উইকিবই bnwikibooks https://bn.wikibooks.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8_%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE MediaWiki 1.45.0-wmf.7 first-letter মিডিয়া বিশেষ আলাপ ব্যবহারকারী ব্যবহারকারী আলাপ উইকিবই উইকিবই আলোচনা চিত্র চিত্র আলোচনা মিডিয়াউইকি মিডিয়াউইকি আলোচনা টেমপ্লেট টেমপ্লেট আলোচনা সাহায্য সাহায্য আলোচনা বিষয়শ্রেণী বিষয়শ্রেণী আলোচনা উইকিশৈশব উইকিশৈশব আলাপ বিষয় বিষয় আলাপ রন্ধনপ্রণালী রন্ধনপ্রণালী আলোচনা TimedText TimedText talk মডিউল মডিউল আলাপ ব্যবহারকারী:R1F4T/খেলাঘর 2 18619 85298 85190 2025-06-25T14:58:57Z R1F4T 9121 85298 wikitext text/x-wiki ;পর্যালোচনা পরিসংখ্যান {| class="wikitable sortable" ! # !! পর্যালোচক !! পর্যালোচনা সংখ্যা |- | ১ || MdsShakil || ২৬৫ |- | ২ || NusJaS || ২৪৪ |- | ৩ || MS Sakib || ২০৩ |- | ৪ || R1F4T || ১৫৯ |- | ৫ || Mehedi Abedin || ১৪৩ |- | ৬ || Tahmid || ১৪০ |- | ৭ || Yahya || ১৩৫ |- | ৮ || Ishtiak Abdullah || ১০৭ |- | ৯ || Maruf || ৪ |- ! colspan="2" | মোট পর্যালোচিত পৃষ্ঠা || ১৪০০টি |} ra859qzpenk3fwkxmu5azfij6e22p12 ব্যবহারকারী:তুষার কান্তি ষন্নিগ্রহী 2 21823 85270 83983 2025-06-25T13:29:48Z তুষার কান্তি ষন্নিগ্রহী 9680 85270 wikitext text/x-wiki লেখক পরিচতি '''তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী''' '''Tushar Kanti Sannigrahi''' জন্ম তারিখ: ১ মার্চ ১৯৫৩। জন্মস্থান: পুটিয়াদহ, বাঁকুড়া। স্থায়ী ঠিকানা: মদনবাগ, সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন- ৭২২১৫১ পিতা: বারিদবরণ ষন্নিগ্রহী, মাতা: সুষমা দেবী। তুষারকান্তি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন মেদিনীপুর কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সায়েন্স (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে। সহ-শিক্ষক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেন এই সব স্কুলে; কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ। বাসন্তী হাইস্কুল, বাসন্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগণা। রাজবলহাট হাইস্কুল, রাজবলহাট, হুগলি। সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল, সিমলাপাল, বাঁকুড়া। লেখক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন দুটি স্কুলে - কমলপুর নেতাজি হাইস্কুল, কমলপুর, বাঁকুড়া এবং ভূতশহর হাইস্কুল, ভূতশহর, বাঁকুড়া। লেখক প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসর নেন ২০১৩ সালে। তারপর আরো তিন বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের (বাঁকুড়া জেলা) একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন। লেখক পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য। লেখালেখি এবং সাংবাদিকতা করা লেখকের অন্যতম নেশা। তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দশটি। তার সম্পাদিত পত্রিকা পাঁচটি। তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী একজন ভারতীয় উইকিপিডিয়ান। উইকিপিডিয়াতে সম্পাদিত নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজারের উপর। '''তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী:''' অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, প্রাক্তন সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির মুখপত্র শিক্ষা ও শিক্ষক, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি,সদস্য: পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি, সম্পাদক: কৃষ্টি কিরণ। ঠিকানা: মদনবাগ,সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন: ৭২২১৫১। ছোটবেলা থেকেই তুষারকান্তি লেখালেখি শুরু করেন। স্কুলে পড়াশোনা করার সময় তার লেখা প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সালে ব্যানার্জিডাঙ্গা হাই স্কুলের বার্ষিক পত্রিকা 'মুকুলিকা' তে তার প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছিল'চাঁদা মামা'। ১৯৭২-১৯৭৩ সালের মেদিনীপুর কলেজ পত্রিকায় তার লেখা 'ভিটামিন ও তার প্রয়োজনীয়তা' প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্ত পুনর্মিলন স্মরণীতে প্রবন্ধ 'প্রাণ রসায়নের গোড়ার কথা'প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬-১৯৭৭ সালের প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় 'বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি'প্রবন্ধটি। তখনকার দিনে এই প্রবন্ধ প্রকাশের পরে কলকাতার বুকে লেখক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেক লেখক এবং গবেষক এই প্রবন্ধ থেকেই ভাদু গান, টুসু গান এবং লোকসংস্কৃতির উপাদান সংগ্রহ করে তাদের রচনাতে স্থান দেন। ১৯৮৫-১৯৮৬ সালে নিখিল বঙ্গ শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় 'সিমলাপালের লোকসংস্কৃতি' প্রবন্ধ। শিক্ষকতার সাথে সাথে তুষারকান্তি সাংবাদিকতাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকা, ভূমিলক্ষ্মী, যুগান্তর, দৈনিক বসুমতী, দি স্টেটসম্যান ,অমৃতবাজার পত্রিকা, দক্ষিণবঙ্গ সংবাদ, বাঁকুড়া বার্তা সাপ্তাহিক পত্রিকা ইত্যাদিতে অনেক প্রতিবেদন, খবরাখবর, চিঠিপত্র, নিবন্ধ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদন এবং চিঠিপত্রের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। তিনি প্রায় ১০০ টি কবিতাও লিখেছেন। সেগুলিও সংবাদপত্র, সাময়িকী ইত্যাদিতে প্রকাশিত হয়েছে। ==আমার গর্ব== '''লেখক: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী'''। এই বইয়ে তিনজন মনীষীর জীবনী আছে। এরা হলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দ। ===ভূমিকা=== উনবিংশ শতাব্দীর নব জাগরণের পথিক পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। দারিদ্র, কুশিক্ষা, দুঃখ দুর্দশার বিরুদ্ধে তিনি জীবন পণ সংগ্রাম করেছিলেন। নারী শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে তাঁর মতো দৃঢ়চেতা মানুষ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত কবি। এছাড়াও তিনি ঔপন্যাসিক, ছোটো গল্পকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী এবং সঙ্গীত বিদ। তাঁর সৃষ্টি সাগরের মতোই বিশাল। তাঁর সাহিত্য কর্ম বিশ্বজগতে পরিব্যাপ্ত। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের ভাব শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ জড় গ্রস্ত জাতির জীবনে এনে দিলেন উদ্দীপনা ও কর্ম চাঞ্চল্য। তিনি বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছেন, "সব ধর্মই সমান, জীব সেবাই ঈশ্বরসেবা"। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দ এই তিনজন মনীষী নিয়েই তুষারকান্তি যন্নিগ্রহীর লেখা প্রবন্ধ সংকলন 'আমার গর্ব' প্রকাশ করা হল। এই মনীষীগণের উজ্জ্বল আদর্শ নতুন ভারত গঠনে আমাদের প্রেরণা দেবে-এটা আমরা আশা করি। বিনীত- প্রকাশক: মীরা ষন্নিগ্রহী, সঙ্গীতা ষন্নিগ্রহী (পাত্র), স্বাগত ষন্নিগ্রহী। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ==পরম পরশ== তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী তাঁর ছাত্রাবস্থায় এবং শিক্ষকতার জীবনে প্রবন্ধ লিখেছেন অনেক। তার মধ্যে বাছাই করা তিরিশটি প্রবন্ধ নিয়ে এই সংকলন। নাম দেওয়া হয়েছে 'পরম পরশ'। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদি বিষয় সমূহ উদ্ভাসিত হয়েছে প্রবন্ধ গুলিতে। সহৃদয় পাঠকবর্গ এই প্রবন্ধ পাঠে যদি আনন্দ পান তাহলে আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। মদনবাগ, সিমলাপাল, বাঁকুড়া পিন-৭২২১৫১ জানুয়ারি-২০০৯ '''পরম পরশ (প্রবন্ধ সংকলন)''' ISBN 978-93-341-3673-9 সূচিপত্র প্রবন্ধের নাম ।। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১) আ-মরি বাংলা ভাষা ১ ২) শিক্ষার বিবর্তন ৬ ৩) জীবন, মানুষ এবং শিক্ষা ১০ 8) প্রকৃতি এবং শিক্ষা ১৩ ৫) শিক্ষার উদ্দেশ্য। ১৫ ৬) শিক্ষার লক্ষ্য ১৮ ৭) শিক্ষার আলো ২০ ৮) সর্বশিক্ষা অভিযান ২৫ ৯) বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি ২৮ ১০) সিমলাপালের লোকসংস্কৃতি ৩৪ ১১) লোকউৎসব ভাদু ৪০ ১২) বাংলার লোকসাহিত্য। ৪৫ ১৩) ছোটগল্প ৪৯ ১৪) বই চাই বই ৫২ ১৫) আমার বইমেলা ৫৫ ১৬) আলোকময় জীবনশৈলী ৫৬ ১৭) নেতাজি ও আমরা ৫৯ ১৮) চাঁদা মামা ৬০ ১৯) বিজ্ঞান বিচিত্রা ৬২ ২০) বেগুন মোটেই নির্গুণ নয় ৬৫ ২১) প্রাণরসায়নের গোড়ার কথা ৬৬ ২২) সয়াবিন কথা ৬৮ ২৩) আত্মরক্ষার সূঁচ র‍্যাফাইড ৬৯ ২৪) মানুষের বিপদ এইডস্ ৭০ ২৫) ২০০০ খ্রিস্টাব্দে সবার জন্য স্বাস্থ্য ৭৩ ২৬) ভিটামিন ও তার প্রয়োজনীয়তা ৭৫ ২৭) ডিমের কথা ৭৯ ২৮) ধূমপান না স্বাস্থ্য ৮১ ২৯) রেশম শিল্পের সেকাল ও একাল ৮৫ ৩০) জোয়ার আসুক রেশম ও লাক্ষা শিল্পে ৮৮ ==কমলকলি== '''কমলকলি (কবিতা সংকলন):''' এই কবিতা সংকলনে মোট সাতজন কবির কবিতা আছে। কবিরা হলেন; '''১) তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী''' '''২) মীনা ঠাকুর''' '''৩) অজিতকুমার দাশ''' '''৪) মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়''' '''৫) নীলাঞ্জন ষন্নিগ্রহী''' '''৬) শোভনা মিশ্র''' '''৭) মালবিকা পণ্ডা''' '''কমলকলি''' সম্পাদনা করেছেন '''তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী''' প্রকাশক: '''কৃষ্টি কিরণ''' (প্রকাশন বিভাগ),সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন- ৭২২১৫১ '''কমলকলি''' আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় ২০২২ সালের বাঁকুড়া জেলা বই মেলাতে। ==স্বর্ণকুমারী দেবী== তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী ঊনবিংশ শতাব্দীর সমাজ সচেতনতার ক্ষেত্রে বাংলার বুকে ঠাকুর পরিবারের যে কন্যা অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি স্বর্ণকুমারী। সাহিত্য, রাজনীতি জনকল্যাণ, নারীর শিক্ষা বিস্তার ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান খুবই উল্লেখযোগ্য। স্বর্ণকুমারী দেবী প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্রি এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাদেবীর একাদশতম সন্তান। তাঁর ভাই রবীন্দ্রনাথ স্বর্ণকুমারীর থেকে ছয় বছরের ছোট। উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথ হলেন দেবেন্দ্রনাথ-সারদা দেবীর চর্তুদশতম সন্তান। এঁদের মোট সন্তান ছিল পনের জন। এ ব্যাপারে একটু আলোকপাত করলে সুবিধে হয়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সারদা দেবীর সন্তানদের তালিকা- ১) প্রথম সন্তান (কন্যা): শিশু অবস্থাতেই মারা যায়। ২) দ্বিতীয় সন্তান (পুত্র): দ্বিজেন্দ্র (১৮৪০-১৯২৬) ৩) তৃতীয় সন্তান (পুত্র) সত্যেন্দ্র (১৮৪২-১৯২৩) 8) চতুর্থ সন্তান (পুত্র) হেমেন্দ্র (১৮৪৪-১৮৮৪) ৫) পঞ্চম সন্তান (পুত্র) বীরেন্দ্র (১৮৪৫-১৯১৫) ৬) ষষ্ঠ সন্তান (কন্যা) সৌদামিনী (১৮৪৭-১৯২০) ৭) সপ্তম সন্তান (পুত্র) জ্যোতিরিন্দ্র (১৮৪৯-১৯২৫) ৮) অষ্টম সন্তান (কন্যা) সুকুমারী (১৮৫০-?) ৯) নবম সন্তান (পুত্র) পূণ্যেন্দ্র (১৮৫১-১৮৮৭) ১০) দশম সন্তান (কন্যা) শরৎকুমারী (১৮৫৪-১৯২০) ১১) একাদশ সন্তান (কন্যা) স্বর্ণকুমারী (১৮৫৫-১৯৩২) ১২)দ্বাদশ সন্তান (কন্যা) বর্ণ কুমারী (১৮৫৮-১৯৪৮) ১৩) ত্রয়োদশ সন্তান (পুত্র) সোমেন্দ্র (১৮৫৯-১৯২২) ১৪) চতুর্দশ সন্তান (পুত্র) রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১) ১৫) পঞ্চদশ সন্তান (পুত্র) বুধেন্দ্র (১৮৬৩-১৮৬৪) স্বর্ণকুমারীর জন্ম তারিখ ২৮ আগস্ট ১৮৫৫। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পরিবেশেই বাড়িতেই তাঁর শিক্ষা শুরু হয়। মাত্র তের বছর বয়সে ১৮৬৮ সালে নদীয়া জেলার জমিদার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জানকীনাথ ঘোষালের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। জানকীনাথ বিদেশে ভ্রমণ করার সময় স্বর্ণকুমারী বেশিরভাগ সময় ঠাকুর বাড়িতেই থাকতেন। অবশ্য জানকীনাথ সব সময়ই স্বর্ণকুমারীকে সাহিত্য চর্চা ও সমাজসেবার কাজে উৎসাহ দিতেন। ঠাকুর বাড়ির পরিবেশ এবং জানকীনাথের উৎসাহ স্বর্ণকুমারীকে সমাজ ' সচেতনতার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। কবিতা, সঙ্গীত, নাটক, সাহিত্য ও সমাজ সেবায় স্বর্ণকুমারী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। তিনি হয়ে ওঠেন ঔপন্যাসিক, বিশিষ্ট কবি, সঙ্গীতকার এবং অন্যতম সমাজ সংস্কারক। সূত্র-কৃষ্টি কিরণ,২০২৩ পৃঃ ৭ ==কৃষ্টি কিরণ== সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল থেকে প্রকাশিত হয়েছে কৃষ্টি কিরণ সাহিত্য পত্রিকার ষোড়শ বর্ষ, ষোড়শ সংখ্যা। এতে প্রচ্ছদ নিবন্ধ হিসেবে স্থান পেয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের নীল দংশন ও মৃগয়ার কালক্ষেপ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলনের ওপরে একটি গবেষণাধর্মী লেখা। লেখক: মোরশেদুল আলম, সহকারী অধ্যাপক এবং গবেষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন পত্রিকার সম্পাদক তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী। গ্লুকোমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করেছেন বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ডা. অনুপ মণ্ডল। এছাড়াও কৃষ্টি কিরণে স্থান পেয়েছে অন্যান্য প্রবন্ধ,চারটি ছোটো গল্প এবং সাতাশটি কবিতা। ===কড়চা তে প্রকাশিত=== বাঁকুড়ার সিমলাপাল থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে "কৃষ্টি কিরণ"(সম্পাদক: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী)সাহিত্য পত্রিকার ষোড়শ সংখ্যা।এই সংখ্যায় প্রবন্ধ লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোরশেদুল আলম, চিকিৎসক অনুপ মণ্ডল, রাহুল কর প্রমুখ।এছাড়াও রয়েছে চারটি ছোট গল্প ও ২৭টি কবিতা। ৪ জানুয়ারি ২০২৫ ।। আনন্দবাজার পত্রিকা,পুরুলিয়া- বাঁকুড়া সংস্করণ। ==ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ== এই বইটির লেখক তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী। প্রকাশক: কৃষ্টি কিরণ প্রকাশন বিভাগ, ঠিকানা: মদনবাগ, সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ,ভারত, পিন- ৭২২১৫১ ==বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ== ।। বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ।। তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী দশম শতাব্দীতে বেশ কিছু বৈদিক ব্রাহ্মণ কনৌজ ত্যাগ করে বৈতরণী নদী পার হয়ে জগন্নাথ দেবের 'চৌদ্দক্রোশী' এলাকায় বসবাস শুরু করেন বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। তখনকার দিনে এঁদের অধিকাংশরেই পদবি বা উপাধি ছিল দেবশর্মা। দেবশর্মা বা দেবশর্মনঃ ব্রাহ্মণদের সাধারণ উপাধি। শ্রীপতি মহাপাত্র ছিলেন 'চৌদ্দক্রোশী' এলাকার অর্ন্তভূক্ত বীররামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কনৌজ ব্রাহ্মণদের বংশধর। তাঁর পূর্বপুরুষের উপাধি ছিল দেবশর্মা। জানা যায় পুরীর গজপতিরাজ মুকুন্দদেবের রাজসভায় প্রধান সেনাপতি ও রাজপুরোহিত হিসেবে শ্রীপতি মহাপাত্র দায়িত্ব পান। রাজা মুকুন্দদেবের দুই পুত্র নকুড় তুঙ্গ এবং ছকুড় তুঙ্গ পুরী এলাকা ত্যাগ করে শ্রীপতি মহাপাত্রকে সঙ্গে নিয়ে এসে পৌঁছেছিলেন রাইপুর এলাকার শ্যামসুন্দরপুরে। শ্যামসুন্দরপুরের এলাকা দখল করে রাজা হন ছকুড়তুঙ্গ। ফুলকুশমা এলাকা দখল করে রাজা হন নকুড়তুঙ্গ। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো অজ্ঞাত কারণে ছকুড় তুঙ্গকে হত্যা করা হয়। ফলে নকুড় তুঙ্গ নিজের নাম পরিবর্তন করে নাম নেন ছত্রনারায়ণ দেব। ছত্রনারায়ণ দেব হিসেবেই তিনি এই রাজ্য শাসন করতে থাকেন।এই ঘটনার গোড়াতেই নকুড়তুঙ্গ তথা ছত্রনারায়ণ দেব শ্রীপতি মহাপাত্রের পৌরোহিত্যে পুত্রোষ্টি যজ্ঞ করার ফলেই তাঁর সন্তান জন্মগ্রহণ করে বলে ধারণা। নাম রাখা হয় চৈতঙ্গ তুঙ্গ। সেই সময় রাজা নকুড় তুঙ্গ বা ছত্র নারায়ণ দেব স্থির করেন সিমলাপাল এলাকা শ্রীপতি মহাপাত্রকে দান করার জন্য। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাক্ষী রেখে একটি তাম্রপট্টে উড়িয়া হরফে স্বাক্ষর করে সিমলাপাল পরগণা তিনি দান করেন শ্রীপতি মহাপাত্রকে। তাম্রপট্টের অনুলিপি- উড়িয়া হরফে লেখা-বাংলা অনুবাদ, : শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব জিউ: রাজনগর রাজা নকুড়তুঙ্গদেবের পুত্রষ্টি যজ্ঞকরণ কারণ পুত্র জন্মিল চৈতন্য তুঙ্গ। কারণ-শ্রীপতি মহাপাত্র কুলগুরু প্রধান সেনাপতি। শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব পদতলে রক্ষিত তাম্রপট্ট দিয়ে নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর সিমলাপাল দানপত্র করিলেন। আমত্য বিশ্বম্ভর মহাপাত্র, রঘুনাথ পণ্ডা, জগন্নাথ ত্রিপাঠী, পুরুষোত্তম কর, পীতাম্বর মিশ্র দেবগণ, মামা সূর্যকান্ত রায়, সেনাপতি বিজয় সিংহ, চাঁদ সিংহ, ঈশ্বর ভট্ট, কৃষ্ণ নাপিত, বাসুদেব করণ, শুকদেব করণ। দামোদর করণ ও প্রজাদিগের সামনে গুরুবরণ করিলেন রাজা নকুড় তুঙ্গদেব। (৮৭০সাল, দোল পূর্ণিমা) দোল পূর্ণিমার দিন ৮৭০ বঙ্গাব্দে শ্রীপতি মহাপাত্র দানপত্রের মাধ্যমে সিমলাপাল পরগণা পান ঠিকই। কিন্তু সেই সময়ে সিমলাপালের শিলাবতী তীরবর্তী এলাকা ঘন অরণ্যে পরিপূর্ণ ছিল। জনবসতি খুব একটা ছিল না। কেবলমাত্র শিলাবতী নদীর তীরে বাউরি, খয়রা ইত্যাদি সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ বসবাস করতেন। নদীর তীরের জঙ্গল এলাকা পরিষ্কার করতে, কিছু বাড়ি ঘর তৈরি করতে প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। ফলে গড় সিমলাপালের প্রতিষ্ঠা হয় ৮৭৫ বঙ্গাব্দ বা ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে। সিমলাপাল রাজবংশে প্রায় ৪৯০ বছরের রাজত্বকালে সিমলাপালে জমিদার বা রাজা ছিলেন মোট ১৮জন। ।।বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবংশ।। তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী (দ্বিতীয় পর্ব) আদি সিমলাপালের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন সিমলাপালের রাজ পরিবারের সদস্যরা। আগেকার দিনে গড় সিমলাপাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৮৭৫ বঙ্গাব্দে বা ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন দিল্লির সুলতান ছিলেন বহলাল খান লোদি, উড়িষ্যার গজপতি ছিলেন পুরুষোত্তম দেব , বাংলার শাসক ছিলেন রুকনুদ্দিন বারবক শাহ, এবং বন বিষ্ণুপুরের রাজা ছিলেন চন্দ্র মল্ল। প্রাচীন কালে এই সিমলাপাল এলাকা কলিঙ্গ ও উড্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৪৫০ সাল নাগাদ নকুড় তুঙ্গ রাইপুর এলাকায় দলবল সমেত আসেন। তাঁর সেনাপতি ও প্রধান পুরোহিত ছিলেন উৎকল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের শ্রীপতি মহাপাত্র। শ্রীপতি মহাপাত্রের বিভিন্ন কর্মকুশলতা ও পুত্রোষ্টি যজ্ঞে সন্তুষ্ট হয়ে নকুড় তুঙ্গ তাকে সিমলাপাল পরগনা দান করেন। সিমলাপাল বা গড় সিমলাপালের প্রথম রাজা শ্রীপতি মহাপাত্র। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ৮৭৫ থেকে ৯০২ বঙ্গাব্দ। দ্বিতীয় রাজার নাম রাধামাধব মহাপাত্র। রাজত্বকাল ৯০২ থেকে ৯৩১ বঙ্গাব্দ। পরবর্তী তৃতীয় রাজার নাম জগন্নাথ মহাপাত্র। রাজত্বকাল ৯৩১ থেকে ৯৫২ বঙ্গাব্দ। চতুর্থ রাজা ছিলেন বাসুদেব মহাপাত্র, রাজত্বকাল ৯৫২ থেকে ৯৬৫ বঙ্গাব্দ। বাসুদেব ছিলেন অপুত্রক। তাই বাসুদেবের মৃত্যুর পর তাঁর কাকা বা খুড়া রাজা হন। তাই সিমলাপাল রাজবংশের পঞ্চম রাজা হিসেবে আমরা পাই বলরাম মহাপাত্রকে। ওঁকে বলা হতো খুড়া বলরাম। রাজত্বকাল ছিল ৯৬৫ বঙ্গাব্দ থেকে ৯৮৭ বঙ্গাব্দ। খুড়া বলরামের পর রাজা হন তাঁর পুত্র মোহনদাস। সেই সময় বনবিষ্ণুপুরের রাজা ছিলেন বীর হাম্বীর। রাজা মোহনদাস মহাপাত্র পদবি না নিয়ে গ্রহণ করলেন সিংহচৌধুরী পদবি। তিনি হয়ে গেলেন মোহনদাস সিংহচোধুরী এই সময় থেকেই সিমলাপাল রাজবংশে বিশেষ প্রথা চালু হলো। রাজার বড় ছেলের পদবি হবে সিংহচৌধুরী পরবর্তী পুত্রের পদবি হবে সিংহহিকিম, তার পরের পুত্রের পদবি হবে সিংহবড়ঠাকুর। তারপর আরো যদি পুত্র থাকে তাঁদের পদবি হবে সিংহবাবু। সিমলাপালের ষষ্ঠ রাজা মোহনদাস সিংহচৌধুরীর রাজত্বকাল ছিল ৯৮৮ থেকে ১০০০ বঙ্গাব্দ। পরবর্তী রাজা চিরঞ্জীব সিংহচৌধুরী (১ম)। রাজত্বকাল ১০০১ থেকে ১০২২ বঙ্গাব্দ। রাজা চিরঞ্জীব সিংহচৌধুরীর পুত্র ছিলেন তিনজন। এঁদের নাম লক্ষ্মণ, লস্কর এবং বিক্রম। ১০২৩ বঙ্গাব্দে সিমলাপালের জমিদারী তিনভাগে বিভক্ত হয়। সিমলাপালে লক্ষণ পান ৬ আনা অংশ, ভেলাইডিহাতে লস্কর পান ৬ আনা অংশ, বাকি ৪ আনা অংশ পান বিক্রম, যার মৌজার নাম বিক্রমপুর। এটা ১০২৩ বঙ্গাব্দ বা ১৬১৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। পরবর্তী পর্যায়ে বিক্রমপুরের চার আনা অংশ সিমলাপালের সাথে যুক্ত হয়। ফলে সিমলাপালের অংশ দশআনা হয়ে যায়। তাই গড় সিমলাপালকে বলা হয় দশ আনি আর ভেলাইডিহা অংশকে বলা হয় ছয় আনি। লক্ষণের রাজত্বকাল ১০২৩-১০৫৯ বঙ্গাব্দ। লক্ষণের পর সিমলাপালের রাজা হন কৃষ্ণ দাস সিংহচৌধুরী তাঁর রাজত্বকালে ১০৬০ থেকে ১১০০ বঙ্গাব্দ। তারপরে রাজা হন রাধানাথ, রাজত্বকাল ১১০১ থেকে ১১৩৫ বঙ্গাব্দ। এর পরের রাজার নাম বলরাম (দ্বিতীয়)। রাজত্বকাল ১১৩৫ থেকে ১১৮২ বঙ্গাব্দ। পরের রাজা জগন্নাথ, রাজত্বকাল ১১৮২ থেকে ১২০৭ বঙ্গাব্দ। তারপরের রাজা চিরঞ্জীব (দ্বিতীয়) রাজত্বকাল-১২০৭-১২৩৭ বঙ্গাব্দ। পরের রাজা নটবর সিংহচৌধুরী, রাজত্বকাল ১২৩৭-১৩১০ বঙ্গাব্দ। পরবর্তী রাজা হন মানগোবিন্দ, রাজত্বকাল ১৩১০-১৩১৫ বঙ্গাব্দ। সিমলাপাল রাজবংশের পরের রাজা জগবন্ধু সিংহচৌধুরী। রাজত্বকাল ১৩১৬ থেকে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ। তারপর রাজা হন মদনমোহন সিংহচৌধুরী। রাজত্বকাল ১৩৩৪ থেকে ১৩৬১ বঙ্গাব্দ। উল্লেখ্য, সিমলাপালের রাজা মদনমোহনের নামেই সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজা মদনমোহন ১৩৬১ বঙ্গাব্দের ২৩ আশ্বিন ইহলোক ত্যাগ করেন। ফলে তাঁর পুত্র শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী পরবর্তী রাজা হিসেবে গণ্য হন। সিমলাপালের সর্বশেষ রাজার রাজত্বকাল মাত্র ছয় মাস স্থায়ী ছিল কারণ, ১৩৬২ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে জমিদারী প্রথা রদ হয়ে যায়। সিমলাপালের শেষ রাজা ছিলেন শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে সিমলাপাল এলাকার সভ্যতার বিকাশ,শিক্ষা এবং সংস্কৃতির উন্নয়ন, কৃষি ও সেচের ব্যবস্থাপনা, মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ অনেকাংশেই রাজ পরিবারের হাত ধরেই হয়েছিল। (তথ্য সূত্র: স্মারকগ্ৰন্থ, প্রথম বর্ষ- সিমলাপাল বই মেলা: ২০০৮। কৃষ্টি কিরণ, ষোড়শ সংখ্যা,২০২৪,পৃ.১১-১৪) ==সিওল থেকে সিমলাপাল== ।। সিওল থেকে সিমলাপাল ।। তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী সিমলাপাল, বাঁকুড়া ছোট্ট দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। জনসংখ্যা মাত্র ৫ কোটি। রাজধানী সিওল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে পরাজিত হয় জাপান। কোরিয়ার উত্তর ও দক্ষিণে দখল নেয় যথাক্রমে রুশ ও মার্কিন সেনা। ১৯৪৮ সালে তখনকার কোরিয়া দুটি আলাদা রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়। রুশ সেনাদের দখলকৃত এলাকার নাম হয় উত্তর কোরিয়া। মার্কিন সেনার দখলে থাকা দক্ষিণ অংশের নাম হয় দক্ষিণ কোরিয়া। ভারতের স্বাধীনতা দিবস ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাধীনতা দিবসের কি মিল। তারিখটি ১৫ আগস্ট। শুধু একবছর বাদে প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (দক্ষিণ কোরিয়া) আত্মপ্রকাশ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল থেকে পাড়ি দিয়ে সোজা সিমলাপাল আসেন কিম হুন। পেশায় সাংবাদিক। তিনি কাজ করেন সিওলের মুনহা ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে। বিমান যোগে দমদম। তারপর গাড়িতে করে সিমলাপাল। গত ২০০৭ সালের মার্চ মাসে সিমলাপালের চাঁদপুর গ্রামে গরুর মুরগি খাওয়ার খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদ পত্রে। টেলিভিসনের বিভিন্ন চ্যানেলেও তা দেখানো হয়। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই সংবাদ। মূলত এই সংবাদের জন্যই এই মহিলা সাংবাদিক এখানে আসেন। কার্তিক ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য, কার্তিক ঘোষের বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি পেশায় সাংবাদিক। তিনিই গরুর মুরগি খাওয়ার ঘটনা প্রথম জানতে পারেন। ২০০৭ সালের ৩ অক্টোবর সিমলাপালের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেন সাংবাদিক কিম হুন। সঙ্গে এনেছিলেন দোভাষী। তাই ভাষাগত বাধা অনেকটাই অতিক্রম করা যায়। তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন বি ডি ও মতীন্দ্রচন্দ্র দেবনাথ। সিমলাপাল ফরেস্ট বাংলোতে। একদিন বাদেই ফিরে যান তিনি। সিওলে ফিরে যেয়ে তিনি কি খবর পরিবেশন করলেন তা আমাদের এখনো অজানা। ==ফিরে দেখা:১৯৬৮-১৯৬৯== ফিরে দেখা।।১৯৬৮ - ১৯৬৯।। ব্যানার্জিডাঙ্গা হাই স্কুল,ফতেসিংপুর, আমলাগোড়া, মেদিনীপুর ছাত্রসংসদের বিভিন্ন শাখার ভার যার যার কাছে। সাল-১৯৬৮- ১৯৬৯ সাধারণ সম্পাদক- শিবদাস মুখোপাধ্যায় (একাদশ শ্রেণী) সহঃ সাধারণ সম্পাদক- হরেরাম দত্ত (দশম শ্রেণী) গ্রন্থাগার বিভাগ- কাশীনাথ চ্যাটার্জ্জী (দশম শ্রেণী) . তুষারকান্তি দাস (নবম শ্রেণী) সংস্কৃতি বিভাগ- শিবশংকর প্রামাণিক (একাদশ শ্রেণী)। , তরুণ কুমার রায় (নবম শ্রেণী) পত্রিকা বিভাগ- গোবিন্দকুমার মণ্ডল (একাদশ শ্রেণী) , বুদ্ধদেব ব্যানার্জ্জী ( একাদশ শ্রেণী), তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী (দশম শ্রেণী) ক্রীড়া বিভাগ- রতনচন্দ্র দাস (একাদশ শ্রেণী) . হীরালাল ব্যানার্জ্জী (দশম শ্রেণী) কমনরুম বিভাগ- অজয়কুমার বাগচি (দশম শ্রেণী) , দিলীপ কুমার প্রতিহার (নবম শ্রেণী) ব্যায়ামাগার বিভাগ- শ্যামসুন্দর দে (একাদশ শ্রেণী) রামশঙ্কর সিংহ (নবম শ্রেণী) ==ফিরে দেখা:১৯৭৮== সিমলাপাল মদন মোহন হাই স্কুল '''তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী''' ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগ। আমি তখন হুগলি জেলার রাজবলহাট হাইস্কুলের সহ শিক্ষক। থাকতাম স্কুলের মেসে। একদিন ইংরেজি দৈনিক অমৃত বাজার পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম। সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুলের উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে দুজন সহ- শিক্ষক চাই। বিষয় রসায়ন এবং শারীর বিদ্যা। আমার শারীরবিদ্যা। তাই দরখাস্ত পাঠালাম ডাকযোগে। স্কুলটির নাম ছোটবেলা থেকে শুনেছি। এমনকি স্কুলের, পাকাবাড়ি, কাঁচাবাড়ি সবই দেখেছি। আমার মামাবাড়ি শুক্লাবাইদ যাওয়ার সোজা রাস্তা ছিল স্কুলের মাঝ দিয়েই। আমাদের বাড়ি পুটিয়াদহ থেকে গরুর গাড়িতে করে আসতাম শীলাবতী নদী পেরিয়ে লক্ষ্মণপুর। ওখানে বাস ধরে নামতাম স্কুল মোড়ে। তারপর স্কুলের মাঝদিয়ে হেঁটে মামাবাড়ি। ছোটবেলায় আমরা মামাবাড়িতে দেড়- দুমাস ধরে থাকতাম। জগন্নাথপুর প্রাইমারি স্কুলে আমরা নিয়মিত ক্লাশও করতাম। বিকেলে দল বেঁধে চলে আসতাম বড় স্কুল লাগোয়া জঙ্গলে। বনের পালকুল, সিয়াকুল, ভুড়রু, জাম, কুসুম আমরা অনেক খেয়েছি। বনের ধারে ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা লাল মাটির ওপরে এই বড় স্কুল। এই স্কুলে যে শিক্ষকতা করব তা আগে ভাবিনি। একদিন ইন্টারভিউ লেটার পেলাম। ইন্টার ভিউর দিন আমি রাজবলহাট থেকে ভোরে বেরিয়ে তিন-তিনটে বাস বদলাবদলি করে যখন সিমলাপাল এলাম তখন সূর্য মধ্যগগনে। প্রধান শিক্ষক মহাশয় আমাকে আগেই খেয়ে নিতে বললেন। আমার ভাত, মাংস, সবজি ঢাকা দেওয়া ছিল। খেলাম। শারীর বিদ্যা শিক্ষকের প্রার্থী আমি একা। ইন্টারভিউ দিলাম। একদিন চিঠি এল। চিঠি খুলে দেখি নিয়োগ পত্র। তাতে স্বাক্ষর স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কল্যাণীপ্রসাদ সিংহচৌধুরীর। চিঠির সাথে মুড়ে দেওযা হয়েছে পরিচালন সমিতির কার্যবিবরণীর হাতে লেখা হুবহু নকল। ৯ নভেম্বর (১৯৭৮) ইস্তাফা দিলাম আগের স্কুলের সহ-শিক্ষকের পদ থেকে। পরদিন ১০ নভেম্বর সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুলের সহ-শিক্ষকের পদে যোগ দিই। একই দিনে এই স্কুলে যোগ দেন রসায়নের শিক্ষক বঙ্কিমচন্দ্রসিংহমহাপাত্র। তখন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৬০০। দশম শ্রেণিতে ৩৮ জন, একাদশ শ্রেণিতে ৪২ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। স্কুলের হস্টেলে থাকত প্রায় ৫০জন ছাত্র। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রচন্দ্র রায়। বেঁটে খাটো মানুষ। নতুন শিক্ষকদের খুব স্নেহ করতেন। স্কুলই ওঁর ধ্যান জ্ঞান। বিদ্যালয়ই মন্দির। সকাল-সন্ধ্যা উনি প্রণাম করতেন এই মন্দিরকে। চরকির মতো গোটা স্কুল পরিদর্শন করতেন। আমরা ক্লাশে কি পড়াতাম তা উনি বারান্দায় পায়চারি করতে করতে লক্ষ্য করতেন। একদিন আমি হেড স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্যার আপনি "রবীন্দ্রনাথ" না লিখে "রবীন্দ্র চন্দ্র" লেখেন কেন? উনি বললেন, আরে "রবীন্দ্রনাথ" একজনই, অন্য কারও নাম "রবীন্দ্রনাথ" হয় না। "তাই আমি রবীন্দ্রচন্দ্র"। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে উনি রবীন্দ্র জীবনী নিয়ে বক্তব্য রাখতেন এমন কি হারমোনিয়ামের একটি মাত্র রিড টিপেই অক্লেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে দিতেন। সহকারী প্রধানশিক্ষক রাজীবলোচন সিংহমহাপাত্র। বিশাল চেহারা। ভোজনপ্রিয় মানুষ। জল ও পান খেতে খেতে প্রভিশন্যাল রুটিন করতেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় ওঁর মাইক লাগত না। ক্লাশে পড়ানোর সময় বহুদূর থেকেও ওঁর গলা শোনা যেত। রাজীব বাবুর চেহারা ও ব্যক্তিত্ব দেখে বই কোম্পানীর লোক ওঁনাকেই প্রধান শিক্ষক বলে মনে করত। হাতে ধরিয়ে দিত বইয়ের নমুনা কপি। বাইরের লোক রাজীব বাবুকেই "স্যার-স্যার" করত। পাশে বসা প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রচন্দ্র রায় রাগে গর গর করতেন, অথচ কিছুই প্রকাশ করতে পারতেন না। সহ-শিক্ষক গোলোকবিহারী সিংহমহাপাত্র, জয়দেব হোতা, রঘুনন্দন সৎপতি প্রমুখ স্কুলের হস্টেলে থাকতেন। জয়দেববাবু ছিলেন হৃষ্ট পুষ্ট ও বেশ লম্বা। ধীর গতিতে ক্লাসে পড়াতেন। ছাত্রদের ফুটবল খেলাতেন। কেবলমাত্র গোলের সময় লম্বা বাঁশী বাজাতেন। "ব্রুশ" কোম্পানীর একজন ভদ্রলোক মোটর বাইকে স্কুলে স্কুলে এসে ফুটবল, নেট, বুট, জার্সি ইত্যাদি বিক্রি করতেন। খেলাধূলার শিক্ষককে ওই কোম্পানী গেঞ্জি উপহার দিত। জয়দেব বাবু সেদিন স্কুলে ছিলেন না। ব্রুশ কোম্পানীর গেঞ্জি গায়ে পরে তার দখল নিয়েছিলেন গোলোকবাবু। জয়দেব বাবু স্কুলে এসে "গেঞ্জি" গায়ে গোলোকবাবুকে দেখে বেজায় চটেছিলেন। গোলোক বাবুর হস্টেলের রুমে কোনদিন তালা পড়ত না। চোরের ভয়ে নয়-কেবলমাত্র কুকুরের ভয়ের জন্য দরজার শেকল তোলা থাকত। রুমের মধ্যে মাটির দেওয়ালের একটি কাঠের গোঁজ গাঁথা ছিল। তাতেই ঝোলানো থাকত স্কুলের চাবির গোছা। গোলোক বাবুর ছিল একটি দড়ির খাট। মাঝে কাঁথা, সামনে বালিশ পিছনে পাতা থাকত দু-তিনটে চটের বস্তা। দড়িতে ঝোলানো থাকত ধুতি জামা। ছিল পান, পানের বাটা, সুপারি। আর ছিল একটা বিষ্ণুপুরের লণ্ঠন। আমিও মাঝে মধ্যে স্কুলের হস্টেলে থাকতাম। একদিন রাতে দেখছি গোলোকবাবু লণ্ঠন জ্বালেন নি। স্যারকে জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন জ্যোৎস্না রাত। তাই জ্বালিনি। হস্টেলের রুম থেকে রঘুনন্দনবাবুর নেওয়া দুধ বেশ কয়েকবার চুরি হয়ে যায়। উনি কিন্তু বেড়ালকে সন্দেহ করেননি। ভবসুন্দর সিংহ বড়ঠাকুর। দুর্দান্ত চেহারা। খুব সুন্দর কথা বলতেন। পড়াতেনও। থিয়েটার নাটকে দারুণ অভিনয় করতেন। রাজবাড়ি থেকে স্কুল হেঁটেই যাতায়াত করতেন। মূল রাস্তার একদম বাঁয়ে সব সময়ই চলতেন- যাতে বিপদ না হয়। সাইকেল জানতেন। তবে চালাতেন কম। শম্বুক গতি। কালীকিঙ্কর সিংহমহাপাত্র পড়াতেন সংস্কৃত, বাংলা, অভিনয়েও পারদর্শী। সুধীর রঞ্জন রায় বাংলার শিক্ষক। লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত। হিন্দির শিক্ষক প্রবোধচন্দ্র মহান্তি। তীক্ষ্মস্বরে পড়াতেন ক্লাশে। কুলডোবা থেকে যাতায়াত করতেন। হরিশচন্দ্র সিংহমহাপাত্র। ইংরাজির শিক্ষক। প্যান্ট শার্ট পরে ক্লাশে শুধু ইংরাজি পড়াতেন না এই ভাষার উচ্চারণও শেখাতেন। হরিশবাবু আবার ছিলেন এন-সি- সি অফিসার। ওঁর স্কুলে আসা, খাওয়া দাওয়া ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় বাঁধা ছিল। এদিক ওদিক হওয়া চলত না। তখন বিজ্ঞানের বিষয়গুলি পড়াতেন গিরিধারী সৎপথী, শ্রীবাসচন্দ্র সিংহমহাপাত্র, বনমালী সিংহমহাপাত্র, বনমালী দাস, রাধারমণ পাত্র এবং দীপ্তেন্দুবিকাশ চট্টোপাধ্যায়। গণিতের শিক্ষক বনমালী দাস বাবু মনে করতেন উচ্চমাধ্যামিক স্তরে কেবলমাত্র ভালো ছাত্ররাই "গণিত" বিষয় পাবে। তাই জটিল অঙ্ক দিয়ে তিনি এমন শুরু করতেন যার ফলে সাধারণ ছাত্ররা গণিত বিষয় ছেড়ে দিত। সরস্বতী পূজার টাকা পয়সার হিসাব রাখতেন বনমালী দাস বাবু। ১টাকার গোলমাল ধরার জন্য উনি গোটা রাত কাবার করেছিলেন। শশাঙ্ক বাবু বলেছিলেন বরং ১ টাকা দিচ্ছি হিসাব ছাড়ুন। বনমালী দাস বাবু কিন্তু হিসাব ছাড়েননি। পরদিন ভোর পাঁচটায় হিসাব মিলেছিল। ইতিহাস-ভূগোল বিষয়গুলি পড়াতেন নলিনীরঞ্জন সিংহবাবু,কিরীটিভূষণ সিংহমহাপাত্র, সুধীরকুমার লাহা এবং শশাঙ্কশেখর সিংহমহাপাত্র। এঁরা যখন বিভিন্ন ক্লাশে পড়াতেন স্কুল গম্ গম্ করত। লাহাবাবু, শশাঙ্কবাবু দারুণ বক্তৃতা দিতেন। কিরীটিবাবু মৌখিক পরীক্ষা এমন নিখুঁত নিতেন যার ফলে ছাত্রছাত্রীদের লাইন দিয়ে প্রায় সন্ধ্যে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। এছাড়াও সহ-শিক্ষক ছিলেন মুরলীমোহন সিংহবাবু এবং অনিলবরণ মহাপাত্র। মুরলীবাবু ধীর স্থির, অন্যদিকে অনিলবাবু ছিলেন কিছুটা ছটফটে। ছাত্রদের পড়াতেন দরদ দিয়ে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন মোট ছয় জন। এঁরা হলেন, কিরীটিভূষণ নায়ক, অনিলবরণ মহান্তি, অনাদি চরণ সিংহমহাপাত্র, গোকুল চন্দ্র মহান্তি, আনন্দমোহন সিংহ এবং গজানন রায়। এঁরা সকলেই আন্তরিকতার সাথে স্কুলে কাজ করতেন। এঁদের মধ্যে অনাদিচরণ, ডবল বেঞ্চ নীচতলা থেকে উপর তলা ছুটে ছুটে একাই নিয়ে যেতেন। সবাই স্কুলে থাকতেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আমরা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সবাই ছিলাম যেন একই পরিবারের সদস্য। আমাদের রাজনীতির রঙ আলাদা ছিল। মত আলাদা ছিল। কিন্তু শিক্ষা ও শিক্ষকের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে মতভেদ হয়নি। উন্নয়নের স্বার্থে আমরা সবাই এক। এটাই ছিল সেদিনের ব্রত। '''২১ মার্চ ২০২৪''' ব্যানার্জীডাঙ্গা হাই স্কুল। গড়বেতা স্টেশন এর পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফতেসিংপুর এলাকায় অবস্থিত এই প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্কুলে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। আমি ১৯৬৫ সালে এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। হোস্টেলেই থাকতাম। তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কৃষ্ণদাস পণ্ডা। আমি এই স্কুল থেকে ১৯৭০ সালে একাদশ শ্রেণির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করি। এক বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য স্কুলের পাশ দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছিল ফেরার পথে হঠাৎই আমি এই স্কুলে প্রবেশ করি। স্কুলের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করি। বর্তমান প্রধান শিক্ষক প্রদ্যোৎ চক্রবর্তী মহাশয় এবং ইংরেজির শিক্ষক সুব্রত চক্রবর্তী মহাশয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। স্কুলে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মূর্তি বসেছে এবং একটি ভবন প্রয়াত প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণদাস পণ্ডার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে দেখে খুব ভালো লাগলো। ==ফিরে দেখা== ফিরে দেখা++++চিঠি # নিজের জীবনের কথা লিখেছেন সত্যনারায়ণ সিংহমহাপাত্র। কয়েক বছর আগেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন তার প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা। প্রতিঃ : তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী সম্পাদক, কৃষ্টি কিরণ মদনবাগ, পোঃ-সিমলাপাল জেলা-বাঁকুড়া পিন-৭২২১৫১ তাং-১লা মাঘ, ১৪২১( 16.01.2015) প্রিয় তুষারবাবু, প্রথমেই জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রীতি শুভেচ্ছা ও নমস্কার। হঠাৎ কয়েকদিন আগে আপনার সম্পাদিত "কৃষ্টি কিরণ”, ষষ্ঠ বর্ষ- ষষ্ঠ সংখ্যা-২০১৪ আমার নজরে পড়ল। কোন এক আত্মীয়ের হাত দিয়ে কলকাতায় আমার কাছে এসে পৌঁচেছে। আমি তা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। আপনার এই পত্রিকায় ছাপানো "কোন এক গাঁয়ের কথা" পড়ে দেখলাম এবং পুটিয়াদহ গ্রাম সম্পর্কে অনেক কিছুই লেখা দেখতে পেলাম, বিশেষ করে আমার স্বর্গীয় দাদা রাইচরণ মহান্তির নাম দেখলাম ঐ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বলতে বাধা নেই যে পুটিয়াদহ আমার শ্বশুরবাড়ি যেখান থেকে আমি ১৯৫১ সালের মে মাসে মিস সবিতা মহান্তিকে (পিতা-স্বর্গীয় বিভূতি ভূষণ মহান্তি এবং জ্যাঠতেতো দাদা স্বর্গীয় রাইচরণ মহান্তি) আমার সহধর্মিনী হিসাবে গ্রহণ করেছিলাম। উল্লেখযোগ্য হিসাবে জানাই যে তখনকার দিনে গাড়ি ঘোড়ার যুগ ছিল না। আমি জামাই হিসাবে পালকিতে চেপে আমার গ্রাম থেকে পুটিয়াদহ গ্রামে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ষোলটি (১৬) গরুর গাড়িতে বর যাত্রীরা গিয়েছিলেন। আর ছিল ২০ জনের ব্যান্ডপার্টি। বিয়ে করে ফেরার সময় আমরা দুজন (বর এবং কনে) দুটি পালকিতে করে আলাদা ভাবে ফিরেছিলাম। তারপর যা অনুষ্ঠান হবার আমাদের দেশের বিধিমত হয়েছিল। আমাদের চার কন্যা। তাদের জন্ম যথাক্রমে ১৯৫৫, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭১ সালে। প্রথম কন্যা লোপামুদ্রা (৬০) এখন হিউসটন (টেক্সাস) আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা। ওরা বর্তমানে মার্কিন নাগরিক। বিয়ে হয়েছে অশোক কুমার পণ্ডার সাথে (ইঞ্জিনিয়ার আই আই টি-খড়ঙ্গপুর) দ্বিতীয়া কন্যা ডাক্তার তপতী (৫৩) বর্তমানে ম্যাঞ্চেস্টারে (ইংল্যান্ড) বসবাস করছে এবং ওখানকার নাগরিক। স্বামী ডাক্তার দেবাশীষ চক্রবর্তী (অর্থোপেডিক সার্জন)। তৃতীয়া কন্যা পারমিতা (৫০) বর্তমানে ফিলাডেলফিয়া আমেরিকাতে বসবাস করছে। স্বামী সুভাস চক্রবর্তী এবং চতুর্থা কন্যা সঙ্ঘমিত্রা (৪৬), আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে আছে। স্বামী কৌশিক ধর ওরাও ওখানকার নাগরিক। বড় কন্যার দুই পুত্র। একজন ডাক্তার, একজন ইঞ্জিনিয়ার, বাকি তিন কন্যার একটি করে পুত্র সন্তান আছে। তারা সবাই স্কুল বা কলেজের ছাত্র। বলাবাহুল্য সংঘমিত্রা মেধাবী ছাত্রী স্কুলে বা কলেজে ও কখনও প্রথম ছাড়া দ্বিতীয়হয়নি। কলকাতার যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশনে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট গোল্ড মেডালিষ্ট। তারপর আমেরিকাতে যায় এবং সেখানে হাবার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার ডিগ্রি নেয়। বর্তমানে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে ওরাকোল ফিনান্স কোম্পানীতে ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত। উল্লেখ্য, আমি ১৯৪৪ সালে সিমলাপাল মদন মোহন হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় এসে পড়াশোনা করি। আমার একান্ত ইচ্ছা ছিল যে আমি মেডিক্যাল পড়ি এবং ডাক্তার হই। কিন্তু ভাগ্যচক্রে তা হয়ে ওঠেনি। ডাক্তারী পড়ার জন্য আর্থিক সহায়তাদানে আমার বাবার অসুবিধা ছিল। তিনি আমাকে দুই বছর অপেক্ষা করতে বলেন কারণ তখন টাকা পয়সার সংস্থান করা তাঁর পক্ষে অসুবিধা ছিল। আমার খুব অভিমান হ'ল। আমার সেজো মামা স্বর্গীয় কৃষ্ণচন্দ্র নায়ক (গ্রাম- রাধানগর, পাঁচমুড়া) হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে থাকতেন এবং ওখানে একটা কোম্পানীতে চাকরী করতেন। আমি ওনাকে লিখলাম যে আমি কলকাতাতে আসতে চাই এবং ওখানে সুবিধা মতো পড়াশোনা করতে চাই। তারপর অনেক কষ্ট করে চাকুরি করতে করতে আমি আই কম, বি কম এবং এম.এ কমার্স (১৯৫১) পাশ করি। সব গুলিই ইভিনিং সেকশান এ পড়াশুনা। এরপর লণ্ডনে অবস্থিত চাটার্ড এন্ড জেনারেল ম্যানেজম্যান্ট ইনস্টিটিউট (CGMA) থেকে ফাইনাল পরীক্ষা পাশ করে বর্তমানে এস.সি.এম এ (Associated Member) এছাড়া আমি Indian Institute of Cost and Management Accountant (ICWA) Fellow Member। তারপর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং চাকুরীর প্রয়োজনে ৫৬ বছর বয়সে কলিকাতা ইউনির্ভাসিটি থেকে এল.এল. বি. ডিগ্রীর (Law Degree) প্রয়োজন অনুভব করি। এর পিছনেও একটা ইতিহাস আছে। তখন আমি ইউনিয়ন কাবইিডে কাজ করি। আমাদের কোম্পানীর বোম্বাইয়ে অবস্থিত Chemicals and Plastic Factory এর একটি কেস গড়াতে গড়াতে সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত চলে যায়। যেহেতু আমি এই ব্যাপারটা সারা ভারতব্যাপী দেখতাম সেই হেতু আমাকে আগাগোড়া কেসটা দেখতে হয়েছে। সিনিয়র এডভোকেট শ্রদ্ধেয় সোলি সোরাজি মহাশয় সুপ্রীমকোর্টে আমাদের কোম্পানীর হয়ে কেসটা করেছিলেন আর আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কারণ আমি ঘটনাটি বিস্তারিত জানতাম। কোর্ট রুমে যখন ওনার পিছনে পিছনে আমি ঢুকতে যাচ্ছি তখন গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক দীর্ঘাকার দারোয়ান আমাকে ঢুকতে দেয়নি কারণ আমি তখন Advocate ছিলাম না। এই ঘটনায় আমি ও আমাদের সিনিয়র এডভোকেট অত্যন্ত অপমানিত ও লজ্জিত বোধ করি। অবশেষে আমি Visitor's Gallery তে বসতে বাধ্য হই। এই ঘটনা থেকে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি যে আমি Law Degree নেব। কলকাতাতে ফিরে এসে আমি Calcutta University Law College, Hazra Branch থেকে আমার এক অধীনস্থ কর্মীর মারফত একটি ফর্ম সংগ্রহ করি। উল্লেখ্য ঐ একই সময়ে আমার দ্বিতীয়া কন্যা তপতীও ডাক্তারী ডিগ্রীর জন্য M.B.B.S পড়ছিল। এই ভাবে আমি Law Degree অর্জন করি এবং আমি Bar Council of India এর সদস্য হয়ে যাই। তারপর থেকে আমি সারা ভারতবর্ষে কালো কোর্ট চড়িয়ে কেস করতে পারছি।আমি ১৯৬৪ সালে ইউনিয়ন কারবাইডে চিফ ওয়াক্স একাউনট্যান্ট হিসাবে যোগদান করেছিলাম। প্রথমে কয়েক বছর ফ্যাক্টরীতে ছিলাম তারপর হেড অফিস (জীবনদীপ কোলকাতা-৭০০ ০৭১) থেকে ১৯৮৭ তে অবসর গ্রহণ করি। যখন আমি জীবনদীপে ছিলাম তখন আমাকে সারা ভারতবর্ষে ঘুরে বেড়াতে হোত কারণ আমাদের কোম্পানীর ১১টি ফ্যাক্টরী ছিল বোম্বাই, কোলকাতা, মাদ্রাজ, হাইদ্রাবাদ, লখনৌতে আর ১৮টি সেলস অফিস ছিল এবং ৪টি ডিভিশন অফিস ছিল (ডিভিশন গুলি হল- Agricultural Products Divn. Battery Products Divn. Carbon and Metal Divn. and Chemicals and Plastic Divn.) আর আমি তার ইনডিরেক্ট ট্যাক্স ম্যাটার দেখাশোনা করতাম। এবং প্রয়োজন মতো যে সমস্ত মামলা হোত Revenue Department (Both State & Central Govt.) এর সাথে, আমাকে সেই গুলির তত্ত্বাবধান করতে হোত। আমি M/s Union Carbide Ltd. থেকে ১৯৮৭ সালে ৬০বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করি। তারপর থেকে আমি এডভোকেট হিসাবে ইনডিরেক্ট ট্যাক্স কনসালট্যান্ট (INDIRECT TAX CON- SULTANT) হিসাবে প্রাক্টিস করছি। আমি দাক্ষিণাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ জনকল্যাণ সমিতির সঙ্গে বহুবছর ধরে জড়ত এবং বর্তমানে ঐ সমিতির সভাপতি। বিশেষ ভাবে জানাচ্ছি যে আমাদের ফ্যামিলিতে কতকগুলি প্রথম স্থানের অধিকারী ঘটনা আছে, যেমন- ১। আমার স্বর্গীয়া স্ত্রী আমাদের দাক্ষিণাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ সমাজে প্রথম মহিলা ম্যাট্রিকুলেট এবংপ্রথম গ্রাজুয়েট। ২।আমার তৃতীয়া কন্যা ডাঃ তপতী প্রথম মহিলা ডাক্তার। ৩। কনিষ্ঠা কন্যা সঙ্ঘমিত্রা প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েট। আমি M.A. (COM), ACMA (U.K) বর্তমানে আমার বয়স ৮৯ বছর। শারীরিক ও মানসিক ভাবে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ ও আমার পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এছাড়া আমি রোটারি ক্লাব অফ সাউথ ক্যালকাটা এর সাথে জড়িত। আপনার পত্রিকার লেখাগুলি আমাকে খুবই আনন্দ দিয়েছে। সেই সঙ্গে আমি একটি আমার -লেখা (Article- MY FIRST VISIT TO CALCUTTA IN 1940) পাঠাচ্ছি। যদি সম্ভব হয় এটি আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করবেন। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নমস্কার, প্রীতি ও ভালোবাসা আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি। সত্যনারায়ণ সিংহমহাপাত্র ২৭/৩৩ কে. এম. নস্কর রোড পোস্ট অফিস ও থানা-রিজেন্ট পার্ক কলকাতা-৭০০ ০৪০ ==কয়েকটি কবিতা== ।।মানুষ আছে ।। '''তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী''' (উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি) মানুষ আছে সুধী সফল, জ্ঞান সমন্বিত আবার কেহ দিশাহীন অজ্ঞ ও ঘৃণিত। মানুষ আছে পরম সুখী দুঃখ নাই ঘরে আবার কেহ দুঃখে মরে মনের অন্তরে। মানুষ আছে সম্পন্ন সে, সুস্থ ও সবল আবার কেহ পায় না খাবার হয় অতি দূর্বল। মানুষ আছে আনন্দতে টাকায় গড়াগড়ি আবার কেহ পায় না টাকা কাঁদে জীবন ভরি। মানুষ আছে বীরের মতো খুবই বলবান আবার কেহ ভিতু অতি ত্রাসিত তার প্রাণ। মানুষ আছে বিদ্বান অতি পূণ্য পুঁথি হাতে আবার কেহ তাড়ি খেয়ে ঘুমায় দিন রাতে। মানুষ আছে সৎ প্রকৃতির সাধু সমাহারে আবার কেহ ডুব দেয় দুষ্কৃত-সাগরে। মানুষ আছে ভাগ্যবান সৌভাগ্য নিয়ে আবার কেহ ভাগ্যহীন সারা জীবন দিয়ে। ভালো মন্দে দোষে গুণে সত্য ও মিথ্যায় মানুষের বিচরণ এই যে ধরায়। '''কবিতা''' '''তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী''' কবিতায় আছে প্রেম আছে ভালোবাসা সুখ আছে দুঃখ আছে মনের ভরসা। কবিতায় ছন্দ আছে কিংবা ছন্দহীন নীড়হারা পাখি যেন আকাশে উড্ডিন। কবিতা কুরে খায় বুকের ভেতর সমুদ্রের ঢেউ যেন প্লাবিত অন্তর। কবিতায় শুরু আছে নেই এর শেষ জীবন প্রবাহে আনে নতুন আবেশ। কবিতায় জন্ম কথা মৃত্যু কথা থাকে জীবনের লুকোচুরি লেখনীর ফাঁকে। কবিতায় সুর থাকে আর থাকে গান জীবন প্রবাহে তাই কবিতা মহান। কবিতা কখনো হয় সহজ সরল আবার কখনো সে যে জটিল - গরল! ভালো-মন্দ আলো-ছায়া তোমার শরীরে জন্ম থেকে মৃত্যু তুমি থাকো যে অন্তরে। ।।আমার বিশ্বাস।। তুষারকান্তি যগ্নিগ্রহী উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি আমার বিশ্বাস- টুকরো টুকরো আলোর কণায় সত্যের সূর্য উঠবে! প্রেম ও ভালোবাসার নতুন মেঘ নীল আকাশে ভাসবে। আমার বিশ্বাস- ধরণীর তলে, গগনের গায়ে, আলোর বন্যা ঝরবে। ছায়া সুশীতল কাননের মাঝে সবুজের ঢেউ পড়বে। আমার বিশ্বাস- ধরার মাঝে মনের বনের সব ফুল আজ ফুটবে। হৃদয় মাঝে মনের গাঙে সব আশা আজ জুটবে। ।।খসে পড়ে।। তুষারকান্তি যন্নিগ্রহী উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি মাধবীলতার ফুল খসে পড়ে জীবনের আশা আকাঙ্খার একটি একটি কুঁড়ি খসে যায়। শীতের হিমেল হাওয়ায় খসে পড়ে বনানীর পাতা। জীবনের আয়ু একটু একটু করে খসে যায়। খসে পড়ে মরচে পড়া সেতারের তার খসে যায় নীল আকাশ, উদার হৃদয় পাখির পালক। ফুল থেকে খসে যায় রেণু বাতাসের উত্তালে। মন খসে চলে যায় অন্যলোকে, চলে যায় হারিয়ে যায় বলেই বার বার শুনি আগমনীর গান। সুখের সবুজ হাসি, চোখের চিরন্তন পলক- করি নতুনের আরাধনা। ==নিবন্ধ== ।। বয়ঃসন্ধিকালে প্রয়োজন জীবনশৈলী শিক্ষা ।। তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী বয়ঃসন্ধি কালে বালকের চেহারা হয়ে ওঠে পুরুষ সুলভ। গলার স্বর পরিবর্তিত হয়। দেহ লম্বা হয়, পেশী হয় সুগঠিত ও শক্তিশালী। দেহের ওজন বাড়ে। গোঁফ দাড়ি গজায়, বুকে বগলে যৌনাঙ্গে কেশোদগম হয়। শুক্রাণু উৎপন্ন হয় শরীরে। এই সময়ে বালিকাও ওজনে বাড়ে, লম্বা হয়, যৌনাঙ্গ বৃদ্ধি পায়। গলার স্বরের পরিবর্তন ঘটে। স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়। বগলে, যৌনাঙ্গে কেশোদগম হয়। শরীরে ডিম্বাণু উৎপন্ন শুরু হয়। জরায়ু প্রাচীরে বিরাট পরিবর্তন-ভাঙা গড়ার কাজ চলে। মাসে মাসে রক্তস্রাব হয়। বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে এই সময়ে এক ধরণের উদ্দীপনা কাজ করে যা যৌনাবেগ। এর লক্ষণ; • বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। • যৌন মিলনের বাসনা। • বিশেষ ব্যক্তির প্রতি আকর্ষণ বা অনীহা। • গভীর সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্খা। বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তন গুলো কি হতে পারে? আমাদের দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণে যা ধরা পড়ে তা এই রকম; • ছেলে মেয়েরা বাবা-মায়ের সব কথা সব সময় শোনে না। বন্ধু বান্ধবদের কথা বেশি শুনতে ভালোবাসে। • নিজে যেটা ভালো বোঝে সেটাই করার চেষ্টা করে। • মন চঞ্চল হয়। অনেক সময় সামান্য কথাতেও উত্তেজিত হয়। • সাজ গোজ ও অন্যকে অনুকরণ করতে ভালোবাসে। • সব বিষয়েই কৌতূহল থাকে। • অনেক সময় বিমূর্ত চিন্তা করে। বিমূর্ত চিন্তা করতে করতেই সৃষ্টিশীল হয়ে ওঠে বয়ঃ সন্ধিকালের তরুণ তরুণীরা। তারা হয়ে ওঠে সমাজের চালিকা শক্তি। এই শক্তিকে ঠিক ভাবে কাজে লাগালে সমাজেরই উপকার। এই সময়ে শরীরের প্রতি আরও বেশি যত্ন নেওয়া দরকার। সাধারণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা দরকার। শরীর ও মনকে সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত করা প্রয়োজন। ছেলে মেয়েরা ভুল পথে পরিচালিত হলে সমূহ বিপদ। সমাজের কুপ্রভাব, সমাজের প্রলোভন, মিডিয়ার দর্শন ও প্রচার পথভ্রষ্ট করে অনেককে। অসুস্থ ভাবনা বাসা বাঁধে কিশোর কিশোরীর মনে। সুযোগ বুঝে বাঁধন হারা হতে পারে। তাই সাবধান! মুক্তি দিতে পারে উপযুক্ত শিক্ষা। জীবনের ছন্দ ঠিক রাখতে পারে 'জীবন শৈলী'। সমাজের শৃঙ্খলাকে বজায় রাখতে পারে এই শিক্ষা। সৃজনশীল কাজ, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি পারস্পরিক সম্মানবোধ, সঠিক পথ নির্দেশেই সুস্থ সবল করতে পারে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীকে। শরীরে সমস্যা থাকলে তা গোপন করা উচিত নয়। যৌন চেতনার ক্ষেত্রেও অযথা লজ্জা বা অপরাধ বোধের কিছু নেই। সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এজন্য আরোও একটু সচেতন হওয়া দরকার। চিরাচরিত প্রথা ভেঙে একটু বেরিয়ে আসা দরকার। প্রতি পদক্ষেপে প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা জীবন শৈলী শিখন। শরীরের পরিবর্তন সহজ-ভাবে বোঝানো দরকার। খুব সমস্যা হলে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মানসিক, শারীরিক এমনকি সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হলে বাবা, মা, আত্মীয় স্বজন, স্কুলের শিক্ষক সবাইকেই বিষয়টি ভাবতে হবে। সমস্যা গুলো বুঝতে হবে। বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। কিশোর কিশোরীর অস্বাভাবিক আচরণ ঘটলে তিরস্কার না করে তাদের মনের কাছাকাছি যেতে হবে। ব্যক্তিত্ব গড়ার জন্য তাদের দিয়ে স্বাধীন কাজকর্ম করাতে হবে। আলোচনা, সভা সমিতি, দলগত কাজ, খেলাধূলা, কোন পরীক্ষা পরিকল্পনা, বিতর্ক সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ ও বিশেষ দায়িত্ব দিলে তারা উৎসাহ পারে। সৃজন মূলক কাজে ব্যস্ত থাকলে মানসিক ও সামাজিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আমাদের ছেলে মেয়েরা চায় সমান অধিকার। চায় ভালোবাসা। চায় নিরাপত্তা। আশা করে স্বীকৃতি ও প্রশংসার। এরা চায় নতুন দায়িত্ব। এরা অর্জন করতে চায় নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। এসব প্রয়োজন মেটাবেন কে? অবশ্যই বাবা, মা, আত্মীয় পরিজন, শিক্ষক আর সমগ্র সমাজ। চাই সুস্বাস্থ্য। চাই সঠিক পরিবেশ। চাই জীবন শৈলীর শিক্ষা। চাই আলোকময় ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা। তাহলেই মুক্তি হবে সংকটের। কিশোর কিশোরীরা পরিচালিত হবে সঠিক পথে। সমাজ হবে কলুষ মুক্ত। দেশ পাবে উপযুক্ত নাগরিক। ==লোকসাহিত্য== '''তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী''' উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি এই বাংলার বুকে নদী যেমন শত ধারায় উৎসারিত সেই রকম লোক সাহিত্য শতধারায় বিরাজমান । চিত্তের অন্দরমহলে গাঁথা হয়ে আছে লোকসাহিত্য। মানুষের সুখ দুঃখ, আশা-আকাঙ্খা, কামনা-বাসনা, প্রতিফলিত হয়েছে লোকসাহিত্যে। কখনও গীত, কখনও ছড়া, কখনও আবৃত্তি কখনও বা গল্পরূপে লোকমুখে প্রচলিত লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্যের মাধ্যমেই মানুষের চিরাচরিত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অভিব্যক্তি ঘটে। সমাজের রীতিনীতি, আচার ব্যবহার, শিল্প সাহিত্য সভ্যতাজনিত উৎকর্ষ সবকিছুর মধ্যেই মানবজাতির যে পরিচয় তাই তো সংস্কৃতি। সংস্কৃতির বিকাশে লোকসাহিত্যের ভূমিকাও কম নয়। লোকসাহিত্য সবসময় হয়তো ঠিক শিল্পসম্মত বা ছন্দোবদ্ধ হয়নি। তা না হোক, মানুষের মনের অন্দরমহলের গোপন দরজা খুলে দিয়েছে লোকসাহিত্য। দোলায়িত করেছে মানুষের প্রাণ ও মনকে। লোকসাহিত্য কোন একক সাহিত্যিকের সৃষ্টি নয়। অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত সাধনার ফসল। লোকসাহিত্যের ধারা বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হয়। মানুষের জীবনপ্রবাহের বার্তা বহন করে। রঙীন কল্পলোকের দ্বার উন্মুক্ত করে। বাংলার ঘরে ঘরে লিখিত অলিখিত প্রচলিত অপ্রচলিত লোকসাহিত্যের যে কত নিদর্শন আছে তার ইয়ত্তা নেই। শিশুসাহিত্য, মেয়েলি ব্রতকথা, ধর্মসাহিত্য, সভাসাহিত্য, পল্লীসাহিত্য, প্রবচনসাহিত্য, ইতিবৃত্তিমূলকসাহিত্যে ভরপুর লোকসাহিত্য। ছেলে ভুলানো ছড়া, ঘুমপাড়ানি গান, রূপকথা, উপ কথা এসব নিয়েই শিশু সাহিত্য। শিশুসাহিত্যের ছড়া ও গানকে রবীন্দ্রনাথ তুলনা করেছেন নানা রঙের ভাসমান মেঘের সাথে । এই মেঘ শিশুমন ও হৃদয়কে উর্বর করে। ছেলেভুলানো ছড়া এই রকম: ইকিড় মিকিড়, চাম চিকিড় চামের কৌটা, মকদ্দোমা হাঁড়িকুড়ি। দুয়ারে বসে চাল কাড়ি। চাল কাড়তে হল বেলা ভাত খেয়ে যা দুপুর বেলা। ভাতে পড়ল মাছি কোদাল দিয়ে চাঁছি। কোদাল হল ভোঁতা খা কামারের মাথা। খোকার চোখে ঘুম নেই। মা ধরেছেন ঘুম পাড়ানি গান: ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি মোদের বাড়ি এসো। খাট নেই পালঙ্ক নেই চাটাই পেতে বসো। বাটা ভরে পান দেব গাল ভরে খাও। খোকার চোখে ঘুম নেই ঘুম দিয়ে যাও। নগরায়ণ ও সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে লোক সাহিত্যের অনুশীলন ও সংরক্ষণ এক বড় প্রশ্ন চিহ্নের উপর দাঁড়িয়ে। বাংলার ঘরে ঘরে আগের মতো আর লোক সাহিত্যের চর্চা হয় না। অনুশীলন হয় না। মানুষের অবসরের সময় কেড়ে নিয়েছে কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন। লোকসাহিত্যের কথা শোনাবার লোক কমে যাচ্ছে। ধুঁকতে ধুঁকতে কোন ক্রমে বেঁচে আছে আমাদের লোকসাহিত্য। তবে এখনো সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন লোকসাহিত্য চর্চাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। উৎসাহিত করছে। অনুষ্ঠানও হচ্ছে। মা ঠাকুমার কাছ থেকে যে শিশু গল্প শুনত এখন তা শুনছে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটারের কাছ থেকে। বাংলার লোকসাহিত্য শুধু মানুষের মনে নয় এখন গাঁথা হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রের শরীরেও। সভ্যতার অগ্রগতি ও যান্ত্রিক যুগের যন্ত্রে ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছে কি লোকসাহিত্য? অকালেই সে চলে যাবে না তো? তথ্য সূত্র: পরম পরশ, পৃঃ ৪৫,৪৬ ==চাণক্য শ্লোক ও শিক্ষা== ভারতবর্ষের মধ্যে চাণক্য ছিলেন একজন অসাধারণ পণ্ডিত। মানুষের কর্তব্য, সঠিক ধর্মপথে চালনা, সমাজকল্যাণ, উপযুক্ত বিদ্যা ও শিক্ষা বিষয়ে তিনি অনেক শ্লোক রচনা করেছেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, চণকের পুত্র বা চণক বংশীয় সন্তান বলে তাঁর নাম চাণক্য। তিনি আবার কৌটিল্য, বিষ্ণুগুপ্ত এমনকি বিষ্ণু শর্মা নামেই পরিচিত ছিলেন। অবশ্য এই বিষয়ে অনেক মতভেদ আছে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে চাণক্যের আর্বিভাব। চন্দ্রগুপ্তকে মগধের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে চাণকোর অবদান খুবই উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টপূর্ব ৩২১-এ চন্দ্রগুপ্ত রাজা ধননন্দকে যুদ্ধে হারিয়ে রাজধানী পাটলিপুত্র দখল করেন। চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন চাণক্য। মহামতি চাণক্য তাঁর প্রতিভা বলে যে শ্লোক রচনা করেছেন তার সামাজিক মূল্য বিরাট। চাণক্য শ্লোক বর্তমানেও মনে হয় খুবই প্রাসঙ্গিক। চাণক্য শ্লোকের ভাববস্তু আমাদের জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। চাণক্যের শ্লোকগুলি অধিকাংশই বাস্তবধর্মী। শিক্ষা ও বিদ্যা বিষয়ে চাণক্য শ্লোক আমাদের জীবনে কতটা অপরিহার্য তা শ্লোকের বিষয়বস্তুর মধ্যে পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছে। আমাদের জীবন প্রবাহে চাণক্য শ্লোকের উপদেশ ঠিকমতো গ্রহণ করলে মানব সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। বিদ্যা ও শিক্ষা বিষয়ে কয়েকটি শ্লোক উল্লেখ করলাম। শ্লোক-১ অলসস্য কুতো বিদ্যা অবিদ্যস্যকুতোধনম্। অধনস্য কুতো মিত্রম্ অমিত্রস্য কুতঃ সুখম্।। যারা অলস তাদের বিদ্যা হয় না। বিদ্যা না থাকলে ধন হয় না। যার ধন নেই তার বন্ধু জোটে না, যার বন্ধু নেই তার সুখ নেই। শ্লোক-২: অনভ্যাসে বিষং বিদ্যা বৃদ্ধস্য তরুণী বিষম্। আরোগে তু বিষং বৈদ্যঃ অজীর্ণে ভোজনং বিষম্।। ঠিকমতো অভ্যাস না করলে বিদ্য বিষ তুল্য বুড়োমানুষের তরুণী স্ত্রী বিষতুল্য, রোগ দূর হলে চিকিৎসক বিষতুল্য, খাবার ঠিকমতো হজম না হলে ভোজন বিষবৎ হয়। শ্লোক-৩: অবিদ্যঃ পুরুষঃ শোচ্যঃ শোচ্যা নারী চানপত্যা। নিরাহারাঃ প্রজাঃ শোচ্যাঃ শোচ্যং রাষ্ট্রমরাজকম্।। যে পুরুষের বিদ্যা নেই, যে নারীর সন্তান নেই, যে প্রজা অনাহারে থাকে, যে রাষ্ট্র রাজাহীন-এগুলোর জন্য শোক করা উচিত। শ্লোক-৪: ন চ বিদ্যসমো বন্ধু র্ন চ ব্যাধিসম রিপুঃ। ন চাপত্য সম স্নেহো র্ন চ দৈবাং পরং বলম্।। বিদ্যার মতো তুল্য বন্ধু নেই, ব্যাধির মতো শত্রু নেই, সন্তান স্নেহের তুল্য স্নেহ নেই, দৈব অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কোনো বল নেই। শ্লোক-৫: বিদ্যা মিত্রং প্রবাসেষু, মাতা মিত্রং গৃহেসু চ। ব্যাধিত সৌষধং মিত্রং ধর্মে মিত্রং মৃতস্য চ।। প্রবাসে বিদ্যা হল বন্ধু, বাড়িতে মা বন্ধু, ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তির ঔষধ হল বন্ধু, ধর্ম হল মৃতের বন্ধু। শ্লোক-৬: ধনং ক্ষীণং ভবেদানাদ বিদ্যাদানাদ্বিবর্ধতে। তস্মান্মান্যে ধ্রুবং বিদ্যা ধনাদপি গরিয়সী।। ধন দান করলে তা কমে যায়, বিদ্যা দান করলে তা বাড়ে, সেইজন্য নিশ্চিন্ত মনে করি-ধনের থেকে বিদ্যাই শ্রেষ্ঠ। শ্লোক-৭: জ্ঞাতিভির্বণ্টা নৈব চৌরেনাপি ন নীয়তে। দানেন ন ক্ষয়ং যাতি বিদ্যারত্বং মহাধনম।। বিদ্যা হল এমন রত্ন বা মূল্যবান ধন যার ভাগ জ্ঞাতিরা নিতে পারে না, চোরে যাকে চুরি করতে পারে না। দান করলে যার ক্ষয় হয় না। শ্লোক-৮: কামং ক্রোধং তথা লোভং স্বাদং শৃঙ্খার কৌতুকম্। অতি নিদ্রাতি সেবা বিদ্যার্থী হাষ্ট বর্জয়েৎ।। বিদ্যার্থী তথা ছাত্রের কাম, ক্রোধ, লোভ, সুস্বাদু খাবার, শৃঙ্গার, কৌতুক, অতিরিক্ত ঘুম, অতিরিক্ত ভোজন এট আটটি বর্জন করা উচিত শ্লোক-৯: অবিদ্যং জীবনং শূন্যং দিক্ শূন্যা চেদবান্ধবাঃ। পুত্রহীনং গৃহং শূন্যং সর্বশূন্যা দরিদ্রতা।। বিদ্যা না থাকলে জীবন শূন্য, বন্ধুবান্ধব না থাকলে সবদিক শূন্য, গৃহে পুত্র না থাকলে তা শূন্য, দরিদ্র ব্যক্তির সবকিছুই শূন্য। শ্লোক-১০: রূপযৌবনসম্পন্না বিশাল কুলসম্ভবাঃ। বিদ্যাহীনা ন, শোভন্তে নির্গন্ধা ইব কিংশুকাঃ।। রূপ যৌবন সম্পন্ন হলেও, উচ্চকুলে জন্ম নিলেও বিদ্যাহীন ব্যক্তি গন্ধহীন পলাশ ফুলের মতো। শ্লোক-১১: ক্ষময়া দয়য়া প্রেমা সুনুতেনার্জবেন চ। বশী কুযাৎ জগৎ সবং বিনয়েন চ সেবয়া।। , দয়া, প্রেম, সত্য, সরলতা, বিনয় এবং সেবা দ্বারা সকল জগৎকে বশীভূত করবে। ক্ষমা সিংহাদেকং বকাদেকং যশুনন্ত্রীণি গর্দভাৎ। শ্লোক-১২: বায়সাৎ পঞ্জ শিক্ষেৎ চত্বারি কুকুটাদপি।। সিংহের কাছ থেকে একটি, বকের কাছ থেকে একটি, কুকুরের কাছ থেকে ছয়টি, গর্দভের কাছ থেকে তিনটি, কাকের কাছ থেকে পাঁচটি, মোরগের কাছ থেকে চারটি গুণ শিক্ষা করা উচিত। সিংহ বীর বিক্রমে শিকার ধরে। কাজ সহজ বা কঠিন হোক তা বীর বিক্রমে করা দরকার। বকের কাছ থেকে যে শিক্ষা আমরা নিতে পারি তা হল, সকল ইন্দ্রিয়কে সংযত করার শিক্ষা। কুকুরের কাছ থেকে যে ছয়রকম শিক্ষা আমরা নিতে পারি। তা হল, বিভিন্ন আহার, অল্পে সন্তোষ, শীঘ্র ঘুম, সামান্য শব্দে জেগে ওঠা, প্রভুভক্তি এবং শত্রুকে আক্রমণ। গর্দভের কাছ থেকে যে তিনটি শিক্ষা আমরা পাই সেগুলি হল, ভার বহন, শীত গ্রীষ্ম উপেক্ষা, সবসময় সন্তোষ। কাকের কাছ থেকে পাঁচটি শিক্ষা হল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, আচরণ, সময়ে আহার, পরিশ্রম ও সতর্কতা। মোরগের কাছ থেকে আমরা চার রকম শিক্ষা পাই-ভোরে ওঠা, যুদ্ধবিদ্যা, একসাথে ভাগ করে খাওয়া, বিপদে স্ত্রীকে রক্ষা করা। চাণক্যের শ্লোকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছে তা সর্বকালীন ও যুগজয়ী। আমাদের জীবনে চলার পথে যদি চাণক্যের উপদেশ কিছুটা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের অশেষ উপকার হবে বলেই মনে হয়''' তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী''' <ref> স্মরণিকা,রাজ্য সম্মেলন,২০২৩, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি, লেখক- তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, পাতা=৩১,৩২</ref> nl7y4n8iceih9n3l87cx9xoy9eom7rp ব্যবহারকারী আলাপ:Ei to ami akash 3 23420 85301 85151 2025-06-25T16:48:23Z Ei to ami akash 11256 /* পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ */ উত্তর 85301 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০৯:৪০, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ]] == প্রতিযোগিতার জন্য জমা দেওয়া [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ]] পাতায় কিছু সমস্যা আছে এবং পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করা হয়নি। সমস্যাগুলোর সমাধান করে আমাকে মেনশন করে জানালে পাতাটি পর্যালোচনা করে গ্রহণ করে নিবো। দ্রুত ঠিক করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। [[ব্যবহারকারী:Mehedi Abedin|Mehedi Abedin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Mehedi Abedin|আলাপ]]) ০৪:৪২, ২২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি শীঘ্রই ভুল ত্রুটি যা আছে তার সংশোধন করে আপনাকে উত্তরের মাধ্যমে জানাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Ei to ami akash|Ei to ami akash]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ei to ami akash|আলাপ]]) ১৬:৪৮, ২৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) 7lxsseltcfjim1gs0gyx8h58ryvdtco 85309 85301 2025-06-25T17:07:38Z Ei to ami akash 11256 /* পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ */ উত্তর 85309 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০৯:৪০, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি) == [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ]] == প্রতিযোগিতার জন্য জমা দেওয়া [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ]] পাতায় কিছু সমস্যা আছে এবং পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করা হয়নি। সমস্যাগুলোর সমাধান করে আমাকে মেনশন করে জানালে পাতাটি পর্যালোচনা করে গ্রহণ করে নিবো। দ্রুত ঠিক করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। [[ব্যবহারকারী:Mehedi Abedin|Mehedi Abedin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Mehedi Abedin|আলাপ]]) ০৪:৪২, ২২ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) :আমি শীঘ্রই ভুল ত্রুটি যা আছে তার সংশোধন করে আপনাকে উত্তরের মাধ্যমে জানাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Ei to ami akash|Ei to ami akash]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ei to ami akash|আলাপ]]) ১৬:৪৮, ২৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) ::আমার সংশোধন করা হয়ে গেছে। একবার পর্যালোচনা করে তা গ্রহণ করে নিন। [[ব্যবহারকারী:Ei to ami akash|Ei to ami akash]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ei to ami akash|আলাপ]]) ১৭:০৭, ২৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) gubz634z8j1p7ybwsc52y4tczbto9em ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ/ব্যবহৃত উপকরণ 0 26013 85271 81131 2025-06-25T14:20:33Z Mehedi Abedin 7113 85271 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==প্লাস্টিক== [[File:Makerbot Store, Manhattan (NY, USA) (8764959982).jpg|thumb|upright=2|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রের উপকরণগুলো বিভিন্ন রঙ এবং ভৌত বৈশিষ্ট্য সহ পাওয়া যায়।]] এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্যাসের ফিলামেন্ট গ্রহণ করে। কিছু এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ সহজে ব্যবহারের জন্য পেলেট ব্যবহারে উপযোগী করে পরিবর্তিত করা হয়।