উইকিবই
bnwikibooks
https://bn.wikibooks.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8_%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE
MediaWiki 1.45.0-wmf.8
first-letter
মিডিয়া
বিশেষ
আলাপ
ব্যবহারকারী
ব্যবহারকারী আলাপ
উইকিবই
উইকিবই আলোচনা
চিত্র
চিত্র আলোচনা
মিডিয়াউইকি
মিডিয়াউইকি আলোচনা
টেমপ্লেট
টেমপ্লেট আলোচনা
সাহায্য
সাহায্য আলোচনা
বিষয়শ্রেণী
বিষয়শ্রেণী আলোচনা
উইকিশৈশব
উইকিশৈশব আলাপ
বিষয়
বিষয় আলাপ
রন্ধনপ্রণালী
রন্ধনপ্রণালী আলোচনা
TimedText
TimedText talk
মডিউল
মডিউল আলাপ
ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T
3
18208
85559
84895
2025-07-02T14:44:12Z
Azizul Islam Abir
11368
/* মার্ক যোগ হচ্ছে না কেন? */ উত্তর
85559
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৮:৪০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (ইউটিসি)
== সম্পাদনা দ্বন্দ্ব ==
প্রিয় R1F4T,
বই সম্পাদনা কালে আমি আপনার সম্পাদনা করতে চাওয়া ([[:en:Famous Theorems of Mathematics/Pythagorean trigonometric identity|Famous Theorems of Mathematics/Pythagorean trigonometric identity]]) পাতাটি বইয়ের ভিতরে গিয়ে তৈরি না অবস্থায় পাওয়ার পর [[গণিতের বিখ্যাত উপপাদ্য/পিথাগোরাসের ত্রিকোণোমিতির অভেদক|তৈরি করে ফেলেছি]]। কিন্তু আপনি সম্পাদান করতে চেয়েছেন এটা আগে খেয়াল করতে পারিনি। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
[[ব্যবহারকারী:Ashiqur Rahman|Ashiqur Rahman]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Ashiqur Rahman|আলাপ]]) ১৪:১৯, ৪ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
:সমস্যা নেই। আপনি করুন অনুবাদ [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৪:২৯, ৪ জুন ২০২৪ (ইউটিসি)
== [[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫: অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ]] ==
{| style="background-color: #f8f9fa; border: 1px solid #ced4da; padding:10px; color: #212529;"
|-
|[[File:Bangla Wikibooks Writing contest 2025 Banner (2).png|frameless|center|300px|link=[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫]]]]<br/>
সুপ্রিয় R1F4T,
আশা করি এই গ্রীষ্মের এই রৌদ্রোজ্জ্বল তপ্ত আবহাওয়াতেও ভালো আছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, গত ৭ মে থেকে বাংলা উইকিবইয়ে '''[[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫]]''' শীর্ষক একটি বই লিখন ও অনুবাদ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতাটি অভিজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও নতুন ব্যবহারকারী সকলের জন্যই মুক্ত।
অন্যান্য ভাষার উইকিবইয়ের চাইতে বাংলা উইকিবইয়ে অবদানকারীর সংখ্যা নিতান্তই কম, এমনকি সংখ্যাটি বাংলা উইকিপিডিয়ার তুলনায়ও নগণ্য। অথচ ডিজিটাল বইয়ের এই যুগে বাংলা উইকিবই যথেষ্ট গুরত্বের দাবি রাখে। এজন্য আমাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। আশা করি আপনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন ও উইকিবইকে সমৃদ্ধ করবেন। বিস্তারিত [[উইকিবই:উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা ২০২৫|প্রকল্প পাতায়]] দেখুন।
'''শীর্ষ অবদানকারীদের জন্য পুরষ্কার'''
* ১ম স্থান অধিকারকারী ― ৬০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ২য় স্থান অধিকারকারী ― ৪০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৩য় স্থান অধিকারকারী ― ৩০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৪র্থ স্থান অধিকারকারী ― ২৫০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৫ম স্থান অধিকারকারী ― ২০০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* ৬ষ্ঠ থেকে ১০তম স্থান অধিকারকারী (৫ জন) ― ৫০০ টাকার গিফট ভাউচার ও মুদ্রিত সনদপত্র
* কমপক্ষে একটি পাতা গৃহীত হলে ― ডিজিটাল সনদপত্র
প্রতিযোগিতায় আপনাকে স্বাগত।<br />
শুভেচ্ছান্তে, <br /> —[[ব্যবহারকারী:MdsShakil|শাকিল]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MdsShakil|আলাপ]]) ০৬:৪৪, ১১ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
|}
<!-- https://bn.wikibooks.org/w/index.php?title=%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80:MdsShakil/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE&oldid=74028-এর তালিকা ব্যবহার করে বার্তাটি ব্যবহারকারী:MdsShakil@bnwikibooks পাঠিয়েছেন -->
== পুনঃপর্যালোচনার আবেদন ==
আসসালামুয়ালাইকুম রিফাত ভাই, [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্বাদতন্ত্র]] পাতাটি পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য বিনীতভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৫:৩১, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:রিফাত ভাই, আপনার বক্তব্য অনুযায়ী [[রন্ধনপ্রণালী:বিফ ভুনা]] ঠিক করেছি। [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৫:৪৩, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] [[ইন্দ্রিয়তন্ত্র/স্বাদতন্ত্র]] নিবন্ধটি গৃহীত হয়নি।
:কারণ: অসম্পূর্ণ অনুবাদ
:এবং পর্যালোচনার নীতিমালা অনুসারে সংশোধনের আর সুযোগ দেয়া হবে না। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:০২, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
::@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] {{আপনাকে ধন্যবাদ}} [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৭:০৩, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:::@[[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]]
:::এছাড়াও আপনাকে নিবন্ধটি ai দিয়ে অনুবাদ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী না করায় সতর্ক করা হলো। [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ০৭:২১, ১৪ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
::::@[[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] [[অতীন্দ্রিয়বাদ/প্রার্থনা]] পাতাটি পুনরায় দেখুন! [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ১০:৫৯, ৪ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
:সুপ্রিয় উইকিমিডিয়ান, আপনাকে ঈদ মোবারক! দয়া করে এই পাতাটি পুনরায় দেখুন - [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/বিদ্যুৎ]] [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:২৭, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
::[[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শক্তি]] দেখুন [[ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain|Md Mobashir Hossain]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Md Mobashir Hossain|আলাপ]]) ০৯:২৯, ৭ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== মার্ক যোগ হচ্ছে না কেন? ==
২ টি আর্টিকেল লেখা হয়েছে কিন্তু এখনো কোনো মার্কস যোগ হয়নি [[ব্যবহারকারী:Azizul Islam Abir|Azizul Islam Abir]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Azizul Islam Abir|আলাপ]]) ১৩:৪৪, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
:@[[ব্যবহারকারী:Azizul Islam Abir|Azizul Islam Abir]] যেহুতু পর্যালোচকগণ স্বেচ্ছাসেবক তাই তারা তাদের ফাঁকা সময় পর্যালোচনা করেন তাই একটু দেরি হতে পারে তবে ফল প্রকাশের পূর্বেই সব নিবন্ধ পর্যালোচনা করা হবে [[ব্যবহারকারী:R1F4T|R1F4T]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:R1F4T|আলাপ]]) ১৩:৪৭, ১৮ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
::ভাইয়া উইকিবই লিখন প্রতিযোগিতা 2025 এর অনলাইন সনদ টি এখন ও পেলাম না মেইল চেক দিয়েছি স্প্যাম চেক দিয়েছি এখন ও পাইনি [[ব্যবহারকারী:Azizul Islam Abir|Azizul Islam Abir]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Azizul Islam Abir|আলাপ]]) ১৪:৪৪, ২ জুলাই ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[রন্ধনপ্রণালী:চালতার টক]] ==
পরামর্শ অংশটি সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে। পুনরায় যাচাই করুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৫:২০, ৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণা/নাথিং ডেটা টাইপ]] ==
সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, পুনরায় দেখুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১৫:২৬, ৫ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[রন্ধনপ্রণালী:নুনগড়া পিঠা]] ==
পুনরায় দেখুন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১১:১৯, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[রন্ধনপ্রণালী:চুষি পিঠা]] ==
পুনরায় দেখবেন [[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ১১:২২, ৮ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== পুনরায় যাচাই করবেন ==
উক্ত নিবন্ধ গুলোর স্বাস্থ্য বিষয়ক অংশ, যান্ত্রিকতা দূর করে প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করা হয়েছে। পুনরায় যাচাই করবেন —
# [[রন্ধনপ্রণালী:ফিস পাকোড়া]]
# [[রন্ধনপ্রণালী:বোরহানি]]
# [[রন্ধনপ্রণালী:সাম্বর]]
# [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন হারিয়ালি কাবাব]]
# [[রন্ধনপ্রণালী:চিকেন রেশমি কাবাব]]
# [[রন্ধনপ্রণালী:বাঁশকোরার ভর্তা]]
[[ব্যবহারকারী:MD Abu Siyam|MD Abu Siyam]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:MD Abu Siyam|আলাপ]]) ০৩:১৫, ১৬ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/জৈবচিকিৎসীয় আলট্রাসাউন্ড]] ==
বাংলা পরিভাষা যোগ করা হয়েছে। পুনরায় পর্যালোচনার জন্য অনুরোধ করছি। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ০৬:২৬, ১৯ জুন ২০২৫ (ইউটিসি)
1vk44176ggeuy5b6mszgdb9xczxp5bc
ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25
3
22719
85560
72198
2025-07-02T15:39:41Z
Mehedi Abedin
7113
/* জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/গ্রন্থপঞ্জি */ নতুন অনুচ্ছেদ
85560
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৯:৪০, ৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/গ্রন্থপঞ্জি]] ==
[[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/গ্রন্থপঞ্জি]] পাতাটি প্রতিযোগিতায় পর্যালোচনার সময় প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পাতায় অনুবাদে কিছু সমস্যা আছে। তার পাশাপাশি আপনি সূত্রের শিরোনাম সরাসরি অনুবাদ করেছেন। খেয়াল করুন যে বইগুলো ইংরেজি তাই সরাসরি অনুবাদের বদলে বইয়ের নাম অনুবাদের সময় বাংলা অক্ষরে নামগুলো লিখতে হবে।
যেমন, আপনি অনুবাদ করেছিলেন
* গার্ডিনার, কে ১৯৬৪, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে ৩১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোরীয় রাষ্ট্র কোগুরিও-র উত্থান ও সূচনা, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল গবেষণাপত্র
অথচ লিখতে হতো,
* গার্ডিনার, কে ১৯৬৪, দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিও ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল গবেষণাপত্র
আপনি যদি প্রতিযোগিতা পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে পাতাটি ঠিক করে আমাকে মেনশন করে জানাতে পারেন তাহলে আমি পুনঃপর্যালোচনা করে পাতাটি গ্রহণ করতে পারবো। [[ব্যবহারকারী:Mehedi Abedin|Mehedi Abedin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Mehedi Abedin|আলাপ]]) ১৫:৩৯, ২ জুলাই ২০২৫ (ইউটিসি)
ip5k2uhs7yq0aicc1u6og2reby5143w
85588
85560
2025-07-03T07:44:17Z
Asikur.rahman25
11164
/* জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/গ্রন্থপঞ্জি */ উত্তর
85588
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ১৯:৪০, ৬ মে ২০২৫ (ইউটিসি)
== [[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/গ্রন্থপঞ্জি]] ==
[[জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/গ্রন্থপঞ্জি]] পাতাটি প্রতিযোগিতায় পর্যালোচনার সময় প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পাতায় অনুবাদে কিছু সমস্যা আছে। তার পাশাপাশি আপনি সূত্রের শিরোনাম সরাসরি অনুবাদ করেছেন। খেয়াল করুন যে বইগুলো ইংরেজি তাই সরাসরি অনুবাদের বদলে বইয়ের নাম অনুবাদের সময় বাংলা অক্ষরে নামগুলো লিখতে হবে।
যেমন, আপনি অনুবাদ করেছিলেন
* গার্ডিনার, কে ১৯৬৪, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে ৩১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোরীয় রাষ্ট্র কোগুরিও-র উত্থান ও সূচনা, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল গবেষণাপত্র
অথচ লিখতে হতো,
* গার্ডিনার, কে ১৯৬৪, দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিও ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল গবেষণাপত্র
আপনি যদি প্রতিযোগিতা পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে পাতাটি ঠিক করে আমাকে মেনশন করে জানাতে পারেন তাহলে আমি পুনঃপর্যালোচনা করে পাতাটি গ্রহণ করতে পারবো। [[ব্যবহারকারী:Mehedi Abedin|Mehedi Abedin]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Mehedi Abedin|আলাপ]]) ১৫:৩৯, ২ জুলাই ২০২৫ (ইউটিসি)
:ঠিক করা হয়েছে। পুনরায় পর্যালোচনা করার অনুরোধ করছি। [[ব্যবহারকারী:Asikur.rahman25|Asikur.rahman25]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:Asikur.rahman25|আলাপ]]) ০৭:৪৪, ৩ জুলাই ২০২৫ (ইউটিসি)
2gu1349ci7gy9jlq7eu3x5onrfa7r30
ব্যবহারকারী:Md Shuvo Sheikh
2
23954
85589
75839
2025-07-03T11:35:36Z
Md Shuvo Sheikh
9612
পরিষ্কারকরণ
85589
wikitext
text/x-wiki
{{mbox
|type = notice
|image = [[Image:Assalamu-aleykum-black.svg|75px]]
|style = background:lightblue;border: 1px solid #CC9999;
|text = [[আসসালামু আলাইকুম|আসসালামু আলাইকুম]], আমার ব্যবহারকারী পাতায় আপনাকে স্বাগতম! [[উইকিপিডিয়া|উইকিপিডিয়া]]তে আমার করা কাজগুলো দেখতে একদম নিচে চলে যান!
}}<noinclude>[[বিষয়শ্রেণী:ব্যবহারকারী টেমপ্লেট]]</noinclude>
== আমার সম্পর্কে ==
আমি '''SA Shuvo Sheikh'''। বর্তমানে আমি ঢাকা, বাংলাদেশে বসবাস করছি। প্রযুক্তি, কম্পিউটার বিজ্ঞান, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও সম্পাদনা এবং গেমিং আমার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু। wikibooks-এ আমি মূলত তথ্যভিত্তিক ও চিন্তাশীল উদ্ধৃতি যোগ এবং বাংলা ভাষায় মানসম্মত অনুবাদে অবদান রাখার চেষ্টা করি।
== শিক্ষাগত পটভূমি ==
আমি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছি। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও নতুন প্রযুক্তি শেখার প্রতি আমার আগ্রহ প্রবল।
== Wikibooks-এ অবদান ==
আমি মূলত প্রযুক্তি, গেমিং, রাজনীতি ও অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য সংশ্লিষ্ট উদ্ধৃতি সংগ্রহ ও সম্পাদনায় কাজ করি।
== আগ্রহ ও শখ ==
* '''গেমিং''': দাবা ও ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। পাশাপাশি প্রযুক্তি-ভিত্তিক গেমস ও গেম ডেভেলপমেন্টে আগ্রহী।
* '''ভ্রমণ''': নতুন স্থান ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে ভালোবাসি।
* '''সঙ্গীত''': ৯০-এর দশকের বাংলা ও হিন্দি গান আমার পছন্দ।
* '''লেখালেখি''': প্রযুক্তি বিষয়ে ব্লগ লেখা ও ভবিষ্যতে বই লেখার পরিকল্পনা আছে।
* '''ভাষা''': বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় পারদর্শী এবং নতুন ভাষা শিখতেও আগ্রহী।
== ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ==
আমি নিজস্ব প্রযুক্তিভিত্তিক ব্লগ এবং ইউটিউব চ্যানেল চালু করার পরিকল্পনা করছি, যেখানে নতুন প্রযুক্তি, গেমিং রিভিউ, সফটওয়্যার টিপস ইত্যাদি শেয়ার করব। এছাড়াও, ওয়ার্কশপ আয়োজন ও বই লেখার ভাবনাও রয়েছে।
== অনলাইন উপস্থিতি ==
* '''Facebook''': [https://www.facebook.com/sashuvosheikh SA Shuvo Sheikh]
* '''LinkedIn''': [https://www.linkedin.com/in/mdsadakkas Md Sad Akkas]
* '''Twitter''': [https://twitter.com/AkkasShuvo @AkkasShuvo]
* '''Instagram''': [https://www.instagram.com/sa.shuvosheikh sa.shuvosheikh]
* '''GitHub''': [https://github.com/shuvosheikh Shuvo Sheikh]
* '''Threads''': [https://www.threads.net/@sa.shuvosheikh SA Shuvo Sheikh]
* '''Others''': [https://socialbrdg.com/sashuvosheikh All Others]
== আমার অবদান ==
আমি যেসব পাতায় কাজ করেছি:
#
== উইকিবই-তে আমার কার্যক্রম ==
[https://bn.wikibooks.org/wiki/Special:Contributions/Md_Shuvo_Sheikh উইকিবই-তে আমার কার্যক্রম] দেখতে এই লিংক ভিজিট করতে পারেন।
== উইকি প্রকল্পে আমার অবদান ==
আমি নিম্নলিখিত উইকি প্রকল্পগুলিতে অবদান রাখি:
<div style="display: grid; grid-template-columns: repeat(2, 1fr); gap: 5px;">
<div>
[[File:Commons-logo.svg|24px]] [https://commons.wikimedia.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Commons] - মুক্ত মিডিয়া সংগ্রহ
</div>
<div>
[[File:Wikivoyage-logo.svg|24px]] [https://en.wikivoyage.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikivoyage] - মুক্ত ভ্রমণ গাইড
</div>
<div>
[[File:Wiktionary-logo.svg|24px]] [https://en.wiktionary.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wiktionary] - মুক্ত অভিধান
</div>
<div>
[[File:Wikibooks-logo.svg|24px]] [https://en.wikibooks.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikibooks] - মুক্ত পাঠ্যবই
</div>
<div>
[[File:Wikinews-logo.svg|24px]] [https://en.wikinews.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikinews] - মুক্ত সংবাদ উৎস
</div>
<div>
[[File:Wikidata-logo.svg|24px]] [https://www.wikidata.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikidata] - মুক্ত জ্ঞানভান্ডার
</div>
<div>
[[File:Wikiversity-logo.svg|24px]] [https://en.wikiversity.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikiversity] - মুক্ত শিক্ষা সংস্থান
</div>
<div>
[[File:Wikiquote-logo.svg|24px]] [https://en.wikiquote.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikiquote] - মুক্ত উক্তির সংকলন
</div>
<div>
[[File:MediaWiki-logo.svg|24px]] [https://www.mediawiki.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh MediaWiki] - মুক্ত ও উন্মুক্ত উইকি সফটওয়্যার
</div>
<div>
[[File:Wikisource-logo.svg|24px]] [https://en.wikisource.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikisource] - মুক্ত বিষয়বস্তু লাইব্রেরি
</div>
<div>
[[File:Wikispecies-logo.svg|24px]] [https://species.wikimedia.org/wiki/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikispecies] - মুক্ত প্রজাতির ডিরেক্টরি
</div>
<div>
[[File:Wikifunctions-logo.svg|24px]] [https://www.wikifunctions.org/User:Md_Shuvo_Sheikh Wikifunctions] - মুক্ত কার্যক্রম লাইব্রেরি
</div>
</div>
</div>
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশি সংস্কৃতি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশি লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী ভাষা]]
[[বিষয়শ্রেণী:প্রযুক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:গেমিং]]
[[বিষয়শ্রেণী:ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা]]
[[বিষয়শ্রেণী:গেমিং বিষয়ক]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভিডিও সম্পাদনা]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশি]]
[[বিষয়শ্রেণী:টেক টিপস]]
[[বিষয়শ্রেণী:সোশ্যাল মিডিয়া]]
[[বিষয়শ্রেণী:জন্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:জন্মস্থান]]
[[বিষয়শ্রেণী:টুলস এবং রিসোর্স]]
[[বিষয়শ্রেণী:টিউটোরিয়াল]]
[[বিষয়শ্রেণী:ফিচারড কনটেন্ট]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ইতিহাস]]
[[বিষয়শ্রেণী:ডাউনলোড]]
[[বিষয়শ্রেণী:গেমিং স্ট্রাটেজি]]
[[বিষয়শ্রেণী:সফটওয়্যার রিভিউ]]
[[বিষয়শ্রেণী:অনলাইন টুলস]]
[[বিষয়শ্রেণী:ব্লগিং টিপস]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভালোবাসা ও সম্পর্ক]]
hocct9o3k4arxtqk60kl8mfwyzzdloq
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/যুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ ও বিভাজন
0
24886
85563
78066
2025-07-02T15:51:30Z
Mehedi Abedin
7113
85563
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা আমেরিকার ফ্রান্সের সঙ্গে বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। আমেরিকান কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার আমেরিকান নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন আমেরিকান সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেফারসন এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন, উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান, ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা আমেরিকানদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলেছিলেন, “এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।”) নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্টরা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কিছু কংগ্রেসনাল আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত আমেরিকান ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল। তবে স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল। তারা এখনও আমেরিকান ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা আমেরিকান মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমেরিকানরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি আমেরিকান সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে আমেরিকান নাবিকদের ব্রিটিশ রয়্যাল নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। আমেরিকান সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু গভীর দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। আমেরিকানদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এটির মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন-বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। আমেরিকার নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা আমেরিকান বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে আমেরিকান নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউএসএস কনস্টিটিউশনকে দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, “৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আছে, সে নিশ্চিতভাবে আমাদের। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নিন, আমি আপনাদের চার মাসের বেতন দেব।” কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন আমেরিকান নাবিক চিৎকার করে বলেন, “হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!” গুয়েরিয়ের, যিনি ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। আমেরিকান ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি আমেরিকান বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা আমেরিকাকে এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি আমেরিকান সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় আমেরিকানদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী আমেরিকান ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি আমেরিকানদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা আমেরিকান জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় পূরণের প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন আমেরিকানকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন আমেরিকান নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে আমেরিকান জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে আমেরিকান বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে আমেরিকান এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
আমেরিকানদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে আমেরিকান সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর আমেরিকায় পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে আমেরিকানরা উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
আমেরিকান কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো, তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড কনভেনশন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো অ্যাক্ট) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স অ্যাক্ট) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড রাজ্য, বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট, প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি রাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের রাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বর হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো রেকর্ড রাখা হয়নি। হার্টফোর্ড কনভেনশন একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে বলা হয়, রাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও কনভেনশন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাসী হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড কনভেনশন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ শেষকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় আমেরিকান স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরিয়ান-পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন বা ডে-এর ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরিয়ান জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন আমেরিকান বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরিয়ান বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর প্রেসিডেন্সি এবং ভালো অনুভূতির যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে আমেরিকান হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন জাতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড কনভেনশনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকে। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। পার্টিটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''ভালো অনুভূতির যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== আমেরিকান সিস্টেম ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি. ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''আমেরিকান সিস্টেম''' নামে পরিচিত হয়। এটি আমেরিকান শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও সিস্টেমের কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা আমেরিকান পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও, কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
আমেরিকান সিস্টেমের বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে আমেরিকান সিস্টেম বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক রাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল রাস্তা নির্মিত হয়। এখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ এখনও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন'''-এর খবর নিয়ে আসে। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠন ছিল, যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে, আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। আমেরিকার মতো, ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, আমেরিকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন গড়ে তুলবে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার বিপরীতে, এই আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট মনরো কংগ্রেসে তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''', যেমন এটি পরিচিত হয়, বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্ট মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ জাতি ছিল। তার নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে, মনরো ডকট্রিনের এককভাবে নয়, ল্যাটিন আমেরিকান জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন ল্যাটিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, ল্যাটিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সিমন বলিভার পানামায় প্রথম প্যান-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি প্যান-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে যায়। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। আমেরিকান এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ভারতীয় বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
আমেরিকান বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ভারতীয় গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ভারতীয়দের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ভারতীয় নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি গ্যারিসন রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ভারতীয়রা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ গ্যারিসন ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংকে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম এইচ. ক্রফোর্ডকে প্রেসিডেন্ট এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কিউ. অ্যাডামস, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের পুত্র, এবং হাউস স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল স্ট্রোকের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়, কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে, সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায়, অযোগ্য ছিলেন। তবে হাউসের স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার আমেরিকান সিস্টেমের মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়। কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে সেক্রেটারি অফ স্টেট নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা, জ্যাকসনিয়ান নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন, ডিসি-তে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তিনি একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকান সিস্টেমের অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সেক্রেটারি ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত, তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনিয়ানদের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনিয়ানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়নকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে। এমনকি যখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতো। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ভারতীয়দের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে, অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন রাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশ দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিসের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে ইউএস সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকানদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডিয়ান কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডিয়ানরা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইন কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রাথমিক আটলান্টিক যুদ্ধে আমেরিকান নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# “গুড ফিলিংসের যুগ” কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
8s1vjxw2qd8inqvea1s5hu7mzr91wiz
85564
85563
2025-07-02T15:54:34Z
Mehedi Abedin
7113
85564
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা আমেরিকানদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলেছিলেন, “এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।”) নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্টরা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কিছু কংগ্রেসনাল আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত আমেরিকান ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল। তবে স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল। তারা এখনও আমেরিকান ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা আমেরিকান মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমেরিকানরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি আমেরিকান সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে আমেরিকান নাবিকদের ব্রিটিশ রয়্যাল নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। আমেরিকান সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু গভীর দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। আমেরিকানদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এটির মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন-বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। আমেরিকার নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা আমেরিকান বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে আমেরিকান নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউএসএস কনস্টিটিউশনকে দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, “৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আছে, সে নিশ্চিতভাবে আমাদের। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নিন, আমি আপনাদের চার মাসের বেতন দেব।” কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন আমেরিকান নাবিক চিৎকার করে বলেন, “হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!” গুয়েরিয়ের, যিনি ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। আমেরিকান ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি আমেরিকান বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা আমেরিকাকে এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি আমেরিকান সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় আমেরিকানদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী আমেরিকান ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি আমেরিকানদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা আমেরিকান জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় পূরণের প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন আমেরিকানকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন আমেরিকান নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে আমেরিকান জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে আমেরিকান বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে আমেরিকান এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
আমেরিকানদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে আমেরিকান সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর আমেরিকায় পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে আমেরিকানরা উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
আমেরিকান কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো, তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড কনভেনশন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো অ্যাক্ট) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স অ্যাক্ট) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড রাজ্য, বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট, প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি রাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের রাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বর হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো রেকর্ড রাখা হয়নি। হার্টফোর্ড কনভেনশন একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে বলা হয়, রাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও কনভেনশন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাসী হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড কনভেনশন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ শেষকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় আমেরিকান স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরিয়ান-পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন বা ডে-এর ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরিয়ান জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন আমেরিকান বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরিয়ান বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর প্রেসিডেন্সি এবং ভালো অনুভূতির যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে আমেরিকান হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন জাতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড কনভেনশনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকে। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। পার্টিটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''ভালো অনুভূতির যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== আমেরিকান সিস্টেম ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি. ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''আমেরিকান সিস্টেম''' নামে পরিচিত হয়। এটি আমেরিকান শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও সিস্টেমের কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা আমেরিকান পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও, কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
আমেরিকান সিস্টেমের বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে আমেরিকান সিস্টেম বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক রাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল রাস্তা নির্মিত হয়। এখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ এখনও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন'''-এর খবর নিয়ে আসে। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠন ছিল, যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে, আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। আমেরিকার মতো, ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, আমেরিকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন গড়ে তুলবে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার বিপরীতে, এই আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট মনরো কংগ্রেসে তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''', যেমন এটি পরিচিত হয়, বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্ট মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ জাতি ছিল। তার নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে, মনরো ডকট্রিনের এককভাবে নয়, ল্যাটিন আমেরিকান জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন ল্যাটিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, ল্যাটিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সিমন বলিভার পানামায় প্রথম প্যান-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি প্যান-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে যায়। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। আমেরিকান এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ভারতীয় বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
আমেরিকান বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ভারতীয় গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ভারতীয়দের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ভারতীয় নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি গ্যারিসন রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ভারতীয়রা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ গ্যারিসন ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংকে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম এইচ. ক্রফোর্ডকে প্রেসিডেন্ট এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কিউ. অ্যাডামস, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের পুত্র, এবং হাউস স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল স্ট্রোকের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়, কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে, সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায়, অযোগ্য ছিলেন। তবে হাউসের স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার আমেরিকান সিস্টেমের মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়। কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে সেক্রেটারি অফ স্টেট নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা, জ্যাকসনিয়ান নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন, ডিসি-তে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তিনি একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকান সিস্টেমের অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সেক্রেটারি ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত, তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনিয়ানদের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনিয়ানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়নকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে। এমনকি যখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতো। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ভারতীয়দের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে, অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন রাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশ দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিসের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে ইউএস সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকানদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডিয়ান কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডিয়ানরা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইন কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রাথমিক আটলান্টিক যুদ্ধে আমেরিকান নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# “গুড ফিলিংসের যুগ” কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
cbiuytoltxsf8xisu40ltook11syvoo
85565
85564
2025-07-02T15:55:47Z
Mehedi Abedin
7113
85565
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা আমেরিকানদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলেছিলেন, “এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।”) নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্টরা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কিছু কংগ্রেসনাল আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত আমেরিকান ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল। তবে স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল। তারা এখনও আমেরিকান ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা আমেরিকান মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমেরিকানরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি আমেরিকান সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে আমেরিকান নাবিকদের ব্রিটিশ রয়্যাল নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। আমেরিকান সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু গভীর দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। আমেরিকানদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এটির মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন-বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। আমেরিকার নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা আমেরিকান বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে আমেরিকান নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউএসএস কনস্টিটিউশনকে দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, “৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আছে, সে নিশ্চিতভাবে আমাদের। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নিন, আমি আপনাদের চার মাসের বেতন দেব।” কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন আমেরিকান নাবিক চিৎকার করে বলেন, “হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!” গুয়েরিয়ের, যিনি ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। আমেরিকান ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি আমেরিকান বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা আমেরিকাকে এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি আমেরিকান সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় আমেরিকানদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী আমেরিকান ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি আমেরিকানদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা আমেরিকান জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় পূরণের প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন আমেরিকানকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন আমেরিকান নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে আমেরিকান জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে আমেরিকান বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে আমেরিকান এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
আমেরিকানদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে আমেরিকান সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর আমেরিকায় পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে আমেরিকানরা উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
আমেরিকান কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো, তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড কনভেনশন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো অ্যাক্ট) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স অ্যাক্ট) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড রাজ্য, বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট, প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি রাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের রাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বর হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো রেকর্ড রাখা হয়নি। হার্টফোর্ড কনভেনশন একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে বলা হয়, রাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও কনভেনশন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাসী হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড কনভেনশন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ শেষকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় আমেরিকান স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরিয়ান-পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন বা ডে-এর ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরিয়ান জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন আমেরিকান বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরিয়ান বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর প্রেসিডেন্সি এবং ভালো অনুভূতির যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে আমেরিকান হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন জাতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড কনভেনশনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকে। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। পার্টিটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''ভালো অনুভূতির যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== আমেরিকান সিস্টেম ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি. ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''আমেরিকান সিস্টেম''' নামে পরিচিত হয়। এটি আমেরিকান শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও সিস্টেমের কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা আমেরিকান পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও, কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
আমেরিকান সিস্টেমের বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে আমেরিকান সিস্টেম বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক রাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল রাস্তা নির্মিত হয়। এখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ এখনও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন'''-এর খবর নিয়ে আসে। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠন ছিল, যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে, আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। আমেরিকার মতো, ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, আমেরিকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন গড়ে তুলবে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার বিপরীতে, এই আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট মনরো কংগ্রেসে তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''', যেমন এটি পরিচিত হয়, বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্ট মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ জাতি ছিল। তার নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে, মনরো ডকট্রিনের এককভাবে নয়, ল্যাটিন আমেরিকান জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন ল্যাটিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, ল্যাটিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সিমন বলিভার পানামায় প্রথম প্যান-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি প্যান-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে যায়। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। আমেরিকান এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ভারতীয় বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
আমেরিকান বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ভারতীয় গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ভারতীয়দের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ভারতীয় নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি গ্যারিসন রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ভারতীয়রা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ গ্যারিসন ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংকে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম এইচ. ক্রফোর্ডকে প্রেসিডেন্ট এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কিউ. অ্যাডামস, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের পুত্র, এবং হাউস স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল স্ট্রোকের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়, কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে, সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায়, অযোগ্য ছিলেন। তবে হাউসের স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার আমেরিকান সিস্টেমের মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়। কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে সেক্রেটারি অফ স্টেট নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা, জ্যাকসনিয়ান নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন, ডিসি-তে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তিনি একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকান সিস্টেমের অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সেক্রেটারি ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত, তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনিয়ানদের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনিয়ানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়নকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে। এমনকি যখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতো। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ভারতীয়দের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে, অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন রাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশ দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিসের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে ইউএস সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকানদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডিয়ান কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডিয়ানরা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইন কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
tkf4ren4i8bsz37omx44xm4a1kj3037
85566
85565
2025-07-02T15:59:11Z
Mehedi Abedin
7113
85566
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা আমেরিকানদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলেছিলেন, “এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।”) নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্টরা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কিছু কংগ্রেসনাল আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত আমেরিকান ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল। তবে স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল। তারা এখনও আমেরিকান ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা আমেরিকান মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের আমেরিকান বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমেরিকানরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি আমেরিকান সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে আমেরিকান নাবিকদের ব্রিটিশ রয়্যাল নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। আমেরিকান সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু গভীর দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। আমেরিকানদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এটির মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন-বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। আমেরিকার নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা আমেরিকান বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে আমেরিকান নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউএসএস কনস্টিটিউশনকে দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, “৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আছে, সে নিশ্চিতভাবে আমাদের। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নিন, আমি আপনাদের চার মাসের বেতন দেব।” কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন আমেরিকান নাবিক চিৎকার করে বলেন, “হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!” গুয়েরিয়ের, যিনি ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। আমেরিকান ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি আমেরিকান বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা আমেরিকাকে এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি আমেরিকান সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় আমেরিকানদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী আমেরিকান ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি আমেরিকানদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা আমেরিকান জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় পূরণের প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন আমেরিকানকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন আমেরিকান নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে আমেরিকান জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে আমেরিকান বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে আমেরিকান এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
আমেরিকানদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে আমেরিকান সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর আমেরিকায় পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে আমেরিকানরা উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
আমেরিকান কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো, তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড কনভেনশন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো অ্যাক্ট) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স অ্যাক্ট) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড রাজ্য, বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট, প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি রাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের রাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বর হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো রেকর্ড রাখা হয়নি। হার্টফোর্ড কনভেনশন একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে বলা হয়, রাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও কনভেনশন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাসী হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড কনভেনশন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কিত পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ সমাপ্তকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরীয় পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন নয়তো ডের ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরীয় জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন মার্কিন বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরীয় বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর প্রেসিডেন্সি এবং ভালো অনুভূতির যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে আমেরিকান হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন জাতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড কনভেনশনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকে। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। পার্টিটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''ভালো অনুভূতির যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== আমেরিকান সিস্টেম ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি. ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''আমেরিকান সিস্টেম''' নামে পরিচিত হয়। এটি আমেরিকান শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও সিস্টেমের কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা আমেরিকান পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও, কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
আমেরিকান সিস্টেমের বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে আমেরিকান সিস্টেম বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক রাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল রাস্তা নির্মিত হয়। এখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ এখনও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন'''-এর খবর নিয়ে আসে। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠন ছিল, যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে, আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। আমেরিকার মতো, ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, আমেরিকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন গড়ে তুলবে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার বিপরীতে, এই আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট মনরো কংগ্রেসে তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''', যেমন এটি পরিচিত হয়, বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্ট মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ জাতি ছিল। তার নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে, মনরো ডকট্রিনের এককভাবে নয়, ল্যাটিন আমেরিকান জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন ল্যাটিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, ল্যাটিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সিমন বলিভার পানামায় প্রথম প্যান-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি প্যান-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে যায়। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। আমেরিকান এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ভারতীয় বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
আমেরিকান বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ভারতীয় গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ভারতীয়দের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ভারতীয় নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি গ্যারিসন রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ভারতীয়রা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ গ্যারিসন ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংকে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম এইচ. ক্রফোর্ডকে প্রেসিডেন্ট এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কিউ. অ্যাডামস, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের পুত্র, এবং হাউস স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল স্ট্রোকের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়, কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে, সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায়, অযোগ্য ছিলেন। তবে হাউসের স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার আমেরিকান সিস্টেমের মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়। কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে সেক্রেটারি অফ স্টেট নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা, জ্যাকসনিয়ান নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন, ডিসি-তে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তিনি একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকান সিস্টেমের অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সেক্রেটারি ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত, তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনিয়ানদের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনিয়ানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়নকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে। এমনকি যখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতো। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ভারতীয়দের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে, অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন রাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশ দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিসের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে ইউএস সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকানদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডিয়ান কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডিয়ানরা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইন কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
r0tgsgwpys7mnqfpb7wa4tot3hp5emx
85567
85566
2025-07-02T16:17:59Z
Mehedi Abedin
7113
85567
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা মার্কিনদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন বলেছিলেন, "এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।") নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্ট যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কংগ্রেসের কিছু আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত মার্কিন ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল (স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল)। তারা তখনো মার্কিন ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা মার্কিন মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মার্কিনরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি মার্কিন সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে মার্কিন নাবিকদের ব্রিটিশ রাজকীয় নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু দূরবর্তী দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। মার্কিনদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা রাষ্ট্রপতি ল ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এর মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। মার্কিনদের নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা মার্কিন বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে মার্কিন নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী মার্কিন কনস্টিটিউশন দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, "৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আসছে, এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের হবে। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নাও, আমি তোমাদের চার মাসের বেতন দেব।" কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন মার্কিন নাবিক চিৎকার করে বলেন, "হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!" গুয়েরিয়ের ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। মার্কিন ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি মার্কিন বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা মার্কিনীদের এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি মার্কিন সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় মার্কিনদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী মার্কিন ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি মার্কিনদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা মার্কিন জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। রাষ্ট্রপতি জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় তৈরির প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন মার্কিনীকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষ্যে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে মার্কিন বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে মার্কিন এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
মার্কিনদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে মার্কিন সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে মার্কিনীরা এই ভেবে উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
মার্কিন কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড সম্মেলন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো আইন) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স আইন) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্য (বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট) রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বরে কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো নথি রাখা হয়নি। একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে হার্টফোর্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, অঙ্গরাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী রাষ্ট্রপতিকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও সম্মেলন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড সম্মেলন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কিত পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ সমাপ্তকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরীয় পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন নয়তো ডের ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরীয় জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন মার্কিন বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরীয় বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর প্রেসিডেন্সি এবং ভালো অনুভূতির যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে আমেরিকান হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন জাতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড কনভেনশনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকে। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। পার্টিটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''ভালো অনুভূতির যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== আমেরিকান সিস্টেম ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি. ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''আমেরিকান সিস্টেম''' নামে পরিচিত হয়। এটি আমেরিকান শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও সিস্টেমের কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা আমেরিকান পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও, কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
আমেরিকান সিস্টেমের বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে আমেরিকান সিস্টেম বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক রাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল রাস্তা নির্মিত হয়। এখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ এখনও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন'''-এর খবর নিয়ে আসে। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠন ছিল, যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে, আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। আমেরিকার মতো, ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, আমেরিকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন গড়ে তুলবে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার বিপরীতে, এই আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট মনরো কংগ্রেসে তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''', যেমন এটি পরিচিত হয়, বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্ট মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ জাতি ছিল। তার নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে, মনরো ডকট্রিনের এককভাবে নয়, ল্যাটিন আমেরিকান জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন ল্যাটিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, ল্যাটিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সিমন বলিভার পানামায় প্রথম প্যান-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি প্যান-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে যায়। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। আমেরিকান এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ভারতীয় বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
আমেরিকান বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ভারতীয় গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ভারতীয়দের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ভারতীয় নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি গ্যারিসন রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ভারতীয়রা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ গ্যারিসন ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংকে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম এইচ. ক্রফোর্ডকে প্রেসিডেন্ট এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কিউ. অ্যাডামস, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের পুত্র, এবং হাউস স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল স্ট্রোকের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়, কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে, সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায়, অযোগ্য ছিলেন। তবে হাউসের স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার আমেরিকান সিস্টেমের মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়। কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে সেক্রেটারি অফ স্টেট নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা, জ্যাকসনিয়ান নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন, ডিসি-তে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তিনি একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকান সিস্টেমের অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সেক্রেটারি ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত, তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনিয়ানদের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনিয়ানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়নকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে। এমনকি যখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতো। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ভারতীয়দের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে, অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন রাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশ দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিসের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে ইউএস সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকানদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডিয়ান কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডিয়ানরা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইন কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
kxs440vzb1i18iydpdk704n2hm60l7g
85568
85567
2025-07-02T16:20:27Z
Mehedi Abedin
7113
85568
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা মার্কিনদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন বলেছিলেন, "এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।") নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্ট যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কংগ্রেসের কিছু আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত মার্কিন ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল (স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল)। তারা তখনো মার্কিন ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা মার্কিন মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মার্কিনরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি মার্কিন সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে মার্কিন নাবিকদের ব্রিটিশ রাজকীয় নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু দূরবর্তী দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। মার্কিনদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা রাষ্ট্রপতি ল ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এর মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। মার্কিনদের নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা মার্কিন বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে মার্কিন নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী মার্কিন কনস্টিটিউশন দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, "৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আসছে, এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের হবে। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নাও, আমি তোমাদের চার মাসের বেতন দেব।" কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন মার্কিন নাবিক চিৎকার করে বলেন, "হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!" গুয়েরিয়ের ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। মার্কিন ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি মার্কিন বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা মার্কিনীদের এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি মার্কিন সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় মার্কিনদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী মার্কিন ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি মার্কিনদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা মার্কিন জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। রাষ্ট্রপতি জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় তৈরির প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন মার্কিনীকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষ্যে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে মার্কিন বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে মার্কিন এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
মার্কিনদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে মার্কিন সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে মার্কিনীরা এই ভেবে উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
মার্কিন কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড সম্মেলন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো আইন) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স আইন) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্য (বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট) রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বরে কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো নথি রাখা হয়নি। একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে হার্টফোর্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, অঙ্গরাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী রাষ্ট্রপতিকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও সম্মেলন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড সম্মেলন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কিত পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ সমাপ্তকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরীয় পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন নয়তো ডের ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরীয় জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন মার্কিন বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরীয় বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর প্রেসিডেন্সি এবং ভালো অনুভূতির যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে আমেরিকান হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন জাতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড কনভেনশনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকে। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। পার্টিটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''ভালো অনুভূতির যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== আমেরিকান সিস্টেম ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি. ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''আমেরিকান সিস্টেম''' নামে পরিচিত হয়। এটি আমেরিকান শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও সিস্টেমের কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা আমেরিকান পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও, কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
আমেরিকান সিস্টেমের বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে আমেরিকান সিস্টেম বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক রাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল রাস্তা নির্মিত হয়। এখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ এখনও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন'''-এর খবর নিয়ে আসে। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠন ছিল, যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে, আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। আমেরিকার মতো, ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, আমেরিকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন গড়ে তুলবে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার বিপরীতে, এই আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট মনরো কংগ্রেসে তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''', যেমন এটি পরিচিত হয়, বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্ট মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ জাতি ছিল। তার নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে, মনরো ডকট্রিনের এককভাবে নয়, ল্যাটিন আমেরিকান জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন ল্যাটিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, ল্যাটিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সিমন বলিভার পানামায় প্রথম প্যান-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি প্যান-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে যায়। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। আমেরিকান এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ভারতীয় বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
আমেরিকান বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ভারতীয় গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ভারতীয়দের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ভারতীয় নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি গ্যারিসন রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ভারতীয়রা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ গ্যারিসন ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংকে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম এইচ. ক্রফোর্ডকে প্রেসিডেন্ট এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কিউ. অ্যাডামস, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের পুত্র, এবং হাউস স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল স্ট্রোকের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়, কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে, সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায়, অযোগ্য ছিলেন। তবে হাউসের স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার আমেরিকান সিস্টেমের মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়। কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে সেক্রেটারি অফ স্টেট নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা, জ্যাকসনিয়ান নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন, ডিসি-তে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তিনি একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকান সিস্টেমের অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সেক্রেটারি ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
প্রেসিডেন্ট অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত, তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনিয়ানদের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনিয়ানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়নকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে। এমনকি যখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতো। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ভারতীয়দের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে, অ্যাডামসের প্রেসিডেন্সি তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন অঙ্গরাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশদের দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিশের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে মার্কিন সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে মার্কিনদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডীয় কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডীয়রা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইনের কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোরও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
78xb3iedbrmpwbv92xsvre12ns7lo92
85569
85568
2025-07-02T16:29:58Z
Mehedi Abedin
7113
85569
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা মার্কিনদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন বলেছিলেন, "এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।") নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্ট যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কংগ্রেসের কিছু আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত মার্কিন ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল (স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল)। তারা তখনো মার্কিন ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা মার্কিন মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মার্কিনরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি মার্কিন সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে মার্কিন নাবিকদের ব্রিটিশ রাজকীয় নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু দূরবর্তী দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। মার্কিনদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা রাষ্ট্রপতি ল ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এর মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। মার্কিনদের নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা মার্কিন বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে মার্কিন নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী মার্কিন কনস্টিটিউশন দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, "৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আসছে, এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের হবে। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নাও, আমি তোমাদের চার মাসের বেতন দেব।" কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন মার্কিন নাবিক চিৎকার করে বলেন, "হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!" গুয়েরিয়ের ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। মার্কিন ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি মার্কিন বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা মার্কিনীদের এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি মার্কিন সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় মার্কিনদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী মার্কিন ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি মার্কিনদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা মার্কিন জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। রাষ্ট্রপতি জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় তৈরির প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন মার্কিনীকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষ্যে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে মার্কিন বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে মার্কিন এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
মার্কিনদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে মার্কিন সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে মার্কিনীরা এই ভেবে উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
মার্কিন কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড সম্মেলন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো আইন) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স আইন) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্য (বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট) রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বরে কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো নথি রাখা হয়নি। একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে হার্টফোর্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, অঙ্গরাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী রাষ্ট্রপতিকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও সম্মেলন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড সম্মেলন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কিত পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ সমাপ্তকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরীয় পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন নয়তো ডের ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরীয় জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন মার্কিন বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরীয় বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর প্রেসিডেন্সি এবং ভালো অনুভূতির যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে আমেরিকান হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন জাতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড কনভেনশনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টি-ফেডারেলিস্ট তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকে। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। পার্টিটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''ভালো অনুভূতির যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== আমেরিকান সিস্টেম ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি. ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''আমেরিকান সিস্টেম''' নামে পরিচিত হয়। এটি আমেরিকান শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও সিস্টেমের কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা আমেরিকান পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও, কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
আমেরিকান সিস্টেমের বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে আমেরিকান সিস্টেম বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক রাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল রাস্তা নির্মিত হয়। এখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ এখনও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন'''-এর খবর নিয়ে আসে। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠন ছিল, যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে, আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। আমেরিকার মতো, ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, আমেরিকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন গড়ে তুলবে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার বিপরীতে, এই আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট মনরো কংগ্রেসে তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''', যেমন এটি পরিচিত হয়, বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্ট মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ জাতি ছিল। তার নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে, মনরো ডকট্রিনের এককভাবে নয়, ল্যাটিন আমেরিকান জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন ল্যাটিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, ল্যাটিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সিমন বলিভার পানামায় প্রথম প্যান-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি প্যান-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে যায়। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। আমেরিকান এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ভারতীয় বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
আমেরিকান বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ভারতীয় গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ভারতীয়দের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ভারতীয় নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি গ্যারিসন রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ভারতীয়রা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ গ্যারিসন ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংকে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসীয় ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস রাজস্ব সচিব উইলিয়াম এইচ ক্রফোর্ডকে রাষ্ট্রপতি এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। রাজ্যসচিব জন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের পুত্র কিউ অ্যাডামস এবং সংসদের স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল হৃদাঘাতের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয় তখন দেখা যায় কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায় অযোগ্য ছিলেন। তবে স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার মার্কিন ব্যবস্থার মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়, কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে রাজ্যসচিব নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, এখানে একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | রাষ্ট্রপতি প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | অঙ্গরাজ্য
! width="13%" | ভোট সংখ্যা:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা তথা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা জ্যাকসনীয় নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্বের সময়ে একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন ব্যবস্থার অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সচিব ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও উপরাষ্ট্রপতি জন সি ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনীয়দের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনীয়রা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়ন কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন যে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে, এমনকি তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ইন্ডিয়ানদের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণীরা এটিকে ঘৃণা করে। "ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস" নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
পরবর্তী নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন অঙ্গরাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশদের দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিশের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে মার্কিন সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে মার্কিনদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডীয় কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডীয়রা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইনের কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোরও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
6ye0oncjz4nu6oi9jf9lp067lme1m7l
85570
85569
2025-07-02T16:45:08Z
Mehedi Abedin
7113
85570
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা মার্কিনদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন বলেছিলেন, "এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।") নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্ট যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কংগ্রেসের কিছু আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত মার্কিন ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল (স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল)। তারা তখনো মার্কিন ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা মার্কিন মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মার্কিনরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি মার্কিন সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে মার্কিন নাবিকদের ব্রিটিশ রাজকীয় নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু দূরবর্তী দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। মার্কিনদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা রাষ্ট্রপতি ল ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এর মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। মার্কিনদের নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা মার্কিন বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে মার্কিন নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী মার্কিন কনস্টিটিউশন দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, "৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আসছে, এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের হবে। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নাও, আমি তোমাদের চার মাসের বেতন দেব।" কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন মার্কিন নাবিক চিৎকার করে বলেন, "হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!" গুয়েরিয়ের ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। মার্কিন ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি মার্কিন বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা মার্কিনীদের এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি মার্কিন সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় মার্কিনদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী মার্কিন ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি মার্কিনদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা মার্কিন জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। রাষ্ট্রপতি জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় তৈরির প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন মার্কিনীকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষ্যে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে মার্কিন বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে মার্কিন এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
মার্কিনদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে মার্কিন সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে মার্কিনীরা এই ভেবে উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
মার্কিন কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড সম্মেলন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো আইন) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স আইন) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্য (বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট) রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বরে কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো নথি রাখা হয়নি। একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে হার্টফোর্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, অঙ্গরাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী রাষ্ট্রপতিকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও সম্মেলন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড সম্মেলন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কিত পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ সমাপ্তকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরীয় পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন নয়তো ডের ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরীয় জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন মার্কিন বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরীয় বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর রাষ্ট্রপতিত্ব ও গুড ফিলিংসের যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|রাষ্ট্রপতি জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে মার্কিন হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন দেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড সম্মেলনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু ফেডারেলিস্ট বিরোধী তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকত। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে রাষ্ট্রপতিত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের রাজ্যসচিব জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। দলটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''গুড ফিলিংসের যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== মার্কিন ব্যবস্থা ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস এরা আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তারা জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''মার্কিন ব্যবস্থা''' নামে পরিচিত হয়। এটি মার্কিন শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে বলা হয়। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যাংক অফ (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও ব্যবস্থার কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা মার্কিন পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
মার্কিন ব্যবস্থার বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে মার্কিন ব্যবস্থা বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক অঙ্গরাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল ভিত্তিক রাস্তা নির্মিত হয়। তখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো অঙ্গরাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ তখনো ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''শিল্প বিপ্লব'''-এর খবর নিয়ে আসতো। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠনে যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব শিল্প বিপ্লব গড়ে তুলতে থাকে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার ফলে এই আতঙ্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি মনরো কংগ্রেসে স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''' বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন লাতিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। রাষ্ট্রপতি মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ দেশ ছিল। এর নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে মনরো ডকট্রিনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এককভাবে নয় বরং লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন লাতিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, লাতিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সাইমন বলিভার পানামায় প্রথম সর্ব-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি সর্ব-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে আসে। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। মার্কিন এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ইন্ডিয়ান বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
মার্কিন বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ইন্ডিয়ান গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ইন্ডিয়ানদের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রাজকীয় মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ইন্ডিয়ান নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি সেনাদল রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইন্ডিয়ানরা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ইন্ডিয়ানরা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ সেনাদল ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংককে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসীয় ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস রাজস্ব সচিব উইলিয়াম এইচ ক্রফোর্ডকে রাষ্ট্রপতি এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। রাজ্যসচিব জন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের পুত্র কিউ অ্যাডামস এবং সংসদের স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল হৃদাঘাতের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয় তখন দেখা যায় কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায় অযোগ্য ছিলেন। তবে স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার মার্কিন ব্যবস্থার মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়, কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে রাজ্যসচিব নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, এখানে একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | রাষ্ট্রপতি প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | অঙ্গরাজ্য
! width="13%" | ভোট সংখ্যা:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা তথা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা জ্যাকসনীয় নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্বের সময়ে একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন ব্যবস্থার অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সচিব ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও উপরাষ্ট্রপতি জন সি ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনীয়দের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনীয়রা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়ন কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন যে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে, এমনকি তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ইন্ডিয়ানদের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণীরা এটিকে ঘৃণা করে। "ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস" নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
পরবর্তী নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের প্রেসিডেন্ট -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন অঙ্গরাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশদের দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিশের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে মার্কিন সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে মার্কিনদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডীয় কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডীয়রা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইনের কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোরও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
eaovqfs1dhgyezec32yoxfrbn6cb6hl
85571
85570
2025-07-02T16:46:50Z
Mehedi Abedin
7113
85571
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা মার্কিনদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন বলেছিলেন, "এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।") নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্ট যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কংগ্রেসের কিছু আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত মার্কিন ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল (স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল)। তারা তখনো মার্কিন ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা মার্কিন মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মার্কিনরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি মার্কিন সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে মার্কিন নাবিকদের ব্রিটিশ রাজকীয় নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু দূরবর্তী দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। মার্কিনদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা রাষ্ট্রপতি ল ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এর মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। মার্কিনদের নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা মার্কিন বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে মার্কিন নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী মার্কিন কনস্টিটিউশন দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, "৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আসছে, এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের হবে। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নাও, আমি তোমাদের চার মাসের বেতন দেব।" কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন মার্কিন নাবিক চিৎকার করে বলেন, "হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!" গুয়েরিয়ের ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। মার্কিন ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি মার্কিন বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা মার্কিনীদের এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি মার্কিন সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় মার্কিনদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী মার্কিন ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি মার্কিনদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা মার্কিন জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। রাষ্ট্রপতি জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় তৈরির প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন মার্কিনীকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষ্যে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে মার্কিন বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে মার্কিন এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
মার্কিনদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে মার্কিন সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে মার্কিনীরা এই ভেবে উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
মার্কিন কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড সম্মেলন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো আইন) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স আইন) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্য (বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট) রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বরে কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো নথি রাখা হয়নি। একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে হার্টফোর্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, অঙ্গরাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী রাষ্ট্রপতিকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও সম্মেলন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড সম্মেলন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কিত পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ সমাপ্তকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরীয় পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন নয়তো ডের ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরীয় জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন মার্কিন বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরীয় বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর রাষ্ট্রপতিত্ব ও গুড ফিলিংসের যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|রাষ্ট্রপতি জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে মার্কিন হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন দেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড সম্মেলনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু ফেডারেলিস্ট বিরোধী তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকত। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে রাষ্ট্রপতিত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের রাজ্যসচিব জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। দলটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''গুড ফিলিংসের যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== মার্কিন ব্যবস্থা ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস এরা আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তারা জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''মার্কিন ব্যবস্থা''' নামে পরিচিত হয়। এটি মার্কিন শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে বলা হয়। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যাংক অফ (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও ব্যবস্থার কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা মার্কিন পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
মার্কিন ব্যবস্থার বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে মার্কিন ব্যবস্থা বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক অঙ্গরাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল ভিত্তিক রাস্তা নির্মিত হয়। তখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো অঙ্গরাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ তখনো ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''শিল্প বিপ্লব'''-এর খবর নিয়ে আসতো। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠনে যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব শিল্প বিপ্লব গড়ে তুলতে থাকে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার ফলে এই আতঙ্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি মনরো কংগ্রেসে স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''' বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন লাতিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। রাষ্ট্রপতি মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ দেশ ছিল। এর নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে মনরো ডকট্রিনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এককভাবে নয় বরং লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন লাতিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, লাতিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সাইমন বলিভার পানামায় প্রথম সর্ব-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি সর্ব-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে আসে। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। মার্কিন এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ইন্ডিয়ান বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
মার্কিন বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ইন্ডিয়ান গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ইন্ডিয়ানদের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রাজকীয় মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ইন্ডিয়ান নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি সেনাদল রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইন্ডিয়ানরা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ইন্ডিয়ানরা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ সেনাদল ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংককে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসীয় ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস রাজস্ব সচিব উইলিয়াম এইচ ক্রফোর্ডকে রাষ্ট্রপতি এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। রাজ্যসচিব জন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের পুত্র কিউ অ্যাডামস এবং সংসদের স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল হৃদাঘাতের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয় তখন দেখা যায় কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায় অযোগ্য ছিলেন। তবে স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার মার্কিন ব্যবস্থার মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়, কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে রাজ্যসচিব নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, এখানে একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | রাষ্ট্রপতি প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | অঙ্গরাজ্য
! width="13%" | ভোট সংখ্যা:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা তথা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা জ্যাকসনীয় নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্বের সময়ে একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন ব্যবস্থার অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সচিব ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও উপরাষ্ট্রপতি জন সি ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনীয়দের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনীয়রা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়ন কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন যে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে, এমনকি তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ইন্ডিয়ানদের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণীরা এটিকে ঘৃণা করে। "ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস" নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
পরবর্তী নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের রাষ্ট্রপতি -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্রেসি''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং “সাধারণ মানুষ” এর উত্থানের দিকে আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক আমেরিকান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে আমেরিকান সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত, সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন এবং উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। ভিড় নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক ঝলক দেখতে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে, শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে, ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চ, জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, “আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।” নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তারা থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট অ্যাফেয়ার এবং কিচেন ক্যাবিনেট ===
পেটিকোট অ্যাফেয়ারকে ইটন অ্যাফেয়ার নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তাদের স্ত্রীদের জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট অ্যাফেয়ারে পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। উইলিয়াম ও’নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনীতিবিদদের জন্য বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন এবং পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা অ্যান্টি-পেগি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== নালিফিকেশন সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল নালিফিকেশনের ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে “ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস” বলে ডাকে।
নালিফিকেশনের ধারণা, যে রাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার, যা তারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করে, প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি রেজোলিউশনে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে সাউথ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি. ক্যালহাউন রাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন রাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর, ১৮৩০ সালের এপ্রিলে, তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন ডে ডিনারে একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন, “রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।” প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে নির্দেশিত), “আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!” এর জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালহাউন বলেন: “ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!”
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি এখনও প্রেসিডেন্টের “কিচেন ক্যাবিনেট”-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার ইউএস সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা নালিফিকেশন অ্যাক্ট পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে রাজ্য আর “অবৈধ” শুল্ক দেবে না। সাউথ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন নালিফিকেশনের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, লীগ নয়... এটা বলা যে কোনো রাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এটা বলার মতো যে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি নয়।” ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি “ফোর্স বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু এখনও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। প্রেসিডেন্ট উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে সাউথ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা নালিফিকেশন অ্যাক্ট বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ভারতীয় অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক নেটিভ আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ভারতীয় অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ভারতীয়দের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ভারতীয় অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত নেটিভ আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। নেটিভ আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ রাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা “ট্রেইল অফ টিয়ার্স” বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত নেটিভরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন একর এবং সমস্ত নেটিভ উপজাতিদের জন্য মোট ৬৫ মিলিয়ন ডলার পায়। আমেরিকান সরকার নেটিভদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন নেটিভদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও রাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ রুল ===
যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্ক এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ রুল'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ রুলগুলো জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ রুলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ রুলটি ১৮৪৪ সালে হাউসে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
দ্বিতীয় ব্যাংক অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের একই জায়গায়, ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত “সাধারণ” মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে “হাইড্রা-হেডেড” দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে, তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। দুই সিনেটর, হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক আমেরিকান ব্যাংক সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে “পেট ব্যাংক”গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন রাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায়। বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয়তা কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন কেস নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডিয়ান বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী আমেরিকা (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার নৌকা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। আমেরিকান সহানুভূতিশীলরা, যারা এই বিদ্রোহকে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডিয়ান লয়ালিস্ট কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে ডক করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে, স্রোতে টেনে নিয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আমেরিকান অ্যামোস ডারফ্রি, একজন কৃষ্ণাঙ্গ, নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, আমেরিকান সংবাদপত্র মিথ্যাভাবে রিপোর্ট করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে, ১৮৩৮ সালের ২৯ মে, একজন আমেরিকান নদী জলদস্যু এবং তার লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন অ্যাফেয়ার ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও আমেরিকান হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি “অ্যান্টিসিপেটরি স্ব-প্রতিরক্ষা” নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিন টেস্ট পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন অঙ্গরাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশদের দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিশের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে মার্কিন সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে মার্কিনদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডীয় কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডীয়রা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইনের কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোরও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
e3cfepzmlyv8zgk5k7j4msw0gb1lwbo
85576
85571
2025-07-02T17:25:41Z
Mehedi Abedin
7113
85576
wikitext
text/x-wiki
== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ==
ওয়াশিংটন, অ্যাডামস এবং জেফারসন চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স ও তার মিত্রদের এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের মধ্যে সংঘাতে নিরপেক্ষ রাখতে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার বাণিজ্যে বাধা দিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিধিনিষেধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিরোধিতা করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস ১৮১২ সালের ১৮ জুন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর কারণ ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে হাজার হাজার মার্কিন নাবিককে জোরপূর্বক নিয়োগ, নিরপেক্ষ বাণিজ্যে ব্রিটিশ বিধিনিষেধ এবং মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সমর্থনে ব্রিটিশ সামরিক সহায়তার প্রতি ক্ষোভ।
ইতিহাসবিদ রবিন রেইলি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ফরাসি কূটনীতির জয় ছিল। এটি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় বিষয় থেকে মনোযোগ এবং কিছু সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল। ব্রিটেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো কারণ ছিল না। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেন মার্কিন সরবরাহ, যেমন গরুর মাংস এবং ওক কাঠের উপর নির্ভর করত। উত্তর আমেরিকায় যেকোনো যুদ্ধ ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনীর জন্য স্পেনে ফরাসিদের পরাজিত করার প্রচেষ্টায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
=== যুদ্ধের রাজনীতি ===
[[File:James Madison.jpg|thumb|upright|১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের ১৮১৬ সালের প্রতিকৃতি।]]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেফারসন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান ছিলেন, তারা ব্রিটিশ আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং কানাডা দখলের আশায় যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিলেন কানাডা দখল করা সহজ হবে। তারা আশা করেছিলেন নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশরা মার্কিনদের জমি দিয়ে দেবে। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন বলেছিলেন, "এই বছর কুইবেকের আশেপাশে কানাডা দখল করা শুধুমাত্র অগ্রসর হওয়ার ব্যাপার। এটি আমাদের হ্যালিফ্যাক্স আক্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এবং আমেরিকান মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করবে।") নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেলিস্ট যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও জমি দখলের ইচ্ছা থেকে কিছুটা প্রভাবিত ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে যুদ্ধ খুবই অজনপ্রিয় ছিল। কারণ, নিউ ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বাণিজ্যের উপর নির্ভর করত, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। যুদ্ধ ঘোষণা অত্যন্ত সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাস হয়েছিল। অ্যাডামস প্রশাসনের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া ফেডারেলিস্ট পার্টি নিউ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। এদিকে, গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী স্পেন্সার পার্সিভাল একজন ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বণিকের গুলিতে নিহত হন। এর ফলে লর্ড লিভারপুল সরকারের দায়িত্ব নেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি জোরপূর্বক নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ততক্ষণে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ফেডারেলিস্টরা বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৮১২ সালের নির্বাচনে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র ডিউইট ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করেন। ক্লিনটন রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের কাছে ১২৮-৮৯ ভোটে হেরে যান। এটি একজন যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি বিরুদ্ধে সম্মানজনক ফলাফল ছিল। ফেডারেলিস্টরা কংগ্রেসের কিছু আসন জিতেছিল এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল দৃঢ়ভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকানদের পক্ষে ছিল।
=== ১৮১২ সালের যুদ্ধ ===
[[File:Principal Campaigns of the War of 1812.gif|thumb|১৮১২ সালের যুদ্ধের প্রধান প্রচারণার মানচিত্র।]]
'''১৮১২ সালের যুদ্ধ''' ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এতে স্থল ও নৌযুদ্ধ উভয়ই হয়েছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের মধ্যে ছিল তাদের আমেরিকান উপনিবেশ, বিশেষ করে আপার কানাডা (বর্তমানে অন্টারিও), লোয়ার কানাডা (কুইবেক), নোভা স্কটিয়া এবং বারমুডা। ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত সমস্ত মার্কিন ভূমি স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল (স্প্যানিশ ফ্লোরিডা বাদ ছিল)। তারা তখনো মার্কিন ভূখণ্ডে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা টেকুমসেহের মতো আদিবাসীদের নিয়োগ করেছিল মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের বিরক্ত করতে। তারা মার্কিন মাটিতে দুর্গ বজায় রেখেছিল। ব্রিটিশরা আদিবাসী উপজাতিদের মার্কিন বসতি স্থাপনকারীদের হয়রানি করতে উৎসাহিত করেছিল। ওহাইও উপত্যকা এবং কেনটাকি অঞ্চলে পশম বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশরা আগ্রহী ছিল।
কোনো দেশই এই সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মার্কিনরা সৈন্য নিয়োগের জন্য বোনাস এবং তিন মাসের বেতন ও পশ্চিমে ১৬০ একর জমি কেনার অধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এতে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এটি মার্কিন সীমান্ত এবং সমুদ্রে বিশেষভাবে সত্য ছিল। সেখানে মার্কিন নাবিকদের ব্রিটিশ রাজকীয় নেভিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকায় মাত্র ৫,০০০ সৈন্য ছিল। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ইউরোপে চলছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ইউরোপের উপকূলের বেশিরভাগ অংশ অবরোধ করেছিল। ১৮১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে মার্কিন সামরিক একাডেমি (১৮০২ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাত্র ৮৯ জন নিয়মিত অফিসার তৈরি করেছিল। সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিলেন বিপ্লবী যুদ্ধের প্রবীণ বা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় এখনও অসংগঠিত এবং অশৃঙ্খল ছিল। নিউ ইংল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের মিলিশিয়ারা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করত। তারা যখন যুদ্ধ করত, তখন প্রায়ই পিছু হটত। সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে নিউ ইয়র্ক দাসদের মুক্তির প্রস্তাব দেয় যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হত। মার্কিন সেনাবাহিনী ওল্ড নর্থওয়েস্ট এবং কানাডায় দাসদের জন্য একই প্রস্তাব দিয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা শহর রক্ষার জন্য একটি কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিগেড গঠন করেছিল। কিন্তু দূরবর্তী দক্ষিণে দাসদের অস্ত্র দেওয়ার ভয় তাদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে রেখেছিল। এমনকি স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময় লুইজিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত নিউ অরলিন্সের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মিলিশিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা দাসদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ করতে পারত। মার্কিনদের শৃঙ্খলার অভাব এবং নিউ ইংল্যান্ডের যুদ্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা রাষ্ট্রপতি ল ম্যাডিসনের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
==== আটলান্টিক থিয়েটার ====
মার্কিন নৌবাহিনী তখনও বিশ বছরের পুরনো ছিল না। এর মাত্র ২২টি জাহাজ ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা তাদের নেপোলিয়ন বিরোধী নৌবহর থেকে অনেক জাহাজ ছাড়তে পারেনি। মার্কিনদের নিয়মিত নৌবাহিনী ছাড়াও সরকার ব্যক্তিগত জাহাজকে অনুমতি দিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত জাহাজগুলো ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারত। তারা জাহাজে পাওয়া যেকোনো মাল নিতে পারত। এটি মূলত বৈধ জলদস্যুতা ছিল। ব্রিটিশরাও ব্যক্তিগত জাহাজ ব্যবহার করত। ব্রিটিশরা কানাডায় তাদের জাহাজ রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা মার্কিন বন্দরগুলো অবরোধ করেছিল। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে আটলান্টিকে মার্কিন নৌবিজয়ের একটি ধারা ছিল।
[[File:USS Constitution v HMS Guerriere.jpg|thumb|ইউএসএস কনস্টিটিউশন এইচএমএস গুয়েরিয়েরকে ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে ইউএসএস কনস্টিটিউশনের ডাকনাম হয় ''ওল্ড আয়রনসাইডস''।]]
১৯ আগস্ট নোভা স্কটিয়ার উপকূলে ইউএসএস ''কনস্টিটিউশন'' এইচএমএস ''গুয়েরিয়ের''-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ছিল প্রথম নৌযুদ্ধ। এইচএমএস গুয়েরিয়েরের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ড্যাক্রেস। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী মার্কিন কনস্টিটিউশন দখল করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, "৪৫ মিনিটে একটি ইয়াঙ্কি ফ্রিগেট আসছে, এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের হবে। পনেরো মিনিটে তাকে নিয়ে নাও, আমি তোমাদের চার মাসের বেতন দেব।" কনস্টিটিউশন ২৫ ফুট দূরে না আসা পর্যন্ত গুলি ছোড়েনি। তারা কামান এবং গ্রেপ শট উভয়ই ছুড়েছিল। যুদ্ধের মাঝখানে গুয়েরিয়েরের একটি কামানের গোলা কনস্টিটিউশনের পাশে লেগে ফিরে আসে। একজন মার্কিন নাবিক চিৎকার করে বলেন, "হুজ্জা! এর পাশগুলো লোহার তৈরি!" গুয়েরিয়ের ব্রিটিশ অবরোধ কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নির্দয়ভাবে পরাজিত হয়। তার ক্রুদের বন্দী হিসেবে জাহাজে আনা হয়। মার্কিন ক্যাপ্টেন হাল বুঝতে পারেন ব্রিটিশ জাহাজটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা উদ্ধার করা যাবে না। তাই এটিকে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয়ের খবরে বোস্টন উৎসবে মেতে ওঠে।
কিন্তু আটলান্টিকে কিছু বিজয় সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ব্রিটিশরা আটলান্টিক এবং উপসাগরীয় উপকূলে প্রায় প্রতিটি মার্কিন বন্দর অবরোধ করেছিল। ব্রিটিশরা মার্কিনীদের এতটাই অবরোধ করেছিল যে ১৮১১ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রায় ৯০% কমে যায়। এই বড় ক্ষতি মার্কিন সরকারকে দেউলিয়া করার হুমকি দেয়।
১৮১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে ''কনস্টিটিউশন'' ব্রাজিলের উপকূলে এইচএমএস ''জাভা''-এর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে। এই দ্বিতীয় ব্রিটিশ জাহাজটিও উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কনস্টিটিউশন অক্ষত থাকে। এই প্রবীণ জাহাজটি সমুদ্রে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রথম কিছু বিজয়ে ''ওল্ড আয়রনসাইডস'' ডাকনাম পায়। জেনারেল হালের নেতৃত্বে বিজয় মার্কিনদের নতুন আশা জাগায়। এটি ১৮১২ সালের ১৫ আগস্ট ওহাইওর ফোর্ট ডিয়ারবর্নের যুদ্ধে হারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে জেনারেল হাল আহত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বারবারি যুদ্ধে খ্যাতি অর্জনকারী মার্কিন ক্যাপ্টেন স্টিফেন ডেকাটুরও প্রাথমিক নৌবিজয়ে সক্ষম হন। ১৮১২ সালের ২৫ অক্টোবর ডেকাটুর ইউএসএস ''ইউনাইটেড স্টেটস''-এর নেতৃত্বে এইচএমএস ''ম্যাসিডোনিয়ান'' দখল করেন। ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপ্টেন ডেভিড পোর্টার ইউএসএস ''এসেক্স''-কে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে যান। তিনি আমেরিকান তিমি শিকার শিল্পে ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের হয়রানির জবাব দেন। এসেক্স ব্রিটিশ তিমি শিকারী জাহাজের প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। অবশেষে ১৮১৪ সালের ২৮ মার্চ চিলির উপকূলে এটি ধরা পড়ে।
তবে আটলান্টিক উপকূলে স্যার জন কোপ শেরব্রুক ১৮১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পেনোবস্কট অভিযান শুরু করেন। তিনি পাঁচশ ব্রিটিশ নাবিকের নেতৃত্ব দেন। এটি মেইনের উপকূলে (তখন ম্যাসাচুসেটসের অংশ) ছিল। এটি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের মধ্যে চোরাচালানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ছাব্বিশ দিনে শেরব্রুক বেশ কয়েকটি শহরে হামলা ও লুটপাট করে। তারা সতেরোটি আমেরিকান জাহাজ ধ্বংস করে। তারা হ্যাম্পডেনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময় কাস্টিন দখল করে রাখে।
==== গ্রেট লেক/কানাডিয়ান/পশ্চিমা থিয়েটার ====
[[File:Battle erie.jpg|thumb|লেক ইরি যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল। এটি মার্কিনদের ডেট্রয়েট পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।]]
যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় স্থলপথে আক্রমণের প্রচেষ্টা ছিল ব্যর্থ। পশ্চিমা থিয়েটারে যুদ্ধ মূলত মিশিগান, ওহাইও এবং কানাডার সীমান্ত এলাকায় হয়েছিল। ভূগোল এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান নির্ধারণ করেছিল। এটি প্রধানত লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী, লেক অন্টারিও, সেন্ট লরেন্স নদী এবং লেক চ্যামপ্লেইনের আশেপাশে ছিল।
==== চেসাপিক অভিযান ====
[[File:British Burning Washington.jpg|thumb|ব্রিটিশরা ওয়াশিংটন ডিসি পুড়িয়ে দেয়।]]
চেসাপিক উপসাগর ছিল বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সরকারের কেন্দ্র। ব্রিটিশরা ১৮১৩ এবং ১৮১৪ সালে চেসাপিক এলাকায় যুদ্ধ নিয়ে আসে।<ref>http://starspangled200.org/History/Pages/ChesapeakeCampaign.aspx</ref> ১৮১৩ সালের ৪ জুলাই জোশুয়া বার্নি নৌবিভাগকে বিশটি বার্জ তৈরি করতে রাজি করান। এগুলো চেসাপিক উপসাগর রক্ষার জন্য ছিল। এই বার্জগুলো রয়্যাল নেভিকে হয়রানিতে সফল হয়। কিন্তু যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে এগুলো অকেজো ছিল।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্রে আরও জাহাজ পাঠায়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সৈন্যরা ওয়াশিংটন শহরে অগ্রসর হয়। নৌবাহিনী তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল এবং বন্দরে থাকা মার্কিন জাহাজ পুড়িয়ে দেয়। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে শহরের আরও অংশ পুড়ে যেত। রাষ্ট্রপতি জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ম্যাডিসনকে কয়েক ঘণ্টা আগে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভা পালিয়ে যান। ডলি ম্যাডিসন প্রথমে গিলবার্ট স্টুয়ার্টের জর্জ ওয়াশিংটনের একটি জীবন্ত আকারের চিত্র নিয়ে যান। (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লাইব্রেরির ধ্বংসের কথা শুনে এটি পুনরায় তৈরির প্রস্তাব দেন। ১৮১৫ সালের মে মাসে সরকার জেফারসনের নিজের লাইব্রেরির ৬,৭০০টি বই ২৩,৯৫০ ডলারে কিনে নেয়।) ভবনগুলো সারা রাত জ্বলতে থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল বাল্টিমোরের যুদ্ধের জন্য একটি বিভ্রান্তি। এখানে ব্রিটিশরা বন্দর অবরোধ করে এবং একই সময়ে স্থল ও সমুদ্রপথে তিনটি দুর্গে আক্রমণ করে। তবে এই অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সত্ত্বেও সব দুর্গ সামান্য ক্ষতি নিয়ে টিকে থাকে। ফোর্ট ম্যাকহেনরি সকালে তার পতাকা উত্তোলন করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের নৌবহর নিউ অরলিন্সে পুনরায় সংগঠিত হতে এবং যুদ্ধ করতে চলে যায়। ফ্রান্সিস স্কট কি নামে একজন মার্কিনীকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে রাতভর আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের মানবিক মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দেখে তার হৃদয় উত্তেজিত হয়। তিনি এই উপলক্ষ্যে কিছু কবিতা লেখেন। একটি পুরনো ব্রিটিশ পানশালার গানের সুরে সেট করা হয়। এটি পরে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত “দ্য স্টার-স্প্যাঙ্গলড ব্যানার” হয়।
==== দক্ষিণ থিয়েটার ====
[[File:Battle Horseshoe Bend 1814.jpg|thumb|upright|হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধ।]]
১৮১৪ সালে মার্কিন বন্দরের অবরোধ এতটাই শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে যাত্রা করতে পারছিল না। ১৮১৪ সালের আগস্টে মার্কিন এবং ব্রিটিশ আলোচকরা বেলজিয়ামের ঘেন্টে শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। '''ঘেন্টের চুক্তি''' ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ করে। কিন্তু এটি যুদ্ধের আগের নীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। খবর দ্রুত পাঠানোর কোনো উপায় না থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির খবর পায়নি।
মার্কিনদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের সমর্থনের নীতির অংশ হিসেবে ব্রিটিশরা দক্ষিণে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের সাহায্য করছিল। ১৮১৪ সালের মার্চে জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এবং জেনারেল জন কফি প্রায় ২,০০০ টেনেসি মিলিশিয়া, চক্টো, চেরোকি এবং মার্কিন নিয়মিত সৈন্য নিয়ে ক্রিক ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রধান মেনাওয়ার নেতৃত্বে ১,০০০ ক্রিকের মধ্যে ৮০০ জন হর্সশু বেন্ডের যুদ্ধে নিহত হন। জ্যাকসনের বাহিনীর মাত্র ৪৯ জন নিহত হয়। জ্যাকসন বাকি ক্রিকদের তাড়া করেন যতক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে।
বছরের শেষে জেনারেল জ্যাকসন আবার অগ্রসর হন। এবার তিনি নিউ অরলিন্স, লুইজিয়ানায় ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য বাহিনী নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষ এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলোর একটিতে জ্যাকসন ব্রিটিশ বাহিনীকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করেন। ১,৭৮৪ ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। আমেরিকানরা মাত্র ২১০ জন হারায়। ব্রিটিশরা নিউ অরলিন্স ত্যাগ করে। এই যুদ্ধ জেনারেল জ্যাকসনকে নায়ক করে তোলে। ব্রিটিশরা মোবাইল উপসাগর দখল করে এবং ফোর্ট বোয়ারের যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু পরে তাদের শুধু চলে যেতে হয়।
==== যুদ্ধের সমাপ্তি ====
[[File:Battle of New Orleans.jpg|thumb|নিউ অরলিন্সের যুদ্ধ]]
যুদ্ধ শেষ হলে ১,৬০০ ব্রিটিশ এবং ২,২৬০ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়। ধীর যোগাযোগের কারণে নিউ ইংল্যান্ডে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে মার্কিন সাফল্যের খবর পৌঁছায়নি। নিরাশাবাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বা পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ১৮১৫ সালের প্রথম দিকে ঘেন্টের চুক্তির খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলে ভয় কেটে যায়। কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে মার্কিনীরা এই ভেবে উৎসাহিত হয় যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টলেনি।
মার্কিন কূটনীতি বিজয়ী হয়েছিল। এটি বিপ্লব এবং লুইজিয়ানা ক্রয়ের মতোই ছিল। যদি ১৮১৫ সালে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শেষ না হতো তবে ব্রিটিশরা এক লক্ষ প্রবীণ সৈন্য এবং তাদের নৌবাহিনীর পূর্ণ শক্তি সংগঠিত করতে পারত।
=== হার্টফোর্ড সম্মেলন ===
নিউ ইংল্যান্ডের বণিক এবং জাহাজ মালিকরা জেফারসন প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি (১৮০৭ সালের এমবার্গো আইন) এবং ম্যাডিসন প্রশাসনের (১৮০৯ সালের নন-ইন্টারকোর্স আইন) নীতির জন্য ইতিমধ্যেই বিরক্ত ছিল। তারা গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিল। তারা নিউ ইংল্যান্ডের শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল। বাণিজ্য অবৈধ এবং ব্রিটিশ অবরোধের কারণে নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্য (বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাট) রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসনের যুদ্ধকালীন নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছিল। রাষ্ট্রপতি ম্যাডিসন নিউ ইংল্যান্ডের সামরিক প্রতিরক্ষার নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেননি। অনেক নিউ ইংল্যান্ডবাসী এটিকে তাদের অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছিল।
১৮১৪ সালের ১০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটস আইনসভা পাঁচটি নিউ ইংল্যান্ড রাজ্যের প্রতিনিধিদের ১৫ ডিসেম্বরে কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে মিলিত হওয়ার জন্য ভোট দেয়। তারা নিউ ইংল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। ছাব্বিশ জন প্রতিনিধি হার্টফোর্ডে জড়ো হন। সভাগুলো গোপনে অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো নথি রাখা হয়নি। একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে হার্টফোর্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, অঙ্গরাজ্যগুলোর অতিক্রমকারী এবং অসাংবিধানিক ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে তাদের সার্বভৌমত্ব জাহির করার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া, কিছু প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:
# ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করা;
# আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, নতুন রাজ্যের প্রবেশ এবং বিদেশী বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা;
# দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্ব বাতিল করা (এটি দক্ষিণের জন্য সুবিধা হিসেবে দেখা হতো);
# যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য এক মেয়াদের সীমা;
# প্রতিটি পরবর্তী রাষ্ট্রপতিকে তার পূর্বসূরীর থেকে ভিন্ন রাজ্যের হতে হবে।
কিছু প্রতিনিধি ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতা চাইলেও সম্মেলন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস থেকে তিনজন কমিশনার এই শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার এবং নিউ অরলিন্সে জেনারেল জ্যাকসনের বিজয়ের খবর তাদের আগেই পৌঁছে যায়। এই কাজটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসেবে দেখা হয়। কমিশনাররা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে যান। হার্টফোর্ড সম্মেলন ফেডারেলিস্ট পার্টির পতন নিশ্চিত করে।
== দ্বিতীয় বারবারি যুদ্ধ ==
প্রথম বারবারি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কিত পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়। এটি বারবারি উপকূলের জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে সেই যুদ্ধ সমাপ্তকারী চুক্তির শর্ত মানতে না দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক সম্পদ না থাকায় তাদের ক্রুদের জন্য মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা সব মার্কিন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে বিতাড়িত করে। এটি জলদস্যু রাষ্ট্রগুলোকে আরও উৎসাহিত করে। আলজিয়ার্সের ডে উমর বিন মুহাম্মদ মার্কিন কনস্যুলার টোবিয়াস লিয়ারকে বহিষ্কার করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্পদের অভাবে পরিস্থিতি অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৮১২ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। ১৮১৫ সালের ৩ মার্চ কংগ্রেস আলজিয়ার্সের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর ব্যবহার অনুমোদন করে। কমোডোর স্টিফেন ডেকাটুর, জুনিয়র এবং উইলিয়াম বেইনব্রিজের নেতৃত্বে দশটি জাহাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেকাটুরের স্কোয়াড্রন প্রথমে ভূমধ্যসাগরে রওনা দেয়।
কমোডোর ডেকাটুর দ্রুত স্কোয়াড্রনকে নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান। তারা আলজিয়ার্সের পথে দুটি আলজেরীয় পতাকাযুক্ত জাহাজ দখল করে। জুন মাসের শেষে ডেকাটুর আলজিয়ার্সে পৌঁছান। তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন নয়তো ডের ধ্বংসের হুমকি দেন। ডে সম্মত হন। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে আলজেরীয় জাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রায় দশজন মার্কিন বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন আলজেরীয় বন্দীর বিনিময়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় বন্দী ফেরত দেওয়া হয়। দখলকৃত জাহাজের জন্য ১০,০০০ ডলার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ প্রদান বন্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ জাহাজ চলাচলের অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
== জেমস মনরোর রাষ্ট্রপতিত্ব ও গুড ফিলিংসের যুগ ==
[[File:James Monroe White House portrait 1819.jpg|thumb|upright|রাষ্ট্রপতি জেমস মনরোর ১৮১৯ সালের প্রতিকৃতি]]
যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদেরকে তাদের নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের নাগরিক হিসেবে দেখত (যেমন নিউ ইয়র্কবাসী বা জর্জিয়াবাসী)। এখন তারা নিজেদেরকে মার্কিন হিসেবে দেখতে শুরু করে। তাদের নতুন দেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল।
১৮১২ সালের যুদ্ধ এবং হার্টফোর্ড সম্মেলনের বিরোধিতা ফেডারেলিস্ট পার্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু ফেডারেলিস্ট বিরোধী তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকত। শেষ গুরুতর ফেডারেলিস্ট প্রার্থী রুফাস কিং ১৮১৬ সালে রাষ্ট্রপতিত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জেমস ম্যাডিসনের রাজ্যসচিব জেমস মনরোর কাছে হেরে যান। দলটি ১৮২৫ সালে ভেঙে যায়।
জাতীয় গর্ব এবং দলীয়তার শান্তি বোস্টনের ''কলম্বিয়ান সেন্টিনাল''-এর সাংবাদিক বেঞ্জামিন রাসেলের নামকরণ করা '''গুড ফিলিংসের যুগ'''-এর দিকে নিয়ে যায়। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মনরো ১৮১৭ সালে একটি শুভেচ্ছা সফরে আসেন।
=== মার্কিন ব্যবস্থা ===
জাতীয় গর্বের নতুন ঢেউয়ে উঠে, কেনটাকির হেনরি ক্লে, সাউথ ক্যারোলাইনার জন সি ক্যালহাউন এবং ম্যাসাচুসেটসের জন কিউ. অ্যাডামস এরা আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তারা জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রচার করেন। এই পরিকল্পনা '''মার্কিন ব্যবস্থা''' নামে পরিচিত হয়। এটি মার্কিন শিল্প রক্ষার জন্য উচ্চ শুল্ক এবং অতিরিক্ত ফেডারেল রাজস্ব সংগ্রহের জন্য উচ্চ জমির দামের আহ্বান জানায়। পরিকল্পনাটি জাতির অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও খাল, শক্তিশালী করার কথা বলে। এগুলো শুল্ক ও জমির রাজস্ব দিয়ে অর্থায়ন করা হবে বলা হয়। এই উন্নতিগুলো বাণিজ্যকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। পরিকল্পনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যাংক অফ (১৮১৬ সালে ২০ বছরের জন্য চার্টার্ড) বজায় রাখার কথা বলে। এটি মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করবে এবং সার্বভৌম ঋণ জারি করবে। কংগ্রেস ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় সমৃদ্ধ শিল্পগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক পাস করে। এই শিল্পগুলো বিদেশী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে। ১৮১৬ সালের শুল্ক আমদানিকৃত উল, তুলা, লোহা, চামড়া, টুপি, কাগজ এবং চিনির উপর কর আরোপ করে।
যদিও ব্যবস্থার কিছু অংশ গৃহীত হয় (উদাহরণস্বরূপ, বিদেশী পণ্যের উপর ২০-২৫% কর, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা মার্কিন পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে), অন্যান্য অংশে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। ফেডারেল সরকারের এই ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিকতার প্রশ্ন ওঠে। তবুও কাম্বারল্যান্ড রোড এবং ইরি খালের আকারে দুটি বড় অবকাঠামো অর্জন করা হয়। কাম্বারল্যান্ড রোড বাল্টিমোর থেকে ওহাইও নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি ভ্রমণের সুবিধা দেয় এবং পশ্চিমে বসতি স্থাপনের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ইরি খাল নিউ ইয়র্কের অ্যালবানির হাডসন নদী থেকে নিউ ইয়র্কের বাফেলো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি উত্তর-পূর্বে জলপথে ভ্রমণের গতি ও দক্ষতা বাড়ায়।
মার্কিন ব্যবস্থার বিরোধিতা মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে আসে। ক্লে যুক্তি দেন, পশ্চিমের উচিত এই পরিকল্পনা সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের শহুরে শ্রমিকরা পশ্চিমের খাদ্যের ভোক্তা হবে। দক্ষিণের উচিত এটি সমর্থন করা। কারণ, উত্তর-পূর্বের কারখানায় তুলার জন্য বাজার রয়েছে। তবে, দক্ষিণ শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের তুলার জন্য ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী বাজার ছিল।
সংক্ষেপে, ১৮১০ এবং ১৮২০-এর দশকে মার্কিন ব্যবস্থা বিভিন্ন বাধার কারণে মিশ্র ফলাফল পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন শিল্প উপকৃত হয় এবং উন্নতি ঘটে।
=== প্রযুক্তি ===
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথক অঙ্গরাজ্যগুলো অবশেষে উন্নত অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৭৯০-এর দশকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক এবং নিউ ইয়র্ক স্টেটের গ্রেট ওয়েস্টার্ন টার্নপাইক নামে দুটি টোল ভিত্তিক রাস্তা নির্মিত হয়। তখন ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো অঙ্গরাজ্যগুলো খাল তৈরি করে। এই বিশাল কৃত্রিম জলপথে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করা হতো। নদীর বিপরীতে, খালগুলোতে অগভীর জায়গা বা র্যাপিড ছিল না। লক এবং বাঁধ ব্যবহার করে জলের উচ্চতা বজায় রাখা হতো। স্টিমবোটগুলোকে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হতো। কিন্তু খালের নৌকাগুলো ঘোড়া বা গরু দিয়ে শান্তভাবে টানা হতো। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট ইরি খাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। রাস্তা, স্টিমশিপ এবং খালের সাহায্যে মানুষ ও পণ্য অভ্যন্তরীণ শহর থেকে পূর্ব উপকূলের বড় বাজারে এবং বিদেশগামী জাহাজে দ্রুত পৌঁছাতে পারত।
এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ তখনো ঔপনিবেশিক দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাণিজ্য আইনের কথা মনে রাখত। বিদেশ থেকে আসা ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র '''শিল্প বিপ্লব'''-এর খবর নিয়ে আসতো। এটি কাজ এবং শ্রমিকদের সংগঠনে যা অলৌকিক ফলাফল তৈরি করেছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে একটি লোহার সেতু নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সিরামিক শিল্প বাড়ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্রিটেনেরও তুলা-বয়ন শিল্প ছিল। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপনিবেশ থেকে সরবরাহ পেত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শৈশবে এর সুবিধা ছিল। বিপুল সম্পদ, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত শ্রমশক্তি এবং দেশীয় রাইফেল শিল্পে উদ্ভাবিত বিনিময়যোগ্য অংশের ব্যবস্থা ছিল। বিদেশী অগ্রগতি অতিক্রম করার চেষ্টায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব শিল্প বিপ্লব গড়ে তুলতে থাকে।
=== ১৮১৯ সালের আতঙ্ক ===
১৮১২ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি এবং রাজনৈতিক দলাদলির আপেক্ষিক অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় দেয়। তবে, ওয়াশিংটনে দলাদলি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার প্রথম বড় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৭৮০ এবং ১৭৯০-এর দশকের মন্দার ফলে এই আতঙ্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন হয়। এটি জব্দ, ব্যাংক ব্যর্থতা, বেকারত্ব এবং কৃষি ও উৎপাদন থেকে কম উৎপাদনের কারণ হয়।
=== ১৮১৯ সালের অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি ===
১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা অঞ্চল কেনার কাজ, ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-ওনিস চুক্তি (ফ্লোরিডা অঞ্চল কেনা) এবং ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে (মেক্সিকান সেশন), যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
=== মনরো ডকট্রিন এবং বিদেশী বিষয় ===
১৮২৩ সালের ২ ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি মনরো কংগ্রেসে স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তার বিদেশ নীতির সবচেয়ে বিখ্যাত দিকটি প্রকাশ করেন। '''মনরো ডকট্রিন''' বলে যে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর (বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা) বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আরও কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ হিসেবে দেখা হবে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। মনরো ডকট্রিন এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা থেকে। তারা ভয় পেয়েছিল যে স্পেন তার প্রাক্তন লাতিন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর তার ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। রাষ্ট্রপতি মনরো মূলত ঘোষণা দেন যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উপনিবেশের জন্য উন্মুক্ত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখনও একটি তরুণ দেশ ছিল। এর নৌশক্তি খুবই কম ছিল। তাই এই সতর্কবাণী বড় শক্তিগুলো মূলত উপেক্ষা করে। তবুও, ব্রিটিশরা এই নীতির সমর্থন করে। তারা প্যাক্স ব্রিটানিকার অংশ হিসেবে এটি মূলত কার্যকর করে। এতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী উচ্চ সমুদ্রের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। মূলত এই সমর্থনের মাধ্যমে মনরো ডকট্রিনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এককভাবে নয় বরং লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত ও বজায় রাখা হয়।
তবুও, মনরো ডকট্রিন লাতিন আমেরিকান নেতাদের কাছে প্রশংসা পায়। যদিও তারা জানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ১৮২৬ সালে, লাতিন আমেরিকান বিপ্লবী নায়ক সাইমন বলিভার পানামায় প্রথম সর্ব-আমেরিকান সম্মেলনের আহ্বান জানান। এটি সর্ব-আমেরিকান সম্পর্কের যুগ শুরু করে।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
[[File:Nea-Math-La, A Seminole Chief.jpg|thumb|upright|প্রধান নিয়ামাথলা]]
দক্ষিণ জর্জিয়ায়, ফাউলটাউনের মিকোসুকি উপজাতির প্রধান নিয়ামাথলা ফোর্ট স্কটের কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড পেন্ডলটন গেইনসের সঙ্গে জমি বিরোধে জড়িত ছিলেন। ফোর্ট জ্যাকসন চুক্তিতে ক্রিকরা এই জমি হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু মিকোসুকিরা নিজেদের আলাদা উপজাতি মনে করত। তারা বলত ক্রিকদের মিকোসুকি জমি হস্তান্তরের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালের নভেম্বরে জেনারেল গেইনস ২৫০ জনের একটি বাহিনী পাঠান নিয়ামাথলাকে ধরতে। কিন্তু তারা ফিরে আসে। একই মাসে দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হয়। মিকোসুকিদের ফাউলটাউন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফাউলটাউনে হামলার এক সপ্তাহ পর, ফোর্ট স্কটে সরবরাহ, অসুস্থ সৈন্য এবং সৈন্যদের পরিবার পরিবহনকারী একটি সামরিক নৌকা আপালাচিকোলা নদীতে আক্রমণের শিকার হয়। জাহাজে শিশু ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী নিহত হয়। একজন মহিলাকে ধরা হয়। ছয়জন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ফোর্ট স্কটে পৌঁছায়।
জেনারেল গেইনসকে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ছোটখাটো অভিযানের অনুমতি ছিল। স্কট গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছালে গেইনসকে সেমিনোলদের তাড়া করতে স্প্যানিশ ফ্লোরিডায় আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্প্যানিশ স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করা যাবে না। তবে, গেইনসকে পূর্ব ফ্লোরিডায় জলদস্যুতার সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাঠানো হয়। তাই যুদ্ধ সচিব জন সি. ক্যালহাউন জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইতিমধ্যে ১৮১২ সালের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
জেনারেল জ্যাকসন ১৮১৮ সালের মার্চে ফোর্ট স্কটে তার বাহিনী জড়ো করেন। তার যোদ্ধারা ছিল ৮০০ নিয়মিত সৈন্য, ১,০০০ টেনেসি স্বেচ্ছাসেবক, ১,০০০ জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ১,৪০০ বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিক যোদ্ধা। জ্যাকসনের বাহিনী ১৩ মার্চ ফ্লোরিডায় প্রবেশ করে। তারা আপালাচিকোলা নদী অনুসরণ করে ফোর্ট গ্যাডসডেন তৈরি করে। ৩১ মার্চ তালাহাসি শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন মিকোসুকি শহর দখল করা হয়। মার্কিন এবং ক্রিক বাহিনী ৩০০ ইন্ডিয়ান বাড়ি ধ্বংস করে। তারা ৬ এপ্রিল স্প্যানিশ ফোর্ট সেন্ট মার্কস দখল করে।
মার্কিন বাহিনী সেন্ট মার্কস ত্যাগ করে ইন্ডিয়ান গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তারা আলেকজান্ডার জর্জ আরবুথনটকে ধরে। তিনি বাহামাস থেকে কাজ করা একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ইন্ডিয়ানদের সরবরাহ দিতেন। তারা রবার্ট আমব্রিস্টারকেও ধরে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন রাজকীয় মেরিন এবং স্ব-নিযুক্ত ব্রিটিশ এজেন্ট। ইন্ডিয়ান নেতা জোসিয়া ফ্রান্সিস এবং হোমাথলেমিকোকেও ধরা হয়। চারজনকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জ্যাকসনের বাহিনী সুয়ানি নদীর তীরে পলাতক দাসদের দখলকৃত গ্রামগুলোতেও আক্রমণ করে।
বিজয় ঘোষণা করে জ্যাকসন জর্জিয়া মিলিশিয়া এবং ক্রিক যোদ্ধাদের বাড়ি পাঠান। বাকি সেনাবাহিনীকে সেন্ট মার্কসে ফেরত পাঠান। সেখানে তিনি একটি সেনাদল রেখে ফোর্ট গ্যাডসডেনে ফিরে যান। ৭ মে তিনি ১,০০০ সৈন্য নিয়ে পেনসাকোলায় অগ্রসর হন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইন্ডিয়ানরা সেখানে জড়ো হচ্ছে এবং স্প্যানিশরা তাদের সরবরাহ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ফ্লোরিডার গভর্নর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, সেখানে থাকা ইন্ডিয়ানরা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জ্যাকসন ২৩ মে পেনসাকোলায় পৌঁছান। গভর্নর এবং স্প্যানিশ সেনাদল ফোর্ট বারানকাসে পিছু হটে। একদিন কামানের গোলা বিনিময়ের পর স্প্যানিশরা আত্মসমর্পণ করে। কর্নেল উইলিয়াম কিংককে ওয়েস্ট ফ্লোরিডার সামরিক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল জ্যাকসন টেনেসিতে ফিরে যান। তিনি ১৮২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
== ১৮২৪ সালের নির্বাচন এবং জন কিউ. অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব ==
[[File:JQA Photo.tif|thumb|upright|১৮৪০-এর দশকে জন কুইন্সি অ্যাডামসের পরবর্তী জীবনের ছবি।]]
ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তির সঙ্গে ১৮২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। চারজন ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। টেনেসি আইনসভা এবং পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকানদের একটি সম্মেলন ১৮২২ এবং ১৮২৪ সালে জেনারেল থেকে সিনেটর হওয়া অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। কংগ্রেসীয় ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান ককাস রাজস্ব সচিব উইলিয়াম এইচ ক্রফোর্ডকে রাষ্ট্রপতি এবং অ্যালবার্ট গ্যালাটিনকে উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। রাজ্যসচিব জন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের পুত্র কিউ অ্যাডামস এবং সংসদের স্পিকার হেনরি ক্লেও এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ক্রফোর্ড নির্বাচনের সময় একটি দুর্বল হৃদাঘাতের কারণে জিততে পারেননি।
যখন ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয় তখন দেখা যায় কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জ্যাকসন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভোট হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে যায়। ক্লে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ায় অযোগ্য ছিলেন। তবে স্পিকার হিসেবে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। ক্লে জ্যাকসনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন। তিনি অ্যাডামসের অনেক নীতি সমর্থন করতেন, যা তার মার্কিন ব্যবস্থার মতো ছিল। ক্লে অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। অ্যাডামস রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হন। এটি জ্যাকসনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়, কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল এবং জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন। অ্যাডামস ক্লেকে রাজ্যসচিব নিযুক্ত করলে জ্যাকসনের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, এখানে একটি ''দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি'' হয়েছে। এখানে ১৮২৪ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থেকে একটি টেবিল দেওয়া হল:
{| class="wikitable" border="1" width="88%"
|-
! width="25%" | রাষ্ট্রপতি প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | অঙ্গরাজ্য
! width="13%" | ভোট সংখ্যা:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন কুইন্সি অ্যাডামস
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | ম্যাসাচুসেটস
| width="13%" align="center" | ১০৮,৭৪০
| width="13%" align="center" | ৮৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | ১৫৩,৫৪৪
| width="13%" align="center" | ৯৯
|-
| width="25%" | উইলিয়াম হ্যারিস ক্রফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | জর্জিয়া
| width="13%" align="center" | ৪৬,৬১৮
| width="13%" align="center" | ৪১
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | ৪৭,১৩৬
| width="13%" align="center" | ৩৭
|-
! width="25%" | ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
! width="25%" | দল
! width="12%" | রাজ্য
! width="13%" | জনপ্রিয় ভোট:
! width="13%" | ইলেক্টোরাল ভোট:
|-
| width="25%" | জন ক্যাল্ডওয়েল ক্যালহাউন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | সাউথ ক্যারোলাইনা
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৮২
|-
| width="25%" | নাথান স্যানফোর্ড
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৩০
|-
| width="25%" | নাথানিয়েল ম্যাকন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নর্থ ক্যারোলাইনা
| width="12%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২৪
|-
| width="25%" | অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | টেনেসি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ১৩
|-
| width="25%" | মার্টিন ভ্যান বুরেন
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | নিউ ইয়র্ক স্টেট
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ৯
|-
| width="25%" | হেনরি ক্লে
| width="25%" | ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি
| width="12%" | কেনটাকি
| width="13%" align="center" | অজানা
| width="13%" align="center" | ২
|}
১৮২৪ সালের নির্বাচন আমেরিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থান ঘটায়। জ্যাকসনের অনুসারীরা তথা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা জ্যাকসনীয় নামে পরিচিত হয়। অ্যাডামস, ক্লে এবং তাদের সমর্থকরা ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে দলীয় রাজনীতি আবার ফিরে আসে।
জন কুইন্সি অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্বের সময়ে একটি উচ্চাভিলাষী অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন ব্যবস্থার অনেক দিক বাস্তবায়ন করেন। কাম্বারল্যান্ড রোড সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েকটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে ছিল চেসাপিক এবং ওহাইও খাল, ডেলাওয়্যার এবং চেসাপিক খাল, পোর্টল্যান্ড থেকে লুইসভিল খাল, গ্রেট লেকসের সঙ্গে ওহাইও নদী ব্যবস্থার সংযোগ এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় ডিসমাল সোয়াম্প খালের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ। অ্যাডামস রাস্তা, খাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগারের মতো অভ্যন্তরীণ উন্নতি আধুনিকীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই অভ্যন্তরীণ উন্নতিগুলো শুল্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ইস্যু অ্যাডামস প্রশাসনকে বিভক্ত করে। সচিব ক্লে শুল্ক সমর্থন করলেও উপরাষ্ট্রপতি জন সি ক্যালহাউন এর বিরোধিতা করেন।
রাষ্ট্রপতি অ্যাডামসের জন্য দুর্ভাগ্যবশত তার পরিকল্পনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। অ্যাডামসের ধারণাগুলো তার নিজের দলের মধ্যেও খুব জনপ্রিয় ছিল না। তবে অ্যাডামসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় সমস্যা ছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচনের পর জ্যাকসনীয়দের ক্ষোভ। ১৮২৭ সালে জ্যাকসনীয়রা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতে নেয়। এটি বাস্তবায়ন কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু অ্যাডামস বিশ্বাস করতেন যে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যেতে পারে, এমনকি তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও। অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সমর্থক ছিল। অ্যাডামসের ইন্ডিয়ানদের প্রতি উদার নীতি জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে। যখন ফেডারেল সরকার চেরোকিদের পক্ষে কর্তৃত্ব জাহির করতে চায়, জর্জিয়া ক্ষুব্ধ হয়। অ্যাডামস প্রশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে যখন রাষ্ট্রপতি অ্যাডামস ১৮২৮ সালের শুল্ক আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইন উত্তরের শিল্প রক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু দক্ষিণীরা এটিকে ঘৃণা করে। "ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস" নামে পরিচিত এই আইন প্রশাসনকে তার শেষ বছরে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।
পরবর্তী নির্বাচন প্রচারণা ছিল নির্মম, তিক্ত এবং ব্যক্তিগত। এমনকি জ্যাকসনের স্ত্রীকেও আক্রমণ করা হয়। তাকে দ্বিবিবাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস হারেন। তিনি ইলেক্টোরাল কলেজে মাত্র ৮৩ ভোট পান। জ্যাকসন ১৭৮ ভোট পান। অ্যাডামস অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। ঠিক যেমন অ্যাডামসের পিতা থমাস জেফারসনের উদ্বোধনে যোগ দেননি। তবে অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতিত্ব তার শেষ ভূমিকা ছিল না। ১৮৩০ সালে তিনি প্রথম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন।
== জনগণের রাষ্ট্রপতি -- অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের যুগ ==
[[File:Andrew jackson head.jpg|thumb|upright|রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রতিকৃতি]]
'''জ্যাকসনীয় গণতন্ত্র''' ১৮২৮ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ছিল। এটি সর্বজনীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাধিকার এবং "সাধারণ মানুষ"-এর উত্থানের আন্দোলন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) বিতর্কিত রাষ্ট্রপতিত্ব দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রথম আধুনিক মার্কিন রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি জ্যাকসন প্রশাসনের শেষের দিকে গঠিত হয়। এই সময়ে মার্কিন সীমান্ত উন্মুক্ত হয়। ভোটাধিকার প্রায় সব শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে প্রসারিত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত ও সম্পত্তির মালিক সংখ্যালঘুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। (এই সময়ে মজুরি-আয়কারীদের সংখ্যাও বাড়ে। কৃষি ছাড়াও, জমি-নিবিড় শিল্পের বিকল্প ছিল।) নারী এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় শিক্ষিত হয়। তবুও সরকারি নিপীড়নও বাড়ে। ট্রেইল অফ টিয়ার্স ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশিত হয়। দাসত্ব সম্পর্কে কংগ্রেসে বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা দাসত্বের প্রতি মনোভাবের কঠোরতার ইঙ্গিত দেয়।
=== নির্বাচন ও উদ্বোধন ===
অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের টেনেসির ন্যাশভিল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে তিন সপ্তাহের যাত্রা উৎসবমুখর ছিল। মানুষ নতুন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে এক ঝলক দেখতে ভীড় করে জড়ো হয়। পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবই ছিল ঘরের মধ্যে ও শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য। তবে ১৮২৯ সালের ২৯ মার্চে জ্যাকসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের ইস্ট পোর্টিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২১,০০০ মানুষ ঘটনাটি দেখতে জড়ো হয়।
নতুন রাষ্ট্রপতি ক্যাপিটলের পশ্চিম দিক দিয়ে বের হন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে নির্বাহী ভবনে অভ্যর্থনার জন্য যান। তিনি পৌঁছানোর আগেই হোয়াইট হাউসে সমর্থকরা ভিড় করে। উৎসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ স্টোরি বলেন, "আমি এমন মিশ্রণ কখনো দেখিনি। রাজা মবের শাসন বিজয়ী মনে হয়।" নতুন রাষ্ট্রপরিকে হোয়াইট হাউস থেকে গোপনে বের হতে হয়। তিনি ভার্জিনিয়ার আলেকজান্ড্রিয়ায় যান। তবে, ভিড় তখনও থেকে যায়। মদের ব্যবস্থা সামনের লনে সরানো পর্যন্ত তাড়া থাকে। হোয়াইট হাউসে হাজার হাজার ডলারের ভাঙা চীনামাটির বাসন ফেলে রাখা হয়।
=== পেটিকোট ঘটনা ও কিচেন মন্ত্রিসভা ===
পেটিকোট ঘটনা ইটন ঘটনা নামেও পরিচিত। এটি ১৮৩০-১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। এটি রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভা এবং তার স্ত্রী জড়িত একটি কেলেঙ্কারি ছিল। যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল, তবুও এটি বেশ কয়েকজন পুরুষের রাজনৈতিক পেশায় সমস্যা সৃষ্টি করে।<ref>http://www.talkingstreet.com/Petticoat_affair</ref> পেটিকোট ঘটনায় পেগি ইটন জড়িত ছিলেন। তাকে জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তখন তিনি পার্সার জন টিম্বারলেকের স্বামী ছিলেন। উইলিয়াম ও'নিলের কন্যা পেগি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তার পিতা ওয়াশিংটন ডিসিতে রাজনীতিবিদদের জন্য প্রতিষ্ঠিত বোর্ডিং হাউসের মালিক ছিলেন। পেগি সেখানে কাজ করতেন। পেগি প্রায়ই বোর্ডিং হাউসে যেতেন। এটি পরে দর্শকদের চোখে পেগির চরিত্রে আরও অসঙ্গতি এনে দেয়। এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পেগির স্বামী সমুদ্রে থাকাকালীন মারা যান। অনেকে বিশ্বাস করত এটি আত্মহত্যা ছিল। কারণ, তার স্ত্রী পেগির জন ইটনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছিল। জন ইটন দম্পতির বন্ধু ছিলেন। যদিও টিম্বারলেকের মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে বলা হয়। পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ে জন ইটনকে বিয়ে করেন। অনেক মহিলা মনে করত পেগি এবং জন ইটনের বিয়ে সঠিক কাজ ছিল না। কথিত সম্পর্কের বিতর্ক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অনেক পুরুষকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে জন ইটন নিজেও ছিলেন। মানুষ জ্যাকসনের এই বিয়ের উপর তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করতে শুরু করে। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরামর্শ দেন যে জন ইটন ও পেগি বিয়ে করুক। জ্যাকসনের দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ফ্লোরাইড ক্যালহাউনের নেতৃত্বে একদল মহিলা পেগি বিরোধী হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের জন্য নিয়ম ও নির্দেশিকা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল মৃত্যুর পর এক বছর শোক পালন এবং কালো পোশাক পরা।
=== বিলুপ্তিকরণ সংকট ===
জ্যাকসন প্রশাসনের প্রাথমিক সংকটগুলোর একটি ছিল বিলুপ্তিকরণ ইস্যু। ১৮২৮ সালে কংগ্রেস ইউরোপ থেকে আমদানির উপর ইতিমধ্যে উচ্চ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শিল্পায়িত উত্তরকে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্য ছিল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণ এটিকে ঘৃণা করে। তারা ইউরোপের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য করত। দক্ষিণ এটিকে "ট্যারিফ অফ অ্যাবোমিনেশনস' বলে ডাকে।
দক্ষিণ নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে মনে করা বিলুপ্তিকরণ ধারণা (যে অঙ্গরাজ্যগুলোর অধিকার আছে কোনো ফেডারেল আইন বাতিল করার) প্রথম ১৭৯৮ সালে ভার্জিনিয়া এবং কেনটাকি প্রস্তাবে প্রকাশ পায়। শুল্কের জবাবে দক্ষিণ ক্যারোলাইনা এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। উপরাষ্ট্রপতি জন সি. ক্যালহাউন অঙ্গরাজ্যের অধিকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত হন। তিনি দক্ষিণ ক্যারোলাইনাকে শুল্ক ইস্যুতে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেন।
এর আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিল না জ্যাকসন অঙ্গরাজ্যের অধিকারের ইস্যুতে কোথায় দাঁড়িয়েছেন। তারপর ১৮৩০ সালের এপ্রিলে তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি এই ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যের অধিকারের বিরোধিতা করেন। রাষ্ট্রপতি জ্যাকসন শুল্কের উপর দক্ষিণের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও তিনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে একটি শক্তিশালী ইউনিয়নে বিশ্বাস করতেন। ফলে জ্যাকসন এবং ক্যালহাউনের মধ্যে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৮৩০ সালের ১৩ এপ্রিল জেফারসন দিবসের প্রাতঃরাশের একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। দক্ষিণ ক্যারোলাইনার সিনেটর রবার্ট হেইন একটি টোস্ট করেন এই বলে, "অঙ্গরাজ্যগুলোর ইউনিয়ন এবং রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব।" রাষ্ট্রপতি জ্যাকসন যোগ করেন (এবং স্পষ্টতই উপরাষ্ট্রপতির দিকে ইঙ্গিত করে), "আমাদের ফেডারেল ইউনিয়ন: এটি অবশ্যই সংরক্ষিত হবে!" এর জবাবে উপরাষ্ট্রপতি ক্যালহাউন বলেন: "ইউনিয়ন: আমাদের স্বাধীনতার পরে, সবচেয়ে প্রিয়!"
