারতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একই ধরনের বেতন পেতেন। তবে দুই ধরণের "পদ জমি"। মাঝারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়োগগুলি শ্রম কর সহ কৃষিজমির একটি ব্লক থেকে সংগৃহীত করের সরাসরি অর্থ প্রদানের পরিমাণ ছিল। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমাণ জমি পেতেন যা তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিচালনা করতেন। উচ্চ পদমর্যাদা বংশানুক্রমিক হওয়ায় তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব জমি আগলে রেখেছিল। কিছু পরিবারকে প্রকৃতপক্ষে সরকারী নিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জমির বৃহত্তম বরাদ্দ রাখার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও পুত্র তার বাবার সমান পদে না পৌঁছালেও সে পারিবারিক পদের জমি রাখতে পারে। এই অনুশীলনগুলির আলোকে, উচ্চতর আভিজাত্যকে সমর্থন করার জন্য জমির নির্দিষ্ট ব্লকগুলি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হবে তা স্বীকৃতি দেওয়া অগত্যা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করা ছিল না। যাইহোক, এই সময়ে এটি ঘোষণা করা অবশ্যই অভিজাতদের আশ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে ছিল যে নতুন ব্যবস্থা তাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি লক্ষ্য করা গেছে যে এই সময়ে এই জমিগুলির স্বীকৃতি বোঝায় যে এগুলি আসলে ৬৪৬ সালের পরে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। নতুন সরকার ব্যবস্থার বিকাশ সম্পাদন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। এ সময় যথেষ্ট পরিমাণে সামরিক তৎপরতাও ছিল। সমস্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক কোরীয় ৬৬৩ সালে জাপানে পালিয়ে গিয়েছিল এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসতি স্থাপনের অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে এবং কীভাবে তাদের জাপানি অভিজাতদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নির্ধারণের জন্য তাদের মধ্যে অভিজাতদের শ্রেণিবদ্ধ করার প্রচেষ্টাও রয়েছে। কোরীয় অভিজাতদের অনেকে যে অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল সেখানে দুর্গ নির্মাণের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল, বিশেষত উত্তর কিউশু এবং দ্বীপপুঞ্জে ইকি এবং সুশিমা কিউশু উপকূলে। সাকামোরি "সমুদ্রপ্রহরী" নামে পরিচিত দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে জাপানি সৈন্যদের শ্রম করের অংশ হিসাবে সীমান্তের দুর্গগুলি পরিচালনার জন্য কর্তব্যের মেয়াদে পশ্চিমে যাওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সাকামোরি এবং তাদের পরিবারের বাড়িতে ফেলে আসা পরীক্ষা এবং দুর্দশা সম্পর্কে প্রচুর কবিতা রয়েছে। অন্যান্য সৈন্যদের কিউশু থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রসারিত সিগন্যাল ফায়ারের একটি শৃঙ্খল পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে আক্রমণ ঘটলে সরকারকে দ্রুত অবহিত করা যায়। নারা যুগে সাকামোরিরা সকলেই এমিশি সীমান্তের নিকটবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে এই ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল যে এই লোকদের সকলেরই সামরিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ছিল। সম্ভবত ৬৬৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় পশ্চিমা সেনারা সম্ভবত ফিল্ড আর্মি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ছিল যখন সাকামোরি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি রক্ষা করত। নারা যুগে সিগন্যাল স্টেশনগুলিতে নিযুক্ত পুরুষরা সকলেই স্থানীয় ছিল এবং সম্ভবত এই সময়েও এটি সত্য ছিল। এটাই ছিল প্রতিরক্ষার প্রথম সারি। দাজাইফু এলাকায় বড় আকারের দুর্গ আকারে একটি দ্বিতীয় সারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বহু শতাব্দী ধরে কিউশু প্রতিরক্ষা সদর দফতর হিসাবে কাজ করেছিল। দাজাইফু উপকূল থেকে বেশ দূরে ফুকুওকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত যা রক্ষা করা সহজ। অনেক দুর্গ আজও দৃশ্যমান। নির্মাণগুলির মধ্যে একটি ছিল তথাকথিত "জলের দুর্গ"। এর কেন্দ্রস্থলটি একটি দীর্ঘ মাটির কাজ যা এখনও ১৪ মিটার উঁচু এবং ১ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। এটি স্পষ্টতই কাঠামোগত ছিল যাতে মিকাসা নদী দ্বারা পূর্ণ জলের একটি জলাধার প্রয়োজনে প্রাচীরের ঠিক নীচের অঞ্চলটি প্লাবিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি উপকূল থেকে দাজাইফুর দিকে আসা সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেবে। উত্তর প্রান্তটি প্রায় ৪১০ মিটার উঁচু একটি যথেষ্ট পাহাড়ে পৌঁছেছে যার উপরে ৬৬৫ সালে একটি বড় পাথরের দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। এগুলোর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক শহর দাজাইফু। পাহাড়ের একটি ফাঁক ঢাকতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে আরও একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল, যদিও একটি সেনাবাহিনী মূল প্রতিরক্ষা ফ্ল্যাঙ্ক করার চেষ্টা করতে পারে। এই দুটি দুর্গের বাহিনীদল কোরীয় ছিল। তারা সম্ভবত নির্মাণের নির্দেশনাও দিয়েছিল। এগুলো দেখতে অবিকল সমসাময়িক কোরীয় পাহাড়ি দুর্গের মতো। কোরিয়া খুব পর্বতময় এবং সমস্ত কোরীয় যুদ্ধ পাহাড়ের দুর্গের চারপাশে ঘোরাফেরা করে বলে মনে হয়। দাজাইফু দুর্গের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। তাই এটির জন্য একটি বড় বাহিনী প্রয়োজন। এটি এত বড় যে দাজাইফুর পুরো জনগোষ্ঠী ভিতরে আশ্রয় নিতে পারে। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে হনশুর পশ্চিম প্রান্তে কোরিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি দুর্গ নির্মিত হয়। এর অবস্থান জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি শিমোনোসেকির কাছাকাছি কোথাও ছিল। এটি সর্বদা সেই অঞ্চলের সামরিক মূল বিন্দু। ৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসের প্রথম দিকে পায়েচে চীনা কমান্ডার জাপানে একটি দূত প্রেরণ করেন। তারা সাত মাস অবস্থান করেন। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি ''নিহন শোকি''। ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের নবম মাসে চীন থেকে সরাসরি দ্বিতীয় দূতাবাস আসে এবং প্রথম দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত নিয়ে আসে। স্পষ্টতই চীনারা সিরিয়াস ছিল। যা ঘটেছিল তার উপর ভিত্তি করে একজনকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে চীনাদের মাথায় অনেক কিছু ছিল (তাদের তখনো কোগুরিওর ধ্বংস সম্পূর্ণ করতে হতো। এটি বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রচুর সমস্যা দিয়েছিল)। সর্বশেষ যে জিনিসটি তারা চেয়েছিল তা হলো জাপানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ। দূতাবাসের আগমনের পরের মাসের জন্য ''নিহন শোকি''তে একটি টীকা রয়েছে যে উজিতে একটি "দুর্দান্ত সামরিক পর্যালোচনা" হয়েছিল, সম্ভবত চীনাদের প্রভাবিত করার জন্য। এই দূতাবাস তিন মাস ছিল। একই বছর জাপান চীনে নিজস্ব দূতাবাস স্থাপন করে। মজার ব্যাপার হলো, রাজকুমার আরিমার ঘটনার অংশ হিসেবে যেসব কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, রাষ্ট্রদূত তাদের একজন। শেষ পর্যন্ত চীন বা সিল্লা কেউই জাপানকে আক্রমণ করেনি (যদিও সিল্লা এমন একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল যা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি), যদিও জাপানিরা কমপক্ষে আরও একশ বছর ধরে পশ্চিমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বজায় রাখার প্রচেষ্টা কখনও শিথিল করেনি। দুর্গগুলি সুশিমাতে, পশ্চিম শিকোকুর সানুকিতে এবং অভ্যন্তরীণ সাগরের পূর্ব প্রান্তে এবং কাওয়াচি এবং ইয়ামাতোর সীমান্তে নানিওয়াতে নির্মিত হয়েছিল। সুশিমার দুর্গটি এখনও টিকে আছে এবং সানুকির দুর্গটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে জেনপেই যুদ্ধের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ৬৬৫ সালে এই প্রচেষ্টার মাঝপথে সম্রাজ্ঞী হাশিহিতো মারা যান। এটি সম্ভবত নাকা নো ওয়ের সিংহাসন গ্রহণের পথ পরিষ্কার করেছিল। তবে তিনি আরও তিন বছর বিলম্ব করতে থাকেন। ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সাইমেই তেন্নো ও সম্রাজ্ঞী হাশিহিতোকে একই সমাধিতে সমাহিত করা হয়। সাইমেইয়ের সমাধি নির্মাণের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও কেন এত সময় লাগল তা বোধগম্য নয়। হাশিহিতোর দেহাবশেষ রাখার ব্যবস্থা করার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এক মাস পরে, নাকা নো ও তার প্রাসাদটি বিওয়া লেকের ওতসুতে স্থানান্তরিত করেন। এটি পূর্ববর্তী কোনও অবস্থানের পূর্ব দিকে। ''নিহন শোকি'' বলেছে যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে অজনপ্রিয় ছিল এবং এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং ব্যঙ্গাত্মক গান ছিল। কেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরের একটি কবিতায় এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে এবং বোঝানো হয়েছে যে আসল বিরোধিতা ছিল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যারা চরম বর হিসাবে যা ভেবেছিল তার দিকে যেতে হবে। আমি মনে করি এটি বলা ন্যায্য যে হেইয়ানকিও (কিয়োটো) এর চূড়ান্ত পদক্ষেপে ভবিষ্যতের সমস্ত পদক্ষেপ একই রকম বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল, এমন পদক্ষেপগুলি ব্যতীত যা পরীক্ষামূলক অবস্থানগুলির মধ্যে একটিকে পরিত্যাগ করে পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসেছিল যেখানে ভবনগুলো ইতিমধ্যে ছিল। ততদিনে কেবল শাসকের পরিবারই যায়নি, বরং উচ্চ ও নিম্ন পদমর্যাদার বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা সরে যায়, যাদের সকলকেই নতুন আবাসন তৈরি করতে হয়েছিল। কোনও কারণ দেওয়া হয়নি। তবে অনুমান করা হয় যে, দাজাইফু যেমন অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তেমনি নাকা নো ওই সামরিক সুরক্ষার কথা ভাবছিলেন। ওতসু নানিওয়া উপকূলের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পর্বত বাধার পূর্ব দিকে রয়েছে। তবে ইয়ামাতো প্রদেশটিও পর্বতমালা দ্বারা ভালভাবে সুরক্ষিত। ওতসুর এই গুণ রয়েছে যে বিওয়া হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে এর অবস্থান এটি কে হোকুরিকু অঞ্চলের সাথে দুর্দান্ত যোগাযোগ দেয়। তবে এটি সর্বদা পশ্চিমে যোগাযোগের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি তখন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আরেকটি তত্ত্ব আছে। এটি পরবর্তীকালের অসংখ্য সত্যায়িত ঘটনার কারণে উপেক্ষা করা যায় না। অর্থাৎ হাশিহিতোর ভূত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন নাকা নো ও। প্রতিহিংসাপরায়ণ ভূত অভিজাতদের মধ্যে একটি প্রধান উদ্বেগ ছিল এবং তারা রাজধানীর অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি মন্দির এবং মন্দিরগুলিতে প্রচুর ক্রিয়াকলাপ করেছিল। আমরা যদি ধরে নিই যে, তাদের অজাচার সম্পর্ক স্থাপনে তিনিই আক্রমণকারী ছিলেন, তা হলে তিনি যেখানে মারা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাওয়ার হয়তো উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে. যাই হোক না কেন, দরবার ওতসুতে ৫ বছরের জন্য স্থগিত ছিল। ৬৬৮ সালে প্রাসাদে ওতসু নাকা নো ও অবশেষে সিংহাসন গ্রহণ করেন। তার সম্রাজ্ঞী ছিলেন ইয়ামাতো নো হিমেমিকো, রাজকুমার ফুরুহিতোর কন্যা, যাকে তিনি হত্যা করেন। তার কোনও সন্তান ছিল না। তবে তার আরও ৮ জন মহিলার সন্তান ছিল, যার মধ্যে চারজন কিসাকি এবং যাদের মধ্যে চারজন অপেক্ষারত মহিলা ছিলেন। তাদের মধ্যে দশটি মেয়ে ও চারটি ছেলে ছিল। তার নির্বাচিত উত্তরাধিকারী রাজকুমার ওটোমোর নিম্ন মর্যাদার মা ছিলেন। তাঁর পিতামহের পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে, তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন। তেনচির একমাত্র উচ্চ মর্যাদার পুত্র ছিলেন যুবরাজ তাকেরু, যার মা ছিলেন সোগা নো ইশিকাওয়ামারোর কন্যা। যাইহোক, রাজকুমার তাকেরু ৮ বছর বয়সে ৬৫৮ সালে মারা গিয়েছিলেন। রাজকুমার ওমায় তেনচি তেন্নোর একটি শক্তিশালী এবং সম্মানিত ভাই ছিল, ইয়ামাতো রাজ্যের স্বাভাবিক গতিশীলতা প্রায় নিশ্চিত করে তুলেছিল যে ওমা তার উত্তরসূরি হবেন (যদি তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন) নিম্ন মর্যাদার মায়ের সাথে রাজপুত্রের সাথে কোনও প্রতিযোগিতায়। এমন রাজপুত্র এতদিন সিংহাসনে আরোহণ করেননি। অবশ্যই, তেনচি তেন্নো ইয়ামাতো রাজ্যকে একটি নতুন উত্তরাধিকারী দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছিলেন যা চীনা রীতিত্ব কাজ করেছিল। বিষয়গুলি সম্পর্কে চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ছিল, জ্যেষ্ঠ বৈধ পুত্রই একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী। তেনচি তেন্নো এবং পরবর্তীকালের বেশ কয়েকজন সম্রাট শাসক বংশের জন্য এই নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচণ্ড লড়াই করেন। কিন্তু তা কখনও ঘটেনি। ৬৬৯ সালে তেনচি তেন্নোর দীর্ঘদিনের সহযোগী নাকাতোমি নো কামাতারি ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর অব্যবহিত আগে সম্রাট নাইদাইজিনের নতুন পদ বিশেষভাবে তৈরি করেন যাতে কামাতারিকে পদোন্নতি দেওয়া যায়। তিনি কামাতারির বংশধরদের জন্য নতুন বংশের নাম ফুজিওয়ারা তৈরির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ফরমান প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশকে আচ্ছাদন করে একটি আদমশুমারি সম্পন্ন করার আদেশ দেয়। এটি করার জন্য, গ্রামীণ অভিজাতদের অংশগ্রহণের সাথে জড়িত প্রদেশগুলিতে এক ধরণের আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক অগ্রগতি হওয়া উচিত। এই আদমশুমারির কোনও প্রকৃত নথি টিকে নেই। যাইহোক, আমরা জানি যে পরে নারা সময়কালে এই আদমশুমারির নিবন্ধগুলি তখনো বিদ্যমান ছিল এবং তাইহো নীতিমালায় নির্দিষ্ট ব্যবস্থা কাজ করার সূচনা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আমরা আরও জানি যে কিউশুর নথি ৭৭০ খণ্ড পর্যন্ত ছিল এবং কান্টো অঞ্চলের কোজুকে প্রদেশের নথি ৯০ খণ্ড ছিল। এই সংখ্যাগুলি ৮ম এবং ৯ম শতাব্দীতে এই স্থানগুলির পরিচিত জনসংখ্যার সমানুপাতিক। নারাতে শোসোইন কোষাগার প্রকৃত ৮ম শতাব্দীর রেজিস্টারগুলি সংরক্ষণ করে। এগুলিতে ক্রীতদাস পর্যন্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এটি জমির পরবর্তী বিতরণের পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ৬৭০টি নিবন্ধন তখন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়নি। কারণটি হলো পরে যখন জিতো তেন্নো একটি আদমশুমারি পরিচালনা করেন তখন এটি সরাসরি জমির পুনর্বণ্টনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তবে এখানে এটি ঘটেছিল এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। এছাড়াও, যদি কারো কাছে প্রতিটি ব্যক্তির বিশদ বিবরণ রেজিস্টার থাকে তবে কেউ স্বাভাবিকভাবেই করের বোঝা নির্ধারণে সেগুলি ব্যবহার করবেন। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে, ৬৪৬ সালে ডাকা নতুন কর ব্যবস্থা তখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এই রেজিস্টারগুলি পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনায় ব্যবহার করার জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হত। এটি পুনরায় বিতরণ এবং পুনরায় বিতরণ দ্বারা নিহিত কর ব্যবস্থার বাস্তবায়নের পরে আরও বিশদ আদমশুমারি হত। তেনচি তেন্নোর শেষ বছরগুলিতে প্রায়শই জমা দেওয়া অন্য কৃতিত্বটি ছিল "ওমি রিও" বা ওমি রীতির সৃষ্টি। ওমি সেই প্রদেশ যেখানে ওতসু অবস্থিত। এটি একটি খুব বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ''নিহন শোকি'' বা নবম শতাব্দীর চেয়ে পুরোনো কোনও বই বা নথিতে এর উল্লেখ নেই। এটি প্রথম ''কোনিন কিয়াকুশিকির'' মুখবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি বছরের পর বছর ধরে প্রকাশিত ধারাবাহিক বইগুলির মধ্যে অন্যতম যা আদেশ, বিচারিক রায় এবং এর মতো অনুলিপি রয়েছে যা প্রশাসনিক আইন নীতিমালার প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করেছিল। ''দাইশোকুকান্দেন'' নামে একটি বই রয়েছে যা অষ্টম শতাব্দীতে ফুজিওয়ারা নো নাকামারো লিখেছিলেন এবং এটি তেনচি তেন্নোর রাজত্বকালের ফরমানগুলির নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা তৈরি একটি সংকলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে করা হয় যা এটি র উল্লেখ করে না। একটি তত্ত্ব উল্লেখ করে যে জিনশিন যুদ্ধের পরে তেম্মু তেন্নোর বংশধররা ১০০ বছর ধরে সিংহাসন ধরে রেখেছিলেন যতক্ষণ না এটি কোনিন তেন্নোর সাথে তেনচি তেন্নোর বংশধরদের লাইনে স্থানান্তরিত হয়। তেম্মু তেন্নোর কৃতিত্বের কৃতিত্ব তার ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এমন অনেকে থাকতে পারেন। যাই হোক না কেন, এর মধ্যে কী ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। তাই এটি আসলে কোনও ব্যাপার নয়। যাইহোক, চীনারা প্রশাসনিক আইনের বিশদ বিবরণ দিয়ে খণ্ড সংকলন করার অভ্যাসে ছিল এবং এটি অনিবার্য ছিল যে কোনও সময়ে জাপানিরাও একই কাজ করার কথা ভাববে। তবে সম্ভবত তখনো পুরোপুরি প্রচলিত ছিল না। == জিনশিন যুদ্ধ == তেনচির রাজত্বের শেষের দিকে উত্তরাধিকার সম্পর্কে সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তেনচির তিন পুত্র জীবিত ছিল, সবচেয়ে বড় ছিল যুবরাজ ওটোমো। তিনি ইতিমধ্যে দাজোদাইজিন নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটি কখন ঘটেছিল তা নিয়ে উৎসে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তেনচি যুবরাজ ওটোমোকে তার উত্তরসূরি বানাতে চেয়েছিলেন, যদিও তার মা নিম্ন মর্যাদার (রাজকীয় মান অনুসারে) প্রাসাদ কর্মচারী ছিলেন। এটি দীর্ঘকাল ধরে প্রথা ছিল যে কুনিনোমিয়াতসুকো এবং আগাতানুশি শ্রেণির প্রাদেশিক অভিজাতরা মেয়েদের স্ত্রী এবং রাজকন্যাদের উচ্চ স্তরের চাকর হিসাবে কাজ করার জন্য প্রাসাদে পাঠাতেন। এই প্রথা পরবর্তী শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল। তেনচি তেন্নো আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদগুলি দীর্ঘদিন ধরে খালি রেখেছিলেন। তবে একই সাথে তিনি ওটোমোকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তিনি সোগা নো ওমি আকে সাদাইজিন, নাকাতোমি নো মুরাজি কোগানে উদাইজিনকে তৈরি করেন এবং ওকিমোনোসুসুকাসা, সোগা নো ওমি হাতায়াসু, কুসে নো ওমি হিতো এবং কি নো ওমি উশির পদে তিনজনকে নিয়োগ করেন। এই শেষ পদটি পরবর্তী ব্যবস্থায় টিকে ছিল না তবে মোটামুটিভাবে দাইনাগনের সাথে মিলে যায়, এর অনুবাদ সাধারণত কাউন্সিলর এবং মহান মন্ত্রীদের ঠিক নীচে এর পদমর্যাদা। সম্ভবত, তিনি শীর্ষস্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে রাজকুমার ওটোমোর পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন, যাকে তখন পর্যন্ত হাতের মুঠোয় রাখা হয়েছিল। ওটোমোর পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব করার জন্য রাজকুমার ওমাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কারণ তেনচির মৃত্যুর পরে আভিজাত্যরা ওটোমোকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম ছিল। কৃতিত্বের জন্য, তেনচি তার ভাইকে হত্যা করতে চায়নি। তিনি মূলত রাজকুমার ফুরুহিতোকে নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি সংস্করণ নিয়ে আসেন। সম্রাট প্রকাশ্যে যুবরাজ ওমাকে উত্তরাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে সিংহাসনে সফল হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই, সম্রাজ্ঞী ইয়ামাতোহিমকে তেন্নো হওয়ার এবং বিষয়গুলির পরিচালনা রাজকুমার ওটোমোর হাতে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে দেশের কোনো নিরিবিলি মন্দিরে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। এটি ৬৭১ সালের ১০ তম মাসের ১৭ তম দিনে ঘটেছিল, যখন সম্রাট ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। একই দিনে, রাজকুমার ওমা মুণ্ডটি নিয়েছিলেন এবং তার প্রাসাদে রাখা সমস্ত অস্ত্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দু'দিন পরে তিনি একই মন্দিরে তথা ইয়োশিনোর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন, যেখানে রাজকুমার ফুরুহিতো এবং পরবর্তীকালে অনেক রাজকীয় আধা-নির্বাসিত ছিল। তা মঞ্জুর করা হয়। এর পরপরই, পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে একত্রিত করা হয়েছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে তেনচি তেন্নোর উপস্থিতিতে শপথের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। তেনচি তেন্নো ৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২তম মাসের শুরুতে মৃত্যুবরণ করেন। রাজকুমার ওটোমো ধারাবাহিক সম্রাটদের সরকারী নথিপত্রে কোবুন তেন্নো হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি কেবল আধুনিক যুগেই করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' তৎক্ষনাৎ তেম্মু তেন্নোর ধারায় স্থানান্তরিত হয়, যার সময় রাজকুমার ওটোমোকে কখনই সম্রাট হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটি উপরে বর্ণিত গল্পটি একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় বর্ণনা করে। এতে বলা হয়েছে, সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়লে নো ওমি ইয়াসুমারোকে রাজকুমার ওমাকে তার উপস্থিতিতে ডেকে আনার জন্য পাঠানো হয়। ভিতরে ঢোকার সময়, সোগা রাজপুত্রকে