<ref>{{cite web |title=10 Tips for Converting a 3D Printer to Pellet Extrusion {{!}} Make: |url=https://makezine.com/2020/11/25/10-tips-for-converting-a-3d-printer-to-pellet-extrusion/ |website=Make: DIY Projects and Ideas for Makers |access-date=30 November 2020 |language=en |date=25 November 2020}}</ref> ===পিএলএ=== পিএলএ (পলিল্যাকটিক অ্যাসিড) একটি সাধারণ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ উপকরণ। এটি সস্তা এবং ব্যবহার করা সহজ হওয়ায় নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্যও একটি বহুল ব্যবহৃত সাধারণ উপকরণ।<ref name="Design Review 3D Printer">{{cite web |title=3D Printer Filaments: Definitions, Applications, and Tips |url=https://www.designreview.byu.edu/collections/3D%20Printer%20Filaments:%20Definitions,%20Applications,%20and%20Tips |accessdate=6 November 2020}}</ref> এবিএস ব্যবহারের তুলনায় পিএলএ ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে অপেক্ষাকৃত কম কণিকা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety">{{cite web |title=3D Printer Safety – Environment, Health, and Safety |url=https://aeroastro-ehs.mit.edu/resources/3d-printer-safety/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এবিএস=== [[File:ABS filament spool.jpg|thumb|এক রিল এবিএস ফিলামেন্ট।]] এবিএস (অ্যাক্রিলোনাইট্রাইল বিউটাডাইন স্টাইরিন) সস্তা ও শক্তিশালী একটি ফিলামেন্ট হলেও ভালোভাবে প্রিন্ট করার জন্য সঠিক পরিবেশের প্রয়োজন।<ref name="SDSU Materials Library"/> পিএলএ ব্যবহারের তুলনায় এবিএস ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে বেশি কণা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety"/><ref>{{cite web |title=Particles Emitted by Consumer 3D Printers Could Hurt Indoor Air Quality |url=https://www.news.gatech.edu/2019/10/07/particles-emitted-consumer-3d-printers-could-hurt-indoor-air-quality |website=www.news.gatech.edu |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তাই এবিএস দিয়ে প্রিন্ট করার সময় যথাযথ বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।<ref name="SDSU Materials Library">{{cite web |last2=White |first2=Lindsay |title=Materials for 3D Printing – build IT @SDSU Library |url=https://buildit.sdsu.edu/materials-for-3d-printing/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এইচআইপিএস=== এইচআইপিএস (হাই ইমপ্যাক্ট পলিস্টাইরিন) ব্যবহার করা সহজ এবং এটি ব্যয়বহুল নয় বলে এটি নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>{{cite web |title=Printing Materials – Innovation Studio |url=https://innovationstudio.mechse.illinois.edu/design-resources/3d-printable-materials/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===পিইটিজি=== পিইটিজি (পলিইথিলিন টেরেফথালেট গ্লাইকল) প্রিন্টগুলো ভিন্ন রাসায়নিক গঠন সত্ত্বেও বাহ্যিকভাবে এবিএস প্রিন্টের মতোই দেখতে হয়। পিইটিজি এবিএস-এর চেয়ে কম উদ্বায়ী এবং বিভিন্ন প্রিন্টিং পরিবেশে বেশি স্থিতিশীল থাকে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> পিইটিজি সরাসরি কাঁচের বেডে প্রিন্ট করা যায় না।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এর জন্য একটি মধ্যবর্তী স্তর—যেমন টেপ—ব্যবহার করা আবশ্যক।<ref name="UCSF Loop"/> ===নাইলন=== [[File:3D printed snow machine nozzle.jpg|thumb|নাইলন ফিলামেন্টের একটি রিল, যার উপরে একটি প্রিন্ট করা নমুনা বস্তু রাখা আছে।]] নাইলন ত্রিমাত্রিক মুদ্রণগুলো সাধারণত কিছুটা নমনীয় এবং টেকসই বলে পরিচিত।<ref name="UCSF Loop">{{cite web |title=Closing the Loop On 3D Printing |url=https://www.library.ucsf.edu/news/closing-the-loop-on-3d-printing/ |website=UCSF Library |access-date=29 November 2020 |date=30 November 2017}}</ref><ref>{{cite web |last1=Meher |first1=Robin |title=Library Guides: 3D Printing at the Library of Engineering and Science: Filament Guide |url=https://guides.lib.purdue.edu/3dprinting/filament |website=guides.lib.purdue.edu |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> নাইলন বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত করা যায়, যার ফলে এটি বিভিন্ন রঙের প্রিন্টিং উপাদান তৈরি করতে সক্ষম।<ref name="UCSF Loop"/> নাইলন খুবই সংবেদনশীল এবং এর সাথে কাজ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হতে পারে।<ref name="SDSU Materials Library"/> ===নমনীয়=== নমনীয় ফিলামেন্টগুলি কিনতে ব্যয়বহুল এবং ব্যবহারেও সংবেদনশীল, তবে এগুলো প্রিন্টকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করে যা মুদ্রণ সামগ্রীকে সামান্য বিকৃত বা নমন হতে সক্ষম করে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এই ধরনের ফিলামেন্ট প্রায়ই প্রিন্টারের মধ্যে আটকে যায়, তাই এগুলো সরাসরি ড্রাইভ প্রিন্টারে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে ভালো।<ref name="SDSU Materials Library"/> ==আদর্শ সহায়ক উপকরণ== [[File:Rapid-dino.jpg|thumb|মুদ্রণের সময় বস্তুগুলিকে সাময়িকভাবে ধরে রাখার জন্য সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।]] ===পিভিএ=== পিভিএ (পলিভিনাইল অ্যালকোহল) পানিতে দ্রবণীয়, অর্থাৎ এই উপাদানটি পানিতে গলে যায় কিন্তু মূল প্লাস্টিক উপাদান অক্ষত থাকে।<ref name="SDSU Materials Library"/> এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি দ্বৈত এক্সট্রুডার বা বহুম্যাটেরিয়াল প্রিন্টারে সহায়ক উপাদান হিসেবে আদর্শ। কারণ এতে করে প্রিন্ট শেষ হওয়ার পর সহায়ক কাঠামো হাত দিয়ে খুলে না ফেলে সহজেই পানিতে গলিয়ে সরিয়ে ফেলা যায়। ==যৌগিক উপকরণ== যৌগিক উপকরণ এমন উপকরণকে বোঝায় যা একটি মুদ্রণযোগ্য উপকরণের সঙ্গে এমন কোনো উপকরণকে মিশিয়ে তৈরি করা হয় যা সাধারণভাবে মুদ্রণ করা যায় না। এর ফলে প্রাপ্ত উপকরণটি বিশেষ কিছু গুণাবলি অর্জন করে এবং একই সাথে এই ধরনের উপকরণ ব্যবহারে কিছু বিশেষ চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। ===যৌগিক উপকরণের উদাহরণ=== * ম্যাগনেটিক আয়রন পিএলএ - এই ফিলামেন্টে আয়রনের গুঁড়া মেশানো থাকে, ফলে প্রিন্ট করা বস্তু শক্তিশালী চুম্বকের আকর্ষণে সাড়া দেয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরিচা ধরতে পারে।<ref>{{cite web |title=Magnetic Iron PLA Magnetic 3D Printer Filament |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/magnetic-iron-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref><ref>{{cite web |title=Iron-filled Metal Composite PLA |url=https://www.proto-pasta.com/products/magnetic-iron-pla |website=ProtoPlant, makers of Proto-pasta |accessdate=6 November 2020}}</ref> * কন্ডাক্টিভ পিএলএ - এই ধরনের পিএলএ বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী হয় এবং সাধারণ ইলেকট্রনিক্সের জন্য অল্পমাত্রার বৈদ্যুতিক প্রবাহ পরিবহন করতে পারে অথবা যন্ত্রাংশকে টাচস্ক্রিন সক্রিয় করতে সক্ষম করে তোলে।<ref>{{cite web |title=Conductive PLA |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/conductive-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref> ==রেজিন== এসএলএ প্রিন্টারগুলো ফিলামেন্টের পরিবর্তে তরল রেজিন ব্যবহার করে। এই রেজিনগুলো সাধারণত রঙিন করতে রঞ্জক ব্যবহার করা যায়।<ref>{{cite web |title=Color Kit |url=https://formlabs.com/store/color-kit/ |website=Formlabs |access-date=30 November 2020 |language=en-us}}</ref><ref>{{cite web |title=How Do I Dye Resin 3D Prints? - Easy To Create Custom Colored Resin |url=https://www.3dprintedminiature.com/how-do-i-dye-resin-3d-prints/ |website=3D Printed Miniatures for Gaming or Display |access-date=30 November 2020 |date=31 January 2020}}</ref> ==অপ্রচলিত উপকরণ== সরাসরি বিরল উপকরণে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার জন্য তৈরি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রও বিদ্যমান।<ref>{{cite web |title=CES 2014: 3D food printers create sweets and chocolates |url=https://www.bbc.com/news/technology-25647918 |website=BBC News |accessdate=6 November 2020 |date=8 January 2014}}</ref><ref>{{cite web |title=Engineers Create A Titanium Rib Cage Worthy Of Wolverine |url=https://www.npr.org/sections/health-shots/2015/09/15/440361621/engineers-create-a-titanium-rib-cage-worthy-of-wolverine |website=NPR.org |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তবে অনেক সময় প্রচলিত উপকরণে একটি ছাঁচ তৈরি করে সেটি ব্যবহার করে চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করাই বেশি উপযুক্ত হয়।<ref>{{cite web |last1=Says |first1=Jobfor778 |title=The beginner's guide to mold making and casting |url=https://blog.prusaprinters.org/the-beginners-guide-to-mold-making-and-casting_31561/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=7 February 2020}}</ref><ref>{{cite web |title=Casting Metal Parts And Silicone Molds From 3D Prints |url=https://hackaday.com/2018/02/25/casting-metal-parts-and-silicone-molds-from-3d-prints/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=25 February 2018}}</ref> বিশেষ করে খাদ্য ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার ক্ষেত্রে অনন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ খাদ্যকে এমনভাবে প্রিন্ট করতে হবে যাতে দূষণ এড়ানো যায় এবং এটি খাওয়ার জন্য নিরাপদ হয়।<ref>{{cite web |title=Maker Faire NY: Cocoa Press Chocolate Printer |url=https://hackaday.com/2018/09/29/maker-faire-ny-cocoa-press-chocolate-printer/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=29 September 2018}}</ref> * খাদ্য ** চকলেট<ref>{{cite web |last1=Mishan |first1=Ligaya |title=The Secret Ingredient for These Desserts: A 3-D Printer (Published 2019) |url=https://www.nytimes.com/2019/02/21/t-magazine/3d-printed-food-dessert.html |website=The New York Times |access-date=29 November 2020 |date=21 February 2019}}</ref> ** পিৎজা উপকরণ (মণ্ড, সস ও পনীর)<ref>{{cite web |title=NASA’s 3D Food Printer Will Make Pizza at Amusement Parks |url=https://www.vice.com/en/article/aekjnb/nasas-3d-food-printer-will-make-pizza-at-amusement-parks |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> * ধাতু * বেলেপাথর <gallery mode="packed" heights="200"> File:Ventury-jewellery-series-by-emmanuel touraine-for-ventury.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা গহনা File:3d printed cookies.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা কুকিজ File:3D printed sugar cube.gk.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা ঘনক। </gallery> ==উপকরণ সংরক্ষণ== সম্ভব হলে এফএফএফ ফিলামেন্টগুলোকে শুকনো পরিবেশে সংরক্ষণ করা উচিত যাতে আর্দ্রতা ও ধুলা থেকে উপকরণের দূষণ রোধ করা যায়।<ref>{{cite web |title=Filament dryboxes and alternative spool holders - not only for MMU2S |url=https://blog.prusaprinters.org/dryboxes-and-alternative-spool-holders-not-only-for-multimaterial-upgrade_30525/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=26 July 2019}}</ref> যদি এটি সম্ভব না হয় তাহলে ফিলামেন্ট ফিড লাইনে একটি ধুলা পরিশোধক ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref>{{cite web |title=Filament Dust Filter Helps Keep Your Print Quality High |url=https://hackaday.com/2020/09/06/filament-dust-filter-helps-keep-your-print-quality-high/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=6 September 2020}}</ref> ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} {{status|100%}} {{BookCat}} rud589yv1kl9drzst56sz3ttfdlbgcv 85272 85271 2025-06-25T14:21:23Z Mehedi Abedin 7113 85272 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==প্লাস্টিক== [[File:Makerbot Store, Manhattan (NY, USA) (8764959982).jpg|thumb|upright=2|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রের উপকরণগুলো বিভিন্ন রঙ এবং ভৌত বৈশিষ্ট্য সহ পাওয়া যায়।]] এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্যাসের ফিলামেন্ট গ্রহণ করে। কিছু এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ সহজে ব্যবহারের জন্য পেলেট ব্যবহারে উপযোগী করে পরিবর্তিত করা হয়।<ref>{{cite web |title=10 Tips for Converting a 3D Printer to Pellet Extrusion {{!}} Make: |url=https://makezine.com/2020/11/25/10-tips-for-converting-a-3d-printer-to-pellet-extrusion/ |website=Make: DIY Projects and Ideas for Makers |access-date=30 November 2020 |language=en |date=25 November 2020}}</ref> ===পিএলএ=== পিএলএ (পলিল্যাকটিক অ্যাসিড) একটি সাধারণ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ উপকরণ। এটি সস্তা এবং ব্যবহার করা সহজ হওয়ায় নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্যও একটি বহুল ব্যবহৃত সাধারণ উপকরণ।<ref name="Design Review 3D Printer">{{cite web |title=3D Printer Filaments: Definitions, Applications, and Tips |url=https://www.designreview.byu.edu/collections/3D%20Printer%20Filaments:%20Definitions,%20Applications,%20and%20Tips |accessdate=6 November 2020}}</ref> এবিএস ব্যবহারের তুলনায় পিএলএ ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে অপেক্ষাকৃত কম কণিকা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety">{{cite web |title=3D Printer Safety – Environment, Health, and Safety |url=https://aeroastro-ehs.mit.edu/resources/3d-printer-safety/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এবিএস=== [[File:ABS filament spool.jpg|thumb|এক রিল এবিএস ফিলামেন্ট।]] এবিএস (অ্যাক্রিলোনাইট্রাইল বিউটাডাইন স্টাইরিন) সস্তা ও শক্তিশালী একটি ফিলামেন্ট হলেও ভালোভাবে প্রিন্ট করার জন্য সঠিক পরিবেশের প্রয়োজন।<ref name="SDSU Materials Library"/> পিএলএ ব্যবহারের তুলনায় এবিএস ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে বেশি কণা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety"/><ref>{{cite web |title=Particles Emitted by Consumer 3D Printers Could Hurt Indoor Air Quality |url=https://www.news.gatech.edu/2019/10/07/particles-emitted-consumer-3d-printers-could-hurt-indoor-air-quality |website=www.news.gatech.edu |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তাই এবিএস দিয়ে প্রিন্ট করার সময় যথাযথ বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।<ref name="SDSU Materials Library">{{cite web |last2=White |first2=Lindsay |title=Materials for 3D Printing – build IT @SDSU Library |url=https://buildit.sdsu.edu/materials-for-3d-printing/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এইচআইপিএস=== এইচআইপিএস (হাই ইমপ্যাক্ট পলিস্টাইরিন) ব্যবহার করা সহজ এবং এটি ব্যয়বহুল নয় বলে এটি নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>{{cite web |title=Printing Materials – Innovation Studio |url=https://innovationstudio.mechse.illinois.edu/design-resources/3d-printable-materials/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===পিইটিজি=== পিইটিজি (পলিইথিলিন টেরেফথালেট গ্লাইকল) প্রিন্টগুলো ভিন্ন রাসায়নিক গঠন সত্ত্বেও বাহ্যিকভাবে এবিএস প্রিন্টের মতোই দেখতে হয়। পিইটিজি এবিএস-এর চেয়ে কম উদ্বায়ী এবং বিভিন্ন প্রিন্টিং পরিবেশে বেশি স্থিতিশীল থাকে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> পিইটিজি সরাসরি কাঁচের বেডে প্রিন্ট করা যায় না।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এর জন্য একটি মধ্যবর্তী স্তর—যেমন টেপ—ব্যবহার করা আবশ্যক।<ref name="UCSF Loop"/> ===নাইলন=== [[File:3D printed snow machine nozzle.jpg|thumb|নাইলন ফিলামেন্টের একটি রিল, যার উপরে একটি প্রিন্ট করা নমুনা বস্তু রাখা আছে।]] নাইলন ত্রিমাত্রিক মুদ্রণগুলো সাধারণত কিছুটা নমনীয় এবং টেকসই বলে পরিচিত।<ref name="UCSF Loop">{{cite web |title=Closing the Loop On 3D Printing |url=https://www.library.ucsf.edu/news/closing-the-loop-on-3d-printing/ |website=UCSF Library |access-date=29 November 2020 |date=30 November 2017}}</ref><ref>{{cite web |last1=Meher |first1=Robin |title=Library Guides: 3D Printing at the Library of Engineering and Science: Filament Guide |url=https://guides.lib.purdue.edu/3dprinting/filament |website=guides.lib.purdue.edu |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> নাইলন বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত করা যায়, যার ফলে এটি বিভিন্ন রঙের প্রিন্টিং উপাদান তৈরি করতে সক্ষম।<ref name="UCSF Loop"/> নাইলন খুবই সংবেদনশীল এবং এর সাথে কাজ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হতে পারে।<ref name="SDSU Materials Library"/> ===নমনীয়=== নমনীয় ফিলামেন্টগুলি কিনতে ব্যয়বহুল এবং ব্যবহারেও সংবেদনশীল, তবে এগুলো প্রিন্টকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করে যা মুদ্রণ সামগ্রীকে সামান্য বিকৃত বা নমন হতে সক্ষম করে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এই ধরনের ফিলামেন্ট প্রায়ই প্রিন্টারের মধ্যে আটকে যায়, তাই এগুলো সরাসরি ড্রাইভ প্রিন্টারে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে ভালো।<ref name="SDSU Materials Library"/> ==আদর্শ সহায়ক উপকরণ== [[File:Rapid-dino.jpg|thumb|মুদ্রণের সময় বস্তুগুলিকে সাময়িকভাবে ধরে রাখার জন্য সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।]] ===পিভিএ=== পিভিএ (পলিভিনাইল অ্যালকোহল) পানিতে দ্রবণীয়, অর্থাৎ এই উপাদানটি পানিতে গলে যায় কিন্তু মূল প্লাস্টিক উপাদান অক্ষত থাকে।<ref name="SDSU Materials Library"/> এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি দ্বৈত এক্সট্রুডার বা বহুম্যাটেরিয়াল প্রিন্টারে সহায়ক উপাদান হিসেবে আদর্শ। কারণ এতে করে প্রিন্ট শেষ হওয়ার পর সহায়ক কাঠামো হাত দিয়ে খুলে না ফেলে সহজেই পানিতে গলিয়ে সরিয়ে ফেলা যায়। ==যৌগিক উপকরণ== যৌগিক উপকরণ এমন উপকরণকে বোঝায় যা একটি মুদ্রণযোগ্য উপকরণের সঙ্গে এমন কোনো উপকরণকে মিশিয়ে তৈরি করা হয় যা সাধারণভাবে মুদ্রণ করা যায় না। এর ফলে প্রাপ্ত উপকরণটি বিশেষ কিছু গুণাবলি অর্জন করে এবং একই সাথে এই ধরনের উপকরণ ব্যবহারে কিছু বিশেষ চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। ===যৌগিক উপকরণের উদাহরণ=== * ম্যাগনেটিক আয়রন পিএলএ - এই ফিলামেন্টে লোহার গুঁড়া মেশানো থাকে, ফলে প্রিন্ট করা বস্তু শক্তিশালী চুম্বকের আকর্ষণে সাড়া দেয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরিচা ধরতে পারে।<ref>{{cite web |title=Magnetic Iron PLA Magnetic 3D Printer Filament |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/magnetic-iron-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref><ref>{{cite web |title=Iron-filled Metal Composite PLA |url=https://www.proto-pasta.com/products/magnetic-iron-pla |website=ProtoPlant, makers of Proto-pasta |accessdate=6 November 2020}}</ref> * কন্ডাক্টিভ পিএলএ - এই ধরনের পিএলএ বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী হয় এবং সাধারণ ইলেকট্রনিক্সের জন্য অল্পমাত্রার বৈদ্যুতিক প্রবাহ পরিবহন করতে পারে অথবা যন্ত্রাংশকে টাচস্ক্রিন সক্রিয় করতে সক্ষম করে তোলে।<ref>{{cite web |title=Conductive PLA |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/conductive-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref> ==রেজিন== এসএলএ প্রিন্টারগুলো ফিলামেন্টের পরিবর্তে তরল রেজিন ব্যবহার করে। এই রেজিনগুলো সাধারণত রঙিন করতে রঞ্জক ব্যবহার করা যায়।<ref>{{cite web |title=Color Kit |url=https://formlabs.com/store/color-kit/ |website=Formlabs |access-date=30 November 2020 |language=en-us}}</ref><ref>{{cite web |title=How Do I Dye Resin 3D Prints? - Easy To Create Custom Colored Resin |url=https://www.3dprintedminiature.com/how-do-i-dye-resin-3d-prints/ |website=3D Printed Miniatures for Gaming or Display |access-date=30 November 2020 |date=31 January 2020}}</ref> ==অপ্রচলিত উপকরণ== সরাসরি বিরল উপকরণে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার জন্য তৈরি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রও বিদ্যমান।<ref>{{cite web |title=CES 2014: 3D food printers create sweets and chocolates |url=https://www.bbc.com/news/technology-25647918 |website=BBC News |accessdate=6 November 2020 |date=8 January 2014}}</ref><ref>{{cite web |title=Engineers Create A Titanium Rib Cage Worthy Of Wolverine |url=https://www.npr.org/sections/health-shots/2015/09/15/440361621/engineers-create-a-titanium-rib-cage-worthy-of-wolverine |website=NPR.org |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তবে অনেক সময় প্রচলিত উপকরণে একটি ছাঁচ তৈরি করে সেটি ব্যবহার করে চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করাই বেশি উপযুক্ত হয়।<ref>{{cite web |last1=Says |first1=Jobfor778 |title=The beginner's guide to mold making and casting |url=https://blog.prusaprinters.org/the-beginners-guide-to-mold-making-and-casting_31561/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=7 February 2020}}</ref><ref>{{cite web |title=Casting Metal Parts And Silicone Molds From 3D Prints |url=https://hackaday.com/2018/02/25/casting-metal-parts-and-silicone-molds-from-3d-prints/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=25 February 2018}}</ref> বিশেষ করে খাদ্য ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার ক্ষেত্রে অনন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ খাদ্যকে এমনভাবে প্রিন্ট করতে হবে যাতে দূষণ এড়ানো যায় এবং এটি খাওয়ার জন্য নিরাপদ হয়।<ref>{{cite web |title=Maker Faire NY: Cocoa Press Chocolate Printer |url=https://hackaday.com/2018/09/29/maker-faire-ny-cocoa-press-chocolate-printer/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=29 September 2018}}</ref> * খাদ্য ** চকলেট<ref>{{cite web |last1=Mishan |first1=Ligaya |title=The Secret Ingredient for These Desserts: A 3-D Printer (Published 2019) |url=https://www.nytimes.com/2019/02/21/t-magazine/3d-printed-food-dessert.html |website=The New York Times |access-date=29 November 2020 |date=21 February 2019}}</ref> ** পিৎজা উপকরণ (মণ্ড, সস ও পনীর)<ref>{{cite web |title=NASA’s 3D Food Printer Will Make Pizza at Amusement Parks |url=https://www.vice.com/en/article/aekjnb/nasas-3d-food-printer-will-make-pizza-at-amusement-parks |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> * ধাতু * বেলেপাথর <gallery mode="packed" heights="200"> File:Ventury-jewellery-series-by-emmanuel touraine-for-ventury.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা গহনা File:3d printed cookies.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা কুকিজ File:3D printed sugar cube.gk.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা ঘনক। </gallery> ==উপকরণ সংরক্ষণ== সম্ভব হলে এফএফএফ ফিলামেন্টগুলোকে শুকনো পরিবেশে সংরক্ষণ করা উচিত যাতে আর্দ্রতা ও ধুলা থেকে উপকরণের দূষণ রোধ করা যায়।<ref>{{cite web |title=Filament dryboxes and alternative spool holders - not only for MMU2S |url=https://blog.prusaprinters.org/dryboxes-and-alternative-spool-holders-not-only-for-multimaterial-upgrade_30525/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=26 July 2019}}</ref> যদি এটি সম্ভব না হয় তাহলে ফিলামেন্ট ফিড লাইনে একটি ধুলা পরিশোধক ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref>{{cite web |title=Filament Dust Filter Helps Keep Your Print Quality High |url=https://hackaday.com/2020/09/06/filament-dust-filter-helps-keep-your-print-quality-high/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=6 September 2020}}</ref> ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} {{status|100%}} {{BookCat}} epsewe4bdr0eu1lhza2xjha8459x01b 85273 85272 2025-06-25T14:22:35Z Mehedi Abedin 7113 85273 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==প্লাস্টিক== [[File:Makerbot Store, Manhattan (NY, USA) (8764959982).jpg|thumb|upright=2|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রের উপকরণগুলো বিভিন্ন রঙ এবং ভৌত বৈশিষ্ট্য সহ পাওয়া যায়।]] এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্যাসের ফিলামেন্ট গ্রহণ করে। কিছু এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ সহজে ব্যবহারের জন্য পেলেট ব্যবহারে উপযোগী করে পরিবর্তিত করা হয়।<ref>{{cite web |title=10 Tips for Converting a 3D Printer to Pellet Extrusion {{!}} Make: |url=https://makezine.com/2020/11/25/10-tips-for-converting-a-3d-printer-to-pellet-extrusion/ |website=Make: DIY Projects and Ideas for Makers |access-date=30 November 2020 |language=en |date=25 November 2020}}</ref> ===পিএলএ=== পিএলএ (পলিল্যাকটিক অ্যাসিড) একটি সাধারণ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ উপকরণ। এটি সস্তা এবং ব্যবহার করা সহজ হওয়ায় নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্যও একটি বহুল ব্যবহৃত সাধারণ উপকরণ।<ref name="Design Review 3D Printer">{{cite web |title=3D Printer Filaments: Definitions, Applications, and Tips |url=https://www.designreview.byu.edu/collections/3D%20Printer%20Filaments:%20Definitions,%20Applications,%20and%20Tips |accessdate=6 November 2020}}</ref> এবিএস ব্যবহারের তুলনায় পিএলএ ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে অপেক্ষাকৃত কম কণিকা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety">{{cite web |title=3D Printer Safety – Environment, Health, and Safety |url=https://aeroastro-ehs.mit.edu/resources/3d-printer-safety/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এবিএস=== [[File:ABS filament spool.jpg|thumb|এক রিল এবিএস ফিলামেন্ট।]] এবিএস (অ্যাক্রিলোনাইট্রাইল বিউটাডাইন স্টাইরিন) সস্তা ও শক্তিশালী একটি ফিলামেন্ট হলেও ভালোভাবে প্রিন্ট করার জন্য সঠিক পরিবেশের প্রয়োজন।<ref name="SDSU Materials Library"/> পিএলএ ব্যবহারের তুলনায় এবিএস ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে বেশি কণা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety"/><ref>{{cite web |title=Particles Emitted by Consumer 3D Printers Could Hurt Indoor Air Quality |url=https://www.news.gatech.edu/2019/10/07/particles-emitted-consumer-3d-printers-could-hurt-indoor-air-quality |website=www.news.gatech.edu |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তাই এবিএস দিয়ে প্রিন্ট করার সময় যথাযথ বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।<ref name="SDSU Materials Library">{{cite web |last2=White |first2=Lindsay |title=Materials for 3D Printing – build IT @SDSU Library |url=https://buildit.sdsu.edu/materials-for-3d-printing/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এইচআইপিএস=== এইচআইপিএস (হাই ইমপ্যাক্ট পলিস্টাইরিন) ব্যবহার করা সহজ এবং এটি ব্যয়বহুল নয় বলে এটি নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>{{cite web |title=Printing Materials – Innovation Studio |url=https://innovationstudio.mechse.illinois.edu/design-resources/3d-printable-materials/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===পিইটিজি=== পিইটিজি (পলিইথিলিন টেরেফথালেট গ্লাইকল) প্রিন্টগুলো ভিন্ন রাসায়নিক গঠন সত্ত্বেও বাহ্যিকভাবে এবিএস প্রিন্টের মতোই দেখতে হয়। পিইটিজি এবিএস-এর চেয়ে কম উদ্বায়ী এবং বিভিন্ন প্রিন্টিং পরিবেশে বেশি স্থিতিশীল থাকে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> পিইটিজি সরাসরি কাঁচের বেডে প্রিন্ট করা যায় না।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এর জন্য একটি মধ্যবর্তী স্তর—যেমন টেপ—ব্যবহার করা আবশ্যক।<ref name="UCSF Loop"/> ===নাইলন=== [[File:3D printed snow machine nozzle.jpg|thumb|নাইলন ফিলামেন্টের একটি রিল, যার উপরে একটি প্রিন্ট করা নমুনা বস্তু রাখা আছে।]] নাইলন ত্রিমাত্রিক মুদ্রণগুলো সাধারণত কিছুটা নমনীয় এবং টেকসই বলে পরিচিত।<ref name="UCSF Loop">{{cite web |title=Closing the Loop On 3D Printing |url=https://www.library.ucsf.edu/news/closing-the-loop-on-3d-printing/ |website=UCSF Library |access-date=29 November 2020 |date=30 November 2017}}</ref><ref>{{cite web |last1=Meher |first1=Robin |title=Library Guides: 3D Printing at the Library of Engineering and Science: Filament Guide |url=https://guides.lib.purdue.edu/3dprinting/filament |website=guides.lib.purdue.edu |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> নাইলন বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত করা যায়, যার ফলে এটি বিভিন্ন রঙের প্রিন্টিং উপাদান তৈরি করতে সক্ষম।<ref name="UCSF Loop"/> নাইলন খুবই সংবেদনশীল এবং এটা নিয়ে কাজ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হতে পারে।<ref name="SDSU Materials Library"/> ===নমনীয়=== নমনীয় ফিলামেন্টগুলি কিনতে ব্যয়বহুল এবং ব্যবহারেও সংবেদনশীল, তবে এগুলো প্রিন্টকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করে যা মুদ্রণ সামগ্রীকে সামান্য বিকৃত বা নমন হতে সক্ষম করে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এই ধরনের ফিলামেন্ট প্রায়ই প্রিন্টারের মধ্যে আটকে যায়, তাই এগুলো সরাসরি ড্রাইভ প্রিন্টারে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে ভালো।<ref name="SDSU Materials Library"/> ==আদর্শ সহায়ক উপকরণ== [[File:Rapid-dino.jpg|thumb|মুদ্রণের সময় বস্তুগুলিকে সাময়িকভাবে ধরে রাখার জন্য সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।]] ===পিভিএ=== পিভিএ (পলিভিনাইল অ্যালকোহল) পানিতে দ্রবণীয়, অর্থাৎ এই উপাদানটি পানিতে গলে যায় কিন্তু মূল প্লাস্টিক উপাদান অক্ষত থাকে।<ref name="SDSU Materials Library"/> এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি দ্বৈত এক্সট্রুডার বা বহুম্যাটেরিয়াল প্রিন্টারে সহায়ক উপাদান হিসেবে আদর্শ। কারণ এতে করে প্রিন্ট শেষ হওয়ার পর সহায়ক কাঠামো হাত দিয়ে খুলে না ফেলে সহজেই পানিতে গলিয়ে সরিয়ে ফেলা যায়। ==যৌগিক উপকরণ== যৌগিক উপকরণ এমন উপকরণকে বোঝায় যা একটি মুদ্রণযোগ্য উপকরণের সঙ্গে এমন কোনো উপকরণকে মিশিয়ে তৈরি করা হয় যা সাধারণভাবে মুদ্রণ করা যায় না। এর ফলে প্রাপ্ত উপকরণটি বিশেষ কিছু গুণাবলি অর্জন করে এবং একই সাথে এই ধরনের উপকরণ ব্যবহারে কিছু বিশেষ চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। ===যৌগিক উপকরণের উদাহরণ=== * ম্যাগনেটিক আয়রন পিএলএ - এই ফিলামেন্টে লোহার গুঁড়া মেশানো থাকে, ফলে প্রিন্ট করা বস্তু শক্তিশালী চুম্বকের আকর্ষণে সাড়া দেয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরিচা ধরতে পারে।<ref>{{cite web |title=Magnetic Iron PLA Magnetic 3D Printer Filament |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/magnetic-iron-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref><ref>{{cite web |title=Iron-filled Metal Composite PLA |url=https://www.proto-pasta.com/products/magnetic-iron-pla |website=ProtoPlant, makers of Proto-pasta |accessdate=6 November 2020}}</ref> * কন্ডাক্টিভ পিএলএ - এই ধরনের পিএলএ বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী হয় এবং সাধারণ ইলেকট্রনিক্সের জন্য অল্পমাত্রার বৈদ্যুতিক প্রবাহ পরিবহন করতে পারে অথবা যন্ত্রাংশকে টাচস্ক্রিন সক্রিয় করতে সক্ষম করে তোলে।<ref>{{cite web |title=Conductive PLA |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/conductive-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref> ==রেজিন== এসএলএ প্রিন্টারগুলো ফিলামেন্টের পরিবর্তে তরল রেজিন ব্যবহার করে। এই রেজিনগুলো সাধারণত রঙিন করতে রঞ্জক ব্যবহার করা যায়।<ref>{{cite web |title=Color Kit |url=https://formlabs.com/store/color-kit/ |website=Formlabs |access-date=30 November 2020 |language=en-us}}</ref><ref>{{cite web |title=How Do I Dye Resin 3D Prints? - Easy To Create Custom Colored Resin |url=https://www.3dprintedminiature.com/how-do-i-dye-resin-3d-prints/ |website=3D Printed Miniatures for Gaming or Display |access-date=30 November 2020 |date=31 January 2020}}</ref> ==অপ্রচলিত উপকরণ== সরাসরি বিরল উপকরণে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার জন্য তৈরি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রও বিদ্যমান।<ref>{{cite web |title=CES 2014: 3D food printers create sweets and chocolates |url=https://www.bbc.com/news/technology-25647918 |website=BBC News |accessdate=6 November 2020 |date=8 January 2014}}</ref><ref>{{cite web |title=Engineers Create A Titanium Rib Cage Worthy Of Wolverine |url=https://www.npr.org/sections/health-shots/2015/09/15/440361621/engineers-create-a-titanium-rib-cage-worthy-of-wolverine |website=NPR.org |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তবে অনেক সময় প্রচলিত উপকরণে একটি ছাঁচ তৈরি করে সেটি ব্যবহার করে চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করাই বেশি উপযুক্ত হয়।<ref>{{cite web |last1=Says |first1=Jobfor778 |title=The beginner's guide to mold making and casting |url=https://blog.prusaprinters.org/the-beginners-guide-to-mold-making-and-casting_31561/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=7 February 2020}}</ref><ref>{{cite web |title=Casting Metal Parts And Silicone Molds From 3D Prints |url=https://hackaday.com/2018/02/25/casting-metal-parts-and-silicone-molds-from-3d-prints/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=25 February 2018}}</ref> বিশেষ করে খাদ্য ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার ক্ষেত্রে অনন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ খাদ্যকে এমনভাবে প্রিন্ট করতে হবে যাতে দূষণ এড়ানো যায় এবং এটি খাওয়ার জন্য নিরাপদ হয়।<ref>{{cite web |title=Maker Faire NY: Cocoa Press Chocolate Printer |url=https://hackaday.com/2018/09/29/maker-faire-ny-cocoa-press-chocolate-printer/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=29 September 2018}}</ref> * খাদ্য ** চকলেট<ref>{{cite web |last1=Mishan |first1=Ligaya |title=The Secret Ingredient for These Desserts: A 3-D Printer (Published 2019) |url=https://www.nytimes.com/2019/02/21/t-magazine/3d-printed-food-dessert.html |website=The New York Times |access-date=29 November 2020 |date=21 February 2019}}</ref> ** পিৎজা উপকরণ (মণ্ড, সস ও পনীর)<ref>{{cite web |title=NASA’s 3D Food Printer Will Make Pizza at Amusement Parks |url=https://www.vice.com/en/article/aekjnb/nasas-3d-food-printer-will-make-pizza-at-amusement-parks |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> * ধাতু * বেলেপাথর <gallery mode="packed" heights="200"> File:Ventury-jewellery-series-by-emmanuel touraine-for-ventury.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা গহনা File:3d printed cookies.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা কুকিজ File:3D printed sugar cube.gk.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা ঘনক। </gallery> ==উপকরণ সংরক্ষণ== সম্ভব হলে এফএফএফ ফিলামেন্টগুলোকে শুকনো পরিবেশে সংরক্ষণ করা উচিত যাতে আর্দ্রতা ও ধুলা থেকে উপকরণের দূষণ রোধ করা যায়।<ref>{{cite web |title=Filament dryboxes and alternative spool holders - not only for MMU2S |url=https://blog.prusaprinters.org/dryboxes-and-alternative-spool-holders-not-only-for-multimaterial-upgrade_30525/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=26 July 2019}}</ref> যদি এটি সম্ভব না হয় তাহলে ফিলামেন্ট ফিড লাইনে একটি ধুলা পরিশোধক ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref>{{cite web |title=Filament Dust Filter Helps Keep Your Print Quality High |url=https://hackaday.com/2020/09/06/filament-dust-filter-helps-keep-your-print-quality-high/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=6 September 2020}}</ref> ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} {{status|100%}} {{BookCat}} f85dnx537c7wx9vzpqmepi49d1b222z 85274 85273 2025-06-25T14:23:12Z Mehedi Abedin 7113 85274 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==প্লাস্টিক== [[File:Makerbot Store, Manhattan (NY, USA) (8764959982).jpg|thumb|upright=2|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রের উপকরণগুলো বিভিন্ন রঙ এবং ভৌত বৈশিষ্ট্য সহ পাওয়া যায়।]] এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্যাসের ফিলামেন্ট গ্রহণ করে। কিছু এফএফএফ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ সহজে ব্যবহারের জন্য পেলেট ব্যবহারে উপযোগী করে পরিবর্তিত করা হয়।<ref>{{cite web |title=10 Tips for Converting a 3D Printer to Pellet Extrusion {{!}} Make: |url=https://makezine.com/2020/11/25/10-tips-for-converting-a-3d-printer-to-pellet-extrusion/ |website=Make: DIY Projects and Ideas for Makers |access-date=30 November 2020 |language=en |date=25 November 2020}}</ref> ===পিএলএ=== পিএলএ (পলিল্যাকটিক অ্যাসিড) একটি সাধারণ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ উপকরণ। এটি সস্তা এবং ব্যবহার করা সহজ হওয়ায় নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্যও একটি বহুল ব্যবহৃত সাধারণ উপকরণ।<ref name="Design Review 3D Printer">{{cite web |title=3D Printer Filaments: Definitions, Applications, and Tips |url=https://www.designreview.byu.edu/collections/3D%20Printer%20Filaments:%20Definitions,%20Applications,%20and%20Tips |accessdate=6 November 2020}}</ref> এবিএস ব্যবহারের তুলনায় পিএলএ ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে অপেক্ষাকৃত কম কণিকা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety">{{cite web |title=3D Printer Safety – Environment, Health, and Safety |url=https://aeroastro-ehs.mit.edu/resources/3d-printer-safety/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এবিএস=== [[File:ABS filament spool.jpg|thumb|এক রিল এবিএস ফিলামেন্ট।]] এবিএস (অ্যাক্রিলোনাইট্রাইল বিউটাডাইন স্টাইরিন) সস্তা ও শক্তিশালী একটি ফিলামেন্ট হলেও ভালোভাবে প্রিন্ট করার জন্য সঠিক পরিবেশের প্রয়োজন।<ref name="SDSU Materials Library"/> পিএলএ ব্যবহারের তুলনায় এবিএস ব্যবহারে একটি সাধারণ এফএফএফ প্রিন্টার থেকে বেশি কণা নির্গত হয়।<ref name="MIT 3D Printer Safety"/><ref>{{cite web |title=Particles Emitted by Consumer 3D Printers Could Hurt Indoor Air Quality |url=https://www.news.gatech.edu/2019/10/07/particles-emitted-consumer-3d-printers-could-hurt-indoor-air-quality |website=www.news.gatech.edu |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তাই এবিএস দিয়ে প্রিন্ট করার সময় যথাযথ বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।<ref name="SDSU Materials Library">{{cite web |last2=White |first2=Lindsay |title=Materials for 3D Printing – build IT @SDSU Library |url=https://buildit.sdsu.edu/materials-for-3d-printing/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===এইচআইপিএস=== এইচআইপিএস (হাই ইমপ্যাক্ট পলিস্টাইরিন) ব্যবহার করা সহজ এবং এটি ব্যয়বহুল নয় বলে এটি নতুনদের জন্য শুরু করার উপযুক্ত উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।<ref>{{cite web |title=Printing Materials – Innovation Studio |url=https://innovationstudio.mechse.illinois.edu/design-resources/3d-printable-materials/ |accessdate=6 November 2020}}</ref> ===পিইটিজি=== পিইটিজি (পলিইথিলিন টেরেফথালেট গ্লাইকল) প্রিন্টগুলো ভিন্ন রাসায়নিক গঠন সত্ত্বেও বাহ্যিকভাবে এবিএস প্রিন্টের মতোই দেখতে হয়। পিইটিজি এবিএস-এর চেয়ে কম উদ্বায়ী এবং বিভিন্ন প্রিন্টিং পরিবেশে বেশি স্থিতিশীল থাকে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> পিইটিজি সরাসরি কাঁচের বেডে প্রিন্ট করা যায় না।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এর জন্য একটি মধ্যবর্তী স্তর—যেমন টেপ—ব্যবহার করা আবশ্যক।<ref name="UCSF Loop"/> ===নাইলন=== [[File:3D printed snow machine nozzle.jpg|thumb|নাইলন ফিলামেন্টের একটি রিল, যার উপরে একটি প্রিন্ট করা নমুনা বস্তু রাখা আছে।]] নাইলন ত্রিমাত্রিক মুদ্রণগুলো সাধারণত কিছুটা নমনীয় এবং টেকসই বলে পরিচিত।<ref name="UCSF Loop">{{cite web |title=Closing the Loop On 3D Printing |url=https://www.library.ucsf.edu/news/closing-the-loop-on-3d-printing/ |website=UCSF Library |access-date=29 November 2020 |date=30 November 2017}}</ref><ref>{{cite web |last1=Meher |first1=Robin |title=Library Guides: 3D Printing at the Library of Engineering and Science: Filament Guide |url=https://guides.lib.purdue.edu/3dprinting/filament |website=guides.lib.purdue.edu |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> নাইলন বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত করা যায়, যার ফলে এটি বিভিন্ন রঙের প্রিন্টিং উপাদান তৈরি করতে সক্ষম।<ref name="UCSF Loop"/> নাইলন খুবই সংবেদনশীল এবং এটা নিয়ে কাজ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হতে পারে।<ref name="SDSU Materials Library"/> ===নমনীয় ফিলামেন্ট=== নমনীয় ফিলামেন্টগুলি ব্যয়বহুল এবং ব্যবহারেও সংবেদনশীল, তবে এগুলো প্রিন্টকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করে যা মুদ্রণ সামগ্রীকে সামান্য বিকৃত বা নমন হতে সক্ষম করে।<ref name="Design Review 3D Printer"/> এই ধরনের ফিলামেন্ট প্রায়ই প্রিন্টারের মধ্যে আটকে যায়, তাই এগুলো সরাসরি ড্রাইভ প্রিন্টারে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে ভালো।<ref name="SDSU Materials Library"/> ==আদর্শ সহায়ক উপকরণ== [[File:Rapid-dino.jpg|thumb|মুদ্রণের সময় বস্তুগুলিকে সাময়িকভাবে ধরে রাখার জন্য সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।]] ===পিভিএ=== পিভিএ (পলিভিনাইল অ্যালকোহল) পানিতে দ্রবণীয়, অর্থাৎ এই উপাদানটি পানিতে গলে যায় কিন্তু মূল প্লাস্টিক উপাদান অক্ষত থাকে।<ref name="SDSU Materials Library"/> এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি দ্বৈত এক্সট্রুডার বা বহুম্যাটেরিয়াল প্রিন্টারে সহায়ক উপাদান হিসেবে আদর্শ। কারণ এতে করে প্রিন্ট শেষ হওয়ার পর সহায়ক কাঠামো হাত দিয়ে খুলে না ফেলে সহজেই পানিতে গলিয়ে সরিয়ে ফেলা যায়। ==যৌগিক উপকরণ== যৌগিক উপকরণ এমন উপকরণকে বোঝায় যা একটি মুদ্রণযোগ্য উপকরণের সঙ্গে এমন কোনো উপকরণকে মিশিয়ে তৈরি করা হয় যা সাধারণভাবে মুদ্রণ করা যায় না। এর ফলে প্রাপ্ত উপকরণটি বিশেষ কিছু গুণাবলি অর্জন করে এবং একই সাথে এই ধরনের উপকরণ ব্যবহারে কিছু বিশেষ চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। ===যৌগিক উপকরণের উদাহরণ=== * ম্যাগনেটিক আয়রন পিএলএ - এই ফিলামেন্টে লোহার গুঁড়া মেশানো থাকে, ফলে প্রিন্ট করা বস্তু শক্তিশালী চুম্বকের আকর্ষণে সাড়া দেয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরিচা ধরতে পারে।<ref>{{cite web |title=Magnetic Iron PLA Magnetic 3D Printer Filament |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/magnetic-iron-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref><ref>{{cite web |title=Iron-filled Metal Composite PLA |url=https://www.proto-pasta.com/products/magnetic-iron-pla |website=ProtoPlant, makers of Proto-pasta |accessdate=6 November 2020}}</ref> * কন্ডাক্টিভ পিএলএ - এই ধরনের পিএলএ বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী হয় এবং সাধারণ ইলেকট্রনিক্সের জন্য অল্পমাত্রার বৈদ্যুতিক প্রবাহ পরিবহন করতে পারে অথবা যন্ত্রাংশকে টাচস্ক্রিন সক্রিয় করতে সক্ষম করে তোলে।<ref>{{cite web |title=Conductive PLA |url=https://www.lulzbot.com/store/filament/conductive-pla |website=LulzBot |accessdate=6 November 2020 |language=en |date=18 September 2015}}</ref> ==রেজিন== এসএলএ প্রিন্টারগুলো ফিলামেন্টের পরিবর্তে তরল রেজিন ব্যবহার করে। এই রেজিনগুলো সাধারণত রঙিন করতে রঞ্জক ব্যবহার করা যায়।<ref>{{cite web |title=Color Kit |url=https://formlabs.com/store/color-kit/ |website=Formlabs |access-date=30 November 2020 |language=en-us}}</ref><ref>{{cite web |title=How Do I Dye Resin 3D Prints? - Easy To Create Custom Colored Resin |url=https://www.3dprintedminiature.com/how-do-i-dye-resin-3d-prints/ |website=3D Printed Miniatures for Gaming or Display |access-date=30 November 2020 |date=31 January 2020}}</ref> ==অপ্রচলিত উপকরণ== সরাসরি বিরল উপকরণে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার জন্য তৈরি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রও বিদ্যমান।<ref>{{cite web |title=CES 2014: 3D food printers create sweets and chocolates |url=https://www.bbc.com/news/technology-25647918 |website=BBC News |accessdate=6 November 2020 |date=8 January 2014}}</ref><ref>{{cite web |title=Engineers Create A Titanium Rib Cage Worthy Of Wolverine |url=https://www.npr.org/sections/health-shots/2015/09/15/440361621/engineers-create-a-titanium-rib-cage-worthy-of-wolverine |website=NPR.org |accessdate=6 November 2020 |language=en}}</ref> তবে অনেক সময় প্রচলিত উপকরণে একটি ছাঁচ তৈরি করে সেটি ব্যবহার করে চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করাই বেশি উপযুক্ত হয়।<ref>{{cite web |last1=Says |first1=Jobfor778 |title=The beginner's guide to mold making and casting |url=https://blog.prusaprinters.org/the-beginners-guide-to-mold-making-and-casting_31561/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=7 February 2020}}</ref><ref>{{cite web |title=Casting Metal Parts And Silicone Molds From 3D Prints |url=https://hackaday.com/2018/02/25/casting-metal-parts-and-silicone-molds-from-3d-prints/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=25 February 2018}}</ref> বিশেষ করে খাদ্য ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করার ক্ষেত্রে অনন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ খাদ্যকে এমনভাবে প্রিন্ট করতে হবে যাতে দূষণ এড়ানো যায় এবং এটি খাওয়ার জন্য নিরাপদ হয়।<ref>{{cite web |title=Maker Faire NY: Cocoa Press Chocolate Printer |url=https://hackaday.com/2018/09/29/maker-faire-ny-cocoa-press-chocolate-printer/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=29 September 2018}}</ref> * খাদ্য ** চকলেট<ref>{{cite web |last1=Mishan |first1=Ligaya |title=The Secret Ingredient for These Desserts: A 3-D Printer (Published 2019) |url=https://www.nytimes.com/2019/02/21/t-magazine/3d-printed-food-dessert.html |website=The New York Times |access-date=29 November 2020 |date=21 February 2019}}</ref> ** পিৎজা উপকরণ (মণ্ড, সস ও পনীর)<ref>{{cite web |title=NASA’s 3D Food Printer Will Make Pizza at Amusement Parks |url=https://www.vice.com/en/article/aekjnb/nasas-3d-food-printer-will-make-pizza-at-amusement-parks |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> * ধাতু * বেলেপাথর <gallery mode="packed" heights="200"> File:Ventury-jewellery-series-by-emmanuel touraine-for-ventury.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা গহনা File:3d printed cookies.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা কুকিজ File:3D printed sugar cube.gk.jpg|ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা ঘনক। </gallery> ==উপকরণ সংরক্ষণ== সম্ভব হলে এফএফএফ ফিলামেন্টগুলোকে শুকনো পরিবেশে সংরক্ষণ করা উচিত যাতে আর্দ্রতা ও ধুলা থেকে উপকরণের দূষণ রোধ করা যায়।<ref>{{cite web |title=Filament dryboxes and alternative spool holders - not only for MMU2S |url=https://blog.prusaprinters.org/dryboxes-and-alternative-spool-holders-not-only-for-multimaterial-upgrade_30525/ |website=Prusa Printers |accessdate=6 November 2020 |date=26 July 2019}}</ref> যদি এটি সম্ভব না হয় তাহলে ফিলামেন্ট ফিড লাইনে একটি ধুলা পরিশোধক ব্যবহার করা যেতে পারে।<ref>{{cite web |title=Filament Dust Filter Helps Keep Your Print Quality High |url=https://hackaday.com/2020/09/06/filament-dust-filter-helps-keep-your-print-quality-high/ |website=Hackaday |accessdate=6 November 2020 |date=6 September 2020}}</ref> ==তথ্যসূত্র== {{reflist}} {{status|100%}} {{BookCat}} g5ih8sm5ol40digjmmyv2g4zo5ev87o ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ/ইতিহাস 0 26047 85275 81165 2025-06-25T14:24:32Z Mehedi Abedin 7113 85275 wikitext text/x-wiki ==উৎপত্তি== আধুনিক থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সূচনা ঘটে ১৯৮২ সালে, যখন ড. হিদেও কোদামা প্রথমবারের মতো থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।<ref>{{cite web |title=What You Need to Know About 3D Printing |url=http://ott.ua.edu/what-you-need-to-know-about-3d-printing/ |website=Technology Transfer |access-date=29 November 2020}}</ref> ১৯৮৪ সালে চার্লস হাল স্টেরিওলিথোগ্রাফি উদ্ভাবন করেন।<ref>{{cite web |title=History of 3D Printing Makerspace |url=https://blogs.lawrence.edu/makerspace/history/ |access-date=29 November 2020}}</ref> স্কট ক্রাম্প ১৯৮৯ সালে এফডিএম (ফিউজড ডিপোজিশন মডেলিং) বা এফএফএফ (ফিউজড ফিলামেন্ট ফেব্রিকেশন) প্রিন্টিং প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন যা আজকের দিনে সর্বাধিক ব্যবহৃত থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিগুলোর একটি।<ref>{{cite web |title=Closing the Loop On 3D Printing |url=https://www.library.ucsf.edu/news/closing-the-loop-on-3d-printing/ |website=UCSF Library |access-date=29 November 2020 |date=30 November 2017}}</ref> ২০০৪ সালে রেপর‍্যাপ (র‌্যাপিড প্রোটোটাইপার রেপ্লিকেটিং) নামে একটি ওপেন সোর্স প্রকল্প শুরু হয়, যার লক্ষ্য ছিল এমন থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি করা যা নিজেই নিজের কিছু অংশ প্রিন্ট করতে পারে। এই প্রকল্প থেকেই অনেক সাশ্রয়ী মূল্যের বাণিজ্যিক প্রিন্টারের সৃষ্টি হয় এবং থ্রিডি প্রিন্টিং সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সহজলভ্য হয়ে ওঠে।<ref>{{cite web |title=Materializing information: 3D printing and social change |url=https://journals.uic.edu/ojs/index.php/fm/article/download/3968/3273 |website=journals.uic.edu |access-date=29 November 2020}}</ref><ref>{{cite web |title=The Brutal Edit War Over a 3D Printer’s Wikipedia Page |url=https://www.vice.com/en/article/53d9vk/the-brutal-edit-war-over-a-3d-printers-wikipedia-page-reprap |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> <gallery mode="packed" heights="300"> File:Firstpart1.jpg|২০০৬ সালে প্রথম রেপর‍্যাপ একটি রেপর‍্যাপ যন্ত্রাংশ প্রিন্ট করে। File:First replication.jpg|প্রথম প্রতিলিপিকৃত রেপর‍্যাপ প্রিন্টার। File:Extrusion of hexagon 2nd layer closeup.jpg|একটি রেপর‍্যাপ ০.১ প্রিন্টার। File:Reprap Darwin.jpg|২০০৭ সাল বা তার আগের একটি রেপর‍্যাপ ডারউইন। </gallery> ==গ্রহণযোগ্যতা== ২০১০ সালের দিকে মেকারবট কর্তৃক দেওয়া তৎকালীন সাশ্রয়ী এবং ওপেন সোর্স ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রগুলো জনগণের কল্পনাকে আকৃষ্ট করে।