১৮৩১ সালে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন রাজ্যসচিব মার্টিন ভ্যান বুরেন (যিনি তখনো রাষ্ট্রপতির "কিচেন মন্ত্রিসভা"-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন) ১৮৩২ সালের নির্বাচনে ক্যালহাউনের পরিবর্তে উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পান। উপরাষ্ট্রপতি ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার মার্কিন সিনেট আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দক্ষিণ এই কম শুল্কে আপস করেনি। দক্ষিণ ক্যারোলাইনা বিলুপ্তিকরণ আইন পাস করে। এটি ঘোষণা করে যে অঙ্গরাজ্য আর "অবৈধ" শুল্ক দেবে না। দক্ষিণ ক্যারোলাইনা হুমকি দেয় যে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করলে তারা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
রাষ্ট্রপতি জ্যাকসন বিলুপ্তিকরণের বিরোধিতা চালিয়ে যান। তিনি বলেন, "সংবিধান... একটি সরকার গঠন করে, সংঘ নয়... কোনো অঙ্গরাজ্য ইচ্ছামতো ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে এটা বলার মতো যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি দেশ নয়।" ১৮৩২ সালে তিনি কংগ্রেসকে একটি "জবরদস্তি বিল” পাস করতে বলেন। এটি শুল্ক আইন কার্যকর করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বিলটি কংগ্রেসে আটকে যায়। তবে মহান আপসকারী হেনরি ক্লে এবং সুরক্ষাবাদীরা একটি আপস শুল্ক বিলে সম্মত হন। আপস শুল্কে কম কিন্তু তবুও বেশ উচ্চ শুল্ক ছিল। ১৮৩৩ সালের ১ মার্চ উভয় বিল পাস হয়। রাষ্ট্রপতি উভয় বিলে স্বাক্ষর করেন।
সামরিক বাহিনীর হুমকির মুখে দক্ষিণ ক্যারোলাইনা দ্রুত কম আপস শুল্কে সম্মত হয়। তারা বিলুপ্তি আইন বাতিল করে। সংকট আরেক দিনের জন্য এড়ানো হয়।
=== ইন্ডিয়ান অপসারণ এবং গণহত্যা ===
[[File:Stephens.jpg|thumb|upright|ট্রেইল অফ টিয়ার্সের একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ছবি।]]
যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে বিস্তারের সময় অনেক স্থানীয় আমেরিকানকে তাদের জমি থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করে বা হত্যা করে। এটি উভয় পক্ষের সম্মত চুক্তি এবং ইন্ডিয়ান অধিকার লঙ্ঘন করে। এভাবে শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের স্বার্থকে ইন্ডিয়ানদের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ায় গভর্নর চেরোকিদের তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই জমি গরিব জর্জিয়াবাসীদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। চেরোকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। উপজাতির একজন বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।
১৮৩২ সালে, যখন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জর্জিয়া অসাংবিধানিকভাবে কাজ করেছে। কিন্তু জ্যাকসন এই রায় কার্যকর করতে অস্বীকার করেন। এদিকে, কংগ্রেস ইন্ডিয়ান অপসারণ আইন পাস করে। এটি মিসিসিপি নদীর পশ্চিমে অঞ্চলে স্থানান্তরিত স্থানীয় আমেরিকানদের আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেয়। স্থানীয় আমেরিকানরা থাকতে পারত এবং তাদের নিজ অঙ্গরাজ্যের নাগরিক হতে পারত। অপসারণটি শান্তিপূর্ণ এবং তাদের নিজের ইচ্ছায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জ্যাকসন তাদের পশ্চিমে যেতে বাধ্য করে।
চেরোকিদের জর্জিয়া থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। তারা বর্তমান ওকলাহোমা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্মম ও মারাত্মক যাত্রা সহ্য করে। এই যাত্রাকে তারা "ট্রেইল অফ টিয়ার্স" বলে। ১৬,০০০ অভিবাসী চেরোকির মধ্যে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ মারা যায়। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং উপজাতির বয়স্ক সদস্যরা ছিল। পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তারা রোগ এবং অনাহারের শিকার হয়। তারা যেখানে থাকত সেখানে অস্থায়ী দুর্গে পৌঁছায়। চেরোকিরা একমাত্র উপজাতি ছিল না যাদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চক্টো, ক্রিক, সেমিনোল এবং চিকাসোদেরও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। চক্টোদের ১৮৩১ এবং ১৮৩২ সালের শীতে প্রথমে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। অনেকে জোরপূর্বক মিছিলে মারা যায়। ক্রিক জাতি ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত আলাবামায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের ওকলাহোমার দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত, স্থানান্তরিত স্থানীয়রা প্রায় ১০ কোটি একর জমির বিনিময়ে প্রায় ৩.২ কোটি একর এবং সমস্ত স্থানীয় উপজাতিদের জন্য মোট ৬.৫ কোটি ডলার পায়। মার্কিন সরকার স্থানীয়দের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা দেখায়, এই জোরপূর্বক স্থানান্তর তার একটি অধ্যায় মাত্র। এই জোরপূর্বক অভিবাসন স্থানীয়দের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। অনেকে রোগ, অনাহার এবং মৃত্যুর শিকার হয়।
=== সেমিনোল যুদ্ধ ===
ফ্লোরিডার সেমিনোল জাতি জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। ১৮৩৫ সালে সেমিনোলদের নেতা ওসিওলা ফেডারেল সৈন্যদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা যুদ্ধ চালায়। সেমিনোল বাহিনীতে ক্রিক, সেমিনোল এবং এমনকি আফ্রিকান আমেরিকানরাও ছিল। ওসিওলাকে মার্কিন সেনাবাহিনী শ্বেত পতাকার অধীনে ধরে। তিনি ১৮৩৮ সালে যুদ্ধবন্দী শিবিরে মারা যান। তবে, সেমিনোলরা প্রধান কোয়াকুচি এবং অন্যান্য নেতাদের অধীনে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ১৮৪২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপসারণ প্রচেষ্টা বন্ধ করে। সেমিনোলরা আজও ফ্লোরিডায় এভারগ্লেডসের কাছে রয়ে গেছে।
=== টলেডো যুদ্ধ ===
<!--TODO: Note how this war shows the general internal conflicts between states, territories, and the federal government typical of the time-->
১৮৩৫ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত ওহাইও অঙ্গরাজ্য তৎকালীন মিশিগান অঞ্চলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জমি নিয়ে একটি রক্তহীন যুদ্ধ করে। [[w:Toledo War|টলেডো যুদ্ধ]] ফেডারেল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হয়। তারা একটি আপস করে। ওহাইও বিতর্কিত জমি পায়, আর মিশিগান উপরের উপদ্বীপ পায়। এটি তৎকালীন অঙ্গরাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে সাধারণ সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি তৎকালীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ এই সংঘাত দমনে সফল হয়। কিন্তু সরকার শীঘ্রই পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে অক্ষম হয়।
=== গ্যাগ নিয়ম ===
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি জনসাধারণের বিতর্কে পরিণত হয় এবং পিটিশনে প্রকাশ পায়। ১৮৩০ সালে একটি দাসত্ববিরোধী পিটিশন অভিযান কংগ্রেসে ১,৩০,০০০ পিটিশন পৌঁছে দেয়।<ref>The U.S. Capitol Visitor Center at http://www.visitthecapitol.gov/exhibition-hall/archives/images/992</ref> দাসত্বপন্থী স্বার্থগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল কংগ্রেসে দাসত্ব নিয়ে আলোচনার বিরুদ্ধে নিয়ম তৈরি করা। প্রথমটি ছিল '''১৮৩৬ সালের গ্যাগ নিয়ম'''।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref> গ্যাগ নিয়ম জনসাধারণের পিটিশন গ্রহণের বিরোধিতা করে। এটি প্রথম সংশোধনীর অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। এই অধিকার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকারের কাছে পিটিশন করার অনুমতি দেয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জন কুইন্সি অ্যাডামস গ্যাগ নিয়মের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেন। শেষ গ্যাগ নিয়ম ১৮৪৪ সালে সংসদে বাতিল করা হয়।
=== দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাংক এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্ক ===
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যাংক প্রথম ব্যাংক পতনের প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হয়। এটি প্রথম ব্যাংকের স্থানে তথা ফিলাডেলফিয়ার কার্পেন্টার্স হলে একই স্থানে শুরু হয়। প্রথম ব্যাংকের পতন ঘটে যখন এটির পরিচালকরা এর চার্টার নবায়ন করতে অস্বীকার করে। প্রথম ব্যাংকের অনেক পরিচালকই দ্বিতীয় ব্যাংকে ছিল। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এটি উদ্ভূত হয়। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল। এটির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে শাখা ছিল।
অ্যান্ড্রু জ্যাকসন জাতীয় ব্যাংককে ঘৃণা করতেন। তিনি নিজেকে একজন স্ব-নির্মিত "সাধারণ" মানুষ হিসেবে গর্বিত ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে ব্যাংক ধনীদের পক্ষপাত করে। একজন পশ্চিমার হিসেবে, তিনি পূর্বের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিস্তার এবং পশ্চিম থেকে মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের ভয় করতেন। তিনি ব্যাংককে "হাইড্রা-হেডেড" দানব হিসেবে চিত্রিত করেন। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে তিনি ব্যাংক বোর্ডের বিদেশী সদস্যদের উপর অবিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ব্যাংকের উপর ভরসা করা যায় না। হেনরি ক্লে এবং ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার এই দুই সিনেটর জ্যাকসনকে অপছন্দ করতেন। তারা চাইতেন জ্যাকসন ১৮৩২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হারুক। তারা ব্যাংকের সভাপতি নিকোলাস বিডলকে বোঝান যে ব্যাংকের জন্য নতুন চার্টারের জন্য আগাম আবেদন করুক। যদিও ব্যাংকের চার্টার ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হবে না। তারা বিশ্বাস করত অনেক মার্কিন ব্যাংক এটি সমর্থন করে। তারা মনে করত জ্যাকসনের ব্যাংকের চার্টার নবায়নের ভেটো তাকে নির্বাচনে হারাবে। জ্যাকসন চার্টার ভেটো করেন। কিন্তু জনমত এতটা কমেনি যে তিনি নির্বাচনে হারবেন।
রাষ্ট্রপতি জ্যাকসন ''স্পেসি সার্কুলার'' জারি করেন। এটি সরকারি জমির জন্য অর্থপ্রদান স্বর্ণ এবং রৌপ্যে করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। তিনি রাজস্ব সচিবকে নির্দেশ দেন জাতীয় ব্যাংক থেকে টাকা বের করে "পেট ব্যাংক" গুলোতে রাখতে। এই পেট ব্যাংকগুলো জ্যাকসনের বন্ধুদের মালিকানাধীন অঙ্গরাজ্য ব্যাংক ছিল। এই ব্যাংকগুলো গরিব কৃষকদের ঋণ দেয়। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর ফলে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা হয়, যা '''১৮৩৭ সালের আতঙ্ক''' নামে পরিচিত। ব্যবসা তলানিতে পৌঁছে যায় ও বেকারত্ব বেড়ে যায়। পণ্যের দাম এত বেড়ে যায় যে পরিবারগুলো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারেনি। মন্দা ছয় বছর স্থায়ী হয়। জ্যাকসনের পর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মার্টিন ভ্যান বুরেন এর প্রভাব কমাতে প্রায় কিছুই করেননি। এই আতঙ্ক নিশ্চিত করে যে ভ্যান বুরেন পরবর্তী নির্বাচনে হারবেন।
=== ক্যারোলিন ঘটনা ===
[[File:Destruction of the Caroline.jpg|thumb|ক্যারোলিন জ্বলছে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে ভেসে যাচ্ছে এমন চিত্র।]]
১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলো '''ক্যারোলিন ঘটনা''' নামে পরিচিত। এটি ক্যারোলিন মামলা নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। উইলিয়াম লিয়ন ম্যাকেঞ্জির নেতৃত্বে কানাডীয় বিদ্রোহীদের একটি দল আপার কানাডায় (বর্তমান অন্টারিও) বিদ্রোহের সূচনা করে। তারা একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল। আপার কানাডায় বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যায়। তারা নায়াগ্রা নদী পর্যন্ত পালায়। এই নদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট) এবং কানাডাকে আলাদা করে। তারা কানাডার বোট দ্বীপে আশ্রয় নেয়। মার্কিন সহানুভূতিশীলরা এই বিদ্রোহকে মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধের বিলম্বিত ধারাবাহিকতা মনে করত, তারা তাদের এস.এস. ক্যারোলিন স্টিমবোটের মাধ্যমে টাকা, খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।
২৯ ডিসেম্বর কানাডীয় ভৃত্যবাদী কর্নেল স্যার অ্যালান ম্যাকনাব মিলিশিয়ার একটি দলকে নদী পার হয়ে ক্যারোলিনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারা জাহাজটিকে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট শ্লোসারে নোঙর করা অবস্থায় পায়। তারা জাহাজটি দখল করে স্রোতে টেনে নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনায় অ্যামোস ডারফ্রি নামে একজন মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হয়। যদিও জাহাজটি ভাসানোর আগে পরিত্যক্ত ছিল, মার্কিন সংবাদপত্র মিথ্যা প্রতিবেদন করে যে জাহাজে আটকা পড়া কয়েক ডজন নাগরিক নিহত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মার্টিন ভ্যান বুরেন জীবনহানির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। প্রতিশোধ হিসেবে ১৮৩৮ সালের ২৯ মে একজন মার্কিন নদীর জলদস্যু এবং তার লোকজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্রিটিশ স্টিমার স্যার রবার্ট পিল পুড়িয়ে দেয়। ক্যারোলিন পোড়ানোর পর ম্যাকেঞ্জি দল সরবরাহ পাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
[[File:Martin Van Buren.jpg|thumb|upright|রাষ্ট্রপতি মার্টিন ভ্যান বুরেন]]
ক্যারোলিন ঘটনা ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এই চুক্তি উভয় জাতির সীমানা নির্ধারণে সহায়তা করে। রাষ্ট্রপতি ভ্যান বুরেন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে পাঠান। তিনি ১৮১২ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কানাডায় আরও মার্কিন হামলা প্রতিরোধ করেন। চুক্তি প্রণয়নে সহায়তা করার সময় ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার লিখেন যে ক্যারোলিন পোড়ানো স্ব-প্রতিরক্ষার দ্বারা ন্যায্য ছিল না। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠি "পূর্বাভাসমূলক স্ব-প্রতিরক্ষা" নীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই নীতি বলে যে সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র আনুপাতিক হুমকির দ্বারা ন্যায্য হতে পারে। ক্যারোলিনের অবস্থা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অপরিহার্য মতবাদ হয়ে ওঠে। এটি নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল সহ পরবর্তী অনেক রায়ে নিশ্চিত হয়।
== আরুস্টুক যুদ্ধ ==
আরুস্টুক যুদ্ধ (১৮৩৮-১৮৩৯) ছিল একটি অঘোষিত এবং রক্তহীন যুদ্ধ। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে নিউ ব্রান্সউইক এবং বর্তমান মেইনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। ১৮২০ সালে মেইন অঙ্গরাজ্য হওয়ার পর, মেইন আইনসভা ম্যাসাচুসেটসের সঙ্গে যৌথভাবে আরুস্টুক নদীর উভয় শাখায় বসতি স্থাপনকারীদের জমি দেয়। এটি ব্রিটিশদের দাবিকে উপেক্ষা করে। ১৮৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সীমানা নিয়ে আপস করার চেষ্টা করে। তারা এই বিষয়টি নেদারল্যান্ডের রাজার কাছে সালিশের জন্য পাঠায়। একটি চুক্তি হয়, কিন্তু ১৮৩২ সালে মার্কিন সিনেট এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৩৯ সালের জানুয়ারিতে মার্কিনদের একটি দল বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশ করে। তারা সেখানে কাজ করা কানাডীয় কাঠুরেদের বিতাড়িত করে। কানাডীয়রা দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাসের মধ্যে ১০,০০০ মেইন সৈন্য হয় আরুস্টুক নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে, নয়তো সেখানে যাচ্ছিল। মেইনের কংগ্রেসম্যানদের জোরাজুরিতে ফেডারেল সরকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের বাহিনী প্রদানের জন্য ভোট দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে নিউ ব্রান্সউইকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়। গ্রেট ব্রিটেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে একটি সীমানা কমিশনের সঙ্গে সম্মত হয়। এর ফলাফল ওয়েবস্টার-অ্যাশবার্টন চুক্তিতে (১৮৪২) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অন্যান্য বিতর্কিত সীমানা সমস্যাগুলোরও সমাধান করে।
== সংস্কার এবং আমেরিকান সমাজ ==
=== শিক্ষা ===
[[File:Horace Mann - Daguerreotype by Southworth & Hawes, c1850.jpg|thumb|left|upright|১৮৫০ সালে হোরেস ম্যান।]]
নিউ ইংল্যান্ডে পাবলিক শিক্ষা সাধারণ ছিল। তবে এটি শ্রেণিভিত্তিক ছিল। শ্রমিক শ্রেণি ন্যূনতম সুবিধা পেত। স্কুলগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাত। এটি ক্যালভিনিস্ট শৃঙ্খলার দর্শন শেখাত, যার মধ্যে শারীরিক শাস্তি এবং জনসমক্ষে অপমান অন্তর্ভুক্ত ছিল। হোরেস ম্যানকে “আমেরিকান শিক্ষার পিতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এমন একটি স্কুল গড়তে চেয়েছিলেন যা ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য দূর করবে। তিনি মনে করতেন এটি অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি ১৮৩৭-১৮৪৮ সালে ম্যাসাচুসেটসে শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে আমেরিকায় শিক্ষক শিক্ষার জন্য প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।<ref>http://en.wikipedia.org/wiki/New_England</ref>
১৮৩৩ সালে ওবারলিন কলেজে ২৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী পড়ত। ওবারলিন কলেজ প্রথম কলেজ হিসেবে পরিচিত হয় যা নারীদের পড়ার অনুমতি দেয়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
পাঁচ বছরের মধ্যে, বত্রিশটি বোর্ডিং স্কুল আমেরিকান ভারতীয় ছাত্রদের ভর্তি করে। তারা আমেরিকান ভারতীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শেখায়। তারা কৃষি এবং খ্রিস্টান গসপেল শেখায়।<ref>A People and A Nation, Eighth Edition</ref>
=== আসাইলাম আন্দোলন ===
[[File:WTP2 Mike Reali 08b.jpg|thumb|[[w:Friends Hospital|দ্য আসাইলাম ফর দ্য রিলিফ অফ পার্সনস ডিপ্রাইভড অফ দ্য ইউজ অফ দেয়ার রিজন]], যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেসরকারি আসাইলাম। এটি ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে নির্মিত হয়। এটি আজও হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।]]
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে আসাইলাম আন্দোলন মানসিক অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসার সচেতনতা বাড়ায়।<ref>http://www.anxiety-depression-treatment.com/articles/asylum-movement.html</ref> আন্দোলনের প্রথম নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোয়েকার। আমেরিকায় মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপাসনা করতে পারত। কিন্তু ইউরোপের সব দেশে এটি সত্য ছিল না। কিছু দেশে ধর্মীয় “উৎসাহীদের” পাগল মনে করে পাগলখানায় বন্দী করা হতো। কোয়েকাররা সেই জায়গাগুলোর ভয়ানক অবস্থা জানত।
প্রথম আমেরিকান আসাইলাম ১৮১৭ সালে পেনসিলভানিয়ার ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে কোয়েকাররা প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রাথমিকভাবে বন্দী করার জায়গা হিসেবে নিজেকে দেখেনি। বরং (নাম অনুসারে) এটি মানসিক রোগীদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। এখানে শিকল এবং স্ট্রেইট-জ্যাকেট চিকিৎসার প্রথম উপায় ছিল না। সংগঠকরা ব্যক্তিগত সহিংসতা মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করত। তারা মানসিক অসুস্থতা থেকে মানুষকে বের করে আনতে “নৈতিক চিকিৎসা” ব্যবহার করত। ১৮১৭ সালে আরেকটি আসাইলাম হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো সামর্থ্যবান মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু আসাইলামগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এটি অন্যান্য রাজ্যকে প্রভাবিত করে। ১৮৪০ সালের আগে গরিবদের জন্য চিকিৎসার কোনো উপায় ছিল না। অনেক মানসিক রোগী, যাদের সামর্থ্য ছিল না, তাদের জেল এবং দানশালায় বন্দী করা হতো। সেখানে তাদের প্রায়ই মারধর, বাঁধা এবং উপহাস করা হতো।
=== দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ===
[[File:1839-meth.jpg|thumb|দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের সময় ১৮৩৯ সালে একটি মেথডিস্ট ক্যাম্প।]]
দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং পূর্ববর্তী ধর্মীয় উত্থানের প্রভাবকে প্রসারিত করে। ১৭৯০-এর দশক থেকে শুরু করে, এটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের ঘটনাকে প্রসারিত করে। “পুনর্জাগরণ একটি বৈপরীত্যের নাটক [. . .] নিজেকে পাপী হিসেবে অনুভব করা এবং তারপর ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পাপীর গ্রহণযোগ্যতায় আনন্দ করা।”<ref>Bednarowski, Mary Farrell. American Religion: a Cultural Perspective. Englewood Cliffs, New Jersey: Prentice-Hall, 1984. P. 30.</ref> এই ঘটনা ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের মধ্যে ঘটে। কিছু কোয়েকার চার্চও এই অভিজ্ঞতা লাভ করে। এমনকি ইউনিটারিয়ানদের মধ্যে একটি প্রচারমূলক গোষ্ঠী ছিল।<ref>Bedell, George C., Leo Sandon, Jr., and Charles T. Wellborn. ''Religion In America.'' Second Edition. New York: Macmillan, 1982 (1975). p. 171</ref> কয়েক দশক আগে জনাথন এডওয়ার্ডস, ওয়েসলি এবং হোয়াইটফিল্ড ভিত্তি তৈরি করেছিল। প্রথমজন ''প্রিডেস্টিনেশন''ে বিশ্বাস করতেন। এই ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র ঈশ্বর জানেন কে মুক্তি পাবে এবং আগে থেকে মুক্তি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ধর্মান্তর ঈশ্বরের নকশা উন্মোচন করে। পরের তিনজন প্রচারক ক্রমশ এডওয়ার্ডসের ''আর্মিনিয়ানিজম'' দ্বারা প্রভাবিত হন। এই ধারণা ছিল যে ব্যক্তিরা নিজেদের মুক্তি বেছে নিতে পারে। একটি জনপ্রিয় স্তোত্রের উদ্ধৃতি: “যদি তুমি আরও উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি কখনোই আসতে পারবে না।” দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিংয়ের প্রধান সুর ছিল আর্মিনিয়ানের জরুরিতা এবং অচর্চিতদের কাছে পৌঁছানো।
পূর্ব এবং উত্তরে পুনর্জাগরণ গির্জা এবং নতুন মিল শহরের জনসাধারণের চত্বরে ঘটে। দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এটি মেথডিস্ট সার্কিট রাইডার এবং অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ প্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েসলিদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখে, সার্কিট রাইডাররা প্রায়শই সাধারণ প্রচারক ছিলেন। তারা উদ্দেশ্যমূলক শ্রোতার মতো সামাজিক স্তর থেকে আসত। এটি কুখ্যাত ''ক্যাম্প মিটিং''-এর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল প্রচারক এবং শ্রোতাদের একটি বিশাল সমাবেশ, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারত। সমালোচক যেমন “সাট লাভিংগুড” (জর্জ ওয়াশিংটন হ্যারিস) প্রচারকদের নিরক্ষর দুর্বৃত্ত বলে ডাকতেন। তারা বলতেন, তারা মানুষকে ঠকায় এবং স্তোত্র গায়, যেমন “শোক হবে, এখানে শোক, সেখানে শোক, সেই ভয়ানক দিনে।”<ref>Harris, George Washington. "Parson John Bullen's Lizards." Yarns Spun by a Nat'ral-Born Durn'd Fool, Warped and Wove For Public Wear. [Google Books, http://books.google.com/books?id=YTjQAAAAMAAJ&printsec=frontcover&dq=sut+lovingood&hl=en&ei=5YlmTcDeOMOB8gbtj9WiCw&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ#v=onepage&q&f=false ] New York: Dick and Fitzgerald, 1867. P. 52.</ref>
কখনো কখনো পুনর্জাগরণের পরে নতুন গির্জা ভবন তৈরি হতো। এই সময়ে সীমান্তে অনেক ব্যাপটিস্ট এবং মেথডিস্ট গির্জা নির্মিত হয়। এটি গির্জার মধ্যে “নারী সমিতি” দ্বারা অনুসরণ করা হতো। এই গোষ্ঠী তখন ভোট দিতে পারত না। সমাজ তাদের নীরব থাকতে বলত। (প্রকৃতপক্ষে, পুনর্জাগরণ কখনো কখনো নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান প্রচারকদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ত।) পুনর্জাগরণ ১৯শ শতাব্দীর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস ছিল। এর মধ্যে কিছু নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আর্মিনিয়ান প্রভাব ''মিলেনিয়ালিজম''-এ বিশ্বাস জাগায়। এটি ছিল পৃথিবীতে ঈশ্বরের শাসন, একটি আসন্ন ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস। এটি সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট এবং চার্চ অফ ল্যাটার-ডে সেইন্টস সহ বেশ কয়েকটি নতুন আমেরিকান ধর্মের প্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় গ্রেট অ্যাওয়েকেনিং ছিল একটি বিশাল আন্দোলন। এটি লাইমান বিচার, চার্লস গ্র্যান্ডিসন ফিনি এবং থিওডোর ওয়েল্ডের মতো পবিত্র পুরোহিতদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, কিন্তু এটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়নি। ১৮৩১ সালের মধ্যে গির্জার সদস্যপদ ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়।
=== টেম্পারেন্স ===
[[File:The Drunkard's Progress - Color.jpg|thumb|''দ্য ড্রাঙ্কার্ডস প্রোগ্রেস'' ১৮৪৬ সালের টেম্পারেন্সপন্থী লিথোগ্রাফ। এটি দেখায় কীভাবে মাতালতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।]]
আমেরিকায় মদের পরিস্থিতি ছিল জটিল। পিলগ্রিমরা মদ্যপানের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তাদের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল তাদের মাতালতা।<ref>Gonzales, Justo L. ''The Story of Cristianity, Volume 2: The Reformation to the Present Day.'' HarperSanFrancisco. HarperCollins, 1985. p. 150</ref> মদ সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান উৎস ছিল। এটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করত। তবে ১৭০০-এর দশকের শেষ এবং ১৮০০-এর দশকে গরিবদের মাতালতা নিয়ে মন্তব্য করা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক প্রচারণা মাতালতাকে উৎসাহিত করত। কিছু লোক বলত যে ভোটের বিনিময়ে পানীয় দেওয়া হতো। অনেক গির্জা বিশ্বাস করত যে ট্যাভার্নগুলো রবিবার, একমাত্র কাজবিহীন দিনে, ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। যারা গির্জায় যেত তারা তাদের টাকা বারে খরচ করত। এই বিশ্বাসের ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মদের ব্যবহার কমানোর জন্য গোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও '''টেম্পারেন্স''' আন্দোলন ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয়, কিছু টেম্পারেন্স নেতা, যেমন কানেকটিকাটের মন্ত্রী লাইমান বিচার, ১৮২৫ সালে সহনাগরিকদের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ সালে আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটি ধর্ম এবং নৈতিকতার পুনরুত্থানে গঠিত হয়। ১৮৩০-এর দশকের শেষ নাগাদ আমেরিকান টেম্পারেন্স সোসাইটির সদস্যপদ ছিল ১,৫০০,০০০। অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা টেম্পারেন্স প্রচার শুরু করে।
=== দাসত্ববিরোধী আন্দোলন ===
[[File:Undergroundrailroadsmall2.jpg|thumb|কানাডায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের রুট। একজন দাস যদি দেশ ছেড়ে না যায়, তবে মুক্ত রাজ্যেও দাস শিকারীরা তাদের তাড়া করত।]]
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানোর বর্ধিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে প্রাক্তন দাস যারা সার্কিট রাইডার ছিল, দাসত্বের অবিচারের জন্য একটি বিস্তৃত শ্রোতা প্রদান করে। কিছু প্রচারক এবং কিছু নারী সমিতি দাসদের সাহায্য করতে শুরু করে যারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে পালাতে সাহস করত। এটি একটি সংগঠিত '''দাসত্ববিরোধী''' আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। আমেরিকান কোয়েকাররা ১৬৮৮ সালের জার্মানটাউন কোয়েকার পিটিশন অ্যাগেইনস্ট স্লেভারির জন্য দাসত্ববিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন কিছু ইভানজেলিকাল সম্প্রদায় এই কারণ গ্রহণ করে। কারো কারো জন্য এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল। আমেরিকান মেথডিস্ট চার্চ ১৭৮৪ সালের সেই সম্মেলনে নিজেকে দাসত্ববিরোধী ঘোষণা করে, যা এটিকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৮৪৩ সালের মধ্যে, “এক হাজারেরও বেশি মেথডিস্ট মন্ত্রী এবং প্রচারক দাসের মালিক ছিল।”<ref>Gonzalez, Justo L. ''The Story of Christianity. Volume 2.'' Pp. 250-251</ref> এটি বিরোধিতাও উদ্দীপিত করে। প্রত্যেক খ্রিস্টান যিনি বাইবেল তাদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে বলে বিশ্বাস করতেন, সেখানে আরেকজন থাকতে পারতেন যিনি জোর দিয়ে বলতেন যে এটি দাসত্বকে ঈশ্বরের ভালো উপকরণ হিসেবে দেখায়। দক্ষিণের সম্প্রদায়গুলো উত্তরের তাদের সহধর্মীদের বিরুদ্ধে বিভক্ত হয়। “যখন, ১৮৪৪ সালে, মেথডিস্ট জেনারেল কনফারেন্স জর্জিয়ার বিশপকে দাস রাখার জন্য নিন্দা করে, গির্জা বিভক্ত হয়। পরের বছর মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চ, সাউথের জন্ম হয়।” প্রেসবিটেরিয়ানরা ১৮৬১ সালে বিভক্ত হয়।<ref>Gonzalez, ''The Story of Christianity. Volume 2.'' p. 251</ref> দক্ষিণে দাসদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়। তবুও দাসত্ববিরোধী আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব ছিল। দাসত্ববিরোধীরা দাস এবং প্রাক্তন দাসদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেমন হ্যারিয়েট টাবম্যান, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড তৈরি করতে। সোজর্নার ট্রুথ এবং ফ্রেডরিক ডগলাসের মতো আফ্রিকান আমেরিকানরা দাসত্ববিরোধী কারণের জন্য কথা বলতে সাহস করেন। বই এবং ম্যাগাজিন তাদের কথা দাস রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেয়।
১৮১৭ সালে আমেরিকান কোলোনাইজেশন সোসাইটি গঠিত হয়। এটি আফ্রিকায় প্রাক্তন আমেরিকান দাস এবং মুক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি উপনিবেশ গঠনের চেষ্টা করে।<ref name="loc_colonization">{{cite web |last1=Cuffee |first1=Paul |last2=Ashmun |first2=Jehudi |title=Colonization - The African-American Mosaic Exhibition Exhibitions (Library of Congress) |url=https://www.loc.gov/exhibits/african/afam002.html |website=www.loc.gov |accessdate=19 September 2020 |date=23 July 2010}}</ref> ১৮২২ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।<ref name="loc_colonization"/> ১৮৩০-এর দশকে কোলোনাইজেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাসত্ববিরোধীদের বিরোধিতা তীব্র হয়। তারা এটিকে দাসত্বের একটি উপকরণ হিসেবে দেখত।<ref name="loc_colonization"/>
== পর্যালোচনার জন্য প্রশ্ন ==
# ১৮১২ সালের যুদ্ধে আটলান্টিকের প্রারম্ভিক লড়াইয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কেন সফল হয়েছিল?
# "গুড ফিলিংসের যুগ" কী ছিল? এই নামকরণের কারণগুলো কী ছিল?
# ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সমৃদ্ধি এবং ১৮৩৭ সালের আতঙ্কের কারণগুলোর নাম বলুন।
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{chapnav|জেফারসনীয় গণতন্ত্র|ধর্মীয় আন্দোলন}}
{{status|100%}}
{{BookCat}}
hb9hfaxjf83fxuhomstcxfa6fi3ic2t
ব্যবহারকারী:Md Mobashir Hossain/খেলাঘর
2
25114
85579
85269
2025-07-03T04:29:40Z
Md Mobashir Hossain
10853
85579
wikitext
text/x-wiki
{| class="wikitable"
|+
! পৃষ্ঠা !! শব্দ সংখ্যা
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/শব্দীয় গিটার]] || ২২৮৭
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/গতিবিদ্যার মৌলিক নীতিমালা]] || ১৯৩৭
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/রক্ত শারীরতত্ত্ব]] || ৩৫৯৫
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/সম্ভাব্যতা]] || ৪২৩৮
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/নিউটনের নিয়মের বিকল্প রূপ]] || ১০৯৫
|-
| [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শব্দ]] || ১২২৮
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/আংশিক উৎপন্ন]] || ১৪৩৫
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/ক্যালকুলাস]] || ৪২৩৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ]] || ১৭৯২
|-
! মোট || ২২৪৪৪
|}
8wt82cgn6fe6vkdfo13ihnjiqwqtsib
85580
85579
2025-07-03T04:42:25Z
Md Mobashir Hossain
10853
85580
wikitext
text/x-wiki
{| class="wikitable"
|+
! পৃষ্ঠা !! শব্দ সংখ্যা
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/শব্দীয় গিটার]] || ২২৮৭
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/গতিবিদ্যার মৌলিক নীতিমালা]] || ১৯৩৭
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/রক্ত শারীরতত্ত্ব]] || ৩৫৯৫
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/সম্ভাব্যতা]] || ৪২৩৮
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/নিউটনের নিয়মের বিকল্প রূপ]] || ১০৯৫
|-
| [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শব্দ]] || ১২২৮
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/আংশিক উৎপন্ন]] || ১৪৩৫
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/ক্যালকুলাস]] || ৪২৩৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ]] || ১৭৯২
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/প্রভাব ও প্রয়োগ/একটি কোয়ান্টাম বাউন্সিং বল]] || ২১৬৫
|-
! মোট || ২৪৬০৯
|}
40gtqzpq5719e1bew14a9wgjk9ytp3h
85581
85580
2025-07-03T04:43:05Z
Md Mobashir Hossain
10853
85581
wikitext
text/x-wiki
==১০০০+ শব্দ ==
{| class="wikitable"
|+
! পৃষ্ঠা !! শব্দ সংখ্যা
|-
| [[প্রকৌশল শব্দবিজ্ঞান/শব্দীয় গিটার]] || ২২৮৭
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/গতিবিদ্যার মৌলিক নীতিমালা]] || ১৯৩৭
|-
| [[মানব শারীরতত্ত্ব/রক্ত শারীরতত্ত্ব]] || ৩৫৯৫
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/সম্ভাব্যতা]] || ৪২৩৮
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/নিউটনের নিয়মের বিকল্প রূপ]] || ১০৯৫
|-
| [[পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন নির্দেশিকা/শব্দ]] || ১২২৮
|-
| [[সাধারণ বলবিজ্ঞান/আংশিক উৎপন্ন]] || ১৪৩৫
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/ক্যালকুলাস]] || ৪২৩৭
|-
| [[পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/ব্যবসায়িক যোগাযোগ]] || ১৭৯২
|-
| [[কোয়ান্টাম জগৎ/প্রভাব ও প্রয়োগ/একটি কোয়ান্টাম বাউন্সিং বল]] || ২১৬৫
|-
! মোট || ২৪৬০৯
|}
'''মনে হয় পারবো!'''
s4rnzsm7ns2j3prg1s66nhzrkizw6r2
পেশাদার ও কারিগরি লেখনী/নকশা/নথির বিন্যাস
0
26508
85554
82478
2025-07-02T14:13:35Z
Mehedi Abedin
7113
85554
wikitext
text/x-wiki
=নথির বিন্যাসকরণ=
পেশাদার ব্যবসা বা কর্মজীবনের নথিতে সঠিক বিন্যাস লেখক এবং পাঠক উভয়ের জন্যই অপরিহার্য। প্রতিটি নথির নির্দিষ্ট সংগঠনের জন্য সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত মান রয়েছে। একটি নথি লেখার সময় স্বীকৃত বিন্যাস অনুসরণ করতে সতর্ক থাকুন।
নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুসারে বিভিন্ন শৈলী ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে সম্ভাব্য কৌশলগুলি দেওয়া হলো:
== শ্রেণিবিন্যাস ==
কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য বা ঘটনা সম্পর্কে লিখতে হতে পারে। এই তথ্যগুলোকে সুসংগঠিত করার জন্য আপনি শ্রেণীকরণ নামক একটি কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। শ্রেণীকরণে আপনি আপনার বিষয়বস্তুকে সম্পর্কিত আইটেমগুলোর গ্রুপে সাজান যা নিম্নলিখিত মানদণ্ডগুলো পূরণ করে:
*প্রতিটি আইটেমের একটি স্থান আছে: প্রতিটি আইটেম কোনো না কোনো গ্রুপের মধ্যে থাকতে হবে; প্রতিটি আইটেমই ঠিকভাবে মানানসই হবে।
*প্রতিটি আইটেমের কেবল একটি স্থান আছে: যদি দুটি স্থান থাকে, তাহলে তথ্য অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। যদি এটি দুটি স্থানে থাকার কথা হয় কিন্তু কেবল একটি স্থানে রাখা হয়, তাহলে তথ্য খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই দুটি পরিস্থিতিই কাম্য নয়।
*গ্রুপগুলো পাঠকের জন্য সহজবোধ্য হবে: যে আইটেমগুলো একসাথে ব্যবহৃত হবে সেগুলোকে একসাথে গ্রুপ করা উচিত।
<u>আনুষ্ঠানিক শ্রেণিবিন্যাস</u>
আনুষ্ঠানিক শ্রেণীকরণে আপনি একটি শ্রেণীকরণ নীতি অনুসারে আইটেমগুলোকে দলবদ্ধ করেন – অর্থাৎ, প্রতিটি আইটেমের বিদ্যমান কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য অনুসারে দলবদ্ধ করেন। সাধারণত, বেছে নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি নীতি থাকবে। এই সম্ভাব্য শ্রেণীকরণ নীতিগুলোর মধ্যে থেকে বেছে নেওয়ার জন্য পাঠক কীভাবে তথ্যগুলো ব্যবহার করবে তা বিবেচনা করতে হবে। শ্রেণীকরণে বড় গ্রুপগুলোকে উপ-গ্রুপে সংগঠিত করা যেতে পারে। আনুষ্ঠানিক শ্রেণীকরণের জন্য দুটি প্রধান নির্দেশিকা রয়েছে:
*আপনার পাঠক এবং আপনার উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত একটি শ্রেণীকরণ নীতি বেছে নিন।
*শুধুমাত্র একটি শ্রেণীকরণ নীতি ব্যবহার করুন।
<u>অনানুষ্ঠানিক শ্রেণিবিন্যাস</u>
যখন আপনাকে প্রচুর সংখ্যক আইটেম সম্পর্কে তথ্য সংগঠিত করতে হয় তখন অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীকরণ পাঠক-কেন্দ্রিক যোগাযোগ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি আনুষ্ঠানিক শ্রেণীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুনিষ্ঠ বৈশিষ্ট্য অনুসারে আইটেমগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা অসম্ভব বা অনাকাঙ্ক্ষিত মনে করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালভিনকে তার নিয়োগকর্তার অনুরোধে ভারী সরঞ্জাম শিল্পের তিনটি বাণিজ্য জার্নালে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনগুলির বিশ্লেষণ সাজাতে হয়েছিল। ক্যালভিন বিজ্ঞাপনগুলিকে তাদের আকার বা ব্যবহৃত শব্দের সংখ্যার মতো একটি বস্তুনিষ্ঠ বৈশিষ্ট্য অনুসারে গোষ্ঠীভুক্ত করে একটি আনুষ্ঠানিক শ্রেণীকরণ তৈরি করতে পারতেন। এর পরিবর্তে, তিনি বিজ্ঞাপনের আবেদনের ধরন অনুসারে সেগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করেছিলেন। "বিজ্ঞাপনের আবেদনের ধরন" একটি বস্তুনিষ্ঠ বৈশিষ্ট্য নয়। একটি বিজ্ঞাপনের আবেদন সংজ্ঞায়িত করতে বিষয়ভিত্তিক ব্যাখ্যা এবং বিচার প্রয়োজন। ক্যালভিন এই অনানুষ্ঠানিক শ্রেণীকরণ ব্যবহার করেছিলেন কারণ এটি তার পাঠকদের লক্ষ্যের সাথে সবচেয়ে ভালোভাবে মিলে গিয়েছিল, যা ছিল বছরের শেষের দিকে যখন তিনি তিনটি জার্নালে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করবেন তখন বিজ্ঞাপন কৌশলগুলির পরিকল্পনা করা।
আনুষ্ঠানিক শ্রেণিবিন্যাসের মতো অনানুষ্ঠানিক শ্রেণিবিন্যাসও আপনাকে এমনভাবে যোগাযোগ সংগঠিত করতে সক্ষম করে যা নিম্নলিখিত লক্ষ্যগুলি অর্জন করে:
*প্রতিটি আইটেমের কেবলমাত্র একটি স্থান থাকে।
*গ্রুপগুলো আপনার পাঠকদের জন্য উপযোগী হয়।
== তুলনা ==
ব্যবসায়িক পরিবেশে আপনি মাঝে মাঝেই তুলনামূলক লেখালেখি করবেন। সাধারণত নিচের দুটি কারণে এমন তুলনা করা হয়ে থাকে:
'''পাঠকদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য:''' কর্মক্ষেত্র হলো পছন্দের জগৎ। মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মপন্থা, প্রতিযোগী পণ্য এবং বিকল্প কৌশলের মধ্যে থেকে বেছে নেয়। তাদের পছন্দ করতে সাহায্য করার জন্য কর্মীরা প্রায়ই লিখিতভাবে বিকল্পগুলোর তুলনা উপস্থাপন করেন।
'''পাঠকদের গবেষণার ফলাফল বুঝতে সাহায্য করার জন্য:''' কর্মক্ষেত্রের অনেক গবেষণা দুটি বা ততোধিক আইটেম বা গোষ্ঠীর (যেমন: মানুষ, প্রাণী, জলবায়ু ইত্যাদি) মধ্যে পার্থক্য এবং সাদৃশ্যের উপর কেন্দ্র করে। এই ধরনের গবেষণার ফলাফল ব্যাখ্যা করার জন্য গবেষকরা তাদের ফলাফলগুলিকে তুলনা আকারে সাজান।
তুলনামূলক রচনার জন্য দুটি বিন্যাস-পদ্ধতি রয়েছে: বিভাজিত ও পর্যায়ক্রমিক। এই দুটি পদ্ধতিতে বিষয়বস্তুর ধরনের কোনো পার্থক্য না থাকলেও উপস্থাপনার ধরনে পার্থক্য থাকে। আপনি কোন পদ্ধতিটি ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণের আগে ভেবে দেখুন—পাঠকেরা কীভাবে আপনার তথ্য ব্যবহার করবেন। এই পদ্ধতিতে মানদণ্ডকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়। এটি আদর্শ যখন পাঠকরা বিকল্পগুলোর মধ্যে বিন্দু-ভিত্তিক তুলনা করতে চান। অর্থাৎ, আপনি একটি মানদণ্ড নিয়ে আলোচনা করবেন এবং তারপর প্রতিটি বিকল্পের জন্য সেই মানদণ্ডের অধীনে কী কী বিষয় রয়েছে তা বলবেন।
অন্যদিকে, বিভাজিত বিন্যাস পদ্ধতিটি এমন পরিস্থিতিতে ভালোভাবে মানানসই যেখানে পাঠকরা প্রতিটি বিকল্পের সমস্ত তথ্য এক জায়গায় পড়তে চান। সাধারণত, এটি ঘটে যখন প্রতিটি বিকল্পের সাধারণ প্রকৃতি এবং বিশদ বিবরণ অল্প পরিসরে বর্ণনা করা যায়। এখানে আপনি প্রথমে একটি বিকল্পের সমস্ত দিক আলোচনা করবেন, তারপর পরের বিকল্পে যাবেন।
পর্যায়ক্রমিক অথবা বিভাজিত— আপনি যেই বিন্যাসই ব্যবহার করুন না কেন পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে দুটি প্রাথমিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা অধিকতর সহায়ক হয়:
'''মানদণ্ডের বিবরণ:''' এই তথ্য পাঠকদের শুরু থেকেই জানতে সাহায্য করে যে তুলনার প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো কী কী।
'''বিকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ:''' এটি পাঠকদের প্রতিটি বিকল্প সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেয়, যাতে তারা পরে বিশদ তথ্য পড়ার আগে একটি কাঠামোবদ্ধ উপলব্ধি গড়ে তুলতে পারেন।
{{BookCat}}
fg845fieb5aupt7gkyk3evn53pntzw9
জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/কেম্মু পুনরুদ্ধার
0
26664
85556
82758
2025-07-02T14:35:35Z
Mehedi Abedin
7113
85556
wikitext
text/x-wiki
[[File:Emperor Godaigo by Monkan-bō Kōshin.jpg|right|300px|thumb|সম্রাট গো-দাইগো]]
কেম্মু পুনরুদ্ধার (建武の新政, কেম্মু নো শিনসেই, ১৩৩৩-১৩৩৬) জাপানি ইতিহাসের কামাকুরা যুগ ও মুরোমাচি যুগের মধ্যবর্তী তিন বছরের সময়কাল এবং এই সময়ে সংঘটিত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের নাম। এই পুনরুদ্ধার ছিল সম্রাট গো-দাইগোর একটি প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে তিনি রাজকীয় পরিবার এবং এর প্রতিনিধিত্বকারী অভিজাতদের পুনরায় ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল প্রায় দেড় শতাব্দীর সামরিক শাসনের পর একটি বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
এই পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং এর স্থলে আশিকাগা শোগুনতন্ত্র (১৩৩৬–১৫৭৫) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে শেষবারের মতো সম্রাট প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ করেন; এরপর ১৮৬৭ সালের মেইজি পুনরুদ্ধার পর্যন্ত সম্রাটের হাতে আর ক্ষমতা ফিরে আসেনি। এই তিন বছরের সময়কালে সম্রাটের পরিবারের দ্বারা সংঘটিত নানা গুরুতর রাজনৈতিক ভুল-ভ্রান্তি পরবর্তী কয়েক দশকে গভীর প্রভাব ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত আশিকাগা শোগুনতন্ত্রের উত্থানে গিয়ে শেষ হয়।
কামাকুরা শোগুনতন্ত্রের পতন দুটি পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয়, যারা মোটামুটি মিত্র হিসেবেই কাজ করেছিল। একদিকে ছিলেন সম্রাট গো-দাইগো, যিনি শোগুনতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সম্রাটের নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অপরদিকে ছিলেন অসন্তুষ্ট যোদ্ধারা (বিশেষ করে মিনামোতো বংশের দুটি শাখা) যাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র হোজো পরিবারের পতন ঘটানো এবং শোগুনতন্ত্র টিকিয়ে রেখে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়া। স্বাভাবিকভাবেই, এই দুই পক্ষের মধ্যে অচিরেই সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
এই সংঘাতের ফলে যে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি হয় তা "উত্তর ও দক্ষিণ রাজবংশের যুদ্ধ" নামে পরিচিত। কারণ একপর্যায়ে উভয় পক্ষই সম্রাটের পরিবারের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শাখার একটিকে স্বীকৃতি দেয়। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায় ব্যতীত এটি কোনো প্রচলিত যুদ্ধ ছিল না—এখানে নিয়মিত ফ্রন্ট লাইন বা সংগঠিত কৌশল খুব একটা দেখা যায়নি। বরং এটি ছিল খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষে ভরপুর এবং প্রায় প্রত্যেক পক্ষই অন্তত একবার করে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছিল। বাস্তবে যা ঘটেছিল তা হলো: আশিকাগা তাকাউজি একটি নতুন শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন যেটি "মুরোমাচি শোগুনতন্ত্র" নামে পরিচিত, কারণ কিয়োতোর মুরোমাচি জেলা ছিল এর সদর দপ্তর। যে কেউ শোগুনতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে সে "দক্ষিণ দরবার"-এর সমর্থক হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করতে পারত—এতে করে সে সাধারণ বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হতো না। যদিও একটি সংক্ষিপ্ত সময়ে আশিকাগা শোগুনরাও আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ দরবারকে সমর্থন করেছিল এবং তাদের বিরোধীরা উত্তর দরবারকে, কিন্তু অধিকাংশ সময়েই বাস্তবতা ছিল ঠিক উল্টো।
এই যুদ্ধের মূল অর্জন ছিল এমন একটি সামগ্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যেখানে আইনগত বৈধতার গুরুত্ব অনেকটা কমে গিয়ে কেবলমাত্র সামরিক শক্তির মাধ্যমে ভূমির নিয়ন্ত্রণই সবকিছু হয়ে দাঁড়ায়। আশিকাগা শোগুনতন্ত্র যে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল তা ছিল পুরোপুরি সামন্ততান্ত্রিক ভিত্তির ওপর নির্ভরশীল। আশিকাগা শাসকের অধীনস্থ অধিকারভুক্ত সৈন্য-প্রধানদের (সামন্ত) বিভিন্ন প্রদেশের শুগো (সামরিক গভর্নর) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং নিজস্ব সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলে তারা নিজেরা প্রদেশে বাস্তব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারছে কিনা তা সেই গভর্নরদের ওপরই নির্ভর করত। দেশের বহু অংশে আশিকাগা শাসকরা সরাসরি শাসনের কোনো চেষ্টা করেননি; বরং মিত্রদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন যাতে তারা নিজ নিজ সামন্ততান্ত্রিক সংগঠন তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তবে এই অধ্যায়ে আলোচিত সময়ের শেষ ভাগে (১৪০৮ সাল, যখন সবচেয়ে দক্ষ ও শক্তিশালী আশিকাগা শোগুন আশিকাগা ইয়োশিমিৎসু মারা যান) রাজদরবার পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয় এবং প্রকাশ্য বিরোধ দমন করা হয়।
এই সময়কালে প্রাচীন জাপানের অনেক পুরনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়। গ্রামীণ এলাকায় নতুন ধরণের সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে; শোয়েন (অধিকারভুক্ত ভূসম্পত্তি) ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় এবং তার পরিবর্তে আত্ম-শাসিত কৃষক গ্রামভিত্তিক একটি নতুন কাঠামো গড়ে ওঠে। কিয়োতো একটি বাস্তব নগরীতে পরিণত হয় এবং আরও নতুন নতুন শহর গড়ে উঠতে থাকে, যেগুলো সাধারণ মানুষ নিজেরাই গঠন করে এবং পরিচালনা করে। একটি অর্থ-ভিত্তিক অর্থনীতি চালু হয়, শিল্প এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাথমিক রূপ দেখা যায়। শিক্ষার হার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এই সময়কালেই জাপানের সামন্ততান্ত্রিক সমাজ সবচেয়ে বেশি মিল দেখিয়েছিল ইউরোপের ১৩শ শতকের সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে।
==পটভূমি==
[[File:Kusunoki Masashige.jpg|right|150px|thumb|কুসুনোকি মাসাশিগে]]
১১৯২ সালে মিনামোটো নো ইয়োরিতোমো সম্রাটের কাছ থেকে শোগুন উপাধি লাভ করার পর থেকেই কামাকুরা থেকে শাসনকারী মিনামোটো এবং হোজো পরিবারগুলো সম্রাটের ভূমিকা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে কামাকুরা শোগুনতন্ত্র সম্রাটের পরিবারের দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শাখা দক্ষিণ দরবার (কনিষ্ঠ শাখা) ও উত্তর দরবারকে (জ্যেষ্ঠ শাখা) বিকল্পভাবে সিংহাসনে বসার ব্যবস্থা চালু করে। এই পদ্ধতি কিছু সময় পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এই পদ্ধতিটি বেশ কয়েকটি উত্তরাধিকার পর্যন্ত কাজ করেছিল যতদিন না দক্ষিণ রাজবংশের একজন সদস্য সম্রাট গো-দাইগো হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
গো-দাইগো শোগুনতন্ত্রকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন এবং নিজের পুত্রকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে প্রকাশ্যে কামাকুরার প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করেন। ১৩৩১ সালে শোগুনাত গো-দাইগোকে নির্বাসিত করে, কিন্তু কুসুনোকি মাসাশিগে সহ রাজকীয় অনুগত বাহিনী বিদ্রোহ করে এবং গো-দাইগোকদ সমর্থন জানায়। আশিকাগা তাকাউজি সহ আরও অনেকে তাদের সাহায্য করেন, যিনি গো-দাইগোর বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরিত হয়ে কামাকুরার বিরুদ্ধে চলে যান। একই সময়ে, পূর্বের আরেকজন প্রধান নিত্তাসাদা শোগুনাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং তাদের রাজধানী আক্রমণ করেন (কামাকুরা অবরোধ, ১৩৩৩)। শোগুনতন্ত্র তার অগ্রগতি প্রতিরোধের চেষ্টা করে, কিন্তু দ্রুতই ভেঙে পড়ে।
==উদ্দেশ্য==
১৩১৮ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট গো-দাইগো সিংহাসনে আরোহণ করার পর পরই কামাকুরার সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই শাসন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায় যে বিপরীত প্রমাণ উপেক্ষা করে তিনি এবং তার উপদেষ্টারা বিশ্বাস করতেন যে রাজকীয় পরিবার এবং অভিজাতদের ভাগ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব এবং কামাকুরা শোগুনাতই ছিল এর সবচেয়ে বড় ও সুস্পষ্ট বাধা। আরেকটি গুরুতর সমস্যা ছিল ম্যানর এবং তাদের ভূমি সংক্রান্ত ভূমি-মালিকানা সমস্যা (বিস্তারিত জানতে 'শোয়েন' নিবন্ধ দেখুন)। শুগো (গভর্নর) এবং জিতো (ম্যানরের প্রভু) নামক বৃহৎ ভূস্বামীরা তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং কর ছাড়ের কারণে সরকারকে দরিদ্র করে তুলছিল এবং এর ক্ষমতাকে দুর্বল করছিল। গো-দাইগোর ভবিষ্যত প্রধান উপদেষ্টা কিতাবাতাকে চিকাফুসা তার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত লেখায় এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। চিকাফুসা স্বীকার করেছিলেন যে, এই বিশেষাধিকারগুলো বিলুপ্ত করার কারো কোনো ইচ্ছা ছিল না, তাই এই ফ্রন্টে সাফল্যের আশা শুরু থেকেই অত্যন্ত ক্ষীণ ছিল। শুগো এবং জিতোদের পরিবর্তে তিনি কী করার পরিকল্পনা করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়, তবে তিনি নিশ্চিতভাবে সামুরাই শ্রেণীর সাথে ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণ করেননি। ভূমি মালিকানা সমস্যা যতই গুরুতর হোক না কেন গো-দাইগো এবং তার উপদেষ্টারা এটি সমাধানের জন্য কোনো গুরুতর প্রচেষ্টা করেননি। এর আংশিক কারণ ছিল পশ্চিমা প্রদেশের ম্যানরগুলোর সামুরাইরাই তার পক্ষে বাকুফুকে পরাজিত করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ম্যানরগুলো নিয়ন্ত্রণের যেকোনো প্রচেষ্টা মূল মিত্রদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করত।
==পুনরুদ্ধারের সমাপ্তি==
পেছনের দিকে তাকালে কেম্মু পুনরুদ্ধার ব্যর্থ ছিল। এটি বেশ কিছু কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, যার মধ্যে প্রধান ছিল উপলব্ধি করা সম্রাট গো-দাইগোর একটি স্বর্ণযুগে ফিরে যাওয়ার অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা। যদিও তার চিকাফুসার মতো হিয়ান যুগের নীতিতে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই, তবে স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে তিনি শুধুমাত্র সাম্রাজ্যিক ক্ষমতা নয় বরং এর সংস্কৃতিও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করতেন। তিনি এমনকি দরনারের যে সমস্ত অনুষ্ঠান ব্যবহার থেকে বাদ পড়েছিল সেগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে কেম্মু নেনচু গিওজি নামে একটি গ্রন্থও লিখেছিলেন। ১৩৩৬ সালে আশিকাগা তাকাউজি সাম্রাজ্যিক আদালতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং একটি নতুন সামরিক শাসনের সূচনা ঘোষণা করেন। তার ঘোষণার পর কিতাবাতাকে আকিয়ের সাম্রাজ্যবাদী বাহিনী কিয়োটোর কাছে তাকে আক্রমণ করে পরাজিত করলে তিনি কিউশুতে পিছু হটতে বাধ্য হন। তাকাউজির এই কেম্মু পুনরুদ্ধারের বিশ্বাসঘাতকতা জাপানি ইতিহাসের পরবর্তী সময়গুলোতে তার নামকে কলঙ্কিত করে তোলে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নামবোকু-চো যুদ্ধের সূচনা করে। পূর্ববর্তী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতাকে সামুরাইদের পক্ষ থেকে আসা অসংখ্য আবেদনের ভূমি পুরস্কারের ক্ষেত্রে অকার্যকারিতার স্তরে দেখার চেষ্টা করেছিল; তবে, এখন এটি স্পষ্ট যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তরে অর্থাৎ ভূমি বিরোধের মামলাগুলি নির্ধারণকারী বিচার বিভাগীয় অঙ্গগুলিতে পুনরুদ্ধার কার্যকর ছিল। এটি আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করে যে তাকাউজির বিদ্রোহ এবং একটি নতুন সামরিক শাসন তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতার একটি প্রধান নির্ণায়ক ছিল। তার বিদ্রোহ অসন্তুষ্ট যোদ্ধাদের (যাদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি এমন অনেকেই ছিল) একটি বিশাল অংশকে উৎসাহিত করেছিল যারা কামাকুরার আদলে আরেকটি সামরিক শাসন দেখতে চেয়েছিল।
নানবোকু-চো যুদ্ধ ছিল একটি আদর্শগত সংগ্রাম। একদিকে ছিল সেই অনুগতরা যারা সম্রাটকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে চেয়েছিল, এবং অন্যদিকে ছিল তারা যারা কামাকুরার আদলে আরেকটি সামরিক শাসন তৈরি করতে বিশ্বাসী ছিল। যেন জাপানি ইতিহাসের পূর্ববর্তী দুটি যুগ হিয়ান এবং কামাকুরা আদর্শিক স্তরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। কিতাবাতাকে চিকাফুসার মতো সম্ভ্রান্ত যোদ্ধারা পুনরুদ্ধারে যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু আদর্শগত স্তরে চিকাফুসা এবং তাকাউজির মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বহু বছর ধরে নেতাদের মেরুকরণ করে রেখেছিল। পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতার পরপরই যুদ্ধের সময় একসঙ্গে গড়ে ওঠা মুরোমাচি শাসন উত্থান লাভ করে। পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখব শোগুনতন্ত্র (উত্তর আদালতের সাথে) এবং গো-দাইগো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ আদালতের মধ্যে একটি আদর্শিক যুদ্ধ সম্পর্কে উত্তর-দক্ষিণ দরবার যুগ (নানবোকু-চো সময়কাল)।
<noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude>
e9e8873t0xlhy1m2r08zfgx0vzt1y5f
85557
85556
2025-07-02T14:36:09Z
Mehedi Abedin
7113
85557
wikitext
text/x-wiki
[[File:Emperor Godaigo by Monkan-bō Kōshin.jpg|right|300px|thumb|সম্রাট গো-দাইগো]]
কেম্মু পুনরুদ্ধার (建武の新政, কেম্মু নো শিনসেই, ১৩৩৩-১৩৩৬) জাপানি ইতিহাসের কামাকুরা যুগ ও মুরোমাচি যুগের মধ্যবর্তী তিন বছরের সময়কাল এবং এই সময়ে সংঘটিত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের নাম। এই পুনরুদ্ধার ছিল সম্রাট গো-দাইগোর একটি প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে তিনি রাজকীয় পরিবার এবং এর প্রতিনিধিত্বকারী অভিজাতদের পুনরায় ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল প্রায় দেড় শতাব্দীর সামরিক শাসনের পর একটি বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
এই পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং এর স্থলে আশিকাগা শোগুনতন্ত্র (১৩৩৬–১৫৭৫) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে শেষবারের মতো সম্রাট প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ করেন; এরপর ১৮৬৭ সালের মেইজি পুনরুদ্ধার পর্যন্ত সম্রাটের হাতে আর ক্ষমতা ফিরে আসেনি। এই তিন বছরের সময়কালে সম্রাটের পরিবারের দ্বারা সংঘটিত নানা গুরুতর রাজনৈতিক ভুল-ভ্রান্তি পরবর্তী কয়েক দশকে গভীর প্রভাব ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত আশিকাগা শোগুনতন্ত্রের উত্থানে গিয়ে শেষ হয়।
কামাকুরা শোগুনতন্ত্রের পতন দুটি পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয়, যারা মোটামুটি মিত্র হিসেবেই কাজ করেছিল। একদিকে ছিলেন সম্রাট গো-দাইগো, যিনি শোগুনতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সম্রাটের নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অপরদিকে ছিলেন অসন্তুষ্ট যোদ্ধারা (বিশেষ করে মিনামোতো বংশের দুটি শাখা) যাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র হোজো পরিবারের পতন ঘটানো এবং শোগুনতন্ত্র টিকিয়ে রেখে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়া। স্বাভাবিকভাবেই, এই দুই পক্ষের মধ্যে অচিরেই সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
এই সংঘাতের ফলে যে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি হয় তা "উত্তর ও দক্ষিণ রাজবংশের যুদ্ধ" নামে পরিচিত। কারণ একপর্যায়ে উভয় পক্ষই সম্রাটের পরিবারের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শাখার একটিকে স্বীকৃতি দেয়। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায় ব্যতীত এটি কোনো প্রচলিত যুদ্ধ ছিল না—এখানে নিয়মিত ফ্রন্ট লাইন বা সংগঠিত কৌশল খুব একটা দেখা যায়নি। বরং এটি ছিল খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষে ভরপুর এবং প্রায় প্রত্যেক পক্ষই অন্তত একবার করে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছিল। বাস্তবে যা ঘটেছিল তা হলো: আশিকাগা তাকাউজি একটি নতুন শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন যেটি "মুরোমাচি শোগুনতন্ত্র" নামে পরিচিত, কারণ কিয়োতোর মুরোমাচি জেলা ছিল এর সদর দপ্তর। যে কেউ শোগুনতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে সে "দক্ষিণ দরবার"-এর সমর্থক হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করতে পারত—এতে করে সে সাধারণ বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হতো না। যদিও একটি সংক্ষিপ্ত সময়ে আশিকাগা শোগুনরাও আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ দরবারকে সমর্থন করেছিল এবং তাদের বিরোধীরা উত্তর দরবারকে, কিন্তু অধিকাংশ সময়েই বাস্তবতা ছিল ঠিক উল্টো।
এই যুদ্ধের মূল অর্জন ছিল এমন একটি সামগ্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যেখানে আইনগত বৈধতার গুরুত্ব অনেকটা কমে গিয়ে কেবলমাত্র সামরিক শক্তির মাধ্যমে ভূমির নিয়ন্ত্রণই সবকিছু হয়ে দাঁড়ায়। আশিকাগা শোগুনতন্ত্র যে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল তা ছিল পুরোপুরি সামন্ততান্ত্রিক ভিত্তির ওপর নির্ভরশীল। আশিকাগা শাসকের অধীনস্থ অধিকারভুক্ত সৈন্য-প্রধানদের (সামন্ত) বিভিন্ন প্রদেশের শুগো (সামরিক গভর্নর) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং নিজস্ব সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলে তারা নিজেরা প্রদেশে বাস্তব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারছে কিনা তা সেই গভর্নরদের ওপরই নির্ভর করত। দেশের বহু অংশে আশিকাগা শাসকরা সরাসরি শাসনের কোনো চেষ্টা করেননি; বরং মিত্রদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন যাতে তারা নিজ নিজ সামন্ততান্ত্রিক সংগঠন তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তবে এই অধ্যায়ে আলোচিত সময়ের শেষ ভাগে (১৪০৮ সাল, যখন সবচেয়ে দক্ষ ও শক্তিশালী আশিকাগা শোগুন আশিকাগা ইয়োশিমিৎসু মারা যান) রাজদরবার পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয় এবং প্রকাশ্য বিরোধ দমন করা হয়।
এই সময়কালে প্রাচীন জাপানের অনেক পুরনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়। গ্রামীণ এলাকায় নতুন ধরণের সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে; শোয়েন (অধিকারভুক্ত ভূসম্পত্তি) ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় এবং তার পরিবর্তে আত্ম-শাসিত কৃষক গ্রামভিত্তিক একটি নতুন কাঠামো গড়ে ওঠে। কিয়োতো একটি বাস্তব নগরীতে পরিণত হয় এবং আরও নতুন নতুন শহর গড়ে উঠতে থাকে, যেগুলো সাধারণ মানুষ নিজেরাই গঠন করে এবং পরিচালনা করে। একটি অর্থ-ভিত্তিক অর্থনীতি চালু হয়, শিল্প এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাথমিক রূপ দেখা যায়। শিক্ষার হার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এই সময়কালেই জাপানের সামন্ততান্ত্রিক সমাজ সবচেয়ে বেশি মিল দেখিয়েছিল ইউরোপের ১৩শ শতকের সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে।
==পটভূমি==
[[File:Kusunoki Masashige.jpg|right|150px|thumb|কুসুনোকি মাসাশিগে]]
১১৯২ সালে মিনামোটো নো ইয়োরিতোমো সম্রাটের কাছ থেকে শোগুন উপাধি লাভ করার পর থেকেই কামাকুরা থেকে শাসনকারী মিনামোটো এবং হোজো পরিবারগুলো সম্রাটের ভূমিকা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে কামাকুরা শোগুনতন্ত্র সম্রাটের পরিবারের দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শাখা দক্ষিণ দরবার (কনিষ্ঠ শাখা) ও উত্তর দরবারকে (জ্যেষ্ঠ শাখা) বিকল্পভাবে সিংহাসনে বসার ব্যবস্থা চালু করে। এই পদ্ধতি কিছু সময় পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এই পদ্ধতিটি বেশ কয়েকটি উত্তরাধিকার পর্যন্ত কাজ করেছিল যতদিন না দক্ষিণ রাজবংশের একজন সদস্য সম্রাট গো-দাইগো হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
গো-দাইগো শোগুনতন্ত্রকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন এবং নিজের পুত্রকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে প্রকাশ্যে কামাকুরার প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করেন। ১৩৩১ সালে শোগুনাত গো-দাইগোকে নির্বাসিত করে, কিন্তু কুসুনোকি মাসাশিগে সহ রাজকীয় অনুগত বাহিনী বিদ্রোহ করে এবং গো-দাইগোকদ সমর্থন জানায়। আশিকাগা তাকাউজি সহ আরও অনেকে তাদের সাহায্য করেন, যিনি গো-দাইগোর বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরিত হয়ে কামাকুরার বিরুদ্ধে চলে যান। একই সময়ে, পূর্বের আরেকজন প্রধান নিত্তাসাদা শোগুনাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং তাদের রাজধানী আক্রমণ করেন (কামাকুরা অবরোধ, ১৩৩৩)। শোগুনতন্ত্র তার অগ্রগতি প্রতিরোধের চেষ্টা করে, কিন্তু দ্রুতই ভেঙে পড়ে।
==উদ্দেশ্য==
১৩১৮ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট গো-দাইগো সিংহাসনে আরোহণ করার পর পরই কামাকুরার সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই শাসন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায় যে বিপরীত প্রমাণ উপেক্ষা করে তিনি এবং তার উপদেষ্টারা বিশ্বাস করতেন যে রাজকীয় পরিবার এবং অভিজাতদের ভাগ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব এবং কামাকুরা শোগুনাতই ছিল এর সবচেয়ে বড় ও সুস্পষ্ট বাধা। আরেকটি গুরুতর সমস্যা ছিল ম্যানর এবং তাদের ভূমি সংক্রান্ত ভূমি-মালিকানা সমস্যা (বিস্তারিত জানতে 'শোয়েন' নিবন্ধ দেখুন)। শুগো (গভর্নর) এবং জিতো (ম্যানরের প্রভু) নামক বৃহৎ ভূস্বামীরা তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং কর ছাড়ের কারণে সরকারকে দরিদ্র করে তুলছিল এবং এর ক্ষমতাকে দুর্বল করছিল। গো-দাইগোর ভবিষ্যত প্রধান উপদেষ্টা কিতাবাতাকে চিকাফুসা তার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত লেখায় এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। চিকাফুসা স্বীকার করেছিলেন যে, এই বিশেষাধিকারগুলো বিলুপ্ত করার কারো কোনো ইচ্ছা ছিল না, তাই এই ফ্রন্টে সাফল্যের আশা শুরু থেকেই অত্যন্ত ক্ষীণ ছিল। শুগো এবং জিতোদের পরিবর্তে তিনি কী করার পরিকল্পনা করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়, তবে তিনি নিশ্চিতভাবে সামুরাই শ্রেণীর সাথে ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণ করেননি। ভূমি মালিকানা সমস্যা যতই গুরুতর হোক না কেন গো-দাইগো এবং তার উপদেষ্টারা এটি সমাধানের জন্য কোনো গুরুতর প্রচেষ্টা করেননি। এর আংশিক কারণ ছিল পশ্চিমা প্রদেশের ম্যানরগুলোর সামুরাইরাই তার পক্ষে বাকুফুকে পরাজিত করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ম্যানরগুলো নিয়ন্ত্রণের যেকোনো প্রচেষ্টা মূল মিত্রদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করত।
==পুনরুদ্ধারের সমাপ্তি==
পেছনের দিকে তাকালে কেম্মু পুনরুদ্ধার ব্যর্থ ছিল। এটি বেশ কিছু কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, যার মধ্যে প্রধান ছিল উপলব্ধি করা সম্রাট গো-দাইগোর একটি স্বর্ণযুগে ফিরে যাওয়ার অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা। যদিও তার চিকাফুসার মতো হিয়ান যুগের নীতিতে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই, তবে স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে তিনি শুধুমাত্র সাম্রাজ্যিক ক্ষমতা নয় বরং এর সংস্কৃতিও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করতেন। তিনি এমনকি দরনারের যে সমস্ত অনুষ্ঠান ব্যবহার থেকে বাদ পড়েছিল সেগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে কেম্মু নেনচু গিওজি নামে একটি গ্রন্থও লিখেছিলেন। ১৩৩৬ সালে আশিকাগা তাকাউজি সাম্রাজ্যিক আদালতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং একটি নতুন সামরিক শাসনের সূচনা ঘোষণা করেন। তার ঘোষণার পর কিতাবাতাকে আকিয়ের সাম্রাজ্যবাদী বাহিনী কিয়োটোর কাছে তাকে আক্রমণ করে পরাজিত করলে তিনি কিউশুতে পিছু হটতে বাধ্য হন। তাকাউজির এই কেম্মু পুনরুদ্ধারের বিশ্বাসঘাতকতা জাপানি ইতিহাসের পরবর্তী সময়গুলোতে তার নামকে কলঙ্কিত করে তোলে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নামবোকু-চো যুদ্ধের সূচনা করে। পূর্ববর্তী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতাকে সামুরাইদের পক্ষ থেকে আসা অসংখ্য আবেদনের ভূমি পুরস্কারের ক্ষেত্রে অকার্যকারিতার স্তরে দেখার চেষ্টা করেছিল; তবে, এখন এটি স্পষ্ট যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তরে অর্থাৎ ভূমি বিরোধের মামলাগুলি নির্ধারণকারী বিচার বিভাগীয় অঙ্গগুলিতে পুনরুদ্ধার কার্যকর ছিল। এটি আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করে যে তাকাউজির বিদ্রোহ এবং একটি নতুন সামরিক শাসন তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতার একটি প্রধান নির্ণায়ক ছিল। তার বিদ্রোহ অসন্তুষ্ট যোদ্ধাদের (যাদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি এমন অনেকেই ছিল) একটি বিশাল অংশকে উৎসাহিত করেছিল যারা কামাকুরার আদলে আরেকটি সামরিক শাসন দেখতে চেয়েছিল।
নানবোকু-চো যুদ্ধ ছিল একটি আদর্শগত সংগ্রাম। একদিকে ছিল সেই অনুগতরা যারা সম্রাটকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে চেয়েছিল, এবং অন্যদিকে ছিল তারা যারা কামাকুরার আদলে আরেকটি সামরিক শাসন তৈরি করতে বিশ্বাসী ছিল। যেন জাপানি ইতিহাসের পূর্ববর্তী দুটি যুগ হিয়ান এবং কামাকুরা আদর্শিক স্তরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। কিতাবাতাকে চিকাফুসার মতো সম্ভ্রান্ত যোদ্ধারা পুনরুদ্ধারে যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু আদর্শগত স্তরে চিকাফুসা এবং তাকাউজির মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বহু বছর ধরে নেতাদের মেরুকরণ করে রেখেছিল। পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতার পরপরই যুদ্ধের সময় একসঙ্গে গড়ে ওঠা মুরোমাচি শাসন উত্থান লাভ করে। পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখব শোগুনতন্ত্র (উত্তর আদালতের সাথে) এবং গো-দাইগো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ আদালতের মধ্যে একটি আদর্শিক যুদ্ধ ও উত্তর-দক্ষিণ দরবার যুগ (নানবোকু-চো সময়কাল)।
<noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude>
krwafnibkjyx0083xx00gx9juqtocyy
85558
85557
2025-07-02T14:37:16Z
Mehedi Abedin
7113
85558
wikitext
text/x-wiki
[[File:Emperor Godaigo by Monkan-bō Kōshin.jpg|right|300px|thumb|সম্রাট গো-দাইগো]]
কেম্মু পুনরুদ্ধার (建武の新政, কেম্মু নো শিনসেই, ১৩৩৩-১৩৩৬) জাপানি ইতিহাসের কামাকুরা যুগ ও মুরোমাচি যুগের মধ্যবর্তী তিন বছরের সময়কাল এবং এই সময়ে সংঘটিত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের নাম। এই পুনরুদ্ধার ছিল সম্রাট গো-দাইগোর একটি প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে তিনি রাজকীয় পরিবার এবং এর প্রতিনিধিত্বকারী অভিজাতদের পুনরায় ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল প্রায় দেড় শতাব্দীর সামরিক শাসনের পর একটি বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
এই পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং এর স্থলে আশিকাগা শোগুনতন্ত্র (১৩৩৬–১৫৭৫) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে শেষবারের মতো সম্রাট প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ করেন; এরপর ১৮৬৭ সালের মেইজি পুনরুদ্ধার পর্যন্ত সম্রাটের হাতে আর ক্ষমতা ফিরে আসেনি। এই তিন বছরের সময়কালে সম্রাটের পরিবারের দ্বারা সংঘটিত নানা গুরুতর রাজনৈতিক ভুল-ভ্রান্তি পরবর্তী কয়েক দশকে গভীর প্রভাব ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত আশিকাগা শোগুনতন্ত্রের উত্থানে গিয়ে শেষ হয়।
কামাকুরা শোগুনতন্ত্রের পতন দুটি পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয়, যারা মোটামুটি মিত্র হিসেবেই কাজ করেছিল। একদিকে ছিলেন সম্রাট গো-দাইগো, যিনি শোগুনতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সম্রাটের নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অপরদিকে ছিলেন অসন্তুষ্ট যোদ্ধারা (বিশেষ করে মিনামোতো বংশের দুটি শাখা) যাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র হোজো পরিবারের পতন ঘটানো এবং শোগুনতন্ত্র টিকিয়ে রেখে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়া। স্বাভাবিকভাবেই, এই দুই পক্ষের মধ্যে অচিরেই সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
এই সংঘাতের ফলে যে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি হয় তা "উত্তর ও দক্ষিণ রাজবংশের যুদ্ধ" নামে পরিচিত। কারণ একপর্যায়ে উভয় পক্ষই সম্রাটের পরিবারের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শাখার একটিকে স্বীকৃতি দেয়। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায় ব্যতীত এটি কোনো প্রচলিত যুদ্ধ ছিল না—এখানে নিয়মিত ফ্রন্ট লাইন বা সংগঠিত কৌশল খুব একটা দেখা যায়নি। বরং এটি ছিল খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষে ভরপুর এবং প্রায় প্রত্যেক পক্ষই অন্তত একবার করে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছিল। বাস্তবে যা ঘটেছিল তা হলো: আশিকাগা তাকাউজি একটি নতুন শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন যেটি "মুরোমাচি শোগুনতন্ত্র" নামে পরিচিত, কারণ কিয়োতোর মুরোমাচি জেলা ছিল এর সদর দপ্তর। যে কেউ শোগুনতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে সে "দক্ষিণ দরবার"-এর সমর্থক হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করতে পারত—এতে করে সে সাধারণ বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হতো না। যদিও একটি সংক্ষিপ্ত সময়ে আশিকাগা শোগুনরাও আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ দরবারকে সমর্থন করেছিল এবং তাদের বিরোধীরা উত্তর দরবারকে, কিন্তু অধিকাংশ সময়েই বাস্তবতা ছিল ঠিক উল্টো।
এই যুদ্ধের মূল অর্জন ছিল এমন একটি সামগ্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যেখানে আইনগত বৈধতার গুরুত্ব অনেকটা কমে গিয়ে কেবলমাত্র সামরিক শক্তির মাধ্যমে ভূমির নিয়ন্ত্রণই সবকিছু হয়ে দাঁড়ায়। আশিকাগা শোগুনতন্ত্র যে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল তা ছিল পুরোপুরি সামন্ততান্ত্রিক ভিত্তির ওপর নির্ভরশীল। আশিকাগা শাসকের অধীনস্থ অধিকারভুক্ত সৈন্য-প্রধানদের (সামন্ত) বিভিন্ন প্রদেশের শুগো (সামরিক গভর্নর) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো এবং নিজস্ব সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলে তারা নিজেরা প্রদেশে বাস্তব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারছে কিনা তা সেই গভর্নরদের ওপরই নির্ভর করত। দেশের বহু অংশে আশিকাগা শাসকরা সরাসরি শাসনের কোনো চেষ্টা করেননি; বরং মিত্রদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন যাতে তারা নিজ নিজ সামন্ততান্ত্রিক সংগঠন তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তবে এই অধ্যায়ে আলোচিত সময়ের শেষ ভাগে (১৪০৮ সাল, যখন সবচেয়ে দক্ষ ও শক্তিশালী আশিকাগা শোগুন আশিকাগা ইয়োশিমিৎসু মারা যান) রাজদরবার পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয় এবং প্রকাশ্য বিরোধ দমন করা হয়।
এই সময়কালে প্রাচীন জাপানের অনেক পুরনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়। গ্রামীণ এলাকায় নতুন ধরণের সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে; শোয়েন (অধিকারভুক্ত ভূসম্পত্তি) ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় এবং তার পরিবর্তে আত্ম-শাসিত কৃষক গ্রামভিত্তিক একটি নতুন কাঠামো গড়ে ওঠে। কিয়োতো একটি বাস্তব নগরীতে পরিণত হয় এবং আরও নতুন নতুন শহর গড়ে উঠতে থাকে, যেগুলো সাধারণ মানুষ নিজেরাই গঠন করে এবং পরিচালনা করে। একটি অর্থ-ভিত্তিক অর্থনীতি চালু হয়, শিল্প এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাথমিক রূপ দেখা যায়। শিক্ষার হার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এই সময়কালেই জাপানের সামন্ততান্ত্রিক সমাজ সবচেয়ে বেশি মিল দেখিয়েছিল ইউরোপের ১৩শ শতকের সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে।
==পটভূমি==
[[File:Kusunoki Masashige.jpg|right|150px|thumb|কুসুনোকি মাসাশিগে]]
১১৯২ সালে মিনামোটো নো ইয়োরিতোমো সম্রাটের কাছ থেকে শোগুন উপাধি লাভ করার পর থেকেই কামাকুরা থেকে শাসনকারী মিনামোটো এবং হোজো পরিবারগুলো সম্রাটের ভূমিকা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে কামাকুরা শোগুনতন্ত্র সম্রাটের পরিবারের দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শাখা দক্ষিণ দরবার (কনিষ্ঠ শাখা) ও উত্তর দরবারকে (জ্যেষ্ঠ শাখা) বিকল্পভাবে সিংহাসনে বসার ব্যবস্থা চালু করে। এই পদ্ধতি কিছু সময় পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এই পদ্ধতিটি বেশ কয়েকটি উত্তরাধিকার পর্যন্ত কাজ করেছিল যতদিন না দক্ষিণ রাজবংশের একজন সদস্য সম্রাট গো-দাইগো হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
গো-দাইগো শোগুনতন্ত্রকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন এবং নিজের পুত্রকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে প্রকাশ্যে কামাকুরার প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করেন। ১৩৩১ সালে শোগুনাত গো-দাইগোকে নির্বাসিত করে, কিন্তু কুসুনোকি মাসাশিগে সহ রাজকীয় অনুগত বাহিনী বিদ্রোহ করে এবং গো-দাইগোকদ সমর্থন জানায়। আশিকাগা তাকাউজি সহ আরও অনেকে তাদের সাহায্য করেন, যিনি গো-দাইগোর বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরিত হয়ে কামাকুরার বিরুদ্ধে চলে যান। একই সময়ে, পূর্বের আরেকজন প্রধান নিত্তাসাদা শোগুনাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং তাদের রাজধানী আক্রমণ করেন (কামাকুরা অবরোধ, ১৩৩৩)। শোগুনতন্ত্র তার অগ্রগতি প্রতিরোধের চেষ্টা করে, কিন্তু দ্রুতই ভেঙে পড়ে।
==উদ্দেশ্য==
১৩১৮ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট গো-দাইগো সিংহাসনে আরোহণ করার পর পরই কামাকুরার সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই শাসন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায় যে বিপরীত প্রমাণ উপেক্ষা করে তিনি এবং তার উপদেষ্টারা বিশ্বাস করতেন যে রাজকীয় পরিবার এবং অভিজাতদের ভাগ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব এবং কামাকুরা শোগুনাতই ছিল এর সবচেয়ে বড় ও সুস্পষ্ট বাধা। আরেকটি গুরুতর সমস্যা ছিল ম্যানর এবং তাদের ভূমি সংক্রান্ত ভূমি-মালিকানা সমস্যা (বিস্তারিত জানতে 'শোয়েন' নিবন্ধ দেখুন)। শুগো (গভর্নর) এবং জিতো (ম্যানরের প্রভু) নামক বৃহৎ ভূস্বামীরা তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং কর ছাড়ের কারণে সরকারকে দরিদ্র করে তুলছিল এবং এর ক্ষমতাকে দুর্বল করছিল। গো-দাইগোর ভবিষ্যত প্রধান উপদেষ্টা কিতাবাতাকে চিকাফুসা তার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত লেখায় এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। চিকাফুসা স্বীকার করেছিলেন যে, এই বিশেষাধিকারগুলো বিলুপ্ত করার কারো কোনো ইচ্ছা ছিল না, তাই এই ফ্রন্টে সাফল্যের আশা শুরু থেকেই অত্যন্ত ক্ষীণ ছিল। শুগো এবং জিতোদের পরিবর্তে তিনি কী করার পরিকল্পনা করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়, তবে তিনি নিশ্চিতভাবে সামুরাই শ্রেণীর সাথে ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণ করেননি। ভূমি মালিকানা সমস্যা যতই গুরুতর হোক না কেন গো-দাইগো এবং তার উপদেষ্টারা এটি সমাধানের জন্য কোনো গুরুতর প্রচেষ্টা করেননি। এর আংশিক কারণ ছিল পশ্চিমা প্রদেশের ম্যানরগুলোর সামুরাইরাই তার পক্ষে বাকুফুকে পরাজিত করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ম্যানরগুলো নিয়ন্ত্রণের যেকোনো প্রচেষ্টা মূল মিত্রদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করত।
==পুনরুদ্ধারের সমাপ্তি==
পেছনের দিকে তাকালে কেম্মু পুনরুদ্ধার ব্যর্থ ছিল। এটি বেশ কিছু কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, যার মধ্যে প্রধান ছিল উপলব্ধি করা সম্রাট গো-দাইগোর একটি স্বর্ণযুগে ফিরে যাওয়ার অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা। যদিও তার চিকাফুসার মতো হিয়ান যুগের নীতিতে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই, তবে স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে তিনি শুধুমাত্র সাম্রাজ্যিক ক্ষমতা নয় বরং এর সংস্কৃতিও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করতেন। তিনি এমনকি দরনারের যে সমস্ত অনুষ্ঠান ব্যবহার থেকে বাদ পড়েছিল সেগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে কেম্মু নেনচু গিওজি নামে একটি গ্রন্থও লিখেছিলেন। ১৩৩৬ সালে আশিকাগা তাকাউজি সাম্রাজ্যিক আদালতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং একটি নতুন সামরিক শাসনের সূচনা ঘোষণা করেন। তার ঘোষণার পর কিতাবাতাকে আকিয়ের সাম্রাজ্যবাদী বাহিনী কিয়োটোর কাছে তাকে আক্রমণ করে পরাজিত করলে তিনি কিউশুতে পিছু হটতে বাধ্য হন। তাকাউজির এই কেম্মু পুনরুদ্ধারের বিশ্বাসঘাতকতা জাপানি ইতিহাসের পরবর্তী সময়গুলোতে তার নামকে কলঙ্কিত করে তোলে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নামবোকু-চো যুদ্ধের সূচনা করে। পূর্ববর্তী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতাকে সামুরাইদের পক্ষ থেকে আসা অসংখ্য আবেদনের ভূমি পুরস্কারের ক্ষেত্রে অকার্যকারিতার স্তরে দেখার চেষ্টা করেছিল; তবে, এখন এটি স্পষ্ট যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তরে অর্থাৎ ভূমি বিরোধের মামলাগুলি নির্ধারণকারী বিচার বিভাগীয় অঙ্গগুলিতে পুনরুদ্ধার কার্যকর ছিল। এটি আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করে যে তাকাউজির বিদ্রোহ এবং একটি নতুন সামরিক শাসন তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতার একটি প্রধান নির্ণায়ক ছিল। তার বিদ্রোহ অসন্তুষ্ট যোদ্ধাদের (যাদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি এমন অনেকেই ছিল) একটি বিশাল অংশকে উৎসাহিত করেছিল যারা কামাকুরার আদলে আরেকটি সামরিক শাসন দেখতে চেয়েছিল।
নানবোকু-চো যুদ্ধ ছিল একটি আদর্শগত সংগ্রাম। একদিকে ছিল সেই অনুগতরা যারা সম্রাটকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে চেয়েছিল, এবং অন্যদিকে ছিল তারা যারা কামাকুরার আদলে আরেকটি সামরিক শাসন তৈরি করতে বিশ্বাসী ছিল। যেন জাপানি ইতিহাসের পূর্ববর্তী দুটি যুগ হিয়ান এবং কামাকুরা আদর্শিক স্তরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। কিতাবাতাকে চিকাফুসার মতো সম্ভ্রান্ত যোদ্ধারা পুনরুদ্ধারে যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু আদর্শগত স্তরে চিকাফুসা এবং তাকাউজির মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বহু বছর ধরে নেতাদের মেরুকরণ করে রেখেছিল। পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতার পরপরই যুদ্ধের সময় একসঙ্গে গড়ে ওঠা মুরোমাচি শাসন উত্থান লাভ করে। পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখব গো-দাইগো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শোগুনতন্ত্র (উত্তর আদালতের সাথে) এবং দক্ষিণ আদালতের মধ্যে একটি আদর্শিক যুদ্ধ, যার নাম উত্তর-দক্ষিণ দরবার যুগ (নানবোকু-চো সময়কাল)।
<noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude>
h4edh59kcsrjgwlby4u3xqpg5k9deu8
জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/গ্রন্থপঞ্জি
0
26738
85582
83007
2025-07-03T07:15:09Z
Asikur.rahman25
11164
/* ইয়ামাতো */
85582
wikitext
text/x-wiki
==জাপান সম্পর্কিত বই==
যদি আপনি শুধু জাপানের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে এখানে কিছু ভালো বই রয়েছে। আরও পড়াশোনার জন্য উইকিপিডিয়াতে কিছু ভালো প্রবন্ধ আছে, যেগুলো একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।আপনি যদি সত্যিই জাপানের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হন, কিংবা নতুন একটি ভাষা শিখতে চান, তাহলে [[জাপানি|এখানে]] জাপানি ভাষার কিছু ভালো পাঠ রয়েছে। স্থাননামের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে চাইলে কানজি অক্ষরের মানে জানা একটু হলেও কাজে লাগতে পারে।আরও পড়াশোনার জন্য আমি আপনাকে উইকিবই এর কিছু অন্যান্য বই ঘুরে দেখার পরামর্শ দেব। এ বইগুলোর কিছুটা এই বইয়ের সঙ্গে মিলও আছে। যেমন [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] বিষয়ক বইটি যেখানে ইতিহাসের বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের অবস্থান আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
==ইয়ামাতো==
<B>অ্যালেন, সি</B> ২০০৩, 'দ্য এমপ্রেস জিংগু', <I>জাপান ফোরাম</I> ১৫ ৩ ৮১-৯৮ <br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, (টোকিও : সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৪, <I>দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিয়ো ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি</I> লন্ডন ইউনিভার্সিটি ডক্টরাল ডিসার্টেশন<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৯, <I>দ্য আর্লি হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হান, ডব্লিউ কে</B> ১৯৭০, <I>দ্য হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হাতাদা, তাকাহাশি</B> ১৯৬৯, <I>আ হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (সান্তা বারবারা: ক্লিও প্রেস)<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', <I>হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ২৯:১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', <I>জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ৩৩:২৫-৪৯ <br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', <I>মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা</I> ৩২:৩৬৫-৩৭৬ <br>