তিনি যা বলেছিলেন তা খুব সাবধানে রাখতে বলেছিলেন, যার ফলে রাজপুত্র একটি ষড়যন্ত্র সন্দেহ করেন। সুতরাং, যখন তাকে সিংহাসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন যেমনটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর সুস্পষ্ট তাৎপর্য হলো, তিনি যদি সিংহাসন গ্রহণ করতেন তাহলে সম্ভবত তাকে হত্যা করা হতো। স্বভাবতই এই গল্প সত্যি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে যা ঘটেছিল তার কেবল রাজকুমার ওমার সংস্করণ রয়েছে। গল্পটি ভালো, হয়তো খুব ভালো। সম্ভবত তেনচি সরাসরি যুবরাজ ওমাকে প্রকাশ্যে সিংহাসন ত্যাগ করে একটি মঠে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাই হোক না কেন, তেনচি মরিয়া হয়ে তার ছেলের উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন এই সত্যের মুখে যে অভিজাতরা প্রায় নিশ্চিতভাবে ওমাকে সমর্থন করবে যদি এটি নিয়ে লড়াই হয়। যখন তিনি যোশিনোতে পৌঁছেছিলেন তখন রাজপুত্র তার "টোনারি" বা ব্যক্তিগত পরিচারক / দেহরক্ষীদের একত্রিত করেন এবং তাদের বলেছিলেন যে তিনি ধর্মের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন এবং যে কেউ পদ চান তার কাছে গিয়ে নতুন চাকরি সন্ধান করার স্বাধীনতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অর্ধেক পেছনে আর অর্ধেক থেকে যায়। এরপর সম্রাট মারা যান। এই সময়ে কিউশুতে সবেমাত্র একটি বিশাল চীনা দূতাবাস এসেছিল, এত বড় যে তারা জাপানিদের আশ্বস্ত করার জন্য কয়েকটি জাহাজ পাঠিয়েছিল যে এটি আক্রমণকারী বহর নয়। রাষ্ট্রদূতদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। রাজকুমার ওটোমোর কোনও উল্লেখ ছাড়াই এই সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পুরো গল্পটি রাজকুমার ওমার দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে এবং ওমি আদালতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। রাজকুমার ওটোমো কখন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন বা আদৌ ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। ''নিহন শোকি'' অনুমানের অনুমতি দেয় যে তিনি শাসক হিসাবে তালিকাভুক্ত নন বলে তিনি ছিলেন না। নর যুগের অন্য কোন গ্রন্থে তাঁকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত শাসক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না। টোকুগাওয়া মিতসুকুনি দ্বারা ''দাই নিহন শিতে'' এডো পিরিয়ড পর্যন্ত এটি প্রথম দাবি করা হয়েছিল যে তাকে সিংহাসনে আরোহণ করা হয়েছিল তবে তেম্মু তেন্নোর বৈধতা সমর্থন করার জন্য ''নিহন শোকিতে'' এটি দমন করা হয়েছিল। মরণোত্তর রাজত্বের উপাধি কোবুন তেন্নো মেইজি সম্রাট কর্তৃক রাজকুমার ওটোমোকে ভূষিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি যে ৬ মাস ওৎসু দরবারে শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ম মাসে যুবরাজ ওমার একজন অনুচর তাকে বলেন যে তিনি প্রচুর সংখ্যক লোককে জড়ো হতে দেখেছেন যারা তেনচির সমাধিতে কাজ করতে আসার দাবি করেছিল। কিন্তু তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল। অপর এক ব্যক্তি তখন বলেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ এবং চেকপয়েন্টগুলি লক্ষ্য করেছেন। ওমা তদন্ত করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে এটি সত্য ছিল। তারপরে তিনি তার লোকদের বলেছিলেন যে ঝামেলা রোধ করার জন্য তিনি অবসর নিয়েছেন। তবে তারা যদি তাকে যেভাবেই হত্যা করতে চলেছে তবে তিনি লড়াই করতে যাচ্ছেন। তার প্রধান সমস্যা ছিল রাজধানী ছাড়ার আগে তাকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাই মূলত অরক্ষিত ছিল। ৬ষ্ঠ মাসের ২২তম দিনে তিনি তিনজন লোককে মিনো প্রদেশে (ঠিক পূর্বদিকে) যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং গভর্নরকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তিনি তার কাছে যা কিছু বাহিনী ছিল তা একত্রিত করেন এবং পূর্বের অন্যান্য গভর্নরদেরও একই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফুওয়াতে একটি সভা পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছিল। এটি ওমি এবং মিনো প্রদেশের সীমান্তের একটি গিরিপথ যা প্রধান পূর্ব-পশ্চিম রাস্তা দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং ওতসুর উপর আক্রমণ চালানোর জন্য একটি ভাল অবস্থান। এরপর আসে ইয়োশিনোর কাছ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তিনি একজন লোককে আসুকায় পাঠিয়েছিলেন পাস পাওয়ার আশায় যা তাদের পোস্ট ঘোড়া ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তাই তারা ২৪ তারিখ পায়ে হেঁটে পূর্ব দিকে রওনা দিল। আদালত ইয়োশিনোর ওপর হামলার কথা ভাবছে কি না, তা জানার কোনো উপায় আমাদের নেই। তবে ওমা চলে যাওয়ার পর আদালত অবাক হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। বেশ কয়েকদিন তারা সাড়া দেয়নি। এই প্রস্থানটি পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে নোটিশের পুরো এক মাস পরে ছিল এবং বর্ধিত বিপদের কোনও উল্লেখ নেই, সুতরাং এটি অবশ্যই ধরে নেওয়া উচিত যে পূর্ববর্তী মাসটি সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে পরিকল্পনা এবং যোগাযোগ করতে ব্যয় করা হয়েছিল। দলটি শীঘ্রই এমন এক সমর্থকের মুখোমুখি হয়েছিল যার একটি ঘোড়া ছিল, যাতে রাজপুত্র চড়তে পারে। তাঁর স্ত্রী (ভবিষ্যতের জিতো তেন্নো) এবং তাঁর দুই পুত্র, রাজকুমারেস কুসাকাবে এবং ওসাকাবেকে একটি পালকিতে বহন করা হয়েছিল। এই সময়ে রাজপুত্রের সাথে "প্রায়" ২০ জন পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৩ জনের নাম ছিল এবং ১০ জন মহিলা ছিলেন। শীঘ্রই তাদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিল এবং তারা যে রাজকীয় এস্টেটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সবাইকে খাওয়ালেন। আরও কিছুটা এগিয়ে তারা প্রায় ২০ জন অভিজাতদের একটি শিকারী দলের মুখোমুখি হয়েছিল, যাদের ছোট সেনাবাহিনীতে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও একজন "রাজকুমার মিনো"। তিনি সম্ভবত যাত্রাপথের কাছাকাছি থাকতেন, তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরপর তারা ৫০টি মালবাহী ঘোড়ার একটি ট্রেন দেখতে পায় যারা চাল বহন করছে। তারা চাল ফেলে দিয়েছিল এবং তখন তাদের অশ্বারোহী ছিল। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই তারা মশাল বানানোর জন্য একটি বেড়া টেনে ফেলল। অবশেষে তারা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে তারা মধ্যরাতে থামতে পারে। তারা পোস্টিং স্টেশনটি পুড়িয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষকে তাদের অনুসরণ করার জন্য জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। দ্বিতীয় দিনে তারা ৭০০ জনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপরে আরও লোক উপস্থিত হয়েছিল, এত বেশি যে তারা ফিরে যেতে এবং তাদের পেছনের দিক রক্ষা করার জন্য ৫০০ জন লোকের একটি বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। ২৬ তারিখে যুবরাজকে জানানো হয় যে মিনো থেকে ৩,০০০ লোক এসেছে এবং আদেশ অনুসারে ফুয়া রাস্তা অবরোধ করছে এবং আরও অনেক সমর্থক, যাদের অনেকের নাম রয়েছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ জন সমর্থকের নাম আমাদের কাছে রয়েছে। তারা ইসে প্রদেশের কুওয়ানায় ছিল এবং ওমা অনুভব করেন যে তিনি দৌড়ানো বন্ধ করতে পারেন। তিনি তখন সৈন্য সংগ্রহের জন্য চারদিকে দূত পাঠাতে শুরু করলেন। ''নিহন শোকি'' বলছে যে এই মুহুর্তে রাজকুমার ওটোমোর সরকার কী ঘটছে তা জানতে পেরেছিল। খবরটি ওতসুর রাজধানীকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। কিছু অভিজাত যুবরাজ ওমায় যোগদানের আশায় পালিয়ে যায়, অন্যরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকার আশায় পালিয়ে যায়। ওটোমো তার কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। একজন মন্ত্রী তাদের কাছে যে কোনও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তাৎক্ষণিক আক্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ওটোমোর পরিবর্তে একটি যথাযথ সেনাবাহিনী সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব বার্তাবাহকদের প্রেরণ করেন। যেখানে ওমার বার্তাবাহকরা বেশিরভাগ পূর্ব দিকে প্রচারিত হচ্ছিল, ওটোমো তাকে পশ্চিমে প্রেরণ করেন। সুকুশির কমান্ডার এই ভিত্তিতে লোক পাঠাতে অস্বীকার করেন যে তার কাজ ছিল কোরীয় এবং চীনাদের কাছ থেকে কিউশুকে রক্ষা করা। ওটোমো কিবি এবং সুকুশির কমান্ডারদের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা আশা করেছিলেন কারণ তারা ওমার সাথে সংযুক্ত রাজপুত্র ছিলেন এবং তিনি তাঁর দূতদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা যদি রাষ্ট্রদ্রোহের লক্ষণ দেখায় তবে তাদের হত্যা করতে। তারা কিবিতে কমান্ডারকে হত্যা করতে সফল হয়েছিল। কিন্তু সুকুশির লোকটি খুব সুরক্ষিত ছিল এবং তারা চলে গেল। তারা খুব কমই সুকুশির কাছ থেকে কোনও ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত পুরুষদের আনার কথা ভাবতে পারেনি, সুতরাং এটি সম্ভবত এই অঞ্চলগুলিকে রাজকুমার ওমার পক্ষে ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল। প্রায় একই সময়ে একজন কর্মকর্তা, ওটোমো নো ফুকেই এর আগে ওমির আদালত ত্যাগ করেন এবং আসুকা অঞ্চলে তার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার নিজস্ব ব্যক্তিগত বাহিনী এবং নিকটবর্তী আয়া বংশের লোকদের একত্রিত করেন এবং ২৯ শে যুবরাজ ওমার পক্ষে প্রাক্তন আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই অঞ্চলের মিওয়া এবং কামো গোষ্ঠীগুলি যুবরাজ ওটোমোকে সমর্থন করার জন্য ওমিতে সৈন্য প্রেরণ করেছিল। যুবরাজ ওমা তখনতার সদর দফতর কুওয়ানা থেকে সরিয়ে নিলেন। এটি সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে ফুয়াতে ছিল। ২৭ তারিখে পূর্ব দিক থেকে আরও বিশ হাজার লোক তার সাথে যোগ দেয়। রাজকুমার ওমা তার ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজকুমার তাকেচিকে সামগ্রিক সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তার সেনাবাহিনী দুটি প্রধান কলামে বিভক্ত ছিল। অভিজ্ঞ যোদ্ধা কি নো ওমি এমারোর নেতৃত্বে প্রথমটি ছিল ইগা এবং ইসের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং ওটোমো নো ফুকেইয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আসুকার দিকে যাত্রা করা। দ্বিতীয়টি ছিল মুরাকানি নো মুরাজি ওয়োরির কমান্ডে সরাসরি ওতসুকে আক্রমণ করা। তিনি ইয়োশিনোতে রাজকুমার ওমার সাথে ছিলেন এমন একজন টোনেরি। এই বাহিনীকে তাদের পোশাকে লাল ব্যাজ সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা যুদ্ধের ময়দানে একে অপরকে চিনতে পারে। সপ্তম মাসের দ্বিতীয় দিনে ওমির আদালত ফুওয়া পাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণের নির্দেশ দেয়। ''নিহন শোকির'' মতে, এই আক্রমণটি প্রচণ্ড বিভ্রান্তিতে পড়েছিল এবং রাষ্ট্রের অন্যতম মন্ত্রী সোগা নো হাতায়াসু যুবরাজ ইয়ামাবের সাথে নিহত হন। রাজকুমার ওমার সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়েছিল এবং ১৩ তারিখে ইয়াসুকাওয়ায় শেষ হওয়া পরপর তিনটি যুদ্ধ জিতেছিল, যার পরে তারা সেটায় অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ওতসু প্রাসাদের বাইরের প্রতিরক্ষা গঠন করেছিল। সেখানে একটি সেতু সহ একটি স্রোত ছিল, যেখানে আদালতের সেনাবাহিনী তার অবস্থান তৈরি করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে, আদালতের অনুগত বাহিনী ওটোমো নো ফুকেই পরাজিত করে এবং আসুকা প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চলেছিল। কিন্তু রাজকুমার ওমার কলামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং ফুকেই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, নির্ণায়ক যুদ্ধটি ৭ম মাসের ৬ষ্ঠ দিনে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের স্থানটি একটি সমাধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অনেক পতিত সৈন্য রয়েছে। দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর আদালতের সেনাবাহিনী উত্তর দিকে পিছু হটে। ২২শ দিনে সেতা ব্রিজে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেতু রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী মাঝের অংশের মেঝে বের করে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি তক্তা প্রসারিত করেছিল যাতে সেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। ওমা বাহিনীর একজন সৈনিক দুই সেট বর্ম পরে তক্তা পেরিয়ে দৌড়ে গেল, যেতে যেতে দড়ি কেটে ফেলল। অতঃপর তিনি শত্রুপক্ষের সারীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এটি কে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিলেন। তার সেনাবাহিনী স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনুসরণ করেছিল এবং রাজকুমার ওটোমোর সেনাবাহিনী ভেঙে পালিয়ে যায়। যিনি এই দায়িত্বে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি যুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিলেন। ৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ''নিহন শোকিতে'' তাঁর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধে নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে তেম্মু তেন্নো সরকারী নোটিশ নেওয়ার জন্য সতর্ক ছিলেন বলে মনে হয়। ওমার বাহিনী পরের দিন সফলভাবে আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং যুবরাজ ওটোমো তার সেনাবাহিনী থেকে আলাদা হয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে কেউ এটি জানত না। সারাদিন লড়াই অব্যাহত ছিল এবং রাজকুমার ওটোমোকে সমর্থনকারী বিশাল শক্তিবৃদ্ধি আসার সাথে সাথে খুব ভারী হয়ে ওঠে। ওমার বাহিনী শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এবং সাদাইজিন ও উদাইজিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ তারিখে রাজকুমার ওটোমোর মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং তার মাথা ওমার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর ঠিক এক মাস পর রাজকুমার ওটোমোর প্রধান সমর্থকদের সাজা ঘোষণা করা হয়। নাইদাইজিন নাকাতোমি নো মুরাজি নো কোগানে সহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, সাদাইজিন এবং উদাইজিন নামে দু'জনকে তাদের সমস্ত পরিবারের সাথে নির্বাসিত করা হয়েছিল, নাকাতোমির পরিবারকেও নির্বাসিত করা হয়েছিল যেমন সোগা নো হাতায়াসু নো ওমি যিনি লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন। বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। একজন কর্মকর্তা যাকে ক্ষমা করা হত তিনি পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং আত্মহত্যা করেন। উত্তরাধিকার নিয়ে পূর্ববর্তী সমস্ত দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে ছোট বিষয় ছিল। তবে এটি একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ ছিল যা যোশিনো থেকে রাজকুমার ওমার ফ্লাইট এবং তিন সপ্তাহের প্রকৃত ক্ষেত্রের লড়াই থেকে এক মাস স্থায়ী হয়েছিল, এতে কয়েক হাজার লোক জড়িত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এর পেছনে অন্য কোনো বিবেচনার বিষয় জড়িত ছিল কি না, যার জন্য এতগুলো পুরুষকে এত কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। উনিশ শতক এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বাধিক জনপ্রিয় তত্ত্বটি ছিল যে যুবরাজ ওমা তেনচি তেন্নোর অধীনে পরিবর্তনের দ্রুত গতির বিরোধিতার সুযোগ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার অর্থ যুদ্ধটি একটি রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া ছিল। যাইহোক, বাস্তবে তেম্মু তেন্নো তার ভাইয়ের দ্বারা উদ্বোধন করা পরিবর্তনগুলি সমাপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাই যদি তার সমর্থকরা পুরানো উপায়ে ফিরে আসার আশা করে তবে তারা দুঃখজনকভাবে হতাশ হবে। প্রায় ১৯২০-এর দশক থেকে এটি ঠিক বিপরীত তর্ক করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল, যে রাজকুমার ওমা "প্রগতিশীল" পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন, সুতরাং রাজকুমার ওটোমো বা তার পিছনে কর্মকর্তারা অবশ্যই "রক্ষণশীল" দল ছিলেন। তার বিজয়ের মাধ্যমে, তেম্মো তেন্নো মূলত রাজকুমার নাকা নো ও এবং নাকাতোমি নো কামাতারি দ্বারা পরিকল্পিত লাইন বরাবর সরকারের পুনর্গঠন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে লেখা রচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গির সারসংক্ষেপ করেন আইনাগা সাবুরো। তিনি ভেবেছিলেন যে রাজকুমার ওমা মূলত নিম্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা সমর্থিত ছিলেন এবং জ্যেষ্ঠ আভিজাত্যরা রাজকুমার ওটোমোর পিছনে ছিলেন। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেরী কোফুন যুগের সমাধিগুলির পরিবর্তিত নিদর্শনগুলির গবেষণায় যা দেখেন তার সাথে এক ধরণের শ্রেণি সংগ্রাম ছিল, সামগ্রিকভাবে আভিজাত্যের মধ্যে আরও অভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকটি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণির অভিজাতদের কাছ থেকে শক্তি বিকশিত হয়েছিল। যাইহোক, এই যুক্তিতে ত্রুটি আছে যে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে তেনচির রাজত্বের পরবর্তী বছরগুলিতে তাইকা সংস্কারের নীতিগুলি থেকে কোনও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৬৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সামরিক সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরে, সংস্কারের স্রোত আবার শুরু হয়েছিল এবং সম্রাটের চূড়ান্ত অসুস্থতা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি জাপানে ঐতিহাসিক চিন্তাধারার একটি সম্পূর্ণ নতুন পর্বের সূচনা করেছিল কারণ এটি ইতিহাসবিদদের প্রকাশ্যে মার্কসবাদী হতে মুক্তি দিয়েছিল। এটা বলা ন্যায্য, আমরা মনে করি, মূলত আগে যা ঘটেছিল তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে মার্কসবাদ (একটি হালকা ধরনের) ১৯৫০ থেকে ১৯৬০-এর দশকে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে। এটি স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিকদের বিস্মিত করেছিল (প্রথমবারের মতো) ৬৪৫ সাল থেকে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সম্ভবত কোনও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কিনা। কিতায়ামা শিজিও নামে একজন ইতিহাসবিদ প্রস্তাব করেন যে ৬৪৫ সাল থেকে পরিবর্তনগুলি মূলত কেন্দ্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য কাজ করেছিল এবং এর অর্থ হলো করের জোরপূর্বক শ্রম অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। যখন এটি স্থানীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন এটি সম্ভবত এপিসোডিক ছিল, এতে প্রতি বছর কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু ছিল না। তবে জাতীয় সরকার সর্বদা কিছু খুঁজে পেতে পারে। আদালত নিজেই এটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রম করের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছিল। প্রহরী, রক্ষণাবেক্ষণের লোক, প্রাসাদের পরিচারক, বার্তাবাহক এবং কাজের ছেলেরা এবং সমস্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের শ্রমকরের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। এটি ব্যবস্থায় বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভ তৈরি করেছিল বলে তিনি ভেবেছিলেন। তবে সমস্যা হলো, জিনশিন যুদ্ধে কোনো পক্ষই জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উভয় পক্ষের যোদ্ধারা অভিজাত ছিল। তবে, এমন অনেকে আছেন যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এই ব্যবস্থার তীব্রতা নিয়ে যে কোনও জনপ্রিয় ক্ষোভ স্থানীয়ভাবে অনুভূত হত এবং গ্রামীণ আভিজাত্যের কৃষক জনসংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলত। ''নিহন শোকির'' বিবরণ থেকে দৃঢ়ভাবে বোঝা যায় যে ইয়ামাতো প্রদেশের বেশিরভাগ অভিজাত ওমির দরবারকে সমর্থন করেছিল এবং যুবরাজ ওমা পূর্বের প্রাদেশিক আভিজাত্যের কাছ থেকে তার সমর্থন পেয়েছিলেন (এবং পশ্চিম, যদিও কোনও পশ্চিমা সেনা হস্তক্ষেপ করার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল)। এটি সুস্পষ্ট যে রাজকুমার ওমার দুটি কলামের একটির কমান্ডার ছিলেন টোনারি। একে নিম্ন-পদমর্যাদার প্রাদেশিক অভিজাত বলতে হয়। রাজকুমার ওমা বছরের পর বছর ধরে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং এই লোকেরা তার প্রতি আস্থা রেখেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল যে তিনি তাদের সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে নারা যুগে উদ্ভূত জটিল ব্যবস্থাটি প্রাদেশিক আভিজাত্যের দ্বারা সমর্থিত না হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। এটি তারা নিজেরা না দেখলে এটি করত না। আপনারা যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিরোধিতার সামগ্রিক অনুপস্থিতি ৬৪৫ পরবর্তী পুরো রূপান্তরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়। উপসংহারটি হলো পুরানো কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণিকে সঙ্কুচিত করা হয়েছিল এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার এবং নিম্ন স্তরের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল যারা নতুন ব্যবস্থার অধীনে জেলা সরকারকে নিয়োগ করেছিল। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে জিনিসগুলি কার্যকর করার জন্য বিশদ জ্ঞান ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাদের জনপ্রিয় অস্থিরতা থেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা ছিল। এটি ছিল মৌলিক চুক্তি যা চীনা সাম্রাজ্যকে বহু শতাব্দী ধরে চালিত রেখেছিল এবং জাপানেও একই জিনিস করার উদ্দেশ্য ছিল। == তেম্মু তেন্নো == ৬৭২ সালের ৯ম মাসে রাজকুমার ওয়ামা ওমি প্রাসাদ ত্যাগ করে আসুকা অঞ্চলে ফিরে আসেন। তিনি কিয়োমিহারা প্রাসাদ নামে পরিচিত একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন। ৬৭৩ সালের ২য় মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহন করেন। ৬৭৩ সাল তার শাসনকালের প্রথম বছর হিসেবে তার সরকারি নথিপত্রে সর্বদা স্বীকৃত ছিল। পরে যখন কোবুন তেন্নো তালিকায় যুক্ত হয়, তখন সরকারি কালানুক্রমিক তালিকা ৬৭২ সালকে "কোবুন প্রথম বছর" হিসেবে গণ্য করলেও ''নিহোন শোকি'' ধারাবাহিকভাবে ৬৭২ সালকে "তেম্মু প্রথম বছর" হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং এটি মেইজি যুগের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক লেখায় স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে স্থিত হয়েছিল। তেম্মুর শাসনকালে এবং জিতোর ৭ বছর পর্যন্ত সরকার কিয়োমিহারা প্রাসাদেই অবস্থান করেছিল, অর্থাৎ ৬৭৩ থেকে ৬৯৩ পর্যন্ত ২১ বছর। এটি পূর্বের যেকোনো প্রাসাদের তুলনায় বেশি স্থায়ী ছিল এবং স্থায়ী রাজধানী স্থাপনের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। ''মান্যোশু'' সংগ্রহে অনেক কবিতায় এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে যে, যুদ্ধজয়ের ফলে তেম্মু তেন্নোর অভূতপূর্ব ক্ষমতা ছিল যিনি যেকোনো কিছু ঘটাতে পারতেন। এক কবিতায় বলা হয়েছে, "ঈশ্বরের মতো" তিনি একটি পাহাড়কে সমুদ্রে রূপান্তরিত করতে পারেন। ঈশ্বরের ন্যায় ওয়াইশিমাগুনি রাজত্বকারী তেম্মু নিজেও ১২তম বছরের একটি আদেশে নিজেকে "যমাতো নেকো নো মিকোতো" বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওয়াইশিমাগুনি হল জাপানের প্রাচীন নাম। তার শাসনকালের শুরুতে কোন বড় যমাতো পরিবার থেকে আসা অভিজাতরা দরবারে প্রাধান্য পায়নি, এবং নাকাতোমি নো কামাতারির ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোও তখনো প্রভাবশালী ছিল না। সরকারে তিনি নিম্ন পদস্থ লোকদের উপর বেশ নির্ভরশীল ছিলেন, যার মধ্যে টোনেরিরাও ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুরাকুনি নো মুরাজি ওয়ায়রি, যাকে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তিনি কুনিনোমিয়াতসুকো শ্রেণীর ছিলেন না এবং তাঁর সামরিক সফলতার জন্য মুরাজি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত অবসরের সময় বা মৃত্যুর কাছাকাছি উচ্চ পদমর্যাদা পেতেন, কিন্তু কর্মজীবনে তাদের পদমর্যাদা তুলনামূলকভাবে কম থাকত। মুরকুনিকে ১২০টি পরিবার থেকে আয় দেওয়া হয়েছিল। এটি মহান অভিজাতদের মানদণ্ডে খুব বেশি ছিল না। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষমতা ছিল কারণ সম্রাট তাদের পিছনে ছিলেন। তাদের উচ্চ পদ বা ব্যক্তিগত প্রতিপত্তির এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শাসনকালের শুরুতে তিনি সর্বোচ্চ পদ দাজোদাইজিন, সদাইজিন এবং উদাইজিন ফাঁকা রেখেছিলেন। বড় কোন অভিজাতকে উচ্চপদে নিয়োগের প্রথম ঘটনা ছিল ৬৭৫ সালে। তখন তিনি ওতোমো নো মুরাজি নো মিয়ুকিকে রাজকুমার কুরিকুমার অধীনে যুদ্ধমন্ত্রীর উপমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। মোট মিলিয়ে ''নিহোন শোকি''তে তেম্মু তেন্নোর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ৭ জন জোমাতো অভিজাত এবং ৫ জন রাজকুমারের নাম উল্লেখ আছে। ৫ জন রাজকুমারই অভিজাতদের থেকে উচ্চ পদ পেয়েছিলেন। আরও উল্লেখ আছে, তেম্মুর সম্রাজ্ঞী উনো (পরে জিতো তেন্নো) তাঁর শাসনকালে সরকারে সক্রিয় ছিলেন এবং বিষয়াদি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া, তেম্মুর দুই পুত্রও যথাক্রমে ৬৮১ সাল থেকে রাজকুমার কুসাকাবে এবং ৬৮৩ সাল থেকে রাজকুমার ওৎসু সরকারে সক্রিয় হয়। কুসাকাবে শেষ পর্যন্ত দাজোদাইজিন হন। স্পষ্ট যে তেম্মুর সরকার ছিল সম্রাটের সরাসরি শাসন, যেটিতে শাসক পরিবারের সদস্যরাই সহযোগিতা করতেন। ৬৭৫ সালে তেম্মু সর্বোচ্চ অভিজাতদের সমস্ত ব্যক্তিগত জমি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন। ৬৬৪ সালে টেনচি এ জমিগুলো বেতন হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন, কিন্তু তখন পরিষ্কার হয়ে গেল যে পুরো দেশ জুড়ে সম্পূর্ণ কর ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে এবং অভিজাতরা কেবলমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করবেন। তিনি আরও আদেশ দেন যে "নিকটবর্তী রাজকুমার, অন্যান্য রাজকুমার, কর্মকর্তা ও মন্দিরগুলো" তাদের হাতে বছরের পর বছর ধরে পাওয়া সব ধরণের জমি — কৃষিজমি বা বনজ — ফেরত দেবে। ৬৮৫ সালে তেম্মু আবার পদমর্যাদা ব্যবস্থা সংস্কার করেন। প্রথমবারের মতো রাজকুমারদের জন্য নতুন পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। এটি পূর্বের ব্যবস্থার বাইরে ছিল। এটি নারা যুগ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুইটি সমান্তরাল পদমর্যাদা ব্যবস্থা চালু ছিল, একটি রাজকুমারদের জন্য এবং অন্যটি সকলের জন্য। এখন সরকারি পদমর্যাদা ব্যবস্থার বাইরে ছিলেন শুধুমাত্র সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবার, অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তানরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কিছু লক্ষণও ছিল। ৬৭৫ সালে একটি ঘটনা ঘটে যখন দুই মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাকে "দরবারে উপস্থিত হওয়া থেকে নিষিদ্ধ" করা হয় এবং কয়েকদিন পরে তাদের একজনকে "সমস্ত পদ ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত" করা হয়। একই বছর রাজকুমার ওমি ও তাঁর দুই পুত্রকে গ্রামাঞ্চলে নির্বাসিত করা হয়, এবং পরের বছর দাজাইফুর প্রধান কর্মকর্তা রাজকুমার ইয়াকাকিকেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট বছর জানা না গেলেও, শাসক গোত্র থেকে কয়েকজনকে "মিকাতা" উপাধি ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাদ দেওয়া হয়। ৬৭৫ সালে একটি আদেশে সব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের বছর গভর্নরদের মধ্যে অস্ত্র ধারণের ব্যাপারে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। ৬৭৯ সালে রাজকুমার ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয় যে পরবর্তী বছর একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তারা সশস্ত্র ও সিংহাসনে চড়ে উপস্থিত হবে, এবং এটি বাস্তবে পরিচালিত হয়। ৬৮৪ সালে তেম্মু তেন্নো একটি আদেশে উল্লেখ করেন যে "সামরিক বিষয়গুলো সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।" ৬৪৫ সালের আগে শাসকের হাতে সরাসরি সীমিত সামরিক বাহিনী ছিল। সবসময় কিছু সংখ্যক টোনেরি ছিল, যারা প্রধানত পূর্বাঞ্চল থেকে আসত, এবং কিছু ইউকেইবে ছিল, যারা কিউশু থেকে চাপা কৃষক সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রাজধানীতে পাঠানো হতো এবং প্রধানত গার্ড হিসেবে কাজ করত। এই বিভাগের লোকসংখ্যা কত ছিল তা কেউ নিশ্চিত নয়। অন্যান্য সব কিছু নির্ভর করত যমাতো গ্রামের সামরিক মনোভাবাপন্ন উজি গোত্রের উপর। ধারণা করা হয় টোনেরিদেরকে নতুন রাষ্ট্রের "বাম" ও "ডান" হ্যোয়েফু 兵衛府 প্রহরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এবং ইউকেইবে গার্ডরা ছিলেন এমোনফু 衛門府-তে। বাকী দুটি গার্ড ইউনিট, "বাম" ও "ডান" ইজিফু 衛士府, শ্রম করের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধারণা করা হয় এই দায়িত্বে নিয়োজিত লোকেরা সাধারণ কৃষক ছিলেন না, বরং স্থানীয় ক্ষুদ্র অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মোটামুটি বলতে গেলে, রাজধানীর সরকারি সামরিক বাহিনী ছিল মূলত পুলিশ ও রক্ষী হিসেবে, বাস্তবিক সামরিক বাহিনী নয়। সম্ভবত তেম্মু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে সব কর্মকর্তা সশস্ত্র এবং অন্তঃপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও যেন সশস্ত্র থাকেন যাতে প্রয়োজনে তিনি দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করতে পারেন। প্রদেশগুলোতে সামরিক সংগঠনের তেমন চিত্র ছিল না। ৬৮৫ সালে তেম্মু আদেশ দেন যে ব্যক্তিগত নয়, বরং সংগঠিত সামরিক ইউনিটগুলোর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সামরিক উপকরণ — যেমন শিং, ঢোল, পতাকা থেকে শুরু করে ক্রূড অস্ত্র যেমন "পাথর নিক্ষেপক" এবং বড় আকারের ক্রসবো — কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। এটি জনগণকে নিরস্ত্র করার জন্য নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে এগুলো প্রয়োজনে দ্রুত পাওয়া যাবে এবং ঠিক করা থাকবে। প্রাচীন জাপানের একটি ছোট রহস্য হল কেন ইসের "মহান মন্দির" আমাতেরাসু ওমিকামি, যাকে শাসক গোত্রের পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়, এটি তাঁর পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন পূজার কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এটি এমন স্থানে অবস্থিত যা থেকে ধারণা করা হয় পূজার বিষয়বস্তু হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর, বিশেষ করে যারা সমুদ্রপথে পূর্ব জাপানে যাওয়ার পথে ছিলেন তাদের জন্য। এটি শাসক গোত্রের সাথে বিশেষ কোন সম্পর্কিত স্থান নয়। ধারণা করা হয়েছে মন্দিরটি তুলনামূলকভাবে দেরিতে আমাতেরাসুর সাথে সম্পর্কিত হয়েছিল, যার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হলো তেম্মু তেন্নোর শাসনকাল। ''নিহোন শোকি''তে কেতাই থেকে সুইকো পর্যন্ত সব শাসনের সময় রাজকুমারেসদের ইসে পাঠানো হত সাইগু বা ইটসুকি নো মিয়া হিসেবে, অর্থাৎ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত্রী হিসেবে। তবে এই প্রথা পরবর্তীতে লোপ পেয়ে যায় যতক্ষণ না ৬৭৪ সালে তেম্মু তার শাসনকালে নিজেই প্রথম ইসে যাত্রা করেন। এটি ছিল রাজ পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই যাত্রাটি তেম্মুর শাসনকালের একটি চিহ্নিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এভাবে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তী যুগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেম্মু আরও কৃতিত্ব পেয়েছেন এমন একটি কাজ শুরু করার জন্য যা পরবর্তীতে ''কোজিকি'' এবং ''নিহন শোকি'' রচনার সূচনা করেছিল। তিনি বিভিন্ন অভিজাত বংশের কাছে থাকা উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে জাপানের ইতিহাস রচনার উপকরণ পাওয়া যায়। এটি ''কোজিকি''র ভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে। ৬৮১ সালে তিনি রাজকুমার কাওশিমা নেতৃত্বাধীন শাসক বংশের ছয় সদস্যের একটি কমিটি এবং নাকাতোমি নো মুরাজি নো ওশিমা নেতৃত্বাধীন অন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তার একটি কমিটিকে জাতীয় ইতিহাস সম্পাদনার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এই প্রকল্পটি কখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে এটির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তা পরে ''নিহন শোকি''তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই বৃহৎ প্রকল্প থেকে আলাদাভাবে, তিনি তাঁর এক টোনেরি হিয়েদা নো আরেকে সহজ একটি কাজ এককভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এটি একক লেখকের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। হিয়েদা তাঁর কাজ শেষ করার আগে মারা যান, কিন্তু এটি নারা যুগের শুরুর দিকে ও নো আসোন ইয়াসুমারো পুনরায় গ্রহণ করেন এবং ৭১২ সালে ''কোজিকি'' নামে প্রকাশ করেন। উভয় কাজেই অভিজাত বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এটি সম্ভবত ঐ বংশগুলি দ্বারা রক্ষিত কাহিনীগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। ''কোজিকি''তে প্রায় ২০০টি বংশ কাহিনী এবং ''নিহন শোকি''তে প্রায় ১১০টি পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো একত্রিত করার সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তাইকা সংস্কার এবং জিনশিন যুদ্ধের পর থেকে বহু প্রাচীন বংশ মুছে গেছে এবং নতুন অনেক বংশ প্রভাবশালী হয়েছে। এর ফলে প্রাচীন "কাবানে" উপাধিগুলো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বংশের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রতিপত্তির সাথে আর মিলছিল না। তাই ৬৮৪ সালে তেম্মু কাবানে ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি আটটি উপাধির ব্যবস্থা করেন, যাদের মধ্যে বেশকিছু নতুন সৃষ্টি ছিল। শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এগুলো ছিল—মাহিতো (মাঝে মাঝে মাবিতো লেখা হয়) 真人, আসোমি (প্রায় সবসময় আসোন লেখা হয়) 朝臣, সুকুনে 宿禰, ইমিকি 忌寸, মিচিনোশি 道師, ওমি 臣, মুরাজি 連, এবং ইনাগি 稲置। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি বংশের সম্রাট থেকে বিচ্ছেদের মাত্রা স্পষ্ট করা। যেসব বংশ আগে ওমি উপাধি পেত, তাদের অধিকাংশকে আসোমি উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এটি শাসক বংশের শাখা থেকে আগত বংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যেসব বংশ আগে মুরাজি ব্যবহার করত, তাদের বেশির ভাগ সুকুনে উপাধি দেওয়া হয়। মাহিতো বিশেষভাবে শাসক বংশের প্রধান শাখার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত বংশের জন্য সংরক্ষিত ছিল, বিশেষ করে কেটাই তেন্নো বা পরবর্তীকালের শাসকদের বংশ থেকে আগত বংশগুলোর জন্য। ওজিন রাজবংশ থেকে আগত বংশগুলো সবাই আসোমি উপাধিতে আচ্ছাদিত হয়েছিল। ছোট উপাধিগুলো সাধারণত প্রাদেশিক বংশদের জন্য ছিল। তেম্মুর শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। এটি পরবর্তী প্রশাসনিক আইন বিধিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারা যুগে সরকারের মূল ভিত্তি ছিল আটটি মন্ত্রণালয়ের সমষ্টি যাকে দাজোকান বা "বড় দপ্তর" বলা হয়। এদের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তেম্মুর সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মাত্র একটি ছিল অনুপস্থিত, তা হলো নাকাতসুকাসা। এটি শাসকের আবাসিক প্রাসাদের পরিচালনা করত। এটি প্রশাসনিক প্রাসাদ থেকে আলাদা। তেম্মুর দিনে একটি মন্ত্রণালয়ই উভয় কাজ দেখাশোনা করত। নামগুলো সবই ভিন্ন ছিল। তবে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিম্নস্তরের বহু প্রশাসনিক সত্তার নাম এবং সরকারি পদবীও ভিন্ন ছিল। প্রধান পার্থক্য ছিল, শেষমেশ প্রতিষ্ঠিত কোডগুলো চীনা সমসাময়িক প্রথা থেকে নেওয়া নাম ও পদবী বেশি ব্যবহার করত। ৬৮১ সালের দ্বিতীয় মাসে সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী প্রাসাদের প্রধান মিলনকক্ষে গিয়ে সমস্ত রাজপুত্র ও কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। সম্রাট ঘোষণা করেন যে, সরকারের কাঠামো এবং কার্যাবলীর নিয়মাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রশাসনিক নীতিমালা প্রস্তুত করার সময় এসেছে। তিনি স্বীকার করেন এটি একটি বৃহৎ কাজ। এটি শেষ করতে সময় লাগবে এবং সরকারী কাজ ব্যাহত হওয়া উচিত নয়, তাই এই প্রকল্পের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। এটিই পরিচিত "অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরো"র সূচনা। তেম্মু তেন্নোর জীবদ্দশায় সম্ভবত এই কাজ শেষ হয়নি। তবে সরকারের কাঠামো এই প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সামঞ্জস্য করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তেম্মু তেন্নোর ১৭ জন সন্তান ছিল, যাদের নাম জানা গেছে, ৯ জন বিভিন্ন মাতার সন্তান, ১০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। সম্রাজ্ঞী উনোর একমাত্র সন্তান ছিলেন রাজকুমার কুসাকাবে। তিনজন অন্যান্য নারী কিসাকি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, যাঁরা রাজকুমার ওতসু, রাজকুমার নাগা, রাজকুমার ইউগে, এবং রাজকুমার টোনেরির মা ছিলেন, পাশাপাশি একটি কন্যাও ছিলেন। এই চারজন নারীই ছিলেন তেনচি তেন্নোর কন্যা। আরও তিনজন মহিলা ছিলেন, যাঁরা কনকুবাইন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিলেন। দুজন ছিলেন ফুজিওয়ারা নো কামাতারির কন্যা, যাঁরা রাজকুমার নিটাবে এবং এক কন্যার জন্ম দিয়েছেন। তৃতীয় ছিল সোগা নো ওমি নো আকের কন্যা, যিনি রাজকুমার হাটসুমি এবং দুই কন্যার জন্ম দেন। শেষমেশ তিনজন নারী ছিলেন যাদের প্রাসাদে কোন সরকারি পদবী ছিল না। রাজকুমারেস নুকাতা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এক কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন, রাজকুমারেস তোচি, যিনি শিশুকালে মারা যান। এটি আদালতে অনেক শোকের কারণ হয়। দুই প্রাসাদের সহকারী রাজকুমার টাকেচি, রাজকুমার ওসাকাবে এবং রাজকুমার শিকি ও দুই কন্যার জন্ম দেন। রাজকুমার টাকেচি উল্লেখযোগ্য কারণ তিনি জিনশিন যুদ্ধে কমান্ডার ছিলেন। রাজকুমার ওসাকাবে ও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। দুটি সর্বোচ্চ পদমর্যাদার রাজপুত্র ছিলেন নিঃসন্দেহে রাজকুমার কুসাকাবে এবং রাজকুমার ওতসু। ৬৮১ এবং ৬৮৩ সালে যথাক্রমে তারা এমন বয়সে পৌঁছান যেখানে সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। রাজকুমার কুসাকাবের মা ছিলেন সম্রাজ্ঞী, যেখানে রাজকুমার ওতসুর মা জিনশিন যুদ্ধে আগে মারা গিয়েছিলেন। তবে মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ রাজকুমার ওতসুকে বেশি প্রভাবশালী মনে করত। ''নিহন শোকি'' উল্লেখ করে যে, শিশু অবস্থায় তিনি তাঁর চাচা ও দাদা তেনচি তেন্নোর প্রিয় ছিলেন, এবং অন্যান্য প্রাচীন সূত্রে বলা হয়েছে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। রাজকুমার কুসাকাবে সম্পর্কে কোনও তথ্য অবশিষ্ট নেই। তিনি ২৮ বছর বয়সে মারা যান এবং ধারণা করা হয় যে তিনি সবসময় অসুস্থ ছিলেন। এটি সম্ভবত ব্যাখ্যা করে কেন তাঁকে তেম্মুর মৃত্যুর পর শাসক করা হয়নি। তেম্মুর শাসনকাল এমন ছিল যে তিনি সরাসরি শাসন করতেন, তাই এটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী শাসককে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হতে হয়েছিল। মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি ছিল সম্রাজ্ঞী। যদি ধরা হয় যে রাজকুমার কুসাকাবে অনুপযুক্ত ছিলেন, তাহলে তিনি তাঁর শিশুসন্তান রাজকুমার কারুর (যিনি পরবর্তীতে মোম্মু তেন্নো হন) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনাক্রমে কুসাকাবে ৬৮১ সালে "সিংহাসন অধিকারী" করা হয়। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, এর সঙ্গে উত্তরাধিকার নিয়ে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে তাকে সরকারের একটি প্রখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই একই দিনে অসুকা কিয়োমিহারা রিৎসুরোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয় সরকারী নিয়মাবলী আনুষ্ঠানিককরণ সম্রাটের অবস্থান দৃঢ় করবে যাতে তিনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন এমনকি যদি তিনি সাধারণ ক্ষমতার ব্যক্তিও হন। ৬৮৩ সালে রাজকুমার ওতসুও সরকারে পদ পায়। যদি ধরা হয় তিনি তাঁর সৎভাই থেকে স্বাস্থ্যবান ও প্রতিভাবান ছিলেন, তাহলে সকল কারণ রয়েছে মনে করার যে তিনি তেম্মুর মৃত্যুর পর সম্রাট হওয়ার সুযোগ পেতেন। ৬৮৫ সালে তেম্মু অসুস্থ হন কিন্তু কিছুদিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ৬৮৬ সালের ৫ম মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন এবং ৭ম মাসে ঘোষণা করেন যে তিনি আর সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকবেন না। এটি সবকিছুই সম্রাজ্ঞী ও রাজকুমার কুসাকাবে দেখবেন। তিনি ৯ম মাসের ৯ তারিখে মারা যান, বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। ''নিহন শোকি'' জানায়, ১১ তারিখে তাঁকে সাময়িকভাবে তাঁর মোগারি নো মিয়ায় সমাহিত করা হয়, এবং ২৪ তারিখে "রাজকুমার ওতসু সিংহাসন অধিকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল"। পরবর্তী ঘটনা জিতো তেন্নো নিবন্ধে বর্ণিত। বলা হয়েছে, রাজকুমার ওতসুর বিশ্বাসঘাতকতা ১০ম মাসের ২ তারিখে প্রকাশ পায় এবং তিনি প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরের দিন তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তাঁর স্ত্রীও মারা যান। তবে স্পষ্ট নয় তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যা করেন। পরের দিন "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে দুই জন ছাড়া সবাই ক্ষমা পায়। ওই দুইজন নির্বাসিত হন। এর কয়েকদিন পরে সম্ভবত চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর রাজকুমার ওতসুর বোন রাজকুমারী এস ওকু রাজধানীতে ফিরে আসেন যিনি কয়েক বছর ইসেতে পুরোহিত ছিলেন। ''মানইশু''র একটি কবিতা প্রকাশ করে যে, রাজকুমার ওতসু গোপনে ইসেতে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন তেম্মুর মৃত্যুর সময়ের আশেপাশে। সম্ভবত এই ঘটনাটিই ''নিহন শোকি''র জন্য তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের কারণ। একজন রাজপুত্র রাজধানী ত্যাগ করে পূর্বদিকে যাওয়া এবং উত্তরাধিকার অস্থিতিশীল থাকা অবস্থায় যাত্রা করা বিদ্রোহী উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরা লক্ষ্য করেছেন যে, "সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের" মধ্যে কয়েকজন পরবর্তীকালে জিতোর আদালতে কর্মজীবন চালিয়েছেন। একজন প্রথম সম্পূর্ণ রিৎসুরো নীতিমালা তৈরির কমিটিতেও ছিলেন। এটা ইঙ্গিত দেয় যে রাজকুমার ওতসুকে অপরাধী বানানোর কূটনীতি করা হয়েছিল। ''নিহন শোকি'' স্পষ্ট করে যে সম্রাজ্ঞী শাসনে্র ছিলেন। তবে কিছু সময়ের জন্য উত্তরাধিকার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করা হয়নি। মৃত সম্রাটকে শোক জানানো ও