<ref>{{cite web |title=Making the Makerbot, A DIY 3-D Printer |url=https://www.popsci.com/diy/article/2010-06/making-makerbot/ |website=Popular Science |access-date=30 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |last1=Simonite |first1=Tom |title=Rise of the replicators |url=https://www.newscientist.com/article/mg20627621-200-rise-of-the-replicators/ |website=New Scientist |access-date=30 November 2020}}</ref> ২০১২ সালে মেকারবট হার্ডওয়্যার ওপেন সোর্সিং বন্ধ করে দেয় এবং দ্রুত স্ট্রাটাসিস কোম্পানির দ্বারা অধিগ্রহণ হয়। এরপর ২০১৬ সালে মেকারবট তাদের নিজস্ব প্রিন্টার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।<ref>{{cite web |last1=Brown |first1=Rich |title=Pulling back from open source hardware, MakerBot angers some adherents |url=https://www.cnet.com/news/pulling-back-from-open-source-hardware-makerbot-angers-some-adherents/ |website=CNET |access-date=30 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |last1=Sharma |first1=Rakesh |title=The Real Reason Stratasys Bought MakerBot |url=https://www.forbes.com/sites/rakeshsharma/2013/09/24/stratasys-bold-moves-a-conversation-with-company-chairman-scott-crump/?sh=260433db1ce7 |website=Forbes |access-date=30 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |title=The MakerBot Obituary |url=https://hackaday.com/2016/04/28/the-makerbot-obituary/ |website=Hackaday |access-date=30 November 2020 |date=28 April 2016}}</ref> ২০১৫ সালে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ যন্ত্রের বাজার কিছুটা সঙ্কুচিত হয়।<ref>{{cite web |title=People Aren’t Buying 3D Printers Anymore, So Companies Are Refocusing on Health |url=https://www.vice.com/en/article/qkv7km/people-arent-buying-3d-printers-anymore-so-companies-are-refocusing-on-health |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |title=MakerBot lays off 20% of its staff—again |url=https://fortune.com/2015/10/08/makerbot-lays-off-20-percent-of-staff-again/ |website=Fortune |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> এই সময় সাশ্রয়ী মূল্যের ক্রিয়ালিটি ব্র্যান্ডের প্রিন্টার জনপ্রিয়তা লাভ করে।<ref>{{cite web |title=Creality Ender 3 vs CR-10: The Differences |url=https://all3dp.com/2/creality-ender-3-vs-cr-10-3d-printer-shootout/ |website=All3DP |access-date=30 November 2020 |language=en |date=15 July 2019}}</ref> ২০১০-এর দশকে লু্লজবট এবং প্রুসা উভয় কোম্পানি তাদের বাণিজ্যিক থ্রিডি প্রিন্টারগুলোর যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য নিজস্ব বাণিজ্যিক-মাপের প্রিন্টার ফার্ম পরিচালনা করত।<ref>{{cite web |title=The 3D Printers that Print 3D Printers |url=https://www.vice.com/en/article/539e93/the-3d-printers-that-print-3d-printers |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |title=Three hundred 3D printers in one room: A quick look to our printing farm |url=https://blog.prusaprinters.org/a-quick-look-to-our-printing-farm_7474/ |website=Prusa Printers |access-date=29 November 2020 |date=9 February 2018}}</ref> ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ায় নির্মাতারা ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ যন্ত্রের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) উৎপাদন করেন।<ref>{{cite web |last1=Commissioner |first1=Office of the |title=3D Printing in FDA’s Rapid Response to COVID-19 |url=https://www.fda.gov/emergency-preparedness-and-response/coronavirus-disease-2019-covid-19/3d-printing-fdas-rapid-response-covid-19 |website=FDA |access-date=30 November 2020 |language=en |date=13 November 2020}}</ref><ref>{{cite web |last1=Choong |first1=Yu Ying Clarrisa |last2=Tan |first2=Hong Wei |last3=Patel |first3=Deven C. |last4=Choong |first4=Wan Ting Natalie |last5=Chen |first5=Chun-Hsien |last6=Low |first6=Hong Yee |last7=Tan |first7=Ming Jen |last8=Patel |first8=Chandrakant D. |last9=Chua |first9=Chee Kai |title=The global rise of 3D printing during the COVID-19 pandemic |url=https://www.nature.com/articles/s41578-020-00234-3 |website=Nature Reviews Materials |access-date=30 November 2020 |pages=637–639 |language=en |doi=10.1038/s41578-020-00234-3 |date=September 2020}}</ref> <gallery mode="packed" heights="250"> File:MakerBot Founders and Final Prototypes.jpg|২০০৯ সালে মেকারবট কাপকেক নমুনাসহ মেকারবট প্রতিষ্ঠাতা। File:3D printer on sale at ALDI supermarket.jpg|২০১৬ সালে একটি সুপারমার্কেটে বিক্রির জন্য একটি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র। File:3d Printer at HackIllinois 2016.jpg|২০১৬ সালের একটি হ্যাকাথনে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রগুলো। </gallery> ==তথ্যসূত্র== {{Reflist}} {{status|100%}} {{BookCat}} 4m8tnwdkf5ppy39ktclwkehvkj8eqt2 85276 85275 2025-06-25T14:26:06Z Mehedi Abedin 7113 85276 wikitext text/x-wiki ==উৎপত্তি== আধুনিক থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সূচনা ঘটে ১৯৮২ সালে, যখন ড. হিদেও কোদামা প্রথমবারের মতো থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।<ref>{{cite web |title=What You Need to Know About 3D Printing |url=http://ott.ua.edu/what-you-need-to-know-about-3d-printing/ |website=Technology Transfer |access-date=29 November 2020}}</ref> ১৯৮৪ সালে চার্লস হাল স্টেরিওলিথোগ্রাফি উদ্ভাবন করেন।<ref>{{cite web |title=History of 3D Printing Makerspace |url=https://blogs.lawrence.edu/makerspace/history/ |access-date=29 November 2020}}</ref> স্কট ক্রাম্প ১৯৮৯ সালে এফডিএম (ফিউজড ডিপোজিশন মডেলিং) বা এফএফএফ (ফিউজড ফিলামেন্ট ফেব্রিকেশন) প্রিন্টিং প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন যা আজকের দিনে সর্বাধিক ব্যবহৃত থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিগুলোর একটি।<ref>{{cite web |title=Closing the Loop On 3D Printing |url=https://www.library.ucsf.edu/news/closing-the-loop-on-3d-printing/ |website=UCSF Library |access-date=29 November 2020 |date=30 November 2017}}</ref> ২০০৪ সালে রেপর‍্যাপ (র‌্যাপিড প্রোটোটাইপার রেপ্লিকেটিং) নামে একটি ওপেন সোর্স প্রকল্প শুরু হয়, যার লক্ষ্য ছিল এমন থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি করা যা নিজেই নিজের কিছু অংশ প্রিন্ট করতে পারে। এই প্রকল্প থেকেই অনেক সাশ্রয়ী মূল্যের বাণিজ্যিক প্রিন্টারের সৃষ্টি হয় এবং থ্রিডি প্রিন্টিং সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সহজলভ্য হয়ে ওঠে।<ref>{{cite web |title=Materializing information: 3D printing and social change |url=https://journals.uic.edu/ojs/index.php/fm/article/download/3968/3273 |website=journals.uic.edu |access-date=29 November 2020}}</ref><ref>{{cite web |title=The Brutal Edit War Over a 3D Printer’s Wikipedia Page |url=https://www.vice.com/en/article/53d9vk/the-brutal-edit-war-over-a-3d-printers-wikipedia-page-reprap |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> <gallery mode="packed" heights="300"> File:Firstpart1.jpg|২০০৬ সালে প্রথম রেপর‍্যাপ একটি রেপর‍্যাপ যন্ত্রাংশ প্রিন্ট করে। File:First replication.jpg|প্রথম প্রতিলিপিকৃত রেপর‍্যাপ প্রিন্টার। File:Extrusion of hexagon 2nd layer closeup.jpg|একটি রেপর‍্যাপ ০.১ প্রিন্টার। File:Reprap Darwin.jpg|২০০৭ সাল বা তার আগের একটি রেপর‍্যাপ ডারউইন। </gallery> ==গ্রহণযোগ্যতা== ২০১০ সালের দিকে মেকারবট কর্তৃক দেওয়া তৎকালীন সাশ্রয়ী এবং ওপেন সোর্স ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রগুলো জনগণের কল্পনাকে আকৃষ্ট করে।<ref>{{cite web |title=Making the Makerbot, A DIY 3-D Printer |url=https://www.popsci.com/diy/article/2010-06/making-makerbot/ |website=Popular Science |access-date=30 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |last1=Simonite |first1=Tom |title=Rise of the replicators |url=https://www.newscientist.com/article/mg20627621-200-rise-of-the-replicators/ |website=New Scientist |access-date=30 November 2020}}</ref> ২০১২ সালে মেকারবট হার্ডওয়্যার ওপেন সোর্সিং বন্ধ করে দেয় এবং দ্রুত স্ট্রাটাসিস কোম্পানির দ্বারা অধিগ্রহণ হয়। এরপর ২০১৬ সালে মেকারবট তাদের নিজস্ব প্রিন্টার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।<ref>{{cite web |last1=Brown |first1=Rich |title=Pulling back from open source hardware, MakerBot angers some adherents |url=https://www.cnet.com/news/pulling-back-from-open-source-hardware-makerbot-angers-some-adherents/ |website=CNET |access-date=30 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |last1=Sharma |first1=Rakesh |title=The Real Reason Stratasys Bought MakerBot |url=https://www.forbes.com/sites/rakeshsharma/2013/09/24/stratasys-bold-moves-a-conversation-with-company-chairman-scott-crump/?sh=260433db1ce7 |website=Forbes |access-date=30 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |title=The MakerBot Obituary |url=https://hackaday.com/2016/04/28/the-makerbot-obituary/ |website=Hackaday |access-date=30 November 2020 |date=28 April 2016}}</ref> ২০১৫ সালে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ যন্ত্রের বাজার কিছুটা সঙ্কুচিত হয়।<ref>{{cite web |title=People Aren’t Buying 3D Printers Anymore, So Companies Are Refocusing on Health |url=https://www.vice.com/en/article/qkv7km/people-arent-buying-3d-printers-anymore-so-companies-are-refocusing-on-health |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |title=MakerBot lays off 20% of its staff—again |url=https://fortune.com/2015/10/08/makerbot-lays-off-20-percent-of-staff-again/ |website=Fortune |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref> এই সময় সাশ্রয়ী মূল্যের ক্রিয়ালিটি ব্র্যান্ডের প্রিন্টার জনপ্রিয়তা লাভ করে।<ref>{{cite web |title=Creality Ender 3 vs CR-10: The Differences |url=https://all3dp.com/2/creality-ender-3-vs-cr-10-3d-printer-shootout/ |website=All3DP |access-date=30 November 2020 |language=en |date=15 July 2019}}</ref> ২০১০-এর দশকে লু্লজবট এবং প্রুসা উভয় কোম্পানি তাদের বাণিজ্যিক থ্রিডি প্রিন্টারগুলোর যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য নিজস্ব বাণিজ্যিক-মাপের প্রিন্টার ফার্ম পরিচালনা করত।<ref>{{cite web |title=The 3D Printers that Print 3D Printers |url=https://www.vice.com/en/article/539e93/the-3d-printers-that-print-3d-printers |website=www.vice.com |access-date=29 November 2020 |language=en}}</ref><ref>{{cite web |title=Three hundred 3D printers in one room: A quick look to our printing farm |url=https://blog.prusaprinters.org/a-quick-look-to-our-printing-farm_7474/ |website=Prusa Printers |access-date=29 November 2020 |date=9 February 2018}}</ref> ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ায় নির্মাতারা ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ যন্ত্রের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) উৎপাদন করেন।<ref>{{cite web |last1=Commissioner |first1=Office of the |title=3D Printing in FDA’s Rapid Response to COVID-19 |url=https://www.fda.gov/emergency-preparedness-and-response/coronavirus-disease-2019-covid-19/3d-printing-fdas-rapid-response-covid-19 |website=FDA |access-date=30 November 2020 |language=en |date=13 November 2020}}</ref><ref>{{cite web |last1=Choong |first1=Yu Ying Clarrisa |last2=Tan |first2=Hong Wei |last3=Patel |first3=Deven C. |last4=Choong |first4=Wan Ting Natalie |last5=Chen |first5=Chun-Hsien |last6=Low |first6=Hong Yee |last7=Tan |first7=Ming Jen |last8=Patel |first8=Chandrakant D. |last9=Chua |first9=Chee Kai |title=The global rise of 3D printing during the COVID-19 pandemic |url=https://www.nature.com/articles/s41578-020-00234-3 |website=Nature Reviews Materials |access-date=30 November 2020 |pages=637–639 |language=en |doi=10.1038/s41578-020-00234-3 |date=September 2020}}</ref> <gallery mode="packed" heights="250"> File:MakerBot Founders and Final Prototypes.jpg|২০০৯ সালে মেকারবট কাপকেক নমুনাসহ মেকারবট প্রতিষ্ঠাতা। File:3D printer on sale at ALDI supermarket.jpg|২০১৬ সালে একটি সুপারমার্কেটে বিক্রির জন্য একটি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র। File:3d Printer at HackIllinois 2016.jpg|২০১৬ সালের একটি হ্যাকাথনে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র। </gallery> ==তথ্যসূত্র== {{Reflist}} {{status|100%}} {{BookCat}} jsrzuijb1imzojc7afu65uypzhsvmm5 ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ/রক্ষণাবেক্ষণ 0 26058 85277 81186 2025-06-25T14:28:01Z Mehedi Abedin 7113 85277 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==পরিচিতি== ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র একটি জটিল যন্ত্র যা দক্ষতার সাথে চালানোর জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ==রেখাচিত্র== ===অক্ষ সন্নিবেশ=== [[File:3D printing calibration axis alignment movement and lubrication.svg|thumb|center|upright=3|বাম পাশের প্রিন্টারটি সঠিকভাবে তৈলাক্তকৃত ও অক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রিন্টার। অপরদিকে ডান পাশের প্রিন্টারটি দীর্ঘদিন তৈলাক্ত করা হয়নি এবং যার অক্ষ সঠিকভাবে সন্নিবেশিত নয়—ফলে প্রিন্টে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।]] ===টান ও পশ্চাদ্‌গতি=== [[File:3D printing calibration – 3D printer belt tension and backlash.svg|thumb|center|upright=3|সঠিক বেল্টের টান নিশ্চিত করা নিখুঁত প্রিন্টের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যদি বেল্ট ঢিলা হয় একে ''পশ্চাদ্‌গতি'' (''ব্যাকল্যাশ'') বলা হয় এবং এটি সংশ্লিষ্ট অক্ষ বরাবর প্রিন্টে অমিল বা অস্পষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।]] ===নির্মাণ পট=== [[File:3D printing calibration build plate levelling.svg|thumb|center|upright=3|একটি সঠিকভাবে সমতল করা বিল্ড প্লেট প্রিন্টিংয়ের সময় বস্তুটি প্লেটে ঠিকভাবে আটকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্সট্রুডারের সাথে সামান্য হেলান থাকলেও বিল্ড প্লেটের একপ্রান্তে উচ্চতা যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে প্রিন্ট ব্যর্থ হতে পারে। অটোমেটিক প্লেট লেভেলিং সুবিধা না থাকা প্রিন্টারগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবার প্রিন্ট শুরুর আগে বিল্ড প্লেট লেভেল করা একটি সাধারণ ও নিয়মিত কাজ। সৌভাগ্যক্রমে বিল্ড প্লেট লেভেলিংয়ের একমাত্র মূল খরচ সাধারণত সময় – অন্য কোনো ব্যয়বহুল উপাদান এর সঙ্গে জড়িত নয়।]] [[File:3D printing calibration build plate flatness.svg|thumb|center|upright=3|একটি বাঁকা বিল্ড প্লেটও প্রিন্টিংয়ে ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সংশোধন করা অপেক্ষাকৃত কঠিন এবং প্লেটের বাঁকানোর মাত্রা ও উপাদানের উপর নির্ভর করে কখনও কখনও পুরো প্লেটটি পরিবর্তন করাই একমাত্র কার্যকর সমাধান হয়ে ওঠে।]] ===সঠিকতা নির্ধারণ=== [[File:Illustration of 3D printing calibration build plate first layer gap.svg|thumb|center|upright=3|সঠিকভাবে সঠিকতা নির্ধারণ (ক্যালিব্রেশন) না করা হলে প্রথম স্তরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্লেটের খুব নিচে প্রিন্টি করলে প্রথম স্তরটি অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যায়, যা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার প্লেটের অনেক উপর দিয়ে প্রিন্ট করলে প্রথম স্তরটি ভালোভাবে আটকায় না এবং তার ফলে পুরো প্রিন্টটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।]] [[File:3D printing calibration elephant foot.svg|thumb|center|upright=3|ভুলভাবে ক্যালিব্রেট করা এফএফএফ প্রিন্টারে একটি সাধারণ ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেটি "এলিফ্যান্ট'স ফুট" নামে পরিচিত। এতে প্রিন্টের ভিত্তি অংশটি উপরের স্তরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি প্রশস্ত হয়। এই সমস্যা তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন প্রিন্টের সৌন্দর্য এবং নির্ভুলতা গুরুত্বপূর্ণ হয়। তবে কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্টের ক্ষেত্রে (যেমন: সাধারণ সাজসজ্জার বস্তু) এই ত্রুটিটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবুও এই ত্রুটি সংশোধন করলে অন্যান্য আরও গুরুতর ক্যালিব্রেশন সমস্যাও এড়ানো যেতে পারে।]] ==তথ্যসূত্র== {{Reflist}} {{BookCat}} {{status|100%}} bqm1jv64oxposg72bv13f5f735wzwyd 85278 85277 2025-06-25T14:28:41Z Mehedi Abedin 7113 85278 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==পরিচিতি== ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র একটি জটিল যন্ত্র যা দক্ষতার সাথে চালানোর জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ==রেখাচিত্র== ===অক্ষ সন্নিবেশ=== [[File:3D printing calibration axis alignment movement and lubrication.svg|thumb|center|upright=3|বাম পাশের প্রিন্টারটি সঠিকভাবে তৈলাক্তকৃত ও অক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রিন্টার। অপরদিকে ডান পাশের প্রিন্টারটি দীর্ঘদিন তৈলাক্ত করা হয়নি এবং যার অক্ষ সঠিকভাবে সন্নিবেশিত নয়—ফলে প্রিন্টে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।]] ===টান ও পশ্চাদ্‌গতি=== [[File:3D printing calibration – 3D printer belt tension and backlash.svg|thumb|center|upright=3|সঠিক বেল্টের টান নিশ্চিত করা নিখুঁত প্রিন্টের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বেল্ট ঢিলা হওয়াকে ''পশ্চাৎগতি'' (''ব্যাকল্যাশ'') বলা হয় যা সংশ্লিষ্ট অক্ষ বরাবর প্রিন্টে অমিল বা অস্পষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।]] ===নির্মাণ পট=== [[File:3D printing calibration build plate levelling.svg|thumb|center|upright=3|একটি সঠিকভাবে সমতল করা বিল্ড প্লেট প্রিন্টিংয়ের সময় বস্তুটি প্লেটে ঠিকভাবে আটকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্সট্রুডারের সাথে সামান্য হেলান থাকলেও বিল্ড প্লেটের একপ্রান্তে উচ্চতা যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে প্রিন্ট ব্যর্থ হতে পারে। অটোমেটিক প্লেট লেভেলিং সুবিধা না থাকা প্রিন্টারগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবার প্রিন্ট শুরুর আগে বিল্ড প্লেট লেভেল করা একটি সাধারণ ও নিয়মিত কাজ। সৌভাগ্যক্রমে বিল্ড প্লেট লেভেলিংয়ের একমাত্র মূল খরচ সাধারণত সময় – অন্য কোনো ব্যয়বহুল উপাদান এর সঙ্গে জড়িত নয়।]] [[File:3D printing calibration build plate flatness.svg|thumb|center|upright=3|একটি বাঁকা বিল্ড প্লেটও প্রিন্টিংয়ে ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সংশোধন করা অপেক্ষাকৃত কঠিন এবং প্লেটের বাঁকানোর মাত্রা ও উপাদানের উপর নির্ভর করে কখনও কখনও পুরো প্লেটটি পরিবর্তন করাই একমাত্র কার্যকর সমাধান হয়ে ওঠে।]] ===সঠিকতা নির্ধারণ=== [[File:Illustration of 3D printing calibration build plate first layer gap.svg|thumb|center|upright=3|সঠিকভাবে সঠিকতা নির্ধারণ (ক্যালিব্রেশন) না করা হলে প্রথম স্তরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্লেটের খুব নিচে প্রিন্টি করলে প্রথম স্তরটি অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যায়, যা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার প্লেটের অনেক উপর দিয়ে প্রিন্ট করলে প্রথম স্তরটি ভালোভাবে আটকায় না এবং তার ফলে পুরো প্রিন্টটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।]] [[File:3D printing calibration elephant foot.svg|thumb|center|upright=3|ভুলভাবে ক্যালিব্রেট করা এফএফএফ প্রিন্টারে একটি সাধারণ ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেটি "এলিফ্যান্ট'স ফুট" নামে পরিচিত। এতে প্রিন্টের ভিত্তি অংশটি উপরের স্তরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি প্রশস্ত হয়। এই সমস্যা তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন প্রিন্টের সৌন্দর্য এবং নির্ভুলতা গুরুত্বপূর্ণ হয়। তবে কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্টের ক্ষেত্রে (যেমন: সাধারণ সাজসজ্জার বস্তু) এই ত্রুটিটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবুও এই ত্রুটি সংশোধন করলে অন্যান্য আরও গুরুতর ক্যালিব্রেশন সমস্যাও এড়ানো যেতে পারে।]] ==তথ্যসূত্র== {{Reflist}} {{BookCat}} {{status|100%}} shdgdzaztgv77al9xnzcw1cg91kuta7 85279 85278 2025-06-25T14:29:21Z Mehedi Abedin 7113 85279 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==পরিচিতি== ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র একটি জটিল যন্ত্র যা দক্ষতার সাথে চালানোর জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ==রেখাচিত্র== ===অক্ষ সন্নিবেশ=== [[File:3D printing calibration axis alignment movement and lubrication.svg|thumb|center|upright=3|বাম পাশের প্রিন্টারটি সঠিকভাবে তৈলাক্তকৃত ও অক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রিন্টার। অপরদিকে ডান পাশের প্রিন্টারটি দীর্ঘদিন তৈলাক্ত করা হয়নি এবং যার অক্ষ সঠিকভাবে সন্নিবেশিত নয়—ফলে প্রিন্টে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।]] ===টান ও পশ্চাদ্‌গতি=== [[File:3D printing calibration – 3D printer belt tension and backlash.svg|thumb|center|upright=3|সঠিক বেল্টের টান নিশ্চিত করা নিখুঁত প্রিন্টের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বেল্ট ঢিলা হওয়াকে ''পশ্চাৎগতি'' (''ব্যাকল্যাশ'') বলা হয় যা সংশ্লিষ্ট অক্ষ বরাবর প্রিন্টে অমিল বা অস্পষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।]] ===নির্মাণ পট=== [[File:3D printing calibration build plate levelling.svg|thumb|center|upright=3|একটি সঠিকভাবে সমতল করা বিল্ড প্লেট প্রিন্টিংয়ের সময় বস্তুটি প্লেটে ঠিকভাবে আটকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্সট্রুডারের সাথে সামান্য হেলান দেওয়া থাকলেও বিল্ড প্লেটের একপ্রান্তে উচ্চতা যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে প্রিন্ট ব্যর্থ হতে পারে। অটোমেটিক প্লেট লেভেলিং সুবিধা না থাকা প্রিন্টারগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবার প্রিন্ট শুরুর আগে বিল্ড প্লেট লেভেল করা একটি সাধারণ ও নিয়মিত কাজ। সৌভাগ্যক্রমে বিল্ড প্লেট লেভেলিংয়ের একমাত্র মূল খরচ সাধারণত সময় – অন্য কোনো ব্যয়বহুল উপাদান এর সঙ্গে জড়িত নয়।]] [[File:3D printing calibration build plate flatness.svg|thumb|center|upright=3|একটি বাঁকা বিল্ড প্লেটও প্রিন্টিংয়ে ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সংশোধন করা অপেক্ষাকৃত কঠিন এবং প্লেটের বাঁকানোর মাত্রা ও উপাদানের উপর নির্ভর করে কখনও কখনও পুরো প্লেটটি পরিবর্তন করাই একমাত্র কার্যকর সমাধান হয়ে ওঠে।]] ===সঠিকতা নির্ধারণ=== [[File:Illustration of 3D printing calibration build plate first layer gap.svg|thumb|center|upright=3|সঠিকভাবে সঠিকতা নির্ধারণ (ক্যালিব্রেশন) না করা হলে প্রথম স্তরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্লেটের খুব নিচে প্রিন্টি করলে প্রথম স্তরটি অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যায়, যা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার প্লেটের অনেক উপর দিয়ে প্রিন্ট করলে প্রথম স্তরটি ভালোভাবে আটকায় না এবং তার ফলে পুরো প্রিন্টটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।]] [[File:3D printing calibration elephant foot.svg|thumb|center|upright=3|ভুলভাবে ক্যালিব্রেট করা এফএফএফ প্রিন্টারে একটি সাধারণ ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেটি "এলিফ্যান্ট'স ফুট" নামে পরিচিত। এতে প্রিন্টের ভিত্তি অংশটি উপরের স্তরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি প্রশস্ত হয়। এই সমস্যা তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন প্রিন্টের সৌন্দর্য এবং নির্ভুলতা গুরুত্বপূর্ণ হয়। তবে কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্টের ক্ষেত্রে (যেমন: সাধারণ সাজসজ্জার বস্তু) এই ত্রুটিটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবুও এই ত্রুটি সংশোধন করলে অন্যান্য আরও গুরুতর ক্যালিব্রেশন সমস্যাও এড়ানো যেতে পারে।]] ==তথ্যসূত্র== {{Reflist}} {{BookCat}} {{status|100%}} 0yvn96t1dnw3q5rm6ihle563tn8kg30 85280 85279 2025-06-25T14:30:00Z Mehedi Abedin 7113 85280 wikitext text/x-wiki __NOTOC__ ==পরিচিতি== ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্র একটি জটিল যন্ত্র যা দক্ষতার সাথে চালানোর জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ==রেখাচিত্র== ===অক্ষ সন্নিবেশ=== [[File:3D printing calibration axis alignment movement and lubrication.svg|thumb|center|upright=3|বাম পাশের প্রিন্টারটি সঠিকভাবে তৈলাক্তকৃত ও অক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রিন্টার। অপরদিকে ডান পাশের প্রিন্টারটি দীর্ঘদিন তৈলাক্ত করা হয়নি এবং যার অক্ষ সঠিকভাবে সন্নিবেশিত নয়—ফলে প্রিন্টে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।]] ===টান ও পশ্চাদ্‌গতি=== [[File:3D printing calibration – 3D printer belt tension and backlash.svg|thumb|center|upright=3|সঠিক বেল্টের টান নিশ্চিত করা নিখুঁত প্রিন্টের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বেল্ট ঢিলা হওয়াকে ''পশ্চাৎগতি'' (''ব্যাকল্যাশ'') বলা হয় যা সংশ্লিষ্ট অক্ষ বরাবর প্রিন্টে অমিল বা অস্পষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে।]] ===নির্মাণ পট=== [[File:3D printing calibration build plate levelling.svg|thumb|center|upright=3|একটি সঠিকভাবে সমতল করা বিল্ড প্লেট প্রিন্টিংয়ের সময় বস্তুটি প্লেটে ঠিকভাবে আটকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্সট্রুডারের সাথে সামান্য হেলান দেওয়া থাকলেও বিল্ড প্লেটের একপ্রান্তে উচ্চতা যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে প্রিন্ট ব্যর্থ হতে পারে। অটোমেটিক প্লেট লেভেলিং সুবিধা না থাকা প্রিন্টারগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবার প্রিন্ট শুরুর আগে বিল্ড প্লেট লেভেল করা একটি সাধারণ ও নিয়মিত কাজ। সৌভাগ্যক্রমে বিল্ড প্লেট লেভেলিংয়ের একমাত্র মূল খরচ সাধারণত সময় – অন্য কোনো ব্যয়বহুল উপাদান এর সঙ্গে জড়িত নয়।]] [[File:3D printing calibration build plate flatness.svg|thumb|center|upright=3|একটি বাঁকা বিল্ড প্লেটও প্রিন্টিংয়ে ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সংশোধন করা অপেক্ষাকৃত কঠিন এবং প্লেটের বাঁকানোর মাত্রা ও উপাদানের উপর নির্ভর করে কখনও কখনও পুরো প্লেটটি পরিবর্তন করাই একমাত্র কার্যকর সমাধান হয়ে ওঠে।]] ===সঠিকতা নির্ধারণ=== [[File:Illustration of 3D printing calibration build plate first layer gap.svg|thumb|center|upright=3|সঠিকভাবে সঠিকতা নির্ধারণ (ক্যালিব্রেশন) না করা হলে প্রথম স্তরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্লেটের খুব নিচে প্রিন্ট করলে প্রথম স্তরটি অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যায় যা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার প্লেটের অনেক উপর দিয়ে প্রিন্ট করলে প্রথম স্তরটি ভালোভাবে আটকায় না এবং তার ফলে পুরো প্রিন্টটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।]] [[File:3D printing calibration elephant foot.svg|thumb|center|upright=3|ভুলভাবে ক্যালিব্রেট করা এফএফএফ প্রিন্টারে একটি সাধারণ ত্রুটি দেখা দিতে পারে যা "এলিফ্যান্ট'স ফুট" নামে পরিচিত। এতে প্রিন্টের ভিত্তি অংশটি উপরের স্তরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি প্রশস্ত হয়। এই সমস্যা তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন প্রিন্টের সৌন্দর্য এবং নির্ভুলতা গুরুত্বপূর্ণ হয়। তবে কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্টের ক্ষেত্রে (যেমন: সাধারণ সাজসজ্জার বস্তু) এই ত্রুটিটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবুও এই ত্রুটি সংশোধন করলে অন্যান্য আরও গুরুতর ক্যালিব্রেশন সমস্যাও এড়ানো যেতে পারে।]] ==তথ্যসূত্র== {{Reflist}} {{BookCat}} {{status|100%}} eozqxhwgfoj4o4kg1anh7slrl20yw95 পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ/শুরু 0 26298 85281 82366 2025-06-25T14:32:53Z Mehedi Abedin 7113 85281 wikitext text/x-wiki =একটি যোগাযোগের শুরু= পাঠক যখন কিছু পড়ে, তখন তারা লেখার শব্দ আর ছবির সঙ্গে মনের ভিতরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে। একটি বাক্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা পরের বাক্যগুলোতেও প্রভাব ফেলে। তাই শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরু ভালো হলে পাঠক মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়বে। এই অধ্যায়ে আটটি কৌশল শেখানো হবে। এই কৌশলগুলো লেখার শুরুটা সহজ, কাজে লাগার মতো এবং প্রভাবশালী করে তোলে। সব কৌশল একসাথে ব্যবহার করতে হবে না। কোনটি ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ভর করবে লেখার লক্ষ্য আর পাঠক সম্পর্কে জানা তথ্যের উপর। অধ্যায়ের শেষে একটি নৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কখনও কখনও মানুষ দ্বিধায় পড়ে—লেখা শুরু করা উচিত কি না। প্রথম তিনটি কৌশলে বলা হয়েছে কীভাবে বিষয় জানাতে হয়, মূল কথা বলতে হয়, আর লেখার গঠন সম্পর্কে পূর্বে ধারণা দিতে হয়। '''কৌশল ১: পাঠককে মনোযোগ দেওয়ার কারণ দিন''' শুরুর লক্ষ্য হলো পাঠকের মনোযোগ পাওয়া। যাতে তারা লেখা এড়িয়ে না যায় বা মাঝপথে ফেলে না দেয়। অনেকেই বলেন, তারা অনেক ই-মেইল, নোট আর প্রতিবেদন পান। তাই পাঠককে শুধু পড়তে বললে হবে না, মনোযোগ দিয়ে পড়তে আগ্রহী করে তুলতে হবে। লেখাটি যদি কাউকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, কেউ যখন গভীরভাবে কিছু পড়ে বা শোনে, তখন তারা লেখায় বলা মনোভাব গ্রহণ করে। তারা সেই মনোভাব সহজে পরিবর্তন হতে দেয় না। বরং, সেই মনোভাব অনুযায়ী কাজও করতে চায়। পাঠকের মনোযোগ পেতে হলে দুইটি কাজ করতে হবে: *বিষয়টি জানাতে হবে *তাদের বোঝাতে হবে, এতে তাদের কী উপকার হবে এই দুইটি কাজ একসাথে করতে হবে। শুধু বিষয় বললেই চলবে না। পাঠক হয়তো বুঝবেই না, কেন লেখাটি তাদের কাজে লাগবে। যা আপনার কাছে স্পষ্ট, পাঠকের কাছে তা নয়। ==সাবজেক্ট লাইনের গুরুত্ব== সাবজেক্ট লাইন ব্যবহার করা হয় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। সাধারণত এটি কয়েকটি শব্দের বেশি নয়। সাবজেক্ট লাইন লেখার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার: * সংক্ষেপে লেখো। সাবজেক্ট লাইন লেখার কাজ হলো পাঠককে জানানো—লেখাটি কী নিয়ে, লেখাটাই নয়। * আকর্ষণীয় করো। মানুষ যখন সাবজেক্ট লাইন পড়বে, তখন কি তারা বাকিটা পড়তে আগ্রহী হবে? * যেন বিষয়ে ঠিক থাকে। সাবজেক্ট লাইন পড়ে যেন পাঠক বুঝতে পারে, পরের অংশে কী আসছে। ই-মেইলের ক্ষেত্রে বিষয় লাইন আরও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একরকম দুটি শুরু থাকে—একটি হলো বিষয় লাইন, আরেকটি হলো মেইলের শুরুতে লেখা কয়েকটি বাক্য। পাঠক তখনই মেইল খুলে পড়বে, যদি সাবজেক্ট লাইন তাকে আগ্রহী করে তোলে। তাই বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করো। বোঝাও, তোমার লেখাটি পাঠকের উপকারে আসবে। মেমো বা চিঠির ক্ষেত্রেও সাবজেক্ট লাইনের সুযোগ কাজে লাগাও। ==পাঠকের উপকারিতা তুলে ধরার দুটি উপায়== দুটি কৌশল বিশেষভাবে কার্যকর যারা মোটামুটি উপকার পাবেন তাদের বোঝাতে। '''পাঠকের অনুরোধের উল্লেখ করো''' কর্মক্ষেত্রে তুমি প্রায়ই লিখবে কারণ সহকর্মী, ব্যবস্থাপক বা ক্লায়েন্ট তোমার কাছে কোনো পরামর্শ বা তথ্য চেয়েছে। তোমার উত্তরে পাঠকের উপকারিতা প্রতিষ্ঠা করতে, শুধু সেই অনুরোধের উল্লেখ করো। '''পাঠকের সমস্যা সমাধানে সাহায্যের প্রস্তাব দাও''' লেখার শুরুতে পাঠককে জানাও, তোমার যোগাযোগ তাদের সামনে আসা সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। বেশিরভাগ কর্মী নিজেদের সমস্যা সমাধানকারী মনে করে। প্রযুক্তিগত, সংগঠনিক বা নৈতিক কোনো সমস্যা হোক, পাঠক এমন যোগাযোগ পছন্দ করবে যা সমাধানে সাহায্য করে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জে. সি. ম্যাথেস এবং ডুইট ডব্লিউ. স্টিভেনসন একটি বিশেষ শক্তিশালী পদ্ধতির কথা বলেছেন। মূল কথা হলো, লেখার শুরুতে পাঠকের উদ্বেগের ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধান বা সময় বাঁচানোর উপায় দেওয়া। প্রথমে, তুমি যাদের উদ্দেশ্যে লিখছো, তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো তালিকা করো। তালিকা থেকে একটি সমস্যা বেছে নাও যার সমাধান তোমার তথ্য ও ভাবনা দিতে পারবে। এভাবে তুমি নিজেকে ও পাঠককে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করছ সমস্যা সমাধানের যৌথ প্রচেষ্টায়, যেখানে তোমার যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন তুমি বুঝে নেবে কীভাবে তোমার ও পাঠকের মধ্যে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব বর্ণনা করবে, তখন লেখার শুরু তৈরি করো। <u>পাঠকের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব স্থাপন</u> তোমার পাঠকদের বলো, তুমি কোন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। এমন সমস্যা বেছে নাও যা তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তোমার পাঠকদের বলো, তুমি সমস্যাটি সমাধানের জন্য কী করেছো। নিজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণস্বরূপ, হয়তো তোমার নিয়োগকর্তার পণ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছো বা প্রতিযোগিতামূলক পণ্য নিয়ে গবেষণা করেছো। অহংকার না করে বোঝাও কেন তোমার গবেষণা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকদের জানাও, তোমার যোগাযোগ কীভাবে তাদের কাজ সহজ ও দক্ষ করবে এবং তাদের অবদান কীভাবে যৌথ সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। <u>কিছু পরিস্থিতি যেখানে সাধারণত সমস্যা সমাধানের পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বর্ণনা প্রয়োজন হয়</u> তোমার যোগাযোগ পড়বে তোমার সরাসরি টিমের বাইরে যারা। পাঠক যত দূরে থাকবে, বার্তার প্রেক্ষাপট জানার সম্ভাবনা তত কম। তোমার যোগাযোগে বাইন্ডিং এবং কভার থাকবে। বাইন্ড করা নথি সাধারণত বড় পাঠকদলের জন্য এবং ভবিষ্যত পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ সমস্যার প্রেক্ষাপট বুঝতে নাও পারে। তোমার যোগাযোগ ব্যবহার হবে বড় অর্থের সিদ্ধান্ত নিতে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেন, যারা রিপোর্টের সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট জানতে চান। ==অননুরোধিত যোগাযোগে সমস্যার সংজ্ঞায়ন== আপনার কর্মজীবনে অনেকবার এমন সুযোগ আসবে যখন আপনাকে অনুরোধ বা সুপারিশ না করেও কিছু জানাতে হবে। এই ধরনের অননুরোধিত যোগাযোগ লেখার সময়, আপনাকে পাঠকদের বোঝাতে হতে পারে যে প্রকৃতপক্ষে কোনো সমস্যা রয়েছে। এর জন্য সৃজনশীল ও পাঠককেন্দ্রিক চিন্তা প্রয়োজন হতে পারে। '''নিয়ম ২: আপনার মূল বক্তব্য স্পষ্ট করুন''' সাধারণত, আপনার যোগাযোগের কার্যকারিতা ও প্রভাব বাড়াতে আপনার মূল বক্তব্য শুরুতেই তুলে ধরুন। এর তিনটি প্রধান কারণ: * আপনি আপনার পাঠকদের তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। * আপনি পাঠকদের মধ্যে সম্ভাবনা বাড়ান যে তারা আপনার মূল বক্তব্য সঠিকভাবে পড়বে, যোগাযোগটি পড়ে শেষ না করেই পাশে রাখবে না। * আপনি পাঠকদের পরবর্তী বিস্তারিত বিষয়গুলি বুঝতে একটি প্রাসঙ্গিক কাঠামো প্রদান করেন। ==আপনার মূল বক্তব্য সচেতনভাবে বেছে নিন== আপনার বার্তার মূল বক্তব্য ঠিক তেমনি সচেতনভাবে বেছে নিন, যেমনভাবে আপনি প্রতিটি অংশের মূল বক্তব্য নির্ধারণ করেন। আপনি যদি কোনো অনুরোধের জবাব দিচ্ছেন, তাহলে আপনার মূল বক্তব্য হবে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর। আর আপনি যদি নিজ উদ্যোগে কিছু লিখছেন, তাহলে আপনার মূল বক্তব্য হতে পারে—পাঠকরা এটি পড়ার পর কী ভাববে বা কী করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি বিষয় লাইনে লিখতে পারেন "অনুমোদনের প্রয়োজন", এবং তারপর নথিতে কী অনুমোদন করতে হবে তা ব্যাখ্যা করতে পারেন মূল বক্তব্য হিসেবে। '''নির্দেশনা ৩: আপনার পাঠকদের কী প্রত্যাশা করা উচিত তা জানান''' আপনার বার্তাটি যদি খুব সংক্ষিপ্ত না হয়, তাহলে এর শুরুতেই পাঠকদের জানানো উচিত যে পরবর্তী অংশগুলোতে তারা কী আশা করতে পারে। একটি পূর্বাভাসমূলক বিবৃতি যা যোগাযোগের শুরুতে রাখা হয়, তা এর সংগঠন এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। এর কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, এটি পাঠকের মনোযোগ কেবল প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর দিকে কেন্দ্রীভূত করবে। দ্বিতীয়ত, এটি সেইসব পাঠকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে, যাদের জন্য আপনি বার্তাটি লিখছেন না। এর ফলে আইনি ঝামেলা এড়ানো যেতে পারে। ==আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে জানান== আপনার বার্তার শুরুতেই এর সংগঠন সম্পর্কে পাঠকদের জানালে, আপনি তাদেরকে একটি কাঠামো প্রদান করেন যা বার্তার বিভিন্ন তথ্যাংশের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে। এই কাঠামো আপনার বার্তার ব্যবহারযোগ্যতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে, কারণ এটি পাঠকদের তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনি প্রতিটি নতুন যে পয়েন্ট উপস্থাপন করছেন, তা আগের পয়েন্টগুলোর সাথে কীভাবে সম্পর্কিত। এটি দ্রুত স্ক্যান করে পড়া পাঠকদেরও সাহায্য করে, যাতে তারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে পারে। ==আপনার বার্তার পরিসর সম্পর্কে জানান== পাঠকরা শুরু থেকেই জানতে চান যে একটি বার্তায় কী রয়েছে এবং কী নেই। এমনকি যদি তারা বুঝেও ফেলেন যে আপনি এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করছেন যা তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক, তবুও তারা ভাবতে পারেন আপনি সেই বিষয়ের ঠিক কোন কোন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন যা তারা জানতে চান। প্রায়ই আপনি যখন আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে বলবেন, তখনই এর পরিসর সম্পর্কেও জানাবেন: আপনি যখন আলোচ্য বিষয়গুলোর তালিকা দেন, তখন আপনি বার্তার পরিসর নির্ধারণ করেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত তথ্যও দিতে হতে পারে। যেমন—যখন আপনি চান পাঠক বুঝুক যে আপনি বিষয়টি পুরোপুরি কাভার করছেন না, বা আপনি এটি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করছেন। '''নির্দেশনা ৪: আপনার বার্তায় পাঠকদের উন্মুক্ততা উৎসাহিত করুন''' এই বইয়ের অন্যান্য অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পাঠকরা একটি বার্তা পড়ার সময় বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। যেমন, তারা আপনার তৈরি করা কোনো নির্দেশিকা পড়লে সেটিকে হুবহু অনুসরণ করতে পারেন, আবার নিজের মতো করেও প্রয়োগ করতে পারেন—শুধু সমস্যায় পড়লে নির্দেশিকাটি দেখেন। যেহেতু আপনার বার্তার সূচনাটি পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, তাই বার্তার শুরুতে সবসময় প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা উচিত। সবসময় এমনভাবে শুরু করুন যাতে পাঠকরা বাকিটা পড়তে আগ্রহী ও উন্মুক্ত থাকে। ==পাঠকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে== সাধারণভাবে, আপনি হয়তো সহজেই একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাবেন, কারণ আপনি সহকর্মী, গ্রাহক কিংবা অন্য যেসব মানুষকে তথ্য দিচ্ছেন, তারা সেটি জানতে আগ্রহী থাকে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বার্তার শুরুটা আরও সচেতনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে আপনার বার্তা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচিত হয়। পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে যদি নিচের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হয় "হ্যাঁ"। যদি তা-ই হয়, তাহলে পাঠকের সম্ভাব্য মনোভাব নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী বার্তার সূচনা গঠন করুন। * আপনার বার্তায় কি পাঠকদের জন্য কোনো খারাপ খবর রয়েছে? * বার্তায় কি এমন কোনো ধারণা বা পরামর্শ রয়েছে যা পাঠকদের কাছে অপ্রিয় হতে পারে? * পাঠকেরা কি আপনার, আপনার বিভাগের বা কোম্পানির প্রতি অবিশ্বাস, বিরূপতা, বা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করেন? * তারা কি বিষয় বা পরিস্থিতির প্রতি সংশয়প্রবণ? * তারা কি আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান? <u>উন্মুক্ততা উৎসাহিত করার কৌশল</u> * নিজেকে সমালোচক বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং একজন সহযোগী হিসেবে উপস্থাপন করুন। বোঝাতে চেষ্টা করুন যে আপনি পাঠকদের কোনো সমস্যা সমাধানে বা লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে কাজ করছেন। * আপনার মূল বক্তব্য উপস্থাপন কিছুটা বিলম্বিত করুন। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এড়াতে শুরুতেই মূল পয়েন্ট না দিয়ে আগে কিছু পরিপ্রেক্ষিত দিন। এতে পাঠক অন্য যুক্তিগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন। * আপনার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করুন। যদি পাঠক বিশ্বাস করেন যে আপনি জানেন কী বলছেন, তাহলে তারা বার্তাটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আপনার যোগ্যতা বলার দরকার নেই, বিশেষত যদি পাঠক ইতোমধ্যেই তা জানেন। * সাহায্য চেয়ে নিন। মানুষ সাধারণত বেশি গ্রহণযোগ্য হয় যখন তাকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এটি দেখায় আপনি অহংকারী নন এবং দলগতভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। কখনো কখনো আত্মগর্ব বিসর্জন দিয়ে নিচু স্বরে কথা বললেই কার্যসিদ্ধি হয়। ==নিজেকে একটি গল্প বলুন== যদিও উপরের কৌশলগুলো প্রায়শই পাঠকের উন্মুক্ততা বাড়াতে সাহায্য করবে, সেগুলো যান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করবেন না। আপনার বার্তার সূচনা লেখার সময় সবসময় পাঠকের মনোভাব, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশাগুলো মাথায় রাখুন। এটি করতে পারেন নিজেই একটি কল্পিত গল্প তৈরি করে, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে আপনার পাঠক—যদি একজনকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, তাহলে সেই ব্যক্তি; আর যদি একটি দলের উদ্দেশ্যে লেখেন, তাহলে তাদের একজন সাধারণ সদস্য। গল্পটি শুরু করুন ঠিক সেই সময় থেকে, যখন সে আপনার বার্তাটি পড়ার আগে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং শেষ করুন বার্তার প্রথম শব্দগুলো পড়ার সময়। যদিও এই গল্পটি বার্তার অংশ হবে না, এটি আপনাকে বার্তার উপযুক্ত সূচনা বেছে নিতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৫: প্রাসঙ্গিক পটভূমি তথ্য দিন''' যখন আপনি একটি বার্তার সূচনা লেখেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: এই বার্তাটি বুঝতে পাঠকের কি কোনো পটভূমি তথ্য প্রয়োজন? <u>যেসব পরিস্থিতিতে সূচনায় তথ্য দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে</u> * পাঠকরা যদি বার্তার নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো বুঝতে সাধারণ কিছু নীতিমালা জানার প্রয়োজন হয় * বার্তায় ব্যবহৃত কারিগরি শব্দ বা পরিভাষা যদি পাঠকদের অজানা হয় * আপনি যেই পরিস্থিতি বা প্রসঙ্গ আলোচনা করছেন, সেটি পাঠকদের অজানা হলে তবে সব পটভূমি তথ্য বার্তার শুরুতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেসব তথ্য শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ বা অংশের জন্য প্রাসঙ্গিক, সেগুলো সেগুলোর শুরুতেই দিন। শুরুতে কেবল সেই তথ্য দিন যা পাঠকদের পুরো বার্তা বুঝতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৬: যদি বার্তাটি খুব সংক্ষিপ্ত না হয়, তাহলে একটি সারাংশ যুক্ত করুন''' সারাংশ ব্যস্ত ম্যানেজারদের সাহায্য করে যাতে তারা পুরো নথি না পড়ে মূল বিষয়গুলো জানতে পারে। এটি বার্তার সারাংশ ও সংগঠন বোঝাতেও সাহায্য করে। দীর্ঘ নথির ক্ষেত্রে (যেমন, যেখানে কভার পেজ ও বিষয়সূচি থাকে), এই সারাংশগুলো আলাদা পাতায় বড় আকারে লেখা হয়ে থাকে। '''নির্দেশনা ৭: পাঠকের প্রয়োজন অনুসারে সূচনার দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করুন''' সূচনা কত বড় হওয়া উচিত, তার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। একটি ভালো, পাঠক-কেন্দ্রিক সূচনা কখনো কেবল একটি বাক্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে, আবার কখনো কয়েক পৃষ্ঠাও হতে পারে। আপনাকে কেবল সেই তথ্যই দিতে হবে যা পাঠকের অজানা। <u>পাঠকেরা যেন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানে</u> * কেন তারা বার্তাটি পড়বে * বার্তার মূল বক্তব্য কী * বার্তার সংগঠন ও পরিসর কেমন * কী পটভূমি তথ্য জানলে তারা বার্তাটি ভালোভাবে বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারবে আপনি যদি এই সব তথ্য দিয়ে থাকেন এবং পাঠকের মধ্যে বার্তাটি গ্রহণ করার ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন, তাহলে আপনার সূচনা একটি ভালো সূচনা—তাতে দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন। '''নির্দেশনা ৮: আপনার সূচনা পাঠকের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নিন''' একটি বার্তার সূচনা নিয়ে পাঠকের প্রত্যাশা ও পছন্দ তার সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের জন্য উপযোগী। তবে ভিন্ন সংস্কৃতিতে এই রীতি ভিন্ন হতে পারে। তাই একটি কার্যকর সূচনা তৈরি করতে হলে আপনাকে পাঠকের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। যদি না জানেন, তাহলে গবেষণা করুন বা সেই সংস্কৃতির কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিন। '''নির্দেশনা ৯: নৈতিকতা সম্পর্কিত সমস্যা দ্রুত ও কৌশলীভাবে উত্থাপন করুন''' ধরুন আপনি জানতে পারলেন আপনার প্রতিষ্ঠান এমন কিছু করছে যা আপনি অনৈতিক বলে মনে করেন। অথবা আপনাকে এমন কিছু লেখার অনুরোধ জানানো হলো যা আপনার নৈতিকতা বিরোধী। আপনি কি তখন মুখ খুলবেন বা লিখিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন? অনেক সময় নতুন কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে স্থিতি ও মর্যাদা অর্জনের পর এসব বিষয়ে কথা বলতে। কিন্তু এর মানে হলো, আপনি হয়তো বছরের পর বছর অপেক্ষা করবেন এমন একটি অনুশীলনের বিরোধিতা করতে, যেটি আপনি নিজেই অনৈতিক মনে করেন। এমনটি হলে আপনি নিজেও পরোক্ষভাবে অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন। যেকোনো বার্তার সূচনা নিয়ে ভাবার সময় যেমন কৌশল দরকার, তেমনি এমন নৈতিক বিষয়গুলো উত্থাপন করতেও তা প্রয়োজন। <u>চাকরি ঝুঁকিতে না ফেলে অনৈতিকতা রোধের ৩টি কৌশল</u> * পরিবর্তনের বীজ বপন করুন * অভিযোগ না তুলে যুক্তি দিয়ে বোঝান * অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উন্মুক্ত থাকুন একদিন আপনি এমন কিছু দেখবেন যা এতটাই ভয়াবহ যে আপনি ভবিষ্যৎ পদোন্নতি বা এমনকি চাকরি হারানোর ঝুঁকিও নিতে প্রস্তুত হবেন তা থামাতে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কোম্পানির ভেতরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা নিন। যদি ওই অনুশীলন আইন বা সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে, তাহলে উপযুক্ত সংস্থাকে জানানো উচিত। একে বলে "হুইসেল ব্লোয়িং (Whistle Blowing)"। কিছু রাজ্য ও ফেডারেল আইন হুইসেল ব্লোয়ারদের সুরক্ষা দেয়। ==নিজেকে জিজ্ঞেস করার মতো ১০টি প্রশ্ন== আপনি যখন আপনার চিঠি, ইমেইল বা অন্যান্য রুটিন যোগাযোগ পরিকল্পনা করবেন, তখন নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন: # আমি এই ব্যক্তিকে কতটা ভালোভাবে চিনি? # চিঠিতে আলোচিত বিষয়ের সম্পর্কে তারা কতটা জানেন? # আমি যা বলতে যাচ্ছি তাতে তারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন? এই বার্তাটিকে আমি কীভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি? # আমি এই বার্তার মাধ্যমে আসলে কী অর্জন করতে চাই? # আলোচিত ধারণাগুলো সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের স্তর কতটা? # আমার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন? # এর আগে তাদের সঙ্গে আমার/আমাদের কী ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক হয়েছে? # তাদের প্রোফাইল অনুযায়ী কতটা এবং কী ধরনের তথ্য আমি যুক্ত করব? # আমি কতটা কারিগরি ভাষা ব্যবহার করতে পারি আমার বার্তায়? # আমি কী কৌশল ব্যবহার করলে বার্তাটি সহজপাঠ্য ও সহজবোধ্য হবে? {{bookcat}} 7lp656pc5si7u5f3aaeepz0e3vkjkmq 85282 85281 2025-06-25T14:34:14Z Mehedi Abedin 7113 85282 wikitext text/x-wiki =একটি যোগাযোগের শুরু= পাঠক যখন কিছু পড়ে, তখন তারা লেখার শব্দ আর ছবির সঙ্গে মনের ভিতরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে। একটি বাক্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা পরের বাক্যগুলোতেও প্রভাব ফেলে। তাই শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরু ভালো হলে পাঠক মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়বে। এই অধ্যায়ে আটটি কৌশল শেখানো হবে। এই কৌশলগুলো লেখার শুরুটা সহজ, কাজে লাগার মতো এবং প্রভাবশালী করে তোলে। সব কৌশল একসাথে ব্যবহার করতে হবে না। কোনটি ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ভর করবে লেখার লক্ষ্য আর পাঠক সম্পর্কে জানা তথ্যের উপর। অধ্যায়ের শেষে একটি নৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কখনও কখনও মানুষ দ্বিধায় পড়ে—লেখা শুরু করা উচিত কি না। প্রথম তিনটি কৌশলে বলা হয়েছে কীভাবে বিষয় জানাতে হয়, মূল কথা বলতে হয়, আর লেখার গঠন সম্পর্কে পূর্বে ধারণা দিতে হয়। '''কৌশল ১: পাঠককে মনোযোগ দেওয়ার কারণ দিন''' শুরুর লক্ষ্য হলো পাঠকের মনোযোগ পাওয়া। যাতে তারা লেখা এড়িয়ে না যায় বা মাঝপথে ফেলে না দেয়। অনেকেই বলেন, তারা অনেক ই-মেইল, নোট আর প্রতিবেদন পান। তাই পাঠককে শুধু পড়তে বললে হবে না, মনোযোগ দিয়ে পড়তে আগ্রহী করে তুলতে হবে। লেখাটি যদি কাউকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, কেউ যখন গভীরভাবে কিছু পড়ে বা শোনে, তখন তারা লেখায় বলা মনোভাব গ্রহণ করে। তারা সেই মনোভাব সহজে পরিবর্তন হতে দেয় না। বরং, সেই মনোভাব অনুযায়ী কাজও করতে চায়। পাঠকের মনোযোগ পেতে হলে দুইটি কাজ করতে হবে: *বিষয়টি জানাতে হবে *তাদের বোঝাতে হবে, এতে তাদের কী উপকার হবে এই দুইটি কাজ একসাথে করতে হবে। শুধু বিষয় বললেই চলবে না। পাঠক হয়তো বুঝবেই না, কেন লেখাটি তাদের কাজে লাগবে। যা আপনার কাছে স্পষ্ট, পাঠকের কাছে তা নয়। ==সাবজেক্ট লাইনের গুরুত্ব== সাবজেক্ট লাইন ব্যবহার করা হয় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। সাধারণত এটি কয়েকটি শব্দের বেশি নয়। সাবজেক্ট লাইন লেখার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার: * সংক্ষেপে লেখো। সাবজেক্ট লাইন লেখার কাজ হলো পাঠককে জানানো—লেখাটি কী নিয়ে, লেখাটাই নয়। * আকর্ষণীয় করো। মানুষ যখন সাবজেক্ট লাইন পড়বে, তখন কি তারা বাকিটা পড়তে আগ্রহী হবে? * যেন বিষয়ে ঠিক থাকে। সাবজেক্ট লাইন পড়ে যেন পাঠক বুঝতে পারে, পরের অংশে কী আসছে। ই-মেইলের ক্ষেত্রে বিষয় লাইন আরও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একরকম দুটি শুরু থাকে—একটি হলো বিষয় লাইন, আরেকটি হলো মেইলের শুরুতে লেখা কয়েকটি বাক্য। পাঠক তখনই মেইল খুলে পড়বে, যদি সাবজেক্ট লাইন তাকে আগ্রহী করে তোলে। তাই বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করো। বোঝাও, তোমার লেখাটি পাঠকের উপকারে আসবে। মেমো বা চিঠির ক্ষেত্রেও সাবজেক্ট লাইনের সুযোগ কাজে লাগাও। ==পাঠকের উপকারিতা তুলে ধরার দুটি উপায়== যারা মোটামুটি উপকার পাবেন তাদের বোঝাতে দুটি কৌশল বিশেষভাবে কার্যকর। '''পাঠকের অনুরোধের উল্লেখ করো''' কর্মক্ষেত্রে তুমি প্রায়ই লিখবে কারণ সহকর্মী, ব্যবস্থাপক বা মক্কেল তোমার কাছে কোনো পরামর্শ বা তথ্য চেয়েছে। তোমার উত্তরে পাঠকের উপকারিতা প্রতিষ্ঠা করতে, শুধু সেই অনুরোধের উল্লেখ করো। '''পাঠকের সমস্যা সমাধানে সাহায্যের প্রস্তাব দাও''' লেখার শুরুতে পাঠককে জানাও যে তোমার যোগাযোগ তাদের সামনে আসা সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। বেশিরভাগ কর্মী নিজেদের সমস্যা সমাধানকারী মনে করে। প্রযুক্তিগত, সংগঠনিক বা নৈতিক কোনো সমস্যা হোক, পাঠক এমন যোগাযোগ পছন্দ করবে যা সমাধানে সাহায্য করে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জে সি ম্যাথেস এবং ডুইট ডব্লিউ স্টিভেনসন একটি বিশেষ শক্তিশালী পদ্ধতির কথা বলেছেন। মূল কথা হলো, লেখার শুরুতে পাঠকের উদ্বেগের ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধান বা সময় বাঁচানোর উপায় দেওয়া। প্রথমে, তুমি যাদের উদ্দেশ্যে লিখছো তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো তালিকা করো। তালিকা থেকে একটি সমস্যা বেছে নাও যার সমাধান তোমার তথ্য ও ভাবনা দিতে পারবে। এভাবে তুমি সমস্যা সমাধানের যৌথ প্রচেষ্টায় নিজেকে ও পাঠককে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করছ, যেখানে তোমার যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন তুমি বুঝে নেবে কীভাবে তোমার ও পাঠকের মধ্যে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব বর্ণনা করবে, তখন লেখার শুরু তৈরি করো। <u>পাঠকের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব স্থাপন</u> তোমার পাঠকদের বলো তুমি কোন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। এমন সমস্যা বেছে নাও যা তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তোমার পাঠকদের বলো তুমি সমস্যাটি সমাধানের জন্য কী করেছো। নিজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণস্বরূপ, হয়তো তোমার নিয়োগকর্তার পণ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছো বা প্রতিযোগিতামূলক পণ্য নিয়ে গবেষণা করেছো। অহংকার না করে বোঝাও কেন তোমার গবেষণা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকদের জানাও তোমার যোগাযোগ কীভাবে তাদের কাজ সহজ ও দক্ষ করবে এবং তাদের অবদান কীভাবে যৌথ সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। <u>কিছু পরিস্থিতি যেখানে সাধারণত সমস্যা সমাধানের পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বর্ণনা প্রয়োজন হয়</u> তোমার যোগাযোগ পড়বে তোমার সরাসরি টিমের বাইরে যারা। পাঠক যত দূরে থাকবে বার্তার প্রেক্ষাপট জানার সম্ভাবনা তত কম। তোমার যোগাযোগে বাইন্ডিং এবং কভার থাকবে। বাইন্ড করা নথি সাধারণত বড় পাঠকদলের জন্য এবং ভবিষ্যত পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ সমস্যার প্রেক্ষাপট বুঝতে নাও পারে। তোমার যোগাযোগ ব্যবহার হবে বড় অর্থের সিদ্ধান্ত নিতে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেন যারা রিপোর্টের সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট জানতে চান। ==অননুরোধিত যোগাযোগে সমস্যার সংজ্ঞায়ন== আপনার কর্মজীবনে অনেকবার এমন সুযোগ আসবে যখন আপনাকে অনুরোধ বা সুপারিশ না করেও কিছু জানাতে হবে। এই ধরনের অননুরোধিত যোগাযোগ লেখার সময়, আপনাকে পাঠকদের বোঝাতে হতে পারে যে প্রকৃতপক্ষে কোনো সমস্যা রয়েছে। এর জন্য সৃজনশীল ও পাঠককেন্দ্রিক চিন্তা প্রয়োজন হতে পারে। '''নিয়ম ২: আপনার মূল বক্তব্য স্পষ্ট করুন''' সাধারণত, আপনার যোগাযোগের কার্যকারিতা ও প্রভাব বাড়াতে আপনার মূল বক্তব্য শুরুতেই তুলে ধরুন। এর তিনটি প্রধান কারণ: * আপনি আপনার পাঠকদের তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। * আপনি পাঠকদের মধ্যে সম্ভাবনা বাড়ান যে তারা আপনার মূল বক্তব্য সঠিকভাবে পড়বে, যোগাযোগটি পড়ে শেষ না করেই পাশে রাখবে না। * আপনি পাঠকদের পরবর্তী বিস্তারিত বিষয়গুলি বুঝতে একটি প্রাসঙ্গিক কাঠামো প্রদান করেন। ==আপনার মূল বক্তব্য সচেতনভাবে বেছে নিন== আপনার বার্তার মূল বক্তব্য ঠিক তেমনি সচেতনভাবে বেছে নিন, যেমনভাবে আপনি প্রতিটি অংশের মূল বক্তব্য নির্ধারণ করেন। আপনি যদি কোনো অনুরোধের জবাব দিচ্ছেন, তাহলে আপনার মূল বক্তব্য হবে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর। আর আপনি যদি নিজ উদ্যোগে কিছু লিখছেন, তাহলে আপনার মূল বক্তব্য হতে পারে—পাঠকরা এটি পড়ার পর কী ভাববে বা কী করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি বিষয় লাইনে লিখতে পারেন "অনুমোদনের প্রয়োজন", এবং তারপর নথিতে কী অনুমোদন করতে হবে তা ব্যাখ্যা করতে পারেন মূল বক্তব্য হিসেবে। '''নির্দেশনা ৩: আপনার পাঠকদের কী প্রত্যাশা করা উচিত তা জানান''' আপনার বার্তাটি যদি খুব সংক্ষিপ্ত না হয়, তাহলে এর শুরুতেই পাঠকদের জানানো উচিত যে পরবর্তী অংশগুলোতে তারা কী আশা করতে পারে। একটি পূর্বাভাসমূলক বিবৃতি যা যোগাযোগের শুরুতে রাখা হয়, তা এর সংগঠন এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। এর কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, এটি পাঠকের মনোযোগ কেবল প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর দিকে কেন্দ্রীভূত করবে। দ্বিতীয়ত, এটি সেইসব পাঠকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে, যাদের জন্য আপনি বার্তাটি লিখছেন না। এর ফলে আইনি ঝামেলা এড়ানো যেতে পারে। ==আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে জানান== আপনার বার্তার শুরুতেই এর সংগঠন সম্পর্কে পাঠকদের জানালে, আপনি তাদেরকে একটি কাঠামো প্রদান করেন যা বার্তার বিভিন্ন তথ্যাংশের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে। এই কাঠামো আপনার বার্তার ব্যবহারযোগ্যতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে, কারণ এটি পাঠকদের তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনি প্রতিটি নতুন যে পয়েন্ট উপস্থাপন করছেন, তা আগের পয়েন্টগুলোর সাথে কীভাবে সম্পর্কিত। এটি দ্রুত স্ক্যান করে পড়া পাঠকদেরও সাহায্য করে, যাতে তারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে পারে। ==আপনার বার্তার পরিসর সম্পর্কে জানান== পাঠকরা শুরু থেকেই জানতে চান যে একটি বার্তায় কী রয়েছে এবং কী নেই। এমনকি যদি তারা বুঝেও ফেলেন যে আপনি এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করছেন যা তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক, তবুও তারা ভাবতে পারেন আপনি সেই বিষয়ের ঠিক কোন কোন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন যা তারা জানতে চান। প্রায়ই আপনি যখন আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে বলবেন, তখনই এর পরিসর সম্পর্কেও জানাবেন: আপনি যখন আলোচ্য বিষয়গুলোর তালিকা দেন, তখন আপনি বার্তার পরিসর নির্ধারণ করেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত তথ্যও দিতে হতে পারে। যেমন—যখন আপনি চান পাঠক বুঝুক যে আপনি বিষয়টি পুরোপুরি কাভার করছেন না, বা আপনি এটি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করছেন। '''নির্দেশনা ৪: আপনার বার্তায় পাঠকদের উন্মুক্ততা উৎসাহিত করুন''' এই বইয়ের অন্যান্য অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পাঠকরা একটি বার্তা পড়ার সময় বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। যেমন, তারা আপনার তৈরি করা কোনো নির্দেশিকা পড়লে সেটিকে হুবহু অনুসরণ করতে পারেন, আবার নিজের মতো করেও প্রয়োগ করতে পারেন—শুধু সমস্যায় পড়লে নির্দেশিকাটি দেখেন। যেহেতু আপনার বার্তার সূচনাটি পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, তাই বার্তার শুরুতে সবসময় প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা উচিত। সবসময় এমনভাবে শুরু করুন যাতে পাঠকরা বাকিটা পড়তে আগ্রহী ও উন্মুক্ত থাকে। ==পাঠকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে== সাধারণভাবে, আপনি হয়তো সহজেই একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাবেন, কারণ আপনি সহকর্মী, গ্রাহক কিংবা অন্য যেসব মানুষকে তথ্য দিচ্ছেন, তারা সেটি জানতে আগ্রহী থাকে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বার্তার শুরুটা আরও সচেতনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে আপনার বার্তা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচিত হয়। পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে যদি নিচের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হয় "হ্যাঁ"। যদি তা-ই হয়, তাহলে পাঠকের সম্ভাব্য মনোভাব নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী বার্তার সূচনা গঠন করুন। * আপনার বার্তায় কি পাঠকদের জন্য কোনো খারাপ খবর রয়েছে? * বার্তায় কি এমন কোনো ধারণা বা পরামর্শ রয়েছে যা পাঠকদের কাছে অপ্রিয় হতে পারে? * পাঠকেরা কি আপনার, আপনার বিভাগের বা কোম্পানির প্রতি অবিশ্বাস, বিরূপতা, বা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করেন? * তারা কি বিষয় বা পরিস্থিতির প্রতি সংশয়প্রবণ? * তারা কি আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান? <u>উন্মুক্ততা উৎসাহিত করার কৌশল</u> * নিজেকে সমালোচক বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং একজন সহযোগী হিসেবে উপস্থাপন করুন। বোঝাতে চেষ্টা করুন যে আপনি পাঠকদের কোনো সমস্যা সমাধানে বা লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে কাজ করছেন। * আপনার মূল বক্তব্য উপস্থাপন কিছুটা বিলম্বিত করুন। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এড়াতে শুরুতেই মূল পয়েন্ট না দিয়ে আগে কিছু পরিপ্রেক্ষিত দিন। এতে পাঠক অন্য যুক্তিগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন। * আপনার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করুন। যদি পাঠক বিশ্বাস করেন যে আপনি জানেন কী বলছেন, তাহলে তারা বার্তাটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আপনার যোগ্যতা বলার দরকার নেই, বিশেষত যদি পাঠক ইতোমধ্যেই তা জানেন। * সাহায্য চেয়ে নিন। মানুষ সাধারণত বেশি গ্রহণযোগ্য হয় যখন তাকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এটি দেখায় আপনি অহংকারী নন এবং দলগতভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। কখনো কখনো আত্মগর্ব বিসর্জন দিয়ে নিচু স্বরে কথা বললেই কার্যসিদ্ধি হয়। ==নিজেকে একটি গল্প বলুন== যদিও উপরের কৌশলগুলো প্রায়শই পাঠকের উন্মুক্ততা বাড়াতে সাহায্য করবে, সেগুলো যান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করবেন না। আপনার বার্তার সূচনা লেখার সময় সবসময় পাঠকের মনোভাব, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশাগুলো মাথায় রাখুন। এটি করতে পারেন নিজেই একটি কল্পিত গল্প তৈরি করে, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে আপনার পাঠক—যদি একজনকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, তাহলে সেই ব্যক্তি; আর যদি একটি দলের উদ্দেশ্যে লেখেন, তাহলে তাদের একজন সাধারণ সদস্য। গল্পটি শুরু করুন ঠিক সেই সময় থেকে, যখন সে আপনার বার্তাটি পড়ার আগে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং শেষ করুন বার্তার প্রথম শব্দগুলো পড়ার সময়। যদিও এই গল্পটি বার্তার অংশ হবে না, এটি আপনাকে বার্তার উপযুক্ত সূচনা বেছে নিতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৫: প্রাসঙ্গিক পটভূমি তথ্য দিন''' যখন আপনি একটি বার্তার সূচনা লেখেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: এই বার্তাটি বুঝতে পাঠকের কি কোনো পটভূমি তথ্য প্রয়োজন? <u>যেসব পরিস্থিতিতে সূচনায় তথ্য দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে</u> * পাঠকরা যদি বার্তার নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো বুঝতে সাধারণ কিছু নীতিমালা জানার প্রয়োজন হয় * বার্তায় ব্যবহৃত কারিগরি শব্দ বা পরিভাষা যদি পাঠকদের অজানা হয় * আপনি যেই পরিস্থিতি বা প্রসঙ্গ আলোচনা করছেন, সেটি পাঠকদের অজানা হলে তবে সব পটভূমি তথ্য বার্তার শুরুতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেসব তথ্য শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ বা অংশের জন্য প্রাসঙ্গিক, সেগুলো সেগুলোর শুরুতেই দিন। শুরুতে কেবল সেই তথ্য দিন যা পাঠকদের পুরো বার্তা বুঝতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৬: যদি বার্তাটি খুব সংক্ষিপ্ত না হয়, তাহলে একটি সারাংশ যুক্ত করুন''' সারাংশ ব্যস্ত ম্যানেজারদের সাহায্য করে যাতে তারা পুরো নথি না পড়ে মূল বিষয়গুলো জানতে পারে। এটি বার্তার সারাংশ ও সংগঠন বোঝাতেও সাহায্য করে। দীর্ঘ নথির ক্ষেত্রে (যেমন, যেখানে কভার পেজ ও বিষয়সূচি থাকে), এই সারাংশগুলো আলাদা পাতায় বড় আকারে লেখা হয়ে থাকে। '''নির্দেশনা ৭: পাঠকের প্রয়োজন অনুসারে সূচনার দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করুন''' সূচনা কত বড় হওয়া উচিত, তার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। একটি ভালো, পাঠক-কেন্দ্রিক সূচনা কখনো কেবল একটি বাক্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে, আবার কখনো কয়েক পৃষ্ঠাও হতে পারে। আপনাকে কেবল সেই তথ্যই দিতে হবে যা পাঠকের অজানা। <u>পাঠকেরা যেন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানে</u> * কেন তারা বার্তাটি পড়বে * বার্তার মূল বক্তব্য কী * বার্তার সংগঠন ও পরিসর কেমন * কী পটভূমি তথ্য জানলে তারা বার্তাটি ভালোভাবে বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারবে আপনি যদি এই সব তথ্য দিয়ে থাকেন এবং পাঠকের মধ্যে বার্তাটি গ্রহণ করার ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন, তাহলে আপনার সূচনা একটি ভালো সূচনা—তাতে দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন। '''নির্দেশনা ৮: আপনার সূচনা পাঠকের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নিন''' একটি বার্তার সূচনা নিয়ে পাঠকের প্রত্যাশা ও পছন্দ তার সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের জন্য উপযোগী। তবে ভিন্ন সংস্কৃতিতে এই রীতি ভিন্ন হতে পারে। তাই একটি কার্যকর সূচনা তৈরি করতে হলে আপনাকে পাঠকের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। যদি না জানেন, তাহলে গবেষণা করুন বা সেই সংস্কৃতির কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিন। '''নির্দেশনা ৯: নৈতিকতা সম্পর্কিত সমস্যা দ্রুত ও কৌশলীভাবে উত্থাপন করুন''' ধরুন আপনি জানতে পারলেন আপনার প্রতিষ্ঠান এমন কিছু করছে যা আপনি অনৈতিক বলে মনে করেন। অথবা আপনাকে এমন কিছু লেখার অনুরোধ জানানো হলো যা আপনার নৈতিকতা বিরোধী। আপনি কি তখন মুখ খুলবেন বা লিখিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন? অনেক সময় নতুন কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে স্থিতি ও মর্যাদা অর্জনের পর এসব বিষয়ে কথা বলতে। কিন্তু এর মানে হলো, আপনি হয়তো বছরের পর বছর অপেক্ষা করবেন এমন একটি অনুশীলনের বিরোধিতা করতে, যেটি আপনি নিজেই অনৈতিক মনে করেন। এমনটি হলে আপনি নিজেও পরোক্ষভাবে অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন। যেকোনো বার্তার সূচনা নিয়ে ভাবার সময় যেমন কৌশল দরকার, তেমনি এমন নৈতিক বিষয়গুলো উত্থাপন করতেও তা প্রয়োজন। <u>চাকরি ঝুঁকিতে না ফেলে অনৈতিকতা রোধের ৩টি কৌশল</u> * পরিবর্তনের বীজ বপন করুন * অভিযোগ না তুলে যুক্তি দিয়ে বোঝান * অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উন্মুক্ত থাকুন একদিন আপনি এমন কিছু দেখবেন যা এতটাই ভয়াবহ যে আপনি ভবিষ্যৎ পদোন্নতি বা এমনকি চাকরি হারানোর ঝুঁকিও নিতে প্রস্তুত হবেন তা থামাতে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কোম্পানির ভেতরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা নিন। যদি ওই অনুশীলন আইন বা সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে, তাহলে উপযুক্ত সংস্থাকে জানানো উচিত। একে বলে "হুইসেল ব্লোয়িং (Whistle Blowing)"। কিছু রাজ্য ও ফেডারেল আইন হুইসেল ব্লোয়ারদের সুরক্ষা দেয়। ==নিজেকে জিজ্ঞেস করার মতো ১০টি প্রশ্ন== আপনি যখন আপনার চিঠি, ইমেইল বা অন্যান্য রুটিন যোগাযোগ পরিকল্পনা করবেন, তখন নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন: # আমি এই ব্যক্তিকে কতটা ভালোভাবে চিনি? # চিঠিতে আলোচিত বিষয়ের সম্পর্কে তারা কতটা জানেন? # আমি যা বলতে যাচ্ছি তাতে তারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন? এই বার্তাটিকে আমি কীভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি? # আমি এই বার্তার মাধ্যমে আসলে কী অর্জন করতে চাই? # আলোচিত ধারণাগুলো সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের স্তর কতটা? # আমার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন? # এর আগে তাদের সঙ্গে আমার/আমাদের কী ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক হয়েছে? # তাদের প্রোফাইল অনুযায়ী কতটা এবং কী ধরনের তথ্য আমি যুক্ত করব? # আমি কতটা কারিগরি ভাষা ব্যবহার করতে পারি আমার বার্তায়? # আমি কী কৌশল ব্যবহার করলে বার্তাটি সহজপাঠ্য ও সহজবোধ্য হবে? {{bookcat}} 8w2bimuwvhonwznkppznhgwx374il90 85283 85282 2025-06-25T14:35:22Z Mehedi Abedin 7113 85283 wikitext text/x-wiki =একটি যোগাযোগের শুরু= পাঠক যখন কিছু পড়ে, তখন তারা লেখার শব্দ আর ছবির সঙ্গে মনের ভিতরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে। একটি বাক্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা পরের বাক্যগুলোতেও প্রভাব ফেলে। তাই শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরু ভালো হলে পাঠক মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়বে। এই অধ্যায়ে আটটি কৌশল শেখানো হবে। এই কৌশলগুলো লেখার শুরুটা সহজ, কাজে লাগার মতো এবং প্রভাবশালী করে তোলে। সব কৌশল একসাথে ব্যবহার করতে হবে না। কোনটি ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ভর করবে লেখার লক্ষ্য আর পাঠক সম্পর্কে জানা তথ্যের উপর। অধ্যায়ের শেষে একটি নৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কখনও কখনও মানুষ দ্বিধায় পড়ে—লেখা শুরু করা উচিত কি না। প্রথম তিনটি কৌশলে বলা হয়েছে কীভাবে বিষয় জানাতে হয়, মূল কথা বলতে হয়, আর লেখার গঠন সম্পর্কে পূর্বে ধারণা দিতে হয়। '''কৌশল ১: পাঠককে মনোযোগ দেওয়ার কারণ দিন''' শুরুর লক্ষ্য হলো পাঠকের মনোযোগ পাওয়া। যাতে তারা লেখা এড়িয়ে না যায় বা মাঝপথে ফেলে না দেয়। অনেকেই বলেন, তারা অনেক ই-মেইল, নোট আর প্রতিবেদন পান। তাই পাঠককে শুধু পড়তে বললে হবে না, মনোযোগ দিয়ে পড়তে আগ্রহী করে তুলতে হবে। লেখাটি যদি কাউকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, কেউ যখন গভীরভাবে কিছু পড়ে বা শোনে, তখন তারা লেখায় বলা মনোভাব গ্রহণ করে। তারা সেই মনোভাব সহজে পরিবর্তন হতে দেয় না। বরং, সেই মনোভাব অনুযায়ী কাজও করতে চায়। পাঠকের মনোযোগ পেতে হলে দুইটি কাজ করতে হবে: *বিষয়টি জানাতে হবে *তাদের বোঝাতে হবে, এতে তাদের কী উপকার হবে এই দুইটি কাজ একসাথে করতে হবে। শুধু বিষয় বললেই চলবে না। পাঠক হয়তো বুঝবেই না, কেন লেখাটি তাদের কাজে লাগবে। যা আপনার কাছে স্পষ্ট, পাঠকের কাছে তা নয়। ==সাবজেক্ট লাইনের গুরুত্ব== সাবজেক্ট লাইন ব্যবহার করা হয় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। সাধারণত এটি কয়েকটি শব্দের বেশি নয়। সাবজেক্ট লাইন লেখার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার: * সংক্ষেপে লেখো। সাবজেক্ট লাইন লেখার কাজ হলো পাঠককে জানানো—লেখাটি কী নিয়ে, লেখাটাই নয়। * আকর্ষণীয় করো। মানুষ যখন সাবজেক্ট লাইন পড়বে, তখন কি তারা বাকিটা পড়তে আগ্রহী হবে? * যেন বিষয়ে ঠিক থাকে। সাবজেক্ট লাইন পড়ে যেন পাঠক বুঝতে পারে, পরের অংশে কী আসছে। ই-মেইলের ক্ষেত্রে বিষয় লাইন আরও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একরকম দুটি শুরু থাকে—একটি হলো বিষয় লাইন, আরেকটি হলো মেইলের শুরুতে লেখা কয়েকটি বাক্য। পাঠক তখনই মেইল খুলে পড়বে, যদি সাবজেক্ট লাইন তাকে আগ্রহী করে তোলে। তাই বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করো। বোঝাও, তোমার লেখাটি পাঠকের উপকারে আসবে। মেমো বা চিঠির ক্ষেত্রেও সাবজেক্ট লাইনের সুযোগ কাজে লাগাও। ==পাঠকের উপকারিতা তুলে ধরার দুটি উপায়== যারা মোটামুটি উপকার পাবেন তাদের বোঝাতে দুটি কৌশল বিশেষভাবে কার্যকর। '''পাঠকের অনুরোধের উল্লেখ করো''' কর্মক্ষেত্রে তুমি প্রায়ই লিখবে কারণ সহকর্মী, ব্যবস্থাপক বা মক্কেল তোমার কাছে কোনো পরামর্শ বা তথ্য চেয়েছে। তোমার উত্তরে পাঠকের উপকারিতা প্রতিষ্ঠা করতে, শুধু সেই অনুরোধের উল্লেখ করো। '''পাঠকের সমস্যা সমাধানে সাহায্যের প্রস্তাব দাও''' লেখার শুরুতে পাঠককে জানাও যে তোমার যোগাযোগ তাদের সামনে আসা সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। বেশিরভাগ কর্মী নিজেদের সমস্যা সমাধানকারী মনে করে। প্রযুক্তিগত, সংগঠনিক বা নৈতিক কোনো সমস্যা হোক, পাঠক এমন যোগাযোগ পছন্দ করবে যা সমাধানে সাহায্য করে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জে সি ম্যাথেস এবং ডুইট ডব্লিউ স্টিভেনসন একটি বিশেষ শক্তিশালী পদ্ধতির কথা বলেছেন। মূল কথা হলো, লেখার শুরুতে পাঠকের উদ্বেগের ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধান বা সময় বাঁচানোর উপায় দেওয়া। প্রথমে, তুমি যাদের উদ্দেশ্যে লিখছো তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো তালিকা করো। তালিকা থেকে একটি সমস্যা বেছে নাও যার সমাধান তোমার তথ্য ও ভাবনা দিতে পারবে। এভাবে তুমি সমস্যা সমাধানের যৌথ প্রচেষ্টায় নিজেকে ও পাঠককে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করছ, যেখানে তোমার যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন তুমি বুঝে নেবে কীভাবে তোমার ও পাঠকের মধ্যে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব বর্ণনা করবে, তখন লেখার শুরু তৈরি করো। <u>পাঠকের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব স্থাপন</u> তোমার পাঠকদের বলো তুমি কোন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। এমন সমস্যা বেছে নাও যা তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তোমার পাঠকদের বলো তুমি সমস্যাটি সমাধানের জন্য কী করেছো। নিজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণস্বরূপ, হয়তো তোমার নিয়োগকর্তার পণ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছো বা প্রতিযোগিতামূলক পণ্য নিয়ে গবেষণা করেছো। অহংকার না করে বোঝাও কেন তোমার গবেষণা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকদের জানাও তোমার যোগাযোগ কীভাবে তাদের কাজ সহজ ও দক্ষ করবে এবং তাদের অবদান কীভাবে যৌথ সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। <u>কিছু পরিস্থিতি যেখানে সাধারণত সমস্যা সমাধানের পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বর্ণনা প্রয়োজন হয়</u> তোমার যোগাযোগ পড়বে তোমার সরাসরি টিমের বাইরে যারা। পাঠক যত দূরে থাকবে বার্তার প্রেক্ষাপট জানার সম্ভাবনা তত কম। তোমার যোগাযোগে বাইন্ডিং এবং কভার থাকবে। বাইন্ড করা নথি সাধারণত বড় পাঠকদলের জন্য এবং ভবিষ্যত পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ সমস্যার প্রেক্ষাপট বুঝতে নাও পারে। তোমার যোগাযোগ ব্যবহার হবে বড় অর্থের সিদ্ধান্ত নিতে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেন যারা রিপোর্টের সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট জানতে চান। ==অননুরোধিত যোগাযোগে সমস্যার সংজ্ঞায়ন== আপনার কর্মজীবনে অনেকবার এমন সুযোগ আসবে যখন আপনাকে অনুরোধ বা সুপারিশ না করেও কিছু জানাতে হবে। এই ধরনের অননুরোধিত যোগাযোগ লেখার সময়, আপনাকে পাঠকদের বোঝাতে হতে পারে যে প্রকৃতপক্ষে কোনো সমস্যা রয়েছে। এর জন্য সৃজনশীল ও পাঠককেন্দ্রিক চিন্তা প্রয়োজন হতে পারে। '''নিয়ম ২: আপনার মূল বক্তব্য স্পষ্ট করুন''' সাধারণত, আপনার যোগাযোগের কার্যকারিতা ও প্রভাব বাড়াতে আপনার মূল বক্তব্য শুরুতেই তুলে ধরুন। এর তিনটি প্রধান কারণ: * আপনি আপনার পাঠকদের তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। * আপনি পাঠকদের মধ্যে সম্ভাবনা বাড়ান যে তারা আপনার মূল বক্তব্য সঠিকভাবে পড়বে, যোগাযোগটি পড়ে শেষ না করেই পাশে রাখবে না। * আপনি পাঠকদের পরবর্তী বিস্তারিত বিষয়গুলি বুঝতে একটি প্রাসঙ্গিক কাঠামো প্রদান করেন। ==আপনার মূল বক্তব্য সচেতনভাবে বেছে নিন== আপনার বার্তার মূল বক্তব্য ঠিক তেমনি সচেতনভাবে বেছে নিন, যেমনভাবে আপনি প্রতিটি অংশের মূল বক্তব্য নির্ধারণ করেন। আপনি যখন কোনো অনুরোধের জবাব দিচ্ছেন, তখন আপনার মূল বক্তব্য হবে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর। আর আপনি যদি নিজ উদ্যোগে কিছু লিখেন, তাহলে আপনার মূল বক্তব্য হতে পারে—পাঠকরা এটি পড়ার পর কী ভাববে বা কী করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি বিষয় লাইনে লিখতে পারেন "অনুমোদনের প্রয়োজন", এবং তারপর নথিতে কী অনুমোদন করতে হবে তা ব্যাখ্যা করতে পারেন মূল বক্তব্য হিসেবে। '''নির্দেশনা ৩: আপনার পাঠকদের কী প্রত্যাশা করা উচিত তা জানান''' আপনার বার্তাটি যদি খুব সংক্ষিপ্ত না হয় তাহলে এর শুরুতেই পাঠকদের জানানো উচিত যে পরবর্তী অংশগুলোতে তারা কী আশা করতে পারে। একটি পূর্বাভাসমূলক বিবৃতি যা যোগাযোগের শুরুতে রাখা হয়, তা এর সংগঠন এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। এর কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, এটি পাঠকের মনোযোগ কেবল প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর দিকে কেন্দ্রীভূত করবে। দ্বিতীয়ত, এটি সেইসব পাঠকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে, যাদের জন্য আপনি বার্তাটি লিখছেন না। এর ফলে আইনি ঝামেলা এড়ানো যেতে পারে। ==আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে জানান== আপনার বার্তার শুরুতেই এর সংগঠন সম্পর্কে পাঠকদের জানালে, আপনি তাদেরকে একটি কাঠামো প্রদান করেন যা বার্তার বিভিন্ন তথ্যাংশের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে। এই কাঠামো আপনার বার্তার ব্যবহারযোগ্যতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে, কারণ এটি পাঠকদের তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনি প্রতিটি নতুন যে পয়েন্ট উপস্থাপন করছেন, তা আগের পয়েন্টগুলোর সাথে কীভাবে সম্পর্কিত। এটি দ্রুত স্ক্যান করে পড়া পাঠকদেরও সাহায্য করে, যাতে তারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে পারে। ==আপনার বার্তার পরিসর সম্পর্কে জানান== পাঠকরা শুরু থেকেই জানতে চান যে একটি বার্তায় কী রয়েছে এবং কী নেই। এমনকি যদি তারা বুঝেও ফেলেন যে আপনি এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করছেন যা তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক, তবুও তারা ভাবতে পারেন আপনি সেই বিষয়ের ঠিক কোন কোন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন যা তারা জানতে চান। প্রায়ই আপনি যখন আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে বলবেন, তখনই এর পরিসর সম্পর্কেও জানাবেন: আপনি যখন আলোচ্য বিষয়গুলোর তালিকা দেন, তখন আপনি বার্তার পরিসর নির্ধারণ করেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত তথ্যও দিতে হতে পারে। যেমন—যখন আপনি চান পাঠক বুঝুক যে আপনি বিষয়টি পুরোপুরি কাভার করছেন না, বা আপনি এটি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করছেন। '''নির্দেশনা ৪: আপনার বার্তায় পাঠকদের উন্মুক্ততা উৎসাহিত করুন''' এই বইয়ের অন্যান্য অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পাঠকরা একটি বার্তা পড়ার সময় বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। যেমন, তারা আপনার তৈরি করা কোনো নির্দেশিকা পড়লে সেটিকে হুবহু অনুসরণ করতে পারেন, আবার নিজের মতো করেও প্রয়োগ করতে পারেন—শুধু সমস্যায় পড়লে নির্দেশিকাটি দেখেন। যেহেতু আপনার বার্তার সূচনাটি পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, তাই বার্তার শুরুতে সবসময় প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা উচিত। সবসময় এমনভাবে শুরু করুন যাতে পাঠকরা বাকিটা পড়তে আগ্রহী ও উন্মুক্ত থাকে। ==পাঠকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে== সাধারণভাবে, আপনি হয়তো সহজেই একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাবেন, কারণ আপনি সহকর্মী, গ্রাহক কিংবা অন্য যেসব মানুষকে তথ্য দিচ্ছেন, তারা সেটি জানতে আগ্রহী থাকে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বার্তার শুরুটা আরও সচেতনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে আপনার বার্তা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচিত হয়। পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে যদি নিচের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হয় "হ্যাঁ"। যদি তা-ই হয়, তাহলে পাঠকের সম্ভাব্য মনোভাব নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী বার্তার সূচনা গঠন করুন। * আপনার বার্তায় কি পাঠকদের জন্য কোনো খারাপ খবর রয়েছে? * বার্তায় কি এমন কোনো ধারণা বা পরামর্শ রয়েছে যা পাঠকদের কাছে অপ্রিয় হতে পারে? * পাঠকেরা কি আপনার, আপনার বিভাগের বা কোম্পানির প্রতি অবিশ্বাস, বিরূপতা, বা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করেন? * তারা কি বিষয় বা পরিস্থিতির প্রতি সংশয়প্রবণ? * তারা কি আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান? <u>উন্মুক্ততা উৎসাহিত করার কৌশল</u> * নিজেকে সমালোচক বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং একজন সহযোগী হিসেবে উপস্থাপন করুন। বোঝাতে চেষ্টা করুন যে আপনি পাঠকদের কোনো সমস্যা সমাধানে বা লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে কাজ করছেন। * আপনার মূল বক্তব্য উপস্থাপন কিছুটা বিলম্বিত করুন। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এড়াতে শুরুতেই মূল পয়েন্ট না দিয়ে আগে কিছু পরিপ্রেক্ষিত দিন। এতে পাঠক অন্য যুক্তিগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন। * আপনার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করুন। যদি পাঠক বিশ্বাস করেন যে আপনি জানেন কী বলছেন, তাহলে তারা বার্তাটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আপনার যোগ্যতা বলার দরকার নেই, বিশেষত যদি পাঠক ইতোমধ্যেই তা জানেন। * সাহায্য চেয়ে নিন। মানুষ সাধারণত বেশি গ্রহণযোগ্য হয় যখন তাকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এটি দেখায় আপনি অহংকারী নন এবং দলগতভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। কখনো কখনো আত্মগর্ব বিসর্জন দিয়ে নিচু স্বরে কথা বললেই কার্যসিদ্ধি হয়। ==নিজেকে একটি গল্প বলুন== যদিও উপরের কৌশলগুলো প্রায়শই পাঠকের উন্মুক্ততা বাড়াতে সাহায্য করবে, সেগুলো যান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করবেন না। আপনার বার্তার সূচনা লেখার সময় সবসময় পাঠকের মনোভাব, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশাগুলো মাথায় রাখুন। এটি করতে পারেন নিজেই একটি কল্পিত গল্প তৈরি করে, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে আপনার পাঠক—যদি একজনকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, তাহলে সেই ব্যক্তি; আর যদি একটি দলের উদ্দেশ্যে লেখেন, তাহলে তাদের একজন সাধারণ সদস্য। গল্পটি শুরু করুন ঠিক সেই সময় থেকে, যখন সে আপনার বার্তাটি পড়ার আগে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং শেষ করুন বার্তার প্রথম শব্দগুলো পড়ার সময়। যদিও এই গল্পটি বার্তার অংশ হবে না, এটি আপনাকে বার্তার উপযুক্ত সূচনা বেছে নিতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৫: প্রাসঙ্গিক পটভূমি তথ্য দিন''' যখন আপনি একটি বার্তার সূচনা লেখেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: এই বার্তাটি বুঝতে পাঠকের কি কোনো পটভূমি তথ্য প্রয়োজন? <u>যেসব পরিস্থিতিতে সূচনায় তথ্য দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে</u> * পাঠকরা যদি বার্তার নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো বুঝতে সাধারণ কিছু নীতিমালা জানার প্রয়োজন হয় * বার্তায় ব্যবহৃত কারিগরি শব্দ বা পরিভাষা যদি পাঠকদের অজানা হয় * আপনি যেই পরিস্থিতি বা প্রসঙ্গ আলোচনা করছেন, সেটি পাঠকদের অজানা হলে তবে সব পটভূমি তথ্য বার্তার শুরুতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেসব তথ্য শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ বা অংশের জন্য প্রাসঙ্গিক, সেগুলো সেগুলোর শুরুতেই দিন। শুরুতে কেবল সেই তথ্য দিন যা পাঠকদের পুরো বার্তা বুঝতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৬: যদি বার্তাটি খুব সংক্ষিপ্ত না হয়, তাহলে একটি সারাংশ যুক্ত করুন''' সারাংশ ব্যস্ত ম্যানেজারদের সাহায্য করে যাতে তারা পুরো নথি না পড়ে মূল বিষয়গুলো জানতে পারে। এটি বার্তার সারাংশ ও সংগঠন বোঝাতেও সাহায্য করে। দীর্ঘ নথির ক্ষেত্রে (যেমন, যেখানে কভার পেজ ও বিষয়সূচি থাকে), এই সারাংশগুলো আলাদা পাতায় বড় আকারে লেখা হয়ে থাকে। '''নির্দেশনা ৭: পাঠকের প্রয়োজন অনুসারে সূচনার দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করুন''' সূচনা কত বড় হওয়া উচিত, তার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। একটি ভালো, পাঠক-কেন্দ্রিক সূচনা কখনো কেবল একটি বাক্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে, আবার কখনো কয়েক পৃষ্ঠাও হতে পারে। আপনাকে কেবল সেই তথ্যই দিতে হবে যা পাঠকের অজানা। <u>পাঠকেরা যেন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানে</u> * কেন তারা বার্তাটি পড়বে * বার্তার মূল বক্তব্য কী * বার্তার সংগঠন ও পরিসর কেমন * কী পটভূমি তথ্য জানলে তারা বার্তাটি ভালোভাবে বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারবে আপনি যদি এই সব তথ্য দিয়ে থাকেন এবং পাঠকের মধ্যে বার্তাটি গ্রহণ করার ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন, তাহলে আপনার সূচনা একটি ভালো সূচনা—তাতে দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন। '''নির্দেশনা ৮: আপনার সূচনা পাঠকের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নিন''' একটি বার্তার সূচনা নিয়ে পাঠকের প্রত্যাশা ও পছন্দ তার সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের জন্য উপযোগী। তবে ভিন্ন সংস্কৃতিতে এই রীতি ভিন্ন হতে পারে। তাই একটি কার্যকর সূচনা তৈরি করতে হলে আপনাকে পাঠকের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। যদি না জানেন, তাহলে গবেষণা করুন বা সেই সংস্কৃতির কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিন। '''নির্দেশনা ৯: নৈতিকতা সম্পর্কিত সমস্যা দ্রুত ও কৌশলীভাবে উত্থাপন করুন''' ধরুন আপনি জানতে পারলেন আপনার প্রতিষ্ঠান এমন কিছু করছে যা আপনি অনৈতিক বলে মনে করেন। অথবা আপনাকে এমন কিছু লেখার অনুরোধ জানানো হলো যা আপনার নৈতিকতা বিরোধী। আপনি কি তখন মুখ খুলবেন বা লিখিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন? অনেক সময় নতুন কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে স্থিতি ও মর্যাদা অর্জনের পর এসব বিষয়ে কথা বলতে। কিন্তু এর মানে হলো, আপনি হয়তো বছরের পর বছর অপেক্ষা করবেন এমন একটি অনুশীলনের বিরোধিতা করতে, যেটি আপনি নিজেই অনৈতিক মনে করেন। এমনটি হলে আপনি নিজেও পরোক্ষভাবে অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন। যেকোনো বার্তার সূচনা নিয়ে ভাবার সময় যেমন কৌশল দরকার, তেমনি এমন নৈতিক বিষয়গুলো উত্থাপন করতেও তা প্রয়োজন। <u>চাকরি ঝুঁকিতে না ফেলে অনৈতিকতা রোধের ৩টি কৌশল</u> * পরিবর্তনের বীজ বপন করুন * অভিযোগ না তুলে যুক্তি দিয়ে বোঝান * অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উন্মুক্ত থাকুন একদিন আপনি এমন কিছু দেখবেন যা এতটাই ভয়াবহ যে আপনি ভবিষ্যৎ পদোন্নতি বা এমনকি চাকরি হারানোর ঝুঁকিও নিতে প্রস্তুত হবেন তা থামাতে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কোম্পানির ভেতরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা নিন। যদি ওই অনুশীলন আইন বা সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে, তাহলে উপযুক্ত সংস্থাকে জানানো উচিত। একে বলে "হুইসেল ব্লোয়িং (Whistle Blowing)"। কিছু রাজ্য ও ফেডারেল আইন হুইসেল ব্লোয়ারদের সুরক্ষা দেয়। ==নিজেকে জিজ্ঞেস করার মতো ১০টি প্রশ্ন== আপনি যখন আপনার চিঠি, ইমেইল বা অন্যান্য রুটিন যোগাযোগ পরিকল্পনা করবেন, তখন নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন: # আমি এই ব্যক্তিকে কতটা ভালোভাবে চিনি? # চিঠিতে আলোচিত বিষয়ের সম্পর্কে তারা কতটা জানেন? # আমি যা বলতে যাচ্ছি তাতে তারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন? এই বার্তাটিকে আমি কীভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি? # আমি এই বার্তার মাধ্যমে আসলে কী অর্জন করতে চাই? # আলোচিত ধারণাগুলো সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের স্তর কতটা? # আমার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন? # এর আগে তাদের সঙ্গে আমার/আমাদের কী ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক হয়েছে? # তাদের প্রোফাইল অনুযায়ী কতটা এবং কী ধরনের তথ্য আমি যুক্ত করব? # আমি কতটা কারিগরি ভাষা ব্যবহার করতে পারি আমার বার্তায়? # আমি কী কৌশল ব্যবহার করলে বার্তাটি সহজপাঠ্য ও সহজবোধ্য হবে? {{bookcat}} ot42kn4soa507kxzsy9ukyk8bf5yxfm 85284 85283 2025-06-25T14:35:52Z Mehedi Abedin 7113 85284 wikitext text/x-wiki =একটি যোগাযোগের শুরু= পাঠক যখন কিছু পড়ে, তখন তারা লেখার শব্দ আর ছবির সঙ্গে মনের ভিতরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে। একটি বাক্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা পরের বাক্যগুলোতেও প্রভাব ফেলে। তাই শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরু ভালো হলে পাঠক মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়বে। এই অধ্যায়ে আটটি কৌশল শেখানো হবে। এই কৌশলগুলো লেখার শুরুটা সহজ, কাজে লাগার মতো এবং প্রভাবশালী করে তোলে। সব কৌশল একসাথে ব্যবহার করতে হবে না। কোনটি ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ভর করবে লেখার লক্ষ্য আর পাঠক সম্পর্কে জানা তথ্যের উপর। অধ্যায়ের শেষে একটি নৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কখনও কখনও মানুষ দ্বিধায় পড়ে—লেখা শুরু করা উচিত কি না। প্রথম তিনটি কৌশলে বলা হয়েছে কীভাবে বিষয় জানাতে হয়, মূল কথা বলতে হয়, আর লেখার গঠন সম্পর্কে পূর্বে ধারণা দিতে হয়। '''কৌশল ১: পাঠককে মনোযোগ দেওয়ার কারণ দিন''' শুরুর লক্ষ্য হলো পাঠকের মনোযোগ পাওয়া। যাতে তারা লেখা এড়িয়ে না যায় বা মাঝপথে ফেলে না দেয়। অনেকেই বলেন, তারা অনেক ই-মেইল, নোট আর প্রতিবেদন পান। তাই পাঠককে শুধু পড়তে বললে হবে না, মনোযোগ দিয়ে পড়তে আগ্রহী করে তুলতে হবে। লেখাটি যদি কাউকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, কেউ যখন গভীরভাবে কিছু পড়ে বা শোনে, তখন তারা লেখায় বলা মনোভাব গ্রহণ করে। তারা সেই মনোভাব সহজে পরিবর্তন হতে দেয় না। বরং, সেই মনোভাব অনুযায়ী কাজও করতে চায়। পাঠকের মনোযোগ পেতে হলে দুইটি কাজ করতে হবে: *বিষয়টি জানাতে হবে *তাদের বোঝাতে হবে, এতে তাদের কী উপকার হবে এই দুইটি কাজ একসাথে করতে হবে। শুধু বিষয় বললেই চলবে না। পাঠক হয়তো বুঝবেই না, কেন লেখাটি তাদের কাজে লাগবে। যা আপনার কাছে স্পষ্ট, পাঠকের কাছে তা নয়। ==সাবজেক্ট লাইনের গুরুত্ব== সাবজেক্ট লাইন ব্যবহার করা হয় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। সাধারণত এটি কয়েকটি শব্দের বেশি নয়। সাবজেক্ট লাইন লেখার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার: * সংক্ষেপে লেখো। সাবজেক্ট লাইন লেখার কাজ হলো পাঠককে জানানো—লেখাটি কী নিয়ে, লেখাটাই নয়। * আকর্ষণীয় করো। মানুষ যখন সাবজেক্ট লাইন পড়বে, তখন কি তারা বাকিটা পড়তে আগ্রহী হবে? * যেন বিষয়ে ঠিক থাকে। সাবজেক্ট লাইন পড়ে যেন পাঠক বুঝতে পারে, পরের অংশে কী আসছে। ই-মেইলের ক্ষেত্রে বিষয় লাইন আরও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একরকম দুটি শুরু থাকে—একটি হলো বিষয় লাইন, আরেকটি হলো মেইলের শুরুতে লেখা কয়েকটি বাক্য। পাঠক তখনই মেইল খুলে পড়বে, যদি সাবজেক্ট লাইন তাকে আগ্রহী করে তোলে। তাই বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করো। বোঝাও, তোমার লেখাটি পাঠকের উপকারে আসবে। মেমো বা চিঠির ক্ষেত্রেও সাবজেক্ট লাইনের সুযোগ কাজে লাগাও। ==পাঠকের উপকারিতা তুলে ধরার দুটি উপায়== যারা মোটামুটি উপকার পাবেন তাদের বোঝাতে দুটি কৌশল বিশেষভাবে কার্যকর। '''পাঠকের অনুরোধের উল্লেখ করো''' কর্মক্ষেত্রে তুমি প্রায়ই লিখবে কারণ সহকর্মী, ব্যবস্থাপক বা মক্কেল তোমার কাছে কোনো পরামর্শ বা তথ্য চেয়েছে। তোমার উত্তরে পাঠকের উপকারিতা প্রতিষ্ঠা করতে, শুধু সেই অনুরোধের উল্লেখ করো। '''পাঠকের সমস্যা সমাধানে সাহায্যের প্রস্তাব দাও''' লেখার শুরুতে পাঠককে জানাও যে তোমার যোগাযোগ তাদের সামনে আসা সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। বেশিরভাগ কর্মী নিজেদের সমস্যা সমাধানকারী মনে করে। প্রযুক্তিগত, সংগঠনিক বা নৈতিক কোনো সমস্যা হোক, পাঠক এমন যোগাযোগ পছন্দ করবে যা সমাধানে সাহায্য করে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জে সি ম্যাথেস এবং ডুইট ডব্লিউ স্টিভেনসন একটি বিশেষ শক্তিশালী পদ্ধতির কথা বলেছেন। মূল কথা হলো, লেখার শুরুতে পাঠকের উদ্বেগের ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধান বা সময় বাঁচানোর উপায় দেওয়া। প্রথমে, তুমি যাদের উদ্দেশ্যে লিখছো তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো তালিকা করো। তালিকা থেকে একটি সমস্যা বেছে নাও যার সমাধান তোমার তথ্য ও ভাবনা দিতে পারবে। এভাবে তুমি সমস্যা সমাধানের যৌথ প্রচেষ্টায় নিজেকে ও পাঠককে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করছ, যেখানে তোমার যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন তুমি বুঝে নেবে কীভাবে তোমার ও পাঠকের মধ্যে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব বর্ণনা করবে, তখন লেখার শুরু তৈরি করো। <u>পাঠকের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব স্থাপন</u> তোমার পাঠকদের বলো তুমি কোন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। এমন সমস্যা বেছে নাও যা তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তোমার পাঠকদের বলো তুমি সমস্যাটি সমাধানের জন্য কী করেছো। নিজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণস্বরূপ, হয়তো তোমার নিয়োগকর্তার পণ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছো বা প্রতিযোগিতামূলক পণ্য নিয়ে গবেষণা করেছো। অহংকার না করে বোঝাও কেন তোমার গবেষণা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকদের জানাও তোমার যোগাযোগ কীভাবে তাদের কাজ সহজ ও দক্ষ করবে এবং তাদের অবদান কীভাবে যৌথ সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। <u>কিছু পরিস্থিতি যেখানে সাধারণত সমস্যা সমাধানের পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বর্ণনা প্রয়োজন হয়</u> তোমার যোগাযোগ পড়বে তোমার সরাসরি টিমের বাইরে যারা। পাঠক যত দূরে থাকবে বার্তার প্রেক্ষাপট জানার সম্ভাবনা তত কম। তোমার যোগাযোগে বাইন্ডিং এবং কভার থাকবে। বাইন্ড করা নথি সাধারণত বড় পাঠকদলের জন্য এবং ভবিষ্যত পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ সমস্যার প্রেক্ষাপট বুঝতে নাও পারে। তোমার যোগাযোগ ব্যবহার হবে বড় অর্থের সিদ্ধান্ত নিতে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেন যারা রিপোর্টের সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট জানতে চান। ==অননুরোধিত যোগাযোগে সমস্যার সংজ্ঞায়ন== আপনার কর্মজীবনে অনেকবার এমন সুযোগ আসবে যখন আপনাকে অনুরোধ বা সুপারিশ না করেও কিছু জানাতে হবে। এই ধরনের অননুরোধিত যোগাযোগ লেখার সময়, আপনাকে পাঠকদের বোঝাতে হতে পারে যে প্রকৃতপক্ষে কোনো সমস্যা রয়েছে। এর জন্য সৃজনশীল ও পাঠককেন্দ্রিক চিন্তা প্রয়োজন হতে পারে। '''নিয়ম ২: আপনার মূল বক্তব্য স্পষ্ট করুন''' সাধারণত, আপনার যোগাযোগের কার্যকারিতা ও প্রভাব বাড়াতে আপনার মূল বক্তব্য শুরুতেই তুলে ধরুন। এর তিনটি প্রধান কারণ: * আপনি আপনার পাঠকদের তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। * আপনি পাঠকদের মধ্যে সম্ভাবনা বাড়ান যে তারা আপনার মূল বক্তব্য সঠিকভাবে পড়বে, যোগাযোগটি পড়ে শেষ না করেই পাশে রাখবে না। * আপনি পাঠকদের পরবর্তী বিস্তারিত বিষয়গুলি বুঝতে একটি প্রাসঙ্গিক কাঠামো প্রদান করেন। ==আপনার মূল বক্তব্য সচেতনভাবে বেছে নিন== আপনার বার্তার মূল বক্তব্য ঠিক তেমনি সচেতনভাবে বেছে নিন, যেমনভাবে আপনি প্রতিটি অংশের মূল বক্তব্য নির্ধারণ করেন। আপনি যখন কোনো অনুরোধের জবাব দিচ্ছেন, তখন আপনার মূল বক্তব্য হবে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর। আর আপনি যদি নিজ উদ্যোগে কিছু লিখেন, তাহলে আপনার মূল বক্তব্য হতে পারে—পাঠকরা এটি পড়ার পর কী ভাববে বা কী করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি বিষয় লাইনে লিখতে পারেন "অনুমোদনের প্রয়োজন", এবং তারপর নথিতে কী অনুমোদন করতে হবে তা ব্যাখ্যা করতে পারেন মূল বক্তব্য হিসেবে। '''নির্দেশনা ৩: আপনার পাঠকদের কী প্রত্যাশা করা উচিত তা জানান''' আপনার বার্তাটি যদি খুব সংক্ষিপ্ত না হয় তাহলে এর শুরুতেই পাঠকদের জানানো উচিত যে পরবর্তী অংশগুলোতে তারা কী আশা করতে পারে। একটি পূর্বাভাসমূলক বিবৃতি যা যোগাযোগের শুরুতে রাখা হয়, তা এর সংগঠন এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। এর কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, এটি পাঠকের মনোযোগ কেবল প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর দিকে কেন্দ্রীভূত করবে। দ্বিতীয়ত, এটি সেইসব পাঠকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে, যাদের জন্য আপনি বার্তাটি লিখছেন না। এর ফলে আইনি ঝামেলা এড়ানো যেতে পারে। ==আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে জানান== আপনার বার্তার শুরুতেই এর সংগঠন সম্পর্কে পাঠকদের জানালে, আপনি তাদেরকে একটি কাঠামো প্রদান করেন যা বার্তার বিভিন্ন তথ্যাংশের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে। এই কাঠামো আপনার বার্তার ব্যবহারযোগ্যতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে, কারণ এটি পাঠকদের তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনি প্রতিটি নতুন যে পয়েন্ট উপস্থাপন করছেন তা আগের পয়েন্টগুলোর সাথে কীভাবে সম্পর্কিত। এটি দ্রুত স্ক্যান করে পড়া পাঠকদেরও সাহায্য করে, যাতে তারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে পারে। ==আপনার বার্তার পরিসর সম্পর্কে জানান== পাঠকরা শুরু থেকেই জানতে চান যে একটি বার্তায় কী রয়েছে এবং কী নেই। এমনকি যদি তারা বুঝেও ফেলেন যে আপনি এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করছেন যা তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক, তবুও তারা ভাবতে পারেন আপনি সেই বিষয়ের ঠিক কোন কোন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন যা তারা জানতে চান। প্রায়ই আপনি যখন আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে বলবেন, তখনই এর পরিসর সম্পর্কেও জানাবেন: আপনি যখন আলোচ্য বিষয়গুলোর তালিকা দেন, তখন আপনি বার্তার পরিসর নির্ধারণ করেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত তথ্যও দিতে হতে পারে। যেমন—যখন আপনি চান পাঠক বুঝুক যে আপনি বিষয়টি পুরোপুরি কাভার করছেন না, বা আপনি এটি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করছেন। '''নির্দেশনা ৪: আপনার বার্তায় পাঠকদের উন্মুক্ততা উৎসাহিত করুন''' এই বইয়ের অন্যান্য অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পাঠকরা একটি বার্তা পড়ার সময় বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। যেমন, তারা আপনার তৈরি করা কোনো নির্দেশিকা পড়লে সেটিকে হুবহু অনুসরণ করতে পারেন, আবার নিজের মতো করেও প্রয়োগ করতে পারেন—শুধু সমস্যায় পড়লে নির্দেশিকাটি দেখেন। যেহেতু আপনার বার্তার সূচনাটি পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, তাই বার্তার শুরুতে সবসময় প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা উচিত। সবসময় এমনভাবে শুরু করুন যাতে পাঠকরা বাকিটা পড়তে আগ্রহী ও উন্মুক্ত থাকে। ==পাঠকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে== সাধারণভাবে, আপনি হয়তো সহজেই একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাবেন, কারণ আপনি সহকর্মী, গ্রাহক কিংবা অন্য যেসব মানুষকে তথ্য দিচ্ছেন, তারা সেটি জানতে আগ্রহী থাকে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বার্তার শুরুটা আরও সচেতনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে আপনার বার্তা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচিত হয়। পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে যদি নিচের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হয় "হ্যাঁ"। যদি তা-ই হয়, তাহলে পাঠকের সম্ভাব্য মনোভাব নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী বার্তার সূচনা গঠন করুন। * আপনার বার্তায় কি পাঠকদের জন্য কোনো খারাপ খবর রয়েছে? * বার্তায় কি এমন কোনো ধারণা বা পরামর্শ রয়েছে যা পাঠকদের কাছে অপ্রিয় হতে পারে? * পাঠকেরা কি আপনার, আপনার বিভাগের বা কোম্পানির প্রতি অবিশ্বাস, বিরূপতা, বা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করেন? * তারা কি বিষয় বা পরিস্থিতির প্রতি সংশয়প্রবণ? * তারা কি আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান? <u>উন্মুক্ততা উৎসাহিত করার কৌশল</u> * নিজেকে সমালোচক বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং একজন সহযোগী হিসেবে উপস্থাপন করুন। বোঝাতে চেষ্টা করুন যে আপনি পাঠকদের কোনো সমস্যা সমাধানে বা লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে কাজ করছেন। * আপনার মূল বক্তব্য উপস্থাপন কিছুটা বিলম্বিত করুন। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এড়াতে শুরুতেই মূল পয়েন্ট না দিয়ে আগে কিছু পরিপ্রেক্ষিত দিন। এতে পাঠক অন্য যুক্তিগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন। * আপনার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করুন। যদি পাঠক বিশ্বাস করেন যে আপনি জানেন কী বলছেন, তাহলে তারা বার্তাটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আপনার যোগ্যতা বলার দরকার নেই, বিশেষত যদি পাঠক ইতোমধ্যেই তা জানেন। * সাহায্য চেয়ে নিন। মানুষ সাধারণত বেশি গ্রহণযোগ্য হয় যখন তাকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এটি দেখায় আপনি অহংকারী নন এবং দলগতভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। কখনো কখনো আত্মগর্ব বিসর্জন দিয়ে নিচু স্বরে কথা বললেই কার্যসিদ্ধি হয়। ==নিজেকে একটি গল্প বলুন== যদিও উপরের কৌশলগুলো প্রায়শই পাঠকের উন্মুক্ততা বাড়াতে সাহায্য করবে, সেগুলো যান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করবেন না। আপনার বার্তার সূচনা লেখার সময় সবসময় পাঠকের মনোভাব, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশাগুলো মাথায় রাখুন। এটি করতে পারেন নিজেই একটি কল্পিত গল্প তৈরি করে, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে আপনার পাঠক—যদি একজনকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, তাহলে সেই ব্যক্তি; আর যদি একটি দলের উদ্দেশ্যে লেখেন, তাহলে তাদের একজন সাধারণ সদস্য। গল্পটি শুরু করুন ঠিক সেই সময় থেকে, যখন সে আপনার বার্তাটি পড়ার আগে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং শেষ করুন বার্তার প্রথম শব্দগুলো পড়ার সময়। যদিও এই গল্পটি বার্তার অংশ হবে না, এটি আপনাকে বার্তার উপযুক্ত সূচনা বেছে নিতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৫: প্রাসঙ্গিক পটভূমি তথ্য দিন''' যখন আপনি একটি বার্তার সূচনা লেখেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: এই বার্তাটি বুঝতে পাঠকের কি কোনো পটভূমি তথ্য প্রয়োজন? <u>যেসব পরিস্থিতিতে সূচনায় তথ্য দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে</u> * পাঠকরা যদি বার্তার নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো বুঝতে সাধারণ কিছু নীতিমালা জানার প্রয়োজন হয় * বার্তায় ব্যবহৃত কারিগরি শব্দ বা পরিভাষা যদি পাঠকদের অজানা হয় * আপনি যেই পরিস্থিতি বা প্রসঙ্গ আলোচনা করছেন, সেটি পাঠকদের অজানা হলে তবে সব পটভূমি তথ্য বার্তার শুরুতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেসব তথ্য শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ বা অংশের জন্য প্রাসঙ্গিক, সেগুলো সেগুলোর শুরুতেই দিন। শুরুতে কেবল সেই তথ্য দিন যা পাঠকদের পুরো বার্তা বুঝতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৬: যদি বার্তাটি খুব সংক্ষিপ্ত না হয়, তাহলে একটি সারাংশ যুক্ত করুন''' সারাংশ ব্যস্ত ম্যানেজারদের সাহায্য করে যাতে তারা পুরো নথি না পড়ে মূল বিষয়গুলো জানতে পারে। এটি বার্তার সারাংশ ও সংগঠন বোঝাতেও সাহায্য করে। দীর্ঘ নথির ক্ষেত্রে (যেমন, যেখানে কভার পেজ ও বিষয়সূচি থাকে), এই সারাংশগুলো আলাদা পাতায় বড় আকারে লেখা হয়ে থাকে। '''নির্দেশনা ৭: পাঠকের প্রয়োজন অনুসারে সূচনার দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করুন''' সূচনা কত বড় হওয়া উচিত, তার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। একটি ভালো, পাঠক-কেন্দ্রিক সূচনা কখনো কেবল একটি বাক্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে, আবার কখনো কয়েক পৃষ্ঠাও হতে পারে। আপনাকে কেবল সেই তথ্যই দিতে হবে যা পাঠকের অজানা। <u>পাঠকেরা যেন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানে</u> * কেন তারা বার্তাটি পড়বে * বার্তার মূল বক্তব্য কী * বার্তার সংগঠন ও পরিসর কেমন * কী পটভূমি তথ্য জানলে তারা বার্তাটি ভালোভাবে বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারবে আপনি যদি এই সব তথ্য দিয়ে থাকেন এবং পাঠকের মধ্যে বার্তাটি গ্রহণ করার ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন, তাহলে আপনার সূচনা একটি ভালো সূচনা—তাতে দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন। '''নির্দেশনা ৮: আপনার সূচনা পাঠকের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নিন''' একটি বার্তার সূচনা নিয়ে পাঠকের প্রত্যাশা ও পছন্দ তার সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের জন্য উপযোগী। তবে ভিন্ন সংস্কৃতিতে এই রীতি ভিন্ন হতে পারে। তাই একটি কার্যকর সূচনা তৈরি করতে হলে আপনাকে পাঠকের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। যদি না জানেন, তাহলে গবেষণা করুন বা সেই সংস্কৃতির কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিন। '''নির্দেশনা ৯: নৈতিকতা সম্পর্কিত সমস্যা দ্রুত ও কৌশলীভাবে উত্থাপন করুন''' ধরুন আপনি জানতে পারলেন আপনার প্রতিষ্ঠান এমন কিছু করছে যা আপনি অনৈতিক বলে মনে করেন। অথবা আপনাকে এমন কিছু লেখার অনুরোধ জানানো হলো যা আপনার নৈতিকতা বিরোধী। আপনি কি তখন মুখ খুলবেন বা লিখিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন? অনেক সময় নতুন কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে স্থিতি ও মর্যাদা অর্জনের পর এসব বিষয়ে কথা বলতে। কিন্তু এর মানে হলো, আপনি হয়তো বছরের পর বছর অপেক্ষা করবেন এমন একটি অনুশীলনের বিরোধিতা করতে, যেটি আপনি নিজেই অনৈতিক মনে করেন। এমনটি হলে আপনি নিজেও পরোক্ষভাবে অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন। যেকোনো বার্তার সূচনা নিয়ে ভাবার সময় যেমন কৌশল দরকার, তেমনি এমন নৈতিক বিষয়গুলো উত্থাপন করতেও তা প্রয়োজন। <u>চাকরি ঝুঁকিতে না ফেলে অনৈতিকতা রোধের ৩টি কৌশল</u> * পরিবর্তনের বীজ বপন করুন * অভিযোগ না তুলে যুক্তি দিয়ে বোঝান * অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উন্মুক্ত থাকুন একদিন আপনি এমন কিছু দেখবেন যা এতটাই ভয়াবহ যে আপনি ভবিষ্যৎ পদোন্নতি বা এমনকি চাকরি হারানোর ঝুঁকিও নিতে প্রস্তুত হবেন তা থামাতে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কোম্পানির ভেতরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা নিন। যদি ওই অনুশীলন আইন বা সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে, তাহলে উপযুক্ত সংস্থাকে জানানো উচিত। একে বলে "হুইসেল ব্লোয়িং (Whistle Blowing)"। কিছু রাজ্য ও ফেডারেল আইন হুইসেল ব্লোয়ারদের সুরক্ষা দেয়। ==নিজেকে জিজ্ঞেস করার মতো ১০টি প্রশ্ন== আপনি যখন আপনার চিঠি, ইমেইল বা অন্যান্য রুটিন যোগাযোগ পরিকল্পনা করবেন, তখন নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন: # আমি এই ব্যক্তিকে কতটা ভালোভাবে চিনি? # চিঠিতে আলোচিত বিষয়ের সম্পর্কে তারা কতটা জানেন? # আমি যা বলতে যাচ্ছি তাতে তারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন? এই বার্তাটিকে আমি কীভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি? # আমি এই বার্তার মাধ্যমে আসলে কী অর্জন করতে চাই? # আলোচিত ধারণাগুলো সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের স্তর কতটা? # আমার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন? # এর আগে তাদের সঙ্গে আমার/আমাদের কী ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক হয়েছে? # তাদের প্রোফাইল অনুযায়ী কতটা এবং কী ধরনের তথ্য আমি যুক্ত করব? # আমি কতটা কারিগরি ভাষা ব্যবহার করতে পারি আমার বার্তায়? # আমি কী কৌশল ব্যবহার করলে বার্তাটি সহজপাঠ্য ও সহজবোধ্য হবে? {{bookcat}} kslx9thxxsi2ks4n8bc54q98iwiapf9 85285 85284 2025-06-25T14:37:37Z Mehedi Abedin 7113 85285 wikitext text/x-wiki =একটি যোগাযোগের শুরু= পাঠক যখন কিছু পড়ে, তখন তারা লেখার শব্দ আর ছবির সঙ্গে মনের ভিতরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে। একটি বাক্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা পরের বাক্যগুলোতেও প্রভাব ফেলে। তাই শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরু ভালো হলে পাঠক মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়বে। এই অধ্যায়ে আটটি কৌশল শেখানো হবে। এই কৌশলগুলো লেখার শুরুটা সহজ, কাজে লাগার মতো এবং প্রভাবশালী করে তোলে। সব কৌশল একসাথে ব্যবহার করতে হবে না। কোনটি ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ভর করবে লেখার লক্ষ্য আর পাঠক সম্পর্কে জানা তথ্যের উপর। অধ্যায়ের শেষে একটি নৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কখনও কখনও মানুষ দ্বিধায় পড়ে—লেখা শুরু করা উচিত কি না। প্রথম তিনটি কৌশলে বলা হয়েছে কীভাবে বিষয় জানাতে হয়, মূল কথা বলতে হয়, আর লেখার গঠন সম্পর্কে পূর্বে ধারণা দিতে হয়। '''কৌশল ১: পাঠককে মনোযোগ দেওয়ার কারণ দিন''' শুরুর লক্ষ্য হলো পাঠকের মনোযোগ পাওয়া। যাতে তারা লেখা এড়িয়ে না যায় বা মাঝপথে ফেলে না দেয়। অনেকেই বলেন, তারা অনেক ই-মেইল, নোট আর প্রতিবেদন পান। তাই পাঠককে শুধু পড়তে বললে হবে না, মনোযোগ দিয়ে পড়তে আগ্রহী করে তুলতে হবে। লেখাটি যদি কাউকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, কেউ যখন গভীরভাবে কিছু পড়ে বা শোনে, তখন তারা লেখায় বলা মনোভাব গ্রহণ করে। তারা সেই মনোভাব সহজে পরিবর্তন হতে দেয় না। বরং, সেই মনোভাব অনুযায়ী কাজও করতে চায়। পাঠকের মনোযোগ পেতে হলে দুইটি কাজ করতে হবে: *বিষয়টি জানাতে হবে *তাদের বোঝাতে হবে, এতে তাদের কী উপকার হবে এই দুইটি কাজ একসাথে করতে হবে। শুধু বিষয় বললেই চলবে না। পাঠক হয়তো বুঝবেই না, কেন লেখাটি তাদের কাজে লাগবে। যা আপনার কাছে স্পষ্ট, পাঠকের কাছে তা নয়। ==সাবজেক্ট লাইনের গুরুত্ব== সাবজেক্ট লাইন ব্যবহার করা হয় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। সাধারণত এটি কয়েকটি শব্দের বেশি নয়। সাবজেক্ট লাইন লেখার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার: * সংক্ষেপে লেখো। সাবজেক্ট লাইন লেখার কাজ হলো পাঠককে জানানো—লেখাটি কী নিয়ে, লেখাটাই নয়। * আকর্ষণীয় করো। মানুষ যখন সাবজেক্ট লাইন পড়বে, তখন কি তারা বাকিটা পড়তে আগ্রহী হবে? * যেন বিষয়ে ঠিক থাকে। সাবজেক্ট লাইন পড়ে যেন পাঠক বুঝতে পারে, পরের অংশে কী আসছে। ই-মেইলের ক্ষেত্রে বিষয় লাইন আরও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একরকম দুটি শুরু থাকে—একটি হলো বিষয় লাইন, আরেকটি হলো মেইলের শুরুতে লেখা কয়েকটি বাক্য। পাঠক তখনই মেইল খুলে পড়বে, যদি সাবজেক্ট লাইন তাকে আগ্রহী করে তোলে। তাই বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করো। বোঝাও, তোমার লেখাটি পাঠকের উপকারে আসবে। মেমো বা চিঠির ক্ষেত্রেও সাবজেক্ট লাইনের সুযোগ কাজে লাগাও। ==পাঠকের উপকারিতা তুলে ধরার দুটি উপায়== যারা মোটামুটি উপকার পাবেন তাদের বোঝাতে দুটি কৌশল বিশেষভাবে কার্যকর। '''পাঠকের অনুরোধের উল্লেখ করো''' কর্মক্ষেত্রে তুমি প্রায়ই লিখবে কারণ সহকর্মী, ব্যবস্থাপক বা মক্কেল তোমার কাছে কোনো পরামর্শ বা তথ্য চেয়েছে। তোমার উত্তরে পাঠকের উপকারিতা প্রতিষ্ঠা করতে, শুধু সেই অনুরোধের উল্লেখ করো। '''পাঠকের সমস্যা সমাধানে সাহায্যের প্রস্তাব দাও''' লেখার শুরুতে পাঠককে জানাও যে তোমার যোগাযোগ তাদের সামনে আসা সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। বেশিরভাগ কর্মী নিজেদের সমস্যা সমাধানকারী মনে করে। প্রযুক্তিগত, সংগঠনিক বা নৈতিক কোনো সমস্যা হোক, পাঠক এমন যোগাযোগ পছন্দ করবে যা সমাধানে সাহায্য করে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জে সি ম্যাথেস এবং ডুইট ডব্লিউ স্টিভেনসন একটি বিশেষ শক্তিশালী পদ্ধতির কথা বলেছেন। মূল কথা হলো, লেখার শুরুতে পাঠকের উদ্বেগের ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধান বা সময় বাঁচানোর উপায় দেওয়া। প্রথমে, তুমি যাদের উদ্দেশ্যে লিখছো তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো তালিকা করো। তালিকা থেকে একটি সমস্যা বেছে নাও যার সমাধান তোমার তথ্য ও ভাবনা দিতে পারবে। এভাবে তুমি সমস্যা সমাধানের যৌথ প্রচেষ্টায় নিজেকে ও পাঠককে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করছ, যেখানে তোমার যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন তুমি বুঝে নেবে কীভাবে তোমার ও পাঠকের মধ্যে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব বর্ণনা করবে, তখন লেখার শুরু তৈরি করো। <u>পাঠকের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের অংশীদারিত্ব স্থাপন</u> তোমার পাঠকদের বলো তুমি কোন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। এমন সমস্যা বেছে নাও যা তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তোমার পাঠকদের বলো তুমি সমস্যাটি সমাধানের জন্য কী করেছো। নিজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণস্বরূপ, হয়তো তোমার নিয়োগকর্তার পণ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছো বা প্রতিযোগিতামূলক পণ্য নিয়ে গবেষণা করেছো। অহংকার না করে বোঝাও কেন তোমার গবেষণা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকদের জানাও তোমার যোগাযোগ কীভাবে তাদের কাজ সহজ ও দক্ষ করবে এবং তাদের অবদান কীভাবে যৌথ সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। <u>কিছু পরিস্থিতি যেখানে সাধারণত সমস্যা সমাধানের পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বর্ণনা প্রয়োজন হয়</u> তোমার যোগাযোগ পড়বে তোমার সরাসরি টিমের বাইরে যারা। পাঠক যত দূরে থাকবে বার্তার প্রেক্ষাপট জানার সম্ভাবনা তত কম। তোমার যোগাযোগে বাইন্ডিং এবং কভার থাকবে। বাইন্ড করা নথি সাধারণত বড় পাঠকদলের জন্য এবং ভবিষ্যত পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ সমস্যার প্রেক্ষাপট বুঝতে নাও পারে। তোমার যোগাযোগ ব্যবহার হবে বড় অর্থের সিদ্ধান্ত নিতে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেন যারা রিপোর্টের সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট জানতে চান। ==অননুরোধিত যোগাযোগে সমস্যার সংজ্ঞায়ন== আপনার কর্মজীবনে অনেকবার এমন সুযোগ আসবে যখন আপনাকে অনুরোধ বা সুপারিশ না করেও কিছু জানাতে হবে। এই ধরনের অননুরোধিত যোগাযোগ লেখার সময়, আপনাকে পাঠকদের বোঝাতে হতে পারে যে প্রকৃতপক্ষে কোনো সমস্যা রয়েছে। এর জন্য সৃজনশীল ও পাঠককেন্দ্রিক চিন্তা প্রয়োজন হতে পারে। '''নিয়ম ২: আপনার মূল বক্তব্য স্পষ্ট করুন''' সাধারণত, আপনার যোগাযোগের কার্যকারিতা ও প্রভাব বাড়াতে আপনার মূল বক্তব্য শুরুতেই তুলে ধরুন। এর তিনটি প্রধান কারণ: * আপনি আপনার পাঠকদের তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। * আপনি পাঠকদের মধ্যে সম্ভাবনা বাড়ান যে তারা আপনার মূল বক্তব্য সঠিকভাবে পড়বে, যোগাযোগটি পড়ে শেষ না করেই পাশে রাখবে না। * আপনি পাঠকদের পরবর্তী বিস্তারিত বিষয়গুলি বুঝতে একটি প্রাসঙ্গিক কাঠামো প্রদান করেন। ==আপনার মূল বক্তব্য সচেতনভাবে বেছে নিন== আপনার বার্তার মূল বক্তব্য ঠিক তেমনি সচেতনভাবে বেছে নিন, যেমনভাবে আপনি প্রতিটি অংশের মূল বক্তব্য নির্ধারণ করেন। আপনি যখন কোনো অনুরোধের জবাব দিচ্ছেন, তখন আপনার মূল বক্তব্য হবে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর। আর আপনি যদি নিজ উদ্যোগে কিছু লিখেন, তাহলে আপনার মূল বক্তব্য হতে পারে—পাঠকরা এটি পড়ার পর কী ভাববে বা কী করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি বিষয় লাইনে লিখতে পারেন "অনুমোদনের প্রয়োজন", এবং তারপর নথিতে কী অনুমোদন করতে হবে তা ব্যাখ্যা করতে পারেন মূল বক্তব্য হিসেবে। '''নির্দেশনা ৩: আপনার পাঠকদের কী প্রত্যাশা করা উচিত তা জানান''' আপনার বার্তাটি যদি খুব সংক্ষিপ্ত না হয় তাহলে এর শুরুতেই পাঠকদের জানানো উচিত যে পরবর্তী অংশগুলোতে তারা কী আশা করতে পারে। একটি পূর্বাভাসমূলক বিবৃতি যা যোগাযোগের শুরুতে রাখা হয়, তা এর সংগঠন এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। এর কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, এটি পাঠকের মনোযোগ কেবল প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর দিকে কেন্দ্রীভূত করবে। দ্বিতীয়ত, এটি সেইসব পাঠকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে, যাদের জন্য আপনি বার্তাটি লিখছেন না। এর ফলে আইনি ঝামেলা এড়ানো যেতে পারে। ==আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে জানান== আপনার বার্তার শুরুতেই এর সংগঠন সম্পর্কে পাঠকদের জানালে, আপনি তাদেরকে একটি কাঠামো প্রদান করেন যা বার্তার বিভিন্ন তথ্যাংশের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে। এই কাঠামো আপনার বার্তার ব্যবহারযোগ্যতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে, কারণ এটি পাঠকদের তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনি প্রতিটি নতুন যে পয়েন্ট উপস্থাপন করছেন তা আগের পয়েন্টগুলোর সাথে কীভাবে সম্পর্কিত। এটি দ্রুত স্ক্যান করে পড়া পাঠকদেরও সাহায্য করে, যাতে তারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে পারে। ==আপনার বার্তার পরিসর সম্পর্কে জানান== পাঠকরা শুরু থেকেই জানতে চান যে একটি বার্তায় কী রয়েছে এবং কী নেই। এমনকি যদি তারা বুঝেও ফেলেন যে আপনি এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করছেন যা তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক, তবুও তারা ভাবতে পারেন আপনি সেই বিষয়ের ঠিক কোন কোন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন যা তারা জানতে চান। প্রায়ই আপনি যখন আপনার বার্তার সংগঠন সম্পর্কে বলবেন, তখনই এর পরিসর সম্পর্কেও জানাবেন: আপনি যখন আলোচ্য বিষয়গুলোর তালিকা দেন, তখন আপনি বার্তার পরিসর নির্ধারণ করেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত তথ্যও দিতে হতে পারে। যেমন—যখন আপনি চান পাঠক বুঝুক যে আপনি বিষয়টি পুরোপুরি কাভার করছেন না, বা আপনি এটি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করছেন। '''নির্দেশনা ৪: আপনার বার্তায় পাঠকদের উন্মুক্ততা উৎসাহিত করুন''' এই বইয়ের অন্যান্য অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পাঠকরা একটি বার্তা পড়ার সময় বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। যেমন, তারা আপনার তৈরি করা কোনো নির্দেশিকা পড়লে সেটিকে হুবহু অনুসরণ করতে পারেন, আবার নিজের মতো করেও প্রয়োগ করতে পারেন—শুধু সমস্যায় পড়লে নির্দেশিকাটি দেখেন। যেহেতু আপনার বার্তার সূচনাটি পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, তাই বার্তার শুরুতে সবসময় প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা উচিত। সবসময় এমনভাবে শুরু করুন যাতে পাঠকরা বাকিটা পড়তে আগ্রহী ও উন্মুক্ত থাকে। ==পাঠকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে== সাধারণভাবে, আপনি হয়তো সহজেই একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাবেন, কারণ আপনি সহকর্মী, গ্রাহক কিংবা অন্য যেসব মানুষকে তথ্য দিচ্ছেন তারা সেটি জানতে আগ্রহী হবে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বার্তার শুরুটা আরও সচেতনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে আপনার বার্তা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচিত হয়। পাঠকেরা আপনার বার্তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে যদি নিচের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হয় "হ্যাঁ"। যদি তা-ই হয়, তাহলে পাঠকের সম্ভাব্য মনোভাব নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী বার্তার সূচনা গঠন করুন। * আপনার বার্তায় কি পাঠকদের জন্য কোনো খারাপ খবর রয়েছে? * বার্তায় কি এমন কোনো ধারণা বা পরামর্শ রয়েছে যা পাঠকদের কাছে অপ্রিয় হতে পারে? * পাঠকেরা কি আপনার, আপনার বিভাগের বা কোম্পানির প্রতি অবিশ্বাস, বিরূপতা, বা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করেন? * তারা কি বিষয় বা পরিস্থিতির প্রতি সংশয়প্রবণ? * তারা কি আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান? <u>উন্মুক্ততা উৎসাহিত করার কৌশল</u> * নিজেকে সমালোচক বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং একজন সহযোগী হিসেবে উপস্থাপন করুন। বোঝাতে চেষ্টা করুন যে আপনি পাঠকদের কোনো সমস্যা সমাধানে বা লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে কাজ করছেন। * আপনার মূল বক্তব্য উপস্থাপন কিছুটা বিলম্বিত করুন। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এড়াতে শুরুতেই মূল পয়েন্ট না দিয়ে আগে কিছু পরিপ্রেক্ষিত দিন। এতে পাঠক অন্য যুক্তিগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন। * আপনার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করুন। যদি পাঠক বিশ্বাস করেন যে আপনি জানেন কী বলছেন, তাহলে তারা বার্তাটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আপনার যোগ্যতা বলার দরকার নেই, বিশেষত যদি পাঠক ইতোমধ্যেই তা জানেন। * সাহায্য চেয়ে নিন। মানুষ সাধারণত বেশি গ্রহণযোগ্য হয় যখন তাকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এটি দেখায় আপনি অহংকারী নন এবং দলগতভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। কখনো কখনো আত্মগর্ব বিসর্জন দিয়ে নিচু স্বরে কথা বললেই কার্যসিদ্ধি হয়। ==নিজেকে একটি গল্প বলুন== যদিও উপরের কৌশলগুলো প্রায়শই পাঠকের উন্মুক্ততা বাড়াতে সাহায্য করবে, সেগুলো যান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করবেন না। আপনার বার্তার সূচনা লেখার সময় সবসময় পাঠকের মনোভাব, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশাগুলো মাথায় রাখুন। এটি করতে পারেন নিজেই একটি কল্পিত গল্প তৈরি করে, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে আপনার পাঠক—যদি একজনকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, তাহলে সেই ব্যক্তি; আর যদি একটি দলের উদ্দেশ্যে লেখেন, তাহলে তাদের একজন সাধারণ সদস্য। গল্পটি শুরু করুন ঠিক সেই সময় থেকে, যখন সে আপনার বার্তাটি পড়ার আগে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং শেষ করুন বার্তার প্রথম শব্দগুলো পড়ার সময়। যদিও এই গল্পটি বার্তার অংশ হবে না, এটি আপনাকে বার্তার উপযুক্ত সূচনা বেছে নিতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৫: প্রাসঙ্গিক পটভূমি তথ্য দিন''' যখন আপনি একটি বার্তার সূচনা লেখেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: এই বার্তাটি বুঝতে পাঠকের কি কোনো পটভূমি তথ্য প্রয়োজন? <u>যেসব পরিস্থিতিতে সূচনায় তথ্য দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে</u> * পাঠকরা যদি বার্তার নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো বুঝতে সাধারণ কিছু নীতিমালা জানার প্রয়োজন হয় * বার্তায় ব্যবহৃত কারিগরি শব্দ বা পরিভাষা যদি পাঠকদের অজানা হয় * আপনি যেই পরিস্থিতি বা প্রসঙ্গ আলোচনা করছেন, সেটি পাঠকদের অজানা হলে তবে সব পটভূমি তথ্য বার্তার শুরুতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেসব তথ্য শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ বা অংশের জন্য প্রাসঙ্গিক, সেগুলো সেগুলোর শুরুতেই দিন। শুরুতে কেবল সেই তথ্য দিন যা পাঠকদের পুরো বার্তা বুঝতে সাহায্য করবে। '''নির্দেশনা ৬: যদি বার্তাটি খুব সংক্ষিপ্ত না হয়, তাহলে একটি সারাংশ যুক্ত করুন''' সারাংশ ব্যস্ত ম্যানেজারদের সাহায্য করে যাতে তারা পুরো নথি না পড়ে মূল বিষয়গুলো জানতে পারে। এটি বার্তার সারাংশ ও সংগঠন বোঝাতেও সাহায্য করে। দীর্ঘ নথির ক্ষেত্রে (যেমন, যেখানে কভার পেজ ও বিষয়সূচি থাকে), এই সারাংশগুলো আলাদা পাতায় বড় আকারে লেখা হয়ে থাকে। '''নির্দেশনা ৭: পাঠকের প্রয়োজন অনুসারে সূচনার দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করুন''' সূচনা কত বড় হওয়া উচিত, তার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। একটি ভালো, পাঠক-কেন্দ্রিক সূচনা কখনো কেবল একটি বাক্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে, আবার কখনো কয়েক পৃষ্ঠাও হতে পারে। আপনাকে কেবল সেই তথ্যই দিতে হবে যা পাঠকের অজানা। <u>পাঠকেরা যেন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানে</u> * কেন তারা বার্তাটি পড়বে * বার্তার মূল বক্তব্য কী * বার্তার সংগঠন ও পরিসর কেমন * কী পটভূমি তথ্য জানলে তারা বার্তাটি ভালোভাবে বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারবে আপনি যদি এই সব তথ্য দিয়ে থাকেন এবং পাঠকের মধ্যে বার্তাটি গ্রহণ করার ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন, তাহলে আপনার সূচনা একটি ভালো সূচনা—তাতে দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন। '''নির্দেশনা ৮: আপনার সূচনা পাঠকের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নিন''' একটি বার্তার সূচনা নিয়ে পাঠকের প্রত্যাশা ও পছন্দ তার সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের জন্য উপযোগী। তবে ভিন্ন সংস্কৃতিতে এই রীতি ভিন্ন হতে পারে। তাই একটি কার্যকর সূচনা তৈরি করতে হলে আপনাকে পাঠকের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। যদি না জানেন, তাহলে গবেষণা করুন বা সেই সংস্কৃতির কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিন। '''নির্দেশনা ৯: নৈতিকতা সম্পর্কিত সমস্যা দ্রুত ও কৌশলীভাবে উত্থাপন করুন''' ধরুন আপনি জানতে পারলেন আপনার প্রতিষ্ঠান এমন কিছু করছে যা আপনি অনৈতিক বলে মনে করেন। অথবা আপনাকে এমন কিছু লেখার অনুরোধ জানানো হলো যা আপনার নৈতিকতা বিরোধী। আপনি কি তখন মুখ খুলবেন বা লিখিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন? অনেক সময় নতুন কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে স্থিতি ও মর্যাদা অর্জনের পর এসব বিষয়ে কথা বলতে। কিন্তু এর মানে হলো, আপনি হয়তো বছরের পর বছর অপেক্ষা করবেন এমন একটি অনুশীলনের বিরোধিতা করতে, যেটি আপনি নিজেই অনৈতিক মনে করেন। এমনটি হলে আপনি নিজেও পরোক্ষভাবে অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন। যেকোনো বার্তার সূচনা নিয়ে ভাবার সময় যেমন কৌশল দরকার, তেমনি এমন নৈতিক বিষয়গুলো উত্থাপন করতেও তা প্রয়োজন। <u>চাকরি ঝুঁকিতে না ফেলে অনৈতিকতা রোধের ৩টি কৌশল</u> * পরিবর্তনের বীজ বপন করুন * অভিযোগ না তুলে যুক্তি দিয়ে বোঝান * অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উন্মুক্ত থাকুন একদিন আপনি এমন কিছু দেখবেন যা এতটাই ভয়াবহ যে আপনি ভবিষ্যৎ পদোন্নতি বা এমনকি চাকরি হারানোর ঝুঁকিও নিতে প্রস্তুত হবেন তা থামাতে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কোম্পানির ভেতরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা নিন। যদি ওই অনুশীলন আইন বা সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে, তাহলে উপযুক্ত সংস্থাকে জানানো উচিত। একে বলে "হুইসেল ব্লোয়িং (Whistle Blowing)"। কিছু রাজ্য ও ফেডারেল আইন হুইসেল ব্লোয়ারদের সুরক্ষা দেয়। ==নিজেকে জিজ্ঞেস করার মতো ১০টি প্রশ্ন== আপনি যখন আপনার চিঠি, ইমেইল বা অন্যান্য রুটিন যোগাযোগ পরিকল্পনা করবেন, তখন নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন: # আমি এই ব্যক্তিকে কতটা ভালোভাবে চিনি? # চিঠিতে আলোচিত বিষয়ের সম্পর্কে তারা কতটা জানেন? # আমি যা বলতে যাচ্ছি তাতে তারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন? এই বার্তাটিকে আমি কীভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি? # আমি এই বার্তার মাধ্যমে আসলে কী অর্জন করতে চাই? # আলোচিত ধারণাগুলো সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের স্তর কতটা? # আমার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন? # এর আগে তাদের সঙ্গে আমার/আমাদের কী ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক হয়েছে? # তাদের প্রোফাইল অনুযায়ী কতটা এবং কী ধরনের তথ্য আমি যুক্ত করব? # আমি কতটা কারিগরি ভাষা ব্যবহার করতে পারি আমার বার্তায়? # আমি কী কৌশল ব্যবহার করলে বার্তাটি সহজপাঠ্য ও সহজবোধ্য হবে? {{bookcat}} caeqhunxt9z7l48k0nt62o7zqxd2odd পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/প্রারম্ভিক অংশ 0 26409 85302 85148 2025-06-25T16:51:05Z Ei to ami akash 11256 85302 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==কভার== একটি কভার পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। কভার পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং স্কেলেবল হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের কভারটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের কভার পৃষ্ঠাটি ভাবুন। কভার পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''- এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;312) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারাংশ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলি সহায়ক ভিজ্যুয়াল যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের 15 শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটি নেভিগেট করার জন্য সহায়ক। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী এবং/অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত স্ক্যান করার অনুমতি দেবে। এটি যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভাল ওভারভিউ পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর নেভিগেশনের সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখা জুড়ে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় 15 পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} r2zv8dn5wl0f1vmziprvnhq08h1qp4o 85303 85302 2025-06-25T16:52:31Z Ei to ami akash 11256 85303 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==কভার== একটি কভার পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। কভার পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং স্কেলেবল হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের কভারটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের কভার পৃষ্ঠাটি ভাবুন। কভার পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''- এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;312) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারাংশ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলি সহায়ক ভিজ্যুয়াল যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের 15 শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটি নেভিগেট করার জন্য সহায়ক। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী এবং/অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত স্ক্যান করার অনুমতি দেবে। এটি যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভাল ওভারভিউ পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর নেভিগেশনের সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখার মধ্যে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় 15 পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন এটি তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} 0r2v5rkn3g1mef4epcdn41padimkbe5 85304 85303 2025-06-25T16:55:48Z Ei to ami akash 11256 85304 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==কভার== একটি কভার পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। কভার পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং স্কেলেবল হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের কভারটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের কভার পৃষ্ঠাটি ভাবুন। কভার পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''- এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;312) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারাংশ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলি সহায়ক ভিজ্যুয়াল যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের 15 শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটির দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত নিরীক্ষণ করার অনুমতি দেবে। যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও তাতে সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভালো ধারণা পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর দিকনির্দেশনার সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখার মধ্যে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় 15 পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন এটি তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} odzbt68g0ma57nijtvedozauywolkh2 85305 85304 2025-06-25T16:57:52Z Ei to ami akash 11256 85305 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==কভার== একটি কভার পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। কভার পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং স্কেলেবল হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের কভারটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের কভার পৃষ্ঠাটি ভাবুন। কভার পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''- এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;312) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারসংক্ষেপ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলির সহায়ক চিত্র যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটির দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত নিরীক্ষণ করার অনুমতি দেবে। যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও তাতে সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভালো ধারণা পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর দিকনির্দেশনার সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখার মধ্যে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় 15 পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন এটি তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} fiyaohpn9wg3891n0o7f709s0sjbgap 85306 85305 2025-06-25T16:58:10Z Ei to ami akash 11256 85306 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==কভার== একটি কভার পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। কভার পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং স্কেলেবল হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের কভারটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের কভার পৃষ্ঠাটি ভাবুন। কভার পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''- এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;312) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারসংক্ষেপ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলির সহায়ক চিত্র যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটির দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত নিরীক্ষণ করার অনুমতি দেবে। যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও তাতে সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভালো ধারণা পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর দিকনির্দেশনার সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখার মধ্যে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় ১৫ পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন এটি তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} bln094ec2nswy81xe67ex69kqooxakt 85307 85306 2025-06-25T16:58:33Z Ei to ami akash 11256 85307 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==কভার== একটি কভার পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। কভার পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং স্কেলেবল হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের কভারটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের কভার পৃষ্ঠাটি ভাবুন। কভার পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''- এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;৩১২) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারসংক্ষেপ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলির সহায়ক চিত্র যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটির দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত নিরীক্ষণ করার অনুমতি দেবে। যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও তাতে সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভালো ধারণা পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর দিকনির্দেশনার সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখার মধ্যে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় ১৫ পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন এটি তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} fwkvi9icgx1ryo521pw0to2zbgb0c7t 85308 85307 2025-06-25T17:04:24Z Ei to ami akash 11256 85308 wikitext text/x-wiki =ফ্রন্ট ম্যাটার: বিষয়বস্তু, তালিকা এবং আরও অনেক কিছু= কোনও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট ম্যাটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, তা সে কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির গবেষণার জন্য হোক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিবেদনের জন্য। আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয় তৈরি করার সময় ফন্টের আকার, ফন্টের ধরণ, বিন্যাস এবং সংগঠনের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ পাঠককে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি কী সম্পর্কে হবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই উপাদানগুলিকে প্রায়শই "বইয়ের উপাদান" বলা হয়, কারণ এগুলি সাধারণত বৃহত্তর রচনাগুলিতে পাওয়া যায়। আপনার প্রকাশনা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত। ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য, আপনার পাঠকরা কীভাবে প্রতিবেদনটি ব্যবহার করবেন এবং তারা কী খুঁজবেন তা বিবেচনা করা উচিত এবং এটি খুঁজে পাওয়া সহজ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ==প্রচ্ছদ== একটি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা হল পাঠকের কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি খুব সহজ, সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত উপায়। এতে থাকা উচিত: * একটি বৃহৎ নির্দিষ্ট শিরোনাম * কোম্পানির নাম * লেখক(দের) নাম * প্রতিবেদনের তারিখ * প্রাসঙ্গিক ছবি একটি বা দুটি প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার একটি লক্ষ্য হল তথ্যবহুল এবং মাপযোগ্য হওয়া কারণ একবার এটি ফাইল করা হয়ে গেলে, অন্যান্য প্রতিবেদনের স্তুপ থেকে এটি বেছে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে তুলে ধরা। যদি প্রতিবেদনের প্রচ্ছদটি বিষণ্ণ এবং নিস্তেজ দেখায়, তাহলে পাঠক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহৃত প্রচ্ছদ পৃষ্ঠার মতো একটি প্রতিবেদনের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি ভাবুন। প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটিই প্রথম দেখা যায়। এটি ভালো বা খারাপ উভয়ের জন্যই প্রথম ছাপের ভিত্তি হবে। প্রতিবেদনটিকে আলাদা করে দেখানোর একটি সহজ উপায় হল প্রতিবেদনের জন্য এমন একটি থিম ব্যবহার করা যার সাথে আপনার দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ম্যাকডোনাল্ডসে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়, তাহলে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাটি হলুদ এবং লাল রঙে থাকবে এবং সোনালী খিলানগুলি ছবি হিসাবে থাকবে। পাঠকের বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনিই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ==শিরোনাম পৃষ্ঠা== একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা আপনার প্রচ্ছদের সাথে খুব মিল থাকবে '''এবং এটি প্রচ্ছদের তথ্য পুনরাবৃত্তি করবে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যোগ করবে। '''- এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন নম্বর, তারিখ, শিরোনাম, লেখকদের নাম এবং ঠিকানা, নির্দিষ্ট চুক্তির তথ্য, তত্ত্বাবধায়কের নাম এবং ঠিকানা এবং প্রতিবেদনটি সমর্থনকারী সংস্থার নাম এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে (টেকনিক্যাল কমিউনিকেশনস, পৃ.&nbsp;৩১২) শিরোনাম পৃষ্ঠাটি নথি এবং এর লেখকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট, বিস্তারিত তথ্য প্রদানের একটি সুযোগ যা এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়। {{SAMPLE|sampletext=Sample Draft (Document number) 10-1 (Date) March 7, 2010 (Title) The Madden Project By (Author) John Manning Brett Peterson 1234 Touch Down Lane Miami, Fl 57897 Madden Inc And (Place to Contact) Madden Inc. No. 54321 Project officer (Who’s in charge) Ari Washington Manager of Exploratory Research 6667 Prime Time Court Mendota Heights, MN 55178 (Who paid for the project) Football Cooperation The Department of Research and Development 1812 Legacy Drive Columbus, OH 99121 |caption=Sample Draft}} ==কার্যনির্বাহী সারাংশ বা সারসংক্ষেপ== ব্যবসায়িক জগতে সারাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একজন ব্যবস্থাপককে আপনার নথির মূল বিষয়গুলি শিখতে সাহায্য করবে এবং পাঠককে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তারা যা খুঁজছেন তার সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা। তথ্যবহুল তথ্য প্রদর্শনকারী চার্ট এবং গ্রাফগুলির সহায়ক চিত্র যা ডকুমেন্টের এই অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখ করা উচিত, কিন্তু প্রতিটির মূল বিষয়গুলি নয়। এখানে আপনার প্রতিবেদনের বেশিরভাগ মূল শব্দ ব্যবহার করা হবে এবং এটি কভার করা তথ্যের একটি পূর্বরূপ হবে। প্রায়শই, একটি ডাটাবেসে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সারাংশ ব্যবহার করা হয়, তাই এই অংশে আপনার প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি চিত্রিত করা কার্যকর হতে পারে। সারাংশ সর্বদা একটি পৃষ্ঠা বা তার কম হওয়া উচিত, বিশেষ করে তথ্যবহুল পরিস্থিতিতে। সাধারণত একটি সারাংশ মোট প্রতিবেদনের ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন টেক্সট অনুসারে, * উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের চিহ্নিত করুন * বিষয়বস্তু বর্ণনা করুন * পাঠককে তথ্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলুন ==সূচীপত্র== যেকোনো প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তুর একটি সারণী প্রতিবেদনটির দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। কিছু দীর্ঘ প্রতিবেদনে গ্রাফের একটি সারণী অথবা চিত্রের একটি সারণীও থাকতে পারে। সারাংশ ছাড়াও, এটি পাঠককে আপনার কভার করা বিষয়গুলি দ্রুত নিরীক্ষণ করার অনুমতি দেবে। যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু খুঁজছেন তাহলেও তাতে সাহায্য করবে। সঠিক শিরোনাম এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করলে পাঠকরা আপনার নথিতে থাকা সমস্ত তথ্যের একটি ভালো ধারণা পাবেন। সূচীপত্র সাধারণত অত্যন্ত সাধারণ এবং একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যবহারকারীর দিকনির্দেশনার সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সূচীপত্র মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড থেকে ফর্ম্যাট করা যেতে পারে। উদাহরণ: [http://www.chicagomanualofstyle.org/ch01/ch01_fig07.html শিকাগো ম্যানুয়াল অফ স্টাইল: সূচীপত্র: ফর্ম্যাটিং] == চিত্র এবং সারণির তালিকা== এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরকারী বিভাগ কারণ আপনার ছবি বা সারণি আপনার লেখার মধ্যে বারবার উল্লেখ করা হয়। আপনার নিবন্ধটি প্রায় ১৫ পৃষ্ঠার বেশি হলে চিত্র এবং সারণির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন ছবিগুলিকে একসাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয় তখন এটি তাদের মধ্যে সহজে তুলনা করার অনুমতি দেয়। {{BookCat}} pk2l16cgsge4gxhrmb7zskc9prt7lfq পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা 0 26481 85286 82409 2025-06-25T14:38:30Z Mehedi Abedin 7113 Mehedi Abedin [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/APA শৈলী রেফারেন্স তালিকা]] কে [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 82409 wikitext text/x-wiki == '''APA শৈলীর রেফারেন্স তালিকা''' == তথ্যের উৎসগুলো সাধারণত মুদ্রিত, ইলেকট্রনিক, বা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এই ক্যাটাগরিগুলোর প্রতিটির মধ্যেও আরও উপশ্রেণি থাকে। প্রতিটি উপশ্রেণিকে APA ফরম্যাটে কিছুটা ভিন্নভাবে উদ্ধৃত করতে হয়। নিচে বিভিন্ন উৎস কীভাবে সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করতে হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সূত্র তালিকাটি একটি ডকুমেন্টের শেষে সংযুক্ত থাকা উচিত। সূত্র তালিকাটি নিচের ফরম্যাট অনুযায়ী হওয়া উচিত: • দ্বিগুণ স্পেসিং • প্রতিটি উদ্ধৃতির দ্বিতীয় এবং পরবর্তী লাইনগুলি প্রায় অর্ধ ইঞ্চি ইনডেন্ট করা • টাইমস নিউ রোমান, ১২ পয়েন্ট ফন্ট • বর্ণানুক্রমিক ক্রমে • লেখকের নাম না থাকলে সংস্থার নাম ব্যবহার করা যাবে == '''মুদ্রিত উৎস''' == •''' বই, একজন লেখক''' - লেখকের শেষ নাম লিখুন, এরপর কমা ও আদ্যক্ষর (সম্পূর্ণ নাম নয়)। - কপিরাইট তারিখটি বন্ধনীর মধ্যে দিন, শেষে একটি ফুলস্টপ। - শিরোনামকে ইটালিক করুন বা আন্ডারলাইন দিন, এবং কেবল শিরোনামের প্রথম শব্দ, উপশিরোনামের প্রথম শব্দ এবং সত্ত্বনাম বড় অক্ষরে লিখুন। - প্রকাশনার শহরের পর কমা ও রাজ্যের দুই অক্ষরের ডাকপত্র সংকেত দিন। নিউ ইয়র্ক বা বোস্টনের মতো পরিচিত শহরের ক্ষেত্রে রাজ্য উল্লেখ করা জরুরি নয়। - দ্বিতীয় ও পরবর্তী লাইনগুলো পাঁচটি স্পেস ইনডেন্ট করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books • '''বই, একাধিক লেখক''' – প্রকাশনার যতজন লেখক থাক, সবগুলো দিন "&" চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করে। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. & Harris, S. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books • '''সংকলন বা প্রবন্ধ সংকলন''' - যদি একজন সম্পাদক থাকেন, তাহলে লিখুন: (Ed.). '''''উদাহরণ''''': Black, S. (Ed). (1989). ''The Origin of Dogs''. New York: Dawg Press • '''সরকারি প্রতিবেদন''' - লেখক না থাকলে, প্রতিবেদনটি যে সংস্থা প্রকাশ করেছে তা লেখক হিসেবে দিন। যদি এটি একটি মার্কিন সরকারী সংস্থা হয়, তবে "U.S" ব্যবহার করুন। - যদি প্রতিবেদনে একটি সনাক্তকারী নম্বর থাকে, তবে তা শিরোনামের ঠিক পরেই দিন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). ''Effects of Bombs on America'' (U.S. Bomb Survey- Report 12-3456). Las Vegas, NV: U.S. Bomb Survey. • '''কর্পোরেট প্রতিবেদন''' - যদি শিরোনাম পৃষ্ঠায় ব্যক্তিগত লেখকদের নাম দেওয়া থাকে, তাহলে তাদের নাম দিন। - যদি না থাকে, তাহলে কর্পোরেশনকে লেখক হিসেবে দিন। - যদি লেখক ও প্রকাশক একই হয়, তাহলে প্রকাশকের নাম হিসেবে "Author" লিখুন। '''''উদাহরণ''''': PetSmart, Inc. (2009). ''Dog Toy Report 2009''. Minneapolis, MN: Author. • '''বইয়ের মধ্যে প্রবন্ধ''' '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). Dog behavior at night. In S. Harris (Ed.), ''Dog Behavior'' (pp. 30-33). Boston: Dawg Books. •''' পুস্তিকা বা ব্রোশিওর''' - লেখক ও প্রকাশক যদি এক হয়, তাহলে "Author" দিন। '''''উদাহরণ''''': American Kennel Club. (2009). ''Adding a New Puppy to Your Family''. [Brochure]. Raleigh, NC: Author. • '''জনপ্রিয় ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ''' - সংখ্যার সম্পূর্ণ তারিখ দিন, বছর প্রথমে দিন। - খণ্ড নম্বর দিন, কিন্তু সংখ্যা নম্বর নয়। – ম্যাগাজিনের নাম ও খণ্ড নম্বর ইটালিক করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009, May 8). Border Collies. ''AKC Gazette'', ''28'', 16-20. • '''পত্রিকায় প্রবন্ধ''' - পৃষ্ঠার নম্বরের আগে লিখুন ''p.'' যদি এক পৃষ্ঠা হয়, আর ''pp.'' যদি একাধিক পৃষ্ঠা হয়। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (1989, May 8). Dog chokes from eating chicken bones. ''Star Tribune'', p.B9. == '''ইলেকট্রনিক উৎস''' == •''' ওয়েবসাইটে পাওয়া প্রতিবেদন''' - যদি ওয়েব পেজটি প্রকাশের তারিখ না দেয়, তাহলে "n.d." (no date) ব্যবহার করুন। '''''উদাহরণ''''': English Springer Spaniels. (n.d). Springer Spaniel Facts. Retrieved May 8, 2008, from www.ess.com/facts • '''সিডি-র‌ম''' – শিরোনাম (ইটালিক), তারিখ (বন্ধনীতে), সিরিজের শিরোনাম (ইটালিক), ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ধরন ও শহর, রাজ্য এবং নির্মাতা দিন। '''''উদাহরণ''''': "Dogs." (2008). ''Encarta 2008''. CD-ROM. Redmond, WA: Microsoft. • '''ই-মেইল''' - ই-মেইলের সূত্র শুধুমাত্র মূল পাঠ্যে বন্ধনীর মধ্যে উল্লেখ করা হয় এবং APA সূত্র তালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত হয় না। - মূল পাঠ্যে লেখকের আদ্যক্ষর, শেষ নাম এবং নির্ভুল তারিখ থাকতে হবে। '''''উদাহরণ''''': (F. Smith, personal communication, May 8, 2008) == '''অন্যান্য উৎস''' == • '''চিঠি''' - চিঠিগুলো APA-তে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। • '''সাক্ষাৎকার''' - সাক্ষাৎকারগুলো APA-তে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। {{BookCat}} 0l6wahpohzwpalg2ztp9knk5b1c6fwh 85290 85286 2025-06-25T14:39:22Z Mehedi Abedin 7113 85290 wikitext text/x-wiki == '''এপিএ শৈলীর রেফারেন্স তালিকা''' == তথ্যের উৎসগুলো সাধারণত মুদ্রিত, ইলেকট্রনিক, বা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এই ক্যাটাগরিগুলোর প্রতিটির মধ্যেও আরও উপশ্রেণি থাকে। প্রতিটি উপশ্রেণিকে এপিএ ফরম্যাটে কিছুটা ভিন্নভাবে উদ্ধৃত করতে হয়। নিচে বিভিন্ন উৎস কীভাবে সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করতে হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সূত্র তালিকাটি একটি ডকুমেন্টের শেষে সংযুক্ত থাকা উচিত। সূত্র তালিকাটি নিচের ফরম্যাট অনুযায়ী হওয়া উচিত: • দ্বিগুণ স্পেসিং • প্রতিটি উদ্ধৃতির দ্বিতীয় এবং পরবর্তী লাইনগুলি প্রায় অর্ধ ইঞ্চি ইনডেন্ট করা • টাইমস নিউ রোমান, ১২ পয়েন্ট ফন্ট • বর্ণানুক্রমিক ক্রমে • লেখকের নাম না থাকলে সংস্থার নাম ব্যবহার করা যাবে == '''মুদ্রিত উৎস''' == •''' বই, একজন লেখক''' - লেখকের শেষ নাম লিখুন, এরপর কমা ও আদ্যক্ষর (সম্পূর্ণ নাম নয়)। - কপিরাইট তারিখটি বন্ধনীর মধ্যে দিন, শেষে একটি ফুলস্টপ। - শিরোনামকে ইটালিক করুন বা আন্ডারলাইন দিন, এবং কেবল শিরোনামের প্রথম শব্দ, উপশিরোনামের প্রথম শব্দ এবং সত্ত্বনাম বড় অক্ষরে লিখুন। - প্রকাশনার শহরের পর কমা ও রাজ্যের দুই অক্ষরের ডাকপত্র সংকেত দিন। নিউ ইয়র্ক বা বোস্টনের মতো পরিচিত শহরের ক্ষেত্রে রাজ্য উল্লেখ করা জরুরি নয়। - দ্বিতীয় ও পরবর্তী লাইনগুলো পাঁচটি স্পেস ইনডেন্ট করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books • '''বই, একাধিক লেখক''' – প্রকাশনার যতজন লেখক থাক, সবগুলো দিন "&" চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করে। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. & Harris, S. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books • '''সংকলন বা প্রবন্ধ সংকলন''' - যদি একজন সম্পাদক থাকেন, তাহলে লিখুন: (Ed.). '''''উদাহরণ''''': Black, S. (Ed). (1989). ''The Origin of Dogs''. New York: Dawg Press • '''সরকারি প্রতিবেদন''' - লেখক না থাকলে, প্রতিবেদনটি যে সংস্থা প্রকাশ করেছে তা লেখক হিসেবে দিন। যদি এটি একটি মার্কিন সরকারী সংস্থা হয়, তবে "U.S" ব্যবহার করুন। - যদি প্রতিবেদনে একটি সনাক্তকারী নম্বর থাকে, তবে তা শিরোনামের ঠিক পরেই দিন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). ''Effects of Bombs on America'' (U.S. Bomb Survey- Report 12-3456). Las Vegas, NV: U.S. Bomb Survey. • '''কর্পোরেট প্রতিবেদন''' - যদি শিরোনাম পৃষ্ঠায় ব্যক্তিগত লেখকদের নাম দেওয়া থাকে, তাহলে তাদের নাম দিন। - যদি না থাকে, তাহলে কর্পোরেশনকে লেখক হিসেবে দিন। - যদি লেখক ও প্রকাশক একই হয়, তাহলে প্রকাশকের নাম হিসেবে "Author" লিখুন। '''''উদাহরণ''''': PetSmart, Inc. (2009). ''Dog Toy Report 2009''. Minneapolis, MN: Author. • '''বইয়ের মধ্যে প্রবন্ধ''' '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). Dog behavior at night. In S. Harris (Ed.), ''Dog Behavior'' (pp. 30-33). Boston: Dawg Books. •''' পুস্তিকা বা ব্রোশিওর''' - লেখক ও প্রকাশক যদি এক হয়, তাহলে "Author" দিন। '''''উদাহরণ''''': American Kennel Club. (2009). ''Adding a New Puppy to Your Family''. [Brochure]. Raleigh, NC: Author. • '''জনপ্রিয় ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ''' - সংখ্যার সম্পূর্ণ তারিখ দিন, বছর প্রথমে দিন। - খণ্ড নম্বর দিন, কিন্তু সংখ্যা নম্বর নয়। – ম্যাগাজিনের নাম ও খণ্ড নম্বর ইটালিক করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009, May 8). Border Collies. ''AKC Gazette'', ''28'', 16-20. • '''পত্রিকায় প্রবন্ধ''' - পৃষ্ঠার নম্বরের আগে লিখুন ''p.'' যদি এক পৃষ্ঠা হয়, আর ''pp.'' যদি একাধিক পৃষ্ঠা হয়। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (1989, May 8). Dog chokes from eating chicken bones. ''Star Tribune'', p.B9. == '''ইলেকট্রনিক উৎস''' == •''' ওয়েবসাইটে পাওয়া প্রতিবেদন''' - যদি ওয়েব পেজটি প্রকাশের তারিখ না দেয়, তাহলে "n.d." (no date) ব্যবহার করুন। '''''উদাহরণ''''': English Springer Spaniels. (n.d). Springer Spaniel Facts. Retrieved May 8, 2008, from www.ess.com/facts • '''সিডি-র‌ম''' – শিরোনাম (ইটালিক), তারিখ (বন্ধনীতে), সিরিজের শিরোনাম (ইটালিক), ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ধরন ও শহর, রাজ্য এবং নির্মাতা দিন। '''''উদাহরণ''''': "Dogs." (2008). ''Encarta 2008''. CD-ROM. Redmond, WA: Microsoft. • '''ই-মেইল''' - ই-মেইলের সূত্র শুধুমাত্র মূল পাঠ্যে বন্ধনীর মধ্যে উল্লেখ করা হয় এবং এপিএ সূত্র তালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত হয় না। - মূল পাঠ্যে লেখকের আদ্যক্ষর, শেষ নাম এবং নির্ভুল তারিখ থাকতে হবে। '''''উদাহরণ''''': (F. Smith, personal communication, May 8, 2008) == '''অন্যান্য উৎস''' == • '''চিঠি''' - চিঠিগুলো এপিএতে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। • '''সাক্ষাৎকার''' - সাক্ষাৎকারগুলো এপিএ-তে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। {{BookCat}} hg900f8rejajd463k9edzpbjzuuqc45 85291 85290 2025-06-25T14:40:08Z Mehedi Abedin 7113 85291 wikitext text/x-wiki == '''এপিএ শৈলীর রেফারেন্স তালিকা''' == তথ্যের উৎসগুলো সাধারণত মুদ্রিত, ইলেকট্রনিক, বা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এই বিষয়শ্রেণীর প্রতিটির মধ্যেও আরও উপশ্রেণি থাকে। প্রতিটি উপশ্রেণিকে এপিএ ফরম্যাটে কিছুটা ভিন্নভাবে উদ্ধৃত করতে হয়। নিচে বিভিন্ন উৎস কীভাবে সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করতে হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সূত্র তালিকাটি একটি ডকুমেন্টের শেষে সংযুক্ত থাকা উচিত। সূত্র তালিকাটি নিচের ফরম্যাট অনুযায়ী হওয়া উচিত: * দ্বিগুণ স্পেসিং * প্রতিটি উদ্ধৃতির দ্বিতীয় এবং পরবর্তী লাইনগুলি প্রায় অর্ধ ইঞ্চি ইনডেন্ট করা * টাইমস নিউ রোমান, ১২ পয়েন্ট ফন্ট * বর্ণানুক্রমিক ক্রমে * লেখকের নাম না থাকলে সংস্থার নাম ব্যবহার করা যাবে == '''মুদ্রিত উৎস''' == •''' বই, একজন লেখক''' - লেখকের শেষ নাম লিখুন, এরপর কমা ও আদ্যক্ষর (সম্পূর্ণ নাম নয়)। - কপিরাইট তারিখটি বন্ধনীর মধ্যে দিন, শেষে একটি ফুলস্টপ। - শিরোনামকে ইটালিক করুন বা আন্ডারলাইন দিন, এবং কেবল শিরোনামের প্রথম শব্দ, উপশিরোনামের প্রথম শব্দ এবং সত্ত্বনাম বড় অক্ষরে লিখুন। - প্রকাশনার শহরের পর কমা ও রাজ্যের দুই অক্ষরের ডাকপত্র সংকেত দিন। নিউ ইয়র্ক বা বোস্টনের মতো পরিচিত শহরের ক্ষেত্রে রাজ্য উল্লেখ করা জরুরি নয়। - দ্বিতীয় ও পরবর্তী লাইনগুলো পাঁচটি স্পেস ইনডেন্ট করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books • '''বই, একাধিক লেখক''' – প্রকাশনার যতজন লেখক থাক, সবগুলো দিন "&" চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করে। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. & Harris, S. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books • '''সংকলন বা প্রবন্ধ সংকলন''' - যদি একজন সম্পাদক থাকেন, তাহলে লিখুন: (Ed.). '''''উদাহরণ''''': Black, S. (Ed). (1989). ''The Origin of Dogs''. New York: Dawg Press • '''সরকারি প্রতিবেদন''' - লেখক না থাকলে, প্রতিবেদনটি যে সংস্থা প্রকাশ করেছে তা লেখক হিসেবে দিন। যদি এটি একটি মার্কিন সরকারী সংস্থা হয়, তবে "U.S" ব্যবহার করুন। - যদি প্রতিবেদনে একটি সনাক্তকারী নম্বর থাকে, তবে তা শিরোনামের ঠিক পরেই দিন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). ''Effects of Bombs on America'' (U.S. Bomb Survey- Report 12-3456). Las Vegas, NV: U.S. Bomb Survey. • '''কর্পোরেট প্রতিবেদন''' - যদি শিরোনাম পৃষ্ঠায় ব্যক্তিগত লেখকদের নাম দেওয়া থাকে, তাহলে তাদের নাম দিন। - যদি না থাকে, তাহলে কর্পোরেশনকে লেখক হিসেবে দিন। - যদি লেখক ও প্রকাশক একই হয়, তাহলে প্রকাশকের নাম হিসেবে "Author" লিখুন। '''''উদাহরণ''''': PetSmart, Inc. (2009). ''Dog Toy Report 2009''. Minneapolis, MN: Author. • '''বইয়ের মধ্যে প্রবন্ধ''' '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). Dog behavior at night. In S. Harris (Ed.), ''Dog Behavior'' (pp. 30-33). Boston: Dawg Books. •''' পুস্তিকা বা ব্রোশিওর''' - লেখক ও প্রকাশক যদি এক হয়, তাহলে "Author" দিন। '''''উদাহরণ''''': American Kennel Club. (2009). ''Adding a New Puppy to Your Family''. [Brochure]. Raleigh, NC: Author. • '''জনপ্রিয় ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ''' - সংখ্যার সম্পূর্ণ তারিখ দিন, বছর প্রথমে দিন। - খণ্ড নম্বর দিন, কিন্তু সংখ্যা নম্বর নয়। – ম্যাগাজিনের নাম ও খণ্ড নম্বর ইটালিক করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009, May 8). Border Collies. ''AKC Gazette'', ''28'', 16-20. • '''পত্রিকায় প্রবন্ধ''' - পৃষ্ঠার নম্বরের আগে লিখুন ''p.'' যদি এক পৃষ্ঠা হয়, আর ''pp.'' যদি একাধিক পৃষ্ঠা হয়। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (1989, May 8). Dog chokes from eating chicken bones. ''Star Tribune'', p.B9. == '''ইলেকট্রনিক উৎস''' == •''' ওয়েবসাইটে পাওয়া প্রতিবেদন''' - যদি ওয়েব পেজটি প্রকাশের তারিখ না দেয়, তাহলে "n.d." (no date) ব্যবহার করুন। '''''উদাহরণ''''': English Springer Spaniels. (n.d). Springer Spaniel Facts. Retrieved May 8, 2008, from www.ess.com/facts • '''সিডি-র‌ম''' – শিরোনাম (ইটালিক), তারিখ (বন্ধনীতে), সিরিজের শিরোনাম (ইটালিক), ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ধরন ও শহর, রাজ্য এবং নির্মাতা দিন। '''''উদাহরণ''''': "Dogs." (2008). ''Encarta 2008''. CD-ROM. Redmond, WA: Microsoft. • '''ই-মেইল''' - ই-মেইলের সূত্র শুধুমাত্র মূল পাঠ্যে বন্ধনীর মধ্যে উল্লেখ করা হয় এবং এপিএ সূত্র তালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত হয় না। - মূল পাঠ্যে লেখকের আদ্যক্ষর, শেষ নাম এবং নির্ভুল তারিখ থাকতে হবে। '''''উদাহরণ''''': (F. Smith, personal communication, May 8, 2008) == '''অন্যান্য উৎস''' == • '''চিঠি''' - চিঠিগুলো এপিএতে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। • '''সাক্ষাৎকার''' - সাক্ষাৎকারগুলো এপিএ-তে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। {{BookCat}} g9b3l97a1jcfi2nd67xv2fr8vd5g479 85293 85291 2025-06-25T14:41:14Z Mehedi Abedin 7113 85293 wikitext text/x-wiki == '''এপিএ শৈলীর রেফারেন্স তালিকা''' == তথ্যের উৎসগুলো সাধারণত মুদ্রিত, ইলেকট্রনিক, বা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এই বিষয়শ্রেণীর প্রতিটির মধ্যেও আরও উপশ্রেণি থাকে। প্রতিটি উপশ্রেণিকে এপিএ ফরম্যাটে কিছুটা ভিন্নভাবে উদ্ধৃত করতে হয়। নিচে বিভিন্ন উৎস কীভাবে সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করতে হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সূত্র তালিকাটি একটি ডকুমেন্টের শেষে সংযুক্ত থাকা উচিত। সূত্র তালিকাটি নিচের ফরম্যাট অনুযায়ী হওয়া উচিত: * দ্বিগুণ স্পেসিং * প্রতিটি উদ্ধৃতির দ্বিতীয় এবং পরবর্তী লাইনগুলি প্রায় অর্ধ ইঞ্চি ইনডেন্ট করা * টাইমস নিউ রোমান, ১২ পয়েন্ট ফন্ট * বর্ণানুক্রমিক ক্রমে * লেখকের নাম না থাকলে সংস্থার নাম ব্যবহার করা যাবে == '''মুদ্রিত উৎস''' == *''' বই, একজন লেখক''' - লেখকের শেষ নাম লিখুন, এরপর কমা ও আদ্যক্ষর (সম্পূর্ণ নাম নয়)। - কপিরাইট তারিখটি বন্ধনীর মধ্যে দিন, শেষে একটি ফুলস্টপ। - শিরোনামকে ইটালিক করুন বা আন্ডারলাইন দিন, এবং কেবল শিরোনামের প্রথম শব্দ, উপশিরোনামের প্রথম শব্দ এবং সত্ত্বনাম বড় অক্ষরে লিখুন। - প্রকাশনার শহরের পর কমা ও অঙ্গরাজ্যের দুই অক্ষরের ডাকপত্র সংকেত দিন। নিউ ইয়র্ক বা বোস্টনের মতো পরিচিত শহরের ক্ষেত্রে রাজ্য উল্লেখ করা জরুরি নয়। - দ্বিতীয় ও পরবর্তী লাইনগুলো পাঁচটি স্পেস ইনডেন্ট করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books * '''বই, একাধিক লেখক''' – প্রকাশনার যতজন লেখক থাক, সবগুলো দিন "&" চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করে। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. & Harris, S. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books * '''সংকলন বা প্রবন্ধ সংকলন''' - যদি একজন সম্পাদক থাকেন, তাহলে লিখুন: (Ed.). '''''উদাহরণ''''': Black, S. (Ed). (1989). ''The Origin of Dogs''. New York: Dawg Press * '''সরকারি প্রতিবেদন''' - লেখক না থাকলে, প্রতিবেদনটি যে সংস্থা প্রকাশ করেছে তা লেখক হিসেবে দিন। যদি এটি একটি মার্কিন সরকারী সংস্থা হয়, তবে "U.S" ব্যবহার করুন। - যদি প্রতিবেদনে একটি সনাক্তকারী নম্বর থাকে, তবে তা শিরোনামের ঠিক পরেই দিন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). ''Effects of Bombs on America'' (U.S. Bomb Survey- Report 12-3456). Las Vegas, NV: U.S. Bomb Survey. * '''কর্পোরেট প্রতিবেদন''' - যদি শিরোনাম পৃষ্ঠায় ব্যক্তিগত লেখকদের নাম দেওয়া থাকে, তাহলে তাদের নাম দিন। - যদি না থাকে, তাহলে কর্পোরেশনকে লেখক হিসেবে দিন। - যদি লেখক ও প্রকাশক একই হয়, তাহলে প্রকাশকের নাম হিসেবে "Author" লিখুন। '''''উদাহরণ''''': PetSmart, Inc. (2009). ''Dog Toy Report 2009''. Minneapolis, MN: Author. * '''বইয়ের মধ্যে প্রবন্ধ''' '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). Dog behavior at night. In S. Harris (Ed.), ''Dog Behavior'' (pp. 30-33). Boston: Dawg Books. * ''' পুস্তিকা বা ব্রোশিওর''' - লেখক ও প্রকাশক যদি এক হয়, তাহলে "Author" দিন। '''''উদাহরণ''''': American Kennel Club. (2009). ''Adding a New Puppy to Your Family''. [Brochure]. Raleigh, NC: Author. * '''জনপ্রিয় ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ''' - সংখ্যার সম্পূর্ণ তারিখ দিন, বছর প্রথমে দিন। - খণ্ড নম্বর দিন, কিন্তু সংখ্যা নম্বর নয়। – ম্যাগাজিনের নাম ও খণ্ড নম্বর ইটালিক করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009, May 8). Border Collies. ''AKC Gazette'', ''28'', 16-20. * '''পত্রিকায় প্রবন্ধ''' - পৃষ্ঠার নম্বরের আগে লিখুন ''p.'' যদি এক পৃষ্ঠা হয়, আর ''pp.'' যদি একাধিক পৃষ্ঠা হয়। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (1989, May 8). Dog chokes from eating chicken bones. ''Star Tribune'', p.B9. == '''ইলেকট্রনিক উৎস''' == •''' ওয়েবসাইটে পাওয়া প্রতিবেদন''' - যদি ওয়েব পেজটি প্রকাশের তারিখ না দেয়, তাহলে "n.d." (no date) ব্যবহার করুন। '''''উদাহরণ''''': English Springer Spaniels. (n.d). Springer Spaniel Facts. Retrieved May 8, 2008, from www.ess.com/facts • '''সিডি-র‌ম''' – শিরোনাম (ইটালিক), তারিখ (বন্ধনীতে), সিরিজের শিরোনাম (ইটালিক), ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ধরন ও শহর, রাজ্য এবং নির্মাতা দিন। '''''উদাহরণ''''': "Dogs." (2008). ''Encarta 2008''. CD-ROM. Redmond, WA: Microsoft. • '''ই-মেইল''' - ই-মেইলের সূত্র শুধুমাত্র মূল পাঠ্যে বন্ধনীর মধ্যে উল্লেখ করা হয় এবং এপিএ সূত্র তালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত হয় না। - মূল পাঠ্যে লেখকের আদ্যক্ষর, শেষ নাম এবং নির্ভুল তারিখ থাকতে হবে। '''''উদাহরণ''''': (F. Smith, personal communication, May 8, 2008) == '''অন্যান্য উৎস''' == • '''চিঠি''' - চিঠিগুলো এপিএতে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। • '''সাক্ষাৎকার''' - সাক্ষাৎকারগুলো এপিএ-তে ই-মেইলের মতোভাবে বিবেচিত হয়। {{BookCat}} 0jf8uky07o02i743batu7nfn4jjnj70 85294 85293 2025-06-25T14:41:35Z Mehedi Abedin 7113 85294 wikitext text/x-wiki == '''এপিএ শৈলীর রেফারেন্স তালিকা''' == তথ্যের উৎসগুলো সাধারণত মুদ্রিত, ইলেকট্রনিক, বা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এই বিষয়শ্রেণীর প্রতিটির মধ্যেও আরও উপশ্রেণি থাকে। প্রতিটি উপশ্রেণিকে এপিএ ফরম্যাটে কিছুটা ভিন্নভাবে উদ্ধৃত করতে হয়। নিচে বিভিন্ন উৎস কীভাবে সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করতে হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সূত্র তালিকাটি একটি ডকুমেন্টের শেষে সংযুক্ত থাকা উচিত। সূত্র তালিকাটি নিচের ফরম্যাট অনুযায়ী হওয়া উচিত: * দ্বিগুণ স্পেসিং * প্রতিটি উদ্ধৃতির দ্বিতীয় এবং পরবর্তী লাইনগুলি প্রায় অর্ধ ইঞ্চি ইনডেন্ট করা * টাইমস নিউ রোমান, ১২ পয়েন্ট ফন্ট * বর্ণানুক্রমিক ক্রমে * লেখকের নাম না থাকলে সংস্থার নাম ব্যবহার করা যাবে == '''মুদ্রিত উৎস''' == *''' বই, একজন লেখক''' - লেখকের শেষ নাম লিখুন, এরপর কমা ও আদ্যক্ষর (সম্পূর্ণ নাম নয়)। - কপিরাইট তারিখটি বন্ধনীর মধ্যে দিন, শেষে একটি ফুলস্টপ। - শিরোনামকে ইটালিক করুন বা আন্ডারলাইন দিন, এবং কেবল শিরোনামের প্রথম শব্দ, উপশিরোনামের প্রথম শব্দ এবং সত্ত্বনাম বড় অক্ষরে লিখুন। - প্রকাশনার শহরের পর কমা ও অঙ্গরাজ্যের দুই অক্ষরের ডাকপত্র সংকেত দিন। নিউ ইয়র্ক বা বোস্টনের মতো পরিচিত শহরের ক্ষেত্রে রাজ্য উল্লেখ করা জরুরি নয়। - দ্বিতীয় ও পরবর্তী লাইনগুলো পাঁচটি স্পেস ইনডেন্ট করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books * '''বই, একাধিক লেখক''' – প্রকাশনার যতজন লেখক থাক, সবগুলো দিন "&" চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করে। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. & Harris, S. (2008). ''AKC Dog Book''. Boston: Dawg Books * '''সংকলন বা প্রবন্ধ সংকলন''' - যদি একজন সম্পাদক থাকেন, তাহলে লিখুন: (Ed.). '''''উদাহরণ''''': Black, S. (Ed). (1989). ''The Origin of Dogs''. New York: Dawg Press * '''সরকারি প্রতিবেদন''' - লেখক না থাকলে, প্রতিবেদনটি যে সংস্থা প্রকাশ করেছে তা লেখক হিসেবে দিন। যদি এটি একটি মার্কিন সরকারী সংস্থা হয়, তবে "U.S" ব্যবহার করুন। - যদি প্রতিবেদনে একটি সনাক্তকারী নম্বর থাকে, তবে তা শিরোনামের ঠিক পরেই দিন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). ''Effects of Bombs on America'' (U.S. Bomb Survey- Report 12-3456). Las Vegas, NV: U.S. Bomb Survey. * '''কর্পোরেট প্রতিবেদন''' - যদি শিরোনাম পৃষ্ঠায় ব্যক্তিগত লেখকদের নাম দেওয়া থাকে, তাহলে তাদের নাম দিন। - যদি না থাকে, তাহলে কর্পোরেশনকে লেখক হিসেবে দিন। - যদি লেখক ও প্রকাশক একই হয়, তাহলে প্রকাশকের নাম হিসেবে "Author" লিখুন। '''''উদাহরণ''''': PetSmart, Inc. (2009). ''Dog Toy Report 2009''. Minneapolis, MN: Author. * '''বইয়ের মধ্যে প্রবন্ধ''' '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009). Dog behavior at night. In S. Harris (Ed.), ''Dog Behavior'' (pp. 30-33). Boston: Dawg Books. * ''' পুস্তিকা বা ব্রোশিওর''' - লেখক ও প্রকাশক যদি এক হয়, তাহলে "Author" দিন। '''''উদাহরণ''''': American Kennel Club. (2009). ''Adding a New Puppy to Your Family''. [Brochure]. Raleigh, NC: Author. * '''জনপ্রিয় ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ''' - সংখ্যার সম্পূর্ণ তারিখ দিন, বছর প্রথমে দিন। - খণ্ড নম্বর দিন, কিন্তু সংখ্যা নম্বর নয়। – ম্যাগাজিনের নাম ও খণ্ড নম্বর ইটালিক করুন। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (2009, May 8). Border Collies. ''AKC Gazette'', ''28'', 16-20. * '''পত্রিকায় প্রবন্ধ''' - পৃষ্ঠার নম্বরের আগে লিখুন ''p.'' যদি এক পৃষ্ঠা হয়, আর ''pp.'' যদি একাধিক পৃষ্ঠা হয়। '''''উদাহরণ''''': Smith, F. (1989, May 8). Dog chokes from eating chicken bones. ''Star Tribune'', p.B9. == '''ইলেকট্রনিক উৎস''' == •''' ওয়েবসাইটে পাওয়া প্রতিবেদন''' - যদি ওয়েব পেজটি প্রকাশের তারিখ না দেয়, তাহলে "n.d." (no date) ব্যবহার করুন। '''''উদাহরণ''''': English Springer Spaniels. (n.d). Springer Spaniel Facts. Retrieved May 8, 2008, from www.ess.com/facts • '''সিডি-র‌ম''' – শিরোনাম (ইটালিক), তারিখ (বন্ধনীতে), সিরিজের শিরোনাম (ইটালিক), ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ধরন ও শহর, রাজ্য এবং নির্মাতা দিন। '''''উদাহরণ''''': "Dogs." (2008). ''Encarta 2008''. CD-ROM. Redmond, WA: Microsoft. • '''ই-মেইল''' - ই-মেইলের সূত্র শুধুমাত্র মূল পাঠ্যে বন্ধনীর মধ্যে উল্লেখ করা হয় এবং এপিএ সূত্র তালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত হয় না। - মূল পাঠ্যে লেখকের আদ্যক্ষর, শেষ নাম এবং নির্ভুল তারিখ থাকতে হবে। '''''উদাহরণ''''': (F. Smith, personal communication, May 8, 2008) == '''অন্যান্য উৎস''' == • '''চিঠি''' - চিঠিগুলো এপিএতে ই-মেইলের মতো করে বিবেচিত হয়। • '''সাক্ষাৎকার''' - সাক্ষাৎকারগুলো এপিএ-তে ই-মেইলের মতো করে বিবেচিত হয়। {{BookCat}} oddk814nj5qwp4qrkhh0efckcjr4lfm আলাপ:পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা 1 26482 85288 82410 2025-06-25T14:38:30Z Mehedi Abedin 7113 Mehedi Abedin [[আলাপ:পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/APA শৈলী রেফারেন্স তালিকা]] কে [[আলাপ:পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 82410 wikitext text/x-wiki {{আলাপ পাতা}} {{আলাপ পাতা/উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫}} 8vxn9zum7n3tju9ayrerhr25vm4kljv পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ/বিষয় 0 26487 85295 82419 2025-06-25T14:44:51Z Mehedi Abedin 7113 85295 wikitext text/x-wiki == প্রযুক্তিগত যোগাযোগে বিষয়বস্তুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য == প্রযুক্তিগত যোগাযোগের বিষয়বস্তু একাডেমিক বা সামাজিক প্রকৃতির যোগাযোগের বিষয়বস্তুর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মাধ্যমে পৃথক হয়, যেগুলো এগুলো নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। '''প্রযুক্তিগত যোগাযোগের বিষয়বস্তু পাঠক-কেন্দ্রিক''' * সব ধরনের লিখিত যোগাযোগই কোনো না কোনোভাবে পাঠক-কেন্দ্রিক বলা যায়। তবে একাডেমিক বা সামাজিক যোগাযোগের তুলনায়, প্রযুক্তিগত যোগাযোগ এককভাবে এই কারণে অনন্য যে এটি পাঠকদের নির্দিষ্ট ও ব্যবহারিক কোনো কাজ সম্পাদনে সহায়তা করার জন্যই বিদ্যমান। এই কাজগুলো শারীরিক (যেমন একটি বাইসাইকেল বা বুকশেল্ফ তৈরি) অথবা মানসিক (যেমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম পরিচালনা করা) যাই হোক না কেন, প্রযুক্তিগত যোগাযোগ অবশ্যই তাদের পাঠকদের ঘিরে হতে হবে এবং জটিল বিষয়গুলোকে স্পষ্ট ও সহজ ভাষায় রূপান্তর করতে হবে। এই ডকুমেন্টগুলোকে সফল হতে হলে তা অবশ্যই ব্যবহারযোগ্য ও প্রভাবশালী হতে হবে। * প্রযুক্তিগত নথিপত্রে ব্যবহারযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই নথি শুধুমাত্র পাঠকদের দ্রুত, সহজে ও কম পরিশ্রমে একটি কাজ করতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়। যদি নথি তথ্য পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে না পারে তবে তা কম সফল হয়। প্রভাবশালী হওয়াটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিটি প্রযুক্তিগত নথি মূলত একজন লেখকের পক্ষ থেকে পাঠককে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে আচরণ করতে রাজি করানোর একটি প্রচেষ্টা। পাঠকরা প্রায়ই নির্দেশনামূলক নথির প্রতি বিরক্ত বা অবহেলার সাথে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং প্রভাবশীলতা সেই মনোভাবের ভারসাম্য আনতে সহায়তা করে। '''প্রযুক্তিগত যোগাযোগের বিষয়বস্তু গতিশীল''' * "রেটোরিক্যাল ট্রায়াঙ্গেল" মডেলের ন্যায় লেখক, পাঠক এবং নথির মধ্যকার সম্পর্ক প্রায়শই গতিশীল হয়। ব্যবহারযোগ্যতা ও প্রভাবশীলতা উন্নত করার জন্য লেখকরা প্রায়ই পাঠকের প্রতিক্রিয়া অনুসারে নথি পরিবর্তন করে থাকেন। প্রযুক্তিগত যোগাযোগের পাঠক-কেন্দ্রিক প্রকৃতির কারণে এর বিষয়বস্তু প্রায়শই পাঠকের মতামতের ভিত্তিতে পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে। যদি কোনো নির্দেশনা অস্পষ্ট হয়, তবে তা পুনঃলিখন বা ভিজ্যুয়াল সহায়তার মাধ্যমে বর্ধিত করা যেতে পারে যাতে ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। এই গতিশীলতা প্রায়শই কেবল নথিভুক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং প্রকৃত প্রক্রিয়ার মধ্যেও বিস্তার লাভ করে। ব্যবসা বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রায়শই যে বিষয়বস্তু নিয়ে প্রযুক্তিগত নথি তৈরি করা হয়েছে সেই পণ্যে বা প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে। কম্পিউটার সফটওয়্যারের আপডেট বা সংস্করণ পরিবর্তন এর একটি ভালো উদাহরণ। পণ্যের এই পরিবর্তন আবার সেই বিষয়ে থাকা প্রযুক্তিগত ডকুমেন্টের পরিবর্তনের প্রয়োজন তৈরি করে এবং এই প্রক্রিয়া আবার নতুনভাবে শুরু হয়। {{BookCat}} 99g5tqhnz5k9nduwy06uxu1d65ndj77 পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ/প্রসঙ্গ 0 26490 85296 82424 2025-06-25T14:48:09Z Mehedi Abedin 7113 85296 wikitext text/x-wiki == প্রযুক্তিগত তথ্য যোগাযোগের বহু প্রেক্ষাপট == আপনি ইতিমধ্যে একাডেমিক পরিবেশে কার্যকর যোগাযোগ সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন, তবে প্রযুক্তিগত যোগাযোগ কেবল এই ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনাকে অবশ্যই পেশাদার পরিবেশসহ অন্যান্য বহু প্রেক্ষাপটে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে জানতে হবে। '''প্রযুক্তিগত যোগাযোগের অনেক রূপ থাকতে পারে''' প্রতিদিন পেশাজীবীরা অনেক ধরনের ডকুমেন্ট তৈরি ও ব্যবহার করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ও পরিচিত হলো স্মারক (মেমো) এবং ইমেইল, যেগুলো সব ধরণের ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি প্রযুক্তিগত লেখকগণ নির্দেশনা, পণ্যের গাইড ও নথিভুক্তি, গ্রাফ, চার্ট, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ধরণের কনটেন্টও তৈরি করে থাকেন। একজন প্রযুক্তিগত লেখক যেই মাধ্যমই ব্যবহার করুন না কেন, প্রধান লক্ষ্য হলো তথ্যবহুল এবং স্পষ্ট হওয়া। '''প্রযুক্তিগত যোগাযোগ ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে কাজ করে''' প্রযুক্তিগত যোগাযোগ বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। নির্দেশনা দেওয়া, তথ্য প্রদান করা বা কাউকে প্রভাবিত করার জন্য এটি ব্যবহৃত হতে পারে। এটি সাধারণ শিক্ষামূলক বা সামাজিক লেখার তুলনায় অনেক বিস্তৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। প্রযুক্তিগত লেখাকে অনুপ্রেরণাদায়ক বা বিনোদনমূলক হওয়ার বাইরে অবশ্যই পাঠকের জন্য কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক হতে হবে। '''প্রযুক্তিগত যোগাযোগ জটিল শ্রোতাদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়''' একাডেমিক রচনাগুলো সাধারণত একজন ব্যক্তি বা কিছু সংখ্যক সমমনা সহপাঠীর উদ্দেশ্যে লেখা হয় যাদের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা একরকম। তবে ব্যবহারিক ও সহযোগিতামূলক প্রকৃতির কারণে প্রযুক্তিগত লেখালেখি প্রায়শই একটি জটিল শ্রোতার জন্য তৈরি করতে হয়। একজন প্রযুক্তিগত লেখককে অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রাপ্ত এবং অনিচ্ছাকৃত পাঠক, দেশীয় ও বিদেশি পাঠক, এবং বিভিন্ন দায়িত্ব, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সচেতনভাবে বিবেচনায় রাখতে হয়। প্রতিটি পাঠকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হয় এবং তাই ডকুমেন্টগুলো সংক্ষিপ্ত, পক্ষপাতহীন ও অতিরিক্ত বা অস্পষ্ট ভাষা থেকে মুক্ত রাখতে হবে যাতে সেগুলো সঠিকভাবে বোঝা যায়। '''প্রযুক্তিগত যোগাযোগ সহযোগিতামূলক''' জটিলতা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে প্রযুক্তিগত নথিতে প্রায়শই একাধিক সহ-লেখকের অংশগ্রহণ বা অবদান প্রয়োজন পড়ে। পল অ্যান্ডারসনের 'টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন' পাঠ্যপুস্তকে একটি উপাখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাবে ৩০০ জনেরও বেশি প্রকৌশলীর লেখা ও চিত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও এটি একটি চরম উদাহরণ, তবুও একজন লেখক একা প্রযুক্তিগত নথি লিখলেও সহকর্মী বা লক্ষ্য শ্রোতার অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সহযোগিতা ও পরামর্শ গ্রহণ লেখালেখির প্রক্রিয়ার একটি অংশ হতে পারে। '''প্রযুক্তিগত যোগাযোগ নিয়মাবলি ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়''' একাডেমিক লেখার মতোই সাংগঠনিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতি প্রযুক্তিগত নথি ভাষা ও রচনাশৈলীকে প্রভাবিত করে। কোনো প্রতিষ্ঠান নিজেকে আনুষ্ঠানিক ও রক্ষণশীল অথবা অনানুষ্ঠানিক ও উদ্ভাবনী হিসেবে কল্পনা করতে পারে এবং তাদের যোগাযোগের শৈলীতে সেই আত্ম-চিন্তার প্রতিফলন ঘটে। এই প্রতিফলন প্রায়ই কর্মক্ষেত্রের সামাজিক মাত্রা বা যে সমাজে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয় সেই সংস্কৃতিতেও বিস্তার লাভ করে। একজন প্রযুক্তিগত লেখকের রচনাশৈলী তার কাজের সামাজিক ও সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট অনুসারে পরিবর্তিত হয়। প্রযুক্তিগত যোগাযোগ একটি জটিল শৃঙ্খলা, কারণ এটি বহু প্রেক্ষাপটে ঘটতে পারে। এটি প্রায় যেকোনো পেশাগত পরিবেশে দেখা যেতে পারে—একটি নির্মাণ সাইট থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত। আপনি যখন আপনার গাড়ি, মাইক্রোওয়েভ, কম্পিউটার বা খণ্ডিত বুকশেল্ফের জন্য ব্যবহারকারী ম্যানুয়াল পড়েন তখন আপনি প্রযুক্তিগত যোগাযোগের মুখোমুখি হন। সর্বদা পরিবর্তনশীল শ্রোতা, আইনি ও নৈতিক বিষয়াবলি এবং নানা সামাজিক প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারা একজন সফল প্রযুক্তিগত লেখকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। {{BookCat}} 7cmibxgie1n97q0oez5hbt2oxj5ioaa পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ/শ্রোতা 0 26492 85297 82427 2025-06-25T14:54:27Z Mehedi Abedin 7113 85297 wikitext text/x-wiki {{TOCright}} = প্রযুক্তিগত যোগাযোগের শ্রোতাদের উপলব্ধি করা = == শ্রোতার ধরণ == কোনো নথি প্রস্তুত করার সময় সম্ভাব্য শ্রোতাদের কথা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্যপ্রাপ্ত এবং অনিচ্ছাকৃত শ্রোতার মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে সচেতনতা লেখকের পক্ষে কীভাবে তথ্য উপস্থাপন বা অন্তর্ভুক্ত করা হবে তা প্রভাবিত করতে পারে, এবং কোনো আইনি ইস্যুর ক্ষেত্রে নথি কীভাবে বিবেচিত হবে তাও নির্ধারণ করতে পারে। পাশাপাশি একজন জটিল শ্রোতা সম্পর্কে সচেতনতা নিশ্চিত করে যে লেখকের লেখা কোনো সম্ভাব্য পাঠককে বাদ না দেয়। আপনি এমন কাউকে বাদ দিতে চাইবেন না যাকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। === উদ্দেশ্যপ্রাপ্ত বনাম অনিচ্ছাকৃত শ্রোতা === উদ্দেশ্যপ্রাপ্ত শ্রোতা বলতে বোঝানো হয় সেই ব্যক্তিদের, যাদের উদ্দেশ্যে আপনি শুরুতে লেখাটি লিখছেন। এটি সেই শ্রোতা, যাদের জন্য আপনার নথি তৈরি। অনিচ্ছাকৃত শ্রোতা হতে পারে যে কেউ, যে কোনো সময়ে আপনার লেখা পড়তে পারে। পেশাগত পরিবেশে, যেকোনো লেখার অনিচ্ছাকৃত শ্রোতা সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ইমেইল, স্মারক বা ব্যবসায়িক প্রস্তাবনার মতো যেকোনো নথি অন্তর্ভুক্ত। এটি কেবল একটি ভালো সাধারণ নিয়মই নয়, বরং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রতিটি নথি পেশাদারভাবে তৈরি করাই আপনার স্বার্থে থাকবে, কারণ এই নথিগুলো আদালতে প্রমাণ হিসেবে লেখক বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। === জটিল শ্রোতা === জটিল শ্রোতার জন্য লেখা একাডেমিক লেখার থেকে আলাদা। একাডেমিক পরিবেশে বেশিরভাগ লেখার একটি নির্দিষ্ট শ্রোতা থাকে (সাধারণত একজন শিক্ষিকা, সহকারী শিক্ষক, বা কয়েকজন সহপাঠী)। কিন্তু পেশাগত পরিবেশে প্রায়শই ভিন্ন পটভূমি, দক্ষতা ও প্রত্যাশা সম্পন্ন ব্যক্তিদের একটি জটিল শ্রোতার জন্য লেখা হয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে খুব বেশি কারিগরি পরিভাষা ব্যবহার এড়ানো উচিত যাতে আপনি আপনার কিছু পাঠককে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাদ না দেন। যখন বড় ও জটিল শ্রোতার জন্য লেখা হয়, তখন এটি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। == নির্দিষ্ট শ্রোতার জন্য কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত ডকুমেন্ট তৈরি == '''রেজ্যুমে''' বা '''কভার লেটার''' এর মতো কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত নথির ক্ষেত্রে "সবার জন্য একটাই" ধরণের পদ্ধতি কার্যকর নয়। প্রতিটি ডকুমেন্ট আলাদাভাবে তৈরি করা উচিত যেন যেই নিয়োগকর্তার কাছে পাঠানো হচ্ছে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি কার্যকরভাবে করতে হলে প্রতিষ্ঠান এবং পদ সম্পর্কে কিছু গবেষণা করা সহায়ক। কিছু পদ্ধতি হলো: * ''চাকরির বিবরণ দেখা'' – চাকরির বিবরণ সাধারণত সেই দক্ষতাগুলোর তালিকা দেয় যা পদটির জন্য প্রয়োজন। নিয়োগকর্তা যেসব দক্ষতা খুঁজছে তা বুঝতে পারলে সেই অনুযায়ী রেজ্যুমেতে তা অন্তর্ভুক্ত করা যায়। (যোগ্যতা সম্পর্কে মিথ্যা বলা উচিত নয়, তবে এই দক্ষতাগুলোর উপর '''আলোপাত''' ও '''অগ্রাধিকার''' দেয়া উচিত।) * ''প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট দেখা'' – প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট দেখা প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে যা চাকরির বিবরণে নাও থাকতে পারে। এটি কভার লেটার লেখার সময় সবচেয়ে উপযোগী, যেখানে নিয়োগকর্তাকে সরাসরি সম্বোধন করা জরুরি। চাকরির বিবরণ এবং প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট দেখার পাশাপাশি আপনি যে ধরণের চাকরির জন্য আবেদন করছেন তা মূল্যায়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি ডিজাইনের ক্ষেত্রে কোনো চাকরিতে আবেদন করেন, তাহলে আপনার রেজ্যুমেকে আরো সৃজনশীলভাবে উপস্থাপন করতে হবে এবং সাধারণ কোনো টেমপ্লেট ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। আপনার অভিজ্ঞতার স্তরের উপর নির্ভর করে একটি ওয়ার্ড ডকুমেন্টে দক্ষতা ও চাকরির অভিজ্ঞতার তালিকা তৈরি করাও সহায়ক হতে পারে। যেমন উপরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন চাকরি সাধারণত নির্দিষ্ট ধরণের দক্ষতার সন্ধান করে। তাই একটি সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার জন্য একটি নথি তৈরি সহজ করতে একটি আলাদা ফাইল রাখা যেতে পারে যাতে বিভিন্ন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তালিকাভুক্ত থাকে। নির্দিষ্ট একটি চাকরির জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিলে সেখান থেকে উপযুক্ত দক্ষতা কপি করে নথিতে বসানো যায়। মনে রাখা জরুরি যে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নথি আপনি '''নিজেকে বিক্রি করছেন'''। প্রতিটি চাকরি একটু ভিন্ন, তাই প্রতিটি রেজ্যুমে নিয়োগকর্তার জন্য আলাদাভাবে তৈরি করা জরুরি। এছাড়াও, নিশ্চিত হোন যে এতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য না থাকে যা নিয়োগকর্তা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করতে পারেন। == অনলাইন সূত্র == অনলাইন টেকনিক্যাল রাইটিং: অডিয়েন্স এনালাইসিস [http://www.io.com/~hcexres/textbook/aud.html] দ্য ওডাব্লিউএল এট পর্ডু: ওয়ার্কপ্লেস রাইটারস [http://owl.english.purdue.edu/owl/resource/681/01/] {{BookCat}} 9yk6i88crz42vt4fdb85qf2up5hkpx8 পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/অলঙ্করণ 0 26494 85299 83033 2025-06-25T15:11:12Z Mehedi Abedin 7113 85299 wikitext text/x-wiki {{Navigate|Prev=পেশাদার লেখনী সম্বন্ধে|Next=নৈতিকতা}}{{TOCright}} = প্রযুক্তিগত ও পেশাগত লেখার অলঙ্কারশাস্ত্রভিত্তিক প্রকৃতি = কর্মক্ষেত্রে বহু ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে যোগাযোগ চর্চিত ও সম্পাদিত হয়। লক্ষ্য থাকে পাঠকের কাছে কার্যকরভাবে তথ্য পৌঁছে দেওয়া, তা সহকর্মী হোক কিংবা অফিসের উচ্চতর দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ। কর্মক্ষেত্রের লেখালেখি অন্যান্য প্রেক্ষাপটের লিখিত যোগাযোগের (যেমন: শিক্ষাবিষয়ক বা সামাজিক ক্ষেত্র) থেকে ভিন্ন। কর্মক্ষেত্রে লেখা একটি আইনি নথি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং প্রায়ই দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষিত হয়। ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা দেখা দিলে এই লেখাগুলো পুনরায় উল্লেখ করা হতে পারে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রের লেখা সাধারণ লেখার থেকে আলাদা, কারণ পাঠক সাধারণত বিনোদনের জন্য বা নিজে নিজে শেখার উদ্দেশ্যে এই নথি পড়ে না; এতে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ, প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য থাকা উচিত—অপ্রয়োজনীয় পুনরাবৃত্তি নয়। == পাঠক-কেন্দ্রিক লেখা == কর্মক্ষেত্রের লেখালেখি সবসময় পাঠককেন্দ্রিক হওয়া উচিত; পাঠকের কী জানা দরকার? লেখায় সঠিকভাবে সেই তথ্য তুলে ধরতে হবে যা পাঠক খুঁজছে। যদি লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে রাজি করানো হয় তাহলে লেখককে ভাবতে হবে কীভাবে পাঠক সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি ওয়ার্কটিম কারখানায় নতুন উৎপাদন যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করছে। কোম্পানির বিভিন্ন পাঠক এই প্রস্তাব থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য খুঁজবে। একটি ভালোভাবে লেখা নথি প্রতিটি সম্ভাব্য পাঠককে বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রত্যাশিত তথ্য সরবরাহ করবে। আপনার সমস্ত লেখার ক্ষেত্রে সবসময় পাঠকের কথা ভাবুন। প্রতিটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পাঠকের বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য, প্রত্যাশা, পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করুন যা তাদের প্রতিক্রিয়া গঠন করবে। এমনভাবে যোগাযোগ গড়ে তুলুন যা পাঠকের চোখে প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য। এ দুটি গুণই সফল কর্মক্ষেত্র-ভিত্তিক লেখার মূল চাবিকাঠি। পাঠক কীভাবে প্রতি মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া দেবে তা কল্পনা করে আপনার লেখা সাজান—এটাই পাঠককে সরাসরি প্রভাবিত করার একমাত্র সুযোগ। == কার্যকর কর্মক্ষেত্রের লেখা == কর্মক্ষেত্রের লেখালেখি এমন হতে হবে যা সব সম্ভাব্য পাঠকের কাছে প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য। একটি নথি তখনই কার্যকর হবে যখন এটি নির্দিষ্ট পাঠকেত জন্য সহজবোধ্য হবে। তাই সরল বাক্য, শব্দ এবং কাঠামো ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে পাঠকেরা সহজে তা বুঝতে পারে। একটি জটিল বা দুর্বোধ্য লেখা কার্যকর নয়, কারণ পাঠক তখন সঠিকভাবে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে না। অত্যন্ত ব্যবহারযোগ্য লেখা পাঠকদের দ্রুত তথ্য খুঁজে পেতে, বুঝতে ও প্রয়োগ করতে সহায়তা করে যাতে তারা তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। এটি রেফারেন্স, নির্দেশিকা বা কোনো নির্দিষ্ট কাজের অগ্রগতি দেখানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রভাবশালী লেখালেখি পাঠককে বিশ্বাস করাতে হবে যে তথ্যটি সঠিক এবং তা অনুসরণযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, একজন পাঠক একাধিক প্রস্তাব বিবেচনা করছেন। যে প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী হবে, সেটিই সম্ভবত বেছে নেয়া হবে; তবে লেখাটি যদি প্রভাবশালী না হয়, তাহলে তা উপেক্ষিত হবে। ফলে লেখার পুরো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। তবে এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রভাবশালী হওয়া মানে '''অনৈতিক কাজ করা নয়'''। কেবল আপনার ডকুমেন্টকেই পছন্দনীয় করার জন্য কিছু লেখা উচিত নয়। সবসময় নৈতিক চর্চা অনুসরণ করতে হবে। নিজেকে কিছু নৈতিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন: ''আমি কি আমার উৎসগুলো উল্লেখ করেছি?'' ''আমি কি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ব্যবহার করেছি?'' ''আমি কি কোনো তথ্য বিকৃত করেছি?'' ''আমি কি যথাযথ ভাষা ব্যবহার করেছি?'' ''আমি কি কেবল সত্য বলছি, কোনো 'ধাপ্পা' দিচ্ছি না?'' ''আমি কি বাস্তববাদী?'' ''আমি কি সময়োপযোগী?'' ''আমি কি সঠিক তথ্য দিয়েছি?'' ''আমি কি কাজের একটি সঠিক মূল্যায়ন ও ধারণা দিচ্ছি?'' == লেখক ও পাঠকের আন্তঃক্রিয়া == লেখক ও পাঠকের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া একটি বিশেষ ধরণের। প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেখালেখি একমুখী তথ্যপ্রবাহ। এজন্য, লেখকদের উচিত পাঠকের সমস্ত প্রয়োজন বিবেচনা ও অন্তর্ভুক্ত করা। প্রত্যেক পাঠক আলাদা, কিন্তু একজন দক্ষ লেখককে অনুমান করতে হবে কোন তথ্যটি শ্রোতার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হবে। তদ্ব্যতীত, বিশ্ব অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। কিছু পাঠক অন্যদের তুলনায় বেশি মুক্তমনা বা নির্ভার হতে পারে। এজন্য লেখকদের সচেতনভাবে লিখতে শিখতে হবে যাতে কোনো পাঠককে নিরুৎসাহিত বা অপমান করা না হয়। কোনো পাঠক যদি অপমানিত হন, তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত লেখকের পক্ষে আসার সম্ভাবনা কম। কার্যকর লেখালেখিতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা হয়। একই শব্দ থেকে ভিন্ন পাঠক ভিন্ন অর্থ অনুধাবন করতে পারে। অর্থ নির্ধারিত হতে পারে ব্যবহারকারীর পূর্ব অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি, বা এমনকি মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। প্রত্যেক পাঠকই লেখার প্রেক্ষাপট এবং তার পূর্ব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি অর্থ তৈরি করে। এই কারণেই একটি নথি লেখার সময় লেখককে অবশ্যই ভাবতে হবে তাদের পাঠক কারা এবং তাদের কী জানা দরকার। পাঠকেরা একটি নথি পড়ার সময় প্রতি মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যদি নথির শুরুতেই থাকে তাহলে তার প্রভাব সাধারণত বেশি হয়। এটি নিশ্চিত করে যে তথ্যটি দ্রুত পড়া হবে। অনেক পাঠক সম্পূর্ণ নথি পড়ে না, তাই "উল্টানো পিরামিড" রচনাশৈলী খুবই কার্যকর। এছাড়াও, গড়ে একজন ব্যবসায়িক পেশাজীবী বলে থাকেন তারা একটি রেজুমে পড়তে ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় ব্যয় করেন না, এবং একটি ব্যবসায়িক প্রস্তাবে ৫ মিনিটের বেশি নয়। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শুরুতেই রাখা বুদ্ধিমানের কাজ, এবং সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেষে। লেখককে শৈলীর ধারাবাহিকতাও নিশ্চিত করতে হবে। একটি দীর্ঘ প্রযুক্তিগত নথিতে কৌতুক ব্যবহারে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন; কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনার সময় সেই একই কৌতুক পাঠককে সহজেই আনন্দ দিতে পারে। পুনরায় বললে, প্রতিটি পাঠক একটি লেখার ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং এই প্রতিক্রিয়াগুলি নির্ভর করবে লেখার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে পাঠকের সাংস্কৃতিক লালনের উপর। ==মৌলিক পূর্বধারণা== কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আপনার থাকা যেকোনো পূর্বধারণা সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেই পূর্বধারণার উপর ভিত্তি করে কাজ করার আগে, শ্রোতা বা বিষয়ের পটভূমি ও অভিজ্ঞতা ভালোভাবে গবেষণা ও বোঝা উচিত। [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Assumptions|এই অংশে]] পেশাগত লেখালেখি সম্পর্কে পূর্বধারণাগুলি আলোচনা করা হয়েছে। ==বক্তৃতাশাস্ত্রভিত্তিক কাঠামো== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Rhetorical Framework|এই অংশে]] লেখক ও পাঠকের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে। লেখার সময় আপনার শ্রোতাকে বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বার্তা যদি সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হয়, তাহলে পাঠক তা শুনবে না বা বুঝবে না। লেখালেখি শুরুর সময়ই শ্রোতাকে বিবেচনায় নেওয়াই সর্বোত্তম। পাঠকের পটভূমি, অভিজ্ঞতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকা আপনাকে একটি সুগঠিত ও ভালোভাবে সংগঠিত নথি তৈরি করতে সাহায্য করবে। ==প্রযুক্তিগত যোগাযোগের শ্রোতাদের উপলব্ধি== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Audiences|এই অংশে]] পেশাগত লেখালেখিতে আপনি যেসব ধরণের শ্রোতার মুখোমুখি হতে পারেন তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট শ্রোতার জন্য নথি কীভাবে কাস্টমাইজ করবেন তা দেখানো হয়েছে। ==প্রযুক্তিগত যোগাযোগে বিষয়ের বিশেষ প্রকৃতি== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Subject|এই অংশে]] প্রযুক্তিগত ও পেশাগত লেখালেখির বিষয় এবং এটি কীভাবে একাডেমিক বা সামাজিক লেখালেখির ধরণের থেকে আলাদা তা আলোচনা করা হয়েছে। ==লেখকসুলভ কণ্ঠস্বর বিকাশ== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Author|এই অংশে]] কীভাবে আপনি আপনার লেখকসুলভ কণ্ঠস্বর বিকাশ করতে পারেন, বিশেষত কীভাবে শ্রোতার উপর ভিত্তি করে আপনার সুর পরিবর্তন করবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ==পাঠককে প্রভাবিত করা== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Purpose|এই অংশে]] কীভাবে পাঠককে প্রভাবিত করতে হয় এবং কোন মাত্রায় করতে হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রায় সব নথিই কিছুটা হলেও প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়। ==প্রযুক্তিগত তথ্য যোগাযোগের বহু প্রেক্ষাপট== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Context|এই অংশে]] পেশাগত পরিবেশে কীভাবে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা স্পষ্ট করা হয়েছে; এটি কেবল লেখালেখি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। {{chapter navigation|Introduction|Rhetoric/Assumptions}} [http://en.wikibooks.org/wiki/Technical_and_professional_writing প্রধান পাতা] {{BookCat}} j6hrfwf24xg7l24g1gl308aq2ewwsfa 85300 85299 2025-06-25T15:12:05Z Mehedi Abedin 7113 85300 wikitext text/x-wiki {{Navigate|Prev=পেশাদার লেখনী সম্বন্ধে|Next=নৈতিকতা}}{{TOCright}} = প্রযুক্তিগত ও পেশাগত লেখার অলঙ্কারশাস্ত্রভিত্তিক প্রকৃতি = কর্মক্ষেত্রে বহু ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে যোগাযোগ চর্চিত ও সম্পাদিত হয়। লক্ষ্য থাকে পাঠকের কাছে কার্যকরভাবে তথ্য পৌঁছে দেওয়া, তা সহকর্মী হোক কিংবা অফিসের উচ্চতর দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ। কর্মক্ষেত্রের লেখালেখি অন্যান্য প্রেক্ষাপটের লিখিত যোগাযোগের (যেমন: শিক্ষাবিষয়ক বা সামাজিক ক্ষেত্র) থেকে ভিন্ন। কর্মক্ষেত্রে লেখা একটি আইনি নথি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং প্রায়ই দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষিত হয়। ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা দেখা দিলে এই লেখাগুলো পুনরায় উল্লেখ করা হতে পারে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রের লেখা সাধারণ লেখার থেকে আলাদা, কারণ পাঠক সাধারণত বিনোদনের জন্য বা নিজে নিজে শেখার উদ্দেশ্যে এই নথি পড়ে না; এতে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ, প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য থাকা উচিত—অপ্রয়োজনীয় পুনরাবৃত্তি নয়। == পাঠক-কেন্দ্রিক লেখা == কর্মক্ষেত্রের লেখালেখি সবসময় পাঠককেন্দ্রিক হওয়া উচিত; পাঠকের কী জানা দরকার? লেখায় সঠিকভাবে সেই তথ্য তুলে ধরতে হবে যা পাঠক খুঁজছে। যদি লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে রাজি করানো হয় তাহলে লেখককে ভাবতে হবে কীভাবে পাঠক সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি ওয়ার্কটিম কারখানায় নতুন উৎপাদন যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করছে। কোম্পানির বিভিন্ন পাঠক এই প্রস্তাব থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য খুঁজবে। একটি ভালোভাবে লেখা নথি প্রতিটি সম্ভাব্য পাঠককে বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রত্যাশিত তথ্য সরবরাহ করবে। আপনার সমস্ত লেখার ক্ষেত্রে সবসময় পাঠকের কথা ভাবুন। প্রতিটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পাঠকের বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য, প্রত্যাশা, পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করুন যা তাদের প্রতিক্রিয়া গঠন করবে। এমনভাবে যোগাযোগ গড়ে তুলুন যা পাঠকের চোখে প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য। এ দুটি গুণই সফল কর্মক্ষেত্র-ভিত্তিক লেখার মূল চাবিকাঠি। পাঠক কীভাবে প্রতি মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া দেবে তা কল্পনা করে আপনার লেখা সাজান—এটাই পাঠককে সরাসরি প্রভাবিত করার একমাত্র সুযোগ। == কার্যকর কর্মক্ষেত্রের লেখা == কর্মক্ষেত্রের লেখালেখি এমন হতে হবে যা সব সম্ভাব্য পাঠকের কাছে প্রভাবশালী ও ব্যবহারযোগ্য। একটি নথি তখনই কার্যকর হবে যখন এটি নির্দিষ্ট পাঠকেত জন্য সহজবোধ্য হবে। তাই সরল বাক্য, শব্দ এবং কাঠামো ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে পাঠকেরা সহজে তা বুঝতে পারে। একটি জটিল বা দুর্বোধ্য লেখা কার্যকর নয়, কারণ পাঠক তখন সঠিকভাবে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে না। অত্যন্ত ব্যবহারযোগ্য লেখা পাঠকদের দ্রুত তথ্য খুঁজে পেতে, বুঝতে ও প্রয়োগ করতে সহায়তা করে যাতে তারা তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। এটি রেফারেন্স, নির্দেশিকা বা কোনো নির্দিষ্ট কাজের অগ্রগতি দেখানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রভাবশালী লেখালেখি পাঠককে বিশ্বাস করাতে হবে যে তথ্যটি সঠিক এবং তা অনুসরণযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, একজন পাঠক একাধিক প্রস্তাব বিবেচনা করছেন। যে প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী হবে, সেটিই সম্ভবত বেছে নেয়া হবে; তবে লেখাটি যদি প্রভাবশালী না হয়, তাহলে তা উপেক্ষিত হবে। ফলে লেখার পুরো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। তবে এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রভাবশালী হওয়া মানে '''অনৈতিক কাজ করা নয়'''। কেবল আপনার ডকুমেন্টকেই পছন্দনীয় করার জন্য কিছু লেখা উচিত নয়। সবসময় নৈতিক চর্চা অনুসরণ করতে হবে। নিজেকে কিছু নৈতিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন: ''আমি কি আমার উৎসগুলো উল্লেখ করেছি?'' ''আমি কি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ব্যবহার করেছি?'' ''আমি কি কোনো তথ্য বিকৃত করেছি?'' ''আমি কি যথাযথ ভাষা ব্যবহার করেছি?'' ''আমি কি কেবল সত্য বলছি, কোনো 'ধাপ্পা' দিচ্ছি না?'' ''আমি কি বাস্তববাদী?'' ''আমি কি সময়োপযোগী?'' ''আমি কি সঠিক তথ্য দিয়েছি?'' ''আমি কি কাজের একটি সঠিক মূল্যায়ন ও ধারণা দিচ্ছি?'' == লেখক ও পাঠকের আন্তঃক্রিয়া == লেখক ও পাঠকের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া একটি বিশেষ ধরণের। প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেখালেখি একমুখী তথ্যপ্রবাহ। এজন্য, লেখকদের উচিত পাঠকের সমস্ত প্রয়োজন বিবেচনা ও অন্তর্ভুক্ত করা। প্রত্যেক পাঠক আলাদা, কিন্তু একজন দক্ষ লেখককে অনুমান করতে হবে কোন তথ্যটি পাঠকের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হবে। তদ্ব্যতীত, বিশ্ব অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। কিছু পাঠক অন্যদের তুলনায় বেশি মুক্তমনা বা নির্ভার হতে পারে। এজন্য লেখকদের সচেতনভাবে লিখতে শিখতে হবে যাতে কোনো পাঠককে নিরুৎসাহিত বা অপমান করা না হয়। কোনো পাঠক যদি অপমানিত হন, তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত লেখকের পক্ষে আসার সম্ভাবনা কম। কার্যকর লেখালেখিতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা হয়। একই শব্দ থেকে ভিন্ন পাঠক ভিন্ন অর্থ অনুধাবন করতে পারে। অর্থ নির্ধারিত হতে পারে ব্যবহারকারীর পূর্ব অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি, বা এমনকি মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। প্রত্যেক পাঠকই লেখার প্রেক্ষাপট এবং তার পূর্ব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি অর্থ তৈরি করে। এই কারণেই একটি নথি লেখার সময় লেখককে অবশ্যই ভাবতে হবে তাদের পাঠক কারা এবং তাদের কী জানা দরকার। পাঠকেরা একটি নথি পড়ার সময় প্রতি মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যদি নথির শুরুতেই থাকে তাহলে তার প্রভাব সাধারণত বেশি হয়। এটি নিশ্চিত করে যে তথ্যটি দ্রুত পড়া হবে। অনেক পাঠক সম্পূর্ণ নথি পড়ে না, তাই "উল্টানো পিরামিড" রচনাশৈলী খুবই কার্যকর। এছাড়াও, গড়ে একজন ব্যবসায়িক পেশাজীবী বলে থাকেন তারা একটি রেজুমে পড়তে ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় ব্যয় করেন না, এবং একটি ব্যবসায়িক প্রস্তাবে ৫ মিনিটের বেশি নয়। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শুরুতেই রাখা বুদ্ধিমানের কাজ, এবং সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেষে। লেখককে শৈলীর ধারাবাহিকতাও নিশ্চিত করতে হবে। একটি দীর্ঘ প্রযুক্তিগত নথিতে কৌতুক ব্যবহারে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন; কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনার সময় সেই একই কৌতুক পাঠককে সহজেই আনন্দ দিতে পারে। পুনরায় বললে, প্রতিটি পাঠক একটি লেখার ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং এই প্রতিক্রিয়াগুলি নির্ভর করবে লেখার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে পাঠকের সাংস্কৃতিক লালনের উপর। ==মৌলিক পূর্বধারণা== কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আপনার থাকা যেকোনো পূর্বধারণা সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেই পূর্বধারণার উপর ভিত্তি করে কাজ করার আগে, পাঠক বা বিষয়ের পটভূমি ও অভিজ্ঞতা ভালোভাবে গবেষণা ও বোঝা উচিত। [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Assumptions|এই অংশে]] পেশাগত লেখালেখি সম্পর্কে পূর্বধারণাগুলি আলোচনা করা হয়েছে। ==বক্তৃতাশাস্ত্রভিত্তিক কাঠামো== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Rhetorical Framework|এই অংশে]] লেখক ও পাঠকের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে। লেখার সময় আপনার পাঠককে বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বার্তা যদি সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হয়, তাহলে পাঠক তা শুনবে না বা বুঝবে না। লেখালেখি শুরুর সময়ই পাঠককে বিবেচনায় নেওয়াই সর্বোত্তম। পাঠকের পটভূমি, অভিজ্ঞতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকা আপনাকে একটি সুগঠিত ও ভালোভাবে সংগঠিত নথি তৈরি করতে সাহায্য করবে। ==প্রযুক্তিগত যোগাযোগের পাঠকের উপলব্ধি== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Audiences|এই অংশে]] পেশাগত লেখালেখিতে আপনি যেসব ধরণের পাঠকের মুখোমুখি হতে পারেন তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট শ্রোতার জন্য নথি কীভাবে কাস্টমাইজ করবেন তা দেখানো হয়েছে। ==প্রযুক্তিগত যোগাযোগে বিষয়ের বিশেষ প্রকৃতি== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Subject|এই অংশে]] প্রযুক্তিগত ও পেশাগত লেখালেখির বিষয় এবং এটি কীভাবে একাডেমিক বা সামাজিক লেখালেখির ধরণের থেকে আলাদা তা আলোচনা করা হয়েছে। ==লেখকসুলভ কণ্ঠস্বর বিকাশ== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Author|এই অংশে]] কীভাবে আপনি আপনার লেখকসুলভ কণ্ঠস্বর বিকাশ করতে পারেন, বিশেষত কীভাবে পাঠকের উপর ভিত্তি করে আপনার সুর পরিবর্তন করবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ==পাঠককে প্রভাবিত করা== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Purpose|এই অংশে]] কীভাবে পাঠককে প্রভাবিত করতে হয় এবং কোন মাত্রায় করতে হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রায় সব নথিই কিছুটা হলেও প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়। ==প্রযুক্তিগত তথ্য যোগাযোগের বহু প্রেক্ষাপট== [[Professional and Technical Writing/Rhetoric/Context|এই অংশে]] পেশাগত পরিবেশে কীভাবে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা স্পষ্ট করা হয়েছে; এটি কেবল লেখালেখি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। {{chapter navigation|Introduction|Rhetoric/Assumptions}} [http://en.wikibooks.org/wiki/Technical_and_professional_writing প্রধান পাতা] {{BookCat}} efga5fmdbwo752tmf17m9rpc93qjeh8 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) 0 27197 85311 85223 2025-06-26T01:57:29Z Jonoikobangali 676 /* সূচিপত্র */ 85311 wikitext text/x-wiki {| cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="width:100%; border:solid #BBBBBB 5px; background:#EEEEEE" |- | style="vertical-align:center" | <div style="margin-left:15px;margin-right:15px"> {{book title|বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)}} এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সাধারণ পাঠকবর্গ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রকাশ করা। এই বইটিতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্বে আছে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় বাঙালির রচিত সাহিত্য ও চর্যাপদের বিবরণ। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রাক্‌-চৈতন্য যুগের কৃষ্ণকথা ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য, অনুবাদ কাব্য এবং মঙ্গলকাব্যের বিবরণ। তৃতীয় পর্বে চৈতন্য যুগে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চৈতন্যজীবনী কাব্যের বিবরণও। চতুর্থ পর্বে বর্ণিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও পদসংকলন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ কাব্য, শাক্ত পদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা এবং চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্যের বিবরণ। |} {| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE" |} ==সূচিপত্র== ===প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক=== # [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় রচিত বাঙালির সাহিত্য|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় রচিত বাঙালির সাহিত্য]] # [[/চর্যাপদ|চর্যাপদ]] ===ত্রয়োদশ শতক-পঞ্চদশ শতক=== # [[/বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন|বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]] # [[/শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা|শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ অনুবাদ # [[/কৃত্তিবাস ওঝা|কৃত্তিবাস ওঝা]] ; মহাভারত অনুবাদ # [[/কবীন্দ্র পরমেশ্বর|কবীন্দ্র পরমেশ্বর]] # [[/শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দী]] ; ভাগবত অনুবাদ # [[/মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়|মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল==== ; মনসামঙ্গল # [[/হরি দত্ত|হরি দত্ত]] # [[/নারায়ণ দেব|নারায়ণ দেব]] # [[/বিজয় গুপ্ত|বিজয় গুপ্ত]] # [[/বিপ্রদাস পিপলাই|বিপ্রদাস পিপলাই]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/মানিক দত্ত|মানিক দত্ত]] ====বৈষ্ণব পদাবলি: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস==== # [[/বিদ্যাপতি|বিদ্যাপতি]] # [[/চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাস]] ===ষোড়শ শতক থেকে মধ্য সপ্তদশ শতক=== ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, শিবায়ন ও কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর==== ; মনসামঙ্গল # [[/কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ|কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]] # [[/ দ্বিজ বংশীদাস|দ্বিজ বংশীদাস]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/দ্বিজ মাধব|দ্বিজ মাধব]] # [[/মুকুন্দ চক্রবর্তী|মুকুন্দ চক্রবর্তী]] # [[/দ্বিজ রামদেব|দ্বিজ রামদেব]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামাই পণ্ডিত|রামাই পণ্ডিত]] # [[/রূপরাম চক্রবর্তী|রূপরাম চক্রবর্তী]] # [[/খেলারাম চক্রবর্তী|খেলারাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামকৃষ্ণ রায়|রামকৃষ্ণ রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/দ্বিজ শ্রীধর|দ্বিজ শ্রীধর]] ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/মুরারি গুপ্ত|মুরারি গুপ্ত]] # [[/নরহরি সরকার|নরহরি সরকার]] # [[/শিবানন্দ সেন|শিবানন্দ সেন]] # [[/জ্ঞানদাস|জ্ঞানদাস]] # [[/গোবিন্দদাস|গোবিন্দদাস]] # [[/বাসুদেব ঘোষ|বাসুদেব ঘোষ]] # [[/রামানন্দ বসু|রামানন্দ বসু]] # [[/বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়|বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/যদুনন্দন দাস|যদুনন্দন দাস]] # [[/মাধবদাস|মাধবদাস]] # [[/অনন্ত দাস|অনন্ত দাস]] ====চরিতকাব্য==== # [[/বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত|বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত]] # [[/লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল|লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল|জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত|কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত]] # [[/গোবিন্দদাসের কড়চা|গোবিন্দদাসের কড়চা]] # [[/চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়|চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/অদ্ভুতাচার্য|অদ্ভুতাচার্য]] # [[/চন্দ্রাবতী|চন্দ্রাবতী]] ; মহাভারত # [[/কাশীরাম দাস|কাশীরাম দাস]] ; ভাগবত # [[রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী|রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী]] # [[/মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল|মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল]] # [[/দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল|দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল]] ===মধ্য সপ্তদশ শতক—অষ্টাদশ শতক=== ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/প্রেমদাস|প্রেমদাস]] # [[/রাধামোহন ঠাকুর|রাধামোহন ঠাকুর]] # [[/চন্দ্রশেখর|চন্দ্রশেখর]] =====বৈষ্ণব পদসংকলন===== # [[/ক্ষণদাগীতচিন্তামণি|ক্ষণদাগীতচিন্তামণি]] # [[/গীতচন্দ্রোদয়|গীতচন্দ্রোদয়]] # [[/গৌরচরিতচিন্তামণি|গৌরচরিতচিন্তামণি]] # [[/পদামৃতসমুদ্র|পদামৃতসমুদ্র]] # [[/পদকল্পতরু|পদকল্পতরু]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর ও শিবায়ন==== ; মনসামঙ্গল # [[/তন্ত্রবিভূতি|তন্ত্রবিভূতি]] # [[/জগজ্জীবন ঘোষাল|জগজ্জীবন ঘোষাল]] # [[/জীবন মৈত্র|জীবন মৈত্র]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামদাস আদক|রামদাস আদক]] # [[/সীতারাম দাস|সীতারাম দাস]] # [[/যাদুনাথ বা যাদবনাথ|যাদুনাথ বা যাদবনাথ]] # [[/শ্রীশ্যাম পণ্ডিত|শ্রীশ্যাম পণ্ডিত]] # [[/ঘনরাম চক্রবর্তী|ঘনরাম চক্রবর্তী]] # [[/মানিক গাঙ্গুলী|মানিক গাঙ্গুলী]] ; অন্নদামঙ্গল # [[/ভারতচন্দ্র রায়|ভারতচন্দ্র রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/কৃষ্ণরাম দাস|কৃষ্ণরাম দাস]] # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/বলরাম চক্রবর্তী|বলরাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামেশ্বর ভট্টাচার্য|রামেশ্বর ভট্টাচার্য]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/জগৎরাম রায়|জগৎরাম রায়]] # [[/রামানন্দ ঘোষ|রামানন্দ ঘোষ]] ; মহাভারত # [[/দ্বৈপায়ন দাস|দ্বৈপায়ন দাস]] # [[/নন্দরাম দাস|নন্দরাম দাস]] # [[/গঙ্গাদাস সেন|গঙ্গাদাস সেন]] ; ভাগবত # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/দ্বিজ মাধবেন্দ্র|দ্বিজ মাধবেন্দ্র]] # [[/দ্বিজ রমানাথ|দ্বিজ রমানাথ]] ====শাক্ত পদাবলি==== # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/কললাকান্ত ভট্টাচার্য|কমলাকান্ত ভট্টাচার্য]] # [[/অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা|অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা]] ====নাথ সাহিত্য==== # [[/নাথ সাহিত্য|নাথ সাহিত্য]] ====ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা==== # [[/ময়মনসিংহ গীতিকা|ময়মনসিংহ গীতিকা]] # [[/পূর্ববঙ্গ গীতিকা|পূর্ববঙ্গ গীতিকা]] ====চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য==== # [[/চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য|চট্টগ্রাম রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|ব}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} bmv9g7ux9wl5pvzxu2okqk7hopeizre 85312 85311 2025-06-26T01:58:06Z Jonoikobangali 676 /* প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক */ 85312 wikitext text/x-wiki {| cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="width:100%; border:solid #BBBBBB 5px; background:#EEEEEE" |- | style="vertical-align:center" | <div style="margin-left:15px;margin-right:15px"> {{book title|বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)}} এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সাধারণ পাঠকবর্গ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রকাশ করা। এই বইটিতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্বে আছে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় বাঙালির রচিত সাহিত্য ও চর্যাপদের বিবরণ। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রাক্‌-চৈতন্য যুগের কৃষ্ণকথা ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য, অনুবাদ কাব্য এবং মঙ্গলকাব্যের বিবরণ। তৃতীয় পর্বে চৈতন্য যুগে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চৈতন্যজীবনী কাব্যের বিবরণও। চতুর্থ পর্বে বর্ণিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও পদসংকলন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ কাব্য, শাক্ত পদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা এবং চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্যের বিবরণ। |} {| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE" |} ==সূচিপত্র== ===প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক=== # [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য]] # [[/চর্যাপদ|চর্যাপদ]] ===ত্রয়োদশ শতক-পঞ্চদশ শতক=== # [[/বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন|বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]] # [[/শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা|শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ অনুবাদ # [[/কৃত্তিবাস ওঝা|কৃত্তিবাস ওঝা]] ; মহাভারত অনুবাদ # [[/কবীন্দ্র পরমেশ্বর|কবীন্দ্র পরমেশ্বর]] # [[/শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দী]] ; ভাগবত অনুবাদ # [[/মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়|মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল==== ; মনসামঙ্গল # [[/হরি দত্ত|হরি দত্ত]] # [[/নারায়ণ দেব|নারায়ণ দেব]] # [[/বিজয় গুপ্ত|বিজয় গুপ্ত]] # [[/বিপ্রদাস পিপলাই|বিপ্রদাস পিপলাই]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/মানিক দত্ত|মানিক দত্ত]] ====বৈষ্ণব পদাবলি: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস==== # [[/বিদ্যাপতি|বিদ্যাপতি]] # [[/চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাস]] ===ষোড়শ শতক থেকে মধ্য সপ্তদশ শতক=== ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, শিবায়ন ও কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর==== ; মনসামঙ্গল # [[/কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ|কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]] # [[/ দ্বিজ বংশীদাস|দ্বিজ বংশীদাস]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/দ্বিজ মাধব|দ্বিজ মাধব]] # [[/মুকুন্দ চক্রবর্তী|মুকুন্দ চক্রবর্তী]] # [[/দ্বিজ রামদেব|দ্বিজ রামদেব]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামাই পণ্ডিত|রামাই পণ্ডিত]] # [[/রূপরাম চক্রবর্তী|রূপরাম চক্রবর্তী]] # [[/খেলারাম চক্রবর্তী|খেলারাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামকৃষ্ণ রায়|রামকৃষ্ণ রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/দ্বিজ শ্রীধর|দ্বিজ শ্রীধর]] ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/মুরারি গুপ্ত|মুরারি গুপ্ত]] # [[/নরহরি সরকার|নরহরি সরকার]] # [[/শিবানন্দ সেন|শিবানন্দ সেন]] # [[/জ্ঞানদাস|জ্ঞানদাস]] # [[/গোবিন্দদাস|গোবিন্দদাস]] # [[/বাসুদেব ঘোষ|বাসুদেব ঘোষ]] # [[/রামানন্দ বসু|রামানন্দ বসু]] # [[/বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়|বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/যদুনন্দন দাস|যদুনন্দন দাস]] # [[/মাধবদাস|মাধবদাস]] # [[/অনন্ত দাস|অনন্ত দাস]] ====চরিতকাব্য==== # [[/বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত|বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত]] # [[/লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল|লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল|জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত|কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত]] # [[/গোবিন্দদাসের কড়চা|গোবিন্দদাসের কড়চা]] # [[/চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়|চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/অদ্ভুতাচার্য|অদ্ভুতাচার্য]] # [[/চন্দ্রাবতী|চন্দ্রাবতী]] ; মহাভারত # [[/কাশীরাম দাস|কাশীরাম দাস]] ; ভাগবত # [[রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী|রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী]] # [[/মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল|মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল]] # [[/দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল|দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল]] ===মধ্য সপ্তদশ শতক—অষ্টাদশ শতক=== ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/প্রেমদাস|প্রেমদাস]] # [[/রাধামোহন ঠাকুর|রাধামোহন ঠাকুর]] # [[/চন্দ্রশেখর|চন্দ্রশেখর]] =====বৈষ্ণব পদসংকলন===== # [[/ক্ষণদাগীতচিন্তামণি|ক্ষণদাগীতচিন্তামণি]] # [[/গীতচন্দ্রোদয়|গীতচন্দ্রোদয়]] # [[/গৌরচরিতচিন্তামণি|গৌরচরিতচিন্তামণি]] # [[/পদামৃতসমুদ্র|পদামৃতসমুদ্র]] # [[/পদকল্পতরু|পদকল্পতরু]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর ও শিবায়ন==== ; মনসামঙ্গল # [[/তন্ত্রবিভূতি|তন্ত্রবিভূতি]] # [[/জগজ্জীবন ঘোষাল|জগজ্জীবন ঘোষাল]] # [[/জীবন মৈত্র|জীবন মৈত্র]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামদাস আদক|রামদাস আদক]] # [[/সীতারাম দাস|সীতারাম দাস]] # [[/যাদুনাথ বা যাদবনাথ|যাদুনাথ বা যাদবনাথ]] # [[/শ্রীশ্যাম পণ্ডিত|শ্রীশ্যাম পণ্ডিত]] # [[/ঘনরাম চক্রবর্তী|ঘনরাম চক্রবর্তী]] # [[/মানিক গাঙ্গুলী|মানিক গাঙ্গুলী]] ; অন্নদামঙ্গল # [[/ভারতচন্দ্র রায়|ভারতচন্দ্র রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/কৃষ্ণরাম দাস|কৃষ্ণরাম দাস]] # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/বলরাম চক্রবর্তী|বলরাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামেশ্বর ভট্টাচার্য|রামেশ্বর ভট্টাচার্য]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/জগৎরাম রায়|জগৎরাম রায়]] # [[/রামানন্দ ঘোষ|রামানন্দ ঘোষ]] ; মহাভারত # [[/দ্বৈপায়ন দাস|দ্বৈপায়ন দাস]] # [[/নন্দরাম দাস|নন্দরাম দাস]] # [[/গঙ্গাদাস সেন|গঙ্গাদাস সেন]] ; ভাগবত # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/দ্বিজ মাধবেন্দ্র|দ্বিজ মাধবেন্দ্র]] # [[/দ্বিজ রমানাথ|দ্বিজ রমানাথ]] ====শাক্ত পদাবলি==== # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/কললাকান্ত ভট্টাচার্য|কমলাকান্ত ভট্টাচার্য]] # [[/অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা|অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা]] ====নাথ সাহিত্য==== # [[/নাথ সাহিত্য|নাথ সাহিত্য]] ====ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা==== # [[/ময়মনসিংহ গীতিকা|ময়মনসিংহ গীতিকা]] # [[/পূর্ববঙ্গ গীতিকা|পূর্ববঙ্গ গীতিকা]] ====চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য==== # [[/চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য|চট্টগ্রাম রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|ব}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} iyc2c6tew0loln16cld6kgllih83wqj 85315 85312 2025-06-26T02:05:28Z Jonoikobangali 676 /* প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক */ 85315 wikitext text/x-wiki {| cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="width:100%; border:solid #BBBBBB 5px; background:#EEEEEE" |- | style="vertical-align:center" | <div style="margin-left:15px;margin-right:15px"> {{book title|বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)}} এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সাধারণ পাঠকবর্গ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রকাশ করা। এই বইটিতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্বে আছে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় বাঙালির রচিত সাহিত্য ও চর্যাপদের বিবরণ। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রাক্‌-চৈতন্য যুগের কৃষ্ণকথা ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য, অনুবাদ কাব্য এবং মঙ্গলকাব্যের বিবরণ। তৃতীয় পর্বে চৈতন্য যুগে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চৈতন্যজীবনী কাব্যের বিবরণও। চতুর্থ পর্বে বর্ণিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও পদসংকলন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ কাব্য, শাক্ত পদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা এবং চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্যের বিবরণ। |} {| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE" |} ==সূচিপত্র== ===প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক=== # [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা]] # [[/চর্যাপদ|চর্যাপদ]] ===ত্রয়োদশ শতক-পঞ্চদশ শতক=== # [[/বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন|বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]] # [[/শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা|শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ অনুবাদ # [[/কৃত্তিবাস ওঝা|কৃত্তিবাস ওঝা]] ; মহাভারত অনুবাদ # [[/কবীন্দ্র পরমেশ্বর|কবীন্দ্র পরমেশ্বর]] # [[/শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দী]] ; ভাগবত অনুবাদ # [[/মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়|মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল==== ; মনসামঙ্গল # [[/হরি দত্ত|হরি দত্ত]] # [[/নারায়ণ দেব|নারায়ণ দেব]] # [[/বিজয় গুপ্ত|বিজয় গুপ্ত]] # [[/বিপ্রদাস পিপলাই|বিপ্রদাস পিপলাই]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/মানিক দত্ত|মানিক দত্ত]] ====বৈষ্ণব পদাবলি: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস==== # [[/বিদ্যাপতি|বিদ্যাপতি]] # [[/চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাস]] ===ষোড়শ শতক থেকে মধ্য সপ্তদশ শতক=== ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, শিবায়ন ও কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর==== ; মনসামঙ্গল # [[/কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ|কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]] # [[/ দ্বিজ বংশীদাস|দ্বিজ বংশীদাস]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/দ্বিজ মাধব|দ্বিজ মাধব]] # [[/মুকুন্দ চক্রবর্তী|মুকুন্দ চক্রবর্তী]] # [[/দ্বিজ রামদেব|দ্বিজ রামদেব]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামাই পণ্ডিত|রামাই পণ্ডিত]] # [[/রূপরাম চক্রবর্তী|রূপরাম চক্রবর্তী]] # [[/খেলারাম চক্রবর্তী|খেলারাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামকৃষ্ণ রায়|রামকৃষ্ণ রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/দ্বিজ শ্রীধর|দ্বিজ শ্রীধর]] ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/মুরারি গুপ্ত|মুরারি গুপ্ত]] # [[/নরহরি সরকার|নরহরি সরকার]] # [[/শিবানন্দ সেন|শিবানন্দ সেন]] # [[/জ্ঞানদাস|জ্ঞানদাস]] # [[/গোবিন্দদাস|গোবিন্দদাস]] # [[/বাসুদেব ঘোষ|বাসুদেব ঘোষ]] # [[/রামানন্দ বসু|রামানন্দ বসু]] # [[/বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়|বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/যদুনন্দন দাস|যদুনন্দন দাস]] # [[/মাধবদাস|মাধবদাস]] # [[/অনন্ত দাস|অনন্ত দাস]] ====চরিতকাব্য==== # [[/বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত|বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত]] # [[/লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল|লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল|জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত|কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত]] # [[/গোবিন্দদাসের কড়চা|গোবিন্দদাসের কড়চা]] # [[/চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়|চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/অদ্ভুতাচার্য|অদ্ভুতাচার্য]] # [[/চন্দ্রাবতী|চন্দ্রাবতী]] ; মহাভারত # [[/কাশীরাম দাস|কাশীরাম দাস]] ; ভাগবত # [[রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী|রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী]] # [[/মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল|মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল]] # [[/দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল|দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল]] ===মধ্য সপ্তদশ শতক—অষ্টাদশ শতক=== ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/প্রেমদাস|প্রেমদাস]] # [[/রাধামোহন ঠাকুর|রাধামোহন ঠাকুর]] # [[/চন্দ্রশেখর|চন্দ্রশেখর]] =====বৈষ্ণব পদসংকলন===== # [[/ক্ষণদাগীতচিন্তামণি|ক্ষণদাগীতচিন্তামণি]] # [[/গীতচন্দ্রোদয়|গীতচন্দ্রোদয়]] # [[/গৌরচরিতচিন্তামণি|গৌরচরিতচিন্তামণি]] # [[/পদামৃতসমুদ্র|পদামৃতসমুদ্র]] # [[/পদকল্পতরু|পদকল্পতরু]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর ও শিবায়ন==== ; মনসামঙ্গল # [[/তন্ত্রবিভূতি|তন্ত্রবিভূতি]] # [[/জগজ্জীবন ঘোষাল|জগজ্জীবন ঘোষাল]] # [[/জীবন মৈত্র|জীবন মৈত্র]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামদাস আদক|রামদাস আদক]] # [[/সীতারাম দাস|সীতারাম দাস]] # [[/যাদুনাথ বা যাদবনাথ|যাদুনাথ বা যাদবনাথ]] # [[/শ্রীশ্যাম পণ্ডিত|শ্রীশ্যাম পণ্ডিত]] # [[/ঘনরাম চক্রবর্তী|ঘনরাম চক্রবর্তী]] # [[/মানিক গাঙ্গুলী|মানিক গাঙ্গুলী]] ; অন্নদামঙ্গল # [[/ভারতচন্দ্র রায়|ভারতচন্দ্র রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/কৃষ্ণরাম দাস|কৃষ্ণরাম দাস]] # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/বলরাম চক্রবর্তী|বলরাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামেশ্বর ভট্টাচার্য|রামেশ্বর ভট্টাচার্য]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/জগৎরাম রায়|জগৎরাম রায়]] # [[/রামানন্দ ঘোষ|রামানন্দ ঘোষ]] ; মহাভারত # [[/দ্বৈপায়ন দাস|দ্বৈপায়ন দাস]] # [[/নন্দরাম দাস|নন্দরাম দাস]] # [[/গঙ্গাদাস সেন|গঙ্গাদাস সেন]] ; ভাগবত # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/দ্বিজ মাধবেন্দ্র|দ্বিজ মাধবেন্দ্র]] # [[/দ্বিজ রমানাথ|দ্বিজ রমানাথ]] ====শাক্ত পদাবলি==== # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/কললাকান্ত ভট্টাচার্য|কমলাকান্ত ভট্টাচার্য]] # [[/অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা|অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা]] ====নাথ সাহিত্য==== # [[/নাথ সাহিত্য|নাথ সাহিত্য]] ====ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা==== # [[/ময়মনসিংহ গীতিকা|ময়মনসিংহ গীতিকা]] # [[/পূর্ববঙ্গ গীতিকা|পূর্ববঙ্গ গীতিকা]] ====চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য==== # [[/চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য|চট্টগ্রাম রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|ব}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} mnvezfb9cn6009kx3an3rpt31bqjtvb 85322 85315 2025-06-26T03:41:28Z Jonoikobangali 676 /* প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক */ 85322 wikitext text/x-wiki {| cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="width:100%; border:solid #BBBBBB 5px; background:#EEEEEE" |- | style="vertical-align:center" | <div style="margin-left:15px;margin-right:15px"> {{book title|বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)}} এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সাধারণ পাঠকবর্গ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রকাশ করা। এই বইটিতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্বে আছে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় বাঙালির রচিত সাহিত্য ও চর্যাপদের বিবরণ। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রাক্‌-চৈতন্য যুগের কৃষ্ণকথা ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য, অনুবাদ কাব্য এবং মঙ্গলকাব্যের বিবরণ। তৃতীয় পর্বে চৈতন্য যুগে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চৈতন্যজীবনী কাব্যের বিবরণও। চতুর্থ পর্বে বর্ণিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও পদসংকলন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ কাব্য, শাক্ত পদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা এবং চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্যের বিবরণ। |} {| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE" |} ==সূচিপত্র== ===প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক=== # [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য|বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য]] # [[/চর্যাপদ|চর্যাপদ]] ===ত্রয়োদশ শতক-পঞ্চদশ শতক=== # [[/বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন|বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]] # [[/শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা|শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ অনুবাদ # [[/কৃত্তিবাস ওঝা|কৃত্তিবাস ওঝা]] ; মহাভারত অনুবাদ # [[/কবীন্দ্র পরমেশ্বর|কবীন্দ্র পরমেশ্বর]] # [[/শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দী]] ; ভাগবত অনুবাদ # [[/মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়|মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল==== ; মনসামঙ্গল # [[/হরি দত্ত|হরি দত্ত]] # [[/নারায়ণ দেব|নারায়ণ দেব]] # [[/বিজয় গুপ্ত|বিজয় গুপ্ত]] # [[/বিপ্রদাস পিপলাই|বিপ্রদাস পিপলাই]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/মানিক দত্ত|মানিক দত্ত]] ====বৈষ্ণব পদাবলি: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস==== # [[/বিদ্যাপতি|বিদ্যাপতি]] # [[/চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাস]] ===ষোড়শ শতক থেকে মধ্য সপ্তদশ শতক=== ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, শিবায়ন ও কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর==== ; মনসামঙ্গল # [[/কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ|কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]] # [[/ দ্বিজ বংশীদাস|দ্বিজ বংশীদাস]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/দ্বিজ মাধব|দ্বিজ মাধব]] # [[/মুকুন্দ চক্রবর্তী|মুকুন্দ চক্রবর্তী]] # [[/দ্বিজ রামদেব|দ্বিজ রামদেব]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামাই পণ্ডিত|রামাই পণ্ডিত]] # [[/রূপরাম চক্রবর্তী|রূপরাম চক্রবর্তী]] # [[/খেলারাম চক্রবর্তী|খেলারাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামকৃষ্ণ রায়|রামকৃষ্ণ রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/দ্বিজ শ্রীধর|দ্বিজ শ্রীধর]] ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/মুরারি গুপ্ত|মুরারি গুপ্ত]] # [[/নরহরি সরকার|নরহরি সরকার]] # [[/শিবানন্দ সেন|শিবানন্দ সেন]] # [[/জ্ঞানদাস|জ্ঞানদাস]] # [[/গোবিন্দদাস|গোবিন্দদাস]] # [[/বাসুদেব ঘোষ|বাসুদেব ঘোষ]] # [[/রামানন্দ বসু|রামানন্দ বসু]] # [[/বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়|বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/যদুনন্দন দাস|যদুনন্দন দাস]] # [[/মাধবদাস|মাধবদাস]] # [[/অনন্ত দাস|অনন্ত দাস]] ====চরিতকাব্য==== # [[/বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত|বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত]] # [[/লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল|লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল|জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত|কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত]] # [[/গোবিন্দদাসের কড়চা|গোবিন্দদাসের কড়চা]] # [[/চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়|চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/অদ্ভুতাচার্য|অদ্ভুতাচার্য]] # [[/চন্দ্রাবতী|চন্দ্রাবতী]] ; মহাভারত # [[/কাশীরাম দাস|কাশীরাম দাস]] ; ভাগবত # [[রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী|রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী]] # [[/মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল|মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল]] # [[/দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল|দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল]] ===মধ্য সপ্তদশ শতক—অষ্টাদশ শতক=== ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/প্রেমদাস|প্রেমদাস]] # [[/রাধামোহন ঠাকুর|রাধামোহন ঠাকুর]] # [[/চন্দ্রশেখর|চন্দ্রশেখর]] =====বৈষ্ণব পদসংকলন===== # [[/ক্ষণদাগীতচিন্তামণি|ক্ষণদাগীতচিন্তামণি]] # [[/গীতচন্দ্রোদয়|গীতচন্দ্রোদয়]] # [[/গৌরচরিতচিন্তামণি|গৌরচরিতচিন্তামণি]] # [[/পদামৃতসমুদ্র|পদামৃতসমুদ্র]] # [[/পদকল্পতরু|পদকল্পতরু]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর ও শিবায়ন==== ; মনসামঙ্গল # [[/তন্ত্রবিভূতি|তন্ত্রবিভূতি]] # [[/জগজ্জীবন ঘোষাল|জগজ্জীবন ঘোষাল]] # [[/জীবন মৈত্র|জীবন মৈত্র]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামদাস আদক|রামদাস আদক]] # [[/সীতারাম দাস|সীতারাম দাস]] # [[/যাদুনাথ বা যাদবনাথ|যাদুনাথ বা যাদবনাথ]] # [[/শ্রীশ্যাম পণ্ডিত|শ্রীশ্যাম পণ্ডিত]] # [[/ঘনরাম চক্রবর্তী|ঘনরাম চক্রবর্তী]] # [[/মানিক গাঙ্গুলী|মানিক গাঙ্গুলী]] ; অন্নদামঙ্গল # [[/ভারতচন্দ্র রায়|ভারতচন্দ্র রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/কৃষ্ণরাম দাস|কৃষ্ণরাম দাস]] # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/বলরাম চক্রবর্তী|বলরাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামেশ্বর ভট্টাচার্য|রামেশ্বর ভট্টাচার্য]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/জগৎরাম রায়|জগৎরাম রায়]] # [[/রামানন্দ ঘোষ|রামানন্দ ঘোষ]] ; মহাভারত # [[/দ্বৈপায়ন দাস|দ্বৈপায়ন দাস]] # [[/নন্দরাম দাস|নন্দরাম দাস]] # [[/গঙ্গাদাস সেন|গঙ্গাদাস সেন]] ; ভাগবত # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/দ্বিজ মাধবেন্দ্র|দ্বিজ মাধবেন্দ্র]] # [[/দ্বিজ রমানাথ|দ্বিজ রমানাথ]] ====শাক্ত পদাবলি==== # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/কললাকান্ত ভট্টাচার্য|কমলাকান্ত ভট্টাচার্য]] # [[/অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা|অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা]] ====নাথ সাহিত্য==== # [[/নাথ সাহিত্য|নাথ সাহিত্য]] ====ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা==== # [[/ময়মনসিংহ গীতিকা|ময়মনসিংহ গীতিকা]] # [[/পূর্ববঙ্গ গীতিকা|পূর্ববঙ্গ গীতিকা]] ====চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য==== # [[/চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য|চট্টগ্রাম রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|ব}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} gsxa8yvz7nsnibcfheun8uflk2af0w7 85328 85322 2025-06-26T03:55:13Z Jonoikobangali 676 /* প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক */ 85328 wikitext text/x-wiki {| cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="width:100%; border:solid #BBBBBB 5px; background:#EEEEEE" |- | style="vertical-align:center" | <div style="margin-left:15px;margin-right:15px"> {{book title|বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)}} এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সাধারণ পাঠকবর্গ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রকাশ করা। এই বইটিতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্বে আছে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় বাঙালির রচিত সাহিত্য ও চর্যাপদের বিবরণ। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রাক্‌-চৈতন্য যুগের কৃষ্ণকথা ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য, অনুবাদ কাব্য এবং মঙ্গলকাব্যের বিবরণ। তৃতীয় পর্বে চৈতন্য যুগে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চৈতন্যজীবনী কাব্যের বিবরণও। চতুর্থ পর্বে বর্ণিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও পদসংকলন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ কাব্য, শাক্ত পদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা এবং চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্যের বিবরণ। |} {| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE" |} ==সূচিপত্র== ===প্রাচীন যুগ: দশম শতক—দ্বাদশ শতক=== # [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য|বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য|বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও অপভ্রংশ সাহিত্য|বাঙালি ও অপভ্রংশ সাহিত্য]] # [[/চর্যাপদ|চর্যাপদ]] ===ত্রয়োদশ শতক-পঞ্চদশ শতক=== # [[/বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন|বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]] # [[/শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা|শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ অনুবাদ # [[/কৃত্তিবাস ওঝা|কৃত্তিবাস ওঝা]] ; মহাভারত অনুবাদ # [[/কবীন্দ্র পরমেশ্বর|কবীন্দ্র পরমেশ্বর]] # [[/শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দী]] ; ভাগবত অনুবাদ # [[/মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়|মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল==== ; মনসামঙ্গল # [[/হরি দত্ত|হরি দত্ত]] # [[/নারায়ণ দেব|নারায়ণ দেব]] # [[/বিজয় গুপ্ত|বিজয় গুপ্ত]] # [[/বিপ্রদাস পিপলাই|বিপ্রদাস পিপলাই]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/মানিক দত্ত|মানিক দত্ত]] ====বৈষ্ণব পদাবলি: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস==== # [[/বিদ্যাপতি|বিদ্যাপতি]] # [[/চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাস]] ===ষোড়শ শতক থেকে মধ্য সপ্তদশ শতক=== ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, শিবায়ন ও কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর==== ; মনসামঙ্গল # [[/কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ|কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]] # [[/ দ্বিজ বংশীদাস|দ্বিজ বংশীদাস]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/দ্বিজ মাধব|দ্বিজ মাধব]] # [[/মুকুন্দ চক্রবর্তী|মুকুন্দ চক্রবর্তী]] # [[/দ্বিজ রামদেব|দ্বিজ রামদেব]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামাই পণ্ডিত|রামাই পণ্ডিত]] # [[/রূপরাম চক্রবর্তী|রূপরাম চক্রবর্তী]] # [[/খেলারাম চক্রবর্তী|খেলারাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামকৃষ্ণ রায়|রামকৃষ্ণ রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/দ্বিজ শ্রীধর|দ্বিজ শ্রীধর]] ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/মুরারি গুপ্ত|মুরারি গুপ্ত]] # [[/নরহরি সরকার|নরহরি সরকার]] # [[/শিবানন্দ সেন|শিবানন্দ সেন]] # [[/জ্ঞানদাস|জ্ঞানদাস]] # [[/গোবিন্দদাস|গোবিন্দদাস]] # [[/বাসুদেব ঘোষ|বাসুদেব ঘোষ]] # [[/রামানন্দ বসু|রামানন্দ বসু]] # [[/বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়|বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/যদুনন্দন দাস|যদুনন্দন দাস]] # [[/মাধবদাস|মাধবদাস]] # [[/অনন্ত দাস|অনন্ত দাস]] ====চরিতকাব্য==== # [[/বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত|বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত]] # [[/লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল|লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল|জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত|কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত]] # [[/গোবিন্দদাসের কড়চা|গোবিন্দদাসের কড়চা]] # [[/চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়|চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/অদ্ভুতাচার্য|অদ্ভুতাচার্য]] # [[/চন্দ্রাবতী|চন্দ্রাবতী]] ; মহাভারত # [[/কাশীরাম দাস|কাশীরাম দাস]] ; ভাগবত # [[রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী|রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী]] # [[/মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল|মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল]] # [[/দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল|দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল]] ===মধ্য সপ্তদশ শতক—অষ্টাদশ শতক=== ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/প্রেমদাস|প্রেমদাস]] # [[/রাধামোহন ঠাকুর|রাধামোহন ঠাকুর]] # [[/চন্দ্রশেখর|চন্দ্রশেখর]] =====বৈষ্ণব পদসংকলন===== # [[/ক্ষণদাগীতচিন্তামণি|ক্ষণদাগীতচিন্তামণি]] # [[/গীতচন্দ্রোদয়|গীতচন্দ্রোদয়]] # [[/গৌরচরিতচিন্তামণি|গৌরচরিতচিন্তামণি]] # [[/পদামৃতসমুদ্র|পদামৃতসমুদ্র]] # [[/পদকল্পতরু|পদকল্পতরু]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর ও শিবায়ন==== ; মনসামঙ্গল # [[/তন্ত্রবিভূতি|তন্ত্রবিভূতি]] # [[/জগজ্জীবন ঘোষাল|জগজ্জীবন ঘোষাল]] # [[/জীবন মৈত্র|জীবন মৈত্র]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামদাস আদক|রামদাস আদক]] # [[/সীতারাম দাস|সীতারাম দাস]] # [[/যাদুনাথ বা যাদবনাথ|যাদুনাথ বা যাদবনাথ]] # [[/শ্রীশ্যাম পণ্ডিত|শ্রীশ্যাম পণ্ডিত]] # [[/ঘনরাম চক্রবর্তী|ঘনরাম চক্রবর্তী]] # [[/মানিক গাঙ্গুলী|মানিক গাঙ্গুলী]] ; অন্নদামঙ্গল # [[/ভারতচন্দ্র রায়|ভারতচন্দ্র রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/কৃষ্ণরাম দাস|কৃষ্ণরাম দাস]] # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/বলরাম চক্রবর্তী|বলরাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামেশ্বর ভট্টাচার্য|রামেশ্বর ভট্টাচার্য]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/জগৎরাম রায়|জগৎরাম রায়]] # [[/রামানন্দ ঘোষ|রামানন্দ ঘোষ]] ; মহাভারত # [[/দ্বৈপায়ন দাস|দ্বৈপায়ন দাস]] # [[/নন্দরাম দাস|নন্দরাম দাস]] # [[/গঙ্গাদাস সেন|গঙ্গাদাস সেন]] ; ভাগবত # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/দ্বিজ মাধবেন্দ্র|দ্বিজ মাধবেন্দ্র]] # [[/দ্বিজ রমানাথ|দ্বিজ রমানাথ]] ====শাক্ত পদাবলি==== # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/কললাকান্ত ভট্টাচার্য|কমলাকান্ত ভট্টাচার্য]] # [[/অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা|অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা]] ====নাথ সাহিত্য==== # [[/নাথ সাহিত্য|নাথ সাহিত্য]] ====ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা==== # [[/ময়মনসিংহ গীতিকা|ময়মনসিংহ গীতিকা]] # [[/পূর্ববঙ্গ গীতিকা|পূর্ববঙ্গ গীতিকা]] ====চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য==== # [[/চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য|চট্টগ্রাম রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|ব}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} qesyps3g8speroei30tjkcqcjcy4mw6 85329 85328 2025-06-26T04:02:05Z Jonoikobangali 676 85329 wikitext text/x-wiki {| cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="width:100%; border:solid #BBBBBB 5px; background:#EEEEEE" |- | style="vertical-align:center" | <div style="margin-left:15px;margin-right:15px"> {{book title|বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)}} এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সাধারণ পাঠকবর্গ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রকাশ করা। এই বইটিতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্বে আছে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় বাঙালির রচিত সাহিত্য ও চর্যাপদের বিবরণ। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রাক্‌-চৈতন্য যুগের কৃষ্ণকথা ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য, অনুবাদ কাব্য এবং মঙ্গলকাব্যের বিবরণ। তৃতীয় পর্বে চৈতন্য যুগে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চৈতন্যজীবনী কাব্যের বিবরণও। চতুর্থ পর্বে বর্ণিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও পদসংকলন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ কাব্য, শাক্ত পদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা এবং চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্যের বিবরণ। |} {| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE" |} {| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE" <!-- ### পর্ব ১ ### --> |- | style="vertical-align:top;text-align:center" | <div style="margin-top:10px"></div> | style="vertical-align:top" | <div style="margin-right:15px"><big>'''পর্ব ১''' – প্রাচীন যুগ: দশম-দ্বাদশ শতক</big> # [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য|বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য|বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য]] ## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও অপভ্রংশ সাহিত্য|বাঙালি ও অপভ্রংশ সাহিত্য]] # [[/চর্যাপদ|চর্যাপদ]] | style="background:#CCCCEE;vertical-align:top" | |} ===ত্রয়োদশ শতক-পঞ্চদশ শতক=== # [[/বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন|বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]] # [[/শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা|শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ অনুবাদ # [[/কৃত্তিবাস ওঝা|কৃত্তিবাস ওঝা]] ; মহাভারত অনুবাদ # [[/কবীন্দ্র পরমেশ্বর|কবীন্দ্র পরমেশ্বর]] # [[/শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দী]] ; ভাগবত অনুবাদ # [[/মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়|মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল==== ; মনসামঙ্গল # [[/হরি দত্ত|হরি দত্ত]] # [[/নারায়ণ দেব|নারায়ণ দেব]] # [[/বিজয় গুপ্ত|বিজয় গুপ্ত]] # [[/বিপ্রদাস পিপলাই|বিপ্রদাস পিপলাই]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/মানিক দত্ত|মানিক দত্ত]] ====বৈষ্ণব পদাবলি: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস==== # [[/বিদ্যাপতি|বিদ্যাপতি]] # [[/চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাস]] ===ষোড়শ শতক থেকে মধ্য সপ্তদশ শতক=== ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, শিবায়ন ও কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর==== ; মনসামঙ্গল # [[/কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ|কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]] # [[/ দ্বিজ বংশীদাস|দ্বিজ বংশীদাস]] ; চণ্ডীমঙ্গল # [[/দ্বিজ মাধব|দ্বিজ মাধব]] # [[/মুকুন্দ চক্রবর্তী|মুকুন্দ চক্রবর্তী]] # [[/দ্বিজ রামদেব|দ্বিজ রামদেব]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামাই পণ্ডিত|রামাই পণ্ডিত]] # [[/রূপরাম চক্রবর্তী|রূপরাম চক্রবর্তী]] # [[/খেলারাম চক্রবর্তী|খেলারাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামকৃষ্ণ রায়|রামকৃষ্ণ রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/দ্বিজ শ্রীধর|দ্বিজ শ্রীধর]] ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/মুরারি গুপ্ত|মুরারি গুপ্ত]] # [[/নরহরি সরকার|নরহরি সরকার]] # [[/শিবানন্দ সেন|শিবানন্দ সেন]] # [[/জ্ঞানদাস|জ্ঞানদাস]] # [[/গোবিন্দদাস|গোবিন্দদাস]] # [[/বাসুদেব ঘোষ|বাসুদেব ঘোষ]] # [[/রামানন্দ বসু|রামানন্দ বসু]] # [[/বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়|বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/যদুনন্দন দাস|যদুনন্দন দাস]] # [[/মাধবদাস|মাধবদাস]] # [[/অনন্ত দাস|অনন্ত দাস]] ====চরিতকাব্য==== # [[/বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত|বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত]] # [[/লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল|লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল|জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল]] # [[/কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত|কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত]] # [[/গোবিন্দদাসের কড়চা|গোবিন্দদাসের কড়চা]] # [[/চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়|চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/অদ্ভুতাচার্য|অদ্ভুতাচার্য]] # [[/চন্দ্রাবতী|চন্দ্রাবতী]] ; মহাভারত # [[/কাশীরাম দাস|কাশীরাম দাস]] ; ভাগবত # [[রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী|রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী]] # [[/মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল|মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল]] # [[/দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল|দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল]] ===মধ্য সপ্তদশ শতক—অষ্টাদশ শতক=== ====বৈষ্ণব পদাবলি==== # [[/প্রেমদাস|প্রেমদাস]] # [[/রাধামোহন ঠাকুর|রাধামোহন ঠাকুর]] # [[/চন্দ্রশেখর|চন্দ্রশেখর]] =====বৈষ্ণব পদসংকলন===== # [[/ক্ষণদাগীতচিন্তামণি|ক্ষণদাগীতচিন্তামণি]] # [[/গীতচন্দ্রোদয়|গীতচন্দ্রোদয়]] # [[/গৌরচরিতচিন্তামণি|গৌরচরিতচিন্তামণি]] # [[/পদামৃতসমুদ্র|পদামৃতসমুদ্র]] # [[/পদকল্পতরু|পদকল্পতরু]] ====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর ও শিবায়ন==== ; মনসামঙ্গল # [[/তন্ত্রবিভূতি|তন্ত্রবিভূতি]] # [[/জগজ্জীবন ঘোষাল|জগজ্জীবন ঘোষাল]] # [[/জীবন মৈত্র|জীবন মৈত্র]] ; ধর্মমঙ্গল # [[/রামদাস আদক|রামদাস আদক]] # [[/সীতারাম দাস|সীতারাম দাস]] # [[/যাদুনাথ বা যাদবনাথ|যাদুনাথ বা যাদবনাথ]] # [[/শ্রীশ্যাম পণ্ডিত|শ্রীশ্যাম পণ্ডিত]] # [[/ঘনরাম চক্রবর্তী|ঘনরাম চক্রবর্তী]] # [[/মানিক গাঙ্গুলী|মানিক গাঙ্গুলী]] ; অন্নদামঙ্গল # [[/ভারতচন্দ্র রায়|ভারতচন্দ্র রায়]] ; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর # [[/কৃষ্ণরাম দাস|কৃষ্ণরাম দাস]] # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/বলরাম চক্রবর্তী|বলরাম চক্রবর্তী]] ; শিবায়ন # [[/রামেশ্বর ভট্টাচার্য|রামেশ্বর ভট্টাচার্য]] ====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত==== ; রামায়ণ # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/জগৎরাম রায়|জগৎরাম রায়]] # [[/রামানন্দ ঘোষ|রামানন্দ ঘোষ]] ; মহাভারত # [[/দ্বৈপায়ন দাস|দ্বৈপায়ন দাস]] # [[/নন্দরাম দাস|নন্দরাম দাস]] # [[/গঙ্গাদাস সেন|গঙ্গাদাস সেন]] ; ভাগবত # [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]] # [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]] # [[/দ্বিজ মাধবেন্দ্র|দ্বিজ মাধবেন্দ্র]] # [[/দ্বিজ রমানাথ|দ্বিজ রমানাথ]] ====শাক্ত পদাবলি==== # [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]] # [[/কললাকান্ত ভট্টাচার্য|কমলাকান্ত ভট্টাচার্য]] # [[/অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা|অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা]] ====নাথ সাহিত্য==== # [[/নাথ সাহিত্য|নাথ সাহিত্য]] ====ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা==== # [[/ময়মনসিংহ গীতিকা|ময়মনসিংহ গীতিকা]] # [[/পূর্ববঙ্গ গীতিকা|পূর্ববঙ্গ গীতিকা]] ====চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য==== # [[/চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য|চট্টগ্রাম রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য]] {{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}} {{বর্ণানুক্রমিক|ব}} {{বিষয়|সাহিত্য}} {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} rp592boaip2rhv1zsfr8p9rci1q6odj পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/APA শৈলী রেফারেন্স তালিকা 0 27205 85287 2025-06-25T14:38:30Z Mehedi Abedin 7113 Mehedi Abedin [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/APA শৈলী রেফারেন্স তালিকা]] কে [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 85287 wikitext text/x-wiki #পুনর্নির্দেশ [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা]] okxrahi7cikil0qkvxl5tscb3iapdgf আলাপ:পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/APA শৈলী রেফারেন্স তালিকা 1 27206 85289 2025-06-25T14:38:30Z Mehedi Abedin 7113 Mehedi Abedin [[আলাপ:পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/APA শৈলী রেফারেন্স তালিকা]] কে [[আলাপ:পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা]] শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন 85289 wikitext text/x-wiki #পুনর্নির্দেশ [[আলাপ:পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/উৎস নথিভুক্তকরণ/এপিএ শৈলী সূত্রের তালিকা]] j2lyi66b31vdyv3co0kjx57wgvzhy4y ব্যবহারকারী আলাপ:PGN28 3 27207 85292 2025-06-25T14:40:12Z KanikBot 8129 স্বাগতম! 85292 wikitext text/x-wiki == বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত == {{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৪:৪০, ২৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি) exre1qbble1cgj7ld5q7095rf72npkd বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য 0 27208 85313 2025-06-26T02:00:19Z Jonoikobangali 676 "প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী ন..." দিয়ে পাতা তৈরি 85313 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। adwi5e0v3ihp1mekqrdyi6qu2fhx6kf 85314 85313 2025-06-26T02:04:48Z Jonoikobangali 676 85314 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। 7e5yrjt5oypv12951va7y4f0hnoedo9 85316 85314 2025-06-26T02:58:15Z Jonoikobangali 676 /* সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা */ 85316 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। 0rv8xmu28cc9r0gw5z8ypqb2a8un6qz 85317 85316 2025-06-26T03:06:21Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য */ 85317 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। 02afzmbt803zpsjj71r7i2enxpj9atp 85318 85317 2025-06-26T03:13:54Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য */ 85318 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। 3zlyhmt87e5o9pqfjlpkflo2dhtud3r 85319 85318 2025-06-26T03:16:42Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য */ 85319 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম কবি শরণ। তাঁর ব্যক্তিপরিচয় বিশেষ জানা যায় না। জয়দেব ''গীতগোবিন্দম্‌''-এ লিখেছেন, “শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরুহদ্রুতে”, অর্থাৎ শরণের দক্ষতা ছিল দুরুহ শব্দ দ্বারা দ্রুত বেগে শ্লোক রচনায়। ''দুর্ঘটবৃত্তি'' নামক ব্যাকরণের রচয়িতা শরণদেব ইনিই কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করা যায়নি। শরণের ২২টি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। আরও কিছু পদ সংকলিত হয়েছে রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী''-তে। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরণের কোনও শ্লোকই বাংলার বাইরে কোনও শ্লোক সংকলনে স্থান পায়নি। এই কারণেই তাঁর বাঙালিত্বের দাবি আরও জোরদার হয়। সাহিত্যের কোনও কোনও ইতিহাসবিদ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত কবি লক্ষ্মীধরের কথা বলেছেন। ২০ সর্গে রচিত ''চক্রপাণিবিজয়'' নামক মহাকাব্যে দেওয়া তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি গৌড়ের ‘ভট্টাঙ্কিত কোশল’ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বগুড়া জেলার কুশৈল গ্রাম। কবি ভোজদেব নামে তাঁর এক পূর্বপুরুষের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকের মতে, ইনি বঙ্গের রাজা ভোজবর্মদেব। লক্ষ্মীধরের মহাকাব্যে অসুররাজ বানের কন্যা ঊষার পরিণয়ের প্রসঙ্গ আছে। এছাড়া কয়েকটি কোষকাব্যে কবির কিছু প্রকীর্ণ শ্লোকও সংকলিত হয়েছে। bliu1z3hagr8gg64d72oetdxnuyt332 85320 85319 2025-06-26T03:34:35Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য */ 85320 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম কবি শরণ। তাঁর ব্যক্তিপরিচয় বিশেষ জানা যায় না। জয়দেব ''গীতগোবিন্দম্‌''-এ লিখেছেন, “শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরুহদ্রুতে”, অর্থাৎ শরণের দক্ষতা ছিল দুরুহ শব্দ দ্বারা দ্রুত বেগে শ্লোক রচনায়। ''দুর্ঘটবৃত্তি'' নামক ব্যাকরণের রচয়িতা শরণদেব ইনিই কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করা যায়নি। শরণের ২২টি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। আরও কিছু পদ সংকলিত হয়েছে রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী''-তে। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরণের কোনও শ্লোকই বাংলার বাইরে কোনও শ্লোক সংকলনে স্থান পায়নি। এই কারণেই তাঁর বাঙালিত্বের দাবি আরও জোরদার হয়। সাহিত্যের কোনও কোনও ইতিহাসবিদ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত কবি লক্ষ্মীধরের কথা বলেছেন। ২০ সর্গে রচিত ''চক্রপাণিবিজয়'' নামক মহাকাব্যে দেওয়া তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি গৌড়ের ‘ভট্টাঙ্কিত কোশল’ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বগুড়া জেলার কুশৈল গ্রাম। কবি ভোজদেব নামে তাঁর এক পূর্বপুরুষের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকের মতে, ইনি বঙ্গের রাজা ভোজবর্মদেব। লক্ষ্মীধরের মহাকাব্যে অসুররাজ বানের কন্যা ঊষার পরিণয়ের প্রসঙ্গ আছে। এছাড়া কয়েকটি কোষকাব্যে কবির কিছু প্রকীর্ণ শ্লোকও সংকলিত হয়েছে। কাব্যরচনায় বাঙালি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করলেও নাট্যরচনায় দৈন্যই প্রকাশ করেছে। সমগ্র মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কোনও নাটক রচিত হয়নি। অবশ্য জনসাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য লোকনাট্য, কৃষ্ণযাত্রা বা নাটগীত ধরনের নাট্যশৈলীগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। সাহিত্যের ইতিহাসবিদদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌''-এও লোকাভিনয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। তারই অনুসারী ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন''-ও সাধারণের নাট্যরসপিপাসা চরিতার্থ করে থাকবে। তবু বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকারের উৎকৃষ্ট রচনার কোনও পরিচয় তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী যুগে নেই। অথচ সুবিশাল সংস্কৃত সাহিত্যের বড়ো অংশ দৃশ্যকাব্য, যা রূপক ও উপরূপকে প্রায় ২৮টি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রায় সহস্রাব্দ কাল ধরে ভাস, অশ্বঘোষ, কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীহর্ষ প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকার ভারতীয় নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সেই ঐতিহ্য যে অল্পবিস্তর বাংলাতেও প্রবেশ করেছিল এবং সংস্কৃত নাট্যকারদের অনুপ্রেরণায় কোনও কোনও অক্ষম লেখক কিছু নাটক রচনাও করেছিলেন, তার কিছু পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে সাগরনন্দী রচিত ''নাটকলক্ষণরত্নকোষ'' গ্রন্থে। তিনি বাঙালির লেখা অনেকগুলি নাটকের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলির একটিও বর্তমানে পাওয়া যায় না। এর থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, সেগুলি কখনই জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি এবং কালের প্রকোপে সেই অকিঞ্চিৎকর রচনাগুলি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও গবেষকের মতে, নাট্যকার ভট্টনারায়ণ, মুরারি, বিশাখদত্ত ও ক্ষেমীশ্বর বাঙালি ছিলেন। এই দাবির পিছনে সুস্পষ্ট কোনও যুক্তি বা প্রমাণ নেই। বাংলার একটি সুপ্রাচীন জনশ্রুতিই ভট্টনারায়ণের বাঙালিত্বের দাবিদার। কুলজীগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে যে, গৌড়াধিপতি আদিশূর কান্যকুব্জ বা কনৌজ থেকে যে পাঁচজন বৈদিক ব্রাহ্মণকে আনয়ন করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ভট্টনারায়ণ। কিন্তু কুলজীগ্রন্থগুলির ঐতিহাসিকত্ব নিয়ে সংশয় আছে এবং কথিত আদিশূরের প্রকৃত পরিচয় আজও অনির্ধারিত। অবশ্য ভট্টনারায়ণের ''বেণীসংহার'' নাটকের সাহিত্যরীতিতে ও ভাষার ছাঁদে গৌড়ী রীতির ছাপ আছে। তাই মূলত জনশ্রুতি ও রচনাপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কোনও কোনও পাশ্চাত্য গবেষক তাঁকে বাঙালি বলে উল্লেখ করেছেন। দশম শতকের নাট্যকার মুরারির ''অনর্ঘরাঘব'' নায়কের কাহিনি রামায়ণ থেকে গৃহীত। এই নাটকে একদা কলচুরি রাজধানী নর্মদা-তীরবর্তী মাহিষ্মতী নগরীর কথা আছে। তাই বৈদিক ব্রাহ্মণদের আদিপুরুষ মুরারি ও নাট্যকার মুরারি অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আনুমানিক দশক শতকের নাট্যকার ক্ষেমীশ্বরের ''চণ্ডকৌশিক'' নাটকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নাটকটি লেখা হয়েছে রাজা মহীপালের সভায়। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অনুমান, এই মহীপাল পালবংশীয় রাজা মহীপালদেব। অন্যদিকে পিশলের বক্তব্য, ইনি আসলে গুর্জর-প্রতিহার রাজা প্রথম মহীপাল। লক্ষণীয় নাটকটির প্রাচীনতম পুথি পাওয়া গিয়েছে নেপালে। এই নাটকে হরিশ্চন্দ্র ও বিশ্বামিত্রের কাহিনি নাট্যাকারে বর্ণিত। নবম শতকের পূর্ববর্তী নাট্যকার বিশাখদত্তের নাটকে বাঙালিত্বের কোনও চিহ্নই নেই। ''মুদ্রারাক্ষস''-এর বিষয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন লাভ ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চাণক্যের ভূমিকা পর্যালোচনা। ss7qse27mxlyo22e4fn13xyfz0v5r3s 85321 85320 2025-06-26T03:40:59Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য */ 85321 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম কবি শরণ। তাঁর ব্যক্তিপরিচয় বিশেষ জানা যায় না। জয়দেব ''গীতগোবিন্দম্‌''-এ লিখেছেন, “শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরুহদ্রুতে”, অর্থাৎ শরণের দক্ষতা ছিল দুরুহ শব্দ দ্বারা দ্রুত বেগে শ্লোক রচনায়। ''দুর্ঘটবৃত্তি'' নামক ব্যাকরণের রচয়িতা শরণদেব ইনিই কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করা যায়নি। শরণের ২২টি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। আরও কিছু পদ সংকলিত হয়েছে রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী''-তে। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরণের কোনও শ্লোকই বাংলার বাইরে কোনও শ্লোক সংকলনে স্থান পায়নি। এই কারণেই তাঁর বাঙালিত্বের দাবি আরও জোরদার হয়। সাহিত্যের কোনও কোনও ইতিহাসবিদ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত কবি লক্ষ্মীধরের কথা বলেছেন। ২০ সর্গে রচিত ''চক্রপাণিবিজয়'' নামক মহাকাব্যে দেওয়া তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি গৌড়ের ‘ভট্টাঙ্কিত কোশল’ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বগুড়া জেলার কুশৈল গ্রাম। কবি ভোজদেব নামে তাঁর এক পূর্বপুরুষের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকের মতে, ইনি বঙ্গের রাজা ভোজবর্মদেব। লক্ষ্মীধরের মহাকাব্যে অসুররাজ বানের কন্যা ঊষার পরিণয়ের প্রসঙ্গ আছে। এছাড়া কয়েকটি কোষকাব্যে কবির কিছু প্রকীর্ণ শ্লোকও সংকলিত হয়েছে। কাব্যরচনায় বাঙালি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করলেও নাট্যরচনায় দৈন্যই প্রকাশ করেছে। সমগ্র মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কোনও নাটক রচিত হয়নি। অবশ্য জনসাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য লোকনাট্য, কৃষ্ণযাত্রা বা নাটগীত ধরনের নাট্যশৈলীগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। সাহিত্যের ইতিহাসবিদদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌''-এও লোকাভিনয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। তারই অনুসারী ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন''-ও সাধারণের নাট্যরসপিপাসা চরিতার্থ করে থাকবে। তবু বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকারের উৎকৃষ্ট রচনার কোনও পরিচয় তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী যুগে নেই। অথচ সুবিশাল সংস্কৃত সাহিত্যের বড়ো অংশ দৃশ্যকাব্য, যা রূপক ও উপরূপকে প্রায় ২৮টি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রায় সহস্রাব্দ কাল ধরে ভাস, অশ্বঘোষ, কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীহর্ষ প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকার ভারতীয় নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সেই ঐতিহ্য যে অল্পবিস্তর বাংলাতেও প্রবেশ করেছিল এবং সংস্কৃত নাট্যকারদের অনুপ্রেরণায় কোনও কোনও অক্ষম লেখক কিছু নাটক রচনাও করেছিলেন, তার কিছু পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে সাগরনন্দী রচিত ''নাটকলক্ষণরত্নকোষ'' গ্রন্থে। তিনি বাঙালির লেখা অনেকগুলি নাটকের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলির একটিও বর্তমানে পাওয়া যায় না। এর থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, সেগুলি কখনই জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি এবং কালের প্রকোপে সেই অকিঞ্চিৎকর রচনাগুলি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও গবেষকের মতে, নাট্যকার ভট্টনারায়ণ, মুরারি, বিশাখদত্ত ও ক্ষেমীশ্বর বাঙালি ছিলেন। এই দাবির পিছনে সুস্পষ্ট কোনও যুক্তি বা প্রমাণ নেই। বাংলার একটি সুপ্রাচীন জনশ্রুতিই ভট্টনারায়ণের বাঙালিত্বের দাবিদার। কুলজীগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে যে, গৌড়াধিপতি আদিশূর কান্যকুব্জ বা কনৌজ থেকে যে পাঁচজন বৈদিক ব্রাহ্মণকে আনয়ন করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ভট্টনারায়ণ। কিন্তু কুলজীগ্রন্থগুলির ঐতিহাসিকত্ব নিয়ে সংশয় আছে এবং কথিত আদিশূরের প্রকৃত পরিচয় আজও অনির্ধারিত। অবশ্য ভট্টনারায়ণের ''বেণীসংহার'' নাটকের সাহিত্যরীতিতে ও ভাষার ছাঁদে গৌড়ী রীতির ছাপ আছে। তাই মূলত জনশ্রুতি ও রচনাপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কোনও কোনও পাশ্চাত্য গবেষক তাঁকে বাঙালি বলে উল্লেখ করেছেন। দশম শতকের নাট্যকার মুরারির ''অনর্ঘরাঘব'' নায়কের কাহিনি রামায়ণ থেকে গৃহীত। এই নাটকে একদা কলচুরি রাজধানী নর্মদা-তীরবর্তী মাহিষ্মতী নগরীর কথা আছে। তাই বৈদিক ব্রাহ্মণদের আদিপুরুষ মুরারি ও নাট্যকার মুরারি অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আনুমানিক দশক শতকের নাট্যকার ক্ষেমীশ্বরের ''চণ্ডকৌশিক'' নাটকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নাটকটি লেখা হয়েছে রাজা মহীপালের সভায়। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অনুমান, এই মহীপাল পালবংশীয় রাজা মহীপালদেব। অন্যদিকে পিশলের বক্তব্য, ইনি আসলে গুর্জর-প্রতিহার রাজা প্রথম মহীপাল। লক্ষণীয় নাটকটির প্রাচীনতম পুথি পাওয়া গিয়েছে নেপালে। এই নাটকে হরিশ্চন্দ্র ও বিশ্বামিত্রের কাহিনি নাট্যাকারে বর্ণিত। নবম শতকের পূর্ববর্তী নাট্যকার বিশাখদত্তের নাটকে বাঙালিত্বের কোনও চিহ্নই নেই। ''মুদ্রারাক্ষস''-এর বিষয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন লাভ ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চাণক্যের ভূমিকা পর্যালোচনা। এছাড়া একাদশ-দ্বাদশ শতকের নাট্যকার কৃষ্ণমিশ্রকেও কেউ কেউ বাঙালি মনে করেন। তাঁর ''প্রবোধচন্দ্রোদয়'' নাটকের কয়েকটি শ্লোকে গৌড়, রাঢ়াপুরী, ভূরিশ্রেষ্ঠ প্রভৃতি স্থাননামের উল্লেখ আছে, আর প্রস্তাবনায় আছে গোপালের নাম। কিন্তু এগুলির অন্যবিধ ব্যাখ্যায় কৃষ্ণমিশ্রের বাঙালিত্বের দাবি খারিজ হয়ে যেতে পারে। তুলনায় প্রাচীন বাংলার প্রসিদ্ধ বৈয়াকরণ চন্দ্রগোমীর বাঙালিত্ব নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তিনি বরেন্দ্রভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। একদা চন্দ্রদ্বীপে নির্বাসিত হয়ে তিনি ‘দ্বৈপ’ নামে পরিচিত হন। এই তথ্য পাওয়া যায় তিব্বতি ঐতিহাসিক তারানাথের গ্রন্থে এবং চন্দ্রগোমীর স্বরচিত ''মনোহরকল্প'' স্তোত্র থেকে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চন্দ্রগোমী ''আর্যতারাদেবীস্তোত্রমুক্তিকামালা'' ইত্যাদি ৩৬টি তান্ত্রিক বজ্রযান সাধনা-বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লেখা সংস্কৃত নাটকটির নাম ''লোকানন্দ''। বর্তমানে নাটকটির তিব্বতি অনুবাদটিই শুধু পাওয়া যায়। চন্দ্রগোমীর বিখ্যাত কীর্তি ''চান্দ্র-ব্যাকরণ''। এটিতে ''অষ্টাধ্যায়ী''-কে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে ৩১০০ সূত্রে ধরেছেন তিনি। এছাড়া ''ন্যায়সিদ্ধ্যালোক'' নামে তর্কশাস্ত্র-বিষয়ক একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার আলোচ্য সময়পর্বে আরও এক নাট্যকারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পারমাররাজ অর্জুনবর্মার গুরু মদন। জাতিতে বাঙালি মদন যৌবনে মালবে গিয়ে তাঁর কবিত্বশক্তির জন্য ‘বাল সরস্বতী’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর রচিত নাটকের নাম ''পারিজাতমঞ্জরী'' বা ''বিজয়শ্রী''। এটি শ্রীহর্ষের ''রত্নাবলী''-র অনুকরণে রচিত। এই নাটকে ধোয়ীর ''পবনদূত''-এর মতো সমকালীন রাজাকেই নায়ক করা হয়েছে। গ্রন্থটির অংশমাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। l324558qq2j4viu307cko89exe7my7u 85324 85321 2025-06-26T03:47:59Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য */ 85324 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম কবি শরণ। তাঁর ব্যক্তিপরিচয় বিশেষ জানা যায় না। জয়দেব ''গীতগোবিন্দম্‌''-এ লিখেছেন, “শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরুহদ্রুতে”, অর্থাৎ শরণের দক্ষতা ছিল দুরুহ শব্দ দ্বারা দ্রুত বেগে শ্লোক রচনায়। ''দুর্ঘটবৃত্তি'' নামক ব্যাকরণের রচয়িতা শরণদেব ইনিই কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করা যায়নি। শরণের ২২টি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। আরও কিছু পদ সংকলিত হয়েছে রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী''-তে। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরণের কোনও শ্লোকই বাংলার বাইরে কোনও শ্লোক সংকলনে স্থান পায়নি। এই কারণেই তাঁর বাঙালিত্বের দাবি আরও জোরদার হয়। সাহিত্যের কোনও কোনও ইতিহাসবিদ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত কবি লক্ষ্মীধরের কথা বলেছেন। ২০ সর্গে রচিত ''চক্রপাণিবিজয়'' নামক মহাকাব্যে দেওয়া তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি গৌড়ের ‘ভট্টাঙ্কিত কোশল’ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বগুড়া জেলার কুশৈল গ্রাম। কবি ভোজদেব নামে তাঁর এক পূর্বপুরুষের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকের মতে, ইনি বঙ্গের রাজা ভোজবর্মদেব। লক্ষ্মীধরের মহাকাব্যে অসুররাজ বানের কন্যা ঊষার পরিণয়ের প্রসঙ্গ আছে। এছাড়া কয়েকটি কোষকাব্যে কবির কিছু প্রকীর্ণ শ্লোকও সংকলিত হয়েছে। কাব্যরচনায় বাঙালি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করলেও নাট্যরচনায় দৈন্যই প্রকাশ করেছে। সমগ্র মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কোনও নাটক রচিত হয়নি। অবশ্য জনসাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য লোকনাট্য, কৃষ্ণযাত্রা বা নাটগীত ধরনের নাট্যশৈলীগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। সাহিত্যের ইতিহাসবিদদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌''-এও লোকাভিনয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। তারই অনুসারী ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন''-ও সাধারণের নাট্যরসপিপাসা চরিতার্থ করে থাকবে। তবু বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকারের উৎকৃষ্ট রচনার কোনও পরিচয় তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী যুগে নেই। অথচ সুবিশাল সংস্কৃত সাহিত্যের বড়ো অংশ দৃশ্যকাব্য, যা রূপক ও উপরূপকে প্রায় ২৮টি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রায় সহস্রাব্দ কাল ধরে ভাস, অশ্বঘোষ, কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীহর্ষ প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকার ভারতীয় নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সেই ঐতিহ্য যে অল্পবিস্তর বাংলাতেও প্রবেশ করেছিল এবং সংস্কৃত নাট্যকারদের অনুপ্রেরণায় কোনও কোনও অক্ষম লেখক কিছু নাটক রচনাও করেছিলেন, তার কিছু পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে সাগরনন্দী রচিত ''নাটকলক্ষণরত্নকোষ'' গ্রন্থে। তিনি বাঙালির লেখা অনেকগুলি নাটকের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলির একটিও বর্তমানে পাওয়া যায় না। এর থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, সেগুলি কখনই জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি এবং কালের প্রকোপে সেই অকিঞ্চিৎকর রচনাগুলি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও গবেষকের মতে, নাট্যকার ভট্টনারায়ণ, মুরারি, বিশাখদত্ত ও ক্ষেমীশ্বর বাঙালি ছিলেন। এই দাবির পিছনে সুস্পষ্ট কোনও যুক্তি বা প্রমাণ নেই। বাংলার একটি সুপ্রাচীন জনশ্রুতিই ভট্টনারায়ণের বাঙালিত্বের দাবিদার। কুলজীগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে যে, গৌড়াধিপতি আদিশূর কান্যকুব্জ বা কনৌজ থেকে যে পাঁচজন বৈদিক ব্রাহ্মণকে আনয়ন করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ভট্টনারায়ণ। কিন্তু কুলজীগ্রন্থগুলির ঐতিহাসিকত্ব নিয়ে সংশয় আছে এবং কথিত আদিশূরের প্রকৃত পরিচয় আজও অনির্ধারিত। অবশ্য ভট্টনারায়ণের ''বেণীসংহার'' নাটকের সাহিত্যরীতিতে ও ভাষার ছাঁদে গৌড়ী রীতির ছাপ আছে। তাই মূলত জনশ্রুতি ও রচনাপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কোনও কোনও পাশ্চাত্য গবেষক তাঁকে বাঙালি বলে উল্লেখ করেছেন। দশম শতকের নাট্যকার মুরারির ''অনর্ঘরাঘব'' নায়কের কাহিনি রামায়ণ থেকে গৃহীত। এই নাটকে একদা কলচুরি রাজধানী নর্মদা-তীরবর্তী মাহিষ্মতী নগরীর কথা আছে। তাই বৈদিক ব্রাহ্মণদের আদিপুরুষ মুরারি ও নাট্যকার মুরারি অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আনুমানিক দশক শতকের নাট্যকার ক্ষেমীশ্বরের ''চণ্ডকৌশিক'' নাটকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নাটকটি লেখা হয়েছে রাজা মহীপালের সভায়। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অনুমান, এই মহীপাল পালবংশীয় রাজা মহীপালদেব। অন্যদিকে পিশলের বক্তব্য, ইনি আসলে গুর্জর-প্রতিহার রাজা প্রথম মহীপাল। লক্ষণীয় নাটকটির প্রাচীনতম পুথি পাওয়া গিয়েছে নেপালে। এই নাটকে হরিশ্চন্দ্র ও বিশ্বামিত্রের কাহিনি নাট্যাকারে বর্ণিত। নবম শতকের পূর্ববর্তী নাট্যকার বিশাখদত্তের নাটকে বাঙালিত্বের কোনও চিহ্নই নেই। ''মুদ্রারাক্ষস''-এর বিষয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন লাভ ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চাণক্যের ভূমিকা পর্যালোচনা। এছাড়া একাদশ-দ্বাদশ শতকের নাট্যকার কৃষ্ণমিশ্রকেও কেউ কেউ বাঙালি মনে করেন। তাঁর ''প্রবোধচন্দ্রোদয়'' নাটকের কয়েকটি শ্লোকে গৌড়, রাঢ়াপুরী, ভূরিশ্রেষ্ঠ প্রভৃতি স্থাননামের উল্লেখ আছে, আর প্রস্তাবনায় আছে গোপালের নাম। কিন্তু এগুলির অন্যবিধ ব্যাখ্যায় কৃষ্ণমিশ্রের বাঙালিত্বের দাবি খারিজ হয়ে যেতে পারে। তুলনায় প্রাচীন বাংলার প্রসিদ্ধ বৈয়াকরণ চন্দ্রগোমীর বাঙালিত্ব নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তিনি বরেন্দ্রভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। একদা চন্দ্রদ্বীপে নির্বাসিত হয়ে তিনি ‘দ্বৈপ’ নামে পরিচিত হন। এই তথ্য পাওয়া যায় তিব্বতি ঐতিহাসিক তারানাথের গ্রন্থে এবং চন্দ্রগোমীর স্বরচিত ''মনোহরকল্প'' স্তোত্র থেকে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চন্দ্রগোমী ''আর্যতারাদেবীস্তোত্রমুক্তিকামালা'' ইত্যাদি ৩৬টি তান্ত্রিক বজ্রযান সাধনা-বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লেখা সংস্কৃত নাটকটির নাম ''লোকানন্দ''। বর্তমানে নাটকটির তিব্বতি অনুবাদটিই শুধু পাওয়া যায়। চন্দ্রগোমীর বিখ্যাত কীর্তি ''চান্দ্র-ব্যাকরণ''। এটিতে ''অষ্টাধ্যায়ী''-কে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে ৩১০০ সূত্রে ধরেছেন তিনি। এছাড়া ''ন্যায়সিদ্ধ্যালোক'' নামে তর্কশাস্ত্র-বিষয়ক একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার আলোচ্য সময়পর্বে আরও এক নাট্যকারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পারমাররাজ অর্জুনবর্মার গুরু মদন। জাতিতে বাঙালি মদন যৌবনে মালবে গিয়ে তাঁর কবিত্বশক্তির জন্য ‘বাল সরস্বতী’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর রচিত নাটকের নাম ''পারিজাতমঞ্জরী'' বা ''বিজয়শ্রী''। এটি শ্রীহর্ষের ''রত্নাবলী''-র অনুকরণে রচিত। এই নাটকে ধোয়ীর ''পবনদূত''-এর মতো সমকালীন রাজাকেই নায়ক করা হয়েছে। গ্রন্থটির অংশমাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ==বাঙালি ও প্রাকৃত ও অপভ্রংশ সাহিত্য== প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার শেষ পর্বে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা রূপে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের উদ্ভব। এই ভাষাগুলি প্রথমে ছিল সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, পরে তা গৃহীত হয় সাহিত্যের মাধ্যম রূপে। খ্রিস্টপূর্ব কালেই প্রাকৃতের আবির্ভাব। সম্রাট অশোকের রাজ্যশাসন-সংক্রান্ত লিপিগুলির অধিকাংশই বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রাকৃতে লেখা। পরে তা থেকে গড়ে ওঠে সাহিত্যিক প্রাকৃত। পূর্ব ভারতে ব্যবহৃত হত মাগধী প্রাকৃত। এই প্রাকৃতে লেখা খুব অল্প রচনাই পাওয়া গিয়েছে। অবশ্য বাংলার কবি ও পণ্ডিতেরা যে অন্য প্রাকৃত জানতেন না তা নয়। তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী অনেকগুলি প্রাকৃত ও অপভ্রংশ গ্রন্থ পাওয়া গিয়েছে। তবে সেগুলি বাঙালির রচনা কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। যেমন, হালের ''গাহাসত্তসঈ'' অথবা পিঙ্গলের প্রাকৃত ছন্দশিক্ষার গ্রন্থ ''প্রাকৃতপৈঙ্গল''। মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতে রচিত ''গাহাসত্তসঈ'' সর্বপ্রাচীন কবিতা সংগ্রহ। অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, সাতবাহন রাজা হালই এই গ্রন্থের সংকলক। সেই হিসেবে এটি খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে সংকলিত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সংশয় জাগে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের দুই বিশিষ্ট গ্রন্থকার প্রবরসেন (১/৬৪, ৩/২, ৩/৮, ৩/১৬) ও বাক্‌পতিরাজের (১/১৫) কবিতা এতে সংকলিত হয়েছে বলে। এগুলি অবশ্য প্রক্ষিপ্তও হতে পারে। যাই হোক, গ্রন্থটি কয়েকটি কারণে উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী সংস্কৃত শ্লোক-সংগ্রহগুলির মূল আদর্শস্বরূপ ছিল এই গ্রন্থ। এখানেই রাধার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। আর মধ্যযুগীয় বাংলা বৈষ্ণব পদের বেশ কয়েকটি এর কোনও না কোনও শ্লোকের প্রত্যক্ষ প্রভাবে রচিত। এই গ্রন্থের দু-একটি শ্লোকে বাংলার জনজীবনও চিত্রিত হয়েছে। সম্ভবত সংশ্লিষ্ট শ্লোকগুলি বাঙালি কবিদের রচনা। ''প্রাকৃতপৈঙ্গল'' গ্রন্থটিও একপ্রকার সংকলন গ্রন্থ, তবে এই সংকলনের বিশেষ উদ্দেশ্যটি হল প্রাকৃত ছন্দে পাঠককে অভিজ্ঞ করে তোলা। গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল শৌরসেনী প্রাকৃত ও অপভ্রংশে। সম্ভবত চতুর্দশ শতকে কাশীতে এটির সংকলনকার্য সমাপ্ত হয়েছিল। সংকলনকর্তা হিসেবে বিশিষ্ট ছন্দশাস্ত্রবিদ পিঙ্গলের নাম উল্লিখিত হয়েছে। তিনি যে বাঙালি ছিলেন না, তা অনুমান করা যায় গ্রন্থে বাঙালির প্রতি তাঁর কয়েকটি কটাক্ষ থেকেই। তবে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় কৃষ্ণকথার কিছু বিশিষ্ট উপাদান এতে নথিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু শ্লোকে বাংলার ভাব, বিষয়বস্তু ও ভাষাকৌশলের আভাস পাওয়া যায়। কয়েকটি শ্লোকে বাঙালি জীবনের ছায়াপাতও ঘটেছে। otlif9wuuqti9psanw9mz7bz262g3nu 85325 85324 2025-06-26T03:49:19Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও প্রাকৃত ও অপভ্রংশ সাহিত্য */ 85325 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম কবি শরণ। তাঁর ব্যক্তিপরিচয় বিশেষ জানা যায় না। জয়দেব ''গীতগোবিন্দম্‌''-এ লিখেছেন, “শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরুহদ্রুতে”, অর্থাৎ শরণের দক্ষতা ছিল দুরুহ শব্দ দ্বারা দ্রুত বেগে শ্লোক রচনায়। ''দুর্ঘটবৃত্তি'' নামক ব্যাকরণের রচয়িতা শরণদেব ইনিই কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করা যায়নি। শরণের ২২টি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। আরও কিছু পদ সংকলিত হয়েছে রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী''-তে। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরণের কোনও শ্লোকই বাংলার বাইরে কোনও শ্লোক সংকলনে স্থান পায়নি। এই কারণেই তাঁর বাঙালিত্বের দাবি আরও জোরদার হয়। সাহিত্যের কোনও কোনও ইতিহাসবিদ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত কবি লক্ষ্মীধরের কথা বলেছেন। ২০ সর্গে রচিত ''চক্রপাণিবিজয়'' নামক মহাকাব্যে দেওয়া তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি গৌড়ের ‘ভট্টাঙ্কিত কোশল’ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বগুড়া জেলার কুশৈল গ্রাম। কবি ভোজদেব নামে তাঁর এক পূর্বপুরুষের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকের মতে, ইনি বঙ্গের রাজা ভোজবর্মদেব। লক্ষ্মীধরের মহাকাব্যে অসুররাজ বানের কন্যা ঊষার পরিণয়ের প্রসঙ্গ আছে। এছাড়া কয়েকটি কোষকাব্যে কবির কিছু প্রকীর্ণ শ্লোকও সংকলিত হয়েছে। কাব্যরচনায় বাঙালি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করলেও নাট্যরচনায় দৈন্যই প্রকাশ করেছে। সমগ্র মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কোনও নাটক রচিত হয়নি। অবশ্য জনসাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য লোকনাট্য, কৃষ্ণযাত্রা বা নাটগীত ধরনের নাট্যশৈলীগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। সাহিত্যের ইতিহাসবিদদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌''-এও লোকাভিনয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। তারই অনুসারী ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন''-ও সাধারণের নাট্যরসপিপাসা চরিতার্থ করে থাকবে। তবু বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকারের উৎকৃষ্ট রচনার কোনও পরিচয় তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী যুগে নেই। অথচ সুবিশাল সংস্কৃত সাহিত্যের বড়ো অংশ দৃশ্যকাব্য, যা রূপক ও উপরূপকে প্রায় ২৮টি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রায় সহস্রাব্দ কাল ধরে ভাস, অশ্বঘোষ, কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীহর্ষ প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকার ভারতীয় নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সেই ঐতিহ্য যে অল্পবিস্তর বাংলাতেও প্রবেশ করেছিল এবং সংস্কৃত নাট্যকারদের অনুপ্রেরণায় কোনও কোনও অক্ষম লেখক কিছু নাটক রচনাও করেছিলেন, তার কিছু পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে সাগরনন্দী রচিত ''নাটকলক্ষণরত্নকোষ'' গ্রন্থে। তিনি বাঙালির লেখা অনেকগুলি নাটকের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলির একটিও বর্তমানে পাওয়া যায় না। এর থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, সেগুলি কখনই জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি এবং কালের প্রকোপে সেই অকিঞ্চিৎকর রচনাগুলি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও গবেষকের মতে, নাট্যকার ভট্টনারায়ণ, মুরারি, বিশাখদত্ত ও ক্ষেমীশ্বর বাঙালি ছিলেন। এই দাবির পিছনে সুস্পষ্ট কোনও যুক্তি বা প্রমাণ নেই। বাংলার একটি সুপ্রাচীন জনশ্রুতিই ভট্টনারায়ণের বাঙালিত্বের দাবিদার। কুলজীগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে যে, গৌড়াধিপতি আদিশূর কান্যকুব্জ বা কনৌজ থেকে যে পাঁচজন বৈদিক ব্রাহ্মণকে আনয়ন করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ভট্টনারায়ণ। কিন্তু কুলজীগ্রন্থগুলির ঐতিহাসিকত্ব নিয়ে সংশয় আছে এবং কথিত আদিশূরের প্রকৃত পরিচয় আজও অনির্ধারিত। অবশ্য ভট্টনারায়ণের ''বেণীসংহার'' নাটকের সাহিত্যরীতিতে ও ভাষার ছাঁদে গৌড়ী রীতির ছাপ আছে। তাই মূলত জনশ্রুতি ও রচনাপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কোনও কোনও পাশ্চাত্য গবেষক তাঁকে বাঙালি বলে উল্লেখ করেছেন। দশম শতকের নাট্যকার মুরারির ''অনর্ঘরাঘব'' নায়কের কাহিনি রামায়ণ থেকে গৃহীত। এই নাটকে একদা কলচুরি রাজধানী নর্মদা-তীরবর্তী মাহিষ্মতী নগরীর কথা আছে। তাই বৈদিক ব্রাহ্মণদের আদিপুরুষ মুরারি ও নাট্যকার মুরারি অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আনুমানিক দশক শতকের নাট্যকার ক্ষেমীশ্বরের ''চণ্ডকৌশিক'' নাটকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নাটকটি লেখা হয়েছে রাজা মহীপালের সভায়। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অনুমান, এই মহীপাল পালবংশীয় রাজা মহীপালদেব। অন্যদিকে পিশলের বক্তব্য, ইনি আসলে গুর্জর-প্রতিহার রাজা প্রথম মহীপাল। লক্ষণীয় নাটকটির প্রাচীনতম পুথি পাওয়া গিয়েছে নেপালে। এই নাটকে হরিশ্চন্দ্র ও বিশ্বামিত্রের কাহিনি নাট্যাকারে বর্ণিত। নবম শতকের পূর্ববর্তী নাট্যকার বিশাখদত্তের নাটকে বাঙালিত্বের কোনও চিহ্নই নেই। ''মুদ্রারাক্ষস''-এর বিষয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন লাভ ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চাণক্যের ভূমিকা পর্যালোচনা। এছাড়া একাদশ-দ্বাদশ শতকের নাট্যকার কৃষ্ণমিশ্রকেও কেউ কেউ বাঙালি মনে করেন। তাঁর ''প্রবোধচন্দ্রোদয়'' নাটকের কয়েকটি শ্লোকে গৌড়, রাঢ়াপুরী, ভূরিশ্রেষ্ঠ প্রভৃতি স্থাননামের উল্লেখ আছে, আর প্রস্তাবনায় আছে গোপালের নাম। কিন্তু এগুলির অন্যবিধ ব্যাখ্যায় কৃষ্ণমিশ্রের বাঙালিত্বের দাবি খারিজ হয়ে যেতে পারে। তুলনায় প্রাচীন বাংলার প্রসিদ্ধ বৈয়াকরণ চন্দ্রগোমীর বাঙালিত্ব নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তিনি বরেন্দ্রভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। একদা চন্দ্রদ্বীপে নির্বাসিত হয়ে তিনি ‘দ্বৈপ’ নামে পরিচিত হন। এই তথ্য পাওয়া যায় তিব্বতি ঐতিহাসিক তারানাথের গ্রন্থে এবং চন্দ্রগোমীর স্বরচিত ''মনোহরকল্প'' স্তোত্র থেকে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চন্দ্রগোমী ''আর্যতারাদেবীস্তোত্রমুক্তিকামালা'' ইত্যাদি ৩৬টি তান্ত্রিক বজ্রযান সাধনা-বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লেখা সংস্কৃত নাটকটির নাম ''লোকানন্দ''। বর্তমানে নাটকটির তিব্বতি অনুবাদটিই শুধু পাওয়া যায়। চন্দ্রগোমীর বিখ্যাত কীর্তি ''চান্দ্র-ব্যাকরণ''। এটিতে ''অষ্টাধ্যায়ী''-কে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে ৩১০০ সূত্রে ধরেছেন তিনি। এছাড়া ''ন্যায়সিদ্ধ্যালোক'' নামে তর্কশাস্ত্র-বিষয়ক একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার আলোচ্য সময়পর্বে আরও এক নাট্যকারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পারমাররাজ অর্জুনবর্মার গুরু মদন। জাতিতে বাঙালি মদন যৌবনে মালবে গিয়ে তাঁর কবিত্বশক্তির জন্য ‘বাল সরস্বতী’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর রচিত নাটকের নাম ''পারিজাতমঞ্জরী'' বা ''বিজয়শ্রী''। এটি শ্রীহর্ষের ''রত্নাবলী''-র অনুকরণে রচিত। এই নাটকে ধোয়ীর ''পবনদূত''-এর মতো সমকালীন রাজাকেই নায়ক করা হয়েছে। গ্রন্থটির অংশমাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ==বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য== প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার শেষ পর্বে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা রূপে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের উদ্ভব। এই ভাষাগুলি প্রথমে ছিল সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, পরে তা গৃহীত হয় সাহিত্যের মাধ্যম রূপে। খ্রিস্টপূর্ব কালেই প্রাকৃতের আবির্ভাব। সম্রাট অশোকের রাজ্যশাসন-সংক্রান্ত লিপিগুলির অধিকাংশই বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রাকৃতে লেখা। পরে তা থেকে গড়ে ওঠে সাহিত্যিক প্রাকৃত। পূর্ব ভারতে ব্যবহৃত হত মাগধী প্রাকৃত। এই প্রাকৃতে লেখা খুব অল্প রচনাই পাওয়া গিয়েছে। অবশ্য বাংলার কবি ও পণ্ডিতেরা যে অন্য প্রাকৃত জানতেন না তা নয়। তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী অনেকগুলি প্রাকৃত ও অপভ্রংশ গ্রন্থ পাওয়া গিয়েছে। তবে সেগুলি বাঙালির রচনা কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। যেমন, হালের ''গাহাসত্তসঈ'' অথবা পিঙ্গলের প্রাকৃত ছন্দশিক্ষার গ্রন্থ ''প্রাকৃতপৈঙ্গল''। মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতে রচিত ''গাহাসত্তসঈ'' সর্বপ্রাচীন কবিতা সংগ্রহ। অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, সাতবাহন রাজা হালই এই গ্রন্থের সংকলক। সেই হিসেবে এটি খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে সংকলিত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সংশয় জাগে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের দুই বিশিষ্ট গ্রন্থকার প্রবরসেন (১/৬৪, ৩/২, ৩/৮, ৩/১৬) ও বাক্‌পতিরাজের (১/১৫) কবিতা এতে সংকলিত হয়েছে বলে। এগুলি অবশ্য প্রক্ষিপ্তও হতে পারে। যাই হোক, গ্রন্থটি কয়েকটি কারণে উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী সংস্কৃত শ্লোক-সংগ্রহগুলির মূল আদর্শস্বরূপ ছিল এই গ্রন্থ। এখানেই রাধার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। আর মধ্যযুগীয় বাংলা বৈষ্ণব পদের বেশ কয়েকটি এর কোনও না কোনও শ্লোকের প্রত্যক্ষ প্রভাবে রচিত। এই গ্রন্থের দু-একটি শ্লোকে বাংলার জনজীবনও চিত্রিত হয়েছে। সম্ভবত সংশ্লিষ্ট শ্লোকগুলি বাঙালি কবিদের রচনা। ''প্রাকৃতপৈঙ্গল'' গ্রন্থটিও একপ্রকার সংকলন গ্রন্থ, তবে এই সংকলনের বিশেষ উদ্দেশ্যটি হল প্রাকৃত ছন্দে পাঠককে অভিজ্ঞ করে তোলা। গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল শৌরসেনী প্রাকৃত ও অপভ্রংশে। সম্ভবত চতুর্দশ শতকে কাশীতে এটির সংকলনকার্য সমাপ্ত হয়েছিল। সংকলনকর্তা হিসেবে বিশিষ্ট ছন্দশাস্ত্রবিদ পিঙ্গলের নাম উল্লিখিত হয়েছে। তিনি যে বাঙালি ছিলেন না, তা অনুমান করা যায় গ্রন্থে বাঙালির প্রতি তাঁর কয়েকটি কটাক্ষ থেকেই। তবে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় কৃষ্ণকথার কিছু বিশিষ্ট উপাদান এতে নথিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু শ্লোকে বাংলার ভাব, বিষয়বস্তু ও ভাষাকৌশলের আভাস পাওয়া যায়। কয়েকটি শ্লোকে বাঙালি জীবনের ছায়াপাতও ঘটেছে। 