<B>কিম, সঙ-হো</B> ১৯৮৫, 'অরিজিনস অফ দ্য জাপানিজ পলিটি: আ টেক্সচুয়াল রিকনসিডারেশন অফ দ্য হর্স-রাইডার থিওরি', <I>কোরিয়া জার্নাল</I> ২৫.১২:৪-২৩<br>
<B>কার্কল্যান্ড, জে. আর.</B> ১৯৮১, 'দ্য হর্সরাইডার্স ইন কোরিয়া: আ ক্রিটিকাল ইভালুয়েশন অফ আ হিস্টরিকাল থিওরি', <I>কোরিয়ান স্টাডিজ</I> ৫:১০৯-১২৮ <br>
<B>কিতো, কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৯: ১-১৩ <br>
<B>মুরায়ামা, এস ও মিলার, আর. এ.</B> ১৯৭৯, 'দ্য ইনারিয়ামা টুমুলাস সোর্ড ইনস্ক্রিপশন', <I>জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ</I> ৫:৪০৫-৪৩৮ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯২, 'দ্য কোফুন পিরিয়ড অ্যান্ড স্টেট ফরমেশন', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৩:৬৪-৮৬ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯০, 'চিফলি লিনিয়েজেস ইন কোফুন পিরিয়ড জাপান: পলিটিকাল রিলেশনস বিটুইন সেন্টার অ্যান্ড রিজিয়ন', <I>অ্যান্টিকুইটি</I> ৬৪:৯২৩-৯৩১ <br>
<B>ত্সুনোডা, আর. ও গুডরিচ, এল. সি.</B> ১৯৫১, <I>জাপান ইন দ্য চাইনিজ ডাইনাস্টিক হিস্টরিজ</I> (পারকিন্স, সাউথ পাসাডিনা)<br>
<B>ভারগো, লার্স</B> ১৯৮২, <I>সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কন্ডিশনস ফর দ্য ফরমেশন অফ দ্য আর্লি জাপানিজ স্টেট</I> (স্টকহোম: স্টকহোম ইউনিভার্সিটি জাপানোলজিকাল স্টাডিজ ১)<br>
<B>আনসেলমো, ভালেরিও</B> ১৯৭৪, "http://www.corea.it/kudara_1.htm" দ্য এটিমোলজি অফ কুদারা<br>==ইয়ামাতো==
==নারা==
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</b> ১৯৭১, <i>ইজুমো ফুদোকি</i>, মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা মনোগ্রাফ, টোকিও<br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</b> ১৯৯৭, <i>বায়ু ও ভূখণ্ডের বৃত্তান্ত: ফুদোকির অনুবাদ, প্রস্তাবনা ও ব্যাখ্যাসহ</i>, অ্যাসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ, অ্যান আরবর, মিশিগান<br>
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯০৩, <i>জাপানের প্রারম্ভিক প্রতিষ্ঠানিক জীবন: ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের সংস্কার নিয়ে একটি গবেষণা</i>, শুয়েইশা, টোকিও<br>
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ১৯৮৬, 'বিদেশি হুমকি ও অভ্যন্তরীণ সংস্কার: রিতসুরিও রাষ্ট্রের উত্থান', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪১: ১৯৯–২১৯<br>
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ১৯৯৩, 'প্রারম্ভিক জাপানে প্রাদেশিক প্রশাসন: রিতসুরিও রাষ্ট্র থেকে ওচো রাষ্ট্রে রূপান্তর', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৩: ১০৩–১৩৪<br>
<b>বিসলি, ডব্লিউ. জি. এবং পুলিব্ল্যাঙ্ক, ই. জি.</b> ১৯৬১, <i>চীন ও জাপানের ইতিহাসবিদগণ</i>, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, অক্সফোর্ড<br>
<b>বেন্ডার, আর.</b> ১৯৭৯, 'হাচিমান উপাসনা ও দোক্যো ঘটনার বিশ্লেষণ', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৩৪: ১২৫–১৫৩<br>
<b>বেন্টলি, জে. আর.</b> ২০০২, <i>প্রারম্ভিক জাপানে ইতিহাসলিপির ধারা</i>, এডউইন মেলেন প্রেস<br>
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>জাপানি ঐতিহাসিক রচনায় রাজনৈতিক চিন্তাধারা: কোজিকি (৭১২) থেকে তোকুশি ইয়োরন (১৭১২) পর্যন্ত</i>, উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ওয়াটারলু, অন্টারিও<br>
<b>কোলড্রেক, ডব্লিউ. এইচ.</b> ১৯৯১, 'নারা রাজনৈতিক ব্যবস্থার নির্মাণে নগর পরিকল্পনা ও প্রাসাদ স্থাপত্য: হেইজো-কিও নগরীর স্থান ও উদ্দেশ্যের সামঞ্জস্য', EAH : ৩৭:৫৪<br>
<b>কোমো, এম.</b> ২০০৭, 'নারা যুগে ঘোড়া, ড্রাগন ও রোগ', JJRS ৩৪: ৩৯৫–৪১৫<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>প্রারম্ভিক জাপানে জনসংখ্যা, রোগ ও ভূমি</i>, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>স্বর্গীয় যোদ্ধারা: ৫০০–১৩০০ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সামরিক বিকাশ</i>, কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯৮, <i>পবিত্র গ্রন্থ ও সমাধিস্থ ধন: প্রাচীন জাপানের ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক কিছু প্রশ্ন</i>, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস, হনোলুলু<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ২০০৭, 'ধাঁধার খণ্ডাংশ: শোসোইন নথিপত্র নিয়ে নতুন বিশ্লেষণ', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৬২: ৩৯৭–৪৩৫<br>
<b>ফ্রাইডে, কে. এফ.</b> ১৯৯৭, 'সীমা ছাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়া: ইয়ামাতোর এমিশি ও উত্তর জাপান জয়', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২৩: ১–২৪<br>
<b>ফানকে, এম. সি.</b> ১৯৯৪, 'হিতাচি নো কুনি ফুদোকি', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৯: ১–২৯<br>
<b>হল, জন ডব্লিউ.</b> ১৯৬৬, <i>জাপানে সরকার ও স্থানীয় ক্ষমতা, ৫০০–১৭০০: বিজেন প্রদেশ ভিত্তিক একটি গবেষণা</i>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<b>হলকম্ব, সি.</b> ১৯৯৭, 'প্রারম্ভিক চীন ও জাপানের সাম্রাজ্যিক শাসনব্যবস্থা', <i>স্টাডিজ ইন চাইনিজ হিস্ট্রি</i> ৫: ৭–৪৪<br>
<b>হলকম্ব, সি.</b> ১৯৯৭, 'রিতসুরিও কনফিউসিয়ানিজম', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৭: ৫৪৩–৫৭৪<br>
<b>হলকম্ব, সি.</b> ১৯৯৯, 'বানিজ্য-বৌদ্ধধর্ম: সামুদ্রিক বাণিজ্য, অভিবাসন ও জাপানে বৌদ্ধধর্মের আগমন', JAOS ১১৯: ২৮০–২৯২<br>
<b>ইনোয়ে মিতসুসাদা</b> ১৯৭৭, 'জাপানে রিতসুরিও ব্যবস্থা', AA ৩১: ৮৩–১১২<br>
<b>ইশিগামি, ই.</b> ১৯৯৫, 'প্রাচীন জাপানে রাষ্ট্র ও সমাজ', AA ৬৯: ১৪–৩৮<br>
<b>ইশি আর.</b> ১৯৮০, <i>জাপানে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস</i>, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, টোকিও<br>
<b>ক্যামস্ট্রা, জে. এইচ.</b> ১৯৬৭, <i>সিঙ্ক্রেটিজমের মুখোমুখি: জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিকাশ</i>, ই. জে. ব্রিল, লেইডেন<br>
<b>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</b> ১৯৬৯, 'নারা যুগের অভিবাসী কর্মকর্তাদের উপনাম সম্পর্কে একটি মন্তব্য', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ২৯: ১৭৭-১৮৯<br>
<b>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</b> ১৯৭৩, 'প্রাচীন ইয়ামাটোতে রাষ্ট্র ও রাজবংশ', জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৩৩: ২৫-৪৯<br>
<b>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</b> ১৯৭৭, 'উজি ও কাবানে: প্রাচীন জাপানে তাদের ভূমিকা', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<b>কিতো কে.</b> ১৯৯৫, 'প্রাচীন জাপানের ইতিহাস সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন: রাষ্ট্র তত্ত্বের আলোকে', এএ ৬৯: ১-১৩<br>
<b>কর্নিকি, পি. এফ. এবং ম্যাকমালেন, আই. জে.</b> ১৯৯৬, <i>জাপানে ধর্ম: স্বর্গ ও পৃথিবীর দিকে তীর</i>, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ<br>
<b>কুরোদা টি.</b> ১৯৮১, 'জাপানের ধর্মীয় ইতিহাসে শিন্তো', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<b>মিলার, আর. জে.</b> ১৯৭৪, <i>প্রাচীন জাপানের অভিজাত শ্রেণি: কাবানে র্যাংকিং ব্যবস্থা</i>, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, বার্কলে<br>
<b>মিলার, আর. জে.</b> ১৯৭৮, <i>জাপানের প্রথম আমলাতন্ত্র</i>, ইস্ট এশিয়ান পেপারস সংখ্যা ১৯, কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<b>ওবায়াশি টি.</b> ১৯৮৫, 'উজি সমাজ ও ইয়ে সমাজ: প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১১: ৩-২৭<br>
<b>ওকাদা এস.</b> ১৯৮৩, 'প্রাচীন জাপানে রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানের বিকাশ', এএ ৫১: ২২-৪১<br>
<b>পিয়ারসন, আর. জে.</b> ১৯৭৬, 'জাপান বিষয়ক গবেষণায় প্রত্নতত্ত্বের অবদান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২: ৩০৫-৩৩৩<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ১৯৮৯, 'প্রাচীন ইজুমোতে পবিত্র রাজত্ব ও সম্মিলন', মোনুমেনটা নিপ্পোনিকা ৪৪: ৪৫-৭৪<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ১৯৯০, 'মোক্কান: নারা যুগের কাঠের দলিল', মোনুমেনটা নিপ্পোনিকা ৪৫: ৪৪৯-৪৭০<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ১৯৯৭, <i>জাপানে রাজত্বের উত্থান</i>, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পালো অল্টো<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ২০০৬, <i>রাজধানী ও গ্রামাঞ্চল: জাপান ৩০০-১১৮০; ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করা জাপানি ইতিহাসবিদেরা</i>, কর্নেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ<br>
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>অর্থের বিভাজন: অষ্টম থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জাপানের চীন অনুকরণ</i>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<b>সাকামোতো টি.</b> ১৯৯১, <i>জাপানের ছয়টি জাতীয় ইতিহাস, অনুবাদক: জে. এস. ব্রাউনলি</i>, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রেস, ভ্যাঙ্কুভার<br>
<b>সাটো এম.</b> ১৯৯৫, 'প্রাচীন জাপানের কাঠের ফলক (মোক্কান)', এএ ৬৯: ৮৪-১১৭<br>
<b>তাকেউচি রিজো</b> ১৯৮৮, 'নারা যুগে স্থানীয় প্রশাসনের দলিল: গৃহ নিবন্ধন ও কর নিবন্ধন', এ. ফোর্তে সম্পাদিত <i>তাং চীন ও তার পরিধি: সপ্তম থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত পূর্ব এশিয়া সংক্রান্ত গবেষণা</i>, ইস্তিতুতো ইতালিয়ানো দি কালচুরা, কিয়োটো<br>
<b>তামুরা ই.</b> ১৯৮৫, 'জাপান ও বৌদ্ধ ধর্মের পূর্বদিকে বিস্তার', এএ ৪৭: ১-৩০<br>
<b>টোবি, আর. পি.</b> ১৯৯৩, 'কেন নারা ছেড়ে যাওয়া? কাম্মু এবং রাজধানী স্থানান্তর', মোনুমেনটা নিপ্পোনিকা ৪০: ৩৩১-৩৪৭<br>
<b>ৎসুবোই কে.</b> ১৯৯২, 'প্রাচীন পার্লামেন্ট ও রাজধানীর খনন', এএ ৬৩: ৮৭-৯৮<br>
<b>ৎসুবোই কে. এবং তানাকা এম.</b> ১৯৯১, <i>ইতিহাসবহুল নগরী নারা: প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি</i>, সেন্টার ফর ইস্ট এশিয়ান কালচারাল স্টাডিজ, টোকিও<br>
<b>ৎসুরুমি ই. পি.</b> ১৯৮২, 'পুরুষ বর্তমান বনাম নারী অতীত: ইতিহাসবিদ ও জাপানের প্রাচীন নারী সম্রাজ্ঞীরা', বিসিএএস ১৪.৪: ৭১-৭৫<br>
<b>ওয়াদা এ.</b> ১৯৯৫, 'ইসে মন্দিরের উৎপত্তি', এএ ৬৯: ৬৩-৮৩<br>
<b>ইাসুদা ওয়াই.</b> ১৯৭৬, 'রিৎসুর্যো ব্যবস্থার পতন: অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ওপর একটি অনুমান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১: ৩-৩৭<br>
==প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ==
হেইয়ান যুগ নিয়ে বাংলায় যেমন তেমন, ইংরেজিতেও লেখা উপাদান অত্যন্ত অপ্রতুল, যা সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও এই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছে, সেগুলো মূলত অভিজাত শ্রেণির জীবন বোঝার প্রাথমিক সূত্র হিসেবে কাজ করে। প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ নিয়ে গবেষণার সুযোগ আরও সীমিত। কারণ এই সময়কার উৎস খুবই কম। ফলে ইতিহাসবিদদের জন্য অনুসন্ধানের সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ। মধ্য হেইয়ান যুগ এবং তার পর থেকে ডায়েরি ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক লেখালেখি পাওয়া যায়। তবে এই লেখাগুলোও মূলত এই আলোচ্য সময়ের একেবারে শেষদিকে শুরু হয়।প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুই নির্ভর করে বেঁচে থাকা সরকারি দলিলপত্র থেকে তথ্য টেনে আনার ওপর।
<b>আডলফসন, এম., কামেনস, ই, এবং মাতসুমোতো, এস</b> (সম্পাদক) ২০০৭, <i>হেইয়ান জাপান: কেন্দ্র ও প্রান্ত</i> (হোনোলুলু: হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯২৯, <i>ইরিকির দলিলপত্র</i> (ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা; পুনর্মুদ্রিত: গ্রিনউড প্রেস, কানেকটিকাট, ১৯৭৪)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯৬৫, <i>মধ্যযুগীয় জাপানে ভূমি ও সমাজ</i> (জাপান বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি, টোকিও)
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ২০০৫, <i>জাপানের প্রবেশদ্বার: হাকাতা—যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে, ৫০০–১৩০০</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>বায়ালক, ডি. টি.</b> ২০০৭, <i>বিচিত্র স্থান, গোপন ইতিহাস: বর্ণনা, আচার ও রাজকীয় কর্তৃত্ব—"জাপানের ইতিহাস" থেকে "হেইক গল্প" পর্যন্ত</i> (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>বক, এফ. জি.</b> ১৯৭০–৭২, <i>এঙ্গি-শিকি: এঙ্গি যুগের প্রক্রিয়া</i>, ২ খণ্ড, এমএন মনোগ্রাফ (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, টোকিও)
<b>বোর্গেন, আর. এস.</b> ১৯৮৬, <i>সুগাওয়ারা নো মিচিজানে ও প্রারম্ভিক হেইয়ান দরবার</i> (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>আডলফসন, এম. এস.</b> ২০০৬, <i>বুদ্ধের দাঁত ও নখর: জাপানের ইতিহাসে সন্ন্যাসী যোদ্ধা ও সোহেই</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>জাপানি ঐতিহাসিক রচনায় রাজনৈতিক চিন্তা: কোজিকি (৭১২) থেকে তোকুশি ইয়োরন (১৭১২) পর্যন্ত</i> (ওয়াটারলু, অন্টারিও: উইলফ্রিড লরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>কার্টার, এস. ডি.</b> ১৯৯৬, <i>পুনরায় রাজপ্রতিনিধি: পণ্ডিত-রাজনীতিক ইচিজো কানেওশির জীবন</i> (অ্যান আরবার: মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানি স্টাডিজ কেন্দ্র)
<b>কব্বিং, এ.</b> ২০০৯, <i>কিউশু: জাপানের প্রবেশদ্বার</i> (ফোকস্টোন: গ্লোবাল ওরিয়েন্টাল)
<b>ফারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>প্রাচীন জাপানে জনসংখ্যা, রোগ এবং ভূমি</i> (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ফারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>স্বর্গীয় যোদ্ধারা: ৫০০–১৩০০ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সামরিক শক্তির বিবর্তন</i> (কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ কাউন্সিল)
<b>ফ্রাইডে, কে.</b> ১৯৯২, <i>ভাড়াটে তলোয়ার: প্রাচীন জাপানে ব্যক্তিগত যোদ্ধা শক্তির উত্থান</i> (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>গ্র্যাপার্ড, এ. জি.</b> ১৯৯২, <i>দেবতাদের নিয়মনীতি: জাপানের ইতিহাসে কাসুগা উপাসনা বিশ্লেষণ</i> (বার্কলে: ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>হল, জন হুইটনি</b> ১৯৬৬, <i>জাপানে সরকার ও স্থানীয় ক্ষমতা, ৫০০–১৭০০: বিজেন প্রদেশের উপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা</i> (প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>হেম্পেল, আর.</b> ১৯৮৩, <i>জাপানের হেইয়ান সভ্যতা</i> (অক্সফোর্ড: ফাইডন)
<b>হার্স্ট, জি. ক্যামেরন</b> ১৯৭৬, <i>ইনসেই: দায়িত্বহীন সম্রাট ও শেষ হেইয়ান যুগের রাজনীতি, ১০৮৬–১১৮৫</i> (নিউ ইয়র্ক: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ইশি, আর.</b> ১৯৮০, <i>জাপানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাস</i> (টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>কর্নিকি, পি. এফ.</b> ১৯৯৮, <i>জাপানে বই: শুরু থেকে উনবিংশ শতক পর্যন্ত একটি সাংস্কৃতিক ইতিহাস</i> (লেইডেন: ব্রিল)
<b>মরিস, ইভান</b> ১৯৬৪, <i>উজ্জ্বল রাজপুত্রের জগৎ</i> (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>মোস্টো, জে. এস.</b> ২০০৪, <i>পাতাঝরা গৃহে: জাপানি দরবারি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত জীবনীমূলক ও আত্মজীবনীমূলক রচনা</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>পিগট, জে. আর.</b> (সম্পাদক) ২০০৬, <i>জাপানে রাজধানী ও গ্রামাঞ্চল, ৩০০–১১৮০: ইংরেজিতে উপস্থাপিত জাপানি ইতিহাসবিদদের ব্যাখ্যা</i> (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>অর্থের বিচ্ছিন্নতা: অষ্টম থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত চীনের সঙ্গে জাপানের সংমিশ্রণ</i> (প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>রাবিনোভিচ, জে. এন.</b> ১৯৮৬, <i>শোমোনকি: মাসাকাদোর বিদ্রোহের কাহিনি</i>, এমএন মনোগ্রাফ (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫(ক), <i>এন্নিনের দিনলিপি: ধর্মের খোঁজে চীনে তীর্থযাত্রার বিবরণ</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫(খ), <i>তাং চীনে এন্নিনের ভ্রমণ</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>সাকামোতো, টি.</b> ১৯৯১, <i>জাপানের ছয়টি জাতীয় ইতিহাস</i>, অনুবাদ: জে. এস. ব্রাউনলি (ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস; টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ভন ভারশুয়ার, সি.</b> ২০০৬, <i>ভয়ংকর সাগর পেরিয়ে: সপ্তম থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ও কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের বাণিজ্য</i>, অনুবাদ: কে. এল. হান্টার (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>ওয়ালেস, জে. আর.</b> ২০০৫, <i>আলোচনার বস্তু: হেইয়ান যুগের নারীদের স্মৃতিচারণ</i> (মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানি স্টাডিজ কেন্দ্র)
<b>উইলসন, ডব্লিউ. আর.</b> ১৯৭১, <i>হোগেন মনোগাতারি: হোগেন বিদ্রোহের কাহিনি</i> (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude>
{{BookCat}}
9d251b7z3k7fkhse0woxlidtn03b6un
85583
85582
2025-07-03T07:16:30Z
Asikur.rahman25
11164
/* ইয়ামাতো */
85583
wikitext
text/x-wiki
==জাপান সম্পর্কিত বই==
যদি আপনি শুধু জাপানের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে এখানে কিছু ভালো বই রয়েছে। আরও পড়াশোনার জন্য উইকিপিডিয়াতে কিছু ভালো প্রবন্ধ আছে, যেগুলো একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।আপনি যদি সত্যিই জাপানের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হন, কিংবা নতুন একটি ভাষা শিখতে চান, তাহলে [[জাপানি|এখানে]] জাপানি ভাষার কিছু ভালো পাঠ রয়েছে। স্থাননামের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে চাইলে কানজি অক্ষরের মানে জানা একটু হলেও কাজে লাগতে পারে।আরও পড়াশোনার জন্য আমি আপনাকে উইকিবই এর কিছু অন্যান্য বই ঘুরে দেখার পরামর্শ দেব। এ বইগুলোর কিছুটা এই বইয়ের সঙ্গে মিলও আছে। যেমন [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] বিষয়ক বইটি যেখানে ইতিহাসের বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের অবস্থান আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
==ইয়ামাতো==
<B>অ্যালেন, সি</B> ২০০৩, 'দ্য এমপ্রেস জিংগু', <I>জাপান ফোরাম</I> ১৫ ৩ ৮১-৯৮ <br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, (টোকিও : সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৪, <I>দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিয়ো ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি</I> লন্ডন ইউনিভার্সিটি ডক্টরাল ডিসার্টেশন<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৯, <I>দ্য আর্লি হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হান, ডব্লিউ কে</B> ১৯৭০, <I>দ্য হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হাতাদা, তাকাহাশি</B> ১৯৬৯, <I>আ হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (সান্তা বারবারা: ক্লিও প্রেস)<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', <I>হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ২৯:১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', <I>জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ৩৩:২৫-৪৯ <br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', <I>মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা</I> ৩২:৩৬৫-৩৭৬ <br>
<B>কিম, সঙ-হো</B> ১৯৮৫, 'অরিজিনস অফ দ্য জাপানিজ পলিটি: আ টেক্সচুয়াল রিকনসিডারেশন অফ দ্য হর্স-রাইডার থিওরি', <I>কোরিয়া জার্নাল</I> ২৫.১২:৪-২৩<br>
<B>কার্কল্যান্ড, জে. আর.</B> ১৯৮১, 'দ্য হর্সরাইডার্স ইন কোরিয়া: আ ক্রিটিকাল ইভালুয়েশন অফ আ হিস্টরিকাল থিওরি', <I>কোরিয়ান স্টাডিজ</I> ৫:১০৯-১২৮ <br>
<B>কিতো, কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৯: ১-১৩ <br>
<B>মুরায়ামা, এস ও মিলার, আর. এ.</B> ১৯৭৯, 'দ্য ইনারিয়ামা টুমুলাস সোর্ড ইনস্ক্রিপশন', <I>জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ</I> ৫:৪০৫-৪৩৮ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯২, 'দ্য কোফুন পিরিয়ড অ্যান্ড স্টেট ফরমেশন', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৩:৬৪-৮৬ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯০, 'চিফলি লিনিয়েজেস ইন কোফুন পিরিয়ড জাপান: পলিটিকাল রিলেশনস বিটুইন সেন্টার অ্যান্ড রিজিয়ন', <I>অ্যান্টিকুইটি</I> ৬৪:৯২৩-৯৩১ <br>
<B>ত্সুনোডা, আর. ও গুডরিচ, এল. সি.</B> ১৯৫১, <I>জাপান ইন দ্য চাইনিজ ডাইনাস্টিক হিস্টরিজ</I> (পারকিন্স, সাউথ পাসাডিনা)<br>
<B>ভারগো, লার্স</B> ১৯৮২, <I>সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কন্ডিশনস ফর দ্য ফরমেশন অফ দ্য আর্লি জাপানিজ স্টেট</I> (স্টকহোম: স্টকহোম ইউনিভার্সিটি জাপানোলজিকাল স্টাডিজ ১)<br>
<B>আনসেলমো, ভালেরিও</B> ১৯৭৪, "http://www.corea.it/kudara_1.htm" দ্য এটিমোলজি অফ কুদারা
==নারা==
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</b> ১৯৭১, <i>ইজুমো ফুদোকি</i>, মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা মনোগ্রাফ, টোকিও<br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</b> ১৯৯৭, <i>বায়ু ও ভূখণ্ডের বৃত্তান্ত: ফুদোকির অনুবাদ, প্রস্তাবনা ও ব্যাখ্যাসহ</i>, অ্যাসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ, অ্যান আরবর, মিশিগান<br>
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯০৩, <i>জাপানের প্রারম্ভিক প্রতিষ্ঠানিক জীবন: ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের সংস্কার নিয়ে একটি গবেষণা</i>, শুয়েইশা, টোকিও<br>
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ১৯৮৬, 'বিদেশি হুমকি ও অভ্যন্তরীণ সংস্কার: রিতসুরিও রাষ্ট্রের উত্থান', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪১: ১৯৯–২১৯<br>
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ১৯৯৩, 'প্রারম্ভিক জাপানে প্রাদেশিক প্রশাসন: রিতসুরিও রাষ্ট্র থেকে ওচো রাষ্ট্রে রূপান্তর', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৩: ১০৩–১৩৪<br>
<b>বিসলি, ডব্লিউ. জি. এবং পুলিব্ল্যাঙ্ক, ই. জি.</b> ১৯৬১, <i>চীন ও জাপানের ইতিহাসবিদগণ</i>, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, অক্সফোর্ড<br>
<b>বেন্ডার, আর.</b> ১৯৭৯, 'হাচিমান উপাসনা ও দোক্যো ঘটনার বিশ্লেষণ', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৩৪: ১২৫–১৫৩<br>
<b>বেন্টলি, জে. আর.</b> ২০০২, <i>প্রারম্ভিক জাপানে ইতিহাসলিপির ধারা</i>, এডউইন মেলেন প্রেস<br>
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>জাপানি ঐতিহাসিক রচনায় রাজনৈতিক চিন্তাধারা: কোজিকি (৭১২) থেকে তোকুশি ইয়োরন (১৭১২) পর্যন্ত</i>, উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ওয়াটারলু, অন্টারিও<br>
<b>কোলড্রেক, ডব্লিউ. এইচ.</b> ১৯৯১, 'নারা রাজনৈতিক ব্যবস্থার নির্মাণে নগর পরিকল্পনা ও প্রাসাদ স্থাপত্য: হেইজো-কিও নগরীর স্থান ও উদ্দেশ্যের সামঞ্জস্য', EAH : ৩৭:৫৪<br>
<b>কোমো, এম.</b> ২০০৭, 'নারা যুগে ঘোড়া, ড্রাগন ও রোগ', JJRS ৩৪: ৩৯৫–৪১৫<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>প্রারম্ভিক জাপানে জনসংখ্যা, রোগ ও ভূমি</i>, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>স্বর্গীয় যোদ্ধারা: ৫০০–১৩০০ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সামরিক বিকাশ</i>, কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯৮, <i>পবিত্র গ্রন্থ ও সমাধিস্থ ধন: প্রাচীন জাপানের ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক কিছু প্রশ্ন</i>, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস, হনোলুলু<br>
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ২০০৭, 'ধাঁধার খণ্ডাংশ: শোসোইন নথিপত্র নিয়ে নতুন বিশ্লেষণ', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৬২: ৩৯৭–৪৩৫<br>
<b>ফ্রাইডে, কে. এফ.</b> ১৯৯৭, 'সীমা ছাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়া: ইয়ামাতোর এমিশি ও উত্তর জাপান জয়', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২৩: ১–২৪<br>
<b>ফানকে, এম. সি.</b> ১৯৯৪, 'হিতাচি নো কুনি ফুদোকি', মনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৯: ১–২৯<br>
<b>হল, জন ডব্লিউ.</b> ১৯৬৬, <i>জাপানে সরকার ও স্থানীয় ক্ষমতা, ৫০০–১৭০০: বিজেন প্রদেশ ভিত্তিক একটি গবেষণা</i>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<b>হলকম্ব, সি.</b> ১৯৯৭, 'প্রারম্ভিক চীন ও জাপানের সাম্রাজ্যিক শাসনব্যবস্থা', <i>স্টাডিজ ইন চাইনিজ হিস্ট্রি</i> ৫: ৭–৪৪<br>
<b>হলকম্ব, সি.</b> ১৯৯৭, 'রিতসুরিও কনফিউসিয়ানিজম', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৭: ৫৪৩–৫৭৪<br>
<b>হলকম্ব, সি.</b> ১৯৯৯, 'বানিজ্য-বৌদ্ধধর্ম: সামুদ্রিক বাণিজ্য, অভিবাসন ও জাপানে বৌদ্ধধর্মের আগমন', JAOS ১১৯: ২৮০–২৯২<br>
<b>ইনোয়ে মিতসুসাদা</b> ১৯৭৭, 'জাপানে রিতসুরিও ব্যবস্থা', AA ৩১: ৮৩–১১২<br>
<b>ইশিগামি, ই.</b> ১৯৯৫, 'প্রাচীন জাপানে রাষ্ট্র ও সমাজ', AA ৬৯: ১৪–৩৮<br>
<b>ইশি আর.</b> ১৯৮০, <i>জাপানে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস</i>, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, টোকিও<br>
<b>ক্যামস্ট্রা, জে. এইচ.</b> ১৯৬৭, <i>সিঙ্ক্রেটিজমের মুখোমুখি: জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক বিকাশ</i>, ই. জে. ব্রিল, লেইডেন<br>
<b>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</b> ১৯৬৯, 'নারা যুগের অভিবাসী কর্মকর্তাদের উপনাম সম্পর্কে একটি মন্তব্য', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ২৯: ১৭৭-১৮৯<br>
<b>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</b> ১৯৭৩, 'প্রাচীন ইয়ামাটোতে রাষ্ট্র ও রাজবংশ', জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৩৩: ২৫-৪৯<br>
<b>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</b> ১৯৭৭, 'উজি ও কাবানে: প্রাচীন জাপানে তাদের ভূমিকা', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<b>কিতো কে.</b> ১৯৯৫, 'প্রাচীন জাপানের ইতিহাস সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন: রাষ্ট্র তত্ত্বের আলোকে', এএ ৬৯: ১-১৩<br>
<b>কর্নিকি, পি. এফ. এবং ম্যাকমালেন, আই. জে.</b> ১৯৯৬, <i>জাপানে ধর্ম: স্বর্গ ও পৃথিবীর দিকে তীর</i>, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ<br>
<b>কুরোদা টি.</b> ১৯৮১, 'জাপানের ধর্মীয় ইতিহাসে শিন্তো', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<b>মিলার, আর. জে.</b> ১৯৭৪, <i>প্রাচীন জাপানের অভিজাত শ্রেণি: কাবানে র্যাংকিং ব্যবস্থা</i>, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, বার্কলে<br>
<b>মিলার, আর. জে.</b> ১৯৭৮, <i>জাপানের প্রথম আমলাতন্ত্র</i>, ইস্ট এশিয়ান পেপারস সংখ্যা ১৯, কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<b>ওবায়াশি টি.</b> ১৯৮৫, 'উজি সমাজ ও ইয়ে সমাজ: প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১১: ৩-২৭<br>
<b>ওকাদা এস.</b> ১৯৮৩, 'প্রাচীন জাপানে রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানের বিকাশ', এএ ৫১: ২২-৪১<br>
<b>পিয়ারসন, আর. জে.</b> ১৯৭৬, 'জাপান বিষয়ক গবেষণায় প্রত্নতত্ত্বের অবদান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২: ৩০৫-৩৩৩<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ১৯৮৯, 'প্রাচীন ইজুমোতে পবিত্র রাজত্ব ও সম্মিলন', মোনুমেনটা নিপ্পোনিকা ৪৪: ৪৫-৭৪<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ১৯৯০, 'মোক্কান: নারা যুগের কাঠের দলিল', মোনুমেনটা নিপ্পোনিকা ৪৫: ৪৪৯-৪৭০<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ১৯৯৭, <i>জাপানে রাজত্বের উত্থান</i>, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পালো অল্টো<br>
<b>পিগট, জে. আর.</b> ২০০৬, <i>রাজধানী ও গ্রামাঞ্চল: জাপান ৩০০-১১৮০; ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করা জাপানি ইতিহাসবিদেরা</i>, কর্নেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ<br>
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>অর্থের বিভাজন: অষ্টম থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জাপানের চীন অনুকরণ</i>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<b>সাকামোতো টি.</b> ১৯৯১, <i>জাপানের ছয়টি জাতীয় ইতিহাস, অনুবাদক: জে. এস. ব্রাউনলি</i>, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রেস, ভ্যাঙ্কুভার<br>
<b>সাটো এম.</b> ১৯৯৫, 'প্রাচীন জাপানের কাঠের ফলক (মোক্কান)', এএ ৬৯: ৮৪-১১৭<br>
<b>তাকেউচি রিজো</b> ১৯৮৮, 'নারা যুগে স্থানীয় প্রশাসনের দলিল: গৃহ নিবন্ধন ও কর নিবন্ধন', এ. ফোর্তে সম্পাদিত <i>তাং চীন ও তার পরিধি: সপ্তম থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত পূর্ব এশিয়া সংক্রান্ত গবেষণা</i>, ইস্তিতুতো ইতালিয়ানো দি কালচুরা, কিয়োটো<br>
<b>তামুরা ই.</b> ১৯৮৫, 'জাপান ও বৌদ্ধ ধর্মের পূর্বদিকে বিস্তার', এএ ৪৭: ১-৩০<br>
<b>টোবি, আর. পি.</b> ১৯৯৩, 'কেন নারা ছেড়ে যাওয়া? কাম্মু এবং রাজধানী স্থানান্তর', মোনুমেনটা নিপ্পোনিকা ৪০: ৩৩১-৩৪৭<br>
<b>ৎসুবোই কে.</b> ১৯৯২, 'প্রাচীন পার্লামেন্ট ও রাজধানীর খনন', এএ ৬৩: ৮৭-৯৮<br>
<b>ৎসুবোই কে. এবং তানাকা এম.</b> ১৯৯১, <i>ইতিহাসবহুল নগরী নারা: প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি</i>, সেন্টার ফর ইস্ট এশিয়ান কালচারাল স্টাডিজ, টোকিও<br>
<b>ৎসুরুমি ই. পি.</b> ১৯৮২, 'পুরুষ বর্তমান বনাম নারী অতীত: ইতিহাসবিদ ও জাপানের প্রাচীন নারী সম্রাজ্ঞীরা', বিসিএএস ১৪.৪: ৭১-৭৫<br>
<b>ওয়াদা এ.</b> ১৯৯৫, 'ইসে মন্দিরের উৎপত্তি', এএ ৬৯: ৬৩-৮৩<br>
<b>ইাসুদা ওয়াই.</b> ১৯৭৬, 'রিৎসুর্যো ব্যবস্থার পতন: অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ওপর একটি অনুমান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১: ৩-৩৭<br>
==প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ==
হেইয়ান যুগ নিয়ে বাংলায় যেমন তেমন, ইংরেজিতেও লেখা উপাদান অত্যন্ত অপ্রতুল, যা সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও এই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছে, সেগুলো মূলত অভিজাত শ্রেণির জীবন বোঝার প্রাথমিক সূত্র হিসেবে কাজ করে। প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ নিয়ে গবেষণার সুযোগ আরও সীমিত। কারণ এই সময়কার উৎস খুবই কম। ফলে ইতিহাসবিদদের জন্য অনুসন্ধানের সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ। মধ্য হেইয়ান যুগ এবং তার পর থেকে ডায়েরি ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক লেখালেখি পাওয়া যায়। তবে এই লেখাগুলোও মূলত এই আলোচ্য সময়ের একেবারে শেষদিকে শুরু হয়।প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুই নির্ভর করে বেঁচে থাকা সরকারি দলিলপত্র থেকে তথ্য টেনে আনার ওপর।
<b>আডলফসন, এম., কামেনস, ই, এবং মাতসুমোতো, এস</b> (সম্পাদক) ২০০৭, <i>হেইয়ান জাপান: কেন্দ্র ও প্রান্ত</i> (হোনোলুলু: হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯২৯, <i>ইরিকির দলিলপত্র</i> (ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা; পুনর্মুদ্রিত: গ্রিনউড প্রেস, কানেকটিকাট, ১৯৭৪)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯৬৫, <i>মধ্যযুগীয় জাপানে ভূমি ও সমাজ</i> (জাপান বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি, টোকিও)
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ২০০৫, <i>জাপানের প্রবেশদ্বার: হাকাতা—যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে, ৫০০–১৩০০</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>বায়ালক, ডি. টি.</b> ২০০৭, <i>বিচিত্র স্থান, গোপন ইতিহাস: বর্ণনা, আচার ও রাজকীয় কর্তৃত্ব—"জাপানের ইতিহাস" থেকে "হেইক গল্প" পর্যন্ত</i> (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>বক, এফ. জি.</b> ১৯৭০–৭২, <i>এঙ্গি-শিকি: এঙ্গি যুগের প্রক্রিয়া</i>, ২ খণ্ড, এমএন মনোগ্রাফ (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, টোকিও)
<b>বোর্গেন, আর. এস.</b> ১৯৮৬, <i>সুগাওয়ারা নো মিচিজানে ও প্রারম্ভিক হেইয়ান দরবার</i> (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>আডলফসন, এম. এস.</b> ২০০৬, <i>বুদ্ধের দাঁত ও নখর: জাপানের ইতিহাসে সন্ন্যাসী যোদ্ধা ও সোহেই</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>জাপানি ঐতিহাসিক রচনায় রাজনৈতিক চিন্তা: কোজিকি (৭১২) থেকে তোকুশি ইয়োরন (১৭১২) পর্যন্ত</i> (ওয়াটারলু, অন্টারিও: উইলফ্রিড লরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>কার্টার, এস. ডি.</b> ১৯৯৬, <i>পুনরায় রাজপ্রতিনিধি: পণ্ডিত-রাজনীতিক ইচিজো কানেওশির জীবন</i> (অ্যান আরবার: মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানি স্টাডিজ কেন্দ্র)
<b>কব্বিং, এ.</b> ২০০৯, <i>কিউশু: জাপানের প্রবেশদ্বার</i> (ফোকস্টোন: গ্লোবাল ওরিয়েন্টাল)
<b>ফারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>প্রাচীন জাপানে জনসংখ্যা, রোগ এবং ভূমি</i> (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ফারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>স্বর্গীয় যোদ্ধারা: ৫০০–১৩০০ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সামরিক শক্তির বিবর্তন</i> (কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ কাউন্সিল)
<b>ফ্রাইডে, কে.</b> ১৯৯২, <i>ভাড়াটে তলোয়ার: প্রাচীন জাপানে ব্যক্তিগত যোদ্ধা শক্তির উত্থান</i> (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>গ্র্যাপার্ড, এ. জি.</b> ১৯৯২, <i>দেবতাদের নিয়মনীতি: জাপানের ইতিহাসে কাসুগা উপাসনা বিশ্লেষণ</i> (বার্কলে: ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>হল, জন হুইটনি</b> ১৯৬৬, <i>জাপানে সরকার ও স্থানীয় ক্ষমতা, ৫০০–১৭০০: বিজেন প্রদেশের উপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা</i> (প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>হেম্পেল, আর.</b> ১৯৮৩, <i>জাপানের হেইয়ান সভ্যতা</i> (অক্সফোর্ড: ফাইডন)
<b>হার্স্ট, জি. ক্যামেরন</b> ১৯৭৬, <i>ইনসেই: দায়িত্বহীন সম্রাট ও শেষ হেইয়ান যুগের রাজনীতি, ১০৮৬–১১৮৫</i> (নিউ ইয়র্ক: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ইশি, আর.</b> ১৯৮০, <i>জাপানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাস</i> (টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>কর্নিকি, পি. এফ.</b> ১৯৯৮, <i>জাপানে বই: শুরু থেকে উনবিংশ শতক পর্যন্ত একটি সাংস্কৃতিক ইতিহাস</i> (লেইডেন: ব্রিল)
<b>মরিস, ইভান</b> ১৯৬৪, <i>উজ্জ্বল রাজপুত্রের জগৎ</i> (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>মোস্টো, জে. এস.</b> ২০০৪, <i>পাতাঝরা গৃহে: জাপানি দরবারি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত জীবনীমূলক ও আত্মজীবনীমূলক রচনা</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>পিগট, জে. আর.</b> (সম্পাদক) ২০০৬, <i>জাপানে রাজধানী ও গ্রামাঞ্চল, ৩০০–১১৮০: ইংরেজিতে উপস্থাপিত জাপানি ইতিহাসবিদদের ব্যাখ্যা</i> (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>অর্থের বিচ্ছিন্নতা: অষ্টম থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত চীনের সঙ্গে জাপানের সংমিশ্রণ</i> (প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>রাবিনোভিচ, জে. এন.</b> ১৯৮৬, <i>শোমোনকি: মাসাকাদোর বিদ্রোহের কাহিনি</i>, এমএন মনোগ্রাফ (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫(ক), <i>এন্নিনের দিনলিপি: ধর্মের খোঁজে চীনে তীর্থযাত্রার বিবরণ</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫(খ), <i>তাং চীনে এন্নিনের ভ্রমণ</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>সাকামোতো, টি.</b> ১৯৯১, <i>জাপানের ছয়টি জাতীয় ইতিহাস</i>, অনুবাদ: জে. এস. ব্রাউনলি (ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস; টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ভন ভারশুয়ার, সি.</b> ২০০৬, <i>ভয়ংকর সাগর পেরিয়ে: সপ্তম থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ও কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের বাণিজ্য</i>, অনুবাদ: কে. এল. হান্টার (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>ওয়ালেস, জে. আর.</b> ২০০৫, <i>আলোচনার বস্তু: হেইয়ান যুগের নারীদের স্মৃতিচারণ</i> (মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানি স্টাডিজ কেন্দ্র)
<b>উইলসন, ডব্লিউ. আর.</b> ১৯৭১, <i>হোগেন মনোগাতারি: হোগেন বিদ্রোহের কাহিনি</i> (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude>
{{BookCat}}
58kuy9108p7s9zq7lskv0h19dlvk29f
85584
85583
2025-07-03T07:27:37Z
Asikur.rahman25
11164
/* নারা */
85584
wikitext
text/x-wiki
==জাপান সম্পর্কিত বই==
যদি আপনি শুধু জাপানের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে এখানে কিছু ভালো বই রয়েছে। আরও পড়াশোনার জন্য উইকিপিডিয়াতে কিছু ভালো প্রবন্ধ আছে, যেগুলো একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।আপনি যদি সত্যিই জাপানের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হন, কিংবা নতুন একটি ভাষা শিখতে চান, তাহলে [[জাপানি|এখানে]] জাপানি ভাষার কিছু ভালো পাঠ রয়েছে। স্থাননামের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে চাইলে কানজি অক্ষরের মানে জানা একটু হলেও কাজে লাগতে পারে।আরও পড়াশোনার জন্য আমি আপনাকে উইকিবই এর কিছু অন্যান্য বই ঘুরে দেখার পরামর্শ দেব। এ বইগুলোর কিছুটা এই বইয়ের সঙ্গে মিলও আছে। যেমন [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] বিষয়ক বইটি যেখানে ইতিহাসের বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের অবস্থান আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
==ইয়ামাতো==
<B>অ্যালেন, সি</B> ২০০৩, 'দ্য এমপ্রেস জিংগু', <I>জাপান ফোরাম</I> ১৫ ৩ ৮১-৯৮ <br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, (টোকিও : সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৪, <I>দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিয়ো ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি</I> লন্ডন ইউনিভার্সিটি ডক্টরাল ডিসার্টেশন<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৯, <I>দ্য আর্লি হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হান, ডব্লিউ কে</B> ১৯৭০, <I>দ্য হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হাতাদা, তাকাহাশি</B> ১৯৬৯, <I>আ হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (সান্তা বারবারা: ক্লিও প্রেস)<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', <I>হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ২৯:১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', <I>জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ৩৩:২৫-৪৯ <br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', <I>মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা</I> ৩২:৩৬৫-৩৭৬ <br>
<B>কিম, সঙ-হো</B> ১৯৮৫, 'অরিজিনস অফ দ্য জাপানিজ পলিটি: আ টেক্সচুয়াল রিকনসিডারেশন অফ দ্য হর্স-রাইডার থিওরি', <I>কোরিয়া জার্নাল</I> ২৫.১২:৪-২৩<br>
<B>কার্কল্যান্ড, জে. আর.</B> ১৯৮১, 'দ্য হর্সরাইডার্স ইন কোরিয়া: আ ক্রিটিকাল ইভালুয়েশন অফ আ হিস্টরিকাল থিওরি', <I>কোরিয়ান স্টাডিজ</I> ৫:১০৯-১২৮ <br>
<B>কিতো, কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৯: ১-১৩ <br>
<B>মুরায়ামা, এস ও মিলার, আর. এ.</B> ১৯৭৯, 'দ্য ইনারিয়ামা টুমুলাস সোর্ড ইনস্ক্রিপশন', <I>জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ</I> ৫:৪০৫-৪৩৮ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯২, 'দ্য কোফুন পিরিয়ড অ্যান্ড স্টেট ফরমেশন', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৩:৬৪-৮৬ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯০, 'চিফলি লিনিয়েজেস ইন কোফুন পিরিয়ড জাপান: পলিটিকাল রিলেশনস বিটুইন সেন্টার অ্যান্ড রিজিয়ন', <I>অ্যান্টিকুইটি</I> ৬৪:৯২৩-৯৩১ <br>
<B>ত্সুনোডা, আর. ও গুডরিচ, এল. সি.</B> ১৯৫১, <I>জাপান ইন দ্য চাইনিজ ডাইনাস্টিক হিস্টরিজ</I> (পারকিন্স, সাউথ পাসাডিনা)<br>
<B>ভারগো, লার্স</B> ১৯৮২, <I>সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কন্ডিশনস ফর দ্য ফরমেশন অফ দ্য আর্লি জাপানিজ স্টেট</I> (স্টকহোম: স্টকহোম ইউনিভার্সিটি জাপানোলজিকাল স্টাডিজ ১)<br>
<B>আনসেলমো, ভালেরিও</B> ১৯৭৪, "http://www.corea.it/kudara_1.htm" দ্য এটিমোলজি অফ কুদারা
==নারা==
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা মনোগ্রাফস, টোকিও<br>
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৯৭, <I>রেকর্ডস অফ উইন্ড অ্যান্ড আর্থ: আ ট্রান্সলেশন অফ ফুডোকি, উইথ ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড কমেন্টারিজ</I>, অ্যাসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ, অ্যান আরবার, মিশিগান<br>
<B>আসাকাওয়া কে.</B> ১৯০৩, <I>দ্য আর্লি ইনস্টিটিউশনাল লাইফ অফ জাপান: আ স্টাডি ইন দ্য রিফর্ম অফ ৬৪৫ এডি</I>, শুয়েইশা, টোকিও<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৮৬, 'ফরেন থ্রেট অ্যান্ড ডোমেস্টিক রিফর্ম: দ্য ইমারজেন্স অফ দ্য রিৎসুরিও স্টেট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪১: ১৯৯-২১৯<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৯৩, 'প্রোভিন্সিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন আর্লি জাপান: ফ্রম রিৎসুরিও কোক্কা টু ওচো কোক্কা', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৩: ১০৩-১৩৪<br>
<B>বিসলি, ডাব্লিউ. জি. এবং পুলিব্ল্যাঙ্ক, ই. জি.</B> ১৯৬১, <I>হিস্টোরিয়ানস অফ চায়না অ্যান্ড জাপান</I>, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, অক্সফোর্ড<br>
<B>বেন্ডার, আর.</B> ১৯৭৯, 'দ্য হাচিমান কাল্ট অ্যান্ড দ্য ডোক্যো ইনসিডেন্ট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৩৪: ১২৫-১৫৩<br>
<B>বেন্টলি, জে. আর.</B> ২০০২, <I>হিস্টরিওগ্রাফিক্যাল ট্রেন্ডস ইন আর্লি জাপান</I>, এডউইন মেলেন প্রেস<br>
<B>ব্রাউনলি, জে. এস.</B> ১৯৯১, <I>পলিটিক্যাল থট ইন জাপানিজ হিস্টোরিক্যাল রাইটিং: ফ্রম কোজিকি (৭১২) টু টোকুশি ইয়োরন (১৭১২)</I>, উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ওয়াটারলু, অন্টারিও<br>
<B>কোলড্রেক, ডাব্লিউ. এইচ.</B> ১৯৯১, 'সিটি প্ল্যানিং অ্যান্ড প্যালেস আর্কিটেকচার ইন দ্য ক্রিয়েশন অফ দ্য নারা পলিটিক্যাল অর্ডার: দ্য অ্যাকোমোডেশন অফ প্লেস অ্যান্ড পারপাস অ্যাট হেইজো-কিও', ইএইচ : ৩৭:৫৪<br>
<B>কোমো, এম.</B> ২০০৭, 'হর্সেস, ড্রাগনস, অ্যান্ড ডিজিজ ইন নারা জাপান', জেজেআরএস ৩৪: ৩৯৫-৪১৫<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৮৫, <I>পপুলেশন, ডিজিজ, অ্যান্ড ল্যান্ড ইন আর্লি জাপান</I>, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯২, <I>হেভেনলি ওয়ারিয়র্স: দ্য এভল্যুশন অফ জাপান'স মিলিটারি, ৫০০-১৩০০</I>, কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯৮, <I>সেক্রেড টেক্সটস অ্যান্ড বিউরিড ট্রেজারস: ইস্যুস ইন দ্য হিস্টোরিক্যাল আর্কিওলজি অফ এনসিয়েন্ট জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস, হনোলুলু<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ২০০৭, 'পিসেস ইন আ পাজল: চেইঞ্জিং অ্যাপ্রোচেস টু দ্য শোসইন ডকুমেন্টস', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৬২: ৩৯৭-৪৩৫<br>
<B>ফ্রাইডে, কে. এফ.</B> ১৯৯৭, 'পুশিং বিয়ন্ড দ্য পেইল: দ্য যামাতো কনকুয়েস্ট অফ দ্য এমিশি অ্যান্ড নর্দার্ন জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২৩: ১-২৪<br>
<B>ফুনকে, এম. সি.</B> ১৯৯৪, 'হিতাচি নো কুনি ফুডোকি', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৯: ১-২৯<br>
<B>হল, জন ডব্লিউ.</B> ১৯৬৬, <I>গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল পাওয়ার ইন জাপান, ৫০০-১৭০০. আ স্টাডি বেসড অন বিজেন প্রভিন্স</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টেট ইন আর্লি ইম্পেরিয়াল চায়না অ্যান্ড জাপান', স্টাডিজ ইন চাইনিজ হিস্ট্রি ৫: ৭-৪৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'রিৎসুরিও কনফিউশিয়ানিজম', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৭: ৫৪৩-৫৭৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৯, 'ট্রেড-বুদ্ধিজম: মেরিটাইম ট্রেড, ইমিগ্রেশন, অ্যান্ড দ্য বুদ্ধিস্ট ল্যান্ডফল ইন আর্লি জাপান', জেএওএস ১১৯: ২৮০-২৯২<br>
<B>ইনোউয়ে মিতসুসাদা</B> ১৯৭৭, 'দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম ইন জাপান', এএ ৩১: ৮৩-১১২<br>
<B>ইশিগামি ই.</B> ১৯৯৫, 'স্টেট অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ১৪-৩৮<br>
<B>ইশি আর.</B> ১৯৮০, <I>আ হিস্ট্রি অফ পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনস ইন জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও প্রেস, টোকিও<br>
<B>কামস্ট্রা, জে. এইচ.</B> ১৯৬৭, <I>এনকাউন্টার অফ সিঙ্ক্রেটিজম; দ্য ইনিশিয়াল গ্রোথ অফ জাপানিজ বুদ্ধিজম</I>, ই. জে. ব্রিল, লাইডেন<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ২৯: ১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৩৩: ২৫-৪৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>কিতো কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', এএ ৬৯: ১-১৩<br>
<B>কোর্নিকি, পি. এফ. এবং ম্যাকমুলেন, আই. জে.</B> ১৯৯৬, <I>রিলিজিয়ন ইন জাপান: অ্যারোস টু হেভেন অ্যান্ড আর্থ</I>, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ<br>
<B>কুরোডা টি.</B> ১৯৮১, 'শিন্তো ইন দ্য হিস্ট্রি অফ জাপানিজ রিলিজিয়ন', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৪, <I>এনসিয়েন্ট জাপানিজ নোবিলিটি: দ্য কাবানে র্যাঙ্কিং সিস্টেম</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, বার্কলি<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৮, <I>জাপান'স ফার্স্ট ব্যুরোক্রেসি</I>, ইস্ট এশিয়ান পেপার্স নাম্বার ১৯, করনেল ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<B>ওবায়াশি টি.</B> ১৯৮৫, 'উজি সোসাইটি অ্যান্ড ইয়ে সোসাইটি ফ্রম প্রিহিস্ট্রি টু মিডিয়েভাল টাইমস', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১১: ৩-২৭<br>
<B>ওকাদা এস.</B> ১৯৮৩, 'দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ স্টেট রিচুয়াল ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৫১: ২২-৪১<br>
<B>পিয়ারসন, আর. জে.</B> ১৯৭৬, 'দ্য কনট্রিবিউশন অফ আর্কিওলজি টু জাপানিজ স্টাডিজ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২: ৩০৫-৩৩৩<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৮৯, 'সেক্রেড কিংশিপ অ্যান্ড কনফেডারেসি ইন আর্লি ইজুমো', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৪: ৪৫-৭৪<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯০, 'মোক্কান: উডেন ডকুমেন্টস ফ্রম দ্য নারা পিরিয়ড', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৫: ৪৪৯-৪৭০<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯৭, <I>দ্য ইমারজেন্স অফ জাপানিজ কিংশিপ</I>, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পালো অল্টো<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ২০০৬, <I>ক্যাপিটাল অ্যান্ড কান্ট্রিসাইড ইন জাপান, ৩০০-১১৮০: জাপানিজ হিস্টোরিয়ানস ইন্টারপ্রেটেড ইন ইংলিশ</I>, করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ<br>
<B>পোলাক, ডি.</B> ১৯৮৬, <I>দ্য ফ্র্যাকচার অফ মিনিং: জাপান'স সিনথেসিস অফ চায়না ফ্রম দ্য এইথ থ্রু দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরিজ</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>সাকামোটো টি.</B> ১৯৯১, <I>দ্য সিক্স ন্যাশনাল হিস্টরিজ অফ জাপান, ট্রান্সলেটেড বাই জে. এস. ব্রাউনলি</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রেস, ভ্যানকুভার<br>
<B>সাতো এম.</B> ১৯৯৫, 'দ্য উডেন ট্যাবলেটস (মোক্কান) অফ এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ৮৪-১১৭<br>
<B>তেকেউচি রিজো</B> ১৯৮৮, 'ডকুমেন্টস অফ লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন দ্য নারা পিরিয়ড. দ্য হাউসহোল্ড রেজিস্টারস অ্যান্ড দ্য ট্যাক্স রেজিস্টারস', ইন এ. ফোর্তে <I>তাং চায়না অ্যান্ড বিয়ন্ড: স্টাডিজ অন ইস্ট এশিয়া ফ্রম দ্য সেভেনথ টু দ্য টেন্থ সেঞ্চুরি</I>, ইস্টিতুতো ইটালিয়ানো দি কালচুরা, কিওটো<br>
<B>তামুরা ই.</B> ১৯৮৫, 'জাপান অ্যান্ড দ্য ইস্টওয়ার্ড পারমিয়েশন অফ বুদ্ধিজম', এএ ৪৭: ১-৩০<br>
<B>টোবি, আর. পি.</B> ১৯৯৩, 'হোয়াই লিভ নারা? কাম্মু অ্যান্ড দ্য ট্রান্সফার অফ দ্য ক্যাপিটাল', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪০: ৩৩১-৩৪৭<br>
<B>ৎসুবোই কে.</B> ১৯৯২, 'দ্য এক্সকাভেশন অফ এনসিয়েন্ট পার্লেন্সেস অ্যান্ড ক্যাপিটালস', এএ ৬৩: ৮৭-৯৮<br>
<B>ৎসুবোই কে. এবং তানাকা এম.</B> ১৯৯১, <I>দ্য হিস্টোরিক সিটি অফ নারা: আন আর্কিওলজিকাল অ্যাপ্রোচ</I>, দ্য সেন্টার ফর ইস্ট এশিয়ান কালচারাল স্টাডিজ, টোকিও<br>
<B>ৎসুরুমি ই. পি.</B> ১৯৮২, 'দ্য মেইল প্রেজেন্ট বনাম দ্য ফিমেল পাস্ট: হিস্টোরিয়ানস অ্যান্ড জাপান'স এনসিয়েন্ট ফিমেল এমপ্রেস', বিসিএএস ১৪.৪: ৭১-৭৫<br>
<B>ওয়াদা এ.</B> ১৯৯৫, 'দ্য অরিজিনস অফ ইসে শ্রাইন', এএ ৬৯: ৬৩-৮৩<br>
<B>ইাসুদা ওয়াই.</B> ১৯৭৬, 'দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম: হাইপোথেসিস অন ইকনমিক অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল চেইঞ্জ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ, ১: ৩-৩৭<br>
==প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ==
হেইয়ান যুগ নিয়ে বাংলায় যেমন তেমন, ইংরেজিতেও লেখা উপাদান অত্যন্ত অপ্রতুল, যা সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও এই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছে, সেগুলো মূলত অভিজাত শ্রেণির জীবন বোঝার প্রাথমিক সূত্র হিসেবে কাজ করে। প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ নিয়ে গবেষণার সুযোগ আরও সীমিত। কারণ এই সময়কার উৎস খুবই কম। ফলে ইতিহাসবিদদের জন্য অনুসন্ধানের সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ। মধ্য হেইয়ান যুগ এবং তার পর থেকে ডায়েরি ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক লেখালেখি পাওয়া যায়। তবে এই লেখাগুলোও মূলত এই আলোচ্য সময়ের একেবারে শেষদিকে শুরু হয়।প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুই নির্ভর করে বেঁচে থাকা সরকারি দলিলপত্র থেকে তথ্য টেনে আনার ওপর।
<b>আডলফসন, এম., কামেনস, ই, এবং মাতসুমোতো, এস</b> (সম্পাদক) ২০০৭, <i>হেইয়ান জাপান: কেন্দ্র ও প্রান্ত</i> (হোনোলুলু: হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯২৯, <i>ইরিকির দলিলপত্র</i> (ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা; পুনর্মুদ্রিত: গ্রিনউড প্রেস, কানেকটিকাট, ১৯৭৪)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯৬৫, <i>মধ্যযুগীয় জাপানে ভূমি ও সমাজ</i> (জাপান বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি, টোকিও)
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ২০০৫, <i>জাপানের প্রবেশদ্বার: হাকাতা—যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে, ৫০০–১৩০০</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>বায়ালক, ডি. টি.</b> ২০০৭, <i>বিচিত্র স্থান, গোপন ইতিহাস: বর্ণনা, আচার ও রাজকীয় কর্তৃত্ব—"জাপানের ইতিহাস" থেকে "হেইক গল্প" পর্যন্ত</i> (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>বক, এফ. জি.</b> ১৯৭০–৭২, <i>এঙ্গি-শিকি: এঙ্গি যুগের প্রক্রিয়া</i>, ২ খণ্ড, এমএন মনোগ্রাফ (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, টোকিও)
<b>বোর্গেন, আর. এস.</b> ১৯৮৬, <i>সুগাওয়ারা নো মিচিজানে ও প্রারম্ভিক হেইয়ান দরবার</i> (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>আডলফসন, এম. এস.</b> ২০০৬, <i>বুদ্ধের দাঁত ও নখর: জাপানের ইতিহাসে সন্ন্যাসী যোদ্ধা ও সোহেই</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>জাপানি ঐতিহাসিক রচনায় রাজনৈতিক চিন্তা: কোজিকি (৭১২) থেকে তোকুশি ইয়োরন (১৭১২) পর্যন্ত</i> (ওয়াটারলু, অন্টারিও: উইলফ্রিড লরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>কার্টার, এস. ডি.</b> ১৯৯৬, <i>পুনরায় রাজপ্রতিনিধি: পণ্ডিত-রাজনীতিক ইচিজো কানেওশির জীবন</i> (অ্যান আরবার: মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানি স্টাডিজ কেন্দ্র)
<b>কব্বিং, এ.</b> ২০০৯, <i>কিউশু: জাপানের প্রবেশদ্বার</i> (ফোকস্টোন: গ্লোবাল ওরিয়েন্টাল)
<b>ফারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>প্রাচীন জাপানে জনসংখ্যা, রোগ এবং ভূমি</i> (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ফারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>স্বর্গীয় যোদ্ধারা: ৫০০–১৩০০ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সামরিক শক্তির বিবর্তন</i> (কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ কাউন্সিল)
<b>ফ্রাইডে, কে.</b> ১৯৯২, <i>ভাড়াটে তলোয়ার: প্রাচীন জাপানে ব্যক্তিগত যোদ্ধা শক্তির উত্থান</i> (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>গ্র্যাপার্ড, এ. জি.</b> ১৯৯২, <i>দেবতাদের নিয়মনীতি: জাপানের ইতিহাসে কাসুগা উপাসনা বিশ্লেষণ</i> (বার্কলে: ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>হল, জন হুইটনি</b> ১৯৬৬, <i>জাপানে সরকার ও স্থানীয় ক্ষমতা, ৫০০–১৭০০: বিজেন প্রদেশের উপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা</i> (প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>হেম্পেল, আর.</b> ১৯৮৩, <i>জাপানের হেইয়ান সভ্যতা</i> (অক্সফোর্ড: ফাইডন)
<b>হার্স্ট, জি. ক্যামেরন</b> ১৯৭৬, <i>ইনসেই: দায়িত্বহীন সম্রাট ও শেষ হেইয়ান যুগের রাজনীতি, ১০৮৬–১১৮৫</i> (নিউ ইয়র্ক: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ইশি, আর.</b> ১৯৮০, <i>জাপানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাস</i> (টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>কর্নিকি, পি. এফ.</b> ১৯৯৮, <i>জাপানে বই: শুরু থেকে উনবিংশ শতক পর্যন্ত একটি সাংস্কৃতিক ইতিহাস</i> (লেইডেন: ব্রিল)
<b>মরিস, ইভান</b> ১৯৬৪, <i>উজ্জ্বল রাজপুত্রের জগৎ</i> (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>মোস্টো, জে. এস.</b> ২০০৪, <i>পাতাঝরা গৃহে: জাপানি দরবারি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত জীবনীমূলক ও আত্মজীবনীমূলক রচনা</i> (হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>পিগট, জে. আর.</b> (সম্পাদক) ২০০৬, <i>জাপানে রাজধানী ও গ্রামাঞ্চল, ৩০০–১১৮০: ইংরেজিতে উপস্থাপিত জাপানি ইতিহাসবিদদের ব্যাখ্যা</i> (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>অর্থের বিচ্ছিন্নতা: অষ্টম থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত চীনের সঙ্গে জাপানের সংমিশ্রণ</i> (প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>রাবিনোভিচ, জে. এন.</b> ১৯৮৬, <i>শোমোনকি: মাসাকাদোর বিদ্রোহের কাহিনি</i>, এমএন মনোগ্রাফ (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫(ক), <i>এন্নিনের দিনলিপি: ধর্মের খোঁজে চীনে তীর্থযাত্রার বিবরণ</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫(খ), <i>তাং চীনে এন্নিনের ভ্রমণ</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>সাকামোতো, টি.</b> ১৯৯১, <i>জাপানের ছয়টি জাতীয় ইতিহাস</i>, অনুবাদ: জে. এস. ব্রাউনলি (ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস; টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<b>ভন ভারশুয়ার, সি.</b> ২০০৬, <i>ভয়ংকর সাগর পেরিয়ে: সপ্তম থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ও কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের বাণিজ্য</i>, অনুবাদ: কে. এল. হান্টার (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>ওয়ালেস, জে. আর.</b> ২০০৫, <i>আলোচনার বস্তু: হেইয়ান যুগের নারীদের স্মৃতিচারণ</i> (মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানি স্টাডিজ কেন্দ্র)
<b>উইলসন, ডব্লিউ. আর.</b> ১৯৭১, <i>হোগেন মনোগাতারি: হোগেন বিদ্রোহের কাহিনি</i> (সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
<noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude>
{{BookCat}}
mp5ym3bafmy8dfns61axxo9040ekgdr
85585
85584
2025-07-03T07:32:41Z
Asikur.rahman25
11164
/* প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ */
85585
wikitext
text/x-wiki
==জাপান সম্পর্কিত বই==
যদি আপনি শুধু জাপানের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে এখানে কিছু ভালো বই রয়েছে। আরও পড়াশোনার জন্য উইকিপিডিয়াতে কিছু ভালো প্রবন্ধ আছে, যেগুলো একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।আপনি যদি সত্যিই জাপানের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হন, কিংবা নতুন একটি ভাষা শিখতে চান, তাহলে [[জাপানি|এখানে]] জাপানি ভাষার কিছু ভালো পাঠ রয়েছে। স্থাননামের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে চাইলে কানজি অক্ষরের মানে জানা একটু হলেও কাজে লাগতে পারে।আরও পড়াশোনার জন্য আমি আপনাকে উইকিবই এর কিছু অন্যান্য বই ঘুরে দেখার পরামর্শ দেব। এ বইগুলোর কিছুটা এই বইয়ের সঙ্গে মিলও আছে। যেমন [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] বিষয়ক বইটি যেখানে ইতিহাসের বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের অবস্থান আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
==ইয়ামাতো==
<B>অ্যালেন, সি</B> ২০০৩, 'দ্য এমপ্রেস জিংগু', <I>জাপান ফোরাম</I> ১৫ ৩ ৮১-৯৮ <br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, (টোকিও : সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৪, <I>দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিয়ো ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি</I> লন্ডন ইউনিভার্সিটি ডক্টরাল ডিসার্টেশন<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৯, <I>দ্য আর্লি হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হান, ডব্লিউ কে</B> ১৯৭০, <I>দ্য হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হাতাদা, তাকাহাশি</B> ১৯৬৯, <I>আ হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (সান্তা বারবারা: ক্লিও প্রেস)<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', <I>হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ২৯:১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', <I>জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ৩৩:২৫-৪৯ <br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', <I>মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা</I> ৩২:৩৬৫-৩৭৬ <br>
<B>কিম, সঙ-হো</B> ১৯৮৫, 'অরিজিনস অফ দ্য জাপানিজ পলিটি: আ টেক্সচুয়াল রিকনসিডারেশন অফ দ্য হর্স-রাইডার থিওরি', <I>কোরিয়া জার্নাল</I> ২৫.১২:৪-২৩<br>
<B>কার্কল্যান্ড, জে. আর.</B> ১৯৮১, 'দ্য হর্সরাইডার্স ইন কোরিয়া: আ ক্রিটিকাল ইভালুয়েশন অফ আ হিস্টরিকাল থিওরি', <I>কোরিয়ান স্টাডিজ</I> ৫:১০৯-১২৮ <br>
<B>কিতো, কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৯: ১-১৩ <br>
<B>মুরায়ামা, এস ও মিলার, আর. এ.</B> ১৯৭৯, 'দ্য ইনারিয়ামা টুমুলাস সোর্ড ইনস্ক্রিপশন', <I>জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ</I> ৫:৪০৫-৪৩৮ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯২, 'দ্য কোফুন পিরিয়ড অ্যান্ড স্টেট ফরমেশন', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৩:৬৪-৮৬ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯০, 'চিফলি লিনিয়েজেস ইন কোফুন পিরিয়ড জাপান: পলিটিকাল রিলেশনস বিটুইন সেন্টার অ্যান্ড রিজিয়ন', <I>অ্যান্টিকুইটি</I> ৬৪:৯২৩-৯৩১ <br>
<B>ত্সুনোডা, আর. ও গুডরিচ, এল. সি.</B> ১৯৫১, <I>জাপান ইন দ্য চাইনিজ ডাইনাস্টিক হিস্টরিজ</I> (পারকিন্স, সাউথ পাসাডিনা)<br>
<B>ভারগো, লার্স</B> ১৯৮২, <I>সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কন্ডিশনস ফর দ্য ফরমেশন অফ দ্য আর্লি জাপানিজ স্টেট</I> (স্টকহোম: স্টকহোম ইউনিভার্সিটি জাপানোলজিকাল স্টাডিজ ১)<br>
<B>আনসেলমো, ভালেরিও</B> ১৯৭৪, "http://www.corea.it/kudara_1.htm" দ্য এটিমোলজি অফ কুদারা
==নারা==
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা মনোগ্রাফস, টোকিও<br>
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৯৭, <I>রেকর্ডস অফ উইন্ড অ্যান্ড আর্থ: আ ট্রান্সলেশন অফ ফুডোকি, উইথ ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড কমেন্টারিজ</I>, অ্যাসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ, অ্যান আরবার, মিশিগান<br>
<B>আসাকাওয়া কে.</B> ১৯০৩, <I>দ্য আর্লি ইনস্টিটিউশনাল লাইফ অফ জাপান: আ স্টাডি ইন দ্য রিফর্ম অফ ৬৪৫ এডি</I>, শুয়েইশা, টোকিও<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৮৬, 'ফরেন থ্রেট অ্যান্ড ডোমেস্টিক রিফর্ম: দ্য ইমারজেন্স অফ দ্য রিৎসুরিও স্টেট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪১: ১৯৯-২১৯<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৯৩, 'প্রোভিন্সিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন আর্লি জাপান: ফ্রম রিৎসুরিও কোক্কা টু ওচো কোক্কা', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৩: ১০৩-১৩৪<br>
<B>বিসলি, ডাব্লিউ. জি. এবং পুলিব্ল্যাঙ্ক, ই. জি.</B> ১৯৬১, <I>হিস্টোরিয়ানস অফ চায়না অ্যান্ড জাপান</I>, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, অক্সফোর্ড<br>
<B>বেন্ডার, আর.</B> ১৯৭৯, 'দ্য হাচিমান কাল্ট অ্যান্ড দ্য ডোক্যো ইনসিডেন্ট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৩৪: ১২৫-১৫৩<br>
<B>বেন্টলি, জে. আর.</B> ২০০২, <I>হিস্টরিওগ্রাফিক্যাল ট্রেন্ডস ইন আর্লি জাপান</I>, এডউইন মেলেন প্রেস<br>
<B>ব্রাউনলি, জে. এস.</B> ১৯৯১, <I>পলিটিক্যাল থট ইন জাপানিজ হিস্টোরিক্যাল রাইটিং: ফ্রম কোজিকি (৭১২) টু টোকুশি ইয়োরন (১৭১২)</I>, উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ওয়াটারলু, অন্টারিও<br>
<B>কোলড্রেক, ডাব্লিউ. এইচ.</B> ১৯৯১, 'সিটি প্ল্যানিং অ্যান্ড প্যালেস আর্কিটেকচার ইন দ্য ক্রিয়েশন অফ দ্য নারা পলিটিক্যাল অর্ডার: দ্য অ্যাকোমোডেশন অফ প্লেস অ্যান্ড পারপাস অ্যাট হেইজো-কিও', ইএইচ : ৩৭:৫৪<br>
<B>কোমো, এম.</B> ২০০৭, 'হর্সেস, ড্রাগনস, অ্যান্ড ডিজিজ ইন নারা জাপান', জেজেআরএস ৩৪: ৩৯৫-৪১৫<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৮৫, <I>পপুলেশন, ডিজিজ, অ্যান্ড ল্যান্ড ইন আর্লি জাপান</I>, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯২, <I>হেভেনলি ওয়ারিয়র্স: দ্য এভল্যুশন অফ জাপান'স মিলিটারি, ৫০০-১৩০০</I>, কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯৮, <I>সেক্রেড টেক্সটস অ্যান্ড বিউরিড ট্রেজারস: ইস্যুস ইন দ্য হিস্টোরিক্যাল আর্কিওলজি অফ এনসিয়েন্ট জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস, হনোলুলু<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ২০০৭, 'পিসেস ইন আ পাজল: চেইঞ্জিং অ্যাপ্রোচেস টু দ্য শোসইন ডকুমেন্টস', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৬২: ৩৯৭-৪৩৫<br>
<B>ফ্রাইডে, কে. এফ.</B> ১৯৯৭, 'পুশিং বিয়ন্ড দ্য পেইল: দ্য যামাতো কনকুয়েস্ট অফ দ্য এমিশি অ্যান্ড নর্দার্ন জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২৩: ১-২৪<br>
<B>ফুনকে, এম. সি.</B> ১৯৯৪, 'হিতাচি নো কুনি ফুডোকি', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৯: ১-২৯<br>
<B>হল, জন ডব্লিউ.</B> ১৯৬৬, <I>গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল পাওয়ার ইন জাপান, ৫০০-১৭০০. আ স্টাডি বেসড অন বিজেন প্রভিন্স</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টেট ইন আর্লি ইম্পেরিয়াল চায়না অ্যান্ড জাপান', স্টাডিজ ইন চাইনিজ হিস্ট্রি ৫: ৭-৪৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'রিৎসুরিও কনফিউশিয়ানিজম', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৭: ৫৪৩-৫৭৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৯, 'ট্রেড-বুদ্ধিজম: মেরিটাইম ট্রেড, ইমিগ্রেশন, অ্যান্ড দ্য বুদ্ধিস্ট ল্যান্ডফল ইন আর্লি জাপান', জেএওএস ১১৯: ২৮০-২৯২<br>
<B>ইনোউয়ে মিতসুসাদা</B> ১৯৭৭, 'দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম ইন জাপান', এএ ৩১: ৮৩-১১২<br>
<B>ইশিগামি ই.</B> ১৯৯৫, 'স্টেট অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ১৪-৩৮<br>
<B>ইশি আর.</B> ১৯৮০, <I>আ হিস্ট্রি অফ পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনস ইন জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও প্রেস, টোকিও<br>
<B>কামস্ট্রা, জে. এইচ.</B> ১৯৬৭, <I>এনকাউন্টার অফ সিঙ্ক্রেটিজম; দ্য ইনিশিয়াল গ্রোথ অফ জাপানিজ বুদ্ধিজম</I>, ই. জে. ব্রিল, লাইডেন<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ২৯: ১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৩৩: ২৫-৪৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>কিতো কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', এএ ৬৯: ১-১৩<br>
<B>কোর্নিকি, পি. এফ. এবং ম্যাকমুলেন, আই. জে.</B> ১৯৯৬, <I>রিলিজিয়ন ইন জাপান: অ্যারোস টু হেভেন অ্যান্ড আর্থ</I>, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ<br>
<B>কুরোডা টি.</B> ১৯৮১, 'শিন্তো ইন দ্য হিস্ট্রি অফ জাপানিজ রিলিজিয়ন', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৪, <I>এনসিয়েন্ট জাপানিজ নোবিলিটি: দ্য কাবানে র্যাঙ্কিং সিস্টেম</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, বার্কলি<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৮, <I>জাপান'স ফার্স্ট ব্যুরোক্রেসি</I>, ইস্ট এশিয়ান পেপার্স নাম্বার ১৯, করনেল ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<B>ওবায়াশি টি.</B> ১৯৮৫, 'উজি সোসাইটি অ্যান্ড ইয়ে সোসাইটি ফ্রম প্রিহিস্ট্রি টু মিডিয়েভাল টাইমস', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১১: ৩-২৭<br>
<B>ওকাদা এস.</B> ১৯৮৩, 'দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ স্টেট রিচুয়াল ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৫১: ২২-৪১<br>
<B>পিয়ারসন, আর. জে.</B> ১৯৭৬, 'দ্য কনট্রিবিউশন অফ আর্কিওলজি টু জাপানিজ স্টাডিজ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২: ৩০৫-৩৩৩<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৮৯, 'সেক্রেড কিংশিপ অ্যান্ড কনফেডারেসি ইন আর্লি ইজুমো', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৪: ৪৫-৭৪<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯০, 'মোক্কান: উডেন ডকুমেন্টস ফ্রম দ্য নারা পিরিয়ড', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৫: ৪৪৯-৪৭০<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯৭, <I>দ্য ইমারজেন্স অফ জাপানিজ কিংশিপ</I>, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পালো অল্টো<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ২০০৬, <I>ক্যাপিটাল অ্যান্ড কান্ট্রিসাইড ইন জাপান, ৩০০-১১৮০: জাপানিজ হিস্টোরিয়ানস ইন্টারপ্রেটেড ইন ইংলিশ</I>, করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ<br>
<B>পোলাক, ডি.</B> ১৯৮৬, <I>দ্য ফ্র্যাকচার অফ মিনিং: জাপান'স সিনথেসিস অফ চায়না ফ্রম দ্য এইথ থ্রু দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরিজ</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>সাকামোটো টি.</B> ১৯৯১, <I>দ্য সিক্স ন্যাশনাল হিস্টরিজ অফ জাপান, ট্রান্সলেটেড বাই জে. এস. ব্রাউনলি</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রেস, ভ্যানকুভার<br>
<B>সাতো এম.</B> ১৯৯৫, 'দ্য উডেন ট্যাবলেটস (মোক্কান) অফ এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ৮৪-১১৭<br>
<B>তেকেউচি রিজো</B> ১৯৮৮, 'ডকুমেন্টস অফ লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন দ্য নারা পিরিয়ড. দ্য হাউসহোল্ড রেজিস্টারস অ্যান্ড দ্য ট্যাক্স রেজিস্টারস', ইন এ. ফোর্তে <I>তাং চায়না অ্যান্ড বিয়ন্ড: স্টাডিজ অন ইস্ট এশিয়া ফ্রম দ্য সেভেনথ টু দ্য টেন্থ সেঞ্চুরি</I>, ইস্টিতুতো ইটালিয়ানো দি কালচুরা, কিওটো<br>
<B>তামুরা ই.</B> ১৯৮৫, 'জাপান অ্যান্ড দ্য ইস্টওয়ার্ড পারমিয়েশন অফ বুদ্ধিজম', এএ ৪৭: ১-৩০<br>
<B>টোবি, আর. পি.</B> ১৯৯৩, 'হোয়াই লিভ নারা? কাম্মু অ্যান্ড দ্য ট্রান্সফার অফ দ্য ক্যাপিটাল', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪০: ৩৩১-৩৪৭<br>
<B>ৎসুবোই কে.</B> ১৯৯২, 'দ্য এক্সকাভেশন অফ এনসিয়েন্ট পার্লেন্সেস অ্যান্ড ক্যাপিটালস', এএ ৬৩: ৮৭-৯৮<br>
<B>ৎসুবোই কে. এবং তানাকা এম.</B> ১৯৯১, <I>দ্য হিস্টোরিক সিটি অফ নারা: আন আর্কিওলজিকাল অ্যাপ্রোচ</I>, দ্য সেন্টার ফর ইস্ট এশিয়ান কালচারাল স্টাডিজ, টোকিও<br>
<B>ৎসুরুমি ই. পি.</B> ১৯৮২, 'দ্য মেইল প্রেজেন্ট বনাম দ্য ফিমেল পাস্ট: হিস্টোরিয়ানস অ্যান্ড জাপান'স এনসিয়েন্ট ফিমেল এমপ্রেস', বিসিএএস ১৪.৪: ৭১-৭৫<br>
<B>ওয়াদা এ.</B> ১৯৯৫, 'দ্য অরিজিনস অফ ইসে শ্রাইন', এএ ৬৯: ৬৩-৮৩<br>
<B>ইাসুদা ওয়াই.</B> ১৯৭৬, 'দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম: হাইপোথেসিস অন ইকনমিক অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল চেইঞ্জ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ, ১: ৩-৩৭<br>
==প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ==
হেইয়ান যুগ নিয়ে বাংলায় যেমন তেমন, ইংরেজিতেও লেখা উপাদান অত্যন্ত অপ্রতুল, যা সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও এই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছে, সেগুলো মূলত অভিজাত শ্রেণির জীবন বোঝার প্রাথমিক সূত্র হিসেবে কাজ করে। প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ নিয়ে গবেষণার সুযোগ আরও সীমিত। কারণ এই সময়কার উৎস খুবই কম। ফলে ইতিহাসবিদদের জন্য অনুসন্ধানের সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ। মধ্য হেইয়ান যুগ এবং তার পর থেকে ডায়েরি ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক লেখালেখি পাওয়া যায়। তবে এই লেখাগুলোও মূলত এই আলোচ্য সময়ের একেবারে শেষদিকে শুরু হয়।প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুই নির্ভর করে বেঁচে থাকা সরকারি দলিলপত্র থেকে তথ্য টেনে আনার ওপর।
<b>আডলফসন, এম., কামেনস, ই, এবং মাতসুমোতো, এস</b> (সম্পা.) ২০০৭, <i>হেইয়ান জাপান, সেন্টারস অ্যান্ড পেরিফেরিজ</i> (হনোলুলু: হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯২৯, <i>দ্য ডকুমেন্টস অফ ইরিকি</i> (ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস; পুনর্মুদ্রণ গ্রিনউড প্রেস, কানেকটিকাট, ১৯৭৪)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯৬৫, <i>ল্যান্ড অ্যান্ড সোসাইটি ইন মিডিয়েভাল জাপান</i> (জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ সায়েন্স, টোকিও)
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ২০০৫, <i>গেটওয়ে টু জাপান: হাকাতা ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস, ৫০০-১৩০০</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>বিয়ালক, ডি. টি.</b> ২০০৭, <i>একসেন্ট্রিক স্পেসেস, হিডেন হিস্টরিজ: ন্যারেটিভ, রিচুয়াল, অ্যান্ড রয়্যাল অথরিটি ফ্রম দ্য ক্রনিকলস অফ জাপান টু দ্য টেইল অফ দ্য হেইকে</i> (স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>বক, এফ. জি.</b> ১৯৭০-৭২, <i>দ্য এঙ্গি-শিকি: প্রসিডিউরস অফ দ্য এঙ্গি এরা</i>, ২ খণ্ড, এমএন মনোগ্রাফস (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি, টোকিও)
<b>বোর্গেন, আর. এস.</b> ১৯৮৬, <i>সুগাওয়ারা নো মিচিজানে অ্যান্ড দ্য আর্লি হেইয়ান কোর্ট</i> (হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>আডলফসন, এম. এস.</b> ২০০৬, <i>দ্য টিথ অ্যান্ড ক্লজ অফ দ্য বুদ্ধা: মোনাস্টিক ওয়ারিয়র্স অ্যান্ড সোহেই ইন জাপানিজ হিস্ট্রি</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>পলিটিক্যাল থট ইন জাপানিজ হিস্টোরিকাল রাইটিং: ফ্রম কোজিকি (৭১২) টু টোকুশি ইয়োরন (১৭১২)</i> (ওয়াটারলু, অন্টারিও: উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>কার্টার, এস. ডি.</b> ১৯৯৬, <i>রিজেন্ট রিডাক্স: আ লাইফ অফ দ্য স্টেটসম্যান-স্কলার ইচিজো কানেয়োশি</i> (অ্যান আরবার: সেন্টার ফর জাপানিজ স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান)
<b>কবিং, এ.</b> ২০০৯, <i>কিউশু: গেটওয়ে টু জাপান</i> (ফোকস্টোন: গ্লোবাল ওরিয়েন্টাল)
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>পপুলেশন, ডিজিজ, অ্যান্ড ল্যান্ড ইন আর্লি জাপান</i> (হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>হেভেনলি ওয়ারিয়র্স: দ্য এভল্যুশন অফ জাপান'স মিলিটারি, ৫০০-১৩০০</i> (ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস: কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি)
<b>ফ্রাইডে, কে.</b> ১৯৯২, <i>হায়ার্ড সোর্ডস: দ্য রাইজ অফ প্রাইভেট ওয়ারিয়র পাওয়ার ইন আর্লি জাপান</i> (স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>গ্রাপার্ড, এ. জি.</b> ১৯৯২, <i>দ্য প্রোটোকল অফ দ্য গডস: আ স্টাডি অফ দ্য কাসুগা কাল্ট ইন জাপানিজ হিস্ট্রি</i> (বার্কলি: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস)
<b>হল, জন হুইটনি.</b> ১৯৬৬, <i>গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল পাওয়ার ইন জাপান, ৫০০-১৭০০. আ স্টাডি বেসড অন বিজেন প্রভিন্স</i> (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>হেম্পেল, আর.</b> ১৯৮৩, <i>দ্য হেইয়ান সিভিলাইজেশন অফ জাপান</i> (অক্সফোর্ড: ফাইডন)
<b>হার্স্ট, জি. ক্যামেরন</b> ১৯৭৬, <i>ইনসেই: অ্যাবডিকেটেড সোভারেইনস ইন দ্য পলিটিক্স অফ লেট হেইয়ান জাপান, ১০৮৬-১১৮৫</i> (নিউ ইয়র্ক: কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ইশি, আর.</b> ১৯৮০, <i>আ হিস্ট্রি অফ পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনস ইন জাপান</i> (টোকিও ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>কোর্নিকি, পি. এফ.</b> ১৯৯৮, <i>দ্য বুক ইন জাপান: আ কালচারাল হিস্ট্রি ফ্রম দ্য বিগিনিংস টু দ্য নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি</i> (লাইডেন: ব্রিল)
<b>মরিস, আইভান</b> ১৯৬৪, <i>দ্য ওয়ার্ল্ড অফ দ্য শাইনিং প্রিন্স</i> (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>মোস্টো, জে. এস.</b> ২০০৪, <i>অ্যাট দ্য হাউস অফ গ্যাদার্ড লিভস: শর্টার বায়োগ্রাফিক্যাল অ্যান্ড অটোবায়োগ্রাফিক্যাল ন্যারেটিভস ফ্রম জাপানিজ কোর্ট লিটারেচার</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>পিগগট, জে. আর.</b> (সম্পা.) ২০০৬, <i>ক্যাপিটাল অ্যান্ড কান্ট্রিসাইড ইন জাপান, ৩০০-১১৮০: জাপানিজ হিস্টোরিয়ানস ইন্টারপ্রেটেড ইন ইংলিশ</i> (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>দ্য ফ্র্যাকচার অফ মিনিং: জাপান'স সিনথেসিস অফ চায়না ফ্রম দ্য এইথ থ্রু দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরিজ</i> (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>রাবিনোভিচ, জে. এন.</b> ১৯৮৬, <i>শোমনকি: দ্য স্টোরি অফ মাসাকাডো'স রিবেলিয়ন</i>, এমএন মনোগ্রাফস (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫a, <i>এনিন'স ডায়েরি, দ্য রেকর্ড অফ আ পিলগ্রিমেজ টু চায়না ইন সার্চ অফ দ্য ল</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫b, <i>এনিন'স ট্রাভেলস ইন তাং চায়না</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>সাকামোটো, টি.</b> ১৯৯১, <i>দ্য সিক্স ন্যাশনাল হিস্টরিজ অফ জাপান</i>, অনুবাদ: জে. এস. ব্রাউনলি (ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস; ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও প্রেস)
<b>ফন ভার্সুর, সি.</b> ২০০৬, <i>অ্যাক্রস দ্য পেরিলাস সি: জাপানিজ ট্রেড উইথ চায়না অ্যান্ড কোরিয়া ফ্রম দ্য সেভেনথ টু দ্য সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরিজ</i>, অনুবাদ: কে. এল. হান্টার (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>ওয়ালেস, জে. আর.</b> ২০০৫, <i>অবজেক্টস অফ ডিসকোর্স: মেমোয়ার্স বাই উইমেন অফ হেইয়ান জাপান</i> (সেন্টার ফর জাপানিজ স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান)
<b>উইলসন, ডব্লিউ. আর.</b> ১৯৭১, <i>হোগেন মনোগাতারি: টেইল অফ দ্য ডিসঅর্ডার ইন হোগেন</i> (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস)<b>আডলফসন, এম., কামেনস, ই, এবং মাতসুমোতো, এস</b> (সম্পাদক) ২০০৭, <i>হেইয়ান জাপান: কেন্দ্র ও প্রান্ত</i> (হোনোলুলু: হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা)
mz3v1ww4pdg0pckzuayj4hdorb27rls
85586
85585
2025-07-03T07:36:57Z
Asikur.rahman25
11164
/* প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ */
85586
wikitext
text/x-wiki
==জাপান সম্পর্কিত বই==
যদি আপনি শুধু জাপানের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে এখানে কিছু ভালো বই রয়েছে। আরও পড়াশোনার জন্য উইকিপিডিয়াতে কিছু ভালো প্রবন্ধ আছে, যেগুলো একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।আপনি যদি সত্যিই জাপানের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হন, কিংবা নতুন একটি ভাষা শিখতে চান, তাহলে [[জাপানি|এখানে]] জাপানি ভাষার কিছু ভালো পাঠ রয়েছে। স্থাননামের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে চাইলে কানজি অক্ষরের মানে জানা একটু হলেও কাজে লাগতে পারে।আরও পড়াশোনার জন্য আমি আপনাকে উইকিবই এর কিছু অন্যান্য বই ঘুরে দেখার পরামর্শ দেব। এ বইগুলোর কিছুটা এই বইয়ের সঙ্গে মিলও আছে। যেমন [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] বিষয়ক বইটি যেখানে ইতিহাসের বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের অবস্থান আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
==ইয়ামাতো==
<B>অ্যালেন, সি</B> ২০০৩, 'দ্য এমপ্রেস জিংগু', <I>জাপান ফোরাম</I> ১৫ ৩ ৮১-৯৮ <br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, (টোকিও : সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৪, <I>দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিয়ো ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি</I> লন্ডন ইউনিভার্সিটি ডক্টরাল ডিসার্টেশন<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৯, <I>দ্য আর্লি হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হান, ডব্লিউ কে</B> ১৯৭০, <I>দ্য হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হাতাদা, তাকাহাশি</B> ১৯৬৯, <I>আ হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (সান্তা বারবারা: ক্লিও প্রেস)<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', <I>হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ২৯:১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', <I>জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ৩৩:২৫-৪৯ <br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', <I>মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা</I> ৩২:৩৬৫-৩৭৬ <br>
<B>কিম, সঙ-হো</B> ১৯৮৫, 'অরিজিনস অফ দ্য জাপানিজ পলিটি: আ টেক্সচুয়াল রিকনসিডারেশন অফ দ্য হর্স-রাইডার থিওরি', <I>কোরিয়া জার্নাল</I> ২৫.১২:৪-২৩<br>
<B>কার্কল্যান্ড, জে. আর.</B> ১৯৮১, 'দ্য হর্সরাইডার্স ইন কোরিয়া: আ ক্রিটিকাল ইভালুয়েশন অফ আ হিস্টরিকাল থিওরি', <I>কোরিয়ান স্টাডিজ</I> ৫:১০৯-১২৮ <br>
<B>কিতো, কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৯: ১-১৩ <br>
<B>মুরায়ামা, এস ও মিলার, আর. এ.</B> ১৯৭৯, 'দ্য ইনারিয়ামা টুমুলাস সোর্ড ইনস্ক্রিপশন', <I>জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ</I> ৫:৪০৫-৪৩৮ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯২, 'দ্য কোফুন পিরিয়ড অ্যান্ড স্টেট ফরমেশন', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৩:৬৪-৮৬ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯০, 'চিফলি লিনিয়েজেস ইন কোফুন পিরিয়ড জাপান: পলিটিকাল রিলেশনস বিটুইন সেন্টার অ্যান্ড রিজিয়ন', <I>অ্যান্টিকুইটি</I> ৬৪:৯২৩-৯৩১ <br>
<B>ত্সুনোডা, আর. ও গুডরিচ, এল. সি.</B> ১৯৫১, <I>জাপান ইন দ্য চাইনিজ ডাইনাস্টিক হিস্টরিজ</I> (পারকিন্স, সাউথ পাসাডিনা)<br>
<B>ভারগো, লার্স</B> ১৯৮২, <I>সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কন্ডিশনস ফর দ্য ফরমেশন অফ দ্য আর্লি জাপানিজ স্টেট</I> (স্টকহোম: স্টকহোম ইউনিভার্সিটি জাপানোলজিকাল স্টাডিজ ১)<br>
<B>আনসেলমো, ভালেরিও</B> ১৯৭৪, "http://www.corea.it/kudara_1.htm" দ্য এটিমোলজি অফ কুদারা
==নারা==
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা মনোগ্রাফস, টোকিও<br>
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৯৭, <I>রেকর্ডস অফ উইন্ড অ্যান্ড আর্থ: আ ট্রান্সলেশন অফ ফুডোকি, উইথ ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড কমেন্টারিজ</I>, অ্যাসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ, অ্যান আরবার, মিশিগান<br>
<B>আসাকাওয়া কে.</B> ১৯০৩, <I>দ্য আর্লি ইনস্টিটিউশনাল লাইফ অফ জাপান: আ স্টাডি ইন দ্য রিফর্ম অফ ৬৪৫ এডি</I>, শুয়েইশা, টোকিও<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৮৬, 'ফরেন থ্রেট অ্যান্ড ডোমেস্টিক রিফর্ম: দ্য ইমারজেন্স অফ দ্য রিৎসুরিও স্টেট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪১: ১৯৯-২১৯<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৯৩, 'প্রোভিন্সিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন আর্লি জাপান: ফ্রম রিৎসুরিও কোক্কা টু ওচো কোক্কা', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৩: ১০৩-১৩৪<br>
<B>বিসলি, ডাব্লিউ. জি. এবং পুলিব্ল্যাঙ্ক, ই. জি.</B> ১৯৬১, <I>হিস্টোরিয়ানস অফ চায়না অ্যান্ড জাপান</I>, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, অক্সফোর্ড<br>
<B>বেন্ডার, আর.</B> ১৯৭৯, 'দ্য হাচিমান কাল্ট অ্যান্ড দ্য ডোক্যো ইনসিডেন্ট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৩৪: ১২৫-১৫৩<br>