তাঁর সমাধি প্রস্তুতির সব সরকারি কার্যক্রমে সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ ছিল "সিংহাসন অধিকারী"। ৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১তম মাসে তেম্মুর দাফনের মধ্য দিয়ে এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। অবশ্যই ঐ সময়ে সম্রাটের বিধবা মোগারি নো মিয়ায় বসবাস করতেন এবং গভীর শোক পালন করতেন। এরপর ৬৮৯ সালের ৪ম মাসে যুবরাজ কুসাকাবে মারা যান। তাই ধারণা করা যায়, শোক পালন শেষ হলে রাজ্যাভিষেক করার পরিকল্পনা ছিল। তাঁর পুত্র যুবরাজ কারুর বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর এবং তাই সম্রাজ্ঞীর আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি জিতো তেন্নো নামে পরিচিত। এটি ৬৯০ সালের শুরুতে ঘটেছিল। এই সময়কালে ৬৮৯ সালের ৬ষ্ঠ মাসে অসুকা কিয়োমিহারা রিও ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয় এবং সরকারী দপ্তরগুলোতে বিতরণ করা হয়। এই ঘটনাকেই অসুকা যুগের সমাপ্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ৬৮৯ সালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, কামাতারির বড় ছেলে ফুজিওয়ারা নো ফুহিতোর প্রথমবারের মতো সরকারি পদে নিয়োগ। eurla23vzg6b59k8et4hc21bg4wpu1g জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান 0 26675 85127 84901 2025-06-21T15:16:21Z Asikur.rahman25 11164 /* পররাষ্ট্রনীতি */ 85127 wikitext text/x-wiki এই অধ্যায়ে ১৯৫২ সালে মিত্রশক্তির দখল শেষ হওয়ার পরের সময়কালটি তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে, জাপান আবারও বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি এটি একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবেও গড়ে ওঠে। ==দখল পরবর্তী রাজনীতি== সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির শর্ত কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল মিত্রশক্তির দখলের অবসান ঘটে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সব এলাকা জাপানের দখলে ছিল, তার অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সাখালিন। এছাড়াও, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপের উপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। যেগুলো আগে জাতিপুঞ্জের অধীনে জাপান পরিচালনা করত। নতুন এই চুক্তি জাপানকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও দেয়। একই দিনে, জাপান সান ফ্রান্সিসকো চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এতে শিগেরু ইয়োশিদা ও হ্যারি ট্রুম্যান এমন একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে জাপানে ঘাঁটি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। জাপান পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আগেই, সরকার প্রায় ৮০,০০০ ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করে। এদের অনেকেই পূর্বের রাজনৈতিক বা সরকারি পদে ফিরে যান। এরপর সামরিক ব্যয় সীমিতকরণ এবং সম্রাটের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে অক্টোবর ১৯৫২ সালের প্রথম দখল-পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যায় বড় ধরনের পতন ঘটে। কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনের পর, ১৯৫৪ সালে একটি বেসামরিক পরিচালকের অধীনে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। এই সময়ে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা এবং কাছাকাছি কোরিয়ায় চলমান গরম যুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সাম্যবাদ দমন এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নিরুৎসাহিত করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দলগুলোর বারবার বিভাজন ও একের পর এক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের কারণে রক্ষণশীল শক্তিগুলো একত্রিত হয়। তারা লিবারেল পার্টি (জিয়ুতো) এবং জাপান ডেমোক্রেটিক পার্টি (নিপ্পন মিনশুতো) যা পূর্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে গঠিত হয়েছিল একত্র করে ১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জিয়ু-মিনশুতো; এলডিপি) গঠন করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই দলই ক্ষমতায় ছিল। এরপর একটি নতুন সংখ্যালঘু সরকার তাদের প্রতিস্থাপন করে। এলডিপির নেতৃত্বে ছিলেন সেইসব অভিজাত ব্যক্তি যারা জাপানকে পরাজয় ও দখলকাল অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলেন। এই দলে যোগ দেন সাবেক আমলারা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কৃষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়পাস ব্যক্তিরা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জাপান সোশালিস্ট পার্টি গঠন করে। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে কোমেইতো (স্বচ্ছ সরকার পার্টি), যা ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়। এটি ছিল সোকা গাক্কাই (মানবিক মূল্য সৃষ্টির সমাজ) নামক বৌদ্ধ মতাদর্শভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা। কোমেইতো জাপানি ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় এবং শহুরে শ্রমিক, গ্রাম থেকে আসা বাসিন্দা ও বহু নারীকে আকর্ষণ করে। জাপান সোশালিস্ট পার্টির মতো, কোমেইতো-ও ধাপে ধাপে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন ও বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে কোমেইতো ও ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চুক্তি মেনে নেয়। এমনকি ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট পার্টি একটি সীমিত পরিসরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পক্ষেও সমর্থন জানায়। জাপান সোশালিস্ট পার্টিকেও তাদের পূর্বের কঠোর সামরিকবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর চাপ অব্যাহত রাখে, যাতে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (GNP) ১ শতাংশের বেশি করে। এই নিয়ে ডায়েটে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধিতা মূলত সংখ্যালঘু দল বা জনগণ থেকে নয়, বরং অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সচেতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আসে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েইকে ১৯৭৪ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে লকহিড ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার করে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে এলডিপির বিভক্ত রাজনীতি ডায়েটে ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৮০ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির হঠাৎ মৃত্যুতে দলের প্রতি সহানুভূতি ভোট দেখা যায়। এর ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুজুকি জেনকো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি এক পাঠ্যবই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতে, বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা এবং গুরুতর আর্থিক সমস্যার কারণে সুজুকির মন্ত্রিসভা পতনের মুখে পড়ে, যেটি গঠিত হয়েছিল এলডিপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে । ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে নাকাসোনে ইয়াসুহিরো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক ছিলেন এবং তানাকা ও সুজুকি গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে প্রতিরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে নাকাসোনেকে আবারও এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা জনমত জরিপে অস্বাভাবিকভাবে ৫০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পায়। বিপরীতে, বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশ করার সময় নাকাসোনে ডায়েট ও জাতির মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখেন। যদিও ১৯৮৩ সালে তানাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও ১৯৮০ এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি দলীয় কাঠামোর মাধ্যমে পর্দার আড়ালে শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তাশীল নাকাসোনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর ১৯৮৭ সালে নাকাসোনের মেয়াদ শেষ হয়। তার দ্বিতীয় দুই বছরের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। এটি ছিল আধুনিক জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নাকাসোনের অবসরের মাত্র ১৫ মাস আগে এলডিপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ৫১২টি আসনের মধ্যে ৩০৪টি জিতে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এমন শক্ত অবস্থান সত্ত্বেও সরকার নানা সংকটের মুখে পড়ে। জাপানের সম্পদমূল্য বুদবুদের কারণে জমির দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বেকারত্ব ৩.২ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ে এবং এলডিপির প্রস্তাবিত কর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও ২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে, যেদিন নাকাসোনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকেশিতা নোবোরুকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, সেদিনই টোকিওর শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়নের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যার প্রভাব ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে। ==অর্থনীতি== এলডিপি সরকার জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জাপানি শিল্পকে বিদেশে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জাপানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই কৌশলগুলো এবং প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা মিলিয়ে জাপানের অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সাল নাগাদ জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসসহ বহু পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হতে থাকে। শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এর দশকে মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা চলতে থাকে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক অনেকের মতে জাপানের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় আবির্ভাবের প্রতীক। সেই সময়ে শিনকানসেন হাই স্পিড রেলসহ নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ-পরবর্তী উন্নয়ন বিশ্বকে দেখানো হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত জাপানে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে ১৯৭৩ সালে ওপেক চার গুণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে জাপান তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তেলের জন্য জাপান প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপানে মন্দা দেখা দেয়। ==পররাষ্ট্রনীতি== আর্থিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় অবস্থানের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-এর দশকে জাপান বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে। যেমন ১৯৫৬ সালে জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়া এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল যা জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৫ সালে জার্মানির সঙ্গে জাপান নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে। যা মূলত অর্থনৈতিক বিনিময়কে কেন্দ্র করে ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ১৯৬০ সালে। যখন জাপান-যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তির সংশোধন হয়। নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাপানের সামরিক রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে। এতে জাপানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ, রাস্তার বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চুক্তিটি ডায়েটে অনুমোদনের এক মাস পরেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্র এবং নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও, ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দখল থেকে জাপানের সার্বভৌমত্বে ফিরে আসে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান গণচীন প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। যখন সেই জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে নির্বাসনে যায় তখনও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এই নীতির ফলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী জাপানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। পরে যখন চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে, তখন ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে হঠাৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন (যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত) জাপানকে চমকে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালে টোকিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল ছিল। তবে ১৯৫৬ সালের ১৯ অক্টোবর একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, যা যুদ্ধের অবসান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। প্রধান বিরোধের বিষয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকা অঞ্চল, যেগুলো জাপান 'উত্তর অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করে। এই এলাকাগুলো হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুটি দ্বীপ এতোরোফু ও কুনাশিরি এবং শিকোতান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ (হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে)। এই দ্বীপগুলো জাপানের আত্মসমর্পণের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে। প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়েই (১৯৭২–৭৪) সরকারের সময়ে জাপান একটু দৃঢ়তর হলেও নীরবভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। তানাকার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও সেগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরের সময় জনরোষ ও দাঙ্গার সম্মুখীন হন। যা দীর্ঘদিনের জাপানের বিরুদ্ধ মতামতের প্রতিফলন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মধ্যে একাধিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা। জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে নাকাসোনের কঠোর মনোভাব কিছু মার্কিন কর্মকর্তার কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। তবে জাপান ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তা জনপ্রিয় ছিল না। জাপানকে "অডুব্ব ডুবে না যাওয়া বিমানবাহী রণতরী" হিসেবে বর্ণনা করা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করা, এবং সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মতো মন্তব্য দেশে ও বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারপরও ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল জাপানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত যা নাকাসোনের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে যায়। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তারা ইয়েনের মূল্য বাড়ায় এবং মার্কিন পণ্যের আমদানি সহজ করতে বাজার আরও উন্মুক্ত করে। জাপান সরকার নিজেদের মূল শিল্পগুলোকে সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। টোকিও এই সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা নিজেদের শিল্প নীতি রক্ষা করে এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হ্রাসে খুবই অনিচ্ছুক ছিল। তারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব অল্প কিছু চুক্তি করেছিল। ==দখল-পরবর্তী সংস্কৃতি== দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে জাপানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহত থাকে, যার অনেকটাই আসে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ে। সেই সময় বহু এলাকায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান সংগীত ও চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে এক নতুন জাপানি শিল্পী প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে, যারা পশ্চিমা ও স্থানীয় উভয় প্রভাবকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এই সময় জাপান নিজেও সাংস্কৃতিক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা জাপানি "কাইজু" (দানব চলচ্চিত্র), "অ্যানিমে" (কার্টুন), "মাঙ্গা" (কমিক বই) ও অন্যান্য আধুনিক জাপানি সংস্কৃতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ও ইউকিও মিশিমার মতো জাপানি সাহিত্যিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দখলদারিত্ব শেষে আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে যান গল্প ও নানা সামগ্রী নিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের সৈন্যরা জাপান থেকে মার্শাল আর্টসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ধারাও বহন করেন। ==টাইমলাইন (১৯৫২ – ১৯৮৯)== *১৯৫২: মিত্রবাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান (২৮ এপ্রিল)। *১৯৫৪: জাপান আত্মরক্ষাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। *১৯৫৫: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠিত হয়। *১৯৫৬: জাপান জাতিসংঘে যোগ দেয়। *১৯৬০: দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৬৪: টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। শিনকানসেন ট্রেন চলাচল শুরু করে। *১৯৬৫: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শিন’ইচিরো তোমোনাগা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৬৮: পারমাণবিক রণতরী "এন্টারপ্রাইজ" বিতর্কের মধ্যে সাসেবোতে পৌঁছে। "ইটাই-ইটাই" রোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। একজন ব্যক্তি পুলিশ সেজে ৩০ কোটি ইয়েন চুরি করে (২০০৩ সাল পর্যন্ত আটক নয়)। *১৯৬৯: প্রধানমন্ত্রী আইসাকু সাতো ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর বৈঠক। ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর তারিখ ১৯৭২ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। *১৯৭০: ওসাকায় বিশ্ব মেলা (এক্সপো ৭০) অনুষ্ঠিত হয়। *১৯৭১: ইয়েনের মান পরিবর্তন করে ভাসমান বিনিময় হারে আনা হয়, যার ফলে স্বল্পমেয়াদী মন্দা দেখা দেয়। *১৯৭২: ওকিনাওয়া জাপানের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। *১৯৮০: বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক হয়ে ওঠে। ইয়োমিউরি জায়ান্টস-এর সাদাহারু ওহ খেলা থেকে অবসর নেন। *১৯৮১: কেনিচি ফুকুই রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। *১৯৮২: তোহোকু শিনকানসেন ওমিয়া থেকে মোরিওকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। *১৯৮৩: ইজু দ্বীপপুঞ্জের মিয়াকেজিমায় ওয়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে। কিতোরা কোফুনে জেনবুর রঙিন চিত্র আবিষ্কৃত হয়। কাকুয়েই তানাকা চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। *১৯৮৪: মিষ্টির কোম্পানি ইজাকি গ্লিকোর সভাপতিকে অপহরণ করে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ও ১০০ কেজি সোনার মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তবে তিনি পালিয়ে আসেন। পরে একজন চাঁদাবাজ কোম্পানির পণ্য বিষাক্ত করার হুমকি দিয়ে ৬০ মিলিয়ন ইয়েন (পরে ১২০ মিলিয়ন ইয়েন) দাবি করে। অপরাধী ধরা পড়েনি। নতুন মুদ্রা চালু হয়, যাতে ১০,০০০ ইয়েন নোটে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ৫,০০০ ইয়েন নোটে ইনাজো নিতোবে ও ১,০০০ ইয়েন নোটে নাটসুমে সোসেকির ছবি ছাপা হয়। *১৯৮৫: জাপানে প্রথম এইডস রোগী আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয়। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ ওমিতাকা-ইয়ামায় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে ৫২০ জন নিহত ও মাত্র ৪ জন বেঁচে যান—এই দুর্ঘটনা বিমান দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড গড়ে। *১৯৮৬: ইজু ওওশিমার মিহারায়ামা আগ্নেয়গিরি উদ্গিরণ ঘটে, তবে আগেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। *১৯৮৭: জাপান জাতীয় রেলওয়ে বেসরকারি খাতে যায় ও সাতটি কোম্পানিতে ভাগ হয়—ছয়টি আঞ্চলিক এবং একটি মালবাহী। অভিনেতা ইউজিরো ইশিহারা মারা যান। *১৯৮৮: হোক্কাইডো ও হোনশুকে সংযুক্ত করা সেইকান টানেল নির্মিত হয়। মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স-এর সাবমেরিন "নাদাশিও" একটি মাছ ধরার জাহাজ "দাই ইচি ফুজিমারু"-র সঙ্গে ধাক্কা খায়। *১৯৮৯: ৭ জানুয়ারি শোওয়া সম্রাট মারা যান। পরদিন আকিহিতো সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নতুন যুগের নাম ঘোষণা করা হয়—"হেইসেই"। <noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude> {{BookCat}} dzei31738c6u0aycndevzhwl1c7316p আলাপ:চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন 1 27076 85214 83620 2025-06-22T11:02:19Z NusJaS 8394 NusJaS [[আলাপ:চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা]] কে [[আলাপ:চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 83620 wikitext text/x-wiki {{আলাপ পাতা}} {{আলাপ পাতা/উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫}} 8vxn9zum7n3tju9ayrerhr25vm4kljv ব্যবহারকারী আলাপ:প্রান ভ্রমরা 3 27190 85136 2025-06-21T18:40:19Z KanikBot 8129 স্বাগতম! 85136 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৮:৪০, ২১ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) hwaurzfescoo7ahy0xejjt3jt5kt8ci টেমপ্লেট:SAMPLE 10 27191 85149 2025-06-22T04:39:43Z Mehedi Abedin 7113 "<div class="notice metadata" id="cleanup" style="background:#F9F9F9; border:1px solid #aaaaaa; padding:6pt; font-family:monospace; margin:12pt 8%; width:84%"> {{{sampletext}}} <hr /> <div style="font-family:serif; font-weight:bold;">{{{caption}}}</div> </div><noinclude>[[Category:Quotation templates|{{PAGENAME}}]]</noinclude>" দিয়ে পাতা তৈরি 85149 wikitext text/x-wiki <div class="notice metadata" id="cleanup" style="background:#F9F9F9; border:1px solid #aaaaaa; padding:6pt; font-family:monospace; margin:12pt 8%; width:84%"> {{{sampletext}}} <hr /> <div style="font-family:serif; font-weight:bold;">{{{caption}}}</div> </div><noinclude>[[Category:Quotation templates|{{PAGENAME}}]]</noinclude> 4a3ruo48j9epyzeu3irlp2lwwikwvya 85150 85149 2025-06-22T04:40:19Z Mehedi Abedin 7113 85150 wikitext text/x-wiki <div class="notice metadata" id="cleanup" style="background:#F9F9F9; border:1px solid #aaaaaa; padding:6pt; font-family:monospace; margin:12pt 8%; width:84%"> {{{sampletext}}} <hr /> <div style="font-family:serif; font-weight:bold;">{{{caption}}}</div> </div><noinclude>[[Category:উক্তি টেমপ্লেট|{{PAGENAME}}]]</noinclude> nwtvh6ckz5xs7lqe9iy0t1p9ulvpa4e ব্যবহারকারী আলাপ:Rafiqul-islam-suman2 3 27192 85176 2025-06-22T07:40:22Z KanikBot 8129 স্বাগতম! 85176 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০৭:৪০, ২২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) nlwgbtw1h80adcylgw8mh1wpq53ei03 ব্যবহারকারী:R1F4T/common.js 2 27193 85177 2025-06-22T07:47:14Z R1F4T 9121 "$(document).ready( function() { $('#bodyContent a.external').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); } );" দিয়ে পাতা তৈরি 85177 javascript text/javascript $(document).ready( function() { $('#bodyContent a.external').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); } ); dqr69a1qzkd81wqwydewisi0d3rpmyg 85181 85177 2025-06-22T07:50:51Z R1F4T 9121 85181 javascript text/javascript $(document).ready( function() { $('#bodyContent a.extiw').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); } ); 3te6zkjesc863v5phv73se8ujq46px3 85183 85181 2025-06-22T07:51:46Z R1F4T 9121 85183 javascript text/javascript $(document).ready( function() { $('#bodyContent a.extarnal').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); } ); k43ensdph136kj8i920dojdi7d2yf8b 85184 85183 2025-06-22T07:52:02Z R1F4T 9121 85184 javascript text/javascript $(document).ready( function() { $('#bodyContent a.external').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); } ); dqr69a1qzkd81wqwydewisi0d3rpmyg 85185 85184 2025-06-22T07:57:49Z R1F4T 9121 85185 javascript text/javascript $(function () { $('<button>') .text('Click me!') .attr('id', 'myButton') .css({ padding: '5px 10px', 'background-color': '#ccf', border: '1px solid #88a', 'border-radius': '5px', cursor: 'pointer' }) .appendTo('#mw-content-text'); $('#myButton').click(function () {$('#bodyContent a.external').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); alert('Clicked!'); }); }); crneixlkhim7pqlbi77zgwqdw1jcnpr 85186 85185 2025-06-22T08:00:14Z R1F4T 9121 85186 javascript text/javascript $(function () { $('<button>') .text('Click me!') .attr('id', 'myButton') .css({ padding: '5px 10px', 'background-color': '#ccf', border: '1px solid #88a', 'border-radius': '5px', cursor: 'pointer' }) .appendTo('#mw-content-text', '.mw-content-ltr'); $('#myButton').click(function () {$('#bodyContent a.external').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); alert('Clicked!'); }); }); 3prgngpx97x4h6b6e38dw6rv3cmeulg 85187 85186 2025-06-22T08:02:27Z R1F4T 9121 85187 javascript text/javascript $(function () { $('<button>') .text('Click me!') .attr('id', 'myButton') .css({ padding: '5px 10px', 'background-color': '#ccf', border: '1px solid #88a', 'border-radius': '5px', cursor: 'pointer' }) .appendTo('#mw-content-text', '.mw-content-ltr'); $('#myButton').click(function () {$('.mw-page-title-namespace').css('background-color','hsl(0,0%,10%)'); alert('Clicked!'); }); }); 4c1mq82rbsznyfbyt4zlr2begrophg5 85188 85187 2025-06-22T08:04:09Z R1F4T 9121 85188 javascript text/javascript $(function () { $('<button>') .text('Click me!') .attr('id', 'myButton') .css({ padding: '5px 10px', 'background-color': '#ccf', border: '1px solid #88a', 'border-radius': '5px', cursor: 'pointer' }) .appendTo('#mw-content-text', '.mw-content-ltr'); $('#myButton').click(function () {$('.mw-page-title-namespace').css('background-color','hsl(0,0%,50%)'); alert('Clicked!'); }); }); hbjsvaqnnogxcylah2woz80rryoxskr 85189 85188 2025-06-22T08:07:32Z R1F4T 9121 85189 javascript text/javascript $(function () { const ns = mw.config.get('wgNamespaceNumber'); if (ns === 2 || ns === 3) { const username = mw.config.get('wgTitle').split('/')[0]; new mw.Api().get({ action: 'query', list: 'users', ususers: username, usprop: 'groups' }).done(function (data) { const user = data.query.users[0]; const groups = user.groups || []; const filtered = groups.filter(g => !['*', 'user', 'autoconfirmed'].includes(g) ); if (filtered.length) { const tag = ` <span style="font-size:85%; color:#555;">[${filtered.join(', ')}]</span>`; $('.firstHeading').append(tag); } }); } }); nzls65w1kyi2j4lngkv386awh3cz8p7 85191 85189 2025-06-22T08:10:39Z R1F4T 9121 85191 javascript text/javascript $(document).ready(function() { // This is the function that will call the Gemini API async function getSimpleExplanation(text) { // Show a loading modal showExplanationModal('<div class="gemini-loader"></div><p>Asking Gemini for a simpler explanation...</p>'); const apiKey = ""; // This is handled by the environment when you preview. const apiUrl = `https://generativelanguage.googleapis.com/v1beta/models/gemini-2.0-flash:generateContent?key=${apiKey}`; const prompt = "Explain the following text in simple, easy-to-understand terms for someone who is not an expert. Focus on the key concepts: \n\n" + text; const payload = { contents: [{ parts: [{ text: prompt }] }] }; try { const response = await fetch(apiUrl, { method: 'POST', headers: { 'Content-Type': 'application/json' }, body: JSON.stringify(payload) }); if (!response.ok) { throw new Error(`API request failed with status ${response.status}`); } const result = await response.json(); if (result.candidates && result.candidates.length > 0) { const explanation = result.candidates[0].content.parts[0].text; // Use .replace to format the text as HTML paragraphs const formattedExplanation = '<p>' + explanation.replace(/\n\n/g, '</p><p>').replace(/\n/g, '<br>') + '</p>'; showExplanationModal(formattedExplanation); } else { showExplanationModal("Sorry, I couldn't get an explanation. The response was empty."); } } catch (error) { console.error('Gemini API Error:', error); showExplanationModal(`<strong>An error occurred:</strong> ${error.message}. Check the console for details.`); } } // Function to create and show the modal function showExplanationModal(content) { // Remove existing modal first $('#gemini-explanation-modal').remove(); const modalHTML = ` <div id="gemini-explanation-modal" style="position: fixed; top: 0; left: 0; width: 100%; height: 100%; background: rgba(0,0,0,0.5); z-index: 10000; display: flex; align-items: center; justify-content: center;"> <div style="background: white; padding: 2rem; border-radius: 8px; max-width: 600px; width: 90%; max-height: 80vh; overflow-y: auto; box-shadow: 0 5px 15px rgba(0,0,0,0.3);"> <h3 style="font-size: 1.25rem; font-weight: 600; margin-top: 0; margin-bottom: 1rem;">✨ Simple Explanation</h3> <div id="gemini-explanation-content">${content}</div> <button id="gemini-close-modal" style="margin-top: 1.5rem; padding: 0.5rem 1rem; border: none; background: #3b82f6; color: white; border-radius: 5px; cursor: pointer;">Close</button> </div> </div> `; $('body').append(modalHTML); $('#gemini-close-modal, #gemini-explanation-modal').on('click', function(e) { if (e.target === this) { $('#gemini-explanation-modal').remove(); } }); } // Inject custom styles for the loader const styles = ` .gemini-eli5-button { margin-left: 10px; font-size: 0.8em; font-weight: normal; cursor: pointer; color: #2563eb; border: 1px solid #93c5fd; padding: 2px 6px; border-radius: 4px; background-color: #eff6ff; } .gemini-eli5-button:hover { background-color: #dbeafe; border-color: #60a5fa; } .gemini-loader { width: 40px; height: 40px; border: 4px solid #dbeafe; border-top-color: #3b82f6; border-radius: 50%; animation: gemini-spin 1s linear infinite; margin: 0 auto 1rem; } @keyframes gemini-spin { to { transform: rotate(360deg); } } `; $('head').append(`<style>${styles}</style>`); // Find all section headlines and add the button $('#mw-content-text .mw-headline').each(function() { const button = $('<span class="gemini-eli5-button">✨ Explain Simply</span>'); $(this).append(button); button.on('click', function(e) { e.stopPropagation(); // Prevent other click events // Find the parent heading tag (h2, h3, etc.) let parentHeading = $(this).closest('h2, h3, h4, h5, h6'); // Select all paragraph elements until the next heading let contentToExplain = parentHeading.nextUntil('h2, h3, h4, h5, h6', 'p').text(); if(contentToExplain.trim()){ getSimpleExplanation(contentToExplain); } else { alert("Couldn't find any text in this section to explain."); } }); }); }); af0ksmgdpjvsgm3et7fvthwudkcvxey 85192 85191 2025-06-22T08:11:40Z R1F4T 9121 পাতা খালি করা হয়েছে 85192 javascript text/javascript phoiac9h4m842xq45sp7s6u21eteeq1 85199 85192 2025-06-22T09:25:48Z R1F4T 9121 85199 javascript text/javascript $(function () { const username = mw.config.get('wgTitle').split('/')[0]; new mw.Api().get({ action: 'query', list: 'users', ususers: username, usprop: 'groups' }).done(function (data) { const groups = data.query.users[0].groups; alert('Rights: ' + groups.join(', ')); }); }); 57cp6hq56o7q3u89llyoeqxwu3837la 85200 85199 2025-06-22T09:28:45Z R1F4T 9121 85200 javascript text/javascript $(function () { const title = mw.config.get('wgTitle'); const namespace = mw.config.get('wgCanonicalNamespace'); const full = mw.config.get('wgPageName'); alert('Title: ' + title + '\nNamespace: ' + namespace + '\nFull: ' + full); }); 3qgjqhtw9fvcjfodyfbjuuvasinadi9 85203 85200 2025-06-22T09:30:48Z R1F4T 9121 85203 javascript text/javascript $(function () { $('.firstHeading').text('🎉 আপনি শিখছেন!'); $('#mw-content-text').css('background-color', '#ffffcc'); }); 48ytouh8he534dmvpzyd6l5mypyc9ro আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস/গিরিশচন্দ্র ঘোষ 0 27194 85194 2025-06-22T09:17:13Z Jonoikobangali 676 "বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ ব..." দিয়ে পাতা তৈরি 85194 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। 8ewg9230uds71afr8ue5vcujq1n0geh 85195 85194 2025-06-22T09:20:37Z Jonoikobangali 676 85195 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। 7qzxr7h8h187hfq5qj0zm9ohwz7h3du 85197 85195 2025-06-22T09:24:00Z Jonoikobangali 676 /* নাটক */ 85197 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। ===গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং=== গীতিনাটক-রচয়িতা হিসেবেই বাংলা নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর গীতিনাটকগুলি নিতান্তই বৈশিষ্ট্যবর্জিত। গীতরচনার ভাষাতেও তিনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। শব্দযোজনাতেও নিম্নরুচির পরিচয় যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। গীতিনাটকগুলির মধ্যে একমাত্র ''আবুহোসেন'' সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রহসন ও পঞ্চরংগুলির সংলাপে ও গানে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সে যুগের দর্শকগণ যে কী করিয়া ধৈর্য ধরিয়া নাটমঞ্চে এই সমস্ত অপথ্যগুলি হজম করিত, ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়।” pw7xhic1cqfqxua8d134pp4imraiby6 85201 85197 2025-06-22T09:29:07Z Jonoikobangali 676 /* গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং */ 85201 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। ===গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং=== গীতিনাটক-রচয়িতা হিসেবেই বাংলা নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর গীতিনাটকগুলি নিতান্তই বৈশিষ্ট্যবর্জিত। গীতরচনার ভাষাতেও তিনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। শব্দযোজনাতেও নিম্নরুচির পরিচয় যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। গীতিনাটকগুলির মধ্যে একমাত্র ''আবুহোসেন'' সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রহসন ও পঞ্চরংগুলির সংলাপে ও গানে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সে যুগের দর্শকগণ যে কী করিয়া ধৈর্য ধরিয়া নাটমঞ্চে এই সমস্ত অপথ্যগুলি হজম করিত, ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়।” ===পৌরাণিক নাটক=== ====পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি==== পৌরাণিক নাটকের রচয়িতা হিসেবেই গিরিশচন্দ্রের খ্যাতি সমধিক। মনোমোহন বসু গীতাভিনয়ের যে ধারায় নাটক লিখেছিলেন, গিরিশচন্দ্র সেই ধারারই অনুসারী। এই প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনার পূর্বে গিরিশচন্দ্র যে যুগে পৌরাণিক নাটক রচনা করেন, তার পটভূমিটি স্মরণ করা আবশ্যক। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, তারই প্রতিক্রিয়া রূপে সেকালে দেখা দিয়েছিল হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ। এই পুনর্জাগরণে দুটি ধারা ছিল। একটি ধারার প্রবক্তা ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীরা। তাঁরা যুক্তিবাদের আলোয় হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ অপর ধারার প্রবক্তাগণ যুক্তি অপেক্ষা চিরাচরিত ভক্তিবিশ্বাসকেই একমাত্র পাথেয় করেছিলেন। এদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ভক্তিবাদ জনমানসে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত ছিল সেই মধ্যযুগ থেকেই। তার সঙ্গে উনিশ শতকে যুক্ত হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের মতবাদ। এই যুক্তবেণীর সমন্বয়ে বাঙালির মনে ধর্মচেতনার যে জোয়ার এসেছিল, গিরিশচন্দ্র তারই উত্তুঙ্গ শিখরে আসীন হয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি এবং অবতারকল্প সাধুসন্তের জীবনীকে নাট্যরূপ দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। oxxqpnc8sf9adtbt4box8o2pbzsy7lf 85204 85201 2025-06-22T09:35:05Z Jonoikobangali 676 /* পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি */ 85204 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। ===গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং=== গীতিনাটক-রচয়িতা হিসেবেই বাংলা নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর গীতিনাটকগুলি নিতান্তই বৈশিষ্ট্যবর্জিত। গীতরচনার ভাষাতেও তিনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। শব্দযোজনাতেও নিম্নরুচির পরিচয় যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। গীতিনাটকগুলির মধ্যে একমাত্র ''আবুহোসেন'' সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রহসন ও পঞ্চরংগুলির সংলাপে ও গানে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সে যুগের দর্শকগণ যে কী করিয়া ধৈর্য ধরিয়া নাটমঞ্চে এই সমস্ত অপথ্যগুলি হজম করিত, ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়।” ===পৌরাণিক নাটক=== ====পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি==== পৌরাণিক নাটকের রচয়িতা হিসেবেই গিরিশচন্দ্রের খ্যাতি সমধিক। মনোমোহন বসু গীতাভিনয়ের যে ধারায় নাটক লিখেছিলেন, গিরিশচন্দ্র সেই ধারারই অনুসারী। এই প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনার পূর্বে গিরিশচন্দ্র যে যুগে পৌরাণিক নাটক রচনা করেন, তার পটভূমিটি স্মরণ করা আবশ্যক। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, তারই প্রতিক্রিয়া রূপে সেকালে দেখা দিয়েছিল হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ। এই পুনর্জাগরণে দুটি ধারা ছিল। একটি ধারার প্রবক্তা ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীরা। তাঁরা যুক্তিবাদের আলোয় হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ অপর ধারার প্রবক্তাগণ যুক্তি অপেক্ষা চিরাচরিত ভক্তিবিশ্বাসকেই একমাত্র পাথেয় করেছিলেন। এদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ভক্তিবাদ জনমানসে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত ছিল সেই মধ্যযুগ থেকেই। তার সঙ্গে উনিশ শতকে যুক্ত হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের মতবাদ। এই যুক্তবেণীর সমন্বয়ে বাঙালির মনে ধর্মচেতনার যে জোয়ার এসেছিল, গিরিশচন্দ্র তারই উত্তুঙ্গ শিখরে আসীন হয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি এবং অবতারকল্প সাধুসন্তের জীবনীকে নাট্যরূপ দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। ====গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন==== পৌরাণিক নাটক অথবা সন্তজীবনী অবলম্বনে নাটক লিখতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র শেকসপিয়রীয় নাট্যাদর্শ গ্রহণ করেছিলেন, আবার যাত্রাশৈলীকেও বর্জন করেননি। ফলে একদিকে যেমন নতুন রসাভাস হয়েছে, অপরদিকে তেমনই বাঙালির নিজস্ব রস-সংস্কারই জয়লাভ করেছে। প্রসঙ্গত তাঁর ''জনা'' নাটকটির নাম উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে এটিই তাঁর শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক। জনা চরিত্রটি তিনি শেকসপিয়রের ''দ্য ট্র্যাজেডি অফ কিং রিচার্ড দ্য থার্ড'' নাটকের ষষ্ঠ হেনরির বিধবা রানি মার্গারেটের ছায়ায় অঙ্কন করেছেন। প্রতিবিধিৎসু জনার উক্তির সঙ্গে মার্গারেটের উক্তির (প্রথম অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্য) সাদৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পার্থক্য এই যে, জনা শুধুই বাগাড়ম্বরময়ী, তিনি ক্রিয়াশীলা নন। অধিকন্তু ক্ষত্রিয় রমণীর মধ্যে বাঙালি মাতৃসুলভ শঙ্কাই প্রাধান্য পেয়েছে। নায়ক প্রবীরও ক্ষত্রিয় যুবক নয়, যেন বাঙালি মায়ের আদুরে দুলাল। বিদূষকের চরিত্রটিও প্রচ্ছন্ন ভক্তিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সরলবিশ্বাসী বিদূষকের বহু উক্তির মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণের সহজ উপদেশের প্রভাব অতি স্পষ্ট। পুরাণের মধ্যে যে শিক্ষাদান ও উপদেশপ্রবণতা আছে, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলিতে সেই প্রচারধর্মিতার প্রাধান্যই লক্ষিত হয়। ''জনা'' নাটকের তুলনায় ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' ও ''পাণ্ডব-গৌরব'' নাটক দুটি অধিকতর নাট্যগুণসম্পন্ন। ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকে যে নাট্যরস প্রথম দিকে ঘনীভূত হয়েছিল, পরের দিকে উপদেশ-মুখরতায় ও প্রচারধর্মিতায় তা একেবারেই উড়ে গিয়েছে। ''শংকরাচার্য'' ও ''তপোবল'' নিকৃষ্ট শ্রেণির নাটক। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পৌরাণিক নাটকের প্রসঙ্গে লিখেছেন, “বলিতে কি প্রাচীন বাঙলার কথক ঠাকুরেরা কথকতার দ্বারা যাহা করিতেন, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলি সেই প্রয়োজনই সিদ্ধ করিয়াছে। কথকগণ শুধু কথকতার দ্বারা অশিক্ষিত জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করিয়া পৌরাণিক আখ্যান-চরিত্র ও নীতি-উপদেশের উচ্চ আদর্শ জনসমাজে প্রচার করিতেন। গিরিশচন্দ্রও পৌরাণিক নাটকের দ্বারা জনসাধারণকে ভারতীয় জীবন ও সাধনার নীতিগুলির সুকৌশলে প্রচার করিয়াছিলেন।” 9sni0vscuc7gmjhbvfcglvt5e4l6y0g 85206 85204 2025-06-22T09:37:42Z Jonoikobangali 676 /* গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন */ 85206 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। ===গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং=== গীতিনাটক-রচয়িতা হিসেবেই বাংলা নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর গীতিনাটকগুলি নিতান্তই বৈশিষ্ট্যবর্জিত। গীতরচনার ভাষাতেও তিনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। শব্দযোজনাতেও নিম্নরুচির পরিচয় যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। গীতিনাটকগুলির মধ্যে একমাত্র ''আবুহোসেন'' সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রহসন ও পঞ্চরংগুলির সংলাপে ও গানে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সে যুগের দর্শকগণ যে কী করিয়া ধৈর্য ধরিয়া নাটমঞ্চে এই সমস্ত অপথ্যগুলি হজম করিত, ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়।” ===পৌরাণিক নাটক=== ====পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি==== পৌরাণিক নাটকের রচয়িতা হিসেবেই গিরিশচন্দ্রের খ্যাতি সমধিক। মনোমোহন বসু গীতাভিনয়ের যে ধারায় নাটক লিখেছিলেন, গিরিশচন্দ্র সেই ধারারই অনুসারী। এই প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনার পূর্বে গিরিশচন্দ্র যে যুগে পৌরাণিক নাটক রচনা করেন, তার পটভূমিটি স্মরণ করা আবশ্যক। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, তারই প্রতিক্রিয়া রূপে সেকালে দেখা দিয়েছিল হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ। এই পুনর্জাগরণে দুটি ধারা ছিল। একটি ধারার প্রবক্তা ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীরা। তাঁরা যুক্তিবাদের আলোয় হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ অপর ধারার প্রবক্তাগণ যুক্তি অপেক্ষা চিরাচরিত ভক্তিবিশ্বাসকেই একমাত্র পাথেয় করেছিলেন। এদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ভক্তিবাদ জনমানসে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত ছিল সেই মধ্যযুগ থেকেই। তার সঙ্গে উনিশ শতকে যুক্ত হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের মতবাদ। এই যুক্তবেণীর সমন্বয়ে বাঙালির মনে ধর্মচেতনার যে জোয়ার এসেছিল, গিরিশচন্দ্র তারই উত্তুঙ্গ শিখরে আসীন হয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি এবং অবতারকল্প সাধুসন্তের জীবনীকে নাট্যরূপ দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। ====গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন==== পৌরাণিক নাটক অথবা সন্তজীবনী অবলম্বনে নাটক লিখতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র শেকসপিয়রীয় নাট্যাদর্শ গ্রহণ করেছিলেন, আবার যাত্রাশৈলীকেও বর্জন করেননি। ফলে একদিকে যেমন নতুন রসাভাস হয়েছে, অপরদিকে তেমনই বাঙালির নিজস্ব রস-সংস্কারই জয়লাভ করেছে। প্রসঙ্গত তাঁর ''জনা'' নাটকটির নাম উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে এটিই তাঁর শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক। জনা চরিত্রটি তিনি শেকসপিয়রের ''দ্য ট্র্যাজেডি অফ কিং রিচার্ড দ্য থার্ড'' নাটকের ষষ্ঠ হেনরির বিধবা রানি মার্গারেটের ছায়ায় অঙ্কন করেছেন। প্রতিবিধিৎসু জনার উক্তির সঙ্গে মার্গারেটের উক্তির (প্রথম অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্য) সাদৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পার্থক্য এই যে, জনা শুধুই বাগাড়ম্বরময়ী, তিনি ক্রিয়াশীলা নন। অধিকন্তু ক্ষত্রিয় রমণীর মধ্যে বাঙালি মাতৃসুলভ শঙ্কাই প্রাধান্য পেয়েছে। নায়ক প্রবীরও ক্ষত্রিয় যুবক নয়, যেন বাঙালি মায়ের আদুরে দুলাল। বিদূষকের চরিত্রটিও প্রচ্ছন্ন ভক্তিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সরলবিশ্বাসী বিদূষকের বহু উক্তির মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণের সহজ উপদেশের প্রভাব অতি স্পষ্ট। পুরাণের মধ্যে যে শিক্ষাদান ও উপদেশপ্রবণতা আছে, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলিতে সেই প্রচারধর্মিতার প্রাধান্যই লক্ষিত হয়। ''জনা'' নাটকের তুলনায় ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' ও ''পাণ্ডব-গৌরব'' নাটক দুটি অধিকতর নাট্যগুণসম্পন্ন। ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকে যে নাট্যরস প্রথম দিকে ঘনীভূত হয়েছিল, পরের দিকে উপদেশ-মুখরতায় ও প্রচারধর্মিতায় তা একেবারেই উড়ে গিয়েছে। ''শংকরাচার্য'' ও ''তপোবল'' নিকৃষ্ট শ্রেণির নাটক। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পৌরাণিক নাটকের প্রসঙ্গে লিখেছেন, “বলিতে কি প্রাচীন বাঙলার কথক ঠাকুরেরা কথকতার দ্বারা যাহা করিতেন, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলি সেই প্রয়োজনই সিদ্ধ করিয়াছে। কথকগণ শুধু কথকতার দ্বারা অশিক্ষিত জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করিয়া পৌরাণিক আখ্যান-চরিত্র ও নীতি-উপদেশের উচ্চ আদর্শ জনসমাজে প্রচার করিতেন। গিরিশচন্দ্রও পৌরাণিক নাটকের দ্বারা জনসাধারণকে ভারতীয় জীবন ও সাধনার নীতিগুলির সুকৌশলে প্রচার করিয়াছিলেন।” ====পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা==== গিরিশচন্দ্র অজস্র গান লিখেছিলেন। একমাত্র ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকের গানগুলিই সুরচিত এবং তার চেয়েও বড়ো কথা সুপ্রযুক্ত। অন্যান্য নাটকের এক, দ্বৈত ও সমবেত গানগুলি যাত্রার প্রভাবে রচিত এবং যাত্রার মতোই যত্রতত্র নির্বিচারে প্রযুক্ত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্র যে বাস্তবধর্মী নাট্যসম্ভাবনার আভাস দিয়েছিলেন, গিরিশচন্দ্র তাকে উজ্জ্বলতর না করে নাট্যধারাকে মধ্যযুগীয় ভক্তিবাদ ও অলৌকিকতাবাদের মোহে আচ্ছন্ন করে দেন। একটি বিশেষ কালে তা দর্শককে আকৃষ্ট করেছিল; কিন্তু তাঁর মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী কালের মধ্যেই পরিবর্তিত সমাজ-পরিবেশের নিরিখে তা বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যায়। dc9d8d3ya6i5j3uswng7cdj7lyhzuob 85207 85206 2025-06-22T09:49:50Z Jonoikobangali 676 /* পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা */ 85207 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। ===গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং=== গীতিনাটক-রচয়িতা হিসেবেই বাংলা নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর গীতিনাটকগুলি নিতান্তই বৈশিষ্ট্যবর্জিত। গীতরচনার ভাষাতেও তিনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। শব্দযোজনাতেও নিম্নরুচির পরিচয় যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। গীতিনাটকগুলির মধ্যে একমাত্র ''আবুহোসেন'' সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রহসন ও পঞ্চরংগুলির সংলাপে ও গানে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সে যুগের দর্শকগণ যে কী করিয়া ধৈর্য ধরিয়া নাটমঞ্চে এই সমস্ত অপথ্যগুলি হজম করিত, ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়।” ===পৌরাণিক নাটক=== ====পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি==== পৌরাণিক নাটকের রচয়িতা হিসেবেই গিরিশচন্দ্রের খ্যাতি সমধিক। মনোমোহন বসু গীতাভিনয়ের যে ধারায় নাটক লিখেছিলেন, গিরিশচন্দ্র সেই ধারারই অনুসারী। এই প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনার পূর্বে গিরিশচন্দ্র যে যুগে পৌরাণিক নাটক রচনা করেন, তার পটভূমিটি স্মরণ করা আবশ্যক। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, তারই প্রতিক্রিয়া রূপে সেকালে দেখা দিয়েছিল হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ। এই পুনর্জাগরণে দুটি ধারা ছিল। একটি ধারার প্রবক্তা ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীরা। তাঁরা যুক্তিবাদের আলোয় হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ অপর ধারার প্রবক্তাগণ যুক্তি অপেক্ষা চিরাচরিত ভক্তিবিশ্বাসকেই একমাত্র পাথেয় করেছিলেন। এদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ভক্তিবাদ জনমানসে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত ছিল সেই মধ্যযুগ থেকেই। তার সঙ্গে উনিশ শতকে যুক্ত হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের মতবাদ। এই যুক্তবেণীর সমন্বয়ে বাঙালির মনে ধর্মচেতনার যে জোয়ার এসেছিল, গিরিশচন্দ্র তারই উত্তুঙ্গ শিখরে আসীন হয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি এবং অবতারকল্প সাধুসন্তের জীবনীকে নাট্যরূপ দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। ====গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন==== পৌরাণিক নাটক অথবা সন্তজীবনী অবলম্বনে নাটক লিখতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র শেকসপিয়রীয় নাট্যাদর্শ গ্রহণ করেছিলেন, আবার যাত্রাশৈলীকেও বর্জন করেননি। ফলে একদিকে যেমন নতুন রসাভাস হয়েছে, অপরদিকে তেমনই বাঙালির নিজস্ব রস-সংস্কারই জয়লাভ করেছে। প্রসঙ্গত তাঁর ''জনা'' নাটকটির নাম উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে এটিই তাঁর শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক। জনা চরিত্রটি তিনি শেকসপিয়রের ''দ্য ট্র্যাজেডি অফ কিং রিচার্ড দ্য থার্ড'' নাটকের ষষ্ঠ হেনরির বিধবা রানি মার্গারেটের ছায়ায় অঙ্কন করেছেন। প্রতিবিধিৎসু জনার উক্তির সঙ্গে মার্গারেটের উক্তির (প্রথম অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্য) সাদৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পার্থক্য এই যে, জনা শুধুই বাগাড়ম্বরময়ী, তিনি ক্রিয়াশীলা নন। অধিকন্তু ক্ষত্রিয় রমণীর মধ্যে বাঙালি মাতৃসুলভ শঙ্কাই প্রাধান্য পেয়েছে। নায়ক প্রবীরও ক্ষত্রিয় যুবক নয়, যেন বাঙালি মায়ের আদুরে দুলাল। বিদূষকের চরিত্রটিও প্রচ্ছন্ন ভক্তিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সরলবিশ্বাসী বিদূষকের বহু উক্তির মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণের সহজ উপদেশের প্রভাব অতি স্পষ্ট। পুরাণের মধ্যে যে শিক্ষাদান ও উপদেশপ্রবণতা আছে, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলিতে সেই প্রচারধর্মিতার প্রাধান্যই লক্ষিত হয়। ''জনা'' নাটকের তুলনায় ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' ও ''পাণ্ডব-গৌরব'' নাটক দুটি অধিকতর নাট্যগুণসম্পন্ন। ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকে যে নাট্যরস প্রথম দিকে ঘনীভূত হয়েছিল, পরের দিকে উপদেশ-মুখরতায় ও প্রচারধর্মিতায় তা একেবারেই উড়ে গিয়েছে। ''শংকরাচার্য'' ও ''তপোবল'' নিকৃষ্ট শ্রেণির নাটক। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পৌরাণিক নাটকের প্রসঙ্গে লিখেছেন, “বলিতে কি প্রাচীন বাঙলার কথক ঠাকুরেরা কথকতার দ্বারা যাহা করিতেন, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলি সেই প্রয়োজনই সিদ্ধ করিয়াছে। কথকগণ শুধু কথকতার দ্বারা অশিক্ষিত জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করিয়া পৌরাণিক আখ্যান-চরিত্র ও নীতি-উপদেশের উচ্চ আদর্শ জনসমাজে প্রচার করিতেন। গিরিশচন্দ্রও পৌরাণিক নাটকের দ্বারা জনসাধারণকে ভারতীয় জীবন ও সাধনার নীতিগুলির সুকৌশলে প্রচার করিয়াছিলেন।” ====পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা==== গিরিশচন্দ্র অজস্র গান লিখেছিলেন। একমাত্র ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকের গানগুলিই সুরচিত এবং তার চেয়েও বড়ো কথা সুপ্রযুক্ত। অন্যান্য নাটকের এক, দ্বৈত ও সমবেত গানগুলি যাত্রার প্রভাবে রচিত এবং যাত্রার মতোই যত্রতত্র নির্বিচারে প্রযুক্ত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্র যে বাস্তবধর্মী নাট্যসম্ভাবনার আভাস দিয়েছিলেন, গিরিশচন্দ্র তাকে উজ্জ্বলতর না করে নাট্যধারাকে মধ্যযুগীয় ভক্তিবাদ ও অলৌকিকতাবাদের মোহে আচ্ছন্ন করে দেন। একটি বিশেষ কালে তা দর্শককে আকৃষ্ট করেছিল; কিন্তু তাঁর মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী কালের মধ্যেই পরিবর্তিত সমাজ-পরিবেশের নিরিখে তা বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যায়। ===ঐতিহাসিক নাটক=== যুগের দাবি মেটাতে গিরিশচন্দ্র কয়েকটি ঐতিহাসিক নাটক ও ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক লিখেছিলেন। এগুলির মধ্যে ''সিরাজদ্দৌলা'', ''মীরকাশিম'' ও ''ছত্রপতি শিবাজী'' নাটক তিনটির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে বাংলায় যে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল এবং স্বাদেশিক আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছিল, এই নাটক তিনটি সেই পরিবেশেই রচিত হয়। তাই এগুলিতে ইতিহাস ও নাটক যতটা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে জাতীয়তাবাদের উচ্ছ্বাস। নাট্যগুণের অভাবে ঐতিহাসিক নাটক রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেননি। অবশ্য তাঁর ''সিরাজদ্দৌলা'' নাটকে কিছুটা ঐতিহাসিক কাহিনি অনুসরণের প্রয়াস দেখা যায়। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রচিত ''সিরাজদ্দৌলা'' নামক ইতিহাস-গ্রন্থ এই নাটকের একমাত্র উৎস। ঘটনার বিন্যাসে তিনি এই বইটির উপরই বিশ্বস্তভাবে নির্ভর করেছেন। তবু যাত্রার প্রভাবে করিম চাচা ও জহরা নামে দুটি অনৈতিহাসিক চরিত্র এর নাট্যরস অনেকটা ক্ষুণ্ণ করেছে। এই দুই চরিত্রের মাধ্যমে বহু অসম্ভব ঘটনা নাটকে ঢুকে পড়েছে। জগৎশেঠের বৈঠকখানায় ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন আলোচনায় নবাব-অনুগামী করিম চাচার উপস্থিতি অসম্ভব বলেই মনে হয়। প্রতিহিংসা-পরায়ণা জহরা যেভাবে সিরাজের অন্দরমহল থেকে ইংরেজ শিবিরে যখন তখন প্রবেশ করছে, তারও সম্ভাব্যতা নেই। ফকির দানশা সিরাজের সময়ে জীবিত না থাকলেও এই চরিত্রটিকে তিনি নাটকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, এমনকি তাঁকে ‘বাঙাল’ সাজাতে গিয়ে চরিত্রটিকেই লঘু করে ফেলেছেন। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “অহেতুক স্বাদেশিক উচ্ছ্বাস, স্থানকালপাত্রের কালানৌচিত্য দোষ (anachronism), নাটকীয় বাস্তব ঘটনাকে মেলোড্রামাটিক ফুৎকারে উড়াইয়া দিয়া এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাস, স্বাভাবিক-অস্বাভাবিকের সীমাকে অবহেলাভরে লঙ্ঘন করিয়া যাওয়ার অনুচিত ঝোঁক গিরিশচন্দ্রের ঐতিহাসিক নাটকগুলিকে আধুনিক পাঠক ও দর্শকের রুচির প্রতিকূল করিয়া তুলিয়াছে।” pz7vyz86fh2ntqcbmxkp7l9ze7oycwk 85209 85207 2025-06-22T09:58:10Z Jonoikobangali 676 /* ঐতিহাসিক নাটক */ 85209 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। ===গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং=== গীতিনাটক-রচয়িতা হিসেবেই বাংলা নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর গীতিনাটকগুলি নিতান্তই বৈশিষ্ট্যবর্জিত। গীতরচনার ভাষাতেও তিনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। শব্দযোজনাতেও নিম্নরুচির পরিচয় যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। গীতিনাটকগুলির মধ্যে একমাত্র ''আবুহোসেন'' সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রহসন ও পঞ্চরংগুলির সংলাপে ও গানে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সে যুগের দর্শকগণ যে কী করিয়া ধৈর্য ধরিয়া নাটমঞ্চে এই সমস্ত অপথ্যগুলি হজম করিত, ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়।” ===পৌরাণিক নাটক=== ====পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি==== পৌরাণিক নাটকের রচয়িতা হিসেবেই গিরিশচন্দ্রের খ্যাতি সমধিক। মনোমোহন বসু গীতাভিনয়ের যে ধারায় নাটক লিখেছিলেন, গিরিশচন্দ্র সেই ধারারই অনুসারী। এই প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনার পূর্বে গিরিশচন্দ্র যে যুগে পৌরাণিক নাটক রচনা করেন, তার পটভূমিটি স্মরণ করা আবশ্যক। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, তারই প্রতিক্রিয়া রূপে সেকালে দেখা দিয়েছিল হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ। এই পুনর্জাগরণে দুটি ধারা ছিল। একটি ধারার প্রবক্তা ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীরা। তাঁরা যুক্তিবাদের আলোয় হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ অপর ধারার প্রবক্তাগণ যুক্তি অপেক্ষা চিরাচরিত ভক্তিবিশ্বাসকেই একমাত্র পাথেয় করেছিলেন। এদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ভক্তিবাদ জনমানসে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত ছিল সেই মধ্যযুগ থেকেই। তার সঙ্গে উনিশ শতকে যুক্ত হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের মতবাদ। এই যুক্তবেণীর সমন্বয়ে বাঙালির মনে ধর্মচেতনার যে জোয়ার এসেছিল, গিরিশচন্দ্র তারই উত্তুঙ্গ শিখরে আসীন হয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি এবং অবতারকল্প সাধুসন্তের জীবনীকে নাট্যরূপ দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। ====গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন==== পৌরাণিক নাটক অথবা সন্তজীবনী অবলম্বনে নাটক লিখতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র শেকসপিয়রীয় নাট্যাদর্শ গ্রহণ করেছিলেন, আবার যাত্রাশৈলীকেও বর্জন করেননি। ফলে একদিকে যেমন নতুন রসাভাস হয়েছে, অপরদিকে তেমনই বাঙালির নিজস্ব রস-সংস্কারই জয়লাভ করেছে। প্রসঙ্গত তাঁর ''জনা'' নাটকটির নাম উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে এটিই তাঁর শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক। জনা চরিত্রটি তিনি শেকসপিয়রের ''দ্য ট্র্যাজেডি অফ কিং রিচার্ড দ্য থার্ড'' নাটকের ষষ্ঠ হেনরির বিধবা রানি মার্গারেটের ছায়ায় অঙ্কন করেছেন। প্রতিবিধিৎসু জনার উক্তির সঙ্গে মার্গারেটের উক্তির (প্রথম অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্য) সাদৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পার্থক্য এই যে, জনা শুধুই বাগাড়ম্বরময়ী, তিনি ক্রিয়াশীলা নন। অধিকন্তু ক্ষত্রিয় রমণীর মধ্যে বাঙালি মাতৃসুলভ শঙ্কাই প্রাধান্য পেয়েছে। নায়ক প্রবীরও ক্ষত্রিয় যুবক নয়, যেন বাঙালি মায়ের আদুরে দুলাল। বিদূষকের চরিত্রটিও প্রচ্ছন্ন ভক্তিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সরলবিশ্বাসী বিদূষকের বহু উক্তির মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণের সহজ উপদেশের প্রভাব অতি স্পষ্ট। পুরাণের মধ্যে যে শিক্ষাদান ও উপদেশপ্রবণতা আছে, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলিতে সেই প্রচারধর্মিতার প্রাধান্যই লক্ষিত হয়। ''জনা'' নাটকের তুলনায় ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' ও ''পাণ্ডব-গৌরব'' নাটক দুটি অধিকতর নাট্যগুণসম্পন্ন। ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকে যে নাট্যরস প্রথম দিকে ঘনীভূত হয়েছিল, পরের দিকে উপদেশ-মুখরতায় ও প্রচারধর্মিতায় তা একেবারেই উড়ে গিয়েছে। ''শংকরাচার্য'' ও ''তপোবল'' নিকৃষ্ট শ্রেণির নাটক। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পৌরাণিক নাটকের প্রসঙ্গে লিখেছেন, “বলিতে কি প্রাচীন বাঙলার কথক ঠাকুরেরা কথকতার দ্বারা যাহা করিতেন, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলি সেই প্রয়োজনই সিদ্ধ করিয়াছে। কথকগণ শুধু কথকতার দ্বারা অশিক্ষিত জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করিয়া পৌরাণিক আখ্যান-চরিত্র ও নীতি-উপদেশের উচ্চ আদর্শ জনসমাজে প্রচার করিতেন। গিরিশচন্দ্রও পৌরাণিক নাটকের দ্বারা জনসাধারণকে ভারতীয় জীবন ও সাধনার নীতিগুলির সুকৌশলে প্রচার করিয়াছিলেন।” ====পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা==== গিরিশচন্দ্র অজস্র গান লিখেছিলেন। একমাত্র ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকের গানগুলিই সুরচিত এবং তার চেয়েও বড়ো কথা সুপ্রযুক্ত। অন্যান্য নাটকের এক, দ্বৈত ও সমবেত গানগুলি যাত্রার প্রভাবে রচিত এবং যাত্রার মতোই যত্রতত্র নির্বিচারে প্রযুক্ত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্র যে বাস্তবধর্মী নাট্যসম্ভাবনার আভাস দিয়েছিলেন, গিরিশচন্দ্র তাকে উজ্জ্বলতর না করে নাট্যধারাকে মধ্যযুগীয় ভক্তিবাদ ও অলৌকিকতাবাদের মোহে আচ্ছন্ন করে দেন। একটি বিশেষ কালে তা দর্শককে আকৃষ্ট করেছিল; কিন্তু তাঁর মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী কালের মধ্যেই পরিবর্তিত সমাজ-পরিবেশের নিরিখে তা বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যায়। ===ঐতিহাসিক নাটক=== যুগের দাবি মেটাতে গিরিশচন্দ্র কয়েকটি ঐতিহাসিক নাটক ও ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক লিখেছিলেন। এগুলির মধ্যে ''সিরাজদ্দৌলা'', ''মীরকাশিম'' ও ''ছত্রপতি শিবাজী'' নাটক তিনটির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে বাংলায় যে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল এবং স্বাদেশিক আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছিল, এই নাটক তিনটি সেই পরিবেশেই রচিত হয়। তাই এগুলিতে ইতিহাস ও নাটক যতটা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে জাতীয়তাবাদের উচ্ছ্বাস। নাট্যগুণের অভাবে ঐতিহাসিক নাটক রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেননি। অবশ্য তাঁর ''সিরাজদ্দৌলা'' নাটকে কিছুটা ঐতিহাসিক কাহিনি অনুসরণের প্রয়াস দেখা যায়। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রচিত ''সিরাজদ্দৌলা'' নামক ইতিহাস-গ্রন্থ এই নাটকের একমাত্র উৎস। ঘটনার বিন্যাসে তিনি এই বইটির উপরই বিশ্বস্তভাবে নির্ভর করেছেন। তবু যাত্রার প্রভাবে করিম চাচা ও জহরা নামে দুটি অনৈতিহাসিক চরিত্র এর নাট্যরস অনেকটা ক্ষুণ্ণ করেছে। এই দুই চরিত্রের মাধ্যমে বহু অসম্ভব ঘটনা নাটকে ঢুকে পড়েছে। জগৎশেঠের বৈঠকখানায় ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন আলোচনায় নবাব-অনুগামী করিম চাচার উপস্থিতি অসম্ভব বলেই মনে হয়। প্রতিহিংসা-পরায়ণা জহরা যেভাবে সিরাজের অন্দরমহল থেকে ইংরেজ শিবিরে যখন তখন প্রবেশ করছে, তারও সম্ভাব্যতা নেই। ফকির দানশা সিরাজের সময়ে জীবিত না থাকলেও এই চরিত্রটিকে তিনি নাটকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, এমনকি তাঁকে ‘বাঙাল’ সাজাতে গিয়ে চরিত্রটিকেই লঘু করে ফেলেছেন। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “অহেতুক স্বাদেশিক উচ্ছ্বাস, স্থানকালপাত্রের কালানৌচিত্য দোষ (anachronism), নাটকীয় বাস্তব ঘটনাকে মেলোড্রামাটিক ফুৎকারে উড়াইয়া দিয়া এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাস, স্বাভাবিক-অস্বাভাবিকের সীমাকে অবহেলাভরে লঙ্ঘন করিয়া যাওয়ার অনুচিত ঝোঁক গিরিশচন্দ্রের ঐতিহাসিক নাটকগুলিকে আধুনিক পাঠক ও দর্শকের রুচির প্রতিকূল করিয়া তুলিয়াছে।” ===পারিবারিক ও সামাজিক নাটক=== গিরিশচন্দ্রের পারিবারিক ও সামাজিক নাটকগুলির মধ্যে ''প্রফুল্ল'', ''বলিদান'' ও ''শাস্তি কি শান্তি'' নাটক তিনটিই প্রধান। অপরেশচন্দ্রের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, গিরিশচন্দ্র বলেছিলেন, “realistic বিষয় নিয়ে নাটক লেখা আর নর্দমা-ঘাঁটা এক।” উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। পারিবারিক ও সামাজিক নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্রের অনীহা ও তাঁর লেখক-মানসের স্বরূপ এই মন্তব্য থেকে ফুটে ওঠে। তবু সম্ভবত রঙ্গমঞ্চের তাগিদেই এই ধরনের নাটক তিনি লিখেছিলেন। কাহিনি গ্রন্থনে, খুন-জখম-হত্যা-আত্মহত্যার ঘনঘটায় তিনি দীনবন্ধুকেই অনুকরণ করেছিলেন, কিন্তু দীনবন্ধুর মতো নাটকীয় চরিত্র সৃষ্টি করতে পারেননি। তিনটি নাটকই কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে কোনও না কোনও সামাজিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। ''বলিদান'' নাটকে পণপ্রথার সমস্যা, ''শাস্তি কি শান্তি'' নাটকে বাল্যবিধবাদের সমস্যা এবং ''প্রফুল্ল'' নাটকে ক্ষীণভাবে মদ্যপান ও মামলা-মোকদ্দমার মতো সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে প্রচার থাককেও তা হয়ে উঠেছে মূলত যৌথ পরিবারের ভাঙনের কাহিনি। তিনটি নাটকেই ট্র্যাজেডি রচনার প্রয়াস আছে। কিন্তু করুণাময়, প্রসন্নকুমার বা যোগেশ কেউই আত্মপ্রত্যয়পূর্ণ সংগ্রামশীল নায়ক নয়; তাই নাটকগুলি করুণ হলেও ট্র্যাজিক হয়নি। ট্র্যাজেডিতে ভয়, বিস্ময়, করুণা দর্শককে স্তম্ভিত করে রাখে, কাঁদালেও কেবলই কাঁদায় না। কিন্তু এই তিনটি নাটক কেবলই কাঁদিয়েছে। ''প্রফুল্ল'' তাঁর প্রথম পারিবারিক নাটক। এটিকে তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটকও মনে করা হয়। কিন্তু নাটকটির মধ্যে নাটকীয় দ্বন্দ্ব বা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রামের স্পৃহা নায়কের মধ্যে দেখা যায় না। ব্যাংক ফেলের কথা শুনে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার কিছু অংশও উদ্ধার করা যায় কিনা তা না ভেবে নায়ক অপরিমিত মদ্যপানে করতে শুরু করে এবং সমগ্র নাটকে আকণ্ঠ মদেই ডুবে থাকে। নায়কের এমন আচরণ নাট্যরস-পরিপন্থী। গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে ড. সুকুমার সেন লিখেছেন, “গিরিশের সামাজিক নাটকে প্রথম বিশেষত্ব হইতেছে এই যে, ইহাতে কলিকাতার মধ্যবিত্ত গৃহস্থ জীবনের কাহিনী মাত্র স্থান পাইয়াছে। দ্বিতীয় বিশেষত্ব ব্যাংক-ফেল্‌, ঋণের দায়ে ডিক্রীজারি, চাকুরিহানি, গৃহবিক্রয়, চুরির অভিযোগ, কন্যার পতিবিয়োগ ইত্যাদি সমস্ত বিপৎপাত একসঙ্গে অথবা পর পর দ্রুতবেগে ঘটিয়া গিয়াছে এবং তাহার ফলে গৃহকর্তা স্ত্রীলোকের অধিক মুহ্যমান হইয়া পড়িয়াছে। তৃতীয় বিশেষত্ব বিপৎপাতের মূলীভূত চক্রান্তের স্রষ্টা হইতেছে নায়কের ভ্রাতা, বাল্যবন্ধু অথবা ভ্রাতৃস্থানীয় স্নেহাস্পদ ব্যক্তি। তাহার সঙ্গে উকিল অ্যাটর্নি দালালের যোগ থাকিবেই। ভাগ্যহত নায়ক বিকৃতমস্তিষ্ক হইয়াও ঘটনাবলীর পরিণতি সহজ মানুষের মতো লক্ষ্য ও অনুমান করিয়া যাইবে। চতুর্থ বিশেষত্ব নীলদর্পণের আদর্শে নাটকের শেষে আত্মহত্যা, হত্যা এবং ‘পতন ও মৃত্যু’ ইত্যাদির প্রাচুর্য থাকিবে। নাটকের ভাগ্যহত পাত্রপাত্রীকে সংসার-ভূমি হইতে একেবারে নিকাশ করিয়া তবেই যবনিকা-পতন হইতেছে গিরিশচন্দ্রের নাট্যকৌশল।” এই নাট্যকৌশল যাত্রাশৈলীর অনুসারী। গিরিশচন্দ্রের শিল্পীমানস যাত্রানাটক ও গীতাভিনয়ের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে তিনি মধুসূদন বা দীনবন্ধুর আধুনিক আদর্শ গ্রহণ করতেও সক্ষম হননি। তবে একথা অনস্বীকার্যে যে, বাংলা নাটকের অভাবের যুগে তিনি অজস্র নাটক লিখে বাংলা রঙ্গমঞ্চকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এটিই গিরিশচন্দ্রের প্রধান কৃতিত্ব। hmc33xbxb61sfpklyt20ypslcv71c0s 85211 85209 2025-06-22T10:32:50Z Jonoikobangali 676 /* পারিবারিক ও সামাজিক নাটক */ 85211 wikitext text/x-wiki বাংলা নাট্যশালা ও নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪—১৯১২) এক বিস্ময়কর নাম। এই বিস্ময়ের পিছনে প্রধানত আছে এক অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকের সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেই সঙ্গে তাঁর উনচল্লিশ বছরের অবিরাম নাট্যরচনা। এই ভূরিস্রষ্টা নাট্যকার প্রায় একশোটি নাটক রচনা করেছেন। সংগত কারণেই তিনি সমকালে ‘নটগুরু’ আখ্যা লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় ‘ভক্ত ভৈরব’ গিরিশচন্দ্রের জীবন এক ধর্মীয় মহিমায় মণ্ডিত এবং আমাদের দেশ গুরুবাদের দেশ বলেই নির্বিচারে তিনি ‘মহাকবি’ আখ্যাও লাভ করেছিলেন। তিনি নটগুরু, অতএব তিনি নিশ্চিতভাবে নাট্যগুরুও হবে—এমন অযৌক্তিক ধারণার বশেই তাঁর গুণমুগ্ধেরাও কখনও তাঁকে শেকসপিয়রের উপরেও আসন দিয়েছিলেন। এই ধারণা ভাবাবেগপ্রসূত স্তুতিবাদ হতে পারে, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নাট্যসমালোচনা নয়। গিরিশচন্দ্রের নাটকের আলোচনার প্রথমে তাই পূর্বোক্ত মোহ অপসারণ করে যুক্তির আলোয় সাহিত্যবিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। এর আগে আর-একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো। গিরিশচন্দ্র আগে নট (১৮৬৭), পরে নাট্যকার (১৮৭৪)। নাট্য পরিচালক রূপে নাট্যশালাকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি নানা শ্রেণির নাটক রচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ''রঙ্গালয়ে ত্রিশ বৎসর'' গ্রন্থে লিখেছেন, “নাট্যবাণীর পূজার প্রধান উপকরণ—ইহার প্রাণ—ইহার অন্ন—নাটক। গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে—তিনি অন্ন দিয়া ইহার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বরাবর স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এইজন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the native stage—ইহার খুড়া জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।” কিন্তু নিছক প্রয়োজনের তাড়নায় রচিত এই নাটকগুলি শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করতে পারেনি। তাই তাঁর প্রায় একশো নাটকের মধ্যে ''প্রফুল্ল'' নাটকটিই আজ কোনও রকমে টিকে আছে। এমনকি যে পৌরাণিক নাটকে তিনি একদা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার ছিলেন, সেগুলিও হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। ==নাটক== নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে গিরিশচন্দ্র একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। প্যান্টোমাইম (Pantomime) শ্রেণির নাটক থেকে আরম্ভ করে গীতিনাটক, প্রহসন, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক ও পারিবারিক—সব ধরনের নাটকই তিনি রচনা করেন। মঞ্চ-কর্তৃত্ব তাঁর হাতে থাকায় তাঁর সব নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্রের যে আসন তাঁর গুণমুগ্ধেরা নির্ধারণ করেন, তার উৎস এখানেই। ''আগমনী'', ''অকালবোধন'', ''দোললীলা'', ''মায়াতরু'', ''মোহিনী-প্রতিমা'', ''মলিন মালা'', ''পারস্যপ্রসূন'', ''বেল্লিক বাজার'', ''আবুহোসেন'', ''আলাদীন'', ''য্যায়সা কা ত্যায়সা'' প্রভৃতি তাঁর গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং (Extravaganza)। ''রাবণ বধ'', ''সীতার বনবাস'', ''অভিমন্যু বধ'', ''লক্ষ্মণ বর্জন'', ''সীতাহরণ'', ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' (১৮৮৩), ''দক্ষযজ্ঞ'' (১৮৮৩), ''নল-দময়ন্তী'', ''শ্রীবৎস-চিন্তা'', ''জনা'' (১৮৯৩), ''পাণ্ডব-গৌরব'' (১৯০০), ''তপোবল'' (১৯১১) প্রভৃতি তাঁর পৌরাণিক নাটক। অবতার ও ভক্তজীবনী এবং ভক্তিতত্ত্ব অবলম্বনে তিনি রচনা করেন ''চৈতন্যলীলা'' (১৮৮৪), ''নিমাই-সন্ন্যাস'' (১৮৮৫), ''বুদ্ধদেব-চরিত'' (১৮৮৫), ''বিল্বমঙ্গল'' (১৮৮৬), ''রূপ-সনাতন'' (১৮৮৭), ''পূর্ণচন্দ্র'' (১৮৮৮), ''নসীরাম'' (১৮৮৮), ''করমেতিবাঈ'' (১৮৯৫), ''শংকরাচার্য'' (১৯১০) প্রভৃতি নাটক। ''আনন্দ রহো'' (১৮৮১), ''চণ্ড'' (১৮৯০), ''কালাপাহাড়'' (১৮৯৬), ''সৎনাম'' (১৯০৪), ''সিরাজদ্দৌলা'' (১৯০৫), ''মীরকাশিম'' (১৯০৬), ''ছত্রপতি শিবাজী'' (১৯০৭), ''অশোক'' (১৯১০) প্রভৃতি তাঁর ঐতিহাসিক নাটক। ''প্রফুল্ল'' (১৮৮৯), ''হারানিধি'' (১৮৮৯), ''বলিদান'' (১৯০৫), ''শাস্তি কি শান্তি'' (১৯০৮), ''গৃহলক্ষ্মী (১৯১২) প্রভৃতি তাঁর পারিবারিক নাটক। ===গীতিনাটক, প্রহসন ও পঞ্চরং=== গীতিনাটক-রচয়িতা হিসেবেই বাংলা নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর গীতিনাটকগুলি নিতান্তই বৈশিষ্ট্যবর্জিত। গীতরচনার ভাষাতেও তিনি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। শব্দযোজনাতেও নিম্নরুচির পরিচয় যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। গীতিনাটকগুলির মধ্যে একমাত্র ''আবুহোসেন'' সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রহসন ও পঞ্চরংগুলির সংলাপে ও গানে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সে যুগের দর্শকগণ যে কী করিয়া ধৈর্য ধরিয়া নাটমঞ্চে এই সমস্ত অপথ্যগুলি হজম করিত, ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়।” ===পৌরাণিক নাটক=== ====পৌরাণিক নাটক রচনার পটভূমি==== পৌরাণিক নাটকের রচয়িতা হিসেবেই গিরিশচন্দ্রের খ্যাতি সমধিক। মনোমোহন বসু গীতাভিনয়ের যে ধারায় নাটক লিখেছিলেন, গিরিশচন্দ্র সেই ধারারই অনুসারী। এই প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনার পূর্বে গিরিশচন্দ্র যে যুগে পৌরাণিক নাটক রচনা করেন, তার পটভূমিটি স্মরণ করা আবশ্যক। বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, তারই প্রতিক্রিয়া রূপে সেকালে দেখা দিয়েছিল হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ। এই পুনর্জাগরণে দুটি ধারা ছিল। একটি ধারার প্রবক্তা ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীরা। তাঁরা যুক্তিবাদের আলোয় হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ অপর ধারার প্রবক্তাগণ যুক্তি অপেক্ষা চিরাচরিত ভক্তিবিশ্বাসকেই একমাত্র পাথেয় করেছিলেন। এদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ভক্তিবাদ জনমানসে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত ছিল সেই মধ্যযুগ থেকেই। তার সঙ্গে উনিশ শতকে যুক্ত হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের মতবাদ। এই যুক্তবেণীর সমন্বয়ে বাঙালির মনে ধর্মচেতনার যে জোয়ার এসেছিল, গিরিশচন্দ্র তারই উত্তুঙ্গ শিখরে আসীন হয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি এবং অবতারকল্প সাধুসন্তের জীবনীকে নাট্যরূপ দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। ====গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের মূল্যায়ন==== পৌরাণিক নাটক অথবা সন্তজীবনী অবলম্বনে নাটক লিখতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র শেকসপিয়রীয় নাট্যাদর্শ গ্রহণ করেছিলেন, আবার যাত্রাশৈলীকেও বর্জন করেননি। ফলে একদিকে যেমন নতুন রসাভাস হয়েছে, অপরদিকে তেমনই বাঙালির নিজস্ব রস-সংস্কারই জয়লাভ করেছে। প্রসঙ্গত তাঁর ''জনা'' নাটকটির নাম উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে এটিই তাঁর শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক। জনা চরিত্রটি তিনি শেকসপিয়রের ''দ্য ট্র্যাজেডি অফ কিং রিচার্ড দ্য থার্ড'' নাটকের ষষ্ঠ হেনরির বিধবা রানি মার্গারেটের ছায়ায় অঙ্কন করেছেন। প্রতিবিধিৎসু জনার উক্তির সঙ্গে মার্গারেটের উক্তির (প্রথম অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্য) সাদৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পার্থক্য এই যে, জনা শুধুই বাগাড়ম্বরময়ী, তিনি ক্রিয়াশীলা নন। অধিকন্তু ক্ষত্রিয় রমণীর মধ্যে বাঙালি মাতৃসুলভ শঙ্কাই প্রাধান্য পেয়েছে। নায়ক প্রবীরও ক্ষত্রিয় যুবক নয়, যেন বাঙালি মায়ের আদুরে দুলাল। বিদূষকের চরিত্রটিও প্রচ্ছন্ন ভক্তিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সরলবিশ্বাসী বিদূষকের বহু উক্তির মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণের সহজ উপদেশের প্রভাব অতি স্পষ্ট। পুরাণের মধ্যে যে শিক্ষাদান ও উপদেশপ্রবণতা আছে, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলিতে সেই প্রচারধর্মিতার প্রাধান্যই লক্ষিত হয়। ''জনা'' নাটকের তুলনায় ''পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস'' ও ''পাণ্ডব-গৌরব'' নাটক দুটি অধিকতর নাট্যগুণসম্পন্ন। ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকে যে নাট্যরস প্রথম দিকে ঘনীভূত হয়েছিল, পরের দিকে উপদেশ-মুখরতায় ও প্রচারধর্মিতায় তা একেবারেই উড়ে গিয়েছে। ''শংকরাচার্য'' ও ''তপোবল'' নিকৃষ্ট শ্রেণির নাটক। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পৌরাণিক নাটকের প্রসঙ্গে লিখেছেন, “বলিতে কি প্রাচীন বাঙলার কথক ঠাকুরেরা কথকতার দ্বারা যাহা করিতেন, গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলি সেই প্রয়োজনই সিদ্ধ করিয়াছে। কথকগণ শুধু কথকতার দ্বারা অশিক্ষিত জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করিয়া পৌরাণিক আখ্যান-চরিত্র ও নীতি-উপদেশের উচ্চ আদর্শ জনসমাজে প্রচার করিতেন। গিরিশচন্দ্রও পৌরাণিক নাটকের দ্বারা জনসাধারণকে ভারতীয় জীবন ও সাধনার নীতিগুলির সুকৌশলে প্রচার করিয়াছিলেন।” ====পৌরাণিক নাটকে গান ও অলৌকিকতা==== গিরিশচন্দ্র অজস্র গান লিখেছিলেন। একমাত্র ''বিল্বমঙ্গল'' নাটকের গানগুলিই সুরচিত এবং তার চেয়েও বড়ো কথা সুপ্রযুক্ত। অন্যান্য নাটকের এক, দ্বৈত ও সমবেত গানগুলি যাত্রার প্রভাবে রচিত এবং যাত্রার মতোই যত্রতত্র নির্বিচারে প্রযুক্ত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্র যে বাস্তবধর্মী নাট্যসম্ভাবনার আভাস দিয়েছিলেন, গিরিশচন্দ্র তাকে উজ্জ্বলতর না করে নাট্যধারাকে মধ্যযুগীয় ভক্তিবাদ ও অলৌকিকতাবাদের মোহে আচ্ছন্ন করে দেন। একটি বিশেষ কালে তা দর্শককে আকৃষ্ট করেছিল; কিন্তু তাঁর মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী কালের মধ্যেই পরিবর্তিত সমাজ-পরিবেশের নিরিখে তা বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যায়। ===ঐতিহাসিক নাটক=== যুগের দাবি মেটাতে গিরিশচন্দ্র কয়েকটি ঐতিহাসিক নাটক ও ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক লিখেছিলেন। এগুলির মধ্যে ''সিরাজদ্দৌলা'', ''মীরকাশিম'' ও ''ছত্রপতি শিবাজী'' নাটক তিনটির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে বাংলায় যে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল এবং স্বাদেশিক আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছিল, এই নাটক তিনটি সেই পরিবেশেই রচিত হয়। তাই এগুলিতে ইতিহাস ও নাটক যতটা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে জাতীয়তাবাদের উচ্ছ্বাস। নাট্যগুণের অভাবে ঐতিহাসিক নাটক রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেননি। অবশ্য তাঁর ''সিরাজদ্দৌলা'' নাটকে কিছুটা ঐতিহাসিক কাহিনি অনুসরণের প্রয়াস দেখা যায়। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রচিত ''সিরাজদ্দৌলা'' নামক ইতিহাস-গ্রন্থ এই নাটকের একমাত্র উৎস। ঘটনার বিন্যাসে তিনি এই বইটির উপরই বিশ্বস্তভাবে নির্ভর করেছেন। তবু যাত্রার প্রভাবে করিম চাচা ও জহরা নামে দুটি অনৈতিহাসিক চরিত্র এর নাট্যরস অনেকটা ক্ষুণ্ণ করেছে। এই দুই চরিত্রের মাধ্যমে বহু অসম্ভব ঘটনা নাটকে ঢুকে পড়েছে। জগৎশেঠের বৈঠকখানায় ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন আলোচনায় নবাব-অনুগামী করিম চাচার উপস্থিতি অসম্ভব বলেই মনে হয়। প্রতিহিংসা-পরায়ণা জহরা যেভাবে সিরাজের অন্দরমহল থেকে ইংরেজ শিবিরে যখন তখন প্রবেশ করছে, তারও সম্ভাব্যতা নেই। ফকির দানশা সিরাজের সময়ে জীবিত না থাকলেও এই চরিত্রটিকে তিনি নাটকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, এমনকি তাঁকে ‘বাঙাল’ সাজাতে গিয়ে চরিত্রটিকেই লঘু করে ফেলেছেন। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “অহেতুক স্বাদেশিক উচ্ছ্বাস, স্থানকালপাত্রের কালানৌচিত্য দোষ (anachronism), নাটকীয় বাস্তব ঘটনাকে মেলোড্রামাটিক ফুৎকারে উড়াইয়া দিয়া এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাস, স্বাভাবিক-অস্বাভাবিকের সীমাকে অবহেলাভরে লঙ্ঘন করিয়া যাওয়ার অনুচিত ঝোঁক গিরিশচন্দ্রের ঐতিহাসিক নাটকগুলিকে আধুনিক পাঠক ও দর্শকের রুচির প্রতিকূল করিয়া তুলিয়াছে।” ===পারিবারিক ও সামাজিক নাটক=== গিরিশচন্দ্রের পারিবারিক ও সামাজিক নাটকগুলির মধ্যে ''প্রফুল্ল'', ''বলিদান'' ও ''শাস্তি কি শান্তি'' নাটক তিনটিই প্রধান। অপরেশচন্দ্রের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, গিরিশচন্দ্র বলেছিলেন, “realistic বিষয় নিয়ে নাটক লেখা আর নর্দমা-ঘাঁটা এক।” উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। পারিবারিক ও সামাজিক নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্রের অনীহা ও তাঁর লেখক-মানসের স্বরূপ এই মন্তব্য থেকে ফুটে ওঠে। তবু সম্ভবত রঙ্গমঞ্চের তাগিদেই এই ধরনের নাটক তিনি লিখেছিলেন। কাহিনি গ্রন্থনে, খুন-জখম-হত্যা-আত্মহত্যার ঘনঘটায় তিনি দীনবন্ধুকেই অনুকরণ করেছিলেন, কিন্তু দীনবন্ধুর মতো নাটকীয় চরিত্র সৃষ্টি করতে পারেননি। তিনটি নাটকই কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে কোনও না কোনও সামাজিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। ''বলিদান'' নাটকে পণপ্রথার সমস্যা, ''শাস্তি কি শান্তি'' নাটকে বাল্যবিধবাদের সমস্যা এবং ''প্রফুল্ল'' নাটকে ক্ষীণভাবে মদ্যপান ও মামলা-মোকদ্দমার মতো সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে প্রচার থাককেও তা হয়ে উঠেছে মূলত যৌথ পরিবারের ভাঙনের কাহিনি। তিনটি নাটকেই ট্র্যাজেডি রচনার প্রয়াস আছে। কিন্তু করুণাময়, প্রসন্নকুমার বা যোগেশ কেউই আত্মপ্রত্যয়পূর্ণ সংগ্রামশীল নায়ক নয়; তাই নাটকগুলি করুণ হলেও ট্র্যাজিক হয়নি। ট্র্যাজেডিতে ভয়, বিস্ময়, করুণা দর্শককে স্তম্ভিত করে রাখে, কাঁদালেও কেবলই কাঁদায় না। কিন্তু এই তিনটি নাটক কেবলই কাঁদিয়েছে। ''প্রফুল্ল'' তাঁর প্রথম পারিবারিক নাটক। এটিকে তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটকও মনে করা হয়। কিন্তু নাটকটির মধ্যে নাটকীয় দ্বন্দ্ব বা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রামের স্পৃহা নায়কের মধ্যে দেখা যায় না। ব্যাংক ফেলের কথা শুনে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার কিছু অংশও উদ্ধার করা যায় কিনা তা না ভেবে নায়ক অপরিমিত মদ্যপানে করতে শুরু করে এবং সমগ্র নাটকে আকণ্ঠ মদেই ডুবে থাকে। নায়কের এমন আচরণ নাট্যরস-পরিপন্থী। গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে ড. সুকুমার সেন লিখেছেন, “গিরিশের সামাজিক নাটকে প্রথম বিশেষত্ব হইতেছে এই যে, ইহাতে কলিকাতার মধ্যবিত্ত গৃহস্থ জীবনের কাহিনী মাত্র স্থান পাইয়াছে। দ্বিতীয় বিশেষত্ব ব্যাংক-ফেল্‌, ঋণের দায়ে ডিক্রীজারি, চাকুরিহানি, গৃহবিক্রয়, চুরির অভিযোগ, কন্যার পতিবিয়োগ ইত্যাদি সমস্ত বিপৎপাত একসঙ্গে অথবা পর পর দ্রুতবেগে ঘটিয়া গিয়াছে এবং তাহার ফলে গৃহকর্তা স্ত্রীলোকের অধিক মুহ্যমান হইয়া পড়িয়াছে। তৃতীয় বিশেষত্ব বিপৎপাতের মূলীভূত চক্রান্তের স্রষ্টা হইতেছে নায়কের ভ্রাতা, বাল্যবন্ধু অথবা ভ্রাতৃস্থানীয় স্নেহাস্পদ ব্যক্তি। তাহার সঙ্গে উকিল অ্যাটর্নি দালালের যোগ থাকিবেই। ভাগ্যহত নায়ক বিকৃতমস্তিষ্ক হইয়াও ঘটনাবলীর পরিণতি সহজ মানুষের মতো লক্ষ্য ও অনুমান করিয়া যাইবে। চতুর্থ বিশেষত্ব নীলদর্পণের আদর্শে নাটকের শেষে আত্মহত্যা, হত্যা এবং ‘পতন ও মৃত্যু’ ইত্যাদির প্রাচুর্য থাকিবে। নাটকের ভাগ্যহত পাত্রপাত্রীকে সংসার-ভূমি হইতে একেবারে নিকাশ করিয়া তবেই যবনিকা-পতন হইতেছে গিরিশচন্দ্রের নাট্যকৌশল।” এই নাট্যকৌশল যাত্রাশৈলীর অনুসারী। গিরিশচন্দ্রের শিল্পীমানস যাত্রানাটক ও গীতাভিনয়ের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে তিনি মধুসূদন বা দীনবন্ধুর আধুনিক আদর্শ গ্রহণ করতেও সক্ষম হননি। তবে একথা অনস্বীকার্যে যে, বাংলা নাটকের অভাবের যুগে তিনি অজস্র নাটক লিখে বাংলা রঙ্গমঞ্চকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এটিই গিরিশচন্দ্রের প্রধান কৃতিত্ব। ==মূল্যায়ন== গিরিশযুগের পূর্বে বাংলা নাটক অভিজাত সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদেরই বাড়িতে অথবা বাগানবাড়িতে অভিনীত হত। গিরিশচন্দ্র ও তাঁর সহযোগীরাই প্রথম সেই নাটককে নিয়ে এলেন জনতার দরবারে। কিছুকাল পূর্বে কলকাতায় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের সদস্যরাই তা দেখার সুযোগ পেতেন। ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর সাধারণ রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠিত হল। সেদিন থেকেই নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে সূচিত হল এক গৌরবময় অধ্যায়। নাট্যশালার প্রসারেই নাটকের প্রচার সম্ভব হয়। দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখের শ্রেষ্ঠ নাটকগুলি পূর্বে রচিত হলেও সেগুলির প্রকৃত ও যথাযোগ্য সমাদর সাধারণ নাট্যশালার দর্শকগণের প্রশংসার মাধ্যমেই হয়েছিল। সাধারণ রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমৃত্যু গিরিশচন্দ্র বাংলা নাট্যমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তাঁকে কেন্দ্র করে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, অমৃতলাল বসু, অমৃতলাল মিত্র, অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়, মহেন্দ্রলাল বসু প্রমুখ নট ও নাট্যকার বাংলা নাটকের সমৃদ্ধি সাধনে নিযুক্ত হন। গিরিশচন্দ্র ও তাঁর সহকারীরা বাংলা নাট্য আন্দোলনকে এক চূড়ান্ত রূপ প্রদান করেন। সাধারণ রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠা, রঙ্গমঞ্চ পরিচালনা ও অভিনয়-শিল্প শিক্ষাদানে গিরিশচন্দ্রের সমকক্ষ কেউ বাংলায় ছিলেন না। গিরিশচন্দ্র অনেক নাটক লিখেছিলেন বটে, কিন্তু তার চেয়েও বড়ো কথা এই যে, তিনি রঙ্গমঞ্চের শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও রক্ষাকর্তা। তাঁর পূর্বে নাট্যশালার নিতান্ত শৈশবাবস্থা এবং তাঁর পরেই আবার নাট্যশালার অকাল বার্ধক্যের সূচনা ঘটে। নাট্যশালার গৌরবময় যৌবন কেবল গিরিশচন্দ্রের সময়েই প্রকট হয়েছিল। রঙ্গালয়ের অধ্যক্ষ ও অভিনেতা রূপেই গিরিশচন্দ্রের আত্মপ্রকাশ এবং হয়তো একমাত্র এই রূপেই তাঁর জীবনের সর্বোত্তম বিকাশ ঘটতে পারত। কিন্তু নাট্যশালার প্রয়োজনেই তাঁর প্রতিভার অপর একটি দিক প্রকাশিত হল এবং প্রতিভাবান জনপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে খ্যাতনামা নাট্যকারের নিরলস প্রচেষ্টার সংযোগ সাধিত হল। গিরিশচন্দ্র নাট্যরচনায় হাত দেওয়ার আগে মধুসূদন ও দীনবন্ধুর নাটক এবং বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলির নাট্যরূপ নাট্যশালার চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। কিন্তু ক্রমে সেগুলি পুরোনো হয়ে এল এবং দর্শকেরা নতুন নাটক দেখতে চাইলেন। দর্শকের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং নাট্যশালাগুলিকে নতুন ধরনের নাটক দিয়ে সমৃদ্ধ করার আশা নিয়ে গিরিশচন্দ্র নিজে নাটক লিখতে শুরু করলেন। সেই সময় থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রমে নিত্য নতুন নাটক লিখে চললেন তিনি। এইসব নাটক সেকালের রঙ্গমঞ্চগুলিকে নতুন রসের আভাস দিয়েছিল। গিরিশচন্দ্রের মতো এত বেশি সংখ্যায় নাটক বাংলার আর কোনও নাট্যকার লেখেননি, সৃষ্টির এই বাহুল্য যথার্থই সকলের মনে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। গিরিশচন্দ্র সম্ভবত বাংলার সর্বাপেক্ষা ভাগ্যবান নাট্যকার। দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখ অনেক নাট্যকার শ্রেষ্ঠ প্রতিভার অধিকারী হয়েও সমালোচকেরা কাছে প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা পাননি। কিন্তু গিরিশচন্দ্র জীবদ্দশাতেই নাট্যসমালোচকদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছিলেন। গিরিশচন্দ্রের বহু অনুরাগী সমালোচক তাঁকে শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের মর্যাদা দান করেন। এঁদের অধিকাংশই ছিলেন গিরিশচন্দ্রের সমসাময়িক এবং কাছের মানুষ। তাই পরিচালক, ব্যবস্থাপক, শিক্ষক এবং সর্বোপরি অসাধারণ অভিনেতা গিরিশচন্দ্র এঁদের দৃষ্টিকে এমনভাবে আচ্ছন্ন রেখেছিলেন যে, নাট্য-সমালোচনায় এঁরা অপক্ষপাতী বিশ্লেষক দৃষ্টি সজাগ রাখতে পারেননি। ড. সুকুমার সেন লিখেছেন, “নাটকের শাশ্বত সাহিত্যমূল্য ততটুকুই যতটুকু দ্বারা ইহাতে মানবজীবনরস কালদেশাতিশায়ী শিল্পসৌন্দর্য লাভ করিতে পারে।” গিরিশচন্দ্রের নাট্যকৃতিত্বও কিন্তু এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটেই আলোচ্য। গিরিশচন্দ্র যে সময়ে নাট্যকার রূপে আবির্ভূত হলেন, তখন বাংলা নাট্যসাহিত্যের শৈশব ও কৈশোর অতিক্রান্ত হয়ে যৌবন সূচিত হয়েছে। তাঁর পূর্বেই প্রতিভাবান নাট্যকারেরা বিভিন্ন নাট্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, গিরিশচন্দ্র সেই ধারায় বহু সংখ্যক নাটক লিখে নাট্যশালাকে সচল রেখেছিলেন—এটিই তাঁর কৃতিত্ব। তিনি পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক অনেক ধরনের নাটক লিখেছিলেন, কিন্তু সব ক্ষেত্রেই বিশ্বস্তভাবে অনুসরণ করেছিলেন তাঁর পূর্বসূরিদের নির্দেশিত পথ। সামাজিক নাটকে তিনি দীনবন্ধুর নাটক, বিশেষত ''নীলদর্পণ''-এর দ্বারা প্রভাবিত। করুণরসের প্রাবল্য, অকারণ মৃত্যুর আতিশায্য এবং চরিত্রের অতিরঞ্জন প্রভৃতি ''নীলদর্পণ''-এর বৈশিষ্ট্যগুলি গিরিশচন্দ্রের নাটকে সমভাবে বিদ্যমান ছিল। ঐতিহাসিক নাটকে তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা প্রভাবিত। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাটকে যে বীররসের আধিক্য এবং স্বদেশি ভাবোদ্দীপন দেখা যায়, গিরিশচন্দ্রের ঐতিহাসিক নাটকেও সেইসব বিশেষত্ব আছে। ধর্মপ্রাণ বাঙালির হৃদয় জয় করতে হলে পৌরাণিক নাটক লেখা দরকার, গিরিশচন্দ্রও তা বুঝেছিলেন। মনোমোহন বসু থেকে রাজকৃষ্ণ রায় পর্যন্ত যে পৌরাণিক গীতাভিনয়, অপেরা প্রভৃতির ধারা চলে আসছিল, তা গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। অবশ্য পৌরাণিক নাটকে তাঁর কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য সেগুলি সম্পূর্ণত যাত্রা বা গীতাভিনয়ের অনুরূপ হয়নি। গিরিশচন্দ্র তাঁর পৌরাণিক নাটকে রামায়ণ ও মহাভারত থেকে অনেক কাহিনি গ্রহণ করেছিলেন। সাধারণ বাঙালির ন্যায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ ও কাশীদাসী মহাভারতই তাঁর মানসিক সংস্কৃতি গঠন করেছিল। কৃত্তিবাসী ও কাশীরামের ভাব ও ভাষা তাঁর অনেক নাটকেই অবিকল অনুসৃত হয়েছিল। ইতিপূর্বে মধুসূদন রাম ও রাবণ চরিত্রের পরিকল্পনায় অভিনব মৌলিকত্ব দেখিয়েছিলেন, কিন্তু কৃত্তিবাসের প্রতি সশ্রদ্ধ আনুগত্যের জন্য গিরিশচন্দ্র মধুসূদনকে অনুসরণ করেননি। তাঁর রাম, রাবণ প্রভৃতি চরিত্র খাঁটি কৃত্তিবাসী চরিত্রেরই অনুরূপ হয়েছে। ''গিরিশচন্দ্র ও নাট্যসাহিত্য'' গ্রন্থে জানা যায়, স্বয়ং নাট্যকারও এই দুই বাঙালি কবির প্রতি তাঁর ঋণ স্বীকার করে কুমুদবন্ধু সেনকে বলেছিলেন, “…মহাকবি কাশীরাম দাস, কৃত্তিবাসী আমার ভাষার বনিয়াদ। আমার লেখায় তাঁদের প্রভাবও দেখতে পাবে।” গিরিশচন্দ্রের নাটকে দেশীয় ও জাতীয় ভাব অধিক হলেও বিদেশি ভাব ও সাহিত্যের আদর্শও তিনি কিছুটা গ্রহণ করেছিলেন। কুমুদবন্ধু সেনকে তিনি বলেছিলেন, “মহাকবি সেক্ষপীয়রই আমার আদর্শ। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছি।” শেকসপিয়রের ন্যায় তিনিও নাটকের পঞ্চাঙ্ক বিভাগ সর্বত্র মেনে চলেছেন। শেকসপিয়রের অনুসরণে তিনি আদিম প্রবৃত্তির সংঘাত এবং প্রবল ভাবের (passion) আতিশায্য বর্ণনা করেছেন। মানবসমাজের যত অন্যায় ও দুষ্কৃতি, শেকসপিয়র সে সব কিছুই অঙ্কন করেছিলেন। গিরিশচন্দ্রের নাটকেও ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, প্রতিহিংসা, ব্যভিচার, নরহত্যা প্রভৃতি সব ধরনের অপরাধ ও পাপ দেখানো হয়েছে। বিদূষক প্রভৃতির চরিত্রের উপর শেকসপিয়রের Fool চরিত্রের প্রভাব কিছুটা পড়েছে। শেকসপিয়রের ন্যায় গিরিশচন্দ্রও লঘু ও হাস্যরসাত্মক ভাবপ্রকাশের জন্য গদ্য এবং গম্ভীর ও ওজস্বী বিষয় ব্যক্ত করার জন্য পদ্য ব্যবহার করেছেন। শেকসপিয়রের ''জুলিয়াস সিজার'', ''হ্যামলেট'', ''ম্যাকবেথ'' প্রভৃতি নাটকে যেমন প্রেতাত্মার অস্তিত্ব আছে, গিরিশচন্দ্রের ''চণ্ড'', ''কালাপাহাড়'' ইত্যাদি নাটকেও তেমনই অশরীরী ছায়ামূর্তির আবির্ভাব দেখানো হয়েছে। শেকসপিয়রের সঙ্গে এইসব সাদৃশ্য সত্ত্বেও জোর দিয়ে বলা যায় যে, গিরিশচন্দ্রের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাঁর নাট্যগুরুর আদর্শের গুরুতর প্রভেদও বিদ্যমান। গিরিশচন্দ্রের সব নাটকই ধর্মভাব ও নীতিবোধে আচ্ছন্ন। এটিই তাঁর সর্বপ্রধান নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। তাঁর নাটকের মধ্যে দেশীয় ঐতিহ্যের ভাব ও সংস্কৃতির ধারা প্রবাহিত এবং তাঁর নাটকীয় রীতিও সর্বতোভাবে শেকসপিয়রের অনুসারী নয়। তাই শেকসপিয়রের সঙ্গে তাঁর নাটকে গভীর ঐক্য অনুসন্ধান করতে যাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। ভাষা ও ছন্দের দিক থেকেও গিরিশচন্দ্র বাংলা নাটকের অনেক সংস্কার সাধন করেছিলেন। মধুসূদন, দীনবন্ধু প্রমুখ নাট্যকারের গদ্য সংলাপ সংস্কৃত ভাষার প্রভাবে ক্ষেত্রবিশেষে আড়ষ্ট ও অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছিল। গিরিশচন্দ্রই প্রথম নাটকীয় সংলাপ সাবলীল করতে সক্ষম হলেন, নাটকীয় চরিত্রগুলিতে তিনি আরোপ করলেন তাদের নিজস্ব ভাষা। সংস্কৃত নাটকের বিদূষক প্রভৃতি যেমন প্রাকৃত ভাষায় কথা বলে, গিরিশচন্দ্রের বিদূষক প্রভৃতি হাস্যরসাত্মক চরিত্রগুলিও তেমনই কলকাতা অঞ্চলের ইতর ভাষা (slang) ব্যবহার করে। গম্ভীর ও মার্জিত ভাষার সঙ্গে বৈপরীত্য দেখিয়ে নাট্যকার এই ভাষা হাস্যরস উদ্রেক করার জন্য প্রয়োগ করেছেন বটে, তবে একই ধরনের চরিত্রের মুখে প্রত্যেক নাটকে একই ভাষা একঘেয়ে ও বৈচিত্র্যহীন হয়েছে। তাছাড়া তাঁর ভাষায় সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনার অভাব দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের নাটকের ভাষায় যে wit এবং অপরূপ কারুকার্য দেখা যায়, গিরিশচন্দ্রের ভাষায় তা নেই। গিরিশচন্দ্রের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব গৈরিশ ছন্দ। এই ছন্দের আবিষ্কর্তা অবশ্য তিনি নন। তাঁর পূর্বেই কালীপ্রসন্নের ''হুতোম প্যাঁচার নক্সা''-এ, ব্রজমোহন রায়ের ''দানব-বিজয়'' নাটকে এবং রাজকৃষ্ণ রায়ের কাব্যে এই ছন্দ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু গিরিশচন্দ্রই এই ছন্দ সংস্কার করে নাটকের উপযোগী করে তোলেন। নাটকে দীনবন্ধু-ব্যবহৃত পয়ার এবং মধুসূদন-প্রবর্তিত চতুর্দশাক্ষরী অমিত্রাক্ষর ছন্দ অনুকূল নয়, কারণ ওই দুই ছন্দে ভাবের দ্রুত ও অবিরাম গতি সম্ভব হয় না। কিন্তু গৈরিশ ছন্দের মধ্যে দিয়ে নাটকীয় ক্রিয়া ও চরিত্র দ্রুতগতি লাভ করে এবং কথোপকথন দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর মনে হয় না। গিরিশচন্দ্রের এই মৌলিক নাটকীয় ছন্দের জন্যই তাঁর পৌরাণিক নাটকগুলি গতানুগতিক একঘেয়েমি থেকে রক্ষা পেয়েছে। গিরিশচন্দ্র যখন নাট্যরচনায় হাত দেন তখন বাংলায় হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানের যুগ। ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর ধর্মদ্রোহের দিন অতিক্রান্ত এবং ব্রাহ্ম আন্দোলনের সাময়িক চাঞ্চল্যও স্তিমিত। বাঙালি পুনরায় আত্মপ্রতিষ্ঠ হয়ে নিজের ধর্ম ও সমাজ সংরক্ষণে ব্রতী। এই পরিবেশে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেন পৌরাণিক কাহিনির নিয়ে মহাকাব্য-আখ্যানকাব্য রচনা শুরু করেছেন এবং বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভা যুক্তিবাদের নিরিখে হিন্দুধর্মের সারতত্ত্ব অনুশীলনে নিরত হয়েছে। এমন এক সর্বজনীন ধর্মপ্লাবন গিরিশচন্দ্রের ধর্মভাবকে পুষ্ট করলেও তাঁর জীবনে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য প্রভাব এসেছিল শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গলাভের মাধ্যমে। এই দুই ধর্মনেতা তাঁর মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি এমনভাবে প্রভাবিত করেছিলেন যে, তাঁর সমস্ত নাটকে ভক্তিভাবের অবারিত উচ্ছ্বাস দেখা যায়। ''বিল্বমঙ্গল''-এর পাগলিনী, ''নসীরাম''-এর নামচরিত্র এবং ''কালাপাহাড়''-এর চিন্তামণি প্রভৃতি চরিত্রের উপর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিদ্যমান। ''জনা''-র বিদূষক'', ''পাণ্ডব-গৌরব''-এর কঞ্চুকী, ''গৃহলক্ষ্মী''-র অবধূত প্রভৃতি চরিত্রও শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ অনুসারে কল্পিত। আবার ''ভ্রান্তি''-র রঙ্গলাল, ''মায়াবসান''-এর কালীকিঙ্কর, ''বলিদান''-এর কিশোর এবং ''শাস্তি কি শান্তি''-র পাগল প্রভৃতি চরিত্রে স্বামী বিবেকানন্দের প্রেম ও সেবাধর্মের মূর্তিমান আদর্শ চিত্রিত হয়েছে। কোনও বিশেষ ভক্ত চরিত্র নাটকের অঙ্গহানি করে না, এবং পৌরাণিক বা ধর্মমূলক নাটকে ভক্তিরসের আধিক্য দোষাবহ নয়। কারণ সেইসব নাটকে ধর্ম ও ভক্তির আদর্শই দর্শক আশা করে থাকে। ''রূপ-সনাতন'', ''ধ্রুব-চরিত্র'', ''প্রহ্লাদ-চরিত্র'', ''বিল্বমঙ্গল'' প্রভৃতি নাটকে ধর্মভাবের আধিক্য বরং দর্শকের মনকে আপ্লুত করে। কিন্তু এই ধর্মভাব যখন ঐতিহাসিক বা সামাজিক প্রভৃতি বাস্তব নাটকে সংক্রামিত হয়, তখনই তা নাটকীয় রসের পরিপন্থী হয়ে ওঠে। আধ্যাত্মিক অনুভূতি ও ধর্মাদর্শ গিরিশচন্দ্রের মনপ্রাণকে এমনভাবে আচ্ছন্ন ও অভিভূত করে রেখেছিল যে, বাস্তব রাজ্যের স্থূল বিষয়ে তিনি তাঁর দৃষ্টি বেশিক্ষণ নিবদ্ধ রাখতে পারতেন না। তাঁর নাটকের বাস্তব চরিত্র ও ঘটনাগুলি যেন এক অদৃশ্য ধর্মীয় শক্তির দ্বারা অমোঘভাবে আকৃষ্ট হয়েছে। সুতরাং তাঁর যে কোনও নাটক কিছুক্ষণ দেখেই সেগুলির সুনিশ্চিত পরিণতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা হয়ে যায়। গিরিশচন্দ্রের এই সর্বব্যাপী ধর্মভাব ধর্মপ্রাণ বাঙালির কাছে তাঁর নাটককে আদরণীয় করেছে, কিন্তু বাস্তবনিষ্ঠ সমালোচকের কাছে সেগুলিকে করে তুলেছে দোষাবহ। এই ধর্মভাবের প্রাবল্যেই তাঁর ঐতিহাসিক নাটক ''অশোক'', ''কালাপাহাড়'' ইত্যাদির ঐতিহাসিকতা নষ্ট হয়েছে এবং সামাজিক নাটক ''শাস্তি কি শান্তি'', ''মায়াবসান'' প্রভৃতিকে অনর্থক ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। অনেক সময়েই তিনি পাত্রপাত্রীর মুখ দিয়ে অভীষ্ট ধর্মতত্ত্বের আলোচনা করে তাঁর স্বরূপ নাটকের মধ্যে প্রকাশ করে ফেলেছেন। এর ফলে নাট্যকারের আত্মগুপ্তি-ধর্মও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। গিরিশচন্দ্রের এই প্রবল ধর্মভাব ও নীতিবোধের জন্য নাটকের চরিত্রগুলি তাঁর মানসিক আদর্শ অনুযায়ী পরিণতি লাভ করেছেন। তাঁর নাটকে পাপী ও পুণ্যাত্মা উভয় চরিত্রই আছে, কিন্তু ধর্ম ও নীতির জয় ও গৌরব প্রদর্শনের জন্যই তিনি এই চরিত্রগুলির বিকাশ ঘটিয়েছেন। পাপের পরাজয় এবং ধর্মের জয় ঘটে—এ সাধারণ নীতিশাস্ত্রের কথা। তা দেখিয়ে দর্শকের ধর্ম ও নীতিবোধকে পরিতৃপ্ত করা যায়, কিন্তু তার মধ্যে সূক্ষ্ম শিল্পনৈপুণ্যের অবকাশ নেই। শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বিশ্বজনীন মানবনীতিকে কখনও অগ্রাহ্য করেন না বটে, কিন্তু সে নীতি খুব গূঢ় ও গভীর। সাধারণ মানুষের ভালো-লাগা মন্দ-লাগা এবং পাপপুণ্যবোধ দ্বারা তার পরিমাপ করা যায় না। অনেক সময়েই অপরাধী ও পাপী তাঁর সহানুভুতি ও দরদ পেয়ে থাকে এবং ভয়াবহ পরিণতির মধ্যে সব সময়ে তাদের চরিত্র পরিণতি প্রাপ্ত হয় না। শাইলক নিষ্ঠুর নরাধম, কিন্তু তার চরিত্রও দর্শকের সহানুভূতি আকর্ষণে সমর্থ হয়। ''কিং লিয়ার'' নাটকে এডমন্ড মানবসমাজের জঘন্য অপরাধে অপরাধী হলেও মনে হয় যে, সমাজের কাছ থেকে সে কেবল ঘৃণা ও ধিক্কার পেয়েছে বলেই সমাজের প্রতি সে এমন প্রতিহিংসা-পরায়ণ হয়ে উঠেছে। শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক সৃষ্ট চরিত্র মাত্রই এমন জটিল। কিন্তু গিরিশচন্দ্রের চরিত্রগুলি নিতান্ত সরল ও সহজবোধ্য, হয় তারা খুব ভালো অথবা নিতান্ত মন্দ। মন্দ চরিত্রের পরিণতি হয় প্রাপ্য শাস্তিতে অথবা আমূল পরিবর্তনে। গিরিশচন্দ্রের অনেক মন্দ চরিত্র কঠোর শাস্তি ও ভয়াবহ পরিণাম লাভ করেনি সত্য, কিন্তু তারা নিশ্চয়ই শেষ পর্যন্ত খুবই সৎ ও ধার্মিক হয়ে উঠেছে। ''হারানিধি''-র মোহিনী, ''মায়াবসান''-এর যাদব ও মাধব এবং ''বলিদান''-এর মোহিত ও দুলাল প্রভৃতি এভাবেই ধর্মের স্পর্শে নতুন মানুষ হয়ে উঠেছে, যতক্ষণ না এইরকম পরিণতি দিতে পেরেছেন, ততক্ষণে গিরিশচন্দ্রের ধর্ম ও নীতিবোধ সন্তুষ্ট হয়নি। সোণা, কাদম্বিনী, গঙ্গা, চিন্তামণি প্রভৃতি পতিতা চরিত্রও তাঁর নাটকে সাধু ও ধর্মপন্থা অবলম্বন করেছে। বার্নার্ড শ ''মিসেস ওয়ারেন’স প্রফেশন'' নাটকে পতিতাবৃত্তির অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু গিরিশচন্দ্র পতিতা-সমস্যা নিয়ে তেমন আলোচনা করেননি অথবা শরৎচন্দ্রের ন্যায় পতিতার সূক্ষ্ম অনুভূতি ও অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রভৃতি বিশ্লেষণ করেননি। শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে এসে গিরিশচন্দ্র পতিত ও অভাজনে কৃপা করার মহৎ প্রবৃত্তি লাভ করেছিলেন। সেইজন্য লাঞ্ছিতা হতভাগিনী পতিতাদের ধর্মপথে নিয়োজিত করে তিনি তাদের আধ্যাত্মিক মুক্তির বিধান দিয়েছেন নাটকে। ব্যক্তিগত জীবনে রঙ্গালয়ের মধ্যে দিয়ে গিরিশচন্দ্র পতিতাদের জীবন সংশোধনের চেষ্টা করেছেন। ‘অভিনেত্রীর কটাক্ষ’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “নালার জল গঙ্গায় আসিয়া পড়িয়া গঙ্গাজল হইয়া যায়। পরশমণি স্পর্শে ব্যাধ-গৃহের লোহাও কাঞ্চনে পরিণত হয়; সাধুসঙ্গে কুচরিত্রা সন্ন্যাসিনী হন; ভগবদ্ভক্ত হরিদাসকে ছলনা করিতে গিয়া বেশ্যা মোহিনী পরমা বৈষ্ণবী হইয়াছিল। আমাদেরও আশা, সদাশয় ব্যক্তির পদার্পণে রঙ্গালয় পবিত্র হইবে, ও ঘৃণিত অভিনেত্রীরাও স্বীয় শিল্পানুরাগিণী মাতৃদুগ্ধে পরিপুষ্ট বৃত্তি পরিহারপূর্বক সাধুজনের কৃপার ভাজন ও প্রশংসার পাত্রী হইবে।” তাঁর নাটকেও সোণা, গঙ্গা, চিন্তামণিরা সকলেই ধর্ম আশ্রয় করে তাদের বেশ্যাজীবনের কলুষ ও কলঙ্ক ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। সুতরাং পতিতাদের প্রতি গিরিশচন্দ্রের দৃষ্টি পতিতাপাবক মহাপ্রাণের দৃষ্টির সঙ্গে অভিন্ন। পতিতাজীবনের প্রেম ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সংঘাত, সেই জীবনের করুণ ট্র্যাজেডি গিরিশচন্দ্র বিশ্লেষণ করে দেখাতে চাননি। তাঁর পতিতা চরিত্রেরা সকলেই মানবীয় দুর্বলতার ঊর্ধ্বে স্থিত ধর্মব্রতী সন্ন্যাসিনী হয়ে গিয়েছে। একমাত্র ''মোহিনী-প্রতিমা'' নাটকে গিরিশচন্দ্র সাহানাকে ধর্মার্থিনী যোগিনী না করে তার জীবনের বেদনার স্পর্শটি ফুটিয়ে তুলেছেন। সাহানা তার প্রেমাস্পদকে অন্যের হাতে সঁপে দিয়ে যে চরম আত্মত্যাগ করল তাতে তার চরিত্র নিতান্ত ট্র্যাজিক ও মহীয়সী হয়ে উঠল। সাহানা শরৎচন্দ্রের সাবিত্রী, বিজলী, চন্দ্রমুখী প্রভৃতি প্রসিদ্ধ চরিত্রকে মনে করিয়ে দেয়। এই নাটকটি গিরিশচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক সৃষ্টি। গিরিশচন্দ্রের জীবনী ও নাটক আলোচনা করলেই মনে হয় যে, জীবন সম্পর্কে তাঁর গভীর ও দার্শনিক ধারণা ছিল। তাঁর তৎসন্ধিৎসু মন জীবনের সব সমস্যার মূল অনুসন্ধান করেছিল। তাঁর ধর্মপ্রবণতা ও সাধুসঙ্গ তাঁকে জীবন সম্পর্কে আরও বেশি জিজ্ঞাসু করে তুলেছিল। তাই জীবনের হাল্কা দিকটির সঙ্গে গিরিশচন্দ্রের যোগ স্থাপিত হয়নি। দেবেন্দ্রনাথ বসু গিরিশচন্দ্রের জীবনে লিখেছেন, “গিরিশচন্দ্রের কল্পনা উচ্চ ধ্যানে ও উচ্চ আদর্শ চিন্তায় সর্বক্ষণ বিভোর হইয়া থাকিত। এজন্য প্রহসনের নিম্নভূমিতে অবতরণ করিতে চাহিত না।” দীনবন্ধু কিংবা অমৃতলালের ন্যায় গিরিশচন্দ্র নাটকে তাই জীবনের হাস্যমধুর, চপল-চটুল মুহূর্তগুলির পরিচয় দেননি। করুণরস অথবা ভক্তিরসের গম্ভীর ও সমাহিত ধ্বনি তাঁর সমস্ত নাটকে ব্যাপ্ত হয়ে আছে। গিরিশচন্দ্র কুমুদবন্ধু সেনকে বলেছিলেন, “আমার drama-গুলো light নয়, serious mood-এ serious think না করলে সব বুঝতে পারবে না। superficially আমার drama পড়া চলবে না।” তাই তাঁর রসে বিশুদ্ধ হাস্যরসের অভাব। বিদূষক প্রভৃতি চরিত্রের হাস্যরসের তারল্যও ধর্মভাবের প্রাবল্যে সমাধি লাভ করেছে। তিনি যে পঞ্চরংগুলি লিখেছিলেন, সেগুলির মধ্যে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও কদর্য রসিকতা আছে, কিন্তু নির্মল হাস্যরসের স্নিগ্ধ ধারা নেই। গিরিশচন্দ্রের নাটকে দোষত্রুটি থাকলেও তাতে অকপট আন্তরিকতার অভাব নেই। তিনি নিজে যা দেখেছেন, তাই লিখে গিয়েছেন। কুমুদবন্ধু সেনকে বলেছেন, “আমি বই লিখতে লোককে ফাঁকি দি না। যেটা feel করছি, যে সত্য practical life-এ realise করেছি, যা জীবনে মরণে পরম সত্য ব’লে জেনেছি তাই সবার ভিতরে বিলিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি।” ধর্মগুরুর সঙ্গলাভ করেছিলেন বলেই তাঁর নাটকে ধর্মভাবের আধিক্য, আবার বেশ্যা-সংসর্গেও বাস করতে হয়েছিল বলে তাদের কথাও তিনি লিখেছেন। {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} de1nefey3qg9qm10vekcteo8x5gd3uc চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা 0 27195 85213 2025-06-22T11:02:18Z NusJaS 8394 NusJaS [[চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা]] কে [[চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 85213 wikitext text/x-wiki #পুনর্নির্দেশ [[চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] 4tssu82segmcezy8mp91uaq0s4bb1gw আলাপ:চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা 1 27196 85215 2025-06-22T11:02:19Z NusJaS 8394 NusJaS [[আলাপ:চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শেখা]] কে [[আলাপ:চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 85215 wikitext text/x-wiki #পুনর্নির্দেশ [[আলাপ:চিন্তন ও নির্দেশনা/মেটাকগনিশন ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত শিখন]] tcy6aeu7wyz3dr8wjvisa9vgx009mxn