2atum1b179gq9c6c1fy1zlzodyumqu6 85326 85325 2025-06-26T03:51:50Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য */ 85326 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম কবি শরণ। তাঁর ব্যক্তিপরিচয় বিশেষ জানা যায় না। জয়দেব ''গীতগোবিন্দম্‌''-এ লিখেছেন, “শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরুহদ্রুতে”, অর্থাৎ শরণের দক্ষতা ছিল দুরুহ শব্দ দ্বারা দ্রুত বেগে শ্লোক রচনায়। ''দুর্ঘটবৃত্তি'' নামক ব্যাকরণের রচয়িতা শরণদেব ইনিই কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করা যায়নি। শরণের ২২টি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। আরও কিছু পদ সংকলিত হয়েছে রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী''-তে। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরণের কোনও শ্লোকই বাংলার বাইরে কোনও শ্লোক সংকলনে স্থান পায়নি। এই কারণেই তাঁর বাঙালিত্বের দাবি আরও জোরদার হয়। সাহিত্যের কোনও কোনও ইতিহাসবিদ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত কবি লক্ষ্মীধরের কথা বলেছেন। ২০ সর্গে রচিত ''চক্রপাণিবিজয়'' নামক মহাকাব্যে দেওয়া তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি গৌড়ের ‘ভট্টাঙ্কিত কোশল’ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বগুড়া জেলার কুশৈল গ্রাম। কবি ভোজদেব নামে তাঁর এক পূর্বপুরুষের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকের মতে, ইনি বঙ্গের রাজা ভোজবর্মদেব। লক্ষ্মীধরের মহাকাব্যে অসুররাজ বানের কন্যা ঊষার পরিণয়ের প্রসঙ্গ আছে। এছাড়া কয়েকটি কোষকাব্যে কবির কিছু প্রকীর্ণ শ্লোকও সংকলিত হয়েছে। কাব্যরচনায় বাঙালি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করলেও নাট্যরচনায় দৈন্যই প্রকাশ করেছে। সমগ্র মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কোনও নাটক রচিত হয়নি। অবশ্য জনসাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য লোকনাট্য, কৃষ্ণযাত্রা বা নাটগীত ধরনের নাট্যশৈলীগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। সাহিত্যের ইতিহাসবিদদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌''-এও লোকাভিনয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। তারই অনুসারী ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন''-ও সাধারণের নাট্যরসপিপাসা চরিতার্থ করে থাকবে। তবু বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকারের উৎকৃষ্ট রচনার কোনও পরিচয় তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী যুগে নেই। অথচ সুবিশাল সংস্কৃত সাহিত্যের বড়ো অংশ দৃশ্যকাব্য, যা রূপক ও উপরূপকে প্রায় ২৮টি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রায় সহস্রাব্দ কাল ধরে ভাস, অশ্বঘোষ, কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীহর্ষ প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকার ভারতীয় নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সেই ঐতিহ্য যে অল্পবিস্তর বাংলাতেও প্রবেশ করেছিল এবং সংস্কৃত নাট্যকারদের অনুপ্রেরণায় কোনও কোনও অক্ষম লেখক কিছু নাটক রচনাও করেছিলেন, তার কিছু পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে সাগরনন্দী রচিত ''নাটকলক্ষণরত্নকোষ'' গ্রন্থে। তিনি বাঙালির লেখা অনেকগুলি নাটকের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলির একটিও বর্তমানে পাওয়া যায় না। এর থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, সেগুলি কখনই জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি এবং কালের প্রকোপে সেই অকিঞ্চিৎকর রচনাগুলি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও গবেষকের মতে, নাট্যকার ভট্টনারায়ণ, মুরারি, বিশাখদত্ত ও ক্ষেমীশ্বর বাঙালি ছিলেন। এই দাবির পিছনে সুস্পষ্ট কোনও যুক্তি বা প্রমাণ নেই। বাংলার একটি সুপ্রাচীন জনশ্রুতিই ভট্টনারায়ণের বাঙালিত্বের দাবিদার। কুলজীগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে যে, গৌড়াধিপতি আদিশূর কান্যকুব্জ বা কনৌজ থেকে যে পাঁচজন বৈদিক ব্রাহ্মণকে আনয়ন করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ভট্টনারায়ণ। কিন্তু কুলজীগ্রন্থগুলির ঐতিহাসিকত্ব নিয়ে সংশয় আছে এবং কথিত আদিশূরের প্রকৃত পরিচয় আজও অনির্ধারিত। অবশ্য ভট্টনারায়ণের ''বেণীসংহার'' নাটকের সাহিত্যরীতিতে ও ভাষার ছাঁদে গৌড়ী রীতির ছাপ আছে। তাই মূলত জনশ্রুতি ও রচনাপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কোনও কোনও পাশ্চাত্য গবেষক তাঁকে বাঙালি বলে উল্লেখ করেছেন। দশম শতকের নাট্যকার মুরারির ''অনর্ঘরাঘব'' নায়কের কাহিনি রামায়ণ থেকে গৃহীত। এই নাটকে একদা কলচুরি রাজধানী নর্মদা-তীরবর্তী মাহিষ্মতী নগরীর কথা আছে। তাই বৈদিক ব্রাহ্মণদের আদিপুরুষ মুরারি ও নাট্যকার মুরারি অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আনুমানিক দশক শতকের নাট্যকার ক্ষেমীশ্বরের ''চণ্ডকৌশিক'' নাটকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নাটকটি লেখা হয়েছে রাজা মহীপালের সভায়। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অনুমান, এই মহীপাল পালবংশীয় রাজা মহীপালদেব। অন্যদিকে পিশলের বক্তব্য, ইনি আসলে গুর্জর-প্রতিহার রাজা প্রথম মহীপাল। লক্ষণীয় নাটকটির প্রাচীনতম পুথি পাওয়া গিয়েছে নেপালে। এই নাটকে হরিশ্চন্দ্র ও বিশ্বামিত্রের কাহিনি নাট্যাকারে বর্ণিত। নবম শতকের পূর্ববর্তী নাট্যকার বিশাখদত্তের নাটকে বাঙালিত্বের কোনও চিহ্নই নেই। ''মুদ্রারাক্ষস''-এর বিষয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন লাভ ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চাণক্যের ভূমিকা পর্যালোচনা। এছাড়া একাদশ-দ্বাদশ শতকের নাট্যকার কৃষ্ণমিশ্রকেও কেউ কেউ বাঙালি মনে করেন। তাঁর ''প্রবোধচন্দ্রোদয়'' নাটকের কয়েকটি শ্লোকে গৌড়, রাঢ়াপুরী, ভূরিশ্রেষ্ঠ প্রভৃতি স্থাননামের উল্লেখ আছে, আর প্রস্তাবনায় আছে গোপালের নাম। কিন্তু এগুলির অন্যবিধ ব্যাখ্যায় কৃষ্ণমিশ্রের বাঙালিত্বের দাবি খারিজ হয়ে যেতে পারে। তুলনায় প্রাচীন বাংলার প্রসিদ্ধ বৈয়াকরণ চন্দ্রগোমীর বাঙালিত্ব নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তিনি বরেন্দ্রভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। একদা চন্দ্রদ্বীপে নির্বাসিত হয়ে তিনি ‘দ্বৈপ’ নামে পরিচিত হন। এই তথ্য পাওয়া যায় তিব্বতি ঐতিহাসিক তারানাথের গ্রন্থে এবং চন্দ্রগোমীর স্বরচিত ''মনোহরকল্প'' স্তোত্র থেকে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চন্দ্রগোমী ''আর্যতারাদেবীস্তোত্রমুক্তিকামালা'' ইত্যাদি ৩৬টি তান্ত্রিক বজ্রযান সাধনা-বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লেখা সংস্কৃত নাটকটির নাম ''লোকানন্দ''। বর্তমানে নাটকটির তিব্বতি অনুবাদটিই শুধু পাওয়া যায়। চন্দ্রগোমীর বিখ্যাত কীর্তি ''চান্দ্র-ব্যাকরণ''। এটিতে ''অষ্টাধ্যায়ী''-কে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে ৩১০০ সূত্রে ধরেছেন তিনি। এছাড়া ''ন্যায়সিদ্ধ্যালোক'' নামে তর্কশাস্ত্র-বিষয়ক একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার আলোচ্য সময়পর্বে আরও এক নাট্যকারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পারমাররাজ অর্জুনবর্মার গুরু মদন। জাতিতে বাঙালি মদন যৌবনে মালবে গিয়ে তাঁর কবিত্বশক্তির জন্য ‘বাল সরস্বতী’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর রচিত নাটকের নাম ''পারিজাতমঞ্জরী'' বা ''বিজয়শ্রী''। এটি শ্রীহর্ষের ''রত্নাবলী''-র অনুকরণে রচিত। এই নাটকে ধোয়ীর ''পবনদূত''-এর মতো সমকালীন রাজাকেই নায়ক করা হয়েছে। গ্রন্থটির অংশমাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ==বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য== প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার শেষ পর্বে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা রূপে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের উদ্ভব। এই ভাষাগুলি প্রথমে ছিল সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, পরে তা গৃহীত হয় সাহিত্যের মাধ্যম রূপে। খ্রিস্টপূর্ব কালেই প্রাকৃতের আবির্ভাব। সম্রাট অশোকের রাজ্যশাসন-সংক্রান্ত লিপিগুলির অধিকাংশই বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রাকৃতে লেখা। পরে তা থেকে গড়ে ওঠে সাহিত্যিক প্রাকৃত। পূর্ব ভারতে ব্যবহৃত হত মাগধী প্রাকৃত। এই প্রাকৃতে লেখা খুব অল্প রচনাই পাওয়া গিয়েছে। অবশ্য বাংলার কবি ও পণ্ডিতেরা যে অন্য প্রাকৃত জানতেন না তা নয়। তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী অনেকগুলি প্রাকৃত ও অপভ্রংশ গ্রন্থ পাওয়া গিয়েছে। তবে সেগুলি বাঙালির রচনা কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। যেমন, হালের ''গাহাসত্তসঈ'' অথবা পিঙ্গলের প্রাকৃত ছন্দশিক্ষার গ্রন্থ ''প্রাকৃতপৈঙ্গল''। মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতে রচিত ''গাহাসত্তসঈ'' সর্বপ্রাচীন কবিতা সংগ্রহ। অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, সাতবাহন রাজা হালই এই গ্রন্থের সংকলক। সেই হিসেবে এটি খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে সংকলিত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সংশয় জাগে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের দুই বিশিষ্ট গ্রন্থকার প্রবরসেন (১/৬৪, ৩/২, ৩/৮, ৩/১৬) ও বাক্‌পতিরাজের (১/১৫) কবিতা এতে সংকলিত হয়েছে বলে। এগুলি অবশ্য প্রক্ষিপ্তও হতে পারে। যাই হোক, গ্রন্থটি কয়েকটি কারণে উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী সংস্কৃত শ্লোক-সংগ্রহগুলির মূল আদর্শস্বরূপ ছিল এই গ্রন্থ। এখানেই রাধার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। আর মধ্যযুগীয় বাংলা বৈষ্ণব পদের বেশ কয়েকটি এর কোনও না কোনও শ্লোকের প্রত্যক্ষ প্রভাবে রচিত। এই গ্রন্থের দু-একটি শ্লোকে বাংলার জনজীবনও চিত্রিত হয়েছে। সম্ভবত সংশ্লিষ্ট শ্লোকগুলি বাঙালি কবিদের রচনা। ''প্রাকৃতপৈঙ্গল'' গ্রন্থটিও একপ্রকার সংকলন গ্রন্থ, তবে এই সংকলনের বিশেষ উদ্দেশ্যটি হল প্রাকৃত ছন্দে পাঠককে অভিজ্ঞ করে তোলা। গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল শৌরসেনী প্রাকৃত ও অপভ্রংশে। সম্ভবত চতুর্দশ শতকে কাশীতে এটির সংকলনকার্য সমাপ্ত হয়েছিল। সংকলনকর্তা হিসেবে বিশিষ্ট ছন্দশাস্ত্রবিদ পিঙ্গলের নাম উল্লিখিত হয়েছে। তিনি যে বাঙালি ছিলেন না, তা অনুমান করা যায় গ্রন্থে বাঙালির প্রতি তাঁর কয়েকটি কটাক্ষ থেকেই। তবে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় কৃষ্ণকথার কিছু বিশিষ্ট উপাদান এতে নথিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু শ্লোকে বাংলার ভাব, বিষয়বস্তু ও ভাষাকৌশলের আভাস পাওয়া যায়। কয়েকটি শ্লোকে বাঙালি জীবনের ছায়াপাতও ঘটেছে। দুটি প্রাকৃত আখ্যানকাব্যকে কেউ কেউ বাঙালির রচনা বলে নির্দেশ করেছেন: প্রবরসেনের ''সেতুবন্ধ'' বা ''দহমুহবহো'' এবং বাক্‌পতিরাজের ''গউড়বহো''। দুই লেখকেরই জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায় না। ''সেতুবন্ধ'' মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতে রচিত ষষ্ঠ শতাব্দীর গ্রন্থ। রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডের বিষয় এখানে অনুসৃত হয়েছে। গ্রন্থটি এতই প্রসিদ্ধ ছিল যে দণ্ডী এর প্রশস্তিতে বলেছেন, “সাগরঃ সূক্তিরত্নানাং সেতুবন্ধাদি যন্ময়ম্‌”। অন্যদিকে আনুমানিক সপ্তম শতকে বাক্‌পতিরাজের লেখা ''গউড়বহো'' শৌরসেনী প্রাকৃতে লেখা ইতিহাস ও কল্পনার মিশ্রণ। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী এই রচনায় বাংলা মঙ্গলকাব্যের পূর্বাভাস দেখতে পেয়েছেন। কাব্যের সূচনায় বিভিন্ন দেবদেবীর বন্দনা আছে, গ্রন্থোৎপত্তির কারণ বর্ণনার মতো কবির কৈফিয়ত আছে, এছাড়াও মঙ্গলকাব্যের কিছু আনুষঙ্গিক উপাদানও এখানে পাওয়া যায়। এই সূত্র ধরে বাক্‌পতিরাজকে বাঙালি বলে বিবেচনা করাই যায়। ldw1t8agabgkn1gvl2k2p1s7bwv9dcb 85327 85326 2025-06-26T03:54:31Z Jonoikobangali 676 /* বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য */ 85327 wikitext text/x-wiki প্রাচীন আর্যসাহিত্য থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পার হয়ে সিন্ধু-সরস্বতী নদী উপত্যকায় প্রথম জনবসতি স্থাপন করেছিল আর্যরা। ক্রমশ তাদের প্রসার ঘটে মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এবং সবশেষে প্রত্যন্ত পূর্ব ভারতে। এই কারণে পূর্ব ভারত সুদীর্ঘকাল আর্যদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। প্রাচীন বাংলা এই পূর্ব ভারতেরই অংশ ছিল। আর্য-আগমনের আগেও এখানে জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রিক জাতির মানুষ, যারা প্রাগার্য বা অনার্য নামেও অভিহিত হত। স্থান হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্য ঋগ্বেদে নেই। শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে: “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মানয়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধশ্চের পাদাঃ”। বোঝা যায়, আর্য-বসতির বহিরাঞ্চল ও সেখানকার অধিবাসীদের ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পাখি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এইসব অঞ্চলে আর্যদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পূর্বাবধি এইরকম উন্নাসিকতা দেখা যায়। মৌর্যযুগে যখন পূর্ব ভারত আর্যাবর্তের সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে, তখনই সম্ভবত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটে এবং সেই সুবাদে বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্ম ও সংস্কৃতি স্থানীয় প্রাগার্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারতের সূত্র থেকে অনুমিত হয়, মহাকাব্যের যুগে পূর্ব ভারতে আর্যপ্রভাব ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ক্রমে প্রাধান্য অর্জন করতে শুরু করেছিল। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের মনোভাবেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছিল। বাংলার আর্যীকরণ সম্ভবত পূর্ণ রূপ লাভ করে গুপ্তযুগে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী গুপ্তসম্রাটগণ এক শক্তিশালী, সুগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। প্রাচীন বাংলাও তাঁদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গুপ্তযুগেই ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে বাংলা অধিবাসীদের সম্যক পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে চর্চার মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার বহনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। এরই ফলশ্রুতি বাঙালির সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যচর্চা। ==সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা== ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থের ভাষা বৈদিক বা ছান্দস—যে ভাষাটি উৎসারিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখা থেকে। বৈদিক ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি একটি কথ্য রূপও প্রচলিত ছিল। আর্যাবর্তের নানা স্থানে আঞ্চলিক বিকৃতি সহ কথিত হত সেই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ বৈয়াকরণ পাণিনি তাঁর ''অষ্টাধ্যায়ী'' গ্রন্থে প্রায় ৪০০০ সূত্র নির্ধারণ করে এই ভাষার সংস্কার ঘটান। ব্যাকরণ-নিয়ন্ত্রিত এই ভাষা পরিচিত হয় সংস্কৃত ভাষা নামে। তবে সংস্কৃত ভাষা খুব অল্প ক্ষেত্রেই কথিত হত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল কাব্য, নাটক, আখ্যায়িকা ইত্যাদি রসসাহিত্য এবং পুরাণ, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি ধর্ম ও জ্ঞানবিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ রচনার কাজে। সংস্কৃত একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা হলেও গ্রন্থরচনায় এর ব্যবহার বহু পরবর্তী কাল পর্যন্ত হয়ে এসেছে। কালক্রমে সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে শৈথিল্য এবং সেই সূত্রে যে উচ্চারণ-বিকৃতি দেখা দিয়েছিল সেই বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা অঞ্চলে। ‘প্রকৃতি’ অর্থাৎ সাধারণ প্রজাপুঞ্জের মুখের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এই ভাষার নাম হল ‘প্রাকৃত’। সম্রাট অশোকের বহু লিপি প্রাকৃতে রচিত। আরও পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হল। তখন এই ভাষা পরিচিত হল ‘সাহিত্যিক প্রাকৃত’ নামে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, পৈশাচী, মাগধী ও অর্ধমাগধী প্রাকৃতে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কালের নিয়মে প্রাকৃতেও দেখা দিল বিকৃতি। মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হল তার নাম অপভ্রংশ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই ভাষাতেও রচিত হল সাহিত্য। অবশেষে অপভ্রংশ রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নিল হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। বাংলা ভাষার অব্যবহিত উৎসব পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ। ==বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য== বাংলা ভাষার উদ্ভবের পূর্বে বাঙালি প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই রসসাহিত্যের চর্চা করেছিল। গুপ্তযুগ থেকে শুরু করে তুর্কি আক্রমণের পূর্বাবধি এই ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বাংলার তুলনায় সংস্কৃতে অধিক সংখ্যায় গ্রন্থরচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষায় কাব্যরচনার ফলে ‘গৌড়ী রীতি’ নামে পরিচিত একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক রীতিও সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল, এই রীতি তারই নামাঙ্কিত। সপ্তম শতকের আলংকারিক ভামহের ''কাব্যালঙ্কার'' গ্রন্থে গৌড়ী রীতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বামন তাঁর ''কাব্যালঙ্কার সূত্রবৃত্তি'' গ্রন্থে বৈদর্ভী ও পাঞ্চালী রীতির সঙ্গে ‘গৌড়ীয়া’ রীতিকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তাতে নিন্দনীয় কিছু নেই। কিন্তু অষ্টম শতকের আলংকারিক দণ্ডী ''কাব্যাদর্শ'' গ্রন্থে যেভাবে বৈদর্ভী রীতির বিপরীতে একে স্থাপন করেছেন, তাতে গৌড়ী রীতির অনুপ্রাসবাহুল্য ও সমতাগুণের অভাব ‘দোষ’ বলেই প্রতিভাত হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট সম্ভবত ‘অক্ষরডম্বর’ অর্থাৎ শব্দাড়ম্বরের জন্য গৌড়ী রীতির প্রতি বিরূপ ছিলেন। তাছাড়া গৌড়ী রীতির রচনা অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ। চতুর্দশ শতকের আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ ''সাহিত্যদর্পণ'' গ্রন্থেও গৌড়ী রীতির ওজঃগুণ, সমাসবহুলতা ও বিপুল শব্দাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য শুধু যে বাঙালি সাহিত্যিকেরাই গৌড়ী রীতিতে সাহিত্য রচনা করেছিলেন তা নয়, বহির্বঙ্গের অনেক কবিও তাঁদের রচনায় এই রীতি প্রয়োগ করেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের সব শ্রেণির রসসাহিত্যই ‘কাব্য’ নামে অভিহিত। নাটক মঞ্চায়ন ও দর্শনসাপেক্ষ বলে ‘দৃশ্যকাব্য’ এবং কাব্য পাঠযোগ্য বলে ‘শ্রব্যকাব্য’ নামে পরিচিত ছিল। শ্রব্যকাব্য আবার ছন্দের ব্যবহার অনুযায়ী গদ্য, পদ্য ও গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পূ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বাঙালি কবির গদ্যকাব্যের সন্ধান বিশেষ পাওয়া যায়নি। বরং তাঁরা পদ্যকাব্যের মধ্যে মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোষকাব্য রচনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এইসব কাব্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। রামায়ণ-মহাভারত থেকে সংগৃহীত বিষয় অবলম্বনে রচিত কাব্য ছাড়াও ছিল দূতকাব্য, গীতিকাব্য ও ঐতিহাসিক কাব্যের উপযোগী কিছু বিষয়। আলোচ্য সময়পর্বে চম্পূকাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে দুটি কোষকাব্য খুব খ্যাতি অর্জন করেছিল। সংস্কৃত কাব্যে অভিনন্দ নামে একাধিক কবির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ‘গৌড় অভিনন্দ’ নামে যিনি পরিচিত, তিনি সম্ভবত গৌড়বাসী ছিলেন। নবম শতকের কবি অভিনন্দ রামায়ণ অবলম্বনে রচনা করেন ''রামচরিত'' কাব্যটি। তাঁর বেশ কিছু শ্লোক সংকলিত হয়েছে ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'', ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', ''সুক্তিমুক্তাবলী'', ''পদ্যাবলী'', ''সুভাষিতাবলী'' প্রভৃতি কোষকাব্যে। এইসব শ্লোক ''রামচরিত''-এ নেই। সম্ভবত এগুলি অভিনন্দের অন্যান্য প্রকীর্ণ শ্লোক। ''রামচরিত'' কাব্যটি ৪০টি সর্গে রচিত। আখ্যানভাগ গৃহীত হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ও যুদ্ধকাণ্ড থেকে। রামের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য কবি আখ্যানে কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সম্ভবত বাংলার তন্ত্রপ্রাধান্যের জন্যই এই বৈষ্ণব কাব্যে দেবীমাহাত্ম্যও কীর্তিত হয়েছে। কালিদাস-পরবর্তী যুগে এমন সুললিত সাবলীল রচনা অল্পই পাওয়া যায়। কাব্যটি বৈদর্ভী রীতিতে রচিত। ''কাদম্বরী কথাসার'' গ্রন্থটির রচয়িতাও অভিনন্দ। তবে ইনি গৌড়বাসী কিনা তা স্পষ্ট জানা যায় না। অপর এক ''রামচরিত'' কাব্যের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী যে বাঙালি ছিলেন তার সাক্ষ্যে কাব্যে কবির আত্মপরিচয় থেকেই জানা যায়। বরেন্দ্রের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধনে সন্ধ্যাকরের জন্ম। তাঁর পিতা প্রজাপতির নন্দী ছিলেন পালরাজা মদনদেবপালের সান্ধিবিগ্রহিক মন্ত্রী। কাব্যটি সম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত। কারণ, এতে মদনপালদেবের (রাজত্বকাল ১১৪০—১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ২২০। কাব্যটি শ্লেষ-কাব্য, অর্থাৎ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক শব্দের সাহায্যে কবি একই সঙ্গে রামায়ণের রামের এবং গৌড়াধিপতি রামপালদেবের কীর্তি যুগপৎ বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর শ্লেষকে ‘অক্লেশন’ বললেও কাব্যটি যত্নকৃত প্রয়াসেই রচিত। কবি নিজেকে ‘কলিকাল বাল্মীকি’ বলে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাল্মীকির কাব্যের প্রসাদগুণ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। অবশ্য পালযুগের শেষ পর্বের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এই কাব্যের কিছুটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাভারত অবলম্বনে রচিত কাব্যের মধ্যে নীতিবর্মার ''কীচকবধ'' বিখ্যাত। কবির জন্ম একাদশ শতকের প্রথমার্ধে। তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধানত দুটি কারণে তাঁকে বাঙালি বলে অনুমান করা হয়। প্রথমত, তাঁর কাব্যের প্রাপ্ত সকল পুথিই বাংলা লিপিতে লেখা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটির যতগুলি টীকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির রচয়িতাও বাঙালি। বিরাটপর্ব থেকে আখ্যানবস্তু সংগ্রহ করে পাঁচ সর্গে রচিত এই কাব্যের মোট শ্লোকসংখ্যা ১১৭। কাব্যটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, তৃতীয় সর্গটি শ্লেষ অলংকারে রচিত এবং বাকি চারটি সর্গে যমক অলংকারের প্রাধান্য। শব্দপ্রয়োগে কবি চাতুর্য দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে কাব্যটি কিছুটা কৃত্রিমতা দোষেও দুষ্ট হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই সংক্ষিপ্ত রচনায় কবি প্রায় বারোটি ছন্দ প্রয়োগ করে নিজের ছন্দনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। মহাভারতেরই নল-দময়ন্তীর আখ্যান অবলম্বনে শ্রীহর্ষ রচনা করেন ''নৈষধচরিত''। মাত্র দুশো শ্লোকে নিবদ্ধ কাহিনি শ্রীহর্ষের লেখনীতে ২৫০০ শ্লোকবিশিষ্ট মহাকাব্যে রূপান্তরিত। মূল গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কবি কামশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রও আলোচনা করেছেন। পদলালিত্য এই রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে আধুনিক রুচির বিচারে কেউ কেউ কাব্যটিতে বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। নানারকম দোষও এই কাব্যে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীহর্ষের মাতুল ছিলেন প্রসিদ্ধ কাশ্মীরী আলংকারিক তথা ''কাব্যপ্রকাশ'' গ্রন্থের রচয়িতা মম্মট ভট্ট। তিনি নাকি ভাগিনেয়ের কাব্য পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দোষ পরিচ্ছেদ’ লিখতে তিনি বৃথাই অসংখ্য কাব্য অনুসন্ধান করেছেন, শ্রীহর্ষের রচনাটিও আগে হাতে এলে তাঁর পরিশ্রম লাঘব হত। আসলে কাব্যরচনার উচ্ছ্বাসে কবি মাঝে মাঝে মাত্রাবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভার বর্ণনায় অনর্থক পাঁচটি দীর্ঘ সর্গ জুড়ে কাব্যটিকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছেন। কবির পরিচয় নিয়ে কিছু সংশয় আছে। তাঁর পিতার নাম শ্রীহীর ও মাতার নাম মামল্লদেবী। কাব্যের শেষে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি কনৌজরাজ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। ''প্রবন্ধকোষ'' গ্রন্থের রচয়িতা রাজশেখর সূরির সাক্ষ্যে মনে হয়, কবি দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কনৌজরাজ বিজয়চন্দ্র ও জয়চন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর বাঙালিত্বের বড়ো দাবিদার তাঁর কাব্যটি। এই কাব্যে কয়েকটি বাঙালি আচার ও সংস্কারের উল্লেখ আছে। যেমন, বিবাহিতা নারীর শাঁখা পরা, বিবাহে মাছ-ভাত খাওয়া, উলু দেওয়া, চালের পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা, বরের মাথায় মুকুট ও হাতে দর্পণ ধরা এবং সেই সঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে কিছু বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি স্ত্রী-আচারও। ভাষারীতির দিক থেকেও এটি বাংলার রচনা বলে সিদ্ধান্ত করা চলে। ণ/ন, বর্গীয় ব/অন্তঃস্থ ব-এর মধ্যে ভেদ করা হয়নি। সর্বোপরি কাব্যটি গৌড়ী রীতিতে রচিত। বঙ্গীয় কুলজীগ্রন্থে শ্রীহর্ষকে মেধা তিথির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য তথ্যসূত্রে এই সব প্রমাণ খণ্ডন করার চেষ্টাও দেখা যায়। বাঙালি রচিত সংস্কৃত গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখনীয় কবি জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের নাম। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব ছিলেন সেন রাজসভার পঞ্চরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্ন। কাব্যে প্রদত্ত আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মাতার নাম রমাদেবী বা বামাদেবী। কেউ কেউ মনে করেন নর্তকী পদ্মাবতী ছিলেন তাঁর পত্নী এবং কবি ছিলেন তাঁর নৃত্যকালীন বাদক। কাব্যের গায়েন পরাশর ছিলেন কবির প্রিয় বন্ধু। কিন্তু জয়দেব তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কিছুই বলেননি। তাই গবেষক মহলে তা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশের মতে, জয়দেব ছিলেন বাঙালি এবং তাঁর জন্মস্থান ছিল বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলি গ্রাম, মতান্তরে বগুড়া জেলার কেন্দুল গ্রাম। জয়দেবের খ্যাতি তাঁকে বাংলার বাইরেও টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহির্বঙ্গের গবেষকদের কেউ কেউ বিহারের তিরহুত বিভাগের ঝেঞ্ঝারপুর শহরের কাছে অবস্থিত কেন্দোলি গ্রামকে অথবা ওড়িশার পুরীর নিকটবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামকে তাঁর জন্মস্থান বলে দাবি করেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌''-রচয়িতা জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালীন রাসলীলা অবলম্বনে কবি বারোটি সর্গে কাব্যরচনা করেছেন। রাধা ভিন্ন অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণ রাসলীলায় মত্ত হলে ঈর্ষায় রাধা মানিনী হলেন। তখন কৃষ্ণ গোপীদের ছেড়ে রাধার মানভঞ্জন করতে এলেন। অবশেষে অনুতপ্ত কৃষ্ণের অনুনয়-বিনয়ে এবং সখীদের অনুরোধে রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রসন্ন হলে উভয়ের মিলন হল। কাব্যবিশারদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌'' খণ্ডকাব্য ও মহাকাব্য উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বহন করছে। কথাবস্তু তুচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও বারোটি সর্গ কাব্যটিকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি প্রদান করেছে। চরিত্রগুলিও ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাধাকে একটি কাব্যের একক নায়িকা করে কাব্যরচনার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। কৃষ্ণের চরিত্রচিত্রণে কবি ভাগবত বা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের আদর্শ অনুসরণ করেছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এটা স্পষ্ট যে জয়দেব তাঁর নায়ক কৃষ্ণকে ধর্মতৃষ্ণা ও জীবনতৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী করার মানসেই চিত্রিত করেছেন। তাই কাব্যের গোড়ায় তিনি বলেছেন: <poem> :: যদি হরিস্মরণে সরসং মনো / যদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্‌। :: মধুর কোমল কান্ত পদাবলীম্‌ / শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌।। </poem> বস্তুত পৌরাণিক কাহিনিকে লৌকিক প্রেমগাথায় পরিণত করতে গিয়ে কাব্যের কৃষ্ণের বহুবল্লভ, নাগর রূপটিকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছে। মধুর-রসাশ্রিত কৃষ্ণই তার উপজীব্য, যদিও সূচনায় দশাবতার স্তোত্র রচনা করে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যময়-রূপটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কবির রাধা চরিত্রের উৎস সম্ভবত কিছু অর্বাচীন পুরাণ, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কবিতা, সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক, এবং কিছুটা তাঁর নিজস্ব কল্পনা। বিশেষত অষ্টম থেকে দশম সর্গে যে প্রেমিকা রাধার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা এক রোম্যান্টিক কবির কল্পনাপ্রসূত ভাবসম্পদ। একাদশ সর্গের অভিসারিকা রাধার মানবী মূর্তিও পরবর্তীকালে খুব কম কবিও আঁকতে পেরেছেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের সাহিত্যিক গোত্র বিচারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, এতে যেমন মহাকাব্যের লক্ষণ অনুসারে অষ্টাধিক সর্গ, শৃঙ্গার অঙ্গীরস, ধীরোদাত্ত গুণসম্পন্ন নায়ক আছে, তেমনই মহাকাব্যের পক্ষে ক্ষতিকর গীতিধর্মিতাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কাব্যে যে চব্বিশটি গান সংযোজিত হয়েছে সেগুলির ভাষা সংস্কৃত হলেও অপভ্রংশ কবিতার ছন্দমাধুর্য তাতে সুস্পষ্ট। কিথ, ম্যাকডোনাল্ড, ভিন্টারনিৎসের মতো পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এই কাব্যকে গীতিকবিতা বলে বিবেচনা করেছেন। তবে এই কাব্যে নাট্যলক্ষণও কম নেই। কৃষ্ণ, রাধা ও সখী এই তিন মুখ্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। তাই স্যার উইলিয়াম জোনস এটিকে বলেছেন Pastoral Drama বা রাখালিয়া নাট্য। লসেনের মতে, এটি Lyrical Drama বা গীতিনাট্য। আবার লেভি ও পিশেলের ধারণায় এই গান ও নাটকের মধ্যবর্তী Opera শ্রেণির রচনা। কবি নিজে তাঁর রচনাকে বলেছেন ‘প্রবন্ধম্‌’। অবশ্য প্রতি সর্গের পুষ্পিকায় ‘মহাকাব্য’ শব্দটিও প্রযুক্ত হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ''গীতগোবিন্দম্‌'' একটি অভূতপূর্ব সাহিত্যকীর্তি, যার মধ্যে একাধারে গীতিকাব্যের সুরমুর্চ্ছনা, নাটকীয়তা, আখ্যানকাব্যের বর্ণনাত্মক রূপ এবং নৃত্যোপযোগী উপকরণ উপস্থিত। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'' কাব্যে সম্ভবত এই রূপবন্ধটিই অনুসরণ করেছিলেন। ''গীতগোবিন্দম্‌'' কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব সেটির ভাষায়। ভাষার বাহ্যিক আবরণে এটি সংস্কৃত, কিন্তু শাব্দিক প্রয়োগকলা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সমকালীন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ কাব্যের কোমলতা ও নব্যসৃজ্যমান বাংলা ভাষার মাধুর্য কবি তাঁর কাব্যভাষায় অনুরণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গানগুলির মধ্যে যে সুখশ্রাব্য অনুপ্রাস লক্ষ্য করা যায়, তাতে স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার, বিশেষত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই কাব্যে যে অপভ্রংশ পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তা পরবর্তীকালে পয়ার ছন্দে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ত্রিপদীর ভঙ্গিটিও এতে পাওয়া যায়। জয়দেবের পঞ্চমাত্রিক ছন্দ বড়ু চণ্ডীদাস যেমন অনুসরণ করেছেন, তেমনই তা অনুপ্রাণিত করেছে রবীন্দ্রনাথকেও। ''গীতগোবিন্দম্‌'' জয়দেবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা এই গ্রন্থকে ভাগবতের কবিত্বময় ভাষ্য মনে করেন। বৈষ্ণব সমাজে জয়দেব আদিকবি বলে বিবেচিত হন। কারণ, তাঁর রাধাকৃষ্ণ-প্রেমগাথাই বৈষ্ণব পদাবলির উৎসমুখ অবারিত করে দিয়েছিল। সহজিয়াপন্থীদের মতে, জয়দেব আদিগুরু, নবরসিকের একজন। গ্রন্থটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের নানা প্রান্তে এটির অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রানা কুম্ভের ''রসিকপ্রিয়া'', শঙ্কর মিশ্রের ''রসমঞ্জরী'' ও চৈতন্যদাসের ''বালবোধিনী'' টীকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের সন্ত সম্প্রদায়গুলি এই গ্রন্থের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই গ্রন্থের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। তাই জয়দেবও এক ভক্ত বৈষ্ণব ও সাধক-কবি রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। অথচ এই কাব্য রচিত হয়েছিল একদা লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আদিরসের ঢেউ তোলা বিদগ্ধ কলারসিকদের জন্য। জয়দেব সেই “লৌকিক কামনাবাসনাময় আবহের মধ্যে রাধাকৃষ্ণলীলাকে আশ্রয় করে একই সঙ্গে ইন্দ্রিয়কামনা ও প্রেমভক্তির জয়” ঘোষণা করেন। সম্ভবত পৌরাণিক দেবকথার সঙ্গে লৌকিক প্রেমকথার সমন্বয়ই ছিল জয়দেবের কাব্যাদর্শ। এই আদর্শ পরবর্তীকালে প্রভাবিত করেছিল রাজসভার আর-এক কবি বিদ্যাপতিকে। ভাবে, ভাষায় ও ধ্বনিসম্পদে বিদ্যাপতি এই কাব্যের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা শিবসিংহ তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবেশক হিসেবে ''গীতগোবিন্দম্‌''-এর স্থান নির্দেশ করতে গিয়ে এক সমালোচক বলেছেন, “একাধারে পদকাব্য এবং মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরবর্তী বাংলা পদাবলি সাহিত্য এবং মঙ্গলকাব্য সাহিত্য এই দুই সাহিত্যের ধারায় আদিতে গীতগোবিন্দের স্থান।” তুর্কি আক্রমণের পূর্বে বাঙালি রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকৃতি ''গীতগোবিন্দম্‌'' আধুনিক কালেও বাঙালি কবিদের প্রেরণার উৎস রূপে বিরাজমান। সেন রাজসভার অপর বিশিষ্ট কবি আচার্য গোবর্ধন রচনা করেন ''আর্যাসপ্তশতী''। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন কবি। কাব্যশেষে একটি পুষ্পিকা শ্লোকে কবি তাঁর শিষ্য উদয়ন ও ভ্রাতা বলভদ্রের নামও করেছেন। কাব্যটির শ্লোকসংখ্যা অবশ্য সাতশোরও বেশি। শ্লোকগুলি প্রেমমূলক। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, “প্রেম, প্রেমের বহিরঙ্গ বিলাস ও অন্তর্মুখী গভীরতা, প্রেমের ভুজঙ্গ কুটিল গতি ও স্বাভাবিক ঋজুতা এবং সর্বোপরি প্রেমের সূক্ষ্ম গভীর মনস্তত্ত্ব আর্যার শ্লোকাবলীতে বর্ণশাবল্যে চিত্রিত হইয়াছে। জীবন পরিচয়ের নিবিড়তায়, বস্তুদৃষ্টির প্রখরতায় এবং কৌতুকের সস্মিত দীপ্তিতে আচার্যের রচনা বিশিষ্টতার দাবি রাখে।” জয়দেব ও গোবর্ধন একই প্রেমের কথা বলেছেন। কিন্তু জয়দেবের কৃতিত্ব যেখানে ‘কোমল কান্ত পদাবলী’ সৃষ্টিতে, সেখানে গোবর্ধনের দক্ষতা ঘাতগম্ভীর গভীর নাদ সৃজনে। জয়দেবের প্রেম রাধাকৃষ্ণের দেবায়ত সীমায় আবদ্ধ, গোবর্ধন সেই প্রাচীর অতিক্রম করে মানবীয় প্রেমবৈচিত্র্যের বর্ণময় চিত্র অঙ্কন করেছেন। ঋণকৃত আখ্যানের পরিবর্তে গোবর্ধন খণ্ড খণ্ড ভাবের মননপ্রধান প্রকীর্ণ কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ''আর্যাসপ্তশতী''। কবি হালের প্রাকৃত কবিতা সংকলন ''গাহাসত্তসঈ'' গ্রন্থের অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচিত। নিজের কবিত্বশক্তি নিয়ে গোবর্ধনের একটি পাণ্ডিত্যাভিমান ছিল। এক জায়গায় তিনি নিজেকে কালিদাস ও ভবভূতির সমধর্মী বলে দাবি করেছেন। বাস্তবে ততটা না হলেও কবি যে সর্বশাস্ত্রবিদ ও সুপণ্ডিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সভাবন্ধু জয়দেব তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শৃঙ্গারোত্তরসৎপ্রমেয়রচনৈরার্যগোবর্ধন স্পর্ধী কোঽপি ন”। অথচ আশ্চর্যের বিষয় কবির সমকালীন শ্লোক সংগ্রাহক শ্রীধর দাস তাঁর ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে গোবর্ধনের এই কাব্যের কোনও শ্লোক গ্রহণ করেননি। কোষকাব্য বা কাব্য সংকলন সম্পাদনায় বাঙালি কাব্যরসিকদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এই ধরনের কাব্যে পরস্পর-নিরপেক্ষ শ্লোক ব্রজ্যা বা প্রকরণ ক্রমে সজ্জিত হয় (অন্যোন্যানপেক্ষকঃ ব্রজ্যাক্রমেণ রচিতঃ)। এতে সংকলকের সৃষ্টিপ্রতিভার তুলনায় আস্বাদন-দক্ষতার মহত্ত্বই অনুভূত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা পরিপুষ্ট হয়ে উঠলে তবেই এই ধরনের সংকলন গ্রন্থ সম্পাদিত হয়। প্রাপ্ত কোষকাব্যগুলির মধ্যে বাঙালি সংকলক সম্পাদিত প্রাচীনতম গ্রন্থটি হল বিদ্যাকরের ''সুভাষিত রত্নকোষ''। তিনি সম্ভবত পালরাজত্বের শেষ দিকের ব্যক্তি ছিলেন। গ্রন্থটি সংকলনের কাল স্থিরীকৃত হয়েছে দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধ। গ্রন্থের আরম্ভে ‘সুগত ব্রজ্যা’ সংযুক্তির কারণে অনেকে বিদ্যাধরকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মনে করেন। বুদ্ধাকর গুপ্ত, রত্নকীর্তি, সংঘশ্রী, জিতারি নন্দী প্রমুখ অনেক বৌদ্ধ কবির কবিতাও এতে সংকলিত হয়েছে। এছাড়া এই কোষকাব্যে এমন কয়েকজন কবির শ্লোক সংকলিত হয়েছে, যাঁদের কোনও পরিচয় জানা যায় না কিংবা অন্য কোনও সংকলনে যাঁদের শ্লোক সংকলিত হয়নি। কাব্যরচনা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কীর্তিমান ব্যক্তিদের রচিত কবিতাও বিদ্যাকর তাঁর সংকলনে স্থান দিয়েছিলেন। সংকলনে বিধৃত অঙ্গোক, ডিম্বোক, ললিতোক, সরোক, হিদ্দোক, প্রমুখ ‘-ওক’ অন্তক নামধেয় কবিরা বাঙালি ছিলেন বলেই কোনও কোনও গবেষকের ধারণা। এফ. ডবলিউ. টমাস নেপাল থেকে এই গ্রন্থের একটি খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১২ সালে তাঁর সম্পাদনায় বইটি ''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়'' নামে প্রকাশিত হয়। পরে সম্পূর্ণ পুথিটি আবিষ্কৃত হলে সংকলক ও গ্রন্থের আসল নাম জানা যায়। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের ঠিক পরেই যে কোষকাব্যের সংকলন সমাপ্ত হয়েছিল সেটি হল শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' (১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ)। শ্রীধরের পিতা বটু দাস ছিলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও রাজকর্মচারী। শ্রীধর নিজেও মহামাণ্ডলিক পদে বৃত ছিলেন। এই কোষকাব্যের শ্লোকগুলি মোট পাঁচটি ‘প্রবাহ’-এ সংকলিত। দেবদেবী-বিষয়ক পদগুলি সংকলিত হয়েছে ‘অমরপ্রবাহ’ অংশে। মূলত পৌরাণিক দেবতাদেরই স্তুতি করা হয়েছে এখানে। কৃষ্ণ তথা বিষ্ণু-বিষয়ক পদের আধিক্য দৃষ্টে কেউ কেউ শ্রীধরকে বৈষ্ণব বলে মনে করেন। দ্বিতীয় প্রবাহের নাম ‘শৃঙ্গারপ্রবাহ’। এই অংশে প্রাকৃত প্রেমিকা-প্রেমিকার প্রেমের বিভিন্ন স্তর কাব্যভাষায় রূপলাভ করেছে। রাজপ্রশস্তি-বিষয়ক কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে ‘চাটুপ্রবাহ’ অংশে এবং অন্যান্য পদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘অপদেশপ্রবাহ’ ও ‘উচ্চাবচপ্রবাহ’ অংশে। প্রতিটি প্রবাহ কয়েকটি ‘বীচি’-তে বিভক্ত এবং পাঁচটি করে শ্লোক নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি বীচি। এই গ্রন্থে মোট ৪৮৫ জন কবির কবিতা সংকলিত। অজ্ঞাতনামা কবিদের ক্ষেত্রে ‘কস্যচিৎ’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীধর বহু কবিকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলার যে-সব কবির ভাগ্যে সর্বভারতীয় অনুমোদন জোটেনি তাঁদেরও অমরত্ব দিয়েছেন তিনি এই সংকলনে। গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কবিদের জাতি নির্দেশ করা না হলেও, নাম, গাঁই ইত্যাদি বিবেচনা করে লক্ষ্মণসেন, কেশবসেন, উমাপতি ধর, গোবর্ধন আচার্য, কমল গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, তিল চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র, প্রভাকর দত্ত, কালিদাস নন্দী, ত্রিপুরারি পাল প্রমুখ কবিকে বাঙালি বলে শনাক্ত করা কঠিন নয়। সবাই যে ব্রাহ্মণ ছিলেন তা নয়, কায়স্থ, বৈদ্য নট, কেওট প্রভৃতি জাতির লোকেরাও প্রকীর্ণ শ্লোক রচনা করেছেন। ''সুভাষিত রত্নকোষ''-এ সংকলিত কিছু পদ এখানেও লভ্য। অপদেশপ্রবাহ ও উচ্চাবচপ্রবাহের শ্লোকগুলি থেকে তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী বাংলার জনজীবন, শান্ত গ্রামীণ সমাজ এবং বাঙালির পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দারিদ্র্য, ধনসম্পদ, ধর্মাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক খাঁটি তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত কাব্য-প্রকরণের একটি বিশিষ্ট ভাগ দূতকাব্যের প্রেরণা ও আদর্শ কালিদাসের ''মেঘদূত'' কাব্যটি। লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ''পবনদূত'' নামে দূতকাব্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ধোয়ী। কাব্যটি কল্প-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এক বিচিত্র প্রেমকাব্য। কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকেই করেছেন কাব্যের ধীরললিত নায়ক। কাব্যে দেখে যায়, রাজা দক্ষিণদেশে গিয়েছেন। সেখানে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তারপর রাজা দেশে ফিরে এলে বিরহিনী নায়িকা মলয় বায়ুকে দূত করে প্রিয়তমের কাছে প্রেমবার্তা প্রেরণ করছেন। সেই বার্তাটিই কালিদাসের ভঙ্গিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিবৃত করেছেন কবি। বস্তুত কাব্যটিতে মৌলিকতার চিহ্ন বিশেষ নেই। ভাবগভীরতাও তেমন প্রত্যক্ষ করা যায় না। তবে ধোয়ীর অভিনবত্ব এখানেই যে, তিনি সমকালের এক জীবিত রাজাকে গ্রহণ করেছেন কাব্যের নায়ক রূপে। কাব্যটি ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এছাড়া ধোয়ীর আরও ২০টি শ্লোক স্থান পেয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। সেখানে অবশ্য ধোই, ধোয়ীক, ধুয়ী ইত্যাদি নাম উল্লিখিত। ''সেক-শুভোদয়া'' গ্রন্থে ধোয়ী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন মূর্খ এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল তন্তুবায় সম্প্রদায়ে। ধোয়ীর কাব্যে সুহ্মদেশের অন্তরঙ্গ বর্ণনা থেকে মনে হয় তিনি রাঢ় অঞ্চলেরই অধিবাসী ছিলেন। পল্লবিত কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি উমাপতি ধর জয়দেব গোষ্ঠীর অন্যতম। তাঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্য পাওয়া যায়নি। বস্তুত প্রশস্তি ও প্রকীর্ণ কবিতাগুলির মধ্যেই তাঁর কবিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর অনেক শ্লোকই গৃহীত হয়েছে শ্রীধর দাসের ''সদুক্তিকর্ণামৃত'', কলহনের ''সুক্তিমুক্তাবলী'' ও রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী'' সংকলনে। প্রথম কোষকাব্যটিতে কবির ৯০টি শ্লোক সংকলিত। কবি যে পল্লবিত কাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার প্রমাণ কেবল সংকলনে বিধৃত প্রকীর্ণ শ্লোকগুলিতেই নেই, বিভিন্ন প্রশস্তিপত্রেও পাওয়া যায়। বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি, লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর তাম্রলিপি প্রভৃতি অনেক প্রশস্তিলিপির লেখক উমাপতি। গৌড়ী রীতির অক্ষরডম্বর বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় প্রকট। কবিত্ব বলতে তিনি সম্ভবত আলংকারিক আতিশায্যকেই বুঝতেন। মেরুতুঙ্গের ''প্রবন্ধচিন্তামণি'' গ্রন্থে উমাপতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। উমাপতি ছিলেন করণ-কায়স্থ। তিনি কেবল রাজসভাকবিই ছিলেন না, ছিলেন লক্ষ্মণসেনের এক যোগ্য মন্ত্রীও। একদা উদ্ধত রাজাকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতায় তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কবি রাজার উদ্দেশ্যে একটি শ্লোক আবৃত্তি করলে রাজার বোধোদয় হয় এবং তিনি দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে কবিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম কবি শরণ। তাঁর ব্যক্তিপরিচয় বিশেষ জানা যায় না। জয়দেব ''গীতগোবিন্দম্‌''-এ লিখেছেন, “শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরুহদ্রুতে”, অর্থাৎ শরণের দক্ষতা ছিল দুরুহ শব্দ দ্বারা দ্রুত বেগে শ্লোক রচনায়। ''দুর্ঘটবৃত্তি'' নামক ব্যাকরণের রচয়িতা শরণদেব ইনিই কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করা যায়নি। শরণের ২২টি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে ''সদুক্তিকর্ণামৃত'' গ্রন্থে। আরও কিছু পদ সংকলিত হয়েছে রূপ গোস্বামীর ''পদ্যাবলী''-তে। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরণের কোনও শ্লোকই বাংলার বাইরে কোনও শ্লোক সংকলনে স্থান পায়নি। এই কারণেই তাঁর বাঙালিত্বের দাবি আরও জোরদার হয়। সাহিত্যের কোনও কোনও ইতিহাসবিদ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত কবি লক্ষ্মীধরের কথা বলেছেন। ২০ সর্গে রচিত ''চক্রপাণিবিজয়'' নামক মহাকাব্যে দেওয়া তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি গৌড়ের ‘ভট্টাঙ্কিত কোশল’ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বগুড়া জেলার কুশৈল গ্রাম। কবি ভোজদেব নামে তাঁর এক পূর্বপুরুষের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকের মতে, ইনি বঙ্গের রাজা ভোজবর্মদেব। লক্ষ্মীধরের মহাকাব্যে অসুররাজ বানের কন্যা ঊষার পরিণয়ের প্রসঙ্গ আছে। এছাড়া কয়েকটি কোষকাব্যে কবির কিছু প্রকীর্ণ শ্লোকও সংকলিত হয়েছে। কাব্যরচনায় বাঙালি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করলেও নাট্যরচনায় দৈন্যই প্রকাশ করেছে। সমগ্র মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কোনও নাটক রচিত হয়নি। অবশ্য জনসাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য লোকনাট্য, কৃষ্ণযাত্রা বা নাটগীত ধরনের নাট্যশৈলীগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। সাহিত্যের ইতিহাসবিদদের মতে, ''গীতগোবিন্দম্‌''-এও লোকাভিনয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। তারই অনুসারী ''শ্রীকৃষ্ণকীর্তন''-ও সাধারণের নাট্যরসপিপাসা চরিতার্থ করে থাকবে। তবু বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকারের উৎকৃষ্ট রচনার কোনও পরিচয় তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী যুগে নেই। অথচ সুবিশাল সংস্কৃত সাহিত্যের বড়ো অংশ দৃশ্যকাব্য, যা রূপক ও উপরূপকে প্রায় ২৮টি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রায় সহস্রাব্দ কাল ধরে ভাস, অশ্বঘোষ, কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীহর্ষ প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকার ভারতীয় নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সেই ঐতিহ্য যে অল্পবিস্তর বাংলাতেও প্রবেশ করেছিল এবং সংস্কৃত নাট্যকারদের অনুপ্রেরণায় কোনও কোনও অক্ষম লেখক কিছু নাটক রচনাও করেছিলেন, তার কিছু পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে সাগরনন্দী রচিত ''নাটকলক্ষণরত্নকোষ'' গ্রন্থে। তিনি বাঙালির লেখা অনেকগুলি নাটকের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলির একটিও বর্তমানে পাওয়া যায় না। এর থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, সেগুলি কখনই জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি এবং কালের প্রকোপে সেই অকিঞ্চিৎকর রচনাগুলি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও গবেষকের মতে, নাট্যকার ভট্টনারায়ণ, মুরারি, বিশাখদত্ত ও ক্ষেমীশ্বর বাঙালি ছিলেন। এই দাবির পিছনে সুস্পষ্ট কোনও যুক্তি বা প্রমাণ নেই। বাংলার একটি সুপ্রাচীন জনশ্রুতিই ভট্টনারায়ণের বাঙালিত্বের দাবিদার। কুলজীগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে যে, গৌড়াধিপতি আদিশূর কান্যকুব্জ বা কনৌজ থেকে যে পাঁচজন বৈদিক ব্রাহ্মণকে আনয়ন করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ভট্টনারায়ণ। কিন্তু কুলজীগ্রন্থগুলির ঐতিহাসিকত্ব নিয়ে সংশয় আছে এবং কথিত আদিশূরের প্রকৃত পরিচয় আজও অনির্ধারিত। অবশ্য ভট্টনারায়ণের ''বেণীসংহার'' নাটকের সাহিত্যরীতিতে ও ভাষার ছাঁদে গৌড়ী রীতির ছাপ আছে। তাই মূলত জনশ্রুতি ও রচনাপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কোনও কোনও পাশ্চাত্য গবেষক তাঁকে বাঙালি বলে উল্লেখ করেছেন। দশম শতকের নাট্যকার মুরারির ''অনর্ঘরাঘব'' নায়কের কাহিনি রামায়ণ থেকে গৃহীত। এই নাটকে একদা কলচুরি রাজধানী নর্মদা-তীরবর্তী মাহিষ্মতী নগরীর কথা আছে। তাই বৈদিক ব্রাহ্মণদের আদিপুরুষ মুরারি ও নাট্যকার মুরারি অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আনুমানিক দশক শতকের নাট্যকার ক্ষেমীশ্বরের ''চণ্ডকৌশিক'' নাটকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নাটকটি লেখা হয়েছে রাজা মহীপালের সভায়। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অনুমান, এই মহীপাল পালবংশীয় রাজা মহীপালদেব। অন্যদিকে পিশলের বক্তব্য, ইনি আসলে গুর্জর-প্রতিহার রাজা প্রথম মহীপাল। লক্ষণীয় নাটকটির প্রাচীনতম পুথি পাওয়া গিয়েছে নেপালে। এই নাটকে হরিশ্চন্দ্র ও বিশ্বামিত্রের কাহিনি নাট্যাকারে বর্ণিত। নবম শতকের পূর্ববর্তী নাট্যকার বিশাখদত্তের নাটকে বাঙালিত্বের কোনও চিহ্নই নেই। ''মুদ্রারাক্ষস''-এর বিষয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন লাভ ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চাণক্যের ভূমিকা পর্যালোচনা। এছাড়া একাদশ-দ্বাদশ শতকের নাট্যকার কৃষ্ণমিশ্রকেও কেউ কেউ বাঙালি মনে করেন। তাঁর ''প্রবোধচন্দ্রোদয়'' নাটকের কয়েকটি শ্লোকে গৌড়, রাঢ়াপুরী, ভূরিশ্রেষ্ঠ প্রভৃতি স্থাননামের উল্লেখ আছে, আর প্রস্তাবনায় আছে গোপালের নাম। কিন্তু এগুলির অন্যবিধ ব্যাখ্যায় কৃষ্ণমিশ্রের বাঙালিত্বের দাবি খারিজ হয়ে যেতে পারে। তুলনায় প্রাচীন বাংলার প্রসিদ্ধ বৈয়াকরণ চন্দ্রগোমীর বাঙালিত্ব নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তিনি বরেন্দ্রভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। একদা চন্দ্রদ্বীপে নির্বাসিত হয়ে তিনি ‘দ্বৈপ’ নামে পরিচিত হন। এই তথ্য পাওয়া যায় তিব্বতি ঐতিহাসিক তারানাথের গ্রন্থে এবং চন্দ্রগোমীর স্বরচিত ''মনোহরকল্প'' স্তোত্র থেকে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চন্দ্রগোমী ''আর্যতারাদেবীস্তোত্রমুক্তিকামালা'' ইত্যাদি ৩৬টি তান্ত্রিক বজ্রযান সাধনা-বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লেখা সংস্কৃত নাটকটির নাম ''লোকানন্দ''। বর্তমানে নাটকটির তিব্বতি অনুবাদটিই শুধু পাওয়া যায়। চন্দ্রগোমীর বিখ্যাত কীর্তি ''চান্দ্র-ব্যাকরণ''। এটিতে ''অষ্টাধ্যায়ী''-কে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে ৩১০০ সূত্রে ধরেছেন তিনি। এছাড়া ''ন্যায়সিদ্ধ্যালোক'' নামে তর্কশাস্ত্র-বিষয়ক একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার আলোচ্য সময়পর্বে আরও এক নাট্যকারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পারমাররাজ অর্জুনবর্মার গুরু মদন। জাতিতে বাঙালি মদন যৌবনে মালবে গিয়ে তাঁর কবিত্বশক্তির জন্য ‘বাল সরস্বতী’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর রচিত নাটকের নাম ''পারিজাতমঞ্জরী'' বা ''বিজয়শ্রী''। এটি শ্রীহর্ষের ''রত্নাবলী''-র অনুকরণে রচিত। এই নাটকে ধোয়ীর ''পবনদূত''-এর মতো সমকালীন রাজাকেই নায়ক করা হয়েছে। গ্রন্থটির অংশমাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ==বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য== প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার শেষ পর্বে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা রূপে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের উদ্ভব। এই ভাষাগুলি প্রথমে ছিল সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, পরে তা গৃহীত হয় সাহিত্যের মাধ্যম রূপে। খ্রিস্টপূর্ব কালেই প্রাকৃতের আবির্ভাব। সম্রাট অশোকের রাজ্যশাসন-সংক্রান্ত লিপিগুলির অধিকাংশই বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রাকৃতে লেখা। পরে তা থেকে গড়ে ওঠে সাহিত্যিক প্রাকৃত। পূর্ব ভারতে ব্যবহৃত হত মাগধী প্রাকৃত। এই প্রাকৃতে লেখা খুব অল্প রচনাই পাওয়া গিয়েছে। অবশ্য বাংলার কবি ও পণ্ডিতেরা যে অন্য প্রাকৃত জানতেন না তা নয়। তুর্কি আক্রমণের পূর্ববর্তী অনেকগুলি প্রাকৃত ও অপভ্রংশ গ্রন্থ পাওয়া গিয়েছে। তবে সেগুলি বাঙালির রচনা কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। যেমন, হালের ''গাহাসত্তসঈ'' অথবা পিঙ্গলের প্রাকৃত ছন্দশিক্ষার গ্রন্থ ''প্রাকৃতপৈঙ্গল''। মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতে রচিত ''গাহাসত্তসঈ'' সর্বপ্রাচীন কবিতা সংগ্রহ। অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, সাতবাহন রাজা হালই এই গ্রন্থের সংকলক। সেই হিসেবে এটি খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে সংকলিত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সংশয় জাগে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের দুই বিশিষ্ট গ্রন্থকার প্রবরসেন (১/৬৪, ৩/২, ৩/৮, ৩/১৬) ও বাক্‌পতিরাজের (১/১৫) কবিতা এতে সংকলিত হয়েছে বলে। এগুলি অবশ্য প্রক্ষিপ্তও হতে পারে। যাই হোক, গ্রন্থটি কয়েকটি কারণে উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী সংস্কৃত শ্লোক-সংগ্রহগুলির মূল আদর্শস্বরূপ ছিল এই গ্রন্থ। এখানেই রাধার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। আর মধ্যযুগীয় বাংলা বৈষ্ণব পদের বেশ কয়েকটি এর কোনও না কোনও শ্লোকের প্রত্যক্ষ প্রভাবে রচিত। এই গ্রন্থের দু-একটি শ্লোকে বাংলার জনজীবনও চিত্রিত হয়েছে। সম্ভবত সংশ্লিষ্ট শ্লোকগুলি বাঙালি কবিদের রচনা। ''প্রাকৃতপৈঙ্গল'' গ্রন্থটিও একপ্রকার সংকলন গ্রন্থ, তবে এই সংকলনের বিশেষ উদ্দেশ্যটি হল প্রাকৃত ছন্দে পাঠককে অভিজ্ঞ করে তোলা। গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল শৌরসেনী প্রাকৃত ও অপভ্রংশে। সম্ভবত চতুর্দশ শতকে কাশীতে এটির সংকলনকার্য সমাপ্ত হয়েছিল। সংকলনকর্তা হিসেবে বিশিষ্ট ছন্দশাস্ত্রবিদ পিঙ্গলের নাম উল্লিখিত হয়েছে। তিনি যে বাঙালি ছিলেন না, তা অনুমান করা যায় গ্রন্থে বাঙালির প্রতি তাঁর কয়েকটি কটাক্ষ থেকেই। তবে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় কৃষ্ণকথার কিছু বিশিষ্ট উপাদান এতে নথিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু শ্লোকে বাংলার ভাব, বিষয়বস্তু ও ভাষাকৌশলের আভাস পাওয়া যায়। কয়েকটি শ্লোকে বাঙালি জীবনের ছায়াপাতও ঘটেছে। দুটি প্রাকৃত আখ্যানকাব্যকে কেউ কেউ বাঙালির রচনা বলে নির্দেশ করেছেন: প্রবরসেনের ''সেতুবন্ধ'' বা ''দহমুহবহো'' এবং বাক্‌পতিরাজের ''গউড়বহো''। দুই লেখকেরই জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায় না। ''সেতুবন্ধ'' মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতে রচিত ষষ্ঠ শতাব্দীর গ্রন্থ। রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডের বিষয় এখানে অনুসৃত হয়েছে। গ্রন্থটি এতই প্রসিদ্ধ ছিল যে দণ্ডী এর প্রশস্তিতে বলেছেন, “সাগরঃ সূক্তিরত্নানাং সেতুবন্ধাদি যন্ময়ম্‌”। অন্যদিকে আনুমানিক সপ্তম শতকে বাক্‌পতিরাজের লেখা ''গউড়বহো'' শৌরসেনী প্রাকৃতে লেখা ইতিহাস ও কল্পনার মিশ্রণ। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী এই রচনায় বাংলা মঙ্গলকাব্যের পূর্বাভাস দেখতে পেয়েছেন। কাব্যের সূচনায় বিভিন্ন দেবদেবীর বন্দনা আছে, গ্রন্থোৎপত্তির কারণ বর্ণনার মতো কবির কৈফিয়ত আছে, এছাড়াও মঙ্গলকাব্যের কিছু আনুষঙ্গিক উপাদানও এখানে পাওয়া যায়। এই সূত্র ধরে বাক্‌পতিরাজকে বাঙালি বলে বিবেচনা করাই যায়। ==বাঙালি ও অপভ্রংশ সাহিত্য== অপভ্রংশ ভাষার উদ্ভব প্রাকৃত ভাষা থেকে এবং অপভ্রংশের বিকাশ ও বিস্তার খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দশম শতক পর্যন্ত। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, প্রত্যেকটি প্রাকৃত বিবর্তিত হয়েছিল সেই ভাষার অব্যবহিত রূপান্তর অপভ্রংশের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু মাগধী প্রাকৃতের সাহিত্যিক নিদর্শন কিছু পাওয়া গেলেও মাগধী অপভ্রংশে লেখা গ্রন্থ কিছুই পাওয়া যায়নি। মাগধী প্রাকৃতের তুলনায় শৌরসেনী প্রাকৃত অনেক পরিশীলিত। সম্ভবত তাই শৌরসেনী অপভ্রংশ মাধ্যমটিকে ব্যবহার করেছিলেন পাল ও সেন যুগের মহাযানী বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যেরা। বাংলার তান্ত্রিক বৌদ্ধ সাধকেরা তাঁদের গুহ্য সাধনপদ্ধতির কথা রহস্যময় ভাষায় লিখতে শুরু করেন। সেইসব তত্ত্বপ্রকাশের বাহন কখনও হয়ে ওঠে গান, কখনও বা গদ্যাত্মক টীকা-টিপ্পনী। গানগুলি চর্যা ও দোহা নামে খ্যাত। চর্যাগীতি রচিত হয় সদ্যোজাত বাংলা ভাষায় এবং দোহার ভাষা ছিল শৌরসেনী অপভ্রংশ। দোহাকারেরা অধিকাংশই ছিলেন বাঙালি। এখনও পর্যন্ত যে-সব দোহাকোষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলির অন্যতম হল সরহপাদের ''দোহাকোষ'' (অদ্বয়বজ্রের ''সহজম্নায় পঞ্জিকা'' নামক সংস্কৃত টীকা সহ), তিল্লোপাদের ''দোহাকোষ'' (''সারার্থ পঞ্জিকা'' নামক সংস্কৃত টীকা সহ) এবং কাহ্নপাদের ''দোহাকোষ'' (আচার্যপাদের ''মেখলা'' নামক সংস্কৃত টীকা সহ)। {{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}} sdtmr4of20eg0hl67ctwq8z4pg65l9s বিষয়শ্রেণী:বই:বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) 14 27209 85323 2025-06-26T03:42:43Z Jonoikobangali 676 "{{মূল বই বিষয়শ্রেণী}}" দিয়ে পাতা তৈরি 85323 wikitext text/x-wiki {{মূল বই বিষয়শ্রেণী}} 3521gy9bjbq7uw9q6660hmeadzrmek9