<B>বেন্টলি, জে. আর.</B> ২০০২, <I>হিস্টরিওগ্রাফিক্যাল ট্রেন্ডস ইন আর্লি জাপান</I>, এডউইন মেলেন প্রেস<br>
<B>ব্রাউনলি, জে. এস.</B> ১৯৯১, <I>পলিটিক্যাল থট ইন জাপানিজ হিস্টোরিক্যাল রাইটিং: ফ্রম কোজিকি (৭১২) টু টোকুশি ইয়োরন (১৭১২)</I>, উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ওয়াটারলু, অন্টারিও<br>
<B>কোলড্রেক, ডাব্লিউ. এইচ.</B> ১৯৯১, 'সিটি প্ল্যানিং অ্যান্ড প্যালেস আর্কিটেকচার ইন দ্য ক্রিয়েশন অফ দ্য নারা পলিটিক্যাল অর্ডার: দ্য অ্যাকোমোডেশন অফ প্লেস অ্যান্ড পারপাস অ্যাট হেইজো-কিও', ইএইচ : ৩৭:৫৪<br>
<B>কোমো, এম.</B> ২০০৭, 'হর্সেস, ড্রাগনস, অ্যান্ড ডিজিজ ইন নারা জাপান', জেজেআরএস ৩৪: ৩৯৫-৪১৫<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৮৫, <I>পপুলেশন, ডিজিজ, অ্যান্ড ল্যান্ড ইন আর্লি জাপান</I>, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯২, <I>হেভেনলি ওয়ারিয়র্স: দ্য এভল্যুশন অফ জাপান'স মিলিটারি, ৫০০-১৩০০</I>, কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯৮, <I>সেক্রেড টেক্সটস অ্যান্ড বিউরিড ট্রেজারস: ইস্যুস ইন দ্য হিস্টোরিক্যাল আর্কিওলজি অফ এনসিয়েন্ট জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস, হনোলুলু<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ২০০৭, 'পিসেস ইন আ পাজল: চেইঞ্জিং অ্যাপ্রোচেস টু দ্য শোসইন ডকুমেন্টস', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৬২: ৩৯৭-৪৩৫<br>
<B>ফ্রাইডে, কে. এফ.</B> ১৯৯৭, 'পুশিং বিয়ন্ড দ্য পেইল: দ্য যামাতো কনকুয়েস্ট অফ দ্য এমিশি অ্যান্ড নর্দার্ন জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২৩: ১-২৪<br>
<B>ফুনকে, এম. সি.</B> ১৯৯৪, 'হিতাচি নো কুনি ফুডোকি', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৯: ১-২৯<br>
<B>হল, জন ডব্লিউ.</B> ১৯৬৬, <I>গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল পাওয়ার ইন জাপান, ৫০০-১৭০০. আ স্টাডি বেসড অন বিজেন প্রভিন্স</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টেট ইন আর্লি ইম্পেরিয়াল চায়না অ্যান্ড জাপান', স্টাডিজ ইন চাইনিজ হিস্ট্রি ৫: ৭-৪৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'রিৎসুরিও কনফিউশিয়ানিজম', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৭: ৫৪৩-৫৭৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৯, 'ট্রেড-বুদ্ধিজম: মেরিটাইম ট্রেড, ইমিগ্রেশন, অ্যান্ড দ্য বুদ্ধিস্ট ল্যান্ডফল ইন আর্লি জাপান', জেএওএস ১১৯: ২৮০-২৯২<br>
<B>ইনোউয়ে মিতসুসাদা</B> ১৯৭৭, 'দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম ইন জাপান', এএ ৩১: ৮৩-১১২<br>
<B>ইশিগামি ই.</B> ১৯৯৫, 'স্টেট অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ১৪-৩৮<br>
<B>ইশি আর.</B> ১৯৮০, <I>আ হিস্ট্রি অফ পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনস ইন জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও প্রেস, টোকিও<br>
<B>কামস্ট্রা, জে. এইচ.</B> ১৯৬৭, <I>এনকাউন্টার অফ সিঙ্ক্রেটিজম; দ্য ইনিশিয়াল গ্রোথ অফ জাপানিজ বুদ্ধিজম</I>, ই. জে. ব্রিল, লাইডেন<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ২৯: ১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৩৩: ২৫-৪৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>কিতো কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', এএ ৬৯: ১-১৩<br>
<B>কোর্নিকি, পি. এফ. এবং ম্যাকমুলেন, আই. জে.</B> ১৯৯৬, <I>রিলিজিয়ন ইন জাপান: অ্যারোস টু হেভেন অ্যান্ড আর্থ</I>, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ<br>
<B>কুরোডা টি.</B> ১৯৮১, 'শিন্তো ইন দ্য হিস্ট্রি অফ জাপানিজ রিলিজিয়ন', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৪, <I>এনসিয়েন্ট জাপানিজ নোবিলিটি: দ্য কাবানে র্যাঙ্কিং সিস্টেম</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, বার্কলি<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৮, <I>জাপান'স ফার্স্ট ব্যুরোক্রেসি</I>, ইস্ট এশিয়ান পেপার্স নাম্বার ১৯, করনেল ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<B>ওবায়াশি টি.</B> ১৯৮৫, 'উজি সোসাইটি অ্যান্ড ইয়ে সোসাইটি ফ্রম প্রিহিস্ট্রি টু মিডিয়েভাল টাইমস', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১১: ৩-২৭<br>
<B>ওকাদা এস.</B> ১৯৮৩, 'দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ স্টেট রিচুয়াল ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৫১: ২২-৪১<br>
<B>পিয়ারসন, আর. জে.</B> ১৯৭৬, 'দ্য কনট্রিবিউশন অফ আর্কিওলজি টু জাপানিজ স্টাডিজ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২: ৩০৫-৩৩৩<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৮৯, 'সেক্রেড কিংশিপ অ্যান্ড কনফেডারেসি ইন আর্লি ইজুমো', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৪: ৪৫-৭৪<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯০, 'মোক্কান: উডেন ডকুমেন্টস ফ্রম দ্য নারা পিরিয়ড', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৫: ৪৪৯-৪৭০<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯৭, <I>দ্য ইমারজেন্স অফ জাপানিজ কিংশিপ</I>, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পালো অল্টো<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ২০০৬, <I>ক্যাপিটাল অ্যান্ড কান্ট্রিসাইড ইন জাপান, ৩০০-১১৮০: জাপানিজ হিস্টোরিয়ানস ইন্টারপ্রেটেড ইন ইংলিশ</I>, করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ<br>
<B>পোলাক, ডি.</B> ১৯৮৬, <I>দ্য ফ্র্যাকচার অফ মিনিং: জাপান'স সিনথেসিস অফ চায়না ফ্রম দ্য এইথ থ্রু দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরিজ</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>সাকামোটো টি.</B> ১৯৯১, <I>দ্য সিক্স ন্যাশনাল হিস্টরিজ অফ জাপান, ট্রান্সলেটেড বাই জে. এস. ব্রাউনলি</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রেস, ভ্যানকুভার<br>
<B>সাতো এম.</B> ১৯৯৫, 'দ্য উডেন ট্যাবলেটস (মোক্কান) অফ এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ৮৪-১১৭<br>
<B>তেকেউচি রিজো</B> ১৯৮৮, 'ডকুমেন্টস অফ লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন দ্য নারা পিরিয়ড. দ্য হাউসহোল্ড রেজিস্টারস অ্যান্ড দ্য ট্যাক্স রেজিস্টারস', ইন এ. ফোর্তে <I>তাং চায়না অ্যান্ড বিয়ন্ড: স্টাডিজ অন ইস্ট এশিয়া ফ্রম দ্য সেভেনথ টু দ্য টেন্থ সেঞ্চুরি</I>, ইস্টিতুতো ইটালিয়ানো দি কালচুরা, কিওটো<br>
<B>তামুরা ই.</B> ১৯৮৫, 'জাপান অ্যান্ড দ্য ইস্টওয়ার্ড পারমিয়েশন অফ বুদ্ধিজম', এএ ৪৭: ১-৩০<br>
<B>টোবি, আর. পি.</B> ১৯৯৩, 'হোয়াই লিভ নারা? কাম্মু অ্যান্ড দ্য ট্রান্সফার অফ দ্য ক্যাপিটাল', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪০: ৩৩১-৩৪৭<br>
<B>ৎসুবোই কে.</B> ১৯৯২, 'দ্য এক্সকাভেশন অফ এনসিয়েন্ট পার্লেন্সেস অ্যান্ড ক্যাপিটালস', এএ ৬৩: ৮৭-৯৮<br>
<B>ৎসুবোই কে. এবং তানাকা এম.</B> ১৯৯১, <I>দ্য হিস্টোরিক সিটি অফ নারা: আন আর্কিওলজিকাল অ্যাপ্রোচ</I>, দ্য সেন্টার ফর ইস্ট এশিয়ান কালচারাল স্টাডিজ, টোকিও<br>
<B>ৎসুরুমি ই. পি.</B> ১৯৮২, 'দ্য মেইল প্রেজেন্ট বনাম দ্য ফিমেল পাস্ট: হিস্টোরিয়ানস অ্যান্ড জাপান'স এনসিয়েন্ট ফিমেল এমপ্রেস', বিসিএএস ১৪.৪: ৭১-৭৫<br>
<B>ওয়াদা এ.</B> ১৯৯৫, 'দ্য অরিজিনস অফ ইসে শ্রাইন', এএ ৬৯: ৬৩-৮৩<br>
<B>ইাসুদা ওয়াই.</B> ১৯৭৬, 'দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম: হাইপোথেসিস অন ইকনমিক অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল চেইঞ্জ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ, ১: ৩-৩৭<br>
==প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ==
হেইয়ান যুগ নিয়ে বাংলায় যেমন তেমন, ইংরেজিতেও লেখা উপাদান অত্যন্ত অপ্রতুল, যা সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও এই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছে, সেগুলো মূলত অভিজাত শ্রেণির জীবন বোঝার প্রাথমিক সূত্র হিসেবে কাজ করে। প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ নিয়ে গবেষণার সুযোগ আরও সীমিত। কারণ এই সময়কার উৎস খুবই কম। ফলে ইতিহাসবিদদের জন্য অনুসন্ধানের সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ। মধ্য হেইয়ান যুগ এবং তার পর থেকে ডায়েরি ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক লেখালেখি পাওয়া যায়। তবে এই লেখাগুলোও মূলত এই আলোচ্য সময়ের একেবারে শেষদিকে শুরু হয়।প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুই নির্ভর করে বেঁচে থাকা সরকারি দলিলপত্র থেকে তথ্য টেনে আনার ওপর।
<b>আডলফসন, এম., কামেনস, ই, এবং মাতসুমোতো, এস</b> (সম্পা.) ২০০৭, <i>হেইয়ান জাপান, সেন্টারস অ্যান্ড পেরিফেরিজ</i> (হনোলুলু: হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯২৯, <i>দ্য ডকুমেন্টস অফ ইরিকি</i> (ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস; পুনর্মুদ্রণ গ্রিনউড প্রেস, কানেকটিকাট, ১৯৭৪)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯৬৫, <i>ল্যান্ড অ্যান্ড সোসাইটি ইন মিডিয়েভাল জাপান</i> (জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ সায়েন্স, টোকিও)
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ২০০৫, <i>গেটওয়ে টু জাপান: হাকাতা ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস, ৫০০-১৩০০</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>বিয়ালক, ডি. টি.</b> ২০০৭, <i>একসেন্ট্রিক স্পেসেস, হিডেন হিস্টরিজ: ন্যারেটিভ, রিচুয়াল, অ্যান্ড রয়্যাল অথরিটি ফ্রম দ্য ক্রনিকলস অফ জাপান টু দ্য টেইল অফ দ্য হেইকে</i> (স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>বক, এফ. জি.</b> ১৯৭০-৭২, <i>দ্য এঙ্গি-শিকি: প্রসিডিউরস অফ দ্য এঙ্গি এরা</i>, ২ খণ্ড, এমএন মনোগ্রাফস (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি, টোকিও)
<b>বোর্গেন, আর. এস.</b> ১৯৮৬, <i>সুগাওয়ারা নো মিচিজানে অ্যান্ড দ্য আর্লি হেইয়ান কোর্ট</i> (হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>আডলফসন, এম. এস.</b> ২০০৬, <i>দ্য টিথ অ্যান্ড ক্লজ অফ দ্য বুদ্ধা: মোনাস্টিক ওয়ারিয়র্স অ্যান্ড সোহেই ইন জাপানিজ হিস্ট্রি</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>পলিটিক্যাল থট ইন জাপানিজ হিস্টোরিকাল রাইটিং: ফ্রম কোজিকি (৭১২) টু টোকুশি ইয়োরন (১৭১২)</i> (ওয়াটারলু, অন্টারিও: উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>কার্টার, এস. ডি.</b> ১৯৯৬, <i>রিজেন্ট রিডাক্স: আ লাইফ অফ দ্য স্টেটসম্যান-স্কলার ইচিজো কানেয়োশি</i> (অ্যান আরবার: সেন্টার ফর জাপানিজ স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান)
<b>কবিং, এ.</b> ২০০৯, <i>কিউশু: গেটওয়ে টু জাপান</i> (ফোকস্টোন: গ্লোবাল ওরিয়েন্টাল)
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>পপুলেশন, ডিজিজ, অ্যান্ড ল্যান্ড ইন আর্লি জাপান</i> (হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>হেভেনলি ওয়ারিয়র্স: দ্য এভল্যুশন অফ জাপান'স মিলিটারি, ৫০০-১৩০০</i> (ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস: কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি)
<b>ফ্রাইডে, কে.</b> ১৯৯২, <i>হায়ার্ড সোর্ডস: দ্য রাইজ অফ প্রাইভেট ওয়ারিয়র পাওয়ার ইন আর্লি জাপান</i> (স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>গ্রাপার্ড, এ. জি.</b> ১৯৯২, <i>দ্য প্রোটোকল অফ দ্য গডস: আ স্টাডি অফ দ্য কাসুগা কাল্ট ইন জাপানিজ হিস্ট্রি</i> (বার্কলি: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস)
<b>হল, জন হুইটনি.</b> ১৯৬৬, <i>গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল পাওয়ার ইন জাপান, ৫০০-১৭০০. আ স্টাডি বেসড অন বিজেন প্রভিন্স</i> (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>হেম্পেল, আর.</b> ১৯৮৩, <i>দ্য হেইয়ান সিভিলাইজেশন অফ জাপান</i> (অক্সফোর্ড: ফাইডন)
<b>হার্স্ট, জি. ক্যামেরন</b> ১৯৭৬, <i>ইনসেই: অ্যাবডিকেটেড সোভারেইনস ইন দ্য পলিটিক্স অফ লেট হেইয়ান জাপান, ১০৮৬-১১৮৫</i> (নিউ ইয়র্ক: কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ইশি, আর.</b> ১৯৮০, <i>আ হিস্ট্রি অফ পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনস ইন জাপান</i> (টোকিও ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>কোর্নিকি, পি. এফ.</b> ১৯৯৮, <i>দ্য বুক ইন জাপান: আ কালচারাল হিস্ট্রি ফ্রম দ্য বিগিনিংস টু দ্য নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি</i> (লাইডেন: ব্রিল)
<b>মরিস, আইভান</b> ১৯৬৪, <i>দ্য ওয়ার্ল্ড অফ দ্য শাইনিং প্রিন্স</i> (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>মোস্টো, জে. এস.</b> ২০০৪, <i>অ্যাট দ্য হাউস অফ গ্যাদার্ড লিভস: শর্টার বায়োগ্রাফিক্যাল অ্যান্ড অটোবায়োগ্রাফিক্যাল ন্যারেটিভস ফ্রম জাপানিজ কোর্ট লিটারেচার</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>পিগগট, জে. আর.</b> (সম্পা.) ২০০৬, <i>ক্যাপিটাল অ্যান্ড কান্ট্রিসাইড ইন জাপান, ৩০০-১১৮০: জাপানিজ হিস্টোরিয়ানস ইন্টারপ্রেটেড ইন ইংলিশ</i> (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>দ্য ফ্র্যাকচার অফ মিনিং: জাপান'স সিনথেসিস অফ চায়না ফ্রম দ্য এইথ থ্রু দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরিজ</i> (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>রাবিনোভিচ, জে. এন.</b> ১৯৮৬, <i>শোমনকি: দ্য স্টোরি অফ মাসাকাডো'স রিবেলিয়ন</i>, এমএন মনোগ্রাফস (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫a, <i>এনিন'স ডায়েরি, দ্য রেকর্ড অফ আ পিলগ্রিমেজ টু চায়না ইন সার্চ অফ দ্য ল</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫b, <i>এনিন'স ট্রাভেলস ইন তাং চায়না</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>সাকামোটো, টি.</b> ১৯৯১, <i>দ্য সিক্স ন্যাশনাল হিস্টরিজ অফ জাপান</i>, অনুবাদ: জে. এস. ব্রাউনলি (ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস; ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও প্রেস)
<b>ফন ভার্সুর, সি.</b> ২০০৬, <i>অ্যাক্রস দ্য পেরিলাস সি: জাপানিজ ট্রেড উইথ চায়না অ্যান্ড কোরিয়া ফ্রম দ্য সেভেনথ টু দ্য সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরিজ</i>, অনুবাদ: কে. এল. হান্টার (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>ওয়ালেস, জে. আর.</b> ২০০৫, <i>অবজেক্টস অফ ডিসকোর্স: মেমোয়ার্স বাই উইমেন অফ হেইয়ান জাপান</i> (সেন্টার ফর জাপানিজ স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান)
<b>উইলসন, ডব্লিউ. আর.</b> ১৯৭১, <i>হোগেন মনোগাতারি: টেইল অফ দ্য ডিসঅর্ডার ইন হোগেন</i> (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস)
d5mh9a8n4tloa8np3vq05jq776gzra9
85587
85586
2025-07-03T07:38:35Z
Asikur.rahman25
11164
/* প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ */
85587
wikitext
text/x-wiki
==জাপান সম্পর্কিত বই==
যদি আপনি শুধু জাপানের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে এখানে কিছু ভালো বই রয়েছে। আরও পড়াশোনার জন্য উইকিপিডিয়াতে কিছু ভালো প্রবন্ধ আছে, যেগুলো একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।আপনি যদি সত্যিই জাপানের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হন, কিংবা নতুন একটি ভাষা শিখতে চান, তাহলে [[জাপানি|এখানে]] জাপানি ভাষার কিছু ভালো পাঠ রয়েছে। স্থাননামের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে চাইলে কানজি অক্ষরের মানে জানা একটু হলেও কাজে লাগতে পারে।আরও পড়াশোনার জন্য আমি আপনাকে উইকিবই এর কিছু অন্যান্য বই ঘুরে দেখার পরামর্শ দেব। এ বইগুলোর কিছুটা এই বইয়ের সঙ্গে মিলও আছে। যেমন [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] বিষয়ক বইটি যেখানে ইতিহাসের বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের অবস্থান আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
==ইয়ামাতো==
<B>অ্যালেন, সি</B> ২০০৩, 'দ্য এমপ্রেস জিংগু', <I>জাপান ফোরাম</I> ১৫ ৩ ৮১-৯৮ <br>
<B>আওকি, এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, (টোকিও : সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৪, <I>দ্য অরিজিন অ্যান্ড রাইজ অফ দ্য কোরিয়ান কিংডম অফ কোগুরিয়ো ফ্রম দ্য ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসি টু ৩১৩ এডি</I> লন্ডন ইউনিভার্সিটি ডক্টরাল ডিসার্টেশন<br>
<B>গার্ডিনার, কে</B> ১৯৬৯, <I>দ্য আর্লি হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হান, ডব্লিউ কে</B> ১৯৭০, <I>দ্য হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (হনোলুলু: ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস) <br>
<B>হাতাদা, তাকাহাশি</B> ১৯৬৯, <I>আ হিস্ট্রি অফ কোরিয়া</I> (সান্তা বারবারা: ক্লিও প্রেস)<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', <I>হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ২৯:১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', <I>জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ</I> ৩৩:২৫-৪৯ <br>
<B>কাইলি, সি. জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', <I>মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা</I> ৩২:৩৬৫-৩৭৬ <br>
<B>কিম, সঙ-হো</B> ১৯৮৫, 'অরিজিনস অফ দ্য জাপানিজ পলিটি: আ টেক্সচুয়াল রিকনসিডারেশন অফ দ্য হর্স-রাইডার থিওরি', <I>কোরিয়া জার্নাল</I> ২৫.১২:৪-২৩<br>
<B>কার্কল্যান্ড, জে. আর.</B> ১৯৮১, 'দ্য হর্সরাইডার্স ইন কোরিয়া: আ ক্রিটিকাল ইভালুয়েশন অফ আ হিস্টরিকাল থিওরি', <I>কোরিয়ান স্টাডিজ</I> ৫:১০৯-১২৮ <br>
<B>কিতো, কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৯: ১-১৩ <br>
<B>মুরায়ামা, এস ও মিলার, আর. এ.</B> ১৯৭৯, 'দ্য ইনারিয়ামা টুমুলাস সোর্ড ইনস্ক্রিপশন', <I>জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ</I> ৫:৪০৫-৪৩৮ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯২, 'দ্য কোফুন পিরিয়ড অ্যান্ড স্টেট ফরমেশন', <I>অ্যাক্টা এশিয়াটিকা</I> ৬৩:৬৪-৮৬ <br>
<B>সুদে, এইচ.</B> ১৯৯০, 'চিফলি লিনিয়েজেস ইন কোফুন পিরিয়ড জাপান: পলিটিকাল রিলেশনস বিটুইন সেন্টার অ্যান্ড রিজিয়ন', <I>অ্যান্টিকুইটি</I> ৬৪:৯২৩-৯৩১ <br>
<B>ত্সুনোডা, আর. ও গুডরিচ, এল. সি.</B> ১৯৫১, <I>জাপান ইন দ্য চাইনিজ ডাইনাস্টিক হিস্টরিজ</I> (পারকিন্স, সাউথ পাসাডিনা)<br>
<B>ভারগো, লার্স</B> ১৯৮২, <I>সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কন্ডিশনস ফর দ্য ফরমেশন অফ দ্য আর্লি জাপানিজ স্টেট</I> (স্টকহোম: স্টকহোম ইউনিভার্সিটি জাপানোলজিকাল স্টাডিজ ১)<br>
<B>আনসেলমো, ভালেরিও</B> ১৯৭৪, "http://www.corea.it/kudara_1.htm" দ্য এটিমোলজি অফ কুদারা
==নারা==
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৭১, <I>ইজুমো ফুডোকি</I>, মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা মনোগ্রাফস, টোকিও<br>
<B>আওকি এম. ওয়াই.</B> ১৯৯৭, <I>রেকর্ডস অফ উইন্ড অ্যান্ড আর্থ: আ ট্রান্সলেশন অফ ফুডোকি, উইথ ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড কমেন্টারিজ</I>, অ্যাসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ, অ্যান আরবার, মিশিগান<br>
<B>আসাকাওয়া কে.</B> ১৯০৩, <I>দ্য আর্লি ইনস্টিটিউশনাল লাইফ অফ জাপান: আ স্টাডি ইন দ্য রিফর্ম অফ ৬৪৫ এডি</I>, শুয়েইশা, টোকিও<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৮৬, 'ফরেন থ্রেট অ্যান্ড ডোমেস্টিক রিফর্ম: দ্য ইমারজেন্স অফ দ্য রিৎসুরিও স্টেট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪১: ১৯৯-২১৯<br>
<B>ব্যাটেন, বি. এল.</B> ১৯৯৩, 'প্রোভিন্সিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন আর্লি জাপান: ফ্রম রিৎসুরিও কোক্কা টু ওচো কোক্কা', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৩: ১০৩-১৩৪<br>
<B>বিসলি, ডাব্লিউ. জি. এবং পুলিব্ল্যাঙ্ক, ই. জি.</B> ১৯৬১, <I>হিস্টোরিয়ানস অফ চায়না অ্যান্ড জাপান</I>, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, অক্সফোর্ড<br>
<B>বেন্ডার, আর.</B> ১৯৭৯, 'দ্য হাচিমান কাল্ট অ্যান্ড দ্য ডোক্যো ইনসিডেন্ট', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৩৪: ১২৫-১৫৩<br>
<B>বেন্টলি, জে. আর.</B> ২০০২, <I>হিস্টরিওগ্রাফিক্যাল ট্রেন্ডস ইন আর্লি জাপান</I>, এডউইন মেলেন প্রেস<br>
<B>ব্রাউনলি, জে. এস.</B> ১৯৯১, <I>পলিটিক্যাল থট ইন জাপানিজ হিস্টোরিক্যাল রাইটিং: ফ্রম কোজিকি (৭১২) টু টোকুশি ইয়োরন (১৭১২)</I>, উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ওয়াটারলু, অন্টারিও<br>
<B>কোলড্রেক, ডাব্লিউ. এইচ.</B> ১৯৯১, 'সিটি প্ল্যানিং অ্যান্ড প্যালেস আর্কিটেকচার ইন দ্য ক্রিয়েশন অফ দ্য নারা পলিটিক্যাল অর্ডার: দ্য অ্যাকোমোডেশন অফ প্লেস অ্যান্ড পারপাস অ্যাট হেইজো-কিও', ইএইচ : ৩৭:৫৪<br>
<B>কোমো, এম.</B> ২০০৭, 'হর্সেস, ড্রাগনস, অ্যান্ড ডিজিজ ইন নারা জাপান', জেজেআরএস ৩৪: ৩৯৫-৪১৫<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৮৫, <I>পপুলেশন, ডিজিজ, অ্যান্ড ল্যান্ড ইন আর্লি জাপান</I>, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯২, <I>হেভেনলি ওয়ারিয়র্স: দ্য এভল্যুশন অফ জাপান'স মিলিটারি, ৫০০-১৩০০</I>, কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ১৯৯৮, <I>সেক্রেড টেক্সটস অ্যান্ড বিউরিড ট্রেজারস: ইস্যুস ইন দ্য হিস্টোরিক্যাল আর্কিওলজি অফ এনসিয়েন্ট জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস, হনোলুলু<br>
<B>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</B> ২০০৭, 'পিসেস ইন আ পাজল: চেইঞ্জিং অ্যাপ্রোচেস টু দ্য শোসইন ডকুমেন্টস', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৬২: ৩৯৭-৪৩৫<br>
<B>ফ্রাইডে, কে. এফ.</B> ১৯৯৭, 'পুশিং বিয়ন্ড দ্য পেইল: দ্য যামাতো কনকুয়েস্ট অফ দ্য এমিশি অ্যান্ড নর্দার্ন জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২৩: ১-২৪<br>
<B>ফুনকে, এম. সি.</B> ১৯৯৪, 'হিতাচি নো কুনি ফুডোকি', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৯: ১-২৯<br>
<B>হল, জন ডব্লিউ.</B> ১৯৬৬, <I>গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল পাওয়ার ইন জাপান, ৫০০-১৭০০. আ স্টাডি বেসড অন বিজেন প্রভিন্স</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টেট ইন আর্লি ইম্পেরিয়াল চায়না অ্যান্ড জাপান', স্টাডিজ ইন চাইনিজ হিস্ট্রি ৫: ৭-৪৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৭, 'রিৎসুরিও কনফিউশিয়ানিজম', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৫৭: ৫৪৩-৫৭৪<br>
<B>হলকম্ব, সি.</B> ১৯৯৯, 'ট্রেড-বুদ্ধিজম: মেরিটাইম ট্রেড, ইমিগ্রেশন, অ্যান্ড দ্য বুদ্ধিস্ট ল্যান্ডফল ইন আর্লি জাপান', জেএওএস ১১৯: ২৮০-২৯২<br>
<B>ইনোউয়ে মিতসুসাদা</B> ১৯৭৭, 'দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম ইন জাপান', এএ ৩১: ৮৩-১১২<br>
<B>ইশিগামি ই.</B> ১৯৯৫, 'স্টেট অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ১৪-৩৮<br>
<B>ইশি আর.</B> ১৯৮০, <I>আ হিস্ট্রি অফ পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনস ইন জাপান</I>, ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও প্রেস, টোকিও<br>
<B>কামস্ট্রা, জে. এইচ.</B> ১৯৬৭, <I>এনকাউন্টার অফ সিঙ্ক্রেটিজম; দ্য ইনিশিয়াল গ্রোথ অফ জাপানিজ বুদ্ধিজম</I>, ই. জে. ব্রিল, লাইডেন<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৬৯, 'আ নোট অন দ্য স্যরনেমস অফ ইমিগ্রান্ট অফিসিয়ালস ইন নারা জাপান', হার্ভার্ড জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ২৯: ১৭৭-১৮৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৩, 'স্টেট অ্যান্ড ডাইনাসটি ইন আর্কেইক যামাতো', জার্নাল অফ এশিয়ান স্টাডিজ ৩৩: ২৫-৪৯<br>
<B>কাইলি, কর্নেলিয়াস জে.</B> ১৯৭৭, 'উজি অ্যান্ড কাবানে ইন এনসিয়েন্ট জাপান', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>কিতো কে.</B> ১৯৯৫, 'সাম কোয়েশ্চনস কনসার্নিং এনসিয়েন্ট জাপানিজ হিস্ট্রি: উইথ রেফারেন্স টু স্টেট থিওরি', এএ ৬৯: ১-১৩<br>
<B>কোর্নিকি, পি. এফ. এবং ম্যাকমুলেন, আই. জে.</B> ১৯৯৬, <I>রিলিজিয়ন ইন জাপান: অ্যারোস টু হেভেন অ্যান্ড আর্থ</I>, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ<br>
<B>কুরোডা টি.</B> ১৯৮১, 'শিন্তো ইন দ্য হিস্ট্রি অফ জাপানিজ রিলিজিয়ন', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ৭: ১-২১<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৪, <I>এনসিয়েন্ট জাপানিজ নোবিলিটি: দ্য কাবানে র্যাঙ্কিং সিস্টেম</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, বার্কলি<br>
<B>মিলার, আর. জে.</B> ১৯৭৮, <I>জাপান'স ফার্স্ট ব্যুরোক্রেসি</I>, ইস্ট এশিয়ান পেপার্স নাম্বার ১৯, করনেল ইউনিভার্সিটি প্রেস<br>
<B>ওবায়াশি টি.</B> ১৯৮৫, 'উজি সোসাইটি অ্যান্ড ইয়ে সোসাইটি ফ্রম প্রিহিস্ট্রি টু মিডিয়েভাল টাইমস', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ১১: ৩-২৭<br>
<B>ওকাদা এস.</B> ১৯৮৩, 'দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ স্টেট রিচুয়াল ইন এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৫১: ২২-৪১<br>
<B>পিয়ারসন, আর. জে.</B> ১৯৭৬, 'দ্য কনট্রিবিউশন অফ আর্কিওলজি টু জাপানিজ স্টাডিজ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ ২: ৩০৫-৩৩৩<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৮৯, 'সেক্রেড কিংশিপ অ্যান্ড কনফেডারেসি ইন আর্লি ইজুমো', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৪: ৪৫-৭৪<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯০, 'মোক্কান: উডেন ডকুমেন্টস ফ্রম দ্য নারা পিরিয়ড', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪৫: ৪৪৯-৪৭০<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ১৯৯৭, <I>দ্য ইমারজেন্স অফ জাপানিজ কিংশিপ</I>, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পালো অল্টো<br>
<B>পিগগট, জে. আর.</B> ২০০৬, <I>ক্যাপিটাল অ্যান্ড কান্ট্রিসাইড ইন জাপান, ৩০০-১১৮০: জাপানিজ হিস্টোরিয়ানস ইন্টারপ্রেটেড ইন ইংলিশ</I>, করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ<br>
<B>পোলাক, ডি.</B> ১৯৮৬, <I>দ্য ফ্র্যাকচার অফ মিনিং: জাপান'স সিনথেসিস অফ চায়না ফ্রম দ্য এইথ থ্রু দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরিজ</I>, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন<br>
<B>সাকামোটো টি.</B> ১৯৯১, <I>দ্য সিক্স ন্যাশনাল হিস্টরিজ অফ জাপান, ট্রান্সলেটেড বাই জে. এস. ব্রাউনলি</I>, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রেস, ভ্যানকুভার<br>
<B>সাতো এম.</B> ১৯৯৫, 'দ্য উডেন ট্যাবলেটস (মোক্কান) অফ এনসিয়েন্ট জাপান', এএ ৬৯: ৮৪-১১৭<br>
<B>তেকেউচি রিজো</B> ১৯৮৮, 'ডকুমেন্টস অফ লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন দ্য নারা পিরিয়ড. দ্য হাউসহোল্ড রেজিস্টারস অ্যান্ড দ্য ট্যাক্স রেজিস্টারস', ইন এ. ফোর্তে <I>তাং চায়না অ্যান্ড বিয়ন্ড: স্টাডিজ অন ইস্ট এশিয়া ফ্রম দ্য সেভেনথ টু দ্য টেন্থ সেঞ্চুরি</I>, ইস্টিতুতো ইটালিয়ানো দি কালচুরা, কিওটো<br>
<B>তামুরা ই.</B> ১৯৮৫, 'জাপান অ্যান্ড দ্য ইস্টওয়ার্ড পারমিয়েশন অফ বুদ্ধিজম', এএ ৪৭: ১-৩০<br>
<B>টোবি, আর. পি.</B> ১৯৯৩, 'হোয়াই লিভ নারা? কাম্মু অ্যান্ড দ্য ট্রান্সফার অফ দ্য ক্যাপিটাল', মোনুমেন্তা নিপ্পোনিকা ৪০: ৩৩১-৩৪৭<br>
<B>ৎসুবোই কে.</B> ১৯৯২, 'দ্য এক্সকাভেশন অফ এনসিয়েন্ট পার্লেন্সেস অ্যান্ড ক্যাপিটালস', এএ ৬৩: ৮৭-৯৮<br>
<B>ৎসুবোই কে. এবং তানাকা এম.</B> ১৯৯১, <I>দ্য হিস্টোরিক সিটি অফ নারা: আন আর্কিওলজিকাল অ্যাপ্রোচ</I>, দ্য সেন্টার ফর ইস্ট এশিয়ান কালচারাল স্টাডিজ, টোকিও<br>
<B>ৎসুরুমি ই. পি.</B> ১৯৮২, 'দ্য মেইল প্রেজেন্ট বনাম দ্য ফিমেল পাস্ট: হিস্টোরিয়ানস অ্যান্ড জাপান'স এনসিয়েন্ট ফিমেল এমপ্রেস', বিসিএএস ১৪.৪: ৭১-৭৫<br>
<B>ওয়াদা এ.</B> ১৯৯৫, 'দ্য অরিজিনস অফ ইসে শ্রাইন', এএ ৬৯: ৬৩-৮৩<br>
<B>ইাসুদা ওয়াই.</B> ১৯৭৬, 'দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য রিৎসুরিও সিস্টেম: হাইপোথেসিস অন ইকনমিক অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল চেইঞ্জ', জার্নাল অফ জাপানিজ স্টাডিজ, ১: ৩-৩৭<br>
==প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ==
হেইয়ান যুগ নিয়ে বাংলায় যেমন তেমন, ইংরেজিতেও লেখা উপাদান অত্যন্ত অপ্রতুল, যা সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও এই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছে, সেগুলো মূলত অভিজাত শ্রেণির জীবন বোঝার প্রাথমিক সূত্র হিসেবে কাজ করে। প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ নিয়ে গবেষণার সুযোগ আরও সীমিত। কারণ এই সময়কার উৎস খুবই কম। ফলে ইতিহাসবিদদের জন্য অনুসন্ধানের সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ। মধ্য হেইয়ান যুগ এবং তার পর থেকে ডায়েরি ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক লেখালেখি পাওয়া যায়। তবে এই লেখাগুলোও মূলত এই আলোচ্য সময়ের একেবারে শেষদিকে শুরু হয়।প্রারম্ভিক হেইয়ান যুগ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুই নির্ভর করে বেঁচে থাকা সরকারি দলিলপত্র থেকে তথ্য টেনে আনার ওপর।
<b>আডলফসন, এম., কামেনস, ই, এবং মাতসুমোতো, এস</b> (সম্পা.) ২০০৭, <i>হেইয়ান জাপান, সেন্টারস অ্যান্ড পেরিফেরিজ</i> (হনোলুলু: হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯২৯, <i>দ্য ডকুমেন্টস অফ ইরিকি</i> (ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস; পুনর্মুদ্রণ গ্রিনউড প্রেস, কানেকটিকাট, ১৯৭৪)
<b>আসাকাওয়া, কে.</b> ১৯৬৫, <i>ল্যান্ড অ্যান্ড সোসাইটি ইন মিডিয়েভাল জাপান</i> (জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ সায়েন্স, টোকিও)
<b>ব্যাটেন, বি. এল.</b> ২০০৫, <i>গেটওয়ে টু জাপান: হাকাতা ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস, ৫০০-১৩০০</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>বিয়ালক, ডি. টি.</b> ২০০৭, <i>একসেন্ট্রিক স্পেসেস, হিডেন হিস্টরিজ: ন্যারেটিভ, রিচুয়াল, অ্যান্ড রয়্যাল অথরিটি ফ্রম দ্য ক্রনিকলস অফ জাপান টু দ্য টেইল অফ দ্য হেইকে</i> (স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>বক, এফ. জি.</b> ১৯৭০-৭২, <i>দ্য এঙ্গি-শিকি: প্রসিডিউরস অফ দ্য এঙ্গি এরা</i>, ২ খণ্ড, এমএন মনোগ্রাফস (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি, টোকিও)
<b>বোর্গেন, আর. এস.</b> ১৯৮৬, <i>সুগাওয়ারা নো মিচিজানে অ্যান্ড দ্য আর্লি হেইয়ান কোর্ট</i> (হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>আডলফসন, এম. এস.</b> ২০০৬, <i>দ্য টিথ অ্যান্ড ক্লজ অফ দ্য বুদ্ধা: মোনাস্টিক ওয়ারিয়র্স অ্যান্ড সোহেই ইন জাপানিজ হিস্ট্রি</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ব্রাউনলি, জে. এস.</b> ১৯৯১, <i>পলিটিক্যাল থট ইন জাপানিজ হিস্টোরিকাল রাইটিং: ফ্রম কোজিকি (৭১২) টু টোকুশি ইয়োরন (১৭১২)</i> (ওয়াটারলু, অন্টারিও: উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>কার্টার, এস. ডি.</b> ১৯৯৬, <i>রিজেন্ট রিডাক্স: আ লাইফ অফ দ্য স্টেটসম্যান-স্কলার ইচিজো কানেয়োশি</i> (অ্যান আরবার: সেন্টার ফর জাপানিজ স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান)
<b>কবিং, এ.</b> ২০০৯, <i>কিউশু: গেটওয়ে টু জাপান</i> (ফোকস্টোন: গ্লোবাল ওরিয়েন্টাল)
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৮৫, <i>পপুলেশন, ডিজিজ, অ্যান্ড ল্যান্ড ইন আর্লি জাপান</i> (হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ফ্যারিস, ডব্লিউ. ডব্লিউ.</b> ১৯৯২, <i>হেভেনলি ওয়ারিয়র্স: দ্য এভল্যুশন অফ জাপান'স মিলিটারি, ৫০০-১৩০০</i> (ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস: কাউন্সিল অফ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি)
<b>ফ্রাইডে, কে.</b> ১৯৯২, <i>হায়ার্ড সোর্ডস: দ্য রাইজ অফ প্রাইভেট ওয়ারিয়র পাওয়ার ইন আর্লি জাপান</i> (স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>গ্রাপার্ড, এ. জি.</b> ১৯৯২, <i>দ্য প্রোটোকল অফ দ্য গডস: আ স্টাডি অফ দ্য কাসুগা কাল্ট ইন জাপানিজ হিস্ট্রি</i> (বার্কলি: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস)
<b>হল, জন হুইটনি.</b> ১৯৬৬, <i>গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল পাওয়ার ইন জাপান, ৫০০-১৭০০. আ স্টাডি বেসড অন বিজেন প্রভিন্স</i> (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>হেম্পেল, আর.</b> ১৯৮৩, <i>দ্য হেইয়ান সিভিলাইজেশন অফ জাপান</i> (অক্সফোর্ড: ফাইডন)
<b>হার্স্ট, জি. ক্যামেরন</b> ১৯৭৬, <i>ইনসেই: অ্যাবডিকেটেড সোভারেইনস ইন দ্য পলিটিক্স অফ লেট হেইয়ান জাপান, ১০৮৬-১১৮৫</i> (নিউ ইয়র্ক: কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>ইশি, আর.</b> ১৯৮০, <i>আ হিস্ট্রি অফ পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনস ইন জাপান</i> (টোকিও ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>কোর্নিকি, পি. এফ.</b> ১৯৯৮, <i>দ্য বুক ইন জাপান: আ কালচারাল হিস্ট্রি ফ্রম দ্য বিগিনিংস টু দ্য নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি</i> (লাইডেন: ব্রিল)
<b>মরিস, আইভান</b> ১৯৬৪, <i>দ্য ওয়ার্ল্ড অফ দ্য শাইনিং প্রিন্স</i> (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>মোস্টো, জে. এস.</b> ২০০৪, <i>অ্যাট দ্য হাউস অফ গ্যাদার্ড লিভস: শর্টার বায়োগ্রাফিক্যাল অ্যান্ড অটোবায়োগ্রাফিক্যাল ন্যারেটিভস ফ্রম জাপানিজ কোর্ট লিটারেচার</i> (হাওয়াই ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>পিগগট, জে. আর.</b> (সম্পা.) ২০০৬, <i>ক্যাপিটাল অ্যান্ড কান্ট্রিসাইড ইন জাপান, ৩০০-১১৮০: জাপানিজ হিস্টোরিয়ানস ইন্টারপ্রেটেড ইন ইংলিশ</i> (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>পোলাক, ডি.</b> ১৯৮৬, <i>দ্য ফ্র্যাকচার অফ মিনিং: জাপান'স সিনথেসিস অফ চায়না ফ্রম দ্য এইথ থ্রু দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরিজ</i> (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<b>রাবিনোভিচ, জে. এন.</b> ১৯৮৬, <i>শোমনকি: দ্য স্টোরি অফ মাসাকাডো'স রিবেলিয়ন</i>, এমএন মনোগ্রাফস (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫a, <i>এনিন'স ডায়েরি, দ্য রেকর্ড অফ আ পিলগ্রিমেজ টু চায়না ইন সার্চ অফ দ্য ল</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>রেইশাওয়ার, এডউইন ও.</b> ১৯৫৫b, <i>এনিন'স ট্রাভেলস ইন তাং চায়না</i> (রোনাল্ড প্রেস, নিউ ইয়র্ক)
<b>সাকামোটো, টি.</b> ১৯৯১, <i>দ্য সিক্স ন্যাশনাল হিস্টরিজ অফ জাপান</i>, অনুবাদ: জে. এস. ব্রাউনলি (ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস; ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও প্রেস)
<b>ফন ভার্সুর, সি.</b> ২০০৬, <i>অ্যাক্রস দ্য পেরিলাস সি: জাপানিজ ট্রেড উইথ চায়না অ্যান্ড কোরিয়া ফ্রম দ্য সেভেনথ টু দ্য সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরিজ</i>, অনুবাদ: কে. এল. হান্টার (করনেল ইস্ট এশিয়া সিরিজ)
<b>ওয়ালেস, জে. আর.</b> ২০০৫, <i>অবজেক্টস অফ ডিসকোর্স: মেমোয়ার্স বাই উইমেন অফ হেইয়ান জাপান</i> (সেন্টার ফর জাপানিজ স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান)
<b>উইলসন, ডব্লিউ. আর.</b> ১৯৭১, <i>হোগেন মনোগাতারি: টেইল অফ দ্য ডিসঅর্ডার ইন হোগেন</i> (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস)
<noinclude>{{Japanese HistoryTOC}}</noinclude>
{{BookCat}}
o7szdojxjdeg9sfhgygl46qjso4g7ug
দর্শনের সাথে পরিচয়/যুক্তিবিদ্যা/প্রকরণ যুক্তি
0
26768
85561
83125
2025-07-02T15:45:31Z
Mehedi Abedin
7113
85561
wikitext
text/x-wiki
[[দর্শনের ভূমিকা|দর্শনের ভূমিকা]] > [[দর্শনের ভূমিকা/তর্ক|তর্ক]] > প্রকরণ যুক্তি
== প্রকরণ ==
<blockquote>''দ্য গ্রাসহপার লাইস হেভি''-এর কপিটি ধরে রবার্ট বললেন, 'এই বইটিতে কোন ধরণের বিকল্প বর্তমানের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে??'<br />কিছুক্ষণ পর বেটি বললেন, 'যে যুদ্ধে জার্মানি এবং জাপান হেরেছিল।।' <br />তারা সবাই চুপ করে রইল। <br />(''ফিলিপ কে. ডিক'', ''দ্য ম্যান ইন দ্য হাই ক্যাসেল'')</blockquote>
এটি [http://en.wikipedia.org/wiki/Modal_logic প্রকরণ যুক্তি]-এর মূল ভিত্তি: কিছু জিনিস অন্যথায়ও হতে পারত।<br />আমাদের দৈনন্দিন যুক্তিতে, আমরা 'প্রয়োজনীয়' সত্য এবং বিবৃতিগুলির মধ্যে পার্থক্য করি যা কেবল সত্য হতে পারে কিন্তু মিথ্যাও হতে পারে। আমরা বলি যে পরেরটি "আকস্মিকভাবে" সত্য, অথবা তাদের অস্বীকার "সম্ভব"। "প্রয়োজনীয়", "আকস্মিক", "সম্ভব" এবং "অসম্ভব" ধারণাগুলি খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত: কিছু "প্রয়োজনীয়" যদি এটি "অসম্ভব" হয় তবে এটি মিথ্যা হতে পারে, এবং কিছু "সম্ভব" যদি এর মিথ্যা "প্রয়োজনীয়" না হয়। "আকস্মিকতা" হল "প্রয়োজনীয়তা" এর অস্বীকার, এবং "অসম্ভবতা" হল "সম্ভাব্যতা" এর অস্বীকার।<br />প্রকরণ যুক্তি ধ্রুপদী যুক্তির কাঠামোর (প্রস্তাবিত যুক্তি এবং প্রেডিকেট ক্যালকুলাস) মধ্যে প্রকরণের ধারণাগুলি (প্রয়োজনীয়, সাপেক্ষিক, সম্ভব এবং অসম্ভব, অন্যান্য) অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে এবং তাই এটি ধ্রুপদী যুক্তির একটি সম্প্রসারণ।
== প্রকরণ প্রস্তাবমূলক ক্যালকুলাস ==
=== সিনট্যাক্স ===
প্রকরণ যুক্তি ধ্রুপদি যুক্তিতে তিনটি নতুন প্রতীক প্রবর্তন করে: <math>\Box</math>(প্রয়োজনীয়),<math>\Diamond</math> (সম্ভব) এবং <math>\Rightarrow</math> (যদি, তাহলে)। সূত্রগুলি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, নিম্নলিখিত নিয়মগুলি ''ক্লোজার ক্লজের আগে'' যুক্ত করা হয় (প্রস্তাবমূলক ক্যালকুলাসে [[Introduction to Philosophy/Logic/A More Formal Approach to Sentential Logic#Well-Formed_Formulae|Well-Formed Formulae]] এর নিয়মগুলি দেখুন):
<ul>
<li>যদি <math>\alpha</math> একটি সুগঠিত সূত্র হয়, তাহলে <math>\Box \alpha</math> এবং <math>\Diamond \alpha</math>ও সুগঠিত সূত্র।
<li>যদি <math>\alpha</math> এবং <math>\beta</math> সুগঠিত সূত্র হয়, তাহলে <math>\alpha \Rightarrow \beta</math>ও একটি সুগঠিত সূত্র।
</ul>
প্রকৃতপক্ষে, কেউ কেবল <math>\Box</math> অথবা <math>\Diamond</math> ব্যবহার করে প্রকরণ প্রস্তাবনামূলক ক্যালকুলাসকে স্বতঃসিদ্ধভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা <math>\Diamond</math> এবং <math>\Rightarrow</math> কে <math>\Box</math> এর পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়িত করতে চাই, তাহলে <math>\Diamond \alpha</math> কে <math>\neg \Box \neg \alpha</math> এবং <math>\Rightarrow \beta</math> এর জন্য <math>\Box (\alpha \rightarrow \beta)</math> লেখার আরেকটি উপায় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।<br />
=== অনুমানের নিয়ম ===
== গ্রন্থপঞ্জি ==
* ''হিউজেস, জি. ই.'''', এবং ''ক্রেসওয়েল, এম. জে.'''': ''মডাল লজিকের একটি ভূমিকা'', মেথুয়েন অ্যান্ড কোং লিমিটেড, লন্ডন (১৯৭২)।
* ''''হিউজ, জি. ই.'''', এবং ''''ক্রেসওয়েল, এম. জে.'''': ''আ কম্প্যানিয়ন টু মডেল লজিক'', মেথুয়েন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, লন্ডন (১৯৮৪)।
* ''স্মুলিয়ান, আর.'''': ''ফরএভার আনডিসিডেড'' (১৯৮৭)। পার্ট ৯: সম্ভাব্য বিশ্ব।
----
উপরে: [[পরিচয়_দর্শন/যুক্তিবিদ্যা|যুক্তিবিদ্যার সূচীপত্র]]
{{BookCat}}
iwcogr84wfbtq616oswhdfeu6l6ng4k
85562
85561
2025-07-02T15:49:32Z
Mehedi Abedin
7113
85562
wikitext
text/x-wiki
[[দর্শনের ভূমিকা|দর্শনের ভূমিকা]] > [[দর্শনের ভূমিকা/তর্ক|তর্ক]] > প্রকরণ যুক্তি
== প্রকরণ ==
<blockquote>''দ্য গ্রাসহপার লাইস হেভি''-এর কপিটি ধরে রবার্ট বললেন, 'এই বইটিতে কোন ধরণের বিকল্প বর্তমানের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে??'<br />কিছুক্ষণ পর বেটি বললেন, 'যে যুদ্ধে জার্মানি এবং জাপান হেরেছিল।' <br />তারা সবাই চুপ করে রইল। <br />(''ফিলিপ কে. ডিক'', ''দ্য ম্যান ইন দ্য হাই ক্যাসেল'')</blockquote>
এটি [http://en.wikipedia.org/wiki/Modal_logic প্রকরণ যুক্তির] মূল ভিত্তি: কিছু জিনিস অন্যথায়ও হতে পারত।<br />আমাদের দৈনন্দিন যুক্তিতে, আমরা 'প্রয়োজনীয়' সত্য এবং বিবৃতিগুলির মধ্যে পার্থক্য করি যা কেবল সত্য হতে পারে কিন্তু মিথ্যাও হতে পারে। আমরা বলি যে পরেরটি "আকস্মিকভাবে" সত্য, অথবা তাদের অস্বীকার "সম্ভব"। "প্রয়োজনীয়", "আকস্মিক", "সম্ভব" এবং "অসম্ভব" ধারণাগুলি খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত: কিছু "প্রয়োজনীয়" যদি এটি "অসম্ভব" হয় তবে এটি মিথ্যা হতে পারে, এবং কিছু "সম্ভব" যদি এর মিথ্যা "প্রয়োজনীয়" না হয়। "আকস্মিকতা" হল "প্রয়োজনীয়তা" এর অস্বীকার, এবং "অসম্ভবতা" হল "সম্ভাব্যতা" এর অস্বীকার।<br />প্রকরণ যুক্তি ধ্রুপদী যুক্তির কাঠামোর (প্রস্তাবিত যুক্তি এবং প্রেডিকেট ক্যালকুলাস) মধ্যে প্রকরণের ধারণাগুলি (প্রয়োজনীয়, সাপেক্ষিক, সম্ভব এবং অসম্ভব, অন্যান্য) অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে এবং তাই এটি ধ্রুপদী যুক্তির একটি সম্প্রসারণ।
== প্রকরণ প্রস্তাবমূলক ক্যালকুলাস ==
=== সিনট্যাক্স ===
প্রকরণ যুক্তি ধ্রুপদি যুক্তিতে তিনটি নতুন প্রতীক প্রবর্তন করে: <math>\Box</math>(প্রয়োজনীয়),<math>\Diamond</math> (সম্ভব) এবং <math>\Rightarrow</math> (যদি, তাহলে)। সূত্রগুলি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, নিম্নলিখিত নিয়মগুলি ''ক্লোজার ক্লজের আগে'' যুক্ত করা হয় (প্রস্তাবমূলক ক্যালকুলাসে [[Introduction to Philosophy/Logic/A More Formal Approach to Sentential Logic#Well-Formed_Formulae|সুগঠিত সূত্রের]] নিয়মগুলি দেখুন):
<ul>
<li>যদি <math>\alpha</math> একটি সুগঠিত সূত্র হয়, তাহলে <math>\Box \alpha</math> এবং <math>\Diamond \alpha</math>ও সুগঠিত সূত্র।
<li>যদি <math>\alpha</math> এবং <math>\beta</math> সুগঠিত সূত্র হয়, তাহলে <math>\alpha \Rightarrow \beta</math>ও একটি সুগঠিত সূত্র।
</ul>
প্রকৃতপক্ষে, কেউ কেবল <math>\Box</math> অথবা <math>\Diamond</math> ব্যবহার করে প্রকরণ প্রস্তাবনামূলক ক্যালকুলাসকে স্বতঃসিদ্ধভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা <math>\Diamond</math> এবং <math>\Rightarrow</math> কে <math>\Box</math> এর পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়িত করতে চাই, তাহলে <math>\Diamond \alpha</math> কে <math>\neg \Box \neg \alpha</math> এবং <math>\Rightarrow \beta</math> এর জন্য <math>\Box (\alpha \rightarrow \beta)</math> লেখার আরেকটি উপায় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।<br />
== গ্রন্থপঞ্জি ==
* ''হিউজেস, জি. ই.'''', এবং ''ক্রেসওয়েল, এম. জে.'''': ''অ্যান ইন্ট্রোডাকশন ফর মডাল লজিক'', মেথুয়েন অ্যান্ড কোং লিমিটেড, লন্ডন (১৯৭২)।
* ''''হিউজ, জি. ই.'''', এবং ''''ক্রেসওয়েল, এম. জে.'''': ''আ কম্প্যানিয়ন টু মডেল লজিক'', মেথুয়েন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, লন্ডন (১৯৮৪)।
* ''স্মুলিয়ান, আর.'''': ''ফরএভার আনডিসিডেড'' (১৯৮৭)। পার্ট ৯: সম্ভাব্য বিশ্ব।
----
উপরে: [[পরিচয়_দর্শন/যুক্তিবিদ্যা|যুক্তিবিদ্যার সূচীপত্র]]
{{BookCat}}
evm92kgukdx7h96h3vlmuw4l3rdvkj6
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)
0
27197
85575
85553
2025-07-02T17:16:06Z
Jonoikobangali
676
85575
wikitext
text/x-wiki
{| cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="width:100%; border:solid #BBBBBB 5px; background:#EEEEEE"
|-
| style="vertical-align:center" | <div style="margin-left:15px;margin-right:15px">
{{book title|বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)}}
এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সাধারণ পাঠকবর্গ ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রকাশ করা।
এই বইটিতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্বে আছে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় বাঙালির রচিত সাহিত্য ও চর্যাপদের বিবরণ। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রাক্-চৈতন্য যুগের কৃষ্ণকথা ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য, অনুবাদ কাব্য এবং মঙ্গলকাব্যের বিবরণ। তৃতীয় পর্বে চৈতন্য যুগে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চৈতন্যজীবনী কাব্যের বিবরণও। চতুর্থ পর্বে বর্ণিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও পদসংকলন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ কাব্য, শাক্ত পদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা এবং চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্যের বিবরণ।
|}
{| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE"
|}
{| width="100%" cellspacing="0" cellpadding="4" border="0" style="border:solid #BBBBBB 1px; background:#EEEEEE"
<!-- ### পর্ব ১ ### -->
|-
| style="vertical-align:top;text-align:center" | <div style="margin-top:10px"></div>
| style="vertical-align:top" | <div style="margin-right:15px"><big>'''পর্ব ১''' – প্রাচীন যুগ: দশম-দ্বাদশ শতক</big>
# [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য]]
## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা|সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষা]]
## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য|বাঙালি ও সংস্কৃত সাহিত্য]]
## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য|বাঙালি ও প্রাকৃত সাহিত্য]]
## [[/সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত বাঙালির সাহিত্য#বাঙালি ও অপভ্রংশ সাহিত্য|বাঙালি ও অপভ্রংশ সাহিত্য]]
# [[/চর্যাপদ|চর্যাপদ]]
## [[/চর্যাপদ#রচনাকাল ও গ্রন্থনাম বিচার|রচনাকাল ও গ্রন্থনাম বিচার]]
## [[/চর্যাপদ#কবি|কবি]]
### [[/চর্যাপদ#লুইপাদ|লুইপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#শবরীপাদ|শবরীপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#ভুসুকুপাদ|ভুসুকুপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#সরহপাদ|সরহপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#কাহ্নপাদ|কাহ্নপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#বিরূপপাদ|বিরূপপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#শান্তিপাদ|শান্তিপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#দারিকপাদ|দারিকপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#ডোম্বীপাদ|ডোম্বীপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#কুক্কুরীপাদ|কুক্কুরীপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#চাটিলপাদ|চাটিলপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#আর্যদেব|আর্যদেব]]
### [[/চর্যাপদ#কম্বলাম্বরপাদ|কম্বলাম্বরপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#বীণাপাদ|বীণাপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#ভাদেপাদ|ভাদেপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#মহীধরপাদ|মহীধরপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#ধামপাদ|ধামপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#কঙ্কণ|কঙ্কণ]]
### [[/চর্যাপদ#গুণ্ডরীপাদ|গুণ্ডরীপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#তাড়কপাদ|তাড়কপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#জয়নন্দী|জয়নন্দী]]
### [[/চর্যাপদ#ঢেণ্ঢণপাদ|ঢেণ্ঢণপাদ]]
### [[/চর্যাপদ#তন্ত্রীপাদ|তন্ত্রীপাদ]]
## [[/চর্যাপদ#ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব|ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব]]
## [[/চর্যাপদ#ভাষা|ভাষা]]
### [[/চর্যাপদ#সন্ধ্যাভাষা|সন্ধ্যাভাষা]]
| style="background:#CCCCEE;vertical-align:top" |
|}
===ত্রয়োদশ শতক-পঞ্চদশ শতক===
# [[/বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন|বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]]
# [[/শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা|শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ জোলেখা]]
====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত====
; রামায়ণ অনুবাদ
# [[/কৃত্তিবাস ওঝা|কৃত্তিবাস ওঝা]]
; মহাভারত অনুবাদ
# [[/কবীন্দ্র পরমেশ্বর|কবীন্দ্র পরমেশ্বর]]
# [[/শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দী]]
; ভাগবত অনুবাদ
# [[/মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়|মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়]]
====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল====
; মনসামঙ্গল
# [[/হরি দত্ত|হরি দত্ত]]
# [[/নারায়ণ দেব|নারায়ণ দেব]]
# [[/বিজয় গুপ্ত|বিজয় গুপ্ত]]
# [[/বিপ্রদাস পিপলাই|বিপ্রদাস পিপলাই]]
; চণ্ডীমঙ্গল
# [[/মানিক দত্ত|মানিক দত্ত]]
====বৈষ্ণব পদাবলি: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস====
# [[/বিদ্যাপতি|বিদ্যাপতি]]
# [[/চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাস]]
===ষোড়শ শতক থেকে মধ্য সপ্তদশ শতক===
====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, শিবায়ন ও কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর====
; মনসামঙ্গল
# [[/কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ|কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]]
# [[/ দ্বিজ বংশীদাস|দ্বিজ বংশীদাস]]
; চণ্ডীমঙ্গল
# [[/দ্বিজ মাধব|দ্বিজ মাধব]]
# [[/মুকুন্দ চক্রবর্তী|মুকুন্দ চক্রবর্তী]]
# [[/দ্বিজ রামদেব|দ্বিজ রামদেব]]
; ধর্মমঙ্গল
# [[/রামাই পণ্ডিত|রামাই পণ্ডিত]]
# [[/রূপরাম চক্রবর্তী|রূপরাম চক্রবর্তী]]
# [[/খেলারাম চক্রবর্তী|খেলারাম চক্রবর্তী]]
; শিবায়ন
# [[/রামকৃষ্ণ রায়|রামকৃষ্ণ রায়]]
; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর
# [[/দ্বিজ শ্রীধর|দ্বিজ শ্রীধর]]
====বৈষ্ণব পদাবলি====
# [[/মুরারি গুপ্ত|মুরারি গুপ্ত]]
# [[/নরহরি সরকার|নরহরি সরকার]]
# [[/শিবানন্দ সেন|শিবানন্দ সেন]]
# [[/জ্ঞানদাস|জ্ঞানদাস]]
# [[/গোবিন্দদাস|গোবিন্দদাস]]
# [[/বাসুদেব ঘোষ|বাসুদেব ঘোষ]]
# [[/রামানন্দ বসু|রামানন্দ বসু]]
# [[/বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়|বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়]]
# [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]]
# [[/যদুনন্দন দাস|যদুনন্দন দাস]]
# [[/মাধবদাস|মাধবদাস]]
# [[/অনন্ত দাস|অনন্ত দাস]]
====চরিতকাব্য====
# [[/বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত|বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত]]
# [[/লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল|লোচন দাসের চৈতন্যমঙ্গল]]
# [[/জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল|জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল]]
# [[/কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত|কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত]]
# [[/গোবিন্দদাসের কড়চা|গোবিন্দদাসের কড়চা]]
# [[/চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়|চূড়ামণি দাসের গৌরাঙ্গ বিজয়]]
====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত====
; রামায়ণ
# [[/অদ্ভুতাচার্য|অদ্ভুতাচার্য]]
# [[/চন্দ্রাবতী|চন্দ্রাবতী]]
; মহাভারত
# [[/কাশীরাম দাস|কাশীরাম দাস]]
; ভাগবত
# [[/রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী|রঘুনাথের শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিনী]]
# [[/মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল|মাধবাচার্যের শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল]]
# [[/দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল|দুঃখী শ্যামদাসের গোবিন্দমঙ্গল]]
===মধ্য সপ্তদশ শতক—অষ্টাদশ শতক===
====বৈষ্ণব পদাবলি====
# [[/প্রেমদাস|প্রেমদাস]]
# [[/রাধামোহন ঠাকুর|রাধামোহন ঠাকুর]]
# [[/চন্দ্রশেখর|চন্দ্রশেখর]]
=====বৈষ্ণব পদসংকলন=====
# [[/ক্ষণদাগীতচিন্তামণি|ক্ষণদাগীতচিন্তামণি]]
# [[/গীতচন্দ্রোদয়|গীতচন্দ্রোদয়]]
# [[/গৌরচরিতচিন্তামণি|গৌরচরিতচিন্তামণি]]
# [[/পদামৃতসমুদ্র|পদামৃতসমুদ্র]]
# [[/পদকল্পতরু|পদকল্পতরু]]
====মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর ও শিবায়ন====
; মনসামঙ্গল
# [[/তন্ত্রবিভূতি|তন্ত্রবিভূতি]]
# [[/জগজ্জীবন ঘোষাল|জগজ্জীবন ঘোষাল]]
# [[/জীবন মৈত্র|জীবন মৈত্র]]
; ধর্মমঙ্গল
# [[/রামদাস আদক|রামদাস আদক]]
# [[/সীতারাম দাস|সীতারাম দাস]]
# [[/যাদুনাথ বা যাদবনাথ|যাদুনাথ বা যাদবনাথ]]
# [[/শ্রীশ্যাম পণ্ডিত|শ্রীশ্যাম পণ্ডিত]]
# [[/ঘনরাম চক্রবর্তী|ঘনরাম চক্রবর্তী]]
# [[/মানিক গাঙ্গুলী|মানিক গাঙ্গুলী]]
; অন্নদামঙ্গল
# [[/ভারতচন্দ্র রায়|ভারতচন্দ্র রায়]]
; কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর
# [[/কৃষ্ণরাম দাস|কৃষ্ণরাম দাস]]
# [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]]
# [[/বলরাম চক্রবর্তী|বলরাম চক্রবর্তী]]
; শিবায়ন
# [[/রামেশ্বর ভট্টাচার্য|রামেশ্বর ভট্টাচার্য]]
====অনুবাদ কাব্য: রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত====
; রামায়ণ
# [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]]
# [[/জগৎরাম রায়|জগৎরাম রায়]]
# [[/রামানন্দ ঘোষ|রামানন্দ ঘোষ]]
; মহাভারত
# [[/দ্বৈপায়ন দাস|দ্বৈপায়ন দাস]]
# [[/নন্দরাম দাস|নন্দরাম দাস]]
# [[/গঙ্গাদাস সেন|গঙ্গাদাস সেন]]
; ভাগবত
# [[/শঙ্কর কবিচন্দ্র|শঙ্কর কবিচন্দ্র]]
# [[/বলরাম দাস|বলরাম দাস]]
# [[/দ্বিজ মাধবেন্দ্র|দ্বিজ মাধবেন্দ্র]]
# [[/দ্বিজ রমানাথ|দ্বিজ রমানাথ]]
====শাক্ত পদাবলি====
# [[/রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেন]]
# [[/কললাকান্ত ভট্টাচার্য|কমলাকান্ত ভট্টাচার্য]]
# [[/অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা|অন্যান্য শাক্ত পদকর্তা]]
====নাথ সাহিত্য====
# [[/নাথ সাহিত্য|নাথ সাহিত্য]]
====ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা====
# [[/ময়মনসিংহ গীতিকা|ময়মনসিংহ গীতিকা]]
# [[/পূর্ববঙ্গ গীতিকা|পূর্ববঙ্গ গীতিকা]]
====চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য====
# [[/চট্টগ্রাম-রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য|চট্টগ্রাম রোসাঙের রোম্যান্টিক প্রণয়কাব্য]]
{{বিষয়|বাংলা সাহিত্য}}
{{বর্ণানুক্রমিক|ব}}
{{বিষয়|সাহিত্য}}
{{বইয়ের বিষয়শ্রেণী}}
nayc62fpdo3ilkjsyqv67zf7u0e3w5n
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)/চর্যাপদ
0
27231
85572
85552
2025-07-02T17:11:49Z
Jonoikobangali
676
/* ভাষা */
85572
wikitext
text/x-wiki
বিশ শতকের গোড়ায় চর্যাপদের আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চর্যাপদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্রাচীন বাংলার এক অমূল্য লুপ্ত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কৃতিত্ব প্রাচ্যবিদ্যার বিশিষ্ট গবেষক মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর। কিন্তু তাঁর ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' পুথি আবিষ্কারের পিছনে বাঙালির প্রাচীন সংস্কৃতি চর্চার একটি ইতিহাস আছে। উনিশ শতকে বাংলায় যে নবজাগরণ ঘটেছিল, তার অন্যতম বৈশিষ্ট্যই ছিল দেশের অতীত ইতিহাসের ভাবসম্পদ পুনরুদ্ধার ও তার নবমূল্যায়ন। এর সূচনা ঘটেছিল ১৭৮৪ সালে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। প্রথম দিকে কেবল ইউরোপীয় গবেষকেরাই প্রাচীন ভারতের লুপ্ত সম্পদ উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। যেমন, বি. এইচ. হজসন ও ড্যানিয়েল রাইট উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নেপাল থেকে কিছু প্রাচীন পুথি উদ্ধার করে ইউরোপের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেরণ করেন, যার ফলে ইউরোপীয় গবেষকেরা ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চায় উৎসাহী হয়ে উঠতে শুরু করেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালি গবেষকেরাও এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গবেষক রাজেন্দ্রলাল মিত্র নেপালে গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় রচিত কিছু পুথি উদ্ধার করে আনেন এবং ''দ্য সংস্কৃত বুদ্ধিস্ট লিটারেচার ইন নেপাল'' (১৮৮২) শীর্ষক পুস্তিকায় সেগুলির নাম প্রকাশ করেন। ১৮৯২ সালে শরৎচন্দ্র দাসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বুদ্ধিস্ট টেক্সট সোসাইটি। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর প্রাচীন পুথি উদ্ধারের ভার গ্রহণ করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। ১৮৯৭ ও ১৮৯৮ সালে নেপালে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম-বিষয়ক কয়েকটি সংস্কৃত পুথি তিনি কলকাতায় নিয়ে আসেন। এরপর ১৯০৭ সালে তৃতীয়বার নেপাল যাত্রা করে তিনি নেপালের রাজদরবারের পুথিশালা থেকে আবিষ্কার করেন চর্যাপদের প্রাচীন পুথি ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'', সরহপাদের ''দোহাকোষ'' ও কাহ্নপাদের ''দোহাকোষ''। এই তিনটি পুথির সঙ্গে পূর্বাবিষ্কৃত ''ডাকার্ণব'' পুথিটিকে যুক্ত করে শাস্ত্রী মহাশয় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ''হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা'' গ্রন্থটি। ভূমিকায় তিনি চারটি পুথির ভাষাকেই বাংলা বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ভাষাতাত্ত্বিকেরা কেবল চর্যাগীতিগুলির ভাষাকেই বাংলা বলে স্বীকৃতি দেন। সেই দিক থেকে প্রাচীনতম বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্যিক নিদর্শন হল এই চর্যাপদ।
চর্যাপদের পুথি তালপাতায় লেখা হয়েছিল। নেপাল থেকে আনা পুথি আবার রাজদরবারে ফেরত দেওয়ার আগে শাস্ত্রী মহাশয় সেটির অনেকগুলি ফোটোকপি করে নিয়েছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, তালপাতার উভয় পৃষ্ঠাতেই পদগুলি লেখা হয়েছে। প্রতি পৃষ্ঠায় আছে পাঁচটি করে টানা লাইন। মাঝখানে সামান্য একটু ফাঁক, সম্ভবত সেখানে ফুটো করে সুতো বা ওই জাতীয় কিছু পরাবার জন্য। পাতাগুলি সংখ্যাযুক্ত এবং সংখ্যাটি লিখিত পাতার শেষ পৃষ্ঠায়। এইভাবে প্রাপ্ত পুথির শেষ পাতার অঙ্ক ৬৯। কিন্তু তার পরেও যে পুথি বাকি ছিল তার প্রমাণ ওই পাতার পদটি অসমাপ্ত থেকে যাওয়ায়। শুধু শেষ পাতা নয়, মাঝের ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮ ও ৬৬ সংখ্যক পাতাগুলিও পাওয়া যায়নি। লুপ্ত পাতা বাদে প্রাপ্ত পুথিটি মোট ৬৪ পৃষ্ঠার। পুথিটিতে আরও একধরনের ক্রমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি মোট পদের সংখ্যা নির্দেশক। বলা বাহুল্য, লুপ্ত পাতার পদগুলি পাওয়া যায়নি। এই রকম অপ্রাপ্ত পদের সংখ্যা সাড়ে তিনটি। শেষ পাতার যে পদসংখ্যা পাওয়া যায় সেটি ৪৯। সেখানেই শুরু হয়েছে ৫০ সংখ্যক পদটি, যার বাকি অংশ লুপ্ত পাতার সঙ্গেই হারিয়ে গিয়েছে। মুনিদত্তের টীকার সূত্রে জানা যায়, কোনও একটি শতপদী সংকলন থেকে অর্ধেক সংখ্যক পদ নিয়ে সেটির টীকা রচনার উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অর্থাৎ চর্যার পুথিটি ছিল মোট ৫০টি পদের সংকলন। সাড়ে তিনটি পদ না পাওয়ায় প্রাপ্ত পদের সংখ্যা এখানে সাড়ে ছেচল্লিশ। অবশ্য পরবর্তীকালে এই গ্রন্থের তিব্বতি অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে। অনুবাদক ছিলেন কীর্তিচন্দ্র। সেই পুথিটি অক্ষত। তার থেকে লুপ্ত সাড়ে তিনটি পদের বিষয় ও তার ব্যাখ্যা জানা গিয়েছে।
টীকার পুথিটি সংকলনে একটি বিশেষ রীতি অবলম্বিত হয়েছে। এখানে একই সঙ্গে মূল গান ও তার টীকা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত টীকার পুথিতে মূল গান সম্পূর্ণ উদ্ধৃত হয় না। কিন্তু এখানে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। সমগ্র পদ উদ্ধৃত করে টীকাকার পরে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদগুলি বাংলা ভাষায় লেখা, টীকার ভাষা সংস্কৃত। টীকার নাম ''নির্মলগিরা টীকা''। টীকাকারের নাম মুনিদত্ত। গানগুলি একক পদকর্তার নয়, বিভিন্ন জনের রচনা। প্রত্যেকটি পদের সূচনায় রাগের উল্লেখ ও পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। তারপর দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ পদটি। সব শেষে রয়েছে তার ব্যাখ্যা বা টীকা। টীকার পরে আছে গানের ক্রমিক সংখ্যা। অবশ্য গ্রন্থসূচনার পদটিতে একটু ভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষিত হয়। প্রথমে নমস্ক্রিয়ার পর সদ্গুরু বন্দনা ও বস্তুনির্দেশ, তারপর “কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল” পদটির দ্বারা মূল চর্যাগীতির আরম্ভ। তারপর গানটির রাগের উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য ধরনের ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন, ৯ সংখ্যক পদে চর্যাকারের নাম উল্লিখিত হয়নি, যদিও গানের মাঝে ভণিতা থেকে জানা যায় এটি কাহ্নপাদের রচনা। ১০ সংখ্যক চর্যার পরে টীকাকার বা লিপিকর লিখে রেখেছেন, “লাড়ীডোম্বীপাদানাম্ সূনেত্যাদি। চর্য্যায়া ব্যাখ্যা নাস্তি।” অর্থাৎ এখানে অপেক্ষিত ব্যাখ্যাটি নেই। তাছাড়া মূল গানগুলির পাঠ ও টীকায় উদ্ধৃত অংশগুলির পাঠে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। তাই কোনও কোনও গবেষক মনে করেন, মূল গান সংকলন ও তার টীকা রচনা দুই স্বতন্ত্র ব্যক্তির কাজ। আবার কেউ কেউ অনুমান করেন, মুনিদত্তের টীকা পরে কারও দ্বারা পরিমার্জিত হয়েছিল। সেই পরবর্তী সংস্কার-কর্তাও অন্য কোনও গীতিসংগ্রহ থেকে মূল গানগুলিকে নিয়ে ব্যাখ্যার আগে সংযোজিত করে থাকতে পারেন। টীকারম্ভের প্রথম বাক্যটি রচনা এবং গানের সূচনায় কবি ও রাগরাগিণীর নামের উল্লেখ সম্ভবত এই সংস্কার-কর্তারই কাজ। পুথির পাঁচটি পাতা হারিয়ে যাওয়ায় ২৩ সংখ্যক গানের ছটি চরণ এবং ২৪, ২৫ ও ৪৮ সংখ্যক গান সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ২৩ ও ২৪ সংখ্যক গানের সম্পূর্ণ টীকা এবং ২৫ সংখ্যক গানের টীকার প্রথমাংশটিও সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে ৪৭ সংখ্যক গানের ব্যাখ্যার সামান্য অংশ হারিয়ে গিয়েছে এবং ৪৮ সংখ্যক গানের শেষ পদটির ব্যাখ্যা ছাড়া গান সহ সমগ্র টীকাটিই লুপ্ত। তিব্বতি অনুবাদটির আবিষ্কারক ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী গানগুলি সংস্কৃত ভাষায় রূপান্তরিত করেছিলেন। পরে তিব্বতি অনুবাদের ছায়া অনুসরণে ড. সুকুমার সেন লুপ্ত গানগুলির সম্ভাব্য রূপ পুনর্গঠন করে তাঁর সম্পাদিত ''চর্যাগীতি পদাবলী'' গ্রন্থে প্রকাশ করেন।
==রচনাকাল ও গ্রন্থনাম বিচার==
১৯১৬ সালে ''হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা'' গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর নানা বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। ফলে অনেক রকম বিতর্ক সৃষ্টি হয়। চর্যাগীতির ভাষা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যেমন মতান্তর ছিল, তেমনই এগুলির রচনাকাল ও প্রাপ্ত পুথির প্রকৃত নাম নিয়েও ছিল নানা সংশয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দাবি করেছিলেন, গানগুলির রচনাকাল খ্রিস্টীয় দশম শতক এবং সেই কারণেই সম্পাদিত গ্রন্থের নামে তিনি ‘হাজার বছরের পুরাণ’ এই সময়-জ্ঞাপক বিশেষণটি জুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সকলে সেই কথা নিঃসন্দিগ্ধভাবে মেনে নিতে চাননি। সামগ্রিক দৃষ্টিতে চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে দুটি প্রশ্ন ওঠে। প্রথম প্রশ্ন, চর্যার মূল গানগুলি কোন সময়ে লেখা হয়েছিল? এবং দ্বিতীয় প্রশ্ন, টীকা-সম্বলিত যে সংগ্রহটি পাওয়া গিয়েছে, সেটিই বা কোন সময়ে লেখা হয়? মুনিদত্তের টীকা অনুসারে বলা যায়, গানগুলি আগে লেখা হয়েছিল এবং পরে তার থেকে কয়েকটি গান বেছে নিয়ে সেগুলির ব্যাখ্যা রচিত হয়। তাই প্রথম প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হবে দুটি প্রশ্নের নিরিখে। প্রথমত, চর্যাকারেরা কবে আবির্ভূত হন? এবং দ্বিতীয়ত, ভাষাতত্ত্বের নিরিখে চর্যায় প্রাপ্ত ভাষার জন্ম কোন সময়ে? বিভিন্ন গবেষক এই দুই বিষয়ে কিছু আলোকপাত করেছেন।
ইতিহাস-বিস্মৃত জাতির বাস্তব ঐতিহাসিক সকল ঘটনারই লিখিত ইতিহাস পাওয়া সম্ভব নয়। এই কারণেই চর্যাপদ, চর্যাপদের কবিগণ, তাঁদের জন্ম ও মৃত্যু এবং সেই সংক্রান্ত তারিখ-যুক্ত কোনও তথ্য পাওয়া কঠিন। তাই জনশ্রুতি, কল্পকাহিনি ও লোকপরম্পরাগত ঐতিহ্য সত্যাসত্য নির্বিশেষে সেই শূন্যস্থান ভরিয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। চর্যাকারেরা নিছক কবি বা গীতিকার ছিলেন না, ছিলেন বৌদ্ধধর্মের এক বিশেষ ধারার সাধক। সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে তাঁর খ্যাত হয়েছিলেন সিদ্ধাচার্য নামে। তাঁদের নিয়ে তাই নানা অলৌকিক জনশ্রুতি ছড়িয়ে পড়েছিল। সেগুলি সংগ্রহ করে পরবর্তীকালে কিছু গ্রন্থও রচিত হয়। সুম্পাখন্পো-র ''Pag Sam Jon Zang'' ও লামা তারানাথের ''Khabad Dun Dan'' হল তিব্বতি ভাষায় লেখা এই সংক্রান্ত দুটি গ্রন্থ। ভারতেও সিদ্ধাচার্যদের নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত ছিল। ভারতে যোগী সিদ্ধসাধকদের আবির্ভাব ঘটে। নাথপন্থা ও সহজযান বৌদ্ধধর্মের মধ্যে যে তাত্ত্বিক এবং দেহসাধনা ও যোগাচারকেন্দ্রিক ক্রিয়াকাণ্ডগুলির আদান-প্রদান ঘটেছিল তার অজস্র প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। দেহসাধনা এই উভয় মতেরই ভিত্তিস্বরূপ। নাথপন্থীদের সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের নাম পাওয়া যায়। ‘চৌরাসী সিদ্ধ’ অর্থাৎ চুরাশিজন সিদ্ধাচার্যেরা মধ্যে ছিয়াত্তর জনের নাম পাওয়া যায় চতুর্দশ শতকের মৈথিল কবি জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থে। এছাড়া তন্ত্রগ্রন্থ ''কৌলজ্ঞাননির্ণয়'' এবং নাথপন্থীদের গুরুশিষ্য-পরম্পরা সম্পর্কিত গ্রন্থাদিতেও সিদ্ধাচার্যেরা কথা অল্পবিস্তর বর্ণিত হয়েছে। ড. জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী তাঁর ''চর্যাগীতির ভূমিকা'' গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, জনশ্রুতিগুলি যে সব ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রসূত নয়, তার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে এই লোকপরম্পরাগত ঐতিহ্যের মিল যথেষ্টই আছে।
চর্যাগীতির রচনাকাল বিষয়ে তিনজন বিশিষ্ট গবেষক তিনটি পৃথক মত প্রকাশ করেছেন। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ''দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ'' গ্রন্থে বিভিন্ন সম্ভাব্য যুক্তি প্রদর্শন করে মন্তব্য করেছেন, “The period 950-1200 A.D. would thus seem to be a reasonable date to give to these poems.” অর্থাৎ তাঁর মতে দশম শতকের মধ্যভাগ থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়কালে চর্যাগীতিগুলি রচিত হয়েছিল। সময় নির্ধারণে তিনি আদি সিদ্ধাচার্য লুইপাদ ও শেষ সিদ্ধাচার্য কাহ্নপাদের জীবৎকালকে প্রমাণস্বরূপ ধরেছেন। এই দুই কবির জীবনেতিহাস স্পষ্ট নয়। কিংবদন্তিই এক্ষেত্রে মুখ্য আশ্রয়। সিদ্ধাচার্যদের একটি গুরুশিষ্য-পরম্পরা ছিল। তিব্বতি ঐতিহ্যে লুইপাদ প্রথম গুরু বা আদি সিদ্ধাচার্য। মুনিদত্তের টীকাতেও লুইপাদকে সেই সম্মান জানিয়ে বলা হয়েছে “শ্রীলূয়ীচরণাদিসুদ্ধ রচিতেঽপ্যাশ্চর্য্যচর্য্যাচয়ে…” এবং তাঁর পদ দিয়েই গ্রন্থারম্ভ করা হয়েছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন যে, বাঙালি বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান লুইপাদের ''অভিসময়বিহঙ্গ'' গ্রন্থ রচনায় সাহায্য করেছিলেন। দীপঙ্কর ১০৩৮ সালে বিক্রমশীলা বিহার থেকে তিব্বতি যাত্রা করেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৫৮। সেই হিসেবে লুইপাদের আবির্ভাবকাল তাঁর মতে দশম শতকের মাঝামাঝি। অন্যদিকে ঐতিহ্য অনুসারে কাহ্নপাদ ছিলেন জালন্ধরীপাদের শিষ্য। কাহ্নপাদ রচিত ৩৬ সংখ্যক চর্যাগীতিটিতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কাহ্নপাদ চর্যাগীতি ছাড়াও আরও অনেক গ্রন্থ রচনা করেন, যেগুলির মধ্যে অন্যতম ''হেবজ্রপঞ্জিকাযোগরত্নমালা''। এই গ্রন্থটির অনুলিপির কাল জানা গিয়েছে। রাজা গোবিন্দপালের ৩৯ রাজ্যাঙ্ক অর্থাৎ ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটির অনুলিপি করা হয়। তাই সুনীতিকুমার দ্বাদশ শতককেই চর্যাগীতির সময়সীমা ধরতে চান। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই গবেষকেরা বিরুদ্ধ যুক্তি দিয়েছেন। তাঁদের মতে, দীপঙ্কর সম্পর্কে শাস্ত্রী মহাশকের উক্ত তথ্যের তেমন কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। পি. কর্ডিয়ার ''তেঙ্গুর'' গ্রন্থমালার যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে লুইপাদ ও দীপঙ্কর উভয়ের নামেই ''অভিসময়বিহঙ্গ'' গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। আসলে লুইপাদের এই গ্রন্থটি এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ রচনা, যা অন্যান্য বৌদ্ধ পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ''তেঙ্গুর'' তালিকা থেকে জানা যায় যে, কম্বলাম্বরপাদ, প্রজ্ঞারক্ষিত, সুমতিকীর্তি, প্রভাকরগুপ্ত, রত্নবজ্র, দানশীল, বিভূতিচন্দ্রের ন্যায় অসংখ্য বৌদ্ধ পণ্ডিত এই গ্রন্থটির উপর নানা সময়ে বৃত্তি, ক্রম, মঞ্জরী, টীকা ইত্যাদি রচনা করেন। দীপঙ্করের নাম এভাবেই উল্লিখিত হতে পারে। তিনি লুইপাদকে সরাসরি গ্রন্থরচনায় সাহায্য করেননি, বরং লুইপাদের গ্রন্থটির অনুবাদ করেছিলেন মাত্র। অন্যদিকে কাহ্নপাদের গ্রন্থটির অনুলিপির কাল ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দ স্থিরীকৃত হলেও অনুলিপির সময় যে লেখকের জীবৎকালের কাছাকাছি হবেই এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। ষোড়শ শতকের কোনও গ্রন্থের অনুলিপি অষ্টাদশ শতকেও হতে দেখা গিয়েছে। এইসব বিরুদ্ধ যুক্তির বলে সুনীতিকুমারের সিদ্ধান্ত অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
দ্বিতীয় মতের প্রবক্তা হিন্দিভাষী পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন। তিনি ''দোহাকোষ''-এর ভূমিকায় লিখেছেন যে, সিদ্ধাচার্যেরা আবির্ভূত হয়েছিলেন অষ্টম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে। তিনি আরও মনে করেন যে, লুইপাদ নন, আদি সিদ্ধাচার্য ছিলেন রাহুলভদ্র সরহপাদ, যিনি বৌদ্ধ আচার্য শান্তরক্ষিতের সমসাময়িক ছিলেন। শান্তরক্ষিত ভোট সম্রাট খি স্রোঙ দে চন্-এর রাজত্বকালে (৭৫৫—৭৮০ খ্রিস্টাব্দ) রাজার আহ্বানে তিব্বতে গিয়েছিলেন। আর-একটি প্রমাণ হল, সরহপাদের শিক্ষক ছিলেন নালন্দার পণ্ডিত ধর্মকীর্তি, যিনি শান্তরক্ষিতের শিষ্য এবং গৌড়াধিপতি ধর্মপালের (রাজত্বকাল ৭৭০—৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) বন্ধু। এইসব তথ্যের ভিত্তিতে সরহপাদকে অষ্টম শতকের ব্যক্তি বলে গণ্য করা চলে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, লুইপাদ ছিলেন সরহপাদের প্রশিষ্য—সরহপাদের শিষ্য শবরপাদ, তাঁর শিষ্য লুইপাদ। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী কর্তৃক ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত ''জার্নাল অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট অফ লেটারস'' (২৮শ খণ্ড) থেকে জানা যায় যে, সরহপাদের দোহাগুলি ‘বিনষ্ট-প্রণষ্ট’ (‘বিণট্ঠা-পণট্ঠা-পউ’) হতে দেখে দিবাকর চন্দ নামে এক পণ্ডিত ২২১ নেপাল সম্বৎ অর্থাৎ ১১০১ খ্রিস্টাব্দে সেগুলি একটি পুথিতে সংকলিত করেন: “সমস্তো জহালব্ধা দোহাকোসো এসো সংহহিত্ত… পণ্ডিত সিরি দিবাকর চন্দেনেত্তি। সম্বৎ ২২১ শ্রাবণ শুক্লপূর্ণমাস্যাং।” এই বিষয়টিও পরোক্ষে প্রমাণ করে যে সরহপাদ খুব প্রাচীন সময়ের কবি; নইলে দ্বাদশ শতকের সূচনাতেই তাঁর ''দোহাকোষ'' বিনষ্ট হতে পারে না।
তৃতীয় মতটি দিয়েছেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর মতে চর্যাপদ রচনার সূচনা সপ্তম শতকে। এই মতের ব্যাখ্যায় তিনি ২১ সংখ্যক গানের টীকায় মুনিদত্ত মীননাথের লেখা একটি গানের কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছেন: “কহন্তি গুরু পরমার্থের বাট।/ কর্মকূরঙ্গ সমাধিকপট।।” মীননাথ নাথগুরুদের অন্যতম এবং উদ্ধৃত অংশটি লেখা হয়েছে আদি স্তরের বাংলা ভাষায়। মীননাথই মৎস্যেন্দ্রনাথ নামে পরিচিত। ড. শহীদুল্লাহ এঁকেই লুইপাদ বলে ধরেছেন। ফারসি গবেষক সিলভ্যাঁ লেভি ''লে নেপাল'' (১ম খণ্ড) গ্রন্থে বলেছেন, মৎস্যেন্দ্রনাথ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে রাজা নরেন্দ্রদেবের রাজত্বকালে নেপালে গিয়েছিলেন। ড. শহীদুল্লাহ এই তথ্যের ভিত্তিতে চর্যাগীতির সূচনাকাল ধরেছেন সপ্তম শতককে। তবে এই মত মানতে গেলে ভাষাতাত্ত্বিকদের ভাষার বিবর্তন-সংক্রান্ত আলোচনাকে অগ্রাহ্য করতে হয়। সপ্তম শতক অপভ্রংশ ভাষারই কাল। খ্রিস্টীয় নবম শতক নাগাদ এই ভাষা থেকেই বাংলার মতো নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির উদ্ভব ঘটেছিল।
চর্যাপদের কালনির্ণয়ে গৌড়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটিও বিবেচ্য। এমনকি যে সময়ে মহাযানী বৌদ্ধধর্ম তন্ত্রের প্রভাবে মন্ত্রনয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে বজ্রযান, কালচক্রযান ও সহজযানে পরিণত হল, সেটিও আলোচনা করা কর্তব্য। সেই সঙ্গে কেউ কেউ আর-একটি বাহ্য প্রমাণ উপস্থিত করেছেন। সেটি হল প্রাচীন বাংলা সংগীত-বিষয়ক গ্রন্থের সাক্ষ্য। বিষয়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। চর্যাপদ বৌদ্ধধর্মের সাধন-সংক্রান্ত গীতিগুচ্ছ হলেও তাতে বিশুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়নি। চর্যাগীতির মূল অবলম্বন মহাযানী বৌদ্ধধর্মের এক বিশেষ বিকারগ্রস্থ রূপ। এই বিকৃতি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর চারটি বৌদ্ধসংগীতি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মতান্তর সূচিত করেন। পরিণামে বৌদ্ধসমাজ হীনযান ও মহাযান নামে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হীনযানীরা পরে সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক উপদলে বিভক্ত হয়ে যান। দার্শনিক মতভেদের কারণে মহাযানীরাও মাধ্যমিক ও যোগাচার শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই যোগাচার মতের উদ্ভব খ্রিস্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতকে। সপ্তম শতক পর্যন্ত উত্তর ভারতে বৌদ্ধ দার্শনিকদের মধ্যে মাধ্যমিক ও যোগাচার মত বিশেষ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল। এরপর অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্ট বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে বৈদিক তথা পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্যধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হলেন। শঙ্করাচার্যের অদ্বৈত বেদান্ত ও কুমারিল ভট্টের পূর্ব মীমাংসা দর্শনের চাপে বৌদ্ধধর্ম কোণঠাসা হয়ে পড়ল। অবস্থার সঙ্গে সামাল দিতে গিয়ে মহাযানী বৌদ্ধধর্মে হিন্দু পুরাণের দেবদেবীদের অনুরূপ নানা দেবদেবীর আবির্ভাব ঘটল এবং ব্রাহ্মণ্য তান্ত্রিক রহস্যাচার গ্রাস করে ফেলল যোগাচারীদের। তন্ত্রের প্রভাবে দেহসাধনা-নির্ভর বৌদ্ধধর্ম কথিত হল ‘মন্ত্রযান’ নামে, যার শেষ পরিণতি বজ্রযান, কালচক্রযান ও সহজযান। চর্যাগীতিতে এই শেষোক্ত তিনটি মতেরই ছায়া লক্ষ্য করা যায়। এসব ঘটতে কমপক্ষে এক শতাব্দীর কেটে যাওয়ার কথা। তাই বলা চলে, নবম শতকের আগে মহাযানী বৌদ্ধধর্মে এই বিকৃতি ঘটেনি। নতুন তত্ত্ব ও সেই অনুযায়ী আচার-সংস্কার গড়ে উঠলে নবদীক্ষিতদের কাছে এর রহস্যময়তা তথা গূঢ় তাৎপর্য ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন সিদ্ধাচার্যেরা। তাঁদের রচনার ভাষা আলো-আঁধারি সন্ধ্যাভাষা বা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট অভিপ্রায়কেই ব্যক্ত করার জন্য বিশেষ প্রযত্নে নির্মিত ভাষা। যৌনাচার-ভিত্তিক এই যোগসাধনপ্রণালী অন্যের কাছে প্রকাশ করতে সম্ভবত তাঁরা কুণ্ঠিত ছিলেন। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দিক থেকেও এই সময়টি ছিল বেশ অনুকূল। বাংলার সিংহাসনে তখন আসীন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল সম্রাটেরা। এই অনুকূল পরিবেশে বসে বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা অসংখ্য গ্রন্থ ও পদ রচনা করেন। তাঁদের রচিত অধিকাংশ পদের ভাষা নবসৃজ্যমান বাংলা ভাষা এবং টীকা ও ভাষ্যের মাধ্যম ছিল সংস্কৃত বা বৌদ্ধ-সংস্কৃত। অতএব সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কালে চর্যার মূল গানগুলি রচিত হয়েছিল।
এবার মুনিদত্তের টীকাগ্রন্থটির কাল অনুসন্ধান করা যাক। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটি যে বেশ পরবর্তীকালে লিখিত, তা গ্রন্থের বিষয় ও লিপির আদর্শ থেকেই স্পষ্ট। চর্যাগীতিগুলি তত্ত্বের বাহক। কিন্তু সেগুলি এমনই আভিপ্রায়িক বচনে পরিপূর্ণ যে, দীক্ষিত ব্যক্তিদের কাছেও তা দুর্বোধ্য ছিল। তত্ত্ব ও সাংকেতিকতার দুরূহতার জন্য এগুলির ব্যাখ্যার প্রয়োজন দিল। মুনিদত্তই সেই অগ্রণী বৌদ্ধ পণ্ডিত যিনি একশোটি চর্যার একটি গীতিগুচ্ছ থেকে অর্ধেক পদ নিয়ে সেগুলির ব্যাখ্যায় অগ্রসর হলেন। বিশ্বভারতী প্রকাশিত ''চর্যাগীতিকোষ'' গ্রন্থে আছে: “তত্রাহৃতানাং চ বিচারিতানাং চর্যাশতেনাহৃত গীতিকানাম্। সত্ত্বৈস্তু সংবোধি বিচারাণার্থং কোষং বুধাঃ সংরচয়াংবভূবঃ।।” মূল গানগুলি রচিত হওয়ার অনেক পরে যে মুনিদত্তের টীকা লিখিত হয়েছিল, তার প্রমাণ পুথিতে উদ্ধৃত গীতিগুলির পাঠভেদ। এই বিষয়ে ড. সত্যব্রত দেব লিখেছেন, “মূল গীতিরচনার যুগ হইতে টীকা বা অনুলিপি রচনার যুগ পর্যন্ত মধ্যবর্তীকালে এই জনপ্রিয় গীতিগুলি নিশ্চয়ই গায়কদের মুখে মুখে এবং/অথবা লিপিকরদের অনুলিপির মাধ্যমে প্রচারিত ছিল। সুতরাং মূল রচনার সময়কার রূপ হইতে চর্যাগীতিগুলির ভাষা পরিবর্তিত হওয়াই স্বাভাবিক, যেমনভাবে মধ্যযুগের অনেক জনপ্রিয় সাহিত্যকৃতির ভাষা বিকৃত হইয়া গিয়াছে।” লিপির আদর্শ বিচার করে পুথির কালনির্দেশের ক্ষেত্রে লিপিবিশারদদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা যায়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে পুথির লিপিকাল দ্বাদশ শতক, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতক, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে চতুর্দশ শতকের পরবর্তী সময়, ড. সুকুমার সেনের মতে চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতক এবং তারাদাস মুখোপাধ্যায়ের মতে দ্বাদশ শতকের শেষার্ধ। মুনিদত্তের আবির্ভাবকাল জানা যায়নি। অতএব এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমান-নির্ভর হতে বাধ্য। খুব সম্ভবত, চতুর্দশ শতকের কিছু আগে বা পরে কোনও এক সময়ে মুনিদত্তের মূল গ্রন্থটির অনুলিপি করা হয়েছিল। প্রাপ্ত পুথিটি যে টীকাকারের স্বহস্তে লিখিত তারও কোনও উপযুক্ত প্রমাণ নেই। বরং গানগুলির পাঠভেদ থেকে অনুমিত হয় যে, গানগুলি গায়কদের মুখে মুখে কম-বেশি পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কোনও ব্যক্তি মূল পুথির অনুলিপি করেছিলেন।
চর্যাপদের রচনাকালের ন্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটির গ্রন্থ নিয়েও গবেষকেরা আজ পর্যন্ত কোনও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি। প্রাপ্ত পুথিটির মলাটের পাতা ও শেষে পুষ্পিকার পাতা পাওয়া যায়নি বলে প্রকৃত তথ্য অজ্ঞাতে থেকে গিয়েছে। শাস্ত্রী মহাশয় তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের যে নামকরণ করেছেন তা স্পষ্টতই বিষয়-নির্দেশক অভিধা, যা একই সঙ্গে সময়কেও ইঙ্গিত করছে। নাম মাত্রেই বিশেষ্য, সেখানে এই ধরনের বিশেষণের প্রয়োগ অর্থ-ব্যঞ্জনার সূক্ষ্মতার পক্ষে ক্ষতিকারক। শাস্ত্রী মহাশয় অবশ্য বিকল্প একটি নাম দিয়েছিলেন ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। এই নামটির উৎস জানা যায়নি। পুথির কোথাও এই নামটি নেই। এটি সম্পাদকের স্ব-নির্ধারিত নাম হতে পারে, তবে একান্তই যে তাঁর স্ব-উদ্ভাবিত নাম নয়, তার প্রমাণ অদ্বয়বজ্রের ''প্রজ্ঞোপায়বিনিশ্চয়সিদ্ধ'' নামের গ্রন্থটি। টীকাগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধ গ্রন্থগুলির নামের সঙ্গে এই ‘বিনিশ্চয়’ শব্দটি যুক্ত থাকত। প্রাপ্ত পুথিটিও একটি টীকাগ্রন্থ। মুনিদত্ত বাংলা ভাষায় লেখা পঞ্চাশটি চর্যাগীতির টীকা লিখেছিলেন সংস্কৃত ভাষায়। নাম দিয়েছিলেন ''নির্মলগিরা টীকা''। সেদিক থেকে শাস্ত্রী মহাশয়ের দেওয়া নামটি সংগতিপূর্ণ। অথচ এই নামটি নিয়েও গবেষকদের মধ্যে অনেক বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।
চর্যাগীতিগুচ্ছের প্রথম পদের সংস্কৃত টীকায় বলা হয়েছে: “শ্রীলূয়ীচরণাদিসিদ্ধরচিতেঽপ্যাশ্চর্য্যচর্য্যাচয়ে। সদ্বর্ত্মাবগমায় নির্ম্মলগিরাং টীকাং বিধাস্যে স্ফুটনম।।” ১৯২৮ সালে বিধুশেখর শাস্ত্রী ''ইন্ডিয়ান হিস্টোরিক্যাল কোয়ার্টারলি'' পত্রিকার চতুর্থ খণ্ডে এই শ্লোকটির নিরিখে দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে, এখানে উক্ত ‘আশ্চর্য্যচর্য্যাচয়’ শব্দবন্ধটিই প্রকৃত গ্রন্থনাম, যার অর্থ হল ‘আশ্চর্য চর্যাসমূহের সংকলন’। কিন্তু এটিকে ঠিক গ্রন্থনাম হিসেবে স্বীকার করা যায় না। বরং উপরিউক্ত বাক্য থেকে টীকাকার এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই আশ্চর্য বা অদ্ভুত চর্যাসমূহে প্রবেশের ‘সদ্বর্ত্ম’ নির্দেশের জন্য তিনি টীকা রচনা করেছেন। ‘আশ্চর্য’ শব্দটি গানগুলির প্রকৃতি নির্দেশক, যা অবশ্যই বিশেষণ। অন্যদিকে ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী তাঁর ''স্টাডিজ ইন তন্ত্রজ'' (১ম খণ্ড) গ্রন্থে তিব্বতি অনুবাদটির প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেছেন যে, শাস্ত্রী মহাশয় একটি ভুল পাঠের উপর ভিত্তি করে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' নাম দিয়েছেন; গ্রন্থটির আসল নাম হবে ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়''। অবশ্য ড. বাগচী নেপাল রাজদরবারে রক্ষিত পুথিতে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' নামটি আছে বলেও উল্লেখ করেছেন। ড. সুকুমার সেনও মনে করেন যে, গ্রন্থটির মূল নাম ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়'', কিন্তু লিপিকরের ভুলে তা হয়েছে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। কিন্তু ড. বাগচী ও ড. সেন সমর্থিত ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়'' নামটি প্রাপ্ত পুথিতে তো নেই-ই, এমনকি ''তেঙ্গুর'' গ্রন্থমালার পি. কর্ডিয়ার কৃত তালিকাতেও পাওয়া যায় না। এই নামটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। মুনিদত্তের যে শ্লোকটি উদ্ধৃত করা হয়েছে, তাতে ‘আশ্চর্য’ শব্দটি থাকলেও চর্যার ‘আশ্চর্য বিনিশ্চয়’ অর্থাৎ অপূর্ব অর্থনির্ধারণের ব্যাপারটি কষ্টকল্পিত বলেই মনে হয়। বরং হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর দেওয়ার নামটির পিছনে কিছু যুক্তি আছে। ‘চর্য্যাচর্য্য’ শব্দটি একটি সমাসবদ্ধ পদ, যার পূর্বপদ ‘চর্য্য’, অর্থাৎ আচরণীয় এবং উত্তরপদ ‘অচর্য্য’ অর্থাৎ যা আচরণীয় নয়। যে গ্রন্থ আচরণীয় ও অনাচরণীয় তত্ত্বকে বিশেষরূপে নিশ্চয়ই করে তার নাম দেওয়া যেতে পারে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। এই কারণে বিশ্বভারতী প্রকাশিত ''চর্যাগীতিকোষ'' গ্রন্থের ভূমিকায় বৌদ্ধ পণ্ডিত শান্তি ভিক্ষু শাস্ত্রী মন্তব্য করেছেন, “I see no justification to invent a new name when the old one conveys the better meaning, that is, Viniscaya ‘Determination’ of carya ‘that to be practiced’ and acarya ‘that not to be practiced’.”
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পর চর্যাপদের পুথি আরও কয়েকজন বিদগ্ধ গবেষক কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছিল। যেমন, মনীন্দ্রমোহন বসুর ''চর্য্যাপদ'', ড. সুকুমার সেনের ''চর্যাগীতি পদাবলী'', ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী ও শান্তি ভিক্ষু শাস্ত্রীর যুগ্ম সম্পাদনায় ''চর্যাগীতিকোষ'' এবং ড. নীলরতন সেনের ''চর্যাগীতিকোষ'' (ফ্যাক্সিমিলি সংস্করণ)। লক্ষণীয়, সকলেই সম্পাদিত গ্রন্থের নামকরণে গানের দিকেই লক্ষ্য রেখেছেন এবং শাস্ত্রী মহাশয়ের দেওয়া নামটি বর্জন করেছেন। এই বিষয়ে জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী বলেন, “কিন্তু গ্রন্থনাম বিচারে প্রথম বিচার্য গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয় এবং গ্রন্থের উদ্দেশ্য। যে গ্রন্থখানি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা চর্যাগীতির সঙ্কলন মাত্র নহে, গীতিগুলির অর্থ বা টীকা। গ্রন্থখানির আরম্ভ টীকাকারের বন্দনা ও বস্তুনির্দেশক শ্লোক লইয়া। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী তিব্বতী অনুবাদের যে সংস্কৃত ছায়া দিয়াছেন, তাহাতে দেখা যায়, তাহাও টীকাকার মুনিদত্তের উক্তি লইয়াই পরিসমাপ্ত।” অথচ সম্পাদিত সব কটি গ্রন্থেই এই ব্যাপারটি অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং নামকরণে গানের ভূমিকাকেই দেওয়া হয়েছে প্রাধান্য। প্রাপ্ত পুথিটিতে গানগুলির উপস্থিতি যে একটি বিশিষ্ট ঘটনা তা অস্বীকার করা যায় না; কিন্তু টীকাকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল গানগুলির সূত্রে সহজযান বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব ও আচরণ ব্যাখ্যা করা। মূল পুথিতে গান আদৌ যুক্ত ছিল কিনা তা নিয়েও কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যেভাবে সাহিত্যের অর্থপুস্তক লেখা হয় সেইভাবে, অর্থাৎ প্রতিটি পদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পদের প্রথম শব্দটি উল্লেখ করে এখানে ব্যাখ্যা শুরু হয়েছে। এই রীতি বৌদ্ধসাহিত্যে যে সুপ্রচলিত ছিল তার প্রমাণ কাহ্নপাদ রচিত ''যোগরত্নমালা'' টীকা, অদ্বয়বজ্রের ''দোহাকোষপঞ্জিকা'' এবং নারোপা রচিত ''সেকোদ্দেশ টীকা''। মুনিদত্তও সেই ধারাতে অর্থবোধের জন্য ''নির্মলগিরা টীকা'' রচনা করেছিলেন। সূচনায় “বিধাস্যে স্ফুটম্” ও অন্তে “কোষস্য চার্থঃ প্রকটিকৃতোঽএ” প্রভৃতি উক্তিই তার প্রমাণ। অতএব টীকাকারের উদ্দেশ্য বিচার করলে পূর্বোক্ত সমস্ত নামই অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর মনে হবে। তিনি যে এর ভিন্ন একটি নামকরণ বৌদ্ধধর্মের গূঢ় তত্ত্বসমূহের ভাষ্য তথা ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত ''তাঞ্জুর'' গ্রন্থমালার তালিকা থেকে পাওয়া যায়। সেখানে মুনিদত্তের নামে ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি'' গ্রন্থটির উল্লেখ আছে। মুনিদত্তের গ্রন্থটির তিব্বতি অনুবাদক কীর্তিচন্দ্রের নামেও একই নামে একটি গ্রন্থের উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। পি. কর্ডিয়ার কৃত তালিকাও এই তত্ত্বকে সমর্থন করে। অতএব সিদ্ধান্ত করা যায় যে, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত গ্রন্থটির প্রকৃত নাম ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি''। উল্লেখ্য যে, তিব্বতি ভাষান্তরেও গ্রন্থের নাম দেওয়া হয়েছিল ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি''। আশ্চর্যের বিষয়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ সালে তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের পরিশিষ্টে যে ''তাঞ্জুর'' তালিকা সন্নিবিষ্ট করেছিলেন, তাতেও মুনিদত্তের নামের পাশে ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি'' গ্রন্থের উল্লেখ আছে।
==কবি==
চর্যাগীতিগুলির ভণিতায় যেমন পদকর্তাদের নাম স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে, তেমনই টীকাগ্রন্থটিতে ব্যাখ্যার সঙ্গে রচয়িতাদের নামও দেওয়া হয়েছে। মোট সাড়ে ছেচল্লিশটি গানের তেইশজন পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। এঁরা সবাই ছিলেন মহাযানী বৌদ্ধধর্মের যোগাচার শাখার সাধক-কবি। সম্ভবত তন্ত্রযোগ সাধনায় এঁরা সকলেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, তাই প্রত্যেকেই সিদ্ধাচার্য নামে খ্যাত ছিলেন। মুখ্যত বজ্রযান ও সহজযানের গুরুরাই এই অভিধায় ভূষিত হতেন। তিব্বতি ইতিহাসে চুরাশি জন সিদ্ধাচার্যের নাম সুপ্রসিদ্ধ। লামা তারানাথের গ্রন্থ, মৈথিল কবি জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' ও বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধনামানুসরণ'' গ্রন্থে এই সব সিদ্ধাচার্যের নাম ও তাঁদের সম্পর্কে কিছু জনশ্রুতি উল্লিখিত হয়েছে।
===লুইপাদ===
টীকাকার মুনিদত্ত লুইপাদকে আদি সিদ্ধাচার্য বলেছেন। তিব্বতি তালিকায় তাঁর নামই সর্বাগ্রে পাওয়া যায়। অবশ্য তারানাথ বলেছেন, লুইপাদ চতুর্থ সিদ্ধাচার্য। তিনি উড্ডীয়ান-রাজ উদয়নের করণিক ছিলেন। পরে মহাসিদ্ধ শবরীপাদের কাছে তন্ত্রাভিষেক লাভ করেন এবং নির্বিঘ্নে ধ্যান করার জন্য বাংলার গঙ্গাতীরে আসেন। সাধনরত অবস্থায় তিনি মৎস্যের অন্ত্র ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। এইজন্য নাথধর্মের অন্যতম গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথ বা মীননাথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। ‘মৎস্যেন্দ্র’ শব্দের অর্থ হল মাছেদের রাজা অর্থাৎ রুই। পাণিনির “ন র লয়োর্ভেদঃ” সূত্র অনুযায়ী বলা যায়, রুই ও লুইয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এইভাবে মীননাথ ও লুইপাদ অভিন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। অবশ্য সেটি বাস্তব সত্য কিনা সে নিয়ে সংশয় আছে। লুইপাদ বজ্রযান মতে বজ্রবারাহীর ধ্যান করতেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা অবশ্য লুইপাদকে ‘বাঙালি’ বলে ঘোষণা করেছে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, লুইপাদ ছিলেন পাল সম্রাট ধর্মপালের কায়স্থ বা মুখ্য করণিক। সরহপাদ রচিত দোহাকোষের অদ্বয়বজ্র কৃত পঞ্জিকায় লুইপাদকে ‘কৈবর্ত’ বলা হয়েছে। চর্যাগীতি ও ''তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টি'' নামক দোহাকোষ ছাড়া লুইপাদ রচনা করেন ''শ্রীভগবদভিসময়'', ''অভিসময়বিভঙ্গ'', ''বুদ্ধোদয়'' ও ''বজ্রসত্ত্বসাধন''। প্রথম দুটি গ্রন্থ খুবই বিখ্যাত। বিশেষত দ্বিতীয় গ্রন্থটির উপর পরবর্তীকালে অনেক টীকা, ব্যাখ্যা, বৃত্তি, পঞ্জিকা ইত্যাদি রচিত হয়। চর্যার পুথিতে তাঁর দুটি গান (১ ও ২৯ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত।
===শবরীপাদ===
মহাসিদ্ধ শবরীপাদ ছিলেন লুইপাদের গুরু। শবরীপাদের গুরু ছিলেন রসসিদ্ধ নাগার্জুন। তারানাথের বিবরণে পাওয়া যায়, প্রথম জীবনে শবরীপাদ ছিলেন বঙ্গের এক নটাচার্য। নাগার্জুন তাঁকে শ্রীপর্বতে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে তিনি শবরসুলভ জীবন যাপন করে ‘শবরীশ্বর’ বা ‘সিদ্ধ শবর’ উপাধি লাভ করেন। তন্ত্রমতে, শবর বা সবর শব্দের অর্থ বজ্রধর। তিনি কনিষ্ঠ সরোহ নামেও পরিচিত। ''তাঞ্জুর'' তালিকা অনুসারে, তিনি বজ্রযোগিনী সাধন-বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এছাড়া ষড়ঙ্গ যোগের উপরেও তাঁর অধিকার বিভিন্ন রচনায় প্রমাণিত। তিনি ‘আচার্য’ ও ‘মহাচার্য’ বিশেষণেও ভূষিত। ''মহামুদ্রাবজ্রগীতি'', ''চিত্তগুহ্যগম্ভীরার্থগীতি'' প্রভৃতি তাঁর রচিত তত্ত্বগ্রন্থ। বৌদ্ধ সাধনমালায় ''সিতকুরুকুল্লাসাধন'' ও ''বজ্রযোগিনী আরাধনাবিধি'' নামে দুটি রচনায় তাঁর ভণিতা পাওয়া যায়। চর্যাপদের পুথিতে তাঁর দুটি গান (২৮ ও ৫০ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত।
===ভুসুকুপাদ===
অন্যতম শ্রেষ্ঠ চর্যাকার ভুসুকুপাদের ব্যক্তিগত ও প্রাচীনত্ব নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। মহাযান মধ্যমক শূন্যবাদের প্রবক্তা শান্তিদেব ও চর্যাকার ভুসুকুপাদ অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে কিছু মতান্তর আছে। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ''শিক্ষাসমুচ্চয়'' ও ''বোধিচর্যাবতার''। তারানাথ এই সকল গ্রন্থের রচয়িতাকে সৌরাষ্ট্রের অধিবাসী বলেছেন। কিন্তু হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘বাঙালি’ বলে স্বীকার করেছেন। শাস্ত্রী মহাশয় এশিয়াটিক সোসাইটির ৯৯৯০ সংখ্যক তালপাতার পুথি থেকে শান্তিদেবের যে জীবনী উদ্ধার করেছেন, সেটি এইরকম: শান্তিদেব ছিলেন রাজপুত্র। যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার প্রাক্কালে তাঁর মা তাঁকে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুবজ্রের নিকট উপদেশ নিতে বলেন। শান্তিদেব ঘোড়ায় চড়ে মঞ্জুবজ্রের নিকট যাত্রা করলেন। পথে মঞ্জুবজ্রের এক শিষ্যের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল এবং তারপর বারো বছর মঞ্জুবজ্রের কাছে থেকে তিনি মঞ্জুশ্রী মন্ত্রে সিদ্ধ হলেন। তারপরে তিনি ‘রাউত’ বা অশ্বারোহীর বেশে মগধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মগধরাজের নিকট ‘অচল সেন’ নামে নিজের পরিচয় দিলেন। মগধরাজ অশ্বারোহী তরবারিধারী অচলকে সেনাপতি পদে বরণ করলেন। তরবারিকে আশ্রয় করে তাঁর অদ্ভুত সিদ্ধি প্রকাশ পেল। তখন তিনি রাজকার্য ত্যাগ করে ভিক্ষুর বেশে নালন্দায় প্রবেশ করলেন। এখানেই তিনি তাঁর গ্রন্থদ্বয় রচনা করেন। ভোজনকালে, সুপ্ত অবস্থায় ও কুটি গমনে অর্থাৎ বিশ্রামকালে ‘প্রভাস্বর’ বা সমাধি সমাপন্ন থাকতেন বলে তিনি ‘ভুসুকু’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। এই নামেই তিনি চর্যাগীতি রচনা করেন। পদকর্তা ভুসুকুর গানে আছে “রাউতু ভনই কট”। এই ভণিতাই দুই ব্যক্তিত্বকে এক করে দিয়েছে। তাছাড়া নারোপা রচিত ''সেকোদ্দেশ টীকা'' গ্রন্থে শান্তিদেব ও ভুসুকুপাদকে একই ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ড. সুকুমার সেন এই দুজনকে পৃথক ব্যক্তি বলে মনে করেন। ড. সেনের মতে, ভুসুকুপাদ শান্তিদেবের তুলনায় অনেক পরবর্তীকালের ব্যক্তি। তিনি সহজযানী সিদ্ধাচার্য। তাঁর রচিত ''চতুরাভরণ'' গ্রন্থের লিপিকাল ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দ ধরে ড. সেন তাঁকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষার্ধের ব্যক্তি মনে করেছেন। কিন্তু এই ধারণা সম্ভবত সঠিক নয়। ভুসুকুপাদ ত্রয়োদশ শতকের কবি হলে দ্বাদশ শতকের পূর্বে রচিত কোনও গ্রন্থে তাঁর পদ স্থান লাভ করতে পারে না। তাছাড়া ভুসুকুপাদ যে রাজপুত্র ও রাউত ছিলেন, তার প্রমাণ তাঁর পদেই পাওয়া যায়। “আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী” ভণিতার সূত্রে তাঁকে বাঙালি মনে করা হয়। তাঁর পদে দু-একটি বঙ্গীয় বাগ্বিধিও লক্ষণীয়। চর্যার পুথিতে ভুসুকুপাদের ৮টি গান সংকলিত হয়েছে: ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩ ও ৪৯ সংখ্যক চর্যা।
===সরহপাদ===
লামা তারানাথ সরহপাদকে আদি সিদ্ধাচার্য বলে উল্লেখ করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় সরহপাদকে বলা হয়েছে ‘আচার্য’, ‘মহাচার্য’, ‘সিদ্ধ মহাচার্য’, ‘মহাব্রাহ্মণ’, ‘যোগী’, ‘মহাযোগী’, ‘যোগীশ্বর’ ও ‘মহাশবর’ (‘শবর’ শব্দটি বজ্রযানে বজ্রধরের প্রতীক)। সরহপাদ উড়িষ্যায় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বেদাদি শাস্ত্রে পারঙ্গম ছিলেন। নালন্দায় তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন ধর্মকীর্তি হরিভদ্র। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, হরিভদ্র ছিলেন গৌড়াধিপতি ধর্মপালের (রাজত্বকাল ৭৭০—৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) সমসাময়িক। সেই হিসেবে সরহপাদ অষ্টম শতাব্দীর ব্যক্তি ছিলেন এবং সম্ভবত তাঁর মৃত্যু হয় ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে। আচার্য স্থবিরকালের নিকট সরহপাদ অভিষিক্ত হন। দাক্ষিণাত্যে এক শরকারের (arrow-smith) কন্যাকে মুদ্রা রূপে গ্রহণ করায় তাঁর নাম হয় শরহ বা সরহ। তাঁর অপর নাম রাহুলভদ্র, সরোরুহবজ্র ও সরোজবজ্র। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, সরহপাদের ভিক্ষুনাম রাহুলভদ্র। বজ্রযানের সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে সরোরুহবজ্র বা সরোজবজ্র নাম ব্যবহার করা হয়েছে। রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন বলেছেন, ‘পূর্বদিশা’ অঞ্চলের অন্তর্গত ‘রাজ্ঞী’ (বর্তমান বিহারের ভাগলপুর) নামক স্থানে তাঁর জন্ম। অবশ্য অনেকেই মনে করেন, সরহপাদ ছিলেন বরেন্দ্রভূমির ব্যক্তি। তাঁর লেখা ৩৯ সংখ্যক চর্যাটির বাহ্য অর্থ থেকে জানা যায় যে, তিনি বঙ্গে জায়া গ্রহণ করেছিলেন: “বঙ্গে জাআ নিলেসি”। তাঁর পদে ব্যবহৃত প্রবাদ-প্রবচন ও বাগ্বিধির বিচারেও তাঁকে গৌড়ের অধিবাসী মনে হয়। রসসিদ্ধ নাগার্জুনকে তিনি সহজ মতে অভিষিক্ত করেন। সংস্কৃত, অপভ্রংশ ও প্রত্ন বাংলা তিন ভাষাতেই সরহপাদ গ্রন্থাদি রচনা করেন। সংস্কৃতে তিনি রচনা করেন ''বুদ্ধকপালসাধন'', ''হেবজ্রতন্ত্রপঞ্জিকাপদ্মিনীনাম'' প্রভৃতি গ্রন্থ। অপভ্রংশে রচিত তাঁর সহজতত্ত্ব ও সহজ-সাধনা বিষয়ক দোহা ও দোহাজাতীয় গীতি সংকলনগুলির মধ্যে ''দোহাকোষগীতি'', ''ক-খ দোহা'' (ক-কারাদি বর্ণকে আদ্যক্ষর করে বর্ণার্থমূলক দোহা), ''মহামুদ্রোপদেশবজ্রগুহ্যগীতি'', ''কায়বাক্চিত্তঅমনসিকার'', ''ডাকিনীগুহ্যগীতি'' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চর্যাগীতির পুথিতে তাঁর ৪টি পদ (২২, ৩২, ৩৮ ও ৩৯ সংখ্যক পদ) সংকলিত।
===কাহ্নপাদ===
চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত ৫০টি পদের মধ্যে ১৩টি পদই (৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ৩৬, ৪০, ৪২ ও ৪৫ সংখ্যক চর্যা; এবং টীকা অনুসারে, মূল পুথিতে লুপ্ত ২৪ সংখ্যক চর্যাটি) কাহ্নপাদের রচনা। তিব্বতি ইতিহাস, ''তাঞ্জুর'' তালিকা, চর্যাগীতি ও বাংলা সিদ্ধাচার্য-গীতিকায় (নাথগীতিকা) কাহ্নপাদ একটি বিশিষ্ট নাম। টীকাকার তাঁকে ‘কাহ্নপাদ’, ‘কৃষ্ণপাদ’, ‘কৃষ্ণাচার্যপাদ’, ‘কৃষ্ণবজ্রপাদ’, ‘কৃষ্ণাচার্য’, ‘কৃষ্ণাচার্য চরণ’ ইত্যাদি নামে উল্লেখ করেছেন। তিনি সিদ্ধ সাধক, মহাপণ্ডিত ও মণ্ডলাচার্যদের ভিতর সিদ্ধাচার্য। তবে কাহ্নপাদ দুই জন কবির নাম কিনা এবং তাঁর সময়কাল নিয়ে বিতর্ক আছে। ড. সুকুমার সেনের মতে, ১০, ১১, ১৮, ১৯, ৩৬ ও ৪২ সংখ্যক পদগুলি জালন্ধরীপাদের শিষ্য তান্ত্রিক যোগী কাহ্নপাদের এবং ৭, ৯, ১২, ১৩, ৪০ ও ৪৫ সংখ্যক পদগুলি অপর এক কাহ্নপাদের রচনা। কয়েকটি গানে ‘জ্ঞান উপদেশের প্রবণতা’ এবং অন্য গানগুলিতে ডোম্বী-বিবাহের সন্ধ্যা-সংকেতের ভিত্তিতে দুই কাহ্নের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও, একই সাধক-কবি দুই ভিন্ন শ্রেণির গান রচনা করেছেন—এই যুক্তিতে কেউ কেউ দুই কাহ্নের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। কাহ্নপাদের পরিচয় নিয়েও অনেকগুলি জনশ্রুতি আছে। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে ভারতবাসী ও উড়িষ্যা থেকে আগত বলা হয়েছে। তিব্বতের ইতিহাস অনুসারে, তাঁর জন্মস্থান কর্ণ-নগর। জনশ্রুতিতে বলা হয়েছে তাঁর জন্ম পদ্মনগর বা বিদ্যানগর বা বিজয়নগরে। এই স্থানগুলির অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। নাথগীতিকায় তাঁর একটি কীর্তিস্থল হিসেবে বঙ্গ মেহারকুলের উল্লেখ আছে। কাহ্নপাদের পদে বাংলা শব্দভাণ্ডারের প্রাচুর্যও লক্ষণীয়। কাহ্নপাদের জীবনকাহিনিও বিচিত্র। প্রথম জীবনে বিরূপপাদ বা বিরুআপাদের শিষ্য কাহ্নপাদ ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে চারটি পাপ করার পর জালন্ধরীপাদের শরণ নেন। জালন্ধরীপাদের নির্দেশে বজ্রবারাহীর উপাসনার করে তিনি শাপমুক্ত হন। বিরূপপাদের সঙ্গে কাহ্নপাদের যোগের ইঙ্গিত তাঁর পদেই পাওয়া যায়। তবে জালন্ধরীপাদের সঙ্গেই তাঁর যোগ বেশি। চর্যাগীতিতে কাহ্নপাদ জালন্ধরীপাদকে সাক্ষী মেনে মেনেছেন: “শাখি করিব জালন্ধরী পাএ”। তিব্বতি ইতিহাসে আছে, জালন্ধরীর শ্রেষ্ঠ শিষ্য কৃষ্ণ অঙ্গে হাড়ের মালা ও হস্তে ডমরু ধারণ করবেন। চর্যাগানে কাহ্নপাদ তাই করেছেন বলে উল্লিখিত। আবার নাথগীতিকায় বলা হয়েছে হাড়িফাকে (জালন্ধরীপাদ) নিত্য সেবা করেন কানফা যোগাই (কাহ্নপাদ)। কাহ্নপাদ ''দোহাকোষপঞ্জিকা'' সহ অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ''হেবজ্রতন্ত্র'' গ্রন্থের উপর একটি গ্রন্থও তাঁর নামে পাওয়া যায়।
===বিরূপপাদ===
বিরূপপাদ বা বিরুআপাদ ছিলেন বজ্রযোগিনীর সাধক। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে ‘আচার্য’, ‘মহাচার্য’, ‘যোগীশ্বর’ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে। সিদ্ধ সাধক হিসেবে তিনি এত বিখ্যাত ছিলেন যে, পরবর্তীকালে অনেকেই তাঁর নাম করেছেন। তাঁর কোনও গুরু ছিল না। জনশ্রুতি অনুসারে, তিনি ছিলেন সিদ্ধাচার্য কাহ্নপাদের প্রথম জীবনের গুরু। তাঁর নামে ''গীতিকা'', ''কর্মচণ্ডালিকাদোহাকোষগীতি'' প্রভৃতি গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। লামা তারানাথের গ্রন্থে তাঁর মদ্যপানে আসক্তি ও শুণ্ডিনী সাহচর্যের কথা পাওয়া যায়। চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত তাঁর একমাত্র চর্যাটিতে (৩ সংখ্যক পদ) সেই শুণ্ডিনীর মদ চোলাইয়ের একটি বাস্তব চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
===শান্তিপাদ===
শান্তিপাদ প্রাচীন সিদ্ধাচার্য। ড. সুকুমার সেনও তাঁকে প্রাচীন চর্যাকার বলে স্বীকার করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা মতে, রত্নাকর শান্তিই শান্তিপাদ। তিব্বতি তালিকায় রত্নাকর শান্তি ‘আচার্য’, ‘আচার্যপাদ’ ও ‘মহাপণ্ডিত’ বিশেষণে ভূষিত। লামা তারানাথের বিবরণ অনুসারে, তিনি শবরীপাদের সমসাময়িক, অর্থাৎ অষ্টম শতকের মধ্যভাগের ব্যক্তিত্ব। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁর নামে ''মুক্তাবলী নামি হেবজ্র পঞ্জিকা'' ও ''কুসুমাঞ্জলি নাম গুহ্যসমাজ নিবন্ধ'' নামে দুই গ্রন্থ উল্লিখিত হয়েছে। এগুলি সহজ-সাধনার ভিত্তি ''হেবজ্রতন্ত্র'' ও ''গুহ্যসমাজ তন্ত্র'' গ্রন্থদ্বয়ের টীকা। সহজযানের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগের সাক্ষর বহন করছে ''সহজরতিসংযোগ'' ও ''সহজ যোগক্রম'' গ্রন্থ দুটি। তাঁর অপর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ''সুখদুঃখপরিত্যাগদৃষ্টি''। এছাড়া তিনি বজ্রতারা ও মহামায়ার সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থও রচনা করেন। শান্তিদেব ও শান্তিপাদকে কেউ কেউ অভিন্ন মনে করেন। কিন্তু এঁরা যে পৃথক ব্যক্তি তা নানা সূত্র থেকে জানা যায়। শান্তিদেবের দুটি পদ (১৫ ও ২৬ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত হয়েছে চর্যাগীতির পুথিতে।
===দারিকপাদ===
দারিকপাদকে অভিষিক্ত করেন লুইপাদ। গানের ভণিতাতেও দারিকপাদ বলেছেন, “লুইপাঅ পসাএঁ দারিক”। লামা তারানাথের মতে, দারিকপাদ ছিলেন উড়িষ্যার রাজা। তিনি সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় দারিকপাদের নামে ''শ্রীচক্রতন্ত্ররাজ'' গ্রন্থের ''সেকপ্রক্রিয়াবৃত্তি'' ও ''শ্রীচক্রসম্বরসাধন'' গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। চর্যাগীতির পুথিতে তাঁর একটি মাত্র পদই (৩৪ সংখ্যক চর্যা) পাওয়া গিয়েছে।
===ডোম্বীপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য ডোম্বী, আচার্য ডোম্বীপাদ এবং আচার্য বা মহাচার্য ডোম্বী-হেরুকের নামে একাধিক গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়। লামা তারানাথের মতে, এঁরা সবাই একই ব্যক্তি এবং এই ডোম্বী-হেরুক ছিলেন বিরূপপাদের শিষ্য কাল বিরূপ বা কাহ্নপাদের শিষ্য। তিব্বতি তালিকায় সিদ্ধ ডোম্বী-হেরুককে সন্ন্যাসী ও মগধের রাজা বলা হয়েছে। তারানাথ অবশ্য বলেন, ডোম্বী-হেরুক ছিলেন ত্রিপুরার রাজপুত্র। মুদ্রিকা নিয়ে সাধনা করতেন বলে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হন। কিন্তু রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ডোম্বী-হেরুক আশ্চর্য সিদ্ধাই দেখিয়ে দুর্ভিক্ষ নিবারণ করেন। তখন লোকে তাঁর সিদ্ধির কথা বুঝতে পারে। ডোম্বী-হেরুকের শিষ্যবর্গ ছিলেন ডোম্বী (আধ্যাত্মিক অর্থে বায়ুরূপা অবধূতিকা) ধরার সাধক। তারানাথ আরও বলেছেন যে, ডোম্বী-হেরুক রাঢ়ের রাজাকেও অভিষিক্ত করেন, ফলে রাঢ় অঞ্চল থেকে তীর্থিক ধর্ম লোপ পায়। মুনিদত্তও ডোম্বীপাদকে ‘লাড়ী’ বলে অভিহিত করেছেন। তাই ড. সুকুমার সেন তাঁর রাঢ় অঞ্চলের মানুষ মনে করেন। ড. বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের মতে, তিনি ছিলেন অষ্টম শতকের লোক। চর্যাগীতির পুথিতে ডোম্বীপাদের মাত্র একটি পদ (১৪ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত হয়েছে। টীকাকার এটির ব্যাখ্যা দেননি। তবে কাহ্নপাদের অনেক পদে ডোম্বীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
===কুক্কুরীপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য কুক্কুরীপাদ কুকুরাজ বা কুক্কুররাজ নামে অভিহিত হয়েছেন। তাঁর নামে অনেকগুলি গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। ''গুহ্যার্থধর ব্যুহ'' নামে তিনি বজ্রসত্ত্ব, বজ্রহেরুক, পদ্মরত্নেশ্বর প্রমুখের সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারানাথের ভাষ্য অনুসারে, সর্বদা সঙ্গে একটি কুক্কুরী থাকত বলে তিনি কুক্কুরীপাদ নামে পরিচিত হয়েছেন। ড. সুকুমার সেন অবশ্য কুক্কুটিকপাদ থেকে কুক্কুরীপাদ শব্দটি নিষ্পন্ন করতে চান। চর্যাপদের পুথিতে তাঁর তিনটি চর্যা সংকলিত হয়েছিল; তার মধ্যে ২ ও ২০ সংখ্যক চর্যাটি পাওয়া গিয়েছে এবং ৪৮ সংখ্যক চর্যাটি লুপ্ত।
===চাটিলপাদ===
পদকর্তা চাটিলপাদের অস্তিত্ব তাঁর একটি পদের (৫ সংখ্যক চর্যা) উপর নির্ভরশীল। কারণ তারানাথের বর্ণনায় বা ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁর নাম দেখা যায় না। কেবল জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থের সিদ্ধা-বর্ণনায় ‘চাটল’ এবং বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধনামানুসরণ'' গ্রন্থে ‘চাটলা’ নাম পাওয়া যায়। ৫ সংখ্যক পদে তিনি নিজেকে ‘অনুত্তর সামী’ বলে আত্মপ্রশংসা করেছেন বলে, ড. সুকুমার সেন এটিকে চাটিলপাদের কোনও শিষ্যের রচনা বলে মনে করেন। কিন্তু প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় সাহিত্যে কবির আত্মপ্রশংসা বিরল নয় বলেই ড. সেনের মত অনেকে গ্রহণ করতে পারেননি।
===আর্যদেব===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আর্যদেব বা আজদেবকে ‘আচার্য’ ও ‘মহাচার্য’ বলা হয়েছে। তিনি সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন। চতুষ্পীঠ যোগতন্ত্র সাধন সম্পর্কে তিনি গ্রন্থ রচনা করেন। সহজ-সাধনায় চিত্তশোধন-বিষয়ক মূল্যবান গ্রন্থ ''চিত্তাবরণবিশোধন নামপ্রকরণ'' তাঁর রচনা। অপভ্রংশ ভাষায় তিনি রচনা করেন ''কাণেরি গীতিকা''। প্রভুভাই প্যাটেলের মতে, আর্যদেব অষ্টম শতকের প্রথমার্ধে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি ছিলেন উড়িষ্যারাজ ইন্দ্রভূতি এবং সরহপাদের শিষ্য নাগার্জুনের সমসাময়িক। আর্যদেবের একটি মাত্র চর্যা (৩১ সংখ্যক পদ) সংকলিত হয়েছে চর্যাগীতির পুথিতে।
===কম্বলাম্বরপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য বা মহাচার্য কম্বলের নাম পাওয়া যায়; সেই সঙ্গে প্রজ্ঞারক্ষিতের গুরু মহাসিদ্ধ কম্বলাম্বরপাদের নামও উল্লিখিত হয়েছে এখানে। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ''অভিসময়নামপঞ্জিকা''। লামা তারানাথের বিবরণ থেকে অনুমান করা হয় যে, লুইপাদের শিষ্য দারিকপাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল এবং সেই সূত্রে লুইপাদের গ্রন্থটির পঞ্জিকা রচনা করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। তারানাথ কম্বলাম্বরপাদকে বজ্রঘণ্টের শিষ্য বলেছেন। ডোম্বী-হেরুক, জালন্ধরীপাদ প্রমুখের সঙ্গে কম্বলাম্বরপাদের যোগাযোগ ছিল। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, কম্বলাম্বরপাদ ছিলেন ঊড়িষ্যার এক রাজকুমার। শ্মশানে সাধনা করে তিনি মন্ত্রসিদ্ধ হয়েছিলেন। মন্ত্রবতী শ্মশান-ডাকিনী তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলে শ্মশানে একটি কম্বল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না। তাতেই তিনি ‘কম্বল’ নামে খ্যাত হন। তাঁর কিছু সংস্কৃত রচনার অংশ উদ্ধৃত হয়েছে সরহপাদ রচিত দোহার অদ্বয়বজ্র কৃত টীকায়। সেখানে তিনি শাস্ত্রের শব্দাক্ষরের অসারতা প্রতিপন্ন করেছেন। চর্যাগীতির পুথিতে ৮ সংখ্যক পদটি কম্বলাম্বরপাদের রচনা। এটিতে তিনি ‘কামলি’ নামে আত্মপরিচয় দিয়েছেন। পদটি সাধনতত্ত্বের রূপক। নৌকা বাওয়ার রূপকে কবি মহাসুখচক্রের উদ্দেশ্যে বোধিচিত্তের যাত্রা বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন পংক্তিতে নৌকা বাওয়ার বাস্তব চিত্র এই বিষয়ে কবির বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিচায়ক। সন্ধ্যা-সংকেতে ও উৎপ্রেক্ষায় পদটি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
===বীণাপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় বিরুআপাদের বংশধর রূপে বীণাপাদের নাম উল্লিখিত হয়েছে। অবশ্য লামা তারানাথের মতে, তিনি ছিলেন অশ্বপাদের শিষ্য। ডোম্বী-হেরুকের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। সেই হিসেবে তিনি অষ্টম শতকের শেষার্ধের ব্যক্তি। ড. সুকুমার সেন বলেছেন, “টীকাকারের অনুকরণে একটি চর্যা (১৭) অকারণে বীণাপাদের রচিত বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছে। কিন্তু ভণিতা বলিয়া নির্দেশ করিতে পারি এমন কোন নাম চর্যাটিতে নাই।” কিন্তু অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তীর মতে, “চর্যাগানে অনেক ক্ষেত্রে লেখক রূপকের আবরণে আত্মগোপন করিয়াছেন, কোথায়ও বা সরাসরি ভণিতা না দিয়া নিজেই গীতিকবিতার নায়ক সাজিয়াছেন। কাহ্নপাদের ১০ সংখ্যক চর্যায় ও শবরপাদের ২৮ ও ৫০ সংখ্যক চর্যায় এই রীতিই অবলম্বিত হইয়াছে। কাজেই বীণাপাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না।” গুহ্যাভিষেক, মহাভিষেক ও বজ্রডাকিনী নিষ্পন্নক্রম বিষয়ে বীণাপাদ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ১৭ সংখ্যক চর্যাটিও নিষ্পন্নক্রমের সাধন-সংক্রান্ত চর্যা। সেকমণ্ডলে আলি-কালির দ্বার রুদ্ধ হয়ে চিত্ত অবধূতী মার্গে প্রবিষ্ট হলে কীভাবে হেরুক-বীণায় শূন্যতার ধ্বনি ওঠে এবং কীভাবে যোগিনী-অভিষঙ্গে যোগী বজ্রনৃত্যে ও বজ্রগীতে তন্ময় হন, তারই একটি ছবি ধরা পড়েছে ১৭ সংখ্যক চর্যাটিতে। সাধকসত্ত্বাই এখানে বীণাযন্ত্র-স্বরূপ। বীণার রূপকল্পনায় নীরস দেহতত্ত্ব এই পদে সরস হয়ে উঠেছে। গানটি শুধু তত্ত্ববাহীই নয়, নানা তথ্যে সমৃদ্ধ এবং কবির বস্তুদৃষ্টির পরিচায়ক।
===ভাদেপাদ===
কাহ্নপাদের যে ছয়জন শিষ্যের একটি করে গান চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত হয়েছে, তাঁদের অন্যতম ভাদেপাদ বা ভদ্রপাদ। অন্যত্র তিনি ভদ্রচন্দ্র বা ভদ্রদত্ত বা ভদ্রোক নামেও পরিচিত। লামা তারানাথ তাঁর ‘গুহ্য’ নামটির কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলা গোপীচন্দ্রের গানে উল্লিখিত কৃষ্ণাচার্যের শিষ্য ‘বাইল ভাদাই’ সম্ভবত ভদ্রপাদ। কানফা গোপীচন্দ্রকে উদ্ধার করতে সোনার গোপীচন্দ্র মূর্তি ক্রুদ্ধ হাড়িপার সম্মুখে স্থাপনের উপদেশ দেন। হাড়িপার ক্রোধে সেই স্বর্ণমূর্তি ভস্ম হয়ে যায়। গুরু জালন্ধরী এই কথা জানতে পেরে কানফাকে শাপ দেন। শেষে ময়নামতীর অনুনয়ে সিদ্ধ হাড়িপা বলেন যে, ‘বাইল ভাদাই’ শাপমুক্ত করবেন কানফাকে। সিদ্ধাচার্যদের অনেকেই শিষ্য কর্তৃক উদ্ধার লাভ করেছিলেন। গোরক্ষনাথ যেমন গুরু মীননাথকে কামবাসনায় ঘেরা কদলীরাজ্য থেকে মুক্ত করেছিলেন, তেমনই হয়তো গুরু কানফা বা কাহ্নপাদকে শাপমুক্ত করে থাকবেন ‘বাইল ভাদাই’ বা ভদ্রপাদ। নাথপন্থার সঙ্গে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের যোগ এই কাহিনির মাধ্যমে বোঝা গিয়েছে। কিন্তু ভাদেপাদের গানে তান্ত্রিকতার ছাপ স্পষ্ট নয়, পারিভাষিক শব্দের ব্যবহারও কম। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় ভাদেপাদকে বলা হয়েছে ‘ভাণ্ডারিন্’ (আচার্য)। তাঁর রচিত গ্রন্থটির নাম ''সহজানন্দদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টি''। ৩৫ সংখ্যক চর্যাগীতিটি ভাদেপাদের রচনা। গুরু উপদেশে কীভাবে তিনি সহজচিত্ত লাভ করেছিলেন, তা উল্লিখিত হয়েছে এই পদে। টীকাকার বলেছেন, ভদ্রপাদ ‘জ্ঞানানন্দপ্রমোদ’-যুক্ত সিদ্ধাচার্য। পদটিতেও সর্বধর্ম-অনুপলম্ভরূপ চরম জ্ঞানের স্বরূপ বিধৃত হয়েছে। পদটিতে ‘বাজুল’ (বজ্রকুল) শব্দটির প্রয়োগ দেখে মনে হয়, ভাদেপাদ বজ্রকুলের সাধক ছিলেন।
===মহীধরপাদ===
চর্যাগীতির পুথিতে প্রাপ্ত ১৬ সংখ্যক পদটির রচয়িতা মহিণ্ডা। ভণিতায় ‘মহিণ্ডা’ নামটি পাওয়া গেলেও টীকায় তাঁর নাম মহীধরপাদ। লামা তারানাথ তাঁকে ‘মহিল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা বলা হয়েছে যে, ‘মহিপাদ’ ছিলেন আচার্য কৃষ্ণের অর্থাৎ কাহ্নপাদের বংশধর (শিষ্য)। ''বায়ুতত্ত্ব দোহাগীতিকা'' গ্রন্থটি মহীধরপাদের রচনা। তাঁর রচিত চর্যাগীতিটি ধ্বনিগাম্ভীর্যে, ২৬ মাত্রার দীর্ঘায়িত ছন্দের গজগতিতে এবং রূপক-কল্পনার সৌন্দর্যে বেশ উপভোগ্য। টীকাকার বলেছেন, "জ্ঞানপানপ্রমত্তো হি সিদ্ধাচার্য মহীধর”। এই জ্ঞানদৃষ্টির সঙ্গে কবির শিল্পদৃষ্টিও প্রশংসনীয়। পদটির সঙ্গে কাহ্নপাদ রচিত ৯ সংখ্যক পদের ভাব ও চিত্র-সাদৃশ্য কাহ্নপাদের সঙ্গে মহীধরপাদের নিকট সম্পর্কেরই সূচক। তবে ড. নির্মল দাশ এই পদের ভণিতায় ক্রিয়াপদে বহুবচন দেখে অনুমান করেন যে, পদটি মহীধরপাদের “শিষ্যানুশিষ্যদেরও” রচনা হতে পারে।
===ধামপাদ===
লামা তারানাথের মতে, ধম্মপাদ বা ধামপাদ ছিলেন কাহ্নপাদের শিষ্য। কাহ্নপাদ যখন গুরুকে উদ্ধার করতে শিষ্যদের নিয়ে গোবিন্দচন্দ্রের রাজ্যে আসেন, তখন রাজা তাঁদের উদ্দেশ্যে এক ভোজের আয়োজন করেন। কাহ্নপাদ বলেন, শিষ্য ধম্ম ও ধূমকে ভোজনে তৃপ্ত করলেই সকলে পরিতৃপ্ত হবেন। রাজার সংগৃহীত সমস্ত ভোজ্যদ্রব্য ধম্ম ও ধূম নিঃশেষ করেন। এতে সবাই তাঁদের সিদ্ধি বুঝতে পারেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য ধর্মপাদকে কৃষ্ণ অর্থাৎ কাহ্নপাদের বংশধর বলা হয়েছে। ধামপাদ ''সুগত দৃষ্টি গীতিকা'', ''মহাযান নিষ্পন্নক্রম'', ''হুঙ্কার চিত্তবিন্দু ভাবনাক্রম'' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত ৪৭ সংখ্যক পদটি তাঁর রচনা। এই পদেও নিষ্পন্নক্রম সাধনের কথাই বিবৃত হয়েছে: প্রজ্ঞোপায় সমতাযোগে চণ্ডালী প্রজ্বলিত হয়, অপরিশুদ্ধা নাড়ী দগ্ধ হয় এবং তখন নাড়ীর অধিদেবতা ও চিত্ত বিশ্রাম লাভ করে মহাসুখচক্রে। প্রকারান্তরে কাহ্নপাদ কথিত ‘কামচণ্ডালী’ সাধনার কথাই এখানে পুনর্কথিত হয়েছে। গানটি ''হেবজ্রতন্ত্র''-এর ‘চণ্ডালী জ্বলিতা নাভৌ’ শ্লোকটির ভাষা-অনুবাদ।
===কঙ্কণ===
চর্যাগীতির পুথিতে ৪৪ সংখ্যক পদটি কঙ্কণের রচনা। পুথিতে তাঁর নাম কোঙ্কণ বলে উল্লিখিত। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও তাঁকে সেই নামেই অভিহিত করেছেন। কিন্তু ড. সুকুমার সেনের মতে, তাঁর নাম কৌঙ্কণ। ড. নির্মল দাশের মতে, কঙ্কণ কবির ছদ্মনাম। সম্ভবত কঙ্কণ ছিল তাঁর লব্ধ-উপঢৌকন। সেকালে কবিরা এভাবে প্রাপ্ত উপঢৌকনের নামে ছদ্মনাম গ্রহণ করতেন। কথিত আছে, তিনি আচার্য কম্বলের বংশধর। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে সিদ্ধ সাধক বলা হয়েছে। টীকাকার তাঁকে পরম করুণাসব পানে প্রমুদিত ‘কঙ্কণ সিদ্ধাচার্য’ বলেছেন। কঙ্কণের পদটিতে মধ্যমা নিরোধের যুগনদ্ধ ফলোদয়ের অবস্থাটির বর্ণনা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র মাপের মাত্রা ছন্দ (১১ মাত্রার রসিকা) কঙ্কণই ব্যবহার করেছেন। ছন্দে বৈচিত্র্য এনেছে ষোড়শ-মাত্রিক বন্ধনের সঙ্গে ১১ মাত্রার চরণ: “সুনে সুন মিলিআ জবেঁ। সঅল ধাম উইআ তবেঁ।।” ''চর্যাদোহাকোষগীতিকা'' তাঁর রচনা। সম্ভবত আর কোনও গ্রন্থ তিনি রচনা করেননি।
===গুণ্ডরীপাদ===
৪ সংখ্যক চর্যাগীতিটি গুণ্ডরীপাদের রচনা। গানটিতে ‘গুড়রী’ ভণিতা দেওয়া হয়েছে। অ্যালবার্ট গ্রানওয়েডেল সিদ্ধাচার্যদের যে তালিকা প্রস্তুত করেছেন, তাতে গুণ্ডরী নামটি আছে। বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধবন্দনা'' গ্রন্থেও তাঁর নাম পাওয়া যায়। কিন্তু ''তাঞ্জুর'' তালিকায় এই নামের কোনও লেখকের কথা উল্লিখিত হয়নি। ড. সুকুমার সেনের মতে, গুণ্ডরী সম্ভবত ব্যক্তিনাম নয়, কবির জাতি বা পেশাবাচক নামক এবং সম্ভবত মশলা ইত্যাদি গুঁড়ো করা ছিল কবির পেশা। পুথিতে সংকলিত চর্যাটিতে কুন্দুরু যোগের একটি সংকেত পাওয়া যায়। পদটিতে নরনারীর প্রেম-মিলনের স্থূল বর্ণনা আছে। ড. সেন গানটিতে যৌন-তান্ত্রিকতার স্পষ্ট ইঙ্গিত ও পারিভাষিক শব্দের আধিক্যের কারণে পদকর্তাকে অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন বলে বিবেচনা করেছেন। পদের শেষে কবির আত্মপ্রশংসা লক্ষণীয়।
===তাড়কপাদ===
৩৭ সংখ্যক চর্যাগীতির রচয়িতা হিসেবে তাড়কের নাম উল্লিখিত হয়েছে। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় যে মহাপণ্ডিত তারশ্রী ও উপাধ্যায় তারপাদের নাম পাওয়া যায়, তাড়ক তাঁদেরই মধ্যে কেউ হতে পারেন। টীকাকার তাঁকে সিদ্ধাচার্য বলেছেন: “সিদ্ধাচার্য হি তাড়ক।” পদটিতে সহজজ্ঞানের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। কবির বস্তুদৃষ্টির পরিচয়ও পাওয়া যায় এতে। নৌকা-পারাপার ও পারানির কড়ি খোঁজার ছবিটি মনোজ্ঞ।
===জয়নন্দী===
৪৬ সংখ্যক চর্যাগীতিটি জয়নন্দীর রচনা। তিনি ‘জঅনন্দি’ নামেও পরিচিত। লামা তারানাথের গ্রন্থে জয়নন্দীর নাম পাওয়া যায় না। গ্রানওয়েডেল কৃত সিদ্ধাচার্যদের নামের তালিকায় ‘জয়নন্দ’ নামটি পাওয়া যায়। টীকাকার তাঁকে পরম করুণা অর্জনের নিমিত্ত ‘অভিজ্ঞালাভী’ বলেছেন। প্রাপ্ত পদটিতে পরমার্থ চিত্তের অদাহ্য অপ্লাব্য অচ্ছেদ্য রূপের বর্ণনা এবং পরমার্থতত্ত্বে লক্ষণ কথিত হয়েছে। পদটি অলংকার-বর্জিত ও সোজাসুজি তত্ত্ববাহী।
===ঢেণ্ঢণপাদ===
৩৩ সংখ্যক পদটি ঢেণ্ঢণপাদের রচনা। তিনি চেণ্ঢনপা বা টেণ্টনপা নামেও পরিচিত। তিব্বতি ইতিহাসে ঢেণ্ঢণপাদের নাম নেই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, ভোট উচ্চারণে যিনি ধেতন, তিনিই ঢেণ্ঢণ। আবার ড. নির্মল দাশের মতে, টেণ্টনপা নামটি ছদ্মনাম। তাঁর পদটিতে যে ‘টেণ্টন’ অর্থাৎ ধূর্ত-সুলভ চাতুর্যের পরিচয় আছে, সেটিকে ড. দাশ কবির ব্যক্তিচরিত্রের নয়, বরং রীতিচরিত্রের পরিচায়ক বলেছেন। আগাগোড়া সন্ধ্যাভাষায় রচিত ঢেণ্ঢণপাদের চর্যাগীতিটিতে সন্ধ্যা-সংকেতে সংসারচিত্ত ও সহজচিত্তের স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে। পদে পদে পরস্পর-বিরোধী উক্তি এবং বিরোধালংকারের সমাবেশে পদটি দুরূহ হলেও উপভোগ্য। সাধক-কবির সূক্ষ্ম বস্তুদৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণ শক্তিও প্রশংসনীয়। পদটিতে গৌড়ের দরিদ্র পরিবারের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কবীরের একটি কবিতায় এবং সহদেব চক্রবর্তী ও লক্ষ্মণের ''অনিলপুরাণ'' ও ''গোর্খবিজয়'' কাব্যেও ঢেণ্ঢণপাদের পদটির প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়।
===তন্ত্রীপাদ===
তন্ত্রীপাদ রচিত ২৫ সংখ্যক চর্যাগীতিটি লুপ্ত। টীকা থেকে গানের শেষাংশের কিছু আভাস পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে যে, নৈরাত্মা যোগিনীর অভিষঙ্গে জাতিধর্ম লুপ্ত হয়ে যায়—হীন বৃত্তিধারী তন্ত্রী হন বজ্রধর। তিব্বতি অনুবাদ থেকে বোঝা যায় যে, গানটির বিষয় তাঁত বোনা। ‘তন্ত্রী’ নামটি জাতি-বৃত্তির স্মারক। ড. নির্মল দাশের মতে ‘তন্ত্রী’ ব্যক্তিনাম নয়, জাতিবাচক নাম। সিদ্ধাচার্যদের তালিকা ‘তান্তি’ শব্দটি আছে। জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থে ‘তান্তিপা’ নামটি পাওয়া যায়।
==ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব==
সভ্যতার উষালগ্নে মানুষ ছিল অসহায়। তখন থেকেই সাহিত্যের সঙ্গে ধর্মের একটি গভীর সম্পর্ক সূচিত হয়। বিশ্বের সকল ভাষার সাহিত্যেই তাই দেখা যায়, মানবীয় অনুভূতিগুলি প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাত্মচেতনার আবরণে। প্রাচীন ভারতে বেদ, উপনিষদ্, মহাকাব্য, পুরাণ সর্বত্রই এই দৃষ্টান্ত দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন চর্যাপদও ছিল এক বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়ের সাধনসংগীত। পদগুলি রচনার ক্ষেত্রে পদকর্তারা বিশুদ্ধ সাহিত্যবোধের দ্বারা চালিত না হয়ে যে অন্যরকম সাধ্য ও সাধনপ্রণালীর কথাই বলতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যদিও তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, “যাঁহারা সাধনভজন করেন তাঁহারাই সেই কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই”, তবু প্রাচীন বাংলার ধর্মসাধনার অঙ্গ হিসেবে রচিত এই সংগীতের অর্থবোধ ব্যতীত প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সংগীত বা কাব্য ছিল সেযুগের ধর্মসাধনার অন্যতম সোপান। মঙ্গলকাব্য, নাথসাহিত্য, বৈষ্ণব পদাবলি, বাউল গান, শাক্ত পদাবলি প্রভৃতি মধ্যযুগের বিভিন্ন সাহিত্যধারাতেও এই একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। চর্যার সাহিত্যমূল্য যেমন পরিমাপযোগ্য, তেমনই এই গানগুলিতে অবলম্বিত ধর্মের গূঢ় তত্ত্বও প্রণিধানযোগ্য। আধুনিক গবেষকেরা বৌদ্ধধর্মের নানা পুথি অনুসন্ধান করে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম ও সহজ-সাধনার স্বরূপ নির্ণয়ে প্রয়াসী হয়েছেন। এই বিষয়ে বিদেশি গবেষকদের পাশাপাশি ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী ও ড. শশিভূষণ দাশগুপ্তের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. বাগচী বাংলায় ''বৌদ্ধধর্ম ও সাহিত্য'' এবং ইংরেজিতে ''স্টাডিজ ইন তন্ত্রজ'' এবং ড. দাশগুপ্ত ইংরেজিতে ''অবস্কিওর রিলিজিয়াস কাল্টস অ্যাজ ব্যাকগ্রাউন্ড অফ বেঙ্গলি লিটারেচার'' ও ''ইন্ট্রোডাকশন টু তান্ত্রিক বুদ্ধিজম'' গ্রন্থের রচয়িতা। পরবর্তীকালে সকল গবেষক এঁদের প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হয়ে সিদ্ধাচার্যদের নির্দেশিত ও অনুশীলিত ধর্মাচারের বিস্তৃত পরিচয় দিতে সমর্থ হয়েছেন।
গৌতম বুদ্ধের দেহত্যাগের পর তাঁর অনুগামীদের মধ্যে নানা মতভেদের কারণে বৌদ্ধধর্মে ভাঙন দেখা দেয়। ধর্মীয় আদর্শ পর্যালোচনার জন্য পরপর চারটি বৌদ্ধ মহাসংগীতি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রবল মতবিরোধের প্রেক্ষিতে বৌদ্ধসমাজ হীনযান ও মহাযান নামে দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রাচীনপন্থী হীনযানীদের ভাবনা তুলনামূলকভাবে কিছুটা সংকীর্ণ ছিল। তাঁরা ‘অর্হৎ’ অর্থাৎ নিজেদের মুক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। এঁদের মধ্যে পদ্ধতির ভিন্নতা অনুযায়ী শ্রাবকযান ও প্রত্যেকবুদ্ধযান নামে দুটি উপদল গড়ে ওঠে। শ্রাবকযানীরা বুদ্ধত্বলাভের দুরাশা পোষণ করতেন না, কেবল নির্ধারিত আচার-আচরণ পালন করে ধর্মের পথে পুণ্য অর্জনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। যাঁরা বুদ্ধত্বলাভের উচ্চাশা পোষণ করতেন, তাঁরা প্রত্যেকবুদ্ধযানী নামে পরিচিত ছিলেন। এঁদের নিরিখে মহাযানীদের আদর্শ ছিল অনেক উদার। তাঁরা গৌতম বুদ্ধের ন্যায় পরোপকারে জীবন উৎসর্গ করে বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভ এবং তার মধ্যে দিয়ে বুদ্ধত্ব অর্জনকেই আদর্শ বলে মনে করতেন। বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভের উপায় হল শূন্যতা ও করুণার অভিন্নতায় বোধিচিত্তের জাগরণ ঘটানো। বোধিপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে বুদ্ধত্বলাভের একমাত্র সোপান বোধিসত্ত্বাবস্থায় উন্নীত হওয়া সহজ হত। বোধিচিত্ত কী এবং কীভাবে তাকে জাগরিত করা যায়, সে আলোচনা আবশ্যক। মহাযানীদের মতে, জাগতিক কোনও বস্তুরই নিজস্ব কোনও ধর্ম বা স্বরূপ নেই। অথচ প্রত্যেকের যে প্রাতিভাসিক স্বরূপ দেখা যায়, তা অন্য কোনও স্বরূপের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং পার্থিব সকল বস্তুই প্রকৃত অস্তিত্বহীন। বস্তু সম্পর্কে এই জাতীয় জ্ঞানই শূন্যতাজ্ঞান। যখন সাধক জগৎ-সংসারে উক্ত শূন্যতাজ্ঞান এবং বিশ্বব্যাপী করুণাকে একত্র সংযুক্ত করেন, তখন যে মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটিই হল বোধিচিত্ত (“শূন্যতা করুণাভিন্নং বোধিচিত্তম্”)। সাধকের মনে বিশ্বব্যাপী করুণার উদয় ঘটলে তিনি কেবল নিজের মুক্তিপ্রয়াসী হন না, পরোপকারের মধ্যে দিয়ে জগতের সকলের মুক্তিপ্রয়াসী হয়ে ওঠেন। বস্তুত মহাযানী মতের জনপ্রিয়তার কারণ নিহিত হয়ে রয়েছে তাঁর আদর্শে, সকল জীবের মধ্যে বুদ্ধত্ব কল্পনায় এবং সদাচারী পন্থায়। বিশ্বের সকল জীবের মুক্তির জন্য এভাবে পরোপকারে আত্মোৎসর্গ করার কথা অন্য কোনও ধর্মমতে বিশেষ দেখা যায় না। মৈত্রী, করুণা, অহিংসা প্রভৃতি মানবিক সদ্বৃত্তির অনুশীলনও মহাযানকে সকলের কাছে গ্রহণীয় করে তুলেছিল। বৌদ্ধ পরিভাষায় উক্ত সদ্বৃত্তিগুলিকে বলা হয় ‘পারমিতা’। জগতের শূন্যস্বভাবে বিশ্বাস হেতু মহাযানীরা ‘শূন্যবাদী’ নামে পরিচিত হন। দার্শনিক মত বিচারের সূক্ষ্মতায় মহাযানীদের মধ্যেও দুটি উপদল ছিল। যাঁরা প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির মধ্যবর্তী পথ ধরে চলতে চাইলেন, তাঁরা ‘মধ্যমক’ শাখার অন্তর্গত ছিলেন। অন্যদিকে যাঁরা বস্তুসত্তাকে চিৎসত্তায় পরিণত করে চৈতন্যরূপী জ্ঞানের মধ্যেই সমস্ত জগৎকে ধারণ করতে চাইলেন, তাঁরা গণ্য হতেন যোগাচার শাখার দার্শনিক হিসেবে। মধ্যমক মতের প্রবর্তক নাগার্জুন। যোগাচার মতের সাধন-পথের দিকটিতে অসঙ্গ বিশেষ গুরুত্ব দিলেও এটির দার্শনিক দিকটি গড়ে ওঠে বসুবন্ধুর নেতৃত্বে। যোগাচারবাদীরা বলতেন, “সর্বং বুদ্ধিময়ং জগৎ”। এই কারণে এই মতটি ‘বিজ্ঞানবাদ’ নামেও পরিচিত ছিল।
মহাযান বৌদ্ধধর্মের যোগাচার তথা বিজ্ঞানবাদ থেকে সহজযানে এই মতের রূপান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক পদক্ষেপ। এর পিছনে বৈদিক ও পৌরাণিক হিন্দুধর্মের প্রভাব ছিল বলেই গবেষকদের ধারণা। অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্টের দ্বারা ভারতীয় সমাজে ব্রাহ্মণ্য সংস্কার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে নাস্তিক্যবাদী বৌদ্ধধর্মেও দেবদেবীদের অনুপ্রবেশ শুরু হয়। এই দুর্বলতার সুযোগে হিন্দু তন্ত্রের দেহকেন্দ্রিক যোগসাধনার প্রক্রিয়াটি যোগাচার মতে গ্রাস করে। ইতিপূর্বে যাঁরা ‘পারমিতা’ অর্থাৎ দান, শীল, ক্ষান্তি, বীর্য প্রভৃতি পরম গুণের অনুশীলনের মাধ্যমে বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভের কথা বলতেন, তন্ত্রের প্রভাবে তাঁরাই মন্ত্রশক্তির প্রয়োগে আকাঙ্ক্ষিত বোধিসত্ত্বাবস্থাকে স্থায়ী করার কথা বললেন। এভাবে মন্ত্রের সংযোগে যোগাচার মত প্রথমে ‘মন্ত্রনয়’-এ পরিণত হল, তারপর এই পথেই নানাপ্রকার তান্ত্রিক গুহ্যাচার প্রবেশ করল এই মতে। বলা বাহুল্য, ভারতের বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মসাধনার মধ্যে তন্ত্রের আচারনিষ্ঠা প্রশ্নাতীত এবং এই মত বুদ্ধিগ্রাহ্য আলোচনা অপেক্ষা অধিক প্রাধান্য দেয় কার্যকরী আচার-পদ্ধতিকেই। তন্ত্রের হাত ধরে মন্ত্র, মণ্ডল ও মুদ্রা এভাবেই ঢুকে পড়ল শীল ও সদাচার-নির্ভর বৌদ্ধধর্মে। যৌনযোগাচার-কেন্দ্রিক সাধনপদ্ধতিও বাদ গেল না। মন্ত্রনয় বা মন্ত্রযান পরিচিত হল বজ্রযান নামে। কালক্রমে বজ্রযানেও সাধনার তারতম্যে কিছু উপবিভাগ গড়ে উঠল: ক্রিয়াতন্ত্র, যোগতন্ত্র, চর্যাতন্ত্র, অনুত্তরতন্ত্র। বজ্রযানের পরবর্তী পরিণতি কালচক্রযান ও সহজযান। চর্যাপদের প্রাপ্ত পুথিতে উক্ত তিন যানের প্রভাব থাকলেও বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সহজযানী বৌদ্ধ মত। তাই এই সহজযান মতটি আলোচনা করা প্রয়োজন।
মহাযানী মতের শূন্যের ধারণাটি পূর্বেই বজ্রে পরিণত হয়েছিল। এবার বজ্র পরিণত হল ‘সহজ’-এ। ''হেবজ্রতন্ত্র'' মতে, জন্মের সঙ্গেই যা উৎপন্ন হয় তাই ‘সহজ’ (“সহজাত্যং যদুৎপন্নং সহজং তৎ প্রকীর্তিতম্।”)। দেহ হল সেই সহ-জ উপাদান, যা জীব জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই প্রাপ্ত হয়। হিন্দু তন্ত্রেও দেহের প্রাধান্য স্বীকার করে বলা হয়েছে, “যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে দেহভাণ্ডে”। মহাযান মতে, শূন্যতা ও করুণার মিলনে যে বোধিচিত্তের উদ্ভব ঘটত, সহজযানে তা হল প্রজ্ঞা ও উপায়ের সংযুক্তিতে। প্রজ্ঞা ‘প্রকৃতি’ রূপে এবং উপায় ‘পুরুষ’ রূপে বিবেচিত হল এই মতে। তন্ত্র মতে, পরমার্থ সত্য দুই রূপে প্রতিভাত—নিবৃত্তিরূপ পুরুষ বা শিব এবং প্রবৃত্তিরূপ প্রকৃতি বা শক্তি। যখন শিব ও শক্তি অর্থাৎ পুরুষ ও প্রকৃতি অদ্বয়স্বরূপে মিলিত হয় তখন পরমার্থ সত্য লাভ করা যায়। এই মিথুন বা মিলিতাবস্থাই জীবের কাম্য। কারণ এই মিলন বিশ্বের সৃষ্টিপ্রবাহের কারণ। ''হঠযোগপ্রদীপিকা'' গ্রন্থে বলা হয়েছে, কায়াসাধনায় দেহস্থ বামগা নাড়ী ঈড়া ও দক্ষিণগা নাড়ী পিঙ্গলা যথাক্রমে শক্তি ও শিবের প্রতীক। এই দুই নাড়ীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ ও অপান বায়ুকে দেহমধ্যস্থিত নাড়ী সুষুম্নার পথে চালিত করে মস্তকে স্থিত সহস্রারে প্রেরণ করতে পারলেই অদ্বয় সিদ্ধি ঘটে। এই বিশুদ্ধ দার্শনিক বিষয়টির সঙ্গে পার্থিব নরনারীর যৌনমিলনকে এক করে ফেলা হয়েছে তন্ত্রের আর-একটি অপার্থ (malicious) ধারণায়। সেটি হল, প্রতিটি নারী ও পুরুষের মধ্যে শক্তি ও শিব বিদ্যমান থাকলেও শিব-প্রাধান্যে যে-কোনও পুরুষই শিব এবং শক্তি-প্রাধান্যে নারীমাত্রেই শক্তি। অতএব শিব-শক্তির মিলন বলতে প্রাকৃত নরনারীর যৌনসংযোগকেই বোঝায়। চর্যার সাধকেরা যে সাধনসঙ্গিনী নিয়ে সাধনায় অগ্রসর হতেন, তার পিছনে তন্ত্রের এই প্ররোচনা বিপুলভাবে কাজ করেছে।
সহজযানের পরম লক্ষ্য অদ্বয় মহাসুখের উপলব্ধি। মহাসুখের অপর নাম সহজ বা সহজানন্দ। নির্বাণ ও মহাসুখ এক্ষেত্রে প্রায় অভিন্ন। তাই সহজযানী সিদ্ধাচার্যেরা তাঁদের গানে বারবার মহাসুখের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। চর্যাকার লুইপাদ চিত্তকে দৃঢ় করে মহাসুখ পরিমাণ করতে নির্দেশ দেন। ভুসুকুপাদ বলেন, তিনি মিলনলীলার মধ্যেই সহজানন্দ মহাসুখকে উপলব্ধি করেছেন। কম্বলাম্বরপাদ জানান, বাম ও দক্ষিণকে চেপে সুষুম্নার সঙ্গে মিলিয়ে দিতেই মহাসুখ মিলন। এইভাবে কাহ্নপাদ, শবরীপাদ, দারিকপাদ প্রমুখ কবিদের রচনায় মহাসুখের স্বরূপ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তাতে বোঝা যায়, মহাসুখ বা সহজানন্দ একটি অচিন্ত্যনীয় মহাসুখকর অনুভব। এই সহজসুখ উৎপন্ন হয় যে স্থানে, সেই চরমকেন্দ্রটিকে কেউ জিনপুর, কেউ বা কামরূপ, আবার কেউ অনুত্তরধাম, পারিমকুল, কিংবা জোহ্নাবাড়ি ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করেছেন। মহাসুখের লক্ষ্যে পৌঁছাতে শাস্ত্রপাঠ, জপতপ, প্রব্রজ্যা বা সন্ন্যাসগ্রহণের মতো বাহ্যানুষ্ঠান ত্যাগ করার কথাও বলে হয়েছে। প্রজ্ঞা ও উপায়ের মিলিত রূপই যুগনদ্ধ বলে কথিত। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে ও ক্ষণে ভিন্ন ভিন্ন আনন্দের উদ্ভব ঘটে। সহজ মহাসুখের অপর লক্ষণ হল শূন্যতা। সাধকের অবস্থানভেদেও শূন্যতার প্রকারভেদ আছে। কায়, বাক্ ও চিত্তের সমবায়ে জীবের সত্তাবোধ। যখন এগুলির অস্তিত্ব শূন্য হয়ে পড়ে তখনই বোধিচিত্তের সর্বশূন্যতার প্রতিষ্ঠা ঘটে। এই অবস্থাকে চর্যাকারেরা নানা ভাবে প্রতীকায়িত করেছেন। কখনও বলেছেন শূন্য প্রান্তর, কখনও বা প্রতিবেশীহীন পর্বতের টিলা। বর্ণচিহ্নরূপহীন চরম শূন্যস্বভাব এই মহাসুখ। এর সর্বরিক্ত রূপ ভুসুকুপাদের ৪৯ সংখ্যক চর্যাটিতে প্রতীকী উপস্থাপনায় উজ্জ্বল। নির্দয় বঙ্গাল দেশ লুণ্ঠন করে সেখানে। পঞ্চপাটন, ইন্দ্রের মতো বিষয়-আশয় সব বিনষ্ট হয়, সোনা-রুপো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। চর্যার মহাসুখের ধারণাকে নানা মাত্রায় দেখা সম্ভব। কখনও তা মিলনজনিত একটি সহজ আনন্দঘন অবস্থা, আবার কখনও তা সর্বশূন্যের সার্থক পরিণাম। যেহেতু বিজ্ঞানবাদ থেকেই এর সূচনা, তাই এর মধ্যে নিরালম্ব বিশুদ্ধ বিজ্ঞানকেও পাওয়া যায়। এবং এই মহাসুখবৃক্ষের ফল হল মহাকরুণা। দেহের মধ্যে চারটি অবস্থান কল্পনা করে চক্র, ক্ষণ, আনন্দ, শূন্যতা ইত্যাদি ভেদে মহাসুখের ক্রমোৎকর্ষের বিভিন্ন অভিধা কল্পনা করা হয়েছে। নিচের ছকটিতে তারই আভাস দেওয়া হল:
{| class="wikitable"
|-
| মস্তক || মহাসুখচক্র || সহজানন্দ || বিলক্ষণ || সর্বশূন্য || নৈরাত্মা || চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত
|-
| হৃদয় || ধর্মচক্র || বিরমানন্দ || বিমর্দ || মহাশূন্য || চিত্ত || গ্রাহ্য ও গ্রাহক শূন্য
|-
| কণ্ঠ || সম্ভোগচক্র || পরমানন্দ || বিপাক || অতিশূন্য || বাক্ || গ্রাহক শূন্য
|-
| নাভি || নির্মাণচক্র || প্রথমানন্দ || বিচিত্র || শূন্য || কায় || গ্রাহ্যশূন্য
|}
সাধ্য এই মহাসুখকে সাধক কীভাবে লাভ করেন অর্থাৎ চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত সাধনার পথটি কী তাও আলোচনা করা হয়েছে। চর্যার হেঁয়ালিপূর্ণ রহস্যময় ভাষা ভেদ করে যেটুকু বোঝা গিয়েছে তা হল, এই ঈড়া ও পিঙ্গলা নাড়ী যখন মুক্ত অবস্থায় থাকে তখন যাবতীয় সুখদুঃখের অনুভূতি জীবের অস্তিত্বকে মথিত করে। আর যখন পরস্পর সংযুক্ত হয় এবং মধ্যনাড়ী সুষুম্নার পথে চালিত হয়, তখন বাহ্যেন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ হয়ে অন্তর্লোক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। সাংবৃতিক বোধিচিত্ত এইভাবে পারমার্থিক বোধিচিত্তে পরিণত হওয়ার অবস্থায় পৌঁছায়। সম্পূর্ণ মননপ্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল এই সাধনপথটি কবিরা রূপকের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। এই রূপক কোথাও নৌকা বাওয়ার, কোথাও ইঁদুর মারার, কোথাও মত্ত হাতির পদ্মবন বিনষ্ট করার, আবার কোথাও তুলো ধোনা কিংবা মদ চোলাইয়ের। পুদ্গলচিত্তকে নিঃস্বভাবীকৃত করতে পারলেই জিনপুরে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। ডোম্বীপাদ তাঁর একটি পদে এই নাড়ীদ্বয় ও মধ্যপথে তাদের প্রবেশ করানোর বিষয়টি প্রতীকী আভাসে ব্যঞ্জিত করে তুলেছেন:
<poem>
:: গঙ্গা জউনা মাঝেঁ রে বহই নাঈ।
:: তঁহি বুড়িলী মাতঙ্গী পোইআ লীলেঁ পার করেই।।...
:: চন্দ সূজ্জ দুই চকা সিঠি সংহার পুলিন্দা।
:: বাম দাহিন দুই মাগ ন রেবই বাহতু ছন্দা।।
</poem>
এমন বহু পদেই কায়াসাধনার তত্ত্বটি সুন্দরভাবে প্রকাশিত। কাহ্নপাদের একটি পদে কাপালিক যোগীর সাধনায় দেহপ্রাধান্য সরাসরি উচ্চারিত: “দেহ নঅরী বিহরই একাকারেঁ”। চর্যাগীতিগুলিতে গুরুবাদের প্রসঙ্গও এসেছে। গুহ্য সাধনপ্রক্রিয়া মাত্রেই গুরুগম্য জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিশেষত তান্ত্রিক আচারে অনভিজ্ঞ বালযোগীকে দেহকেন্দ্রিক কৃত্যাদিতে সাহায্য করেন গুরু। তাই চর্যাকারেরা বলেছেন: “বাহতু কামলি সদ্গুরু পুচ্ছি”, কিংবা “সদ্গুরু বোহেঁ জিতেল ভববল”, অথবা “সদ্গুরু পাঅপএঁ জাইব পুনু জিনউরা” ইত্যাদি। কোথাও আবার গুরুর অপ্রয়োজনীতা ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে “গুরু বোব সিসা কাল”। আসলে বিশুদ্ধ তত্ত্বকথায় গুরুর ভূমিকা ন্যূনতম, কিন্তু তান্ত্রিক গুহ্যাচার পালনে গুরুই পথনির্দেশক। চর্যায় সাধকের নানা অবস্থার বর্ণনা আছে। যখন তিনি বিষয়বদ্ধ তখন একরকম, সাধনার প্রাথমিক স্তরে অন্যরকম, ক্রমশ প্রবৃত্তিনাশে তাঁর স্বভাব পরিবর্তিত, মস্তক বা উষ্ণীষকমলে যখন তাঁর চিত্তের অবস্থান তখন সে অনুভূতি ভিন্ন ধরনের, আবার সহজানন্দ লাভের পর সিদ্ধ সাধকের অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। প্রতিটি স্তরে সাধক এক-একজন শক্তি বা সাধনসঙ্গিনীর অস্তিত্ব অনুভব করেন। এঁরাই সংকলিত পদগুলিতে শবরী, ডোম্বী, চণ্ডালী, যোগিনী, নৈরামণি ইত্যাদি নামে খ্যাত। সম্ভোগচক্রের নৈরামণি মহাসুখচক্রে উন্নীত হয়ে সহজসুন্দরীতে পরিণত হন। এইভাবে প্রেমের রূপকে সাধনকথা পরিবেশিত হয়েছে এখানে। বস্তুত এই পথ ধরেই সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের অবশ্যম্ভাবী পতনের বীজও অঙ্কুরিত হয়েছিল। মূলত ব্যভিচারের কারণে বৃহত্তর সমাজ সেই আমলে এদের বর্জন করতে চেয়েছিল। তুর্কি আক্রমণের পর মুণ্ডিতমস্তক বৌদ্ধ সহজিয়ারা ‘নেড়া-নেড়ী’ নামে অভিহিত হয়ে সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিনযাপন করতে থাকেন। পরবর্তীকালে নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্র এঁদের বৈষ্ণবধর্মের দীক্ষিত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। বীরভদ্রের বৈষ্ণব সাধনায় কিছুটা সহজিয়া প্রভাব পড়েছিল বলে গবেষকদের ধারণা।
==ভাষা==
চর্যাপদের ভাষাপ্রসঙ্গটি বিতর্কিত। বিশেষত চর্যাপদ কোন ভাষায় রচিত তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্পাদিত গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পরই। উক্ত বইটি ছিল চারটি পুথির সংকলন: মুনিদত্তের সংস্কৃত টীকা সহ চর্যাপদের পুথি, সরহপাদ ও কাহ্নপাদের ''দোহাকোষ'' পুথিদ্বয় এবং ''ডাকার্ণব''। শাস্ত্রী মহাশয় চারটি পুথিই হাজার বছরের পুরোনো বাংলা ভাষার লেখা বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু এই মত সবাই মেনে নেননি। বিতর্কের সূচনা সেই থেকেই। আসলে চর্যাপদ যে সময়ে রচিত হয়েছে, ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বের বিচারে সেই সময়টি নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির উদ্ভবকাল। সবে তখন অপভ্রংশের গর্ভ থেকে বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া, মগহি, অওধি, ভোজপুরি প্রভৃতি ভাষা ভূমিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। একই জঠরে বেড়ে ওঠার ফলে এগুলির মধ্যে ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক ও শব্দভাণ্ডারগত পার্থক্য খুবই কম। গবেষকদের বিভ্রান্তির কারণ সেটাই। ভাষা সাবালক হলে তার এমন কিছু নিজস্ব চিহ্ন প্রকাশিত হয়, যেগুলি ভাষার প্রভেদকারী বৈশিষ্ট্য বলে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় তা ঘটার আগেই চর্যাপদ রচিত হয়েছে, ফলে সংশয়ের জাল সহজেই বিস্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ১৯২০ সালে ভাষাতাত্ত্বিক বিজয়চন্দ্র মজুমদার ''বঙ্গবাণী'' মাসিক পত্রিকায় কয়েকটি প্রবন্ধে এবং ''হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল ল্যাংগুয়েজ'' গ্রন্থে বলেন যে, চর্যাগীতিগুলি পুরনো বাংলা ভাষায় রচিত হয়নি, এতে দু-চারটি বাংলা, ওড়িয়া ও অসমিয়া পদ থাকলেও মূল ভাষাছাঁদ হিন্দির। ১৯২১ সালে জার্মান ভাষাতত্ত্ববিদ হারমান জেকবি তাঁর সম্পাদিত ''সনৎকুমারচিতম্'' গ্রন্থের ভূমিকায় চর্যাপদের ভাষাকে “All Bengalishch” বা প্রত্ন-বাংলা বলে নির্দেশ করেন, কিন্তু কোনও খাঁটি যুক্তি তিনি দিতে পারেননি। ১৯২৬ সালে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত ''দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ'' গবেষণাগ্রন্থে চর্যাগীতির ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ, ছন্দ, বাগ্বিধি ইত্যাদি বিচার করে প্রথম একটি সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। তিনি স্পষ্ট জানালেন যে, ''দোহাকোষ'' দুটির ও ''ডাকার্ণব'' পুথির ভাষা শৌরসেনী অপভ্রংশ, কিন্তু চর্যাগানের ভাষা আদিতম বাংলা। অবশ্য এই বাংলায় কিছু পশ্চিমা অপভ্রংশ এবং দু-চারটি ওড়িয়া-মৈথিলী শব্দ মিশে আছে। তাঁর তীক্ষ্ণ, শক্তিশালী ও বাস্তবসিদ্ধ যুক্তিগুলি মেনে নিতে কোনও অসুবিধাই হল না। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও তাঁর ''Les Chants Mystique de Saraha et de Kanha'' গবেষণাগ্রন্থে সুনীতিকুমারের মতটি মেনে নেন।
অন্যান্য ভাষার গবেষকেরাও অবশ্য চর্যাপদ তাঁদের ভাষায় রচিত বলে দাবি করেছিলেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন, জয়কান্ত মিশ্র ও কাশীপ্রসাদ জয়সওয়াল বলেন, চর্যাপদের ভাষা বিহারি এবং সিদ্ধাচার্যদের অধিকাংশই মগধ অঞ্চলের বাসিন্দা। ১৯৩৫ সালে বরোদায় অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সের সপ্তম অধিবেশনে উক্ত তিন হিন্দিভাষী পণ্ডিত চর্যাপদের উপর বাংলা ভাষার দাবিকে অস্বীকার করেন। চর্যায় ‘জো’, ‘সো’, ‘তো’, ‘মই’ প্রভৃতি সর্বনাম, ‘অইসন’, ‘জইসন’, ‘ঐছে’, ‘তৈছে’, ‘জিস’, ‘তিস’, ‘জসু’, ‘তসু’ প্রভৃতি সর্বনামীয় ক্রিয়াবিশেষণ, ‘রাতি পোহাইলী’-র ন্যায় ক্রিয়াপদের স্ত্রীলিঙ্গীকরণে হিন্দি ও মৈথিলীর বিশেষত্ব আছে ঠিকই, কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও দেখার যে এই দুই ভাষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ‘-ক’, ‘-কো’ বিভক্তি যোগে ষষ্ঠীর পদগঠন এবং ‘-অল’, ‘-অব’ বিভক্তি যোগে যথাক্রমে অতীত ও ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ গঠনের দৃষ্টান্ত চর্যাপদে নেই। ভাষাগত সাদৃশ্যের কারণে ওড়িয়া ও অসমিয়া ভাষার দাবিও চর্যাপদের উপর আছে। যেমন, ওড়িয়াতে সংস্কৃত প্রভাবজাত বর্তমান কালবাচক ক্রিয়াপদে ‘-অন্তি’ বিভক্তির ব্যবহার চর্যায় দেখা যায়: “নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী” কিংবা “ভনন্তি মহিণ্ডা”। কিন্তু এটাও লক্ষণীয় যে, ‘-রু’ দিয়ে অপাদানের পদগঠন, সর্বত্র ‘-র’ বিভক্তি দ্বারা ষষ্ঠীর পদগঠন, ‘-মানে’ পরসর্গ যোগে বহুবচনের পদনির্মাণ, যা ওড়িয়া ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ, তার একটি দৃষ্টান্তও চর্যাগানে পাওয়া যায় না। অসমিয়া ভাষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দু-একটি ক্ষেত্রে অসমিয়া ভাষার ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য দেখা গেলেও কয়েকটি বিশিষ্ট ও প্রধান ক্ষেত্রে চর্যাগীতির বাক্যগঠন রীতি অসমিয়া ভাষার তুলনায় পৃথক। চর্যার ভাষায় শৌরসেনী অপভ্রংশের লক্ষণ ও শব্দের ব্যবহারও স্বাভাবিক। কারণ, মাগধী প্রাকৃত থেকে জাত মাগধী অপভ্রংশ প্রাত্যহিক ব্যবহারে প্রচলিত থাকলেও শিষ্ট সাহিত্যের ভাষা হিসেবে অষ্টম-নবম শতকে ব্যবহৃত হত শৌরসেনী অপভ্রংশ। চর্যাকারেরা যে যুগের মানুষ ছিলেন সেই যুগের বাংলার ভৌগোলিক সীমা আজকের তুলনায় অনেক বেশি প্রসারিত ছিল। সেযুগের বাংলা-বিহারের বৌদ্ধ সংঘগুলিতে ভারতের নানা প্রান্তের মানুষ একত্র হতেন শিক্ষা ও ধর্মলাভের উদ্দেশ্যে। ভাষা হিসেবে শৌরসেনী অপভ্রংশের গ্রহণযোগ্যতা সেযুগে ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু চর্যাপদে বাংলা ভাষার লক্ষণ, যা ত্রিস্তরীয় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেও আধুনিক যুগেও সমানভাবে উপস্থিত, তা এমনভাবে সেঁটে রয়েছে যে তার পরিমাণগত প্রাচুর্যে একে অবশ্যই প্রাচীন বাংলা ভাষা বলে চিহ্নিত করা যায়। বিশিষ্ট গবেষকদের আলোচনার সারাৎসারটুকু উপস্থিত করে বাংলার এই বিশিষ্ট লক্ষণগুলিকে বুঝে নেওয়া যেতে পারে:
; (ক) ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
# সংস্কৃত বর্ণমালা থেকে ঈ, ঊ, ঋ, ৯ প্রভৃতি বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় এলেও বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনির উচ্চারণে হ্রস্ব-দীর্ঘ পার্থক্য রক্ষিত হয় না। চর্যার বানানেও এই বিশেষ লক্ষণটি দেখা যায়। যেমন, চিএ, চিঅ; হোহী, হোহি; লুই, লূই; বোহী, বোহি ইত্যাদি।
# স্বরবর্ণের মতো ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ষেত্রেও দেখা যায় স্বতন্ত্র ধ্বনিজ্ঞাপক চিহ্ন থাকলেও বাংলায় সেগুলির উচ্চারণে বিশেষ পার্থক্য নেই। জ-য, ণ-ন, শ-ষ-স ইত্যাদি ক্ষেত্রে উচ্চারণে কোনও পার্থক্য দেখা যায় না। চর্যাতেও স্বভাবতই এইসব বর্ণের লিপি-বিপর্যয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেমন, জোইনি, যোইনী; যাই, জাই; নাবী, ণাবী; শবর, সবর; শূন, সূণ; ষিআলা, শিয়ালী ইত্যাদি।
# অর্থপার্থক্য সৃষ্টি কিংবা বিশেষ কোনও আবেগ প্রকাশের জন্য বাংলায় ব্যঞ্জনধ্বনির দ্বিত্ব উচ্চারণ করা হয়। চর্যার ভাষায় তার ছাপ সুস্পষ্ট। যেমন, ফাড্ডিঅ, নিঅড্ডী, চ্ছাড়ী ইত্যাদি।
; (খ) রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
# বাংলা ভাষার সমস্ত কারকে ‘-এ’ বিভক্তির প্রয়োগ লক্ষিত হয়। চর্যার ভাষাতেও ‘-এ’ বা ‘-এঁ’ বিভক্তির এইরকম প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন, কর্তৃকারকে—কুম্ভীরে খাঅ; কর্মকারকে—গঅবরেঁ তোলিআ; করণকারকে—কুঠারে ছিজঅ; সম্প্রদান কারকে—ধামার্থে চাটিল; অপাদান কারকে—জামে কাম কি কামে জাম; অধিকরণ কারকে—ঘরে সান্ধঅ।
# আধুনিক বাংলায় যেমন কর্ম-কর্তৃ বাচ্য গঠন করা হয়ে থাকে, চর্যাতেও অবিকল তারই প্রতিরূপ দেখা যায়। যেমন, নানা তরুবর মৌলিল রে, ডমরু বাজএ বীরনাদে।
# বাংলা ভাষার বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ চর্যাতেও বিভিন্ন কারকে দেখা যায়। যেমন, তৃতীয়াতে ‘-তেঁ’ বিভক্তি (সুখ দুখেতেঁ নিচিত মরিঅই); চতুর্থীতে ‘-রেঁ’ বিভক্তি (সো করউ রস রসানেরে কংখা); ষষ্ঠীতে ‘-র’/‘এর’ বিভক্তি (সাঙ্কমত চড়িলে; দুধিল দুধ কি বেণ্টে ধামায়) ইত্যাদি।
# বাংলার নিজস্ব কিছু অনুসর্গ (মাঝে, অন্তরে, সঙ্গে ইত্যাদি) আছে। চর্যায় এগুলির প্রয়োগও অপ্রতুল নয়। যেমন, কোড়ি মাঝেঁ একু; তোহার অন্তরে; দুজ্জন সাঙ্গে অবসরি জাই ইত্যাদি।
# স্বাধীন অব্যয় রূপে উপসর্গের প্রয়োগেও বাংলার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। উপসর্গগুলি অব্যয় হিসেবে বিশেষ্যের পূর্বে বসে বিচিত্র অর্থপ্রকাশে সাহায্য করে। চর্যাপদেও এই লক্ষণ দৃশ্যমান। যেমন, <u>নি</u>সারা, <u>বি</u>আলী, <u>স</u>চ্চড়ে, <u>বি</u>মনা ইত্যাদি।
# আধুনিক বাংলায় ‘সে’ শব্দটি মুখ্যত সর্বনাম হিসেবে, আবার কখনও বা বাক্যালংকার অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্য ভাষায় শব্দটি বসে বিশেষণ ও সর্বনাম হিসেবেই। বাক্যকে অলংকৃত করার উদ্দেশ্যে বাংলা ছাড়া আর কোথাও ‘সে’ বসে না। চর্যায় ‘সে’ ও একই অর্থে ‘সো’-এর ব্যবহার দেখা যায় যত্রতত্র। যেমন, এক সে শুণ্ডিনী, এক সো পদুমা, গুরু বোস সে সীসা কাল ইত্যাদি।
; (গ) ক্রিয়াপদের বৈশিষ্ট্য
# বিভিন্ন ক্রিয়ার কাল গঠনে ধাতুরূপে বিশিষ্ট বিভক্তির প্রয়োগ করা হয় বাংলায়। পুরুষ ও বচন ভেদেও তা পৃথক। ভবিষৎকালে ‘-ইব’ বিভক্তি প্রযুক্ত হয় উত্তম পুরুষে, অতীতকালে প্রথম পুরুষে বসে ‘-ইল’ বিভক্তি এবং অসমাপিকায় ‘-ইয়া’ বা ‘-ইলে’ ইত্যাদি প্রযুক্ত হয়। এইসব লক্ষণ চর্যার ভাষাতেও পাওয়া যায়। যেমন, জই তুম্হে লোঅ হে হেইব পারগামী; কাহ্নু কহি গই করিব নিবাস; কানেট চৌরি নিল অধরাতি; সসুরা নিদ গেল; মাঅ মারিআ কাহ্ন ভইঅ কবালী; সাঙ্কমত চড়িলে ইত্যাদি।
# বাংলা ক্রিয়াপদের অপর বিশেষত্ব হল যৌগিক বা সংযোগমূলক ক্রিয়াপদ গঠন। দুভাবে এই পদ গঠিত হয়। অসমাপিকার সঙ্গে সমাপিকার সংযোগে অথবা বিশেষ্য বা বিশেষণ পদের সঙ্গে সমাপিকার সংযোগে। কেউ কেউ এই জাতীয় ক্রিয়াপদকে বাংলা ভাষার দুর্বলতা বলেও নির্দেশ করেছেন। চর্যাপদেও আছে—গুণিআ লেহুঁ; টুটি গেল, ধরণ ন জাই; নিদ গেল; কহন ন জাই; ভান্তি ন বাসসি; ছই ছোই যাই ইত্যাদি।
# বাংলা ভাষায় বিশিষ্ট ভঙ্গির জন্ম হয়েছে বাক্যে ক্রিয়াপদের বাহ্যিক অনুপস্থিতি থেকে। এই লক্ষণ বাংলা গদ্যের সূচনাতেই লক্ষ্য করা যায়। চর্যাপদের ভাষাতেও এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, কায়া তরুবর পঞ্চ বি ডাল; ছড়গই সঅল সহাবে সুধ; গন্ধ পরস রস জইসো তইসো।
# বাংলার বিভিন্ন বাগ্বিধির ব্যবহারেও চর্যাপদের ভাষা সহজে অলংকৃত। এইসব বিশিষ্টার্থক বাক্যরীতি পরে কালবাহিত হয়ে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। যেমন, আপনা মাংসে হরিণা বৈরী, হাথেরে কাঙ্কন মা লেউ দাপন, ভান্তি ন বাসসি জাংতে, তু লো ডোম্বী হাঁউ কপালী, বর-সুণ গোহালী কিমো দুঠ বলন্দেঁ ইত্যাদি।
এইসব বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, “The language of the charyas is the genuine vernacular of Bengal at its basis.” চর্যাপদের উপর অন্যান্য ভাষার দাবি নিরপেক্ষভাবে বিচার করে এটুকুই বলা যায় যে, চর্যাগীতিতে বিক্ষিপ্তভাবে ওড়িয়া, অসমিয়া, হিন্দি ও মৈথিলী শব্দ ছড়িয়ে থাকলেও এর মূল প্রকাশ্য ছাঁদটিই ছিল মাগধী অপভ্রংশের গুটি কেটে বেরিয়ে আসা সদ্যোজাত বাংলা ভাষার। তখনও তার পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত না হলেও তার নিজস্বতার অস্ফুট চিহ্নগুলি চর্যাপদের শারীরিক গড়নে ঠিকই ধরা পড়ে।
===সন্ধ্যাভাষা===
চর্যাপদের ভাষার আরও একটি দিক রয়েছে। ভাষা ভাবপ্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলেও সব ভাষা একইভাবে সংযোগ স্থাপন করে না। যে ভাষা ইঙ্গিতপ্রধান তার চালচলন আলাদা, আবার যে ভাষা ধ্বনিনির্ভর ও বাচ্যার্থপ্রধান তার আবেদন ভিন্ন প্রকার। ভাষাতাত্ত্বিকেরা ভাষার দেহময় রূপের কথাও বলেছেন, আবার প্রায়-ভাষার (para-language) কথাও বলেছেন। চর্যাপদের ভাষা-সংক্রান্ত আলোচনায় এইসব ভাবনা এই কারণেই প্রাসঙ্গিক যে, এখানে কোনও বক্তব্য স্পষ্টভাবে উপস্থিত করার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত জটিল পথ অবলম্বন করা হয়েছে। ফলে চর্যাকার ও পাঠকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে একটি প্রাচীর। এটা বোধহয় চর্যাকারদের অভিপ্রায়সিদ্ধ ধরন। কারণ, তাঁরাও কোনও কারণে চাইতেন এইসব গানে পরিবেশিত তত্ত্ব ও তথ্য অল্পসংখ্যক লোকের কাছেই পৌঁছাক। ঢেণ্ঢণপাদ যেমন বলেন, “ঢেণ্ডনপাএর গীত বিরলে বুঝঅ”। কুক্কুরীপাদও তাঁর চর্যার ভণিতার শেষ চরণে স্বীকার করেছেন যে, কোটির মধ্যে গুটিকতক লোকই তাঁর বক্তব্য বুঝবেন: “কোড়ি মাঝেঁ একু হিঅহিঁ সমাইউ”। এইভাবে মুষ্টিমেয় পাঠক নির্বাচনের কারণ অনুসন্ধান করতে হলে চর্যাপদের নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্যময় আচারের দিকে দৃষ্টি দিতে হয়। তন্ত্রও এমনই ‘শাম্ভবী বিদ্যা’, যা ‘গোপ্যা কুলবধূরিব’। সহজযানীরা তন্ত্রের কায়াসাধনাকে প্রাধান্য দেওয়ায় সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁদের সাধনতত্ত্বটিকে। কেবল দীক্ষিত ব্যক্তিদের কাছেই তাঁরা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সেই সাধনার প্রণালী ও অধ্যাত্মচেতনার প্রকৃত রহস্যকে। তাই তাঁরা এমন একপ্রকার সাংকেতিক ভাষা অবলম্বন করেছিলেন, যে ভাষার সংকেত শুধু সংশ্লিষ্ট ধর্মের সাধকেরাই বুঝবেন, অন্যরা নয়। এই সংকেতপূর্ণ ভাষার তাঁর অন্য নামও দিয়েছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই ভাষার নাম ‘সন্ধ্যাভাষা’। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভূমিকায় সন্ধ্যাভাষার উল্লেখ করে এই ভাষার প্রকৃতি সম্পর্কে লিখেছিলেন, “আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না।” ফারসি গবেষক ইউজিন বুর্নফ ''সদ্ধর্ম্পুণ্ডরীকসূত্র'' গ্রন্থের অনুবাদের ভূমিকায় সন্ধ্যাভাষাকে বলেছেন “Language Enigmatique” বা প্রহেলিকাময় ভাষা। আসলে রহস্যময় হেঁয়ালির ভাষাতে তত্ত্বপ্রকাশের রীতি খুবই প্রাচীন। বেদ-উপনিষদেও স্থানে স্থানে হেঁয়ালি ব্যবহার করা হয়েছে। গোপনীয়তার কারণে এবং গুহ্য তত্ত্ব বহন করার জন্য এই ভাষাকে এইচ. কার্ন মন্ত্রের সগোত্র বলে মনে করেছেন। অবশ্য প্রকৃতি অনুসারে সন্ধ্যাভাষাকে ঠিক মন্ত্র বলা চলে না। কারণ অলৌকিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা এই ভাষার আছে, এমন দাবি কোথাও করা হয়নি।
চর্যার আভিপ্রায়িক সাংকেতিক বচনের নাম সন্ধ্যাভাষা। এর উল্লেখ প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যায়। শব্দটির বানান, ব্যুৎপত্তি ও অর্থ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। মহাযানী ধর্মগ্রন্থে ও সেগুলির ভাষ্যে সর্বত্র ‘সন্ধ্যা’ বানানই দেখা যায়। কিন্তু বিধুশেখর শাস্ত্রী এই বানানকে লিপিকরের প্রমাদ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, যথার্থ বানানটি হল ‘সন্ধা’। ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, চর্যাপদের ভাষার মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন অর্থ রয়ে গিয়েছে। সেই লুক্কায়িত তাৎপর্যই আভিপ্রায়িক বচন (Intentional language)। এটি শব্দের বাচ্যার্থ থেকে পৃথক। তাঁর কথায়, “Abhiprayika means that it is intended to imply or suggest something different from what is expressed by the words.” অর্থাৎ এই ভাষাতে রয়েছে কোনও নিগূঢ় ব্যঞ্জনা বা ভিন্ন অর্থের অভিসন্ধি। যে শব্দের মূল ব্যুৎপত্তি ছিল ‘সম্-ধৈ+আ’, সেটি বিধুশেখরের ভাষ্যে পরিবর্তিত হয়ে হল ‘সম্-ধা+ঙ’। এই মত সমর্থন করেন ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীও। এঁদের দুজনেরই মতে, সন্ধ্যাভাষা অবশ্যই সাংকেতিক ভাষা, যা শব্দগুলির নিজস্ব আভিধানিক অর্থ পরিহার করে ভিন্নতর অর্থের ব্যঞ্জনা এনে দেয় এবং সেই অর্থ কোটির মধ্যে গুটিকতকের হৃদয়েই প্রবেশ করে। চর্যায় গুরুর ভূমিকা এখানেই। তিনি সেই শ্লিষ্ট অর্থটি শিষ্যের কাছে পরিস্ফুট করে তোলেন।
বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীর বক্তব্য কিছুটা সঠিক হলেও সমস্যা অন্যত্র। তাঁরা বলেছেন, লিপিকরের প্রমাদে ‘সন্ধা’ শব্দটি ‘সন্ধ্যা’ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রাচীন পুথিগুলি লক্ষ্য করলে প্রায় সর্বত্রই ‘সন্ধ্যা’ বানানই পাওয়া যায়। একটি বিশেষ বানানে সমস্ত লিপিকর প্রমাদগ্রস্থ হবেন, এটা নিতান্তই কষ্ট-কল্পনা। তাছাড়া মুনিদত্ত তাঁর টীকায় বারবার 'সন্ধ্যাবচন’-এর কথা বলেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রাকৃতিক সন্ধ্যার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অর্থের ক্ষেত্রে যে আলো-আঁধারি প্রেক্ষাপটের কথা বলেছেন, তার গুরুত্ব এখানেই। শ্লিষ্ট শব্দে একটি জানা অর্থ বা বাচ্যার্থ সংযুক্ত থাকে, অন্যটি হয় লক্ষণার্থ বা ব্যঞ্জনার্থ। হয়তো সিদ্ধাচার্যগণ তাঁদের ব্যবহৃত ভাষার এই দ্বিবিধ স্বভাব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং সেই তাৎপর্যে ‘সন্ধ্যা’ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কেউ কেউ ‘সম্-ধা+আ’ থেকে নিষ্পন্ন শব্দটির “সম্যক ধ্যায়তে অস্যাম্ ধ্যায়তে ইতি সন্ধ্যা” সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। অর্থাৎ, যে অর্থ অনুধ্যান করে বুঝতে হয়, তাই-ই সন্ধ্যা। এটিও সত্য হতে পারে। তবে সাহিত্যিক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে অর্ধকল্পিত এক সন্ধি অঞ্চলের (আর্যাবর্ত ও পূর্ব ভারতের সন্ধিস্থল বীরভূম-সাঁওতাল পরগনার পশ্চিমাঞ্চল) ভাষা বলে সন্ধ্যাভাষাকে নির্দেশ করেছেন, তার পিছনে কোনও বলিষ্ঠ যুক্তি নেই।
চর্যাগানে সন্ধ্যাভাষার প্রয়োগকৌশল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সব গানেই যে আগাগোড়া এই হেঁয়ালিপূর্ণ আভিপ্রায়িক বচন ব্যবহার করা হয়েছে তা নয়। কয়েকটি গান আদ্যোপান্ত সন্ধ্যা শব্দে রচিত। যেমন, ২ ও ৩৩ সংখ্যক চর্যা। আবার কয়েকটি গানের অংশবিশেষ সন্ধ্যাভাষিত, কোনও বিচ্ছিন্ন শব্দ হয়তো সন্ধ্যা অর্থে প্রযুক্ত। আবার এমন গানও দুর্লভ নয়, যেখানে সন্ধ্যাশব্দের ব্যবহার একেবারেই নেই। যেমন, ৪০ ও ৪২ সংখ্যক চর্যা। নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, যে সমস্ত গানে দার্শনিকতার বাহুল্য, সেখানে সন্ধ্যাভাষা তেমন প্রযুক্ত হয়নি। কিন্তু তান্ত্রিক কৃত্যের নির্দেশ সমৃদ্ধ পদগুলিতে সন্ধ্যাবচনের বাহুল্য লক্ষিত হয়। হয়তো আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর বা কুরুচিপূর্ণ কয়েকটি বিষয় গোপন করার জন্যই সন্ধ্যাভাষার আড়াল খুঁজেছিলেন চর্যাকারেরা। মুনিদত্তের টীকা রচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই লুকানো অর্থটিকে পরিস্ফুট করা। তাই তিনি বারবার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ‘সন্ধ্যাভাষয়া’, সন্ধ্যাবচনেন’, ‘সন্ধ্যাসংকেতম্’, ‘সন্ধ্যাজ্ঞানেন’, ‘সন্ধ্যয়া’ ইত্যাদি বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন। মধ্যযুগের সন্তসাধকদের গানেও ভাষার এই হেঁয়ালিপূর্ণ ভাব লক্ষ্য করা যায়। আসলে সিদ্ধাচার্য কিংবা সন্তসাধক সকলেই ছিলেন বাক্পথাতীত এক অ-কথনবেদ্য ভাবানুভূতির শরিক। তাঁর কথা বলেছেন রূপক-প্রতীকের ঘেরাটোপে। মরমিয়া সাধক মাত্রেরই স্বভাবধর্ম এই। এঁদের সম্পর্কে সেন্ট মার্টিন যথার্থ বলেছেন, “All mystics speak the same language for they come from the same country.” সন্ধ্যাভাষা এই বিশেষ ‘দেশ’-এরই ভাষা। স্বসংবেদ্য, অচিন্ত্য তত্ত্বের রূপময়তা ফুটিয়ে তোলার জন্য রূপক-প্রতীকের আয়োজন, তেমনই মহাসুখের স্বরূপ, মহাসুখ লাভের পথ, লাভের পর যোগীর মানসিক অবস্থা, পারমার্থিক ও সাংবৃতিক বোধিচিত্তের প্রকৃতি ইত্যাদি বর্ণনা করতে গিয়ে প্রায় প্রতি পদে সন্ধ্যাভাষার আশ্রয় নিয়েছেন চর্যাকারেরা। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী তাঁর ''চর্যাগীতির ভূমিকা'' গ্রন্থে চর্যায় ব্যবহৃত শব্দগুলির উৎসগত শ্রেণিবিন্যাস করে একটি সামগ্রিক পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতে দেখা যায়, জিনপুর, মাঙ্গ, নিবান, দশবল, তিশরণ, তথাগত ইত্যাদি শব্দগুলি প্রাচীন বৌদ্ধশাস্ত্র থেকে সংগৃহীত। আবার চন্দ্রসূর্য, দশমী দুয়ার, অণহা, বিণানা, তথতা, গগণ, কমলকুলিশ, ধমনচমন, কামরু, জোইনি, আলিকালি ইত্যাদি শব্দ গৃহীত হয়েছে হিন্দু যোগতন্ত্র এবং বৌদ্ধ মহাযানের অন্তর্গত মধ্যমক দর্শন, যোগাচার, বজ্রযান ইত্যাদি থেকে। এছাড়া চর্যাগানের ব্যবহৃত শুণ্ডিনী, বিআলী, সাঙ্কম, কোঞ্জাতালা, রূপা, খুণ্টি, কাচ্ছি, কেড়ুয়াল, তান্তি, ঠাকুর, কণ্ঠ কমলিনী, সবরসবরী, বঙ্গাল, গুঞ্জামালী ইত্যাদি কিছু পরিচিত শব্দ নেওয়া হয়েছে পরিচিত গৃহস্থালি ও লোকজীবনের প্রেক্ষাপট থেকে। বলা বাহুল্য, এইসব শব্দপ্রয়োগের ফলে চর্যাপদ সকল শ্রেণির পাঠকের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠেনি। তবে তাতে একদিকে যেমন নিজেদের আচরিত কায়াসাধনার গুহ্য রহস্যকে অতি সহজে ঢাকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তেমনই অন্যদিকে প্রাচীন বাঙালির কাব্যসৃষ্টির অভূতপূর্ব ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। মুনিদত্তের টীকাটি পাওয়া না গেলে গানগুলির অর্থোদ্ধারের জন্য পরবর্তীকালের গবেষকদের যে অন্ধকারে হাতড়ে ফিরতে হত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
dmjh829ygkwzxyq44rm1k36dos8qt75
85573
85572
2025-07-02T17:12:53Z
Jonoikobangali
676
/* সন্ধ্যাভাষা */
85573
wikitext
text/x-wiki
বিশ শতকের গোড়ায় চর্যাপদের আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চর্যাপদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্রাচীন বাংলার এক অমূল্য লুপ্ত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কৃতিত্ব প্রাচ্যবিদ্যার বিশিষ্ট গবেষক মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর। কিন্তু তাঁর ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' পুথি আবিষ্কারের পিছনে বাঙালির প্রাচীন সংস্কৃতি চর্চার একটি ইতিহাস আছে। উনিশ শতকে বাংলায় যে নবজাগরণ ঘটেছিল, তার অন্যতম বৈশিষ্ট্যই ছিল দেশের অতীত ইতিহাসের ভাবসম্পদ পুনরুদ্ধার ও তার নবমূল্যায়ন। এর সূচনা ঘটেছিল ১৭৮৪ সালে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। প্রথম দিকে কেবল ইউরোপীয় গবেষকেরাই প্রাচীন ভারতের লুপ্ত সম্পদ উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। যেমন, বি. এইচ. হজসন ও ড্যানিয়েল রাইট উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নেপাল থেকে কিছু প্রাচীন পুথি উদ্ধার করে ইউরোপের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেরণ করেন, যার ফলে ইউরোপীয় গবেষকেরা ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চায় উৎসাহী হয়ে উঠতে শুরু করেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালি গবেষকেরাও এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গবেষক রাজেন্দ্রলাল মিত্র নেপালে গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় রচিত কিছু পুথি উদ্ধার করে আনেন এবং ''দ্য সংস্কৃত বুদ্ধিস্ট লিটারেচার ইন নেপাল'' (১৮৮২) শীর্ষক পুস্তিকায় সেগুলির নাম প্রকাশ করেন। ১৮৯২ সালে শরৎচন্দ্র দাসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বুদ্ধিস্ট টেক্সট সোসাইটি। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর প্রাচীন পুথি উদ্ধারের ভার গ্রহণ করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। ১৮৯৭ ও ১৮৯৮ সালে নেপালে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম-বিষয়ক কয়েকটি সংস্কৃত পুথি তিনি কলকাতায় নিয়ে আসেন। এরপর ১৯০৭ সালে তৃতীয়বার নেপাল যাত্রা করে তিনি নেপালের রাজদরবারের পুথিশালা থেকে আবিষ্কার করেন চর্যাপদের প্রাচীন পুথি ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'', সরহপাদের ''দোহাকোষ'' ও কাহ্নপাদের ''দোহাকোষ''। এই তিনটি পুথির সঙ্গে পূর্বাবিষ্কৃত ''ডাকার্ণব'' পুথিটিকে যুক্ত করে শাস্ত্রী মহাশয় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ''হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা'' গ্রন্থটি। ভূমিকায় তিনি চারটি পুথির ভাষাকেই বাংলা বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ভাষাতাত্ত্বিকেরা কেবল চর্যাগীতিগুলির ভাষাকেই বাংলা বলে স্বীকৃতি দেন। সেই দিক থেকে প্রাচীনতম বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্যিক নিদর্শন হল এই চর্যাপদ।
চর্যাপদের পুথি তালপাতায় লেখা হয়েছিল। নেপাল থেকে আনা পুথি আবার রাজদরবারে ফেরত দেওয়ার আগে শাস্ত্রী মহাশয় সেটির অনেকগুলি ফোটোকপি করে নিয়েছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, তালপাতার উভয় পৃষ্ঠাতেই পদগুলি লেখা হয়েছে। প্রতি পৃষ্ঠায় আছে পাঁচটি করে টানা লাইন। মাঝখানে সামান্য একটু ফাঁক, সম্ভবত সেখানে ফুটো করে সুতো বা ওই জাতীয় কিছু পরাবার জন্য। পাতাগুলি সংখ্যাযুক্ত এবং সংখ্যাটি লিখিত পাতার শেষ পৃষ্ঠায়। এইভাবে প্রাপ্ত পুথির শেষ পাতার অঙ্ক ৬৯। কিন্তু তার পরেও যে পুথি বাকি ছিল তার প্রমাণ ওই পাতার পদটি অসমাপ্ত থেকে যাওয়ায়। শুধু শেষ পাতা নয়, মাঝের ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮ ও ৬৬ সংখ্যক পাতাগুলিও পাওয়া যায়নি। লুপ্ত পাতা বাদে প্রাপ্ত পুথিটি মোট ৬৪ পৃষ্ঠার। পুথিটিতে আরও একধরনের ক্রমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি মোট পদের সংখ্যা নির্দেশক। বলা বাহুল্য, লুপ্ত পাতার পদগুলি পাওয়া যায়নি। এই রকম অপ্রাপ্ত পদের সংখ্যা সাড়ে তিনটি। শেষ পাতার যে পদসংখ্যা পাওয়া যায় সেটি ৪৯। সেখানেই শুরু হয়েছে ৫০ সংখ্যক পদটি, যার বাকি অংশ লুপ্ত পাতার সঙ্গেই হারিয়ে গিয়েছে। মুনিদত্তের টীকার সূত্রে জানা যায়, কোনও একটি শতপদী সংকলন থেকে অর্ধেক সংখ্যক পদ নিয়ে সেটির টীকা রচনার উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অর্থাৎ চর্যার পুথিটি ছিল মোট ৫০টি পদের সংকলন। সাড়ে তিনটি পদ না পাওয়ায় প্রাপ্ত পদের সংখ্যা এখানে সাড়ে ছেচল্লিশ। অবশ্য পরবর্তীকালে এই গ্রন্থের তিব্বতি অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে। অনুবাদক ছিলেন কীর্তিচন্দ্র। সেই পুথিটি অক্ষত। তার থেকে লুপ্ত সাড়ে তিনটি পদের বিষয় ও তার ব্যাখ্যা জানা গিয়েছে।
টীকার পুথিটি সংকলনে একটি বিশেষ রীতি অবলম্বিত হয়েছে। এখানে একই সঙ্গে মূল গান ও তার টীকা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত টীকার পুথিতে মূল গান সম্পূর্ণ উদ্ধৃত হয় না। কিন্তু এখানে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। সমগ্র পদ উদ্ধৃত করে টীকাকার পরে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদগুলি বাংলা ভাষায় লেখা, টীকার ভাষা সংস্কৃত। টীকার নাম ''নির্মলগিরা টীকা''। টীকাকারের নাম মুনিদত্ত। গানগুলি একক পদকর্তার নয়, বিভিন্ন জনের রচনা। প্রত্যেকটি পদের সূচনায় রাগের উল্লেখ ও পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। তারপর দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ পদটি। সব শেষে রয়েছে তার ব্যাখ্যা বা টীকা। টীকার পরে আছে গানের ক্রমিক সংখ্যা। অবশ্য গ্রন্থসূচনার পদটিতে একটু ভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষিত হয়। প্রথমে নমস্ক্রিয়ার পর সদ্গুরু বন্দনা ও বস্তুনির্দেশ, তারপর “কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল” পদটির দ্বারা মূল চর্যাগীতির আরম্ভ। তারপর গানটির রাগের উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য ধরনের ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন, ৯ সংখ্যক পদে চর্যাকারের নাম উল্লিখিত হয়নি, যদিও গানের মাঝে ভণিতা থেকে জানা যায় এটি কাহ্নপাদের রচনা। ১০ সংখ্যক চর্যার পরে টীকাকার বা লিপিকর লিখে রেখেছেন, “লাড়ীডোম্বীপাদানাম্ সূনেত্যাদি। চর্য্যায়া ব্যাখ্যা নাস্তি।” অর্থাৎ এখানে অপেক্ষিত ব্যাখ্যাটি নেই। তাছাড়া মূল গানগুলির পাঠ ও টীকায় উদ্ধৃত অংশগুলির পাঠে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। তাই কোনও কোনও গবেষক মনে করেন, মূল গান সংকলন ও তার টীকা রচনা দুই স্বতন্ত্র ব্যক্তির কাজ। আবার কেউ কেউ অনুমান করেন, মুনিদত্তের টীকা পরে কারও দ্বারা পরিমার্জিত হয়েছিল। সেই পরবর্তী সংস্কার-কর্তাও অন্য কোনও গীতিসংগ্রহ থেকে মূল গানগুলিকে নিয়ে ব্যাখ্যার আগে সংযোজিত করে থাকতে পারেন। টীকারম্ভের প্রথম বাক্যটি রচনা এবং গানের সূচনায় কবি ও রাগরাগিণীর নামের উল্লেখ সম্ভবত এই সংস্কার-কর্তারই কাজ। পুথির পাঁচটি পাতা হারিয়ে যাওয়ায় ২৩ সংখ্যক গানের ছটি চরণ এবং ২৪, ২৫ ও ৪৮ সংখ্যক গান সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ২৩ ও ২৪ সংখ্যক গানের সম্পূর্ণ টীকা এবং ২৫ সংখ্যক গানের টীকার প্রথমাংশটিও সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে ৪৭ সংখ্যক গানের ব্যাখ্যার সামান্য অংশ হারিয়ে গিয়েছে এবং ৪৮ সংখ্যক গানের শেষ পদটির ব্যাখ্যা ছাড়া গান সহ সমগ্র টীকাটিই লুপ্ত। তিব্বতি অনুবাদটির আবিষ্কারক ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী গানগুলি সংস্কৃত ভাষায় রূপান্তরিত করেছিলেন। পরে তিব্বতি অনুবাদের ছায়া অনুসরণে ড. সুকুমার সেন লুপ্ত গানগুলির সম্ভাব্য রূপ পুনর্গঠন করে তাঁর সম্পাদিত ''চর্যাগীতি পদাবলী'' গ্রন্থে প্রকাশ করেন।
==রচনাকাল ও গ্রন্থনাম বিচার==
১৯১৬ সালে ''হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা'' গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর নানা বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। ফলে অনেক রকম বিতর্ক সৃষ্টি হয়। চর্যাগীতির ভাষা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যেমন মতান্তর ছিল, তেমনই এগুলির রচনাকাল ও প্রাপ্ত পুথির প্রকৃত নাম নিয়েও ছিল নানা সংশয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দাবি করেছিলেন, গানগুলির রচনাকাল খ্রিস্টীয় দশম শতক এবং সেই কারণেই সম্পাদিত গ্রন্থের নামে তিনি ‘হাজার বছরের পুরাণ’ এই সময়-জ্ঞাপক বিশেষণটি জুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সকলে সেই কথা নিঃসন্দিগ্ধভাবে মেনে নিতে চাননি। সামগ্রিক দৃষ্টিতে চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে দুটি প্রশ্ন ওঠে। প্রথম প্রশ্ন, চর্যার মূল গানগুলি কোন সময়ে লেখা হয়েছিল? এবং দ্বিতীয় প্রশ্ন, টীকা-সম্বলিত যে সংগ্রহটি পাওয়া গিয়েছে, সেটিই বা কোন সময়ে লেখা হয়? মুনিদত্তের টীকা অনুসারে বলা যায়, গানগুলি আগে লেখা হয়েছিল এবং পরে তার থেকে কয়েকটি গান বেছে নিয়ে সেগুলির ব্যাখ্যা রচিত হয়। তাই প্রথম প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হবে দুটি প্রশ্নের নিরিখে। প্রথমত, চর্যাকারেরা কবে আবির্ভূত হন? এবং দ্বিতীয়ত, ভাষাতত্ত্বের নিরিখে চর্যায় প্রাপ্ত ভাষার জন্ম কোন সময়ে? বিভিন্ন গবেষক এই দুই বিষয়ে কিছু আলোকপাত করেছেন।
ইতিহাস-বিস্মৃত জাতির বাস্তব ঐতিহাসিক সকল ঘটনারই লিখিত ইতিহাস পাওয়া সম্ভব নয়। এই কারণেই চর্যাপদ, চর্যাপদের কবিগণ, তাঁদের জন্ম ও মৃত্যু এবং সেই সংক্রান্ত তারিখ-যুক্ত কোনও তথ্য পাওয়া কঠিন। তাই জনশ্রুতি, কল্পকাহিনি ও লোকপরম্পরাগত ঐতিহ্য সত্যাসত্য নির্বিশেষে সেই শূন্যস্থান ভরিয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। চর্যাকারেরা নিছক কবি বা গীতিকার ছিলেন না, ছিলেন বৌদ্ধধর্মের এক বিশেষ ধারার সাধক। সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে তাঁর খ্যাত হয়েছিলেন সিদ্ধাচার্য নামে। তাঁদের নিয়ে তাই নানা অলৌকিক জনশ্রুতি ছড়িয়ে পড়েছিল। সেগুলি সংগ্রহ করে পরবর্তীকালে কিছু গ্রন্থও রচিত হয়। সুম্পাখন্পো-র ''Pag Sam Jon Zang'' ও লামা তারানাথের ''Khabad Dun Dan'' হল তিব্বতি ভাষায় লেখা এই সংক্রান্ত দুটি গ্রন্থ। ভারতেও সিদ্ধাচার্যদের নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত ছিল। ভারতে যোগী সিদ্ধসাধকদের আবির্ভাব ঘটে। নাথপন্থা ও সহজযান বৌদ্ধধর্মের মধ্যে যে তাত্ত্বিক এবং দেহসাধনা ও যোগাচারকেন্দ্রিক ক্রিয়াকাণ্ডগুলির আদান-প্রদান ঘটেছিল তার অজস্র প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। দেহসাধনা এই উভয় মতেরই ভিত্তিস্বরূপ। নাথপন্থীদের সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের নাম পাওয়া যায়। ‘চৌরাসী সিদ্ধ’ অর্থাৎ চুরাশিজন সিদ্ধাচার্যেরা মধ্যে ছিয়াত্তর জনের নাম পাওয়া যায় চতুর্দশ শতকের মৈথিল কবি জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থে। এছাড়া তন্ত্রগ্রন্থ ''কৌলজ্ঞাননির্ণয়'' এবং নাথপন্থীদের গুরুশিষ্য-পরম্পরা সম্পর্কিত গ্রন্থাদিতেও সিদ্ধাচার্যেরা কথা অল্পবিস্তর বর্ণিত হয়েছে। ড. জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী তাঁর ''চর্যাগীতির ভূমিকা'' গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, জনশ্রুতিগুলি যে সব ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রসূত নয়, তার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে এই লোকপরম্পরাগত ঐতিহ্যের মিল যথেষ্টই আছে।
চর্যাগীতির রচনাকাল বিষয়ে তিনজন বিশিষ্ট গবেষক তিনটি পৃথক মত প্রকাশ করেছেন। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ''দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ'' গ্রন্থে বিভিন্ন সম্ভাব্য যুক্তি প্রদর্শন করে মন্তব্য করেছেন, “The period 950-1200 A.D. would thus seem to be a reasonable date to give to these poems.” অর্থাৎ তাঁর মতে দশম শতকের মধ্যভাগ থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়কালে চর্যাগীতিগুলি রচিত হয়েছিল। সময় নির্ধারণে তিনি আদি সিদ্ধাচার্য লুইপাদ ও শেষ সিদ্ধাচার্য কাহ্নপাদের জীবৎকালকে প্রমাণস্বরূপ ধরেছেন। এই দুই কবির জীবনেতিহাস স্পষ্ট নয়। কিংবদন্তিই এক্ষেত্রে মুখ্য আশ্রয়। সিদ্ধাচার্যদের একটি গুরুশিষ্য-পরম্পরা ছিল। তিব্বতি ঐতিহ্যে লুইপাদ প্রথম গুরু বা আদি সিদ্ধাচার্য। মুনিদত্তের টীকাতেও লুইপাদকে সেই সম্মান জানিয়ে বলা হয়েছে “শ্রীলূয়ীচরণাদিসুদ্ধ রচিতেঽপ্যাশ্চর্য্যচর্য্যাচয়ে…” এবং তাঁর পদ দিয়েই গ্রন্থারম্ভ করা হয়েছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন যে, বাঙালি বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান লুইপাদের ''অভিসময়বিহঙ্গ'' গ্রন্থ রচনায় সাহায্য করেছিলেন। দীপঙ্কর ১০৩৮ সালে বিক্রমশীলা বিহার থেকে তিব্বতি যাত্রা করেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৫৮। সেই হিসেবে লুইপাদের আবির্ভাবকাল তাঁর মতে দশম শতকের মাঝামাঝি। অন্যদিকে ঐতিহ্য অনুসারে কাহ্নপাদ ছিলেন জালন্ধরীপাদের শিষ্য। কাহ্নপাদ রচিত ৩৬ সংখ্যক চর্যাগীতিটিতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কাহ্নপাদ চর্যাগীতি ছাড়াও আরও অনেক গ্রন্থ রচনা করেন, যেগুলির মধ্যে অন্যতম ''হেবজ্রপঞ্জিকাযোগরত্নমালা''। এই গ্রন্থটির অনুলিপির কাল জানা গিয়েছে। রাজা গোবিন্দপালের ৩৯ রাজ্যাঙ্ক অর্থাৎ ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটির অনুলিপি করা হয়। তাই সুনীতিকুমার দ্বাদশ শতককেই চর্যাগীতির সময়সীমা ধরতে চান। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই গবেষকেরা বিরুদ্ধ যুক্তি দিয়েছেন। তাঁদের মতে, দীপঙ্কর সম্পর্কে শাস্ত্রী মহাশকের উক্ত তথ্যের তেমন কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। পি. কর্ডিয়ার ''তেঙ্গুর'' গ্রন্থমালার যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে লুইপাদ ও দীপঙ্কর উভয়ের নামেই ''অভিসময়বিহঙ্গ'' গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। আসলে লুইপাদের এই গ্রন্থটি এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ রচনা, যা অন্যান্য বৌদ্ধ পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ''তেঙ্গুর'' তালিকা থেকে জানা যায় যে, কম্বলাম্বরপাদ, প্রজ্ঞারক্ষিত, সুমতিকীর্তি, প্রভাকরগুপ্ত, রত্নবজ্র, দানশীল, বিভূতিচন্দ্রের ন্যায় অসংখ্য বৌদ্ধ পণ্ডিত এই গ্রন্থটির উপর নানা সময়ে বৃত্তি, ক্রম, মঞ্জরী, টীকা ইত্যাদি রচনা করেন। দীপঙ্করের নাম এভাবেই উল্লিখিত হতে পারে। তিনি লুইপাদকে সরাসরি গ্রন্থরচনায় সাহায্য করেননি, বরং লুইপাদের গ্রন্থটির অনুবাদ করেছিলেন মাত্র। অন্যদিকে কাহ্নপাদের গ্রন্থটির অনুলিপির কাল ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দ স্থিরীকৃত হলেও অনুলিপির সময় যে লেখকের জীবৎকালের কাছাকাছি হবেই এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। ষোড়শ শতকের কোনও গ্রন্থের অনুলিপি অষ্টাদশ শতকেও হতে দেখা গিয়েছে। এইসব বিরুদ্ধ যুক্তির বলে সুনীতিকুমারের সিদ্ধান্ত অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
দ্বিতীয় মতের প্রবক্তা হিন্দিভাষী পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন। তিনি ''দোহাকোষ''-এর ভূমিকায় লিখেছেন যে, সিদ্ধাচার্যেরা আবির্ভূত হয়েছিলেন অষ্টম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে। তিনি আরও মনে করেন যে, লুইপাদ নন, আদি সিদ্ধাচার্য ছিলেন রাহুলভদ্র সরহপাদ, যিনি বৌদ্ধ আচার্য শান্তরক্ষিতের সমসাময়িক ছিলেন। শান্তরক্ষিত ভোট সম্রাট খি স্রোঙ দে চন্-এর রাজত্বকালে (৭৫৫—৭৮০ খ্রিস্টাব্দ) রাজার আহ্বানে তিব্বতে গিয়েছিলেন। আর-একটি প্রমাণ হল, সরহপাদের শিক্ষক ছিলেন নালন্দার পণ্ডিত ধর্মকীর্তি, যিনি শান্তরক্ষিতের শিষ্য এবং গৌড়াধিপতি ধর্মপালের (রাজত্বকাল ৭৭০—৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) বন্ধু। এইসব তথ্যের ভিত্তিতে সরহপাদকে অষ্টম শতকের ব্যক্তি বলে গণ্য করা চলে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, লুইপাদ ছিলেন সরহপাদের প্রশিষ্য—সরহপাদের শিষ্য শবরপাদ, তাঁর শিষ্য লুইপাদ। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী কর্তৃক ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত ''জার্নাল অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট অফ লেটারস'' (২৮শ খণ্ড) থেকে জানা যায় যে, সরহপাদের দোহাগুলি ‘বিনষ্ট-প্রণষ্ট’ (‘বিণট্ঠা-পণট্ঠা-পউ’) হতে দেখে দিবাকর চন্দ নামে এক পণ্ডিত ২২১ নেপাল সম্বৎ অর্থাৎ ১১০১ খ্রিস্টাব্দে সেগুলি একটি পুথিতে সংকলিত করেন: “সমস্তো জহালব্ধা দোহাকোসো এসো সংহহিত্ত… পণ্ডিত সিরি দিবাকর চন্দেনেত্তি। সম্বৎ ২২১ শ্রাবণ শুক্লপূর্ণমাস্যাং।” এই বিষয়টিও পরোক্ষে প্রমাণ করে যে সরহপাদ খুব প্রাচীন সময়ের কবি; নইলে দ্বাদশ শতকের সূচনাতেই তাঁর ''দোহাকোষ'' বিনষ্ট হতে পারে না।
তৃতীয় মতটি দিয়েছেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর মতে চর্যাপদ রচনার সূচনা সপ্তম শতকে। এই মতের ব্যাখ্যায় তিনি ২১ সংখ্যক গানের টীকায় মুনিদত্ত মীননাথের লেখা একটি গানের কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছেন: “কহন্তি গুরু পরমার্থের বাট।/ কর্মকূরঙ্গ সমাধিকপট।।” মীননাথ নাথগুরুদের অন্যতম এবং উদ্ধৃত অংশটি লেখা হয়েছে আদি স্তরের বাংলা ভাষায়। মীননাথই মৎস্যেন্দ্রনাথ নামে পরিচিত। ড. শহীদুল্লাহ এঁকেই লুইপাদ বলে ধরেছেন। ফারসি গবেষক সিলভ্যাঁ লেভি ''লে নেপাল'' (১ম খণ্ড) গ্রন্থে বলেছেন, মৎস্যেন্দ্রনাথ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে রাজা নরেন্দ্রদেবের রাজত্বকালে নেপালে গিয়েছিলেন। ড. শহীদুল্লাহ এই তথ্যের ভিত্তিতে চর্যাগীতির সূচনাকাল ধরেছেন সপ্তম শতককে। তবে এই মত মানতে গেলে ভাষাতাত্ত্বিকদের ভাষার বিবর্তন-সংক্রান্ত আলোচনাকে অগ্রাহ্য করতে হয়। সপ্তম শতক অপভ্রংশ ভাষারই কাল। খ্রিস্টীয় নবম শতক নাগাদ এই ভাষা থেকেই বাংলার মতো নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির উদ্ভব ঘটেছিল।
চর্যাপদের কালনির্ণয়ে গৌড়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটিও বিবেচ্য। এমনকি যে সময়ে মহাযানী বৌদ্ধধর্ম তন্ত্রের প্রভাবে মন্ত্রনয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে বজ্রযান, কালচক্রযান ও সহজযানে পরিণত হল, সেটিও আলোচনা করা কর্তব্য। সেই সঙ্গে কেউ কেউ আর-একটি বাহ্য প্রমাণ উপস্থিত করেছেন। সেটি হল প্রাচীন বাংলা সংগীত-বিষয়ক গ্রন্থের সাক্ষ্য। বিষয়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। চর্যাপদ বৌদ্ধধর্মের সাধন-সংক্রান্ত গীতিগুচ্ছ হলেও তাতে বিশুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়নি। চর্যাগীতির মূল অবলম্বন মহাযানী বৌদ্ধধর্মের এক বিশেষ বিকারগ্রস্থ রূপ। এই বিকৃতি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর চারটি বৌদ্ধসংগীতি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মতান্তর সূচিত করেন। পরিণামে বৌদ্ধসমাজ হীনযান ও মহাযান নামে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হীনযানীরা পরে সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক উপদলে বিভক্ত হয়ে যান। দার্শনিক মতভেদের কারণে মহাযানীরাও মাধ্যমিক ও যোগাচার শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই যোগাচার মতের উদ্ভব খ্রিস্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতকে। সপ্তম শতক পর্যন্ত উত্তর ভারতে বৌদ্ধ দার্শনিকদের মধ্যে মাধ্যমিক ও যোগাচার মত বিশেষ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল। এরপর অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্ট বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে বৈদিক তথা পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্যধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হলেন। শঙ্করাচার্যের অদ্বৈত বেদান্ত ও কুমারিল ভট্টের পূর্ব মীমাংসা দর্শনের চাপে বৌদ্ধধর্ম কোণঠাসা হয়ে পড়ল। অবস্থার সঙ্গে সামাল দিতে গিয়ে মহাযানী বৌদ্ধধর্মে হিন্দু পুরাণের দেবদেবীদের অনুরূপ নানা দেবদেবীর আবির্ভাব ঘটল এবং ব্রাহ্মণ্য তান্ত্রিক রহস্যাচার গ্রাস করে ফেলল যোগাচারীদের। তন্ত্রের প্রভাবে দেহসাধনা-নির্ভর বৌদ্ধধর্ম কথিত হল ‘মন্ত্রযান’ নামে, যার শেষ পরিণতি বজ্রযান, কালচক্রযান ও সহজযান। চর্যাগীতিতে এই শেষোক্ত তিনটি মতেরই ছায়া লক্ষ্য করা যায়। এসব ঘটতে কমপক্ষে এক শতাব্দীর কেটে যাওয়ার কথা। তাই বলা চলে, নবম শতকের আগে মহাযানী বৌদ্ধধর্মে এই বিকৃতি ঘটেনি। নতুন তত্ত্ব ও সেই অনুযায়ী আচার-সংস্কার গড়ে উঠলে নবদীক্ষিতদের কাছে এর রহস্যময়তা তথা গূঢ় তাৎপর্য ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন সিদ্ধাচার্যেরা। তাঁদের রচনার ভাষা আলো-আঁধারি সন্ধ্যাভাষা বা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট অভিপ্রায়কেই ব্যক্ত করার জন্য বিশেষ প্রযত্নে নির্মিত ভাষা। যৌনাচার-ভিত্তিক এই যোগসাধনপ্রণালী অন্যের কাছে প্রকাশ করতে সম্ভবত তাঁরা কুণ্ঠিত ছিলেন। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দিক থেকেও এই সময়টি ছিল বেশ অনুকূল। বাংলার সিংহাসনে তখন আসীন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল সম্রাটেরা। এই অনুকূল পরিবেশে বসে বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা অসংখ্য গ্রন্থ ও পদ রচনা করেন। তাঁদের রচিত অধিকাংশ পদের ভাষা নবসৃজ্যমান বাংলা ভাষা এবং টীকা ও ভাষ্যের মাধ্যম ছিল সংস্কৃত বা বৌদ্ধ-সংস্কৃত। অতএব সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কালে চর্যার মূল গানগুলি রচিত হয়েছিল।
এবার মুনিদত্তের টীকাগ্রন্থটির কাল অনুসন্ধান করা যাক। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটি যে বেশ পরবর্তীকালে লিখিত, তা গ্রন্থের বিষয় ও লিপির আদর্শ থেকেই স্পষ্ট। চর্যাগীতিগুলি তত্ত্বের বাহক। কিন্তু সেগুলি এমনই আভিপ্রায়িক বচনে পরিপূর্ণ যে, দীক্ষিত ব্যক্তিদের কাছেও তা দুর্বোধ্য ছিল। তত্ত্ব ও সাংকেতিকতার দুরূহতার জন্য এগুলির ব্যাখ্যার প্রয়োজন দিল। মুনিদত্তই সেই অগ্রণী বৌদ্ধ পণ্ডিত যিনি একশোটি চর্যার একটি গীতিগুচ্ছ থেকে অর্ধেক পদ নিয়ে সেগুলির ব্যাখ্যায় অগ্রসর হলেন। বিশ্বভারতী প্রকাশিত ''চর্যাগীতিকোষ'' গ্রন্থে আছে: “তত্রাহৃতানাং চ বিচারিতানাং চর্যাশতেনাহৃত গীতিকানাম্। সত্ত্বৈস্তু সংবোধি বিচারাণার্থং কোষং বুধাঃ সংরচয়াংবভূবঃ।।” মূল গানগুলি রচিত হওয়ার অনেক পরে যে মুনিদত্তের টীকা লিখিত হয়েছিল, তার প্রমাণ পুথিতে উদ্ধৃত গীতিগুলির পাঠভেদ। এই বিষয়ে ড. সত্যব্রত দেব লিখেছেন, “মূল গীতিরচনার যুগ হইতে টীকা বা অনুলিপি রচনার যুগ পর্যন্ত মধ্যবর্তীকালে এই জনপ্রিয় গীতিগুলি নিশ্চয়ই গায়কদের মুখে মুখে এবং/অথবা লিপিকরদের অনুলিপির মাধ্যমে প্রচারিত ছিল। সুতরাং মূল রচনার সময়কার রূপ হইতে চর্যাগীতিগুলির ভাষা পরিবর্তিত হওয়াই স্বাভাবিক, যেমনভাবে মধ্যযুগের অনেক জনপ্রিয় সাহিত্যকৃতির ভাষা বিকৃত হইয়া গিয়াছে।” লিপির আদর্শ বিচার করে পুথির কালনির্দেশের ক্ষেত্রে লিপিবিশারদদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা যায়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে পুথির লিপিকাল দ্বাদশ শতক, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতক, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে চতুর্দশ শতকের পরবর্তী সময়, ড. সুকুমার সেনের মতে চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতক এবং তারাদাস মুখোপাধ্যায়ের মতে দ্বাদশ শতকের শেষার্ধ। মুনিদত্তের আবির্ভাবকাল জানা যায়নি। অতএব এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমান-নির্ভর হতে বাধ্য। খুব সম্ভবত, চতুর্দশ শতকের কিছু আগে বা পরে কোনও এক সময়ে মুনিদত্তের মূল গ্রন্থটির অনুলিপি করা হয়েছিল। প্রাপ্ত পুথিটি যে টীকাকারের স্বহস্তে লিখিত তারও কোনও উপযুক্ত প্রমাণ নেই। বরং গানগুলির পাঠভেদ থেকে অনুমিত হয় যে, গানগুলি গায়কদের মুখে মুখে কম-বেশি পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কোনও ব্যক্তি মূল পুথির অনুলিপি করেছিলেন।
চর্যাপদের রচনাকালের ন্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটির গ্রন্থ নিয়েও গবেষকেরা আজ পর্যন্ত কোনও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি। প্রাপ্ত পুথিটির মলাটের পাতা ও শেষে পুষ্পিকার পাতা পাওয়া যায়নি বলে প্রকৃত তথ্য অজ্ঞাতে থেকে গিয়েছে। শাস্ত্রী মহাশয় তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের যে নামকরণ করেছেন তা স্পষ্টতই বিষয়-নির্দেশক অভিধা, যা একই সঙ্গে সময়কেও ইঙ্গিত করছে। নাম মাত্রেই বিশেষ্য, সেখানে এই ধরনের বিশেষণের প্রয়োগ অর্থ-ব্যঞ্জনার সূক্ষ্মতার পক্ষে ক্ষতিকারক। শাস্ত্রী মহাশয় অবশ্য বিকল্প একটি নাম দিয়েছিলেন ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। এই নামটির উৎস জানা যায়নি। পুথির কোথাও এই নামটি নেই। এটি সম্পাদকের স্ব-নির্ধারিত নাম হতে পারে, তবে একান্তই যে তাঁর স্ব-উদ্ভাবিত নাম নয়, তার প্রমাণ অদ্বয়বজ্রের ''প্রজ্ঞোপায়বিনিশ্চয়সিদ্ধ'' নামের গ্রন্থটি। টীকাগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধ গ্রন্থগুলির নামের সঙ্গে এই ‘বিনিশ্চয়’ শব্দটি যুক্ত থাকত। প্রাপ্ত পুথিটিও একটি টীকাগ্রন্থ। মুনিদত্ত বাংলা ভাষায় লেখা পঞ্চাশটি চর্যাগীতির টীকা লিখেছিলেন সংস্কৃত ভাষায়। নাম দিয়েছিলেন ''নির্মলগিরা টীকা''। সেদিক থেকে শাস্ত্রী মহাশয়ের দেওয়া নামটি সংগতিপূর্ণ। অথচ এই নামটি নিয়েও গবেষকদের মধ্যে অনেক বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।
চর্যাগীতিগুচ্ছের প্রথম পদের সংস্কৃত টীকায় বলা হয়েছে: “শ্রীলূয়ীচরণাদিসিদ্ধরচিতেঽপ্যাশ্চর্য্যচর্য্যাচয়ে। সদ্বর্ত্মাবগমায় নির্ম্মলগিরাং টীকাং বিধাস্যে স্ফুটনম।।” ১৯২৮ সালে বিধুশেখর শাস্ত্রী ''ইন্ডিয়ান হিস্টোরিক্যাল কোয়ার্টারলি'' পত্রিকার চতুর্থ খণ্ডে এই শ্লোকটির নিরিখে দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে, এখানে উক্ত ‘আশ্চর্য্যচর্য্যাচয়’ শব্দবন্ধটিই প্রকৃত গ্রন্থনাম, যার অর্থ হল ‘আশ্চর্য চর্যাসমূহের সংকলন’। কিন্তু এটিকে ঠিক গ্রন্থনাম হিসেবে স্বীকার করা যায় না। বরং উপরিউক্ত বাক্য থেকে টীকাকার এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই আশ্চর্য বা অদ্ভুত চর্যাসমূহে প্রবেশের ‘সদ্বর্ত্ম’ নির্দেশের জন্য তিনি টীকা রচনা করেছেন। ‘আশ্চর্য’ শব্দটি গানগুলির প্রকৃতি নির্দেশক, যা অবশ্যই বিশেষণ। অন্যদিকে ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী তাঁর ''স্টাডিজ ইন তন্ত্রজ'' (১ম খণ্ড) গ্রন্থে তিব্বতি অনুবাদটির প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেছেন যে, শাস্ত্রী মহাশয় একটি ভুল পাঠের উপর ভিত্তি করে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' নাম দিয়েছেন; গ্রন্থটির আসল নাম হবে ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়''। অবশ্য ড. বাগচী নেপাল রাজদরবারে রক্ষিত পুথিতে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' নামটি আছে বলেও উল্লেখ করেছেন। ড. সুকুমার সেনও মনে করেন যে, গ্রন্থটির মূল নাম ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়'', কিন্তু লিপিকরের ভুলে তা হয়েছে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। কিন্তু ড. বাগচী ও ড. সেন সমর্থিত ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়'' নামটি প্রাপ্ত পুথিতে তো নেই-ই, এমনকি ''তেঙ্গুর'' গ্রন্থমালার পি. কর্ডিয়ার কৃত তালিকাতেও পাওয়া যায় না। এই নামটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। মুনিদত্তের যে শ্লোকটি উদ্ধৃত করা হয়েছে, তাতে ‘আশ্চর্য’ শব্দটি থাকলেও চর্যার ‘আশ্চর্য বিনিশ্চয়’ অর্থাৎ অপূর্ব অর্থনির্ধারণের ব্যাপারটি কষ্টকল্পিত বলেই মনে হয়। বরং হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর দেওয়ার নামটির পিছনে কিছু যুক্তি আছে। ‘চর্য্যাচর্য্য’ শব্দটি একটি সমাসবদ্ধ পদ, যার পূর্বপদ ‘চর্য্য’, অর্থাৎ আচরণীয় এবং উত্তরপদ ‘অচর্য্য’ অর্থাৎ যা আচরণীয় নয়। যে গ্রন্থ আচরণীয় ও অনাচরণীয় তত্ত্বকে বিশেষরূপে নিশ্চয়ই করে তার নাম দেওয়া যেতে পারে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। এই কারণে বিশ্বভারতী প্রকাশিত ''চর্যাগীতিকোষ'' গ্রন্থের ভূমিকায় বৌদ্ধ পণ্ডিত শান্তি ভিক্ষু শাস্ত্রী মন্তব্য করেছেন, “I see no justification to invent a new name when the old one conveys the better meaning, that is, Viniscaya ‘Determination’ of carya ‘that to be practiced’ and acarya ‘that not to be practiced’.”
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পর চর্যাপদের পুথি আরও কয়েকজন বিদগ্ধ গবেষক কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছিল। যেমন, মনীন্দ্রমোহন বসুর ''চর্য্যাপদ'', ড. সুকুমার সেনের ''চর্যাগীতি পদাবলী'', ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী ও শান্তি ভিক্ষু শাস্ত্রীর যুগ্ম সম্পাদনায় ''চর্যাগীতিকোষ'' এবং ড. নীলরতন সেনের ''চর্যাগীতিকোষ'' (ফ্যাক্সিমিলি সংস্করণ)। লক্ষণীয়, সকলেই সম্পাদিত গ্রন্থের নামকরণে গানের দিকেই লক্ষ্য রেখেছেন এবং শাস্ত্রী মহাশয়ের দেওয়া নামটি বর্জন করেছেন। এই বিষয়ে জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী বলেন, “কিন্তু গ্রন্থনাম বিচারে প্রথম বিচার্য গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয় এবং গ্রন্থের উদ্দেশ্য। যে গ্রন্থখানি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা চর্যাগীতির সঙ্কলন মাত্র নহে, গীতিগুলির অর্থ বা টীকা। গ্রন্থখানির আরম্ভ টীকাকারের বন্দনা ও বস্তুনির্দেশক শ্লোক লইয়া। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী তিব্বতী অনুবাদের যে সংস্কৃত ছায়া দিয়াছেন, তাহাতে দেখা যায়, তাহাও টীকাকার মুনিদত্তের উক্তি লইয়াই পরিসমাপ্ত।” অথচ সম্পাদিত সব কটি গ্রন্থেই এই ব্যাপারটি অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং নামকরণে গানের ভূমিকাকেই দেওয়া হয়েছে প্রাধান্য। প্রাপ্ত পুথিটিতে গানগুলির উপস্থিতি যে একটি বিশিষ্ট ঘটনা তা অস্বীকার করা যায় না; কিন্তু টীকাকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল গানগুলির সূত্রে সহজযান বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব ও আচরণ ব্যাখ্যা করা। মূল পুথিতে গান আদৌ যুক্ত ছিল কিনা তা নিয়েও কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যেভাবে সাহিত্যের অর্থপুস্তক লেখা হয় সেইভাবে, অর্থাৎ প্রতিটি পদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পদের প্রথম শব্দটি উল্লেখ করে এখানে ব্যাখ্যা শুরু হয়েছে। এই রীতি বৌদ্ধসাহিত্যে যে সুপ্রচলিত ছিল তার প্রমাণ কাহ্নপাদ রচিত ''যোগরত্নমালা'' টীকা, অদ্বয়বজ্রের ''দোহাকোষপঞ্জিকা'' এবং নারোপা রচিত ''সেকোদ্দেশ টীকা''। মুনিদত্তও সেই ধারাতে অর্থবোধের জন্য ''নির্মলগিরা টীকা'' রচনা করেছিলেন। সূচনায় “বিধাস্যে স্ফুটম্” ও অন্তে “কোষস্য চার্থঃ প্রকটিকৃতোঽএ” প্রভৃতি উক্তিই তার প্রমাণ। অতএব টীকাকারের উদ্দেশ্য বিচার করলে পূর্বোক্ত সমস্ত নামই অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর মনে হবে। তিনি যে এর ভিন্ন একটি নামকরণ বৌদ্ধধর্মের গূঢ় তত্ত্বসমূহের ভাষ্য তথা ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত ''তাঞ্জুর'' গ্রন্থমালার তালিকা থেকে পাওয়া যায়। সেখানে মুনিদত্তের নামে ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি'' গ্রন্থটির উল্লেখ আছে। মুনিদত্তের গ্রন্থটির তিব্বতি অনুবাদক কীর্তিচন্দ্রের নামেও একই নামে একটি গ্রন্থের উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। পি. কর্ডিয়ার কৃত তালিকাও এই তত্ত্বকে সমর্থন করে। অতএব সিদ্ধান্ত করা যায় যে, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত গ্রন্থটির প্রকৃত নাম ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি''। উল্লেখ্য যে, তিব্বতি ভাষান্তরেও গ্রন্থের নাম দেওয়া হয়েছিল ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি''। আশ্চর্যের বিষয়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ সালে তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের পরিশিষ্টে যে ''তাঞ্জুর'' তালিকা সন্নিবিষ্ট করেছিলেন, তাতেও মুনিদত্তের নামের পাশে ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি'' গ্রন্থের উল্লেখ আছে।
==কবি==
চর্যাগীতিগুলির ভণিতায় যেমন পদকর্তাদের নাম স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে, তেমনই টীকাগ্রন্থটিতে ব্যাখ্যার সঙ্গে রচয়িতাদের নামও দেওয়া হয়েছে। মোট সাড়ে ছেচল্লিশটি গানের তেইশজন পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। এঁরা সবাই ছিলেন মহাযানী বৌদ্ধধর্মের যোগাচার শাখার সাধক-কবি। সম্ভবত তন্ত্রযোগ সাধনায় এঁরা সকলেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, তাই প্রত্যেকেই সিদ্ধাচার্য নামে খ্যাত ছিলেন। মুখ্যত বজ্রযান ও সহজযানের গুরুরাই এই অভিধায় ভূষিত হতেন। তিব্বতি ইতিহাসে চুরাশি জন সিদ্ধাচার্যের নাম সুপ্রসিদ্ধ। লামা তারানাথের গ্রন্থ, মৈথিল কবি জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' ও বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধনামানুসরণ'' গ্রন্থে এই সব সিদ্ধাচার্যের নাম ও তাঁদের সম্পর্কে কিছু জনশ্রুতি উল্লিখিত হয়েছে।
===লুইপাদ===
টীকাকার মুনিদত্ত লুইপাদকে আদি সিদ্ধাচার্য বলেছেন। তিব্বতি তালিকায় তাঁর নামই সর্বাগ্রে পাওয়া যায়। অবশ্য তারানাথ বলেছেন, লুইপাদ চতুর্থ সিদ্ধাচার্য। তিনি উড্ডীয়ান-রাজ উদয়নের করণিক ছিলেন। পরে মহাসিদ্ধ শবরীপাদের কাছে তন্ত্রাভিষেক লাভ করেন এবং নির্বিঘ্নে ধ্যান করার জন্য বাংলার গঙ্গাতীরে আসেন। সাধনরত অবস্থায় তিনি মৎস্যের অন্ত্র ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। এইজন্য নাথধর্মের অন্যতম গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথ বা মীননাথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। ‘মৎস্যেন্দ্র’ শব্দের অর্থ হল মাছেদের রাজা অর্থাৎ রুই। পাণিনির “ন র লয়োর্ভেদঃ” সূত্র অনুযায়ী বলা যায়, রুই ও লুইয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এইভাবে মীননাথ ও লুইপাদ অভিন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। অবশ্য সেটি বাস্তব সত্য কিনা সে নিয়ে সংশয় আছে। লুইপাদ বজ্রযান মতে বজ্রবারাহীর ধ্যান করতেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা অবশ্য লুইপাদকে ‘বাঙালি’ বলে ঘোষণা করেছে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, লুইপাদ ছিলেন পাল সম্রাট ধর্মপালের কায়স্থ বা মুখ্য করণিক। সরহপাদ রচিত দোহাকোষের অদ্বয়বজ্র কৃত পঞ্জিকায় লুইপাদকে ‘কৈবর্ত’ বলা হয়েছে। চর্যাগীতি ও ''তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টি'' নামক দোহাকোষ ছাড়া লুইপাদ রচনা করেন ''শ্রীভগবদভিসময়'', ''অভিসময়বিভঙ্গ'', ''বুদ্ধোদয়'' ও ''বজ্রসত্ত্বসাধন''। প্রথম দুটি গ্রন্থ খুবই বিখ্যাত। বিশেষত দ্বিতীয় গ্রন্থটির উপর পরবর্তীকালে অনেক টীকা, ব্যাখ্যা, বৃত্তি, পঞ্জিকা ইত্যাদি রচিত হয়। চর্যার পুথিতে তাঁর দুটি গান (১ ও ২৯ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত।
===শবরীপাদ===
মহাসিদ্ধ শবরীপাদ ছিলেন লুইপাদের গুরু। শবরীপাদের গুরু ছিলেন রসসিদ্ধ নাগার্জুন। তারানাথের বিবরণে পাওয়া যায়, প্রথম জীবনে শবরীপাদ ছিলেন বঙ্গের এক নটাচার্য। নাগার্জুন তাঁকে শ্রীপর্বতে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে তিনি শবরসুলভ জীবন যাপন করে ‘শবরীশ্বর’ বা ‘সিদ্ধ শবর’ উপাধি লাভ করেন। তন্ত্রমতে, শবর বা সবর শব্দের অর্থ বজ্রধর। তিনি কনিষ্ঠ সরোহ নামেও পরিচিত। ''তাঞ্জুর'' তালিকা অনুসারে, তিনি বজ্রযোগিনী সাধন-বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এছাড়া ষড়ঙ্গ যোগের উপরেও তাঁর অধিকার বিভিন্ন রচনায় প্রমাণিত। তিনি ‘আচার্য’ ও ‘মহাচার্য’ বিশেষণেও ভূষিত। ''মহামুদ্রাবজ্রগীতি'', ''চিত্তগুহ্যগম্ভীরার্থগীতি'' প্রভৃতি তাঁর রচিত তত্ত্বগ্রন্থ। বৌদ্ধ সাধনমালায় ''সিতকুরুকুল্লাসাধন'' ও ''বজ্রযোগিনী আরাধনাবিধি'' নামে দুটি রচনায় তাঁর ভণিতা পাওয়া যায়। চর্যাপদের পুথিতে তাঁর দুটি গান (২৮ ও ৫০ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত।
===ভুসুকুপাদ===
অন্যতম শ্রেষ্ঠ চর্যাকার ভুসুকুপাদের ব্যক্তিগত ও প্রাচীনত্ব নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। মহাযান মধ্যমক শূন্যবাদের প্রবক্তা শান্তিদেব ও চর্যাকার ভুসুকুপাদ অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে কিছু মতান্তর আছে। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ''শিক্ষাসমুচ্চয়'' ও ''বোধিচর্যাবতার''। তারানাথ এই সকল গ্রন্থের রচয়িতাকে সৌরাষ্ট্রের অধিবাসী বলেছেন। কিন্তু হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘বাঙালি’ বলে স্বীকার করেছেন। শাস্ত্রী মহাশয় এশিয়াটিক সোসাইটির ৯৯৯০ সংখ্যক তালপাতার পুথি থেকে শান্তিদেবের যে জীবনী উদ্ধার করেছেন, সেটি এইরকম: শান্তিদেব ছিলেন রাজপুত্র। যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার প্রাক্কালে তাঁর মা তাঁকে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুবজ্রের নিকট উপদেশ নিতে বলেন। শান্তিদেব ঘোড়ায় চড়ে মঞ্জুবজ্রের নিকট যাত্রা করলেন। পথে মঞ্জুবজ্রের এক শিষ্যের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল এবং তারপর বারো বছর মঞ্জুবজ্রের কাছে থেকে তিনি মঞ্জুশ্রী মন্ত্রে সিদ্ধ হলেন। তারপরে তিনি ‘রাউত’ বা অশ্বারোহীর বেশে মগধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মগধরাজের নিকট ‘অচল সেন’ নামে নিজের পরিচয় দিলেন। মগধরাজ অশ্বারোহী তরবারিধারী অচলকে সেনাপতি পদে বরণ করলেন। তরবারিকে আশ্রয় করে তাঁর অদ্ভুত সিদ্ধি প্রকাশ পেল। তখন তিনি রাজকার্য ত্যাগ করে ভিক্ষুর বেশে নালন্দায় প্রবেশ করলেন। এখানেই তিনি তাঁর গ্রন্থদ্বয় রচনা করেন। ভোজনকালে, সুপ্ত অবস্থায় ও কুটি গমনে অর্থাৎ বিশ্রামকালে ‘প্রভাস্বর’ বা সমাধি সমাপন্ন থাকতেন বলে তিনি ‘ভুসুকু’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। এই নামেই তিনি চর্যাগীতি রচনা করেন। পদকর্তা ভুসুকুর গানে আছে “রাউতু ভনই কট”। এই ভণিতাই দুই ব্যক্তিত্বকে এক করে দিয়েছে। তাছাড়া নারোপা রচিত ''সেকোদ্দেশ টীকা'' গ্রন্থে শান্তিদেব ও ভুসুকুপাদকে একই ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ড. সুকুমার সেন এই দুজনকে পৃথক ব্যক্তি বলে মনে করেন। ড. সেনের মতে, ভুসুকুপাদ শান্তিদেবের তুলনায় অনেক পরবর্তীকালের ব্যক্তি। তিনি সহজযানী সিদ্ধাচার্য। তাঁর রচিত ''চতুরাভরণ'' গ্রন্থের লিপিকাল ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দ ধরে ড. সেন তাঁকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষার্ধের ব্যক্তি মনে করেছেন। কিন্তু এই ধারণা সম্ভবত সঠিক নয়। ভুসুকুপাদ ত্রয়োদশ শতকের কবি হলে দ্বাদশ শতকের পূর্বে রচিত কোনও গ্রন্থে তাঁর পদ স্থান লাভ করতে পারে না। তাছাড়া ভুসুকুপাদ যে রাজপুত্র ও রাউত ছিলেন, তার প্রমাণ তাঁর পদেই পাওয়া যায়। “আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী” ভণিতার সূত্রে তাঁকে বাঙালি মনে করা হয়। তাঁর পদে দু-একটি বঙ্গীয় বাগ্বিধিও লক্ষণীয়। চর্যার পুথিতে ভুসুকুপাদের ৮টি গান সংকলিত হয়েছে: ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩ ও ৪৯ সংখ্যক চর্যা।
===সরহপাদ===
লামা তারানাথ সরহপাদকে আদি সিদ্ধাচার্য বলে উল্লেখ করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় সরহপাদকে বলা হয়েছে ‘আচার্য’, ‘মহাচার্য’, ‘সিদ্ধ মহাচার্য’, ‘মহাব্রাহ্মণ’, ‘যোগী’, ‘মহাযোগী’, ‘যোগীশ্বর’ ও ‘মহাশবর’ (‘শবর’ শব্দটি বজ্রযানে বজ্রধরের প্রতীক)। সরহপাদ উড়িষ্যায় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বেদাদি শাস্ত্রে পারঙ্গম ছিলেন। নালন্দায় তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন ধর্মকীর্তি হরিভদ্র। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, হরিভদ্র ছিলেন গৌড়াধিপতি ধর্মপালের (রাজত্বকাল ৭৭০—৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) সমসাময়িক। সেই হিসেবে সরহপাদ অষ্টম শতাব্দীর ব্যক্তি ছিলেন এবং সম্ভবত তাঁর মৃত্যু হয় ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে। আচার্য স্থবিরকালের নিকট সরহপাদ অভিষিক্ত হন। দাক্ষিণাত্যে এক শরকারের (arrow-smith) কন্যাকে মুদ্রা রূপে গ্রহণ করায় তাঁর নাম হয় শরহ বা সরহ। তাঁর অপর নাম রাহুলভদ্র, সরোরুহবজ্র ও সরোজবজ্র। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, সরহপাদের ভিক্ষুনাম রাহুলভদ্র। বজ্রযানের সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে সরোরুহবজ্র বা সরোজবজ্র নাম ব্যবহার করা হয়েছে। রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন বলেছেন, ‘পূর্বদিশা’ অঞ্চলের অন্তর্গত ‘রাজ্ঞী’ (বর্তমান বিহারের ভাগলপুর) নামক স্থানে তাঁর জন্ম। অবশ্য অনেকেই মনে করেন, সরহপাদ ছিলেন বরেন্দ্রভূমির ব্যক্তি। তাঁর লেখা ৩৯ সংখ্যক চর্যাটির বাহ্য অর্থ থেকে জানা যায় যে, তিনি বঙ্গে জায়া গ্রহণ করেছিলেন: “বঙ্গে জাআ নিলেসি”। তাঁর পদে ব্যবহৃত প্রবাদ-প্রবচন ও বাগ্বিধির বিচারেও তাঁকে গৌড়ের অধিবাসী মনে হয়। রসসিদ্ধ নাগার্জুনকে তিনি সহজ মতে অভিষিক্ত করেন। সংস্কৃত, অপভ্রংশ ও প্রত্ন বাংলা তিন ভাষাতেই সরহপাদ গ্রন্থাদি রচনা করেন। সংস্কৃতে তিনি রচনা করেন ''বুদ্ধকপালসাধন'', ''হেবজ্রতন্ত্রপঞ্জিকাপদ্মিনীনাম'' প্রভৃতি গ্রন্থ। অপভ্রংশে রচিত তাঁর সহজতত্ত্ব ও সহজ-সাধনা বিষয়ক দোহা ও দোহাজাতীয় গীতি সংকলনগুলির মধ্যে ''দোহাকোষগীতি'', ''ক-খ দোহা'' (ক-কারাদি বর্ণকে আদ্যক্ষর করে বর্ণার্থমূলক দোহা), ''মহামুদ্রোপদেশবজ্রগুহ্যগীতি'', ''কায়বাক্চিত্তঅমনসিকার'', ''ডাকিনীগুহ্যগীতি'' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চর্যাগীতির পুথিতে তাঁর ৪টি পদ (২২, ৩২, ৩৮ ও ৩৯ সংখ্যক পদ) সংকলিত।
===কাহ্নপাদ===
চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত ৫০টি পদের মধ্যে ১৩টি পদই (৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ৩৬, ৪০, ৪২ ও ৪৫ সংখ্যক চর্যা; এবং টীকা অনুসারে, মূল পুথিতে লুপ্ত ২৪ সংখ্যক চর্যাটি) কাহ্নপাদের রচনা। তিব্বতি ইতিহাস, ''তাঞ্জুর'' তালিকা, চর্যাগীতি ও বাংলা সিদ্ধাচার্য-গীতিকায় (নাথগীতিকা) কাহ্নপাদ একটি বিশিষ্ট নাম। টীকাকার তাঁকে ‘কাহ্নপাদ’, ‘কৃষ্ণপাদ’, ‘কৃষ্ণাচার্যপাদ’, ‘কৃষ্ণবজ্রপাদ’, ‘কৃষ্ণাচার্য’, ‘কৃষ্ণাচার্য চরণ’ ইত্যাদি নামে উল্লেখ করেছেন। তিনি সিদ্ধ সাধক, মহাপণ্ডিত ও মণ্ডলাচার্যদের ভিতর সিদ্ধাচার্য। তবে কাহ্নপাদ দুই জন কবির নাম কিনা এবং তাঁর সময়কাল নিয়ে বিতর্ক আছে। ড. সুকুমার সেনের মতে, ১০, ১১, ১৮, ১৯, ৩৬ ও ৪২ সংখ্যক পদগুলি জালন্ধরীপাদের শিষ্য তান্ত্রিক যোগী কাহ্নপাদের এবং ৭, ৯, ১২, ১৩, ৪০ ও ৪৫ সংখ্যক পদগুলি অপর এক কাহ্নপাদের রচনা। কয়েকটি গানে ‘জ্ঞান উপদেশের প্রবণতা’ এবং অন্য গানগুলিতে ডোম্বী-বিবাহের সন্ধ্যা-সংকেতের ভিত্তিতে দুই কাহ্নের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও, একই সাধক-কবি দুই ভিন্ন শ্রেণির গান রচনা করেছেন—এই যুক্তিতে কেউ কেউ দুই কাহ্নের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। কাহ্নপাদের পরিচয় নিয়েও অনেকগুলি জনশ্রুতি আছে। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে ভারতবাসী ও উড়িষ্যা থেকে আগত বলা হয়েছে। তিব্বতের ইতিহাস অনুসারে, তাঁর জন্মস্থান কর্ণ-নগর। জনশ্রুতিতে বলা হয়েছে তাঁর জন্ম পদ্মনগর বা বিদ্যানগর বা বিজয়নগরে। এই স্থানগুলির অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। নাথগীতিকায় তাঁর একটি কীর্তিস্থল হিসেবে বঙ্গ মেহারকুলের উল্লেখ আছে। কাহ্নপাদের পদে বাংলা শব্দভাণ্ডারের প্রাচুর্যও লক্ষণীয়। কাহ্নপাদের জীবনকাহিনিও বিচিত্র। প্রথম জীবনে বিরূপপাদ বা বিরুআপাদের শিষ্য কাহ্নপাদ ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে চারটি পাপ করার পর জালন্ধরীপাদের শরণ নেন। জালন্ধরীপাদের নির্দেশে বজ্রবারাহীর উপাসনার করে তিনি শাপমুক্ত হন। বিরূপপাদের সঙ্গে কাহ্নপাদের যোগের ইঙ্গিত তাঁর পদেই পাওয়া যায়। তবে জালন্ধরীপাদের সঙ্গেই তাঁর যোগ বেশি। চর্যাগীতিতে কাহ্নপাদ জালন্ধরীপাদকে সাক্ষী মেনে মেনেছেন: “শাখি করিব জালন্ধরী পাএ”। তিব্বতি ইতিহাসে আছে, জালন্ধরীর শ্রেষ্ঠ শিষ্য কৃষ্ণ অঙ্গে হাড়ের মালা ও হস্তে ডমরু ধারণ করবেন। চর্যাগানে কাহ্নপাদ তাই করেছেন বলে উল্লিখিত। আবার নাথগীতিকায় বলা হয়েছে হাড়িফাকে (জালন্ধরীপাদ) নিত্য সেবা করেন কানফা যোগাই (কাহ্নপাদ)। কাহ্নপাদ ''দোহাকোষপঞ্জিকা'' সহ অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ''হেবজ্রতন্ত্র'' গ্রন্থের উপর একটি গ্রন্থও তাঁর নামে পাওয়া যায়।
===বিরূপপাদ===
বিরূপপাদ বা বিরুআপাদ ছিলেন বজ্রযোগিনীর সাধক। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে ‘আচার্য’, ‘মহাচার্য’, ‘যোগীশ্বর’ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে। সিদ্ধ সাধক হিসেবে তিনি এত বিখ্যাত ছিলেন যে, পরবর্তীকালে অনেকেই তাঁর নাম করেছেন। তাঁর কোনও গুরু ছিল না। জনশ্রুতি অনুসারে, তিনি ছিলেন সিদ্ধাচার্য কাহ্নপাদের প্রথম জীবনের গুরু। তাঁর নামে ''গীতিকা'', ''কর্মচণ্ডালিকাদোহাকোষগীতি'' প্রভৃতি গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। লামা তারানাথের গ্রন্থে তাঁর মদ্যপানে আসক্তি ও শুণ্ডিনী সাহচর্যের কথা পাওয়া যায়। চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত তাঁর একমাত্র চর্যাটিতে (৩ সংখ্যক পদ) সেই শুণ্ডিনীর মদ চোলাইয়ের একটি বাস্তব চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
===শান্তিপাদ===
শান্তিপাদ প্রাচীন সিদ্ধাচার্য। ড. সুকুমার সেনও তাঁকে প্রাচীন চর্যাকার বলে স্বীকার করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা মতে, রত্নাকর শান্তিই শান্তিপাদ। তিব্বতি তালিকায় রত্নাকর শান্তি ‘আচার্য’, ‘আচার্যপাদ’ ও ‘মহাপণ্ডিত’ বিশেষণে ভূষিত। লামা তারানাথের বিবরণ অনুসারে, তিনি শবরীপাদের সমসাময়িক, অর্থাৎ অষ্টম শতকের মধ্যভাগের ব্যক্তিত্ব। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁর নামে ''মুক্তাবলী নামি হেবজ্র পঞ্জিকা'' ও ''কুসুমাঞ্জলি নাম গুহ্যসমাজ নিবন্ধ'' নামে দুই গ্রন্থ উল্লিখিত হয়েছে। এগুলি সহজ-সাধনার ভিত্তি ''হেবজ্রতন্ত্র'' ও ''গুহ্যসমাজ তন্ত্র'' গ্রন্থদ্বয়ের টীকা। সহজযানের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগের সাক্ষর বহন করছে ''সহজরতিসংযোগ'' ও ''সহজ যোগক্রম'' গ্রন্থ দুটি। তাঁর অপর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ''সুখদুঃখপরিত্যাগদৃষ্টি''। এছাড়া তিনি বজ্রতারা ও মহামায়ার সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থও রচনা করেন। শান্তিদেব ও শান্তিপাদকে কেউ কেউ অভিন্ন মনে করেন। কিন্তু এঁরা যে পৃথক ব্যক্তি তা নানা সূত্র থেকে জানা যায়। শান্তিদেবের দুটি পদ (১৫ ও ২৬ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত হয়েছে চর্যাগীতির পুথিতে।
===দারিকপাদ===
দারিকপাদকে অভিষিক্ত করেন লুইপাদ। গানের ভণিতাতেও দারিকপাদ বলেছেন, “লুইপাঅ পসাএঁ দারিক”। লামা তারানাথের মতে, দারিকপাদ ছিলেন উড়িষ্যার রাজা। তিনি সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় দারিকপাদের নামে ''শ্রীচক্রতন্ত্ররাজ'' গ্রন্থের ''সেকপ্রক্রিয়াবৃত্তি'' ও ''শ্রীচক্রসম্বরসাধন'' গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। চর্যাগীতির পুথিতে তাঁর একটি মাত্র পদই (৩৪ সংখ্যক চর্যা) পাওয়া গিয়েছে।
===ডোম্বীপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য ডোম্বী, আচার্য ডোম্বীপাদ এবং আচার্য বা মহাচার্য ডোম্বী-হেরুকের নামে একাধিক গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়। লামা তারানাথের মতে, এঁরা সবাই একই ব্যক্তি এবং এই ডোম্বী-হেরুক ছিলেন বিরূপপাদের শিষ্য কাল বিরূপ বা কাহ্নপাদের শিষ্য। তিব্বতি তালিকায় সিদ্ধ ডোম্বী-হেরুককে সন্ন্যাসী ও মগধের রাজা বলা হয়েছে। তারানাথ অবশ্য বলেন, ডোম্বী-হেরুক ছিলেন ত্রিপুরার রাজপুত্র। মুদ্রিকা নিয়ে সাধনা করতেন বলে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হন। কিন্তু রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ডোম্বী-হেরুক আশ্চর্য সিদ্ধাই দেখিয়ে দুর্ভিক্ষ নিবারণ করেন। তখন লোকে তাঁর সিদ্ধির কথা বুঝতে পারে। ডোম্বী-হেরুকের শিষ্যবর্গ ছিলেন ডোম্বী (আধ্যাত্মিক অর্থে বায়ুরূপা অবধূতিকা) ধরার সাধক। তারানাথ আরও বলেছেন যে, ডোম্বী-হেরুক রাঢ়ের রাজাকেও অভিষিক্ত করেন, ফলে রাঢ় অঞ্চল থেকে তীর্থিক ধর্ম লোপ পায়। মুনিদত্তও ডোম্বীপাদকে ‘লাড়ী’ বলে অভিহিত করেছেন। তাই ড. সুকুমার সেন তাঁর রাঢ় অঞ্চলের মানুষ মনে করেন। ড. বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের মতে, তিনি ছিলেন অষ্টম শতকের লোক। চর্যাগীতির পুথিতে ডোম্বীপাদের মাত্র একটি পদ (১৪ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত হয়েছে। টীকাকার এটির ব্যাখ্যা দেননি। তবে কাহ্নপাদের অনেক পদে ডোম্বীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
===কুক্কুরীপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য কুক্কুরীপাদ কুকুরাজ বা কুক্কুররাজ নামে অভিহিত হয়েছেন। তাঁর নামে অনেকগুলি গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। ''গুহ্যার্থধর ব্যুহ'' নামে তিনি বজ্রসত্ত্ব, বজ্রহেরুক, পদ্মরত্নেশ্বর প্রমুখের সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারানাথের ভাষ্য অনুসারে, সর্বদা সঙ্গে একটি কুক্কুরী থাকত বলে তিনি কুক্কুরীপাদ নামে পরিচিত হয়েছেন। ড. সুকুমার সেন অবশ্য কুক্কুটিকপাদ থেকে কুক্কুরীপাদ শব্দটি নিষ্পন্ন করতে চান। চর্যাপদের পুথিতে তাঁর তিনটি চর্যা সংকলিত হয়েছিল; তার মধ্যে ২ ও ২০ সংখ্যক চর্যাটি পাওয়া গিয়েছে এবং ৪৮ সংখ্যক চর্যাটি লুপ্ত।
===চাটিলপাদ===
পদকর্তা চাটিলপাদের অস্তিত্ব তাঁর একটি পদের (৫ সংখ্যক চর্যা) উপর নির্ভরশীল। কারণ তারানাথের বর্ণনায় বা ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁর নাম দেখা যায় না। কেবল জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থের সিদ্ধা-বর্ণনায় ‘চাটল’ এবং বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধনামানুসরণ'' গ্রন্থে ‘চাটলা’ নাম পাওয়া যায়। ৫ সংখ্যক পদে তিনি নিজেকে ‘অনুত্তর সামী’ বলে আত্মপ্রশংসা করেছেন বলে, ড. সুকুমার সেন এটিকে চাটিলপাদের কোনও শিষ্যের রচনা বলে মনে করেন। কিন্তু প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় সাহিত্যে কবির আত্মপ্রশংসা বিরল নয় বলেই ড. সেনের মত অনেকে গ্রহণ করতে পারেননি।
===আর্যদেব===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আর্যদেব বা আজদেবকে ‘আচার্য’ ও ‘মহাচার্য’ বলা হয়েছে। তিনি সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন। চতুষ্পীঠ যোগতন্ত্র সাধন সম্পর্কে তিনি গ্রন্থ রচনা করেন। সহজ-সাধনায় চিত্তশোধন-বিষয়ক মূল্যবান গ্রন্থ ''চিত্তাবরণবিশোধন নামপ্রকরণ'' তাঁর রচনা। অপভ্রংশ ভাষায় তিনি রচনা করেন ''কাণেরি গীতিকা''। প্রভুভাই প্যাটেলের মতে, আর্যদেব অষ্টম শতকের প্রথমার্ধে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি ছিলেন উড়িষ্যারাজ ইন্দ্রভূতি এবং সরহপাদের শিষ্য নাগার্জুনের সমসাময়িক। আর্যদেবের একটি মাত্র চর্যা (৩১ সংখ্যক পদ) সংকলিত হয়েছে চর্যাগীতির পুথিতে।
===কম্বলাম্বরপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য বা মহাচার্য কম্বলের নাম পাওয়া যায়; সেই সঙ্গে প্রজ্ঞারক্ষিতের গুরু মহাসিদ্ধ কম্বলাম্বরপাদের নামও উল্লিখিত হয়েছে এখানে। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ''অভিসময়নামপঞ্জিকা''। লামা তারানাথের বিবরণ থেকে অনুমান করা হয় যে, লুইপাদের শিষ্য দারিকপাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল এবং সেই সূত্রে লুইপাদের গ্রন্থটির পঞ্জিকা রচনা করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। তারানাথ কম্বলাম্বরপাদকে বজ্রঘণ্টের শিষ্য বলেছেন। ডোম্বী-হেরুক, জালন্ধরীপাদ প্রমুখের সঙ্গে কম্বলাম্বরপাদের যোগাযোগ ছিল। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, কম্বলাম্বরপাদ ছিলেন ঊড়িষ্যার এক রাজকুমার। শ্মশানে সাধনা করে তিনি মন্ত্রসিদ্ধ হয়েছিলেন। মন্ত্রবতী শ্মশান-ডাকিনী তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলে শ্মশানে একটি কম্বল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না। তাতেই তিনি ‘কম্বল’ নামে খ্যাত হন। তাঁর কিছু সংস্কৃত রচনার অংশ উদ্ধৃত হয়েছে সরহপাদ রচিত দোহার অদ্বয়বজ্র কৃত টীকায়। সেখানে তিনি শাস্ত্রের শব্দাক্ষরের অসারতা প্রতিপন্ন করেছেন। চর্যাগীতির পুথিতে ৮ সংখ্যক পদটি কম্বলাম্বরপাদের রচনা। এটিতে তিনি ‘কামলি’ নামে আত্মপরিচয় দিয়েছেন। পদটি সাধনতত্ত্বের রূপক। নৌকা বাওয়ার রূপকে কবি মহাসুখচক্রের উদ্দেশ্যে বোধিচিত্তের যাত্রা বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন পংক্তিতে নৌকা বাওয়ার বাস্তব চিত্র এই বিষয়ে কবির বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিচায়ক। সন্ধ্যা-সংকেতে ও উৎপ্রেক্ষায় পদটি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
===বীণাপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় বিরুআপাদের বংশধর রূপে বীণাপাদের নাম উল্লিখিত হয়েছে। অবশ্য লামা তারানাথের মতে, তিনি ছিলেন অশ্বপাদের শিষ্য। ডোম্বী-হেরুকের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। সেই হিসেবে তিনি অষ্টম শতকের শেষার্ধের ব্যক্তি। ড. সুকুমার সেন বলেছেন, “টীকাকারের অনুকরণে একটি চর্যা (১৭) অকারণে বীণাপাদের রচিত বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছে। কিন্তু ভণিতা বলিয়া নির্দেশ করিতে পারি এমন কোন নাম চর্যাটিতে নাই।” কিন্তু অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তীর মতে, “চর্যাগানে অনেক ক্ষেত্রে লেখক রূপকের আবরণে আত্মগোপন করিয়াছেন, কোথায়ও বা সরাসরি ভণিতা না দিয়া নিজেই গীতিকবিতার নায়ক সাজিয়াছেন। কাহ্নপাদের ১০ সংখ্যক চর্যায় ও শবরপাদের ২৮ ও ৫০ সংখ্যক চর্যায় এই রীতিই অবলম্বিত হইয়াছে। কাজেই বীণাপাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না।” গুহ্যাভিষেক, মহাভিষেক ও বজ্রডাকিনী নিষ্পন্নক্রম বিষয়ে বীণাপাদ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ১৭ সংখ্যক চর্যাটিও নিষ্পন্নক্রমের সাধন-সংক্রান্ত চর্যা। সেকমণ্ডলে আলি-কালির দ্বার রুদ্ধ হয়ে চিত্ত অবধূতী মার্গে প্রবিষ্ট হলে কীভাবে হেরুক-বীণায় শূন্যতার ধ্বনি ওঠে এবং কীভাবে যোগিনী-অভিষঙ্গে যোগী বজ্রনৃত্যে ও বজ্রগীতে তন্ময় হন, তারই একটি ছবি ধরা পড়েছে ১৭ সংখ্যক চর্যাটিতে। সাধকসত্ত্বাই এখানে বীণাযন্ত্র-স্বরূপ। বীণার রূপকল্পনায় নীরস দেহতত্ত্ব এই পদে সরস হয়ে উঠেছে। গানটি শুধু তত্ত্ববাহীই নয়, নানা তথ্যে সমৃদ্ধ এবং কবির বস্তুদৃষ্টির পরিচায়ক।
===ভাদেপাদ===
কাহ্নপাদের যে ছয়জন শিষ্যের একটি করে গান চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত হয়েছে, তাঁদের অন্যতম ভাদেপাদ বা ভদ্রপাদ। অন্যত্র তিনি ভদ্রচন্দ্র বা ভদ্রদত্ত বা ভদ্রোক নামেও পরিচিত। লামা তারানাথ তাঁর ‘গুহ্য’ নামটির কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলা গোপীচন্দ্রের গানে উল্লিখিত কৃষ্ণাচার্যের শিষ্য ‘বাইল ভাদাই’ সম্ভবত ভদ্রপাদ। কানফা গোপীচন্দ্রকে উদ্ধার করতে সোনার গোপীচন্দ্র মূর্তি ক্রুদ্ধ হাড়িপার সম্মুখে স্থাপনের উপদেশ দেন। হাড়িপার ক্রোধে সেই স্বর্ণমূর্তি ভস্ম হয়ে যায়। গুরু জালন্ধরী এই কথা জানতে পেরে কানফাকে শাপ দেন। শেষে ময়নামতীর অনুনয়ে সিদ্ধ হাড়িপা বলেন যে, ‘বাইল ভাদাই’ শাপমুক্ত করবেন কানফাকে। সিদ্ধাচার্যদের অনেকেই শিষ্য কর্তৃক উদ্ধার লাভ করেছিলেন। গোরক্ষনাথ যেমন গুরু মীননাথকে কামবাসনায় ঘেরা কদলীরাজ্য থেকে মুক্ত করেছিলেন, তেমনই হয়তো গুরু কানফা বা কাহ্নপাদকে শাপমুক্ত করে থাকবেন ‘বাইল ভাদাই’ বা ভদ্রপাদ। নাথপন্থার সঙ্গে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের যোগ এই কাহিনির মাধ্যমে বোঝা গিয়েছে। কিন্তু ভাদেপাদের গানে তান্ত্রিকতার ছাপ স্পষ্ট নয়, পারিভাষিক শব্দের ব্যবহারও কম। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় ভাদেপাদকে বলা হয়েছে ‘ভাণ্ডারিন্’ (আচার্য)। তাঁর রচিত গ্রন্থটির নাম ''সহজানন্দদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টি''। ৩৫ সংখ্যক চর্যাগীতিটি ভাদেপাদের রচনা। গুরু উপদেশে কীভাবে তিনি সহজচিত্ত লাভ করেছিলেন, তা উল্লিখিত হয়েছে এই পদে। টীকাকার বলেছেন, ভদ্রপাদ ‘জ্ঞানানন্দপ্রমোদ’-যুক্ত সিদ্ধাচার্য। পদটিতেও সর্বধর্ম-অনুপলম্ভরূপ চরম জ্ঞানের স্বরূপ বিধৃত হয়েছে। পদটিতে ‘বাজুল’ (বজ্রকুল) শব্দটির প্রয়োগ দেখে মনে হয়, ভাদেপাদ বজ্রকুলের সাধক ছিলেন।
===মহীধরপাদ===
চর্যাগীতির পুথিতে প্রাপ্ত ১৬ সংখ্যক পদটির রচয়িতা মহিণ্ডা। ভণিতায় ‘মহিণ্ডা’ নামটি পাওয়া গেলেও টীকায় তাঁর নাম মহীধরপাদ। লামা তারানাথ তাঁকে ‘মহিল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা বলা হয়েছে যে, ‘মহিপাদ’ ছিলেন আচার্য কৃষ্ণের অর্থাৎ কাহ্নপাদের বংশধর (শিষ্য)। ''বায়ুতত্ত্ব দোহাগীতিকা'' গ্রন্থটি মহীধরপাদের রচনা। তাঁর রচিত চর্যাগীতিটি ধ্বনিগাম্ভীর্যে, ২৬ মাত্রার দীর্ঘায়িত ছন্দের গজগতিতে এবং রূপক-কল্পনার সৌন্দর্যে বেশ উপভোগ্য। টীকাকার বলেছেন, "জ্ঞানপানপ্রমত্তো হি সিদ্ধাচার্য মহীধর”। এই জ্ঞানদৃষ্টির সঙ্গে কবির শিল্পদৃষ্টিও প্রশংসনীয়। পদটির সঙ্গে কাহ্নপাদ রচিত ৯ সংখ্যক পদের ভাব ও চিত্র-সাদৃশ্য কাহ্নপাদের সঙ্গে মহীধরপাদের নিকট সম্পর্কেরই সূচক। তবে ড. নির্মল দাশ এই পদের ভণিতায় ক্রিয়াপদে বহুবচন দেখে অনুমান করেন যে, পদটি মহীধরপাদের “শিষ্যানুশিষ্যদেরও” রচনা হতে পারে।
===ধামপাদ===
লামা তারানাথের মতে, ধম্মপাদ বা ধামপাদ ছিলেন কাহ্নপাদের শিষ্য। কাহ্নপাদ যখন গুরুকে উদ্ধার করতে শিষ্যদের নিয়ে গোবিন্দচন্দ্রের রাজ্যে আসেন, তখন রাজা তাঁদের উদ্দেশ্যে এক ভোজের আয়োজন করেন। কাহ্নপাদ বলেন, শিষ্য ধম্ম ও ধূমকে ভোজনে তৃপ্ত করলেই সকলে পরিতৃপ্ত হবেন। রাজার সংগৃহীত সমস্ত ভোজ্যদ্রব্য ধম্ম ও ধূম নিঃশেষ করেন। এতে সবাই তাঁদের সিদ্ধি বুঝতে পারেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য ধর্মপাদকে কৃষ্ণ অর্থাৎ কাহ্নপাদের বংশধর বলা হয়েছে। ধামপাদ ''সুগত দৃষ্টি গীতিকা'', ''মহাযান নিষ্পন্নক্রম'', ''হুঙ্কার চিত্তবিন্দু ভাবনাক্রম'' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত ৪৭ সংখ্যক পদটি তাঁর রচনা। এই পদেও নিষ্পন্নক্রম সাধনের কথাই বিবৃত হয়েছে: প্রজ্ঞোপায় সমতাযোগে চণ্ডালী প্রজ্বলিত হয়, অপরিশুদ্ধা নাড়ী দগ্ধ হয় এবং তখন নাড়ীর অধিদেবতা ও চিত্ত বিশ্রাম লাভ করে মহাসুখচক্রে। প্রকারান্তরে কাহ্নপাদ কথিত ‘কামচণ্ডালী’ সাধনার কথাই এখানে পুনর্কথিত হয়েছে। গানটি ''হেবজ্রতন্ত্র''-এর ‘চণ্ডালী জ্বলিতা নাভৌ’ শ্লোকটির ভাষা-অনুবাদ।
===কঙ্কণ===
চর্যাগীতির পুথিতে ৪৪ সংখ্যক পদটি কঙ্কণের রচনা। পুথিতে তাঁর নাম কোঙ্কণ বলে উল্লিখিত। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও তাঁকে সেই নামেই অভিহিত করেছেন। কিন্তু ড. সুকুমার সেনের মতে, তাঁর নাম কৌঙ্কণ। ড. নির্মল দাশের মতে, কঙ্কণ কবির ছদ্মনাম। সম্ভবত কঙ্কণ ছিল তাঁর লব্ধ-উপঢৌকন। সেকালে কবিরা এভাবে প্রাপ্ত উপঢৌকনের নামে ছদ্মনাম গ্রহণ করতেন। কথিত আছে, তিনি আচার্য কম্বলের বংশধর। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে সিদ্ধ সাধক বলা হয়েছে। টীকাকার তাঁকে পরম করুণাসব পানে প্রমুদিত ‘কঙ্কণ সিদ্ধাচার্য’ বলেছেন। কঙ্কণের পদটিতে মধ্যমা নিরোধের যুগনদ্ধ ফলোদয়ের অবস্থাটির বর্ণনা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র মাপের মাত্রা ছন্দ (১১ মাত্রার রসিকা) কঙ্কণই ব্যবহার করেছেন। ছন্দে বৈচিত্র্য এনেছে ষোড়শ-মাত্রিক বন্ধনের সঙ্গে ১১ মাত্রার চরণ: “সুনে সুন মিলিআ জবেঁ। সঅল ধাম উইআ তবেঁ।।” ''চর্যাদোহাকোষগীতিকা'' তাঁর রচনা। সম্ভবত আর কোনও গ্রন্থ তিনি রচনা করেননি।
===গুণ্ডরীপাদ===
৪ সংখ্যক চর্যাগীতিটি গুণ্ডরীপাদের রচনা। গানটিতে ‘গুড়রী’ ভণিতা দেওয়া হয়েছে। অ্যালবার্ট গ্রানওয়েডেল সিদ্ধাচার্যদের যে তালিকা প্রস্তুত করেছেন, তাতে গুণ্ডরী নামটি আছে। বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধবন্দনা'' গ্রন্থেও তাঁর নাম পাওয়া যায়। কিন্তু ''তাঞ্জুর'' তালিকায় এই নামের কোনও লেখকের কথা উল্লিখিত হয়নি। ড. সুকুমার সেনের মতে, গুণ্ডরী সম্ভবত ব্যক্তিনাম নয়, কবির জাতি বা পেশাবাচক নামক এবং সম্ভবত মশলা ইত্যাদি গুঁড়ো করা ছিল কবির পেশা। পুথিতে সংকলিত চর্যাটিতে কুন্দুরু যোগের একটি সংকেত পাওয়া যায়। পদটিতে নরনারীর প্রেম-মিলনের স্থূল বর্ণনা আছে। ড. সেন গানটিতে যৌন-তান্ত্রিকতার স্পষ্ট ইঙ্গিত ও পারিভাষিক শব্দের আধিক্যের কারণে পদকর্তাকে অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন বলে বিবেচনা করেছেন। পদের শেষে কবির আত্মপ্রশংসা লক্ষণীয়।
===তাড়কপাদ===
৩৭ সংখ্যক চর্যাগীতির রচয়িতা হিসেবে তাড়কের নাম উল্লিখিত হয়েছে। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় যে মহাপণ্ডিত তারশ্রী ও উপাধ্যায় তারপাদের নাম পাওয়া যায়, তাড়ক তাঁদেরই মধ্যে কেউ হতে পারেন। টীকাকার তাঁকে সিদ্ধাচার্য বলেছেন: “সিদ্ধাচার্য হি তাড়ক।” পদটিতে সহজজ্ঞানের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। কবির বস্তুদৃষ্টির পরিচয়ও পাওয়া যায় এতে। নৌকা-পারাপার ও পারানির কড়ি খোঁজার ছবিটি মনোজ্ঞ।
===জয়নন্দী===
৪৬ সংখ্যক চর্যাগীতিটি জয়নন্দীর রচনা। তিনি ‘জঅনন্দি’ নামেও পরিচিত। লামা তারানাথের গ্রন্থে জয়নন্দীর নাম পাওয়া যায় না। গ্রানওয়েডেল কৃত সিদ্ধাচার্যদের নামের তালিকায় ‘জয়নন্দ’ নামটি পাওয়া যায়। টীকাকার তাঁকে পরম করুণা অর্জনের নিমিত্ত ‘অভিজ্ঞালাভী’ বলেছেন। প্রাপ্ত পদটিতে পরমার্থ চিত্তের অদাহ্য অপ্লাব্য অচ্ছেদ্য রূপের বর্ণনা এবং পরমার্থতত্ত্বে লক্ষণ কথিত হয়েছে। পদটি অলংকার-বর্জিত ও সোজাসুজি তত্ত্ববাহী।
===ঢেণ্ঢণপাদ===
৩৩ সংখ্যক পদটি ঢেণ্ঢণপাদের রচনা। তিনি চেণ্ঢনপা বা টেণ্টনপা নামেও পরিচিত। তিব্বতি ইতিহাসে ঢেণ্ঢণপাদের নাম নেই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, ভোট উচ্চারণে যিনি ধেতন, তিনিই ঢেণ্ঢণ। আবার ড. নির্মল দাশের মতে, টেণ্টনপা নামটি ছদ্মনাম। তাঁর পদটিতে যে ‘টেণ্টন’ অর্থাৎ ধূর্ত-সুলভ চাতুর্যের পরিচয় আছে, সেটিকে ড. দাশ কবির ব্যক্তিচরিত্রের নয়, বরং রীতিচরিত্রের পরিচায়ক বলেছেন। আগাগোড়া সন্ধ্যাভাষায় রচিত ঢেণ্ঢণপাদের চর্যাগীতিটিতে সন্ধ্যা-সংকেতে সংসারচিত্ত ও সহজচিত্তের স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে। পদে পদে পরস্পর-বিরোধী উক্তি এবং বিরোধালংকারের সমাবেশে পদটি দুরূহ হলেও উপভোগ্য। সাধক-কবির সূক্ষ্ম বস্তুদৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণ শক্তিও প্রশংসনীয়। পদটিতে গৌড়ের দরিদ্র পরিবারের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কবীরের একটি কবিতায় এবং সহদেব চক্রবর্তী ও লক্ষ্মণের ''অনিলপুরাণ'' ও ''গোর্খবিজয়'' কাব্যেও ঢেণ্ঢণপাদের পদটির প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়।
===তন্ত্রীপাদ===
তন্ত্রীপাদ রচিত ২৫ সংখ্যক চর্যাগীতিটি লুপ্ত। টীকা থেকে গানের শেষাংশের কিছু আভাস পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে যে, নৈরাত্মা যোগিনীর অভিষঙ্গে জাতিধর্ম লুপ্ত হয়ে যায়—হীন বৃত্তিধারী তন্ত্রী হন বজ্রধর। তিব্বতি অনুবাদ থেকে বোঝা যায় যে, গানটির বিষয় তাঁত বোনা। ‘তন্ত্রী’ নামটি জাতি-বৃত্তির স্মারক। ড. নির্মল দাশের মতে ‘তন্ত্রী’ ব্যক্তিনাম নয়, জাতিবাচক নাম। সিদ্ধাচার্যদের তালিকা ‘তান্তি’ শব্দটি আছে। জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থে ‘তান্তিপা’ নামটি পাওয়া যায়।
==ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব==
সভ্যতার উষালগ্নে মানুষ ছিল অসহায়। তখন থেকেই সাহিত্যের সঙ্গে ধর্মের একটি গভীর সম্পর্ক সূচিত হয়। বিশ্বের সকল ভাষার সাহিত্যেই তাই দেখা যায়, মানবীয় অনুভূতিগুলি প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাত্মচেতনার আবরণে। প্রাচীন ভারতে বেদ, উপনিষদ্, মহাকাব্য, পুরাণ সর্বত্রই এই দৃষ্টান্ত দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন চর্যাপদও ছিল এক বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়ের সাধনসংগীত। পদগুলি রচনার ক্ষেত্রে পদকর্তারা বিশুদ্ধ সাহিত্যবোধের দ্বারা চালিত না হয়ে যে অন্যরকম সাধ্য ও সাধনপ্রণালীর কথাই বলতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যদিও তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, “যাঁহারা সাধনভজন করেন তাঁহারাই সেই কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই”, তবু প্রাচীন বাংলার ধর্মসাধনার অঙ্গ হিসেবে রচিত এই সংগীতের অর্থবোধ ব্যতীত প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সংগীত বা কাব্য ছিল সেযুগের ধর্মসাধনার অন্যতম সোপান। মঙ্গলকাব্য, নাথসাহিত্য, বৈষ্ণব পদাবলি, বাউল গান, শাক্ত পদাবলি প্রভৃতি মধ্যযুগের বিভিন্ন সাহিত্যধারাতেও এই একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। চর্যার সাহিত্যমূল্য যেমন পরিমাপযোগ্য, তেমনই এই গানগুলিতে অবলম্বিত ধর্মের গূঢ় তত্ত্বও প্রণিধানযোগ্য। আধুনিক গবেষকেরা বৌদ্ধধর্মের নানা পুথি অনুসন্ধান করে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম ও সহজ-সাধনার স্বরূপ নির্ণয়ে প্রয়াসী হয়েছেন। এই বিষয়ে বিদেশি গবেষকদের পাশাপাশি ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী ও ড. শশিভূষণ দাশগুপ্তের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. বাগচী বাংলায় ''বৌদ্ধধর্ম ও সাহিত্য'' এবং ইংরেজিতে ''স্টাডিজ ইন তন্ত্রজ'' এবং ড. দাশগুপ্ত ইংরেজিতে ''অবস্কিওর রিলিজিয়াস কাল্টস অ্যাজ ব্যাকগ্রাউন্ড অফ বেঙ্গলি লিটারেচার'' ও ''ইন্ট্রোডাকশন টু তান্ত্রিক বুদ্ধিজম'' গ্রন্থের রচয়িতা। পরবর্তীকালে সকল গবেষক এঁদের প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হয়ে সিদ্ধাচার্যদের নির্দেশিত ও অনুশীলিত ধর্মাচারের বিস্তৃত পরিচয় দিতে সমর্থ হয়েছেন।
গৌতম বুদ্ধের দেহত্যাগের পর তাঁর অনুগামীদের মধ্যে নানা মতভেদের কারণে বৌদ্ধধর্মে ভাঙন দেখা দেয়। ধর্মীয় আদর্শ পর্যালোচনার জন্য পরপর চারটি বৌদ্ধ মহাসংগীতি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রবল মতবিরোধের প্রেক্ষিতে বৌদ্ধসমাজ হীনযান ও মহাযান নামে দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রাচীনপন্থী হীনযানীদের ভাবনা তুলনামূলকভাবে কিছুটা সংকীর্ণ ছিল। তাঁরা ‘অর্হৎ’ অর্থাৎ নিজেদের মুক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। এঁদের মধ্যে পদ্ধতির ভিন্নতা অনুযায়ী শ্রাবকযান ও প্রত্যেকবুদ্ধযান নামে দুটি উপদল গড়ে ওঠে। শ্রাবকযানীরা বুদ্ধত্বলাভের দুরাশা পোষণ করতেন না, কেবল নির্ধারিত আচার-আচরণ পালন করে ধর্মের পথে পুণ্য অর্জনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। যাঁরা বুদ্ধত্বলাভের উচ্চাশা পোষণ করতেন, তাঁরা প্রত্যেকবুদ্ধযানী নামে পরিচিত ছিলেন। এঁদের নিরিখে মহাযানীদের আদর্শ ছিল অনেক উদার। তাঁরা গৌতম বুদ্ধের ন্যায় পরোপকারে জীবন উৎসর্গ করে বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভ এবং তার মধ্যে দিয়ে বুদ্ধত্ব অর্জনকেই আদর্শ বলে মনে করতেন। বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভের উপায় হল শূন্যতা ও করুণার অভিন্নতায় বোধিচিত্তের জাগরণ ঘটানো। বোধিপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে বুদ্ধত্বলাভের একমাত্র সোপান বোধিসত্ত্বাবস্থায় উন্নীত হওয়া সহজ হত। বোধিচিত্ত কী এবং কীভাবে তাকে জাগরিত করা যায়, সে আলোচনা আবশ্যক। মহাযানীদের মতে, জাগতিক কোনও বস্তুরই নিজস্ব কোনও ধর্ম বা স্বরূপ নেই। অথচ প্রত্যেকের যে প্রাতিভাসিক স্বরূপ দেখা যায়, তা অন্য কোনও স্বরূপের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং পার্থিব সকল বস্তুই প্রকৃত অস্তিত্বহীন। বস্তু সম্পর্কে এই জাতীয় জ্ঞানই শূন্যতাজ্ঞান। যখন সাধক জগৎ-সংসারে উক্ত শূন্যতাজ্ঞান এবং বিশ্বব্যাপী করুণাকে একত্র সংযুক্ত করেন, তখন যে মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটিই হল বোধিচিত্ত (“শূন্যতা করুণাভিন্নং বোধিচিত্তম্”)। সাধকের মনে বিশ্বব্যাপী করুণার উদয় ঘটলে তিনি কেবল নিজের মুক্তিপ্রয়াসী হন না, পরোপকারের মধ্যে দিয়ে জগতের সকলের মুক্তিপ্রয়াসী হয়ে ওঠেন। বস্তুত মহাযানী মতের জনপ্রিয়তার কারণ নিহিত হয়ে রয়েছে তাঁর আদর্শে, সকল জীবের মধ্যে বুদ্ধত্ব কল্পনায় এবং সদাচারী পন্থায়। বিশ্বের সকল জীবের মুক্তির জন্য এভাবে পরোপকারে আত্মোৎসর্গ করার কথা অন্য কোনও ধর্মমতে বিশেষ দেখা যায় না। মৈত্রী, করুণা, অহিংসা প্রভৃতি মানবিক সদ্বৃত্তির অনুশীলনও মহাযানকে সকলের কাছে গ্রহণীয় করে তুলেছিল। বৌদ্ধ পরিভাষায় উক্ত সদ্বৃত্তিগুলিকে বলা হয় ‘পারমিতা’। জগতের শূন্যস্বভাবে বিশ্বাস হেতু মহাযানীরা ‘শূন্যবাদী’ নামে পরিচিত হন। দার্শনিক মত বিচারের সূক্ষ্মতায় মহাযানীদের মধ্যেও দুটি উপদল ছিল। যাঁরা প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির মধ্যবর্তী পথ ধরে চলতে চাইলেন, তাঁরা ‘মধ্যমক’ শাখার অন্তর্গত ছিলেন। অন্যদিকে যাঁরা বস্তুসত্তাকে চিৎসত্তায় পরিণত করে চৈতন্যরূপী জ্ঞানের মধ্যেই সমস্ত জগৎকে ধারণ করতে চাইলেন, তাঁরা গণ্য হতেন যোগাচার শাখার দার্শনিক হিসেবে। মধ্যমক মতের প্রবর্তক নাগার্জুন। যোগাচার মতের সাধন-পথের দিকটিতে অসঙ্গ বিশেষ গুরুত্ব দিলেও এটির দার্শনিক দিকটি গড়ে ওঠে বসুবন্ধুর নেতৃত্বে। যোগাচারবাদীরা বলতেন, “সর্বং বুদ্ধিময়ং জগৎ”। এই কারণে এই মতটি ‘বিজ্ঞানবাদ’ নামেও পরিচিত ছিল।
মহাযান বৌদ্ধধর্মের যোগাচার তথা বিজ্ঞানবাদ থেকে সহজযানে এই মতের রূপান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক পদক্ষেপ। এর পিছনে বৈদিক ও পৌরাণিক হিন্দুধর্মের প্রভাব ছিল বলেই গবেষকদের ধারণা। অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্টের দ্বারা ভারতীয় সমাজে ব্রাহ্মণ্য সংস্কার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে নাস্তিক্যবাদী বৌদ্ধধর্মেও দেবদেবীদের অনুপ্রবেশ শুরু হয়। এই দুর্বলতার সুযোগে হিন্দু তন্ত্রের দেহকেন্দ্রিক যোগসাধনার প্রক্রিয়াটি যোগাচার মতে গ্রাস করে। ইতিপূর্বে যাঁরা ‘পারমিতা’ অর্থাৎ দান, শীল, ক্ষান্তি, বীর্য প্রভৃতি পরম গুণের অনুশীলনের মাধ্যমে বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভের কথা বলতেন, তন্ত্রের প্রভাবে তাঁরাই মন্ত্রশক্তির প্রয়োগে আকাঙ্ক্ষিত বোধিসত্ত্বাবস্থাকে স্থায়ী করার কথা বললেন। এভাবে মন্ত্রের সংযোগে যোগাচার মত প্রথমে ‘মন্ত্রনয়’-এ পরিণত হল, তারপর এই পথেই নানাপ্রকার তান্ত্রিক গুহ্যাচার প্রবেশ করল এই মতে। বলা বাহুল্য, ভারতের বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মসাধনার মধ্যে তন্ত্রের আচারনিষ্ঠা প্রশ্নাতীত এবং এই মত বুদ্ধিগ্রাহ্য আলোচনা অপেক্ষা অধিক প্রাধান্য দেয় কার্যকরী আচার-পদ্ধতিকেই। তন্ত্রের হাত ধরে মন্ত্র, মণ্ডল ও মুদ্রা এভাবেই ঢুকে পড়ল শীল ও সদাচার-নির্ভর বৌদ্ধধর্মে। যৌনযোগাচার-কেন্দ্রিক সাধনপদ্ধতিও বাদ গেল না। মন্ত্রনয় বা মন্ত্রযান পরিচিত হল বজ্রযান নামে। কালক্রমে বজ্রযানেও সাধনার তারতম্যে কিছু উপবিভাগ গড়ে উঠল: ক্রিয়াতন্ত্র, যোগতন্ত্র, চর্যাতন্ত্র, অনুত্তরতন্ত্র। বজ্রযানের পরবর্তী পরিণতি কালচক্রযান ও সহজযান। চর্যাপদের প্রাপ্ত পুথিতে উক্ত তিন যানের প্রভাব থাকলেও বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সহজযানী বৌদ্ধ মত। তাই এই সহজযান মতটি আলোচনা করা প্রয়োজন।
মহাযানী মতের শূন্যের ধারণাটি পূর্বেই বজ্রে পরিণত হয়েছিল। এবার বজ্র পরিণত হল ‘সহজ’-এ। ''হেবজ্রতন্ত্র'' মতে, জন্মের সঙ্গেই যা উৎপন্ন হয় তাই ‘সহজ’ (“সহজাত্যং যদুৎপন্নং সহজং তৎ প্রকীর্তিতম্।”)। দেহ হল সেই সহ-জ উপাদান, যা জীব জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই প্রাপ্ত হয়। হিন্দু তন্ত্রেও দেহের প্রাধান্য স্বীকার করে বলা হয়েছে, “যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে দেহভাণ্ডে”। মহাযান মতে, শূন্যতা ও করুণার মিলনে যে বোধিচিত্তের উদ্ভব ঘটত, সহজযানে তা হল প্রজ্ঞা ও উপায়ের সংযুক্তিতে। প্রজ্ঞা ‘প্রকৃতি’ রূপে এবং উপায় ‘পুরুষ’ রূপে বিবেচিত হল এই মতে। তন্ত্র মতে, পরমার্থ সত্য দুই রূপে প্রতিভাত—নিবৃত্তিরূপ পুরুষ বা শিব এবং প্রবৃত্তিরূপ প্রকৃতি বা শক্তি। যখন শিব ও শক্তি অর্থাৎ পুরুষ ও প্রকৃতি অদ্বয়স্বরূপে মিলিত হয় তখন পরমার্থ সত্য লাভ করা যায়। এই মিথুন বা মিলিতাবস্থাই জীবের কাম্য। কারণ এই মিলন বিশ্বের সৃষ্টিপ্রবাহের কারণ। ''হঠযোগপ্রদীপিকা'' গ্রন্থে বলা হয়েছে, কায়াসাধনায় দেহস্থ বামগা নাড়ী ঈড়া ও দক্ষিণগা নাড়ী পিঙ্গলা যথাক্রমে শক্তি ও শিবের প্রতীক। এই দুই নাড়ীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ ও অপান বায়ুকে দেহমধ্যস্থিত নাড়ী সুষুম্নার পথে চালিত করে মস্তকে স্থিত সহস্রারে প্রেরণ করতে পারলেই অদ্বয় সিদ্ধি ঘটে। এই বিশুদ্ধ দার্শনিক বিষয়টির সঙ্গে পার্থিব নরনারীর যৌনমিলনকে এক করে ফেলা হয়েছে তন্ত্রের আর-একটি অপার্থ (malicious) ধারণায়। সেটি হল, প্রতিটি নারী ও পুরুষের মধ্যে শক্তি ও শিব বিদ্যমান থাকলেও শিব-প্রাধান্যে যে-কোনও পুরুষই শিব এবং শক্তি-প্রাধান্যে নারীমাত্রেই শক্তি। অতএব শিব-শক্তির মিলন বলতে প্রাকৃত নরনারীর যৌনসংযোগকেই বোঝায়। চর্যার সাধকেরা যে সাধনসঙ্গিনী নিয়ে সাধনায় অগ্রসর হতেন, তার পিছনে তন্ত্রের এই প্ররোচনা বিপুলভাবে কাজ করেছে।
সহজযানের পরম লক্ষ্য অদ্বয় মহাসুখের উপলব্ধি। মহাসুখের অপর নাম সহজ বা সহজানন্দ। নির্বাণ ও মহাসুখ এক্ষেত্রে প্রায় অভিন্ন। তাই সহজযানী সিদ্ধাচার্যেরা তাঁদের গানে বারবার মহাসুখের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। চর্যাকার লুইপাদ চিত্তকে দৃঢ় করে মহাসুখ পরিমাণ করতে নির্দেশ দেন। ভুসুকুপাদ বলেন, তিনি মিলনলীলার মধ্যেই সহজানন্দ মহাসুখকে উপলব্ধি করেছেন। কম্বলাম্বরপাদ জানান, বাম ও দক্ষিণকে চেপে সুষুম্নার সঙ্গে মিলিয়ে দিতেই মহাসুখ মিলন। এইভাবে কাহ্নপাদ, শবরীপাদ, দারিকপাদ প্রমুখ কবিদের রচনায় মহাসুখের স্বরূপ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তাতে বোঝা যায়, মহাসুখ বা সহজানন্দ একটি অচিন্ত্যনীয় মহাসুখকর অনুভব। এই সহজসুখ উৎপন্ন হয় যে স্থানে, সেই চরমকেন্দ্রটিকে কেউ জিনপুর, কেউ বা কামরূপ, আবার কেউ অনুত্তরধাম, পারিমকুল, কিংবা জোহ্নাবাড়ি ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করেছেন। মহাসুখের লক্ষ্যে পৌঁছাতে শাস্ত্রপাঠ, জপতপ, প্রব্রজ্যা বা সন্ন্যাসগ্রহণের মতো বাহ্যানুষ্ঠান ত্যাগ করার কথাও বলে হয়েছে। প্রজ্ঞা ও উপায়ের মিলিত রূপই যুগনদ্ধ বলে কথিত। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে ও ক্ষণে ভিন্ন ভিন্ন আনন্দের উদ্ভব ঘটে। সহজ মহাসুখের অপর লক্ষণ হল শূন্যতা। সাধকের অবস্থানভেদেও শূন্যতার প্রকারভেদ আছে। কায়, বাক্ ও চিত্তের সমবায়ে জীবের সত্তাবোধ। যখন এগুলির অস্তিত্ব শূন্য হয়ে পড়ে তখনই বোধিচিত্তের সর্বশূন্যতার প্রতিষ্ঠা ঘটে। এই অবস্থাকে চর্যাকারেরা নানা ভাবে প্রতীকায়িত করেছেন। কখনও বলেছেন শূন্য প্রান্তর, কখনও বা প্রতিবেশীহীন পর্বতের টিলা। বর্ণচিহ্নরূপহীন চরম শূন্যস্বভাব এই মহাসুখ। এর সর্বরিক্ত রূপ ভুসুকুপাদের ৪৯ সংখ্যক চর্যাটিতে প্রতীকী উপস্থাপনায় উজ্জ্বল। নির্দয় বঙ্গাল দেশ লুণ্ঠন করে সেখানে। পঞ্চপাটন, ইন্দ্রের মতো বিষয়-আশয় সব বিনষ্ট হয়, সোনা-রুপো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। চর্যার মহাসুখের ধারণাকে নানা মাত্রায় দেখা সম্ভব। কখনও তা মিলনজনিত একটি সহজ আনন্দঘন অবস্থা, আবার কখনও তা সর্বশূন্যের সার্থক পরিণাম। যেহেতু বিজ্ঞানবাদ থেকেই এর সূচনা, তাই এর মধ্যে নিরালম্ব বিশুদ্ধ বিজ্ঞানকেও পাওয়া যায়। এবং এই মহাসুখবৃক্ষের ফল হল মহাকরুণা। দেহের মধ্যে চারটি অবস্থান কল্পনা করে চক্র, ক্ষণ, আনন্দ, শূন্যতা ইত্যাদি ভেদে মহাসুখের ক্রমোৎকর্ষের বিভিন্ন অভিধা কল্পনা করা হয়েছে। নিচের ছকটিতে তারই আভাস দেওয়া হল:
{| class="wikitable"
|-
| মস্তক || মহাসুখচক্র || সহজানন্দ || বিলক্ষণ || সর্বশূন্য || নৈরাত্মা || চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত
|-
| হৃদয় || ধর্মচক্র || বিরমানন্দ || বিমর্দ || মহাশূন্য || চিত্ত || গ্রাহ্য ও গ্রাহক শূন্য
|-
| কণ্ঠ || সম্ভোগচক্র || পরমানন্দ || বিপাক || অতিশূন্য || বাক্ || গ্রাহক শূন্য
|-
| নাভি || নির্মাণচক্র || প্রথমানন্দ || বিচিত্র || শূন্য || কায় || গ্রাহ্যশূন্য
|}
সাধ্য এই মহাসুখকে সাধক কীভাবে লাভ করেন অর্থাৎ চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত সাধনার পথটি কী তাও আলোচনা করা হয়েছে। চর্যার হেঁয়ালিপূর্ণ রহস্যময় ভাষা ভেদ করে যেটুকু বোঝা গিয়েছে তা হল, এই ঈড়া ও পিঙ্গলা নাড়ী যখন মুক্ত অবস্থায় থাকে তখন যাবতীয় সুখদুঃখের অনুভূতি জীবের অস্তিত্বকে মথিত করে। আর যখন পরস্পর সংযুক্ত হয় এবং মধ্যনাড়ী সুষুম্নার পথে চালিত হয়, তখন বাহ্যেন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ হয়ে অন্তর্লোক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। সাংবৃতিক বোধিচিত্ত এইভাবে পারমার্থিক বোধিচিত্তে পরিণত হওয়ার অবস্থায় পৌঁছায়। সম্পূর্ণ মননপ্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল এই সাধনপথটি কবিরা রূপকের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। এই রূপক কোথাও নৌকা বাওয়ার, কোথাও ইঁদুর মারার, কোথাও মত্ত হাতির পদ্মবন বিনষ্ট করার, আবার কোথাও তুলো ধোনা কিংবা মদ চোলাইয়ের। পুদ্গলচিত্তকে নিঃস্বভাবীকৃত করতে পারলেই জিনপুরে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। ডোম্বীপাদ তাঁর একটি পদে এই নাড়ীদ্বয় ও মধ্যপথে তাদের প্রবেশ করানোর বিষয়টি প্রতীকী আভাসে ব্যঞ্জিত করে তুলেছেন:
<poem>
:: গঙ্গা জউনা মাঝেঁ রে বহই নাঈ।
:: তঁহি বুড়িলী মাতঙ্গী পোইআ লীলেঁ পার করেই।।...
:: চন্দ সূজ্জ দুই চকা সিঠি সংহার পুলিন্দা।
:: বাম দাহিন দুই মাগ ন রেবই বাহতু ছন্দা।।
</poem>
এমন বহু পদেই কায়াসাধনার তত্ত্বটি সুন্দরভাবে প্রকাশিত। কাহ্নপাদের একটি পদে কাপালিক যোগীর সাধনায় দেহপ্রাধান্য সরাসরি উচ্চারিত: “দেহ নঅরী বিহরই একাকারেঁ”। চর্যাগীতিগুলিতে গুরুবাদের প্রসঙ্গও এসেছে। গুহ্য সাধনপ্রক্রিয়া মাত্রেই গুরুগম্য জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিশেষত তান্ত্রিক আচারে অনভিজ্ঞ বালযোগীকে দেহকেন্দ্রিক কৃত্যাদিতে সাহায্য করেন গুরু। তাই চর্যাকারেরা বলেছেন: “বাহতু কামলি সদ্গুরু পুচ্ছি”, কিংবা “সদ্গুরু বোহেঁ জিতেল ভববল”, অথবা “সদ্গুরু পাঅপএঁ জাইব পুনু জিনউরা” ইত্যাদি। কোথাও আবার গুরুর অপ্রয়োজনীতা ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে “গুরু বোব সিসা কাল”। আসলে বিশুদ্ধ তত্ত্বকথায় গুরুর ভূমিকা ন্যূনতম, কিন্তু তান্ত্রিক গুহ্যাচার পালনে গুরুই পথনির্দেশক। চর্যায় সাধকের নানা অবস্থার বর্ণনা আছে। যখন তিনি বিষয়বদ্ধ তখন একরকম, সাধনার প্রাথমিক স্তরে অন্যরকম, ক্রমশ প্রবৃত্তিনাশে তাঁর স্বভাব পরিবর্তিত, মস্তক বা উষ্ণীষকমলে যখন তাঁর চিত্তের অবস্থান তখন সে অনুভূতি ভিন্ন ধরনের, আবার সহজানন্দ লাভের পর সিদ্ধ সাধকের অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। প্রতিটি স্তরে সাধক এক-একজন শক্তি বা সাধনসঙ্গিনীর অস্তিত্ব অনুভব করেন। এঁরাই সংকলিত পদগুলিতে শবরী, ডোম্বী, চণ্ডালী, যোগিনী, নৈরামণি ইত্যাদি নামে খ্যাত। সম্ভোগচক্রের নৈরামণি মহাসুখচক্রে উন্নীত হয়ে সহজসুন্দরীতে পরিণত হন। এইভাবে প্রেমের রূপকে সাধনকথা পরিবেশিত হয়েছে এখানে। বস্তুত এই পথ ধরেই সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের অবশ্যম্ভাবী পতনের বীজও অঙ্কুরিত হয়েছিল। মূলত ব্যভিচারের কারণে বৃহত্তর সমাজ সেই আমলে এদের বর্জন করতে চেয়েছিল। তুর্কি আক্রমণের পর মুণ্ডিতমস্তক বৌদ্ধ সহজিয়ারা ‘নেড়া-নেড়ী’ নামে অভিহিত হয়ে সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিনযাপন করতে থাকেন। পরবর্তীকালে নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্র এঁদের বৈষ্ণবধর্মের দীক্ষিত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। বীরভদ্রের বৈষ্ণব সাধনায় কিছুটা সহজিয়া প্রভাব পড়েছিল বলে গবেষকদের ধারণা।
==ভাষা==
চর্যাপদের ভাষাপ্রসঙ্গটি বিতর্কিত। বিশেষত চর্যাপদ কোন ভাষায় রচিত তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্পাদিত গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পরই। উক্ত বইটি ছিল চারটি পুথির সংকলন: মুনিদত্তের সংস্কৃত টীকা সহ চর্যাপদের পুথি, সরহপাদ ও কাহ্নপাদের ''দোহাকোষ'' পুথিদ্বয় এবং ''ডাকার্ণব''। শাস্ত্রী মহাশয় চারটি পুথিই হাজার বছরের পুরোনো বাংলা ভাষার লেখা বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু এই মত সবাই মেনে নেননি। বিতর্কের সূচনা সেই থেকেই। আসলে চর্যাপদ যে সময়ে রচিত হয়েছে, ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বের বিচারে সেই সময়টি নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির উদ্ভবকাল। সবে তখন অপভ্রংশের গর্ভ থেকে বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া, মগহি, অওধি, ভোজপুরি প্রভৃতি ভাষা ভূমিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। একই জঠরে বেড়ে ওঠার ফলে এগুলির মধ্যে ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক ও শব্দভাণ্ডারগত পার্থক্য খুবই কম। গবেষকদের বিভ্রান্তির কারণ সেটাই। ভাষা সাবালক হলে তার এমন কিছু নিজস্ব চিহ্ন প্রকাশিত হয়, যেগুলি ভাষার প্রভেদকারী বৈশিষ্ট্য বলে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় তা ঘটার আগেই চর্যাপদ রচিত হয়েছে, ফলে সংশয়ের জাল সহজেই বিস্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ১৯২০ সালে ভাষাতাত্ত্বিক বিজয়চন্দ্র মজুমদার ''বঙ্গবাণী'' মাসিক পত্রিকায় কয়েকটি প্রবন্ধে এবং ''হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল ল্যাংগুয়েজ'' গ্রন্থে বলেন যে, চর্যাগীতিগুলি পুরনো বাংলা ভাষায় রচিত হয়নি, এতে দু-চারটি বাংলা, ওড়িয়া ও অসমিয়া পদ থাকলেও মূল ভাষাছাঁদ হিন্দির। ১৯২১ সালে জার্মান ভাষাতত্ত্ববিদ হারমান জেকবি তাঁর সম্পাদিত ''সনৎকুমারচিতম্'' গ্রন্থের ভূমিকায় চর্যাপদের ভাষাকে “All Bengalishch” বা প্রত্ন-বাংলা বলে নির্দেশ করেন, কিন্তু কোনও খাঁটি যুক্তি তিনি দিতে পারেননি। ১৯২৬ সালে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত ''দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ'' গবেষণাগ্রন্থে চর্যাগীতির ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ, ছন্দ, বাগ্বিধি ইত্যাদি বিচার করে প্রথম একটি সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। তিনি স্পষ্ট জানালেন যে, ''দোহাকোষ'' দুটির ও ''ডাকার্ণব'' পুথির ভাষা শৌরসেনী অপভ্রংশ, কিন্তু চর্যাগানের ভাষা আদিতম বাংলা। অবশ্য এই বাংলায় কিছু পশ্চিমা অপভ্রংশ এবং দু-চারটি ওড়িয়া-মৈথিলী শব্দ মিশে আছে। তাঁর তীক্ষ্ণ, শক্তিশালী ও বাস্তবসিদ্ধ যুক্তিগুলি মেনে নিতে কোনও অসুবিধাই হল না। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও তাঁর ''Les Chants Mystique de Saraha et de Kanha'' গবেষণাগ্রন্থে সুনীতিকুমারের মতটি মেনে নেন।
অন্যান্য ভাষার গবেষকেরাও অবশ্য চর্যাপদ তাঁদের ভাষায় রচিত বলে দাবি করেছিলেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন, জয়কান্ত মিশ্র ও কাশীপ্রসাদ জয়সওয়াল বলেন, চর্যাপদের ভাষা বিহারি এবং সিদ্ধাচার্যদের অধিকাংশই মগধ অঞ্চলের বাসিন্দা। ১৯৩৫ সালে বরোদায় অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সের সপ্তম অধিবেশনে উক্ত তিন হিন্দিভাষী পণ্ডিত চর্যাপদের উপর বাংলা ভাষার দাবিকে অস্বীকার করেন। চর্যায় ‘জো’, ‘সো’, ‘তো’, ‘মই’ প্রভৃতি সর্বনাম, ‘অইসন’, ‘জইসন’, ‘ঐছে’, ‘তৈছে’, ‘জিস’, ‘তিস’, ‘জসু’, ‘তসু’ প্রভৃতি সর্বনামীয় ক্রিয়াবিশেষণ, ‘রাতি পোহাইলী’-র ন্যায় ক্রিয়াপদের স্ত্রীলিঙ্গীকরণে হিন্দি ও মৈথিলীর বিশেষত্ব আছে ঠিকই, কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও দেখার যে এই দুই ভাষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ‘-ক’, ‘-কো’ বিভক্তি যোগে ষষ্ঠীর পদগঠন এবং ‘-অল’, ‘-অব’ বিভক্তি যোগে যথাক্রমে অতীত ও ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ গঠনের দৃষ্টান্ত চর্যাপদে নেই। ভাষাগত সাদৃশ্যের কারণে ওড়িয়া ও অসমিয়া ভাষার দাবিও চর্যাপদের উপর আছে। যেমন, ওড়িয়াতে সংস্কৃত প্রভাবজাত বর্তমান কালবাচক ক্রিয়াপদে ‘-অন্তি’ বিভক্তির ব্যবহার চর্যায় দেখা যায়: “নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী” কিংবা “ভনন্তি মহিণ্ডা”। কিন্তু এটাও লক্ষণীয় যে, ‘-রু’ দিয়ে অপাদানের পদগঠন, সর্বত্র ‘-র’ বিভক্তি দ্বারা ষষ্ঠীর পদগঠন, ‘-মানে’ পরসর্গ যোগে বহুবচনের পদনির্মাণ, যা ওড়িয়া ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ, তার একটি দৃষ্টান্তও চর্যাগানে পাওয়া যায় না। অসমিয়া ভাষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দু-একটি ক্ষেত্রে অসমিয়া ভাষার ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য দেখা গেলেও কয়েকটি বিশিষ্ট ও প্রধান ক্ষেত্রে চর্যাগীতির বাক্যগঠন রীতি অসমিয়া ভাষার তুলনায় পৃথক। চর্যার ভাষায় শৌরসেনী অপভ্রংশের লক্ষণ ও শব্দের ব্যবহারও স্বাভাবিক। কারণ, মাগধী প্রাকৃত থেকে জাত মাগধী অপভ্রংশ প্রাত্যহিক ব্যবহারে প্রচলিত থাকলেও শিষ্ট সাহিত্যের ভাষা হিসেবে অষ্টম-নবম শতকে ব্যবহৃত হত শৌরসেনী অপভ্রংশ। চর্যাকারেরা যে যুগের মানুষ ছিলেন সেই যুগের বাংলার ভৌগোলিক সীমা আজকের তুলনায় অনেক বেশি প্রসারিত ছিল। সেযুগের বাংলা-বিহারের বৌদ্ধ সংঘগুলিতে ভারতের নানা প্রান্তের মানুষ একত্র হতেন শিক্ষা ও ধর্মলাভের উদ্দেশ্যে। ভাষা হিসেবে শৌরসেনী অপভ্রংশের গ্রহণযোগ্যতা সেযুগে ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু চর্যাপদে বাংলা ভাষার লক্ষণ, যা ত্রিস্তরীয় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেও আধুনিক যুগেও সমানভাবে উপস্থিত, তা এমনভাবে সেঁটে রয়েছে যে তার পরিমাণগত প্রাচুর্যে একে অবশ্যই প্রাচীন বাংলা ভাষা বলে চিহ্নিত করা যায়। বিশিষ্ট গবেষকদের আলোচনার সারাৎসারটুকু উপস্থিত করে বাংলার এই বিশিষ্ট লক্ষণগুলিকে বুঝে নেওয়া যেতে পারে:
; (ক) ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
# সংস্কৃত বর্ণমালা থেকে ঈ, ঊ, ঋ, ৯ প্রভৃতি বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় এলেও বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনির উচ্চারণে হ্রস্ব-দীর্ঘ পার্থক্য রক্ষিত হয় না। চর্যার বানানেও এই বিশেষ লক্ষণটি দেখা যায়। যেমন, চিএ, চিঅ; হোহী, হোহি; লুই, লূই; বোহী, বোহি ইত্যাদি।
# স্বরবর্ণের মতো ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ষেত্রেও দেখা যায় স্বতন্ত্র ধ্বনিজ্ঞাপক চিহ্ন থাকলেও বাংলায় সেগুলির উচ্চারণে বিশেষ পার্থক্য নেই। জ-য, ণ-ন, শ-ষ-স ইত্যাদি ক্ষেত্রে উচ্চারণে কোনও পার্থক্য দেখা যায় না। চর্যাতেও স্বভাবতই এইসব বর্ণের লিপি-বিপর্যয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেমন, জোইনি, যোইনী; যাই, জাই; নাবী, ণাবী; শবর, সবর; শূন, সূণ; ষিআলা, শিয়ালী ইত্যাদি।
# অর্থপার্থক্য সৃষ্টি কিংবা বিশেষ কোনও আবেগ প্রকাশের জন্য বাংলায় ব্যঞ্জনধ্বনির দ্বিত্ব উচ্চারণ করা হয়। চর্যার ভাষায় তার ছাপ সুস্পষ্ট। যেমন, ফাড্ডিঅ, নিঅড্ডী, চ্ছাড়ী ইত্যাদি।
; (খ) রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
# বাংলা ভাষার সমস্ত কারকে ‘-এ’ বিভক্তির প্রয়োগ লক্ষিত হয়। চর্যার ভাষাতেও ‘-এ’ বা ‘-এঁ’ বিভক্তির এইরকম প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন, কর্তৃকারকে—কুম্ভীরে খাঅ; কর্মকারকে—গঅবরেঁ তোলিআ; করণকারকে—কুঠারে ছিজঅ; সম্প্রদান কারকে—ধামার্থে চাটিল; অপাদান কারকে—জামে কাম কি কামে জাম; অধিকরণ কারকে—ঘরে সান্ধঅ।
# আধুনিক বাংলায় যেমন কর্ম-কর্তৃ বাচ্য গঠন করা হয়ে থাকে, চর্যাতেও অবিকল তারই প্রতিরূপ দেখা যায়। যেমন, নানা তরুবর মৌলিল রে, ডমরু বাজএ বীরনাদে।
# বাংলা ভাষার বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ চর্যাতেও বিভিন্ন কারকে দেখা যায়। যেমন, তৃতীয়াতে ‘-তেঁ’ বিভক্তি (সুখ দুখেতেঁ নিচিত মরিঅই); চতুর্থীতে ‘-রেঁ’ বিভক্তি (সো করউ রস রসানেরে কংখা); ষষ্ঠীতে ‘-র’/‘এর’ বিভক্তি (সাঙ্কমত চড়িলে; দুধিল দুধ কি বেণ্টে ধামায়) ইত্যাদি।
# বাংলার নিজস্ব কিছু অনুসর্গ (মাঝে, অন্তরে, সঙ্গে ইত্যাদি) আছে। চর্যায় এগুলির প্রয়োগও অপ্রতুল নয়। যেমন, কোড়ি মাঝেঁ একু; তোহার অন্তরে; দুজ্জন সাঙ্গে অবসরি জাই ইত্যাদি।
# স্বাধীন অব্যয় রূপে উপসর্গের প্রয়োগেও বাংলার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। উপসর্গগুলি অব্যয় হিসেবে বিশেষ্যের পূর্বে বসে বিচিত্র অর্থপ্রকাশে সাহায্য করে। চর্যাপদেও এই লক্ষণ দৃশ্যমান। যেমন, <u>নি</u>সারা, <u>বি</u>আলী, <u>স</u>চ্চড়ে, <u>বি</u>মনা ইত্যাদি।
# আধুনিক বাংলায় ‘সে’ শব্দটি মুখ্যত সর্বনাম হিসেবে, আবার কখনও বা বাক্যালংকার অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্য ভাষায় শব্দটি বসে বিশেষণ ও সর্বনাম হিসেবেই। বাক্যকে অলংকৃত করার উদ্দেশ্যে বাংলা ছাড়া আর কোথাও ‘সে’ বসে না। চর্যায় ‘সে’ ও একই অর্থে ‘সো’-এর ব্যবহার দেখা যায় যত্রতত্র। যেমন, এক সে শুণ্ডিনী, এক সো পদুমা, গুরু বোস সে সীসা কাল ইত্যাদি।
; (গ) ক্রিয়াপদের বৈশিষ্ট্য
# বিভিন্ন ক্রিয়ার কাল গঠনে ধাতুরূপে বিশিষ্ট বিভক্তির প্রয়োগ করা হয় বাংলায়। পুরুষ ও বচন ভেদেও তা পৃথক। ভবিষৎকালে ‘-ইব’ বিভক্তি প্রযুক্ত হয় উত্তম পুরুষে, অতীতকালে প্রথম পুরুষে বসে ‘-ইল’ বিভক্তি এবং অসমাপিকায় ‘-ইয়া’ বা ‘-ইলে’ ইত্যাদি প্রযুক্ত হয়। এইসব লক্ষণ চর্যার ভাষাতেও পাওয়া যায়। যেমন, জই তুম্হে লোঅ হে হেইব পারগামী; কাহ্নু কহি গই করিব নিবাস; কানেট চৌরি নিল অধরাতি; সসুরা নিদ গেল; মাঅ মারিআ কাহ্ন ভইঅ কবালী; সাঙ্কমত চড়িলে ইত্যাদি।
# বাংলা ক্রিয়াপদের অপর বিশেষত্ব হল যৌগিক বা সংযোগমূলক ক্রিয়াপদ গঠন। দুভাবে এই পদ গঠিত হয়। অসমাপিকার সঙ্গে সমাপিকার সংযোগে অথবা বিশেষ্য বা বিশেষণ পদের সঙ্গে সমাপিকার সংযোগে। কেউ কেউ এই জাতীয় ক্রিয়াপদকে বাংলা ভাষার দুর্বলতা বলেও নির্দেশ করেছেন। চর্যাপদেও আছে—গুণিআ লেহুঁ; টুটি গেল, ধরণ ন জাই; নিদ গেল; কহন ন জাই; ভান্তি ন বাসসি; ছই ছোই যাই ইত্যাদি।
# বাংলা ভাষায় বিশিষ্ট ভঙ্গির জন্ম হয়েছে বাক্যে ক্রিয়াপদের বাহ্যিক অনুপস্থিতি থেকে। এই লক্ষণ বাংলা গদ্যের সূচনাতেই লক্ষ্য করা যায়। চর্যাপদের ভাষাতেও এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, কায়া তরুবর পঞ্চ বি ডাল; ছড়গই সঅল সহাবে সুধ; গন্ধ পরস রস জইসো তইসো।
# বাংলার বিভিন্ন বাগ্বিধির ব্যবহারেও চর্যাপদের ভাষা সহজে অলংকৃত। এইসব বিশিষ্টার্থক বাক্যরীতি পরে কালবাহিত হয়ে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। যেমন, আপনা মাংসে হরিণা বৈরী, হাথেরে কাঙ্কন মা লেউ দাপন, ভান্তি ন বাসসি জাংতে, তু লো ডোম্বী হাঁউ কপালী, বর-সুণ গোহালী কিমো দুঠ বলন্দেঁ ইত্যাদি।
এইসব বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, “The language of the charyas is the genuine vernacular of Bengal at its basis.” চর্যাপদের উপর অন্যান্য ভাষার দাবি নিরপেক্ষভাবে বিচার করে এটুকুই বলা যায় যে, চর্যাগীতিতে বিক্ষিপ্তভাবে ওড়িয়া, অসমিয়া, হিন্দি ও মৈথিলী শব্দ ছড়িয়ে থাকলেও এর মূল প্রকাশ্য ছাঁদটিই ছিল মাগধী অপভ্রংশের গুটি কেটে বেরিয়ে আসা সদ্যোজাত বাংলা ভাষার। তখনও তার পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত না হলেও তার নিজস্বতার অস্ফুট চিহ্নগুলি চর্যাপদের শারীরিক গড়নে ঠিকই ধরা পড়ে।
===সন্ধ্যাভাষা===
চর্যাপদের ভাষার আরও একটি দিক রয়েছে। ভাষা ভাবপ্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলেও সব ভাষা একইভাবে সংযোগ স্থাপন করে না। যে ভাষা ইঙ্গিতপ্রধান তার চালচলন আলাদা, আবার যে ভাষা ধ্বনিনির্ভর ও বাচ্যার্থপ্রধান তার আবেদন ভিন্ন প্রকার। ভাষাতাত্ত্বিকেরা ভাষার দেহময় রূপের কথাও বলেছেন, আবার প্রায়-ভাষার (para-language) কথাও বলেছেন। চর্যাপদের ভাষা-সংক্রান্ত আলোচনায় এইসব ভাবনা এই কারণেই প্রাসঙ্গিক যে, এখানে কোনও বক্তব্য স্পষ্টভাবে উপস্থিত করার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত জটিল পথ অবলম্বন করা হয়েছে। ফলে চর্যাকার ও পাঠকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে একটি প্রাচীর। এটা বোধহয় চর্যাকারদের অভিপ্রায়সিদ্ধ ধরন। কারণ, তাঁরাও কোনও কারণে চাইতেন এইসব গানে পরিবেশিত তত্ত্ব ও তথ্য অল্পসংখ্যক লোকের কাছেই পৌঁছাক। ঢেণ্ঢণপাদ যেমন বলেন, “ঢেণ্ডনপাএর গীত বিরলে বুঝঅ”। কুক্কুরীপাদও তাঁর চর্যার ভণিতার শেষ চরণে স্বীকার করেছেন যে, কোটির মধ্যে গুটিকতক লোকই তাঁর বক্তব্য বুঝবেন: “কোড়ি মাঝেঁ একু হিঅহিঁ সমাইউ”। এইভাবে মুষ্টিমেয় পাঠক নির্বাচনের কারণ অনুসন্ধান করতে হলে চর্যাপদের নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্যময় আচারের দিকে দৃষ্টি দিতে হয়। তন্ত্রও এমনই ‘শাম্ভবী বিদ্যা’, যা ‘গোপ্যা কুলবধূরিব’। সহজযানীরা তন্ত্রের কায়াসাধনাকে প্রাধান্য দেওয়ায় সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁদের সাধনতত্ত্বটিকে। কেবল দীক্ষিত ব্যক্তিদের কাছেই তাঁরা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সেই সাধনার প্রণালী ও অধ্যাত্মচেতনার প্রকৃত রহস্যকে। তাই তাঁরা এমন একপ্রকার সাংকেতিক ভাষা অবলম্বন করেছিলেন, যে ভাষার সংকেত শুধু সংশ্লিষ্ট ধর্মের সাধকেরাই বুঝবেন, অন্যরা নয়। এই সংকেতপূর্ণ ভাষার তাঁর অন্য নামও দিয়েছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই ভাষার নাম ‘সন্ধ্যাভাষা’। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভূমিকায় সন্ধ্যাভাষার উল্লেখ করে এই ভাষার প্রকৃতি সম্পর্কে লিখেছিলেন, “আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না।” ফারসি গবেষক ইউজিন বুর্নফ ''সদ্ধর্ম্পুণ্ডরীকসূত্র'' গ্রন্থের অনুবাদের ভূমিকায় সন্ধ্যাভাষাকে বলেছেন “Language Enigmatique” বা প্রহেলিকাময় ভাষা। আসলে রহস্যময় হেঁয়ালির ভাষাতে তত্ত্বপ্রকাশের রীতি খুবই প্রাচীন। বেদ-উপনিষদেও স্থানে স্থানে হেঁয়ালি ব্যবহার করা হয়েছে। গোপনীয়তার কারণে এবং গুহ্য তত্ত্ব বহন করার জন্য এই ভাষাকে এইচ. কার্ন মন্ত্রের সগোত্র বলে মনে করেছেন। অবশ্য প্রকৃতি অনুসারে সন্ধ্যাভাষাকে ঠিক মন্ত্র বলা চলে না। কারণ অলৌকিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা এই ভাষার আছে, এমন দাবি কোথাও করা হয়নি।
চর্যার আভিপ্রায়িক সাংকেতিক বচনের নাম সন্ধ্যাভাষা। এর উল্লেখ প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যায়। শব্দটির বানান, ব্যুৎপত্তি ও অর্থ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। মহাযানী ধর্মগ্রন্থে ও সেগুলির ভাষ্যে সর্বত্র ‘সন্ধ্যা’ বানানই দেখা যায়। কিন্তু বিধুশেখর শাস্ত্রী এই বানানকে লিপিকরের প্রমাদ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, যথার্থ বানানটি হল ‘সন্ধা’। ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, চর্যাপদের ভাষার মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন অর্থ রয়ে গিয়েছে। সেই লুক্কায়িত তাৎপর্যই আভিপ্রায়িক বচন (Intentional language)। এটি শব্দের বাচ্যার্থ থেকে পৃথক। তাঁর কথায়, “Abhiprayika means that it is intended to imply or suggest something different from what is expressed by the words.” অর্থাৎ এই ভাষাতে রয়েছে কোনও নিগূঢ় ব্যঞ্জনা বা ভিন্ন অর্থের অভিসন্ধি। যে শব্দের মূল ব্যুৎপত্তি ছিল ‘সম্-ধৈ+আ’, সেটি বিধুশেখরের ভাষ্যে পরিবর্তিত হয়ে হল ‘সম্-✓ধা+ঙ’। এই মত সমর্থন করেন ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীও। এঁদের দুজনেরই মতে, সন্ধ্যাভাষা অবশ্যই সাংকেতিক ভাষা, যা শব্দগুলির নিজস্ব আভিধানিক অর্থ পরিহার করে ভিন্নতর অর্থের ব্যঞ্জনা এনে দেয় এবং সেই অর্থ কোটির মধ্যে গুটিকতকের হৃদয়েই প্রবেশ করে। চর্যায় গুরুর ভূমিকা এখানেই। তিনি সেই শ্লিষ্ট অর্থটি শিষ্যের কাছে পরিস্ফুট করে তোলেন।
বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীর বক্তব্য কিছুটা সঠিক হলেও সমস্যা অন্যত্র। তাঁরা বলেছেন, লিপিকরের প্রমাদে ‘সন্ধা’ শব্দটি ‘সন্ধ্যা’ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রাচীন পুথিগুলি লক্ষ্য করলে প্রায় সর্বত্রই ‘সন্ধ্যা’ বানানই পাওয়া যায়। একটি বিশেষ বানানে সমস্ত লিপিকর প্রমাদগ্রস্থ হবেন, এটা নিতান্তই কষ্ট-কল্পনা। তাছাড়া মুনিদত্ত তাঁর টীকায় বারবার 'সন্ধ্যাবচন’-এর কথা বলেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রাকৃতিক সন্ধ্যার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অর্থের ক্ষেত্রে যে আলো-আঁধারি প্রেক্ষাপটের কথা বলেছেন, তার গুরুত্ব এখানেই। শ্লিষ্ট শব্দে একটি জানা অর্থ বা বাচ্যার্থ সংযুক্ত থাকে, অন্যটি হয় লক্ষণার্থ বা ব্যঞ্জনার্থ। হয়তো সিদ্ধাচার্যগণ তাঁদের ব্যবহৃত ভাষার এই দ্বিবিধ স্বভাব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং সেই তাৎপর্যে ‘সন্ধ্যা’ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কেউ কেউ ‘সম্-✓ধা+আ’ থেকে নিষ্পন্ন শব্দটির “সম্যক ধ্যায়তে অস্যাম্ ধ্যায়তে ইতি সন্ধ্যা” সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। অর্থাৎ, যে অর্থ অনুধ্যান করে বুঝতে হয়, তাই-ই সন্ধ্যা। এটিও সত্য হতে পারে। তবে সাহিত্যিক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে অর্ধকল্পিত এক সন্ধি অঞ্চলের (আর্যাবর্ত ও পূর্ব ভারতের সন্ধিস্থল বীরভূম-সাঁওতাল পরগনার পশ্চিমাঞ্চল) ভাষা বলে সন্ধ্যাভাষাকে নির্দেশ করেছেন, তার পিছনে কোনও বলিষ্ঠ যুক্তি নেই।
চর্যাগানে সন্ধ্যাভাষার প্রয়োগকৌশল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সব গানেই যে আগাগোড়া এই হেঁয়ালিপূর্ণ আভিপ্রায়িক বচন ব্যবহার করা হয়েছে তা নয়। কয়েকটি গান আদ্যোপান্ত সন্ধ্যা শব্দে রচিত। যেমন, ২ ও ৩৩ সংখ্যক চর্যা। আবার কয়েকটি গানের অংশবিশেষ সন্ধ্যাভাষিত, কোনও বিচ্ছিন্ন শব্দ হয়তো সন্ধ্যা অর্থে প্রযুক্ত। আবার এমন গানও দুর্লভ নয়, যেখানে সন্ধ্যাশব্দের ব্যবহার একেবারেই নেই। যেমন, ৪০ ও ৪২ সংখ্যক চর্যা। নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, যে সমস্ত গানে দার্শনিকতার বাহুল্য, সেখানে সন্ধ্যাভাষা তেমন প্রযুক্ত হয়নি। কিন্তু তান্ত্রিক কৃত্যের নির্দেশ সমৃদ্ধ পদগুলিতে সন্ধ্যাবচনের বাহুল্য লক্ষিত হয়। হয়তো আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর বা কুরুচিপূর্ণ কয়েকটি বিষয় গোপন করার জন্যই সন্ধ্যাভাষার আড়াল খুঁজেছিলেন চর্যাকারেরা। মুনিদত্তের টীকা রচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই লুকানো অর্থটিকে পরিস্ফুট করা। তাই তিনি বারবার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ‘সন্ধ্যাভাষয়া’, সন্ধ্যাবচনেন’, ‘সন্ধ্যাসংকেতম্’, ‘সন্ধ্যাজ্ঞানেন’, ‘সন্ধ্যয়া’ ইত্যাদি বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন। মধ্যযুগের সন্তসাধকদের গানেও ভাষার এই হেঁয়ালিপূর্ণ ভাব লক্ষ্য করা যায়। আসলে সিদ্ধাচার্য কিংবা সন্তসাধক সকলেই ছিলেন বাক্পথাতীত এক অ-কথনবেদ্য ভাবানুভূতির শরিক। তাঁর কথা বলেছেন রূপক-প্রতীকের ঘেরাটোপে। মরমিয়া সাধক মাত্রেরই স্বভাবধর্ম এই। এঁদের সম্পর্কে সেন্ট মার্টিন যথার্থ বলেছেন, “All mystics speak the same language for they come from the same country.” সন্ধ্যাভাষা এই বিশেষ ‘দেশ’-এরই ভাষা। স্বসংবেদ্য, অচিন্ত্য তত্ত্বের রূপময়তা ফুটিয়ে তোলার জন্য রূপক-প্রতীকের আয়োজন, তেমনই মহাসুখের স্বরূপ, মহাসুখ লাভের পথ, লাভের পর যোগীর মানসিক অবস্থা, পারমার্থিক ও সাংবৃতিক বোধিচিত্তের প্রকৃতি ইত্যাদি বর্ণনা করতে গিয়ে প্রায় প্রতি পদে সন্ধ্যাভাষার আশ্রয় নিয়েছেন চর্যাকারেরা। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী তাঁর ''চর্যাগীতির ভূমিকা'' গ্রন্থে চর্যায় ব্যবহৃত শব্দগুলির উৎসগত শ্রেণিবিন্যাস করে একটি সামগ্রিক পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতে দেখা যায়, জিনপুর, মাঙ্গ, নিবান, দশবল, তিশরণ, তথাগত ইত্যাদি শব্দগুলি প্রাচীন বৌদ্ধশাস্ত্র থেকে সংগৃহীত। আবার চন্দ্রসূর্য, দশমী দুয়ার, অণহা, বিণানা, তথতা, গগণ, কমলকুলিশ, ধমনচমন, কামরু, জোইনি, আলিকালি ইত্যাদি শব্দ গৃহীত হয়েছে হিন্দু যোগতন্ত্র এবং বৌদ্ধ মহাযানের অন্তর্গত মধ্যমক দর্শন, যোগাচার, বজ্রযান ইত্যাদি থেকে। এছাড়া চর্যাগানের ব্যবহৃত শুণ্ডিনী, বিআলী, সাঙ্কম, কোঞ্জাতালা, রূপা, খুণ্টি, কাচ্ছি, কেড়ুয়াল, তান্তি, ঠাকুর, কণ্ঠ কমলিনী, সবরসবরী, বঙ্গাল, গুঞ্জামালী ইত্যাদি কিছু পরিচিত শব্দ নেওয়া হয়েছে পরিচিত গৃহস্থালি ও লোকজীবনের প্রেক্ষাপট থেকে। বলা বাহুল্য, এইসব শব্দপ্রয়োগের ফলে চর্যাপদ সকল শ্রেণির পাঠকের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠেনি। তবে তাতে একদিকে যেমন নিজেদের আচরিত কায়াসাধনার গুহ্য রহস্যকে অতি সহজে ঢাকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তেমনই অন্যদিকে প্রাচীন বাঙালির কাব্যসৃষ্টির অভূতপূর্ব ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। মুনিদত্তের টীকাটি পাওয়া না গেলে গানগুলির অর্থোদ্ধারের জন্য পরবর্তীকালের গবেষকদের যে অন্ধকারে হাতড়ে ফিরতে হত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
lr3pzujdcis6hl63nziksbyndd0gpms
85574
85573
2025-07-02T17:14:03Z
Jonoikobangali
676
/* সন্ধ্যাভাষা */
85574
wikitext
text/x-wiki
বিশ শতকের গোড়ায় চর্যাপদের আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চর্যাপদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্রাচীন বাংলার এক অমূল্য লুপ্ত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কৃতিত্ব প্রাচ্যবিদ্যার বিশিষ্ট গবেষক মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর। কিন্তু তাঁর ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' পুথি আবিষ্কারের পিছনে বাঙালির প্রাচীন সংস্কৃতি চর্চার একটি ইতিহাস আছে। উনিশ শতকে বাংলায় যে নবজাগরণ ঘটেছিল, তার অন্যতম বৈশিষ্ট্যই ছিল দেশের অতীত ইতিহাসের ভাবসম্পদ পুনরুদ্ধার ও তার নবমূল্যায়ন। এর সূচনা ঘটেছিল ১৭৮৪ সালে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। প্রথম দিকে কেবল ইউরোপীয় গবেষকেরাই প্রাচীন ভারতের লুপ্ত সম্পদ উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। যেমন, বি. এইচ. হজসন ও ড্যানিয়েল রাইট উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নেপাল থেকে কিছু প্রাচীন পুথি উদ্ধার করে ইউরোপের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেরণ করেন, যার ফলে ইউরোপীয় গবেষকেরা ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চায় উৎসাহী হয়ে উঠতে শুরু করেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালি গবেষকেরাও এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গবেষক রাজেন্দ্রলাল মিত্র নেপালে গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় রচিত কিছু পুথি উদ্ধার করে আনেন এবং ''দ্য সংস্কৃত বুদ্ধিস্ট লিটারেচার ইন নেপাল'' (১৮৮২) শীর্ষক পুস্তিকায় সেগুলির নাম প্রকাশ করেন। ১৮৯২ সালে শরৎচন্দ্র দাসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বুদ্ধিস্ট টেক্সট সোসাইটি। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর প্রাচীন পুথি উদ্ধারের ভার গ্রহণ করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। ১৮৯৭ ও ১৮৯৮ সালে নেপালে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম-বিষয়ক কয়েকটি সংস্কৃত পুথি তিনি কলকাতায় নিয়ে আসেন। এরপর ১৯০৭ সালে তৃতীয়বার নেপাল যাত্রা করে তিনি নেপালের রাজদরবারের পুথিশালা থেকে আবিষ্কার করেন চর্যাপদের প্রাচীন পুথি ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'', সরহপাদের ''দোহাকোষ'' ও কাহ্নপাদের ''দোহাকোষ''। এই তিনটি পুথির সঙ্গে পূর্বাবিষ্কৃত ''ডাকার্ণব'' পুথিটিকে যুক্ত করে শাস্ত্রী মহাশয় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ''হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা'' গ্রন্থটি। ভূমিকায় তিনি চারটি পুথির ভাষাকেই বাংলা বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ভাষাতাত্ত্বিকেরা কেবল চর্যাগীতিগুলির ভাষাকেই বাংলা বলে স্বীকৃতি দেন। সেই দিক থেকে প্রাচীনতম বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্যিক নিদর্শন হল এই চর্যাপদ।
চর্যাপদের পুথি তালপাতায় লেখা হয়েছিল। নেপাল থেকে আনা পুথি আবার রাজদরবারে ফেরত দেওয়ার আগে শাস্ত্রী মহাশয় সেটির অনেকগুলি ফোটোকপি করে নিয়েছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, তালপাতার উভয় পৃষ্ঠাতেই পদগুলি লেখা হয়েছে। প্রতি পৃষ্ঠায় আছে পাঁচটি করে টানা লাইন। মাঝখানে সামান্য একটু ফাঁক, সম্ভবত সেখানে ফুটো করে সুতো বা ওই জাতীয় কিছু পরাবার জন্য। পাতাগুলি সংখ্যাযুক্ত এবং সংখ্যাটি লিখিত পাতার শেষ পৃষ্ঠায়। এইভাবে প্রাপ্ত পুথির শেষ পাতার অঙ্ক ৬৯। কিন্তু তার পরেও যে পুথি বাকি ছিল তার প্রমাণ ওই পাতার পদটি অসমাপ্ত থেকে যাওয়ায়। শুধু শেষ পাতা নয়, মাঝের ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮ ও ৬৬ সংখ্যক পাতাগুলিও পাওয়া যায়নি। লুপ্ত পাতা বাদে প্রাপ্ত পুথিটি মোট ৬৪ পৃষ্ঠার। পুথিটিতে আরও একধরনের ক্রমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি মোট পদের সংখ্যা নির্দেশক। বলা বাহুল্য, লুপ্ত পাতার পদগুলি পাওয়া যায়নি। এই রকম অপ্রাপ্ত পদের সংখ্যা সাড়ে তিনটি। শেষ পাতার যে পদসংখ্যা পাওয়া যায় সেটি ৪৯। সেখানেই শুরু হয়েছে ৫০ সংখ্যক পদটি, যার বাকি অংশ লুপ্ত পাতার সঙ্গেই হারিয়ে গিয়েছে। মুনিদত্তের টীকার সূত্রে জানা যায়, কোনও একটি শতপদী সংকলন থেকে অর্ধেক সংখ্যক পদ নিয়ে সেটির টীকা রচনার উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অর্থাৎ চর্যার পুথিটি ছিল মোট ৫০টি পদের সংকলন। সাড়ে তিনটি পদ না পাওয়ায় প্রাপ্ত পদের সংখ্যা এখানে সাড়ে ছেচল্লিশ। অবশ্য পরবর্তীকালে এই গ্রন্থের তিব্বতি অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে। অনুবাদক ছিলেন কীর্তিচন্দ্র। সেই পুথিটি অক্ষত। তার থেকে লুপ্ত সাড়ে তিনটি পদের বিষয় ও তার ব্যাখ্যা জানা গিয়েছে।
টীকার পুথিটি সংকলনে একটি বিশেষ রীতি অবলম্বিত হয়েছে। এখানে একই সঙ্গে মূল গান ও তার টীকা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত টীকার পুথিতে মূল গান সম্পূর্ণ উদ্ধৃত হয় না। কিন্তু এখানে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। সমগ্র পদ উদ্ধৃত করে টীকাকার পরে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদগুলি বাংলা ভাষায় লেখা, টীকার ভাষা সংস্কৃত। টীকার নাম ''নির্মলগিরা টীকা''। টীকাকারের নাম মুনিদত্ত। গানগুলি একক পদকর্তার নয়, বিভিন্ন জনের রচনা। প্রত্যেকটি পদের সূচনায় রাগের উল্লেখ ও পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। তারপর দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ পদটি। সব শেষে রয়েছে তার ব্যাখ্যা বা টীকা। টীকার পরে আছে গানের ক্রমিক সংখ্যা। অবশ্য গ্রন্থসূচনার পদটিতে একটু ভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষিত হয়। প্রথমে নমস্ক্রিয়ার পর সদ্গুরু বন্দনা ও বস্তুনির্দেশ, তারপর “কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল” পদটির দ্বারা মূল চর্যাগীতির আরম্ভ। তারপর গানটির রাগের উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য ধরনের ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন, ৯ সংখ্যক পদে চর্যাকারের নাম উল্লিখিত হয়নি, যদিও গানের মাঝে ভণিতা থেকে জানা যায় এটি কাহ্নপাদের রচনা। ১০ সংখ্যক চর্যার পরে টীকাকার বা লিপিকর লিখে রেখেছেন, “লাড়ীডোম্বীপাদানাম্ সূনেত্যাদি। চর্য্যায়া ব্যাখ্যা নাস্তি।” অর্থাৎ এখানে অপেক্ষিত ব্যাখ্যাটি নেই। তাছাড়া মূল গানগুলির পাঠ ও টীকায় উদ্ধৃত অংশগুলির পাঠে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। তাই কোনও কোনও গবেষক মনে করেন, মূল গান সংকলন ও তার টীকা রচনা দুই স্বতন্ত্র ব্যক্তির কাজ। আবার কেউ কেউ অনুমান করেন, মুনিদত্তের টীকা পরে কারও দ্বারা পরিমার্জিত হয়েছিল। সেই পরবর্তী সংস্কার-কর্তাও অন্য কোনও গীতিসংগ্রহ থেকে মূল গানগুলিকে নিয়ে ব্যাখ্যার আগে সংযোজিত করে থাকতে পারেন। টীকারম্ভের প্রথম বাক্যটি রচনা এবং গানের সূচনায় কবি ও রাগরাগিণীর নামের উল্লেখ সম্ভবত এই সংস্কার-কর্তারই কাজ। পুথির পাঁচটি পাতা হারিয়ে যাওয়ায় ২৩ সংখ্যক গানের ছটি চরণ এবং ২৪, ২৫ ও ৪৮ সংখ্যক গান সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ২৩ ও ২৪ সংখ্যক গানের সম্পূর্ণ টীকা এবং ২৫ সংখ্যক গানের টীকার প্রথমাংশটিও সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে ৪৭ সংখ্যক গানের ব্যাখ্যার সামান্য অংশ হারিয়ে গিয়েছে এবং ৪৮ সংখ্যক গানের শেষ পদটির ব্যাখ্যা ছাড়া গান সহ সমগ্র টীকাটিই লুপ্ত। তিব্বতি অনুবাদটির আবিষ্কারক ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী গানগুলি সংস্কৃত ভাষায় রূপান্তরিত করেছিলেন। পরে তিব্বতি অনুবাদের ছায়া অনুসরণে ড. সুকুমার সেন লুপ্ত গানগুলির সম্ভাব্য রূপ পুনর্গঠন করে তাঁর সম্পাদিত ''চর্যাগীতি পদাবলী'' গ্রন্থে প্রকাশ করেন।
==রচনাকাল ও গ্রন্থনাম বিচার==
১৯১৬ সালে ''হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা'' গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর নানা বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। ফলে অনেক রকম বিতর্ক সৃষ্টি হয়। চর্যাগীতির ভাষা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যেমন মতান্তর ছিল, তেমনই এগুলির রচনাকাল ও প্রাপ্ত পুথির প্রকৃত নাম নিয়েও ছিল নানা সংশয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দাবি করেছিলেন, গানগুলির রচনাকাল খ্রিস্টীয় দশম শতক এবং সেই কারণেই সম্পাদিত গ্রন্থের নামে তিনি ‘হাজার বছরের পুরাণ’ এই সময়-জ্ঞাপক বিশেষণটি জুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সকলে সেই কথা নিঃসন্দিগ্ধভাবে মেনে নিতে চাননি। সামগ্রিক দৃষ্টিতে চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে দুটি প্রশ্ন ওঠে। প্রথম প্রশ্ন, চর্যার মূল গানগুলি কোন সময়ে লেখা হয়েছিল? এবং দ্বিতীয় প্রশ্ন, টীকা-সম্বলিত যে সংগ্রহটি পাওয়া গিয়েছে, সেটিই বা কোন সময়ে লেখা হয়? মুনিদত্তের টীকা অনুসারে বলা যায়, গানগুলি আগে লেখা হয়েছিল এবং পরে তার থেকে কয়েকটি গান বেছে নিয়ে সেগুলির ব্যাখ্যা রচিত হয়। তাই প্রথম প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হবে দুটি প্রশ্নের নিরিখে। প্রথমত, চর্যাকারেরা কবে আবির্ভূত হন? এবং দ্বিতীয়ত, ভাষাতত্ত্বের নিরিখে চর্যায় প্রাপ্ত ভাষার জন্ম কোন সময়ে? বিভিন্ন গবেষক এই দুই বিষয়ে কিছু আলোকপাত করেছেন।
ইতিহাস-বিস্মৃত জাতির বাস্তব ঐতিহাসিক সকল ঘটনারই লিখিত ইতিহাস পাওয়া সম্ভব নয়। এই কারণেই চর্যাপদ, চর্যাপদের কবিগণ, তাঁদের জন্ম ও মৃত্যু এবং সেই সংক্রান্ত তারিখ-যুক্ত কোনও তথ্য পাওয়া কঠিন। তাই জনশ্রুতি, কল্পকাহিনি ও লোকপরম্পরাগত ঐতিহ্য সত্যাসত্য নির্বিশেষে সেই শূন্যস্থান ভরিয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। চর্যাকারেরা নিছক কবি বা গীতিকার ছিলেন না, ছিলেন বৌদ্ধধর্মের এক বিশেষ ধারার সাধক। সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে তাঁর খ্যাত হয়েছিলেন সিদ্ধাচার্য নামে। তাঁদের নিয়ে তাই নানা অলৌকিক জনশ্রুতি ছড়িয়ে পড়েছিল। সেগুলি সংগ্রহ করে পরবর্তীকালে কিছু গ্রন্থও রচিত হয়। সুম্পাখন্পো-র ''Pag Sam Jon Zang'' ও লামা তারানাথের ''Khabad Dun Dan'' হল তিব্বতি ভাষায় লেখা এই সংক্রান্ত দুটি গ্রন্থ। ভারতেও সিদ্ধাচার্যদের নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত ছিল। ভারতে যোগী সিদ্ধসাধকদের আবির্ভাব ঘটে। নাথপন্থা ও সহজযান বৌদ্ধধর্মের মধ্যে যে তাত্ত্বিক এবং দেহসাধনা ও যোগাচারকেন্দ্রিক ক্রিয়াকাণ্ডগুলির আদান-প্রদান ঘটেছিল তার অজস্র প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। দেহসাধনা এই উভয় মতেরই ভিত্তিস্বরূপ। নাথপন্থীদের সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের নাম পাওয়া যায়। ‘চৌরাসী সিদ্ধ’ অর্থাৎ চুরাশিজন সিদ্ধাচার্যেরা মধ্যে ছিয়াত্তর জনের নাম পাওয়া যায় চতুর্দশ শতকের মৈথিল কবি জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থে। এছাড়া তন্ত্রগ্রন্থ ''কৌলজ্ঞাননির্ণয়'' এবং নাথপন্থীদের গুরুশিষ্য-পরম্পরা সম্পর্কিত গ্রন্থাদিতেও সিদ্ধাচার্যেরা কথা অল্পবিস্তর বর্ণিত হয়েছে। ড. জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী তাঁর ''চর্যাগীতির ভূমিকা'' গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, জনশ্রুতিগুলি যে সব ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রসূত নয়, তার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে এই লোকপরম্পরাগত ঐতিহ্যের মিল যথেষ্টই আছে।
চর্যাগীতির রচনাকাল বিষয়ে তিনজন বিশিষ্ট গবেষক তিনটি পৃথক মত প্রকাশ করেছেন। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ''দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ'' গ্রন্থে বিভিন্ন সম্ভাব্য যুক্তি প্রদর্শন করে মন্তব্য করেছেন, “The period 950-1200 A.D. would thus seem to be a reasonable date to give to these poems.” অর্থাৎ তাঁর মতে দশম শতকের মধ্যভাগ থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়কালে চর্যাগীতিগুলি রচিত হয়েছিল। সময় নির্ধারণে তিনি আদি সিদ্ধাচার্য লুইপাদ ও শেষ সিদ্ধাচার্য কাহ্নপাদের জীবৎকালকে প্রমাণস্বরূপ ধরেছেন। এই দুই কবির জীবনেতিহাস স্পষ্ট নয়। কিংবদন্তিই এক্ষেত্রে মুখ্য আশ্রয়। সিদ্ধাচার্যদের একটি গুরুশিষ্য-পরম্পরা ছিল। তিব্বতি ঐতিহ্যে লুইপাদ প্রথম গুরু বা আদি সিদ্ধাচার্য। মুনিদত্তের টীকাতেও লুইপাদকে সেই সম্মান জানিয়ে বলা হয়েছে “শ্রীলূয়ীচরণাদিসুদ্ধ রচিতেঽপ্যাশ্চর্য্যচর্য্যাচয়ে…” এবং তাঁর পদ দিয়েই গ্রন্থারম্ভ করা হয়েছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন যে, বাঙালি বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান লুইপাদের ''অভিসময়বিহঙ্গ'' গ্রন্থ রচনায় সাহায্য করেছিলেন। দীপঙ্কর ১০৩৮ সালে বিক্রমশীলা বিহার থেকে তিব্বতি যাত্রা করেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৫৮। সেই হিসেবে লুইপাদের আবির্ভাবকাল তাঁর মতে দশম শতকের মাঝামাঝি। অন্যদিকে ঐতিহ্য অনুসারে কাহ্নপাদ ছিলেন জালন্ধরীপাদের শিষ্য। কাহ্নপাদ রচিত ৩৬ সংখ্যক চর্যাগীতিটিতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কাহ্নপাদ চর্যাগীতি ছাড়াও আরও অনেক গ্রন্থ রচনা করেন, যেগুলির মধ্যে অন্যতম ''হেবজ্রপঞ্জিকাযোগরত্নমালা''। এই গ্রন্থটির অনুলিপির কাল জানা গিয়েছে। রাজা গোবিন্দপালের ৩৯ রাজ্যাঙ্ক অর্থাৎ ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটির অনুলিপি করা হয়। তাই সুনীতিকুমার দ্বাদশ শতককেই চর্যাগীতির সময়সীমা ধরতে চান। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই গবেষকেরা বিরুদ্ধ যুক্তি দিয়েছেন। তাঁদের মতে, দীপঙ্কর সম্পর্কে শাস্ত্রী মহাশকের উক্ত তথ্যের তেমন কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। পি. কর্ডিয়ার ''তেঙ্গুর'' গ্রন্থমালার যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে লুইপাদ ও দীপঙ্কর উভয়ের নামেই ''অভিসময়বিহঙ্গ'' গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। আসলে লুইপাদের এই গ্রন্থটি এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ রচনা, যা অন্যান্য বৌদ্ধ পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ''তেঙ্গুর'' তালিকা থেকে জানা যায় যে, কম্বলাম্বরপাদ, প্রজ্ঞারক্ষিত, সুমতিকীর্তি, প্রভাকরগুপ্ত, রত্নবজ্র, দানশীল, বিভূতিচন্দ্রের ন্যায় অসংখ্য বৌদ্ধ পণ্ডিত এই গ্রন্থটির উপর নানা সময়ে বৃত্তি, ক্রম, মঞ্জরী, টীকা ইত্যাদি রচনা করেন। দীপঙ্করের নাম এভাবেই উল্লিখিত হতে পারে। তিনি লুইপাদকে সরাসরি গ্রন্থরচনায় সাহায্য করেননি, বরং লুইপাদের গ্রন্থটির অনুবাদ করেছিলেন মাত্র। অন্যদিকে কাহ্নপাদের গ্রন্থটির অনুলিপির কাল ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দ স্থিরীকৃত হলেও অনুলিপির সময় যে লেখকের জীবৎকালের কাছাকাছি হবেই এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। ষোড়শ শতকের কোনও গ্রন্থের অনুলিপি অষ্টাদশ শতকেও হতে দেখা গিয়েছে। এইসব বিরুদ্ধ যুক্তির বলে সুনীতিকুমারের সিদ্ধান্ত অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
দ্বিতীয় মতের প্রবক্তা হিন্দিভাষী পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন। তিনি ''দোহাকোষ''-এর ভূমিকায় লিখেছেন যে, সিদ্ধাচার্যেরা আবির্ভূত হয়েছিলেন অষ্টম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে। তিনি আরও মনে করেন যে, লুইপাদ নন, আদি সিদ্ধাচার্য ছিলেন রাহুলভদ্র সরহপাদ, যিনি বৌদ্ধ আচার্য শান্তরক্ষিতের সমসাময়িক ছিলেন। শান্তরক্ষিত ভোট সম্রাট খি স্রোঙ দে চন্-এর রাজত্বকালে (৭৫৫—৭৮০ খ্রিস্টাব্দ) রাজার আহ্বানে তিব্বতে গিয়েছিলেন। আর-একটি প্রমাণ হল, সরহপাদের শিক্ষক ছিলেন নালন্দার পণ্ডিত ধর্মকীর্তি, যিনি শান্তরক্ষিতের শিষ্য এবং গৌড়াধিপতি ধর্মপালের (রাজত্বকাল ৭৭০—৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) বন্ধু। এইসব তথ্যের ভিত্তিতে সরহপাদকে অষ্টম শতকের ব্যক্তি বলে গণ্য করা চলে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, লুইপাদ ছিলেন সরহপাদের প্রশিষ্য—সরহপাদের শিষ্য শবরপাদ, তাঁর শিষ্য লুইপাদ। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী কর্তৃক ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত ''জার্নাল অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট অফ লেটারস'' (২৮শ খণ্ড) থেকে জানা যায় যে, সরহপাদের দোহাগুলি ‘বিনষ্ট-প্রণষ্ট’ (‘বিণট্ঠা-পণট্ঠা-পউ’) হতে দেখে দিবাকর চন্দ নামে এক পণ্ডিত ২২১ নেপাল সম্বৎ অর্থাৎ ১১০১ খ্রিস্টাব্দে সেগুলি একটি পুথিতে সংকলিত করেন: “সমস্তো জহালব্ধা দোহাকোসো এসো সংহহিত্ত… পণ্ডিত সিরি দিবাকর চন্দেনেত্তি। সম্বৎ ২২১ শ্রাবণ শুক্লপূর্ণমাস্যাং।” এই বিষয়টিও পরোক্ষে প্রমাণ করে যে সরহপাদ খুব প্রাচীন সময়ের কবি; নইলে দ্বাদশ শতকের সূচনাতেই তাঁর ''দোহাকোষ'' বিনষ্ট হতে পারে না।
তৃতীয় মতটি দিয়েছেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর মতে চর্যাপদ রচনার সূচনা সপ্তম শতকে। এই মতের ব্যাখ্যায় তিনি ২১ সংখ্যক গানের টীকায় মুনিদত্ত মীননাথের লেখা একটি গানের কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছেন: “কহন্তি গুরু পরমার্থের বাট।/ কর্মকূরঙ্গ সমাধিকপট।।” মীননাথ নাথগুরুদের অন্যতম এবং উদ্ধৃত অংশটি লেখা হয়েছে আদি স্তরের বাংলা ভাষায়। মীননাথই মৎস্যেন্দ্রনাথ নামে পরিচিত। ড. শহীদুল্লাহ এঁকেই লুইপাদ বলে ধরেছেন। ফারসি গবেষক সিলভ্যাঁ লেভি ''লে নেপাল'' (১ম খণ্ড) গ্রন্থে বলেছেন, মৎস্যেন্দ্রনাথ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে রাজা নরেন্দ্রদেবের রাজত্বকালে নেপালে গিয়েছিলেন। ড. শহীদুল্লাহ এই তথ্যের ভিত্তিতে চর্যাগীতির সূচনাকাল ধরেছেন সপ্তম শতককে। তবে এই মত মানতে গেলে ভাষাতাত্ত্বিকদের ভাষার বিবর্তন-সংক্রান্ত আলোচনাকে অগ্রাহ্য করতে হয়। সপ্তম শতক অপভ্রংশ ভাষারই কাল। খ্রিস্টীয় নবম শতক নাগাদ এই ভাষা থেকেই বাংলার মতো নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির উদ্ভব ঘটেছিল।
চর্যাপদের কালনির্ণয়ে গৌড়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটিও বিবেচ্য। এমনকি যে সময়ে মহাযানী বৌদ্ধধর্ম তন্ত্রের প্রভাবে মন্ত্রনয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে বজ্রযান, কালচক্রযান ও সহজযানে পরিণত হল, সেটিও আলোচনা করা কর্তব্য। সেই সঙ্গে কেউ কেউ আর-একটি বাহ্য প্রমাণ উপস্থিত করেছেন। সেটি হল প্রাচীন বাংলা সংগীত-বিষয়ক গ্রন্থের সাক্ষ্য। বিষয়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। চর্যাপদ বৌদ্ধধর্মের সাধন-সংক্রান্ত গীতিগুচ্ছ হলেও তাতে বিশুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়নি। চর্যাগীতির মূল অবলম্বন মহাযানী বৌদ্ধধর্মের এক বিশেষ বিকারগ্রস্থ রূপ। এই বিকৃতি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর চারটি বৌদ্ধসংগীতি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মতান্তর সূচিত করেন। পরিণামে বৌদ্ধসমাজ হীনযান ও মহাযান নামে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হীনযানীরা পরে সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক উপদলে বিভক্ত হয়ে যান। দার্শনিক মতভেদের কারণে মহাযানীরাও মাধ্যমিক ও যোগাচার শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই যোগাচার মতের উদ্ভব খ্রিস্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতকে। সপ্তম শতক পর্যন্ত উত্তর ভারতে বৌদ্ধ দার্শনিকদের মধ্যে মাধ্যমিক ও যোগাচার মত বিশেষ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল। এরপর অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্ট বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে বৈদিক তথা পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্যধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হলেন। শঙ্করাচার্যের অদ্বৈত বেদান্ত ও কুমারিল ভট্টের পূর্ব মীমাংসা দর্শনের চাপে বৌদ্ধধর্ম কোণঠাসা হয়ে পড়ল। অবস্থার সঙ্গে সামাল দিতে গিয়ে মহাযানী বৌদ্ধধর্মে হিন্দু পুরাণের দেবদেবীদের অনুরূপ নানা দেবদেবীর আবির্ভাব ঘটল এবং ব্রাহ্মণ্য তান্ত্রিক রহস্যাচার গ্রাস করে ফেলল যোগাচারীদের। তন্ত্রের প্রভাবে দেহসাধনা-নির্ভর বৌদ্ধধর্ম কথিত হল ‘মন্ত্রযান’ নামে, যার শেষ পরিণতি বজ্রযান, কালচক্রযান ও সহজযান। চর্যাগীতিতে এই শেষোক্ত তিনটি মতেরই ছায়া লক্ষ্য করা যায়। এসব ঘটতে কমপক্ষে এক শতাব্দীর কেটে যাওয়ার কথা। তাই বলা চলে, নবম শতকের আগে মহাযানী বৌদ্ধধর্মে এই বিকৃতি ঘটেনি। নতুন তত্ত্ব ও সেই অনুযায়ী আচার-সংস্কার গড়ে উঠলে নবদীক্ষিতদের কাছে এর রহস্যময়তা তথা গূঢ় তাৎপর্য ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন সিদ্ধাচার্যেরা। তাঁদের রচনার ভাষা আলো-আঁধারি সন্ধ্যাভাষা বা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট অভিপ্রায়কেই ব্যক্ত করার জন্য বিশেষ প্রযত্নে নির্মিত ভাষা। যৌনাচার-ভিত্তিক এই যোগসাধনপ্রণালী অন্যের কাছে প্রকাশ করতে সম্ভবত তাঁরা কুণ্ঠিত ছিলেন। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দিক থেকেও এই সময়টি ছিল বেশ অনুকূল। বাংলার সিংহাসনে তখন আসীন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল সম্রাটেরা। এই অনুকূল পরিবেশে বসে বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা অসংখ্য গ্রন্থ ও পদ রচনা করেন। তাঁদের রচিত অধিকাংশ পদের ভাষা নবসৃজ্যমান বাংলা ভাষা এবং টীকা ও ভাষ্যের মাধ্যম ছিল সংস্কৃত বা বৌদ্ধ-সংস্কৃত। অতএব সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কালে চর্যার মূল গানগুলি রচিত হয়েছিল।
এবার মুনিদত্তের টীকাগ্রন্থটির কাল অনুসন্ধান করা যাক। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটি যে বেশ পরবর্তীকালে লিখিত, তা গ্রন্থের বিষয় ও লিপির আদর্শ থেকেই স্পষ্ট। চর্যাগীতিগুলি তত্ত্বের বাহক। কিন্তু সেগুলি এমনই আভিপ্রায়িক বচনে পরিপূর্ণ যে, দীক্ষিত ব্যক্তিদের কাছেও তা দুর্বোধ্য ছিল। তত্ত্ব ও সাংকেতিকতার দুরূহতার জন্য এগুলির ব্যাখ্যার প্রয়োজন দিল। মুনিদত্তই সেই অগ্রণী বৌদ্ধ পণ্ডিত যিনি একশোটি চর্যার একটি গীতিগুচ্ছ থেকে অর্ধেক পদ নিয়ে সেগুলির ব্যাখ্যায় অগ্রসর হলেন। বিশ্বভারতী প্রকাশিত ''চর্যাগীতিকোষ'' গ্রন্থে আছে: “তত্রাহৃতানাং চ বিচারিতানাং চর্যাশতেনাহৃত গীতিকানাম্। সত্ত্বৈস্তু সংবোধি বিচারাণার্থং কোষং বুধাঃ সংরচয়াংবভূবঃ।।” মূল গানগুলি রচিত হওয়ার অনেক পরে যে মুনিদত্তের টীকা লিখিত হয়েছিল, তার প্রমাণ পুথিতে উদ্ধৃত গীতিগুলির পাঠভেদ। এই বিষয়ে ড. সত্যব্রত দেব লিখেছেন, “মূল গীতিরচনার যুগ হইতে টীকা বা অনুলিপি রচনার যুগ পর্যন্ত মধ্যবর্তীকালে এই জনপ্রিয় গীতিগুলি নিশ্চয়ই গায়কদের মুখে মুখে এবং/অথবা লিপিকরদের অনুলিপির মাধ্যমে প্রচারিত ছিল। সুতরাং মূল রচনার সময়কার রূপ হইতে চর্যাগীতিগুলির ভাষা পরিবর্তিত হওয়াই স্বাভাবিক, যেমনভাবে মধ্যযুগের অনেক জনপ্রিয় সাহিত্যকৃতির ভাষা বিকৃত হইয়া গিয়াছে।” লিপির আদর্শ বিচার করে পুথির কালনির্দেশের ক্ষেত্রে লিপিবিশারদদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা যায়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে পুথির লিপিকাল দ্বাদশ শতক, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতক, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে চতুর্দশ শতকের পরবর্তী সময়, ড. সুকুমার সেনের মতে চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতক এবং তারাদাস মুখোপাধ্যায়ের মতে দ্বাদশ শতকের শেষার্ধ। মুনিদত্তের আবির্ভাবকাল জানা যায়নি। অতএব এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমান-নির্ভর হতে বাধ্য। খুব সম্ভবত, চতুর্দশ শতকের কিছু আগে বা পরে কোনও এক সময়ে মুনিদত্তের মূল গ্রন্থটির অনুলিপি করা হয়েছিল। প্রাপ্ত পুথিটি যে টীকাকারের স্বহস্তে লিখিত তারও কোনও উপযুক্ত প্রমাণ নেই। বরং গানগুলির পাঠভেদ থেকে অনুমিত হয় যে, গানগুলি গায়কদের মুখে মুখে কম-বেশি পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কোনও ব্যক্তি মূল পুথির অনুলিপি করেছিলেন।
চর্যাপদের রচনাকালের ন্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটির গ্রন্থ নিয়েও গবেষকেরা আজ পর্যন্ত কোনও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি। প্রাপ্ত পুথিটির মলাটের পাতা ও শেষে পুষ্পিকার পাতা পাওয়া যায়নি বলে প্রকৃত তথ্য অজ্ঞাতে থেকে গিয়েছে। শাস্ত্রী মহাশয় তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের যে নামকরণ করেছেন তা স্পষ্টতই বিষয়-নির্দেশক অভিধা, যা একই সঙ্গে সময়কেও ইঙ্গিত করছে। নাম মাত্রেই বিশেষ্য, সেখানে এই ধরনের বিশেষণের প্রয়োগ অর্থ-ব্যঞ্জনার সূক্ষ্মতার পক্ষে ক্ষতিকারক। শাস্ত্রী মহাশয় অবশ্য বিকল্প একটি নাম দিয়েছিলেন ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। এই নামটির উৎস জানা যায়নি। পুথির কোথাও এই নামটি নেই। এটি সম্পাদকের স্ব-নির্ধারিত নাম হতে পারে, তবে একান্তই যে তাঁর স্ব-উদ্ভাবিত নাম নয়, তার প্রমাণ অদ্বয়বজ্রের ''প্রজ্ঞোপায়বিনিশ্চয়সিদ্ধ'' নামের গ্রন্থটি। টীকাগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধ গ্রন্থগুলির নামের সঙ্গে এই ‘বিনিশ্চয়’ শব্দটি যুক্ত থাকত। প্রাপ্ত পুথিটিও একটি টীকাগ্রন্থ। মুনিদত্ত বাংলা ভাষায় লেখা পঞ্চাশটি চর্যাগীতির টীকা লিখেছিলেন সংস্কৃত ভাষায়। নাম দিয়েছিলেন ''নির্মলগিরা টীকা''। সেদিক থেকে শাস্ত্রী মহাশয়ের দেওয়া নামটি সংগতিপূর্ণ। অথচ এই নামটি নিয়েও গবেষকদের মধ্যে অনেক বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।
চর্যাগীতিগুচ্ছের প্রথম পদের সংস্কৃত টীকায় বলা হয়েছে: “শ্রীলূয়ীচরণাদিসিদ্ধরচিতেঽপ্যাশ্চর্য্যচর্য্যাচয়ে। সদ্বর্ত্মাবগমায় নির্ম্মলগিরাং টীকাং বিধাস্যে স্ফুটনম।।” ১৯২৮ সালে বিধুশেখর শাস্ত্রী ''ইন্ডিয়ান হিস্টোরিক্যাল কোয়ার্টারলি'' পত্রিকার চতুর্থ খণ্ডে এই শ্লোকটির নিরিখে দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে, এখানে উক্ত ‘আশ্চর্য্যচর্য্যাচয়’ শব্দবন্ধটিই প্রকৃত গ্রন্থনাম, যার অর্থ হল ‘আশ্চর্য চর্যাসমূহের সংকলন’। কিন্তু এটিকে ঠিক গ্রন্থনাম হিসেবে স্বীকার করা যায় না। বরং উপরিউক্ত বাক্য থেকে টীকাকার এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই আশ্চর্য বা অদ্ভুত চর্যাসমূহে প্রবেশের ‘সদ্বর্ত্ম’ নির্দেশের জন্য তিনি টীকা রচনা করেছেন। ‘আশ্চর্য’ শব্দটি গানগুলির প্রকৃতি নির্দেশক, যা অবশ্যই বিশেষণ। অন্যদিকে ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী তাঁর ''স্টাডিজ ইন তন্ত্রজ'' (১ম খণ্ড) গ্রন্থে তিব্বতি অনুবাদটির প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেছেন যে, শাস্ত্রী মহাশয় একটি ভুল পাঠের উপর ভিত্তি করে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' নাম দিয়েছেন; গ্রন্থটির আসল নাম হবে ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়''। অবশ্য ড. বাগচী নেপাল রাজদরবারে রক্ষিত পুথিতে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'' নামটি আছে বলেও উল্লেখ করেছেন। ড. সুকুমার সেনও মনে করেন যে, গ্রন্থটির মূল নাম ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়'', কিন্তু লিপিকরের ভুলে তা হয়েছে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। কিন্তু ড. বাগচী ও ড. সেন সমর্থিত ''চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়'' নামটি প্রাপ্ত পুথিতে তো নেই-ই, এমনকি ''তেঙ্গুর'' গ্রন্থমালার পি. কর্ডিয়ার কৃত তালিকাতেও পাওয়া যায় না। এই নামটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। মুনিদত্তের যে শ্লোকটি উদ্ধৃত করা হয়েছে, তাতে ‘আশ্চর্য’ শব্দটি থাকলেও চর্যার ‘আশ্চর্য বিনিশ্চয়’ অর্থাৎ অপূর্ব অর্থনির্ধারণের ব্যাপারটি কষ্টকল্পিত বলেই মনে হয়। বরং হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর দেওয়ার নামটির পিছনে কিছু যুক্তি আছে। ‘চর্য্যাচর্য্য’ শব্দটি একটি সমাসবদ্ধ পদ, যার পূর্বপদ ‘চর্য্য’, অর্থাৎ আচরণীয় এবং উত্তরপদ ‘অচর্য্য’ অর্থাৎ যা আচরণীয় নয়। যে গ্রন্থ আচরণীয় ও অনাচরণীয় তত্ত্বকে বিশেষরূপে নিশ্চয়ই করে তার নাম দেওয়া যেতে পারে ''চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়''। এই কারণে বিশ্বভারতী প্রকাশিত ''চর্যাগীতিকোষ'' গ্রন্থের ভূমিকায় বৌদ্ধ পণ্ডিত শান্তি ভিক্ষু শাস্ত্রী মন্তব্য করেছেন, “I see no justification to invent a new name when the old one conveys the better meaning, that is, Viniscaya ‘Determination’ of carya ‘that to be practiced’ and acarya ‘that not to be practiced’.”
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পর চর্যাপদের পুথি আরও কয়েকজন বিদগ্ধ গবেষক কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছিল। যেমন, মনীন্দ্রমোহন বসুর ''চর্য্যাপদ'', ড. সুকুমার সেনের ''চর্যাগীতি পদাবলী'', ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী ও শান্তি ভিক্ষু শাস্ত্রীর যুগ্ম সম্পাদনায় ''চর্যাগীতিকোষ'' এবং ড. নীলরতন সেনের ''চর্যাগীতিকোষ'' (ফ্যাক্সিমিলি সংস্করণ)। লক্ষণীয়, সকলেই সম্পাদিত গ্রন্থের নামকরণে গানের দিকেই লক্ষ্য রেখেছেন এবং শাস্ত্রী মহাশয়ের দেওয়া নামটি বর্জন করেছেন। এই বিষয়ে জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী বলেন, “কিন্তু গ্রন্থনাম বিচারে প্রথম বিচার্য গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয় এবং গ্রন্থের উদ্দেশ্য। যে গ্রন্থখানি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা চর্যাগীতির সঙ্কলন মাত্র নহে, গীতিগুলির অর্থ বা টীকা। গ্রন্থখানির আরম্ভ টীকাকারের বন্দনা ও বস্তুনির্দেশক শ্লোক লইয়া। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী তিব্বতী অনুবাদের যে সংস্কৃত ছায়া দিয়াছেন, তাহাতে দেখা যায়, তাহাও টীকাকার মুনিদত্তের উক্তি লইয়াই পরিসমাপ্ত।” অথচ সম্পাদিত সব কটি গ্রন্থেই এই ব্যাপারটি অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং নামকরণে গানের ভূমিকাকেই দেওয়া হয়েছে প্রাধান্য। প্রাপ্ত পুথিটিতে গানগুলির উপস্থিতি যে একটি বিশিষ্ট ঘটনা তা অস্বীকার করা যায় না; কিন্তু টীকাকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল গানগুলির সূত্রে সহজযান বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব ও আচরণ ব্যাখ্যা করা। মূল পুথিতে গান আদৌ যুক্ত ছিল কিনা তা নিয়েও কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যেভাবে সাহিত্যের অর্থপুস্তক লেখা হয় সেইভাবে, অর্থাৎ প্রতিটি পদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পদের প্রথম শব্দটি উল্লেখ করে এখানে ব্যাখ্যা শুরু হয়েছে। এই রীতি বৌদ্ধসাহিত্যে যে সুপ্রচলিত ছিল তার প্রমাণ কাহ্নপাদ রচিত ''যোগরত্নমালা'' টীকা, অদ্বয়বজ্রের ''দোহাকোষপঞ্জিকা'' এবং নারোপা রচিত ''সেকোদ্দেশ টীকা''। মুনিদত্তও সেই ধারাতে অর্থবোধের জন্য ''নির্মলগিরা টীকা'' রচনা করেছিলেন। সূচনায় “বিধাস্যে স্ফুটম্” ও অন্তে “কোষস্য চার্থঃ প্রকটিকৃতোঽএ” প্রভৃতি উক্তিই তার প্রমাণ। অতএব টীকাকারের উদ্দেশ্য বিচার করলে পূর্বোক্ত সমস্ত নামই অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর মনে হবে। তিনি যে এর ভিন্ন একটি নামকরণ বৌদ্ধধর্মের গূঢ় তত্ত্বসমূহের ভাষ্য তথা ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত ''তাঞ্জুর'' গ্রন্থমালার তালিকা থেকে পাওয়া যায়। সেখানে মুনিদত্তের নামে ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি'' গ্রন্থটির উল্লেখ আছে। মুনিদত্তের গ্রন্থটির তিব্বতি অনুবাদক কীর্তিচন্দ্রের নামেও একই নামে একটি গ্রন্থের উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। পি. কর্ডিয়ার কৃত তালিকাও এই তত্ত্বকে সমর্থন করে। অতএব সিদ্ধান্ত করা যায় যে, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত গ্রন্থটির প্রকৃত নাম ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি''। উল্লেখ্য যে, তিব্বতি ভাষান্তরেও গ্রন্থের নাম দেওয়া হয়েছিল ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি''। আশ্চর্যের বিষয়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ সালে তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের পরিশিষ্টে যে ''তাঞ্জুর'' তালিকা সন্নিবিষ্ট করেছিলেন, তাতেও মুনিদত্তের নামের পাশে ''চর্যাগীতিকোষবৃত্তি'' গ্রন্থের উল্লেখ আছে।
==কবি==
চর্যাগীতিগুলির ভণিতায় যেমন পদকর্তাদের নাম স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে, তেমনই টীকাগ্রন্থটিতে ব্যাখ্যার সঙ্গে রচয়িতাদের নামও দেওয়া হয়েছে। মোট সাড়ে ছেচল্লিশটি গানের তেইশজন পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। এঁরা সবাই ছিলেন মহাযানী বৌদ্ধধর্মের যোগাচার শাখার সাধক-কবি। সম্ভবত তন্ত্রযোগ সাধনায় এঁরা সকলেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, তাই প্রত্যেকেই সিদ্ধাচার্য নামে খ্যাত ছিলেন। মুখ্যত বজ্রযান ও সহজযানের গুরুরাই এই অভিধায় ভূষিত হতেন। তিব্বতি ইতিহাসে চুরাশি জন সিদ্ধাচার্যের নাম সুপ্রসিদ্ধ। লামা তারানাথের গ্রন্থ, মৈথিল কবি জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' ও বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধনামানুসরণ'' গ্রন্থে এই সব সিদ্ধাচার্যের নাম ও তাঁদের সম্পর্কে কিছু জনশ্রুতি উল্লিখিত হয়েছে।
===লুইপাদ===
টীকাকার মুনিদত্ত লুইপাদকে আদি সিদ্ধাচার্য বলেছেন। তিব্বতি তালিকায় তাঁর নামই সর্বাগ্রে পাওয়া যায়। অবশ্য তারানাথ বলেছেন, লুইপাদ চতুর্থ সিদ্ধাচার্য। তিনি উড্ডীয়ান-রাজ উদয়নের করণিক ছিলেন। পরে মহাসিদ্ধ শবরীপাদের কাছে তন্ত্রাভিষেক লাভ করেন এবং নির্বিঘ্নে ধ্যান করার জন্য বাংলার গঙ্গাতীরে আসেন। সাধনরত অবস্থায় তিনি মৎস্যের অন্ত্র ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। এইজন্য নাথধর্মের অন্যতম গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথ বা মীননাথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। ‘মৎস্যেন্দ্র’ শব্দের অর্থ হল মাছেদের রাজা অর্থাৎ রুই। পাণিনির “ন র লয়োর্ভেদঃ” সূত্র অনুযায়ী বলা যায়, রুই ও লুইয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এইভাবে মীননাথ ও লুইপাদ অভিন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। অবশ্য সেটি বাস্তব সত্য কিনা সে নিয়ে সংশয় আছে। লুইপাদ বজ্রযান মতে বজ্রবারাহীর ধ্যান করতেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা অবশ্য লুইপাদকে ‘বাঙালি’ বলে ঘোষণা করেছে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, লুইপাদ ছিলেন পাল সম্রাট ধর্মপালের কায়স্থ বা মুখ্য করণিক। সরহপাদ রচিত দোহাকোষের অদ্বয়বজ্র কৃত পঞ্জিকায় লুইপাদকে ‘কৈবর্ত’ বলা হয়েছে। চর্যাগীতি ও ''তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টি'' নামক দোহাকোষ ছাড়া লুইপাদ রচনা করেন ''শ্রীভগবদভিসময়'', ''অভিসময়বিভঙ্গ'', ''বুদ্ধোদয়'' ও ''বজ্রসত্ত্বসাধন''। প্রথম দুটি গ্রন্থ খুবই বিখ্যাত। বিশেষত দ্বিতীয় গ্রন্থটির উপর পরবর্তীকালে অনেক টীকা, ব্যাখ্যা, বৃত্তি, পঞ্জিকা ইত্যাদি রচিত হয়। চর্যার পুথিতে তাঁর দুটি গান (১ ও ২৯ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত।
===শবরীপাদ===
মহাসিদ্ধ শবরীপাদ ছিলেন লুইপাদের গুরু। শবরীপাদের গুরু ছিলেন রসসিদ্ধ নাগার্জুন। তারানাথের বিবরণে পাওয়া যায়, প্রথম জীবনে শবরীপাদ ছিলেন বঙ্গের এক নটাচার্য। নাগার্জুন তাঁকে শ্রীপর্বতে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে তিনি শবরসুলভ জীবন যাপন করে ‘শবরীশ্বর’ বা ‘সিদ্ধ শবর’ উপাধি লাভ করেন। তন্ত্রমতে, শবর বা সবর শব্দের অর্থ বজ্রধর। তিনি কনিষ্ঠ সরোহ নামেও পরিচিত। ''তাঞ্জুর'' তালিকা অনুসারে, তিনি বজ্রযোগিনী সাধন-বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এছাড়া ষড়ঙ্গ যোগের উপরেও তাঁর অধিকার বিভিন্ন রচনায় প্রমাণিত। তিনি ‘আচার্য’ ও ‘মহাচার্য’ বিশেষণেও ভূষিত। ''মহামুদ্রাবজ্রগীতি'', ''চিত্তগুহ্যগম্ভীরার্থগীতি'' প্রভৃতি তাঁর রচিত তত্ত্বগ্রন্থ। বৌদ্ধ সাধনমালায় ''সিতকুরুকুল্লাসাধন'' ও ''বজ্রযোগিনী আরাধনাবিধি'' নামে দুটি রচনায় তাঁর ভণিতা পাওয়া যায়। চর্যাপদের পুথিতে তাঁর দুটি গান (২৮ ও ৫০ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত।
===ভুসুকুপাদ===
অন্যতম শ্রেষ্ঠ চর্যাকার ভুসুকুপাদের ব্যক্তিগত ও প্রাচীনত্ব নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। মহাযান মধ্যমক শূন্যবাদের প্রবক্তা শান্তিদেব ও চর্যাকার ভুসুকুপাদ অভিন্ন ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে কিছু মতান্তর আছে। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ''শিক্ষাসমুচ্চয়'' ও ''বোধিচর্যাবতার''। তারানাথ এই সকল গ্রন্থের রচয়িতাকে সৌরাষ্ট্রের অধিবাসী বলেছেন। কিন্তু হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘বাঙালি’ বলে স্বীকার করেছেন। শাস্ত্রী মহাশয় এশিয়াটিক সোসাইটির ৯৯৯০ সংখ্যক তালপাতার পুথি থেকে শান্তিদেবের যে জীবনী উদ্ধার করেছেন, সেটি এইরকম: শান্তিদেব ছিলেন রাজপুত্র। যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার প্রাক্কালে তাঁর মা তাঁকে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুবজ্রের নিকট উপদেশ নিতে বলেন। শান্তিদেব ঘোড়ায় চড়ে মঞ্জুবজ্রের নিকট যাত্রা করলেন। পথে মঞ্জুবজ্রের এক শিষ্যের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল এবং তারপর বারো বছর মঞ্জুবজ্রের কাছে থেকে তিনি মঞ্জুশ্রী মন্ত্রে সিদ্ধ হলেন। তারপরে তিনি ‘রাউত’ বা অশ্বারোহীর বেশে মগধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মগধরাজের নিকট ‘অচল সেন’ নামে নিজের পরিচয় দিলেন। মগধরাজ অশ্বারোহী তরবারিধারী অচলকে সেনাপতি পদে বরণ করলেন। তরবারিকে আশ্রয় করে তাঁর অদ্ভুত সিদ্ধি প্রকাশ পেল। তখন তিনি রাজকার্য ত্যাগ করে ভিক্ষুর বেশে নালন্দায় প্রবেশ করলেন। এখানেই তিনি তাঁর গ্রন্থদ্বয় রচনা করেন। ভোজনকালে, সুপ্ত অবস্থায় ও কুটি গমনে অর্থাৎ বিশ্রামকালে ‘প্রভাস্বর’ বা সমাধি সমাপন্ন থাকতেন বলে তিনি ‘ভুসুকু’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। এই নামেই তিনি চর্যাগীতি রচনা করেন। পদকর্তা ভুসুকুর গানে আছে “রাউতু ভনই কট”। এই ভণিতাই দুই ব্যক্তিত্বকে এক করে দিয়েছে। তাছাড়া নারোপা রচিত ''সেকোদ্দেশ টীকা'' গ্রন্থে শান্তিদেব ও ভুসুকুপাদকে একই ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ড. সুকুমার সেন এই দুজনকে পৃথক ব্যক্তি বলে মনে করেন। ড. সেনের মতে, ভুসুকুপাদ শান্তিদেবের তুলনায় অনেক পরবর্তীকালের ব্যক্তি। তিনি সহজযানী সিদ্ধাচার্য। তাঁর রচিত ''চতুরাভরণ'' গ্রন্থের লিপিকাল ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দ ধরে ড. সেন তাঁকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষার্ধের ব্যক্তি মনে করেছেন। কিন্তু এই ধারণা সম্ভবত সঠিক নয়। ভুসুকুপাদ ত্রয়োদশ শতকের কবি হলে দ্বাদশ শতকের পূর্বে রচিত কোনও গ্রন্থে তাঁর পদ স্থান লাভ করতে পারে না। তাছাড়া ভুসুকুপাদ যে রাজপুত্র ও রাউত ছিলেন, তার প্রমাণ তাঁর পদেই পাওয়া যায়। “আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী” ভণিতার সূত্রে তাঁকে বাঙালি মনে করা হয়। তাঁর পদে দু-একটি বঙ্গীয় বাগ্বিধিও লক্ষণীয়। চর্যার পুথিতে ভুসুকুপাদের ৮টি গান সংকলিত হয়েছে: ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩ ও ৪৯ সংখ্যক চর্যা।
===সরহপাদ===
লামা তারানাথ সরহপাদকে আদি সিদ্ধাচার্য বলে উল্লেখ করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় সরহপাদকে বলা হয়েছে ‘আচার্য’, ‘মহাচার্য’, ‘সিদ্ধ মহাচার্য’, ‘মহাব্রাহ্মণ’, ‘যোগী’, ‘মহাযোগী’, ‘যোগীশ্বর’ ও ‘মহাশবর’ (‘শবর’ শব্দটি বজ্রযানে বজ্রধরের প্রতীক)। সরহপাদ উড়িষ্যায় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বেদাদি শাস্ত্রে পারঙ্গম ছিলেন। নালন্দায় তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন ধর্মকীর্তি হরিভদ্র। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, হরিভদ্র ছিলেন গৌড়াধিপতি ধর্মপালের (রাজত্বকাল ৭৭০—৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) সমসাময়িক। সেই হিসেবে সরহপাদ অষ্টম শতাব্দীর ব্যক্তি ছিলেন এবং সম্ভবত তাঁর মৃত্যু হয় ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে। আচার্য স্থবিরকালের নিকট সরহপাদ অভিষিক্ত হন। দাক্ষিণাত্যে এক শরকারের (arrow-smith) কন্যাকে মুদ্রা রূপে গ্রহণ করায় তাঁর নাম হয় শরহ বা সরহ। তাঁর অপর নাম রাহুলভদ্র, সরোরুহবজ্র ও সরোজবজ্র। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, সরহপাদের ভিক্ষুনাম রাহুলভদ্র। বজ্রযানের সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে সরোরুহবজ্র বা সরোজবজ্র নাম ব্যবহার করা হয়েছে। রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন বলেছেন, ‘পূর্বদিশা’ অঞ্চলের অন্তর্গত ‘রাজ্ঞী’ (বর্তমান বিহারের ভাগলপুর) নামক স্থানে তাঁর জন্ম। অবশ্য অনেকেই মনে করেন, সরহপাদ ছিলেন বরেন্দ্রভূমির ব্যক্তি। তাঁর লেখা ৩৯ সংখ্যক চর্যাটির বাহ্য অর্থ থেকে জানা যায় যে, তিনি বঙ্গে জায়া গ্রহণ করেছিলেন: “বঙ্গে জাআ নিলেসি”। তাঁর পদে ব্যবহৃত প্রবাদ-প্রবচন ও বাগ্বিধির বিচারেও তাঁকে গৌড়ের অধিবাসী মনে হয়। রসসিদ্ধ নাগার্জুনকে তিনি সহজ মতে অভিষিক্ত করেন। সংস্কৃত, অপভ্রংশ ও প্রত্ন বাংলা তিন ভাষাতেই সরহপাদ গ্রন্থাদি রচনা করেন। সংস্কৃতে তিনি রচনা করেন ''বুদ্ধকপালসাধন'', ''হেবজ্রতন্ত্রপঞ্জিকাপদ্মিনীনাম'' প্রভৃতি গ্রন্থ। অপভ্রংশে রচিত তাঁর সহজতত্ত্ব ও সহজ-সাধনা বিষয়ক দোহা ও দোহাজাতীয় গীতি সংকলনগুলির মধ্যে ''দোহাকোষগীতি'', ''ক-খ দোহা'' (ক-কারাদি বর্ণকে আদ্যক্ষর করে বর্ণার্থমূলক দোহা), ''মহামুদ্রোপদেশবজ্রগুহ্যগীতি'', ''কায়বাক্চিত্তঅমনসিকার'', ''ডাকিনীগুহ্যগীতি'' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চর্যাগীতির পুথিতে তাঁর ৪টি পদ (২২, ৩২, ৩৮ ও ৩৯ সংখ্যক পদ) সংকলিত।
===কাহ্নপাদ===
চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত ৫০টি পদের মধ্যে ১৩টি পদই (৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ৩৬, ৪০, ৪২ ও ৪৫ সংখ্যক চর্যা; এবং টীকা অনুসারে, মূল পুথিতে লুপ্ত ২৪ সংখ্যক চর্যাটি) কাহ্নপাদের রচনা। তিব্বতি ইতিহাস, ''তাঞ্জুর'' তালিকা, চর্যাগীতি ও বাংলা সিদ্ধাচার্য-গীতিকায় (নাথগীতিকা) কাহ্নপাদ একটি বিশিষ্ট নাম। টীকাকার তাঁকে ‘কাহ্নপাদ’, ‘কৃষ্ণপাদ’, ‘কৃষ্ণাচার্যপাদ’, ‘কৃষ্ণবজ্রপাদ’, ‘কৃষ্ণাচার্য’, ‘কৃষ্ণাচার্য চরণ’ ইত্যাদি নামে উল্লেখ করেছেন। তিনি সিদ্ধ সাধক, মহাপণ্ডিত ও মণ্ডলাচার্যদের ভিতর সিদ্ধাচার্য। তবে কাহ্নপাদ দুই জন কবির নাম কিনা এবং তাঁর সময়কাল নিয়ে বিতর্ক আছে। ড. সুকুমার সেনের মতে, ১০, ১১, ১৮, ১৯, ৩৬ ও ৪২ সংখ্যক পদগুলি জালন্ধরীপাদের শিষ্য তান্ত্রিক যোগী কাহ্নপাদের এবং ৭, ৯, ১২, ১৩, ৪০ ও ৪৫ সংখ্যক পদগুলি অপর এক কাহ্নপাদের রচনা। কয়েকটি গানে ‘জ্ঞান উপদেশের প্রবণতা’ এবং অন্য গানগুলিতে ডোম্বী-বিবাহের সন্ধ্যা-সংকেতের ভিত্তিতে দুই কাহ্নের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও, একই সাধক-কবি দুই ভিন্ন শ্রেণির গান রচনা করেছেন—এই যুক্তিতে কেউ কেউ দুই কাহ্নের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। কাহ্নপাদের পরিচয় নিয়েও অনেকগুলি জনশ্রুতি আছে। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে ভারতবাসী ও উড়িষ্যা থেকে আগত বলা হয়েছে। তিব্বতের ইতিহাস অনুসারে, তাঁর জন্মস্থান কর্ণ-নগর। জনশ্রুতিতে বলা হয়েছে তাঁর জন্ম পদ্মনগর বা বিদ্যানগর বা বিজয়নগরে। এই স্থানগুলির অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। নাথগীতিকায় তাঁর একটি কীর্তিস্থল হিসেবে বঙ্গ মেহারকুলের উল্লেখ আছে। কাহ্নপাদের পদে বাংলা শব্দভাণ্ডারের প্রাচুর্যও লক্ষণীয়। কাহ্নপাদের জীবনকাহিনিও বিচিত্র। প্রথম জীবনে বিরূপপাদ বা বিরুআপাদের শিষ্য কাহ্নপাদ ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে চারটি পাপ করার পর জালন্ধরীপাদের শরণ নেন। জালন্ধরীপাদের নির্দেশে বজ্রবারাহীর উপাসনার করে তিনি শাপমুক্ত হন। বিরূপপাদের সঙ্গে কাহ্নপাদের যোগের ইঙ্গিত তাঁর পদেই পাওয়া যায়। তবে জালন্ধরীপাদের সঙ্গেই তাঁর যোগ বেশি। চর্যাগীতিতে কাহ্নপাদ জালন্ধরীপাদকে সাক্ষী মেনে মেনেছেন: “শাখি করিব জালন্ধরী পাএ”। তিব্বতি ইতিহাসে আছে, জালন্ধরীর শ্রেষ্ঠ শিষ্য কৃষ্ণ অঙ্গে হাড়ের মালা ও হস্তে ডমরু ধারণ করবেন। চর্যাগানে কাহ্নপাদ তাই করেছেন বলে উল্লিখিত। আবার নাথগীতিকায় বলা হয়েছে হাড়িফাকে (জালন্ধরীপাদ) নিত্য সেবা করেন কানফা যোগাই (কাহ্নপাদ)। কাহ্নপাদ ''দোহাকোষপঞ্জিকা'' সহ অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ''হেবজ্রতন্ত্র'' গ্রন্থের উপর একটি গ্রন্থও তাঁর নামে পাওয়া যায়।
===বিরূপপাদ===
বিরূপপাদ বা বিরুআপাদ ছিলেন বজ্রযোগিনীর সাধক। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে ‘আচার্য’, ‘মহাচার্য’, ‘যোগীশ্বর’ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে। সিদ্ধ সাধক হিসেবে তিনি এত বিখ্যাত ছিলেন যে, পরবর্তীকালে অনেকেই তাঁর নাম করেছেন। তাঁর কোনও গুরু ছিল না। জনশ্রুতি অনুসারে, তিনি ছিলেন সিদ্ধাচার্য কাহ্নপাদের প্রথম জীবনের গুরু। তাঁর নামে ''গীতিকা'', ''কর্মচণ্ডালিকাদোহাকোষগীতি'' প্রভৃতি গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। লামা তারানাথের গ্রন্থে তাঁর মদ্যপানে আসক্তি ও শুণ্ডিনী সাহচর্যের কথা পাওয়া যায়। চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত তাঁর একমাত্র চর্যাটিতে (৩ সংখ্যক পদ) সেই শুণ্ডিনীর মদ চোলাইয়ের একটি বাস্তব চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
===শান্তিপাদ===
শান্তিপাদ প্রাচীন সিদ্ধাচার্য। ড. সুকুমার সেনও তাঁকে প্রাচীন চর্যাকার বলে স্বীকার করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা মতে, রত্নাকর শান্তিই শান্তিপাদ। তিব্বতি তালিকায় রত্নাকর শান্তি ‘আচার্য’, ‘আচার্যপাদ’ ও ‘মহাপণ্ডিত’ বিশেষণে ভূষিত। লামা তারানাথের বিবরণ অনুসারে, তিনি শবরীপাদের সমসাময়িক, অর্থাৎ অষ্টম শতকের মধ্যভাগের ব্যক্তিত্ব। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁর নামে ''মুক্তাবলী নামি হেবজ্র পঞ্জিকা'' ও ''কুসুমাঞ্জলি নাম গুহ্যসমাজ নিবন্ধ'' নামে দুই গ্রন্থ উল্লিখিত হয়েছে। এগুলি সহজ-সাধনার ভিত্তি ''হেবজ্রতন্ত্র'' ও ''গুহ্যসমাজ তন্ত্র'' গ্রন্থদ্বয়ের টীকা। সহজযানের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগের সাক্ষর বহন করছে ''সহজরতিসংযোগ'' ও ''সহজ যোগক্রম'' গ্রন্থ দুটি। তাঁর অপর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ''সুখদুঃখপরিত্যাগদৃষ্টি''। এছাড়া তিনি বজ্রতারা ও মহামায়ার সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থও রচনা করেন। শান্তিদেব ও শান্তিপাদকে কেউ কেউ অভিন্ন মনে করেন। কিন্তু এঁরা যে পৃথক ব্যক্তি তা নানা সূত্র থেকে জানা যায়। শান্তিদেবের দুটি পদ (১৫ ও ২৬ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত হয়েছে চর্যাগীতির পুথিতে।
===দারিকপাদ===
দারিকপাদকে অভিষিক্ত করেন লুইপাদ। গানের ভণিতাতেও দারিকপাদ বলেছেন, “লুইপাঅ পসাএঁ দারিক”। লামা তারানাথের মতে, দারিকপাদ ছিলেন উড়িষ্যার রাজা। তিনি সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় দারিকপাদের নামে ''শ্রীচক্রতন্ত্ররাজ'' গ্রন্থের ''সেকপ্রক্রিয়াবৃত্তি'' ও ''শ্রীচক্রসম্বরসাধন'' গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। চর্যাগীতির পুথিতে তাঁর একটি মাত্র পদই (৩৪ সংখ্যক চর্যা) পাওয়া গিয়েছে।
===ডোম্বীপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য ডোম্বী, আচার্য ডোম্বীপাদ এবং আচার্য বা মহাচার্য ডোম্বী-হেরুকের নামে একাধিক গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়। লামা তারানাথের মতে, এঁরা সবাই একই ব্যক্তি এবং এই ডোম্বী-হেরুক ছিলেন বিরূপপাদের শিষ্য কাল বিরূপ বা কাহ্নপাদের শিষ্য। তিব্বতি তালিকায় সিদ্ধ ডোম্বী-হেরুককে সন্ন্যাসী ও মগধের রাজা বলা হয়েছে। তারানাথ অবশ্য বলেন, ডোম্বী-হেরুক ছিলেন ত্রিপুরার রাজপুত্র। মুদ্রিকা নিয়ে সাধনা করতেন বলে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হন। কিন্তু রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ডোম্বী-হেরুক আশ্চর্য সিদ্ধাই দেখিয়ে দুর্ভিক্ষ নিবারণ করেন। তখন লোকে তাঁর সিদ্ধির কথা বুঝতে পারে। ডোম্বী-হেরুকের শিষ্যবর্গ ছিলেন ডোম্বী (আধ্যাত্মিক অর্থে বায়ুরূপা অবধূতিকা) ধরার সাধক। তারানাথ আরও বলেছেন যে, ডোম্বী-হেরুক রাঢ়ের রাজাকেও অভিষিক্ত করেন, ফলে রাঢ় অঞ্চল থেকে তীর্থিক ধর্ম লোপ পায়। মুনিদত্তও ডোম্বীপাদকে ‘লাড়ী’ বলে অভিহিত করেছেন। তাই ড. সুকুমার সেন তাঁর রাঢ় অঞ্চলের মানুষ মনে করেন। ড. বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের মতে, তিনি ছিলেন অষ্টম শতকের লোক। চর্যাগীতির পুথিতে ডোম্বীপাদের মাত্র একটি পদ (১৪ সংখ্যক চর্যা) সংকলিত হয়েছে। টীকাকার এটির ব্যাখ্যা দেননি। তবে কাহ্নপাদের অনেক পদে ডোম্বীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
===কুক্কুরীপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য কুক্কুরীপাদ কুকুরাজ বা কুক্কুররাজ নামে অভিহিত হয়েছেন। তাঁর নামে অনেকগুলি গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। ''গুহ্যার্থধর ব্যুহ'' নামে তিনি বজ্রসত্ত্ব, বজ্রহেরুক, পদ্মরত্নেশ্বর প্রমুখের সাধন-সংক্রান্ত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারানাথের ভাষ্য অনুসারে, সর্বদা সঙ্গে একটি কুক্কুরী থাকত বলে তিনি কুক্কুরীপাদ নামে পরিচিত হয়েছেন। ড. সুকুমার সেন অবশ্য কুক্কুটিকপাদ থেকে কুক্কুরীপাদ শব্দটি নিষ্পন্ন করতে চান। চর্যাপদের পুথিতে তাঁর তিনটি চর্যা সংকলিত হয়েছিল; তার মধ্যে ২ ও ২০ সংখ্যক চর্যাটি পাওয়া গিয়েছে এবং ৪৮ সংখ্যক চর্যাটি লুপ্ত।
===চাটিলপাদ===
পদকর্তা চাটিলপাদের অস্তিত্ব তাঁর একটি পদের (৫ সংখ্যক চর্যা) উপর নির্ভরশীল। কারণ তারানাথের বর্ণনায় বা ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁর নাম দেখা যায় না। কেবল জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থের সিদ্ধা-বর্ণনায় ‘চাটল’ এবং বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধনামানুসরণ'' গ্রন্থে ‘চাটলা’ নাম পাওয়া যায়। ৫ সংখ্যক পদে তিনি নিজেকে ‘অনুত্তর সামী’ বলে আত্মপ্রশংসা করেছেন বলে, ড. সুকুমার সেন এটিকে চাটিলপাদের কোনও শিষ্যের রচনা বলে মনে করেন। কিন্তু প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় সাহিত্যে কবির আত্মপ্রশংসা বিরল নয় বলেই ড. সেনের মত অনেকে গ্রহণ করতে পারেননি।
===আর্যদেব===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আর্যদেব বা আজদেবকে ‘আচার্য’ ও ‘মহাচার্য’ বলা হয়েছে। তিনি সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন। চতুষ্পীঠ যোগতন্ত্র সাধন সম্পর্কে তিনি গ্রন্থ রচনা করেন। সহজ-সাধনায় চিত্তশোধন-বিষয়ক মূল্যবান গ্রন্থ ''চিত্তাবরণবিশোধন নামপ্রকরণ'' তাঁর রচনা। অপভ্রংশ ভাষায় তিনি রচনা করেন ''কাণেরি গীতিকা''। প্রভুভাই প্যাটেলের মতে, আর্যদেব অষ্টম শতকের প্রথমার্ধে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি ছিলেন উড়িষ্যারাজ ইন্দ্রভূতি এবং সরহপাদের শিষ্য নাগার্জুনের সমসাময়িক। আর্যদেবের একটি মাত্র চর্যা (৩১ সংখ্যক পদ) সংকলিত হয়েছে চর্যাগীতির পুথিতে।
===কম্বলাম্বরপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য বা মহাচার্য কম্বলের নাম পাওয়া যায়; সেই সঙ্গে প্রজ্ঞারক্ষিতের গুরু মহাসিদ্ধ কম্বলাম্বরপাদের নামও উল্লিখিত হয়েছে এখানে। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ''অভিসময়নামপঞ্জিকা''। লামা তারানাথের বিবরণ থেকে অনুমান করা হয় যে, লুইপাদের শিষ্য দারিকপাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল এবং সেই সূত্রে লুইপাদের গ্রন্থটির পঞ্জিকা রচনা করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। তারানাথ কম্বলাম্বরপাদকে বজ্রঘণ্টের শিষ্য বলেছেন। ডোম্বী-হেরুক, জালন্ধরীপাদ প্রমুখের সঙ্গে কম্বলাম্বরপাদের যোগাযোগ ছিল। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, কম্বলাম্বরপাদ ছিলেন ঊড়িষ্যার এক রাজকুমার। শ্মশানে সাধনা করে তিনি মন্ত্রসিদ্ধ হয়েছিলেন। মন্ত্রবতী শ্মশান-ডাকিনী তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলে শ্মশানে একটি কম্বল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না। তাতেই তিনি ‘কম্বল’ নামে খ্যাত হন। তাঁর কিছু সংস্কৃত রচনার অংশ উদ্ধৃত হয়েছে সরহপাদ রচিত দোহার অদ্বয়বজ্র কৃত টীকায়। সেখানে তিনি শাস্ত্রের শব্দাক্ষরের অসারতা প্রতিপন্ন করেছেন। চর্যাগীতির পুথিতে ৮ সংখ্যক পদটি কম্বলাম্বরপাদের রচনা। এটিতে তিনি ‘কামলি’ নামে আত্মপরিচয় দিয়েছেন। পদটি সাধনতত্ত্বের রূপক। নৌকা বাওয়ার রূপকে কবি মহাসুখচক্রের উদ্দেশ্যে বোধিচিত্তের যাত্রা বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন পংক্তিতে নৌকা বাওয়ার বাস্তব চিত্র এই বিষয়ে কবির বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিচায়ক। সন্ধ্যা-সংকেতে ও উৎপ্রেক্ষায় পদটি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
===বীণাপাদ===
''তাঞ্জুর'' তালিকায় বিরুআপাদের বংশধর রূপে বীণাপাদের নাম উল্লিখিত হয়েছে। অবশ্য লামা তারানাথের মতে, তিনি ছিলেন অশ্বপাদের শিষ্য। ডোম্বী-হেরুকের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। সেই হিসেবে তিনি অষ্টম শতকের শেষার্ধের ব্যক্তি। ড. সুকুমার সেন বলেছেন, “টীকাকারের অনুকরণে একটি চর্যা (১৭) অকারণে বীণাপাদের রচিত বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছে। কিন্তু ভণিতা বলিয়া নির্দেশ করিতে পারি এমন কোন নাম চর্যাটিতে নাই।” কিন্তু অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তীর মতে, “চর্যাগানে অনেক ক্ষেত্রে লেখক রূপকের আবরণে আত্মগোপন করিয়াছেন, কোথায়ও বা সরাসরি ভণিতা না দিয়া নিজেই গীতিকবিতার নায়ক সাজিয়াছেন। কাহ্নপাদের ১০ সংখ্যক চর্যায় ও শবরপাদের ২৮ ও ৫০ সংখ্যক চর্যায় এই রীতিই অবলম্বিত হইয়াছে। কাজেই বীণাপাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না।” গুহ্যাভিষেক, মহাভিষেক ও বজ্রডাকিনী নিষ্পন্নক্রম বিষয়ে বীণাপাদ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ১৭ সংখ্যক চর্যাটিও নিষ্পন্নক্রমের সাধন-সংক্রান্ত চর্যা। সেকমণ্ডলে আলি-কালির দ্বার রুদ্ধ হয়ে চিত্ত অবধূতী মার্গে প্রবিষ্ট হলে কীভাবে হেরুক-বীণায় শূন্যতার ধ্বনি ওঠে এবং কীভাবে যোগিনী-অভিষঙ্গে যোগী বজ্রনৃত্যে ও বজ্রগীতে তন্ময় হন, তারই একটি ছবি ধরা পড়েছে ১৭ সংখ্যক চর্যাটিতে। সাধকসত্ত্বাই এখানে বীণাযন্ত্র-স্বরূপ। বীণার রূপকল্পনায় নীরস দেহতত্ত্ব এই পদে সরস হয়ে উঠেছে। গানটি শুধু তত্ত্ববাহীই নয়, নানা তথ্যে সমৃদ্ধ এবং কবির বস্তুদৃষ্টির পরিচায়ক।
===ভাদেপাদ===
কাহ্নপাদের যে ছয়জন শিষ্যের একটি করে গান চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত হয়েছে, তাঁদের অন্যতম ভাদেপাদ বা ভদ্রপাদ। অন্যত্র তিনি ভদ্রচন্দ্র বা ভদ্রদত্ত বা ভদ্রোক নামেও পরিচিত। লামা তারানাথ তাঁর ‘গুহ্য’ নামটির কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলা গোপীচন্দ্রের গানে উল্লিখিত কৃষ্ণাচার্যের শিষ্য ‘বাইল ভাদাই’ সম্ভবত ভদ্রপাদ। কানফা গোপীচন্দ্রকে উদ্ধার করতে সোনার গোপীচন্দ্র মূর্তি ক্রুদ্ধ হাড়িপার সম্মুখে স্থাপনের উপদেশ দেন। হাড়িপার ক্রোধে সেই স্বর্ণমূর্তি ভস্ম হয়ে যায়। গুরু জালন্ধরী এই কথা জানতে পেরে কানফাকে শাপ দেন। শেষে ময়নামতীর অনুনয়ে সিদ্ধ হাড়িপা বলেন যে, ‘বাইল ভাদাই’ শাপমুক্ত করবেন কানফাকে। সিদ্ধাচার্যদের অনেকেই শিষ্য কর্তৃক উদ্ধার লাভ করেছিলেন। গোরক্ষনাথ যেমন গুরু মীননাথকে কামবাসনায় ঘেরা কদলীরাজ্য থেকে মুক্ত করেছিলেন, তেমনই হয়তো গুরু কানফা বা কাহ্নপাদকে শাপমুক্ত করে থাকবেন ‘বাইল ভাদাই’ বা ভদ্রপাদ। নাথপন্থার সঙ্গে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের যোগ এই কাহিনির মাধ্যমে বোঝা গিয়েছে। কিন্তু ভাদেপাদের গানে তান্ত্রিকতার ছাপ স্পষ্ট নয়, পারিভাষিক শব্দের ব্যবহারও কম। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় ভাদেপাদকে বলা হয়েছে ‘ভাণ্ডারিন্’ (আচার্য)। তাঁর রচিত গ্রন্থটির নাম ''সহজানন্দদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টি''। ৩৫ সংখ্যক চর্যাগীতিটি ভাদেপাদের রচনা। গুরু উপদেশে কীভাবে তিনি সহজচিত্ত লাভ করেছিলেন, তা উল্লিখিত হয়েছে এই পদে। টীকাকার বলেছেন, ভদ্রপাদ ‘জ্ঞানানন্দপ্রমোদ’-যুক্ত সিদ্ধাচার্য। পদটিতেও সর্বধর্ম-অনুপলম্ভরূপ চরম জ্ঞানের স্বরূপ বিধৃত হয়েছে। পদটিতে ‘বাজুল’ (বজ্রকুল) শব্দটির প্রয়োগ দেখে মনে হয়, ভাদেপাদ বজ্রকুলের সাধক ছিলেন।
===মহীধরপাদ===
চর্যাগীতির পুথিতে প্রাপ্ত ১৬ সংখ্যক পদটির রচয়িতা মহিণ্ডা। ভণিতায় ‘মহিণ্ডা’ নামটি পাওয়া গেলেও টীকায় তাঁর নাম মহীধরপাদ। লামা তারানাথ তাঁকে ‘মহিল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকা বলা হয়েছে যে, ‘মহিপাদ’ ছিলেন আচার্য কৃষ্ণের অর্থাৎ কাহ্নপাদের বংশধর (শিষ্য)। ''বায়ুতত্ত্ব দোহাগীতিকা'' গ্রন্থটি মহীধরপাদের রচনা। তাঁর রচিত চর্যাগীতিটি ধ্বনিগাম্ভীর্যে, ২৬ মাত্রার দীর্ঘায়িত ছন্দের গজগতিতে এবং রূপক-কল্পনার সৌন্দর্যে বেশ উপভোগ্য। টীকাকার বলেছেন, "জ্ঞানপানপ্রমত্তো হি সিদ্ধাচার্য মহীধর”। এই জ্ঞানদৃষ্টির সঙ্গে কবির শিল্পদৃষ্টিও প্রশংসনীয়। পদটির সঙ্গে কাহ্নপাদ রচিত ৯ সংখ্যক পদের ভাব ও চিত্র-সাদৃশ্য কাহ্নপাদের সঙ্গে মহীধরপাদের নিকট সম্পর্কেরই সূচক। তবে ড. নির্মল দাশ এই পদের ভণিতায় ক্রিয়াপদে বহুবচন দেখে অনুমান করেন যে, পদটি মহীধরপাদের “শিষ্যানুশিষ্যদেরও” রচনা হতে পারে।
===ধামপাদ===
লামা তারানাথের মতে, ধম্মপাদ বা ধামপাদ ছিলেন কাহ্নপাদের শিষ্য। কাহ্নপাদ যখন গুরুকে উদ্ধার করতে শিষ্যদের নিয়ে গোবিন্দচন্দ্রের রাজ্যে আসেন, তখন রাজা তাঁদের উদ্দেশ্যে এক ভোজের আয়োজন করেন। কাহ্নপাদ বলেন, শিষ্য ধম্ম ও ধূমকে ভোজনে তৃপ্ত করলেই সকলে পরিতৃপ্ত হবেন। রাজার সংগৃহীত সমস্ত ভোজ্যদ্রব্য ধম্ম ও ধূম নিঃশেষ করেন। এতে সবাই তাঁদের সিদ্ধি বুঝতে পারেন। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় আচার্য ধর্মপাদকে কৃষ্ণ অর্থাৎ কাহ্নপাদের বংশধর বলা হয়েছে। ধামপাদ ''সুগত দৃষ্টি গীতিকা'', ''মহাযান নিষ্পন্নক্রম'', ''হুঙ্কার চিত্তবিন্দু ভাবনাক্রম'' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। চর্যাগীতির পুথিতে সংকলিত ৪৭ সংখ্যক পদটি তাঁর রচনা। এই পদেও নিষ্পন্নক্রম সাধনের কথাই বিবৃত হয়েছে: প্রজ্ঞোপায় সমতাযোগে চণ্ডালী প্রজ্বলিত হয়, অপরিশুদ্ধা নাড়ী দগ্ধ হয় এবং তখন নাড়ীর অধিদেবতা ও চিত্ত বিশ্রাম লাভ করে মহাসুখচক্রে। প্রকারান্তরে কাহ্নপাদ কথিত ‘কামচণ্ডালী’ সাধনার কথাই এখানে পুনর্কথিত হয়েছে। গানটি ''হেবজ্রতন্ত্র''-এর ‘চণ্ডালী জ্বলিতা নাভৌ’ শ্লোকটির ভাষা-অনুবাদ।
===কঙ্কণ===
চর্যাগীতির পুথিতে ৪৪ সংখ্যক পদটি কঙ্কণের রচনা। পুথিতে তাঁর নাম কোঙ্কণ বলে উল্লিখিত। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও তাঁকে সেই নামেই অভিহিত করেছেন। কিন্তু ড. সুকুমার সেনের মতে, তাঁর নাম কৌঙ্কণ। ড. নির্মল দাশের মতে, কঙ্কণ কবির ছদ্মনাম। সম্ভবত কঙ্কণ ছিল তাঁর লব্ধ-উপঢৌকন। সেকালে কবিরা এভাবে প্রাপ্ত উপঢৌকনের নামে ছদ্মনাম গ্রহণ করতেন। কথিত আছে, তিনি আচার্য কম্বলের বংশধর। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় তাঁকে সিদ্ধ সাধক বলা হয়েছে। টীকাকার তাঁকে পরম করুণাসব পানে প্রমুদিত ‘কঙ্কণ সিদ্ধাচার্য’ বলেছেন। কঙ্কণের পদটিতে মধ্যমা নিরোধের যুগনদ্ধ ফলোদয়ের অবস্থাটির বর্ণনা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র মাপের মাত্রা ছন্দ (১১ মাত্রার রসিকা) কঙ্কণই ব্যবহার করেছেন। ছন্দে বৈচিত্র্য এনেছে ষোড়শ-মাত্রিক বন্ধনের সঙ্গে ১১ মাত্রার চরণ: “সুনে সুন মিলিআ জবেঁ। সঅল ধাম উইআ তবেঁ।।” ''চর্যাদোহাকোষগীতিকা'' তাঁর রচনা। সম্ভবত আর কোনও গ্রন্থ তিনি রচনা করেননি।
===গুণ্ডরীপাদ===
৪ সংখ্যক চর্যাগীতিটি গুণ্ডরীপাদের রচনা। গানটিতে ‘গুড়রী’ ভণিতা দেওয়া হয়েছে। অ্যালবার্ট গ্রানওয়েডেল সিদ্ধাচার্যদের যে তালিকা প্রস্তুত করেছেন, তাতে গুণ্ডরী নামটি আছে। বিনয়শ্রীর ''সিদ্ধবন্দনা'' গ্রন্থেও তাঁর নাম পাওয়া যায়। কিন্তু ''তাঞ্জুর'' তালিকায় এই নামের কোনও লেখকের কথা উল্লিখিত হয়নি। ড. সুকুমার সেনের মতে, গুণ্ডরী সম্ভবত ব্যক্তিনাম নয়, কবির জাতি বা পেশাবাচক নামক এবং সম্ভবত মশলা ইত্যাদি গুঁড়ো করা ছিল কবির পেশা। পুথিতে সংকলিত চর্যাটিতে কুন্দুরু যোগের একটি সংকেত পাওয়া যায়। পদটিতে নরনারীর প্রেম-মিলনের স্থূল বর্ণনা আছে। ড. সেন গানটিতে যৌন-তান্ত্রিকতার স্পষ্ট ইঙ্গিত ও পারিভাষিক শব্দের আধিক্যের কারণে পদকর্তাকে অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন বলে বিবেচনা করেছেন। পদের শেষে কবির আত্মপ্রশংসা লক্ষণীয়।
===তাড়কপাদ===
৩৭ সংখ্যক চর্যাগীতির রচয়িতা হিসেবে তাড়কের নাম উল্লিখিত হয়েছে। ''তাঞ্জুর'' তালিকায় যে মহাপণ্ডিত তারশ্রী ও উপাধ্যায় তারপাদের নাম পাওয়া যায়, তাড়ক তাঁদেরই মধ্যে কেউ হতে পারেন। টীকাকার তাঁকে সিদ্ধাচার্য বলেছেন: “সিদ্ধাচার্য হি তাড়ক।” পদটিতে সহজজ্ঞানের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। কবির বস্তুদৃষ্টির পরিচয়ও পাওয়া যায় এতে। নৌকা-পারাপার ও পারানির কড়ি খোঁজার ছবিটি মনোজ্ঞ।
===জয়নন্দী===
৪৬ সংখ্যক চর্যাগীতিটি জয়নন্দীর রচনা। তিনি ‘জঅনন্দি’ নামেও পরিচিত। লামা তারানাথের গ্রন্থে জয়নন্দীর নাম পাওয়া যায় না। গ্রানওয়েডেল কৃত সিদ্ধাচার্যদের নামের তালিকায় ‘জয়নন্দ’ নামটি পাওয়া যায়। টীকাকার তাঁকে পরম করুণা অর্জনের নিমিত্ত ‘অভিজ্ঞালাভী’ বলেছেন। প্রাপ্ত পদটিতে পরমার্থ চিত্তের অদাহ্য অপ্লাব্য অচ্ছেদ্য রূপের বর্ণনা এবং পরমার্থতত্ত্বে লক্ষণ কথিত হয়েছে। পদটি অলংকার-বর্জিত ও সোজাসুজি তত্ত্ববাহী।
===ঢেণ্ঢণপাদ===
৩৩ সংখ্যক পদটি ঢেণ্ঢণপাদের রচনা। তিনি চেণ্ঢনপা বা টেণ্টনপা নামেও পরিচিত। তিব্বতি ইতিহাসে ঢেণ্ঢণপাদের নাম নেই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, ভোট উচ্চারণে যিনি ধেতন, তিনিই ঢেণ্ঢণ। আবার ড. নির্মল দাশের মতে, টেণ্টনপা নামটি ছদ্মনাম। তাঁর পদটিতে যে ‘টেণ্টন’ অর্থাৎ ধূর্ত-সুলভ চাতুর্যের পরিচয় আছে, সেটিকে ড. দাশ কবির ব্যক্তিচরিত্রের নয়, বরং রীতিচরিত্রের পরিচায়ক বলেছেন। আগাগোড়া সন্ধ্যাভাষায় রচিত ঢেণ্ঢণপাদের চর্যাগীতিটিতে সন্ধ্যা-সংকেতে সংসারচিত্ত ও সহজচিত্তের স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে। পদে পদে পরস্পর-বিরোধী উক্তি এবং বিরোধালংকারের সমাবেশে পদটি দুরূহ হলেও উপভোগ্য। সাধক-কবির সূক্ষ্ম বস্তুদৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণ শক্তিও প্রশংসনীয়। পদটিতে গৌড়ের দরিদ্র পরিবারের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কবীরের একটি কবিতায় এবং সহদেব চক্রবর্তী ও লক্ষ্মণের ''অনিলপুরাণ'' ও ''গোর্খবিজয়'' কাব্যেও ঢেণ্ঢণপাদের পদটির প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়।
===তন্ত্রীপাদ===
তন্ত্রীপাদ রচিত ২৫ সংখ্যক চর্যাগীতিটি লুপ্ত। টীকা থেকে গানের শেষাংশের কিছু আভাস পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে যে, নৈরাত্মা যোগিনীর অভিষঙ্গে জাতিধর্ম লুপ্ত হয়ে যায়—হীন বৃত্তিধারী তন্ত্রী হন বজ্রধর। তিব্বতি অনুবাদ থেকে বোঝা যায় যে, গানটির বিষয় তাঁত বোনা। ‘তন্ত্রী’ নামটি জাতি-বৃত্তির স্মারক। ড. নির্মল দাশের মতে ‘তন্ত্রী’ ব্যক্তিনাম নয়, জাতিবাচক নাম। সিদ্ধাচার্যদের তালিকা ‘তান্তি’ শব্দটি আছে। জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ''বর্ণনরত্নাকর'' গ্রন্থে ‘তান্তিপা’ নামটি পাওয়া যায়।
==ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব==
সভ্যতার উষালগ্নে মানুষ ছিল অসহায়। তখন থেকেই সাহিত্যের সঙ্গে ধর্মের একটি গভীর সম্পর্ক সূচিত হয়। বিশ্বের সকল ভাষার সাহিত্যেই তাই দেখা যায়, মানবীয় অনুভূতিগুলি প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাত্মচেতনার আবরণে। প্রাচীন ভারতে বেদ, উপনিষদ্, মহাকাব্য, পুরাণ সর্বত্রই এই দৃষ্টান্ত দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন চর্যাপদও ছিল এক বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়ের সাধনসংগীত। পদগুলি রচনার ক্ষেত্রে পদকর্তারা বিশুদ্ধ সাহিত্যবোধের দ্বারা চালিত না হয়ে যে অন্যরকম সাধ্য ও সাধনপ্রণালীর কথাই বলতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যদিও তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, “যাঁহারা সাধনভজন করেন তাঁহারাই সেই কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই”, তবু প্রাচীন বাংলার ধর্মসাধনার অঙ্গ হিসেবে রচিত এই সংগীতের অর্থবোধ ব্যতীত প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সংগীত বা কাব্য ছিল সেযুগের ধর্মসাধনার অন্যতম সোপান। মঙ্গলকাব্য, নাথসাহিত্য, বৈষ্ণব পদাবলি, বাউল গান, শাক্ত পদাবলি প্রভৃতি মধ্যযুগের বিভিন্ন সাহিত্যধারাতেও এই একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। চর্যার সাহিত্যমূল্য যেমন পরিমাপযোগ্য, তেমনই এই গানগুলিতে অবলম্বিত ধর্মের গূঢ় তত্ত্বও প্রণিধানযোগ্য। আধুনিক গবেষকেরা বৌদ্ধধর্মের নানা পুথি অনুসন্ধান করে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম ও সহজ-সাধনার স্বরূপ নির্ণয়ে প্রয়াসী হয়েছেন। এই বিষয়ে বিদেশি গবেষকদের পাশাপাশি ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী ও ড. শশিভূষণ দাশগুপ্তের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. বাগচী বাংলায় ''বৌদ্ধধর্ম ও সাহিত্য'' এবং ইংরেজিতে ''স্টাডিজ ইন তন্ত্রজ'' এবং ড. দাশগুপ্ত ইংরেজিতে ''অবস্কিওর রিলিজিয়াস কাল্টস অ্যাজ ব্যাকগ্রাউন্ড অফ বেঙ্গলি লিটারেচার'' ও ''ইন্ট্রোডাকশন টু তান্ত্রিক বুদ্ধিজম'' গ্রন্থের রচয়িতা। পরবর্তীকালে সকল গবেষক এঁদের প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হয়ে সিদ্ধাচার্যদের নির্দেশিত ও অনুশীলিত ধর্মাচারের বিস্তৃত পরিচয় দিতে সমর্থ হয়েছেন।
গৌতম বুদ্ধের দেহত্যাগের পর তাঁর অনুগামীদের মধ্যে নানা মতভেদের কারণে বৌদ্ধধর্মে ভাঙন দেখা দেয়। ধর্মীয় আদর্শ পর্যালোচনার জন্য পরপর চারটি বৌদ্ধ মহাসংগীতি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রবল মতবিরোধের প্রেক্ষিতে বৌদ্ধসমাজ হীনযান ও মহাযান নামে দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রাচীনপন্থী হীনযানীদের ভাবনা তুলনামূলকভাবে কিছুটা সংকীর্ণ ছিল। তাঁরা ‘অর্হৎ’ অর্থাৎ নিজেদের মুক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। এঁদের মধ্যে পদ্ধতির ভিন্নতা অনুযায়ী শ্রাবকযান ও প্রত্যেকবুদ্ধযান নামে দুটি উপদল গড়ে ওঠে। শ্রাবকযানীরা বুদ্ধত্বলাভের দুরাশা পোষণ করতেন না, কেবল নির্ধারিত আচার-আচরণ পালন করে ধর্মের পথে পুণ্য অর্জনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। যাঁরা বুদ্ধত্বলাভের উচ্চাশা পোষণ করতেন, তাঁরা প্রত্যেকবুদ্ধযানী নামে পরিচিত ছিলেন। এঁদের নিরিখে মহাযানীদের আদর্শ ছিল অনেক উদার। তাঁরা গৌতম বুদ্ধের ন্যায় পরোপকারে জীবন উৎসর্গ করে বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভ এবং তার মধ্যে দিয়ে বুদ্ধত্ব অর্জনকেই আদর্শ বলে মনে করতেন। বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভের উপায় হল শূন্যতা ও করুণার অভিন্নতায় বোধিচিত্তের জাগরণ ঘটানো। বোধিপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে বুদ্ধত্বলাভের একমাত্র সোপান বোধিসত্ত্বাবস্থায় উন্নীত হওয়া সহজ হত। বোধিচিত্ত কী এবং কীভাবে তাকে জাগরিত করা যায়, সে আলোচনা আবশ্যক। মহাযানীদের মতে, জাগতিক কোনও বস্তুরই নিজস্ব কোনও ধর্ম বা স্বরূপ নেই। অথচ প্রত্যেকের যে প্রাতিভাসিক স্বরূপ দেখা যায়, তা অন্য কোনও স্বরূপের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং পার্থিব সকল বস্তুই প্রকৃত অস্তিত্বহীন। বস্তু সম্পর্কে এই জাতীয় জ্ঞানই শূন্যতাজ্ঞান। যখন সাধক জগৎ-সংসারে উক্ত শূন্যতাজ্ঞান এবং বিশ্বব্যাপী করুণাকে একত্র সংযুক্ত করেন, তখন যে মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটিই হল বোধিচিত্ত (“শূন্যতা করুণাভিন্নং বোধিচিত্তম্”)। সাধকের মনে বিশ্বব্যাপী করুণার উদয় ঘটলে তিনি কেবল নিজের মুক্তিপ্রয়াসী হন না, পরোপকারের মধ্যে দিয়ে জগতের সকলের মুক্তিপ্রয়াসী হয়ে ওঠেন। বস্তুত মহাযানী মতের জনপ্রিয়তার কারণ নিহিত হয়ে রয়েছে তাঁর আদর্শে, সকল জীবের মধ্যে বুদ্ধত্ব কল্পনায় এবং সদাচারী পন্থায়। বিশ্বের সকল জীবের মুক্তির জন্য এভাবে পরোপকারে আত্মোৎসর্গ করার কথা অন্য কোনও ধর্মমতে বিশেষ দেখা যায় না। মৈত্রী, করুণা, অহিংসা প্রভৃতি মানবিক সদ্বৃত্তির অনুশীলনও মহাযানকে সকলের কাছে গ্রহণীয় করে তুলেছিল। বৌদ্ধ পরিভাষায় উক্ত সদ্বৃত্তিগুলিকে বলা হয় ‘পারমিতা’। জগতের শূন্যস্বভাবে বিশ্বাস হেতু মহাযানীরা ‘শূন্যবাদী’ নামে পরিচিত হন। দার্শনিক মত বিচারের সূক্ষ্মতায় মহাযানীদের মধ্যেও দুটি উপদল ছিল। যাঁরা প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির মধ্যবর্তী পথ ধরে চলতে চাইলেন, তাঁরা ‘মধ্যমক’ শাখার অন্তর্গত ছিলেন। অন্যদিকে যাঁরা বস্তুসত্তাকে চিৎসত্তায় পরিণত করে চৈতন্যরূপী জ্ঞানের মধ্যেই সমস্ত জগৎকে ধারণ করতে চাইলেন, তাঁরা গণ্য হতেন যোগাচার শাখার দার্শনিক হিসেবে। মধ্যমক মতের প্রবর্তক নাগার্জুন। যোগাচার মতের সাধন-পথের দিকটিতে অসঙ্গ বিশেষ গুরুত্ব দিলেও এটির দার্শনিক দিকটি গড়ে ওঠে বসুবন্ধুর নেতৃত্বে। যোগাচারবাদীরা বলতেন, “সর্বং বুদ্ধিময়ং জগৎ”। এই কারণে এই মতটি ‘বিজ্ঞানবাদ’ নামেও পরিচিত ছিল।
মহাযান বৌদ্ধধর্মের যোগাচার তথা বিজ্ঞানবাদ থেকে সহজযানে এই মতের রূপান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক পদক্ষেপ। এর পিছনে বৈদিক ও পৌরাণিক হিন্দুধর্মের প্রভাব ছিল বলেই গবেষকদের ধারণা। অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্টের দ্বারা ভারতীয় সমাজে ব্রাহ্মণ্য সংস্কার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে নাস্তিক্যবাদী বৌদ্ধধর্মেও দেবদেবীদের অনুপ্রবেশ শুরু হয়। এই দুর্বলতার সুযোগে হিন্দু তন্ত্রের দেহকেন্দ্রিক যোগসাধনার প্রক্রিয়াটি যোগাচার মতে গ্রাস করে। ইতিপূর্বে যাঁরা ‘পারমিতা’ অর্থাৎ দান, শীল, ক্ষান্তি, বীর্য প্রভৃতি পরম গুণের অনুশীলনের মাধ্যমে বোধিসত্ত্বাবস্থা লাভের কথা বলতেন, তন্ত্রের প্রভাবে তাঁরাই মন্ত্রশক্তির প্রয়োগে আকাঙ্ক্ষিত বোধিসত্ত্বাবস্থাকে স্থায়ী করার কথা বললেন। এভাবে মন্ত্রের সংযোগে যোগাচার মত প্রথমে ‘মন্ত্রনয়’-এ পরিণত হল, তারপর এই পথেই নানাপ্রকার তান্ত্রিক গুহ্যাচার প্রবেশ করল এই মতে। বলা বাহুল্য, ভারতের বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মসাধনার মধ্যে তন্ত্রের আচারনিষ্ঠা প্রশ্নাতীত এবং এই মত বুদ্ধিগ্রাহ্য আলোচনা অপেক্ষা অধিক প্রাধান্য দেয় কার্যকরী আচার-পদ্ধতিকেই। তন্ত্রের হাত ধরে মন্ত্র, মণ্ডল ও মুদ্রা এভাবেই ঢুকে পড়ল শীল ও সদাচার-নির্ভর বৌদ্ধধর্মে। যৌনযোগাচার-কেন্দ্রিক সাধনপদ্ধতিও বাদ গেল না। মন্ত্রনয় বা মন্ত্রযান পরিচিত হল বজ্রযান নামে। কালক্রমে বজ্রযানেও সাধনার তারতম্যে কিছু উপবিভাগ গড়ে উঠল: ক্রিয়াতন্ত্র, যোগতন্ত্র, চর্যাতন্ত্র, অনুত্তরতন্ত্র। বজ্রযানের পরবর্তী পরিণতি কালচক্রযান ও সহজযান। চর্যাপদের প্রাপ্ত পুথিতে উক্ত তিন যানের প্রভাব থাকলেও বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সহজযানী বৌদ্ধ মত। তাই এই সহজযান মতটি আলোচনা করা প্রয়োজন।
মহাযানী মতের শূন্যের ধারণাটি পূর্বেই বজ্রে পরিণত হয়েছিল। এবার বজ্র পরিণত হল ‘সহজ’-এ। ''হেবজ্রতন্ত্র'' মতে, জন্মের সঙ্গেই যা উৎপন্ন হয় তাই ‘সহজ’ (“সহজাত্যং যদুৎপন্নং সহজং তৎ প্রকীর্তিতম্।”)। দেহ হল সেই সহ-জ উপাদান, যা জীব জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই প্রাপ্ত হয়। হিন্দু তন্ত্রেও দেহের প্রাধান্য স্বীকার করে বলা হয়েছে, “যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে দেহভাণ্ডে”। মহাযান মতে, শূন্যতা ও করুণার মিলনে যে বোধিচিত্তের উদ্ভব ঘটত, সহজযানে তা হল প্রজ্ঞা ও উপায়ের সংযুক্তিতে। প্রজ্ঞা ‘প্রকৃতি’ রূপে এবং উপায় ‘পুরুষ’ রূপে বিবেচিত হল এই মতে। তন্ত্র মতে, পরমার্থ সত্য দুই রূপে প্রতিভাত—নিবৃত্তিরূপ পুরুষ বা শিব এবং প্রবৃত্তিরূপ প্রকৃতি বা শক্তি। যখন শিব ও শক্তি অর্থাৎ পুরুষ ও প্রকৃতি অদ্বয়স্বরূপে মিলিত হয় তখন পরমার্থ সত্য লাভ করা যায়। এই মিথুন বা মিলিতাবস্থাই জীবের কাম্য। কারণ এই মিলন বিশ্বের সৃষ্টিপ্রবাহের কারণ। ''হঠযোগপ্রদীপিকা'' গ্রন্থে বলা হয়েছে, কায়াসাধনায় দেহস্থ বামগা নাড়ী ঈড়া ও দক্ষিণগা নাড়ী পিঙ্গলা যথাক্রমে শক্তি ও শিবের প্রতীক। এই দুই নাড়ীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ ও অপান বায়ুকে দেহমধ্যস্থিত নাড়ী সুষুম্নার পথে চালিত করে মস্তকে স্থিত সহস্রারে প্রেরণ করতে পারলেই অদ্বয় সিদ্ধি ঘটে। এই বিশুদ্ধ দার্শনিক বিষয়টির সঙ্গে পার্থিব নরনারীর যৌনমিলনকে এক করে ফেলা হয়েছে তন্ত্রের আর-একটি অপার্থ (malicious) ধারণায়। সেটি হল, প্রতিটি নারী ও পুরুষের মধ্যে শক্তি ও শিব বিদ্যমান থাকলেও শিব-প্রাধান্যে যে-কোনও পুরুষই শিব এবং শক্তি-প্রাধান্যে নারীমাত্রেই শক্তি। অতএব শিব-শক্তির মিলন বলতে প্রাকৃত নরনারীর যৌনসংযোগকেই বোঝায়। চর্যার সাধকেরা যে সাধনসঙ্গিনী নিয়ে সাধনায় অগ্রসর হতেন, তার পিছনে তন্ত্রের এই প্ররোচনা বিপুলভাবে কাজ করেছে।
সহজযানের পরম লক্ষ্য অদ্বয় মহাসুখের উপলব্ধি। মহাসুখের অপর নাম সহজ বা সহজানন্দ। নির্বাণ ও মহাসুখ এক্ষেত্রে প্রায় অভিন্ন। তাই সহজযানী সিদ্ধাচার্যেরা তাঁদের গানে বারবার মহাসুখের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। চর্যাকার লুইপাদ চিত্তকে দৃঢ় করে মহাসুখ পরিমাণ করতে নির্দেশ দেন। ভুসুকুপাদ বলেন, তিনি মিলনলীলার মধ্যেই সহজানন্দ মহাসুখকে উপলব্ধি করেছেন। কম্বলাম্বরপাদ জানান, বাম ও দক্ষিণকে চেপে সুষুম্নার সঙ্গে মিলিয়ে দিতেই মহাসুখ মিলন। এইভাবে কাহ্নপাদ, শবরীপাদ, দারিকপাদ প্রমুখ কবিদের রচনায় মহাসুখের স্বরূপ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তাতে বোঝা যায়, মহাসুখ বা সহজানন্দ একটি অচিন্ত্যনীয় মহাসুখকর অনুভব। এই সহজসুখ উৎপন্ন হয় যে স্থানে, সেই চরমকেন্দ্রটিকে কেউ জিনপুর, কেউ বা কামরূপ, আবার কেউ অনুত্তরধাম, পারিমকুল, কিংবা জোহ্নাবাড়ি ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করেছেন। মহাসুখের লক্ষ্যে পৌঁছাতে শাস্ত্রপাঠ, জপতপ, প্রব্রজ্যা বা সন্ন্যাসগ্রহণের মতো বাহ্যানুষ্ঠান ত্যাগ করার কথাও বলে হয়েছে। প্রজ্ঞা ও উপায়ের মিলিত রূপই যুগনদ্ধ বলে কথিত। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে ও ক্ষণে ভিন্ন ভিন্ন আনন্দের উদ্ভব ঘটে। সহজ মহাসুখের অপর লক্ষণ হল শূন্যতা। সাধকের অবস্থানভেদেও শূন্যতার প্রকারভেদ আছে। কায়, বাক্ ও চিত্তের সমবায়ে জীবের সত্তাবোধ। যখন এগুলির অস্তিত্ব শূন্য হয়ে পড়ে তখনই বোধিচিত্তের সর্বশূন্যতার প্রতিষ্ঠা ঘটে। এই অবস্থাকে চর্যাকারেরা নানা ভাবে প্রতীকায়িত করেছেন। কখনও বলেছেন শূন্য প্রান্তর, কখনও বা প্রতিবেশীহীন পর্বতের টিলা। বর্ণচিহ্নরূপহীন চরম শূন্যস্বভাব এই মহাসুখ। এর সর্বরিক্ত রূপ ভুসুকুপাদের ৪৯ সংখ্যক চর্যাটিতে প্রতীকী উপস্থাপনায় উজ্জ্বল। নির্দয় বঙ্গাল দেশ লুণ্ঠন করে সেখানে। পঞ্চপাটন, ইন্দ্রের মতো বিষয়-আশয় সব বিনষ্ট হয়, সোনা-রুপো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। চর্যার মহাসুখের ধারণাকে নানা মাত্রায় দেখা সম্ভব। কখনও তা মিলনজনিত একটি সহজ আনন্দঘন অবস্থা, আবার কখনও তা সর্বশূন্যের সার্থক পরিণাম। যেহেতু বিজ্ঞানবাদ থেকেই এর সূচনা, তাই এর মধ্যে নিরালম্ব বিশুদ্ধ বিজ্ঞানকেও পাওয়া যায়। এবং এই মহাসুখবৃক্ষের ফল হল মহাকরুণা। দেহের মধ্যে চারটি অবস্থান কল্পনা করে চক্র, ক্ষণ, আনন্দ, শূন্যতা ইত্যাদি ভেদে মহাসুখের ক্রমোৎকর্ষের বিভিন্ন অভিধা কল্পনা করা হয়েছে। নিচের ছকটিতে তারই আভাস দেওয়া হল:
{| class="wikitable"
|-
| মস্তক || মহাসুখচক্র || সহজানন্দ || বিলক্ষণ || সর্বশূন্য || নৈরাত্মা || চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত
|-
| হৃদয় || ধর্মচক্র || বিরমানন্দ || বিমর্দ || মহাশূন্য || চিত্ত || গ্রাহ্য ও গ্রাহক শূন্য
|-
| কণ্ঠ || সম্ভোগচক্র || পরমানন্দ || বিপাক || অতিশূন্য || বাক্ || গ্রাহক শূন্য
|-
| নাভি || নির্মাণচক্র || প্রথমানন্দ || বিচিত্র || শূন্য || কায় || গ্রাহ্যশূন্য
|}
সাধ্য এই মহাসুখকে সাধক কীভাবে লাভ করেন অর্থাৎ চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত সাধনার পথটি কী তাও আলোচনা করা হয়েছে। চর্যার হেঁয়ালিপূর্ণ রহস্যময় ভাষা ভেদ করে যেটুকু বোঝা গিয়েছে তা হল, এই ঈড়া ও পিঙ্গলা নাড়ী যখন মুক্ত অবস্থায় থাকে তখন যাবতীয় সুখদুঃখের অনুভূতি জীবের অস্তিত্বকে মথিত করে। আর যখন পরস্পর সংযুক্ত হয় এবং মধ্যনাড়ী সুষুম্নার পথে চালিত হয়, তখন বাহ্যেন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ হয়ে অন্তর্লোক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। সাংবৃতিক বোধিচিত্ত এইভাবে পারমার্থিক বোধিচিত্তে পরিণত হওয়ার অবস্থায় পৌঁছায়। সম্পূর্ণ মননপ্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল এই সাধনপথটি কবিরা রূপকের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। এই রূপক কোথাও নৌকা বাওয়ার, কোথাও ইঁদুর মারার, কোথাও মত্ত হাতির পদ্মবন বিনষ্ট করার, আবার কোথাও তুলো ধোনা কিংবা মদ চোলাইয়ের। পুদ্গলচিত্তকে নিঃস্বভাবীকৃত করতে পারলেই জিনপুরে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। ডোম্বীপাদ তাঁর একটি পদে এই নাড়ীদ্বয় ও মধ্যপথে তাদের প্রবেশ করানোর বিষয়টি প্রতীকী আভাসে ব্যঞ্জিত করে তুলেছেন:
<poem>
:: গঙ্গা জউনা মাঝেঁ রে বহই নাঈ।
:: তঁহি বুড়িলী মাতঙ্গী পোইআ লীলেঁ পার করেই।।...
:: চন্দ সূজ্জ দুই চকা সিঠি সংহার পুলিন্দা।
:: বাম দাহিন দুই মাগ ন রেবই বাহতু ছন্দা।।
</poem>
এমন বহু পদেই কায়াসাধনার তত্ত্বটি সুন্দরভাবে প্রকাশিত। কাহ্নপাদের একটি পদে কাপালিক যোগীর সাধনায় দেহপ্রাধান্য সরাসরি উচ্চারিত: “দেহ নঅরী বিহরই একাকারেঁ”। চর্যাগীতিগুলিতে গুরুবাদের প্রসঙ্গও এসেছে। গুহ্য সাধনপ্রক্রিয়া মাত্রেই গুরুগম্য জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিশেষত তান্ত্রিক আচারে অনভিজ্ঞ বালযোগীকে দেহকেন্দ্রিক কৃত্যাদিতে সাহায্য করেন গুরু। তাই চর্যাকারেরা বলেছেন: “বাহতু কামলি সদ্গুরু পুচ্ছি”, কিংবা “সদ্গুরু বোহেঁ জিতেল ভববল”, অথবা “সদ্গুরু পাঅপএঁ জাইব পুনু জিনউরা” ইত্যাদি। কোথাও আবার গুরুর অপ্রয়োজনীতা ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে “গুরু বোব সিসা কাল”। আসলে বিশুদ্ধ তত্ত্বকথায় গুরুর ভূমিকা ন্যূনতম, কিন্তু তান্ত্রিক গুহ্যাচার পালনে গুরুই পথনির্দেশক। চর্যায় সাধকের নানা অবস্থার বর্ণনা আছে। যখন তিনি বিষয়বদ্ধ তখন একরকম, সাধনার প্রাথমিক স্তরে অন্যরকম, ক্রমশ প্রবৃত্তিনাশে তাঁর স্বভাব পরিবর্তিত, মস্তক বা উষ্ণীষকমলে যখন তাঁর চিত্তের অবস্থান তখন সে অনুভূতি ভিন্ন ধরনের, আবার সহজানন্দ লাভের পর সিদ্ধ সাধকের অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। প্রতিটি স্তরে সাধক এক-একজন শক্তি বা সাধনসঙ্গিনীর অস্তিত্ব অনুভব করেন। এঁরাই সংকলিত পদগুলিতে শবরী, ডোম্বী, চণ্ডালী, যোগিনী, নৈরামণি ইত্যাদি নামে খ্যাত। সম্ভোগচক্রের নৈরামণি মহাসুখচক্রে উন্নীত হয়ে সহজসুন্দরীতে পরিণত হন। এইভাবে প্রেমের রূপকে সাধনকথা পরিবেশিত হয়েছে এখানে। বস্তুত এই পথ ধরেই সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের অবশ্যম্ভাবী পতনের বীজও অঙ্কুরিত হয়েছিল। মূলত ব্যভিচারের কারণে বৃহত্তর সমাজ সেই আমলে এদের বর্জন করতে চেয়েছিল। তুর্কি আক্রমণের পর মুণ্ডিতমস্তক বৌদ্ধ সহজিয়ারা ‘নেড়া-নেড়ী’ নামে অভিহিত হয়ে সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিনযাপন করতে থাকেন। পরবর্তীকালে নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্র এঁদের বৈষ্ণবধর্মের দীক্ষিত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। বীরভদ্রের বৈষ্ণব সাধনায় কিছুটা সহজিয়া প্রভাব পড়েছিল বলে গবেষকদের ধারণা।
==ভাষা==
চর্যাপদের ভাষাপ্রসঙ্গটি বিতর্কিত। বিশেষত চর্যাপদ কোন ভাষায় রচিত তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্পাদিত গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পরই। উক্ত বইটি ছিল চারটি পুথির সংকলন: মুনিদত্তের সংস্কৃত টীকা সহ চর্যাপদের পুথি, সরহপাদ ও কাহ্নপাদের ''দোহাকোষ'' পুথিদ্বয় এবং ''ডাকার্ণব''। শাস্ত্রী মহাশয় চারটি পুথিই হাজার বছরের পুরোনো বাংলা ভাষার লেখা বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু এই মত সবাই মেনে নেননি। বিতর্কের সূচনা সেই থেকেই। আসলে চর্যাপদ যে সময়ে রচিত হয়েছে, ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বের বিচারে সেই সময়টি নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির উদ্ভবকাল। সবে তখন অপভ্রংশের গর্ভ থেকে বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া, মগহি, অওধি, ভোজপুরি প্রভৃতি ভাষা ভূমিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। একই জঠরে বেড়ে ওঠার ফলে এগুলির মধ্যে ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক ও শব্দভাণ্ডারগত পার্থক্য খুবই কম। গবেষকদের বিভ্রান্তির কারণ সেটাই। ভাষা সাবালক হলে তার এমন কিছু নিজস্ব চিহ্ন প্রকাশিত হয়, যেগুলি ভাষার প্রভেদকারী বৈশিষ্ট্য বলে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় তা ঘটার আগেই চর্যাপদ রচিত হয়েছে, ফলে সংশয়ের জাল সহজেই বিস্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ১৯২০ সালে ভাষাতাত্ত্বিক বিজয়চন্দ্র মজুমদার ''বঙ্গবাণী'' মাসিক পত্রিকায় কয়েকটি প্রবন্ধে এবং ''হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল ল্যাংগুয়েজ'' গ্রন্থে বলেন যে, চর্যাগীতিগুলি পুরনো বাংলা ভাষায় রচিত হয়নি, এতে দু-চারটি বাংলা, ওড়িয়া ও অসমিয়া পদ থাকলেও মূল ভাষাছাঁদ হিন্দির। ১৯২১ সালে জার্মান ভাষাতত্ত্ববিদ হারমান জেকবি তাঁর সম্পাদিত ''সনৎকুমারচিতম্'' গ্রন্থের ভূমিকায় চর্যাপদের ভাষাকে “All Bengalishch” বা প্রত্ন-বাংলা বলে নির্দেশ করেন, কিন্তু কোনও খাঁটি যুক্তি তিনি দিতে পারেননি। ১৯২৬ সালে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত ''দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ'' গবেষণাগ্রন্থে চর্যাগীতির ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ, ছন্দ, বাগ্বিধি ইত্যাদি বিচার করে প্রথম একটি সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। তিনি স্পষ্ট জানালেন যে, ''দোহাকোষ'' দুটির ও ''ডাকার্ণব'' পুথির ভাষা শৌরসেনী অপভ্রংশ, কিন্তু চর্যাগানের ভাষা আদিতম বাংলা। অবশ্য এই বাংলায় কিছু পশ্চিমা অপভ্রংশ এবং দু-চারটি ওড়িয়া-মৈথিলী শব্দ মিশে আছে। তাঁর তীক্ষ্ণ, শক্তিশালী ও বাস্তবসিদ্ধ যুক্তিগুলি মেনে নিতে কোনও অসুবিধাই হল না। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও তাঁর ''Les Chants Mystique de Saraha et de Kanha'' গবেষণাগ্রন্থে সুনীতিকুমারের মতটি মেনে নেন।
অন্যান্য ভাষার গবেষকেরাও অবশ্য চর্যাপদ তাঁদের ভাষায় রচিত বলে দাবি করেছিলেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন, জয়কান্ত মিশ্র ও কাশীপ্রসাদ জয়সওয়াল বলেন, চর্যাপদের ভাষা বিহারি এবং সিদ্ধাচার্যদের অধিকাংশই মগধ অঞ্চলের বাসিন্দা। ১৯৩৫ সালে বরোদায় অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সের সপ্তম অধিবেশনে উক্ত তিন হিন্দিভাষী পণ্ডিত চর্যাপদের উপর বাংলা ভাষার দাবিকে অস্বীকার করেন। চর্যায় ‘জো’, ‘সো’, ‘তো’, ‘মই’ প্রভৃতি সর্বনাম, ‘অইসন’, ‘জইসন’, ‘ঐছে’, ‘তৈছে’, ‘জিস’, ‘তিস’, ‘জসু’, ‘তসু’ প্রভৃতি সর্বনামীয় ক্রিয়াবিশেষণ, ‘রাতি পোহাইলী’-র ন্যায় ক্রিয়াপদের স্ত্রীলিঙ্গীকরণে হিন্দি ও মৈথিলীর বিশেষত্ব আছে ঠিকই, কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও দেখার যে এই দুই ভাষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ‘-ক’, ‘-কো’ বিভক্তি যোগে ষষ্ঠীর পদগঠন এবং ‘-অল’, ‘-অব’ বিভক্তি যোগে যথাক্রমে অতীত ও ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ গঠনের দৃষ্টান্ত চর্যাপদে নেই। ভাষাগত সাদৃশ্যের কারণে ওড়িয়া ও অসমিয়া ভাষার দাবিও চর্যাপদের উপর আছে। যেমন, ওড়িয়াতে সংস্কৃত প্রভাবজাত বর্তমান কালবাচক ক্রিয়াপদে ‘-অন্তি’ বিভক্তির ব্যবহার চর্যায় দেখা যায়: “নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী” কিংবা “ভনন্তি মহিণ্ডা”। কিন্তু এটাও লক্ষণীয় যে, ‘-রু’ দিয়ে অপাদানের পদগঠন, সর্বত্র ‘-র’ বিভক্তি দ্বারা ষষ্ঠীর পদগঠন, ‘-মানে’ পরসর্গ যোগে বহুবচনের পদনির্মাণ, যা ওড়িয়া ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ, তার একটি দৃষ্টান্তও চর্যাগানে পাওয়া যায় না। অসমিয়া ভাষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দু-একটি ক্ষেত্রে অসমিয়া ভাষার ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য দেখা গেলেও কয়েকটি বিশিষ্ট ও প্রধান ক্ষেত্রে চর্যাগীতির বাক্যগঠন রীতি অসমিয়া ভাষার তুলনায় পৃথক। চর্যার ভাষায় শৌরসেনী অপভ্রংশের লক্ষণ ও শব্দের ব্যবহারও স্বাভাবিক। কারণ, মাগধী প্রাকৃত থেকে জাত মাগধী অপভ্রংশ প্রাত্যহিক ব্যবহারে প্রচলিত থাকলেও শিষ্ট সাহিত্যের ভাষা হিসেবে অষ্টম-নবম শতকে ব্যবহৃত হত শৌরসেনী অপভ্রংশ। চর্যাকারেরা যে যুগের মানুষ ছিলেন সেই যুগের বাংলার ভৌগোলিক সীমা আজকের তুলনায় অনেক বেশি প্রসারিত ছিল। সেযুগের বাংলা-বিহারের বৌদ্ধ সংঘগুলিতে ভারতের নানা প্রান্তের মানুষ একত্র হতেন শিক্ষা ও ধর্মলাভের উদ্দেশ্যে। ভাষা হিসেবে শৌরসেনী অপভ্রংশের গ্রহণযোগ্যতা সেযুগে ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু চর্যাপদে বাংলা ভাষার লক্ষণ, যা ত্রিস্তরীয় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেও আধুনিক যুগেও সমানভাবে উপস্থিত, তা এমনভাবে সেঁটে রয়েছে যে তার পরিমাণগত প্রাচুর্যে একে অবশ্যই প্রাচীন বাংলা ভাষা বলে চিহ্নিত করা যায়। বিশিষ্ট গবেষকদের আলোচনার সারাৎসারটুকু উপস্থিত করে বাংলার এই বিশিষ্ট লক্ষণগুলিকে বুঝে নেওয়া যেতে পারে:
; (ক) ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
# সংস্কৃত বর্ণমালা থেকে ঈ, ঊ, ঋ, ৯ প্রভৃতি বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় এলেও বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনির উচ্চারণে হ্রস্ব-দীর্ঘ পার্থক্য রক্ষিত হয় না। চর্যার বানানেও এই বিশেষ লক্ষণটি দেখা যায়। যেমন, চিএ, চিঅ; হোহী, হোহি; লুই, লূই; বোহী, বোহি ইত্যাদি।
# স্বরবর্ণের মতো ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ষেত্রেও দেখা যায় স্বতন্ত্র ধ্বনিজ্ঞাপক চিহ্ন থাকলেও বাংলায় সেগুলির উচ্চারণে বিশেষ পার্থক্য নেই। জ-য, ণ-ন, শ-ষ-স ইত্যাদি ক্ষেত্রে উচ্চারণে কোনও পার্থক্য দেখা যায় না। চর্যাতেও স্বভাবতই এইসব বর্ণের লিপি-বিপর্যয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেমন, জোইনি, যোইনী; যাই, জাই; নাবী, ণাবী; শবর, সবর; শূন, সূণ; ষিআলা, শিয়ালী ইত্যাদি।
# অর্থপার্থক্য সৃষ্টি কিংবা বিশেষ কোনও আবেগ প্রকাশের জন্য বাংলায় ব্যঞ্জনধ্বনির দ্বিত্ব উচ্চারণ করা হয়। চর্যার ভাষায় তার ছাপ সুস্পষ্ট। যেমন, ফাড্ডিঅ, নিঅড্ডী, চ্ছাড়ী ইত্যাদি।
; (খ) রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
# বাংলা ভাষার সমস্ত কারকে ‘-এ’ বিভক্তির প্রয়োগ লক্ষিত হয়। চর্যার ভাষাতেও ‘-এ’ বা ‘-এঁ’ বিভক্তির এইরকম প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন, কর্তৃকারকে—কুম্ভীরে খাঅ; কর্মকারকে—গঅবরেঁ তোলিআ; করণকারকে—কুঠারে ছিজঅ; সম্প্রদান কারকে—ধামার্থে চাটিল; অপাদান কারকে—জামে কাম কি কামে জাম; অধিকরণ কারকে—ঘরে সান্ধঅ।
# আধুনিক বাংলায় যেমন কর্ম-কর্তৃ বাচ্য গঠন করা হয়ে থাকে, চর্যাতেও অবিকল তারই প্রতিরূপ দেখা যায়। যেমন, নানা তরুবর মৌলিল রে, ডমরু বাজএ বীরনাদে।
# বাংলা ভাষার বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ চর্যাতেও বিভিন্ন কারকে দেখা যায়। যেমন, তৃতীয়াতে ‘-তেঁ’ বিভক্তি (সুখ দুখেতেঁ নিচিত মরিঅই); চতুর্থীতে ‘-রেঁ’ বিভক্তি (সো করউ রস রসানেরে কংখা); ষষ্ঠীতে ‘-র’/‘এর’ বিভক্তি (সাঙ্কমত চড়িলে; দুধিল দুধ কি বেণ্টে ধামায়) ইত্যাদি।
# বাংলার নিজস্ব কিছু অনুসর্গ (মাঝে, অন্তরে, সঙ্গে ইত্যাদি) আছে। চর্যায় এগুলির প্রয়োগও অপ্রতুল নয়। যেমন, কোড়ি মাঝেঁ একু; তোহার অন্তরে; দুজ্জন সাঙ্গে অবসরি জাই ইত্যাদি।
# স্বাধীন অব্যয় রূপে উপসর্গের প্রয়োগেও বাংলার বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। উপসর্গগুলি অব্যয় হিসেবে বিশেষ্যের পূর্বে বসে বিচিত্র অর্থপ্রকাশে সাহায্য করে। চর্যাপদেও এই লক্ষণ দৃশ্যমান। যেমন, <u>নি</u>সারা, <u>বি</u>আলী, <u>স</u>চ্চড়ে, <u>বি</u>মনা ইত্যাদি।
# আধুনিক বাংলায় ‘সে’ শব্দটি মুখ্যত সর্বনাম হিসেবে, আবার কখনও বা বাক্যালংকার অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্য ভাষায় শব্দটি বসে বিশেষণ ও সর্বনাম হিসেবেই। বাক্যকে অলংকৃত করার উদ্দেশ্যে বাংলা ছাড়া আর কোথাও ‘সে’ বসে না। চর্যায় ‘সে’ ও একই অর্থে ‘সো’-এর ব্যবহার দেখা যায় যত্রতত্র। যেমন, এক সে শুণ্ডিনী, এক সো পদুমা, গুরু বোস সে সীসা কাল ইত্যাদি।
; (গ) ক্রিয়াপদের বৈশিষ্ট্য
# বিভিন্ন ক্রিয়ার কাল গঠনে ধাতুরূপে বিশিষ্ট বিভক্তির প্রয়োগ করা হয় বাংলায়। পুরুষ ও বচন ভেদেও তা পৃথক। ভবিষৎকালে ‘-ইব’ বিভক্তি প্রযুক্ত হয় উত্তম পুরুষে, অতীতকালে প্রথম পুরুষে বসে ‘-ইল’ বিভক্তি এবং অসমাপিকায় ‘-ইয়া’ বা ‘-ইলে’ ইত্যাদি প্রযুক্ত হয়। এইসব লক্ষণ চর্যার ভাষাতেও পাওয়া যায়। যেমন, জই তুম্হে লোঅ হে হেইব পারগামী; কাহ্নু কহি গই করিব নিবাস; কানেট চৌরি নিল অধরাতি; সসুরা নিদ গেল; মাঅ মারিআ কাহ্ন ভইঅ কবালী; সাঙ্কমত চড়িলে ইত্যাদি।
# বাংলা ক্রিয়াপদের অপর বিশেষত্ব হল যৌগিক বা সংযোগমূলক ক্রিয়াপদ গঠন। দুভাবে এই পদ গঠিত হয়। অসমাপিকার সঙ্গে সমাপিকার সংযোগে অথবা বিশেষ্য বা বিশেষণ পদের সঙ্গে সমাপিকার সংযোগে। কেউ কেউ এই জাতীয় ক্রিয়াপদকে বাংলা ভাষার দুর্বলতা বলেও নির্দেশ করেছেন। চর্যাপদেও আছে—গুণিআ লেহুঁ; টুটি গেল, ধরণ ন জাই; নিদ গেল; কহন ন জাই; ভান্তি ন বাসসি; ছই ছোই যাই ইত্যাদি।
# বাংলা ভাষায় বিশিষ্ট ভঙ্গির জন্ম হয়েছে বাক্যে ক্রিয়াপদের বাহ্যিক অনুপস্থিতি থেকে। এই লক্ষণ বাংলা গদ্যের সূচনাতেই লক্ষ্য করা যায়। চর্যাপদের ভাষাতেও এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, কায়া তরুবর পঞ্চ বি ডাল; ছড়গই সঅল সহাবে সুধ; গন্ধ পরস রস জইসো তইসো।
# বাংলার বিভিন্ন বাগ্বিধির ব্যবহারেও চর্যাপদের ভাষা সহজে অলংকৃত। এইসব বিশিষ্টার্থক বাক্যরীতি পরে কালবাহিত হয়ে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। যেমন, আপনা মাংসে হরিণা বৈরী, হাথেরে কাঙ্কন মা লেউ দাপন, ভান্তি ন বাসসি জাংতে, তু লো ডোম্বী হাঁউ কপালী, বর-সুণ গোহালী কিমো দুঠ বলন্দেঁ ইত্যাদি।
এইসব বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, “The language of the charyas is the genuine vernacular of Bengal at its basis.” চর্যাপদের উপর অন্যান্য ভাষার দাবি নিরপেক্ষভাবে বিচার করে এটুকুই বলা যায় যে, চর্যাগীতিতে বিক্ষিপ্তভাবে ওড়িয়া, অসমিয়া, হিন্দি ও মৈথিলী শব্দ ছড়িয়ে থাকলেও এর মূল প্রকাশ্য ছাঁদটিই ছিল মাগধী অপভ্রংশের গুটি কেটে বেরিয়ে আসা সদ্যোজাত বাংলা ভাষার। তখনও তার পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত না হলেও তার নিজস্বতার অস্ফুট চিহ্নগুলি চর্যাপদের শারীরিক গড়নে ঠিকই ধরা পড়ে।
===সন্ধ্যাভাষা===
চর্যাপদের ভাষার আরও একটি দিক রয়েছে। ভাষা ভাবপ্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলেও সব ভাষা একইভাবে সংযোগ স্থাপন করে না। যে ভাষা ইঙ্গিতপ্রধান তার চালচলন আলাদা, আবার যে ভাষা ধ্বনিনির্ভর ও বাচ্যার্থপ্রধান তার আবেদন ভিন্ন প্রকার। ভাষাতাত্ত্বিকেরা ভাষার দেহময় রূপের কথাও বলেছেন, আবার প্রায়-ভাষার (para-language) কথাও বলেছেন। চর্যাপদের ভাষা-সংক্রান্ত আলোচনায় এইসব ভাবনা এই কারণেই প্রাসঙ্গিক যে, এখানে কোনও বক্তব্য স্পষ্টভাবে উপস্থিত করার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত জটিল পথ অবলম্বন করা হয়েছে। ফলে চর্যাকার ও পাঠকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে একটি প্রাচীর। এটা বোধহয় চর্যাকারদের অভিপ্রায়সিদ্ধ ধরন। কারণ, তাঁরাও কোনও কারণে চাইতেন এইসব গানে পরিবেশিত তত্ত্ব ও তথ্য অল্পসংখ্যক লোকের কাছেই পৌঁছাক। ঢেণ্ঢণপাদ যেমন বলেন, “ঢেণ্ডনপাএর গীত বিরলে বুঝঅ”। কুক্কুরীপাদও তাঁর চর্যার ভণিতার শেষ চরণে স্বীকার করেছেন যে, কোটির মধ্যে গুটিকতক লোকই তাঁর বক্তব্য বুঝবেন: “কোড়ি মাঝেঁ একু হিঅহিঁ সমাইউ”। এইভাবে মুষ্টিমেয় পাঠক নির্বাচনের কারণ অনুসন্ধান করতে হলে চর্যাপদের নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্যময় আচারের দিকে দৃষ্টি দিতে হয়। তন্ত্রও এমনই ‘শাম্ভবী বিদ্যা’, যা ‘গোপ্যা কুলবধূরিব’। সহজযানীরা তন্ত্রের কায়াসাধনাকে প্রাধান্য দেওয়ায় সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁদের সাধনতত্ত্বটিকে। কেবল দীক্ষিত ব্যক্তিদের কাছেই তাঁরা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সেই সাধনার প্রণালী ও অধ্যাত্মচেতনার প্রকৃত রহস্যকে। তাই তাঁরা এমন একপ্রকার সাংকেতিক ভাষা অবলম্বন করেছিলেন, যে ভাষার সংকেত শুধু সংশ্লিষ্ট ধর্মের সাধকেরাই বুঝবেন, অন্যরা নয়। এই সংকেতপূর্ণ ভাষার তাঁর অন্য নামও দিয়েছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই ভাষার নাম ‘সন্ধ্যাভাষা’। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভূমিকায় সন্ধ্যাভাষার উল্লেখ করে এই ভাষার প্রকৃতি সম্পর্কে লিখেছিলেন, “আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না।” ফারসি গবেষক ইউজিন বুর্নফ ''সদ্ধর্ম্পুণ্ডরীকসূত্র'' গ্রন্থের অনুবাদের ভূমিকায় সন্ধ্যাভাষাকে বলেছেন “Language Enigmatique” বা প্রহেলিকাময় ভাষা। আসলে রহস্যময় হেঁয়ালির ভাষাতে তত্ত্বপ্রকাশের রীতি খুবই প্রাচীন। বেদ-উপনিষদেও স্থানে স্থানে হেঁয়ালি ব্যবহার করা হয়েছে। গোপনীয়তার কারণে এবং গুহ্য তত্ত্ব বহন করার জন্য এই ভাষাকে এইচ. কার্ন মন্ত্রের সগোত্র বলে মনে করেছেন। অবশ্য প্রকৃতি অনুসারে সন্ধ্যাভাষাকে ঠিক মন্ত্র বলা চলে না। কারণ অলৌকিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা এই ভাষার আছে, এমন দাবি কোথাও করা হয়নি।
চর্যার আভিপ্রায়িক সাংকেতিক বচনের নাম সন্ধ্যাভাষা। এর উল্লেখ প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যায়। শব্দটির বানান, ব্যুৎপত্তি ও অর্থ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। মহাযানী ধর্মগ্রন্থে ও সেগুলির ভাষ্যে সর্বত্র ‘সন্ধ্যা’ বানানই দেখা যায়। কিন্তু বিধুশেখর শাস্ত্রী এই বানানকে লিপিকরের প্রমাদ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, যথার্থ বানানটি হল ‘সন্ধা’। ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, চর্যাপদের ভাষার মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন অর্থ রয়ে গিয়েছে। সেই লুক্কায়িত তাৎপর্যই আভিপ্রায়িক বচন (Intentional language)। এটি শব্দের বাচ্যার্থ থেকে পৃথক। তাঁর কথায়, “Abhiprayika means that it is intended to imply or suggest something different from what is expressed by the words.” অর্থাৎ এই ভাষাতে রয়েছে কোনও নিগূঢ় ব্যঞ্জনা বা ভিন্ন অর্থের অভিসন্ধি। যে শব্দের মূল ব্যুৎপত্তি ছিল ‘সম্-✓ধৈ+আ’, সেটি বিধুশেখরের ভাষ্যে পরিবর্তিত হয়ে হল ‘সম্-[]✓ধা+ঙ’। এই মত সমর্থন করেন ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীও। এঁদের দুজনেরই মতে, সন্ধ্যাভাষা অবশ্যই সাংকেতিক ভাষা, যা শব্দগুলির নিজস্ব আভিধানিক অর্থ পরিহার করে ভিন্নতর অর্থের ব্যঞ্জনা এনে দেয় এবং সেই অর্থ কোটির মধ্যে গুটিকতকের হৃদয়েই প্রবেশ করে। চর্যায় গুরুর ভূমিকা এখানেই। তিনি সেই শ্লিষ্ট অর্থটি শিষ্যের কাছে পরিস্ফুট করে তোলেন।
বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীর বক্তব্য কিছুটা সঠিক হলেও সমস্যা অন্যত্র। তাঁরা বলেছেন, লিপিকরের প্রমাদে ‘সন্ধা’ শব্দটি ‘সন্ধ্যা’ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রাচীন পুথিগুলি লক্ষ্য করলে প্রায় সর্বত্রই ‘সন্ধ্যা’ বানানই পাওয়া যায়। একটি বিশেষ বানানে সমস্ত লিপিকর প্রমাদগ্রস্থ হবেন, এটা নিতান্তই কষ্ট-কল্পনা। তাছাড়া মুনিদত্ত তাঁর টীকায় বারবার 'সন্ধ্যাবচন’-এর কথা বলেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রাকৃতিক সন্ধ্যার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অর্থের ক্ষেত্রে যে আলো-আঁধারি প্রেক্ষাপটের কথা বলেছেন, তার গুরুত্ব এখানেই। শ্লিষ্ট শব্দে একটি জানা অর্থ বা বাচ্যার্থ সংযুক্ত থাকে, অন্যটি হয় লক্ষণার্থ বা ব্যঞ্জনার্থ। হয়তো সিদ্ধাচার্যগণ তাঁদের ব্যবহৃত ভাষার এই দ্বিবিধ স্বভাব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং সেই তাৎপর্যে ‘সন্ধ্যা’ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কেউ কেউ ‘সম্-✓ধা+আ’ থেকে নিষ্পন্ন শব্দটির “সম্যক ধ্যায়তে অস্যাম্ ধ্যায়তে ইতি সন্ধ্যা” সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। অর্থাৎ, যে অর্থ অনুধ্যান করে বুঝতে হয়, তাই-ই সন্ধ্যা। এটিও সত্য হতে পারে। তবে সাহিত্যিক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে অর্ধকল্পিত এক সন্ধি অঞ্চলের (আর্যাবর্ত ও পূর্ব ভারতের সন্ধিস্থল বীরভূম-সাঁওতাল পরগনার পশ্চিমাঞ্চল) ভাষা বলে সন্ধ্যাভাষাকে নির্দেশ করেছেন, তার পিছনে কোনও বলিষ্ঠ যুক্তি নেই।
চর্যাগানে সন্ধ্যাভাষার প্রয়োগকৌশল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সব গানেই যে আগাগোড়া এই হেঁয়ালিপূর্ণ আভিপ্রায়িক বচন ব্যবহার করা হয়েছে তা নয়। কয়েকটি গান আদ্যোপান্ত সন্ধ্যা শব্দে রচিত। যেমন, ২ ও ৩৩ সংখ্যক চর্যা। আবার কয়েকটি গানের অংশবিশেষ সন্ধ্যাভাষিত, কোনও বিচ্ছিন্ন শব্দ হয়তো সন্ধ্যা অর্থে প্রযুক্ত। আবার এমন গানও দুর্লভ নয়, যেখানে সন্ধ্যাশব্দের ব্যবহার একেবারেই নেই। যেমন, ৪০ ও ৪২ সংখ্যক চর্যা। নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, যে সমস্ত গানে দার্শনিকতার বাহুল্য, সেখানে সন্ধ্যাভাষা তেমন প্রযুক্ত হয়নি। কিন্তু তান্ত্রিক কৃত্যের নির্দেশ সমৃদ্ধ পদগুলিতে সন্ধ্যাবচনের বাহুল্য লক্ষিত হয়। হয়তো আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর বা কুরুচিপূর্ণ কয়েকটি বিষয় গোপন করার জন্যই সন্ধ্যাভাষার আড়াল খুঁজেছিলেন চর্যাকারেরা। মুনিদত্তের টীকা রচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই লুকানো অর্থটিকে পরিস্ফুট করা। তাই তিনি বারবার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ‘সন্ধ্যাভাষয়া’, সন্ধ্যাবচনেন’, ‘সন্ধ্যাসংকেতম্’, ‘সন্ধ্যাজ্ঞানেন’, ‘সন্ধ্যয়া’ ইত্যাদি বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন। মধ্যযুগের সন্তসাধকদের গানেও ভাষার এই হেঁয়ালিপূর্ণ ভাব লক্ষ্য করা যায়। আসলে সিদ্ধাচার্য কিংবা সন্তসাধক সকলেই ছিলেন বাক্পথাতীত এক অ-কথনবেদ্য ভাবানুভূতির শরিক। তাঁর কথা বলেছেন রূপক-প্রতীকের ঘেরাটোপে। মরমিয়া সাধক মাত্রেরই স্বভাবধর্ম এই। এঁদের সম্পর্কে সেন্ট মার্টিন যথার্থ বলেছেন, “All mystics speak the same language for they come from the same country.” সন্ধ্যাভাষা এই বিশেষ ‘দেশ’-এরই ভাষা। স্বসংবেদ্য, অচিন্ত্য তত্ত্বের রূপময়তা ফুটিয়ে তোলার জন্য রূপক-প্রতীকের আয়োজন, তেমনই মহাসুখের স্বরূপ, মহাসুখ লাভের পথ, লাভের পর যোগীর মানসিক অবস্থা, পারমার্থিক ও সাংবৃতিক বোধিচিত্তের প্রকৃতি ইত্যাদি বর্ণনা করতে গিয়ে প্রায় প্রতি পদে সন্ধ্যাভাষার আশ্রয় নিয়েছেন চর্যাকারেরা। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী তাঁর ''চর্যাগীতির ভূমিকা'' গ্রন্থে চর্যায় ব্যবহৃত শব্দগুলির উৎসগত শ্রেণিবিন্যাস করে একটি সামগ্রিক পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতে দেখা যায়, জিনপুর, মাঙ্গ, নিবান, দশবল, তিশরণ, তথাগত ইত্যাদি শব্দগুলি প্রাচীন বৌদ্ধশাস্ত্র থেকে সংগৃহীত। আবার চন্দ্রসূর্য, দশমী দুয়ার, অণহা, বিণানা, তথতা, গগণ, কমলকুলিশ, ধমনচমন, কামরু, জোইনি, আলিকালি ইত্যাদি শব্দ গৃহীত হয়েছে হিন্দু যোগতন্ত্র এবং বৌদ্ধ মহাযানের অন্তর্গত মধ্যমক দর্শন, যোগাচার, বজ্রযান ইত্যাদি থেকে। এছাড়া চর্যাগানের ব্যবহৃত শুণ্ডিনী, বিআলী, সাঙ্কম, কোঞ্জাতালা, রূপা, খুণ্টি, কাচ্ছি, কেড়ুয়াল, তান্তি, ঠাকুর, কণ্ঠ কমলিনী, সবরসবরী, বঙ্গাল, গুঞ্জামালী ইত্যাদি কিছু পরিচিত শব্দ নেওয়া হয়েছে পরিচিত গৃহস্থালি ও লোকজীবনের প্রেক্ষাপট থেকে। বলা বাহুল্য, এইসব শব্দপ্রয়োগের ফলে চর্যাপদ সকল শ্রেণির পাঠকের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠেনি। তবে তাতে একদিকে যেমন নিজেদের আচরিত কায়াসাধনার গুহ্য রহস্যকে অতি সহজে ঢাকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তেমনই অন্যদিকে প্রাচীন বাঙালির কাব্যসৃষ্টির অভূতপূর্ব ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। মুনিদত্তের টীকাটি পাওয়া না গেলে গানগুলির অর্থোদ্ধারের জন্য পরবর্তীকালের গবেষকদের যে অন্ধকারে হাতড়ে ফিরতে হত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
4j5w26yjbg4xvcy5smmypj8ma4xcy3o
টেমপ্লেট:Japanese HistoryTOC
10
27236
85555
2025-07-02T14:21:08Z
Mehedi Abedin
7113
"{| id="toc" class="noprint" style="clear:both;" ! [[জাপানের ইতিহাস]] |- | style="font-size:80%; text-align:center;"| [[জাপানের ইতিহাস/ভূমিকা|ভূমিকা]]<br /> {{nowrap begin}}[[জাপানের ইতিহাস/The Jomon Period|Prehistory through the Jomon Period]]{{–w}} [[জাপানের ইতিহাস/The Yayoi Period|The Yayoi Period]]{{–w}} জা..." দিয়ে পাতা তৈরি
85555
wikitext
text/x-wiki
{| id="toc" class="noprint" style="clear:both;"
! [[জাপানের ইতিহাস]]
|-
| style="font-size:80%; text-align:center;"|
[[জাপানের ইতিহাস/ভূমিকা|ভূমিকা]]<br />
{{nowrap begin}}[[জাপানের ইতিহাস/The Jomon Period|Prehistory through the Jomon Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Yayoi Period|The Yayoi Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Kofun Period|The Kofun or Yamato Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Asuka Period|The Asuka Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Nara Period|The Nara Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/Buddhism in Japan|The Spread of Buddhism in Japan]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Early Heian Period|The Early Heian Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Middle Heian Period|The Middle Heian Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Late Heian Period|The Late Heian Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Kamakura Period|The Kamakura Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Kemmu Restoration|The Kemmu Restoration]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Muromachi Period/The Nanboku-chō Period|The Nanboku-chō Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Muromachi Period|The Muromachi Period (Ashikaga)]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Warring States Period|The Warring States Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Azuchi–Momoyama Period|The Azuchi–Momoyama Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Edo Period|The Edo Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Meiji Restoration|The Meiji Restoration]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Meiji Period|The Meiji Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Taisho Period|The Taisho Period]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The Rise of Militarism|The Rise of Militarism]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/World War II|World War II]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/The American Occupation of Japan|The American Occupation of Japan]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/Post-War Japan|Post-War Japan]]{{–w}}
[[জাপানের ইতিহাস/Japan Today|Japan Today]]{{nowrap end}}<br />
[[জাপানের ইতিহাস/গ্রন্থপঞ্জি|আরও পড়ুন]]
|}{{BookCat}}
rj49u5r8lpeg2xal4xlmhyysn8cn6z5
ব্যবহারকারী:Akram Zahid
2
27237
85577
2025-07-02T18:51:27Z
Akram Zahid
11629
User:আকরাম জাহিদ আকরাম জাহিদ তার সম্পূর্ণ নাম আকরাম হোসিন জাহিদ। আকরাম জাহিদ নামেই বেশি পরিচিত। আকরাম জাহিদ একুবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের একজন বাংলাদেশী বাঙ্গালী চিত্রশিল্পী। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লোহাইড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন কৃষক ও মাতা একজন গৃহিণী। আকরাম জাহিদ ২০০১ সালে এসএসসি পাশ করে মুকসুদপুর কলেজে ভর্তি হন সেখানে আশানুরূপ ফল না পেয়ে ২০০৭
85577
wikitext
text/x-wiki
আকরাম জাহিদ
smumb8ym2ts8xbskf62c7ew430fur9l
ব্যবহারকারী আলাপ:Bijoy Das2
3
27238
85578
2025-07-03T01:40:15Z
KanikBot
8129
স্বাগতম!
85578
wikitext
text/x-wiki
== বাংলা উইকিবইয়ে স্বাগত ==
{{স্বাগত/২য় সংস্করণ}} ০১:৪০, ৩ জুলাই ২০২৫ (ইউটিসি)
6td9gk7x65ghw11wp1d7o86cp65vh1w